Problem
stringlengths
191
1.28k
Solution
stringlengths
697
4.66k
আমরা দুই ভাই। আমি ছোট। আমাদের বাড়িতেই আমার ভাই আলাদা থাকে। আমি আব্বু-আম্মুর সঙ্গে থাকি। কিছুদিন পরপর সামান্য বিষয় নিয়ে আব্বু-আম্মুর সঙ্গে ঝগড়া বাধায় আমার ভাবি। রাগের বশে মাঝেমধ্যে ভাবিকে আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন আমার আব্বু। ইদানীং আত্মহত্যা করে আমাদের ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন আমার ভাবি। তিনি এই বাড়িতে থাকতে না পারলে আমাদেরও থাকতে দেবেন না বলে হুমকি দেন। এখন আমরা আইনানুগ কী ব্যবস্থা নিতে পারি।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, তাহলে যে ব্যক্তি আত্মহত্যায় সাহায্য করবে বা প্ররোচনা দেবে, সেই ব্যক্তিকে ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হবে। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ৩২ ধারায় বলা আছে, আত্মহত্যাকারীর মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট প্ররোচনা দানকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। তবে শুধু একটি সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। সুইসাইড নোটের সমর্থনে আরও সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। তাই আপনার পরিবারের সঙ্গে কোনো মনোমালিন্যের সূত্র ধরে আপনার মা-বাবাকে দায়ী করে তিনি যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটান, তবে অবশ্যই তাঁদের আইনগত জটিলতার মুখে পড়তে হবে। সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে কারও বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা গেলে তখনই শাস্তি প্রদান করা যাবে।
আমি একজন নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী। দুই মাস আগে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার গায়ে হাত তোলে আমার স্ত্রী। বঁটি দিয়ে আমাকে আঘাত করারও চেষ্টা করে, কিন্তু আশপাশের লোকজনের বাধার মুখে পারেনি। পরে আমি তার বাবাকে অভিযোগ করি। তিনি তাঁর ছেলেকে পাঠিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যান। আমার অভিযোগের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ না করে উল্টো তিনি আমার নামে লোকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি আপস করতে চাইলেও তারা রাজি না। তারা মামলা করতে চায়। এ অবস্থায় চাকরির নিরাপত্তাসহ মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা থেকে কীভাবে ত্রাণ পাব, দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে। কোনো ব্যক্তির দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরিপূর্ণ অধিকার আপনার আছে। যেকোনো নাগরিকের বিচার চাওয়া এবং বিচার পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার। যেহেতু আপনার স্ত্রী আপনাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন, কাজেই আপনার উচিত ছিল তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা। এ ছাড়া তাঁর কারণে পারিবারিক বা সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে, কোনো কলহবিবাদ তৈরির শঙ্কা কিংবা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩-এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত প্রদান করে, তার শাস্তি হবে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আপনি চাইলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন। যেহেতু আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আপনার নামে মিথ্যা মামলা করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, আপনার উচিত হবে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)–এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। এই ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। তবে মিথ্যা মামলা করলে আদালতে মিথ্যা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে হয়রানির শিকার হতে হবে।
আমি একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার বয়স যখন ১৮ বছর ৭ মাস, আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়াই। প্রথম থেকেই সে চাইত, আমি যেন ওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হই। বিভিন্ন সময়ে সে আবাসিক হোটেলে যেতে চাইত। শুরুতে না করলেও একসময় আমিও আগ্রহ দেখাই। মেয়েটি আমাকে তার বিভিন্ন রকম ছবি পাঠিয়ে আগ্রহী করেছে। তার সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। বিভিন্ন সময়ে বন্ধু হিসেবে তার রুমে গিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়েছি। এখন সে বিয়ে করার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের আগে এমন কোনো কথা সে বলেনি। এমনকি নারী নির্যাতন আইনে মামলা করবে বলে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘দেখ, তোর ফ্যামিলির কী হাল করি। তোকে হলের বড় ভাইদের দিয়ে ধরে রাখব।’ আমার এখন কেবলই মনে হচ্ছে, বিয়ে করার জন্যই আমাকে সে রুমে ডেকে নিয়েছে। এমনকি পরিবার থেকেও সে আমাকে দূরে রাখতে চায়। সে শুধু আমার টাকাপয়সা ও সম্পদের ওপর আগ্রহ দেখায়। আমি চাই না আমার পরিবার এসব জানুক। পরিবারের কথা ভেবে কয়েকবার আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল। আমি এখন নিজেও এই ঝামেলা থেকে মুক্তি চাচ্ছি, পাশাপাশি পরিবারেরও নিরাপত্তা চাই। হলের বড় ভাইদের নিয়েও ভয়ে আছি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আইনের কোনো সাহায্য কি আমি পাব?
মেয়েটি যেহেতু তাঁকে বিয়ে করার জন্য আপনার ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন, বিয়ে না করলে নারী নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলা করার ভয় দেখাচ্ছেন, কাজেই এটা দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার আওতায় পড়বে। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)-এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতির উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি ও মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। এ ধরনের বেআইনি কাজ থেকে তাঁকে বিরত থাকতে বলুন। এরপরও এ ধরনের হুমকি দিলে বা একই আচরণ করলে এসব কথা উল্লেখ করে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করুন। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন–এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন।
আমি একজন হিন্দু ছেলে। অনাথ একটি মেয়েকে তিন মাস প্রেম করার পর বিয়ে করি। বিয়েতে আমার পরিবারের মত ছিল না। প্রথম প্রেমের কারণে আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের প্রত্যাশার বাইরে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ দিকে বুঝতে পারি, বিয়ে যেহেতু সারা জীবনের জিনিস, তাই প্রত্যাশার বাইরে গেলে আফসোস হতে পারে। এসব ভেবে শেষ দিকে আমি মেয়েটিকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করি। কিন্তু মেয়েটি আমাকে নানা রকম ইমোশনাল কথাবার্তা বলে। নিজের নানা রকম দুর্দশার কথা বলতে থাকে। একটি অনাথ মেয়ের সঙ্গে কীভাবে প্রতারণা করতে পারলাম ইত্যাদি নানা কথা বলে। তাই শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। কাউকে না জানিয়ে নিজেরা বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু বিয়ের পর এখন আমার আফসোস হচ্ছে। আমি ভুল করেছি। আমি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। হিন্দু আইনে যেহেতু বিবাহবিচ্ছেদ নেই, সেহেতু কীভাবে এই বিয়ে থেকে বেরিয়ে আলাদা থাকতে পারি, সেটা জানতে চাই। আলাদা হতে পারলে ভরণপোষণের কেমন খরচ দিতে হবে, সেটাও জানতে চাই।
হিন্দুধর্মে বৈবাহিক সম্পর্ক ‘অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক’। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়। যার ফলে হিন্দুধর্মে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) বিধান নেই। জন্ম-মৃত্যুর মতো হিন্দুদের জন্য বর্তমানে বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২’ নামে পরিচিত। এই আইনে কীভাবে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে, সেটার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। তবে আইনে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। সনাতন ধর্মমতে হিন্দু বিয়ে শুধু ধর্মীয় বিধান মেনে সম্পন্ন করা হতো। মন্দিরে পুরোহিত দ্বারা মন্ত্র পাঠ করে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে এই বিয়ে হতো, অনেকেই এখনো সেভাবেই বিয়ে করেন। আপনি বিয়ে নিবন্ধন করেছেন কি না, জানাননি। তবে যদি সনাতন ধর্মমতে মন্দিরে বিয়ে করেন কিন্তু নিবন্ধন না করে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও আপনার বিয়েটি বৈধ হবে। নিবন্ধন করলে প্রমাণপত্র হিসেবে একটি কাগজ দেওয়া হয়। আর এই প্রমাণপত্র দেখিয়ে বিচ্ছেদের সুযোগ থাকে। তবে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হয়, তাহলে দেওয়ানি আদালতে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে ঘোষণামূলক মামলা করতে পারেন। আদালত চূড়ান্ত সেপারেশনের নির্দেশ দিলে শুধু সেপারেশন সম্ভব, কিন্তু হিন্দু আইনে ডিভোর্স হয় না। আদালত স্ত্রীর ভরণপোষণ বাবদ কিছু টাকা নির্ধারণ করতে পারেন, যা স্বামী স্ত্রীকে দেবেন। এই ভরণপোষণ সাধারণত একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভরণপোষণের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন। সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক, সামাজিক ও আার্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
আমি পুরুষ, বয়স ১৮ বছর। গত বছর একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তী সময়ে দুজনের সম্মতিতে আমরা কয়েকবার অন্তরঙ্গ হই। আমার পরিবার তাকে মেনে নেবে না, তাই আমি এখন এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে চাইছি। কিন্তু মেয়েটি নানাভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয় দেখাচ্ছে। এখন আমি আইনগত কোনো প্রতিকার কি পেতে পারি?
আপনি জানিয়েছেন, গত বছর অর্থাৎ যখন আপনার বয়স ১৭ ছিল, তখন আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। অল্প বয়সে এ ধরনের সম্পর্ক উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। সবকিছুর একটা সঠিক বয়স রয়েছে। প্রেম, ভালোবাসার জন্যও সঠিক বয়স রয়েছে। তার আগে দরকার মানসিক বিকাশ। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সবার আগে দরকার। কারণ, প্রেম, ভালোবাসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে হলে নিজেকে তার যোগ্য করে তোলা প্রয়োজন। যা–ই হোক, যেহেতু কোনো কারণে সম্পর্কটি আপনি আর রাখতে চাচ্ছেন না, তাই আপনার প্রেমিকারও জোর করে সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখা বা বাধ্য করাটা যুক্তিসংগত নয়। আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনার প্রেমিকা সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে বাধ্য করতে চাচ্ছে। সেই সঙ্গে মেয়েটি আপনাকে হুমকি প্রদর্শন করছে এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। তদন্ত করে যদি দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন। কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়। ১০৭ ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড সম্পাদনে বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। ১০৭ ধারার আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এই মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।
পড়াশোনা শেষ করার পর আমি এখন চাকরিজীবী। আমার সঙ্গে একটি মেয়ের আট বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। শুরু থেকে আমি তাকে প্রয়োজনীয় খরচ দিয়ে আসছি। তখন তার পরিবার আমার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের ব্যাপারে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিল। সে জন্য আমি তার ভরণপোষণ চালিয়ে এসেছি। তার পড়ালেখার খরচও আমি চালাই। তাকে আমি স্বর্ণের চেইন, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সে যা চেয়েছে—সব দিয়েছি। সম্প্রতি সে ডিগ্রি পাস করেছে। তার ফ্যামিলি আমাদের বিয়েতে রাজি ছিল। কিন্তু দিন দশেক আগে তার পরিবার থেকে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। আমি যাওয়ার পর প্রেমিকার মা বলছেন, তাঁর আরেক জামাই নাকি আমাদের বিয়েতে রাজি নন। যে কারণে তাঁরা আমার সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে পারবেন না। এই আট বছরে আমি তার পেছনে প্রায় সাত লাখ টাকা ঢাললাম, এখন বলছে বিয়ে করবে না। এদিনের পর থেকে আমার সঙ্গে তাঁদের পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। মেয়েও আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না। আমার সঙ্গে এমন প্রতারণার জন্য আমি কী কী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি, সেটা আমার খুব জানা প্রয়োজন। দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
আপনার তথ্যমতে, আট বছরে আপনি প্রায় সাত লাখ টাকা তাঁর পেছনে ব্যয় করেছেন। এখন মেয়েটির পরিবার নানা অজুহাতে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিচ্ছে। আপনি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। আপনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম–ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান–প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া–নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসতে পারে। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষের করা উচিত। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে; তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কাজেই আপনার প্রেমিকা যদি আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করেন, তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেন বা অন্য কোনো ক্ষতি করেন; তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি ও তাঁর পরিবার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
আমরা তিন বোন, কোনো ভাই নেই। আমার বাবার বয়স প্রায় আশি বছর। বাবার বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে চাচার ছেলেরা আমার বাবার সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। শুনেছি, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কারও পুত্রসন্তান না থাকলে মৃত্যুর পর তাঁর ভাইয়ের ছেলেরা সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন, এটা কতটুকু সত্য? আমার বাবা যদি সব সম্পত্তি আমাদের তিন বোন ও মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে কী করতে হবে, আইনগতভাবে কি সেটা সম্ভব?
যেহেতু আপনাদের কোনো ভাই নেই, তাই আপনার বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে আপনার চাচাতো ভাইয়েরা আপনার বাবার সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বাবা যদি তাঁর সব সম্পত্তি আপনাদের তিন বোন ও মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে তা হেবা দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর জীবিত অবস্থায় আপনার বোনদের এবং মায়ের নামে হস্তান্তর করে দিতে হবে। দান করার সঙ্গে সঙ্গে ওই সম্পত্তি হস্তান্তরও করতে হবে। হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্তসম্পর্কিত আত্মীয় তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, মা–বাবা ও সন্তানের মধ্যে, ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি থেকে নাতি-নাতনি ও নাতি-নাতনি থেকে নানা-নানি সম্পর্কের মধ্যে নামমাত্র ১০০ টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে। দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলা হয়ে থাকে। কারও কাছ থেকে প্রতিদান বা বিনিময় ছাড়া কোনো কিছু নিঃশর্তে গ্রহণ করাকে দান বলা হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপিঅ্যাক্ট)–এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তিদাতা কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাঁকে দান বলা হয়। দান বা হেবা বৈধ হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়— • দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা প্রদান। • গ্রহীতার পক্ষ হতে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা। • দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান। একবার সম্পত্তি দান বা হেবা করার পর আদালতের ডিক্রি ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তিটি হস্তান্তর করা না হলে, কিছু ক্ষেত্রে তা বাতিল হতে পারে। হেবা করার পদ্ধতি শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে দান যেকোনো ধর্মের লোকেরাই করতে পারেন। দানের ক্ষেত্রেও দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সম্মতি থাকতে হয়। প্রতিটি হেবা দান দলিলের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। ২০০৫ সালের আগস্ট মাস থেকে হেবা করা সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আপনার বাবা যদি জীবিত থাকা অবস্থায় আপনার, আপনার বোনদের এবং মায়ের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চান, তাহলে তিনি হেবা দলিল সম্পাদন এবং রেজিষ্ট্রি করে তা করতে পারেন। অন্যান্য উত্তরাধিকাররা এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করতে পারবে না।
আমরা চার ভাই এক বোন। আমার বাবার বাড়িতে অনেক জমিজমা আছে। অন্যদিকে মেয়ের পরিবার মেয়ের সৎমামার বাড়িতে থাকে। নিজেদের জমি নেই। মেয়ের বাবা দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় স্ত্রী তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম ঘরে সন্তান নেই। দ্বিতীয় ঘরে একটি মেয়ে, তৃতীয় ঘরে দুটি মেয়ে। আমার সঙ্গে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আমার অভিযোগ অনেক। যেমন অন্যের জমি–বাড়ি নিজের বলে দেখিয়ে বিয়ে করানো, সৎমায়ের তথ্য গোপন রাখা, বিয়ের দুই দিন পরই আমার সঙ্গে অজামাতাসুলভ আচরণ, ইত্যাদি। তাঁদের মেয়ে আমার বাড়িতে আসার পর অন্য ছেলেকে ‘আই মিস ইউ জান’ লিখে মেসেজ করেছে। সব মিলিয়ে আমি সব দিক থেকেই প্রতারিত হয়েছি। এমন অবস্থায় আমি তালাক চাচ্ছি। কাবিন তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। বিয়ে এক বছর পেরিয়েছে। চাওয়া সত্ত্বেও কাবিনের কাগজ আমাকে দেওয়া হয়নি। মেয়ে মোহরানা ছাড়া তালাক দিতে রাজি। কিন্তু মেয়ের বাবা, সৎমা, আপন মায়ের পরিবার—সবাই মিলে মোহরানার টাকা ছাড়া তালাক দিতে রাজি নয়। আর আমার কথা হলো, আমি একটি ভালো মেয়ে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। তাঁরা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি কেন টাকা দেব। আমি এখন কী করতে পারি। কীভাবে তালাক দিতে পারি, জানাবেন প্লিজ।
আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার চিঠি পড়ে বুঝতে পারছি, বিয়ের আগে আপনার স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন আপনার কাছে অনেক তথ্য গোপন করেছেন। তাঁদের এ ধরনের আচরণে আপনি প্রতারিত বোধ করছেন এবং তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি শুধু আইনি পরামর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব। মোহরানা নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, স্ত্রী বা স্বামী যে কেউ তালাক দিক না কেন, সব ক্ষেত্রেই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তালাকের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০ ধারা মোতাবেক দেনমোহর প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিনে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও স্ত্রী চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে স্ত্রী যদি দেনমোহর পরিত্যাগ করে, সে ক্ষেত্রে তা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। স্ত্রী ইচ্ছা করলে আংশিক বা সম্পূর্ণ দেনমোহর মওকুফ করে দিতে পারে। এর জন্য কোনো প্রতিদান প্রয়োজন নেই। তবে তা অবশ্যই স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতিতে হতে হবে। কাজেই এ সম্পর্কে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দেখতে পারেন। কাবিননামার কপি আপনি নির্ধারিত ফি দিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজি অফিস থেকে তুলতে পারবেন। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে—তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে, তখনই বা পরবর্তী সময়ে বা যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেবেন। আপনি বলেছেন মেয়েটি ও তার পরিবার আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। কেউ যদি প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে কারও কাছ থেকে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা বা তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করে কোনো কিছু আদায় করে, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা যেতে পারে। তবে এসব অভিযোগ আপনাকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। যদি আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে আপনার স্ত্রী ও তাঁর পরিবার আপনার কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করে তারপর আপনার ক্ষতিসাধন করেছে, তবে অবশ্যই এর জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার জন্য ঘটকের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন। দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তিকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়।
একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। প্রবাসে আসার আগে কাজির মাধ্যমে আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে তাঁকে বিয়ে করে আসি। এই কথা আমাদের দুজনের বন্ধুরা ছাড়া দুই পরিবারের কেউ জানতেন না। আমাদের সবকিছু ঠিক চলছিল। প্রায় দুই বছর চার মাস পর তাকে আমার ঘরে তোলা নিয়ে কথা চলছিল। কথার মধ্যে দুজনের ঝগড়া হয়। এরপর কথা বন্ধ থাকে কয়েক দিন। তার পর থেকে তাকে ফোন দিলে সে কথা বলতে চাইত না। কয়েক দিন পর হঠাৎ সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠায়। এখন আমি জানতে পেরেছি, আমার এক সাবেক বন্ধুর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়েছে। আমি কী তার (আমার স্ত্রী) বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি?
আপনার প্রশ্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি যাঁর সঙ্গে সংসার করতে চাইছেন, তিনি যদি আপনার সঙ্গে থাকতে না চান, তাহলে জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা আপনাদের দুজনের জন্যই ক্ষতিকর। আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্ত্রী আপনাকে ইতিমধ্যে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দিয়ে থাকেন, তাহলে তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে (স্ত্রী কর্তৃক তালাক) স্ত্রী স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কাজির মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনকে পাঠাতে হবে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১-এর ধারা ৭ অনুযায়ী, স্ত্রী তাঁর স্বামীকে তালাক দিতে চাইলে তালাক উচ্চারণ করার পর যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে ও স্বামীকেও এর কপি পাঠাতে হবে। আইনের বিধান অনুযায়ী, তালাক প্রত্যাহার না করা হলে চেয়ারম্যানের নিকট প্রেরিত নোটিশের তারিখ হতে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত তালাক কার্যকর হবে। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান দুই পক্ষের মধ্যে পুনর্মিলনের লক্ষ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। এই সালিসি পরিষদ পুনর্মিলন ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে ৯০ দিন বা গর্ভকাল—এই দুইয়ের মধ্যে যেটা পরে হবে, তা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। আপনি যদি মনে করেন, আপনাদের মধ্যে যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব, তাহলে আপনার স্ত্রী ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করতে পারেন। তা ছাড়া ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(৬) ধারা অনুসারে, তালাকের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রে ঘরসংসার করতে চাইলে নতুন করে আইন ও ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে করতে হবে। পুনর্বিবাহ করে ঘরসংসার করতে চাইলে আইনে কোনো বাধা নেই। আর আপনি যদি মনে করেন তা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে বাস্তবতা মেনে নেওয়াই শ্রেয়। আপনি আপনার চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানাননি আপনাদের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়েছে কি না। যদি দুই পক্ষের মধ্যে আইনগতভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তাহলে নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই।
আমি একজন উদ্যোক্তা। প্রায় তিন বছর ধরে আমি একটি বুটিক হাউস চালাই। এই ব্যবসায় আমার সঙ্গে আরও দুজন অংশীদার (পার্টনার) যুক্ত হতে চাইছেন। আমরা সবাই মিলে বুটিক হাউসটিকে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চাচ্ছি। আমাদের একজন কোম্পানি গঠনের কথা বলছেন। আমরা জেনেছি, কোম্পানি গঠন করা নাকি খুব ঝক্কির কাজ। এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, কোম্পানি গঠনের জন্য কী কী আইনি পদ্ধতি মেনে চলতে হবে?
একজন নতুন বিনিয়োগকারীকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করে ব্যবসা শুরু করতে হয়। প্রথমে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মসে নতুন কোম্পানি নিবন্ধন করাতে হয়। কোম্পানি আইন ও অন্যান্য বিধি অনুসারে এই প্রতিষ্ঠান কোম্পানি, সমিতি ও অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। আবেদনকারীকে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। আপনি যেহেতু তিন বছর ধরে ব্যবসা করছেন, তাই আমি ধরে নিচ্ছি আপনার ট্রেড লাইসেন্স আছে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি খোলার নিয়ম কোম্পানি খোলার আগে প্রথমেই আপনাদের প্রস্তাবিত নামটি দিয়ে একটি নেমক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তুলতে হবে। যদি আপনার প্রস্তাবিত নামটি খালি থাকে, তবে কোম্পানির নাম নিবন্ধন করার জন্য আপনাকে সেখান থেকে নাম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন সম্পন্ন হবার পর এবার নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা প্রদান করে পছন্দের নামটি নিবন্ধন করতে হবে। নাম নিবন্ধনের পরে এবার আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তা হলো আপনার কোম্পানির জন্য মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করতে হবে। মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন হলো কোম্পানির উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কে বলা থাকে; এতে ব্যবসার নাম, ধরন, লক্ষ্য, মূলধনের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ থাকে। কীভাবে কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হবে, কোম্পানির সাধারণ সভা এবং বিশেষ সভা কীভাবে কখন সম্পাদিত হবে, কীভাবে নতুন সদস্য নেওয়া হবে, কীভাবে কোন সদস্যকে বহিষ্কার করা হবে, কীভাবে লভ্যাংশ বণ্টন করা হবে ইত্যাদি বিষয় আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনে বিশদভাবে বর্ণনা করতে হবে। এ ব্যাপারে আপনাকে কোম্পানিবিষয়ক অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হবে। এসব প্রস্তুত হওয়ার পর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নিবন্ধনের আবেদনপত্রটি সংগ্রহ করতে হবে, উক্ত আবেদনপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে এবং আনুষঙ্গিক কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত করতে হবে। এবার পূরণ করা আবেদনপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্রগুলো নিয়ে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মসের অফিসে জমা দিতে হবে। কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর যাচাই–বাছাই করে সেখান থেকে আপনাকে কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য সুনির্দিষ্ট ফি ধার্য করে দেবে। এবার কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফি নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা দিতে হবে। সেখানে আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আছে, তা আপনাকে সম্পাদন করতে হবে। পরবর্তীকালে নিবন্ধক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখবেন এবং আপনার আবেদনটি উপযুক্ত মনে হলে তাঁদের বইয়ে আপনার নতুন কোম্পানির নাম তালিকাভুক্ত করবেন। একই সঙ্গে আপনাকে কোম্পানির নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকবেন। নিবন্ধন সার্টিফিকেট পাওয়ার পরপরই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম আপনি শুরু করতে পারবেন।
আমার মা ও বাবার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২২ বছর। বিয়ের পর বাবা বিদেশে চলে যান। তিন বছর পরপর দেশে এসে তিন মাস থেকে আবার চলে যেতেন। প্রতিবার দেশে এসে মায়ের গায়ে হাত তুলতেন। বিদেশ থেকে মাসে ২০ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। ২০২৩ সালে একেবারে দেশে চলে আসেন বাবা। এর পর থেকে আমাদের খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন। প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে বিনা কারণে ঝগড়া করেন, অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন, গায়ে হাত তোলেন, বিচ্ছেদ চান। সন্তান হিসেবে আমাকে আর আমার ভাইকেও অস্বীকার করেন। মাকে মারার প্রতিবাদ করায় ভাইকে চাকু মারতে গিয়েছিলেন, তখন সে বাবার গায়ে হাত তোলে। প্রতিদিন তাঁর এই ব্যবহারের কারণে আমি ও আমার ভাই তাঁর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। মা তাঁর সব অত্যাচার সহ্য করেন। কারণ, তিনি চান না বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান। তাহলে মানুষ আমাদের খারাপ চোখে দেখবে। বাবা এখন মা ও ভাইয়ের নামে মামলা করতে চান। এ অবস্থায় কী করব?
পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোনো নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯-এ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ,পারিবারিক সহিংসতা হতে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে। আপনাদের বাড়িতে যেটা ঘটছে, সেটা পারিবারিক সহিংসতা। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এ প্রথমবারের মতো পারিবারিক সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা প্রণীত হয়েছে। একজন শিশু বা নারী যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কর্তৃক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, দেশের আইন অনুযায়ী তিনি প্রতিকার চাইতে পারবেন। আপনার বাবা আপনার মায়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছেন। সেই সঙ্গে আপনারা আর্থিক বৈষম্যের শিকার। আপনার বাবার এ ধরনের আচরণ পারিবারিক সহিংসতার অন্তর্ভুক্ত। আইনের অধীনে আপনার মা নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলো চাইতে পারবেন— ক. এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার খ. চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ গ. প্রয়োগকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে সেবা পাওয়ার সুযোগ ঘ. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা বা অন্য কোনো আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার উপায় আদালতে আবেদন আপনার মায়ের পক্ষে কোনো প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আদালত আবেদন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এর অধীনে একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিম্নবর্ণিত প্রতিকার পেতে পারেন— ১. অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ: অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ বিষয়ে আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে। আদালত সন্তুষ্ট হলে প্রতিপক্ষ বা তার প্ররোচনায় পারিবারিক সহিংসতা ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে আদালত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন। ২. সুরক্ষা আদেশ: সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও প্রতিপক্ষকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে পারিবারিক সহিংসতা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা আছে, তাহলে সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন। সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষকে পারিবারিক সহিংসতামূলক কোনো কাজ সংঘটন, সংঘটনে সহায়তা করা, প্ররোচিত করা বা সুরক্ষা আদেশে উল্লিখিত অন্য যেকোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিতে পারবেন। ৩. বসবাস আদেশ: এই আইনের ১৫ ধারায় বসবাসের আদেশ নিয়েও বলা আছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বসবাস আদেশ প্রদান করতে পারবেন। এই আদেশের আওতায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যেখানে বসবাস করেন, সেখানে প্রতিপক্ষের বসবাস বা যাতায়াত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে বাসার কোনো অংশ থেকে বেদখল করা বা ভোগদখলে কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি করা থেকে বিরত করা ইত্যাদি পড়ে। আদালত যদি মনে করেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাঁর সন্তানের জন্য বর্তমান আশ্রয়স্থল নিরাপদ নয়, তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে আদালত প্রয়োগকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থানের ব্যবস্থা করবেন। তা ছাড়া প্রতিপক্ষকে জামানতসহ বা জামানত ছাড়া মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারবেন, যেন তিনি বা তাঁর পরিবারের অন্য কোনো সদস্য ভবিষ্যতে পারিবারিক সহিংসতামূলক কাজ না করেন। ৪. ক্ষতিপূরণ আদেশ: আইনের ১৬ ধারায় ক্ষতিপূরণের আদেশের কথা বলা হয়েছে। আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং তাঁর সন্তানের ভরণপোষণের জন্য তিনি যে ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, সে রকম জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত ও যুক্তিযুক্ত অর্থ প্রদানের জন্য প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারবেন। তা ছাড়া উপযুক্ত মনে করলে আদালত এককালীন বা মাসিক ভরণপোষণ পরিশোধের আদেশ দিতে পারবেন। ৫. নিরাপদ হেফাজত আদেশ: আদালত উক্ত আইনের অধীনে আবেদন বিবেচনার যেকোনো পর্যায়ে, আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সন্তানকে তাঁর নিকট অথবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো আবেদনকারীর জিম্মায় অস্থায়ীভাবে সাময়িক নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ দিতে পারবেন। কাজেই আপনার মা চাইলে যেকোনো থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা বা সরাসরি আদালতের কাছে সুরক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপসযোগ্য। এই আইনের ৩০ ধারায় শাস্তির বিধান সম্পর্কে বলা আছে। তবে আদালত চাইলে প্রতিপক্ষকে ধারা ৩০-এর অধীন শাস্তি না দিয়ে ৩১ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা প্রদানের জন্য আদেশ দিতে পারবেন এবং বিষয়টি তত্ত্বাবধানের জন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারবেন। এই আইনে শাস্তির পাশাপাশি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। যার ফলে পুনরায় দুই পক্ষের মধ্যে আপস–নিষ্পত্তি করা সহজ হয়। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩-এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাতদানের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করেন, তার শাস্তি হবে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আপনারা চাইলে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন।
আমার এক স্বজনের মেয়ে, ঢাকার বাইরের একটি নামকরা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। কিছুদিন আগে একটি ছেলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পরিচয়। একসময় দুজনে ফোনে কথা বলতে শুরু করে। ছেলেটি ঢাকার একটি স্কুলের ছাত্র। মুঠোফোনে ও ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে একসময় ছেলেটি মেয়েটিকে তার ব্যক্তিগত ছবি তুলে পাঠাতে বলে। ফোনে কথা বলতে বলতে ছেলেটি এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে যে মেয়েটিও তাকে তৎক্ষণাৎ ছবি পাঠিয়ে দেয়। ছেলেটি মেয়েটিকে আশ্বাস দিয়েছিল, ‘একবার দেখেই ডিলিট করে দেব।’ কিন্তু কিছুদিন পর ছেলেটি এই ছবি দিয়ে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে। তার কাছ থেকে নানা রকম অবৈধ সুবিধা নিতে থাকে। মেয়েটিকে একাধিকবার ঢাকায় এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করে। ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক টাকাপয়সা হাতিয়ে নিতে থাকে। ছেলেটির বিরুদ্ধে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবধান বা সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে টিনএজার সন্তানের মা-বাবাকেও সচেতন থাকতে হবে। সন্তান অনলাইনে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলছে কি না, কী কাজে সে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, এসব বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। অভিভাবকেরা একটু অসচেতন হলেই নানা ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারে সন্তানেরা। ছেলেটি যদি অনলাইনে কোনো ছবি প্রকাশ করে ফেলে, তাহলে এ জন্য তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আপনি অভিভাবক হিসেবে ছেলেটির সঙ্গে আলোচনা করে ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি তাকে ডিলিট করতে বলুন। ছেলেটি ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে মেয়েটির কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী, এ ধরনের ব্ল্যাকমেলকে এক্সটরশন বা চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে। ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী, এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড। ব্ল্যাকমেলিং একটি জঘন্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত সব আইন সম্পূর্ণরূপে আপনার পক্ষে। আপনি অতি দ্রুত কাছের থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। প্রয়োজনে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করে প্রতিকার চাইতে পারেন। যেহেতু সে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, তাই দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা বলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীন অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি, দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন। ছেলেটি মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। যদি কোনো এক পক্ষ অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং বিশ্বাস অর্জনের পর অপর পক্ষের অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির ৪১৫ থেকে ৪২০ পর্যন্ত বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী তা প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব খাটিয়ে তাঁর কোনো কিছু হাতিয়ে নেয় (তাঁর সম্মতি থাকলেও) সেটা প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হবে। উপরিউক্ত প্রতারণার জন্য সেই ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারার অধীন এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আমার বয়স ৩০ বছর। ছোটবেলায় আমাকে দত্তক নেওয়া হয়। সব কাগজপত্রে আমার মা–বাবার নামের জায়গায় পালক মা–বাবার পরিচয় দেওয়া আছে। এর মধ্যে আমার পালক বাবা হঠাৎ মারা গেছেন। তারপর জানতে পারি, পারিবারিক ওয়ারিশনামায় আমার নাম নেই। আসলেই কি ওয়ারিশনামায় আমার নাম থাকতে পারে না? যেহেতু ওয়ারিশনামায় নাম নেই, আমি কি পালক মা–বাবার কোনো সম্পত্তিই পাব না? যদি না দেয় আর আইনি কোনো পদক্ষেপ যদি আমি নিই, তাহলে রায় কার পক্ষে যাবে? মা–বাবার জায়গায় যেহেতু তাঁদের নাম আছে, সেহেতু আমারও তো ভাগ আছে। আবার যাঁদের কাছ থেকে আমাকে আনা হয়েছিল, তাঁদের (আমার জন্মদাতা মা-বাবা) ওয়ারিশনামাতেও তো আমার নাম নেই। তাঁদের সম্পত্তির ভাগও কি আমি পাব না? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
বাংলাদেশের আইনে শিশু দত্তক নেওয়ার বিষয়ে কোনো বিধান নেই। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি একটি শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে পারেন। কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে হলে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। ১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর কাস্টডি ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় নেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের অধীন এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। আপনি জানিয়েছেন, আপনাকে যাঁরা দত্তক নিয়েছেন, তাঁদের ওয়ারিশনামায় আপনার নাম নেই। আপনি তাঁদের পালক সন্তান। আর পালক সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে আইনত তাঁর কিছুই করার থাকে না। কারণ, মুসলিম আইনে দত্তক সন্তান কোনো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইলকে বলে অসিয়ত। কোনো সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান তাঁর অনাত্মীয়কে, অর্থাৎ যিনি তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নন, সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পারেন। কাজেই আপনার বর্তমান মা (যে আপনাকে পালক নিয়েছেন) চাইলে আপনাকে তাঁর সম্পত্তির একটি অংশ অসিয়ত করতে পারেন। তবে আপনার জন্মদাতা মা–বাবার সম্পত্তি থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন না। আপনি আইনগতভাবে আপনার জন্মদাতা মা–বাবার সম্পত্তি থেকে আপনার অংশ দাবি করতে পারবেন, যেহেতু আপনি তাঁদের বৈধ উত্তরাধিকার।
কলেজে পড়ার সময় থেকে একটি মেয়েকে আমি খুব ভালোবাসি। পাঁচ বছর আগে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে তাকে ভালোবাসার কথা জানাই। মেয়েটিও তাতে সম্মতি দেয়। এরপর আমরা ফোনে কথা বলা শুরু করি। সে যখন যা চেয়েছে, কিনে দিয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার মনটা সব সময় ছটফট করত। কিন্তু সপ্তাহে সে দুবারের বেশি কথা বলত না। বলত, বাসায় জানলে সমস্যা হবে। আমি সেসব বিশ্বাস করতাম। প্রেমের দুই বছর পর আমি ইতালি চলে আসি। এর পর থেকে যেকোনো দরকারে আমার বন্ধুর মাধ্যমে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। মাঝেমধ্যে দুজন ফোনে কথা বলতাম। বিদেশে এসে এ পর্যন্ত তাকে আমি দুই লাখ টাকা দিয়েছি। এই বছর আমাদের বিয়ে করার কথা। আমি দেশে আসব, সে তার পরিবারের কাছে জানাবে। এখন শুনি, আমার প্রেমিকা আমার সেই বন্ধুকে এক বছর আগে বিয়ে করেছে। তারা এখন আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। দুজনে মিলে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাকে বোকা বানিয়ে নানা সময়ে টাকা নিয়েছে। এখন আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়েছি। তবে আমি আমার টাকা ফেরত চাই। যখনই তাকে টাকা দিয়েছি, ব্যাংকে পাঠিয়েছি। সেসবের তথ্য ও প্রমাণ আমার কাছে আছে। এখন আইনের আশ্রয় পেতে কী করব?
আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রেমিকাকে উপহারসহ টাকা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আপনাকে ছেড়ে আপনার বন্ধুকে বিয়ে করেছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান-প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া-নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে দুই পক্ষেরই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত। তবে আপনার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে, মেয়েটি হয়তো অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তিকে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটিও প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। আপনার ক্ষেত্রে প্রেমিকা আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেছেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জনের পর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন, এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আপনি যদি আদালতে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন, তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে মানি মোকদ্দমা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দাবি করা টাকার অনুপাতে কোর্ট ফি দাখিল করতে হয়। ফৌজদারি আদালতে আশ্রয় নিতে হলে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে সিআর (নালিশি) মামলা করা যায়। এ ছাড়া থানায় এজাহার হিসেবেও মামলা করার সুযোগ রয়েছে। আদালতে সরাসরি মামলা করলে আদালত জবানবন্দি নিয়ে সরাসরি সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
কলেজে পড়ার সময় থেকে একটি মেয়েকে আমি খুব ভালোবাসি। পাঁচ বছর আগে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে তাকে ভালোবাসার কথা জানাই। মেয়েটিও তাতে সম্মতি দেয়। এরপর আমরা ফোনে কথা বলা শুরু করি। সে যখন যা চেয়েছে, কিনে দিয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার মনটা সব সময় ছটফট করত। কিন্তু সপ্তাহে সে দুবারের বেশি কথা বলত না। বলত, বাসায় জানলে সমস্যা হবে। আমি সেসব বিশ্বাস করতাম। প্রেমের দুই বছর পর আমি ইতালি চলে আসি। এর পর থেকে যেকোনো দরকারে আমার বন্ধুর মাধ্যমে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। মাঝেমধ্যে দুজন ফোনে কথা বলতাম। বিদেশে এসে এ পর্যন্ত তাকে আমি দুই লাখ টাকা দিয়েছি। এই বছর আমাদের বিয়ে করার কথা। আমি দেশে আসব, সে তার পরিবারের কাছে জানাবে। এখন শুনি, আমার প্রেমিকা আমার সেই বন্ধুকে এক বছর আগে বিয়ে করেছে। তারা এখন আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। দুজনে মিলে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাকে বোকা বানিয়ে নানা সময়ে টাকা নিয়েছে। এখন আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়েছি। তবে আমি আমার টাকা ফেরত চাই। যখনই তাকে টাকা দিয়েছি, ব্যাংকে পাঠিয়েছি। সেসবের তথ্য ও প্রমাণ আমার কাছে আছে। এখন আইনের আশ্রয় পেতে কী করব?
আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রেমিকাকে উপহারসহ টাকা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আপনাকে ছেড়ে আপনার বন্ধুকে বিয়ে করেছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান-প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া-নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে দুই পক্ষেরই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত। তবে আপনার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে, মেয়েটি হয়তো অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তিকে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটিও প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। আপনার ক্ষেত্রে প্রেমিকা আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেছেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জনের পর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন, এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আপনি যদি আদালতে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন, তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে মানি মোকদ্দমা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দাবি করা টাকার অনুপাতে কোর্ট ফি দাখিল করতে হয়। ফৌজদারি আদালতে আশ্রয় নিতে হলে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে সিআর (নালিশি) মামলা করা যায়। এ ছাড়া থানায় এজাহার হিসেবেও মামলা করার সুযোগ রয়েছে। আদালতে সরাসরি মামলা করলে আদালত জবানবন্দি নিয়ে সরাসরি সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
পড়াশোনা শেষ করার পর আমি এখন চাকরিজীবী। আমার সঙ্গে একটি মেয়ের আট বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। শুরু থেকে আমি তাকে প্রয়োজনীয় খরচ দিয়ে আসছি। তখন তার পরিবার আমার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের ব্যাপারে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিল। সে জন্য আমি তার ভরণপোষণ চালিয়ে এসেছি। তার পড়ালেখার খরচও আমি চালাই। তাকে আমি স্বর্ণের চেইন, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সে যা চেয়েছে—সব দিয়েছি। সম্প্রতি সে ডিগ্রি পাস করেছে। তার ফ্যামিলি আমাদের বিয়েতে রাজি ছিল। কিন্তু দিন দশেক আগে তার পরিবার থেকে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। আমি যাওয়ার পর প্রেমিকার মা বলছেন, তাঁর আরেক জামাই নাকি আমাদের বিয়েতে রাজি নন। যে কারণে তাঁরা আমার সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে পারবেন না। এই আট বছরে আমি তার পেছনে প্রায় সাত লাখ টাকা ঢাললাম, এখন বলছে বিয়ে করবে না। এদিনের পর থেকে আমার সঙ্গে তাঁদের পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। মেয়েও আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না। আমার সঙ্গে এমন প্রতারণার জন্য আমি কী কী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি, সেটা আমার খুব জানা প্রয়োজন। দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
আপনার তথ্যমতে, আট বছরে আপনি প্রায় সাত লাখ টাকা তাঁর পেছনে ব্যয় করেছেন। এখন মেয়েটির পরিবার নানা অজুহাতে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিচ্ছে। আপনি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। আপনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম–ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান–প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া–নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসতে পারে। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষের করা উচিত। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে; তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কাজেই আপনার প্রেমিকা যদি আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করেন, তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেন বা অন্য কোনো ক্ষতি করেন; তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি ও তাঁর পরিবার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। আশা করি, আপনার উত্তর পেয়েছেন।
আমি একজন নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী। দুই মাস আগে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার গায়ে হাত তোলে আমার স্ত্রী। বঁটি দিয়ে আমাকে আঘাত করারও চেষ্টা করে, কিন্তু আশপাশের লোকজনের বাধার মুখে পারেনি। পরে আমি তার বাবাকে অভিযোগ করি। তিনি তাঁর ছেলেকে পাঠিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যান। আমার অভিযোগের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ না করে উল্টো তিনি আমার নামে লোকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি আপস করতে চাইলেও তারা রাজি না। তারা মামলা করতে চায়। এ অবস্থায় চাকরির নিরাপত্তাসহ মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা থেকে কীভাবে ত্রাণ পাব, দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে। কোনো ব্যক্তির দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরিপূর্ণ অধিকার আপনার আছে। যেকোনো নাগরিকের বিচার চাওয়া এবং বিচার পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার। যেহেতু আপনার স্ত্রী আপনাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন, কাজেই আপনার উচিত ছিল তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা। এ ছাড়া তাঁর কারণে পারিবারিক বা সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে, কোনো কলহবিবাদ তৈরির শঙ্কা কিংবা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩-এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত প্রদান করে, তার শাস্তি হবে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আপনি চাইলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন। যেহেতু আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আপনার নামে মিথ্যা মামলা করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, আপনার উচিত হবে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)–এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। এই ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। তবে মিথ্যা মামলা করলে আদালতে মিথ্যা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে হয়রানির শিকার হতে হবে। আপনি আপনার করা সাধারণ ডায়েরির একটি কপি আপনার কর্মস্থলে দিয়ে রাখতে পারেন এবং সব বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে অবহিত করে রাখতে পারেন
আমি পুরুষ, বয়স ১৮ বছর। গত বছর একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তী সময়ে দুজনের সম্মতিতে আমরা কয়েকবার অন্তরঙ্গ হই। আমার পরিবার তাকে মেনে নেবে না, তাই আমি এখন এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে চাইছি। কিন্তু মেয়েটি নানাভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয় দেখাচ্ছে। এখন আমি আইনগত কোনো প্রতিকার কি পেতে পারি?
আপনার বয়স অনেক কম। আপনি জানিয়েছেন, গত বছর অর্থাৎ যখন আপনার বয়স ১৭ ছিল, তখন আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। অল্প বয়সে এ ধরনের সম্পর্ক উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। সবকিছুর একটা সঠিক বয়স রয়েছে। প্রেম, ভালোবাসার জন্যও সঠিক বয়স রয়েছে। তার আগে দরকার মানসিক বিকাশ। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সবার আগে দরকার। কারণ, প্রেম, ভালোবাসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে হলে নিজেকে তার যোগ্য করে তোলা প্রয়োজন। যা–ই হোক, যেহেতু কোনো কারণে সম্পর্কটি আপনি আর রাখতে চাচ্ছেন না, তাই আপনার প্রেমিকারও জোর করে সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখা বা বাধ্য করাটা যুক্তিসংগত নয়। আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনার প্রেমিকা সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে বাধ্য করতে চাচ্ছে। সেই সঙ্গে মেয়েটি আপনাকে হুমকি প্রদর্শন করছে এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। তদন্ত করে যদি দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন। কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়। ১০৭ ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড সম্পাদনে বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। ১০৭ ধারার আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এই মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। তবে আপনি তাকে ‍ভালোভাবে বোঝাতে পারেন, আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আপনারা দুজন ও আপনাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনাদের দুজনের ভবিষ্যৎ ও পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কোনো অভিভাবক বা শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্য নিন।
আমি একজন পুরুষ, বয়স ৪২ বছর। খুলনা শহরে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ১৩ বছর আগে ভালোবেসে আমারই গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করি। আমাদের কোনো সন্তান নেই। চেষ্টা করেছি, তবে এখনো হয়নি। স্ত্রী আগে আমার সঙ্গে ছিল, এখন গ্রামে থাকে। নানা কারণ দেখিয়ে এখন সে গ্রাম ছেড়ে আসতে চায় না। গ্রামে যাওয়ার পর থেকে একটু একটু করে সে বদলে যাচ্ছে। আমাকে সহ্য করতে পারে না, কিছু বললে রাগ দেখায়। ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলে। এলাকার মানুষ আমাকে নানা কথা বলে। সে নাকি আমার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছে। ফুফাতো ভাইয়ের বয়স ২৪ বছর। আমার স্ত্রীর চেয়ে সে প্রায় ১৫ বছরের ছোট। আমার বিশ্বাস হয়নি, তবে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে সে এড়িয়ে যায়। একদিন আমি আগে কিছু না বলে গভীর রাতে গ্রামে যাই, স্ত্রীকে ডাকার পরও সে দরজা খুলতে চায় না। প্রায় আধা ঘণ্টা পর সে দরজা খোলে। সেদিন আমি বাড়িতে অন্য কাউকে পাইনি। তবে সন্দেহ থেকে তল্লাশি চালিয়ে খাটের নিচে একটা জামা খুঁজে পাই, যেটা আমার সেই ফুফাতো ভাইয়ের বলে প্রতিবেশীরা শনাক্ত করেন। আমার স্ত্রীর ইমো নম্বরে অনেক ছেলে ছবি পাঠায়। সে আদতে কী করছে, ঠিক বুঝতে পারছি না। আমার হাতে কোনো শক্ত প্রমাণ নেই, তবে বুঝতে পারছি, সে প্রতারণা করছে। এখন আমি কীভাবে আইনি প্রতিকার পেতে পারি?
প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। প্রশ্ন থেকে বুঝতে পারছি, অন্য কারও সঙ্গে আপনার স্ত্রীর সম্পর্ক আছে বলে আপনি ধারণা করছেন। এ বিষয়ে আপনার প্রতিবেশীরাও আপনাকে বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য–প্রমাণ আপনি পাননি। বাংলাদেশের আইনে দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় পরকীয়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে সেই নারীর সম্মতি সাপেক্ষে সম্পর্কে লিপ্ত হন, তবে সেই ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনা শ্রম বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে এ ক্ষেত্রে পরকীয়ায় জড়িত নারীর কোনো শাস্তির কথা এ আইনে বলা নেই। স্ত্রী যদি পরকীয়া করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে এ ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন না তাঁর স্বামী। আইনের বিধান অনুযায়ী, স্ত্রী পরকীয়া করলে স্বামী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ পাবেন না। সে ক্ষেত্রে প্রমাণ থাকলে আপনার ফুফাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তবে আইনের আশ্রয় নিতে হলে অন্যের দেওয়া তথ্য বা কানকথায় বিশ্বাস না করে, যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করা জরুরি। তারপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবতে পারেন।
আমার স্বামী আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখে না, তাই আমি বাবার বাড়ি চলে এসেছি। আমার কাবিন পাঁচ লাখ টাকা। বিয়ের সময় আমার বাবার বাড়ি থেকে আড়াই ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়েছিল। এখন আমি যদি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চাই, তাহলে আমি কত টাকা ক্ষতিপূরণ পাব? আমার স্বামী প্রবাসে থাকে, আমি কীভাবে কী করতে পারি জানাবেন। স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় কি আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবে? মামলা করলে তা সম্ভব হবে?
আপনার প্রশ্নে অনেকগুলো বিষয় স্পষ্ট নয়। আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্বামী বিদেশে থাকেন এবং আপনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। তাই আপনি বাবার বাড়িতে চলে এসেছেন। বিয়ের পর মনোমালিন্য কিংবা বনিবনা না হলে অনেক দম্পতি আলাদা বসবাস করেন। তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে দাম্পত্য সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়। সে ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীকে পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মামলা করতে হবে। আপনার পরিবার থেকে বিয়ের সোনা ও টাকা যৌতুক হিসেবে দিয়েছিল বলে লিখেছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়া—দুটিই বাংলাদেশের আইনে গুরুতর অপরাধ। যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮–এর ৩ ও ৪ ধারায় বলা আছে, যৌতুক দাবি, প্রদান ও গ্রহণ করার দণ্ড হচ্ছে অনধিক ৫ বছর এবং অন্যূন ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। আইনে আরও বলা আছে, যে ব্যক্তি যৌতুক দেওয়া বা গ্রহণ করার ব্যাপারে কোনো ধরনের সাহায্য বা সহায়তা করবেন, তিনিও একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যৌতুককে কেন্দ্র করে নারী নির্যাতনের চিত্র আমরা যেমন দেখতে পাই, তেমনি আবার যৌতুকসংক্রান্ত মিথ্যা মামলার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। পারিবারিক কলহের জেরে ও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে অনেক সময় এ ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করেন অনেকে। ফলে নিরপরাধ ব্যক্তি মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যান, যা ব্যাপক হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো আইনানুগ কারণ নেই জেনেও যদি কোনো ব্যক্তি আরেকজনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এখন আসছি ডিভোর্সের প্রসঙ্গে। আপনার স্বামী চাইলেও পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে তালাক দিতে পারবেন। আপনি চাইলে আপনার স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন। আপনি যদি তালাক চান, তবে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কি না, দেখে সরাসরি তালাক দিতে পারেন। যদি ১৮ নম্বর কলামে কোনো ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে আদালতে যেতে হবে। স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা না থাকলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক দিতে চাইলে তাঁকে তালাক ঘোষণার পর অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করে, সে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে, তখনই/পরবর্তী সময়ে/যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করতে হবে এবং সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, তা কার্যকরের পর যে কাজির মাধমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক।
আমি বিয়ে করেছি ১৯৮৬ সালে। আমার বয়স ৬২ বছর, স্ত্রীর ৫৩ বছর। আমার স্বল্প আয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। সংসারের বাইরের খরচ মেটাতে কষ্ট হয়। আমার স্ত্রী তার কোটিপতি ছোট বোনের নিকট থেকে যাকাত ও ফেতরা এনে কিছু খরচ মেটায়। স্ত্রী পরিচিত সবার কাছে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার করে। আমাকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য রাখে, যা আমার জন্য খুবই লজ্জার। প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে আমি তার কোটিপতি বোনকে দাওয়াত দিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি আর সব বিষয় তাকে জানাই। সব শুনে তার বোন আমাকে তালাক দিতে বলে যায়। তালাক দেওয়ার পর বোনের সব খরচ সে বহন করবে, এমন আশ্বাসও দিয়ে যায়। বোনকে তার বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। আমার স্ত্রী তার বোনের প্ররোচনায় আমার সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক থেকে বিরত আছে, এমনকি কথাও বলে না। আজ চার থেকে পাঁচ মাস আমার স্ত্রীর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ। ডিভোর্স চাইলে দেয় না, আবার আমার সঙ্গে সংসারও করতে চায় না। এ অবস্থায় আমি কী করতে পারি?
দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের বিষয়টি পারিবারিক আদালতের এখতিয়ারে দেওয়া রয়েছে এবং আইনানুযায়ী আদালত ডিক্রি জারি করতে পারেন। বাংলাদেশে প্রচলিত ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫’-র বলে দাম্পত্য অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আপনার স্ত্রী যেহেতু কোনো কারণ ছাড়া আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না, তাই দাম্পত্য অধিকার দাবি করে আপনি পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। কোনো আইনসংগত কারণ ছাড়া আপনার স্ত্রী যেহেতু আপনার সঙ্গে একত্রে বসবাস বন্ধ করেছেন, সে ক্ষেত্রে স্বামী হিসেবে আপনি দাম্পত্য অধিকার চাইতে পারেন এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। দাম্পত্য অধিকার উদ্ধারের বিষয়টি সাধারণত আদালতের বিবেচনার ব্যাপার। উভয়ের মধ্যে বিয়ে কার্যকর আছে কি না, আদালত দেখতে চাইবেন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার স্ত্রী কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে ফিরতে চান না। তবে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে তালাক-প্রক্রিয়া চলাকালে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে এ মামলা চলে না। এ মামলায় আদালত বিবেচনা করেন যে পরস্পরের দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কি না। তবে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর করার কোনো বিধান নেই। আর স্বামী-স্ত্রীর মত থাকা সত্ত্বেও যদি শ্বশুরবাড়ির লোকজন বা তৃতীয় পক্ষ একসঙ্গে সংসার করতে না দেয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতের আশ্রয় নেওয়া যায়। তবে আপনাদের সম্পর্ক যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষে বা যেকোনো এক পক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে আপনারা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। তিনি না দিলে আপনিও উদ্যোগ নিতে পারেন। এ জন্য একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তবে আমার মনে হয় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করুন। নিজে না পারলে অন্য কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর মধ্যস্থতায় বিষয়টি আগে মীমাংসা করার চেষ্টা করা উচিত। কারণ, আমি ধরে নিচ্ছি আপনাদের অনেক বছরের সংসার এবং এই বয়সে এসে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না–ও হতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধানে আসতে পারলে সেটি সবার জন্য কল্যাণকর হবে।
আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। সম্প্রতি একটি বিষয় নিয়ে খুব ভেঙে পড়েছি। অনলাইনে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয়ের পর আমাদের সম্পর্ক হয়। ছেলেটি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি ভেঙে পড়েছি। জানি না, কীভাবে এসব কাটিয়ে উঠব। তার কাছে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি আছে। এটা নিয়ে এখন আমি উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া আমরা যখন ভিডিও কলে কথা বলতাম, সেসবও ছেলেটি রেকর্ড করে রেখেছিল। এখন ছেলেটি যদি আমার ছবি প্রকাশ করার চেষ্টা করে বা ফোনকল ফাঁস করে দিতে চায়, তাহলে কী করব? এসব ঘটনার আগেই আমি কি আইনের আশ্রয় নিতে পারি, যাতে সে আমার ক্ষতি করতে না পারে?
ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। অনলাইনে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের ক্ষেত্রে একটু অসচেতন হলেই নানা ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারেন। এখন পর্যন্ত যদিও এ ধরনের কোনো হুমকি ছেলেটি আপনাকে দেয়নি। কাজেই আপনি তাকে অনুরোধ করতে পারেন, যাতে সে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে। জেনে হোক বা না জেনে, সে যদি অনলাইনে কোনো ছবি প্রকাশ করে, তাহলে এ জন্য তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আপনি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি যা সংরক্ষিত আছে, সব মুছে ফেলতে বলুন। সে যদি আপনার ছবি প্রকাশ করার চেষ্টা করে বা ফোনকল ফাঁস করে দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করবেন। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারে। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারে। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বলা আছে যে কোনো ব্যক্তি যদি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হতে পারে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে। দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে। তবে যেহেতু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি সে দেয়নি, কাজেই আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির সমাধান করা নেওয়াই ভালো হবে। সম্ভব হলে আপনি আপনার অভিভাবকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করুন, তাঁদের সাহায্য চান।
২০২২ সালে আমি এইচএসসি পাস করেছি। এক বছরের বেশি হলো, একটা ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। কিন্তু বারবার নানা অজুহাতে সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আবার অনেক বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনি। আমার দিক থেকে তার সঙ্গে সম্পর্ক অনেক গভীর। তাকে ছাড়া একদমই থাকতে পারি না, কিন্তু বারবার সে এরই সুযোগ নেয়। আমাকে সে অনেকবার বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এখন পরিবার মানবে না বলে বিয়ে করতে চায় না। সে যদি আমার কাছে আর না আসত, আমিও তাকে ছেড়ে দিতাম। আমাকে সে ঠকাচ্ছে। এখন সে এমন করলে আমি আর বাঁচতে পারব না। পরিবারের কাছে মুখ দেখাতে পারব না। আমি চাই, সে আর তার পরিবার আমাকে মেনে নিক। আমি এখন কী করব, তার আইনি পরামর্শ চাচ্ছি।
আপনার বয়স কম। কম বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নানা ধরনের আবেগ কাজ করে। প্রেম বা বিয়ে, যেকোনো ক্ষেত্রেই ভাঙন আসতে পারে। দুই পক্ষের সম্মতি ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা উচিত নয়। কোনো এক পক্ষ অসম্মতি জানালে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষরই করা উচিত। যেহেতু অপর পক্ষ আপনার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে, কাজেই আপনার ভেবে দেখা উচিত, কেন সে সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছে না। যেহেতু তাঁর পরিবার সম্পর্কটি মানতে চাচ্ছে না, সে জন্য হয়তো তিনি তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারছেন না। এ জন্য হয়তো তিনি আপনাকে আর অপেক্ষায় রাখতে চান না। কিন্তু আপনি কষ্ট পাচ্ছেন এবং প্রতারিত বোধ করছেন। শুধু আপনি প্রতারিত বোধ করলেই হবে না। প্রতারণার জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে এর আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলক বা অসাধুভাবে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থ সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করে, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছা করে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে, যার কারণে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তার কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, সে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। কেননা, কোনো সম্পর্ক ভেঙে গেলে যেকোনো এক পক্ষ প্রতারিত বোধ করতেই পারে। তবে আইনের চোখে তা প্রতারণা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া সে বা তার পরিবার আপনাকে মেনে না নিলে আইনগতভাবে তাদের বাধ্য করার কোনো উপায় নেই। আশা করি, আপনি আবেগের বশবর্তী না হয়ে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রয়োজনে কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। বউকে এখনো তুলে আনা হয়নি। বিয়ের পর থেকেই আমার স্ত্রী ও তার মা-বোন বিভিন্নভাবে আমাদের অপমান করছে। আমাদের নামে নানা রকম মিথ্যা কথা বলছে। আমরা নতুন আত্মীয় ভেবে সবই মেনে নিয়েছি। এর মধ্যে আমার স্ত্রী আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে তিন-চার দিন ছিল। সেই সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। তাকে আমার মায়ের সঙ্গে থাকতে বলা হয়। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত তুলে সে আমার রুমে এসে থাকে। আমি ফোনে তাকে মায়ের রুমে থাকতে অনুরোধ করলে সে থাকবে বলে পরে আর থাকেনি। গত ৯ জানুয়ারি আমরা জানতে পারি, মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যও সঠিক নয়। তারা আমাদের মিথ্যা বলেছে। এর পর থেকে আমার স্ত্রী তার মা-বাবার বাড়িতেই আছে। আমার বোনদের সে সহ্য করতে পারছে না। আমার বাবা নেই, মা অসুস্থ বলেই তখন দ্রুত বিয়ে করেছি। এখন তারা হুমকি দিচ্ছে, সংসার না করলে আমাদের নামে মামলা ও চাকুরিচ্যুত করবে। উল্লেখ্য যে আমরা চার ভাইবোন। এর মধ্যে তিনজন সরকারি কর্মকর্তা। ওনাদের আচরণ পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না। আইনিভাবে কী করতে পারি?
বিয়ের অল্প কিছু দিনের মধ্যেই যে আপনি এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়েছেন, এটি খুব দুঃখজনক। মেয়েটি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আপনার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আইনের চোখে এটি একটি অপরাধ। এই অপরাধের জন্য আপনি চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করেন, তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার দায়ের করে অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়। আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকজন সংসার না করলে আপনাদের নামে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে এবং চাকুরিচ্যুতির ভয় দেখাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)–এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি ও মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। এ ধরনের বেআইনি কাজ থেকে তাঁদের বিরত থাকতে বলুন। এরপরও এ ধরনের হুমকি দিলে বা একই আচরণ করলে এসব কথা উল্লেখ করে নিকটস্থ থানাকে অবহিত করে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি বুঝে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। আপনারা আপনাদের কর্মক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে এই বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকে জানিয়ে রাখতে পারেন।
আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসি, মেয়েটাও আমাকে খুব ভালোবাসে। ২০২১ সালে আমাদের সম্পর্কের শুরু। মেয়েটির মা-বাবা একদিন বিষয়টা জানতে পারেন। মেয়েটির পরিবার বকাঝকা দিয়ে আমাকে মেয়ের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করে। এরপর অনেক দিন আমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ একদিন মেয়েটিই আমাকে নক দেয় আর আবার আমাদের মধ্যে বার্তা–চালাচালি শুরু হয়। পরে মেয়ের মা–বাবাও জানতে পারেন যে আমাদের যোগাযোগ আছে। এর পর থেকে আমার প্রেমিকার মা–বাবা আমাকে নানা রকম হুমকি দেন, ভয় দেখান। এখন আমি কী করব?
আপনার বা মেয়েটির বয়স কত, ই–মেইলে তা জানাননি। দুজনেই যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন, তাহলে পরিবারের লোকজন আইনগতভাবে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। মেয়েটির মা-বাবা অথবা আপনার পরিবারের সেসব সদস্য, যাঁরা আপনাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছেন না, তাঁরা আপনার থেকে পৃথিবীটা অনেক বেশি দেখেছেন। অতএব তাঁরা হয়তোবা আপনাদের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক আসলেই কতটুকু আস্থার বা ভরসার, তা সঠিকভাবে মেয়েটির পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন। কী কারণে মেয়েটির মা-বাবা সম্পর্কটি মেনে নিচ্ছেন না, সেটা আপনি লেখেননি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রেম ও আবেগে পরিবারের অবাধ্য হয়ে বিয়ে করার পর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া–বিবাদ লেগেই থাকে। পরে বিচ্ছেদই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিজেদের সম্পর্কটা নিয়ে আগে ভাবুন। মেয়েটির মা–বাবা আপনাকে হুমকি দিচ্ছেন, ভয় দেখাচ্ছেন। সেটার আইনগত সমাধান আপনি জানতে চেয়েছেন। কেউ কাউকে হুমকি দিলে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটি আপনাকে জানাচ্ছি, তবে আপনি যেহেতু মেয়েটিকে ভালোবাসেন, তাই তাঁর বাবা–মায়ের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকা উচিত। আইন আছে বলে সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সমীচীন নয়। সাধারণত কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। যদি তদন্ত করে দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীন অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ীও প্রতিকার চাওয়া যায়। এই ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখতে বন্ড বা মুচলেকা সম্পাদনের জন্য বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্তের নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এ মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। আশা করি আপনি ও আপনার প্রেমিকা—দুই পরিবারের সম্মতি আদায় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং অহেতুক মামলায় নিজেদের জড়াবেন না। আপনাদের জন্য শুভকামনা।
আমি একজনকে ভালোবেসেছিলাম। তিন বছর আমাদের সম্পর্ক ছিল। পরে জানতে পারি, সে আমার থেকে চার বছরের বড় এবং পূর্বে তার আরও একজন প্রেমিক ছিল। এসব জানাজানি হওয়ার পর আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। সম্পর্ক ভাঙার এক বছর পর সে আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আমাকে শেষ দেখা করার জন্য অনুরোধ করে। গত ১৯ নভেম্বর সরল মনে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক তৎক্ষণাৎ আমাকে সে বিয়ে করে। দেনমোহর ধার্য করে তিন লাখ টাকা। বর্তমানে আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাসা থেকে কোনোক্রমে ওই মেয়েকে মেনে নিবে না। তার সঙ্গে এখন পর্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রাখছি, যাতে করে আমার বাসায় বিষয়টা জানতে না পারে। আমি আর তার সঙ্গে সংসার করতে চাই না। কীভাবে আমি এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পারি?
আপনি জানিয়েছেন, আপনার সাবেক প্রেমিকা বা তার পরিবার কৌশলে আপনাকে উঠিয়ে নিয়ে বা প্রতারণার আশ্রয়ে বিয়ে করেছে। জোরপূর্বক তারা দেনমোহর ধার্য করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে একটা চক্র আছে, যারা বিয়ে ও দেনমোহর আদায়টাকে একটা ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ছেলেকে জিম্মি করে তারা বিয়ে পড়িয়ে দেয়। ধার্য করা হয় মোটা অঙ্কের দেনমোহর। পরে ছেলেকে তালাক দিয়ে দেনমোহরের জন্য চাপ দেওয়া হয় অথবা মামলা করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটা মেয়ে ছেলেকে পছন্দ করে কিন্তু ছেলে মেয়েকে পছন্দ করে না। সে ক্ষেত্রে মেয়ে নিজে বা তার পরিবারের সাহায্যে কৌশলে বা জোরপূর্বক ছেলেকে বিয়ে করে। এখানেও মোটা অঙ্কের টাকা দেনমোহর হিসেবে ধার্য করা হয়। যে পক্ষই তা করুক না কেন, দেশের আইনে এটা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি দাবি করেছেন, আপনাকে জোরপূর্বক বিয়ে করা হয়েছে। তাহলে আপনি তালাক দিয়ে দিলেই সমস্যার একটা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ে জোরপূর্বক বা প্রতারণার মাধ্যমে করা হলেও আপনি তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন। আপনার উচিত ছিল, তার সঙ্গে মেলামেশা না করে যত দ্রুত সম্ভব অপর পক্ষের বিরুদ্ধে থানায় বা আদালতে ক্রিমিনাল মামলা করা। পাশাপাশি বিয়েকে অস্বীকার বা চ্যালেঞ্জ করে দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করা। অপর পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে একবার বিয়েকে মেনে নিলে পরে আর অস্বীকার করা যায় না। আর একবার বিয়েকে স্বীকার করে নিলে অবশ্যই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। কাজেই এখন আপনাকে আইনগতভাবে তালাক দিতে হবে এবং দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তবে প্রতারণার জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে পারেন। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়।
আমার নানা–নানির দুই পালক সন্তান, তাঁদের মধ্যে বয়সে আমার মা বড়। সম্পর্কের দিক দিয়ে তিনি আমার নানির বোনের মেয়ে। নানির নামেই নানার সব সম্পত্তি। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে আমার মাকে বঞ্চিত করে নানি তাঁর পালক ছেলের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। এই সম্পত্তির অধিকার চেয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো অধিকার আমার মা রাখেন কি?
শিশু দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে কোনো বিধান নেই। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে অভিভাবক হিসেবে একটি শিশুর দায়িত্ব নিতে পারেন কোনো ব্যক্তি। কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে হলে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। ১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় কাস্টডি নেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের অধীনে এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। আপনার মা আপনার নানির পালক সন্তান। আপনি জানিয়েছেন, আপনার নানি আপনার মাকে বঞ্চিত করে আপনার মামাকে সম্পত্তি দান করেছেন। আপনার মামাও আপনার নানির পালক সন্তান। পালক সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে আইনত কিছুই করার থাকে না। কারণ, মুসলিম আইনে দত্তক সন্তান সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইলকে অসিয়ত বলে। সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মুসলমান তাঁর অনাত্মীয়কে, অর্থাৎ যিনি তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন না, তাঁকে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পারেন।
১১ বছর ধরে আমি সৌদিপ্রবাসী। পারিবারিকভাবে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর এক মাস দেশে কাটিয়ে ফিরে আসি। আমার স্ত্রী বয়সে আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। বিয়ের পর তাকে আমি ফোন দিলেই দেখি ওয়েটিং। পরে বলে, বাপের বাড়িতে কথা বলেছে। কিন্তু আমার সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে দেখি, সে আরেকজনের সঙ্গে প্রেম করে। বিয়ের পর বাসররাতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাকে পছন্দ কি না? সে বলেছে, পছন্দ। কিন্তু এখন সে আরেক জায়গায় ফোনে কথা বলে। আমার পাঠানো নতুন কম্বল সে ওই ছেলেকে দিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে টাকাপয়সাও দেয়। এসব নিয়ে ঝগড়া হওয়ার পর সে বাপের বাড়িতে চলে গেছে। জরুরি ছুটি নিয়ে দেশে গিয়ে ১৫ দিন চেষ্টা করেও তাকে আনতে পারিনি। সে আর আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে জানিয়েছে। আমি তাকে ১২ ভরি সোনার অলংকার দিয়েছি। সেসবও সে ফেরত দেবে না। দেনমোহরের টাকা সৌদিতে এসে দুই মাসের মধ্যে শোধ করে দিয়েছি। কিন্তু সে বলছে, কোনো গয়না দেবে না। আমি এখন সৌদিতে আছি। আমার কী করার আছে, ব্যারিস্টার আপার কাছে সেই পরামর্শ চাই।
প্রথমত, আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে মামলা করতে পারেন। এ ধরনের মামলাকে ‘রেসটিটিউশন অব কনজুগাল রাইটস’-এর মামলা বলে। বিনা কারণে স্ত্রী যদি আপনার থেকে আলাদা থাকেন এবং বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন, তাহলে এই মামলা করা যায়। অতএব স্ত্রী যাতে আপনার প্রতি কর্তব্য পালন করেন, সেই প্রার্থনা জানিয়ে আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে। বাংলাদেশে প্রচলিত পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর অধীনে দাম্পত্য অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক আদালতে যেতে হয়—আদালত আদেশ বা ডিক্রি জারি করতে পারেন। দাম্পত্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা। আপনি যদি মামলাটি করেন, তাহলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি স্বচ্ছ মনোভাব নিয়েই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং প্রমাণ করতে হবে যে আপনার জীবনসঙ্গী কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে ফিরতে চাচ্ছেন না। তবে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে তালাকপ্রক্রিয়া সম্পন্নকালে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে মামলা চলে না। আর আপনার স্ত্রী যদি আপনার সঙ্গে কোনোভাবেই সংসার করতে না চান, সে ক্ষেত্রে তালাকপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিত নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকেও নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে অ্যাডিসহযোগে (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। দেনমোহর বিবাহিত মুসলিম নারীর একটি বিশেষ অধিকার, যা স্বামীর ওপর আইন কর্তৃক আরোপিত একটি দায়িত্ব। মুসলিম বিয়ের অন্যতম শর্ত দেনমোহর। শর্তটি পূরণ ছাড়া কোনো বিয়ে বৈধ হতে পারে না। দেনমোহরের টাকা আপনি ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছেন। আর স্ত্রীকে আপনি যে গয়না উপহার হিসেবে দিয়েছেন, সেটা আইনগতভাবে ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় নেই। আপনিও যদি স্ত্রীর কাছ থেকে বিয়ের সময় কোনো উপহার পেয়ে থাকেন, সেটিও তিনি আইনগতভাবে ফেরত চাইতে পারবেন না। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। আপনার জন্য শুভকামনা।
README.md exists but content is empty. Use the Edit dataset card button to edit it.
Downloads last month
0
Edit dataset card