Problem
stringlengths
191
1.28k
Solution
stringlengths
697
4.66k
আমরা দুই ভাই। আমি ছোট। আমাদের বাড়িতেই আমার ভাই আলাদা থাকে। আমি আব্বু-আম্মুর সঙ্গে থাকি। কিছুদিন পরপর সামান্য বিষয় নিয়ে আব্বু-আম্মুর সঙ্গে ঝগড়া বাধায় আমার ভাবি। রাগের বশে মাঝেমধ্যে ভাবিকে আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন আমার আব্বু। ইদানীং আত্মহত্যা করে আমাদের ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন আমার ভাবি। তিনি এই বাড়িতে থাকতে না পারলে আমাদেরও থাকতে দেবেন না বলে হুমকি দেন। এখন আমরা আইনানুগ কী ব্যবস্থা নিতে পারি।
দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, তাহলে যে ব্যক্তি আত্মহত্যায় সাহায্য করবে বা প্ররোচনা দেবে, সেই ব্যক্তিকে ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হবে। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ৩২ ধারায় বলা আছে, আত্মহত্যাকারীর মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট প্ররোচনা দানকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। তবে শুধু একটি সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। সুইসাইড নোটের সমর্থনে আরও সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। তাই আপনার পরিবারের সঙ্গে কোনো মনোমালিন্যের সূত্র ধরে আপনার মা-বাবাকে দায়ী করে তিনি যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটান, তবে অবশ্যই তাঁদের আইনগত জটিলতার মুখে পড়তে হবে। সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে কারও বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা গেলে তখনই শাস্তি প্রদান করা যাবে।
আমি একজন নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী। দুই মাস আগে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার গায়ে হাত তোলে আমার স্ত্রী। বঁটি দিয়ে আমাকে আঘাত করারও চেষ্টা করে, কিন্তু আশপাশের লোকজনের বাধার মুখে পারেনি। পরে আমি তার বাবাকে অভিযোগ করি। তিনি তাঁর ছেলেকে পাঠিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যান। আমার অভিযোগের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ না করে উল্টো তিনি আমার নামে লোকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি আপস করতে চাইলেও তারা রাজি না। তারা মামলা করতে চায়। এ অবস্থায় চাকরির নিরাপত্তাসহ মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা থেকে কীভাবে ত্রাণ পাব, দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে। কোনো ব্যক্তির দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরিপূর্ণ অধিকার আপনার আছে। যেকোনো নাগরিকের বিচার চাওয়া এবং বিচার পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার। যেহেতু আপনার স্ত্রী আপনাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন, কাজেই আপনার উচিত ছিল তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা। এ ছাড়া তাঁর কারণে পারিবারিক বা সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে, কোনো কলহবিবাদ তৈরির শঙ্কা কিংবা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩-এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত প্রদান করে, তার শাস্তি হবে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আপনি চাইলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন। যেহেতু আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আপনার নামে মিথ্যা মামলা করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, আপনার উচিত হবে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)–এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। এই ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। তবে মিথ্যা মামলা করলে আদালতে মিথ্যা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে হয়রানির শিকার হতে হবে।
আমি একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার বয়স যখন ১৮ বছর ৭ মাস, আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়াই। প্রথম থেকেই সে চাইত, আমি যেন ওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হই। বিভিন্ন সময়ে সে আবাসিক হোটেলে যেতে চাইত। শুরুতে না করলেও একসময় আমিও আগ্রহ দেখাই। মেয়েটি আমাকে তার বিভিন্ন রকম ছবি পাঠিয়ে আগ্রহী করেছে। তার সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। বিভিন্ন সময়ে বন্ধু হিসেবে তার রুমে গিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়েছি। এখন সে বিয়ে করার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের আগে এমন কোনো কথা সে বলেনি। এমনকি নারী নির্যাতন আইনে মামলা করবে বলে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘দেখ, তোর ফ্যামিলির কী হাল করি। তোকে হলের বড় ভাইদের দিয়ে ধরে রাখব।’ আমার এখন কেবলই মনে হচ্ছে, বিয়ে করার জন্যই আমাকে সে রুমে ডেকে নিয়েছে। এমনকি পরিবার থেকেও সে আমাকে দূরে রাখতে চায়। সে শুধু আমার টাকাপয়সা ও সম্পদের ওপর আগ্রহ দেখায়। আমি চাই না আমার পরিবার এসব জানুক। পরিবারের কথা ভেবে কয়েকবার আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল। আমি এখন নিজেও এই ঝামেলা থেকে মুক্তি চাচ্ছি, পাশাপাশি পরিবারেরও নিরাপত্তা চাই। হলের বড় ভাইদের নিয়েও ভয়ে আছি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আইনের কোনো সাহায্য কি আমি পাব?
মেয়েটি যেহেতু তাঁকে বিয়ে করার জন্য আপনার ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন, বিয়ে না করলে নারী নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলা করার ভয় দেখাচ্ছেন, কাজেই এটা দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার আওতায় পড়বে। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)-এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতির উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি ও মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। এ ধরনের বেআইনি কাজ থেকে তাঁকে বিরত থাকতে বলুন। এরপরও এ ধরনের হুমকি দিলে বা একই আচরণ করলে এসব কথা উল্লেখ করে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করুন। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন–এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন।
আমি একজন হিন্দু ছেলে। অনাথ একটি মেয়েকে তিন মাস প্রেম করার পর বিয়ে করি। বিয়েতে আমার পরিবারের মত ছিল না। প্রথম প্রেমের কারণে আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের প্রত্যাশার বাইরে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ দিকে বুঝতে পারি, বিয়ে যেহেতু সারা জীবনের জিনিস, তাই প্রত্যাশার বাইরে গেলে আফসোস হতে পারে। এসব ভেবে শেষ দিকে আমি মেয়েটিকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করি। কিন্তু মেয়েটি আমাকে নানা রকম ইমোশনাল কথাবার্তা বলে। নিজের নানা রকম দুর্দশার কথা বলতে থাকে। একটি অনাথ মেয়ের সঙ্গে কীভাবে প্রতারণা করতে পারলাম ইত্যাদি নানা কথা বলে। তাই শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। কাউকে না জানিয়ে নিজেরা বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু বিয়ের পর এখন আমার আফসোস হচ্ছে। আমি ভুল করেছি। আমি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। হিন্দু আইনে যেহেতু বিবাহবিচ্ছেদ নেই, সেহেতু কীভাবে এই বিয়ে থেকে বেরিয়ে আলাদা থাকতে পারি, সেটা জানতে চাই। আলাদা হতে পারলে ভরণপোষণের কেমন খরচ দিতে হবে, সেটাও জানতে চাই।
হিন্দুধর্মে বৈবাহিক সম্পর্ক ‘অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক’। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়। যার ফলে হিন্দুধর্মে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) বিধান নেই। জন্ম-মৃত্যুর মতো হিন্দুদের জন্য বর্তমানে বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২’ নামে পরিচিত। এই আইনে কীভাবে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে, সেটার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। তবে আইনে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। সনাতন ধর্মমতে হিন্দু বিয়ে শুধু ধর্মীয় বিধান মেনে সম্পন্ন করা হতো। মন্দিরে পুরোহিত দ্বারা মন্ত্র পাঠ করে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে এই বিয়ে হতো, অনেকেই এখনো সেভাবেই বিয়ে করেন। আপনি বিয়ে নিবন্ধন করেছেন কি না, জানাননি। তবে যদি সনাতন ধর্মমতে মন্দিরে বিয়ে করেন কিন্তু নিবন্ধন না করে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও আপনার বিয়েটি বৈধ হবে। নিবন্ধন করলে প্রমাণপত্র হিসেবে একটি কাগজ দেওয়া হয়। আর এই প্রমাণপত্র দেখিয়ে বিচ্ছেদের সুযোগ থাকে। তবে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হয়, তাহলে দেওয়ানি আদালতে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে ঘোষণামূলক মামলা করতে পারেন। আদালত চূড়ান্ত সেপারেশনের নির্দেশ দিলে শুধু সেপারেশন সম্ভব, কিন্তু হিন্দু আইনে ডিভোর্স হয় না। আদালত স্ত্রীর ভরণপোষণ বাবদ কিছু টাকা নির্ধারণ করতে পারেন, যা স্বামী স্ত্রীকে দেবেন। এই ভরণপোষণ সাধারণত একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভরণপোষণের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন। সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক, সামাজিক ও আার্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
আমি পুরুষ, বয়স ১৮ বছর। গত বছর একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তী সময়ে দুজনের সম্মতিতে আমরা কয়েকবার অন্তরঙ্গ হই। আমার পরিবার তাকে মেনে নেবে না, তাই আমি এখন এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে চাইছি। কিন্তু মেয়েটি নানাভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয় দেখাচ্ছে। এখন আমি আইনগত কোনো প্রতিকার কি পেতে পারি?
আপনি জানিয়েছেন, গত বছর অর্থাৎ যখন আপনার বয়স ১৭ ছিল, তখন আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। অল্প বয়সে এ ধরনের সম্পর্ক উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। সবকিছুর একটা সঠিক বয়স রয়েছে। প্রেম, ভালোবাসার জন্যও সঠিক বয়স রয়েছে। তার আগে দরকার মানসিক বিকাশ। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সবার আগে দরকার। কারণ, প্রেম, ভালোবাসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে হলে নিজেকে তার যোগ্য করে তোলা প্রয়োজন। যা–ই হোক, যেহেতু কোনো কারণে সম্পর্কটি আপনি আর রাখতে চাচ্ছেন না, তাই আপনার প্রেমিকারও জোর করে সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখা বা বাধ্য করাটা যুক্তিসংগত নয়। আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনার প্রেমিকা সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে বাধ্য করতে চাচ্ছে। সেই সঙ্গে মেয়েটি আপনাকে হুমকি প্রদর্শন করছে এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। তদন্ত করে যদি দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন। কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়। ১০৭ ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড সম্পাদনে বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। ১০৭ ধারার আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এই মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।
পড়াশোনা শেষ করার পর আমি এখন চাকরিজীবী। আমার সঙ্গে একটি মেয়ের আট বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। শুরু থেকে আমি তাকে প্রয়োজনীয় খরচ দিয়ে আসছি। তখন তার পরিবার আমার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের ব্যাপারে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিল। সে জন্য আমি তার ভরণপোষণ চালিয়ে এসেছি। তার পড়ালেখার খরচও আমি চালাই। তাকে আমি স্বর্ণের চেইন, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সে যা চেয়েছে—সব দিয়েছি। সম্প্রতি সে ডিগ্রি পাস করেছে। তার ফ্যামিলি আমাদের বিয়েতে রাজি ছিল। কিন্তু দিন দশেক আগে তার পরিবার থেকে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। আমি যাওয়ার পর প্রেমিকার মা বলছেন, তাঁর আরেক জামাই নাকি আমাদের বিয়েতে রাজি নন। যে কারণে তাঁরা আমার সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে পারবেন না। এই আট বছরে আমি তার পেছনে প্রায় সাত লাখ টাকা ঢাললাম, এখন বলছে বিয়ে করবে না। এদিনের পর থেকে আমার সঙ্গে তাঁদের পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। মেয়েও আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না। আমার সঙ্গে এমন প্রতারণার জন্য আমি কী কী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি, সেটা আমার খুব জানা প্রয়োজন। দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
আপনার তথ্যমতে, আট বছরে আপনি প্রায় সাত লাখ টাকা তাঁর পেছনে ব্যয় করেছেন। এখন মেয়েটির পরিবার নানা অজুহাতে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিচ্ছে। আপনি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। আপনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম–ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান–প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া–নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসতে পারে। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষের করা উচিত। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে; তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কাজেই আপনার প্রেমিকা যদি আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করেন, তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেন বা অন্য কোনো ক্ষতি করেন; তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি ও তাঁর পরিবার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
আমরা তিন বোন, কোনো ভাই নেই। আমার বাবার বয়স প্রায় আশি বছর। বাবার বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে চাচার ছেলেরা আমার বাবার সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। শুনেছি, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কারও পুত্রসন্তান না থাকলে মৃত্যুর পর তাঁর ভাইয়ের ছেলেরা সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন, এটা কতটুকু সত্য? আমার বাবা যদি সব সম্পত্তি আমাদের তিন বোন ও মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে কী করতে হবে, আইনগতভাবে কি সেটা সম্ভব?
যেহেতু আপনাদের কোনো ভাই নেই, তাই আপনার বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে আপনার চাচাতো ভাইয়েরা আপনার বাবার সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বাবা যদি তাঁর সব সম্পত্তি আপনাদের তিন বোন ও মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে তা হেবা দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর জীবিত অবস্থায় আপনার বোনদের এবং মায়ের নামে হস্তান্তর করে দিতে হবে। দান করার সঙ্গে সঙ্গে ওই সম্পত্তি হস্তান্তরও করতে হবে। হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্তসম্পর্কিত আত্মীয় তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, মা–বাবা ও সন্তানের মধ্যে, ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি থেকে নাতি-নাতনি ও নাতি-নাতনি থেকে নানা-নানি সম্পর্কের মধ্যে নামমাত্র ১০০ টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে। দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলা হয়ে থাকে। কারও কাছ থেকে প্রতিদান বা বিনিময় ছাড়া কোনো কিছু নিঃশর্তে গ্রহণ করাকে দান বলা হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপিঅ্যাক্ট)–এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তিদাতা কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাঁকে দান বলা হয়। দান বা হেবা বৈধ হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়— • দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা প্রদান। • গ্রহীতার পক্ষ হতে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা। • দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান। একবার সম্পত্তি দান বা হেবা করার পর আদালতের ডিক্রি ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তিটি হস্তান্তর করা না হলে, কিছু ক্ষেত্রে তা বাতিল হতে পারে। হেবা করার পদ্ধতি শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে দান যেকোনো ধর্মের লোকেরাই করতে পারেন। দানের ক্ষেত্রেও দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সম্মতি থাকতে হয়। প্রতিটি হেবা দান দলিলের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। ২০০৫ সালের আগস্ট মাস থেকে হেবা করা সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আপনার বাবা যদি জীবিত থাকা অবস্থায় আপনার, আপনার বোনদের এবং মায়ের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চান, তাহলে তিনি হেবা দলিল সম্পাদন এবং রেজিষ্ট্রি করে তা করতে পারেন। অন্যান্য উত্তরাধিকাররা এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করতে পারবে না।
আমরা চার ভাই এক বোন। আমার বাবার বাড়িতে অনেক জমিজমা আছে। অন্যদিকে মেয়ের পরিবার মেয়ের সৎমামার বাড়িতে থাকে। নিজেদের জমি নেই। মেয়ের বাবা দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় স্ত্রী তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম ঘরে সন্তান নেই। দ্বিতীয় ঘরে একটি মেয়ে, তৃতীয় ঘরে দুটি মেয়ে। আমার সঙ্গে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আমার অভিযোগ অনেক। যেমন অন্যের জমি–বাড়ি নিজের বলে দেখিয়ে বিয়ে করানো, সৎমায়ের তথ্য গোপন রাখা, বিয়ের দুই দিন পরই আমার সঙ্গে অজামাতাসুলভ আচরণ, ইত্যাদি। তাঁদের মেয়ে আমার বাড়িতে আসার পর অন্য ছেলেকে ‘আই মিস ইউ জান’ লিখে মেসেজ করেছে। সব মিলিয়ে আমি সব দিক থেকেই প্রতারিত হয়েছি। এমন অবস্থায় আমি তালাক চাচ্ছি। কাবিন তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। বিয়ে এক বছর পেরিয়েছে। চাওয়া সত্ত্বেও কাবিনের কাগজ আমাকে দেওয়া হয়নি। মেয়ে মোহরানা ছাড়া তালাক দিতে রাজি। কিন্তু মেয়ের বাবা, সৎমা, আপন মায়ের পরিবার—সবাই মিলে মোহরানার টাকা ছাড়া তালাক দিতে রাজি নয়। আর আমার কথা হলো, আমি একটি ভালো মেয়ে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। তাঁরা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি কেন টাকা দেব। আমি এখন কী করতে পারি। কীভাবে তালাক দিতে পারি, জানাবেন প্লিজ।
আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার চিঠি পড়ে বুঝতে পারছি, বিয়ের আগে আপনার স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন আপনার কাছে অনেক তথ্য গোপন করেছেন। তাঁদের এ ধরনের আচরণে আপনি প্রতারিত বোধ করছেন এবং তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি শুধু আইনি পরামর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব। মোহরানা নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, স্ত্রী বা স্বামী যে কেউ তালাক দিক না কেন, সব ক্ষেত্রেই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তালাকের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০ ধারা মোতাবেক দেনমোহর প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিনে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও স্ত্রী চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে স্ত্রী যদি দেনমোহর পরিত্যাগ করে, সে ক্ষেত্রে তা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। স্ত্রী ইচ্ছা করলে আংশিক বা সম্পূর্ণ দেনমোহর মওকুফ করে দিতে পারে। এর জন্য কোনো প্রতিদান প্রয়োজন নেই। তবে তা অবশ্যই স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতিতে হতে হবে। কাজেই এ সম্পর্কে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দেখতে পারেন। কাবিননামার কপি আপনি নির্ধারিত ফি দিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজি অফিস থেকে তুলতে পারবেন। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে—তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে, তখনই বা পরবর্তী সময়ে বা যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেবেন। আপনি বলেছেন মেয়েটি ও তার পরিবার আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। কেউ যদি প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে কারও কাছ থেকে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা বা তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করে কোনো কিছু আদায় করে, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা যেতে পারে। তবে এসব অভিযোগ আপনাকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। যদি আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে আপনার স্ত্রী ও তাঁর পরিবার আপনার কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করে তারপর আপনার ক্ষতিসাধন করেছে, তবে অবশ্যই এর জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার জন্য ঘটকের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন। দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তিকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়।
একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। প্রবাসে আসার আগে কাজির মাধ্যমে আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে তাঁকে বিয়ে করে আসি। এই কথা আমাদের দুজনের বন্ধুরা ছাড়া দুই পরিবারের কেউ জানতেন না। আমাদের সবকিছু ঠিক চলছিল। প্রায় দুই বছর চার মাস পর তাকে আমার ঘরে তোলা নিয়ে কথা চলছিল। কথার মধ্যে দুজনের ঝগড়া হয়। এরপর কথা বন্ধ থাকে কয়েক দিন। তার পর থেকে তাকে ফোন দিলে সে কথা বলতে চাইত না। কয়েক দিন পর হঠাৎ সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠায়। এখন আমি জানতে পেরেছি, আমার এক সাবেক বন্ধুর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়েছে। আমি কী তার (আমার স্ত্রী) বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি?
আপনার প্রশ্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি যাঁর সঙ্গে সংসার করতে চাইছেন, তিনি যদি আপনার সঙ্গে থাকতে না চান, তাহলে জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা আপনাদের দুজনের জন্যই ক্ষতিকর। আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্ত্রী আপনাকে ইতিমধ্যে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দিয়ে থাকেন, তাহলে তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে (স্ত্রী কর্তৃক তালাক) স্ত্রী স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কাজির মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনকে পাঠাতে হবে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১-এর ধারা ৭ অনুযায়ী, স্ত্রী তাঁর স্বামীকে তালাক দিতে চাইলে তালাক উচ্চারণ করার পর যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে ও স্বামীকেও এর কপি পাঠাতে হবে। আইনের বিধান অনুযায়ী, তালাক প্রত্যাহার না করা হলে চেয়ারম্যানের নিকট প্রেরিত নোটিশের তারিখ হতে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত তালাক কার্যকর হবে। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান দুই পক্ষের মধ্যে পুনর্মিলনের লক্ষ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। এই সালিসি পরিষদ পুনর্মিলন ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে ৯০ দিন বা গর্ভকাল—এই দুইয়ের মধ্যে যেটা পরে হবে, তা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। আপনি যদি মনে করেন, আপনাদের মধ্যে যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব, তাহলে আপনার স্ত্রী ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করতে পারেন। তা ছাড়া ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(৬) ধারা অনুসারে, তালাকের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রে ঘরসংসার করতে চাইলে নতুন করে আইন ও ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে করতে হবে। পুনর্বিবাহ করে ঘরসংসার করতে চাইলে আইনে কোনো বাধা নেই। আর আপনি যদি মনে করেন তা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে বাস্তবতা মেনে নেওয়াই শ্রেয়। আপনি আপনার চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানাননি আপনাদের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়েছে কি না। যদি দুই পক্ষের মধ্যে আইনগতভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তাহলে নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই।
আমি একজন উদ্যোক্তা। প্রায় তিন বছর ধরে আমি একটি বুটিক হাউস চালাই। এই ব্যবসায় আমার সঙ্গে আরও দুজন অংশীদার (পার্টনার) যুক্ত হতে চাইছেন। আমরা সবাই মিলে বুটিক হাউসটিকে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চাচ্ছি। আমাদের একজন কোম্পানি গঠনের কথা বলছেন। আমরা জেনেছি, কোম্পানি গঠন করা নাকি খুব ঝক্কির কাজ। এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, কোম্পানি গঠনের জন্য কী কী আইনি পদ্ধতি মেনে চলতে হবে?
একজন নতুন বিনিয়োগকারীকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করে ব্যবসা শুরু করতে হয়। প্রথমে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মসে নতুন কোম্পানি নিবন্ধন করাতে হয়। কোম্পানি আইন ও অন্যান্য বিধি অনুসারে এই প্রতিষ্ঠান কোম্পানি, সমিতি ও অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। আবেদনকারীকে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। আপনি যেহেতু তিন বছর ধরে ব্যবসা করছেন, তাই আমি ধরে নিচ্ছি আপনার ট্রেড লাইসেন্স আছে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি খোলার নিয়ম কোম্পানি খোলার আগে প্রথমেই আপনাদের প্রস্তাবিত নামটি দিয়ে একটি নেমক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তুলতে হবে। যদি আপনার প্রস্তাবিত নামটি খালি থাকে, তবে কোম্পানির নাম নিবন্ধন করার জন্য আপনাকে সেখান থেকে নাম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন সম্পন্ন হবার পর এবার নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা প্রদান করে পছন্দের নামটি নিবন্ধন করতে হবে। নাম নিবন্ধনের পরে এবার আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তা হলো আপনার কোম্পানির জন্য মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করতে হবে। মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন হলো কোম্পানির উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কে বলা থাকে; এতে ব্যবসার নাম, ধরন, লক্ষ্য, মূলধনের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ থাকে। কীভাবে কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হবে, কোম্পানির সাধারণ সভা এবং বিশেষ সভা কীভাবে কখন সম্পাদিত হবে, কীভাবে নতুন সদস্য নেওয়া হবে, কীভাবে কোন সদস্যকে বহিষ্কার করা হবে, কীভাবে লভ্যাংশ বণ্টন করা হবে ইত্যাদি বিষয় আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনে বিশদভাবে বর্ণনা করতে হবে। এ ব্যাপারে আপনাকে কোম্পানিবিষয়ক অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হবে। এসব প্রস্তুত হওয়ার পর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নিবন্ধনের আবেদনপত্রটি সংগ্রহ করতে হবে, উক্ত আবেদনপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে এবং আনুষঙ্গিক কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত করতে হবে। এবার পূরণ করা আবেদনপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্রগুলো নিয়ে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মসের অফিসে জমা দিতে হবে। কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর যাচাই–বাছাই করে সেখান থেকে আপনাকে কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য সুনির্দিষ্ট ফি ধার্য করে দেবে। এবার কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফি নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা দিতে হবে। সেখানে আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আছে, তা আপনাকে সম্পাদন করতে হবে। পরবর্তীকালে নিবন্ধক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখবেন এবং আপনার আবেদনটি উপযুক্ত মনে হলে তাঁদের বইয়ে আপনার নতুন কোম্পানির নাম তালিকাভুক্ত করবেন। একই সঙ্গে আপনাকে কোম্পানির নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকবেন। নিবন্ধন সার্টিফিকেট পাওয়ার পরপরই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম আপনি শুরু করতে পারবেন।
আমার মা ও বাবার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২২ বছর। বিয়ের পর বাবা বিদেশে চলে যান। তিন বছর পরপর দেশে এসে তিন মাস থেকে আবার চলে যেতেন। প্রতিবার দেশে এসে মায়ের গায়ে হাত তুলতেন। বিদেশ থেকে মাসে ২০ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। ২০২৩ সালে একেবারে দেশে চলে আসেন বাবা। এর পর থেকে আমাদের খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন। প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে বিনা কারণে ঝগড়া করেন, অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন, গায়ে হাত তোলেন, বিচ্ছেদ চান। সন্তান হিসেবে আমাকে আর আমার ভাইকেও অস্বীকার করেন। মাকে মারার প্রতিবাদ করায় ভাইকে চাকু মারতে গিয়েছিলেন, তখন সে বাবার গায়ে হাত তোলে। প্রতিদিন তাঁর এই ব্যবহারের কারণে আমি ও আমার ভাই তাঁর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। মা তাঁর সব অত্যাচার সহ্য করেন। কারণ, তিনি চান না বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান। তাহলে মানুষ আমাদের খারাপ চোখে দেখবে। বাবা এখন মা ও ভাইয়ের নামে মামলা করতে চান। এ অবস্থায় কী করব?
পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোনো নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯-এ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ,পারিবারিক সহিংসতা হতে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে। আপনাদের বাড়িতে যেটা ঘটছে, সেটা পারিবারিক সহিংসতা। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এ প্রথমবারের মতো পারিবারিক সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা প্রণীত হয়েছে। একজন শিশু বা নারী যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কর্তৃক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, দেশের আইন অনুযায়ী তিনি প্রতিকার চাইতে পারবেন। আপনার বাবা আপনার মায়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছেন। সেই সঙ্গে আপনারা আর্থিক বৈষম্যের শিকার। আপনার বাবার এ ধরনের আচরণ পারিবারিক সহিংসতার অন্তর্ভুক্ত। আইনের অধীনে আপনার মা নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলো চাইতে পারবেন— ক. এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার খ. চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ গ. প্রয়োগকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে সেবা পাওয়ার সুযোগ ঘ. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা বা অন্য কোনো আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার উপায় আদালতে আবেদন আপনার মায়ের পক্ষে কোনো প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আদালত আবেদন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এর অধীনে একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিম্নবর্ণিত প্রতিকার পেতে পারেন— ১. অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ: অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ বিষয়ে আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে। আদালত সন্তুষ্ট হলে প্রতিপক্ষ বা তার প্ররোচনায় পারিবারিক সহিংসতা ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে আদালত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন। ২. সুরক্ষা আদেশ: সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও প্রতিপক্ষকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে পারিবারিক সহিংসতা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা আছে, তাহলে সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন। সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষকে পারিবারিক সহিংসতামূলক কোনো কাজ সংঘটন, সংঘটনে সহায়তা করা, প্ররোচিত করা বা সুরক্ষা আদেশে উল্লিখিত অন্য যেকোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিতে পারবেন। ৩. বসবাস আদেশ: এই আইনের ১৫ ধারায় বসবাসের আদেশ নিয়েও বলা আছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বসবাস আদেশ প্রদান করতে পারবেন। এই আদেশের আওতায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যেখানে বসবাস করেন, সেখানে প্রতিপক্ষের বসবাস বা যাতায়াত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে বাসার কোনো অংশ থেকে বেদখল করা বা ভোগদখলে কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি করা থেকে বিরত করা ইত্যাদি পড়ে। আদালত যদি মনে করেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাঁর সন্তানের জন্য বর্তমান আশ্রয়স্থল নিরাপদ নয়, তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে আদালত প্রয়োগকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থানের ব্যবস্থা করবেন। তা ছাড়া প্রতিপক্ষকে জামানতসহ বা জামানত ছাড়া মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারবেন, যেন তিনি বা তাঁর পরিবারের অন্য কোনো সদস্য ভবিষ্যতে পারিবারিক সহিংসতামূলক কাজ না করেন। ৪. ক্ষতিপূরণ আদেশ: আইনের ১৬ ধারায় ক্ষতিপূরণের আদেশের কথা বলা হয়েছে। আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং তাঁর সন্তানের ভরণপোষণের জন্য তিনি যে ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, সে রকম জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত ও যুক্তিযুক্ত অর্থ প্রদানের জন্য প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারবেন। তা ছাড়া উপযুক্ত মনে করলে আদালত এককালীন বা মাসিক ভরণপোষণ পরিশোধের আদেশ দিতে পারবেন। ৫. নিরাপদ হেফাজত আদেশ: আদালত উক্ত আইনের অধীনে আবেদন বিবেচনার যেকোনো পর্যায়ে, আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সন্তানকে তাঁর নিকট অথবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো আবেদনকারীর জিম্মায় অস্থায়ীভাবে সাময়িক নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ দিতে পারবেন। কাজেই আপনার মা চাইলে যেকোনো থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা বা সরাসরি আদালতের কাছে সুরক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপসযোগ্য। এই আইনের ৩০ ধারায় শাস্তির বিধান সম্পর্কে বলা আছে। তবে আদালত চাইলে প্রতিপক্ষকে ধারা ৩০-এর অধীন শাস্তি না দিয়ে ৩১ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা প্রদানের জন্য আদেশ দিতে পারবেন এবং বিষয়টি তত্ত্বাবধানের জন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারবেন। এই আইনে শাস্তির পাশাপাশি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। যার ফলে পুনরায় দুই পক্ষের মধ্যে আপস–নিষ্পত্তি করা সহজ হয়। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩-এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাতদানের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করেন, তার শাস্তি হবে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আপনারা চাইলে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন।
আমার এক স্বজনের মেয়ে, ঢাকার বাইরের একটি নামকরা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। কিছুদিন আগে একটি ছেলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পরিচয়। একসময় দুজনে ফোনে কথা বলতে শুরু করে। ছেলেটি ঢাকার একটি স্কুলের ছাত্র। মুঠোফোনে ও ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে একসময় ছেলেটি মেয়েটিকে তার ব্যক্তিগত ছবি তুলে পাঠাতে বলে। ফোনে কথা বলতে বলতে ছেলেটি এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে যে মেয়েটিও তাকে তৎক্ষণাৎ ছবি পাঠিয়ে দেয়। ছেলেটি মেয়েটিকে আশ্বাস দিয়েছিল, ‘একবার দেখেই ডিলিট করে দেব।’ কিন্তু কিছুদিন পর ছেলেটি এই ছবি দিয়ে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে। তার কাছ থেকে নানা রকম অবৈধ সুবিধা নিতে থাকে। মেয়েটিকে একাধিকবার ঢাকায় এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করে। ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক টাকাপয়সা হাতিয়ে নিতে থাকে। ছেলেটির বিরুদ্ধে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবধান বা সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে টিনএজার সন্তানের মা-বাবাকেও সচেতন থাকতে হবে। সন্তান অনলাইনে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলছে কি না, কী কাজে সে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, এসব বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। অভিভাবকেরা একটু অসচেতন হলেই নানা ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারে সন্তানেরা। ছেলেটি যদি অনলাইনে কোনো ছবি প্রকাশ করে ফেলে, তাহলে এ জন্য তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আপনি অভিভাবক হিসেবে ছেলেটির সঙ্গে আলোচনা করে ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি তাকে ডিলিট করতে বলুন। ছেলেটি ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে মেয়েটির কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী, এ ধরনের ব্ল্যাকমেলকে এক্সটরশন বা চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে। ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী, এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড। ব্ল্যাকমেলিং একটি জঘন্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত সব আইন সম্পূর্ণরূপে আপনার পক্ষে। আপনি অতি দ্রুত কাছের থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। প্রয়োজনে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করে প্রতিকার চাইতে পারেন। যেহেতু সে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, তাই দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা বলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীন অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি, দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন। ছেলেটি মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। যদি কোনো এক পক্ষ অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং বিশ্বাস অর্জনের পর অপর পক্ষের অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির ৪১৫ থেকে ৪২০ পর্যন্ত বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী তা প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব খাটিয়ে তাঁর কোনো কিছু হাতিয়ে নেয় (তাঁর সম্মতি থাকলেও) সেটা প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হবে। উপরিউক্ত প্রতারণার জন্য সেই ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারার অধীন এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আমার বয়স ৩০ বছর। ছোটবেলায় আমাকে দত্তক নেওয়া হয়। সব কাগজপত্রে আমার মা–বাবার নামের জায়গায় পালক মা–বাবার পরিচয় দেওয়া আছে। এর মধ্যে আমার পালক বাবা হঠাৎ মারা গেছেন। তারপর জানতে পারি, পারিবারিক ওয়ারিশনামায় আমার নাম নেই। আসলেই কি ওয়ারিশনামায় আমার নাম থাকতে পারে না? যেহেতু ওয়ারিশনামায় নাম নেই, আমি কি পালক মা–বাবার কোনো সম্পত্তিই পাব না? যদি না দেয় আর আইনি কোনো পদক্ষেপ যদি আমি নিই, তাহলে রায় কার পক্ষে যাবে? মা–বাবার জায়গায় যেহেতু তাঁদের নাম আছে, সেহেতু আমারও তো ভাগ আছে। আবার যাঁদের কাছ থেকে আমাকে আনা হয়েছিল, তাঁদের (আমার জন্মদাতা মা-বাবা) ওয়ারিশনামাতেও তো আমার নাম নেই। তাঁদের সম্পত্তির ভাগও কি আমি পাব না? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
বাংলাদেশের আইনে শিশু দত্তক নেওয়ার বিষয়ে কোনো বিধান নেই। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি একটি শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে পারেন। কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে হলে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। ১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর কাস্টডি ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় নেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের অধীন এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। আপনি জানিয়েছেন, আপনাকে যাঁরা দত্তক নিয়েছেন, তাঁদের ওয়ারিশনামায় আপনার নাম নেই। আপনি তাঁদের পালক সন্তান। আর পালক সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে আইনত তাঁর কিছুই করার থাকে না। কারণ, মুসলিম আইনে দত্তক সন্তান কোনো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইলকে বলে অসিয়ত। কোনো সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান তাঁর অনাত্মীয়কে, অর্থাৎ যিনি তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নন, সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পারেন। কাজেই আপনার বর্তমান মা (যে আপনাকে পালক নিয়েছেন) চাইলে আপনাকে তাঁর সম্পত্তির একটি অংশ অসিয়ত করতে পারেন। তবে আপনার জন্মদাতা মা–বাবার সম্পত্তি থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন না। আপনি আইনগতভাবে আপনার জন্মদাতা মা–বাবার সম্পত্তি থেকে আপনার অংশ দাবি করতে পারবেন, যেহেতু আপনি তাঁদের বৈধ উত্তরাধিকার।
কলেজে পড়ার সময় থেকে একটি মেয়েকে আমি খুব ভালোবাসি। পাঁচ বছর আগে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে তাকে ভালোবাসার কথা জানাই। মেয়েটিও তাতে সম্মতি দেয়। এরপর আমরা ফোনে কথা বলা শুরু করি। সে যখন যা চেয়েছে, কিনে দিয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার মনটা সব সময় ছটফট করত। কিন্তু সপ্তাহে সে দুবারের বেশি কথা বলত না। বলত, বাসায় জানলে সমস্যা হবে। আমি সেসব বিশ্বাস করতাম। প্রেমের দুই বছর পর আমি ইতালি চলে আসি। এর পর থেকে যেকোনো দরকারে আমার বন্ধুর মাধ্যমে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। মাঝেমধ্যে দুজন ফোনে কথা বলতাম। বিদেশে এসে এ পর্যন্ত তাকে আমি দুই লাখ টাকা দিয়েছি। এই বছর আমাদের বিয়ে করার কথা। আমি দেশে আসব, সে তার পরিবারের কাছে জানাবে। এখন শুনি, আমার প্রেমিকা আমার সেই বন্ধুকে এক বছর আগে বিয়ে করেছে। তারা এখন আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। দুজনে মিলে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাকে বোকা বানিয়ে নানা সময়ে টাকা নিয়েছে। এখন আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়েছি। তবে আমি আমার টাকা ফেরত চাই। যখনই তাকে টাকা দিয়েছি, ব্যাংকে পাঠিয়েছি। সেসবের তথ্য ও প্রমাণ আমার কাছে আছে। এখন আইনের আশ্রয় পেতে কী করব?
আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রেমিকাকে উপহারসহ টাকা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আপনাকে ছেড়ে আপনার বন্ধুকে বিয়ে করেছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান-প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া-নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে দুই পক্ষেরই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত। তবে আপনার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে, মেয়েটি হয়তো অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তিকে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটিও প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। আপনার ক্ষেত্রে প্রেমিকা আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেছেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জনের পর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন, এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আপনি যদি আদালতে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন, তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে মানি মোকদ্দমা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দাবি করা টাকার অনুপাতে কোর্ট ফি দাখিল করতে হয়। ফৌজদারি আদালতে আশ্রয় নিতে হলে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে সিআর (নালিশি) মামলা করা যায়। এ ছাড়া থানায় এজাহার হিসেবেও মামলা করার সুযোগ রয়েছে। আদালতে সরাসরি মামলা করলে আদালত জবানবন্দি নিয়ে সরাসরি সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
কলেজে পড়ার সময় থেকে একটি মেয়েকে আমি খুব ভালোবাসি। পাঁচ বছর আগে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে তাকে ভালোবাসার কথা জানাই। মেয়েটিও তাতে সম্মতি দেয়। এরপর আমরা ফোনে কথা বলা শুরু করি। সে যখন যা চেয়েছে, কিনে দিয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার মনটা সব সময় ছটফট করত। কিন্তু সপ্তাহে সে দুবারের বেশি কথা বলত না। বলত, বাসায় জানলে সমস্যা হবে। আমি সেসব বিশ্বাস করতাম। প্রেমের দুই বছর পর আমি ইতালি চলে আসি। এর পর থেকে যেকোনো দরকারে আমার বন্ধুর মাধ্যমে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। মাঝেমধ্যে দুজন ফোনে কথা বলতাম। বিদেশে এসে এ পর্যন্ত তাকে আমি দুই লাখ টাকা দিয়েছি। এই বছর আমাদের বিয়ে করার কথা। আমি দেশে আসব, সে তার পরিবারের কাছে জানাবে। এখন শুনি, আমার প্রেমিকা আমার সেই বন্ধুকে এক বছর আগে বিয়ে করেছে। তারা এখন আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। দুজনে মিলে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাকে বোকা বানিয়ে নানা সময়ে টাকা নিয়েছে। এখন আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়েছি। তবে আমি আমার টাকা ফেরত চাই। যখনই তাকে টাকা দিয়েছি, ব্যাংকে পাঠিয়েছি। সেসবের তথ্য ও প্রমাণ আমার কাছে আছে। এখন আইনের আশ্রয় পেতে কী করব?
আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রেমিকাকে উপহারসহ টাকা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আপনাকে ছেড়ে আপনার বন্ধুকে বিয়ে করেছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান-প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া-নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে দুই পক্ষেরই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত। তবে আপনার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে, মেয়েটি হয়তো অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তিকে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটিও প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। আপনার ক্ষেত্রে প্রেমিকা আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেছেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জনের পর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন, এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আপনি যদি আদালতে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন, তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে মানি মোকদ্দমা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দাবি করা টাকার অনুপাতে কোর্ট ফি দাখিল করতে হয়। ফৌজদারি আদালতে আশ্রয় নিতে হলে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে সিআর (নালিশি) মামলা করা যায়। এ ছাড়া থানায় এজাহার হিসেবেও মামলা করার সুযোগ রয়েছে। আদালতে সরাসরি মামলা করলে আদালত জবানবন্দি নিয়ে সরাসরি সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
পড়াশোনা শেষ করার পর আমি এখন চাকরিজীবী। আমার সঙ্গে একটি মেয়ের আট বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। শুরু থেকে আমি তাকে প্রয়োজনীয় খরচ দিয়ে আসছি। তখন তার পরিবার আমার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের ব্যাপারে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিল। সে জন্য আমি তার ভরণপোষণ চালিয়ে এসেছি। তার পড়ালেখার খরচও আমি চালাই। তাকে আমি স্বর্ণের চেইন, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সে যা চেয়েছে—সব দিয়েছি। সম্প্রতি সে ডিগ্রি পাস করেছে। তার ফ্যামিলি আমাদের বিয়েতে রাজি ছিল। কিন্তু দিন দশেক আগে তার পরিবার থেকে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। আমি যাওয়ার পর প্রেমিকার মা বলছেন, তাঁর আরেক জামাই নাকি আমাদের বিয়েতে রাজি নন। যে কারণে তাঁরা আমার সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে পারবেন না। এই আট বছরে আমি তার পেছনে প্রায় সাত লাখ টাকা ঢাললাম, এখন বলছে বিয়ে করবে না। এদিনের পর থেকে আমার সঙ্গে তাঁদের পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। মেয়েও আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না। আমার সঙ্গে এমন প্রতারণার জন্য আমি কী কী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি, সেটা আমার খুব জানা প্রয়োজন। দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
আপনার তথ্যমতে, আট বছরে আপনি প্রায় সাত লাখ টাকা তাঁর পেছনে ব্যয় করেছেন। এখন মেয়েটির পরিবার নানা অজুহাতে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিচ্ছে। আপনি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। আপনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম–ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান–প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া–নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসতে পারে। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষের করা উচিত। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে; তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কাজেই আপনার প্রেমিকা যদি আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করেন, তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেন বা অন্য কোনো ক্ষতি করেন; তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি ও তাঁর পরিবার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। আশা করি, আপনার উত্তর পেয়েছেন।
আমি একজন নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী। দুই মাস আগে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার গায়ে হাত তোলে আমার স্ত্রী। বঁটি দিয়ে আমাকে আঘাত করারও চেষ্টা করে, কিন্তু আশপাশের লোকজনের বাধার মুখে পারেনি। পরে আমি তার বাবাকে অভিযোগ করি। তিনি তাঁর ছেলেকে পাঠিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যান। আমার অভিযোগের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ না করে উল্টো তিনি আমার নামে লোকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি আপস করতে চাইলেও তারা রাজি না। তারা মামলা করতে চায়। এ অবস্থায় চাকরির নিরাপত্তাসহ মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা থেকে কীভাবে ত্রাণ পাব, দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে। কোনো ব্যক্তির দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরিপূর্ণ অধিকার আপনার আছে। যেকোনো নাগরিকের বিচার চাওয়া এবং বিচার পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার। যেহেতু আপনার স্ত্রী আপনাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন, কাজেই আপনার উচিত ছিল তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা। এ ছাড়া তাঁর কারণে পারিবারিক বা সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে, কোনো কলহবিবাদ তৈরির শঙ্কা কিংবা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩-এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত প্রদান করে, তার শাস্তি হবে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আপনি চাইলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন। যেহেতু আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আপনার নামে মিথ্যা মামলা করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, আপনার উচিত হবে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)–এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। এই ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। তবে মিথ্যা মামলা করলে আদালতে মিথ্যা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে হয়রানির শিকার হতে হবে। আপনি আপনার করা সাধারণ ডায়েরির একটি কপি আপনার কর্মস্থলে দিয়ে রাখতে পারেন এবং সব বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে অবহিত করে রাখতে পারেন
আমি পুরুষ, বয়স ১৮ বছর। গত বছর একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তী সময়ে দুজনের সম্মতিতে আমরা কয়েকবার অন্তরঙ্গ হই। আমার পরিবার তাকে মেনে নেবে না, তাই আমি এখন এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে চাইছি। কিন্তু মেয়েটি নানাভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয় দেখাচ্ছে। এখন আমি আইনগত কোনো প্রতিকার কি পেতে পারি?
আপনার বয়স অনেক কম। আপনি জানিয়েছেন, গত বছর অর্থাৎ যখন আপনার বয়স ১৭ ছিল, তখন আপনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। অল্প বয়সে এ ধরনের সম্পর্ক উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। সবকিছুর একটা সঠিক বয়স রয়েছে। প্রেম, ভালোবাসার জন্যও সঠিক বয়স রয়েছে। তার আগে দরকার মানসিক বিকাশ। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সবার আগে দরকার। কারণ, প্রেম, ভালোবাসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে হলে নিজেকে তার যোগ্য করে তোলা প্রয়োজন। যা–ই হোক, যেহেতু কোনো কারণে সম্পর্কটি আপনি আর রাখতে চাচ্ছেন না, তাই আপনার প্রেমিকারও জোর করে সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখা বা বাধ্য করাটা যুক্তিসংগত নয়। আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনার প্রেমিকা সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে বাধ্য করতে চাচ্ছে। সেই সঙ্গে মেয়েটি আপনাকে হুমকি প্রদর্শন করছে এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। তদন্ত করে যদি দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন। কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়। ১০৭ ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড সম্পাদনে বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। ১০৭ ধারার আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এই মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। তবে আপনি তাকে ‍ভালোভাবে বোঝাতে পারেন, আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আপনারা দুজন ও আপনাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনাদের দুজনের ভবিষ্যৎ ও পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কোনো অভিভাবক বা শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্য নিন।
আমি একজন পুরুষ, বয়স ৪২ বছর। খুলনা শহরে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ১৩ বছর আগে ভালোবেসে আমারই গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করি। আমাদের কোনো সন্তান নেই। চেষ্টা করেছি, তবে এখনো হয়নি। স্ত্রী আগে আমার সঙ্গে ছিল, এখন গ্রামে থাকে। নানা কারণ দেখিয়ে এখন সে গ্রাম ছেড়ে আসতে চায় না। গ্রামে যাওয়ার পর থেকে একটু একটু করে সে বদলে যাচ্ছে। আমাকে সহ্য করতে পারে না, কিছু বললে রাগ দেখায়। ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলে। এলাকার মানুষ আমাকে নানা কথা বলে। সে নাকি আমার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছে। ফুফাতো ভাইয়ের বয়স ২৪ বছর। আমার স্ত্রীর চেয়ে সে প্রায় ১৫ বছরের ছোট। আমার বিশ্বাস হয়নি, তবে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে সে এড়িয়ে যায়। একদিন আমি আগে কিছু না বলে গভীর রাতে গ্রামে যাই, স্ত্রীকে ডাকার পরও সে দরজা খুলতে চায় না। প্রায় আধা ঘণ্টা পর সে দরজা খোলে। সেদিন আমি বাড়িতে অন্য কাউকে পাইনি। তবে সন্দেহ থেকে তল্লাশি চালিয়ে খাটের নিচে একটা জামা খুঁজে পাই, যেটা আমার সেই ফুফাতো ভাইয়ের বলে প্রতিবেশীরা শনাক্ত করেন। আমার স্ত্রীর ইমো নম্বরে অনেক ছেলে ছবি পাঠায়। সে আদতে কী করছে, ঠিক বুঝতে পারছি না। আমার হাতে কোনো শক্ত প্রমাণ নেই, তবে বুঝতে পারছি, সে প্রতারণা করছে। এখন আমি কীভাবে আইনি প্রতিকার পেতে পারি?
প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। প্রশ্ন থেকে বুঝতে পারছি, অন্য কারও সঙ্গে আপনার স্ত্রীর সম্পর্ক আছে বলে আপনি ধারণা করছেন। এ বিষয়ে আপনার প্রতিবেশীরাও আপনাকে বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য–প্রমাণ আপনি পাননি। বাংলাদেশের আইনে দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় পরকীয়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে সেই নারীর সম্মতি সাপেক্ষে সম্পর্কে লিপ্ত হন, তবে সেই ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনা শ্রম বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে এ ক্ষেত্রে পরকীয়ায় জড়িত নারীর কোনো শাস্তির কথা এ আইনে বলা নেই। স্ত্রী যদি পরকীয়া করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে এ ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন না তাঁর স্বামী। আইনের বিধান অনুযায়ী, স্ত্রী পরকীয়া করলে স্বামী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ পাবেন না। সে ক্ষেত্রে প্রমাণ থাকলে আপনার ফুফাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তবে আইনের আশ্রয় নিতে হলে অন্যের দেওয়া তথ্য বা কানকথায় বিশ্বাস না করে, যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করা জরুরি। তারপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবতে পারেন।
আমার স্বামী আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখে না, তাই আমি বাবার বাড়ি চলে এসেছি। আমার কাবিন পাঁচ লাখ টাকা। বিয়ের সময় আমার বাবার বাড়ি থেকে আড়াই ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়েছিল। এখন আমি যদি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চাই, তাহলে আমি কত টাকা ক্ষতিপূরণ পাব? আমার স্বামী প্রবাসে থাকে, আমি কীভাবে কী করতে পারি জানাবেন। স্বামী প্রবাসে থাকা অবস্থায় কি আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবে? মামলা করলে তা সম্ভব হবে?
আপনার প্রশ্নে অনেকগুলো বিষয় স্পষ্ট নয়। আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্বামী বিদেশে থাকেন এবং আপনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। তাই আপনি বাবার বাড়িতে চলে এসেছেন। বিয়ের পর মনোমালিন্য কিংবা বনিবনা না হলে অনেক দম্পতি আলাদা বসবাস করেন। তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে দাম্পত্য সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়। সে ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীকে পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মামলা করতে হবে। আপনার পরিবার থেকে বিয়ের সোনা ও টাকা যৌতুক হিসেবে দিয়েছিল বলে লিখেছেন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়া—দুটিই বাংলাদেশের আইনে গুরুতর অপরাধ। যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮–এর ৩ ও ৪ ধারায় বলা আছে, যৌতুক দাবি, প্রদান ও গ্রহণ করার দণ্ড হচ্ছে অনধিক ৫ বছর এবং অন্যূন ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। আইনে আরও বলা আছে, যে ব্যক্তি যৌতুক দেওয়া বা গ্রহণ করার ব্যাপারে কোনো ধরনের সাহায্য বা সহায়তা করবেন, তিনিও একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যৌতুককে কেন্দ্র করে নারী নির্যাতনের চিত্র আমরা যেমন দেখতে পাই, তেমনি আবার যৌতুকসংক্রান্ত মিথ্যা মামলার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। পারিবারিক কলহের জেরে ও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে অনেক সময় এ ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করেন অনেকে। ফলে নিরপরাধ ব্যক্তি মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যান, যা ব্যাপক হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো আইনানুগ কারণ নেই জেনেও যদি কোনো ব্যক্তি আরেকজনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এখন আসছি ডিভোর্সের প্রসঙ্গে। আপনার স্বামী চাইলেও পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে তালাক দিতে পারবেন। আপনি চাইলে আপনার স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন। আপনি যদি তালাক চান, তবে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কি না, দেখে সরাসরি তালাক দিতে পারেন। যদি ১৮ নম্বর কলামে কোনো ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে আদালতে যেতে হবে। স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা না থাকলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক দিতে চাইলে তাঁকে তালাক ঘোষণার পর অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করে, সে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে, তখনই/পরবর্তী সময়ে/যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করতে হবে এবং সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, তা কার্যকরের পর যে কাজির মাধমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক।
আমি বিয়ে করেছি ১৯৮৬ সালে। আমার বয়স ৬২ বছর, স্ত্রীর ৫৩ বছর। আমার স্বল্প আয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। সংসারের বাইরের খরচ মেটাতে কষ্ট হয়। আমার স্ত্রী তার কোটিপতি ছোট বোনের নিকট থেকে যাকাত ও ফেতরা এনে কিছু খরচ মেটায়। স্ত্রী পরিচিত সবার কাছে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার করে। আমাকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য রাখে, যা আমার জন্য খুবই লজ্জার। প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে আমি তার কোটিপতি বোনকে দাওয়াত দিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি আর সব বিষয় তাকে জানাই। সব শুনে তার বোন আমাকে তালাক দিতে বলে যায়। তালাক দেওয়ার পর বোনের সব খরচ সে বহন করবে, এমন আশ্বাসও দিয়ে যায়। বোনকে তার বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। আমার স্ত্রী তার বোনের প্ররোচনায় আমার সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক থেকে বিরত আছে, এমনকি কথাও বলে না। আজ চার থেকে পাঁচ মাস আমার স্ত্রীর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ। ডিভোর্স চাইলে দেয় না, আবার আমার সঙ্গে সংসারও করতে চায় না। এ অবস্থায় আমি কী করতে পারি?
দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের বিষয়টি পারিবারিক আদালতের এখতিয়ারে দেওয়া রয়েছে এবং আইনানুযায়ী আদালত ডিক্রি জারি করতে পারেন। বাংলাদেশে প্রচলিত ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫’-র বলে দাম্পত্য অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আপনার স্ত্রী যেহেতু কোনো কারণ ছাড়া আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না, তাই দাম্পত্য অধিকার দাবি করে আপনি পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। কোনো আইনসংগত কারণ ছাড়া আপনার স্ত্রী যেহেতু আপনার সঙ্গে একত্রে বসবাস বন্ধ করেছেন, সে ক্ষেত্রে স্বামী হিসেবে আপনি দাম্পত্য অধিকার চাইতে পারেন এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। দাম্পত্য অধিকার উদ্ধারের বিষয়টি সাধারণত আদালতের বিবেচনার ব্যাপার। উভয়ের মধ্যে বিয়ে কার্যকর আছে কি না, আদালত দেখতে চাইবেন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার স্ত্রী কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে ফিরতে চান না। তবে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে তালাক-প্রক্রিয়া চলাকালে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে এ মামলা চলে না। এ মামলায় আদালত বিবেচনা করেন যে পরস্পরের দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কি না। তবে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর করার কোনো বিধান নেই। আর স্বামী-স্ত্রীর মত থাকা সত্ত্বেও যদি শ্বশুরবাড়ির লোকজন বা তৃতীয় পক্ষ একসঙ্গে সংসার করতে না দেয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতের আশ্রয় নেওয়া যায়। তবে আপনাদের সম্পর্ক যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষে বা যেকোনো এক পক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে আপনারা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। তিনি না দিলে আপনিও উদ্যোগ নিতে পারেন। এ জন্য একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তবে আমার মনে হয় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করুন। নিজে না পারলে অন্য কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর মধ্যস্থতায় বিষয়টি আগে মীমাংসা করার চেষ্টা করা উচিত। কারণ, আমি ধরে নিচ্ছি আপনাদের অনেক বছরের সংসার এবং এই বয়সে এসে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না–ও হতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধানে আসতে পারলে সেটি সবার জন্য কল্যাণকর হবে।
আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। সম্প্রতি একটি বিষয় নিয়ে খুব ভেঙে পড়েছি। অনলাইনে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয়ের পর আমাদের সম্পর্ক হয়। ছেলেটি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি ভেঙে পড়েছি। জানি না, কীভাবে এসব কাটিয়ে উঠব। তার কাছে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি আছে। এটা নিয়ে এখন আমি উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া আমরা যখন ভিডিও কলে কথা বলতাম, সেসবও ছেলেটি রেকর্ড করে রেখেছিল। এখন ছেলেটি যদি আমার ছবি প্রকাশ করার চেষ্টা করে বা ফোনকল ফাঁস করে দিতে চায়, তাহলে কী করব? এসব ঘটনার আগেই আমি কি আইনের আশ্রয় নিতে পারি, যাতে সে আমার ক্ষতি করতে না পারে?
ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। অনলাইনে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের ক্ষেত্রে একটু অসচেতন হলেই নানা ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারেন। এখন পর্যন্ত যদিও এ ধরনের কোনো হুমকি ছেলেটি আপনাকে দেয়নি। কাজেই আপনি তাকে অনুরোধ করতে পারেন, যাতে সে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে। জেনে হোক বা না জেনে, সে যদি অনলাইনে কোনো ছবি প্রকাশ করে, তাহলে এ জন্য তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আপনি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি যা সংরক্ষিত আছে, সব মুছে ফেলতে বলুন। সে যদি আপনার ছবি প্রকাশ করার চেষ্টা করে বা ফোনকল ফাঁস করে দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করবেন। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারে। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারে। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বলা আছে যে কোনো ব্যক্তি যদি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হতে পারে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে। দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে। তবে যেহেতু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি সে দেয়নি, কাজেই আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির সমাধান করা নেওয়াই ভালো হবে। সম্ভব হলে আপনি আপনার অভিভাবকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করুন, তাঁদের সাহায্য চান।
২০২২ সালে আমি এইচএসসি পাস করেছি। এক বছরের বেশি হলো, একটা ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। কিন্তু বারবার নানা অজুহাতে সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আবার অনেক বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনি। আমার দিক থেকে তার সঙ্গে সম্পর্ক অনেক গভীর। তাকে ছাড়া একদমই থাকতে পারি না, কিন্তু বারবার সে এরই সুযোগ নেয়। আমাকে সে অনেকবার বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এখন পরিবার মানবে না বলে বিয়ে করতে চায় না। সে যদি আমার কাছে আর না আসত, আমিও তাকে ছেড়ে দিতাম। আমাকে সে ঠকাচ্ছে। এখন সে এমন করলে আমি আর বাঁচতে পারব না। পরিবারের কাছে মুখ দেখাতে পারব না। আমি চাই, সে আর তার পরিবার আমাকে মেনে নিক। আমি এখন কী করব, তার আইনি পরামর্শ চাচ্ছি।
আপনার বয়স কম। কম বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নানা ধরনের আবেগ কাজ করে। প্রেম বা বিয়ে, যেকোনো ক্ষেত্রেই ভাঙন আসতে পারে। দুই পক্ষের সম্মতি ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা উচিত নয়। কোনো এক পক্ষ অসম্মতি জানালে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষরই করা উচিত। যেহেতু অপর পক্ষ আপনার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে, কাজেই আপনার ভেবে দেখা উচিত, কেন সে সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছে না। যেহেতু তাঁর পরিবার সম্পর্কটি মানতে চাচ্ছে না, সে জন্য হয়তো তিনি তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারছেন না। এ জন্য হয়তো তিনি আপনাকে আর অপেক্ষায় রাখতে চান না। কিন্তু আপনি কষ্ট পাচ্ছেন এবং প্রতারিত বোধ করছেন। শুধু আপনি প্রতারিত বোধ করলেই হবে না। প্রতারণার জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে এর আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলক বা অসাধুভাবে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থ সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করে, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছা করে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে, যার কারণে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তার কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, সে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। কেননা, কোনো সম্পর্ক ভেঙে গেলে যেকোনো এক পক্ষ প্রতারিত বোধ করতেই পারে। তবে আইনের চোখে তা প্রতারণা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া সে বা তার পরিবার আপনাকে মেনে না নিলে আইনগতভাবে তাদের বাধ্য করার কোনো উপায় নেই। আশা করি, আপনি আবেগের বশবর্তী না হয়ে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রয়োজনে কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। বউকে এখনো তুলে আনা হয়নি। বিয়ের পর থেকেই আমার স্ত্রী ও তার মা-বোন বিভিন্নভাবে আমাদের অপমান করছে। আমাদের নামে নানা রকম মিথ্যা কথা বলছে। আমরা নতুন আত্মীয় ভেবে সবই মেনে নিয়েছি। এর মধ্যে আমার স্ত্রী আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে তিন-চার দিন ছিল। সেই সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। তাকে আমার মায়ের সঙ্গে থাকতে বলা হয়। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত তুলে সে আমার রুমে এসে থাকে। আমি ফোনে তাকে মায়ের রুমে থাকতে অনুরোধ করলে সে থাকবে বলে পরে আর থাকেনি। গত ৯ জানুয়ারি আমরা জানতে পারি, মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যও সঠিক নয়। তারা আমাদের মিথ্যা বলেছে। এর পর থেকে আমার স্ত্রী তার মা-বাবার বাড়িতেই আছে। আমার বোনদের সে সহ্য করতে পারছে না। আমার বাবা নেই, মা অসুস্থ বলেই তখন দ্রুত বিয়ে করেছি। এখন তারা হুমকি দিচ্ছে, সংসার না করলে আমাদের নামে মামলা ও চাকুরিচ্যুত করবে। উল্লেখ্য যে আমরা চার ভাইবোন। এর মধ্যে তিনজন সরকারি কর্মকর্তা। ওনাদের আচরণ পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না। আইনিভাবে কী করতে পারি?
বিয়ের অল্প কিছু দিনের মধ্যেই যে আপনি এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়েছেন, এটি খুব দুঃখজনক। মেয়েটি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আপনার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আইনের চোখে এটি একটি অপরাধ। এই অপরাধের জন্য আপনি চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করেন, তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার দায়ের করে অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়। আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকজন সংসার না করলে আপনাদের নামে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে এবং চাকুরিচ্যুতির ভয় দেখাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)–এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি ও মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। এ ধরনের বেআইনি কাজ থেকে তাঁদের বিরত থাকতে বলুন। এরপরও এ ধরনের হুমকি দিলে বা একই আচরণ করলে এসব কথা উল্লেখ করে নিকটস্থ থানাকে অবহিত করে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি বুঝে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। আপনারা আপনাদের কর্মক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে এই বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকে জানিয়ে রাখতে পারেন।
আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসি, মেয়েটাও আমাকে খুব ভালোবাসে। ২০২১ সালে আমাদের সম্পর্কের শুরু। মেয়েটির মা-বাবা একদিন বিষয়টা জানতে পারেন। মেয়েটির পরিবার বকাঝকা দিয়ে আমাকে মেয়ের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করে। এরপর অনেক দিন আমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ একদিন মেয়েটিই আমাকে নক দেয় আর আবার আমাদের মধ্যে বার্তা–চালাচালি শুরু হয়। পরে মেয়ের মা–বাবাও জানতে পারেন যে আমাদের যোগাযোগ আছে। এর পর থেকে আমার প্রেমিকার মা–বাবা আমাকে নানা রকম হুমকি দেন, ভয় দেখান। এখন আমি কী করব?
আপনার বা মেয়েটির বয়স কত, ই–মেইলে তা জানাননি। দুজনেই যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন, তাহলে পরিবারের লোকজন আইনগতভাবে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। মেয়েটির মা-বাবা অথবা আপনার পরিবারের সেসব সদস্য, যাঁরা আপনাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছেন না, তাঁরা আপনার থেকে পৃথিবীটা অনেক বেশি দেখেছেন। অতএব তাঁরা হয়তোবা আপনাদের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক আসলেই কতটুকু আস্থার বা ভরসার, তা সঠিকভাবে মেয়েটির পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন। কী কারণে মেয়েটির মা-বাবা সম্পর্কটি মেনে নিচ্ছেন না, সেটা আপনি লেখেননি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রেম ও আবেগে পরিবারের অবাধ্য হয়ে বিয়ে করার পর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া–বিবাদ লেগেই থাকে। পরে বিচ্ছেদই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিজেদের সম্পর্কটা নিয়ে আগে ভাবুন। মেয়েটির মা–বাবা আপনাকে হুমকি দিচ্ছেন, ভয় দেখাচ্ছেন। সেটার আইনগত সমাধান আপনি জানতে চেয়েছেন। কেউ কাউকে হুমকি দিলে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটি আপনাকে জানাচ্ছি, তবে আপনি যেহেতু মেয়েটিকে ভালোবাসেন, তাই তাঁর বাবা–মায়ের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকা উচিত। আইন আছে বলে সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সমীচীন নয়। সাধারণত কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। যদি তদন্ত করে দেখা যায়, হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীন অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। কেউ হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ীও প্রতিকার চাওয়া যায়। এই ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখতে বন্ড বা মুচলেকা সম্পাদনের জন্য বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্তের নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এ মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। আশা করি আপনি ও আপনার প্রেমিকা—দুই পরিবারের সম্মতি আদায় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং অহেতুক মামলায় নিজেদের জড়াবেন না। আপনাদের জন্য শুভকামনা।
আমি একজনকে ভালোবেসেছিলাম। তিন বছর আমাদের সম্পর্ক ছিল। পরে জানতে পারি, সে আমার থেকে চার বছরের বড় এবং পূর্বে তার আরও একজন প্রেমিক ছিল। এসব জানাজানি হওয়ার পর আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। সম্পর্ক ভাঙার এক বছর পর সে আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আমাকে শেষ দেখা করার জন্য অনুরোধ করে। গত ১৯ নভেম্বর সরল মনে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক তৎক্ষণাৎ আমাকে সে বিয়ে করে। দেনমোহর ধার্য করে তিন লাখ টাকা। বর্তমানে আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাসা থেকে কোনোক্রমে ওই মেয়েকে মেনে নিবে না। তার সঙ্গে এখন পর্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রাখছি, যাতে করে আমার বাসায় বিষয়টা জানতে না পারে। আমি আর তার সঙ্গে সংসার করতে চাই না। কীভাবে আমি এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পারি?
আপনি জানিয়েছেন, আপনার সাবেক প্রেমিকা বা তার পরিবার কৌশলে আপনাকে উঠিয়ে নিয়ে বা প্রতারণার আশ্রয়ে বিয়ে করেছে। জোরপূর্বক তারা দেনমোহর ধার্য করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে একটা চক্র আছে, যারা বিয়ে ও দেনমোহর আদায়টাকে একটা ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ছেলেকে জিম্মি করে তারা বিয়ে পড়িয়ে দেয়। ধার্য করা হয় মোটা অঙ্কের দেনমোহর। পরে ছেলেকে তালাক দিয়ে দেনমোহরের জন্য চাপ দেওয়া হয় অথবা মামলা করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটা মেয়ে ছেলেকে পছন্দ করে কিন্তু ছেলে মেয়েকে পছন্দ করে না। সে ক্ষেত্রে মেয়ে নিজে বা তার পরিবারের সাহায্যে কৌশলে বা জোরপূর্বক ছেলেকে বিয়ে করে। এখানেও মোটা অঙ্কের টাকা দেনমোহর হিসেবে ধার্য করা হয়। যে পক্ষই তা করুক না কেন, দেশের আইনে এটা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি দাবি করেছেন, আপনাকে জোরপূর্বক বিয়ে করা হয়েছে। তাহলে আপনি তালাক দিয়ে দিলেই সমস্যার একটা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ে জোরপূর্বক বা প্রতারণার মাধ্যমে করা হলেও আপনি তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন। আপনার উচিত ছিল, তার সঙ্গে মেলামেশা না করে যত দ্রুত সম্ভব অপর পক্ষের বিরুদ্ধে থানায় বা আদালতে ক্রিমিনাল মামলা করা। পাশাপাশি বিয়েকে অস্বীকার বা চ্যালেঞ্জ করে দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করা। অপর পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে একবার বিয়েকে মেনে নিলে পরে আর অস্বীকার করা যায় না। আর একবার বিয়েকে স্বীকার করে নিলে অবশ্যই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। কাজেই এখন আপনাকে আইনগতভাবে তালাক দিতে হবে এবং দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তবে প্রতারণার জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে পারেন। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়।
আমার নানা–নানির দুই পালক সন্তান, তাঁদের মধ্যে বয়সে আমার মা বড়। সম্পর্কের দিক দিয়ে তিনি আমার নানির বোনের মেয়ে। নানির নামেই নানার সব সম্পত্তি। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে আমার মাকে বঞ্চিত করে নানি তাঁর পালক ছেলের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। এই সম্পত্তির অধিকার চেয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো অধিকার আমার মা রাখেন কি?
শিশু দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে কোনো বিধান নেই। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে অভিভাবক হিসেবে একটি শিশুর দায়িত্ব নিতে পারেন কোনো ব্যক্তি। কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে হলে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। ১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় কাস্টডি নেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের অধীনে এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। আপনার মা আপনার নানির পালক সন্তান। আপনি জানিয়েছেন, আপনার নানি আপনার মাকে বঞ্চিত করে আপনার মামাকে সম্পত্তি দান করেছেন। আপনার মামাও আপনার নানির পালক সন্তান। পালক সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে আইনত কিছুই করার থাকে না। কারণ, মুসলিম আইনে দত্তক সন্তান সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইলকে অসিয়ত বলে। সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মুসলমান তাঁর অনাত্মীয়কে, অর্থাৎ যিনি তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন না, তাঁকে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পারেন।
১১ বছর ধরে আমি সৌদিপ্রবাসী। পারিবারিকভাবে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর এক মাস দেশে কাটিয়ে ফিরে আসি। আমার স্ত্রী বয়সে আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। বিয়ের পর তাকে আমি ফোন দিলেই দেখি ওয়েটিং। পরে বলে, বাপের বাড়িতে কথা বলেছে। কিন্তু আমার সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে দেখি, সে আরেকজনের সঙ্গে প্রেম করে। বিয়ের পর বাসররাতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাকে পছন্দ কি না? সে বলেছে, পছন্দ। কিন্তু এখন সে আরেক জায়গায় ফোনে কথা বলে। আমার পাঠানো নতুন কম্বল সে ওই ছেলেকে দিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে টাকাপয়সাও দেয়। এসব নিয়ে ঝগড়া হওয়ার পর সে বাপের বাড়িতে চলে গেছে। জরুরি ছুটি নিয়ে দেশে গিয়ে ১৫ দিন চেষ্টা করেও তাকে আনতে পারিনি। সে আর আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে জানিয়েছে। আমি তাকে ১২ ভরি সোনার অলংকার দিয়েছি। সেসবও সে ফেরত দেবে না। দেনমোহরের টাকা সৌদিতে এসে দুই মাসের মধ্যে শোধ করে দিয়েছি। কিন্তু সে বলছে, কোনো গয়না দেবে না। আমি এখন সৌদিতে আছি। আমার কী করার আছে, ব্যারিস্টার আপার কাছে সেই পরামর্শ চাই।
প্রথমত, আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে মামলা করতে পারেন। এ ধরনের মামলাকে ‘রেসটিটিউশন অব কনজুগাল রাইটস’-এর মামলা বলে। বিনা কারণে স্ত্রী যদি আপনার থেকে আলাদা থাকেন এবং বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন, তাহলে এই মামলা করা যায়। অতএব স্ত্রী যাতে আপনার প্রতি কর্তব্য পালন করেন, সেই প্রার্থনা জানিয়ে আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে। বাংলাদেশে প্রচলিত পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর অধীনে দাম্পত্য অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক আদালতে যেতে হয়—আদালত আদেশ বা ডিক্রি জারি করতে পারেন। দাম্পত্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা। আপনি যদি মামলাটি করেন, তাহলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি স্বচ্ছ মনোভাব নিয়েই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং প্রমাণ করতে হবে যে আপনার জীবনসঙ্গী কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে ফিরতে চাচ্ছেন না। তবে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে তালাকপ্রক্রিয়া সম্পন্নকালে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে মামলা চলে না। আর আপনার স্ত্রী যদি আপনার সঙ্গে কোনোভাবেই সংসার করতে না চান, সে ক্ষেত্রে তালাকপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিত নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকেও নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে অ্যাডিসহযোগে (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। দেনমোহর বিবাহিত মুসলিম নারীর একটি বিশেষ অধিকার, যা স্বামীর ওপর আইন কর্তৃক আরোপিত একটি দায়িত্ব। মুসলিম বিয়ের অন্যতম শর্ত দেনমোহর। শর্তটি পূরণ ছাড়া কোনো বিয়ে বৈধ হতে পারে না। দেনমোহরের টাকা আপনি ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছেন। আর স্ত্রীকে আপনি যে গয়না উপহার হিসেবে দিয়েছেন, সেটা আইনগতভাবে ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় নেই। আপনিও যদি স্ত্রীর কাছ থেকে বিয়ের সময় কোনো উপহার পেয়ে থাকেন, সেটিও তিনি আইনগতভাবে ফেরত চাইতে পারবেন না। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। আপনার জন্য শুভকামনা।
আমার মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স ১ বছর আর আমার বোনের বয়স ৩ বছর। আমরা দুই ভাই বোন আমার মায়ের সম্পত্তির উত্তারিধকারী হই, যা আমার মা তাঁর বাবা (আমাদের নানা) মারা যাওয়ার পর উত্তারিধকার সূত্রে পেয়েছিলেন। আমার বয়স যখন ১২ বা ১৩ বছর, তখন আমার মামা কৌশলে আমার বাবার কাছ থেকে ৩৮ শতক জমি সাফকবলা করে নেন, যা আমাদের দুই ভাইবোনের নামে রেকর্ড। আমরা সাবালক হয়ে জানতে পারি, সেই জমি ১৯৮৭ সালে পারিবারিক আদালতের অনুমতি ছাড়াই আমার মামা আমার বাবার কাছ থেকে কৌশলে কবলা করে নেন। এখন আমার বয়স ৪৮ বছর এবং আমার বোনের বয়স ৫১ বছর। আমার বাবা জীবিত আছেন। এখন আইনগতভাবে আমরা ওই জমি দাবি করে পাব কি না? যদি পাই, তাহলে আমাদের কী করতে হবে?
আপনাদের বাবা আপনাদের পক্ষে ওই সম্পত্তি সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে আপনার মামার কাছে ১৯৮৭ সালে বিক্রি করেছেন। আপনি উল্লেখ করেছেন যে আপনার মামা কৌশলে আপনার বাবার কাছ থেকে সাফকবলা করে নিয়েছেন। অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ –এর বিধান অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়স্ক সন্তানকে ‘নাবালক’ বলে বিবেচনা করা হয়। আইন অনুযায়ী তার অভিভাবক হবেন তিনি, যিনি কোনো নাবালকের শরীর অথবা সম্পত্তি অথবা সম্পত্তি ও শরীর উভয়ের তত্ত্বাবধানের এবং তাকে ভরণপোষণ প্রদানে আইনিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আইনে বলা আছে, নাবালকের স্বাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক হলেন বাবা। আপনাদের বাবা অভিভাবক হিসেবে এবং আপনাদের সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আপনাদের পক্ষে সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। সে ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি কোনো লিখিত দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য হয় এবং একই সঙ্গে সেই ব্যক্তির যদি যুক্তিসংগত আশঙ্কা থাকে যে যদি এই দলিল বলবৎ থাকলে, সেটা তার গুরুতর ক্ষতির কারণ হবে, তখন উক্ত ব্যক্তি যথাযথ এখতিয়ারসম্পন্ন কোর্টে দলিলটি বাতিল বা বাতিলের মামলা করতে পারেন। এই ধরনের মামলাকে দলিল বাতিলের মামলা বলে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৩৯ ধারার শর্তসমূহ সাপেক্ষে যেকোনো দলিল বাতিল ঘোষিত হতে পারে। সাফকবলা দলিলও আইনে বর্ণিত শর্ত অনুযায়ী বাতিল হতে পারে। তবে তামাদি আইনের ৯১ ধারা অনুযায়ী, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় দলিল বাতিলের মামলা করার অধিকারী ব্যক্তিকে, এই বিষয় অবগত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তামাদি আইনের ১২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে ৬ বছরের মধ্যেও মামলা করা যেতে পারে। আপনাদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে এই সময়সীমা অতিবাহিত হয়ে গেছে।
আমরা তিন বোন, কোনো ভাই নেই। আমার বাবার বয়স প্রায় আশি বছর। বাবার বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে চাচার ছেলেরা আমার বাবার সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। শুনেছি, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কারও পুত্রসন্তান না থাকলে মৃত্যুর পর তাঁর ভাইয়ের ছেলেরা সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন, এটা কতটুকু সত্য? আমার বাবা যদি সব সম্পত্তি আমাদের তিন বোন ও মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে কী করতে হবে, আইনগতভাবে কি সেটা সম্ভব?
যেহেতু আপনাদের কোনো ভাই নেই, তাই আপনার বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে আপনার চাচাতো ভাইয়েরা আপনার বাবার সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বাবা যদি তাঁর সব সম্পত্তি আপনাদের তিন বোন ও মায়ের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে তা হেবা দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর জীবিত অবস্থায় আপনার বোনদের এবং মায়ের নামে হস্তান্তর করে দিতে হবে। দান করার সঙ্গে সঙ্গে ওই সম্পত্তি হস্তান্তরও করতে হবে। হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্তসম্পর্কিত আত্মীয় তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, মা–বাবা ও সন্তানের মধ্যে, ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি থেকে নাতি-নাতনি ও নাতি-নাতনি থেকে নানা-নানি সম্পর্কের মধ্যে নামমাত্র ১০০ টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে। দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলা হয়ে থাকে। কারও কাছ থেকে প্রতিদান বা বিনিময় ছাড়া কোনো কিছু নিঃশর্তে গ্রহণ করাকে দান বলা হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপিঅ্যাক্ট)–এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তিদাতা কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাঁকে দান বলা হয়। দান বা হেবা বৈধ হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়— • দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা প্রদান। • গ্রহীতার পক্ষ হতে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা। • দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান। একবার সম্পত্তি দান বা হেবা করার পর আদালতের ডিক্রি ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তিটি হস্তান্তর করা না হলে, কিছু ক্ষেত্রে তা বাতিল হতে পারে। হেবা করার পদ্ধতি শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে দান যেকোনো ধর্মের লোকেরাই করতে পারেন। দানের ক্ষেত্রেও দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সম্মতি থাকতে হয়। প্রতিটি হেবা দান দলিলের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। ২০০৫ সালের আগস্ট মাস থেকে হেবা করা সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আপনার বাবা যদি জীবিত থাকা অবস্থায় আপনার, আপনার বোনদের এবং মায়ের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চান, তাহলে তিনি হেবা দলিল সম্পাদন এবং রেজিষ্ট্রি করে তা করতে পারেন। অন্যান্য উত্তরাধিকাররা এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করতে পারবে না।
খুব অল্প বয়সেই আমার বিয়ে হয়ে যায়, এসএসসি পরীক্ষাও দিতে পারিনি। পাত্র বিদেশে থাকে। সে খুব বদমেজাজি, রাগ উঠলে গায়ে হাত তোলে। রাগলে অবশ্য সে তার মায়ের গায়েও হাত তোলে। এক বছর আগে হঠাৎ আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, বিগো নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে সে মেয়েদের সঙ্গে খারাপ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে আমার সঙ্গে ঝগড়া হয় বলেই ওই সব নারীর সঙ্গে সে সম্পর্কে জড়িয়েছে। প্রতিবছর তাকে এনজিও থেকে টাকা (ঋণ) তুলে দেই, বিদেশে বসে সে লোন চালায়, শেষ হলে আবার তুলে দিতে হয়। বিদেশে থাকলেও তার কোনো বিশেষ আয় নেই। এরপর সে হঠাৎ দেশে আসে। আমি আমার পরিবারকে বলি, তোমরা তাকে বোঝাও, নয়তো একটা ফয়সালা করো। বাড়ির লোকের এক কথা, দেশে এসেছে স্বামীকে সময় দাও, ঠিক হয়ে যাবে। ওকে আমাদের সন্তানদের কথা বলে বোঝাই। ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে সে আমাকে বলে, এগুলো আর করবে না। কিন্তু বিদেশে গিয়ে আবার সেই একই অবস্থা। কিছুদিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, এমন এক নারী আমাকে ফোন করে জানায়, তোমাদের সংসারের কথা ভেবে আমি তার কাছ থেকে সরে আসি। কিন্তু তোমার স্বামী তো আমাকে ভাইরাল করে দিয়েছে। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে সে গালাগালি করে। বাড়ির সবাই চায়, মুখ বুজে সহ্য করি, কারণ, আমার দুটি সন্তান আছে। নানা নারীর সঙ্গে তার খারাপ কাজের ভিডিও আমাকে বিভিন্ন সময় পাঠিয়েছে। আমার নিজের কিছু করারও অবস্থা নেই যে দুই বাচ্চাকে নিয়ে আলাদা থাকব। এমন অবস্থায় না বেঁচে আছি, না মরে গেছি। আমাকে একটা পরামর্শ দিন।
আপনার চিঠি পড়ে বুঝতে পারছি, আপনি বিচ্ছেদ চাচ্ছেন না, বরং সংশোধনমূলক সমাধানের পথ খুঁজছেন। আপনার স্বামী দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি আপনার গায়েও হাত তোলেন। আপনি এনজিও থেকে টাকা তুলে দিয়েছেন কেন, জানাননি। গালিগালাজ ও গায়ে হাত তোলার মতো বিষয়গুলো পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে পড়বে। পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কতৃর্ক পরিবারের অপর কোনো নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯-এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এ প্রথমবারের মতো পারিবারিক সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা প্রণীত হয়েছে। একজন শিশু বা নারী যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কতৃর্ক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তিনি দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারবেন। আইনের অধীন আপনি নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলো চাইতে পারবেন— ক. এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার; খ. চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ; গ. প্রয়োগকারী কর্মকর্তার নিকট হতে সেবা প্রাপ্তির সুযোগ; ঘ. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রাপ্তি বা অন্য কোনো আইন অনুসারে প্রতিকার প্রাপ্তির উপায়। আদালতে আবেদন: আপনি বা আপনার পক্ষে কোনো প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আদালত আবেদন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এর অধীন একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিম্নবর্ণিত প্রতিকার পেতে পারেন। ১. অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ: অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ নিয়ে আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে। আদালত সন্তুষ্ট হলে প্রতিপক্ষ বা তাঁর প্ররোচনায় পারিবারিক সহিংসতা ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে আদালত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন। ২. সুরক্ষা আদেশ: সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও প্রতিপক্ষকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে পারিবারিক সহিংসতা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা আছে, তাহলে সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবে এবং প্রতিপক্ষকে পারিবারিক সহিংসতামূলক কোনো কাজ সংঘটন, পারিবারিক সহিংসতামূলক কাজ সংঘটনে সহায়তা করা বা প্ররোচনা করা বা সুরক্ষা আদেশে উল্লেখিত অন্য যেকোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিতে পারবেন। ৩. বসবাস আদেশ: এই আইনের ১৫ ধারায় বসবাসের আদেশ নিয়েও বলা আছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বসবাস আদেশ প্রদান করতে পারবেন। যেমন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যেখানে বসবাস করেন সেখানে প্রতিপক্ষকে বসবাস বা যাতায়াত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে বাসার কোনো অংশ থেকে বেদখল করা বা ভোগদখলে কোনো রূপ বাধা সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখা ইত্যাদি। আদালত যদি মনে করেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাঁর সন্তানের জন্য নিরাপদ নয়, তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত প্রয়োগকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধায়নে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থানের ব্যবস্থা করবেন। তা ছাড়া প্রতিপক্ষকে জামানতসহ বা ছাড়া মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারবেন, যেন তিনি বা তাঁর পরিবারের অন্য কোনো সদস্য ভবিষ্যতে পারিবারিক সহিংসতামূলক কাজ করতে না পারেন। ৪. ক্ষতিপূরণ আদেশ: আইনের ১৬ ধারায় ক্ষতিপূরণের আদেশের কথা বলা হয়েছে। আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং তাঁর সন্তানের ভরণপোষণের জন্য তিনি যে ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, সে রকম জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত ও যুক্তিযুক্ত অর্থ প্রদানের জন্য প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারবেন। তা ছাড়া উপযুক্ত মনে করলে এককালীন বা মাসিক ভরণপোষণ পরিশোধের আদেশ দিতে পারবেন আদালত। ৫. নিরাপদ হেফাজত আদেশ: আদালত উক্ত আইনের অধীন আবেদন বিবেচনার যেকোনো পর্যায়ে আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সন্তানকে তাঁর নিকট অথবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো আবেদনকারীর জিম্মায় অস্থায়ীভাবে সাময়িক নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ দিতে পারবেন। কাজেই আপনি চাইলে যেকোনো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা বা সরাসরি আদালতের কাছে সুরক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য। এই আইনের ৩০ ধারায় শাস্তির বিধান সম্পর্কে বলা আছে। তবে আদালত চাইলে প্রতিপক্ষকে ধারা ৩০-এর অধীন শাস্তি না দিয়ে ৩১ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা প্রদানের জন্য আদেশ দিতে পারবেন এবং বিষয়টি তত্ত্বাবধায়নের জন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারবেন। এই আইনের ভালো দিক হচ্ছে আইনে শাস্তির পাশাপাশি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। যার ফলে পুনরায় দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ নিষ্পত্তি করা সহজ হয়।
আমার বিয়ে হয়েছে সাত বছর। পাঁচ বছরের একটা ছেলে আছে। ছেলে হওয়ার পর থেকে আমার স্ত্রী তার বড় ভাইয়ের বাসায় থাকে, আমি আসা–যাওয়া করি। ছেলের সব খরচ এ পর্যন্ত আমিই দিচ্ছি। চেকের মাধ্যমে টাকা দেওয়ায় সব ধরনের প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমার স্ত্রী আমাকে একদম সময় দেয় না, আমার অতীত জীবন নিয়ে আমাকে অমানবিক বিরক্ত করে। যে কারণে আমার শারীরিক ও মানসিক অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমার স্ত্রী আমাকে আর শান্তি দিচ্ছে না, সুখী করতে পারছে না। এখন আমি যদি নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাই এবং যদি আরেকটা বিয়ে করতে চাই তাহলে আমার কি কোনোরকম হয়রানি হওয়ার আশঙ্কা আছে? দেনমোহরের পুরোটাই বিয়ের সময়েই পরিশোধ করা হয়েছে। পরামর্শ পেলে উপকৃত হতাম।
আপনার প্রশ্ন থেকে বুঝতে পারছি, আপনার স্ত্রী পাঁচ বছর ধরে তাঁর ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিয়ের পর স্ত্রী বাবার বাড়িতে এসে স্বামীর সংসারে ফিরতে চান না। কোনো স্ত্রী যদি সংগত কারণ ছাড়া স্বামীর সঙ্গে বসবাস বন্ধ করে দেন, সে ক্ষেত্রে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন স্বামী। দাম্পত্য অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতার মধ্যে পড়ে। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি মামলাটি করেন, তবে অবশ্যই আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি স্বচ্ছ মনোভাব নিয়েই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার স্ত্রী কোনো কারণ ছাড়াই সংসারে ফিরতে চান না। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে বলছি, আইন অনুযায়ী এক স্ত্রী বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিয়ে করাকে বহুবিবাহ বলে। কোনো ব্যক্তির যদি এক স্ত্রী বর্তমান থাকতে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তিনি বর্তমান স্ত্রীর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে— ১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব। ২. শারীরিক মারাত্মক দুর্বলতা। ৩. দাম্পত্য–সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা। ৪. দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত থেকে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন। ৫. মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি। আপনি যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে অবিলম্বে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে। বর্তমান স্ত্রী সে ক্ষেত্রে আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করার অধিকার রাখেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিলেও তিনি ভরণপোষণ পাবেন। এ ক্ষেত্রে নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণও বাবাকেই দিতে হবে। পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানদের উত্তরাধিকারের অধিকার কোনো অবস্থাতেই খর্ব হবে না। এ ছাড়া অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগে স্বামী দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে আপনি যদি মনে করেন কোনোভাবেই এই বিয়ে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, যেমনটা আপনি লিখেছেন, সে ক্ষেত্রে তালাকও দিতে পারেন। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে যে তালাক দিতে চাইলে তালাক ঘোষণার পর, অপর পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র/সিটি করপোরেশন মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডিসহযোগে পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। সালিসের কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। যে পক্ষই তালাক প্রদান করুক না কেন, তালাক কার্যকরের পর তালাকটি যে কাজির মাধ্যমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক। আপনি ইতিমধ্যে আপনার স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করেছেন। কাজেই তাঁকে ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ ছাড়া আর কিছু দিতে হবে না। তবে যেকোনো ক্ষেত্রেই আপনার সন্তান সাবালক না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে তাঁর ভরণপোষণ দিতে হবে। আর এ বিষয়ে অবশ্যই একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে আপনার জন্য ভালো হবে।
আমরা চার ভাই এক বোন। আমার বাবার বাড়িতে অনেক জমিজমা আছে। অন্যদিকে মেয়ের পরিবার মেয়ের সৎমামার বাড়িতে থাকে। নিজেদের জমি নেই। মেয়ের বাবা দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় স্ত্রী তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম ঘরে সন্তান নেই। দ্বিতীয় ঘরে একটি মেয়ে, তৃতীয় ঘরে দুটি মেয়ে। আমার সঙ্গে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আমার অভিযোগ অনেক। যেমন অন্যের জমি–বাড়ি নিজের বলে দেখিয়ে বিয়ে করানো, সৎমায়ের তথ্য গোপন রাখা, বিয়ের দুই দিন পরই আমার সঙ্গে অজামাতাসুলভ আচরণ, ইত্যাদি। তাঁদের মেয়ে আমার বাড়িতে আসার পর অন্য ছেলেকে ‘আই মিস ইউ জান’ লিখে মেসেজ করেছে। সব মিলিয়ে আমি সব দিক থেকেই প্রতারিত হয়েছি। এমন অবস্থায় আমি তালাক চাচ্ছি। কাবিন তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। বিয়ে এক বছর পেরিয়েছে। চাওয়া সত্ত্বেও কাবিনের কাগজ আমাকে দেওয়া হয়নি। মেয়ে মোহরানা ছাড়া তালাক দিতে রাজি। কিন্তু মেয়ের বাবা, সৎমা, আপন মায়ের পরিবার—সবাই মিলে মোহরানার টাকা ছাড়া তালাক দিতে রাজি নয়। আর আমার কথা হলো, আমি একটি ভালো মেয়ে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। তাঁরা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি কেন টাকা দেব। আমি এখন কী করতে পারি। কীভাবে তালাক দিতে পারি, জানাবেন প্লিজ।
আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার চিঠি পড়ে বুঝতে পারছি, বিয়ের আগে আপনার স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন আপনার কাছে অনেক তথ্য গোপন করেছেন। তাঁদের এ ধরনের আচরণে আপনি প্রতারিত বোধ করছেন এবং তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি শুধু আইনি পরামর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব। মোহরানা নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, স্ত্রী বা স্বামী যে কেউ তালাক দিক না কেন, সব ক্ষেত্রেই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তালাকের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০ ধারা মোতাবেক দেনমোহর প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিনে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলেও স্ত্রী চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে স্ত্রী যদি দেনমোহর পরিত্যাগ করে, সে ক্ষেত্রে তা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। স্ত্রী ইচ্ছা করলে আংশিক বা সম্পূর্ণ দেনমোহর মওকুফ করে দিতে পারে। এর জন্য কোনো প্রতিদান প্রয়োজন নেই। তবে তা অবশ্যই স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতিতে হতে হবে। কাজেই এ সম্পর্কে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দেখতে পারেন। কাবিননামার কপি আপনি নির্ধারিত ফি দিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজি অফিস থেকে তুলতে পারবেন। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে—তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে, তখনই বা পরবর্তী সময়ে বা যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেবেন। আপনি বলেছেন মেয়েটি ও তার পরিবার আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। কেউ যদি প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে কারও কাছ থেকে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা বা তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করে কোনো কিছু আদায় করে, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা যেতে পারে। তবে এসব অভিযোগ আপনাকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। যদি আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে আপনার স্ত্রী ও তাঁর পরিবার আপনার কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করে তারপর আপনার ক্ষতিসাধন করেছে, তবে অবশ্যই এর জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার জন্য ঘটকের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন। দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তিকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। আপনার জন্য শুভকামনা।
২০২১ সালের জুলাই মাসে পারিবারিকভাবে আমি বিয়ে করি। সবকিছু মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু আঞ্চলিক কিছু রীতি–রেওয়াজ নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার মা–বাবা ও বোনের বনিবনা হচ্ছিল না। পরে আমার স্ত্রী আমার অনুমতি ছাড়াই তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে বাপের বাড়ি চলে যায়। যাওয়ার আগে আমার মা–বাবার সঙ্গে সে খারাপ আচরণ করে। পরে ফোনে বারবার চলে আসতে বললেও সে আসে না। তার অভিভাবকদের বিষয়টি জানানোর পরও কোনো লাভ হয়নি। সব দিক বিবেচনা করে আমি একজন আইনজীবীর পরামর্শে ফেরত আসার জন্য তাকে নোটিশ পাঠাই। কিন্ত তাঁরা নোটিশ গ্রহণ করেননি। আরও তিন মাস পরে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে আমি ডিভোর্স নোটিশ পাঠাই। এ সময়ে জানতে পারি সে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তারা নোটিশ ফেরত পাঠায়। এর মধ্যে নানা চেষ্টা করেও তাকে ফেরত আনা যায়নি। ২১ এপ্রিল আমাদের একটি কন্যাসন্তান হয়েছে শুনে আমি হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু সেখানে তাদের খুঁজে পাইনি। নানাভাবে কয়েক দিন চেষ্টা করেও তাঁদের কোনো খোঁজ পাই না। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছি শুনে শাশুড়ি ফোন করে মেয়েকে দেখে যেতে বলেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমি মেয়েকে দেখে আসি। এরপর অনেকবার গিয়েছি কিন্তু প্রতিবার শাশুড়ি অপমান করে ফেরত পাঠাতো। স্ত্রীও আসতে চায় না। ওই এলাকার মেয়রও তাঁদের রাজি করাতে না পারায় আমাদের নিজেদেরই ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?
নোটিশ পাঠানো, মেয়রের সালিসের উদ্যোগ, সব শেষে তালাক ৯০ দিনের মধ্যে কার্যকর হয়ে যাওয়ার কথা। তবে আপনার স্ত্রী যেহেতু অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তাই সেই তালাক কার্যকর হতে গর্ভকাল শেষ হওয়া জরুরি। সেটাও শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, যদি না এর মধ্যে সালিসের মাধ্যমে এবং আইন মেনে তা প্রত্যাহার করা হয়। তালাক দেওয়ার পর তালাকদাতা যদি মনে করেন, তাঁর সিদ্ধান্ত ভুল এবং এই তালাক তিনি বাতিল করতে চান, তাহলে তালাক গ্রহীতার নিকট লিখিত নোটিশ দিয়ে তালাক প্রত্যাহারের বিষয়টি জানাতে হবে। তালাক নোটিশের কপি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান/সালিসি পরিষদে পাঠানো হলে ওই তালাক প্রত্যাহারের বিষয়টিও তাঁদের লিখিত আকারে বা নির্ধারিত শুনানির তারিখে সশরীর উভয়পক্ষ হাজির হয়ে জানাতে হবে। তালাকদাতা কর্তৃক তালাক বাতিলের বিষয়টি হলফনামার মাধ্যমে স্বীকৃত হতে হবে। আপনার স্ত্রী নোটিশ গ্রহণ করেছেন কি না, তাতে কিছু আসে যায় না। আইনিভাবে প্রত্যাহার না করলে তালাক ইতিমধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে চাইলে কাজির উপস্থিতিতে পুনরায় আপনাকে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০ অনুসারে ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানকে নাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ওই সন্তানের অভিভাবক হলেন তিনি, যিনি ওই সন্তানের শরীর কিংবা সম্পত্তি অথবা উভয়ের তত্ত্বাবধান ও ভরণপোষণে আইনিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই আইন অনুযায়ী নাবালকের স্বাভাবিক এবং আইনি অভিভাবক হলেন পিতা। তবে নাবালকের সার্বিক মঙ্গল ও কল্যাণের গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী সন্তানের মাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদারির অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মেয়েশিশুকে মা তাঁর জিম্মায় রাখবেন। সন্তানের জিম্মাদারির নির্দিষ্ট বয়স পার হলেই যে সন্তান বাবার জিম্মায় যাবে, তা নয়। এ সময় অতিক্রম করার পরও সন্তানের সার্বিক কল্যাণ বিবেচনা করে সন্তানের হেফাজত পুনরায় মায়ের ওপর ন্যস্ত হতে পারে। নাবালক সন্তানের ভরণপোষণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য ব্যাপারে নৈতিক ও অর্থনৈতিক সব সুবিধা প্রদান করা একজন অভিভাবকের দায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে আপনাকে এই ভরণপোষণ প্রদান করতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের কথা আইনে উল্লেখ করা নেই। আপনি অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে বাচ্চার ভরণপোষণের টাকা প্রদান করতে পারেন। আইন অনুযায়ী আপনার মেয়ে মায়ের হেফাজতেই থাকবে। আপনি আপস-মীমাংসার মাধ্যমে আপনার সন্তানকে নিজের কাছে আনতে পারেন। তবে তাঁরা রাজি না হলে নাবালক সন্তানের জিম্মাদারির জন্য পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজের আদালতে আপিল করা যায়। আদালতের মাধ্যমে শিশুর বিষয়ে কোনো আদেশ প্রদান করা হয়ে থাকলে যদি কেউ আদালতের এখতিয়ারের সীমা থেকে তাঁকে সরিয়ে নেন, তাহলে আদালতের আদেশে ওই ব্যক্তি অনূর্ধ্ব এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাস পর্যন্ত দেওয়ানি কারাবাস ভোগ করতে বাধ্য থাকবেন। ওই দেওয়ানি কারাবাসের খরচসহ মামলার খরচ, এই আইন মোতাবেক হাইকোর্ট ডিভিশনে প্রণীত কোনো বিধি সাপেক্ষে যে আদালতে মামলাটি চলছে, তার বিবেচনার ওপর নির্ভর করে আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। একজন শিশুর সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মা এবং বাবা দুজনের ভালবাসারই প্রয়োজন আছে। আশা করি আপনারা দুজনেই সন্তানের সর্বোত্তম কল্যাণের কথা ভেবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে পারবেন।
আমার বয়স ৭২ বছর। প্রায় ১০ বছর আগে আমার স্ত্রী মারা যান। আমার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। আমি ব্যবসা করতাম। এখন অবসর জীবন যাপন করছি। সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছি। তাদের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখিনি। আর্থিকভাবে আমি স্বাবলম্বী। সন্তানেরা সবাই বিবাহিত এবং পেশাগত জীবনে সফল। তারা ব্যস্ত। মাসে একবার আমার সঙ্গে দেখা করার সময় পর্যন্ত তাদের হয় না। নাতি–নাতনিদের দেখতে ইচ্ছা করে, কিন্তু যেহেতু তারা ব্যস্ত থাকে, তাই তাদের বিরক্ত করতে চাই না। আমি আলাদা বাসায় থাকি। আমার দেখাশোনার জন্য ছেলেরা লোক রেখে দিয়েছে। কিন্তু এখন বার্ধক্যে এসে সন্তানদের অনুপস্থিতি একটু বেশি বোধ করি। তাদের সঙ্গ কামনা করি। আমি সন্তানদের ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল নই। তাদের প্রতি কোনো অভিযোগও নেই। কিন্তু আমাদের দেশে বৃদ্ধ বয়সে অনেক হতভাগ্য মা–বাবা সন্তানদের নিদারুণ অবহেলার শিকার হয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেন। এর কোনো প্রতিকার আছে কি?
মা-বাবা বার্ধক্যে উপনীত হলে সন্তানদের কাছ থেকে সেবাযত্নের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি অনুভব করেন। তখন মা-বাবার সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে অনেক মা–বাবাই কষ্টে জীবন যাপন করেন। অবহেলার শিকার হয়েও সন্তানদের সুখের কথা ভেবে তাঁরা সবকিছু মেনে নেন। আমাদের দেশে বৃদ্ধ মা–বাবার ভরণপোষণ দেওয়া একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ‘পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩’ নামক একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনটি সম্পর্কে অনেকেরই কোনো ধারণা নেই। মা–বাবার ভরণপোষণ নিশ্চিত করা এবং তাঁদের সঙ্গে সন্তানের বসবাস বাধ্যতামূলক করার বিধান রেখে সরকার ২০১৩ সালে এই আইন করে। মা–বাবার ভরণপোষণ আইন ২০১৩-এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তানকে তাঁর মা-বাবার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হবে এবং একাধিক সন্তান থাকলে প্রত্যেককে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হবে। আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো সন্তান তাঁর মা–বাবাকে অথবা উভয়কে তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধাশ্রম কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদাভাবে বাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। সন্তানেরা তাদের মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা করবে। শুধু তা–ই নয়, মা–বাবাকে নিয়মিত সঙ্গ প্রদান করার কথাও আইনে বলা আছে। কোনো সন্তানের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয় যদি বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়, তাহলে তারাও একই অপরাধে অপরাধী হবে। তাদেরও এই আইনের অধীন শাস্তির আওতায় আনা যাবে। মা–বাবার ভরণপোষণ আইনের ৩ (৭) ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে, সন্তানদের সঙ্গে বসবাস না করে আলাদাভাবে বসবাস করলে, উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তার প্রতিদিনের আয়-রোজগার, মাসিক আয় বা বার্ষিক আয় থেকে যুক্তিসংগত পরিমাণ অর্থ পিতা বা মাতা, বা ক্ষেত্রমতে উভয়কে নিয়মিত প্রদান করবে। অথবা মাসিক আয়ের কমপক্ষে দশ ভাগ পিতা-মাতার ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করবে।’ কোনো ব্যক্তি মা–বাবার ভরণপোষণ আইন অমান্য করলে প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচার করা হবে। কোনো আদালত এ আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ বাবা বা মায়ের লিখিত অভিযোগ ছাড়া আমলে নেবে না। আইনে আপস-নিষ্পত্তির ধারাও সংযুক্ত করা হয়েছে। মা–বাবার ভরণপোষণ আইন ২০১৩-এর ৫ (১) ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো প্রবীণ তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আনেন এবং সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে এই আইনের ব্যবহার আমাদের দেশে এখনো খুবই কম। আপনার সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। আপনার নিজের হয়তো কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, তবে আশা করি আপনার এই প্রশ্নের মাধ্যমে অন্যরা উপকৃত হবেন।
আমার স্ত্রী একটি নামকরা এনজিওতে চাকরি করেন। ওই এনজিওর নির্বাহী পরিচালক ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাঁকে নীল ছবিযুক্ত ভিডিও দেন। এ নিয়ে মামলা করা হয় ডিজিটাল আইনে। মামলা করার কিছুদিনের মধ্যে তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন। একই সঙ্গে এ ধরনের ভুল আর হবে না বলে একটি অঙ্গীকারনামা দেন। এ ঘটনার এক বছর পর সেই লোক আর তাঁর স্ত্রী মিলে অনেক ধরনের অপবাদ দিয়ে চিঠি দেন। তারপরও তাঁরা আমার স্ত্রীকে চাকরি থেকে বাদ দিতে পারেননি। এর মধ্যেই আমার স্ত্রী দীর্ঘ ১১ বছর পর অন্তঃসত্ত্বা হন। কিন্তু তারপরও অসুস্থতায় তাঁকে ছুটি না দিয়ে অফিস করতে বাধ্য করেন। একদিন অফিসে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার পর তাঁরা আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে না নিয়ে বাসায় ফেলে রেখে যান। পরে তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন, মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর আমার স্ত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এরপরও তাঁকে অযৌক্তিকভাবে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়ে মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত করা হয়। এরই মধ্যে কয়েক দিন আগে তাঁদের অফিসের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধানকে সেই নির্বাহী পরিচালক ঠিক একই রকম কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব পাঠান। সেই কর্মকর্তা জানালেন, তাঁকে ডেকে বলা হয়েছে—‘হয় টাকা নিয়ে মিটমাট করেন, নতুবা আপনার ইনক্রিমেন্ট বন্ধ, বেতনও আর বাড়বে না।’ এ অবস্থায় আমরা কীভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি? লোকটার যথাযথ শিক্ষা হওয়া জরুরি।
আপনার স্ত্রী ওই নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, সেটি কী অবস্থায় আছে জানাননি। কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সব ধরনের হয়রানি বন্ধের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট একটি রায় দেন। রায়ে হাইকোর্ট দেশের সব সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি, গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে কমিটি গঠন করার আদেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সব প্রতিষ্ঠানে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন বাধ্যতামূলক। হাইকোর্টের ওই নির্দেশনায় বলা আছে, কমিটিতে কমপক্ষে পাঁচজন সদস্য থাকবেন। বেশির ভাগ সদস্যকে হতে হবে নারী। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে দুজন সদস্য নিতে হবে এবং সম্ভব হলে একজন নারীকে কমিটির প্রধান করতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা ও জনমত তৈরির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সব প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং সংবিধানে বর্ণিত লিঙ্গীয় সমতা ও যৌন নিপীড়ন–সম্পর্কিত দিকনির্দেশনাটি বই আকারে প্রকাশ করতে হবে। হাইকোর্টের এ নির্দেশনা আইনে রূপান্তর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ নির্দেশনাই আইন হিসেবে কাজ করবে এবং সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ আইন প্রযোজ্য হবে। হাইকোর্টের রায়ে যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শারীরিক, মানসিক, মৌখিক যেকোনো ধরনের নির্যাতনই যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে। ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, পর্নোগ্রাফি, যেকোনো ধরনের অশালীন চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে ‘সুন্দরী’ বলাও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। কোনো ধরনের অশালীন উক্তি, কটূক্তি করা, কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো ইত্যাদি আইনের দৃষ্টিতে যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য করা হয়। রায়ে বলা আছে, কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, যেকোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন, অশালীন চিত্র, দেয়াললিখন, আপত্তিকর কিছু করা যৌন হয়রানির মধ্যে পড়বে। আপনার স্ত্রীর বস তাঁর সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছেন, নিঃসন্দেহে তা হয়রানির মধ্যে পড়ে। যেহেতু আপনার স্ত্রী একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, সে ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’তে তাঁর অভিযোগ জানাতে পারবেন। যে কেউ যৌন হয়রানি করলে ওই কমিটির কাছে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে অসদাচরণের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এ ধরনের কোনো কমিটি না থাকলে তিনি অবশ্যই মানবসম্পদ বিভাগে তাঁর অভিযোগ জানাবেন। তবে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। আপনারা ইতিমধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আপনার স্ত্রী যদি শ্রমিক হিসেবে শ্রম আইনের আওতায় পড়েন, সে ক্ষেত্রে তাঁর বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুসারে প্রসূতিকালীন সময়ে পূর্ণ বেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করার অধিকার আছে। কয়েকটি শর্তের ভিত্তিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ৪৫ ধারায় বলা আছে, অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিক, সন্তান প্রসবের আগে ৮ সপ্তাহ এবং প্রসবের পরের ৮ সপ্তাহ, মোট ১৬ সপ্তাহ পূর্ণ মজুরিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়ার অধিকার রাখেন। কোনো নিয়োগকর্তা যদি জেনে থাকেন যে তাঁর অধীন কোনো নারী শ্রমিক অন্তঃসত্ত্বা এবং আগামী ১০ সপ্তাহের মধ্যে তিনি সন্তান প্রসব করতে পারেন, তাহলে ওই শ্রমিককে তিনি এমন কোনো ভারী, ঝুঁকিপূর্ণ বা কষ্টকর কাজে নিয়োগ করবেন না, যার কারণে অনাগত শিশুটি মায়ের গর্ভে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত কাজের এই আইন মেনে চলতে হবে। আপনার স্ত্রী যদি ছুটির নোটিশ দিয়ে থাকেন বা তিনি তাঁর বসকে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত করে থাকেন, তবে অবশ্যই আইন অনুযায়ী আপনার স্ত্রী ছুটি পাওয়ার অধিকারী। সে ক্ষেত্রে যেহেতু তিনি আপনার স্ত্রীকে ছুটি দেননি বরং মানসিক নির্যাতন করেছেন, এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে (বোর্ড) অভিযোগ জানাতে পারেন। সেই সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারেন। সেই সঙ্গে হয়রানি ও হুমকির জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ধারায় প্রতিকার সাধারণত শান্তি রক্ষার মুচলেকার মামলা বলেই পরিচিত। ১০৭ ধারায় মামলা রুজু করে প্রতিপক্ষ কিংবা দায়ী ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড বা মুচলেকা সম্পাদনের জন্য বাধ্য করা যায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করতে হবে। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ কেন, কী কারণে আপনার শান্তি বিনষ্ট করছে এবং কোনো ভয়ভীতি দেখালে কখন ঘটনাটি ঘটেছে তা স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আরজির সঙ্গে কোনো প্রমাণ থাকলে তা দাখিল করতে হবে। কোনো সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করা থাকলে তা–ও দাখিল করতে হবে।
আমার বয়স ৩৬। আমি ১২ বছর যাবৎ বিবাহিত। আমার স্বামী আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের প্রথম দিকে আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন বদভ্যাস আমার নজরে আসা শুরু হয়। আমার পরিবার প্রথম থেকেই তাঁকে পছন্দ করেনি। কিন্তু আমি তাঁর প্রেমে অন্ধ হয়ে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁকে বিয়ে করি। তিনি কথায় কথায় আমাকে সন্দেহ করেন। বিয়ের আগে আমার যেসব ছেলে বন্ধু ছিল, বিয়ের পর আমার স্বামী তাদের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ রাখতে দেননি। এমনকি আমার খালাতো বা চাচাতো ভাইদের সঙ্গেও মেলামেশা তিনি ভালো চোখে দেখেন না। কোথায় যাই, না যাই, তা নিয়ে তিনি সব সময় খবরদারি করেন। সব সময় আমার ফোন চেক করেন। আমার চলাফেরা, পোশাক, সাজগোজ প্রতিটি বিষয় নিয়েই তাঁর আপত্তি। এসব নিয়ে আমি খুব মানসিক যন্ত্রণায় আছি। তাঁর এমন সন্দেহবাতিক স্বভাবের কারণে আমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমাদের কোনো সন্তান নেই। আমার কোনো পিছুটানও নেই। প্রায়ই আমার এক কাপড়ে তাঁর সংসার ছেড়ে বের হয়ে আসতে ইচ্ছা করে। ইচ্ছা করে নিজের জীবন শেষ করে দিতে। দিনের পর দিন তাঁর এসব আচরণ আমি আর সহ্য করতে পারছি না। পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।
আপনার স্বামী আপনার সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছেন, তা মানসিক নির্যাতন। এ ধরনের মানসিক নির্যাতন বাংলাদেশের আইনে পারিবারিক সহিংসতার আওতাভুক্ত হবে। পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোন নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। আপনি যে অভিযোগ করছেন, আপনার স্বামী আপনাকে প্রতিনিয়ত সন্দেহ করেন। শুধু তা–ই নয়, আপনার চলাফেরা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন তিনি নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এই আইন অনুযায়ী মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভয় দেখানো ইত্যাদি আচরণ পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে গণ্য করা হবে। এ ছাড়া হয়রানি, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অর্থাৎ স্বাভাবিক চলাচল, যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশে বাধা দেওয়া, কথা শোনানো, পুরুষতান্ত্রিক আচরণ দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা, সন্দেহ করা এগুলোও সহিংসতার আওতাভুক্ত হবে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯–এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ,পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এ প্রথমবারের মতো মানসিক নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৩ প্রণীত হয়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯-তে বলা হয়েছে মানসিকভাবে একজন নারীকে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত করলে তা পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত করা হবে। একজন শিশু বা নারী যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কর্তৃক পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তিনি দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারবেন। আইনের অধীন আপনি নিচের প্রতিকারগুলো চাইতে পারবেন— ক) এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার; (খ) চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ; (গ) প্রয়োগকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে সেবা প্রাপ্তির সুযোগ; (ঘ) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রাপ্তি বা অন্য কোনো আইন অনুসারে প্রতিকার প্রাপ্তির উপায়; আদালতে আবেদন: সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাঁর পক্ষে কোনো প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন প্রাপ্তির ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। আবেদন প্রাপ্তির পর আদালত যদি আবেদনপত্রেরসঙ্গেউপস্থাপিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করেএই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে পারিবারিক সহিংসতাঘটেছে বা ঘটার সম্ভাবনারয়েছে,তাহলে আদালত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন।এআইনের১৪ধারাঅনুযায়ী,বিজ্ঞআদালতচাইলেসঙ্গেসঙ্গেসুরক্ষারআদেশবানিরাপত্তারজন্যবিশেষব্যবস্থাগ্রহণকরতে পারবেন।এআইনের১৫ধারা অনুযায়ী, প্রয়োজনেআদালতভুক্তভোগীকেনিরাপদেথাকতেপ্রতিপক্ষকেভুক্তভোগীরআবাসস্থলেযেতেনিষেধাজ্ঞাপর্যন্তদিতেপারেন।সেইসঙ্গে১৬ধারাঅনুযায়ীক্ষতিপূরণ,চিকিৎসারখরচদিতেপ্রতিপক্ষকেআদেশদিতেপারেন।আপনি দ্রুত আইনের আশ্রয় নিন এবং সেই সঙ্গে আপনি একজন মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। কোনোভাবেই নিজের মূল্যবান জীবনের প্রতি কোনো অবহেলা করবেন না। আপনার প্রতি অনেক শুভকামনা।
আমি একজন বিবাহিত পুরুষ। বিয়ের দুই বছর হয়েছে। আমার জানামতে, আমার স্ত্রী অত্যন্ত নম্র, ভদ্র। ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত মুঠোফোন থেকে আমার কাছে একটা ফোন আসে। কলদাতা আমার স্ত্রী সম্পর্কে অনেক মানহানিকর, অপ্রীতিকর কথাবার্তা বলে। বিয়ের আগে আমার স্ত্রীর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল, প্রেম-ভালোবাসা ছিল ইত্যাদি। লোকটার দাবি, এখনো তার সঙ্গে আমার স্ত্রীর সম্পর্ক অটুট আছে। এখনো আমার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে তার কথা হয়, মুঠোফোনে এসএমএসে যোগাযোগ হয়। আমি ছেলেটির সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে রাজি হয়নি। কথা হওয়ার পর থেকে ছেলেটির সেই সিম বন্ধ আছে। তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দুজনের যে সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্ক আছে, তা নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এমন অবস্থায় ওই কলদাতাকে বিচারের মুখোমুখি করতে আমার কী করা উচিত?
কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ, কুৎসা রটানোর মাধ্যমে তাঁর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন আইনের চোখে অপরাধ। অপরিচিত কলদাতা আপনাকে আপনার স্ত্রী সম্পর্কে যে ধরনের অপ্রীতিকর তথ্য দিচ্ছেন, সেগুলো যদি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে থাকে, তাহলে আপনি তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারবেন। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪৯৯ থেকে ৫০২ ধারা পর্যন্ত মানহানি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি আরেক ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হতে পারে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করেন, তাহলে তিনি ওই ব্যক্তির মানহানি করেছেন বলে ধরা হবে। তবে আইনে কিছু ব্যতিক্রমের কথাও বলা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও মানহানি হবে না। মানহানি মামলার ক্ষেত্রে যে উপাদানগুলো দরকার তা হলো— প্রথমত, বক্তব্যটি অবশ্যই মানহানিকর হতে হবে। দ্বিতীয়ত, বক্তব্যটির দ্বারা কোনো ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার ব্যাঘাত ঘটবে। তৃতীয়ত, বক্তব্যটি বিদ্বেষমূলক হতে হবে। অর্থাৎ মানহানি হতে হলে অবশ্যই মিথ্যা কিছু বলতে হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে। সরল বিশ্বাসে সত্য কথা বললে সেটি কোনোমতেই মানহানি হবে না। সাধারণত মানহানিকর বক্তব্য দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মানহানির মামলা দায়ের করতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারা অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে আদালতের অনুমতি নিয়ে অন্য কেউ মামলা করতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সংজ্ঞা নির্ভর করে সামগ্রিক অবস্থার ওপর। যেমন আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রে চাইলে আপনি মামলা করতে পারেন। যেহেতু আপনার স্ত্রীর মানহানির ফলে আপনিও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন, তাই ১৯৮ ধারা অনুযায়ী আপনিও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং মামলা করতে পারেন। মানহানির অভিযোগে আপনি ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় ধরনের মামলা বা মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন। দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হয়। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেওয়ানি প্রতিকার, তাই ফৌজদারি মামলায় ক্ষতিপূরণ চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশ করেন, তখন যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ করেছেন, তিনি ফৌজদারি আদালতেও নালিশি মামলা হিসেবে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। মানহানির মামলাটি করতে হবে আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে। মানহানি মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে না। তবে সমন দিলে আদালতে হাজির না হলে সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৫০০ ধারা অনুযায়ী, মানহানির অপরাধের শাস্তি হচ্ছে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। আপনি মামলা করার আগে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে আপনার আইনগত অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীর মতামত গ্রহণ করবেন। আপনাদের জন্য শুভকামনা।
একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। প্রবাসে আসার আগে কাজির মাধ্যমে আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে তাঁকে বিয়ে করে আসি। এই কথা আমাদের দুজনের বন্ধুরা ছাড়া দুই পরিবারের কেউ জানতেন না। আমাদের সবকিছু ঠিক চলছিল। প্রায় দুই বছর চার মাস পর তাকে আমার ঘরে তোলা নিয়ে কথা চলছিল। কথার মধ্যে দুজনের ঝগড়া হয়। এরপর কথা বন্ধ থাকে কয়েক দিন। তার পর থেকে তাকে ফোন দিলে সে কথা বলতে চাইত না। কয়েক দিন পর হঠাৎ সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠায়। এখন আমি জানতে পেরেছি, আমার এক সাবেক বন্ধুর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়েছে। আমি কী তার (আমার স্ত্রী) বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি?
আপনি যাঁর সঙ্গে সংসার করতে চাইছেন, তিনি যদি আপনার সঙ্গে থাকতে না চান, তাহলে জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা আপনাদের দুজনের জন্যই ক্ষতিকর। আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্ত্রী আপনাকে ইতিমধ্যে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দিয়ে থাকেন, তাহলে তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে (স্ত্রী কর্তৃক তালাক) স্ত্রী স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কাজির মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনকে পাঠাতে হবে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১-এর ধারা ৭ অনুযায়ী, স্ত্রী তাঁর স্বামীকে তালাক দিতে চাইলে তালাক উচ্চারণ করার পর যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে ও স্বামীকেও এর কপি পাঠাতে হবে। আইনের বিধান অনুযায়ী, তালাক প্রত্যাহার না করা হলে চেয়ারম্যানের নিকট প্রেরিত নোটিশের তারিখ হতে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত তালাক কার্যকর হবে। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান দুই পক্ষের মধ্যে পুনর্মিলনের লক্ষ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। এই সালিসি পরিষদ পুনর্মিলন ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে ৯০ দিন বা গর্ভকাল—এই দুইয়ের মধ্যে যেটা পরে হবে, তা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। আপনি যদি মনে করেন, আপনাদের মধ্যে যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব, তাহলে আপনার স্ত্রী ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করতে পারেন। তা ছাড়া ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(৬) ধারা অনুসারে, তালাকের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রে ঘরসংসার করতে চাইলে নতুন করে আইন ও ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে করতে হবে। পুনর্বিবাহ করে ঘরসংসার করতে চাইলে আইনে কোনো বাধা নেই। আর আপনি যদি মনে করেন তা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে বাস্তবতা মেনে নেওয়াই শ্রেয়। আপনি আপনার চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানাননি আপনাদের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়েছে কি না। যদি দুই পক্ষের মধ্যে আইনগতভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তাহলে নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই।
আমি একজন ব্যবসায়ী ও অবিবাহিত। ফেসবুকে আমার সঙ্গে বরিশালের এক বিবাহিত নারীর প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিচয়ের শুরুতে জানতাম, সে খুব একাকিত্বে ভুগছে। শুনেছিলাম, সে তার প্রবাসী স্বামীর নীরব অবহেলার শিকার। এসব কারণে তার প্রতি আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ি। তার সঙ্গে কিছু সময় কথা না হলেই আমার বুকে ব্যথা হতো। একাধিকবার তার সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে। মুখে বলে সে আমাকে তার স্বামীর স্থানে বসিয়েছে। তার শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সাংসারিক সব ইচ্ছা আমাকে দিয়ে পূরণ করত। পরে আমি তার ভিন্ন রূপ খুঁজে পাই। জানতে পারি, আমার সঙ্গে প্রেমের আগে সে তার বাবার বাড়িতে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। তাদের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। একদিকে সে আমার কাছে স্বামীর সম্পর্কে বলছে, অন্যদিকে পুরোনো প্রেমিকদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে, শারীরিক সম্পর্কেও জড়াচ্ছে। বিশ্বাস করে তাকে আমি ভালোবেসেছিলাম। আমার বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে সে ছিনিমিনি খেলছে। প্রতিনিয়ত আমি প্রতারিত হচ্ছি। আমি আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাই না। তবে তার শাস্তি চাই। কীভাবে আইনি সহায়তা পেতে পারি?
প্রথমেই বলতে চাই, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এবার আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসছি। আপনি বলেছেন, মেয়েটি আপনার কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছেন এবং বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। প্রেমে প্রতারণার কোনো আইনি প্রতিকার সাধারণত নেই। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে যখন কেউ প্রেমের অভিনয় করে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে কারও কাছ থেকে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা বা তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করে কোনো কিছু আদায় করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা যেতে পারে। তবে এসব অভিযোগ আপনাকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করেন, তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। যদি আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে আপনার প্রেমিকা আপনার কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রেম করেছেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করে তারপর আপনার ক্ষতি সাধন করেছেন, তবে অবশ্যই এর জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে, ওই নারী প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবেন। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়। কোনো সম্পর্কে ভাঙন ধরলে অনেক সময় এক পক্ষ আবেগের বশবর্তী হয়ে বা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অপর পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মামলাগুলোর তেমন কোনো আইনগত ভিত্তি থাকে না। ফলে সেসব মামলা পরবর্তী সময়ে আর টেকে না। কাজেই আবেগের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের মামলা না করার পরামর্শই দেব। এতে আপনার সময় ও অর্থের অপচয় হবে।
আমার বয়স ২৭ বছর। এক ছেলের সঙ্গে আমার পাঁচ বছর সম্পর্ক ছিল। আমাদের শারীরিক সম্পর্কও হয়। তার কথা বাড়িতে জানানোর পর আমাদের পরিবার রাজি হচ্ছিল না। তাই আমি তাকে বলি যে আমি তাকে বিয়ে করতে পারব না। এরপর থেকে ছেলেটা আমার ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে। সে বলেছে, আমাকে অন্য কোথাও বিয়ে করতে দেবে না, আমাদের বাড়িতেও ভয় দেখাচ্ছে। সে আমার আত্মীয়স্বজনের কাছে আমার আর তার ছবি পাঠাচ্ছে আর সবাইকে আমার নামে আজেবাজে কথা বলছে। আমার বিয়ের কোনো প্রস্তাব এলে তা ভেঙে দিচ্ছে। তাকে মামলা করার ভয় দেখালে বলে, কেউ নাকি তার কিচ্ছু করতে পারবে না। মামলা করলে সে জেল থেকে বের হয়ে আবার আমার ক্ষতি করবে। ছবি ‘পাবলিক’ করে সে নিজেও আত্মহত্যা করবে, আর সবার কাছে আমার নাম বলে যাবে, যাতে আমি বিপদে পড়ি। তার এসব দেখে আমাদের বাড়িতে ভয় পেয়ে তার সঙ্গেই বিয়ে দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু আমি তাকে বিয়ে করতে চাই না। আমার কাছে মনে হয়, তার এসব কিছু মেনে নিলে পরে সে আরও খারাপ কিছু করার সাহস পেয়ে যাবে। এক বছর ধরে আমার তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আমার কী করা উচিত?
আপনার সাবেক প্রেমিক আপনার সম্পর্কে আত্মীয়স্বজনের কাছে কুৎসা রটাচ্ছে, ছবি পাঠাচ্ছে। সেই সঙ্গে আপনাকে হুমকি দিচ্ছে এবং ব্ল্যাকমেল করছে। প্রথমত, যেহেতু সে আপনাকে নিয়ে আপনার আত্মীয়স্বজনের কাছে কুৎসা রটাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা করা যায়। ফৌজদারি আদালতে মানহানির মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেন। মানহানির মামলায় সরাসরি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করা হয় না। সমন দেওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি আদালতে হাজির না হন, সে ক্ষেত্রে বিচারক অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন। দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হতে পারে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে। দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে। তা ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮–এর ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে, ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক বা মিথ্যা জেনেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে এর জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কেউ এ ধরনের অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সে যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আপনাকে হুমকি দেয় ও ভীতি প্রদর্শন করে, তাহলে আপনি তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, ছেলেটি আপনাকে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য বা তাকে বিয়ে করার জন্য আপনার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। বিয়ে না করলে সে ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে, কাজেই তা দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার সংজ্ঞায় পড়বে। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তার কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। যেহেতু সে আপনাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে, আপনি অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করবেন। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি, দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারেন।
একটা সম্পর্কের দুই বছর চলছে, কিন্তু এখন তিক্ততা চলে এসেছে। নানা কারণে তাই আর সম্পর্কটি টেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু ছেলে নাছোড়বান্দা, সম্পর্ক ভেঙে দিলে দেখে নেবে বলে ভয় দেখায়। ক্যাম্পাসে মেয়েকে ইচ্ছেমতো চলতে দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে করণীয় কী?
একটি সম্পর্কে যেকোনো পক্ষ যদি সম্পর্কটি আর রাখতে না চায়, তবে অযৌক্তিকভাবে জোর করে সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে বাধ্য করা যুক্তিসংগত নয়। আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, এখানে ছেলেটি তাঁর প্রেমিকাকে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে নিতে বাধ্য করছেন। সেই সঙ্গে তিনি মেয়েটিকে হুমকি দিচ্ছেন ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কেউ হুমকির শিকার হলে তাঁকে অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। হুমকির শিকার ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ তদন্ত করবে। যদি তদন্ত করে দেখা যায় হুমকি দেওয়ার ঘটনা সঠিক, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। কেউ হুমকি-ধমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়। ১০৭ ধারায় মামলা করার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড সম্পাদনের জন্য বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আপনি যদি নিরাপত্তার অভাববোধ করেন, তবে সে ক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করবেন। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ সব ঘটনার বিবরণ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আপনার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা আরজির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। ১০৭ ধারায় আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের হুমকি বা ভয়ভীতি দেখাবেন না, এ মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।
২০১৯ সালে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে স্ত্রী আমার সঙ্গে ঝগড়া করে তার বাবার বাড়িতে চলে যায় এবং আমাকে একটি তালাক নোটিশ পাঠায়। আমি ও আমার পরিবার তাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি, যাতে সে ফিরে এসে আবার সংসারে মন দেয়। কিন্তু সে কোনো অবস্থাতেই ফিরে আসেনি। সে অনেক জেদি ও মেজাজি। সব সময় টাকাপয়সার জন্য চাপ দিত। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ছোট একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সব সময় তার অযৌক্তিক দাবি আমার পক্ষে মেটানো সম্ভব হতো না। গত মাসে আমার স্ত্রী আমাকে এসএমএস পাঠিয়ে কাবিনের টাকা পরিশোধ করে দিতে বলে। আমাদের কাবিন ছিল ৫ লাখ টাকা। কিন্তু এখন সে বলছে ১০ লাখ টাকা কাবিন। আমাকে সে কাবিননামার ফটোকপির ছবি পাঠিয়েছে, যেখানে ১০ লাখ টাকা লেখা আছে। আমাদের আসল কাবিনে ৫ লাখ লেখা, গয়না বাবদ ২ লাখ টাকা উশুল দেখানো হয়েছে। আমি কোনো তালাকনামাতে সই করিনি। আমার কয়েকটি প্রশ্ন আছে। ১. আমাদের তালাক হয়েছে কি? কারণ, আমি কোথাও কোনো সই করিনি। ২. যদি স্ত্রী তালাক দেয়, তাহলে কি কাবিনের টাকা আমাকে দিতে হবে? ৩. সে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করছে। কিন্তু আমাদের কাবিনে টাকার পরিমাণ ৫ লাখ। তাকে কত টাকা দিতে হবে?
যদি কোনো স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ চান, তাহলে তাঁর সেই অধিকার রয়েছে। কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে যদি আপনার স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়ে থাকে, তাহলে তিনি সরাসরি আপনাকে তালাক দিতে পারেন। আর ১৮ নম্বর কলামে যদি কোনো ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে আদালতে যেতে হয়। স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা না থাকলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হয়। আপনার স্ত্রী যেহেতু আপনাকে ইতিমধ্যে তালাকের নোটিশ প্রদান করেছেন, কাজেই ধরে নিচ্ছি কাবিননামাতে দেওয়া ক্ষমতাবলেই তিনি নোটিশটি দিয়েছেন। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক দিতে চাইলে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ পৌরসভার মেয়র/ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হয়ে থাকে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে। আপনার চিঠি থেকে মনে হচ্ছে, নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মীমাংসার কোনো উদ্যোগ হয়নি এবং ইতিমধ্যে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। কাজেই আপনার স্ত্রীর দেওয়া তালাক কার্যকর বলে গণ্য করা হবে। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় কিংবা আগে তালাকের নোটিশ পাঠান, তাহলে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এই ধারণা সঠিক না। স্ত্রী তালাক দিলেও তাঁর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। আপনার শেষ প্রশ্নে আপনি জানতে চেয়েছেন, তাঁকে দেনমোহর বাবদ কত টাকা দিতে হবে বা তিনি আপনার কাছ থেকে ভরণপোষণ বাবদ কত টাকা পাবেন। কাবিননামা অনুযায়ী তাঁর যা প্রাপ্য, সেই টাকাই তিনি পাবেন। আপনি বলেছেন, কাবিননামায় দেনমোহরের পরিমাণ ৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা আছে এবং এর মধ্যে গয়না বাবদ ২ লাখ টাকা উশুলের কথা উল্লেখ আছে। সে ক্ষেত্রে তিনি দেনমোহর বাবদ ৩ লাখ টাকা পাবেন। এ ছাড়া যদি স্ত্রীকে আগে কোনো ভরণপোষণ না দেওয়া হয়, এ বকেয়া ভরণপোষণসহ ইদ্দতকালীন (তালাকের নোটিশ প্রদান থেকে তালাক কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সময়) ভরণপোষণও প্রদান করতে হবে। যদি আপনার মনে হয়, কাবিননামা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে জাল কাবিননামা তৈরির জন্য প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা করতে পারবেন। যদি কেউ মিথ্যা ও অবৈধ অর্থ লাভের আশায় জাল নিকাহনামা তৈরি করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে প্যানাল কোডের ৪৬৪/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/৩৪ ধারায় মামলা করা যাবে। দণ্ডবিধির ৪৬৫ ধারায় জালিয়াতির শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারা অনুযায়ী আদালতে নথি বা সরকারি রেজিস্টার ইত্যাদিতে জালিয়াতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বিচারালয়ের নথিপত্র বা মামলার বিবরণী-সংক্রান্ত কোনো দলিল বা জন্মনামকরণ, বিয়ে বা শবসংক্রান্ত রেজিস্টার হিসেবে গণ্য বা সরকারি সার্টিফিকেট জাল করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ অপরাধ জামিনযোগ্য নয়। ৪৬৭ ধারার অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ জালিয়াতিতে সহায়তার কারণেও হতে পারে।
আমার বাবা–চাচা–ফুফুরা আট ভাইবোন। পারিবারিক সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে বিরোধ আছে এবং একটি দামি জমি নিয়ে দুই চাচার মধ্যে রেষারেষি চলছে। মিথ্যা ঘটনা নিয়ে এই দুই চাচার একজন আরেক ভাই এবং আমার বাবার নামে থানায় একটি জিডি করেন। সেদিনই দুজন কর্মকর্তা এসে আমার বাবার সঙ্গে কথা বলে ঘটনা শোনেন এবং পারিবারিকভাবে বসার কথা বলে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যান। যেসব বিষয় পরিষ্কার হতে চাই—১. তিনি যা করেছেন, তা কি জিডি নাকি মামলা? জিডি আর মামলা কি এক? কখন জিডি মামলা হয়? ২. যিনি জিডি করেছেন, তিনি চান এটি থাকা অবস্থায় সম্পত্তি ভাগ হোক, যাতে তাঁর বিপক্ষে কিছু গেলে এটা দিয়ে আটকাতে পারেন। জিডি থাকা অবস্থায় সম্পত্তি বণ্টনের জন্য বসা কি ঠিক হবে? নাকি আমরাও জিডি করে রাখব? ৩. যদি এই জিডি এভাবে পড়ে থাকে, আমাদের কী অসুবিধা হতে পারে? আমার বাবা প্রবাসী, বিদেশে যেতে কি তাঁর কোনো সমস্যা হবে?
আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনার বাবা ও চাচাদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরোধের জের ধরে আপনার এক চাচা আপনার বাবা ও তাঁর আরেক ভাইয়ের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করেছে। যদিও এটি জিডি না এজাহার, সেটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে না। আপনি জিডির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি (যদি আপনাকে অবহিত করা হয়ে থাকে ইতিমধ্যে)। আপনি জানিয়েছেন জিডি করার পর দুজন কর্মকর্তা এসে আপনার বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যান। পুলিশ যদি আপনাদের কাছে টাকা দাবি করে, সেটি বেআইনি। এ ধরনের অপরাধের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এবার আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসি। কেউ ভয় বা হুমকি প্রদান করলে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে, কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, শিক্ষাসংক্রান্ত সনদ, দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া কোনো নাগরিক যখন নিজের কিংবা তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি থানায় গিয়ে জিডি করতে পারেন। ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে আদালত এই জিডি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবেন। জিডি হলো সাধারণ ডায়েরি (জেনারেল ডায়েরি) বা কোনো বিষয়ে সাধারণ বিবরণ। যেকোনো আইনি সহায়তা নিতে জিডির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো ব্যক্তি থানায় এটি করতে পারবেন। অন্যদিকে এজাহার হচ্ছে মামলা করার প্রথম পদক্ষেপ। জিডি ও এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বা এজাহার এক বিষয় নয়। জিডি হচ্ছে কোনো বিষয় সম্পর্কে থানায় অবহিত করা। কোনো অপরাধ ঘটার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য থানায় যে অভিযোগ জানানো হয়, তাকে এজাহার বলে। এজাহারের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যাদি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত ফরমে তুলে এফআইআর আকারে লিপিবদ্ধ করেন এবং মামলার জন্য প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এজাহারের মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। এজাহার মৌখিক ও লিখিত উভয় আকারেই হতে পারে। পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল ১৯৪৩–এর ৩৭৭ প্রবিধান এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ এবং ১৫৫ ধারায় জিডি সম্পর্কে বলা হয়েছে। এজাহারের ক্ষেত্রে পিআরবি বা পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল ১৯৪৩–এর ২৪৩ প্রবিধান এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ অনুসরণ করা হয়। আপনি বারবার জিডির কথা উল্লেখ করেছেন। কাজেই আন্দাজ করছি এখনো কোনো মামলা হয়নি। এবার আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, পারিবারিক সম্পত্তি বণ্টন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। এ ব্যাপারে জমিজমাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করেন, এমন কোনো আইনজীবীর পরামর্শ নিন। জিডি করার কারণে সেটা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে যাওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই, যদিও তা জিডির বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করছে।। কেন আপনার বাবার নামে জিডি করা হয়েছে, সেটা বিস্তারিত না জেনে কোনো পরামর্শ দেওয়া সম্ভব নয়। জিডিতে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার সত্যতা না থাকলে আপনারা অবশ্যই পাল্টা জিডি করতে পারেন এবং তাঁদের অসৎ উদ্দেশ্য এবং ক্ষতিকর কার্যকলাপ সম্পর্কে পুলিশকে অবহিত করতে পারেন। জিডি করতে কোনো প্রকার টাকাপয়সা লাগে না। এমনকি কেউ যদি লিখতে না পারেন কিংবা নিয়মকানুন না জানেন, তবে থানায় গিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে বললে তিনিই জিডির আবেদন লিখে অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে শুধু স্বাক্ষর দিলেই চলবে। আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তর হলো শুধু জিডির কারণে আপনার বাবার বিদেশ যাওয়া বাধাগ্রস্ত হবে না। আপনার প্রশ্ন থেকে যতটুকু বুঝতে পেরেছি, ততটুকু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আপনি অবশ্যই সব কাগজপত্রসহ একজন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করবেন। কাগজপত্র না দেখে সুনির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ অনুমানের ভিত্তিতে দেওয়া সম্ভব নয়।
আমার সঙ্গে একটি ছেলের দীর্ঘদিন সম্পর্ক ছিল। আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি। সে আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। আমি তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতাম এবং বিশ্বাস করতাম। বলতে দ্বিধা নেই, সম্পর্কে থাকা অবস্থায় আমি আমার বিভিন্ন ব্যক্তিগত ছবি তাঁর সঙ্গে শেয়ার করি। কিন্তু একপর্যায়ে আমাদের সম্পর্কে নানা জটিলতা দেখা দেয়। দুজনের সিদ্ধান্তে আমরা সম্পর্কটি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিই। এক বছর পর আমি পরিবারের পছন্দের একটি ছেলেকে বিয়ে করি। এখন আমার সাবেক প্রেমিক আমাকে নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছে। তার সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গ ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছে। সে বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আমাকে নানা রকম ভীতিকর মেসেজ পাঠাচ্ছে। ইতিমধ্যে সে বলেছে, আমি যদি আমার স্বামীকে তালাক দিয়ে তার কাছে ফেরত না যাই, তাহলে সে আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে আমাদের অন্তরঙ্গ ছবি দেখাবে। সে আমার কাছে টাকাও দাবি করছে। আমি প্রচণ্ড আতঙ্ক ও ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমার স্বামীকে যদি সে এসব দেখায়, তাহলে আমি কিছুতেই বিয়ে টিকিয়ে রাখতে পারব না। আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সবাই অত্যন্ত রক্ষণশীল। আমার স্বামীকে আগের সম্পর্কের কথা কোনোভাবেই জানাতে পারব না। এখন আমি কি কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি? আবার ভাবছি, আইনি ব্যবস্থা নিলে জানাজানি হবে। তখন আমার কী হবে?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করে, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতিপ্রদর্শক বা মিথ্যা জেনেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার করে, তাহলে এর জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কেউ এ ধরনের অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করলে অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। সে যেহেতু ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আপনাকে হুমকি দিচ্ছে ও ভীতি প্রদর্শন করছে, আপনি তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারবেন। আপনার সাবেক প্রেমিক আপনাকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করতে চাইছে, কাজেই ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী এ ধরনের ব্ল্যাকমেলকে চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে। ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড। ব্ল্যাকমেলিং একটি জঘন্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত সব আইন সম্পূর্ণরূপে আপনার পক্ষে। আপনি অতি দ্রুত নিকটস্থ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। প্রয়োজনে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করে প্রতিকার চাইতে পারেন।
আমি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছি। এক মেয়ের সঙ্গে আমার সাড়ে পাঁচ বছরের একটা সম্পর্ক ছিল। আমরা গোপনে ২০১৮ সালে সনাতন ধর্মমতে মন্দিরে গিয়ে বিয়েও করেছি। বিয়ের পর আমাদের অনেকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। আমাদের কারও বাসার কেউ এই বিয়ের কথা জানত না। আমি বিয়ের পর তার যাবতীয় দায়িত্বও নিয়েছি। এখন হঠাৎ আমার স্ত্রী এই সম্পর্ক অস্বীকার করছে এবং আমাকে এড়িয়ে চলছে। কোনোভাবেই স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সে আমার বাসায় আমার বাবাকে পর্যন্ত ফোন করে বলেছে যে আমি নাকি তাকে বিরক্ত করছি। শুনলাম, সে এখন অন্য কোথাও বিয়ে করছে পরিবারের মতে, আমি কিছু বললে তার পরিবার আমাকে মামলা, হামলা ইত্যাদি ভয় দেখায়। সে আমার সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করবে, সেটা কখনো ভাবিনি। ছেলেদের কি অনুভূতি নেই? তাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই? এত কিছুর পরও সে আমার সঙ্গে এমনটা করছে, মানতে পারছি না। বেঁচে থাকার কোনো কারণ পাচ্ছি না। কোনো আইনি উপায় থাকলে, তা জানতে চাই।
এটি খুব দুঃখজনক ব্যাপার যে আপনাকে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। হিন্দু বিয়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। রেজিস্ট্রেশন না করা হলে অনেক ক্ষেত্রে বিয়ে অস্বীকার করা হয়, যেমনটি আপনার ক্ষেত্রেও হয়েছে। নিবন্ধন না করলে, বিবাহিত থাকা অবস্থায় আবার কাউকে বিয়ে করলে পূর্ববর্তী বিয়েটি আদালতে প্রমাণ করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই জন্ম–মৃত্যুর মতো হিন্দুদের জন্য বর্তমানে বিবাহনিবন্ধন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ‘হিন্দু বিবাহনিবন্ধন আইন, ২০১২’ নামে পরিচিত। এই আইনে কীভাবে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে, সেটার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। তবে আইনে হিন্দু বিবাহনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। আপনার প্রশ্ন থেকে মনে হচ্ছে, আপনি সনাতন ধর্মমতে মন্দিরে বিয়ে করেছেন কিন্তু বিয়েটি নিবন্ধন করেননি। নিবন্ধন না করলেও আপনার বিয়েটি বৈধ হবে। হিন্দু বিয়েতে বিচ্ছেদের কোনো বিধান নেই। কাজেই স্বামী থাকা অবস্থায় একজন হিন্দু নারীর দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করার সুযোগ নেই। কেউ যদি এই বিধান লঙ্ঘন করেন, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থায় অন্যত্র বিয়ে করেন, তাহলে প্রথম স্বামী সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে। অন্যদিকে স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় যাঁকে বিয়ে করছেন, তাঁর কাছে আগের বিয়ের কথা গোপন করেন, তাহলে সেটি দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারা অনুসারে একটি অপরাধ। এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা। তবে যেহেতু আপনারা গোপনে বিয়ে করেছেন এবং ধরে নিচ্ছি নিবন্ধনও করেননি, তাই এই বিয়ে প্রমাণ করা খুব কঠিন। সে ক্ষেত্রে আপনাদের বিয়ের কোনো ছবি থাকলে, সেটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কোনো বন্ধুবান্ধব বা কেউ যদি বিয়েতে উপস্থিত থাকেন, তাঁদের সাক্ষী হিসেবে আদালতে নিয়ে যেতে পারেন। ছেলে হওয়ায় আইনকানুন আপনার পক্ষ নেবে না, এই ধারণা সত্যি নয়। সব মানুষের অনুভূতি ও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আইনের আশ্রয় লাভ ও আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যেকোনো নাগরিকের (নারী–পুরুষনির্বিশেষে) সাংবিধানিক অধিকার। সবশেষে বলতে চাই, সমস্যা যতই জটিল হোক, সেটা সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করুন। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন। জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আত্মহত্যা অমূল্য জীবনের অপচয়। প্রত্যাখ্যানের বেদনা মেনে নিতে কষ্ট হলে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।
আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হিসেবে আট বছর সততার সঙ্গে চাকরি করেছি। সব নিয়মকানুন মেনে প্রতিষ্ঠান থেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে এসেছি। দেড় বছর হয়ে গেছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনো আমার পাওনা মিটিয়ে দেয়নি। নিয়মমাফিক আমি ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), গ্র্যাচুইটিসহ অন্যান্য ভাতা পাব। কিন্তু তারা সেটা দিচ্ছে না। এখন আমি কি আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি? আইনের কোন ধারা আমার জন্য প্রযোজ্য হবে?
null
সমবয়সী একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক তিন বছর ধরে। আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু একটা সমস্যা আছে, মেয়েটি অনেক জেদি আর অন্তর্মুখী স্বভাবের। আর তাই সামান্য বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হলে সে আত্মহত্যা করতে চায়। আমি বুঝতে পারি না সে আমাকে ভয় দেখায়, নাকি এমন প্রবণতা তার মধ্যে রয়েছে। তার জেদি স্বভাব আর আত্মহত্যার প্রবণতা দূর করতে করণীয় কী, সেটা জানতে চাই। আর যদি সে আত্মহত্যা করেই ফেলে, সে ক্ষেত্রে তার প্রেমিক হিসেবে আমার আইনসংক্রান্ত কী কী জটিলতা হতে পারে? উল্লেখ্য, আমাদের বয়স ২৪ বছর প্রায়। এক বছরের মধ্যে আমরা পারিবারিকভাবে বিয়ে করতে যাচ্ছি।
আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে যে আপনার বান্ধবী কোনো মনোমালিন্য হলে আত্মহত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর আত্মহত্যার প্রবণতা না ভীতি প্রদর্শনের প্রবণতা রয়েছে, সেটা বোঝার জন্য এবং এই প্রবণতা দূর করার জন্য তাঁকে অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে নিয়ে যেতে হবে। আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে। আবেগপ্রবণতা, মাদকাসক্তি বা মানসিক অসুস্থতার কারণে অনেক সময় এসব প্রবণতা দেখা দেয়। তবে এটাও ঠিক যে অনেক ক্ষেত্রেই কেউ কেউ আবার আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অন্য কোনো ব্যক্তির প্ররোচনাতে। আর এ জন্যই প্ররোচনা দানকারীর জন্য আমাদের দেশের আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। এবার আসা যাক আইনগত বিষয়ে। দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ৩০৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, তাহলে যে ব্যক্তি আত্মহত্যায় সাহায্য করবে এবং প্ররোচনা দান করবে, সে ব্যক্তিকে ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং তাকে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হবে। তা ছাড়া সাক্ষ্য আইন ১৮৭২–এর ৩২ ধারায় বলা আছে, আত্মহত্যাকারীর মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট প্ররোচনা দানকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। তবে শুধু একটি সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। সুইসাইড নোটের সমর্থনে আরও সাক্ষ্য–প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে কোনো মনোমালিন্যের সূত্র ধরে তিনি যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটান, তবে অবশ্যই আপনি আইনগত জটিলতার মুখোমুখি হতে পারেন। তীব্র অপমান, তুচ্ছতাচ্ছিল্য, উত্তেজিত করার মাধ্যমে কাউকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া দেশের আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ। তবে অভিযোগের সমর্থনে সাক্ষ্য–প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে কারও বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা গেলে তখনই শাস্তি প্রদান করা যাবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর সম্মতি ছাড়া বা তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত কোনো কাজ দ্বারা সম্ভ্রমহানি হওয়ার প্রত্যক্ষ কারণে কোনো নারী আত্মহত্যা করলে তা আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। যার জন্য সে ব্যক্তির অনধিক ১০ বছর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হবে। আরেকটি বিষয় বলে রাখা ভালো, আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে সেই ব্যক্তিকে আত্মহত্যা বা নিজেকে ধ্বংস করার অপচেষ্টার অপরাধে এক বছরের জেলে যেতে হতে পারে। দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারামতে, যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করার উদ্যোগ নেন এবং অনুরূপ অপরাধ করার উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করেন, তা হলে তাঁর এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে বা উভয় শাস্তিই হতে পারে। আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপনার উচিত হবে মেয়েটির অভিভাবকদের এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা, যাতে তাঁরা একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে মেয়েটিকে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করেন। কোনো মানুষকে আত্মহত্যার মতো পরিণতিতে নয় বরং সম্মান, ভালোবাসায় বাঁচিয়ে রাখতে পারার ভেতরেই আনন্দ ও সার্থকতা।
আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ছয় মাস আগে যোগ দিয়েছি। চাকরির শুরু থেকেই আমার ঊর্ধ্বতন আমার সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ করেন। অনেকবার তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, তাঁর কিছু মন্তব্য ও আচরণ আমার পছন্দ নয়। তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনি সবকিছু সিরিয়াসলি নেন, জোকস বোঝেন না।’ কিন্তু আমার প্রতি তাঁর আচরণ যথেষ্ট আপত্তিকর। প্রায় প্রতিদিন তিনি আমাকে কারণে–অকারণে তাঁর রুমে ডেকে নেন এবং নানা ধরনের অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর কথা বলেন, যা আমার পক্ষে এখানে লেখা সম্ভব নয়। অনেক সময় ধরে আমাকে বসিয়ে রেখে তাঁর ব্যক্তিগত এবং দাম্পত্য জীবনের নানা কথা শুনতে বাধ্য করেন। কথায় কথায় তিনি আমাকে বোঝান, আমি অনেক সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়। কিন্তু আমার সৌন্দর্য আমি কোনো কাজে লাগাচ্ছি না। এভাবে আমার পেশাগত কোনো উন্নতি হবে না। মাঝেমধ্যেই তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে লাঞ্চ বা ডিনার করার জন্য বাইরে যেতে বলেন। তিনি প্রায়ই আমাকে বলেন, ‘কিছু দরকার হলে আমাকে জানাবেন, আমি প্রয়োজনে সব সময় আপনার পাশে থাকব।’ তাঁর এ ধরনের বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তিনি আমার শারীরিক গঠন ও সৌন্দর্য নিয়ে অনেক মন্তব্য করেছেন, যা আমার কাছে অশালীন মনে হয়েছে। এ অবস্থায় আমি কী কোনো আইনি প্রতিকার পেতে পারি?
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় নারীদের সুযোগ বাড়ছে। পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যায়ও তাঁরা পড়ছেন। যেমন হয়রানি একটা বড় সমস্যা। শারীরিক, মৌখিক, মানসিক—বিভিন্নভাবে একজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সব ধরনের হয়রানি বন্ধের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট একটি রায় দেন। এ রায়ে হাইকোর্ট দেশের সব সরকারি–বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানি, গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে কমিটি গঠন করার আদেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সব প্রতিষ্ঠানে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে সচেতনতা ও জনমত তৈরির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং সংবিধানে বর্ণিত লিঙ্গীয় সমতা ও যৌন নিপীড়নসম্পর্কিত দিকনির্দেশনাটি বই আকারে প্রকাশ করতে হবে। হাইকোর্টের এ নির্দেশনা আইনে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ নির্দেশনাই আইন হিসেবে কাজ করবে এবং সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে। হাইকোর্টের রায়ে যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শারীরিক, মানসিক, মৌখিক যেকোনো ধরনের নির্যাতনই যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে। ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, পর্নোগ্রাফি, কোনো ধরনের অশালীন চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। কোনো ধরনের অশালীন উক্তি, কটূক্তি করা, কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো ইত্যাদিও আইনের দৃষ্টিতে যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য করা হয়। রায়ে বলা আছে, কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, যেকোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন, অশালীন চিত্র, দেয়াল লিখন, আপত্তিকর কিছু করা যৌন হয়রানির মধ্যে পড়বে। আপনার বস আপনার সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছেন, তা আপাতদৃষ্টে হয়রানির মধ্যে পড়ে। সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই আপনার প্রতিষ্ঠানে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’তে আপনার অভিযোগ জানাতে পারবেন। যে কেউ যৌন হয়রানি করলে ওই কমিটির কাছে ভুক্তভোগী ব্যক্তি অভিযোগ জানাতে পারবেন। সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সাক্ষ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে যদি আপনার বসের অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে অসদাচরণের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এ ধরনের কোনো কমিটি না থাকলে আপনি অবশ্যই মানবসম্পদ বিভাগে আপনার অভিযোগটি জানাবেন। পাশাপাশি অপরাধের মাত্রা অনেক বেশি হলে দেশের অন্যান্য প্রচলিত আইনেও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
আমার মা ২০১৩ সালে মারা যান। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ২০১৪ সালে। চলতি বছর কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে আমার বাবা মারা গেছেন। আমার মায়ের নামের সম্পত্তিতে কি আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী অংশীদার হবেন?
মৃত স্ত্রীর যদি সন্তান থাকে, তবে স্বামী পাবেন এক–চতুর্থাংশ। সুতরাং আপনার মায়ের মৃত্যুর পর আপনার বাবা এক–চতুর্থাংশ সম্পত্তির মালিকানা পেয়েছেন। এই সম্পত্তি তাঁকে দেওয়ার পর বাকি সম্পত্তি আপনাদের মধ্যে বাঁটোয়ারা হওয়ার কথা। এখন আপনার বাবার মৃত্যুর পর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শুধু আপনার বাবার সব সম্পত্তির (আপনার মায়ের থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তিসহ) অংশীদার হবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার সৎমায়ের ঘরে আপনার বাবার যদি কোনো সন্তান থাকে, তাহলে সে আপনার বাবার সম্পত্তি থেকে আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) সম্পত্তি পাবে। যদি তাঁদের কোনো সন্তান না থাকে, তাহলে আপনার সৎমা আপনার বাবার সম্পত্তির সিকি (এক–চতুর্থাংশ) ভাগ পাবে। বাকি সম্পত্তি অন্য উত্তরাধিকারেরা পাবে। কাজেই প্রত্যক্ষভাবে আপনার মায়ের সম্পত্তিতে তাঁর কোনো অধিকার নেই।
আমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। সে যখন রাগ করে তার মাথা ঠিক থাকে না। আমার সঙ্গে রাগারাগি করে সে প্রায়ই তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। অনেক দিন সেখানে থাকে। সংসারের কোনো দায়িত্ব সে পালন করে না। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, কোনো বাগ্‌বিতণ্ডা হলে আমার স্ত্রী আমার নামে নারী নির্যাতনের মামলা করার হুমকি দেয়, যদিও আমি তাকে কখনোই কোনো ধরনের নির্যাতন করিনি। স্ত্রী যদি মিথ্যা মামলা করে আমার বিরুদ্ধে, সে ক্ষেত্রে আমি আগে থেকে কোনো প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারি কি না?
আপনার স্ত্রী যদি আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন, তবে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে, মামলাটি থানায় নাকি আদালতে হয়েছে। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার আরজি বা এজাহারের কপি তুলতে হবে। এরপর আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে, মামলাটির ধারা জামিনযোগ্য কি না। যদি তা জামিনযোগ্য হয়, তবে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারবেন। অভিযোগ জামিন-অযোগ্য হলে, উচ্চ আদালতে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাইতেও পারবেন। তবে হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এ মেয়াদের মধ্যেই নিম্ন আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হবে। আদালতে বিচার চলাকালে নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত থেকে হাজিরা দিতে হবে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আসামির জামিন বাতিল করে দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের আছে। সাধারণত পুলিশ প্রতিবেদন হওয়ার আগেই জামিন চাইতে হয়। পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার আগে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগটি যে মিথ্যা, তা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারেন। থানায় তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করবেন। অভিযোগপত্র দাখিল হয়ে গেলে মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি করা হয়। অভিযোগ গঠনের দিন আসামিকে হাজির হয়ে নতুন করে পূর্বশর্তে জামিন চাইতে হবে এবং জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। এই আবেদনে আসামি মামলা থেকে অব্যাহতি চাইতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন তিনি। মিথ্যা মামলা হওয়ার পর যদি পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়, তবে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে পারবেন। যদি আদালত জামিন দেন, তাহলে একজন পরিচিত জামিনদারের জিম্মায় আসামিকে জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। যদি জামিন না হয়, তাহলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে। যদি থানায় না হয়ে আদালতে মামলা (সিআর মামলা) হয়, তাহলে আদালত সমন জারি করতে পারেন কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত) এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়ছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। তা ছাড়া আপনার স্ত্রীর এ ধরনের হুমকি ও আচরণের কথা উল্লেখ করে আপনি নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখতে পারেন।
আমি যুক্তরাষ্ট্রে থাকি প্রায় আট বছর ধরে। সেখানে থাকার সময়ে বাংলাদেশের একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়। মেয়েটি তখন স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়ত। প্রায় দুই বছর ধরে তার সঙ্গে কথা বলে আমাদের সম্পর্কটি প্রেমের পথে গড়ায়। আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। বিদেশ থেকে নিয়মিত উপহার পাঠাতাম। সে আমার কাছে দু–তিনবার তার সেমিস্টারের টাকা চেয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। যখন যা চাইত আমি আমার সাধ্যমতো তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কথা ছিল আমি দেশে এলে আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হওয়ার। হঠাৎ–ই সে আমাকে এড়িয়ে চলতে থাকে। আগের মতো ফোনে কথা বলতে চায় না। ভিডিও কল করলে সে ধরে না। নানা অজুহাতে এড়িয়ে যায়। একদিন সে জানায়, আমার সঙ্গে সে আর সম্পর্ক রাখতে পারবে না। তার পরিবার থেকে অন্য এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছে। এসব শুনে আমি খুব ভেঙে পড়ি। আমি বারবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। সে ফোনে, ফেসবুকে আমাকে ব্লক করে দেয়। এর মধ্যে ওর এক বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারি সে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে। যাকে আমি এত ভালোবেসেছি তার প্রতারণা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমার কী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ আছে?
একটি মেয়ের সঙ্গে আপনার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এখন সে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করেছে। আপনি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। আপনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাকে উপহার দিতেন। প্রেম–ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহারের আদান–প্রদান ভালোবাসা প্রকাশের একটি মাধ্যম। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহারের দেওয়া–নেওয়া হলে সেটিকে আইনগত জটিলতার মধ্যে না আনাই ভালো। ভালোবেসে কাউকে কিছু দিয়ে সেটি ফেরত চাওয়া বা আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাওয়া একটি নৈতিকতা ও শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ। প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রেই ভাঙন আসতে পারে। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষেরই করা উচিত। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি, কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থ সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করে, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তার কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কাজেই আপনার প্রেমিকা যদি আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয় বা অন্য কোনো ক্ষতি করে, তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। কেননা কোনো সম্পর্ক ভেঙে গেলে যেকোনো এক পক্ষ প্রতারিত বোধ করতেই পারে। তবে আইনের চোখে তা প্রতারণা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আমার মা আমাকে খুশি হয়ে কিছু জমি দিতে চান। এ জন্য হেবা না দান দলিল করা ভালো হবে? আইনের ক্ষেত্রে কোনটি জোরদার হবে? যদি আমার অন্য ভাইবোন এটা বাতিল করতে চায়, তাহলে তারা কি সেটা পারবে? যদি পারে তাহলে কী করলে পারবে না? মা যদি আবার মানুষের চাপে পড়ে ফিরিয়ে নিতে চান, তাহলে কি ফিরিয়ে নিতে পারবেন?
আইন অনুযায়ী হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়ের মধ্যে হেবা দলিলে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। মুসলিম আইনে কারও কাছ থেকে প্রতিদান বা বিনিময় ছাড়া কোনো কিছু নিঃশর্তে গ্রহণ করাকে হেবা বলা হয়ে থাকে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপিঅ্যাক্ট)–এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তিদাতা কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাকে দান বলা হয়। দান বৈধ, হেবার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়, তা হলো— ১. দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা প্রদান। ২. গ্রহীতা তার পক্ষ হতে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা। ৩. দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান। হেবা করার পদ্ধতি শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে দানের ক্ষেত্রেও দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সম্মতি থাকতে হয়। ২০০৫ সালের আগস্ট মাস থেকে হেবা করা সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদি জীবিত থাকা অবস্থায় আপনার মা আপনার নামে এ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চান তাহলে তিনি হেবা দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রি করে তা করতে পারেন। অন্য উত্তরাধিকারীরা এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করতে পারবে না। দখল হস্তান্তরে আগেই শুধু হেবা দলিল বাতিল করা যায়। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলো বিদ্যমান থাকলে হেবা দলিল বাতিল করা যায় না। ক. হেবাকৃত সম্পত্তির দাতা-গ্রহীতা স্বামী বা স্ত্রী হলে। খ. গ্রহীতা মৃত্যুবরণ করলে। গ. দাতা-গ্রহীতার মধ্যে বিবাহ–অযোগ্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে। ঘ. হেবাকৃত সম্পত্তি গ্রহীতা কর্তৃক বিক্রি বা হস্তান্তরিত হয়ে গেলে। ঙ. হেবাকৃত সম্পত্তি বিলীন বা ধ্বংস হয়ে গেলে। চ. হেবাকৃত সম্পত্তির মূল্য বেড়ে গেলে। ছ. হেবাকৃত সম্পত্তির প্রকৃতি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেলে। জ. হেবাটি ‘হেবা বিল এওয়াজ’ (বিনিময়ে দান) হয়ে থাকলে হেবা দলিল বাতিল করা যায় না। উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলো বিদ্যমান না থাকলে আদালতের মাধ্যমে হেবা দলিল বাতিল করা যায়। কাজেই উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে আপনার মা যদি আপনাকে সব ধরনের শর্ত পূরণ করে সম্পত্তি হেবা করেন এবং আপনি যদি তাঁর কাছ থেকে দখল বুঝে নেন, সে ক্ষেত্রে আপনার ভাইবোনেরা তা বাতিল করতে পারবে না।
আমি গারো সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী বাংলাদেশি নাগরিক। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আমাদের ডিভোর্স ও দ্বিতীয় বিয়েতে নিরুৎসাহিত করা হয়। গারো খ্রিষ্টানদের জন্য ডিভোর্স এবং দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে বাংলাদেশের আইনে কী বলা আছে তা জানতে চাই।
বাংলাদেশের খ্রিষ্টান বিবাহবিচ্ছেদ নিজস্ব ধর্মীয় আইনে পরিচালিত হয়। যেসব আইনে খ্রিষ্টান ডিভোর্স পরিচালিত সেগুলো হলো দ্য ডিভোর্স অ্যাক্ট, ১৮৬৯, দ্য ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৯৭২, দ্য কোড অব ক্যানন ল’ (ক্যাথলিকদের জন্য)। ক্যানন আইনের ১০৫৬ ধারামতে, খ্রিষ্টান বিয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ঐক্য ও অবিচ্ছেদ্যতা। প্রটেস্ট্যান্টদের মতে, বিয়ে একটি ধর্মীয় সংস্কার। বিয়ে এবং বিয়ের বিচ্ছেদ নিয়ে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও দ্য ডিভোর্স অ্যাক্ট, ১৮৬৯ সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিষ্টান দম্পতির সম্পর্ক তিনটি উপায়ে ছিন্ন করা যায়— প্রথমত, দ্য ডিভোর্স অ্যাক্টের ধারা ১০ অনুযায়ী স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ এনে আদালতে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন। কিন্তু স্ত্রীর ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ এনে আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। তবে স্বামী যদি ব্যভিচারসহ ধর্মত্যাগ, অন্য ধর্ম গ্রহণ, অপর কোনো নারীকে বিয়ে করেন, কোনো নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকেন, বহুকামিতা, পাশবিকতা বা নৃশংসতা করেন, অথবা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া দুই বছর স্ত্রীর খোঁজখবর না রাখেন, তাহলেই শুধু স্ত্রী আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীর পক্ষে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করার কোনো সুযোগও এ আইনে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, নিচে উল্লেখ করা কারণে বিয়ে বাতিল করার জন্য যেকোনো পক্ষ আদালতে আবেদন করতে পারেন—১. স্বামী বিয়ের সময় এবং মামলা দায়ের করার সময় পর্যন্ত পুরুষত্বহীন ছিল; ২. বিয়ের পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এমন সম্পর্ক বিদ্যমান, যার কারণে বিয়ে করা আইনত নিষিদ্ধ; ৩. বর বা কনে কেউ বিয়ের সময় মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল; ৪. স্বামী বা স্ত্রী যে কারও পূর্ববর্তী স্ত্রী বা স্বামী বিয়ের সময় জীবিত ছিল। সর্বশেষ জুডিশিয়াল স্যাপারেশনের মাধ্যমেও সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাবে। ব্যভিচার, নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা বা কোনো কারণ ছাড়া দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে পরিত্যাগ করলে স্বামী বা স্ত্রী আদালতে জুডিশিয়াল স্যাপারেশনের মামলা করতে পারে। দ্য ডিভোর্স অ্যাক্ট, ১৮৬৯-এর ধারা ১৭ ও ২০-এর অধীনে বিবাহবিচ্ছেদ ও বাতিল–সম্পর্কিত রায় হাইকোর্ট ডিভিশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়, যা অনেক বিচারপ্রার্থীর জন্য ঝামেলাদায়ক। আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া জটিল বলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকে অ্যাফিডেভিট করে বিবাহবিচ্ছেদ ও আবার বিয়ে করে থাকেন। তবে তা আইনসিদ্ধ নয়। আগের বিয়ের বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ না হলে আবার বিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মমতে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
আমি ২৫ বছর ধরে বিবাহিত। আমার দুটি সন্তান। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমার স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে ছোটখাটো মনোমালিন্য লেগেই থাকে। তাঁর সঙ্গে আমার মনের মিল না হলেও কোনো দিন তেমন গুরুতর সমস্যা হয়নি। ২০১৬ সালে জানতে পারি তিনি একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন। জিজ্ঞাসা করলে তিনি মেয়েটির কথা অস্বীকার করেন। এরপর থেকে প্রায়ই তিনি কাউকে কিছু না বলে দুই–তিন দিনের জন্য বাসার বাইরে চলে যান। প্রতি সপ্তাহে তিনি বাসার বাইরে থাকেন। এ বছরের শুরুর দিকে হঠাৎ জানতে পারি ২০১৬ সালে তিনি মেয়েটিকে গোপনে বিয়ে করেছেন এবং সেই ঘরে তাঁর দুই বছর বয়সী একটি সন্তান আছে। এসব জানার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। মেয়েটি অত্যন্ত সুশ্রী, মেধাবী এবং আমার স্বামীর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। কিন্তু সে আমার স্বামীর প্রথম বিয়ে ও সন্তানদের কথা জেনেও এই সম্পর্কে জড়িয়েছে এবং তাকে বিয়ে করেছে। আমার স্বামী আমাদের জানিয়েছেন আমার প্রতি সব দায়িত্ব তিনি পালন করবেন। তবে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। কারণ, তিনি মেয়েটিকে খুব ভালোবাসেন। আমার স্বামী আলাদা বাসায় তাঁদের রেখেছেন এবং সব খরচ তিনি বহন করেন। বেশির ভাগ সময় মেয়েটির সঙ্গেই বসবাস করেন। আমাকে না জানিয়ে তিনি পুনরায় বিয়ে করেছেন, এই বিয়ে বৈধ কি? সেই ঘরে যে সন্তান হয়েছে, সে আমার স্বামীর অবর্তমানে তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে কি না?
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ ধারা অনুযায়ী বহু বিবাহের জন্য বর্তমান স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যক্তি যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করেন, তাহলে ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইনের অধীনে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের সম্পূর্ণ দেনমোহর তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করতে হবে। স্ত্রী ও সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া বিয়ের অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে এক বছর কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। তবে অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বা পুনরায় বিয়ে করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, কিন্তু বিয়েটি অবৈধ নয়। কাজেই আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে আপনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন, তবে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ হবে না। যেহেতু এই বিয়ে বৈধ কাজেই একজন স্বামী ও পিতা হিসেবে তাঁকে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও নাবালক সন্তানের ভরণপোষণ দিতে হবে। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, যেহেতু আইনের চোখে এটি একটি বৈধ বিয়ে, কাজেই বাবার মৃত্যুর পর শিশুসন্তান তার বাবার সম্পত্তিতে একজন উত্তরাধিকার হিসেবে পরিপূর্ণ অধিকার লাভ করবে।
আমার এক আত্মীয়া গোপনে একটি ছেলেকে বিয়ে করেন, যা দুই পরিবারের কেউ জানতেন না। দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। বিয়ের পর কিছু সমস্যার কারণে আমার আত্মীয়া মেয়েটি স্বামীকে তালাকও দিয়েছেন। প্রতিশোধ হিসেবে এখন ছেলেটি বিয়ের আগের ও পরের অনেক ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মেয়েটি কি মামলা করতে পারেন?
আপনার আত্মীয়া যদি আইনগত সব নিয়ম পালন করে তালাক দিয়ে থাকেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। তবে তিনি যদি আইন মেনে সঠিক নিয়মে তালাক না দেন, তাহলে আইনের দৃষ্টিতে তাঁরা এখনো বিবাহিত দম্পতি। এ ক্ষেত্রে যদি তাঁর স্বামী ফেসবুকে স্ত্রীর সঙ্গে ছবি প্রকাশ করেন, সেখানে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে আইনগত বিচ্ছেদ হলে এবং অবমাননাকর বা মিথ্যা কোনো কিছু সেই নারীর সম্পর্কে প্রচার করলে তা আইনত দণ্ডনীয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮–এর ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে, ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক বা মিথ্যা জেনেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কেউ এ ধরনের অপরাধ একাধিকবার করলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যদি তিনি ওই নারীকে নিয়ে লোকজনের কাছে আজেবাজে মন্তব্য বা কুৎসা রটান বা কোনো অসত্য বক্তব্য দেন এবং এতে আপনার আত্মীয়া মানহানির শিকার হন, সে ক্ষেত্রে তিনি মানহানির অভিযোগ এনে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানির মামলা করতে পারেন। ফৌজদারি আদালতে মানহানির মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযোগ থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেন। তবে মানহানির মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। সমন দেওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি আদালতে হাজির না হন, সে ক্ষেত্রে বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে।
আমার স্ত্রী আমাকে বিয়ের পর থেকেই অকথ্য নির্যাতন করে। সব সময় আমাকে টাকাপয়সার জন্য চাপ দেয়। আমার মা–বাবার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করে। সে আমার গায়েও অনেকবার হাত তুলেছে। সম্প্রতি সে এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, সে আমার মা–বাবার সামনে আমাকে মারধর করে। আমার মাকে মারতে উদ্যত হয়। একজন পুরুষ হয়ে আমি এই পরিস্থিতিতে আইনের দ্বারস্থ হতে পারি?
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য একটি বিশেষ আইন। পুরুষদের জন্য কোনো বিশেষ আইন নেই। তবে আপনি যেকোনো ব্যক্তির দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলে, দেশের অন্যান্য আইনে আপনার আশ্রয় গ্রহণ করার পরিপূর্ণ অধিকার আছে। যেকোনো মানুষের বিচার চাওয়া এবং বিচার পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার। কাজেই আপনি বিচার পাবেন না, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। যেহেতু আপনার স্ত্রীর দ্বারা আপনি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন, কাজেই আপনার উচিত হবে নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা। এ ছাড়া তাঁর কারণে পারিবারিক বা সামাজিক শান্তি–শৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ায়, কোনো কলহ-বিবাদ তৈরির আশঙ্কা কিংবা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩–এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দানের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করে তার শাস্তি হবে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আপনি চাইলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন।
আমি ১৯ বছরের মেয়ে। কলেজে পড়ি। একটি ছেলের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল চার বছর। করোনায় হঠাৎ সে আমাকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করেছে। দুই মাস পর জানতে পেরেছি। এই সময়ে সে আমার সঙ্গেও কথা বলে গেছে। আমাদের দুইবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। আমি এখন তার বিরুদ্ধে কেস করতে চাই। মা–বাবাকে জানাতে ভয় লাগছে। কী উপায় আছে আর?
প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, একটি ছেলের সঙ্গে আপনার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এখন সে অন্য আরেক মেয়েকে বিয়ে করেছে। আপনি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক সরাসরি কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। তবে ভালোবাসার মানুষ যদি আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয় বা অন্য কোনো ক্ষতি করে, তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে আপনার প্রশ্নে সে ধরনের কোনো অভিযোগ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এবং স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে আপনি আবেগ বা রাগের বশবর্তী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে চাচ্ছেন। আপনি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিয়ের প্রলোভন বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে একজন পুরুষ সঙ্গী শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে প্রলুব্ধ করে। পরে পুরুষটি যখন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না, ঠিক তখনই নারীটি আদালতে গিয়ে ‘ধর্ষণের’ মামলা ঠুকে দেন। এসব ক্ষেত্রে ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে কি না, এই প্রশ্ন আসে এই কারণে যে এর কোনোটিতেই যদি নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিংবা অমতে, বল প্রয়োগে বা ভীতি প্রদর্শন করে কিংবা ‘বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে’ এই মর্মে শঠতা করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করা না হয়, তাহলে এই মামলা টিকবে না। সুতরাং এখানে প্রতারণার অস্তিত্ব থাকলেও বিদ্যমান আইনের আওতায় একে আনা সম্ভব নয়। তবে জারপূর্বক শারীিরক সম্পর্ক বা ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেলে ভিন্ন কথা। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট হানিফ সেখ বনাম আছিয়া বেগম মামলা, যা ৫১ ডিএলআরের ১২৯ পৃষ্ঠায় এবং অন্য একটি মামলায়, যা ১৭ বিএলটিএর ২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে ১৬ বছরের অধিক বয়সী কোনো মেয়েকে যদি কোনো পুরুষ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে তা ধর্ষণের আওতায় আসবে না। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ যখন জেনে-বুঝে কোনো শারীরিক সম্পর্কে জড়াবেন, তখন পরবর্তী সময়ে সেই সম্পর্ককে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে আদালতের কাছে প্রমাণ করা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের দায়ে প্রতারণার মামলা চলতে পারে। তবে ভিকটিম যদি ১৬ বছরের কম বয়সী হয়, তাহলে সেটিকে ‘ধর্ষণ’ বলা হবে। কারণ, এই বয়সী মেয়ে সম্মতি দেওয়ার মতো সক্ষমতা রাখে না। যেহেতু আপনি আইনি বিষয় জানতে চাচ্ছেন তাই এই সব বিষয় আপনার বোঝা খুব দরকার। কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে বারবার ভাবতে হবে। কেননা, আবেগ বা রাগের বশবর্তী হয়ে আপনি যদি কোনো মামলা করে ফেলেন এবং তা আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়, সে ক্ষেত্রে আপনাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাজেই যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভালোমতো ভাবুন, নিশ্চিত হোন এবং তারপর ব্যবস্থা নিন। কোনো একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক পক্ষ যদি আর এগোতে না চায়, তবে এ নিয়ে আর জটিলতা না বাড়ানোই ভালো।
আমি একজন গৃহিণী। ৩ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। এখনো কোনো সন্তান হয়নি। বিয়ের পর থেকেই আমার স্বামী আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে। বিয়ের আগে বলেছিল সে আমাকে পড়াশোনা করাবে। কিন্তু বিয়ের পর আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। আমি স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের পর আর পড়তে পারিনি। সে অন্য মেয়েদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করে। আমি বাধা দিলে আমার গায়ে হাত তোলে। আমি বেশ কয়েকবার তালাকের কথা বলেছি। আমার পরিবারের থেকে তালাকে সম্মতি আছে, কিন্তু আমার স্বামী বলেছে কোনো অবস্থাতেই আমি তাকে তালাক দিতে পারব না। আমাকে তার সংসার করতেই হবে। আমি তাকে তালাক দিতে চাই। কীভাবে তালাক দিতে পারি? তালাক দিলে কি দেনমোহর পাব?
যেকোনো আইনসংগত কারণেই হোক না কেন, যদি স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ চান, তাহলে তাঁর এ অধিকার রয়েছে। তাঁকে জোর করে সংসার করানো সম্ভব না। কোনো এক পক্ষ যদি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তবে এ নিয়ে আর জটিলতা না বাড়ানো ভালো। আপনি যদি বিচ্ছেদ চান, তবে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কি না, তা দেখে সরাসরি তালাক দিতে পারেন। যদি ১৮ নম্বর কলামে কোনো ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে আদালতে যেতে হবে। স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা না থাকলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং কিছুটা জটিলও বটে। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে যে তালাক দিতে চাইলে তাকে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান/ পৌরসভার মেয়র/ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাক গ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে তখনই/ পরবর্তী সময়ে/ যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করতে হবে এবং সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, তালাক কার্যকরের পর তালাকটি যে কাজির মাধমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক। এই বিষয়ে অবশ্যই একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন। আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় কিংবা আগে তালাকের নোটিশ পাঠান, তাহলে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্ত্রী তালাক দিলেও তাঁর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া যদি স্ত্রীকে আগে কোনো ভরণপোষণ না দেওয়া হয়, এ বকেয়া ভরণপোষণসহ ইদ্দতকালীন (তালাকের নোটিশ প্রদান থেকে তালাক কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সময়) ভরণপোষণও প্রদান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ-সংক্রান্ত কোনো দাবিদাওয়া থাকলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতেও যেতে পারেন।
আমরা কয়েক ভাই। দেশে আছেন চারজন আর বিদেশে থাকেন দুজন। প্রশ্ন হলো এক ভাই লিভারের চিকিৎসার জন্য বিদেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার সুবিধার্থে আমরা সবাই আমাদের বসতবাড়ি ডেভেলপারকে দিতে সম্মত হই। কিন্তু যিনি অসুস্থ, এ মুহূর্তে তাঁর পক্ষে আসা সম্ভব নয়। তাঁর সঙ্গে বিদেশে আরেক ভাই থাকেন। এ ক্ষেত্রে অসুস্থ ভাই কি তাঁর সব লেনদেনের ক্ষমতা ওই ভাইকে অর্পণ করতে পারবেন? পারলে কীভাবে?
আপনার ভাই যেহেতু শারীরিক অসুস্থতার কারণে দেশে আসতে পারবেন না, সে ক্ষেত্রে তিনি দেশে অবস্থানরত কাউকে ‘ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’–এর মাধ্যমে যেকোনো কাজ তাঁর অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন। ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন ২০১২’–এর ধারা–২ অনুযায়ী পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অর্থ এমন একটি দলিল, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পক্ষে ওই দলিলে বর্ণিত বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে আরেকজন ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা অর্পণ করেন। আমমোক্তারনামা বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়। যেহেতু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি একটি আইনগত দলিল, কাজেই এটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। বিদেশে থাকাবস্থায় কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে তাঁকে প্রথমে একজন ভালো আইনজীবীর মাধ্যমে দলিলটি সঠিকভাবে ড্রাফট করাতে হবে। এরপর সে দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে। আপনার ভাইকে ওই দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কনস্যুলারের সামনে দলিলে সই করতে হবে এবং কনস্যুলারের মাধ্যমে তা সত্যায়িত হওয়ার পর ক্ষমতাদাতা অর্থাৎ আপনার ভাই ক্ষমতাগ্রহীতা বা আমমোক্তার বরাবরে পাঠিয়ে দেবেন। ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। পরে তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিদেশে সম্পাদিত আমমোক্তারনামা দলিলে বর্ণিত সম্পত্তিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত আছে কি না, তার তথ্য এবং দাগ–সংক্রান্ত তথ্যসম্পর্কিত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন এবং আরেকটি চিঠি প্রেরণ করবেন সহকারী সচিব (কনস্যুলার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর। জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে সব তথ্য আসার পর, সেখান থেকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের স্ট্যাম্প লাগাতে হবে এবং সেখানে আমমোক্তারনামা দলিলের ওপর একটি নম্বর ও তারিখ পড়বে। এ রকম বিদেশি আমমোক্তারনামার সত্যতা যাচাই করতে হলে জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে গিয়ে ওই নম্বর দিয়ে যাচাই করে নেওয়া যায়। এরপর এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই পদ্ধতিতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করলে আপনাদের বসতবাড়ি ডেভেলপারকে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
আমার মাকে আমার বাবা শুধু শুধু প্রায়ই মারে। এমনকি ঝগড়া করে মাকে ঘরে ঢুকতে দেয় না। আমি পরিবারের বড় ছেলে। বয়স ২২ বছর। আমার একটি ছোট বোন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে, আর ছোট ভাই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আমি ছোটখাটো একটা চাকরি করি। মায়ের প্রতি বাবার আচরণের কথা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। মা সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে নেয়, শুধু আমাদের কথা চিন্তা করে। একবার তো মা আত্মহত্যা করতেও গিয়েছিল। কিন্তু আমি দেখে ফেলেছি, এ অবস্থায় আমি নিজেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এই সমস্যা সমাধানের কি কোনো আইনগত বিধান আছে?
পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোনো নারী সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। আপনি যে অভিযোগটি করছেন, আপনার বাবা আপনার মাকে মারধর করেন, এ বিষয়টি পারিবারিক সহিংসতার সংজ্ঞায় পড়বে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ সালে এতে সই করা রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সম–অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এ প্রথমবারের মতো পারিবারিক সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৩ প্রণীত হয়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯–এ বলা হয়েছে, শারীরিক ও মানসিকভাবে একজন নারীকে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত করলে, তা পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত করা হবে। একজন নারী, যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কর্তৃক পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারবেন। আইনের অধীনে আপনার মা যেসব প্রতিকার চাইতে পারবেন— এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার; চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ; আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ; প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তাপ্রাপ্তি বা অন্য কোনো আইন অনুসারে প্রতিকারপ্রাপ্তির উপায়। আদালতে আবেদন: আপনার মা বা তাঁর পক্ষে কোনো আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপ্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে আদালত আবেদন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ: আবেদনপ্রাপ্তির পর আদালত যদি আবেদনপত্রের সঙ্গে উপস্থাপিত তথ্য পর্যালোচনা করে এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে প্রতিপক্ষ কর্তৃক বা তার প্ররোচনায় কোনোরূপ পারিবারিক সহিংসতা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, তবে আদালত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন। আপনার মা যেহেতু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখোমুখি হচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে আদালতে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারেন।
স্কুলে পড়ার সময়ে এক মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। এরপর এসএসসি পরীক্ষার আগে তার বিয়ে হয়ে যায়। তখন ছোট থাকায় সেই ভালোবাসা আটকাতে পারিনি। বিয়ের পাঁচ বছর পর হঠাৎ মেয়েটি আমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। তত দিনে তার একটি সন্তানও হয়েছে। তার স্বামী দেশের বাইরে থাকে। নতুন করে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, সেটাও পাঁচ বছর হয়ে গেছে। এখন আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। সে–ও আমার কাছে চলে আসতে চায়। কিন্তু আমার বা মেয়েটির পরিবার এ সম্পর্ক মেনে নেবে না। আমি একটি চাকরি করি, যা দিয়ে আমার মোটামুটি চলে যায়। এখন আমি জানতে চাই, আমরা কীভাবে বিয়ে করব? পরবর্তী সময়ে আমার প্রেমিকার স্বামী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে কি না? তাদের ছেলেটি কি আমাদের কাছে রাখতে পারব? ছেলের বয়স ৮ বছর।
আপনার প্রেমিকাকে বিয়ে করতে চাইলে আগে তাঁকে অবশ্যই তাঁর স্বামীর কাছ থেকে তালাক গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। তবে তা কার্যকর করতে হলে আইনগত পদ্ধতি মানতে হবে। তালাকের নোটিশ পাঠানোর বেলায় কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব নিয়ম ঠিকমতো না মানলে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, যিনি তালাক দেবেন, তাঁকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপর পক্ষের ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে নোটিশ লিখিতভাবে পাঠাতে হবে। ওই নোটিশের কপি অপর পক্ষের কাছেও পাঠাতে হবে। তবে আদালতের মাধ্যমে কোনো তালাকের ডিক্রি হলে সেটির কপি চেয়ারম্যানকে প্রদান করলেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। তালাক কার্যকরের পর তালাকটি কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক। স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে কোনো কারণে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তানেরা কার কাছে থাকবে বা কে হবে তাদের অভিভাবক—এই প্রশ্ন দেখা দেয়। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, প্রায় সব ক্ষেত্রে বাবা সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। এই আইনের আওতায় সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং সন্তানের জিম্মাদারি এই দুটি বিষয়কে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সাধারণত শিশুসন্তানের তত্ত্বাবধান, অভিভাবকত্ব ও ভরণপোষণের বিষয়গুলো পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ ও গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৯০ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে বা স্বামী মারা গেলে, ছেলেসন্তান সাত বছর পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকবে, এটাই আইন। এ ক্ষেত্রে মায়ের অধিকার সর্বাগ্রে স্বীকৃত। কিন্তু আপনার প্রেমিকার সন্তানের বয়স আট, সে ক্ষেত্রে সন্তানের হেফাজতের কোনো অধিকার মায়ের থাকে না। তবে নির্দিষ্ট বয়সের পরও মায়ের জিম্মাদারিত্বে সন্তান থাকতে পারে, যদি আদালত বিবেচনা করেন যে সন্তান মায়ের হেফাজতে থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে, তার কল্যাণ হবে এবং স্বার্থরক্ষা হবে—সে ক্ষেত্রে আদালত মাকে ওই বয়সের পরও সন্তানের জিম্মাদার নিয়োগ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, মুসলিম আইনে মা সন্তানের আইনগত অভিভাবক নন; কেবল জিম্মাদার বা হেফাজতকারী।