id
stringlengths
8
103
url
stringlengths
33
357
title
stringlengths
0
175
summary
stringlengths
0
1.51k
text
stringlengths
30
235k
news-54690291
https://www.bbc.com/bengali/news-54690291
দুর্গাপূজার সময়ে যেভাবে শোক পালন করেন 'মহিষাসুরের বংশধরেরা'
হিন্দু বাঙালীরা যে সময়ে তাদের সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপন করেন, সেই সময়েই শোক পালন করেন অসুর বংশীয় আদিবাসীরা।
দুর্গাপুজায় মহিষাসুর বধ্যে মধ্য দিয়ে অশুভর ওপর শুভর বিজয় দেখানো হয়। কিন্তু সেটা বিজয়ীর লেখা ইতিহাস বলেই গবেষকরা এখন বলছেন। তাদের লোককথা অনুযায়ী, আর্যদের দেবী দুর্গা এই সময়েই তাদের রাজা মহিষাসুরকে ছলনার মাধ্যমে হত্যা করেছিলেন। রাজাকে হারানোর শোক হাজার হাজার বছর ধরেও ভুলতে পারেননি আদিবাসী সমাজ। 'অসুর' ভারতের একটি বিশেষ আদিবাসী উপজাতি। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড আর বিহার - এই তিন রাজ্যের সরকারি তপশিলী উপজাতিদের তালিকার একেবারে প্রথম নামটিই হল অসুর। তবে এখন 'অসুর' ছাড়া অন্য আদিবাসী সমাজও মহিষাসুর স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়ের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে 'মহান অসুর সম্রাট হুদুড় দুর্গা স্মরণ সভা'র আয়োজন প্রতিবছরই বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন আদিবাসী সমাজ-গবেষকরা। "২০১১ সালে গোটা পশ্চিমবঙ্গে ২০০-র কিছু বেশি এরকম স্মরণসভা হয়েছিল, ২০১৮ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০০-র কিছু বেশি," বলছিলেন মহিষাসুর তথা ভারতের আদিবাসীদের উৎস সন্ধানে এক নির্মীয়মাণ তথ্যচিত্রের পরিচালক সুমিত চৌধুরী। মহিষাসুরের স্মরণে পূজা। আরও পড়তে পারেন: রামকে নিয়ে রসিকতা: অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা অযোধ্যা নেপালে, রাম নেপালি রাজপুত্র: নেপালের প্রধানমন্ত্রী যখন হিন্দু রীতিতে বিয়ে হলো মসজিদের ভেতরে আর এবছর পশ্চিমবঙ্গের শুধু তিনটি জেলা - মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরেই সাড়ে ৩৫০০ জায়গায় এই স্মরণ সভা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন আদিবাসীদের সামাজিক সংগঠন মাঝি পারগানা গাঁওতার নেতা চরন বেসরা। মহিষাসুরের নাম হুদুড় দুর্গা কেন হিন্দুদের বিশ্বাস মতে, তাদের দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। আবার আদিবাসী সমাজ মনে করে, দুর্গা আসলে তাদের 'সম্রাট মহিষাসুর'-এর নাম, যেখানে তিনি পরিচিত হুদুড় দুর্গা বলে। গবেষক শরদিন্দু উদ্দীপনের ব্যাখ্যা, "হুদুড় শব্দটার অর্থ হল ঝঞ্ঝা, বিদ্যুৎ বা বজ্রের ধ্বনি। এক্ষেত্রে মহিষাসুরের প্রভাব আর শক্তি ছিল বজ্রের মতো। আর দুর্গা শব্দটা দুর্গের রক্ষক অর্থে ব্যবহৃত। এটা পুংলিঙ্গ। প্রবল শক্তিশালী এক দুর্গের রক্ষক, অর্থাৎ রাজাই ছিলেন মহিষাসুর বা হুদুড় দুর্গা।" বুন্দেলখণ্ডে এই মন্দিরে মহিষাসুরের পূজা হয় থাকে। "তিনি ছিলেন অত্যন্ত বলশালী এবং প্রজাবৎসল এক রাজা। আদিবাসীদের প্রচলিত লোকগাথা অনুযায়ী এক গৌরবর্ণা নারীকে দিয়ে তাদের রাজাকে হত্যা করা হয়েছিল।" "এক গৌরবর্ণা নারীই যে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, তা হিন্দু পুরাণেও আছে। দেবী দুর্গার যে প্রতিমা গড়া হয়, সেখানে দুর্গা গৌরবর্ণা, টিকলো নাক, যেগুলি আর্যদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য। দুর্গার আরেক নাম সেজন্যই গৌরী। অন্যদিকে মহিষাসুরের যে মূর্তি গড়া হয় দুর্গাপূজায়, সেখান তার গায়ের রঙ কালো, কোঁকড়ানো চুল, পুরু ঠোঁট। এগুলো সবই অনার্যদের বৈশিষ্ট্য," ব্যাখ্যা তথ্যচিত্র নির্মাতা সুমিত চৌধুরীর। মি. উদ্দীপন আরও বলছিলেন যে আর্যরা ভারতে আসার পরে তারা কোনোভাবেই মহিষাসুরকে পরাজিত করতে পারছিল না। তাই তারা একটা কৌশল নেন, যাতে এক নারীকে তারা ব্যবহার করেন মহিষাসুরকে বধ করার জন্য। মহিষাসুর বধের দুই বিপরীত কাহিনী মহিষাসুরকে স্মরণ করছে আদিবাসী সম্প্রদায়। হিন্দু পুরাণে যেমন মহিষাসুর আর দেবী দুর্গার যুদ্ধের কাহিনী আছে, আদিবাসী লোকগাথাতেও সেই কাহিনী রয়েছে, কিন্তু দুটি কাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বিপরীত। "রাজা মহিষাসুরের সময়ে নারীদের অত্যন্ত সম্মান দেওয়া হত। এবং এরকম একজন রাজা কোনও নারীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন না, বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না, এরকমটাই ধারণা ছিল আর্যদের। তাই তারা দুর্গাকে এই কাজে ব্যবহার করেছিলেন বলেই আদিবাসী সমাজ মনে করে," বলছিলেন শরদিন্দু উদ্দীপন। আর হিন্দুদের পুরাণে মহিষাসুরকে একজন 'ভিলেন' হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। মহিষাসুরকে সাধারণত দানব হিসেবে তুলে ধরা হলেও এবারের দুর্গাপূজায় তাকে করোনাভাইরাস হিসেবে দেখানো হয়েছে। অসুর এবং অন্যান্যা আদিবাসী সম্প্রদায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উনবিংশ শতকে প্রথম পৌরাণিক কাহিনীগুলির বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক পর্যালোচনা করেছিলেন সামাজিক কর্মকর্তা ও ইতিহাসবিদ জ্যোতিরাও ফুলে। হিন্দুদের অবতার ও দেবদেবীদের আলোকে তিনি বিশ্লেষণ করেছিলেন ভারতের আদিবাসীদের লোকগাথা ও ইতিহাস। তারপরে মি. ফুলের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যান ভারতের সংবিধান রচয়িতা বি. আর. আম্বেদকর। পুরাণ ও লোককথার ওপরে ভিত্তি করে তিনি আর্য ও অনার্যদের সংঘাতকে বিশ্লেষণ করেছিলেন। তার লেখাতেই প্রথম বলা হয় দানব, রাক্ষস, দৈত্য, কিন্নর, নাগ, যক্ষ এরা সব মিলে যে 'অসুর' সম্প্রদায়, তারা আসলে মানুষই ছিলেন। তিনিই প্রথম এই অসুর সম্প্রদায়ের লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন। কীভাবে মহিষাসুরের জন্য শোক পালন করা হয় খাজুরাহোর মন্দিরে মহিষাসুরের মূর্তি। চিরাচরিত ভাবে দুর্গাপূজার সময়টাতেই মহিষাসুরের জন্য শোক পালন করে থাকে আদিবাসী সমাজ। কোথাও অরন্ধন পালন করা হয়, কোথাও জানলা-দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকেন আদিবাসীরা, যাতে দুর্গাপূজার যে উৎসব, সেই মন্ত্র বা ঢাকের শব্দ যাতে তাদের কানে না যায়। দুর্গাপূজার এই সময়ে তারা অশৌচ পালন করেন এবং ভুয়াং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নাচ হয়। দাসাই নাচ করেন তারা, যেখানে পুরুষরা নারী যোদ্ধার ছদ্মবেশ ধারণ করে কান্নার সুরে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘোরেন। "তাদের গানটা এরকম : 'ওকার এদম ভুয়াং এদম জনম লেনা রে, ওকার এদম ভুয়াং এদম বছর লেনা রে'। তারা বিশ্বাস করে এই গানের মধ্যে যে প্রশ্ন আছে, তার উত্তর একমাত্র জানে হুদুড় দুর্গা। সে যদি এই গান শুনতে পায়, তাহলে জবাব দেবে এবং হুদুড় দুর্গাকে তারা চিহ্নিত করতে পারবে," বলছিলেন শরদিন্দু উদ্দীপন। "তারা 'বিন্দি বা মাকড়সাকে বলে, 'ও বিন্দি, তোমরা কি কেউ আমার রাজাকে দেখেছ? আমাদের রাজাকে কোনও এক গৌরবর্ণা নারী চুরি করে নিয়ে গেছে'," আদিবাসী সমাজের লোকগাথা বিশ্লেষণ করে বলছিলেন শরদিন্দু উদ্দীপন। মহিষাসুর স্মরণের ধরণ পাল্টাচ্ছে আদিবাসী সমাজের নেতা চরন বেসরা জানাচ্ছেন, এবছর করোনা মহামারির কারণে তাদের মূল কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানটি হয় দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পরের দিন। কিন্তু গ্রামে গ্রামে মানুষ মহিষাসুর স্মরণ করছেন নিজেদের মতো করে। "ষষ্ঠী, সপ্তমী থেকেই শুরু হয় শোক পালন। দাসাই, ভুয়াং এগুলো চলতে থাকে পাড়ায় পাড়ায়। আর দশমীর দিন হয় বড় অনুষ্ঠান। আমরা এগুলো করতে শুরু করেছি ২০১২ সাল থেকে। আর প্রতিবছরই সংখ্যাটা বাড়ছে। "আমরা চেষ্টা করছি আর্য সভ্যতা-সংস্কৃতির বিপরীতে ভারতের আদি বাসিন্দাদের সংস্কৃতি পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে," বলছিলেন চরণ বেসরা। বছর দশেক আগে থেকে সংগঠিতভাবে মহিষাসুর স্মরণ অনুষ্ঠান করা হলেও আদিবাসী সমাজ কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে তাদের রাজার জন্য শোক ব্যক্ত করে আসছে। নতুন করে যেভাবে শোক পালন অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে, তার সঙ্গে চিরাচরিত প্রথায় শোক পালনের একটা ফারাক আছে বলে মনে করেন মহিষাসুর গবেষক প্রমোদ রঞ্জন। মি. রঞ্জন এখন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন, কিন্তু তার বড় পরিচয় হল ভারতের নানা জায়গায় ঘুরে মহিষাসুর সম্বন্ধীয় ঐতিহাসিক প্রমাণ যোগাড় করেছেন তিনি। "তফাৎটা হল যে চিরাচরিত প্রথায় যেভাবে শোক পালন হত, তার ভিত্তি ছিল লোকগাথা আর এখন যেটা হচ্ছে সেটা একটা ইতিবাচক সাংস্কৃতিক রাজনীতি। যেটা একদিকে মনুবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আদিবাসী সমাজের রুখে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা অন্যদিকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াস," বলছিলেন মি. রঞ্জন। মহিষাসুরের খোঁজে গবেষকদের মতে মহিষাসুর সংক্রান্ত যে লোকগাঁথা রয়েছে, তা প্রায় ৩০০০ বছর পুরনো, যখন আর্যরা ভারতবর্ষে আসেননি। এমন কি বুদ্ধেরও আগের যুগের ইতিহাস এটা। আর মহিষাসুর সম্বন্ধীয় লোকগাঁথা গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই পাওয়া যায়। উত্তর ভারত থেকে শুরু করে দাক্ষিণাত্য, বর্তমানের নেপাল - বাংলাদেশেরও নানা জায়গায়। প্রমোদ রঞ্জনের কথায়, "বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এই অসুর জাতির ইতিহাস আর্যদের পূর্ববর্তী যুগের ইতিহাস। আমরা যেমন মহিষাসুরকে খুঁজে পেয়েছি বর্তমান উত্তর প্রদেশের বুন্দেলখন্ডে, আবার এখনকার যে মহীশুর বা মাইসোর শহর, সেই অঞ্চলেও মহিষাসুরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আবার খাজুরাহোর যে বিশ্বখ্যাত মন্দির, সেখানেও মহিষাসুরের মূর্তি পেয়েছি আমরা। অর্থাৎ শুধু যে লোকগাঁথায় মহিষাসুর আছেন, তা নয়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও খুঁজে পেয়েছি আমরা।" 'অসুর' নামের যে জনজাতি, তারা ছাড়াও ভারতের আদিমতম আদিবাসী বলে পরিচিত ছত্তিশগড়ের গোন্ড সম্প্রদায়ের মধ্যেও মহিষাসুরের লোকগাঁথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত বলে জানাচ্ছিলেন মি. রঞ্জন। দু'হাজার চৌদ্দ সালে তার কাছে কতগুলি ছবি আসে, যেগুলি ছিল উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখন্ড এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মহিষাসুরের কয়েকটি প্রত্ন নিদর্শনের ছবি। প্রমোদ রঞ্জন সেই সময়ে দিল্লির ফরোয়ার্ড প্রেস নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা, যারা মূলত দলিত সম্প্রদায়ের সাহিত্য নিয়ে কাজ করে, সেটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তার মধ্যে এমন একটি ছবি ছিল, যেটি ভারত সরকারের আর্কিওলজিকাল সার্ভের সংরক্ষিত একটি নিদর্শন, যার নাম মহিষাসুর স্মারক। প্রমোদ রঞ্জনের কথায়, "শুধুমাত্র ওই কয়েকটি ছবি সম্বল করে আমি এবং আমার এক সহকর্মী ট্রেনে চেপে দিল্লি থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে মাহোবা রেল স্টেশনে নেমেছিলাম এক রাতে। স্টেশনের আশেপাশে অনেককে দেখিয়েছিলাম ছবিগুলো। কিন্তু কেউ বুঝতে পারেনি যে ওই জায়গাগুলো কোথায়।" দিন দুয়েক পরে তারা খুঁজে পেয়েছিলেন মহিষাসুর স্মারক। "একজন আমাদের পাঠায় কুলাপাহাড় নামের এক জায়গায়, কিন্তু সেখানেও কিছু পাইনি আমরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে কুলাপাহাড় থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চাউকা নামের একটা জায়গার কথা বলে একজন। সেখানে পৌঁছিয়ে আমরা নিশ্চিত হলাম যে সঠিক জায়গায় এসেছি। পুরাতত্ত্ব বিভাগের একটি বোর্ড দেখতে পেলাম," বলছিলেন প্রমোদ রঞ্জন। ওই স্মারকটি ভারত সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষণ করে রেখেছে। পরে মি. রঞ্জনের এক প্রশ্নের জবাবে পুরাতত্ত্ব বিভাগ জানায় যে ওই স্মারকটি একাদশ শতকের। দিন দুয়েক পরে মাহোবায় ফিরে এসে কাছাকাছি মহিষাসুরের আরও নিদর্শন খুঁজতে থাকেন তারা। গোখর পাহাড়ে আলাপ হওয়া এক সাধুর কাছে তাঁরা জানতে পারেন যে ওই অঞ্চলে মহিষাসুর ব্যাপকভাবে পূজিত হন। কোথাও ভৈঁসাসুর, কোথাও মাইকাসুর আবার কোথাও মহিষাসুর নামে তাঁর পুজা দেন দলিত শ্রেণীর যাদব আর পাল বংশীয় মানুষ। মহিষাসুরকে তাঁরা গরু, মোষের মতো গৃহপালিত পশুর রক্ষাকর্তা বলে মনে করেন। মি. রঞ্জন বলছেন, গ্রামগুলিতে মহিষাসুরের মন্দির থাকে না, তবে বাঁধানো চাতাল মতো একটা জায়গায় পূজা করেন স্থানীয় মানুষ। আবার খাজুরাহোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটেও তিনি মহিষাসুরের মূর্তি দেখতে পেয়েছেন। গবেষক শরদিন্দু উদ্দীপন বলছিলেন, সম্রাট অশোকের আমলে মহিষাসুরকে বর্তমানের মহিশুর বা মাইসোর অঞ্চলটি শাসন করতে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সব নিদর্শনগুলি দেখে প্রমোদ রঞ্জনের মত হল, "মহিষাসুর নানা যুগেই ছড়িয়ে ছিলেন। তাই এটা সম্ভবত কোনও এক ব্যক্তি নন, এটা একটা উপাধি। যার পরম্পরা দক্ষিণ এশিয়ার নানা এলাকায় ছড়িয়ে আছে। যে পরম্পরা হাজার হাজার বছর ধরে বয়ে আসছেন আদিবাসীরা।" বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনকে রুখতেই ভারত-আমেরিকার 'দুই আর দুই' বিদেশি মদ রাখার দায়ে ইরফান সেলিমের কারাদণ্ড পর্নোগ্রাফি আসক্তি যেভাবে সব ধারণা বদলে দেয়
news-50797621
https://www.bbc.com/bengali/news-50797621
রাশিয়ায় ক্ষমতার ২০ বছর যেভাবে কেটেছে ভ্লাদিমির পুতিনের
ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর ক্ষমতায় থাকার ২০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছেন।
গত ২০ বছরে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক সংকট যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর অর্থাৎ বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে রাশিয়া। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি'র একজন এজেন্ট ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯৯৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর তিনি যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেন তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিল ক্লিনটন। গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের তিন প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটেনের পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসা-যাওয়া করেছেন। বৈশ্বিক সংঘাত, দেশের অভ্যন্তরে নানা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে খেলাধুলার আসর আয়োজন এবং নিজের প্রচারণার জন্য নানা ছবি - এ সবকিছুই আছে মি: পুতিনের এই ২০ বছরে। তাঁর ক্ষমতার ২০ বছরে সেসব দিকে দৃষ্টি দিয়েছে বিবিসি। আরো পড়ুন: উদারপন্থা 'অচল' হয়ে পড়েছে: পুতিন কেন র‍্যাপ সঙ্গীতের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান পুতিন ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠক: কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ? ১৯৯৯ সালের অগাস্ট মাসে ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। বরিস ইয়েলেতসিনের বিদায়ের পর ৩১ শে ডিসেম্বর মি: পুতিন প্রেসিডেন্ট হন। কেজিবি'র সাবেক এ কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালে যখন ক্ষমতাসীন হলেন তখন দ্বিতীয়বারের মতো চেচনিয়া যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। কিছু এপার্টমেন্টে বোমা হামলার জবাবে সে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট হিসেবে মি: পুতিনের সূচনা হয়েছিল রাশিয়ার অস্থির দক্ষিণাঞ্চলে সংঘাতের মধ্য দিয়ে। চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনি অবরোধ করে রাখে রাশিয়ার সৈন্যরা। ২০০৩ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে গ্রোজনিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ২০০০ সালের মার্চ মাসে মি: পুতিন চেচনিয়া সফর করেন। এরপর কয়েক বছর ধরে জঙ্গি হামলায় আক্রান্ত হয় রাশিয়া। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ২০০৪ সালে বেসলান স্কুলে হামলা, যেখানে ৩৩০ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল শিশু। ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পুতিন চেচনিয়াতে যুদ্ধ শেষ করেননি। ২০০০ সালের মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো সে পদে আসীন হন। এর কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ইমেজ সংকটে পড়েন। ২০০৪ সালে বেসলাস স্কুলে হামলায় নিহতদের প্রতি শোক করতে রাশিয়ার মন্ত্রীসভা এক মিনিট নিরবতা পালন করে। কার্স্ক সাবমেরিন বিপর্যয়ে ১১৮ জন নাবিক মারা যায়। ২০০০ সালের অগাস্ট মাসে যখন কার্স্ক সাবমেরিন বিপর্যয় ঘটে তখন নিহত নাবিকদের পরিবারকে বিষয়টি অবহিত করতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে। তখন মি: পুতিন তখন অবকাশ যাপনে কৃষ্ণ সাগরে ছিলেন। কিন্তু সাবমেরিন বিপর্যয়ের পর প্রথমদিকে তিনি অবকাশ যাপন থেকে ফিরে আসেননি। কার্স্ক সাবমেরিন কমান্ডারের পরিবারের সাথে দেখা করেন মি: পুতিন। ক্ষমতার প্রথম দশকে মি: পুতিনের সাথে পশ্চিমা নেতাদের সম্পর্ক ভালোই ছিল। যদিও তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতির সমালোচক ছিলেন। ২০০৬ সালে রাশিয়া প্রথমবারের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট 'জি এইট' সম্মেলনের আয়োজন করে। এর মাধ্যমে সে জোটে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তিও ঘটে। ২০০১ সালে ভ্লাদিমির পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী মি: পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরপর তিন মেয়াদে থাকতে পারতেন না। সেজন্য ২০০৮ সালে তিনি চার বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন। সে সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন দিমিত্রি মেদভেদেভ। কিন্তু অনেকে মনে করতেন, মি: মেদভেদেভ ছিলেন মি: পুতিনের হাতের পুতুল। ২০০৩ সালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লোসকুনি রাশিয়া সফর করেন। সে সফরে ইরাক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ ২০০৩ সালে মি: পুতিনকে ব্রিটেনে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানান। ১৮৭৪ সালের পর সেটাই ছিল রাশিয়ার কোন নেতার ব্রিটেন সফর। ২০০৬ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত জি এইট সামিটে জর্জিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সাউথ ওশেটিয়া অঞ্চলের কর্তৃত্ব ফিরে পাবার জন্য ২০০৮ সালে জর্জিয়া যখন সেখানে সৈন্য পাঠায়, তখন রাশিয়া জর্জিয়ার ভেতরে আক্রমণ করে। স্বল্প সময়ের যুদ্ধ ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য মি: পুতিন সম্পর্কে একটি সতর্কবার্তা। ২০১৪ সালে রাশিয়া যখন পূর্ব ইউক্রেন আক্রমণ করে তখন পশ্চিমা নেতাদের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়া দখল করে নেবার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপর অবরোধ আরোপ করে। এছাড়া শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন 'জি এইট' থেকে রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। জর্জিয়ার সাথে যুদ্ধ শুরু হলে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আহতদের দেখতে যান মি: পুতিন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হবার চার বছর পরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে রক্ষার জন্য রাশিয়া সে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। তখন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ প্রায় পতনের মুখে চলে গিয়েছিলেন। সিরিয়াতে রাশিয়ার যুদ্ধ বিমান এবং সরঞ্জাম পাঠানোর কারণে সেখানকার ভারসাম্য বদলে যায়। মি: পুতিন যখন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন দেয়া শুরু করেন, তখন সিরিয়ার যুদ্ধের পরিস্থিতি বদলে যায়। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়লাভ করার পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বলে যে, দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে। ২০১৮ সালে রাশিয়ার সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সার্গেই স্ক্রিপালকে ব্রিটেনের মাটিতে বিষ প্রয়োগে হত্যার জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে ব্রিটেন। মার্কিন গোয়েন্দারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে। সার্গেই স্ক্রিপালকে বিষ প্রয়োগে হত্যার পর ব্রিটেনের তখনকার প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে'র সাথে সম্পর্ক শীতল হয়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখল করার পর দেশের ভেতরে মি: পুতিনের জনসমর্থন বাড়ে। ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে মি: পুতিন ক্রাইমিয়ায় মোটর সাইকেল র‍্যালিতে অংশ নেন। এটিকে সার্বভৈৗমত্বের লংঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পাঁচ বছর পর এ মাসে আলোচনা শুরু হয়। ক্ষমতায় থাকার পুরো সময় জুড়ে মি: পুতিন তাঁর নিজের এবং দেশের ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। নিজের কিছু ছবি দিয়ে প্রচারণার মাধ্যমে মি: পুতিন নিজেকে একজন শক্তিমান ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। ২০০৭ সালে মঙ্গোলিয়ার সীমান্তে স্নাইপার হাতে হাঁটছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৩ সালে পোষা কুকুকদের নিয়ে তুষাড়ের উপর খেলছেন মি: পুতিন। খেলাধুলায় নিজের পারদর্শিতা দেখানোর চেষ্টাও করেছেন মি: পুতিন। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় আইস হকিতে অংশ নিয়েছেন। ২০১৪ সালে শীতকালীন অলিম্পিক এবং ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের মাধ্যমে মি: পুতিন ক্রীড়াঙ্গনে রাশিয়ার ভালো অবস্থান তুলে ধরতে চেয়েছেন। সোচিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক ছিল সফল। কিন্তু ডোপ কেলেঙ্কারির জের এখনো চলছে। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট পুতিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। গত সপ্তাহে ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি বা ওয়াডা রাশিয়াকে চার বছরের জন্য খেলাধুলার বড় আসরগুলোতে নিষিদ্ধ করেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ডোপিং এর অভিযোগ ওঠে ২০১৫ সালে। সে বছরের নভেম্বরে রাশিয়ার অ্যান্টি ডোপিং সংস্থা 'রুসাডা' মাদক বন্ধে সহযোগিতা করছে না বলে ঘোষণা করে ওয়াডা। সংস্থার এক রিপোর্টে তখন বলা হয়েছিল, রাশিয়ায় সরকারি মদদেই ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলেটিক্সে ব্যাপকভাবে মাদক ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর ২০১৬ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চার বছর ধরে ডোপিং কর্মসূচি চলেছে যাতে করে তাদের প্রতিযোগীরা গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন অলিম্পিকসে অংশগ্রহণ করতে পারে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তারা ল্যাবরেটরি পরীক্ষার যেসব তথ্য হস্তান্তর করেছিল, তাতে কারসাজি করা হয় বলে অভিযোগ করছে ওয়াডা। তবে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনে রাশিয়া ছিল সফল। ডোপিং কেলেঙ্কারির জন্য ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকস এবং ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে রাশিয়া অংশ নিতে পারবে না।
news-46678346
https://www.bbc.com/bengali/news-46678346
সংসদ নির্বাচন: বরিশালে ছয়টি আসন কিন্তু সবার দৃষ্টি সদর ও গৌরনদীতে
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বরিশাল এখন তুমুল নির্বাচনী প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রচারণার পাশাপাশি কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনায় বাড়ছে উত্তেজনাও।
বরিশাল সদরে চলছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। যদিও প্রায় সব আসনেই প্রচার প্রচারণা বেশি চোখে পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদেরই। তারপরেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে। এমনকি মাঠে তেমন দেখা না গেলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিংবা নেতাকর্মীরা তাদের প্রচারে বারবারই তুলে আনছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের প্রসঙ্গ। বরিশালে ছয় আসন কিন্তু সবার দৃষ্টি সদর ও গৌরনদীতে আরও পড়তে পারেন: রাজশাহীতে নির্বাচনী পরিবেশ 'ভালো', কিন্তু বাইরে? সাংবাদিকদের চোখে মোটরসাইকেল নিষেধাজ্ঞা হিন্দু ভোটারদের ঘিরেই নাসিরনগরে যত সমীকরণ রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ সদর আসন: বরিশাল-৫ আসনটিই জেলায় সদর আসন এবং এই অঞ্চলের রাজনীতি এ এলাকাকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। আসনটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মজিবর রহমান সরওয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জাহিদ ফারুক শামীমকে হারিয়ে। এবারও তারা দুজনই একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। এর আগে ৯১ ও ৯৬ সালেও বিএনপি প্রার্থী এ আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন আর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী জিতেছিলেন উপ নির্বাচনে। কিন্তু ২০১৪ সাল ছাড়া এ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে পরবর্তীতে সব নির্বাচনই এখানে জমজমাট হয়েছিল। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী যেমন জিতেছিলেন তেমনি আওয়ামী লীগ আমলে জিতেছিলেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। এবং সেটা সর্বশেষ মেয়র নির্বাচনে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। শহরের আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ ফারুককে সমর্থনে ব্যাপক প্রচার চোখে পড়লেও বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ারের প্রচার চোখে পড়ছে কমই। অথচ শহরেই নৌকা প্রতীকে পাশাপাশি অসংখ্য পোস্টার চোখে পড়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সৈয়দ মোঃ ফয়জুল করিমের। আসনটিতে আরও প্রার্থী আছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিও আব্দুস সাত্তার, এনপিপির শামিমা নাসরিন, জাতীয় পার্টির একেএম মুরতজা আবেদীন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির এইচ এম মাসুম বিল্লাহ। নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী। কি বলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি? মহানগর বিএনপির সহসভাপতি মহসিন মন্টু বলছেন গণ-গ্রেপ্তার আতঙ্কে গাঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন তার দলের নেতাকর্মীরা। "বাধার কারণে সভা সমাবেশ করা যাচ্ছেনা। পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এমনকি পোস্টার লাগাতে গেলে হুমকি দেয়া হচ্ছে"। তিনি বলেন, "সেনাবাহিনী নামলে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে"। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আফজালুল করিম বলছেন বিএনপির অভিযোগ সত্যি নয় কারণ প্রতিদিনই তাদের প্রচারণার ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। মিস্টার করিম বলেন গ্রেফতারের বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য নেই কারণ এটি আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিষয়। "যাদের ধরা হচ্ছে তারা একাধিক মামলার আসামী"। ধানের শীষের পক্ষে চলছে প্রচারণা। আসনটির ইস্যু কি? শহীদুল ইসলাম নামে একজন দোকানী এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, "এখানে ইস্যু রাজনীতি"। তার মতে আসনটি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জন্য মর্যাদার আসন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর সে কারণেই কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ এবার। এ আসনে ভোটারদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝা মুশকিল তবে অনেকেই বলছেন শহরের রাস্তাঘাট প্রশস্ত করা দরকার, বেকারত্ব অনেক তীব্র আর শিল্প কারখানা না থাকায় কর্মসংস্থান বাড়ছেনা। তবে তরুণ ভোটার অনেকের মধ্যেই ভোট সঠিক ভাবে হবে কি-না তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। তারিন তাসনিম জুঁই নামে একজন নতুন ভোটার বলছিলেন, "এবার ভোট দিবো এবং এটি নিয়ে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। তাই চাই ভোটটা যেন ঠিক মতো হয়"। জান্নাতুল ফেরদৌস কানিজ বলেন, "আমরা যেন ভোট দিয়ে বলতে পারি যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি আমাদের ভোটেই হয়েছেন।" ভোটারদের অনেকেই জানিয়েছেন ভোট নিয়ে এমন উদ্বেগ আছে অনেকের মধ্যেই আর এর কারণ হল চলতি বছরেই হওয়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। যে নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। তরুণদের একজন অপূর্ব কুমার বলছিলেন, "সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কারণেই আমরা উদ্বিগ্ন"। বরিশাল এখন তুমুল নির্বাচনী প্রচারণায় সরগরম 'ইলেকশন যেমন অওয়ার অইবে' সদরের বাইরে জেলার যে আসনটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সেটি হল বরিশাল-১। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। মিস্টার আব্দুল্লাহর ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ্ই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের এখনকার মেয়র এবং গত জুলাইয়ের যে নির্বাচনে জিতে তিনি মেয়র হয়েছেন সে নির্বাচন নিয়েই ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। যদিও তিনি ও আওয়ামী লীগ তা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, যিনি দলটির সংস্কারপন্থী অংশটির সাথে গিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। পরে অনেকদিন নিষ্ক্রিয় থেকে সম্প্রতি বিএনপিতে ফিরে এসে তিনি সক্রিয় হয়েছেন। কিন্তু এবার মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে নিজের এলাকায় এসে ঘর থেকেই বের হতে পারছেননা বলে দাবী করছেন তিনি। সোমবার বিকেলে গৌরনদীর সরিকল নামে একটি গ্রামে তার নিজের বাসায় বসে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আমাকেই হুমকি দেয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের ওপর গণহারে মারধর চলছে। মিছিলে হামলা হচ্ছে। এসব কারণে বের হতে পারছিনা"। জহির উদ্দিন স্বপন বলেন সেনাবাহিনী নামার পর পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে আশা করছেন তিনি। বরিশালে ছয় আসন কিন্তু সবার দৃষ্টি সদর ও গৌরনদীতে তবে তার এসব অভিযোগ মানতে রাজী নন প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর প্রধান সমন্বয়ক গৌরনদীর মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ। মিস্টার রহমান বলেন, "বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এ এলাকায় যে নির্যাতন করেছিলো সেজন্য তারা এখন মানুষের কাছে যেতে পারছেনা"। তবে দল দুটির নেতারা যাই বলুন স্থানীয় ভোটারদের অনেকেই নির্বাচন বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। সোমবার বিকেলেই জহির উদ্দিন স্বপনের বাড়ির কাছেই সড়কে বিপুল সংখ্যক নৌকা সমর্থককে লাঠিসোটা হাতে দেখা গেছে। যদিও হারিছুর রহমান বলছেন তারা বিএনপিকে কোন বাধা দিচ্ছেনা। স্থানীয় একটি মার্কেটের সামনে মোহাম্মদ মনোয়ার নামের একজন ভোটার বলেন এখানে ভয়ে আসলে অনেকে নির্বাচন নিয়ে কথাই বলতে চাননা। তবে এই ভয় কিসের সে প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজী হননি তিনি। যদিও আরেকজন ভোটার বলেন, "যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে এখানে সব তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বোঝাই যায় কেমন হবে নির্বাচন"। বরিশাল-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর প্রধান সমন্বয়ক গৌরনদীর পৌর মেয়র হারিসুর রহমান হারিস। অন্য আসনগুলোর কি অবস্থা? বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মোঃ শাহ আলম ও বিএনপির সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুসহ সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। সোমবারও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে বিএনপি প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর নেতৃত্বে হামলা ও গুলি হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম মিঠু। সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু জানিয়েছেন তার ওপর হামলা হয়েছে আর সে কারণেই আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি করেছেন তিনি। বরিশাল-৩ আসনে বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান মহাজোট প্রার্থী। আবার ওয়ার্কার্স পার্টির আরেকজন নেতা আতিকুর রহমানও নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপুও রয়েছেন মাঠে, যিনি ২০০৮ সালে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বরিশাল-১ এর বিএনপি প্রার্থী জহিরুদ্দিন স্বপন। এ আসনে আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোন নেতা প্রার্থী হননি বরং এই তিনজন দলটির নানা দল-উপদলের সমর্থন পাচ্ছেন। ওদিকে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। বরিশাল -৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি পংকজ নাথ ও বিএনপি জোটের জে এম নূরুর রহমানসহ মোট প্রার্থী সাতজন। মিস্টার রহমান নাগরিক ঐক্যের নেতা ছিলেন। তবে নির্বাচনী প্রচারে এসে একবার হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে তিনি আর এলাকায় নেই। আর বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান আমিন। অন্যদিকে এখানে বিএনপির প্রার্থী হলেন আবুল হোসেন খান। এ আসনে প্রচার প্রচারণা তুলনামূলক শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে।
news-51860832
https://www.bbc.com/bengali/news-51860832
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে দ্বিতীয় স্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - নোবেলজয়ী সাহিত্যিক
দু'হাজার চার সালে বিবিসি বাংলা একটি 'শ্রোতা জরিপ'-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলো - সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত। বিবিসি বাংলার সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ তাঁর জীবন-কথা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির কাছে বিশেষ একটি নাম। বাংলা সাহিত্যের তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং তাঁর বিশাল সাহিত্য কীর্তির জন্য তিনি বহু বাঙালির রক্তস্রোতে আজও মিশে আছেন। তিনি ছিলেন একাধারে বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতকার, চিত্রশিল্পী, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। এক কথায় বহুমুখী প্রতিভার সম্বন্বয় ঘটেছিল তাঁর বর্ণময় দীর্ঘ কর্মজীবনে। তবুও তাঁর কবি পরিচিতিই তাঁকে বিশ্ববরেণ্য করে তুলেছিল আর তাই রবীন্দ্রনাথকে ভূষিত করা হয়েছিল 'বিশ্বকবি' বা 'কবিগুরু' নামে। আর তাঁর কবিতাগুচ্ছের জন্য তিনি পেয়েছিলেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এক ধনী ও সংস্কৃতিবান পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৬১ সালের ৭ই মে। বাবা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর বাবামায়ের চতুর্দশ সন্তান। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছোটবেলায় প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তিনি নেননি। বাড়িতে গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্কুলের বাঁধাধরার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ছোটবেলা থেকেই ছিল তাঁর অনাগ্রহ। তাঁর 'জীবনস্মৃতি' বইয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, যে অল্পকাল তিনি স্কুলে পড়েছিলেন সেসময় স্কুলের পাঠ ও পরিবেশ এবং স্কুলের দিনগুলো তাঁর কাছে কেমন "মুখবিবরের মধ্যে প্রাত্যহিক বরাদ্দ গ্রাসপিণ্ডের মত" লাগত। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বা কলকাতার বাইরে পারিবারিক বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতেই বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ মাকে হারিয়েছিলেন তাঁর চোদ্দ বছর বয়সে। তাঁর বাবা অনেক সময় কাটাতেন দেশের বাইরে। ফলে রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল গৃহভৃত্যদের শাসন ও সান্নিধ্যে। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন তাঁর থেকে বয়সে বড় তাঁর এক ভাগিনার উৎসাহে। সে কবিতা পরে ছাপাও হয়েছিল একটি পত্রিকায়। তাঁর যখন এগারো বছর বয়স তখন তিনি কয়েকমাসের জন্য বাবার সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাঞ্জাবে হিমালয় পাহাড় ঘেরা ডালহাউসি শহরে থাকাকালীন বাবার কাছে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতেন। ওই পাহাড়ি শৈলাবাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৩ সালে লিখেছিলেন তাঁর প্রথম গান "গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বালে"। বলা হয় এটি ছিল পাঞ্জাবি একটি ভজনের অনুবাদ। ওই সময় অমৃতসরে এক মাস যখন তিনি বাবার সঙ্গে ছিলেন, তখন বাবা ও ছেলে নিয়মিত যেতেন স্বর্ণমন্দিরে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'জীবনস্মৃতি'তে লিখেছেন, সেসময় ওই মন্দিরের ভজন সঙ্গীত তাঁর ওপর বড়ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। আট বছর বয়স থেকে শুরু করে লিখে গেছেন তাঁর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত। ৫২কাব্যগ্রন্থ ৩৮ নাটক ১৩উপন্যাস ৩৬প্রবন্ধ ৯৫ছোটগল্প ২০০০গান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যারিস্টারি পড়তে ১৮৭৮ সালে সতের বছর বয়সে ইংল্যান্ডে যান। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন তিনি আইনজ্ঞ হন। প্রথমে তিনি সমুদ্রতীরের শহর ব্রাইটনে একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। এক বছর পরে লন্ডনে আসেন আইনবিদ্যা নিয়ে পড়তে। কিন্তু সাহিত্যচর্চ্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি শেষ করতে পারেননি। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন এই সময়ে তিনি শেক্সপিয়র সহ অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের লেখার সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে আইনের পড়া শেষ না করেই তিনি ফিরে যান কলকাতায়। বিয়ে করেন ১৮৮৩ সালে ১০ বছরের কিশোরী মৃণালিনী দেবীকে। জন্মকালে তাঁর নাম ছিল ভবতারিণী এবং তিনি ছিলেন ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারীর মেয়ে। রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর পাঁচজন সন্তান জন্মেছিল, যদিও দুই সন্তান তাদের বাল্যবয়সেই মারা যায়। বাবার আদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯০-৯১ সাল থেকে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, সেইসঙ্গে পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যায় পৈত্রিক জমিদারিগুলোর তদারকি শুরু করেন। এর মধ্যে শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ পরিবার নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন। শিলাইদহে 'পদ্মা' নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতে যেতেন তিনি। তবে গবেষকরা বলেন তিনি প্রজাদের কাছ থেকে নামমাত্র খাজনা নিতেন। শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, যেখানে বসে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছিলেন বহু বিখ্যাত কবিতা। ১৯০১ পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছিলেন শিলাইদহে। সেখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, ক্ষণিকা ও চৈতালির অসংখ্য কবিতা। গীতাঞ্জলি কাব্যের অনুবাদের কাজও তিনি শুরু করেছিলেন শিলাইদহে। রবীন্দ্র গবেষকদের অনেকেই বলেন এসময় প্রজাদের কল্যাণে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সেখানে থাকাকালে তিনি দেখেছিলেন তাঁদের জমিদারিতেই প্রজারা কীভাবে শোষণের শিকার হয়েছেন। প্রজাদের কল্যাণে তিনি সেখানে একটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রও স্থাপন করেছিলেন। ওই সময় তিনি তাঁর গল্পগুচ্ছ বইয়ের প্রায় ৫০টির মত গল্প লেখেন। এসব গল্পে তিনি মূলত গ্রাম বাংলা দারিদ্র ও বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ছোট গল্প লিখতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম ছোট গল্প ছিল 'ভিখারিনী'। রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ সালে সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে যান পশ্চিমবঙ্গে বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের কাছে শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ একটি ব্রহ্মবিদ্যালয় বা ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯০১ সালে যা কালক্রমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯২১ সালে। এই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে একটি স্কুল স্থাপন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই স্কুল স্থাপনের কিছুকাল পরের ছবি। শান্তিনিকেতনে থাকাকালেই অল্প কয়েক বছরের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যাকে হারান। তাঁর পিতৃবিয়োগও ঘটে ১৯০৫ সালে। এসবের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে পড়েছিলেন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক লর্ড কার্জন যখন দেখলেন বাঙালিরা স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন তারা ওই আন্দোলন রুখতে সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাকে দুভাগে ভাগ করে দিতে। এর প্রতিবাদে যে রাজনৈতিক আন্দোলন দানা বেঁধেছিল, তার পুরোভাগে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্রিটিশ সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলার নেতারা ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের ডাক দিলেন। রবীন্দ্রনাথ তখন শাসকগোষ্ঠির বিরুদ্ধে কলম ধরে যে গানগুলো লিখেছিলেন, তা তখন এক অভিনব উন্মাদনা তৈরি করেছিল। তবে স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বেশিদিন প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকেননি। রাজনৈতিক নেতারা উত্তেজনাপূর্ণ আন্দোলন-সর্বস্ব, গঠননীতি-বর্জিত যে পথ বেছে নিয়েছিলেন তা তিনি সমর্থন করেননি। কিন্তু তাঁর কিছু কিছু জীবনীকার লিখেছেন রাজনৈতিক আন্দোলনে তাঁর সায় না থাকলেও, যেহেতু তাঁর মন জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ ছিল এবং তিনি ছিলেন খুবই সংবেদনশীল, তাই বিদেশি শাসকরা বড় রকম অন্যায় করছে দেখলে তিনি চুপ করে থাকতে পারতেন না। জালিয়ানওয়ালা বাগের বিক্ষোভে জমায়েত মানুষরা ছিলেন নিরস্ত্র গ্রামবাসী। তাদের হত্যাকাণ্ডের ছবি রয়েছে শহীদদের স্মৃতিসৌধে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৫ সালে তাঁকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজ শাসকের প্রবর্তিত এক বিল, যার আওতায় বিনা বিচারে যে কোন লোককে আটক রাখার বিধান পাশ করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী প্রায় দুহাজার নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে। তিনি ইংরেজ সরকারের কাছে তাঁর প্রতিবাদপত্রে লিখেছিলেন, "একদল অসহায় মানুষকে যে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়েছে এবং যেভাবে সে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তার কঠোরতা অপরাধের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ। কোন সভ্য সরকার যে একাজ করতে পারে তার কোন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নেই।" ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ার যার নির্দেশে চলেছিল জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাযজ্ঞ পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে ওই মর্মান্তিক গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ইংরেজ সরকারের দেওয়া 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম অ-ইউরোপীয় যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯১৩ সালে। তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'গীতাঞ্জলি'র ইংরেজি অনুবাদের জন্য সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাঁকে নোবেল পুরস্কার দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ছিল তার ভাবগভীরতায়। তাঁর সাহিত্যে বিশ্বপ্রেম ও মানবপ্রেমের পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেম, রোমান্টিক সৌন্দর্যচেতনা আর প্রগতিবোধ প্রকাশ পেয়েছে। কথা সাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধেও তাঁর মতামত তুলে ধরেছিলেন। সমাজকল্যাণ, গ্রাম উন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার পক্ষে তিনি সোচ্চার ছিলেন। শান্তিনিকেতনের কাছে সুরুল গ্রামে আমেরিকান কৃষি অর্থনীতিবিদ লেনার্ড এলমহার্স্ট এবং শান্তিনিকেতনের শিক্ষক ও ছাত্রদের সহযোগিতায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন শ্রীনিকেতন নামে পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পরিবৃত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল কৃষির উন্নতিসাধন, সমবায় প্রথা চালু করা এবং গ্রামের সাধারণ মানুষদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিপুল সাহিত্যসম্ভারের যেসব হিসাব পাওয়া যায় সে অনুযায়ী তিনি লিখেছিলেন ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ এবং অন্যান্য আরও গদ্য, ৯৫টি ছোটগল্প এবং দুহাজারের ওপর গান। প্রায় ৭০ বছর বয়সে তিনি ছবি আঁকতে শুরু করেন। ছবি আঁকায় তাঁর কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিল না। লেখার কাটাকুটিকে একটা চেহারা দেবার চেষ্টা থেকে তাঁর ছবি আঁকার শুরু। তারপরেও তিনি প্রায় দু হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ শুধু যে নিজের দেশে বসেই সাহিত্যসৃষ্টি করেছিলেন তা নয়, সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। মোট বারোবার তিনি বিশ্বভ্রমণে বেরন। পাঁচটি মহাদেশের তিরিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাবার পর। সেসময় ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায় তিনি বিরাট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ইংল্যান্ডে ডাটিংটন হল স্কুল নামে শ্রীনিকেতনের আদর্শে একটি প্রগতিশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তাঁর ব্যাপক অবদান ছিল। অনেক জাপানি সাহিত্যিক তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা ইংরেজি, ডাচ, জার্মান, স্প্যানিশসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছিল। তাঁর সমসাময়িক বহু বিদেশি কবি, সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিককে তিনি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাইরে জাপান ও উত্তর আমেরিকায় এবং এক অর্থে বাংলার বাইরে তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছিল। জীবনের শেষ চার পাঁচ বছর ধারাবাহিকভাবে নানা অসুস্থতায় ভুগেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু লেখা তিনি কখনও থামাননি। মৃত্যুর সাতদিন আগে পর্যন্তও তিনি ছিলেন সৃষ্টিশীল। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই তাঁর জীবনাবসান হয়। অসুস্থ রবীন্দ্রনাথকে শান্তিনিকেতন থেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়। সুস্থ হয়ে তিনি আর ফেরেননি। রবীন্দ্র গবেষকরা মনে করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানই তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তাঁর রচিত গান 'আমার সোনার বাংলা' বাংলাদেশের আর 'জনগণমন অধিনায়ক জয় হে' ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।
56310420
https://www.bbc.com/bengali/56310420
৭ই মার্চের ভাষণ: ৫০ বছর আগে রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিতি থেকে ভাষণ শুনেছিলেন যারা
'ভাষণ শুরু আগে মাথার উপর দিয়ে বিমান আর হেলিকপ্টার উড়ছিলো, আর পুরো রেসকোর্স মাঠে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে'- ৭ই মার্চের ভাষণ শুনতে এসে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হারুন হাবীব।
আর কুমিল্লা থেকে বাস ভাড়া করে অনেকের সাথে নিজেও ভাষণ শুনতে এসেছেন বাহার উদ্দিন রেজা। কিশোর বয়সে ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধ করবেন। যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের কারণে পরবর্তীতে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন তিনি। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সেসময়কার ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেবার ৫০ বছর পূর্ণ হলো আজ। ৫০ বছর আগের এই দিনে মুজিবের ভাষণ শুনতে এসে কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিলো তা বর্ণনা করেছেন এই দুই প্রত্যক্ষদর্শী। তাদের অভিজ্ঞতা জানতে দেখুন এই ভিডিওটি। ভিডিওটি দেখতে পারেন বিবিসির ইউটিউব চ্যানেলেও:
news-52552857
https://www.bbc.com/bengali/news-52552857
করোনাভাইরাস: বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের কি সঞ্চয়ে হাত পড়ছে?
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে গত ২৬শে মার্চ থেকে চলছে সাধারণ ছুটি, যে কারণে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সব বন্ধ রয়েছে।
শুধু নিম্ন নয়, মধ্য আয়ের মানুষের রোজগারেও করোনাভাইরাসের 'লকডাউনের' প্রভাব পড়েছে। একদিকে খেটে খাওয়া মানুষের রোজগারে টান পড়ছে, অন্যদিকে বাইরে বেরুলে সংক্রমণের ঝুঁকি - এ যেন উভয় সংকট! ইতিমধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষজন - বিশেষ করে পোশাক কারখানার শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশাচালক ও পরিবহন শ্রমিকসহ নানা পেশার মানুষ - কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তবে শুধু নিম্ন নয়, মধ্য আয়ের মানুষের রোজগারেও করোনাভাইরাসের 'লকডাউনের' প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন কাটছে কিংবা অর্ধেক বেতন দিচ্ছে, এমনকি বেতন দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে। যদিও সরকার বেশ কিছুদিন ধরেই কর্মীদের বেতন না কাটা এবং কর্মী ছাটাই না করার জন্য নিয়োগদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। বেজি, নেউল নাকি কচ্ছপ? হদিশ নেই কে ছড়ালো এই ভাইরাস মার্কেট খুললে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুশিয়ারী মধ্যপ্রাচ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে ইরানের একটি ফ্লাইট নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? কোথায় কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু, নির্মূলের উপায় অনেক স্কুলের শিক্ষকই জানিয়েছেন যে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তাদের পূর্ণ বেতন দেয়া হচ্ছে না ‘অনলাইনে ক্লাশ নিই, তবু বেতন অর্ধেক’ ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক চিত্রা পেরেইরার স্কুল বন্ধ মার্চের ১৮ তারিখ থেকে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয় সেই স্কুলে। কিন্তু এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, যতদিন স্কুলের কার্যক্রম স্বাভাবিক না হবে ততদিন শিক্ষক ও অন্য কর্মীদের পুরো বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। স্কুলের সব শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন অর্ধেক করে দেয়া হয়েছে। “এখন আমাদের স্কুলে যেতে হয় না ঠিকই, কিন্তু সিলেবাস ধরে টপিক ম্যাটেরিয়াল বানানো ও অনলাইন লেকচার তৈরি করার কাজ নিয়মিত করছি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক দেয়া এবং সেগুলো আবার মেইল বা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর পর চেক করে ফিডব্যাকও দিচ্ছি আমরা নিয়মিত।” কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে স্বাভাবিক বেতন দেয়ার ক্ষমতা নেই তাদের, কারণ শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে না, বেতন দিচ্ছে না। “আবার আমি বাসায় বাচ্চাদের ব্যাচে পড়াতাম, মূলত ওই রোজগারটা দিয়েই আমার সংসারটা চলে। কিন্তু গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে সেটা বন্ধ। ফলে সংসার চালানোর জন্য আমাকে আমার সঞ্চয়ে হাত দিতে হয়েছে।” মিস পেরেইরা বলছেন, জমানো টাকা দিয়েও বড়জোড় দুয়েক মাস চলা যাবে। ‘চেম্বার বন্ধ, আয় নাই, কিন্তু স্টাফ তো আছে’ আইনুন্নাহার সুলতানা একজন আইনজীবী। এটি তার আসল নাম নয়। বলছিলেন, প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার পর থেকেই তার চেম্বারে মক্কেলদের আসা কিছুটা কমে যায়। এরপর সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ হলে তিনি নিজেও মগবাজারে নিজের চেম্বারে যাওয়া বন্ধ করে দেন। “আদালত বন্ধ, মামলার কার্যক্রম বন্ধ, সুতরাং আমার তো ইনকাম বন্ধ। কিন্তু আমার একজন সহকারী আছে, একজন কেয়ারটেকার আছে। বিদ্যুত-পানির জন্য মাসে নির্দিষ্ট অর্থ দিতে হয়। বাসা ভাড়া দিতে হয়, ড্রাইভার আছে, গৃহকর্মী আছে। অথচ আমার রোজগার বন্ধ।” “আমার স্বামী এখন উচ্চশিক্ষার্থে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এখন আমি কার কাছে সাহায্য চাইবো? উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকে আমার একটা ডিপিএস ছিল, সেটা ভাঙাতে হল।” পরিবহণ শ্রমিক, গার্মেন্টস কর্মী, বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িতদের জন্য দিনযাপন রীতিমতো কষ্টকর হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে হাত বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ মনে করেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ উভয় সংকটে পড়েছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে আর্থিক ঝুঁকিতে পড়তে কাধ্য হচ্ছে অনেক মানুষ। “এর মধ্যে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের বিপদ অনেক বড়, সংকটে এরা পথেও নামতে পারবে না আবার কারো কাছে হাতও পাততে পারবে না।” তিনি মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে হাত পড়বে। “তবে এখুনি সেটা অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে কমই দেখা যাবে। কারণ, মানুষের সাধারণ প্রবনতা হিসেব করলে দেখা যাবে প্রথমদিকে নিজেদের হাতে থাকা সঞ্চিত অর্থ খরচ করবে তারা, এরপর দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ে হাত দেবে।" "সবেশষে কোন বিনিয়োগ থাকলে সেটা খরচ করে ফেলবে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে, আগামী দুয়েক মাসের মধ্যেই সেটা প্রবলভাবে দৃশ্যমান হবে।” বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, লকডাউনের ফলে প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ পরিবার ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়বে। সংস্থাটি বলছে, এই পরিস্থিতির কারণে দারিদ্র সীমার ঠিক ওপরে যারা আছেন, অর্থাৎ নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী, তারাও দারিদ্রসীমার মধ্যে পড়ে যাবে বর্তমান অবস্থার কারণে। সঞ্চয় কি কমছে? ইতিমধ্যে ব্যাংকে নিয়মিত সঞ্চয়ে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কমছে নতুন বিনিয়োগের হারও। সেই সঙ্গে নতুন করে সঞ্চয়ী কোন প্রকল্পে মানুষের আগ্রহ কমেছে বলে জানাচ্ছেন ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট মানুষেরা। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম মনে করেন, লকডাউন পরিস্থিতির কারণে সারাদেশেই মানুষ সঞ্চয় কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। “সঞ্চয় কমেছে কারণ মানুষের ইনকাম কমেছে। আমাদের এখানে যেসব আমানতকারী ছোট ছোট সঞ্চয়ী স্কীমগুলো চালান, বিশেষ করে তাদের সঞ্চয়ে এর প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার হারও কমেছে গত এক দেড় মাসে, বিশেষ করে যারা কম টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতেন।” এদিকে, বেসরকারি ব্যাংক আইএফআইসি’র একজন কর্মকর্তা হাবিবা সুলতানা বলছিলেন, গত এক মাসে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলেছে। “কী কারণে ভাঙছে, তাতো জানি না। কিন্তু সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে নতুন করে কেনে। কিন্তু এবার নতুন করে কেনার হার অনেক কম।” আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান মনে করেন, করোনাভাইরাসের আতংক এবং সাধারণ ছুটির কারণেও মানুষ ব্যাংকিং কম করেছে। “তবে সাধারণভাবে সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে কিছুটা ধীর গতি দেখছি আমরা। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন ব্যবসা শুরু করা কমেছে বলে মনে হচ্ছে।” তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বলে এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি প্রদানের কাজ করায় ব্যাংকটি বড় কোন সংকটে পড়েনি বলে মনে করেন মি. রহমান। ব্যাংকগুলো বলছ সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে, তবে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর দাবি করছে বিক্রি অপরিবর্তিত রয়েছে এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেনি বলে দাবি করেছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালক মহিনুর ইসলাম জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার আগের মতই আছে। তবে তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি মুনাফা তোলার হার বেড়ে গেছে, বিশেষ করে পেনশনার এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রের, অর্থাৎ যারা সঞ্চয়পত্রের আয়ের ওপর নির্ভরশীল বিনিয়োগকারী বয়স্ক ও নারী, তাদের মধ্যে। এদিকে আয় কমে যাওয়ার ধারা দীর্ঘায়িত হলে একদিকে মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের সঞ্চয় কমে তলানিতে ঠেকলে, সেটা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিআইডিএসের নাজনীন আহমেদ। “অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে সমাজে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনা ঘটে। ফলে সেটা থামাতে হলে সরকারকে সচেতন হতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সরকার একা সেটা সামাল দিয়ে উঠতে পারেব না।” এজন্য সমাজের বিত্তবান মানুষেরও এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মনে করেন, “যেমন বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন কর্মী ছাটাই না করে, বেতন না কমায় এবং প্রয়োজনে কারো অর্থ কষ্টে পাশে দাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”
news-55301521
https://www.bbc.com/bengali/news-55301521
সন্তান বিক্রির ব্যবসা: কেনিয়ার কালোবাজারে ব্যবসায়ীর কবলে পড়া এক মায়ের কাহিনি- বিবিসির অনুসন্ধান
বিবিসির আফ্রিকা আই অনুসন্ধান বিভাগ গত মাসে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে শিশু ব্যবসার রমরমা কালোবাজারের খবর উদঘাটন করার পর পুলিশ পাচারের অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মুনাফার লোভে কালোবাজারে অবৈধভাবে যেসব মায়েদের শিশু বিক্রি হয়েছে, কেন তারা এই পথে গেছেন? কেন সামান্য অর্থের বিনিময়ে নিজের সন্তান বিক্রি করে দিয়েছেন?
আডামা তার গ্রামে ফিরে গেছেন। তিনি বলছেন, ''জীবন তার জন্যখুবই কঠিন''। আডামার বাবা মা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন তার জীবন অনেক সহজ ছিল, তিনি বলছেন। তাদের পরিবার স্বচ্ছল ছিল না, চাইলেও সবকিছু করার সামর্থ্য ছিল না, কিন্তু তারপরেও জীবনে একটা শৃঙ্খলা ছিল। তিনি স্কুলে গেছেন, স্কুলজীবন আনন্দে কেটেছে। কোন কিছু নিয়ে তাকে চিন্তা করতে হতো না। বাবা মারা গেলেন তার ১২ বছর বয়সে। কয়েক বছর পরে মাও মারা গেলেন। ''জীবন খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াল,'' কেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে এক গ্রামে বসে কথা হচ্ছিল আডামার সাথে। ''আমাকে স্কুল ছেড়ে দিতে হল জীবিকার তাগিদে।'' আডামার যখন ২২ বছর বয়স এক পুরুষের সাথে তার পরিচয় হয়, আডামা অন্ত:স্বত্তা হন। কিন্তু তাদের কন্যা সন্তান জন্মানোর তিনদিন পর সন্তানের বাবাও মারা যান। তার একাকীত্বের যন্ত্রণা গভীর হয়। বাচ্চাটা ১৮ মাস বয়স হওয়া পর্যন্ত নানা অসুখে ভুগত। এরপর মেয়ের অবস্থা স্থিতিশীল হবার পর তাদের দুজনের বেঁচে থাকার জন্য আয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। আডামা বাচ্চাকে তার বৃদ্ধা নানীর কাছে রেখে নাইরোবি গেলেন কাজের খোঁজে। ''মনে রেখো, বাচ্চাটার জন্যই তুমি কাজের খোঁজে ছুটে যাচ্ছ,'' নানী বলেছিলেন। আডামা নাইরোবি পৌঁছে প্রথমে রাস্তায় তরমুজ বিক্রির কাজ নেয়। এতে আয় হত খুবই সামান্য। যার সাথে ভাগাভাগির বন্দোবস্তে সে বাসা ভাড়া নিয়েছিল, আডামা বাসায় না থাকলে ঘরে রাখা তার আয়ের অর্থ সেই মেয়েটি চুরি করে নিত। শহরের জীবন খুবই কঠিন ছিল। তার কপালে একটা ক্ষত ছিল। আডামা বলছিলেন নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন, "কিছু পুরুষ আমার সাথে অসদাচরণ করার চেষ্টা করেছিল, নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলাম।" আডামা এরপর নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে যান, কিন্তু সেখানে কোন বেতনই পেতেন না। এরপর একটি নাইটক্লাবে তার কাজ জোটে। প্রথমে তিনি তার বসকে বলেছিলেন তার বেতনের পুরো অর্থ সরাসরি গ্রামে তার নানীর কাছে পাঠিয়ে দিতে। পরে তিনি বেতনের কিছু অর্থ নিজের জন্য রাখার সিদ্ধান্ত নেন। নাইরোবিতে একটি বাসা ভাড়া নেন। আর একটু ভাল বেতনের কাজ জোগাড় হয় আরেকটি নির্মাণ সাইটে। সেখানে এক পুরুষের সাথে আলাপ হয়। দুজনে মেলামেশা শুরু করেন। পুরুষটি তাকে বলে সে বাচ্চা চায়। আডামা একটা শর্ত দেন। বলেন ওই পুরুষ যদি তার কন্যা সন্তানকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসার ব্যাপারে রাজি হয়, যাতে তারা একসাথে থাকতে পারে, তাহলে ওই পুরুষের সাথে আরেকটি সন্তান নিতে তিনি রাজি আছেন। পুরুষটি রাজি হন। আডামা অন্ত:স্বত্তা থাকার প্রথম পাঁচ মাস তিনি বাসাভাড়া, ও যাবতীয় খরচ দিয়েছেন, খাবারদাবার কিনেছেন। আডামা তখনও তার মেয়েকে গ্রাম থেকে শহরে আনার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন। এরই মধ্যে পুরুষটি একদিন তাকে ছেড়ে চলে যায়। সে আর কখনও ফিরে আসেনি। কেনিয়ার দরিদ্র নারীরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে পাচারকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেক নারীই জানে একজন সন্তানকে পৃথিবীতে আনার আগে তার খাওয়াপরা জোগানোর চিন্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর দুজন হলে তো সে চিন্তা আরও বেড়ে যায়। কেউই অপরিচিত লোকের কাছে নিজের সন্তান বিক্রি করার কথা কখনই ভাবে না। কিন্তু কেনিয়ার দরিদ্র কিছু নারী অভাবে পড়ে বাঁচার শেষ উপায় হিসাবে পাচারকারীদের কাছে তাদের শিশুসন্তানদের বিক্রি করছে। পাচারকারীরা এর বিনিময়ে এসব নারীকে এত কম অর্থ দেয় যা অভাবনীয়। আরেকজন নারী সারা, যখন দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করেন, তার বয়স ছিল ১৭। বাচ্চার ভরনপোষণের সামর্থ্য তার ছিল না। এক মহিলার কাছে সে বাচ্চাকে বিক্রি করে দেয় ৩০০০ কেনিয়ান শিলিং-এর বিনিময়ে- পাউন্ডের হিসাবে যার অর্থমূল্য মাত্র বিশ পাউন্ড। "আমার বয়স ছিল কম, আমি যে কী ভুল করছি, তখন বুঝিনি," তিনি বলেন। "পাঁচ বছর পর আমি বুঝেছিলাম কী করেছি। আমি মহিলাকে ওই অর্থ ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।" তিনি বলেন, আরও কয়েকজন নারীর কথা তিনি জানেন যারা প্রায় একই অর্থের বিনিময়ে সন্তানকে বেচে দিয়েছে। "চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে মেয়েরা সন্তান বিক্রি করছে। অনেকে মায়ের দাবি মেটাতে না পেরে সন্তান বেচেছে, অনেকে আবার স্কুলে পড়তে পড়তে অন্ত:স্বত্তা হয়ে গেছে ১৫/১৬ বছর বয়সে, যা নানাধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। একমাত্র পথ তখন সন্তানকে বিক্রি করে দেয়া।" "এসব মেয়েদের পরামর্শ দেবার বা তাদের সাথে কথা বলার কেউ নেই।" আরও পড়তে পারেন: সন্তানকে বৈধ পথে দত্তকের জন্য দেবার প্রক্রিয়ার কথা আডামাকে কেউ বলেনি। ''আমি কখনও এ বিষয়ে কিছু শুনিনি,'' আডামা জানান আফ্রিকার মধ্যে যেসব দেশে কিশোরীদের মধ্যে গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি, তার অন্যতম হল কেনিয়া। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এই সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। মহামারির কারণে কিছু নারীকে বাধ্য হয়ে যৌন কর্মীর কাজ করতে হচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক মেয়ের জন্য স্কুল নিয়মের শৃঙ্খলও ভেঙে পড়েছে। "আমি বহু নারী ও মেয়ের এধরনের পরিস্থিতিতে পড়ার কাহিনি শুনেছি। অল্পবয়সী মেয়েরা কাজের খোঁজে শহরে আসছে, পুরুষদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে, অন্ত:স্বত্তা হচ্ছে, তারপর সন্তানের বাবা তাদের পরিত্যাগ করে চলে যাচ্ছে," বলছেন কেনিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী প্রুডেন্স মুটিসো। তিনি শিশু সুরক্ষা এবং প্রজনন অধিকার নিয়ে কাজ করেন। "সন্তানের পিতা যদি এসব নারীদের অর্থ না দেন, তাহলে আয়ের জন্য তাদের বিকল্প পথ খুঁজতেই হয়। আর তার থেকেই সন্তান বিক্রিতে তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তারা ভাবছে এভাবে নিজেদের এবং হয়ত গ্রামে রেখে আসা আগের সন্তানদের ভরনপোষণের জন্য হাতে কিছু অর্থ আসবে। লোকে এসব নিয়ে কথা বলে না, কিন্তু এটা একটা সমস্যা।" আডামা যে নির্মাণ কোম্পানিতে কাজ করত, সেখানে তার গর্ভধারণের খবর যতদিন পর্যন্ত সম্ভব লুকিয়ে রেখেছিল। যতদিন না সিমেন্টের ভারী বস্তা তার পক্ষে আর বহন করা সম্ভব হয়নি বা তার পেটের আকৃতি আর গোপন করা সম্ভব হয়নি, সে বলে নি সে অন্ত:স্বত্তা। বললে ঘর ভাড়ার অর্থ হাতে আসত না। তিন মাস তার বাড়িওয়ালা সময় দিয়েছিল। তারপর তাকে তাড়িয়ে দেয় এবং ঘরে কাঠের দেয়াল তুলে ঘর বন্ধ করে দেয়। আট মাসের অন্ত:স্বত্তা আডামা কোন বাড়ির পেছনে লুকিয়ে ঢুকে রাতটুকু ঘুমতেন, ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বেরিয়ে যেতেন। "ভাগ্য ভাল থাকলে কোনদিন কিছু খাবার জুটত," তিনি বলেন। "কখনও কখনও শুধু পানি খেয়ে কাটত।" কেনিয়ায় সাম্প্রতিক কয়েক বছরে কিশোরী মেয়েদের গর্ভধারণের হার বেড়ে গেছে কেনিয়ায় কোন একজন নারী আডামার পরিস্থিতিতে পড়লে, তাদের পাচারকারীদের কব্জায় পড়তে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করে। দেশটিতে গর্ভবতী মা বা শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়লে তবেই গর্ভপাত বৈধ। ফলে এসব ক্ষেত্রে গর্ভপাতের জন্য বিকল্প হল ঝুঁকিপূর্ণ হাতুড়েদের শরণাপন্ন হওয়া। এছাড়াও সমস্যা হল বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের যৌনতা ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষাদানের অভাব, বিশেষ করে গ্রাম এলাকায়। তাছাড়া বৈধ পথে শিশুকে দত্তক দেয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কেও সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। "কোন নারী বা কিশোরী গর্ভের সন্তান না চাইলে সরকারের দিক থেকে তাকে সাহায্য করার কোন ব্যবস্থা নেই," বলছেন হেল্থ পভার্টি অ্যাকশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কেনিয়া শাখার পরিচালক ইব্রাহিম আলি। "এসব নারী প্রায়শই গ্রামাঞ্চলে অবস্থার শিকার হয়ে পড়েন এবং তাদের একঘরে করার প্রবণতা থাকে, ফলে তারা পালানোর পথ বেছে নেন, এবং শহরে গিয়ে তারা ঝুঁকির মুখে থাকেন।" তার সন্তানকে বৈধভাবে ও নিরাপদে কারো হাতে তুলে নেবার যে পথ আছে আডামা তা জানতেনই না। দত্তক প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার কোন ধারণাই ছিল না। "আমি জানতামও না, কখনও এ বিষয়ে শুনিওনি," তিনি বলেন। তিনি হাতুড়েকে দিয়ে গর্ভপাতের কথা ভেবেছিলেন, তিনি বলেন। কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের কারণে তা তিনি করতে পারেননি। তিনি এরপর আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন। "আমার মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল, ভাবছিলাম পানিতে ডুবে কীভাবে আত্মহত্যা করা যায়, যাতে মানুষ আমার কথা পুরো ভুলে যায়।" তার সন্তান প্রসবের কয়েক সপ্তাহ আগে একজন তার সাথে মেরি আওমা নামে এক মহিলার আলাপ করিয়ে দেয়। তিনি বলেন গর্ভপাত বা আত্মহত্যা কোনটাই করো না। তিনি নাইরোবির বস্তি এলাকা কেওলে রাস্তার ধারে একটি অবৈধ ক্লিনিক চালাতেন। তিনি আডামাকে ১০০ শিলিং (স্থানীয় মুদ্রা) দেন এবং বলেন পরেরদিন তার ক্লিনিকে যেতে। মেরি আওমা, কেওলে একটি অবৈধ ক্লিনিক চালান, সেখানে তিনি মুনাফা রেখে শিশু কেনা বেচা করেন। মেরি আওমার অস্থায়ী ক্লিনিকটি আসলেই কোন ক্লিনিক নয়। কেওলের রাস্তার পাশে একটা সন্দেহজনক দোকানঘরের পেছনে লুকানো দুটি ঘর নিয়ে এই ক্লিনিক। দোকানের ভেতর কয়েকটি খালি তাক, তাতে ছড়ানো ছেটানো কিছু পুরনো ওষুধপত্র। তার পেছনে রয়েছে দুটো ঘর, যেখানে নারীদের প্রসব করানো হয়। ভেতরে বসেন মেরি তার সহকারীকে সাথে নিয়ে। মুনাফা রেখে বাচ্চা কেনাবেচা করেন। যারা বাচ্চা কিনছেন তারা কে বা কেন কিনছেন সেসব খোঁজ নেবার কোন দরকার তিনি দেখেন না। আডামাকে তিনি বলেছিলেন তার খদ্দেররা সবাই মমতাময়ী পরিবার, তারা বাচ্চা নিতে পারেন না, তাই তারা বাচ্চা কেনেন। কিন্তু রাস্তার যে কেউ তার হাতে ঠিক ঠিক নগদ অর্থ তুলে দিলেই আওমা খুশি- তিনি সদ্যোজাতদের বেচে দেন। মেরি আওমা গর্ভবতীদের বলেন তিনি আগে নার্স ছিলেন। কিন্তু শিশু প্রসবের সময় বড়ধরনের সমস্যা হলে তা মোকাবেলার জন্য কিন্তু তার কাছে না আছে চিকিৎসা বা অন্যান্য সরঞ্জাম বা তার নিজের বিষয়ে কোন দক্ষতা। "তার ওই ঘরটা নোংরা। রক্তের জন্য তিনি একটা ছোট পাত্র ব্যবহার করেন, ঘরে কোন বেসিন নেই, বিছানাও অপরিষ্কার," আডামা বলেন। "কিন্তু আমার তখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমার কাছে আর কোন বিকল্প ছিল না।" আডামা যখন সেই ক্লিনিকে পৌঁছন, মেরি আওমা তাকে দুটি ট্যাবলেট খেতে দেন। তিনি বলেননি প্রসববেদনা তাড়াতাড়ি ওঠানোর জন্য তাকে ওই ট্যাবেলট দেয়া হয়েছে, জানান আডামা। আওমার হাতে একজন খদ্দের ছিল এবং তিনি চাইছিলেন তাড়াতাড়ি বাচ্চাটা তার কাছে বিক্রি করে দিতে। আডামা যখন একটি ছেলে সন্তান প্রসব করলেন, জন্মের পর তার বুকের সমস্যা দেখা দিল। মেরি আডামাকে বললেন বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর শিশুটিকে যখন ছেড়ে দেয়া হল, তখন সে সুস্থ হয়ে গেছে। তার বাড়িওয়ালা, যিনি তাকে বের করে দিয়েছিলেন, তিনি তাকে ঘরে আবার ঢুকতে দেন, এবং আডামা বাচ্চাটিকে সেখানে দেখাশোনা শুরু করেন। মেরি আওমার সাথে আবার আডামার বাজারে দেখা হয়ে যায়, আওমা তাকে আবার ১০০ শিলিং দেন এবং বলেন পরদিন তার ক্লিনিকে যেতে। "আরেকটি শিশু জন্মেছে," আওমা তার খদ্দেরের কাছে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে বলেন, দাম "৪৫,০০০ শিলিং।" আডামার তার সন্তানকে কোলে করে আদর করছেন, তাকে বিক্রি করে দেবার কয়েক মুহূর্ত আগে মেরি আওমা কিন্তু আডামাকে ৪৫,০০০ শিলিং দেবার প্রস্তাব দেননি- পাউন্ডের হিসাবে যা ৩০০ পাউন্ডের সমান। যে অর্থ তিনি খদ্দেরের কাছে দাবি করেছিলেন। তিনি আডামাকে ১০ হাজার শিলিং (প্রায় ৭০ পাউন্ড) দিতে চান। কিন্তু মেরি আওমা জানতেন না যে, যে খদ্দেরকে তিনি ঠিক করেছেন তিনি ছদ্মপরিচয়ে বিবিসির সাংবাদিক। বিবিসি শিশু পাচার নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য এক বছর ধরে তাদের অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। আডামা যখন পরদিন মেরির ওই ক্লিনিকে গেলেন, তিনি পেছনের ঘরে বসলেন, কোলে ছিল তার পুত্র সন্তান। তিনি যখন বসেছিলেন তার শিশুর কথিত খদ্দের তার কানে ফিসফিস করে তার কাছে আর কী বিকল্প আছে সে বিষয়ে কিছু বললেন। আডামা সেদিন ছেলে কোলে নিয়ে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে যান। শিশুকে নিয়ে যান সরকার পরিচালিত একটি শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে তার শিশুর যত্ন নেয়া হবে যতদিন না বৈধ পথে তার দত্তকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিবিসি মেরি আওমাকে বলেছিল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে তার কিছু বলার আছে কিনা, মেরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। আডামার বয়স এখন ২৯। তিনি ফিরে গেছেন তার গ্রামে যেখানে তিনি বড় হয়েছিলেন। এখনও তিনি অনেক সময়ই অভুক্ত ঘুমাতে যান। জীবন এখনও তার জন্য সংগ্রামের। কাছের একটা হোটেলে মাঝেমধ্যে তার কাজ জোটে। কিন্তু সেই আয় যথেষ্ট নয়। তার স্বপ্ন তার গ্রামে তিনি একটা জুতার দোকান খুলবেন। নাইরোবি থেকে জুতা এনে বিক্রি করবেন। কিন্তু এটা তার অনেক দূরের স্বপ্ন। ছেলের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু তার কোন দুঃখ নেই। "ছেলেকে বিক্রি করতে আমি চাইনি। আমি ওই অর্থ ছুঁতে পর্যন্ত চাইনি। কিন্তু ওকে যখন আর্থিক লেনদেন ছাড়া দিয়ে দিতে হল, তখন দুঃখ পাইনি।" যে শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে তিনি তার ছেলেকে রেখে এসেছেন সেই এলাকা তার পরিচিত। ছেলের জন্মের কয়েকদিন আগে যে বাসা থেকে বাড়িওয়ালা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, কেন্দ্রটি তার কাছেই। "আমি জানি এলাকাটা নিরাপদ," তিনি বলেন, "এবং যারা ওর দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তারা ভাল লোক।" রিপোর্টিং-এ সহযোগিতা করেছেন এনজেরি এমওয়াঙ্গি। বিবিসির জন্য ছবি তুলেছেন টনি ওমোন্ডি।
news-56325380
https://www.bbc.com/bengali/news-56325380
আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্ট সবচেয়ে বেশি অসৎ মিথ্যাচারী ছিলেন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল যে তিনি সত্যের ধার ধারেননা, নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলেন। কিন্তু যেটা সত্য তা হলো যে হোয়াইট হাউজে মি. ট্রাম্পের পূর্বসূরিদের অনেকেই অবিশ্বাস্য মাত্রায় ভয়াবহ রকমের মিথ্যাচার করেছেন।
আমেরিকার সাবেক কজন প্রেসিডেন্ট কিন্তু তাদের সাথে কি মি. ট্রাম্পের তুলনা আসলেই হতে পারে? অবশ্যই পারে। যেমন, সাদ্দাম হোসেন যখন ১৯৯০ সালের আগস্টে কুয়েত দখল করেন, প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবলু বুশ (বুশ সিনিয়র) হুমকি দিয়েছিলেন, “এটা সহ্য করা হবেনা“ কিন্তু আমেরিকা যখন উপসাগরে সৈন্য সমাবেশ করলো, মার্কিন জনগণের যুদ্ধে তেমন সায় ছিলনা। নির্বাসিত কুয়েত সরকার তখন যুদ্ধের পক্ষে আমেরিকায় জনমত তৈরিতে দ্রুত মার্কিন একটি জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান (হিল অ্যান্ড নোলটন) নিয়োগ করে। মি. বুশের সাবেক প্রধান সহকারী তখন ওয়াশিংটনে ঐ প্রতিষ্ঠানের অফিসটি চালাতেন। ঐ জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানটি ‘নাইরা‘ নামে ১৫ বছরের একজন কিশোরীকে ইরাকি আগ্রাসনের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে প্রশিক্ষণ দেয়। এরপর ঐ কিশোরী ছলছল চোখে কাঁদোকাঁদো গলায় ১৯৯০ এর অক্টোবরে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সামনে বলে যে কীভাবে ইরাকি সৈন্যরা কুয়েতের একটি হাসপাতাল ঢুকে ইনকিউবেটর থেকে সদ্যোজাত অসুস্থ শিশুদের বের করে নিয়ে তাদেরকে মেঝেতে শুইয়ে রেখেছিল যাতে তারা মারা যায়। সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল নাইরা নামটি ছদ্মনাম, কারণ আসল নাম প্রকাশ পেলে কুয়েতে তার পরিবারের ওপর নির্যাতন হতে পারে। যুদ্ধের পর জানা যায়, ঐ কিশোরী ছিল যুক্তরাষ্ট্রে কুয়েতি রাষ্ট্রদূতের মেয়ে, এবং সে যা বলেছিল তা পুরোপুরি মনগড়া। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ নিয়ে তার এক বইতে জন ম্যাকআর্থার তার এক বইতে ঐ ঘটনার বিস্তারিত লিখেছেন। সাদ্দাম হুসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর যুক্তি হিসাবে মি. বুশ নিজে কমপক্ষে ছয়বার কুয়েতি রাষ্ট্রদূতের মেয়ের মুখের ঐ কল্পকাহিনী জনসমক্ষে উল্লেখ করেছেন। সৌদি আরবে মার্কিন সৈন্যদের সামনে এক ভাষণে তিনি বলেন, “ইনকিউবেটর থেকে শিশুদের বের করে কাঠের চেলার মত মেঝের ওপর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে।“ ম্যাকআর্থার লিখেছেন, সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধের সামরিক অভিযানে সমর্থন তৈরিতে ঐ মনগড়া গল্প কাজে লেগেছিল। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে মিথ্যাচারের অনেক অভিযোগ রয়েছে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের (সিনিয়র) বিরুদ্ধে ১৯৯১ সালে জানুয়ারিতে সেনেটে মি বুশের যুদ্ধ শুরুর প্রস্তাব খুব অল্প ব্যবধানের ভোটে পাশ হয়। ছয়জন সেনেটর তাদের দেওয়া সমর্থনের যুক্তিতে হাসপাতালে ইনকিউবেটর থেকে শিশুদের টেনে বের করার সেই মনগড়া কাহিনীর উল্লেখ করেছিলেন। কয়েকদিন পরই অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম শুরু হয়েছিল। দুঃখের বিষয় যেটি ছিল তা হলো হাসপাতালের ইনকিউবেটর থেকে সরানোর জন্য সত্যিই শিশুদের মৃত্যু হয়েছিল, কিন্তু তা হয়েছিল ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের বিমান হামলার পরিণতিতে। বোমা হামলার প্রথম রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এবং বোমার শব্দে আতঙ্কিত মায়েরা বাগদাদের একটি হাসপাতালের ইনকিউবেটর থেকে তাদের সদ্যোজাত বাচ্চাদের নিয়ে ঠাণ্ডা বেজমেন্টে গিয়ে আশ্রয় নেয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, ঐ ঘটনায় ৪০টি সদ্যজাত শিশু মারা গিয়েছিল। ৪২ দিনের ঐ যুদ্ধে কয়েক হাজার বেসামরিক লোক মারা যায় - যার মধ্যে চিল ৪০টি সদ্যোজাত ইরাকি শিশু। কুয়েতে ইনকিউবেটরের শিশু মৃত্যুর কাহিনী যে মনগড়া তা প্রেসিডেন্ট বুশ জানতেন কি জানতেন না তা কখনই পরিষ্কার হয়নি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট যখন কোনো বক্তব্য দেন হোয়াইট হাউজ আগে থেকে তার সত্যতা যাচাই করে বা তাদের তা করার কথা। বিশেষ করে শিশু হত্যার মত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে প্রেসিডেন্ট কোনো কথা বলার আগে তা যাচাই করা তার স্টাফদের অবশ্য কর্তব্য ছিল। তবে কংগ্রেসের সামনে কুয়েতি কিশোরী নারিয়ার ঐ মনগড়া শুনানির ব্যাপারে মার্কিন সাংবাদিকরা জানতে পেরেছিলেন যুদ্ধের পর। ২০১৮ সালে মি. বুশের মৃত্যুর পর তার স্তুতি করে যে জীবনী লেখা হয়েছে তাতেও নারিয়ার সেই গল্প নেই। কিন্তু পক্ষান্তরে মি. ট্রাম্পের শাসনামলে তার বক্তব্য বিবৃতি ব্যাপকভাবে যাচাই করেছে মার্কিন মিডিয়া। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় মি. ট্রাম্পের বক্তব্য-বিবৃতির একটি ডাটাবেজ রয়েছে। পত্রিকাটি দাবি করে মি. ট্রাম্প ৩০ হাজারেরও বেশি এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন যা অসত্য, বিভ্রান্তিকর। এমনকি গল্ফ খেলা বা তার নিজের সম্পত্তি নিয়ে মি. ট্রাম্পের মন্তব্যও যাচাই করেছে পত্রিকাটি। নির্বাচন প্রক্রিয়াই ‘দানব‘ সৃষ্টি করছে আমেরিকার রাজনীতিতে মিথ্যাচার নিয়ে লেখা এক বইতে রাজনীতির অধ্যাপক বেঞ্জামিন গিনসবার্গ বলেছেন, প্রেসিডেন্টদের অনেক মিথ্যাচারের পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। তিনি মি. বুশের ছেলে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবলু বুশের (বুশ জুনিয়র) অনেক মিথ্যা বিবৃতির উল্লেখ করেন যেগুলো দ্বিতীয় ইরাক যুদ্ধের আগে দেওয়া হয়েছিল। যেমন, ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের হাতে বিপজ্জনক মারণাস্ত্র থাকা নিয়ে গোয়েন্দাদের সন্দেহ ইচ্ছা করে চেপে রাখা, সাদ্দাম হোসেনের কাছে এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র থাকার সম্ভাবনা বার বার বলা বা সাদ্দামকে আল-কায়দার মিত্র বলে চিহ্নিত করা। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়র অধ্যাপক গিনসবার্গ বলেন, প্রেসিডেন্টদের অনেক মিথ্যা ভাষণের পরিণতিতে যুদ্ধ হয়েছে। সেদিক দিয়ে মি. ট্রাম্পের চেয়ে তার পূর্বসূরিদের দায় অনেক বেশি। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির এই শিক্ষক বলেন, “সমস্যা হচ্ছে যে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়াতেই গলদ রয়েছে, যার ফলে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক দানব সৃষ্টি হয়েছে।“ “প্রার্থী হতে বছরের পর বছর ধরে প্রচারণা চালাতে হয়। ফলে, সবচেয়ে উদ্ধত, উচ্চাভিলাষী, আত্ম-প্রেমিক এবং দাম্ভিক ব্যক্তিরাই এই প্রক্রিয়ার অংশ হন।“ আমেরিকান জনগণ একসময় তাদের সেনাপতিকে শিশুর মত সরলভাবে বিশ্বাস করতো। মানুষের কাছে তখন প্রেসিডেন্টের অবস্থান ছিল অনেকটা ঈশ্বরের মত। কখন তা বদলে গেল? অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, লিন্ডন বেইনস জনসনের সময় থেকে মিথ্যাচারের সূচনা। কিন্তু তিনিই যে প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি মিথ্যাচার করেছিলেন - সেটা ঠিক নয়। জনসনের মিথ্যাচার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাই রবার্ট কেনেডি প্রেসিডেন্ট জনসন সম্পর্কে বলেছিলেন, “তিনি সবকিছু নিয়ে সর্বক্ষণ মিথ্যা বলেন। প্রয়োজন ছাড়াই তিনি মিথ্যা বলেন।“ ভিয়েতনামের যুদ্ধের যুক্তি খাড়া করতে মি. জনসন ১৯৬৪ সালে অক্টোবর মাসে টনকিন উপসাগরে একটি নৌ হামলার কথা বলেছিলেন - যে হামলা আসলে কখনই হয়নি। অথচ সেই বিবৃতির জন্য বিরোধের মাত্রা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গিয়েছিল। লিন্ডন বি জনসন নির্বাচনের আগে মি. জনসন ওহাইওতে এক সভায় ভোটারদের বলেছিলেন, তিনি ১০ হাজার মাইল দূরে এশিয়ার একটি দেশে আমেরিকান সৈন্য পাঠাবেননা কিন্তু জেতার পরপরই চুপিসারে তিনি সৈন্য পাঠিয়েছিলেন - যে সংখ্যা শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশিতে পৌঁছেছিল। বিদেশনীতি নিয়ে নিয়ে প্রেসিডেন্ট জনসন এত বিভ্রান্তিমুলক কথা বলতেন যে আমেরিকান মিডিয়া তখন খোলাখুলি বলতো যে এই প্রশাসনের কথার ওপর আস্থা রাখা যায়না। মি. জনসনের উত্তরসূরি রিচার্ড নিক্সন ভিয়েতনাম যুদ্ধের একটি “সম্মানজনক“ সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে কম্বোডিয়ায় কার্পেট বোমা ফেলে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছিলেন। এরপর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর আড়ি পাতার জেরে - যেটি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত - ক্ষমতা হারান মি. নিক্সন। সততার রোল মডেল স্কুলের বইতে প্রেসিডেন্টদের সততা নিয়ে লেখা গল্প পড়িয়ে আমেরিকায় বাচ্চাদের সততা এবং মূল্যবোধ শেখানো হতো। কিন্তু বাস্তবে সেই সততার কোনো অস্তিত্ব কখনই ছিলনা। প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে নিয়ে বিখ্যাত এক গল্প রয়েছে যে বাগানের চেরি গাছ কুড়োল দিয়ে কেটে ফেলার পর তিনি তার বাবার কাছে দোষ স্বীকার করে বলেছিলেন, “আমি মিথ্যা বলতে পারিনা বাবা।“কিন্তু প্রেসিডেন্টের একজন জীবনী রচনাকারী এই গল্পটি স্রেফ বানিয়ে লিখেছিলেন। রিচার্ড নিক্সন আমেরিকান জাতির পিতাও শতভাগ সাধু ছিলেন না। যেমন ১৯৮৮ সালে তিনি নতুন করে ইতিহাস তৈরির চেষ্টা করেন যখন তিনি দাবি করেন যে সাত বছর আগেই তিনি ইয়র্কটাউনে ব্রিটিশদের পরাজিত করার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ভার্জিনিয়ায় সেই গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানো যুদ্ধের প্রধান হোতা ছিল তার ফরাসী মিত্ররা। আমেরিকায় প্রেসিডেন্টদের মিথ্যাচারের শুরু হয়তো ছিল সেটাই। আকাশকুসুম কল্পনা হোয়াইট হাউজের বাসিন্দাদের কিছু কিছু মিথ্যাচার একবারে আকাশকুসুম কল্পনার মত। যেমন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন সফরকারী ইউরোপীয় একজন প্রকৃতি বিজ্ঞানীকে বলেছিলেন আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে জনমানবশূন্য এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে এখনও পশামাবৃত ম্যামথ (হাতির মত দেখতে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী) চরে বেড়ায়। রোনাল্ড রেগান ১৯৮৩ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান বলেন ইউরোপে মার্কিন বাহিনীর সিগনাল কোরের আলোকচিত্রি হিসাবে কাজ করার সময় তিনি নাৎসি বন্দী শিবিরে নির্যাতনের ছবি তুলেছেন। হোয়াইট হাউজে সে সময়কার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইতজাক শামিরের সাথে আলাপের সময় মি. রেগান এই গল্প করেন। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকার বাইরে কখনই যাননি। ওয়াশিংটনে পোস্টের তালিকায় জায়গা পাওয়া মি ট্রাম্পের অনেক বক্তব্যই হয়তো গুরুত্বহীন। কিন্তু একজন ইতিহাসবিদ বলেন, মি. ট্রাম্প যেভাবে অকাতরে মিথ্যাচার করেছেন - তাতে আমেরিকার রাজনীতি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা ধসে পড়েছে। রাষ্ট্রের মিথ্যাচার নিয়ে তার এক বইতে অধ্যাপক এরিক অলটারম্যান বলেছেন - আমেরিকা রাষ্ট্র সৃষ্টির শুরু থেকেই প্রেসিডেন্টদের মিথ্যাচার মানুষ সহ্য করেছে, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প অতীতের সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছিলেন। মিথ্যাচার নিয়ে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের নির্লজ্জতাও ছিল অবিশ্বাস্য। ১৯৯৮ সালে জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজের ইনটার্ন মনিকা লিউনিস্কির সাথে তার যৌন সম্পর্কের অভিযোগ জোরগলায় অস্বীকার করেছিলেন তিনি। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে অস্বীকার করেছিলেন। পরে এক তদন্তের তার মিথ্যাচার ফাঁস হয়ে যায়। অবৈধ যৌন সম্পর্ক ঢাকতে মিথ্যা বলেছিলেন বিল ক্লিনটন কিন্তু জাতিকে ধোঁকা দেওয়া নিয়ে লজ্জা পাওয়ার বদলে শাস্তি না হওয়ার জন্য মি. ক্লিনটন আড়ালে স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন বলে তার জীবনীমুলক একটি গ্রন্থে (দি সারভাইভর) প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের অগাস্টে এ নিয়ে টিভিতে এক সাক্ষাৎকারের আগে তিনি এক বন্ধুকে বলেছিলেন, “মিথ্যা আমাকে বাঁচিয়েছে।“ অথচ হোয়াইট হাউজের যে ঘরে রাষ্ট্রীয় ভোজসভা হয় সেখানে খোদাই করে লেখা রয়েছে - এই ছাদের নীচে শুধু যেন সৎ এবং জ্ঞানী ব্যক্তিরাই শাসক হিসাবে আসেন। বিবিসি বাংলায় আরো খবর: ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও কেন অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হতে চান? সুইস গণভোটে মুসলিমদের বোরকা-নিকাব নিষিদ্ধের পক্ষে রায় 'আমি আর বেঁচে থাকতে চাইনি'- অপরা-র সাথে সাক্ষাৎকারে মেগান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম নারী স্নাতক কাদম্বিনী তালেবান হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে, মার্কিন সতর্কতা বাংলাদেশে নারীবাদীদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় কেন?
news-53166128
https://www.bbc.com/bengali/news-53166128
করোনা ভাইরাস: যে কারণে চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে পারলো না অনলাইন শপগুলো
মার্চ মাসের শেষদিক থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত দুই মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি থাকায় অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় এবং মানুষের ঘরের ভেতরে থাকার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইনে অর্ডার করার প্রবণতা বেড়েছে। তবে অনলাইনে অর্ডারের পরিমাণ অনেক বাড়লেও সেই অনুপাতে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা ও ডেলিভারি দেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বাংলাদেশে গত কয়েকবছর ধরে ফুডপান্ডা, হাঙ্গরি নাকি বা পাঠাও ফুডের মত অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহার করে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করার চল তৈরি হলেও শাকসবজি, মাছ-মাংস বা রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় বাজার সদাই কেনার ক্ষেত্রে অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবহার করার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেশ কম ছিল। কিন্তু সাধারণ ছুটির সময়কার দুই মাসে মানুষের এই প্রবণতা হঠাৎ করেই বহুগুণ বেড়েছে। একইসাথে বেড়েছে ইলেকট্রনিক পণ্য, মোবাইল ফোন বা দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্য অনলাইনে কেনার প্রবণতাও। তবে মানুষের মধ্যে অনলাইনে অর্ডার করার চাহিদা বাড়লেও মানুষের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনলাইনে এই ধরণের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দিতে পারছে না বলে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। পণ্য ডেলিভারির সময় নিয়ে অভিযোগ তুলে ঢাকার বাসিন্দা উম্মে হানি সালমা বলেন, "শাক-সবজি, মাছ-মাংসের মত পণ্য অর্ডার দিলে আগে একদিন, খুব বেশি হলে তিনদিন সময় নিতো। কিন্তু সাধারণ ছুটির মধ্যে অর্ডার ডেলিভারি করতে ১০-১২দিন পর্যন্ত সময় নিতে দেখেছি।" আরেকজন সেবা গ্রহীতা মাকসুদা মোমিন জানান তিনি অনলাইনে একটি ব্র্যান্ডের পণ্য অর্ডার করলেও তাকে ডেলিভারি দেয়া হয় আরেকটি ব্র্যান্ডের পণ্য। "আর তা নিয়ে কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করার পর সঠিক পণ্যটি পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়, ভোগান্তিও কম হয়নি।" অথচ করোনাভাইরাস মহামারির সময় মানুষের অনলাইনে কেনাকাটার চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগানোর যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছিলো এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর। 'দারাজ' বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট চাহিদামত সেবা দিতে না পারার কারণ কী? বাংলাদেশে অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান চালডালের চিফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ বলেন হঠাৎ বাড়তি চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে গ্রাহকদের সেবা দিতে না পারার অন্যতম প্রধান কারণ প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট পরিমাণ সক্ষমতা না থাকা। জিয়া আশরাফ বলেন, "সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকায় দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার অর্ডার আসতো আমাদের, আর আমাদের সক্ষমতা ছিল দৈনিক সাড়ে তিন হাজার মানুষকে অর্ডার দেয়ার।" "কিন্তু ছুটি শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন আমরা দেখলাম দিনে ১৬ থেকে ১৭ হাজারের মত অর্ডার আসছে, অর্থাৎ আমরা যেই পরিমাণ অর্ডার প্রতিদিনে ডেলিভারি দিতে পারি তারও চার-পাঁচগুণ বেশি।" এই কারণে অনেক অর্ডার ডেলিভারি দিতে সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে বলে মন্তব্য করেন জিয়া আশরাফ। এছাড়া সাধারণ ছুটির সময় মানুষের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অতিরিক্ত পরিমাণে কিনে মজুদ করে রাখার প্রবণতার কারণে পণ্যের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা আরো বেশি প্রকট হয়েছে বলে মনে করেন জিয়া আশরাফ। তবে মি. আশরাফ জানান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন ওয়্যারহাউজ খোলায় এবং নতুন জনবল নিয়োগ করায় অর্ডার ডেলিভারি করার ক্ষেত্রে আগের মত দীর্ঘ সময় লাগছে না তার প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশে দ্রত বাড়ছে অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার প্রবণতা 'ঋণ ও আর্থিক সুবিধা না পাওয়া অন্যতম প্রধান সমস্যা' চালডালের চিফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের একজন পরিচালকও। বাংলাদেশে এই ধরণের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের যথাযথভাবে ব্যবসা করতে না পারার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিমালাকে দোষারোপ করেন তিনি। "একটা ই-কমার্স স্টার্ট আপকে বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে চায় না বা সহায়তা করতে চায় না। ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের প্রয়োজনীয় ফান্ডিং পায় না উন্নতি করার জন্যে। অর্থায়নের সহজলভ্য ব্যবস্থা থাকলে ও সময়মতো ফান্ডিং পেলে চাহিদা তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হতো, সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।" অর্থায়ন সহজলভ্য হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পেতে সক্ষম হবে এবং সাধারণ মানুষও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন জিয়া আশরাফ। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সেবা দেয়ার সক্ষমতা অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি। "ঢাকায় যদি এখন নিউ ইয়র্কের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়, অর্থাৎ সবাইকে ঘরে থাকতে হয় এবং দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয় - তাহলে প্রতিদিন প্রায় এক লাখের মত মানুষকে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে শাক-সবজি, চাল ডাল, মাছ-মাংসের মত পণ্য সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু আমাদের সবগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মিলে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার মানুষের কাছে দিনে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবো।"
news-51091547
https://www.bbc.com/bengali/news-51091547
সিরিয়ার কুর্দি নেতা হেভরিন খালাফের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ধূম্রজাল
বিবিসির নিউজ অ্যারাবিকের তদন্তে জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, সিরিয়ান-কুর্দি রাজনৈতিক নেতা হেভরিন খালাফকে হত্যা করেছে তুরস্কপন্থী সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির একটি দল।
ইতালিতে বিক্ষোভকারীরা হেভরিন খালফের স্মরণে হাতে লাল রং করে করে জড়ো হয় তবে আহরার আল-শারকিয়া নামে ওই গোষ্ঠীটি জানিয়েছে যে, এই মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী নয়। কিন্তু এই ঘটনায় পাওয়া প্রমাণগুলো বলছে অন্য কথা। কে ছিলেন হেভরিন খালাফ? ৩৪ বছর বয়সী হেভরিন খালাফ সিরিয়ার সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কয়েক বছর ধরে সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা যা কুর্দি ভাষায় রোজাভা নামে পরিচিত, সেখানে তুর্কি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি একটি দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। হেভরিন খালাফ ফিউচার সিরিয়া পার্টি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সমতা এই তরুণ রাজনীতিবিদ ফিউচার সিরিয়া পার্টির প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন, যাদের লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার খ্রিস্টান, কুর্দি এবং আরবরা যেন পাশাপাশি কাজ করতে পারে। এ অঞ্চলটি পুনর্গঠনে তাদেরকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। হেভরিন খালাফের সহকর্মী, বন্ধু এবং প্রাক্তন রুমমেট নুবার মোস্তফা বলেন, "আমি আমার একজন বোন, একজন কমরেড, একজন নেতা এবং কর্মস্থলে আমাদের কমরেডরাও তাদের একজন নেতাকে হারিয়েছে।" "আমরা এমন এক নারীকে হারিয়েছি যিনি অন্য নারীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। যিনি মানুষের ক্ষমতায়ন চেয়েছিলেন এবং শান্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন।" ২০১৯ সালের ১২ই অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হেভরিন খালাফ, উত্তর সিরিয়ার আল-হাসাকাহ শহর থেকে রাক্কায় তার পার্টির সদর দফতরের উদ্দেশ্যে নিজে গাড়িতে রওনা হন। সেখানে যাওয়ার জন্য তিনি পশ্চিমের এমফোর মোটরওয়ে ব্যবহার করেন। বাড়ি আর কর্মস্থলের এলাকা দুটি তিন ঘণ্টার দূরত্বে ছিল। মার্কিন সেনারা ওই অঞ্চল থেকে সরে আসার মাত্র তিন দিন হয়েছিল। এর মধ্যে তুর্কি সেনাবাহিনী সিরিয় সীমান্ত অতিক্রম করে সামরিক অভিযান শুরু করতে পারবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে এমন অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এমফোর মোটরওয়েটি ফ্রন্টলাইনের কাছাকাছি কোথাও ছিল না। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে যে তারা একটি সামরিক কনভয়কে তুরস্ক থেকে সিরিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে দক্ষিণে এমফোর মোটরওয়ের দিকে যেতে দেখেছে। হেভরিন খালফকে বহনকারী গাড়িটি চারিদিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। টেলিগ্রামে ভিডিও এই কনভয়টি তুরস্কপন্থী সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি-এসএনএ এর একটি অংশ ছিল। এর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কথা নয়। এসএনএ হল ২০১৯ সালে ৭০ হাজারেরও বেশি সৈন্য এবং ৪১টি দল নিয়ে তুরস্কের গঠিত একটি আমব্রেলা গ্রুপ বা ছদ্ম দল। তুরস্ক এই দলগুলোকে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দেয়। মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার পর থেকে তারা উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীর সাথে লড়াই করে আসছে। ২০১৯ সালের ১২ই অক্টোবর, আহরার আল-শারকিয়া নামে একটি গোষ্ঠী, টেলিগ্রাম নামের একটি এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনে ভিডিওগুলো পোস্ট করে। এক ভিডিওতে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি এমফোর মোটরওয়েতে তাদের আসার কথা ঘোষণা করে। ভিডিওতে সূর্যোদয় দেখা যায় এবং তাদের আসার সময়টি ছিল সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে। এর মধ্যে একটি ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি কংক্রিটের ব্যারিকেড, একটি টেলিফোনের খুঁটি এবং একটি ধুলোয় ছাওয়া রাস্তা দেখা যায়। স্যাটেলাইট চিত্রগুলির সাথে এই জায়গাটির অবস্থান তুলনা করে বিবিসি, যাতে দেখা যায় যে ভিডিওটি তিরওয়াজিয়া চৌকিতে ধারণ করা হয়েছিল। ১২ই অক্টোবর সকালে এই চৌকিটি ধরেই হেভরিন খালাফ তার গাড়ি নিয়ে যাত্রা করছিলেন। টেলিগ্রামে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, আহরান আল-শারকিয়া যোদ্ধারা হেভরিন খালাফের গাড়িটিকে ঘিরে রেখেছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ভিডিওগুলো তখন অন্ধকারের দিকে মোড় নেয়, যেখানে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়, যাদেরকে বলা হয় তারা পিকেকে যোদ্ধা। পিকেকে হল একটি কুর্দি সশস্ত্র দল যারা কয়েক দশক ধরে তুর্কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। একটি ভিডিওতে, আহরার আল-শারকিয়া গোষ্ঠীর একজন তার এক সহকর্মীকে বলতে শোনা যায় তিনি মাটিতে পড়ে থাকা কাউকে গুলি করার সময় সেই দৃশ্য যেন ভিডিওতে ধারণ করেন। এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য ধারণ করা হয় তিরওয়াজিয়া চেকপয়েন্টে। আহরার আল-শারকিয়া কী বলছে? আহরার আল-শারকিয়া প্রথমে সেখানে উপস্থিত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। কিন্তু পরে দলটি বিবিসিকে এক বিবৃতিতে জানায় যে "সেদিন এমফোর মোটরওয়েতে যে ব্যক্তি কোন অনুমতি ছাড়াই রোড ব্লক স্থাপন করেছিল... যারা নেতৃত্বের আদেশ লঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে বিচারের জন্য পাঠানো হয়েছে।" আহরার আল-শারকিয়া আরও বলেছে যে তারা একটি গাড়িতে গুলি চালিয়েছিল। তারা দাবি করেছে যে তারা ওই গাড়িটিকে থামতে বললেও সেটা থামেনি। কিন্তু দলটি জোর দিয়ে বলছে যে তারা হেভরিন খালাফকে টার্গেট করেনি এবং কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটা তারা জানে না। বিবিসির অনুসন্ধান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহরার আল-শারকিয়ার পোস্ট করা নিজস্ব ভিডিও এবং এক প্রত্যক্ষদর্শী যিনি বিবিসি নিউজ অ্যারাবিকের সঙ্গে বিশেষভাবে কথা বলেছেন---এই দুটি বিষয় এমন ইঙ্গিত দেয় যে ওই কুর্দি রাজনীতিবিদকে এই গোষ্ঠীর লোকেরাই হত্যা করেছে। বিবিসির ভূ-অবস্থান বা জিওলোকেশন বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে হেভরিন খালাফের গাড়িটি তিরওয়াজিয়া চৌকির পাশে যে রাস্তার তার বাইরেই ছিল। সেদিন আহরার আল-শারকিয়ার পোস্ট করা সর্বশেষ ভিডিওতে, যোদ্ধাদের হেভরিনের গাড়িটি ঘিরে থাকতে দেখা গেছে। গাড়ীটির মেঝেতে একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়, সেটা হেভরিনের ড্রাইভার ফরহাদ রমজানের বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভিডিওটির এক পর্যায়ে গাড়ির ভিতরে থেকে যখন কোন নারীর ম্লান কণ্ঠস্বর শোনা যায়। ৩৪ বছর বয়সী এই নারীর জানাজা উত্তর সিরিয়ার দেরিক শহরে অনুষ্ঠিত হয়। "এই পৃথিবীতে কোন মানবতা নেই" "এটি হেভরিনের কণ্ঠস্বর - আমি ৫০০০ কণ্ঠের মধ্যেও তার কণ্ঠস্বর চিনতে পারবো"--- হেভরিনের মা সৌয়াদ মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেন। "যখন আমি তার কণ্ঠ শুনেছি, আমি বিশ্বের বর্বরতা দেখেছি এবং এই পৃথিবীতে কোনও মানবতা নেই।" দেখা যাচ্ছে যে, হেভরিন খালাফ বেঁচে ছিলেন এবং গাড়ি থামানোর সময় যোদ্ধাদের কাছে নিজের পরিচয় দিতে সক্ষম ছিলেন। এছাড়াও প্রমাণ আছে যে, তিনি গাড়ির ভিতরে মারা যাননি। যে কৃষক বিবিসির সাথে বিশেষভাবে কথা বলেছিলেন এবং তার পরিচয় গোপন রাখতে বলেছেন, তিনি জানান যে, আহরার আল-শারকিয়ার বিদ্রোহীরা যখন সেখানে পৌঁছায় তখন তিনি ওই চৌকির পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে সাতটায় যোদ্ধারা পিছু হটে যাওয়ার পরে তিনি ঘটনাস্থলে যান। ওই কৃষক বলেছেন, "এটি একটি ভয়াবহ দৃশ্য ছিল," আমি প্রথমে যাকে দেখেছি তিনি ছিলেন একজন নারী। তার দেহ গাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ মিটার দূরে পড়ে ছিল ... তার মুখটি সম্পূর্ণরূপে বিকৃত ছিল, এবং তার পা সত্যিই খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সম্ভবত ভাঙ্গা। " ওই কৃষক তিরওয়াজিয়া চৌকিতে এমন নয়টি লাশ দেখতে পান। "স্থানীয়রা লাশ গাড়ীতে রাখার জন্য আমাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেছিল। তারা ভয় পেয়েছিল যে তাদেরও হত্যা করা হবে।" হেরিন খালফের মা সৌদ মোহাম্মদ টেলিগ্রামের ভিডিওটি যাচাই করে দেখছেন। বন্দুকের ২০টি গুলির আঘাত ২০১৯ সালের ১২ই অক্টোবর রাত ১২টায় হেভরিনের মরদেহ এবং আরও তিনটি লাশ মালিকিয়ার সামরিক হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। সে সময় বিতরণ করা একটি মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয় যে হেভরিন খালাফকে ২০বারেরও বেশি গুলি করা হয়েছিল। তার দুই পা ভেঙে গিয়েছিল এবং তিনি গুরুতর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। বিবিসি অ্যারাবিকের ধারণা যে, আহরার আল-শারকিয়া যোদ্ধারা হেভরিনকে জীবিত অবস্থায় গাড়ি থেকে টেনে নামায়, এরপর হামলা চালিয়ে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং গাড়ির বাইরে হত্যা করে। আহরার আল-শারকিয়া বিবিসিকে বলেছে যে, "আমরা হেভরিন খালাফকে হত্যার দায় বেশ কয়েকবার পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করেছি।" জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার, হেভরিন খালাফ হত্যার বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করার জন্য তুরস্ককে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এখনও সেই তদন্ত হয়নি। উত্তর সিরিয়ায় তুর্কি সামরিক আক্রমণ শুরুর পর থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইপ এরদোয়ান বলে আসছেন যে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করতে এবং শান্তির সুরক্ষার জন্য সামরিক অভিযানের প্রয়োজন ছিল। আরও পড়তে পারেন: তুরস্ককে প্রতিহত করতে কুর্দিদের সাথে সিরিয়ার চুক্তি সিরিয়ায় তুর্কী-সমর্থক বাহিনী কি যুদ্ধাপরাধ করেছে? সিরিয়ায় কি ইসলামিক স্টেট ফিরে আসতে পারে? তুরস্কের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য নেই অক্টোবরে মার্কিন সেনা ওই অঞ্চল থেকে সরে আসার পর হেভরিন সেই কয়েকশো মানুষেরই একজন যাকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবিসিকে জানিয়েছে যে, "আহরান আল-শারকিয়া যে হেভরিন খালাফ এবং অন্যদের হত্যা করেছে তা অবশ্যই স্বাধীনভাবে তদন্ত করা উচিত এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ...তুরস্ক যতক্ষণ পর্যন্ত না তার প্রক্সি বাহিনীর উপর লাগাম টানছে এবং সহিংসতার পেছনে দায়ীদের রেহাই দেয়া বন্ধ করছে ততোক্ষণ পর্যন্ত নৃশংসতাকে আরও উৎসাহিত করা হবে।" বিবিসি তুরস্ক সরকারের কাছে এই ঘটনায় একটি মন্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেও কোন সাড়া মেলেনি।

No dataset card yet

New: Create and edit this dataset card directly on the website!

Contribute a Dataset Card
Downloads last month
0
Add dataset card