summary
stringlengths
1
29.6k
genre
stringclasses
7 values
Label
int64
0
6
কালচক্রঃ কালের স্রোতধারায় জীবনের প্রতিচ্ছবি। বিগত কয়েকবছর ধরে বাংলা সাহিত্যে থ্রিলার ও অনুবাদের যে জোয়ার চলছে, তার মধ্যে সামাজিক উপন্যাস প্রায় চোখেই পড়ে না। হাতে গোনা যাও বা দু একটা লেখা হচ্ছে, তার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে প্রায় গতানুগতিক রোমান্টিক উপন্যাস, আর বাকিটা জুড়ে হুমায়ুন আহমেদীয় স্টাইলের মধ্যবিত্ত বা নিন্মবিত্তের জীবন নিয়ে উপন্যাস। এরকম একটা সময়ে কেবল স্রোতের বিপরীতে গিয়ে সামাজিক উপন্যাসই শুধু নয়, সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে কোন একটা আঞ্চলিক জনগোষ্ঠী বা জনপদকেন্দ্রিক উপন্যাস রচনার দিকে হাত দেয়াটাই একটা বিশাল কৃতিত্বের কাজ বলে মনে করি। এবং সে কাজটা যখন অনায়াসে যথাযথ মুন্সিয়ানার সাথে সম্পন্ন করে তোলেন লেখক; তাও একজন নতুন, তরুন লেখক, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি শ্রদ্ধার ভাব চলে আসে৷ সত্যি বলতে এই আয়োজনের আগে আমি লেখক আবদুল্লাহ আল ইমরানের লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম না একেবারেই। ধন্যবাদ এই আয়োজনকেও, এরকম চমৎকার একজন লেখকের খোজ পেলাম বলে। "কালচক্র" সামাজিক উপন্যাস । সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে এটি জনপদকেন্দ্রিক উপন্যাস। যেমনটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পদ্মানদীর মাঝি", তারাশংকরের " হাসুলিবাকের উপকথা" বা অদ্বৈত মল্লবর্মনের "তিতাস একটি নদীর নাম"। পদ্মানদীর মাঝি যেরকম পদ্মা ও তার নদী তীরবর্তী জেলেদের জীবনসংগ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, তেমনই " কালচক্র" উপন্যাস গড়ে উঠেছে ভৈরব নদী আর তার তীরবর্তী নয়নতারা পাটকলকে কেন্দ্র করে। এধরনের উপন্যাসে সাধারণত কেন্দ্রীয় কোন চরিত্রের চেয়ে সেই এলাকার, এলাকার মানুষের সামগ্রিক জীবনটাই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠে৷ কালচক্রও এর ব্যাতিক্রম নয়। উপন্যাসের শুরুটা ভৈরবের তীরবর্তী ভবানীপুর গ্রামের ঠাকুরবাড়িতে, প্রাচীন ও সম্ভ্রান্ত এই ঠাকুরবাড়ির এক অন্তঃপুরবাসিনী মহুয়ার আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। গায়ের লোকের কানাকানিতে শোনা যায়, আত্মহত্যার সময় মহুয়ার পেটে বাচ্চা ছিল। ঘটনা সত্যি কি না, আর সত্যি হলেও অবিবাহিতা মহুয়ার এমন সর্বনাশের জন্য দায়ী কে সেটা নিয়ে গাঁয়ের লোকদের মত পাঠকদের মনেও কৌতূহল জেগে উঠে৷ গল্পের আরেকদিক, এবং মূল সুর যেটা, সেটা নয়নতারা মিল, মিলের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও এই মিলকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করা নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনধারা, তাদের সুখ দুঃখ, বঞ্চনার, প্রতারনার ইতিহাস নিয়ে। যে মিলে আছে আমজাদ প্রেসিডেন্টের মত সুচতুর স্বার্থান্বেষী শ্রমিক নেতা, সোলায়মান মিয়ার মত সহজ সরল কিন্তু ভাবুক সাধারণ শ্রমিক, কিংবা বিষ্ণুর মত বোকা মাতাল আর জগলুর মত মনিব আন্তঃপ্রাণ কর্মচারীর কথা৷ আর তাদের ঘিরে লতায় পাতায় জড়িয়ে আছে হারুন, মিষ্টি বৌদি, নাজিমুদ্দিন, সিরাজ মোল্লা, মন্টুর মত আরো অসংখ্য চরিত্র। ঠাকুরবাড়ির আভিজাত্য আর মিলের শ্রমিকদের দারিদ্রতার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী দুই চঞ্চল কিশোর কিশোরী, চন্দ্রলেখা আর পলাশ৷ সাদামাটা ভাবে বলতে গেলে এটাই উপন্যাসের প্লট। বাস্তবিক অর্থেই মাত্র ২০০ পেইজের উপন্যাসে লেখক সমাবেশ ঘটিয়েছেন বেশ কয়েকটি চরিত্রের, সুতো ছড়িয়েছেন তাদের অনেক রকম গল্পের। কিন্তু উপন্যাস শেষে এত সুন্দর করে সব সুতোর জোড়া দিয়েছেন, অবাক, বিস্মিত হতে হয়। বিপুল চরিত্র আর বেশ কয়েকটা সাবপ্লটের পরেও খেই হারিয়ে না ফেলা, লেখকের চূড়ান্তরকম মুন্সিয়ানায় পরিচয়। উপন্যাসের মূল এন্টাগনিস্ট বলা যায় আমজাদ প্রেসিডেন্টকে, ব্যাপ্তি, বৈচিত্র্য আর উপস্থিতিতে যে কিনা প্রটাগনিস্ট পলাশকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার চরিত্রের এত রকম শেড দেখা গেছে, মুগ্ধ হতে হয়। আমজাদ একাধারে ধূর্ত শ্রমিক নেতা, চতুর তেল ব্যাবসায়ী বা তেল চোর, দয়ালু মনিব, মমতাবান পিতা আবার রাজনৈতির মঞ্চের পাকা খেলোয়ারও৷ ক্ষমতাশালী হিসেবে সে দরিদ্র বা অসহায়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিবে, এ তো স্বাভাবিক, কিন্তু একটা মিলের শ্রমিক নেতা হয়েও ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার মত করে এলাকার চেয়ারম্যানের উপরে টেক্কা নেয়াটা বেশ মজার, তৃপ্তিকরও বটে। এদিকে আমজাদ চেয়ারম্যান যেমন ধূর্ততা, ক্ষমতা, আর চালাকির মূর্ত প্রতীক, একেবারেই তার উলটো সোয়ামান মিয়া, আবেগী, বেখেয়ালি, সরল আর উদাস। বউ বাচ্চার সখ আহ্লাদের কথা বাদ দিয়েও পেটে ভাত জোগাতে পারে না বলে তার যেমন মন খারাপ হয়, নিজেকে ব্যার্থ মনে হয়, দুটো রোজগার বেশি করার চিন্তা মাথায় আসে, তেমনি জ্বর আক্রান্ত মুমূর্ষু বাউলের চিকিৎসার জন্যে সংসার চলবে না জেনেও নিজের বেতনের টাকা খরচ করতে সে দুবার ভাবে না। আমজাদ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার খেলায় শেষমেশ সোলায়মানের যে পরিনতি, এ তো হওয়ারই ছিল। যুগে যুগে, দরিদ্র সরল মানুষ গুলো তো এভাবেই নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার দৌড়ে। তাই আমাদের সোলায়মানের বোকামির জন্য রাগ হয় না, মায়া হয়। বিষন্নতার সাথে আমরা ভাবি, আহারে... এত রকমের চরিত্রের ভিড়ে পাঠকের মন কেড়ে নেয় কলোনির মিষ্টি বৌদি, আর ঠাকুরবাড়ির বৃদ্ধা আশালতা। নয়নতারা কলোনির এই মিষ্টি; ক্ষুধা-দারিদ্রে-প্রেমে-কামে সবাই যেখানে এক ছাঁচে গড়া, সেখান্র এই এক মিষ্টি যেন আর সবার চেয়ে আলাদা। রূপে আর দশজনের চেয়ে আলাদা, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তার স্বভাব, তার চলন, তার জীবনদর্শন, তার ভালবাসা নিয়ে যে মিষ্টি, সে মিষ্টি স্বতন্ত্র, নিজ মহিমায় ভাস্বর। মিষ্টি সুন্দরী, নিজের দেহের প্রতি পুরুষের লোভ সম্পর্কে সে সচেতন। কখনও বা তাদের দৃষ্টিতে প্রশংসা সে উপভোগও করে, কিন্তু নিজেকে সে সহজলভ্য করে নি৷ স্বামীর সংসারে অভাব, স্বামী সোহাগের অভাব কিংবা কোল জুড়ে একটা সন্তানের অভাব, কোন কিছুই মিষ্টির পদস্থলনের কারন হয় নি। বরং স্বামী পরনারীতে আশক্তি জেনেও, কারনে অকারনে স্বামীর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেও মিষ্টি বিষ্ণু অপেক্ষায়ই থাকে৷ মিষ্টির ভালোবাসা, ভাবনা, জীবন দর্শন আমাদেরও ভাবায়৷ ভীষন এক অজানা আবেগে আমরাও কি সারাটাজীবনই ভুল মানুষের কাছেই প্রত্যাশা করে যাই না? প্রতীক্ষায় থাকি না, একদিন ভুল মানুষটাই সঠিক হয়ে উঠবে? টেনে নিবে বুকের কাছে? কিন্তু মিষ্টির মত আমাদেরও সেই অনন্ত প্রতীক্ষার অবসান হয় কি? উপন্যাসের সবচেয়ে সুন্দর আর করুন দুটি দৃশ্যের একটি মিষ্টির দখলে। সেটা বিষ্ণুর মৃত্যু। সত্যিকার অর্থে আসলে মিষ্টির ভালোবাসার মৃত্যু৷ যে মিষ্টি শত অভাব অনটন, অবজ্ঞা, নির্যাতনের পরেও এক বিষ্ণর ভালোবাসাই চেয়ে এসেছে, হারুনের নিষ্পাপ ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে, সেই মিষ্টির ভেতর থেকে যখন ভালোবাসা মরে যায়, পাঠক হৃদয় বেদনায় হুহু করে উঠে৷ দয়িতের প্রতি যে ভালোবাসা, সেই ভালোবাসার মৃত্যুর চেয়ে নির্মম আর কি হতে পারে? সেই শোকেই হয়তোবা মিষ্টির ঘোর ভাঙ্গে, নিজ হাতে তার অসুরবধের আনন্দ যেন তাই তার ভালোবাসার মৃত্যুর কাছে ম্লান হয়ে যায়। পাঠকের মনে লেগে থাকে। লাল টুকটুকে শাড়ীতে, রক্তমাখা দেবীরূপী মিষ্টির জন্য তাই আমাদের ভীষণ মমতাবোধ হয়৷ দুইটি করুন আর সুন্দর দৃশ্যের কথা হচ্ছিল। এর অপরটি বৃদ্ধা আশালতার স্বামীর ভিটে ছেড়ে কলকাতা গমনের আগ মুহুর্তে তুলসিতলায় প্রদীপ জ্বালানোর দৃশ্য৷ এই একটা দৃশ্যে, স্বল্প উপস্থিতিতে লেখক পুরো গ্রাম বাংলার শাশ্বত নারী রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন পরম মমতায়৷ " আশালতা দেবী জবাব দিলেন না। সোজা হেটে গিয়ে থামলেন ঘরের দাওয়ার সামনে। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে পড়লেন তার ঘর বরাবর। চৌকোনা ইটের বেষ্টনিতে মাটি ভরে তুলসি গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। গাছটার গায়ে আলতো করে হাত বোলালেন৷ বিড়বিড় করে কিছু বললেনও। কয়েক মুহূর্ত পর চাদরের নিচ থেকে ছোট্ট একটা প্রদীপ বের করলেন তিনি। শাড়ির আঁচলে বাধা দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে আলো জ্বাললেন। পিটপিট করে জ্বলতে থাকলে সলতেটা। আঁধার কেটে মৃদু আলোর রেখা ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে৷ আশালতা দেবী সামান্য পিছিয়ে এলেন। দুই হাত জুড়ে মাথায় ঠেকিয়ে প্রনাম করলেন দাওয়ায়। সহসাই সেই প্রনাম শেষ হলো না..." এই একটা দৃশ্য, স্বল্প কিন্তু শক্তিশালী এই দৃশ্যটুকুই, গোটা উপন্যাসের মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুন। শেকড় ছাড়ার কষ্ট, নাড়ি উপড়ে ফেলার বেদনা, সাম্প্রদায়িকতার অসহায়ত্ব এত করুণ ভাবে ফুটে উঠেছে এ দৃশ্যটাতে, বুকের ভেতর বেদনায় মুচড়ে উঠে। আশালতা দেবীর চোখে সেই দিন জল ছিল হয়তো, হয়তো না। অন্ধকারে তা টের পাবার উপায় ছিল না, তবে আমার চোখে জল এসেছে। প্রাঞ্জল ভাষা উপন্যাসের প্রধান গুন। তারচেয়েও যেটা ভালো লেগেছে, অসম্ভব সুন্দর সব চিত্রকল্প, উপমা, উৎপ্রেক্ষার ব্যাবহার৷ "হাতের মুঠোয় হাওয়াই মিঠাই জীবন", " মন খারাপের বিবর্ন সামিয়ানা ", "মনের আকাশে বিষন্নতার ঘুড়ি", কিংবা "শালিক পাখির মতন ছোট্ট বুক"... এরকম শব্দগুচ্ছের ব্যাবহারে হঠাৎ হঠাৎ থমকে যেতে হয়। দু তিনবার আউড়ে নিয়ে পড়ে তৃপ্তি নিয়ে এগিয়ে যাই। উপন্যাসে কবিতার স্বাদ দেয়া সহজ নয়, আব্দুল্লাহ আল ইমরান এতেও স্বার্থক। কিন্তু তারচেয়েও বড় মুন্সিয়ানা বোধহয় লেখক দেখিয়েছেন চরিত্রগুলোর মনোজগৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের জীবন দর্শনের সাথে পাঠকের পরিচয় ঘটিয়ে। বিশেষত নারীমন বিশ্লেষণে লেখক অপ্রতিদ্বন্দ্বী, যার প্রমাণ পাওয়া যায় উপন্যাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্টায়। বিশেষত মিষ্টির মাধ্যমেই লেখক প্রায় সমগ্র নারী জাতির অন্তর্জগতকে ফুটিয়ে তুলেছেন নিপুন শিল্পীর চোখে৷ ছোট খাটো দু একটা বিচ্যুতি মন খারাপ করে দেয়া। আঞ্চলিক উপন্যাস হিসেবে চরিত্রদের মুখে আঞ্চলিক ভাষা লেখার শিল্পগুন বাড়িয়ে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু ঠাকুরবাড়ির মত সম্ভ্রান্ত পরিবারের মধ্যে আঞ্চলিকতা একটু চোখে লাগে। নরেশ ঠাকুরের কথায় আঞ্চলিকতা ছিল না, কিন্তু বৃদ্ধা আশালতার মুখে আঞ্চলিকতা কিছুটা চোখে লেগেছে। এরকম বংশের প্রাচীন একজন নারীর মুখে হয়তো শুদ্ধ বাংলাই বেশি মানাতো। তেমনি স্কুল পড়ুয়া চন্দ্রলেখার মুখেও। আর ২য় অধ্যায়ের পরে হায়দারের অনুপস্থিতিও সচেতন পাঠকের চোখে পড়বে৷ যেখানে ছোট বড় অন্য সব চরিত্রই পরিনতি পেয়েছে, সেখানে হায়দারকে একেবারেই ভুলে যাওয়াটা কিছুটা অস্বাভাবিক লেগেছে। সমগ্র উপন্যাসের প্রতিটা চরিত্র নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আরেকটা উপন্যাস হয়ে যাবে বলে এখন মনে হচ্ছে। অথচ আমার বলা হলো না হারুনের সরল, নিষ্পাপ প্রেমের কথা, সাজিয়া বেগমের মত বাংলার ঘরে ঘরে থাকা আমাদের মায়ের কথা, যারা দশভুজার মত নিজের সন্তানের মুখে দুমুঠো অন্নের জন্য আকাশপাতাল এক করে ফেলতে পারে৷ বাদ রয়ে গেলো নাজিমুদ্দিনের কথা, সারাজীবন যে লোভ থেকে দূরে থেকেও শেষ বয়সে তার লোভের কারনে সর্বশান্ত হওয়ার কথা, কিংবা যে মন্টু ডাকাত, তার হৃদয়েও থেকে যাওয়া কোমলতার কথা। এরাতো সব আবহমান বাংলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরই প্রতীক। সিরাজ মোল্লার মত ভন্ডদের আমাদের সমাজে খুজে পাওয়া মোটেই কঠিন নয়, তেমনি কঠিন না নরেশ ঠাকুরের মত চরিত্রের দেখা পাওয়াও। কালে কালে, সময়ের বিবর্তনে তো এরাই ঘুরে ফিরে আসছে, হয়তো নতুন নামে, নতুন পরিচয়ে। কিন্তু এই যে হিংসা, প্রতারণা, কামনা, লোভ, বিচ্ছেদ, প্রেম, কলহ, শোষন... এ সবই তো সময়ের স্রোতে ঘুরে ফিরে আসছে আমাদের জীবনে, নয়নতারা মিলের মানুষদের জীবনে। আমজাদ চেয়ারম্যানের মত ক্ষমতাশালীরা সব সময়ই যেখানে ক্ষমতাসীন থাকবে, সোয়ামানের মত সাধারণ জনতা ঘুটি হবে ক্ষমতাসীনদের খেলার, হয়তো মরবে কিংবা অথর্ব হয়ে যাবে৷ তারপর শোষন স্থানান্তরিত হবে পরবর্তী প্রজন্মে, যেমন সোলায়মানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে পলাশ। এমনি করেই তো জীবন কাটে। বয়ে চলে। চক্রাকারে ফিরে ফিরে আসা এইসব নিয়েই আমাদের কালচক্রের জীবন,যে জীবন জীবনের প্রতিচ্ছবি।
Fiction
0
সাবিত্রী উপাখ্যান মাত্র শেষ করলাম। ১৯৩৮ - এর একটি ঘটনা যেটা উপন্যাসের বিষয়বস্তু। এ ধরণের ঘটনা আমাদের সমাজে হয়তো অহরহ ঘটছে। কিন্তু সেইসময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনা কতটুকু আলোড়ন তুলেছিল লেখক সেটা বের করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উপাখ্যান টিতে সেটা যথাযথ আসেনি বলেই মনে হয়। প্রথম আমি এই উপন্যাসের অংশ পাই ঈদ সংখ্যা প্রথম আলোয়। এর দ্বিতীয় অংশ পাই কালি ও কলম বছর পূর্তি সংখ্যায়। তখনই এর শেষ জানার আগ্রহে বইটি প্রকাশের পর কিনে ফেলি। সম্ভবতঃ লেখক সে সময়ের রাজনীতির চাইতে ঘটমান ঘটনাটার উপর জোর দিতে চেয়েছেন। তাই দুই ধর্মের মানুষের সংঘাতের চিত্র তেমন আসেনি। উপাখ্যানটি অবশ্যই সুখপাঠ্য।
Fiction
0
বইটা একরকম হুট করেই কেনা!! এর আগে লেখকের কোন লেখা পড়ি নাই, তাই ভাবলাম হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পড় এক থ্রিলার ছাড়া বাংলায় নতুন লেখকের লেখা অনেক দিন পড়ি নাই,তাই পড়ে দেখি । নতুন লেখক তাই কোন রকম আশা ছাড়াই পড়া শুরু করেছিলাম, শেষ করার পড় খুব একটা মনে দাগ কেটে যেতে না পড়লেও একেবারেও খারাপ লাগে নি বইটা । প্রথমে কয়েক পাতা পড়ার পড়ে হতাশ হতে শুরু করেছিলাম যে সেই একই ধরণের প্লট হবে হয়ত - নায়ক ও নায়িকা পরস্পর বন্ধু । নায়ক মনে মনে ভালবাসে নায়িকাকে কিন্তু কোন একটা কারণে নায়িকার বিয়ে হয়ে যায় অন্য কারো সাথে আর বিরহ নেমে আসে নায়কের উপরে। এই ধরণের প্লট এর পরেই বইটা লেখা হলেও এর সাথে আরো অনেক কিছু আছে হরর, ফ্যান্টাসি, কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তি!!! তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্ণনা কেমন জানি কাঁচা কাঁচা মনে হয়েছে । তবে এটা অবশ্যই ঠিক যে লেখক অন্য রকম একটা আবহ তৈরি করতে ঠিকই সফল হয়েছেন । তবে অতিপ্রাকৃত জায়গা ও পরিবেশগুলোর বর্ণনা আরো ভালো হতে পারত নিঃসন্দেহে । আর অশরীরী সত্ত্বাগুলার বর্ণনা সত্যই গায়ে লোম ঝাড়া করে দেয়ার মতই । আর অহেতুক কাহিনী না বাড়ানোর জন্যেও লেখককে ধন্যবাদ । প্রথম বই হিসেবে যথেষ্ঠই ভাল । বই শেষ করে অনেক কিছুর মিশ্রন পাওয়া যাবে । আর শেষটাও যেন কেমন!! মনে হয় যে কাহিনী এখনো বাকী রয়ে গেল কিছুটা !! অনেক দিন একই ধরণের বই পড়তে পড়তে একটু স্বাদ বদলাবার জন্যে অন্যরকম এই বইটা পড়া যেতে পারে । আশা করি এই একটাই নয় সামনে লেখকের কাছ থেকে আরো ভালো আরো পরিণত কিছু পাব
Fiction
0
গল্পটা শুরু হয়েছে চমৎকার একটা দিনের বর্ণনা দিয়ে । স্বভাবতই এখানেও হিমু এমন অনেক কান্ডকারখানা করেছে যা অন্য সবার চোখে পাগলামি দেখায় । এই চমৎকার দিনে হিমু রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে ছিল যা মারিয়া নামের একটি মেয়ের চোখে পড়ে । পাঁচ বছর আগে মারিয়া হিমুকে একটি প্রেমপত্র দেয় সাংকেতিক ভাষায় যা হিমুর ফুপাত ভাই বাদল ওরফে হিমুর শিষ্য পাঠোদ্ধার করতে পারে । কিন্তু হিমু চিঠিটার অর্থটা জানতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে । এবারেও হিমু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কিন্তু হিমুর স্বভাব চরিত্রের জন্যই পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় । এদিকে চিঠি লেখা আসগর সাহেবের সাথেও হিমু জড়িয়ে যায় । একজনের টাকা আসগর সাহেবের কাছে থাকায় সে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে পারছে না । একসময় সে সেই ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখে যে তার কাছে টাকা রেখে চলে গিয়েছিলো । এখানে আসগর সাহেবের কাহিনীতে রহস্য থেকেই যায় । মারিয়ার বাবার সাথে হিমুর প্রথম দেখা হয় এক পুরানো বইয়ের দোকানে । সেখান থেকেই পরিচয়ে হিমুর মারিয়াদের বাসায় যাওয়া আসা শুরু করে । মারিয়ার বাবা আসাদুল্লাহ সাহেবের মতে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর প্রতিটি ছেলেমেয়ের কাছে পাঁচটি অদৃশ্য নীলপদ্ম দিয়ে পাঠান । এই নীলপদ্মগুলি হলো প্রেম ভালবাসা । কেউ তার নীলপদ্ম এক জনকে একটা করেও দিতে পারে কেউ সব কয়টা । যে তার পাঁচটি নীলপদ্ম কাউকে দিয়ে দেবে সে কখনো অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে না । সব শেষে এই বইটির কয়েকটা লাইন তুলে দিতে চাই । 'যাবার আগে আপনি কে বলে যাবেন আপনি কে ?' আমি বললাম, 'মারিয়া আমি কেউ না । I am Nobody ।' আমি আমার এক জীবনে এই কথা বলেছি - কখনো আমার গলা ধরে যায় নি , বা চোখ ভিজে ওঠেনি । দু'টা ব্যাপারই এই প্রথম ঘটল ।
Fiction
0
“ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ উপায়” বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ কোনো বিশেষ গুনে কোনে বিশেষ একজনকে প্রভাবিত করতে পারার নামই ব্যক্তিত্ব। জীবনে সফল হতে হলে অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা অবশ্যই থাকতে হবে অন্যথায় সফলতা আশা করা যাবে না। আর অন্যকে প্রভাবিত করতে হলে নিজের ব্যক্তিত্বকে অবশ্যই বিকশিত করতে হবে। পৃথিবীতে যথাযথভাবে জীবন কাটাতে গেলে চারটি বিশেষ পথ অবলম্বন করা দরকার। এই চারটে বিষয় ধরেই প্রথ্যেক মানুষের আসল বিচার ঘটে। অন্যেরাই সে বিচার করে জেনে রাখা চাই বিষয় চারটি কি? বিষয় চারটি হলো:- ১। আমরা কি করি? ২। আমাদের বাহ্যিক আকৃতি কি? ৩। আমরা কিভাবে কি কথা বলি? ৪। আমাদের সেই বলার পদ্ধতি কি রকম? এই চারটি বিষয়কেই ব্যক্তিত্ব বিকাশের চাবিকাঠি বলা হয়। এই বইটিতে এই চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই বইটি ব্যক্তিত্ব বিকাশ এবং সাফল্য লাভ করতে অনেকাংশে সহায়তা করবে। ব্যক্তিত্ব অনায়াসলভ্য কখনই নয়। তাই এটা গড়ে তোলার কাজে চাই আত্মবিশ্লেষণ। সমস্ত ত্রুটি, নানা অসুবিধা আর বাধা জয় করার মধ্য দিয়েই আসে প্রকৃত সাফল্য আর যে, সাফল্য লাভ করে ব্যক্তিত্বই হয় তার প্রধান সহায়। পৃথিবীতে এরকম অসংখ্য কৃতী , বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন যাঁদের জীবনী আলোচনা করলেই একথার সত্যতা প্রকট হয়ে পড়বে। তাই আসুন বৃথা সময় নষ্ট না করে বইটি পড়তে আরম্ব করুন।
Motivational
6
বিমল কর একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি উত্তর ২৪ পরগণার টাকীতে ১৯ সেপ্টেম্বর,১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন ।বিমল কর জব্বলপুর, হাজারিবাগ, ধানবাদ,আসানসোল প্রভৃতি জায়গায় ছোটবেলা কাটিয়েছেন। তারপর আসানসোল অ্যামিউনেশন প্রোডাকশন ডিপোয় এআরপি হিসাবে কর্মজীবনের শুরু হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে "অম্বিকানাথের মৃত্যু "নামক ছোটগল্পের মাধ্যমে তার লেখালেখির সুচনা হয়। প্রেম ভালোবাসা থেকে শুরু করে শিশু সাহিত্য সর্বক্ষেত্রেই তার লেখার প্রভাব দেখা যায়। ১৯৬৫ সালে তার "বালিকাবধূ " উপন্যাস প্রথম প্রকাশ পায়। বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন বিপুল গুহ। মোটামুটি পুরাতন কাহিনী,প্রায় ৩ যুগ আগেকার কাহিনী কে তিনি তার লিখার মাধ্যমে অত্যান্ত সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন "বালিকা বধু" বইটি তে । বইতে তার পিতার গঠন থেকে শুরু করে অদ্ভুত আচার আচরন সবকিছুই অত্যন্ত সুন্দরভাবে বর্ননা করেছেন,আরো বর্ননা করেছেন তার পরিবারের অতীত ইতিহাস। তার লিখা পড়ে বোঝা যায় তাহার পিতার প্রতি তাহার কি পরিমাণ ভক্তি। পিতামহের দেশত্যাগ এবং পরবর্তী কাহিনী থেকে শুরু করে পিতামহ পরলোক গমনের পর তার পিতার কথা বর্ননা করেছেন অত্যন্ত সুন্দর ভাবে। এই খ্যাতিমান লেখক এর অন্যান্য বইসমুহের মধ্যে রয়েছে বসন্ত বিলাপ, কিঙ্কর কিশোর রায় বা কিকিরা। ১৯৭৫ সালে তিনি "অসময়" উপন্যাসের জন্য বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পেয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি শরৎচন্দ্র পুরষ্কার, নরসিংহ দাস পুরষ্কার সহ আরো অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন। বিমল কর ২৬ আগস্ট ২০০৩ সালে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার জীবনে অসংখ্য ছোটগল্প,উপন্যাস লিখে গেছেন।
Thriller
1
রিভিউঃ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে লেখকঃ রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম রিভিউঃ গ্রন্থকার রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম সেনা বাহিনীর সেই অফিসারদের মধ্যে একজন ব্যক্তি যিনি তাঁর অধীনস্থ ইপিআর সৈন্যদের নিয়ে চট্টগ্রামে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরের ঘটনাবলী তুলে ধরার জন্য তাঁর মত একজনের লিখা সত্যিই মহামূল্যবান। ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনার বর্ণনায় সমৃদ্ধ একঐতিহাসিক দলিল। গ্রন্থে একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের অনিশ্চিত, দুঃস্বপ্নের ন’মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধসমূহের বিবরণ স্থান পেয়েছে, অন্যদিকে বর্ণিতদ হয়েছে বাঙালি হত্যায় উন্মক্ত পাকিস্তানী সৈন্যদের নৃশংসতার বিবরণ : কীভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছে, এক কোটি বাঙালিকে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। গ্রন্থকার নিজে এ যুদ্ধ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী। ১নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসাবে দীর্ঘ ন’মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি একদিকে যেমন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি প্রত্যক্ষ করেছেন প্রতি মুর্হর্তে; তেমনি গভীরভঅবে অনুভব করেছেন এ যুদ্ধের নৃশংসতা, ভয়াবহতা, সাধারণ মানুষের বেদনার্ত আহাজারি। তারই প্রতিফলন ঘটেছে এ গ্রন্থে। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ মহান গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনাই আমাদের অজানা। গ্রন্থকার মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা, অস্পষ্ট দিকগুলো জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিপুণ কলমের আচরে ফুটিয়ে তুলেছেন নির্ভয়ে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ এবং যুদ্ধের নৃশংসতা ও ভয়াবহতা অনুভবের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছে এ বইটিতে। ঘটনার বর্ণনার সাথে ঘটনার যথার্থতা ও সত্যতা সম্পর্কে তিনি সচেতন, সত্যনিষ্ঠ বস্তুনিষ্ঠ থেকেছেন। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস বিকৃত, অস্পষ্ট ও ঝাপসা হয়ে যাওয়ার পূর্বেই মুক্তিযুদ্ধের এক অগ্রণী সৈনিকের সচেতন প্রয়াসে রচিত এই গ্রন্থ মহান মুক্তিসংগ্রামের এক বিশ্বস্ত দলিল। পাদটীকাঃ ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ লেখকের মূল গ্রন্থ A Tale of Millions-এর অনুবাদ। A Tale of Millions ইংরেজীতে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। ইংরেজী গ্রন্থের পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ এবং বাংলায় অনূদিত ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’-র প্রথম সংস্করণসমূহে যে-সব যুদ্ধের ঘটনা বর্ণিত হয়নি, নতুন সংস্করণে সে-সব ঘটনা সংযুক্ত হয়েছে। (তথ্য ও কথা সংগ্রহীত)
Political
3
মোস্তাক আহমেদ এর একটি আত্মউন্নয়ন মূলক “কীভাবে জীবনে সফল হওয়া যায়”।নেক ভাল বলতেই হবে বইটিকে।মানুষের সফল হওয়ার সবরকম পথের কথায় তুলে ধরেছেন লেখক এই বইতিতে।মানুষ চাইলেই যে নিজেকে পরিবর্তন করে নিজের আত্মবিশ্বাস ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করে সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌছতে পারে তা এই বইটিতে সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।এই বইটি আসলে তাদের জন্যই যারা একান্তভাবে নিজেকে নিয়োজিত করার দৃঢ় সংকল্প বা কর্মপ্রচেষ্টা দ্বারা অভীষ্ট লক্ষে পৌছতে চান।আটটি আধ্যায়ের সমন্বয়ে গঠিত বইটিতে প্রত্যেকটি অধ্যায়ে রয়েছে কিভাবে সফল হওয়া যায় তার কৌশল।এই বইটিতে এমন সকল জিনিসের কথা বর্ণনা করা হয়েছে যা সাফল্যলাভের জন্য প্রয়োজন।এই বইয়ে বিভিন্ন উপাদান বা তালিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে যা কি পরিমান প্রয়োগ করলে কি পরিমান সাফল্য পাওয়া যাবে তার সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা দেয়া আছে। বইটির পাতায় পাতায় কি করে আত্মউন্নয়ন করা যায় তার সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।আমি মনে করি এই বইটি কোন মানুষকে নতুন লক্ষ্য নির্ণয়য়ে সাহায্য করবে,নতুন চিন্তা উদ্দেশ্যে উন্নিত করতে সাহায্য করবে।যারা কোন কাজে সফলতা পাননি আমি মনে করি তারা একবার হলেও এই বইটি পড়ে দেখতে পাড়েন এতে কিছুটা হলেও আপনি নিজেকে নতুন করে তৈরি করার মন-মানসিকতা তৈরি হবে।বইটি পড়ে আমার কাছে অসাধারন লেগেছে।হবে।বইটি পড়ে মনে হয়েছে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হলে অবশ্যই একজন উপযুক্ত অকোতভয় সৈনিক হতে হবে।সত্যিকারের মানুষের জন্মই হয় বিজয়ী হওয়ার জন্য।অন্যায়ের প্রতিবাদ করে মাথা উচু করে বাচাটায় জীবন।বিজয়ীদের সবাই মনে রাখে লুজারদের কেউ মনে রাখে না। তাই বিজয়ি হতে হলে অবশ্যই জীবন যুদ্ধে নামতে হবে। আশাকরি আপনাদের কাছেও অনেক ভাল লাগবে এই বইটি।
Motivational
6
বই : নাথিং লাস্টস ফরএভার লেখক : সিডনি শেলডন অনুবাদক : অনীশ দাস অপু প্রকাশক : অনিন্দ্য প্রকাশ প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ঘরানা : মেডিকেল থ্রিলার পৃষ্ঠা : ২৮০ মুদ্রিত মূল্য : ৩৬০ টাকা বইটি এমন সময়ের পটভূমিতে লেখা, যখন মহিলা ডাক্তার এর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সাল ১৯৯০। এমবারকাডেরো নামক এক বিশাল কাউন্টি হাসপাতালে প্রথমবারের মত প্রথম বর্ষের রেসিডেন্ট হয়ে এল তিনজন নারী। পেগি টেলর, ক্যাট হান্টার এবং হানি ট্যাফট। এর মধ্যে আবার দুজনের আছে কালো অতীত। প্রায় হাজারখানেক পুরুষ ডাক্তার এর মাঝে মাত্র তিনজন মহিলা যেন অথই সাগরে পড়ল। কিন্তু ওরা নিজেরা খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেল, আর নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে এখানে টিকে থাকার প্রতিজ্ঞা করল। বিরামহীন ডিউটি, সংখ্যালঘু হওয়ার যণ্ত্রণা, আবার কখনো কোন ডাক্তার এর ব্যাক্তিগত আক্রোশ এর শিকার, এমন নানা প্রতিকূল ঘটনা ওদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলল। এক রোগীর স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহায়তা করে তাকে হত্যার দায়ে ফেঁসে গেল পেগি, কারণ রোগী তার নামে রেখে গেছে এক মিলিয়ন ডলার। "আর কোনদিন কোন পুরুষকে আমার শরীর স্পর্শ করতে দেবনা" বলে প্রতিজ্ঞা করা ক্যাট প্রেমে পড়ল এক খেলোয়াড়ের, যা তাকে নিয়ে গেল করুণ পরিণতির দিকে। অন্যদিকে হানি তার সমস্যাগুলোর সমাধান করতে লাগল তার পুরনো উপায়ে। শেষ পর্যন্ত এই তিন কন্যার ভাগ্যে কি ছিল? পাঠ প্রতিক্রিয়া : আমি থ্রিলার পড়তে অসম্ভব পছন্দ করি। সিডনি শেলডনের হলে তো কথাই নেই। উনার মত বিশাল কাহিনীর ট্যুইস্ট আর কারো লেখায় পাইনি এখনো। প্রায় প্রতিটা বই ই এমন যে, শেষ না করে উঠা কঠিন। অন্যরা যেমন হুমায়ূন আহমেদ এর বই রেখে রেখে পড়ছে, আমি এনার বেলায় ঠিক তাই করছি, ফুরিয়ে গেলে যে আর পাবোনা। শেল্ডনের অন্য বইগুলোর থেকে এটা একটু কম ভাল লেগেছে, কাহিনীর ট্যুইস্ট এবং রহস্য কম ছিল। পেগি এবং ক্যাট চরিত্র দুটো ভাল ছিল। চরম দু:সময়েও ভেঙে না পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শিক্ষা রয়েছে ওদের মাঝে। হানিকে ভাল লাগেনি, কেন সেটা পাঠক নিজেই বুঝবেন। সবথেকে মজা লেগেছে বই এ দুই জায়গায় বাংলাদেশ এর নাম উল্লেখ করেছেন লেখক। অনুবাদ নিয়ে বলার কিছু নেই। অনীশ দাস অপুর অনুবাদ পড়লে মনে হয়না যে অনুবাদ পড়ছি। সময় কাটানোর জন্য ভাল বই। আর যারা আগে শেলডনের বই পড়েননি, তাদের অবশ্যই ভাল লাগার কথা। রেটিং : ৭.৫/১০
Thriller
1
ভূমিকা ‘উন্নত জীবন’ ডাঃ লুৎফর রহমানের মানসিক উৎকর্ষধর্মী প্রবন্ধ গ্রন্থমূহের অন্যতম। বাংলাভাষায় এমন সরল ও অলংকারবিহীন গদ্যে, এমন স্বতঃস্ফূর্ত ও কথোপকথনের ঢঙে মানব কল্যাণমুখী দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা সম্বলিত গ্রন্থ বিরল। তিনি যা লিখেছেন, তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেই লিখেছেন, যে কারণে তার উক্তির মধ্যে নির্ভীক দৃঢতা আমরা সহজেই লক্ষ্য করি। বইটি থেকে দু’একটি উদ্ধৃতি দিলেই উক্তিটার সত্যতা ধরা পড়বে : ‘কোন সভ্য জাতিকে অসভ্য করার ইচ্ছা যদি তোমার থাকে, তাহলে তাদের বইগুলো ধ্বংস কর, সকল পণ্ডিতকে হত্যা কর, তোমার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে।’ ‘জাতি যখন দৃষ্টি সম্পন্ন ও জ্ঞানী হয়, তখন জাগবার জন্য সে কারো আহ্বানের অপেক্ষা করে না, কারণ, জাগরণই তার স্বভাব।’ ‘তুমি তোমার ব্যক্তিত্বকে দৃঢ করে তোল। কেই তোমার উপর অন্যায় আধিপত্য করতে পারবে না।’ ‘যারা কাপুরুষ তারাই ভাগ্যের দিকে চেয়ে থাকে। পুরুষ চায় নিজের শক্তির দিকে। তোমার বাহু, তোমার মাথা তোমাকে টেনে তুলবে, তোমার কপাল নয়।’ শহিদুল আলম
Motivational
6
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই:দ্য ফোর্থ কে লেখক: মারিও পূজো অনুবাদক: রাফিক হারিরি মুল্য: 340 টাকা ধরন: থ্রিলার প্রকাশনা: রোদেলা প্রকাশনী গড ফাদার লিখে হইচই ফেলে দেওয়া মারিও পুজো দ্য ফোর্থ কে থেকে খুব বেশি আয় করতে পারেন নি। কিন্তু পূজো এই বইকে তার সবচেয়ে প্রিয় বই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তো দেখি এই বইয়ের রিভিউ: প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস কেনেডি আমেরিকাতে জনপ্রিয় তার হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য, আকর্ষণীয় চেহারার জন্য। কিন্তু হঠাৎ করে পাল্টে যায় অনেক কিছু, কেনেডির মেয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়। কিন্তু কেনেডি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে রাজনীতিবিদদের দ্বারাই প্রতিরোধের স্বীকার হোন, কেন একটি শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট এ পরিস্থিতির স্বীকার হোন? কেনেডি কী পারবেন সারাক্ষণ অপঘাতে মৃত্যুর আশঙ্কায় বুদ হয়ে থাকা মৃত্যু থেকে আদৌ বাচতে? কেনই বা কেনেডি প্রশাসনের উপর এসে যুক্ত হল নিজ দেশে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ? এই সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে এ উপন্যাসে। পাঠপ্রতিক্রিয়া: এ বইটি অসাধারণ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিভাবে তার প্রশাসন চালায়, কিভাবে ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, এসব কিছু সম্বন্ধে এই বই একটা পরিস্কার ধারণা দেয়। বইটিতে বেশ কিছু জায়গা আমার কাছে অতিকথন বলে মনে হয়েছে, কিন্তু উপন্যাসে যেভাবে সাধারণ চরিত্র বিশেষ চরিত্রে পরিণত হয়েছে, ছোট ছোট ঘটনা যেভাবে মহীরুহের আকার ধারণ করেছে, এ সব কিছুই এ থ্রিলারধর্মী উপন্যাসকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। আমার কাছে অনুবাদ যথেষ্ট প্রাঞ্জল বলে মনে হয়েছে। এর রেটিং ৪/৫
Thriller
1
আচ্ছা ফ্রিৎস নামক পুতুলটার কথা কারো মনে আছে? যার কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল! বা মানুষখেকো সেই সেপ্টোপাস! বঙ্কুবাবুর বন্ধুটি! টাইমট্রাভেলার! বেচারা শিবু আর তার শিক্ষক, ভ্যাম্পায়ার,প্রোফেসর হিজিবিজবিজ, ব্রাউন সাহেবের বন্ধু সাইমন, কিংবা ফটিকচাঁদ, পিন্টুর দাদু বা পিকু ও তার ডায়রির কথা? সেই যাদুকরের নাম কি মনে আছে? অসাধারন এই সব রঙিন, গা-ছমছমে, অদ্ভুত গল্পগুলোর সৃষ্টিকর্তার নাম 'সত্যজিৎ রায়'। এরপর তো আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়েনা! এই রায় বাবুকে চিনেনা এমন পাঠক এপার ওপারের কোনো বাংলাতেই নেই। বিশ্ববরেণ্য হয়েছেন চলচ্চিত্রের দ্বারা। কিন্তু গল্প লিখেছেন তারও আগে। বিস্ময় ভরা গুরুগম্ভীর তত্ত্ব ছাড়া একেকটি ছোটগল্প।জানালা খুলে দিয়ে বিশাল আকাশটা দেখা আর তার গল্প পড়া একই কথা। বরং খালি চোখে দেখা রাতের আকাশে তারাদের থেকেও আরো দুরে আমাদের নিয়ে যায় তাঁর গল্প গুলো। নিজের শিল্পীস্বভাব ও অনন্য গদ্যশৈলীর কারনে প্রত্যেকটি গল্পই হয়ে উঠেছে শিশু কিশোর বয়স্ক সবার কাছে লোভনীয় সম্পদ । গল্প ১০১ এ ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কু ছাড়া তাঁর লেখা অন্য সব গল্পই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সংকলনটিতে। বইপ্রেমীদের কাছে এখন পর্যন্ত গুপ্তধন স্বরূপ সম্পদ হিসেবে গণ্য একটি বই। রেটিং এর সর্বোচ্চ মঞ্চ-ও 'গল্প ১০১' এর জন্য মলীন দেখায়। সকল পাঠকের জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য ।
Thriller
1
সাহিত্য এবং ইতিহাসের সুন্দর বাগান শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাস। একটা বই যতি একজন পাঠককে সারাজীবনের ভাবনার খোরাক দিতে পারে। তাহলে এই বইটি পড়তে হবে। নেই সেনরাজ্যের পতনের কালে। ধর্ম বর্ন বিচারে যখন মনুষ্যত্বের বানী নিরবে কাঁদেছিলো। তখন শ্যামাঙ্গ তার শিল্পচর্চার কথা ভাবছিলো। শিল্পের টান শ্যামাঙ্গকে ঘর থেকে বের করে নিয়েছে। কিন্তু নৃপতি আর ধর্মবেত্তারা শিল্প চায়না তারা চায় গতানুগতিক ধারার মন্দিরে অংকন। সে যুগে যখন মানুষের ভাত কাপড়ের কথাই মূখ্য তখনকার শ্যামাঙ্গ একইসাথে জীবন জিবিকা ও শিল্পকে বাঁধতে চেয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠুর সময় তা হতে দেয়নি। সেন রাজাদের অত্যাচার ধর্ষণ এর মধ্যে এলো পশ্চিম দেশের যবনজাতি। যারা প্রার্থনার সময় পশ্চাদদেশ উপরে তুলে রাখে। আর মন্ত্রপাঠ করে। েএকজন নেতা যে অঙ্গভঙ্গি করে অন্যরা তার অনুসরণ করে সে বড়ো দেখার মতো দৃশ্য। স্থানীয়দের কাছে এর কারণ অজানা এর গুড় রহস্য অজানা। তবুও তাদের ব্যাপক কৌতুহল ওই শুশ্রুমন্ডিত পুরুষদের প্রতি। শেষপর্যন্ত শিল্প আর মানবতার প্রশ্ন অসমাপ্ত রেখে নতুন ধর্মমতের দিকে ধাবিত হওয়ার আওয়াজ দেখা যায়। শেষের দিকে। বসন্তদাস, মায়াবতী, লীলাবতিরাও গল্পকে বয়ে নিয়ে গেছে হাতে হাত ধরে। প্রাকৃতজনের জীবন জীবিকা তাদের ধর্মবিশ্বাস ও আচার জানা যাবে এই বই পাঠে। বাংলাসাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলোর একটি প্রদোষে প্রাকৃতজন।
Fiction
0
‘দ্য জাংগল বুক’ বইটি সাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপলিং এর লেখা শিশুতোষ সাহিত্য । সাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপলিং-এর জন্ম ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে। শৈশব কৈশোর কেটেছে ভারতের মুম্বই শহরে, তখনকার নাম বম্বে। ইংরেজরা, সেকালে যেমন হত, নিজেদের চারদিকে পাঁচিল তুলে নিজস্ব ছোট সমাজব্যবস্থায় বসবাস করতেন। তারই মধ্যে বড় হয়েছেন কিপলিং। ছেলেবেলা থেকেই কিপলিং সচেতন যে, তাঁরা শাসক, সাম্রাজ্যবাদ তাঁদের কাছে গর্বের ব্যাপার। দৃঢ় বিশ্বাস, ঈশ্বর তাঁদের এক উচ্চশ্রেণির জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্যদের উপর প্রভুত্ব করা বা তাদের ভালমন্দ দেখার ভার এঁদের যেন জন্মগত। রুডিয়ার্ড কিপলিং একজন অসাধারণ গল্পকার। দ্য জাংগল বুক অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি গ্রন্থ । এই গ্রন্থ নিয়ে অনেক চলচিত্র ও তৈরী হয়েছে । পৃথিবীর অনেক দেশে বইটি শিশুদের কাছে অত্যান্ত জনপ্রিয় বই হিসেবে এটি বহুদিন যাবত স্থান করে রেখেছে । এই গ্রন্থের গল্পমালায় ভারতবর্ষের বনাঞ্চল তার সকল মোহনীয়তা, রহস্য ও আতঙ্ক নিয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে। অরণ্যের গাছপালা, পাহাড়পর্বত, নদী-নালা ও পশুপাখির জগতকে লেখক যেভাবে পরিবেশন করেছেন তা পাঠককে মুগ্ধ করে। বাঘ, নেকড়ে, হাতি, সাপ, হরিণ, মহিষ, বানর, চিল, ময়ূর, শিয়াল, মৌমাছিসহ অরণ্যের নানা প্রাণী পাঠকের সামনে এসে হাজির হয়। আর এদের মধ্যে স্থান করে নেয় মানবশিশু মৌগলি। ল্যাংড়া বাঘ শেরখান অরণ্যের নিকটবর্তী এক গ্রাম্য কুটির থেকে তুলে নিয়ে এসেছিল মৌগলিকে, কিন্তু তাকে হত্যা করার আগেই মৌগলি আশ্রয় পায় এক নেকড়ে- পরিবার। সেখানেই সে বেড়ে উঠে, অরণ্যেরই এক সন্তানরূপে। মোগলি কে নিয়েই গল্পটি চলতে থাকে এবং সম্পুর্ন গল্পই অত্যান্ত রোমাঞ্চকর । অসাধারন বইটি যে কোন পাঠক এর নিকটই ভাল লাগতে বাধ্য ।
Childrens-Book
2
"সূর্য দীঘল বাড়ী" নামক টাইমমেশিনে আরোহন করে গত শতাব্দীর বুর্জোয়াদের হটকারিতা আর প্রান্তিক মানুষের জীবন যন্ত্রণা খুব সহজে বুঝতে চাইলে বইটি পড়তে পারেন যে কেউ। ঘটনার ঘনঘটা নেই, সাহিত্যিক দেখাননি সিনেমামাটিক কারিশমা। খুব সহজ ভাষায়, নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তৎকালিন ঘটনা প্রবাহ, জীবন-জীবিকা, প্রকৃতি আর মানুষের সরলতা ও পৈশাচিকতাকে। উইকিপিডিয়া থেকে কাহিনী সংক্ষেপঃবাংলা ১৯৫০ সনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভুক্ত ভারতের বাংলায় ব্যাবসাসীদের কারসাজিতে 'পঞ্চাশের আকাল' নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তটে বহু লক্ষ দরিদ্র মানুষ প্রাণ হারায়। যারা কোনমতে শহরের লঙ্গরখানায় পাত পেতে বাঁচতে পেরেছিল তাদেরই একজন একালের সময় স্বামী পরিত্যক্ত জয়গুন। সঙ্গে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর গোরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইয়ের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন এক খন্ড জমিতে ঘর তৈরী করে যেটির অপয়া ভিতে বলে পরিচিতি ছিল। জীবনের যুদ্ধে যখন সে প্রানপন লড়ছে তখর তর প্রতি গায়ের মরলের দৃষ্টি পড়ে। দ্বিতীয় স্বামীও তাকে আবার ঘরে তুলতে চায়। সে কারো প্রস্তাবেই সে দেয় না। কিন্তু এ দুজনের সাক্ষাত ঘটে এবং মরল তার প্রতিযোগীকে হত্যা করে। ঘটনার একমাত্র দর্শক হিসেবে জয়্গুনকেও মূল্য দিতে হয় অন্যভাবে। --এই কাহিনীর বিচিত্রতার মধ্যে মূল বিষয় একটিই; তা হচ্ছে কুসংস্কার, সম্পদ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, সামাজিক বাধা-নিষেধ, এমনকি জাতীয়তাবোধ- এ সব কিছুকেই কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবি ক্ষুধর্তো মানুষকে ক্রমাগত শোষণ।
Fiction
0
বিজ্ঞান ও সমসাময়িক বিজ্ঞানের গবেষণা নিয়ে রচিত হয়েছে উপন্যাসের গল্প। পৃথিবীর গণ্ডি ছেড়ে প্রথমবারের মতো মহাকাশে ঘর বাঁধতে চলেছে মানুষ। চারজন মানুষ বের হচ্ছে এক অভিযানে, লক্ষ্য মঙ্গল গ্রহে মানুষের উপনিবেশ স্থাপন করা। তাদের সৃষ্টি করা পথে ভবিষ্যতে মঙ্গলে যাবে আরও অনেকে, স্থাপিত হবে একটা পূর্ণাঙ্গ উপনিবেশ। কিন্তু প্রথম যে চারজন যাচ্ছে তাদের এই যাত্রা একমুখী, তারা আর কখনই ফিরতে পারবে না পৃথিবীতে। সেই চারজনকে নেওয়া হয়েছে চারটা দেশ থেকে। তারমধ্যে আছে একজন বাংলাদেশি নারী, সাবিনা আক্তার শিমু। এই অভিযানের জন্য প্রস্তুতি-প্রশিক্ষণ চলছে বহুদিন ধরে, কিন্তু বিদায়ের মুহূর্তে মানুষের সহজাত পিছুটান ছাড়ছে না শিমুকেও। ভালো প্লট অবশ্যই। আনিসুল হক স্যার খুবই ইতিবাচক ধরনের মানুষ। বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন। তাই এই বইয়েও বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। বইয়ে যোগ করেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এবং নিজের নাম। উদ্দেশ্য ভালো হলেও পুরো ব্যাপারটা ভারি হাস্যকর। শিমু নামের একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান মহিলা মঙ্গলে ওয়ান-ওয়ে অভিযানে গিয়ে তাঁর কমান্ডারের প্রেমে পড়ে যান, মঙ্গলে গিয়ে বিয়ে করেন। দেশকে খুবই গভীরভাবে অনুভব করেন প্রিয় এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েও। এই হচ্ছে উপন্যাসের মূল কাহিনী। আনিসুল হকের বর্ণনাশৈলী একঘেয়ে লাগে আমার কাছে। এই বইটাও পড়তে খুব একটা ভালো লাগে নি। তবে তিনি দেশকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, সেটা সত্যিই আশা জাগায় মনে। অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো শিমুর মতো কেউ ভিনগ্রহে, মহাকাশের অনন্ত জগতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে।
Science-Fiction
4
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল ব্রিটেন ও এশিয়ার বৃহত্তম এবং সবথেকে ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। কোম্পানির প্রতিষ্ঠা হয় ব্রিটেনের বাজারের জন্য এশিয়ার পণ্য কিনবার উদ্দেশ্য নিয়ে। এই কেনাবেচার পরিণাম পারস্য থেকে ইন্দোনেশিয়া, এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত এক নেটওয়ার্ক। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে প্রায় নাটকীয়ভাবে কোম্পানি ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ফেলল। ব্যবসা থেকে সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতে কোম্পানির বাণিজ্যের ফলে অর্থনীতির পরিবর্তন- মূলত এই দু’টি বিষয় আলোচিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য হত মূলত স্থলপথে। ১৪৯৮ সালে ভাস্কো-ডা-গামার নেতৃত্বে পর্তুগিজ়রা ইউরোপ থেকে ভারতে আসার সোজা সমুদ্রপথ আবিষ্কার করার পর জলপথেও বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। ভারত/এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে পর্তুগিজ়দের মুনাফার পরিমাণ (অনেকসময় শতকরা এক হাজারেরও বেশি) দেখে উত্তর ইউরোপের ব্যবসায়ীরা লোভ সামলাতে পারলেন না। ভারত/এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করার জন্য তাঁরা জয়েন্ট স্টক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেন। এভাবেই জন্ম হল ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৬০০) আর ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৬০২)-র। তার অনেক পরে ফরাসি, ড্যানিশ প্রভৃতি কোম্পানির উদ্ভব। ষোড়শ শতকে ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যে পর্তুগিজ়দের ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। কিন্তু সতেরো শতকে ডাচ আর ইংরেজরা এসে পর্তুগিজ়দের হটিয়ে দিয়ে নিজেরাই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। আলোচ্য গ্রন্থে তীর্থংকর দুটো ‘বড় প্রশ্ন’-র উত্তর খুঁজেছেন। প্রথম, ব্যবসা থেকে সাম্রাজ্যবাদ (মানদণ্ড থেকে রাজদণ্ড)- কোম্পানির এই বিবর্তনের কারণগুলি কী? দ্বিতীয়ত, ভারতে কোম্পানির বাণিজ্যের ফলে অর্থনীতির কী পরিবর্তন হয়েছিল? ‘ভূমিকা’ ও ‘মূল্যায়ন’ বাদ দিয়ে সাতটি সুচিন্তিত ও সুবিন্যস্ত অধ্যায়ে লেখক তাঁর বক্তব্য ও মূল সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন।
War
5
- উপ্যনাসের মূল চরিত্র বীরু। বীরু এবং তার পরিবারকে ঘিরেই পুরো উপ্যনাসটি এগিয়ে গিয়েছে। বীরু' বাবা ডেলটা ইন্সুরেন্স কোম্পানির হেড ক্যাশিয়ার হিসাবে সাড়ে তিন হাজার টাকা পান। তিনি যুবক বয়সে অনেক কবিতা লিখতেন। এছাড়াও বিভিন্ন কাজ করতেন। একসময় অর্থাৎ ত্রিশ বছর বয়সে তিনি তের বছরের এক বালিকার প্রেমে পড়ে যান। এবং তিনি এই প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে বদ্ধপরিকর। তিনি তার দাদার কাছে গিয়ে এই মেয়ের কথা বললেন। তিনি যদি এখন এই মেয়েটাকে বিয়ে না করে তাহলে তার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর দাদা তাকে সম্মতি দেন। তবে, তার সামনে যেন কখনো না আসে। বীরু'র সাথে তার ছোট বোন পারুলের সঙ্গে সম্পর্কটা কেমন জানি। তাদের ডাক্তার হচ্ছেন ধীরেন কাকু। তার চার মেয়ে। বীরু ছোটবেলায় সবসময় অতসী'র কাছে যেত। কারণ, মিষ্টি খাওয়ার লোভে। গল্পের এক পর্যায়ে দেখা যায় বীরু'র বন্ধু টুকু অতসীকে ভালাবেসে ফেলে। সে কী শেষ পর্যন্ত মনের কথা অতসীকে বলতে পারবে? উপ্যনাসের আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র - মাসুম। তাকে অবশ্য মজার চরিত্রও বলা যেতে পারে। সে চট করে নিজের চোখে পানি নিয়ে আসতে পারে। এবং, মাসুম এমনভাবে কথা বলে আর সেই কথা যদি মিথ্যাও হয় তবুও সবাই তার কথা বিশ্বাস করে ফেলে। একবার হলো কি, বীরু থার্ড ইয়ারের ক্লাস করছিলো। হঠাৎ করে মাসুম এসে স্যারকে বলতে লাগলো - একজনের এক্সিডেন্ট হয়েছে। বীরুকে এখন ছুটি দিতে হবে। মাসুমের এই কথা শুনে স্যার আর বিলম্ব না করে বীরুকে ছুটি দিয়ে দিলো। পরবর্তীতে রাস্তায় বের হয়ে বীরু উপলব্ধি করতে পারে যে মাসুম এতক্ষণ মিথ্যে কথা বলছিলো! এই উপ্যনাসের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে এশা। বীরু যাকে পচ্ছন্দ করে। মেয়েটি একটু অদ্ভুত প্রকৃতির। যখন সে বীরু'র কাছে চিঠি লেখে তখন সে তার পুরো নাম লেখে না। এশা'র শুধু 'এ' লেখে। এছাড়াও একবার এশা বীরুকে পুলিশবক্সের সামনে দাঁড়াতে বলে। কিন্তু, সময় গড়িয়ে গেলেও এশা'র দেখা নেই। একদিন এশা বলে যে সে ছোটবেলা থেকেই অনেক স্বাধীনভাবে চলাফেরা করেছে। ভালো ছেলেদের সাথে যেমন মিশেছে তেমনি এশা খারাপ ছেলেদের সাথেও অতি সহজভাবে মিশেছে। ফল হয় ভয়ংকর। যার জন্যে বীরু মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কী ছিল সেই কথা?... পাঠ প্রতিক্রিয়া - হুট্ করে শেষ হয়ে গেল মনে হচ্ছে।
Fiction
0
'মধ্যাহ্ন' আমার দেখা হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম একটি বই সন্দেহ নেই। বেশ কিছুদিন পর সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদ তাঁর অসাধারণ লেখনির পরিচয় দিলেন... দুই খন্ডের বই। ব্যাস্ততার কারণে পুরোটা এখনো শেষ করা হয়নি। ১৯০৫ সালের পটভূমিতে লেখা উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর চমৎকার লেখনীতে বিভিন্ন উল্লেখ যোগ্য ঘটনা তুলে ধরছেন... কিশোর নজরুলের হোটেলে রুটি বানাতে বানাতে গান লেখা থেকে শুরু করে বঙ্গভঙ্গে হিন্দুদের ভূমিকা পর্যন্ত অনেক ঘটনা তুলে ধরেছেন। ভাল লাগলো যে আমাদের এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে হিন্দুদের বিরোধীতার ঘটনাকে অনেক গোঁয়ার গবিন্দের মত চোখ কান বন্ধ করে অস্বীকার করেননি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধীদের আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা কোন এক বিচিত্র কারণে এড়িয়ে গিয়েছেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যে রাখি বন্ধনের প্রচলন করা হয়েছিলো সেটার বিষয়েও দেয়া তথ্যটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে.. (রাখি বিষয়ক তথ্যটার বিষয়ে অবশ্য আমি নিজেও নিশ্চিত নই.. তাই এটা নিয়ে আপাতত আর কিছু বলা গেল না)। ভাল লেগেছে তৎকালীন মুসলিম সমাজের উপরে হিন্দু সমাজের নির্মম অত্যাচারের কিছু কিছু চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন দেখে। হিন্দুরা মুসলমানদের খুব নিকৃষ্ট মনে করতো তখনকার সময়ে। মুসলমানরা তাদের দৃষ্টিতে ছিলো 'অস্পৃশ্য'। আমার মা'য়ের মুখে এধরনের বেশ কিছু গল্প শুনেছিলাম। যেমন কোন ঘাট হতে হিন্দুরা কলসি ভরে পানি নিয়ে যাচ্ছে.. কোন মুসলমান যদি ভুলেও ঐ পানির কোথাও স্পর্শ করতো তাহলে তারা সব পানি ফেলে দিয়ে নতুন করে পানি ভরে নিতো। বই থেকে একটা লাইন কোট করি- "তিনি এক মুসলমান কাঠমিস্ত্রির ছেলে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন- এ দৃশ্য হাস্যকর। যবনপুত্র অস্পৃশ্য হওয়ার কথা। ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। শূদ্রের নিচে যবনের অবস্থান। " উপন্যাসের এক চরিত্র 'হরিচরণ'। এটা ছিল মুসলিম কাঠমিস্ত্রির ছেলে 'জহির'কে কোলে নেয়ার বিষয়ক ভাবনাটা। মুসলিম কাঠমিস্ত্রির ছেলের জীবন বাঁচানো এবং নিজের ঘরে প্রবেশ করানোর অপরাধে হরিচরণকে সমাজচ্যুত করা হয়েছিলো। বিধান মতে যবনপুত্রকে কোলে নেয়া এবং তাকে ঘরে নেয়া নিষিদ্ধ। ধর্ম থেকে পতিত হওয়ার মতত অপরাধ। ধর্ম থেকে যে পতিত তার স্থান রসাতলে। পাতালের সাত স্তরের ষষ্ঠ তল হচ্ছে রসাতল। এই তলে যে পতিত, তার গতি নাই। এগুলো যদি তাদের বিধানে লেখা থেকে থাকে তাহলে বিষয়টা নিয়ে আমার ভাবাবার অবকাশ রয়েছে। আমার বেশ কিছু হিন্দু বন্ধু রয়েছে। তাদের বাড়ি গিয়ে আমি খেয়েছি তারাও আমার বাড়ি এসে খেয়ে গিয়েছে। বিধান মতে তাদের জাত যাওয়ার কথা। তাদের পুরো পরিবারকেই সমাজচ্যুত করার কথা... তেমনটি হতে শুনিনি। এর কারণ কি হতে পারে যে তারা বিধান মানে না বা মানার উপায় নেই!? ভারতের হিন্দৃ অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে কি হিন্দুরা এগুলো এখনো মানে? তাহলে সেখানের মুসলমানদেরও কি সেই ১৯০৫ সালের মত পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে? তৎকালীন মুসলিম সমাজের কিছু অন্ধত্বও বেশ চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে এখানে একটা বিষয়ে খুব সরলীকরণ করে ফেলেছেন। কিছু সুবিধাবাদী মুসলিম চরিত্র যারা না বুঝে দাসীদের সাথে অবৈধ সম্পর্ককে সঠিক মনে করে উলটা-পালটা কাজ কর্ম করে বেড়াতো তাদের রেফারেন্স দিয়ে পুরো বিষয়টা মুসলিম সমাজের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন। এধরনের সরলীকরণ দু:খজনক! তবে কিছু অন্ধত্ব (যা এখন অনেকটা কেটে গিয়েছে বলেই ধারণা করি) খুব ভয়াভয় ছিলো। ওগুলো ছিলো মূলত ধর্ম সম্পর্কে কম জানার ফল। মুসলিম সমাজের নামে এপর্যন্ত যত অপবাদ এসেছে তার বেশীর ভাগই এইসবআধা ধার্মিকদের কারণে হয়েছে। আমাদের মুসলমানদেরই উচিত এসব আধাধার্মিকদের সঠিক ধর্ম শিক্ষা দিয়ে এদের অন্ধত্ব দূর করা। তবে একটা বিষয় সত্যি খারাপ লেগেছে। যেমন লেখক তার উপন্যাসে ইসলাম বিষয়ে বেশ কিছু ভুল বিষয় উপস্থাপণ করেছেন। তার ভেতরে একটি এরকম যে, তৎকালীন সময়ে মসজিদের ইমাম'রা ঢোল বাদ্য নিয়ে নিত্য করলে মানুষ কিছু মনে করতো না। কারণ হিসেবে বলেছেন তখনকার মুসলমানরা উগ্র ছিলো না.. তাই এগুলো সমস্যা সৃষ্টি করেনি। তার মানে আমাদের এখন উগ্রতা ছেড়ে মসজিদের ঈমামদের ঢোল-বাদ্য নিয়ে রাস্তায় নাচতে পাঠানো উচিত!!?!! উপন্যাসে 'ধনু শেখ' নামে নাম মাত্র মুসলিম এক ধূর্ত চরিত্র রয়েছে যার একটা ধূর্তামির শিকার হয়ে 'অম্বিকা ভট্টাচার্য' নামের এক হিন্দু ঠাকুর কে গো-মাংস ভক্ষন করতে হয়েছিলো। সাধারন বিধান মতে এটা মহাপাত। তবুও বিধানের ফাঁক ফোকর গলে ঠাকুরকে রক্ষার চেষ্টা করা হলো, কিন্তু কাজ হলো না। সমাজচ্যুত হয়ে ঠাকুর পরিবার অবশেষে মুসলিম হওয়ার সিন্ধান্ত নিলেন। অনিচ্ছাস্বত্বেও হিন্দু ধর্মের একজন সম্মানীত ঠাকুরকে এভাবে মুসলিম বানানো আমার কাছে খারাপ লেগেছে। তবে সেই ঠাকুর পরিবারের নিশ্চয় আরো বেশী খারাপ লেগেছে। যদিও অম্বিকা ভট্টাচার্যের প্রতি এই আচরণ করার পেছনে ধনু শেখের কিছু মটিভ রয়েছে। উপন্যাসের চরিত্র হরিচরণ ছিলো ধনু শেখের প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। এই হরিচরণকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি নিয়ে হরিচরণ একদা জাত বিষয়ক কিছু প্রশ্ন তুলেছিলো যা হিন্দু সমাজের অপছন্দের কারণ হওয়া ধনু শেখের চাকুরী চলে যায় এবং গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে পথে নামতে হয়। হরিচরণকে সমাজচ্যুত করার পেছনে অম্বিকা ভট্টাচার্যের বিশেষ ভূমিকা থাকার কারণেই ধনু শেখ এই হঠকারিতার আশ্রয় নিয়েছিলো। একধরনের প্রতিশোধ বলা যায়। এ উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের মত অম্বিকা ভট্টাচার্যও শুধু উপন্যাসের একটি চরিত্র নয়। 'অম্বিকা ভট্টাচার্য' একজন বাস্তবের মানুষ। তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখনো আমাদের দেশে বাস করছে। 'ধনু শেখের' হঠকারিতায় মুসলিমদের উপর এই পরিবারের আজন্ম আক্রোশ থাকার কথা। আমার মনে হয় তেমনটিই রয়েছে... অম্বিকা ভট্টাচার্যের এক বংশধর আমাদের দেশে বেশ পরিচিত একটি ফ্যামিলি। সেই ফ্যামিলির এক সদস্য যদি চরম মুসলিম বিদ্বেষী হয়, তাহলে সম্ভবত এরজন্য তাঁকে খুব বেশী দোষ দেয়া যায় না...
Fiction
0
রূপা অনেক রূপবতী একটা মেয়ে। বাবা হারুনুর রশীদ। রূপা ছোট থাকতেই ওর মা ওকে ছেড়ে চলে যায়। মা চলে যাওয়ার পর রূপার বাবা আর বিয়ে করেন নি। রূপার বাবা একটা বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। কিছুদিন হলো তিনি রিটায়ার করেছেন এবং এখন তিনি ইতিহাস লেখা এবং পীর-ফকির নিয়ে মেতেছেন। রূপাদের বাড়িতে মানুষ মাত্র তিনজন। রূপা, রূপার বাবা আর কাজের মেয়ে মদিনা। রূপাদের বাসায় হটাৎ এক ছেলের আগমন। ছেলেটার নাম রাশেদ। আমেরিকার এক ভার্সিটির ম্যাথের টিচার। দেখতে খুবই সুদর্শন। রূপার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছে সে। কিন্তু রূপার বাবা হারুনুর রশীদ সাহেব বললেন, তিনি রাশেদ নামে কাউকে চিনেন না। রাশেদ নিজেও বুঝতে পারলো, সে ভুল ঠিকানায় এসেছে। কিন্তু বাইরে তখন প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি। সেই ঝড়-বৃষ্টির মাঝেই ঘর থেকে বের হয়ে যায় রাশেদ। পাশের এক চায়ের দোকানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু রাশেদের ফুসফুস খুব দূর্বল। বৃষ্টিতে ভিজে আসে তার জ্বর। অবস্থা খুব খারাপ। হসপিটাল থেকে রূপাদের বাড়িতে খবর দেয়া হয়। রূপা নিজেই গিয়ে রাশেদকে বাড়ি নিয়ে আসে। তারপর রাশেদ সুস্থ হওয়ার পর সঠিক ঠিকানা খুজেঁ বের করে চলে যায়। কাহিনী কি তবে শেষ? না কাহিনী এভাবেই চলতে থাকে। শেষ জানার জন্যে বইটা পড়তে হবে!
Fiction
0
মার্ডার মিস্ট্রি হয়তো পড়েছেন আগে, কিন্তু পজেশন মিস্ট্রি ? কোন অশুভ শক্তির ছায়া পড়েছে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারের একমাত্র মেয়ের ওপর-- সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নিয়োগ করা হলো অদ্ভুত এক মানুষকে; অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার সাথে যার আছে নিবিড়, তিক্ত অভিজ্ঞতা । কিন্তু তদন্তে ডুব দেবার পরই বুঝতে পারলো চোরাবালি আসলে কতোটা গভীর । একা একা সমস্যার জট খোলা সম্ভব নয়, অন্য এক ধরনের বিশেষজ্ঞের সাহায্যের দরকার । দরকার একজন রিচুয়াল ম্যাজিশিয়ানের । ওরা দু-জন মিলেও কি এই মারাত্মক রহস্যের জাল ভেদ করতে পারবে ? প্রতি পদে অপেক্ষা করছে বিপদ--ছায়ার আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে আছে অকল্পনীয় ক্ষমতাধর এক আততায়ী । প্রচন্ড প্রভাবশালী জাহানারা মুনীর, অপ্রকৃতস্থ জিহাদ,পীরের মুরীদ রেহানা খালা , ঘুমন্ত আয়েশা প্রত্যেকটা চরিত্রই রীতিমত তাকে পাজলড করে তোলে,সপ্তাহান্তেই সে বুঝতে পারে এ কোন জীনের আছড় নয় , কেউ নিয়ন্ত্রন করছে মুনির ফ্যামিলির একমাত্র মেয়ে আয়েশার স্বপ্নকে ... হয়তোবা সে খুব কাছের কেউ ... ? কে সে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই পর্দায় আগমন ঘটে অন্যতম প্রধান চরিত্র ম্যাজিশিয়ান "অ্যানিমা"র ... ! তাও আবার যেন তেন ম্যাজিশিয়ান নাহ ,পুরোপুরি ড্রিগ্রীধারি ব্ল্য্যাক ম্যাজিশিয়ান !!! মুমিন আর অ্যানিমা মিলে যখন সব চেষ্টা করে ক্লান্ত , অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তাদের সামনে এসে পরে ভয়ংকর সত্যটা ... এতোটাই ভয়ংকর যা ঘটতে দিতে থাকলে হুমকীর মুখে পড়বে পুরো মানবসভ্যতা,হয়তোবা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাবে পৃথিবী ... !!!! আর্কন-খ্যাত তানজীম রহমানের হরর থৃলার অক্টারিন-এর পাতায় লুকিয়ে আছে খুন, জাদু, কিংবদন্তি আর চক্রান্তের আশ্চর্য এক উপন্যাস যা চুম্বকের মতো আপনার মনোযোগকে আকর্ষণ করবে ।
Thriller
1
বই : জ্যাক অ্যান্ড জিল। মূল : জেমস প্যাটারসন। অনুবাদ : সাঈদ শিহাব। প্রকাশনী : আদী। প্রচ্ছদ : অনিক। মূল্য : ৩০০ টাকা। জনরা : থ্রিলার। #কাহিনী_সংক্ষেপ আমেরিকার ইতিহাসে লেখা হতে যাচ্ছে এক নতুন কাহিনী। যে নাটক টা মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে, অনেকেই এটাকে নাটুকে বলবে, যার মূল অভিনেতা হচ্ছে জ্যাক। সে নিজের পরিচয় দেয় স্যাম হ্যারিসন বলে। যদিও সে স্যামও নয়, হ্যারিসনও নয়। তার কাঁধের ব্যাগ টা এদিক ওদিক দুলছে। ভেতরে একটা ক্যামকর্ডার আছে। ইতিহাস লেখা হতে যাচ্ছে! যতটুক সম্ভব ভিডিও করে রাখতে চায় সে। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ থাকা উচিত। ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলছে - শতাব্দীর শেষ প্রান্তে পৌঁছে আমেরিকা আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক বারোটা বাজার দশ মিনিট আগে আমেরিকান সিনেটর ড্যানিয়েল ফিটসপ্যাট্রিকের অ্যাপার্টমেন্টের এসে দাঁড়াল স্যাম। দরজা খুলে গেল। "জ্যাক" ফিসফিসিয়ে বললো রমণী। "জিল" হেসে উত্তর দিলো স্যাম। খাটের সাথে বেঁধে রাখা সিনেটরের কয়েক ইঞ্চি দূর থেকে গুলি করল সে। পরপর দুইবার। রচিত হলো ইতিহাস। খেলা শুরু হয়ে গেছে। জ্যাক অ্যান্ড জিল। ওদিকে ওয়াশিংটনের অন্য প্রান্তে গারফিল্ড পার্কে খুন হয় ছয় বছরের ছোট্ট এক কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চামেয়ে! তদন্তে নামে ওয়াশিংটন পুলিশের চীফ অ্যালেক্স ক্রস ও তার বন্ধ স্যাম্পসন। কিন্তু কোনো ক্লু ই খুঁজে পায় না! কে এই খুনি? সে কি চায়? নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করতে? নাকি সে জ্যাক অ্যান্ড জিলকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে? তারা কি শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নেমেছে? নাকি ওয়াশিংটন পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে? পাঁচ দিনের মাথায় তারা তাদের দ্বিতীয় খুন টা করল! ন্যাটালি শিহান, সুন্দরী সংবাদ পাঠিকাকে। জ্যাক অ্যান্ড জিলের তৃতীয় শিকার হলো মাইকেল রবিনসন, হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা। একটা খুনের রহস্য সুরাহা করার আগেই কাঁধে এসে পড়েছে আরো দুইটা খুনের রহস্য! ড্রাগনস্লেয়ার নামে খ্যাত অ্যালেক্সকে ডাকা হয়েছে হোয়াইট হাউজে! ব্যাপার কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাই যাচ্ছে। হোয়াইট হাউজে একত্রিত হয়েছে- ড্রাগনস্লেয়ার খ্যাত ওয়াশিংটন পুলিশের চীফ অ্যালেক্স, সিক্রেট সার্ভিস এর এজেন্ট অ্যানা রেপার ও মাইকেল ফেসকো, এফবিআইর ডিরেক্টর হ্যাটফিল্ড, মার্কিন সেনাবাহিনীর জেনারেল অ্যাইডেন কর্নওয়াল , জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল কেইন এবং হোয়াইট হাউজের চীফ অব স্টাফ ডন হ্যামারম্যানসহ সিআইএ এর ইনস্পেকটর জেনারেল জিন স্ট্রালিং। তারা কি পারবে এই খুনের রহস্যভেদ করতে? খুঁজে বের করতে পারবে কি জ্যাক অ্যান্ড জিল নামের খুনিদের? আর গারফিল্ডের খুনের সাথেই বা এর কি রহস্য? উন্মোচন করতে পারবে কি অ্যালেক্স ক্রস? সময় কিন্তু খুবই কম! সে পারবে কি? #পাঠপ্রতিক্রিয়া আমি চরম বিরক্ত প্যাটারসনের উপরে! সে একটা জঘন্য । এমন একটা টানটান উত্তেজনাকর বইয়ের এন্ডিং এমন বাজে হয় কি করে! নিঃশ্বাস বন্ধ করে পড়েছি! অথচ সমাপ্তি টা আমাকে হতাশ করেছে। সমাপ্তি আমার একটুও পছন্দ হয়নি। অনুবাদক খুব ভালো কাজ করলেও ঘাপলা করছে প্রকাশনা সংস্থা। বানানের অবস্থা যাচ্ছেতাই! আর এরা স্পেসের এর ব্যবহার টাই হয়ত ঠিক জানেনা। দুই তিনটা শব্দ এক সাথে জোড়া লেগে গেছে। কোনটা যে কি বুঝতে হিমসিম খেতে হয়েছে। কারণ আমেরিকা আমার জন্মভূমি নয় যে তার সব রাস্তাঘাট, পার্ক এভিনিউ বা প্রতিষ্ঠান সমূহের নামধাম আমার জানা থাকবে! এই ব্যাপার টায় তাদের সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়া তাদের বইয়ের প্রচ্ছদ, বাঁধাই আর পেজ যথেষ্ট সুন্দর। সো গাইজ বি কেয়ারফুল। এত্ত কিছুর পরেও কেনো জানি বইটা আমার খুব ভালো লেগেছে। পাঠক চাইলে পড়ে দেখতে পারেন। দারুণ থ্রিল পাবেন। বই হোক ভালোবাসার প্রতীক।
Thriller
1
আমি বসে আছি ঈশা খা হোটলে এর সামনে । কোলে আছে চেঙ্গিস খান । সামনে চা কফির ফ্ল্যাক্স নিয়ে এক ছেলে । কিন্তু কফির দাম আমার কাছে নেই । কিভাবে এর হাত থেকে বাচা যায় তাই ভাবছি । ঘামবাবু,হামবাবু ও মধ্যমণি । তিন এর সামনে বসে আছি । পরিস্থিতি বজ্রা আটুনি ফস্কা গেড়োর কোন কারবার নেই । এদিকে রাত ও অনেক । এহেন পরিস্থিতিতে কি করা উচিত । ফ্লাওয়ারের হাতে মার খেয়ে খালু হাসপাতাল এ । খালা তাকে দেখতে যাবে না এটা তার শাস্তি । তিনি আমার আর হুসির বিয়ে নিয়ে চিন্তিত । কার্ড ও ছাপানো হয়েছে । দেখা যাক কি হয় । হিমু সিরিজ এর এই বই দিয়ে আমার শুরু । সেটাও ২০০৬ এ । ক্লাস নাইন এ পড়ি । র‍্যাব তখন সেই আতঙ্ক । র‍্যাব এর নাম শুনলেই সবার অবস্থা খারাপ । যদিও তখন এত কিছু বুঝতাম না । কিন্তু নির্মল আনন্দ হিসেবে এই বই টা পড়েছি । তাও বন্ধুরা মিলে নদীর পাড়ে বসে । হাসি তখন থামে না । একজন আর একজন এর উপর গড়িয়ে পরি । আমার কেন জানি মনে হয় এই বইটি হুমায়ূন আহমেদ যখন খুব আনন্দিত ছিলেন তখন লিখেছেন । তবে হিমু সিরিজের শুরুটা মনে হয় ভাল ই ছিল আমার । এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি । সর্বোপরি মন খারাপ থাকলে এই বইটি পড়তে পারেন । হাসি আসতে বাধ্য ।
Fiction
0
পুস্ত_পরিচিতিঃ নাম: উত্তরাধিকার লেখক: সমরেশ মজুমদার পৃষ্ঠা:২৯৫ দাম: Rs. ২০০ (মুদ্রিত মূল্য) প্রথম প্রকাশকাল: জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৬ বাংলা প্রচ্ছদ: সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় ভিতরের অলঙ্করণ: সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত #কাহিনী_সংক্ষেপণ: এই উপন্যাসের কাহিনীর শুরু উত্তরবঙ্গের একটি চা-বাগানের পটভূমি। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্টে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবসে গল্পের মূল চরিত্র অনিমেষ নামের এক কিশোর প্রথম 'বন্দেমাতরম' শব্দটি শুনে। তখন অর্থটি ঠিক বুঝতে পারে না। কিন্তু সেদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে তার ভিতরে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। অনি চা-বাগানের গ্রাম স্বর্গছেরা ছেড়ে সদ্য অবসর প্রাপ্ত বড়কর্তা দাদুর হাত ধরে জলপাইগুড়ি আসে পড়ালেখা শিখতে। সেই থেকে জেঠি আর দাদুর বুকেই বড় হতে থাকে। নতুন পরিবেশে কিশোর দেখতে থাকে দেশপ্রেমের নামে অসুস্থ রাজনীতির খেলা। প্রকৃত রাজনীতি আর দেশসেবার পথ খুঁজতে থাকে সে। কংগ্রেস আর কমুনিস্টের ভিন্ন উদ্দেশ্যের ভিড়ে দিশেহারা হয়ে যায় অনিমেষ সঠিকপথ কোনটা তা ভেবেই। আস্তে আস্তে বড় হয় অনি। আর বাবা চায় ডাক্তার হউক, দাদু চায় ইংরেজিতে পড়ুক। কলকাতায় অনির গন্তব্য। সে কলকাতা যাচ্ছে। সেদিন পথেই দেখল- সারাশহরে আগুন জ্বলছে, কঠোর আন্দোলনের এক ভয়ংকর পরিবেশ। নিজের সম্পর্কে, দেশের সম্পর্কে পুরনো বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ভালবাসার সঙ্গে নতুন করে তার মুখামুখি পরিচয় শুরু হল। এই কাহিনী সেদিনের অনিমেষের আত্মজিজ্ঞাসার, আত্মানুসন্ধানের। আদৌ অনি পৌছাতে পারল কলকাতায়? অনির জীবনে কি কি হল তা জানতে পুরো গল্প পড়তে হবে। #পাঠপ্রতিক্রয়া: বাংলা সাহিত্যে কথাশিল্পীদের মধ্যে সরমেশ মজুমদার অগ্রগণ্য। তার বিশিষ্ট রচনাশৈলীর জন্য একতম বললেও অন্যায় হবে না। তার অন্যান্য সব উপন্যাস পড়লেই সেই প্রমাণ মিলে। 'উত্তরাধিকার' ঘরোয়া গল্পে অনুপম প্রসাদ গুণে তার মনোমুগ্ধকর মধ্যদিয়ে একালের তরুণদের জন্য বার্তা বয়ে এনেছেন। যাদের স্বাস্থ্যবান বই পড়ায় অনিহা আছে তারা শুরু করুন দেখবেন ডুবে যাবেন গল্পে। সাবলীল, সহজ ভাষার সামাজিক গল্পের বইতে আপনি সব পাবেন। সুখ, দু:খ, হতাশা, উল্লাস সব। বইয়ের ভিতরে অসাধারণ কিছু অলঙ্করণ রয়েছে কাহিনীর সাথে মিলিয়ে। যা আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। #প্রাপ্তিস্থান: ছোটবড় সব বই দোকানে পাবেন। নীলক্ষেত কিংবা বাংলাবাজার তাছাড়া আমাদের সবারপ্রিয় রকমারি.কম তো আছেই। ঘরে বসেই অর্ডার করলেই দ্রুত পেয়ে যাবেন আপনার দরজায় ঝামেলামুক্তভাবেই।
Fiction
0
বই: ক্রোমিয়াম অরণ্য ধরণ: সায়েন্স ফিকশন লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: ধ্রুব এষ প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান: সময় প্রথম প্রকাশকাল: ১৯৯৫ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮০ কাহিনী সংক্ষেপ: পৃথিবীর বাতাস পুরোপুরি দুষিত হয়ে গেছে,অসংখ্য ধুলিকনায় সারা অাকাশে একটি ঘোলাটে রং, সূর্য ডুবে যাবার অাগে সূর্যালোক বিচ্ছুরিত হয়ে হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য একটি বিচিত্র রহস্যময় অালো অাকাশে খেলা করতে থাকে। অথচ অাশা -ভালবাসা অার সম্ভাবনার এই পৃথিবীর রুপ ছিল ভিন্ন।একদিন শরতের রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরে গভীর নীল অাকাশ থেকে নেমে অাসা একটি তুষারশুভ্র প্লুটোনিয়ামের গোলকের ভয়াবহ বিস্ফোরণে পৃথিবীর বুক থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে যায় এক নগরীর অস্তিত্ব। প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ল একে অন্যের উপর। ধংব্বস হল মানবতা, ধর্ষিত হল প্রকৃতি। যে সভ্যতা গড়তে লক্ষ বছর লেগেছিলল তা ধংব্বস হল নিমেষেই। পারমানবিক বিস্ফোরণে ধুলার মত উড়ে গেল পৃথিবীর সুরম্য অট্টালিকা,প্রাচীন ও বিখ্যাত সব নগরী। পৃথিবী এখন অাজ অাদিগন্ত বিস্তৃত মরু প্রান্তর। প্রাণহীন সেই ধংব্বসস্তুপের মাঝে ধিকি ধিকি করে জ্বলে ওঠা অাগুনের মাঝেই হতভাগা কিছু মানুষের দল অার চতুর্থ শ্রেনীর কতগুলোর রোবট হাতে হাত ধরে অাজো বেঁচে অাছে। সেই বেঁচে থাকা যেন মৃত্যুর চেয়েও কঠিন।বিষময় এই পৃথিবীতে না অাছে বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিশুদ্ধ বায়ুতে শ্বাস গ্রহন এখানে এক অলীক স্বপ্ন। ধুকে ধুকে বেঁচে থাকা মানুষের দলের একজন কুশান। যার চোখে নেই কোন স্বপ্ন, মনে নেই কোন ভালবাসা।সাথী একটি চতুর্থ শ্রেনীর রোবট; যার নাম ক্রিশি। পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে থাকা সেই হতশায় নিমজ্জিত খাদ্যবস্ত্রহীন মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে “গ্রুষ্টান”। গ্রুষ্টান ধংব্বসযন্ত্র থেকে রক্ষা পাওয়া পৃথিবীজুড়ে সুরক্ষিত কম্পিউটারের ঘাটিগুলির যোগসুত্র। কোয়ার্টজের তন্তুতে অবলাল রশ্মিতে পরিব্যপ্ত এক অবিশ্বাস্য শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম। যাকে বেঁচে থাকা মানুষেরা ঈশ্বর বলে ভাবে। গ্রুস্টান অার মানুষের এক সভায় কুশান হঠাৎ গ্রুস্টানের বিরোধিতা করে বসে। জরুরি অধিবেশন ডেকে কুশানকে নির্বাসন দেওয়া হয়। নিরাপদ অাশ্রয় ছেড়ে বিষময় এই পৃথিবীতে নেমে পড়ে কুশান মনে একরাশ ভয় অার অাতংক নিয়ে। যে কোন সময় গ্রুস্টানের রোবটবাহিনী তাকে হত্যাও করতে পারে। কি করবে কুশান?কোথায় যাবে? প্রতিক্রিয়া: বিজ্ঞাণ সম্পর্কিত জটিল বিষয়গুলো খুব চমৎকার অার চিত্তাকর্ষক শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। মানুষ যুদ্ধ করছে একটা কম্পিউটার অপারেটিং সিসটেমের বিরুদ্ধে এই চিন্তাটি মূলত ইউনিক। প্রচলিত সমসাময়িক উপন্যাস থেকে সরে গিয়ে নতুন কিছু বিষয় ও কাহিনী থেকে সাহিত্য রস অাস্বাদন করতে চাইলে হাতে নিতে পারেন ক্রোমিয়াম অরণ্য। একথা প্রায় সব পাঠকই স্বীকার করবে বাংলাদেশে সায়েন্স ফিকশনের জনক জাফর ইকবাল স্যার। তার হাতেই সায়েন্স ফিকশনের বিকাশ ও জনপ্রিয়তা।
Science-Fiction
4
‘সাফল্যের হাজারো সূত্র’ রাজিব আহমেদ এর লেখা একটি বই । জীবন ঘনিষ্ঠ বহুমাত্রিক লেখক রাজিব আহমেদ বাংলা মননশীল সাহিত্যকে ক্রমেই সমৃদ্ধ করে চলেছেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম বিক্রয় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ। মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০ অতিক্রম করে গেছে। বাংলাদেশে আত্মোন্নয়নমূলক অভিনন্দন লাভ করেছেন। রাজিব আহমেদ চারটি স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানিতে (রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার, বাংলালিংক ও রবি) দশ বছরের কর্মজীবন থেকে স্বেচ্ছায় ছুটি নিয়ে এখন মুক্ত বিক্রয় প্রশিক্ষক ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তা; জয় করে চলেছেন অসংখ্য বিক্রয় পেশাজীবী, শিক্ষার্থী ও দর্শক শ্রোতার হৃদয়। লেখালেখি তার নেশা আর ভালোবাসেন দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে। তিনি কলকাতায় অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার এর একজন অন্যতম শিল্পী ।নানা গুনের অধিকারী এই লেখকের লেখা সাফল্যের হাজারো সূত্র বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে । বইটি প্রকাশিত হয় অনন্যা প্রকাশনী থেকে এবং এর প্রকাশক মনিরুল হক । প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ । মানুষের জীবনে সমস্যা আসবেই , তা উৎরে যে যেতে পারে সে সফল মানুষ , যে পারে না সে ব্যর্থ । মানুষ কে এই চলার পথে সাহস ও প্রেরনা যোগানোর জন্য পৃথিবীর বহু দেশে বহু ভাষায় লেখা হয়েছে অনেক বই । কিন্তু আমাদের দেশে এই ধরনের বই খুব একটা দেখা যায় না যার জন্য এই বইয়ের ঘাটতি রয়েছে , এই ঘাটতি পুরনে বইটি লিখেছেন বিক্রয় বন্ধু রাজিব আহমেদ । তিনি তার জীবনে করেছেন অনেক ধরনের কাজ ,সেই কাজ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছে পচিশ হাজারেরো বেশী মানুষের কাছে । তিনি জীবনে সফল হওয়ার জন্য বইটি তে লিখেছেন বারো শো এর ও বেশী সূত্র যা সকলের জীবনেই প্রভাব ফেলতে পারবে তা বলা যায় ।
Motivational
6
টেকি সফল উদ্যোক্তার গল্প” বইটি মূলত বাংলাদেশের সফল ২৫ জন তথ্য উদ্যোক্তার সাফল্যের গল্প নিয়ে , অনেক বাঁধা পেরিয়ে আজ যারা সফল তাদের গল্পের পসরা নিয়েই বায়োগ্রাফি মুলক বই “টেকি সফল উদ্যোক্তার গল্প” অসাধারন একটি বই । অনেক কাজে লাগবে বইটি ।
Motivational
6
#রবিজ_রকমারি_বুক_রিভিউ_কন্টেস্ট বই : ত্রাতিনা লেখক : মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৮ প্রকাশন : সময় প্রকাশন পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৩৬ মূল্য : ২৬০ টাকা পৃথিবী এমন একটা পর্যায়ে পৌছেছে যখন শাসন ক্ষমতা কোনো সরকারি দল বা ব্যাক্তির হাতে নয় রয়েছে বিজ্ঞানীদের হাতে। পৃথিবীর মানুষেরা তাদের দেখভালের ভার ছেড়ে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের হাতে। এখন কোনো নিউক্লিয়ার বোমা নেই, কোনো যুদ্ধ বিগ্রহ নেই। একসময় বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করলেন একটি গ্রহাণু ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে। এর আকার এতটাই সুবিশাল যা মনে করিয়ে দেয় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের ডাইনোসরদের বিলুপ্ত হওয়ার ঘটনাকে। ৪৮ ঘন্টার ভেতরে গ্রহাণুটি আঘাত করবে আর পৃথিবী ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের সেই অবস্থায় ফিরে যাবে। বিজ্ঞানীদের মহাপরিচালক মহামান্য রিহা তাই বিজ্ঞানীদের নিয়ে সভায় বসলেন। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো রায়ানা একাই গ্রহাণুটিকে ধ্বংস করতে যাবে এক "সুইসাইড মিশনে" । নিজের মেয়ে ত্রাতিনাকে অনাথ আশ্রমে রেখে ৭ বিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করল। বোমা বিস্ফোরণের আগে জানতে পারল সেটি কোনো গ্রহাণু নয় কোনো এক মহাজাগতিক প্রানের তৈরি স্পেসসিপ। সেই মহাজাগতিক জীব কেন চাচ্ছিলো পৃথিবীকে ধ্বংস করতে? কি হতে যাচ্ছে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ? মতামত: প্রথম অংশের কাহিনীটুকু লিখলাম শুধু।শুরুতে একরকম জাকজমক ভাব থাকলেও শেষের দিকে তা আর থাকে নি। চমৎকার একটি প্লট ছিলো কিন্তু আমি বলব কাহিনী অতি সংক্ষেপিত করা হয়েছে। ১৩৬ পেজের জায়গায় ৩০০ পেজের সাইন্স ফিকশন হতে পারত। তখন বইটি অনেক বেশি গ্রহনযোগ্যতা পেত। লেখক বেশ কিছু টপিক বিস্তারিত না লিখে এড়িয়ে গেছেন। ফলে তার চেনাজানা সাইন্স ফিকশনের রূপ এতেও থাকছে। মানে এন্ড্রয়েড, নারীর ভূমিকা, এলিয়েন। তবে ঐ যে বললাম ৩০০ পেজ হলে চমৎকার একটা বই হত। এছাড়া ও বইয়ের ভেতরে ত্রাতিনার বয়সের হিসেব নিয়ে গোলমাল আছে। আরও একটা ভুল আছে সেটা বললে লেখাটা স্পয়লার হয়ে যাবে। আমি জাফর ইকবালের প্রায় সব সাইন্স ফিকশন পড়েছি তাই এই বইয়ে কিছু একটা নতুনত্ব পেতে গিয়েও পাই নি। তবে সদ্য পাঠক হয়েছে এমন কিছু বন্ধুদের মাঝে বইটা নিয়ে দারুণ জল্পনা কল্পনা দেখছি। একজন বলেই ফেলেছিল বইটা নাকি মাস্টারপিস। তাই যদি জাফর ইকবালের সাইন্স ফিকশন প্রথম পড়বেন তেমন কেউ থাকেন সেক্ষেত্রে বইটা ভালোই হবে। তবে সংক্ষেপিত হওয়ায় প্লট আর নতুন শব্দ নিয়ে বিপাকে পড়তে পারেন। - Fahim Montasir Misbah
Science-Fiction
4
নিষিদ্ধ লোবান, লেখক : সৈয়দ শামসুল হক, ক্যাটাগরি : মুক্তযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস, প্রকাশকাল : ১৯৮১, প্রকাশনী : অনন্যা প্রকাশনী, গায়ের মূল্য : ১০০ টাকা 'নিষিদ্ধ লোবান' সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। #কাহিনী_সংক্ষেপ : জনশূন্য নবগ্রামের রেইলপথ ধরে উৎকন্ঠা একটি মেয়ে হেঁটে চলছে। নাম বিলকিস।তাকে প্রায় পাঁচ মাইলে হেঁটে যেতে হবে। গন্তব্য স্থান জলেশ্বরী।ঢাকা থেকে ট্রেনেই এসেছে সে।নবগ্রামে এসে শুনেছে মিলিটারিরা জলেশ্বরী আক্রমণ করেছে তাই ট্রেন আর যাবে না।কিন্তু যেভাবেই হোক জলেশ্বরীতে যে তাকে পৌঁছাতেই হবে। কিছুটা পথ সামনে যেতেই বিলকিস অনুভব করলো কেউ একজন তাকে অনুসরণ করছে।পিছনে ফিরে দেখে ১৭/১৮ বছর বয়সী এক ছেলে ঠিক তার ছোট ভাইয়ের মত।ছেলেটির নাম সিরাজ। সে বিলকিসকে জলেশ্বরী যেতে নিষেধ করে।একা এই পথ যাওয়া বিলকিসের জন্য বিপদজনক।কিন্তু জলেশ্বরী যাওয়াটাও বিলকিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতোদূর এসে সে ঢাকা ফিরে যেতে পারে না।আবার ছেলেটির ব্যাকুলতা উপেক্ষা করতে পারে না। তবে কী সে ফিরে যায় ঢাকায়? নাকি পাঁচ মাইল পথ হেঁটে জলেশ্বরীতে পৌঁছায়?!কী এমন হয়েছিল জলেশ্বরীতে? সব উত্তর মিলবে উপন্যাসের প্রত্যেক পাতায়। #আমার_উপলব্ধি : শামসুল হকের গুটি কয়েক কবিতা ব্যতীত তার আর কোন বই এর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই।ভাইয়ার বুক সেলফ দেখতে গিয়ে চোখে পড়লো বইটি।একটু চেক করে দেখলাম বইটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক।সারাংশটুকুও ভালো লেগে গেল।পড়া শুরু করলাম।এক ঘন্টার মধ্যেই পড়া শেষ করে ফেলি।চোখের সামনে দৃশ্যগুলোকে কল্পনা করে স্থির থাকতে পারছিলাম না।বিলকিসের জায়গায় নিজেকে বসাতে গিয়ে শরীর শিহরিত হচ্ছিলো বারবার।এই উপন্যাসটিতে ৭১ এর নির্মমতা, নৃশংসতা তুলে ধরলেও খন্ড কিছু বিষয়কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।বিলকিসের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে পাঠক যেন উপলব্ধি করতে পারে মুহূর্তগুলোকে।বিলকিসের সাথে সমান তালে চলতে গিয়েও যেন কোন ক্লান্তিবোধ হয়নি।বিলকিস আর সিরাজ যেন এখানে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়টাতে এরকম হাজারো বিলকিস,সিরাজ তাদের অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ উপন্যাসটি নান্দনিক ছিল। **চরিত্র বিশ্লেষণ** ১।বিলকিস এই চরিত্রটা একজন সাহসী,উদ্যমী, নারীর পরিচয় বহন করে।যে মেয়ে একা এক রাত পার করতে পারতো না সেই মেয়ে রাতের আঁধারে মানুষরূপী হিংস্র পশুদের দেখে আর ভীত হয় না।একটার পর একটা আঘাত তার মনোবলকে যেন আরো দৃঢ় করে চলছিল।কোন হায়েনার দল যদি তার শরীরকে টুকরো টুকরো করে দেয় তবুও হার মানতে নারাজ সে।প্রিয়জন হারানোর বেদনা তাকে আরো বেশি সাহসী করে তোলে।তার চোখে জ্বলজ্বল করছে প্রতিশোধ নেবার আগুন। সব মিলিয়ে অসাধারণ সাহসিকতা আর অনুসরণীয় একটি চরিত্র ছিল বলে মনে হয়েছে। ২।সিরাজ এই চরিত্রটাও যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় বহন করেছে।সহজ সরল একটা চরিত্র।সহজে মায়া সৃষ্টি করে।সব হারিয়ে অজানা,অপরিচিত একটা নারীর প্রতিটা পদক্ষেপে সহায়তা করেছে সে,সব বিপদ থেকে বিলকিসকে রক্ষা করেছে।তার চরিত্রটার মধ্য দিয়ে আসল মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। পুরো উপন্যাসে কাহিনী এবং চরিত্রগুলোর উপস্থাপন সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে।পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। নিষিদ্ধ লোবানের কাহিনী অবলম্বনে ২০১১ সালে নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত "গেরিলা" মুভিটি নির্মিত হয়।তবে কাহিনীতে কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে।মুভিটিতে অভিনয় করেছে জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত সহ আরো অনেকে।
War
5
অসাধারণ উপন্যাস। সকলের পড়া উচিৎ।
Fiction
0
''এত গৌরবময়, এত বেদনার বছর বাঙালির জীবনে আগে কথনো আসেনি। বছরটি ১৯৭১। এই এতটি বছরের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশকে জানল, চিনল এবং বুঝতে পারল সবুজ শ্যামল প্রকৃতির কাদামাটির মতো নরম বাঙলি প্রয়োজনে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।'' আর এই বাঙালির দেশপ্রেম, প্রত্যয়, দৃঢ়তা, মুক্তির অনির্বাণ আকাঙ্ক্ষা এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে আবেগ মিলেমিশে একাকার হয়ে এক অনির্বচনীয় 'মুক্তিযুদ্ধ' স্বাধীন বাংলাদেশকে জন্ম দিচ্ছিল। দেশপ্রসবকালিন সেই সময়ের অসাধারণ নিখাদ দলিল ‘একাত্তরের চিঠি’ । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে লেখা ৮২ টি চিঠির একটি সংকলন। দৈনিক প্রথম আলো ও গ্রামীণ ফোনের উদ্যোগে চিঠিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। সংকলনটি প্রথম প্রকাশিত হয় চৈত্র ১৪১৫, মার্চ ২০০৯ এ। সালাউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সম্পাদনা পবিষদে ছিলেন আমিন আহম্মেদ চৌধুরী, রশীদ হায়দার, সেলিনা হোসেন এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ইতিহাস ও সভ্যতার সন্ধান মিলে সেই সময়কার উপাদান দলিলদস্তাবেজ, সাহিত্যকর্ম, শিল্পকর্ম, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের ডায়রি ও চিঠিপত্র ইত্যদির মাধ্যমে। এগুলোর গুরুত্ব সর্বজনীন ও বৈশ্বিক। আমরা আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি থেকে জানতে পারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি পরিবারে কি ভয়াবহ অবস্থা নেমে এসেছিল। সেই কিশোরীটির দুই বছর দুই মাসের দিনলিপি পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে মানুষ আতংকে হয়ে যায় বাকরুদ্ধ, মানুষের কষ্টের বাধ ভেঙে যায়, সারা পৃথিবীর মানুষ চমকে ওঠে সদ্য কিশোরীর কলমের আঁচড়ে। একইভাবে ‘একাত্তরের চিঠি’ পড়তে পড়তে স্মরণে আসে ১৯৬৭ সালে বলিভিয়ার সৈন্যদের হাতে নিহত মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারা ডায়েরির কথা। একাত্তরের চিঠি সেরকম ওন একক ব্যক্তির ব্যক্তিগত ডায়রি নয়, সমষ্টিগত চিঠির সংকলন, যাতে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রণাঙ্গন থেকে স্বজনদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেগমথিত কথামালা, চেতনা ও প্রত্যয়ের দৃঢ় উচ্চারণ আর যুদ্ধজয়ের প্রগাঢ় আকাঙ্খার বাণী। যে সব মুক্তিযোদ্ধারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এটি শুধু তাদের বীরত্বগাথাই নয়, পেছনে রেখে আসা তাদের পরিবারেরও গল্প। মূলত এটি একটি জনযুদ্ধের ইতিহাস। সেসব ঘটনা, অনুভব, ত্যাগ ও স্বপ্নের দলিলই হচ্ছে স্বজনদের কাছে লেখা মুক্তিযোদ্ধাদের এসব চিঠি। আর মুক্তিযোদ্ধাদের সেসব চিঠি নিয়েই ‘একাত্তরের চিঠি’। আমাদের রয়েছে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রয়েছে ‘একাত্তরের ডায়রি’ তেমনি এই মহান যুদ্ধের নতুন দলিল ‘একাত্তরের চিঠি’। সেই উত্তাল দিনগুলোতে নানা সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে তাদের পরিবারে বিশেষ করে মাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন দেশের প্রতি তাদের অবস্থান, যুদ্ধের অবস্থা এবং ফিরে না আসতে পারার সম্ভাবনার কথাও। কিন্তু সেই বিচ্ছিন্ন চিঠিগুলোর মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করেছে তাদের মহান কর্ম মুক্তিযুদ্ধ আর মহান চেতনা দেশমাতৃকার প্রতি সুগভীর ভালোবাসা। ফলে সেই চিঠি আর ব্যক্তিগত গোপনীয় বস্তুতে পরিণত না হয়ে নির্মাণ করেছে এক জাতীয় অর্কাইভ। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন-সংগ্রামের আলেখ্যকে নবীন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেবার মধ্য দিয়ে এই প্রজন্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঞ্চারণ ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘একাত্তরের চিঠি’। এই গ্রন্থ থেকে ২৬টি চিঠি নিয়ে ২০-২২ মিনিটের আলাদা গল্প নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ২৬ পর্বের প্রামাণ্য ধারাবাহিক ‘একাত্তরের চিঠি’ও । চিঠিগুলোর বেশিরভাগই লিখেছেন তরুণ যোদ্ধারা; অল্পশিক্ষিত যুবক, স্কুল কলেজের ছাত্র। যোদ্ধারা লড়াই করেছেন প্রাণের আবেগকে শ্রেষ্ঠ অস্ত্র বানিয়ে। এবং এই আবেগের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটেছে প্রকাশিত বেশিরভাগ চিঠিতে। উদাহরণ দেয়া যাক: তারিখ: ২৫/০৮/১৯৭১ মা, আমার সালাম নিবেন। ভাবির কাছ থেকে আপনার চিঠি পেলাম। আপনি আমার জন্য সব সময় চিন্তা করেন। কিন্তু মা, আপনার পুত্র হয়ে জন্ম নিয়ে মাতৃভূমির এই দুর্দিনে কি চুপ করে বসে থাকতে পারি? আর আপনিই বা আমার মতো এক পুত্রের জন্য কেন চিন্তা করবেন? পূর্ব বাংলার সব যুবকই তো আপনার পুত্র। সবার কথা চিন্তা করুন। আমাদের সবাইকে আশীর্বাদ করুন, যেন আমরা যে কাজে নেমেছি তাতে সাফল্য লাভ করতে পারি। তবেই না আপনার পুত্র হয়ে জন্ম নেওয়া সার্থক হবে। আমাদের বিজয়েই না আপনার এবং শত শত জননীর গৌরব। শুনতে পেলাম আপনার শরীর খুব খারাপ। শরীরের দিকে নজর দেন। কেননা বিজয়ের পর যে উৎসব হবে, সেই উৎসবে আপনাকে তো আমাদের গলায় মালা পরিয়ে দিতে হবে। আপনি তো শুধু আমার জননীই নন, শত শত বিপ্লবী যুবকের মা। আপনি আমাকে বাড়ি আসতে লিখেছেন। এই মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করি সামনের মাসের প্রথম দিকে বাড়ি আসতে পারব। আমার জন্য চিন্তা না করে আশীর্বাদ করবেন। আব্বাকে আমার সালাম জানাবেন আর ছোটদেরকে স্নেহশীষ। আমি ভাল আছি। ইতি আপনার শত শত বিপ্লবী যুবক সন্তানদের একজন আজু চিঠি লেখক: শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী আবু হাসমত রশিদ। চিঠি প্রাপক: মা, তাহমিনা বেগম। আরএকটি উদাহরণ: যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাফী ইমাম রুমী’র ইংরেজিতে লেখা চিঠির বাংলা অনুবাদ। লিখেছিলেন তাঁর মামা সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশা’কে প্রিয় পাশা মামা, অবাক হয়ো না! এটা লেখা হয়েছিল আর তোমার কাছ পর্যন্ত পৌঁছলও। পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট করে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকে* কিছু লিখে জানানোর চেষ্টা কোরো না। তাহলে তাদের বিপদে পড়তে হবে। তাড়াহুড়া করে লিখলাম। হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে কাল এখান থেকে চলে যেতে হবে। আমরা একটা ন্যায়সংগত যুদ্ধ লড়ছি। আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্যে দোয়া কোরো। কী লিখব বুঝতে পারছি না- কতো কী নিয়ে যে লেখার আছে। নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াবহ ধ্বংসের যত ছবি তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করেছে, মানব-ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলে যথার্থই বলেছেন, একই ধরণের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। ইতোমধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেবো। জানি না আবার কখন লিখতে পারব। আমাএ লিখো না। সোনার বাংলার জন্যে সর্বোচ্চ যা পার করো। এখনকার মতো বিদায়। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহ রুমী অন্যএকটি উদাহরণ: বেনু ভাই, শুভেচ্ছা জানবেন। হাবীব সাহেবের সিগনাল এইমাত্র এসেছে। আপনার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। গতকাল তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য এবং তার কাছাকাছি অবস্থান করার জন্য আপনাকে লিখেছিলাম। হাবীব সাহেবের কাছাকাছি থাকবেন। পুংলীর পুল পার হবেন না। কারণ, বিপদে পড়তে পারেন। হাবীব সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলুন। আজ এনায়েত করীম সাহেব কিছু লোকজন এবং অস্ত্র নিয়ে আসবেন। সম্ভব হলে আপনাকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করব। বর্তমানে কোনো রিস্ক না নিয়ে হাবীব সাহেবের সঙ্গে মিলিত হয়ে ওই এলাকার অপারেশন সফল করুন। কারণ, এই অপারেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ জরুরি পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি হয়েছে। সব সময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। কারণ, হেডকোয়ার্টারে নিয়মিত খবর পাঠাতে হয়। আপনারা কোনো চাঁদা জোর করে তুলবেন না। জয় বাংলা। বুলবুল খান মাহবুব। চিঠি লেখক: মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব। চিঠি প্রাপক: হাবিবুল হক খান বেনু। গ্রাম: কোলাহাট, গৌরঙ্গী, টাঙ্গাইল। এভাবে অজস্র উদাহরণ দেয়া যায়া। গ্রন্থটিতে প্রতিটি চিঠি ছাপা হয়েছে দুইভাবে । মূল হাতের লেখা, অর্থাৎ ১০৭১ সালে যেভাবে লেখা হয়েছিল সেটাই অবিকৃত রেখে পাঠকের সামনে অংশি প্রকাশকরা হয়েছে আর ছাপার অক্ষরে পূর্ণাঙ্গ চিঠিটি ছাপনো হয়েছে সম্পাদনা করে- বানান রীতি সমতাবিধান করে। প্রচ্ছদ কাগজ ইত্যাদি মিলিয়ে এটি একটি অধুনিক পরিপাটি ও শৈল্পিক প্রকাশনা। সম্পাদকের পক্ষথেকে রশীদ হায়দারের একটি ‘সবিনয় নিবেদন’ গ্রন্থের প্রথমেই দেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে প্রকাশনার নীতিমালাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সর্বপরি বলতে পারি এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অকাট্য দলিল। এটি অপরিকল্পিত অথচ ভণিতাবিহীন অকৃতিম ঐতিহাসিক উপাদান। মুক্তিযুদ্ধের যে ১৫ খন্ডের দলিল প্রকাশিত হয়েছে এটিকে সেই দলিলের অংশহিসেবে ম্বীকৃতি প্রদান করে তা ঐ দলিলের একটি খণ্ডে স্থান দিয়ে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা যেতে পারে।
War
5
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-শঙ্খনীল কারাগার লেখক-হুমায়ূন আহমেদ ধরন-উপন্যাস পৃষ্ঠা-৮৫ মূল্য-২০০ প্রকাশনী-অন্যপ্রকাশ নন্দিত নরকের রাবেয়া চরিত্রটা আমার ভীষন পছন্দ । এমন কি আমি তাকে অনুকরন করতাম প্রায়ই। ও যেমন হাতের ছড়ি নাড়িয়ে নাড়িয়ে বার বার বলতো, আজ আমার মন খারাপ। আমি সেটা বলতাম মন খারাপ, আমার শুধুই মন খারাপ। মুখ ভার করে থাকা মেয়েটি মন খারাপের সময় চোখে লেগে থাকতো। বেশ ছোটবেলার কথা। প্রথম যখন নন্দিত নরকে হাতে পাই তখন ক্লাস ফোর-এ পড়ি। খেলতে গিয়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেছি। বাসা বন্ধি হয়েছিলাম অনেক দিন। তখন পড়েছি, কিন্তু এখনও আমার মনে পড়ে আমি তখন কিছুই উপলব্দি করিনি। সামনে পেয়েছি, শুধু অক্ষর গুনে পড়ে গেছি এই যা। শঙ্খনীল কারাগার পাই তারও কিছুদিন পর, যখন হুমায়ূন আহমেদকে চিনি। লেখক কে চিনিয়েছিলো আমার ভাইয়া, তার হিমু গিরির ভাব দেখিয়ে। আম্মু তখন উঠতে বসতে লেখক আর আমার ভাইয়ের চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করেন। শঙ্খনীল কারাগার পড়ার সময়ও আমার কোন বিকার ছিলো না। এরপর যখন আমি বই চিনতে শিখেছি, কিছু সময় গেছে তখন আবার শঙ্খনীল ধরলাম। একটু বুঝেই কেমন জানি পরিচিত লাগলো। আরে এ তো আমি আরো আগে পড়েছি কিন্তু তখন কিচ্ছুই বুঝি নাই। সে সময় আমি হুমায়ূন বলতে অজ্ঞান। মানুষটা এতো সুন্দর লেখে! আমার ছু্ঁয়ে দিতে ইচ্ছা করতো। তখন ধীরে ধীরে বুঝেছিলাম শঙ্খনীলের কারাগার আসলে কি। একটু একটু করে সত্যিই আমাকে অবাক করে দিলো, এই শঙ্খনীল কারাগারের কয়েদি তো আমি নিজেও একজন। গল্পে লেখক একটা পরিবার দেখিয়েছেন। বাবা-মা, ভাই-বোন। সবাই মিলে ৮ জন মানুষের গল্প। সংসারের বড় মেয়ে রাবেয়া। কালো বলে যার বিয়ে হয় নি। তার যে আর বিয়ে হবে, সে সম্ভাবনাও নেই। এর পর খোকা, রুনু, ঝুনু, মন্টু আর নিনু। বাবা আজাহার হোসেন আর মা শিরিনের বিয়েটাও একটা গল্প। শিরিন দের বাড়িতে আজাহার হোসেন থাকতেন। সে সুত্রে আজাহারের সাথে শিরিনের পরিচয়। এরপর বিয়ে। কিন্তু কোন একটা অজানা কারনে, বিয়ের পর শিরিন আর বাবার বাড়ি গেলেন না একদিনও। তাঁর গানের গলা ছিলো বেশ সুন্দর। অথচ বিয়ের পর তার কন্ঠে কোন সুর খেলতে শোনা যায় নি। কোথাও চাপা ছিলো একটা স্পষ্ট অভিমান। কিন্তু কেউ তা টের পায়নি মোটেও। শিরিনের আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো। রাবেয়া সে ঘরের মেয়ে। রাবেয়া জানে আজাহার হোসেন তার বাবা নয়, তবুও লোকটা যখন তার জন্য রংফর্সা কারী ক্রিম এনে দেয়। তখন মেয়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা বেশ তীক্ষ্ণ ভাবেই চোখে পড়ে। তবুও কি নিজের বাবার অভাবোধটা কমে যায়! কেউ কি তা বুঝতে পারে? রাবেয়া তা কাউকে বলেনিও কখনো। একই পরিবারের সব গুলো মানুষ, কিন্তু তাদের মাঝে নিজেরাই নিজেকে নিয়ে বাকিদের থেকে আড়াল থাকে। একই ছাদের নিচে থেকেও কেউ কারো মনে অবস্থা বুঝে না। যেমন, শিরিন যে কেন বিয়ের পর এরকম একপেশে হয়ে গেলেন, তার উত্তর কিন্তু আজহার হোসেন দিতে পারেন না। কারণ, বড় ঘরের মেয়ে হওয়ায় শিরিনকে তিনি সব সময় সমঝে চলতেন। রাবেয়ার বিয়ে হবে না বলেই রুনুর বিয়ের তোড়জোড় চলছিলো, কিন্তু কিছু একটা কারনে যার সাথে রুনুর বিয়ের কথা হচ্ছিলো তার সাথে বিয়ে হলো ঝুনুর। ঝুনু তার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে পড়ে রইলো নিজের মতো, এদিকে রুনুর মনে তখন কি চলছে কেউ টের পায় নি পর্যন্ত। মন্টুর কথা যদি বলা যায়, সে একেবারে গন্ডির বাইরের মানুষ। তার নেশা লেখালেখি করা, এ নিয়েই সে পড়ে থাকে। বাকি থাকে নিনু আর খোকা। নিনু তো একেবারে ছোট, তবুও দেখা যায় সেও থাকে তার নিজের মতো। খোকা, এই পুরো গল্পটাই তার জবানিতেই লেখা, সে কলেজের প্রফেসর। তার মাঝেও থাকে কিছু পাওয়া না পাওয়ার গল্প। তা সে কাউকেই বলে নি। এরকম করেই সংসারের প্রতিটি মানুষ থাকে নিজের মতো। খোলসের আবরনে লুকিয়ে রাখে নিজেদের অভাব, মলিন কষ্ট গুলো। যেখানে আর কারো কোন প্রবেশাদিকার নেই। আমরা কি তেমন নই, মধ্যবিত্ত জীবন কি এর থেকে অন্যরকম কিছু? আমরা কি নিজেদের গুটিয়ে রাখছি না অন্যদের থেকে? কাকে জানাচ্ছি নিজের মনের অবস্থা? কে ই বা বুঝতে পারছে আমি কি নিয়ে সময় পার করছি। কেউ না। সত্যিই তো একই ছাদের নিচে দুজন অথচ একটা অদৃশ্য দেয়াল দিয়ে নিজেদের এমন ভাবে আড়াল করে রাখি, কারো বুঝার কোন উপায় নেই কি চলছে সেখানে। উপন্যাসের শেষের দিকে রাবেয়ার একটা চিঠি, তার ছোট ভাই খোকাকে দেয়। সেই চিঠিতে লেখা থাকে রাবেয়ার অব্যক্ত কথা। যা সে এতোদিন কাউকে বলে নি। আর সে চিঠি পড়ে আমার মতো পাঠককে আবেগ স্পর্শ করাটা একদমি স্বাভাবিক। কি বলব! আমি ভাবি এরকম একটা কাহিনী লেখকের প্রথম জীবনে মাথায় আসে কি করে! একেবারে মধ্যবিত্তদের ভেতরকার কথা এতো সহজ ভাবে প্রকাশিত করেছেন।যার প্রতিটি অক্ষর মায়া আর আবেগ দিয়ে মুড়ানো। যেখান থেকে চাইলেও আড়াল করা যায় না। নিজেকে কয়েদি হিসেবে চিহ্নিত করতে এতটুকুও কষ্ট হয়না তখন। প্রতিবার একটা হাহাকার নিয়ে শেষ করি বইয়ের পৃষ্ঠা গুলো।
Fiction
0
"বাংলাদেশ লাঞ্ছিতা" বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভিত্তিক বই। বইটির লেখক উপমহাদেশের বিখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেন্হাস। ১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল অ্যান্থনিসহ আরো কয়েকজন সাংবাদিক পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ঢাকা আসেন 'পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে' এই মর্মে সংবাদ পরিবেশনের জন্য। কিন্তু, পূর্ববাংলায় পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস বর্বরতা হতবাক করে তাঁকে,স্তম্ভিত হয়ে ভাবেন এ বর্বরতা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার কথা। পূর্ববাংলায় পাকিস্তানিদের বর্বরতাকে তিনি হিটলার ও নাৎসীবাদের অমানুষিক বর্বরতার চেয়েও ভয়াবহ বলে বইটির ভূমিকায় লিখেছেন। তাই, তিনি এ অমানবিক নৃশংসতার চিত্র বিশ্ববাসীকে জানানোর সংকল্প নিয়ে ১৯৭১ এর মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লন্ডনে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি সবকিছু তুলে ধরেন 'সানডে টাইমস'এ; ১৯৭১ এর ১৩ই জুন 'সানডে টাইমস' পাকিস্তানের গণহত্যার সম্পূর্ণ কাহিনী ফাঁস করে দেয়। ঐ সকল খবরের যুক্তিসংগত অনুসিদ্ধান্তই হল দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ গ্রন্থটি,যার বঙ্গানুবাদ 'বাংলাদেশ লাঞ্ছিতা'। ৪টি পরিশিষ্ট ছাড়াও বইটি মূলতঃ বারোটি অধ্যায়ে বিভক্ত- অধ্যায় এক- এ তিনি প্রস্তাবনা ও দুর্বিপাক শিরোনামে ২৫ মার্চের কালরাত্রির প্রেক্ষাপট, হানাদারদের প্রস্তুতি ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। অধ্যায় দুই-এ 'কেন এবং তার কারনসমূহ' শিরোনামে প্রাকস্বাধীনতা যুগে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি ও বিকাশ; পরিণতিতে সৃষ্ট সংঘাতের স্বরুপ, কারণ প্রভৃতি অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা করেছেন। অধ্যায় তিনে 'বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা' শিরোনামে পাকিস্তান রাষ্ট্রসৃষ্টির মূলনীতির প্রতি শাসকগোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকতা, গণতন্ত্রকে পদদলিত করা- এসব বিষয় তুলে ধরেছেন যুক্তির নিরিখে। অধ্যায় চারে 'এক নতুন অধ্যায়' শিরোনামে ইয়াহিয়া যুগের সূচনা, তার ব্যক্তিগত আচরণ, প্রতিশ্রুতি বর্ননার পাশাপাশি আরেকটি বড় বিশ্বাসঘাতকতার ইঙ্গিত দেন লেখক। অধ্যায় পাঁচে 'নির্বাচন-পূর্ব প্রতারণা' শিরোনামে ইয়াহিয়ার নির্বাচন-শাসনতন্ত্র সংস্কার সংক্রান্ত ভাষণের বিশ্লেষণ-তাতে বাঙ্গালির প্রতি অবহেলার চিত্র ফুটিয়ে তোলেন অ্যান্থনি। অধ্যায় ছয়ে নির্বাচনে ১৬৭ আসন পাওয়া আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা, জনরোষের উর্ধ্বগতি প্রভৃতি বিষয়ে সবিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে। অধ্যায় সাত- 'সেনাবাহিনীর অভিযান'এ বর্বর হানাদারদের ঢাকায় সৈন্যসমাবেশ, প্রস্তুতি ও অভিযান-বর্ণিত হয়েছে। অধ্যায় আটে 'পচিঁশটি স্মরনীয় দিন' শিরোনামে ১৯৭১ সালের মার্চের ১-২৫ তারিখ এই ২৫ দিনের ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা রয়েছে। অধ্যায় নয়ে রয়েছে গণহত্যা ও পাকিস্তানিদের নিষ্ঠুরতার বিবরণ। অধ্যায় দশ- 'গোয়েবল্সের পুনরাবির্ভাব' এ পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রণালয়ের নির্লজ্জ অপপ্রচার ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের নিষ্ক্রিয় দর্শক ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন লেখক। অধ্যায় এগারো- 'কেন আশি লাখ লোক মারা যেতে পারে?'-এ সত্তরের নভেম্বর হতে একাত্তরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দুটি বিরাট বিপর্যয়- ঘূর্ণিঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাস এবং পাকবাহিনীর গণহত্যায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যার প্রাচুর্য ও ব্যাপক প্রাণহানিতে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া পূর্ব পাকিস্তানের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে। অধ্যায় বারোতে 'বাংলাদেশ কেন?' এ প্রশ্নের উত্তরে যৌক্তিক সমাধান টেনেছেন লেখক। চারটি পরিশিষ্টে রয়েছে-'বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা', ভাষণ, ছাত্রসমাজের এগারো দফা এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এর মার্চ পর্যন্ত ঘটনাপঞ্জি। বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে বঙ্গবন্ধুর ছবি,অ্যান্থনি ম্যাসকারেন্হাসের জীবনপরিচিতি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 'হানাদারদের অত্যাচারের নিদর্শনস্বরুপ পেশকৃত ১১টি দুর্লভ ছবি- যা নাড়া দেয় প্রতিটি মানুষের বিবেককে, হৃদয়ে ঘটায় রক্তক্ষরণ।
War
5
গল্পের ভেতর গল্প । প্রচন্ড কর্মব্যস্ত এক বৃষ্টি ভেজা ছুটির সন্ধ্যায় মতিন সাহেব তার তিন কন্যা তিলু , বিলু আর নিলুকে গল্প শোনাতে বসলেন । তাদের গল্প শোনাতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধল। হায় ! হায় ! কোন গল্পই তার মনে আসছে না । গল্প মনে আসবে এই আশায় তিনি মাথা চুলকাতে লাগলেন । কিন্তু তাতেও কাজ হয় না । গল্প মনে আসে না । শেষে তিলুর কথায় তিনি গল্প শুরু করতে চাইলেন তিনি । ভূতের গল্প বলতে চাইলে বিলু না করে ওঠে । ভূতের গল্প সে কিছুতেই শুনবে না । সে শুনবে বাঘের গল্প । মতিন সাহেব এবার ছাদের দিকে তাকিয়ে বাঘের গল্প মনে করার চেষ্টা করতে লাগলেন । নাহ , কিছুতেই কিছু হল না । গল্প মনে আসে না । এর মধ্যে নিলু জানালো যে তাদের মা প্রচন্ড বৃষ্টিতে মামার বাড়িতে আটকা পড়ছে । পরদিন ভোরে আসবে । ব্যাস , ওমনি শুরু হয়ে গেল তিন মেয়ের চাপাচাপি । গল্প ! গল্প ! গল্প ! গল্প বলতে হবে । তিন জনের জন্য তিনটা গল্প বলতে হবে । তিন কন্যার চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে এবার লক্ষ্ণী বাবার মত তিনি গল্প শুরু করলেন । পিঁপড়ার গল্প । সাথে সাথে তিলু , বিলু বাঁধিয়ে দিল হাঙ্গামা । পিঁপড়ার গল্প ওরা কিছুতেই শুনবে না । শুধু নিলু বলল সে শুনবে । তো মতিন সাহেব গল্প শুরু করলেন । গল্পটা পিপলী বেগম নামের এক মেয়ে পিঁপড়াকে নিয়ে । সে দেখতে খুব সুন্দরী । পরীক্ষায় সব সময় ফার্স্ট হয় । কিন্তু হঠাৎ করেই সেবার পরীক্ষায় খুব খারাপ করল পিপলী । অঙ্কে উনিশ আর ভূগোলে তেইশ পেল । পিঁপড়াদের সমাজে রেজাল্ট খারাপ করার বিধান নেই । একারণেই স্কুলের আপা পিপলীকে অফিস ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন । পিপলী যখন স্কুলের আপাকে বলল যে তার পড়তে ভালো লাগে না , তখন আপা খুবই অবাক হলেন । স্কুলের আপাকে আরো অবাক করে দিয়ে পিপলী বলল যে তার পৃথিবী ঘুরে দেখতে ইচ্ছা করে , বিশেষ করে মানুষদের দেখতে খুব ইচ্ছা করে । কিন্তু পিঁপড়াদের সমাজে তো এমনটিও হবার কথা না । পিপলীর কথা শুনে আপা আরো বিচলিত হলেন । তিনি পিপলীকে স্কুলের ডাক্তার দেখালেন , এরপর সাত দিনের ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠালেন । পিপলীদের সমাজের নিয়ম অনুযায়ী কারো সামান্য কিছু হলেও রানীমাকে জানানো হয় । রানীমা জরুরী মনে করলে কাউকে কাউকে ডেকে পাঠান । তিনি পিপলীকে তার প্রাসাদে ডেকে পাঠালেন । রানীমার প্রাসাদের নিয়ম কানুন বড় অদ্ভুত । রানীমার বাড়ির চারপাশে লালদাগ দেওয়া , বৃত্তের মত । সেই লালদাগের ভেতর ভুলেও যাওয়া যাবে না । গেলেই সারাজীবনের জন্য নির্বাসনদন্ড । তাছাড়া রানীমাকে কেউ কোনদিন দেখে নি । কিন্তু কেন ? ছোট বন্ধুরা বাকীটুকু আর বললাম না তোমাদের পড়ার জন্য রেখে দিলাম । পড়ে দেখো কিন্তু । পড়লেই বুঝবে কত্ত মজার পিপলী বেগম । পিপলী বেগম পড়লে তোমাদেরও পিপলী হতে ইচ্ছা করবে ।
Childrens-Book
2
একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো নেতা, সর্বোপরি একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদ হওয়ার সব উপাদন এখানে আছে। সব মানুষের জন্য বইটি আর রাজনীতি যারা করেন তাদের জন্য তো বলার অপেক্ষা রাখে না!
Political
3
স্মৃতিশক্তি' মানুষের জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহার চমকপ্রদ। জ্ঞানার্জন থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবনের যাবতীয় তথ্য আমরা মনে রাখি কেবল স্মৃতিশক্তির জোড়ে। স্মরণশক্তির একটা প্রভাব মেধার ওপর পরে। মেধাবী মানুষ মাত্রই তুখোড় স্মরণশক্তি সম্পন্ন। স্মৃতিশক্তি কম থাকলে সব কাজেই পিছিয়ে পড়তে হয়। একই কারণে ছোটো বয়স থেকেই অনেকে পিছিয়ে পড়ে। যার উদাহরণ আমরা দেখতে পাই ক্লাসের ছোটো ছোটো বাচ্চাদের মাঝেও। এসব মাথায় রেখে স্মরণশক্তিকে আরো ক্ষুরধার করার জন্য লেখক কেভিন হোর্সলি গবেষণা করে বের করেছেন বেশকিছু উপায়। পাঠকদের জন্য রচনা করেছেন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দুর্দান্ত সহায়ক এক বই 'আনলিমিটেড মেমোরি'। স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে মস্তিষ্কে আরো বেশি তথ্য ধারণ করার জন্য 'আনলিমিটেড মেমোরি' বেশ কার্যকরী একটা বই। বইটাতে স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে মস্তিষ্কে আগের তুলনায় আরো বেশি তথ্য মনে রাখার এবং সেগুলো ধারণ করার সহজ পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন লেখক। বর্ণনা করেছেন বেশকিছু কৌশল যা ব্যবহার করে খুব সহজেই ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারবে যে কেউ। ফলে আগের চেয়েও যেকোনো কিছু খুব সহজে ধারণ করা যাবে এবং তা মনেও থাকবে বেশিদিন। মানব মস্তিষ্ক এক হলেও, মানুষ ভেদে স্মৃতিশক্তি সবার এক থাকে না। কেউ কেউ খুব সহজে সবকিছু মনে রাখতে পারে, কেউবা পারে না। তবে সবার জন্যই এটা সহায়ক একটা বই। যা পাঠককে সহজেই পাঠ্যবস্তু অথবা যেকোনো তথ্য সব মনে রাখার কৌশল শেখাবে। লেখক কেভিন হোর্সলি সুকৌশলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা, কিভাবে তা কাজ করে, স্মরণশক্তি বাড়িয়ে অধিক তথ্য মনে রাখার সব উপায় তুলে ধরেছেন বইটিতে। হতাশ না হয়ে সঠিক উপায়ে এগিয়ে যাবার কথাটিও সচেতনভাবে বলেছেন তিনি। সেই সাথে উল্লেখ করেছেন বিখ্যাত জ্ঞানীগুণীর মূল্যবান সব উক্তি। যা পাঠককে করবে অনুপ্রাণিত। বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট ম্যারিয়াস ভ্যালগিমোর বইটা সম্পর্কে বলেছেন : 'এই বইয়ের মাধ্যমে জীবনের সব উপাদান পাঠকের সামনে এনেছে কেভিন, যা জীবনকে বদলে দেবার মত। এই কথাটা আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, কারণ আমি বইটা পড়েছি এবং কৌশলগুলো নিজ জীবনে প্রয়োগ করেছি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে পারেন। যখন আপনি এসবের প্রয়োগ করবেন, আমি নিশ্চিত এতে কেবল আপনাদের স্মৃতিশক্তিই বাড়বে না, বরং জীবনেরও উন্নতি ঘটবে।'
Motivational
6
দি টাইমসের জরিপে,বিশ্বের সেরা দশ বইয়ের তালিকার প্রথমে স্থান পেয়েছে ল্যেভ নিকলাইয়েভিচ তলস্তয়ের বাস্তবতাবাদী উপন্যাস আন্না কারেনিনা । উপন্যাসটিতে ভালবাসার গল্পের মধ্যে দিয়ে লেখক তুলে ধরেছেন,সেই সময়ের রাশিয়ান রাজনীতি,ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি । "ভালবাসা বিবাহিত-অবিবাহিত,সময়-অসময়,ঠিক-বেঠিক এসব হিসেব করে হয় না"এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ আন্না কারেনিনা উপন্যাস । নেপোলিয়ন বলেছিলেন,"অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল" আর তাদের তালিকার প্রথম সারিতে "আন্না কারেনিনা" না থাকলে তালিকা মানায় না । এক কথায় অসাধারন।
Fiction
0
রইসউদ্দিন-এতবড় একজন সাহসী মানুষ কিন্তু তিনি একটা জিনিসকে খুব ভয় পান। সেটি জিনিসটি মাকড়সা নয়, জোঁক বা বিছে নয়, পুলিশ কিংবা মিলিটারি নয়, ঝড় বা ভূমিকম্পও নয়, তিনি বাচ্চা-কাচ্চাকে একেবারে যমের মতো ভয় করেন। ছোট বাচ্চার ভয়ে তিনি বিয়ে পর্যন্ত করেন নি! ছেলেবেলায় তিনি ছোটখাট ভীতু এবং দুর্বল ধরনের ছিলেন। পাড়ার কাছে যে স্কুলে তিনি পড়তেন সেখানে ভয়ানক দুষ্টু ধরনের কিছু বাচ্চা পড়াশোনা করত । রইসউদ্দিনকে দুর্বল পেয়ে বাচ্চাগুলো দুইবেলা তাকে পেটাতো। পিটুনি খেয়ে খেয়ে সেই যে তার মনে ছোট বাচ্চার একটা ভয় ঢুকে গেল, সেটা আর কখনো দূর হয় নি। অথচ রইসউদ্দীন ভাবতেও পারছিলো না তার জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে!!!/লেখক পরিচয়: মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন বাংলাদেশী লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ। তাকে বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা ও জনপ্রিয়করণের পথিকৃৎ হিসাবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও তিনি একজন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং কলাম-লেখক। তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান। জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। তার প্রথম সায়েন্স-ফিকশন গল্প কপোট্রনিক ভালোবাসা সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি পড়ে একজন পাঠক দাবি করেন সেটি বিদেশি গল্প থেকে চুরি করা। এর উত্তর হিসেবে তিনি একই ধরণের বেশ কয়েকটি বিচিত্রার পরপর কয়েকটি সংখ্যায় লিখে পাঠান। তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এই গল্পগুলো নিয়ে কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইটি পড়ে শহীদ-জননী জাহানারা ইমাম খুবই প্রশংসা করেন এবং এই ঘটনায় তিনি এ ধরণের আরও বই লিখতে উৎসাহিত হন। তার প্রথম দিকের বিজ্ঞান কল্পকাহিনীগুলো পাঠকমহলে সমাদৃত হয়। সুদূর আমেরিকাতে বসে তিনি বেশ কয়েকটি সায়েন্স-ফিকশান রচনা করেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি নিয়মিত বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী লিখে যাচ্ছেন।
Childrens-Book
2
প্রায় ৪০ বছর পার হতে চলল 'খেলারাম খেলে যা'র। উপন্যাসটি এখনো পাঠকের আগ্রহ ধরে রেখেছে। এটি একটি বিশেষ ধরনের জনপ্রিয়তা এবং বলতে কী এটিই সত্যিকারের জনপ্রিয়তা। তথাকথিত জনপ্রিয় উপন্যাস (আদতে সেসব তো উপন্যাস পদবাচ্যই নয়) পড়েই ভুলে যান পাঠক। পড়ার কিছুদিন পর লেখকের নামটা হয়তো মনে থাকে, কিন্তু দেখা যায় উপন্যাসের নামটাই ভুলে গেছেন। ওই বই পড়ে তিনি সেই আগের মানুষটিই রয়ে যান। সত্যিকারের সাহিত্য মানুষকে স্থানচ্যুত করে_সৈয়দ হক নানা সময়ে কথাটি বলেছেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ_তাঁর প্রায় সব লেখা পাঠের পর রুচির নতুন নির্মাণ ঘটে। বোধের জগৎ আলোড়িত হয়। জন্ম নেয় নানা জিজ্ঞাসা। কে কত বড় পুরুষ, এর পরিমাপ তার শিশ্নের মাপেও হয় না, হয় না কত নারীতে সে গমন করছে তার বিচারেও। তাহলে রন জেরেমি বা জন হোমসরা, তথা পৃথিবীর তাবৎ নীল ছবির নায়করা হতেন সর্বকালের সেরা পৌরুষদীপ্ত পুরুষ। জন আপডাইকের একটি গল্পে তাঁর একটি চরিত্র নীল ছবির নায়কদের বিশেষ অর্থে পৌরুষহীন, নপুংসক এবং ম্যাদামারা পুরুষ বলেই মনে করে। সৈয়দ হক 'খেলারাম খেলে যা'তে বাবরের মাধ্যমে যে যৌন পরিস্থিতির নির্মাণ করেন, তাতে শেষ পর্যন্ত মূলত এক ধরনের অপ্রেম আর বিবমিষারই প্রমাণ মেলে। 'খেলারাম' বলতে আমরা কি রতিদক্ষ পুরুষকে বুঝব, তাকে কি প্লেবয় বলব? উপন্যাসটি নিবিড় পাঠের পর এর নায়ককে কি আর তা মনে হয়? কারণ তার চেয়ে বড় এক খেলা কালের করাল আঙুলের সুতোর টানে চলতে থাকে। ব্যক্তির লোভ-রিরংসার বিস্তৃত প্রকাশ ঘটে সমাজ ও রাজনীতির হাত ধরে। তারও আগে দেশভাগ হয়। আপন পর হয়। ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে পালিয়ে আসে আত্দোদরপরায়ণ মানুষ। বাবর তাদেরই প্রতিনিধি। বাবর আমাদের স্বার্থসচেতনতার গভীরে থাকা 'পাশবিক আমি'র প্রতিনিধি, যার অন্য পিঠে আছে মানবিক মানুষ হতে না পারার আর্তি ও দহন, ক্ষয় ও ক্ষরণ। রাজনীতি, ইতিহাসের মার খাওয়া বাবরের পিঠ। এ পিঠ তার অতীতের পিঠ। তার ব্যর্থতা ও কাপুরুষতার পিঠ। সেই মারের দাগ তৈরি করেছে অমোচনীয় এক কালশিটে দাগ। দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িকতার গ্লানি, রক্তপাত কেবল সেই সময়টার ভেতরে সেঁধিয়ে যায়নি, সময়ের সীমা ছেড়ে তা বেরিয়ে পড়েছে, জন্ম দিয়েছে দাঙ্গার মতো আরো কাপুরুষোচিত ঘটনার। নিজের বোন হাসনুকে দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি বাবর। সেই স্মৃতি তার পিছু ছাড়ে না। উপন্যাসের শেষে ধর্ষণকারীদের হাত থেকে জাহেদাকে বাঁচাতে চেয়েছে বাবর। সেখানেই তার প্রকৃত পৌরুষের প্রথম ও শেষ পরিচয় পাওয়া যায়।
Fiction
0
বাংলাদেশের মানুষ যে কতোটা লেইড-ব্যাক হিমু হল সেটার চরম উদাহরণ। রাস্তায় রাস্তায় ঘরাফেরা করা আর রাত-বিরাতে মালাই চা খাওয়া। হিমুর চরিত্রটা বরাবরই অদ্ভহুত। সে নিজে কিছু চিন্তা করলে সেটাতে হেল-বেনট হয়ে থাকে না। তাকে কনভিন্স করা খুবই সহজ। এতে বোঝা যায় যে দুনিয়া সে সম্পর্কে যথেষ্ট উদাসীনও বটে। হিমুর সাথে আবারও এক মেয়ের পরিচয় হয় এখানে। এবং যথারীতি সে আমেরিকা থেকে এসেছে, এবং যথারীতি তাকে ঘোরানো হল হিমুর দায়িত্ব। এর থেকেই ঘটনা এগুতে থাকে। ফাকে জয়নাল নামের এক লোকের সাথে পরিচয় হয় তার, যে চুরি করতে গিয়ে হিমুর কাছে ধরা পড়ে তার বন্ধু হয়ে যায়। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তাঁর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি।
Fiction
0
হ্যা। এই বইটা পড়ে মজা পাচ্ছি। দারুচিনি দ্বীপ থেকে আনলেও আর চেহারগুলো আর মনে পড়ছে না। পিকনিকের নানা বন্ধু বান্ধবের কথা মনে পড়ছে। খুলনায়। পৌছেসেই সকালের কথা মনে পড়ছে। তবে এত বন্ধু নিয়ে কোথাও যাইনি তো। তাই বলতে পারছিনা। আপাতত গল্পের যেই বন্ধুদের আমিও একজন। শুভ্রই আমি। বইটা একটু ছোটই। তবে বলে রাখছি এরপ্রে যদি সমুদ্রে যাই জোসনাতেই সমুদ্রে নামবো। কেন জানি মনে পড়ে রাতে সমুদ্রে নামা নিষেধ। ভাটা চলে তখন।আর আমার বউ নিশ্চিত কাঠখোট্টা হবে। সমুদ্র তো দুরের কথা, সারাদিন বই পড়বে।
Fiction
0
রনি খেয়াল করেছে বেশিরভাগ দুঃসংবাদ সে সকালবেলা নাস্তার টেবিলে পায়।সে আজকেউ একটি খারাপ খবর নাস্তার টেবিলে সকালেই পেয়েছে।দুঃসংবাদটি হলো তার জন্য আরেকজন টিচার ঠিক করা হয়েছে।যে রনিকে আর্ট শিখাবে।রনির জন্য দুঃ সংবাদ কারন সে এত টিচারের কাছে পড়তে চায় না।তার এছাড়াও আরো টিচার রয়েছে।যে আর্ট শিখাতে এসেছে তার নাম হলো মুহাব্বত আলি।রনিকে দেখে অনেকে ভাবে সে অনেও কষ্টে আছে।এর কারন হলো তার সৎ বাবা সৎ মা।রনির আপন মার মৃত্যুর পরে তার বাবা বিয়ে করে তখন রনির হয় সৎ মা।তার বাবাও মারার যাওয়ার পর তার মা আবার বিয়ে করে তখন হয় সৎ বাবা।যদিও রনি কষ্টে থাকে না কারন তারা রনিকে ভালোই আদর করে।রনি ভালোই আছে।শুধু রাতের বেলা একটু খারাপ লাগে যখন একা ঘুমাতে যায়।যদিও পুরাপুরি একা ঘুমায় না তার দাদা তার পাহারা দেওয়ার জন্য এক লোক রেখেছে যে কিনা রনির সামনের মেঝেতে শোয়।সে লোককে রনির দাদা রেখেছেন কারন তার ধারণা রনির বাবা-মা তাকে মেরে ফেলতে পারে সম্পওির লোভে।তার আসল বাবা মারা যাওয়ার সময় রনির নামে কোটি-কোটি টাকার সম্পওি রেখে গেছেন।রনি তার দাদাকে মোটেও পছন্দ করে না।রনিকে সে নিজের কাজে রাখতে অনেক চেষ্টা করত কিন্তু রনি তার কাছে থাকতে চায় না।রনির স্কুল একদিন তাড়াতাড়ি ছুটি হওয়ায় সে অনেকক্ষন যাবত স্কুলে বসে থাকে।তাকে নেওয়ার জন্য কেউ আসে না তার উপরে তার ম্যাডাম অনেক রেগে যায়।তখন তার আত্নীয় পরিচয় দিয়ে তাকে নিয়ে আসে হাব্বত আলি।রনিও তার সাথে চলে আসে।তার সাথে রিকশায় অনেকক্ষন কথা হয় রনির।তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে আসে।রনি যে একা বাসায় চলে এসেছে এই খবর জানার পর একে একে সবাইতাকে চিন্তিত মুখে সব জিজ্ঞেস করে।কিন্তু রনি কার সাথে এসেছে তা সে কাউকে বলে না।পুলিশ পর্যন্ত আসে ওদের বাসায়।রনির দাদার ধারণা তার সৎ বাবা সৎ মা এই কাজ করিয়েছেন।তাকে কিডন্যাপ করাতে চাচ্ছে।কিন্তু রনি জানে যে সে হাব্বত আলির সাথে এসেছে।কিন্তু তার কথা কাউকে বলে না।রনির দাদা তার বাবার নামে কেইস করে।তার দাদা তাকে এই কথা বলে এবং বলে যে সে যেন উকুল যা বলে তাই বলে আর এও বলে তার ছুটির পর তার গাড়ির লোকের সাথে চলে আসতে।কিন্তু রনি স্কুল ছুটির পর লুকিয়ে পরে।তাকে কেউ খুজে পায় না।এই নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয়।টিভিতে পর্যন্ত খবর দেয় রনি বিষয়ে।তাকে কেউই খুজে পায়না।এদিকে তার জন্য তার বাবা-মা কান্না-কাটি করা শুরু করে।রনিকে কেউ খুজে না পেলেও হাব্বত ঠিকই খুজে পেয়েছে।রনি খেয়াল করেছে হাব্বত আলিকে জিজ্ঞেস করবে সে কিভাবে তাকে খুজে পেয়েছে।কিন্তু পরে আর জিজ্ঞেস করে না সে খেয়াল করেছে হাব্বত আলি কি করে যেন সব কিছুই জানে।এদিকে রনির জন্য মন খারাপ করে অপেক্ষা করছে লুতপাইন।লুতপাইন আর রনির একি ক্লাসে পড়ে।এর পর হাব্বত আলিকে রনি অনেক দিন খুজেছে কিন্তু আর দেখা হয়নি।রনির বিয়ের দিন তাকে আবার দেখে রনি প্রথমে পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে ছোটদের গল্প যেহেতু তাই বেশি একটা মজা পাবো না।কিন্তু যখন পড়তে শুরু করলাম তখন সব ধারনা ভুল প্রমাণিত হলো।লেখক এমন ভাবে গল্পটা লিখেছে যেকেউ পড়ে মজা পাবে।যেকেউ পড়া শুরু করলে আগ্রহ নিয়েই পড়বে।বিশেষ করে হাব্বত আলির কাহিনি পড়ে অনেক মজা লেগেছে।সে আগে থেকেই অনেক কিছু জানে,যখন রনির কাউকে দরকার তখনই সে এসে হাজির হয়।গল্পটা ছোট বড় সবাই পড়েই মজা পাবেন।তাই সবাই পড়বেন এই বইটি।ভালো লাগবে এই আমার বিশ্বাস।
Childrens-Book
2
বাংলা সাহিত্যে খুব কম লেখকই প্রান্তজন,হরিজন অথবা জেলেদের নিয়ে লিখেছেন।এবং এদের মধ্যে অন্যতম হল হরিশংকর জলদাস। নিজে জেলে সমাজ এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারনে খুব ভালো করে জেলে সমাজকে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন। এবং অসাধারন লেখনীর সাহায্যে সেটি ফুটিয়েও তুলেছেন তার লেখায়।অপূর্ব লেখনী ও অসাধারন বর্ণনায় পরিপূর্ণ দহনকাল বইটি লেখক হরিশংকর জলদাস এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। অশিক্ষিত রাধানাথ জেলে সমাজের নিয়মের বাইরে যেয়ে পুত্র হরিদাসকে লেখাপড়া শিখানো শুরু করে। একদিকে দারিদ্রের কঠিন নাগপাশ এর মধ্যে রাধানা্থ তার পুত্রের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। অন্যদিকে রাধানাথের মা চন্দ্রকলা এই স্বার্থপর ,সুবিধাবাদী সমাজের শেষ পর্যন্ত এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকে গেছে। সেই সাথে সর্দার আব্দুল খালেক ও জালাল মেম্বার দরিদ্র, অশিক্ষিত এসব জেলেদের গ্রাস করার চেষ্টা করসে।জেলেদের নিজেদের মধ্যে আবার জাতিভেদের শিকার হরবাঁশি। হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ এদের প্রত্যেকেই যেন জেলেসমাজের বাস্তবতার েক এক টি বিমূর্ত প্রতীক। সঙ্গ-নৈঃসঙ্গ্য, মৃত্যু-জীবন চলতে থাকে জেলেদের নিরন্তর। এভাবে জেলেরা জীবনযুদ্ধে দিনদিন কাটাতে কাটাতে চলে আসে এক অন্য যুদ্ধ...মুক্তিযুদ্ধ... জীবনযুদ্ধে ভিতু,বঞ্ছিত, নির্জীব, নির্বীর্য জেলেরা জড়িয়ে পরে দেশের যুদ্ধে।তাদের সর্ব শক্তি দিয়ে তারা প্রতিরোধ করে পাক হানাদার বাহিনীর। নিজেদের অজান্তে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে।শুরু হয় তাদের এক নতুন কাল এর... দহনকালের...
Fiction
0
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা বই :লীলাবতী। ধরণ :সমকালীন উপন্যাস। লেখক:হুমায়ূন অাহমেদ। প্রথম প্রকাশকাল :একুশে বইমেলা ২০০৫। প্রচ্ছদ :মাসুম রহমান। পৃষ্ঠাসংখ্যা:২৪০। প্রকাশনী :অন্যপ্রকাশ। মূল্য:৩২৫টাকা মাত্র। (মুদ্রিত) কাহিনী সংক্ষেপ : ধর্মপাশা থানার ছোট একটি গ্রামের বেশ প্রভাবশালী একজন ব্যক্তিত্ব সিদ্দিকুর রহমান। গ্রামের সবাই যেমন তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে তেমনিভাবে ভালোবাসে।এই পৃথিবীর সুন্দরতম কতগুলো দিন অার বছর কাটিয়ে এসে তার জীবনতরীর অায়ু ক্রমশ কমে অাসছে। তার বর্নাঢ্য জীবনের ঝুলিতে উঁকি দিলে যেমন সফলতার গল্প পাওয়া যায় তেমনি দুঃখ, হতাশা অার নিঃসঙ্গতার নীলরত্নেরও দেখা মেলে। পূর্বপুরুষের ফেলে রাখা গৌরবময় স্মৃতিকে অাঁকড়ে ধরে নিঃসঙ্গ সিদ্দিকুর রহমান সংসারে বটবৃক্ষের মত দাঁড়িয়ে অাছেন মৃত্যুর অপেক্ষায়। যৌবনে একবার তার সুরমা নাম্নী একজন রুপসী বুদ্ধিমতী নারীর সাথে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু নববধূ দাদীশাশুড়ির বিকৃত রুচির প্রতিবাদ করায় সিদ্দিকুর রহমান দাদীর উপর কর্তব্যবোধের দরুণ স্ত্রীর উপর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সুরমা অার সিদ্দিকুর রহমান সাহেবের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। সিদ্দিকুর সাহেব পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে,তার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে গিয়ে মারা যান।শিশুকন্যাটি তার স্ত্রীর অনুরোধে তার মামার বাড়িতে বড় হচ্ছে জানবার পরও তিনি তার সন্তানকে নিজ গৃহে ফিরিয়ে তৎপরতাও দেখাননি তখন। বেশ কয়েকবছর পর বিয়ে করেন রমিলা নামের এক নারীকে। রমিলা শান্ত, দূর্বল, সে প্রতিবাদ করতে জানত না। অসুস্থ দাদীশাশুড়ির সেবা যত্ন করতে গিয়ে একসময় সে নিজেও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুই কন্যা এক পুত্রের জনক সিদ্দিকুর রহমানের নিস্তরঙ্গ জীবনে একসময় লীলাবতীর অার্বিভূত হয়। এই লীলাবতীই সেই কন্যা শিশুটি যার খোঁজ তিনিও এতদিনেও নেননি। ২১বছর বয়সী লীলা ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছে তার পিতার মত নিষ্ঠুর অার এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই ।লীলা মনের গভীরে শৈশবকাল থেকেই তার পিতার জন্য জন্ম নেয় ক্ষোভ অার অভিমান। ২১ বছর পর লীলা ফিরে এসেছে তার নিষ্ঠুর পিতার কাছে। তার হৃদয়ে লুকিয়ে অাছে কতগুলো কঠিন অার নির্মম সব প্রশ্ন কিন্তু তার চোখের দৃষ্টিতে অাছে ভয়াবহ নির্লিপ্ততা। পিতা অার কন্যার এ এক জটিল সমীকরণ!! প্রতিক্রিয়া :প্রথিতযশা স্বনামধন্য সুকৌশলী লেখক হুমায়ূন অাহমেদের অন্যতম অনবদ্য সৃষ্টি "লীলাবতী "। লীলাবতী উপন্যাসের মুখবন্ধে লেখক শুরুতেই প্রাচীন গণিতবিদ ভাস্করাচার্য ও তার কন্যা লীলাবতীকে প্রচলিত একটি কাহিনীর অবতারণা করেন। কাহিনীটি ছিল এমন ভাস্করাচার্যের কন্যা লীলাবতী একবার লগ্নভ্রষ্টা হন। দুঃখিনী কন্যার প্রতি অপত্য স্নেহে বর্শবতী হয়ে পিতা ভাস্করাচার্য তার একটি বিখ্যাত গণিতের বইয়ের নাম দেন কন্যা লীলাবতীর নামে। একজন পিতা কন্যার প্রতি কতটা স্নেহ প্রবন হলে এমনটি করতে পারেন তা অনুধাবন করে পাঠিকা হিসেবে চোখে অশ্রু এসে গিয়েছিল। লীলাবতীর কাহিনী একজন পিতা ও কন্যার। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর ও যে পিতা কন্যার অাকস্মিক অাগমনে নিজের অাবেগকে লুকিয়ে রাখছেন অথচ অভিনয় করছেন তিনি কতটাই না নির্বিকার! অপরদিকে কন্যা লীলা পিতার প্রতি কৌতুহলবোধ করলেও অভিনয় করছে অনাত্মীয়ার মত। লীলাবতী উপন্যাসে সংসারকে অাড়াল করে যেন দুইটি মানুষের স্নেহ ভালবাসার লুকোচুরি খেলা চলছে। যা খালি চোখে দেখলে বড় জটিল অাবার অর্ন্তচক্ষু দিয়ে তাকালে তার জটিলতা ভেদ করা যায়। লেখক তার মায়াময় লেখনী দিয়ে জগতের এই সত্যটুকু দেখিয়েছেন যে, একজন পিতা তার সন্তানের প্রতি কতটা স্নেহপ্রবন। ছোট কন্যা শিশুটিকে পরম অাদরে তিনি লালন করেন,শিশু থেকে সে বড় হয়। যৌবনে পর্দাপন করে তার স্নেহের পুতুলকে তাকে অন্য কোন অপরিচিত লোকের কাছের অর্পন করতে হয়। এটাই পিতৃজীবনের ট্র্যাজেডি। জনশ্রুতি অাছে হুমায়ূন এক কন্যা সন্তানের জনক হয়েছিলেন। শিশুটির নাম ছিল লীলাবতী । পরে লীলাবতীর মৃত্যু হয়। ভাস্করাচার্য যেমন তার দুঃখী মেয়েটির জন্য রচনা করেছিলেন বিখ্যাত গ্রন্থ,তেমনি অামার মনে হয় হয়ত এই উপন্যাসটি যেন কোন অভিমানী লেখক তার মৃত কন্যা সন্তানকে ঊৎসর্গ করে পাঠকের হৃদয়ে তার কন্যাকে করে গেছেন অমর।
Fiction
0
এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়। জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা... হারিয়ে যাওয়া এক ছেলেবেলার গল্প... স্মৃতিচারণ। সময়ের খামখেয়ালীতে চলে যাওয়া কিছু মুহূর্তকে পুনরায় চাওয়ার আকূলতা... দেশ বিভাগ নিয়ে এক বাচ্চামনের চাপা কষ্ট, তার আশেপাশের মানুষের কাজকর্ম, সব মিলিয়ে ছবির মতোন একটা বই। ভাল লাগার মতোন একটা বই।
Fiction
0
ভাল বই। পড়ে মজা পেয়েছি।
Fiction
0
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ শ্বাপদ সনে লেখকের নামঃ নাবিল মুহতাসিম ঘরনারঃথ্রিলার রেটিং-৪.৫/৫ রিভিউঃ শিল্পপতির ছেলে জামশেদ। খুনের দায় এড়াতে প্যারানরমাল ইবভেস্টিগেটর বন্ধুর সাথে এক অজপাড়াগাঁয়ে বন্ধুর সাথে গাঁ ঢাকা দিতে এসেছে। কিন্তু গ্রামে ঘটে যাচ্ছে অনেক কিছু। একের পর এক মানুষ খুন হচ্ছে আতাতয়ী দ্বারা। জামশেদের বন্ধুর মতে , এটা সেই কিংবদন্তির শ্বাপদ যা গ্রামের পাশে রহস্যময় জঙ্গলে বাস করছে শত বছর ধরে। কিন্তু বন্ধুর কথা, কতোটা যুক্তিযুক্ত? যদি এটা সত্যি না হয়, তবে জঙ্গলের ভেতর যেখানে পুরনো মন্দির, সেখানে কার মুখোমুখি হতে হলো? এটা কি সেই শ্বাপদ, নাকি অসীম ক্ষমতাধরের, যে কিনা অন্ধকারের রাজপুত্র, যার হাতে অমরত্বের চাবি! প্রকাশনীঃবাতিঘর পৃষ্ঠাঃ২০৮ মূল্যঃ২০০ প্রচ্ছদঃডিলান ব্যক্তিগত মতামতঃ ভয় পাওয়ার জন্য বইটা বেশ। গল্পের কাহিনী সুন্দর। চরিত্রগুলোও লেখক আলাদা আলাদা ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এদিক থেকে চরিত্র চিত্রায়নও বেশ ভালো ছিলো। বর্ণনা ছিলো সুন্দর এবং বিশদ ভাবে তাতে বইয়ের প্যারানরমাল ব্যপার গুলো পাঠকের কাছে সহজ হয়ে যাবে। লেখকের লেখার হাত বেশ ভালো। তার লেখনীর জন্যই পুরো বইটাতে কোন রূপ বিরক্ত লাগে নি। এটা লেখকের প্রথম বই হিসেবে যথেষ্ট নির্ভূল ছিলো। কিন্তু বিষয় আরেকটা ছিলো, তাহলো কিছু ইংরেজী শব্দের ব্যবহার। যদিও এটা তেমন ব্যপার না। তবুও কিছুটা কম ব্যবহার হলে ভালো হতো। প্রথমে গল্পটা কিছুটা ধীরে হলেও, মাঝামাঝি থেকে বেশ গতি নিয়ে শেষ হয়েছে। ধীর হলেও মোটেও বিরক্ত লাগে নি। গল্পের যে জিজ্ঞাসা, কে করছে, কিভাবে করছে, কেন করছে, সব মিলেয়ে কেন হচ্ছে এই সব প্রশ্ন গুলো পুরোটা বইয়ে পাঠককে ব্যস্ত করে রাখবে বইটা শেষ করতে। গল্পে কিছু মেডিক্যাল টার্ম এসেছে। এগুলো লেখক ডাক্তার হওয়ার কারনে সহজ করে তুলে ধরেছেন, পাঠকের কাছে। অসাধারণ একটা টুইস্ট ময় গল্প পড়তে, শ্বাপদ সনে একবার পড়তে পারেন। যেহেতু হরর থ্রিলার টাইপ। তাই, ভয়ের সাথে করবো জয় এরকম একটা ভাব করবে পাঠকের মাঝে। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে। https://www.rokomari.com/book/111628/শ্বাপদ-সনে?ref=srbr_pg0_p0
Thriller
1
বর্তমান পৃথিবীতে মানুষকে দুইটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ক্যাটাগরি এ ও ক্যাটাগরি সি । এ ক্যাটাগরির মানুষ এর লেখাপড়া, গবেষণা করার অধিকার আছে কিন্তু সি ক্যাটাগরির মানুষের তা নেই। রিটিন ক্যাটাগরি সি এর অর্ন্তভুক্ত। ক্যাটাগরি সি এর অর্ন্তভুক্ত হয়েও ক্যাটাগরি এ এর মতো লেখাপড়া, গবেষণা করতে চায় রিটিন। বর্তমান পৃথিবীতে এছাড়াও অনেক পরিবর্তন এসেছে। পৃথিবী থেকে চাষাবাদ উঠে গেছে। ৫০০ বছর আগের পৃথিবীর মানুষের মতো জৈবিক খাদ্য গ্রহণ করতে হয় না বর্তমান পৃথিবীর মানুষদের ; সিনথেটিক উপায়ে প্রস্তুতকৃত খাদ্য খায় এরা। সি ক্যাটাগরির কিছু মানুষ পৃথিবী থেকে সকল বৈষম্য দূর করার জন্য একসাথে কাজ করছে। ঘটনাক্রমে রিটিন যোগ দেয় সেই দলে। নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মূল কোয়ার্ট ওয়েব গাইডগুলোর একটি অংশ বাকি রেখে অন্য অংশগুলো ধ্বংসের জন্য মিশনে পাঠানো হলো রিটিনকে। উল্লেখ্য যে এই মিশনে আগেও অনেকজনকে পাঠানো হয়েছিলো, কিন্তু কেউ সফল হতে পারেনি। রিটিন মিশনে সফল হয়। এই মিশনে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হলে তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ধ্বংস করতে হবে। তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ধ্বংস করার মতো কোনো উপায় নেই। মানুষের বৈষম্য দূর করতে সি ক্যাটাগরির যারা কাজ করছে তাদের নেতা নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হতে একটি ছবি পায়। ছবিতে দেখা যায় রিটিন একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে একটি মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জানা গেলো ছবিটি ৫০০ বছর আগের। কিন্তু ৫০০ বছর আগের রিটিনের ছবি কিভাবে পাওয়া সম্ভব? সময় পরিভ্রমণ সম্ভব তাহলে? প্রকৃতি কি ইংগিত দিচ্ছে এই ছবির মাধ্যমে? তাহলে কি রিটিন ৫০০ বছর পূর্বে ফিরে যেতে পারলে ধ্বংস করা যাবে তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ? দূর হবে পৃথিবীর মানুষের মধ্যেকার বৈষম্য? সময় পরিভ্রমণ কি আদৌ সম্ভব হবে? রিটিন দূর করতে পারবে কি সকল মানুষের মধ্যেকার বৈষম্য? জানতে হলে পড়তে হবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী: রিটিন। জানার আগ্রহ হলে পড়ে ফেলুন বইটি
Science-Fiction
4
পুরোনো বন্ধুরা অনেকদিন পর আড্ডায় মেতে উঠে। মারুফ, হাসান আর রুমী তাদের আরেক বন্ধু জহিরের বিয়ে উপলক্ষে একত্রিত হয়েছে। আড্ডায় হঠাৎ তাদের অন্য এক বন্ধু শওকতের কথা জানতে পারে মারুফ আর রুমী। সে নাকি এখন দেশের স্বনামধন্য ভেন্ট্রিলোকুইস্ট। ওরা একদিন চট্টগ্রাম চলে যায় শওকতের খেলা দেখার জন্যে। খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে শওকতকে তার হোটেলে খুঁজে বের করে। ওদের সাথে শওকতের কথাবার্তায় ভয়ংকর কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে। শওকতের এক্স রুনুর উপর সে কঠিন প্রতিশোধ নিতে চায় যা শুনে মারুফ আর রুমী দুজনেই কেঁপে উঠে। তাই ওরা দ্রুত শওকতের গ্রামের বাড়ি জয়ন্তপুরে যায়। ওখানে গিয়ে জানতে পারে ডাক্তার রুহান উদ্দীন রুশদীর মেন্টাল হসপিটালে গেলে রুনুকে পাওয়া যাবে। কিন্তু এইবার কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসলো সাপ। বেরিয়ে আসলো বাহাইজম নামের গোপন এবং বহু প্রাচীন রক ধর্মের রিচুয়ালের কথা। সাধারণ না বরং ভয়ংকর শিউড়ে উঠার মতো কিছু রহস্যের কথান তার সাথে আবার যুক্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় করা কিছু অমানুষিক বায়োলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট, যেগুলো পড়তে পড়তে গা গুলিয়ে উঠে। ওরা কি পারবে রুনুকে বাঁচাতে? কোন ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের শিকার হতে যাচ্ছে রুনু? শওকতের ভেন্ট্রিলোকুইজম এত জীবন্ত কেন? এর পেছনে কি আসলেই কোনো অলৌকিক শক্তি কাজ করে? বাহাইজম? কি লুকিয়ে আছে এই গোপন ধর্মচর্চার পেছনে? ডা. রুশদী কি এর সাথে জড়িত? তাহলে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন এই অসাধারণ থ্রিলারটিতে! পাঠ প্রতিক্রিয়া: ব্যক্তিগতভাবে, এই বইটা আমি ২বছর পাগলের মতো খুঁজেছি। অদ্ভুত আর কাকতালীয় হলেও আর কোনো বইয়ের জন্যে এতটা খাটিনি। যাই হোক, সেদিক থেকে আমার পজিটিভ রিভিউই বেশি হওয়ার কথা। তবে সবদিক বিবেচনা করেই বলবো, এটি আমাদের দেশের অন্যতম প্রথম দিককার সেরা মৌলিক থ্রিলার। এর আগে নাজিম উদ্দীন ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য মৌলিক থ্রিলার লেখক ছিলেন না। "বাংলার ভিঞ্চি কোড" খ্যাত এই বইটি লিখে লেখক থ্রিলারে অসামান্য এক অবদান রেখেছেন। পড়ে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। বইয়ের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটা হলো, বইটি যেন একটি ইনফোগ্রাফিক মডেল। প্রচুর তথ্য সম্বলিত একখানা বই, বিশেষ করে বাহাইজম নামক ধর্মের উপর লেখককে যে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে তার প্রভাব স্পষ্ট। আর গতি যে ড্যান ব্রাউনের আর জেমস রোলিন্সের বইয়ের মতো ছিল সেটা বলাই বাহুল্য। যে ব্যাপারটি ভালো লাগেনি সেটি হলো, রুশদীর হসপিটালে প্রবেশের অত্যাধিক নাটকীয়তা। তাছাড়া মৃত মানুষের আত্মার ওজন সম্পর্কিত একটি তথ্য দেওয়া আছে। ঐটি উল্লেখ করতে গিয়ে লেখক যে ঘটনাটির উল্লেখ করেছেন তার বিজ্ঞানসম্মত আরো অনেক বিপরীত হাইপোথিসিস আছে। সেগুলো একটু উল্লেখ করে দিলে ভালো হতো। তবে মোদ্দাকথা, এটি একটি অসাধারণ বই! আবারো বলি, এটি আসলেই একটি চমৎকার বই! এডিশনাল ইনফো: ভেন্ট্রিলোকুই্জম হলো এমন এক আর্ট যাতে শিল্পী এমনভাবে শব্দ সৃষ্টি করেন যে মনে হয় তা অন্য কোনো জায়গা থেকে ভেসে আসছে। সাধারণত, এইখানে অন্য কোনো উৎস হিসেবে কোনো পুতুল বা ডামিকেই ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে এরই সমার্থক হিসেবে অনেকে 'হরবোলা' শব্দটি ব্যবহার করেন যা যথার্থ না। হরবোলা হলো সেই ব্যক্তি যে কারো গলার স্বর বা কোনো পশু-পাখির ডাক হুবহু নকল করতে পারে। একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট হরবোলা হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন। ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৯/৫
Thriller
1
#রহস্যময়_বিজ্ঞান_জগত ও #রকমারি_ডট_কম #বুক_রিভিউ_কনটেস্ট ব্যক্তিগত রেটিং : ৯/১০ "বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা'" খ্যাতিমান লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল রচিত science fiction গুলোর মধ্যে আমার ভালো লাগা অন্যতম একটি science fiction। এটি ৫ টি গল্পে বিভক্ত। পুরো বইয়ে তিন জন প্রধান চরিত্র - বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা (মা-বাবা এবং নানা-দাদা কর্তৃক প্রদত্ত সম্মিলিত নাম-কুতুব আলি মোহাম্মদ সগির উদ্দিন নাফসি জাহাঙ্গীর!),লেখক (জাফর ইকবাল) এবং লেখকের বন্ধু সুব্রত রয়েছে। বইটির প্রধান চরিত্র বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা বিভিন্ন কিছু আবিষ্কার এবং প্রজেক্ট তৈরির মাধ্যমে মানুষের জীবন কে সহজতর ও সমস্যা দূর করতে সচেষ্ট। বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা মহাশয়ের সাথে 'ওসমানী মিলনায়তনে' Barefoot scientists movement (পদচারী বিজ্ঞানী আন্দোলন!) এ জাফর ইকবালের পরিচয় হয়। দুজনের প্রত্যেকে তাদের মাঝে মিল খুজে পায়। দ্বিতীয় গল্পে বিজ্ঞানী 'মশা' নিয়ে বিশাল গবেষণা করেছেন যাতে তা মানুষকে না কামড়ায় এবং তাঁর গবেষণালব্ধ এ আবিষ্কারটি একটি প্রতারক চক্রের হস্তগত হওয়ার হূলস্থুল কান্ডের চমৎকার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তৃতীয় গল্পে (ইঁদুর) এক অসহায় বৃদ্ধার বাসায় জোরপূর্বক স্থায়ী ভাবে আশ্রয় নেওয়া দুই মাস্তান কে বিতাড়িত করার চমকপ্রদ কৌশলের প্রয়োগ করেছেন বিজ্ঞানী সাহেব। পরবর্তী গল্পে (কবি কিংকর চৌধুরী) লেখকের বোনের বাসায় আগত উদ্ভট কবি কিংকর চৌধুরী বিজ্ঞানী অনিক লুম্বার আবিষ্কৃত 'ব্যায়াম বটিকা'র 'গিনিপিগ' হয়ে তার আসল রুপ প্রকাশপূর্বক বাড়ি থেকে বিদায় হয়েছেন! সবশেষ 'জলকন্যা' গল্পে সদ্যজাত শিশুকে নিয়ে বিজ্ঞানী অনিক লুম্বার এক্সপেরিমেন্ট! প্রায় সদ্যজাত শিশুকে পানিপূর্ন এ্যাকুরিয়ামে নিয়ে মহাউৎসাহে বইয়ে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করছেন তিনি। প্রতিটি গল্পই হাস্য-রসাত্মকপূর্ন যা মানসিক প্রশান্তি ও মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট এবং কৌতূহল উদ্দীপকও বটে। By Amin Uddin
Science-Fiction
4
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস “গৌরীপুর জংশন” আশির দশকের একেবারে শেষ ভাগে রচিত। উপন্যাসের পটভূমি একটি ছোট রেল স্টেশন। স্টেশন-জীবনের প্রতিদিনকার বাস্তবতাই এ উপন্যাসের নায়ক। ছোট ছোট নানা ঘটনা উপন্যাসটির রচনাকালের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছে দারুণ। ভালোবাসা, মায়া, দুঃখ-কষ্টের সাথে শঠতা, দুর্নীতি, বিশ্বাসঘাতকতা মিলে গৌরীপুর স্টেশনের পাত্রপাত্রীরা এমন এক বাস্তবতা তৈরি করেছে যা মধ্যবিত্ত বাঙালির বাস্তবতার সাথে মেলে না। গল্পগুলো চেনা মনে হতে পারে, কিন্তু পুরো পরিস্থিতি এবং পরিবেশ মিলেমিশে এর চরিত্রগুলো ভিন্ন এক জগত নির্মাণ করেছে যা তাদের জন্য স্বাভাবিক। “গৌরীপুর জংশন” মধ্যবিত্তের চোখের সামনে থাকা ভিন্ন এক জগত এবং অন্য এক বাস্তবতার পর্দা উন্মোচন করেছে। হুমায়ূন আহমেদ বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া বিরল গোত্রের লেখকের একজন। তাঁর প্রায় সকল বই-ই বহুল পঠিত, তবু “গৌরীপুর জংশন” নিয়ে হুমায়ূন-প্রেমীদের মধ্যে চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায় না। অনেকের কাছে এটি অপঠিতই থেকে গেছে। ব্যাপারটি বিস্ময়কর, কারণ হুমায়ূন আহমেদ রচিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর একটি “গৌরীপুর জংশন”। এ উপন্যাস নিয়ে পাঠকদের আপাত নীরবতা এটাই নির্দেশ করছে যে, এই উপন্যাসটি চিরায়ত হুমায়ূনীয় ফর্মুলায় রচিত হয় নি। এই উপন্যাসে নেই হিমুর মতো রহস্যময় চরিত্র, কিংবা মিসির আলী সিরিজের মতো আকর্ষণীয় রহস্য। এই উপন্যাসে কেবলই একটি নিভৃত স্টেশনের বসবাসরত নিম্নবিত্তের আটপৌরে জীবন উঠে এসেছে, যা অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পাঠকের অচেনা। “গৌরীপুর জংশন”এর প্রধান চরিত্র জয়নাল। সে গৌরীপুর স্টেশনে বসবাসরত মধ্যবয়সী কুলী, যার যৌবন বিগত এবং ‘এখন যার দশা কোমর-ভাঙা কুকুরের মতো’। চালের বস্তা কোমরে পড়ে কোমর চেঙে যাওয়ার পর কুলীর জীবন ত্যাগ করেছে, কিন্তু স্টেশন ত্যাগ করে নি; কারণ কোথায়ই বা যাবে সে। জয়নাল বর্ণিল একটি চরিত্র। স্টেশনের অন্য সব চরিত্রের মতোই স্বার্থপরতা তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্যমান, কিন্তু অনাথ শিশু বজলুর জন্য দয়াময় একটি মনের দেখা পাই আমরা। বজলুকে নিজের সাথে রাখে, খাওয়ায়, জীবনে চলার জন্য নানা উপদেশ দেয়। মালবাবু আর সিগনাল-ম্যান রমজানের সাথে তার বেশ খাতির। নানান সময়ে তারা জয়নালকে নানানভাবে সাহায্য করেছে, জয়নাল এ সত্যটা কখনো ভুলতে পারে না, তাদের জন্য কিছু করার চিন্তা সবসময় তাকে ঘিরে থাকে। জয়নালের চরিত্রে অসদগূণগুলো তার নানা কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পায়। স্টেশনের পুরনো সর্দার মোবারককে নিগৃহীত হতে দেখে আনন্দ পায়, পুলিশকে মোবারকের নাম বলে দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। কুলী-গিরি ছাড়ার পর মূলত চুরি করে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে নিয়েছে সে। ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে চুরি করা ছাড়াও স্টেশনের মালবাবুর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ফেরত দেয় না সে। হুমায়ূন আহমেদ মূলত একজন নিম্নবিত্ত ছিঁচকে চোরের চরিত্র এঁকেছেন যার আছে এক আর্দ্র মন। “গৌরীপুর জংশন” উপন্যাসটি লিখিত হয়েছে তৃতীয় পুরুষে। যদিও পুরো গল্প এগিয়েছে জয়নালের দৃষ্টিকোণ থেকে। এটা ইন্টারেস্টিং। কখনো কখনো তৃতীয় পুরুষ থেকে লাফ দিয়ে প্রথম পুরুষে চলে এসেছেন লেখক। এই রচনাকৌশল ছাড়াও উপন্যাসের ভাষার কাজ পর্যবেক্ষণ করার মতো। হুমায়ূন আহমেদের স্বভাবসুলভ হিউমারে পূর্ণ বর্ণনারীতি তো আছেই, সাথে আছে আঞ্চলিক ভাষার দারুণ সংমিশ্রণ। নিম্নবিত্তের মনোজগৎ নিয়ে পর্যবেক্ষণের উল্লেখযোগ্য উপাদান আছে আলোচ্য উপন্যাসে। মধ্য ও উচ্চবিত্তের চরিত্র নিয়ে জয়নালের দর্শন বেশ চমকপ্রদ। তার ভাষায় ওরা ‘ভদ্রলোক’। আমি মনে করি, ভদ্রলোকদের দয়ার উপরে সর্বদা নির্ভর করছে তার আর্থিক অবস্থা, এটা সে কখনো ভুলতে পারে বলেই মনে মনে তাদেরকে আক্রমণ করে আনন্দ খুঁজে পায়। কখনো কখনো সামনাসামনি অপমান করেও বেশ শ্লাঘা অনুভব করে জয়নাল। ভদ্রলোক বিপদে জয়নালের বড় ভালো লাগে। তার ভাষায়, ‘ভদ্রলোক বিপদের পড়ে চোখ বড়ো করে যখন এদিক ওদিক চায়,ফটাফট ইংরেজিতে কথা বলে তখন মজাই লাগে’। হুমায়ূন আহমদের প্রায় সকল পাঠকই মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তের কাতারে পড়বে, জয়নালের ভাষায় যারা ‘ভদ্রলোক’। নিম্নবিত্ত এক কুলী তার শ্রেণী সম্পর্কে কী ভাবছে তা জেনে একজন মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তের মনে কেমন অনুরণন সৃষ্টি হয় তা চিন্তাভাবনার বিষয় বটে। “গৌরীপুর জংশন” উপন্যাস হিসেবে মুদ্রিত হলেও এটি মূলত একটি বড় গল্পের চরিত্র ধারণ করে। কারণ এই রচনায় উপন্যাসের বিস্তৃত পটভূমির উপস্থিতি নেই। “গৌরীপুর জংশন” লেখা হয়েছে মাত্র ৪২ পৃষ্ঠায়। এতো ছোট পরিসরে উপন্যাসের বিস্তৃত পটভূমি এবং চরিত্রের উপস্থিতি কোনোভাবেই বর্ণনা করা সম্ভব না। এর মধ্যে গল্পের প্রথম বারো পৃষ্ঠা ব্যবহৃত হয়েছে পটভূমি ও পরিবেশের বর্ণনা এবং চরিত্র উপস্থাপনে। তাছাড়া একটি আদর্শ উপন্যাসে বিভিন্ন ঘটনা ও পরিপার্শ্বের চাপে চরিত্রের যে বিবর্তন ঘটে, তাও “গৌরীপুর জংশন”এ উপস্থিত। তাই আমার মতানুসারে, “গৌরীপুর জংশন” উপন্যাসের মোড়কে একটি সফল বড় গল্প। সার্থক বড় গল্পের অসম্পূর্ণতা, হাহাকারকে ধারণ করেই এর সমাপ্তি ঘটেছে।
Fiction
0
কথিত আছে, পূর্ব-পশ্চিম প্রসারী বাড়ি অশুভ; এই বাড়ির বাসিন্দাদের বংশ রক্ষা হয়না। পূর্ব-পশ্চিম সূর্য উদয়াস্তের দিক হওয়ার এ ধরনের বাড়িকে বলা হয় সূর্য-দীঘল বাড়ি। এরকমই এক বাড়ির বাসিন্দাদের নিয়ে এ উপন্যাসের কাহিনী। জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে ইট কাঠের শহরে দুই সন্তান নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল জয়গুন। কিন্তু যান্ত্রিক শহরও দিতে পারেনি ভাতের নিশ্চয়তা, তাই আরো অনেকের মত জয়গুনকেও ফিরে আসতে হয় তার নিজ গ্রামে। ততদিনে সহায় সম্বলহীন জয়গুনের মাথা গোজার ঠাইটুকুও হারিয়ে গেছে পঞ্চাশের মনন্তরে। বাসস্থান বলতে আছে নাবালক ভাইপো শফির সাথে অংশীদারের এক চিলতে ছাড়া ভিটে। ঝোপজঙ্গলে ছাওয়া সেই পরিত্যাক্ত ভিটেতেই দুটি ঘর তুলে নতুন করে সংসার পেতে নেয় অসহায় দুই নারী, জয়গুন ও শফির মা। কিন্তু এ যে সূর্য-দীঘল বাড়ি!!! সূর্য-দীঘল বাড়ি নিয়ে চালু আছে বহু ভীতিকর কাহিনী, তাই সন্তানদের অমঙ্গলের আশঙ্কায় কেঁপে উঠে দুই মায়ের মন। জোবেদ আলী ফকিরের তাবিজ তাদের সেই আশঙ্কা দূর করে, শুরু হয় সূর্য-দীঘল বাড়িতে তাদের দিনযাপন। চার সন্তানের মধ্যে হাসু আর মায়মুনই এখন জয়গুনের সুখদুঃখের সাথী। দারিদ্র্যের কাছ থেকে এই কচি বয়সেই তারা অর্জন করে নিয়েছে পরিশ্রম আর সংযমের শিক্ষা। হাসুর ছোট্ট কাঁধ মায়ের সাথে ভাগ করে নেয় জীবিকানির্বাহের ভারী বোঝা। আর দশ বছরের অপুষ্ট রোগা ময়মুন তার শীর্ণ দুই হাতে সামলে নেয় গৃহস্থালির সিংহভাগ কাজ। এদিকে জয়গুনের আরেক সন্তান কাসু করিম বক্সের নজরদারির দৃঢ় বন্ধনে বড় হতে থাকে তার সৎমার সংসারে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সাথে পাল্লা দিয়ে মায়মুনের বিয়ে, কাসুর শূন্যতা, সমাজপতিদের নির্দেশ, করিম বক্সের চোখ রাঙ্গানি, গদু প্রধানের প্রস্তাব যখন দিশাহারা করে দেয় জয়গুনকে, ঠিক সেই সময়টাতেই ক্ষেপে উঠে সূর্য-দীঘল বাড়ির ভূত; এক অমাবশ্যার রাতে কাচের টুকরার মত ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায় জয়গুনের সব মনোবল, শুরু হয় এক নতুন আশ্রয়ের খোঁজ। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ গ্রামবাংলার আবহে রচিত এ উপন্যাসটি আমার অসম্ভব ভাললাগার একটি উপন্যাস। দুঃখ-কষ্টে পীড়িত অসহায় মানুষগুলোর প্রতিচ্ছবি এত সুস্পষ্টভাবে এখানে ফুটে উঠেছে যে তাদের দুদর্শার উত্তাপ খুব সহজেই স্পর্শ করেছে পাঠকের মন। তবে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে শেষের চমকটা, যার জন্য আমি আদৌ প্রস্তুত ছিলাম না। বই পরিচিতিঃ বাংলা সাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলোর একটি আবু ইসহাকের সূর্য-দীঘল বাড়ি। এটি ছিল লেখকের প্রথম উপন্যাস। ১৯৪৮ সালে এই উপন্যাসটি লেখা শেষ হলেও প্রকাশিত হতে সময় নেয় প্রায় ৬/৭ বছর। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই চারদিকে সাড়া ফেলে দেয় এই সূর্য-দীঘল বাড়ি। পরবর্তীতে এই বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ছয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করে। লেখক পরিচিতিঃ আবু ইসহাকের জন্ম ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর, তৎকালীন মাদারিপুর জেলার শিরঙ্গল গ্রামে। তিনি ১৯৪২ সালে স্কলারশিপ নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন, আর গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত থেকে ১৯৮৪ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৩ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি মরণের কোলে ঢলে পড়েন বাংলা সাহিত্যের এই কীর্তিমান লেখক।
Fiction
0
শঙ্খরঙা জল বইটি লিখেছেন কথা সাহিত্যিক তানিয়া সুলতানা। গল্পের লেখনীর পুরোটাই জড়িয়ে ছিল একধরণের মায়ার আবেশে। অদ্ভুত এক মায়া। পড়তে গিয়ে গল্পের প্রতিটা সুখ-দুঃখ-কান্না-হাসি-ভালবাসা-ঘৃণা সবই অনুভব করতে পেরেছি। শঙ্খরঙা জল এর প্রতিটা লাইন ই যেনো পরম মমতা দিয়ে লেখা, বিশেষ করে প্রকৃতির ছোট ছোট দৃশ্যের বর্ণনাগুলো !!! পড়তে গিয়ে হোঁচট খাবেন না কখনোই। বরং মনে হবে, আরে এ তো আমাদের চেনা গ্রাম , চেনা দৃশ্য , যেগুলো কখনোই খুব একটা খেয়াল করে লক্ষ্য করা হয়নি । অধ্যায়ের ফাঁকে ফাঁকে লেখিকার কবিতা গুলোও ছুঁয়ে গিয়েছে খুব করে !!! অদ্ভুত, মায়াময় !! কিছু কিছু অধ্যায়ের শেষের লাইনগুলো তো একেবারে ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস টেনে বের করে নিয়ে আসে !!! শঙ্খরঙা জল আসলে খুব মন খারাপ করা ভালো একটা বই !!!! কোমল, জন্মের পর তার পিতা ছলছল চোখে ডেকেছিল ‘কুমু,’ এরপর থেকে সকলের কাছেই সে কুমু। নীলসাগরি নদীর তীরে সাজানো ছোট্ট পৃথিবী ছেড়ে কিভাবে মেয়েটি পদার্পণ করল ভিন্ন এক জগতে, এটি তারই গল্প। জীবন পথের অলি-গলিতে কতরঙের মানুষের যে বসবাস, সে কি কুমু জানত? এই মানুষগুলোই পাল্টে দিতে থাকে তার জীবনের গতিপথ। হাজারও বিষাদের ভিড়ে বেঁচে থাকার একটি কারণ খুঁজে নেয়ার গল্প এটি। আরও আছে ঘৃণা, মায়া, প্রেম আর সখ্যতা। পেয়ে হারানোর ব্যথা, না পাওয়ার যাতনা নিয়ে কাটিয়ে দেয়া অগনিত রজনীর দীর্ঘশ্বাসের ছোঁয়া। জীবনের তাগিদে সকল পিছুটান বিসর্জন দিয়ে, রোজকার দৌড়ে চলার মাঝে যে কষ্টজলে বারবার হোঁচট খেয়ে জর্জরিত কুমু--তারই নাম শঙ্খরঙা জল।
Fiction
0
মানুষ হিসেবে বড় হয়ে উঠতে চাইলে, খুবই দরকারী বই। যখন ছোট ছিলাম তখন বুঝতে পারিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে বোধগম্য হয়েছে ডা: লুৎফর রহমান’র কথাগুলো। বিশেষ করে উঠতি যুবক-যুবতীদের জন্য, হতাশাগ্রস্থ মানুষদের জন্য বইটি খুবই জরুরী।
Motivational
6
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জানুয়ারি রিভিউ নংঃ১৬ উপন্যাসঃ বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ধরনঃ সায়েন্স ফিকশন প্রকাশনীঃঅনুপম মুল্যঃ১৮০ টাকা (মলাট মুল্য) লেখক পরিচিতিঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২) হলেন একজন বাংলাদেশী লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ। তাকে বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা ও জনপ্রিয়করণের পথিকৃৎ হিসাবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও তিনি একজন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং কলাম-লেখক। তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন। কাহিনী সংক্ষেপেঃ বিজ্ঞান মানেই কঠিন কঠিন কিছু কথা। যা একমাত্র বিজ্ঞানীরা ছাড়া অন্য কেউ বুঝে না। বিজ্ঞান অবশ্যই কঠিন একটি বিষয় কিন্তু মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা কিছু বই পড়লে বিজ্ঞানের প্রতি এই ভুল ধারনা ভেঙ্গে যাবে। বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা নামের বইটি এধরনের একটি বই।বিজ্ঞান মানেই সাইন্স ফিকশন না। বিজ্ঞানর কথা ছোট ছোট পাঁচটি গল্পের মাধ্যমে বলেছেন জাফর ইকবাল। ছোট বড় সবারই ভাল লাগবে এই কিশোর উপন্যাসটি। বিজ্ঞানকে খুব সহজ ভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। এই বইটি পড়লে ছোটরা অবশ্যই সাইন্স পড়ার জন্য আগ্রহী হবে। একজন মানুষ, যার বয়ষ প্রায় আমার বয়সের কাছাকাছি, তাকে হঠাৎ করে একটা নতুন নাম দিয়ে দেয়াটা এত সোজা না। হেজিপেজি মানুষ হলেও একটা কথা ছিল কিন্তু অনিক লুম্বা মোটেও হেজিপেজি মানুষ নয়, সে রীতিমতো একজন বিজ্ঞানী মানুষ, তাই কথা নেই বার্তা নেই সে কেন আমার দেয়া নাম দিয়ে ঘোরাঘুরি করবে? কিন্তু সে তাই করেছে, আমি নিজের চোখে দেখেছি কেউ যদি তাকে জিজ্ঞেস করে, “ভাই আপনার নাম?” সে তখন সরল মুখ করে বলে, ”অনিক লুম্বা।” মানুষজন যখন তাকায় তখন সে একটু গরম হয়ে বলে, “এত অবাক হচ্ছেন কেন? একজন মানুষের নাম কি অনিক লুম্বা হতে পারে না?বিজ্ঞানী অনিক লুম্বার সাথে মুহাম্মদ জাফর ইকবালকেও পাওয়া যাবে বইটিতে। অসাধারন বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা সাথে লেখকের পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা হয় হঠাৎ করেই। তাদের কিছু মজার কর্মকান্ডকে আলাদা আলাদা পরিচ্ছেদে আলাদা আলাদা গল্পের মত করে তুলে ধরা হয়েছে এই বইতে। মূলত, একটা উপন্যাস হিসেবে বইটি প্রকাশিত হলেও, প্রধান দুই চরিত্রকে ঠিক রেখে আসলে ৫টি আলাদা গল্প বলা হয়েছে এই বইতে। ৫টি গল্পই দারুণ মজার। বিশষ করে মশা নিয়ে বিজ্ঞানী অনিক লুম্বার যে পরিকল্পনা সেটা এক কথায় অসাধারন। জলকন্যা গল্পটি সদ্যজাত একটি শিশুকে নিয়ে। বইটি মূলত শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা। কিন্তু সব ধরনের পাঠকই বইটি পড়ে আনন্দ পাবে। সাধারণত কিংবদন্তীসম লেখকদের লেখার ভাঁজে-ভাঁজে লুকিয়ে থাকে গভীর অর্থ| তাঁদের চরিত্রদের হাতে-পায়ে-গোপন অঙ্গে ছড়ান-ছেটান থাকে রহস্যময় স্রষ্টা আর সমাজ-রাজনীতি-ইতিহাসের এমন সব নিশানা যা দেখে, এই বইয়ের কথকের ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার পর সে যেমন সব প্রশ্নেরই মাত্র এক রকম উত্তর দিতে পারছিল, আমাদের মত গোদা পাঠকও ঠিক তেমন করেই বলে ওঠে: “আউক”| কিন্তু আলোচ্য বইটি এইজন্যেই স্পেশাল যে সেটি এক কিংবদন্তীসম লেখকের লেখা হলেও তার কোন রিভিউ করা সম্ভব নয়| নামে বইটি ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি’, কিন্তু বাস্তবে এতে ঠিক কী আছে? এতে যে লেখাগুলো আছে, সেগুলো হল: • বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা • মশা • ইঁদুর • কবি কিংকর চৌধুরী • জলকন্যা এই গল্পগুলোর মাধ্যমে আমরা পরিচিত হই কিছু অদ্বিতীয় চরিত্রের, এবং তাদের বিভিন্ন এডভেঞ্চারের (ব্যাড-ভেঞ্চার-ও বলা যায়) সঙ্গে| এতে অনেক হাসির উপাদান আছে, এবং গল্পগুলো পড়ার সময়ে (তার পরেও, যেমন এইসব লিখতে গিয়ে) আমি প্রচুর হেসেছি| ধ্রুব এষ-র করা অলংকরণের সঙ্গে অহিভূষণ মালিকের সাদৃশ্য আছে বলেই হয়ত লেখাগুলো পড়তে গিয়ে প্রথমবার তারাপদ রায়ের “কান্ডজ্ঞান” পড়ার স্মৃতি ফিরে আসছিল| কিন্তু এই গল্পগুলো একেবারে আলাদা, কারণ অদ্ভূত-কিম্ভূত ঘটনাবলির মাধ্যমে এই বই-এ লেখক আমাদের যে আসল কথাটা বলতে চান, সেটা লুকিয়ে আছে বইয়ের একেবারে শেষ লাইনে| পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ জাফর ইকবালের লেখা সেই স্কুল জীবন থেকে পড়ি। ছোটদের জন্য তার লেখাগুলো বোধহয় বেশি জনপ্রিয় আমার কিন্তু ভালো লাগে তার সায়েন্স ফিকশানগুলো। বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা ছোটদের জন্য লেখা তবে তাতে সামান্য হলেও সায়েন্স ফিকশানের গন্ধ আছে হাজার হোক অনিক লুম্বা তো একজন বিজ্ঞানী। তবে পড়তে পড়তে মনে হলো এ তো হুবুহু সফদর আলী। অবশ্য সফদর অালী বোধহয় আশী বা নব্বই দশকের চরিত্র, অনিক লুম্বা আরেকটু নবীন এই যা। সেখানে লেখক চাকরী করতেন এখানে নিকষ বেকার।তবে হাসির ব্যাপারগুলো যথেষ্ঠই আছে, বিজ্ঞানী অনিক লুম্বার নামকরনটাই তো যথেষ্ঠ কৌতুকপূর্ণ।
Science-Fiction
4
নতুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নটি কীভাবে দেখছে, তা জানা জরুরি। যদি তারা মনে করে, বহুদিন আগে ঘটে যাওয়া প্রসঙ্গটিকে এখন আর টানাহেঁচড়া করা কেন, যা ঘটে গেছে, তা তো গেছেই—এখন সবকিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে সবাই মিলে দেশ গড়ার কাজে হাত দিলেই তো হয়—তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটি আর জরুরি কোনো বিষয় হয়ে দাঁড়ানোর ভিত খুঁজে পাবে না। আর যদি তারা মনে করে, জাতির ওপর এত বছর ধরে যে কলঙ্ক চেপে বসে আছে, তা থেকে মুক্ত হতে হবে, তাহলেই কেবল প্রশ্নটি দাঁড়াতে পারবে শক্ত ভিতের ওপর। আর এ জন্য কিছু তথ্য জানা জরুরি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, তাঁরা জানেন কী বীভত্সতার সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল দেশের সাধারণ মানুষদের। প্রায় প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ হারিয়ে গেছেন বা প্রতিটি পরিবারই এই যুদ্ধের ক্ষত বহন করে চলেছে। তাই তাঁরা জানেন মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ হয়েছে তাঁর বিচার হওয়া প্রয়োজন। যুদ্ধের মাঠে মৃত্যুর উত্সব হয়। প্রতিপক্ষ খুন করে প্রতিপক্ষকে। যুদ্ধের এটাই বর্বর নিয়ম। কিন্তু সেটা অস্ত্র হাতে যারা যুদ্ধ করছে, তাদের ব্যাপার। নিরীহ জনগণকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হলে তাকে আর যুদ্ধের মাঠে হানাহানি বলা যায় না, বলতে হয়, ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড। যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে কোনো গোষ্ঠী, দলকে হত্যা করাটাই যুদ্ধাপরাধ। শুধু বাঙালি পরিচয়ের কারণেই সাধারণ বাঙালিদের হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার বিচার না হলে কি সত্যিই আমরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব? হত্যাকারীদের পাশে বসিয়ে আমরা বাংলার জল-হাওয়া-প্রকৃতির কাছে সমর্পিত হব? কোনো দেশই যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল, কসবো, রুয়ান্ডা, বসনিয়া, পূর্ব তিমুর ইত্যাদি নাম আমাদের মনে আশা জাগায়। আমরা তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, সে বিশ্বাস রাখতে পারি। ডা. এম এ হাসান যে বইটি লিখেছেন, তাতে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গটি এসেছে। তরুণ প্রজন্মের জন্য বইটির ৩২ পৃষ্ঠা থেকে একটি অংশ তুলে দিতে চাই: যুদ্ধাপরাধ আইন সেই সমস্ত অপরাধকে বিবেচনায় আনে যা কিনা যুদ্ধকালীন সংঘটিত হয়। এতে আক্রমণকারী ও তার সহায়ক শক্তি জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করে, যুদ্ধ ও সংঘাতে প্রযোজ্য আইনের সীমা অতিক্রম করলে তা যুদ্ধাপরাধ বলে পরিগণিত হয়। উদাহরণস্বরূপ—উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যা বা বেসামরিক ব্যক্তিবর্গকে আক্রমণ করে যুদ্ধ সংঘটিত করা বৈধ নয়। শত্রুর দেহ খণ্ড-বিখণ্ডকরণ, তাকে বন্দী করে নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, সাধারণের সম্পত্তি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ—সবই অবৈধ। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতালসহ প্রতিরক্ষাহীন স্থান ও স্থাপনার ওপর আঘাতও যুদ্ধাপরাধ। এমনকি লক্ষ্যবস্তুর বাইরে সীমাহীন আঘাতের মাধ্যমে ধ্বংস, হত্যা ও শারীরিক ক্ষতিসাধনও যুদ্ধাপরাধ (যেমন, জগন্নাথ হল হত্যাকাণ্ড)। অন্যায়ভাবে আটকিয়ে অথবা পরিকল্পিতভাবে কষ্ট ও দুর্ভোগ সৃষ্টিও যুদ্ধাপরাধ। জেলে হত্যা ও নারী নির্যাতনও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধ। এটা মানবতার বিরুদ্ধেও অপরাধ। এই ঘটনাগুলো ঘটেছে একাত্তরে। ঘটিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা। সে সময়কার পত্রপত্রিকা ঘাটলেই প্রকাশ পাবে, কারা পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছিল, কারা খুন-ধর্ষণ করেছিল, কারা এই অন্যায় আচরণে ইন্ধন দিয়েছিল। বইটিতে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে একটি অধ্যায় আছে, যা পড়লে একাত্তরে ঘটে যাওয়া বর্বরতা প্রগাঢ়ভাবে বোঝা যাবে। সেখানে কিছু উদাহরণ পাঠে চোখে জল আসে। ‘বিচার ও সম্ভাবনা’ নামে একটি অধ্যায়ে পরিষ্কারভাবে প্রমাণ হয় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে ম্যান্ডেট আছে। যুদ্ধাপরাধ কখনো তামাদি হয় না। আরেকটি অধ্যায়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক জনমতটিও জানা যাবে। বিচারকাজটি শুধু আবেগ দিয়ে হবে না। রাষ্ট্রের ঘাড়ে অনেক বড় দায়িত্ব বর্তায়। অপরাধকর্মের স্থানগুলো চিহ্নিত করতে হবে; বিজ্ঞানভিত্তিক ডকুমেন্টেশন করতে হবে; কে কাকে কীভাবে, কী উদ্দেশ্যে হত্যা, গুম বা অপহরণ করেছে সে বিষয়গুলো পরিষ্কার হতে হবে। অপরাধী ও অপরাধের শিকারের পরিচয়সংক্রান্ত প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। নিহত ব্যক্তির হাড়গোড় শনাক্ত করতে হবে। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ এবং গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল হবে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে রেডিও, টেলিভিশন, ওয়্যারলেস ও সংবাদপত্রে প্রদত্ত উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে বিচারকাজে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম অ্যাক্ট ১৯/৭৩ বিচার শুরুর ব্যাপারে হতে পারে একটি বড় হাতিয়ার। ডা. হাসান বইটি লিখতে গিয়ে অনেক প্রমাণ হাজির করেছেন। সেগুলো যুদ্ধাপরাধ নিয়ে জানার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
War
5
ড. কামাল হোসেন তাঁর মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল শুরু করেছেন ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা পেশ করার বিষয়টি দিয়ে। পশ্চিমা নেতাদের বাধার কারণে তিনি আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এটি পেশ করতে না পেরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানান। পশ্চিমা নেতারা ছয় দফাকে নিয়েছিলেন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তৎপরতার অংশ হিসেবে। সামরিক শাসক আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় এর জবাব দেন এবং শেখ মুজিবসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন। এরপর ছয় দফাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। কামাল হোসেন এই মামলার সূত্রেই শেখ মুজিবের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ছিলেন এই মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী। পরবর্তী সময়ে তাঁর ভূমিকা কেবল আইনজীবীর মধ্যে সীমিত থাকেনি। উনসত্তরের গোলটেবিল বৈঠক, খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কিংবা একাত্তরের মার্চে মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনায় তিনি একজন পরামর্শদাতা ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া একটি আসনে উপনির্বাচন করে কামাল হোসেন জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। স্বাধীনতার পর তিনি প্রথমে আইনমন্ত্রী, পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আইনমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা ছিল তাঁর প্রধান কাজ। সেটি তিনি সুচারুভাবেই পালন করেছেন।অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান এই আইনজীবী ইতিহাসকে কেবল কাছ থেকে দেখেননি, ইতিহাস নির্মাণেও সাধ্যমতো ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর নিজের ভাষায় ‘সেই উত্তাল দিনগুলোতে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরে আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক-সাংবিধানিক আলোচনা ও কার্যক্রমের সঙ্গেও আমি জড়িত ছিলাম।’তবে কামাল হোসেন বইয়ের কোথাও নিজের কৃতিত্ব দাবি করেননি; তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ছাড়া কামাল হোসেন দ্বিতীয় যে রাজনীতিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন, তিনি তাজউদ্দীন আহমদ।
War
5
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ রিভিউ নংঃ২৫ বই:- টুনটুনি ও ছোটাচ্চু লেখক:- মোহম্মদ জাফর ইকবাল প্রকাশনি:- পার্ল পাবলিকেশন্স ঘরানা:- কিশোর উপন্যাস রকমারি মূল্য:- ২১৩ বই আলোচনাঃ বাসাটা তিনতলা। কিংবা কে জানে, চারতলাও হতে পারে। আবার তিন কিংবা চারতলা না হয়ে সাড়ে তিনতলাও হতে পারে। এই বাসায় যারা থাকে, তাদের জন্য অসম্ভব কিছু না। এই বাসায় কারা থাকে, সেটা বলে দিতে পারলে মনে হয় ভালো হতো, কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া বলে লাভ কী, সবার নাম, বয়স, কে কী করে এত সব কি আর মনে রাখা সম্ভব? শুধু একটা জিনিস বলে দেওয়া যায়, এই বাসায় সবাই এক পরিবারের মানুষ। সংখ্যাটা শুধু আন্দাজ করা যেতে পারে, ৩০-৪০ জন হবে, কিংবা কে জানে, বেশিও হতে পারে। বাসাভর্তি বাচ্চা কিলবিল করছে। এতগুলো বাচ্চার হিসাব রাখা কঠিন, তাদের বাবা-মায়েরাই হিসাব রাখতে পারে না। তাদের বাবা-মায়েরা যে হিসাব রাখতে পারে না, তার অবশ্য একটা কারণ আছে। কারণ, তারা কে কখন কোথায় থাকে, তার ঠিক নেই। হয়তো বাসায় খেতে বসেছে, ডাইনিং টেবিলে খাবারটা কারও পছন্দ হলো না, সঙ্গে সঙ্গে নাক কুঁচকে থালাটা বগলে নিয়ে ওপরে কিংবা নিচের তলায় কিংবা পাশের ফ্ল্যাটে চলে যাবে। হয়তো স্কুলে যাওয়ার সময় হয়েছে, স্কুলের পোশাক খুঁজে পাচ্ছে না তারা, অন্যজনের ফ্ল্যাটে গিয়ে অন্য কারও পোশাক পরে ফেলবে। কাছাকাছি বয়স, সমস্যা হয় না। বড়জোর একটু ঢলঢলে কিংবা একটু টাইট হয়, সেটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। রাতে ঘুমানোর সময় মায়েরা যদি দেখে বাচ্চা বিছানায় নেই, তাহলেও তারা দুশ্চিন্তা করে না। আবার যদি দেখে দুই-চারটা বাচ্চা বেশি, তাহলেও অবাক হয় না। মিতভাষী, বুদ্ধিমতী, ভারী চশমা চোখে টুনি জোবেদা খানমের বিশাল বাসার অগুণতি নাতি-নাতনীদের মাঝে একজন । ছোটাচ্চু শাহরিয়ার বাসার সবথেকে ছোট ছেলে, মাস্টার্স পাশ করে 'দি আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি' খুলেছেন । কিন্তু ছোটাচ্চু কি পারবে টুনটুনি (টুনি) কে ছাড়া আদৌ জটিল সব কেসের সমাধান করতে ? লেখক পরিচিতিঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২) হলেন একজন বাংলাদেশী লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ। তাকে বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা ও জনপ্রিয়করণের পথিকৃৎ হিসাবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও তিনি একজন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং কলাম-লেখক। তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ "টুনটুনি ও ছোটাচ্চু" সিরিজটা আমার পড়া বর্তমান সময়ে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা সবচেয়ে ভালো বই। আগের মত অতো অসাধারণ না হলেও, খুব একটা খারাপ না! ছোট ছোট হিউমার গুলা বেশ মজা দেয়। একঘেয়ে ভাবটাও নেই লেখার মধ্যে। বেশ বুদ্ধিমত্তা আছে গল্প গুলার মাঝে।
Childrens-Book
2
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ পুতুল নাচের ইতিকথা লেখকঃমানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনীঃঝিনুক প্রকাশনী ধরনঃচিরায়ত উপন্যাস মূল্যঃ১৮০ টাকা(রকমারি মূল্যঃ১৩৫ টাকা) . উপন্যাসের কাহিনীতে প্রথমে পাওয়া যায় শশীর অস্তিত্ব।গ্রামের নাম গাওদিয়া,সেখানকার সুদী মহাজন গোপালের ছেলে শশী কলকাতা থেকে পাশ করা একমাত্র ডাক্তার।শশী গ্রামে আসে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভিন্নতর সংস্কৃতি কিংবা সহজ ভাষায় উন্নত জীবনের সন্ধ্যানে বেড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সে আর প্রথাগত জীবনের বাহিরে যেতে পারে না।গ্রামীণ জীবণের প্রতিবেশ, পরিবেশের বৈচিত্র্যতা আর বাস্তবতার ডালপালা এমন ভাবে তাকে আকড়ে ধরে; যা ছিড়ে বের হওয়া শশীবাবুদের সামর্থের বাহিরে। . উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র পরাণের স্ত্রী তেইশ বছরের বাঁজা মেয়ে কুসুম । প্রকৃ্তপক্ষে কুসুম এক অস্থির, বেপরোয়া,ও দূর্বোধ্য গ্রাম্য রমণী । পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসে লেখক কুসুমের মৃতপ্রায় অস্তিত্বের এক ভিন্ন রূপ উন্মোচন করে নারী সম্পর্কে আমাদের আবহমান ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে এক নতুন ধারনার জন্ম দেন । শশী-কুসুম ছাড়াও উপন্যাসে কুমুদ-মতির ছন্নছাড়া জীবন আর বিন্দু-নন্দলালের অস্বাভাবিক দাম্পত্যজীবনের কথকতাও উঠে এসেছে পুরোপুরি । এছাড়া উপন্যাস জুড়ে নির্বিকারভাবে ছড়িয়ে আছে অনেকগুলো মৃত্যু-বর্ণনা । আকাশের দেবতার কটাক্ষে (বজ্রপাতে) হারু ঘোষের মৃত্যু দিয়ে শুরু । গাছ হতে পড়ে ভুতো, সন্তান জন্মাতে গিয়ে সেনদিদি আর রথের দিন মরবেন এই কথা রাখতে গিয়ে যাদব- পাগলাদিদি- সবারই মৃত্যু যেন নিয়তির খেল । সবই যেন কোন এক বিরাট শিশুর পুতুল খেলা। . শশীকে ঘিরে রোমান্টিক সম্পর্কে আবদ্ধ কিশোরী মতি আছে , যে পুরাষাকারের প্রতি কৌতুহলী , পরবর্তী শশীর বন্ধু কুমুদের সাথে প্রেম আর পরিনয়ে আবদ্ধ হয় । শশীর প্রেমে উন্মাদিনী চরিত্র কুসুম আছে । যার ভালোবাসায় একসময় শশী পোষ মানে কিন্তু তাদের অবৈধ সম্পর্ককে তারা পরিনতি দিতে পারে না । পুতুল নাচের ইতিকথায় মতি আর ছন্নছাড়া যাত্রা দলে এক্টর কুমুদের প্রেম সংসারের বর্ননাও আছে । মতির গ্রামের সহজ সরল কিশোরী থেকে স্বামী সোহাগিনী প্রজাপতি হয়ে উঠার আখ্যান আছে । পুতুল নাচের ইতিকথায় আরো আছে বিকৃত যৌনতা আর সামাজিক অবক্ষয়ের বর্ণনা। #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃমানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (মে ১৯, ১৯০৮ - ডিসেম্বর ৩, ১৯৫৬) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি।পুতুল নাঁচের ইতিকথা তেমনি একটি উপন্যাস।চমৎকার বই।পড়তে পারেন আশা ভাল লাগবে। হাপি রিডিং....
Fiction
0
চন্দ্রমুখী-আশীফ এন্তাজ রবি। বুক মিভিউ কে জানি আমাকে বলেছিল যে এই লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর মত লেখে। বলেছিল গত বইমেলায়, সেই হিসেবে এই বই মেলায় কিনলাম। এই বইটা পড়ে তারে যে কি করতে ইচ্ছে করছে-বলা মুশকিল। লেখক পরিচিতিতে তার বিড়ি বা সিগ্রেট খাওয়া ছবি একদম বেমানান। একটানেই শেষ করা গিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফরিদ চরিত্রকে ভালো না বেসে পারা যায়নি। তবে বিদেশে থেকে দেশের এরকম গল্প না লিখে, বরঞ্চ বিদেশ স্থানে প্রবাসীদের নিয়ে লিখলে আমরা নতুন স্বাদ পেতাম।
Fiction
0
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ পৃ লেখকঃজাফর ইকবাল প্রকাশনীঃসময় প্রকাশনী ধরনঃবৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মূল্যঃ১২০ টাকা(রকমারি মূল্যঃ৯০) . একটি মহাকাশযানকে ঘিরে-যা কোনো এক সুদূর গ্রহ থেকে মহাকাশ পাড়ি দিয়ে ভ্রমণ করছে বহুদিন আগে মানুষের ছেড়ে আসা আদি-গ্রহ পৃথিবীর উদ্দেশে, পৃথিবীতে বাস করার উদ্দেশ্যে।প্রকৃতি বহু শতাব্দি থেকে পৃথিবীকে আবার বাসের যোগ্য করে তুলেছে  তাই শতাব্দি আগের ফেলে যাওয়া মানুষের আদি-বাসস্থান পৃথিবীতে ফিরে আসছে মহাকাশযানটি। . সে মহাকাশযানের ডিজাইন করেছে আধা মানব আধা রোবোটিক এক সত্তা, নাম তার গ্রাউল। তার বুদ্ধিমত্তা সাধারণ মানুষ থেকে উচ্চস্তরে। তাই তার দুর্বলতাও বেশি।তার ঘুম নেই, নিদ্রা নেই।কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক উপায় সব কাজ সুনির্দিষ্টভাবে চলতে থাকায় সে নিঃসঙ্গ অনুভব করে।তার এই নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য সে নিষ্ঠুর এক পরিকল্পনা করে।সে পরিকল্পনার ফলে মহাকাশযান এ শুরু হয় বিপর্যয়, শুরু হয় মহাকাশযান দখল নেওয়ার জন্য যুদ্ধ। . তাই সঠিক সময় আসার আগেই মহাকাশযানের মানুষকে জাগিয়ে তোলা শুরু হয়। কারণ হিসেবে সবাইকে বলা হয় যে, পৃথিবীতে মানুষ একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে যা তারা যে উন্নত সমাজ থেকে এসেছে তা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। তাই মহাকাশযানের মানুষকে এমন সমাজে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য জাগিয়ে তোলা হয়েছে এবং মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নেয়া হয়েছে যাতে মানুষ নিজেরা বোঝাপড়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব বেছে নেয় এবং মহাকাশযানকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু দেখা যায় মানুষ জড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধে, বিভিন্ন অঞ্চল দখল করার জন্য গড়ে তুলেছে সশস্ত্র বাহিনী। . সেই সময় ক্যাপসুল থেকে জাগিয়ে তুলা হয় কিহা ও লেনকে।কিহার বুদ্ধিমত্তা নিনীষ স্কেলে আট এবং লেনের বুদ্ধিমত্তা নিনীষ স্কেলে ছয়ের অধিক।br .br এই মহাকাশযানে শুধু তারাই বেচে থাকতে পারবে যাদের বুদ্ধি ও নৃশংস হওয়ার ক্ষমতা বেশি। কিহার বুদ্ধিমত্তা এই মহাকাশযানের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলেও সে নৃশংস নয়। কিহাকে প্রথমে মিয়ারা নামে একজন নেতার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে তাকে অনেক নৃশংস কাজ করতে বলা হয়। কি সেই কাজ? আট জন মানুষকে নিয়ে কিহা আর লেন মিয়ারার আস্তানা থেকে পালিয়ে যায়। . মিয়ারার কাছ থেকে পালিয়ে সে আশ্রয় নেয় লী নামের এক বৃদ্ধের কাছে।কিন্ত সেখানে ও সে ঠিকে থাকতে পারে না।ধরে নিয়ে আসা হয় তাদের। . কিহা কি পারবে অসম্ভব বুদ্ধিমান সে সত্তাকে বুদ্ধির খেলায় হারাতে? কিহা কি পারবে মহাকাশযানের মানুষ গুলোকে বাচাতে? নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি এই বুদ্ধিমান সত্তার কাছে পরাজিত হতে হবে থাকে?।এটা জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে এই উপন্যাসটি। #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃউপন্যাসের পুরো প্রক্রিয়ায় নানান যুক্তির উপর নির্ভর করে চললেও শেষ মুহুর্তে এসে মানবিকতাই হয়ে উঠে প্রধান। উপন্যাসটি আসলেই খুব সুন্দর। পুরো কাহিনীটি দেখানো হয়েছে কিহার দৃষ্টিতে।রহস্য বজায় রেখে লেখা হয়েছে বইটি। আশা করছি পড়লে আপনাদের ও ভাল লাগবে। হাপি রিডিং....
Science-Fiction
4
প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক কাজী আনোয়ার হোসেনের অসাধারন সৃষ্টি এক চরিত্র মাসুদ রানা। এই মাসুদ রানাকে নিয়ে গুপ্তচর বৃত্তীয় কাহিনী নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন রচনা করেছেন চার শতাধিক এর উপরে কাহিনী নিয়ে বইগুলো।মাসুদ রানা চরিত্রটিতে কাজী আনোয়ার হোসেন তুলে ধরেছেন প্রখর বুদ্ধিমান, গতি সম্পন্ন, শক্তিশালি , অকোতভয়, সাহসী প্রেমিক সাথে পুরুষত্ব। সম্পন্ন আমি ছোট বেলা থেকেই অনেক ভক্ত ছিলাম মাসুদ রানা সিরিজের। তার অ্যকশান ধর্মী থ্রিলার গুলো আমাকে সব সময় রোমাঞ্চিত করে এসেছে। মাসুদ রানা সিরিজের " রক্তের রং" বইটিতে রয়েছে ব্যাপক থ্রিলার আর চমকপ্রদ অ্যাকাশন। বইটি মুল কাহিনী যদি বলতে চাই তাহলে বলতে হয় ভারত – বাংলাদেশ- বার্মা সীমান্তের কাছাকাছি কোথাও এক জটিল ষড়যন্ত্রের আবাস পেয়েছেন জেনারেল রাহাত খান। তার ধারনা হচ্ছে” মুসলিম বাংলা” সংক্রান্ত গুজবের সত্যতা আছে কিনা। ষড়যন্ত্র বানচাল করতে দায়িত্ব অপর্ন করা হয় মাসুদ রানার কাছে ।বিশাল সমুদ্রের উপর ছোট এক ইয়েটে করে নয়শো মাইল পাড় হয়ে ইয়ানগন পৌঁছে মাসুদ রানা। জানতে পারেন প্রাচ্যের দুধর্ষতম দস্যু উ সেন বেচে আছে মারা যাননি প্লান ক্র্যাশে। বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন তিনি।রানা ছদ্দ পরিচয়ে ঢুকে পড়েন তার দলে। উসেন দলে আট হাজার ট্রেইনড গেরিলা রয়েছে। ষড়যন্ত্র বানচাল করতে হলে ওকে এদের মোকাবেলা করতে হবে। রানার শক্তি সমর্থ দিয়ে কিভাবে এই মিশন সফল কারেন তা জানতে পড়ে ফেলুন এই বইটি। বইটির পাতাই পাতাই পাবেন আ্যডভেঞ্চার আর নানা আ্যকশনের বণর্না। আশাকরি পাঠক অনেক রোমান্সিত হবে বইটি পড়ে। যাদের মাসুদ রানার বই ভাল লাগে অবশ্যই মিস করবেন না।
Thriller
1
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা জুলাই রিভিউ ২৭ বুক রিভিউ : বুকের মধ্যে আগুন লেখক : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রকাশনী : মাটিগন্ধা রেটিং : ৭/১০ ধরণ : সমকালীন উপন্যাস রকমারি মূল্য : ৯৬ টাকা স্বদেশ! এই শব্দটির মাঝে এমন কিছু আছে যা মনে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। যেন কোনো এক লুকোনো মমতা, ভালোবাসা আচ্ছাদিত করে রেখেছে। দেশমাতৃকার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে ছয় জন যুবক পা বাড়িয়েছিল অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে,যেখানে প্রতি মুহূর্তে রয়েছে নিষ্ঠুর মৃত্যুর হাতছানি।তবুও জানের পরোয়া না করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে নেমেছিল সব্যসাচী,অরিন্দম,রতনলাল,সুকুমার আর রফিক। সুকুমার সর্বকনিষ্ঠ,যে সবে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে।বয়স অল্প হলেও বাঙালীরা বুঝে গিয়েছিল,ইংরেজরা আর যাই হোক না কেন বাংলার বন্ধু না। তাই এই ছয় যুবকের মতো অসংখ্য তরুণ বিপ্লবী নেমে এসেছিল রণাঙ্গণে। কাহিনী শুরু হয় একটি ট্রেন ডাকাতির মাধ্যমে।অভিযানে অকস্মাৎ আক্রমণে গুরুতর আহত হয় সব্যসাচী। ভাগ্যের ফেরে কুন্তলা,ভানুমতী আর তিশনা এক মধুর স্পর্শ নিয়ে আসে তাদের কণ্টকাকীর্ণ পথে উৎসাহ দেয়ার জন্য। তিশনা আর কুন্তলার কমনীয়তা সহজেই চোখে পড়ে।কিন্তু ভানুমতীর মতো দেহোপজীবিনীকে আর কয়জনই বা পছন্দ করে???কয়জনই বা বুঝে তাদের ভালোবাসা মমতা???? এতগুলো মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা কি শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিল? নারীর পরোক্ষ বিপ্লব কি পেয়েছিল পূর্ণতা? ঘুরে আসুন সেই ইংরেজ শাসনের সময়টায় এই উপন্যাসের হাত ধরে, হয়তো আপনারো বুকে ও আগুন জ্বলবে, সেই আগুনে সমস্ত শত্রু পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। রকমারি লিংক:https://www.rokomari.com/book/91806
Fiction
0
বাংলা সাহিত্যে ‘থিওলকজক্যাল থ্রিলার’ এই কথাটি এর আগে বা এমন গল্প এর আগে সেভাবে লক্ষ্য করা যায়নি; ঠিক এই কথাটি লেখক ‘তাসরজ্জামান বাবু’ যখন ভূমিকা অংশে বলে দিয়েছেন তখনিই একটা আগ্রহ জন্ম নেয়; আবারো নতুন কিছু পেতে যাচ্ছি এই ভেবে। এবং পুরো গল্প পড়ে অবাক হতে হয়েছে এই যে, সত্যি একই সাথে ধর্ম, সায়েন্স, অকাল্ট, ফ্যান্টাসি, হিস্ট্রি, থ্রিলার, কালো জাদু এসবের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং তথ্যবহুল গল্প এবং একই সাথে পাঠক মহলের জন্য একটি উপহার ইতোপূর্বে কখনো পাওয়া হয়নি। তরুন এই লেখক একের পর এক পাঠক মহলে নতুন নতুন কনসেপ্ট এর সমন্বয়ে সারা জাগিয়ে তুলছেন যা সত্যি চাঞ্চল্যকর এবং একই সাথে খুব কঠিন।কিন্তু তিনি দেখিয়ে চলেছেন খুব সূক্ষাতিসূক্ষ্ম ভাবে। প্রথমে তার মৌলিকগ্রন্থ- ‘তৃতীয় অনুভূতি’ এর পর প্রকাশিতব্য ‘বিয়ন্ড দ্যা ম্যানমেইড ইউনিভার্স’ এবং তারপর এই তথ্যবহুল বই- ‘প্রজেক্ট হাজার-আল-ফালাসিফাহ’ সত্যি রোমাঞ্চকর। গল্পটির প্রধান চরিত্র ‘ফয়েজ’ কে বলা হয়ে থাকলেও আমার মাঝে মাঝে আমার মনে হয়েছে প্রধান চরিত্র তার শায়খ- আব্দুল মফিজ খুলনাভী।হুজুর খুলনাভী কে একজন রহস্যময় চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন লেখক প্রথম দিকে। এবং সর্বশেষ তার এই রহস্যের পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন শেষের দিকে। এর পেছনে লেখকে যে দূরদর্শিতা লক্ষ্যণীয়- গ্রামের মানুষদের সামনে হুজুর তার অতীতটুকু তুলে ধরলে সেখানে গ্রাম্য মানুষদের অসামঞ্জস্যতা তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এবং একই সাথে তার যে গুপ্ত কাহিনী সেটা প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।এই দিকটি সত্যি অসাধারলণ। কিন্তু গল্পে প্রধান চরিত্র ফয়েজ হয়ে থাকলেও আমার কাছে প্রধান চরিত্র হিসেবে ধরা দিয়েছে ড. আব্দুল মফিজ খুলনাভী।এর কারণ ফয়েজ এর অমর হওয়ার পেছনে প্রধান হাতিয়ার তার শায়খ। তাই এই দিকটির সাথে একমত নই।তবে গল্পের মাঝে যখন পাঠক মন স্থির করবে তখন এই দিকটি তেমন ধরা দিবেনা যেটা সত্যি একজন লেখকের জন্য বড় পাওয়া।কারণ গল্পের ট্রাজেডি ক্রমেই একের পর এক পরিবর্তন হয়ে চলছে যার জন্য এই ক্ষুদ্র পার্থক্য নিয়ে তেমন কৌতুহল পাঠকের থাকবেনা। রোদসী চরিত্রটি অতুলনীয়। প্রথমে যখন রোদসী কে আবার ফিরে পায় ফয়েজ তখন গল্পের ট্রাজেডি মোর নিতে শুরু করে অন্যদিকে।এখানে বলা সঙ্গত যে, ‘আসওয়াদ আল আবাসি’ কে যখন লেখক একজন সহকারী হিসেবে তুলে ধরেছিলেন তখনই আমার মনে হয়েছিল এই মানুষটি ধুরন্ধর স্বভাবের কেউ (ঠিক এই চিন্তা তখন গাড়ো হতে শুরু করে যখন রোদসী ফয়েজকে বলে যে তার চাচ্চু সম্পর্কে। আমার তখনই মনে হয়েছিল আবাসি এবং রোদসীর কোনো চক্রান্তের ধরা দিতে চলেছে ফয়েজ।) কিন্তু পরে রোদসীর এই চাচ্চুর আসল পরিচয় জানতে পেরে আবাসির প্রতি এই মনোভাবটুকু ক্ষীণ হয়ে যায়।এই দিকগুলো এবং ট্রজিডিগুলো সত্যি অব্যক্ত যা এই গল্পটি না পড়লেই নয়। এরপরেই আসে একটি নতুন টুইস্ট। সেই আল আবাসি। তারপর ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সামঞ্জস্যতা সত্যি অনেক তথ্যবহুল এবং জ্ঞানের জন্য ক্রমে যেন বাস্তব সম্মত করে তুলেছে গল্পটাকে। এই প্রথম একটি গল্প পড়তে হয়েছে দু-তিন’বার এর কারণ তথ্যগুলো নেটে খুঁজেছি এবং গল্পের প্যাটার্ণটাতে এগিয়েছি ।হাজার বছরের পুরোনো লাইব্রেরী অব আলেকজান্দ্রিয়া পুনরুদ্ধার এবং তার পেছনে লুকিয়ে থাকা ইতিহাসকে কেন্দ্র করে ঘটনা এগিয়েছে।সেখান থেকেই উঠে আসে কিমিয়া বিদ্যা। এই বিদ্যার মাধ্যমে জগতের শুরু থেকে এখন অব্দি যে নতুন নতুন উদ্ভাবন তা শেষ ফলকে উঠে এসেছে। অনেক সাসপেন্স এর সাথে এগিয়ে যাওয়া এই গল্পটি যদি পাঠক শেষ অবধি না যায় তাহলে তার রসবোধে কিছুটা তারতম্যে ঘনঘটা রয়ে যাবে।খুব ইচ্ছে একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবেঃ গল্পে্ল্যোখিত ক্যালকুশেন অর্থাৎ রোদসী তার প্রেমিকের সহকারী হিসেবে যে মাথ, ফিজিক্স এবং রসায়নের যে টার্মগুলো শিখছিল, সেগুলো লেখক তাসরুজ্জামান বাবুর একজন ছাত্র হিসেবে প্রাক্টিক্যাল বা ছবির মাধ্যমে শিখবো। প্রথমত, শতভাগ নিশ্চয়তা পাওয়া যায় এমন কোনো কিছু সত্যি দূর্লভ।তবুও তরুন এই লেখক চেষ্টা করেছেন তার শতভাগটুকু তুলে ধরার জন্য। দ্বিতীয়ত, পাঠকমহল এরকম একটি গল্প পেয়ে অনেক কিছু জানতে পারবে বলে আশা রাখছি এবং পাশাপাশি ধর্মের প্রতি যাদের ভিন্ন মনোভাব সেটা দুরিভূত হবে বলে আশা রাখছি। সবশেষ, হাইপোথিসিসগুলো ছিল অসাধারণ।কি আছে এই গল্পে তা জানতে পাঠক আপনাকে শুরু থেকে শেষ পড়তে হবে।
Thriller
1
কাশ্মীর। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উত্তপ্ত ও বিক্ষত জনপদ।৭১ বছর কাশ্মীরীরা আজাদির জন্য লড়ছে। একই সঙ্গে বিশাল ভারত তার সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখে উপস্থিত। কাশ্মীর ভ্যালি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়িত এলাকাগুলোর একটি। বিশ্ব দেখছে, প্রতিদিন কাশ্মীরে রক্ত ঝরছে- কিন্তু সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।গণভোটের বহুল প্রচারিত দাবিও উপেক্ষিত এখন। বাংলাদেশ ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক মিল থাকলেও বাংলাদেশিরা ঐ জনপদের ভৌগলিক, জাতিগত এবং রাজনৈতিক বিকাশধারার বিষয়ে কমই জানে। বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যম ও একাডেমিক জগতে কাশ্মীর বিষয়ে গভীরতর মনোযোগ প্রায় অনুপস্থিত। কাশ্মীর বিষয়ে ভারত ও পশ্চিমের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত বিবরণগুলোই বাংলাদেশে প্রশ্নহীনভাবে সর্বদা প্রচারিত হতে দেখা যায়। স্থানীয় নির্ভরযোগ্য একাডেমিক সূত্রগুলোকে ব্যবহার করে জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইতিহাসের চুম্বক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা ও একই সঙ্গে কাশ্মীর সংঘাতের আঞ্চলিক তাৎপর্য বুঝতে প্রয়োজন একটি কোষগ্রন্থ। বাংলাদেশের আগ্রহী পাঠকদের সেই শূন্যতা পূরণে ঐতিহ্যের একটি বই- সাংবাদিক গবেষক আলতাফ পারভেজ রচিত, এথনো- পলিটিক্স ইন সাউথ এশিয়া সিরিজের দ্বিতীয় বই- 'কাশ্মীর ও আজাদীর লড়াই'
Political
3
কাহিনী সংক্ষেপঃ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে জাল নোটের দৌরাত্ম। একদল জাল নোট ব্যবসায়ীর হাত থেকে সেই নকল টাকাটা পৌঁছে যাচ্ছে দেশের সাধারন মানুষদের হাতে, প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তারা, এদিকে মূল আসামী রয়ে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে। জাল নোটের এই তদন্তের ভার পড়েছে এককালের দক্ষ গোয়েন্দা মি. আলী রেজার উপরে; তার অতীতের কর্মদক্ষতার ফলাফল হিসেবেই অবসর জীবন থেকে তিনি আবার ফিরে এসেছেন স্পেশাল অফিসার হয়ে, জাল নোট তদন্তের সুরাহা করতে। আর এই তদন্তে তাঁর অধীনে কাজ করছেন তরুণ ইন্সপেক্টর ইলিয়াস। তিনমাস হয়ে গেলেও তেমন কোন অগ্রগতি হয়না জাল নোটের তদন্তে, তাই আদাজল খেয়ে লাগে ইন্সপেক্টর ইলিয়াস; অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে তাঁর হাতে আসে একটি সাঙ্কেতিক চিঠি, কিন্তু লাভ হয়না তাতে, ঘটনাচক্রে হারিয়ে যায় চিঠিটি। এরপর থেকে ইলিয়াস আরো সতর্ক। তার নিষ্ঠার পুরষ্কার হিসেবেই হয়তো সাঙ্কেতিক ভাষায় লেখা দ্বিতীয় চিঠির নাগাল পায় ইলিয়াস। বিচিত্র ভাষায় লেখা সেই চিঠিটির মর্মোদ্ধার করতে গিয়ে কালোঘাম ছুটে যায় ইন্সপেক্টরের। কিন্তু এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে। এক মুদির দোকানে জাল নোট লেনদেনের মাধ্যমে সন্দেহের তীর গড়ায় রিফিউজি জাফর আহমদের দিকে, তার বাড়ি তল্লাশি করে পাওয়া যায় আরো কিছু প্রমান। কিন্তু জাফর আহমদের মেয়ে রোকসানা আহমদ পিতার উপর আনীত এ অভিযোগ মানতে নারাজ। জাফর সাহেবকে গ্রেফতার করার পর ইলিয়াসের মনেও দন্দ্ব জাগে, নির্দোষ মানুষকে শাস্তি দেয়া হয়ে যাচ্ছে না তো? সে এগিয়ে আসে রোকসানার সাহায্যে। কিন্তু এক অপরিচিত আগন্তুকের কারসাজিতে রোকসানা ইলিয়াসকে ঠেলে দেয় চরম অপমানের মুখে, যার ফলে ইলিয়াসের চোখে দেখতে পায় তীব্র ঘৃনার আগুন, সেই আগুনে ঝলসে যায় তরুনী রোখসানার হৃদয়। এদিকে সাঙ্কেতিক চিঠির প্রাপকের নাম ঠিকানার সূত্র ধরে ইলিয়াস পৌঁছে যায় সদানন্দ ক্লাবে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে ক্লাবের মেম্বারদের। এদের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে আছে জাল নোট মামলার প্রধান কর্ণধার। ইলিয়াস কি পারবে তাকে খুঁজে বের করতে, নাকি প্রকৃত আসামীরা রয়ে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই? বই পরিচিতিঃ ‘জাল’ উপন্যাসটি ছিল প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস। তিনি ১৯৫৪ সালে এ উপন্যাস লেখা শেষ করলেও তার প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য-দীঘল বাড়ি’র সুখ্যাতি ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর বাক্সবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিল বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য মৌলিক থ্রিলার ‘জাল’। ১৯৮৬ সালে লেখক পুরো উপন্যাসটির পান্ডুলিপি আবার আগাগোড়া পড়ার পর বুঝতে পারলেন যে এই উপন্যাস তার সুনাম মোটেই ক্ষুন্ন করবে না, তখন তিনি উদ্যোগ নিলেন উপন্যাসটি প্রকাশ করার। ‘জাল’ এর প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮ সালে ‘আনন্দপত্র’ ঈদ সংখ্যায়। এরপর কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনার পর ১৯৮৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ যেহেতু এই বইয়ে লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতার কিছুটা মিশেল রয়েছে, তাই পড়ার সময় আলাদা একটা ভাললাগা কাজ করছিল। কাহিনীর অগ্রগতিও খুব সুন্দরভাবে হচ্ছিল বিধায় একটুও বিরক্ত লাগেনি পড়তে। আর সবচেয়ে মজা লেগেছে সাঙ্কেতিক চিঠির রহস্য উদ্ধারের অংশটা। তবে রচনার সময়কাল বেশ আগের হওয়ায় লেখার ভঙ্গীটা একটু অন্যরকম লেগেছে এখনকার তুলনায়। যেমন ইলিয়াসকে আপনি-আজ্ঞে দিয়ে উপস্থাপন করায় পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল তরুণ ইনসপেক্টর নয়, মুরুব্বিস্থানীয় কারো কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সর্বোপরি খুব ভাল লেগেছে উপন্যাসটি।
Thriller
1
ব ২০ জাফর ইকবালের একটি অনবদ্য উপন্যাস মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি অনবদ্য উপন্যাস হচ্ছে 'আমি তপু'। তপু নামের এক কিশোরের জীবনের খণ্ডচিত্র এতে উদ্ভাসিত হয়েছে সহজ, সরল ও সুখপাঠ্য লেখনীর মাধ্যমে। জীবনের গতিধারা কিভাবে একেক সময় একেকভাবে অকল্পনীয় পথে পাল্টে যায় তার স্পষ্ট ধারণা দেয় বইটি। উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে মূল চরিত্র তপুর জবানীতে। প্রতিটি মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা তার জীবনকে অত্যন্ত ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। কিশোরদের ক্ষেত্রে সেই প্রভাব আরও বেশি কার্যকর। আর সেই পারিপার্শ্বিক অবস্থার ক্রমপরিবর্তনে তপুর জীবনধারা কিভাবে কোন পথে গতিশীল হয় তাই মুখ্য হয়ে উঠেছে এই উপন্যাসে। তপুর বাবার মৃত্যুর পর তপুর জীবনে ঘটে যায় এক আকস্মিক পরিবর্তন। ক্লাস ফাইভে থাকতে যখন তপুর বাবা মারা যায় তার আগে তপু ছিল তার বাবা-মায়ের আদরের সন্তান, স্কুলের ফার্স্ট বয় আর এক স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকারী। কিন্তু, বাবার মৃত্যুর পর থেকে পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি। যে একসময় স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিল তিন বছরের ব্যবধানে পাস করাই তার জন্য ঝামেলা হয়ে উঠে। তার শরীরে থাকে বিভিন্ন ক্ষতচিহ্ন। সে অকথ্য গালিগালাজ করতে পারে এবং সবাই তাকে বেশ ভয় পায় কারণ তারা মনে করে যে ছেলেটি বাবার মৃত্যুর পর বখে গিয়েছে। কিন্তু, আসলে এমন কি হয়েছিল যে তপু এক মেধাবী ছাত্র থেকে রূপান্তরিত হয়ে বখাটেতে পরিণত হয়েছিল? এই কারণ জানতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে কেন তপুর মা তপুকে বলে, "বাপকে মেরে এসে এখানে বসে ঢং করিস? জানোয়ারের বাচ্চা।" তপুর বাবা আসলে মারা গিয়েছিলেন তপুর জন্য ক্রিকেট ব্যাট কিনে ফিরে আসার সময় গাড়ি একসিডেন্টে। তপুর মার যুক্তি হল যে, তপু যদি ব্যাট কিনে দেয়ার জন্য আবদার করত তাহলে তার স্বামী অসময়ে মারা যেত না। তপুর মার এই যুক্তি তপুকে ঠেলে দিল অন্ধকার কূপে। মায়ের অত্যাচারের কারণে তপুকে বাসস্থান হিসেবে বেছে নিতে হয় রান্নাঘরের স্টোররূম। তপুর মা তার বড় মেয়ে ঈশিতা আর বড় ছেলে রাজীবকে নিয়ে পরিবারকে নতুন আঙ্গিকে গুছিয়ে তুলেন যেখানে তপুর জায়গা হয় না। তপুর আপন বলতে তখন অবশিষ্ট থাকে দুলি খালা। তপুদের বাসায় অনেকদিন যাবত্ কাজ করে আসা এই দুলি খালাই তপুকে বেশিরভাগ সময় মারের হাত থেকে বাঁচান। দুলি খালার কথায় আমরা তপুর মা সম্পর্কে যা জানতে পারি তা হল, "তার অর্থ তার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। তোমার মা অসুস্থ। তোমারমা পাগলি। তোমার বাপ মরে যাবার পর তার মাথাটা পুরাপুরি আউলে গেছে। অন্য কেউ বুঝতে পারে না, আমি পারি। চোখ দেখলেই বুঝতে পারি।..... চোখগুলি জ্বলে তুমি দেখ নাই? তুমি খুব সাবধান বাবা- আমার কেন জানি মনে হয় কোন একদিন তোমার মা তোমারে খুন করে ফেলার চেষ্টা করবে।" তপুর মা তপুর শরীরে যেসব ক্ষতচিহ্ন সৃষ্টি করেন সেগুলোকে তপু লুকানোর চেষ্টা করে কিন্তু, সবসময় পারে না। তপু পড়ালেখায় মনোযোগী না কারণ তপুর ভাষ্যমতে, "আগে পড়াশোনার একটা ব্যাপার ছিল এখন সেটাও নাই, খাতা কলম বইপত্র না থাকলে মানুষ পড়াশোনা করে কেমন করে?" তপুর নিঃসঙ্গ জীবনে হঠাত্ একদিন আগমন ঘটে প্রিয়াংকা নামের একটি মেয়ের। তপুর জন্য নির্দিষ্ট করা সিটে স্কুলের নতুন ছাত্রী প্রিয়াংকা ভুলবশত বসে থাকায় তপু তাকে সরে যেতে বলে। সরতে রাজি না হওয়ায় তপু প্রিয়াংকার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু, কিছুক্ষণ পরেই তোফাজ্জল হোসেন সরকার তথা রাজাকার স্যারের বাংলা ক্লাসে তপু আর প্রিয়াংকাকে এক হতে হয় দিলীপের উপর শাস্তি বন্ধ করার জন্য। প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে ডাক পরার পর তপু সেই তোফাজ্জল স্যারের রাজাকারসুলভ আচরণ বর্ণনা করে। আরও কিছুদিনের মধ্যেই প্রিয়াংকা তপুর বান্ধবী হয়ে উঠতে থাকে। এরই মাঝে রাজাকার স্যারের বদলে ক্লাস নিতে আসেন প্রিন্সিপাল ম্যাডাম। রাজাকার স্যারের ক্লাসে যেই ব্যাপারটা কখনো ঘটে নি, তিনি সেটাই ঘটান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করে ছাত্রছাত্রীদের মন কেড়ে নেন সহজেই। তপুর সাদাকালো জীবন যখন একটু রঙিন হতে শুরু করে তখনই তার নামের সংযুক্ত হয় নতুন এক অভিধা 'চোর'। চুরি করে কিছু জমানো টাকা খুঁজে পেয়ে তপুর মা তপুকে বেদম প্রহার করেন। আর তারপর এক কাজের ছেলের মত জীবন শুরু হয় তপুর। তপুর বড় ভাই রাজীব তপুকে দিয়ে জুতা পরিষ্কার করানো, কাপড়- চোপড় ইস্ত্রি করানো শুরু করে। এসব সহ্য করতে না পেরে তপু বাসা থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু, কমলাপুর রেল স্টেশনে তাকে খুঁজে বের করে প্রিয়াংকা। আসলে ততক্ষণে প্রিয়াংকা তপুর করুণ জীবনযাপনের সব জেনে গিয়েছে। তাই সে বলে, "... তুই আমাকে একটা সুযোগ দে, আমি তোর আম্মু হব, তোর ভাই হব, বোন হব, তোর বন্ধুবান্ধব হব- দেখিস তুই, খোদার কসম!" এরপর বাসায় ফিরে আসে তপু। আবারো শুরু হয় পুরোনো জীবন। এরই মাঝে অভিনব এক গণিত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। এরপর নতুন এক জীবন শুরু হয় তপুর। শুধুমাত্র বাসার ভিতরেই সে ঠিক আগের মতোই থাকে। তারকথা বলার সঙ্গী হিসেবে থাকে সেই 'মিচকি' নামক নেংটি ইঁদুরটি। অবশ্য এখানে উল্লেখ্য যে, গণিত প্রতিযোগিতায় যেদিন তপু স্বর্ণপদক লাভ করে ঠিক সেই রাতেই তপুকে খুন করার চেষ্টা করে তার মা। যদিও শেষপর্যন্ত তিনি তা করতে পারেন নি। অবশেষে এক সময় তপুর মার ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। মৃত্যু ঘনিয়ে আসার ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে তপুর মা তপুকে আবার বুকে জড়িয়ে নেন। এভাবেই তপুর প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন হয়। একবার শক পেয়ে যেই মানুষটি তপুকে দেখতে পারেন নি, দ্বিতীয়বার শক পেয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে আসলেও তিনি পৃথিবীতে আর থাকার সুযোগ পান নি। উপন্যাসটি মূলত পাঠকদের মাঝে অভিনব এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। আমরা বখাটে বলে যেসব ছেলেকে ঘৃণা করি তারা কেন আজ এই পর্যায়ে এসেছে তা নিয়ে আমরা ভাবি না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেয় উপন্যাসটি। তপু ফিরে আসতে পেরেছে। কিন্তু, সবাই কি তা পারে? যারা ফেরার পথ খুঁজে পায় না তাদেরকে কি আমরা পথ খুঁজতে সাহায্য করি? সবার জীবনেই কি প্রিয়াংকার আবির্ভাব ঘটে? বাইরে থেকে আমরা যা দেখি তা সবসময়ই হয়তো সত্যি নয়। যা ভাবা যায় না তাও অনেক সময় ঘটে থাকে যদিও আমরা বুঝতে পারি না। উপন্যাসটিতে আরও কিছু ব্যাপার তুলে ধরা হয়েছে। তোফাজ্জল ওরফে রাজাকার স্যার ও প্রিন্সিপাল ম্যাডাম- এই দুটি চরিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের ও পক্ষের শক্তিকেও টেনে আনা হয়েছে আমাদের সামনে। যেখানে রাজাকার স্যার ক্লাসে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলোচনাই করতেন না, সেখানে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের রবীন্দ্র সাহিত্য চর্চা তার ছাত্রছাত্রীদের মাঝে নতুন এক অনুরণনের সূচনা করে। সহশিক্ষা ব্যাপারটি যেখানে তোফাজ্জল স্যার দেখতে পারেন না সেখানে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের আমরা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই উপন্যাসের এক পর্যায়ে আমরা জানতে পারি প্রিয়াংকার বাবা প্যারালাইজড আর মা মৃত। তপুর মনে প্রশ্ন জাগে কোনটি ভালো- শারীরিক অবশতা নাকি মানসিক? উপন্যাসটিতে আমরা কিশোর মনের কিছু গভীর চিন্তাচেতনার খোঁজ পাই। এর একটি উদাহরণ হল "আমাদের মারলে ব্যথাটা সহ্য করতে পারি, কিন্তু স্যার লজ্জাটা সহ্য করতে পারি না-" এখানে আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়। তপু যখন চোর হিসেবে ধরা পড়ে তখন তার বড় বোন ঈশিতা বলে, "ছিঃ তপু, ছিঃ", তখন পাঠকমন অজান্তেই ঈশিতাকে ধিক্কার দিয়ে উঠে, তপুকে নয়। নিজের দায়িত্ব পালন না করলেও অনেকে অন্যের দোষকে বড় চোখে দেখে এবং দোষী ব্যক্তিটিকে বৃহত্তর অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। ঈশিতা আর রাজীবের কি উচিত ছিল না তাদের ছোট ভাইটির জন্য একটি স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করা? কিন্তু তারা সেটা করতে পারে নি। করতে পারলে একটা কলমের জন্য তপুকে রাতের আঁধারে রাজীবের ঘরে যেতে হত না। তপুর বইখাতা কলম ছিল না। কেউ সেই অভাব পূরণ করেনি, অথচ পরীক্ষায় ফেল করার দোষটা তপুর ওপরেই বর্তায়। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার 'আমি তপু' উপন্যাসে আমাদের সামাজিক জীবনের নানা অসঙ্গতি তো তুলে ধরেছেনই, সেই সাথে মানবমনের বিকাশের জন্য কি প্রয়োজন তাও তপু চরিত্রটির সৃষ্টি করে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন। শুধু প্রতিভার জোরেই মানুষ প্রতিভাবান হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে না, বরঞ্চ দরকার হয় অনুপ্রেরণার অফুরন্ত স্রোতধারার তাও আমরা উপলব্ধি করি। তপুর জন্য মূলত প্রিয়াংকাই সেই অনুপ্রেরণার যোগান দেয়। 'আমি তপু' উপন্যাসের পঠন পাঠকমনকে এক নতুন জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। চিরায়ত সাহিত্যের গুণসম্পন্ন এই কিশোর উপন্যাসটি তাই সবার জীবনকে আলোকিত করার ক্ষমতা রাখে।
Childrens-Book
2
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_ডিসেম্বর উপন্যাসঃ রাজু ও আগুনালির ভুত লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রকাশনীঃঅনুপম ধরনঃশিশু কিশোর মুল্যঃ১৮০ টাকা কাহিনী সংক্ষেপঃ দুপুর বেলার দিকে রাজুর মনে গভীর ভাবের জন্ম নেয়। তখন সে গভীর মনোযোগ দিয়ে মাথার পেছনে হাত রেখে আকাশে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তা করে। তার বয়স মাত্র ১১ বছর। কিন্তু এই মন খারাপের সময়ে তার দিকে কেউ তাকালে মনে করবে নিশ্চিত তার পেটে ব্যাথা কারন তার চোখ কুচকানো থাকে ঐ সময়ে। তাকে কেউ অত জিজ্ঞেস ও করেনা। অন্যদিকে সাগর হলো রাজুর ছোট ভাই। কিন্তু স্বভাবে একদম অন্যরকম। বয়স মাত্র ৭ বছর হলেও ধৈর্য অসীম। একনাগাড়ে মানুষকে প্রশ্ন করে যেতে পারে কোন থামাথামি নেই। রাজু আর সাগরের সম্পর্ক আপন ভাই এর হলেও ভেতরে পুরোপুরি দা কুমড়া সম্পর্ক। দুজনের কেউ পছন্দ করেনা একে অপরকে। ছোট্ট সাগর সারাক্ষণ বিরক্ত করতে থাকে রাজু কে। আর কোনভাবেই তাকে বশে আনা যায়না। রাজু তার উপর এতোটা বিরক্ত যে মাঝে মাঝে চিন্তা করে আছাড় মেরে মেরে ফেলার। আর এরকম খুনসুটি অথবা খুব সাংঘাতিক ব্যাপার নিয়েই তাদের সময় গুলো কেটে যায়। রাজু এবং সাগর দুজনের বাবা মা এখনো বেঁচে আছে। কিন্ত তাদের মধ্যে সমস্যা হলো সারাক্ষণ তারা ঝগড়া করে কাটিয়ে দেয়। যদিও তারা তাদের সন্তান কে বুঝতে দিতে চায়না কিন্তু তারা এতো পরিমান ঝগড়া করে যে ছোট সাগরও একসময় বুঝতে পারে এবং তার অনেক খারাপ লাগে এই ভেবে যে, বাবা মা বুঝি ডিভোর্স দিয়ে দিবে একজন আরেকজন কে। এরকম ঝগড়াময় দিনের মধ্যে একদিন তাদের বাসার দরজা তে কে যেন শব্দ করছিলো। দরজা খোলা মাত্র অনেক চমকে উঠলো সবাই। কারন আজগর মামা এসেছে। আজগর মামা কে দেখে সবথেকে বেশি খুশি হলো রাজু এবং সাগর কারন তারা জানে যে মামা আসলেই বাসার সবাই এক কাতারে দাড়িয়ে বন্ধু সুলভ আচরন করে। আজগর মামা বাচ্চাদের জন্য খেলনা সহ বড়দের জন্য ও কেনাকাটা করে আনে, তাই কারোরই মন খারাপের সুযোগ থাকেনা। এই মানুষ টা কিভাবে যেন সবাই কে হাসিখুশি রাখে এবং তার সামনে মন খারাপের অবকাশ থাকেনা কোনমতেই। কিন্তু এইবার বেড়াতে এসে মামা ২ ভাইকে গ্রামে নিয়ে যেতে চাইলো এবং যেহেতু সাগর এবং রাজুর পরীক্ষা শেষ তাই বাধ্য হয়ে তাদের যেতে দিতে হলো। আজগর মামা এমনিতেই অনেক মজার মানুষ তার উপর শুরু থেকেই বিভিন্ন মজার ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। এরপর যখন তারা গ্রামে পৌছালো তখন হঠাৎ আজগর মাম তাদেরকে রেখে অন্য জায়গায় চলে যেতে হলো। কি হবে এখন তাহলে?? এই ২ জন আদৌ কি মামা কে ছাড়া থাকতে পারবে?? নাকি নতুন কোন সমস্যা তে নিজেদের জড়িয়ে ফেলবে?? আর আগুনালি ই বা কে?? ঐ গ্রামে কি সত্যি ই কোন ভুতের বসবাস রয়েছে?? যদি থেকেও থাকে তাহলে তার খপ্পরে পড়বে না তো দুই ভাই? পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ বইটি আর ১০ টা কিশোর উপন্যাস এর মতোই বিভিন্ন আ্যাডভেন্ঞ্চার দিয়ে পরিপুর্ন কিন্তু শেষ টা অন্য গল্পগুলোর মতো নয়। শেষে যে রোমান্টিক কাহিনীর বর্ননা রয়েছে তা যেন পুরো উপন্যাস টিকে অন্য জায়গাতে দাড় করিয়েছে। খুব ভালো লেগেছে বইয়ের প্রতিটি চরিত্র। আরো ভালো লেগেছে রাজুর দুঃসাহসিকতা। সবমিলিয়ে বলবো অসাধারন একটি বই।
Childrens-Book
2
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-অাশাবরী লেখক-হুমায়ূন আহমেদ ধরন-উপন্যাস মূল্য-১২০ পৃষ্ঠা-১০২ প্রকাশনী-সময় আশাবরী, একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। লেখকের অনেক গুলো জীবনবাদী উপন্যাসের মধ্য আশাবরী অন্যতম। উপন্যাস রচিত হয়েছে উত্তম পুরুষে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র রেনু। মা, বাবা, ভাই, বোন নিয়ে একটি পরিবারে স্থির চিত্র। লেখক এই পরিবারের সব গুলো মানুষের দ্বারা এঁকেছেন একটি চিত্রপট। যাতে ফুটে উঠেছে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কের টানপোড়ন, নিত্য নতুন সঙ্গী অভাববোধ আর দৈন্য। আর এ পরিবারের সব গল্প বলে গেছে রেনু। তার নিরুদ্দেশ বাবার গল্প, রসিকতা পূর্ণ ভাইয়ের গল্প, অসম্ভব রূপবতী বোনের গল্প এমনকি সংসার লক্ষী মা এবং সব কিছু বুঝে না বোঝার ভান করা নিজের গল্পও। রেনুর বাবা প্রায়ই নিরুদ্দেশ হন। আর একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা কতোদিন নিরুদ্দেশ থাকার ফলে পরিবারের মানুষ গুলো যে কি পরিমান ভোগান্তির শিকার হয়, লেখক বোধহয় তাই দেখিয়েছেন। একদিকে বলতে গেলে রেনুর বাবার এই নিরুদ্দেশ হওয়ার কারনেই হয়তো উপন্যাসের পরিনতি হয় খুবই করুন। রেনুর বাবার নিরুদ্দেশ হওয়ার সময়, সংসারের হাল ধরতে হয় রেনুর ভাইকে। সদা সহাস্যমুখের চরিত্র রেনুর ভাই। সে সময়, সবাইকে সব কিছু থেকে ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। পরিবারে কোন কিছুর চাপ কারো উপর ফেলতে দেয় না। কিন্তু তা কি সম্ভব হয়.. এসকল দুঃখ কষ্ট ভেদ করেই তাদের চলতে হয়। এভাবেই একের পর এক ঘটনার বর্ণনায় উপন্যাস সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। তাতে পাঠক পরিচিত হয় কর্তাহীন, দৈন্যদশায় পতিত এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিনিয়ত সংগ্রামের সাথে। কি করে ভান করে কাটিয়ে দিতে হয় তাদের সকাল, দুপর, রাত এমনকি আরো একটা নতুন দিন। তার মাঝে থাকে বেশ কিছুটা হাসি খুশির ছলনা। এই সুখের চিহ্ন গুলোর মধ্যেই চলে আসে দুখের পরশ। রেনু তার জবানিতেই বলে যায়, সে সব দুঃখগাথা, করুণ পরিনতির কথা। এর মাঝে নিজের চাওয়া, পাওয়ার কথাও বলে যায়। নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনে যে জিনিসটার ছোঁয়া কখনো সুখের পরিনতি পায় না তা হলো, প্রেম। তবুও তাদের জীবনে প্রেম আসে। সুপ্ত অগ্নিটাকে, আরো একটু করে উসকে দেয় সে অব্যক্ত প্রেম। দীনতা, দৈনতায় কাটিয়ে দেওয়া মানুষগুলো এবার বোধ হয় আর পারে না। রিক্ততায় মিশে যায় একেবারে। হুমায়ুন আহমেদ এর নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তের জীবন পটভূমি করে রচিত উপন্যাস গুলোর মতোও আশাবরীর শেষটা বেশ কষ্টদায়ক। মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়নের আচড়ে গঠন হলো আশাবরী। এসকল গল্পের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে লেখক বেশ ভালোই পারেন। অনুভূতির কথা কি বলা যায়! একেবারে প্রথম লাইনেই লেখক এ গল্পের দৈন্যতায় প্রকাশ করেছেন এভাবে, "জানেন আমাদের বাসায় গত তিন মাস ধরে কোন আয়না নেই। সত্যিই নেই।" কতোটা দূরাবস্থা হলে, কোন সংসারের এ হাল দেখতে পাওয়া যায়! একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখ দুখের গল্প, তাদের অভাব অনটন, প্রতিদিনকার সংগ্রাম, লেখকের লেখনী আর বর্ণনা এতে পরিপূর্ণ প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। সব কিছুর মিশ্রনে লেখকের হাতে ফুটে উঠেছে মধ্যবিত্তের আরো একটি আখ্যান। প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের মাঝে মুখে হাসি ফুটিয়ে, নতুন পায়ের ছাপ ফেলতে হয় তাদের। হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়।সাবলীল ঘটনার বর্ননা আর সহজ ভাষায় লেখার কারণে হুমায়ূন আহমেদের বই এর তুলনা নেই। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনিই পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও হুমায়ূন আহমেদ সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। রেটিং-৫/৫ রকমারি লিংক- https://www.rokomari.com/book/1328/আশাবরী
Fiction
0
#রিভিউ বইয়ের নামঃ বাজিকর লেখকঃ নাবিল মুহতাসিম প্রকাশনঃ বাতিঘর প্রকাশনী পৃষ্ঠাঃ ২৫৩ মূল্যঃ ২৫০ টাকা প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এডওয়ার্ড স্নোডেনের কথা মনে আছে তো! সিআইডির সেই পালাতক এজেন্ট। যে বিপুল তথ্য ফাস করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এবার ভয়াবহ তথ্য চুরি করে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সিআইডির এজেন্ট কার্ল হাসান সেভার্স। যে তথ্য প্রকাশ পেলে পুরো দুনিয়া কেঁপে উঠবে। বাংলাদেশে এসে কি ঠিক করলো! নিজেকে শত্রুর হাতে তুলে দিলো না তো! ইউক্রেনের মাটিতে পরষ্পরের মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকা আর রাশিয়া। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে একটা চক্র। এই অবস্থায় ইউক্রেনের আকাশ থেকে হাইজ্যাক হলো বাংলাদেশি বিমান। বিমানের যাত্রী কারা জানেন? প্রধানমন্ত্রীর কন্যা অ্যানিলা ও দেশসেরা এজেন্ট বাজিকর জনি। তাদেরকে জিম্মি রেখেছে একটা দল। জিম্মি উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশের অতি গোপনীয় একটি এজেন্সির বাছাই করা ছয়জন এসপিওনাজ এজেন্টকে পাঠানো হলো। মিশন শুরু করার আগেই সেফহাউসে এমবুশে মারা গেলো পাঁচজন দুর্ধর্ষ এজেন্ট। বেচে গেলো টিমের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য আহাদ। যে এখনো এজেন্ট হতে পারে নি। অপারেটিভ। ট্রেনিং চলছে। এমন একজনের উপর পুরো মিশনের দায়িত্ব এসে পড়লো। তবে আহাদ যে তার চেষ্টায় কমতি করবে না সেটা বলাই যায়। কারন রাস্তার ফুটপাত থেকে তাকে তুলে এনেছিলো এই বাজিকর জনিই। সেই জনি আজ বিপদে। কিন্তু কিভাবে অগ্রসর হবে সে? যেখানে রাস্তাঘাটই চেনে না সেখানে এতবড় মিশন কমপ্লিট করা অলিক কল্পনা ছাড়া কি হতে পারে? তাছাড়া জমা হয়েছে একগাদা প্রশ্ন। কোন গ্রুপ হাইজ্যাক করলো প্লেনটা? তাতে তাদের স্বার্থ কোথায়? নীল স্যুট আর গ্যাস মাস্ক পড়া এই কর্ণেল সেবাস্তিয়ান কে? কি তার পরিচয়? এত ক্ষমতা কার কাছ থেকে পায় সে? আমেরিকা? রাশিয়া? নাকি এর পিছনে হাত আছে মহাশক্তিধর কোনো সংস্থার! এই মিশনের মুল উদ্দেশ্য কি? শুধুই কি জিম্মি উদ্ধার? নামকরনঃ বাজিকর একটা উপাধি। যেটা একটা ট্রেডিশন। এক দেশে একজনই বাজিকর হয়। দেশের সবচেয়ে সেরা এজেন্টকে বলা হয় বাজিকর। একজন বাজিকর যদি রিটায়ার করে বি স্কিলে অন্য স্পাইয়ের কাছে হেরে যায় বা হেড টু হেট লড়াইয়ে অপর এজেন্টের হাতে মারা যায় তাহলে সেই জয়ী স্পাই বাজিকর খেতাব পাবে। পড়ার শুরুতে মনে হচ্ছিল বাজিকর জনি যখন জিম্মি তখন গল্পটার নাম বাজিকর রাখা কি দরকার। কিন্তু গল্পটা আসলে বাজিকর জনির না। একজন সামান্য অপারেটরের বাজিকর হয়ে ওঠার গল্প। বইটা শেষ করার পরে মনে হবে এটাই এই বইয়ের জন্য পারফেক্ট নাম। ব্যাক্তিগত মতামতঃ ছোটবেলা থেকে মাসুদ রানার ভক্ত। মাসুদ রানার বাইরে বাংলায় এসপিওনাজ নভেল পাই নি। এটা পুরোপুরি একটা এসপিওনাজ নভেল। তবে ভিন্ন স্বাদে ভালোই লাগলো। পুরো বইটা টানটান উত্তেজনা নিয়ে শেষ করছি। টুইস্ট খুব বেশি ছিলো তা বলবো না কিন্তু যা ছিলো তাতেই যথেষ্ট। লেখকের লেখনি ছিলো অসাধারন। একশনের বর্ণনাগুলো চমৎকার ছিলো। বানান ভুল খুব চোখে পড়ে নি। এক জায়গায় বাজিকর জনির স্থানে বাজিকর রাসেল লেখা হয়েছে। বইয়ের ফ্লাপেও ভুল ছিলো একটা। সেখানে বাজিকর জনির স্থানে বাজিকর আহাদ লেখা হয়েছে। সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর একটা নভেল। যারা আমার মত একসময় মাসুদ রানার ডাইহার্ড ফ্যান ছিলেন বা আছেন তাদের জন্য বইটা পড়া বাধ্যতামুলক। এবছর বইমেলায় আসা বইগুলোর প্রায় প্রত্যেকটি বইয়ের প্রচ্ছদ নজর কেড়েছে। বাজিকর তার ব্যাতিক্রম না। এজন্য নিউটন ভাইয়ের ধন্যবাদ প্রাপ্য।
Thriller
1
নাথিং লাস্টস ফর এভার লেখক-সেডনী শেলডন অনুবাদক- অনীশ দাস অপু মূল্য-২৩৪৳ পৃষ্ঠ-২৮৮ অনিন্দ্য প্রকাশ ধরণ - মেডিকেল থ্রিলার কাহিনী : তিন নারীডক্টর। রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেয় এমবারকাডোরো হাসপাতালে। সানফ্রানসিসকোর একটি ব্যস্ত হাসপাতাল। ড. পেগি টেলর। পিতা ডক্টর, নানা দেশ ঘুরেছেন বাবার সাথেই। শৈশবসঙ্গী আলফ্রেড। প্রথম প্রেম ও বটে। নিজেকে তার কাছে সম্পূর্ণ সপেই দিয়েছিলেন। এক সময় সে ধোঁকা দেয় পেগি কে। পেগির এক রোগী মৃত্যুবরণ করেছিল কিন্তু তার মৃত্যুর পরে যখন জানা গেল সে এক মিলিয়ন ডলার দিয়ে গেছে ডা. পেগিকে, সবাই মেয়েটিকে সন্দেহ করতে শুরু করল। যে ব্যক্তি পেগি কে দেখতে পারত না সে কেন তাকে এত টাকা দেবে???খুনের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল ডা. পেগি টেলরকে। ডা. ক্যাট হান্টার। সৎ পিতার কাছে নির্যাতনের স্বীকার এই মেয়েটি প্রতিজ্ঞা করেছিল জীবনেও কোনদিন কোনো পুরুষ কে কাছে ঘেষতে দেবেনা। কিন্তু এক সময় সে প্রেমে পড়ে গেল এক সুদর্শন যুবক ম্যালোরির, মহাধুর্ত লোক, হাসপাতালের অধিকাংশ নারীকে শয্যাসঙ্গিনী বানিয়েছে এবং বাজী ধরে ক্যাট এর প্রতিজ্ঞা ভেঙেছে আর ক্যাট?? ঠিক এরকম সময় ক্যাট আর তার ভাইয়ের পেছনে লাগে এক ভয়ানক ব্যক্তি। ডা. হানি ট্যাফেট। ট্যাফেট ফ্যামিলির ছোট মেয়ে, নার্স হতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারের ট্যাগ তাকে বাধ্য করে ডক্টর হতে। বড় বোন, বাবা, মা তাদের মত কিছুতেই নিজের অবস্থান বাড়াতে পারছিলনা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের শরীর কে জিম্মি করে ফেলে সে। পুরুষ কে নিজের শরীরের ফাঁদে ফেলে কাজ হাসিল করে। কি আছে এর ভবিষ্যৎ??? হানি একজন ডাক্তার যদিও ডাক্তারির ড ও সে জানে না। তার রোগী দের কি হবে??? তিন নারীকে নানা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এদিকে গল্পে দুই জন ম্যালোরির আগমন। এক জন পেগির জীবনে, অন্যজন ক্যাটের। কে ভালো কে মন্দ???পেগি খুন কি আসলেও টাকার জন্য করেছিল?? নাকি অন্য কারন??? পাঠ-প্রতিক্রিয়া: মেডিকেল থ্রিলার এবং স্বভাবতই এডাল্ট কন্টেন্ট এ পরিপূর্ণ। তারপর ও সাস্পেন্স, থ্রিল ভালোই। আমার ধারণা আর সবার মত পেগি চরিত্র সবার ভালো লাগবে। বিরক্তিকর চরিত্র হানি। ক্যাট মাঝামাঝি। অনুবাদ ভালো। তবে দুটো ম্যালোরি এসে গল্প গোলমেলে করে দেয়। কোনটা কোন ম্যালোরি, সেটা একটু ঝামেলা হতে পারে। প্রথম দিকে পড়ে গতানুগতিক উপন্যাস লাগতে পারে। পাতা উল্টানোর সাথে সাথে থ্রিল বাড়বে আর শেষ দেখার আগ্রহ। রেটিং :৪.৫/৫ রকমারি ঃhttps://www.rokomari.com/book/14934/নাথিং-লাষ্টস-ফর-এভার
Thriller
1
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগীতা #Book_Review বিজ্ঞান, কল্পনা ও রিটিন ৮০’র দশকের শেষ কিংবা ৯০ দশকের মাঝামাঝি হবে। সঠিক খেয়াল নেই। প্রতিমাসে তখন ‘বিচিত্রা’র সংখ্যা রাখা হতো বাঙ্গালীর অনেকের ঘরে। অনেকেই পড়তেন সেই ম্যাগাজিন। বিশেষ করে ঘরের গৃহিনীরা সারাদিনের সংসারের কাজ শেষে অবসর সময়ে বসতেন বিচিত্রা নিয়ে। সেরকমই একটি বিচিত্রা সংখ্যায় একদিন প্রকাশিত হলো এক গল্প। নাম “কপোট্রনিক ভালোবাসা”! যেমন অদ্ভুত নাম, তেমনি অদ্ভুত তার বিষয়বস্তু। কি না কি এক রোবটের প্রেম কাহিনী। স্বাভাবিকভাবেই শুনতে বেশ হাস্যকর শোনাল। কিন্তু অবাক কান্ড! বাংলাদেশের তৎকালীন সেই মধ্যবিত্ত সমাজে হঠাৎ করেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠল সেই গল্প। সবার কাছে ভালো লেগেছে সেটা। ব্যাস! লেখক পেলেন উৎসাহ! পরপর কয়েকটি বিচিত্রা সংখ্যায় আরো বের হলো কয়েকটি গল্প! এভাবেই লেখক লিখতে লিখতে একদিন বিদেশে গেলেন পড়াশোনার খাতিরে। তখন অন্যদিকে এদেশে বের হলো তাঁর প্রথম গ্রন্থ “কপোট্রনিক সুখ দুঃখ”! জী হ্যাঁ! আমি কথা বলছি এই সময়ের জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল’কে নিয়ে! জাফর ইকবাল স্যার আমেরিকায় গিয়েও লেখা থামাননি। নিয়মিতই লিখে গেছেন ও যাচ্ছেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী! স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশীয় সাহিত্যে প্রথম সফল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বা সায়েন্স ফিকশন লেখেন হুমায়ুন আহমেদ (তোমাদের জন্য ভালোবাসা)! তবে বাংলা সায়েন্স ফিকশন যার হাত ধরে হাইপার স্পিডে ছুটে গেছে, তিনি হচ্ছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি তার প্রথম সায়েন্স ফিকশন গল্প 'কপোট্রনিক সুখ দুঃখ' লিখেছেন। রোবটিক মস্তিষ্ক 'কপোট্রন'-এর প্রবক্তা তিনি। যে কপোট্রন ফিকশনের দেয়াল টপকে স্থান পেয়েছে দেশের অনেক বিখ্যাত কবির কবিতাতেও। দেশজুড়ে তার সায়েন্স ফিকশনের রয়েছে অগণিত ভক্ত। টুকুনজিল, বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা মহা আবিষ্কার, সায়রা সায়েন্টিস্ট, জলমানব, ওমিক্রনিক রূপান্তর, ক্রোমিয়াম অরণ্য, নয় নয় শূন্য তিন, যারা বায়োবোট ও পৃ তার জনপ্রিয় কয়েকটি সায়েন্স ফিকশন। ২০১৭ সালে তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন সায়েন্স ফিকশন গ্রন্থ “রিটিন”! সায়েন্স ফিকশন কি? ইংরেজি শব্দ Science Fiction শব্দের বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। অর্থাৎ যেধরণের কাল্পনিক রচনায় বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলো বেশী থাকে তাকে সায়েন্স ফিকশন বলে। তবে মজার ব্যাপার হলো, সত্যিকারে ব্যাপারটা অত সোজা না। আমাদের দেশে সায়েন্স ফিকশনের অত প্রচলন না থাকলেও আন্তর্জাতিক সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশনের চর্চা বহুবছর ধরে হয়ে আসছে। এমনকি কেউ কেউ সায়েন্স ফিকশনকে ভবিষ্যত দর্শানোর রচনা বলেও মনে করে থাকেন। সায়েন্স ফিকশন লেখা অন্য সকল লেখা থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। থ্রিলার, গোয়েন্দা, হরর, এডভেঞ্চার... এরা প্রায় সমগোত্রীয় হলেও সায়েন্স ফিকশন এদের সবার থেকে আলাদা! লেখক তাঁর কল্পনাশক্তি ও শিক্ষাগত প্রতিভার একটা বিশাল অংশকে কাজে লাগিয়ে সায়েন্স ফিকশন লিখে থাকেন। তাছাড়া এই ধরণের লেখার দু একটি বৈশিষ্ট্যও থাকে। যেমনঃ বিজ্ঞানের নীতিমালার উপস্থিতি, সহজবোধ্যতা ও যৌক্তিক কল্পনা। বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন লেখার গল্পটা ছোট হলেও, ইতিহাসটা ছোট না। অনেক আগে থেকেই এই সাহিত্যের চর্চা হয়ে আসছে আমাদের সাহিত্যে। কিন্তু সে গল্প আজ না, অন্য কোন দিন বলবো! প্রসঙ্গ-রিটিন রিটিন বইটি এই বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় “তাম্রলিপি” প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে! গল্পটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে এক অদ্ভুত পৃথিবীকে ঘীরে। সেই পৃথিবীতে রোবটের পাশাপাশি ২ ধরণের মানুষ বাস করে। ক্যাটাগরী এ মানুষ ও ক্যাটাগরী সি মানুষ। বাবা মা জেনেটিক ডিজাইনের মাধ্যমে তাঁদের সামর্থ অনুযায়ী বাচ্চার ক্যাটাগরী তার জন্মের আগে থেকে ঠিক করে ফেলতে পারেন। ক্যাটাগরি এ মানুষেরা সমাজের সকল সুযোগ সুবিধা পায়। কিছুটা উচ্চবিত্ত ধরণের হয় তাঁরা। আর ক্যাটাগরি সি মানুষেরা হয় কিছুটা নিম্নবিত্ত। তাঁরা কোন সামাজিক সুবিধা পায় না। মৌলিক অধিকারও তাঁদের ক্ষুণ্ণ হয়! লেখাপড়া করার, কোন ভালোকাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার অধিকার তাঁদের থাকে না। ঠিক এমনই একটি পৃথিবীতে জন্ম হয় রিটিনের। উপন্যাসে তাঁর বয়স ২৫ এর মত। মানুষ হিসেবে সে সি ক্যাটাগরির। কিন্তু তাঁর আইকিউ লেভেল অনেক বেশি। তাঁর খুব পড়াশোনা করার ইচ্ছা! গল্পের শুরুতেই আমরা দেখতে পাই রিটিন একটি বড় অফিসে বসে আছে। তাঁর সাথে কথা বলছে একজন মানুষরূপী রোবট। রোবটটিকে সে বোঝানোর চেষ্টা করে, তাঁকে কাট্যাগরি এ তে ট্র্যান্সফার দিতে। কিন্তু রোবট কোনমতেই রাজী হয় না। রিটিন তখন জেদের বসে মেটাকোড দিয়ে রোবটটিকে অচল করে ফেলে। তারপর ঘটনাক্রমে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে খুজে পায় তার শরীরের মধ্যে থাকা ট্রাকিওশান নামক ট্র্যাকিং ডিভাইসের মাধ্যমে। বন্দি হয় রিটিন। জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখিন হয়। তারপর সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে সে যোগ দেয় এক অদ্ভুত বিপ্লবী দলের সাথে। সেখান থেকে রিটিন পায় এক মহান দায়িত্ব। কি সেটা? জানতে হলে পড়তে হবে পুরো বইটি! রিটিন-পাঠ-প্রতিক্রিয়া কোন বইই ১০০% ভালো হয় না। আবার ১০০% খারাপও হয় না। মিশ্রতা নিয়েই বই। তবে রিটিনের ক্ষেত্রে একটা কথা না বললেই না, মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার অনেকদিন পর পুরানো ফর্মে ফিরেছেন। ভালো লাগা দিকগুলো... ১. বইটির কাহিনী ভালো। অনেক পরিণত প্লট। ২. বেশ চমৎকার গতি ছিল কাহিনীতে। ৩. জাফর ইকবাল স্যারের গত কয়েকটি সায়েন্স ফিকশন বইয়ের গল্প কিছুটা কিশোরোপন্যাস ধরনের হলেও এবারেরটা সব বয়সী পাঠকদের জন্যই গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। ৪. গল্পে কিছু মারামারির জায়গা আছে, সে সব জায়গাতে লেখকের বর্ণনাগুলো বেশ ভালো লেগেছে। ৫. অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, সায়েন্স, প্রেম... সবমিলিয়ে গল্পে মশলা ভালো ছিল। ৬. বইটির প্রচ্ছদটি বেশ আকর্ষণীয়। ৭. বাঁধাই, কাগজের মান, ছাপাও বেশ চমৎকার। খারাপ লাগা দিকগুলো... ১. জাফর ইকবাল বা হুমায়ুন আহমেদ স্যারদের সব থেকে বড় দূর্বল দিক হচ্ছে তাঁদের বইয়ের দাম। মোটামোটা অফসেট কাগজে ১২ইঞ্চি ফন্টের লেখা ও চমৎকার প্রচ্ছদের ফলে তাঁদের বইয়ের দাম খুব বেশি রাখা হয়। অথচ তাঁদের, বিশেষ করে জাফর ইকবাল স্যারের পাঠকভক্তদের ভেতর প্রায় ৮০%-ই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী। যাদের পক্ষে ১৫০ পৃষ্ঠার একটি বই ৩০০ টাকা দিয়ে কেনা শুধু কঠিনই না, কারও কারও কাছে অসম্ভবও হয়ে পড়ে। ঢাকা শহর বাদে বাংলাদেশের মফঃস্বল শহরের অনেক বইপড়ুয়া ছেলেমেয়ে তাঁর বই কিনতে পারে না শুধুমাত্র এই অতিরিক্ত দামের কারণে। এই দূর্মূল্যের বাজারে ৩০০টাকা দিয়ে ১৫০ পৃষ্ঠার বই কেনা অনেকটাই বিলাসীতার উদাহরণ। এই বেশি দাম হওয়ার কারণেই আজকাল পাঠক সমাজের অনেকেই বই পড়তে চায় না। যারাও বা পড়ে তাদের একটি বড় অংশ পিডিএফ বা ই-বুক পড়ে। আর সেজন্য প্রকাশন ব্যবসাও মার খায়! ২. সায়েন্স ফিকশন গল্পের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে লজিকের ব্যবহার। তবে এই গল্পে জাফর স্যার লিখতে লিখতে কয়েক জায়গায় লজিক গোলমাল করে ফেলেছেন বলে মনে হয়েছে। যেমনঃ গল্পের এক জায়গায় আমরা দেখতে পাই যে রিটিন হাজার হাজার গুলির সামনে থেকে বেঁচে ফিরে আসে। এটাকে ব্যাখ্যা করা হয়, প্রকৃতি রিটিনকে বিশেষ একটা কাজের জন্য বাঁচিয়ে রাখে। বিশেষ সে কাজের কথা পরে জানতে পারি। তবে এ প্রকৃতি জিনিসটা কী তা বইয়ে স্পষ্ট না। আবার এখানে আরেক জায়গায় রেখা যায় যে সময় পরিভ্রমনের মাধ্যমে রিটিন একই সময়ে ২ জায়গায় অবস্থান করে। এরকম একটি কথা পড়েছিলাম আমি হ্যারি পটার গল্পে। যেখানে হ্যারির বন্ধু হারমাইনি একটি সময় পরিভ্রমনের লকেট ব্যাবহার করে যার ফলে সে একই সময় ২ জায়গায় অবস্থান করতে পারে। কিন্তু গল্প অনুযায়ী রিটিন সেরকম কোন জাদুর দুনিয়ার লোক না। তারপরেও যদি আমরা যুক্তির খাতিরে মেনে নিলাম যে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে সময় পরিভ্রমণ করা সম্ভব হবে কোন একদিন। কিন্তু প্রকৃতির ব্যাপারটা কি? সায়েন্সের ভিত্তি অনুসারে প্রকৃতির কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই বলেই জানি! ৩. রিটিন উপন্যাসটি জাফর ইকবাল স্যারের বিগত উপন্যাসগুলোর তুলনায় কিছুটা ছোট মনে হয়েছে। ৪. বইয়ের কয়েকটি জায়গায় বানান ও ছাপার ভুল চোখে পড়েছে। এক নজরে রিটিন... বইয়ের নামঃ রিটিন বইয়ের ধরণঃ সায়েন্স ফিকশন/বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বইয়ের লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রকাশকালঃ অমর একুশে বইমেলা ২০১৭ প্রকাশনীঃ তাম্রলিপি প্রকাশনী প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ মেহেদী হক পৃষ্ঠাঃ ১৫৮ মূল্যঃ ৩০০ টাকা (মূদ্রিত) রেটিংঃ ৪.২/৫
Science-Fiction
4
lifetime ai rokom akta book kenar jonno website cai....amar dekha fast
Political
3
ভূমিকা একটু সচেতন হলেই মানুষ ভাল হতে পারে, ভালো থাকতে পারে। ছাত্রছাত্রীরাও যদি একটু সচেতন হয়, একটু বুঝতে শেখে তবে সে ভালো হবেই। আমি নিশ্চিত , একটা গাইড লাইন পেলে বাংলাদেশের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই বদলে দিতে পারে তাদের জীবনের ধারা, পরীক্ষায় করত পারে ভালো ফলাফল। টেনে নিয়ে যেতে পারে জীবনকে অন্য এক লোকে-প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নিজেকে সুখী-সমৃদ্ধ অনন্য এক মানুষে। ভালো্ ছাত্র হওয়া, বড় ব্যাপারে মানুষ হওয়া কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। সব কিছুরই একটা পদ্ধতি আছে, আছে কৌশল। আমি এ বইয়ে কিছু সাধারণ কৌশলের কথা বলেছি। আমার বিশ্বাস, এ বইটি অনুসরণ করলে একজন ছাত্রের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। ভালো ছাত্র হতে হলে কী করা প্রয়োজন-ছাত্রছাত্রীদের অনেকই তা জানে না বলে ব্যর্থতার পরিমাণ এত বেশি। এ বইয়ে অনেক বিষয়ে অনেক কথা বলেছি। আমি ছাত্রছাত্রীদের প্রতিটি সমস্যা অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছি। সেজন্যেই নানান প্রসঙ্গে কথা বলেছি। লেখালেখির ব্যাপারে আমার স্ত্রী অধ্যাপিকা নাজমা আক্তার নাজুর আন্তরিকতিই আমাকে বইটি সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে। আমার মা নূরজাহান বেগম ও আমার ছেলে প্রত্যয় সামীদার আগ্রহ ও উৎসাহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার সহকর্মী অধ্যাপক জিতেন্দ্রনাল বড়ুয়া,অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপিকা, অধ্যাপিকা খুরশীদ আরা হাই, অধ্যাপক শাহ্ হালিমুউয্‌যামান, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা মিয়া, অধ্যাপক কালাম মাহমুদ, অধ্যাপক সিরাজ্ উদ্দীন ভূইয়া, অধ্যাপক পার্থ সারথি, অধ্যাপিকা আঞ্জুমান আরা ডেইজি, আমার শুভাকাঙ্ক্ষী বড় ভাই আতিউর রহমান, ডা, রফিকুল ইসলাম, গীতিকার আবুদল বারী হাওলাদার ও তআমার গুরু পরম শ্রদ্ধেয় কন্ঠশিল্পী মো. ইব্রাহীম বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ-পরামর্শ দিয়ে আমাকে ধন্য ও কৃতার্থ করেছেন। আমার স্নেহাস্পদ ছাত্র ওয়াদুদ, নাজমুল,রনি,রূপো, মনির,তুষার, আকরাম, আল-আমিন প্রমুখের সহযোগিতার কথা ও মুহূর্তে মনে পড়েছে। ওদের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তা আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানানোর ঊর্ধে্ব। বইটি ছাত্র ছাত্রীদের কাজে লাগবে -এ আমার দৃঢ় প্রত্যাশা। মোহাম্মদ আবুল খায়ের সূচিপত্র * এস মুখোমুখি বসি : অন্তরঙ্গ মমতায় * তুমি কি প্রস্তুত? * তোমার ইচ্ছা * তুমি ইচ্ছা কর * চাইলেই পাই * আশা করি তুমি ইচ্ছা পোষণ করবে * আমি কি পারব? ঝেড়ে ফেল কুসংস্কার ৥ জাগাও প্রাণশক্তি * ভুল হতেই পারে * আমি সহসা আমারে চিনেছি * তুমি কি শিখবে সে কৌশল? * কেন শিক্ষা জরুরি? * আমাদের এই দৈন্যদশা কেন? * মানুষের ধারণা নারীরা কতটা মানুষ? * লক্ষ্য স্থির কর * কেমন করে পড়বে? * কতক্ষণ পড়বে? * পড়ার জন্য কি কোনও বিশেষ ভঙ্গি আছে? * মনে রাখার কৌশল * তুমি দেখনা একবার * তাড়াহুড়ো করে পড়বে না * কীভাবে পড়বে? * একঘেয়েমি * মনোযোগ : পড়াশোনার জাদুর কাঠি * আত্নবিশ্বাস * আ্ত্নবিশ্বাস কি বাড়ানো যায়? তাহলে কীভাবে? * কয়েকটি গুন : বড় হওয়ার সিঁড়ি * আচরণ * সাহসিকতা * সততা * ভদ্রতা * অধ্যবসায় * ক্ষমা * বন্ধুত্ব * ক্যারিয়ার * সবার ওপরে মানুষ সত্য * দেহঘড়ি * খাবার * কী কী খাবে? * ফল খাবে * কী কী খাবেন না * ধূমপা্ন * ধূমপানা থেকে মুক্ত হওয়ার ১০টিপস * মনে রাখবে * ঘুম * কীভাবে ঘুমাবে * ব্যায়াম * ব্যায়াম কেন জরুরি * কোথায় ব্যায়াম করবে? * নেশা * মাদক কী ধরণের ক্ষতি করে? * তুমি মাদকে আক্রান্ত? * কী কী করবে * কী কী করবে না
Motivational
6
অপূর্ব, অপার্থিব সুন্দর একটি বই! কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে মনে হচ্ছিল , যাক , এতদিনে অনুদিত থ্রিলার এর বদলে সত্যি সত্যি কেউ মাসুদ রানা লিখল। কিন্তু পড়ে সত্যিই স্তম্ভিত। মাসুদ রানার ত্রিল, ড্রামা, প্রেম -সবকিছু এতো সুন্দর শৈল্পিক শালীন করে কেউ লিখতে পারে ধারনাই ছিলনা, তাও একেবারে মৌলিক রচনা! স্যালুট লেখককে!
Fiction
0
স্যার হুমায়ূন আহমেদ এর এই বসন্তে বইটির প্রথম প্রকাশ সত্তরের দশকে। সেটাকে পূর্ণ মুদ্রণ করেছে অন্যপ্রকাশ ২০০৫ সালে। প্রকাশকের ভাষ্যমতে হুমায়ুন আহমেদ এর নিজের খুব পছন্দের একটি উপন্যাস এই বসন্তে। কাহিনী এর মুল চরিত্র জহুর আলি। খুন এর মামলায় ছয় বছর তিন মাস পর সে ছাড়া পেয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে এক বসন্ত কালে। এখান থেকেই কাহিনী শুরু।জহুর আলীর দুলাভাই দবির মিয়া। ব্যবসায়ী নীলগঞ্জে। ছাড়া পাওয়ার পর সে নীলগঞ্জে তার এই দুলাভাই য়ের কাছেই ফেরত গেলো। যদিও তার আপন বোন মারা গিয়েছে। কিন্তু তার বোনের সন্তান রা তাকে পছন্দ করে।এম্নকি দবির মিয়া এর দ্বিতীয় বউ ও তাকে ভাইয়ের মতো দেখে। জহুর আলী খুনের মামলা থেকে ছাড়া পাওয়াও নীলগঞ্জের সবার মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চল্য কাজ করে। সবাই হালকা ভয়ের চোখে দেখতে থাকে তাকে। এখানেই দবির মিয়া এর চিন্যাতার সুত্নার থেকে জানা যায় জহুর বদি নামে একজন কে খুন এর দায়ে জেলে যায়। বদিকে জহুর আলী ভাই য়ের মতো দেখতো। তাকে কেন সে খুন করবে... এর মধ্যে পুলিশ দবির মিয়া কে বলে ছোট চৌধুরী নামে একজনের সাথে দেখা করতে। যার কাছে নীলগঞ্জের সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত।...যাই হোক কাহিনী বর্তমানে চলে আসে। জহুর আলী ছাড়া পাওয়ার পর ছোট চৌধুরীর সাথে দেখা করতে যায়। এবং এর পড়েই দবির মিয়ার দোকানে চুরি হয়। পুলিশ এসে দোকানের নাইট গার্ডকে ধরে নিয়ে যায়। এবং জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে নাইটগারড মারা যায়।এদিকে দবির মিয়া এর মেয়ে টুনিকে গান শিখায় সাইফুল ইসলাম নামে এক ছেলে সে থানার পাশ দিয়ে রাতের বেলা যাওয়ার সময় নাইট গার্ডর এর মৃত্যু এর পুরবে দেয়া চিৎকার শুনে ফেলে। জহুর আলী বদি এর ভাবি মিনু কে দেখতে যায়। তখনি বুঝা যায় জহুর আলী বদির স্ত্রী মিনু কে ভালবাসে। এদিকে সাইফুল কোনো ভাবেই ভুলতে পারেনা সেই চিৎকার।সে সাহসের অভাবে পুলিশ কে কিছু বলতে পারেনা। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় পুলিশকে বেনামে একের পর এক চিঠি লিখতে থাকে... একসময় পুলিশ সেটা আবিস্কার করে ফেলে কে চিঠি গুলা লিখছে। এদিকে জহুর আলী ও ব্যাপারটা নিয়ে চৌধুরী সাহেবের সাথে ঝামেলা করতে থাকে... এরপর উপন্যাসে কি হল... চরিত্র গুলা কি করল ...কাহিনীর সমাপ্তি কিভাবে হল এসব জানতে হলে শেষ করতে হবে হুমায়ুন স্যার এর নিজের প্রিয় এই উপন্যাসটি
Fiction
0
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই - আর কতদিন লেখক - জহির রায়হান প্রকাশনা - অনুপম প্রকাশনী দাম - ৬০/- (মুদ্রিত মূল্য) রেটিং - ৫/৫ ... ২৮ পৃষ্ঠার বই। কেবলি ২৮ পৃষ্ঠা। উপন্যাসের ব্যাপ্তি আরো একটু কম হবে। কিন্তু এই একটা বই আপনাকে ভাবাতে পারে তিন থেকে চারটি ঘন্টা। রেশ রেখে দিতে পারে অনেক অনেক দিনের জন্য। এটাই জহির রায়হানের কৃতিত্ব। এটাই 'আর কতদিন' পড়ার স্বার্থকতা। বইয়ের প্রেক্ষাপট আমি দু সপ্তাহ ভেবেও বের করতে পারিনি। এটা কি অনাহারী পৃথিবীর পটভূমি? নাকি বিশ্বযুদ্ধের কিছু দিন? নাকি ক্রুসেডের মত ধর্মযুদ্ধ? কিন্তু সেই বিভীষিকাময় দিনেও আশ্রয়ের সন্ধানে দুটি মানুষ। তপু আর ইভা। তপু ইভাকে নিয়ে যেতে চায় নিজের ঘরে। একটা ঘর বাঁধবে বলে। আর তপুর মা আশ্রয় দেন বিরোধীপক্ষকে। মানবতার জন্যে। কিন্তু যেদিন খবর আসে তপু আর নেই বিক্ষুব্ধ হয় তপুর পরিবার। শেষ করে দেয় কিছু তাজা প্রাণ। তপু ফিরে আসে। তার মায়ের হাতে রক্ত। ইভাকে নিয়ে আবার নামে রাস্তায়। আর ফেলে আসে একটা প্রশ্ন 'আর কতদিন?' .. ২৮ পৃষ্ঠার বই। কিন্তু অনুভূতির খাতাটা বিশাল। সংক্ষেপে যা বলতে চেয়েছি লেখকের কলমে সেটা শতগুণ বিবর্ধিত? কিভাবে? জানার জন্য বইটা কিনে ফেলুন। আর উপভোগ করুন একটা অসাধারণ একটি গল্পগ্রন্থ।
Fiction
0
হরিশংকর জলদাস ,তিনি সবসময় দলিত মানুষদের নিয়ে লেখালেখি করেন । তিনি নিজেও প্রান্তিক সমাজের মানুষ, অসাধারন নিজস্ব ভাষা দিয়ে তিনি তার কথাসাহিত্যের জগত তৈরী করেছেন । সাহিত্যকর্মের জন্য পেয়েছেন আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য ইত্যাদি ।এই উপন্যাসে নারীদেহের সান্নিধ্যে আসা যুবকের মনোবিকলনের চালচিত্র আছে, ধর্ষণমনস্কতা আছে। আছে আবার বিবেকের দংশন। সবকিছুকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে শাসনক্ষমতা চলে যাওয়ার হাহাকার আছে। লাল সূর্যের অপমানের কথা যেমন আছে, তেমনি সেই সূর্যের রাহুমুক্ত হওয়ার বাসনাও ব্যক্ত হয়েছে জোরালোভাবে। এই উপন্যাসের কাহিনির কাল একাদশ শতাব্দী। স্থানের বৃত্ত বিশাল বরেন্দ্রভূমি। তারই দু্ই ধর্ম-সম্প্রদায়-পাল রাজা আর সাধারণ কৈবর্তরা মুখোমুখি। দ্বন্দ্ব -সংঘাতে পরস্পর সংক্ষুব্ধ। রাজ্যশাসনভার কার করতলগত হবে-শূদ্রদের, না বৌদ্ধদের? ঘটনার এই জটাজালে জড়িয়ে পড়ল কথিত ছোটজাতের কৈবর্তরা। ঘোরতর যুদ্ধে মুখোমুখি হলেন পালরাজা রামপাল আর কৈবর্তরাজ ভীম। রামপালের সহায় চৌদ্দ জন সামন্ত। আর ভীমের সহায় তার পালকপুত্র চণ্ডক। তার শরীরে বহমান বৌদ্ধ রক্ত। তার জন্মসূত্র রহস্যজালে ঘেরা। চণ্ডক গভীরভাবে মগ্ন বারবণিতা মোহনার রূপসৌন্দর্যে। তার অপার রূপ-যৌবন চণ্ডকের কাছে দুর্বার আকর্ষণের মতো। অথচ সেই মোহনার হাতেই অন্তিমে তার যে পরিণতি, পাঠককে নিঃসন্দেহে তা উদ্বেল ও উৎকণ্ঠ করবে। বস্তুত, মোহনা পাল রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কৈবর্ত-গণতন্ত্রের সংঘাতের কাহিনিমাত্র নয়, এক গভীর মানবিক আখ্যানেরও আধার। দিব্যেক, ভীম, শার্বদেব, কঙ্কণদেব, রামপাল,মথনদেব ও চণ্ডককে ঘিরে এই উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হলেও এর কেন্দ্রে মোহনীয় মোহনা।
Fiction
0
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০১৮ উপন্যাসঃবৃষ্টির ঠিকানা লেখকঃমুহম্মদ জাফর ইকবাল ধরনঃ শিশু-কিশোর উপন্যাস প্রকাশনীঃ পার্ল পাবলিকেশন্স মুল্যঃ ২০০ টাকা জাফর ইকবাল স্যার এর পড়া প্রথম কিশোর উপন্যাস,, এই বইটির মাধ্যমে আমি তার মতো এক বড় মাপের লেখকের সাথে পরিচিতি লাভ করি,, অসাধারন বই।। তার লেখা কিশোর উপন্যাসগুলো পড়ার সময় মনে হয় যাদুর বাগিচাতে আছি,, তাই নতুন করে কিছু বলবোনা।। এই বইটির মুল চরিত্রের নাম টুম্পা। সে বড় হয় আমেরিকায়। সে অনেক ভালো ছবিও আকে,, একবার ছবি আকার প্রতিযোগিতায় অনেক গুলো ডলার জিতে নেয়,, এখন কি করবে টুম্পা এতোগুলো ডলার দিয়ে?? টুম্পার বাবা অনেক বড় মাপের শিল্পি ।সে তার বাবাকে দেখেনি কখনও।তার বাবা থাকেন বাংলাদেশে কিন্তু সে কি কখনো তাকে খুজে পাবে??? আসতে পারবে বাংলাদেশে?? টুম্পা এটাও জানে বাংলাদেশে ভালো বৃষ্টি হয়,,বৃষ্টি দেখার তার অনেক শখ।। বইটি পড়ে তখন ভেবেছিলাম, অন্যদেশে থেকেও নিজের দেশের প্রতি টুম্পার কতোটাই না টান ছিল,, তাহলে যারা সত্যিই জিবিকার তাগিদে বাইরে কাজের খোজে যায় না জানি রাতজাগা কত মনে পড়ার স্মৃতি তাদের মনে নিজের দেশকে নিয়ে,, একদিকে যেমন বইটাতে দেশপ্রেম ছিল অন্যদিকে বাবা মেয়ের সম্পর্ক টাও ছিল,, আবার বাংলাদেশকে কিছু মানুষ অনেক নিচু চোখে দেখে এরকম মানুষের কথাও উপন্যাসটিতে আছে আচ্ছা যে কখনো বাবাকে দেখেয়নি সেই সন্তান যদি কখনও জানে বাবার বর্তমান কোন বড় রোগ নিয়ে তার রি একশন টা কেমন হবে?? বাবার পাশে কি সে সত্যিই থাকবে?? দিতে চাইবে তার মুল্যবান সময়?? জানতে হলে চোখ বন্ধ করে পড়ে ফেলুন উপন্যাসটি।। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ কিছু মানুষের স্বার্থপরতা,,কিছু মানুষের আথিতেয়তা,, কিছু মানুষের ভালোবাসা,,, এই সবকিছু মিলে আমার কাছে উপন্যাস টি পরিপুর্ন মনে হয়েছে।। প্রিয় গুলোর মধ্যে একটি।। আশা করি নিরাশ হবেন না।
Childrens-Book
2
কী আছে এই বইয়েেএকজন পিতা, মাতা বা অভিভাবক হিসেবে সন্তানকে নিয়ে আপনি যে স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্নের শুরু থেকে তাকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখড়ে পৌঁছে দেওয়ার পুরো ম্যানেজমেন্ট সূহ্মভাবে আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ে। আপনার সন্তানকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করার সকল মৌলিক ধরণের সমন্বয় ঘটিয়েছে বইটিতে। মাত্র এক পাতা উল্টিয়ে গিয়ে সূচিপত্র থেকে জানা যায়, মোট ২০ টি অধ্যায়ে দুই শতাধিক পয়েন্ট ও সা পয়েন্টে কীভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে মানুষ গড়ার ম্যানেজমেন্ট, যা আপনার জানা খুবই জরুরি। পিতামাতার ও অভিভাবকের জন্য পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা
Motivational
6
Form: রহস্যময় বিজ্ঞান জগত Writer: Shohanur Rahman Shohan সায়েন্স ফিকশন "ভিনগ্রহের পাণ্ডুলিপি" এর ২ মিনিট রিভিউ বই : ভিনগ্রহের পাণ্ডুলিপি লেখক : আবদুল গাফফার রনি বইয়ের ধরণ : সায়েন্স ফিকশন প্রকাশনী : ছায়াবীথি প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০১২ পৃষ্ঠা : ৬৪ টি মুল্য : ৮০ টাকা ক্রয়কৃত মুল্য : ৩৬ টাকা (রকমারি.কম থেকে ৫৫% ছাড়ে) রিভিউ : "ভিনগ্রহের পাণ্ডুলিপি" কল্পকাহিনীতে লেখক, ড. মকসুদ জামিল চরিত্রকে তুলে ধরেছেন, যিনি হচ্ছেন একজন বাংলাদেশী এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং আবিষ্কারক । সুন্দরবনে ঘটে যাওয়া একটা বহিঃজাগতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রচিত এই কল্পকাহিনীতে বেশ খানিকটা গোয়েন্দা, অনেকটা রহস্যময় এবং শেষের দিকে সুন্দরবনের এডভেঞ্চারের স্বাদ রয়েছে । ড. জামিল সুন্দরবনে ঘটে যাওয়া মহাঃজাগতিক ঘটনার রহস্য সমাধান করার প্রস্তাব পান এবং কাহিনী অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে রহস্য উন্মোচন করতে থাকেন । ভিনগ্রহের উচ্চমাত্রার প্রাণীরা কিভাবে একজন মানুষের শরীরের রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে উল্টো মানুষে পরিনত করতে পারে তার বেশ যুক্তিযুত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে । [আমরা ত্রিমাত্রিক প্রাণী । যদি দ্বিমাত্রিক প্রাণী থাকত, তাহলে তাদের ধরে অর্থাৎ দ্বিমাত্রিক প্রাণিদের ডানকে বাম করে তাদের প্রতিবিম্ব প্রাণী সৃষ্টি করতে পারতাম ।] তাহলে, ড. জামিল কি পাড়বেন তার বিচক্ষণ ও কৌশল দ্বারা রহস্যভেদ, পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধার ও মানবজাতিকে রক্ষা করতে ? জানতে হলে "ভিনগ্রহের পাণ্ডুলিপি" সায়েন্স ফিকশন পড়ে ফেলুন । আর, পাণ্ডুলিপি পাঠোদ্ধারের যোগসুত্রের মাঝেও বেশ রহস্যময়তা রয়েছে । এছাড়া, আরও অনেক নতুন কিছু সম্পর্কে লেখক ধারণা দিয়েছেন । বইটার পৃষ্ঠা মাত্র ৬৪ টি এবং দাম হাতের নাগালে । সেক্ষেত্রে অল্প সময়েই বইটা পড়ে শেষ করতে পারেন । গল্পটার মাঝে নতুনত্ব রয়েছে । সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে । রেটিং : কভার : ৬/১০ কল্পকাহিনীর পাঠ্য সূচনা : ৭/১০ কল্পকাহিনীর সমাপ্তি : ৮/১০ সব মিলিয়ে রেটিং : ৭/১০ রিভিউ দেখে/পড়ে কোন বই বিচার করবেন না । কারণ, রিভিউ হচ্ছে কোন পাঠকের ব্যাক্তিগত মতামত । আজ এ পর্যন্তই ! ভালো থাকবেন সবাই । ধন্যবাদ :)
Science-Fiction
4
কি সুন্দর ব্যবসা! লেখকের মৃত্যুকে পুঁজি করে কি লাভ টাই প্রকাশক করছে। সাবাশ! এইজন্যই বাংলাদেশী প্রকাশকদের বই কিনে শান্তি পাওয়া যায় না। ভারতীয়রা যেখানে বই পড়ুয়া জাতি গঠনের জন্য স্বল্প মূল্যে শ্রেষ্ঠ বাঁধাইয়ের বই বের করে যাতে কোন পাঠককে মূল্যের জন্য বই কেনা থেকে বিরত না থেকে সেখানে এদেশের প্রকাশকরা মৃত ব্যক্তিকে পুঁজি করেও লাভ করতে পিছপা হয় না। আপনাদের কে অভিনন্দন। জাতির বই পড়ার মানসিকতাকে আপনারা সুনিপুণ ভাবে হত্যা করেছেন।
Fiction
0
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে আবদুল মতিনের সম্পর্ক এতই নিবিড় যে 'ভাষা মতিন' হিসেবে তিনি পরিচিতি অর্জন করেছিলেন। আন্দোলনের কাণ্ডারী যে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ তিনি ছিলেন তার আহ্বায়ক। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র , লেখক ও ভাবুক আহমদ রফিক বিপুলভাবে সক্রিয় ছিলেন আন্দোলনের নেপথ্যে। চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির নৈকট্য থেকে ভাষা আন্দোলনের দুই কুশীলব আন্দোলনের ইতিহাস ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে প্রণয়ন করেছেন গুরুত্ববহ গ্রন্থ। এই বইটিতে তুলে ধরা আছে আটচল্লিশের আন্দোলন: সাফল্য ও ব্যর্থতা আটচল্লিশ থেকে একান্ন :আন্দোলনের প্রস্তুতি একুশে ফেব্রুয়ারি নরকীয় দিনের বর্ণনা।তাছারাও তুলে ধরা আছে ভাষা আন্দোলনের পরের কিছু কথা কিছু ঘটনা।অবরোধ বিক্ষোভ আন্দোলন আর হত্যাযজ্ঞের নারকীয় বর্ণনা করেছেন লেখক।য়াসলে বইটি পড়লে বুঝতে পারা যায় তখন সময়টা কত কঠিন ছিল।ঘটনাবলী এত সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন যেখানে ফুটে উঠেছে কঠোরতা আত্মপ্রত্যয়তা আর নির্মমতা।অইটির শেষাংশে ঊনিশততেপ্পান্ন ্থেকে ছাপ্পান্ন সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া অনেকগুলো ঘটনা লেখক তুলে ধরেছেন।আমাদের জাতীয় জীবনে ভাষা আন্দোলন তুলনারহিত এক ঘটনা, আর সেই তাৎপর্যময় ঘটনার ধারাক্রম ও বিকাশ স্বচ্ছন্দভাবে মেলে ধরে ব্যতিক্রমী এক বই উপহার দিয়েছেন লেখকদ্বয়, ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে পূর্বাপর যাঁদের সম্পর্ক অতি নিবিড়। ভাষা আন্দোলনের ঘটনাক্রম নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি যেমন দূর করবে এই গ্রন্থ, তেমনি আন্দোলনের বিপুল তাৎপর্য অনুধাবনে হবে বিশেষ সহায়ক।পাঠক বইটি পড়ে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত অনেক অজানা ঘটনা জানতে পারবেন।তাই বলব মিস করবেন না পড়ে ফেলেন।
Political
3
this book is anisul haque's first novel and in my opinion the best one too. it is a political fantasy novel which displays the rise of the religious extremists and their horrible conspiracies to destroy Bangladesh's culture, economy and development. the writer shows how these extremists think of only themselves and misuse religion in order to manipulate people.but the writer did not mock any religion during this whole fantasy he rather showed respect to the true meaning of religion by criticizing it's manipulators. but this book's most amazing part is the rise and revolution of the so called "mango people". this book truly shows the writer's credibility, courage and also his ability to create a revolutionary masterpiece.
Fiction
0
#রকমারিরিভিউপ্রতিযোগিতা বই-ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস লেখক-তীর্থংকর রায় পৃষ্ঠা-১৮৫ মূল্য-৪৫০ আনন্দ পাবলিশার্স ১৬০০ সালে ভারত ও পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের একদল বণিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে।৩১ ডিসেম্বর রানি এলিজাবেথের সনদ বলে উক্ত কোম্পানি উত্তমাশা অন্তরীপ থেকে সমগ্র পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্যের একচেটিয়া অধিকার লাভ করে। তারা ১৬০৮-এ মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের শাসনকালে সুরাটে প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়। পরে অন্যান্য স্থানসহ হুগলিতে বাণিজ্য কুঠি স্থাপিত হয়। ১৬৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রতিনিধি হিসেবে জেমস হার্ট ঢাকা প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজ আগমন শুরু হয়। ১৭১৫ সালে মোগল দরবার থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদৌলা কোলকাতা দখল করে নেবার পরে, লর্ড ক্লাইভ এবং ওয়াটসন তামিলনাড়ু থেকে জাহাজযোগে সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসেন ও কোলকাতা পুণরায় দখল করেন। প্রথমে কোম্পানির কেরানি, পরে ফ্রান্স-ইংল্যান্ড যুদ্ধ শুরু হলে সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেন। নিজের যোগ্যতায় পরে উঁচু পদ এবং চন্দননগর দখল করার পর, সিরাজউদৌলাকে উৎখাত করার জন্য সিরাজের পরিবারের কয়েকজন ষড়যন্ত্র করেন। চুক্তি মতো কাজ হয় ও নদীয়ার পলাশির প্রান্তরে সিরাজউদৌলার সঙ্গে মেকি যুদ্ধ হয়। সিরাজউদৌলা পরাজিত হয়ে পালাবার সময় ধরা পড়ে নিহত হন। মীরজাফর নবাব হন এবং ক্লাইভ নগদ ত্রিশ লক্ষ টাকা ও চব্বিশ পরগনার জায়গিরদারি লাভ করেন। জায়গির থেকে ক্লাইভের বছরে তিন লক্ষ টাকা আয় হত। পরে ১৭৬০-এ ক্লাইভ দেশে ফিরে যান। এ দিকে তার অভাবে ইংরেজরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন আবার ক্লাইভের ডাক পড়ে। ক্লাইভ এ দেশে আবার ফিরে আসেন ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এবং ইংরেজ সরকারের গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি তখন দিল্লির বাদশাহ শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেন। বিহার-ওড়িশার প্রকৃত শাসন ক্ষমতা লাভ করে, নবাবের নামে মাত্র অস্তিত্ব থাকে। ফলে পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে দ্বৈত শাসন চালু হয় । নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব, আর রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কোম্পানি। এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে। রাজনীতি এবং বানিজ্যের মধ্যে যে জটিল পরস্পর নির্ভরতা থেকে ভারতে ব্রিটিশ রাজ্যের শুরু তা নিয়ে এই বই। সাম্প্রতিক গবেষণা এবং ঐতিহাসিক তথ্যের সমন্বয়ে লেখক ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির তাৎপর্য বিশ্লেষন করেছেন। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল ব্রিটেন ও এশিয়ার বৃহত্তম এবং সব থেকল ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। কোম্পানুর প্রতিষ্ঠা হয় ব্রিটেনের বাজারের জন্য এশিয়ার পন্য কিনবার উদ্দেশ্য নিয়ে এই কেনাবেচার পরিণাম পারস্য থেকে ইন্দোনেশিয়া, এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত এক নেটওয়ার্ক। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে প্রায় নাটকীয়ভাবে কোম্পানি ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ফেলল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস -তীর্থংকর রায় বই এর বর্ণনায় উঠে এসেছে ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে কোম্পানির তাৎপর্য কোথায়,কিভাবে ঊনিশ শতকের বিশ্বায়ন ভারতের ব্যাবসার কাঠামো বদলে দেয়,আর এই পরিবর্তনের প্রভাব কেন সূদুরপ্রসারী। মূলত ভারতবর্ষ তিন ধাপে ব্রিটিশ শাসকদের মাধ্যমে শাসিত হয়। ১. কোম্পানি ও দেশিয় নবাবের দ্বৈত শাসন (১৭৫৭-১৭৭০) ২. কোম্পানি শাসন (১৭৭০-১৮৫৮) ৩. ব্রিটিশ রাজের শাসন (১৮৫৮-১৯৪৭) , তাছাড়া অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে প্রায় নাটকীয়ভাবে কোম্পানিটি কিভাবে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল সেটার বর্ণনা বইটিতে লেখক দিয়েছেন ।পুরো বইয়ে লেখক , ব্যবসা থেকে সম্রাজ্যবাদ কোম্পানির এই বিবর্তনের কারণ এবং ভারতে কোম্পানির বাণিজ্যের ফলে অর্থনীতির কি পরিবর্তন হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। কোম্পানি কি করে ব্যবসা বানিজ্য থেকে সম্রাজ্যবাদ শুরু করে তার জন্য লেখক অন্ধকূপ হত্যা ও সিরাজকে দায়ী করেন। তার মতে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একাংশেট বিশ্বাসঘাতকতাই সিরাজের পরাজয়ের অন্যতম কারণ। কিন্তু তার থেকে বেশি গ্রহনীয় , ইংরেজরাই পলাশীর চক্রান্তের উৎস। তাদের উৎসাহ ব্যতীত এটা কখনও সম্ভব হতো না। ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা যা ১৭৩০ থেকে চলছিলো ১৭৪০ সালে বিনাশুল্কে ব্যক্তিগত ব্যবসা সিরাজ বন্ধ করে দিতে চাইলে ইংরেজরা পছন্ড লস খাচ্ছিলো। এই ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার প্ল্যান করে এবং সেই প্রতারণায় পলাশি যুদ্ধ এবং সিরাজউদ্দলার উৎখাত। যদিও লেখক বলেন ভারতে কোম্পানির বানিজ্যের ফলে ভারতের বানিজ্যে বিশ্বায়নের জালানা খুলে যায়। তা ঠিক মনে হয় না। কেননা ইউরোপীয়রা ভারতে আসার আগে থেকে, ভারতের সঙ্গে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, মধ্যপাচ্য থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। পণ্য চুক্তিও নতুন কিছু নয় এটি বাংলা বানিজ্যের পুরনো প্রথা। তবে লেখকের ঐতিহাসিক বর্ণনায় কিছু উলটপালট হয়েছে যেমন: ★লেখক বলেন, হলওয়েল বর্ণিত "অন্ধকূপ হত্যা" এর কথা বলা হয়েছে কিন্তু ৫০ বছর আগেই ব্রিজপশ গুপ্ত দেখিয়েছেন বন্দির সংখ্যা ৬৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিলো ৪৩ জন। হলওয়েল এই কথার কোন ভিত্তি নেই। ★ লেখকের মতে ১৭০০ সাল পর্যন্ত কোম্পানির রপ্তানির পন্য ছিলো দুটি। কাপড় ও সোরা কিন্তু এই দুটি ছাড়াও প্রধান রপ্তানি দ্রব্য ছিলো রেশম। ★বইয়ে উল্ল্যেখ আছে ১৭৬৫ থেকে কোম্পানি বণিক বা দালাল দের পরবর্তিতে কর্মচারীদের মাধ্যমে রপ্তানি পন্য সংগ্রহ শুরু করে। কিন্তু এই ব্যবস্থা ১৭৫৩ সাল থেকেই চলছিলো।
Political
3
বই: একাত্তরের গণহত্যা রাজধানী থেকে বিয়ানীবাজার ঘরনা: মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তক গবেষণা লেখক: অাজিজুল পারভেজ প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ প্রকাশ কাল: বইমেলা ২০০৯ প্রকাশনী: ঐতিহ্য পৃষ্ঠা: ১১২ মুদ্রিত মূল্য: ১৪০ বুক রিভিউ: রক্তঝরা একাত্তরে গোটা বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল একটা বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের হাতে গোনা কয়েকজনের নাম জানলেও বিশাল এ গণহত্যার অনেক ঘটনাই রয়ে গেছে বর্তমান প্রজন্মের দৃষ্টির অগোচরে। ২৫ মার্চের ভয়াবহ কালো রাতে যে গণহত্যার সূচনা হয় দীর্ঘ নয় মাস তা অক্ষুন্ন ছিল সারা বাংলায়। অথচ এ লাখো মানুষের প্রাণদানকে উপহাস করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মান্ধ রাজনৈতিকদল। অার তাই ইতিহাসকে চাক্ষুষ পাঠকের সামনে তুলে ধরতে একজন লেখক তথা সাংবাদিক সরেজমিন অনুসন্ধান করে লিখলেন একটি গবেষণাগ্রন্থ। যা রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার সামগ্রিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে স্থানীয় তথা জাতীয় পর্যায়ে। পাকবাহিনী এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে যার বাড়িতে অাশ্রয় নিয়ে থাকল বিশ্বাসঘাতকেরা তাকেই কুকুরের মত গুলি করে হত্যা করল। পাকিস্তানী হায়েনারা শুধু যে টার্গেট করে জওয়ান সামর্থবানদেরই হত্যা করছে তা-ই নয়। তাদের মৃত্যু ছোবল থেকে অবুঝ শিশু কিংবা অসহায় বৃদ্ধ কেউই রক্ষা পায়নি। যুদ্ধের ভয়াবহতা ছড়িয়ে দিতে তারা প্রতিনিয়ত এলোপাতাড়ি মর্টার শেল নিক্ষেপ করত। এতে মারা পরে বহু নিরাপরাধ লোক। বইটিতে জরিপ আছে বিয়ানীবাজারের শহীদদের নিয়ে। এই জরিপে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, ছাত্র-কৃষক-দিনমজুর সব শ্রেণী-পেশার, ধর্ম-বর্ণের শহীদরা স্থান পেয়েছে। এতে যুদ্ধের ভয়াবহতা বোঝা যায়। দেশের অধিকাংশ শহীদ স্মৃতি বিলুপ্তের পথে, তাঁদের সন্ধান দেওয়ার মতো অনেকে এখন আর বেঁচেও নেই। তবুও প্রতি অধ্যায়ে ইউনিয়ন ভিত্তিক হত্যাকান্ডের ভয়ংকর তথ্য, তদন্ত-সাক্ষ্য ও বর্ণণা অাছে। সাক্ষীদের তথ্য যোগ করে দেয়া অাছে টিকা অাকারে যাতে যে কোন পাঠক কিংবা অনুসন্ধানকারী খুব সহজেই তথ্যসূত্র যাচাই বাছাই করতে পারবে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বইটির সূচিপত্র ক্রমানুসারে: ★একাত্তরের গণহত্যা: একটি মাঠ জরিপ, ★বিয়ানী বাজারের অবস্থান, পরিচিতি ও প্রারম্ভিক তথ্য ★অপারেশন সার্চ লাইটে হত্যার শিকার যারা। ★সৈনিক জওয়ান কর্মকর্তারা প্রাণ দিলেন সারা দেশে ★বিয়ানীবাজারে গণহত্যা: ইউনিয়নভিত্তিক বিবরণ ★রণাঙ্গণে শহীদ যারা ★দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যার শিকার যারা ★প্রকাশিত শহীদ তালিকাগুলোর অসঙ্গতি ও আরো কয়েকটি নাম ★মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের ইউনিয়নভিত্তিক তালিকা। এসব তথ্য ও বর্ণনা এতটাই বাস্তব যে চোখের সামনে প্রতিটা দৃশ্য ভেসে ওঠে। স্থানীয় পর্যায়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার নিয়ে গবেষণা হলেও বইয়ে বর্ণনার খাতিরে বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা কিন্তু ঢাকায় অবস্থানরত অবস্থায় মৃত্যু বা বাইরের লোক হলেও বিয়ানীবাজারে মৃত্যুর ঘটনা উঠে এসেছে। এ কারণেই বইয়ের নামকরন করা হয় রাজধানী থেকে বিয়ানীবাজার। ১৯৭১ এ বাংলাদেশের অনেক নদী তীরে বিশেষ করে যেখানে ব্রিজ-কালভার্ট ছিলো পাকিস্তানী সেনা বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসরা অনেক মানুষকে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয়, যার কোনো হিসেব নেই। প্রায় এক হাজার বধ্যভূমি ও গণকবর আবিস্কৃত হয়েছে। এ সব বধ্যভূমি ও গণকবরে কতো শহীদ ঘুমিয়ে আছেন, তারও সঠিক কোনো হিসেব নেই। তাই ৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি একেবারে অবাস্তব নয়। কারও কারও ভাবখানা এমন যে সংখ্যাটা ৩০ লাখ বা ৩০ হাজার মৃত্যুটা তেমন কোন ব্যপারই না। সিলেটের বিয়ানীবাজার গণহত্যা নিয়ে ১৯৮৪-৮৫ সালে একটা তালিকা তৈরি করা হয় সেখানে ১১২ জনের বিবরন ছিল পরবর্তীতে লেখক একটি তালিকা করেন যাতো ২০০ জনের নাম উঠে অাসে। যদিও এ দুইটি তালিকাই ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করায় লেখক বাড়ি বাড়ি ঘুরে ১২৮ জনের একটি তালিকা তৈরি করেন। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ের তথ্য শুদ্ধির সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। একাত্তরের গণহত্যার এক নিবিড় অনুসন্ধান অাছে বইয়ের প্রতিটা পাতায়। নিঃসন্দেহে বিয়ানীবাজারে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার এক অকাট্য যুদ্ধদলিল বলা যায় বইটাকে। এসব স্থানীয় পর্যায়ের নিবিড় অনুসন্ধান মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক ইতিহাসটিকেই সমৃদ্ধ করে। তাই পাঠক '৭১ এর ভয়াবহ যুদ্ধের চাক্ষুষ প্রমান বা যুদ্ধদলিল জানতে নির্বিঘ্নে পড়তে পারেন বইটা।
War
5
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইন্টার্ন কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী। তিনি দাবি করেন, তদানীন্তন ইয়াহিয়া খানের সরকার জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরামর্শেই পরিকল্পিতভাবে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পরিত্যাগ করেছে। জেনারেল নিয়াজী তার ‘দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে পূর্ব পাকিস্তানে পরিচালিত গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য ইয়াহিয়া ও ভুট্টোকেই দায়ী করেন। পূর্ব পাকিস্তানে তিনি আট মাস দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনিই পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় ও পাকিস্তানি সেনাদের পরাজয়ের গ্লানি তাকেই বরণ করতে হয়েছে। তারই নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। পরাজয়ের গ্লানি কেউই বরণ করতে চায় না। তিনিও চাননি। সেজন্যই বুঝি ‘দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ে মাথার ওপর থেকে অভিযোগ ঝেড়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর চাপাতে চাইলেন তিনি। অথচ নিয়াজীর নেতৃত্বেই পাকিস্তানি হানাদাররা এখানে গণহত্যা চালায়। নিয়াজীর পরিচালিত গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বলে সমধিক পরিচিত। পাকিস্তানি বাহিনী এখানে শুধু সামরিক শক্তিই প্রয়োগ করেনি, তারা প্রথাগত যুদ্ধের সমস্ত রীতি-রেওয়াজও ভঙ্গ করেছে। তারা বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, নারী ধর্ষণ করেছে, শিশুদেরও নির্বিচারে হত্যা করেছে। লিপ্ত হয়েছে গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি সব কর্মকাণ্ডে। কিন্তু নিয়াজী বাহিনী এসব করেও নিজেদের শেষ রক্ষা করতে পারেনি। বাঙালির কাছে তাদের পরাজয় বরণ করতেই হলো। রণাঙ্গনে তার এ পরাজয়ের দায় নিয়াজী যেমন চাপিয়েছেন পাকিস্তান বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ওপর, তেমনি সমানভাবে দায়ী করেছেন ভুট্টোকেও। বাস্তবতা বলবে, পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত অপরাধের জন্য নিয়াজী কোনোভাবেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে পারেন না। বরং তিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার জন্য সরাসরি দায়ী। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত সব অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত। তার নেতৃত্বে তার আদেশ-কমান্ডেই যে হানাদার বাহিনী এখানে ঘৃণ্যতম তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। নিয়াজী দাবি করেছেন, ওই তিনজন (ইয়াহিয়া-ভুট্টো-জে. হামিদ) সঠিক পদক্ষেপ নিলে বাঙালিদের পরাজয় ছিল নিশ্চিত। যুদ্ধে তিনিই জয়ী হতেন। যদিও তার এ দাবি নয় মাসের যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক-অতি কথনমাত্র বলেই প্রতীয়মান হয়। পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডার নিযুক্ত হওয়ার সময় নিয়াজী ছিলেন উর্ধ্বতন দ্বাদশ কর্মকর্তা। এতো জুনিয়র অফিসার হওয়া সত্ত্বেও তিনি সেনাবাহিনীর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হন। এই নিয়াজী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময় বার্মা সেক্টরে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে জাপানিদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে ‘টাইগার উপাধি’ লাভ করেছিলেন। তার খেতাব অনুসারে তাকে নাকি ‘টাইগার নিয়াজী’ বলা হতো। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেও নিয়াজী একরকম সাফল্যই দেখিয়েছেন। ইস্টার্ন কমান্ডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজি হলেন সেই ব্যক্তি যাকে এমন এক দুর্ভাগ্যজনক অপারেশনের নেতৃত্ব দিতে হয়েছিল যার ফলে পাকিস্তানের বিভক্তি ঘটেছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে সেই অবিস্মরণীয় ইতিহাসে সেই অবিস্মরণীয় বছর ১৯৭১ সম্পর্কে অনেক বই লেখা হয়েছে। কিন্তু অবশেষে এই ঘটনার অন্য যে প্রধান নায়ক যুদ্ধে পরাজয়ের জন্য দায়ী ঘটনাবলী সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। এই বই ইতিহাসের অনেক শূন্যতা পূরণ করবে।
Political
3
এই বইটির লেখার মধ্যে আপনি ড্যান ব্রাউনের লেখার ছাপ খুজে পাবেন, যদিও এটি বহু আগে প্রকাশিত একটি বই। চমৎকার গল্প ,পাজল , সাস্পেন্সে ভর্তি একটি বই। এই বইয়ের পরবর্তী সিক্যুয়েল 'দ্যা ফায়ার' এর অনুবাদের জন্য অপেক্ষা করছি। বরাবরের মত মোঃ নাজিম উদ্দিন এবারও চমৎকার একটি বই বাছাই করেছেন অনুবাদের জন্য। পরে দেখুন পস্তাবেন না।
Thriller
1
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ দ্য সাইলেন্স অব দি ল্যাম্বস্ লেখকঃটমাস হ্যারিস অনুবাদকঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ধরনঃ থ্রিলার প্রকাশনীঃবাতিঘর প্রকাশনী মূল্যঃ ২৭০ টাকা( রকমারি মূল্যঃ ১৮৯ টাকা) . অজ্ঞাত এক সিরিয়াল কিলার এর গল্পে সাজানো এই থ্রিলার উপন্যাস। এফবিআই কর্মকর্তা জ্যাক ক্রফোর্ড তৎকালীন একটা সিরিয়াল কিলিং কেসে একেবারে শিক্ষানবীশ ক্লারিস স্টার্লিংকে নিয়োগ করেন, যে কেসে ক্রফোর্ড নিজেও লেগে আছেন। . নতুন এক খ্যাপাটে সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব হয়েছে। যার খুন করার পদ্ধতি বীভৎস। লাশ পাওয়া গেলে সেইসব লাশের দিকে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তাকাতে পারবেনা। পাঁচ পাঁচটি লাশ এফবিআই এর কাছে। অজ্ঞাতনামা এই সিরিয়াল কিলারের নাম দেয়া হল বাফেলো বিল। এই বাফেলো বিলের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। . অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণী ক্ল্যারিস স্টার্লিংয়ের সাথে সাথে পাঠকের শুরু হয় এক অজানা অন্ধকারের যাত্রা। . শুরুতেই তাকে মুখোমুখি হতে দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার হ্যানিবাল লেকটার। মানসিক বিকারগ্রস্থ কিন্তু সাইকোলোজির অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী লেকটার একজন মানুষখেকো। নয়টি নরহত্যার দায়ে দণ্ডিত এই ধূর্ত আর দূর্বোধ্য কিলারের কাছ থেকে অজ্ঞাত খুনীর পরিচয় জানার চেষ্টায় রত হয় স্টার্লিং।লেকটার তাকে কিছু অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে ঘুরাতে থাকে। . লেকটার এর অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে মাঝপথে তদন্ত থামিয়ে স্বস্থানে ফিরে যাওয়ার মনস্থির করতেই স্টার্লিংয়ের সামনে আসে এক নতুন চ্যালেঞ্জ। সিনেটরের মেয়ের অপহরণ,অতঃপর পুনরায় সেই লেকটারের কাছে ধরনা দিতে হয় তাকে। এবারও কি লেকটার আত্মপ্রশান্তির জন্য কয়েকটি সূত্র দিয়ে মজা করবে নাকি স্টার্লিংকে পথ দেখাবে? একের পর এক লাশ উদ্ধার,বীভৎস সেই দৃশ্য আর প্রতিটি খুনের পেছনের ঘটনা কিংবা সংযোগ অনুসন্ধান করতে হয় স্টার্লিংকে। কিন্ত হঠাৎ করেই পুরো কেসে জড়িয়ে পড়ে এসাইলামের ডাক্তার মি. চিলটন, একটি কাটা মাথা 'ক্লস'এবং অতি রহস্যম্য় এক প্রজাতির মথ, যার পৃষ্ঠদেশে একটি মড়ার মাথার খুলি অংকিত আছে। . ডা.চিলটন এর পরামর্শে সিনেটর লেকটারের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে অজ্ঞাত খুনীর পরিচয় জানতে চান। বিনিময়ে লেকটারকে দিতে হবে উন্মুক্ত পৃথিবী কিংবা একটা জানালা।সিনেটর তার কথা মতো লেকটারকে উন্মুক্ত পৃথিবী দান করলেও লেকটার তার কথা রাখেনি সে তথ্য না দিয়েই সেখান থেকে পালিয়ে যায়।এখন কি করবেন সিনেটর বা ড.চিলটন?? কিভাবে বাঁচাবেন সিনেটর তার একমাত্র মেয়েকে?? এদিকে লেকটার কি নতুন কোনো ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করবে? এফবিআই কর্মকর্তা জ্যাক ক্রফোর্ড এবং স্টার্লিং তারা কি পারবেন নিরিহ মেয়েটিকে রক্ষা করতে? পারবেন কি সেই অজ্ঞাত সিরিয়াল কিলার এর পরিচয় জানতে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে পড়ে নিতে হবে টমাস হ্যারিস এর এই অসাধারণ বই"দ্য সাইলেন্স অব দি ল্যাম্বস্"। . #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ হ্যারিসের সাইলেন্স অব দি ল্যাম্বস্ বইটি এককথায় অসাধারণ একটি বই। বইটি পড়ে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি থমাস হ্যারিসকে সাইকোলজিকাল থ্রিলারের রাজা বললে ভুল বলা হবে না।এই বইটিও মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন অনুবাদ করেছেন মূল বইটির ভাব নষ্ট না করে।এক কথায় অপূর্ব। আপনারও পড়ে দেখতে পারেন ভালো লাগবে আশা করি। হ্যাপি রিডিং....
Thriller
1
রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_আগস্ট_২০১৯ বইয়ের নাম: বরফ গলা নদী; লেখক: জহির রায়হান; প্রকাশক: অনুপম প্রকাশনী; ধরন: চিরায়ত উপন্যাস “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসটি বাংলাদেশের জাতীয় পাঠ্যক্রমের আওতাভুক্ত হওয়ায় সবারই পড়া আছে। সেই সূত্রে জহির রায়হান নামটি নিশ্চয়ই অচেনা নয়। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের বর্বরতা ও গণহত্যা নিয়ে জহির রায়হান নির্মিত ইংরেজি ডকুমেন্টারি “স্টপ জেনোসাইড” নামের একটি ডকুমেন্টরির কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তার নাম চর্চিত ছিল। বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের কথা এলে অবধারিতভাবে জহির রায়হানের নাম চলে আসে। তিনি যেমন কাগজে-কলমে একটি কাহিনী সুন্দরভাবে বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন, ঠিক তেমনি দক্ষ ছিলেন সেই গল্পকে সিনেমার পর্দায় দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রেও। ১৯৬০ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস “শেষ বিকেলের মেয়ে” প্রকাশিত হয়। “বরফ গলা নদী” তাঁর রচিত চতুর্থ উপন্যাস। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। কাহিনী: নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে মরিয়ম টিউশনি করে সংসারে অবদান রাখার চেষ্টা করে। ওর বড় ভাই মাহমুদ সাংবাদিকতার চাকরিতে টিকে থাকার চেষ্টায় নিজের মনের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। বাবা হাসমত আলী সামান্য কেরানীর চাকরি করেন। মা সালেহা বিবি, ছোট বোন হাসিনা আর দুই ছোট ভাই খোকন আর দুলুকে নিয়ে বিশাল এই পরিবারের ব্যয়ভার করা বাবার একার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই জীবনযুদ্ধে লড়ে যেতে হয় ওদের। নোংরা এক গলিতে ভাঙাচোরা ভাড়া বাসায় থাকে ওরা। বৃষ্টি হলে ছাত থেকে পানি চুঁইয়ে পড়ে। মেঝেতে এটা ওটা বসিয়ে সেই পানিকে জায়গা করে দিতে হয়। নড়বড়ে ছাতটায় একসাথে কয়েকজন ওঠা যায় না। যদি ভেঙ্গে পড়ে! মরিয়ম যাকে পড়ায় তার নাম সেলিনা। সেলিনার পরিবার বেশ ধনী। সেলিনার বড় বোনের দেবর মনসুর মরিয়মকে নিয়মিত অনুসরণ করে। মরিয়ম বিষয়টা খেয়াল করলেও পাত্তা দেয় না। জাহেদ নামের এক পুরুষ ওর জীবনটা যেভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে সেটা আজও ভোলেনি মরিয়ম। ওর কাছে “সব পুরুষই সমান। সবাই শুধু ভোগ করতে চায়। প্রেমের কোনো মূল্য নেই ওদের কাছে। দেহটাকে পাবার জন্য কত অভিনয়ই না করতে পারে ওরা!” ওদিকে সেলিনার মা আনিসা বেগম মনসুরের সাথে সেলিনার বিয়ে দেবেন বলে পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু মনসুর তো মরিয়মের পিছু ছাড়ে না। পরিবারের বড় ছেলে মাহমুদ। শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও উপযুক্ত চাকরি পাচ্ছে না। ছোটখাট যা করছে তাতে পরিবারকে সুখী করা সম্ভব হচ্ছে না। বড়লোকদের প্রতি একধরনের ক্ষোভ কাজ করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা মাহমুদের মনে। নিজের আর্থিক অক্ষমতাকে সে ক্ষোভে রূপান্তরিত করে বড়লোকদের উপর উগলে দেয়। সমাজ বদলে দেয়ার মতো বড় আদর্শ বুকে পোষা মাহমুদ জীবনের কঠিন চপেটাঘাত খেতে খেতে মানসিকভাবে ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পরিবারের বন্ধনও ওর কাছে মেকি ও বাহুল্য বলে মনে হয়। একদিন নিউমার্কেটে মরিয়মের সাথে মনসুর, সেলিনা আর আনিসা বেগমকে দেখতে পায় মাহমুদ। বড়লোকের গাড়ি চড়ে বোনকে বেড়াতে দেখে তার মেজাজ চড়ে যায়। বাসায় ফিরে বোনকে শ্লেষমাখা কণ্ঠে প্রশ্ন করে। একটা পারিবারিক যুদ্ধের অবতারণা হয় তখন। “পড়ানোর কাজটা কি নিউমার্কেটে সারা হয়?” মরিয়ম জবাব দেয়, “ওরা নিউমার্কেট যাচ্ছিল, সঙ্গে নিয়ে গেল আমায়…।” “তুমি গেলে কেন? ওদের সঙ্গে সম্পর্ক হলো মালিক আর মাস্টারনির সম্পর্ক। ওদের মেয়েকে পড়াও আর বিনিময়ে টাকা পাও। নিউমার্কেটে ওদের সঙ্গ দেবার জন্য নিশ্চয় কোনো বাড়তি টাকা তোমাকে দেয় হয় না?” ছেলের চিৎকার শুনে মা সালেহা বিবি এগিয়ে আসেন। সব শুনে মেয়ের পক্ষ নেন তিনি। “নিউমার্কেটে গেছে তাতে হয়েছে কী, এমন কী অন্যায় করেছে যে তুই বকছিস ওকে?” “তুমি যা বোঝো না, তা নিয়ে কথা বলতে এসো না মা। নিউমার্কেটে ও যাবে না কেন, একশোবার যাবে, কিন্তু ওই বড়লোকদের বাচ্চাগুলোর সঙ্গে নয়।” মাহমুদ নিজেকে কিছুটা সংযত করে বলে। সালেহা বিবি রেগে জিজ্ঞেস করেন, “কেন ওরা কি মানুষ না?” “কই ওরা তো আমাকে নিয়ে যায় না? নিউমার্কেট কেন, সদরঘাট পর্যন্তও ওরা মোটরে করে নিয়ে যাবে না আমায়। তোমার মেয়েকে দেখবে বুড়িগঙ্গা ওপারেও নিয়ে যাবে। কই দশ টাকা বেতন এ মাসে বাড়িয়ে দেবে বলে কথা দিয়েছিল, বাড়িয়েছে? ওদের আমি চিনিনে ভেবেছো? সব ব্যাটা বেঈমান।” মরিয়ম, মনসুর, সেলিনার সম্পর্কের পরিণতি কী হবে? জাহেদ কে? মরিয়মের সাথে জাহেদের কী হয়েছিল? বিতৃষ্ণার শক্ত খোলস গায়ে চড়ানো মাহমুদের ভবিষ্যৎ কী? হাসমত আলীর পরিবারের গন্তব্য কোথায়? এসব উত্তর জানতে হলে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে আপনাকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপন্যাস 'বরফ গলা নদী'। রিভিউ ক্ষয়িঞ্চু নিম্ন-মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের ঘাত-প্রতিঘাত, আনন্দ, বেদনা, পাওয়া-না পাওয়াগুলোকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে 'বরফ গলা নদী'। ১৯৬৯ সালের একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনযাত্রা কেমন ছিল সেই ব্যাপারে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে উপন্যাসটি থেকে। উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে মেকি বলে মনে হয় না। এত সাধারণ, এত বাস্তব, এত চেনা যে চরিত্রগুলোর সাথে পাঠক হিসেবে মিশে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় না মোটেও। শব্দের ছোঁয়ায় বাস্তবসম্মত দৃশ্যপট সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক জহির রায়হান। কিন্তু কিছু কমতিও রয়ে গেছে। উপন্যাসটা শেষ করার পর সচেতন পাঠকদের মনে যুক্তির বিচারে কিছু প্রশ্নের উদয় হতে পারে। কিন্তু উপন্যাস হাতড়ে হয়তো জবাব খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্পয়লার এড়াতে বিষয়গুলো উহ্য রাখা হলো। তারপরও সবদিক বিবেচনায় 'বরফ গলা নদী' বাংলা সাহিত্যের একটি সম্পদ হিসেবে পাঠকদের কাছে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হলেও পাঠকদের কাছে যে উপন্যাসটির আবেদন এখনও কমেনি তার প্রমাণ পাওয়া যায় বইটির সংস্করণ সংখ্যা ও সালের দিকে তাকালে। ★বইটি থেকে জহির রায়হানের কিছু দুর্দান্ত লাইনের উদ্ধৃতি টেনে রিভিউয়ের ইতি টানা যাক- “…অতীত। বর্তমান। ভবিষ্যৎ। ছুরি দিয়ে কেটে-কেটে জীবনটাকে বিশ্লেষণ করার মতো প্রবৃত্তি না হলেও, জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো, টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে দেখা দেয় মনে। সেখানে আনন্দ আছে, বিষাদ আছে। ব্যর্থতা আছে, সফলতা আছে। হাসি আছে, অশ্রু আছে। অতীতের মতো বর্তমানও যেন ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো ওঠা আর পড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা কেউ বলতে পারে না। …”
Fiction
0
স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনের উত্থান, জীবনের নানা ঘাত-অভিঘাত পেরিয়ে এগিয়ে গেছে উপন্যাসের কাহিনী পরম্পরা। একজোড়া জমজ বোনের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা এবং মাতৃহীন বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা-তাদের স্পর্শকাতর অনুভূতির এবং তাদের চোখেই চারপাশ দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা উঠে এসেছে। গল্পের প্রয়োজনে অপর কিছু চরিত্র, বাবা-মা, ছোট বোন, ভাড়াটিয়া চাচা, বন্ধু, স্কুল শিক্ষক, অনুরাগী বয়সী বন্ধু ও আরও কিছু পার্শ চরিত্র। বয়সন্ধিকালে যাবার আগেই দুই বোন নীলু-বিলু ও তিন বছরের আরও এক ছোট বোন একদিন শুনতে পায় তাদের মা বাবার প্রেসের কর্মচারী ও পারিবারিক বন্ধুর সাথে পালিয়ে গেছেন-আর ফিরবেন না। তাদের বাবা মেয়েদের বড় করে তুলতে চেষ্টা করেন। তবে শেষের দিকে ভেঙ্গে পড়েন-মদ্যপ হয়ে যান এবং প্রেসের ব্যবসা বেচে দেন। ভাড়াটিয়া ও পারিবারিক বন্ধু চাচা তাদের বাবাকে আবার বিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজি হন না তিনি। এত অভিঘাতেও বিলু এসএসসিত ভাল ফল করে ঢাকার কলেজে চলে যায়। নয় মিনিটের বড় নীলুর পড়ালেখায় মন নেই-শেষ অব্দি সেও কলেজে যায়। ছোট মেয়েটা গান শিখে প্রেসিডেন্ট জিয়ার কাছ থেকে পুরস্কার নেয়। সেই বিচারে গল্পের অাখ্যান সত্তরের দশকের। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নীলুর প্রতি অনুরক্ত। মাঝে মাঝেই সে জমজ দু জনকে গুলিয়ে ফেলে বিব্রত হয়। লেখক ময়মনসিংহ শহরের সেই সময়ে নারীদেরকে স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবেই দেখিয়েছেন যদিও বড়রা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিঘ্ন থেকেছেন। একদল ছেলের সাথে তিন বোনের সন্ধ্যা গড়িয়েও নির্বঘ্নে গল্প করিয়েছেন এবং বাড়ী অব্দি তাদেরকে পৌঁছে দিয়েছে। এতে লেখকের নারী স্বাধীনতা, সাম্য ও বঞ্চনাহীন সমাজের স্বপ্নই প্রকাশ পায়। আমি সচেতন ভাবেই কয়েক জায়গায় গল্প বলেছি-উপন্যাসের ব্যপ্তির সঙগা অনুযায়ী কোন ভাবেই একে উপন্যাস বলা যায় না। (ফ্লাইট ধরতে না পেরে পরবর্তী ফ্লাইটের অপেক্ষায় এয়ারপোর্টে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই পিডিএফ পড়ে শেষ করি।) মায়ের হঠাৎ বোস বাবুর সঙ্গে চলে যাবার কোন পূর্ব সংকেত রাখেননি। যদিও দেখিয়েছেন বোস বাবুর গানের খুব ভক্ত, এবং বড় মেয়ে নীলু তাকে পছন্দ করতো না। অাখ্যানের বিস্তার ঘটাতে সহজেই একটা দুটো অধ্যায় বাড়ানো যেত এসব ঘটনার পূর্ব ইঙ্গিত দিতে। সবশেষে নাম করণ নিয়ে হতাশ হবেন পাঠক। অবশ্য ১৯৯২ খ্রীস্টাব্দে লেখক নিজেই বলেছেন সম্ভব হলে তিনি নাম পরিবর্ত করতেন। পাঠক দ্বিধান্বিত হবেন বলে সেটা পরবর্তী সংকলনে আর করেননি।
Fiction
0
বইয়ের নাম : নিখোঁজ কাব্য লেখকের নাম : সালমান হক প্রচ্ছদ : সিরাজুল ইসলাম নিউটন ঘরনা : থ্রিলার প্রকাশনী : বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশ কাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৭ মুদ্রিত মূল্য: একশত আশি টাকা মাত্র পৃষ্ঠা সংখ্যা :১৭৬ কাহিনী অালোচনা: নিখোঁজ কাব্য মূলত এক রহস্যধর্মী উপন্যাস। নামের মধ্যেই যার আকর্ষন বিদ্যমান। উত্তরবঙ্গের ছিমছাম আর শান্তিপূর্ণ এক মফস্বল রতনপুর। কিন্তু এক সময় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে একের পর এক উধাও হয়ে গেল কম বয়সি তিন তরুণী। বিপদে পড়ে গেল স্থানীয় প্রশাসন। তদন্তে পাঠানো হলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার নাবিদ আল নিয়াজকে। রতনপুর পৌঁছে সে বুঝতে পারলো পরিস্থিতি যতটা মনে হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। দুই তরুণীর লাশ উদ্ধার হলে নড়েচড়ে বসলো সবাই। তবে কি এরকম এক জায়গায় কোনো সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব ঘটেছে? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোন গভীর ষড়যন্ত্র? কে বা কারা এমন নিখুঁত প্লান করে একে একে হত্যা করে চলছে কিশোরী বয়সী এ মেয়েদের। কোনো সাইকো কিলারের কাজ নয়তো এমনটাই ভাবনা মাথায় ঘুরতে থাকে। তদন্তে আবির্ভাব ঘটলো আরো কিছু চরিত্রের। ঘটনা জট পাকাতে শুরু করলো। একটা প্রশ্নই ঘুরতে লাগলো তখন- কিভাবে সমাপ্তি ঘটবে এই নিখোঁজকাব্যের? পাঠ প্রতিক্রিয়া : টান টান থ্রিলে ভরপুর বইটা। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটা প্রশ্নই কেবল তাড়া করে বেড়ায়। কর করল খুনগুলো? এটা কি কোন কুচক্রী মহলের কাজ। আবার মধ্য পর্যায়ে এসে মনে হয় প্রেম ঘটিত কোন ত্রিভুজ কাহিনী নয়তো। কিন্তু না লেখক তার লেখনী বলে সে ধারনাও পাল্টে দেয়। একদম শেষ পর্যন্ত সেই ধারবাহিকতা বজায় রেখে পাঠক কে শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য করে বইটা। আদালতের মতো চমৎকার রহস্য উন্মোচন ব্যাপারটাও বেশ ভালো লেগেছে। ছোট ছোট ক্লু দিয়ে রহস্য ধরে রাখার ব্যাপারটাও ভালো ছিল। কত সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত বড় এক রহস্যময় দুধর্ষ খুনের উতপত্তি পড়তে পড়তে এসব ভাবনা বারবার শিহরিত করে। লেখকের প্রথম উপন্যাস পড়ার সময় তা একবারও মনে হয় নাই। এত চমৎকার বর্ননা শৈলী পাঠকে মুগ্ধ করবে। এছাড়া রহস্য সমাধানের ব্যাপারটাও বেশ আকর্ষনীয় একদম শেষ পর্যন্ত যা পাঠক কে টেনে নিয়ে যেতে বাধ্য করবে।
Thriller
1
বইয়ের নামঃ প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল লেখকঃ মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম বইয়ের ধরণঃ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী প্রচ্ছদঃ আসিফ সিদ্দিকী প্রকাশনাঃ উপন্যাস প্রকাশন প্রথম প্রকাশঃ মে, ২০১৮ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২ মুদ্রিত মূল্যঃ ২৩০ টাকা ধর্ম ও বিজ্ঞান-- এ দুয়ের দ্বন্দ্বের ইতিহাস বহু পুরনো। ঠিক কবে থেকে এ দুইয়ের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র আজও পাওয়া যায়নি। যুক্তিনির্ভর বিজ্ঞান ও বিশ্বাসনির্ভর ধর্মের মাঝে চলমান দ্বন্দ্বে জড়িয়ে কতজন যে হতাহত হয়েছে, সে ব্যাপারেও কোনো পরিসংখ্যানিক উপাত্ত পাওয়া যায়না। ধর্মীয় অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো ধর্মে বিশ্বাস করতে বলা হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের কোনো তত্ত্ব দিয়ে সরাসরি তাকে প্রমাণ করা যায়না। এ নিয়েই ধর্মবাদী ও বস্তুবাদীদের যত দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। এমনই এক দ্বন্দ্বের গল্প নিয়ে পাঠক সমাজে হাজির হয়েছেন তরুণ লেখক মোহাম্মদ সাইফূল ইসলাম। ১৯৮১ সালে জন্ম নেওয়া এ লেখকের বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব কাটে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(কুয়েট) থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি(সিএসই) বিষয়ে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে উদ্যোক্তা হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সে প্রতিষ্ঠানের সুবাদে বর্তমানে লিবিয়ায় প্রবাস জীবন যাপন করছেন তরুণ এ লেখক। তো, যা বলছিলাম তখন! ধর্ম ও বিজ্ঞানের এ বিরোধের গল্পের আশ্রয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তুলে ধরেছেন এ লেখক। মহাবিশ্বের জন্ম ও গঠন নিয়ে মানুষের জল্পনা-কল্পনার কোনো শেষ নেই। বারবার মানুষ চেষ্টা করেছে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটন করতে। বার বার মানুষ মহাকাশে ছুটে গিয়েছে এ রহস্যের টানে। বার বার ব্যর্থ হলেও মানুষের এ উৎসাহে কোথাও যেন কোনো ভাটা পড়েনি কখনোই। বরং একেক বার ব্যর্থ হবার পর পরের বার দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে ছুটে গিয়েছে মহাবিশ্বের পানে। মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটন করতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এক প্রজেক্টের গল্প নিয়ে রচিত বইয়ের নাম "প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল"। পাশাপাশি মানুষের মানবিকতার নানা দিক সংক্রান্ত আলোচনা এ বইটিতে সমানভাবে স্থান পেয়েছে। একদিকে বিজ্ঞান, অন্যদিকে মানবিকতা--- এ দুইয়ের অসম লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কোন শক্তির জয় হয়? বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত দানবীয় শক্তির জয় হয়, নাকি "সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই"---- চণ্ডীদাসের এ জনপ্রিয় উক্তির সত্যতা আরেকবার প্রমাণিত হয়? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে উল্লেখিত বইয়ের পাতায়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পক্ষ থেকে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে এক প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়। প্রজেক্টের নাম "প্রজেক্ট প্রজেক্টাইল"। টাইম ও স্পেসের মাত্রা শূন্য হলে সেখানে কী ঘটতে পারে, তা খুঁজে বের করাই এ প্রজেক্টের উদ্দেশ্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশে স্পেসশিপ পাঠানো হয়। মহাকাশচারী হিসেবে এ অভিযানে অংশ নেন পৃথিবীর সকল বাঘা বাঘা পদার্থবিদ, গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীরা। এদের সাথে এ অভিযানে যাবার সুযোগ পান বাংলাদেশের এক অখ্যাত যুবক। তার নাম প্রবাল। পেশায় বংশীবাদক প্রবাল কী করে এ অভিযানের সওয়ারী হলেন, তা নিয়েই এ বইয়ের গল্প। শুনতে বেশ অবাক লাগলেও এ বংশীবাদক অন্যান্যদের সাথে মহাকাশে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে ঘটনাচক্রে যখন তাদের ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা নেমে আসে, তখন এ অখ্যাত বংশীবাদকের প্রচেষ্টায় তারা সকলে বিপদ থেকে মুক্ত হন। কিন্তু একজন সামান্য বংশীবাদক কী করে রক্ষা করতে পারে এ মহাকাশযানকে। প্রিয় পাঠক! সে প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে চোখ রাখতে হবে উপন্যাসের পাতায়। এ তো উপন্যাসের একদিকের গল্প। এর পাশাপাশি দুই নরনারীর অতৃপ্ত প্রেমের গল্প-ও সমানভাবে ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসটিতে। প্রেম এ উপন্যাসের মুখ্য কাহিনী না হলেও তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর এ উপন্যাসটাতে। উক্ত উপন্যাসের আলোচ্য বিষয়বস্তু নিয়ে কথা তো কম হলো না। এবার আসি চরিত্রগত বিশ্লেষণের অংশে। আমার মতে, এটাকে ঠিক বিশ্লেষণ না বলে ব্যবচ্ছেদ বলাই বোধ হয় অধিকতর শ্রেয় হবে। কেননা, রিভিউয়ের এ অংশে লেখকের সৃষ্টিকর্মকে ইচ্ছেমত টেনে-হিঁচড়ে, কেটে কুটিকুটি করা হয়। যা হোক, মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক আবার। উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রে রাখা হয়েছে প্রবাল নামক এক বংশীবাদককে। মহাবিশ্বের রহস্য সংক্রান্ত জটিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে পূর্বদেশীয় একজন সামান্য বংশীবাদকের ভূমিকা কী হতে পারে, সেটাও এক অপার বিস্ময়। তার চাইতে বড় বিস্ময় হচ্ছে, এ নগণ্য ব্যক্তির ভূমিকাতেই আসন্ন বিপদের হাত থেকে রক্ষা পায় প্রথিতযশা বিজ্ঞানীর দল। কিন্তু এটাও কি কখনো সম্ভবপর হতে পারে? হ্যাঁ, পাঠক! এটাও সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে, যার সত্যতা পাওয়া যাবে উক্ত বইয়ে। এর পাশাপাশি তার জীবনের এক অতৃপ্ত দিক বেশ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলবার কাজটি সুনিপুণ হাতে করেছেন এ ঔপন্যাসিক। বিজ্ঞানের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কিছুই হারাতে হয় তাকে। যাকে নিজের নিত্যসঙ্গিনী করার কথা ভেবেছিল, সে তার জীবনে বাস্তব হয়ে ধরা দেয় না আর। অধরাই রয়ে যায় তার বহুদিনের লালিত সে স্বপ্ন। সবকিছু হারিয়েও সে যেন আজ জয়ী। এভাবেই এগিয়ে যায় উপন্যাসের কাহিনী। উপরোল্লিখিত চরিত্রের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। সে চরিত্রের নাম বন্দনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক দিলীপ চৌধুরীর একমাত্র সন্তান বন্দনা চৌধুরী। মা-মরা মেয়ে বন্দনার সময় একান্ত নিরবে-নিভৃতে। বাবা তার চাকরি ও কর্মব্যস্ততার কারণে মেয়েকে সময় দিতে পারেন না। এ নিঃসঙ্গতা কাটাতে বন্দনা একসময় শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি হয়। এ ভর্তির সুবাদে প্রবালের সাথে তার পরিচয় হয়। প্রবালের ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে তাকে ঘিরে বিনা সুতোয় আগামী দিনের স্বপ্নজাল বুনতে শুরু করে দেয় বন্দনা। এক পর্যায়ে নিজের ভাবাবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিজের মনের কথা বলে দেয় প্রবালকে। কিন্তু প্রবাল এটাকে নিতান্ত ছেলেমানুষি জ্ঞান করে অবজ্ঞা করতে শুরু করলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। প্রবালকে নিজের করে পাবার তীব্র বাসনা তার এ স্বপ্ন পূরণের সহায়ক না হয়ে বরং কাল হয়ে দাঁড়ায়। সুদীর্ঘকাল অপেক্ষার পরেও নিজের প্রিয় মানুষ তার আপনজন হয়ে ওঠে না আর! বিজ্ঞান তাকে বেগ দিলেও কেড়ে নেয় আবেগ। এগিয়ে চলে উপন্যাসের গল্প। উপরোক্ত দুইটি মুখ্য চরিত্র ছাড়াও উপন্যাসে আরো কিছু গৌণ চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু চরিত্র হচ্ছে, ক্যাসিও আন্তের, দিলীপ চৌধুরী, স্বর্ণা, মিলিতা, বিশিষ্ট গণিতবিদ টয়লার, জগদ্বিখ্যাত পদার্থবিদ ভ্লাদিমির, ক্যাপ্টেন চমনোস্কি, ফাদার প্রমুখ। এসবের চরিত্রের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চরিত্র লাইকাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায় এ গল্পে। প্রত্যেকে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী/অধিকারিণী হবার ফলে এ উপন্যাসে এক আলাদা মাত্রা যুক্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, টয়লার ও ভ্লাদিমিরের নিত্যকার ঝগড়া উপন্যাসের গল্পে আলাদা এক ব্যঞ্জনা দান করেছে। তেমনি, পেশাগত জীবনে চিকিৎসক মিলিতার হাসি-খুশি ও মিশুক স্বভাব তাকে অন্যান্য চরিত্র থেকে সহজেই আলাদা করে তুলেছে পাঠকের চোখে। এসব গৌণ চরিত্রের আলাদা আলাদা ভূমিকা গল্পের প্রয়োজনেই যুক্ত করা হয়েছে। উপন্যাসের পুরো কাহিনী একটা বৈজ্ঞানিক প্রজেক্টকে ঘিরে এগিয়েছে বিধায় উক্ত প্রজেক্টের নামে নামকরণ করা হয়েছে উপন্যাসের। তবে সবকিছু ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রবাল ও বন্দনার গল্প। এবার আসি উক্ত বইটির ভাষার গল্পে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হলেও ভাষার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা চোখে পড়েনি আমার। বেশ সহজ ভাষায় ঔপন্যাসিক এ উপন্যাসের গল্প লিখে গিয়েছেন। গল্পের স্বার্থে কোথাও কোথাও বৈজ্ঞানিক টার্ম ব্যবহৃত হবার ফলে শুরুতে কিছুটা জটিল লাগছিল এগুলো। তবে আশার কথা হলো--- উপন্যাসের শেষে প্রয়োজনীয় টিকা সংযুক্ত থাকার ফলে এগুলো বুঝতে তেমন কষ্ট হয়নি আমার কোনো। এছাড়া বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পাশাপাশি নরনারীর চিরকালীন প্রেমের দিকটি আলাদা মাত্রা যুক্ত করেছে এ বইটিতে। এ দিকটি যুক্ত হবার ফলে এটি অন্যান্য আর দশটি সাধারণ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর তুলনায় ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও অতৃপ্ত প্রেমের গল্প--- এ দুইয়ের মধ্যে এক অপূর্ব সমন্বয় সাধিত হবার ফলে বইটি আলাদা এক আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি, এক কথায় বলতে গেলে, উপন্যাসের গল্প, দ্বৈত বিষয়বস্তুর সমন্বয় ও ভাষাশৈলী--- এসব কিছুর বিচারে বইটি দারুণ সুখপাঠ্য এ উপন্যাস বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। যারা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়তে ভালোবাসেন, তাদের মনে এ উপন্যাস একটু হলেও আলাদা জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে, এটাই আমার বিশ্বাস। আশা করি, কোনো পাঠক বইটি পড়ে আশাহত হবেন না। উক্ত বই সম্পর্কিত আরো কিছু ব্যাপারে না বললেই নয়। প্রথমত উল্লেখ্য যে, এ বইটি যে প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে, সে প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত প্রথম বই এটি। প্রথম বই হিসেবে কাগজের কোয়ালিটি, বাইন্ডিং থেকে শুরু করে লেখার মান----কোথাও কোনো ব্যাপারে কিছুর কমতি দেখিনি এ বইতে। বিশেষত কোথাও কোনো ভুল-ত্রুটি দেখলে তা তাদের অফিশিয়াল মেইলে জানানোর আহ্বান ও বড় ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে রিফান্ডিংয়ের বিষয়টা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে। উপরন্তু, একটা সুদৃশ্য বুকমার্ক বইয়ের সাথে দেওয়া হয়েছে উপহারস্বরূপ, যা একজন পাঠকের আনন্দ বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। প্রসঙ্গত আরো উল্লেখ্য যে, ইদানীং সময়ে আমাদের দেশের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো নবীন লেখকদের লেখা প্রকাশের সুযোগ খুব কম দেয়। সে তুলনায় এ প্রকাশনীর এমন উদ্যোগ এ দেশীয় সাহিত্য অঙ্গনের জন্যে সত্যিকার অর্থেই আশাজাগানিয়া। এমন মহৎ উদ্যোগ আরো অব্যাহত থাকুক। তাদের সরব পদচারণায় মুখরিত হোক বাংলা সাহিত্যের সকল অঙ্গন। আসুন, সকলে সুস্থধারার বই পড়ি। আর সম্ভব হলে, বই কিনে পড়ি। নিতান্তই সত্যিকারের দরকার না হলে ফ্রি পিডিএফকে না বলি!♥ পাঠ অনুভূতি সুখের হোক! ♥
Thriller
1
বইঃ তমিস্রা লেখকঃ জাবেদ রাসিন প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রচ্ছদঃ ডিলান না কিন্তু :p সুজন পৃষ্ঠাঃ ২৫৪ মূল্যঃ ২৫০ টাকা ফ্ল্যাপে যা লেখাঃ শুভপুর গ্রামে অদ্ভুতভাবে খুন হল একজন। গ্রামের চেয়ারম্যানের মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল অস্বাভাবিকভাবে। তার চিকিৎসার জন্য ঢাকা থেকে আসলো একজন তরুন ডাক্তার। প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে শুরু হলো চিকিৎসা। এর মাঝে গ্রাম থেকে কিছুদিনের জন্যে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন এক লোক। তার অন্তর্ধানের মাঝেই খুন হল আরও একজন। খুন হয়ে যাওয়া মানুষদের শরীরে মিলল বিশেষ এক চিহ্ন, আর তা তদন্ত করতেই শুভপুর এলো ডিবি'র অফিসার। নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিটি গ্রামে ফিরে এলেন নতুন এক কাজের দায়িত্ব নিয়ে, যা শেষ করতে পারলেই তিনি লাভ করবেন অসীম ক্ষমতা। সময়ের সাথে উন্মোচিত হতে লাগলো, চেয়ারম্যানের মেয়ের অসুস্থ হওয়া এবং খুনগুলোর সাথে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া এক মেয়ের সম্পর্ক। আর এই সম্পর্কের সূচনা আরও গভীরে, এক অন্ধকারময় জগতে। তমিস্রা'র ভয়াল ভুবনে আপনাদেরকে নিমন্ত্রণ। ------------------------------- প্রথমেই লেখককে বিশাল বড় একটা ধন্যবাদ। আমার নামে গ্রামটির নাম রাখার জন্যে ;) বিষয়টা ভালো লেগেছে :p কাহিনীটা মূলত খুন দিয়ে শুরু হলেও আধ্যাত্মিক আরাধনা, জ্বীন, অশুভ আত্মা... অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে ধীরে ধীরে। তবে, আমার মনে হয়েছে, লেখকের ভেতরে এখনো কিছুটা আড়ষ্টতা আছে। লেখায় মাঝেমধ্যেই সেটা বোঝা যাচ্ছিলো। লেখা মাঝেমধ্যেই গতি হারাচ্ছিলো, শব্দচয়নও সবক্ষেত্রে ঠিক ছিলোনা। চরিত্রের গঠন ভালো হয়নি। চরিত্রগুলোকে চোখের সামনে দেখতে বেগ পেতে হয়েছে। কিছু ব্যাখ্যায়ও দ্বিমত আছে লেখকের সাথে আমার। বিরক্তিই লাগছিলো মাঝে মাঝে। চরিত্রগুলোকে আরো ডিটেইলস এ লিখলে, বিল্ডআপ ক্লিয়ার করলে, পাঠক হিশেবে বইটা পড়ে আরেকটু তৃপ্তি পেতাম। তবে, ক্লাইম্যাক্সটা ভালো ছিলো। অপ্রত্যাশিত, আপনি যেটা চাইবেন না, সেরকম এক ক্লাইম্যাক্স। অন্যরকম করে ক্লাইম্যাক্স চাইছিলেন লেখক, সেখানে তিনি যথেষ্ট সফল। টুইস্টের ব্যাপারে আসি। টুইস্টটা দারুণ ছিলো। শেষে এরকম ইউটার্ণ, সত্যি ভাবিনি। অনেকগুলো সম্ভাব্য পরিণতি ভেবে রেখেছিলাম, পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো, শেষে এই এই টুইস্ট আসতে পারে। লেখক হয়তো শেষে এই টুইস্টটা দেবেন...এরকম ভাবছিলাম। কিন্তু, এরকম আনপ্রেডিক্টেবল টুইস্ট!!! অনবদ্য। আমার ভাবনার ধারেকাছে দিয়েও যায়নি। কিছু প্লটহোলের সমাধান পাইনি। ফিনিশিং পড়ে মনে হলো, তমিস্রার সিক্যুয়াল আসতে পারে। শেষের হিন্টস'টা এরকমই মনে হলো। দেখা যাক... বইয়ের প্রচ্ছদটা সুন্দর ছিলো। বাতিঘরের বইয়ে বরাবর ডিলানের প্রচ্ছদই দেখে এসেছি, এবারে ভিন্ন কারো দেখলাম। ভালো লেগেছে। সবদিক মিলিয়ে, মোটামুটি লেগেছে "তমিস্রা।" লেখক কিছু কিছু জায়গায় খেই হারিয়ে ফেলছিলেন, সেটা লেখনীতেই স্পষ্ট। কিছু বর্ণনায় অলংকারের আধিক্য ছিলো বেশি। অল্পকথায় যা বোঝানো যায়, তার পেছনে বেশি শব্দ খরচের কী দরকার? লেখকের কাছে ভবিষ্যতে আরো গোছানো লেখা, আরো ছিমছাম শব্দবিন্যাস প্রত্যাশা করছি। লেখকের জন্যে শুভকামনা। বইয়ের রকমারি লিঙ্কঃ https://www.rokomari.com/book/111674/তমিস্রা
Thriller
1
‘আমার পিতার স্বপ্ন থেকেঃ বর্ণ এবং উত্তারাধিকারের গল্প’ বারাক ওবামার একটি স্মৃতিচারণামূলক বই, পরবর্তীতে তিনি ২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বারাক ওবামার জন্ম ১৯৬১ সালে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হনলুলুতে। বাবা কেনিয়ান এবং মা আমেরিকান। ১৯৬৩ সালে তাঁর বাবা মা আলাদা থাকতে শুরু করেন এবং ১৯৬৪ তে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়, ওবামার যখন দু বছর বয়স। ওবামার বাবা তাঁর স্বপ্ন পূরণের কেনিয়া চলে আসেন। তাঁর মা লোলো সোয়েতোরো নামের ইন্দোনেশিয়ান একজনকে বিয়ে করেন। ওবামার পরিবার আবার জাকার্তাতে চলে আসে। দশ বছর বয়সে ওবামা আবার হাওয়াইতে ফিরে আসেন তাঁর নানা নানীর কাছে। এখানে ওবামা পুনাহু স্কুলে ভর্তি হন, এই স্কুলে তখন কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র সংখ্যা ছিল ৬ জন। হাইস্কুল শেষ করে ওবামা লস এঞ্জেলস এ চলে আসেন, ওক্সিডেন্টাল কলেজে। ওবামার সাথে তাঁর বাবার আর একবারই দেখা হয়েছিল ১৯৭১ সালে যখন সিনিয়র ওবামা ১ মাসের জন্য হাওয়াইতে আসেন। জন্য আমেরিকার ইতিহাসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। এতে বারাক ওবামার শৈশবকাল থেকে শুরু করে ১৯৮৮ সালে ল’ স্কুলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বর্ননা করা আছে। বারাক ওবামা ১৯৯৫ সালের জুলাইতে বইটি প্রকাশ করেন যখন তিনি , ইলিনয় স্টেটের হয়ে সিনেটর প্রচারণা শুরু করেন। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মতে রালফ এডিসনের ইনভিসিবল ম্যান অনুসারে বইটি লেখা। বারাক ওবামা ২০০৪ সালে ইলিনয় স্টেট থেকে সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হলে বইটি রিপাব্লিশ হয়। এই স্মৃতিচারণামূলক বইয়ে পাওয়া যাবে একজন কালো আফ্রিকান বাবা আবং একজন সাদা আমারিকান মা’র ছেলে জীবনের একটি কর্মময় অর্থ খোঁজেন একজন কালো আমেরিকান হিসেবে।
War
5
One Of the incredible science fiction book ,i have ever read in my Life. At present, people are thinking about things in the era of science excellence. What will be the future of the world, how technology will change life, how much we live in Mars, we wonder? Historical science-writer Muhammad Zafar Iqbal's science fiction book 'Jalmanab.' Has been described in the book, Marine Animals and Botany, through the various characters imaginally. The book wants to be cut off in the water. He just wants to run on a dolphin's back and run in the sea. Speaking of the water level, almost two centuries have passed since the people of the world pushed us into water. We are still alive. If the landmakers do not want to finish us, we will survive. So we have to make a very thoughtful decision
Science-Fiction
4
বইয়ের ফ্ল্যাপটা অসাধারন হয়েছে। বইটা যখন পরতে শুরু করলাম কোন ভাবেই বইটা রেখে উঠতে পারলাম না। বইটি হাতে নিয়ে পাঠক কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাবে তার ছেলেবেলায়। কখনো কল্পনায় মেতে উঠবে শৈশবের দূরন্তপনায়। কখনো বা লেখকের রসবোধ সম্পন্ন লাইনগুলো পড়ে হো হো করে হেসে উঠবে। কখনো চোখের কোনে জল ছলছল করে উঠবে। শব্দশৈলী আর ভাষার ব্যবহার দেখে হবে মুগ্ধ। প্রভাষ আমিন। যার প্রতিটি লেখা, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর আমাকে উজ্জীবিত করে। একেশটি ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ি আর মনের ভেতর ঘর্ষণ অনুভব করি। কখনো হৃদয় ছোঁয়া বর্ণনায় কুকড়ে উঠি, কখনো বা হাসিতে ফেটে পড়ি, কখনো জানতে পারি নানা অজানা তথ্য। আমি মনে করি বইটি সময় উপযোগী হয়েছে। আমার অনেক ভাল লেগেছে। আমার পক্ষ থেকে লেখক সহ যারা এই বইটির শুভাকাঙ্খি সকলকে ধন্যবাদ। আমি খুব সহজ পাঠক না । তবে আমি মোটামুটি পড়ি । আমি যে ধরনের বই পড়ি । তা এই বইয়ের সাথে যায় না ।লেখক ভালোভাবে জানেন পাঠককে আকৃষ্ট করার কৌশল। তার গদ্য ঝরঝরে, ভাষা সাবলীল ও মেদহীন। তিনি সব ধরনের পাঠককে স্বাগত জানান। মুক্তমনে দরোজা খুলে রাখেন সমালোচকদের জন্যও। শব্দকে শাসনে রেখে নিজের কথাটি অনায়াসে বলবার কৌশলও তার করায়াত্বে। একজন দক্ষ কথাশিল্পীর মতোই তার বাচনভঙ্গ ও শব্দের লেখক পরিচিতি এমন হতে পারে আমি কোন দিন কল্পনা করতে পারিনি । আজব । মানুষ । এক কথায় বলা যায় । দেশে নতুন ধারার লেখক আসছে । বাংলাদেশ যে উন্নত হচ্ছে ।
Childrens-Book
2
প্রাগৈতিহাসিক যুগের পর মানুষ যখন সমাজবদ্ধ হতে শুরু করল তখন থেকেই গুপ্তচরবৃত্তির চর্চা ছিল। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সেই গুপ্তচরবৃত্তির কাজটাই করে। তবে পাল্টেছে কাজের ধরন, পরিধি ও চর্চা। গোয়েন্দা সংস্থা হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান যার কাজই হলো নিজ দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, গবেষণা ও সেগুলো নিরাপদে রাখা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও কাজ করতে হয় তাদের। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তবে গোপনীয়তা, দুর্ধর্ষ গোয়েন্দাবৃত্তির চর্চায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়িয়ে গেছে সব গোয়েন্দা সংস্থাকে। এরকমই কিছু সংস্থার গোয়েন্দাগিরি, রহস্য, দক্ষতা ও নিষ্ঠুরতা এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সংস্থা মানা হয় ইসরায়েলের মোসাদ এবং আমেরিকার সিআইএ প্রতিষ্ঠানকে। এ ছাড়াও রয়েছে- রাশিয়ার বর্তমান গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি, ব্রিটিশদের এমআই সিক্স, ভারতের ‘র’, পাকিস্তানের আইএসআই, চীনের এমএসএস, জার্মানির বিএনডি, ফ্রান্সের ডিজিএসই, অস্ট্রেলিয়ার এএসআইএস বর্তমান বিশ্বের উল্লেখযোগ্য দুর্ধর্ষ সংস্থা।
Political
3
অনেকেই কথায় কথায় বলে থাকেন, "আমি মানুষ দেখলেই বুঝে ফেলি কে কেমন!"। আদৌ কি বোঝা সম্ভব? একজন মানুষের সাথে বছরের পর বছর একত্রে থেকেও কখনো কখনো মানুষ চেনা যায় না। মানুষ চেনা যায় কিছু বিশেষ মূহূর্তে। (গল্প পড়ার পর ব্যাক্তিগত মতামত) #রিভিউ বইয়ের নামঃ কয়েকটি মৃত্যু লেখকঃ জহির রায়হান প্রকাশকালঃ ১৯৬৮ আহমদ আলী শেখ একজন বৃদ্ধ ব্যাক্তি। চার ছেলে এক মেয়ে ছোটছেলে শামসু বাদে সকলের বিয়ে হয়েছে। চার ছেলে আর দশ নাতিনাতনি নিয়ে শুখেই আছেন বুড়ো। ছেলেবউরা প্রত্যেকে সুন্দরী আর সুন্দর ব্যবহার। লোকের প্রশংসায় রাঙা হয় তিন বউ। একদিন রাতে হঠাৎ স্বপ্ন দেখলেন তার মৃত পূর্বপুরুষরা এসেছে। প্রত্যেকে বলছে "তোমাকে নিতে এসেছি"। ভয়ে ঘুম ভেঙে গেলো আহমদ আলী শেখের। তার বাবা আর চাচাও মৃত্যুর পূর্বে একই স্বপ্ন দেখেছে। চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ির লোকদের এক করলেন। বাড়ির সকলের মধ্যে একটা পরিবর্তন এলো। বড়ছেলে মনসুর হঠাৎ করেই বউয়ের কাছে জায়নামাজ চেয়ে নামাজ পড়া শুরু করলো। মেজো ছেলেও টেনশনে। এরই মধ্যে একদিন ছোটছেলে শামসু একই স্বপ্ন দেখলো। স্বপ্ন বুড়োর স্বপ্নের সাথে হুবহু মিলো গেলো। সেজো ছেলে ইদানিং ঘনঘন সিগারেট খায়। প্রত্যেকেই একটা দুর্ঘটনার জন্য প্রস্তুত। আর বাড়ির বউয়েরা? তাদের কি পরিবর্তন! এই সুন্দর চরিত্রের বউদের পরিবর্তন জানতে আপনাকে বইটা পড়তে হবে। এখানেই বইটার মজা। আর কি দুর্ঘটনা ঘটলো শেষ পর্যন্ত? এত চিন্তা না করে ছোট্ট এই বইটি পড়ে ফেলুন। পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ আমাকে কেউ প্রিয় লেখকের নাম জিজ্ঞাস করলে বলতে পারবো না। তবে খুব চাপাচাপি করলে যাদের নাম আসবে তাদের মধ্যে জহির রায়হান অন্যতম। এই মানুষটার দেখার চোখ ছিলো আলাদা। কয়েকটি মৃত্যু গল্পেও সেই আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির দেখা পাই। গল্পটা বেশ ছোট হলেও মনে দীর্ঘস্থায়ী দাগ কেটে যাবে। খুব চমৎকার ভাবে সমাজের ও পরিবারের এক নির্মম সত্যকে দেখতে পাবেন। আর লেখকের লেখনি সম্পর্কে কি বলবো! একজন জাত শিল্পির লেখা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারি!!!
Fiction
0
অমর একুশে বইমেলাতে পাওয়া যাচ্ছে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক জাফর ইকবালের লেখা ’গ্রামের নাম কাঁকনডুবি’ । বইটি প্রকাশিত হয়েছে তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বইটি রচিত শিশুতোষ এই বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন আরাফাত করিম।
Childrens-Book
2