summary
stringlengths
1
29.6k
genre
stringclasses
7 values
Label
int64
0
6
"মুহম্মদ জাফর ইকবাল" নামেই পরিচয় বিশেষ কিছু বলার প্রয়োজন নেই তবুও বলছি - মুহম্মদ জাফর ইকবাল হলেন একজন বাংলাদেশী লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ। রাশা মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত একটি কিশোর উপন্যাস যা ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় । "রাশা" বই সম্পর্কে বলি - মূল চরিত্র হচ্ছে রাশা যার নাম একময় রাইসা ছিল , নাম পরিবর্তন করার কাহিনীটা মজার । ছোট একটা মেয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আর তার সাথে সাথে জগৎটাও পাল্টাতে থাকে । নানী আর নাতনী দুজন দুজন কে শেষ সম্বলের মতো আঁকড়ে ধরে নতুন করে বেঁচে উঠে ।আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠা একজন যে কোন অন্যায় মেনে নেয় না কোন কিছুতেই , বাঁধা বিপতি যাই আসুক না কেন! সে মনে সাহস রেখে লড়াই করে যায় । একটা নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে কোথাও হার না মেনে জীবনে কীভাবে জয়ী হওয়া যায় তা রাশা খুব সুন্দর ভাবে দেখিয়ে দিয়েছে এই গল্পে । শেখার কোন বয়স নাই - শহুরের এক মেয়ে গ্রামের মানুষদের মতো মাছ ধরা , পাখি শিকার করা , গাছে উঠা, সাতার কাটা ইত্যাদি কীভাবে হেসে খেলে শিখতে থাকে তা বর্ণনা করা আছে এই গল্পে । একমাত্র রাশার আত্মবিশ্বাসের জন্যই সে নিজের এবং তার স্কুলের উন্নতি করে। অপর দিকে তার নানী , এখন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, যিনি অকালে স্বামী হারিয়ে প্রায় পাগল অবস্থায় থাকে ; তার জীবনে রাশার আগমনে সে আবার নতুন করে বেঁচে উঠে । একসময় দেখা যায় বুদ্ধির জোরে রাশা তার নানার হত্যাকারী রাজাকারকেও বিচারের সম্মুখীন করে। আমার কাছে মনে হয়েছে বইটা শুধুমাত্র কিশোর - কিশোরীদের জন্য নয় কারণ মা - বাবা দুজনের জন্যই বাচ্চাদের জগৎ কতোটা রংহীন হয়ে পরে তা ছোট করে বোঝার জন্য হলেও সবার এই বইটা পড়া প্রয়োজন । তিনি বইটির মাধ্যমে শিক্ষাপদ্ধতি ও সমাজ সংস্কার এবং মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্যর বিষয়টি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি বই। বইটি সংগ্রহ করুন এবং নিজেও পড়ুন ছোট ভাই বোনদের পড়তে উৎসাহিত করুন । শুভ হোক আপনার পাঠ্য কার্যক্রম।
Childrens-Book
2
মোশতাক আহমেদ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা সাহিত্যে যে সকল কথাসাহিত্যিক অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে মোশতাক আহমেদ অন্যতম।নিবো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। টানা চোখ, টিকালো নাক আর লম্বা চুলে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে। বেশি সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে। বেশি সুন্দর লাগছে শরীরের হালকা সবুজ রঙের কারনে। যখন মেয়েটির কণ্ঠ শুনল এবং নাম জানতে পারল নিলি, তখন আরও বিস্মিত হলো সে। একজন মেয়ের কণ্ঠ এত সুন্দর হয় কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে নতুন রূপের নিলিকে দেখে চমকে উঠল নিবো। নিলি এখন আর সবুজ নয়, সোনালি। সোনালি নিলি সবুজ নিলির চেয়ে অনেক সুন্দর। এত সুন্দর যে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে। হারিয়ে যেতে দুরে, অনেক দুরে, লাল, নীল কিংবা সবুজ জিজিল নামক গ্রহ-উপগ্রহে। নিবো যখন নিলির সঙ্গে এক জিজিল থেকে অন্য জিজিলে ঘুরে বেড়াতে ব্যস্ত, তখন তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল মিমিচুন গ্রহের উন্নত বুদ্ধির রোবটেরা। তারা নিলিকে জিজিল থেকে দূরের কোন গ্রহে পাঠিয়ে দিতে চায়, আর খুঁজে বের করতে চায় নিবোকে। কারণ জিজিল গ্রহে নিবোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। এদিকে নিবোকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠে নিলি। একটার পড় একটা কৌশল অবলম্বন করতে থাকে সে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠে না। রোবটদের কাছে ফাঁস হয়ে যায় তার চতুরতা। পরিণামে বিচ্ছেদ ঘটে নিবো আর নিলির। শেষ পর্যন্ত কি ঘটেছিল নিবো আর নিলির জীবনে? আবার কি তারা ফিরে পেয়েছিল আনন্দ আর ভালবাসায় ভরা জিজিলের রঙিন জীবন। নাকি তারা হারিয়ে গিয়েছিল দূর মহাশূন্যের নিকষ কালো অন্ধকারে?
Science-Fiction
4
বই: বিভ্রম জনরা: সামাজিক উপন্যাস লেখক: জয়নাল আবেদীন প্রকাশনী: ভূমিপ্রকাশ প্রকাশকাল: বইমেলা ২০১৯ প্রচ্ছদ: শওকত শাওন পৃষ্ঠা: ৪২৪ মূল্য: ৪৯০টাকা কাহিনী সংক্ষেপ: আশির দশকের যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের গ্রাম্য ও শহুরে রাজনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ জীবনের গল্প বিভ্রম। জেনারেল এরাশাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে একদিকে শহরে বইছে উত্তল হাওয়া। সেই হাওয়ায় উতপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মৃত্যুকে পরোয়া করে তাই দেশের জন্য রাজপথে চলে স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম। এই সংগ্রামের নায়ক ফরিদ। একসময় বিপ্লবী চেতনায় বুদ থাকলেও ক্রমে হয়ে ওঠে প্রেমিক। বন্ধুর প্রেমিকা অালো, দ্বীধানিত মনে আলোকে কাছে পেতে চাইলেও পরক্ষণেই বিবেকের কাছে হেরে যায় সে, কোথায় অাছে এর পরিনতি! অন্যদিকে শিমুলতলীতে স্বৈরচারীর বীজ বুনছে ইলিয়াস শেখ। দেড়শো বছরের পুরানো জমিদারী প্রথা না থাকলেও জমিদারী নাম, ভাব, প্রভাব প্রতিপত্তি পুরোটাই অাছে আগের মতো। তাই ইলিয়াস শেখও চাইছে পিতৃভুলের মাসুল দিয়ে নিজের রাজত্ব পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা করতে। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে মানুষ শিকার করতে বের হয়েছেন প্রবল প্রতাপশালী জমিদার জমির শেখ। ঝুম বৃষ্টির রাতে আবছায়া অবয়ব দেখে তীর ছুঁড়লেন জমির। তীর আঘাত করল মুর্শিদ আলীর বুকে। ময়ূরের পাখা লাগানো বিষমাখা একটিমাত্র তীর জন্ম দিল অর্ধ শতক ব্যাপী মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের। এক পক্ষে সাম্রাজ্য হারানোর ক্ষোভে বিক্ষুদ্ধ জমির শেখের নাতি ইলিয়াস শেখ, অন্য পক্ষে পিতৃহত্যার প্রতিশোধে নির্মম মুর্শিদ আলীর পুত্র আনসার আলী। শুরু হলো প্রভাব বিস্তারের অভিশপ্ত বিভ্রম খেলা। এ খেলায় জড়িয়ে পরে মা-বাবা হীন গ্রাম্য অশিক্ষিতা সুন্দরী বধু নাজু। কারও সাতপাঁচে না থেকেও নাজুকে কেন্দ্র করে আবর্তীত হতে থাকে ইলিয়াস শেখ আর আনসার আলীর দাবার কোটের দান। এই দাবার ছকে কেবল রাজা মন্ত্রী নয় আছে প্রজারও বিস্তার। মুক্তিযুদ্ধে সর্বহারা যতিন মাষ্টার তাই তো স্বাধীনতার দু'বছর পরে আবার ফিরে আসে। কেন তার এ প্রত্যাবর্তন? কিসের ভ্রমে রাত দুপুরে ছুটে যায় জমিদার বাড়ির দিকে! জমিদার পত্নী জামিলা। সংসারের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও অবহেলার পাত্রী হয়েই কেটেছে সংসার জীবন। ইলিয়াস শেখের সারাজীবনের অপবাদ মাথা পেতে নিলেও শেষ বয়সে এসে ছেলের এক প্রশ্ন তাকে করে তোলে ক্ষতবিক্ষত। রাজীব নিজেও অাছে অস্তিত্বের সংকটে। কী তার অাসল পরিচয়? এ প্রশ্ন যে তাকে কুড়ে কুড়ে খায় দিনরাত। উপন্যাসের প্রছন্ন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিরঞ্জন।বাকপ্রতিবন্ধী এ বাঁশুরিয়ার নাম নিরঞ্জন সেটাই বা কে অাবিস্কার করল! সারারাত নির্ঘুম আম বাগানে বাঁশি বাজানো নিরঞ্জন পাগলেরই বা কিসের এত দুঃখ। ঝড়ের মতো হঠাৎ করেএসে অাবার হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে কোথায় চলে যায় নিরঞ্জন, কেন যায়? এতসব প্রশ্ন গোলক ধাঁধার মতো ছকে এঁকে পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে তোলা গল্পটা বিভ্রমের। বিভ্রম মূলত প্রেম-বিচ্ছেদ, বিশ্বাস- অবিশ্বাস দুঃখ- সুখের দোলাচালে গড়ে ওঠা এক ধর্মভিরু সমাজের আখ্যান। যেখানে অজানা ভয়কে হাতিয়ার করে মাজার বাড়িতে আনসার আলী দিনের পর দিন বিস্তার করছে তার সম্রাজ্য। ইলিয়াস শেখও বুঝি তাই সামনা সামনি লড়াইয়ে নামতে চায় না তার। শেষ পর্যন্ত কার হবে জয় এই বিভ্রমের খেলায়! নিজস্ব মতামত: অনেকগুলো চরিত্র নিয়ে বিস্তর পরিসরে লেখা বিভ্রম। তাই বলে তাল কেটে ভ্রমে হারিয়ে যাওয়ার কোনে সুযোগ লেখক রাখে নাই। শিকল পড়ে যতোটা না অনুভুতি ছিল তার থেকে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগা বেড়েছে লেখকের লিখন শৈল্পের প্রতি। লেখক সত্ত্বাটা যে মানুষের প্রতি স্রষ্টার প্রকৃতি প্রদত্ত দান অার সেই সাথে প্রচেষ্টার ফসল জয়নাল আবেদীন সেটা হাতে কলমে দেখিয়ে দিলেন। একজন মেডিকেল পড়ুয়া মানুষের মাথা থেকে এত সুন্দর প্লট অার তার চমৎকার বর্ণনা মুগ্ধ করছে আমায়। রাজনীতি নিয়ে আমার জ্ঞান শূন্যের কোঠায়। এরশাদের স্বৈরাচারী সময় সম্পর্কে তাই তেমন কোন ধারণাই ছিল না। বিভ্রমের গল্পে দেখেছি সেই উত্তল সময়ের চিত্র। সামান্য মাজার কে কেন্দ্র করে ধর্মভিরু মানুষের জীবন প্রবাহ কতোটা পরিবর্তনশীল তার সুন্দর দৃশ্যকল্প রচিত হয়েছে এ রচনায়। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট মুর্শিদী অার লোকগীতির ব্যবহার, ভাষার আঞ্চলিকতার টান গল্পটাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এছাড়া প্রেম- ভালোবাসা অার মানুষের অাদিম লোভ লালসার চিত্রও ফুটে উঠেছে। বিশ্বাস অবিশ্বাস সর্বোপরি প্রতিশোধ প্রবণতা আর ক্ষমতার লোভে মত্ত হওয়া কিছু মানুষের মনোসতাত্ত্বিক রণক্ষেত্রের চিত্র এতোটাই বাস্তব যা পাঠককে কল্পলোকে হারিয়েেযেতে বাধ্য করবে। এক কথায় জীবনধর্মী গল্প প্রেমিকদের জন্য সুখপাঠ্য এক বই বিভ্রম। ভালো লাগা কিছু উক্তি: ★ ভয়, ভালোবাসা এবং ঘৃণা-- এই তিন জিনিস সত্যিকার অর্থে মনে একবার ঢুকে পড়লে আর বের করা যায় না। ★ একমাত্র মৃত্যৃই অাত্মীয় স্বজনকে ক্ষণিকের জন্য এক করতে পারে। মৃত্যু ছাড়া আর কারও সেই সাধ্য নেই। ★ সব পাপের জননী মিথ্যা, সব রোগের জননী দারিদ্র। ★ যারা মানুষের অভাবে জীবনভর অভাবী কেবল তারাই জানে ভাত না পেলে পেট যতখানি পুড়ে, কথা বলার মানুষ না পেলে বুক তারচেয়ে একটুও কম পুড়ে না। ★ নীরবতার চেয়ে বড় কোন শব্দ নাই। ★ তোমার লাইগ্যা কান্দিতেও সুখ, যত পারো কান্দাইয়ো লাগলে কইয়া মোর কইলজা, আমারে দিয়া রান্ধাইয়ো আমার পাগল অান্ধা মনটা, বান্ধাইয়ো তোমার মনে এক অাবদার পরকালে, আমায় রাইখো তোমার সনে ★ মানুষ নিজের কর্মরে ঢাকার লাইগ্যা একটা রুমাল পাইলেও সেইটারে চাদর বানাইতে চায়। ★ জীবনকে অযথা অকারণে অপচয় করার নাম বিপ্লব না, বরং ভবিষ্যতে কাজে লাগানোর জন্য বাঁচিয়ে রাখার নামই বিপ্লব। ★ বিশ্বাস এবং ভালোবাসা জমজ বোন। জন্ম হয় একসাথেই কিন্তু বেড়ে ওঠে আলাদা সত্তা নিয়ে। সব ভালবাসায় বিশ্বাস থাকে না।আবার সব বিশ্বাস ভালোবাসা পর্যন্ত গড়ায় না।
Fiction
0
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের যুদ্ধ ছিল না। পাকিস্তানিরা প্রথম দিকে সারা বিশ্বের কাছে তাদের ‘অভ্যন্তরীণ’ ব্যাপার হিসেবে এটিকে জাহির করতে চাইলেও প্রকৃত সত্যটি ছিল অন্য রকম। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান—তিনটি দেশই সক্রিয়ভাবে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা তাদের নৃশংস গণহত্যার খবর বিশ্ববাসীর কাছে আড়াল করে রাখতে পারেনি। যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীব্যাপী। পৃথিবীর বৃহৎ পরাশক্তিগুলো দুই দিকে বিভক্ত হয়ে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে এ যুদ্ধে। অনেক দেশই তখন চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। এমনকি খোদ ভারতের একটি মহল বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে ভারতবর্ষের স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পশ্চিমবঙ্গেও অনুরূপ ব্যাপার ঘটতে পারে; তাছাড়া কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ুর মতো জায়গাগুলোতে বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। কিন্তু সেটি কেবল ভারতের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশের ভাবনা হয়ে ছিল। ভারতের সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিল। মুক্তিযুদ্ধ মূলত দুটি জায়গা থেকে চলছিল, প্রথম যুদ্ধটি ছিল দেশের অভ্যন্তরে, আর দ্বিতীয়টি মুজিবনগর সরকার কর্তৃক দেশের বাইরে থেকে কূটনৈতিক যুদ্ধ। বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জন্ম ও জাতিসংঘ বইটিতে প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের প্রাক্কালে জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র সে সময় কী ভূমিকা নিয়েছিল, তার রূপরেখা রয়েছে বইটিতে। ২০০২ সালে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও জাতিসংঘ। কিন্তু বইটি এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না। বাংলা একাডেমীর বইটির পরিবর্ধিত ও সংশোধিত বইটিই হলো আমাদের বর্তমান আলোচ্য বই। একটি অধ্যায় এখানে সংযোজিত হয়েছে এবং একাধিক অধ্যায় পুনর্লিখন করা হয়েছে। এটি মূলত একটি গবেষণা গ্রন্থ। আগে এ বিষয়ে এমন পূর্ণাঙ্গ পুস্তক রচিত না হওয়ার কারণেই বর্তমান বইয়ের পরিকল্পনা করেন লেখক এবং নানা দলিলপত্র, বইপুস্তক থেকে এ গ্রন্থের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে নানা সেমিনার, আলোচনা ও বৈঠকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, লেখক তার একটি জবাবও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বইটিতে। জাতিসংঘের সাংগঠনিক কাঠামো, বিশেষ করে ভেটো প্রদানক্ষমতা কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে এটি নানা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে না। তবু বিশ্ব রাজনীতিতে এ সংগঠনটির ভূমিকা নেহাত কম নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিসমূহ এবং জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গি লাখ খানেক দলিলপত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেসব দলিলের মধ্য থেকে এযাবৎ অবমুক্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দলিলের বিশ্লেষণের মাধ্যমে জাতিসংঘের ভূমিকার একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয়েছে এখানে। বইটির প্রথম অধ্যায়ে গবেষণার বিষয় নির্বাচন ও তার পদ্ধতি সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দেওয়া হয়েছে। অখণ্ড পাকিস্তানে বাংলাদেশ একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হলেও বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র। উপরন্তু তারা ’৭১ সালের ২৫ মার্চ পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু করে। সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ আর তখন বাঙালিদের সামনে খোলা ছিল না। বর্তমান বইয়ের বিষয়বস্তু নির্বাচনে চারটি বইয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার কোনোটিতেই বিষয়টি বিস্তারিত ও নিরপেক্ষভাবে ধরা দেয়নি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এখানে দেখানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ কেন সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রাম নয়, কেন এটি ‘জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম’। তৃতীয় অধ্যায়ে শরণার্থী ইস্যুতে জাতিসংঘ, তার নানা সংস্থা, বৃহৎ শক্তি ও ভারতের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে নানা দিকের কূটনৈতিক কার্যক্রম ও জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া। মুজিবনগর সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যকার ঘটনাবলি বর্ণনা করা হয়েছে পঞ্চম অধ্যায়ে। সরকারের সেন্সরের বাইরে থাকা পত্রপত্রিকার দৃষ্টিতে জাতিসংঘের রূপটি তুলে ধরা হয়েছে ষষ্ঠ অধ্যায়ে। সপ্তম অধ্যায়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ ইস্যুতে বিতর্কের বিস্তারিত বলা হয়েছে। খুবই শ্রমসাধ্য এ বইটিতে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে। আগ্রহী পাঠকের কাছে বইটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে।
War
5
Khub bhalo boi .............
Fiction
0
by Bibhutibhushan Bandyopadhyay Read My rating: 1 of 5 stars2 of 5 stars3 of 5 stars[ 4 of 5 stars ]5 of 5 stars "আদর্শ হিন্দু হোটেল" পড়তে গিয়ে Paulo Coelho এর The Alchemist উপন্যাসের একটা লাইন বারবার মনে পড়ে যায়। “And, when you want something, all the universe conspires in helping you achieve it.” মাসে সাত টাকা মাইনেতে রাণাঘাট রেল বাজারের বেচু চক্কত্তির হোটেলে রাঁধুনির কাজ করে হাজারি ঠাকুর। এই অল্প মাইনেতে তার পরিবার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু হাজারির স্বপ্ন অনেক বড়। এই রাণাঘাট রেল বাজারেই সে নিজের একটা হোটেল দিবে। হাজারির রান্নার হাত খুব ভাল, অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বেচু চক্কত্তির হোটেলে আসে শুধু হাজারির রান্না করা খাবার খাবে বলে। বলতে গেলে বেচু চক্কত্তির হোটেলটা টিকে আছে হাজারির রান্নার গুণে। সকলেই খাওয়ার পরে হাজারির রান্নার বিশেষ তারিফ করে, এমনকি পাশের হোটেলের মালিক রাত্রিবেলা গোপনে এসে তাদের হোটেলে কাজ করলে দশ টাকা করে মাইনে দেওয়ার লোভ দেখায়। এসব হাজারির আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তবুও সে বেচু চক্কত্তির হোটেল ছেড়ে যায় না, কারণ সে এখানে থেকে ভালভাবে কাজ শিখে নিজেকে প্রস্তুত করতে চায়। কিন্তু বেচু চক্কত্তির হোটেলে হাজারির জীবনটা অত মসৃণ নয়। প্রায়সময় বিভিন্ন বানোয়াট অভিযোগে হোটেলের ম্যানেজার পদ্ম ঝির লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে তাকে জরিমানা করে বেতনের টাকাও কেটে রাখা হয়। এমনকি একবার হোটেল থেকে বাসনপত্র চুরির মিথ্যে অভিযোগে এক সপ্তাহ হাজতে কাটাতে হয়। এত কিছুর পরও হাজারি মনিবের প্রতি তার অসীম শ্রদ্ধা এবং নিজের একটি হোটেল দেয়ার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে বেচু চক্কত্তির হোটেলে কাজ করে যায়। তার এই স্বপ্নের সারথি হয় তার কণ্যাসম কয়েকটি মেয়ে। বিধবা কুসুম, জমিদার কণ্যা অতসী এবং ভিনগাঁয়ের এক বধূ। তারা প্রত্যেকেই তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে হাজারিকে তার নিজের হোটেল চালু করতে সাহায্য করতে চায়। হাজারি কি কুসুম-অতসীদের সাথে নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে? নাকি মানুষের জীবনের অন্য অনেক স্বপ্নের মত "আদর্শ হিন্দু হোটেল" একটি স্বপ্নই থেকে যাবে?
Fiction
0
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী : একজন হৃদয়বান বাঙালীর হৃদয়ের আঁকিবুকি মাসুম বিল্লাহ আমি মুখে যা বলি, তাই বিশ্বাস করি। আমার পেটে আর মুখে এক কথা। আমি কথা চাবাই না, যা বিশ্বাস করি বলি। সেজন্য বিপদেও পড়তে হয়, এটা আমার স্বভাবের দোষও বলতে পারেন, গুণও বলতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২১৮ পৃষ্ঠা) থেকে উপরের সংলাপটি কোট করে দিলাম। বিশেষ কারণটি এখানে অব্যক্তই থাক; বরং আমার প্রিয় একটি সংলাপ’ বলে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে। পড়ছি: বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। অনেককাল থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ইমার্চের ভাষণ শুনে যেমনটি শিহরিত হয়েছিলাম, তেমনি বইটি পড়ার সময়ও বুকের ভেতর এক ধরনের শিহরন অনুভব করেছি। চোখের পাতায় আলগোছে মহান মানুষটি ভেসে উঠেছে। স্পর্শ পেয়েছি দরাজ কন্ঠের অধিকারী পাশে বসে আমার সাথে কথা বলে যাচ্ছেন। যেমন করে মাঠের রাখাল বালক আর কৃষকের মধ্যে ভাব বিনিময় হয়। এসময় অনুভব করে নিয়েছিÑ একজন হৃদয়বান মানুষের অন্তর আত্মার কথকতা। সাধারণত বিখ্যাত লেখক বা বিখ্যাত কোনো বইয়ের নাম জেনেই পড়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠি, কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ’র ক্ষেত্রে তেমনটি মাথায় ছিল না। যখন বইটি পড়া শুরু করলাম, তখনো মাথায় ছিল যে, আমি বঙ্গবন্ধুর নিজের বলা কথা জানতেই বইটি পড়ছি। কিন্তু কিছুসময় পড়েই আমি স্তম্ভিতই হয়ে গেলাম বঙ্গবন্ধুর লিখনি ধার দেখে। মাঠে ময়দানে ছুটে বেড়ানো মানুষটির কলম-কালির মহিমা পড়ে। একজন রাহনৈতিক নেতার লিখিত ভাষা এতো সাবলীল, গতিময়! যেন লিখিত কোনো বই পড়ছি না, বইটির লেখক নিজে আমার সাথে কথা বলছেন। যে কথায় কোনো ভানটান নেই, চালাকী নেই, রং নেই একটুও; বাংলার মাটিঘেঁষা মানুষ তার ঘরের আঙিনায় বসে তার কাছের মানুষের কাছে যেভাবে হৃদয়ে কথা বলে, যা হৃদয়েরই রস-রসায়নে হয়ে ওঠে পাঁচালী-ঠিক সেই ভাবে লিখেছেন বইটি। পৃথিবীর সব লিখিত ভাষা মাত্রই সাজানো, আর্টিফিশিয়াল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু লেখক ছিলেন না বলেন এমন সরল নির্ভেজাল কথাগুলো লিখতে পেরেছিলেন। পেরেছিলেন নিজের সম্পর্কেও সরল-সোজা ভাবে বলতে: আমি মুখে যা বলি, তাই বিশ্বাস করি। আমার পেটে আর মুখে এক কথা। আমি কথা চাবাই না, যা বিশ্বাস করি বলি। সেজন্য বিপদেও পড়তে হয়, এটা আমার স্বভাবের দোষও বলতে পারেন, গুণও বলতে পারেন।’’ (বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ২১৮ পৃষ্ঠা থেকে ) যেমন সহজেই বাংলার মানুষের সম্পর্কে তিঁনি বলতে পেরেছিলেন: অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভালো দাড়ি, সামান্য আরবি ফার্সি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে । ভালো করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী; পৃষ্ঠা, ৪৮) ৩২৯ পৃষ্ঠার বইটা পড়তে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের নিখাদÑঅকপট আন্তরিকতা আমায় গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। বাঙালি সংসারে আন্তরিক মানুষ আমি অনেকই দেখেছি। সম্ভবত প্রত্যেক বাঙালিই আন্তরিকÑআমার একান্ত বিশ্বাস। তবে বাঙালির এই সর্বশ্রেষ্ট নেতাটি যে নিখাদ আন্তরিক সে বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ আগেও যেমন ছিলো না, বইটি পড়ে তো সে ধারণা পাকাপোক্ত হয়েছে। বইটির প্রতিটি বাক্যে তাঁর দরদ দারুণ স্পষ্ট করে অনুভব করেছি। বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতা, হৃদয়মাধুর্য অনুভব করার জন্য তাঁর দিল্লি থেকে কলকাতা ফেরার বর্ণনার উদাহরণ হিসেবে এখানে তুলে দিতে পারি... ... আমাদের সময় হয়ে এসেছে, ফিরতে হবে। চৌধুরী সাহেব তাড়া দিলেন। আমরাও গাড়িতে উঠে বসলাম। আগ্রায় ফিরে এসেই মালপত্র নিয়ে রওয়ানা করলাম তুন্দলা স্টেশনে। এসে দেখি বংলাদেশের অনেক সহকর্মীই এখানে আছেন। অনেক ভিড়। মালপত্র চৌধুরী সাহেবের প্রথম শ্রেণীর গাড়িতে ফেলে আমরা তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে চেষ্টা করলাম। যখন সকলেই উঠে গেছে ট্রেনে, আমি আর উঠতে না পেরে এক ফার্স্ট ক্লাসের দরোজার হাতল ধরে দাঁড়ালাম। আমার সাথে আরেক বন্ধু ছিল। পরের স্টেশনে যে কোনও বগিতে উঠে পড়ব। অনেক ধাক্কাধাক্কি করলাম, প্রথম শ্রেণীর ভদ্রলোক দরোজা খুললেন না। ট্রেন ভীষণ জোরে চলছে, আমাদের ভয় হতে লাগল, একবার হাত ছুটে গেলে আর উপায় নাই। আমি দুই হাতলের মধ্যে দুই হাত ভরে দিলাম, আর ওকে বুকের কাছে রাখলাম। মেলট্রেন-স্টেশন কাছাকাছি হবে না। আমাদের কিন্তু অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছিল।বাতাসে হাত-পা অবশ হতে চলেছে। আর কিছু সময় চললে আর উপায় নাই। কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ ট্রেন থেমে গেল। আমরা নেমে পড়লাম।’ (বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী; পৃষ্ঠা-৬০-৬১) এছাড়া আরো নানান বিষয় বঙ্গবন্ধু তার লেখনীতে তুলে এনেছেন। প্রতিটি ঘটনাই মানবিক হিসেবে আমার কাছে ধরা দিয়েছে। সেকারণেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী কেবল একটা সময়ের নিছক রাজনৈতিক ভাষ্য বলে মনে হয় না। একজন মানুষের বুকের ভেতরের আকাশটা ছবি দেখতে পাওয়া যায়; শুধু ছবি কেন সব খোঁজ-খবরই পাওয়া যায় । পরিশেষে এটুকু বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু নির্জন কারাকক্ষে বসে অমূল্য কিছু লেখা পড়ে আমরা এক হৃদয়বান বাঙালি হৃদয়ের আঁকিবুকির খোঁজ পাই।
Political
3
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ রাত দ্বিপ্রহর পেরিয়েছে অনেক আগে। সারাদিন মাছ ধরে ক্লান্ত নিতাই তার নৌকা খানা গঙ্গাবতী নদীর তীরে ভিড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎই দেখে তার নৌকার পাশে আরেকটি নাও। ছইয়ের ভিতরে মুখ অবধি ঢেকে শুইয়ে রাখা আছে একটি বালককে। মাথার কাছে জলের ঘটির গলায় বাঁধা চিরকুট। কিন্তু এ কী! ছেলেটার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, সারা গায়ে যে মহামারী গুটিবসন্ত! তীব্র আতংকে জমে গেলো নিতাই! খবর গেলো দেবেন্দ্রনারায়ণ এর কাছে। গঙ্গাবতীর পাশ ঘেঁষে বিশাল জমিদার বাড়ি, তারই মেজোকর্তা তিনি। জমিদার বিষ্ণুনারায়ণের তিন সন্তানের মধ্যে মধ্যম হলেও, বড় পুত্র অবনীন্দ্রনারায়ণের বদলে বৃদ্ধ পিতার জমিদারি দেবেন্দ্রনারায়ণই দেখেন। প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারি দেবুর মধ্যে জমিদারি রক্তের খামখেয়াল, বহুগামিতা, চন্ডাল-রাগ সবই বিদ্যমান। এতো পরাক্রম সত্বেও সেই কালরাতে নদীর তীরে পাওয়া রহস্যময় ছেলেটির জন্যই বদলে গেলো দেবেন্দ্রনারায়ণের জীবনছক। দীর্ঘকাল ধরে জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে পাতা হয়েছে ষড়যন্ত্রের শতরঞ্জ খেলা! বীণাবালা জাল গুটিয়ে এনেছেন। তার সাথে খেলায় যোগ দিল আরো অনেকেই, কেউ লোভের ফাঁদে, কেউ প্রতিশোধের অনলে জ্বলন্ত। দেবেন্দ্রনারায়ণকে চুকাতে হবে অনেক পাপের হিসেব। শুধু কি তিনি? প্রকৃতি ছেড়ে কথা বলে না কাউকেই, সকলের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়। গঙ্গামহলের প্রতিটি ইঁট যে চিৎকার করে বলছে লোভ, বঞ্চনা, আর প্রতিহিংসার গল্প! পাঠপ্রতিক্রিয়া: যেকোনো গল্প পড়ার সময় পাঠক মাত্রই কল্পনা করে নেয় একটা দৃশ্যপট। তা না হলে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ডুব দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। 'অন্দরমহল' উপন্যাসের সময়কালটা পুরনো পটভূমিতে লেখা হলেও, সেটা ঠিক কবে সে বিষয়টি লেখক এড়িয়ে গিয়েছেন। ভূমিকাতে দায়মুক্তির জন্য উল্লেখ করেছেন বাস্তবের সঙ্গে সংস্পর্শ এড়াতে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়কাল বেছে নিচ্ছেন না। উপন্যাস শুরু করার আগেই এমন শুভংকরের ফাঁকির মত ঘোষণা পুরো সময় মাথায় চাপ ফেলেছিল। গল্পের কিছু কিছু জায়গাতেই গল্পপ্রবাহকে 'অনেকদিন' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গল্পে যেখানে জীবন-মরণের টানটান উত্তেজনা, সেখানে 'অনেকদিন কেটে যাওয়া' সময় খুব বিভ্রান্তিকর। কখনো আবার লেখক এই অনির্দিষ্ট সময়ে এগিয়ে গিয়ে, ফ্ল্যাশব্যাকে কি কি ঘটে গেছে বর্ণনা করেছেন। এর চাইতে ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে গল্প এগিয়ে গেলে পড়তে বেশি ভালো লাগতো৷ পুরো উপন্যাস পড়ার পরও ঠিক ঠাহর করতে পারিনি 'অন্দরমহল' এর পুরো ঘটনাটা কতোটা সময় যাবত ঘটেছে। পরিচয়ের পুনরুক্তি ঘটেছে গল্পে বারবার। গঙ্গাবতীর তীর ঘেঁষে গঙ্গামহল, পরপর কয়েক পাতায় এই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। রতনকান্তিকেও প্রতিবার গানের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে না দিলেও চলে। গল্পে রহস্য জমিয়ে তুলে আবার সব উত্তর দিয়ে দেওয়া হয়েছে একটু পরে পরে। সাসপেন্স তাই থমকে যাচ্ছিলো। কি ঘটবে পাঠক সহজেই ধরে নিতে পারবেন, এবং বুঝে নেওয়ার জন্য আগে থেকে প্রচুর সূত্র রাখা হয়েছে। অবশ্য লেখক কোনো রহস্য উপন্যাস লিখতেও চাননি, তিনি চেয়েছেন লোভ- লালসা আর পরিণতির গল্প বলতে। 'অন্দরমহল' উপন্যাস ভালো লাগার প্রধান কারণ এর পটভূমি। জমিদার বাড়ি, ক্ষমতার লড়াই, আর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের গল্প পড়তে এমনিতেও ভালো লাগে, অন্যরকম একটা জগতে বাস করা যায় পড়ার সময়টা। গঙ্গামহল, প্রমত্তা গঙ্গাবতী নদী, বজরাডুবির চর, বারোহাটির ভূতূড়ে জঙ্গল আর বাগানবাড়ি - সবকিছুই ছিল উত্তেজনাময়। বড় কলেবরে লেখা উপন্যাসের অনেক চরিত্র, তাদের ব্যাপ্তি শক্তিশালী এবং গভীর। দেবেন্দ্রনারায়ণ উগ্র মেজাজের বুনোঘোড়া, যিনি স্ত্রী রেণুকাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাকে দিয়েই কিশোরী দাসীর সাথে মিলিত হওয়ার শয্যা প্রস্তুত করে পাশে বসিয়ে রাখেন, অথবা নির্মাণকাজ মনমতো না হওয়ার রামচরণ কারিগরের দু'হাত কেটে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার চরিত্রেই আবার সংমিশ্রণ ছিল অপরাধবোধে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া স্নেহশীল জন্মদাতার। বাইজি হেমাঙ্গিনী দেবী, বিভুঁই, হরিহরণ বণিক, রতনকান্তি, সর্বজয়া, দ্বিজেন্দ্র - সব চরিত্রের আলাদা আলাদা গল্প লেখক সুন্দরভাবে বলে গিয়েছেন। লেখকের 'নির্বাসন' পড়েছিলাম এর আগে। সেই তুলনায় এই উপন্যাসের গল্পের গাঁথুনি আর চরিত্রায়ন অনেক বেশি ভালো লেগেছে। লেখক যা কিছু দর্শন এবং স্বরচিত গান ব্যবহার করেছেন তাতে বিরক্তি লাগেনি, বরং গল্পের প্রয়োজনে এসেছে। প্রকৃতি মানুষের হিসাব তার জীবদ্দশাতেই অনেকটা বুঝিয়ে দেয়, হোক তা পাপের প্রায়শ্চিত্ত বা পূণ্যের প্রতিদান। যে এক জীবনে মানুষ লোভের পিছনে ছুটে বেড়ায়, তাতে শান্তি কি পায়? 'আমাদের কিছুই নেই, অথচ সবটা সময়জুড়ে ভাবি, এই বুঝি নিঃস্ব হলাম!' - এই জীবনবোধ নিয়েই পাঠককে ভাবাবে অন্দরমহল উপন্যাসটি। উপন্যাস: অন্দরমহল লেখক: সাদাত হোসাইন প্রকাশনায়: ভাষাচিত্র প্রথম প্রকাশ: একুশে বইমেলা, ২০১৬ পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৪৩৮ মূল্য: ৬৫০ টাকা
Fiction
0
আজকে রিভিউ বাদ দিয়ে চলুন ঠগীদের নিয়ে একটা গল্প বলি। তার আগে একটা কথার জবাব দিন তো, "মৃত মানুষ কি কখনো পুনরায় জীবিত হতে পারে?" ১৮২৮ সালে এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজ চলাকালীন উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান নামক এক কর্নেলের উপর নাখোশ ছিলেন উপরমহল। উইলিয়াম হেনরির আগ্রহ ছিল ভারত নিয়ে গবেষণা। এজন্যে তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে ফোর্ট উইলিয়ামে পড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোম্পানির চাপে পড়ে শেষপর্যন্ত নর্মদা এলাকার ম্যাজিস্ট্রেটের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ফরাসি এক ভদ্রলোকের বই এসে পড়ে হেনরির হাতে। সে বইয়ে ফরাসি ভদ্রলোক সম্পূর্ণ ভিন্ন এক গোত্রের কথা উল্লেখ করেন। ভারতের অনেক প্রাচীন এই গোত্র ফাঁসুড়ে নামে পরিচিত। রুমাল দিয়ে গলায় ফাঁস পরিয়ে ওরা খুন করতো বলে ওদের এই নামকরণ। তারও অনেক পরে গিয়ে হেনরি জানতে পারেন এই গোত্রের আসল নাম হলো ঠগী। এই ঠগীদের আলাদা কোনো ধর্ম নেই। ঠগী ধর্মই সবার ধর্ম। দেবী কালীর আরাধনা করে এরা। বিভিন্ন ব্যবসায়ী কিংবা তীর্থযাত্রীদের সাথে সাধারণ মানুষের বেশ ধরে ওরা মিশে যায়। তাদের আপ্যায়নও করে, গান বাজনা করে আনন্দ দেয়। কিন্তু সময় সুযোগ বুঝে গলায় রুমালের ফাঁস পরিয়ে সবাইকে খুন করে। একজন যখন গলায় ফাঁস পরায় আরেকজন তখন পা চেপে ধরে যেন নড়াচড়া করতে না পারে। রুমালের এক কোনায় একটা পয়সা বাধা থাকে। ঐ রুমাল দিয়ে ফাঁস দিয়ে টান দিলে জিব আর চোখ বের হয়ে যায়। খুন করার পর মৃত ব্যক্তির পেট চিড়ে ফেলা হয় ছুরি দিয়ে। এরপর মাটি খুড়ে সবগুলো লাশ একসাথে কবর দেয়া হয়। এই সব কাজ হয়ে যায় এক ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে। এক ঘন্টা পর কোনোভাবেই বোঝার উপায় থাকেনা এখানে আলাদা একটা কাফেলার দল ছিল। একদম নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয় ওদের সব অস্তিত্ব। কোনো প্রমাণ ছাড়া এই গোত্রের কথা বলার কারণে ব্রিটিশ রাজ নাখোশ ছিল হেনরির উপর। অবশেষে উপায় না দেখে এই ঠগীদের বিরুদ্ধেই উঠে পড়ে লাগেন উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান। ইতিহাসে এখনো তিনি বিখ্যাত ঠগী নির্মূলের কারণে। এবার আসি সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনায়। আচ্ছা, কর্মক্ষেত্রে যদি আপনাকে ডিমোশন দিয়ে আপনারই কোনো সহকর্মির অধীনে কাজ করতে পাঠানো হয় কেমন লাগবে আপনার? যে ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে গিয়েছিল আহমেদ বাশার, যেখানে ফেরার কোনো ইচ্ছাই ছিল না সেখানেই তাকে ফিরতে হয় তাও অপদস্থ হয়ে। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় ইনস্পেক্টর হিসেবে ডিমোশন পেয়ে জয়েন করতে হয় আহমেদ বাশারকে। এসেই এলাকার প্রভাবশালী সাঈদ কন্ট্রাক্টরের রোষানলে পড়তে হয়। ময়মনসিংহ শহরের একটা পুকুরের উপর লোভ ছিল সাঈদ কন্ট্রাক্টরের বাবার। নিজে দখল করতে না পেরে মৃত্যুর সময় নিজের ছেলেকে বলে যান ওটা দখল করার জন্য। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে যখন পুকুরের দখল পাওয়া গেল তখন মোটর দিয়ে পানি সেচে তা ভরাট করতে চেয়েছিল সাঈদ কন্ট্রাক্টর। কিন্তু পানি সেচে পুকুর শুকিয়ে ফেলার চাঞ্চল্যকর একটা ব্যাপার ঘটে গেল। পুকুরের তলায় কাদায় ডোবা অবস্থায় একটা গাড়ি পাওয়া গেল। শুধু গাড়ি হলেও ব্যাপারটা সামান্যই ছিল। কিন্তু গাড়ির ভেতর একটা লাশের কংকালও পাওয়া গেল! আর যায় কোথায়, ক্রাইম সিন ঘেরাও করে সব রকম কাজ বন্ধ করে দিল বাশার। কোটি টাকার প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেল সাঈদ কন্ট্রাক্টরের। এদিকে ঐ গাড়ি আর কংকাল পরীক্ষা করে এমন সব তথ্য পাওয়া গেল যা শুনে বাশার একদম থ। বহুবছর ধরে পুকুরের তলায় পড়ে আছে গাড়ি আর লাশটা!! বাশার তদন্ত করতে থাকুক, এই সুযোগে আগের গল্পটা শেষ করি। ১৮২৮ সালেরই কোনো এক সময় মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ির জমিদারিত্ব পায় জমিদার বাড়ির ছোটছেলে সূর্যকান্ত আচার্য। লোকমুখে শোনা যায় বড় ভাই রমাকান্ত আচার্যকে ষড়যন্ত্র করে জমিদারি থেকে সরিয়ে নিজে জমিদার হয় সূর্যকান্ত। নিজে জমিদার হওয়ার সাথে সাথেই ব্রিটিশ রাজের সাথে আতাত করতে চেয়েছিল সূর্যকান্ত। পার্শবর্তী মধুপুরের তালুকদার পরিবারের সাথে তাদের অনেকদিনের বিরোধ রয়েছে। একদিকে তালুকদার পরিবার অপরদিকে বড়ভাই রমাকান্ত, দুদিক সামাল দিতে হলে ব্রিটিশ রাজের সাহায্য দরকার। এজন্য ব্রিটিশ রাজের পক্ষ হতে ছয়জন সৈন্য এসেছিল সূর্যকান্তের সাথে কথা বলতে। বৈঠক শেষে তারা আর ফিরে যায়নি। একদম লাপাত্তা। তাদের ঘোড়া পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, এমনকি কোনো চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছেনা। তদন্ত করতে পাঠানো হলো ক্যাপ্টেন জেমস ম্যাকফি ওর তার দলকে। তারা এসে তদন্ত শুরু করার পর এমন কিছু তথ্য পেল যা হজম করতে বেগ পেতে হলো। তবে কি ঠগীরা এই এলাকায় চলে এসেছে? অসম্ভব কিছু নয়। কথিত আছে ঠগীদের এই দলটা ভারতের সেরা। এবং তাদের কাছে জোড়া কালী মূর্তি আছে। এই কালীমূর্তি যাদের কাছে থাকবে তাদের কেউ দমাতে পারবেনা। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন পুকুরে পাওয়া গাড়ি ও লাশের সাথে ব্রিটিশ আমলের ঠগীদের একটা সম্পর্ক আছে। কী সম্পর্কে, কোন সুতায় দুটা অধ্যায় বাধা সেটা আপনারাই বের করে নিবেন। প্রথম থেকে দুটো আলাদা টাইমলাইনের গল্প বলা হয়েছে। ব্রিটিশ রাজের সময়কার এবং বর্তমান সময়কার। একটা অধ্যায় ব্রিটিশ রাজের, পরের অধ্যায়টা বর্তমানের। আবার এর পরেরটা ব্রিটিশ। এভাবেই আস্তে আস্তে সুতা ছেড়েছেন লেখক। দুটো টাইমলাইনকে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিতে নিতে শেষ দিকে দুটো বিন্দু এক করে দেয়ার কাজটা খুবই সুন্দর ও সাবলীলভাবে করেছেন। সবথেকে ভালো লেগেছে বইয়ের নামকরণ। কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে আপনাদের মনে হতে পারে, কাহিনীর সাথে নামের কোনো সম্পর্ক নেই। দাঁড়ান, ব্যাখ্যা করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ ও মাৎসর্য। আমরা সাধারণত এই ছয়টি রিপুর কথা জানি। এই ছয়টি রিপুকেই ষড়রিপু বলা হয়ে থাকে। তাহলে সপ্তম রিপু আসলো কোথা থেকে? অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল ফিলোসফিতে রিভার্স থিউরি নামে একটা থিউরি আছে। রিভার্স থিউরি অনুযায়ী মানুষের রিপু আসলে সাতটা। সপ্তম রিপুটা হলো আসক্তি। না বুঝে অতিরিক্ত ভক্তির প্রতি আসক্তিই হল সপ্তরিপু। এই যে জঙ্গীবাদ, এই জঙ্গীরা অতিরিক্ত ভক্তির আসক্তিতে না বুঝেই দাঙ্গা ফ্যাসাদ করছে। এটাই সপ্তরিপু। এবার নিশ্চয় গল্পের সাথে নামকরণের মিল পেয়েছেন। ওই যে, কালীর সাধনা! প্রথম দিকে সাধারণ একটা থ্রিলার ভেবে পড়া শুরু করেছিলাম। সাধারণ বলতে আমি গতানুগতিক থ্রিলার মনে করেছিলাম। এই বই নিয়ে তেমন কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি বলে এমনটা হতে পারে। তবে এতটুকু জানতাম যে এই বইটা ঠগীদের কেন্দ্র করেই লেখা হয়েছে। পড়া শুরু করার পর যখন বেশ কয়েক অধ্যায় পড়ে ফেলেছি তখন বইয়ের পাতাগুলোয় আঠার মত লেগেছিল আমার চোখ। দুদিন একটানা পড়ে শেষ করেছি চারশো পৃষ্ঠারও উপরের একটা বই। গল্পটা আমার মাথায় এমনভাবে ঢুকে গেছিল যে বিকেলের আড্ডার সময়ও ভাবছিলাম জেমস ম্যাকফি, উইলিয়াম হেনরি কিংবা বাশারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে। এটাই বোধহয় একজন লেখকের সার্থকতা। এর আগে রবিন জামান খানের কোনো বই আমি পড়িনি। সেই হিসেবে খুবই ভালো একটা বই দিয়েই তার লেখার সাথে আমার পরিচয় হলো। এই বই নিয়ে কেন এত আলোচনা হয়নি সেটা আমার মাথায় ঢুকেনি। আলোচনা এবং প্রসংসার দাবিদার এই বই। তবে। এত প্রসংসার পর আবার তবে কেন? বইটার কাহিনী বা গল্প যতটাই ভালো লেগেছে ঠিক ততটাই বিরক্তিকর লেগেছে প্রচুর পরিমাণে ভুল বানান দেখে। ভুল বানানের কথা বাদ দিলাম, নরমাল টাইপিং মিস্টেক এত পরিমাণে ছিল যে বারবার মনোযোগ ছুটে যাচ্ছিল। আমি জানিনা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন কেন এই ব্যাপারগুলোয় নজর দিচ্ছেন না। বানান ভুলের আধিক্য না থাকলে গত বছরের সেরা থ্রিলার বই বলা যেত সপ্তরিপুকে। লেখকেরও বেশ কিছু তথ্যগত ভুল রয়েছে। আশা করব এগুলো আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠবেন লেখক। তবে তিনি এমনই গল্প ফেঁদেছেন যে ঐসব ছোটখাটো ভুল নজর এড়িয়ে যায়। যারা এখনো সপ্তরিপু পড়েননি তারা দারুণকিছু মিস করেছেন। যারা কিনে রেখেছেন, আমার মত দেরি করে পড়ছেন তাদের বলব, আর দেরি করা ঠিক হবেনা মোটেও। হ্যাপি রিডিং। বইঃ সপ্তরিপু লেখকঃ রবিন জামান খান প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ প্রচ্ছদঃ ডিলান পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৪৩০ মূল্যঃ ৪৫০ টাকা মাত্র
Fiction
0
এক বিখ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী ক্রিসের মেয়ে রেগান। বয়স এগারো। হঠাৎ করে তার মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিতে লাগল। প্রথমদিকে যে এক কাল্পনিক চরিত্রের সাথে একা একা কথা বলত। কিছুদিন পর অস্বাভাবিকতার মাত্রা বাড়ল। মানসিকভাবে সে একাবারেই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ল। তার ঘরেও যেন কিছু একটা আছে যেজন্য ঘর সবসময় শীতল হয়ে থাকে। রাতে ঘুমের মধ্যে তার খাট কাঁপে। ক্রিস তার মেয়েকে ডাক্তার দেখাল। ডাক্তারেরা রেগানের শারীরিক সবধরনের সম্ভাব্য রোগ বিশ্লেষণ করলেন। পাওয়া গেল না কিছুই। সাইক্রিয়াটিস্টের শরণাপন্ন হয়েও লাভ হল না কোন। ওদিকে ক্রিসের বাড়িতে এক সন্ধ্যায় খুন হয়ে গেল এক চলচ্চিত্র পরিচালক। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, মানসিক ভারসাম্যহীন রেগানের হাতেই খুনটা হয়েছে। কিন্তু রেগানের সমস্যাটা কি? শারীরিক বা মানসিক সমস্যা না থাকার মানে তো তার ওপর শয়তান আছর করেছে। শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে তার দরকার এক্সরসিজম বা তার ওপর গুণ করা। এক নাস্তিক পাদ্রী কারাস যে কিনা একজন মনোবিদও, অস্বীকৃতি জানাল এক্সরসিজম করতে। সে নতুন করে বৈজ্ঞানিকভাবে বের করার চেষ্টা করতে লাগল রেগানের সমস্যার সমাধান। বিভিন্ন থিওরিও দাঁড় করাল। কিন্তু শেষ অব্দি কি রেগানের সমস্যাটাকে যুক্তি দিয়ে বিচার করা যাবে নাকি এক্সরসিজমই করতে হবে? শেষে রেগান আর কারাসের পরিণতিই বা হবে? কাহিনীর শেষে কি নতুন করে আবির্ভাব হবে কারো? এসবের উত্তর পাওয়া যাবে এক্সরসিজম উপন্যাসে। এটি মূলত পিটার ব্লেটির পিশাচ কাহিনীর হুমায়ুন আহমেদ কর্তৃক ভাবানুবাদ। প্রথমেই বলতে হবে, অনুবাদটি হয়েছে সর্বোচ্চমানের। হুমায়ুন আহমেদ যদি সাহিত্যের এই শাখার সাথে নিয়মিতভাবে জড়িত থাকতেন, তবে এদেশের অনুবাদশিল্প যে এতদিনে অনেকদূর এগিয়ে যেত তা বলাই বাহুল্য। যাইহোক, এবার 'দি এক্সরসিস্ট' এর মূল কাহিনী নিয়ে কথা বলি। অনেকেই হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী বিষয়ক রচনাগুলোর সাথে মিল পাবেন এই উপন্যাসের। মূলত 'দি এক্সরসিস্ট' এর অনুবাদের অভিজ্ঞতাই কিন্তু হুমায়ুন আহমেদকে অনুপ্রাণিত করেছিল এইধরণের আদিভৌতিক বিষয়কে যুক্তিসঙ্গতভাবে মিসির আলী সিরিজের মাধ্যমে তুলে ধরতে। মিসির আলীর রচনায় যেমন লজিক আর অ্যান্টি লজিক বিশেষ জায়গা পেয়েছে, তেমন এই উপন্যাসেও কিন্তু লজিক আর অ্যান্টি লজিকের পরস্পর বিরোধিতা এবং এ বিষয়ে কারাস চরিত্রের মাধ্যমে সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচল ফুটে উঠেছে। কারাস চরিত্রটি একেবারে মিসির আলীর মত করেই ভৌতিক বিষয়গুলোর বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করেছে, যদিও কারাস চরিত্রের জন্ম আসলে মিসির আলীর আগেই। এ থেকেও পাঠক নিজেরা একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। সে ব্যাপারে আমি নতুন করে কিছু নাই বা বললাম। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে, হুমায়ুন আহমেদ নিজে যেমন আকর্ষিত হয়েছিলেন নাস্তিক পাদ্রী কারাসের চরিত্রের ব্যাপারে, তেমন অন্য পাঠকেরাও এই চরিত্রটিকে পছন্দ করবে। পাশাপাশি পুলিশ ইনভেস্টিগেটর মিঃ কিণ্ডারম্যানের চরিত্রটিও বেশ মনোমুগ্ধকর। তবে সার্বিকভাবে 'দি এক্সরসিস্ট' এর ফিনিশিং নিয়ে আমি সন্তুষ্ট হতে পারি নাই। একটি যুক্তিবাদী ফিনিশিং আশা করছিলাম কিন্তু বাস্তবে দেখা মিলল তার সম্পূর্ণ বিপরীত ফলাফলের। তাই তো এই 'দি এক্সরসিস্ট' এর জনরা হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে 'ভৌতিক' বা 'আদিভৌতিক'।
Thriller
1
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা || রিভিউ || বই : দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস মূল : জন বয়েন অনুবাদ : সালমান হক প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকাল : জানুয়ারি, ২০১৭ ঘরানা : ঐতিহাসিক উপন্যাস পৃষ্ঠা : ১৪৪ প্রচ্ছদ : ডিলান মুদ্রিত মূল্য : ১৪০ টাকা ছোট্ট ব্রুনো একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখলো জোরেশোরে গোছগাছের কাজ চলছে পুরো বাসায়। বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। তারপর সে জানতে পারলো, বার্লিনের সুবিশাল এই বাসাটা ছেড়ে তাদের পুরো পরিবারকে পাড়ি জমাতে হবে সম্পূর্ণ আলাদা এক জায়গায়। স্বাভাবিক ভাবেই ভয়াবহ মন খারাপ হলো নয় বছর বয়সী এই বালকের। ফিউরি সাহেবের (ফুয়েরার হিটলার) অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ব্রুনো'র সেনাকর্মকর্তা বাবাকে কমান্ড্যান্ট পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তাই দেশমাতৃকা'র প্রতি দায়িত্ব (!) পালনের জন্যই তাঁকে সপরিবারে পাঠানো হলো আউট-উইথ নামের এক জায়গায়, যেটা মূলত একটা ক্যাম্প হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিলো। মন খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার নিরানন্দ পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো ব্রুনো। নিজের ঘরের জানালা দিয়ে কাঁটাতারের ওপারে অদ্ভুত সব মানুষদের দেখতে পেতো ছোট্ট ব্রুনো। তাদের সবার পরনে থাকতো ডোরাকাটা পায়জামা আর টুপি। মুখ শুকনো করে মাটির দিকে তাকিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষ গুলোকে দেখে শিশুমনে নানা প্রশ্নের উদয় হতো তার। আর এসবের উত্তর খোঁজার জন্য সে বারবার নিজের বড় বোন গ্রেটেল (যার মাথা খারাপ বলে মনে করে ব্রুনো), তার মা আর পরিচারিকা মারিয়াকে নানা প্রশ্ন করতো সে। বন্ধুহীন ঐ আউট-উইথে হঠাৎ করেই এক বন্ধুর দেখা পেয়ে গেলো ব্রুনো। কাঁটাতারের ওপাশে মানবেতর জীবনযাপন করা সেই ছেলেটা তারই সমবয়সী। নাম শুমেল। নিস্তরঙ্গ জীবনটা তরঙ্গায়িত হয়ে উঠলো ওদের দুজনেরই। কাঁটাতারের এপারে ব্রুনো আর ওপারের বাসিন্দা শুমেল দু'জন দু'জনের অকৃত্রিম বন্ধুতে পরিণত হলো। অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ছাপিয়ে 'দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস' উপন্যাসে পাঠক অনুভব করবেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অতলস্পর্শ করা ভয়াবহতা। জার্মান আর ইহুদি জাতি'র হাস্যকর বিভেদ আরো একটা বার ভাবতে বাধ্য করবে মানুষের তথাকথিত সভ্যতার অস্তিত্ব সম্পর্কে। নিষ্পাপ দুটো ছেলে, যারা সমস্ত জাতিভেদের ঊর্ধ্বে, তাদের গল্পের শেষটা চোখের কোণ ভিজিয়ে দেবে আপনার অজান্তেই। ব্যক্তিগত মতামত : একজন উচ্চপদস্থ জার্মান সেনাকর্মকর্তা'র ছেলে আর কাঁটাতারের ওপাশে বসবাসরত এক ওয়ার ভিকটিম বালকের বিপরীতমুখী দুই জগতের গল্প এক মলাটে বন্দি করে পাঠকের মুখোমুখি করেছেন লেখক জন বয়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লিখিত ছোট কলেবরের এই উপন্যাস কাহিনি'র গুণে হয়ে উঠেছে দারুন মর্মস্পর্শী। অদ্ভুত এক বিষাদবোধ বুকে বেঁধে এই রিভিউটা লিখতে বসেছি। পাঠকের ভেতরটা স্পর্শ করে যাওয়া এক জিনিস আর তার ভেতরটা ওলটপালট করে যাওয়া আরেক জিনিস। 'দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস' পড়ার পর আমার ক্ষেত্রে এই দ্বিতীয়টাই ঘটেছে। স্তব্ধতা নিয়ে বসে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত রোষের শিকার হওয়া পুরো একটা জাতি'র নিদারুণ কষ্ট আমার ভেতরের ঘৃণাটাকে আবারো উস্কে দিয়েছে। ঘৃণাটা নিন্দিত একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের জন্য। ঘৃণাটা তার সৃষ্টি করা গেস্টাপো বাহিনী'র জন্য। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে অযুত নিযুত আবর্জনার নিচে আজ যাদের বাস। 'দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস' আমাকে ভিন্নরকম এক পাঠ অভিজ্ঞতা দিয়েছে। এটাকে আমি 'কষ্টের চাদরে মোড়া ভালো লাগা' ছাড়া আর কোন বিশেষণ পাচ্ছিনা বিশেষায়িত করার জন্য। ছোট্ট ব্রুনোর চোখে জন বয়েন আমাকে দেখিয়েছেন তৎকালিক জার্মান সেনাবাহিনী'র অযৌক্তিক আর অসুস্থ ইহুদি বিদ্বেষী চিত্র। অনুবাদক সালমান হক নিক পিরোগের হেনরি বিনস সিরিজ বাংলায় অনুবাদের জন্য বিখ্যাত। তবে 'দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস' তাঁর প্রথম কাজ। যদিও বইটা বাতিঘর থেকে পরেই প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছু প্রিন্টিং ও বানান জনিত ভুলভ্রান্তি থাকার পরেও অনুবাদক ভালো কাজ দেখিয়েছেন। পড়তে গিয়ে বড় ধরণের হোঁচট অন্তত খাইনি। ডিলান সাহেবের প্রচ্ছদ ভালো ছিলো। তবে এই বইটার বাঁধাই আমার মানসম্মত মনে হয়নি। সবশেষে 'দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস' উপন্যাসে ব্যবহৃত টমাস জেফারসনের একটা উক্তি দিয়ে রিভিউয়ের ইতি টানবো। "যেকোন যুদ্ধে নির্যাতিতদের মতো নির্যাতনকারীও চরম শাস্তি ভোগ করে" এই উক্তির শানে নযুল বইটা পড়লেই পাঠক অনুধাবন করবেন। হ্যাপি রিডিং। রেটিং : ৫/৫ © শুভাগত দীপ
Childrens-Book
2
ঘটনার শুরু নিউইয়র্কে। এক সস্তা হোটেলে অদ্ভুতভাবে খুন হলো এক তরুণী। খুনটা অদ্ভুত কেনো সে ব্যাখ্যায় পরে আসছি। তদন্তের দায়িত্বে আছে হোমিসাইড পুলিশের অফিসার। সাথে আরও একজন আছেন। তিনিউ এই গল্পের বর্ণনাকারি। তিনিই মূল নায়ক। সৌদিআরবের জেদ্দায় তপ্ত রোদের মধ্যে প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ করা হলো এক প্রাণিবিদের। এক পিতার। এর পরিনাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা।কি কেউ ভেবেছিলো? এই রক্তাক্ত অধ্যায়ে তৈরি করলো এক হিংস্রতা। যার জন্য হয়ত ভবিষ্যতে মূল্য দিতে হবে পুরো পৃথিবীকে। সিরিয়ার একটা গোপন ল্যাবরেটরি থেকে ঈদুল ফিতরের আগের সন্ধায় এক কর্মকর্তার দুই চোখ তুলে নেওয়া হলো। তারপরে মেরে ফেলা হলো। তার কি দোষ ছিলো? ওদিকে আফগানিস্তানের হিন্দু কুশ পর্বতমালায় তিনটা লাশ পোড়াচ্ছে কোনো এক ডাক্তার। পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশগুলো পাওয়ার পরে এমন এক জীবাণু পাওয়া গেলো যা পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিবে। বিপদ নেমে আসছে আমেরিকার উপর। ভয়াবহ বিপদ। এমন বিপদ যে, এই বিপদের সামনে নিউক্লিয়ার বোমাকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। এদিকে আবার তুরস্কের বোডরাম শহরে দুর্ঘটনাবশত মারা গেলে এক বিলিয়নার যুবক। এটা কি আসলেই দুর্ঘটনা? নাকি পরিকল্পিত মার্ডার? এবার আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেই গল্পের নায়কের সাথে। যারা নিয়মিত স্পাই থ্রিলার পড়েন তাদের জন্য খুব পরিচিত একটা পেশায় কাজ করেন তিনি। তবে সেটা অতিরিক্ত সিক্রেট। ইন্টেলিজেন্ট সংস্থাটার নাম দ্য ডিভিশন। কাগজে কলমে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। কাজ হলো স্পাইদের উপর স্পাইগিরি করা। অর্থাৎ দেশের ইন্টেলিজেন্ট সংস্থার উপরে নজর রাখা। হতে পারে কেউ বেইমানি করবে। সেরা ইন্টেলিজেন্ট সংস্থার সেরা এজেন্ট। যাকে বলা হয় শতাব্দির সেরা এজেন্ট। উপাধি রাইডার অব দ্য ব্লু। এই নামেই আপনাকে চিনতে হবে তাকে। কারন তার আসল নাম কি তা কেউ জানে না। আরও একটা নামে ডাকতে পারেন। স্কট মরডিক। তবে ৬৭০ পৃষ্ঠার বইটা শেষ করে তার আসল নাম আমিও জানতে পারি নাই। এবার বলি প্রথম খুনের ব্যাপারে। খুনটা কেন অদ্ভুত! শতাব্দির সেরা একজন এজেন্টের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের উপরে লেখা বইয়ের সাহায্য নিয়ে যদি কেউ ক্রাইম করে তাহলে তাকে খুজে পাবে কে? ঠিক এটাই ঘটেছে। সামান্য কোনো ক্লু নেই। ওদিকে উপরে টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো আলাদা মনে হলেও সব কিন্তু একই সুতায় বাধা। রাইডার অব দ্য ব্লু কে নামতে হচ্ছে এমন এব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যার কোনো অতীত নেই। পৃথিবীর বুকে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। যাকে কেউ চেনে না; কখনো দেখে নি। স্রেফ যেন ভূতের বিরুদ্ধে নামছে। পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ বাংলাদেশের অনুবাদ জগতে দুই মলাটে সবচেয়ে মোটা বই সম্ভবতঃ "আই অ্যাম পিলগ্রিম"। তবে কেউ যদি বইয়ের সাইজ দেখে পড়তে না চান তবে বলবো ভুল করলেন। সাইজ না দেখেই পড়া শুরু করুন। আপনাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব লেখকের। দ্য টাইমসের ভাষায় বইটা শতাব্দির সেরা থ্রিলার। বিশাল ক্যানভাসের প্লট আর অসাধারন মন ছুয়ে যাওয়া কিছু চরিত্র। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো এটা লেখকের প্রথম উপন্যাস। আমার বিশ্বাসই হতে চায় না। প্রথম বইতেই বাজিমাত। লেখক নিজে হলিউডের স্ক্রিপ্ট রাইটার। লেখার বর্ণনাগুলো চমৎকার। মনে হয় মুভি দেখছিতি। অনুবাদক শাহেদ জামানের কথা কি বলা দরকার আছে? যারা তার অনুবাদ নিয়মিত পড়েন তারা অবশ্যই জানেন কত সাবলিল অনুবাদ করেন তিনি। তবে প্রুফ দেখায় কিছু সমস্যা ছিলো। এক জায়গায় নাম পাল্টে গেছে। আরেক জায়গায় "তুমি" না লিখে "আপনি" লিখেছে। যদিও এতবড় বইয়ের তুলনায় ভুলগুলো খুবই নগন্য। লেখক গল্পের প্রয়োজনে ইসলামি জঙ্গিবাদ তুলে ধরলেও ধর্মের ব্যাপারে সাবধান ছিলেন। কোথাও যদি মনে হয়েছে ধর্ম অবমাননা হয়েছে তাহলে পরে আবার পাঠকের ভুল ভেঙে দিয়েছেন। তবে স্পাই থ্রিলারের সাথে সমকালিন বিশ্বরাজনীতির এমন চমৎকার কম্বিনেশন খুব কম দেখেছি। তবে লেখক বুদ্ধিমান। বিতর্ক তৈরি করতে পারে এমন ব্যাপার সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। বইটা সারাবিশ্ব বেস্ট সেলার। আমাদের দেশেও ভালোই চলছে তবে বাংলা ভাষায় বইটার কোনো রিভিউ পেলাম না। ব্যাপারটা বোধগম্য হলো না। আমি সাধারনত বইয়ের রেটিং দেই না। তবে এটার রেটিং দিবো ৫/৫।
Thriller
1
সেই সময় (১৯০১-১৯৭১) হুমায়ুন আহমেদ মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা-৮২৪ বইটি পড়তে ৯ দিনের মত লেগেছে। পুরো নেশা ধরিয়ে দেওয়ার মত একটি বই। প্রতিটি শব্দ খুব নিখুতভাবে সাজানো হয়েছে, মনে হয়েছে যেন লেখক নিজেই সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী । যদিও উপন্যাসের মাধুর্য আনার জন্য কিছু রূপক চরিত্র ব্যবহার করতে হয়েছে। বইটি ৩ টা অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। ১। মধ্যাহ্ন - এই অংশে অবিভক্ত বাংলার মাধুর্য তুলে ধরার সাথে সাথে কিছু প্রথা , সংস্কারের জন্য ধর্মীও বিভেদটাকে খুব সুনিপুনভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। ২। মাতাল হাওয়া- এই অংশে লেখক বাংলাদেশের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার উপস্থাপন করেন। ৫২'র ভাষা আন্দোলন ৬৯'র এর গনঅভভুথান ৩। জোছনা ও জননীর গল্প- এই অংশে লেখক বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ঘটনাগুলো তুলে ধরেন।
Fiction
0
প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা সামাজিক উপন্যাস “কবি”।কবিয়াল, ঝুমুরদল সহ ঐ সময়ের জীবনযাত্রার প্রেক্ষিতে এই বিখ্যাত উপন্যাসটি রচিত হয়েছে।উপন্যাসটির কাহিনী সংক্ষেপ হল ঃ-সাধারণ এক গ্রামে ডাকাত বংশে জন্মগ্রহণ করে নিচুবংশের নিতাই। তবে তার স্বভাব তার বাবা-কাকাদের মত নয়। সে সৎ থাকতে চায়, তাই ঘরবাড়ি ছেড়ে স্টেশনে গিয়ে থাকে। এখানেই তার সাথে বন্ধুত্ব হয় রাজার, যে স্টেশনে কাজ করে। সে কবিয়াল ধরণের মানুষ। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ইতোমধ্যেই সে কবিগান করেছে।এদিকে রাজারই এক আত্মীয়কে ঠাকুরঝি বলে ডাকত সে। বিবাহিত ঠাকুরঝি রোজ এসে দুধ বিক্রি করে যেত। একপর্যায়ে তার ঠাকুরঝিকে ভাল লেগে যায়, ঠাকুরঝিওনিতাইকে ভালবেসে ফেলে, যদি সমাজ এর বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে বিষয়টা জানাজানি হলে নিতাই গ্রামছেড়ে চলে যায়। সে ঝুমুরদলের সাথে যুক্ত হয়, যেই দল অশ্লীল গান-বাজনা করে এবং নারীরা গানের গানের সাথে নাচ করলেও তারা মূলত দেহোপজীবিনী। সে ক্রমশ তার নিজের ভিতরকার কবিয়ালের সত্ত্বাকে চেপে রেখে এই দলের মত করেই গান রচনা করে। এখানে সে বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় বসন্ত (বা বসন) এর সাথে। বসনের মধ্যে সে ঠাকুরঝির ছায়া দেখতে পায়। দুজনের মাঝে সখ্যতা গড়ে ওঠে।এই ব্যবসায় থাকলে নানা ধরণের রোগ হয়ে থাকে, এবং তারই এক রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে একসময়ে বসন্তও মারা যায়। শোকে কাতর হয়ে ঝুমুরদল ছেড়ে দে নিতাই। সে কাশীসহ অন্যান্য স্থান ঘোরে। কিন্তু তার মন না টেকায় একসময় আবারও সে নিজের আগের গ্রামে ফিরে আসে। এসে জানতে পারে ঠাকুরঝি আর বেঁচে নেই, নিতাই গ্রামছাড়ার পরেই সে মারা যায়।এই উপন্যাসে যেমন বিভিন্ন প্রকার গান রয়েছে। তেমনি ভিন্ন ধরাণার জীবনযাত্রার আবহে একটি অন্যরকম প্রেমের কাহিনী রচিত হয়েছে।পাঠক পড়ে ভিন্ন স্বাদ পাবেন।তাই মিস না করে পড়ে ফেলেন ভাল লাগার মত অনেক কিছুই পাবেন উপন্যাসটিতে।
Fiction
0
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলো আমার কিশোর বয়সে পড়া হয় নি। এখন ‘চার মূর্তি’ উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে বুঝতে পারলাম কী অসাধারণ লেখা আমার না-পড়া রয়ে গেছে। তবে আনন্দের বিষয় হল, কিশোর বয়স পার করে আসলেও ‘চার মূর্তি’ উপন্যাসটি আমার পড়তে খারাপ লাগছে না। আসলে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখার ধরনই বোধহয় এরকম। মূলত কিশোরদের জন্যে লেখা হলেও সব বয়সের পাঠকই তাঁর লেখা উপভোগ করতে পারবে। এই উপন্যাসে চারটা মূল চরিত্র। প্যালারাম, ক্যাবলা, বাঙাল হাবুল সেন আর টেনিদা। উপন্যাসের শুরুতে দেখানো হয় এই চার মূর্তির পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে এবং কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায় তা নিয়ে তারা আলোচনা করছে। তখন ক্যাবলা বলল, তার বাড়িতে আজ পোলাও, কাবাব, চিংড়ির কাটলেট হচ্ছে আর সবার দাওয়াত। সবাই এই কথা শুনে পারলে আনন্দে প্রায় নেচে উঠে। তারপর রাতে ক্যাবলার বাসায় তার মেসোমশায় গল্পে গল্পে বললেন তার একটা বাংলো-বাড়ি আছে। সেখানে তারা চার মূর্তি চাইলে বেড়াতে যেতে পারে। জায়গাটা বেড়ানোর জন্যে আদর্শ। তারা সে সুযোগ লুফে নিলো। কিন্তু মেসোমশায় বলে রাখলেন সে বাংলো-বাড়িতে একটু ভূতের উৎপাত আছে। তারপর দেখা গেল, তারা চার মূর্তি ট্রেনে করে সে জায়গার উদ্দেশ্যে রওনা দিতেছে। ট্রেনে তাদের কামরায় এক ভণ্ড সাধু উঠেছিল। পরে সেই সাধু রাতে ঘুমালে টেনিদা বাকি তিনজনকে নিয়ে তার রসগোল্লার হাঁড়ি সাবাড় করে দেয়। এভাবে আরও নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে তারা সেই বাংলো-বাড়িতে পৌঁছায়। এবং পৌঁছেই অবাক হয়ে যায় চারপাশের ঘোরলাগা সৌন্দর্য দেখে। আর খাওয়া-দাওয়ার কথা তো বলাই বাহুল্য। টেনিদা সমানে পেটে মুরগি চালান দিতে থাকে। কিন্তু মূল সমস্যা, অর্থাৎ ভূতের উৎপাত শুরু হয় রাত থেকে। প্রথমে অট্টহাসি, তারপর ঘরের মধ্যে মড়ার খুলি ছুঁড়ে মারা। সবাই তো ভয়ে অস্থির। কিন্ত পরের দিন সকালে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, এই ভূতের রহস্য তারা সমাধান না করে যাবে না। এভাবেই রহস্য জমে উঠে আর একের পর এক মজার মজার ঘটনা ঘটতে থাকে। এই সব ঘটনা উপভোগ করতে হলে পাঠককে এই অসাধারণ উপন্যাস ‘চারমূর্তি’ পড়তে হবে। এই উপন্যাসের সবচেয়ে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হল এর হাস্যরস। আমি কোন সময়েই রহস্য-উপন্যাসের ভক্ত নই। তবে এই উপন্যাসটা আমাকে চুম্বকের মত টেনেছে এর সংলাপে ব্যবহৃত অসাধারণ সব হিউমারের কারণে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল, ছেলে-বুড়ো সবাইকেই এই উপন্যাসটা প্রাণ-খুলে হাসাবে।
Childrens-Book
2
‘মুক্তিযুদ্ধের ধূসর স্মৃতি মিজোরামের শরনার্থী’ তপন চক্রবর্তী এর লেখা আমাদের দেশের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের শরনার্থী শিবির এর দুঃখ দুর্দশা এর কাহিনী নির্ভর একটি বই । আমাদের দেশের স্বাধীনতার পরে এই পর্যন্ত অসংখ্য বই লিখা হয়েছে স্বাধীনতার যুদ্ধ , পাকিস্থানি সামরিক বাহিনীর আক্রমন , নির্মম হত্যাকান্ড এবং তাদের সহযোগী রাজাকার আল বদর এবং আল শামস বাহিনীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে । কিভাবে মুজিবনগর সরকার , মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিণী ইয়াহিয়ার দস্যুদের পরাস্ত করার জন্য আত্মোতসর্গ করেছেন তার বিস্তারিত বর্ননা নিয়ে অনেক বই লিখা হয়েছে । কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ শরনার্থী হিসেবে ছিলেন ভারতের মিজোরামে ,এই শরনার্থী দের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে তেমন লেখালেখি লক্ষ করা যায় না । এই বিষয় নিয়ে বইটি লিখেছেন তপন চক্রবর্তী । বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে । বইটি প্রকাশিত হয় অবসর প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশনী থেকে এবং এর প্রকাশক এফ রহমান । প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছে প্রতীক ডট ডিজাইন । আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের শরনার্থীদের বেদনার কাহিনী নিয়ে লেখা এই অসাধারন তথ্যবহুল বই । লেখক নিজেই তার পরিবারের সাথে এই শরনার্থী শিবিরে অবর্ননীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছিলেন । তিনি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন এই বইটি সুতরাং বইটির তথ্যগুলো সবই সঠিক সেই ব্যাপারে ধারনা করা যায় । এই দুর্ভোগ এর পাশাপাশি তার পরিবারের তিনজন কে মিজোরামের মাটির নিচে রেখে আসতে হয়েছিলো । তার বর্ননায় আমরা বুঝবো তখনকার দিনে শরনার্থী শিবিরে মানুষ এর দুর্ভোগ সম্পর্কে । অসাধারন এ বইটি আমাদের দেশের সকল পাঠকদের জন্যই পড়া দরকার ।
War
5
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই:রিটিন লেখক:মুহম্মদ জাফর ইকবাল ধরণ:বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী প্রকাশনী:তাম্রলিপি পৃষ্ঠা সংখ্যা:১৫৮ মুদ্রিত মুল্য:২২৫ টাকা কাহিনী সংক্ষেপে:পৃথিবী অনেক বদলে গেছে।আজকের পৃথিবী থেকে ৫০০ বছর আগের পৃথিবীর অনেক পার্থক্য। বর্তমানে মানুষ জৈবিক খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এখন সব খাবার ই সিনথেটিক।পৃথিবী থেকে চাষাবাদ উঠে গেছে।যখন যে খাবার দরকার হয় তখন সিনথেটিক উপায়ে তা তৈরি করে নেয়া হয়।আর বর্তমান পৃথিবীরর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো এখন মানুষ কে ২ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।এ ক্যাটাগরি এবং সি ক্যাটাগরি। এ ক্যাটাগরির মানুষ এর লেখাপড়া গবেষণা করার অধিকার থাকলেও সি ক্যাটাগরিরর মানুষের তা।এছাড়াও অনেক বৈষম্যভেদ রয়েছে এই ২ ক্যাটাগরির মানুষদের মধ্যে।গল্পের মুল চরিত্র রিটি রিটিন ও সি ক্যাটাগরির।সে ও এই বৈষম্যভেদ এর সীকার।সেই সময় সি ক্যাটাগরিরর মানুষ একত্রিত হয়ে এই বৈষম্যভেদ দূর করার প্রচেষ্টায় নামলো।রিটিন সেই দলে যোগ দিলো।এই বৈষম্য দূর করতে রিটিনকে একটি মিশন এ যেতে হল তা হল নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মুল কোয়ার্টজ ওয়েব গাইডগুলোর এক অংশ তাকে ধংস করতে হবে।এর আগে এই মিশনে যারা এসেছিলো কেউ সফল হয় নি।কিন্তু রিটিন ভাগ্যক্রমে সফল হল।কিন্তু এই বৈষম্য দূর করতে হলে তাদের তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ধংস করতে হবে।কিন্তু তা এখন ধংস করা সম্ভব না। নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একটি ছবি পাওয়া গেলো।ছবিতে রিটিন একটি মেয়ের সাথে রয়েছে। ছবিটি ৫০০ বছর আগের।কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি সময় পরিভ্রমণ সম্ভব?তাহলে এই ছবি কি প্রকৃতির একটি ইংগিত? যদি তা সম্ভব হয় তাহলে রিটিন ৫০০ বছর আগে গিয়ে তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ধংস করা সম্ভব।কিন্তু কিভাবে?রিটিন কি পারবে সময় পরিভ্রমণ করে তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ধংস করে মানুষের মধ্যকার বৈষম্য দূর করতে? জানতে হলে পড়ে ফেলুন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রিটিন। পাঠ প্রতিক্রিয়া:বইটি ভালো লেগেছে।কিন্তু বইটিতে অভিনব কোনো নতুন কাহিনী পেলাম না।যাই হোক মোটামুটি ভালো একটি সাই-ফাই।আমার রেটিং ৩/৫। রকমারি লিংক: https://www.rokomari.com/book/127637/বৈজ্ঞানিক-কল্পকাহিনী-:-রিটিন
Science-Fiction
4
A brief journey into Pakistan period...
Political
3
বইয়ের নামঃশূণ্য লেখকঃহুমায়ূন আহমেদ ধরনঃসায়েন্স ফিকশন প্রকাশনীঃসময় প্রকাশন মূল্যঃ১০০ টাকা গল্পের মূল চরিত্র হল মনসুর সাহেব। তিনি একজন স্কুল-শিক্ষক। তার পরিবার-পরিজন বলতে তেমন কেউ নেই। একা একা থাকেন। আর দিন-রাত গণিতের বিভিন্ন জটিল জটিল সমস্যা নিয়ে ভাবেন। বিখ্যাত গণিতবিদ লিওনার্দো ফিবোনাক্কির আবিষ্কৃত এই রাশিমালার প্রয়োগ প্রকৃতিতে অসংখ্য। সূর্যমুখী ফুলের পাঁপড়ির বিন্যাস, শামুকের স্পাইরেল, সামুদ্রিক কাঁকড়ার দ্বারা বালুতে তৈরি নকশা ইত্যাদি ফিবোনাক্কি রাশিমালা অনুসারে হয়। তাই লিওনার্দো ফিবোনাক্কির মত তিনিও মনে করেন যে প্রকৃতির মূল সমস্যা লুকিয়ে আছে ফিবোনাক্কি রাশিমালায়। . কাহিনীর সূচনায় দেখা যায়, তিন পুরুষ ধরে গণিত চর্চাকারী শিক্ষক মনসুর সাহেব তার নিয়মিত ক্লাসে শারীরিক ভাবে অসুস্থ বোধ করছেন, তিনি বিচলিত তার নিজ চিন্তার ভুবন নিয়ে, নিয়মতান্ত্রিক মানুষ হিসেবে তিনি তার এলাকায় শ্রদ্ধাশীল, নিজ জীবনে নিয়মের ব্যাতিক্রম তাকে অস্থির করে তোলে। পরবর্তীতে দেখা যায় এক বিশেষ রাশিমালা প্রবর্তনের অদম্য সাধনাই তার চিন্তার জগত ও পারিপার্শ্বিক কে আরও অস্থির করে তুলছে, তার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকেই তিনি এই বিশেষ রাশিমালার ধারণা পেয়েছিলেন, তার পিতা ও পিতামহ এর সমাধান শেষ করতে পারেন নি, নিঃসন্তান ও বিপত্নীক মনসুর সাহেব তাই আপ্রাণ চেষ্টারত। হঠাৎ করেই বজ্রাহত হন মনসুর সাহেব, ঠিক তার পর মুহূর্তেই তার সাথে পরিচয় ঘটে এক যুবকের, যে তাকে জানায়- তার বিশেষ রাশিমালার সমাধানে সে সাহায্য করতে চায়।যে নিজেকে #ফিবোনাক্কি নামে পরিচয় দেয় এবং বলে মনসুর রহমানকে সহায়তার উদ্দেশ্যে শূন্য মাত্রার জগত থেকে সে এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই মনসুর রহমান তাকে নিজের উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা হিসেবে ধরে নেন। ফিবোনাক্কি তাকে এক নতুন জগতের কথা জানায়। যেখানে সব কিছুই শূন্য আবার সব কিছুই অসীম। ফিবোনাক্কির উৎসাহে তিনি শূন্য মাত্রার সমীকরণ নিয়ে কাজ শুরু করেন। মনসুর সাহেবও ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপরেও তিনি তার কাজ চালিয়ে যান। সমাধান করার চেষ্টা করেন এই রহস্যের। গল্পের শেষাংশে, তার অসুস্থতার পরিমাণ খুব বেড়ে গেল আজিজ খাঁ এবং হেডমাস্টার তাকে ঢাকার এক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালেই তার মৃত্যু ঘটে। মনসুর সাহেব কি শূন্য রহস্যের সমাধান করতে পেরেছিলেন? জানতে পেরেছিলেন কে এই ফিবোনাক্কি?? তার দাদা এবং বাবার মৃত্যু কি শুধুই দুর্ঘটনা? নাকি অন্য কিছু।প্রশ্নের উত্তর গুলো জানতে পড়ে নিন সুন্দর এই বইটি। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ হুমায়ূন আহমেদের সায়েন্স ফিকশান উপন্যাসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, তিনি বিজ্ঞানকে পুঁজি করে গল্পের ভিত গড়ে তুললেও গল্পের শেষে মানবিক অনুভূতিগুলোই সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে। শূন্য’ বইটির আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এখানে গল্পের কাহিনী বিজ্ঞানের খুব কাছাকাছি থেকে তৈরি করা হয়েছে।সুন্দর একটি বই পড়ে দেখুন আশা করি ভাল লাগবে।
Science-Fiction
4
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা "জাহান্নাম হইতে বিদায়" উপন্যাসের পটভূমি ১৯৭১ সাল,যা শওকত ওসমানের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক উপন্যাস। বলা হয়, প্রত্যক্ষ ঘটনার উপর ভিত্তি করে এটিই মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রথম উপন্যাস। শওকত ওসমানের যুদ্ধকালীন ব্যক্তিগত যে ভাবনা তাই উঠে এসেছে তাঁর উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের হাত ধরে। শওকত ওসমানের বড় ছেলে বুলবন ওসমান সে সময়ের প্রসঙ্গে লিখেছেন -''মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা বাবার বাংলাদেশে থাকাটা নিরাপদ নয় মনে করে ভারতবর্ষে পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিই। এ ব্যাপারে আমার মেজভাই আসফাক ওসমান সব ব্যবস্থা করে। সে তখন সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে রিসার্চ অফিসার হিসেবে চাকরিরত। তার পিয়ন ইদ্রিস মিয়া ও অন্যতম অধঃস্তন অফিসার জীবনকে সঙ্গে নেয়। ওদের বাড়ি কুমিল্লা কোনাবন বর্ডারের কাছে। ওরা বাবাকে আগরতলা পৌঁছে দেবে। আমার ছোটভাই জাঁনেসারও ছিল ওদের সঙ্গে। এই সময় বাবার যে মানসিক দ্বন্দ্ব তা আমরা তার মুখ দেখে বুঝতে পারতাম।যেটি উপন্যাসে বারবার এসেছে।" আলোচিত এই উপন্যাসের পর্যালোচনা: বাংলাদেশ পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলে মাসদেড়েক পর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক গাজী রহমান জীবন রক্ষার আদিম তাগিদে শহর ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্যে রওনা হন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁর স্কুল বিভিন্ন কাজে ভূমিকা রেখেছে। তাই হানাদার বাহিনীর কালো তালিকায় তাঁর নাম ওঠে। প্রথমে তিনি আশ্রয় নেন এক প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁর এক পুরনো ছাত্রের বাড়িতে। ছাত্রটির নাম ইউসুফ। ইউসুফ সওদাগরী অফিসের কেরানী। ইউসুফের স্ত্রী সখিনা গাজী রহমানকে সেবা যত্ন করে। কিন্তু এক সময় গাজী রহমান জানতে পারেন ইউসুফের গ্রামও দখলদার মিলিটারি বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হবে। তাই তিনি সেখান থেকে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই পালিয়ে বেড়ানোর সময় নানান ঘটনাবলী যা তিনি প্রত্যক্ষ করেন, তাই এ উপন্যাসে বর্ণিত হয়। কিন্তু গাজী রহমান কি আদৌ পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিলেন? যে জাহান্নাম হতে বিদায়ের কথা বলা হচ্ছে তা কেমন বিদায় ছিল? এ কী পৃথিবী থেকে বিদায়? নাকি সামরিক জান্তা কর্তৃক জাহান্নামে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ থেকে সাময়িক বিদায়? উপন্যাস শেষ হয় কবিতার পংক্তি দিয়ে, 'আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে'- প্রধান চরিত্রের এ উক্তির কারণ কী ছিল? তা কী জীবনানন্দের মতই জন্মান্তরবাদ ছিল? না অন্য কিছু? এই সব কিছুর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে হৃদয়গ্রাহী এ উপন্যাসে। পাঠপ্রতিক্রিয়া: আনোয়ার পাশার "রাইফেল রোটি আওরাত "(১৯৭১), শওকত ওসমানের "জাহান্নাম হইতে বিদায়" (১৯৭১) ও শওকত আলীর "যাত্রা"(১৯৭৬) - এই তিনটি উপন্যাসের মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তিনটি উপন্যাসের (রাইফেল রোটি আওরাতের সুদীপ্ত শাহীন, যাত্রা উপন্যাসের অধ্যাপক রায়হান এবং জাহান্নাম হইতে বিদায় উপন্যাসের গাজী রহমান) কেন্দ্রীয় চরিত্র পেশায় শিক্ষক এবং লেখকত্রয়ীও পেশায় শিক্ষক। ফলে উপন্যাসের চরিত্রের মধ্যে তাঁদের আত্মচরিত্রের প্রক্ষেপ ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির প্রতি তাঁদের অসীম মমত্ব রয়েছে এবং তাঁরা মনেপ্রাণে চান দেশ স্বাধীন হোক কিন্তু কেউ প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন না। এ চরিত্রগুলো আমাদের সমাজের মধ্যবিত্তসমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। একাত্তরের যুদ্ধে মধ্যবিত্ত সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। চিন্তায়, মননে তারা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক হলেও, নিজের আত্মরক্ষা, পরিবারকে নিরাপত্তা দানই তাঁদের কাছে প্রধান হয়ে ওঠে। তাই একাত্তরের সময়কালে চেতনায় তাঁরা ছিলেন উজ্জীবিত, কিন্তু মানসে যন্ত্রণাদগ্ধ। পলায়নপর মানসিকতায় সেই সমাজ ক্রমাগত বিপদ ও বৈরী বাস্তবতা থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার বিবেক জাগ্রত, সেও মনেপ্রাণে মুক্তি কামনা করে, তার মধ্যেও প্রবল দেশপ্রেম রয়েছে। তবু তার মধ্যে যে মানসিক দোলাচল তাই যেন গাজী রহমানের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। তথাপি এ উপন্যাস সমালোচনার উর্ধ্বে উঠতে পারে নি পুরোপুরি। সমালোচকদের মতে "জাহান্নাম হইতে বিদায়" উপন্যাসের কাহিনির কোনো উত্থান-পতন নেই, দ্বন্দ্ব এবং চরিত্রের বিকাশও চোখে পড়ে না। "শহিদ স্মরণে" কবিতায় মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেছেন, 'মুক্তিযুদ্ধ- এ এক বিরাট মহাকাব্য'। বাস্তবিক ভাবেই এটা সত্যি। এই মহাকাব্যকে একটি উপন্যাসে পুরোপুরিই তুলে ধরা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধ একটি অভিযান। সে অভিযানে একেকজন অভিযাত্রী একেকভাবে তার অভিযাত্রার বর্ণনা করবে, সেটাই স্বাভাবিক।তাই, '৭১ এর যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে অস্থিরতা চলছিল, তার মধ্যে এ ধরনের উপন্যাস পাঠকসমাজকে দেওয়া, প্রসংশার দাবী রাখে। পুরো উপন্যাস জুড়েই রয়েছে কিছু এপিগ্রাম। যেমন: "গোলামের কোনো পরিচয় থাকে না। গোলাম গোলামই। বাংলাদেশের স্বাধীনতাই আমার পরিচয় হোক।" "গোটা বাংলাদেশ স্তব্ধ। শব্দের মালিক তারাই, যাদের হাতে মেশিনগান প্রভৃতি আগ্নেয়াস্ত্র আছে, পিতলের নক্ষত্র উর্দির উপর বসিয়ে যারা নিজেদের ভাবে পৃথিবী এবংআকাশ বিজেতা।" "এখানে হয় তুমি কসাই অথবা মাংস।" মুক্তিযুদ্ধ উত্তর প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাসের রেটিং করা দু:সাধ্য বটে তবুও আমার হিসাবে এর রেটিং ৪/৫
Fiction
0
ভিকি রুনকে কিছুতেই বোঝাতে পারে না এই মুহূর্তে অতিরিক্ত খরচ করবার মতো আর্থিক সঙ্গতি তাদের নেই। বাড়িটা পর্যন্ত ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রাখা। রুন অবশ্য কিছুই শুনতে চায় না। বরং ভিকি রোমে যাবার পর সে নয় লক্ষ লিরা দিয়ে একটা পেইন্টিং কিনেছে। রুনের ইচ্ছা তাদের মেয়ে অ্যানি সুইজারল্যান্ডে লেখাপড়া করবে। নিরাপত্তার অজুহাতে সে অ্যানিকে মিলানে পড়তে দিতে চায় না।আর্থিক অসঙ্গতির কথা জানিয়ে ভিকিকে রুনকে অনুরোধ করে মিলানের কোন একটা স্কুলে অ্যানিকে ভর্তি করতে। সবশেষে ঠিক হয় অ্যানি মিলানেই পড়বে, তবে তার জন্য একজন বডিগার্ড থাকবে। রুনের আত্মীয় এতরার সাথে কথা বলে ভিকি ঠিক করে এমন একজন বডিগার্ডকে রাখা হবে যাতে রুন তাকে তিন মাসের মধ্যেই ছাড়িয়ে নিতে চায়। এমনি করেই জামশেদের গল্পের শুরু। জামশেদ কে বা আগে কি ছিলো এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া কঠিন। তবে কোন এক বিচিত্র কারণে অ্যানি খুব পছন্দ করে ফেলে জামশেদকে। জামশেদ অবশ্য ছোট বাচ্চাদের পছন্দ করে না। কিন্তু ধীরে ধীরে তার চোখের কাঠিন্য সরে গিয়ে অ্যানির জন্য প্রবল মায়া দেখা যায়। হঠাৎই কিডন্যাপ হয় অ্যানি। জীবনপণ যুদ্ধ করেও তাকে রক্ষা করতে পারে না জামশেদ। মুক্তিপণের টাকা পেলেই তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে এমনটা কথা থাকলেও নির্মমভাবে ধর্ষণের পরে অ্যানির লাশ পাওয়া যায়। মৃত অ্যানি পৃথিবীতে রেখে যায় তার একমাত্র আপনজন জামশেদকে, যে পিতার মত অসীম স্নেহে অ্যনিকে নিজের হৃদয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। জামশেদ কি ফিরে আসতে পারবে? তবে কি এতো বড় একটা অন্যায়ের কোন বিচারই করবে না পৃথিবী?
Fiction
0
‘মিথস্ক্রিয়া’ খ্যাতনামা এক বাংলাদেশি বিজ্ঞানীকে তার বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলো। ডাক পড়লো ডিটেক্টিভ আসিফ আহমেদ ও তার দলের। অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুক্ত হলো একটি কিডন্যাপ কেস। তদন্ত শুরু হতেই খুব দ্রুত পাল্টে গেলো ঘটনা প্রবাহ-রসায়ন থেকে অ্যালকেমি, খ্রিস্টের জন্মের চার হাজার বছর আগ থেকে বর্তমান বাংলাদেশে-কল্পনাতীতভাবে বিস্তৃত এই রহস্যের সমাধান লুকিয়ে আছে সামনে থাকা তথ্যগুলোর এক এবং কেবল একটিমাত্র অংশে। সেটাই খুঁজে বের করতে হবে। স্বভাবতই এলো বিপত্তি। সার্বক্ষণিক বাধা আসছে অদৃশ্য কোন গুপ্তসঙ্ঘের ইশারায়। প্রধান সাসপেক্টকে হাতের নাগালে পেয়েও কেসটার মিমংসা করা গেলো না। প্রতিঘণ্টায় কাহিনীর মোড় ঘুরে যাচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের চোখের সামনে থাকা সত্যটা খুঁজে বের করতে গিয়েও গলদঘর্ম হয়ে উঠলো ডিটেক্টিভ। কিন্তু কারও ধারণাও নেই, সত্যটা কাঁপিয়ে দিতে পারে গোটা বাংলাদেশকে। কিশোর পাশা ইমনের প্রথম মৌলিক থৃলার উপন্যাস ‘মিথস্ক্রিয়া’ পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে রহস্যময় এক অতীত আর অজানা বাস্তবতাকে।
Thriller
1
বহুদিন পর একবসায় এক বই শেষ করলাম। বইয়ের নাম 'চন্দ্রমুখী'। ফর্মুলা ওয়ান চালকরা যেমন নিপুণ হাতে গিয়ার শিফট করে, রবি ভাইয়ের লেখাও তেমন পরীক্ষিত ও ঝরঝরে। গল্পের স্রোত কিভাবে কৈলাস সরোবর থেকে নেমে কীভাবে যে আনন্দ, বিষাদে প্রবাহিত হয় সেটা অনুভব করা যায়, কিন্তু, বোঝা যায় না! সব কিছু বাদ দিয়ে তিনি শুধু লিখুন, ফল্গুধারার মতো।
Fiction
0
হুমায়ূন আহমেদের সব বই-ই আমার ভালো লাগে । কেননা তার বই পড়ে কখন ও হিমুর মতো অ্যান্টি-লজিক নিয়ে ভেবেছি , আবার কখনো মিসির আলির মতো লজিক নিয়ে ভেবেছি । তার বই পড়ে কখনো যেমন হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খেয়েছি আবার কখনো বালিশের নিচে মুখ নিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছি । বৃষ্টি ও মেঘমালা হুমায়ূন আহমেদের এমন এক উপন্যাস যেখানের সব চরিত্রের জন্য এক ধরনের কষ্ট অনুভূত হয় । কেন্দ্রীয় চরিত্র হাসান একটি ছোট কোম্পানীর মালিক । হাসান ব্যস্ত তার মায়ানগর তৈরী করায় । এদিকে তার অসুস্থ ছেলে অন্তু মাদ্রাজে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করছে । কেঁদে কেঁদে বলছে -বাবা কোথায় ? Where is my dad ? কিন্তু সে ব্যস্ত ছিল তার স্বপ্ন নিয়ে । এদিকে হাসানের প্রেমে পড়ে তারই সেক্রেটারি লীনা । কিন্তু লীনার বিয়ে ঠিক করা আছে তারই ভাইয়ের বন্ধু ফিরোজের সাথে যে কিনা তাদের আর্থিক সমস্যার সময় সাহায্য করেছে । এভাবেই একটা ঘোর নিয়ে উপন্যাসটি পড়ছিলাম । বইটি পড়া শেষে অনেকক্ষণ বইটি হাতে নিয়ে বসে ছিলাম । জানি না কেন ?
Fiction
0
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি মহাযজ্ঞ। এই যজ্ঞের কুশীলব ছিলেন এই ভূখণ্ডের ভেতরের মানুষ, দেশান্তরি মানুষ। আবার যাঁরা অনেক দূরে ছিলেন, তাঁরাও নতুন দেশের জন্মযন্ত্রণা অনুভব করেছেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে অনেকের পক্ষেই যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব হয়নি, হূদয়ে-মননে তারাও স্বাধীনতাকে ধারণ করেছেন। হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, তখন বেঁচে থাকাটাই ছিল একটি যুদ্ধ। সে সময়ে অনেক সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি পাকিস্তানে আটকা পড়েছিলেন, কেউ বন্দি ছিলেন, কেউ বা ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাকরি করে গেছেন। তাঁদেরই একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ খলিলুর রহমান। ১৯৪৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে থাকতে হয়েছে। একাত্তরেও ছিলেন। ‘শত্রুদেশে’ বসে থেকে একজন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা কীভাবে দেশকে অনুভব করেছেন, কীভাবে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে যোগদানের জন্য ব্যাকুল ছিলেন, তারই বিবরণ আছে তাঁর পূর্বাপর ১৯৭১: পাকিস্তানি সেনা গহবর থেকে বইয়ে। বইটি ইতিহাস নয়। প্রতি দিনের ছোট ছোট ঘটনা ও অভিজ্ঞতার বিবরণ। তাতে ব্যক্তিগত কথা আছে, পারিবারিক কথা আছে। আছে একটি রাষ্ট্রের ভাঙন এবং আরেকটি রাষ্ট্রের উত্থানের কাহিনি। নিজের দেখা ও জানাশোনা জগত নিয়েই কথা বলেছেন তিনি। বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানি তথা পাঞ্জাবিরা কী ধরনের বৈরী ও বিদ্বেষমূলক আচরণ করতেন লেখক সেসব তুলে ধরেছেন বিভিন্ন ঘটনার আলোকে। কীভাবে নানা ছলছুতায় বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের অপমান ও অপদস্ত করত তারা। যদিও একাত্তরে তার উচিত শিক্ষা পেয়েছে, যে বাঙালিকে ভিরু ও অযোদ্ধার জাতি বলে হাসিঠাট্টা করত তাদের কাছেই লজ্জাজনক পরাজয় স্বীকার করেছে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা। মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের বইটি শুরু হয়েছে ২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞ স্বাধীনতা সংগ্রামের খবর দিয়ে। তখন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১ নম্বর কোর-এর সদর দপ্তর মংলায় (পশ্চিম পাকিস্তানের মংলা)। এখানে মূলত সেনাবাহিনীর কর্মকৌশল নির্ধারিত হতো। ২৫ মার্চের পর স্বভাবতই সে দায়িত্ব থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর কাজ ছিল অফিসে আসা-যাওয়া, বৈঠকে অংশ নেওয়া। এ অবস্থায় সুযোগ পেলে অন্য বাঙালি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজেদের ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতেন, নানা সূত্রে জানতে পেরে তিনি এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে পাকিস্তানিরাই পাকিস্তানের মৃত্যু পরোয়ানা লিখে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে খলিলুর রহমানের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হলো দেশে পালিয়ে যাওয়া। সেই চেষ্টা করেও সফল হননি। ফলে ভবিতব্য মেনে নিয়ে মুক্তির অপেক্ষা করছেন। এরপর ক্রমশ ঘটনা এগোতে থাকে, যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নেয়। বাংলাদেশে এত উথালপাতাল ঘটনা ঘটছে, প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলছে বাঙালি সেনা পুলিশ ইপিআর এবং সর্বস্তরের মানুষ। বিশ্ব গণমাধ্যম যখন পাকিস্তানিদের পরাজয় অবধারিত বলে প্রচার চালাচ্ছে, তখনো তাদের ভাবখানা হলো, সব কিছু ঠিক হ্যায়। শেষ পর্যন্ত সব কিছু ঠিক হয়নি। বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানিদের লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হতে হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর যখন নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন, তখন পাকিস্তানে আটকে পড়া সব বাঙালি সেনা ও বেসামরিক নাগরিককে বন্দিজীবন বেছে নিতে হয়। তাদের জীবন ছিল অসহায়, অমানবিক। তবে এই দুঃসময়ে কিছু পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার সহূদয় ব্যবহার পেয়েছেন, সে কথা বলতেও ভোলেননি খলিলুর রহমান। আবার এসময়ে বাঙালিদের মধ্যে কেউ কেউ দালালি করেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মেজর কাইউম চৌধুরী, রিয়াজ রহমান এবং বাংলাদেশ থেকে সফরে যাওয়া কাজী দীন মুহাম্মদ প্রমুখ। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে ব্রিগেডিয়ার খলিল পাকিস্তানি সেনা সদর দপ্তরের হাঁড়ির খবরও পেতেন, তাদের মধ্যে দলাদলি, ঈর্ষা ও হিংসা ছিল প্রকটতর। তার চেয়ে বেশি ছিল ক্ষমতার লিপ্সা। পাকিস্তানের দুই সামরিক শাসক আইউব খান ও ইয়াহিয়া খান সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ জাগিয়ে তুলেছিলেন। সেনা কর্মকর্তারা রাজনীতিকদের ঘৃণা করলেও রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভে ছিলেন উন্মুখ। এই বইয়ের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী অধ্যায় হলো তিনজন বাঙালি সেনা কর্মকর্তার ওপর পাকিস্তানিদের বর্বর ও বীভৎস নির্যাতন। বর্তমানে গুয়ানতানামো বেতে ইরাকি ও আফগান যোদ্ধাদের ওপর যেভাবে আমেরিকান বাহিনী নির্যাতন চালিয়েছে, তার চেয়েও নৃশংস ছিল পাকিস্তানিদের আচরণ। তাদের নির্যাতনের কারণে ব্রিগেডিয়ার মজুমদার, কর্নেল মাসুদ ও কর্নেল মুহাম্মদ ইয়াসিন চিরতরে পঙ্গু ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ানোর জন্যই এই নির্যাতন চালানো হয়। এ ছাড়া বইয়ে আছে পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছিল, তার কথা। ১৯৭১ সালে কীভাবে গুলহাসান চক্র ভুট্টোর সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন, আবার যুদ্ধের পর সেই গুলহাসান কীভাবে সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত হলেন সেসবও আমরা জানতে পারি খলিলুর রহমানের বইয়ে। যাঁদের সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছেন প্রথম সুযোগে তাঁদের কী নির্দয়ভাবে বিদায় করেছিলেন, সেই বিবরণও আছে। ভুট্টো কখনোই প্রতিপক্ষকে সহ্য করেননি। নওশের মান্ডি বাহাউদ্দিনে বন্দী জীবনযাপন করেছেন ব্রিগেডিয়ার খলিলসহ আরও অনেক বাঙালি সেনা কর্মকর্তা। বন্দিজীবনে তাঁরা যেমন ভালো পাকিস্তানিদের দেখা পেয়েছেন তেমনি মন্দ পাকিস্তানিদের সংখ্যাও কম ছিল না। তবে সেটি ছিল ব্যক্তিগত পর্যায়ে। বাঙালিদের বঞ্চনার কথা বলতে গেলে কেউ-ই স্বীকার করেনি। বইটি সাজানো হয়েছে আটটি অধ্যায়ে, যথাক্রমে মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক ঘটনাবলি ও পাকিস্তানি সেনা কর্তৃপক্ষের মনোভাব, ১৯৭১ সালের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, পাকিস্তানিদের সীমাহীন অজ্ঞতা, বাঙালিদের সম্পর্কে পাকিস্তানি তথা পাঞ্জাবিদের মনোভাব, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা, পাকিস্তানিদের পরাজয় ও নতুন পরিস্থিতিতে ক্ষমতার লড়াই, বন্দিজীবন—কোহাট ও অন্যত্র, মুক্তি ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এটি ভিন্নধারার বই, যাতে অজানা এক অধ্যায় উঠে এসেছে, আমাদের ধারণা ছিল, যারা দেশ ত্যাগ করেছেন এবং দেশের ভেতরে ছিলেন তাঁরাই নির্যাতন-হয়রানির শিকার হয়েছেন। কিন্তু দেশে ফিরতে ব্যাকুল এবং পাকিস্তানে বন্দি আরেক জনগোষ্ঠী যে কি দুঃসহ যন্ত্রণা ও অপমান সহ্য করেছেন, তারই প্রামাণ্য দলিল পূর্বাপর: ১৯৭১।
War
5
"আপনি কি জব খুঁজছেন?" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: অধিকাংশ লোকই চাকরির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে। যেখানেই কোনও চাকরির খোঁজ পাওয়া যায়, দৌড়ে সবাই সেখানে পৌঁছায়। প্রার্থীদের হাজারো দরখাস্ত জমা হয়। সবারই কামনা, চাকরিটা যেন আমিই পাই।চাকরির জন্য কত রকম কৌশল যে করা হয়! কেউ ঘুষ দেয়; কেউ বা কোন প্রভাবশালীর সুপারিশ আনতে চেষ্টা করে।এটা হল পার্থিব চাকরির অবস্থা। চাকরির আরেকটা প্রকার আছে, সেটা হল আল্লাহর চাকরি। এটা হল সেই মূল্যবান চাকরি, যার জন্য আল্লাহ্‌ তাআলা বান্দাদের প্রস্তাব দেন। তবে চাকরি সে-ই পাবে, যে আল্লাহর পছন্দের পাত্র।
Motivational
6
খুঁজতে বের হয়েছিলাম আটলান্টিস শহর। জ্বি, ঠিকই শুনেছেন। কিংবদন্তীর হারানো শহর আটলান্টিস খুঁজতে বের হয়েছিলাম। যে শহর আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে হারিয়ে গেছে। তারপর আর কেউ ওটার খোঁজ পায়নি। জুল ভার্ন অবশ্য প্রায় বের করে ফেলেছিলেন, তাও এক শতাব্দি পার হয়ে গেছে। তারপর থেকে এখনো ব্যাপারটা লোককাহিনী হিসেবেই মানুষের মুখে মুখে ছিল। আমি সেই লোককাহিনী বিশ্বাস করেছিলাম। কারণ রানাও বিশ্বাস করেছিল। আর রানাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল আমেরিকান বাঙালি সুন্দরি আর্কিওলজিস্ট ড. লাবনী আলম। অভিযানটা অবশ্য অতটা সুখকর ছিলনা। প্রথমে অভিযান শুরু করেছিলাম লাবনীর বাবা ড. ফেরদৌস আলম এবং তার স্ত্রী লিলিয়া আলমের সাথে। তিব্বতের বরফাচ্ছাদিত এক জায়গায় গিয়েছিলাম ওদের সাথে। আটলান্টিসের খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে আমাকে। হতাশা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তখন আমাকে। তার চার বছর পর আবার সুযোগ পেয়ে গেলাম। ড. লাবনী আলম খুঁজতে বের হবে আটলান্টিস। সাথে যেহেতু রানা থাকবে এবং নরওয়ের ধনকুবের ডেনিয়েলসন ফান্ড দিবে সেহেতু না যাওয়ার কোনো কারণ দেখিনা। রওনা হয়ে গেলাম ওদের সাথে। সাথে ডেনিয়েলসনের সুন্দরী কন্যা সেসিলি ডেনিয়েলসনও ছিল। ব্যাপারটা যত সহজ ভাবছেন, মোটেও অতটা সহজ ছিলনা। পদে পদে বিপদ এবং মৃত্যুর হাতছানি উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। সূত্রের জন্য ইরানেও যেতে হয়েছে। তারপর শুরু হয়েছে আসল অভিযান। আর বলতে ইচ্ছে করছেনা, আমি খুব অলস মানুষ। যদি বিপদের আশঙ্কা, মৃত্যুর হাতছানি তুড়ি মেরে দূরে সরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনিও হতে পারেন আমাদের সঙ্গী। অভিযানের ডিটেইলস লেখা ফাইলে (পড়ুন বইয়ের প্রিভিউতে) একটা শব্দ দেখেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম রানার সাথে এই অভিযানের সাক্ষী হতে। 'আটলান্টিস'। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আটলান্টিস খুঁজে বের করব। জুল ভার্নের সাথে এগিয়েওছিলাম অনেকটা, তবে স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে শুধুমাত্র রানার কারণে। ধন্যবাদ রানাকে। ধন্যবাদ ড. লাবনী আলমকেও। এবং ধন্যবাদ কাজীদা এবং তার বেটাকে। অনেকদিন পর শান্তি পেয়েছি রানার সাথে অভিযানে গিয়ে। এর আগে ওর সাথে অনেক অভিযানে গিয়েছি আমি। সাক্ষী হয়েছি ওর অনেক কাজের। তবে এবারের অভিযান ছিল অন্যরকম। সবথেকে আলাদা। অভিযানের একদম প্রথম থেকেই ( পড়ুন বইয়ের প্রথম দিক থেকেই) টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল সবার মধ্যে। এই অভিযানে খুঁটিনাটি কিছু ভুল যে ছিলনা তা অস্বীকার করবনা। তবে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি। আপনাদেরও হওয়ার কথা নয়। স্বাগতম আটলান্টিসে।
Thriller
1
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচয় দিতে গেলে প্রথমেই আসবে তিনি একজন রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। কিন্তু এর বাইরেও তাঁর আলাদা একটি পরিচয় আছে। তিনি একজন সুলেখিকা। তাঁর রচিত অনেকগুলো বই বের হয়েছে। এক সময় বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন। বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। তাই রাজনীতির মতই সাহিত্যের অলিগলি তাঁর চিরচেনা। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে 'ওরা টোকাই কেন?', 'সবুজ মাঠ পেরিয়ে', 'শেখ মুজিব আমার পিতা', 'দারিদ্র‍্য বিমোচনঃ কিছু চিন্তাভাবনা', 'আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম', 'People and Democracy', 'The Quest for Vision- 2021' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উপর্যুক্ত বইগুলোর মধ্যে 'শেখ মুজিব আমার পিতা' বইটি আলাদাভাবে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। বইটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচিত নির্বাচিত দশটি প্রবন্ধের সংকলন। বইটির ভূমিকা লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং সম্পাদনা করেছেন পার্থ ঘোষ। ১৯৯৯ সালে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বইটি প্রকাশিত হয়। 'শেখ মুজিব আমার পিতা' বইটিকে চারটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রথম তিনটি অধ্যায়ে তিনটি করে প্রবন্ধ আছে। শেষ অধ্যায়ে একটি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। প্রথম দুই অধ্যায়ে পারিবারিক স্মৃতি থাকলেও তৃতীয় অধ্যায়ে লেখিকা ড. আবদুল মতিন চৌধুরী, বেগম জাহানারা ইমাম ও নূর হোসেনকে স্মরণ-শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন এবং শেষ অধ্যায়ে একানব্বই সালের ভয়ংকর সাইক্লোনের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। প্রতিটি প্রবন্ধই ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে লেখা হয়েছে৷ বইটির প্রথম অধ্যায়ের নাম 'বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি'। এতে তিনটি প্রবন্ধ রয়েছে- ১. শেখ মুজিব আমার পিতা- এই প্রবন্ধে বাবা সম্পর্কে দেখা ও শোনা নানা ঘটনার বর্ণনা করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বঙ্গবন্ধুর শৈশব, রাজনীতিতে হাতেখড়ি, জেলে বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অবস্থা জানার জন্য এই প্রবন্ধটি সবার কাজে দেবে। ২. বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সেনা বাহিনী- সেনাবাহিনীকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টভঙ্গি ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে যে বিতর্ক প্রচলিত আছে, তা কতটুকু যৌক্তিক তা এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। ৩. ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড- এই প্রবন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনার বিবরণ দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কারা জড়িত ছিল, তাদের পরিচয় দিয়েছেন। বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম- 'মুক্তিযুদ্ধ ও পারিবারিক কথা'। এতেও স্থান পেয়েছে তিনটি প্রবন্ধ- ১. স্মৃতির দখিন দুয়ার (এক)- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। রেসকোর্স ময়দানে পাক সেনাবাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করছিলো, তখন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বন্দি করে রাখা হয়েছিলো ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোড়ের একটি বাড়িতে। রুদ্ধশ্বাস সেই মুহূর্তগুলো বর্ণনা জানতে পারা যায় এই প্রবন্ধে। ২. স্মৃতির দখিন দুয়ার (দুই)- এই প্রবন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর শৈশবে ফিরে গেছেন। অত্যন্ত কাব্যিক বর্ণনায় তিনি টুঙ্গিপাড়ার সৌন্দর্য তুলে এনেছেন বইয়ের পাতায়। এই প্রবন্ধের শেষে তিনি ইচ্ছাপোষণ করেছেন, "আমার জীবনের শেষ দিনগুলো আমি টুঙ্গিপাড়ায় স্থায়ীভাবে কাটাতে চাই।" ৩. স্মৃতি বড় মধুর, স্মৃতি বড় বেদনার- ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পারিবারিক বাড়িটি শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন, যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর'। এই প্রবন্ধটি লেখা হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক দিনটি উপলক্ষে। বইটির তৃতীয় অধ্যায়ের নাম- 'স্মরণ-শ্রদ্ধার্ঘ্য'। এতে তিনজন ব্যক্তিত্ব নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ স্থান পেয়েছে। ১. ড. আবদুল মতিন চৌধুরীঃ আমার স্মৃতিতে ভাস্বর যে নাম- ড. আবদুল মতিন ছিলেন পনেরো আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। তাঁকে ঘিরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জীবনের একটি বিশেষ স্মৃতি স্থান পেয়েছে প্রবন্ধটিতে। ২. বেগম জাহানারা ইমাম- এই প্রবন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সাথে নিজের স্মৃতিচারণ করেছেন। এই মহীয়সী নারীকে কীভাবে চক্রান্ত করে দেশদ্রোহী বানানো হয়েছে তা জানলে সবার কষ্ট লাগবে। ৩. নূর হোসেন- স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক নূর হোসেন। নির্ভীক নূর হোসেনের বুকে-পিঠে "স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক" লেখা দেখে মমতাময়ী মায়ের মতোই সন্তানের অনিষ্ট চিন্তা করে আঁতকে উঠেছিলেন শেখ হাসিনা। নূর হোসেনকে নিয়ে তাঁর সেই বেদনাবিধুর স্মৃতি স্থান পেয়েছে এই প্রবন্ধে। বইটির সর্বশেষ অধ্যায় 'ছেঁড়া ছেঁড়া ছবি'। এতে একটি মাত্র প্রবন্ধ আছে- ১. একানব্বইয়ের ডায়েরি- ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামে ছুটে যান তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। মানুষের জন্য কাজ করতে হলে যে ক্ষমতায় না থেকেও ভূমিকা রাখা যায়, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই প্রবন্ধটি। সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও তাঁর পরিবারের নানা স্মৃতিকে ধারণ করে আছে 'শেখ মুজিব আমার পিতা' বইটি। এছাড়াও বইটিতে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামের ইতিহাস। যে সময় প্রবন্ধগুলো প্রকাশিত হয়েছিলো, তা সে সময়ের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং সাহসী পদক্ষেপ ছিলো। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের হাতিয়ার হয়েছিলো প্রবন্ধগুলো। এক কথায়, একজন শেখ হাসিনা কতটুকু বলিষ্ঠ মননের অধিকারী, তা বইটির প্রতিটি প্রবন্ধে স্পষ্ট। নিজের দেশের সরকার প্রধানের লেখার হাত এত ভাল জেনে মন থেকে প্রশংসা চলে আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
Political
3
রোবট বলতেই আমরা বুঝি যন্ত্র এবং কলকব্জা দিয়ে তৈরি কোন চলমান প্রতিকৃতি। এর কোন অনুভূতি শক্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার সম্পুরন বিপরীত চিত্র দেখিয়েছেন তার এ সায়েন্স ফিকশনে। গল্পের শুরু মানবজাতির ধ্বংস নিয়ে। ভাইরাস এর সংক্রমনে যখন মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যায়, একটি মাত্র শিশু বেঁচে যায়। এবং শিশুটির মা তার দায়িত্ব দিয়ে যায় তৃতীয় প্রজন্মের এক রোবট এর কাছে। এক সময় সে বড় হয় এবং জীবিত আরও মানুষের সন্ধানে সে তার সঙ্গী রোবটের সাথে বের হয়। অ্যাডভেঞ্চারের শুরু এখানেই। এবং রোবট টি প্রমান করে যন্ত্রের তৈরি হলেও তার মধ্যে ভালোবাসা রয়েছে। তাই বইটি অবশ্যই সকলের পরা উচিত।
Science-Fiction
4
শওকত আলীর বড় দরদ দিয়ে ইতিহাসের পটভূমিতে বিনির্মান করছেন হাজার বছরের বাঙালি শাসক আর শাসিতের চরিত্র। সাথে আছে তুর্কি মুসলিমদের আগমন, ধর্মান্তরীকরন, অত্যাচার, লুণ্ঠন। উপন্যাসে প্রেম, কাম, ক্ষেত্রকরের করুন জীবন কাহিনীর সাথে সামন্ত ও মহাসামন্ত রাজাদের বিলাশবহুল এবং শ্রেণি স্বার্থের এক সুনিপুণ যোগসাদৃশ্য অংকন করা হয়েছে। মৃৎ শিল্পী শ্যামাঙ্গের সাথে তার শিল্পগুরু বসুদেবের মতপার্থক্য এবং অতঃপর তার নিরুদ্দেশ যাত্রা দিয়ে উপন্যাসের শুরু। শিল্প সব সময় বন্দী থেকেছে ক্ষমতাশীলদের হাতে এবং তাদের বিলাসব্যাসনেই ব্যবহৃত হয়েছে শিল্প। যা প্রকাশ পায় শ্যামাঙ্গর নিজের প্রতি করা প্রশ্নে, “শিল্পী কি ক্রীতদাস? রাজানুগ্রহ ব্যতিরেকে কি শিল্পীর কোন অস্তিত্ব নেই?” মন্দির গাত্রে নগ্ন নারীর মুর্তিতে ধর্মের কি ক্ষতি হয় সে বিষয়ে একটা প্রশ্ন করেছেন লেখক। দেবী যদি ঘড়ে থাকেন তাহলে মন্দিরের দরকার কি? আর স্রষ্টা যদি অন্তরে বাস করে তাহলে মন্দিরেরই বা দরকার কি? গাত্রের বিশুদ্ধতা নিয়ে আমাদের হাজারো অজুহাত অথচ নিজের মন মন্দিরের সংস্কারে আমাদের কোন উদ্যোগই নেই! এসব বিষয়েই গুরুদেবের সহিত বিতন্ডার শেষে শ্যামাঙ্গের নিরুদ্দেশ যাত্রার সুত্রপাত। বঙ্গ, পুন্ড্র, সহ বাংলার হিন্দু অধ্যুষিত জনপদে সামন্ত শাসকদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ ছিল বিপর্যস্ত। লীলাবতী, মায়াবতী, বসন্তদস, মিত্রানন্দ এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুরা উপন্যাসের চরিত্রকে একটি বহুমাত্রিক রূপ দিয়েছে। একদিকে যবন(মুসলিম) আগমনের ভয় অন্যদিকে সামন্ত রাজাদের অত্যাচার ক্ষেত্রকর বাঙ্গালির মনে বিপ্লব জাগালেও শেষ সম্বল রক্ষা হয় না নৃ-পতিতের ক্ষমতা আর বলের কাছে। পৃথিবীর সকল শাসকেরা তাদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য এক এবং অভিন্ন রীতি গ্রহন করে এবং তা চাপিয়ে দেয় সাধারণ মানুষের উপরে। সাধারণ মানুষেরা কখনোই মানুষ হয়ে ওঠেনি এসব শাসকের কাছে। যা প্রকাশ পায় সামন্তরাজ হরিসেনের একটি উক্তির মধ্য দিয়ে, “ওদের অনাহারে রাখুন, দেখবেন, ওরা বিনয়ী এবং শ্রমশীল দুই-ই হয়েছে, সুতারাং ওদের অনাহারে রাখুন”। চন্ডাল, শুদ্র, ডোমসহ সকল ক্ষেত্রকর নিচু মানুষেরা সেই প্রাচীনকাল থেকেই নিগৃহীত। ক্ষুদ্র বণিক থেকে বসন্তদাসের বিদ্রোহী হয়ে যাওয়া এমনকি মায়াবতীর মায়ার জালও যাকে আটকাতে পারে নি তার কারণও বিধৃত আছে উপন্যাসে। লীলাবতীর সাথে শ্যামাঙ্গের সাক্ষাৎ এবং যোগী জীবনের সুত্রপাত, কাম, প্রেমের এক অপুর্ব মিলনও আছে স্নেহের অক্ষরে লেখা। নারীর চির আবহমান মায়া, প্রেম, ছলনার সংমিশ্রণ ঘটেছে লীলাবতী চরিত্রের মধ্যে। যদিও যবন আক্রমন এবং আগমনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় উপন্যাসটি তবুও একটি ছায়া থেকে যাবে পাঠকের মধ্যে চরিত্রগুলোর কি হলো শেষ পর্যন্ত। উত্তরটি আমাদের সবার জানা, হাজার বছর ধরেই রাজা, সামন্ত রাজা, মন্ত্রী সাধারণের চির শত্রুই হয়ে থেকেছে। উচু শ্রেণি স্বার্থগত কারণে নীচ শ্রেণিকে নিজেদের কাছে ডাকলেও সবসময়ই এরা থেকেছে সাধারণ থেকে অনেক দূরে। যে কারণে অত্যাচার এবং লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই। এ কারণেই যবন আক্রমন আসন্ন দেখে সোমজিৎ এক সামন্ত রাজাকে বলেছিলেন, “যবনরা যদি আসে, তখনো দেখবে তাদের উচ্চ শ্রেনির লোকেরা সদ্ভাব করছে আমাদের উচ্চ শ্রেণির লোকদের সাথে। নীচ যে, সে সর্ব অবস্থায় নীচ থাকবে”! যুগ বদলেছে কিন্ত অত্যাচার সেই তেমনই আছে। আধুনিক হয়েছি কিন্ত পশুত্ব ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে! এদেশের সাধারণের কাছে অল্পতে তুষ্ট থাকার সংস্কৃতিই হয়েছে বাণিজ্য বিকাশের সবচেয়ে প্রধান অন্তরায়। তাছারা সামন্ত রাজাদের লুণ্ঠনকারী মনভাবের কারণে সাধারনে সম্পত্তি সৃষ্টিতে কখনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি। গরীবের সৃষ্ট সম্পদ তো গরীবের ব্যবহারের জন্য নয়। ওটাতো সামন্ত রাজদের বিলাসব্যসনের জন্য। তাদের গৃহ নগ্ন নারীর শরীরে সাজানোর জন্য আর গরীবের গৃহে নববিবাহিত পুরুষ চেয়ে দেখে তার স্ত্রীর সতীত্ব কিভাবে রাজপুরুষ দ্বারা লুণ্ঠিত হয়। এটাই কি তাহলে হাজার বছরের চিরায়িত বিধান? একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের সেই প্রাচীন সামন্ত বা আধা সামন্তবাদী সমাজের অস্তিত্ব নেই কিন্ত সামন্ত চরিত্র গুলো কিন্ত ঠিক-ই আছে। আমাদের রাজনীতিবিদ এবং তাদের সাঙ্গ পাঙ্গরা খুব সহজেই তাদের গুনটি আত্মস্থ করে নিয়েছে আর আমরা হলাম সেই প্রাকৃতজন। আমরা ধর্ষিত হই বনে বাদারে, বিচার চাইতে গেলে পুরুষরাও বলাৎকারের শিকার হয়ে ফিরে আসে মৃত ধর্ষিতার ছিন্ন শরীর নিয়ে! এখন আমার প্রশ্ন তাহলে সমাজ কি একটি নির্দিষ্ট ধারায় চলতে থাকে। সমাজ পরিবর্তন হয় ঠিক আছে কিন্তু সমাজের মৌলিক কাঠামো কি পরিবর্তিত হয়? গতিশীল সমাজের অবকাঠামোগত পরিবর্তন-ই কি সব কিছু? কিভাবে শাসক আর শোষিতের মধ্যকার সম্পর্ক এখনো আগের মতন আছে সে বিষয়ে আমার অনেক প্রশ্ন আছে।
Fiction
0
একজন সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন একটি অসাধ্য সাধন করেছেন যার প্রশংসা করার ভাষা নেই। ভারতের মসনদে এখন তৎকালীন গুজরাট দাঙ্গা ও সাজানো বন্দুকযুদ্ধের নায়কেরাই। শ্রদ্ধা ভক্তির বদলে তাদের জন্য সচেতন মানুষের মনে তৈরি হবে একরাশ ঘৃণা। স্যালুট রানা আইয়ুব। আপনার সাহস পথ দেখাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের। আরো উৎসাহী হয়ে হবে লুকিয়ে রাখা সত্যকে আবিষ্কার করতে মিথ্যার চাদর সরাতে।
Political
3
প্রতিটি লাইনে জড়িয়ে আছে স্মৃতি। লেখিকার সাহসিকতায় মুগ্ধ
Political
3
গোপন এক কাল্টের হাতে খুন হয়ে গেলেন বাংলাদেশী জেনেটিক্স বিজ্ঞানী আহসান মোবারক। হঠাৎ করেই যেন মাটি ফুঁড়ে বের হয়েছে এই কাল্ট। কোনও সিকিউরিটি সংস্থার কাছেই ওদের অতীতের কোনও তথ্য নেই। ভয়ঙ্কর এই কাল্ট খুব নির্দয়ভাবে নির্যাতন করে খুন করেছে বাঙালি বিজ্ঞানীকে। জানা গেছে মৃত্যুর আগে অদ্ভুত এক ভাইরাস নিয়ে কাজ করছিলেন তিনি। রওনা হয়ে গেছে রানা। খুঁজে বের করবে ঐ কাল্টকে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে মৃত বিজ্ঞানীর মেয়ে মোনা মোবারকের। মোনাও বাবার মতই জেনেটিক্স বিজ্ঞানী। রানার সঙ্গী হলো আমেরিকান ন্যাশনাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর এজেন্ট এলেনা রবার্টসন। এই অপারেশনে ওর জড়িত হওয়ার কারণ ঐ ভাইরাস। ইউএন অফিসের এক মহিলা কর্মকর্তা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। একটা চিঠির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া হয় তার মধ্যে। জানা যায় এই ভাইরাস নিয়েই কাজ করছিলেন আহসান মোবারক। এদিকে এর সাথে জড়িয়ে আছে প্রাচীন এক ইতিহাস। খুঁজে বের করতে হবে জীবন-বৃক্ষ নামের ঐ গাছকে যার বর্ণনা ছিল ওল্ড টেস্টামেন্টসহ আরও অনেক ধর্মগ্রন্থে। বলা হয়ে থাকে এই গাছের ফল এবং বীজে আছে এমন এক ভাইরাস যা মানবদেহের ক্ষয়রোধ করে। বেড়ে যায় আয়ু। গোপন ঐ কাল্টও ঐ জীবন-বৃক্ষের পিছনে লেগেছে। কে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাচ্ছে ঐ ভাইরাস বুঝতে পারছেন? অনেকদিন পর রানা সিরিজের ইসাটাবুর অভিশাও পড়ে খুব ভালো লেগেছিল। সেই ভালো লাগার রেশ থেকেই শুরু করেছিলাম মৃত্যুঘন্টা। যদিও মৃত্যুঘন্টা ইসাটাবুর অভিশাপের আগে বের হয়েছিল, কিন্তু আমার হাতে পৌঁছাতে দেরি করেছে। যাইহোক, যা বলছিলাম অনেক আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম মৃত্যুঘন্টা। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে আমাকে। ইসাটাবুর অভিশাপের ধারেকাছেও নেই এটি। প্রথম ১০০ পৃষ্ঠা যথেষ্ট বোরিং ছিল, পড়তে সময় লেগেছে অনেক। ১০০ পৃষ্ঠার পর কাহিনীতে গতি এসেছে কিন্তু সেটাও খুব ধীরগতি। প্রচ্ছদ একদমই ভালো লাগেনি। উপরে দুবাই এর বুর্জ আল আরব এর ছবি থাকলেও কাহিনীতে বুর্জ আল আরব ছিল সামান্য কিছু সময়ের জন্য মাত্র। প্রচ্ছদ আরও সুন্দর হতে পারতো। একটা অসংগতি দেখে মেজাজ খারাপ হয়েছে খুব। আগের বইগুলোতে পিছনের কোনও কাহিনীর উল্লেখ থাকলে স্টার সিম্বল দিয়ে সেই বইয়ের নাম উল্লেখ থাকতো। কিন্তু এই বইয়ে পুরনো দুটা কাহিনীর উল্লেখ থাকলেও বইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া যেসব ইংরেজি শব্দের বাংলা বানান আমরা একভাবে দেখে অভ্যস্ত ছিলাম সেগুলো বদলে গেছে। কিছু উদাহারণ দেই, সাইজ- সাইয, ক্লোজ-ক্লোয, ওয়াটার-ওঅটার। এছাড়া যেসব ইংরেজী শব্দের বাংলা বানানে বর্গীয় জ ছিল সেগুলো সব বদলে অন্তস্থ য হয়ে গেছে। আমার মত অনেক পুরনো পাঠকেরই ব্যাপারটা চোখে লাগার কথা। কাহিনীর তুলনায় একশন যেটুকু দরকার ছিল, যেটুকু সাসপেন্স দরকার ছিল তা পাইনি। ছোট ছোট টুইস্টগুলোও ঠিকভাবে ফুটে উঠেনি। কাহিনীর দুর্বলতার কারণে আগে থেকেই টুইস্টগুলো অনুমেয় ছিল। তবে ধৈর্য্য ধরে অর্ধেক পর্যন্ত পড়তে পারলে বাকিটা শেষ করতে পারবেন এক বসায়। কিন্তু অর্ধেক পর্যন্ত পড়তেই আমার বারোটা বেজে গিয়েছিল। আশা করব পরবর্তীতে আরও সুন্দর কিছু রানা উপহার পাব আমরা।
Thriller
1
জাফর ইকবাল স্যারের কিছু কিছু বইয়ে যেন ফিরে আসে হারানো শৈশব,ছেলেবেলার খুনসুঁটি-আরও অনেক কিছু । এরকম হাজারটা ভাল লাগা ধারণ করে রাখা বইয়ের নাম "গাব্বু" । গাব্বু স্কুল পড়ুয়া বারো বছরের এক ক্ষুদে বৈজ্ঞানিকের নাম,যার বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তার বাবা-মা,ভাই-বোন এমনকি স্কুলের সহপাঠীদের জীবনও রীতিমত দুর্বিসহ ! তারপরেও বিজ্ঞান গবেষণায় গাব্বুর যেন এতটুকু বিরক্তি বা ক্লান্তি নেই । এ গল্পের আরেক চরিত্র হল বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পৃথিবীর খ্যাতিমান বিজ্ঞানী রিফাত হাসান , যিনি কিনা বহু বছর পর আমেরিকা থেকে ফিরেছেন স্বদেশের টানে এই বাংলাদেশে । খ্যাতির চরম বিড়ম্বনা এঁড়িয়ে তিনি যখন কিছুটা সময় কাটাবার জন্য ছুটে গেছেন তাঁর শৈশবের স্কুলে তখন তার সাথে পরিচয় ঘটে গাব্বুর । অথচ শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী রিফাত হাসান কে যেন চিনতেই পারেনা গাব্বু ! স্বভাব-সুলভ ভঙ্গিতে গাব্বু তার বৈজ্ঞানিক আলোচনা চালাতে থাকে রিফাত হাসানের সাথে । গাব্বুর সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে রিফাত হাসান গাব্বুর কথা থেকে পেয়ে যায় তাঁর গবেষণার এক বৈপ্লবিক কৌশল । অথচ তার পর দিনই স্কুলে গাব্বুর নানারকম এক্সপেরিমেন্টের ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে এবং গাব্বুর বাবা-মা,শিক্ষক আর সহপাঠীদের আপত্তি সত্ত্বেও গাব্বুকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাগী চেহারার প্রধান শিক্ষক । এসময় বাংলাদেশ ছাড়ার আগ মুহূর্তে গাব্বুর খোঁজে গাব্বুর স্কুলে উপস্থিত হন রিফাত হাসান । সবাই বুঝতে পারে,গাব্বু আসলে অন্যরকম প্রতিভাধর এক ছোট্ট বৈজ্ঞানিক , যার কারণে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক !
Childrens-Book
2
রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মে বইয়ের নামঃ নিয়ান লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রকাশক:তাম্রলিপি ধরণঃ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মণিকার ১৬ বছর বয়স।মণিকার মা নেই। মণিকার বাবা রিয়াজ একজন সাইন্টিস্ট।তিনি নিয়ানডারথাল মানুষ অর্থাৎ আদিমমানবদের নিয়ে রিসার্চ করেন। একদিন মণিকার স্কুল থেকে রিয়াজের বাবার কাছে একটি কমপ্লেইন আসে তাই সে তাড়াতাড়ি করে তার স্কুলে যায় এবং কী হয়েছে তা জানতে চায়।প্রিন্সিপাল জানায়, মণিকা কংগ্রেসম্যানের ছেলেকে মেরে তার নাক ভেঙ্গে দিয়েছে।এজন্য তারা মণিকাকে আর এই স্কুলে রাখতে চাচ্ছে না।তখন তার বাবা তাকে নিয়ে স্কুল থেকে চলে যায়। সেদিনের পর থেকে মণিকা পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।তাই সে নিজ ইচ্ছায় ম্যাকডোনাল্ডসে চাকরি করা শুরু করে, ক্যারাটে ক্লাস করে এবং ড্রাইভিং শেখা শুরু করে।তার বাবা এগুলোর কিছুই চায় নি।মণিকা ঘুরতে খুবই ভালোবাসে।তাই তার বাবা ঠিক করলো তাকে নিয়ে ভ্যাকেশনে যাবে।তাই মণিকা অনেক খুশি।কিন্তু কে বা জানতো, সেখানে গিয়ে তার জীবনে অনেক কিছুই উলোটপালোট হয়ে যাবে।রিয়াজ তাকে নিয়ে আল্পস পর্বতে ঘুরতে গেলো।কারণ মণিকা পাহাড়ে হাইকিং করতে খুব ভালোবাসে।মণিকা সেখানে তাদের প্রতিটা দিন কী করে কাটাবে, তার একটা চার্ট তৈরি করে রাখে।প্রথম দিন তারা হালকাভাবে হাইকিং করলো।তবে সেইদিন রাতের বেলা হঠাৎ করে ৭.৩ মাত্রার খুবই ভয়াবহ একটি ভূমিকম্পের শুরু হয়।ভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে যায়।তবে সেই আল্পস পাহাড়টিতে অনেক বরফ ও পাথর ধসে পড়ে।আর এখন সেখানে যাওয়া মানেই মরণ। তবুও মণিকা জোর করে তার বাবাকে নিয়ে সেখানে যায়।মণিকা অত্যন্ত দুঃসাহসী।তারা অনেক সাবধানে সেখানে হাটঁতে থাকে। একসময় তারা এক জায়গা গিয়ে তারা রেস্ট নিচ্ছিলো।হঠাৎ করে মণিকার গলায় থাকা তার মায়ের লকেট বরফ পাথরে ঢাকা একটি খাদের মধ্যে পড়ে যায়।এটা তার মায়ের খুব প্রিয় লকেট ছিলো। তাই মণিকা কাদোঁ কাদোঁ গলায় বলে উঠলো যে সে ওই খাদে নামবেই।তারপর সে অনেক রিস্ক নিয়ে সেই খাদে নামলো এবং লকেটটাও পেয়ে গেলো।তবে সে সেই খাদে বরফে জমাট বাধা অবস্থায় একটা ছেলেকে দেখতে পেলো।তাকে দেখে বোঝা গেলো যে, সে চল্লিশ হাজার বছর আগের কোনো নিয়ানডারথালের ছেলে।আমরা যেমন হোমো স্যাপিয়েন্স ওরা তেমন নিয়ানডারথাল।মণিকার বাবা নিয়ানডারথালের এই ছেলেটিকে দেখে যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করার জন্য অনেক জনকে ডাকলো।মিডিয়ার লোকেরাও আসে।তারা মণিকার সাক্ষাৎকার নিলো।সাক্ষাৎকারে সে নিয়ানডারথাল এর ছেলেটার নাম নিয়ান রেখেছে সেটা জানালো।ইতোমধ্যে সারা পৃথিবীতে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়লো। তারপর মণিকারা নিজ দেশে তাড়াতাড়ি ফিরে যায় এবং রিয়াজ নিয়ানকে বাচিঁয়ে তোলার চেষ্টা করে।একসময় সেই চল্লিশ বছর আগের ছেলেটিকে বাচাঁনো যায়।কিন্তু সেই দেশের কিছু লোক নিয়ানকে মেরে ফেলতে চাইলো এবং এই নিয়ে কিছু পরিকল্পনাও করে ফেলে তা ফেসবুকে জানিয়ে দিলো।তাই দেখে মণিকা অনেক ভয় পেয়ে যায়।আর ঠিক করে যে, তাকে নিয়ানকে বাচাঁতেই হবে।আর ঠিকই একদিন তারা অনেক অস্ত্র ও রাইফেল নিয়ে আসে নিয়ানকে মারতে।তখন মনিকা লুকিয়ে নিয়ানের কাছে যায়।নিয়ান কখনো মানুষ দেখেনি তাই সে তাকে দেখে খুবই ভয় পেয়ে গেলো।তবে মনিকা তাকে অনেক কষ্ট করে মানিয়ে এবং সেই খারাপ লোকদের সাথে যুদ্ধ করে নিয়ানকে বাচিঁয়ে ফেললো।সে নিয়ানকে নিয়ে একটি বিরাট পাহাড়ে চলে গেলো এবং সকল পুলিশকে তাদের পিছু নিতে নিষেধ করলো।তাই নিয়ানের কথা ভেবে তারা আর তাদের পিছু নিলো না। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, নিয়ান এই নতুন এবং অচেনা এই পৃথিবীতে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিলো না।সে সেখানকার সকল টেকনোলোজি দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।তবে মনিকা তাকে আস্তে আস্তে বন্ধু বানিয়ে নেয়।কিন্তু তবুও নিয়ান এখানকার মানুষকেও সহ্য করতে পারেনা।সে তার মা কে খুজঁতে থাকে।কিন্তু পায়না।একসময় নিয়ান সকল আশা ছেড়ে দেয়, সে মন থেকে তার নিজেকে মেরেই ফেলে।আর বাচঁতে চায় না।নিয়ান এর এ অবস্থা দেখে মনিকা কাদঁতে শুরু করে।সে বুঝলো যে নিয়ান আর বাচঁবে না।তাই সে নিয়ানের কাছে শেষবারের মতো ক্ষমা চাইলো।কারণ হোমো স্যাপিয়েন্সরাই একসময় থেকে নিয়ান্ডার্থালদের হত্যা করে আসছে।সে অতি কষ্টে বলে উঠলো যে, "নিয়ান তুমি কী আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না?" তখন নিয়ান শেষবারের মতো তার দিকে তাকিয়েই রইলো, চোখ সরালো না। জাফর ইকবাল স্যার নিয়ান্ডার্থালদের স্মরণে, নিয়ানয়ের মতো মানুষদের কাছে ক্ষমা চাইতে এই বইটি লিখেছেন।তবে তিনি জানেন যে, এটা কখনোই সম্ভব নয়।কারণ তারা পৃথিবীতে আর নেই।এই বইটি আসলেই অতি চমৎকার একটি বই।এই বইটি পড়ে আসলেই আমার অনেক ভালো লেগেছে।তাই সকলকে এই বইটি পড়ার অনুরোধ করছি, হয়তো অনেকেরই এই বইটি পড়ে নিয়ান এবং নিয়ান্ডার্থাল মানুষকে নিয়ে অনেক দুঃখ ও অনুশোচনার সৃষ্টি হতে পারে। ধন্যবাদ।
Science-Fiction
4
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃবাজিকর লেখকের নামঃনাবিল মুহতাসিম ঘরানারঃথ্রিলার রেটিং:-৪.৫/৫ রিভিউঃ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে সি আই এ এর প্রাক্তন আইটি স্পেশালিষ্ট কার্ল হাসান সেভার্স। এখানে এসেছে সিলেটের পরিচিত বন্ধু সাব্বিরের কাছে আশ্রয়ের জন্য। পালিয়ে আশার কারন হলো, তার কাছে রয়েছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। যা প্রকাশ হলে বিশ্বজুড়ে অনেক কিছু ঘটে যাবার সম্ভাবনা। অথচ সে এখানে নিরাপদ কিনা, বা সাব্বির যাকে সে এতটা বিশ্বাস করেছে সে কি আসলে তাকে নিরাপদে রাখতে পারবে! ইউক্রেনে তখন চলছে যুদ্ধ। আর হার্ভাস এই যুদ্ধ থেকেই পালিয়েছে। ইউক্রেনের তখন বিরূপ অবস্থা রাশিয়ানরা বর্ডার ক্রস করে ইউক্রেনে হামলা চালায়। এই আবস্থায় ইউক্রেনের আকাশ থেকে নিখোঁজ হলো বাংলাদেশি বিমান। সেখানে ছিলো প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে আর দেশের সেরা স্পাই এজেন্ট জনি ওরফে বাজিকর। অনেক তল্লাসী শেষে, তাদের খোঁজ পাওয়া গেলো তবে অপহরণকারীদের ছিলো বিনময় প্রথা দাবী। তাদের দাবী ছিলো সেভার্সের বিনিময়ে তারা দুজনকে ফেরত দেবে। এবার কি হবে! প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্ধারে ছয় জনের একটা গ্রুপ এজেন্ট পাঠান। কিন্তু শত্রুদের আক্রমেন সেই ছয়জনের মধ্যে কেবল মাত্র একজন বেঁচে থাকে। আর আশ্চর্য জনক হলেও সত্যি এ ছিলো এজেন্টদের মাঝে সব থেকে কনিষ্ট। সে পুরোদস্তুর এজেন্ট হয়ে উঠতে পারেনি এখনো। এই বিপন্ন পরিস্থিতিতে কি করে তার পক্ষে সম্ভব হবে একা এই ভিনদেশে এত এত শত্রু পক্ষের সাথে মোকাবেলা করে বাজিকর জনি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়েকে উদ্ধার করা! প্রকাশনীঃবাতিঘর পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ২৫৩ মূল্যঃ২৫০ প্রথম প্রকাশঃ২০১৭ নাবিল মুহতাসিম রংপুরের ছেলে। পড়াশোনা করছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ছোটবেলা থেকে লেখালেখিতে তার বেশ ঝোক ছিলো। বাজিকর তার ২য় মৌলিক থ্রিলার। ব্যক্তিগত মতামতঃ বাজিকর মূলত একটা ধুলোমাটি থেকে উঠে আসা এক চরিত্রের উত্থান পর্ব। আর এতে বর্ণনা করা হয়েছে, কিভাবে বাজিকর তার নিজের পজিশনে অবস্থান গেরেছে। বাজিকর কোন চরিত্র নয় এটা মূলত উপাধি। বাজিকর জনি ছাড়াও আরো যে ছয় জন এজেন্টকে গল্পের জন্য নিয়ে আসা হয়। তাদেরকেও লেখক বেশ ভালোভাবেই উপস্থাপন করেছেন । লেখকের বর্ণনা বেশ তীব্র ছিলো বলে, ভেতর থেকে উত্তেজনা টের পাওয়া যাচ্ছিলো। এ হিসেবে বলতে হয় লেখকের লেখনী বেশ ভালো ছিলো। সাধারন এজেন্ট থেকে বাজিকরে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াও দেখার মতো। লেখনীর সাথে কাহিনীর ছিলো জমজমাট উপস্থাপন। তবে বেশ কিছু চরিত্রে তিনি শেষাংশ দেখান নি। মানে শেষ পর্যন্ত তাদের পরিনতির খোঁজে পাওয়া যায় নি। এদিক থেকে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। এছাড়া বাকি সবটুকু গল্পই বেশ ভালো ভাবে এগিয়ে গিয়েছে। প্রিন্টিক মিস্টেক ছিলো খুব। নাম কিছুটা উল্টাপাল্টা ছিলো। এছাড়া পাঠক বেশ আগ্রহ নিয়ে পুরো বই শেষ করবেন বলেই আশা করি। https://www.rokomari.com/book/129287/বাজিকর?ref=srbr_pg0_p1
Thriller
1
বইমেলায় নিয়মিতই বই কিনি । বই কিনতে,পড়তে,উপহার হিসেবে দিতে খুব ভালো লাগে ।এতদিন মেলায় গেলেই খালি খুঁজতাম হুমায়ুন আহমেদ স্যার বা জাফর ইকবাল স্যারের নতুন কোন বই এসেছে । সেগুলো চট করে কিনে ফেলতাম । আমাদের দূর্ভাগ্য হুমায়ুন আহমেদ স্যার আমাদের মাঝে আর নেই ।তার নতুন কোন বই পাব না ভাবতেই খারাপ লাগে ।যাইহোক,এইবার ঠিক করলাম নতুন লেখকদের কিছু পড়ব।খুঁজতে লাগলাম।আমি আবার খুব অস্থির মানুষ।এসব খুঁজাখুজি আমার দ্বারা হয়না ।বন্ধু অর্ফিয়াসকে বললাম একটা বই রেফার করার জন্য।ও আমাকে রেফার করল এই বইটি,"কিছু বিষাদ হোক পাখি"।অনেক আগ্রহ নিয়ে বইটি কিনলাম ।অন্যপ্রকাশ থেকে।হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বই বের হত এই অন্যপ্রকাশ থেকে।যাইহোক,বইটা হাতে নিয়ে শুরুতেই দেখলাম প্রচ্ছদটা।সাদা আর নীলে মিলানো অনেক সুন্দর একটা প্রচ্ছদ।বাসায় এসে বইটা পড়া শুরু করলাম।সঞ্জনা নামের এক মেয়ের কাহিনী।ছোট থেকে বড় হওয়া,বাবার প্রতি,মনি নামের বড় বোনের প্রতি,মার প্রতি ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিটি লাইনে।জীবনের ছোট ছোট বাস্তবতাগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ।আসলে এইভাবে কী বলব!সাহিত্য হয়েছে কিনা তা গবেষণা করা আমার কাজ না। ঐ প্রমথ চৌধুরীর ভাস্যমতে আমি স্কুল মাস্টার হতে চাইনা ।তারা যেভাবে সাহিত্যের চুলচেরা বিশ্লষণ করেন তখন তা আর সাহিত্য থাকেনা। এখানে একটা জিনিস আছে বলার মত।যেটা আমি নিজেও খেয়াল করেছি ।বাবা মারা গেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়ার জন্য খুব তাড়াহুড়া চলতে থাকে । যেন মেয়েটা পরিবারের জন্য একটা উটকো ঝামেলা।অনেকে হয়ত পরিবারের চাপে আর বাবার শোকে বিয়েও করে ফেলে । তার সকল স্বপ্ন ,সকল আশা আকাঙ্খা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় বাবার মৃত্যুর সাথে সাথে।তখন বাবার মৃত্যুর শোকের থেকে বাবার ওপর অভিমানটাই বড় হয়ে উঠে। এখন সঞ্জনার ব্যাপারে কী বলব!এই গল্পটা তার ভাষাতেই লেখা।তার ছোট্ট জীবন যেন তার বাবা,মা,মনিপাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।তার বড় বোন মনিকে সে মনিপা বলত।সঞ্জনা তার বন্ধু মোক্তারের প্রতি না বলা অনুভূতিগুলো লুকোতে পারেনি তার কাছ থেকে।পরবর্তিতে কি হয়েছে জানিনা। কেউ না হয়েই সঞ্জনার জন্য অনেক কিছু ছিল আদিবা।এমন অনেক অনুভূতিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বইটিতে। অনেক ছোট কাহিনী।এক বসাতেই যেন পুরোটা বলে ফেলতে পারব।কিন্তু বলছি না ।কিনে পড়ে দেখবেন। এখন আমার মন্তব্য বলি আসলে অন্যদের জন্য ভালো বই কী আমি জানি না । আমার জন্য যেই বইটা আমার মনে অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে,কাঁদাতে পারে ,হাসাতে পারে সেইটাই ভালো বই ।এরকম বই আমি খুব কম পড়েছি ।শুভকামনা রইল মাহরীন ফেরদৌস (একুয়া রেজিয়া) আপুকে।
Fiction
0
'মেমরিজ অভ মিডনাইট' বইটির লেখক সিডনি শেলডন। বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন স্বনামধন্য অনুবাদক অনীশ দাস অপু। বইটি অনিন্দ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, বইটির প্রকাশক আফজাল হোসেন। সিডনী শেলডন একজন একাডেমী এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী আমেরিকান লেখক, যার জন্ম ১৯১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি শিকাগো শহরে । তিনি মাস্টার অফ দ্যা গেম, দ্যা আদার সাইড অফ মিডনাইট ইত্যাদি বই এর জন্য বেশ বিখ্যাত । 'মেমরিজ অফ মিডনাইট' বইটি দ্য আদার সাইড অভ মিডনাইট বইটির সিকুয়েল। বইটির মূল চরিত্রে আছে ক্যাথেরিন ডগলাস, একজন স্মৃতিভ্রষ্ট লেডি। সিকুয়েল এর বইটি তে সে তার স্মৃতি হারিয়ে ফেলে। সে তার বাস্তব জীবনে ফিরে আসতে চায়, এই নিয়েই কাহিনী এগিয়ে যায়। এক সময় আবির্ভাব হয় টাইকুন কনর্স্টানটিন এর। যে তার জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। টাইকুন চায় ক্যাথেরিন কে হত্যা করতে, কারন ক্যাথেরিন টাইকুন এর ব্যাপার এ এমন কিছু জানে যা তার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। এই দুইজন ছাড়াও বইটি তে আরো অনেক গুলা চরিত্র রয়েছে, সেইগুলাও কাহিনীভেদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাথেরিন এর আসে পাশে যারা থাকে প্রায় সকলের মৃতু হয়ে যায়। এতে ক্যাথেরিন অত্যন্ত ভয় পেয়ে যায় এবং একজন সাইকিয়াট্রিষ্ট এর সাথে যোগাযোগ করে। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এই থ্রিলার টি যে কোন থ্রিলার প্রেমীর কাছে ভালো লাগতে বাধ্য। বইটির একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রহস্যে ঘেরা। বইটির লেখক এর প্রথম বই 'দ্য নেকেড ফেস' তখন বছরের সেরা রহস্যোপন্যাস হিসেবে অবিহিত করেছিল নিউইয়র্ক টাইমস। এই জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক ২০০৭ সালের ৩০ এ জানুয়ারি পরলোকগমন করেন।
Thriller
1
সলোমন দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী শহর হচ্ছে ইসাটাবু দ্বীপ। স্থানীয় ভাষায় ইসাটাবু শব্দের অর্থ হচ্ছে পূবাল হাওয়া। প্রচুর পরিমানে খনিজ সম্পদে ভরপুর এই দ্বীপে ছুটি কাটাতে এসেছে রানা। একটা খালের ধারে মাছ ধরছিল, এমন সময় ইসাটাবু রেইন ফরেস্টের ভিতর থেকে দৌড়ে এসে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে স্থানীয় এক আদিবাসি। এই খালে যে কুমিরের উৎপাত আছে এটা অবশ্যই জানা থাকার কথা, তারপরও নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও লোকটা কেন খালে ঝাপ দিল? লোকটা কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়। তারপরও রানা তাকে কুমিরের হাত থেকে বাচানোর চেষ্টা করে, এবং সফল হয়। এবং এই লোকের মানিবেল্ট থেকে পাওয়া কিছু জিনিষের কারণে জড়িয়ে পড়ে বড় ধরণের এক চক্রান্ত এবং গুপ্তধনের রহস্যের সাথে। আদিবাসি লোকের ধারণা, ইসাটাবুর জঙ্গলে দৈত্যদানোদের বাস। কোনও মানুষ সেখানে গেলে আর ফিরে আসেনা। জঙ্গল গিলে খায় ওদের। এভাবে অনেক কিশোর কিশোরী হারিয়ে গেছে ইসাটাবু থেকে। এদিকে কুমিরের হাত থেকে বাচানো লোকটার বেল্ট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রানা শামান রাজার গুপ্তধনের পিছনে লাগে। ১৬০০ সালের দিকে ইসাটাবুতে শামান বলে এক রাজার রাজত্ব ছিল। কথিত আছে সে দেবদেবীদের দিয়েও কাজ করিয়ে নিতে পারতো। দেবদেবীদের অভিশাপে তার প্রাসাদ পানির নিচে তলিয়ে যায় তার জীবনের সব সম্পদসহ। এই অভিযানে রানা একা নয়। প্রতিপক্ষ এবং শত্রু হিসেবে পিছনে লাগে দ্য মিউটিনিয়ার নামে একটা দল এবং ইসাটাবুর পুলিশ কর্মকর্তা সার্জেন্ট ফুগুয়ে। ঘটনাক্রমে পরিচয় হয় সুন্দরি ডাক্তার নাম্বানা ভেলর এবং রেমি তানাঘাইয়ের সাথে। ড. নাম্বানা ভেলরের হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রেখেছে কুমিরের আক্রমণ থেকে বাচানো লোকটাকে। লোকটার নাম জ্যাকব ভাউযা। আর রেমি তানাঘাই নিজেকে ভাউযার বোন হিসেবে পরিচয় দেয়। এদিকে দ্য মিউটিনিয়াররা শুধুমাত্র গুপ্তধনের পিছনে লেগেছে তা নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলমালের সাথেও ওরা জড়িত। পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছিল অন্য কেউ। গুপ্তধন উদ্ধার করবে রানা, সাথে এমন একটা রহস্যের কিনারা করবে যার সাথে পাঠকদের চিন্তার কোনও মিলই হয়তো পাওয়া যাবেনা। অনেকদিন পর মাসুদ রানা পড়লাম, এবং পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেলাম। ৫০০ পৃষ্ঠার উপরের বই মাত্র দুদিনে শেষ করেছি। রানা সিরিজের বেশিরভাগ বইগুলোতেই যেটা দেখা যায় প্রথমদিকে কাহিনী একটু বোরিং থাকে তারপর থেকে সাসপেন্স শুরু হয়। কিন্তু এই বইয়ে প্রথম থেকেই, আরও ভালোভাবে বলতে গেলে প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই সাসপেন্স শুরু। মাঝেমধ্যে টুকটাক ছোট ছোট টুইস্ট আছে। শেষের দিকের টুইস্টটা আসলে ভড়কাতে পারেনি আমাকে, অনেক আগে থেকেই টের পাচ্ছিলাম এরকম কিছু। অনেকদিন পর ববি ম্যুরল্যান্ড এবং সোহেলকে পেলাম রানার সাথে। যদিও অল্প কিছু সময়ের জন্য ছিল ওদের উপস্থিতি, কিন্তু ভালো লেগেছে। বইয়ের কিছু ব্যাপার আমার কাছে খাপছাড়া লেগেছে। রেমি তানাঘাই পড়ালেখা করছে নার্সিং এ, অস্ত্র সম্পর্কে তার জ্ঞান বা আগ্রহ কিছুটা খাপছাড়া নয় কি? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানী এক রাইফেলের প্রসঙ্গে সে জিজ্ঞেস করে ওটা কি ধরণের রাইফেল? ও হ্যাঁ, বলতেই তো ভুলে গেছি। গল্পের বেশ অনেকটা জুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং জাপানী সৈনিকদের পরাজয় এবং দুজন জাপানী ক্যাপ্টেনের ব্যক্তিগত ডায়েরি ও তাদের জীবন নিয়েও আলোচনা আছে বেশ। আরেকটা খটকার বিষয় হলো, রানার ফেসবুক ব্যবহার। একজন টপ রেটেড স্পাই এর ক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যবহার করাটা যুক্তিযুক্ত? সেবার বইগুলোতে আগে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়েও বানান ভুল পাওয়া যেতনা। ইদানিং বেশ ভুল পাওয়া যাচ্ছে। বইয়ের বেশ কিছু জায়গায় বেশ কিছু ধাঁধা ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে গুপ্তধনের লুকানো জায়গাটা খুজে পাওয়া যাবে কয়েকটা কবিতার মাধ্যমে। এই ব্যপারটা খুব ভালো লেগেছে আমার। এছাড়া একটা উক্তি আমার ভালো লেগেছে খুব। "ইশ্বরের ঘরে রঙ দেয়ার লোক আছে, গরীব মানুষের সেবা করার কেউ নেই" একটা ধাঁধা দিচ্ছি আপনাদের, দেখুন ভাঙাতে পারেন কিনা। "পাউরুটি খাই কিন্তু রুটি খাইনা, কারণ হিন্দিতে ভয় পাই" যদি ভাঙাতে পারেন তাহলে বইটি আপনার জন্য অবশ্যপাঠ্য :p
Thriller
1
জাফর ইকবাল স্যারের লেখা এক অমর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অসাধারণ কিশোর উপন্যাস । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বহু সংখ্যক গ্রন্থ বহুবার রচিত হয়েছে । কিন্তু যুদ্ধে শিশু - কিশোরদের নির্ভয় অংশগ্রহণের ব্যাপারটি খুব কম গ্রন্থেই লেখা আছে । মুক্তিযুদ্ধে শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণ এবং তাদের অবদান স্বতন্ত্র উপন্যাস দিয়ে সবার সামনে ছবির মত তুলে ধরেছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার । ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের কিশোররা মুক্তিযুদ্ধে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তা এখানে তুলে ধরা হয়েছে । দেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য তারাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। লুকিয়ে লুকিয়ে মুক্তিবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করে, পাকিস্তানি ঘাঁটিকে উচ্ছেদ করার জন্য ম্যাপ একে দেয়। বয়সে ছোট হবার কারনে হানাদার বাহিনী তাদেরকে সন্দেহ করে না। কিন্তু একসময় তা প্রকাশ পেয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ প্রচণ্ড আকার ধারন করলে সবাই পালিয়ে যায়। কিন্তু রাশেদ থেকে যায়। এক সময় রাজাকারদের হাতে সে মারা যায়। রাশেদ ১৯৭১সালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের এক দুরন্ত - নির্ভীক কিশোর চরিত্র । তার বাবা কিছুটা পাগল গোছের মানুষ । তাই ছেলের পড়াশুনার কোন খবর রাখেন না , এমনকি ছেলের ভাল একটা নাম ও রাখেননি । বরং ছেলের সাথে রাজনীতির গল্প করেন । ভাল কোন নাম না থাকায় ক্লাসের শিক্ষক আর তার বন্ধুরা মিলে তার সুন্দর একটা নাম দিয়ে দেন । রাশেদ হাসান । তখন থেকে বন্ধুরা ওকে ডাকে রাশেদ । যে বয়সে সবাই বাবা মায়ের সাথে ঘরে বসে দিন কাটায় সে বয়সে রাশেদ রাত- বিরাতে মিছিলে ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় , সে বয়সে রাশেদ মুক্তিবাহিনীর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে , জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিবাহিনী কে সহযোগীতা করে । রাশেদ কে দেখে উজ্জীবিত হয় তার বন্ধুরাও । তারাও এগিয়ে আসে । গল্পের দুটি প্রাণবন্ত চরিত্র অরু আপা আর শফিক ভাই । শফিক ভাই রাশেদ আর তার বন্ধু ইবু সহ অন্য সবার প্রেরণা । শফিক ভাই অপারেশনে গিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে ধরা পড়লে রাশেদের নেতৃত্বে তার বন্ধুরা দুঃসাহসিক এক অভিযানের মাধ্যমে মুক্ত করে তাকে । রাশেদের এমন বেশ কিছু দুঃসাহসের কিছু জীবন্ত চিত্র যেন পাওয়া যায় উপন্যাসটির পাতায় পাতায় । অবশেষে রাজাকার আজরফ আলীর হাতে শহীদ হয় নির্ভীক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ হাসান । তবুও মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সে একটিবার পশ্চিম পাকিস্তানের আনুগত্য স্বীকার করে নেয় নি । বীরের মত জীবন দিয়েছে তবু মাথা নত করেনি । এমনি এক নির্ভীক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়বিদারক প্রায় জীবন্ত এক উপাখ্যান "আমার বন্ধু রাশেদ" । রাশেদের মত কত কত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তার হিসাব আমাদের হাতে নেই। কিন্ত জাফর ইকবাল স্যার দেখিয়েছেন রাশেদরা ছিল এবং তারা তাদের অবদান রেখে গেছে।
War
5
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই: প্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন লেখক:আইজাক আসিমভ , অনুবাদক: নাজমুছ ছাকিব মুল্য: 546 ধরন: অনুবাদ সায়েন্স ফিকশন প্রকাশনা: সন্দেশ প্রকৃত মানব সভ্যতার শুরু আজ থেকে দশ হাজার বছর আগে। আর মাত্র দশ হাজার বছর এর মধ্যে মানব সভ্যতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। ভাবুনতো আজ থেকে লক্ষ হাজার বছর পরে মানব সভ্যতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এরই এক ক্ষুদ্র সংস্করণ তুলে ধরছেন আইজাক আসিমভ তার ফাউন্ডেশন সিরিজে। গ্র্যান্ড মাস্টার অব দ্য সায়েন্স ফিকশনের অমর সৃষ্টি এ ফাউন্ডেশন সিরিজ। যদি এই সিরিজের সিকুয়েন্স হিসাব করা হয় তবে প্রথম নামটা উঠে আসবে প্রিলিউড টু ফাউন্ডেশনের। যাই হোক এর রিভিউ: লক্ষ বছর পরের ঘটনা। মানবজাতি ছড়িয়ে পরেছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। হ্যারি সেলডন, হ্যালিকন নামক একটি গ্রহের গণিতবিদ। হ্যারি সেলডন সে সময়ের মানুষ যখন মহাবিশ্ব জুড়ে শুধু শান্তি আর শান্তি। সবচেয়ে উন্নত গ্রহ ট্রানটরে গণিতের তার নিজের আবিষ্কার একটি প্রবন্ধ পাঠ করতে আসেন হ্যারি সেলডন, তার গবেষণা পাঠ করার পর সেই সমাবেশে সাময়িক হইচই হলেও সবকিছু ধীরে ধীরে নীরব হয়ে যায়। কিন্তু আসলেই কী সব চুকে বুকে গেছে? না, কাহিনী শুরু হয় সেখানেই। গোটা মহাবিশ্বের সম্রাট, প্রভাবশালী নেতা সেলডনকে কব্জা করতে তার পিছনে লেগে যায়। পালিয়ে বাচার জন্য সেলডনকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটতে হয়। সেলডন কী পারবেন সবার চোখ এড়িয়ে তার গবেষণা শেষ করতে? আচ্ছা সাধারণ গণিত কী করে এত মুল্যবান হয়ে উঠল? জানার জন্য এই বই পড়ুন, সময়কে উপভোগ করুন পাঠপ্রতিক্রিয়া: যদি আপনি সায়েন্স ফিকশন পাঠক হোন আর ফাউন্ডেশন সিরিজ না পড়ে থাকেন, তাহলে আপনার জীবন বৃথা। সায়েন্স ফিকশন কিভাবে আর্ট হতে পারে, সায়েন্স ফিকশন কিভাবে হৃদয়কে এতটা মোহিত করতে তা এই সিরিজ না পড়লে বুঝা দু:সাধ্য। আমার কাছে অনুবাদ অনেক প্রাঞ্জল মনে হয়েছে। এর রেটিং আমার কাছে ৫ এ ৫ নয়। এর রেটিং ৫
Science-Fiction
4
ক্রীতদাসের হাসি বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত একটি উপন্যাস। ১৯৬২ সালে তিনি এ উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ করলো। এ সময় সব ধরনের-বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এ উপন্যাস রচিত হয়। এ উপন্যাসের মূল চরিত্র তাতারী। গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায় স্বৈরাচারী শাসক। এই চেতনাকে দমন করার জন্যই আবার নেমে আসে সামরিক শাসন তবুও লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ থাকেনি। রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী। খলিফা হারুনর রশীদ কোনো কিছুর বিনিময়েই তাতারীর হাসি শুনতে পান না। খলিফার নির্দেশে হাসার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেছে তাতারী।
Fiction
0
রাষ্ট্রসংগ্রাম ও পঞ্চাশের মন্বন্তর ড.শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রচিত একটি বই। লেখক ১২টি প্রবন্ধ ও ৪টি পরিশিষ্ট দিয়ে বইখানা লিখেছেন।এই বইটিতে অনেক না জানা কথা আছে। বড় কথা হল আমরা ২টি মন্বন্তর এর কথা জানি।একটি ছিয়াত্তুরের অন্যটি পঞ্চাশের। এই দু’য়ের মাঝে ১৭৪বছর। ১৯৪২-৪৩ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় সময়।সেই সাথে ১৯৩৫ কংগ্রেসশাসিত ৭টি প্রদেশ হয়। লেখক নিজে সেই সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ জননায়ক। এই বইটির সময় কাল লেখকের চোখে দেখা সময়।এটিকে ইতিহাসের সাক্ষী বললেও ভুল হবে না। বাংলা ১৩৫০ এ এই বইখানা প্রকাশ হয়। সেই সময়ের অনেক ইতিহাস অনেক তথ্য উপাত্ত আছে এই বইটিতে। ১৯৪২ এর ভারত ছাড় আন্দোলন থেকে সেই সময়কার অনেক ঘটনাই উঠে এসেছে এই বইতিতে।সেই সময়ই প্রথম অগাস্ট আন্দোলনের শুরু, যার অন্যতম নায়ক লেখক নিজে।পরে তিনি নিজে সেই সময়কার বঙ্গেরদেশের শাসনকর্তাকে চিঠিও লিখেন।নানা কারনে এই বইটি মূল্যবান।এর আরও অধিকতর কারন হচ্ছে যখন ১৯৩৫ এ সাতটি প্রদেশ হল তখন সব মন্ত্রীরা কারাবন্ধ।সেই সময় লেখকের অনেক অবদাঞ্ছিল।সবচেয়ে বড় কথা বিরোধি পক্ষও তাকে সম্মান করত তাঁর বাংলা ও ইংজেরিতে বক্তব্য শুনে।এই বইতিতে দুর্ভিক্ষের সংজ্ঞা নিয়েও যে আলোচনা আছে সেটিও প্রকাশ পেয়েছে।১৯৪৩ এ লেখক নিজে দুর্ভিক্ষ নিয়ে বক্তব্য দেন এবং এই বইটিতে ক্ষমতা ও ক্ষমতার পরিবর্তনও দেখা যায়।১৯৪৪ সালের পর নানা আইন হয় এবং নানা দল ও জায়গাও ভাগ হয়। এইসকল নানা তথ্য দিয়ে লেখক বইটি সাজিয়েছেন। এটি ইতিহাস জানার জন্য অনেক সহায়ক একটি বই।লেখক তাঁর নিপুন হাতে বইটি রচনা করেছেন।
War
5
তারেক নূরুল হাসান -------------------- একদম পলকা একটা বই। বড় বড় হরফে ছাপা সবমিলিয়ে মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠা। তার নিজস্ব ওজনের সিংহভাগই হচ্ছে শক্ত বাঁধাইয়ের কল্যাণে। আমার খাবার টেবলের পাশে রাখা ওজন মাপার মেশিনটায় তুললে কাঁটা খুব একটা নড়ে চড়ে না, দেখেছি। কিন্তু পড়তে গিয়ে যতবারই বুকের ওপর রেখেছি, মনে হয়েছে, এর চেয়ে ওজনদার বা ভারী কিছু বোধহয় আর নেই! বইয়ের নাম, একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। মেজর হামিদুল হোসেন তারেক বীর বিক্রমের লেখা বই। একাত্তর সালে লেখক নিজেও কমবয়েসী ছিলেন, হায়ার সেকেন্ডারীতে পড়তেন। তবু সেই সময়েই তিনি যুদ্ধে চলে যান; এবং দেশের নানা জায়গায় তিনি সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন। এই বইটি অবশ্য মেজর হামিদুল হোসেনের নিজের গল্প নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি বেশ কয়েকজন কিশোরের সংস্পর্শে আসেন যারা নানা ভাবে যুদ্ধের ময়দানে তাঁকে সহযোগীতা করেছিলো। সেইসব কিশোরদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেই এই বই। সাতটি আলাদা অনুচ্ছেদে সাতজন কিশোর কিশোরীর কথা আছে এখানে। রমজান আলী, শশীলাল চর্মকার, নুরু নাপিত, পুতুল, আজিজ মন্ডল, বারেক ও তোতা। মেজর হামিদুল হোসেন নিয়মিত সাহিত্যিক নন। এই বইটির ভাষায় তাই তেমন কোন মাধুর্য্য নেই। একদম সোজা সাপ্টা লেখা। লেখকের বাংলাও খুব যে ভাল নয়, সেটাও স্পষ্ট হয় কিছু কিছু শব্দের ব্যবহার বা বাক্যের গঠন দেখলেই। কিন্তু, এটা এমনই একটা বই, ভাষার সৌন্দর্য্য যেখানে খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না। এই বইয়ের ভাষার উৎপত্তি কলমের মাথা থেকে নয় বলেই বোধ হয়। এটার উৎপত্তি ভিন্ন কোন জায়গা থেকে, বুকের খুব গভীরের, প্রাণের কাছাকাছি কোন চোরাকুঠুরি থেকে। শশীলাল চর্মকার বা নূর মোহাম্মদ নাপিত, যারা পরিবার হারিয়ে এখানে ওখানে ঠোকর খাচ্ছিলো, পরে লেখকের দলের সাথে জড়িয়ে পড়ে এরা, নানা অভিযান সফল করে তুলতে বিস্তর ভূমিকা রাখে। পুতুল নামে এক কিশোরীর কথা আছে, যে পাকবাহিনীর গায়ে গ্রেনেড ছুঁড়ে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো কজন মুক্তিযোদ্ধাকে। এরকম এক এক করে প্রত্যেকের অসীম সাহসিকতার কথা বলা এই বইয়ে। রমজান আলী নামে এক কিশোরের কথা বলেছেন লেখক, রাজাকার সন্দেহে লেখকের দলের মুক্তিযোদ্ধারা যাকে ধরে এনেছিলো। পরে আসল ঘটনা জানা যায়। বিহারীরা ওর পুরো পরিবারকে মেরে ঘরদোর জালিয়ে দেয়। পরে যার আশ্রয়ে যায় রমজান, তার দোকানে এক রাজাকার কমান্ডারের আনা গোনা ছিলো, ওখান থেকেই রমজানকে নিয়ে যায় সে। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এসে পুর দস্তুর যোদ্ধা বনে যায় সে। শত্রুপক্ষের খবর নিয়ে আসে, সরাসরি যুদ্ধেও অংশ নেয়। এবং একটা অপারেশনে গিয়ে রমজান পাকসেনাদের পাতানো মাইনে পা দিয়ে ফেলে, তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। শহীদ হয় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা রমজান। বইয়ের প্রতিটি কিশোর মুক্তিযোদ্ধার কথা পড়তে গিয়ে গলা বুজে আসে। কী ভাগ্য আমাদের যে শুধু কষ্ট করে আমাদের একটু জন্মাতে হয়েছে, সাথে সাথে বিনেপয়সায় একটা দেশ পেয়ে গেছি আমরা। অথচ এই দেশটাকে আনবার জন্যে কত কত মানুষের রক্ত অশ্রু আর ত্যাগ যে জড়িয়ে আছে, তার কিছুই আমরা জানি না! এমাজন ডট কমে দেখলাম হ্যারি পটারের নতুন বইটার দাম বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে নয়শো টাকা। আর একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা বইটির মূল্য ঠিক তার ষোল ভাগের একভাগ, মাত্র ষাট টাকা। উঁহু, যারা ভাবছেন হ্যারিকে পছন্দ করি না আমি, ভুল ভাবছেন। রূপকথার আমি আজীবন ভক্ত, হ্যারি ও তার বন্ধুরা আমার কম প্রিয় নয়। আজকের শিশুরা হ্যারি পটার পড়তে পড়তে বড় হোক, এ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। আমি শুধু চাইবো, হ্যারি পটারের সাথে সাথে আপনারা আপনাদের সন্তানের হাতে একটি করে একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা বইটিও তুলে দিন। রূপকথার জাদুকর কিশোরকে স্বপ্নের নায়ক ভেবে নিক নতুন প্রজন্ম, সমস্যা নেই, কিন্তু সেই সাথে জীবন যুদ্ধের যারা সত্যিকারের নায়ক, তাদের যেন জানতে পারে তারা, চিনতে পারে; তাতে যেন ভুল না হয় আমাদের।
War
5
মেয়েটির নাম রূপা। সে অনেক কিছুই আগে ভাগে বুঝতে পারে। প্রকৃতি তাকে এই বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছে। তার বাবা-মা'র ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। যদিও রূপার বাবা হারুন সাহেব তার স্ত্রীকে এখনও ভয়ানক ভাবে ভালবাসেন। হঠাৎ তাদের বাসায় বিদেশ থেকে রাশেদ নামের এক ছেলে আসে। প্রকৃতি তাদের দুজনের ভাগ্য নিয়ে অপূর্ব কিছু খেলা করে। প্রকৃতির রহস্যময়তাকে ঘিরে লেখা সুন্দর একটি বই "রূপা"।
Fiction
0
‘দ্য ডুমসডে কী’ জেমস রোলিন্স এর লেখা একটি বেস্টসেলার উপন্যাস । লেখক জেমস রোলিন্স একজন বিশ্ববিখ্যাত জনপ্রিয় লেখক বর্তমান সময়ের । তিনি মুলত এ্যাডভেঞ্চার ও থ্রিলারধর্মী উপন্যাস বেশী লেখালেখি করেন এবং এর জন্যই ব্যপকভাবে জনপ্রিয় । তিনি লেখক হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করার পুর্বে ছিলেন একজন পশু চিকিৎসক । তিনি প্রায় ১০ বছর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার পরে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন এবং তার পেশা থেকে অবসর নিয়ে নেন । তিনি এ্যাডভেঞ্চার বই লেখালেখি করেন এবং বাস্তব জীবনেও তিনি বেশ এ্যাডভেঞ্চার প্রেমী মানুষ । তিনি একজন সার্টিফিকেট প্রাপ্ত স্কুবা ডাইভার , তিনি তার লেখা উপন্যাসে পানির নিচের যা বর্ননা দেন তা নেহাতই তার কল্পনা থেকে নেওয়া নয় , তিনি তার বই লেখার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান এ অভিযান চালিয়ে সেই স্থান নিয়ে বাস্তবধর্মী স্থান নির্বাচন করে সেই উপন্যাস লিখেন । তার বই প্রায় ৪০ টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে । দ্য ডুমসডে কী বইটি অনুবাদ করেছেন রাফসান রেজা রিয়াদ ও মারুফ হোসেন । বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে । বইটি প্রকাশিত হয় আদী প্রকাশণী থেকে এবং এর প্রকাশক নাফিসা বেগম । প্রচ্ছদ করেছেন আদনান আহমেদ রিজন । অসাধারন রোমাঞ্চকর একটি বই এই দ্য ডুমসডে কী । বইটি তে লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে একটি কাহিনী কে অসাধারন করে তুলেছেন । ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ইউ এস এর প্রায় এক তৃতিয়াংশ মৌমাছি গায়েব হয়ে যায় । ইউরোপ ও কানাডায় এর পরিমান আরো বেশী । এই অবস্থাকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল কলোনি কোলাপ্স ডিজ অর্ডার নামে । এই বিষয় এর ব্যাপারেও জানা যাবে এই বইটি পড়লে ।
Thriller
1
#বই_পর্যালোচনা নাম : থ্রি এ এম (3:00 AM) লেখক : নিক পিরোগ অনুবাদ : সালমান হক। প্রচ্ছদ : ডিলান (কাহিনী এবং নামের সাথে একদম খাইখাই একটা প্রচ্ছদ) *নিক পিরোগ আমেরিকান ঔপন্যাসিক। থ্রি এ এম তার ব্যতিক্রম একটি রচনা। *সালমান হক বর্তমানে ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটিতে অণুজীববিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নরত। নিক পিরোগের থ্রি এ এম তার প্রথম অনুবাদগ্রন্থ। *হেনরি বিনস। প্রতি চব্বিশ ঘন্টায় তার জন্যে শুধু একঘণ্টা বরাদ্দ। এই একঘণ্টা তিনি জেগে থাকেন। মাত্র ষাট মিনিট। তিনি বিনস নামক রোগে আক্রান্ত। এক-দুই মিনিটে গোসল, পাঁচ-সাত মিনিট গেম অব থ্রোন্স দেখা। এই একঘণ্টার মধ্যে তিনি আবার প্রতিদিন বাইরেও বের হন। হেনরির জীবনে রাত তিনটা থেকে চারটা আলো, উজ্জ্বল হলেও পৃথিবী তখন চুপচাপ, সাড়াশব্দহীন, অন্ধকার। এভাবেই তার জীবন চলছিল। হঠাৎ এক রাতে পাল্টেযায় সব কিছু। পাশের বাড়ি থেকে ভেসে এলো ক্যালি ফ্রেইগ নামের এক মহিলা প্রতিবেশীর আর্তচিৎকার। হেনরি বিনস দেখল দরজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে সম্ভাব্য আক্রমণকারী। যে আততায়ী কোন সাধারণ লোক নয় স্বয়ং আমেরিকারর প্রেসিডেন্ট। হেনরি খুঁজে বের করতে চাইলে এই রহস্য। মেরিল্যান্ড এর ওয়েবসাইট থেকে ক্যালি ফ্রেইগ নামের দুজন হারিয়ে যাওয়া মানুষের ছবি খুঁজে পায়। দম বন্ধ হয়ে আসা একের পর এক সুত্র ধরে অসম্ভব এই কাজে হেনরি এগিয়ে চলে। একসময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্রেফতার হন। তারপর........ তারপর জানতে পড়ুন নিক পিরোগের থ্রি এ এম (3:00 AM) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোলারকোস্টার গতির এবং টুইস্টে ভরপুর এই থ্রিলারটি আপনাকে জমিয়ে রাখবে অপরিমিত ঘোরে।
Thriller
1
আমি কখনওই অপরিচিত লেখক-লেখিকাদের বই পড়ি না। কিন্তু এই বইটা হঠাৎ চোখে পড়ল এবং কভারটা খুব ভাল লাগল দেখে বইটা কিনেই ফেললাম। এরপর বইটা যখন পড়লাম, তখন পড়েও খুব ভাল লাগল। সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এই বই পড়ার সময়টুকু জুড়ে অসাধারণ একটা ভাল লাগা কাজ করেছে। বইটা নিসন্দেহে এক নিশ্বাসে পড়ার মত একটা উপন্যাস। আর সব শেষে এই কথা বলব ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কভার কথাটা সব ক্ষেত্রে সত্যি না।
Fiction
0
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আমরা থাকি এলিফ্যান্ট রোডে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির কলোনির ভেতরে মনীষা বিল্ডিংয়ে। মাত্র দুই দিন আগে এই বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছি ইপিআরটিসির লাল রঙের কোচ নিয়ে আলবদরের সদস্যরা ঢুকেছে কলোনির ভেতরে। ১৪ ডিসেম্বরের ভোর ছিল সেদিন। সকাল সাড়ে আটটা কি নয়টা হবে। তারা তুলে নিয়ে যায় সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে কর্মরত বিজ্ঞানী ড. আমিনউদ্দিন ও ড. সিদ্দিক আহমদকে। মাঝে এক দিন পার হয়েছে। এলিফ্যান্ট রোড থেকে আনন্দ উল্লাসের ধ্বনি ভেসে আসছে। চারদিক থেকে খবর আসছে যে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। সকাল ১০টা অথবা ১১টা হবে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে চারদিক। শুনতে পাচ্ছি রেসকোর্স ময়দানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। প্রবল উত্তেজনা অনুভব করি। যাব কি রেসকোর্স ময়দানে? আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের একজন হতে? ভাবলাম, যাওয়াই উচিত। যেমন গিয়েছিলাম ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে। সেদিন এলিফ্যান্ট রোড পুরোটা হেঁটে যেতে হয়েছিল। জনস্রোতের ভেতর রিকশায় ওঠারও সুযোগ ছিল না। আজও হয়তো সেভাবেই যেতে হবে। ঠিক আছে, যাবই। ভাবতে ভাবতে ঘরের দু-চারটা কাজ শেষ করে তৈরি হতে শুরু করি। বের হওয়ার আগেই বাড়িতে আসেন আমার খালাতো ভাই আবু ইউসুফ খান। দেখেই চমকে উঠি। শৈশব থেকে দেখা ইউসুফ ভাই তিনি নন। তাঁকে একজন অপরিচিত মানুষ মনে হলো। একমুখ দাড়ি, পিঠে রাইফেল, পরনে মুক্তিযুদ্ধের ইউনিফর্ম। এক রঙের খাকি মোটা কাপড়ের প্যান্ট-শার্ট। যুদ্ধ শুরুর আগে তিনি পাকিস্তান এয়ারফোর্সে চাকরির সূত্রে ডেপুটেশনে সৌদি আরব ছিলেন। যুদ্ধের নয় মাসে তাঁর আর কোনো খবর পাইনি। আজ তিনি আমার সামনে মুক্তিযুদ্ধের এক সাহসী যোদ্ধা। তাঁকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলাম। আপনি যুদ্ধ করেছেন ইউসুফ ভাই? বললেন, সৌদি আরব থেকে লন্ডন হয়ে পালিয়ে আসি ভারতে। তারপর ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করি। তাহের ওই সেক্টরের কমান্ডার ছিল মিত্রবাহিনীর সঙ্গে আমরাই ঢাকায় ঢুকেছি। আমাকে যেতে হবে। তোমার বাসায় আর বসব না। দ্রুতকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, অন্যরা কেমন আছেন? তাহের ভাই, আনোয়ার, বেলাল, ডলি, জলি— তিনি একমুহূর্ত থেমে বললেন, কামালপুর যুদ্ধে তাহের আহত হয়েছে। হাঁটুর কাছ থেকে বাঁ পা উড়ে গেছে। ও তুরা হাসপাতালে আছে। ওর খুব সাহস। সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। আমার চোখে পানি দেখে বললেন, কেঁদো না। আজ আমাদের আনন্দের দিন। দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার গৌরবে দুঃখ ভোলো। ইউসুফ ভাই চলে যান। আমি মন খারাপ করে বসে থাকি। শহীদ, মৃত্যু, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষয়ক্ষতির তাণ্ডব, স্বজনহারাদের বেদনা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ—এসবের বিনিময়ে স্বাধীনতা। আজীবন বুকের ভেতর লালন করতে হবে এর সবটুকু। পরক্ষণে চমকে উঠি। বুঝতে পারি, পাশাপাশি ক্রোধ জমা হয়ে থাকবে রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে, যারা মাত্র এক দিন আগে ঢুকেছে এই কলোনির ভেতরে। কোথায় নিয়ে গেল ওরা দুজন বিজ্ঞানীকে? সেই মুহূর্তে এর বেশি কিছু ভাবার সাধ্য ছিল না। আধা ঘণ্টার মধ্যে আসেন আমার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল হাফিজ। না, তিনি ইউসুফ ভাইয়ের মতো পিঠে রাইফেল নিয়ে আসেননি। বললেন, আমি রণক্ষেত্রে সাংবাদিকতা করেছি। বিভিন্ন রণক্ষেত্রে ঘুরেছি। একটু আগে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ঢাকায় এসেছি। আমরাই প্রথম দল। ভাবলাম, তোমাকে দেখে যাই। আর একটি সত্যি ঘটনার কথা বলব। তুমি এই ঘটনা নিয়ে গল্প লিখবে। আমি তাঁর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকি। তিনি বললেন, যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামের ঘটনা। পাশের ঘরের দুটি ছেলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় একজন মাকে সালাম করে যায়। তিনি তাদের জন্য দোয়া করেন। কয়েক মাস পরে মুক্তিবাহিনীর দল পাকিস্তানি সেনাদের একটি ক্যাম্প আক্রমণ করে। ওই বাহিনীতে ছেলে দুজন ছিল। ওদের গোলাবারুদ কম থাকায় ওরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে পিছু হটে। পালাতে থাকে ওরা। খেয়াল করে পাকিস্তানি সেনারা ওদের ধরার জন্য তাড়া করে আসছে। ওরা সেই মায়ের ঘরে আশ্রয় নেয়। বলে, ‘চাচি, আমাদের বাঁচান।’ এর মধ্যে সেনারা এসে বিভিন্ন ঘরের দরজায় লাথি দিতে থাকে। সেই মা বুঝতে পারেন সমূহ বিপদ। তিনি মনে-প্রাণে স্বাধীনতা চান। তাই ঠিক করেন, যোদ্ধা ছেলেদের বাঁচাতে হবে। সেনারা তাঁর দরজায় লাথি দিলে তিনি নিজের ছেলেটিকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেন। তারা তাঁর বসতির উঠোনে ছেলেটিকে গুলি করে চলে যায়। দুজন মানুষের কাছ থেকে যুদ্ধের দুই রকম ঘটনা শোনার পর সেদিন আমি আর বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। বিমূঢ় হয়ে বসে ছিলাম। স্বাধীনতা এমনই কঠিন এবং মর্যাদার অর্জন। আমার দুই চোখ ভরে পানি আসে। নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়। ঘটনাটি আমি অসংখ্যবার ভেবেছি। কেমন করে একজন মা এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটালেন স্বাধীনতা লাভের জন্য! এক অলৌকিক মানুষ মনে হয় সেই মাকে। তিনি আমার প্রাণের অচিন পাখি হয়ে ওঠেন। ঘটনাটি ভেবে আমার শরীর হিম হয়ে গেল। আমি কল্পনায় পাখির ডানা ঝাপটানো টের পেতাম। তারপর নিজের মুখোমুখি হয়ে নিজেকে তৈরি করেছি। নিজেকে বলেছি, লিখতেই হবে। স্বাধীনতার জন্য রণক্ষেত্রে জীবন দেওয়ার পাশাপাশি এই ঘটনা একই সমান্তরালে অবস্থান করে। ইতিহাসের এই সত্য লিখিত না হলে পরবর্তী প্রজন্ম হারাবে যুদ্ধের গৌরবগাথা। আমি এভাবে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করি। কিন্তু বললেই লেখা হয় না। মাস ছয়েক পেরিয়ে যায়। তখন আমি বাংলা একাডেমীতে চাকরি করি। একদিন আমার অফিসে আসেন দু-তিনজন তরুণ। তাঁদের নাম এখন আর মনে নেই। ওঁরা বললেন, আমরা সমকালীন টেরেডাকটিল নামের একটি পত্রিকা বের করব। আপনি গল্প দেবেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। গল্প তো আমার মাথার মধ্যে জমা হয়ে আছে। ছোট আকারের একটি গল্প লিখি। গল্পের নাম কী রেখেছিলাম সেটা আর মনে নেই। সমকালীন টেরেডাকটিল যাঁরা প্রকাশ করেছিলেন, তাঁরা পত্রিকার কপি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন। প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কাছ থেকে জানতে পারি, তিনি আমার গল্পটি সিনেমা করা যায় বলে ভেবেছিলেন। এই খবরে আমি প্রবলভাবে উৎসাহিত হই। গল্পটি উপন্যাস করার জন্য লিখতে শুরু করি। সেই সময় বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা উত্তরাধিকার সম্পাদনা করতেন কবি রফিক আজাদ। তিনি বললেন, আপনার ছোট উপন্যাসটি আমাকে দিন। উত্তরাধিকার-এ ছাপব। আবার আমার খুশি হওয়ার পালা। মনোযোগ দিয়ে লেখা শেষ করে রফিক আজাদকে দিই। তিনি লেখা প্রেসে পাঠান। ছাপার কাজ শুরু হয়। তখন লেটার প্রেসে ছাপার কাজ হতো। আমি যত্ন করে প্রুফ দেখি। একদিন একাডেমীর মহাপরিচালক রফিক আজাদকে ডাকলেন। উত্তরাধিকার-এর বর্তমান সংখ্যায় কী লেখা যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলেন। সূচি দেখে তিনি রাগতস্বরে বললেন, সেলিনা বেগমের লেখা উপন্যাস? এ লেখা যাবে না। রফিক আজাদ বললেন, পত্রিকার এই অংশ তো ছাপা হয়ে গেছে। তিনি আরও রেগে বললেন, ছাপা হয়েছে তো কী হয়েছে? বাদ দিতে বলেছি, বাদ দেবেন। শেষ পর্যন্ত রফিক আজাদকে আমার উপন্যাস বাদ দিতে হলো। আমরা যারা পত্রিকা বিভাগে কাজ করতাম, তারা সবাই শুকনো মুখে ভাবলাম, এই উপন্যাসের সের দরে বিক্রি করার ব্যবস্থা হলো। কিন্তু আমি দমলাম না। একটি পত্রিকায় ছাপা না হলো তো কী হলো, আরেকটি পত্রিকায় হতে পারে। আমি সাপ্তাহিক বিচিত্রা অফিসে গেলাম। সম্পাদক শাহাদত চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলো। সব শুনে তিনি বললেন, আপনার উপন্যাস আমি ছাপব। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছাপা হলো হাঙর নদী গ্রেনেড। ছোট আকারের উপন্যাসটি বই হিসেবে প্রকাশ করে মুক্তধারা। পরবর্তী মুদ্রণের সময় উপন্যাসটি পরিমার্জনা করে আবার লিখি। এবার আকারে খানিক বড় হয়। প্রতিবারই মনে হয় কিছু থেকে গেল। আবার হয়তো লিখতে হবে। ১৯৮৭ সালে উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন আবেদীন কাদের। প্রকাশ করে বাংলা একাডেমী। ইংরেজি নাম The Shark, The River and The Grenade. ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের কারণে বইটি দেশের সীমানা অতিক্রম করে। ২০০৫ সালে আমেরিকার শিকাগোতে ডকটন কম্যুনিটি কলেজে চার সেমিস্টার পড়িয়েছিলেন অধ্যাপক এমিলি ব্লক। তিনি বইটি নেট থেকে নামিয়েছিলেন। প্যারিসের সরবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাসকাল জিঙ্কও বইটি নেট থেকে নামিয়েছেন। তিনি ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় সাউথ এশিয়ার সাহিত্য। এভাবে এই বই নানা দেশে ভ্রমণ করেছে। ভারতের কেরালা রাজ্যে মালয়ালাম ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তার পরও লেখকের তৃষ্ণার বাইরে যেতে পারেনি বইটি। প্রথম প্রকাশের ৩৮ বছর পরে আমি আবার এই উপন্যাসের পরিমার্জনা করছি। জানি না লেখকের নিজের ভেতর থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ কথা কি না। উপন্যাস লেখার নেপথ্য কথা প্রতিটি উপন্যাসের জন্যই ভিন্ন। অন্তত আমার ক্ষেত্রে এটি সত্যি। এই উপন্যাসের খুদে পাঠক আট বছর বয়সী সুমাইয়া বুশরা ভোর। উপন্যাসটি পড়ার পরে ও আমাকে প্রশ্ন করেছিল, রইসের খবর কোথায়? আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভেবেছিলাম, শহীদদের খবর খোঁজার জন্য আমাকে কি আরেকবার উপন্যাসটি লিখতে হবে? ততটুকু আয়ু কি পাব?
War
5
"মোরাল অব দ্য স্টোরি" বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা: ‘মােরাল অব দ্য স্টোরি’ আপনাকে বদলে দেবে। এই বদলটা হওয়া চাই ইতিবাচক। নিজের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন, জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনের সুখ, আশা এবং বিশ্বাস খুঁজে পাওয়ার একটি হাতিয়ার হচ্ছে ‘মােরাল অব দ্য স্টোরি'। এটি একটি নীতি গল্প বা আত্মউন্নয়নমূলক বই। গল্পের মাধ্যমে যে শিক্ষা দেয়া হয় তা সহজে মনে থাকে। গল্পের ছলে সহজভাবে বলার চেষ্টা করা হয়েছে আমাদের জীবনেরই গল্প। সব মানুষের জন্য উপযােগী একটি বই হচ্ছে ‘মােরাল অব দ্য স্টোরি’ কারণ প্রতিটি মানুষের বদলানােটাই হচ্ছে জীবনের ধ্রুব সত্য।
Motivational
6
হুমায়ুন আহমেদের শুভ্র সিরিজির দ্বিতীয় উপন্যাস। দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাস যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই ‘রূপালী দ্বীপ’ উপন্যাসের শুরু। প্রস্তাবনা অংশে লেখক হুমায়ূন আহমেদ বলছেন, ‘চার বছর আগে জানুয়ারি মাসের এক প্রচণ্ড শীতের রাতে একুশ বছর বয়েসী একদল ছেলেমেয়ে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে বসেছিলাম। উপন্যাসের নাম ‘দারুচিনি দ্বীপ।’ সেই উপন্যাসে একদল ছেলেমেয়ে ঠিক করল, তারা দল বেঁধে বেড়াতে যাবে প্রবাল দ্বীফ সেন্ট মার্টিনে। সেখানে কাটাবে পূর্ণচন্দ্রের একটি অপূর্ব রাত। আমি উপন্যাসের শেষ করব জোছনার সুন্দর একটা বর্ণনা দিয়ে। পাত্র-পাত্রীদের আমি কিন্তু প্রবাল দ্বীপে নিতে পারিনি। তার আগেই উপন্যাস শেষ করতে হয়েছে। কারণ আমি নিজে তখনো দ্বীপে যাইনি। স্বপ্নের সেই দ্বীপ কেমন আমি জানতাম না। এখন জানি সেই অপূর্ব দ্বীপে আমি নিজে এক টুকরো জমি কিনে কাঠের একটা ছোট্ট ঘর বানিয়েছি। তার নাম দিয়েছি- ‘সমুদ্র বিলাস।’ ফিনাক ফোটা জোছনায় আমি দেখেছি জ্বলন্ত সমুদ্র-ফেনা। আহা, কী দৃশ্য! সেই প্রায় পরাবাস্তব ছবি দেখতে দেখতে মনে হয়েছে, ঐ তরুণ-তরুণীদের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাই না সমুদ্রের কাছে।’ দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাসে কুশীলবদের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাবার উদ্দেশ্যে ট্রেনে চড়ার মাধ্যমে উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটে। যেখান থেকে দারুচিনি দ্বীপ সমাপ্ত হয় সেখান থেকেই শুরু হয় রূপালী দ্বীপ। জরি নামের যে চরিত্র বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছিল, তার হবু জামাই পরে তাদের যাত্রায় ঝামেলা করেছিল। চট্টগ্রাম নামতেই তাদের পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়। বিয়ের আসর থেকে পাত্রীকে পালাতে প্ররোচিত করা, সাথে ভাগিয়ে নিয়ে আসা (অপহরণ), এবং স্বর্ণালংকার সংক্রান্ত মামলা করেছিল সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা তরুণ তরুণীদের বিরুদ্ধে। সবাইকে জেলে যেতে হয়েছিল। ঘটনার চক্রে জেল থেকে তারা বের হয় এবং সেন্ট মার্টিন যাবার জন্য ট্রলারে ওঠার আগ পর্যন্ত চারজন ঢাকায় ফিরে আসে। শেষমেশ তারা কয়েকজন দ্বীপে যায় এবং দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়। ”শুভ্র” র চোখের সমস্যার কারণে সে বেশিক্ষণ সৌন্দর্য দেখতে পারে না। অন্ধ হয়ে যায় একদমই।উপন্যাসটি যেখানে শেষ হয়েছে তাতে মনে হতে পারে চাইলে এই উপন্যাসের ট্রিলোজি করা যেতো, হুমায়ূনের তেমন ইচ্ছা ছিলো কি-না তা জানা আজ অসম্ভব। দুটো উপন্যাসেই জরীর প্রতি শুভ্রর টান লক্ষ্য করি। শুভ্রর পরবর্তী উপন্যাসগুলোতে জরী কিংবা অন্য বন্ধুদের আর দেখতে পাই না।
Fiction
0
এক কথায় অসাধারণ। আমি রোমান্টিক বই খুব পছন্দ করি। আর এই বইটা একদম পারফেক্ট। আবার পড়তে ইচ্ছে করছিল আর তাই অলরেডি স্টার্ট করে রিভিউ লিখতে বসছি। উপন্যাসের নায়ক ফরহাদ নামের একটি ছেলে এবং নায়িকা আসমানি নামের একটি মেয়ে। ছেলেটা খুব গরীব আর মেয়েটা মদ্ধ্যবিত্ত। সব মিলিয়ে ভালই চলছিল তাদের জীবন একটা সময় তারা বিয়ে করবে বলে ঠিক করে আর তখন থেকেই শুরু হয় ট্রাজেডি ফরহাদের চাকরী চলে যাওয়া, বাড়ি হাতছাড়া হওয়া, আসমানি অসুস্থ সব মিলিয়ে হৃদয় কাড়া একটা উপন্যাস। কষ্টটা বেশ ভালো লিখতে পারে এই লেখক । তা বলে ভাবার দরকার নেই যে সুখ চিত্রায়নে দুর্বলতা আছে তার। বরং সব কষ্টের মাঝেই বার বার সুখ ফিরে পাওয়া যায় গল্পগুলোতে।
Fiction
0
সাইন্স ফিকশন বলতে প্রথমে মাথায় আসে দূর ভবিষ্যৎ অথবা স্পেস বা টাইম ট্রাভেল অথবা এলিয়েন এর কথা। মজার বিষয় হল এর সবকটাই আলেক্সান্দর বেলায়েভ এর উভচর মানুষ এ অনুপস্থিত। এর পটভূমি ১৯২৮ (রচনা কাল) এর আর্জেন্টিনার বুয়েনাস-আইরেসের উপকূলবর্তী মহাসাগর। হঠাৎ করেই এই এলাকার মুক্তো-সন্ধানি জাহাজী আর জেলেরা দেখতে লাগলো এক অদ্ভুত ‘দরিয়ার দানো’। সে ডলফিনের পিঠে চরে ঘুরে বেরায়, শাঁখ বাজায়, কথা বলে বিশুদ্ধ স্প্যানিশ ভাষায়। ঘাগু রেড-ইন্ডিয়ান ডুবুরি বালথাযার আর লোভী ক্যাপ্টেন জুরিতা ফাঁদ পাতল দরিয়ার দানো ধরার জন্য। কাহিনীর এই পর্যায়ে আসে অসামান্য প্রতিভাবান সার্জন ডাক্তার সালভাদর। স্থানীয় রেড-ইন্ডিয়ানদের কাছে সাক্ষাৎ ভগবান, সারাতে পারেন যে কোন রোগ বা ক্ষত, এমন কি মরাকেও বাঁচিয়ে তোলেন। তারই সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ইকথিয়ান্ডর-উভচর মানুষ, যে জলে ডাঙায় একসাথে শ্বাস নিতে সক্ষম, আমাদের দরিয়ার দানো। লোভী ক্যাপ্টেন জুরিতা, বালথাযার আর তাঁর কূট বুদ্ধির ভাই ক্রিস্টো মিলে চক্রান্ত করে ইকথিয়ান্ডর কে ছিনিয়ে নেয়ার। আর ইকথিয়ান্ডর ঘটনাক্রমে ভালবেসে ফেলে বালথাযারএর পালক মেয়ে নীল নয়না গুত্তিয়েরেকে। তারপর অনেক ঘটনা। গুত্তিয়েরেকে জোর করে ধরে নিয়ে বিয়ে করে ক্যাপ্টেন জুরিতা, তাকে উদ্ধার করতে ডাঙায় উঠে আসে ইকথিয়ান্ডর। বন্দি হয় জুরিতার ফাঁদে। উদ্ধার করতে ছুটে আসেন ডাক্তার সালভাদর । বালথাযার এর মামলায় গ্রেপ্তার হয় ডাক্তার সালভাদর আর ইকথিয়ান্ডর। কিন্তু ইকথিয়ান্ডর তো সাগরের পানি ছাড়া বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। এদিকে স্থানীয় গির্জার আচার্য, বিশপ এর দাবি হত্যা করতে হবে ডাক্তার সালভাদর ও তাঁর কুকীর্তি ইকথিয়ান্ডর কারন এ হল গির্জা, ঈশ্বর ও স্বর্গের প্রতি এক ধৃষ্ট চ্যালেঞ্জ। তারপর কি হল ইকথিয়ান্ডরের, সে কি সাগরের কাছে পৌছতে পেরেছিল? ডাক্তার সালভাদরের কি ফাঁসি হল? গুত্তিয়েরে আর ইকথিয়ান্ডরের ভালবাসারই বা কি হল? জানতে হলে পরতে হবে অন্যরকম এক সাইন্স ফিকশন -উভচর মানুষ।
Science-Fiction
4
মুখোশ এমন একটা জিনিস যার আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্ত্বার সন্ধান পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু যদি একবার কোন ভাবে সেই মুখোশ খুলে ফেলা যায় তবে বেরিয়ে আসে আলাদা রূপ। কখনোবা অপ্রিয়,অবিশ্বাস্য,ভয়ঙ্কর সব রূপ। ঠিক তেমনি কিছু মুখোশ ধারীদের কাহিনী আমাদের এই বই, যার নাম "মুখোশ "। মাত্র সাতটি দিন ও রাত্রির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুখোশের কাহিনী দানা বেঁধে উঠেছে। লেখক এর মতে, মুখোশ পুরোপুরি নাটক নয় আবার উপন্যাসও নয়। বলা যেতে পারে দু'য়ের মাঝামাঝি নতুন এক টেকনিকে লেখা একটি রহস্যকাহিনী। ঘটনার সূত্রপাত বিহার প্রদেশের ছোটখাটো একটি স্টেশনের অদূরে অবস্থিত এক কুঠি বাড়িতে। কথিত আছে কুঠি বাড়িটা ইংরেজ আমলে "নীলকুঠি" ছিলো। মেজর রাজেশ্বর চৌধুরী নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার কুঠি বাড়িটা ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন।রাজেশ্বর চৌধুরী অবিবাহিত মানুষ। কুঠি বাড়িতে তার একার জীবনে সঙ্গী মাত্র চারজন। নার্স বিনতা,ভৃত্য রতন,দারোয়ান মধু সিং এবং বাবুর্চি বাইরাম খাঁ। গত এক বছর ধরে রাজেশ্বর চৌধুরী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে আছেন। কখন যে বিধাতার ডাক আসে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আর তাই তার সমস্ত টাকাকড়ি ও অন্যান্য সম্পদ উইল করে সকল আত্মীয়দের ভাগ করে দিয়েছেন। সেই উইল টাই পড়ে শোনাবার জন্য সবাইকে চিঠি দিয়ে ডেকে এনেছিলেন কুঠি বাড়িতে। সকলের আগমনের পরের দিন সকালে উইল পড়ে শোনানো হবে বলা হলেও রাতেই ঘটে ভয়ানক দুর্ঘটনা। খুন হন রাজেশ্বর চৌধুরী। ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর সেন দায়িত্ব পান এই খুনের রহস্য উদঘাটনের। কুঠি বাড়িতে উপস্থিত সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রেখে যতদিন না খুনি শনাক্ত হয় ততদিন বাড়ি থেকে কারো বের হওয়া বন্ধ করে দেন মি:সেন। এরপর শুরু হয় একেরপর এক রহস্যের জাল ছড়ানোর পালা। নীহারঞ্জন বাবুর বিখ্যাত চরিত্র কিরীটী রায়। তবে মুখোশ সম্ভবত কিরিটী সিরিজ এর বই নয়। আমার সঠিক জানা নেই। এখানে কিরীটী রায় এর দেখা না পেয়ে এমন মনে হয়েছে। অভিজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন। গোয়েন্দাকাহিনী আমার এমনি তেই খুব পছন্দ। নিশ্বাস আটকে পড়তে থাকি। পড়ার সময়ে একেরপর এক রহস্য মাথায় যে চাপ দেয় তা খুব উপভোগ্য লাগে আমার কাছে। মুখোশ ঠিক এমনি চাপ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। বইটিতে এত অসংখ্য চরিত্র,তাদের মনে রেখে এগুতে মাথা খাটাতে হয়েছে যথেষ্ট। অনেক চরিত্র, তারমানে তাদের প্রত্যেকের পেছনের গল্পও অনেক।সবচেয়ে মজার ব্যাপার প্রতিটি চরিত্রই রহস্যজনক ও ধোঁয়াটে। সবাই মুখোশধারী! যার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে অর্থ ও সম্পদের প্রতি লোভ ও লালসা। যে নীল কুঠি অতীতে ছিলো রহস্যের এক আস্তানা,এখন সে নিজেই এক রহস্য উন্মোচনে মেলে ধরবে তার দ্বার! সমাধান হবে রহস্যের,আমরা দেখা পাবো মুখোশের আড়ালের অবয়বের। থমকে যেতে হয় মুখোশের অপারের অন্য রূপ দেখে।
Thriller
1
একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো নেতা, সর্বোপরি একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদ হওয়ার সব উপাদন এখানে আছে। সব মানুষের জন্য বইটি আর রাজনীতি যারা করেন তাদের জন্য তো বলার অপেক্ষা রাখে না!
Political
3
বইঃ গ্রামের নাম কাঁকনডুবি লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ধরণঃ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ প্রকাশনীঃ তাম্রলিপি প্রচ্ছদঃ আরাফাত করিম মূল্যঃ চারশত টাকা মাত্র মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের শেষ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস বোধহয় "আমার বন্ধু রাশেদ", বহুল জনপ্রিয় একটা বই। তারপরে, অনেকদিন গ্যাপ। এবারের বইমেলায় এলো লেখকের আরেকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস, বৃহৎ কলেবরের "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি।" আজকের পাঠপ্রতিক্রিয়া "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" নিয়েই। তো, শুরু করা যাক। উপন্যাসের নামে বোঝা যাচ্ছে, উপন্যাসটা কাঁকনডুবি নামের একটা গ্রামকে কেন্দ্র করে লিখেছেন লেখক। একাত্তরের যুদ্ধে আমাদের গোটা দেশটাই পরিণত হয়েছিলো অখন্ড যুদ্ধক্ষেত্রে, সেই যুদ্ধের ছোঁয়ায় নিস্তরঙ্গ "কাঁকনডুবি" গ্রামের পরিণতি উঠে এসেছে বইতে। বইয়ের মূল চরিত্র রঞ্জু। গ্রামের এক অংশে দৃষ্টিশক্তিহীন, অশীতিপর, বৃদ্ধা নানীকে নিয়ে থাকে সে। খুব ছোটবেলায় নৌকাডুবিতে বাবা-মা'কে হারিয়েছে রঞ্জু। তখন থেকেই সে নানীর কাছে মানুষ। রঞ্জু স্থানীয় "নবকুমার হাইস্কুল"এর ছাত্র। লেখাপড়ায় মোটেও ভালো না, দস্যিপনায় দুরন্ত। ক্লাসে কখনোই পড়াশোনা করে আসেনা সে। ক্লাসের শিক্ষকগুলোও বিচিত্র ধরণের। সেই শিক্ষকদের বিচিত্র বর্ণনাও আছে বইয়ের প্রথমদিকে। এই জীর্ণশীর্ণ স্কুলে একদিন আসে নতুন এক শিক্ষক, মাসুদ। প্রথম প্রথম তাকে সবাই স্যার বলে ডাকলেও, আস্তে আস্তে ডাকটা "স্যার" থেকে "ভাই"তে চলে আসে। মাসুদ ভাই ক্লাসে দুই পাকিস্তানের বৈষম্য, পশ্চিম পাকিস্তানের বিমাতৃসুলভ আচরণ, পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র, নীলনকশা এগুলো সবাইকে বোঝায়। ক্লাসের সবাইকে উদ্দীপ্ত করে তোলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। মাসুদ ভাই বলে, দেশে এবার একটা যুদ্ধ হবে। মাসুদ ভাইয়ের উৎসাহেই স্কুলে প্রথমবারের মত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। যদিও স্কুলের কিছু শিক্ষক এর বিরোধিতা করেছিলেন, তবে সে বিরোধ শেষমেশ ধোপে টেকেনি। রঞ্জুরাও বাগান থেকে ফুল চুরি করে শহীদ মিনারে অর্পণ করে। প্রভাতফেরিও করা হয় প্রথমবারের মত। তখন দেশের অবস্থা থমথমে। বিশাল ঘূর্ণিঝড় ওঠার আগে আকাশ যেমন থমকে থাকে সাময়িক সময়ের জন্যে, সেরকমভাবে থমকে আছে গোটা দেশ। যদিও কাঁকনডুবি গ্রামে এর আঁচ আসেনা। এখানের মানুষের দিন কাটে আর পাঁচটা দিনের মতই ঘটনাহীনভাবে। তবে, কাঁকনডুবিতেও একদিন "যুদ্ধ" ঢুকে পড়ে। রঞ্জুর একটা সুবিধে হচ্ছে, সে সারাক্ষণ টো টো করে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারে। নানী চোখে দেখেনা, বাবা-মা নাই, রঞ্জু যথেষ্টই স্বাধীন। রঞ্জু চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনে, ঢাকা থেকে আসা মানুষদের ভীতসন্ত্রস্ত চেহারা দেখে বুঝতে পারে, যুদ্ধ এসে গেছে দেশে। একদিন সে লক্ষ্য করে, ভারী ট্রাঙ্ক আর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাক হানাদারেরা চলে এসেছে কাঁকনডুবিতে। ক্যাম্প করেছে রঞ্জুর স্কুলে। হানাদারেরা গ্রামের বাড়িগুলো একের পর এক ধ্বংস করতে থাকে। রঞ্জুর চোখের সামনেই হিন্দু বাড়িগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় হানাদার আর রাজাকারেরা। ঘরগুলোতে যা ছিলো, তা "গণিমতের মাল" বানিয়ে লুট করে পাকিদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা, রাজাকারেরা। বিষয়গুলো রঞ্জুকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। সিদ্ধান্ত নেয়, সেও যুদ্ধে যাবে। কিন্তু, যুদ্ধে যাবে বললেই তো যুদ্ধে যাওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় ক্যাম্প করেছে, কোথায় আছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্যই রঞ্জুর নেই। সে নিরুপায় হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। এভাবেই ঘটনাচক্রে একদিন তার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেখা হয়ে যায়, গ্রামের এক প্রান্তে। তাদের মধ্যে একটা চেনামুখও ছিলো, মাসুদ ভাই। রঞ্জু এই দলের সঙ্গে ভিড়তে চায়, বাধ সাধেন মাসুদ ভাই। বয়স কম বলে রঞ্জুকে বাদ দেয়া হয়। মাসুদ ভাই বলেন, দরকার হলে রঞ্জুকে নেয়া হবে। তবে তা পরে জানানো হবে। মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে রঞ্জু ফিরে আসে বাড়িতে। সারাদিন কোনো কাজকর্ম নেই, পাকিস্তানি হানাদারদের অপকর্মগুলো আড়ালে থেকে, লুকিয়ে থেকে দেখতে দেখতে একদিন মিলিটারিদের হাতে ধরা পড়ে যায় সে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় টর্চার সেলে। রঞ্জুর ওপরে চালানো হয় অকথ্য অত্যাচার, রঞ্জুর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের ডেরার খবর জানতে চাওয়া হয়। তীব্র অত্যাচার সহ্য করে রঞ্জু, কিন্তু একটা খবরও ফাঁস করেনা। অর্ধমৃত অবস্থায় রঞ্জুকে ফেলে দেয়া হয় খালের পাড়ে। এর কিছুদিন পরেই যুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ পায় রঞ্জু আর তার বন্ধু খোকন। খোকনটা আবার কে? যুদ্ধের পরিণতি কী হলো? গল্পের পরিণতি কি বিয়োগান্তক না হ্যাপি এন্ডিং? সব উত্তর বইয়ে আছে। পড়ে ফেলুন "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি।" নিজস্ব মতামতঃ প্রথমেই একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে হবে। অনেক... অনেকদিন পরে জাফর ইকবাল স্যারের এরকম একটা অসাধারণ বই পেলাম। দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, স্কুলের নাম পথচারী, শান্তা পরিবার, রাশা, রাজু ও আগুনালীর ভূত... এরকম বই যে লিখতে পারে, সে কেন শেষদিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন, তা আমার বোধগম্য না। ইস্টিশন, রাতুলের রাত-রাতুলের দিন, টুনটুনি ও ছোটাচ্চু... এ জাতীয় বইগুলো একদমই ভালো লাগেনি। জাফর ইকবাল স্যারের বইয়ের সে স্পেশাল ফ্লেভারটা যেন মিসিং। সবই ঠিকঠাক, কোথায় যেন বিশেষ একটা মশলার অভাব। "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" বুঝিয়ে দিয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এখনো ফুরিয়ে যান নি। ইচ্ছে করলে, তিনি এখনো অসাধারণ বই লিখতে পারেন। সেটাই হলো এক্ষেত্রে। সব উপকরণ ঠিকঠাক, সহজ ভাষার গল্প... সবমিলিয়ে উপাদেয় খাদ্য। তবে, বইয়ে মেয়ে চরিত্রের আগমনটা কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে। যেটা মনে হলো, স্যার কিছুটা জোর করেই এখানে আরেকটা চরিত্র ঢুকিয়েছেন, এটা না হলেও বইয়ের যে খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি হতো, তা না। হয়তো বইয়ের পৃষ্ঠা কিছু কম হতো। কিন্তু, বিষয়টা পরিশীলিত, আরো টানটান থাকতো। এই চরিত্রের জন্যে গল্প কোথাও কোথাও গতি হারিয়েছে। সমস্যা হলো, বিষয়গুলো ডিটেইলস লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, "স্পয়লার" নামক বিষফোঁড়ার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছেনা। যাক, সেটা সমস্যা না। বিষয় হচ্ছে, "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" হয়তো "আমার বন্ধু রাশেদ"র মত অতটা বিখ্যাত হবেনা, তবে প্রিয় লেখক যখন আবার তার পুরোনো ফর্মে ফিরে আসে, সেটা পাঠকের জন্যে যে প্রচন্ড স্বস্তির বিষয় হয়, সেটা বুঝলাম। "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" আবার ফিরিয়ে এনেছে আমাদের পুরোনো জাফর ইকবালকে। বিষয়টা আশাব্যঞ্জক :D বইয়ের রকমারি লিঙ্কঃ https://www.rokomari.com/book/93317/গ্রামের-নাম-কাঁকনডুবি  বইঃ গ্রামের নাম কাঁকনডুবি লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ধরণঃ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ প্রকাশনীঃ তাম্রলিপি প্রচ্ছদঃ আরাফাত করিম মূল্যঃ চারশত টাকা মাত্র মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের শেষ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস বোধহয় "আমার বন্ধু রাশেদ", বহুল জনপ্রিয় একটা বই। তারপরে, অনেকদিন গ্যাপ। এবারের বইমেলায় এলো লেখকের আরেকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস, বৃহৎ কলেবরের "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি।" আজকের পাঠপ্রতিক্রিয়া "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" নিয়েই। তো, শুরু করা যাক। উপন্যাসের নামে বোঝা যাচ্ছে, উপন্যাসটা কাঁকনডুবি নামের একটা গ্রামকে কেন্দ্র করে লিখেছেন লেখক। একাত্তরের যুদ্ধে আমাদের গোটা দেশটাই পরিণত হয়েছিলো অখন্ড যুদ্ধক্ষেত্রে, সেই যুদ্ধের ছোঁয়ায় নিস্তরঙ্গ "কাঁকনডুবি" গ্রামের পরিণতি উঠে এসেছে বইতে। বইয়ের মূল চরিত্র রঞ্জু। গ্রামের এক অংশে দৃষ্টিশক্তিহীন, অশীতিপর, বৃদ্ধা নানীকে নিয়ে থাকে সে। খুব ছোটবেলায় নৌকাডুবিতে বাবা-মা'কে হারিয়েছে রঞ্জু। তখন থেকেই সে নানীর কাছে মানুষ। রঞ্জু স্থানীয় "নবকুমার হাইস্কুল"এর ছাত্র। লেখাপড়ায় মোটেও ভালো না, দস্যিপনায় দুরন্ত। ক্লাসে কখনোই পড়াশোনা করে আসেনা সে। ক্লাসের শিক্ষকগুলোও বিচিত্র ধরণের। সেই শিক্ষকদের বিচিত্র বর্ণনাও আছে বইয়ের প্রথমদিকে। এই জীর্ণশীর্ণ স্কুলে একদিন আসে নতুন এক শিক্ষক, মাসুদ। প্রথম প্রথম তাকে সবাই স্যার বলে ডাকলেও, আস্তে আস্তে ডাকটা "স্যার" থেকে "ভাই"তে চলে আসে। মাসুদ ভাই ক্লাসে দুই পাকিস্তানের বৈষম্য, পশ্চিম পাকিস্তানের বিমাতৃসুলভ আচরণ, পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র, নীলনকশা এগুলো সবাইকে বোঝায়। ক্লাসের সবাইকে উদ্দীপ্ত করে তোলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। মাসুদ ভাই বলে, দেশে এবার একটা যুদ্ধ হবে। মাসুদ ভাইয়ের উৎসাহেই স্কুলে প্রথমবারের মত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। যদিও স্কুলের কিছু শিক্ষক এর বিরোধিতা করেছিলেন, তবে সে বিরোধ শেষমেশ ধোপে টেকেনি। রঞ্জুরাও বাগান থেকে ফুল চুরি করে শহীদ মিনারে অর্পণ করে। প্রভাতফেরিও করা হয় প্রথমবারের মত। তখন দেশের অবস্থা থমথমে। বিশাল ঘূর্ণিঝড় ওঠার আগে আকাশ যেমন থমকে থাকে সাময়িক সময়ের জন্যে, সেরকমভাবে থমকে আছে গোটা দেশ। যদিও কাঁকনডুবি গ্রামে এর আঁচ আসেনা। এখানের মানুষের দিন কাটে আর পাঁচটা দিনের মতই ঘটনাহীনভাবে। তবে, কাঁকনডুবিতেও একদিন "যুদ্ধ" ঢুকে পড়ে। রঞ্জুর একটা সুবিধে হচ্ছে, সে সারাক্ষণ টো টো করে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারে। নানী চোখে দেখেনা, বাবা-মা নাই, রঞ্জু যথেষ্টই স্বাধীন। রঞ্জু চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনে, ঢাকা থেকে আসা মানুষদের ভীতসন্ত্রস্ত চেহারা দেখে বুঝতে পারে, যুদ্ধ এসে গেছে দেশে। একদিন সে লক্ষ্য করে, ভারী ট্রাঙ্ক আর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাক হানাদারেরা চলে এসেছে কাঁকনডুবিতে। ক্যাম্প করেছে রঞ্জুর স্কুলে। হানাদারেরা গ্রামের বাড়িগুলো একের পর এক ধ্বংস করতে থাকে। রঞ্জুর চোখের সামনেই হিন্দু বাড়িগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় হানাদার আর রাজাকারেরা। ঘরগুলোতে যা ছিলো, তা "গণিমতের মাল" বানিয়ে লুট করে পাকিদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা, রাজাকারেরা। বিষয়গুলো রঞ্জুকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। সিদ্ধান্ত নেয়, সেও যুদ্ধে যাবে। কিন্তু, যুদ্ধে যাবে বললেই তো যুদ্ধে যাওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় ক্যাম্প করেছে, কোথায় আছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্যই রঞ্জুর নেই। সে নিরুপায় হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। এভাবেই ঘটনাচক্রে একদিন তার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেখা হয়ে যায়, গ্রামের এক প্রান্তে। তাদের মধ্যে একটা চেনামুখও ছিলো, মাসুদ ভাই। রঞ্জু এই দলের সঙ্গে ভিড়তে চায়, বাধ সাধেন মাসুদ ভাই। বয়স কম বলে রঞ্জুকে বাদ দেয়া হয়। মাসুদ ভাই বলেন, দরকার হলে রঞ্জুকে নেয়া হবে। তবে তা পরে জানানো হবে। মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে রঞ্জু ফিরে আসে বাড়িতে। সারাদিন কোনো কাজকর্ম নেই, পাকিস্তানি হানাদারদের অপকর্মগুলো আড়ালে থেকে, লুকিয়ে থেকে দেখতে দেখতে একদিন মিলিটারিদের হাতে ধরা পড়ে যায় সে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় টর্চার সেলে। রঞ্জুর ওপরে চালানো হয় অকথ্য অত্যাচার, রঞ্জুর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের ডেরার খবর জানতে চাওয়া হয়। তীব্র অত্যাচার সহ্য করে রঞ্জু, কিন্তু একটা খবরও ফাঁস করেনা। অর্ধমৃত অবস্থায় রঞ্জুকে ফেলে দেয়া হয় খালের পাড়ে। এর কিছুদিন পরেই যুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ পায় রঞ্জু আর তার বন্ধু খোকন। খোকনটা আবার কে? যুদ্ধের পরিণতি কী হলো? গল্পের পরিণতি কি বিয়োগান্তক না হ্যাপি এন্ডিং? সব উত্তর বইয়ে আছে। পড়ে ফেলুন "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি।" নিজস্ব মতামতঃ প্রথমেই একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে হবে। অনেক... অনেকদিন পরে জাফর ইকবাল স্যারের এরকম একটা অসাধারণ বই পেলাম। দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, স্কুলের নাম পথচারী, শান্তা পরিবার, রাশা, রাজু ও আগুনালীর ভূত... এরকম বই যে লিখতে পারে, সে কেন শেষদিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন, তা আমার বোধগম্য না। ইস্টিশন, রাতুলের রাত-রাতুলের দিন, টুনটুনি ও ছোটাচ্চু... এ জাতীয় বইগুলো একদমই ভালো লাগেনি। জাফর ইকবাল স্যারের বইয়ের সে স্পেশাল ফ্লেভারটা যেন মিসিং। সবই ঠিকঠাক, কোথায় যেন বিশেষ একটা মশলার অভাব। "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" বুঝিয়ে দিয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এখনো ফুরিয়ে যান নি। ইচ্ছে করলে, তিনি এখনো অসাধারণ বই লিখতে পারেন। সেটাই হলো এক্ষেত্রে। সব উপকরণ ঠিকঠাক, সহজ ভাষার গল্প... সবমিলিয়ে উপাদেয় খাদ্য। তবে, বইয়ে মেয়ে চরিত্রের আগমনটা কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে। যেটা মনে হলো, স্যার কিছুটা জোর করেই এখানে আরেকটা চরিত্র ঢুকিয়েছেন, এটা না হলেও বইয়ের যে খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি হতো, তা না। হয়তো বইয়ের পৃষ্ঠা কিছু কম হতো। কিন্তু, বিষয়টা পরিশীলিত, আরো টানটান থাকতো। এই চরিত্রের জন্যে গল্প কোথাও কোথাও গতি হারিয়েছে। সমস্যা হলো, বিষয়গুলো ডিটেইলস লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, "স্পয়লার" নামক বিষফোঁড়ার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছেনা। যাক, সেটা সমস্যা না। বিষয় হচ্ছে, "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" হয়তো "আমার বন্ধু রাশেদ"র মত অতটা বিখ্যাত হবেনা, তবে প্রিয় লেখক যখন আবার তার পুরোনো ফর্মে ফিরে আসে, সেটা পাঠকের জন্যে যে প্রচন্ড স্বস্তির বিষয় হয়, সেটা বুঝলাম। "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" আবার ফিরিয়ে এনেছে আমাদের পুরোনো জাফর ইকবালকে। বিষয়টা আশাব্যঞ্জক :D বইয়ের রকমারি লিঙ্কঃ https://www.rokomari.com/book/93317/গ্রামের-নাম-কাঁকনডুবি
Childrens-Book
2
'মানব জীবন' বইয়ের সূচিপত্র সূচি মানব-চিত্তের তৃপ্তি....................৭ আল্লাহ্....................৮ শয়তান....................৯ দৈনন্দিন জীবন....................১৩ সংস্কার মানুষের অন্তরে....................১৬ জীবনের মহত্ত্ব....................২০ স্বভাব-গঠন....................২৫ জীবন সাধনা....................২৯ বিবেকের বাণী....................৩৫ মিথ্যাচার....................৩৭ পরিবার....................৩৯ প্রেম....................৪১ সেবা....................৪৫ এবাদত....................৪৭
Motivational
6
‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটিকে একটি সামাজিক উপন্যাস বলা যায়। আবার একে প্রেমের উপন্যাসও বলা যায়। তবে সে প্রেমের উৎস ও প্রকৃতি বড় বিক্ষিপ্ত, বড়ই বিপন্ন। সে বিষয়ে আলোচনায় পরে আসবো। তবে ‘ছায়াবীথি’ বইটি হাতে নিলে প্রথমেই যে বিষয়টি বোঝা যায় তা হল, এর আয়তন হুমায়ূন আহমেদের লেখা গতানুগতিক সামাজিক প্রেমের উপন্যাসগুলোর থেকে ঢের বেশি। আর বইটি পড়তে শুরু করলে অনুধাবন করা যায়, শুধু আয়তনে নয় বরং অন্তর্নিহিত তাৎপর্যেও উপন্যাসটি অনেক বেশি বলীয়ান। সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার পূর্বে পাঠকদের স্বার্থে উপন্যাসটির কাহিনী সংক্ষেপ নিচের অনুচ্ছেদে আলোচিত হল। ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র নায়লা। নায়লার স্বামী জামান একটা অল্প বেতনের ছোট-খাট চাকরি করে। তাদের মধ্যবিত্ত জীবনের অধিকাংশ সাধ-আহ্লাদই অপূর্ণ থেকে যায়। তারপরও কোন কিছু নিয়েই নায়লার তেমন কোন অভিযোগ ছিল না। স্বামী জামান আর এক শিশু সন্তানকে নিয়ে নায়লা বেশ সুখেই ছিল। প্রতি রাতে নায়লা তার স্বামী কখন অফিস থেকে ফিরে সেই পথ চেয়ে থাকতো। কিন্তু তাদের এই জীবনে হঠাৎ করেই ছন্দপতন হয়। জামানের হঠাৎ একদিন তার ছেলেবেলার বন্ধু আলমের সাত্থে দেখা হয়। আলম দীর্ঘদিন বিদেশে ছিল। সে অনেক টাকা-পয়সা করে সম্প্রতি দেশে এসেছে বিয়ে করার জন্যে। এই দেখা হওয়ার পর থেকে জামানের বাসায় আলমের নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়। নায়লার প্রতি আলমের আচরণ কেমন যেন প্রগলভ। নায়লাকে সে শুরু থেকেই নাম ধরে ডাকতে থাকে। তারপর আলম আস্তে আস্তে নায়লার কাছে আসার চেষ্টা করে। নায়লা প্রথম দিকে বিষয়টাকে একদম পাত্তা দিচ্ছিলো না। কিন্তু ধীরে ধীরে নায়লাও কেমন যেন আলমের প্রতি দুর্বল হয়ে উঠতে থাকে। নায়লা বুঝতে পারে, এটা ঠিক হচ্ছে না। তারপরও সে ঘুরে ফিরে বারবার আলমের কাছেই যেতে থাকে। আর এই পুরো ব্যাপারটা নিয়েই জামান আশ্চর্যরকম উদাসীন থাকে। এর মাঝে জানা যায়, আলম আগে একটি মেয়েকে ভালোবাসতো। যার নাম ছিল রেশমী। নায়লা দেখতে নাকি অনেকটাই রেশমীর মত। সে কারণেই নায়লার প্রতি আলমের এতো দুর্বলতা। সে যাই হোক, নায়লা তার এই আপাত মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে উত্তরণের জন্যে তারই বান্ধবী অরুণার সাথে আলমের বিয়ে ঠিক করে। একদিন আলম আর অরুণার দেখা করিয়ে দেয়ার জন্যে নায়লা বাবুর জন্মদিনকে উপলক্ষ করে তাদের বাসায় দাওয়াত দেয়। আর সেদিনই নায়লা প্রথমবারের মত বুঝতে পারে, আলমকে ছাড়া থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আলম যখন অরুণার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো, তখন নায়লা আশ্চর্য বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করে তার প্রচণ্ড পরিমাণে রাগ হচ্ছে। সে হিংসায় জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। সে রাতেই নায়লা কোন কারণ ছাড়াই জামানের সাথে বেশ ঝগড়া করে। এদিকে তখন জামানের চাকরিটা চলে গেছে। জামান সব দিক বিবেচনা করে ঠিক করে, সে কিছুদিন বাড়িতে গিয়ে থাকবে। আর নায়লাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। তাতে যদি নায়লার কিছুটা মানসিক স্থিরতা আসে। কিন্তু বাবার বাড়িতে গিয়ে নায়লার আচরণ সম্পূর্ণ বদলে যায়। সে অবিবাহিত মেয়ের মত আচরণ করতে থাকে। সেজেগুজে সকাল বেলা ঘুরতে বের হয়। তারপর এক সন্ধ্যায় নায়লা চোখে কাজল দিয়ে, সাদা শাড়ি পরে বের হয় তার জীবনের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই গন্তব্যটি কে? জামান নাকি আলম? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যে পাঠককে ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটি পড়তে হবে। এই আলোচনার শুরুতে আমি ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটিকে একটি সামাজিক প্রেমের উপন্যাস বলেছিলাম। তবে সেটা ছিল আসলে উপন্যাসের উপরিতল বিবেচনাপ্রসূত একটি মন্তব্য। যদি গভীরতর বিশ্লেষণের নিরিখে মন্তব্য করতে বলা হয়, তাহলে আমি নির্দ্বিধায় ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটিকে একটি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস বলবো। এখানে হুমায়ূন আহমেদ নায়লা চরিত্রের মনোজগতের অভ্যন্তরীণ অন্ধকার অলি-গলির মধ্যে আলোকপাত করার মাধ্যমে মানব চরিত্রের বিস্ময়কর কিন্তু নিয়ত বিরাজমান কিছু প্রবণতা সুনিপুণ দক্ষতায় পাঠকদের সামনে তুলে এনেছেন। আমি নিচে সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। আলম আসার আগে পর্যন্ত নায়লার একটি সুখের সংসার ছিল। হঠাৎ ঝড়ের মত সেখানে আলম এসে উপস্থিত হওয়ায় নায়লার সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। কিন্তু আলমের কাছে তো এমন কোন জাদু-মন্ত্র ছিল না যা দিয়ে সে নায়লাকে আচ্ছন্ন করতে পারে। তাহলে নায়লার এমন কেন হল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই আসলে আমরা মানব চরিত্রের সেই বিস্ময়কর প্রবণতাকে খুঁজে পাব, যাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। নায়লা আসলে আলমের কাছে ছুটে যায় নি, বরং সে ছুটে গেছে মানুষের রক্তে নিয়ত বয়ে চলা সেই বিপন্ন বিস্ময়ের কাছে, সেই বিপুল অজানার কাছে যা জীবনকে প্রতি মুহূর্তে অস্থির করে রাখে, প্রাণবন্ত করে রাখে। নায়লা তার স্বামী-সন্তান নিয়ে একটি সুখী, নিস্তরঙ্গ জীবন যাপন করছিলো। কিন্তু সেই জীবনে হঠাৎ করে আলমের উপস্থিতি নায়লাকে মনে করিয়ে দেয়, প্রতি রাতে শুধু স্বামীর পথ পানে চেয়ে থাকাই জীবন নয়। শুধু সময়মত সন্তানকে দুগ্ধ পান করানোই জীবন নয়। বরং জীবন আরও গভীর, আরও বিচিত্র, আরও উত্তাল এক ঢেউ। তখন নায়লার অন্তর্জগতে বিভিন্ন প্রথাবিরোধী প্রবণতা দানা বেঁধে উঠতে থাকে। যেমন, তার মনে হয় সে যদি চুল কেটে ফেলে এবং ছেলেদের পোশাক পড়ে ছেলে সাজে তাহলে বোধহয় গভীর রাতে পথে-ঘাটে একা একা চলাফেরা করতে পারবে। আবার, এক সন্ধ্যায় আলমের হোটেলে গিয়ে এক ওয়েট্রেস মেয়েকে দেখে তার মনে হয় সে যদি মেয়েটির মত চাকরি করতে পারতো তাহলে কত ভালো হত। সে নিজের উপার্জন নিজের মত খরচ করতে পারতো। এই চিন্তাটি যদিও আপাত দৃষ্টিতে গঠনমূলক, কিন্তু অবস্থার প্রেক্ষিতে বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না যে নায়লার মনে এ ধরনের বিক্ষিপ্ত চিন্তার উত্থান হয়েছে জীবন সম্পর্কে তার মাঝে বিদ্যমান হতাশা থেকে। আর এই হতাশাই ছিল নায়লার আলমের কাছে ফিরে ফিরে যাবার মূল কারণ। আলমের প্রতি নায়লার মুগ্ধতাকে তাই আমি প্রেম বলবো না। বরং একে বিচিত্র শক্তিশালী জন্মপ্রবণতার কাছে এক সাধারণ রমণীর অসহায় আত্মসমর্পণের আখ্যান বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসের একটি আকর্ষণীয় দিক হল, এটা সব শ্রেণীর পাঠকের কাছেই ভালো লাগবে। যারা উপরিতল সর্বস্ব বিনোদনের জন্যে এই উপন্যাসটি হাতে নিয়ে বসবেন, তাদের কাছে যেমন এই উপন্যাসটি ভালো লাগবে; আবার একইসাথে, যারা আমার মত উপন্যাসের উপরিতল ভেদ করে কেন্দ্রে ডুব দিয়ে মণি-মুক্তা খুঁজে আনতে চান তারাও হতাশ হবেন না। সব মিলিয়ে বলা যায়, এই চমৎকার ছদ্মবেশী মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসটি সবারই ভালো লাগবে।
Fiction
0
#কাহিনী_সংক্ষেপ আমি..মানে ইবু। আর আমার সাথে আছে সাচ্চু, অনিক, সাজু আমাদের বন্ধুদের গ্রুপ। সবাই পড়ি ক্লাস এইটে। অন্যসব ক্লাসের মত আমাদের একটি ক্লাস গুন্ডা আছে, নাম বকর। আমাদের থেকে ঢের বড়। কতকাল ফেইল করে আমাদের ক্লাসে এসে পড়েছে। আমরা সবাই তাকে ভয় পাই। কম না অনেক বেশি ভয় পাই। কিছু না হলেও আমাদের অপমান করে , মারধর করে। সাজু আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয়। সে সব কিছুতেই তোতা পাখির মত সব মুখস্ত বলে যায়। এভাবেই সব চলছিল। আমাদের এই স্বাভাবিক ক্লাসটাতে একদিন এক অস্বাভাবিক কান্ড ঘটে গেল। একজন হুইল চেয়ারে বসা ছেলে! আমাদের সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে গেল। মোতালেব স্যার আমাদের শপথ করিয়েছিলেন যেন আমরা তাকে ডিস্টার্ব না করি। কিন্তু বেখাপ্পা আমরা। একজন প্রতিবন্ধীকে সহপাঠী হিসেবে দেখতে ভারী আশ্চর্যিত হচ্ছি। ছেলেটার নাম সেন্টু। স তে সেন্টু! ছেলেটা যে একটু ট্যারা জিনিস তা প্রথম দেখাতেই বুঝিয়ে দিল। সপ্তাহখানেকের মাঝে সেন্টু তার আসল চেহারা দেখাতে শুরু করল। বকর ভাই। যাকে আমরা প্রচন্ড রকম ভয় পাই, তাকে পর্যন্ত ঘোল খাইয়ে দিল। সেন্টু হাওয়ার বেগে ছুটছে! হুইল চেয়ার নিয়ে বেশ শান্তিতে আছে দেখে আমাদের কারো কারো সাধ জাগল. ইশ! যদি তেমন একটা হুইল চেয়ার পেতাম! গল্পটা এভাবেও চললেও পারত। কিন্তু তার ক্লাইমেক্স না থাকলে মজা কই? আমরাও বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। এই যেমন ধরুন টোটো। আমাদের বন্ধু, লিউকোমিয়ার থ্যারাপিতে চুল পড়ে ন্যাড়া হয়ে গেছে। তাই স্কুলে যাবে না। তাই কি হয়! আমাদের গরিলা স্যার আর জাল নোট নিয়েও বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আরো কত কি! সেন্টু বেশ বুদ্ধিমানও। প্রমাণ করে দিয়েছে সব ক্ষেত্রে। এদিকে স্যারের কথা অনুযায়ী আমরা তেলাপোকার মত, কারণ আমরা কোনো কো কারিকুলাম একটিভিটিস এ অংশ নেই না। তাই সবাই মিলে আলোকিত শৈশব নামের সাংস্কৃতিক সংগঠনের মেম্বার হয়ে যাই। সেই সুত্রে পরিচয় সুস্মিতার সাথে। সেন্টু আর সুস্মিতা মিলে তারপর যা করল না একেবারে পেপারের খবর হয়ে গেল. .... তারা... থাক! এটা বই তে দেখে নিন। কিন্তু জানেন হল কি! আমাদের এই সেন্টুকে স্কুল ছাড়তে হল । কিজন্য? আমরা তার শুণ্যতা অনুভব করছি অনেক। তারপর একদিন কিছু একটা হয়ে গেল....... .......... উঁহু! নিজেদের নিয়ে অনেকটা তো বললাম। আমাদের পুরো মজা পেতে বই আবশ্যক!!! #বইটার_সমাজ_বাস্তবতা বইটার নাম চরিত্র সেন্টু একজন প্রতিবন্ধী। কিন্তু তার মাঝে যে প্রাণশক্তি আছে...যেটা কোনো অংশেই কম না। বরং আমরা তার উপর্যুক্ত ব্যবহারে অপারগ সেটাই লেখক আঙ্গুল তোলে দেখিয়েছেন। স্বাভাবিক বা অটিস্টিক যাই হোক না কেন, অবশ্যই তার সঠিক ব্যবহার সমাজজীবনের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমরা কি প্রতিবন্ধীদের জন্য সমান সুযোগ দিতে পারছি? পাশাপাশি স্কুলের অবকাঠামোগত সমস্যাদির কড়া সমালোচনা করা হয়েছে গল্পে। আসলেই সেটা ভাবতে বাধ্য করে!! তাছাড়া একজন ছাত্রের জীবনে পড়াশুনোর পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ হতে হয়, সৎ হতে হয়, অন্যয়ের বিরুদ্ধাচার করতে হয়। এসব একটা ছাত্রকে আদর্শ মানুষে পরিণত করে । সাথে সাথে সোস্যাল ওয়ার্ক, কো-কারিকুলাম একটিবিজ আর বন্ধুবাৎসল্যতার প্রয়োজনীয়তা.... সব মিলিয়ে বইটা গল্পের ছলে একজন ভালো মানুষের সব গুণ তোলে ধরেছে। সারকথা বইটার বাস্তবতাবোধ বেশ প্রকট। #ক্রিয়া_প্রতিক্রিয়া_উপলব্ধি_আরো_একটুকু___ বইটার টপিকটা ভালো লেগেছে। কথার ভাজে ভাজে ঠিক কিশোর সময়কার সব ফ্যান্টাসি আর বাস্তবতার মিশেল হিসেবে আমাদের নিজেদের যে জগত থাকে তার সন্নিহিত একটা অনুভবের জগত তৈরি করেছে বইটা। বইটাতে অনেকগুলো ছোট ছোট ঘটনা বেশ চাটুলতার সাথেই জোড়া দিয়ে বইটার ভীত গড়া হয়েছে যা সুখপাঠ্য আর শিক্ষাগুলো সহজেই কিশোরদের কচি মন ধারন করতে পারে। বয়সের তারতম্য বইটার অনুভূতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি, কি ছোট কি বড় সবাই এটা পড়ে একটা কৈশোরের স্বাদ পাবেন। এই জিনিসটা বইটার একটা বড় শিল্প গুণ। গল্পের প্রবাহ বেশ দ্রুত ছিল। ওভার অল ভালো একটা কিশোর উপন্যাস। এই গেল ভালো লাগা। এবার আসা যাক মন্দ লাগাতে। জাফর সাহেবের সব কিশোর উপন্যাসের ধরনটা মোটামুটি একই ধরনের। সব বন্ধুর মাঝে একটা বন্ধু এমন থাকবে যে একটু ব্যতিক্রমী, তার কীর্তিকলাপ নিয়ে গল্পের প্লট। একই জিনিস বারবার খেলে যেমন অরুচি ধরে তেমনি উনার কিশোর উপন্যাসগুলো। মানতে বাধ্য খুবই চমকপ্রদ ভাষ্যরসে একেকটা প্লট লেখা কিন্তু সেটা ছাপিয়ে চোখে পড়ে গল্পের ধরনটা। বইটা শুরু করার পর যদি বুঝতেই পারেন শেষটা কিরকম হতে পারে পড়তে ততোটা কি মজা পাবেন? গল্পের প্রবাহ ভালো হলেও হোচটও খেয়েছে কিছু জায়গাতে। কিছু বানান ভুল চোখে পড়েছে।
Childrens-Book
2
এই অনুবাদ পড়ার ধৈর্য আমার হয়নি বহু চেষ্টা করেও। এত বাজে অনুবাদ। লেখক, যত্নশীল হউন।
Political
3
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ অবনীল লেখকঃজাফর ইকবাল ধরনঃবৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী প্রকাশনীঃতাম্রলিপি মূল্যঃ১৬০ টাকা(রকমারি মূল্যঃ১২০ টাকা) . একজন নীল মানুষ ও একজান সাধারণ মানুষ এর কাহিনী।এই দুজনকে গল্পের কেন্দীয় চরিত্র বা নায়ক নায়িকা ও বলা চলে। #কুশান একজন নীলমানব আর #রিরা মহাকাশ অভিযানের নবীন শিক্ষানবীশ ক্রু। . #সার-সংক্ষেপঃএকদল নীলমানবকে নিয়ে ক্যাপ্টেন বার্কের মহাকাশযান যাত্রা শুরু করেছেন।তিনি এই মহাকাশযযান এর দলপতি। এই নীলমানবের দলটি ক্লড উপগ্রহের যুদ্ধে ধরা পরেছে।আর ক্যাপ্টেন বার্কের ওপর ভার পরেছে এদের বিজ্ঞানন একাডেমিতে পৌছে দেওয়ার।এরা খুবই ভয়ানক তাই তিনি চেয়েছিলেন এদের ঘুম পাড়িয়ে শীতল ঘরে নিয়ে যেতে কিন্তু বিজ্ঞান একাডেমি রাজি হয়নি। . ক্যাপ্টেন বার্কের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ওপর রিরার অগাধ ভরসা, তাই মহাকাশযানের কার্গো নিয়ে ক্যাপ্টেন বর্কেনের আশঙ্কায় রিরাও কিছুটা উদ্বিগ্ন। এই মহাকাশযানের কার্গো হচ্ছে সতের জন নীলমানবের একটি দল। নীলমানব হল মানব সম্প্রদায়ের সেই প্রজাতি যাদের বিবর্তন মানুষের মত স্বাভাবিক না। তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন এনে দৃষ্টিশক্তি আল্ট্রাভায়োলেট পর্যন্ত সংবেদনশীল করেছে, ফুসফুসের আকার করেছে বৃহৎ, যার ফলশ্রুতিতে সীমিত অক্সিজেনও তাদের জন্য কোন সমস্যা না। সেই সাথে রক্ত কপারভিত্তিক হওয়ায় তাদের গায়ের রঙ হালকা নীল। অস্বাভাবিক বিবর্তনের কারণে মানুষের কাছে তারা মানুষ হিসেবে বিবেচ্য না, তাদের পরিচয় - নীলমানব। . কিন্ত বিজ্ঞান একাডেমির কৌতুহলের কাছে ক্যাপ্টেন বার্কে হার মানতে হয়।যার ফলাফল হয় এক বীভৎস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। লাল-নীল রক্তে নির্মমভাবে রেঙ্গে উঠে পুরো মহাকাশযান। . বেঁচে থাকে কেবল দুই প্রজাতির দুজন মানুষ, রিরা ও নীলমানব কুশান।এই ভয়ানক যুদ্ধের পরে রিরা আবিষ্কার করে যে মহাকাশযানটিতে সে আর নীলমানব ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। বেঁচে থাকার প্রয়োজন এ একজন আরেক জনের সহায় হয়। এক অচেনা অজানা গ্রহে হিংস্র প্রাণীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয় জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য। নতুন এ্যাডভেঞ্চার শুরু হয় সেখানে। ফিরে আসতে হবে মানব সভ্যতার মাঝে । কী হয় শেষ পর্যন্ত? জানতে হলে পড়তে হবে মুহম্মদ জাফর ইকবালের "অবনীল" #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ জাফর ইকবাল স্যারের অন্যতম আরেকটি সায়েন্স ফিকশন এর নাম হল অবনীল।দুই প্রজাতির দুইজন মানুষ এর ভালবাসা পুরো উপন্যাসটি ছিল ভরপুর। মুহম্মদ জাফর ইকবালের বেশীরভাগ বইই শেষ হয় ভাল লাগা দিয়ে।কিন্তু এটাতে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে।এই বইয়ের শেষটায় পাঠকের ভেতরে এক ধরনের হাহাকারের সৃষ্টি করে।পড়লেই বুঝতে পারবেন। হাপি রিডিং...
Science-Fiction
4
‘কিশোর মুসা রবিন সাগরতলে’ তিন গোয়েন্দা সিরিজের একটি অসাধারন বই । তিন গোয়েন্দা সিরিজটি আমাদের দেশের কিশোর ও তরুন সমাজের নিকট ব্যপক জনপ্রিয় । এই তিন গোয়েন্দা সিরিজে রয়েছে তিনজন শখের গোয়েন্দা , কিশোর পাশা প্রধান , সে বাংলাদেশী , এরপরে তার সাথে থাকে তার দুই বন্ধু মুসা আমান এবং রবিন মিলফোর্ড । তারা তিনজন মিলে অসাধারন সব রহস্য সমাধান করে তাদের বুদ্ধি দিয়ে । এর মধ্যে তাদের পড়তে হয় অনেক বিপদে । অসাধারন এ সিরিজে অসংখ্য বই লিখেছেন লেখক রকিব হাসান । রকিব হাসান-এর জন্ম কুমিল্লায়, ১৯৫০ সালে । স্বনামে-বেনামে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪০০টি । তার লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে, ছদ্মনামে । স্বনামে প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল অনুবাদগ্ৰস্থ, ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা” । এরপর অনুবাদ করেছেন এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল-এর মত বিখ্যাত লেখকদের অনেক ক্লাসিক বই । অনুবাদ করেছেন মহাক্লাসিক অ্যারাবিয়ান নাইটস’ ও এডগার রাইস বারোজএর টারজান’ সিরিজ । বড়দের উপযোগী তার লেখা কিছু রহস্য উপন্যাসও খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে । সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে ছোটদের জন্য লেখা "তিন গোয়েন্দা” সিরিজটি । লিখেছেন কিশোর গোয়েন্দা” সিরিজ, খুদে গোয়েন্দা’ সিরিজ, জাফর চৌধুরী ছদ্মনামে রোমহর্ষক’ সিরিজ এবং আবু সাঈদ ছদ্মনামে গোয়েন্দা রাজু সিরিজ । এ ছাড়া কিশোরদের জন্য বেশ কিছু ভূতের বই ও সাইন্স ফিকশনও লিখেছেন তিনি। তার লেখা কিশোর মুসা রবিন সাগরতলে বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে । বইটি প্রকাশিত হয় প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তিন গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে এসে পড়ে মস্ত বিপদে । হঠাত সাগর থেকে ট্যাংকের মতো বিশাল বিশাল কাকড়া এসে তিন গোয়েন্দা কে টেনে নিয়ে যায় সাগরতলায় । ডেথ সিটির বাসিন্দা টম কে জিজ্ঞেস করে জানা যায় অবিশ্বাস্য এক কাহিনী । এরপরে কেচো খুড়তে সাপ বের হয় । তারা কি পারবে এই সমস্যা সমাধান করতে ? জানতে হলে পড়তে হবে অসাধারন এ বইটি ।
Childrens-Book
2
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই:টুকি ও ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান লেখক:মুহম্মদ জাফর ইকবাল ধরণ :সায়েন্স ফিকশন মুল্য:১২০ টাকা প্রকাশক:অনুপম প্রকাশনী কাহিনী সংক্ষেপে:সায়েন্স ফিকশন মানেই যে কাঠখোট্টা হতে হবে তা নয়।সায়েন্স ফিকশন এমন মজার ও হতে পারে।এটি লেখকের একটি লঘু সায়েন্স ফিকশন। টুকি ও ঝা দুই ছিচকে চোর।টুকি বদরাগী,হঠাৎ ই ক্ষেপে যায়।কিন্তু তার শরীর শুকনো কাঠির মতো।গায়ে মাংসের বালাই নেই।অপরদিকে ঝা ছোটখাটো পাহাড়। কিন্তু সে মোটেও টুকির মতো কাঠখোট্টা নয় যেকোনো দৃশ্যে সে গা দুলিয়ে হাসতে থাকে।শৈশবে তারা উত্তেজক জিনিসপাতি চুরি করেছে।কিন্তু এখন তারা একটি বড় দাও মেরে চুরি ছেড়ে দিয়ে বাকি জীবন অন্য একটি গ্রহে কাটিয়ে দিতে চায়।তাই তারা পরিকল্পনা করে হীরা চুরি করতে যায়।সব ঠিকই চলছিল কিন্তু হঠাৎ পালানোর সময় ঝায়ের বাথরুম পেয়ে যায়।ততক্ষণ এ সিকিউরিটি সিস্টেম খবর পেয়ে যায়।পালাতে পালাতে তারা একটি জংলা স্থানে এসে পড়ে।হঠাৎ সেখানে অদ্ভুত এক দালান দেখতে পায় তারা।ভেতরে ঢুকে তারা ভেতরের মানুষ দুটিকে বাইরে ফেলে দেয়।আসলে এই অদ্ভুত দালান আসলে মহাকাশযান কিন্তু টুকি ও ঝা যখন বুঝতে পারল ততক্ষণ এ দেরি হয়ে গেছে।মহাকাশযান চালু হয়ে গেছে।মহাকাশযান এ তিনজন টুকি,ঝা এবং রোবট রোবি।এরপর প্রথমে এম সেভেন্টি ওয়ান এর মতো দুধর্ষ গ্রহ,এরপর রোবটদের উপগ্রহ যেখানে তারা রোবটদের রসিকতা শেখায়।এরপর অন্য একটি গ্রহ যেখানে পুরুষরা পর্দা করে চলে আর নারী তার ঠিক উলটো।এরপর আরেকটি।কিভাবে নিজের গ্রহে ফিরে আসবে টুকি ও ঝা।জানতে পড়ে ফেলুন এই মজাদার সাই-ফাই পাঠ প্রতিক্রিয়া:অসম্ভব মজার একটি সায়েন্স ফিকশন। গুরুগম্ভীর পাঠকরা পছন্দ নাও করতে পারেন।কিন্তু আমার কাছে বেশ মজাদার লেগছে।আমার রেটিং ৪/৫ রকমারি লিংক:https://www.rokomari.com/book/8404/টুকি-এবং-ঝায়ের-(প্রায়)-দুঃসাহসিক-অভিযান
Science-Fiction
4
Himu... himu... himu What can I really say about him? I love reading books with him as the main protagonist. He is funny, extroverted and completely (or at least half) crazy for sure! But at the same time he is affected by other people's lives. Although his father died trying to teach him to be a "Mohapurush" Himu already knows he would never live up to his father's expectation. Himu is not a Mohapurush and his father could never turn him into one. Why?? - Ok first Himu's father always said to stay away from familial matters. But Himu feels connected to his disconnected family. Be it Majeda Khala, Farida Khala, Khalujaan, Fupa or even Badol, he always goes back to these people. He doen't want money or love or company from them, but yet if they call, if they need him he arrives at their doorstep. Then he accepts any job that comes his way. Khalujaan gives him money to stay away from Badol he takes it, if he saves someone's life and they offers to pay him, he takes it, if someone wants him as a tour guide and offers money, he accepts it. But strangely he never keeps the money for himself. In some way or the other he spends it on people randomly and gives it all away. He puts himself in strange situations and then somehow even gets out if it as well! Himu is a paradigm of what-not-to-be! But I have a complain about him. In every novel a girl, as beautiful as Snow white, Cinderella and Belle, falls in love with him. Frankly I don't understand it. Himu is the kind of guy you would love having as friend. Someone you can have fun with, enjoy your time and laugh hard. But he is not a husband material at all nor does it have an ounce of romantic gene in his body. I think the only girl he really likes is Rupa but obviously he will find a thousand reasons to stay away from her. And only a friend like Rupa is justified to fall in love with Himu. I think I am tired reading these girls falling head over heels in love with Himu. No that doesn't happen to intelligent girls. I think in modern times, Himu is the kind of guy a girl would love to hang out with all day but never go home with! Every time I sit to write a good review I end up writing my musings about Himu instead of the novel itself. So to put a nice end to this review- Himu fans read it, Himu not-fans start reading it! Nicely written with a good flow and twist and turns you don't expect, Tomader Ei Nogore is a very good and smooth read!
Fiction
0
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম: নীল এই যে আমি লেখক: সুমন্ত আসলাম ধরন: উপন্যাস প্রচ্ছদ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি প্রকাশকাল: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ প্রকাশনী : কথাপ্রকাশ মূল্য: ১৫০/= শুরুর কথা: সুখ-দুঃখ এই দুটি মিলিয়েই মানুষের পূর্ণ একটা জীবন।দুঃখের স্বাদ গ্রহণ না করে সুখ লাভ করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।সেকারণে আমাদের কষ্টের মুহুর্তগুলোতে সুখকর জীবনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়,প্রত্যাশা রাখতে হয়।আর সে দৃষ্টিকোণ থেকেই অনেককে দেখা যায়, পুরো জীবনটায় কষ্টের বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন তার প্রয়োজন পড়ে একটুখানি সান্ত্বনার।সুখের পিপাসায় কাতর লোকটির তখন খুব প্রয়োজন এক পশলা শীতল বারির।আরো প্রয়োজন একটুখানি আরাম ও আয়েশের।চারপাশে খুঁজতে থাকে তখন জীবনটাকে নতুনভাবে সাজানোর উপায়-উপকরণ।অনেকে চলতি পথে পেয়ে যায় কাঙ্খিত সুখের দেখা।আবার অনেককে কষ্টের গ্লানি টেনেই কাটিয়ে দিতে হয় পূর্ণ একটা জীবন।সেই কষ্টে জর্জরিত জীবনটার ধারক যদি একজন পুরুষ হয় তাহলে তার সামান্য মানসিক ভারসাম্য থাকার কারণে সে হয়তো কোনভাবে এই জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারে।কিন্তু একটা মেয়ের কপালে যদি জুটে কষ্টে ঘেরা এমন জীবন?সারাজীবন যাকে বয়ে বেড়াতে হবে অন্যের পাপের সাজা? পিতৃ পরিচয় দিতে হয় নকল?এতকিছুর পর সেই মেয়েটা কীভাবে কাটাতে পারে আস্তো একটা জীবন যেখানে দেশ-সমাজ এমন কি আপন পরিবার পর্যন্ত মেয়ে জাতিকে বাকা চোখে দেখতে অভ্যন্ত!এমন অদ্ভূত পৃথিবীতে মেয়েটা কার কাছে বলবে জীবনের নির্মম সত্যগুলো? কার আচলে আশ্রয় নিলে সে পেতে পারে একটুখানি সান্ত্বনা? কার দেয়া সান্ত্বনা গ্রহণ করে জীবন যুদ্ধে পেতে পারে একটুখানি শক্তি ও সাহস? "নম্রতা প্রিয়দর্শিনী" নামের মেয়েকে উপন্যাসের মূল চরিত্র দিয়ে এমন অপ্রিয় সত্য ঘটনাগুলো ধারণ করেই এগিয়ে চলতে থাকে "নীল এই যে আমি"। সারসংক্ষেপ: নম্রতা প্রিয়দর্শিনী,বুঝ হবার পর জানতে পেরেছে সে যাকে বাবা বলে ডাকে তিনি তার প্রকৃত বাবা নন।প্রকৃত বাবা তার মাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।অবৈধ সম্পর্ক এবং তাদের পাপের ফল হয়েই জন্ম নম্রতার।এই ঘটনায় মা বিতাড়িত হয়েছেন বাবা বাড়ি থেকে। তখন এক মহৎ মানুষের আশ্রয় পেয়ে নিজের কাছে নম্রতাকে রাখতে সক্ষম হোন তার মা।আর নম্রতাকেও সেই ভদ্র লোকটি কখনো বুঝতে দেন নি তিনি যে তার প্রকৃত বাবা নন।কিন্তু তারপরো বুঝতে পারে নম্রতা পুরো ব্যাপারটা।আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকে উপন্যাস।একসময় নম্রতার মা পায় তার বাবার কোলে আশ্রয়।বাবা তার মেয়ের সব ভুল নিজ গুনে ক্ষমা করে কাছে টেনে নেন। বইয়ের শুরুটা হয় যেভাবে: " কাউকে না কাউকে বলা দরকার কথাটা।কাকে বলব, বুঝতে পারছি না।লিমাকে বলা যায়, রাকাকে বলা যায়, মনাকে বলা যায়।আবার বাবাকেও বলা যায়।কিন্তু বলতে হবে একজনকে।দুজনের কানে গেলে সেটা তিনজনের কানে যাবে,সেখান থেকে চার-পাঁচ-ছয়জন। শেষে অনেকজন। আমি এটা চাই না। বাবাকে অবশ্য নির্দ্বিধায় বলা যায়।বাবা শুনে বলবেন, এটা আর এমন কী।আমি বলব, এটা এমন কিছু নয়? বাবা আর কিছু বলবেন না।আমার হাত ধরে জানালার পাশে দাঁড়াবেন।আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলবেন,নম্রতা, এই যে আমরা কিছুটা সময় এখানে কাটালাম- এরই মধ্যে ত্রিশ লাখ গোলাপ ফুটেছে এই পৃথিবীতে, দক্ষিণ সাগরের বরফ গলেছে কয়েক হাজার টন,সাড়ে নয় হাজার শিশু চোখ মেলেছে মায়ের মুখ চেয়ে।ছলছল করে উঠবে বাবার দু চোখ।'এগুলো বড়, না তোমার এই ব্যাপারটা বড়? " এসব ভেবে মনের ভেতরকার কষ্টগুলো কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না নম্রতা।এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে নম্রতা ও তার জীবন। পাঠপক্রিয়া: ** নম্রতার জন্মের আগের কথা।তার মা ও একটি ছেলের মাঝে প্রেম ছিলো।দুজন দুজনকে ভালোবাসতো।এরই মাঝে একদিন মেয়েটি বুঝতে পারলো- শি ইজ ক্যারিং,তার পেটে কেউ একজন এসেছে।এটা ছেলেকে জানানোর পর সেই যে লাপাত্তা তারপর আর যোগাযোগ করে নি মেয়েটির সাথে।শেষে নিরুপায় হয়ে মেয়েটি পরিবারকে সব জানিয়ে দেয়।মেয়েটির সেই করুণ মুহুর্তে পরিবার তাকে মেনে না নিয়ে তাকে ঘর ছাড়া করে।সে তখন মাথা নিচু করে একা একা ঘর ছেড়ে চলে আসে।ভুল বললাম, সে তখন একা না আরো একজন এসেছিলো তার সঙ্গে।বিশ বছর আগের সেই সঙ্গিটিই হলো আজকের নম্রতা।নম্রতার মায়ের সেই কঠিন মুহুর্তে কে তার হাতটা ধরেছিলেন? কার আশ্রয় পেয়ে মা তার সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে সক্ষম হয়েছেন? কে সে মহৎ মানুষটা? কীভাবে কেটে গেল তাদের থেকে বিশটা বছর? এসবের রহস্য জানার জন্য হলেও আমাদের প্রবেশ করতে হবে "নীল এই যে আমি" উপন্যাসের গভীরে। ** এক বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে নম্রতা।দুটো দোয়েল ছাদের কিনারায়।তাকে দেখে দোয়েল উড়ে গেল।কী সুন্দর ডানা মেলা! অপলক তাকিয়ে দেখছে উড়ে যাবার দৃশ্য।তখন পাশের ছাদে মোটা ফ্রেম পরা একটা ছেলেকে দেখতে পায়। সেদিন থেকে তার সাথে পরিচয়।নম্রতা যেমন ভেতরে কষ্টের বাসা বেধে রেখেছে ছেলেটিরও একটিই অবস্থা।নানা রোগে আত্রান্ত ছেলেটি তাই জীবনের মায়া একেবারে ছেড়ে দিয়েছে।সেদিন থেকে ছাদে এলে ঐ কানা বাবার সাথে কথা বলে।কানা বাবা তার সম্পর্কে বলে নম্রতাকে।দুঃখির কষ্ট আরেক দুঃখিই ভাল করে উপলব্ধি করতে পারে।তাই কানা বাবার কষ্টগুলো নম্রতা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারতো,তার মনেও যে কষ্টের জোয়ার।ভালো লাগে ছেলেটার সাথে কথা বলতে।তার কথা শুনতে। অন্যদিকে ফেইসবুকের মাধ্যমে নম্রতার পরিচয় হয় পঞ্চাশ উর্ধ্ব বাবার বয়সী মাসুক আলতাফ নামে একজনের সাথে।তারপর অল্প দিনের ব্যবধানে ফোন নাম্বার আদান প্রদান, এবং দেখা করা।রিক্সায় চড়ে প্রথম দিন।তারপর থেকে বুড়ো লোকটা দিনে দিনে নম্রতার প্রতি দুর্বল হতে থাকে।নানা রকম পাগলামি করতে থাকে নম্রতার সাথে।এগিয়ে যায় গল্পের প্রেক্ষাপট।কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবনের সবকিছু মেয়েটি কার সাথে ভাগ করে নেয় তা জানার জন্য অবশ্যই পড়তে হবে পুরো উপন্যাসটা। ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি: উপন্যাসটি লেখা হয়েছে আমাদেরই আশেপাশে নিত্যদিন ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে।এদেশে, আমাদের এই সমাজে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে পিতৃপরিচয়হীন কত নবজাতকের জন্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত সেটা আমরা পত্রিকায় চোখ রাখলেই বুঝতে পারি।সেসব নিষ্পাপ শিশুর শেষে স্থান হয় ডাস্টবিনে কিংবা কোন নির্জন পথে।তাদের মাঝে কোনভাবে অনেকে বেচে গেলেও তারা কখনো বাবা মার পরিচয় দিতে পারে না এবং পিতা-মাতার পরিচয় ছাড়াই শুন্যে ভাসমান থেকে বেড়ে উঠতে থাকে সময়ের সাথে।সমাজে তাদেরকে আমরা জারজ সন্তান বলি।কিন্তু তাদের তো কোনো অপরাধ ছিলো তারপরো তাদেরই অন্যের পাপের পাশ্চাত্য দিতে হয় জীবনভর।তাদের দিকেই আমরা ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাই।এমনই পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠার কথা ছিলো নম্রতার কিন্তু ভাগ্যক্রমে দেবদূত হয়ে তাদের মা মেয়ের জীবনে আগমন ঘটে এক মহান পুরুষের।দেবদূত এসে তার মায়ের পাপ সবার আড়াল করে দেন।তাদের বংশের মান রক্ষা করেন মানুষের কাছে।তার হাত ধরেই তারা মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহস পায়।অবশেষে সবকিছু বুঝতে পেরে নম্রতার নানা নম্রতাদের কি গ্রহণ করেছে নাকি তারাও নিষ্ঠুর পৃথিবীর মত নিঠুরিয়া গান শুনিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেটা জানতে পাবেন পড়ার পরই।কিছু রহস্য আড়ালেই থাক যারা সমাকালীন উপন্যাসটা পড়তে পারেন নি তাদের কাছে।পরিশেষে বলতে পারি- সবমিলিয়ে সমাজের নির্মম বাস্তবতাগুলো উঠে এসেছে সুমন্ত আসলামের কলমে।সেসব বাস্তবতাগুলো জানতে এবং সমাজের অপ্রিয় সত্যগুলো জানার জন্য হলেও আমাদের সকলের পড়া দরকার "নীল এই যে আমি"।সবাইকে বইটা পড়ার আগাম নিমন্ত্রণ রইলো। #হ্যাপি রিডিং রেটিং- ৪.৫/৫
Fiction
0
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #অক্টোবর : ২৩ বই : আমি মৃণালিনী নই লেখক : হরিশংকর জলদাস ধরণ : আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস মূল্য : ৩২০টাকা  মৃণালিনী। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী তিনি। যশোরের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। তার বাবা ছিলেন ঠাকুর বাড়ির বাজার সরকার। সেই বাজার সরকারের মেয়ে থেকে হঠাৎ সে ঠাকুর বাড়িতে বউ হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে ঠাকুরবাড়ির সবচেয়ে সুদর্শন ছেলেটির সহধর্মিণী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাইশ বছর বয়সে মাত্র নয় বছর বয়সী ভবতারিণীর সাথে বিয়ে হয়। ভবতারিণীইই বটে। পরে রবিঠাকুর নিজেই মৃণালিনী নামটা দেন। মৃণালিনী নামটা কবিগুরু বেশ ভেবেচিন্তেই দিয়েছিলেন। “ মৃণালিনী মানে পদ্ম। রবি মানে সূর্য। ভোরবেলাকার সূর্যের আলো পদ্মের ওপর পড়লে  পদ্ম পূর্ণভাবে বিকশিত হয়। রবি ছাড়া মৃণালিনী যেমন অপ্রস্ফুটিত থাকে , তেমনি মৃণালিনীবিহীন রবিও অপূর্ণ।“ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনেও মৃণালিনী তেমনই একজন ছিলেন। যার সহচার্য রবীন্দ্রনাথ কে করেছে পূর্ণ। কিন্তু শুধু কি মৃণালিনীর একার কথায় এই বইতে এসেছে? না, তা নয়। আরো আছে কাদম্বরী, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী। আছে ঠাকুরবাড়িরর কাহিনী আর ভবতারিণীর মৃণালিনী হয়ে ওঠার সংগ্রাম। কেমন ছিল রবীন্দ্রনাথ আর মৃণালিনী দেবীর দাম্পত্যজীবন? যে রবীন্দ্রনাথ কে আমরা প্রেমময়, সৌন্দর্যময়তার কবি হিসেবে দেখি, তিনি কি আসলেই মৃণালিনী কে প্রেম দিয়েছিলেন? করেছিলেন আপন? নাকি মৃণালিনী ছিলেন কেমন বাইরের কেউ? রবীন্দ্রনাথের মন জুড়ে কি ছিল অন্য কারো স্থান? সেই সকল প্রশ্নের উত্তরের মলাট বন্দি প্রতিচ্ছবি এই উপন্যাসটি। পাঠ প্রতিক্রিয়া : মাত্র নয় বছর বয়সে ঠাকুর বাড়ির বউ হয়ে ওঠা মৃণালিনীর দীর্ঘ সংসার জীবনের হাসি কান্না, আনন্দ- বেদনা, কষ্ট, পাওয়া- না পাওয়ার কথাগুলো কে লেখক দুই মলাটে আটকে দিয়েছেন এই বইটিতে। কি অদ্ভুত সাবলীলতায় অকপটে সব স্বীকার করে গেলেন মৃণালিনী! লেখক ভিষণ সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন কবি পত্নীর মন অন্তরালের কাহিনী গুলোকে। অজস্র না বলা কথা, অনুভূতির স্তুপাকৃতির পাহাড় ভেঙে ঝর্ণার মত প্লাবিত করেছেন লেখক মৃণালিনীর ভাষ্যে। আজ কত কথা স্বীকার করতে আমাদেরও অস্বস্তি হয়। অথচ এই অনুভূতি গুলোই হয়ত এইভাবেই চাপা পড়েছিল মৃণালিনীর মনে। ঠাকুর বাড়ির কঠোর রীতিনীতি, জ্ঞানদা বৌদির ভবতারিণী কে মৃণালিনী করে তোলার অদম্য চেষ্টা পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে বিকশিত হয়েছে বইটির পাতায় পাতায়। বইটি পড়তে পড়তে কখন যে বইয়ের পাতায় পথ হারিয়েছি তা ভেবেই পাইনা। তবে শুধুই যে মুগ্ধ হয়েছি তা নয়। কখনো কখনো বা ক্ষোভ হয়েছে খুব, কষ্ট পেয়েছি মৃণালিনীর জন্য। আচ্ছা, কবি পত্নী কি সত্যিই কখনো ভবতারিণী থেকে মৃণালিনী হতে চেয়েছিলেন? বাবা মায়ের দেয়া নাম ভুলে থাকতে তার কষ্ট হয়নি? হয়েছে হয়ত। তাই এই বইয়ের প্রতি পাতা জুড়ে ভবতারিণীর নিঃশব্দ আর্তনাদ প্রকট হয়ে উঠেছে। বার বার মনে এসে বিঁধেছে তার একটি কথা, " আমি মৃণালিনী নই" লেখক যে বইটির পেছনে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে তা বোঝায় যায়। সে সময়ে ঠাকুর বাড়ির অবস্থা এতটাই কঠোর ছিল যে, কারো প্রকাশ্য ঘটনাও চৌকাঠ পেরুনোর সাহস করত না। সে ক্ষেত্রে মৃণালিনীর মনের কথা কারো জানার কথা নয়। কিন্তু লেখক তার অসাধারণ পারমাঙ্গতায় তার নিজস্ব অনুভূতির কিংবা কল্পনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন মৃণালিনীর মাধ্যমে। আর তা এতটাই জীবন্ত যে বিশ্বাস করতে সামান্য কষ্টও হয়না। তবে কখনো কখনো এটাও মনে হয়েছে, মৃণালিনীর আবেগের বহিঃ প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে কবি গুরু কে বড্ড বেশি নিষ্ঠুর বানিয়ে ফেলেছেন লেখক। মৃণালিনী কে তার কাছে বানিয়েছেন হাতের পুতুল মাত্র। যাকে নিয়ে ইচ্ছে মত খেলা করা যায়। কিন্তু আসলেই কি তিনি তেমনই ছিলেন? আজ শতবছর পরে ঠাকুরবাড়ির অন্দরের বাসিন্দাদের মনকুঠুরীর সেই অনুভূতি কে অবিস্কার করা অসম্ভব। কিন্তু বই জুড়ে ঠাকুরবাড়ির যে বর্ণনা উঠে এসেছে, তা স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই। হরিশংকর জলদাসের অনবদ্য লেখনশৈলীর প্রাচুর্যে সত্য আর কল্পনার মিশেলে " আমি মৃণালিনী নই " হয়ে উঠেছে সত্যিকার অর্থেই সুখ পাঠ্য।
Fiction
0
দেশ পাল্টাতে হবে এই চিন্তা প্রথমে আসে শিক্ষিত ছাত্র সমাজের।কারণ তাদের রক্ত গরম।তাদের মানসিকতা ঠিক থাকলে তারা অন্যায় দেখতে পারেনা।তেমনই চারজন বন্ধু।আনন্দ,সুদীপ,কল্যান আর একজন মেয়ে জয়িতা।চারজন সমাজের চাররকম পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছে।তারা স্বপ্ন দেখেছে নোংরামুক্ত ভারতবর্ষ গড়ার,স্বপ্ন দেখেছে দেশকে নাড়া দেয়ার। যেসব নোংরা সবাই দেখছে কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবে কারর কিছু করার থাকছে না তারা সেগুলোই সরাতে এগিয়ে আসলো।প্রথমে একশান নিলো। জাল ঔষধ তৈরির কারখানা,বড়লোকদের তথাকথিত 'আধুনিকতা',এবং পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টাকা খাওয়া মন্ত্রী। তারা একে একে যখন তিনটে মিশনই সফল করলো তখন দেখল পুরো ভারতবর্ষ পুলিশ তাদের পেছনে।তারা মরতে চায়না,তারা যে বিপ্লবে নেমেছে সেটা শেষ করতে চায়,সুতরাং তারা পালাতে লাগল।মন্ত্রী হত্যায় পুরো সরকার তাদের উপর ক্ষ্যাপা।অথচ তাদের জীবনও বাঁচাতে হবে।তারা কি পারবে পুরো ভারতবর্ষের পুলিশদের চোখে ধুলো দিতে? সমরেশ মজুমদার অনেক অনেক গভীর চিন্তাধারার লেখক।এই বই আবারো সেটা প্রমাণ করে দিল।প্রথমে তিনি দেখিয়েছেন পুরো একটা দেশকে পরিবর্তন করা এক বা দুজনের পক্ষে সম্ভব না।কিন্তু সবার সহযোগিতা বা একতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা সম্ভব।সমরেশ মজুমদার দেখিয়েছেন, অশিক্ষিত সভ্যতার আলো থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা মানুষদেরকেও আলোর পথে আনা যায়, তাহলে দেশকে আনা যাবেনা কেন?এছাড়া আমাদের দেশের মানুষদের চিন্তাধারাও এই বইতে প্রকাশ পেয়েছে। নিজের কথা বলি,পড়তে পড়তে কখন যে আনন্দদের দলের একজন হয়ে গিয়েছিলাম টেরই পাইনি।লাস্টে জয়িতার খবরটাতে সুদীপের চেয়ে আমার বেশি রাগ হয়েছে(থাক স্পয়লার না করি আর!!)আর কাহিনীও টের পাওয়া যাচ্ছিল না কি হবে।বইতে যখন আর মাত্র ১০/১৫ পেজ বাকি তখনও আপনি বলতে পারবেন না কাহিনী কোনদিকে যাবে।যাইহোক,অসাধারণ একটা বই।না পড়লে অনেক মিস করবেন। বইতে প্রচুর বানান ভুল ছিল।আর লোকাল প্রিন্ট বলে বাঁধানও ভালো না।এই প্রথম ইন্ডিয়ান প্রকাশনীদের উপর রাগ উঠেছে, কারণ তাদের ফন্ট এত্ত ছোট পড়াইই যায়না।আরও দুশ পেজ বেশি হোক,দাম একটু বেশি হোক সমস্যা কি?ও দেশের পাঠকরা কিছু বলেনা নাকি?আমাদের প্রকাশনীগুলো হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো কত যত্ন করর ছাপায়! এই অসাধারণ বইটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল!
Fiction
0
মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের অত্যন্ত এবং অত্যন্ত মজার অসাধারণ একটি কিশোর উপন্যাস "নাট বল্টু" । বল্টু । এক ক্ষুদে বৈজ্ঞানিকের নাম । তার গবেষণার বিষয়বস্তু আশেপাশের পরিবেশ । সে প্রশ্ন করতে ভালবাসে । সবকিছু নিয়ে । সে তার আম্মুর কাছ থেকে গল্প শুনতে ভালবাসে । বল্টুর আম্মু তাকে গল্পের বই থেকে গল্প পড়ে শুনাতে শুনাতে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল । বল্টু কেমন করে কেমন করে জানি বর্ণমালা না চিনেই পড়তে শিখে গেল এবং মোটা মোটা বই পড়ে শেষ করে ফেলল । আর সাথে তার বিচিত্র আর মজার সব গবেষণা তো আছেই । আর নান্টু হল বল্টুর সহযোগী । বল্টু যেমন মহান ক্ষুদে বৈজ্ঞানিক তেমনি নান্টু হল মহান ক্ষুদে দার্শনিক । ছোট্ট এই ছেলেটির চাল-চলন,কথা- বার্তা সবকিছুতেই একটা ভাবগম্ভীর দার্শনিকতার ছাপ ! বল্টু নানারকম এক্সেপেরিমেন্ট করে আর তার সহকারী হিসেবে থাকে নান্টু । নান্টু আবার কিছু বুঝতে না পারলে অনেক প্রশ্নও করে বল্টুকে । বল্টু তখন তাকে সেটা বুঝিয়ে দেয় ! তাদের এক্সপেরিমেন্টগুলো খুব মজার-মশা কেন ভূত হবে না,দেশে এত লোকের কাপড়ের অভাব অথচ মেয়েদের কেন এত লম্বা শাড়ি পড়তে হবে ! বল্টু আরো এক্সপেরিমেন্ট করে টিউব থেকে পেস্ট বের করার পর তা আবার ঢুকিয়ে ফেলতে চেষ্টা করে,ফ্যানের রিঙের সাথে শাড়ি পেঁচিয়ে তা দিয়ে ঝুলে থেকে অ্যাস্ট্রোনাট হবার চেষ্টা করে । শুধু কি তাই ! বল্টু নান্টুর বড় আপু মুনিয়াকে দিয়ে আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলিটিভিটি সংক্রান্ত একটা গবেষণাও করে ফেলে ! নান্টুর আমেরিকা থেকে আসা "সায়েন্টিস্ট" সবুজ ভাইয়াকেও বল্টু বোকা বানিয়ে দেয় । শেষে ছোটখাট একটা অ্যাডভেঞ্চার দিয়ে শেষ হয়েছে মজার এ কিশোর উপন্যাসটি । আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকে বলব,আমি জাফর ইকবাল স্যারের বলতে গেলে একজন মহা ভক্ত । তাঁর যে কয়টি উপন্যাসের কথা আজীবন আমি যত্ন করে মনে রেখে দেব তার মাঝে একটি উপন্যাস হল এই নাট বল্টু । আসলে এ উপন্যাসের পাতায় পাতায় যে কত মজা আর কত ভাল লাগার সমাহার তা ঠিক ভাষায় বলে বোঝানো যাবে না । বুঝতে হলে উপন্যাসটি কাউকে একটিবার হলেও পড়ে দেখতে হবে ।
Childrens-Book
2
সমাজতন্ত্র বুঝতে ও জানতে হলে বইটি পড়তেই হবে
Political
3
"লোকায়ত জীবনবোধ ছাপিয়ে অস্তিত্ববাদের গল্প : কালচক্র " দুটি প্রজন্মের প্রধান পার্থক্য তাদের জীবনবোধে। বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনবোধের পরিপক্বতা আসে। ঘাত-প্রতিঘাত, দুরন্ত কৈশোর থেকে আস্তে আস্তে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় টিকে থাকার লড়াই এ। আর এই টিকে থাকার লড়াই, এই অমোঘ অস্তিত্ববাদ "কালচক্র" র মুল উপজীব্য। আচ্ছা এই গল্পটা কার? কে এই গল্পের মুল চরিত্র? এ বই এর জন্য এপ্রশ্নের স্পেসিফিক জবাব দেয়া আসলে সম্ভব না। বইটার একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটি। এখানে গল্পটা নির্দিষ্ট কারো ওপর ফোকাস করা না। বরং গল্পটা নয়নতারা পাটকল এবং তার সংশ্লিষ্ট সবার। তবে বইটার প্রায় সবার ওপর কমবেশি প্রভাব রেখেছে আমজাদ প্রেসিডেন্ট। ভাসমান একটা মানুষ থেকে হয়ে ওঠেছে গ্রামের সবার ভাগ্য নির্ধাতা আর তারই অস্তিত্ববাদ আর প্রভাব রক্ষার জন্য কপটতা ছল-চাতুরীর আর এক বিপ্লবের গল্প কালচক্র। #কাহিনী_সংক্ষেপ__ মহুয়া পিসি আত্মহত্যা করলেন। আর তার মৃত্যুকে নিয়ে গুজব রটে গেল পুরো গ্রামময়। ছড়াতে থাকল নানা গল্প। বাজারের চায়ের স্টল থেকে মা মাসিদের আড্ডা পর্যন্ত ছড়াতে লাগল গল্পের দীর্ঘ শাখা। প্রভাবশালী এই ঠাকুরবাড়ির ভিত নড়িয়ে বিদায় নিলেন মহুয়া রেখে গেলেন সমালোচনা আর নিন্দা। জগলু রাতে চোরাই তেল আনতে গেল নৌকা করে। আর সেযাত্রায় ঘটল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। জাহাজ ফুটো হয়ে পুরো নদী ভরে গেল তেলে। ঘরে রুগ্ন ছেলে, মালিকের রোষ সব মিলিয়ে অকুল পাথারে পড়ল সে। তার ওপর ঘটনাটা যদি চাউর হয়ে যায় তাহলে তো থানা পুলিশের ঝামেলা। সোহেল, রনি, রকিব, মিলন এদের সাথে দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল পলাশের। কিন্তু সে তবুও স্বস্তি পাচ্ছে না। চন্দ্রলেখার সাথে পলাশের দেখা হচ্ছে না। ধর্ম, সামাজিকতা, লোকাচারের বাধা পেড়িয়ে তাদের গোপনে প্রেম হয়ে গেল কিভাবে যেন। সমাজে নিষিদ্ধ এই সম্পর্কের পরিণতি নেই জানা থাকলেও দুরন্ত কৈশোরের প্রথম প্রেম সে বাধা কি মানে? এদিকে পলাশের বাবা সোলেমান মিয়ার সংসারের প্রতি কোনো আসক্তি নেই। জীবনের অপ্রাপ্তি আর হতাশার থেকে মুক্তির পথ খোঁজে সে গানে। আর তাতে তার আয়ের সবটা চলে গেলেও তাতে দুঃখ হয় না তার। কিন্তু যখন প্রশ্নটা নিজের সন্তানের, যখন সময়টা বেতন না পেয়ে অগুনতি অভাবে টাল খাওয়ার? মিস্টি! পাড়ার মিস্টি বৌদি। ভরা যৌবন নিয়ে যখন চলে, হেসে কথা বলে তখন প্রতিটা চোখ যখন তাকে ছিড়ে খায় তখন সে ভালোবাসা খুঁজে মুগ্ধতা খোঁজে। পায়ও সেই নিখাদ মুগ্ধতা হারুনের নজরে। সেই মুগ্ধতা সে আশা করে তার স্বামীর কাছে, নেশায় বুঁদ হয়ে পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়া তার স্বামী বিষ্ণুর চোখে। কিন্তু সে তো....... নয়নতারা মিলে ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। লড়াকু, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার রাজুকে কে যেন আধমরা করে ফেলেছে মেরে। কিন্তু আসল দুর্ঘটনা শ্রমিকদের বেতন আটকে যাওয়া। পুরো গ্রামের মুল চালিকা শক্তি ধুম করে থেমে গেল। কারো কোনো আয় নেই সঞ্চয় নেই। চারিদিকে হাহাকার। আর সেই ক্রান্তিলগ্নে ছড়াতে লাগল মিল বন্ধ হবার খবর। তবে কি?...... ঠাকুরবাড়ির অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হতে থাকল। মহুয়া পিসি আর পরেশ কাকাকে নিয়ে ডালপালা ছড়ানো গল্প ছেকে ধরতে থাকল পুরো পরিবারকে আর সেই অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে পিছপা হবে না সিরাজ মোল্লা আর আমজাদ প্রেসিডেন্টের মত গুটিকতক প্রভাবশালী লোক। আমজাদ প্রেসিডেন্ট! নয়নতারা মিলের শ্রমিক সংঘের প্রেসিডেন্ট হলেও তার আয় বহুমুখী। কালোবাজারি, তেলের ব্যবসা থেকে শুরু করে সব অনৈতিক কাজের হোতা এই লোকটার স্বার্থে আঘাত হতে থাকল বারবার। রাজুর বেঁচে যাওয়া, তেলের জাহাজে ফুটো হওয়া, শ্রমিকদের অসন্তোষ। সব তার অস্তিত্বের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল একযোগে। বিপরীতে কেবল সে। একযুগের এই প্রভাব প্রতিপত্তি সে শেষ হয়ে যেতে দিতে পারে? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া_ * প্লট নির্বাচন : উপন্যাসের সবচেয়ে এহেম অংশ হলো প্লট নির্বাচন। প্রান্তিক জনজীবন আর প্রভাবশীল কতিপয় লোকের সাথে জীবনসংগ্রামে লড়ে যাওয়া মানুষের দ্বন্দ্ব, জীবনযাত্রা , কৈশোর, অনিশ্চিত ভালোবাসা আর তথোকথিক সামাজিকতাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসের প্লট নির্বাচিত হয়েছে। বইটার ভেতরকার থিম মুলত একশ্রেণীর লোকের অস্তিত্ববাদ। উপন্যাসের সব চরিত্র মুলত পাটকলের ওপর নির্ভরশীল আর পাটকলের কলকাঠি মুলত আমজাদ প্রেসিডেন্ট এর হাতে। এক কথায় পুরো উপন্যাস জুড়ে সব ঘটনার মুলে আমজাদ প্রেসিডেন্ট আর তার ক্ষমতায় টিকে থাকার আকাঙ্ক্ষা। পাশাপাশি গ্রাম্য লোকাচার, রাডার নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, ভালোবাসা, মানবিকতা সব মিলিয়ে পরিপুষ্টা একটা প্লট। লেখক উপন্যাসের প্লট নির্বাচনেই বাজিমাত করে দিয়েছেন। * সংলাপ ও বর্ণনা : বইটার লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো বইটা ন্যারেটিভ স্টাইলে লেখা। তার সাথে অল্প বিস্তর সংলাপের ব্যবহার ও আছে। বর্ণনা নির্ভর বইগুলোর ক্ষেত্রে পাঠকের হাপিয়ে ওঠার সুযোগ থাকে। আর তাছাড়া অতিবর্ণনা এবং অপ্রাসঙ্গিক বর্ণনা উপন্যাসকে কলুষিত করতে পারে। "কালচক্র" উপন্যাসের ক্ষেত্রে এবিষয়টা লেখক কাটিয়ে ওঠতে পেরেছেন। অযথা অপ্রাসঙ্গিক বর্ণনা ও আবেগ টেনে বইটাকে দীর্ঘায়িত করা হয়নি । তবে সংলাপের ক্ষেত্রে লেখক আরোকটু ফোকাস করতে পারতেন বলে আমার ধারণা। *যথার্থ শব্দচয়ন ও যথার্থ ভাষার ব্যবহার একটা উপন্যাসের বেশ গুরুত্ববাহী দিক। কালচক্রে আমরা একটা গ্রামীণ প্রেক্ষাপট পাচ্ছি। অতএব ভাষাগত দিকটা বেশ নজরে রাখা দরকার ছিল আর লেখক সেটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন। শব্দচয়ন বেশ ভালো ছিল। তবে বেশ কিছু শব্দ ঘুরে ফিরে বারবার আসছিল। যাহোক সব মিলিয়ে ভাষাগত সৌকর্য বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বইতে। * সাসপেন্স! সামাজিক উপন্যাস মুলত ফোকাস রাখে বর্ণনা রীতি আর প্রবাহের দিকে। কিন্তু তারপরও সাসপেন্স রাখাটাও বেশ জরুরি। বইটাতে প্রবাহ বেশ স্মুথ হলেও সাসপেন্স আর টুইস্টের অভাব বোধ করেছি। বেশ কিছু জায়গায় লেখক সাসপেন্স রাখতে চেয়েছেন যার পুরোটা ফলপ্রসু হয়নি এবং বেশ কিছু জায়গায় সেটা পূর্বেই অনুমান করা গেছে। হালকথা, পাঠক হিসেবে বইটার এদিকটা কিছুটা দুর্বল ছিল বলে আমি মনে করি। * চারিত্রিক স্বাতন্ত্র্য ও দ্বৈততা। ভালো মন্দ দুই ই মানবচরিত্রের বৈশিষ্ট্য, সুতরাং চারিত্রিক দ্বৈততা দেখাতে না পারলে, চরিত্রগুলো যদি কেবল একমুখী হয় তবে উপন্যাসের যথার্থতা হারাবার আশঙ্কা থাকে। এ বইটাতে চরিত্রগুলো স্বতন্ত্রভাবে প্রকাশিত আর দ্বৈততা ফলাও করে চোখে পড়ার মত। যেমন আমজাদ প্রেসিডেন্ট চরিত্রটা ক্ষমতালোভী, অস্তিত্ববাদী আবার যখন জগলুর ছেলের প্রসঙ্গ আসে তখন বেশ দরদী আবার কিছুক্ষণ পরেই শোষক ও নীচ চরিত্রের প্রতিচ্ছায়া। পলাশের বাবা একদিকে পুরোপুরিভাবে কেয়ারলেস আবার সন্তানবাৎসল্য তার কোনো অংশে কম নয়। মিস্টি মেয়েটা একদিকে যেমন ভালোবাসার কাঙাল তেমনি রক্ষণশীল। তেমনি প্রায় সবগুলো চরিত্রে এমন বিপরীত গুণের সমন্বয় বেশ উপভোগ্য। চরিত্র নির্মাণ ও গল্পের সাথে চরিত্রের সামঞ্জস্য রক্ষা করা উপন্যাসের একটা অন্যতম প্রধান দিক আর এ দিক বিবেচনায় বই পুরোপুরিভাবে সার্থক। *গল্পের সিকুয়েন্স : উপন্যাসকে আকর্ষণীয় করে তোলতে সিকুয়েন্স এর বিকল্প নেই। যেমন বই এর শুরুটা মহুয়া পিসির আত্মহত্যা দিয়ে হলেও মুহূর্তেই গল্পটা ফোকাস করেছে জগলুর তেল চুরির ঘটনায়। তারপর গল্পের শাখা ছড়িয়েছে পলাশ, পাটকল আর সেখানকার মানুষের মাঝে। গল্পগুলো সমান্তরালে চলতে থাকা সমাজের বিভিন্ন খন্ডের চিত্র দেখাতে দেখাতে অগ্রসর হয় সামনের দিকে। আর এই অনবদ্য সিকুয়েন্স বইটার সবচেয়ে স্ট্রং দিক। * নামকরণ, প্রচ্ছদ, প্রুফরিড : একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর একটা নির্দিষ্ট এলাকার কতিপয় লোকের জীবনের উৎকর্ষ অপকর্ষের চক্রাকারে আবর্তের মাধ্যমে বইটার নামকরণের সার্থকতা নিহিত। প্রচ্ছদের নদীর ছবি আর একটা হলুদাভ ব্যকগ্রাউন্ড একটা বিষণ্ন ভাব ফুটিয়ে তুলেছে। আবার নৌকার পালের রঙটা যেন বিষণ্নতার মাঝে আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। বইটার মুল থিম জীবনযাত্রা, আশা আকাঙ্ক্ষা, অপ্রাপ্তি, অস্তিত্ববাদ। এ বিষয়টা প্রচ্ছদে বেশ ভালো করেই প্রস্ফুটিত। বইটার প্রুফ নিয়ে আমি কিছুটা আশাহত, কিছু বানানে ভুল নজরে এসেছে। কিছু জায়গাতে লাইন ব্রেকের দরুন শব্দ ভেঙ্গে গেছে। এবিষয়গুলো নজরে রাখা উচিত ছিল। কিছু সমান্তরাল ঘটনার আর চরিত্রের মিথস্ক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সুক্ষ্ম জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলা একজন উপন্যাসিকের কর্তব্য। মানছি যেটা হালযুগের অনেক লেখকই পারেন না আর তার জন্যেই একগাদা সাদাকালো শব্দের আর পেজের বুনন কেবল লেখা হয়েই থেকে যায় । এ বইতে মুলত জীবনযাত্রার প্রতি নজর দিয়ে ছোট ছোট অনেকগুলো গল্পের সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। বিস্তারিত প্রেক্ষাপটে এতগুলো চরিত্রের সন্নিবেশ বর্তমান লেখকদের মাঝে বেশ বিরল। অস্তিত্ববাদ নিয়ে বর্তমানে কিছু নতুন লেখক লিখছেন। যেমন "সুঁয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন" বইতেও অস্তিত্ববাদ নিয়ে বলা হলেও তাতে বেশ কিছু চারিত্রিক ত্রুটি চোখে পড়েছে। সমসাময়িক বইগুলোতে চরিত্র নির্মাণ ও যোগসুত্র স্থাপনে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে (অন্তত আমার তাই ধারণা) সে হিসেবে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা লেখক কালচক্রে কাটিয়ে ওঠতে পেরেছেন। হালকথা যাদের সামাজিক উপ্যাখ্যানে রচিত বই পছন্দ তারা "কালচক্র" পড়ে অন্তত নিরাশ হবেন না। #প্রিয়_উক্তি মায়া জিনিসটা বাল্যবন্ধুর মতো। একবার সামনে এসে দাঁড়ালে তাকে আর এড়ানো যায় না। ভীষণ আবেগে জাপটে ধরতে হয়।
Fiction
0
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ জলপুত্র লেখকঃ হরিশংকর জলদাস প্রকাশনীঃমাওলা ব্রাদার্স ধরনঃসমকানীন উপন্যাস মূল্যঃ২২৫ টাকা( রকমারি মূল্যঃ১৬৯ টাকা) . "জলপুত্র"উপন্যাসের স্থানিক পটভূমি চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গা গ্রামের জেলেপল্লীটি। এখানকার অধিবাসীরা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। চরিত্রগুলোর মুখে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা বসানা ছিল। . ‘জলপুত্র’ শুরু হয়েছে ভুবনেশ্বরীকে নিয়ে যে কিনা অপেক্ষায় আছে পূর্বরাতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া তার স্বামী চন্দ্রমণির। উনিশ বছরের ভুবনেশ্বরীর সে অপেক্ষা যেন শেষ হওয়ার নয়। অপেক্ষায় অপেক্ষায় অনেক বছর কেটে গেল। . উত্তর পতেঙ্গার জেলেপাড়াটি ভদ্র লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন। ভদ্রপল্লি থেকে মাইল দুয়েক দূরে বঙ্গোপসাগরের কোলে পাড়াটি নিরুক্ত হয়ে শুয়ে আছে।হিন্দু ও মুসলিম পাড়াগুলো এই জেলেপাড়াটি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে।এখানে প্রাণ আছে, প্রাণবান পরিবেশ নেই। জীনব আছে, জীবনায়নের সুস্থির বাতাবরণ নেই।পড়াশোনা ছেলেদের বিলাসিতা, আর মেয়েরা জন্মেছে ভাঁত রাঁধার জন্য আর বছর বছর সন্তান বিয়োবার জন্য। দশ-বারো বছর পেরোলেই ছেলেকে যেতে হয় সমুদ্র বা খালে বিলে মাছ ধরতে। এমনি জেলে পরিবারের ছেলে ছিল এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভুবেনশ্বরীর স্বামী চন্দ্রমণি। যে কিনা গল্পের শুরুতেই সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। . এর জন্যই ভুবেনশ্বরী প্রতিজ্ঞা করে যে সে তার ছেলেকে পড়াশোনা করাবে।হিন্দু মুসলমানদের সন্তানের মতো সেও শিক্ষিত হয়ে বাপের অপমৃত্যুরর দাগ ভুবেনশ্বরীর হৃদয় থেকে মুছে দিবে। . ভুবনেশ্বরীর একমাত্র পুত্র গঙ্গা ক্লাস নাইনে পড়ে এখন। জেলেপল্লীর মানুষ যে শিক্ষিত হবার নয়, ব্যারিস্টার হবার নয় সে সত্য গঙ্গা উপলব্ধি করেছে তার শৈশব থেকেই। বাবা চন্দ্রমণি প্রকৃতির আঘাত সহ্য করতে পারেনি, কিন্তু গঙ্গা পেরেছে। বারবার পেরেছে। প্রকৃতির পর তার প্রধান শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে তার সমাজের মানুষ। নিজ সম্প্রদায়ের সকলকে সুসংগঠিত করে নায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে ঐক্যমত্য তৈরি করেছিল গঙ্গা। . জেলেসমাজের ভেতর থেকে জেগে ওঠা মানুষ গঙ্গা। যে জেলেরা বুঝেছিল শুক্কুর বা শশিভূষণের কাছ থেকে দাদন নিলেও সুদ থেকে নিজেদের মাছ রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধতা এবং শিক্ষার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আসতে পারে মুক্তি। শিক্ষিত রামগোলাম ঐক্যবদ্ধ করার সে প্রচেষ্টাতেই নিজেকে নিয়োজিত করেছিল। কিন্তু সমাজ তো নীতি দিয়ে চলে না। আর চলে না বলেই জেলেপাড়ার সকল মানুষ সব সময়ই একইভাবে ঐক্যবদ্ধও থাকে না। বারবার ভাঙচুরের ভেতর দিয়ে সে ঐক্যকে ধরে রাখার প্রয়াস। গঙ্গার নিজের পরিবারের মানুষদের কাছ থেকেও আসে আঘাত। দুঃসম্পর্কের ভাই এর দাবিদার গোলকবিহারীর কাছ থেকে সে আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে গঙ্গা আর ওর মা ভুবনেশ্বরীর সহায় সম্পদ। পাড়ার মানুষদের সামাজিক প্রচেষ্টায় রক্ষা পায় তারা। শশিভুষণ- শুক্কুরের যে ষড়যন্ত্রে গঙ্গাপদকে হত্যা করার কথা চিন্তা করা হয় সেখানে কিন্তু হাজির জেলে- প্রতিনিধি গোপালও। গোপাল যে মিরজাফর তা সকলেই জানে, সে নিজেও কম জানে না। গোপালই বিভীষণের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে গঙ্গার কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেয়। . আর শিক্ষা প্রসঙ্গটি জলপুত্রতে গুরুত্বের সাথে আলোচিত। সে আলোর প্রতিভূ দীনদয়াল – সন্দীপে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর এসে উঠেছে পতেঙ্গার জেলেপাড়ায়। ‘আঁই লেয়াপড়া জানি। আন্নাগো পোলাপাইনেরে আঁই পড়াশোনা শিখায়্যুম’ (পৃ ৫৩) বলতেই জেলেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাকে পরিবারসহ গ্রামে আশ্রয় দেওয়ার। সে-আশ্রয়ের কারণে গ্রামের ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলোও আসছিল দরকার মতো। কিন্তু ‘জেলেসন্তানদের শিক্ষিত হওয়ার সকল স্বপ্ন-সাধ ধূলিসাৎ হয়ে গেল’ দীনদয়ালের চারিত্রিক কারণে। . পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ অদ্বৈত মল্লাবর্মণের (১৯১৪-১৯৫১) পরে দীর্ঘদিন আর কোনো জলপুত্র কলম হাতে তুলে নেননি। অদ্বৈতর মৃত্যুর ৪৯ বছর পর হরিশংকর জলদাস লিখতে শুরু করলেন। জেলেদের নিয়েই লেখালেখি শুরু করলেন তিনি। অদ্বৈত নদীলগ্ন মানুষদের জীবনকতা লিখে গেলেন, আর হরিশংকর লিখছেন সমুদ্রসংগ্রামী জেলেদের জীবনালেখ্য, তবে নদীমগ্ন মানুষজনও তাঁর কথাসহিত্যে অবহেলিত নয়। হরিশংকর জলদাসের ‘জলপুত্র’ উপন্যাসটি জেলেদের নিয়েই লেখা। ব্যক্তিক্রম এই যে—এটি সমুদ্রভিত্তিক জেলেজীবননির্ভর উপন্যাস। হরিশংকর জলদাসের ‘জলপুত্র’ উপন্যাসে জেলেসম্প্রদায়ের অপ্রাপ্তির বেদনা, প্রাপ্তির উল্লাস, শোষণের হাহাকার, অশিক্ষার অন্ধকার—সবই অসাধারণ বিশ্বস্ততার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে।সুন্দর একটি বই।পড়ে দেখতে পারেন। হাপি রিডিং.....
Fiction
0
প্যারাসাইকোলজি :যুগল মানব লেখক : হাসান তারেখ চৌধুরী ধরন : প্যারাসাইকোলজি পৃষ্ঠা: ১৪৩ প্রকাশনী : ভাষাচিএ মূল্য : ২০৮ টাকা (রকমারি) #রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা কাহীনি সংক্ষেপ : নিঃসঙ্গ যুবক রাকিব। স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল তার জীবন। কিন্তু জীবন তো সহজ পথে চলে না, তার সবসময় মনে হয় জটিলতাই পছন্দ। হঠ্যাৎ করেই পাল্টে গেল তার জীবন। স্বপ্নের জগতে বার বার দেখা পায় এক নারীর কে সে ? সহসাই তার জীবনে আগমন হলো আরো দু'জন নারীর। জীবনে শুরু হল এক নতুন অধ্যায়। জীবনে ঘটতে থাকে পরাবাস্তব সব ঘটনা আর এর সমাধান জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেখ তুখড় মেধাবী এক নিউরোসাইন্টিষ্ট। মস্তিষ্কের অতিপাকৃত সব ঘটনার রহস্যের সমাধান করেন এই নারী। কি আছে রাকিবের জীবনে? কিসের স্বপ্নে সে মেতে থাকে? পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্যারাসাইকোলজি নিয়ে আমার পড়া এইটি প্রথম বই। বাংলা সাহিত্যে আমার জানামতে প্যারাসাইকোলজি নিয়ে তেমন কোন বই নেই। বই ধরন অনেকটা মিসির আলী টাইপ এর মত। তবে মিসির আলীর থেকেও এই বই আছে পরাবাস্তব রিয়েলিটি নিয়ে আলোচনা। বইটি পড়ে ভালো না লাগর কোন কারণ নেই, কারণ বাংলা সাহিত্যে এ ধরনের লেখা নেই বললেই চলে। বই পড়ার সময় প্রতি মুহূর্ত থ্রিল এর মাঝে ছিলাম। এক কথায় অসাধারণ। লেখক হাসান তারেক চৌধুরী প্যারাসাইকোলজি নিয়ে আরো একটি বই আছে তার নাম দ্বিখন্ডিত।
Fiction
0
বড় আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু হতাশ হলাম। নতুন তেমন কোন তথ্যই নেই। বাজারে থাকা বিভিন্ন জনের লেখা বই থেকে তথ্য নিয়ে এখানে এলোমেলো ভাবে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা করতে যেয়ে কোথাও কোথাও দু'তিন পৃষ্ঠা পর্যন্ত হুবহু মেরে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। লেখক ভদ্রলোক পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন। আশা করেছিলাম, উনি বোধকরি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কিছু কথা এখানে বলবেন। কিন্তু সেরকম কিছু পাইনি। বইটির সম্পাদনার মানও খুবই নিম্ন। ফলে একই তথ্য একাধিক জায়গায় চলে এসেছে, ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। নেতিবাচক কথা বলতে হলো বলে দুঃখিত। আসলে একটু বেশি প্রত্যাশাটা ছিল বলেই হয়তো লিখলাম।
Political
3
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০১৮ বইঃ সাগরতলে ষাট হাজার মাইল লেখকঃ জুলভার্ন প্রকাশনীঃ পান্ঞ্জেরী ধরনঃ অনুবাদ রূপান্তরঃ ফিরোজ আশরাফ মুল্যঃ ১০০ টাকা এই পৃথিবীতে জানা অজানা কতো তথ্যই না ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে,, মাঝে মাঝে হয়তো কিছু কিছু তথ্যের মীমাংসা হয়,, আবার মাঝে মাঝে কিছু তথ্যের মীমাংসা হয়না,, তবে পরিসংখ্যান ঘাটতে গেলে দেখা যায় এই অজানা তথ্যের সংখ্যাটাই বেশী।।। তবে বেশীরভাগ সময় অজানা তথ্য ঘাটতে গিয়েই আবিস্কার হয় নতুনত্বের।।।।।। ভ্রমন পিপাসু মানুষের সংখ্যা তো অনেক,, কারো পছন্দ পাহাড়ে,, কারো জঙ্গলে আবার কারো সাগরে,, এই সাগরের ভ্রমন গুলো কি শুধুই আনন্দদায়ক হয়?? নাকি মাঝে মাঝে এর সাথে যোগ হয় নতুন কোন রহস্য?? সাগরে নাম না জানা শত শত প্রানী উদ্ভিদের বসবাস,, আর সবসময়ের মতো বিভিন্ন জাহাজ বানিজ্যের জন্য,গবেষনার জন্য পাড়ি জমাচ্ছে কত শত জাহাজ।। কিন্তু হঠাৎ করে কলরব শুরু হয়ে গেল, মাঝে মাঝে ই নাকি দেখা যাচ্ছে কিছু একটা ভাসমান বস্তু। কেউ ই ঠাহর করতে পারছেনা,কি হতে পারে, একেক জনের একেক কথা।। মাছ,,নাকি অন্য কোন সামুদ্রিক প্রানী?? নাকি অপেক্ষা করছে নতুন কিছু!!!!! অবশেষে রহস্যের জট খোলার জন্য গভীর সমুদ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো কাঙ্ক্ষিত জাহাজকে।। সকল প্রস্তুতি শেষ করে পাড়ি জমালো জাহাজ টি ।। সারা সমুদ্র চষে বেড়াতে বেড়াতে যখন তারা ক্লান্ত,,আশা যখন ছেড়েই দিয়েছে হঠাত ই চোখে পড়লো তাদের সেই বর্ননায় মিল রাখা ভাসমান বস্তু, লক্ষ করলো কয়েক মাইল দুরেই তার অবস্থান।। একে একে শুরু হলো আক্রমনের পালা, কিন্তু কোন জিনিষই যে দমাতে পারছেনা,, এর মাঝেই আঘাত প্রাপ্ত হলো জাহাজ টি,, আর মুহহুর্তের মধ্যেই ডুবে যেতে থাকলো জাহাজের ক্যাপ্টেন সহকর্মীরা।। শেষ পর্যন্ত কি তাহলে ডুবেই গেল সবাই?? রহস্যের সমাধান কি কেউ ই করতে পারলোনা?? নাকি সৃষ্টি হয়েছিল নতুন বিস্ময়ের?? কি ছিলো মুলত সেই ভাসমান বস্তু?? এই সকল উত্তর পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই পড়তে হবে বইটি।। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ বইটি যখন পড়া শুরু করেছি, সাগর সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসছে, ভালো লাগছে অনেক,, যারা ভ্রমন পিপাসু আছেন, আশা করি খারাপ লাগবেনা।।
Childrens-Book
2
শওকত ওসমান বাংলাদেশের একজন চিন্তক, লেখক ও কথাসাহিত্যিক। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তিনি ছিলেন এক উচ্চকিত কণ্ঠের অধিকারী। "জাহান্নম হইতে বিদায়" উপন্যাস হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত রচনা করা প্রথম উপন্যাস । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এদেশে যে একটা গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছিল তা লেখক এই উপন্যাসে বর্ণনা করেছেন । এক প্রবীণ শিক্ষক মনে হাজার দুঃখ -বেদনা- অশ্রু নিয়ে ভেসে চলছে এখান থেকে সেখানে ; না সে পাকিস্তানীদের সামনে মাথা উচু করে দাড়াতে পারছে , না সে সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছে কারণ বিবেক আর বয়স । কতো জনই তো চেয়েছিল এদেশ পাকিস্তানের হোক, পরে যখন নিজের চোখে দেখেছে পাকিস্তানী সৈন্যদের আসল রূপ তখন তারা নিজেরাই অনুশোচনায় আল্লাহ'র কাছে কতো হাজার বার চেয়েছে আর যারা নিজের ভুল বুঝেনি তারা তো রাজাকার - আলবদর হয়েছে । তাদের ছিল অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র আর জানোয়ারের মতো হিংস্র মন , অপরদিকে আমাদের ছিল মনোবল আর দেশ মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা তবুও আমরা স্বাধীন হয়েছি । "জাহান্নম হইতে বিদায়" উপন্যাসের নাম যা উপন্যাসটাও তা , বাকী সব কিছু তো বইটা পড়লে আপনারা বুঝতেই পারবেন । বই সংগ্রহ করে পড়ুন, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের অস্থিরতা অতি সামান্য অর্থাৎ চুল পরিমাণ হলেও অনুভব করতে পারবেন । শুভ হোক আপনার পাঠ্য কার্যক্রম।
Fiction
0
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তোমাকে ছড়িয়ে দেব, ইতিহাসের পাতা থেকে ফিকে হতে দেবনা আমার প্রিয় নেতাকে...
Political
3
বিবিএ প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ, ক্যারিয়ার স্টার্টআপ, স্টার্টআপ উদ্যোক্তা, সাবজেক্ট চয়েস, আত্মউন্নয়ন, সেরা বই ও মুভির তালিকা, স্টুডেন্ট লাইফে আয় করার দিকনির্দেশনাসহ আইবিএ-এর শিক্ষার্থী লেখক একজন মেন্টর হিসেবে ছোট ভাইবোনদের জন্যে এই বইটি লিখেছেন। বিবিএ-এর শিক্ষার্থী হিসেবে "বিবিএ লাইফ" একটি কারণে পড়তে পারেন প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা, আর তা হচ্ছে যে বিষয় বা সমস্যায় চতুর্থ বর্ষে সমাধান করবেন, তা প্রথম বর্ষে জেনে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে সুন্দরভাবে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে পারবেন এবং এই বইটি পড়লে আপনি একজন ভালো মেন্টরের পরামর্শ পাবেন।
Motivational
6
নিঃসন্দেহে লেখক তার একান্ত মধু ছড়িয়েছেন। আমি তার ভক্ত হলেও সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখতে চাইনা। সমালোচনা: টুশকি নামের মেয়েঠি ক্লাস টেন- এ অধ্যয়নরত। কিন্তু লেখক তাকে দেখিয়েছেন যেন সে দশ বৎসরের বাচ্চা। তার বাচ্যভঙ্গী, চিন্তা-ধারা ঠিক দশম শ্রেণীর মেয়ের মতন নয় বরং দশ বৎসর বয়সী মনে হয়েছে। আবেগমন্ডিত পঙক্তি: "শফিক আজ তিন মাস হলো দেশের বাহিরে গুনিয়া পাইলাম উহা অবিকল ৯১ দিন। ইহা দেখিয়া আমি গলা ছাড়িয়া কাঁদিলাম। বাড়ির সকলেই খুব অবাক হইয়াছে। আমি যে ভেতরে এতটা দুর্বল, এটা আগে কেহ জানিত না। আজ সকলেই জানিল।_আবদুল মতিন" সবচেয়ে প্রিয় বাক্যসমষ্টি: "শাস্রমতে, অশ্রুর উৎপত্তি চোখের কোনো এক গ্রন্থি থেকে। ইহা নিছকই বিজ্ঞান। জগতে বিজ্ঞান হচ্ছে সব চাইতে মামুলি বিষয়। একের সাথে এক মিলাইয়া দুই বানানোতেই তাহার যতসব কেরদানি। এর বাইরে বিজ্ঞান আমাদের কতটুকুই বা দিতে পারে।" আক্ষেপ: লেখক গল্পটাকে আরও সাজাতে পারতেন। আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস ছিলো প্রয়োগের জন্য। কিন্তু যেহেতু তিনি স্বাধীন গল্প বলেন, এজন্য দোষ দেওয়াটা শ্রেয় হবে না। প্রশংসা: উৎসর্গ মঞ্চে কাব্য ভাষ্য দেখে অবাক হয়েছি। লেখক ভাল কবিতাও বলতে পারেন। তবে ফারিয়া তিলাত লোবাকে আমিও পছন্দ করে ফেলেছি। তাই এই কবিতাটি তার জন্য। " বয়স মানে শরীর গুনে, আমার জন্য নয়, বাইশ বৎসর হয়েও তোমায় পরাণ চায়। বরষাঘন কালো সন্ধ্যায় হাটবো মোরা সাথে, মনের কথা মনেই রবে, চোখে কথা কবে।"
Fiction
0
কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কর্তৃক ২০০২ সালে গুজরাটে কয়েক মাস ব্যাপী চলা মুসলিম গণহত্যা ও মর্মান্তিক নির্যাতনের এক অনন্য দলিল গুজরাট ফাইলস। দীর্ঘ আট মাস যাবত এক অনুসন্ধানের পিছনে ছুটে বেড়িয়েছেন সাংবাদিক রানা আইয়ুব। এই জীবনবাজী রাখা অনুসন্ধানের ফল “গুজরাট ফাইলস”। অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু ছিল গুজরাট দাঙ্গা, সাজানো বন্দুকযুদ্ধে নিরীহ মুসলিমদেরকে নির্মমভাবে হত্যা এবং গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হরেন পান্ডিয়ার হত্যার রহস্য। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সমূহ সম্ভাবনা সত্ত্বেও এই অনুসন্ধান অব্যহত রেখে তিনি উদর ফুঁড়ে বের করে এনেছেন অসংখ্য বিস্ময়কর তথ্য । বই - গুজরাট ফাইলস লেখক - রানা আইয়ুব
Political
3
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০১৮ উপন্যাস:মেঘের ছায়া লেখক: হুমায়ুন আহমেদ প্রকাশনাঃপ্রতীক ধরনঃসমকালীন মুল্যঃ১৫০ টাকা হুমায়ুন আহমেদের লেখনী নিয়ে আমার নতুন করে কিছু বলার নেই, তার সবগুলো সৃষ্ট চরিত্রের মধ্যে আমি সবসময় "শুভ্র" কে ধরি পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে। এলোমেলো চুলে, মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া ছেলেটি হচ্ছে শুভ্র যার পড়াশোনা বাদে বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে খুব কম হিতাহিত জ্ঞান রয়েছে। ইয়াজউদ্দীন সাহেবের একমাত্র ছেলে হলো শুভ্র। ছেলে কি করে না করে, কোথায় যায়, কাদের সাথে মেলামেশা করে এগুলোর খুটিনাটি খবর রাখে শুভ্রর বাবা। অন্যদিকে মা রেহানা বেগমেরও ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই, সবকিছুতেই যেন একটু বাড়াবাড়ি রকমের খেয়াল করে তিনি। শুভ্র সাধারনত বন্ধুদের সাথে খুব কম মেলামেশা করে। তাই তার বন্ধুর সংখ্যা একেবারে কম। এই কম সংখ্যক বন্ধুর মধ্যেই একজনের নাম হলো জাহেদ এবং অন্যজনের নাম হলো তাহের।। দুই বন্ধুই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। এদিকে জাহেদ নিজেই থাকে মামার বাড়িতে সেখানে প্রতিনিয়ত তাকে তাচ্ছিল্য করা হয়ে থাকে, এর মধ্যেই ডে আবার পছন্দের মানুষ টা কে বিয়ে করে ফেলে। জহেদের কও আদৌ জায়গা হবে এখন মামার বাড়িতে নাকি নতুন বউ নিয়ে শুরু হবে তার অন্যরকম জীবন?? সেই জীবনে কি শুভ্র বন্ধু হিসেবে কোন উপকার করতে পারবে?? অন্যদিকে আরেক বন্ধু তাহের সে মৃত। কিন্তু তাহেরের বাবা শুভ্রকে নিজের ছেলের মতোই পছন্দ করে বলে শুভ্রর তাহেরের বাড়িতে প্রায় আসা যাওয়া হয়। এদিকে শুভ্র পছন্দ করে তাহেরের বড় আপা কে।। কি হবে এই সম্পর্কের পরিনতি!!!!! আর শুভ্রর পরিবার কি এতো সহজে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটা কে আপন করে নেবে?? আর তাহেরের বড় বোন নিতু কি, মতামত দিবে এই ব্যাপারে!!!! এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে পড়তে হবে শুভ্র সিরিজের "মেঘের ছায়া" বইটি। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ শুভ্র চরিত্রটি বরাবরের মতোই আমার পছন্দের, যখন ই সিরিজের বইগুলো নিয়ে বসি, মুগ্ধহয়ে পড়তে থাকি।
Fiction
0
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ দ্যা নেকেড ফেস লেখকঃ শিডনি সিলডন রুপান্তরঃ অনীশ দাস অপু প্রকাশনীঃঅনিন্দ্য প্রকাশনী ধরনঃ থ্রিলার উপন্যাস মূল্যঃ১৮০ টাকা (রকমারি মূল্যঃ ১১৭ টাকা) . নিউইয়র্কের বিখ্যাত সাইকোঅ্যানালিস্ট জাড স্টিভেন্স। কলেজে শেষবর্ষের ছাত্র থাকাকালীন বিয়ে করেছিলেন জাড।বিয়ের প্রথম ক্রিসমাসের রাতে সন্তানসম্ভবা এলিজাবেথ গাড়ি- দূর্ঘটনায় মারা যায়। শোক ভুলতে কাজের মধ্যে ডুব দেন জাড, শীঘ্রি হয়ে হয়ে ওঠেন দেশের খ্যাতিমান সাইকোঅ্যানালিস্ট। . বিভিন্ন স্বভাবের অদ্ভূত সব রোগীর আগমন তার কাছে। লেসিংটন এভিন্যুতে লম্বা, রোগাপাতলা এক লোক, গায়ে হলদে বর্ষাতি, ক্রিসমাসের ভিড়ের সঙ্গে মিশে আপন মনে হেঁটে চলছিল। হলুদ বর্ষাতি পরিহিত ওই ব্যক্তিকে মানুষের পদচারণায় মুখর রাস্তায় পিঠে ছুরি মেরে খুন করা হলো। জানা গেলো, সে ছিলো ড. জাড স্টিভেন্সেরই রোগী। তার থেরাপি চলছিলো এবং প্রায় শেষের দিকে চলেও এসেছিলো। হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের ডিটেকটিভ ম্যাকগ্রিভি ও অ্যাঞ্জেলি তদন্তে নামলো। স্বাভাবিক ভাবেই ড. স্টিভেন্সের নাম উচ্চারিত হলো। আর তদন্তের স্বার্থে তার চেম্বারে হানা দিলো ডিটেক্টিভদ্বয়। তাদের প্রাথমিক প্রশ্ন উত্তরের পরের দিন খুন হলেন জাডের সেক্রেটারি ক্যারল রবার্টস। কারা যেনো ওর শরীর অ্যাসিড দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। খুনটাও হয়েছে জাডের অফিসে। এই দুটি খুনই জাডের জীবন বদলে দিলো। কিন্তু ম্যাকগ্রিভি তো আসল খুনী বাদ দিয়ে জাডের পিছনেই লেগে আছেন, কোন পুরোনো শত্রুতার জের ধরে নয়তো? এ্যান্জোলি যথাসম্ভব সাহায্য করতে চাইছে জাডকে, কিন্তু পারবে কি? জাডকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হলো। প্রতিবারেই ভাগ্য জোরে বেঁচে গেল জাড, কিন্তু কতদিন? প্রাইভেট ডিটেকটিভ মুডির সাহায্য নিলেন জাড কিন্তু তাকেও হত্যা করা হলো নির্মমভাবে। প্রাইভেট ডিটেকটিভ মুডি মারা যাওয়ার আগে জাডকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিলেন কে থাকে মারতে চায় মুডি তার নামও জানিয়েছিলেন কিন্ত তারপর ও ম্যাকগ্রিভি বা আঞ্জেলি তাকে ধরতে পারেননি। #ডন ভিলটন এই নামই ফোনে জাডকে জানিয়েছিলেন মুডি। কে এই ডন ভিলটন? কেনইবা খুন করতে চায় সে জাডকে? এই নামের রহস্য আর খুনের রহস্য জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে টান টান উত্তেজনায় ভরা এই বইটি। . #লেখক_পরিচিতিঃ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক সিডনি শেলডন। তাঁর প্রথম বই ‘দ্য নেকেড ফেস’ -কে নিউইয়র্ক টাইমস অভিহিত করেছিল ’ বছরের সেরা রহস্যোপন্যাস’ বলে। শেলডন যে ১৮টি থ্রিলার রচনা করেছেন তার প্রতিটি পেয়েছে ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলারের মর্যাদা। তাঁর সবচেয়ে হিট রোমাঞ্চোপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- দ্য আদার সাইড অভ মিডনাইট, ব্লাড লাইন, রেজ অভ এঞ্জেলস, ইফ টুমরো কামস, দ্য ডুমসাযে কন্সপিরেসি, মাস্টার অব দ্য গেম, দ্য বেস্ট লেইড গ্ল্যানস, মোমোরিজ অভ মিডনাইট ইত্যাদি। তার লেখা দ্য নেকেড ফেস বইটি বাংলাতে অনুবাদ করে প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে । বইটি অনুবাদ করেছেন অনীশ দাস অপু । প্রকাশিত হয় অনিন্দ্য প্রকাশনী থেকে । বইটির প্রকাশক আফজাল হোসেন । . #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ আমার পড়া সিডনি শিলডনের প্রথম রহস্য উপন্যাস দ্যা নেকেড ফেস দুর্দান্ত রহসময়তায় ভরা একটি বই।প্রতিটি পেজেই টান টান উত্তেজনা ছিল। অসম্ভব ভাল লেগেছে পড়তে। আপনারা ও পড়ে দেখুন আশা করি ভাল লাগবে হাপি রিডিং....
Thriller
1
আন্দালিব রাশদী তার ‘একাত্তরের দলিল’ বইটিতে প্রথমেই জানাচ্ছেন, একাত্তরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশেৱ পক্ষেই ছিল। এই অধ্যায়ে আরও রয়েছে ইয়াহিয়ার অঙ্গীকার সংঘর্ষের দিকে, বিবিসি লন্ডনের বিশ্বসংবাদ, পিআইএর উড়োজহোজে সৈন্য আনা হচ্ছে শুরু হলো গুলিবর্ষণ, জনগণের বিরুদ্ধে মার্কিং অস্ত্র, বাংলাদেশের রক্ত, নির্মম গণহত্যার সাক্ষী। বইটিতে আরও রয়েছে - পাকিস্তানি সংবাদপত্রে একাত্তরের মার্চ , ডন ও পাকিস্তান টাইমসের দুটি প্রতিবেদন, মুজিব্ যে কোন ভালো কথা বা পরামর্শ শুনতে আগ্রহী, ১২০ দিনের বাধ্যবাধকতা তুলে দিন, পি'পলস পার্টি অধিবেশনে যোগ দেবে না, একমাত্র সমাধান- আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। লেখকের গবেষণায় উঠে এসেছে দুঃসময়ের বন্ধু এডওয়ার্ড কেনেডির কথা। একাত্তরে বার্তাসংস্থাৱ তিনটি সংবাদ, ‘তার অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড হবে’ ডের স্পিগেল, ‘পিপলস পার্টির রাজাকার সম্রাসের কথা স্বীকার করছেন’ রয়টার ‘পাকিস্তানী নেতারা শেখের মুক্তি দাবি করেছেন’ রয়টার, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বক্ষণে। হেনরি কিসিঞ্জারের মেমোরেণ্ডাম, সম্ভাব্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, কিসিঞ্জারকে নিয়ে বাংলাদেশ আলোচনা, নিক্সনের জন্য হেনরি কিসিঞ্জারের স্মারক, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান সিচুয়েশন রিপোর্ট, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সিআইএ-এর গোয়েন্দা স্মারক, নিক্সনও ইয়াহিয়াকে রক্ষাকরতে পারলেন না, পূর্ব পাকিস্তানে উপনির্বানে , যুদ্ধদিনের বন্ধু সিডনি , স্বাধীনতা যুদ্ধের আরও কয়েকটি দলিল -সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল, পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থায় বিরাজ করছে! ছেলে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি তো?, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর চিঠি, রাজাকার সহায়তার চিঠি, দিস ইজ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। নিউজউইকের খবর থেকে একাংশ তুলে দেওয়া হল- ‘পিআই'এ-র উড়োজাহাজে সৈন্য আনা হচ্ছে’। ২৯ মার্চ ১৯৭১ নিউজউইকে প্রকাশিত আগের সপ্তাহের প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো- ইয়াহিয়ার সঙ্গে যখন সমঝোতার আলোচনা চলছে মুজিব ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে এলেন এবং বেরোবার সময় ইয়াহিয়াকে বললেন, ‘আপনার সঙ্গে আলাপ করে লাভ নেই ৷ আপনি আলোচনার আসল জায়গায় আসছেন না ৷’ ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনার ভেতরের খবর প্রকাশিত না হওয়ায় ভয়ার্ত গুজব ঢাকাকে ছেয়ে ফেলেছে৷ বিমানযোগে যারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসছেন তারা জানাচ্ছেন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে এখানকার সেনাশক্তি আরও জোরদার করতে সৈন্য আনা হচ্ছে৷ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তাদের বেসামরিক পেশোকে আড়াল করেও আনা হচ্ছে৷ বোমা ও গোলাগুলির ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে ৷.. “
War
5
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কিছু ঘটনা, কিছু মানুষের দ্বি-মুখী আচরণের মাধ্যমে পুরো সমাজকে ব্যাঙ্গ করেছেন ছফা এই উপন্যাসে। সাধারণ কিছু স্যাটায়ার আছে। তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, তার রাজনীতি আর মানুষগুলোর দ্বিচারিতা যেন সামনে চলে আসলো। আমরা ছাত্রদেরগুলো দেখতে পাই, প্রশাসনিক বা শিক্ষকদের গুলো হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হয় না, এখানে সেগুলো সামনে আনা হলো।দুর্দান্ত স্যাটেয়ার! ছফা এদেশের পাবলিক বিশববিদযালয়ের অনদরমহলের খবর তুলে ধরেছেন কোনরকম রাখঢাক ছাড়াই। উনার সেন্স অব হিউমার অতুলনীয়! ১৯৯৫ সালে লেখা হলেও দুঃখজনকভাবে এখনো সমান প্রাসঙ্গিক। আহমদ ছফার যতগুলো উপন্যাস এ পর্যন্ত পড়েছি এটা সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে...আমার একটা ফ্রেন্ড এর পশুপাখিদের প্রতি অনেক মমতা দেখে একজন স্যার এই বইটি পড়তে সাজেস্ট করেছিলেন...তখন আমি ভেবেছিলাম এটার কাহিনী কিছুটা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর 'মহেশ' গল্পের মত হবে হয়তো...কিন্তু যখন পড়তে শুরু করলাম দেখলাম উপন্যাসের পুরো কাহিনী একজন উপাচার্যকে ঘিরে...পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন ঘটনা, অভ্যন্তরীন চিত্র, ছাত্র রাজনীতি ইত্যাদি অনেক সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে...নিঃসন্দেহে পড়তে অনেক ভালো লাগছিল কিন্তু গাভীর সাথে কোন যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছিলাম না... অপূর্ব সুন্দর উজ্জ্বল লাল রং এর গরুটি...ছিপ নৌকার মত লম্বা শরীর...মাঝে মাঝে ডোরাকাটা দাগ...সবচেয়ে সুন্দর তার চোখ দুটি...যদি দুটি পাখা থাকত, তা হলে আকাশের দিকে উড়াল দিত...অসহায় এবং কৌতূহলী দৃষ্টি দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে থাকে...এতো সুন্দর একটি প্রাণীর এমন করুণ পরিণতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না...সমাপ্তিটা আসলেই অনেক বেশি মর্মস্পর্শী ছিল।
Fiction
0
২০০৫ সালে সপ্তম শ্রেণীতে উঠে সাপ্তাহিক বই পড়া ক্লাসে, পড়ার লিস্টে সেদিন পেয়েছিলাম বইটা। উল্লেখ্য, ‘ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম’ পেয়েছিলাম প্রথম সপ্তাহে যেটা তখন কিছুই বুঝিনি। তাই বলবো ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ কিংবা ‘ঈশপের গল্প সমগ্রের’ পর প্রথম পুর্নাঙ্গ উপন্যাস/ গল্পের বই ছিল আমার ক্ষেত্রে এই ‘অবনীল’। পুরোপুরি কিশোরী দিনের অনুভূতি নিয়ে লিখছি রিভিউ। স্পয়লার বাদ দিয়ে মূলকথাঃ কিছু মানুষ জোর করে নিজেদের মাঝে বিবর্তন এনেছে নিজেদের আরো শক্তিশালী অর প্রখর বুদ্ধিমান করে তোলার জন্য; যারা ‘নীল মানব’ নামেই পরিচিত সাধারণ মানব জাতির কাছে। মানুষের নিজেদের মধ্যেই কত জাতি-উপজাতি নিয়ে দ্বন্দ্ব আর ‘নীল মানব’ তো মোটামুটি রাক্ষস-খোক্কসের পর্যায়ের উপাধি পেলো সাধারণ মানুষের কাছে। তাদেরই একদল বন্দীকে নিয়ে মহাকাশ-যাত্রায় এক মিশনে যাচ্ছিল রিরা নামের এক মেয়ে আর তার গবেষক দল, যারা কিনা সাধারণ মানুষ। ঘটনাক্রমে, নানা দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির শিকার হয়ে রিরা এক নীলমানবকে কাছ থেকে দেখার এবং জানার সুযোগ পেলো। আর কি সুন্দর কাকতালীয় ব্যাপার! এই নীলমানব ছিল একজন পুরুষ; যাকে নাকি সুদর্শন বলা যেত যদি গায়ের রঙ কিছুটা নিলাভ না হতো। নাহ! এই সুদর্শন পুরুষ যার নাম পরে জানা গেলো কুশান, সেও অবশ্য এক জায়গায় বলেছিল রিরাকে সুন্দরী বলে চালিয়ে দেয়া যেত যদি তার গায়ের রঙ পঁচা আঙ্গুরের মতো না হতো। তা বেশ যাচ্ছিল প্লট আর কেমিস্ট্রি। যাইহোক, ভালোই রেসিসমের মাঝখানে দুই ভিন্ন রকমের মানুষ যখন একইসাথে দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়ে যায় তখন হয়তো একটা পরিচয়ই কাজ করে তাদের মাঝে - ‘মানুষ’ পরিচয়, আর কিছু না। এবং বেশ চেনাজানা হয়ে যাবার পর যখন অপরজনকে নিজেদের কাছে আর রাক্ষস কিংবা ডাইনি মনে হলো না, তখন তারা নতুন করে ভাবতে শিখলো; কারা ঢোকাচ্ছে এসব ভেদাভেদ? এবং কেন? কিন্তু, কিচ্ছু আসে যায় না, কারা ঢোকাচ্ছে সেসব জেনে। কারণ, জীবনের শেষ প্রান্তে হয়তো তারা। আর শেষ মুহূর্তে যতটুকু পারে তারা জীবনকে উপভোগ করে নিতে চায়। (উপভোগের ঘটনায় অবশ্যই লেখকের প্রিয় তিতির পাখির ঝলসানো কাবাব আর অঙ্গুরের রস ছিল। :p ) আমার মতামতঃ ১। কিশোরী দিনগুলোতে আসলেই কোন সমালোচনা ছিল না এই গল্পের। এই লেখক আর সমরেশ আমার চিন্তাভাবনার জগতের জাল বিস্তারের সহায়ক। ২। এখন পিডিএফে চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম একটু, সেই সুদর্শন নীলমানবের নাম মনে করতে পারছিলাম না বলে। (কিভাবে আমার প্রথম ক্রাশের নাম ভুলে গেলাম বুঝলাম না যদিও। ) ৩। লেখকের এখনকার লেখাগুলোর তুলনায় ডায়ালগ বেশ ভালো। যদিও আমার প্রায় জায়গায় আগেও মনে হতো সরাসরি ইংরেজি ডাবিং করা হচ্ছে ডায়ালগগুলোকে। মানে, ‘দিস’, ‘দ্যাট’কে বাংলায় সাধারণত উহ্য রাখলেই আমার কাছে ভালো লাগে। কিন্তু লেখকের সব সাই-ফাইএ, সর্বনামের ব্যবহার আমার কাছে অড লাগতো। এবং বাক্যগুলোকে ইংরেজিতে চিন্তা করে বাংলায় অনুবাদ করে লিখেছেন মনে হতো। কিশোর উপন্যাসগুলোতে আবার এমনটা লাগেনি। কিন্তু, এই অড লাগাটাও সয়ে গিয়েছিলো লেখকের অন্য অনেক বই পড়তে পড়তে। ৪। যারা লেখকের অন্য অনেক সাই-ফাই পড়েছেন, তাদের কাছে একই গোছের লাগতে পারে। ৫। ট্র্যাজেডি এলার্ট! যাদের ফিকশন ভালো লাগে তাদের পড়তে ভালো লাগবে। আমার রেটিংঃ যখন প্রথম পড়ছি তখন ৫/৫ এখন পড়লেঃ ৩.৫/৫ (শুধু মাত্র, এখন আর তেমন ছোট ফিকশন পড়িনা বলে)
Science-Fiction
4
আবহমান গ্রাম বাংলার একটি একান্নবর্তী পরিবারের জীবনগাথাকে পরম মমতায় সাজিয়ে লেখক জহির রায়হান "হাজার বছর ধরে" উপন্যাসটিকে কালজয়ী উপন্যাসে পরিণত করেছেন।তার ‘হাজার এই বছর ধরে’ উপন্যাসটি হয়ে থাকবে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অসামান্য দলিল। ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে তিনি একটি পরিবারের মাধ্যমে গ্রাম-বাংলার শত শত পরিবারের বাস্তবতা, জীবনধারা আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেনে।এই উপন্যাসে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য পুরুষদের মাঠে কঠিন পরিশ্রমের পাশাপাশি মেয়েরাও ঘরে চাটাই বোনা,শাপলা তোলা,ধান ভাঙ্গার কাজ করে সংসারে উন্নতির আপ্রান চেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন।লেখক এই উপন্যাসে বাল্যবিবাহের দিকটা ভাল করে তুলে ধরেছেন তার সাথে বহু বিবাহ ছিল নিত্যনৈমন্ত ব্যাপার।তখনকার সমাজে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও নারীদের মুল্যহীনতার কথা ভাল ভাবে ফুটে উঠেছে এমনকি বউ পিটিয়ে মারা তেমন কোন কঠিন কাজ ছিল না।উপন্যাসটিতে বাড়ির কর্তা বুড়ো মকবুলের প্রানচঞ্চল কিশোরী স্ত্রী টুনির সাথে মন্তুর অসামান্য প্রেমের কাহিনী এবং তাদের হৃদয় ভাঙ্গনের কথা তুলে ধরেছেন।তখনকার শিক্ষা ব্যাবস্থা ও চিকিৎসা ব্যাবস্থার করুন অবস্থা ফুটে উঠেছে উপন্যাসটিতে।কুসংস্কারে অন্ধ বিশ্বাস ও মহামারি সুনিখুত ভাবে ফুটে উঠেছে।বিনোদনের মাধ্যম বলতে রাতে পুথিপাঠ ও বাজারে সার্কাসের সুনিপুণ দৃষ্টান্ত। আম্বিয়াকে বলা যায় গ্রামের অপ্রতিরোধ্য,স্বাবলম্বী এক নারীর প্রতীক ।উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মাঝে আছে মকবুল বুড়ো,গনু মোল্লা,আবুল,ফকিরের মা,মন্তু , আম্বিয়া,টুনি মোটকথা আবহমানকাল ধরে চলে আসা বাঙালি জীবনের প্রায় প্রতিটি দিকই ঔপন্যাসিক অন্তত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।মকবুলের মৃত্যুর পর সময়ের পরিবর্তনে সে কর্তা মন্তু হয় একে একে পূরনো মুখ গুলো হারিয়ে যেতে থাকে নতুন মুখের সৃষ্টি হয় কিন্তু তাদের ঐতিহ্য ঠিকই থাকে এবং থাকবে এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলবে আবহমান বাংলা তারই প্রতিচ্ছবি জহির রায়হান অত্যান্ত সুন্দর ও নিখুত ভাবে এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন।বাংলার ইতিহাসে অন্যতম সেরা সাহিত্যকৃতী এবং আমার পড়া সেরা ঊপন্যাস বলে মনে করি।
Fiction
0
আমার মত যারা ৯০'র দশকে জন্ম তারা আমরা অনেকেই ১৯৭৫ এর নভেম্বরের অভ্যুত্থান সম্পর্কে বেশি একটা জানি। এই বইটা সেই সকল পাঠককে সহায়তা করবে আশা করি।
Political
3
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল জাসদ। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি আ. স. ম আব্দুর রব এর হাত ধরে জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। পিছনে থেকে ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো ক্ষমতায় যেতে পারে নি দলটি। জাসদের প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ার সাথে লেখক জড়িত থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বইটি থেকে। লেখার মান অনেক ভালো এবং ঘটনাপ্রবাহ সাবলীল।
Political
3