label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
rg
ইতিহাস বাংলাদেশের রাজনীতি'র কি সাক্ষ্য দেয়!!! ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নে জুলফিকার আলী ভুট্টো বেকে বসলেন। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তারপর সেই বিতর্ক চলে গেল আলোচনার টেবিলে। আলোচনা চললো একেবারে শেষ সময় পর্যন্ত। ভুট্টো সাহেব ঢাকায় আসলেন। ইয়াহিয়া সাহেব একবার ভুট্টো সাহেবের সঙ্গে বসেন, একবার বঙ্গবন্ধু'র সাথে বসেন। তারপর ২৪শে মার্চ ভুট্টো সাহেব করাচী ফেরত গেলেন। ইয়াহিয়া সাহেব টিক্কা খানকে কিছু ফাইফরমায়েস দিয়ে নিজেও রাওয়ালপিন্ডি উড়ে গেলেন। তারপর ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে চললো অপারেশান সার্সলাইট। নিরস্ত্র বাঙালি'র উপর সশস্ত্র পাক সেনাদের নির্মম দানবীয় শক্তি প্রয়োগ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হল। পাক সেনাদের ভাষায়- 'বিগ ফিস হ্যাজ বিন কট'। তারপর শুরু হল মুক্তির লড়াই। সেই লড়াইটি ছিল গোটা বাঙালি'র কাছে সুস্পষ্ট। পাকিস্তানের তাবেদারী আর মানা হবে না। পূর্ব-বাঙলার সম্পদ আর পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে দেওয়া হবে না। সমারিক বাহিনী কর্তৃক দেশ শাসন আর নয়। বাঙালি সেদিন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে যার যা কিছু ছিল, তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার, যেখানে জনগণের প্রতিনিধিরাই দেশ শাসন করবে। ন্যায় নীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে। অসাম্প্রদায়িক একটি সমাজ গড়ে উঠবে। নিজেদের ভাতের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত হবে এবং বাঙালি মাথা উঁচু করে বিশ্বে নিজেদের সম্পূর্ণ আলাদা একটি জাতিস্বত্তায় প্রমাণ করবে- বাঙালি একটি শান্তিপ্রিয় জাতি। কিন্তু আমাদের চরম দুর্ভাগ্য আমাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ছিল? বাঙালিকে আর অন্তত ভীনদেশী কারো বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে না। নিজেদের মানুষ দিয়েই নিজেরা একটি সুন্দর সমাজ গঠনে মনোযোগী হব। যেখানে হাসি-কান্না-দুঃখ-আনন্দ ভাগাভাগি করব। শোষণ জিনিসটির সত্যিকার অর্থেই অবসান ঘটবে এটাই ছিল মূলকথা। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে শুরু করে পাকিস্তানি ভূত তাড়ানোর পর নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে এবার একটি আওয়ামী জুজু নতুন কায়দায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। যা কিছু ভোগ দখল, লুটপাট, চুরি-চামারি, ব্যাংক ডাকাতি, সম্পত্তি দখল, খাসজমি দখল, চর দখল, সব আওয়ামী লোকজন শুরু করলো। তাহলে কি দীর্ঘ নয় মাসের সীমাহীন দুর্ভোগের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে আমরা একটি আওয়ামী লুটপাট চেয়েছিলাম? আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী এই লুটপাটের ঘটনা এড়িয়ে যাবার একটি প্রবণতা দেখি। লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতার পর তো এমন লুটপাটের কথা ছিল না। সেই লুটপাটের প্রতি সমর্থন দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন এনে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হল। বাকশালের গঠনতন্ত্রে খুব ভালো ভালো কিছু কথা আছে। দেশ স্বাধীনের পরেই সংবিধানে সেটি স্থান পেলে হয়তো অন্যরকম হতে পারতো!! কারণ, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের পরম বন্ধু রাষ্ট্র ছিল। কিন্তু টানা চার বছর একটি সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত তলাবিহীন ঝুড়ি'র সবকিছু লুটপাট হবার পরে কেন ওই বাকশাল-আদর্শের কথাটি আসলো? তাহলে কি আওয়ামী চোরদের একটি পাকাপাকি অবস্থান গড়ে তোলার নামই ছিল স্বাধীনতা? মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু সে কারণে হয়নি। তাই ওই চাপিয়ে দেওয়া ব্যবস্থাও টিকলো না। তাসের ঘরের মত রাতারাতি ভেঙে গেল! তারপর কি হল? দেশ আরো রসাতলে গেল। খোন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের একটি অংশ নিয়েই চক্রান্ত করলেন। এই মোশতাক সাহেব স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নানান ধরনের দেন দরবার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আটকে দিতে চেয়েছিলেন। অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তিনি বড় ভাই আমেরিকা ও চীনের পরামর্শ নিয়ে একটি সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন। এক সময় তাকে সেই ষড়যন্ত্র থেকে সরিয়ে দিয়ে তাজউদ্দিন সাহেব দক্ষতার সঙ্গেই যুদ্ধে নের্তৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে কি এমন ঘটেছিল যে, সেই মোশতাক সাহেব আবার বঙ্গবন্ধু'র প্রিয়ভাজনে পরিনত হলেন? আর তাজউদ্দিন সাহেবকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল? তাহলে কি স্বয়ং তাজউদ্দিন সাহেবকে বঙ্গবন্ধু নের্তৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন? আমরা সেই আড়ালের রহস্যময় বিষয়গুলোর কিছুই জানি না। কিন্তু তাজউদ্দিন সাহেব কখনোই বেঈমানী করেননি। বেঈমানী করলেন স্বয়ং মোশতাক সাহেব ও তার গংরা। তারা ধ্বংসস্থূপ থেকে জেগে উঠতে যাওয়া একটি দেশের নেতাকে সপরিবারে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করলেন। সেই থেকে বাংলাদেশ নের্তৃত্বশূণ্য একটি দেশ। যে জাতি নিজেরাই নিজেদের নেতাকে হত্যা করে সে জাতি আর কখনো নেতা পায় না। এটাই ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা। তারপর থলের বেড়াল বেড়িয়ে পড়লো। জেনারেল জিয়া এসে পাকিস্তানের পরাজিত শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশটাকে আবার একটি পাকিস্তান বানানোর পায়তারা শুরু করলেন। তিনি গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে উড়িয় আনলেন। শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানালেন। আর বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রক্ষা করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাশ করলেন। আর চুরি-চামারি-দখল-লুটপাট এগুলো নতুনভাবে শুরু হল। এবার পরাজিত শক্তির দেশের সবকিছু দখল করার পালা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো আন্দোলনই অহিংস ছিল না। স্বাধীনতার পরপর আওয়ামী দস্যুদের হাতেও নিরীহ মানুষ অকাতরে খুন হয়েছে। আওয়ামী দুঃশাসন হঠিয়ে জেনারেল জিয়াও ক্ষমতা পাকাপাকি করতে অসংখ্য মানুষ খুন করেছেন। যাকেই শত্রু মনে করেছেন তাকেই হত্যা করেছেন। অথচ এই পাল্টাপাল্টি খুনের রাজনীতি করার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সেরকম কোনো আস্ফালনের কথা কোথাও ছিল না। জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর কঠোর হাতে দমন পীড়ন শুরু করলেন। জামায়াত-রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের প্রতিষ্ঠা ও লালন পালন করার খায়েস নিয়ে একটি পাকিস্তানী কায়দার রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে নতুন করে জেনারেল জিয়া একটি আধিপত্যবাদী স্বৈরশাসন শুরু করলেন। এভাবে জেনারেল জিয়া'র হাত ধরেই জেনারেল এরশাদের আগমন। রক্তপাত কিন্তু বন্ধ হল না। বন্ধ হল না রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি দখল কিংম্বা লুটপাট-চুরি-চামারি। বরং গোটা দেশে একটি নব্য আইউব খানের স্বৈরশাসন শুরু হল। গণতন্ত্র ভূ-লুণ্ঠিত হল। মানুষের ভাতের অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। মানুষের নিরাপদ বসবাসের অভয়বাণী কোথায় যেনো হারিয়ে গেল। পাশাপাশি শুরু হল স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন। সেই আন্দোলনও অহিংস ছিল না। রক্তপাত আর নিরীহ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে তখন একটি নতুন আন্দোলন শুরু হল বটে। যতো বেশি লাশ পড়ে আন্দোলন ততো বেশি বেগবান হয়। মানুষের প্রাণ হল আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ঘুটি। নূর হোসেন কেন প্রাণ দিয়েছিল আজও সে প্রশ্নের মিমাংসা হয়নি। ডাক্তার মিলন কেন প্রাণ দিলেন আজও সে প্রশ্নের সমাধান হয়নি। তারপর কি হল, ছাত্রসমাজ গর্জে উঠলো। ফলাফল, স্বৈরাচার এরশাদ সাহেবকে বিদায় নিতে হল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে তখন একটি নতুন আশা জেগেছিল বটে, এবার হয়তো দেশ একটি সুনির্দিষ্ট পথেই অগ্রসর হবে। কিন্তু স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর কি হল? ক্ষমতায় আসলেন খালেদা জিয়া। যার এক পা সামরিক ব্যারাকে আর আরেক পা জামায়াতে ইসলামী'র ঘরে। তিনি আবার নতুন করে আরেক ধরনের জুজু'র ভয় দেখাতে শুরু করলেন। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে যে রূপরেখা সেটি রাতারাতি ভুলে গিয়ে শুরু করলেন বিরোধী দল নিপীড়নের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ তখন কি করলো? তারা সংসদ বর্জন করে রাজপথের আন্দোলনকে যুক্তিযুক্ত মনে করলো। নিরীহ মানুষের লাশের সংখ্যা দিয়ে রাজনীতি'র আন্দোলনকে চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা চালালো আওয়ামী লীগ। অহিংস আন্দোলনের বদলে আবারো শুরু হল সহিংস আন্দোলন। সেই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কথা নাই। নিজেরা ক্ষমতায় গেলে কিভাবে আখের গোছানো হবে তার আয়োজন কেবল সেখানে। ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বিদায় ঘণ্টা বাজলো। ক্ষমতায় আসলো আবারো আওয়ামী লীগ। এবার শেখ হাসিনার শাসন শুরু হল। দীর্ঘ একুশ বছর যারা রাষ্ট্রীয় চুরি-চামারি-দখল ভোগ থেকে দূরে ছিল, তারা কিভাবে সেই পুরান অভ্যাস ভুলে যায়? রাতারাতি আবার শুরু হল আওয়ামী ভোগ দখলের পালা। এবার ছাত্রলীগ সেই লুটপাট দখলে নতুন মাত্রা যোগ করলো। যুবলীগ সেই দখলে নতুন আইডিয়া আনলো। রাস্তা বাঁকাকরণ-সোজাকরণ প্রকল্প। একবার রাস্তার মাঝখানের আইল্যান্ড বাঁকা করা হবে। সেই কন্ট্রাক পাবে যুবলীগ-ছাত্রলীগ। কয়দিন পর সেই আইল্যান্ড আবার সোজাকরণ প্রকল্পে আবারো কন্ট্রাক পাবে যুবলীগ-ছাত্রলীগ। এই হল সহজ সরল উন্নয়ন!! পাশাপাশি কি হল? ফেনীতে জয়নাল হাজারী বাহিনী গড়ে উঠলো। নারায়নগঞ্জে শামীম ওসমান বাহিনী গড়ে উঠলো। মিরপুরে কামাল বাহিনী গড়ে উঠলো। কুস্টিয়ায় কুমিল্লায় ফরিদপুরে যশোরে রাজশাহী পাবনায় খুলনায় বরিশালে গোটা দেশের নানান প্রান্তে নানান আওয়ামী বাহিনী গড়ে উঠলো। এসব বাহিনীর দখল লুটপাট আর নির্যাতন দিয়ে ষেখ হাসিনার দুঃশাসন তরান্বিত হতে লাগলো। তারপর ২০০১ সালে নির্বাচনের পর কি হল? এবার খালেদা জিয়া পুনরায় ক্ষমতায় আসলেন। এবার জামায়াত শিবির সরাসরি ক্ষমতার অংশ। তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। তারা কি আর বসে থাকতে পারে? এবার সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘরে একাত্তরের মতো হামলা শুরু হল। জ্বালাও পোড়াও খুন ধর্ষণ শুরু হল। তখন আওয়ামী লীগের নেতারা নিরাপদ দূরত্বে গুহায় অবস্থান করলেন। শুরু হল প্রিন্স তারেক জিয়ার নের্তৃত্বে একটি হাওয়া ভবনের উদয় কেতন। খালেদা জিয়া শুধু নামমাত্র দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু হাওয়া ভবন থেকে প্রিন্স তারেক জিয়া দেশের সকল নীতি নির্ধারণ করেন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের কথা সেখানে উচ্চারিত হয় না। সেখানে উচ্চারিত হতে থাকলো বিরোধীদলকে নিশ্চিন্থ করার পায়তারা। আবির্ভূত হতে থাকলো বাংলা ভাই। বোমা-গ্রেনেড জ্বালাও পোড়াও শুরু হল দেশের সবখানে। কোথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? দেশ তো পাকিস্তানের চেয়েও একধাপ এগিয়ে তখন মডারেট মুসলিম দেশে পরিনত হল!! তারপর আবার কি হল? ওয়ান ইলেভেন। ওয়ান ইলেভেন মানে কি? ওয়ান মানে এক, আর ইলেভেন মানে এগারো। সেনাবাহিনীর সমর্থণে একটি সরকার থাকবে যাতে এগারো জন সদস্য কাজ করবে। তাদের প্রধান কাজ কি ছিল? দেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু তারা কি করলো? সে ইতিহাস সবাই জানেন। তারপর তারা দুই বছর পরে একটি নির্বাচন আয়োজন করে বিদায় নিল। ক্ষমতা পেলেন আবার শেখ হাসিনা। এবার আর ৯৬'র মত নড়বড়ে সরকার নয়। এবার একেবারে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার। ফু দিলেই সংবিধান ভেঙে ছাড়খাড় হয়ে যাবে! তাদের মাথায় এবার কি আসলো? কিছু পুরানো কাসুন্দি এবার তারা ঘাটা শুরু করলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। খুব ভালো কথা। সেই বিচারটি স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে কেন করেননি? কেন সেই বিচার সংবিধান সংশোধন করে ১৯৭৩ সালে শুরু করে মাঝপথে বিরতি দিলেন? কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তখন বন্ধ করে লাহোরে ইসলামিক সম্মেলনে যোগ দিলেন? ভুট্টো সাহেবের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার জন্যে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন বন্ধ হয়েছিল? এই প্রশ্নে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোন সম্মানজনক জবাব দিতে পারেনি। ওই বিচারটি তো কনটিনিউ হবার কথা ছিল। ওই বিচারের কথাটি স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের সময় তোলা হল না কেন? ওই বিচারের কথাটি খালেদা জিয়ার নব্বই পরবর্তী প্রথম সরকারের সময় আওয়ামী লীগ কেন সংসদে উত্থাপন করলো না? এমনকি ৯৬' সালে আওয়ামী লীগ কেন ওই বিচারের কথা মুখ ফসকে একবারও বললো না নিজেরা ক্ষমতায় থাকার সময়ে? কারণ, তখন গোলাম আজমের আশির্বাদ নেবার জন্য শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার মধ্যে প্রতিযোগীতা চলছিল। সেই প্রতিযোগিতায় খালেদা জিয়া বিজয়ী হয়েছিল বেট। সে কথাও মানলাম। কিন্তু ৯৬' সালে কেন ক্ষমতায় গিয়ে সেই বিচারের কাসুন্দির ডালাটি খোলা হয়নি? কারণ তখন বঙ্গবন্ধু'র খুনের বিচারের একটি মোক্ষম ইস্যু হাতে ছিল। সেই ইস্যু নিয়ে যতোদিন রাজনীতি করা যায় ততোদিন একটা ধাপ্পাবাজি করে সাধারণ মানুষকে বোগলে রাখা যাবে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু'র খুনের বিচারের কাজ কার্যকর হতে শুরু করলো। সেটাকে দরদ দিয়ে কাজে লাগালে এতো সময় লাগার কথা নয়। ১৯৯৬ থেকে ২০১০ এই ১৪ বছর শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিয়ে রাজনীতি করা গেছে। বাকী সময়টা নতুন একটা ইস্যু খুব দরকার আওয়ামী লীগের। সেটা হতে পারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত একটা চকচকা ইস্যু। খুব ভালো কথা। তো সেই বিচার যখন শুরু হল সেখানে এতো নাটক কেন? স্পেশাল ট্রাইবুন্যাল গঠন নিয়েই অনেক সময় পার করা হল। তারপর স্কাইপ কেলেংকারী, ট্রাইবুন্যাল পুনঃগঠন, নাটকীয় রায়! কতো কিছু!! নাটকের আর শেষ নাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যদি সত্যিই সদিচ্ছা হয়, তাহলে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি'র দাবী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইবুন্যাল গঠন করা কি খুব না-জায়েজ ছিল? কেন আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হল না? যদি বিদেশ থেকে সাক্ষী এসে সাক্ষ্য দিয়ে যেতে পারে, তাহলে বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বিচারক নিয়োগ করা গেল না কেন? কারণ, সহজ কথায় রাজনীতি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই ইস্যু নিয়ে আরো কিছু দিন খোলা গরম রাখার একটি কৌশল। যদি সত্যি সত্যিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার আওয়ামী লীগের কোনো ইচ্ছা থাকতো তাহলে ট্রাইবুন্যাল করতো আন্তর্জাতিক মানের। সেখানে আন্তর্জাতিক বিচারকগণ নিয়োগ পেতেন। বিচারের কাঠগড়া ঢাকায় না হয়ে অন্য কোনো নিরপেক্ষ দেশেও হতে পারতো। বিশেষ করে ভিয়েনায় যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের যুদ্ধাপরাধিদের বিচার হয়, সেই হেগ আন্তর্জাতিক আদালতে কেন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া তোলা হল না? উল্টো নিজেরাই একটা বিশেষ ট্রাইবুন্যাল করে বলা হল, এটি আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যাল! তাও মানলাম যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার একটা শেষ হয়। কিন্তু এটা তো একটা রাজনৈতিক খেলা। আওয়ামী লীগের যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার এই আদালতে কখন হবে? নাকী জাতির সামনে একটা যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রহসন দাঁড় করিয়ে ক্ষমতা ভোগ করার এটি একটি কৌশল মাত্র! নিজেরাই যখন ট্রাইবুন্যাল করলেন, সেখানে বিচারিক প্রক্রিয়া এতো শ্লো কেন? বঙ্গবন্ধু'র খুনীদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে লেগেছে ১৪ বছর! এখনো বঙ্গবন্ধু'র অনেক খুনী নিরাপদে বিশ্বের অনেক দেশে খুব দাপটের সঙ্গেই বসবাস করছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে এতো সময় লাগছে কেন? কারণ, সোজাসাপ্টা রাজনীতি। তাদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে এনে ঝুলিয়ে দিলেই তো বঙ্গবন্ধু ইস্যুটি নিয়ে রাজনীতি করার দিন শেষ! সেই পালে হাওয়া দিতেই নতুন করে শুরু করা হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এই বিচারের প্রক্রিয়া শেষ করতে মিনিমাম আরো ১৪ বছর তো লাগবে। তখনও দেখা যাবে অনেক আওয়ামী যুদ্ধাপরাধী এই বিচারের আওতায় আসেনি। চলমান বিচারের প্রক্রিয়া দেখেই তাই অনুধাবন করা যায়। মানে আরো ১৪ বছরের একটি প্রজেক্ট এই টার্মে ওপেন করা হল। বাদ বাকি আল্লাহ ভরসা! যদি আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় যায়, তারা এই বিচার প্রক্রিয়া কনটিনিউ যে করবে না এটা তাদের আচরণ দেখেই বোঝা যায়। অর্থ্যাৎ এটা আওয়ামী লীগের প্রজেক্ট। এটাতে বিএনপি হাত লাগাবে না, যেমন ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় হাত লাগায়নি। বরং খুনীদের এখনো নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে এটাই বাস্তবতা। তো কোথায় গেল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? বর্তমান সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি কাগুজে ফানুস! মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় খোদ আওয়ামী লীগেরও আস্থা নেই। এটা তাদের ভোগ ভাগানোর একটা হাতিয়ার মাত্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াও আওয়ামী লীগের ভোট ভাগানোর একটি কৌশল মাত্র। সত্যিকার অর্থে বিচার তারা করতে চায় না। বিচারের নামে জাতির সামনে একটি ইস্যু খাড়া করিয়ে রাখতে চায়। যাতে আমজনতা কুতকুতু হয়ে ভোটের সময় ময়দানের বক্তৃতায় চাঙ্গা হয়ে নৌকায় ভোট দিতে উৎসাহিত হয়। আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতিতে এখন কি কি ইস্যু জনগণের সামনে মূলা হিসেবে আছে? নাম্বার ওয়ান, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বঙ্গবন্ধু'র খুনীদের এখনো যারা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যকর করা। নাম্বার টু, চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু তারা দিন ক্ষণ বলছে না যে, এই সময়ের মধ্যে এই ইস্যু'র তারা সত্যি সত্যি সমাপ্তি চায়। সেটা ৭ বছর বা ১০ বছর বা স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তীর আগে এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করবে, এমন দৃঢ়তাও নেই সেই শীতল কণ্ঠে। নাম্বার তিন, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা হবে। এটা একটা সবচেয়ে বড় প্রহসন। মুক্তিযুদ্ধের সাতজন বীর শ্রেষ্ঠ'র পরিবারের বর্তমান হাল হকিকত কি আওয়ামী লীগ জানে? তাদের পরিবার তো কোটি টাকার মালিক বনে গেল না! লাখ লাখ পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের খবর কি? তারা কেন এখনো দিন আনে দিন খায়? বয়সের ভারে ন্যূয অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে কেন এখনো রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতে হয়? পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের কেন এখনো বিনা চিকিৎসায় কাতরাতে হয়? অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখনো চোখে পড়ে যারা স্বাধীন দেশের পতাকা ফেরি করে দু'বেলার আহারের ব্যবস্থা করেন। তারা কেউ জানে না মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি?!! মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবচেয়ে বেশি বোঝে আওয়ামী লীগ। আর তারচেয়েও বেশী বোঝে কিছু আওয়ামী বুদ্ধিজীবী। এর বাইরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা কথা বলবে, তারা সবাই দেশের শত্রু, তারা সবাই পাকিস্তানের দালাল! এই যদি হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দশা, তাহলে এদেশের সাধারণ জনগণ এখনো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জন করেছিল, সেটি ছিল একটি অঘটন। সেটি ছিল একটি নির্বোধ ঝাঁপিয়ে পরা। এখনো দেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে বিক্রি করে কোনো সুফল ভোগ করেনি। যতোটুকু করেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের পোষ্য বুদ্ধিজীবীরা। এখনো বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে আর স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠক হিসেবে জেনারেল জিয়া'র কীর্তি ভাঙিয়ে যতোটুকু সুফল ঘরে তুলেছে, দেশের সাধারণ মানুষ সেই মুক্তিযুদ্ধের কোনো সুফল বা ফসল ভোগ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে আপনারা অনেক কিছু ভোগ করেছেন, অনেক কিছু দখল করেছেন, অনেক সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহন করছেন, যার সিটেফোটাও দেশের সাধারণ মানুষ চোখেও দেখেনি, ভোগও করেনি। এটাই বাস্তবতা। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে, এই ঘোষণা একটি ফাঁপা চোঙ্গার মত। সেখানে ঘি খাওয়ার লোকের অভাব নেই। দেশের সাধারণ মানুষের সেই উসকানিতে কিছুই যায় আসে না। দেশের মানুষ শান্তি চায়, আপনারা শাসকরা তা দিতে গত ৪২ বছর ধরে ব্যর্থ হয়েছেন। ৪২ বছর ধরে আপনারা দেশের শাসন ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তন কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে হবে, সেটি কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটাই আসল সত্য। আপনাদের কাছে শান্তিপূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সংজ্ঞা হল, ভোটাররা বাড়ি থেকে বাধা নিষেধ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যালট পেপারে একটা সিল মেরে দেবেন। সেই সিল মারা ব্যালট ভরতি বাক্স কোনো ধরনের ছিনতাইয়ের কবলে না পড়ে, সঠিকভাবে গণনার পর নির্বাচন কমিশন একটা ফলাফল ঘোষণা করবেন। গেজেট প্রকাশের পর সেই ফলাফলে বিজয়ী দল দেশ শাসনে ভার পাবে। আর পরবর্তী পাঁচ বছর দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করার জন্য সেই দল যা খুশি তাই করার গ্রান্টেড লাইসেন্স পেয়ে যাবে। আপনাদের সম্পদ চুরির লাইসেন্স নেন আপনারা তথাকথিত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যেখানে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন বলে কিছু নাই। স্বাধীন বিচার বিভাগ বলে কিছু নাই। ন্যায় বিচার বলে কিছু নাই। পাঁচ বছরের একটি লাইসেন্স নবায়নের খেলায় আছেন আপনারা। স্বাধীনতার পর গত ৪২ বছরে দেশে একটিও রাজনৈতিক সহিংসতার বলিতে অপমৃত্যু'র বিচার হয়নি। সেটা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে আজ ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর বেলায় সত্য। মানুষের জীবনের কোনো দাম নাই আপনাদের রাজনীতির কাছে। আপনাদের আন্দোলন কতোটা বেগবান হল, সেই বেগবানে কয়টা লাশ হলে সরকার বাহাদুরের টনক নড়ে, তার উপর আন্দোলন আর সহিংসতার মাত্রা নির্ভর করে। আপনারা কেন কথা কথায় জনসাধারণের সেবা করার কথা বলেন? আপনাদের প্রয়োজনে তো জনসাধাণের লাশ আপনাদের কাছে আন্দোলনের একটি হাতিয়ার। নইলে তো ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত সবগুলো রাজনৈতিক আন্দোলনের সহিংসতার বলিতে সবগুলো মৃত্যুর বিচার হত। অন্তত আদালতে কিছু বিচার চলমান থাকতো!!! আমরা জানি, ১৯৭৩ সালে ছাত্রলীগের হাতে গোপালগঞ্জের কমিউনিস্ট নেতাকে দিনদুপুরে হত্যার কোনো বিচার হয়নি। উল্ঠো সেই হত্যাকারীকে হেলিকাপ্টারে ঢাকায় এনে ইতালীতে পুনর্বাসন করা হয়েছে! আমরা জানি, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে হত্যার বিচার হয়নি। বিচার হয়নি অসংখ্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের নির্বিচারে হত্যা করারও। জিয়ার শাসন আমলে অনেক সেনা সদস্যদের ক্যু-পাল্টা ক্যু'র নামে হত্যা করা হয়েছে। সেগুলো'র একটারও বিচার হয়নি। আমরা জানি, বাসুনিয়া, নূর হোসেন, ডাক্তার মিলন হত্যার বিচার হয়নি। বিচার হয়নি আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার। বিচার হয়নি শাহ এসএমএস কিবরিয়া হত্যার। বিচার হয়নি রমনা বটমূলে বোমা হামলায় নিহত কারোর হত্যাকারী। বিচার হয়নি উদিচি শিল্পগোষ্ঠী'র অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় নিহত হত্যাকারীদের। বিচার হয়নি কমিউনিস্ট পার্টির জনসভায় বোমা হামলার। বিচার হয়নি সিনেমা হলে বোমার আঘাতে যারা মরলো তাদের কোনো খুনীর। বিচার হয়নি খ্রিস্টান পল্লীতে বোমা হামলায় নিহত কোনো কারো খুনীর। বিচার হয়নি ভোলায় গোপালগঞ্জে সংখ্যালঘু নির্যাতনের। বিচার হয়নি অসংখ্য রাজনৈতিক হামলায় নিহত হাজার হাজার হত্যার। আমরা এখন এও জানি, আগামীতে বর্তমান সময়ে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় যারা মারা যাচ্ছে, তাদের হত্যাতারীদেরও বিচার এদেশে কখনো হবে না। এদেশে কখনো বিচার হবে না বাবু রবীন হত্যার। এদেশে কখনো চলমান অবরোধ হরতালে যারা বাসে পুড়ে মরছে, পেট্রোল বোমায় পুড়ে মরছে, ট্রেন উল্টে পড়ে মরছে, এসব মৃত্যুর এদেশে কোনোদিন বিচার হবে না। কারণ এদেশে বিচার নেই। আমাদের হাজারো নীতি আছে কিন্তু ন্যায় নাই। আমাদের হাজারো কথার ফুলঝুড়ি আছে কিন্তু শান্তি নাই। সাধারণ মানুষের জীবন এই জনপদে সবচেয়ে অনিরাপদ। কোথাও নিরাপত্তা নেই সাধারণ মানুষের। কিন্তু আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের একটি জাতীয় পতাকা আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন একটা জাতি! আমাদের তেল গ্যাস কয়লা আছে। আমাদের শাসকদের লুটপাট বহাল তবিয়তেই আছে। আমাদের রাজনৈতিক সহিসংতায় প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে কেবল লাশ হবার নিয়ম। আর এক দলের বদলে আরেক দলকে পাঁচ বছরের জন্য লুটপাটের লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম। সভ্যতার কোন জনপদে আমরা বসবাস করছি? আমাদের শাসক কারা সেই তফাৎ আমরা কিভাবে বুঝবো? ব্রিটিশরা কিভাবে শাসন করতো? পাকিস্তানীরা কিভাবে শাসন করতো? বঙ্গবন্ধু কিভাবে শাসন করেছেন? জেনারেল জিয়া কিভাবে শাসন করেছেন? জেনারেল এরশাদ কিভাবে শাসন করেছেন? খালেদা জিয়া কিভাবে শাসন করেছেন? আর এখন শেখ হাসিনা কিভাবে শাসন করছেন? কোন শাসনে কিসের পার্থক্য? তা আমরা সাধারণ মানুষেরা জ্ঞানবুদ্ধিতে আবিস্কার করতে পারি না। আমরা কেবল দেখছি, আমাদের নিরাপত্তা নেই। জন্মই যেনো আমাদের আজন্ম পাপ, এই দেশে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ কোন এক কুলক্ষণে উচ্চারণ করেছিলেন, সাত কোটি বাঙালি হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি। কথাটি হারে হারে সত্য। একশো ভাগ সত্য। এক হাজার বার সত্য। আমরা আসলে অসভ্য একটি দেশের মানুষ। এই জনপদে কোনো দিন সভ্যতার সূর্য উঠবে কিনা তাই নিয়েই ভারী সন্দেহ আছে!!! সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১০
false
fe
যে মুজিব চিরদিন প্রজন্মের চেতনার উৎস যে মুজিব চিরদিন প্রজন্মের চেতনার উৎস ফকির ইলিয়াস ===================================== বাঙালীর জীবনে আবারও এসেছে সেই শোকের আগস্ট মাস। আগস্ট মাসটি এলেই নানা বেদনার চিত্র আমার মানসে ফুটে ওঠে। এই মাসটি বাঙালির ইতিহাসে একটি কলংকের মাস। পনেরোই আগস্টের সেই কালরাতে যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, তারা চেয়েছিল বাঙালির ইতিহাস পাল্টে দিতে। তারা চেয়েছিল ভেঙে দিতে একটি উন্নয়নশীল জাতির মেরুদণ্ড। আজ পয়ত্রিশ বছর পর সে প্রশ্নটিই আসে, সেই ষড়যন্ত্রকারীরা কতোটা সফল হয়েছে। সফল যে তারা হয়নি তা বলা যাবে না। তারা যা চেয়েছিল ,তার অর্ধেকেরও বেশি তারা পূরণ করতে পেরেছে। হয়তো আরো জঘন্য রূপ নিলে বাংলাদেশ বর্তমান পাকিস্তানের মতো রূপ নিতো। তা নেয়নি। কোনো লাল মসজিদ ট্র্যাজেডি যদিও বাংলাদেশে সংঘটিত হয়নি তবুও ১৭ আগস্টের বোমা হামলার মতো মারাত্মক কাজ তারা করতে পেরেছে বাংলাদেশে। গোটা দেশব্যাপী একযোগে বোমা হামলার মাধ্যমে। আদালত প্রাঙ্গণে বিচারক হত্যার মাধ্যমে। বাংলাভাই, শায়খ রহমান , মুফতী হান্নান , মওলানা মহীউদ্দীন তৈরির মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে যে পরিবর্তনটি ষড়যন্ত্রকারীরা করতে পেরেছিল, তা কি ঠেকানো যেতো না? আমার বারবার যেন মনে হয় তা ঠেকানোর পথ প্রশস্থ ছিল। কিন্তু যারা সেদিন সশস্ত্র ক্ষমতাবান ছিলেন তারা ‘রিস্ক’ নিতে চাননি। কেন ‘রিস্ক’ নিলেন না, সে প্রশ্নটি আমি আজো করি। বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন তখন দেশে একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনী বহাল ছিল। সেনা, নৌ, বিমান তিনটি বাহিনীই ছিল জাগ্রত। যারা এই হীন অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিল এরা ছিল বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য। প্রশ্নটি হচ্ছে এই, সপরিবারে শেখ মুজিবকে হত্যার পরে হলেও সেনাবাহিনী কেন তাৎক্ষণিক ঐ কতিপয় চক্রান্তকারী সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নিলো না? কেন সেদিনের সেনাবাহিনী প্রধান কে এম শফিউল­াহ তার বাহিনী নিয়ে জাতির পক্ষে, ষড়যন্ত্রকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন না? যদি তেমনটি হতো তাহলে হয়তো আরো কিছু রক্তপাত হতো। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা পরাজিত হতো। জাতির জনক বেঁচে না থাকলেও তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী তাজউদ্দিন, মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, সামাদ আজাদসহ অন্য নেতারা সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা পেতেন। খন্দকার মোশতাকের মতো নর্দমার কীটরা রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার স্বপ্ন ভণ্ডুল হয়ে যেতো। কে এম শফিউল­াহ যে জবাবই দিন না কেন, তিনি যে ভুলটি করেছিলেন­ তার মাশুল গোটা জাতিকে দিতে হচ্ছে আজো তিলে তিলে। জাতির এতোই দুর্ভাগ্য, আজ পয়ত্রিশ বছর পরও ঘাতকদেরকে প্রেতাত্মা ধাওয়া করছে গোটা জাতিকে। আশার কথা , বর্তমান মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর জাতির জনকের খুনীদের একাংশের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এখনও একটি খুনী অংশ বিদেশে পালিয়ে আছে। এদেরকে শাস্তির মুখোমুখি করা খুবই জরুরী কাজ। বিশ্বের কোনো দেশে, কোনো ঐতিহাসিক হত্যাকাণ্ডের বিচারকর্ম বন্ধ কিংবা তা নিয়ে গড়িমসির ঘটনা বোধহয় আর নেই। বাংলাদেশের যিনি স্থপতি, যিনি একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়ার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন­ তার হত্যাকাণ্ডের বিচারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল রাষ্ট্রীয় আইন। তথাকথিত ইনডেমনিটি বিলের নামে হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি বাধাগ্রস্থ করতে সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একজন মহান নেতার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধটুকু থাকলে কোনো দল বা নেতা তা করতে পারে? বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতির চেয়ে জঘন্য হীনমন্যতা বোধহয় আর কিছু নেই। এসব করার পেছনে প্রকারান্তরে একটি কারণ ছিল। আর তা হলো ঘাতকচক্রকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা। সে আশায় আজ যে গুড়েবালি পড়েছে­ তা হচ্ছে তাদেরই কৃতকর্মের ফল। আজ বেগম খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে বলছেন, তার ছেলে তারেক- কোকো নাকি কোনো অপকর্মই করে নি। কিন্তু খালেদা জিয়া ভুলে যাচ্ছেন তারেক রহমান তার সন্তান হিসেবে, তিনি তারেককে ‘ক্রাউন প্রিন্স’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কোনো মহৎ রাজনীতিক কখনোই রাষ্ট্রীয় রাজনীতিকে পারিবারিক গণ্ডিতে আবদ্ধ করতে চান না। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে বঙ্গবন্ধুকে যতোটা অবমূল্যায়ন করতে চাননি, খালেদা জিয়া এবং তার শাসনামলে তা করা হয়েছে বহুগুণে। শেখ মুজিবের সমান্তরালে অন্য কোনো নেতা দাঁড়াবেন কিনা­ তা মহাকালই বলবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে­ এই শেখ মুজিবের জীবদ্দশায় এবং তারও অগ্রজ বেশ কজন নেতা পাকিস্তান থেকে বের হয়ে এসে নতুন রাষ্ট্র গঠনের নেতৃত্বটি দিতে পারেননি। আর পারেননি বলেই শেখ মুজিবকে এগিয়ে আসতে হয়েছিল। এবং তিনি সফলও হয়েছিলেন। আর সে জন্যই তিনি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। আজ যারা শেখ মুজিবের পাশাপাশি ‘জাতীয় নেতা’র সনদ লাগিয়ে অন্যদের ছবি রাখার কথা বলেন­ তারা আদৌ বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রটির অভ্যুদ্বয় চেয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ হয়। আমরা লক্ষ করি, জর্জ ওয়াশিংটন কিংবা কামাল আতাতুর্ক কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বা তুরস্কে একজনই। তার সঙ্গে অন্য নেতাদের তুলনামূলক আলোচনায় কখনোই যান না সেসব দেশের নাগরিকরা। অথচ বাংলাদেশে শেখ মুজিবের কাতারবন্দী করার জন্য নামের তালিকা শুধু বেড়েই চলেছে। একসময় হয়তো দেরিতে কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার নেতানেত্রীরাও শেখ মুজিবের পাশাপাশি আসনে নিজেদের আশ্রয় খুঁজতে উদ্যত হবেন। কিন্তু তাই বলে কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুছে ফেলা যাবে? না যাবে না। একটি বিষয় অনেক চরম ক্রান্তিকালেও প্রমাণিত হয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর চেতনা লালন করেন তারা ভোগবাদী নন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্বল মামলাগুলোতে তার জামিন প্রাপ্তি এটাও প্রমাণ করছে। তিনি কিংবা তার সহদোরা শেখ রেহানা যদি ভোগবাদীই হতেন, তবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের তাদের একমাত্র বাড়িটি ট্রাস্টে দিয়ে দিতেন না। বাংলাদেশে শেখ মুজিবের বজ্রকণ্ঠের যে অমিত তেজ তা ঢেকে দেওয়ার প্রচেষ্টা ’৭৫ সালে করা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। বোমা মেরে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে যে জঘন্যতম হামলা করা হয়েছিল, তা ছিল সেই ধারাবাহিকতায়। এরও সুবিচার বাংলার মাটিতে এখন পর্যন্ত হয়নি। এই শোক বহন করেই চলেছে বাংলার মাটি, বাংলার নদীনালা। ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী সরকার বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনকের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে সরকারি উদ্যোগ নিয়েছিল। এটাও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল জামাত- বিএনপির। জাতির জনকের স্বপ্ন গুলো পূরণে মানুষের ঐক্য দরকার। আমরা এই প্রত্যয় বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে লক্ষ করছি, আগস্টের শোক ও বেদনাকে চিত্তে ধারণ করে তারা সোনার বাংলা গড়তেই এগিয়ে যাচ্ছে। সূর্যের একটি শক্তিশালী বাহুর মতোই মুজিব আবির্ভূত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির জন্য। সেই শেখ মুজিব এখন চিরনিদ্রায় শায়িত তার জন্মস্থান সবুজ টুঙ্গিপাড়ায়। তার শয্যাপাশে গিয়ে এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা নিজের শৌর্য, শক্তি এবং রক্তস্রোতেরই সন্ধান করে। কোনো অপশক্তিই এই গতিধারা থামাতে পারবে না। আলোকিত মানুষের জীবনকর্ম, আরেকটি জীবনকে আলোকিত করে। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি জাতির আলোকবর্তিকা হয়েই থাকবেন চিরদিন। বিষয়টি ভাবলে খুবই দু:খ পাই, বাংলাদেশের রাজনীতিক পরিচয়ধারীরাই হীনস্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে শেখ মুজিবের স্বপ্নগুলোকে নস্যাৎ করতে বিভিন্ন সময় নানাভাবে তৎপর হয়েছেন। এইসব মতলববাজরাও একদিন আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হবেন আগামী প্রজন্মের হাতেই। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগই হবে বাঙালি প্রজন্মের পাথেয়। # নিউইয়র্ক , ১১ আগস্ট ২০১০ --------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ১৩ আগস্ট ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১:১৬
false
fe
বহির্বিশ্বে বাংলা একাডেমির বইমেলা শুধু লন্ডনে কেন_ বহির্বিশ্বে বাংলা একাডেমির বইমেলা শুধু লন্ডনে কেন?ফকির ইলিয়াস======================================================বাংলাদেশের বাইরে বাংলা একাডেমি আরো একটি বইমেলার আয়োজন করে দুদিনব্যাপী। এই মেলাটি ইংল্যান্ডের শহর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সাল থেকে এই বইমেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। ২০০৯ থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান। মূলত তার উদ্যোগেই বিদেশে এই দুদিনের বইমেলাটির আয়োজন করা হচ্ছে। বহির্বিশ্বে এমন একটি নান্দনিক কর্মযজ্ঞ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের উদ্যোগে এবং ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাজ্য’-এর আয়োজনে ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনে মোট সাতটি ‘বাংলা একাডেমির বইমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করেই ২০১১ সাল থেকে বাংলা একাডেমি প্রবর্তন করে ‘প্রবাসী লেখক পুরস্কার’। ২০১৪ সালে এটির নামকরণ করা হয়, ‘বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’। পরবর্তী সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ বইমেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’। বাংলা একাডেমি ২০১১ সালে যে ‘প্রবাসী লেখক পুরস্কার’টি প্রবর্তন করে, তা প্রথমবারের মতো লাভ করেন ইংল্যান্ড অভিবাসী কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক কাদের মাহমুদ। এর পরের বছর কথাশিল্পী সালেহা চৌধুরী এবং ডা. মাসুদ আহমেদকে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি ‘প্রবাসী লেখক পুরস্কার-২০১২’ প্রদান করা হয়। তারা দুজনেই গ্রেট ব্রিটেন প্রবাসী।২০১৩ সালে প্রবাসে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান যুক্তরাজ্যবাসী দুজন, লেখক ও সাংবাদিক ইসহাক কাজল ও লেখক-গবেষক ফারুক আহমদ এবং জার্মানবাসী লেখক ও বিজ্ঞান-গবেষক ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া। ২০১৪ সালে ‘বাংলা একাডেমি প্রবাসী সাহিত্য পুরস্কার’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’ করা হয়। সেই বছর এই পুরস্কার পান কানাডা প্রবাসী দুই লেখক ইকবাল হাসান ও সৈয়দ ইকবাল এবং যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ লেখক-অনুবাদক-গবেষক উইলিয়াম রাদিচি।২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত এই ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’ পান যুক্তরাজ্য প্রবাসী লেখক মঞ্জু ইসলাম ও ফ্রান্স প্রবাসী ফ্রান্স ভট্টাচার্য। বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি শামীম আজাদ এবং জার্মানপ্রবাসী লেখক ও গবেষক নাজমুন নেসা পিয়ারি। ২০১৭-এর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে তারা এই পুরস্কার পাচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের বাইরে এখন গড়ে উঠেছে একটি বড় অভিবাসী সমাজ।১৯৯২-৯৫ সময়ে বেশ কয়েক দফা ইংল্যান্ডে দীর্ঘকালীন আমি অবস্থান করি। সেই সময়ে অনেক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মাকাণ্ডে আমার অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে। চলতি সময়ে এর প্রসার অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকার অন্যান্য দেশেও বেড়েছে এর ব্যাপক ব্যাপ্তি। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বড় আয়োজনের বইমেলা হচ্ছে বিগত ২৬ বছর থেকে। ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ ও মুক্তধারা’র আয়োজনে নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে প্রথম বইমেলাটির উদ্বোধক ছিলেন ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত।মুক্তধারার উদ্যোগে ২০০৪ সালে দুটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ওই বছর নিউইয়র্কের বইমেলা উদ্বোধন করেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও লস এঞ্জেলেসে রাবেয়া খাতুন। ২০০৫ সালের বইমেলার উদ্বোধক ছিলেন ড. আবদুন নূর। ২০০৬ সালে পঞ্চদশ বইমেলা উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আঙ্গিকে বইমেলা শুরু হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। বইবিপণী ‘মুক্তধারা’র সহযোগী সংগঠন ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে বইমেলা রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে। এই উৎসবের অংশ হিসেবে চারটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৭ সালে। নিউইয়র্কে ড. গোলাম মুরশিদ, ডালাসে ড. আনিসুজ্জামান, লস এঞ্জেলেসে সমরেশ মজুমদার এবং নিউজার্সিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এসব বইমেলা উদ্বোধন করেন।২০০৮ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি রফিক আজাদ। ২০০৯ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। ২০১১ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন তপনরায় চৌধুরী। ২০১২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন শামসুজ্জামান খান। ২০১৩ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। ২০১৪ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি মহাদেব সাহা। ২০১৫ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ২০১৬-এর নিউইয়র্ক বইমেলা উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা (এবিসি সম্মেলন) সম্মেলনও আয়োজিত হয়েছে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। ২০০৯ সালের ১১, ১২ জুলাই নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় এই আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা সম্মেলন। সেমিনারগুলোর আলোচনার বিভিন্ন পর্বে অংশ নেন অধ্যাপক আলী আনোয়ার, দিলারা হাশেম, সমরেশ মজুমদার ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১০ সালের দ্বিতীয় এবিসি সম্মেলনে নিউইয়র্কে ম্যারি লুইস একাডেমির সুবিশাল চত্বরে এ সম্মেলন ছিল অভিবাসী বাঙালির প্রাণের মেলা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য তো বটেই, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া থেকেও শিকড় সন্ধানী বাঙালি অভিবাসীরা ছুটে এসেছিলেন এই সম্মেলনে। এই সম্মেলনে কবি শহীদ কাদরীর হাতে ‘এবিসি সম্মেলন সম্মাননা পদক’ তুলে দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আরেকজন কৃতী বাংলাদেশের সন্তান ড. ওসমান সিদ্দিক। কবি শহীদ কাদরী গভীর আপ্লুত হয়ে বলেন, কবিতা লিখে এমন বিরল সম্মান পাব, তা কোনোদিন ভাবিনি। তিনি প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি চর্চায় গভীর অনুরাগী হওয়ার আহ্বান জানান।২০১২ সালের জুন মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট বাঙালিরা অংশ নেন তৃতীয় এবিসি সম্মেলনে। নিউইয়র্কের বিশ্ববিখ্যাত ‘এস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড ম্যানর’ সেজেছিল বর্ণাঢ্য সাজে। ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা’ কনভেনশনের আহ্বায়ক ছিলেন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক, সাপ্তাহিক ঠিকানার চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) সাঈদ-উর-রব। এই সম্মেলনে অতিথি ছিলেন শাহীদ কাদরী, সৈয়দ শামসুল হক ও ফরহাদ মজহার। মার্কিন মুলুকের বাঙালিদের অনেক বড় বড় সম্মেলন করার অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্কে অভিজাত পেনসিলভেনিয়া হোটেলের দি প্যান প্লাজা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ কনভেনশন। ‘এনএবিসি’খ্যাত এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ওয়াকিল আহমেদ। অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান, কথাসাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সতিনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।কনভেনশনের শেষ সেমিনারটি ছিল ‘বাংলা সাহিত্যচর্চার গুণগত মান : অতীত ও বর্তমান’। এটি উপস্থাপনার দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। এতে মূল প্রবন্ধ পড়েন ড. সালাহউদ্দিন আইয়ুব। স্বপ্নময় চক্রবর্তী বলেন, লেখক তার মতো করেই লিখবেন। গুণগত মান নির্ণয় করবে মহাকাল। অতীতে কি ছিল আর ভবিষ্যতে কি হবে, তা বলা কঠিন। তারপরও আমাদের আশাবাদ সাহিত্য মানুষের জন্য পুষ্পবর্ষণ করে যাবে পথে পথে। এসব কথাগুলো এজন্য লিখলাম, যুক্তরাষ্ট্রে এখন গড়ে উঠেছে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি বড় কাফেলা। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলা একাডেমি কি সেই খবর রাখছে না। যদি রাখে, তাহলে এই বইমেলা যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত হচ্ছে না কেন? পরপর সাত বছর ইংল্যান্ডে তা আয়োজিত হয়েছে। একাডেমি কি কোনো লিখিত/অলিখিত বিধান করে নিয়েছে এই বইমেলা শুধু যুক্তরাজ্যেই হবে? তা জানতে চাইছেন যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সংগঠকরা।এ বিষয়ে বিশিষ্ট লেখক-সাহিত্যিক হাসান ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, ‘শুধু লন্ডন নয়, এই মেলা বিশ্বের অন্যান্য শহরে, যেখানে বড় সংখ্যায় বাংলা ভাষাভাষীদের বসবাস, সেখানেই এই মেলা বসুক, সেটাই আমরা চাই। যেমন, নিউইয়র্ক শহরে ও তার আশপাশে তিন লাখ বা তার চেয়ে বেশি বাঙালির বাস। বাংলা একাডেমি যদি এখানেও তাদের বইমেলা নিয়ে আসে, আমরা সবাই তাকে স্বাগত জানাব। হয়তো একাধিক শহরে প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন বাংলা একাডেমির পক্ষে সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের প্রধান শহরগুলোতে এই মেলা আবর্তিত হতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এক বছর লন্ডন তো পরের বছর নিউইয়র্ক বা প্যারিস। বাংলা একাডেমি একা এই মেলা সফলভাবে আয়োজনে সক্ষম হবে না, এজন্য প্রয়োজন পড়বে স্থানীয় আয়োজকদের। এই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেই লন্ডনের মেলাটি গত কয়েক বছর ধরে আয়োজিত হচ্ছে।প্রশ্ন করেছিলাম বিশিষ্ট কবি ও টিভি অ্যাঙ্কর তমিজ উদদীন লোদীকে। তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বহির্বিশ্বে প্রথম এবং একমাত্র যে বইমেলাটি শুরু হয় তা ২০১০ সালে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে। শুরু থেকেই এটি প্রবাসীদের মধ্যে সাড়া জাগায়। প্রথমত, এটি লন্ডন প্রবাসীদের মধ্যে সীমিত থাকলেও খুব দ্রুত এটি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যেও আগ্রহের সঞ্চার করে। পরবর্তী সময় এটি আরো গুরুত্ব পায় যখন থেকে প্রবাসী সাহিত্য পুরস্কার সংযোজন করা হয়। যেটি ২০১৪ সাল থেকে নাম পরিবর্তন করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার করা হয়েছে।ইদানীংকালে যে প্রশ্নটি মূলত উত্তর আমেরিকার সাহিত্য সংস্কৃতি মহলে উচ্চারিত হচ্ছে তা হলো, এই বই মেলাটি কি শুধু লন্ডনে হবে বলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, নাকি এটি ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং উত্তর আমেরিকায়ও করা যাবে? যদি যায় তবে কেন করা হচ্ছে না? অপরদিকে যদি এটি শুধু লন্ডনেই করার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত? লন্ডনের পাশাপাশি এটি তো ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং উত্তর আমেরিকায়ও করা যেতে পারে।কবি তমিজ উদদীন লোদী আরো বলেন, ‘আপনি নিশ্চয় জানেন, উত্তর আমেরিকা তথা এই নিউইয়র্ক শহরে প্রতি বছর মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অত্যন্ত সফলভাবে বইমেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। এখানকার বাংলা ভাষাভাষী সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীরা এটি সফলভাবেই সম্পন্ন করছেন এবং এতে দেশ-বিদেশের কবি-লেখক-প্রকাশকরা অংশগ্রহণ করছেন। সে জন্য নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলা একাডেমির উদ্যোগ ও অর্থায়নে যদি এখানে বইমেলার আয়োজন করা হয় তাহলে এটিও সফলভাবে আয়োজন করা সম্ভব। এটি আয়োজন করার শক্তি-সামর্থ্য কিংবা মেধা ও মনন নিউইয়র্কবাসী সাহিত্য সমাজের যথেষ্টভাবেই রয়েছে।’ একই বিষয়ে আমি মুখোমুখি হই সংগঠক-প্রাবন্ধিক আদনান সৈয়দের। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা এখন শুধু বাংলাদেশ কিংবা কলকাতা শহরের চার দেয়ালে বন্দি কোনো ভাষা নয়। এই ভাষা এখন গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই ভাষায় পৃথিবীর নানান প্রান্তে শিল্প-সাহিত্য চর্চা হচ্ছে। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বহির্বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দুটো শহরে বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্য নিয়ে বিভিন্নরকম কাজ হচ্ছে তা হলো লন্ডন এবং নিউইয়র্ক। এই দুটো শহরেই বাঙালি সংখ্যার দিক থেকে তো বটেই মেধার দিক থেকেও যথেষ্ট উচ্চ একটি পর্যায়ে নিজেদের নিয়ে গেছে। দেখতে পাই, বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতিকে গোটা পৃথিবীতে তুলে ধরার জন্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই কার্যক্রমগুলোর অন্যতম একটি হলো বাংলাদেশের বাইরে প্রতি বছর বইমেলা উদযাপন করা। ইতিমধ্যে বাংলা একাডেমির আয়োজনে লন্ডনে বেশ আয়োজন করেই বইমেলা উৎসব শুরু হয়েছে। বিষয়টি আমাদের ভাষা এবং সাহিত্যের জন্যে অবশ্যই এক বড় প্রাপ্তি। তবে বাংলা একাডেমির এই কার্যক্রম শুধু লন্ডন কেন্দ্রিক না হয়ে সেটি ধীরে ধীরে গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন বাঙালি প্রধান অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়লে আমাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি আরো অনেক বেশি লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।’তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নিউইয়র্ক শহরকে বলা হয় বাংলা শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম একটি তিলোত্তমা নগর। প্রবাসী বাঙালিদের পদচারণায় এই নগর এখন বাংলা শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরে পরিণত হয়েছে। এই শহরে বাংলা একাডেমি আয়োজনে একটি জমজমাট বইমেলা হবে- এটি একদিক থেকে যেমন সময়ের দাবি, পাশাপাশি খুব প্রাসঙ্গিকও।’ হ্যাঁ, এখন প্রশ্ন একটিই- বহির্বিশ্বে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা শুধু লন্ডনে কেন?----------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৪
false
hm
দেজা! পাঁপড়ির সাথে ফটিকের বিচ্ছেদের ঘটনা শুনে আমরা যত না মর্মাহত হয়েছিলাম, তারচেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছি পাঁপড়ির সাথে প্রেমযাত্রার পর ফটিকের আচরণে। মানিক ওরফে মাইনকার ধারণা ছিলো, যার নাম ফটিক, বন্ধুরা যাকে ফইটকা বলে ডাকে, তার কখনোই কোন বাঙালি তরুণীর সাথে প্রেম হওয়া সম্ভব নয়। অন্তত এই কুড়ি বছর বয়সে নয়। তার জন্যে ফইটকাকে আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে এফিডেভিট করে নাম পাল্টে নেয়ার পর। নতুন নামটাকে রইয়ে সইয়ে হালাল করে নেয়ার পর কিছু একটা হোলেও হোতে পারে। তাছাড়া ফইটকা দেখতেও বানরের মতো, লেখাপড়ায়ও মাঝারি, আর বাপেরও পকেট থেকে টাকা ছিটকে পড়তে দেখা যায় না। প্রেম বিষফোঁড়া নয়, কোষ্ঠকাঠিন্যও নয়, যে এমনি এমনি হয়ে যাবে। অনেক কার্যকারণ থাকতে হবে। তাছাড়া সৌরজগতে আর তার বাইরে অনেক গ্রহনক্ষত্রকে লাইনে আসতে হবে ফইটকার প্রেমের জন্যে, আদৎ-সুরৎ-দৌলৎ এর কথা বাদই দেয়া যাক। কিন্তু মানিক যথেষ্ঠ সুদর্শন হওয়া সত্ত্বেও ফটিক মানিকের এই সম্ভব-নয় তত্ত্বকে গুল্লি মেরে নিজের পিতৃদত্ত নাম আর চেহারা নিয়েই পাঁপড়ির মতো শাঁসালো এক তরুণীর সাথে প্রেম বাঁধিয়ে ফেললো। মাইনকার উর্দু ফ্যাক্টরগুলিতে কিসমতের ব্যাপারটা ছিলো না, দেখা গেলো ওর জোরেই ফইটকা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। পাঁপড়ি দেখতে বেশ, দূর থেকে দেখতে ভালোই লাগে। কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় না, কারণ পাঁপড়ি আশেপাশে থাকলে ফটিক আমাদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয় না, দেখলে খ্যাঁক করে ওঠে। হাবিব, যাকে আমরা গত আট বছরে কখনো হাইব্যা ছাড়া অন্য কিছু ডাকিনি, শান্তশিষ্ট ছেলে বলেই হয়তো পাঁপড়ি-ফটিক জুটিকে খোঁচানোর সব পরিকল্পনায় ভেটো দিয়ে চলছিলো। "থাক না ওরা ওদের মতো!" এই ছিলো তার করুণ আর্তি। ওর চশমার পেছনে ভেজা বেড়ালের মতো চোখ দেখে আমরা ওকে তখনকার মতো ক্ষমা করে দিলেও ফইটকাকে জ্বালানোর প্ল্যানগুলিতে পানি ঢেলে দেয়ার ফলে জোশ হারিয়ে ফোঁসফোঁস করতাম। পাঁপড়ি-ফটিক একসাথে সিনেমা দেখতে যাবে, আমরা কি ঘটনাচক্রে কাকতালীয়ভাবে ওদের আশেপাশেই গিয়ে সে সিনেমা দেখতে বসতে পারি না? ফটিক পাঁপড়িকে কবিতার বই কিনে উপহার দেবে বইমেলা থেকে, আমরা কি ঘটনাচক্রে সেই আসরেই ফইটকাকে "দুষ্টু মেয়ে" উপন্যাসটি কিনে উপহার দিতে পারি না? ফটিক পাঁপড়িকে খাওয়াতে নিয়ে যাবে বুমারস এ, আমরা কি ফটিকের বাবাকে সেদিন চাঁদা তুলে বুমারস এ খাওয়াতে নিয়ে যেতে পারি না? হাইব্যা রাজি হয় না। শুধু নেতিবাচক কাতর শব্দ করে। ইচ্ছা করে ধরে লাত্থি মারা শালাকে। সন্দেহ হয়, ফটিকের সাথে হাইব্যার কোন টেবিলাচ্ছাদিত লেনদেন আছে কি না। হয়তো পাঁপড়ির ছোট বোন ঠুমরি, যে কি না দেখতে পাঁপড়ির চেয়েও অনেক মিষ্টি ও দুষ্টু, তার সাথেই হয়তো একটা কিছু ঘটিয়ে দেবার অঙ্গীকার করেছে ফইটক্যা। হয়তো বলেছে, "দোস্ত! একটু দেখিস! ঠুমরি কিন্তু ঐদিন তোর কথা জিগাইতেসিলো!" তাই হয়তো হাইব্যা দেখছে ফইটক্যাকে। হাইব্যাই ফোন করে জানায় আমাকে। "মইত্যা রে, ফইটকার তো প্রেম ভেঙে গেসে!" মইত্যা নামটা আমার পছন্দ না, এই নামে রাজাকার আর ধান্ধাবাজ আছে অনেক, কিন্তু যার নাম মতিউর তাকে মইত্যাই ডাকে লোকে। আমি উল্লসিত হয়ে বললাম, "পাঁপড়ির ফোন নাম্বার আছে না তোর কাছে?" হাইব্যা পষ্টাপষ্টি অস্বীকার করলো। একটু পরেই মাইনকার ফোন। "পাঁপড়ি এখন রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত। ফোন নাম্বারটা দে।" আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালাম যে পাঁপড়ির ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই। থাকলে এই ফাউল প্রেম অনেক আগেই ভেঙে যেতো। মাইনকা আত্মবিশ্বাস নিয়ে সায় দেয় আমার কথায়। আমার কাছে ফোন নাম্বার থাকলে নাকি অনেক আগেই সেটা নিয়ে ও পাঁপড়ির সাথে ভাব জমিয়ে ফেলতো। ফোন করি ফইটকাকে। ফইটকার ছোট ভাই ছইটকা জানায়, দাদার ঘর বন্ধ। টোকা দিলে হুঙ্কার দিচ্ছে। পরদিন মাইনকা বাসায় এসে হাজির। "চল ফইটকার বাসায় যাই। বোকাচোদা শালা নাকি ঘরের দরজা খুলতাসে না।" আমি বলি, "দাঁড়া, ওর মনটা ভালো করা দরকার। কিছু জিনিস নিয়ে যাই।" এরই মধ্যে হাইব্যাও এসে হাজির। "আমি একটা বোতল নিয়ে এসেছি।" মাইনকা ব্যাগ থেকে একটা বোতল বার করে। হাইব্যা নিরাশাবাদী বলে খুঁতখুঁত করতে থাকে, "এটা তো অর্ধেক খালি!" মাইনকা বলে, "ন্যাকামি করিস না। এইটার অর্ধেক ভরা!" হাইব্যা বলে, "এইসবে কাজ হবে? এই দ্যাখ ... আমি দুইটা চুটকির বই নিয়ে এসেছি!" আমি আমার শেলফের গোপন কন্দর থেকে কিছু জিনিস বার করি। হাইব্যা বলে, "এগুলি আবার ক্যান?" মাইনকা বলে, "কাজে লাগবে। ফইটকার এখন এগুলি কাজে লাগবে।" তিনজনে দুড়দাড় করে যাই ফটিকের বাসায়। ছইটকা বাড়ি ছিলো না, ফটিকের মা বিরক্ত হয়ে বললেন, "শুরু করসে এক ঢং! ঘর ছাইড়া বাইর হয় না! আসুক ওর বাপ!" আমরা ফইটকার ঘরে টোকা দেই। "ফটু! ফটু রে! আছিস? আমরা আসছি, দরজা খোল!" ফইটকা দরজা খুলে সন্দিহান চোখে তাকায় আমাদের দিকে। "কী হইসে? কী চাস?" আমরা দরজা আবার লাগিয়ে দিয়ে বলি, "তোমার পোন্দে লাত্থি মারতে চাই! তোর কী হইসে খুইলা ক। দরজা বন্ধ কইরা থিয়েটার করস ক্যান?" ফইটকা কিছু বলে না, গম্ভীর মুখে একটা বই খুলে বসে আবার। মানিক গিয়ে বইটা টান মেরে ওর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বলে, "এ কী? তুই ফ্রেঞ্চ শিখতাসস নাকি? অলিয়ঁসে?" ফটিক গম্ভীর হয়ে বলে, "উই!" মানিক বলে, "কইতি আমাগো। আমরাও শিখতাম তোর লগে।" ফটিক আবার বইটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টায়। মানিক ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দ্যায়। "কোন ব্যাপার না। জীবনটাই এমন। মাইয়ারা আসবে আর যাবে। তুই হবি প্ল্যাটফর্ম। মেয়েরা হবে ট্রেন। একের পর এক আসবে, কিছুক্ষণ থামবে, চলে যাবে।" ফটিক অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় মাইনকার দিকে। মানিক বলে, "আচ্ছা আচ্ছা, তুই প্ল্যাটফর্ম না। তুই ট্রেন। মাইয়ারা হইলো গিয়া প্ল্যাটফর্ম। তুই একের পর এক প্ল্যাটফর্মে যাবি, খাড়াবি, আবার রওনা দিবি। চিয়ার আপ বাডি!" আমি বলি, "ফইটকা রে, এই দ্যাখ কী নিয়াসছি!" নেংটু সিডি বার করে দেখাই ওকে। দেখে ফটিকের ভাবান্তর হয় না। কাভারটা মনোযোগ দিয়ে দেখে সে ঘোঁৎ করে শুধু বলে, "দেজা ভু!" আমরা একে অন্যের দিকে তাকাই। মানে কী এর? ফইটকাই ব্যাখ্যা করে, "দেখসি এইটা, অলরেডি দেইখা ফালাইসি!" মাইনকা ব্যাগ থেকে বোতলটা বার করে। "আয় মাল খাই। বাসায় ফান্টা আছে?" ফইটকা বোতল দেখে মুখ কুঁচকায়, বলে, "দেজা বু!" দেজা ভু শুনে আমরা গোঁৎ খেয়েছিলাম, দেজা বু শুনে আবারও হোঁচট খাই। ফইটকাই টীকা যোগ করে, "খাইসি, অলরেডি খাইসি একটু আগেই।" ঘরের কোণে টুলের ওপর একটা খালি বোতল দেখায় সে আঙুল দিয়ে। হাইব্যা ব্যাগ থেকে চুটকির বই দুইটা এগিয়ে দেয়। "এগুলি পড়। হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাবি! একটা শোনাই দাঁড়া ...।" ফটিক বই দুইটা হাতে নিয়ে দ্যাখে। তারপর ফিরিয়ে দেয় আবার হাইব্যার হাতে। "দেজা লু!" আমরা আঁচ করতে পারি। ফইটকা বই দুইটা পড়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। মানিক ক্ষেপে যায়। "ঐ হারামী, তোরে এতো খাতির যত্ন করতেসি, আর তুই পাত্তা দেস না আমাগো! ঐ মাইয়ার লাইগা অ্যাতো অ্যাতো অপমান আমাগো?" ফইটকা গোঁ গোঁ করতে থাকে। হাইব্যা বলে, "বল। সব খুইলা বল। অ্যাতো দুঃখ কীসের?" আমি বলি, "দোস্ত, কদ্দুর কী হইসিলো বইলা ফেল।" মাইনকা বদমাইশটার কোন মায়াদয়া নাই, সে বলে, "হ, কইয়া ফালা সব। দেজা চু?" ফইটকা অম্নি ক্ষেপে ওঠে দারুণ। লাফিয়ে উঠে আমাদের ঠেলতে থাকে। "বাইরা, বাইরা সব! হালারা! আসছে আমারে জ্বালাইতে!" আমরা হতবাক হয়ে যাই এই আচরণে। ফইটকা আমাদের হাত থেকে বোতল, বই আর সিডি কেড়ে নিয়ে একরকম ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয় ঘর থেকে।
false
ij
হেসিয়দ_ প্রাচীন গ্রিসের এক কবি হেসিয়দ: প্রাচীন গ্রিসের এক কবি। গ্রিক সাহিত্যের প্রথম দু’জন বিখ্যাত লেখক হলেন হোমার ও হেসিয়দ । আমাদের এখানে হোমার তুমুল আলোচিত হলেও হেসিয়দ-এর নামটি ততটা আলোচিত নয়; তবে কে কার আগে বেঁচে ছিলেন তা নিয়ে ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের মধ্যে আজও যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে ... যে কারণে আমরা সে বিতর্কে যেতে চাই না। হেসিয়দ ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ এবং এবং ‘থিওগনি’ নামে দুটি কাব্যের রচয়িতা। প্রাত্যহিক কৃষিজীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও গ্রিক দেবদেবীর বিবরণ এবং কালপঞ্জীই হেসিয়দ-এর কাব্যের বিষয়বস্তু । হেসিয়দ- এর কাব্যে রয়েছে এক আদিম ও অন্ধকার জগতের প্রতিচ্ছবি ...সে জগৎ আদিম কিন্তু সুবিন্যস্ত; সুবিন্যস্ত, কেননা হেসিয়দ-এর সময় থেকেই গ্রিক মনন ক্রমশ পরিনত হয়ে উঠছিল। হেসিয়দ কে প্রথম কৃষিবিদ এবং গ্রিক ডিডাকটিভ বা অবরোহী কাব্যের জনকও বলা হয়। প্রাচীন গ্রিসের মানচিত্র। পুবে এশিয়া মাইনর, পশ্চিমে গ্রিসের মূলভূমি খ্রিস্টীয় অস্টম শতকের মাঝামাঝি। একজন গ্রিক নাবিক গ্রিসের মূল ভূখন্ডের আসক্রায় বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি আগে বাস করতেন এশিয়া মাইনরের এয়োলিয়ার সাইমি তে। গ্রিসের মূল ভূখন্ডের আসক্রা এয়োলিয়ার পশ্চিমে। যা হোক। এয়োলিয় বলে সেকালে একটি ভাষা ছিল, যে ভাষাটি গ্রিক ভাষারই শাখা,পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ভাষা ও বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভাষা যেমন অভিন্ন বাংলা ভাষারই শাখা, তেমনি। এশিয়া মাইনরের এয়োলিয় ভাষাটি নাকি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও শ্র“তিমধুর ছিল। মহাকবি হোমার এই এয়োলিয় ভাষাতেই তাঁর মহাকাব্য দুটি গ্রন্থনা করেছেন। এয়োলিও হার্প। পশ্চিমা সংগীতেও এয়োলিও সংগীতের গভীর প্রভাব; এয়োলিয় মাইনর নামে একটি স্কেল রয়েছে, যে স্কেলটি বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় । আমাদের দেশে এয়োলিয় মাইনর কেবলি ‘মাইনর স্কেল’ নামে পরিচিত। ‘মাইনর স্কেল’ ৩ ভাগে বিভক্ত। (১) ন্যাচারাল মাইনর। (২) হারমোনিক মাইনর এবং (৩) মেলোডিক মাইনর। এই ন্যাচারাল মাইনরই এয়োলিয় মাইনর -যা ছিল এয়োলিও অঞ্চলের অন্যতম স্কেল। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ট শতকে ইউরোপের গির্জে পিতারা এয়োলিও মাইনর স্কেলটিকে পাশ্চাত্য সংগীতে পদ্ধতিগত ভাবে সংযোজন করেন। বিয়োশিয়ার মানচিত্র । জায়গাটা এথেন্সের পশ্চিমে ... বিয়োশিয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্য যা হোক। আসক্রা জায়গাটা গ্রিসের বিয়োশিয়ায়, ওখানেই রয়েছে বিখ্যাত চারণ ভূমি, উর্বর কৃষিক্ষেত্র। যে কারণে অভিবাসী নাবিকটি কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে গ্রহন করেন । এবং কালক্রমে তাঁর দুটি পুত্রসন্তান জন্ম লাভ করে। একজনের নাম: পারসেস,অন্যজনের নাম: হেসিয়দ। যে হেসিওদ সম্বন্ধে ভবিষ্যতের পৃথিবীর এন এন ডি বি নামে একটি ওয়েব সাইট লিখবে : হেসিয়দ জন্ম: ৭০০ খ্রিস্টপূর্ব। জন্মস্থান: বিয়োশিয়া, গ্রিস। মৃত্যু:৭০০ খ্রিস্টপূর্ব। মৃত্যুর স্থান: বিয়োশিয়া, গ্রিস। মৃত্যুর কারণ: আনস্পেসিফায়েড। লিঙ্গ: পুরুষ। এথনিসিটি: হোয়াইট। পেশা: কবি। জাতীয়তা: প্রাচীন গ্রিস। এক্সিকিউটিভ সামারি: ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ হেসিয়দ। আজও এই একুশ শতকেও স্মরণীয় ... বিয়োশিয়ার হেলিকন পাহাড় বিয়োশিয়ার আসক্রায় পারসেস আর তার ভাই হেসিয়দ বেড়ে উঠছে। তারা একত্রে মেষ চড়ায়। কাছেই হেলিকন পাহাড়। সেই পাহাড়ের ঢালের তৃণবর্ণের তুমুল সৌন্দর্য, ওপরকার অবারিত নীলাকাশ, বিস্তীর্ণ সবুজাভ দ্রাক্ষাকুঞ্জ, আঁকাবাঁকা পাথরগর্ভা নদী, সবুজ রঙা আদিগন্ত ঘাসের প্রান্তরে অটুট নির্জনতা... হেসিয়দ কবি হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে পারসেস ভাবে কি করে আরও ভেড়া বিক্রি করে ধনী হয়ে ওঠা যায়! পক্ষান্তরে হেসিওদ ভেড়াদের সঙ্গে কথা কয়। কবি তো! হেসিওদ খ্রিস্টীয় অস্টম শতকের মাঝামাঝির কবি, অর্থাৎ, ২৭০০ বছরের আগের কবি। ভেড়া দেখে কি ভাবতেন সেই কবিটি? ইংরেজ কবি উইলিয়াম ব্লেকের একটি কবিতা আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর দেয়। উইলিয়াম ব্লেকের জন্ম, ১৭৫৭ সালে ...‘দ্য ল্যাম্ব’ কবিতায় ব্লেক লিখেছেন ... Little lamb, who made thee? Dost thou know who made thee, Gave thee life, and bid thee feed By the stream and o'er the mead; Gave thee clothing of delight, Softest clothing, woolly, bright; Gave thee such a tender voice, Making all the vales rejoice? Little lamb, who made thee? Dost thou know who made thee? বিয়োশিয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্য এসব মেটাফিজিক্যাল ভাবনা নিয়েই কিশোর হেসিওদ বড় হয়ে উঠতে থাকে। ভেড়া নিয়ে চারণক্ষেত্রে যায়। পারসেস আর যায় না। সে আগোরায় দোকান দিয়েছে ( আগোরা বলতে কেবল গ্রিসের এথেন্স নগরের আগোরা বুঝলে ভুল হবে। তৎকালে গ্রিসজুড়ে যেসব নগররাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল তার প্রত্যেকেরই নগরের মাঝমধ্যিখানে হাটবাজার ছিল, যার নামই আগোরা। )...পারসেস বিয়ে করেছে। আলাভোলা হেসিওদ-এর আর বিয়ে করা হল কই? ... হেসিওদ এর সময়কার প্রত্নবস্তু তো একদিন। হেলিকন পাহাড়ের কুয়াশার রূপ ধরে এলেন মিউজ। মিউজ হলেন গ্রিসের জ্ঞান ও কাব্যকলার দেবী। জ্ঞানের দেবী নির্মল হৃদয়ের অধিকারী হেসিওদকে দান করলেন বর । বললেন,‘তুমি যথাসাধ্য লিখ। যুগযুগ ধরে মানুষ তোমায় স্মরণ করবে, পারসেস এর নামও নেবে না ।’ দেবীর কথা শুনে হেসিওদ মহাকাব্য লিখতে অনুপ্রাণিত হলেন। ছবি। হেসিয়দকে মিউজ কাব্য লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, এটি যুগ যুগ ধরে ইউরোপী শিল্পীদের প্রিয় এক থিম। এ রকম দুটি ছবি। যা হোক। যা হয় ... ঘনিয়ে এল দুর্যোগ । কবির বাবা মারা গেলেন। উত্তরাধিকারসূত্রে হেসিয়দ সামান্য সম্পদ পেল। সে সম্পদ কুক্ষিতগত করতে মামলা করল ধূর্ত পারসেস । পারসেস মামলার রায় নিজের পক্ষে আনার জন্য বিচারককে ঘুষ দিয়েছিল। এই কথা কানে যেতেই কবির মন ভেঙে যায়, কবি আসক্রা ছেড়ে নাওপ্যাক্টাস নামে একটি জায়গায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হায়, একজন ভগ্নহৃদয় কবি জন্মস্থান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন নাওপ্যাক্টাস নামে একটি জায়গায় হায়, একজন ভগ্নহৃদয় মানুষ চলে যাচ্ছেন নাওপ্যাক্টাস নামে একটি জায়গায় হায়, কাছের মানুষের সংকীর্ণতা দেখে একজন বিশাল হৃদয়ের মানুষ কষ্ট পেয়েছিলেন আজ থেকে ২ হাজার ৭০০ বছর আগে ... নাওপ্যাক্টাস এ কবি উঠলেন এক সদ্য পরিচিত লোকের বাড়ি। গৃহকর্তার ছেলে আরেক পারসেস। গৃহকর্তার ছেলের শিল্পবোধ মোটেও ছিল না, কবির ব্যাক্তিত্বের মাধুর্য আবিস্কার করতে পারেনি সে হতভাগা ...কবির দুর্ভাগ্য এই যে তিনি সেই গৃহকর্তার ছেলের হাতেই খুন হন। খুন করার কারণটি জানা যায়নি। পরে তার মরদেহ অবশ্য আসক্রায় নিয়ে আসা হয়েছিল। গ্রিকভাষায় ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ এর পান্ডুলিপি আগেই বলেছি কবি হেসিওদ দৈব অনুপ্রেরণায় রচনা করেছিলেন ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ এবং ‘থিওগনি’ নামে দুটি কাব্য। হেসিওদ আসলে ছিলেন পল্লীর কবি: ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ এ তৎকালীন পল্লীজীবনের প্রতিদিনকার কাজের অভিজ্ঞতা ফুটে উঠেছে। হেসিওয়দ ছিলেন নিুবৃত্ত গৃহস্থ কৃষক, তারই প্রতিচ্ছবি পড়েছে তাঁর লেখায়। আমৃত্যু কৃষিজীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। এখানেই জসীমউদ্দীনের সঙ্গে হেসিওদ-এর পার্থক্য, জসীমউদ্দীন পল্লীজীবন নিয়ে লিখেছেন, সম্ভবত লাঙল ধরেননি, হেসিওদ ছিলেন পুরোদস্তুর একজন কৃষক। বাংলার কবি জসীমউদ্দীন ছাড়াও ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ এ হেসিওদ এর ভিতরে আমরা খনা ও শাইখ সিরাজের মিশ্রন দেখতে পাই। হেসিওদকে যে কারণে প্রথম কৃষিবিদ বলা হয়। এ ছাড়া ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ এ রয়েছে উপকথা, রূপক, ব্যাক্তিগত ইতিহাস, বিয়োশিয়ার মেষপালকদের কালপঞ্জীর মিশ্রন। এই কাব্যে উৎসাহিত করা হয়েছে সৎ পরিশ্রমকে, তিরস্কার করা হয়েছে আলস্যকে। পুরো ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ জুড়েই রয়েছে কৃষিকাজের দিকনির্দেশনা । এছাড়া রয়েছে ধর্মীয় কালপঞ্জী, কৃষকের কোন্ দিন শুভ আর কোন্ দিন অশুভ, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা। অদ্ভূত হলেও সত্য পুরো ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ কাব্য ভাই পারসেস কে উদ্দেশ্য করে লেখা ... যে ভাই কবির মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেসিওদ-রচিত‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ কে গ্রিসের প্রথম ফেবল, বা কল্পকাহিনী বলা হয়। সমগ্র কাব্যটি এপিক ভার্স ফর্মে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এখন ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ থেকে কিয়দংশ পাঠ করা যাক- যদি তুমি উত্তরায়ণে কর চাষ উর্বর ভূমি, মুঠোয় আঁকড়ে ধরবে তুমি বসে যাওয়া কৃশকায় ফসল আর বাঁধবে তির্যক শষ্যের বোঝা, ধূলিময়, অসন্তুষ্টি, ঝুড়িতে করে বাড়ি বয়ে আনবে আর অন্যেরা চোখে দেখবে শ্লেষ। যদিও জিউসের ইচ্ছে, যিনি ধরে রাখেন বিভিন্ন আনুকূল্য বিভিন্ন সময়ে, আর এটি বলা মরনশীল মানবের পক্ষে দুস্কর; যদি তুমি বিলম্বে তুলে নাও লাঙল, তুমি সম্ভবত লাভ করবে প্রতিবিধান ... ওক গাছের পাতার ভিতর যখন প্রথম ডাকে কোকিল আর সীমাহীন পৃথিবীতে মানুষ হয়ে ওঠে আনন্দিত, যদি জিউস তৃতীয় দিনে পাঠায় বৃষ্টি, বৃষ্টির যে জল ষাঁড়ের ক্ষুরের ওপর ওঠে না কিংবা এর নিচেও না-থাকে, তাহলে বিলম্বিত লাঙলের চাষ প্রতিযোগীতা করতে পারবে লাঙলের প্রথম চাষ এর সঙ্গে। এইসব ভালো ভাবে মনে রেখ, আর মনে রেখ ধূসর বসন্তের কথাও, আর বর্ষনের মাসটির কথা ... এজন্যই আমি বলছিলাম বাংলার কবি জসীমউদ্দীন ছাড়াও ‘ওয়ার্কস অ্যান্ড ডে’জ’ এ হেসিওদ এর ভিতরে আমরা খনা ও শাইখ সিরাজের মিশ্রন দেখতে পাই। থিওগনি বইয়ের প্রচ্ছদ পক্ষান্তরে ‘থিওগনি’ কাব্যটি খ্রিস্টীয় অস্টম শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গ্রিসের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের কাব্যিক সারৎসার, এবং সে কারণেই ‘থিওগনি’ গ্রিক মিথলজির প্রধান উৎস, সেই সঙ্গে মানুষের আদি জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চার উৎকৃষ্ট এক নিদর্শন; আজ থেকে ২,৭০০ বছর আগে মানুষ কোন্ চোখে তাকিয়েছিল আকাশের দিকে ... অপার রহস্যে ভরা ওই মহাবিশ্বের দিকে। থিওগনি কাব্যটির বিষয়বস্তু বিশ্বজগতের সৃষ্টি (কসমোগনি)ও দেবদেবী (থিওগনি) ... সেই সঙ্গে গ্রিক দেবতাদের কালপঞ্জী। গ্রিক নগর সমূহের উপকথাও এতে আছে। গ্রিক উপকথা সম্বন্ধে হেসিওদ যা লিখেছেন তা গ্রিক ভাষাভাষী সমাজ গ্রহন করে এবং আজও বিশ্বজুড়ে মানুষ তারই চর্চা করে যাচ্ছে। উপরোন্ত গ্রিক মিথ বলতে বাঙালি শিক্ষিত সমাজ আজ যা বুঝে তা কবি হেসিওদ এর হাতেই সর্বপ্রথম প্রস্ফুটিত হয়েছিল। থিওগনিও এপিক ভার্স ফর্মে উপস্থাপন করা হয়েছিল। থিওগনি থেকে পাঠ করা যাক- ... And Night bare hateful Doom and black Fate and Death, and she bare Sleep and the tribe of Dreams. And again the goddess murky Night, though she lay with none, bare Blame and painful Woe, and the Hesperides who guard the rich, golden apples and the trees bearing fruit beyond glorious Ocean. Also she bare the Destinies and ruthless avenging Fates, Clotho and Lachesis and Atropos (10), who give men at their birth both evil and good to have, and they pursue the transgressions of men and of gods: and these goddesses never cease from their dread anger until they punish the sinner with a sore penalty. Also deadly Night bare Nemesis (Indignation) to afflict mortal men, and after her, Deceit and Friendship and hateful Age and hard-hearted Strife. গ্রিক ভাষায় হেসিয়দ এর কাব্য তখন লিখেছিলাম হেলিকন পাহাড়ের পাদদেশে কুয়াশারূপে আর্বিভূত দেবী নির্মল হৃদয়ে অধিকারী হেসিয়দ কে বর দান করেন। তারপর বলেন,‘তুমি যথাসাধ্য লিখ। যুগ যুগ ধরে মানুষ তোমায় স্মরণ করবে, পারসেস এর নামও নেবে না ।’ দেবীর বাক্যই সত্য হয়েছে। আজ আমরা বলি যে হোমার ও হেসিওদ -এ দু’জন হলেন গ্রিক সাহিত্যের প্রথম বিখ্যাত লেখক। ...বাস্তববাদী পারসেস বেঁচে থেকে ভাইয়ের সম্পদ গ্রাস করে তার কী লাভ হল কে জানে, আমরা তাকে ধিক্কার দেই। তার কারণেই কবি নাওপ্যাক্টাস-এ চলে যেতে বাধ্য হলেন এবং সেখানকার গৃহকর্তার ছেলের হাতে খুন হলেন। তার আগে পারসেস কবির সম্পদ নিয়ে মামলা করল, বিচারককে ঘুষ দিল । এতে কবির মন ভেঙে যায় ... ছিঃ, যুগ যুগ ধরে লোভী বিষয়ী মানুষেরা নির্লোভ মানুষদের কষ্ট দিয়েছে। ... যে হেসিওদ ভালোবাসতেন হেলিকন নামে এক পাহাড়ের ঢালের তৃণবর্ণের তুমুল সৌন্দর্য, ওপরকার অবারিত নীলাকাশ, বিস্তীর্ণ সবুজাভ দ্রাক্ষাকুঞ্জ, আঁকাবাঁকা পাথরগর্ভা নদী, সবুজ রঙা আদিগন্ত ঘাসের প্রান্তরে অটুট নির্জনতা ... যে গন্ধময় সবুজ নির্জনতা এক গ্রিক কিশোর হেসিয়দ কে কবি করে তুলেছিল আজ থেকে ২৭০০ বছর আগে ... সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১০ রাত ১১:০৫
false
hm
রয়েসয়ে পুরনো লেখা সাধারণত সচলে দিই না, এই লেখাটার কথা বহুদিন পর মনে পড়লো। যাঁরা ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছেন তাঁদের কাছে ক্ষমা চাই। একটি মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনবুলি "অন্যরা যা করে কয়েক বছরে, আমরা তা করেছি কয়েক মাসে"কে পঁচিয়ে লেখা। যাঁরা পড়েননি, তাঁরা একে সত্যকাহিনীর সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। সত্য গল্পের চেয়েও খাইষ্টা। হুঁ, একটু তাড়াহুড়ো করতাম সবকিছুতেই। আজন্ম এই হুড়োহুড়ি আমার। জন্মের পর থেকেই আশেপাশের সবাইকে ব্যস্ত করে ফেলি। ট্যাঁ ট্যাঁ কান্না, গিগিগি হাসি, আর কাঁথা নষ্ট। আপত্তি করেনি কেউ, এ তো স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যদের যা করতে লাগে কয়েক বছর, আমি তা করে ফেলি কয়েক মাসে। হাঁটি, কথা বলি। দিব্যি বড়দের মতো। সবাই একটু নড়েচড়ে বসে। বলে, রয়েসয়ে! আমি রইও না, সইও না। ব্যতিব্যস্ত করে ছাড়ি সবাইকে। এটা ধরি, ওটা ভাঙি। এক বড়দের কথা অন্য বড়দের কাছে শিশুতোষ সারল্যে চালান করে দেই। পাশের বাড়ির আঙ্কেল জানতে পারেন, আমার বাবা তাঁকে ইস্টুপিট ডাকেন। আন্টি জানতে পারেন, মা তাঁকে ডাকেন ব্যাটাতুন্নেসা। একটা খিটিমিটি লেগে যায়। আমি গা করি না। ওনাদের মেয়ে লুবনার সাথে আমার দারুণ দহরমমহরম। বাপমা তো দুদিনের মায়া, লুবনাই সব। দুপক্ষের বাবামাই পক্ষ ঝাপটান, বলেন, আরে রয়েসয়ে, এই বয়সেই এই! ইস্কুলে গিয়ে আবার ব্যাপারটা একটু উল্টে যায়। অন্যরা যা কয়েক মাসে করে ফ্যালে, আমার তা করতে লেগে যায় কয়েক বছর। সব শালাশালি দেখি ফটাফট সরলাঙ্ক মানসাঙ্ক লসাগু গসাগু জ্যামিতি নিয়ে একটা দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে বসেছে। আমার তো ত্রিভূজ থেকে চতুর্ভূজের ফারাক করতেই ঝামেলা লেগে যায়। বাবা ক্ষেপে যান, মা বলেন, মনে হয় চোখের দোষ। চশমা লাগবে। লুবনা আমার কামড় খেয়ে হাসে, বলে, দুষ্টু, রয়েসয়ে। তবে গালাগালিটা ওদিকে বেশ রপ্ত করে ফেলি। অন্যদের যা শিখতে কয়েক বছর লেগে যায়, আমি তা অনায়াসে শিখে ফেলি কয়েক মাসেই। কচি কচি সহপাঠীরা সবে শকার বকার করতে শিখেছে, সস্নেহে তাদের চ-বর্গীয় গালাগালি করি। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওরা, আমি চোখ টিপি। মাস্টারদের কাছে বিচার ঠোকে কতিপয় বইখোর বোকাচো--, আমার ডাক পড়ে তদন্ত কমিটির সামনে। নিখাদ হাবলা সেজে দাঁড়াই, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি, সুন্দরী ম্যাডামের অস্বস্তি ভরে বুকের ওপর আঁচল টানেন। হতাশ হই আমি, হতাশ হন অ্যাসিস্টেন্ট হেডমাস্টারও। আমরা দুই খাঁজভক্ত একে অন্যের দিকে তাকাই। শুনতে পাই তিনি বিড়বিড়িয়ে বলছেন, রয়েসয়ে ...। এসএসসি পরীক্ষার সময় সাথের পোলাপানের সবে কচি কচি রোমের রেখা নাকের নিচে, আর আমার রীতিমতো আঁচড়ে রাখা গোঁপ। হুঁ, অন্যদের যা বাগাতে কয়েক বছর লেগে যায়, আমার সেটা কয়েক মাসেই গজিয়ে একেবারে ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থা। ইনভিজিলেটর খাবি খায় আমাকে দেখে। এক গ্লাস পানি খেয়ে ধাতস্থ হয়ে বলে, রয়েসয়ে! লুবনা ওদিকে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। চুটিয়ে রোমান্স করছি আমরা। আমার ইস্কুলের সহপাঠীরা বিষন্ন হয়ে পড়ে আমাদের হুড়োহুড়ির নমুনা দেখে। বলে, রয়েসয়ে। আমি হাসি। কিছু বলি না। আরে ওরা তো নিছক আবাল, লুবনার সিনিয়র ভাইয়েরাই আমাদের চালচলনে ঘাবড়ে যায়, বলে, রয়েসয়ে ... আর এরা তো মোটে ইস্কুল ছেড়ে বেরোচ্ছে। তো, হয়তো অন্য কেউ হলে আরো কয়েক বছর সময় নিতো, কিন্তু আমি তা করে ফেলি কয়েক মাসেই। লুবনার সাথে বিয়েটা সেরে ফেলি কাজী অফিসে গিয়ে। কাজী দুষ্টুটা কলমা পড়ায়, আমরা মিটিমিটি হাসি। বিয়ে হয়ে যাবার পর লুবনাকে চুমু খাই সিনেমার ইশটাইলে। কাজী আঁতকে ওঠে। ইউ মে কিস দ্য ব্রাইড বলা তো আর ওর ধাতে নেই। আমরা সামলে নেই, কাজী নিজের বুক আঁকড়ে কী একটা ট্যাবলেট খায়, তারপর বলে, আলহামদুলিল্লাহ, রয়েসয়ে! বাড়ি ফিরে দেখি আরেব্বাপস, বাপ মা দুজনেই চটে লাল। কত অভিযোগ। ইস্টুপিটের মেয়ে ঘরে আনলাম, ব্যাটাতুন্নেসার মেয়ে ঘরে আনলাম। দুজনে মিলে কয়েক ঘন্টায় যা বকাঝকা করে, অন্য কেউ হলে তা করতে লেগে যেতো কয়েক মাস। আমি অধোবদনে দাঁড়িয়ে থাকি, লুবনা মুচকি মুচকি হাসে। শেষে মায়ের কানে কানে আসল কথাটা বলে। শুনে তো মা ফিট! হায়রে মা, সুসংবাদ শুনে কোথায় একটু হই হল্লা করবি তা না ... এজন্যেই তো মুরুবি্বরা বলে, রয়েসয়ে। লুবনাকে বকা দেই। তখুনি বলার কী দরকার ছিলো? যা ভাবছেন তাই, অন্যরা বিয়ের পর যা করতে কয়েক বছর লাগিয়ে দেয়, আমরা তা করে ফেলি কয়েক মাসেই। যমজ এসে হাজির। সবার মুখ কিন্তু অন্ধকার, বাচ্চাগুলোই খলখল করে হাসে। পাড়ার বড় ভাইরা এসে পিঠ চাপড়ে দেয়, চোখ টিপে বলে, রয়েসয়ে! বাবা নোটিশ দেয়, চাকরি বাকরি জোটা, নইলে জুতিয়ে বার করে দেবো। আমি হাসি, বলি, আরে ইস্কুল পাসের পর অন্যদের যা করতে কয়েক বছর লেগে যায়, আমাকে তা কয়েক মাসে করতে বলছো, এ-ই কি ইনসাফ? রয়েসয়ে! বাবা জুতো হাতে তেড়ে আসেন। চাকরি একটা ধরাধরি করে পাই। সম্মানজনক কিছু নয়। পড়ালেখার পর করতে হয়। বড় চাপ। বাড়ি ফিরে এসে দেখি বাপমাবউবাচ্চা দিয়ে ঘর বোঝাই। ভাল্লাগেনা। অন্যরা হয়তো কয়েক বছর পর ধরতো, আমি কয়েক মাস পরেই ধরে ফেলি। দেশি ভদকা। একটু লেবু চিপে পান করলেই দুনিয়াটা বেশ ডগোমগো হয়ে ওঠে। হামলা করতে গেলে লুবনা বিরক্ত হয়, বলে, আহ কী হচ্ছে আবার, রয়েসয়ে! তো এভাবেই চলছে গত কয়েক বছর, বুঝলেন। অন্য কেউ হলে কয়েক মাস পরই সব ছেড়েছুড়ে তাবলীগের চিল্লায় চলে যেতো, কিন্তু আমি আঁকড়ে আছি। ভালোবাসার টান, কী করবো বলুন? তবে আপনাদের জন্য একটাই উপদেশ আমার। রয়েসয়ে। (রচনাকাল: অগাস্ট, ২০০৬)
false
mk
শুভ জন্মদিন শেখ হাসিনা বাবা শেখ মুজিব আদর করে বাড়ির বড় সন্তানকে ডাকতেন কখনো ‘হাচু’ বলে, আবার কখনো ‘হাচিনা’। শুদ্ধ করে ডাকলে হতো ‘হাসিনা’। আবহমান বাংলার মা-বাবারা সন্তানদের আদর করে ডাকতে অভ্যস্ত। তাই মূল নামটা হয়ে যায় একটু আদুরে। কখনো কখনো মূল নামের সঙ্গে তার মিলও থাকে না। যেমন শেখ মুজিব মা-বাবার কাছে পরিচিত ছিলেন খোকা হিসেবে। সেই শেখ মুজিব একদিন হয়ে গেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’, মানে বাংলার বন্ধু। সেই বঙ্গবন্ধু একদিন হয়ে উঠলেন ‘জাতির জনক’। সেই জাতির জনককে সপরিবারে পাকিস্তানিদের বন্ধুরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করল। বিদেশে অবস্থানের কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁর দুই কন্যা, তাঁর হাচু আর রেহানা। সেই হাচু বর্তমানে বাংলাদেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী—বিশ্ব তাঁকে চেনে শেখ হাসিনা নামে। দেশের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি জননেত্রী। তিনি যখন বাংলাদেশের বাইরে তাঁর নাম তেমন একটা কেউ জানতেন না। এখন শুধু জানেন না, তাঁকে সম্মান করেন, কথা বললে মনোযোগ দিয়ে শোনেন। নিজেদের বক্তৃতায় তাঁকে উদ্ধৃত করেন। স্বীকার করেন মহিলার হাতে জাদু আছে। বিশ্বে তিনি স্বীকৃত একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন জরিপ করে বলেছে, শেখ হাসিনা বিশ্বের ৪৭তম ক্ষমতাধর নারী। আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন অনেক। অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়াটা এখন সময়ের দাবি। শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার না পেলে তেমন কিছু একটা আসে-যায় না। মহাত্মা গান্ধী একাধিকবার এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। পাননি। হিটলারকেও মনোনীত করা হয়েছিল একবার। বিশ্বশান্তিকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি কিন্তু এই পদকে ভূষিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রথমবার ক্ষমতায় যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মাথায় নোবেলপ্রাপ্ত হয়েছেন এই প্রত্যাশায়—তাঁর শাসনামলে বিশ্বটা একটু শান্ত হবে। ঠিক উল্টোটাই হয়েছিল তাঁর আট বছরের শাসনামলে। রাজনৈতিক নেতা হতে পারাটা অনেক সহজ। রাষ্ট্রনায়ক হতে হলে দূরদৃষ্টি থাকতে হয়। সময়ের দাবিকে সম্মান করে দেশের জন্য ঝুঁকি নিতে হয় কখনো কখনো। শেখ হাসিনা তা অনেকবার নিয়েছেন। দেশের স্বার্থে জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন। তাঁর কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। সেই জননেত্রীর আজ ৭০তম জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে প্রাণঢালা অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা।১৯৯৪ সালে জাতীয় শোক দিবসে টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। মধুমতী নদীর পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা সরু পথ দিয়ে যেতে হয়েছিল। কানায় কানায় পূর্ণ তখন মধুমতী। দুই পারে কাশবন। একটি নদী যে এত সুন্দর হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না। মধুমতী এখন অযত্ন-অবহেলায় অনেকটা মৃত। সেই মধুমতী নদীর অনতিদূরে দেশভাগের এক মাসের মাথায় টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মেছিলেন মা-বাবার আদরের হাচু, হাচিনা আর আজকের শেখ হাসিনা। যাঁরা শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছেন তাঁরা স্বীকার করবেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা আক্ষরিক অর্থে কখনো শহুরে হাইফাই মেয়ে বা মহিলা হতে পারেননি। সিফন শাড়ি পরিহিত, চোখে দামি সানগ্লাস আর পায়ে বিদেশি হাইহিল পরা একজন শেখ হাসিনাকে কল্পনা করা অসম্ভব। কাছে গেলে মনে হবে তিনি বাড়ির বড় বুবু অথবা ছোট ফুফু। এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এক বালিকা তো তাঁকে দাদি বলেই সম্বোধন করল। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন কবিতা শর্মা, বর্তমানে ড. কবিতা শর্মা, দিল্লির সাউথ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট (উপাচার্য)। তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা সপরিবারে তাঁদের প্রতিবেশী হওয়ার অনেক পরে তাঁরা তাঁদের প্রতিবেশী সম্পর্কে জেনেছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে কখনো কখনো বাজারে যেতেও দেখেছেন। পরিচয় হয়েছিল অনেক পরে। শেখ হাসিনার অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা দেখে তিনি চমত্কৃত হন। কর্মসূত্রে ড. শর্মার সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমার কাছে জানতে চান, কেমন আছেন তাঁদের সেই প্রতিবেশী? বলি, তিনি দিনরাত পরিশ্রম করছেন বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য। ড. শর্মা আমাকে জানান, দিল্লিতে থাকতে তিনি শেখ হাসিনাকে প্রায়ই বিষণ্ন দেখলেও তাঁর চোখে-মুখে একধরনের দৃঢ়তার ছাপ লক্ষ করতেন। তাঁকে বলি, বর্তমানে তাঁর সেই দৃঢ়তা শুধু বাড়েইনি বরং তিনি সেই দৃঢ়তাকে দেশের প্রয়োজনে দুঃসাহসে রূপান্তর করতে পিছপা হননি।বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনা, তাঁর স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া ও পরিবারকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছিলেন। দেশের সঙ্গে যোগাযোগটা তত সহজ ছিল না। শুধু জানতেন যারা এক রাতেই তাঁর পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল তারাই ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে শাসন করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার দেশে ফেরা নিষিদ্ধ। যে দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডও নিষিদ্ধ হয়েছে। দলের কিছু নেতা যাদের বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, তারা ঘাতকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। দল অনেকটা ছত্রভঙ্গ। বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজনদের কয়েকজন দলকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন। কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের কোনো উত্তরাধিকার যদি দলের হাল ধরেন তাহলে কাজটা কিছুটা হলেও সহজ হতে পারে। তেমন উত্তরাধিকার আছে তো মাত্র দুজন। তার মধ্যে ছোটজন শেখ রেহানা একেবারেই বালিকা। বাকি বড়জন, শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সেই শেখ হাসিনাকেই সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দলের সিনিয়র নেতারা ছুটলেন দিল্লিতে তাঁদের নতুন সভাপতিকে দেশ ফিরিয়ে আনতে। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষ করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে এক বৃষ্টিস্নাত বিকেলে সব হারানো বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিরে আসেন দেশের মাটিতে। সেদিন কত মানুষ তেজগাঁও বিমানবন্দর অথবা ঢাকা শহরের রাস্তায় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একনজর দেখার জন্য সমবেত হয়েছিল, তা শুধু অনুমানের বিষয় হতে পারে। সম্পূর্ণ পরিবার হারানো আক্ষরিক অর্থে একজন নিঃস্ব মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মানসিক ভারসাম্য হারানোটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দেশে ফিরে শেখ হাসিনা তাঁর মনের ভেতরের রক্তক্ষরণের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে তাঁর প্রবাদতুল্য দৃঢ়তার স্বাক্ষর হিসেবে হাল ধরেছিলেন দেশের ঐতিহ্যবাহী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন ঘাতকদের সমুচিত জবাব তখনই দেওয়া হবে যখন দলকে পুনর্গঠন করে তাকে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হবে। সময় ও পরিবেশ-পরিস্থিতির বিচারে তা তখন প্রায় অসম্ভব ছিল। সেই প্রায় অসম্ভব কাজটাকেই শেখ হাসিনা সম্ভব করেছিলেন দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ২১ বছর পর, যা বিশ্বের ইতহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। কেমন ছিল শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পরবর্তী সময়, তা বোঝা যায় তাঁকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত তাঁর পৈতৃক বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়াতেই। বাড়ির সামনের রাস্তায় বসে তাঁকে পরিবারের সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ পড়তে হয়। অথচ যে জেনারেল জিয়া তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় তাঁকে বঙ্গবন্ধু নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করতেন।এরশাদ পতনের পর এটি স্বাভাবিক ছিল, আওয়ামী লীগেরই একমাত্র সক্ষমতা আছে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়ার। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনায় নানা ধরনের ভুল আর অতিমাত্রায় আত্মসন্তুষ্টির কারণে তা সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বিচলিত হয়েছিলেন সত্য, কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। এমনকি তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগের মতো দুঃসাহসী সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। পিতার মতো কোনো পদ-পদবি তাঁর কাছে কখনো বড় মনে হয়নি। তিনি আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনাই থাকতে চেয়েছিলেন। দলের নেতাকর্মী আর দেশের সাধারণ মানুষের দাবির মুখে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। নতুন করে আবার তিনি দলের হাল ধরেন। তাঁর একাগ্রতা, নিরলস পরিশ্রম, আত্মপ্রত্যয় আর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি দলকে বিজয়ী করে অন্য কয়েকটি দলের সমন্বয়ে মহাজোট সরকার গঠন করেছিলেন। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যার নতুন পথচলা শুরু। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের মানুষের চাহিদার মাত্রাটা আকাশচুম্বী হয়, যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। যে দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়, সেই দলের কাছেই তো মানুষের প্রত্যাশা থাকবে। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছরে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা নিয়োগ পেয়েছিল তাদের অন্যতম যোগ্যতা ছিল তারা হয় আওয়ামী লীগবিরোধী হবে অথবা পাকিস্তানপ্রেমী। সেই প্রশাসন দিয়ে দেশ পরিচালনা বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য বেশ কঠিনই ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করেছিলেন। হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে তিনি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলেন। কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। বিচারিক আদালতে তা শেষ হয়েছিল, যা ২০০১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়টা ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্রের ফসল। সেই ধাক্কাও শেখ হাসিনা সামলে উঠতে পেরেছিলেন একমাত্র তাঁর দৃঢ়তার কারণে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা একজন লড়াকু সেনাপতির মতোই সংসদ ও সংসদের বাইরে শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাঁকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। তাঁর নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবন দিয়ে তাদের নেত্রীকে সেদিন রক্ষা করে। নিজের জীবন দিয়ে একটি দলের প্রধানকে রক্ষা করার নজির বিশ্বের ইতিহাসে তেমন একটা নেই।২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতা দখল করে শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দি করলে তাঁর দলের কর্মীরাই রাজপথে তাঁর মুক্তির দাবিতে আবার নেমে আসে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জিল্লুর রহমান (পরে রাষ্ট্রপতি), যিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আইভি রহমানকে হারিয়েছেন, তাঁর ধূলিমাখা কালো কোটটা গায়ে চাপিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন, যেখানে বিচারের নামে প্রহসন চলছিল। সেই দৃশ্য যিনিই দেখেছেন তিনি সেদিন অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অনেকটা অবধারিত ছিল; কারণ ২০০১-০৬ সালের বেগম জিয়ার চারদলীয় জোট সরকারের দুঃশাসন আর পাপের বোঝা। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তিনি শুধু হাতই দেননি, সেই বিচারের মহামান্য আদালত কর্তৃক দেওয়া রায় বাস্তবায়ন করতেও পিছপা হননি। জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক চাপ ছিল বিচার বন্ধ করার অথবা রায় বাস্তবায়ন না করার। আবারও বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃঢ়তার বিজয় হয়। এবার বঙ্গবন্ধুকন্যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তাঁর বক্তব্যে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে দেওয়া পিতার ভাষণের সূত্র ধরে বলেছিলেন, ‘শান্তির প্রতি যে আমাদের পূর্ণ আনুগত্য, তা এই উপলব্ধি থেকে জন্মেছে যে একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই আমরা ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-শোক, অশিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমাদের সব সম্পদ ও শক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হব।’ বিশ্ব সম্প্রদায়কে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিশ্বায়নের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘একই সঙ্গে এদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী ও প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করতে হবে।’ আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের দিকে যাদের দৃষ্টি আছে তাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, এসব কথা যুক্তরাষ্ট্রের বেলায় ১০০ ভাগ প্রযোজ্য। তিনি সাহসের সঙ্গে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়েই এই সত্য কথা কটি অকপটে বলেছেন। এটি একজন শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। বিশ্বকে বলেছেন জঙ্গিবাদ দমনে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা।শেখ হাসিনার মানবিক গুণাবলি প্রবাদতুল্য। একবার বিদেশে যাত্রাকালে তাঁর সফরসঙ্গী মহিলা চেম্বারের এক নেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সেই মহিলার মাথা কোলে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা শুরু করে দেন। কোনো একজন শিল্পী, খেলোয়াড় কিংবা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক—কেউ অসুস্থ হলে ছুটে যান তাঁর কাছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার খুলে দেন তাঁদের চিকিৎসার জন্য। চতুর্থ শ্রেণির স্কুলপড়ুয়া বালক শীর্ষেন্দু পটুয়াখালী থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখে তাদের গ্রামের পায়রা নদীর ওপর একটা সেতু চেয়ে, কারণ স্কুলে যেতে তাদের কষ্ট হয়। বিদেশে অবস্থান করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষেন্দুকে চিঠি লিখে জানান, তৈরি করে দেবেন তিনি সেই সেতু। এমন একজন মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী কোথায় পাওয়া যাবে? বঙ্গবন্ধুকন্যা বিয়েশাদি করে সংসার পেতেছিলেন। হয়তো চিন্তা করেছিলেন, ছেলেমেয়ে মানুষ করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু ইতিহাস তাঁকে জাতীয় রাজনীতিতে টেনে এনেছে। ১৯৮১ সালের পর তিনি দেশের রাজনীতির ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে দিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন ইতিহাসের নন্দিত কন্যা। টুঙ্গিপাড়ার হাচু, হাচিনা, শেখ হাসিনা এখন সারা বিশ্বের একজন স্বীকৃত সফল রাষ্ট্রনায়ক। ইতিহাসকন্যাকে এই দিনে অভিনন্দন। জয়তু শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুকন্যা। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩
false
hm
সবারই ক্যামেরা আছে, পুলিশের নাই কাজী সৈয়দ আজিজুল হক নামে এক বাঙালি পুলিশ অফিসার বৃটিশ শাসনামলে করাঙ্ক শ্রেণীবিন্যাস (ফিঙ্গারপ্রিন্ট ক্লাসিফিকেশন) পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে একে সহজতর করে তোলেন এবং এর সাহায্যে অপরাধী শনাক্তকরণের কাজটির জটিলতা [১] বহুগুণে কমিয়ে আনেন । এর এক শতাব্দী পর বাংলাদেশের পুলিশ সম্পর্কে খবর এসেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা হাসপাতালের ফরেনসিক রিপোর্টের ভাষা বোঝেন না [২]। মৃতদেহের প্রকৃতির ওপর তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি সুরতহাল (রূপাবস্থা) রিপোর্ট করেন। মৃতদেহ কোথায় কী অবস্থায় পাওয়া গেছে, মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন আছে কি না, থাকলে তা কেমন, পরিধেয় কী ছিলো, ইত্যাদি অনেক বর্ণনা তারা লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু মৃত্যু পরবর্তী বিকৃতি সম্পর্কে তাদের যথাযথ জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ থাকে না বলে সেই সুরতহাল প্রতিবেদনের সাথে চিকিৎসকের পোস্ট মর্টেম প্রতিবেদনের গরমিল পাওয়া যায়। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে, সেটি আরো বিড়ম্বনাকর, পুলিশ সেই রিপোর্ট বোঝে না। না বোঝার পেছনে কাজ করছে একটি অদ্ভুত অযোগাযোগ। সাব-ইনস্পেক্টরদের জন্যে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, আমি জানি না, কিন্তু তারা ফরেনসিক রিপোর্টে ব্যবহৃত জারগন বোঝেন না। এতে লজ্জার কিছু নেই, কারণ চিকিৎসার ভাষা বিশেষায়িত। মুশকিল হচ্ছে, সাব-ইন্সপেক্টররা সেই বিশেষ শব্দাবলী বোঝেন না, এবং ধারণা করা যায়, তারা ইংরেজিতে কাঁচা। ঘটনাক্রমে কিছু ঘটনায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত রায় পড়ার সুযোগ আমার ঘটেছে, সেখানে খোদ ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের বাংলা ভাষা নিয়ে মন্তব্য করে বিপদে না পড়াই ভালো, আর তদন্তকারী সাব-ইন্সপেক্টরের প্রতিবেদনের অবস্থা তথৈবচ। বাংলাতেই যদি এই হাল হয়, ইংরেজিতে যে খুব ভালো হবে না তা অনায়াসানুমেয়। সাব-ইন্সপেক্টরদের নানা খাটনির কাজে জড়িত থাকতে হয়, লেখাপড়ার ব্যাপারটায় তারা বেশি সময় দিতে পারেন বলে মনে হয়নি। পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট বেশ দীর্ঘ এবং নানা হাবিজাবি তথ্যে ভরপুর হয়, সেটা লিখতেও লম্বা সময় লাগার কথা। সেই রিপোর্টে আইনের ভাষাও যথোচিত পরিমাণে এস্তেমাল করতে হয়। এই অবস্থায় যদি তাদের ডাক্তারি এলেমও অর্জন করতে হয়, বেচারা সাব-ইন্সপেক্টররা আয়রোজগার করবে কখন? একটি কাজের দায়িত্বে যখন দুই বা ততোধিক ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষ জড়িত থাকেন, তখন তাদের মধ্যে মিসকমিউনিকেশন হওয়া স্বাভাবিক। পুলিশের কাজে আইন ও চিকিৎসা, উভয় বিদ্যাই কমবেশি জড়িত। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (সাধারণত উপপরিদর্শক) এই দুই বিষয়ে কিছু না কিছু জানতে হয়। কিন্তু পুলিশের উপপরিদর্শক পদটির মর্যাদা বিচার করলে দেখা যায়, এই পদে উচ্চশিক্ষিত লোক (যারা স্বল্প আয়াসে আইন ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় প্যাচঘোচ হেফজ করতে পারবেন) সাধারণত যোগদান করবেন না। আমাদের দেশে আইন ও চিকিৎসা, উভয় বিদ্যা শুদ্ধরূপে বলিতে-পড়িতে-লিখিতে গেলে ইংরেজি জানা অবশ্যকর্তব্য। সমাধানটা তাহলে কোথায়? রাতারাতি আমাদের উপপরিদর্শকদের ইংরেজিতে দক্ষ করে তোলা যাবে না। ফরেনসিক রিপোর্টের ডিটেল ফুলপ্যান্ট ছেঁটে উপপরিদর্শকের মাপে হাফপ্যান্ট বানানোও অনুচিত হবে, তাতে ফরেনসিক পরীক্ষাটিকে পঙ্গু করা হবে কেবল। পুলিশ বিভাগ উপপরিদর্শকের প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে চায়, কিন্তু সেটি করে কতটুকু ফল আসবে, সে প্রশ্ন সামনে আসতে বাধ্য। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ইংরেজি জ্ঞানের অভাবে ফরেনসিক রিপোর্টের সব কিছু ডিঙিয়ে নাকি শুধু শেষটা দেখেন, হত্যা নাকি আত্মহত্যা ইত্যাদি। তাদের এই কর্মসংস্কৃতি দূর করা খুব কঠিন। প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আমাকে বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষের সাথে কাজ করতে হয়েছে, এবং তাদের দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নিতে হয়েছে। ইংরেজি বোঝে না এমন টেকনিশিয়ানের জন্যে আমাকে বাংলায় ফর্ম বানিয়ে দিতে হয়েছে রিপোর্ট লেখার জন্যে, এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেগুলো ছিলো টেইলরমেড, একেক জনের জন্যে একেক রকম। আমাদের দেশে যে লোকটা দৈহিক শ্রমঘন কাজ করে, তার জন্যে কাগুজে কাজ প্রায়শই কঠিন। এই কঠিন কাজটায় সে হয় ফাঁকি দেয়, নয়তো মনোযোগ দেয় না। এই কারণে তার জন্যে সবচেয়ে সহজ, এমন একটা ফর্ম ডিজাইন করাই শ্রেয় সাময়িক সমাধান। পুলিশের উপপরিদর্শকের কাজ সহজ করে তার দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে পুলিশ বিভাগ যা করতে পারে, তা হচ্ছে তার সুরতহাল রিপোর্টে জন্যে একটি ফর্ম তৈরি করে দেয়া। এই ডিজিটাল ক্যামেরার যুগে যেখানে প্রতিদিন পোলাপান কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাঙের ছবি তুলে ফেসবুকে আপ করে লোকজনকে ট্যাগিয়ে অস্থির, সেখানে কেন পুলিশের কাছে একটা সবচেয়ে বেসিক ডিজিটাল ক্যামেরা থাকবে না, আর কেন সুরতহালের এক হাজার শব্দের পরিবর্তে একটি ছবি ব্যবহার করা হবে না, সেটিই আশ্চর্য প্রশ্ন। একটা সাধারণ এনজিনিয়ারিং ইনস্টলেশনের আগে-পরেই যেখানে কয়েকশ ছবি তোলা হয়, মৃত্যু বা হত্যকাণ্ডের পর কেন তোলা হবে না? সুরতহালের জন্যে যদি একটি ফর্ম পুলিশকে তৈরি করে দেয়া হয়, যেখানে তাকে শুধু টিক/ক্রস দাগাতে হবে, তাহলেই তার কাজ সহজ হয়ে যায়। পুলিশকে প্রচুর পেপারওয়ার্কস করতে হয়, এবং তার অনেক কিছুই একঘেয়ে ও পুনরাবৃত্তিপ্রবণ, একটা সঠিকভাবে প্রণীত তথ্যবহুল ফর্ম তাকে দেয়া হলে, এবং সেটার ওপর সংক্ষিপ্ত একটা প্রশিক্ষণ দিলে সুরতহাল প্রতিবেদন সঠিক হওয়া সম্ভাবনা বাড়ে, তদন্ত এনজিনিয়ারিঙের সুযোগও কমে। একই সাথে ফরেনসিক রিপোর্টটিকেও একটি ফর্মের চেহারা দেয়া সম্ভব। সেটি দ্বিভাষিক হলে চিকিৎসক ও পুলিশ, উভয়ের জন্যে কাজ সহজ হয়। চিকিৎসক তাঁর অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী ইংরেজি অপশনে টিক চিহ্ন দিয়ে যাবেন, যার পাশেই ব্র্যাকেটে বাংলায় লেখা থাকবে, ঐ বস্তুটি আসলে কী। এতে করে টার্মগুলো শেখার কাজটিও তারা দীর্ঘ সময় ধরে চর্চা করতে পারবেন, যা স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণে সম্ভব নয়। স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার ইত্যাদি শব্দ এবং দুয়েকটি গল্প শেখানো সম্ভব, কিন্তু আস্ত ফরেনসিক বিজ্ঞানের দাঁতভাঙা সব বিশেষায়িত শব্দ শেখানো বেশ কঠিন। পুলিশ বিভাগ চাইলে এক ধাপ এগিয়ে আরো একটি কাজ করতে পারে, একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে এই সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে সমন্বয় করতে পারে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শনে গিয়ে সুরতহালের ফর্ম ফিল আপ করবেন, ছবি তুলবেন, আরো যা যা করণীয় করবেন, তারপর থানায় ফিরে এসে লগ অন করবেন পুলিশের ওয়েবসাইটে। সেখানে তিনি সুরতহাল প্রতিবেদনের অনলাইন ফর্মটিতে তারপর মাউসের কয়েক ক্লিকে সেই রিপোর্ট জমা করে দেবেন পুলিশের কেন্দ্রীয় তথ্য গোলায়, ছবিসহ। একইভাবে ফরেনসিক চিকিৎসকও হাসপাতাল থেকে তার রিপোর্টটি পাঠিয়ে দেবেন পুলিশের কাছে। দুইজনের তথ্য সমন্বয় করে একটি রিপোর্ট চলে যাবে সেই থানার ফোল্ডারে, থানার ইনচার্জ সেখান থেকে তা ডাউনলোড করে বিস্তারিত দেখবেন। একই সাথে সেই রিপোর্টটি জনসমক্ষেও প্রকাশের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে [ছবি ছাড়া], তাতে করে স্বচ্ছতা আরো বাড়বে। আমাদের পুলিশ আইন রয়ে গেছে বৃটিশ আমলে, পুলিশের আচরণও বৃটিশ আমলের পুলিশের মতো, কিন্তু বৃটিশ পুলিশের ব্যবস্থা আর উপকরণ কিন্তু এগিয়ে গেছে বহুদূর। পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে গেছে অনেক, আমাদের ক্ষমতাবানেরা বৃটিশ আমল আঁকড়ে পড়ে আছেন। কারণ তাতেই ফায়দা। একটা ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের জন্যে দরকার হয় আধুনিক কর্তার। আমরা সেই আধুনিক কর্তাদের ঠেকিয়ে দিয়েছি বৃটিশ আমলেই। সেই কারণেই আমরা কাজী সৈয়দ আজিজুল হককে নিয়ে গর্বিত হই, বর্তমান পুলিশকে নিয়ে নয়। গোটা ব্যবস্থাটাকে আরো স্বচ্ছ করে তোলার জন্যে শুধু পুলিশের সদিচ্ছাই যথেষ্ট নয়, আমাদের পক্ষ থেকেও চাপ থাকতে হবে। তথ্যসূত্র: [১] আজিজুল হক, উইকিপিডিয়া [২] ময়নাতদন্তের ভাষা বোঝে না পুলিশ, প্রথম আলো
false
rn
যে ভাবে আমি আওয়ামীলীগ ক্যাডারদের হাতে মার খেলাম ঢাকাটাইমস থেকে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় যাই। শুক্রবার রাত দশটার দিকে আমরা রাতের খাবার খেতে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় হোটেলে যাই। হোটেল থেকে ফেরার পথে আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মসিউর রহমান খানের নেতাকর্মী পরিচয়ে সন্ত্রাসী ও ক্যাডাররা আমাদের উপর আক্রমণ করে। আচমকা তারা আক্রমন করলো আমাদের উপর। আমাকে খুব মারল। লাঠি, বাঁশ আর গজারি দিয়ে। আমি কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না- আমার দোষটা কি? কি অপরাধ করলাম। এসেছিলাম অফিসের কাজে। কাশিয়ানীর পোনা গ্রামের সব লোক একসাথে হয়েছে। আমার সাথে থাকা রিপোর্টার'রা চিৎকার করে বলছে- ভাই আমরা সাংবাদিক। আমরা এইখানে কাজে আসছি। ক্ষিপ্ত মেজাজে আমাকে মারল। পোনা গ্রামের লোকজন ঠিক করলো- আমাদের সকলকে মেরে ফেলবে। আর সবাইকে বলবে- ডাকাতি করতে আসছিল- হাতে-নাতে ধরা পড়েছে। জনতা ধরে মেরে ফেলেছে। ঠিক এই সময় ফায়েকুজ্জামান নামে একজন এসে আমাদের বলল- এরা ভূয়া সাংবাদিক। নির্বাচন কমিশন থেকে দেয়া আইডি এবং অফিসের আইডি কার্ডও ওদের দেখালাম। অশিক্ষিত বর্বর লোক গুলো আমাকে খুব মারল। মটরসাইকেল থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে কমপক্ষে পনের-বিশ জন আমাকে খুব মারে। এর মধ্যে একজন আমাকে বাঁশ দিয়ে মাথায় প্রচন্ড শক্তি দিয়ে আঘাত করে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাই। তখন একজন দূর থেকে দৌড়ে দৌড়ে এসে আমার বুকে মুখে লাথথি দিচ্ছিল। যাই হোক, সেইখানেই মরে যাওয়ার কথা ছিল- কিন্তু আমি মরিনি। আমার সাথে থাকা সাংবাদিকরা বেশ মারের স্বীকার হয়। আমাদের প্রধান রিপোর্টার হাবীবুল্লাল ফাহাদ (ভাই) দুইহাত উপরে তুলে আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। তিনি আর একটু দেরী করলে তারা আমাকে মেরেই ফেলত।আমার জামা ছিড়ে গিয়েছিল। আমি খালি গায় দাঁড়িয়ে আছি। বমি পাচ্ছিল। মাথা ঘুরছিল। গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এক গ্লাস পানি না পেলে আমি এখনই মরে যাবো। এত অসংখ্য মানুষ কার কাছে পানি চাইবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বৃদ্ধাকে বললাম, আমাকে এক গ্লাস পানি দেন। সেই বৃদ্ধা পানি না দিয়ে বরং চিৎকার করে বললেন, চুপ হারামাজাদা। পানি চাইবি না। তুই ডাকাত। পাশের এক লোকের দিকে তাকিয়ে বললেন- ওর পকেট চেক কর পিস্তল পাবি। প্রায় আধা ঘন্টা পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্বার করে কাশিয়ানী থানায় নিয়ে যান। সেখানে পুলিশ আমাদের সব কথা শুনে লকারে আটকে রাখেন। কারণ আমরা থানায় পৌঁছানোর আগেই ক্ষমতাবান একজন থানার ওসিকে ফোন করে আমাদের না ছাড়তে বলে দেন। বিনা অপরাধে সারারাত হাজতে থাকলাম। আমার ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পড়ছিল- আমাকে ফাস্ট এইডও দেয়া হয়নি। আমার ক্ষত স্থান থেকে তখনও রক্ত পড়ছিল। হাজতের ছোট্র একটা ঘরে- আমরা বারোজন লোক। পাশেই খোলা বাথরুম। বিকট গন্ধ আসছিল। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম। আমাদের ধম বন্ধ হয়ে আসছিল। থানার লোকদের কাছে পানি চেয়েও পাইনি। বরং ধমক দিয়েছে। কি প্রচন্ড গরম।এদিকে আমাদের প্রিয় সম্পাদক তিন মাস আগে গাড়ি এক্সিডেন্ট করেন। তার পায়ে প্লাস্টার। তিনি সকালে আমাদের খবর পাওয়ার সাথে সাথে থানার ওসি আমাদের স্বসম্মানে ছেড়ে দেন। এবং ছেড়ে দেয়ার আগে চা নাস্তা খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যান।পোনা গ্রামের মানুষ জন খুব হিংস্র ও নিষ্ঠুর। বিনা অপরাধে মার খেলাম। সারারাত ব্যাথায় ঘুমাতে পারছি না। ঢাকায় ফিরে এসে ডাক্তার দেখালাম। ওষুধ খাচ্ছি। আমার মা কাঁদছে। http://www.dhakatimes24.com/2016/04/23/110349 সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭
false
rn
দিনে কমপক্ষে ২০ বার বলুন- ‘আমি ভালো আছি’। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথা বলি- ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের সকল বিধানই মানুষের জন্য চির কল্যাণকর। যে কেউ(সে অমুসলিম হউক) ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করবে, নিঃসন্দেহে সে সুখের সন্ধান পাবে। লাভ করবে সুখ-সমৃদ্ধ শান্তিময় জীবন। পক্ষান্তরে কেউ যদি নিজের মনমত চলে, ইসলামি বিধি-বিধানকে লঙ্ঘন করে অবলীলায়, তার জীবনে নেমে আসে চরম অশান্তি; উন্মুক্ত হয় বিপদ-মসিবত ও জ্বালা-যন্ত্রণার দ্বার! এক ছেলে তার রুমমেটের নাক ডাকার শব্দে ঘুমাতে পারেনা। রুমমেটকে এটা বলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। তাই, ছেলেটা একদিন তার রুমমেটকে ঘুমের মধ্যে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গার ঐ পারে নিয়া ফালায়া আসে। ফিরে আসার পথে নৌকার মাঝির বৈঠার আঘাতে পানির ছিটা এসে ছেলেটার মুখে লাগে। ছেলেটা বিরক্ত হয়ে মুখ সরিয়ে নিতে গেলে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ছেলেটা দেখে তার রুমমেট তাকে পানির ছিটা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাচ্ছে। একজন বিখ্যাত লেখক একবার বক্তৃতা দিয়ে আসছেন, তো পথের মাঝে একজন তরুণের সাথে তার দেখা, দেখে বোঝাই যায় তরুণ দরিদ্র ঘরের ছেলে,ছেঁড়া ময়লা শার্ট,উস্কো খুসকো চুল, তো তরুণ এসে লেখককে প্রস্তাব দিলো, "জনাব আপনি কি দয়া করে আমাকে আপনার একদিনের রোজগার ধার দেবেন, বিনিময়ে আমি আপনাকে একদিন আমার এক বছরের রোজগার দেব" .....তো লেখক বালকের কথাকে পাত্তা দিলেন না, বাড়ি ফিরে সাহায্যের নামে এমনি কিছু ডলার দিলেন, দিয়ে বললেন, "না পারলে ফেরত দিতে হবে না..". তরুণ ধন্যবাদ দিয়ে বলল, 'জনাব আপনার এই উপকার আমি কোনদিন ভুলবো না'........তো এভাবে অনেকদিন কেটে যায় লেখক সেই তরুণের কথা ভুলে যায়, হঠাৎ অনেক বছর পর সেই তরুণের আবির্ভাব, সে তখন যুবক, লেখকের সেই মুহূর্তে অভাব চলছে। তরুণ এসে তাকে কয়েক হাজার ডলার দিয়ে বলল, "জনাব, আপনি একদিন আমাকে আপনার একদিনের রোজগার দিয়ে হেল্প করেছিলেন, আজকে আমার সময় এসেছে এই নিন আমার একদিনের রোজগার।" সেই লোকটার একদিন এর রোজগার ছিল সেই লেখক মানুষটির এক বছর এর রোজগার ..... লেখকের সেই মুহূর্তে চোখে পানি চলে এল, এবং তিনি অদ্ভুত দৃষ্টিতে যুবক কে দেখতে লাগলেন। সেই যুবকের নাম ছিল চার্লিচ্যাপলিন।বাংলাদেশের মানুষের রাগ-ক্ষোভ, আবেগ-ভালবাসা সব কিছুই চড়ুই পাখির মত। কোন কিছুই তাঁরা দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে পারেনা। সম্ভবত ভৌগোলিক ও পরিবেশগত কোন সমস্যার কারনে এ উপ-মহাদেশের মানুষদের মধ্যে এই স্বভাবটা গড়ে উঠেছে। এখানে এত সমস্যা, এত ইস্যু প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় কোনটা রেখে কোনটা ধরবে তাঁরা বুঝে উঠতে পারেনা।সমুদ্র, জানি তুমি একের পর এক ঢেউ তুলছ আমার জন্য। কিন্তু তোমার প্রচণ্ড টানের কাছে জীবনের বাস্তবতা যেন দানবের মত এসে দাড়ায়। সমুদ্র, তুমি সমুদ্র হয়েই অনেক বেশী সুখী আমার থেকে। আমি চাইলেই তোমার মত ঢেউ তুলতে পারিনা নিজের মাঝে। আছরে পরতে পারিনা বালুর বুকে।"রাস্তায় ঢাকনা বিহীন ম্যানহলের ভিতরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন আপনাকে ঘিরে একই ভাবে ম্যানহলের ভিতরে তাকিয়ে আছে। একটু পরে আপনি সেখান থেকে চলে যাবার পর সেখানে ছোট খাট একটা জটলা তৈরি হবে। একজন তাকিয়ে থাকবে অন্যজন তাকিয়ে আছে বলে, কেউ জানে না তারা কেন ম্যানহলের ভিতরে তাকিয়ে আছে।সমাজে কিছু মানুষ আছে শুধু মানুষের ভুল ধরার তালে। নিজে কোন ভাল কাজ করবে না, অন্যরা করলেও তার মধ্যে হাজারটা ভুল ধরার চেষ্টা করবে। আরে ভাই নিজে একা কারও উপকার করতে না পারলে যারা করছে তাদের সাথে মিলে কর, তা না পারলে যারা করছে তাদের উৎসাহ দে, তাও না পারলে চুপচাপ ঘরে বসে থাক। তা না করে কিছু আছে ফেসবুকে বসে নেতিবাচক মন্তব্য করার তালে। গঠনমূলক সমালোচনা বা পরামর্শ এক জিনিস আর উদ্দেশ্যমুলকভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করা আলাদা জিনিস। সুন্দর মন আর ভালো ব্যক্তিত্যের জন্যে সবচেয়ে দরকারী হচ্ছে উদার মনের হওয়া। উদার না হলে কখনোই সুন্দর মনের অধিকারী হতে পারবেন না। অবশ্যই আপনাকে আপনার ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মানতে হবে এবং অবশ্যই তা যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে। ধর্মগ্রন্থগুলো সবসময়েই একটা মানুষকে বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করেই কাজ করতে বলে।নৌকা আসিয়া লাগিল। সকলেই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখিবার জন্য ব্যস্ত। ভিড় হইয়াছে। ঠাকুরকে নিরাপদে নামাইবার জন্য কেশব শশব্যস্ত হইলেন। অনেক কষ্টে হুঁশ করাইয়া ঘরের ভিতর লইয়া যাওয়া হইতেছে। এখনও ভাবস্থ — একজন ভক্তের উপর ভর দিয়া আসিতেছেন। পা নড়িতেছে মাত্র। ক্যাবিনঘরে প্রবেশ করিলেন। কেশবাদি ভক্তেরা প্রণাম করিলেন, কিন্তু কোন হুঁশ নাই। ঘরের মধ্যে একটি টেবিল, খানকতক চেয়ার। একখানি চেয়ারে ঠাকুরকে বসানো হইল, কেশব একখানিতে বসিলেন। বিজয় বসিলেন। অন্যান্য ভক্তেরা যে যেমন পাইলেন, মেঝেতে বসিলেন। অনেক লোকের স্থান হইল না। তাঁহারা বাহির হইতে উঁকি মারিয়া দেখিতেছেন। ঠাকুর বসিয়া আবার সমাধিস্থ। সম্পূর্ণ বাহ্যশূন্য! সকলে একদৃষ্টে দেখিতেছেন। (ফেসবুক থেকে সংগ্রহ )
false
rn
হযরত নূহ (আঃ) ( কুরআন এমন এক দিক নির্দেশনাকারী গ্রন্থ যার মধ্যে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে প্রচুর নিদর্শন। যা তাদের পথ চলতে সাহায্য করবে। যার আক্ষরিক অর্থ হল এর সকল অর্থ (আভ্যন্তরীণ) সকলের জন্যে উন্মুক্ত নয়। ) হযরত নূহ (আঃ) কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবী।হযরত নূহ (আঃ) নামে কুরআনের নূহ একটি সূরা নাযিল হয়েছে। এই সূরাতে হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে।হযরত নূহ (আঃ) ছিলেন আল্লাহর অন্যতম প্রধান নবী ও রাসূল ছিলেন। আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন,..."নিশ্চয়ই আমরা নূহ কে পাঠিয়ে ছিলাম তার লোকদের কাছে এই বলে-'তোমরা লোকদেরকে সতর্ক করে দাও তাদের উপর মর্মন্দ্দুদ শাস্তি আসবার আগে । উল্লেখ্য,আধুনিক অনেক গবেষকও মনে করছেন, প্রায় এক লাখ ৯৫ হাজার বছর আগে পূর্ব আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটেছিল। পঞ্চাশ হাজার বছরের মধ্যেই তারা মহাদেশের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।পাঁচ’শ কোটি বছরের পুরানো এ ‘পৃথিবী’ নামের গ্রহটি মানুষের স্বৈরাচার ও ভ্রষ্টাচারে যে হারে দ্রুত লয়ে ধূসর গ্রহে পরিণত হতে চলেছে তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।সূরা হুদ ৪২ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াত -আয়াতে বলা হয়েছে, “পর্বত প্রমাণ তরঙ্গের মধ্যে এ (নৌকা) তাদের নিয়ে বয়ে চললো, নূহ তার পুত্রকে যে (তাদের ডাকে) পৃথক ছিল, ডেকেবললেন, হে বৎস আমাদের সঙ্গে আরোহন কর এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের সঙ্গী হয়ো না।”হযরত নূহ (আঃ) বহু বছর বেঁচেছিলেন এবংমানুষকে সৎ পথে আনারজন্য তিনি বহুকাল ধরে চেষ্টা চালান। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা গেল তার সম্প্রদায়ের মুষ্টিমেয় মানুষ ছাড়া আর কেউ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে রাজী হলো না, বরং তারা হযরত নূহ(আঃ)কে নিয়ে নানাভাবে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা শুরু করলো। পৃথিবীতে আদি যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৬টি জাতির ঘটনা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে এবং কুরআনের মাধ্যমেই জগদ্বাসী তাদের খবর জানতে পেরেছে। যাতে মুসলিম উম্মাহ ও পৃথিবীবাসী তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।আদম (আঃ) ৯৬০ বছর বেঁচে ছিলেন এবং নূহ (আঃ) ৯৫০ বছর জীবন পেয়েছিলেন।নূহ (আঃ) ইরাকের মূছেল নগরীতে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাথে বসবাস করতেন।হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ২৮টি সূরায় ৮১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।আল্লাহ্‌র নবীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের হৃদয় ছিল কোমল, মানুষের জন্য দয়া ও স্নেহ মমতায় পরিপূর্ণ; হযরত নূহ্‌ও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। বাইবেলের গল্প অনুসারে, পৃথিবীজুড়ে আসা এক ভয়াবহ বন্যার (মহাপ্লাবন) সময় ৫০০ ফুট দীর্ঘ ও ৮০ ফুট উঁচু ওই বিশালাকার নৌকা তৈরি করেছিলেন নবী হজরত নূহ (আ.)। ওই নৌকায় তিনি মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণীর জোড়া তুলে নিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে পৃথিবীর মানুষ ও প্রাণিকুলকে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু নূহ (আ.) কি সত্যিই অত বড় একটি নৌকা করতে পেরেছিলেন বা পারলেও এতে এত প্রাণীর স্থান সংকুলান সম্ভব হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন ও সন্দেহ। আর মানুষের এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মনের ভেতর থেকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করতেই কেন্টাকিতে ওই নৌকা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।নূহ (আঃ)-এর চারটি পুত্র।প্রথম তিনজন ঈমান আনেন। কিন্তু শেষোক্ত জন কাফের হয়ে প্লাবনে ডুবে মারা যায়। ঈমান না থাকার কারণে নূহের স্ত্রী ও পুত্র যেমন নাজাত লাভে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি এ যুগেও হওয়া সম্ভব। কাফির ও মুশরিক সন্তান বা কোন নিকটাত্মীয়ের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করা জায়েয নয়।নূহ বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায় আমাকে অমান্য করেছে আর অনুসরণ করছে এমন লোককে, যার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কেবল তার ক্ষতিই বৃদ্ধি করছে।মহাপ্লাবনের শেষে আরারাত কিংবা জুদাই পর্বতের আশপাশে কোথাও নোঙ্গর ফেলেছিল সেই জাহাজ। তবে এদিক থেকে আরারাত পর্বতের পাল্লাই বেশি ভারি।নূহ (আঃ)-এর কাঠের তৈরী নৌকাটির দৈর্ঘ্য ৩০০ ইউনিট, প্রস্থ ৫০ ইউনিট এবং উচ্চতা ৩০ ইউনিট ছিল যা আধুনিক ইউনিটে পরিবর্তন করলে মোটামুটি দাড়ায় ১৩৫ মিঃ দীর্ঘ, ২২.৫ মিঃ প্রস্থ আর ১৩.৫ মিঃ উচু। চীনা আর তুরস্কের গবেষকদল তুরস্কের মাউন্ট আরারাতে কাঠের তৈরি একটি প্রাচীন জাহাজের সন্ধান পেয়েছেন। তাদের দাবি হচ্ছে- এটিই নূহ নবীর সেই বিখ্যাত নৌকা, যা প্লাবন থেকে নবীর অনুসারীদের বাঁচিয়েছিলো। প্রাপ্ত কাঠামোর অভ্যন্তরীণ গঠন এবং কার্বনটেস্টের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছেন এর বয়স প্রায় ৪,৮০০ বছর।পবিত্র কুরআনে হযরত নূহ (আ.)’র যুগের মহাপ্লাবনের ঘটনা স্থান পেয়েছে। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী ইরাকের কুফা শহর ছিল হযরত নুহ (আ.)’র আবাসস্থল ঠিক যেখানে রয়েছে কুফার বড় মসজিদ। কুফা ইসলামের অন্যতম প্রধান পবিত্র শহর। এই শহর থেকেই শুরু হয়েছিল মহাপ্লাবন। অবিশ্বাসীরা বা কাফিরদের সবাই ডুবে যায়। শুধু নুহ (আ.) ও ঈমানদার ব্যক্তিরা নুহ (আ.)’র নির্মিত বিশাল কিশতি বা নৌকায় উঠে বেঁচে ছিলেন।হযরত নূহ্‌ যখন আল্লাহ্‌র আদেশে নৌকা বানাতে শুরু করলেন, তখন পাপীরা তাকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতে শুরু করলো। তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের কারণ ছিলো যে, যিনি এতদিন নিজেকে আল্লাহ্‌র নবী বলে প্রচার করেছেন, তিনি এখন কাঠ মিস্ত্রিতে রূপান্তরিত হয়েছেন।বিরাট সংখ্যক নবীগণের মধ্যে পবিত্র কুরআনে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম এসেছে। তন্মধ্যে একত্রে ১৭ জন নবীর নাম এসেছে সূরা আন‘আম ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াতে। বাকী নাম সমূহ এসেছে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে। নূহ (আঃ)-কে যখন নৌকা তৈরীর নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তিনি নৌকাও চিনতেন না, তৈরী করতেও জানতেন না। সরাসরি অহীর মাধ্যমে নূহ (আঃ)-এর হাতে নৌকা ও জাহায নির্মাণ শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। অতঃপর যুগে যুগে তার উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মালামাল ও যাত্রী পরিবহনে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। আধুনিক বিশ্ব সভ্যতা যার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেক নবী রাসূলকে নিজ নিজ যুগে কাফের মুশরেকদের বিরোধীতা ও প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে কাজ করতে হয়েছে। কাফের-মুশরেকরা পয়গম্বরদের এত বেশী বিরোধীতা করতো যে, তারা নবীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রবঞ্চণার অভিযোগও খাড়া করতো। হযরত নূহ (আও এ ধরণের অপপ্রচারণার সম্মুখীন হয়েছিলেন। হাদিস শরীফে বিশ্ব নবী (সাঃ) এর পবিত্র বংশধর বা আহলে বাইতকে নূহ নবীর কিশতির সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আহলে বাইত হচ্ছে নূহ নবীর নৌকার মত, যে এতে আরোহন করবে সে মুক্তি পাবে আর যে এতে আরোহন করবে না সে নিমজ্জিত হবে। হ্যাঁ আহলে বাইত বা বিশ্বনবী (সাঃ) এর পবিত্র বংশধরদের ব্যাপারে এ ধরণের অনেক হাদিস রয়েছে, যা ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর, আনাস বিন মালেক আবু সাঈদ খুদরীর মত বিখ্যাত ব্যক্তিরা বর্ণনা করেছেন।
false
fe
ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ হোক ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ হোক ফকির ইলিয়াস ======================================== ফিলিস্তিনে অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে তারা। নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব মোড়লরা নীরব। জাতিসংঘের অনুরোধ শুনছে না ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। নিউইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ ইসরায়েল সফর করেছেন। তার সহমর্মিতা ইসরায়েলিদের প্রতি। না, তিনি এই মুসলিম নিধনযজ্ঞের কোনো প্রতিবাদ করেননি। বিষয়গুলো খুবই মর্মান্তিক। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানছে না ইসরায়েল। কেন মানছে না? তাদের খুঁটির জোর কোথায়? হামাসকে ধ্বংসের নামে তারা শিশু-নারীসহ সাধারণ মানুষ হত্যার উল্লাসে মেতেছে কেন? রেডক্রসের চেয়ারম্যান যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো সভ্য বিবেকই মেনে নিতে পারে না। ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব সরব হলেও উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাশীনরা কোনো বিশেষ ভূমিকা রাখছেন না। দেশে দেশে প্রতিবাদ করছে সাধারণ মানুষ। নিউইয়র্কের মানুষ। জাতিসংঘের সামনে তীব্র হিমাঙ্কের মাঝেও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে মানুষ। শিশুরা প্ল্যাকার্ড বহন করে বলেছে, এ হত্যাযজ্ঞের অবসান হোক। না, এসব কেউ শুনছে না। ইসরায়েলি স্থলবাহিনী গাজা সিটিতে ঢুকে পড়ে যে নির্মম তা-ব ঘটিয়েছে তা দেখেছে বিশ্ববাসী। হামাসের সদস্যরা যা করেছে তা নিজেদের বাঁচানো ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ সর্বশক্তি দিয়ে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি বাহিনী মানুষ মারার উন্মত্ততা থামাতে চাইছে না। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করুন। তার কথা কেউ শুনছে না। বিশেষ করে আরব বিশ্বের শায়খ, বাদশাহ, আমির, সুলতান, খলিফারা অত্যন্ত নীরব। অথচ তারাই ইউরোপ-আমেরিকার তেল জোগান দেন। মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রনায়করা সমবেত হয়ে এর প্রতিবাদ করলে ইউরোপ-আমেরিকার নেতাদের তা না শুনে উপায় ছিল না। তারা তা করছেন না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদারী আর নগ্ন মোসাহেবিতে তারা ব্যস্ত। এই ন্যক্কারজনক মানবিকতা, তীব্র ঘৃণার দাবি রাখে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে রহস্যজনক। ফিলিস্তিনের প্রবাদপ্রতিম নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর মাহমুদ আব্বাস এর দায়িত্ব নেন। শুরু থেকেই তিনি তাদের দাবি মানার জন্য ইসরায়েলি প্রশাসনকে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তারা তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করে, ভেতরে ভেতরে ফিলিস্তিনকে শাসন করারই মতলব হাঁকছে। হামাসের ‘জঙ্গিবাদী’ কার্যক্রমের দোহাই দিয়ে তারা ফিলিস্তিনীদের ওপর হামলা করছে বিভিন্ন সময়ে। এবার প্রকাশ্য যুদ্ধ বাধিয়ে তারা ফিলিস্তিন জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ারই পাঁয়তারা করছে। ইসরায়েলের এই বর্বরতম আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বের মানুষ নানাভাবে ইসরায়েলকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। ডাক এসেছে বিশ্বের সব দেশে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের। কূটনৈতিকভাবেও চাপ প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন দেশের মানুষ জনমত সংগ্রহে নেমেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, তিনি ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব পাওয়ার পর এ বিষয়ে কূটনেতিক উদ্যোগ নেবেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছে বিভিন্ন মানবকল্যাণমূলক সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘হিউমেন ফর হিউমেন’, ‘পিস ফর ওয়ার্ল্ড’, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’, ‘হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ’সহ বিভিন্ন সংগঠন বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত শিগগিরই যুদ্ধ বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া। যারা বিশ্বে মানবতা প্রতিষ্ঠার ধুয়া তোলে, ফিলিস্তিন বিষয়ে তাদের অন্ধত্বের তীব্র নিন্দা অব্যাহত রয়েছে বিশ্বজুড়ে। দেশপ্রেমিক ফিলিস্তিনিরা তাদের দেশমাতৃকার জন্য যে মুক্তি সংগ্রাম করে আসছে, তা বিশ্বের কারো অজানা নয়। স্বাধীনতা যদি মানুষের জন্মগত অধিকার হয়ে থাকে তবে সদ্য জন্ম নেয়া ফিলিস্তিনি শিশুটিরও সে অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার কথা। যারা এই অধিকার হরণ করতে চাইছে, এরা মানবতার শত্রু। এসব জালেমদের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক বিশ্ববিবেক। বন্ধ হোক রক্তপাত। এ লেখাটি যখন লিখে শেষ করবো তখনই দেখলাম ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে তারপরও তারা চোরাগোপ্তা হামলা করছে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে। তেরো ধরনের মার্কিন নির্মিত বিষাক্ত ক্ষেপণাস্ত্র তারা প্রক্ষেপণ করছে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের ওপর। ফসফরাস বোমা যদিও আনবিক বোমা নয়, তারপরও এর ক্রিয়া অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বিষাক্ত। ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্তাক্ত দেহ আর বৃদ্ধ নারীদের ঝলসানো মুখ দেখে বারবারই মনে হয়েছে বিশ্বসভ্যতা বারবারই থেকে যাচ্ছে পেশীশক্তির কাছে পরাজিত। অথচ বিশ্ব নেতারা একটি সুসভ্য প্রজন্ম গঠনে বারবার হাত উঁচিয়ে শপথ নিচ্ছেন! ট্রেন ভ্রমণ করে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নিতে গিয়েছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, আমি মানুষের জন্য, বিশ্ববাসীর জন্য শান্তির বারতা নিয়েই হোয়াইট হাউসে যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতি যে ফিলিস্তিনি মজলুম মানুষের খুব বেশি স্বার্থ রক্ষা করবে, তা বলা যাবে না। বলার কোনো সুযোগও নেই। কারণ ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষায় মার্কিন কংগ্রেস, মার্কিন সিনেট যখন একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে ফিলিস্তিনের বোমাদগ্ধ শিশুটির পক্ষে দাঁড়াবে কে? তারপরও সবিনয়ে বলি, বারাক ওবামা যদি শান্তির সমতা রক্ষায় ব্রতী হন তবে তাকে দুঃস্থ নিপীড়িত গণমানুষের কথা ভাবতে হবে। ভাবতে হবে, কিভাবে হানাহানি বন্ধ করে বিশ্বে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনের নামে বোমা নিক্ষেপের সংস্কৃতি বন্ধে নতুন যাত্রা শুরু হোক ওবামা প্রশাসনের। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের কোনো ভূখন্ডই কোনো পরাক্রমশালীর বোমা পর্যবেক্ষণের জন্য উন্মুক্ত নয়। ------------------------------------------------------------ দৈনিক ডেসটিনি। ঢাকা। ২১ জানুয়ারি ২০০৯ বুধবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৭:৪৮
false
ij
গল্প_ দৃষ্টিপাত ১২০৮ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি। বাহমান নামে এক পারস্য দেশিয় তরুণ হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত একটি অতিথিশালার সুবিশাল অলিন্দে বসিয়া ছিল। সবে মাত্র সন্ধ্যা উর্ত্তীণ হইয়াছে। অতিথিশালার পাথরের চাতালে সুবিখ্যাত পাহাড়ি জ্যোস্নায়তাহার সফেদ ওড়না ছড়াইয়া ছিল। এলোমেলো বাতাস বহিতেছিল। বাহমান-এর অতি নিকটেই আধো-অন্ধকার ছায়ায় এক ভারতীয় সাধু বসিয়া ছিল। গম্ভীর মধুর কন্ঠে সাধুটি বলিতেছিল, শিব অশুভ ও দুঃখকে নাশ করেন। হিমালয় পর্বতের কৈলাস শিখরে বাস করেন শিব । পার্বতী হইলেন হিমালয়কন্যা। শিব অনন্তকাল ধরিয়া পার্বতীর সঙ্গে ধ্যানমগ্ন আছেন। শুনিতে শুনিতে বাহমান বিস্মিত হইয়া যাইতে থাকে।সাধুটি আরও বলিল, আমরা ভারতীয়রা বিশ্বাস করি, কৈলাসই হইল জগতের স্তম্ভ, জগতের কেন্দ্র। কৈলাশ শিখরের চর্তুমুখে স্ফটিক, পদ্মরাগমনি, স্বর্ণ ও নীলকান্তমনি খোদিত আছে।শুনিতে শুনিতে বাহমান বিস্মিত হইয়া যাইতে থাকে।ত্রয়োদশ শতক। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন আরম্ভ হইয়াছে। কুতুবউদ্দীন আইবক ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লিতে গুলাম বংশ প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। নবাগত মুসলিম সংস্কৃতির অভিঘাতে ভারতীয় ভাবলোকে নব নব তরঙ্গ অদৃশ্য স্রোতের ন্যায় বহিয়া যাইতেছে। কালটি পটপরিবর্তময় ও যুগপৎ যুগান্তরের কাল। হাজার বৎসরের প্রাচীন ইতিহাসের নদীটি বাঁক লইলে যেমন গম্ভীর গর্জন-ধ্বনি শ্রুত হয়, ভারতবর্ষীয় সমাজের চতুর্দিকে সেইরূপ পরিবর্তনের গুরুগম্ভীর সুরটি ধ্বনিত হইতেছে। এইরুপ আর্থ-সামাজিক পটভূমিতে পারস্যের তরুণ বাহমান ভারতবর্ষ ভ্রমনে আসিয়াছে। ছাব্বিশ বৎসর বয়েসি তরুণটি দেখিতে অত্যন্ত সুদর্শন ও বলিষ্ট। পারস্যের ধনী জায়গিরদার পরিবারের কনিষ্ট সন্তান সে; শৈশব হইতেই তাহার হৃদয়ে জ্ঞানতৃষ্ণা প্রবল। সে ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্ঞানতৃষ্ণা মিটাইতেছে। জ্ঞানতৃষ্ণা মিটাইতেই সে হিন্দুস্তান আসিয়াছে। ... এক্ষণে বলিয়া রাখি ভারতবর্ষের খাজুরাহ নগরে তাহার সহিত এক অপরুপা কন্যার সাক্ষাৎ হইবে, কন্যাটির নাম পূর্বা এবং পূর্বা অন্ধ ...কী প্রকারে বাহমান পূর্বাকে উত্তরের তুষার আচ্ছাদিত হিমালয় পর্বতে লইয়া গেল, জন্মান্ধ পূর্বাকে জোছনা দেখাইল- তাহাই এই উপাখ্যানের বিষয়বস্তু। বাহমান হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশ হইতে বাদামী বর্ণের একটি আরব অশ্বে চড়িয়া হিন্দুস্তানের আরও গভীরে যাইতে থাকে । অশ্বটি সে বাগরাম নগরের এক বাজার হইতে খরিদ করিয়াছে। অশ্বের নাম: ‘আতশ’, অর্থাৎ অগ্নি। হাঁ, আতশ বাস্তবিকই অগ্নির ন্যায় তেজোদীপ্ত বটে। এবং বাহমানের অতিশয় বাধ্য। আমরা অনতি ভবিষ্যতে দেখিতে পাইব যে আতশ পূর্বারও অত্যন্ত বাধ্য থাকিবে। যাহা হউক। হিন্দুস্তান বাহমানকে মুগ্ধ করিয়াছে। তাহার দেশটিও কম বৈচিত্রময় নয়; তবে ভারতের প্রকৃতি যেন অধিক হরিৎ, বিস্তর মনোহর । বাহমান মেধাবী। সে নিবিড় জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে ভারতবাসীর কথ্য ভাষাটি উত্তমরূপে আয়ত্ম করিয়াছে।২বাহমান দিল্লি নগরে কিছুকাল অবস্থান করিয়া বুন্দেলখন্ড নামক একটি রাজ্যের রাজধানী খাজুরাহ নগরে আসিয়া পৌঁছাইল। বুন্দেলখন্ড-এর অবস্থান দিল্লি নগরের দক্ষিণ পূর্বে। বুন্দেলখন্ডের অদ্যপি মুসলমানদিগের দ্বারা অধিকৃত হয় নাই। ইহা চান্দেলা নামক হিন্দুস্তানীয় বংশের শাসনাধীন। যাহা হউক। বাহমান খাজুরাহ নগরে আসিয়া মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী ও ভাস্কর্য দেখিয়া বিস্মিত হইয়া গেল। ভারতবর্ষের মন্দির সে আগেও দেখিয়াছে। কিন্তু,খাজুরাহ নগরে মন্দিরের শৈলী যেমন নান্দনিক তেমনি ইহার ভাস্কর্যসমূহ বিস্ময়কর। ভাস্কর্যে নরনারী রতিমিলনের দৃশ্যটি প্রকট ভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে। ইহার কি কারণ?বাহমান কৌতূহলী হইয়া উঠিল।বৈশাখ মাসের মধ্যাহ্নবেলা খা খা করিতেছিল। পথিপার্শ্বে একটি সুবির্স্তীণ প্রান্তর, অদূরে একটি নির্মীয়মান মন্দির, তাহার পিছনে খর্জুরবীথি, দিঘী। বাহমান লাগাম টানিয়া ধরিয়া ঘোড়া থামাইল, তাহার পর নিচে নামিয়া আরশকে ছাড়িয়া দিল। নির্মীয়মান মন্দিরের দিকে আগাইয়া যায়। বৈশাখের প্রখর রৌদ্রে মন্দিরের নিকটে এক শ্যামলা মতন মধ্যবয়সী ব্যাক্তি দাঁড়াইয়া ছিল। সে বাহমান পদ শব্দে ফিরিয়া তাকাইল। বাহমানকে দেখিয়া মধুর হাসিয়া নমস্কার করিল। বাহমানও সালাম ফিরাইয়া মৃদু হাসিল। মধ্যবয়সী ব্যক্তিটি বলিল, আপনি নিশ্চয়ই পশ্চিমদেশ হইতে আসিয়াছেন। হাঁ। বাহমান মাথা নাড়িল। মধ্যবয়সী ব্যাক্তিটি বলিল, আমি সদানন্দ। এই খাজুরাহ নগরেই বাস করি। পেশায় ভাস্কর। তাছাড়া নির্মীয়মান রাজকীয় মন্দিরের ভাস্কর্যগুলি আমিই তত্ত্বাবধান করি।বাহমান বলিল, খাজুরাহ নগরের ভাস্কর্যগুলি আমার বিস্ময়ের সৃষ্টি করিয়াছে। ভাস্কর্যের এইরুপ কামজ রুপ আমি অন্যত্র দেখি নাই। সদানন্দ হাসিয়া বলিলেন, তাহার কারণ আছে। বুন্দেলখন্ড রাজ্যটি চান্দেলা বংশের শাসনাধীন। চান্ডেলা রাজাগন দেড়শ বছর পূর্বে তান্ত্রিক মত গ্রহন করে। ভাস্কর্যের কামজ রূপের ইহাই কারণ। তান্ত্রিক মত কি? বাহমান কৌতূহলী হইয়া উঠিল। দূরে তাকাইয়া দেখিল আরশ নিশ্চিন্তে রৌদ্রময় প্রান্তরে চড়িয়া ঘাস খাইতেছে। তান্ত্রিক হইল ...কপালের ঘাম মুছিয়া সদানন্দ বলিল, রৌদ্র প্রখর হইয়া উঠিয়াছে। চলুন আমরা ঐ দিঘীর পাড়ে খর্জুর বৃক্ষের ছায়ায় বসিয়া আলাপচারিতা করি।বাহমান খাজুরাহ নগরে আসিয়া সমকালীন হিন্দুস্তানি স্থাপত্য দর্শন সম্বন্ধে কৌতূহল বোধ করিতেছিল। সদানন্দর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হইয়াছিল। সে বলিল, চলুন। দীঘির পাড়ে খর্জুর বৃক্ষের ছায়ায় বসিয়া সদানন্দ বলিল, খর্জুর বৃক্ষ হইতেই এই নগরের নাম হইয়াছে খাজুরাহো।ওহ্ ।সে যাহা হউক। সদানন্দ বলিল। তন্ত্র শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘বুনন’ হইতে উদ্ভূত হইয়াছে। মহাবিশ্বময় যিনি কর্তৃত্ব করেন, তিনি হইলেন নির্গূণ ব্রহ্মা; তাহার শক্তির সমুদ্রে ক্ষুদ্র জাগতিক জীব বিলীণ হইয়া যাইতে ইচ্ছুক, ইহা কি প্রকারে উপলব্ধ হয়? নারীপুরুষের রতিমিলনের ফলে। সুতারং রতিমিলনে কে নিষিদ্ধ না ভাবিয়া পবিত্র ভাবাই তন্ত্র। বুন্দেলখন্ড রাজ্যটি চান্দেলা বংশের শাসনাধীন। চান্ডেলা রাজাগন দেড়শ বছর পূর্বে তান্ত্রিক মত গ্রহন করে। এই কারণে তাহাদের নিমার্ণাধীন মন্দিরে নরনারীর মিলনদৃশ্য পরিস্ফুট হয়। ওহ্ । শুনিতে শুনিতে বাহমান বিস্মিত হইয়া যাইতে থাকে।সদানন্দ এক্ষণে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করিয়া বলিল, আপনি অতিথিশালায় উঠিয়াছেন কি?না। বাহমান বলিল। আজই মাত্র এই নগরে আসিয়াছি। এখনও কোনও অতিথিশালায় উঠি নাই। সদানন্দ আন্তরিক স্বরে বলিল, আজ না-হয় আমার গৃহে আতিথ্য বরণ করুন। নিমন্ত্রণ পাইয়া বাহমান অত্যন্ত খুশি হইল। উপরোন্ত সদানন্দ পন্ডিত ব্যক্তি; ইহার সঙ্গে আলাপচারিতায় হিন্দুস্তানি রীতিনীতি সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান হইবে। সে বলিল, আপনি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা গ্রহন করুন। সদানন্দর বাড়ি নিকটেই, শিবসাগর নামক একটি হ্রদের কিনারায়। বাহমান আরশের লাগাম ধরিয়া সদানন্দর পাশে শিবসাগর হ্রদের অভিমুখে হাঁটিতে লাগিল। যাত্রাপথে সদানন্দ চাপাস্বরে বলিল, স্থানীয় রাজার সঙ্গে আমার বিরোধ চলিতেছে। আমার প্রাণনাশের শঙ্কা তৈরি হইয়াছে। বাহমান চমকাইয়া উঠিয়া বলিল, সে কী! কেন?রাজ জয়বর্ধন আমার পৈত্রিক ভিটা অধিকার করিতে চায়। কেন?আমার পৈত্রিক ভিটায় মন্দির নির্মান করিবে। রাজার মাতা নাকি স্বপ্ন দেখিয়াছে।ওহ্ ।সদানন্দ আরও অনেক কথা বলিল। সে শিবভক্ত। তাহার স্ত্রী নির্মলা গত বৎসর মারা গিয়াছে। তাহার পুত্র সন্তান নাই, একটি মাত্র কন্যা রহিয়াছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় কন্যাটি অন্ধ।সদানন্দ অমায়িক ব্যক্তি; তাহার একমাত্র কন্যাটি অন্ধ শুনিয়া বাহমান অত্যন্ত ব্যথিত হইল। টলটলে কালচে জলের শিবসাগর হ্রদের পাড় ঘেঁষিয়া সদানন্দ বাড়ি। বাড়ির সম্মূখভাগে সঘন উদ্যান। উদ্যানময় নানা বর্ণের সূর্যমুখি ও নাগলিঙ্গম ইত্যাদি ফুলের গাছগাছালি। সে গাছগাছালি হইতে বিচ্ছূরিত তরল সৌন্দর্য বাহমানের দৃষ্টিকে কেমন আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, তাহার বোধবুদ্ধি অবশ করিয়া দেয়। সোনালি রৌদ্রে অসংখ্য হলুদ প্রজাপতি উড়িতেছে। বাতাসে ফুলস্থ রেণুর সুগন্ধ ভাসিতেছে। বাহমান মুগ্ধ হইয়া গেল। সদানন্দ হাসিয়া বলিল, আমার যথেষ্ট পৈত্রিক সম্পদ আছে। ভাস্কর্য নির্মাণ আমার শখ বলিয়া আজও এই কার্যে লিপ্ত আছি। বলিয়া সদানন্দ অন্দরমহলে চলিয়া গেল। উদ্যানের উত্তরাংশে কামরাঙা ও হরিতকী বৃক্ষে ঘেরা পুরাতন আমলের কারুকার্যময় একটি ধূসর বর্ণের ইষ্টক নির্মিত পাকা দালান। দালানটি দ্বিতল। নীচে রক্তিমবর্ণের চমৎকার প্রশস্ত অলিন্দ। অলিন্দে দাঁড়াইলে গাছগাছালি বেষ্টিত টলটলে জলের শিবসাগর হ্রদের অনেকদূর দেখা যায়। সূর্যালোকে হ্রদের জল চিকচিক করিতেছে। আর, রৌদ্রমূখর রক্তিমবর্ণের অলিন্দে একটি শ্বেতবর্ণের বিড়াল ও একটি বিচিত্রবর্ণের ময়ূর নিবিঘেœ ঘুরিয়া বেড়াইতেছে।হঠাৎ নূপুরের ধ্বনি শুনিয়া বাহমান থমকাইয়া গেল। অলিন্দে ঘনশ্যাম বর্ণের ঘাগরা পরিহিতা শ্যামলা মতন একটি তরুণীকে দেখিতে পাইল সে; বয়স অষ্টাদশী হইবেই। ‘ভদ্রা’, ‘ভদ্রা’ বলিয়া তরুণিটি কাহাকে যেন ডাকিতেছে। তরুণীর কন্ঠস্বর পারস্যের শততন্ত্রী বীণার ন্যায় মিষ্ট। ইহাই কি সদানন্দর দৃষ্টিহীন কন্যা? তরুণী হঠাৎই থমকাইয়া গেল। দৃষ্টি বাহমানের মুখের উপর স্থির। সেই শ্যামল মুখোশ্রীতে অজস্র ভাব প্রকাশিত হইল। ইহার পর শততন্ত্রী বীণা বাজিয়া উঠিল, কে আপনি?বাহমান বলিল, আমি পথিক। আপনি? আমার নাম পূর্বা। ভাস্কর সদানন্দ আমার পিতা।ওহ্ , আপনার পিতার সঙ্গে আজই আমার সাক্ষাৎ হইয়াছেন। কিন্তু তিনি কোথায় গেলেন বলুন তো?পূর্বা বলিল, পিতা এখন স্নান করিবেন। বলিয়া, থামিয়া আবার বলিল, পথিক?বলুন।কোথায় আপনার বাড়ি?আমার বাড়ি পারস্যের ফারস প্রদেশের শাহপুর।ওহ্! আপনি যবন।তা বলিতে পারেন।আর্যাবত্মের ভাষা উত্তররূপেই রপ্ত করিয়াছেন।হ্যাঁ। আমি দীর্ঘকাল হইল হিন্দুস্থানের নানা স্থানে ঘুরিতেছি। পূর্বা আরও কি বলিতে যাইবে সদানন্দ ভিতর হইতে তৈলের শিশি ও বস্ত্রাদি লইয়া বাহির হইয়া আসিল। তাহার পর বলিল, আপনি ক্ষণিক অপেক্ষা করুন, আমি স্নান করিয়া আসিতেছি। উফঃ যা গরম পড়িয়াছে। বলিয়া সদানন্দ শিবসাগরের তীরের দিকে চলিয়া গেল।পূর্বা বলিল, আপনি অনেক রাজ্য ভ্রমন করিয়াছেন না?তা করিয়াছি। আমারও ভ্রমন করিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু, কি লাভ? পূর্বার করুন স্বর বাহমানকে ব্যথিত ও বিচলিত করিল । বাহমান অন্ধ মেয়েটির কথা ভাবিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলিল।পূর্বা জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি মানস হ্রদের কথা শুনিয়াছেন? যে হ্রদের কিনারে গেলে মানুষ তাহার হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়া পায়। না, আমি এইরুপ নাম শুনি নাই। বাহমান অবাক হইয়া বলিল। পূর্বা বলিল, আমার মা আমাকে মানস হ্রদের উপকথা বলিয়াছেন। মানস হ্রদ শিব-পার্বতীর পবিত্র সাধনায় অলীক হইয়া আছে। যে হ্রদের কিনারে গেলে মানুষ তাহার হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়া পায়। বাহমান নিশ্চুপ হইয়া থাকে।পূর্বা বলিল, মৃত্যুর পূর্বে আমার মা সাধনার দ্বারা শিবশক্তি অর্জন করিয়াছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি আমায় বলিয়াছিলেন-আমি একদিন মানস হ্রদের পাড়ে যাইব। আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়া পাইব, তাহার পূর্বে আমি আমার এক প্রিয়জনকে হারাইব, আবার আমি আমার একজন প্রিয়জনকে পাইব। বাহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলিল। অন্ধ কিশোরী তাহার কল্পনা লইয়া দিন অতিবাহিত করে। বেলা আরও কিছু গড়াইল।পূর্বা উদ্বিগ্ন হইয়া বলিল, পিতা এখনও ফিরিতেছে না, আমার বড় ভয় হইতেছে। বাহমান বলিল, আপনি অপেক্ষা করুন। আমি দেখিয়া আসি। উদ্যানের ভিতর দিয়া শিবসাগর হ্রদের পাড়ে যাইতে অধিক সময় লাগিল না। হ্রদের পাড়ে কে যেন উপুর হইয়া পড়িয়া আছে। বাহমান চমকাইয়া উঠিল। কাছে গিয়া দেখিল সদানন্দ। ঘাড়ের কাছে তীর বিঁধিয়া আছে। সদানন্দ বাঁচিয়া নাই। বাহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলিল। আজই সদানন্দ বলিয়াছিল: স্থানীয় রাজার সঙ্গে আমার বিরোধ চলিতেছে। আমার প্রাণনাশের শঙ্কা তৈরি হইয়াছে।... সদানন্দর প্রাণনাশ কাহার কাজ বুঝিতে বাকি নাই। পূর্বার জীবনও আশঙ্কায় ... বাহমান দ্রুত পূর্বার নিকটে ফিরিয়া আসিল। পূর্বা অলিন্দ হইতে নামিয়া উদ্যানে আসিয়া দাঁড়াইয়া ছিল। মুখেচোখে উদ্বেগের ছাপ। সে কিছু বুঝিয়া উঠিবার পূর্বেই বাহমান তাহাকে টানিয়া আরশের পিঠে তুলিয়া সবেগে ঘোড়া ছুটাইয়া দিল।৩নীলাভ আকাশের তলে মানস হ্রদটি নির্জন নিথর হইয়া আছে। কেবল কী এক পাখি টি টি শব্দ করিয়া কৈলাস শিখরের দিকে উড়িয়া গেল। চতুর্দিকে শেষ বেলার নরম রৌদ্র ছড়াইয়া আছে। হ্রদটির নীলাভ জলে আকাশের ছায়া ফুটিয়াছে। চতুর্দিকে সবুজ পবর্তশ্রেণি-তাহাদের ধবল শীর্ষদেশ কী এক সুপ্ত অভিব্যক্তি ধারণ করিয়া মৌন হইয়া আছে। হ্রদ পাড়ের প্রকান্ড নির্জনতা মানবাত্মার অভ্যন্তরেরর ধ্যান-সমাধিকে অত্যন্ত প্রকট করিয়া তুলিতেছে। সন্ধ্যালগ্নে বাহমান ও পূর্বা মানস হ্রদটির নির্জন পাড়ে আসিয়া পড়িল। আরশকে তাহারা পাহাড়ের পাদদেশে স্থানীয় বম জাতীয় আদিবাসীদের হেফাজতে রাখিয়া আসিয়াছে। (যাত্রাপথে আতশ পূর্বার অত্যন্ত বাধ্যই ছিল।) তাহারা তীর্থযাত্রীদের সহিত হাঁটিয়া দূর্গম গিরিবর্ত্ম পাড় হইয়া মানস হ্রদের পাড়ে আসিয়াছে। যাত্রাপথে ক্লেশ হয় নাই তেমন। কেবল রোমাঞ্চ অনুভব করিয়াছে। হ্রদের দিকে মুখ করিয়া পূর্বা বলিল, পথিক।বল।শিব অশুভ ও দুঃখকে নাশ করেন, তিনি কৈলাস শিখরে বাস করেন। শিব অনন্তকাল ধরিয়া ধ্যানে আছেন ,সঙ্গে হিমালয়কন্যা পার্বতী। ওহ্ ।কাহারও কাহারও মতে কৈলাসই জগতের স্তম্ভ, জগতের কেন্দ্র।ওহ্।কৈলাসের চারিটি মুখ। চারিটি মুখে স্ফটিক পদ্মরাগমনি, স্বর্ণ ও নীলকান্তমনি খোদিত।ওহ্।সন্ধ্যালগ্ন উর্ত্তীণ বলিয়া আষাঢ়ী জ্যোস্নায় মানস হ্রদসহ চতুর্দিকের পবর্তশ্রেণি প্লাবিত হইয়াছিল। বাহমান মুগ্ধ হইয়া দেখিল পূর্ণিমার ধবল আলো হ্রদের জলে প্রতিফলিত হইয়া বিচিত্র দৃশ্যের সৃষ্টি করিয়াছে। কৈলাস শিখর ছুঁইয়া আসা হিমশীতল বাতাস যেন জানান দিয়া যাইতেছে: অদৃশ্য দেবতারা তোমাদিগকে অবলোকন করিতেছে, তোমরা সচেতন হও। সহসা পূর্বা বলিল, পথিক। বল। বাহমানের কন্ঠস্বর কী কারণে কাঁপিয়া উঠিল। আমি সব দেখিতে পাইতেছি। বাহমান শিহরিয়া উঠিল।
false
fe
বারাক ওবামার ১০০ দিন _ শান্তির অন্বেষণ বারাক ওবামার ১০০ দিন : শান্তির অন্বেষণ ফকির ইলিয়াস ========================================= মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরম অর্থনৈতিক মন্দা শিশু নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে স্থানীয় শিশু কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালের শুরুর তিন মাসে মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদেরকে অবজ্ঞার হার বেড়েছে পনেরো শতাংশ। এর কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক অসঙ্গতিকেই দায়ী করা হচ্ছে। বোস্টনে একজন মা তার সন্তানকে সুচিকিৎসা দিতে না পারায় ডায়াবেটিক আক্রান্ত শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। মা বলেছেন, তিনি চিকিৎসার ইন্স্যুরেন্স নিয়মিত দিতে পারছিলেন না। ফলে চিকিৎসা করানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। আটলান্টায় একজন মা চাকরি হারিয়ে ভরণপোষণ বহন করতে পারছিলেন না নিজ সন্তানদের। দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। প্রজন্মের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে একটি উৎকণ্ঠা বিশ্বের চারদিকে। দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার ভোটারদের একটি বিরাট অংশও ছিল তরুণ-তরুণী। ‘হ্যাঁ আমরাই পারবো’ এমন একটা প্রত্যয় ছিল সবার চোখে মুখে। লক্ষ্য একটিই, দিন পরিবর্তনের হাওয়া বইয়ে দেয়া। কিন্তু তা করতে তিনি কতোটা কাজ করতে পারছেন তা নিয়ে একটি জল্পনা সবদিকে। তার ১০০ দিনের শাসনে চলছে যোগ-বিয়োগ। প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা তার যাত্রার শুরুতেই মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি বেশ কিছু মুসলিম দেশ ইতিমধ্যেই সফর করেছেন। কোনো কোনো দেশে তীব্র প্রতিবাদের মুখোমুখিও হতে হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। কিন্তু তারপরও তিনি বলেছেন, আমরা সম্প্রীতির সুসম্পর্ক চাই। প্রেসিডেন্ট ওবামার একটি পরিচয় বিশ্ববাসী জানেন, তিনি অর্ধেক মুসলিম বংশোদ্ভূত। যদিও তিনি খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাস করেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি যে তাকে খুব সহযোগিতা করে আসছে তাও কিন্তু নয়। তারপরও ওবামা তার প্রজ্ঞার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সন্ত্রাস দমনে তার নীতিটি হচ্ছে ‘উসকে দেয়া নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান চাই’। যা বিশ্বের বিভিন্ন মহলে এ পর্যন্ত নন্দিতই হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডগুলো সফর করেছেন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফরকালে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের সঙ্গে। ওবামা বলেছেন, আসুন বেশি কথা না বলে বিশ্বকে একটি সৃজনশীল নেতৃত্বের পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, গণতন্ত্রের পক্ষে বক্তৃতা আমরা অনেক শুনেছি। এখন সময় কাজ করার। কারণ এই প্রজন্ম আমাদের সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বের এই সময়ের আলোচিত বামপন্থী নেতা হুগো শ্যাভেজের কাছ থেকে একটি উপহারও গ্রহণ করেছেন বারাক ওবামা। ওবামা একটি সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছেন প্রতিবেশী কম্যুনিস্ট দেশ কিউবার সঙ্গেও। তিনি বলেছেন, গুয়েন্তানামো বে’তে বন্দীদের ব্যাপারে উদার নীতি যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছে। সেখানে যে কোনো অমানবিক কায়দায় যাতে কাউকে নির্যাতন করা না হয় সে নির্দেশ ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে। ওবামা বলেন, কিউবারও উচিত যথাশিগগির সম্ভব রাজবন্দীদেরকে মুক্তি দেয়া। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, কিউবা এখন রাউল কাস্ট্রের নতুন নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। তাদের উচিত গণতন্ত্রকে বারবার কটাক্ষ না করে গণতন্ত্রের সৌন্দর্যকে গ্রহণ করা। এবং তা মানুষের কল্যাণে লাগানো। ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী কিউবান আমেরিকানরা বছরে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কিউবায় তাদের স্বজনদেরকে পাঠান। কিউবান সরকার তা থেকে একটি মোটা অঙ্কের ফি কেটে নেয় এই ফি কর্তনের পরিমাণ কমানো দরকার। তা হলেই ভুক্তভোগী কিউবান নাগরিকরা আরেকটু বেশি স্বস্তি পাবে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত বেশকিছু উদারনীতি বিশ্বে প্রশংসা পাচ্ছে। তিনি বলেছেন, কাউকে ‘মুসলিম টেরোরিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। কারণ সন্ত্রাসীদের কোনো জাত-পাত, জাতি ধর্ম নেই। ভেনেজুয়েলা এবং কিউবার প্রতি আরোপিত বেশকিছু নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিয়েছেন ওবামা। কিন্তু কিউবার প্রতি আরোপিত ইউএস ট্রেড এমবার্গো এখনো তুলে নেয়া হয়নি। এদিকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ বলেছেন, আমরা পরাশক্তির দিকে উদারতার হাত বাড়িয়েছি। দেখি তারা তা গ্রহণে কতোটা সমর্থ। শ্যাভেজ বারাক ওবামাকে একটি বই উপহার দিয়ে বলেছেন প্রতাপশালী প্রেসিডেন্টের উচিত বিশ্বের বামধারার রাজনীতি, উদারতা এবং উত্থান পড়ে দেখা। তিনি যে বইটি ওবামাকে উপহার দিয়েছেন তা ইতিমধ্যে আমাজন ডটকমে অন্যতম বেস্ট সেলার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। বইটির লেখক একজন উরুগুয়েনিয়ান সাংবাদিক। বইটির নাম ‘ওপেন ভেইনস অব ল্যাটিন আমেরিকা : ফাইভ সেঞ্চুরিস অব দ্য পিলেজ অব দ্য কনটিনেন্ট’। (Open Veins Of Latin America : Five Centuries Of The Pillage Of A Continent – By Eduardo Galeano ) লেখক মি. এডওয়ার্ডো গেলিয়ানো একজন বামপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমধিক পরিচিত। বহুল আলোচিত এই বইটি সম্পর্কে লেখক বলেছেন, আমি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার স্বচ্ছতা ধারণ করে বইটি লিখেছি। প্রেসিডেন্ট ওবামা বইটি পড়বেন জেনে খুব ভালো লাগছে। ওবামা যে দ্বার উন্মোচন করতে চাইছেন তা বিশ্বের প্রজন্মের কল্যাণে কতোটা স্বস্তি বয়ে আনবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুটি সরগরম করে রাখছে মধ্যপ্রাচ্যের মাঠ। আরব দেশগুলোর বাদশাহ, খলিফা, আমির, শাসককুল একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদারিতে যেমন পাল্লা দিচ্ছেন অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে ঐক্যের বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন না। ওবামা প্রশাসন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেছে আবারো। একই অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোও। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা গেলে আরব বিশ্বের সৌহার্দ্যপূর্ণ সমর্থন পাবে যুক্তরাষ্ট্র এমন কথা অনেক আগেই বলেছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। ওবামার নেতৃত্বে তা কতোটা সম্ভব করতে পারে তাই দেখার বিষয়। বিশ্বের জাহাজ পথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন একটি দানবতন্ত্র কাঁপিয়ে তুলেছে সবাইকে। তা হচ্ছে সোমালিয়ান সশস্ত্র ‘পাইরেট বাহিনী’। এরা ছোট ছোট ট্রলারে করে এসে গভীর সমুদ্রে বিভিন্ন দেশের জাহাজগুলোকে জিম্মি করছে। হাইজ্যাক করে মুক্তিপণ দাবি করছে। অতীতের তুলনায় গেলো ৬ মাসে এর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাহাজ এই পাইরেট বাহিনী কর্তৃক জিম্মি হওয়ার পর তা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধ জাহাজ সেখানে পৌঁছে ছয়জন পাইরেট সদস্যকে হত্যার পর জাহাজটি উদ্ধার করে। ইতিমধ্যে ফ্রান্স, নরওয়ে, ইংল্যান্ড, জার্মানিরও জাহাজ আক্রান্ত হয়েছে এই পাইরেট বাহিনী দ্বারা। গালফ অব এডেনে একটি নরওয়ের জাহাজ উদ্ধার করেছে একটি কানাডিয়ান ওয়ারশিপ। এই বিষয়টি নিয়ে ন্যাটো ইতিমধ্যে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিনি বিদেশ মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও প্রেসিডেন্ট ওবামা আবারো জোর দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের জল-স্থল সবখানেই মানুষের নিরাপত্তা বিধানে যুক্তরাষ্ট্রে সবার সহযোগিতা চায়। ------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ।ঢাকা। ১২ মে ২০০৯ মংগলবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০০৯ সকাল ৭:১৮
false
mk
স্বাধীনতাস্তম্ভে যুদ্ধাপরাধীর ছবি, লাখো শহীদের প্রতি অবমাননা শুক্রবার বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ। ১৮ দলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে সেখানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও যোগদান করে। কিন্তু তাদের স্লোগান-ব্যানার-ফেস্টুনের ভাষা ১৮ দলীয় জোটের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিরোধী দল দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সংগত কারণেই ১৮ দলীয় জোটের অভিন্ন দাবি হিসেবে সেখানে আগতদের স্লোগান-বক্তব্য কিংবা ব্যানার-ফেস্টুনে তাই উল্লেখ থাকার কথা। সমাবেশে বক্তব্যদানকারী নেতাদের প্রায় সবাই একই বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে বক্তৃতাও করেছেন। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কিছু নেতা-কর্মী সমাবেশে প্রকাশ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মুক্তি দাবি করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাঙ্ক্ষিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলেরও। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর যে ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেখানে স্থাপিত স্বাধীনতাস্তম্ভে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী সংগঠন জামায়াতের চিহ্নিত নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে তারা। একাত্তরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণকালে নিজেদের এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের আত্মসমর্পণের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। আর সেই সময় পাকিস্তানি বাহিনীর অকজিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও তাদের সমন্বয়ে গঠিত রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী- যেগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন কিংবা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেসব নেতা। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতিস্মারকে এভাবে স্বাধীনতাবিরোধী কিছু ব্যক্তির ছবিসহ ব্যানার টানানোর ধৃষ্টতাকে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি অবমাননা বলে মনে করি।রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি দলের সঙ্গে আরেকটি দলের মতভেদ থাকবে, একটি দল অন্য দলের বিরুদ্ধে কথা বলবে- প্রয়োজনে আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। তাই বলে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানকে অপমান করার মতো গর্হিত কাজকে স্বাধীনতায় বিশ্বাসী কারো পক্ষেই স্বাভাবিক বলে মনে করা সম্ভব নয়।মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে যারা একাত্তরে নৃশংসতা চালিয়েছিল, তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা চায় না। তার প্রমাণ এরই মধ্যে তারা একের পর এক দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে উল্লিখিত সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা, বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র কর্মী গ্রেপ্তার, জামায়াতকর্মীর বাড়িতে বোমা বানানোর সময় নিহত হওয়া এবং বোমা বানানোর সরঞ্জাম উদ্ধারের মতো ঘটনা প্রমাণ করে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তৎপর। র‌্যাব কিংবা পুলিশের ওপর আক্রমণ করার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা। গণতন্ত্রের নামে ৩০ লাখ শহীদকে অপমান করার অধিকার কারো থাকতে পারে না।
false
mk
ঢাকায় নাশকতা চালাতে পারে শিবির___ রাজধানীতে চোরাগোপ্তা হামলাসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা হয়েছে প্রশিক্ষিত শিবির ক্যাডার। আর এরাই গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়ররায় ঘোষণার প্রাক্কালে জামায়াতের ডাকা হরতালে বহিরাগত প্রশিক্ষিত শিবির ক্যাডাররাই বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়। এরা রাজধানীর অদূরে টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।টঙ্গী থেকে হেফাজত ইসলামের পোস্টারসহ বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই ও দেশিয় অস্ত্রসহ ১২ জনকে আটকের পর উত্তরায় সদর দফতরে র‌্যাব-১ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই তথ্য দেন অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াত।আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশিক্ষিত শিবির ক্যাডারদের রাজধানীতে আনা হয়েছে। এরা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। টানা চারদিন হরতালে রাজধানীতে যে নাশকতা হয়েছে, বহিরাগত শিবির ক্যাডাররাই তাতে অংশ নেয়। কর্মকর্তারা জানান, টঙ্গীর গোপন আস্তানা থেকে নিয়ামতউল্লাহ, সাঈদ, তাজুল ইসলাম, শাহাদৎ হোসেন, মুনছুর, নাজমুল হক নাছিম, শহিদুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, আবুল কাশেম, নূর আহম্মেদ, আব্দুল কাইয়ুম এবং সোহাগসহ ১২ জনকে আটক করা হয়।আটকদের বাড়ি গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, চাঁদপুর, নেত্রকোনা এবং লক্ষ্মীপুর জেলায়।কর্মকর্তারা আরো জানান, রাজধানীতে আসার পর তাদের টঙ্গীতে থাকতে দেওয়া হয়। হরতালের দিন তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়।আটকদের মধ্যে নাজমুল হক নাসিম ও তরিকুল ভাটারা থানার কুড়িল এলাকায় পুলিশকে মারধর করে অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।একইভাবে তারা রাজধানীর অদূরে আমিন বাজার, সাভার, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, শনির আখড়া, রায়ের বাগ, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়।র‌্যাব-১ এর সিও লে. কর্নেল কিসমত হায়াত বাংলানিউজকে বলেন, “দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের রাজধানীমুখি করা হচ্ছে। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত-শিবির তরুণদের বিপথগামী করে তুলছে। গত চারদিনের হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যে নাশকতা চালানো হয়েছে, তারাই এর সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছে।”তিনি বলেন, “একই রকমভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নাশকতা চালানোর জন্য শিবির ক্যাডাররা এসেছে। আমরা তাদের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।”এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করছে জামায়াত-শিবির। সাধারণ মানুষদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে এই গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের পাশাপাশি এই বিচারকে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে তৎপর এই গোষ্ঠী।”“এই গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বন্ধে আমরা কাজ করছি। আটকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে” বলেও জানান তিনি।
false
mk
বাচ্চু রাজাকার বৃত্তান্ত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, পিতা মৃত আব্দুস সালাম মিয়া, সাং-বড়খাড়াদিয়া, থানা-সালথা, জেলা ফরিদপুর। বর্তমানে সেক্টর নং ০৭, রোড নং-৩৩, বাড়ি নং-০৬, থানা উত্তরা, ঢাকা এবং আজাদ ভিলা ২৭৯/৬ চাঁনপাড়া, উত্তরখান, ঢাকায় বসবাস করছেন। ১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ ফরিদপুর জেলায় এই আসামি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে লেখাপড়া করেছেন। মসজিদভিত্তিক এনজিও প্রতিষ্ঠান করেন। এর চেয়ারম্যান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ফরিদপুর জেলায় প্রথমে রাজাকার ও পরে আলবদর বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এক সময় জামায়াতে ইসলামীর রোকন থাকলেও বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। খাড়াদিয়ার মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার জেলা আলবদরের প্রধান ও রাজাকার কমান্ডার (নেতা) হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বর্তমানে বাচ্চু রাজাকার প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি ৫টি এনজিও পরিচালনা করায় তাঁর অনেক অনুসারী হয়ে পড়েছে। তিনি একজন ভাল বক্তা, ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে তিনি বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করে লোকজনকে প্রভাবিত করেছেন। ১৯৭১ সালে বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র ছিলেন। পাকিস্তানপন্থী ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন এবং ফরিদপুর ইসলামী ছাত্রসংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন ও প্রাদেশিক নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী মুসলিম লীগ প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় কাজ করেন। সে কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন হওয়ার পূর্ব হতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অপকর্মের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথমার্ধে ফরিদপুর জেলায় আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুসহ অন্যদের নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। পরে ফরিদপুরের আলবদর বাহিনী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবুল কালাম আজাদ মাদ্রাসায় লেখাপড়ার কারণে ভাল উর্দু বলতে পারতেন। এটাকে পুঁজি করে অন্যায়ভাবে লাভবান ও অসৎ কামনা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে তিনি ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রারম্ভকাল হতে পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের মন জয় করার জন্য সচেষ্ট হন। ১৯৭০-১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের ফরিদপুর জেলা পর্যায়ের কমিটির সদস্য আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুর স্টেডিয়ামে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। বাচ্চু রাজাকার পাক বাহিনীর কাছে ফরিদপুর পুলিশলাইনে অস্ত্র ট্রেনিং গ্রহণ করে পাকিস্তানী হানাদারদের কাছ থেকে অস্ত্রপ্রাপ্ত হন। তাঁর ইঙ্গিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী স্টেডিয়ামের ভেতরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে স্টেডিয়ামের ভেতরেই মাটিচাপা দিয়েছে। বহু লাশ নদীতে ও ফরিদপুর শহরে ময়লারগাড়ি নামক স্থানে ফেলে দেয়। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। তাঁর দলে ১২-১৩টি রাইফেল ছিল। এই রাইফেল পেয়ে বাচ্চুর অত্যাচারের মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছিল। হাসামদিয়া গ্রামে প্রবেশ করে হিন্দুপাড়ার মাল লুটপাট করেন ও ৪০-৫০টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ফরিদপুর শহরে যে কটি বধ্যভূমিতে শত শত মানুষ শায়িত আছেন, তাঁদের হত্যার নির্দেশদাতা এবং নিজেও সরাসরি হত্যাকারী আবুল কালাম আজাদ। তিনি নিজে গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছেন। বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন বিভাগ যে সমস্ত অভিযোগ এনেছে তার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩র ধারা ৩(২) (এ) (সি-আই) (জি) (এইচ) তৎসহ ৪(১) হত্যাজনিত গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত করা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পলাতক আসামি বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ফরিদপুর শহর, বোয়ালমারী, নগরকান্দা থানার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তঁাঁর নেতৃত্বে ফরিদপুর জেলায় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ ও দেশান্তরী, যুবতীদের ধরে পাকিস্তানী সেনাদের কাছে সোপর্দ কারার মতো ঘটনা ঘটেছে। জগদ্বন্ধু আশ্রমে হামলা, লুটপাট করার পর ৮ পূজারীকে হত্যা করা হয়। এছাড়া শহরের চকবাজারস্থ বদ্রিনারায়ণের বাড়ির রামকৃষ্ণ আগরওয়ালার বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট করে ও তাঁদের দেশান্তরিত করা হয়। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে কলারন গ্রামে তৎকালীন জমিদার শুধাংশু মোহন রায়কে অপহরণ ও হত্যা করা হয় । পরবর্তীতে তাঁর ছেলে মণিময় রায়কে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে জখম করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরদের অভিযোগপত্র উপস্থাপনে এ সমস্ত তথ্য পাওয়া গেছে।অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ১৯৭১ সালে রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র ছিলেন। পাকিস্তানপন্থী ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন ছাত্রসংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ফরিদপুর ছাত্রসংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ও প্রাদেশিক নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী/মুসলিম লীগ প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার স্বাধীনতাবিরোধী অন্যান্য চক্রের সঙ্গে একত্রিত হয়ে পাকিস্তানী সেনাদের অভ্যর্থনা করে ফরিদপুর শহরে নিয়ে আসেন। খানসেনাদের অত্যাচারও বাচ্চুর কাছে হার মানে। এমন কোন জঘন্য কাজ ছিল না যা তাঁর দলের লোক দ্বারা সম্ভব হয়নি। বাচ্চুর দল বিভিন্ন হিন্দু বসতিপূর্ণ গ্রামের মাল লুট করে। সে কাহিনী বড়ই মর্মান্তিক। খানসেনাদের সহযোগীদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ছিলেন অন্যতম। ফরিদপুর শহর, বোয়ালমারী থানা, সালথা থানা, নগরকান্দা থানার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয় খাড়াদিয়ার আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে। বাচ্চুর দল বিভিন্ন হিন্দু বসতিপূর্ণ গ্রামের মাল লুট করে। সে অত্যাচারের কাহিনী বড়ই মর্মান্তিক। বড়খাড়াদিয়ার নিকটবর্তী হিন্দু গ্রাম যেমন ফুলবাড়িয়া, জগনন্দী, উজিরপুর, শ্রীনগর, হাশেমদিয়া ও ময়েনদিয়া প্রভৃতি গ্রামে হিন্দুদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়। বাচ্চু রাজাকার এ সমস্ত হিন্দুর মাল লুট করে তাঁদের সর্বস্বান্ত করেছিলেন। বেশকিছু হিন্দু বাসিন্দাকে বাচ্চু রাজাকার গুলি করে হত্যা করেন। হিন্দু মেয়েদের ধরে এনে তাঁদের ওপর তাঁরা পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছেন। বহু সোনা ও টাকা ফরিদপুর মিলিটারি মেজরের কাছে জমা দিয়েছিলেন বাচ্চু রাজাকার। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, পিতা মৃত আব্দুস সালাম মিয়া, সাং-বড়খাড়াদিয়া, থানা-সালথা, জেলা ফরিদপুর। বর্তমানে সেক্টর নং ০৭, রোড নং-৩৩, বাড়ি নং-০৬, থানা উত্তরা, ঢাকা এবং আজাদ ভিলা ২৭৯/৬ চাঁনপাড়া, উত্তরখান, ঢাকায় বসবাস করছেন। ১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ ফরিদপুর জেলায় এই আসামি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে লেখাপড়া করেছেন। মসজিদভিত্তিক এনজিও প্রতিষ্ঠান করেন। এর চেয়ারম্যান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ফরিদপুর জেলায় প্রথমে রাজাকার ও পরে আলবদর বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এক সময় জামায়াতে ইসলামীর রোকন থাকলেও বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। খাড়াদিয়ার মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার জেলা আলবদরের প্রধান ও রাজাকার কমান্ডার (নেতা) হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বর্তমানে বাচ্চু রাজাকার প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি ৫টি এনজিও পরিচালনা করায় তাঁর অনেক অনুসারী হয়ে পড়েছে। তিনি একজন ভাল বক্তা, ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে তিনি বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করে লোকজনকে প্রভাবিত করেছেন। ১৯৭১ সালে বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র ছিলেন। পাকিস্তানপন্থী ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন এবং ফরিদপুর ইসলামী ছাত্রসংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন ও প্রাদেশিক নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী মুসলিম লীগ প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় কাজ করেন। সে কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন হওয়ার পূর্ব হতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অপকর্মের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথমার্ধে ফরিদপুর জেলায় আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুসহ অন্যদের নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। পরে ফরিদপুরের আলবদর বাহিনী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবুল কালাম আজাদ মাদ্রাসায় লেখাপড়ার কারণে ভাল উর্দু বলতে পারতেন। এটাকে পুঁজি করে অন্যায়ভাবে লাভবান ও অসৎ কামনা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে তিনি ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রারম্ভকাল হতে পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের মন জয় করার জন্য সচেষ্ট হন। ১৯৭০-১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের ফরিদপুর জেলা পর্যায়ের কমিটির সদস্য আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুর স্টেডিয়ামে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। বাচ্চু রাজাকার পাক বাহিনীর কাছে ফরিদপুর পুলিশলাইনে অস্ত্র ট্রেনিং গ্রহণ করে পাকিস্তানী হানাদারদের কাছ থেকে অস্ত্রপ্রাপ্ত হন। তাঁর ইঙ্গিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী স্টেডিয়ামের ভেতরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে স্টেডিয়ামের ভেতরেই মাটিচাপা দিয়েছে। বহু লাশ নদীতে ও ফরিদপুর শহরে ময়লারগাড়ি নামক স্থানে ফেলে দেয়। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। তাঁর দলে ১২-১৩টি রাইফেল ছিল। এই রাইফেল পেয়ে বাচ্চুর অত্যাচারের মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছিল। হাসামদিয়া গ্রামে প্রবেশ করে হিন্দুপাড়ার মাল লুটপাট করেন ও ৪০-৫০টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ফরিদপুর শহরে যে কটি বধ্যভূমিতে শত শত মানুষ শায়িত আছেন, তাঁদের হত্যার নির্দেশদাতা এবং নিজেও সরাসরি হত্যাকারী আবুল কালাম আজাদ। তিনি নিজে গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছেন। বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন বিভাগ যে সমস্ত অভিযোগ এনেছে তার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩র ধারা ৩(২) (এ) (সি-আই) (জি) (এইচ) তৎসহ ৪(১) হত্যাজনিত গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত করা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পলাতক আসামি বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ফরিদপুর শহর, বোয়ালমারী, নগরকান্দা থানার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তঁাঁর নেতৃত্বে ফরিদপুর জেলায় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ ও দেশান্তরী, যুবতীদের ধরে পাকিস্তানী সেনাদের কাছে সোপর্দ কারার মতো ঘটনা ঘটেছে। জগদ্বন্ধু আশ্রমে হামলা, লুটপাট করার পর ৮ পূজারীকে হত্যা করা হয়। এছাড়া শহরের চকবাজারস্থ বদ্রিনারায়ণের বাড়ির রামকৃষ্ণ আগরওয়ালার বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট করে ও তাঁদের দেশান্তরিত করা হয়। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে কলারন গ্রামে তৎকালীন জমিদার শুধাংশু মোহন রায়কে অপহরণ ও হত্যা করা হয় । পরবর্তীতে তাঁর ছেলে মণিময় রায়কে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে জখম করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরদের অভিযোগপত্র উপস্থাপনে এ সমস্ত তথ্য পাওয়া গেছে।অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ১৯৭১ সালে রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র ছিলেন। পাকিস্তানপন্থী ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন ছাত্রসংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ফরিদপুর ছাত্রসংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ও প্রাদেশিক নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী/মুসলিম লীগ প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার স্বাধীনতাবিরোধী অন্যান্য চক্রের সঙ্গে একত্রিত হয়ে পাকিস্তানী সেনাদের অভ্যর্থনা করে ফরিদপুর শহরে নিয়ে আসেন। খানসেনাদের অত্যাচারও বাচ্চুর কাছে হার মানে। এমন কোন জঘন্য কাজ ছিল না যা তাঁর দলের লোক দ্বারা সম্ভব হয়নি। বাচ্চুর দল বিভিন্ন হিন্দু বসতিপূর্ণ গ্রামের মাল লুট করে। সে কাহিনী বড়ই মর্মান্তিক। খানসেনাদের সহযোগীদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ছিলেন অন্যতম। ফরিদপুর শহর, বোয়ালমারী থানা, সালথা থানা, নগরকান্দা থানার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয় খাড়াদিয়ার আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে। বাচ্চুর দল বিভিন্ন হিন্দু বসতিপূর্ণ গ্রামের মাল লুট করে। সে অত্যাচারের কাহিনী বড়ই মর্মান্তিক। বড়খাড়াদিয়ার নিকটবর্তী হিন্দু গ্রাম যেমন ফুলবাড়িয়া, জগনন্দী, উজিরপুর, শ্রীনগর, হাশেমদিয়া ও ময়েনদিয়া প্রভৃতি গ্রামে হিন্দুদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়। বাচ্চু রাজাকার এ সমস্ত হিন্দুর মাল লুট করে তাঁদের সর্বস্বান্ত করেছিলেন। বেশকিছু হিন্দু বাসিন্দাকে বাচ্চু রাজাকার গুলি করে হত্যা করেন। হিন্দু মেয়েদের ধরে এনে তাঁদের ওপর তাঁরা পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছেন। বহু সোনা ও টাকা ফরিদপুর মিলিটারি মেজরের কাছে জমা দিয়েছিলেন বাচ্চু রাজাকার।
false
rg
ইউরো মাতবরদের আধিপত্যকে সাহসি না বলেছে গ্রিস !!! ঋণ সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে গ্রিস। গ্রিসের মানুষ বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করেছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা ও দেশগুলো ঋণ দেবার সময় নানান কিসিমের শর্ত জুড়ে দেয়। গ্রিসের সাধারণ মানুষেরা মূলত আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের এই শর্তগুলোকে একবাক্যে অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউরো মাতুব্বরদের মুখে একটা কঠিন চপেটাঘাত দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের পুনরুদ্ধারের প্রস্তাব (বেইল আউট) প্রত্যাখ্যান করে গ্রিসের জনগণ সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রিসে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়েছে। চূড়ান্ত ফলে ‘না’ ভোট পড়েছে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ। ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ। মোট ভোট পড়েছে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ। এখন জুলাই মাসের মধ্যে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) ৩০০ কোটি ইউরো গ্রিসকে ফেরত দিতে ঋণদাতারা চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এমনকি গ্রিসকে ইউরোজোন থেকে বের করেও দিতে পারে। পাঁচ বছর আগে থেকে গ্রিসের এই সংকটের শুরু। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএমএফের কাছে পাঁচ বছর আগে সাহায্যের আবেদন করেছিল গ্রিস। ২০১১ সালের মে মাসে ইউরোজোনের প্রথম দেশ হিসেবে ইইউ ও আইএমএফের কাছ থেকে আর্থিক পুনরুদ্ধার (বেইলআউট) প্যাকেজ গ্রহণ করেছিল গ্রিস। তখন এসব আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা এথেন্সকে ১১০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ দেয়। কিন্তু এরা তখন ঋণের শর্তে জুড়ে দিয়েছিল যে শ্রমিকদের বেতন ভাতা কমাতে হবে এবং কর বাড়াতে হবে। ঋণদাতাদের এই ঋণের শর্ত পালন করতে গিয়ে চড়া মূল্য দিতে হয় গ্রিসের জনগণকে।২০১১ সালের অক্টোবরে গ্রিসের অর্থনৈতিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় পর ১৩০ বিলিয়ন ইউরোর দ্বিতীয় বেইলআউট প্যাকেজ প্রস্তাব ঘোষণা করে ইউরোজোন। ঋণের এই অর্থে চলতে থাকে দেশটি। আর এ জন্য নাগরিকদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই সময়ে পেনশন, বেতন ও সরকারি সেবায় ব্যাপক কাটছাঁট হয় গ্রিসে। কিন্তু এভাবে ঋণ নিয়ে আর কত? যেসব শর্তে ইইউ ও আইএমএফ ঋণ দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বড় জয় পায় আলেক্সিস সিপ্রাসের নেতৃত্বাধীন ব্যয়-সংকোচনবিরোধী সিরিজা পার্টি। এরপর ফেব্রুয়ারিতে গ্রিস ও ঋণদাতাদের মধ্যে মতৈক্য হয় যে জুন পর্যন্ত ঋণসহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। বিনিময়ে বিভিন্ন সংস্কার পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এথেন্স।গত ২ জুন সংস্কার প্রশ্নে গ্রিসকে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয় ঋণদাতারা। প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস তা প্রত্যাখ্যান করেন। গতকালের গণভোটেও তারই প্রতিফলন ঘটল। এখন কীভাবে এই অবস্থা থেকে গ্রিস উদ্ধার পাবে, সেটিই দেখার বিষয়। আসলে গণভোটের ফলাফল ইউরোপের বিপক্ষে নয়, বরং ঋণ সংকট মোকাবেলায় আলোচনার ক্ষেত্রে দেশটির সামর্থ্য বৃদ্ধির পক্ষে ভোট দিয়েছে গ্রিসের সচেতন ভোটাররা। নানান কিসিমের ঋণের শর্ত জুড়ে দিয়ে ইউরো জোনের অন্য আঠারোটি দেশ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার বিপক্ষেই আসলে গ্রীস সমর্থন দিয়েছে।আসলে ইউরো মাতুব্বরদের বেইলআউট প্রস্তাবকেই গ্রিসের মানুষ আর বেইল দেয়নি। মাতুব্বরদের মুখে চুনকালি লাগিয়ে দিয়েছে গ্রিসের সাহসী সন্তানেরা। তোমরা ধনি বলে আমাদের ঋণ দেবা, আবার ঋণের সঙ্গে কিছু অন্যায্য শর্ত জুড়ে দিবা, এভাবে আর কতকাল মাতুব্বরি করবা মনু? এই কথাটিই সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে গ্রিসের ভোটারগণ। বেইলআউট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এখন গ্রিসকে ইউরো জোন থেকে বের করে দেবার জন্য ইউরো মাতুব্বরদের ঘুম হারাম। ইউরো জোন থেকে বের হলে কি হবে? একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো গ্রিসে বন্ধ হবে। সেক্ষেত্রে গ্রিসের নিজস্ব মুদ্রা দ্রাকমা আবার চালু হবে। ২০০১ সালে গ্রিস দ্রাকমা থেকে ইউরো মুদ্রা প্রবর্তন করে। অর্থনৈতিক লেনদেন ২০০১ সালের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। তাতে কি গ্রিসে অর্থনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হবে? মোটেই না। একটি দেশ এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। গোটা ইউরোপকে টেক্কা দিয়ে এখান থেকেই গ্রিসের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে গ্রিসকে কিছু কঠিন বিষয় মেনে নিতে হবে। এবং সেগুলো থেকে উত্তরণের পথে কঠোর সংগ্রাম করতে হবে। গত সপ্তাহ জুড়ে ব্যাংকগুলো বন্ধ রাখে সরকার, পাশাপাশি এটিএম বুথ থেকে দিনে ৬০ ইউরোর বেশি না তোলার বিধান জারি হয় গ্রিসে। সামনে এমন আরো কঠিন দিন গ্রিসের সামনে আসলেও এই সংকট কাটিয়ে উঠতে গ্রিসের মানুষেরা সাহসি হয়ে উঠছে। এটাই আশার কথা। অ্যাথেন্সের রাস্তায় রাস্তায় হাজার হাজার গ্রিসবাসীর এভাবে নেচে গেয়ে পতাকা উড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশের এমন বিরল দৃশ্য নিকট অতীতে খুব একটা দেখা যায়নি গ্রিসে। সেন্ট্রাল স্কয়ারে উড়ন্ত পতাকার ঢেউ, মাতোয়ারা গ্রিকদের উল্লাস, আতশবাজির শব্দ দাতাদের কানে না পৌঁছুলেও তাদের নানান কিসিমের শর্তকে ‘না’ বলে দেওয়ার ‘সাহস দেখিয়েই’ সঙ্কট থেকে উত্তরণের আলো খুঁজছে এখন গ্রিসবাসী।আপাত সংকটগুলো হল ব্যাংক বন্ধ থাকায় গ্রিসের অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অবসরভাতা তুলতে পারছেন না। আর্থিক অবস্থায় ভারসাম্য ফেরাতে করকাঠামো চাঙা করতে হবে। ইউরোপের দেশ হলেও গ্রিসের কর আদায় এখনো বাংলাদেশের মত অপর্যাপ্ত। গ্রিসের কর নিরীক্ষণ সংস্থার পরিচালক নিকোস লেকাস ২০১২ সালের এক হিসাবে দেখিয়েছেন, প্রতিবছর গ্রিসে কর খাত থেকে প্রাপ্ত আয় ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার। গ্রিসের জিডিপিতে এই ক্ষতির হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। গ্রিসকে এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে।গ্রিসে বিদেশি বিনিয়োগের হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধান করতে গ্রিসের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরো সহজ করতে হবে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়াতে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে গ্রিস প্রশাসনে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে হবে। এতে বিদেশিরা বিনিয়োগের জন্য গ্রিসকে নিরাপদ মনে করবে। স্থিতিশীলতা ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব নয়।গ্রিস নানা সম্পদে সমৃদ্ধ। বিশেষ করে জ্বালানি ও সৌর সম্পদে ভরপুর। এসব সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ৭০ শতাংশ চাহিদা মেটানো সম্ভব। এছাড়া গ্রিসে অর্থনীতির বেশ কিছু সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে। যেমন পর্যটন, কৃষি, বন্দর খাত। কিন্তু অর্থনীতির সম্ভাবনাময় এই খাতগুলোতে এখন মন্দা চলছে। গ্রিসের অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য এই সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে এখন শক্তিশালী করতে হবে। গ্রিসের জনগণকে এই বিষয়ে এখন গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করার জন্য আপোদকালীন নানা কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে। রপ্তানি বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের নানান উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রিসের জনগণ যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য এই সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে দৃড়ভাবে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে ইউরো মাতবরদের খবরদারির একটা জুতসই জবাব তখন কার্যকর হবে। নতুবা গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে একদিনে ইউরো জোন থেকে বের হয়ে বড়-মিঞাদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে চলাটা মোটেও সহজ হবে না গ্রিসের জন্য। তবুও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ইউরো মাতবররা নিজেদের ইজ্জ্বত পুনরুদ্ধার করার জন্য রাতের অন্ধকারে এখন গ্রিসকে নানান সংস্কার উদ্যোগের পরামর্শ দেবে। প্রয়োজনে সহজ শর্তে ঋণ ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করবে ইউরো গডফাদারগণ। আর তার লক্ষণ তো এখনই দেখা যাচ্ছে। আজ সোমবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। গণভোটের ফল নিয়ে ফোনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর। ম্যার্কেল ও ওলাঁদ গতকাল রাতে ফোনে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। গ্রিসের জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে তাঁরা একমত হয়েছেন। গণভোটের ফলের প্রেক্ষাপটে ইউরোজোনের নেতাদের নিয়ে কাল মঙ্গলবার একটি সম্মেলন করার অনুরোধ আসার পর তাতে তাৎক্ষণিক সায় দিয়েছেন ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। ইউরোপীয় কমিশন এই গণভোটের ব্যাপারে আঁটোসাঁটো বিবৃতি দিয়েছে। এতে গণভোটের ফলাফলে প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলা হয়েছে। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঁ-ক্লদ জাঙ্কার আজ ইসিবির প্রধান ও ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীদের নেতা ডিজেলব্লোয়েমের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করবেন। সো, গ্রিসের জনগণ ইউরো ঋণ কসাইদের মুখে যে চটকানি দিয়েছে, তা যে তারা এখন ধীরে হলেও হজম করতে শুরু করেছে এটাই দেখার বিষয়। গ্রিস নিজের পায়ে দাঁড়ালে ইউরো বণিক কসাইদের ঋণ ব্যবসা আর থাকে না। গোটা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে গরিব হল গ্রিস। তাই ধনিদের যত শর্ত সেই গরিবদের বিপক্ষে। গ্রিসের গণভোটের রায় শুধু বেইলআউট প্রস্তাবকেই না করা নয়, গোটা বিশ্বে ধনিদের আধিপত্যকে ইগনোর করার জন্য গরিবদের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত গতে পারে। ধন্যবাদ গ্রিসবাসী। ধন্যবাদ বেইলআউটে না। .......................................৮ জুলাই ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২
false
mk
জামায়াত-বিএনপির সহিংস তাণ্ডব ॥ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি, আতঙ্কিত জনপদ মুখ থুবড়ে পড়ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ চলমান বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সহিংস তা-বে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে; বিশেষ করে দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সহিংস তা-বের নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু করেছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। চলছে রাস্তাঘাটে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর। বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তথাকথিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কারণে নিরাপত্তাহীন সাধারণ মানুষ বাস করছে এক ধরনের আতঙ্কে। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় নিহত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যসহ সাধারণ জনগণ। হরতালের কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশের ১০ লাখ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরাও। উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা। বন্ধ ব্যবসা-বাণিজ্য। বেসরকারি সেক্টরে চলছে চরম হতাশা। গত ৩ এপ্রিল ঢাকা চেম্বার সূত্রে জানা যায়, হরতালের আর্থিক ক্ষতি ১ দিনে ১৬০০ কোটি টাকা হিসেবে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আর ১ দিনের হিসাবে জিডিপি’র পরিমাণ ২৬৮১ কোটি টাকা, জিডিপিতে ক্ষতি ৬.৫ শতাংশ। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেবলমাত্র পোষাক খাতে ১ দিনের হরতালে ক্ষতি হয় ৩৬০ কোটি টাকা। সামগ্রিক বিবেচনায় হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের পোষাকখাত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার (৫০ কোটি ডলার) রপ্তানি আদেশ হারিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এসব অর্ডারের বেশিরভাগই প্রতিবেশী ভারতসহ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় চলে গেছে। হরতালের কারণে বিনিয়োগকারীরা নির্ধারিত সময়ে দেশে আসলেও অজানা আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় ফিরে গেছে স্বদেশে। দিনের পর দিন হরতাল থাকায় পোষাক শিল্পখাতের ৩২ লাখ নারী শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। যাদের ঘাম ঝরানো টাকায় ৩২ লাখ পরিবারের দেড় কোটি মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হচ্ছে। হরতালের কারণে বন্দরে আটকে আছে ৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য। ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির কারণে সঠিক সময়ে মালগুলো খালাস করা যাচ্ছে না। হরতাল আহ্বানকারী বিএনপি-জামায়াত জোটের তা-ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশের বৃহত্তম সেবা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় রেলের প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। বিগত হরতালে রেল নিরাপদ থাকলেও এখন রেল আর রক্ষা পাচ্ছে না জামায়াত-বিএনপির তা-ব থেকে। জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পরবর্তী সহিংস ঘটনায় ২০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় সারাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। হরতালের কারণে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থাও চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়েছে। গ্রাম থেকে উৎপাদিত ফসল শহরের বাজারগুলোতে না পাঠাতে পারায় গ্রামের কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একেকটি হরতালের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে ঝরে যাচ্ছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জানিয়েছে এমন তথ্য। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা বহাল থাকলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফিরে যাবে। ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ছাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে নতুন করে বিদেশিরা বিনিয়োগের ঝুঁকিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে। তারা বিকল্প বাজার খুঁজে বের করছে। দেশি কর্পোরেট হাউজগুলোও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সরকার ও বিরোধীদলকে হরতালের বিকল্প কর্মসূচি খুঁজে বের করার পরামর্শ দিচ্ছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসারও তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যেখানে বিরোধীদল পাবলিক পরীক্ষার ভিতর হরতাল দিচ্ছে সেখানে ব্যবসায়ীদের কান্না তাদের কানে পৌঁছুবে কীভাবে। ব্যবসায়ীরা এখন আতঙ্কিত হয়ে বিদেশে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে। দেশের মানুষ সহিংস রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ধ্বংসাত্মক ও জ্বালাও-পোড়াও-এর রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টমহল। রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী প্রজšে§র কথা ভেবে হলেও ছাড় দিতে হবে। বসতে হবে আলোচনায়। দেশ ও জনগণের স্বার্থে ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরতে হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা।হাত ছাড়া হচ্ছে পোষাকখাতচলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার (৫০ কোটি ডলার) রপ্তানি আদেশ হারিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এসব অর্ডারের বেশিরভাগই প্রতিবেশীদেশ ভারতসহ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় চলে গেছে। এই অবস্থায় আর হরতাল না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত ১ এপ্রিল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, পোশাক শিল্পের বড় ক্রেতারা প্রতিবছর অর্ডার নেগোসিয়েশন ও অর্ডার দেয়ার জন্য তাদের প্রতিনিধি এদেশে পাঠালেও এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমকে সামনে রেখে অর্ডার দেয়ার জন্য এ মুহূর্তে তারা প্রতিনিধি পাঠাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। বরং ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণ দেখিয়ে অর্ডার নেয়ার জন্য বাংলাদেশি পোশাক সরবরাহকারীদেরকে তাদের হেডকোয়ার্টারে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পোশাক শিল্পে অর্ডার ক্রমেই কমছে। অন্যদিকে ঘন ঘন হরতালের কারণে সম্প্রতি এ শিল্পের অনেক উদ্যোক্তাই সমুদ্রপথে পণ্যের জাহাজীকরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ লিড টাইম (পণ্য প্রেরণের চুক্তিবদ্ধ সময়) মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে আকাশপথে পণ্য রপ্তানি করছেন। আবার কিছু উদ্যোক্তা ইতিমধ্যেই স্টকলট (অর্ডার বাতিলকৃত তৈরি পণ্য) পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। আবার অনেক উদ্যোক্তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাহাজীকরণ করতে না পারার কারণে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ডিসকাউন্ট, অর্ডার বাতিল বা বকেয়া (ডেফারড পেমেন্ট) পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এতে করে ঝুঁকিতে পড়ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিজিএমইএ’র মতে, গার্মেন্টস পণ্যের প্রধান গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় মন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেইসাথে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্বল অবকাঠামো খাত এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে স্থানীয় পর্যায়ে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি পণ্যের মূল্য হ্রাস, দেশে ডলারের বিনিময় মূল্য হ্রাসের ফলে উদ্যোক্তাদের সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় ঘন ঘন হরতাল কর্মসূচি পোশাক শিল্পকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যাংক-বীমা, শিপিং, সেবাখাত, পর্যটন, হোটেল, পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প। পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ৪ কোটি লোক এ শিল্পের ওপর নিভর্রশীল। গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিলসেন লিমিটেডের সমীক্ষার বরাত দিয়ে বলা হয়, গত ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ব্যাংক ও বীমা খাতে পোশাক শিল্পের অবদান ছিলো যথাক্রমে প্রায় ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ও প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। একই সময়ে শিপিং খাতে অবদান ছিলো প্রায় ১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে ৮৩০ কোটি টাকা। সরকার স্ট্যাম্প, লাইসেন্স নবায়ন ফি প্রভৃতি বাবদ আয় করেছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। একই সময়ে এই শিল্প প্রত্যক্ষ কর হিসাবে সরকারকে ৫৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। উল্লিখিত সময়ে সেবাখাতে পোশাক শিল্পের অবদান ছিলো প্রায় ১১০ কোটি টাকা, প্রকৌশল খাতে ৪৩১ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ খাতে বিল বাবদ প্রায় ৪৪১ কোটি টাকা, গ্যাস ও ওয়াসা খাতে বিল বাবদ প্রায় ১১১ কোটি টাকা, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে প্রায় ২৯৬ কোটি টাকা, আবাসন খাতে প্রায় ৭৮৫ কোটি টাকা এবং হোটেল ও পর্যটন খাতে প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। সুতরাং জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমগ্র অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে- এমন আশংকা করছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।‘ভেরি সরি! উই আর ব্যাক টু রাশিয়া’গত ২৭ মার্চ ঢাকায় আসার কথা ছিল রাশিয়ার কয়েকজন ক্রেতার। তারা বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শন করবেন। নতুন নতুন অর্ডার দেবেন। বিক্রেতা তো মহাখুশি। কিন্তু সারাদিনও সেই বিদেশি ক্রেতাদের সাক্ষাত পাননি বিক্রেতা। দেশে সেদিন ছিল দুদিনব্যাপী হরতালের প্রথম দিন। ভীষণ টেনশনে কাটে স্থানীয় উদ্যোক্তার। পরে একটি মেইল বার্তায় তিনি জানতে পারলেন ওই ক্রেতারা ঢাকা এসেছিলেন ঠিকই। কিন্তু হরতালের কারণে বিমানবন্দর থেকেই স্বদেশে ফিরে গেছেন। বিক্রেতাকে পাঠানো ই-মেইলে লেখা হয়েছে ‘ভেরি সরি! উই আর ব্যাক টু রাশিয়া।’ ওই ক্রেতাদল জানিয়েছেন, এ দেশে কারখানা পরিদর্শন বা ব্যবসায় আর অগ্রসর হওয়ার আপাতত সুযোগ নেই। শুধু তৈরি পোশাক খাতেই, অন্যান্য খাতের বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও একই মনোভাব। ব্যাপক সম্ভাবনাময় হলেও সবাই ‘সরি’ বলছেন। কেউ আসছেন না এখানে বিনিয়োগ করতে। রাজনৈতিক অস্থিরতার তীব্রতায় অসংখ্য বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের চিন্তা করেও তা বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গত কয়েক মাস ধরে দেশে হরতাল, অবরোধ আর সংঘাত নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিহত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অগ্নিকা- ও বোমাবাজির শিকার হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উদ্যোক্তারা, হয়ে পড়ছেন ঋণ খেলাপি। সব মিলিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতা এভাবে চলতে থাকলে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা বিনিয়োগ গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন; এমনটাই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও স্বস্তিতে নেই। অনেকেই তাদের বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আর যেসব নতুন বিনিয়োগকারীরা বিদেশ থেকে দেশে আসতে চাইছেন তারাও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের তীব্র সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসতে চাইছেন এ দেশের সস্তা শ্রম বিবেচনায়। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধাও তাদেরকে এ দেশে বিনিয়োগের চিন্তা করতে পথ দেখিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে না পারলে তা দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একদিকে দেশের কাঙ্খিত জিডিপির জন্য যে বিনিয়োগের প্রয়োজন তা প্রভাবিত হবে। অন্যদিকে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরির প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। রফতানির অর্ডার অনুযায়ী ঠিকভাবে পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। জাহাজে পণ্য পাঠাতে না পেরে অতিরিক্ত খরচ দিয়ে বিমানে পণ্য পাঠাতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের ইমেজ সঙ্কটের মুখে পড়ছে রপ্তানিকারকরা। যা আগামীতে রফতানির অর্ডারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর ব্যাংকপাড়া হিসেবে খ্যাত মতিঝিলে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন করে চিন্তার উদ্রেক করেছে। কারণ দেশের শিল্প-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু মতিঝিলের সভা সমাবেশে কোনো ধরনের সংঘাত হলে তা শিল্প ও অফিস আদালতের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের ভাবা প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।বন্দরে আটকে আছে ৬০০০ কোটি টাকার পণ্যগত জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গড়ে প্রতিদিন পণ্যভর্তি কনটেইনার খালাস হয়েছে এক হাজার ৯২৫ টি। ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৬১৫ কনটেইনার। আর মার্চে তা আরও কমে হয়েছে এক হাজার ৪৫০। দেশজুড়ে হরতাল-সহিংসতা অব্যাহত থাকায় এভাবে প্রতিদিন বন্দর থেকে কনটেইনার খালাসের হার কমছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে খালাস কমলেও জাহাজ থেকে প্রতিদিন গড়ে পণ্যভর্তি কনটেইনার নামানো হয়েছে দুই হাজার ৮৫টি (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ হিসেবে)। আমদানির তুলনায় খালাসের হার কমে যাওয়ায় বন্দরে এখন কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে। ফলে দুই মাসের ব্যবধানে বন্দর চত্বর থেকে খালাস না হওয়া কনটেইনারের সংখ্যা ১৩ হাজার থেকে এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজারে। এসব কনটেইনারে আনুমানিক ছয় হাজার কোটি টাকার পণ্য পড়ে আছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. মাসুদ সাদিক বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় কাস্টম হাউসে শুধু গত মাসেই ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে।সাঈদীর রায় ঘোষণা পরবর্তী সহিংসতামানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় ৭ জন নিহত, অর্ধশত আহত ও প্রায় ২০৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ তথ্য বিআরটিসি, ফায়ার সার্ভিস, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, পর্যটন মোটেল ও পাবলিক বাস সার্ভিস-সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া। ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে পল্লী বিদ্যুতের সদর দপ্তরে জামায়াত-শিবির কর্মীরা হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি এবং প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহক অদ্যাবধি অন্ধকারে রয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় ৩২ লাখ নারী শ্রমিকঘন ঘন হরতাল আহবান করায় পোশাকশিল্পে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় গ্রাম থেকে আসা ৩২ লাখ নারী শ্রমিকের। এ অবস্থায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে হরতাল ও অবরোধের বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা। সংগঠন দুটি মনে করেÑ যেভাবে ঘন ঘন হরতাল আহ্বান করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে বেসরকারি খাতে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী পোশাকশিল্পের ধারাবাহিকতা ও ভাবমূর্তি কোনোভাবেই ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তারা উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটায় এ মুহূর্তে পোশাকশিল্পের বড় ক্রেতারা বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠাতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রতিবছর অর্ডার নেগোসিয়েশন ও অর্ডার দেওয়ার জন্য বায়ারদের প্রতিনিধি এদেশে পাঠালেও এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমকে সামনে রেখে অর্ডার দেওয়ার জন্য এ মুহূর্তে বাংলাদেশে আসছে না। পাশাপাশি ‘নিরাপত্তাজনিত’ সমস্যায় অর্ডার নেওয়ার জন্য বাংলাদেশি পোশাক সরবরাহকারীদের তাদের হেডকোয়ার্টারে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পোশাকশিল্পের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ প্রতিবেশী দেশে চলে গেছে বলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা জানিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে পোশাকশিল্পের অর্ডার ক্রমেই কমছে। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম জানান, তৈরি পোশাকশিল্প এখন একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। একে তো পোশাকশিল্পের দুটি বৃহৎ বাজারÑ ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় মন্দা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর অর্থনীতি, সেইসঙ্গে স্থানীয়পর্যায়ে দুর্বল অবকাঠামো খাত এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট মোকাবিলা করে উদ্যোক্তাদের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করতে হচ্ছে শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য। অন্যদিকে তাদের বিভিন্ন ধরনের চাপ, স্থানীয়পর্যায়ে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিপণ্যের মূল্য হ্রাস, সেইসঙ্গে দেশে ডলারের বিনিময় মূল্য হ্রাস, একইসঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘন ঘন হরতাল কর্মসূচি পোশাকশিল্পকে পিছিয়ে দিচ্ছে, যা কাম্য নয়। তিনি মনে করেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প কোনো কারণে অস্তিত্ব হারালে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা ৩২ লাখ নারী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে। যার ভার গ্রহণের সামর্থ্য এ অর্থনীতির নেই। এতে করে আর্থ-সামাজিক ভারসাম্য বিঘিœত হবে। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যাংক-বীমা, শিপিং, সেবাখাত, পর্যটন, হোটেল, পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প। পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ৪ কোটি লোক এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ তৈরি পোশাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।বিনিয়োগ অন্যত্র চলে যেতে পারেচলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় বিদেশি বিনিয়োগ অন্যত্র চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ার পরবর্তী টাইগারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ অনেক বিনিয়োগকারী চীনের পরে বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের কথা ভাবছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা চলতে থাকলে এই বিনিয়োগ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্যত্র চলে যেতে পারে। গত ৩১ মার্চ সাভারের আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানা পরিদর্শনকালে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের এ আশঙ্কার কথা জানান। ড্যান মজীনা বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে করা যায় তা রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। এ কাজটি করতে হবে এখনই। কারণ হরতালের মত পরিস্থিতি বাংলাদেশ সহ্য করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধার প্রশ্নে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা হারালে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তির সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদানের বিষয়ে দরকষাকষিতে পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশ। জিএসপি প্রশ্নে বাংলাদেশ জোরালো উত্তর দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে বিনিয়োগে ঝুঁকিওদিকে গত ৩ এপ্রিল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুঁজিবাজারসহ অন্য সব খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকির কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার সৃষ্টি করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। মজিনা বলেন, যেকোনো দেশের বিনিয়োগের জন্য দরকার স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সব দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ক্ষতি ডেকে আনে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বর্তমান এ সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে মজিনা জানান, এ ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। যাতে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়।সহিংসতার টার্গেট রেলগত ২৭ মার্চ ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা জামালপুর কমিউটার ট্রেনের একটি বগিতে ৭/৮ জন দুর্বৃত্ত আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুন নেভানোর আগেই ট্রেনটির একটি বগি পুড়ে যায়। এই ঘটনায় ওই দিন রাতে তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ময়মনসিংহে বগিতে আগুন দেয়ার ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার নৃপেন্দ্র চন্দ্র সাহা ও আনসার সদস্য সেলিম রেজাকে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। এভাবে ট্রেন ও সিøপারে আগুন দেয়া হচ্ছে, সিøপার তুলে ফেলা হচ্ছে, খুলে ফেলা হচ্ছে ফিসপ্লেট- এসব ঘটনায় দু’এক হাবিলদার বা আনসার সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেই দায়িত্ব শেষ করছে রেল বিভাগ। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে রেলকে রক্ষা করার ব্যাপারে এখনও তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় রেলের প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। রেল কর্তৃপক্ষের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শুধু রেলেই ১১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক নাশকতার কারণে রেল মন্ত্রণালয় রেল পুলিশ ও নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে থানার পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের যুক্ত করার কথা বললেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এবং দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল গঠিত। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে ৯৩টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১৩টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনে আগুনের ঘটনার পর রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছিলেন, বিএনপির উস্কানিতে জামায়াত-শিবির চক্র সারাদেশে টেনে নাশকতা চালাচ্ছে। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এরপরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে। এখনো ঘটছে রেল কেন্দ্রিক ঘটনা। গত ৪ এপ্রিল রেলের নাশকতার মধ্যে রেলপথ সচিব মোহাম্মদ মাহবুব উর রহমানকে প্রত্যাহার করেছে সরকার।আল-জাজিরার প্রতিবেদনহরতালের কারণে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়েছে। গ্রাম থেকে উৎপাদিত ফসল শহরের বাজারগুলোতে না পাঠাতে পারায় গ্রামের কৃষকরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একেকটি হরতালের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে ঝরে যাচ্ছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জানিয়েছে এমন তথ্য। ‘বাংলাদেশ স্ট্রাইকস্ ডিভাস্টেট রুরাল ফার্মার্স’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গত ১ এপ্রিল। প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, উত্তরবঙ্গের কৃষকরা ১৯৯৮ সালের বন্যা-পরবর্তী সময়ে এমন দুরবস্থায় আর পড়েননি। কৃষকরা জানিয়েছেন, খাদ্যপণ্য পরিবাহিত যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হলেও কার্যত তা মানা হয় না। এ কারণে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য ক্ষেতেই পচিয়ে ফেলতে হচ্ছে। পাশাপাশি ফসল বিক্রি করতে না পারায় দিনমজুরদের খোরাকিও তাঁরা দিতে পারছেন না। এতে ভূমিহীন বর্গাচাষীরা নিদারুণ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও এই কৃষক-শ্রমিক-নিম্নবিত্তরাই দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন। অর্থনীতির এ গতিশীলতার কারণে কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সহিংসতা অর্থনীতির জয়রথকে আটকে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দিনকে দিন এ হরতালগুলো আরো সহিংস হয়ে উঠছে। ব্যবসায়ীরা দুই দলের প্রতিই হরতাল বন্ধের আবেদন জানালেও বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় কেউই এ আবেদনে সাড়া দেয় না। হরতালকে ‘প্লেগ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, গত দুই দশক ধরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বিরোধী দলে থাকাকালীন সময়ে প্রতিপক্ষকে বিপাকে ফেলতে এই অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের কার্যক্রম শুরু হলে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়মিত বিরতিতে হরতালের ডাক দিচ্ছে। এতে সরকার বিপাকে না পড়লেও খেটে খাওয়া লোকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।স্থানীয় সরকার সংস্থার ক্ষতিসাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জামায়াত-শিবিরের হামলায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে। নন্দীগ্রামে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ও বাঁশখালীতে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের বিষয় সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। দুর্বৃত্তরা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন মিলনায়তন, সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মেইন গেট, সামনের গ্রিল ভেঙে ফেলে ও লাইটিং সিস্টেমের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে তারা স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের নিজস্ব ভবন, বিষয়সম্পদ ও তাদের ব্যবস্থাপনাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পেয়েছেন। বগুড়ার ঘটনা সম্পর্কে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জানান, গত ৩ মার্চ জামায়াত আহূত হরতালের দিন সকাল সাড়ে ছয়টায় নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক জঙ্গি মিছিল উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে অতর্কিতে হামলা চালায়। বিভিন্ন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অফিস, বাসভবন, গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও গাড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন অফিস ও এসব অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, নথিপত্র, কম্পিউটার ভস্মীভূত করে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ওইসব তথ্য দেয়া হয়।সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিবাংলাদেশে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-। এতে ২০১৩ অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা ৬ ভাগের নিচে চলে যেতে পারে। আরও কর আরোপের মাধ্যমে আগামী দিনে রাজস্ব মজবুত করা হবে বাংলাদেশে। রাজস্ব আদায়ে এ অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে। গত ২ এপ্রিল এ সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইটে ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। যৌথ ওই বিবৃতি দেন আইএমএফ-এর বাংলাদেশ মিশনের বিদায়ী প্রধান ডেভিড কোয়েন ও নতুন প্রধান রড্রিগো কুবেরো। এতে বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসাও করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আইএমএফ-এর একটি মিশন ২০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা সফর করে। তিন বছর মেয়াদি সম্প্রসারিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ) বিষয়ক একটি চুক্তি দ্বিতীয়বার পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় আসে ওই মিশন। তারা এ সময় অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, অর্থ সচিব, অন্য সিনিয়র কর্মকর্তা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২০১২ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ওই চুক্তির আওতায় প্রায় ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার অনুমোদন করে। বাংলাদেশ সফর শেষে যৌথ বিবৃতি দেন আইএমএফের বাংলাদেশ মিশনের বিদায়ী প্রধান ডেভিড কোয়েন ও নতুন প্রধান রড্রিগো কুবেরো। এতে তারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে প্রশংসা করেন। তারা বলেন, নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ও মুদ্রানীতির সহায়তায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। অভিবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স রয়েছে শক্ত অবস্থানে। রিজার্ভ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কমে আসছে মুদ্রাস্ফীতির চাপ। এতে বলা হয়, প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পারফরমেন্সে নিরাপত্তা ও ব্যাষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সুদৃঢ় করতে কর্তৃপক্ষ বিচক্ষণ নীতি গ্রহণের বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে।দেশি বিনিয়োগও বিদেশে যাওয়ার আশঙ্কালাগাম টেনে ধরার এখনই সময়রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগও বিদেশে চলে যাওয়ার পথে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশি বিনিয়োগকারীরাও দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আমাদের বিনিয়োগকারীদের অনেকে মালয়েশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যা-, আফ্রিকা, ইটালিসহ উন্নত দেশেও নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ করছে বলে জানা গেছে। দিন দিন এ ধরনের প্রবণতা বাড়ছে। ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বৈধ-অবৈধ পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের আভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে এর দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকারীদের দেশের বাইরে বিনিয়োগ করার প্রবণতা রোধে এগিয়ে আসতে হবে দেশের রাজনীতিকদেরই। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো এখনই সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি আর অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।
false
ij
গল্প_ অন্ধকার পুতুল সকালবেলায় বিছানায় শুয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। শুক্রবার। দিনটা কেমন মেঘলা, কেমন মন খারাপ করা। হঠাৎ ফোনটা বাজল। খবরের কাগজ ফেলে বালিশের পাশ থেকে এলজিটা তুলে কানে ঠেকিয়ে অন্যমনস্ক স্বরে বললাম, হ্যালো। হ্যালো। জামিল? রেজওয়ানের বাবার কন্ঠস্বর। আমি অবাক হলাম। বললাম,জ্বী। বলুন। একবার সময় করে আমার বাসায় এসো তো বাবা । তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। আমি সতর্ক ভাবে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু হয়েছে চাচা? আগে এসো তো। তারপরে বলব। বলে বৃদ্ধ আমাকে সাসপেন্সে রেখে ফোন কেটে দিলেন। বিকেলে যখন রেজওয়ানদের শ্যামলীর রিং রোডের বাড়িতে পৌঁছলাম তখনও দিনের আলো ফুরিয়ে যায়নি। দুপুরের পর মেঘ কেটে ঝরঝরে রোদ উঠেছিল। ছ’ তলা বাড়ি । সিরাজ চাচা অর্থাৎ রেজওয়ানের বাবা তিনতলায় থাকেন। বেল বাজানোর পর এগারো-বারো বছরের শ্যামলা মতন দেখতে একটি মেয়ে দরজা খুলে দিল। আমাকে বসতে বলে মেয়েটি ভিতরে চলে গেল। বসার ঘরে কেউ নেই। আমি কেকের বাক্সটা টেবিলের ওপর রেখে বসলাম। মধ্যবিত্তের ছিমছাম বসার ঘর। বেতের সোফা, লাল কভারের কুশন। পুরনো মডেলের ২১ ইঞ্চি প্যানাসনিক টিভি, তার ওপর দেওয়ালের মাওলানা ভাসানির ছবি। সিরাজ চাচা মাওলানা ভাসানির অন্ধ ভক্ত। মাথার ভিতরে কত কথা যে ঘুরছে আমার। রেজওয়ানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, তখন থেকেই রেজওয়ানদের বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল । রেজওয়ানের মাকে আমি কখনও দেখিনি। উনি মারা গিয়েছিলেন আরও আগে, রেজওয়ান যখন কলেজে পড়ত, তখন। সিরাজ চাচা জনতা ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। ভীষণ দাবা পাগল মানুষ; খেলাটা আমিও ভালোবাসি । দুজনে মুখোমুখি বসে সারাদিন দাবা খেলে কাটিয়ে দিয়েছি। সিরাজ চাচা দারুন মেধাবী দাবারু, কখনও হারাতে পেরেছি বলে মনে পড়ে না। দরজার কাছে শব্দ হল। গায়ে পরদা জড়িয়ে ছোট্ট একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। রেজওয়ানের মেয়ে পুতুল। এত বড় হয়ে গেছে। প্রায় তিন বছর পর দেখলাম। বছর পাঁচেকের শ্যামলা মিষ্টি চেহারা। কেমন পুতুল পুতুল দেখতে। এদিকে এসো। বললাম। না। আসব না। বলে দরজার কাছে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল পুতুল। বললাম, তোমার নাম আমি জানি। বল। একটু এগিয়ে এল। পুতুল। পুতুল মাথা নাড়ল। মুখচোখে হাসি। আরও একটু এগিয়ে এল। জিজ্ঞেস করলাম, আঙ্কেল, তুমি এখন কোন্ ক্লাসে পড়? ওয়ানে । তুমি? আমিও ওয়ানে পড়ি। বললাম। পুতুল ফিক করে হেসে ফেলল। বলল, মিথ্যে কথা। বলে ঘুরে ওদিকে চলে যায়। ওর মা কি নেই ঘরে নেই। রাশিদা একটা মানবাধিকার সংস্থায় চাকরি করে । আজ তো শুক্রবার। নাকি আছে। বেচারি রাশিদা। এই বয়েসেই বিধবা হতে হল। স্বামীর সঙ্গে ঘর করার সুখ কপালে সইল না। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। রাশিদাকে নিয়ে আমার ভাবনা বেশিদূর গড়াল না। খক খক করে কাশতে কাশতে সিরাজ চাচা এলেন। লুঙ্গি আর গেঞ্চি পরে ছিলেন। উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম। বস বাবা, বস। আমি বসলাম। কতদিন পরে দেখলাম সিরাজ চাচাকে। অনেক বুড়িয়ে গেছেন। মাথার সামনের দিকে টাক, পিছনের দিকে ছোট ছোট করে ছাঁটা পাকা চুল, ফরসা মুখে অজস্র কাটাকুটি। কালো ফ্রেমের চশমার লেন্স পুরু। উলটো দিকের সোফায় বসতে বসতে সিরাজ চাচা চিৎকার করে বললেন, রেহানা। রেহানা । সেই শ্যামলা মতন মেয়েটি এল। টেবিলের ওপর কেকের বাক্সটা দেখিয়ে সিরাজ চাচা বললেন, এটা ভিতরে নিয়ে যা। আর চা দে। মেয়েটি কেকের বাক্সটা নিয়ে ভিতরে চলে গেল। সিরাজ চাচা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বল বাবা আছ কেমন? আছি একরকম। আপনাদের দোওয়া। এদিকে একেবারে আসোই না। সিরাজ চাচা অনুযোগের সুরে বললেন। আমি আর কী বলব । আমি চুপ করে থাকি। সিরাজ চাচা আপন মনে বললেন, এখন সবাই ব্যস্ত। আগে এমন ছিল না। কথা সত্য। আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম। হঠাৎ চেয়ে দেখি পুতুল পরদার আড়াল থেকে উঁকি দিল। মিটমিট করে হাসছে। ভারি দুষ্ট মেয়ে তো। তারপর কথায় কথায় সিরাজ চাচা ইঙ্গিতে যা বললেন তা হল এই: তুমি তো সবই জান জামিল। দুদিনের জ্বরে রেজওয়ান আমাদের ছেড়ে চলে গেল। রাশু বিধবা হল। মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে ভারি দুশ্চিন্তায় মধ্যে পড়েছে। আমি ওকে বিয়ে করতে বলছি। এতদিন রাজী হয়নি, এখন মনে হয় বুঝতে পারছে একা একটি মেয়েকে মানুষ করা অত সহজ নয় । আমি আর কদ্দিন ...যাহোক ...তুমি আমার ছেলের মতন ... আর তুমিও তো এখনও বিয়ে করোনি .... এতক্ষণে সিরাজ চাচার ফোন করার কারণটি বুঝলাম। বিয়ে আমি করিনি ঠিকই। একটা কলেজে পড়াই। একা একা দিন কেটে যাচ্ছে। তবে আমার বিয়ে না-করার পিছনে ছোট একটা বিরহী ইতিহাস আছে। ঢাকা শহরের একটা মেয়ের ওপর আমার অনেক অভিমান অনেক ক্ষোভ জমে ছিল। তবে সেসব ক্ষোভ আর অভিমান ইদানিং ফিকে হয়ে আসছে। রাশিদার জন্য না হলেও অন্তত পুতুলের জন্য হলেও আমার সিরাজ চাচার প্রস্তাবটি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত। ট্রে হাতে রেহানা ঘরে ঢুকল। ট্রের ওপর চায়ের কাপ ছাড়াও একটা প্লেটে নোনতা বিসকিট্ । আমি ঝুঁকে চায়ের কাপ তুলে নিলাম। বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। অন্ধকার জমে উঠছিল ঘরে। রেহানা ঘর ছেড়ে যাওয়ার আগে টিউব লাইটটা জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। আমি চায়ে চুমুক দিলাম। সন্ধ্যার পর রাশিদা ফিরল। ডোনারদের সঙ্গে কী নাকি মিটিং ছিল। রাশিদাকে অনেক দিন পরে দেখলাম। শুকিয়ে গেছে। আমাকে না খাইয়ে ছাড়ল না। বারবার আড়চোখে দেখছিল। এর মধ্যেই অবশ্য আমার পুতুলের সঙ্গে খাতির হয়ে গেল। আমি কী কার্টুন দেখি জিজ্ঞেস করল। টম অ্যান্ড জেরির কথাই বললাম। ও খুশি হয়ে বলল: ছেরেক (শ্রেক)। আর ওর পড়ার বইগুলোও এনে আমাকে দেখাল। কি কি ছবি এঁকেছে তাও দেখাল। ও বাড়ি থেকে যখন বেরুলাম তখনও ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। সাড়ে দশটার মতন বাজে। রাস্তায় অনেক ক্ষণ ধরে হাঁটলাম। ভিজলাম। রাস্তার অন্ধকারে রাস্তার আলোয় পুতুলের মুখ দেখলাম। টের পেলাম জীবনে পরিবর্তন আসছে। তাছাড়া রাশিদাকে আমার বরাবরই ভালোই লাগত; রাজশাহীর মেয়ে, শ্যামলা, ছিপছিপে শরীরের নিটোল গড়ন। রেজওয়ানের সঙ্গে ওর বিয়ের পর প্রথম যখন রাশিদাকে দেখেছি তখনই ওকে আমার ভালো লেগেছিল। নারীসঙ্গশূন্য মানুষ আমি, কল্পনায় যেসব নারীকে নগ্ন করতাম, রাশিদার নাম সেই তালিকায় ছিল। সেদিনের পর থেকে সপ্তাহে অন্তত দু-তিন বার পুতুলের টানে শ্যামলী যাই। রাশিদার সঙ্গেও নিরালায় কথা হল। রাশিদা বলল, সামনে বি.এড পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে কিছু ভাববে না। আমিও বললাম, ভালো তো, এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে। আমি থাকি মোহাম্মদপুরে। ইকবাল রোডের একটি চারতলা বাড়ির তিনতলার নিরিবিলি ফ্ল্যাটে। একাই থাকি, যে কারণে পুরো ফ্ল্যাটই অগোছালো হয়ে থাকে। ফ্ল্যাট গোছগাছ করতে শুরু করলাম। যে সব বন্ধুরা এসে আড্ডা মারত, তাদের এড়িয়ে গেলাম। বারান্দায় টবে ফুলের গাছ এনে বসালাম। বাড়িঅলা রং করে দিতে রাজী হল না। নিজেই খরচ করে রং মিস্ত্রি ডেকে রং করালাম। অফ হোয়াইট । বসার ঘরে বসালাম বড় সাইজের একটা অ্যাকুয়ারিয়াম। তোষকের নিচে কতগুলি প্লেবয় ম্যাগাজিন ছিল, সেসব এক জুনিয়ার বন্ধুকে দিয়ে দিলাম। শোওয়ার ঘরে তোষক ফেলে ফ্লোরিং করতাম; আঠারো হাজার টাকায় অটবির একটা ডবল খাট কিনলাম । বসার ঘরের পুরনো বেতের সোফা বেচে দিয়ে গ্রিন রোড থেকে কিনলাম রট আয়রনের ঝকঝকে সোফাসেট । পুতুলের জন্য খেলনা কিনলাম। বেশির ভাগই চাইনিজ পুতুল। নীলক্ষেত থেকে খরগোশ কিনব কিনা ভাবলাম। রাশিদার সামনে বি.এড পরীক্ষা তো কি- পুতুল আর রাশিদাকে নিয়ে বেড়াতে যাই। এই প্রথম জানলাম ঢাকায় শিশুদের জন্য কত সুন্দর সুন্দর বেড়ানোর জায়গা হয়েছে, এত এত শপিং মল হয়েছে,সেইসব শপিংমলে এত এত শাড়ির দোকান, বাচ্চাদের খেলনার দোকান আছে, এত এত চাইনিজ রেস্তোঁরা হয়েছে। চাইনিজ রেস্তোঁরার আলো আঁধারিতে রাশিদার সুশ্রী মুখটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। কন্যাপক্ষকে পাত্রপক্ষের ঘরবাড়ি দেখানো দরকার। একদিন শুক্রবার সিরাজ চাচাদের দাওয়াত করলাম। সকাল সকাল ওরা এল। নতুন সাজে সেজে থাকা ফ্ল্যাট দেখে ওদের খুশি মনে হল। রাশিদা কেবল অ্যাকুয়ারিয়ামটা টিভির পাশে না-রেখে বারান্দার দিকে রাখতে বলল। সকালে বাজার করে রেখেছিলাম। রেহানাকে নিয়ে রাশিদা রান্নাঘরে ঢুকল। সর্ষে-ইলিশ রাঁধবে। পুতুলগুলি পুতুলকে দিলাম। ও যে কী খুশি হল। পুতুল নিয়ে খেলতে বসল। ওকে অবশ্য সবগুলি পুতুল দিইনি। পরে দেব বলে কয়েকটা পুতুল লুকিয়ে রেখেছিলাম। ভাগ্যিস। আমি আর সিরাজ চাচা দাবা খেলতে বসলাম। দাবা খেলার এক ফাঁকে সিরাজ চাচা বললেন, জামিল, তুমি বরং শ্যামলীর দিকে বাসা নাও। কাল রাশু বলছিল। রিং রোড থেকে ইকবাল রোড অনেক দূর হয়ে যায়। নেব। আমি খুশি হয়ে বললাম। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি জার্মানি থেকে আমার এক বন্ধু এল । রায়হান। আমি, রেজওয়ান আর রায়হান একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তাম । ছাত্র হিসেবে রায়হান ছিল মেধাবী, এম এ পাস করে স্কলারশীপ নিয়ে জার্মানির চলে গেল থিসিস করতে । থিসিস শেষ করে হ্যানোভারে লাইবনিজ ইউনিভারসিটিতে জয়েন করে রায়হান। তারপর আর ফিরে আসেনি। নীপাকে ভালোবাসত রায়হান। নীপা আমাদেরই ক্লাসমেট ছিল । গোপনে ওরা বিয়েও করেছিল । কথাটা আমি আর রেজওয়ান ছাড়া আর কেউই জানত না। রায়হান জার্মানি যাওয়ার পর নীপা কয়েক বছর অপেক্ষ করে। তারপর এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে নীপা। ওদিকে জার্মানি তে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে রায়হান। ওর এক্স ওয়াইফের নাম আডা; লাইবনিজ ইউনিভারসিটির কলিগ ছিল। রায়হান এশিয় বলেই নাকি আডা আগ্রহ দেখিয়েছিল। সব পুরুষই নাকি এক! ওদের সর্ম্পকটা এক বছরও টেকেনি। রায়হানদের বাড়িটা কলাবাগানে। গেলাম। আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরল। ই মেইলে অবশ্য অনিয়মিত হলেও যোগাযোগ ছিল। ফোনও করত মাঝে মাঝে। তবে চোখের দেখার আবেগই অন্যরকম। রেজওয়ানের মৃত্যুর কথা রায়হান জানত। জিজ্ঞেস করল, সিরাজ চাচার খবর কী রে। আছে একরকম। শ্যামলীর বাড়িতেই তো আছে? হ্যাঁ। চল একদিন যাই। চল। রায়হান বলল, ও আর ইউরোপীয়ান মেয়ে বিয়ে করবে না। বিয়ে করতেই দেশে এসেছে । পাত্রী দেখছে কি না জিজ্ঞেস করলাম। হ্যাঁ, না-কিছুই বলল না। রেজওয়ানের বিয়ের আগেই রায়হান জার্মানি চলে গিয়েছিল: রাশিদা বা পুতুলকে দেখেনি। রাশিদাকে দেখে রায়হানের মুখচোখে যে মুগ্ধ বিস্ময় ফুটে উঠল তা আমার চোখ এড়াল না। আটপৌড়ে একটা শাড়ি পরেছিল রাশিদা, লক্ষ করলাম, ভিতরে গিয়ে জলদি শাড়ি বদলে এল। সিরাজ চাচা ও রায়হানকে দেখে ভারি খুশি । বারবার বললেন, জান রাশু, রায়হান কত বড় স্কলার। ওর লেখা বই অক্সফোর্ডে পড়ায়। দাবায় একমাত্র ওর কাছেই হেরেছি। রাশিদার মুখে গভীর শ্রদ্ধার বিনম্র ভাব ফুটে উঠতে দেখলাম। আমার কেমন যেন অস্বস্তি হতে থাকে। ড্রইংরুমে ওরা তিনজন গল্পে ডুবে গেল; যেন আমি ঘরে নেই। অবশ্য পুতুল আমার কোলে বসে ফিসফিস ছিনডেরিলার গল্প শুনতে চাইল। আমি ওকে নিয়ে বারান্দায় এলাম। সবে সন্ধ্যা নামছে। ঝিরঝির বৃষ্টি। গলির ওপাশের বাড়ির আলো। নিচের গলিতে গাড়ির হর্ণ। হঠাৎ আমার মনে হল: ওদের আমার দরকার নেই ... কেবল পুতুল আমার কাছে থাকলেই আমার শান্তি। শ্যামলী থেকে ফেরার পথে রায়হান জিজ্ঞেস করল, নীপা এখন কোথায় থাকে রে? মগবাজার। ওর সঙ্গে আমার কথা আছে। দেখা করিয়ে দিতে পারবি? দেখি। দ্যাখ ট্রাই করে। আমার কাছে নীপার ফোন নম্বরটা ছিল। ফোন করে সব জানালাম। ১৯ তারিখ বিকেলে গ্রিন রোডের একটা কফিশপে ওয়েট করবে বলল। নীপাকে দেখে রীতিমতো চমকে উঠলাম। ফরসা সুন্দর মেয়েটার এ কি হাল হয়েছে। চোখের কোণে কালি। হয়তো ছেলেটাকে সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নীপার একটাই ছেলে, রাসেল; বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। স্বামী মোটর পার্টসের ব্যবসা করে। রায়হান কে দেখে ক্ষোভ কিংবা আবেগ দেখাল না নীপা। চাপাকন্ঠে জিজ্ঞেস করল, বিয়ের সব কাগজপত্র তোমার কাছে। কি করেছ? পুড়িয়ে ফেলেছি। কফিতে চুমুক দিয়ে নির্বিকার কন্ঠে রায়হান বলল। আমার সঙ্গে জার্মানি যাবে নীপা? না! ছিঃ। রায়হান এত স্বার্থপর । নীপাকে ফেলে অবলীলায় বিদেশ চলে গেল আর এখন আবার স্বামীসংসার ফেলে নীপাকে ওর সঙ্গে যেতে বলছে। রায়হান বড় স্কলার হতে পারে, ওর বই অক্সফোর্ডে পাঠ্য হতে পারে- তবে এসবই ওর বাইরের পরিচয়। ওর ভিতরটা ভারি নিষ্ঠুর, নিষ্ঠুর আর বিবেকহীন। রায়হান চুপ করেছিল। নীপাই বলল, রাসেলের বাবার ক্যান্সার। অবশ্য আরলি ষ্টেজ। আর, রাসেলের কথা তো শুনলেই জামিলের মুখে। এদের ফেলে কি করে যাই বল? আমি চমকে উঠলাম। এ কী জীবন যাপন করছে নীপা। প্রথম বিয়েটা টিকল না, ছেলে অটিস্টিক, স্বামীর ক্যান্সার। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ওকে মেয়েরা ভীষণ ইর্ষা করত। কফিশপ থেকে আমরা যখন বেরিয়ে এলাম, তখন ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছিল। রাস্তায় অন্ধকার। রাতে শ্যামলীতে খাওয়ার কথা। একটা সি এন জি ডেকে উঠে পড়লাম। দারুন সেজে ছিল রাশিদা । আমি অবাক। কই আমার জন্য তো ও কখনও এমন করে সাজেনি । ভিতরে ভিতরে আমি কেমন গুটিয়ে গেলাম। আমার কেবলি মনে হতে লাগল: অনিবার্য ভবিতব্য রুখবার ক্ষমতা আমার নেই। আমার প্রতিপক্ষরা অত্যন্ত শক্তিশালী। ক’দিন পর সিরাজ চাচাই আমাকে ফোন করে যা বলার বললেন। রাশু সম্ভবত অন্যরকম ভাবছে জামিল। তুমি কিছু মনে করো না বাবা। কদিন পর রায়হান জার্মান ফিরে যাচ্ছে। এখানে ফিউচার নেই। মেয়েটারও তো ভবিষ্যৎ আছে ... ইত্যাদি ... ইত্যাদি। আমি চুপ করে থাকি। আমি ফোন রেখে দিই। জীবনের শেষে এসেও বৃদ্ধ কম্প্রোমাইজ করলেন। কী ভীষণ স্বার্থপর আর প্রতারক এরা! ভাবলাম, থাক, আমি তো একাই ছিলাম। একাই থাকব। তবে বুকের ভিতরে চিনচিনে একটা ব্যথা টের পেলাম। রাশিদার জন্য যতটা না-পুতুলের জন্যই বেশি খারাপ লাগছিল। আসন্ন বিচ্ছেদ কী ভাবে সইব আমি? শহরে শীত আসছে। রায়হানকে ফোন করলাম। ও ফোন রিসিভ করল না। সব বিবেকহীন,স্বার্থপর । ক’দিন পর। পুতুল ফোন করল। (রাশিদাই ফোন করে মেয়েকে ধরিয়ে দিয়েছে।) বলল, কাল আমরা চলে যাচ্ছি। কোথায় চলে যাচ্ছ? বিদেশ। তুমি ভালো থেকো। আমি বললাম, থাকব। তুমিও ভালো থেকো। পুতুল বলল, আচ্ছা, থাকব। জিজ্ঞেস করলাম, কাল কখন যাচ্ছ? বলল, জানি না। আমি প্লেনে করে যাব। পরের দিন ভোর। বিমানবন্দরে বৃষ্টি। আমি পুতুলকে খুঁজছি। এত ভিড়ের মধ্যে কোথায় খুঁজব। আর জানি না ওদের ফ্লাইট কখন। আমি ফিরে আসি। তারপর বর্ষার বাকি দিনগুলো দেখতে দেখতে কী ভাবে ফুরিয়ে গেল। এ শহরের আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে গেল শীতের পদধ্বনি- যা এবার একেবারেই অন্যরকম মনে হল। সারাক্ষণ আমার ভারি নিঃসঙ্গ বোধ হয়। সারাক্ষণ পুতুলের মুখটা ভাসে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে, যা কখনও করিনি, সিগারেট ধরলাম। নিঃসঙ্গতা কাটাতে, যা কখনও করিনি, ছাত্রদের ফ্ল্যাটে ডেকে এনে ব্যাচ করে পড়াতে লাগলাম। তারপরেও বুকের ভিতরে শূন্যতার কামড়। নিঃসঙ্গতা কাটাতে, যা কখনও করিনি, আমার এক কলিগকে নিয়ে নোটবই লেখায় হাত দিলাম । বন্ধুদের আবার ডেকে এনে ঘরে আড্ডা বসালাম। কেন যেন আড্ডা ঠিক আগের মতন জমল না। কোনও কোনও দিন বিকেলে নীলক্ষেতের দিকে যাই। পুরনো বই দেখি, কিনি। কিছুই ভালো লাগে না। মনের ভিতরে কেবলি অথই শূন্যতা খেলা করে। অনেক রাতে শূন্য ফ্ল্যাটে ফিরে আসি। রাত ও ফ্ল্যাট কীরকম শুনশান করে। বাইরে শীত আর কুয়াশা। ঘরের ভিতরে শীত, ঘরের ভিতরে অন্ধকার। আমি শীত শীত অন্ধকারে বসে থাকি। একটার পর একটা সিগারেট টানি। অন্ধকারেই আন্দাজে আলমারি খুলে সেই পুতুলগুলি বের করি। অন্ধকারে পুতুলগুলি নিয়ে বসে থাকি। ভাগ্যিস পুতুলকে সব পুতুল দিইনি। আমি পুতুলের সঙ্গে কথা বলি। অন্ধকারেই দরজার কাছে শব্দ হয়। চোখ তুলে দেখি গায়ে পরদা জড়িয়ে ছোট্ট একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। এদিকে এসো। আসব না। তোমার নাম আমি জানি। বল। পুতুল। পুতুল মাথা নাড়ল। একটু এগিয়ে এল মনে হল। জিজ্ঞেস করলাম, আঙ্কেল, তুমি এখন কোন্ ক্লাসে পড়? ওয়ানে । তুমি? আমিও ওয়ানে পড়ি। বললাম। পুতুল ফিক করে হেসে ফেলল। বলল, মিথ্যে কথা। বলে ওপাশে চলে যায়। আমি অপেক্ষা করি - ও আবার কখন আসে ...সেই অপেক্ষায় থাকি। আমার দিন কেটে যায় ... সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৪:২৭
false
hm
লগ্ন তো সম্রাটের হাতে পাঁচটি বিচারকাণ্ড পরবর্তী ঘটনা নিয়ে আমার এই পোস্ট। বিচারকাণ্ড নিয়ে আমার কোনো মতামত নেই, সেটি আইনজ্ঞদের বিবেচ্য বিষয়। ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক অথবা নিকট অতীতের। তবে চেষ্টা করলে তাদের এক সুতোয় গাঁথা সম্ভব। পাঁচটি বিচারকাণ্ডের মধ্যে পঞ্চমটি স্বতন্ত্র, বাকি চারটিকে একটি বিচিত্র সমতলে সাজানো সম্ভব। আমার পর্যবেক্ষণ কয়েকটি দেশে কয়েকটি দেশের নাগরিকের কয়েকটি বিচারকাণ্ড নিয়ে বিচার পরিচালনাকারী দেশের সমাজ ও সরকার এবং বিচারাধীন ব্যক্তি যে রাষ্ট্রের নাগরিক, সে রাষ্ট্রের সমাজ ও সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। আমি চারটি ঘটনাকে চার কোয়াড্র্যান্টে রেখেছি। নিচের ছবিটা দেখলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। প্রথম কোয়াড্র্যান্টের ব্যক্তিটি বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের নোবেলজয়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক তাকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে তাঁর পুনর্মনোনয়নের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে তিনি এই পদে আর আসীন থাকতে পারবেন না। ইঊনূস এ আদেশের বিরোধিতা করে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের আদেশকে বহাল রাখেন। ইউনূস আদালতের এই আদেশের বিরোধিতা করে বর্তমানে উচ্চ আদালতের শরণ নিয়েছেন। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে শুনানি এখনও শুরু হয়নি। [১] সূত্র [১] এ ইউনূসের অপসারণকে ঘিরে সরকার, ইউনূস, আদলত, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, সুশীল সমাজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক মহল ও মিডিয়ার নিজস্ব বক্তব্যের একটি গ্রাফিক টাইমলাইন রয়েছে। আমরা এই টাইমলাইনে চোখ রাখলে দেখতে পাবো, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউনূসের কণ্ঠে কথা বলছে। এ ঘটনাটির নিরসন আদালতে হওয়াই শ্রেয় ছিল, কিন্তু সেটি ক্রমশ ঢুকে পড়েছে রাজনীতি আর কূটনীতির আঙিনায়। বাংলাদেশের আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার রাষ্ট্রদূত ও সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গকে পাঠিয়ে বলছে, ব্যাপারটি "সমঝোতা"র মাধ্যমে একটি "সম্মানজনক" পরিণতি পেলে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। এর পর যে ঘটনাটি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, সেটি হচ্ছে রেমণ্ড ডেভিসের মুক্তি। সিআইএ-র কনট্র্যাক্টর রেমণ্ড ডেভিস এ বছরের জানুয়ারি মাসে লাহোরে দুজন সশস্ত্র পাকিস্তানী গোয়েন্দা কর্মীকে [যদিও পাকিস্তানী পুলিশ বলছে তারা দস্যু] পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে আত্মসমর্পণ করে। ডেভিস একটি রহস্যময় মার্কিন নাম্বার প্লেটযুক্ত টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারকে এসকর্ট করছিল, এবং দুই পাকিস্তানী গোয়েন্দাকে হত্যার পর সেই গাড়িটি একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডেভিসকে একজন কূটনীতিক দাবি করে তার জন্য ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক দায়মুক্তি দাবি করে। পাকিস্তান এ দাবি অস্বীকার করে ডেভিসের বিচার চালিয়ে যায়। বিচার চলাকালীন একজন নিহতের বিধবা আত্মহত্যা করেন। [২] গত ১৬ মার্চ দুই নিহতের নিকটাত্মীয়রা আদালতে হাজির হয়ে জানায়, তাদের ২০ কোটি পাকিস্তানি রূপি ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। শরিয়া আইন অনুযায়ী রক্তের ঋণ শোধ করে দিলে হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে পারে নিহতের আত্মীয়স্বজন। পাকিস্তানি রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের ক্ষতিপূরণ না নেয়ার জন্যে নিহতের আত্মীয়দের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিলো। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে এক নিহতের আইনজীবী আসাদ মনজুর বাট জানায়, ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে তিনি জানেন না, কারণ তাকে তার মক্কেলদের কাছ থেকে চার ঘন্টার জন্য দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিলো। এ সময় এ ধরনের কোনো চুক্তি হয়ে থাকলে তা তার অজান্তে ঘটেছে। ডেভিসের মুক্তির ঘটনার পর থেকে নিহতের আত্মীয়স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছে। রেমণ্ড ডেভিসকে বিনা অভিযোগে হস্তান্তর করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর প্রবল কূটনৈতিক চাপ দিচ্ছিলো, এবং এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিলো। [৩] পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ডেভিসকে উত্তরাঞ্চলে ড্রোন হামলার সাথে সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করে। তৃতীয় যে ঘটনাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, তা হচ্ছে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেনেথ লুইসের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির প্রতারণার মামলা [৪]। শেয়ার হোল্ডারদের কাছে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা অর্থনৈতিক মন্দার সময় মেরিল লিঞ্চকে অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণের আগে মেরিল লিঞ্চ নিজেদের কর্তা ও কর্মীদের ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার বোনাস বিতরণ করে। অন্যদিকে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা সরকারের কাছ থেকে ৪৫০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রণোদনা গ্রহণ করে মেরিল লিঞ্চসহ অন্যান্য কোম্পানিকে চাঙা করার জন্য [৫]। এ কথা জানাজানি হবার পর স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে অপরাধ স্বীকার না করার শর্তে ৩৩ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেয়ার সমঝোতায় আসে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা, যা বিচারক জেড রাকফ অবৈধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার তথ্য গোপনের কুফল ভোগ করছে এর শেয়ারহোল্ডাররা। জরিমানার দায়ও তাদের ওপরই গিয়ে পড়বে, যা ভুক্তভোগীকে সাজা দেয়ার নামান্তর। [৬] কেনেথ লুইস কংগ্রেস কমিটির সামনে শপথ নিয়ে বলেন, রিপাবলিকান সাংসদেরা তাকে মেরিল লিঞ্চ অধিগ্রহণের জন্য চাপ দেন। চতুর্থ ঘটনাটি সাম্প্রতিক। ১৮ মার্চ, ২০১১ তারিখে যুক্তরাজ্যের উলউইচ ক্রাউন কোর্ট বাংলাদেশি-বৃটিশ রাজীব করিমকে সন্ত্রাসের চেষ্টার অভিযোগে ৩০ বছরের কারাদণ্ড ও দণ্ডভোগ শেষে বহিষ্কারের আদেশ দেয়। রাজীব করিম অভিযোগ স্বীকার করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় এমন উগ্রপন্থী দলের সাথে সে সংশ্লিষ্ট ছিলো। চারটি ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই, প্রতিটি বিচারই সংঘটিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের আওতায়। একটি বিচার নিয়োগবিধি সংক্রান্ত, একটি হত্যা সংক্রান্ত, একটি আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত, অপরটি সন্ত্রাসের চেষ্টা সংক্রান্ত। চারটি বিচারের মধ্যে দু'টির ক্ষেত্রে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখি, কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে একটি দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি দেখাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্কের সিইওকে আদালত ও সংসদীয় কমিটির মুখোমুখি হতে হয়, আর পৃথিবীর অন্য প্রান্তে দুর্বল বাংলাদেশে একজন ইউনূসের নিয়োগবিধি কিংবা দুর্বল পাকিস্তানে দুজন মানুষকে হত্যা নিয়ে আদালতে সম্পাদ্য বিচারকে উপেক্ষা করে "সমঝোতা"র প্রস্তাব দেয় সেই একই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজ ইউনূসের নিয়োগবিধি নিয়ে মামলাকে উপেক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্র, কাল কি তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কেও তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে "সমঝোতা"য় যাওয়ার জন্য চাপ দেবে? লক্ষণ তো সেরকমই বলে। রাজীব করিমের ব্যাপারে সব পক্ষ একমত, এমনকি রাজীব করিম নিজেও। উগ্রপন্থী জিহাদী না হয়ে আজ সিআইএর কনট্র্যাক্টর কিংবা ক্লিনটন পরিবারের শান্তিতে নোবেল লরিয়েট বন্ধু হলে হয়তো পরের দিনই দেশে ফেরার বিমান ধরতে পারতো সে, জন্ম বাংলাদেশেই হোক কি যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে আরো অনেক কিছু বলা যেতো, কিন্তু মাথা নিচু হয়ে যায়, যখন খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে আমাদের রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেন [৮]। এর আগে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহাদাব আকবরের দণ্ডও তিনি মওকুফ করে দিয়েছিলেন [৯]। সম্রাটের ইচ্ছায় রাত দিন হয়ে যায়। আমাদের পঞ্জিকা কী বলে, তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। [১] ঘটনাপঞ্জি: গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে ইউনূসের অপসারণ [২] Raymond Davis and Lahore shootings - unanswered questions [৩] CIA contractor Ray Davis freed over Pakistan killings [৪] Bank of America’s Ex-Chief Denies Fraud, নিউ ই্য়র্ক টাইমস [৫] ফেডারেল বেইলআউট [৬] Bank of America faces trial over bonuses 'lies' [৭] Terror plot BA man Rajib Karim gets 30 years [৮] রাষ্ট্রপতির ক্ষমা [৯] শাহাদাব আকবরের সাজা মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি
false
rn
দু'টি গল্প পড়ুন এবং গল্প থেকে শিক্ষা নিন ১/ তিনটি পাথরের গল্পএটি প্রাচীনকালের একটি গল্প। একবার একজন ব্যবসায়ী গভীর রাতে জনশূন্য পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। এমন সময় একটি অপরিচিত কণ্ঠ ভেসে এলো: 'মাটি থেকে কয়েকটি পাথর তুলে নাও। আগামীকাল তুমি যেমন খুশি হবে, তেমনি হবে অতৃপ্ত।'ধনী লোক এই অপরিচিত লোকের উপদেশ গ্রহণ করলেন। তিনি মাটি থেকে তিনটি পাথর তুলে নিয়ে পকেটে রাখলেন। পরের দিন ভোরবেলায় তিনি গন্তব্যে পৌঁছুলেন। তখন তার মনে পড়ল পাথর তিনটির কথা। তিনি একে একে পকেট থেকে পাথর তিনটি বের করলেন এবং অবাক হয়ে দেখলেন যে, পাথর তিনটির একটি হীরা, একটি মুক্তা এবং অন্যটি পান্না। অবাক হবার পরক্ষণেই ব্যবসায়ী মূল্যবান তিনটি পাথরের মালিক বনে যাওযায় আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তিনি আফসোস করতে লাগলেন এবং আপন মনে বলতে লাগলেন, 'হায়! আমি যদি আরো বেশি পাথর তুলে নিতাম।' তার মনে ভীষণ অতৃপ্তিবোধ জন্ম নিল। গল্পটির মর্ম কি আপনারা বুঝতে পেরেছেন? গল্পের পাথরগুলো আসলে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ী যদি তার সাধ্যমতো পাথর নিয়ে আসতো, তাহলে অনেক বেশি ধনী হতে পারতো। মানুষের জীবনে জ্ঞান বা ভালো পরামর্শ হলো মূল্যবান পাথরের মতো। এ-জিনিস যতো বেশি সম্ভব সংগ্রহ করা উচিত। জ্ঞান যত বেশি হবে, মানুষ ততো আলোকিত হবে, হবে মনের দিক দিয়ে ধনী। অবশ্য জ্ঞানের পিপাসা কখনো মেটে না। আফসোস থেকেই যায়। কিন্তু যতোটা সম্ভব জ্ঞান অর্জন করে যাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে দিন শেষে আফসোসের মাত্রা কম হবে। ব্যবসায়ী যদি তার সাধ্যমতো পাথর তুলে নিতেন, তাহলে অন্তত এ-কথা ভেবে সান্ত্বনা পেতেন যে, 'আমি আমার সাধ্যমতো পাথর তুলে এনেছি।' ২/ জীবনের জন্য ছয়টি শব্দই যথেষ্ট ৩০ বছর আগে এক যুবক নিজের ভবিষ্যত গড়তে নিজের জন্মস্থান ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিল। যাত্রা শুরুর আগে সে গ্রামের একজন জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে গেল এবং তার পরামর্শ শুনতে চাইল। জ্ঞানী ব্যক্তি তখন লিখছিলেন। যুবক কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তিনি তিনটি শব্দ লিখলেন। শব্দ তিনটি হল: 'ভয় কর না।'তিনি যুবককে বললেন: 'মানুষের গোটা জীবনে ছ'টি শব্দ যথেষ্ট। এ তিনটি শব্দ তোমার অর্ধেক জীবনে ব্যবহার করা যাবে। আজকে শুধু তোমাকে তিনটি শব্দ দিলাম।'৩০ বছর পর সেই যুবক তখন মধ্যবয়স্ক মানুষ। এই ৩০ বছরে তিনি কিছু সাফল্য অর্জন করার পাশাপাশি কিছু দুঃখও পেয়েছেন। তিনি জন্মস্থানে ফিরে আসলেন। পরের দিন তিনি এই জ্ঞানী মানুষের কাছে গেলেন। তার বাসায় গিয়ে তিনি জানতে পারলেন যে, এই প্রবীণ লোক কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তার পরিবারের একজন লোক তাকে একটি খাম দিয়ে বললেন: 'তিনি মারা যাওয়ার আগে আপনার জন্য এই চিঠি লিখেছেন। তিনি জানতেন একদিন আপনি জন্মস্থানে ফিরে আসবেন।'তিনি দ্রুত খামটি ছিড়ে ফেললেন। দেখলেন কাগজে তিনটি শব্দ লেখা আছে: 'অনুতাপ করো না।'
false
hm
ঈস্টার দ্বীপ নিয়ে পত্রিকায় শ্রদ্ধেয় শাহাদুজ্জামানের লেখায় বেশ কিছু ভুল তথ্য ঈস্টার দ্বীপ নিয়ে আমার আগ্রহ বেশ অনেকদিনের, এমনকি আমি এই দ্বীপের জনব্যবস্থার মডেল নিয়েও কাজ করেছি ব্যবস্থাকৌশল শিখতে গিয়ে। ঈস্টার দ্বীপ সম্পর্কে আমার প্রাথমিক জ্ঞান থর হেয়ারডাল ও এরিখ ফন দ্যানিকেনদের তত্ত্বভিত্তিক, যা পরে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেই প্রমাণিত হয়। ঈস্টার দ্বীপ সম্পর্কে আমার মাধ্যমিক জ্ঞান জ্যারেড ডায়মন্ডের "কোল্যাপ্স" পড়ে। শাহাদুজ্জামানও তাঁর লেখায় কোল্যাপ্সের কথা বলে এমন কিছু তথ্য সন্নিবেশিত করেছেন তাঁর লেখায়, যেগুলো কোল্যাপ্সে নেই, এবং কোল্যাপ্সে যা আছে তা তাঁর লেখা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শাহাদুজ্জামান বলেছেন, ইস্টার দ্বীপের ছবি যখন প্রথম দেখি তখন থেকেই কৌতুহলী হয়ে উঠেছি দ্বীপটির ব্যাপারে। জনমানুষ নেই, খাঁ খাঁ একটা দ্বীপের চারপাশে সারিবদ্ধ অসংখ্য প্রাগৈতিহাসিক পাথরের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে অতল সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে মুখ করে। ঈস্টার দ্বীপের এই বিখ্যাত মূর্তি বা "মোয়াই"গুলির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, এরা কেউ সাগরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেই। প্রতিটি মোয়াই সাগরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড় করানো। শাহাদুজ্জামান লিখেছেন, নৃতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিকদের আগ্রহের অন্ত নেই এই দ্বীপটি নিয়ে। বিস্তর গবেষণা হয়েছে এ দ্বীপটি নিয়ে এবং বহু তথ্যই এখন জানা হয়ে গেছে। জানা গেছে, কয়েক হাজার বছর আগে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরের এক আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ থেকে জন্ন নিয়েছিল এই দ্বীপ। কয়েক হাজার নয়, কয়েক লক্ষ বছর আগে দ্বীপটির জন্ম হয়েছে। শাহাদুজ্জামান লিখেছেন, এই দ্বীপ থেকে নিকটতম দেশ পেরু। সেই পেরুরই কোনো পথভোলা নৌকা গিয়ে ভেড়ে ওই দ্বীপে। পেরুর পাহাড়ি প্রকৃতি থেকে ওই আশ্চর্য শ্যামলিমায় পৌঁছে নিশ্চয় ঘোর লাগে নৌকাযাত্রীদের। তারা থেকে যায় সেখানে। কেউ কেউ ফিরে গিয়ে নিয়ে আসে আরও মানুষ। একটু একটু করে গড়ে ওঠে এক বিশাল জনপদ। গড়ে ওঠে সম্প্রদায়, প্রশাসন, নতুন এক সংস্কৃতি। এসবই ঘটে কয়েক শতাব্দী ধরে। এইখানে এসে ব্যাপক অস্বস্তি শুরু হয়। প্রশ্ন জাগে, শাহাদুজ্জামান কি আদৌ কোল্যাপ্সের সেই অধ্যায়টি পড়ে দেখেছেন, যেখানে ঈস্টার সম্পর্কে লেখা হয়েছে? ঈস্টার বা রাপা নুই বা ইজলা দে লা পাসকুয়ার নিকটতম দেশ পেরু নয়, চিলে। কিন্তু এর প্রাচীন জনপদের অধিবাসীরা পেরু বা চিলে বা দক্ষিণামেরিকার মূল ভূখন্ড থেকে আগত নয়, ধারণা করা হয় তারা হেন্ডারসন দ্বীপ বা পিটকেয়ার্ন দ্বীপ থেকে আগত। এর প্রমাণ মেলে ঈস্টারে পাওয়া পাথরের যন্ত্র বিশ্লেষণ করে। ঈস্টারের পাথর মূল ভূখন্ডে বা মূল ভূখন্ডের পাথরের যন্ত্র ঈস্টারে পাওয়া যায়নি। এর সংস্কৃতির সাথে দক্ষিণামেরিকার কোন সংস্কৃতির মিল নেই, দূরতর সাদৃশ্য আছে পলিনেশিয়ার সাথেই। এর ভাষার সাথে মূল ভূখন্ডের কোন ভাষার সাদৃশ্য নেই, কিন্তু প্রচুর সাদৃশ্য আছে পলিনেশিয়ার ভাষার সাথে। ঈস্টার শুধু দূরেই ছিলো না, অষ্টাদশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্নও ছিলো। শাহাদুজ্জামান লিখেছেন, এই নতুন রাজ্যের গোত্রপ্রধানরা নতুন এক প্রথা চালু করেন। এ দ্বীপের যেকোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর স্নৃতিতে একটি পাথরের মূর্তি বানাতে হবে এবং সেটিকে স্থাপন করতে হবে দ্বীপের সীমানায়। সে মূর্তি সাগরের দিকে মুখ করে নতজানু হয়ে সাগরকে শ্রদ্ধা জানাবে। এটি লেখক কোথায় পেলেন তা উল্লেখ করেননি, তবে মূর্তিগুলি ঠিক কেন বানানো শুরু হয়েছিলো, তা এখনও পর্যন্ত অনির্ণীত। ঈস্টারের সভ্যতার শেষ দিকে সেখানে ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা পরিবারের কেউ মারা গেলে সে উপলক্ষ্যে মূর্তি নির্মাণ করতো বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। দ্বীপের সীমানায় মূর্তি স্থাপন শুরু হয়েছে অনেক পরে, প্রাথমিক মূর্তিগুলো দ্বীপের মাঝামাঝি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সাগরের দিকে মুখ করে থাকার কথা আগেই বলেছি। শাহাদুজ্জামান লিখেছেন, একেকজন মারা যায় আর দ্বীপের কয়েক শ মানুষ লেগে পড়ে মূর্তি বানাতে। দ্বীপের মাঝখানে অগ্নিগিরির লাভা থেকে সৃষ্ট প্রাচীন পাথর থেকে তৈরি হয় মূর্তি এবং প্রকান্ড সেসব মূর্তিকে এরপর কাঠের তৈরি বিশাল এক গাড়িতে করে আনা হয় দ্বীপের কিনারে। ক্রমেই দ্বীপ ভরে উঠতে থাকে সাগরের দিকে মুখ করা নতজানু অসংখ্য মূর্তিতে। সেই সঙ্গে আরও নিয়ম হয় যে রাতে আগুন জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হবে এই পবিত্র মূর্তিগুলোকে। রাতে আগুন জ্বালিয়ে শ্রদ্ধার ব্যাপারটিও লেখক কোথায় পেলেন, জানা যায় না। ঈস্টারে মানুষকে শুরুতে দাহ করা হতো, তার প্রমাণ মিলেছে, যা পরবর্তীতে কাঠের অভাবে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়। রাতে তারা অবশ্যই আগুন জ্বালাতো (ঈস্টারের গড় তাপমাত্রা কম), কিন্তু পবিত্র মূর্তিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে রাতে আগুন জ্বালানোর তথ্যটির উৎস জানা দরকার। বিপত্তি শুরু হয় সেখান থেকে। দুটো কাজে তাদের কাঠের প্রয়োজন পড়ে। মূর্তিগুলোকে যে বিশাল যানে চড়িয়ে দ্বীপের কিনারে আনতে হবে সেই যানটি বানাতে এবং নিয়মিত আগুন জ্বালিয়ে তাদের পূজা দিতে। আবারও সন্দেহ জাগে, শ্রদ্ধেয় শাহাদুজ্জামান কি কোল্যাপ্স বইটি পড়ে দেখেছেন? যে "বিশাল" যানে করে মূর্তিকে আনা হবে, সেটিকে রোজ রোজ বানানোর প্রয়োজন কেন পড়তো, এ প্রশ্ন তো নিজের মনেই জাগে! কোল্যাপ্সে বলা হয়েছে, পলিনেশিয়ার অন্যত্র বড় ক্যানো পরিবহনের জন্য তা গাছের গুঁড়ির ওপর দিয়ে গড়িয়ে বড় দূরত্ব পার করা হতো। সেই রোলার হিসেবে প্রচুর গাছ কাটা হয়েছে ঈস্টারে। তবে চিলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক সোনিয়া হাওয়া, যিনি ঈস্টারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের সাথে জড়িত, তিনি একটি সাম্প্রতিক পেপারে প্রস্তাবনা লিখেছেন যে ঈস্টারের পরবর্তী যুগের মূর্তিগুলো গড়িয়ে নয়, বরং কাঠের ভেলায় করে দ্বীপের পরিধি বরাবর পার করা হতো। এ কারণেই পরবর্তীতে দ্বীপের সৈকত জুড়ে মূর্তি দাঁড় করানো হয়। শাহাদুজ্জামান লিখেছেন, এই দুই কাজে অবিরাম বৃক্ষ নিধন চলতে থাকে ওই দ্বীপের। কেউ খেয়াল করে না প্রকৃতি যে হারে বৃক্ষ প্রতিস্থাপন করতে পারে, তার চেয়েও দ্রুত তারা তাদের বৃক্ষ ধ্বংস করছে। অবিরাম গাছ কেটে কেটে দেবতার পূজা দিতে থাকে তারা। দ্বীপের সীমিত ভুমির গাছ ক্রমেই কমতে থাকে। কমতে থাকে পাখিদের ডিম পাড়ার জায়গা, প্রাণীদের আশ্রয়। যত্রতত্র মারা যেতে থাকে তারা। অজান্তে কমতে থাকে দ্বীপের পাখি আর প্রাণী। এক পর্যায়ে ভয়ংকর পরিবেশ ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় দ্বীপে। আর কোনো বৃক্ষ জন্নায় না। জন্নায় না কোনো ফসল। পথে পথে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে পাখি, বিবিধ জন্তু-জানোয়ার। পরিবেশ বিপর্যয়ে শেষে মানুষের মধ্যে দেখা দেয় অজানা মহামারি। এক এক করে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে থাকে দ্বীপের মানুষ। খাবারের অভাবে মৃতদেহ খেতে শুরু করে তারা। ফলে-ফুলে শোভিত বর্ণাঢ্য এক জনপদ ক্রমেই পরিণত হয় এক দুর্বিষহ মৃত্যুপুরিতে। সপ্তদশ শতকে ডাচ্ অভিযাত্রী রোগিভিন যখন এই দ্বীপে তাঁর জাহাজ ভেড়ান, তখন দেখতে পান এক ভুতুড়ে বিরাণ দ্বীপ, যেখানে বেঁচে আছে মুমূর্ষু গুটিকয় মানুষ আর পুরো দ্বীপকে যেন পাহারা দিচ্ছে রহস্যময় সেসব মূর্তি। সেই বেঁচে যাওয়া কতিপয় অধিবাসী, তাদের প্রাচীন লিপি, গুহাচিত্র, লোকগাঁথা থেকে বেরিয়ে আসে এই ট্র্যাজিক জনপদের কাহিনী। অজানা মহামারী ঈস্টারে ঘটে রগেভেন সে দ্বীপে পা দেয়ারও বহু পরে। ১৮৭২ নাগাদ দ্বীপটির অধিবাসীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১১১ তে, এবং সেই মহামারী ছিলো স্প্যানিয়ার্ড বোম্বেটেদের আমদানী করা। ঈস্টারের জনব্যবস্থা হুমকির মুখে যখন পড়ে, তখন দ্বীপে প্রচন্ড সংঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠে তারা আবার একটি ইকুইলিব্রিয়ামে পৌঁছাতে পেরেছিলো, যেটি নষ্ট হয় ইয়োরোপীয়দের বয়ে আনা অসুখ আর দাসব্যবসায়ীদের উৎপাতে। আর এই ট্র্যাজিক জনপদের কাহিনী তাদের সেই প্রাচীন লিপি (রঙ্গোরঙ্গো লিপি, যা খুব বেশি প্রাচীন নয়, এমনকি অনেকে ধারণা করেন এর উৎপত্তি হয় ইয়োরোপীয়দের পদার্পণের পর), গুহাচিত্র (গুহাচিত্রের কথা জানা যায় না, ঈস্টারে বরং জনপ্রিয় ছবি হচ্ছে পতিত মোয়াইয়ের ওপর আঁকা পরবর্তী পক্ষীমানব কাল্টের ছবিগুলো) আর লোকগাঁথা (এটি প্রকৃত তথ্যের আকর, নিঃসন্দেহে) ছাড়াও যে অগণিত প্রত্নতাত্ত্বিক এবং উদ্ভিদ, প্রাণী ও পরিবেশবিজ্ঞানী এই দ্বীপের রহস্যভেদে কাজ করেছেন, সেটিও উল্লেখ্য, কারণ রহস্যের একটি বড় অংশ তাঁরা ভেদ করেছেন। শাহাদুজ্জামান বলেছেন, লেখক জেরাড ডায়মন্ড সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর বই কলাপস-এ বেশ কয়েকটি বিলুপ্ত প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কী করে তারা নিজেরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছে। নিজেদের সম্পদ, শক্তি ভুল পথে চালিত করে নিঃশেষ হয়ে গেছে তারা। তাঁর বইয়ে অন্যতম একটি উদাহরণ হিসেবে এসেছে ইস্টার দ্বীপ। ইতিহাসবিদ টয়েনবি যে বলেছিলেন, ‘সভ্যতাকে কেউ হত্যা করে না, সভ্যতা আত্মহত্যা করে’−এ কথার আক্ষরিক অনেক উদাহরণ হাজির করেছেন ডায়মন্ড। এখান থেকেই জানতে পারি, তিনি কোল্যাপ্সের কথা জানেন। কিন্তু বইটি একটু কষ্ট করে পড়লে ওপরের তথ্যজনিত ভ্রান্তি আর পাঠককে পেতে হতো না। শাহাদুজ্জামানের সাথে শুধু একমত হই শেষ অংশে এসে, যেখানে তিনি বলেছেন, ইস্টার দ্বীপের গল্প পড়তে পড়তে আমি নিজের দেশের দিকে তাকাই, তাকাই নিজের শহরের দিকে। এই মহামান্য রাজধানীকে নজরানা দিতে সারা দেশের মানুষ এসে জড়ো হয়েছে এই ঘেরাটোপে। এ শহর আর তার ভার বইতে পারছে না। শুনি শহরের পানির স্তর নেমে গেছে মরু অঞ্চলের মতো, নিঃশেষ হয়ে গেছে শহরকে আলোকিত করার ক্ষমতা, রাতে অন্ধকারে হাঁসফাঁস করে পুরো জনপদ, দিনে গাড়ি, মানুষ একে অপরের গায়ে লেপ্টে স্থবির হয়ে বসে থাকে পথে। আমরা কি ক্রমেই একটা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছি? ইস্টার দ্বীপবাসীর মতো কোনো মূর্তিও তো বানিয়ে রাখলাম না, যারা আমাদের ধ্বংসের সাক্ষী হয়ে থাকতে পারে? কোল্যাপ্সের ওপর ভিত্তি করে ঈস্টার নিয়ে একটি সিরিজ লিখেছিলাম সচলে, লিঙ্ক দিয়ে যাই আগ্রহী পাঠকের জন্য, যদিও সেই সিরিজটি কোন কারণে তেমন পাঠকপ্রিয়তা পায়নি। আর এ অনুভব করে অস্বস্তি বোধ করছি, সুলেখকরা বইয়ের নাম উদ্ধৃত করেন, কিন্তু তা পড়ে দেখেন না।
false
hm
গুহাচিত্র প্রচুর কাজ জমে থাকার পরও রবিবারকে ছুটির দিন ধরে নিয়ে অসংখ্য ব্যক্তিগত ভ্যাজালকে নতুন সপ্তাহের দিকে ঠেলে দিয়ে বেরিয়েছিলাম ঘর থেকে। দুপুরে মোটামুটি ভুরিভোজের পর সিদ্ধান্ত নিলাম, বহুদিন হলো টেবিল টেনিস খেলি না, আজ তাহলে তা-ই করি। আমার ভোনহাইমে টেবিল টেনিস খেলার কোন সরঞ্জাম নেই, খেলতে গেলে যেতে হবে শহরের আরেক দিকে হের রেহমানের ছাত্রাবাসে, ফোন করে জানলাম খেলা যেতে পারে আজকে। কিন্তু মিনিট পনেরো পিটাপিটি করেও চতুর্থ ব্যক্তির অনুপস্থিতি বেশি পীড়াদায়ক হয়ে ওঠায় টেবিল টেনিসে ইতি টেনে মোনোপোলি খেলার সিদ্ধান্ত হলো। সর্বস্ব জলাঞ্জলি দিয়ে ভুনা মুরগি দিয়ে ঠেসে ভাত খেয়ে যখন আমি আর হের চৌধুরী আবার পথে নামলাম দুইজন যথার্থ মাতালের মতো, তখন তাপমাত্রা সেলসিয়াসে শূন্যের আশেপাশে। কনকনে বাতাসও চালিয়েছে, শেষ বাসটা চলে গেছে আমাদের পথে ফেলে রেখে, ভরসা এখন মিনিট পনেরো হাঁটার পর সামনের কোন হাল্টেষ্টেলেতে ট্রামের অপেক্ষায়। হের চৌধুরীও আমার মতোই একজন লোক খারাপ, তাই কিছু খারাপ কথাবার্তার পর কী এক প্রসঙ্গে প্রুশিয় সম্রাট দ্বিতীয় ভিলহেল্ম নিয়ে কিছু কথাবার্তা হলো। চৌধুরী জানালেন, বিংশ শতাব্দীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান অর্থনীতির বারোটা বাজলেও তখন সাহিত্যের স্বর্ণযুগ, নানা রাজনৈতিক উপাদান আর শৈলী যোগ হচ্ছে তখন জার্মান সাহিত্যে। স্বীকার করি, কথাটাকে বাজে একটা দিকে ঠেলে নিয়ে গেলাম আমিই। প্রশ্নটা ঠেলে উঠলো ভেতরে, খালি পেটে কি মানুষের হাত খোলে ভালো? সঙ্কটের সময়ই কি মানুষের ভেতরে শিল্পবোধ আরো সূক্ষ্ম হয়? চৌধুরীর মত হচ্ছে, শুধু সম্পদের সঙ্কট থাকলেই হবে না, মানুষের মধ্যেও লড়াইয়ের প্রবণতা থাকতে হবে। উদাহরণ দিলেন পাকিস্তানের, পাকিস্তানে সম্পদের বন্টন নিয়ে সঙ্কট আছে, কিন্তু পাকিদের মধ্যে লড়াই নেই, তাই তাদের সমসাময়িক সাহিত্য সমৃদ্ধ হচ্ছে না। লড়াইয়ের ধাত বজায় থাকলে মানুষের বিশ্লেষণপ্রবণতা আরো সুবেদী হয়ে ওঠে, কাসেলের বুলেটজমানো ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে চৌধুরীর এমনই মত। আমার মাথায় জটার ওপরে টুপি ছিলো, চৌধুরীর মাথায় শুধুই জটা, তাই আমার এত উত্তেজিত হবার কোন কারণ ছিলো না। আমি তাই ব্যাপারটিকে আবারও টেনে নিয়ে যাই ঘ্যানানোর দিকে। টেনে আনি সেই পেল্লায় উল্লম্ফন বা গ্রেট লীপ ফরওয়ার্ডের কথা, সেই চল্লিশ হাজার বছর আগে, আজকের ফ্রান্সে এক গুহায় আঁকা সেই বিস্ময়কর সব গুহাচিত্রের কথা। আমি প্রস্তাব করলাম, ঐ সময়ে নিশ্চয়ই বড়সড় কোন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিকারের অভাব প্রবল হয়ে উঠেছিলো, তাই গুহাবাসী "আধুনিক" মানুষ বসে বসে গুহার দেয়ালে এঁকেছে প্রবল মাংসল সব বাইসনের ছবি, যেভাবে রোগা রিকশাওয়ালার জন্যে সিনেমা হলের পোস্টারে চর্বিমাংসে একাকার ঢাকাই নায়িকার স্তনের উত্তরগোলার্ধ আঁকা হয়। যেভাবে আমরা গোলাভরা ধান আর পুকুরভরা মাছের প্রসঙ্গ টানি, জীবনে যদিও চোখে দেখিনি এসব। আমি কঠোর হই এসব বলতে বলতে, বলি, ঐ গুহাবাসী শিল্পীরাও হয়তো নিজের চোখে এসব দ্যাখেনি, সে শুনেছে তার পূর্বসূরীদের কাছে, তারপর সেই স্মৃতি, আবছা পর্যবেক্ষণ আর নিজের কল্পনা মিশিয়ে ইচ্ছামতো এঁকে গ্যাছে ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে, যাকে বলে অর্ধেক বাইসন তুমি অর্ধেক কল্পনা। নিশ্চয়ই সেই সময় আবহাওয়ার বড় কোন পরিবর্তন ঘটেছিলো, যার ফলে বাইসন আর ম্যামথের আকাল পড়েছিলো রীতিমতো। শিকারের অভাবে হাভাইত্যা গুহাবাসী তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্যেই বসে বসে এ কাজ করেছে। তাছাড়া ছবি আঁকা অ্যাতো সহজ নয়, সুজন চৌধুরীও একটা কার্টুন আঁকার জন্যে ঘন্টা তিনেক সময় নিয়ে থাকেন, আর সেই প্রাচীন শিল্পী যখন দেয়াল জুড়ে একটা বাইসনের ছবি আঁকতো, তখন নিশ্চয়ই আরো বেশি সময় লাগতো। ধারণা করা হয়, প্রাগচাষাবাদ যুগে শ্রমের বন্টন অনেক সুষম ছিলো, আর পেশার ভাগ তখনো শুরু হয়নি, অর্থাৎ প্রত্যেককেই যার যার খোরাক তার নিজেরই জোটাতে হতো, দিনের এতো সময় ধরে ছবি আঁকলে খাবার যোগাড় হতো কখন? এর উত্তর একটাই হতে পারে, এত সময় যখন তার হাতে ছিলো, তার আর অন্য কিছু করার ছিলো না। অর্থাৎ, শিকারের উপায় ছিলো না তার, কিংবা শিকারই ছিলো না। এতে করে আমরা একটা হাইপোথিসিস দাঁড় করাতে পারি, যে চল্লিশ হাজার বছর আগে ঐ অঞ্চলে বাইসন আর ম্যামথ জনপুঞ্জে একটা উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটেছিলো। পিকাসো যেমন শেষ বয়সে এঁকেছে ভয়ঙ্কর যৌবনবতী সব রমণীর ছবি, তেমনি, ক্ষুধার্ত হাভাইত্যা সেই প্রাচীন শিল্পী বসে বসে এঁকেছে প্রচুর মাংসের ছবি, জীবন্ত সেইসব মাংস শিকারের ছবি। আমার অনুসিদ্ধান্ত, সেই সময়ের মানুষ যদি নিরামিষাশী হতো, তাহলে বাইসন আর ম্যামথের ছবির বদলে আমরা প্রকান্ড সব ফুলকপি আর শালগমের ছবি দেখতাম দেয়ালে। এই হাইপোথিসিস প্রমাণ করে, রিসোর্সের অভাব ঘটলে মানুষের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ আর সৃজনশীলতা সূক্ষ্মতর হয়। এখন যেটা করতে হবে, আশ্রয় নিতে হবে ডেনড্রোমিটিওরোলজির, সেই সময়ের কাঠ যোগাড় করে দেখতে হবে, আবহাওয়ার কী অবস্থা ছিলো। যদি আবহাওয়ার কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না ঘটে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, অতিশিকারের কবলে পড়ে বাইসন আর ম্যামথ হ্রাস পায় সেই অঞ্চলে। অতিশিকার তখনই হয় যখন জনসংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। কোন নির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলে শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে জনসংখ্যা সহজে বৃদ্ধি পায় না, কারণ তারা সবসময় দৌড়ের ওপরে থাকে, এবং নিজেদের জনসংখ্যা সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে, যদি না একই সময়ে একাধিক গোষ্ঠী সেই অঞ্চলে সমাপতন না ঘটায়। কিন্তু তার পরিণতিও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ ও লোকক্ষয়, এবং শেষমেশ আবারও নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা। তাহলে কী ঘটেছিলো সেই গুহার আশপাশে? খোঁজ নিতে হবে, ভালো করে খোঁজ নিতে হবে ... প্রয়োজনে এর ওপর ভিত্তি করে লেখা যেতে পারে একটি বিস্তৃত উপন্যাস। চৌধুরী মন দিয়ে সব শুনে বললেন, কাসেলে আর্জেন্টাইন এক রেস্তোরাঁয় নাকি বাইসনের স্টেক পাওয়া যায়, পনেরো অয়রো দাম। হাইপোথিসিস মিলে যায় কাঁটায় কাঁটায়। তাই বাড়ি ফিরে মন দিই গুহাচিত্র আঁকায়।
false
ij
ধর্মপদ থেকে পাঠ_ অন্যের ভিতরে নিজেরে দেখাই সত্যিকারের প্রেম বুদ্ধ একবার বলেছিলেন- See yourself in other. Then whom can you hurt? What harm can you do? এভাবেই অপার মানবিকতার বীজটি প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগেই। বাংলায় এককালে প্রায় ৪০০ বছর ধরে শাসন করেছিল পাল রাজারা। পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ।পাল শাসন বাংলার ইতিহাসে যে এক গৌরবময় অধ্যায় তা যে কোনও ঐতিহাসিকই স্বীকার করেন। বাংলায় পাল শাসন ছিল গৌরবময় অধ্যায়- কেননা, বৌদ্ধ রাজাদের পথনির্দেশ ছিল ধর্মপদের বানী। যে বানী গভীর মানবিক; যে বানীতে উদবুদ্ধ হয়ে বৌদ্ধ রাজারা বৈষ্ণবসহ অপরাপর ধর্মেও দান করতেন। কারণ, ধর্মপদে রয়েছে-See yourself in other. Then whom can you hurt? What harm can you do? ধর্মপদ যার বানী- সেই বুদ্ধ ছিলেন অপার মানবিকতার আধার। উপরোন্ত, বুদ্ধ ছিলেন বৈদিক যজ্ঞবিরোধী। বৈদিক যজ্ঞে অযাথা পশু বলি হত। বুদ্ধ একবার একবার একটি যজ্ঞে বাধা দিয়ে বলেছিলেন, "বরং আমাকে হত্যা কর; এই পশুটিকে রেহাই দাও।" তারপর কি হয়েছিল তা আমি বলতে পারি না। আমি কেবল বলতে পারি যে- এমন কী অবোধ পশুর ভিতরে নিজেকে দেখার মতো মানসিক শক্তি বুদ্ধের ছিল! বুদ্ধই তো একবার বলেছিলেন-"জলের ফোঁটার প্রতিও আমার দয়া হইত!" ধর্মপদ থেকে পাঠ 10. Violence All beings tremble before violence. All fear death. All love life. See yourself in other. Then whom can you hurt? What harm can you do? He who seeks happiness By hurting those who seek happiness Will never find happiness. For your brother is like you. He wants to be happy. Never harm him And when you leave this life You too will find happiness. Never speak harsh words For they will rebound upon you. Angry words hurt And the hurt rebounds. Like a broken gong Be still, and silent. Know the stillness of freedom Where there is no more striving. Like herdsmen driving their cows into the fields, Old age and death will drive you before them. But the fool in his mischief forgets And he lights the fire Wherein one day he must burn. He who harms the harmless Or hurts the innocent, Ten times shall he fall - Into torment or infirmity, Injury or disease or madness, Persecution or fearful accusation, Loss of family, loss of fortune. Fire from heaven shall strike his house And when his body has been struck down, He shall rise in hell. He who goes naked, With matted hair, mud bespattered, Who fasts and sleeps on the ground And smears his body with ashes And sits in endless meditation - So long as he is not free from doubts, He will not find freedom. But he who lives purely and self-assured, In quietness and virtue, Who is without harm or hurt or blame, Even if he wears fine clothes, So long as he also has faith, He is a true seeker. A noble horse rarely Feels the touch of the whip. Who is there in this world as blameless? Then like a noble horse Smart under the whip. Burn and be swift. Believe, meditate, see. Be harmless, be blameless. Awake to the dharma. And from all sorrows free yourself. The farmer channels water to his land. The fletcher whittles his arrows. The carpenter turns his wood. And the wise man masters himself. মূল পালি থেকে অনুবাদ করেছেন টমাস বাইরোম। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৭
false
mk
নারী জঙ্গি সাম্প্রতিক জঙ্গি সংকটে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে 'নারী জঙ্গি'। আমরা দেখেছি, গুলশান ট্র্যাজেডির সূত্র ধরে এগোতে গিয়ে পুলিশ সিরাজগঞ্জে চার নারী জঙ্গিকে আটক করেছিল। তাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ছয়টি তাজা বোমা, বোমা বানানোর সরঞ্জাম ও জিহাদি পুস্তিকা। তাদের প্রস্তুতি দেখে মনে হওয়া অমূলক নয় যে, কোথাও হামলা করার জন্যই ওই আস্তানায় তারা জড়ো হয়েছিল। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০। বিস্ময়কর যে, কেউ কেউ ইতিমধ্যে সন্তানের মা হয়েও জঙ্গিত্বের পথ বেছে নিয়েছিল। অবশ্য তাদের স্বামীরাও জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে অনেক দিন ধরেই নিখোঁজ। আটক ওই নারীদের পরিবারের পক্ষে তাদের জঙ্গিবাদী জীবন বেছে নেওয়ার খবর স্বীকার না করলেও, তারা যে স্বামীদের হাত ধরেই সহিংস পথে পা বাড়িয়েছে_ এ বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।সিরাজগঞ্জের চার নারী জঙ্গি নিয়ে নানামুখী আলোচনা ও বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই ঢাকা থেকে আরও চার তরুণী আটক হয় জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে। এদের তিনজন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের ছাত্রী এবং একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য পাস করা ডাক্তার, যে ওই মেডিকেল কলেজেই শিক্ষানবিশিকাল অতিবাহিত করছিল। বিত্তশালী পরিবার থেকে আসা গুলশান ও শোলাকিয়া হামলা এবং কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের সামাজিক অবস্থান নতুন বিস্ময়ের সৃষ্টির পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদের চর্চা নিয়ে আতঙ্কে ফেলে দিয়েছিল পিতা-মাতাদের, বলা বাহুল্য। একের পর এক 'নারী জঙ্গি' আটক হওয়ার ঘটনা তাতে নতুন মাত্রা জুগিয়েছে। কেবল নতুন মাত্রা নয়, বরং আতঙ্কের নতুন স্তর। নারীরা নানাভাবে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হলেও মাতৃত্বের কারণেই তাদের হৃদয় সর্বাবস্থাতেই মমতাময়। পরিবারের সেবা ও সন্তান লালনকারী হিসেবে সমাজে সহিংসতার চেয়ে শান্তির জন্য উদগ্রীব থাকে। বাংলাদেশের নারীরা তো হৃদয়ের দিক থেকে আরও কোমল বলে পরিচিত। এখানে নারীরা কেন জঙ্গিত্বের দিকে ধাবিত হয়ে মানুষ হত্যার পথে নেমে পড়বে কথিত জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, এটা ভাবতেও অবাস্তব লাগে বৈকি! অবশ্য এই প্রবণতা যে বাংলাদেশেই প্রথম, সেটা বলা যাবে না। মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর মারনি এল সুতেনের গবেষণায় জানা যায়, গত ১০ বছরে কমপক্ষে ৩৮টি আন্তর্জাতিক বা গৃহযুদ্ধে নারীদের জড়িত হতে দেখা গেছে এবং মোট যোদ্ধার শতকরা ১০ থেকে ৩০ ভাগ নারী। সর্বশেষ সিরিয়ার আইএসে যোগ দেওয়া বিদেশি যোদ্ধাদের মধ্যেও ১০ ভাগ নারী। সর্বশেষ আটক হওয়া চার নারী জঙ্গি আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেকেরই মনে আছে, যুক্তরাষ্ট্রের সান বারনারডিনো শহরে গত বছর ডিসেম্বরের গোড়ায় ২৯ বছর বয়সী পাকিস্তানি তরুণী তাসফিন মালিক তার স্বামী সৈয়দ রিজওয়ান ফারুককে সঙ্গে নিয়ে গুলি করে ১৪ জনকে হত্যা ও ২২ জনকে আহত করেছিল। ফার্মাসিতে অধ্যয়ন করা সাদাসিধা মেয়েটি এক সময় উগ্র মতাদর্শে উজ্জীবিত হয় পাঞ্জাবের ওয়াহাবি ইসলামী ধারায় পরিচালিত এক মাদ্রাসায়। তারপর 'জিহাদি' হয়ে পড়ে। প্যারিসের শার্লি এবদো পত্রিকায় জঙ্গি হামলার সঙ্গেও হায়াত বুমেদিন নামের এক তরুণীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ঠিক মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির তিন ছাত্রী জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমায়। তাদের মধ্যে খাদিজা সুলতানা ও শামীমা বেগম ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। খাদিজা সুলতানা কয়েক সপ্তাহ আগে বোমা হামলায় নিহত হয়েছে। আইএসের নারীবিরোধী কর্মকাণ্ড ও নিষ্পেষণ দেখে খাদিজা আইএস ছেড়ে পালাতে চেয়েও রুশ বিমান হামলায় মারা যায়। তাসফিন মালিকের সশস্ত্র জিহাদি হয়ে ওঠার পেছনে অবশ্য তেমন আর্থ-সামাজিক কারণ পাওয়া যায় না। তবে সাধারণ অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে ভয়ানক হামলা করতে সমর্থ হয়েছিল সে। আমাদের জন্য আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে আটক চার নারী জঙ্গির জীবনধারার সঙ্গে তাসফিন মালিকের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আমরা দেখি, বাংলাদেশে লিঙ্গ বৈষম্যের অনেক নজির থাকলেও নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকারের সূচক অগ্রসরমাণ। গ্রামাঞ্চলে বরং নারীরা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ফতোয়ার শিকার হয়ে থাকে; মূলধারার শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রেও নারীদের অংশগ্রহণ উৎসাহব্যঞ্জক। আমরা জেনেছি, আইএস অধ্যুষিত সিরিয়াতে মেয়েদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন হয়ে থাকে। ভিন্নধর্মী ও ইয়াজিদি মেয়েদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও জোর করে বিবাহ, বাল্যবিবাহ, শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে এই চিত্র এ দেশের নারীদের কাছে অশ্রুত নয়। সর্বশেষ ধরা পড়া চার 'শিক্ষিত' তরুণীর কাছে তো নয়ই। ফলে নারীদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার পেছনে পুরুষ থেকে আলাদা কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। নারী জঙ্গি তৈরিতে বৈবাহিক সম্পর্ককে সাংগঠনিকভাবে ব্যবহার করতে দেখা যায় অবশ্য। বিবাহিত স্ত্রীকে ভালোবাসার চেয়ে জঙ্গি বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পিছপা হয় না জঙ্গিরা। আগেই জেনেছি, সিরাজগঞ্জের আটক চার নারী জঙ্গি নিখোঁজ জঙ্গিদের সহধর্মিণী। তথাকথিত জিহাদিরা নিজ বোন ও আত্মীয়দের স্বনামে-বেনামে অন্য জঙ্গির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে নারী যোদ্ধার সংখ্যা বাড়ানোর কৌশলও নিয়ে থাকে। নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে তারা সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে হামলায় নিহত হলে জঙ্গির স্ত্রীর পরবর্তী স্বামী হবে কে। ফলে একবার জিহাদি বলয়ে পা দেওয়া নারীর পক্ষে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ থাকে না; জিহাদি বধূ হিসেবেই থেকে যেতে হয় চিরজীবনের জন্য। নারী জঙ্গিরা প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের আদান-প্রদান, আস্তানা পরিচালনা, অস্ত্র সংরক্ষণ ও লুকানোর কাজ করে থাকে; কারণ তাতে করে গোয়েন্দা ও পুলিশের নজরদারি এড়ানো সহজ হয়। সামাজিক সহনশীলতার কারণে সন্দেহমুক্ত চলাচল সহজ হয়। গুলশান, শোলাকিয়া হামলা ও কল্যাণপুরে বড় ধরনের হোঁচট খাওয়ার পর এ দেশীয় জঙ্গিরা স্বভাবতই নিরাপত্তার বেড়াজাল ভাঙতে নারীদের ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। জঙ্গিদের ভেঙে পড়া মনোবল পুনরুদ্ধার করতে একটি 'সার্থক' হামলাও জঙ্গিদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সে কারণেও নারী জঙ্গিদের তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। জঙ্গি যোদ্ধা হিসেবে কেবল নয়, জঙ্গিবাদ সহায়ক প্রকাশ্য তৎপরতাতেও নারীদের ব্যবহার লক্ষণীয়। আমরা দেখতে পেলাম, রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামীর পরিচালনাধীন ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে অভিযান চালিয়ে ২৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যেও পাঁচজন নারী। আটকদের মধ্যে বাড্ডা থানা জামায়াতের আমির ফখরুদ্দীন কেফায়াতুল্লাহ, তার স্ত্রী সালেমা আক্তার ও দুই মেয়ে খাদিজা খাতুন ও আয়েশা সিদ্দিকা রয়েছে। এ ছাড়াও বাড়ির মালিক বিল্লাল, তার স্ত্রী শান্তা বিল্লাল ও মা হালিমা বেগম রয়েছেন।লক্ষণীয়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রী সংস্থার ব্যাপারে তিনটি মন্তব্য করে বলা হয়_ 'সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো কোমলমতি ছাত্রী ও সরলমনা ধর্মভীরু মহিলাদের জিহাদে অংশগ্রহণসহ প্রচলিত সংবিধানের বাইরে সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির হীন লক্ষ্যে তাদের (নারী) জিহাদি মনোভাবাপন্ন করে তৈরি করে মাঠে নামানো।' ছাত্রী সংস্থার কর্মীরা গ্রামগঞ্জে ও সারাদেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 'জাহান্নামের আগুন' থেকে মুক্তিলাভের উপায় এবং 'আল্লাহর সানি্নধ্য' লাভের নামে প্রতারণামূলক প্রলোভন দিয়ে সংগঠনে যোগ দিতে সরলমনা নারীদের উদ্বুদ্ধ করছে। বর্তমান সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে পারছে না বিধায় মূল দল জামায়াতে ইসলামীর অর্থায়নে তাদেরই নারী টিম হিসেবে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার চেষ্টা করছে।এখানেই একটি বড় ধরনের প্রশ্ন আমাদের সামনে হাজির হয়। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ কি বিশ্বের অন্যত্র ইসলামের নামে চালানো জঙ্গিবাদ থেকে আলাদা চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে? এখন আর অস্বীকারের অবকাশ নেই যে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামের দলটি জঙ্গি চর্চার চাবিকাঠি। তারাই যে দেশে জঙ্গিবাদী আদর্শ ও তৎপরতা সম্প্রসারণের পেছনে, তা আড়াল করার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। দেখা গেছে, বহুল আলোচিত জঙ্গি 'বাংলা ভাই' এবং শীর্ষস্থানীয় আরও অনেক ছাত্রশিবির বা জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরোক্ষভাবেও জঙ্গিবাদে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে নতুন করে কিছু বলা নেই। এখন বরং অনুসন্ধান চালানো জরুরি যে নারী জঙ্গি তৈরির ক্ষেত্রে ছাত্রী সংস্থার কী ধরনের ভূমিকা রয়েছে।বস্তুত, নারীদের জিহাদি বানানোর ক্ষেত্রে ১৯৭৮ সালের ১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ভূমিকা অনবদ্য হয়েই আছে। ছাত্রীদের জিহাদি মতবাদে আকর্ষিত করতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতোই দেশের মাধ্যমিক স্তরের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিভিন্ন প্রশাসনিক থানা, জেলা ও মহানগরে ছাত্রী সংস্থা তৎপর। গত কয়েক বছরে জামায়াতে ইসলামীর বড় মগবাজারের অফিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, ইডেন কলেজ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। গত সপ্তাহে রাজধানীতে আটক জেএমবির চার নারী জঙ্গিও এক সময়ে এই ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কর্মী ছিল। এর আগে ২৩ ও ২৪ জুলাই রাজধানীর ইডেন কলেজ থেকে জঙ্গি সন্দেহে ছাত্রী সংস্থার পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ।উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জিহাদি মতাদর্শ বিস্তারের অনেক ধরনের কৌশলী অনুশীলন দেখা যায়। ইসলামী দাওয়া নামে মাহফিলের আড়ালে চলে জঙ্গি মতাদর্শের দীক্ষা। পরিবারের মধ্যমণি মাকে ধর্মান্ধ করতে পারলে পুরো পরিবারকে সক্রিয় জঙ্গি বানাতে না পারলেও সমর্থক বানিয়ে জঙ্গি কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করা সম্ভব। বিত্তশালী পরিবারের মাতা ও কন্যাকে এখন প্রায়ই দেখা যায় 'মাহফিল' আয়োজন করতে। সেখানে জঙ্গিবাদী দর্শন ছড়ানো ও বাংলার আবহমান সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে ইসলামসম্মত নয় বলে প্রত্যাখ্যান করার মানসিকতা তৈরিতে এগিয়ে যায়। ধর্ম দিয়ে বাঙালিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে স্বাধীনতাবিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে ক্রমান্বয়ে জঙ্গিবাদে টেনে নেওয়া হয়। কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে নারী জঙ্গিদের উত্থান নিঃসন্দেহে নিরাপত্তার নতুন ঝুঁকি তৈরি করেছে। ধর্মকে পুঁজি করে গড়ে ওঠা ধর্মান্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধীরা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সমাজকে পরিবর্তনের অপচেষ্টায় লিপ্ত। নারী জঙ্গিবাদ তাদের আরেকটি 'তুরুপ' হওয়া অমূলক নয়। 'নারী' হিসেবে যারা 'সফট' ইস্যুতে নারীদের সংগঠিত করে 'মাহফিল' ইত্যাদি আয়োজন করে চলছে, তাদের নির্বিঘ্ন তৎপরতা চালিয়ে যেতে দেওয়া হলে নারী জঙ্গির সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতির বাঙালি সমাজ সম্পর্কে বিদ্বেষ তৈরি করে, পরে সেটা ধর্মীয় বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়। ধর্মের নামে এই সহিংসতা সমাজে জায়গা পেলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সামাজিক নমনীয়তা ও সার্বজনীন অধিকার ভয়াবহভাবে ক্ষুণ্ন হবে এবং মরু সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের জাতিসত্তা হুমকিতে পড়বে। সন্দেহ নেই যে, নারীর ক্ষমতায়ন আরও জরুরি। আমরা চাই, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক। কিন্তু তারা কোনো নারী জঙ্গিবাদীর খপ্পরে পড়ছে কি-না, সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজ ও পরিবারেরও। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬
false
fe
যে বিতর্কিতরা জাতিকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে চায় আজ টিভি নিউজে দেখলাম , সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বলেছেন , তারা ২০ ডিসেম্বর ০৮ থেকে পজিশনে যাবেন। অর্থাৎ সেদিন থেকেই সেনা নামবে। মানুষ কি নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে ? জানতে চাইলে জেনারেল জানালেন, আমরা সে বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবো না।আমার মনে হচ্ছে , এই আসন্ন নির্বাচনে কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী ফ্যাক্টর হতে পারেন। একটি বৃহৎ স্বতন্ত্র এমপি গোষ্টী নিয়ে এবার কোয়ালিশন সরকার হতে পারে।ঋন খেলাপী রাও জাতির শত্রু। এদের মনোনয়ন নিয়েও ভাবা দরকার।যে বিতর্কিতরা জাতিকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে চায় , এদের বিষয়ে সতর্ক হওয়া টাও জরুরী। এখানে একটা রিপোর্ট দেখুন Click This Link প্রার্থী তালিকায় বিতর্কিতরাদুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গি মদদদাতার ভাই, যুদ্ধাপরাধী-----------------------------------------------------------কামরুজ্জামান খান , ভোরের কাগজ / ৭ ডিসেম্বর ২০০৮------------------------------------------------------------ রাজনীতির অপরিছন্নতা দূর করার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলেও আগামী ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কতোটা এর প্রতিফলন ঘটবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন দুই জোটের পক্ষ থেকেই ইতিমধ্যে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে আলোচিত, দুর্নীতি দমন কমিশন ঘোষিত সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ, জঙ্গি মদদদাতা, যুদ্ধাপরাধী এবং নানাভাবে বিতর্কিত কিছু ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইনি জটিলতার কারণে যেসব রাজনৈতিক নেতা নির্বাচন করতে পারছেন না তাদের স্বজনদের দেয়া হয়েছে মনোনয়ন। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অনেক ঋণখেলাপি। এতে করে আগামীতে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ১১ জানুয়ারির পর নির্বাচন ও রাজনীতিতে সংস্কারের যে বুলি আওড়ানো হয়েছিল তাও ব্যর্থ হয়েছে।সূত্র মতে, টাঙ্গাইল-২ আসনে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে জঙ্গি গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোটভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। জঙ্গি মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত জোট সরকারের মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বদলে রাজশাহী-২ আসনে তার ভাই ড. এনামুল হক, স্বাধীনতাযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকাসহ সন্ত্রাসী গডফাদার হিসেবে পরিচিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-২ ও ৬ আসনে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জোট সরকারের মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্থলে তার স্ত্রী রোমানা মাহমুদকে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে, নানা কারণে সমালোচিত সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নোয়াখালী-৫ আসনে, রাজশাহীর আলোচিত সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুকে রাজশাহী-২ আসনে, দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বদলে তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমীন ছবিকে নাটোর-২ আসনে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুর"ল আহসান মুন্সীর স্থলে তার স্ত্রী মাজেদা আহসানকে কুমিল্লা-৪ আসনে, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আলোচিত সাবেক সাংসদ হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গকে শরিয়তপুর-৩ আসনে, ঢাকার শ্যামপুরে নাগরিক আন্দোলনে সম্মিলিত জনতার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী সাবেক সাংসদ সালাউদ্দিন আহমেদ (দৌড় সালাউদ্দিন)-কে ঢাকা-৫ আসনে, একই অভিযোগে চিহ্নিত সাবেক সাংসদ শহিদুল আলম তালুকদারকে পটুয়াখালী-২ আসনে, একই অভিযোগে আলোচিত সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন পিন্টুর বদলে তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনাকে ঢাকা-৭ আসনে, এম এ কাইয়ুমকে ঢাকা-১০ আসনে, টঙ্গীর জনপ্রিয় সাবেক সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি নুর"ল ইসলাম সরকারের ভাই হাসান উদ্দিন সরকারকে গাজীপুর-২ আসনে, দুর্নীতি দমন কমিশনের তালিকাভুক্ত সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ ডা. দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন বাবুকে ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে, দুর্নীতির বটবৃক্ষ হিসেবে আলোচিত বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সারোয়ারকে বরিশাল-৫ আসনে, দুর্নীতি দমন কমিশনের তালিকায় সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ জোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে পটুয়াখালী-১ আসনে, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদকে কক্সবাজার-১ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।সরাসরি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত জামাত নেতাদের মধ্যে শেরপুর-১ আসনে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামার"জ্জামান, আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহার"ল ইসলামকে রংপুর-২ আসনে, মওলানা আব্দুস সোবাহানকে পাবনা-৫ আসনে, মীর কাশেম আলীকে ঢাকা-৮ আসনে, পিরোজপুর-১ আসনে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, আবু সালেহ মোহাম্মদ আজিজ গাইবান্ধা-১ আসনে, সাতক্ষীরা-২ আব্দুল খালেক ওরফে জল্লাদ খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে এম রিয়াজত আলী, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট-৫ আসনে মওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ আসনে হাবিবুর রহমান, কক্সবাজার-১ আসনে এনামুল হক মঞ্জু মনোনয়ন পেয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র থেকে লড়ছেন জয়পুরহাট-১ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুল আলীম।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে আলোচিত জাপা নেতা নাসিম ওসমান নারয়ণগঞ্জ-৫ আসনে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পরিচিত, একাত্তরের রাজাকার মওলানা সাখাওয়াত হোসেন (১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামাত থেকে নির্বাচিত সাংসদ, পরে জাপায় যোগদানকারী) যশোর-৬ আসনে, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর শীর্ষ সহযোগী মুসলিম লীগ নেতা কাজী কাদেরের পুত্র জাপা নেতা ফার"ক কাদের নীলফামারী-৩ আসনে এবং একাত্তরে স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জাপা নেতা আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে।এছাড়া ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করলেও ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বির"দ্ধে উ"চ আদালতে রিট আবেদন করে স্থ’গিতাদেশ পেয়েছেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী বরকতউল্লাহ বুলু, রেদওয়ান আহমেদ, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর (অব) মঞ্জুর কাদের, জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল গনি স্বপন। তারা এখন রয়েছেন ভোটযুদ্ধের ময়দানে। একই তালিকায় নাম রয়েছে আলহাজ এ বি এম আবুল কাসেম, সফি আহমেদ চৌধুরী, মুজিবুল হক, হার"ন উর রশীদ, এ বি সিদ্দিকুর রহমান, নজর"ল ইসলাম, আহমেদ কামর"ল ইসলাম চৌধুরী, এ বি এম আবুল কাসেম, নুর"জ্জামান আহমেদ, এম ইয়াকুব আলী, সৈয়দ সাজেদুল হক, মুস্তাক আহমেদ, শফিউল আজম, মাহফুজুর রহমান, হোসনে আরা বেগম, হাসানুর রশীদ, অশোক পাল, শফিউল আজম মোহসীন, আবদুর রশিদ খান, আশফাক আহমেদ খান, তামান্না জেসমিন, সাদেকুল আলম ইয়াছিন, শফিউল আজম মোহসীনের।
false
rn
কয়েকটি টুকরো টুকরো গল্প ১। আমার ছেলে-মেয়ে ডাক্তার হবে। আরেকজন বলে আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। এই কথা শুনে আরেকজন বলে- আমার মেয়ে বিজ্ঞানী হবে। আর রফিক সাহেব রেগে-মেগে বললেন আমার ছেলে বড় ব্যবসায়ী হবে। ঠিক আছে, আচ্ছা ভালো কথা আপনাদের ছেলে মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিয়ার হবে, বিজ্ঞানী হবে, ব্যবসায়ী হবে। কিন্তু কথা হলো, তাহলে এই সমাজে কাদের ছেলে মেয়ে জঙ্গি হয়, সন্ত্রাস হয়, দুর্নীতিবাজ হয়? এই সমাজে কি খারাপ লোকজন নেই? অবশ্যই আছে। অনেক আছে। তাদের বাবা-মাও এক সময় আপনাদের মতো বলেছে- আমার ছেলে হেন হবে, তেন হবে। কিন্তু শেষ মেষ জঙ্গি হয়, সন্ত্রাস হয়, চোর হয় নেশা গ্রস্ত হয়। সব বাবা-মা'ই তো ছেলে মেয়ে সম্পর্কে ভালো-ভালো সব কিছু ভেবে রাখেন। কিন্তু তা তো হয় না। সবচেয়ে বড় কথা কোনো বাবা মা'ই কখনও বলেন না- আমার সন্তান একজন ভালো মানুষ হবে। তার মানে একজন ডাক্তারের দাম আছে, ইঞ্জিয়ারের দাম আছে ব্যবসায়ীর দাম আছে- ভালো মানুষের দাম নেই। কাজেই বাবা-মা'রা তাদের সন্তানদের ভালো মানুষ বানাতে চান না। ২। সন্তান হয়ে যাওয়ার পর মায়েদের আর চাকরি করা ঠিক না। বাবা তো চাকরি করছেন'ই। বাসায় যতই দাদী, চাচী, নানী অথবা কাজের লোক থাকুক। মায়ের আদর-ভালোবাসা অন্য কেউ দিতে পারে না। হুম, সন্তান হওয়ার আগ পর্যন্ত চাকরি করা যেতে পারে। যে মা সারা দিন চাকরি করে বেড়ায়, সেই সন্তানের কষ্টের শেষ নেই। সেই সন্তানের খাওয়া-দাওয়া, গোছল, ঘুম এবং লেখা-পড়া কিছুই ঠিক ভাবে হয় না। মানসিক বিকাশ সুন্দরভাবে হয় না। চাকরিজীবি মায়ের সন্তানদের কষ্ট দেখে- আমার খুব কষ্ট হয়। আবার অনেক মা আছেন, সন্তান হওয়ার পর যত ভালোই চাকরি হোক না কেন, সন্তাননের মুখের দিকে তাকিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। তার কাছে সন্তান আগে। আমি মনে করি, যে সমস্ত মেয়েরা মনে করে- চাকরিটাই সব তাদের বিয়ে করার দরকার নেই। সন্তান দরকার নেই- তারা চাকরি করে বেরাক। ৩। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর, সবার সাথে ধাক্কাধাক্কি করে যখন বাসে উঠতে পারি না- তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। একেবারে চোখে পানি এসে পড়ে। তখন মনে মনে বলি- যাহ্‌ রোদের মধ্যে হেঁটেই যাবো। ৪। অনেক বছর আগে একবার, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের এক পুকুরে গোসল করতে নামি। টলটলা আর কি ঠান্ডা পানি। গায়ে সাবান মাখতেই হঠাৎ সাবানটি পানিতে পড়ে যায়। আমি ডুব দিয়ে সাবানটি খুঁজতে থাকি। কিছুতেই সাবানটি খুঁজে পাচ্ছি না। এমন সময় আমি পা পিছলে পুকুরে ডুবে যাই। জানি না সাঁতার। পুকুরের পানি খেয়ে পেট গেল ফুলে, চোখে অন্ধকার দেখছি- তখন আমি নিজেকে আবিস্কার করলাম পুকুরের মাঝখানে এসে পড়েছি। তারপর একেবারে পানিতে ডুবে গেলাম। একজন খুব রুপসী নারী সেদিন আমাকে বাঁচিয়ে ছিলেন। কি সুন্দর মায়া ভরা মুখ তার। মাথা ভরতি চুল। বড় বড় চোখ। চোখে মোটা করে কাজল দেয়া। তার নাম আজ আর আমার মনে নেই। কিন্তু গতকাল রাতে তাকে স্বপ্নে দেখি। ... ৫। 'আয়নাবাজি' মুভি টা আধা ঘন্টা দেখার পর আর দেখতে ইচ্ছে হয়নি। আহামরি কিছু না... শুধু শুধু মানুষ আজাইরা এত প্যাচাল পাড়ল !!! একটা এভারেজ সিনেমা'র এত ঢাক-ঢোল পিটানোর কিছু নেই।৬। ইদানিং আমার খুব ইচ্ছা করে বড় কোনো প্রতিষ্ঠানে বড় কোনো পদে চাকরি করি। আমি মনে করি, আমার যোগ্যতা আছে। হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানে আমি দেখেছি- অযোগ্য সব লোক বড় বড় পদে বসে আছে। তারা জানে না কোনো কাজ। কিন্তু মামা চাচার জোড়ে বড় পদে বসে আছে, অনেক টাকা বেতন নিচ্ছে। খুব দুঃখ হয় যোগ্য লোকেরা চাকরি পাচ্ছে না, মামা চাচা না থাকায়। ব্র্যান্ডিং আমি খুব ভালো পারি। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং করে সেই প্রতিষ্ঠান আমি খুব উঁচু তে নিয়ে যেতে পারি। নানান রকম আইডিয়া আছে আমার, বুদ্ধি আছে আমার। পত্রিকা অফিস হোক, ডিজিটাল মার্কেটিং হোক বা কোনো করপোরেট হোক। প্রতিভা থাকা স্বত্তেও হাত পা নিয়ে চুপ করে বসে আছি। আমার মা প্রায়ই বলেন, ঘাট হয় আঘাট, আর আঘাট হয় ঘাট। এই সমাজের নিয়ম এই রকমই হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:১৫
false
rg
বাংলাদেশের নব্য ধনিক শ্রেণীর বিদেশে নিরাপদ সেকেন্ড হোম বনাম আমাদের মহা কাঙ্খিত রেমিট্যান্স।। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশীরা কাজ করেন তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করে, নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে, মাথার ঘাম পায়ে ঝড়িয়ে, নিকট আত্মীয়দের মুখে একটু হাসি ফোটাতে দেশে টাকা পাঠান। যাকে আমরা অর্থনীতির ভাষায় বলি রেমিট্যান্স। বাংলাদেশে এখন বৈদিশিক মুদ্রা থেকে আসা এই রেসিট্যান্স-ই প্রধান বৈদেশিক খাত থেকে আয়। যা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার প্রধান ও অন্যতম কারিগর। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে এক শ্রেণীর তথকথিত ধনিক শ্রেণী, মূলত শাসক শ্রেণীর বংশধর, বা পোষ্য, বা স্বজন, বা আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়, ভাইবোন-ভাগ্নে, মামা-খালারা বাংলাদেশ থেকে অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করেন। বিদেশে তারা নিরাপদ সেকেন্ড হোম গড়ে তোলেন। যাতে দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর যদি অর্থ লুটের কারণে বা অনিয়মের কারণে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়, তখন আরমসে সেই সেকেন্ড হোমে কেটে পড়া যায়। সেকেন্ড হোম তাই এক ধরনের নিরাপদ ও অর্থ পাচারের এক আধুনিক কৌশল। বাংলাদেশ থেকে সারা বছর কত হাজার কোটি টাকা এই সেকেন্ড হোমে পাচার হয় তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে আমেরিকার ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক এর এক হিসেব অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে অন্তঃত এক লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশে রেমট্যান্স কত আসলো? ১৯০ বছর বৃটিশরা এদেশ শাসন করেছে। ওই ১৯০ বছর এদেশের সকল সম্পদ লুন্ঠন করে তারা বৃটেনে পাঠিয়েছে। তারপর ২৪ বছর পাকিস্তানীরা এদেশ শাসন করেছে। ওই ২৪ বছর তারা এদেশের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করেছে। আর গত ৪২ বছর ধরে বাংলাদেশ স্বাধীন। কিন্তু বিদেশে সম্পদ পাচার কিন্তু বন্ধ হয় নি। কারা বাংলাদেশ থেকে বাইরে সম্পদ পাচার করছে? সোজা কথায় এর জবাব হল গত ৪২ বছরে তৈরি হওয়া একটি নব্য ধনিক শ্রেণী। এই নব্য ধনিক শ্রেণীর চরিত্রও সেই বৃটিশ শাসক, পাকিস্তানি শাসকদের মত। তারা কারা? গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের এমপি-মন্ত্রী'র ভাই ব্রাদার, আত্মীয়-স্বজন, তাদের স্বজনপ্রীতির জোরে অর্থ লুট করা একটি লুটেরা শ্রেণী। এরা হাল আমলের হলমার্ক-ডেসটিনি-রানা প্লাজার মালিকদের মতো একশ্রেণীর মালিক। যারা দেশের সম্পদ কোনো না কোনো ভাবে লুট করেছে। সেই লুটে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা করেছে এই ৪২ বছরের শাসকদের কেউ না কেউ। সেই দলে বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে শেখ হাসিনা যেমন আছেন, মেজর জিয়া থেকে খালেদা জিয়া যেমন আছেন, তেমনি আছেন জেনারেল এরশাদ-জেনারেল মঈন গংরা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত এই ৪২ বছরে যারাই দেশ শাসন করেছে তারাই এই লুটের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তাকারী। কখনো কখনো এরা আবার পার্সেন্টেজ ব্যবসা করেছে। কখনো ৫ পারসেন্ট কখনো ১০ পারসেন্ট বা কখনো ১৫ পারসেন্ট। তার মানে এই ৪২ বছরে যারা দেশ শাসন করেছে তাদের মধ্যেও বিদেশে দেশি সম্পদ পাচার করার একটি চক্র সব সময় সক্রিয় ছিল। সেই চক্রটি এখনো হাল-আমলের হলমার্ক-ডেসটিনি-রানা প্লাজার মালিকদের মতো সক্রিয় রয়েছে। রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধার নামে এরা ৪২ বছর ধরে দেশের সম্পদ বাইরে পাচার করেছে এবং এখনো করছে। তারা কারা? আমরা সবাই তা আন্দাজ করতে পারি। বাংলাদেশের যারা কৃষক, যারা শ্রমিক, যারা গরিব মানুষ, তারা দেশে থাকলেও পরিশ্রমই তাদের একমাত্র মাধ্যম। পরিশ্রম করলে দু'বেলা খাওয়া জোটে। পরিশ্রম না করলে না খেয়ে থাকার নিয়ম। এই শ্রেণীর পরিবার থেকে মেধাবী কোনো ছেলে বা মেয়ে দেশের বাইরে যাবার সুযোগ পেলে সেখান থেকে সে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। এই শ্রেণীর পরিবার থেকে যারা বাইরে শ্রমিক হিসেবে গেছে তারা দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। কেন পাঠাচ্ছে? কারণ, তারা সবার উপরে দেশ ও নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ভালোবাসে। নিজের হাজার পরিশ্রমের বিনিময়ে এরা দেশের হাড্ডিসার মানুষগুলোর মুখে একটু হাসি ফোটাতে চায়। এরাই দেশের অর্থনীতিকে দেশে থাকলেও বা বিদেশে গেলেও সচল রাখছে। বিপরীতে, লুটেরাদের শ্রেণী, দালালি, কালোবাজারী, দুর্নীতি বা অবৈধ উপায়ে টাকা কামিয়ে বিদেশে পাচার করছে। সেখানে নিজেদের পরিবার ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সেখানে ব্যাংকে টাকা জমা রাখছে। সেখানকার ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ছেলেমেয়েরা সেশনজট মুক্ত পরিবেশে ভালো লেখাপড়া শিখছে। আর লুটেরার যিনি চালক তিনি বাংলাদেশে বসে এসব করছেন, বা তার মনোনীত বা পোষ্য ক্যাডাররা ফাই ফরমায়েস খাটছেন। খুন, গুম, চাঁদাবাজি, টেন্ডাবাজি, দখল, নদী ভরাট, খাল ভরাট, খাস জমি দখল, মার্কেট দখল, সরকারি সম্পদ দখল, দুর্নীতি, ঘুষ ইত্যাদি করে এরা অর্থ বানাচ্ছে। এদের সহযোগিতা করছে আমাদের স্বাধীন দেশের নতুন শাসকরা। বঙ্গবন্ধু থেকে বর্তমান সময়ের শেখ হাসিনা পর্যন্ত (১৯৭১ থেকে ২০১৩) সকল শাসকদের থেকেই এই সব লুটেরা সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। এখনো পাচ্ছে। সেই দলে মোটা দাগে যদি আপনি সজিব ওয়াজেদ জয়, বা পুতুলের নাম বলেন, বলতে পারেন। সেই দলে আপনি যদি তারেক জিয়া বা কোকো'র নাম বলেন বলতে পারেন। এরা কেউ সেই তালিকার বাইরে নন। সুযোগ সুবিধা সবাই নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। আপনি লন্ডনে গেলে নব্য এই বাংলাদেশী ধনিক শ্যেনীর খোঁজ পাবেন। আপনি কানাডা গেলে এই শ্রেণীর খোঁজ পাবেন। আপনি আমেরিকা গেলে নব্য এই ধনিক শ্রেণীর খোঁজ পাবেন। আপনি অস্ট্রেলিয়া গেলে এই শ্রেণীর খোঁজ পাবেন। আপনি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দুবাই, আবুধাবি, সুইডেন, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড গেলেও এই নব্য বাংলাদেশী ধনিক শ্রেণীর সন্ধান পাবেন। এরা সেখানে নিরাপদ সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে। পরিবার ছেলেমেয়ে সেখানে থাকে। পরিবার প্রধান নিজ দল ক্ষমতাসীন থাকলে বাংলাদেশে অবস্থান করেন। নিজ দল বিরোধী দলে থাকলে ক্যাডারদের বা অনুগত বাহিনীর উপর সবকিছুর দায়িত্ব দিয়ে তিনিও পরিবারের সঙ্গে তখন সেকেন্ড হোমে নিরাপদে থাকেন। কানাডায় আপনি মাত্র দেড় লাখ কানাডিয় ডলার দিলেই পাচ্ছেন বিনিয়োগ কোঠায় নিরাপদ সেকেন্ড হোম। বাংলাদেশী টাকায় যা মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ টাকার মতো। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, সুইডেন, বৃটেন, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি বহু দেশে এসব লুটেরা অনায়াসে একটি সেকেন্ড হোম বানিয়ে রেখেছেন বা রাখছেন অথবা বানানো পথে রয়েছেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হলেই এরা নিরাপদ সেকেন্ড হোমে পাড়ি জমাচ্ছেন। কারা এদের সুযোগ করে দিচ্ছেন? সহজ সরল জবাব- হাসিনা-খালেদা গং। মালয়েশীয় সরকার ২০০২ সাল থেকে ‘সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচি চালু করার পর ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে এক হাজার ৮৬২ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় নাগরিকত্ব কিনেছেন (সূত্র: ডেইলি স্টার, ২৭ এপ্রিল, ২০১২)। আর সেই হিসেবে তাঁরা (১৮৬২ জন নব্য ধনিক) প্রায় দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ কারা কিভাবে বিক্রি করছে এটা মনে হয় সবার কাছেই এখন পরিষ্কার। দেশ থেকে যারা বা যাদের অনুসারী বা দোষর বিদেশে সম্পদ পাচার করছে তারাই সেই দলের লোক। এদের পরিচয় নব্য ধনিক শ্রেণী। এদের কারা তৈরি করলো? বিগত ৪২ বছরের আমাদের শাসকরাই এদের হাতে ধরে তৈরি করেছে। এরা বিদেশে সফরে গেলে তারা মেজবান খাওয়ান। উপহার সামগ্রি দেন। আরো কত কি!!! দুঃখের বিষয় হল, আমাদের রেমিট্যান্সের হিসাব থাকলেও বিদেশে এই নব্য বাংলাদেশী ধনিক শ্রেণীদের পাচার করা টাকার কোনো সঠিক হিসেব নেই। তবে সেটি যে কথিত রেমিট্যান্সের চেয়ে কয়েক হাজার গুন বড় তা আন্দাজ করতে রাতের ঘুম হারাম করতে হয় না। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫
false
ij
উদয়শঙ্কর। উদয়শঙ্কর, পাশে স্ত্রী অমলা শঙ্কর। প্রতিভাবান জাত শিল্পী ছিলেন উদয় শঙ্কর; ভারতীয় নৃত্যকলায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে সারা বিশ্বে ভারতীয় পৌরাণিক নৃত্যকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। চল্লিশের দশকে বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরী উদয় শঙ্করে নাচের স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পঞ্চাশের দশকে বুলবুল চৌধুরীর অকাল মৃত্যু হলেও তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাফা (বুলবুল আকাডেমী অভ ফাইন আর্টস) বাংলাদেশে প্রধানতম নৃত্য চর্চার কেন্দ্র । সে জন্যই বাংলাদেশের নৃত্য জগতে উদয় শঙ্করের প্রভাব আজও অনুভূত হয়। সেকালে, অর্থাৎ উনিশ শতকের শেষার্ধে যশোরে শ্যাম শঙ্কর নামে একজন ব্যারিষ্টার বাস করতেন । উদয় শঙ্কর ছিলেন তাঁরই বড় ছেলে; জন্ম, ৮ ডিসেম্বর। ১৯০০। শ্যাম শঙ্কর ছিলেন আলোকিত মানুষ; কাজেই তাঁর ছেলেমেয়েরা ছোটবেলাতেই রংতুলি, গান ও নাচে হয়ে উঠেছিল পটু । উদয়ের তিন ভাই। রাজেন্দ্র, দেবেন্দ্র এবং রবীন্দ্র। এই রবীন্দ্রই বিখ্যাত সেতার শিল্পী পন্ডিত রবি শঙ্কর। যা হোক। নাচ ছাড়াও উদয় ভালো ছবি আঁকতেন। কিশোর বয়েসে বোম্বের জে জে স্কুল অভ আর্টসে ভর্তি হয়েছিলেন। তারপর লন্ডনের রয়েল কলেজ অভ আর্ট-এ পড়ার জন্য বিলেত গেলেন। সময়টা কুড়ি দশকে। সে সময় উদয় 'রাধাকৃষ্ণ' ও 'হিন্দু বিয়ে' নিয়ে দুটি ব্যালে নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল লন্ডনের কভেন্ট গার্ডেনে । সেখানেই শো শেষে রুশ ব্যালেরিনা আনা পাভলভার সঙ্গে পরিচয়। এক সঙ্গে দু'জন কাজ করেন। দুজন দুজনের কাছ থেকে শেখেন। যা পরে দুজনের জীবনেই প্রভাব রেখেছিল। ১৯২৯ সালে ভারতবর্ষে ফিরে আসেন উদয় এবং নিজস্ব নৃত্যদল তৈরি করেন। নাচ শেখাতেন। অমলা নামে একজন ছাত্রী ছিল । তাকেই বিয়ে করলেন উদয়। সময়টা তিরিশের দশকে। ১৯৩২ থেকে ১৯৬০ সাল অবধি নৃত্যদল নিয়ে ইউরোপের নানা দেশ সফর করেন উদয়। ১৯৩৭ সালে আমেরিকায় যান। ১৯৪২ সালে উদয়ের পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করে। আনন্দ শঙ্কর। বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক। উদয়ে এক কন্যাও রয়েছে। মমতা শঙ্কর। ইনি পশ্চিমবঙ্গের একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী। যা হোক। ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি জায়গার নাম আলমোরা। সেখানে উদয় শঙ্কর 'ইন্ডিয়ান কালচার সেন্টার' নামে একটি নাচ শেখার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সে প্রসঙ্গে একজন গবেষক লিখেছেন, His school was a waterhole for many aspiring and talented dancers. Many graduates of the school have gone into other areas of fine arts. The famous Bombay film director, Guru Dutt had attended Uday’s school. The famous classical singer, Srimati Laxmi Shankar, had attended Uday’s school at Almora. She was advised by Ravi Shankar to change her career from dancing to singing. She later married Rajendra Shankar, the younger brother of Uday Shankar. ২য় বিশ্বযুদ্ধের জন্য নাচের স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে কোলকাতায় ১৯৬৫ সালে স্কুলটি আবার খোলা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ সালে এই অনন্য নৃত্যশিল্পীর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী অমলা শঙ্কর স্কুলের দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন। উদয় শঙ্করের প্রতিভা সম্বন্ধে এ এইচ জাফর উল্লাহ লিখেছেন-Uday Shankar was a born dancer. He never took any formal training in classical dances in India before he went to England in 1929. While in Europe he was exposed to ballet. The graceful movement of ballet dancers must have impressed him. He incorporated ballet movements in Indian dance for the first time; thus, he engendering a "new kind" of Indian dance. His dances were rooted in Hindu mythology; he used amply classical raga music in his choreography. The Europeans loved his "new style" of dancing. Knowing how rigid our Indian dances were in the 1920s and 1930s, it took a while before Indians started appreciating Uday’s "new style," which was hybrid in nature. The old folks were not enthused by Uday’s “new style” of dance but the young generation was awed by his style and many of them had joined his school in Almora, U.P. তথ্যসূত্র: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৪১
false
hm
মাস্টারকার্ডঅলা নৌপরিবহনমন্ত্রীরা কিছু জিনিস টাকা দিয়ে কেনা যায় না। বাকি সবকিছুর জন্যে রয়েছে মাস্টারকার্ড। -মাস্টারকার্ডের বিজ্ঞাপন মানুষের জীবন কি এই কিছু জিনিসের মধ্যে পড়ে? প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করতে হয়, মানুষটা কি বাংলাদেশের? যদি বাংলাদেশের হয়, তাহলে আর "কিছু জিনিস" নয়, সে চলে যাবে "বাকি সবকিছু"র খাতে। আমাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পগুলোর কী অবস্থা, আমি জানি না, কিন্তু বুঝি, মানুষের ভারে বাংলাদেশ কাঁপছে। কেবল মানুষের ওজনেই তলিয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবনের দাম। অর্থনীতির জটিল গ্রন্থিময় পথ ধরে ক্রমশ নিচে নেমে গেলে তার ভিতের কাছে গেলে পাথরে খোদাই হরফে লেখা দেখি, যার সরবরাহ অফুরান অথচ চাহিদা কম, তার মূল্যও কম। বাংলাদেশে মানুষের জীবন এমনই এক স্বল্পমূল্যে ক্রয়যোগ্য পণ্যের কাতারে চলে গেছে। বাংলাদেশে লঞ্চডুবি তো কোনো নতুন ঘটনা নয়। নতুন কোনো কায়দাতেও লঞ্চ ডুবছে না। বছরের পর বছর ধরে এই একই খবর দেখতে দেখতে এই খবরের মূল্যও মানুষের কাছে কমে গেছে। আবারও সেই অর্থনীতির ফতোয়া, এ ধরনের খবরের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক বেশি। রাস্তায় ট্রাক এসে পিষে দিচ্ছে নসিমন, ট্রেন এসে তুবড়ে দিচ্ছে বাস, গাড়ি উঠে যাচ্ছে ফুটপাথে শায়িত ছিন্নমূলের শরীরের ওপর, আর নদীতে মানুষের ভারে টলতে টলতে এগিয়ে যাওয়া লঞ্চ ডুবে যাচ্ছে ঝড় অথবা অন্য জাহাজের ধাক্কায়। এই মৃত্যগুলো রোধ করা সম্ভব, কিন্তু কারো কোনো গরজ নেই। মানুষের নিরুদ্বেগ নিস্পৃহতার কারণে প্রতিদিন, আমি আবারও বলছি, প্রতিদিন খবরের কাগজে এই মৃত‌্যুর খবর পড়তে হয় আমাদের। এই খবরগুলো পড়তে পড়তে আমরা একটু একটু করে অমানুষ হয়ে উঠি, আমরা ভুলে যাই "পাঁচজন নিহত হয়েছে" কথাটার অর্থ পাঁচটি মানুষ মারা গেছে, তাদের পরিজনের পৃথিবী থেকে মুছে গেছে পাঁচটি সতেজ নাম, সর্বমোট একশো দেড়শো দুইশো বছরের যাপিত জীবনের স্মৃতি আর দায় বহন করতে হচ্ছে তাদের স্বজনদের, আর যা কিছু তারা দিতে পারতো আমাদের, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। এই খবরের চাপে আমরা দুইশো লাশের সংবাদ পড়ে পাতা উল্টে চলে যাই আফ্রিদির চ্যাগানো ছবি কিংবা স্কারলেট জোহানসনের ন্যাংটা ছবি প্রকাশ কিংবা ঐশ্বরিয়ার বাচ্চার নাম কী রাখা হলো সেসব খবরে। পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু সত্তর বছর। আমি মানুষের উত্তরণের দীর্ঘ ইতিহাসের পাঠক, মানুষের ক্ষমতায় আস্থাবান, তাই এই সত্তর বছরের এক দিন আগেও যে মৃত্যু ঘটে, তাকেও মানুষের ব্যর্থতা হিসেবেই পরিগণনা করতে শিখেছি। মেঘনায় লঞ্চডুবিতে যারা মারা গেছে, তাদের মৃত্যুও আমাদের ব্যর্থতায় ঘটেছে। আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষ ঐ মৃত্যুর দায়ভার আংশিক হলেও বহনে বাধ্য। তবে সবচেয়ে বড় দায় আমাদের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের। বিবেকহীন এই অশিক্ষিত লোকটি এই তিন বছরে নৌপরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে কী কাজ করেছে আমরা জানি না, তার সকাল থেকে সন্ধ্যা নৌপরিবহন ব্যবস্থার কোন উন্নয়নের কাজে সক্রিয়ভাবে লাগে, আমরা জানি না, শুধু জানি, এই লোকটি এই নির্মম দুর্ঘটনার শিকার মানুষগুলোর জীবনের মূল্য নির্ধারণ করেছে তিরিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা। একটা কোরবানির গরুর দাম যে দেশে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়, সে দেশের মন্ত্রী হয়ে এই লোক অম্লানবদনে, কোনো দুঃখ-লজ্জা-গ্লানি প্রকাশ না করে তিরিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকার শাকে নিজের ব্যর্থতা আর অযোগ্যতার মাছটা ঢাকা দিতে চায়। রাতের বেলা কার্গো জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ, এই বিধি আছে, এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা কি এতই কঠিন? শাজাহান খান এই তিন বছর বসে কোন অঙ্গের কেশ উৎপাটন করেছে যে এই সামান্য নিষেধ কার্যকর করার ব্যবস্থা করতে পারলো না? রাতের বেলা জাহাজ চালানোর খরচ বাঁচাতে জাহাজের মাস্টার-সারেং-সুকানিরা আলো জ্বালায় না। ধরে নিলাম তারা অশিক্ষিত মূর্খ কাঠবলদ, কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কী করে? তারা কি এই মাস্টার-সারেং-সুকানির চেয়ে উন্নত কিছু? যদি উন্নতই হবে, তারা কেন এই সামান্য চর্চাটুকু নিশ্চিত করতে পারে না? লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ঠেকানোর ক্ষমতা তো দূরের কথা, লঞ্চের বাতিটার ওপরও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই, এমনই পালোয়ান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। গত পরশু সুইটজারল্যাণ্ডের এক টানেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চুরমার হয়ে গেছে বেলজিয়ামের স্কুলশিশুবাহী এক বাস। বাইশটি শিশু ঘটনাস্থলেই মারা গেছে, ড্রাইভার আর চার শিক্ষকসহ। বেলজিয়ামে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে, বেলজিয়াম আর সুইটজারল্যাণ্ডের বিশেষজ্ঞরা নেমে পড়েছে কী করে দুর্ঘটনা হলো তা খতিয়ে দেখতে। এতে করে ঐ আটাশ জনের প্রাণ ফিরে আসবে না, কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না হয়, সে চেষ্টা নিশ্চিত করা হবে। আর এ জন্যে যা লাগে, তা পড়ে সেই "কিছু জিনিস"-এর মধ্যে, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। এদের এই তৎপরতার পেছনে কাজ করছে দায়বদ্ধতা, বিবেক আর মনুষ্যত্বের চাপ। এরা জানে, এই প্রাণহানির জন্যে কোথাও না কোথাও কাউকে না কাউকে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের মাস্টারকার্ডঅলা নৌপরিবহনমন্ত্রী দায়বদ্ধতা আর মনুষ্যত্ব বানান করে কাগজে লিখতেই পারবে না (নিজের নাম শাহজাহানই তো ঠিকমতো লিখতে পারে না সে, লেখে শাজাহান), তুলনামূলকভাবে সহজ শব্দ বিবেক লিখতে পারলেও পারতে পারে, কিন্তু তার মানে সে বোঝে না। শাজাহানের আগে এই মন্ত্রণালয় চালাতো আরেক বিবেকহীন আকবর, যে লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারকে একটা বা দুটো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ক্ষতিপূরণ দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলো। তিরিশ হাজার টাকায় হয়তো চারটা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল কেনা যাবে। তাই শাজাহান ছাগল-স্কেলে আকবরের তুলনায় এগিয়ে আছে। মানুষ স্কেলে এই দুইজনকেই খুঁজতে যেতে হবে স্কেলের ঋণাত্মক প্রান্তে, হয়তো লঞ্চে করেই যেতে হবে, এমনই দূরবর্তী এক প্রান্তের অমানুষ এরা। আমরা পনেরো কোটি মানুষের চল্লিশ বছর পুরনো জাতি, কিন্তু একজন, মাত্র একজন দায়িত্ববান বিবেকসম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে পারলাম না যে আমাদের নৌপরিবহন ব্যবস্থার অভিভাবক হতে পারে। এই ঘটনার তদন্তের পর দুর্ঘটনার শিকার লঞ্চ মালিক, মাস্টার-সারেং-সুকানি আর অজ্ঞাতনামা জাহাজের মাস্টার-সারেং-সুকানির নামে মামলা হয়েছে। কিন্তু যার দায় সবচেয়ে বড়, সেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আর তার অযোগ্য মন্ত্রীর কাজের কৈফিয়ত কে নেবে? আমরা কি কোথাও গিয়ে তার কাজের হিসাব চাইতে পারি? বলতে পারি, এই তিন বছরে তুমি কী আঁটি বেঁধেছো আমাদের দেখাও? এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধের জন্যে তুমি আর তোমার মন্ত্রণালয় কী করেছে তার বিবরণ দাও জাতির কাছে? আমরা পারি না। কারণ আমরা পাবলিক। সংবিধানে লেখা, আমরা সবকিছুর মালিক, কিন্তু আমাদের জীবনের মূল্য সংবিধানে লেখা নেই। ওটা শাজাহান খান লিখে দিয়েছে, তিরিশ হাজার, আর যদি আমাদের পরিবারের আরো একজন একই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়, তাহলে পঁয়তাল্লিশ হাজার। চার থেকে ছয়টি ছাগলের মূল্যে আমাদের এই মাস্টারকার্ডঅলা নৌপরিবহনমন্ত্রীরা নিজেদের অযোগ্যতার দায়টুকু চুপচাপ কার্পেটের নিচে চাপা দিয়ে দিতে চায়। সড়ক পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতা শাজাহান খানের দাপট আমরা দেখেছি তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরের ঘাতক বাসচালকের গ্রেফতারের পর। শুধু ঢাকা শহরে বেআইনীভাবে বাস-ট্রাক সমাবিষ্ট করেই এই লোকটি ক্ষান্ত হয়নি, সে তার সংগঠনের ক্ষমতা দেখিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যানবাহন ধর্মঘট করে। নৌপরিবহন শ্রমিকদেরও হয়তো অনুরূপ সংগঠন আছে, শাস্তি দিতে গেলে তারাও হয়তো তাদের সংগঠিত শক্তির দৌড় দেখাবে পাবলিককে জিম্মি করে। সংগঠন নাই শুধু পাবলিকের, সংগঠন নাই শুধু ঘুরে বেড়ানো তিরিশ হাজার টাকা দামের জ্যান্ত লাশগুলির, তারা বালটাও ছিঁড়তে পারে না। তারা শুধু বাসের ভেতরে পিষ্ট বা দগ্ধ হয়, নয়তো নদীতে ডুবে অপেক্ষায় থাকে, কখন ডুবুরি এসে লাশ তুলবে বা পেট ফাঁসিয়ে সমাধি করে দেবে জলের নিচেই। ফাঁসির আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে, কিন্তু প্রতিনিয়ত ফাঁসির চেয়েও নির্মম মৃত্যুর খাঁড়া ঝুলে থাকে যাদের মাথায়, সেই সাধারণ মানুষদের কোনো ক্ষমা নাই। তাদের পাপ, তারা বেলজিয়াম জন্মায়নি, তারা সুইটজারল্যাণ্ডে জন্মায়নি, তারা জন্মেছে বাংলাদেশে যেখানে মন্ত্রী হয় আকবর আর শাজাহানের মতো লোক। আমাদের ক্ষমা করে দেয়ার কেউ কি আছেন? প্লিজ মাফ করে দেন এই পনেরো কোটি মানুষকে। মাস্টারকার্ডটা পকেটে রেখে এক দিনের জন্যে একটু তাকিয়ে দেখুন, কত মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন, শুধু আপনাদের অযোগ্যতা আর গাফিলতির জন্য! সংখ্যার আড়ালে প্রতিদিন একটু একটু করে চাপা পড়ে যাচ্ছে জীবিত ও মৃত মানুষের মনুষ্যত্ব! ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়ে শাজাহান খান স্বীকার করে নিয়েছে, ক্ষতির দায়ভার তার। এই লোক পদত্যাগ করবে, এই দুরাশা আমি করি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি জানাই, তিরিশ হাজার টাকায় মানুষ কিনতে চাওয়া এই লোকটাকে পশ্চাদ্দেশে শক্ত একটা লাথি মেরে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দিন। একজন যোগ্য লোককে নিয়োগ দিন নৌপরিবহন মন্ত্রী হিসেবে। পনেরো কোটি মানুষের মধ্য থেকে তেমন একজনকে কি পাবেন না?
false
mk
ইতিহাস সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে জাতির উদ্দেশে নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করেছিলেন। তখন বিষয়টি অনেকের কাছেই কথার কথার মতো শুনিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাগ্রহণের পর শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীকে উপলক্ষ করে ২০২১ সালকে প্রচারে এনেছিলেন, বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ, রেমিট্যান্স, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে উন্নয়ন ঘটাতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে থাকেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ এর সুফল পেতে শুরু করেছে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এখন ২০২১ সালের মধ্যে স্থিতিশীল উন্নয়ন ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।একসময় এসব লক্ষ্য নির্ধারণের কথা খুব বেশি বিশ্বাস করা হতো না; কিন্তু এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে, বিশ্বাস করা হচ্ছে এবং এভাবেই প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে প্রমাণিত হচ্ছে। আসলে দেশ ও জনগণের জন্য যেসব রাজনৈতিক নেতা কাজ করেছেন, সংগ্রাম ও ত্যাগ করেছেন, তাঁরা জাতীয় ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করে কর্মসূচি নির্ধারণ করেছেন, লক্ষ্য স্থির করে সেভাবেই রাজনীতি করেছেন। এ ধরনের রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে দেশ ও জাতি লাভবান হয়েছে। এঁরাই হচ্ছেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ নেতা। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীনতার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা প্রদান করে তিনি লক্ষ্য বাস্তবায়নে বড় ধরনের মাইলফলক স্থাপন করেন। এখান থেকেই ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা সে লক্ষ্যেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তৈরি করেছিলেন এবং নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন। এর ফল হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আধুনিক চরিত্রদানের লক্ষ্য নিয়ে তিনি একের পর এক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে অগ্রসর হচ্ছিলেন। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রার শেষ গন্তব্য সম্পর্কে বুঝতে পেরেই রক্তাক্ত আগস্ট-নভেম্বর ঘটিয়েছিল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। সেই থেকে বাংলাদেশের গতিপথ নির্ধারিত হয়েছিল সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথম সরকার গঠনের সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেন। দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উদার ও কল্যাণবাদী আর্থ-সামাজিক লক্ষ্যাভিমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু করেছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি শেখ হাসিনার লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রা সম্পর্কে বুঝতে পেরে জোটবদ্ধ হয়, দেশি-বিদেশি নানা মহলের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে অনেকেই পা দেয়, ২০০১ সালের নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী পাঁচ বছর ছিল ১৯৯৬-২০০১ সালে সূচিত ধারাকে উল্টে দেওয়ার, ২১ আগস্টও সেই পরিকল্পনা থেকেই সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং বাংলাদেশে দুটি পরস্পরবিরোধী ধারার রাজনীতি এবং ভাবাদর্শের লড়াই অবিরত চলছে। সেই লড়াইয়ে শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর কল্যাণবাদী অর্থনীতির ধারায় এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য পূরণ করে চলছেন। খুব গভীর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ দিয়েই বিষয়টি বোঝা ও উপলব্ধি করতে হবে। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মতো ভিশনারি-মিশনারি নেতা—এ কথা ঢোল পিটিয়ে কাউকে বিশ্বাস করাতে হবে বলে মনে করি না।শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। দলের ভেতরে-বাইরে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়েই তাঁকে রাজনীতিতে নিজের জায়গা নির্মাণ করতে হয়েছে। পিতা তাঁর দীক্ষাগুরু হলেও নিজেকে দেশ, জাতি ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে প্রচুর জানতে হয়েছে, শিখতে হয়েছে। এদিক থেকে বলতে হবে তিনি নিজেকে গড়তে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, অধ্যয়ন করেছেন, এখনো করছেন। এভাবেই তিনি আজকের জায়গায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন। একজন সৃজনশীল রাজনীতির পথ এমনই। আওয়ামী লীগ সৌভাগ্যবান। দলটির জন্ম থেকেই দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ লক্ষ্যাভিমুখী নেতাদের নিয়ে একের পর এক, বছর, দশক ও যুগের পর যুগ পার করতে পেরেছে। জনবান্ধব রাজনীতির কারণে এর প্রতি বৃহত্তর মানুষের যেমন আস্থা তৈরি হয়েছে, আবার জনবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের শিকারও দলটিকে হতে হয়েছে। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে সেই দুর্গম গিরি দলটিকে পার হতে হয়েছিল, আবার পুনরুজ্জীবনও ঘটেছে। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে প্রথমে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের। এরপর ভাঙাচোরাভাবে নানা নামে রাখার চেষ্টা হয়েছিল, তারপর ১৯৮১-পরবর্তী সময়ে নতুন করে পুনরুজ্জীবনের সংগ্রাম শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে দল ক্ষমতায় আসার পর এর আসল রূপটি প্রকাশিত হলেই নতুন করে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা শুরু হয়। তা থেকেই ২০০১-২০০৮ সালের হত্যা, খুন, নির্যাতন ও দেশছাড়া করার কূটকৌশল, আওয়ামী লীগকে পঙ্গু করে দেওয়া ইত্যাদি ঘটে।সেই ষড়যন্ত্র এখন থেমে গেছে, তেমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বিশেষত ২০০৯-পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে তুলে ধরা ইত্যাদিতে যে সাফল্য দেখিয়েছেন, তখন থেকেই তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র, উৎখাতের ষড়যন্ত্র ক্রমাগত হয়ে চলছে। শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় লক্ষ্যাভিমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছেন—এটি তাঁর রাষ্ট্র-রাজনীতির পরিপক্বতার বিষয়। সেটি বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে উদ্ভাসিত করেছে। তাতে দৃশ্যত আপ্লুত হয়ে অনেকেই এখন দলে ভিড়ছে, দলও ভারী হচ্ছে। এখন যখনই কোথাও কিছু চাওয়া-পাওয়ার সুযোগ ঘটে, সেখানে সবাই নিজেকে আওয়ামী পরিবারের বলে দাবি করে, এমনকি নিজেদের আওয়ামী পরিবারের রক্তের ডিএনএ টেস্ট সনদও হাজির করে থাকে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য কতটা সুখের, নাকি ভয়ের, তা নিয়ে রাজনীতি সচেতন মহলের ভয় বা আশঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে সদলবলে তাদের উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান; কিন্তু অনেকেই আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অনেক কিছু আদায় করে নিচ্ছে, যা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। আওয়ামী লীগের এখন সেদিক থেকে এক ধরনের সুদিন এসেছে, এটা কতটা সুসংবাদ জানি না। তবে দলের এই সুদিনকে কাজে লাগিয়ে সুবিধাবাদীরা দলকে জননিন্দিত করতে মোটেও কসুর করছে না, এটি নেতাদের বুঝতে হবে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে যাঁরা হাল ধরেছিলেন, যাঁরা চরম প্রতিকূল অবস্থায় আদর্শকে ধরে রেখেছিলেন, তাঁদের দলের তৃণমূল থেকে ওপর পর্যন্ত মূল্যায়নে রাখার কোনো বিকল্প আওয়ামী লীগের জন্য নেই। এখন যারা আওয়ামী লীগে আসছে তাদের দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৈরি করার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে নেতাদেরই। যাঁরা দলের কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ের নেতৃত্ব পেয়েছেন তাঁরা যদি সেভাবে দলে আদর্শের প্রতি আস্থাশীল নবাগতদের অবস্থান নির্ধারণ না করতে পারেন, তাহলে সর্বত্র সুবিধাবাদীদের অনুপ্রবেশ, বাড়াবাড়ি, শক্তি ও অর্থবিত্তের প্রভাব বিস্তার ছাড়া আওয়ামী লীগের আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটার কোনো কারণ নেই। এখন বিএনপি সে রকম সংকটেই রয়েছে।বিএনপির মতো বড় দলের দুর্দশা দেখে আওয়ামী লীগকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে এই সময়ে আওয়ামীবিরোধী রাজনীতি কিছুটা সমস্যায় রয়েছে। তাদের কৌশলগত ভুল ও শেখ হাসিনাকে অবমূল্যায়নের কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০১৩-১৬ সালে তাদের রাজনৈতিক কৌশল তাদের অনেকটাই জনবিচ্ছিন্ন ও বিদেশি বন্ধুবিচ্ছিন্ন করেছে। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সম্মুখে আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনৈতিক দর্শন যথাযথভাবে উপস্থাপন করার প্রকৃত সময়। সে ক্ষেত্রে দলের মূল এবং অঙ্গসংগঠনগুলোকে লক্ষ্যাভিমুখী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে, জনগণের সম্মুখে নিজেদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে। আমাদের স্বীকার করতে হবে, গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কোনো কোনো নেতা, কর্মী ও সমর্থক নিজেদের স্বার্থোদ্ধারে বিগত বছরগুলোতে লিপ্ত ছিল, এখনো আছে, সংগঠনে নানা ধরনের গ্রুপিং সৃষ্টি করেছে, তাদের কারো কারো কারণে দলের ভাবমূর্তি তৃণমূল পর্যায়ে কোথাও কোথাও বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নির্মোহভাবে এ জায়গাগুলো ও ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে, সে রকম নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চিহ্নিত করে তাদের হাত থেকে সংগঠনকে মুক্ত করতে হবে, প্রতিশ্রুতিশীল, মেধাবী, সৎ ও যোগ্য নেতাদের হাতে সংগঠনকে গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারো অপকর্মের দায়ভার বহন করার প্রয়োজনীয়তা আওয়ামী লীগের রয়েছে কি না, তা বিবেচ্য বিষয়। আওয়ামী লীগকে নিবারণ করতে হবে, ভাবতে হবে ২০৪৯ সালে দলের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিষয়টি। কংগ্রেস ও মুসলিম এই উপমহাদেশে দুটি দল—যারা শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অতিক্রম করেছে। এই ১০০ বছরে কংগ্রেস ভেঙে অনেক রাজনৈতিক দলের জন্ম নিলেও কংগ্রেস নানা চড়াই-উতরাই পার হয়েও দিব্যি আছে এবং থাকবেও হয়তো। মুসলিম লীগ খণ্ডবিখণ্ডিত হলেও পাকিস্তান রাষ্ট্রদর্শনের দল হিসেবে এর কোনো না কোনোভাবে অবস্থিতি থাকবেই।বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অবদান অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো বড় দল ততটা গভীরভাবে লালন করে না। সুতরাং এ দলের বিকাশ ও সক্ষমতার ওপরই মহান মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কাজ নির্ভর করছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ ২০০৯-পরবর্তী সময়ে যে সুযোগ পেয়েছে, তার সামান্যই দলটি এ পর্যন্ত কাজে লাগাতে পেরেছে বা ব্যবহার করেছে। নতুন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে ওবায়দুল কাদের যেসব কথা বলেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি আওয়ামী লীগের মৌল আদর্শ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব উপলব্ধি করছেন। এখন তাঁকেসহ গোটা দলকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ২০৪৯ সালে দলের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা; সেই সময় একদিকে আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে এর আদর্শ ও সাংগঠনিক ভিত্তি কতটা মজবুত করতে সক্ষম হবে সেই চিন্তাভাবনা করা। পৃথিবীতে অনেক পুরনো দল সময়ের চাহিদা মোতাবেক কাজ না করায় সংকটে পড়েছে, এমনকি বিলুপ্তও হয়েছে। আবার কোনো কোনো দল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিকজীবনে অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এখন ভবিষ্যেক নির্মাণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অনুকূলে আছে। সেই অনুকূল প্রতিকূলে চলে যেতে পারে সময়মতো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে। আওয়ামী লীগ ইতিহাস সৃষ্টি করা রাজনৈতিক দল। সুতরাং ইতিহাসের শিক্ষা নিতে দলটির দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। লক্ষ্যাভিমুখে যাত্রা করে দলটি এরই মধ্যে নতুন উচ্চতায় উঠে এসেছে, আরো সুযোগ দলটির রয়েছে, ইতিহাস নির্মাণে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য নির্ধারণ ও পথচলা। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩
false
hm
বাঘাদা, হীরা কত নিলে শুনি? বুদ্ধিজিগোলো কথাটা ব্যবহার করার সমস্যা হচ্ছে, ট্যাটনারা এসে ত্যানা প্যাঁচাবে। জিগোলো হওয়া কি খারাপ? নিজের শরীরের বিনিময়ে কাউকে যৌন আনন্দ দেয়া কি খারাপ? কিংবা আমি কি জিগোলোদের ডাইনিশিকার করতে চাই? এর আগে একবার কতিপয় আত্মবিস্মৃত ব্যক্তিকে সাহিত্যবেশ্যা বলায় কিছু ট্যাটনা এসে বেশ্যাদের দুঃখে কেঁদে মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করেছিলো। হায় হায়, বেশ্যাদের গালি দেয়া হচ্ছে। সমাস বলে যে একটি ব্যাপার রয়েছে, সেই ব্যাপারটি তারা স্বীকার করতে নারাজ। মৃগ আর শাখামৃগ কদাপি এক নয়, যেমন নয় বেশ্যা আর সাহিত্যবেশ্যা, জিগোলো আর বুদ্ধিজিগোলো। বেশ্যা বা জিগোলোদের প্রতি আমার বাড়তি কোনো অনুরাগ বা বিরাগ নেই, যেমন নেই অ্যালুমিনিয়াম কারখানার ঢালাই মিস্ত্রি কিংবা রেস্তোরাঁর বাবুর্চিদের প্রতি। তবে সাহিত্যবেশ্যাদের ভালো পাই না। আরো খারাপ পাই বুদ্ধিজিগোলোদের। আমি এই পোস্টে কথা বলবো ফারুক ওয়াসিফকে নিয়ে। তিনি বামপন্থী কথাবার্তা লেখেন, কিছুদিন আগ পর্যন্ত আচরণেও বামপন্থী ছিলেন, এখন প্রথম আলোতে বাম-বাম গন্ধঅলা আর্টিকেল অনুবাদ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পাঁচ-ছয়জন সদস্যবিশিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের গোদা ছিলেন, প্রচুর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন বলে শোনা যায়। পুলিশের মার খেয়েছেন, সেনাবাহিনীর মার খেয়েছেন, মাস্তানদের মার খেয়েছেন, কিন্তু কদাপি আন্দোলন থেকে সরে আসেননি। পুঁজিবাদের মাকে ভালোবেসেবেসে তিনি প্রতিনিয়ত ঝাঁঝরা করে ফেলতেন তখন। তিনি বাংলার একজন ছোটোখাটো চে গুয়েবাড়া। একটা মোটরসাইকেলের অভাবে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের পথে রওনা হতে পারেননি। সম্প্রতি বাংলার গুয়েবাড়া মশাই সামুব্লগে মেহেরজান চলচ্চিত্রটির জন্যে জান লড়িয়ে দু'খণ্ডের একটি রিভিউ প্রসব করেছেন। তাঁর স্ত্রী, ফারজানা ববি মেহেরজান চলচ্চিত্রটির সাথে জড়িত ছিলেন বলেই ফারুক এই কাজে নামলেন কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না, কিন্তু বুদ্ধিজিগোলোবৃত্তির এক অনুপম নিদর্শন তিনি রাখতে পেরেছেন, এ কথা বলতে কুণ্ঠিত হওয়া চলে না। আমাদের মুরুক্ষু ভেবে বিভিন্ন স্বঘোষিত শিক্ষাগুরু গোছের লোকজন প্রচুর কীওয়ার্ডকণ্টকিত লেখা ছাপান পত্রিকায়, বুদ্ধিজিগোলোপনা আমাদের সামনে তাই নতুন কিছু নয়। কিন্তু ঘাগুরাও আশা করবো সাবধান হয়ে যাবেন, দেয়ারস আ নিউ শেরিফ ইন টাউন। ফারুক ওয়াসিফ লিখেছেন [১], মেহেরের ভালবাসা কেন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা পাবে না? বাঙালি নারীর ভালবাসা চিরতরে সর্বাবস্থায় বাঙালি পুরুষই পাবে। কড়া জাতীয়তাবাদী পুরুষ ইগো এর ব্যতিক্রমকে অজাচার (ইনসেস্ট) ভাবে। আমরা লেখার শুরুতেই টের পেয়ে যাই, পাকিস্তানী সেনার প্রতি বাঙালি নারীর যে বগলকল্পিত প্রেম এই চলচ্চিত্রের আপাত উপজীব্য, তার সাথে দ্বিমতের পথটিতে র‍্যাবের মেটাল ডিটেক্টরের মতো তিনি জাতীয়তাবাদী আর পুরুষ ইগোর আর্চওয়ে বসিয়ে দিয়েছেন। ওপথে গেলেই ট্যাঁ ট্যাঁ করে উঠবে সঙ্কেত, তুমি হালার ভাই কড়া জাতীয়তাবাদী পুরুষ ইগোতে আক্রান্ত। এইজন্য ধর্ষক পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যর প্রতি বাঙালি নারীর প্রেমরে তুমি দ্যাখতারো না। বাংলার গুয়েবাড়া বিস্মৃত হয়েছেন, এই প্রেম ধর্ষিতা নারীদের চলচ্চিত্রায়নের নামে এক নির্মম বিদ্রুপ। এই বিদ্রুপের প্রতিবাদের ওপর তিনি চুন দিয়ে লিখতে চাইছেন, "ইগো"। আর কে না জানে, ইগো নিয়ে কথা তুললে লোকে পিছিয়ে যায়? তবে বাংলার গুয়েবাড়াকে আমি জানিয়ে রাখি, আমার ইগোতে আঘাত লেগেছে। কারণ আমার ধর্ষিতা পূর্বনারীরা প্রেম বাঞ্ছা করতে পাকিস্তানীদের কাছে যাননি, পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে লক্ষ লক্ষ নারীকে ধর্ষণ আর যৌন অত্যাচার করে গেছে পাকিস্তানীরা। এই গোটা সত্যকে এড়িয়ে, সাত-আট মাসের গর্ভিনী তরুণীদের বাঙ্কার থেকে অর্ধমৃত আর মৃত অবস্থায় উদ্ধারের চিত্রকে পাশ কাটিয়ে, গোলাপি প্রেমের কাহিনী যখন আপনি "বীরাঙ্গনাদের নিয়ে সিনেমা" ট্যাগ মেরে শোনাবেন, আমার অহম আক্রান্ত হয়। বীরাঙ্গনাদের কাঁধে এই অজাচারের অভিযোগ দুইদিনের বৈরাগী ফারুক ওয়াসিফরা যখন চাপিয়ে দিতে আসে, আমি প্রতিবাদ করি। গুয়েবাড়া মশাই একবার শুরু করলে সহজে থামেন না। তারপর আমরা দেখি, মেহেরজান ছবি থেকে কী প্রমাণ করার দায়িত্ব আমাদের? যা আমরা আগে থেকেই বিশ্বাস ও বন্দনা করি, এ থেকে তারই নিশ্চয়তা চাইছি কি? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সব গল্প-কবিতা-চলচ্চিত্র-বর্ণনা-বক্তব্য কি সরকারি লাইন অনুযায়ীই হবে? এ বিষয়ক যাবতীয় ভাবনা-চিন্তা-শিল্পের বাঁধা ছক মজুদ আছে কোথাও? সবার দায়িত্বই হচ্ছে সেই ছককে পাহারা দিয়ে যাওয়া এবং কেবল তারই মনোছবি কপি করে সৃজনশীলতার মেহনত বাঁচানো? মুক্তিযুদ্ধের পরিকাঠামোকে এবার ফারুক ওয়াসিফ দিলেন "সরকারি লাইন"এর ট্যাগ। পাকিস্তানীরা আমাদের আক্রমণ করেছে, আমাদের হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে, বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেড়ে ফেলেছে শিশুদের, এসব কি সরকারি বক্তব্য, নাকি একটা জাতির অভিজ্ঞতা? এই সমন্বিত অভিজ্ঞতা থেকে যে চিত্রটি আমরা পাই, সেটিকে দলে-পিষে "মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা" "বীরাঙ্গনাদের সিনেমা" ট্যাগ মেরে প্রচারের অধিকার কি কারো আছে? উত্তর হচ্ছে, অধিকার আছে। এবং দর্শকের অধিকার আছে সেই প্রচারকে প্রতিরোধ করার। যে জাতিব্যাপী অভিজ্ঞতাকে "বাঁধা ছক" বলে আপনি তুচ্ছ করলেন, সেই "ছক" বিকৃত করাকে আমরা অবশ্যই প্রতিরোধ করবো। "সৃজনশীল" হতে গিয়ে একটি জাতির ওপর ঘটে যাওয়া নির্মমতম অবিচারের ইতিহাসের গণেশ উল্টে দেয়া যায় না, তিরিশ মিনিটে দুনিয়া কাঁপানোর চালিয়াতি সব জায়গায় চলে না। ফারুক বলছেন, ওদিকে সিনেমা হলে পাবলিক টাকা দিয়ে টিকিট কিনে ছবি দেখে পয়সা উসুল মনে বাড়ি যাচ্ছে, কথা বলছে। ব্লগ-ফেসবুকের নারায়ে তকবির তাদের কাছে পৌছাচ্ছে না। সেটা পৌঁছে দিতেই প্রথম আলো বিজ্ঞাপন দিয়ে বিতর্ক আয়োজন করে তাদেরও টেনে আনছে। একটা কিছু হচ্ছে। প্রথম আলোতে রুবাইয়াত হোসেনের নামে ছাপা হওয়া লেখাটা কে লিখে দেয়ার খ্যাপটা পেয়েছে, এবার একটু একটু যেন আন্দাজ করা যাচ্ছে। ব্লগ-ফেসবুকে যত প্রতিবাদ, সব এবার "নারায়ে তাকবির" বানিয়ে দিলেন বাংলার গুয়েবাড়া! অথচ ব্লগে তো ফারুক ওয়াসিফ নামটিও অপরিচিত নয়। কয়েক দিন পরপরই তো একটা ছোটোখাটো বিপ্লব করে ফেলেন তিনি ব্লগের পাতায়। আজকে তিউনিসিয়া তো কাল ফিলিস্তিন। আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃত উপস্থাপন নিয়ে সব প্রতিবাদ তার কাছে "নারায়ে তাকবির" হয়ে গেলো? গুয়েবাড়া মহাশয়ের কলম চলছেই, মেহেরজানের মূল ক্রাইসিস ধর্ষক ও ধর্ষিতা, নিহত ও হত্যাকারী কীভাবে পরস্পরকে ভালবাসতে পারে? প্রথমত, উভয়ের মন থেকে ঘটনাটির স্মৃতি মুছে ফেলে যুদ্ধ ও সংঘাতের বাইরের জমিনে তাদের নিয়ে যেতে পারলে। অর্থাৎ অভিজ্ঞতাটা এবং ইতিহাসটাকে নাই করে দিলে, সেই শূণ্য সময়, সেই ফাঁকা স্পেসে তাদের মিলবার একটা সুযোগ থাকলেও থাকতে পারে। এবং সেই ভালবাসার সাক্ষি হতে হলে দর্শকদেরও সব ভুলে যেতে হয়, চলে যেতে হয় ইতিহাস, ভূমি, মানুষ আর স্মৃতির বাইরের সেই শূণ্যস্থানে। কিন্তু স্মৃতি, যন্ত্রণা, ভয় ও ঘৃণা দ্বারা ভারাক্রান্ত একটি গ্রামে কীভাবে তা সম্ভব? সম্ভব নয় বলেই ভালবাসাটা হয় অপরাধী এবং পাত্রপাত্রীদের হতে হয় অভিযুক্ত। তারা হারিয়ে যায় এবং প্রত্যাখ্যাত হয়। সেই নিষিদ্ধ প্রেম হওয়ার আরেকটি পথ হলো, সময়কে উল্টোদিকে প্রবাহিত করে খোদ নির্যাতনের ঘটনাটিকে অতীতেই রদ করা, ঘটতে না দেওয়া। কিন্তু এ দুটোর কোনোটাই সম্ভব নয়। সম্ভব একমাত্র ভবিষ্যতে, যখন উভয় পক্ষ একটা রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে নতুনভাবে মানবিক বন্ধন নির্মাণ করবে, সৃষ্টি করবে নতুন ইতিহাস এবং নতুন বাস্তবতা। এইটুকু পড়ে স্তব্ধ হয়ে যাই। চোখে বাজে "রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়া" কথাটি। যে ধর্ষিতা মাতার ধর্ষণকারীদের বিচার চেয়ে চিৎকার করছি আমরা বছরের পর বছর, তার কানে তার সন্তান ফারুক ওয়াসিফ ফিসফিস করে বলছে, রিকনসিলিয়েশন করে নিন আম্মা। যেই পাঠান কর্পোরাল আপনাকে প্রত্যেক দিন ধর্ষণ করেছে, তার সাথে রিকনসিলিয়েশন করে নতুনভাবে মানবিক বন্ধন নির্মাণ করুন, সৃষ্টি করুন নতুন ইতিহাস, এবং নতুন বাস্তবতা। সেই ধর্ষিতা মাতার আরেক সন্তান হয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে দেখি এই দৃশ্য। এ কোন ফারুক ওয়াসিফ? এ কি সেই লোক, যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণশতকী মানিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলো? যে লিখেছিলো এই সচলায়তনেই [২], কিন্তু আমরা নিরুপায়। এমনকি ভয় পাওয়ার সামর্থ্যও যেন লোপ পেয়েছিল। আমাদের ফেরার পথ ছিল না। কেন ছিল না তা দেশবাসী জানে, আজ তা ইতিহাস। আমরা আমাদের কয়েকজন সহপাঠীর ওপর বীভৎস ধর্ষণের বিচারের জন্য মরিয়া হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বসে ছিলাম; হিংস্র হায়েনার ঘেরাটোপের মধ্যে গায়ে গা লাগিয়ে, মেষশাবকের দলের মতো। তার আগে পেরিয়ে আসতে হয়েছে অনেক কাঁটায় ছাওয়া দীর্ঘ পথ। এ কি সেই ফারুক ওয়াসিফ? কেন ধর্ষণকারীর বিচার হবে না, শাস্তি হবে না, কেন আমার ধর্ষিতা পূর্বনারীদের রিকনসাইল করতে হবে? পাঞ্জাব থেকে আগত কোনো যুবক তো লিখছে না এ কথা, লিখছে প্রথম আলোর সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ! বামহুঙ্কারে দশদিক কাঁপিয়ে পদে পদে পুঁজিবাদের জননীর সাথে সঙ্গমরত ফারুক ওয়াসিফ আজ কী পুঁজি করে রিকনসিলিয়েশন কথাটা হাত ফস্কে লিখে ফেললেন? এটি কি কর্মস্থলের দোষ? এই কথাটি কি তিনি আজকাল ঘনঘন শুনতে শুনতে শেষ পর্যন্ত নিজেও লিখে ফেললেন? তারপর সম্বিত ফিরে পাই। বুঝতে পারি, বড় দৈনিকে কিছু পোষা বামকুত্তা দরকার হয়, যারা সপ্তাহে সপ্তাহে বাম ঘেউ দেবে। বাম-বাম ভাব করা লোকজনকে তাতে করে মাথায় হাত বুলিয়ে সঙ্গে রাখতে সুবিধা। এই বামকুত্তার চাকরির ফাঁকে ফাঁকে খ্যাপ মেরে কিছু ছাগলের ম্যাৎকার দেয়াও ফ্যাশনদুরস্ত জিনিস। ইফ ইউ ক্যান্ট বিট দেম, জয়েন দেম। রুবাইয়াত হোসেনের প্রতি তাই আহ্বান, রাসূলের উপদেশ স্মরণ করুন। ঘাম শুকিয়ে যাবার আগেই বুদ্ধিজিগোলোবৃত্তির মজুরি পরিশোধ করে দিন বাংলার চে গুয়েবাড়াকে। জাহাঙ্গীরনগরের এই প্রাক্তন বিপ্লবীকে অল্প কিছু দিয়ে বিদায় করে অপমান করবেন না। উনি যেন অন্তত একটা মোটরসাইকেল কিনতে পারেন, তারপর আরিচা রোডে দুয়েক মাইল চালিয়ে এসে রচনা করতে পারেন আরেকটি মোটরসাইকেল ডায়রিজ। নাকের বদলে নরুণ পেয়ে আমরা অভ্যস্ত, বিপ্লব না হলেও বই তো পড়তে পাবো। ফারুক ওয়াসিফকে বিনীত প্রশ্ন, রেটটা কত? বাঘাদা, হীরা কত নিলে শুনি? কতটুকু নিলে জাহাঙ্গীরনগরে সেই আন্দোলনের বিনিদ্র রাতগুলো ভুলে গিয়ে এরকম একটা লেখা নামানো যায়? কতটুকু নিলে রিকনসাইল করা যায় মানিকের সাথে? ক্যাম্পাসে আপনার বোনের ধর্ষণকারীর সাথে? ১. মেহেরজান: যুদ্ধ ও ভালবাসার মালিকানার মামলা ১ ২. আবার ইতিহাস সৃষ্টি করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : এই মূহুর্তে
false
fe
জয় হবে মানুষের একটি সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে­ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে শুধুমাত্র পোষা কুকুরের জন্য ব্যয় হয় ষোলো মিলিয়ন ডলার। গেলো কদিন আগে ম্যানহাটানে একজন পেশাজীবীর সঙ্গে আমার পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি প্রফেশনাল ‘ডগ থেরাপিস্ট’। তার প্রাইভেট সেন্টারে শুধুমাত্র অ্যাপয়েন্টম্যান্টের মাধ্যমে কুকুরদেরকে ম্যাসাজ ও বিভিন্ন ধরনের থেরাপি দিয়ে থাকেন তিনি। সমাজের ধনী শ্রেণীই তার ক্লায়েন্ট। একটি কুকুরকে ম্যাসাজ দিতে তার দু/আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। প্রতিদিন তিনি তিন/চারটি কুকরকে এই সেবা দিয়ে থাকেন। কুকুরপ্রতি তিনি চার্জ গ্রহণ করে তিনশত মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে তার আয় প্রতিদিন নয়শত থেকে বারোশত ডলার। সেই হিসেবে বছরে তার আয় কতো, তা হিসাব করলে তাজ্জবই হতে হয়! এই যুক্তরাষ্ট্রেই অনেক শিশু আশ্রম আছে, যেখানে পিতামাতাহীন সìত্মানেরা বড়দিনের সময়ও ভালো দুসেট কাপড় কিংবা দুবেলা উন্নতমানের খাবার পায় না। এখানে অনেক সিনিয়র সিটিজেন সেন্টারও রয়েছে­ যে সব অগ্রজদের খোঁজখবরও করে না কেউ বছরের পর বছর। অথচ অমানবিক অপচয় কিংবা অনৈতিক মোড়লিপনা কাঁপিয়ে তুলছে বিভিন্নভাবে মানবতার সকল উপাখ্যান। তারপরও মানুষ খুঁজে, ধ্বংসের ঝড় পেরিয়ে মানবতার বিজয়। বিশ্বে যদি সাধারণ মানুষের সার্বিক অধিকার দেশে দেশে প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠিত হতো তবে বিশ্বের চেহারা কেমন হতো? এই প্রশ্নের একটি চমৎকার জবাব দিয়েছিলেন মহামহিম এডওয়ার্ড সাঈদ। তিনি বলেছিলেন, তেমনটি ঘটে গেলে দরিদ্র মানবসমাজ আর ধনীদেরকে খুব একটা তোয়াজ করতো না। আর সেই কারণেই ধনী হতে বুর্জুয়া শ্রেণী যতোটা চেষ্টা করে তার চেয়ে বেশি চেষ্টা কিংবা খরচ করে গরিবকে আরো দরিদ্র করে রাখার জন্য। এই যে সত্য চক্রাবর্ত, তার গণ্ডির মধ্যদিয়েই চলছে বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি। ভরসা এই, এখনো আশার আলো আছে। এখনো সমুজ্জ্বল ঐক্যের জন্য কাজ করে যাচ্ছে মানবগোষ্ঠীর জন্য। লেখাটি যখন শেষ করবো, তখনই একটি ছোট্ট সংবাদে দৃষ্টি নিবদ্ধত হলো। ক্যালিফোর্নিয়ার এক নি:সìত্মান ধনকুবের মি. ডিলন রচডেল তার সমস্ত অর্থ সম্পত্তি ক্যান্সার চিকিৎসা গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য দান করে গেছেন। তার সম্পত্তির অর্থমূল্য পঁচিশ বিলিয়ন ডলার। হ্যাঁ, মানুষ এগুবেই। সত্যের বিজয় আটকে রাখা যায় না। দুই. যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ‘এন্টি টেরোরিজম’ কোর্সটি যুক্ত হওয়ার পরপরই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এর ছাত্রছাত্রী সংখ্যা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও এ কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য ট্রান্সফার নিয়ে প্রচুর ছাত্রছাত্রী আসছে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার জন্য। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষক-অধ্যাপক হিসেবে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন এরা সবাই সামরিক, গোয়েন্দা, সিক্যুরিটি সার্ভিস কিংবা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস আইনে দক্ষ ব্যক্তিত্ব। কেউ কেউ বিভিন্ন সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা। ২০০১ সালের আগেও এ কোর্সটির খুব একটা কদর ছিল না যুক্তরাষ্ট্রে। সেপ্টেম্বর ইলেভেনের পর এর কদর বেড়ে গেছে বহু গুণ। অপরাধের ধরন বাড়ছে। পরিসর বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সন্ত্রাস দমনের উপায় নিয়েও বিশ্বের রাজনীতিক, সমাজবিজ্ঞানী, সংস্খা ও সংগঠনগুলো উদ্বিগ্ন। এন্টি টেরোরিজম কোর্সের তিন-চার বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রজন্মের ক্যারিয়ারেও যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবেই অনেকে নিতে চাচ্ছে এটাকে। একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট, বিশ্ব এগুচ্ছে সমসাময়িক ঘটনাবলি এবং সমস্যা সম্ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এ প্রজন্মকেও তাই গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সমসাময়িক অবস্খার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের অধ্যাপক রাশেল রোলিনের সঙ্গে। তিনি এখানে ‘এন্টি টেরোরিজম’ পড়ান। অধ্যাপক রোলিন বলেন, একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে আজ থেকে বিশ বছর আগে কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এমন মুক্ত এবং অবাধ প্রবাহ ছিল না। ইন্টারনেট এখন গোটা বিশ্বকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। এর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সাইবার ক্রাইমও। তাই বাধ্য হয়ে নতুন আঙ্গিকের সেই ক্রাইমকেও রোধ করতে ব্যবস্খা নিতে হচ্ছে সরকারকে। প্রণীত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন আইন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনের বেলায়ও প্রফেসর রোলিনের একই কথা। তিনি বললেন, খুব শিগগিরই হয়তো এমন সময় আসবে যে এই এন্টি টেরোরিজম সিলেবাসটি গোটা বিশ্বে একটা অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে সমাদৃত হবে। যারা উচ্চপদস্খ হবেন­ তারা সবাই এসব বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে দীক্ষিত করে তুলবেন নিজেদের। তার কথার সঙ্গে একমত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। যদি বাংলাদেশের অতীত শিক্ষা সিলেবাসের প্রতি নজর দেই তবে দেখা যাবে, একসময় ছিল যখন একজন পিতা তার সন্তানকে বিএ, এমএ অথবা এমনি সমপর্যায়ের এডুকেটেড করে গড়ে তুলতেই আগ্রহী ছিলেন। সময়ের আবর্তে এখন তা অধিক ক্ষেত্রেই বদলেছে। নতুন নতুন সিলেবাসের প্রতি, বিষয় ও পেশার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। বিশ্ব পরিমণ্ডলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফার্মেসি, ফাইন আর্টস, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, মাইক্রোবায়োলজি, এস্ট্রনমি (মহাকাশ বিজ্ঞান) প্রভৃতি চমকপ্রদ বিষয় শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। পরিবর্তন কিংবা দিনবদলের এই যে অগ্রযাত্রা তা আমাদের আশার আলো দেখায় অবশ্যই। সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৪৭
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার। আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। গোটা বইমেলায় এখন বিদায়ের একটা সুর বাজছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রকৃত বইপ্রেমীদের বাছাই করে বই কেনার দৌড়ঝাপ। কারণ, আর মাত্র চার দিন পরেই ভাঙবে এই মাসব্যাপী বইয়ের হাট। আজ বইমেলায় গেছি চারটায়। ছিলাম একেবারে মেলার শেষ পর্যন্ত। আজ বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে আলোচনার বিষয় ছিল 'বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বাংলাদেশের লোকজ-সংস্কৃতি গ্রন্থমালা'। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুবুল হক। আলোচক ছিলেন অসীমানন্দ গঙ্গোপাধ্যায়, গোলাম কিবরিয়া ভুঁইয়া, মুহম্মদ শহীদ উজ জামান, মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও মাহবুবা নাসরীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। সন্ধ্যায় যথারীতি ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।মেলায় এসেছে অনিন্দ্য প্রকাশনী থেকে কবি রহিমা আফরোজ মুন্নী'র কবিতার বই 'উড্ডীন নদীর গান'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। বইটির দাম রাখা হয়েছে ১২০ টাকা। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় অনিন্দ্য প্রকাশনীর স্টলে (স্টল নং ৩২৬-৩২৮)।মেলায় এসেছে দেশ পাবলিকেশন্স থেকে তরুণ লেখক মাসুদ পারভেজের গল্পের বই 'বিচ্ছেদের মৌসুম'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী নিয়াজ চৌধুরি তুলি। বইটির দাম রাখা হয়েছে ১৩৫ টাকা। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় দেশ পাবলিকেশন্স স্টলে (স্টল নং ৮১)।অমর একুশে বইমেলায় সাধারণত এই সময়ে প্রকৃত বইয়ের পাঠক আর সারা দেশের পাঠাগার ও বইক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম ঘটে। কিন্তু দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ঢাকার বাইরের ক্রেতাদের তেমন কোনো উপস্থিতি নেই। সারা দেশ থেকে এবার অমর একুশে বইমেলায় আসা বইপ্রেমীদের ভিড় বলতে গেলে একদম ছিল না। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে ঢাকার বাইরের বইপ্রেমীরা এবার মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা অনেকটাই মিস করেছেন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঠাগারের জন্য ক্রয় তালিকায় এখন যেসব বই তালিকাভুক্ত হচ্ছে, সেই তালিকা যারা তৈরি করছেন, তাদের উচিত বইমেলায় আসা সঠিক বইটি ক্রয় করা। কোনো ধরনের অনুরোধের আসরের ঢেকুর গিলে অপাঠ্য অখাদ্য কুখাদ্য বই কিনে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পাঠাগারের সেলফ ভর্তি করলে প্রকৃত বই পাঠকদের সত্যি সত্যিই ঠকানো হবে। যদি কেউ এটা করার চেষ্টা করেন তাহলে প্রকৃত পাঠকদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা করা হবে। এমনিতে প্রতি বছর আমাদের কাছে নানান মাধ্যমে অভিযোগ আসে যে, দেশের পাঠাগারগুলোর জন্য একশ্রেণীর সরকারি আমলাদের লেখা বইপত্রের ঢালাউ চালানে গোজামিলের কেনাকাটার এক মহোচ্ছপ করা হয়। সরকারের উচিত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কার্যকরী নীতিমালা অনুসরণ করা। সেখানে কোনো আমলার লেখা অখাদ্য বইয়ের নির্লজ্ব চালান রয়েছে কিনা তা যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা। পাশাপাশি আমাদের সরকারি আমলা কবি-সাহিত্যিকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে রুচিশীলতার পরিচয় দেওয়া। নিজেদের লেখা বইটি যদি সত্যিই পাঠযোগ্য হয়, তার বাইরে তালিকায় কোনো বাজে বই ঢুকতে না দেওয়া। বরং ভালো বই খুঁজে বের করে তা সরকারি ক্রয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। বইমেলায় একটি মজার বিষয় সবার চোখে পড়ছে কয়েকদিন ধরে। সরকারি চাকরি করেন বা সৌখিন কবি-সাহিত্যিকদের যাদের বই এসেছে মেলায়, তাদের বইটি যেদিন মেলার মাঠে আসছে, সেদিন বইটির মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে নজরুল মঞ্চে। আমাদের বিশিষ্টজনেরা বুঝে বা না বুঝে অনেক অখাদ্য-কুখাদ্য বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করছেন। আর সেই ছবি দেখিয়ে এসব বইয়ের লেখকরা এক ধরনের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। যেদিন বইটি মেলায় আসছে সেদিন অফিসের কলিগদের জোর করে বা অনিচ্ছা স্বত্তেও কলিগ বন্ধুর বইটি কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। বা কেউ একক স্পন্সরে বইটি কিনে অন্য কলিগদের মধ্যে বিতরণ করছেন। আর সৌখিন লেখকরা তাদের গোটা আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে মেলায় আসছেন। তাদের হাতে চক্ষু লজ্বার দোহাই দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছেন সেই বই। ফলে বইমেলা থেকে একটি ভালো বই খুঁজে নিজেদের ইচ্ছায় কিনতে পারছেন না এসব ভুক্তভোগীরা। কারণ এদের সবার বই কেনার জন্য সারা বছরে তেমন কোনো বাজেট থাকে না। কিন্তু এমন বিড়াম্বনার অনুরোধের ঢেকুর গিলতে হয়। এদের অনেকে স্বীকার করেছেন যে, কিচ্ছু করার নেই, কি বলব, বসের বই হলে তো কথাাই নেই। আর কাছের আত্মীয় হলেও একই দশা। ফলে এসব করতে গিয়ে একটি ভালো বই তার পাঠক হারাচ্ছে।আজ বইমেলায় যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে বা আড্ডা হয়েছে তারা হলেন- কবি অসীম সাহা, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, কবি ও গবেষক তপন বাগচী, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি শাফি সমুদ্র, কবি কাজী টিটো, নাট্যাভিনেতা ইকতারুল ইসলাম, নাট্যাভিনেতা শাহজাহান সম্রাট, নির্মাতা রানা ভাই ও তার পরিবারবর্গ, লেখক ও নির্মাতা মোস্তফা মনন, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি সরসিজ আলীম, কবি মামুন খান, কবি মাসুদুজ্জামান, কবি পিয়াস মজিদ, কবি ও সম্পাদক নীলসাধু, লেখক ও গবেষক তপন বড়ুয়া, কবি ও প্রকাশক আফজাল আলী খান, কবি শামীমুল হক শামীম, লেখক ও প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার, কবি দিলদার হোসেন, তরুণ কবি ও নির্মাতা ঈয়ন, মেধা প্রমুখ।আজ আমি বই বিক্রি করেছি নয়টি। মুজিব দ্য গ্রেট ৫টি, আমার গল্পের বই পঞ্চভূতেষু ২টি, আর বন্ধু কবি আলফ্রেড খোকনের কবিতার বই 'মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ' ও 'দুর্লভার দিন' এক কপি করে। আমার প্রকাশক মাধবদা জানালেন, মুজিব দ্য গ্রেট আজ তিনি বিক্রি করেছেন ১৪টি। এ পর্যন্ত মুজিব দ্য গ্রেট ৫ দিনে বিক্রি হয়েছে মোট ১০৮ কপি। মেলা থেকে বের হয়ে শাহবাগ আসার পথে আড্ডা হয়েছে কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর, লেখক ও সাংবাদিক তরুণ সরকার, বন্ধু নাহিদ, টাইগার দোয়েল, সুধীর দা, আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কবি'র সাথে। ..................................২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
ij
মনিবাদ_ কি ও কেন_ মনিবাদী নীতিমালা এবং এর পান্ডাপুরুতগন আগের একটা লেখায় পারস্যের এক প্রেরিতপুরুষ সম্বন্ধে লিখেছি। মনি। ওই লেখাটায় মনির জীবনবোধ নিয়ে সামান্য আলোচনা করেছি। যেহেতু জ্ঞানপিপাসুদের মধ্যে মনিবাদ নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে সে কারণেই আরও একটা লেখার প্রস্তুতি নিতে হলো। আসলে আমি যে কোনও তত্ত্বের চেয়ে সেই তত্ত্বের পিছনের মানুষটার জীবন নিয়েই বেশি কৌতূহল বোধ করি বলেই মনিবাদ নিয়ে না-লিখে মনিকে নিয়ে লিখেছি। সে যাই হোক। মনিবাদ বা Manichaeism সম্পর্কে সবচে গুরুত্বপূর্ন দিক হলো- এটি বৌদ্ধধর্ম, জরথুশত্রবাদ ও খ্রিস্টধর্মের জগাখিচুরি এবং বাঙালিমাত্রেই জানেন জিনিসটি কী প্রকার উপাদেয়। ওই ত্রয়ী দর্শন মিলিয়ে দিয়ে সম্পূর্ন একটি নতুন ভাষ্য তৈরি করার সমস্ত কৃতিত্ব অবশ্যই মনির। উপরোন্ত,বুদ্ধ,জরথুশত্র ও খ্রিস্টকে প্রেরিতপুরুষ মানলেও মনির দাবী অনুযায়ী নাকি সহি ওহী কেবলমাত্র তাঁর কাছেই এসেছিল। এসব বিষয়ে কান না-দিয়ে বরং আরও গভীরে প্রবেশ করি। মনিবাদ-এর মূলকথা দ্বৈতবাদ। দ্বৈতবাদ কি? দ্বৈতবাদ মানে বিশ্বের প্রতিপালক একজন নন দু’জন। এবং এই ধারণাটি মনি প্রাচীন পারস্যের জরথুশত্র থেকে সম্ভবত গ্রহন করেছেন। মানুষ তার কালের চিন্তাচেতনায় আচ্ছন্ন থাকে। হেগেলিয় এই ধারণাটি অসত্য নয়। আমরা কেন মনির কথা এতদিন পরে জানলাম? সে যাই হোক। মনি বিশ্বাস করতেন যে বিশ্বজগতে দুটি পরস্পর বিরোধী শক্তির মধ্যে প্রতিনিয়তই সংঘর্ষ হচ্ছে। এর একটি অশুভ (অন্ধকার ও বস্তু); অন্যটি শুভ ( আলো ও আত্মা)। বোঝা যায় বিষয়টি খ্রিস্টানদের ‘গড’ ও ‘ডেভিল’-এর ধারণার অনুরুপ। তা হলে ব্যাতিক্রম কোথায়? মনিবাদ অনুযায়ী দুটি পরস্পর বিরোধী শক্তির ক্ষমতা সমান! কী ভয়ানক ধারণা! তা হলে শুভ ও অশুভ শক্তির ক্ষমতা সমান? মনিবাদ অনুযায়ী তাইই। এবং এখানেই মনিবাদ জগতের অন্যান্য ধর্মীয় দর্শন থেকে স্বতন্ত্র। যেখানে করুনাময় ঈশ্বরের জগতে অশুভের উপস্থিতি নিয়ে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিকগন ইষৎ লজ্জ্বিত-সেখানে মনিবাদীরা দেখুন কত নির্ভার। নির্ভার ও স্বচ্ছ। বজ্রপাতে খোলামাঠে নিরীহ কৃষকের মৃত্যু হলো। নচ্ছার ঈশ্বরের কাজ। পাঁচ বছরের মেয়েশিশু ধর্ষিত হলো। সেই একই অশুভ ঈশ্বরের কাজ। তাই ... মনিবাদের আরেকটি বদখত সিদ্ধান্ত হলো- শরীর=অশুভ আত্মা =শুভ। [মনির কেন মনে হয়েছিল শরীর অশুভ আর আত্মা শুভ। আত্মাকে তিনি কোথায় দেখলেন? যা দেখা যায় না তা শুভ হয় কি করে? মনকে অনুভব করা যায়। আত্মাকে করা যায় কি? আত্মা কি ধারণামাত্র নয়? শরীরে মনই তো যথেস্ট, আত্মার কি প্রয়োজন? রাস্তা পেরিয়ে কোথাও যেতে হলে মনের দিকনির্দেশনা ই যথেস্ট-আত্মার তাতে কি কাজ? অনেকে বলেন, আত্মা পরলোকের। তো তার এখানে কাজ কি! আর শরীরই-বা অশুভ হয় কি করে? ছেঁউড়িয়ার সাঁইজী তো অন্যকথা বলেন। খাঁচার আড়া প’ল ধসে পাখি আর দাঁড়াবে কি সে? আমি এই ভাবনা ভাবছি মিছে? আমার চমকজ্বরা বইছে গায়। এই খাঁচাই শরীর। বাংলার ভাব অনুযায়ী শরীর শুভ-অশুভ কিছুই নয়। একটা বাস্তবতা মাত্র। যেখানে মানুষ রতন বাস করেন। দেহ হল গৃহ। দেহগৃহ। গৃহ অপরিস্কার হয় কি করে?] শরীর অশুভ ভেবেই কি সব ধরনের যৌন সঙ্গম নিষিদ্ধ করেছেন মনি? এমন কী জন্মদানের উদ্দেশে হলেও। নির্দেশটি সাধুসংঘে মানায় কিন্তু মানুষের সমাজে? তা হলে মনিবাদ লোকসমাজে গ্রহনযোগ্যতা পেল কি করে ? মনির জীবদ্দশাতেই তো মতবাদটি ইউরোপ থেকে ভারত বর্ষ অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল; আর মৃত্যুর পরে স্পেন থেকে চিন অবধি। কিন্তু, যে ধর্মে যৌনতার মতন এক অনিবর্যি তাগিদ নিষিদ তা লোক সমাজে গ্রহন যোগ্যতা পায় কী করে? মনিবাদে কেবল যৌনতাই নিষিদ্ধ নয়, মাংস ও মদ্যপানও নিষিদ্ধ। তা হলে? তা হলে লোকসমাজে কি করে মনিবাদ অত গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছিল? আসলে মনির অনুসারীরা ছিল দু’ভাগে বিভক্ত। Elect এবং Hearers.বিষয়টা আসলে বৌদ্ধদের মঠবাসী ও গৃহস্থ উপাসকের মত। মনিবাদী ধর্মের কঠোর অনুশাসনগুলি কেবলমাত্র Elect-দের জন্যই। অন্যদিকে, Hearers-রা বিয়েথা করে সংসারী হতে পারত। এমন কী তারা মদ ও মাংশও খেতে পারত। তবে দুটো শর্ত আছে। কি শর্ত? (১)Hearersদের সব মনিবাদী ধর্মীয় উৎসব পালন করতে হবে আর (২) Elect-দের পুষতে হবে। বোঝা গেল, Elect রা আসলে মনিধর্মের কাঠমোল্লা। তাইই। বলা হয়ে থাকে যে Elect দের আত্মা মৃত্যুর পর সরাসরি স্বর্গে যাবে। আর Hearersদের সৎগতি অত সহজে নয়। এ বিষয়ে অবশ্য দ্বিমত রয়েছে। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বিশ্বের ধর্মগুলির ভাঙ্গনের প্রসঙ্গে দু-একটি কথা বলতে হয়। বিশ্বের সব ধর্মই ভেঙ্গেচুরে খন্ডবিখন্ড হয়ে আছে।জৈনধর্মে- শ্বেতাম্বর, দিগম্বর। বৌদ্ধধর্মে- মহাযান, হীনযান। খ্রিস্টান ধর্মে- রোমান ক্যাথলিক প্রোটেস্টান্ট। ইসলাম- বাহাই, আহমদীয়া, বুহরা। মনি যে নগরে বেড়ে উঠছিল, মানে তৎকালীন বাগদাদ, সে নগরে “এলকাসিটেস” নামে এক ইহুদি সম্প্রদায় ছিল। সেই গোত্রের সঙ্গে মিশে ধর্ম সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠেছিলেন মনি। তেমনি একটি মনিবাদী সম্প্রদায়ের নাম Cathari. এরা বিশ্বাস করত যে Hearers -রা Elect দের মতোই সরাসরি স্বর্গে যেতে পারবে। এবং সেই লাইসেন্স নাকি বেঁচে থাকতেই যোগার করা সম্ভব! এ ব্যাপারে আপনার কি মত? মনিবাদের বিকাশ আগেই বলেছি, মনির জীবদ্দশাতেই মনির মতবাদটি ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষ অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল। এর আরেক কারণ হলো- মনির ধর্মটি ছিল Proselytizing ধর্ম। Proselytizing কি? অভিধান দেখুন। ইউরোপে চতুর্থ শতকে মনিবাদীদের রমরমা ছিল। এমন কী খ্রিস্টধর্মের জন্য হয়ে উঠেছিল প্রবল হুমকি। একটা উদাহরণ দিই। সাধু অগাস্টিন নাকি প্রথম জীবনে প্রায় ৯ বছর মনিবাদী ছিলেন। এবার ভাবুন। চতুর্থ শতকে রোমানরা খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে গ্রহন করে। এর পরপরই মনিবাদীদের ওপর নেমে আসে লাঞ্ছনা। নির্যাতন ও মৃত্যু। মনি তার বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এবার তাঁর অনুসারীরা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াল। আগের লেখাটায় বলেছি-মনির জন্ম হয়েছিল মেসোপটেমিয়ায়। আরও নির্দিস্ট করে বললে বর্তমান বাগদাদে। তো সেখানে মনিবাদের কি হলো? পারস্য ও মেসোপটেমিয়ায় মনিবাদ প্রথম থেকেই টিকে ছিল। ওখান থেকেই মধ্য এশিয়া, তুর্কিস্থান ও চিনে (বেশ সচেতনভাবেই আমি এই বানান লিখছি) মনিবাদ ছড়িয়ে যায়। এমন কী চিন ছাড়িয়ে তাইওয়ান অবধি পৌঁছেছিল। পশ্চিম চিন ও মঙ্গোলিয়া নিয়ন্ত্রন করত Uighursরা। অস্টম শতকের শেষের দিকে Uighursরা মনিবাদ কে তাদের রাস্ট্রীয় ধর্ম করে। সপ্তম শতকে ইসলামের অভ্যদয় মনিবাদের অন্তিম ঘন্টা বাজিয়ে দেয়। অস্টম শতকে বাগদাদকেন্দ্রীক আব্বাসীয়রা মনিবাদীদের ওপর চাপিয়ে দেয় লাঞ্ছনা। নির্যাতন ও মৃত্যু। হায়! বাগদাদেই জন্ম হয়েছিল মনির। এর পরপরই মতবাদটি ইরান ও মেসোপটেমিয়া থেকে ক্রমশ অবসৃত হয়ে যেতে থাকে। নবম শতক থেকে মধ্য এশিয়ায় মনিবাদের প্রভাব কমে যেতে থাকে। ইসলামের প্রসার এর অন্যতম কারণ। ১৩ শতকে মঙ্গোল অভিযানের পর পর মধ্য এশিয়া থেকে মনিবাদীরা সম্পূর্নত উচ্ছেদ হয়ে যায়। মার্কো পোলো অবশ্য পূর্ব চিনে মনিবাদীদের দেখা পেয়েছিলেন। সময়টা ছির ১৩০০ সাল। তখন বলছিলাম যে- চতুর্থ শতকে রোমানরা খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে গ্রহন করে। আর এর পরপরই মনিবাদীদের ওপর নেমে আসে লাঞ্ছনা। নির্যাতন ও মৃত্যু। [যিশু কি জানতেন যে তাঁর দয়াময় মতবাদটি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে অন্যান্য অবিশ্বাসীদের প্রাণ বলি হয়ে যাবে?] রোমানদের নির্যাতন সত্ত্বেও নানা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মনিবাদীরা। যেমন সপ্তম শতকে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যে Paulicians-রা এবং বলকানে Bogomilsরা। Cathariদের কথা তো আগেই বলেছি। এই সম্প্রদায়টি ছিল গুরুত্বপূর্ন। এদেরই অন্য নাম Albigensians । দক্ষিণ ফ্রান্সে ছিল এদের মূল ঘাঁটি। মজার কথা হলো- এরা নিজেদের খ্রিস্টান মনে করত। যদিও এদের মতবাদ মনিপন্থিদের মিল বেশি। মজা এখানেই। ওদিকে গোঁড়া গির্জে পিতারা এদের মনে করত খ্রিস্টবিরোধী। কী সর্বনাশ! সময়টা ত্রয়োদশ শতকের প্রারম্ভ। ইউরোপে তখন পোপ ইনোসেন্টের দোদর্ন্ড প্রতাপ। পরম প্রতাপশালী ছিলেন পোপ ইনোসেন্ট । অতি কট্টরপন্থি ও দারুন অসহিষ্ণু। তিনি Cathari দের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধের ডাক দিলেন। ১২০৯। ক্রসেড আরম্ভ হলো। ১২৪৪। Cathari সম্প্রদায় সম্পূর্নত ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো। অবশ্য চতুর্দশ শতক অবধি Cathari সম্প্রদায়টি ইতালিতে টিকে ছিল। তথ্যসূত্র: Michael H. Hart;The 100: A Ranking Of The Most Influential Persons In History. pp.429-434. সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৫
false
rg
৩৩ বছর ধরে মান্না দে আমার সঙ্গী___ ১৯৮০ সালের নভেম্বর মাস। আমার বড় ভাই সিলেটের তমাবিল সীমান্ত ফাড়ি থেকে দুই মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসলেন। উদ্দেশ্য এই চাঞ্চে মেয়ে দেখে পছন্দ হলে বিয়ে করবেন। বড় ভাইকে আমরা ডাকি দাদা। তো দাদা বাড়িতে আসার পথে ঢাকায় তিন দিন থাকলেন। অনেক কিছু কেনাকাটা করলেন। একটা লেদারের ভেতরে কি কি সব জিনিসপত্র কিনছেন, ওটা খুলছেন না। তালা মেরে রেখেছেন। এর মধ্যে মেয়ে দেখা শুরু হয়ে গেছে। তিন চার গ্রুপ রোজ নানান জাতের নানান সুন্দরী মেয়ের খবর দিচ্ছেন। কোনো কোনোটার মেয়ের পরিবারের খবরাখবর শুনেই আমার বাবা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। দাদা বিয়ে করবেন এই খবর আমার ছোট ফুফু'র বাড়িতে কিভাবে যেনো পৌঁছে গেল। পরদিন ছোট ফুফু, ফুফা (আমরা ডাকি জামাই) আর তাদের বড় ছেলে কবীর ভাই আমাদের বাড়িতে আসলেন। কবীর ভাই আমার চেয়ে দুই ক্লাশ উপরে পড়েন। কিন্তু আমার সঙ্গে ভারী বন্ধু'র মতো সম্পর্ক। আমি, আমার ছোট ভাই জাকির আর বাবা আমাদের বাগানে নারকেল গাছ লাগাচ্ছিলাম। ছোট ফুফু আর জামাই বাড়ির ভেতরে গেলেন। কবীর ভাই আমাদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দিলেন। এক পর্যায়ে কবীর ভাই বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, মামা, দাদা নাকি বিয়ে করবে? জবাবে বাবা বললেন, বিয়া করবে, মেয়ে কই? মেয়ে তো মিলতেছে না? কবীর ভাই বললেন, দাদা'র জন্য মেয়ে কিন্তু আমি একটা দেইখা রাখছি। আমার স্কুলে পড়ে। রোজ আমি সেই মেয়ের পিছু পিছু স্কুল থেকে আসার পথে হাঁটি। টুকটাক কথা বলি। শাঁখারীকাঠী মল্লিক বাড়ির মেয়ে। মেয়ের বাবার নাম বললে আপনি চিনবেন। বাবা জানতে চায়, মেয়ের বাবা'র নাম কি? কবীর ভাই জবাব দেন- কাসেম মল্লিক। বাবা আবার জানতে চান- মেয়ে পড়ে কিসে? কবীর ভাই জবাব দেন- এবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবে। বাবা আবার জানতে চান- এতো ছোট মেয়ে তারা এখন বিয়ে দেবে? কবীর ভাই জবাব দেন, আপনি কাউরে পাঠিয়ে প্রস্তাব দিয়ে দেখেন। কিন্তু মামা আমি গেলে কিন্তু বিয়ে হবে না। মেয়ে আমার উপর খুব ক্ষ্যাপা। বাবা জানতে চান- ক্ষ্যাপছে ক্যান? কবীর ভাই জবাব দেন- আমি রোজ তার পিছু নেই, সেজন্য আমারে একদিন খুব বকাঝকা করছে। আপনি মামা আব্বারে পাঠাতে পারেন। পরে ছোট জামাইয়ের নের্তৃত্বে আমার মেঝো ভাই এমদাদ আর বিলু দাদা তিন দিন পর মল্লিক বাড়ি গেলেন মেয়ে দেখতে। এমদাদ ভাই আর বিলু দাদা'র মেয়ে পছন্দ হয়েছে। তারা মেয়েকে উপহারও দিয়ে এসেছে। কিন্তু মেয়ের বাবা একটা শর্ত দিয়েছেন- মেয়ের পরীক্ষার আগে কোনো বিয়ে হবে না। আর তারাও আমাদের বাড়িতে একটা গ্রুপ পাঠাবেন ছেলে দেখতে। তো, মেয়ের একমাত্র বড় ভাই আর এক মামা ছেলে দেখতে আসলেন তিন দিন পর। দাদাকে তাদের পছন্দ হয়েছে। মেয়ের ভাই মাকে মাঐ সাহেবা আর বাবাকে তালঐ সাহেব সম্মোধন করলেন। মেয়ের মামাকে আমি ভুলে ইলিয়াস মামা বলে ডাকলাম। ইলিয়াস মামা সিখারেট খান। আমাকে নিয়ে আমাদের বাগানে গিয়ে তিনি সিগারেট খেলেন। সেই সুযোগে ইলিয়াস মামা আমার একটা নাতিদীর্ঘ ইন্টারভিউ করলেন। সেই প্রথম কেউ আমার ইন্টারভিউ করছিল। কিন্তু সেই ইন্টারভিউতে আমার সম্পর্কে প্রশ্নমাত্র একটি। তুমি কোন ক্লাসে পড়? অন্যসব প্রশ্ন আমাদের পরিবারের নানা কুসন্দি সম্পর্কে। আমার মেজাজ ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছিল। আমি তখন পাল্টা প্রশ্ন করলাম, আপনার চুল খুব সুন্দর। বড় হলে আমি আপনার মত লম্বা চুল রাখব। মেয়ের ভাই কাইউম দাদা'র চুলও লম্বা। ইলিয়াস মামা আর কাইউম দাদা সমবয়সি। কিছুক্ষণ পরে কাইউম দাদাও সিগারেট খেতে বাগানে আসলেন। ইলিয়াস মামা'র সঙ্গে আমার খাতির দেখে জানতে চাইলেন, তুমি কোন ক্লাসে পড়? জবাব একটু ঘুরিয়ে দিলাম। কইলাম, আমি এবার স্কলারশিপ দেব। কাইউম দাদা বললেন, বুঝছি, তুমি ফাইভে পড়। তারপর আমার স্কলারশিপ পরীক্ষার ঠিক তিন আগেই ঘটা করেই দাদা'র বিয়ে হল। বিয়ের আগের দিন সেই তালা মারা লেদার খোলা হল। তার ভেতরে একটা ন্যাশনাল ক্যাসেট প্লেয়ার। আর ৬টি ক্যাসেট। একটা মান্না দে, একটা লতা মুঙ্গেশকার, একটা হৈমন্তী শুক্লা, একটা মোহাম্মদ রফি, একটা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর একটা সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। সবগুলো ক্যাসেটের গান বাজলো। ব্যাটারি দিয়ে সেই গান শুনতে হয়। আমার ভালো লেগে গেল মান্না দে'র গান। আমার স্কলারশিপ পরীক্ষা শেষ করে যখন গান শোনার মত অবসর পেলাম, শুনলাম ব্যাটারি নাই। তখনই বাজারে গেলাম বড় আপার হাসের ডিম নিয়ে। চারটা নতুন ব্যাটারি কিনলাম। বাড়িতে এসেই ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করলাম। অবশ্যই মান্না দে'র গান দিয়ে। আমার ছোট ভাই জাকির চাঞ্চ পেলেই ক্যাসেট চেইঞ্জ করে। কোনোটাই ও ভালো মত শোনে না। পরে আমি ব্যাটারি খুলে নিয়ে নিলাম। জাকির বাবা'র টর্চ লাইটের ব্যাটারি নিল তিনটা আর পুরান ব্যাটারি নিল একটা। তাই দিয়ে আবার গান বাজাতে লাগলো। সেই শুরু আমার মান্না দে'র গান শোনা। সেই দশ বছর বয়স থেকেই আমি মান্না দে শুনি। প্রিয় মান্না দে'র অসংখ্য কালেকশান ছিল আমার। নতুন ক্যাসেট আসলেই আমি কিনে ফেলতাম। সেই ১৯৮০ সাল থেকেই মান্না দে আমার সঙ্গী। সারা জীবন মান্না দে শুনতে আমার কখনোই খারাপ লাগবে না। আজ আমার প্রিয় গায়ক মান্না দে ৯৪ বছর বয়সে ব্যাঙ্গালোরের একটি হাসপাতালে ইহকাল ত্যাগ করলেন। মান্না দে'র আত্মার চির শান্তি কামনা করি। যতোদিন বাঁচব হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন মান্না দে। মান্না দে'র গান...সে এক অন্য জগতে নিয়ে যায় আমাকে...জয়তু মান্না দে... সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭
false
mk
রামপালকে খোলা মনে দেখুন রামপালের প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ও হুমকি-ধমকি যথারীতি অব্যাহত রয়েছে। লক্ষণীয় যে, ইদানীং দেশে সরকার যখনই কোন প্রকল্প হাতে নেয় তখনই এক শ্রেণীর লোক বা সংগঠন নানা নয়-ছয় বলে তা প্রতিহত বা নস্যাত করার চেষ্টা করে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়েও এ ধরনের অপচেষ্টা নিশ্চয়ই কারও দৃষ্টি এড়ায় না। আর রামপাল নিয়ে তো রীতিমতো তুলকালাম বাধানোর চেষ্টা চলছেই। শুধু তাই নয়, সরকার গৃহীত অন্য অনেক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও অনুরূপ চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।সরকার যদি জনস্বার্থবিরোধী কিছু করে তবে অবশ্যই তা প্রতিহত করার দায়-দায়িত্ব জনগণের ওপর বর্তায় বৈকি! কিন্তু যদি কোন মতলবী উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি বা সংগঠন নিছক সরকারের বিরোধিতার জন্য কিংবা দেশী-বিদেশী কোন মহলের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দুরভিসন্ধি হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে তৎপর হয়, তখন নিশ্চয়ই তা মেনে নেয়া যায় না বা যাবে না। রামপাল কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি যে এই ধরনের একটি বিষয়, তা কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের উচিত ছিল আরও সহজবোধ্য করে জনগণের সামনে মেলে ধরা। তা না করে প্রধানত আমলাদের বুদ্ধিতেই পত্রপত্রিকায় ক্রোড়পত্র বের করে এমনভাবে তা উপস্থাপন করেছে, যা এর পরিবেশনাগত দুর্বলতার কারণেই মানুষের কাছে যুক্তিগ্রাহ্য বা কনভিনসিং মনে হয়নি। এসব ব্যাপারে পরিবেশবাদী বা বিরোধিতাকারীরা যা বলছে বা যেসব সত্য-মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে, তা প্রত্যাখ্যান করতে হলে সরকারের উচিত এ বিষয়ে শুধু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য তুলে ধরা। আর তা যদি সরকারী ব্যানারে করা হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তা মানুষের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রের যাবতীয় টেকনিক্যাল ও প্রাকটিক্যাল চিত্রটি বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাটি ছিল অতীব জরুরী এক বিষয়। টিভিতে টক শোতে যারা এসব নিয়ে কথা বলেন বা এই জাতীয় প্রকল্পের বিরোধিতা করেন, তাদের অধিকাংশই এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। বরং বুদ্ধিজীবীর নামাবলী গায়ে চাপানো কিছু ব্যক্তি, যাদের অনেকেই কিনা বিদেশী কোম্পানি বা বিদেশী রাষ্ট্রের স্বার্থের হয়ে ছদ্মবেশে কাজ করে থাকেন। এই জাতীয় ছদ্মবেশীদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য যেসব কার্যক্রম হাতে নেয়া দরকার ছিল, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল ও সংশ্লিষ্ট আমলারা তা জানেন বা বোঝেন, এমন কোন দৃষ্টান্ত আমাদের চোখে পড়ে না। সরকার যদি এক শ’ ভাগ নিশ্চিত হয়ে থাকে যে, রামপাল কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পটি কোনক্রমেই জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটাবে না, তাহলে সে বিষয়ক তথ্য এবং বিশেষজ্ঞ মত (দেশী এবং আন্তর্জাতিক) প্রচার করা আবশ্যক। আর সে সব প্রকাশ-প্রচার বা পরিবেশনা হতে হবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে স্থানীয় ও জাতীয় স্টেক হোল্ডারদের উপস্থিতিতে বা তাদের উপলক্ষ করে। টিভিতে কেন এই ধরনের বিশেষজ্ঞকে উপস্থিত করা হচ্ছে না? পত্রপত্রিকায় কেন তাদের নিবন্ধ-প্রবন্ধ ছাপার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না? কেনই বা তথ্যচিত্র নির্মাণ করে বিরোধীদের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যকে নাকচ করা হচ্ছে না? উচিত তো ছিল বিরোধীদের অসার যুক্তি বা মতলবী উদ্দেশ্যকে জনসম্মুখে মেলে ধরে তা নস্যাত করে দেয়া।যাহোক, যারা এসব বিষয়ে সরকারের পলিসিমেকার, তারা যদি দেশপ্রেমের চাইতে ব্যক্তি স্বার্থটাকেই বড় করে তোলে, অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন মানে তাদের পকেটও ভারি হবে এমন চিন্তাকেই প্রশ্রয় দেয়, তাহলে বিরোধীরা তাদের মতলব হাসিলের মওকা পেয়ে যাবে বৈকি! আমাদের সরকার এবং প্রশাসনযন্ত্রের মধ্যেও নানান ভূত চেপে বসে থাকায় যে এমনটা হয়, তা বলাই বাহুল্য! রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প বিষয়ে পরিবেশবাদীরা যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছেন, তা কতখানি সত্য? গোটা বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণই কেবল পারে এর প্রকৃত স্বরূপটি তুলে ধরতে। মোটা দাগে বিষয়টির বিশ্লেষণ করলে যা দাঁড়ায়, তা নিম্নরূপ :আমরা লক্ষ্য করছি যে, বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠন বিভিন্ন সময়ে সরকার গৃহীত নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রবল বাধা সৃষ্টি করছে। এই বাধা সৃষ্টির জন্য তাদের উপস্থাপিত নানা যুক্তি ও তথ্য কতখানি বাস্তবসম্মত তা যেমন বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে, তেমনি আবার এসব যুক্তি যদি সঠিক না হয়ে থাকে, তাহলে তা প্রত্যাখ্যানের দায় সরকারের ওপরই বর্তায় নিশ্চয়ই! পরিবেশবাদীরা বলছে যে, কয়লা তুললে পরিবেশের দারুণ ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, এই কথাটি কি সর্বাংশে সঠিক? বাংলাদেশের বিদ্যুত উন্নয়ন খাতে কয়লার ব্যবহার মাত্র ২.০৫ ভাগ। অন্যদিকে, বিশ্বে গড়ে ৪১ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে। উল্লেখ্য, তেলের দাম স্থিতিশীল না থাকায় বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুত উৎপাদনের ৪৯.১ ভাগ আসে কয়লা থেকে। চীনে এর পরিমাণ ৭৮.৯ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিদ্যুত উৎপাদনের ৯৩ ভাগই কয়লানির্ভর। অস্ট্রেলিয়ায় ৭৮ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদিত হয় কয়লার মাধ্যমে। জাপানে ২৬.৮ ও ভারতে ৬৮ ভাগ বিদ্যুত আসে কয়লানির্ভর প্রকল্প থেকে। এখন কথাটি এই যে, এসব দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষেত্রগুলো কোন বিশ্ব হেরিটেজের এবং সে দেশের পরিবেশের জন্য কোন হুমকি সৃষ্টি করছে কিনা, সেটি দেখা দরকার। নিশ্চয়ই তারা এসব প্রকল্প চালু করার আগে এ ব্যাপারগুলোর ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছিল এবং সেই মোতাবেক প্রকল্প প্রণয়ন করেছে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে পরিবেশবাদীরা কঠিনভাবে প্রশ্ন তুলেছেন রামপাল প্রকল্প নিয়ে। তারা বলেছেন যে, এটি সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে এবং সামগ্রিকভাবে তা বাংলাদেশের পরিবেশকেও বিপন্ন করে তুলবে। উপরন্তু, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত সুন্দরবনে এই বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করে এ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।এখন প্রথমে এই পরিবেশবাদীদের আপত্তি, বিরোধিতা বা আন্দোলনের সূচনা কিভাবে হয়েছিল, তা দেখা যাক। এতে দেখা যাবে যে, দু’জন জামায়াতপন্থী শিক্ষক এর সূচনা করেছিলেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই শিক্ষক পরিবেশবাদীদের হয়ে এর সূত্রপাত ঘটালে শুরুতে তা পরিবেশ বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও, অচিরেই এর বিস্তার ঘটিয়ে আন্দোলনের ইস্যুর মধ্যে তারা এই কেন্দ্রের কর অবকাশ ও কম সুদে ভারতীয় ঋণ পাওয়ায় ওই দেশের জনগণের ক্ষতির প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেও আন্দোলনকারীরা তা ‘মানি না মানব না’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। অভিযোগ আছে যে, তারা বাস্তবের সঙ্গে আদৌ মিল নেই এমন সব অসত্য তথ্য দিচ্ছে জনগণকে।আবার বলা দরকার, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের দু’জন শিক্ষক রামপাল ইস্যুতে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে পরিবেশবাদীদের উস্কে দেয়। ২০১৩ সালের শুরুতে রামপাল কেন্দ্রের মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংস করা হচ্ছে এই মর্মে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীয় গবেষণালব্ধ বক্তব্য তুলে ধরেন ড. আব্দুল্লাহ হারুন (জামায়াতপন্থী বলে পরিচিত)। আর ঠিক এর পর পরই পরিবেশবাদীদের এই ইস্যুতে একটি জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে দেখা গেল। সুতরাং এক্ষেত্রে এই যোগসূত্রটি বিশ্লেষণকারীদের মাথায় রাখা দরকার। মজার ব্যাপার এই যে, ওই গবেষণাপত্রে সুন্দরবন সরকার ধ্বংস করে দিচ্ছে এই অপপ্রচার যেমন চালানো হয়, তেমনি আবার জনগণের একাংশের মধ্যকার ভারতবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগানোর প্রকাশ্য অপচেষ্টাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির ঘরে ওই ফসল তুলে দিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই জামায়াতী শিক্ষক ওই গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন। সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে ড. সাহেব সাংবাদিকদের বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি এবং অনেক প্রশ্ন আবার এড়িয়েও গিয়েছিলেন। যেমন, কোন প্রযুক্তিতে সরকার এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করছেন সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অজ্ঞ। যাহোক, এর কিছুকাল আগে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী শিক্ষক আব্দুস সাত্তার আর তার সহকর্মী নিছক ইন্টারনেট ঘেঁটে একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেন, যাতে এই কেন্দ্রের প্রযুক্তিগত বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই অনুপস্থিত ছিল। এতে প্রতিদিন ১৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতকেন্দ্রটির জন্য কি পরিমাণ কয়লা পোড়ানো হবে, এতে কি পরিমাণ ছাই ও কার্বন নিঃসরণ হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কিভাবে তার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তার ধারে-কাছ দিয়েও যাননি ‘গবেষকরা’। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এসব তথ্য সম্পর্কে ওই শিক্ষকদ্বয়কে কখনই সংশ্লিষ্ট মহল থেকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ বা সরকারী চাকরিতে নিয়োজিত থেকে কিভাবে ও কেন তারা সরকারী প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন, তা নিয়েও কোন প্রকার প্রশ্ন সরকারী মহল থেকে কখনই তোলা হয়নি। বরং বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর প্রচারের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। এর কত ভাগ সত্যিকার বাস্তবানুগ প্রচারণায় ব্যয়িত হয়েছে আর কত ভাগ তাদের উদর পূর্তি করেছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার।পরিবেশবাদীদের সরেজমিনে দেখে আসতে যেসব দেশে এই জাতীয় বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে সেগুলো এবং সেগুলোতে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে অবহিত করতে বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে আনার সরকারী প্রস্তাব পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা তাদের কোন মুরব্বিদের স্বার্থে প্রত্যাখ্যান করে আসছে, সেটাও তলিয়ে দেখা আবশ্যক বলে মনে করেন ওয়াকিফহাল মহল। তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, খালি চোখে বিষয়টি বোঝা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে তাই তাদের উচিত কতিপয় বেসরকারী বিশেষজ্ঞকে নিয়ে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে তারপর সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। কিন্তু তা তারা করতে সম্মত আছেন কি? পরিবেশবাদীরা বেশকিছু অসত্য তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে, এমন নজির তাদের বক্তব্য ও বাস্তব চিত্র পর্যালোচনা করলেই ধরা পড়বে বলে বিশেষজ্ঞ মহল অভিমত ব্যক্ত করছেন। তারা বলছেন যে, সুন্দরবন থেকে ৭ কিমি দূরে এই কেন্দ্রটি হচ্ছে, যা তাদের মতে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন। বাস্তবে এটি নির্মিত হচ্ছে ১৪ কিমি দূরে। বাফার জোনের ১০ কিমির মধ্যে শিল্প স্থাপন না করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর এই কেন্দ্রটি ওই জোন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অন্যদিকে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে এটির দূরত্ব ৬৯.৯ কিমি। পরিবেশবাদীরা ও বিএনপি বলছে যে, এটি নাকি সুন্দরবনের মধ্যে স্থাপন করা হচ্ছে! বিএনপিপন্থী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ না হয়েও ওই পরিবেশবাদীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়েছেন আর বলছেন যে, এই কেন্দ্র নাকি ভারতের স্বার্থে করা হয়েছে! অথচ এই অভিযোগ বাস্তবতা স্বীকার করে না। তাই স্পষ্ট বোঝা যায় যে, পরিবেশগত বিরোধিতা ছাপিয়ে সরকার ও ভারত বিরোধিতা রামপাল ইস্যুতে সক্রিয় রয়েছে।এখন পরিবেশবাদীদের বক্তব্য বা ভূমিকার উল্টো দিকটার দিকে একটু নজর দেয়া যাক। তারা বোঝাতে চাইছে যে, কয়লা তুললে পরিবেশ নষ্ট হবে। এর উল্টো দিকের কথাটি এই যে, তুলতে না দিলে কয়লা তো বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন পড়বে। সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় ভাবা চলে যে, যেসব দেশ কয়লা রফতানি করে তারা লাভের একটি অংশ সিএসআরের আওতায় পরিবেশবাদীদের দেয় তাদের হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করার জন্য। কে না জানে যে, বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদ বাজার দখল করে নানা এজেন্ট পোষার মাধ্যমে। উন্নয়নশীল দেশে নিজেদের বাজার ঠিক রাখার জন্য দেশ নয়, বাজার দখলের প্রয়োজন বর্তমান সাম্র্রাজ্যবাদীদের। সস্তায় বিদ্যুত পেতে হলে কয়লাভিত্তিক উৎপাদনেই যেতে হবে। তাই কয়লা রফতানিকারকরা স্থানীয় কয়লা উৎপাদনে বাধা সৃষ্টির জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করে ও করছে। যে সব দেশ ফার্নেস তেল, জেনারেটরসহ অন্য বিদ্যুত উৎপাদনসামগ্রী রফতানি করে, কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র হলে তারা সে বাজার হারাবে। অভিযোগ আছে যে, এরাই আমাদের পরিবেশবাদীদের খেপাতে সক্ষম হয়েছে ও রামপালবিরোধী আন্দোলনে তৎপর রেখেছে। সত্য বটে, অপপ্রচারের মাধ্যমে তারা মানুষকে খানিক ভড়কে দিতেও পেরেছে।এখন দেখা দরকার যে, রামপালে আসলে হচ্ছেটা কি? এখানে পশুর নদী থেকে পাম্প দিয়ে পানি টানা হবে এবং কয়লা জ্বালিয়ে তাপ উৎপাদনের মাধ্যমে সেই তাপে পানি বাষ্পীভূত করা হবে। বাষ্পীভূত পানি যে বিপুল চাপ তৈরি করবে, তা দিয়ে টারবাইন জেনারেটর ঘুরবে। আর এভাবেই উৎপন্ন হবে বিদ্যুত। অন্যদিকে ওই বাষ্পীভূত পানিকে ঘনীভবনের মাধ্যমে শীতল করে বিশুদ্ধ পানিতে রূপান্তর করে নদীতে ফেরত পাঠানো হবে। এ জন্য থাকবে একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এই সরল বিষয়টিকে জটিল করে পরিবেশবাদীরা জনসাধারণকে এই বলে বিভ্রান্ত করছে যে, দেশ বিক্রির পাঁয়তারা চলছে রামপালে। বোঝা দরকার যে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে কয়েকটি বিষয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলোÑ ১. সুবিধাজনক জমি, কয়লা পরিবহনের সুবিধা, পানির যোগান, বিদ্যুত সঞ্চালন সুবিধা, নির্মাণসামগ্রীর সহজপ্রাপ্যতা, নিকটবর্তী বিমানবন্দরে এয়ারফানেলে চিমনির অবস্থান না থাকা, প্রততাত্ত্বিক-ধর্মীয়-সামরিক-ঐতিহাসিক স্থান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা, পরিবেশ অধিদফতরের বিধিবিধান অনুসরণ, নিকটবর্তী কয়লার উৎসে কম মানুষকে উচ্ছেদ এবং স্থানীয় জনসাধারণের মতামত গ্রহণ। এসব লক্ষ্যকে মাথায় রেখে ২০০৯ সালে খুলনা অঞ্চলে এই বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩টি স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল। সেগুলো হলো খুলনার লবণছড়া, বাগেরহাটের রামপাল এবং চুনকড়ি ও দাকোপ। এগুলোর মধ্যে রামপালই উপরোক্ত সব ইন্ডিকেটর পাস করে। সেখানে এক স্থানে ১৮৩০ একর জমি পাওয়া গেছে। আর এ জন্য মাত্র ১২৫টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে (যাদের পুনর্বাসন করা হবে)। সেখানে বেশিরভাগই নিচু ও পতিত জমি, যা মাটি ভরাট করা হয়েছে। এখানকার জনবসতি প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ১২৫ জন। স্থানটি খুলনা বিভাগীয় শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে। নদীর নাব্য ৬.৫ থেকে ৭.৫ মিটার। কয়লা পরিবহন খরচও কম।আন্তর্জাতিকভাবে গভীর ভূমির ১০ কিমি-এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র না করার আইন আছে। আর অভয়ারণ্য থেকে এই বাধ্যবাধকতা ২৫ কিমি। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর এই স্বীকৃতিকে ঘিরেই পরিবেশবাদীরা তাদের রামপালবিরোধী সেন্টিমেন্ট জাগিয়ে তোলার প্রয়াস পাচ্ছে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, এই প্রকল্প রামপালের প্রান্ত সীমা থেকে ১৪ কিমি (আইন হচ্ছে ১০ কিমি দূরে হতে হবে) আর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ থেকে ৬৫ কিমি দূরে (২৫ কিমি দূরে হওয়ার বিধান আছে) অবস্থিত। উপরন্তু, ওই এলাকার বায়ুপ্রবাহ সুন্দরবনের ঠিক বিপরীতে। ফলে পরিবেশ বিপন্নের সম্ভাবনাই নেই। বিদ্যুতকেন্দ্র, সোলার প্যানেল ইত্যাদি স্থাপনের জন্য ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এটি থেকে মোট ২ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। যার মধ্যে ২০১৮ সালেই পাওয়া যাবে ১৩২০ মেগাওয়াট। পিডিবির সঙ্গে ভারতের ঘঞচঈ-এর সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুত কোম্পানি গঠিত হয়েছে। এতে ১৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। উভয় দেশ দেবে ১৫% করে আর বাকি ৭০ ভাগ ঋণ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল এই বিদ্যুতকেন্দ্রটির কয়লা পোড়ানোর ক্ষমতা সাধারণ কেন্দ্রের চাইতে ৩ গুণ বেশি। চিমনির উচ্চতা হবে ২৭৫ মিটার। আর এ থেকে যে কার্বন বের হবে তা বিদ্যুতকেন্দ্রের ১.৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।বিদ্যুত উৎপাদনের পর যে উড়ন্ত ছাই থাকবে তা নিয়েই প্রধানত আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায় বিরুদ্ধবাদীদের। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দাবি, আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে উদগীরিত ছাই ভস্ম বা ‘এ্যাশ হপার’ ৯৯.৯ ভাগই ধরা হবে এবং তা স্থানীয় সিমেন্ট, সিরামিক কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হবে। এই ছাইয়ের বিরাট বাজারও রয়েছে স্থানীয়ভাবে। ছাই ধরার পর তা সংরক্ষণের জন্য ২৫ একর জমির ওপর একটি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হবে এবং ছাইকে কোনভাবেই বাতাস বা পানির সঙ্গে মিশতে দেয়া হবে না। ৯০ তলা উচ্চতার চিমনি থেকে বাতাসের স্তর বিবেচনা করে ওই স্তরে চিমনিটি দশমিক ১ ভাগেরও কম ছাই বাতাসে ছাড়বে। ফলে ওই ছাই সুন্দরবন অতিক্রম করে সাগরে গিয়ে পড়বে। বছরে ওই কেন্দ্রে ৪৭ লাখ টন কয়লা পোড়ানো হবে। ফলে বিরুদ্ধবাদীদের আশঙ্কা এই যে, এতে যে সাড়ে ৭ লাখ টন ফ্লাই এ্যাশ ও ৬২ লাখ টন বটম এ্যাশ তৈরি হবে, তাতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক ভারি ধাতব, যেমন : ক্যাডমিয়াম, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, পারদ, আর্সেনিক, ব্যারিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম, সীসা, নিকেল থাকবে। কিন্তু বর্তমানের প্রযুক্তি ওই আশঙ্কাকে যে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে, এ কথাটি তাদের জেনে রাখা দরকার।শাহীন রেজা নূরের মূল লেখা সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬
false
mk
তবে এটা প্রমাণিত হল- জামাত একটি অপরাধী সংগঠন___ জামায়াতে ইসলামীকে একটি অপরাধী সংগঠন বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল সোমবার গোলাম আযমের রায়ের পর্যবেক্ষণে এই মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দালিলিক প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, অধ্যাপক গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি অপরাধী সংগঠনের মতো কাজ করেছে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে।এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচটি রায়ের মধ্যে চারটিতেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে পাকিস্তানি সেনাদের ‘সহযোগী বাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধকালীন নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের পাশাপাশি জামায়াতকেও দায়ী করেছেন।একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত দুটি ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত পাঁচটি রায় দিয়েছেন। পাঁচটি রায় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একমাত্র সাঈদী ছাড়া বাকি চারজনই মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াত বা এর তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। গোলাম আযম ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির; কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা ও আবুল কালাম আযাদ ছাত্র সংঘের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ জন্য এই চারজনের বিরুদ্ধে রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।গতকাল দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, উপমহাদেশের ইতিহাস বলে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দুটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতার আন্দোলনের সময়ই জামায়াত বিতর্কিত ভূমিকায় ছিল। ওই সময় জামায়াত সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই দুই রাষ্ট্র গঠনে দলটির কোনো ভূমিকাই ছিল না। পাকিস্তান সৃষ্টির সময় জামায়াতের তৎকালীন আমির মাওলানা মওদুদী মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু মুসলমানরা আলাদা রাষ্ট্রের আন্দোলন শুরু করলে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হয়। ওই সময় জামায়াতে ইসলামী নিজেদের পাকিস্তানের একমাত্র ইসলামিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করে। এর পরে যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু করে, তখনো জামায়াতে ইসলামী এর তীব্র বিরোধিতা করে এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহায়তা করে। কিন্তু যখন ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছিল, তখনো জামায়াত নিজেদের প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করে এবং যারা স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, তাদের ভারতীয় চর হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ট্রাইব্যুনাল তাঁদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেছেন, বিভিন্ন নথি ও সাধারণ ধারণা থেকে দেখা যায়, অভিযুক্ত গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াত ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো প্রত্যক্ষভাবে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি এখনো সক্রিয়। আর এর ফলে নতুন প্রজন্মের জামায়াত-সমর্থকেরাও মনস্তাত্ত্বিকভাবে স্বাধীনতাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক মানসিকতায় পুষ্ট। এটা একটি জাতির জন্য বিচারে উদ্বেগের বিষয়। আমাদের জাতির কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে একাত্তরে জামায়াত যে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা পালন করেছিল, তাদের সেই মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে এবং ৩০ লাখ শহীদের প্রতি সমবেদনা ও শ্রদ্ধার কোনো নিদর্শন তারা এখনো দেখায়নি।ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে বলেছে, একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বার্থে এ ধরনের স্বাধীনতাবিরোধীদের সরকারের কোনো নির্বাহী পদে, সামাজিক ও রাজনৈতিক দলে এবং সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনে কোথাও ঠাঁই দেওয়া উচিত নয়। লাখ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক একটি দেশ গড়ার ক্ষেত্রে এসব উচ্চ পদে এই স্বাধীনতাবিরোধীরা যাতে কোনোভাবেই আসীন না হতে পরে, সে জন্য রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।এর আগে জামায়াতের নেতা কামারুজ্জামানের রায়ে ট্রাইব্যুনাল-২ বলেন, মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর মস্তিষ্কপ্রসূত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধকালে ‘পাকিস্তান রক্ষা’র নামে বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে। জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় আলবদর বাহিনী, যা ছিল প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের ‘অ্যাকশন সেকশন’ বা ‘আর্মড উইং’।কাদের মোল্লা ও আযাদের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে ট্রাইব্যুনাল-২ পর্যবেক্ষণ করেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিল জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ ও আধা সামরিক (প্যারামিলিটারি) বাহিনী আলবদর। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারাও নৃশংস অপরাধ ঘটায়। ওই দুটি রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে ছাত্র সংঘের সদস্য ও জামায়াতের প্রশিক্ষিত রুকনদের দিয়ে আলবদর নামের আধা সামরিক বাহিনীটি গড়ে তোলা হয়েছিল।রায়ে ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের নিশ্চিহ্ন করতে এবং বাঙালি রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রদের হত্যা ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। পাকিস্তান রক্ষার নামে জামায়াতে ইসলামী প্যারামিলিশিয়া বাহিনী বা সহযোগী বাহিনী গঠন করে নিরস্ত্র বাঙালি বেসামরিক ব্যক্তিদের নিশ্চিহ্ন করার অভিযানে অংশ নেয়
false
ij
যেখানে সাঁইর বারামখানা_ লালনের একটি গানের ব্যাখ্যা। বাউলের বিশ্বাস এই রকম। আমরা যাকে ঈশ্বর বলে জানি সে বাস করে মানব দেহে। কথাটা চমকে ওঠার মতোই। লালন এই চমকে যাওয়ার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে। যেখানে সাঁইর বারামখান (বিশ্রামখানা?) শুনে প্রাণ চমকে ওঠে/ দেখে যেন ভুজঙ্গনা। (ভুজঙ্গ মানে সাপ) ঈশ্বর মানব শরীরে বাস করেন! কথাটা শোনার পর কী ভীষন এক ছমছমে ভাবের উদয় হয় মনে। হঠাৎ সাপ দেখলে যেমন পিচ্ছিল এক অনুভূতি হয়- তেমনি বোধ হয় যেন কথাটা শুনলে। লালন তাই লিখেছেন-শুনে প্রাণ চমকে ওঠে ...সাপ দেখার মত ... এই গানের পরের চারটি চরণ এরকম। যা ছুঁইলে প্রাণে মরি এ জগতে তাইতে ত্বরি; বুঝেও তা বুঝতে নারি কীর্তিকর্মার কী কারখানা। ঈশ্বর যে মানব শরীরে বাস করেন। এই কথা বাদে আমরা সবই বিশ্বাস করি। তার মানে, লালনের মতে, যা মিথ্যে, তাই বিশ্বাস করি। আমরা তা বুঝেও বুঝি না। কীর্তিকর্মা মানে ঈশ্বরের কী অভিপ্রায়, ইচ্ছে: মানে তিনি জগৎ সৃষ্টি করলেন; তারপর জগৎ বিবতির্ত হল। বস্তু এল, প্রাণ এল, প্রাণি এল। মানুষ এল। তারপর সেই মানুষ হল ঈশ্বরের বারামখানা; মানে বিশ্রামঘর। এই কথা বাদে আমরা সবই বিশ্বাস করি। যা মিথ্যে তাই বিশ্বাস করি। আমরা তা বুঝেও বুঝি না যে ঈশ্বর মানুষের ভিতর বাস করেন। তারপর লালন লিখেছেন- আপ্ত (বা আত্ম?) তত্ত্ব যে জেনেছে দিব্যজ্ঞানী সে-ই হয়েছে, কু-বৃক্ষে সু-ফল পেয়েছে আমার মনের ঘোর গেল না। সেই দিব্যজ্ঞানী হয়েছে, যে আত্ম তত্ত্ব জেনেছে। খুবই সত্য কথা। কেননা, লালন অন্য একটি গানে বলেছেন- Eternal streams flow out of the One. You and I are nothing in it, nameless. Lalon says, "If only I knew 'me,' all riddles would be solved!" আত্মতত্ত্ব মানে, এই জ্ঞান, যে ঈশ্বর বাস করেন এই দেহে। “কু-বৃক্ষে সু-ফল পেয়েছে ” মানে এই বিশ্বাসের বিপরীত বিশ্বাসগুলিই এ জগতে সফল। সে কারণেই লালনের মনে ঘোর লাগে। তিনি বিভ্রান্ত হন। গানটির শেষ চারটি চরণ এরকম। যে ধনে উৎপত্তি প্রাণধন সেই ধনের হল না যতন; অকালের ফল পাকায় লালন দেখে শুনে জ্ঞান হল না। প্রাণধন মানে প্রাণ। যা লালনকে ভাবায়। লালনের কাছে প্রাণ হচ্ছে প্রাণপাখি। প্রাণের যতন মানে- প্রাণের খোঁজ খবর। কোত্থেতে এই প্রাণ এল। সবচে বড় কথা- প্রাণ কি? বস্তু থেকে প্রাণের উৎপত্তি হয় কি করে? ভারি আশ্চর্য তো কীর্তিকর্মার কারখানা! সেই কীর্তিকর্মাই তো মানবদেহে বাস করেন। মানবদেহ ঈশ্বরের বিশ্রামঘর। এই গানটির ইংরেজি অনুবাদ- Where God resides The heart starts to view as if it be a snake. That kills me only that captures me Between understanding and ignorance halts God's great deeds He who knows himself Is the sage. minor tree gets return unexpected My hellucination does not evade. which the life originates from yet the origin is uncared Lalon matures the fruits immutured. Knowledge can not be touched by perception. অনুবাদ করেছেন হাসান শিবলী। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৪
false
fe
শহীদ জননীর স্বপ্ন ও একটি জাতির নবযাত্রা শহীদ জননীর স্বপ্ন ও একটি জাতির নবযাত্রাফকির ইলিয়াস========================================= আমার খুব মনে পড়ছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে। যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, এর অংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসি হয়েছে যুদ্ধাপরাধ মামলায়। আজ আমার মনে পড়ছে শহীদ জননীর লেখা শেষ চিঠিটির কথা। যে চিঠিটি এই প্রজন্মের প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক তরুণ-তরুণীকে পড়া দরকার। তিনি তাঁর সেই চিঠিতে যা লিখেছিলেন, তা আরেকবার পাঠ করা যাক। তিনি লিখেছিলেন- ‘সহযোদ্ধা দেশবাসীগণ, আপনারা গত তিন বছর একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন। এই লড়াইয়ে আপনারা দেশবাসী অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের অঙ্গীকার ছিল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছেড়ে যাবো না। মারণব্যাধি ক্যান্সার আমাকে শেষ মরণ কামড় দিয়েছে। আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি। রাজপথ ছেড়ে যাইনি। মৃত্যুর পথে বাধা দেবার ক্ষমতা কারো নেই। তাই আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি এবং অঙ্গীকার পালনের কথা আরেকবার আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। আপনারা আপনাদের অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণ করবেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে থাকবেন। আমি না থাকলেও আপনারা আমার সন্তান-সন্ততিরা-আপনাদের উত্তরসূরিরা সোনার বাংলায় থাকবেন। এই আন্দোলনকে এখনো অনেক দুস্তর পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা, নারী, ছাত্র ও যুবশক্তি, নারী সমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই লড়াইয়ে আছে। তবু আমি জানি জনগণের মতো বিশ্বস্ত আর কেউ নয়। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তাই গোলাম আযম ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দায়িত্বভার আমি আপনাদের, বাংলাদেশের জনগণের হাতে অর্পণ করলাম। অবশ্যই, জয় আমাদের হবেই। ---- জাহানারা ইমাম। আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিনগুলো ছিল শহীদ জননীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি- যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহকারী সদস্যসচিব ছিলাম আমি। তাকে ডাকতাম ‘মা’। একদিন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বলেছিলাম, মা আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় আসে তবে কি ঘাতক দালালদের বিচার করবে? ‘মা হেসেছিলেন। বলেছিলেন- ‘পাগল ছেলে! যতোদিন না এই দেশের মানুষ রুখে দাঁড়ায়, বাধ্য করে- ততোদিন এ বিচার হবে না।’ শহীদ জননী মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। যে শেখ হাসিনা, শহীদ জননীর পাশে বসে সাহস জুগিয়েছিলেন- তিনি ১৯৯৬-২০০০ সালে ঐ বিচারের কোনো উদ্যোগ নেননি। কিন্তু থেমে থাকেনি শহীদ জননীর স্বপ্ন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হয় ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি। সেই সংগঠনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন বাম-প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী যুক্ত হন। বিশেষ করে সদ্যপ্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা; জাসদের হাসানুল হক ইনু; কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম; গণফোরামের সাইফুদ্দিন মানিক; ন্যাপের অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী নেতৃবৃন্দ। এঁরা যেহেতু রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব সে কারণে এই সদ্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটিকে রাজনীতির লেজুড়ে পরিণত না করার অভিপ্রায়ে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয় রাজনীতি-সচেতন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কাঁধে। তিনি আমৃত্যু সে দায়িত্ব দৃঢ়প্রত্যয়, আপোসহীনতা, সাহস আর প্রজ্ঞার সঙ্গে পালন করে গেছেন। সারা বাংলাদেশে তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এক নতুন আঙ্গিকে গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশে বিদেশে। শহীদ জননীর ডাকে সেই ঐতিহাসিক গণআদালতে পর্যবেক্ষক হিসেবে যান মার্কিনি আইনজীবী টমাস কিটিং। যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন মাত্রা পায়। পঁচাত্তরের পর সমগ্র জাতি আর কখনোই এমন ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িকতা, দুঃশাসন আর যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারেনি। তাই শহীদ জননীর নেতৃত্বে নির্মূল কমিটির এই আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতিক ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। একই সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। আমাদের মনে আছে, সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শহীদ পরিবারের সদস্যরা মিলিত হয়ে মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ জারি করেন। এরপর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এরই ধারাবাহিকতায় গঠন করা হয় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি দেশের একশ একজন বরেণ্য নাগরিক কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক ঘোষণার মাধ্যমে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করা হয়। এর এক মাসের কম সময়ে নির্মূল কমিটিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ৭২টি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’। এ সমন্বয় কমিটির উদ্যোগেই ২৬ মার্চ গণআদালতে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের প্রতীকী বিচারের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। নির্মূল কমিটি গঠনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সাত নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামান, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের পর শহীদ জননী পুরো সময় সমন্বয় কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত করেন। এর পরের ধারাবাহিকতা অনেকেরই জানা। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়েছে। আমি তখন একজন টগবগে তরুণ। যুক্তরাষ্ট্রে এই কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সদস্যসচিবের দায়িত্ব তখন আমার ওপর ন্যস্ত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিউইয়র্ক আগমন উপলক্ষে এ কমিটির যুক্তরাষ্ট্র শাখা বেগম জিয়ার সমাবেশের বাইরে বিশাল বিক্ষোভের আয়োজন করে। সেই উন্মাতাল দিনগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই শহীদ জননীর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হতো। তিনি আমাকে বলেন, ‘তোমরা বেগম জিয়াকে জিজ্ঞাসা করো, তিনি গোলাম আযমের বিচার করবেন কিনা?’ মনে পড়ছে নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ির বহর আটকে দিয়ে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করেছিল সেদিন নিউইয়র্কের আকাশ আমার মতো শত শত তরুণ। বেগম জিয়া পেছনের দরজা দিয়ে প্লাজা হোটেল ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপরে ছিল বেগম জিয়ার প্রেসব্রিফিং। সেখানে একজন সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ আমার হয়েছিল। আমি বেগম জিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘শহীদ জননী বেগম জাহানারা ইমাম জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করেছেন। তিনি ঘাতক-দালাল রাজাকারদের বিচার দাবি করছেন। আপনার সরকার খুনিচক্রের হোতা গোলাম আযমের বিচার করছেন না কেন?’ প্রশ্নটি শোনার পর তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন খালেদা জিয়া। তিনি বলতে থাকেন, ‘জাহানারা ইমাম কে? গণআন্দোলন করার তিনি কে? তিনি কী করেছেন দেশের জন্য?’ আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি তা এড়িয়ে যান। অথচ আমরা জানি এবং চিনি জাহানারা ইমামকে! শহীদ রুমীর আম্মা জাহানারা ইমাম একাত্তরে কী করেছেন, তার সাক্ষী ‘একাত্তরের দিনগুলি’। আমার খুব মনে পড়ে, শহীদ জননীই সর্বপ্রথম বলেছিলেন তরুণ প্রজন্ম চাইলেই এই বাংলার মাটিতে ঘাতক দালালদের বিচার হবে। হ্যাঁ, এই তরুণ প্রজন্মই তা চেয়েছে এবং গত নির্বাচনে সে কারণেই মহাজোট সরকারকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকার যে কাজটি শুরু করেছে, তা একটি জাতির নবযাত্রা। দায় মোচনের কাজটি শুরু হয়েছে। তা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা জেনেছি, বিচারের রায়ের দিন মাননীয় ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাস ও ট্রাইব্যুনাল-২-এর জন্য এ এক ঐতিহাসিক দিন, যেদিন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের ভূখ-ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার করে প্রথম রায় দেয়া হচ্ছে। নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের ফসল এই বাংলাদেশ। ওই নয় মাসে এ দেশে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, প্রায় চার লাখ নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এক কোটিরও বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচার হয়নি, যা এই জাতি ও এ দেশের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বে এক গভীর ক্ষত রেখে গেছে। রায়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে- আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ছিল, মুক্তিযুদ্ধকালে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আযাদ ও তার সহযোগীরা ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরে হবি মাতব্বরের দোকানের কাছ থেকে রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে ধরে নির্যাতন করে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে নিয়ে যান। সেখানে পাকিস্তানি মেজর আকরাম কোরাইশি ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের সঙ্গে আলোচনার পর রণজিৎকে অন্য একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করেন আযাদ। পরে রণজিৎ সেখান থেকে পালিয়ে রক্ষা পান। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, পাকিস্তানি সেনাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আযাদ শুধু রাষ্ট্রপক্ষের পঞ্চম সাক্ষীকে (রণজিৎ নাথ) আটকে রেখে নির্যাতন ও অমানবিক যন্ত্রণাদানে উৎসাহিতই করেননি, বরং নিজেও নির্যাতন করেছেন। কেন রণজিৎ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলেন? এর জবাব মেলে সাক্ষীর বর্ণনায়- ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হলে রণজিৎকে দেখে মুজাহিদ (আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জামাতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল ও তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি) বলেন, ‘সে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু।’ এরপর রণজিৎকে আযাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ জন্য রণজিৎকে অপহরণ, আটক রাখা ও নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণের দায় আযাদের ওপর পড়ে। শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, গণহত্যা ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ মানবতাবোধের জন্য এক প্রচ- আঘাত। অপরাধের গভীরতা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল একমত যে, একমাত্র মৃত্যুদ- দেয়া হলে এই গর্হিত অপরাধের ন্যায়বিচার হবে। তাই তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হলো। প্রথম, পঞ্চম ও অষ্টম অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় আযাদ কারাদ- পাওয়ার যোগ্য। এই ঘটনা আজকের প্রজন্মকে শাণিত করেছে। যেসব যুদ্ধাপরাধী এখনো বিচারের অপেক্ষায় আছে, তাদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। কারণ জাতি জেনে গিয়েছে, জাতি বুঝে গিয়েছে- কারা এসব যুদ্ধপরাধীদের বিচার করবে। আর কারা এদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিল। আবারো বলি, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের রেখে যাওয়া পতাকা এই প্রজন্ম বয়ে যাবেই। কারণ তিনি একটি মৌলবাদহীন, জঙ্গিমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এই প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চেয়েছিলেন।-----------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ : // ঢাকা ॥ শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
false
fe
সন্ত্রাসীদের রুট পরিকল্পনা ও রাজনীতিকদের টক শো সংস্কৃতি সন্ত্রাসীদের রুট পরিকল্পনা ও রাজনীতিকদের টক শো সংস্কৃতি ফকির ইলিয়াস ======================================= বাংলাদেশে মাফিয়া চক্রের বিস্তার এবং রুট নির্মাণ বিষয়ে মিডিয়া আবার সরগরম। প্রতিদিন জানা যাচ্ছে নতুন নতুন তথ্য। ডন দাউদ ইব্রাহিমের অন্যতম সহযোগী মার্চেন্ট দাউদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছে আরেক সন্ত্রাসী জাহিদ শেখ। পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে এরা দু'জনেই ভারতের নাগরিক। অথচ তারা পাসপোর্ট পেয়েছে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে। রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রও। চৌদ্দ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের প্রতিটি মানুষকে শনাক্ত করা কঠিন কাজ। যেহেতু জন্মনিবন্ধন কিংবা সামাজিক নিরাপত্তা (সোশ্যাল সিকিউরিটি) ক্রমিক ব্যবস্থা নেই, তাই কে কোথাকার বাসিন্দা তা জানা-বোঝাও মুশকিল। পশ্চিমবঙ্গ (কোলকাতা ) বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী প্রদেশ। সেখানের মানুষজনও বাংলাভাষী। আর বাংলা এমন কঠিন কোন ভাষা নয় যে তা শিখে নিতে বেশি বেগ পেতে হয়। বেশ কিছু বিহারি বাংলাদেশে জন্ম না নিয়েও বাংলা ভাষায় দক্ষ। রয়েছে অনেক রোহিঙ্গাও যারা বাংলা জানে, বোঝে। এসব নানা সমীকরণের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। তাছাড়া যারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের গডফাদার তারা বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ,সে কথা সব দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাই জানেন। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীচক্রের একটি নিরাপদ রুট হতে পারে-সে বিষয়ে পাশ্চাত্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বেশ ক'বছর থেকে নানা ধারণা দিয়ে আসছে। এর কারণ আছে। কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ বেশ ক'টি দিক থেকেই নিরাপদ দেশ চোরাকারবার, অবৈধ অস্ত্র পাচার প্রভৃতি কাজের জন্য। প্রথমত, যে বিষয়টি প্রচলিত আছে তা হচ্ছে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে 'ঘুষ'-এর বখরা দিয়ে যে কোন অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দুর্বলতাকেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীচক্র মুখ্য সুযোগ হিসেবে দেখে। এরপর দ্বিতীয় সুযোগটি হচ্ছে, এরা মনে করে টাকা দিয়ে দরকার মতো রাজনীতিকদেরও কিনে নেয়া যায়। অনেকটা হয়ও তাই। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা কিংবা মার্চেন্ট দাউদ গ্রেফতার হওয়ার পর যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা তো সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে যে, বেশ কিছু রাজনীতিক রাঘব বোয়াল এর নেপথ্যে জড়িত। এটা বিশ্ব স্বীকৃত, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। পারতপক্ষে তারা কোন ধরনের ঝামেলাতেই যেতে চান না। আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা সেই সুযোগই কাজে লাগায়। এখানে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার তা হচ্ছে,-আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি, মাফিয়াচক্রকে বাংলাদেশে কারা মদদ দিচ্ছে, এদের লাভ কি? এর উত্তরটি হচ্ছে,এসব অশুভ শক্তি দেশে প্রতিপত্তি বাড়ানোর ফলে গোটা দেশ অরক্ষিত হবে। সরকার বেকায়দায় পড়বে। এই সুযোগে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ব্যস্ত হবে সরকারের প্রতিপক্ষ। বিভিন্ন সংস্থাকে দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জানছি, মাত্র তিন মাসের মধ্যেই গোটা দেশে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক মজবুত করার পরিকল্পনা ছিল গুলশান কুমার হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি মার্চেন্ট দাউদের। তা থেকেই ধারণা করা সহজ বাংলাদেশ কত বড় সঙ্কটকালীন নতুন ঝড়ের সম্মুখীন হতে যাচ্ছিল। দুই. বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরদিন থেকেই নানা ফন্দিফিকির শুরু হয়েছে বিভিন্ন শিবিরে। প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এই সরকারকে কুপোকাত করে দেয়া। এজন্য রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর জীবননাশের হুমকির সংবাদও আমরা দেখছি পত্রপত্রিকায়। বিষয়গুলো নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবা দরকার। পাশাপাশি ভাবা দরকার সরকারের ভেতরে অবস্থান করে কোন মহল সরকারকে ক্রমশ বিতর্কিত, অজনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছে কি না। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দু'জন নিরীহ ছাত্র র্যাবের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে দেশে-বিদেশে। এই দু'জন ছাত্র কি চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিল? এরা কিভাবে কোন পরিস্থিতিতে এনকাউন্টারের শিকার হলো। তার বিশদ দেশবাসী জানতে চায়। এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ তদন্ত অবশ্যই হওয়া দরকার। বাংলাদেশে র‌্যাব ভাল কাজ অবশ্যই করছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ কোন রাষ্ট্রে সন্ত্রাসীরা যখন কৌশল বদলায় তখন নতুন, প্রশিক্ষিত, আধুনিক সশস্ত্র শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠন জরুরি হয়ে পড়ে। র‌্যাব সাহসিকতার সঙ্গে সেসব কাজই করছে। তবে রাতের বেলায় সহযোগী সন্ত্রাসী খুঁজতে গিয়ে পালানোর সময় গুলি এবং হত্যা-এই ঘটনাবলি ধারাবাহিকভাবে মেনে নেয়া কঠিন। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুলি, নির্যাতন কোন সভ্য দেশ-সমাজই মেনে নিতে পারে না। বিচারের যতই দীর্ঘসূত্রতা থাক না কেন, শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। বাংলাদেশে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, খুনি, দাগি আসামিদের স্বল্পকালীন বিশেষ আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক-এই দাবি জনগণের দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এমন কিছু আইনের সংস্কার প্রয়োজন সর্বসম্মতিক্রমে। কারণ এই দানব শক্তির হাত থেকে রাজনীতিক, সাধারণ মানুষ, মাটি-বিত্ত-বৈভব কিছুই মুক্ত নয়। সুযোগ পেলে তারা যে কাউকে গ্রাস করবে, ছোবল দেবে। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর পরস্পরবিরোধী বেশকিছু বক্তব্য মানুষকে নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছে। পিলখানা হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, প্রবাসীদের জন্য নির্মিতব্য ব্যাংক বিভিন্ন ইসু্যতে কয়েকজন মন্ত্রী পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এটা কোন সরকারের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। পাবলিকলি কোন কমেন্ট করার আগে মন্ত্রীদের পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকা দরকার। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় শীর্ষ সিদ্ধান্তগুলোতে সব মন্ত্রীরই সমানভাবে জানা উচিত। একটি কথা দুঃখের সঙ্গেই বলি, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা (সরকারি এবং বিরোধীদলীয়) যত বেশি টিভি টক শোতে হাজির হন, তেমনটি বিশ্বের অন্য কোন দেশে দেখা যায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে এই টক শো পর্বটি ঝেড়ে ফেলা খুবই জরুরি। কারণ কথা যতই বেশি বলা হয় কর্মপরিধি ততই বেশি কমে আসে। বিভিন্ন দেশে টক শোতে অংশ নেন সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তিবিদ, সামরিক এক্সপার্টসহ অন্যান্য অভিজ্ঞরা। রাজনীতিবিদরা তা শোনেন। অনুধাবন করেন। ভাল দিকগুলো বিবেচনায় এনে গণকল্যাণে কাজে লাগান। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশকে টার্গেট করে একটি আন্তর্জাতিক মহল বেশ পূর্ব থেকেই বিভিন্নভাবে সক্রিয় রয়েছে। এরা এই রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরকেই গ্রাস করতে তৎপর। এই অবস্থায় রাজনীতিকরা যদি শুধু কথার বুলিই আওড়ান- তবে পক্ষান্তরে সেই দানবশক্তিই মদদ পাবে। এই রাহুগ্রাস থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত রাখতে প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। নিউইয়র্ক, ২ জুন ২০০৯ ------------------------------------------------------------------ দৈনিক সংবাদ।ঢাকা । ৫ জুন ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- সরিনা বাগএ্যগ সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৩
false
rn
বাচঁতে হলে জানতে হবে -১৭ (আগের লেখা গুলোর লিংক দিলাম না।এখানে ১৯২১থেকে১৯৪০সাল পর্যন্ত দেয়া হলো।বাকি গুলো পরে যথা সময়ে দেয়া হবে।এই তথ্য গুলো সংগ্রহ করতে আমার সাড়ে চার বছর লেগেছে।অসংখ্য বই পড়তে হয়েছে।দিনের পর দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লাইব্রেরীতে থাকতে হয়েছে।কতদিন দুপুরে খাওয়া হয়নি।কিন্তু কেউ এই মূল্যবান তথ্য গুলো পড়তে চায় না।জানতে চায় না।দুঃখ হয়)১৯২১সাললাহোর দূর্গে বাংলার বিপ্লবী নেতা যতীন দাস বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে একনাগাড়ে ৬৩ দিন অনশন ধর্মঘট পালন করেন।উপেন্দ্রনাথ(বাঙ্গালি চিকিৎসা বিজ্ঞানী)কালা জ্বরের ইঞ্জেকশন আবিস্কার করেন।আহমেদ শরীফ চট্রগ্রামে জন্মগ্রহন করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।(১,জুলাই)বিভূতিভূষন বন্দোপাধ্যায়ের প্রথম গল্প 'উপেক্ষিতা' প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবন শুরু।১৯২২সালকলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।সিন্ধু সভ্যতা আবিস্কৃত হয়।বি.বি.সি স্থাপিত হয়।অসহযোগ আন্দোলনের পরিসম্পাপ্তি ঘটে।দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯২৩সালঅনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের চর্তুদশ অধিবেশনে পঞ্চানন দর্শন শাখার সভাপতি ছিলেন।লীলা নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাএী।(ইংরেজীতে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন।)১৯২৪সালফয়'জ লেকটি খনন করে রেলওয়ে প্রকৌশলী ফয় এর নামে নাম করন করা হয়।মোবাইল তৈরী হয় এবং নিউইয়র্কের পুলিশের গাড়িতে ব্যবহৃত হয়।১৯২৫সালকাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক পএিকা 'লাঙল' প্রকাশিত হয়।অমূল চরন বিদ্যাভূষন সম্পাদিত বঙ্গীয় মহা কোষ ১ম খন্ড প্রকাশিত হয়।১৯২৬সালবাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় সাম্যবাদী কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য জন্মগ্রহন করেন।জনপ্রিয় অভিনেতা উওম কুমারের জন্ম।রকেট আবিস্কার হয়।(যুক্তরাষ্টে,ডঃরর্বাট হ্যারিং গভার্ড)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকায় আসেন।ইউরোপ ভ্রমন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুসোলিনীর নিমন্তনে।কাজী নজরুল ইসলাম লক্ষীপুর শহরে আসেন।(জুন মাসে)১৯২৭সালেকাজী নজরুল ইসলামের প্রথম উপন্যাস 'বাধন হারা' প্রকাশিত হয়।১৯২৮সালবিপ্লবী গেরিলা নেতা চে গুয়েভারা আজেন্টিনায় জন্মগ্রহন করেন।চন্দ্র শেখর বেঙ্কট রামন আবিস্কার করেন সমুদ্রের জল নীল রং হবার প্রকৃত কারন।অস্কার পুরস্কার প্রদান শুরু হয়।ফ্লেমিং পেনিসিলিন তৈরি করেন।জীবনানন্দ দাসের প্রথম কাব্য গন্থ 'ঝরা পালক' রচিত হয়।রন সংগীত সর্ব প্রথম প্রকাশি হয়।১৯২৯সালরবীন্দ্রনাথ কানাডা ভ্রমন করেন।কবি শামসু রাহমানের জন্ম।পিকিং এর নিকট প্রাগৌতিহাসিক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া যায়।জাহানারা ইমাম জন্মগ্রহন করেন।১৯৩০সালশহরাঞ্চলে রিক্সার প্রচলন হওয়ার পর থেকে পালকি একেবারেই বাতিল হয়ে যায়।লন্ডনে প্রথম গোল টেবেল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা অনিষ্ঠিত হয়।(উরুগুয়ে)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইউরোপ ভ্রমন করেন।১৯৩১সালমাষ্টার দা সূর্যসেন কে ফাঁসি দেয়া হয়।বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মারা যান।কালুর ঘাট সেতুটি উদ্বোধন করা হয়।মুম্বাই(বোম্বাই) শহরে প্রথম পূর্নদৈর্ঘ সবাক ছবি 'আলম আরা' নির্মিত হয়।বাংলা নাট্যের আলোক সজ্জা এবং সেট ডিজাইনের ক্ষেএে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন সতু সেন।১৯৩২সালবিজ্ঞানী জেমস চ্যাডউইক নিউট্রনকনিকার অস্তিত্ব প্রমান করেন।বিশ্বের প্রথম চলচিএ উৎস শুরু হয় ইতালির ভেনিসে।ইরাক স্বাধীনতা লাভ করে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইরাক ভ্রমন করেন,রেজা শাহ পাহলভীর আমন্তনে।১৯৩৩সালহিটলার জার্মানীর চ্যান্সেলার হন।১৯৩৪সালমাও সে তুং এর পরিচালনায় ৩ হাজার মাইল দীর্ঘ যে পদযাএা শুরু হয়,তাহ ঐতিহাসিক লং মার্চ নামে খ্যাত।১৯৩৫সালঅবিভক্ত বাংলার নারীরা ভোটাধিকার পায়।আইফেল টাওয়ারের ওপর ফ্রেঞ্চ টেলিভিশন ট্রান্সমিটার বসানো হয়।১৯৩৬সালজিয়াউর রহমান জন্মগ্রহন করেন।ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ এর জন্ম।(২৬ এপ্রিল)১৯৩৭সালভৈরব ব্রীজ নির্মান করা হয়।ভারত উপমহাদেশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।জাপান চীন আক্রমন করে।মায়ানমার ভারত থেকে পৃথক হয়।দ্বিতীয় ঢাকেশ্বরী কটন মিল চালু করা হয়।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রজাদের অনুরোধে শেষ বারের মতো পতিসর প্রদর্শন করেন।১৯৩৮সালমির্জাপুরে লৌহজং নদীর তীরে কুমুদিনী হাসপাতাল স্থাপিত হয়।প্রথম ভারতীয় পরিসংখ্যান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।ঢাকায় সর্বপ্রথম একটি স্বংয় সম্পূর্ন পাট গবেষনাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৩৯সালবাংলাদেশ বেতার স্থাপন করা হয়।(১,ডিসেম্বর)প্রথম জেট বিমান আকাশ পাড়ি দেয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান বিভাগের অধীনে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে শিক্ষাদান শুরু হয়।১৯৪০সালঅসাধারন ফুটবল খেলোয়াড় পেলে'র জন্ম হয়।প্লুটোনিয়াম(তেজক্রিয় রাসায়নিক মৌল আবিস্কৃ্ত হয়।)আধুনিক রেকডিং টেপের পরিবর্তন ঘটান জার্মান বিজ্ঞানীরা।
false
rg
সুপ্রভাত হাসনাত আবদুল হাই!! হাসনাত আবদুল হাই কলকাতার মাল। পরবর্তীকালে দেশ বিভাগের অছিলায় ঢাকায় আশ্রিত। সময় এবং সুযোগ দুটোই সফলভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের আমলা হয়েছিলেন। বড়লোক পাড়ার টাই পড়া লেখক। রাষ্ট্রের টাকায় প্রচুর বিদেশ সফর করেছেন। তাই ভ্রমণকাহিনীও লেখেন! বয়স চুয়াত্তর। দুই বছর আগেই বাহাত্তুরা খাতায় নাম লিখিয়েছেন। ১৩ এপ্রিল ২০১৩ দৈনিক প্রথম আলো'তে 'টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি' নামে একটি রসময় টাইপ চটি গল্প প্রসব করেছেন। উদ্দেশ্য পরিস্কার। লেখক পশ্চাদপদ মানসিকতায় পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে দুষ্ট এবং রাজনৈতিক অপপ্রচারে সুরসুরি দিতেই এমন গল্প ফেঁদেছেন। এই লেখকের 'সুপ্রভাত, ভালবাসা', 'আমার আততায়ী', 'তিমি', 'মহাপুরুষ', 'যুবরাজ', 'প্রভূ', 'সুলতান', 'সময়', 'মোড়েলগঞ্জ সংবাদ ', 'একজন আরজ আলী', 'নভেরা', 'বাইরে একজন', 'ইদানীং হাসান', 'Swallow', 'Interview', 'Xanadu: A Journey' ইত্যাদি উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনীগুলো গত শতাব্দীতে রচিত। একুশ শতকে হাসনাত আবদুল হাই কি কি লিখেছেন আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের যারা স্বঘোষিত কুতুব, তিনি সেই গোত্রের একজন বিশেষ মোড়ল। প্রথম আলো সাহিত্য সাময়িকী বছরে কয়টি পড়ার উপযোগী ভালো গল্প প্রকাশ করে? জবাব হল তিন বছরে হয়তো একটি! বাকি সব অনুরোধের আসর। যতোদুর জানি একজন ব্যর্থ কবি প্রথম আলো'র সাহিত্য বিভাগের চূড়ান্ত ক্ষমতার ঈশ্বর। তিনি যার লেখা অনুমোদন করবেন তিনিই হবেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক বা কবি। প্রথম আলো সবখানেই ব্যবসার গন্ধ পায়। সাহিত্যকেও তারা ব্যবসায়িক পণ্য মনে করেন। হাসনাত আবদুল হাই সেই ব্যবসায় কমিশনের খাতিরে হয়তো একটা জোয়ার আনার প্রচেষ্টা করেছেন! তা নিয়ে এখন হৈ চৈ হবে। প্রথম আলো'র ব্যবসাও হবে। এই আর কি!!!বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করা, নারী সমাজকে হেয় করা, রাজনৈতিক সহিংসতাকে উসকে দেওয়া এবং ইঙ্গিতবাহী মানহানিকর গল্প লেখার জন্যে লেখক হাসনাত আবদুল হাই-এর এখন প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। দৈনিক প্রথম আলো'র সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক কিভাবে এমন একটি অশ্লিল গল্প প্রকাশ করলেন, সেজন্য তাদেরও ক্ষমা চাইতে হবে। প্রথম আলো'তে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের রচনা প্রকাশিত না হয় সেই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন, এমনটি প্রত্যাশা করি। আর লেখক হাসনাত আবদুল হাইকে বাকি জীবন বর্জনের তালিকায় রেখে দিলাম। শিঘ্রই হয়তো আমাকে লিখতে হতে পারে 'মদের টেবিলের সেই বুড়োটি' নামক কোন গল্প! কিন্তু প্রথম আলো'তে সেই গল্প দিব না, এটা একশোভাগ নিশ্চিত!!!
false
mk
শান্তিতে নাস্তা করলেন খালেদা জিয়া! নাস্তা ভালো হবার কথা কারণ আরও সাতটি কাবাব তিনি পেয়েছেন। কুমিল্লা থেকে কাবাবগুলো এসেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন ছাপিয়েছে তার কাবাব বানানোর নির্দেশনা ফোনালাপ। কাবাব চাই তার। কাবাব। নাস্তা করার জন্য কাবাব প্রয়োজন। প্রথম আলোতে..( ৩ ফেব্রুয়ারি, অনলাইন)কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছে। আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত ১৬ জন।আজ মঙ্গলবার ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার জগমোহন এলাকায় এ হামলা হয়।পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আইকন পরিবহনের বিলাসবহুল বাসটি যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা ফিরছিল। ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাসটি জগমোহন এলাকায় পেঁৗছে। এ সময় বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। সঙ্গে সঙ্গে বাসে আগুন ধরে যায়। এতে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই সাতজনের মৃত্যু হয়। আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত ১৬ জন। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চক্রবর্তী এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে বলে জানান তিনি।এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ টি কাবাব পেলেন খালেদা...আজকের প্রথম আলোর শিরোনাম ( ৩ ফেব্রুয়ারি) হরতাল ও অবরোধে আবারও লক্ষ্যবস্তু করা হলো রেলযাত্রীদের। লাগাতার অবরোধ ও ৭২ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার গাজীপুরে চলন্ত ট্রেনে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দগ্ধ ও আহত হয়েছেন পাঁচজন। নাশকতা চালানো হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনেও। শতাধিক প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেলায় লাইনচ্যুত হয় ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে আহত হন পাঁচজন।এর আগের দিনই ময়মনসিংহে আন্তনগর যমুনা এক্সপ্রেস ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেসে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে চলতি হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে নয় দফা ট্রেনে নাশকতা চালানো হলো।গতকাল রাজনৈতিক সহিংসতার জেরে মারা গেছেন আরও দুজন। তাঁদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে মারা যান পুলিশের গুলিতে আহত জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছাইদুর রহমান। প্রতিবাদে কাল বুধবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে দলটি। আর লক্ষ্মীপুরে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন অটোরিকশার যাত্রী লিটন হোসেন। এ ছাড়া বগুড়া ও রাজশাহীতে চারটি ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ব্যবসায়ীসহ দগ্ধ হয়েছেন ছয়জন। রাজশাহীতে আরও একটি যাত্রীবাহী বাস ও দুই ট্রাকে বোমা হামলা চালানো হয়। লক্ষ্মীপুরে মালবাহী পিকআপে পেট্রলবোমায় চালকসহ দগ্ধ হয়েছেন তিনজন। গাইবান্ধায় একটি বাসে আগুন ও দুটি ট্রাক ভাঙচুর, নওগাঁয় পাঁচটি ট্রাক এবং কক্সবাজারে দুটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়েছে। মাইক্রোবাসে হামলায় আহত হন মা-মেয়ে।বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ কর্মসূচির গতকাল ছিল ২৮তম দিন। এদিন ১৫টি জেলার অন্তত ২৪টি স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। গত রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১টি গাড়িতে করা হয় পেট্রলবোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ২১টি। নাশকতার আশঙ্কা, সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ, মামলা ও অন্যান্য ঘটনায় আটক করা হয় ১৮৪ জনকে।৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চলছে ২০ দলের ডাকে। তবে এর দুই দিন আগেই সহিংসতার শুরু। সহিংসতায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৬ জন। আগুন দেওয়া হয়েছে ৪১৬টি যানবাহনে এবং ভাঙচুর করা হয় আরও ৪৭০টি।গাজীপুরে ট্রেনে পেট্রলবোমা: গাজীপুরে গতকাল বিকেলে জামালপুর কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনে পেট্রলবোমা ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনের অন্তত পাঁচজন যাত্রী গুরুতর আহত হন। শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পাশে আউট সিগন্যালের কাছে ট্রেনে এ হামলা চালানো হয়। ট্রেনটি ঢাকা থেকে জামালপুরে যাচ্ছিল। আহত ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের হোসেন মিয়া (৬০), ভালুকা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মচারী আফাজ উদ্দিন (৫০), শ্রীপুর পৌর শহরের ভাংনাহাটি গ্রামের চাল ব্যবসায়ী কাজিম উদ্দিন (৪৫), শান্তিবাগ এলাকার দিনমজুর মফিজ উদ্দিন (৬০) ও আবুল কাশেম (৪০)।প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনটি জামালপুরে যাচ্ছিল। ট্রেনটি শ্রীপুর রেলস্টেশনে পৌঁছার আগে আউট সিগন্যালের কাছে ফরেস্ট অফিসের কাছে এলে পাশের জঙ্গল থেকে ইঞ্জিনে দুটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে কয়েক তরুণ। একটি বিস্ফোরিত হয়ে হোসেন ও কাজিম উদ্দিন তাৎক্ষণিকভাবে দগ্ধ হন। অপর তিনজন আহত হন আতঙ্কে লাফিয়ে পড়ার সময়। পরে ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছালে আহত ব্যক্তিদের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।আহত দুজনের অবস্থা গুরুতর। এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে দুটি পেট্রলবোমার একটির আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।চট্টগ্রামে ট্রেন লাইনচ্যুত: রেললাইনের প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে নেওয়ায় গতকাল ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এলাকায় ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ ঘটনায় ট্রেনচালক ইউসুফ ও তাঁর সহকারী কামালসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। প্রথম দুজনকে রেলওয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে এ নাশকতার ঘটনার পর সাড়ে ১১ ঘণ্টা চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এ সময় বাতিল করা হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ছয়টি ট্রেনের যাত্রা। দুর্ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ফিরোজ ইফতেখারকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে চার সদস্যের কমিটি। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।ট্রেনটিতে পাঁচটি বগি ছিল। দুর্ঘটনায় ইঞ্জিন ও একটি বগি নির্ধারিত লাইনের পাশে ঢাকামুখী লাইনের ওপর গিয়ে পড়ে। এতে দুটি লাইনই অচল হয়ে পড়লে সীতাকুণ্ড স্টেশনে ঢাকামুখী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ও মিরসরাইয়ের চিনকি আস্তানায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তূর্ণা নিশীথা ও চট্টগ্রাম মেইল আটকা পড়ে। এ ছাড়া বাতিল করা হয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী মহানগর প্রভাতী, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, গোধূলী ও চাঁদপুরগামী সাগরিকা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতীর যাত্রা।চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মুরাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেলায় ট্রেনটি ওই স্থানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে রেললাইনটি সরে যায়। ইঞ্জিনটি ছিটকে পাশে অপর রেললাইনের ওপর পড়ে। লাইনচ্যুত হয় একটি বগি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করাতেই এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন তিনি।দুর্বৃত্তরা ১২০টিরও বেশি প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেলেছিল। সকাল সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। কিন্তু উদ্ধারকারী ট্রেনটি ইঞ্জিন ও বগি টেনে তুলতে পারেনি। পরে আরও একটি উদ্ধারকারী ট্রেন গিয়ে উদ্ধারকাজ চালায়। উদ্ধারকাজ শেষে বেলা তিনটার দিকে একটি লাইন সচল হলে ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হয়।আরও দুজনের মৃত্যু: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাঁখুয়ায় গত রোববার বিকেলে পুলিশের গুলিতে আহত জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছাইদুর রহমান মারা গেছেন। ওই দিন দিবাগত রাত দেড়টায় তিনি সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ছাইদুর উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ও ঢেউটিন ব্যবসায়ী ছিলেন। ছাইদুর রহমানের পরিবার জানায়, রোববার জোহরের নামাজের পর এক অনুষ্ঠানে খাবার খাচ্ছিলেন ছাইদুর রহমান। এ সময় পুলিশ অনুষ্ঠানস্থল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। মাগরিবের নামাজের আগে এক সাংবাদিক মুঠোফোনে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জানান। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল হুদা দাবি করেন, পুলিশ হরতালকারীদের গ্রেপ্তারে রোববার গ্রামে অভিযান চালালে হরতালকারীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে ছাইদুর পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় নাশকতা, গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধাদানসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এদিকে লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় রোববার রাতে দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলায় গুরুতর আহত অটোরিকশার যাত্রী লিটন হোসেন ওরফে নয়ন মারা গেছেন। গতকাল ভোরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।লিটন হোসেনের বাড়ি নাটোরে। তিনি তিন মাস ধরে লক্ষ্মীপুর সদরের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে থাকছিলেন। মজুচৌধুরীর হাট বালুমহালে কাজ করতেন তিনি। রাজধানীতে পাঁচটি বাসে আগুন : রাজধানীতে পাঁচটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোরে গাবতলীর বাগবাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে বাসটি পুড়ে যায়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পোস্তগোলায় আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে আধা ঘণ্টায় রাজধানীর গুলশান ও মিরপুরে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতটা ৩৪ মিনিটে গুলশানে একটি বাস, পৌনে আটটার দিকে মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে আরেকটি বাস ও সাতটা ৫৩ মিনিটে মিরপুর ১১ নম্বরে আরেকটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গতকাল রাত নয়টার দিকে বুয়েটের পেছনের ফটকে ককটেল বিস্ফোরণে শহীদুজ্জামান (৩০) নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা দুই পায়ে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ককটেল বিস্ফোরণের সময় মাইনউদ্দীন (২৪) নামে এক তরুণকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ। বিস্ফোরণে মাইনউদ্দীন ডান হাতে আঘাত পেয়েছেন।ঢাকার বাইরের আরও চিত্র: রাজশাহী নগরের নগরপাড়া ও ছোটবনগ্রাম এলাকায় গত রাতে দুটি ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে দুই চালকসহ তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন পবা উপজেলার ট্রাকচালক সাইদুল ইসলাম ও তাঁর সহকারী শহিদুল ইসলাম এবং রাজশাহী নগরের ট্রাকচালক ফারুখ হোসেন। এর আগে রোববার রাত ১১টার দিকে কাটাখালী ও পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে ঢাকাগামী আরপি এলিগেন্স নামের যাত্রীবাহী একটি বাস এবং দুটি ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ট্রাক দুটি পুড়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন বাসচালক আবুল হোসেন (৪০) ও একজন যাত্রী। ফেনী শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুলের সামনে গত রাত আটটার দিকে পৌরসভার মেয়রের ব্যক্তিগত গাড়িতে ককটেল হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে গাড়িচালক সাইফুল ইসলাম আহত হন। পৌরসভার মেয়র ও জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আলাউদ্দিন এ সময় গাড়িতে ছিলেন না।লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের জেলা কারাগার এলাকায় গত রাত আটটার দিকে মালবাহী পিকআপে দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলায় চালকসহ তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত চালক মো. কামালের অবস্থা আশঙ্কাজনক। লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গত রাত সাড়ে নয়টায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।বগুড়ায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের গোকুল ও নিশিন্দারা এলাকায় আলুবোঝাই দুটি ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলা ও আগুনে দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম (৪৫), চালক সবুজ মিয়া (৪২) ও তাঁর সহকারী সুরুজ মিয়া (৩৫)। তিনজনকেই বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। গোকুলে রোববার রাতে ও নিশিন্দারায় এর আগের দিন রাতে হামলার ঘটনা ঘটে।চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ ষোলশহর এলাকায় বেবী সুপার মার্কেটের সামনে একটি টেম্পোতে ককটেল হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা আরও কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। এ ছাড়া হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে একটি সবজিবাহী মিনি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট টার্মিনাল এলাকায় রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রাজমহল নামের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।মৌলভীবাজারের জুড়ী-কুলাউড়া সড়কের ভূঁয়াইবাজার এলাকায় রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ডিজেলবাহী একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। কক্সবাজারের চকরিয়ায় গতকাল বিকেলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় কাচ ভেঙে উপজেলার মাইজকাকারা গ্রামের আলমগীরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (২৯) ও মেয়ে তাসকিনা (৪) আহত হন।গাইবান্ধায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পলাশবাড়ীতে রাতে গরু বহনকারী একটি ট্রাকে ককটেল হামলায় চালক ও তিনজন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। আহত ব্যবসায়ীরা হলেন সিরাজগঞ্জের আবুল হোসেন, মোজাম্মেল হক ও বাছের আলী।সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া-বেলকুচি সড়কে গতকাল তিনটি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে পিকেটাররা। একই দিন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাইতানতলা বাজার এলাকায় দুটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। এর আগের রাতে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে রূপা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়।নওগাঁ শহরের পুলিশ লাইনের সামনে গতকাল দুপুরে চারটি ও সুপারিপট্টিতে একটি পণ্যবোঝাই ট্রাক ভাঙচুর করেছে হরতাল-সমর্থকেরা। সিলেট শহরের চৌহাট্টা এলাকার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের (সদর হাসপাতাল) সামনে এবং বারুতখানা এলাকায় গত রাতে ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। চৌহাট্টায় ককটেলে দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকার প্রধান আলোকচিত্রী আবদুল বাতিন ফয়সল আহত হন।
false
ij
কবিতা থেকে গান _ আমার পৃথিবী ১৯৯৩। এপ্রিল মাস। জাফলং এসেছি। রৌদ্রকরোজ্জল একটি দিন। আর একটা পাহাড়ি নদী। নদীতে ভাসমান নৌকার ভিড়। নৌকায় ও নদীতে অজস্র পাথর-শ্রমিক গিজগিজ করছে। ওপারে ইন্ডিয়া। তার নীল-সবুজ পাহাড়। পাহাড়ে ঘরবাড়ি। রুপালি রঙের ঝকঝকে করগেটের টিনের ছাদ। ডিস অ্যান্টেনা। দূরে একটি সেতু লক্ষ করা যায়। প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে আমরা বেশ মুগ্ধ । রুকসার সিগারেট টানছিল। ওকে গম্ভীর দেখায়। আমার ভিতরেও কাঁপা কাঁপা তিরতিরে অনুভূতি। শহর ছাড়িয়ে আসার অনুভূতি। গায়ে তাত লাগছে। বেশ লাগছে। সিগারেট টানছিলাম আমিও। ঘামছিলাম। মৃদু উদ্বেগ বোধ করছি। চোখ, নৌকার ওপর, পাথরশ্রমিকদের কর্মকান্ডের ওপর। জীবনের দুটি রুপ দেখছি যেন। একদিকে অবারিত উজ্জ্বল রৌদ্রময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অন্যদিকে পাথর তুলে প্রকৃতিকে বিপর্যস্ত করার কদর্য রুপ-যে কারণে পাথর তোলার দৃশ্যটি যেন একেবারেই মানায় না। ভাবলাম: উপায় কি- শ্রমিকেরা খাবেই কি? জীবিকার টানে বাংলাদেশের নানাপ্রান্ত থেকে এসেছে। আমি অত্যন্ত বিষন্ন বোধ করতে থাকি। তখনও আমি জানতাম না যে গানের মাধ্যমে অনুভূতিটি অনেকের কাছে ছড়িয়ে যাবে। বিষন্নতার অনুভূতি নিয়ে কবিতা লিখেছিলাম: নিভৃতে বুনি দুঃখের গান। আর সে কবিতা সুর করেছিল জন। অবশ্য অনেক বছর পর। ২০০০ সালে। রুকসার নৌকা ভাড়া করছে ; পানিতে নামবে, সে প্রস্তুতি আমরা নিয়েই এসেছি। ডাউকির জল অত্যন্ত স্বচ্ছ ও অগভীর। পানির নিচে অজস্র পাথর দেখা যায়। আমি নৌকার পাটাতনে দাঁড়িয়ে শার্ট খুলছি, পানিতে নামব, তার আগে লুঙ্গি পরব। গায়ে তাত লাগছে। বেশ লাগছে। ঘাম হচ্ছে। ওপরে তাকিয়ে দেখি-ওজোন লেয়ারের ওপাশে ... আকাশে পূর্বাহ্ণের সূর্য। আমার মনে হচ্ছিল ... (সূর্যটা) তাকিয়ে আছে মৃত্যুর এপারে ...এসব ভেবেই পরে লিখেছিলাম- তাকিয়ে আছে মৃত্যুর এপারে (ওজোন লেয়ার যেন জীবন-মৃত্যুর সীমারেখা) জীবনের সুতীব্র উল্লাস দেখি আমি সাদা রৌদ্রে ভাসছে সবি। এপ্রিল মাস। তারপরও নদীর পানি কি শীতল! এতটা শীতলতা আশা করিনি। মুহুর্তেই উবে গেল শরীর ও মনের দাহ। পাথের নিচে পিছল পাথল। শ্যাওলার গন্ধ। ডুব দিলাম। তবে জলে নেমেও উদ্বেগ কাটল না। বারবার মনে হচ্ছিল আমার: নদী থেকে অবিরাম পাথর তোলা তো পরিবেশের ক্ষয়-নদীর ধর্ষন। সভ্যতার অন্তিম পরিণতিটি যেন দেখতে পাচ্ছি। নদীর ধর্ষন লক্ষ করে মাথার ভিতরে অনেক কথা গুনগুন করছিল। পরে সিলেট ফিরে সে রাতেই লিখে রাখলাম- ছায়ারা সরে যাবে, জানি সূর্য উঠবে। মৃতসব গাছের নিচে আগুন জ্বলবে। বুকের ভিতরে নদী; কুয়াশা কুয়াশা ... পাথরের ওপর বসে দেখছি এসবি। তাকিয়ে আছে মৃত্যুর এপারে জীবনের সুতীব্র উল্লাস দেখি আমি সাদা রৌদ্রে ভাসছে সবি। পায়ে পায়ে ফিরে আসি আবার নিভৃতে বুনি দুঃখের গান। অনন্ত আগুনে পোড়ে অনিদ্র চোখ। আমার বিবেক পোড়ে সূর্যের নিচে। অনেক অনেক বছর পর জন আমার কাছে গানের কথা চাইল। ‘আমার পৃথিবী’ নামে ওই কবিতাই দিলাম। বললাম পরিবেশ সংক্রান্ত গান। চলবে তো? জন মাথা নাড়ল। গিটারে ডি মেজর কর্ড ধরল। তারপর গুনগুন করে গাইতে লাগল-ছায়ারা ... আমি ...যাকে বলে মুগ্ধ। যে মুগ্ধতার ঘোর এত বছরেও কাটেনি। জন জন বলল: কম্পোজিশনটা কিছুটা রাগা টাইপ। আমি টের পেলাম- ও যাকে রাগা টাইপ বলল আমি পেলাম রাগ ইমন এর ছোঁওয়া। তখন তাহাসান ব্যান্ডের ভোকাল। জন বলল: গানটা ডুয়েট হবে। ছায়ারা সরে যাবে, (তাহাসান) জানি সূর্য উঠবে (জন)। মৃতসব গাছের নিচে (তাহাসান )আগুন জ্বলবে (জন)। বুকের ভিতরে নদী; (তাহাসান) কুয়াশা কুয়াশা (জন)... পাথরের ওপর বসে (তাহাসান) দেখছি এসবি (জন)। গানটির কম্পোজিশনে জাহানের সেতারের কথা না বললেই না। জাহান তখন সেতার শিখছিল। ‘আমার পৃথিবীতে’ অসাধারন বাজাল। জাহান; ডান দিকে আমার পৃথিবীই ওদের প্রথম টিভি পারফর্মেন্স। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২৯
false
fe
কবিরাই বার বার আড়ষ্ট হন, হতে পারেন 'যুদ্ধবিরোধী কবিতা ' পাঠ চলছে। নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা ,কবিরা । কবিরা কবিতা পড়ছেন। শুরু করলেন ডব্লিউ. এস. মারউইন। তিনি ভালো করে পড়তে পারেন না । তার গলা আড়ষ্ট হয়ে আসে। তিনি শেষ করেন। তাঁর কাছে জানতে চাই , এমনভাবে আড়ষ্ট হলেন কেন ? কবি হাসেন । বলেন , আমি বলতে পারি - মানুষ হত্যা বন্ধকরো হে শাষককুল ! বন্ধ করো এই রক্তের হোলিখেলা ! কন্ঠ জড়িয়ে যায়। দম বন্ধ হবার উপক্রম হয় । ১৯৯১ সাল। নিউইয়র্কে এসেছেন কবি শামসুর রাহমান। তাকে নিয়ে বড় সভা হবে। মানুষে গমগম করছে মিলনায়তন। কবি বলেন , আমি বক্তৃতা দিতে জানি। ঠিক আছে কবিতা পড়বো। আমরা রাজী হই। তাঁকে নিয়ে মাইকের সামনে হাজির হই আমি আর কবি এহসান ইমদাদ। কবি বই খুলেন। পড়তে শুরু করেন - ' আসাদের শার্ট '। তার কন্ঠ আড়ষ্ট হয়। তিনি জিরিয়ে নেন । আবার পড়েন। আবার আড়ষ্ট হন। মাইকের সামনে থেকে সরে যান চোখ মুছতে মুছতে। আমি গিয়ে কাছে দাঁড়াই। কবি বলেন, আমি পড়তে পারি না ,ইলিয়াস । যাদের রক্তের দামে কেনা আমার অস্তিত্ব , তাদের ঋণ শোধ করা হলো না আমার ! আমি কবির মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় চেয়ে থাকি । ২ এই সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে ২০০৮ সালে প্রকাশিত সকল কবিতা থেকে বাছাই করে একটা সংকলন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। অনেকে , তাদের প্রিয় কবিদের কবিতার মনোনয়ন দিয়েছিলেন। Click This Link সেই বাছাইপর্বের বিচারকমন্ডলীতে আমিও ছিলাম একজন। পরে কবিতার সংকলন আর বের হয় নি । বেরিয়েছিল গল্পের সংকলন। এখানে সেইসব কবিদের নামগুলো আমি আবারও স্মরণ করতে চাই , যারা চুড়ান্ত বাছাইপর্বে টিকেছিলেন। বাছাইপর্ব-২ : কবিতা বিভাগের চূড়ান্ত তালিকা ১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৯ কবিতা ক্যাটাগরিতে এ পর্যন্ত মনোনয়ন পাওয়া কবিতার সংখ্যা ১৭৭টি। এর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০টি কবিতা বেছে নিলে ভালো হয়। প্রয়োজনে পরে আরো কিছু যোগ-বিয়োগ হতে পারে। গ্রুপের পোস্ট এডিট করা যায় না, সে কারণে বিচারকদের বাছাইগুলো আরেকটি পোস্টে আপডেট করা হবে। একাধিক কবিতা মনোনয়ন পেয়েছে যাদের, তাদের একটি করে কবিতা এখনই বেছে নেওয়া যায়। বিচারকরা যদি ভালো মনে করেন, তাহলে প্রতিষ্ঠিত কবিদের সর্বোচ্চ দুটি কবিতা নির্বাচন করা যেতে পারে। কবিতা ও শিল্পসাহিত্য বিভাগের সম্পাদক: ফকির ইলিয়াস, মুজিব মেহদী, আহমাদ মোস্তফা কামাল, কালপুরুষ, কৌশিক এবং তপন বাগচী। যাদের একাধিক কবিতা ব্লগারদের মনোনয়ন পেয়েছে মাছরাঙ্গা নৈসর্গের শলমাজড়ি প্রবীনতম প্রণয় ফরসেপের আঁকড়ায় কয়েক টুকরো মাংস টেংরাটিলা মুজিব মেহদী শীতার্ত সেমিনার মায়া খরগোশ সমুদ্রছায়া চোখের ছবি মনের ছবি পারভেজ একটি প্রার্থনা চাইছি ক্ষমা যাদের কাছে একটি প্রার্থনা পড়ে থাকা সময়গুলো.... অপূর্ব সোহাগ জলের নুপূর ঘর পালানো স্বপ্নরা গেয়ে যায় আরাধ্য সঙ্গীত ফকির ইলিয়াস পরিপথ জানে আমরা দুজনেই শীতের শিল্পায়ন চেয়ে চিঠি লিখেছিলাম ভূমিবাদী জলের কিরণ পথের নিয়তি লিখে আরেকটি মেঘের বিকেল সুমাইয়া মুনিরা যাইনি আমি মরে সব কিছু আমার কেড়ে নিয়েছে এক ঝড় হওয়া তুমি কি.......?? সুন্দর সমর কারাগার মুক্ত মানুষের ঠিকানা পলাশির যুদ্ধের পর মিডিয়ার প্রতি মীরজাফর সুলতানা শিরীন সাজি হৃদয়ে বর্ষাকাল নিয়ত বৃষ্টি ঝরায় মেয়েটার স্বাধীনতা আন্দালীব কর্পূর-সন্ধ্যার বয়ান হিজল সংকেত ঘুম ভেঙ্গে গেলে প্রণব আচার্য একটি পংক্তির জন্য বৃক্ষ ও শস্যের গান সংক্ষিপ্ত শিরোনামে ম্রিয়মান শহরের দৃশ্যপট সবাই একদিন বিপন্ন সময় অতিক্রম করবে দ্বীপান্তরে নাজনীন খলিল জীবন খুঁজে ফিরি দহনের স্মৃতি-কথা অবজ্ঞার অভিনয় গোলাপ ফোটাতে গিয়ে ছন্নছাড়ার পেন্সিল অক্টোবরের বৃষ্টি বিচ্ছেদের আগে চতুর্পদী পতিত নক্ষত্রদলও আমাদের চেয়ে একাকী কালপুরুষ প্রণমী তোমায় এক মেয়ের আকুতি সময়টা ঠিক ছিলনা বোধহয় মুক্তি মণ্ডল দৃশ্যবাদী কাঠুরে নাচের স্কুল রিফাত হাসান ভাষা: নাইন ইলেভেনের পর তোমার সাথে আমার যে বিতর্ক পু র নো স্কে চ খা তা: একটি অন্ধ মেয়ে : মাজুল হাসান নেশা অথবা নিশির টান; বাইসন... এইসব কালাজাদুর কলোনিতে মনজুরুল হক অস্তাচলের মরা ঈশ্বর তার কাছে কোন নালিশ নেই... আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে মুয়ীয মাহফুজ জোনাক ধরার কাচের বয়াম লিখে রাখি অশোক দেব যা আমাকে পাগল করে, সে তো আমার নিজের অর্জন বাইসাইকেলের বয়স তখন আমার, শুভ্রাদি যখন মৃদু ঘন্টাধ্বনী যুবকের কানে আজহার ফরহাদ প্রতিদিন যে ঘরে শুই পলি ও পল্লবের দেশে হমপগ্র মা এভাবে আমার কাছে কিছু চেয়েও না, আমার লজ্জা লাগে! চাঁদের বুকে রাজকন্যা! প্রতিফলন বুঝিস কি তুই........? ভুল করে তুই ফিরিস যদি..... প্রান্তজাকির হয় না; তবুও কবিতা বোনার দুঃসাহস দেখাই! মেঘের ডানা হনলুলু আমার বামহাতটা কব্জির নীচ থেকে উড়ে গিয়েছিলো আমার সতের বছর বয়স নরকের পাপী দু-আনন ~রংধনু~ সোমেশ্বর অলি নাকফুল টের পাচ্ছি স্নানঘর থেকে শুরু... আইরিন সুলতানা দিয়েছিলে যা স্পর্শের বাইরে : ভালবাসার স্পর্শ কোথা পাই .... অভিজিৎ পাখি বিষয়ে যৎসামান্য আরেকবার অভিজিৎ দাসের কয়েকটি কবিতা সরকার আমিন ১৯৬৭ বিবাহিত প্রেমের কবিতা যখন মন থেকে রক্ত ঝরে ডেটলে কাজ হয়না চিটি (হামিদা আখতার) মানুষ তো !! এক বিকেলের হাত ধরে--- শেখ জলিল যায় না পোড়ানো ভালোবাসা একটি মানুষ কখনো কি অন্য কারো হয়? বিহংগ এক নিসঙগ সারথির জন্ম জন্মান্তরের ভালোবাসা চক্কুস্থির যে অনাবিল ভালোবাসায় মুকুল আকাশের গল্প হিসেব নিকেশ মায়াবী ঘাতক একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি সবাক ঘুমরোচক নৈশগীত ঈশ্বরের কাছে প্রেমপত্র দাগ থেকে যায় রাতিফ জিজ্ঞাসা জীবন মু্দ্রা বোঝাপড়া রোবট রাজকন্যা নিরাকার ভালোবাসা ফিরে যাও, স্পার্টাকাস! ভুল করে ভুল আজ কোন কবিতা নয় মনিরুল হাসান দেয়াল ছাড়াছাড়ি লাবণ্য প্রভা গল্পকার আবার অন্যমনস্ক দরোজা খুলে দেই চাঁদ বালিকা নিবিড় অশ্রুভেজা তুলির আঁকড় বসন্তে দ্বিতীয় প্রেম আশরাফ মাহমুদ হার-জিত রাত্তিবাস এবং বিবিধ পথিক!!!!!!! তুমি খুন হও বারবার , তবুও... বিবেক জীবন্মৃত সুরভিছায়া স্মরনের দুয়ারে ........ কাহিনী কাতান একটি করে কবিতা মনোনয়ন পেয়েছে যাদের তুমি, তোমার সরাইখানা এবং হারানো মানুষ : মাসুদ খান কি সুন্দর মিথ্যাগুলো অথবা সূত্রসমুহ : এমরান কবির গত রাতের সীট বিহীন গাড়ি : অ রণ্য সাহিত্যিক মাহমুদুল হককে নিবেদিত কবিতা : তপন বাগচী কবি : মারজুক আফগান টেড হিউজবাদী সঙ্গম : আমি ও আমরা লাস্ট ট্রেন : বেবি রহমান বসন্তের খসড়া ইশারা : আবু বরকত আজ কি আমার বিকেলগুলো, অন্য কারো? : সুনীল সমুদ্র একজন পিপড়া, একটা কবি এবং..... : মাঠশালা নোংরা মেয়ে : মুনমুন বোনাস : এ,টি.এম,মোস্তফা কামাল প্রিয়তম স্বদেশ : কঁাকন ছেলে বৃষ্টি : নতুন কবি আমার কখনো কিছু ছিলো না : রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র ভালোবাসবো বলে! : রাগ ইমন তোমাকে ভালবাসি, হ্যাঁ ভালবাসি তাই মেনে নেই সব। হারাতে চাই না তবে এটা দূর্বলতা নয় : মনের কথা অভিনয় : নীলাভ আমিন আমার হাতে এক পেয়ালা দেবদারুর ছায়া : বিষাক্ত মানুষ আমাদের মিলগুলো : একরামুল হক শামীম হাওয়ায় লেখা মায়ের চিঠি : নাজমুল হাসান বাবু মাগো তোর কোলে : মামুন খান আমায় মনে আছে কি? : আবুল বাহার নিঃশব্দরা যখন শব্দরেখা হবে - ১ : জ্যামিতি নৈসর্গিক : টিপু আমি মেয়ে বলে : অতনু ব্যানার্জী জন্ম অবিশ্রান্ত মৃত্যুর মৈথুন : সাখাওয়াৎ এবার বাংলা ছাড়্ : গুপী গায়েন দীর্ঘশ্বাস ও আরো একটি সন্ধ্যা প্রেমের দায়িত্ব নিল না : ফয়সল নোই ছোট খালার যাওয়া : সুমন রহমান তবু মায়ের ডাক : তুষার আহাসান আমাদের বিজয় : সুমন সালেহী মেলা দিন আগে লিখছিলাম এইটা : মানুষ আমার কলম কাঁদে : নামহীন মানব খেরোখাতার আসন্ন পৃষ্ঠাটি : রহমান হেনরী জল প্রিজমের গান : মৃদুল মাহবুব জন্মদাগ থেকে নির্বাচিত কয়েকটি কবিতা : রায়হান রাইন সূর্যাস্ত মন্দির : তারিক টুকু সারাটা শহর জুড়ে তুমি নেই : অন্য আকাশ হে ভালোবাসা তোমার জন্য বড় অসমান এ পৃথিবী : চতুরভূজ আজ আমার মন ভালো নেই : নীলান্জনা হৃদয় গহনে বসন্ত গাঁথা : কৃষ্ণকলি বিষন্নতায় কাটে সারাবেলা : মোসতাকিম রাহী মধ্যরাতের নদী : মন রহমান প্রশ্নোত্তর : প্রাকৃত আমি কবি হতে চেয়েছিলাম : বুড়ো বেদনাজলের গাঙচিল : ইমরান খান ইমু হৃদয় নিকুঞ্জে : ভোরের কুয়াশা...ফয়সাল মা : বিপ্র ছেড়ে যাচ্ছি : দুরের পাখি অলিখিত উপন্যাসের স্ফূরণ আশা : মেঘ কষ্টের তীব্রতার মাঝেও ওরা বেচেঁ আছে : ভাস্কর চৌধুরী চন্দ্রাহুতি : অমি রহমান পিয়াল অ - কবিতা : মুনিম সিদ্দিকী চিঠি লিখছি আমার জিবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ নারীকে - আমার মা : খোলাচিঠি মা তুমি এত খারাপ কেন? : অতিথি_পথিক_মানুষ জন্ম থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত চাটবি ... : আমি_একজন.মানুষ লাল মাটি আর শান্তিকামী যোদ্ধার দিনলিপি : বৃশ্চিক হয়তো সেদিন... : বরুণা আয়না : সৈয়দ আফছার ধ্রুবতারা এবং আমরা দুজন : বাবুয়া বসন্ত রোদন : টিপু নিঃসঙ্গতা : ফটিক চাঁদ একটা শরীর বিষয়ক কবিতা : জামাল ভাস্কর কবিতা : পথিক মানিক বাঁক : সফেদ ফরাজী ====================================== ৩ এই বিষয়গুলো ব্লগের কবিদের জানা দরকার। মনে রাখা দরকার। আমি যখন আমার লেখা '' ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো '' Click This Link লেখার সিদ্ধান্ত নিই , তখন যে বিষয়টি নিয়ে ভাবি নি , তা নয়। আমি যা করেছি , তা আমার বিবেচনায়। যোগ বিয়োগ করেছি আমি আমার মতো করেই। তারপরও অনেকে না না কথা তুলেছেন। তা তারা তুলতেই পারেন। বলা যায় , আমিও লিখতে গিয়ে আড়ষ্ট হয়েছি। হতেই পারি। কবিরাই বার বার আড়ষ্ট হন, হতে পারেন ...........। ছবি- পল সেলমান সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৫
false
rg
আজ রাতেই কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি!!! রিভিউ আবেদন খারিজের আদেশ কারাগারে পৌঁছে গেছে!!! একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী মিরপুরের কসাই আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি গ্রহণ শেষে দুপুর ১২টার পর এ আদেশ দেন। আইনি জটিলতায় এখন কসাই কাদের মোল্লার সামনে কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতি বরাবর ক্ষমা প্রার্থণার সুযোগ রইল। এর আগে কসাই কাদের মোল্লা বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছো তোষ স্বীকার করে তিনি ক্ষমা চাইবেন না। যদি এখনো তিনি সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তাহলে আজ রাতেই কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবে। এতোদিন বিএনপি ও জামায়াত জোট বলে এসেছিল যে বিচার প্রক্রিয়া বিতর্কিত, এখন আর সেটি বলার সুযোগ নেই। বরং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অনুপস্থিতি একজন চেম্বার বিচারপতি'র কাছ থেকে কসাই কাদের মোল্লার আইনজীবীরা রিভিউ পিটিশনের নামে ফাঁসি কার্যকর স্থগিত আদেশ এককভাবে বের করেছিলেন। যে কারণে ফাঁসি কার্যকর হতে আবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির চেম্বার বেঞ্চ একত্রে এই রিভিউ আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দিলেন। এত করে আইনের সকল জটিলতার নিঃস্পন্ন হল। পাশাপাশি কসাই কাদেরের ফাঁসি নিয়ে জামায়াত বিএনপি'র বিতর্ক করার খায়েসের পথও বন্ধ হল। বাংলাদেশের মাটিতে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সবারই একে একে আইনের সকল জটিলতা শেষে কসাই কাদেরের মত ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে। এভাবেই বাংলাদেশ একাত্তরের কলংক মুছে একুশ শতকে নতুন সোনার বাংলা হয়ে উঠবে। এটাই বাংলার সকল সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবী। জয় বাংলা। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। ক-তে কাদের মোল্লা...তুই রাজাকার...তুই রাজাকার.... কসাই কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না বলে যে দোহাই দিচ্ছেন, এটা হল সময় ক্ষেপণের সেই পুরানো একটি কৌশল মাত্র। এ্টি আর এখন টিকবে না। রাজ্জাক সাহেব বলছেন যে, জেল কোড পুরোপুরি মানতে হবে। আজ সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ চেম্বার আদালতে রিভিউ আবেদন খারিজ করার অর্থই হল আগের যে নির্দেশ ছিল সেটিই হুবহু কার্যকর। সেই হিসেবে কসাই কাদের মোল্লার ডেথ ওয়ারেন্ট কারাগারে আছে। সেটির উপর যে স্থগিত আদেশ করেছিলেন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সেই স্থগিত আদেশ এখন আজকের শুনানীর পর থেকে অকার্যকর। তার মানে হল কাদের মোল্লার ডেথ ওয়ারেন্ট জারী আছে। এখন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আজকের স্থগিত আদেশ যে অকার্যকর এবং রিভিউ আবেদন খারিজের কপি পৌঁছা মাত্রই কাসের কাদের মোল্লাকে ফাঁসিয়ে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাটা কারাটা কর্তৃপক্ষের অবশিষ্ট কাজ। ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব নিজেও একজন জামায়াতে ইসলামী'র লোক। মিথ্যা কথা বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে এর আগে তিনি অনেক বেআইনী কাজ করেছেন। এখন পূণৃাঙ্গ রায়ের প্রকাশ পর্যন্ত রায় কার্যকর করা যাবে না বলে যে দোহাই দিচ্ছেন, সেটা সময় ক্ষেপণের সেই পুরানো ক্যাচাল। আইনি জটিলতায় সেই ক্যাচালের আর কোনো মূল্য নাই। রায় কার্যকরের স্থগিত আদেশ যেহেতু আদালত খারিজ করে দিয়েছে, তাই ডেথ ওয়ারেন্ট কাদের মোল্লার জন্য বহাল আছে। আর সেই খবরটি অফিসিয়ালি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পোঁছা্লেই কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি হবে। আর সেই ফাঁসি যে আজকেই হতে যাচ্ছে এটা প্রায় নিশ্চিত। জয় বাংলা... রিভিউ আবেদন খারিজের আদেশে বিচারকরা সই করার পর ইতোমধ্যে তা কারা কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন। আর কারা মহাপরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মাঈন উদ্দিন খন্দকার জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজের আদেশে হাতে পেলেই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জয় বাংলা... সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৫
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৫৩ ১. অনেক কিছু লেখার জমে গেছে এ ক'দিনে, তবে সর্বশেষ ঘটনা নিয়েই বরং কথা বলি। আমার তাজিক পড়শী বাহুদুর বিদায় নিয়েছে। লাথি মেরে দরজা ভেঙে কয়েকদিন খুব মনমরা ছিলো সে। কফি বানাচ্ছিলাম এক সকালে, আমাকে এসে তার সেই দুঃখের কাহিনী বিশদ বর্ণনা করলো। বাহুদুর জার্মান জানে না তেমন, ইংরেজি-জার্মান মিশেল একটা প্রোগ্রামে এসেছে সে, আমার সাথে বাতচিত ইংরেজিতেই হয়, এ ভাষাটা বেশ ভালোই বলে সে। "আমার দোষ ছিলো না।" শুরুতেই সে রায় দিলো। "চিন্তা করো, আমি বাথরুম থেকে বের হয়েছি একটা জাইঙ্গা পরে, সারা গা ভিজা, টাওয়েলটা পর্যন্ত ঘরের মধ্যে, দরজা খুলতে গিয়ে দেখি দরজা আর খোলে না। তখন আমি আর কী করতে পারি?" আমি সমবেদনা জানালাম। বললাম, যে সে ঠিক কাজটাই করেছে। "তুমিই বলো, আমি এই শীতের রাতে আর কোথায় যাবো? আমার সারা গা ভিজা। পরনে খালি একটা জাইঙ্গা।" আমি আবারও সমবেদনা জানালাম। শীতের রাতে ভেজা গায়ে জাঙ্গিয়া পরে যে কোথাও বের হওয়া উচিত না, এ ব্যাপারে জোর নৈতিক সমর্থন দিলাম। "দরজা না ভাঙলে আমার ঠান্ডা লাগতে পারতো।" আমি জানালাম, দরজা একটা গেলে আরেকটা আসবে। জীবন একটাই। সেটাকে সামলেসুমলে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এরপর বাহুদুর উৎসাহ পেয়ে গেলো। সে ঘ্যানর ঘ্যানর করেই চললো। সে মোটেও এই ভোনহাইমে থাকতে চায় না। সে অয়রোপাহাউস নামের চমকদার ভোনহাইমে থাকার জন্যে ছয় মাসের ভাড়া আগাম শোধ করে তবে এসেছে। এই যে এখানে তাকে রাখা হয়েছে, সেটা এক প্রকারের অবিচার। আমি জানতে চাইলাম, অয়রোপাহাউসে ঘর বরাদ্দ না করে ষ্টুডেন্টেনভেয়ার্ক কেন তাকে আমার প্রতিবেশী বানানোর হীন চক্রান্তে লিপ্ত হলো? বাহুদুর গনগনে মুখে বললো, "আর বইলো না, ঐ রুমে আগে যেই ব্যাটা থাকতো সে যাওয়ার আগে সব ভাইঙ্গা রাইখা গেসে!" আমার কফি মাথায় উঠতো আরেকটু হলেই। বাহুদুর ক্ষেপে গেলো। "হাসো কেন?" আমি আবার গম্ভীর হয়ে গেলাম। যে ছোকরা লাথি মেরে এই মজবুত পার্টিকেল বোর্ডের দরজা ফ্রেম থেকে খসিয়ে দিতে পারে, তাকে না চটানোই ভালো। বললাম, "তুমি ঐদিন গোসলে গেসো, খামাকা দরজায় তালা মারসিলা ক্যান?" বাহুদুর থতমত খেয়ে গেলো। "আমি মারবুর্গে বড় একটা ভিগি (ভোনগেমাইনশাফটের সংক্ষিপ্ত রূপ, মানে কয়েকজন মিলে একত্রে এক অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস)-তে ছিলাম, বুঝছো, ঐখানে আমাদের বলে দিসিলো দরজায় তালা না মাইরা কোথাও না যাইতে। আমার অভ্যাস হয়ে গেসে।" তবে বাহুদুরের কপাল ভালো, অয়রোপাহাউসের পূর্বতন শক্তিমানের কীর্তি কর্তৃপক্ষ মেরামত করেছে শিগগীরই। চাড্ডিগাঁটরি গুটিয়ে সে ভাগলো। কয়েকদিন পর ট্রামে তার সাথে দেখা, বিশালদেহী এক মধ্যএশীয় মেয়ের সাথে। বললাম, তোমার নতুন ভোনহাইমের তালাগুলি ঠিকাছে তো? সে দেখলাম আবার গম্ভীর হয়ে গেলো। ২. কয়েকদিন তারপর একাই অ্যাপার্টমেন্টে বাস করছি। একা থাকলে যা হয়, কোন কিছু পরিষ্কার করার তাড়া থাকে না সহজে। আমি প্রকৃত অলস, ফলে বাসনকোসন ডাঁই হয়ে যায়, মেঝেতে হালকা ধূলো জমে। একদিন সারারাত কী যেন বালছাল কাজে ব্যয় করে সকালে ঘুমাতে গিয়েছি, দুপুরে কলিং বেল বেজে উঠলো। উঠে গিয়ে রান্নাঘরের জানালা খুলে নিচে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে মাথায় বাজ পড়লো। কাসেলে পাকিস্তানী কিছু ছাত্র আছে, যাদের নানা কারণে এড়িয়ে চলি, তাদেরই একজন এক নতুনমুখো ছোকরাকে নিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ইংরেজিতে অনুরোধ ভেসে এলো, আমরা ঘর দেখতে এসেছি। তোমার সময় হবে? মনে মনে বললাম, ব্যাটা বেওকুফ, চাবি ছাড়া তুমি ঘর দেখবা কিভাবে? পরক্ষণেই মনে হলো, আরে, বাহুদুর তো দরজাই ভেঙে রেখে গেছে। দরজা খুলে ঢুকতে দিলাম ব্যাটাদের। এদের মধ্যে একজনকে আগে দেখেছি ক্রিকেটের মাঠে, ভালো বোলিং করে, আর আরেকজন নবাগত, বোঝা যায়। দরজার অবস্থা দেখে চিন্তিত হলেও ঘর দেখে খুশি দুইজনেই। ঐ ঘরটা বেশ বড়। সাথে কমন বারান্দাও আছে। পুরনো পাকি ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো, আমি কোথাকার লোক। আমি লৌকিক ভদ্রতা করে হাত বাড়িয়ে দিলাম। "আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।" বাংলাদেশ শুনে একটা উল্লসিত ভাব দেখা গেলো পুরনো পাকির মুখে। "উর্দু সমঝতে হো?" সদ্য ঘুম থেকে না উঠলে আমি নিশ্চিতভাবেই কোন খারাপ কথা বলতাম, কিন্তু মেজাজ সামলে রেখে বললাম, না। এবার প্রশ্ন, "হিন্দি?" কেমন লাগে? আমি বাংলাদেশের লোক, হিন্দি কেন বুঝতে হবে আমাকে? আমি কর্কশ গলায় বললাম, তোমার যদি ইংরেজিতে সমস্যা থাকে, জার্মানে কথা বলতে পারি আমরা, সমস্যা নেই। পুরনো পাকি চুপ করে গেলো এবার। নতুন পাকি ছোকরার সাথে পরিচিত হলাম। এই ঘরটি তার প্রাপ্য ছিলো, কিন্তু বাহুদুরের অয়রোপাহাউসপ্রাপ্তিতে দেরি হচ্ছিলো বলে তাকে একেবারে অন্য শহরের এক ভোনহাইমে নিয়ে ফেলেছে ষ্টুডেন্টেনভেয়ার্ক। রান্নাঘর টয়লেট দেখে দুইজনেই বিদায় নিলো। আমি রক্তলাল চোখ নিয়ে কড়া এক কাপ চা বানাতে বসলাম। এই ছিলো ললাটলিখন। পাকি মশলা খাই না, পাকি চাল খাওয়া বাদ দিলাম, পাকি দোকানের ছায়া মাড়াই না, আর এখন এক ছাদের নিচে এক পাকির সাথে বাস করতে হবে। কোথায় এক নির্বান্ধব চেক সুন্দরী এসে উঠবে পাশের ঘরে, আধো আধো জার্মানে এটা সেটা জানতে চাইবে, তাকে সব রগে রগে বুঝিয়ে দেবো ক্যাম্নেকী, তা না। স্পষ্টই এ সৃষ্টিকর্তার চুথিয়ামি। আমাকে প্যাঁচে ফেলে দেখছে শালা। ৩. নতুন পাকি পড়শী সৈয়দ বাবাজি কয়েকদিন আগে এসে উঠেছে। বয়স বেশি নয় তার। কয়েকদিন আগে সচলে হয়ে যাওয়া আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলাম, দেখি কী হয়। আগ বাড়িয়ে ভ্যাজাল পাকানো আমার স্বভাব না, কাজেই সদ্ব্যবহারের পথই বেছে নিলাম। সৈয়দ সাহেবের ইংরেজি মোটামুটি, আর প্রথম দিন উর্দু হিন্দিকে রুল আউট করে দেবার পর তিনি উর্দুতে বাতচিতের চেষ্টা করেননি। মনে মনে একটা প্লাস পয়েন্ট দিলাম তাকে। রাতের বেলা বসে কাজ করছি, এমন সময় দরজায় টোকা। সৈয়দ সাহেব কুণ্ঠিত মুখে জানতে চাইলেন, আমার কাছে অ্যালার্ম ঘড়ি হবে নাকি। আমার অ্যালার্ম নষ্ট, মোবাইলের অ্যালার্ম ব্যবহার করি। সৈয়দের মোবাইল নেয়া হয়নি এখনো, ভিসা প্রলম্বিত করার আগে মোবাইল নেয়ার উপায় নেই। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, ঠিকাছে, আমি ভোরে তোমাকে তুলে দিবো। সৈয়দ ধন্যবাদ জানিয়ে কেটে পড়লো। পরদিন সন্ধ্যায় তাকে রান্নাঘরের জিনিসপাতি বুঝিয়ে দিলাম। বেশির ভাগ জিনিস আমার কেনা, বাকিগুলি পুরনোদের রেখে যাওয়া জিনিস, নিয়মানুযায়ী ভোনহাইমের সম্পত্তি এখন। বললাম, "তুমি ব্যবহার করতে পারো যে কোন কিছু, তবে ব্যবহার করে ফেলে রেখো না। এখানে সাবান আছে, স্পঞ্জ আছে, ধুয়ে রেখে দিও।" টুকটাক আরো আলাপ হলো। সে এসেছে বালুচিস্তান থেকে, কোয়েটার ছেলে। ওকে দেখে মনে হয় না সে বালুচ, তাই জিজ্ঞেস করলাম, সে এথনিক বালুচ কি না। সৈয়দ সবেগে মাথা নাড়লো, "না! আমি পাখতুন!" তারপর একগাদা তথ্য দিলো পাখতুনদের সম্পর্কে। তারা কোথায় কোথায় থাকে, কোথায় সংখ্যায় কম, কোথায় বেশি। একই সাথে তার জিজ্ঞাসা, কিবলা কোন দিকে। সৈয়দকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বললাম যে আমি কিবলা সম্পর্কে কেন নিশ্চিত না। আমি মুসলিম পরিবারে বড় হলেও যে ধর্মউদাসীন, এবং অজ্ঞেয়বাদিতার পথের পথিক, শুনে সে ঘাবড়ে গেলো। বললাম, আমরা এখন কা'বার উত্তর পশ্চিমে আছি, তুমি সকালে উঠে দেখে নিও সূর্য কোন দিকে ওঠে, ওদিকে ফিরে নামাজ পড়ে নিও। আজকে সন্ধ্যায় কাজ করছি, আবার দরজায় টোকা। সৈয়দ লজ্জিত মুখে দাঁড়িয়ে। তার আব্দার আকাশচুম্বি। সে কখনো রান্না করেনি জীবনে, তাকে আমি একটু দেখিয়ে দিতে পারি কি না। বিরাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠলাম। আলুর দম খাওয়ার শখ হয়েছে ছোকরার। আলুর দম আমি নিজেও কোনদিন রান্না করিনি, আবছা ধারণা আছে শুধু। নিজে রাঁধতে গিয়ে ইতোমধ্যে মশলার দফারফা করে ছেড়েছে ব্যাটা। রান্না নিয়ে আর চুলা বন্ধ করা নিয়ে একটা গুরুগম্ভীর লেকচার দিয়ে আলুর দম রান্না দেখালাম সৈয়দকে। নিরামিষাশী কি না জিজ্ঞেস করতে সে মনমরা হয়ে গেলো। জানালো, বালুচিস্তান খুব ঠান্ডা জায়গা। ওখানে মাংসচর্বি না খেলে টেকা যায় না। আরি পাকিস্তানী নিরামিষাশী বলে নাকি কোন কিছু নাই দুনিয়ায়। বুঝলাম, তা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতো। এত কিছু ফেলে সে কেন আলুর দম খেতে চায়, এ প্রশ্নের জবাবে সে জানালো, এই দেশে হালাল তরিকায় কেউ ছাগল কাটে না। মাত্র নাকি একটা দোকানে শুধু শুদ্ধ পদ্ধতিতে কাটা মুরগি পাওয়া যায়। রাঁধতে রাঁধতে আরো টুকটাক আলাপ হলো। সৈয়দ জানালো, কোয়েটা সম্পর্কে আমি যা জানি, পাকিস্তানীরা তা-ও জানে না। সে একবার ইসলামাবাদে একটা কাজে গিয়ে জানিয়েছিলো, সে কোয়েটা থেকে এসেছে, উত্তরে নাকি তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কোয়েটা গিলগিটের কাছে কি না। ক্ষুব্ধ গলায় সে বললো, এটা একটা কথা, বলো? গিলগিট হচ্ছে চীনের কাছে। আমি বললাম, বালুচিস্তান তো সবচেয়ে বড় প্রভিন্স, আর কোয়েটা তো বালুচিস্তানের রাজধানী। এত বড় শহর চেনে না কেন? সৈয়দ তিক্ত গলায় বললো, চিনবে কিভাবে? কোন নজর দিলে তো? সরকার কিছু করে না কোয়েটার জন্য। করাচী এয়ারপোর্টে তাকে হেনস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ, সে কোয়েটার লোক হয়ে জার্মানি যাচ্ছে শুনে। করাচী গেলেই ওখানকার লোকে তাদের নিয়ে মস্করা করে। আমি বললাম, কোয়েটাতে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নাই কেন? সৈয়দ এবার মুখ কালো করে ফেললো। আস্তে করে শুধু বললো, কিছু নাই। অনেক কিছুই নাই। আমি খুব শক্ত গলায় বললাম, জানি। এই জিনিস আমরা চিনি। এ জন্যেই আমরা পাকিস্তানকে লাত্থি মেরে আলাদা হয়েছি। সৈয়দ আমার চেহারা দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। তারপর আস্তে করে বললো, খুব অন্যায় হয়েছিলো তখন তোমাদের উপর, আমি জানি। ৪. পাকি ঘৃণা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে সচলে। সেই আলোচনায় আমি ঘৃণার সপক্ষেই কথা বলেছি, ভবিষ্যতেও বলবো। কোন পাকিস্তানী যতদিন পর্যন্ত স্বীকার না করবে এই অন্যায়ের কথা, ততদিন পর্যন্ত সে মানুষ না, হি অর শি ইজ জাস্ট অ্যানাদার পাকি। এই অন্যায় স্বীকার করুক, আমরাও ঘৃণার পাত্রটুকু ঢেকে রাখবো।
false
mk
জিহাদের নামে জামায়াত উসকে দিচ্ছে গ্রামবাসীকে ‘আপনারা যেটাকে বলেন নাশকতা-সহিংসতা, আমরা বলি সেটাকে জিহাদ। এই আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে আমরা জিহাদ করে যাচ্ছি। এই যুদ্ধে মারা গেলেই শহীদ। এই শহীদরা সরাসরি বেহেশতে চলে যায়।’ হরতাল-অবরোধের নামে রাস্তা কাটা, ব্রিজের পাটাতন উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের টেঙ্গনমারী গ্রামের জামায়াত সমর্থক ৫৫ বছর বয়সী সেলিম উল্লাহ এসব কথা বলেন।‘এলাকায় রাস্তা কাটলে এবং ব্রিজ নষ্ট করলে তো আপনাদেরই সমস্যা হয়’ প্রসঙ্গ তুললে জবাবে তিনি বলেন, ‘কষ্ট তো আমাদেরই হয়, তবে ইসলামের জন্য কষ্ট মেনে নিতে হয়।’ সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের জামায়াত সমর্থক হারিস মিয়া বলেন, ‘ঘরে ঘরে জিহাদ শুরু হয়েছে, ইসলাম রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছি।’ ইসলামের ক্ষতি কারা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাদের চোখ কি অন্ধ নাকি? দেখেন নাই শহীদ কাদের মোল্লাকে নাস্তিক সরকার ফাঁসি দিল, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হলো?’সেলিম উল্লাহ আর হারিস মিয়ার মতো জলঢাকা উপজেলার জামায়াত-শিবিরের সমর্থকরা এমনটাই বিশ্বাস করেন। তাঁরা মনে করেন, হরতাল-অবরোধে অংশ নিয়ে গাড়িতে আগুন দেওয়া, রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাসহ নানা ধরনের নাশকতাই হচ্ছে জিহাদ।জামায়াতের নির্দেশে এই জিহাদে অংশ নেওয়া তাঁদের দায়িত্ব। নাশকতা কিংবা সহিংসতার মতো কোনো কর্মসূচিতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাঁরা ‘জিহাদে অংশ নিতে যাচ্ছি’ বলে বের হচ্ছেন। বাঁচলে গাজী, মরলে শহীদ হবেন- এই প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে শরিক হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের লোকজন। শুধু তা-ই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নীলফামারীর জলঢাকা, ডিমলা ও ডোমার উপজেলায় নাশকতায় অংশ নিতে গিয়ে যৌথ বাহিনীর গুলিতে জামায়াত-শিবিরের যেসব ক্যাডার বা সমর্থক নিহত হয়েছে, তাদের শহীদ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গোসল না করিয়েই দাফন করা হয়েছে।জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গ্রামের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে উসকে দিচ্ছে। ইসলাম রক্ষার কথা বলে এলাকার রাস্তা, গাছপালা কেটে ফেলছে, ব্রিজের পাটাতন উপড়ে নিচ্ছে। হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর হামলা করছে।’একই গ্রামের রমজান আলী বলেন, ‘জামায়াত-শিবির যেসব জ্বালাও-পোড়াও করছে, এগুলো নাকি খারাপ কাজ না। এরা নাকি ইসলামের জন্য জিহাদ করছে। এসব করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে নাকি শহীদ হয়ে যায়।’ নীলফামারীর টুপামারী ইউনিয়নের মো. এন্তাজুল রাহিম বলেন, ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে পুড়িয়ে মারছে, একটি পরিবারের দুই ভাই ভিন্ন ভিন্ন দল করছে। তাহলে কার বিরুদ্ধে ওরা জিহাদ করছে?’ তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদের নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে।’ টেঙ্গনমারী বাজারের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের উপজেলায় দুজন জামায়াতকর্মী পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। তাদের গোসল না দিয়েই দাফন করা হয়েছে।’টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজার-সংলগ্ন বাড়ি আওয়ামী সমর্থক নিজামুল হকের। গত ১৪ ডিসেম্বর রামগঞ্জ বাজারেই জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা তাঁর দুই ছেলে ফরহাদ হক ও মুরাদ হককে জবাই করে। একই দিন আওয়ামী লীগের আরো তিনজন নেতা-কর্মীকে হত্যা করে জামায়াত-শিবিরের লোকজন। দুই ছেলে হারিয়ে নিজামুল হক এখন শোকে পাথর। গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী জিহাদ করেই নাকি আমার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। আমরা আওয়ামী লীগ করি বলে নাকি আমরা ইসলামের শত্রু।’ তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘টুপামারী ফাজিল মাদ্রাসাটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আমার বাবা। এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামায়াত নেতা মতিউর রহমান। এই মতিউর রহমানের লোকজনই আমার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। আমাদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার শিক্ষকরাই এখন আমাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছে।’খালিশা চাপানী ইউনিয়নের জামায়াত সমর্থক সিরাজ হোসেন, ফিরোজ মিয়া ও মো. ইকবাল প্রায় একসুরে বলেন, প্রতি ঘরে ঘরে সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেওয়া হয়েছে। নাস্তিক আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে হবে। কে জিহাদের ডাক দিয়েছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘কে ডাক দিয়েছে সেটা না জেনে কিসের জন্য দিয়েছে সেটা বুঝুন। মতিঝিলে বিদ্যুতের সুইস বন্ধ করে দিয়ে শত শত আলেম-ওলামা মেরে শেষ করে ফেলেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে এখন জিহাদ ছাড়া উপায় নেই।’ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গে ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘ওরা নৌকা ছাড়া ভোট দেয় না, নৌকায় ভোট দেওয়া মানে ইসলামের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া। ওদের এই দেশে থাকার অধিকার নাই। হিন্দুরা হিন্দুদের দেশে চলে গেলেই নিরাপদে থাকতে পারবে।’নীলফামারী-৩ (জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিগত দিনে জামায়াত-শিবির ধর্মপ্রাণ মানুষকে জিহাদের নামে তাণ্ডবে অংশ নিতে উসকে দিয়েছে, সহিংসতা চালিয়েছে। ওদের নাশকতা আর বরদাশত করা হবে না।’নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, ‘এই আসনে আওয়ামী লীগের এমপি না থাকায় বিগত দিনে জামায়াত-শিবির নানা ধরনের সহিংসতা চালিয়ে আসছে। ওরা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে তাণ্ডব চালিয়েছে। কিন্তু আর কোনোভাবেই ওদের ছাড় দেওয়া হবে না।’- See more at: Click This Link
false
fe
আপনি ভুল করছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা আপনি ভুল করছেন প্রেসিডেন্ট ওবামাফকির ইলিয়াস======================================কথা ছিল আপনি যুদ্ধ বাধাবেন না। আপনি আপনার কথা রাখছেন না মিঃ প্রেসিডেন্ট,হ্যাঁ, এমন কথাই বলছেন বিক্ষোভকারীরা। নিউইয়র্কের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে হাজারো মানুষ। হাতে ব্যানার-ফেস্টুন। তারা যুদ্ধ চান না। সিরিয়ায় আক্রমণ চাই না আমরা। এমন কথা বলছেন তারা জোর গলায়।যুদ্ধ হয়তো হবেই। কিন্তু এই যুদ্ধ কি দরকারি ছিল ? যে রাসায়নিক ক্যামিকেল এর কথা বলা হচ্ছে, তা তো ইরাকেও পাওয়া যায়নি। জর্জ বুশ তার বইয়েই তা লিখেছেন।প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের বই 'ডিসিশন পয়েন্টস' এ যা লিখেছেন তার কিছু বাংলা অনুবাদের চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা দরকার। তিনি লিখেছেন- ‘সাদ্দামের পতনের পর যখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল তখন আমাদের উচিত ছিল খুব দ্রুত এবং আক্রমণাত্মকভাবে বিষয়টিকে মোকাবিলা করার।’ তার মতে, ‘দ্রুত সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে নেওয়াটাই ছিল যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।’তবে ইরাকে যে গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি সে বিষয়ে তার মনের ভিতর সবসময় একটা ‘বিরক্তিকর অনুভূতি’ কাজ করছে। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন যে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা যুক্তিযুক্ত ছিল। ‘আমেরিকা এখন নিরাপদ। সাদ্দাম ছিল একজন বিপজ্জনক স্বৈরাচার, যে গণবিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদে মদদ জোগাচ্ছিল।’সমালোচকদের চোখে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বুশ যেন সেই বিষয়গুলোকেই এড়িয়ে গেছেন তার ‘আত্মজীবনী’তে। তার শাসনকালীন সময়ে ইরাক বিষয়ে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা এবং তথাকথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ বিষয়ে তার অসীম ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার মতো বিষয়গুলো বলা থেকে তিনি দূরে সরে থেকেছেন।ইরাকের আবু গারিব কারাগারে বর্বরোচিত নির্যাতনের বিষয়টিকে তিনি মনে করেন ‘অপ্রত্যাশিত’। তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিরক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ড আমাকে বলেছেন, জেলখানার বিষয়টির সত্যতা নিয়ে মিলিটারি একটি তদন্ত করছে। তবে ছবিগুলো যে এত জঘন্য হতে পারে বিষয়টি আমার জানাই ছিল না।’ জগতের সবাই যখন বিষয়টি জানলেন তখন তিনিও তা জানতে পারেন।এভাবেই অনেক বিষয় চেপে গেছেন প্রাক্তন এই প্রেসিডেন্ট। আমাদের মনে আছে, ইরাকে আফগানিস্তানে বন্দিদের ওপর 'ওয়াটারবোর্ডিং' নির্যাতন চালানোর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবি্লউ বুশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।সংস্থাটি বলেছিল, 'আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সবাইকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। বুশ এ আইনের বাইরে নন।' প্রকাশিত স্মৃতিকথা 'ডিসিশন পয়েন্টস'-এ বুশ অন্তত তিনজন বন্দির ওপর 'ওয়াটারবোর্ডিং' নির্যাতন চালানোর সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করেন। তবে এ নির্যাতনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার বিষয়টিকে 'সঠিক' হিসেবে অভিহিত করে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, 'এ নির্যাতনের সিদ্ধান্তের কারণেই অনেকগুলো জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।' তবে মানবাধিকারকর্মীরা বুশের এ যুক্তিকে নাকচ করে দিয়েছিলেন। কাপড়ে মুখ ঢেকে মাথা পানিতে চুবিয়ে বন্দিদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের 'ওয়াটারবোর্ডিং' পদ্ধতিকে অনেক দেশেই নির্যাতন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বুশের উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পরই বারাক ওবামা 'ওয়াটারবোর্ডিং' নিষিদ্ধ করেন।সেইসময়ে ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার আইনজীবী জিওফ্রে রবার্টসন বলেছিলেন, স্মৃতিকথায় এই খোলামেলা স্বীকারোক্তির জন্য বিদেশ সফরে গেলে গ্রেপ্তার হতে পারেন বুশ। কারণ অনেক দেশেই ওয়াটারবোর্ডিং বিষয়টিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, বুশ ভাল তবিয়তেই আছেন। তাকে আইনের মুখোমুখিহতে হয়নি।এই ধারাবাহিকতায়ই কি বারাক ওবামা সিরিয়া আক্রমণের জন্য এগোচ্ছেন ? এই প্রশ্নটি বার বার আসছে। সিরিয়ায় স্বল্প পরিসরে হামলা চালানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে ভাষণ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তবে তার আগে কংগ্রেসের অনুমতি নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ওবামার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে একটি নিবন্ধ লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশ্লেষক রস ডুহাট। আন্তর্জাতিক হেরাল্ড ট্রিবিউনে নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে রস ডুহাট বলেন, সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য আমার আমেরিকান বন্ধু ওবামাকে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তার প্রেক্ষিতে আমি তাকে বলতে চাই- এই মুহূর্তে যুদ্ধ কীভাবে ভাল? তিনি বলেন, আপনি (ওবামা) ভাষণে সিরিয়ায় বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন। এসময় আপনি দেশটিতে সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। রস ডুহাট বলেন, আপনার এই বক্তব্য আমরা হতবাক। আপনি কী বুঝাতে চেয়েছেন? সিরিয়ায় হামলা চালানো হলে সেখানে আর কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে না? অবশ্যই ঘটবে। বরং এই যুদ্ধ সেখানে আরো বহুসংখ্যক প্রাণহানি ঘটাবে। ওবামাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে রস ডুহাট বলেন, আপনি বলেছেন- সিরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এই মুহূর্তে সেখানে হামলা চালানো অত্যন্ত জরুরি। আপনার এই হামলার ফলে সেখানে কী রাতারাতি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে ? যুক্তরাষ্ট্রের এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এই মুহূর্তে সিরিয়ায় হামলা করা হলে তা আমাদের জন্য খুব দ্রুত বিজয় এনে দেবে না। বরং এর ফলে সেখানে গৃহযুদ্ধ আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে। সুতরাং যুদ্ধ না করে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের উচিত এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসা। রস ডুহাট বলেন, যেহেতু এই যুদ্ধ চালানোর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স ছাড়া আন্তর্জাতিক মহল তথা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, আরব লিগ এমনকি যুক্তরাজ্যের সমর্থন নেই। সুতরাং এই মুহূর্তে সিরিয়ায় হামলা চালানো কোনোভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।আমরা দেখেছি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পোষ্য সৌদীআরব সিরিয়া আক্রমণকে সমর্থন করেছে। কারণ সৌদীআরব মনে করে ইরান-সিরিয়া মিলে আরববিশ্বে একটি নতুন শক্তিদাঁড়িয়ে যেতে পারে। সর্বশেষ সংবাদ থেকে আমরা জানছি, সিরিয়ায় সামরিক অভিযানে কংগ্রেস নেতাদের সমর্থন পাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার দল ডেমোক্র্যাট তো বটেই, বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি এবং ছোটদলগুলোর শীর্ষ কয়েকজন নেতা এরই মধ্যে ওবামার পাশে দাঁড়িয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সমর্থনের প্রতিফলন মিলবে ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া কংগ্রেসের অধিবেশনেও। তবে কংগ্রেসের সমর্থন না পেলেও সিরিয়ায় হামলার চালানোর বিষয়ে অনড় ওবামা। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইতোমধ্যে ইসরাইল ভূমধ্যসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। রাশিয়ার রাডারে তা ধরা পড়ার পর বিষয়টি স্বীকারও করেছে ইসরাইল। এএফপি, বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, ফক্স নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।সিরিয়ায় অভিযান চালানোর জন্য কংগ্রেসের সমর্থনের আশা করছেন বারাক ওবামা। আর এ সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন কংগ্রেস নেতাদের কাছে। করছেন বৈঠক। তাদের জানাচ্ছেন, এ হামলা ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বোঝাচ্ছেন সিরিয়ায় হামলার ‘গুরুত্ব’ও। এর মধ্যে ফল পেতে শুরু করেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পর হাউস স্পিকার জন বোহেনর ও রিপাবলিকান নেতা এরিক ক্যান্টর সিরিয়ায় হামলায় সমর্থন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হবে মস্ত ভুল। তারা আশা প্রকাশ করেন, তার দলের কংগ্রেস সদস্যরাও বাশার সরকারের বিরুদ্ধে হামলার সমর্থন করবে। তারও আগে ওবামাকে সমর্থন জানান রিপাবলিকান নেতা জন ম্যাককেইন ও লিন্ডসে গ্রাহাম। ডেমোক্র্যাটিক নেতা ন্যান্সি পোলসি মঙ্গলবার বলেন, কংগ্রেস কখনই ওবামার প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দেবে না।এর আগে ফক্স নিউজকে পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ওবামা সিরিয়ায় হামলা চালানোর বিষয়ে মনস্থির করেছেন এবং প্রয়োজনে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই এ হামলা হবে। তিনি বলেন, যে কোনোভাবেই হোক হামলা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার রোজগার্ডেনের বক্তৃতায় এটি স্পষ্ট করেছেন যে, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই তিনি হামলা চালানোর অধিকার রাখেন। ওই বক্তৃতায় ওবামা বলেছিলেন, যদিও কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই হামলা চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কর্তৃত্ব আমার রয়েছে তবুও দেশের গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান রেখে আমি কংগ্রেসের অনুমতি নিয়ে সামরিক অভিযান শুরু করতে চাই।ওবামার বিরোধী মতের যে কেউ নেই তা নয়। এমনকি ডেমোক্র্যাটেরও অনেক সদস্য মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায় যুক্তরাষ্ট্র নতুনভাবে জড়িয়ে পড়বে। যুদ্ধের ব্যয় ও তৎপরবর্তী প্রভাবের ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করছে। হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টাদের বৈঠকে তারা এ মনোভাব ব্যক্ত করেন। অবশ্য জন ম্যাককেইন ও লিন্ডসে গ্রাহামের মতো ঐতিহ্যগত রিপাবলিকানরা সিরিয়ায় হামলার পক্ষে। এ ধরনের রিপাবলিকানরা যখনই দরকার মনে হবে তখনই বাইরের কোনো দেশে আক্রমণের পক্ষপাতী। তারা শুধু আসাদকে শাস্তি দিয়েই ক্ষান্ত হতে চান না, তারা আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদেরও শক্তিশালী করতে চান।সবমিলিয়ে একটা রক্তপাতের নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। কিন্তু এটি তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল না। তিনি পরিবর্তনের বাণী শুনিয়ে তরুণপ্রজন্মকে কাছে টেনেছিলেন। এটাই কি তার ওয়াদার নমুনা ? বলছেন লাখো আমেরিকান। প্রতিদিনের জনমত জরিপে যুদ্ধের বিরুদ্ধে রায় যাচ্ছে। তারপরও ওবামা অনড়।যা গোটা বিশ্ববাসীর জন্যই চরম দুঃসংবাদ। একটা যুদ্ধ চরম ক্ষতির কারণ হয় রাষ্ট্র,সমাজ,জাতি ও প্রজন্মের জন্য। অস্ত্রব্যবসায়ীযে লুটেরা শ্রেণি যুদ্ধের পক্ষে তালি বাজাচ্ছে, তারা রক্তের বিনিময়ে তেল চায় - তাকারও অজানা নয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, সত্য আর কত ভূলুন্ঠিত হবে। আর কত পরাজিত হবে মানবতা ? সৃজনশীল সভ্যতার খোঁজে আর কত দৌঁড়াবে এই বিশ্বপ্রজন্ম ? -----------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ/ ঢাকা / ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ শনিবার
false
fe
জনগনের মনের ভাষা বুঝতে হলে জনগণের মনের ভাষা বুঝতে হলে ফকির ইলিয়াস ------------------------------------ বাংলাদেশের মানুষ আরেকটি তাণ্ডবলীলা দেখলেন। কতিপয় মৌলবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকার বায়তুল মোকাররম পুরানা পল্টন এলাকায় প্রকাশ্যে তাদের পেশিশক্তি দেখাল। তারা পুলিশ, সাংবাদিক, নিরীহ জনতা সবার ওপরই আক্রমণ চালিয়েছে। লাঠিসোঁটা নিয়ে যেন পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল। টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে এসব দৃশ্য দেখে আমার আশির দশকের কথাই মনে পড়েছে বারবার। সে সময়ও মসজিদ ছিল এসব মৌলবাদীর আস্তানা। তারা মিছিল-সমাবেশ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করত। পুলিশ ধাওয়া করলে আবার গিয়ে ঢুকে যেত মসজিদে। পুলিশ মসজিদে যাবে না এটাই ছিল তাদের ভরসা। একই দৃশ্য আবারও দেখল দেশবাসী। তারা মসজিদের জায়নামাজ আর কার্পেট পর্যন্ত পুড়িয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। একদিকে আক্রমণ চলছে আর অন্যদিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন। এসব জঙ্গিবাদীর নেতা মওলানা ফজলুল হক আমিনী। তিনি হুমকি দিয়েছেন তারা সরকার পতনের আন্দোলন করছেন না। তবে দরকার হলে তাও করবেন। ভেবে অবাক হই, এরকম হুমকি-ধমকি দেয়ার পরও এখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী নেতারা রয়ে গেল ধরাছোঁয়ার বাইরে। একই অবস্খা আমরা দেখেছি আশির দশকে। বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদের সংগঠিত করে একটি পক্ষ রাষ্ট্র কাঠামোর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে প্রস্তুতি নিয়েছে। আর এ পক্ষটিকে কৌশলে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত। ৯ এপ্রিল ২০০৮ মাসের প্রথম সপ্তাহে যে পরিকল্পিত সমাবেশ হাঙ্গামা করা হলো এর পেছনে কারা? কি তাদের উদ্দেশ্য? খুঁজলেই জবাবটি স্পষ্ট পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গিবাদী সংগঠনের আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল ঘরে তুলেছে জামায়াত। এখনও তারা তা তুলতে তৎপর যে রয়েছে তাও আবার বোঝা গেল এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে। ইতিমধ্যেই জামায়াতের আমীর নিজামী বিবৃতি দিয়ে নারী উন্নয়ন সংশোধনের দাবি জানিয়ে মৌলবাদী সংস্খাগুলোর আন্দোলনকে সমর্থন করে, এর পেছনে যে তাদের ইন রয়েছে সেটা জাহির করেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে দেশে জরুরি অবস্খা জারি থাকা অবস্খায় এরা এ সমাবেশ আহ্বান করল কীভাবে? এদের অনুমতি দেয়া হলো কীভাবে? বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি ইস্যু এখন খুব জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে দুই নেত্রীর মুক্তি। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। দুই নেত্রীর মুক্তির লক্ষ্যে দুটি প্রধান দল সরকারের সঙ্গে খণ্ড খণ্ড সংলাপও চালিয়ে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার ওয়ান ইলেভেনের চেতনা অনুন্নত রেখে দুই নেত্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তা খুবই স্পষ্ট। বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের উক্তি থেকে তা মনে করাটা খুবই স্বাভাবিক। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সরকার রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে জনগণের দাবির শক্তি বহির্বিশ্বের মিত্র দেশগুলোর চাপ এ দুটি দিক সামনে রেখে এগুচ্ছে। ঠিক এমনি একটি সময়ে সেই পুরনো জঙ্গি মদদদাতা গোষ্ঠীটি সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণ কি? কারণ হচ্ছে জনরোষকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। অবাক হওয়ার মতো কথা হচ্ছে ১১ এপ্রিলের এ জঙ্গি আক্রমণের নেপথ্য মদদদাতাদের বিরুদ্ধে সরকার এখন পর্যন্ত কঠিন কোন ব্যবস্খা নেয়নি। কেন নেয়নি বা নিচ্ছে না তা থেকে যাচ্ছে রহস্যাবৃত। সংলাপের কার্যক্রমের আওতায় জামায়াতের সঙ্গেও সরকার বৈঠক করেছে। পার্থক্য হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দুই সভানেত্রীকে জেলে রেখে সরকার দল দুটির সঙ্গে বৈঠকে বসলেও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্ত রেখেই সরকার চালাচ্ছে সংলাপ। যদিও জামায়াতের দুই বড় নেতা (যারা জোট সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন) তাদের মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির অনেক ফিরিস্তি পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে। এসব বিষয় চোখে পড়ছে বলেই মানুষ ক্রমশ বিশ্বাস হারাচ্ছে বর্তমান সরকারের ওপর থেকে। আর সরকারও আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বাধা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বাধা দিয়ে বিভিন্নভাবে বিতর্কে জড়াচ্ছে। অন্যদিকে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির হোতারা প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে সরকারের প্রতি। পয়লা বৈশাখ থেকে ভারত-বাংলাদেশ ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে। সেই ট্রেন লাইনের পাশে বোমা পুঁতে রাখা হয়েছে­ তেমন সংবাদও আমরা পত্রিকায় দেখছি। এরা কারা? কি তাদের উদ্দেশ্য? এই ‘মৈত্রী’ এক্সপ্রেস চালু হওয়ার ঐতিহাসিক উদ্যোগে অনেকেই খুশি হতে পারেনি। কেন পারেনি তা বর্তমান সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। সরকারি বরাদ্দকৃত চাল পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী। তিনি দেশের কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। অত্যন্ত মানবদরদী এই নেত্রী চাল পেতে সরকারি লাইনে দাঁড়িয়ে আবারও প্রমাণ করতে চেয়েছেন দেশের জনগণ কত অসহায়। না, বেশ কয়েক স্খানে লাইনে দাঁড়িয়েও চাল পাননি মতিয়া চৌধুরী। ওয়ান ইলেভেনের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত সরকারের আমলে তো এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। তাহলে হচ্ছে কেন? জনগণের মনের ভাষা পড়তে হলে জনতার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে গ্রামে-গ্রামান্তরে। জনগণের মনের আকুতি বুঝতে হলে সফর করতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চল। তা না হলে জনপ্রত্যাশা পূরণ করা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রীতিপূর্ণ ভবিষ্যৎ চান। সৌহার্দ্যপূর্ণ শান্তির গণতন্ত্র চান। এবারের বাংলা নববর্ষ পালনে দেশজুড়ে যে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেছে তা সেটাই প্রমাণ করে। বৈশাখী ঝড়ের মতোই উথলে উঠতে পারে বাঙালি জাতি। অতীতে বারবার তেমনটি হয়েছে। আবারও বলি, সম্প্রদায়িক দানব শক্তির টুঁটি চেপে ধরে শান্তি প্রতিষ্ঠার এটাই সময়। যারা বাংলা সংস্কৃতি, সভ্যতা মানে না তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল নয়। তাদের অতীত আচরণ ভুলে গেলে চলবে না। নিউইয়র্ক, ১৬ এপ্রিল ২০০৮ ------------------------------------ দৈনিক সংবাদ। ১৮এপ্রিল ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৮:২৮
false
rn
জেনে নেয়া যাক আজ আমাদের স্বদেশ সম্পর্কে । আমরা শুধুই চেঁচাই যে আমাদের কিছুই নাই। আবার আমরা বাঙ্গাল বলে গালিও দেই , ঠিক না । আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত যে আমরা বাঙ্গালী । ★★ দূর্নীতিতে বাংলাদেশ আগে ছিল চ্যাম্পিয়ন, কিন্তু এখন ১৩তম। ★★ বিশ্বের সুখী রাষ্ট্রসমুহের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম! ★★ পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের স্থান কক্সবাজার! ★★ বৃহত্তর সিলেট এখনও ‘দ্বিতীয় লন্ডন’ হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচিত! ★★ প্রধান ও একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আমাদের বাংলাদেশেই! (ভারতের অংশটুকুতে বর্তমানে প্রাণী সম্পদ কম।) ★★ বিশ্বে এখনও সবচেয়ে বেশী পাট উত্‍পাদন আমরাই করি! ★★ বাংলাদেশ ফ্রীল্যান্সিং এ এখন বিশ্বে ৩য় এবং খুশির খবর হল এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমারা ফ্রীল্যান্সিং খাতে ২০১৫ এর দিকে ১ম স্থানে চলে আসবো! ★★ ‘মসজিদের শহর’ এখনও ঢাকা–ই আছে! ★★ পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত একমাত্র বাংলাদেশেই (কক্সবাজার)! ★★ আমাদের শহীদ দিবসই স্বীকৃতি পেয়েছে “আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে! ★★ পৃথিবীর জনপ্রিয় ভাষাগুলোর মাঝে ‘বাংলা’ এখনও ৪র্থ! ★★ আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে! ★★ একমাত্র বাঙ্গালীই এমন জাতি, যারা প্রবাসে থাকলেও নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধরে রাখে! ★★ পবিত্র হজ্বের পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় মিলনায়তনের স্থান হলো “বিশ্ব ইজতেমা” যা কিনা একমাত্র বাংলাদেশেই হয়! ★★ পবিত্র কাবা’র ৫ ওয়াক্ত নামাজের জন্য নিযুক্ত পাঁচজন ঈমামের মাঝে একজন বাংলাদেশী! এর চেয়ে বেশি সম্মান আর কোথায় আছে? ★★ এবারের হজ্বেও স্বয়ং আরবের পরেই সবচেয়ে বেশী সংখ্যক হাজী ছিলেন বাংলাদেশ থেকে! ★★ পৃথিবীর সয়চেয়ে বড় আর উচ্চতম মন্দির আমাদের বাংলাদেশেই অবস্থিত! ★★ এখনও প্রতি রমজানে পবিত্র মক্কার মসজিদগুলোতে তারাবীহ এর সালাত পড়ানোর দাওয়াত যারা পান, তাদের দুই–তৃতীয়াংশই বাংলাদেশী! ★★ ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর অল–রাউন্ডার সাকিব আমাদের দেশেরই! ★★ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ! ★★ YouTube আবিষ্কারক তিনজনের একজন (জাবেদ করিম) বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত! ★★ বিশ্বের প্রভাবশালী ১০ জন মানুষের মধ্যে “খান একাডেমীর” প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সালমান খান একজন! ★★ আমাদের বাংলা ভাষা অন্য দেশের ২য় রাষ্ট্রভাষার সম্মান পেয়েছে! ★★ যুক্তরাজ্যে বাঙালীদেরকে নিয়ে গঠিত হয়েছে “মিনি বাংলাদেশ”! ★★ চীনে বাঙ্গালীদের জন্য “বাংলাদেশ দিবস” নামে একটি দিন জাতীয়ভাবে পালন করা হয়! ★★ নিউইয়র্কের সিনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আইন করে বিল পাশ করা হয়েছে! ★★ আমাদের জাতীয় কবির লিখিত কবিতা তুরস্কের জাতীয় সঙ্গীত! (সংগৃহীত) সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৪৪
false
mk
জামাত মুনাফেক রাজনীতিতে জামায়াতের সাবেক আমীর ঘাতককুল শিরোমনি গোলাম আযম তার ‘শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী রূপরেখা’ বইয়ে লিখেছেন, ইংরেজ প্রবর্তিত আধুনিক শিক্ষাই যদি আদর্শ শিক্ষা বলে প্রচারিত হয় তাহলে এ শিক্ষার ফল দেখে কোনো ইসলামপন্থী লোকই সন্তুষ্টচিত্তে এ ধরনের শিক্ষাকে সমর্থন করতে পারে না। পাশ্চাত্য মতাদর্শে বিশ্বাসীরা মানুষকে অন্যান্য পশুর ন্যায় গড়ে তুলবার উপযোগী শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন করেছেন। এ শিক্ষা দ্বারা মনুষ্যত্বের বিকাশ অসম্ভব। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের গোটা পরিবেশ একেবারেই ইসলামবিরোধী। ‘আধুনিক শিক্ষাকে এভাবে গাল দিয়েই গোলাম আযম মাদ্রাসা শিক্ষায় জীবন গড়তে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তিনি নিজে তার সন্তানদের মাদ্রাসার ধারে কাছেও আনেননি। এই লোকই আবার আরেক বইয়ে বলেছেন, ‘আমি আমার ছেলেদের মাদ্রাসায় দেইনি এজন্য যে, আমি তাদের যোগ্য বানাতে চাই’। কেবল গোলাম আযমই নয়, পবিত্র ধর্মের মুখোশ পরে এভাবেই প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্বিঘে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে যাচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদী গোষ্ঠী জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। মাদ্রাসা শিক্ষার বাইরে গিয়ে নিজেদের সন্তানদের যেমন তৈরি করেছেন সেই পাশ্চাত্য শিক্ষাতেই অন্যদিকে পরিবারের কেউই নেই ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গেও। অথচ সাধারণ নেতাকর্মীদের মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইসলাম রক্ষার কথা বলে প্রয়োজনে জীবন দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে নিজেরা ফায়দা লুটে চলেছেন যুগের পর যুগ। ধর্মের মুখোশের আড়ালে জামায়াতের আসল চরিত্রের কথা তুলে ধরেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমরাও। সাধারণ মুসল্লিদের ব্যবহার করে জামায়াতের এ ধরনের অপকর্মকে ইসলাম বিরোধী কর্মকা- হিসাবে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন ইসলামীপন্থী নেতা, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামা মাশায়েকরা। যেখানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সব আলেমদের প্রায় প্রত্যেকেই জামায়াতকে অভিহিত করেছেন ইসলামের অপব্যখ্যাকারী বিভ্রান্তকারী গোষ্ঠী হিসাবে। ইসলামের দুর্নামের জন্য দায়ী করে অনেকেই জামায়াতকে ইসলামের শত্রু হিসবে অভিহিত করেছেন।প্রতিষ্ঠা থেকেই ধর্মকে ব্যবহার করে অপকর্ম, দেশদ্রোহিতা : উগ্র মৌলবাদী এই দলটির ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট ভারতের হায়দারাবাদে প্রতিষ্ঠা হয় আজকের এই জামায়াতে ইসলামী। মাওলানা আবু আলা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত এই দলের নাম ছিল ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’। বৃটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা যখন প্রায় নিশ্চিত ঠিক সেই সময়ও এই মওদুদী বলেছিলেন, ভারতের স্বাধীনতার চেয়ে এই মুহূর্তে বেশি জরুরী হলো এখানে হুকুমতের আইন প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীনতার কয়েকদিন আগে ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে পাটনায় জামায়াতের সম্মেলন করেন মওদুদী। আগস্টে স্বাধীনতার পর মওদুদী পাকিস্তানের লাহোরে একটি বস্তিকে ‘দারুল ইসলাম’ ঘোষণা করে সেখানে অবস্থান নিতে থাকেন। এখান থেকেই দল পরিচালনা করে উগ্রবাদী সব বইপুস্তক প্রকাশ করেন। ’৬২ সাল পর্যন্ত অন্তত ১০০ প্রবন্ধে মওদুদী বলেন, ‘পার্লমেন্টে মহিলা সদস্য আসন নাজায়েজ। অথচ ওই বছরেই ফাতেমা জিন্নার পক্ষে নির্বাচনে তার সঙ্গে কাজ করেন জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াত শাখার আহ্বায়ক করা হয় খুররম জাহ মুরাদকে। মাওলানা আব্দুর রহীম, ব্যারিস্টার কোরবান আলী ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক। আব্দুর রহীম কারমাইকেল কলেজ থেকে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসেন গোলাম আযমকে। পরবর্তীতে পূর্ণঙ্গ কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করে দলটি। আইযুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতের কর্মকা-ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে ওই বছরেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সরকার।৬৬ তে আওয়ামী লীগের ছয় দফার তীব্র বিারোধিতা করে জামায়াত। ’৭০-এর নির্বাচনে জামায়াত পশ্চিম পাকিস্তানে ৪টি আসনে জয়লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিককে গবর্নর করে যে প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়েছিল তাতে শিক্ষামন্ত্রী হয়ে আসেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে জামায়াত চালায় গণহত্যা। ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষার ঘোষণা দিয়ে গঠন করা হয় ‘শান্তি কমিটি’। মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হয়। আত্মগোপন করে গণহত্যার নায়ক জামায়াত নেতারা। ’৭৫-এ জাতির পিতার হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আশীর্বাদে ফিরে আসে যুদ্ধাপরাধীদের দল।১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে তাদের রাজনীতি উন্মুক্ত করে দেয়। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের (আইডিএল) হয়ে কাজ চালায় জামায়াত। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে কয়েকটি পদে জয়লাভ করে আইডিএল। এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন আব্দুর রহিম, সিদ্দিকুর আহমেদসহ অন্যরা। ওই বছরই জিয়াউর রহমানের বদৌলতে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে আইডিএল ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশে গঠিত হয় ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।’ যার ভারপ্রাপ্ত আমীর হন একাত্তরের ঘাতক আব্বাস আলী খান। দলে আসেন একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী সকল জামায়াত নেতাই। এদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তারাই এখন জামায়াতের শীর্ষ নেতা। সাংবিধানিকভাবে বৈধ হওয়ার আশায় দুই বছর আগে গঠনতন্ত্র সংশোধন জামায়াতে ইমলামী বাংলাদেশ নাম পাল্টে ধারণ করে ‘ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’।মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইসলামী আন্দোলনে নেই জামায়াতীদের পরিবারের কেউ ॥ বাংলাদেশ ও বিদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘নাস্তিকদের শিক্ষা’ হিসেবে প্রচার করে থাকে জামায়াত। আধুনিক শিক্ষার বিপরীতে দলটি মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে জোর দাবি জানিয়ে আসছে বহুকাল থেকে। কিন্তু এ দলের শীর্ষ নেতাদের সন্তানরা কেউ মাদ্রাসায় পড়ে না। অথচ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের পরিচালিত মাদ্রাসার দিকে ঠেলে দেয় জামায়াত। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দলটি এ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এক সময় টেনে নেয় দলে। গরিব ঘরের এই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরই পরে হরতাল, পিকেটিংয়ের সময় পুলিশের গুলির সামনে ঠেলে দেয়া হয়। জামায়াতের মূল নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের সন্তানরা পড়াশোনা করে প্রচলিত, আধুনিক ও তাঁদের ভাষায় ‘নাস্তিক ও ইসলাম বিরোধীদের’ শিক্ষাঙ্গনে। সাধারণ নেতাকর্মীদের মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইসলাম রক্ষার কথা বলে প্রয়োজনে জীবন দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করলেও শীর্ষ জামায়াত নেতাদের পরিবারে ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ের ভূরি ভূরি অভিযোগ আছে। খোদ জামায়াত-শিবিরের মাঠ পর্যায়ের একটি বৃহৎ অংশ গেল বছর এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন জামায়াত নেতাদের। ফাঁস করে দিয়েছিলেন জামায়াত নেতা ও তাদের স্ত্রী, সন্তানদের ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ের তথ্য প্রমাণ। এ নিয়ে এখনো অসন্তোষ আছে জামায়াত-শিবিরের সাধারণ নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাঝে। জামায়াতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলছে দেশের অন্যান্য ইসলামী দলগুলোও। সাধারণ মুসল্লিদের ব্যবহার করে জামায়াতের এ ধরনের অপকর্মকে ইসলাম বিরোধী কর্মকা- হিসাবে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন ইসলামপন্থী নেতা, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামা মাশায়েকরা। জানা গেছে, শীর্ষ জামায়াত নেতাদের পরিবারে মাদ্রাসা শিক্ষার বিপরীতে পাশ্চাত্যের কর্মকা- চলা নিয়ে অসন্তোষ আছে সাধারণ কর্মীদের। শিবিরের একটি বৃহত অংশ ২০১২ সালে এসব অভিযোগ তুলে শোরগোল পাকিয়ে ফেলেছিল। সাধারণ কর্মীরা বলছেন, সাধারণ মুসল্লি ও কর্মীদের ইসলামের পথে চলা আর সৎ মানুষ হওয়ার কথা বললেও জামায়াত নেতাদের পরিবার চলে ইসলামের বিরুদ্ধে। এই মুহূর্তে নেতাদের জীবন রক্ষায় সারাদেশের হাজার হাজার কর্মী জীবন দিয়ে লড়ছেন, কিন্তু কোথাও শীর্ষ নেতা ও তাদের সন্তানরা নেই। তারা হয় বিদেশী শিক্ষা গ্রহণে নয়তো দেশে আরাম-আয়েশ করে বেড়াচ্ছেন। কর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখানো এমনকি জীবন দেয়ার কথা বললেও জামায়াতের আমীর নিজামী থেকে শুরু করে কোন নেতাই নিজেদের পরিবারে সেই স্বপ্ন দেখেন না।২০১২ সালে ‘সেভ শিবির’-এর ব্যানারে শিবিরের মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ এনে বলেছিলেন, ‘জামায়াত এবং শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের ইসলামের কথা বলেন, ভাল মানুষ হিসাবে চলতে বলেন। এতে আমরা উজ্জীবিত হই, ইসলামের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করতে উজ্জীবিত হই, কিন্তু আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা হলো, এই জামায়াত নেতাদের পরিবারে তাদের সন্তানরা কেউ ইসলামের পথে নেই। কেউ শিবির করে এই পথে আছেন তার খবর নেই। জামায়াত সব সময়ই দাবি করে তাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কিরূপ হওয়া উচিত সেই বিষয়ে কথা বলেন নেতারা। সাধারণ কর্মীদের তারা বলেন, এ দেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি যেটি তাদের ভাষায় আধুনিক শিক্ষা, এই আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির বিরুদ্ধেই তাদের অবস্থান।জামায়াতের সাবেক আমীর ঘাতককুল শিরোমনি গোলাম আযম তার ‘শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী রূপরেখা’ বইয়ের ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘ইংরেজ প্রবর্তিত আধুনিক শিক্ষাই যদি আদর্শ শিক্ষা বলে প্রচারিত হয় তাহলে এ শিক্ষার ফল দেখে কোনো ইসলামপন্থী লোকই সন্তুষ্টচিত্তে এ ধরনের শিক্ষাকে সমর্থন করতে পারে না।’ বলেছেন, ‘পাশ্চাত্য মতাদর্শে বিশ্বাসীরা মানুষকে অন্যান্য পশুর ন্যায় গড়ে তুলবার উপযোগী শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন করেছেন। এ শিক্ষা দ্বারা মনুষ্যত্বের বিকাশ অসম্ভব।’ ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের গোটা পরিবেশ একেবারেই ইসলামবিরোধী।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো- তিনি তার সন্তানদের মাদ্রাসার কাছেও আনেননি কোনদিন।গোলাম আযমের ছয় ছেলে। একজন আব্দুল্লাহহিল মামুন আল আযমী খিলগাঁও গবর্নমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার থেকে অর্থনীতিতে এমএ করেছেন। আব্দুল্লাহ হিল আমিন আল আযমী খিলগাঁও গবর্নমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দেশত্যাগ করেন এবং লন্ডনে নিটিং ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করেন। আব্দুল্লাহ হিল মোমেন আল আযমী সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে এসএসসি, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে এইচএসসি ও একই কলেজ থেকে বিকম পাস করেছেন। আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী- ১৯৭৫ সালে সিলেট সরকারি অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি, ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ থেকে তৃতীয় বিভাগে এইচএসসি পাস। এরপর ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন (সবার জন্য নির্ধারিত তারিখের একমাস পর তিনি মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া একজন অতি সাধারণ ছাত্র জিয়ার সময় সেনাবাহিনীতে কিভাবে কমিশন পেলেন সে প্রশ্ন আছে। ২০০৯ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত অবস্থায় বরখাস্ত হয়। আব্দুল্লাহ হিল নোমান আল আযমী- ঢাকা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। সবশেষে আব্দুল্লাহ হিল সালমান আল আযমী- মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীতে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। এরপর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন।জামায়েতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের কথা তুলে ধরে শিবিরের একটি বিক্ষুব্ধ অংশ একবার বলেছিল, নিজামীর পরিবার দেখেই বোঝা যাবে তারা নিজেরা কতোটা ইসলামের পথে হাঁটেন? বলা হয়েছে, নিজামীর স্ত্রী সামসুন্নাহার নিজামী এককভাবে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা এবং মহিলা জামায়াতকে নিয়ন্ত্রণ করেন, যা স¤পূর্ণ ইসলাম ও গঠনতন্ত্র বিারোধী কাজ। ‘সেভ শিবির’-এর ব্যানারে শিবির কর্মীরা বলছে, এই মহিলা (নিজামীর স্ত্রী) মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন। সেখানে অনেক টাকার হিসেব দিতে পারেননি। তার পরেও স্বামীর দাপটে কিছুদিন পদে টিকে থাকালেও এক সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে নিজেই একটা স্কুল খুলেছেন। কিন্তু স্কুল করার সব টাকা নেয়া হয়েছে জামায়াতের কর্মীদের কষ্ট করে জমানো ফান্ড থেকে। যা চরম অপরাধ। নিজামীর বড় ছেলে তারেকের কর্মকা- তুলে ধরে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় নাইট ক্লাব, বার থেকে শুরু করে সব আজেবাজে জায়গাই ছিল তার মূল কাজ। বাংলাদেশে এসে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসাবে যখন কাজ করেছিলেন তখনো তার বিরুদ্ধে ওঠে ছাত্রীদের সঙ্গে অসামাজিক কাজ করার অভিযোগ। নিজামী অন্যদের বললেও এই ছেলেকে কখনই ছাত্র শিবিরের কোন কাজেই আসতে দেখা যায়নি। নিজামীর অন্য সব ছেলে-মেয়েরাও কেউ ইসলামী আন্দোলনে নেই। নেই মাদ্রাসা শিক্ষায়ও।সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহশান মুহাম্মদ মুজাহিদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। কর্মীদের ইসলামের পথে চলে সৎ মানুষ হওয়ার কথা বললেও এই জামায়াত নেতার পরিবার চলছে তাদের বলা ইসলামবিরোধী পথেই। মুজাহিদের বড় ছেলে তাজদিদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মুজাহিদের পরামর্শে সেই শিবিরকে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল। তাকে মানুষরূপী শয়তান অভিহিত করে শিবিরের একটি অংশ একবার বলেছিল, অনেক মেয়ের সঙ্গে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে থাকার অভিযোগ আছে জামায়াত নেতাদের কাছেও। জামায়াত শিবিরের সাধারণ নেতাকর্মী সুযোগ না পেলেও মুজাহিদ তার এই ছেলেকে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা করতে পাঠিয়েছেন জামায়াতের টাকায়। তাহ্কিক মুজাহিদের দ্বিতীয় ছেলে। মেয়েদের সঙ্গে যার রয়েছে অসামাজিক কাজের নানা অভিয়োগ। এক মেয়েকে নিয়ে মগবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় তার অবৈধ জীবনযাপনের ঘটনা জানেন জামায়াত-শিবিরের অকেকেই। ছোট ছেলে মাবরুরই মুজাহিদের সব অপকর্মের হোতা। অভিযোগ আছে, জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া কাদের মোল্লার এক ছেলে মাবরুরের বন্ধু। এই দুজন গাঁজা, মদসহ নানা নেশায় জড়িয়ে স্কুল জীবন থেকে। মুজাহিদের মেয়ে তামরিনা ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি, আল মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্স করেছেন।কাদের মোল্লার স্ত্রীর তথ্য তুলে ধরে শিবিরের এক অভিযোগনামায় একবার বলা হয়েছিল, তার স্ত্রী বেগম সানওয়ার জাহান জামায়াতের রোকন হলেও আমিরের স্ত্রী সামসুন্নাহান নিজামীর সকল অপকর্মের সহযোগী। নিয়মের কথা বললেও মহিলা জামায়াত এবং ইসলামী ছাত্রী সংস্থাকে এরা দুজন ক্ষমতার জোরে অসাংবিধানিকভাবে পরিচালনা করছে। মোল্লার বড় ছেলের নাম জামিল। মগবাজারের হোটেলগুলোতে অনৈসলামিক সব অপকর্মের নায়ক এই জামিল। স্কুল জীবন থেকেই সে করছে এই অপকর্ম। আবুজর গিফারী কলেজে পড়ার সময় এই ঘটনা ছাড়াও গাঁজা খাওয়ার সময় কয়েকবার পুলিশের হাতে আটক হলেছিল। শিবিরের কর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন দেয়ার আহ্বান জানালেও মোল্লার এই সন্তানকে এই স্বপ্ন দেখান না। ছোট ছেলের নাম মওদুদ। মালয়েশিয়ায় ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। কিন্তু বিয়ে না করেই তার এক বান্ধবীর সঙ্গে লিভ টুগেদার করছে দিনের পর দিন এমন অভিযোগ উঠেছে জামায়াতের ভেতর থেকেই। তাদের অপকর্মের ছবিও বহুবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা এ যুদ্ধাপরাধীর পাঁচ ছেলে এক মেয়ে। প্রথম ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল ও কলেজ থেকে। ইসলামী ইউনিভার্সিটি থেকে মিডিয়া এ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশনে অনার্স ও মাাস্টার্স করেছেন। এই ছেলে সামহোয়ারইনের ব্লগার। হাসান ইকরাম ওয়ালী এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল ও কলেজ থেকে। হাসান জামান সাফি এসএসসি ও এইচএসসি ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল থেকে, অনার্স পাস করেছে মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে। হাসান ইমাম ওয়াফী এসএসসি ও এইচএসসি ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল থেকে পাস করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করেছে। আহম্মদ হাসান জামান ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা দিয়েছে একাডেমিয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে। মেয়ে আতিয়া নুর মিরপুর লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে পড়ে।যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক আরেক নেতা মির কাসেম আলীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। এক ছেলে মোহাম্মদ বিন কাসেম (সালমান) আল মানারাত ইংরেজী মিডিয়াম থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল করেছে। এরপর পাকিস্তান ডেন্টাল কলেজে পড়েছে। আরেক ছেলে মির আহমেদ বিন কাসেম (আরমান) আল মানারাত থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল করেছে। এরপর লন্ডনে বার এ্যাট ল সম্পন্ন করেছে। মেয়ে হাসিনা তাইয়্যেবা অনার্স এবং মাস্টার্স করেছে হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে। সুমাইয়া রাবেয়া আল মানারাতে স্কুল ও কলেজ থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করার পর আল মানারাত ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ করেছে । আরেক মেয়ে তাহেরা হাসনিন আল মানারাতে এ লেভেলে পড়েছে। এই হচ্ছে জামায়াত নেতাদের পরিবারে মাদ্রাসা ও ইসলামী শিক্ষা চর্চার চিত্র। অথচ এরাই হাজার হাজার কর্মী ও সাধারণ মুসল্লির কাছে নিজেদের ইসলামের আসল লোক বলে জাহির করছে বছরের পর বছর।২০১২ সালে যখন শিবিরে ব্যাপক বিদ্রোহ তখন শিবিরের বিদেশে থাকা একটি পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে জামায়াত নেতাদের পরিবারে ইসলামের ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে জামায়াত নেতাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল ‘আপনাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, নিজের পরিবারে ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিতে পারলেই কেবল অন্যদের সেই শিক্ষা দেয়ার কথা বলা যায়। নিজের পরিবার ইসলামী আন্দোলনে থাকলেই কেবল অন্যদের এই আন্দোলনে ডাকা যায়, আনা যায়।’জামায়াত-শিবির, মওদুদী সম্পর্কে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমরা ॥ ধর্মের মুখোশ পড়া জামায়াতের আসল চরিত্রের কথা দিনের পর দিন তুলে ধরেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমগণ। আলেমদের প্রায় প্রত্যেকেই জামায়াতকে অভিহিত করেছেন ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী, বিভ্রান্তকারী গোষ্ঠী, ইসলামের শত্রু হিসেবে।মুফতীয়ে আজম মাওলানা ফয়জুল্লাহ (রহ.) এক লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন, মওদুদী ফাসেকি চিন্তাধারা ও ফাসেকি আকিদাসম্পন্ন এক ব্যক্তি। তার লেখনী ও বক্তৃতার মধ্যে শুধু সলফে সালেহীন, সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, আওলিয়ায়ে কিরামদের সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে কথা আছে। এ কারণে তাদের থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা ফাসেক। আর ফাসেকের পেছনে নামাজ আদায় করা মাকরুহে তাহরিমী। এই মন্তব্যে স্বাক্ষর করেছিলেন মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, মাওলানা শামসুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা আব্দুল জলিলসহ আলেম সমাজের অনেকেই।বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বহুবার বলেছেন, মওদুদী জামায়াতের মতাদর্শগত ভ্রষ্টতা, নিছক রাজনৈতিক নয় বরং ইসলামের মৌল আকিদাগত। তাদের অতীত ইতিহাস সাক্ষী দেয় এরাই উগ্র জঙ্গীবাদের স্রষ্টা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের লালনকারী; তাই মওদুদীপন্থী জামায়াত-শিবির ইসলামী দল নয়, ওরা ভ-। তিনি ’৭১ সালে জামায়াতে ইসলামের ভূমিকা টেনে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত আলবদর, আলশামস নামে সংগঠনের মাধ্যমে কিছু কুলাঙ্গারকে নিয়ে হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ এবং জ্বালাও পোড়াওয়ের মতো যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিল। তিনি এ সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সকলকে বিচারের দাবি জানান। ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী শুধু যুদ্ধপরাধীই নয়, তারা ইসলামের শত্রু।আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.) দীর্ঘদিন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। হাজার হাজার লোক তার দেখাদেখি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছিলেন। অতঃপর জামায়াত-শিবিরের প্রকৃত রূপ তার সামনে উন্মোচিত হয়। তিনি জাতিকে মওদুদী ফিতনার ভয়াবহতা থেকে সতর্ক করার জন্য অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘ভুল সংশোধন’ রচনা করেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জামায়াত তাদের স্বীয় অপকর্ম স্বীকার না করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মুসলমানের জামায়াতে যোগদান করা জায়েজ হবে না।বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের প্রাক্তন খতিব মাওলানা মুফতি আব্দুল মুয়ীজ (রহ.) তার বহু লেখায় বলেছেন, মওদুদী প্রকৃতপক্ষে কোন আলেম নন। কোরান ও হাদিস সম্পর্কে কোন সঠিক জ্ঞান তার নেই। দীনের অপব্যাখ্যা করে মুসলিম সমাজকে গোমরাহ করাই তার মূল লক্ষ্য। তার প্রবর্তিত ফিতনা থেকে দূরে থাকা সকল মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।আজকের হেফাজতের আমির ২০০৩ সালের ৯ অক্টোবর বলেছিলেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আমাদের বিরোধ কোন রাজনৈতিক বিরোধ নয়, এই বিরোধ আকিদাগত। এতে বিশ্বের সকল হক্কানি আলেম একমত।চট্টগ্রাম জিরি মাদ্রাসার আল্লামা নূরুল হক ‘মওদুদীর তাফসির ও চিন্তাধারা’ বইয়ে বলেছেন, মওদুদীবাদ ভ্রান্ত হওয়ার দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য একটি ফেরকা। ইসলামের মুখোশ পড়ার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের দলে চলে যাচ্ছে। আল্লামা হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) মওদুদী মতবাদ এবং জামায়াত-শিবির সম্পর্কে ‘সতর্ক বাণী’ শিরোনামে একটি বই লেখেন। তাতে তিনি মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদ ও জামায়াতে ইসলামীকে মুসলমানদের ঈমান ও ধর্মবিশ্বাস ধ্বংসকারী ফিতনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি মুসলমানদের ইসলামের মুখোশধারী এই দল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। হাফেজ্জী হুজুরের (রহ.) এই পুস্তকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চার শতাধিক আলেম অভিন্ন মত প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেছিলেন।
false
hm
ম্যারাডোনা জাতি বাংলাদেশের মিডিয়াতে মানুষের আন্তর্জাতিক অর্জনগুলো যে বিস্তৃতি নিয়ে কাভার করা হয়, সেটি মনোযোগ দিয়ে দেখলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ঠিক কী কী ধারণা হতে পারে? ধরা যাক, ভিনগ্রহ থেকে জনৈক আগন্তুক এসে হাজির হলো বাংলাদেশে, স্কাউটশিপ থেকে নেমে কোনো নিউজস্টল থেকে কিনলো এক কপি প্রথম আলো, কিংবা টিভি খুলে ধরলো এটিয়েনবাংলা। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস নোবেল পেলেন, মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট জয় করলেন [এ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু সংশয় আছে], মাকসুদুল আলম পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রকল্পে সফল নেতৃত্ব দিলেন ... বিরাট বিকট কাভারেজ নিয়ে মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ছে এইসব সাফল্যের কাহিনীর ওপর। কোনো সন্দেহ নেই, ভিনগ্রহী ভদ্রলোক তার লগবুকে লিখবেন, এই জাতির নসিবে অতীব দুষ্প্রাপ্য মাণিক্যযোগ ঘটেছে। কথাটা মিথ্যেও নয়। আমরা তো আগে নোবেল পাইনি, আগে এভারেস্টেও চড়িনি, আগে কোনো শস্যের জিনোম সিকোয়েন্সিং করিনি। আমরা এ নিয়ে পত্রিকায় বীভৎস বিশাল ফন্টে খবর ছাপিয়ে কিছুটা আনন্দ উল্লাস করবো না কেন? অবশ্যই করবো। কিন্তু আমরা ঠিক ওখানে থামতে জানি না। ডক্টর ইউনুস তাঁর নোবেলখানা বগলস্থ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসতে চান, আবার পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে রাজনীতির মাঠ থেকে সটকেও পড়েন। আলু-স্টার মিডিয়াগোষ্ঠীর আয়োজিত ও নিয়োজিত তারকা মুসা ইব্রাহীম ময়দানে নেমেছেন তরুণদের আইকন হিসেবে দুঃসাধ্য ইঁদুরদৌড়ে, তবে মাকসুদুল আলম এখন পর্যন্ত স্বীয় ধীশক্তির বলে ব্যবহৃত হওয়া থেকে দূরে আছেন। এই যে কিছুদিন পর পর এক একটা মানুষের নাম ঝলক দিয়ে ওঠে আমাদের মিডিয়ার আকাশে, আমরা আসলে এঁদের বীরপূজা শুরু করি ঠিক কী ভাবনা থেকে? উচ্চশিক্ষিত প্রবাসীরা ডক্টর ইউনুসের রাজনৈতিক দলের পাণ্ডা হবার জন্যে কিলাকিলি করেন ঠিক কী ভেবে? মুসা ইব্রাহীমকে তরুণসমাজের রোল মডেল বানানোর চেষ্টায় আলু-গ্রুপ কেন ঘর্মাক্ত হয়? আমি অনুভব করছি, এই মর্মান্তিক উচ্ছ্বাস আমাদের অন্তর্লীন দারিদ্র্যকে উল্টোপিঠে বহন করে চলে। বিজ্ঞান, ক্রীড়া, কলা, কৃষ্টি, অর্থনীতি, প্রযুক্তি সবকিছুতেই আমরা একটু একটু করে পিছু হঠতে হঠতে এখন পৌঁছে গেছি এমন এক পশ্চাদভূমিতে, যেখানে আমাদের ভূমিকা কেবল দর্শকের। একটিবার তাকান আমাদের দেশে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উন্মত্ত মানুষের দিকে, দেখুন আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের পতাকা নিয়ে তাদের উৎকট উদ্দীপনা, ওখানে ফুটনোটে খুদি খুদি হরফে কী লেখা আছে? ওখানে আছে সেই পশ্চাদভূমির নিরুপায় দর্শকের হতাশাটুকু। আমাদের চারপাশে জীবন আর পৃথিবী হয়ে চলছে, ঘটে চলছে, করে চলছে, আমরা তা থেকে দূরে পড়ে আছি বহু অতীতে, স্পর্শ আর সাধ্যের বাইরে কোনো প্রিজনার অব আজকাবান হয়ে। আমাদের এই একশো ষাট মিলিয়ন মানুষের বেশির ভাগের মনেই ফুঁসছে দুর্দমনীয় সাধ, আমরা কেবল দেখে চলতে চাই না, আমরা শামিল হতে চাই এই সময় আর এই পৃথিবীতে। পারি না বলেই আমরা অশালীন তিনশো মিটার দীর্ঘ আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের পতাকা ওড়াই আকাশে, দেখাতে চাই, আমরা আছি, সমর্থক হয়ে আমরা অংশ নিচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে স্ফূরিত ঘটনায়। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ খেলে, তিনশো মিটার দীর্ঘ একটি বাংলাদেশের পতাকা কি উড়েছে দেশে? ওড়েনি, কারণ যে সাধ আমাদের হৃদয়ে অভুক্ত বাঘের মতো গর্জন করে ফুঁসছে, তার নিবৃত্তি ঘটে, যখন তামিম ইকবাল প্যাড পরে মাঠে নামে। আমাদের এই জাতিগত অনপনেয় তৃষ্ণা আর অতৃপ্তির কথা গোপন নয়, তার অস্ফূট অর্ধস্ফূট কল্লোলস্বর মিডিয়া কান পেতে শোনে। এই মিডিয়া তাই নোবেল গলায় ইউনুসকে জাতির ত্রাতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে, পর্বতারোহীকে বানাতে চায় তরুণের ঈশ্বর। হিমশৈলের দৃশ্যমান সফল অংশটুকুর নিচে যে বৃহদাকার নিমজ্জিত ব্যর্থতা, তা কি ভিনগ্রহীর চোখে গোপন থাকে? একটি সাফল্য নিয়ে অনির্দিষ্টকাল একে অন্যের পিঠ চাপড়ে উল্লাসের বিলাসিতা আমাদের নেই, যদি আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকাই। আমাদের একজন শান্তিতে নোবেলজয়ী আছে, কিন্তু দেশে শান্তির অনুকূল রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই। একজন এভারেস্টজয়ী [আমার সংশয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করি] পর্বতারোহী আছে, দেশে কোনো পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণকেন্দ্র নেই। একজন জিনোম সিকোয়েন্সিঙে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী আছেন, দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলট্রাসেন্ট্রিফিউজ নেই। সাফ গেমসে আমরা কারাতে ইভেন্টে চারটি সোনা জয় করি, দেশে কোনো কারাতে একাডেমি নেই। এভাবে প্রতিটি সাফল্যের পেছনে হাত দিলে আমরা লেজের মতো আবিষ্কার করি প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবটুকু। কে জানে, হয়তো প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিলেই আমাদের মধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবে উঠে আসা সফল মানুষগুলো নষ্ট হয়ে যান। আমাদের আসল রোগ হয়তো প্রতিষ্ঠানের যত্ন নিতে না পারা। হয়তো আজীবন ব্যক্তি উদ্যোগেই আমরা বছরে একজন দু'জনের নাম শুনবো নানা ক্ষেত্রে, কিছুদিন চেঁচাবো, তার খবর ব্লগ আর ফেসবুকে শেয়ার করবো, তারপর ভুলে যাবো। হিমশৈলের চূড়ায় শুয়ে রোদের নিচে শরীর তাতাতে দিয়ে ভুলে যাবো কত নিমজ্জন ইতিহাস হয়ে চুপচাপ ভেসে চলছে আমাদের মনোযোগের আড়ালে। বাংলাদেশের এই বিচ্ছিন্ন সাফল্য নিয়ে আনন্দ করতে এখন অভিমান হয়। কেন আমাদের একজন বিজ্ঞানী রসায়নে নোবেল পাবেন না? কেন এভারেস্টে পৃথিবীর কনিষ্ঠতম কিশোরীটি বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবে না? কেন বাংলাদেশে এমন একটি ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে না, যা বাংলাদেশের সকল প্রধান খাদ্যশস্য আর অর্থকরী শস্যের জিন সিকোয়েন্স করবে আগামী দশ বছরে? কেন বাংলাদেশের একজন নভোচারী ফেলে আসা পৃথিবীর গায়ে বাংলাদেশকে খুঁজবে না? ম্যারাডোনা জাতির সন্তান তো আমিও। ২০১০ এর বিশ্বকাপ ফুটবলে মাঠের পাশে স্যুটপরা ম্যারাডোনার চেহারা দেখায় একটু পর পর। একটা করে বল হঠাৎ ছিটকে আসে ম্যারাডোনার দিকে, বুড়ো লোকটা কী ক্ষুধা, কী আকুতি, কী বেদনা নিয়ে ঝট করে তৈরি হয়ে দাঁড়ায় সেই নিরুদ্দিষ্ট ভ্রষ্ট বলের কক্ষপথে, হয়তো পা ঘুরিয়ে বলটা ফিরিয়ে দেয়, নয়তো হাত দিয়ে লুফে বুকে চেপে ধরে। সবাই ভাবে ম্যারাডোনা নেমেছে কাপের লোভে, আমি এই বুড়ো দাড়িঅলা লোকটার ভেতরে দেখতে পাই একজন হঠে যাওয়া ফুটবলারকেই। ম্যারাডোনা এখনও খেলতে চায় মাঠে। ওকে একটা দশ নাম্বার জার্সি এনে দিন, মাঠে নামতে দিন, ও আজও গোল করবে। করতে পারবে, এ বিশ্বাস আমার আছে। ঐ যে স্পর্শ আর সাধ্যের বাইরে থেকে শুধু দর্শক হয়ে থাকা, ম্যারাডোনার এই বেদনা গরীব বাংলাদেশের ছেলে হয়ে আমি অনুভব করি নিজের রক্তস্রোতে। ঐ যে গর্জমান সাধটুকু, তার ক্ষয়চিহ্ন আমাদের সবার পাঁজরের ভেতর দিকে আছে। জুন ২৩, ২০১০
false
rg
বন্ধুদের আমলনামা-৬ _ _ গোসাই'র হাটের ফেরিওয়ালা সুনীল কুমার মন্ডল ।। রেজা ঘটক সুনীল খাবার সময় একদম কথা বলতো না। আমরা সুনীল সুনীল সুনীল...করে গলা ফাটিয়ে ফেললেও সুনীলের কোনো সাড়া শব্দ নেই। সুনীলের মা উঠোনে নেমে কইতো, সুনীল খাইতেছে। সুনীলের মাকে আমি ডাকি দিদি আর সুনীলের বাবাকে ভাই। সেই হিসেবে সুনীল হল আমার ভাতিজা। সুনীল খুব ভালো ফুটবল খেলোয়ার। আমাদের লেফট ব্যাক। সুনীল না থাকলে লেফট ব্যাকের দুর্বলতা নিয়ে বিপক্ষ দল আমাদের জালে গোল দিয়ে দিত। আমাদের নিয়মিত একাদশ ছিল মোটামুটি এরকম। নিশিকান্ত বালা গোলকিপার। নিশি অনুপস্থিত থাকলে প্রকাশ চন্দ্র মন্ডল গোলকিপার। বীরেন বিশ্বাস স্ট্রপার ব্যাক। সুখময় মজুমদার বীরেনের সামনে মেইন ব্যাক। সুনীল কুমার মন্ডল লেফট ব্যাক। লঙ্কেশ্বর সিংহ রাইট ব্যাক। মাঝমাঠে বিমল কৃষ্ণ হিরা। সুনীলের সামনে লেফট উয়িং রেজাউল করিম মিঠুল। লঙ্কেশ্বরের সামনে রাইট উয়িং দিলীপ কুমার মন্ডল। মিঠুলের সামনে লেফট ফরোয়ার্ডে সুবোধ চন্দ্র বৈরাগী। দিলীপের সামনে রাইট ফরোয়ার্ডে শেখ মোহাম্মদ এনায়েত। আর মেইন ফরোয়ার্ডে আমি। কখনো আমি মাঝমাঠে খেললে বিমলা হিরা মেইন ফরোয়ার্ডে খেলতো। কখনো মিঠুল লেফট ফরোয়ার্ডে খেললে সুবোধ লেফট উয়িংয়ে চলে যেতো। কখনো দিলীপ রাইট ফরোয়ার্ডে খেললে এনায়েত রাইট উয়িংয়ে চলে যেতো। কখনো বীরেন সামনের ব্যাকে খেললে সুখময় মেইন স্ট্রপার ব্যাকে খেলতো। বিপক্ষ দলের অবস্থা বুঝেই আমরা এই কম্পিনেশান করতাম। আমাদের নাজিরপুর থানায় আমাদের দল ছিল সেরা ফুটবল টিম। থানা লেভেলে খেলতে গেলে আমরা কিছু সিনিয়র খেলোয়ার নামাতাম। তখন মেইন স্ট্রপার ব্যাকের দায়িত্ব গড়াতো আমার মেঝো ভাই এমদাদের উপর। সুখময় চলে যেতো রাইট উয়িংয়ে। দিলীপ চলে যেতো রাইট ফরোয়ার্ডে। লঙ্কেশ্বরের জায়গায় রাইট ব্যাকে শেখ ছলেমান। এবার আর কে পারে আমাদের সাথে। বিমল-মিঠুল-সুখময় বল বানিয়ে কোনোভাবে দিলীপ-আমি বা সুবোধকে দিতে পারলেই বিপক্ষ দলের গোলকিপারের চোখে শর্সে ফুল ঝড়তো। মাঝে মাঝে আমরা লেফট ফরোয়ার্ডে টিরিপকে নামাতান। টিরিপ ছিল কর্নার কিকে সেরা। কখনো টিরিপের কর্নার কিক বাক খেয়ে এমনিতেই গোল হয়ে যেতো। আমাদের যে কোনো প্লান্টি কিক নিতো এমদাদ, বিমল বা সুনীল। কখনো মিঠুলও নিতো। আর খেলা টাইব্রকারে গড়ালে আমি থাকতাম খুব ঝামেলায়। কারণ শেষ কিক মানে পঞ্চম কিকটি আমার ভাগ্যে গড়াতো মেইন ফরোয়ার্ড হিসেবে। আমি গোল করতে পারলে দল জিততো। আমার কিক বাইরে গেলে আমরা হেরে বসতাম। আমাদের দলের লেফট ব্যাক সুনীল, লেফট উয়িং মিঠুল, লেফট ফরোয়ার্ড সুবোধ আর আমি ছিলাম বাম পায়ের খেলোয়ার। আমাদের বাম পায়ের কিকই মেইন ভরসা ছিল। আর বাকিদের ডান পা। এছাড়া থ্রোইনে আমার ভাই এমদাদ ছিল দারুণ পটু। ফরোয়ার্ডে আমরা কোনো থ্রোইন পেলে এমদাদ ভাই এতো জোরে বল ছুড়ে মারতো যে সেটা কিকের মতোই বিপক্ষ দলের সরাসরি ডিবক্সে আমাদের উদ্দেশ্যে। সেটাও অনেক গোলের ব্যাপারে কার্যকর ছিল। বীরেন বা সুখময় অসুস্থ থাকলে আমরা গৌতমকে হায়ার করতাম। গৌতম ছিল স্ট্রপার ব্যাক । কিন্তু গৌতম সাইজে খাটো হওয়ার কারণে অনেক সময় হেড দিয়ে বিপক্ষ দল কিছুটা সুবিধা বাগিয়ে নিতো। তাই এমদাদ ভাই মেইন স্ট্রপারের দায়িত্ব নিলে গৌতম তার সামনের ব্যাক পসিশানে খেলতো। সুনীলের একটা দোষ ছিল হ্যান্ড বল করার। আমারা সবাই বেশি উপরে চলে যাওয়া মুহূর্তে যদি বিপক্ষ দল বল পেয়ে আমাদের ডিবক্সে আক্রমন চালাতো, সুনীল তখন ইচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল বানাতো ডিবক্সের বাইরে। এ নিয়ে সুনীল রেফরির কাছ থেকে অনেক হলুদ কার্ডও পেয়েছে। কখনো সুনীলও বল নিয়ে সামনে এগিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ গোল করে দিতো। ছাত্র হিসেবে সুনীল ছিল ঠেলা পাস মার্কা গোছের। অনেক সময় স্যারদের করুণা নিয়ে পরের ক্লাশে আমাদের সঙ্গে উঠতো। ইংরেজি, অংক আর ভূগোল সুনীলের মাথায় একদম ঢুকতো না। বীজগণিতে তো সুনীল পারলে হাগু করে দিতো। জ্যামিতি সুনীল মুখস্থ করতো। তো আমাদের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সুনীল তিন পেপারে ডাব্বা মারলো। সুনীলের বাবা আই জারী করলেন, এখন থেকে খেলা বন্ধ। সুনীল বই নিয়ে বারান্দায় বসে থাকে। আমরা সুনীল বলে একটা চিক্কর মেরেই ওদের বাড়ির সামনের রাস্তা পার হতাম। আমরা মাঠে এসে বুট জার্সি পড়ে দু'দলে ভাগ হবার মধ্যেই সুনীল হাজির হতো। সুনীলের পেছন পেছন সুনীলের ইমিডিয়েট বড় ভাই শুকু আসতো সুনীলকে ডাকতে। আমরা শুকু'র কথায় পাত্তা না দিয়ে খেলতে থাকতাম। শুধু কখনো সুনীলের বাবা মানে আমার দাদু ভাই আসলে সুনীল নিজেই খেলা ছেড়ে দিয়ে দৈমন্তীর বাগান ভিটার দিকে ভো দৌড়। আমরা ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাশ করলাম। সুনীল, সুবোধ, হরিপদ, স্বপন এরা ফেল করায় পরের বছর আবার পরীক্ষা দিল। কিন্তু পরীক্ষার জন্য এরা হরিপদ দা'র পরামর্শে বানড়িপাড়ার বাইশারী স্কুল থেকে ফরম ফিলাপ করলো। কারণ বাইশারী স্কুলে তখন সেন্টার হতো। আর সেখানে খুব নকল করার প্রচলন ছিল। সুনীল, সুবোধ, হরিপদ, স্বপনদের ঠিকমতো নকল সাপ্লাই দেবার জন্য এসিট্যান্ট হিসেবে গেলাম আমি, প্রকাশ আর কাইউম। প্রকাশ কাইউম আর আমি মিলে ডামি হ্যান্ডে স্পেড ট্রাম খেলি। আর ওরা পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা। বাইশারী স্কুলের সেন্টারে তখন গার্ড দিতে আসলেন রনজিৎ ঘোড়াই নামে এক ত্যাজী ম্যাজিস্ট্রেট। যার কাছেই রনজিৎ ঘোড়াই নকল পায়, তাকেই এক্সপেল্ট করে। পরীক্ষা শুরু হবার পনের মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র বাইরে আমাদের কাছে চলে আসলো। আমরা উত্তরপত্র রেডি করে ভিতরে পাঠানো শুরু করলাম। যে সকল পিয়ন ছাত্রদের জল খাওয়ান, তাদের কাউরে দশ টাকা ধরিয়ে দিলেই সে নকল ঠিকমত পৌঁছে দেয়। এটাই নিয়ম। সুবোধ আর সুনীলের সিট এক রুমে। হরিপদ আর স্বপনের রুম আলাদা আলাদা রুমে। সবারই বাইশারী স্কুলের দোতলায় সিট পড়েছে। আড়াই ঘণ্টা শেষ তখন। 'লাল সালু'র মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমার উপরে প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে এসেছিল। আমরা উত্তরপত্র রেডি করে ভেতরে পাঠালাম। সুবোধ লেখা শেষ করে সুনীলকে দিল। ঠিক সেই মুহূর্তে রনজিৎ ঘোড়াই সুনীলের রুমে সুনীলকে মার্ক করলেন। সুনীল কিছু লেখার আগেই ধরা খেল। সুনীলের সঙ্গে আর কোনো নকল ছিল না। খাতায় তো নকলের কোনো প্রমাণ নেই। সুনীল অনেক হাত পা ধরলো। কিন্তু রনজিৎ ঘোড়াই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন হৃদয়ের মানুষ। পরীক্ষা শেষ হবার পনেরো মিনিট আগে সুনীল মুখ ব্যাজার করে বাইরে আসল। সুনীল এক্সপেল্ট। বিকালে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে হরিপদ'র দশাও সুনীলের মতো এক্সপেল্ট। রাতে আমাদের স্পেড ট্রামে আর খেলোয়ার ঘাটতি রইলো না। সুনীল আমাদের সঙ্গে খেলতে চাইলো না। কিন্তু না খেলেও উপায় নেই। কারণ, পরীক্ষার মাঝপথে বাড়িতে গেলে সবাই জানবে যে সুনীল এক্সপেল্ট হয়েছে। সুনীল আর হরিপদ তাই পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থেকে গেল। সুনীল আমার পার্টনার। প্রকাশ আর কাইউম পার্টনার। আমরা যে বাড়িতে পরীক্ষার জন্য ভাড়া নিয়েছি সেটা একটি হিন্দু ব্রাহ্মণ বাড়ি। সেই বাড়িতে পৌঁছে আমার নতুন নাম হল তপন। মুসলিম ছেলে ব্রাহ্মণের বাড়িতে খাচ্ছে থাকছে টের পেলেই সর্বনাশ। সুবোধদের তখন থাকার জন্য নতুন বাড়ি কুঁজতে হবে। তাস খেলার মাঝে সুনীল হঠাৎ ভুল করে আমাকে রেজা ডেকে ফেললো। পাশের রুমে সেই বাড়ির অরুণ'দার স্ত্রী আমাদের সকলের ভারী কাছের বৌদি সেই ডাক শুনতে পেলেন। কিন্তু পাশের রুম থেকে দেখা যায় না বলে ঠাওর করতে পারলেন না কে মুসলিম? সুবোধদের পরীক্ষা বাড়তি সাবধনতার সঙ্গে ভালোমতোই শেষ হল। আমরা আসার দিন বৌদিকে চুপিচুপি বললাম, আমিই রেজা। আর কাইউমও তার রবীন নাম ফেলে দিয়ে আসল নাম বললো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আজ পর্যন্ত সেই সুন্দরী বৌদি আমাদের নাম গোপন করে রেখেছেন। পরীক্ষার ফলাফল বের হল। স্বপন পাস করলো। সুবোধ আবার ইংরেজিতে গ্যারাইছে। আজ পর্যন্ত সুনীলের ফেলের রহস্য আমরা আর ছাড়া কেউ জানে না। সুনীলের আর পরীক্ষা দেওয়া হল না। মাঠের কাজেই ভিড়ে গেল। সুনীল বিয়ে করেছে। চিংড়ি মাছের খামার করেছে। খামারের ভেরিতে নানা জাতের শবজির চাষ করছে। আর বাড়ির সামনে একটা মুদি দোকান দিছে। সেখানে গোটা গ্রামের রাজনৈতিক সচেতন মহল সন্ধ্যায় বিবিসি শুনতে ভিড় করেন। সুনীলের এক ছেলে। আমি বাড়িতে গেলে সুনীলের দোকানেই এখন মেইন আড্ডা হয়। সুনীলের দোকানে এক সেট দাবা আছে। তাই নিয়ে আমরা বসে যাই। সুনীলের দোকানে গোল্ড লিফ হল হাইয়েস্ট সিগারেট ব্র্যান্ড। বাড়িতে গেলে সুনীল আমার জন্য সেই সিগারেট এনে রাখে। কখনো আমরা সুনীলের চিংড়ির ঘেরের পাশে মাছ দেখার জন্য ঘুরতে যাই। সুনীল এখনো একটুও পাল্টায়নি। আর আমরা যারা নব্য শহুরে হয়ে গেছি, আমরা কতো বদলে গেছি...। সুনীল যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস।
false
rn
শরীর ও মনের সৌন্দর্যেঃ যোগব্যায়াম মন বা শরীর যেটির সৌন্দর্যের কথাই বলি না কেন, দুটোই নির্ভর করে ব্যায়ামের ওপর। বিশেষ করে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে দেহ ও মনের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য সহজেই ধরে রাখা যায়।ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের মন সজীব হয়। যখন আমাদের মন সতেজ থাকে, তখন এমনি এমনিই আমাদের শরীরও ভালো হয়ে যায়। তাই নিরোগ দেহের জন্য সব বয়সী মানুষই যোগব্যায়াম করতে পারে।বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য জোরে হাঁটাই হচ্ছে সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। সাঁতার কাটা নিশ্চল সাইকেল চালানো ইত্যাদিও করা যেতে পারে। এ ধরনের ব্যায়াম একটানা ৩০ মিনিট ধরে সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ দিন করতে হবে।প্রাচীন ভারত থেকে উদ্ভুত যোগব্যায়ামকে শয়তানের কীর্তি বলে অ্যাখ্যা দিলেন ভ্যাটিকান সিটির প্রবীণ ধর্মগুরু গ্যাবরিয়াল অ্যামোর্থ।৮৫ বছর বয়সী ভ্যাটিকান সিটির এই প্রধান ধর্মযাজক যোগব্যায়ামকে হ্যারি পটার গল্পের পাপাত্মার প্রভাবের সঙ্গে তুলনা করেছেন।তিনি বলেন, শয়তান মন ও মস্তিষ্কে ওপর ভর করে, পুনর্জন্মের দোহাই দিয়ে বাধ্য করে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করতে।” মুখমন্ডলের কিছু ব্যায়াম আপনার চেহারায় বয়সী ভাব কমাতে সাহায্য করে। এটা সুনিশ্চিত একটি প্রক্রিয়া এবং যুগ যুগ ধরে সবচেয়ে কার্যকরী একটি প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ঘরে বসে যেকেউ সহজেই এটা করতে পারে। এই ব্যায়াম ত্বকের নিচের পেশিগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করে যার ফলে চামড়া কুচকে যায় না বা ঝুলে পড়ে না।আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে দ্রাবিড় সভ্যতায় এ ব্যায়ামের উদ্ভব ঘটে। দ্রাবিড় সাধকরা যোগব্যায়ামকে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাস ও সংস্কৃতির অঙ্গে পরিণত করেন। বর্বর আর্যদের আক্রমণে মহেঞ্জোদারো, হরপ্পাসহ দ্রাবিড় সভ্যতার কেন্দ্রসমূহ সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এখানে একটা কথা বলতে চাই- হাঁটা হচ্ছে সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি উত্তম ব্যায়াম।হঠাৎ করে ব্যায়াম শুরু করবেন না বা হঠাৎ করে ব্যায়াম ছাড়বেন না। ব্যায়ামের আগে ও পরে ১০ মিনিট ধীরে হাঁটুন বা হালকা খালি হাতের ব্যায়াম করুন। শরীরের মেদ এবং সেই সাথে ক্যালরি ক্ষয় করতে ব্যায়াম ও ডায়েটিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। যোগব্যায়াম শুরু করলে প্রথমেই শরীরটাকে উজ্জীবিত করা বা ওয়ার্ম-আপ করে নেয়া ভালো। দেহকে একটু উজ্জীবিত করে নিলে দেহ নমনীয় হবে এবং পরবর্তী যোগাসনগুলো করা সহজ হবে। ১৫টি ধাপে বিভক্ত এই অনুশীলনীর মাধ্যমে আপনার পেশী ও হাড়ের জয়েন্টের জড়তা কেটে যাবে এবং আপনার শরীর ব্যায়াম ও যোগাসনের জন্যে প্রস্তুত অবস্থায় চলে আসবে। যে কোনো ব্যায়ামের আগেই একটু ওয়ার্ম-আপ (Warm-up) প্রয়োজন। এই ১৫ ধাপের অনুশীলন শরীরকে চমৎকার ভাবে ওয়ার্ম-আপ করে বলেই একে 'উজ্জীবন' বলা হয়। এই অনুশীলনকালে দম স্বাভাবিক থাকবে।যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভোরবেলা। তবে সন্ধ্যার দিকেও করা যেতে পারে। যোগব্যায়াম করার সময় অন্য সব চিন্তা থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখুন। কেবল ব্যায়ামের দিকেই মনোযোগ দিন। যোগব্যায়ামটা শুরু করুন খুব সহজ কোনো আসন থেকে। তারপর ধীরে ধীরে কঠিন আসলগুলো চর্চা করে ফেলুন।যেটি করতে বেশি কষ্ট হচ্ছে, সেটি বাদ দিন। ব্যায়ামের ফলে কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখুন।দেহের শিথিলতার সাথে সাথে মনের শিথিলতা আনয়নের জন্যে এবার সুন্দর দৃশ্যের কল্পনা করুন। এ দৃশ্য হতে পারে সমুদ্রসৈকত, লেক বা নদীর পাড় বা এমন কোন প্রাকৃতিক দৃশ্য যা আপনাকে আনন্দে আপ্লুত করে তোলে।দুইপায়ের মাঝখানে ৪ আঙুল ফাঁক রেখে দুহহাত শরীরের দুহপাশে রেখে বুক টান করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। বুক টান করে সোজা দাঁড়ানো অবস্থায় দুহহাত সোজা উপরে তুলুন। খেয়াল রাখুন আপনার শরীরের ওজন যেন দুহপায়ের ওপর সমানভাবে পড়ে। কোনদিকে কাত হবেন না বা কোন পায়ে ভর বেশি দেবেন না।হাঁটু ভেঙে কোমর ও মাথা মাটির সমান্তরালে নিয়ে আসুন। হাতের আঙুল ও করতল এবার সুন্দরভাবে মেঝে স্পর্শ করবে।পা ও ঊরু মাটির সাথে লেগে থাকবে। কোমর থেকে মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে হাতে ভর দিয়ে মাথা যতদূর সম্ভব পেছনের দিকে নিয়ে যান। ব্যায়ামের শেষে ব্যায়ামের বিছানার উপর সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুহহাত শরীরের দুহপাশে রাখুন। হাতের তালু উপরের দিকে থাকবে। দুহপায়ের মাঝে চার আঙুল পরিমাণ ফাঁক থাকবে। মাথাটা ডানদিকে একটুখানি কাত হয়ে থাকবে।যেকোনো ব্যায়ামের ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। একদিনে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে এরপর ছেড়ে দিলে তাতে বরং ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। অল্প করে হলেও নিয়মিত চর্চা রাখুন।আপনি কেন ব্যায়াম করবেন সেটা আগে জানুন, প্রয়োজনে ডাক্তার অথবা জিম ট্রেইনারের কাছ থেকে জানুন কিভাবে, কত টুকু করবেন।প্রতেক মানুষেরই ব্যায়াম করা উচিত। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি, শরীরের ওজন কমানো, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, ঘুমের অসুবিধা দূর, মানসিক চাপ কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করাসহ অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় নিয়মিত ব্যায়াম থেকে। এ ছাড়া ত্বক ভালো হয়। ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো রোগ থেকেও আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখতে সহায়তা করবে ব্যায়াম।
false
rn
মৃত্যুর আগে যে ১০০ টি মুভি আপনাকে দেখতে হবে (ছয়) ৫১। রেয়ার উইন্ডো (Rear Window) মুভিটি ১৯৫৪ সালে মুক্তি পায় । কাহিনী ১৯৪২ সালের শর্ট স্টোরি 'ইট হ্যাড টু বি এ মার্ডার' থেকে নেয়া হয়েছে। প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার জেফ এক র্দুঘটনায় তার একটি পায়ে আঘাত পায় । ফলে তাকে বাধ্য হয়ে হুইল চেয়ারের মাধ্যমে চলাফেরা করতে হয় । ফলে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হতে পারে না । মাঝে মাঝে তার পরিচারিকা স্টেলা এবং তার গার্লফ্রেন্ড লিসা তাকে দেখতে আসে এবং বাকী সময় তার একঘেয়ে কাটে । কোনো কাজ না পেয়ে একঘেয়ে সময়কে আনন্দময় করার জন্য সে তার অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে প্রতিবেশীরা কি করছে দেখার চেষ্টা করে । একসময় তার সন্দেহ হয় যে তার এক প্রতিবেশী খুন হয়েছে । একথা সে তার গার্লফ্রেন্ড , পরিচারিকা এবং এক গোয়েন্দা বন্ধু থমাস ডয়েলকে বলে কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করে না । এতে জেফ অপমানিত বোধ করে । সে প্রমান করতে চায় যে সে ঠিক । কিন্তু সে তো অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে যেতে পারবে না । কি করে তার প্রমান করবে যে তার অনুমান সঠিক?৫২। ক্র্যাস (Crash) আমেরিকায় কালো-সাদাদের মধ্যে দন্ধ, ভুল বোঝাবুঝি এবং একে অপরের উপর নির্ভরশিলতা নিয়ে করা অনন্য একটা মুভি। ছবিটিতে পরিচালক খুব সুন্দরভাবে জিনিষগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। আই এমডিভি রেটিং ৮।৫৩। সারেং বৌ- বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্পে নির্মিত। সারেং (ফারুক) জাহাজে কাজ করে অনেক দিন পর ফিরে আসে নিজ বাড়িতে, তারপর ভালবেসে বিয়ে করে “নবিতন”কে (কবরী)। বিয়ের কিছু দিন পরে আবার চলে যায় জাহাজের কাজে, কদম চলে যাওয়ান মাঝে মাঝেই নবিতনের কাছে চিঠি ও টাকা পাঠায়। কিন্তু গ্রামের প্রভাবশালী “মোড়ল” (আরিফুল হক) ডাক পিয়নকে হাত করে সেইসব চিঠি ও টাকা নিয়ে নেয়, যাতে করে নবিতনের সংসারে অভাব চলে আসে। আর এই অভাবের সুযোগে নবিতনকে তার লালসার শিকার বানাতে চায়, কিন্তু নবিতন নিজে গায়ে খেঁটে ঢেঁকিতে ধান বেঁনে কোন মতে সংসার চালায়। এদিকে কদমকে “মন্টু চাচা” (গোলাম মোস্তফা) পকেটে অবৈধ মাল পুরে দিলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, সাজার মেয়াদ শেষ হলে সে ফিরে আসে নিজ গ্রামে। এ ছবিটি নিয়ে ফারুক স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, এ ছবির শুটিং করতে গিয়ে তার ১০৪ ডিগ্রি জ্বর ছিল। ছবির শেষ দৃশ্যধারণের সময় এমন হয়েছিল। জ্বর নিয়ে কাদামাটিতে শুটিং করেন তিনি। ৫৪। আগোরা (Agora) মূল চরিত্র হাইপেশিয়া একজন দার্শনিক, একজন জ্যোতির্বিদ, একজন তরুনী। তার বাবা আলেক্সান্দ্রিয়া মিউজিয়াম এবং লাইব্রেরীর প্রধান, আর হাইপেশিয়ার ছাত্ররা হলো সম্ভ্রান্ত বংশের যুবকরা, হাইপেশিয়া তাদের দর্শন শেখায়, জ্যোতির্বিদ্যা শেখায়। পৃথিবী গোল না চ্যাপ্টা, পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, না সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে – এই সব চিন্তায় হাইপেশিয়া মগ্ন। এক কথায় ধর্ম আর বিজ্ঞানের এই চিরন্তন দ্বন্দ্বের চিত্র ফুটে উঠেছে ‘আগোরা’ মুভিতে। ৫৫। দি সেভেন্থ সিল (The Seventh Seal Movie) কাহিনীর পটভূমি মূলত চতুর্দশ শতাব্দী।এন্টনিয়াস ব্লক হলো সদ্য ক্রুসেড শেষ করা ক্রুসেডার। ১০ বছরের যুদ্ধ শেষ করে ঘরে ফিরছে সে.. সাথে অনুচর জনস.. ফেরার পথে মৃত্যুর সাথে দেখা হয় ব্লক এর। জানতে পারে যে ওর সময় প্রায় শেষ.. বেচে থাকার শেষ ভরসা হিসেবে ও মৃত্যুকে দাবা খেলার চ্যালেঞ্জ জানায়। যতক্ষণ খেলা চলবে ততক্ষণ সে বেচে থাকবে হেরে গেলে ওকে মেরে ফেলা হবে আর জিতে গেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। সেই সাথে চলতে থাকে ধর্ম কে নিয়ে যুদ্ধ করে ফেরা এই নাইট এর নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ানো। জীবন, মৃত্যু, ঈশ্বর এর অস্তিত্ব সহ নানা বিষয়ে তার মনে তখন উত্তর না জানা অজস্র প্রশ্ন। ৫৬। ব্লাড ডায়মন্ড (Blood diamond) সরকারপন্থী ও সরকার বিরোধী গ্রুপের মধ্যকার নিষ্ঠুর সংঘর্ষ এখানে চিত্রায়িত হয়েছে। এখানে আরও দেখানো হয়েছে হীরার লোভে গৃহযুদ্ধে ইউরোপের ব্যবসায়ীদের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ, উঠে এসেছে হীরক-ব্যবসার অন্ধকার দিক।অসম্ভব সুন্দর এবং হাই-ফিলোসোফিকাল মুভি ।৫৭। ফাইলান (Failan) রোমান্টিক মুভি। একটি খুব সাধারণ মেয়ে এবং একজন গ্যাংস্টারের ভালোবাসা নিয়ে এই মুভি। ভুলতে পারবেন না এই মুভির কথা। অনেকদিন মনে থাকবে আপনার। ৫৮। লাভ লাইকস কোইনসিডেন্স (love likes coincidences) ১৯৭৭ সালে আঙ্কারা শহরে ইলমাজ যখন তার প্রেগন্যান্ট স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখন ছোট একটি দুর্ঘটনা ঘটে। তার গাড়ির সাথে ওমরের গর্ভবতী স্ত্রী ইন্সির সাথে ধাক্কা লাগে এবং তার প্রি-টার্ম লেবার শুরু হয়। ফলে একই দিনে একই সাথে ওই হাসপাতালে এই দুই দম্পতির দুটি বাচ্চার জন্ম হয়। ইলমাজ ছিলেন একজন ফটোগ্রাফার, তিনি এই দুই বাচ্চার একসাথে ছবি তুলে রাখেন। বাচ্চা দুটোর নাম রাখা হয় ওজগার এবং দেনিজ। একটি পুর্নাঙ্গ রোম্যান্টিক মুভিতে আপনি যা যা এক্সপেক্ট করেন, এই মুভিটি আপনাকে শতভাগ দিবে। ৫৯। ক্লিক (Click) মুভিতে মাইকেল নিউম্যান একজন আর্কিটেক্ট । সুন্দরী স্ত্রী ডোনা আর দু বাচ্চা নিয়ে তার সুখের সংসার। কিন্তু পরিবারকে আরেকটু সুখের ছোঁয়া দিতে প্রাণান্তকর পরিশ্রম করছে সে। কাজের চাপে বিরক্ত হয়ে একদিন টিভির রিমোর্ট খুঁজতে গিয়ে যখন পেল না তখন ক্ষুব্ধ হয়ে একটা ইউনিভার্সাল রিমোট কন্ট্রোলের খোঁজে দোকানে ছুটল সে। অযাচিত ভাবে সেখানে দেখা পেল মর্টির। মর্টি নিউম্যানকে একটা রিমোট দেয়। বাসায় ফিরে খানিকবাদেই মাইকেল বুঝতে পারে এটা কোন সাধারণ রিমোর্ট নয়। তা দিয়ে এমন সব কাজ করা যায় যা এক কথায় অসম্ভব। ৬০। এ সিম্পল প্লান (A Simple Plan) তিনজন মানুষের গল্প। ব্যক্তিগত জীবনে তেমন সুখী বলা যাবে না তাদেরকে। যাইহোক একদিন তারা এক প্লেনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সন্ধান পায়। সেই টাকা দাবি করার কত কোন লোক পায় না সামনে। তিনজনের মনে লোভ উকি দিয়ে উঠে। ঠিক করে এই টাকা তারা নিয়ে যাবে। পরিকল্পনা সব ঠিক করে তারা সামনে এগোয়। কিন্তু যতটা কঠিন/সহজ আশা করেছিলো তার থেকে কঠিন সমস্যা সামনে চলে আসে। তাদের কল্পনাতেও ছিলো না তা। পরিচালক হলেন স্পাইডারম্যানখ্যাত বিখ্যাত স্যাম রাইমি।একটা পরামর্শ দেই- জীবনে বড় হতে হলে কিছু ভাল বই পড়তে হয়, কিছু ভাল মুভি দেখতে হয়, কিছু ভাল মিউজিক শুনতে হয়, কিছু ভাল জায়গায় ঘুরতে হয়, কিছু ভাল মানুষের সাথে মিশতে হয়, কিছু ভাল কাজ করতে হয়। ছবিগুলোর ডাউনলোড লিংক আপনারা নিজ দায়িত্বে খুঁজে নিবেন।
false
fe
কবিতার সঙ্গে পথ হাঁটা _ সৈকত হাবিব যারা কবিতা নিয়ে ভাবেন , কবিতা লিখেন , তারা লেখাটা পড়তে পারেন। ভাবনার খোরাক পাওয়া যাবে লেখাটায়। ******************************************************************** কবিতার সঙ্গে পথ হাঁটা সৈকত হাবিব ============================================= মাঝে মাঝে বড়ো বিস্মিত হয়ে ভাবি, কী করে একজন কবি কবিতার সঙ্গে পথ হাঁটেন! কবির সঙ্গী হিসেবে কবিতা কিংবা কবিতার সঙ্গী হিসেবে কবি, সম্পর্ক বা ভ্রমণটা কি খুব সুখের নাকি? হয়তো কখনো কখনো। কিš' যখন সঙ্গ বা ভ্রমণটা হয় দীর্ঘ, তখন জীবনের নানা টানা ও পোড়েন, বেদনা কিংবা শোক, উপলব্ধি ও অস্তিত্বের দ্বৈরথ, রূঢ় বাস্তব ও কল্পনার লতা মিলিয়ে সে কি এক জটিল জড়াজড়ি নয়? আজকের দিনে, যখন ভোগের ভাগের জন্য সীমাহীন কাড়াকাড়ি, জীবনের প্রয়োজন আর দাবিও যখন বাড়াবাড়ি রকমের, জীবন যখন পূর্ব-পশ্চিম আর ধনী-নির্ধন কাউকেই এখন কল্পনা কিংবা অবসরের সুযোগও দিতে চায় না, তখন কবিতার মতো একটি সময়ের হাতে প্রায় পরাজিত শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে বসবাস কতোটা বিষয়সম্মত? (তবে যুক্তিসঙ্গত কিনা সে প্রশ্নই থাকা উচিত নয়, কারণ বিষয়ের যুক্তি আর শিল্পের যুক্তি এক ব¯' নয়। সেটা হওয়ার নানারকম ঝামেলাও আছে। সে বরং থাক, ভবিষ্যতের অন্য কোনো সময়ে, অন্য কোনো প্রেক্ষাপটে আরো গভীর কোনো আলোচনার উত্থানের জন্য।) আরেকটা ব্যাপারও আছে, কবিতার সঙ্গে রহস্যের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অচেনার সঙ্গে, অদৃশ্যের সঙ্গে, রহস্যময়তার সঙ্গে কবিতার দাম্পত্য সেই আদিকাল থেকেই। ব্যাপারটা কেমন, তা এক প্রাচীন গ্রিক কবির উচ্চারণ থেকেই টের পাওয়া যায়, যখন সামান্য রহস্যময় একটি ঘটনায়ই তিনি বলে উঠেন, কোনোই বিস্ময় আর বাকি নেই পৃথিবীতে। আর ঘটনাটি ছিল কোনো অগ্ন্যুৎপাত বা সচরাচর ঘটে না, এমন কোনো প্রাকৃতিক বিষয়। অথচ, তারপর পৃথিবী অতিবাহিত করেছে আরো প্রায় তিন হাজার বছর, বিশ্বের শুধু নয়, বরং মহাবিশ্বেরও অনেক রহস্যই আজ উন্মোচিত হয়েছে মানুষের হাতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর অজস্র-অসংখ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবনের কল্যাণে। তাহলে কবিতার রহস্যময়তার সন্ধান কি বিজ্ঞানই অনেকটা মিটিয়ে ফেলছে না? এমন এক বাস্তবতায় কবিতা কি আরো দুর্বলতর হয়ে পড়ছে? অচেনা যতো চেনা হচ্ছে, অদৃশ্য যতো দৃশ্যমান হচ্ছে, রহস্য যতো উন্মোচিত হচ্ছে, কবিতা কি ততোই তার ভাষা ও বোধের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে? আর এই সবের মধ্য দিয়ে সে কি তার পতনের গানকেই বাজিয়ে চলেছে সময়ের তারে ও বে-তারে? হয়তোবা। হয়তো তা নয়। কিš' আজকের এই পৃথিবীতে পাঠক-মানবের সঙ্গে যেমন, কবির সঙ্গেও কবিতার পথ হাঁটা আরো পিচ্ছিল আর কষ্টকর হয়ে উঠছে। অনেক সময় ক্লান্তিকরও। পথ হাঁটা তবু থামছে না। থামা সম্ভবও নয়। হয়তো। কারণ, জীবন যদিও আমাদের তার ভারবাহী গাধায় পরিণত করেছে, প্রতিনিয়ত ঘৃণায়-বিবমিষায়-ক্লান্তিতে-ক্ষুধায়-রুগ্ণতায় বিপন্ন করে তুলছে, তবু আমরা তো প্রতিটি মুহূর্তে জীবনেরই শস্য ফলাই আর জীবনের ভাঁড়ার পূর্ণ করে চলি। জীবনের এতো বৈরিতা, এতো বিপর্যয়, এতো পরাজয়, তারপরও জীবনই আমাদের নিয়ে হেঁটে চলে অন্তহীন পথ ধরে। আর কবিতাও তো জীবনেরই এক গূঢ়-গভীর অঙ্গ। তাকে অনঙ্গ করে কী করে চলবে স্বয়ং জীবন! প্রশ্নটা এমন আসতেই পারে যে, শরীরের অনেক অংশ না থাকলেও তো জীবন ঠিক ঠিক চলে যায়, যদি প্রাণটা থাকে। কাজেই কবিতা না থাকলে ক্ষতি এমন কী-ই বা। জীবন তো অপূর্ণতার মধ্য দিয়েই নিজেকে যাপন করে চলে। কথাটা সঙ্গতও বটে। আর এ তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি যে, কবিতার সঙ্গে আজকের পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষেরই সম্পর্ক এখন পাঠ্যপুস্তক আর পরীক্ষা পাস পর্যন্ত, তাও যদি খুব জরুরি হয়। পৃথিবীর কোনো অক্ষরহীন (এবং ‘আমাদের’ চোখে ‘অ-সভ্য’) সমাজ বা জনগোষ্ঠীর কাছে এখনো হয়তো তন্ত্র-মন্ত্র কিংবা দিনানুদৈনিকের প্রয়োজনে কবিতা টিকে থাকলেও, আমাদের স্বাক্ষর সমাজে এর ব্যবহারিকতা এখনো শিশুদের পদ্য বা রাইমসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারপর জীবন যতো দীর্ঘ ও জটিল হতে থাকে, তার প্রয়োজনও লুপ্ত হতে থাকে। অন্যদিকে আজকের ভোগব্যাকুল, কামনাজটিল পৃথিবীতে, কবিতাতেও আর সারল্যের সুযোগ নেই। সময় ও মননের জাটিল্যের ভেতর কবিতাও ভেতরে ভেতরে হয়ে উঠেছে গূঢ়জটিল। তাই তাও সকলের কিংবা অধিকাংশের আস্বাদবঞ্চিত। অথচ, কী আশ্চর্য, কবিতার মতো অনাথ একটি মাধ্যমের জন্যও জীবনপাত করতে দেখি কতো কতো কবিকে। সে কেবল আজকের দিনে নয়, সুদূর অতীতে যেমন ছিল, হয়তো দূর আগামীতেও দেখা যাবে। কবিতা কী দেয় কবিকে যে, তার এই গভীর আত্মনিগ্রহ? অথচ তার ভেতরেই নিজের চূড়ান্ত নির্বাণ দেখা? যেন কবিতার বাইরে তার কোনো আর পৃথিবী নেই, সুখ নেই, সুন্দর নেই, পূর্ণতা কিংবা গন্তব্য নেই? মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, আবুল হাসান, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শামীম কবিরÑ আমাদের সামনে এমন অজস্র নতুন ও পুরোনো উদাহরণ ছড়ানো, যারা কবিতার সঙ্গে পথ হাঁটতে গিয়ে ক্রমাগত নিজেকে নিঃশেষ কিংবা বিনাশ করেছেন। এখনো অনেকেই আমাদের অজান্তেই করে চলেছেন। তাদের অনেকেরই আজকের পৃথিবীর কাম্য বিত্ত, বিলাস, ভোগ, বৈভব সবকিছু অর্জনের বেশ সক্ষমতা ছিল কিংবা আছে। অথচ, কবিতার মতো কুহকিনী, দুঃখজাগানিয়ার সঙ্গে পথ হাঁটতে গিয়ে তারা অনেকেই কষ্ট-লাঞ্ছনা-দারিদ্র্যের পথকেই শ্রেয়তর ভেবেছেন। কিš' এই শ্রেয়বোধের সঙ্গে কি যাতনাও মিশে নেই? নইলে কেন কারুবাসনা উপন্যাসের নায়কের মুখে জীবনানন্দ দাশের নিজেরই এমনতর কাতর কণ্ঠস্বর শুনি, কারুবাসনা আমার জীবনকে বড়ো ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। ভোগের বাসনা নয়, কারু, অর্থাৎ শিল্প, কিংবা আমাদের আলোচ্য কবিতা-বাসনার জন্য কবির এই যে অন্তর্গত রক্তক্ষরণ আর দৈন্যতা- এ কি এক অনিঃশেষ দ্বৈরথ জীবন ও কবিতার? যদি এই আত্মত্যাগ, তবে কেন এই দৈন্য-গাথা, এই করুণ স্বীকারোক্তি? কোন বাসনা তাকে এমন ছিন্নভিন্ন করে, পার্থিব হিসাব-নিকাশের বাইরে নিয়ে যায়? তাকে কেন ঘরহীন, আত্মহীন করে? কেন করে? সে কি তার নিয়তি? একসময় মনে হতো, অমরত্বের বাসনা হয়তো এর প্রেরণা। এখন আর তা মনে হয় না। বরং কবির ভেতরে থাকে কবিতার এমন তীব্র বীজ, যে তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, তার ভেতরের জমিনে কবিতার শস্য রোপণ করে, শস্য ফলায়। কবিতা হয়তো কবিকে এমন এক কৃষকে পরিণত করে, যেখানে তার নিজের কবিতাজমিনের বাইরে যাওয়ার খুব বেশি পথ খোলা থাকে না। আর যদি কবি সেই জমি থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, অনেক সময়ই সে আর ফিরে আসতে পারে না, দু-এক পরম ভাগ্যবান ছাড়া। কারণ, কবিতা নিজেই যে এক অপার জমিন, এক জীবনে তার কতোটাই বা পাড়ি দেওয়া যায়? কিš' আজকের পৃথিবীতে আমাদের এই তেলাপোকা-জীবন, যা প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছে ক্ষুধা-তৃষ্ণা-প্রয়োজনের হাতে আর কেবলই পিছলে পিছলে যাচ্ছে, সে কেমন করে পথ হাঁটবে কবিতার মতো নির্জন বন্ধুর পথে? এই প্রশ্ন আমাকে বড়ো বিপন্ন করে তোলে। কোনো সদুত্তর পাই না। তবু মনে হয়, যতোই বন্ধুর হোক কবি ও কবিতার বন্ধুত্ব, পথ তবু এক দুজনের। কেননা, অনন্তের উৎসারিত বেদনা কাউকেই পৃথক হতে দেয় না। যদি তা পৃথক হয় তবে আর মানুষটি কবি থাকেন না। আর এই বেদনার ভেতর থেকেই তো জেগে ওঠে তাদের লাবণ্য পৃথিবী। এই পুঁজিপৃথিবী হয়তো দেবে না কবিকে শান্তি, কিন্তু কবি জানে বৈরী পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব রক্ষার মন্ত্র। কারণ, তার কবিতাও তো অনেকাংশে এই বৈরিতার বিরুদ্ধে টিকে থাকার অস্ত্র হিসেবেই কাজ করে। জীবনকে পাঠ করার, অনুভব ও আস্বাদ করা আর যে পৃথিবী তার আরাধ্য তাকে অর্জন করার যে অন্তর্গত বোধ ও পিপাসা তাও অনেক ক্ষেত্রে কবিতাই তার ভেতরে জাগিয়ে দেয়। তাই কবিতার সঙ্গে তার পথ হাঁটা হয়তো পৃথিবীর পরমায়ু পর্যন্ত ফুরোবে না। কিংবা, পৃথিবী বিনাশের আগে যদি তার অন্য কোনো সৌরলোকে যাওয়ার সুযোগ হয়, নিশ্চয়ই সে কবিতাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে। ===== ভোরের কাগজ / ২৩ মে ২০০৮ সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০০৮ সকাল ৮:৩৬
false
hm
(তীর)আন্দেজের বন্দী ১. আন্দেজের বন্দী নামে সুধাময় করের একটা বই বেরিয়েছিলো সেবা প্রকাশনী থেকে। সুধাময় কর কি রক্তমাংসের মানুষ, নাকি ছদ্মনাম, কে জানে, তবে বইটা বেশ গা ছমছমে। উরুগুয়ের কয়েকজন রাগবি খেলোয়াড় বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আন্দেজের চিলে অংশে আটকা পড়েন। কয়েকজন মারা যান দুর্ঘটনার সময়, কয়েকজন মারা যান শীতে, কয়েকজন মারা যান বরফধ্বসে। রেডিওতে তারা শুনতে পান, তাদের উদ্ধারের চেষ্টা বাতিল করা হয়েছে। হাতের কাছে খাবার বা জ্বালানি না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে মৃত সহযাত্রীদের খাওয়া শুরু করেন। তাদের মধ্যে দু'জন অবশেষে আন্দেজের দুর্গম পথ ধরে ১২ দিন হেঁটে অবশেষে সভ্য জগতের খোঁজ পান। বিস্তারিত জানতে উইকি মারুন। প্রায় কাছাকাছি পরিস্থিতিতে আমিও পড়েছিলাম এবার মিউনিখে গিয়ে। এ ধরনের কাহিনী বিস্তর লেখা হয়েছে। সেভেন ইয়ারস ইন টিবেট, বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন ... আমাদের বেলায় সেটা ছিলো আধ ঘন্টার মতো। এই দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী সহসচল মনিরোশেনের কুফাপাওয়ার। এটা ব্যক্তিআক্রমণের মধ্যে পড়ে কি না জানি না, মনির গোধূলি বেজায় অপয়া। সে সাথে থাকলে একটা না একটা দুর্ঘটনায় পড়তেই হয়। দাওয়াত ছিলো এক জায়গায়। সেখানে নাচ হবে, গান হবে, তারপর খাওয়াদাওয়া হবে। গিয়েছি শেষটার লোভে। নিজে রান্না করে খেলে মানুষ ছোঁচা হয়ে যায়, দাওয়াতের গন্ধ পেলেই গিয়ে হাজির হয়। আমিই বা ব্যতিক্রম হবো কেন? মনিরোশেন যদি সুদূর মানহাইম থেকে একবেলা ভালোমন্দ খাবার লোভে মিউনিখ এসে হাজির হতে পারে, আমার আর দোষ কী? তবে কুফা মনির গাড়িতে চড়েই শুধায় অন্য কথা, "তীরুদা, নাচবে কে?" তীরুদা গাড়ি চালাতে চালাতে বলেন, "রোহিণী।" কুফা মনির নাক কোঁচকায়, "শ্রীলঙ্কান নাকি?" তীরুদা বলেন, "শ্রীলঙ্কার হবে কেন? বাঙালি মেয়ে। কোলকাতা থেকে এসেছে।" মনির কথা না বাড়িয়ে ঠেলতে থাকে আমাকে, "ঐ সর, জায়গা দে।" আমি বিনাবাক্যব্যয়ে চেপেচুপে সরে জায়গা করে দিই। মনির ব্যাকপকেট থেকে মোটাসোটা একটা ব্যাগ থেকে চিরুনি আর পাউডার বের করে। তারপর তীরুদাকে বলে রিয়ার ভিউ মিররটা ঘুরিয়ে দিতে। তীরন্দাজ নিরীহ মানুষ, কিন্তু এরকম বেয়াড়া অনুরোধ শুনে তিনি ক্ষেপে আগুন হয়ে গেলেন। পরিস্থিতি সামলানোর জন্যে মনিরকে একটা ধমক দিই। মনির ঠাণ্ডা চোখে আমাকে আপাদমস্তক [মানে গাড়িতে বসে যতটা দেখা যায় আর কি] মেপে বলে, "থাউক! তুই পাশে থাকলে পাউডার মাখে কে! সবসময় আমার পাশে পাশে থাকবি।" কী আর বলবো। পাগলের সুখ মনে মনে। যাই হোক, বিস্তর হাঙ্গামার পর অনুরোধ আসে, গান গাইতে। সেই এক মাস আগে থেকেই ফ্রাউ পুতুল বলে রেখেছেন, হিমু, একটা গান কিন্তু গাইতেই হবে। না বলতে পারবেন না। না বলতে চাইওনি। কিন্তু পট করে সচল হাসিব উঠে দাঁড়ান। আমার দিকে একটা আঙুল তাক করে বলেন, "খাবাদার নড়বা না। আজকে আমি গান গামু।" বদ্দা প্রতিবাদ করে একটা কিছু বলতে চান, হাসিব তাকেও থামিয়ে দ্যান। "কোনো কথা না। আমি গান গামু।" এবার মুখ খোলে মনির। "হাছিব্বাই ... ।" এটুকু বলেই তাকে থেমে যেতে হয়। হাসিব তাকেও আঙুল তাক করে কী যেন বলেন গোঁ গোঁ করে। মনির থেমে যায়। হারমোনিয়াম বাজিয়ে হাসিব ভাই গান ধরেন তারপর। প্রিয় শিল্পী মমতাজের গান, বাড্ডা থানার ওসি আমার দুলাভাই ... ♪♫। এদিকে তীরুদা এসে আমাকে বলেন, "হিমু চলো রোহিণীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।" আমার লজ্জা লাগে। আমি একটু লাজুক তো। কেন রে বাবা? কী দরকার এই ক্ষণিকের আলাপের? একই প্রশ্ন তোলে মনিরও, কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন অ্যাঙ্গল থেকে। ফোঁস করে ওঠে সে, "ক্যান রোহানার লগে পরিচয় করায় দিবেন ক্যান?" আমি শুধরে দিই, "রোহানা নয়, রোহিণী।" মনির বিষাক্ত চোখে আমার দিকে তাকায়, তারপর কানে আঙুল দ্যায়। হাসিব তখন মাইকের সামনে তারস্বরে চেঁচাচ্ছেন। আশপাশের লোক গান শুনে বাকরুদ্ধ। তীরুদা বিরক্ত হয়ে বলেন, "থাক পরে পরিচয় করিয়ে দেবো। মনিরোশেন একটু তফাতে যাক ...।" মনির আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলে, "তু যাঁহা যাঁহা চলেগা মেরা সায়া সাথ হোওওগা ...!" আমি চুপচাপ বসে থাকি। দিনটাই খারাপ যাবে, বোঝা উচিত ছিলো আগেই। এরপর রোহিণী নাচতে আসে। দর্শকরা নিজেদের মধ্যে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছিলো হাসিব ভাইয়ের গান শুনে, রোহিণীর ধমক খেয়ে সবাই চুপ করে যায়। "অ্যাটেএএনশান!" রোহিণী কড়া বকা দেয়। "কেউ নড়বেন না, চড়বেন না, চোখের পাতি ফেলবেন না।" এই বলে সে নাচতে শুরু করে। কত্থক। রোহিণী আসলেই ভালো নাচে, তার ওপর নেচেছে শিবকে মাটিতে ফেলে তার ওপর দুর্গার প্রলয়নাচন। মনিরের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আধ বিঘা হাঁ করে নাচ দেখছে। তীরুদা এসে বলেন, "কামানের মতো বড় একটা ক্যামেরা নিয়া ঘুরো, দুয়েকটা ছবিটবি তুলে দাও না মেয়েটারে।" কী আর করা। উঠে যাই। রোহিণীর অনেকগুলি ছবি তুলি। রোহিণী টেনশনে পড়ে যায় আমার ছবি তোলার ভঙ্গি দেখে। আমার একটা মাত্র ওয়াইড অ্যাঙ্গল লেন্স সম্বল, সেটা দিয়ে তো আর মনিরোচিত ছবি তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু সবাই কি আর লেন্স দেখে তার গুণাগুণ বোঝে? রোহিণী নাচের মধ্যেই যতদূর সম্ভব একটু পর পর জামা ঠিকঠাক করে। নাচ শেষ হবার পর আমরা একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়াই, তীরুদা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলেন, "হিমু রোহিণী তোমাকে ডাকে।" মনির বলে, "আমিও যাবো, আমিও যাবো!" বিরক্ত লাগে, কিন্তু মনির হতভাগা আমাকে সোশ্যালাইজ করতে দেবে না পণ করেছে। তাকে সঙ্গে নিয়েই রোহিণীর কাছে যাই। মনির দরজা খুলেই নিজের নাম ঘোষণা করে। "আমি মনিরহো।" বেটা আবার ব্রাজিলের সাপোর্টার। রোহিণী বলে, কিন্তু হিমু কোথায়? মনিরের মুখটা কালো হয়ে যায়, আমি ঘরে ঢুকি। রোহিণীর সাথে পরিচিত হয়ে তাকে দেখাই আমার ক্যাননখানা। ছবির কিসিম দেখে রোহিণী আশ্বস্ত হয়। কিছু হুদা প্যাঁচালের পর তার কার্ডখানা আমাকে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, আপনার অবসরে আমাকে একটু পাঠিয়ে দেবেন ছবিগুলো। মনির হাঁ হাঁ করে তেড়ে আসে তখন। কী কী যেন বলতে চায়। রোহিণী চোখ পাকায়। আমি বাধ্য হয়ে রোহিণীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মনিরকে টেনে হিঁচড়ে বার করে নিয়াসি। সে ধ্বস্তাধ্বস্তি করে, বলে, ছাড় ছাড় আমারে, আলাপ বাকি আছে তো! মনিরকে টেনেটুনে এনে খেতে বসি আমরা। রান্না দারুণ হয়েছিলো, পদও অনেক, হুশহাশ করে খাই সবাই। হাসিব ভায়ের গান শুনে ক্ষুধা কিঞ্চিৎ নষ্ট হলেও রোহিণীর নাচ দেখে আবার ফিরে এসেছে। আর হাসিব লোকটা সেইরকম খেতে পারে। গরুর গোস্তো দিয়ে চপাচপ পোলাও খেতে খেতে বলে, হলের পাশে একটা নাইজেরিয়ান ক্লাব আছে, জানো? বলি, না। হাসিব চোখ বুঁজে খেতে খেতে বলেন, "আমার গান শেষে এক কাল্লুমামা হাজির। আমারে কার্ড দিয়া বলে, গুট গেজুঙ্গেন [ভালো গাওয়া হয়েছে], সামনে আমাদের একটা ট্র্যাডিশনাল রেইনড্যান্স আছে, তুমি আইবা নাকি?" আমি বললাম, আপনি কী বললেন? হাসিব বলেন, "বুঝতেসি না। তুমি কী বলো? গামু?" আমি উৎসাহ দিই। বলি, নিশ্চয়ই। আপনাকে দিয়েই হবে। হাসিব ভাই একটা উদগার তুলে আবার পাতে গরুর গোস্তো নিয়ে এসে বসেন। মনির গোগ্রাসে পোলাও খেতে খেতে আমাকে শুধু ফরমায়েশ করে চলে, এক্টু বোরহানি আইনা দে। এট্টু পানি আইনা দে। এই হাড্ডিটা ভাংতারি না চাবাইয়া এট্টু লড়ম কইরা দে। ইচ্ছা করে মনিরের পিঠে কীচকবধী কিল মারি একটা, কিন্তু থেমে যাই সময়মতো। খাওয়ার পর মনির আবার রোহিণীর সাথে আলাপ করতে যেতে চায়, তীরুদা তাকে ঠেকিয়ে দ্যান। "না ও এখন কারো সাথে কথা বলবে না। ভাগো।" মনির গজগজ করতে থাকে। একসময় অনুষ্ঠান শেষ হয়। আমরা আবার তীরুদার বাড়ি ফিরতে থাকি। গ্যারেজে গাড়ি থামার পর হাসিব দরজা খুলে সিঁড়ির দিকে হাঁটা দ্যান। বলি, ও হাছিব্বাই, হারমোনিয়ামটা ন্যান! হাসিব বলেন, আমার জ্বর, জানো না? তুমি নাও! স্কেল চেইঞ্জার হারমোনিয়াম, বহুত ভারি জিনিস। মনিরের ওজন হারমোনিয়ামের চে কম, বদ্দার হাতেও ভারি জিনিস, তীরুদার হাতে টুকটাক বাজারসদাই। কী আর করা, জগদ্দল ভারি জিনিসটা নিয়ে হাঁটা দিই। লিফটের সামনে গিয়ে আমরা সবাই ঢুকি, হাসিব এর মধ্যে ঠেলেঠুলে ঢুকে পড়েন। তীরুদা বলেন, হাসিব তুমি বরং পরে আসো, এই লিফটে চারজনের বেশি ধরে না। হাসিব বলেন, এগুলি সব সাম্রাজ্যবাদী জটিলতা। চারজনের জন্য ঠিকাছে, পাঁচজনের জন্য ঠিক্নাই। একটা কথা হইলো? তীরুদা যতই বোঝানোর চেষ্টা করেন, হাসিব ততই বক্তৃতা দ্যান। তীরুদা বলেন, তাহলে আমি পরে আসি তোমরা চার জন যাও। হাসিব তাতেও রাজি নন। শেষমেশ বাধ্য হয়ে তীরুদা লিফটের বোতাম চাপেন। আর সাড়ে তিনতলায় গিয়ে লিফটটা আটকে যায়। আমাদের গল্পের শুরুটাও সেখানে। ২. যে গল্পের শুরু এতো বড়, বুঝতেই পারছেন সেটা জলদি শেষ হয়ে যাবে। লিফট আটকে যেতেই হাসিব ভাই পাগলের মতো বোতাম টিপতে শুরু করলেন। "আরে উঠে না ক্যা? আটকায় গ্যালো ক্যা? আরে হায় হায় রে মলাম রে কী হপে রে!" তীরুদা কড়া ধমক লাগান, হাসিব তুমি থামবা! হাসিব ভাই ফোঁস ফোঁস কেঁদে ফেলেন। "অক্টোবরে আমার পানচিনি! ক্যা, আমি মরুম ক্যা? হোয়াই?" আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। এই অক্টোবরে? জানতাম না তো! তীরুদা ইমার্জেন্সি বোতামে চাপ দেন। একটা খড়খড়ে জার্মান কণ্ঠস্বর বলে, আপনেরা চুপচাপ থাকেন। গিয়ানজাম কইরেন না। একটু ধৈজ্জ ধরেন। সাহায্য কামিঙাপ। একই কথা ইংরেজিতেও বলে তারা। হাসিব ভাই বলেন, আসবে না। কোনো সাহায্য আসবে না। আমার এক গার্লফ্রেন্ড এইভাবে লিফটে আটকায় ছিলো ছয় মাস। ছয় মাস পর ওরা হাড্ডিগুলি বাইর কর্ছে! আমি এই অল্প বয়সে মরতে চাই না! আমরা আবারও মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। চল্লিশ-বেয়াল্লিশ বছর বয়সের একটা লোক এইভাবে কাঁদছে দেখে ভয় লাগে। বদ্দা বলে, ছয় মাস আমরা খামু কী? তীরুদা কড়া ঝাড়ি মারেন। আরে তোমরা থামলা? কীসব রাবিশ বলো? এক্ষণি সাহায্য আসবে। শান্ত হও। বদ্দা তীরুদার ব্যাগ হাতে নিয়ে বলে, বাহ চাইল ডাইল মাখন সবই আছে দেখি। পিয়াজ নাই। কাচামরিচ নাই। তারপরও চলে। তেহারির জন্য টাইমিংটাই আসল জিনিস। আমি বলি, গোস্তো পাবেন কই? বদ্দা কেমন যেন অদ্ভূত চোখে মনিরকে দ্যাখেন। আগাপাস্তলা। আমি হঠাৎ ভয় পেয়ে যাই। মনির দেয়ালে হেলান দিয়ে বলে, তীরুদা আমার খুব বাথ্রুম চাপ্সে। হাসিব ভাই তেড়ে আসেন, খাবাদার গন্ধ ছাড়বা না! মনির একটা আঙুল তুলে থামিয়ে দেয় হাসিব ভাইকে। "দ্যাখেন, তাজিমের সাথে কথা বলবেন। পান থেকে চুন খসলে কিন্তু এই লিফট কাঁপিয়ে দিবো!" বদ্দা আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলেন, লক্ষণ সুবিধার না। মনে হচ্ছে মনিরই প্রথম শহীদ হবে। গোস্তো নিয়া চিন্তা কইরো না। মনিরের গায়ে ত্যালচর্বি কম। গোস্তের স্বাদ খারাপ হবার কথা না। আমি খুবই ঘাবড়ে যাই। বদ্দা গলা খাঁকড়ে বলেন, ছয় মাস এই লিফটে আটক থাকতে হলে খাওয়া দাওয়া একটা বড় ইস্যু। তাছাড়া হাগামুতাও একটা ইস্যু হতে পারে। ঘুম একটা বড় সমস্যা হবে। এই ব্যাপারগুলি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তীরুদা আবার ইমার্জেন্সি বাটনে চাপেন। আবারও সেই বিদঘুটে মেসেজ। আইতাছি খাড়ান। লইড়েন চইড়েন না। হাসিব ভাই হাপুশ নয়নে বলেন, মেয়ে দেক্তে সুচিত্রা সেনের মতো! আর মাত্র তিনটা মাস! হে খোদা পরওয়ারদিগার, এ-ই ছিলো তোমার মনে! মনির জানতে চায়, শালি আছে? হাসিব ভাই চোখের পানি মুছে ধরা গলায় বলেন, আছে, ক্লাস এইটে পড়ে। মনিরের মুখটা আলো আলো হয়ে যায়। সে বলে, বেশি না, চার বছর। দেক্তে দেক্তে বড় হয়ে যাবে। বাহ। আলহামদুলিল্লাহ। সাবাশ হাছিব্বাই। বদ্দা বলেন, আমি প্রস্তাব করছি, খাবারের অভাব শুরু হলে প্রথমে মনিরকে কোতল করা হোক। হাসিব সাথে সাথে হাত তুলে ভোট দ্যান। তীরুদা এবার আবার ইমার্জেন্সি বাটনে চাপ দ্যান। এবার একটা অন্য কণ্ঠস্বর বলে, ছ্যাঙ চু শিয়াওয়ে? তীরুদা জার্মানে কড়া ঝাড়ি দ্যান। বলেন, আমরা অমুক ঠিকানায় লিফটের ভেতরে আটকা পড়েছি। এখানে বাতাস নেই। লিফটে আমরা পাঁচ জন, তার মধ্যে তিনজনের অবস্থা খুব খারাপ। মারামারি কাটাকাটি শুরু হয়ে যাবে। জলদি করেন। কিন্তু আবারও একই কথা শোনা যায়, ছ্যাঙ চু শিয়াওয়ে? এবার আশঙ্কায় আমার বুক কেঁপে ওঠে। আমি বলি, এটা কি চীনা ভাষা? তীরুদা বলেন, মনে হয় ক্রস কানেকশন। হ্যালো, হ্যালো? কিন্তু ভদ্রলোকের এক জবান, আবারও ভেসে আসে, ছ্যাঙ চু শিয়াওয়ে? কানেকশন কেটে যায়। আমি বলি, তীরুদা! লিফট কোম্পানি কাজটা চীনে আউটসোর্স করেনি তো? তীরুদা আচমকা চুপ মেরে যান। বদ্দা চুপ, মনিরও চুপ। হাসিব ভায়ের মুখটা কেন যেন একটু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বদ্দা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, খাইছে। চীন থিকা লোক আইসা উদ্ধার করতে করতে তো ব্যাপক খিদা লাইগা যাইবো। রান্নাপাতির একটা যোগাড় তো করতেই হবে। মনির বলে, একটু আগেই না খাইলেন গরুর গোস্তো দিয়া পোলাও? বদ্দা বলেন, "ঐটা আর পেটে কতক্ষণ টিকবে? কাইলকাই ধরো দুপুরের দিকে খিদা লাগবো। তোমার গোস্তো দিয়া তেহারি রানলে খারাপ হয় না।" মনির বলে, দোস্তো তুই চুপ ক্যা? একটা কিছু ক! আমি ক্যামেরা বার করে ছবি তুলতে থাকি। আন্দেজের বন্দীর কথাই মনে পড়ছিলো তখন। মনিরের গোস্তো খেতে কেমন হবে কে জানে? সবাই চুপ করে যায় আবার। আমি সবার ছবি তুলি। ছয় মাস পর বেরিয়ে সচলে পোস্টাবো। মিনিট পাঁচেক পরেই দরজায় ঘা পড়ে। সেই কণ্ঠস্বর শোনা যায়, ছ্যাঙ চু শিয়াওয়ে? এবার তীরুদা কেঁদে ফেলেন। জার্মান লিফট বিগড়েছে, তাকে কি আর চীনারা ম্যানেজ করতে পারবে? লিফট ছিঁড়ে নিচে পড়ে মৃত্যুই কি লেখা ছিলো কপালে? তীরুদার কান্না দেখে বদ্দাও কাঁদেন। বলেন, একটু পিয়াজ থাকলেই তেহারির টেস্টটা খুইলা যাইতো। আমি বলি, ভাগ্যিস কোনো আরোহিণী ছিলেন না আমাদের সাথে! মনির তেড়ে আসে, ঐ তুই আমার রোহিণীরে লয়া কী কস? বিরক্তই লাগে। লিফটের দেয়ালে জমা হওয়া আমাদের নিঃশ্বাসের বাষ্পে মনির লিখে রেখেছি. মনির + খুকু, সেটার ছবি তুলি। খুকু কে, তা কে জানে? এমন সময় দরজার বাইরে থেকে বিরাট এক চীনা বক্তৃতা বর্ষিত হয়। আমরা কিচ্ছু বুঝি না, বোকার মতো মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। হাসিব ঝট করে উঠে দাঁড়ান কেবল, তারপর আমাদের চমকে দিয়ে বলেন, উয়ে ছো চ্যান উশু ছিয়াং মা? দরজার ওপাশ থেকে একটা উল্লসিত জবাব ভেসে আসে। হাসিব ভাই বলেন, ও আমাদের ঠেলতে বলতেসে। তীরুদা হাত লাগান, ঠেলা দিলে দরজা খুলে যাবে। আমরা আধাআধি আটকায় গেছি। জলদি! তীরুদা অবাক হয়ে বলেন, তো ঠেলা দাও না কেন? হাসিব ভাই বলেন, আমার জ্বর। আপনি ঠ্যালেন। তীরুদা গজগজ করতে করতে দরজায় ঠেলা দেন। আমাদের অপার স্বস্তিতে ভাসিয়ে দিয়ে লিফট খুলে যায়, করিডোরের বাতাসকেই মনে হয় সাগরের তাজা হাওয়া। এক লিকলিকে চীনেম্যান সেখানে দাঁড়িয়ে, সে আমাদের দেখে হাসিমুখে বলে, ছ্যাঙ চু শিয়াওয়ে? তীরুদা হামাগুড়ি দিয়ে বের হন, তারপর বের হন বদ্দা। হাসিব ভাই বলেন, আমার জ্বর, আমারে টাইনা বাইর করতে হবে। মনির আর আমি পেছন থেকে ঠেলে, আর তীরন্দাজ আর বদ্দা সামনে থেকে টেনে হাসিবের কলেবর বার করি লিফটের ভেতর থেকে। মনির তিড়িং করে লাফিয়ে বেরিয়ে যায়। পেছনে পড়ে থাকি আমি আর সেই জগদ্দল হারমোনিয়াম। কী আর করা, দুটোকেই আমি বয়ে বার করি। কিস্মতে থাকলে কী আর করা? বিশেষ দ্রষ্টব্য, ছবি পরে যোগ করবো।
false
fe
রাষ্ট্রীয় অর্জনগুলোর দিকে তাকাতে হবে রাষ্ট্রীয় অর্জনগুলোর দিকে তাকাতে হবেফকির ইলিয়াস=============================================আমরা পারিনি অনেক কিছুই। কিন্তু যা পেরেছি, সেগুলোর দিকে কি তাকাচ্ছি উদার দৃষ্টি নিয়ে? বাংলাদেশে আরো অনেক ভালো কিছুই হতে পারত। পারেনি- কারণ একটি শক্তি দেশের মূল চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে খাটো করতে সচেষ্ট ছিল। এরা এখনো আছে। তারা চায়, একাত্তরের পরাজয়ের বদলা নিতে। তারা চায়, বাংলাদেশে অবস্থান করে সেই পাক তমদ্দুন বাঁচিয়ে রাখতে। ব্যক্তিগত সফরে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন। সেখানে একটি চক্র প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। এরা কারা? কি তাদের পূর্ব পরিচয়? আমার মনে পড়ে যখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যখন গোলাম আযমের বিচার চেয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণআদালত করেন- তখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও বিদেশে জোরালো বিক্ষোভ হয়েছিল। সেদিন এই পাক তমদ্দুনপন্থীদের আমরা মাঠে দেখিনি। কেন দেখিনি? তারা ওই ঘাতক-দালাল-রাজাকারদের দোসর বলেই এদের বিচার চায়নি। আচ্ছা, একজন খুনি-বুদ্ধিজীবী হত্যার পালের গোদার বিচার তারা চাইবে না কেন? কোন মুখে এরাই আবার ‘উন্নত বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখে?আমরা আবারো দেখেছি, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০১৪’ প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনে অঙ্গীকার রক্ষা করেছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও হয়নি। এছাড়াও বলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পুরোপুরি সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস প্রতিরোধে বৈশ্বিক জোটের অংশীদার না হলেও এদের মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার দরকারি সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়াও অর্থ পাচারসহ সন্ত্রাসীদের আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ এবং স্থল, সমুদ্র ও আকাশসীমা দিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রবেশ করতে না দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ এ সময়ে বিশ্বে একটি বড় ইস্যু। এই ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় ভূমিকা অবশ্যই দেখার মতো। মনে রাখতে হবে, দেশকে অস্থির করে তোলার জন্য একটি চক্র সবসময়ই সক্রিয় রয়েছে। এদের মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হচ্ছে সরকারকে। অতিস¤প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক একটি সভায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। বাংলাদেশে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এবং জাতীয় পতাকা ওঠানো হয় না, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও সবার প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করতে হবে। কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকার কথা বললেই পূর্ণ সত্য বলা হয় না, এতে অর্ধসত্য বলা হয়। আমাদের পূর্ণ সত্যের কথা বলতে হবে।’২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু একদিনে এত মানুষ আর কখনো নিহত হয়নি। এদিন প্রায় ৫ লাখ মানুষকে খুন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। দেশ এগিয়ে যেতে হলে মানুষকে বড় মন নিয়ে এগোতে হবে। তাই সত্য জানতে হবে। চর্চা করতে হবে সত্য ইতিহাসের। বাংলাদেশে যে কাজটি একাত্তরের পরাজিতরা করতে চাইছে, তা হলো মানুষের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়ানো। এই বিভ্রান্তবাদীদের প্রচেষ্টা বাংলাদেশে নতুন নয়। এরা বারবার হীন চেষ্টা করেছে। এখনো করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামকে নিয়ে তাদের যত গা-জ্বালা। কারণ তারা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল। বাংলার মানুষ তাদের হারিয়ে দিয়েছিল। সেই বেদনা তারা এখনো ভোলেনি। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা এলেই তারা নানা মিথ্যার বেসাতি ছড়ায়। নানাভাবে বলতে চায়, পাকিস্তানের অখণ্ডতাই ছিল শান্তির আবাসস্থল। কী সাংঘাতিক কথাবার্তা! এরা ইতিহাস বিকৃত করার জন্য নানা মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক, বানোয়াট তথ্য ও অনুমান হাজির করে। বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে চায়। শহীদদের পবিত্র রক্তের সঙ্গে বেইমানি করার ধৃষ্টতা দেখায়। খুব কৌশলে নানা কথা বলে। এসব রাজাকারের সৌভাগ্য, তারা এখনো বাংলার মাটিতে অবস্থান করে মিথ্যা অপপ্রচার করতে পারছে। এ দেশে কোনো রাজাকার নেই বলে বলে জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে! বাংলাদেশে মধ্যপন্থীদের প্রধান এবং শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে ডানপন্থী মৌলবাদীরা। কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা ‘মানবতা’, ‘আধ্যাত্মিকতা’ এবং ‘বিবর্তন’-এর লেবাস পরে মূলত ডানপন্থী মৌলবাদীর পক্ষে কাজ করে যান। তারা ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মপালন না করলেও আড়ালে-আবডালে ধর্মের ধ্বজা ধরে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াসী হন। এসব ‘আধুনিক চিন্তার’ ঝাণ্ডাধারীরা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে রাজাকার-আলবদরদের ইচ্ছাকেই বাঁচিয়ে রাখতে নানাভাবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। যারা একাত্তরে পরাজিত হয়েছিল তারা এখন প্রতিশোধ নিতে চাইছে অন্যভাবে। তারা এখন মাঠে নেমেছে বুদ্ধির বলিহারি নিয়ে। তারা বলছে, আমরাও স্বাধীনতা মানি। বিজয় মানি। কিন্তু একাত্তরে অমুকের ভূমিকা কি ছিল। তমুক কোথায় ছিলেন। অমুকের বাবা কি ছিলেন। ইত্যাদি অনেক কথা।বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। এই কবির গান কেন জাতীয় সঙ্গীত হবে- তা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছে বলছে। রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন। বাংলাদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। কথা দুটোই সত্য। কিন্তু সংস্কৃতির সঙ্গে, সাহিত্যের সঙ্গে, শিল্পের সঙ্গে ধর্মের যোগসাজশ কি? এর উত্তর খুব ঘুরিয়ে দেয় ঐ বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তরা। সন্দেহ নেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রজন্ম অগ্রসর হবে, তা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু অরাজনৈতিক এবং ভ্রান্ত রাজনীতিকদের পাল্লায় পড়ে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেবে তা তো হতে পারে না। তা সমাজের জন্য শুভও নয়। আমাদের চারদিকে এই যে অশুভের প্রভাব, সেটাই সমাজের জন্য তীব্র শঙ্কার কারণ হচ্ছে। ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ নিরুপায় হয়ে নিজেরাই নিজেদের দিচ্ছে পাহারা।আমরা যদি বাংলাদেশে মিডিয়ার উৎকর্ষতার কথা বলি, তাহলে দেখব, যেখানে একসময় একটি মাত্র টিভি চ্যানেল ‘বিটিভি’ ছিল, সেখানে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সংখ্যা এখন প্রায় দেড়ডজন কিংবা তারও বেশি। বেড়েছে ভারী পৃষ্ঠা সংখ্যা নিয়ে জাতীয় দৈনিকের আয়োজন। তারপরে ব্লুগ, ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, অনলাইন দৈনিক, অনলাইন মুক্ত ফোরাম ইত্যাদি আপডেট হচ্ছে তাৎক্ষণিক। প্রতি ঘণ্টার নিউজ, ব্রেকিং নিউজ দেশবাসী, বিশ্ববাসী বাঙালিকে জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের তাৎক্ষণিক সংবাদ। এ প্রসঙ্গে একটি কথা না বললেই নয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিষয়ভিত্তিক অনুসন্ধানী ধারাবাহিক যে রিপোর্টগুলো প্রচারিত হয়, তা রাষ্ট্রপক্ষের শাসকদের কতটা নজরে পড়ে? আর নজরে পড়লে এর বিহিত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় কিনা! কেন নেয়া হয় না?অন্যদিকে দেশে যে ভালো কাজগুলো হচ্ছে, এর কতটা উঠে আসছে আজকের মিডিয়ায়? সম্ভাবনার বাংলাদেশের যে ছবি- তা কতটা লিপিবদ্ধ করে রাখছেন আমাদের সংবাদকর্মীরা? আমরা জানি, দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে একটি শ্রেণি। সরকারদলীয় একজন এমপির পুত্র ফাঁকা গুলি করে দুজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। আর আমাদের অর্জনগুলো ¤øান করতে এরকম ঘটনাই কাজ করছে প্রতিদিন। এ দেশে দখলবাজি কারা করছে? গাছ কেটে বন উজাড় কারা করছে? নদী ভরাট করে পরিবেশ দূষিত কারা করছে? নদীর পানিতে বর্জ্য ফেলে পানি দূষণের মারাত্মক সংবাদ আমরা কাগজে দেখছি। এসব কাজ যারা করছে, তাদের হাত অনেক লম্বা। তারা রাষ্ট্রের উচ্চ শ্রেণির একটি শক্তির মদদপুষ্ট, তা না হলে এত সাহস এরা পায় কোথা থেকে? শান্তিপ্রিয় মানুষ আগ্রাসন আর দেখতে চায় না। বাংলাদেশে এখন একটি শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। যা গণতন্ত্রের ভিতকে নড়বড়ে তো করছেই। এর মধ্য দিয়েই চলছে ঘাতক-দালালদের বিচার।আবারো বলি, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এর জন্য সবাইকে শান্তির পক্ষে থাকতে হবে। আমাদের মনে আছে, স্বাধীনতার পর উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র্যপীড়িত ও ভঙ্গুর অর্থনীতির হাল ধরতে হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ শুধু দরিদ্রই ছিল না, দারিদ্র্য দূর করার যে হাতিয়ারগুলো দরকার তাও ছিল না। ছিল না অর্থ, অবকাঠামো বা দক্ষ জনশক্তি। তখন বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ, অর্ধাহার-অনাহার কবলিত, বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি দেশ হিসেবে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ভঙ্গুর ও নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে এর স্থায়িত্ব সম্পর্কে সন্দিহান ছিল অনেকেই। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বিদেশি সাহায্য নির্ভর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। নরওয়ের অর্থনীতিবিদ ফাল্যান্ড ও ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ পারকিন্সন বাংলাদেশকে বলেছিলেন ‘উন্নয়নের পরীক্ষাগার’। ১৯৭৬ সালে তাদের বই ‘বাংলাদেশ : স্টেট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট’- এ উল্লেখ করেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব হলে পৃথিবীর যে কোনো দেশের পক্ষেই উন্নয়ন সম্ভব। ২০০৭ সালে এরা তাদের মত থেকে সরে আসেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘তিন দশকের সীমিত ও বর্ণাঢ্য অগ্রগতির ভিত্তিতে মনে হয় বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।’ এখন বাংলাদেশকে উন্নয়ন পরীক্ষাগারের পরিবর্তে উন্নয়ন মডেল বলছেন।স¤প্রতি গোল্ডম্যান স্যাক্স সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে। এ দেশগুলোর অর্থনীতি এগিয়ে আসছে বলে এদের নাম দেয়া হয়েছে ‘নেক্সট ইলেভেন’। এই উদীয়মান ১১টি দেশের একটি বাংলাদেশ। সংস্থাটি বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেছে, দেশটির বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার বেশির ভাগই তরুণ। এদের মাধ্যমে দেশটির ভবিষ্যৎ বদলে দেয়া সম্ভব।জেপি মরগান ৫টি ফ্রন্টিয়ার অর্থনীতির নাম উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সব ধরনের সুযোগ বাংলাদেশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ নেক্সট ইলেভেন সম্মিলিতভাবে ইউরোপিয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। লন্ডনের জাতীয় দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ২০৫০ সালে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির বিচারে পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। তাছাড়া মুডি’স ও স্ট্যান্ডার্ড এন্ড পুওর’স গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশের সন্তোষজনক অর্থনৈতিক রেটিং দিচ্ছে। তাদের প্রক্ষেপণও সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের ইঙ্গিত করে। এসব পূর্বাভাস প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সামনে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। আমাদের এই সম্ভাবনার দিকে তাকাতে হবে। প্রজন্মকে সেই আলোকেই গড়ে তুলতে হবে। দেশে মানুষজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, মানুষ হিসেবে বেঁচে-বর্তে থাকার পথও খুঁজতে হবে আন্তর্জাতিকতার নিরিখে।--------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৭ জুন ২০১৫ প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৮:১৯
false
rg
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রেজা ঘটক-এর বই!!! যারা গল্প পড়তে ভালোবাসেন তারা অমর একুশে গ্রন্থ মেলা থেকে গল্পের বই সংগ্রহ করতে পারেন। এ পর্যন্ত আমার পাঁচটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এবার সর্বশেষ মেলায় এসেছে আমার পঞ্চম গল্প সংকলন 'পঞ্চভূতেষু'। বইটি প্রকাশ করেছে ছায়াবীথি। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্টল নং ১০৪। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কবি আলফ্রেড খোকন। আমার চতুর্থ গল্প সংকলন 'ভূমিপুত্র'। প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। বইটির প্রচ্ছদ করেছে শিল্পী চারু পিন্টু। আমার তৃতীয় গল্প সংকলন 'সাধুসংঘ'। বইটি প্রকাশ করেছে আল-আমিন প্রকাশন। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্টল নং ৩০০। বইটির প্রচ্ছদ মাইকেল অ্যাঞ্জেলো'র দ্য মোসেস অবলম্বনে। বইটিতে মোট নয়টি গল্প। বইটি প্রকাশ করেছে আল-আমিন প্রকাশন। যারা সোহারায়ার্দি উদ্যানের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গল্প পড়তে চান তারা আমার 'সাধুসংঘ' বই থেকে 'গাল গল্পো গান উদ্যান অথবা সাধুসংঘ' গল্পটি পড়তে পারেন। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের অনেক না-জানা ইতিহাসের সঙ্গে গল্পে গল্পে নিশ্চিত নতুনভাবে পরিচিত হওয়া যাবে।'সাধুসংঘ' গল্প সংকলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এর সবগুলো গল্পই সাধুভাষায় লেখা। বইটির নয়টি গল্প নয়টি ভিন্ন প্রেক্ষিতে রচিত। 'একশো টাকার নোট বনাম নয়া ফিল্ম ডিরেক্টর' গল্পে যারা এখন ফিল্ম বানান, তাদের নানান বিড়ম্বনার খবর জানা যাবে। সেই সাথে জানা যাবে গল্পের ভেতরের গল্প। 'পং পং চু' গল্পে সূর্য গ্রহন নিয়ে কিছু মিথ নিয়ে নানান দেশে কিভাবে সূর্য গ্রহন পালন করা হয়, সেসব বিষয় উঠে এসেছে। 'জীনের বাদশাহ' গল্পে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতারকদের নতুন ফাঁদের খপ্পরে পড়ে কিভাবে সাধারণ নিরীহ মানুষ সর্বস্ব হারাচ্ছে, সেই গল্প জানা যাবে। 'সুরঙ্গ' গল্পটি একটি ব্যতিক্রমী গল্প। এই গল্পের প্রেক্ষিত ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অনেক মিথ নিয়ে এই গল্পটি পাঠককে গল্পের নতুন এক্সপারিমেন্টের সঙ্গে পরিচয় করাবে। 'পীর সাহেব ও তাঁহার কতিপয় মুরিদ' গল্পে ভণ্ডপীর ও তার সাগরেদের নিয়ে একটি অতি আধুনিক গল্প বলার চেষ্টা করেছি। 'কবরে বসবাস' গল্পটি একটি নিরীক্ষা ধর্মী গল্প। এই গল্পটি লেখার আগে আমি নিজে কিছুদিন বিকল্প কবরের মধ্যে ঘুমিয়েছি। পাঠক এই গল্পে নতুন গল্পবলার স্বাদ পাবেন। 'বেকার অপহরণ' গল্পটি সমসাময়িক সময়ের নির্ভেজাল গদ্য। এখানে বেকার যুবকদের কিভাবে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নানান ধান্দাবাজরা কৌশলে ব্যবহার করেন, সেই সত্য ঘটনার একটি সুস্পষ্ট বয়ান পাওয়া যাবে। 'বাসখি' গল্পটি একটি অদৃশ্য ভূতের গল্প। গল্পটি না পড়ে এর সম্পর্কে আগে কিছুই বলা যাবে না। কারণ, এই ভূত কেবল সাবালক মেয়েদের পিছু নেয়।আমার 'সাধুসংঘ' গল্পের বইটি সংগ্রহ করা যাবে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের আল-আমিন প্রকাশন থেকে। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল নং ৩০০। যারা নতুন গল্প পড়তে চান, ভিন্ন ধারার গল্প পড়তে চান, তাদের জন্য আমার গল্প। আমার দ্বিতীয় গল্প সংকলন 'সোনার কঙ্কাল'। বইটি প্রকাশ করেছে বিবর্তন। বইটি পাওয়া যাবে আল-আমিন প্রকাশনে। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্টল নং ৩০০। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ঝন্টু যোগী। আমার প্রথম গল্প সংকলন 'বুনো বলেশ্বরী'। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্টল নং ১১-১২। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার।এক নজরে আমার বইগুলো- 'পঞ্চভূতেষু' পাওয়া যাবে ছায়াবীথি-তে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্টল নং ১০৪। 'ভূমিপুত্র' পাওয়া যাবে অন্যপ্রকাশে, স্টল নং ১৯৭-২০০। 'বুনো বলেশ্বরী' পাওয়া যাবে পাঠসূত্রে, স্টল নং ১১-১২। 'মা', 'সাধুসংঘ', 'সোনার কঙ্কাল' ও 'শূন্য দশমিক শূন্য' পাওয়া যাবে আল-আমিন প্রকাশনে, স্টল নং ৩০০। 'গপ্পো টপ্পো না সত্যি' পাওয়া যাবে জয়তী পাবলিকেশান্সে, স্টল নং ২৫০-২৫১।
false
fe
প্ররোচনার বিরুদ্ধে চাই সংহতির ঐক্য প্ররোচনার বিরুদ্ধে চাই সংহতির ঐক্যফকির ইলিয়াস=====================================শ্রদ্ধেয় শওকত ওসমান সব সময়ই কথাটি বলতেন- ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা সবসময়ই মুক্তিযোদ্ধা নয়, কিন্তু একজন রাজাকার সব সময়ই রাজাকার।’ বাংলাদেশে চলমান সময়ে কিছু খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধারও চরম নৈতিক স্খলন ঘটেছে। যা হতবাক করেছে জাতিকে যদিও কিন্তু তারা অবাক হননি। একজন মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী তাদের মাঝে একজন। তিনি একাত্তরে যে রাজাকারের বিরুদ্ধে বীরদর্পে যুদ্ধ করেছিলেন- এখন তার কর্মকান্ড, লেখালেখি প্রকারান্তরে সেই রাজাকারদের পক্ষেই যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের দিকে তাকালে আমরা এ রকম অনেক উদাহরণই দেখি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর জন্ম হয়। সে দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মেজর (অব.) এম এ জলিল। তার নেতৃত্বে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্বপ্নে বিভোর হয়ে হাজার হাজার তরুণ আত্মাহুতি দেয়। সেই এম এ জলিল, পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক আদর্শ পাল্টে একটি ইসলামি দলে যোগদান করেন। ‘হিরো’ থেকে ‘জিরো’ হয়ে যান জলিল। বাংলাদেশের প্রজন্ম এবং ইতিহাস তাকে কেমনভাবে মনে রেখেছে তা সকলেরই জানা। একটি মহান আদর্শের বিপ্লব কখনো শেষ হয় না। আমরা যদি চেগুয়েভারার জীবনের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, চে দেশ থেকে দেশান্তরী হয়েছেন। বিপ্লবের বিজয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত আত্মবিসর্জন দিয়েছেন। তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আদর্শচ্যুত হননি। বলা যায় বাংলাদেশের কর্নেল তাহরের কথাও। একজন বীর, কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করতে পারেন নাÑ তাহের সে শিক্ষা এই জাতিকে দিয়ে গেছেন। তার রাজনীতি, তার আদর্শ গণমানুষের পক্ষে ছিল বলেই, তিনি মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করেছিলেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তারাও একটি নিবেদিত আদর্শ বুকে ধারণ করতেন। যার ফলে তাদের মৃত্যুভয় কখনই ছিল না। সাম্প্রতিককালে শ্রীলঙ্কার গেরিলা নেতা প্রভাকরণ, এর উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছেন। তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিকামী এই গেরিলা নেতা আদর্শচ্যুত হননি। বিশ্বের সমাজতন্ত্রের এখন দুঃসময়। তারপরও কিউবার ফিদেল ক্যাস্ত্রো কিংবা ভেনেজুয়েলার হুগো শ্যাভেজ এখনো যে ঝাণ্ডা তুলে দাঁড়িয়ে আছেন, তা তাদের আদর্শেরই উড্ডীন পতাকা। কারো তা ভালো না লাগতে পারে। ভিন্নমত থাকতে পারে কিন্তু ক্যাস্ত্রো-শ্যাভেজ এখনো এই বিশ্বের অনেক পরাক্রমশালীর চক্ষুশূল। এর কারণ তারা তাদের আদর্শের সঙ্গে আপোস করছেন না। ফিরে আসি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীই নয়, আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধাই এখন আদর্শচ্যুত। কাদের সিদ্দিকী বারবার বলেন, বিএনপি যদি জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তবে তার দল বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করবে। কী অরণ্যে রোদন! বেগম জিয়া মৌলবাদীদেরই বেশি পছন্দ করেন। এটা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত বিষয়। তারপরও কাদের সিদ্দিকী উলুবনে মুক্তা ছড়াচ্ছেন কেন? তিনি কি জানেন না, জামাত-বিএনপির গলার মনিহার! বাংলাদেশে কাদের সিদ্দিকীরা মূলত কোন মতবাদের পারপাস সার্ভ করছেন- তা এখন আর অস্পষ্ট নয়। তার কর্মকা-ের সকল ফসলই জামাত-জঙ্গিবাদীদের ঘরে উঠছে। যেমনটি এক সময়ের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদী সম্পাদক, কবি আল মাহমুদ করেছিলেন। আল মাহমুদের কবিতাকে বাংলা সাহিত্য থেকে খারিজ করা যাবে না ঠিকই কিন্তু পৌঢ় জীবনে ব্যক্তি আল মাহমুদ কোনো মৌলবাদী সংগঠনে যুক্ত না হয়েও পরোক্ষভাবে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের যে উপকার করেছেন- তা এই প্রজন্ম ঘৃণার সঙ্গেই স্মরণ করছে। এবং তা তারা ক্ষমাও করবে না। বাংলাদেশে চলমান গণজাগরণ আমাদের আবারো অনেক কিছু চিনিয়ে দিয়েছে। গেলো ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার গোটা দেশজুড়ে নব্য রাজাকাররা শহীদ মিনারে আক্রমণ করেছে। জাতীয় পাতাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। অবমাননা করেছে। আমরা টিভিতে খুব স্পষ্টভাবেই দেখেছি জুমার নামাজের সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গেই ওরা জঙ্গি কায়দায় দৌড়ে বেরিয়ে রাজপথ দখল করেছে। মোনাজাতে পর্যন্ত তারা অংশ নেয়নি। এই হচ্ছে তাদের ইসলামপ্রীতি। আমরা দেখেছি তরুণদের হাতে তারা পবিত্র আল কুরআন তুলে দিয়ে রাস্তায় নামিয়েছে। যাতে পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গেলে পবিত্র কুরআন শরিফকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কী জঘন্য তাদের মানসিকতা। আমাদের মনে আছে একাত্তর সালেও তারা ঠিক এমনটিই করেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধকে তারা ‘ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বলেছিল। শেষ দিকে এসে তারা বলেছিল, ‘ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। কিন্তু শেষ রক্ষা তাদের হয়নি। এটাই ইতিহাস। এটাই বাঙালি জাতির রক্তাক্ত অর্জন। কারণ বাঙালি জাতি গর্জে উঠলে তাদের আর দাবিয়ে রাখা যায় না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাত মার্চের ভাষণ শুনলে আমরা আবারো দেখবোÑ তিনি বলেছিলেন ‘রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ধর্মের প্রতি, মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল। আর ছিল বলেই বাংলাদেশ, বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। পরাজিত হয়েছিল খুনি-ধর্ষক হায়েনা চক্র। যারা এই ২০১৩ সালেও আবার সেই পুরোনো দোহাই দিয়ে বাংলাদেশ রক্তাক্ত করছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, তার সরকার মহানবী (সা.) এর বিরুদ্ধে কোনো কথাবার্তা মোটেই সহ্য করবে না। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যারা এসব বলতে চাইছে এবং যারা তা প্রচার করে সমাজকে উসকে দিতে চাইছে উভয় পক্ষই সমান দোষী। এবং আইনগত ব্যবস্থা উভয়ের বিরুদ্ধেই নেয়া হবে। দেশের তথ্যমন্ত্রী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও বলেছেন, ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার বরদাশত করা হবে না। তারপরও একটি চিহ্নিত মহল জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করতে চাইছে। ১৯৭১ সালে যেমন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীদের আক্রমণ করে হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় সাংবাদিকদের ওপর বিনা কারণে হামলা করা হয়েছে। ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছে সাংবাদিকদের রক্তে। দেশের মানুষ দেখেছেন পরাজিত রাজাকার শক্তির কালো হাতের কর্মকা-। যারা পতাকা পুড়িয়েছে, যারা শহীদ মিনার ভাঙচুর করেছে এরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশে যে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে, তাকে একটি মহল ‘প্যারালাল’ সরকার বলে চালাতে চাইছে। অপবাদ দিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। চারদলীয় জোটের ক্ষমতাকালীন ‘হাওয়া ভবন’ নামে সরকারের একটি প্যারালাল ছায়াশক্তি ছিল। যারা মূলত সরকার নিয়ন্ত্রণ করতো। কই, তখন তো এই জঙ্গি মদতদাতারা প্যারালাল সরকারের কথা তোলেনি। কেন তোলেনি? ধর্ম যে কোনো মানুষের জন্যই একটি সংবেদনশীল বিষয়। তাই বাংলাদেশে কারোই উচিত হবে না ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করে সমাজকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া। চলতি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রাজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান, সাবেক মন্ত্রী জননেতা তোফায়েল আহমেদ একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, জঙ্গিবাদীদের নিষিদ্ধ না করার পরও তারা জনসমক্ষে যে জঘন্য আচরণ করছে, নিষিদ্ধ করলেও তারা একই আচরণ করবে। অতএব পার্থক্য কোথায়? তাই শক্ত হাতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশে অনেক হাক্কানি আলেম সমাজ আছেন, যারা মওদুদিবাদী ঘৃণ্য রাজনীতির প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেন। এরা সকলেই যুদ্ধাপরাধী। মানবতাবিরোধী আলবদর-রাজাকারদের বিচার চান। সময় এসেছে তাদের সবাইকে এক কাতারে এনে ঐক্য গড়ে তোলার। যে ধর্মীয় ঐক্য ও চেতনার তোড়ে ভেসে যাবে মওদুদিপন্থীদের ভ্রান্ত মতবাদ। আমরা দেখছি, চরম জঙ্গিবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশ্নে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে ‘ডায়লগ’ করার আহ্বান জানাচ্ছেন কোনো কোনো মধ্যপন্থী মহল। তাদের সবিনয়ে বলি, বিএনপি কি কখনো জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে ঘৃণা করেছে? জন্মই যাদের সুবিধাবাদী রাজনীতির ওপর, তারা কি জঙ্গিবাদী দমনে সচেষ্ট হবে? জাতীয় পতাকা পোড়ানোর পরও শহীদ মিনার ভাঙচুরের পরও। বিএনপি নিন্দা জানিয়ে কোনো বিবৃতি দিয়েছে? না দেয়নি। তাহলে টকশোর নায়করা কার সঙ্গে ডায়লগের কথা বলছেন? দেশকে নারকীয় তা-বের দিকে ঠেলে দেয়ার প্ররোচনা আগামী দিনগুলোতে আরো বাড়তে পারে। জঙ্গিবাদীরা নিজেরাই মসজিদ, আল কুরআন, এর অবমাননা করে সমাজকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। তাই রাষ্ট্রবাসীকে খুব সাবধানে এগুতে হবে। একটি রাষ্ট্রের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে চাইলে, অনেক অপশক্তিকেই দমন করতে পারে। যেমনটি একাত্তরে বাঙালি জাতি করেছিল। আবারো বলি, প্রজন্মকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে খুবই ধৈর্যের সঙ্গে।---------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২ মার্চ ২০১৩
false
rg
বাংলাদেশে কে হবেন একজন অরবিন্দ কেজরিওয়াল!!! ভারতের চার প্রদেশে রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ধরাসাই। দিল্লী, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ় চার প্রদেশেই বিজেপি এগিয়ে। কিন্তু সেমি ফাইনালের এই ভোটের খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন নবাগত অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লী'র মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে হারিয়ে রাজনীতির ময়দানে অজ্ঞাতকুলশীল অরবিন্দ কেজরিওয়াল-ই সেরা খেলোয়ার। দিল্লী'র ৭০ আসনের রাজ্যসভায় বিজেপি পেয়েছে ৩২টি আসন, নবাগত অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নের্তৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি পেয়েছে ২৮টি আসন, কংগ্রেস পেয়েছে ৮টি আসন এবং অন্যরা পেয়েছে ২টি আসন। মধ্যপ্রদেশে ২৩০ আসনের রাজ্যসভায় বিজেপি পেয়েছে ১৬৫টি, কংগ্রেস ৫৮ ও অন্যান্য ৭টি আসন। রাজস্থানের ১৯৯ আসনের রাজ্যসভায় বিজেপি পেয়েছে ১৬২ আসন, কংগ্রেস ২১টি ও অন্যান্যরা ১৬টি আসন। আর ছত্তীসগঢ়ের ৯০ আসনের রাজ্যসভায় বিজেপি পেয়েছে ৪৯টি, কংগ্রেস ৩৯ ও অন্যরা ২টি আসন।দিল্লীতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্না হাজারি অনশন করেছিলেন। তখন গোটা বিশ্ব সেই চিত্র দেখেছিল। আন্না হাজারি'র সেই অনশন ছিল একটি নাগরিক উদ্যোগ। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাননি। সেই স্পিরিটকে সামনে নিয়ে তরুন ইনকাম ট্যাক্স অফিসার অরবিন্দ কেজরিওয়াল গঠন করলেন আম আদমি পার্টি। প্রতীক হিসেবে বেছে নিলেন ঝাড়ু। সেই ঝাড়ু প্রতীক নিয়ে তিনি কংগ্রেসে ২০০৮ সালের ৪৫ আসনকে টেনে নামালেন। কংগ্রেস এবার পেল মাত্র ৮টি আসন। খোদ দিল্লী'র মুখ্যমন্ত্রী শিলা দিক্ষীতকে হারিয়ে বাজিমাত করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কংগ্রেসের এই ফলাফলকে কটাক্ষ করে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী টুইট করেছেন, ‘বিজেপি একটা রাজ্যে যত আসন পেয়েছে, কংগ্রেস চারটি রাজ্য মিলে তত পায়নি!’আর আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে যাঁকে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিপক্ষ বলে মনে করা হচ্ছে, সেই রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে অরুণ জেটলির মন্তব্য করেছেন, 'এই ভোটের পরে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, নরেন্দ্র মোদী আর রাহুল গান্ধী'র কোনও তুলনাই হয় না।' নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে একদিকে বিজেপি চাঙ্গা হয়েছে। আরেক দিকে কংগ্রেসের ভোট ব্যাংকে হামলা করেছে নবাগত আম আদমি পার্টি। তাই কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী হারের দায় মাথায় নিয়ে বলেছেন, 'আমরা আম আদমি পার্টির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছি। তারা যে ভাবে আনকোরা লোককে প্রার্থী করেছে, ভবিষ্যতে আমরাও তা-ই করতে চাই।'দিল্লীতে না হয় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির উত্থানে কংগ্রেস বিজেপি'র কাছে ধরাসাই হল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে? মধ্যপ্রদেশে সারা বছর খোদ কংগ্রেসের দুই নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আর জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া'র মধ্যে চলেছে টানাপোড়েন। ভোটের পনেরো দিন আগে অবশ্য কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের নির্দেশে দু'জনে উপরে উপরে একটা ঐক্য দেখিয়েছেন। কিন্তু তত দিনে ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে গেছে দলের ভিত। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রদেশে পরপর তিন বার সরকার গড়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। গত বারের তুলনায় এবার বিজেপি ২২টি আসন বাড়িয়েছে।আর রাজস্থানে কংগ্রেসের দলীয় কোন্দল ছিল চরম পর্যায়ে। অশোক গহলৌতের পাঁচ বছরের শাসনের পরে কংগ্রেসের আসন ৯৫ থেকে কমে এবার হয়েছে মাত্র ২১। আর বিজেপি এক লাফে ৮৪টি আসন থেকে পৌঁছে গেছে ১৬২-তে। কংগ্রেস নেতা জনার্দন দ্বিবেদীর আক্ষেপ করে বলেছেন, '২০০৮-এর ভোটের পর থেকেই শুনে আসছি পরের বার রাজস্থানে আমরা ৫০টার বেশি আসন পাব না। তাহলে এই পাঁচ বছরে সেই বিপর্যয় সামাল দেওয়ার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন!'আর শিবরাত্রির সলতের মতো কংগ্রেসের আশা কেবল জেগেছিল ছত্তীসগঢ় নিয়ে। দিনভর সেখানে যেনো ঢেঁ-কুচকুচ খেলা! কখনও কংগ্রেস দু’টো আসনে এগিয়ে যাচ্ছে, তো খানিক পরেই তাদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে বিজেপি। দিনের শেষে কংগ্রেসের হতাশার ঘড়া পূর্ণ করে শেষ হাসিটা রমন সিংহই হেসেছেন। গত বারের তুলনায় একটা আসন কম জিতে বিজেপি-র আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯। আর কংগ্রেস পেয়েছে ৩৯টি আসন। চার প্রদেশে খেলার ফলাফল বিজেপি ৪ কংগ্রেস ০। আর এই ফলাফলের ম্যান অব দ্য ম্যাচ আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল কংগ্রেস-বিজেপিকে সতর্ক করে বলেছেন, 'দুর্নীতি যে মানুষ আর সহ্য করবে না, সেটা দুই দলের নেতাদেরই বোঝা দরকার। তা না হলে ক্রমশ অন্যত্রও তারা মুছে যাবে।'ভারতের রাজ্যসভার এই ভোটে কংগ্রেসের এমন হারের আসল কারণ কি দুর্নীতি? অনেকে বলছেন এটা কংগ্রেসের নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতির একটা ফল। আন্না হাজারি সবাইকে সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি'র বিরুদ্ধে অনশন করে। কেউ বলছেন কংগ্রেসের পঙ্গু প্রশাসনের কারণেই এই ফল। কেউ বলছেন, সোনিয়া গান্ধী ভারতে যে জনমোহিনী অর্থনীতির মডেল খাড়া করেছেন তাতে শুধু ভারতের কাহিনীই দুর্বল হয়নি, বরং একই সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়েছে কংগ্রেসও। দেশের যে কয়টি রাজ্য সোনিয়ার গান্ধী তাঁর প্রিয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছিলেন, দিল্লি ছিল তাদের অন্যতম। গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও সবার আগে চালু হয়েছিল এই রাজ্যে। খাদ্যশস্য থেকে মাগনা ওষুধ দেওয়া পর্যন্ত রাজস্থানে সামাজিক সুরক্ষা খাতে জলের মতো টাকা খরচ করেছেন অশোক গহলৌতের সরকার। তার পরেও কেন এই বিপর্যয়? খোদ সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, 'রাজস্থানে এত জনকল্যাণ কর্মসূচি সত্ত্বেও কেন হার হল ভেবে দেখতে হবে।' কংগ্রেসের একাংশের ব্যাখ্যা অবশ্য এরকম, এই ফলের মধ্যে দিয়ে জনগণ বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা খয়রাতি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে রাজি নন। বাঁচতে চান সম্মান নিয়ে। ওদিকে কংগ্রেস মহলের এই মনোভাব উস্কে দিতে শরিক নেতা ওমর আবদুল্লাহ টুইট করেছেন, 'শেষ মুহূর্তে জনমোহিনী প্রকল্পের ঘুষ দিয়ে ভোটে জেতা যায় না।'কিন্তু শুধু কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুললে বিজেপিকে কি ছাড় দেওয়া যায়? দান-খয়রাতিতে বিজেপি-শাসিত দুই রাজ্য মোটেই কম যায়নি। মধ্যপ্রদেশে ১ টাকা কেজি দরে গম বিলিয়েছেন শিবরাজ। তাহলে তাদের ভাল ফলের কারণ কী? সেটা কি নরেন্দ্র মোদীর প্রভাব? অরুণ জেটলির দাবি, 'মোদী ম্যাজিক অবশ্যই কাজ করেছে। গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণা করার পর থেকেই দলীয় কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনার জোয়ার এসেছে। সেই উদ্দীপনাই এই জয় আনল।' কিন্তু সেই যুক্তি আবার মানছেন না অনেকেই। চার রাজ্যের ফলাফলের সার্বিক ছবিটা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট না-হলেও তাঁদের মতে জনগণের মানসিকতা যতোটা না বিজেপি-পন্থী, তার থেকে অনেক বেশি কংগ্রেস-বিরোধী বলেই ভোটের এই ফল। শেষ পর্যন্ত ভোট কার বাক্সে গেল সেটা মূলত নির্ভর করেছে দু’টি বিষয়ের উপরে। প্রথমত স্থানীয় নেতৃত্বের শক্তি। দ্বিতীয়ত বিকল্পের উপস্থিতি। কংগ্রেসের ক্ষেত্রে প্রায় সর্বত্রই স্থানীয় নেতৃত্ব ছিল তুলনামূলকভাবে দুর্বল। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিজেপি এই দুর্বলতার কড়ায়গণ্ডায় সুযোগ নিয়েছে। সেই সঙ্গে বিকল্পের অভাবও সুবিধা করে দিয়েছে বিজেপিকে। কিন্তু দিল্লিতে আম আদমি পার্টি সামনে থাকায় বিজেপি ততোটা ভাল ফল করতে পারেনি। এই বিশ্লেষণের সূত্র ধরে রাজনৈতিক ভাস্যকাররা বলছেন, আগামী লোকসভা ভোটে হিন্দি বলয়ে বিজেপি-র যাত্রা হয়তো মোটেও মসৃণ হবে না। কিন্তু বিজেপি নেতারা সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, প্রথমত আগামী কয়েক মাসে কংগ্রেসের অবস্থা আরও খারাপ হবে। দ্বিতীয়ত, অন্যত্র দল বিস্তারের চেষ্টা করব বললেও দিল্লির বাইরে আম আদমি পার্টি কোনও প্রভাবই ফেলতে পারবে না। আর এই অঙ্ক থেকেই নরেন্দ্র মোদীর দিল্লিযাত্রা ক্রমশ নিষ্কণ্টক হচ্ছে বলেই তাঁদের দাবি। ওদিকে নরেন্দ্র মোদীর যাত্রাভঙ্গ করতে এই হারের দিন থেকেই উঠেপড়ে লাগার অঙ্গীকার করেছে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধী বলেছেন, 'এবার আমরা যুবসমাজকে এমন ভাবে কাজে লাগাব যে আপনারা চিন্তাই করতে পারবেন না।' আর স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, 'এবার কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।' আসল কথা হল, সেমিফাইনালে হেরে কংগ্রেস নেতারা বলছেন, আর ছায়াযুদ্ধ নয়, ফাইনালে বাঁচতে গেলে মোদীর সঙ্গে লড়তে হবে সামনাসামনি। ভারতের রাজ্যসভা নির্বাচনের এই ফলাফল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে নির্বাচনী এই হাওয়া কতোটা ঘুরবে? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কি আগামী দশম সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের মত গো হারা হারবে? অবশ্য তার আগে বিএনপিকে ভোটযুদ্ধে নামতে হবে। নামতে হবে শক্ত করে আটগাঁট বেঁধে। সিটি করপোরেশানের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপি'র প্রার্থীদের কাছে গো হারা হেরেছিল। যদি বাংলাদেশের চারটি সিটি করপোরেশানের নির্বাচনের সঙ্গে ভারতের চারটি রাজ্যসভার নির্বাচনী ফলাফল তুলনা করা হয়, দেখা যাবে বাংলাদেশে যেমন আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটেছে সিটি করপোরেশানে তেমনি ভারতে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটেছে। আওয়ামী লীগ আর কংগ্রেস উভয় দেশেই ক্ষমতাশীন দল। উভয় দলেরই সেমি ফাইনালের ভোটযুদ্ধে পরাজয় ঘটেছে। আবার বাংলাদেশে যেমন হেফাজতে ইসলামের মত একটি নবাগত রাজনৈতিক শক্তি সেই ভোটযুদ্ধে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে, তেমনি ভারতে আম আদমি পার্টি একই ধরনের ভূমিকা পালন করেছে। উভয় দেশেই এই দুটি গোষ্ঠী নবাগত। ভারতে বিজেপি চরম ধর্মীয় উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল হলেও রাজ্যসভার ভোটে কংগ্রেসকে তারা হারিয়েছে এবং চারটি প্রদেশেই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি। এদিকে বাংলাদেশে বিএনপি'র ধর্মীয় উগ্রবাদী জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের মত দলগুলো রাজনৈতিক মিত্র হওয়ায়, ভোটের সুরসুরিটা সেদিকে যাবার নানান ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। ভারতে সোনিয়া গান্ধী'র কংগ্রেস জনমোহিনী অর্থনীতির যে মডেল খাড়া করেছেন তেমনি বাংলাদেশে একই ধারায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ মডেল খাড়া করেছেন। কিন্তু উভয় মডেল কতোটা সাধারণ মানুষের উপকার করতে পেরেছে তা ভোটের ফলাফলে কিছুটা পূর্বাভাষ দিচ্ছে। উভয় দেশে সাধারণ মানুষ খয়রাতি সাহায্যের চেয়ে সম্মানকে বেশি মূল্যায়ন করেছে। যদি আগামী দশম সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করে তাহলে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের উদ্বিগ্ন হবার মত অনেক জটিল সমীকরণ এখন আরো সামনে আসছে। ক্ষমতাশীন দল কতোটা দুর্নীতি করলো আর কতোটা উন্নয়ন করলো সেই তুলনামূলক চিত্র যতোই সবার সামনে বিল বোর্ড আকারে ঝুলিয়ে রাখা হোক, মানুষ যে পরিবর্তনের নেশায় ছোটে আর ভোটের ফলাফলে যে তার সুস্পষ্ট ছাপ পড়বে এটাই আসল কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমাদের রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের সেই মনের কথাটি পড়তে পারেন না। যে কারণে বিএনপিকে যে কোনো মূল্যে নির্বাচনী যুদ্ধে বাইরে রেখেই আওয়ামী লীগ তরিঘরি করে নির্বাচনটা শেষ করতে চাইছে। বিএনপি'র উচিত হবে লেভেল প্লেয়িং মাঠের ভরসা না করে সাধারণ মানুষের আস্থাকে পুঁজি করে সহিংস আন্দোলনের পথ পরিহার করে দশম সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহন করা। তাতে সেই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং শেখ হাসিনা থাকলে বরং তাদের নির্বাচনী মাঠে বক্তৃতা দিতে আরো সুবিধা হবে। আর আওয়ামী লীগ যদি সত্যি সত্যি দেশের উন্নয়ন করে থাকে তাহলে জনগণের প্রতি তাদের আস্থা রেখেই সর্বদলীয় নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করতে হবে। নইলে একদলীয় নির্বাচন সাধারণ মানুষের কাছে যেমন গ্রহনযোগ্য হবে না, তেমনি সেই নির্বাচনী ফলাফল দিয়ে নতুন সরকারও টেকসই হবে না। সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার সদিচ্ছা যদি সত্যি সত্যিই আওয়ামী লীগের থেকে থাকে তাহলে বিএনপিকে ভোটের যুদ্ধে নিয়ে আসাটা এখন খুব জরুরী। সেজন্য বিদেশী চাটুকারদের যতোটা এড়িয়ে সেই কাজটি করা সম্ভব হবে, ততোই সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থাবান হবে বলেই আমার ধারণা। সেক্ষেত্রে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যদি হুট করে যেমন বঙ্গভবনে যান তেমনি হুট করেই সবকিছু ভুলে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসায় চলে যান, একটা কথাই বলতে যে, আসেন একসঙ্গে ভোটযুদ্ধ করি। অতীত নিয়ে আমরা আর কোনো গলাবাজী করব না। তাহলে দেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। আমরা শেখ হাসিনার সেই শুভবুদ্ধির দিকে তাকিয়ে আছি। নিশা দেশাই, সঞ্জিতা সিংহ, অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো, বান কি মুন নয়, সেই কাজটি স্বয়ং শেখ হাসিনাকেই করতে হবে। আমরা সেই সুদিনের আশায় নতুন ভোরের অপেক্ষায় থাকতে চাই।
false
rn
আমাদের শহর ঢাকা কোলকাতা ইংরেজ আমলের শহর। ইংরেজরাই এ শহর গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে ঢাকা মোঘলদের তৈরি করা শহর।৭০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলটিতে শহর গড়ে ওঠে।কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।মুঘল সাম্রাজ্যের বেশ কিছু সময় ঢাকা সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত ছিলো।মুঘল-পূর্বযুগের পুরাতাত্তি্বক নির্দশন হিসেবে ঢাকা শহরে দুটি এবং মিরপুরে একটি মসজিদ রয়েছে।বুড়িগঙ্গা ও এর উৎস নদী ধলেশ্বরী অন্যান্য বড় বড় নদীর মাধ্যমে বাংলার প্রায় সবকনটি জেলার সঙ্গে ঢাকার সংযোগ স্থাপন করেছে।বিখ্যাত ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবি বলেছিলেন, শহরকে কেউ হত্যা করে না। শহর নিজেই আত্মহননে ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা মনে রাখি না সিন্ধু সভ্যতার মহেনজোদাড়ো নগরী ছেড়ে মানুষ কেন চলে গিয়েছিল। রোমান নগরী ধ্বংসের একমাত্র কারণ শুধু ভূমিকম্প নয়, লাগামহীন ভোগ ও স্বেচ্ছাচারও বটে। এই প্রাচীন শহরটির রাস্তাগুলো খুব সরু হওয়াতে রিকশা এখানকার প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া যান্ত্রিক বাহনগুলোর মধ্যে বাস, টেম্পো, সি.এন.জি. চালিত অটোরিকশা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক অঞ্চল হওয়ায় মালপত্র আনা-নেয়ার জন্য গভীর রাতে পুরান ঢাকা'র সড়কগুলো ট্রাকের দখলে চলে যায়। ঢাকাইয়া লোকেরা চালাক-চতুর, কিন্তু ব্যবহারে খুবই অমায়িক হয়ে থাকেন। অতিথিদের আপ্যায়ন বা খাতিরদারীতে ঢাকা'র লোকেরা দেশে সর্বশ্রেষ্ঠ।প্রায় প্রতিটি মহল্লায় একটি অথবা দু'টি করে মসজিদ রয়েছে। এর কারণেই ঢাকাকে 'মসজিদের নগরী' বলা হয়ে থাকে। ঢাকার অন্যতম প্রাচীন বাজার হলো চক', মূর্শিদ আলি খান প্রায় ২০০ গজ আয়তনের এই চৌকোনা বাজার টি স্থাপন করেছিলেন! সেই সময়ে নগরীর এই অঞ্চলটাকে বলা হতো পুরানা নেকাউস! নেকাউস বা নাখাস শব্দের অর্থ হলো দাস! তাহলে ধরে নেয়া যায় মোঘল আমলে এই "চক", দাস বিক্রীর কেন্দ্র হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেছিল!৪০০ বছর কেটে যাওয়া ঢাকার ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পকরা বুঝতেই পারছেন না, আগামী ৪০০ বছর নয় সামনের দশ বছরের ভবিষ্যদ্বাণী করাও অসম্ভব।ঢাকা শহরে যে অবকাঠামোর ওপর দাড়িয়ে আছে তাতে সহসাই পরিবর্তন ঘটানো প্রায় অসম্ভব। অতএব শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন সেক্টরগুলোকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপন না করলে কোনোভাবেই ৪০/৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যাবে না।মিরপুর ঢাকা শহরের একটি থানা। এর উত্তরে পল্লবী থানা, দক্ষিণে মোহাম্মদপুর থানা, পূর্বে কাফরুল ও পল্লবী থানার একাংশ।প্রায় ১,২০,৩২৯ টি বসতবাড়ি নিয়ে সমগ্র মিরপুরের আয়তন ৫৮.৬৬ বর্গ কিলোমিটার। মিরপুর এ কাজীপাড়া,শেওড়াপাড়া,সেনপাড়া ও সেকশন ১,২,৬,৭,১০,১১,পল্লবী,১২,১৩ রয়েছে।ঢাকার প্রচীন উঁচুভূমি বলতে বুঝায় মীরপুর চিড়িয়াখানার উঁচু ভূমি ও সেনপাড়া পর্বতা থেকে পূর্ব-দক্ষিণে কাঁঠালবাগান পর্যন্ত উঁচু ভূমি, লালমাটিয়ার উঁচু ভূমি এবং লালবাগ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত উঁচু থেকে ক্রমশ ঢালু নিম্নভূমি অঞ্চল।ঢাকা আরিচা রুটে বলিয়ারপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তীব্র যানজট পরিলক্ষিত হচ্ছে। তীব্র গ্যাস সংকটের ঢ‍াকা নগরীতে প্রতিদিন অপচয় হচ্ছে গ্যাস ও তেল।গিজগিজ করা মানুষের ভিড়ে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে আসলেই একটু একান্ত, নিভৃতে কথা বলাটা কঠিন।স্যাটেলাইট শহর বা উপশহর বলতে একটি বড় মেট্রোপলিটান শহরের কাছাকাছি এমন একটি শহর বোঝায় যা সেই শহরের অধিবাসীদের জীবন যাপনের জন্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজ যেমনঃ চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বাজার, খেলাধুলা ইত্যাদির জন্যে সেই মেট্রোপলিটান শহরের উপর নির্ভর করবে না। চামড়া শিল্প হলো বাংলাদেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প। বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান চামড়া প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটি পুরান ঢাকা'র হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত।ইসলামপুর হলো থান কাপড়ের বৃহত্তম বিপণন অঞ্চল।ঢাকেশ্বরী ঢাকার মন্দিরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো।ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়েও নানা কিংবদন্তি আছে। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, ঢাকেশ্বরী ঢাকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তাঁর নামানুসারেই এ শহরের নাম ঢাকা হয়েছে। ঐতিহাসিক ব্রাডলি বার্ট গত শতকের প্রথমাংশে লেখা তাঁর প্রাচ্যের রহস্য নগরী বইতে উল্লেখ করেছেন, ‘মন্দিরটি ২০০ বছরের পুরোনো এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক হিন্দু এজেন্ট বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।’ তবে মুনতাসীর মামুন তাঁর ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইতে বলেছেন, এসব মত বিশ্বাসযোগ্য নয়। স্যার চার্লস ড'য়লী ১৮০৮ সালে ঢাকার কালেক্টর হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, বাংলাদেশে তিনি ছিলনে ১৮১৮ সাল পর্যন্ত। রাজনৈতিক, সামরিক ও প্রশাসনিক সকল কাজের কেন্দ্র হিসাবে কোলকাতার উথ্থান আর ঢাকার পতন একই সুত্রে গাঁথা। রোমান্টিক শিল্পী ড'য়েলী আকাঁয় অবশ্য দেখা যায় তৎকালীন ঢাকা শহরে সুরম্য অট্টালিকার চাইতে মাটি, খড়, বাঁশ কিংবা ঘাস জাতীয় দ্রব্যে বাননো কুড়েঘরের আধ্যিক ছিল বেশি। কথিত আছে, মাঝে মাঝেই আগুন লেগে মহল্লার পর মহল্লা এই সব খড়ের ঘর গুলো পুড়ে যেতো। "ঘরকাচি" মহলের লোকেরা ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে আগুন লাগিয়ে দিত ঘরে। "ঘরকাচি মহল" হলো খড়, বাঁশ, নলখাগড়া এই সব ঘরবাড়ি তৈরির জিনিসপত্রের দোকান, নিজেদের মালামাল বিক্রীর জন্য এরা মাঝে মাঝে এই কান্ড করতো!জীবনের নবচেতনা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা (১৯২১) ঐ অনুঘটকের ভূমিকার জন্যই প্রতিষ্ঠানটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ছাব্বিশ বছর পরেই ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আরো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে এবং ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলায় বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্টার যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, আমাদের এই নগরী হয়ে ওঠে তার অগ্নিগর্ভ মূল কেন্দ্র। এবং শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা এখন নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবধন্য রাজধানী শহর।বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম শহর ঢাকা এবং বিশ্বের ২৮তম জনবহুল শহর, আমাদের ঢাকা । প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় প্রায় ৪,০০,০০০ রিকসা চলাচল করার কারনে এটাকে বিশ্বে রিকসার রাজধানী ও বলা হয়।ফরাসী পর্যটক তাভের্নিয়া ১৬৬৬ খ্রী: ঢাকায় এসেছিলেন, তার যাত্রা বিবরনী তে তিনি লিখেছিলেন "ঢাকা থেকে দুই ক্রোশ বা চার মাইল দূরত্বে উত্তর পূর্ব দিকে থেকে প্রবাহিত লক্ষ্যা নদীর উভয় পাশে দুটি কামান সজ্জিত কেল্লা আছে। এরপরে আধ ক্রোশ ভাটিতে মীর জুমলা কতৃক নির্মিত একয়ি সেতু আছে, এরও আধ ক্রোশ ভাটিতে কদমতলী নদীর উপরে আরেকটি সুন্দর সেতু আছে, যার নাম পাগলার পুল!"ড'য়েলীর আকাঁয় ঢাকার দুটি সেতু আমারা দেখি, একটা পাগলার পুল, আরেকটা টংগী সেতু। যদিও সেই সময়ে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই ভাল ছিলনা, ছিলনা তেমন কোর রাস্তা ঘাট। সেই মোঘল আমলে মোহাম্মদ আজম আরমানিটোলায় হাতি ঘোড়া চলাচলের জন্য ইট বিছানো রাস্তা অল্প একটু তৈরি করেছিলেন। চলাচলের জন্য লোকজন ব্যবাহর করতো পালকি, নয়তো নৌকা আর বড়লোকেরা হাতি বা ঘোড়া! ১৮৬০ সালে বাকল্যান্ড বাঁধ তৈরির পরে কিছু রাস্তাঘাট বানানো হয়েছিল! শহরের মূল রাস্তা ছিল সাহেব বাজার থেকে নবাবপুর পর্যন্ত, এই রাস্তা ছিল ঝামা বিছানো! মেট্রোপলিটন নগরী বলে এখন আমরা যে ঢাকাকে চিনি সে ঢাকা অনেক আগে থেকেই হাজারো সঙ্কটের নির্দয় শিকারে পরিণত হয়েছে।বস্তুত ঢাকা শ্বাসকষ্টে ভুগছে এখন। এমনকি কাকের মতো পাখিও পালিয়েছে এ নগরী থেকে। নিসর্গ নয়, ঢাকার দিগন্ত বদলে দিয়েছে কিছু ইট-কাঠের স্তূপ। একুশ শতকে এসে শত শত বছরের প্রাচীন শহর একযোগে সব ধরনের দূষণের শিকার হয়েছে; বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ—সব।এ শহরে সন্ত্রাস, খুনখারাবি, জবরদখল এখন নৈমিত্তিক বিষয়। সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ও দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্যে। বাজে শহরের তালিকা উল্টো দিক থেকে দেখলে বাংলাদেশের রাজধানী দ্বিতীয়। অর্থাত্ ১৩৯তম স্থান দখল করেছে ঢাকা। অনুপযোগী শহরের আগের অবস্থানই ধরে রেখেছে ঢাকা। জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেকে হারাতে পেয়েছে শুধু। বসবাসের উপযোগী শহর হিসেবে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার নগরীকে আবার প্রথম স্থানে রেখেছেন আলোচ্য সংস্থার গবেষকরা।
false
mk
স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কথা তিন দিন আগেই বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের তিন দিন আগেই বলেছিলেন, তিনি স্বাধীনতার সমতুল্য ঘোষণা দেবেন।১৯৭১ সালের ৪ মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ও নিকট প্রাচ্য বিভাগের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ জে সিসকো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম পি রজার্সকে যে তথ্য স্মারক পাঠান, তাতে এ কথার উল্লেখ পাওয়া গেছে।এই দলিলটি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট খবর ছিল যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যখন বিশ্বকে মুজিবের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছিলেন, তখন আসলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছিলেন।এ বিষয়ে ৪ মার্চের ওই তথ্য স্মারকে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘ক্রমাগতভাবে রিপোর্ট আসছে যে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বাঙালি পুলিশকে নিরস্ত্র করছে। বিমানবাহিনী সীমিতভাবে হলেও শক্তি বৃদ্ধি করছে বলেও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যদিও এই খবর সমর্থিত নয়, তবে তা অনেক বাঙালির কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে।’উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন নীতিনির্ধারণ নিয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম পি রজার্সের সঙ্গে হেনরি কিসিঞ্জারের মতভিন্নতা দেখা দিয়েছিল। কিসিঞ্জার ২৫ মার্চের বর্বর হামলার নিন্দা জানাতে রজার্সের সহানুভূতিশীল মনোভাব অগ্রাহ্য করেছিলেন।মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রথম আলোর সংগ্রহ করা এই নথিতে (সরকারিভাবে অবমুক্ত কিন্তু অনলাইনে অপ্রকাশিত) বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে। ২০১২ সালে প্রথম আলো এই নথি সংগ্রহ করে। স্মারকে বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিবুর রহমান আজ ৩ মার্চে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক ১০ মার্চ ঢাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ নির্দিষ্টভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। ৩ মার্চে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন এবং ৭ মার্চে তাঁর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন।’মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্সকে আরও জানানো হয়, এটা অনুমেয় যে, মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে তা যতই ক্ষীণ হোক না কেন, এখনো পর্যন্ত কিছুটা যোগাযোগ বজায় রাখতে আগ্রহী রয়েছেন। কিন্তু তিনি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা ঘোষণায়ও চালিত হতে পারেন। আবার তিনি একটি মাঝামাঝি রাস্তাও খুঁজে বের করতে পারেন। ৩ মার্চ মুজিবুর রহমান বিদেশি সংবাদদাতাদের ‘অব দ্য রেকর্ড’ বলেছেন, তিনি রোববারে যে ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন, তা হবে স্বাধীনতার সমার্থক।রজার্সকে দেওয়া স্মারকে বলা হয়েছে, ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ মুজিবুর রহমান কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ওই আমন্ত্রণকে ‘নিষ্ঠুর কৌতুক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কারণ, ইয়াহিয়ার ওই আমন্ত্রণের পরে ‘নিরস্ত্র বেসামরিক ব্যক্তিদের ব্যাপকভিত্তিতে হত্যা করা হয়েছে’।তিনি তাঁর ৩ মার্চের ভাষণে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি না হওয়ার কারণে সরকারকে ট্যাক্স পরিশোধ না করতে বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে তিনি সাধারণ ধর্মঘট পালিত হওয়ার সময় রাস্তার ওপরে ব্যারিকেড এবং গর্ত খননেরও আহ্বান জানান। মুজিব লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ বন্ধেরও আবেদন জানান। এর একটা সুফল মিলেছে বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। ৪ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট চলাকালে ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতিশীল পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে হ্রাস’ অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে ঢাকার কনস্যুলেট জেনারেল রিপোর্ট করেছেন।মুজিব বিদেশি সংবাদদাতাদের কাছে আরও উল্লেখ করেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের উচিত হবে পৃথক সংবিধান তৈরি করা এবং তারপর কী ধরনের যোগসূত্র রক্ষা করা যায়, তা বিবেচনা করা।মুজিবের ওই অবস্থান সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া ও নিকট প্রাচ্য বিভাগের মূল্যায়নে বলা হয়, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ মুজিবের ওই অবস্থানের বিরোধিতা করতে পারে। কারণ, এ ধরনের প্রস্তাব রাখা হবে মুজিবের বর্ণিত স্বায়ত্তশাসনবাদী পদ্ধতির বাইরের বিষয়, আর পশ্চিম পাকিস্তান তো মুজিবের আগের প্রস্তাবই ইতিমধ্যে নাকচ করেছে। দুই সংবিধানের ওই ধারণা হবে স্বাধীনতার শামিল। যদিও এটা ভুট্টোর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কারণ “কমনওয়েলথের” পশ্চিম অংশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর অভিলাষ পূরণ হওয়ার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।’ দৈনিক প্রথম আলো, ২৫ মার্চ ২০১৫
false
ij
গল্প_ সাদা শৈত্য বিয়ের তিন মাস পরে সামান্য অজুহাতে মাসুদকে বকাঝকা করে তৃণা।মুহূর্তেই মাসুদের ফরসা মুখটা কেমন বিবর্ণ হয়ে যায়। ওই মুহূর্তটা জীবনেও ভুলবে না তৃণা-এরপর মাসুদের শরীর কেন যেন ভয়ানক শীতল হয়ে যায়।তৃণা ওর পাশে শুয়ে কাঁদে। হাত বাড়িয়ে ছুঁলে আঙুলের ডগায় ঠান্ডা লাগে .. সেই ঠান্ডা তৃণার সত্ত্বায় সঞ্চারিত হয় ...মাসুদ এমন স্পর্শকাতর কে জানত। মাসুদ কবি নয় চিত্রশিল্পী নয় এমনকী গায়কও নয়-সামান্য ব্যাঙ্কার; -তারপরও এমন স্পর্শকাতর ...সামান্য বকাঝকায় এমন শীতল হয়ে গেল! ভেবে ভেবে তৃণা দিশেহারা ...মাসুদ উনত্রিশ বছর সিগারেট না-টেনে থেকেছে । সদ্য সিগারেট ধরেছে ও। তৃণা বলতে পারে না- সিগারেটের ধোঁয়া আমার ভাল্ লাগে না। আজকাল ও মাসুদকে খুব ভয় করে ...সিগারেট খাওয়ার জন্য ওর ছোট ভাইকে খুব বকাঝকা করত। আশিক তারপরও ভুসভুস করে সিগারেট টানত ...একদিন কষে চড় লাগিয়েছিল আশিকের গালে... সিগারেট খাওয়ার জন্য বাবাকেও বকত তৃণা। (বাবার অত্যন্ত আদুরে মেয়ে বলেই বাবা হাসতেন, বলতেন না কিছু ...)যেন বাবাকে ভাইকে বকলে তৃণার খুব সুখ হয় ...এখন...সেই গোপন সুখই তৃণার সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ...সম্প্রতি মাসুদের অনিদ্রা রোগাও হয়েছে। তৃণা বলতে পারে না- ডাক্তার দেখাও । তৃণার কেমন ভয় - ভয় করে। আজকাল তৃণার কথাও অনেক কমে গেছে। ওকে কেমন দুঃখিনী দুঃখিনী দেখায় ...ওদের নতুন সংসারে অদ্ভূত এক নীরবতা নেমে এসেছে। আজকাল মাসুদের শরীর কেমন ভিজে ভিজে থাকে ...হিমশীতল হয়ে থাকে ...ঘরটাকে মনে হয় মফঃস্বলের বরফকল ... যেন ঘরের দেয়ালে মেঝেতে বিছানায় জানালায় শীতল স্বচ্ছ সাদা শৈত্য ছড়িয়ে আছে ...নিজের শরীরটাকেও মনে হয় বরফকল ...মাসুদের দেহযন্ত্রের প্রতিটি কল-কবজায়, অন্ত্রে-অন্ত্রে, শিরা-উপশিরায়, কোষে-কোষে কেবলি সাদা শৈত্যের শীতল বিস্তার ...সেই সাদা শৈত্য তৃণার জীবনেও ঢুকে যায় ...ওর বেঁচে থাকবার আকাঙ্খার ফুলটিও ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে ...
false
mk
বিএনপি নেতার মোসাদ কানেকশন কথায় কথায় ধর্মের দোহাই দিয়ে হরতাল, অবরোধ ডেকে অস্থিরতা সৃষ্টি করলেও বিএনপি ও ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গোপন সম্পর্কের ইস্যুতে পুরোপুরি চুপ হেফাজতসহ ২০ দল মদদপুষ্ট ইসলামী দলগুলো। সাধারণ ইসলামী দল, সংগঠন ও ইসলামী চিন্তাবিদরা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ককে ‘ইসলামের সঙ্গে দুশমনী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, তবে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ইসলামী দলের নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ইসলামের কথা বলে যারা একের পর এক ব্যক্তির ফাঁসির দাবি তুলছেন, ইসলামের শত্রু বলছেন, যাকে ইচ্ছে তাকে সেই হেফাজত নেতারা এখন চুপ। টেলিফোন করলে দু’একজন কথা বললেও বক্তব্য দিচ্ছেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।এদিকে হেফাজত-জামায়াতসহ বিএনপি সমর্থিত ইসলামী দলগুলোর এ কর্মকা-কে ইসলামের সঙ্গে দুশমনী অভিহিত করে বিভিন্ন ইসলামী দল ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, এরা আসলে ইসলামের নামে অপরাজনীতি করে, ব্যবসা করে। ওদের কাছে ইসলাম হচ্ছে অপরাজনীতির হাতিয়ার। মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বিএনপি যেমন ইসলামের সঙ্গে দুশমনী করেছে তেমনি এখন হেফাজত-জামায়াতীরা ইসলামের সঙ্গে দুশমনী করছেন। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, হেফাজত-জামায়াতীরা তখনই মাঠে নামে যখন বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের স্বার্থ রক্ষা হয়। ইসরাইলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে বিএনপিকে সতর্ক করার কথা জানিয়ে ঢাকায় ফিলিস্তিনী দূতাবাসের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ইউসুফ এস রামাদান সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশের কোন দল তা করলে তাদের জন্য ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ হবে। ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোন কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। এ বিষয়ে রামাদান বলেন, বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দল যদি ইসরাইলের কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি, দল কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তবে তা হবে তাদের রাজনৈতিক আত্মহত্যা। ইউসুফ এস রামাদান আরও বলেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আরেকজন নেতা আমার সাথে দেখা করে বলেছেন, ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই এবং ওই গোপন বৈঠকের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।বিএনপির এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি, ভবিষ্যতে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় সারির নেতাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ এ ধরনের ঘটনা তাদের জন্য ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনের সাথে আছে, তারা এ ধরনের কোন আঁতাত মেনে নেবে না। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে যারা বিএনপিকে সমর্থন করে তারাই তাদের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিতে পারে। তবে আসলামের বিষয়টি নিয়ে যেন ‘তিক্ততা’ আর না বাড়ে সে প্রত্যাশা করেছেন ফিলিস্তিনী এই কূটনীতিক।ইসরাইল ইস্যুতে সরকারের অবস্থানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা ফিলিস্তিনের সাথে আছে এবং ইসরাইলের সাথে কোন ধরনের আঁতাতের বিরুদ্ধে সরকার খুবই তৎপর। কারণ ইসরাইল শুধু ফিলিস্তিনের নয়, তারা বাংলাদেশরও শত্রু। ইসরাইল দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। ফিলিস্তিনী কূটনীতিকের এমন অবস্থাপের পর কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে দেশের কিছু ইসলামী দলের নেতারা। এক সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের অংশীদার ছিল ইসলামী ঐক্যজোট। ইসলামের সঙ্গে বিএনপির প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান, শরিকদের অবহেলাসহ নানা কারণে বিরোধে জড়িয়ে পরার পর চলতি বছর ৭ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত ছেড়ে যায় ইসলামী ঐক্যজোট।এ ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ এবার মাঠে সক্রিয় ইসরাইলের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিরুদ্ধে।বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে ইসলামী ঐক্যজোট ঢাকা মহানগর আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে নেতারা মোসাদ তথা ইসরাইলের অপতৎপরতা রুখে দিতে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইসলাম ও বিশ্বমুসলিম নির্মূলকামী অন্যতম প্রধান এবং চির শত্রু হচ্ছে অভিশপ্ত ইসরাইল। এই দেশের সঙ্গে কেউ সম্পর্ক রাখলে বাংলাদেশে কেউ ছাড় পাবে না। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, ১৯৪৮ সালে মোসাদের জন্মই হয়েছে বিশ্বকে ইসলামশূন্য করার জন্য। ইরাকে তারা আগুন জ্বালিয়েছে, ইয়েমেনে ও সিরিয়ায় যুদ্ধ বাঁধিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা চালাচ্ছে। কোরানের ভাষায়, তারা মুসলমানদের নিকৃষ্টতম শত্রু মোসাদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ইসরাইলের কোন ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে চলতে দেয়া যাবে না। কুরআনের ভাষায়, তারা মুসলমানদের নিকৃষ্টতম শত্রু।দলটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলাম ও বিশ্বমুসলিম নির্মূলকামী অন্যতম প্রধান এবং চিরশত্রু হচ্ছে অভিশপ্ত ইসরাইল। এই ইসরাইল চক্রের প্রধান কুশীলব হচ্ছে মোসাদ। এই শত্রুশক্তি যেমন মহানবীর (সা.) যুগে ছিল, তেমনি তার পূর্বেও ছিল। এখনও আছে। সে শত্রুপক্ষটি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অখ-তা, উন্নয়ন ও শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। তারা নির্মূল করতে চায় ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের। ইসলামী শক্তির বিভক্তি ও বিধ্বংসে এবং ইসলামবিরোধী যুদ্ধে তারা সর্বজাতের কাফের, মুশরিক, ফাসেক ও নাস্তিক-মুরতাদদের সঙ্গে কোয়ালিশনও গড়ে তুলেছে। এই অপশক্তির অপতৎপরতা বন্ধে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা একটি দলের রাজনৈতিক আত্মহত্যা মন্তব্য করে ইসলামী ঐক্যজোটের এ নেতা বলেন, মোসাদ ইসলামের চির শত্রু। মোসাদের সঙ্গে যারাই যোগাযোগ করবে, সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করবে তারাই রাজনৈতিক আত্মহত্যা করবে। সরকারের উচিত এসব অপশক্তিকে প্রতিহত করা। বিএনপিরও উচিত তদন্ত করে অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে ইহুদীদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ইসলামী ঐক্যজোট ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা যুবায়ের আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, সাংগঠনিক সচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইন, মাওলানা একেএম আশরাফুল হক, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ গাজী, মাওলানা আবুল খায়ের বিক্রমপুরী, মাওলানা কাজী আজিজুল হক প্রমুখ।ইসলামী ঐক্যজোট ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির কাছাকাছি থাকা অন্য কোন ইসলামী দল এখন পর্যন্ত বিএনপি-মোসাদ সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেনি। যে হেফাজত ইসলামের কথা বলে কথা কথায় হরতাল অবরোধ দিয়ে মাঠে নামে সেই উগ্রবাদী নেতারাও এখন বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষতি হবে এই ভেবে চুপ। দলটির পক্ষ থেকে আন্দোলন এমনি এ ঘটনার নিয়ে কোন কথা বলতেই রাজি নন হেফাজতের কেউ। কয়েক দফা চেষ্টা করে অবশ্য পাওয়া গেল হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হককে। তিনি বলছিলেন, ইহুদীদের সঙ্গে মুসলামনের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। বাংলাদেশের কোন ব্যক্তি যদি সম্পর্ক রাখে তবে সেটা হবে দেশের মুসমানদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু এখন হেফাজত চুপ কেন? এমন প্রশ্নে নিজেদের ‘অরাজনৈতিক’ দাবি করে হেফাজত নেতা বলেন, হেফাজত রাজনৈতিক সংগঠন নয়, তাই এ বিষয়ে কোন কর্মসূচী দেয়ার কারণ নেই। আমরা দেশবাসীকে বলব, সকল ইহুদী শক্তির কাজ থেকে দূরে থাকতে।এদিকে ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চললেও এখন পর্যন্ত জামায়াতের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। টেলিফোন করেও দলটির কোন নেতাকে পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন বলয়ে থাকা ইসরাইল হলো জামায়াতের বন্ধু। তারা এ নিয়ে কোন বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে এমনই সিদ্ধান্ত এসেছে। জামায়াত বিষয়টির দিকে সর্বক্ষণিক নজর রাখছে।কেবল জামায়াত নয়, ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনীতি করে বেড়ালেও বিএনপি-মোসাদের ইস্যুতে নীরব আছে ২০ দলের অন্যান্য নেতাও। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, ইসলামিক পার্টি বা অন্য কোন ইসলামী দলের নেতাদেরই কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জমিয়মের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা কৌশলী বক্তব্য দিয়ে বলেন, বিষয়টি প্রমাণিত নয় তাই তারা কথা বলেননি।বিএনপির-জামায়াত জোট ও তাদের সমর্থিতদের এমন অবস্থানে অবশ্য অবাক নন ইসলামী চিন্তাবিদরা। ওদের (বিএনপি-জামায়াত পন্থী ইসলামী দল) সঙ্গে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই-এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল এমপি বলছিলেন, এরা মুখে ইসলামের কথা বলে। বাস্তবে এরা ইসলামের শত্রুদের সঙ্গে সব সময় সম্পর্ক রেখে কাজ করে। ইসলামের স্বার্থ নয়, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে এরা কাজ করে।তরিকত ফেডারেশন মহাসচিব এম এ আউয়াল ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা ও বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত নানা ধরনের অগণতান্ত্রিক ও অস্বচ্ছ পথে সরকারপতনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগুনসন্ত্রাসের পাশাপাশি পেট্রোলবোমায় মানুষ মেরে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করেছে খালেদা জিয়াসহ তার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। ওই অপকর্মের ধারাবাহিকতায় দিল্লীতে মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে আসলাম চৌধুরী।তরিকত নেতা বলেন, মোসাদ প্রতিনিধির সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠককে হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। অপশক্তি ইসরায়েল আরববিশ্বসহ পুরো ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদার আন্দোলনকে ধ্বংস করার যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের হায়েনাসম্বলিত মুখ এখন বাংলাদেশের দিকে ফিরেছে। এই দেশকেও তারা ফিলিস্তিনের মতো ধ্বংস করতে চায়। আর বিএনপি জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হয়ে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।এদিকে হেফাজত-জামায়াতীদের চুপ থাকার বিষয়ে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগার ইমাম খতিব আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলছিলেন, ওই সব দলের চুপ থাকারই কথা। এরা তো আসলে ইসলামের নামে অপরাজনীতি করে, ব্যবসা করে। ওদের কাছে ইসলাম হচ্ছে অপরাজনীতির হাতিয়ার। মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বিএনপি যেমন ইসলামের সঙ্গে দুশমনী করেছে তেমনি এখন হেফাজত-জামায়াতীরা ইসলামের সঙ্গে দুশমনী করছেন। হেফাজত-জামায়াতীরা তখনই মাঠে নামে যখন বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের স্বার্থ রক্ষা হয়। এখন তারা কথা বলবে না, তাতে ইসলামের যতই ক্ষতি হোক। এটাই ওসব দলের চরিত্র। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩
false
mk
আইএসআই কানেকশন, ফাঁসছেন ফরহাদ মজহার! বিশিষ্ট কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স’র (আইএসআই) কানেকশন খোঁজে দেখছে দেশিয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে হাতে পৌঁছা কিছু কাগজপত্রের মাধ্যমে দেশিয় গোয়েন্দা সংস্থা অনেকটা নিশ্চিত, আইএসআইয়ের সঙ্গে ফরহাদ মজহারের যোগাযোগের বিষয়ে।অন্যদিকে পুলিশও ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে। গণমাধ্যমের ওপর হামলা চালানোর উসকানি দেয়ার অভিযোগে লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে গত বুধবার ঢাকার তেজগাঁও থানায় জিডি করেছে পুলিশ। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, ‘আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ এই জিডির তদন্ত করবে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।’ ফরহাদ মজহারকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে সাংবাদিক সমাজ।গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, আইএসআই ‘লিবার্টি বাংলাদেশ অ্যান্ড ফ্রি থিংকার্স ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠনকে টাকা পাঠাচ্ছে। এর দালিলিক প্রমাণ আছে গোয়েন্দাদের কাছে। এ সংগঠনের সঙ্গে কলামিস্ট, কবি ফরহাদ মজহারের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। ফ্রি থিংকার্স ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ফরহাদ মজহার ছাড়া আরো আছেন দুজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, আইনজীবী, জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতা।পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পাঠানো একটি পত্র আছে দেশিয় গোয়েন্দাদের কাছে। ওই পত্রে লিবার্টি বাংলাদেশ অ্যান্ড ফ্রি থিংকার্স ফাউন্ডেশনকে আইএসআই চল্লিশ হাজার মার্কিন ডলার পাঠানোর কথা উল্লেখ আছে। আইএসআইয়ের পক্ষে এতে স্বাক্ষর করেছেন ডিরেক্টর লেফটেনেন্ট জেনারেল আগা মীর হোসাইন শাহ।আইএসআইয়ের ওই পত্র ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত (ছদ্ম পরিচয়ে) আইএসআইয়ের এক প্রতিনিধির কাছে পাঠানো হয়।গোয়েন্দাদের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অপপ্রচার চালানোর জন্য ফ্রি থিংকার্স ফাউন্ডেশন গঠিত হয়েছে। সারাদেশে এর দশ হাজার কর্মী আছেন।বিশিষ্ট সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক কাগজ’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে ফ্রি থিংকার্স ফাউন্ডেশনের বিষয়ে বলা হয, দৈনিক আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে চলতি বছরের এপ্রিলে গ্রেফতারের পর সংগঠনটির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গোয়েন্দারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গোয়ন্দাদের ধারণা, ফ্রি থিংকার্স ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মাহমুদুর রহমানরহ আরো দুজন বিশিষ্ট সাংবাদিক আছেন। সাপ্তাহিক কাগজ’র চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত সংখ্যার এক প্রতিবেদন এসব কথা বলা হয়। প্রায় একই সময় দেশ টিভিতে প্রচারিত এক প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়।গত রোববার ফরহাদ মজহার একুশে টিভির এক টকশো’তে ১৮ দলের জোটের হরতালের মধ্যে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার প্রেক্ষাপট হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়াতি করে গণমাধ্যমের ওপর হামলাকে ‘সঠিক’ বলে মন্তব্য করেন।এরপর থেকে ফরহাদ মজহারকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন সাংবাদিকরা। তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ। ২ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার না করা হলে রোববার রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে সাংবাদিক সমাজ। গতকাল বুধবার দুই ইউনিয়নের যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া এবং ডিইউজের সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ এ বিবৃতি দেন।অন্যদিকে একই অভিযোগে ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশনের মালিকরা। মঙ্গলবার অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-এর বৈঠকে শেষে এ দাবি জানান সংগঠনের সহ-সভাপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।রোববার রাতের টকশো’তে ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকেরা গণতন্ত্রের পথে অন্তরায়। এ কারণে সাংবাদিকদের ওপর বোমা বা ককটেল মারা উচিত।
false
fe
জাতীয় সরকারের উদ্যোগ বনাম জাতির স্বপ্নমঙ্গল জাতীয় সরকারের উদ্যোগ বনাম জাতির স্বপ্নমঙ্গল ফকির ইলিয়াস ==================================বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে যদি জাতীয় সরকার গঠিত হয় তবে এর কাঠামো কেমন হতে পারে? এ নিয়ে একটি ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। মিডিয়া, লেখক, সাংবাদিক সবাই বিশ্লেষণ করছেন নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের জাতীয় সরকারগুলোর রূপরেখা এবং কর্মযজ্ঞ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং প্রাজ্ঞতাই এসব সরকারকে ক্ষমতায় কিছুদিনের জন্য টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। পরস্পর সহনশীলতা মোটামুটিভাবে কিছুদিন ‘জাতীয় সরকারকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে; কিন্তু সেসব ঐক্য খুব দীর্ঘ হয়নি।’প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন চন্দ্রশেখর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন সে দেশে একটি জাতীয় সরকারের ছায়া গড়ে উঠেছিল। কিন্তু নানা মতদ্বৈততার কারণে চন্দ্রশেখরের সরকার মাত্র কয়েক মাসই ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল।বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠন করার মতো আদৌ কোন সুযোগ আছে কি? এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত কিছু আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করি। প্রথমত একটি দেশে তারাই জাতীয় সরকার চায়, যাদের দল গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের কাছে দুর্বল অবস্খানে থাকে। কারণ তারা জানে, ভোটে জিতে কোন দিনই ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। তাই জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে যদি ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করা যায়। বাংলাদেশে গণভিত্তিহীন রাজনৈতিক দলগুলোর এমন আগ্রহ অতীতে দেখা গেছে। বর্তমানে দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতেও দেখা যাবে।আর এই জাতীয় ঐক্য, সংহতির তথাকথিত বাণী আওড়িয়ে যে দলটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছে সে দলটির নাম জামায়াতে ইসলামী। জাতির জনক বঙ্গবু হত্যার পরপরই সামরিক জান্তাদের ছায়াতলে পুনর্বাসিত হয়ে জামায়াতি রাজাকাররা প্রথমেই বলেছে­ ‘আসুন ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে গড়ে তুলি।’ তারা তাদের জঘন্য কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা না চেয়েই, অনুতপ্ত না হয়েই বলতে চেয়েছে­ আসুন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই! যারা এই রাষ্ট্রকে স্বাধীন হতেই দেয়নি, তারাই কি না অতীত ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানায়! তারাই কি না দেশকে এগিয়ে নেয়ার হুঙ্কার হাঁকে!সেই ঐক্যের দোহাই দিয়েই রাজাকার শাহ আজিজ, মশিউর রহমান যাদু মিয়ারা মন্ত্রিত্ব পেয়েছিল। দীর্ঘদিন পর সেই একই কায়দায় জাতীয় সংহতির ঐক্যের ডাকে গড়ে উঠেছিল বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় ঐক্য। একাত্তরের আলবদর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুজাহিদরা মন্ত্রিত্ব পেয়েছিল­ সে দোহাই দিয়েই।এই জাতীয় ঐক্যের ভাগাভাগিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাও। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জাসদের নেতা আ স ম রব এবং পতিত জাপার ভগ্নাংশের নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে তথাকথিত ‘জাতীয় ঐক্য গড়তে চেয়েছিলেন। এর ফলও শুভ হয়নি। তার প্রমাণ শেখ হাসিনা পেয়েছিলেন ২০০১-এর নির্বাচনে। যদি জনগণ জাতীয় ঐক্যকেই মেনে নিত তবে তো শেখ হাসিনার আবারো বিপুল ভোটে জেতার কথা ছিল। তিনি জিতবে পারলেন না কেন? কেন ভরাডুবি ঘটল তার দলের?দুই.ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করা আর জনগণের মুক্তির জন্য রাজনীতি করা দুটি পৃথক বিষয়। কিন্তু ক্ষমতায় না গিয়ে জনগণের আশা-আকাáক্ষা পূরণ করা যায় না। প্রতিটি জাতির একটা নেপথ্য কাণ্ডারি শক্তি থাকে, যে শক্তি মেধা-মনন, সত্যবার্দিতা, নিষ্ঠা দিয়ে জাতির স্বপ্ন মঙ্গলের জন্য কাজ কৃের যান। এরা ক্ষমতার তোয়াক্কা না করেই মানুষের আশা-আকাáক্ষার পক্ষে দাঁড়ান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ রকম স্বপ্নদ্রষ্টা রাজনীতিক বেশকিছু আছেন। কমরেড মণি সিংহ, কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ কিংবা শ্রী প্রসূন কান্তি রায় (বরুন রায়)­ এদের মতো মানবদরদি নেতারা বাঙালি জাতির গৌরব প্রদীপ বললে ভুল হবে না। অতি সম্প্রতি আমরা ঠিক সে কাতারেরই একজন নেতাকে চিরতরে হারালাম। তিনি সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক। সারাজীবন গণমানুষের কাতারে দাঁড়িয়েছেন নি:স্বার্থভাবে। বামপন্থি রাজনীতির এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব জীবনের শেষ দিকে এসে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামে যোগ দেন। গণফোরাম বাংলাদেশে আপামর জনতার প্রিয় রাজনীতিক দলে রূপ লাভ করতে পারেনি। এর অনেক কারণ আছে। কিন্তু একজন নির্ভীক, আদর্শবাদী নেতা হিসেবে জনাব মানিক সবসময়ই জনগণের পাশে থেকেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এই মহান ব্যক্তি কালো পথে রাষ্ট্র ক্ষমতার ভোগবিলাস চাননি। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। হয়তো তিনি ক্ষমতার ভাগিদার হতে পারেননি; কিন্তু তার কর্ম উদ্যম দিয়ে, আদর্শ দিয়ে বাঙালি জাতিকে যেভাবে প্রকৃত আলোয় প্রজ্বলিত করেছেন­ তা কি জাতি কোনদিন ভুলতে পারবে? না, তাঁর কর্মচেতনার ঋণ কোনদিন শোধ করা যাবে না।বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন­ তারা যদি অসাধু-অশুভ শক্তির সঙ্গে হাত না মিলিয়ে নীতিবান রাজনীতিকিদেরকে মূল্যায়ন করতেন তবে হয়তো আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্নতর হতো। কিন্তু তারা তা করেননি। ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই তারা দলীয় মোসাহেবদের কবলে ব্যস্ত থেকেছেন ওদের লুটপাটকে সাহায্য করতে। আমার বারবার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে শেখ হাসিনার মতো নেত্রী কেন চাটুকারদের কবলে পড়ে ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়েছিলেন? কেন বঙ্গবুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগে এত বেশি তস্করবৃত্তির মানুষ ঠাঁই পেয়েছিল?তিন.সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারও। এদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইন শিথিল করে পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের কথাও বলা হচ্ছে। যদি নির্বাচন করতে হয়, তবে তা কি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে? বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রভাব পড়বে চরমভাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পৌরসভা তো বটেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন এসব নির্বাচনে। তার কারণ ১৯৭১-এর পর, বড় দুটি দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব বাঁচাবার মতো নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হবে ২০০৮ সালে। ১৯৭১-এর কথা এজন্য বলছি, কারণ তখন স্বপ্ন একটাই ছিল­ স্বাধীন বাংলাদেশ। আর এখন বিএনপি, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের লক্ষ্য একটাই, তাদের নেত্রীদের মুক্তি।বর্তমান সরকার যদি তাদের মত না পাল্টান তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, একটা পরিকল্পিত নির্বাচন অনুষ্ঠান করে একটি কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় আসবে এবং সম্মিলিত বাহিনী সে সরকারকে ব্যাকআপ করে যাবে। এভাবে চলতে পারে হয়তোবা দু’টার্ম অর্থাৎ দশ বছর। এর মধ্যে চলতে থাকবে রাজনীতিক শুদ্ধি অভিযান। সে অভিযানের মাধ্যমে বড় দলগুলোকে শুধরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আর যদি বর্তমান শীর্ষ পর্যায়ে মত পরিবর্তন হয়­ তবে কোন বড় দলের নেতৃত্বে জাতীয় সরকারের আদলেই গঠিত হতে পারে আগামী সরকার। ক্ষমতায় যেই আসুক বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির স্বপ্ন মঙ্গল কতটা সাধিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে বৈ কমছে না। সেনাপ্রধান জে. মইন উ আহমেদ বলেছেন, তারা বেশিদিন থাকবেন না। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো আসতে হবে। কারা আসবেন, তাদের পূর্ব প্রস্তুতি কতটা সম্পন্ন হয়েছে।দেশে জরুরি অবস্খা তুলে নিলেই অবস্খা দ্রুত পাল্টে যেতে পারে। রাজনীতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কোন মধ্যস্বত্বভোগী চক্র সহিংসতা ছড়াতে তৎপর হতে পারে। হিংস্র জঙ্গিবাদীদের হামলে বৃদ্ধির সম্ভাবানাও উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়।সব মিলিয়ে একটি অনিশ্চিত শঙ্কার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ নির্বাচন করতে হলে, জরুরি অবস্খা ক্ষমতা আইন তুলতে হবে। আর তা তুলে নিলে আবার দেশ সহিংসতার দিকে যেতে পারে। যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা সার্বিক অবস্খা বিবেচনা করেই অগ্রসর হবেন বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন।কারণ কে জিতবে, কে ক্ষমতায় আসবে তা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, জাতির নিরাপত্তা এবং স্বপ্নপূরণ। তিন যুগ পরও এ প্রত্যাশাটি কি খুব বেশি?====দৈনিক সংবাদ ।১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ বুধবার প্রকাশিত
false
rn
গাঁজা আসসালামু আলাইকুম,সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। শান্তি বর্ষিত হোক সেই মানুষটির উপর যে হেদায়েতের, সত্যের অনুসরণ করে।আমেরিকাতে সবচে বড় হল কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁজা উৎসব। ২০১০ সালে ১০, ০০০ লোক জমা হয়েছিল এই গাঁজা উৎসবে এবছর তা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।বাংলাদেশে গাঁজা উৎসব- বিভিন্ন মাজার, সাধু সন্তদের আখড়ার মেলাতে গাজা খাওয়ার রেওয়াজ আছে। বগুড়ার মহাস্থান গড়ের বাৎসরিক গাঁজা উৎসব পালিত হয় ফাল্গুন মাসের শেষ শুক্রবারে। ঐদিন এখানে ৪০ মন পর্যন্ত গাঁজা খাওয়া হতশুনেছি আজকাল প্রশাসনের বাধার কারনে সে মেলা আর বসে না। সিলেটের শাহ জালালের মাজারের ওরসে, এবং কুস্টিয়ার লালন মেলায় বসা গাঁজা মেলা স্বচক্ষে দেখা। রাজশাহী শহরের অদুরের খেতুরের মেলাও গাঁজা সেবনের জন্য বিখ্যাত মেলা।গাঁজার বৈজ্ঞানিক নাম Cannabis sativa (ক্যানাবিস স্যাটিভা )।পশ্চিমা দেশ গুলোতে মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামে পরিচিত।নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবনে গাঁজা সাইকোসিস (Ganja-psychosis) নামে একধরনের লক্ষন হয়।গাঁজা সেবনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেবনকারী ব্যক্তির হৃত্‍কম্পন বেড়ে যায়৷ কোমনালীগুলি(Bronchial Passages) শিথিল হয়ে বেড়ে যায় এবং চোখের রক্ত প্রবাহের শিরাগুলি স্ফিত হয় যার কারণে চোখ লাল হয়৷ হৃত্‍স্পন্দন স্বাভাবিকের (মিনিটে ৭০-৮০বার) চেয়ে বেড়ে যায়।মাদক হিসেবে গাঁজার জনপ্রিয়তা ও চাহিদা সর্বত্র৷ গাঁজা শরীরের বিষ-ব্যথা সারায়। এ কথার বর্ণনা রয়েছে ভারতবর্ষের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখেছেন, ভাং ও গঞ্জিকা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি তামাক পাতায় প্রস্তুত সিগারেট পানের চেয়ে কম। প্রাচীন কাল থেকে গাঁজা সারা দুনিয়ায় একটি বহুল ব্যবহৃত মাদক। কম মুল্য এবং সহজলভ্যতার কারনে নিম্ন আয়ের নেশাখোরদের মাঝে অত্যন্ত আদরনীয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মাদক হিসেবে গাঁজা নিষিদ্ধ৷ তবে সম্প্রতি ক্যানাডা, নেদারল্যান্ডস এবং ইসরায়েলসহ কিছু দেশে ওষুধ হিসেবে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যেও এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ গাঁজার মূল নেশা উদ্রেককারী উপাদান হচ্ছে ডেল্টা-৯-ট্রেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (delta-9-tetrahydro cannabinol) সংক্ষেপে THC৷ এই টিএইচসি-র পরিমানই ব্যবহারকারীর নেশার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিছুদিন আগে- প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের দায়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইমাম নুরী(৩০) নামে এক যুবকের তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।গাঁজা গাছের পাতা শুকিয়ে সিদ্ধি তৈরি করা হয়। সিদ্ধি থেকে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে ঔষধ তৈরি করা হয়। এছাড়া সিদ্ধি মুখে পুরে চিবিয়ে নেশা করে অনেকে।গাছের আঠা থেকে চরস তৈরি হয়ে থাকে। অনেক সময় গাঁজার ফুল শুকানোর সময় যে গুঁড়া উৎপন্ন হয়, তা আঠার সাথে যুক্ত করে চরস তৈরি হয়ে থাকে। অনেক সময় এই আঠা পাওয়ার জন্য গাঁজার গাছ কেটে দেওয়া হয়। নওঁগা জেলায় সমবায় সমিতির মাধ্যমে সরকারী নিয়ন্ত্রণে গাঁজার চাষ হতো ক'বছর আগেও৷ ওখান থেকে সংগ্রহ করে গাঁজা বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে পেঁৗছে যেতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গঞ্জিকাসেবীদের কাছে ৷ বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে গাঁজার উত্‍পাদন ও বিপণনের ওপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়৷আজ থেকে ৪১ বছর আগে ১৯৭১ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান রাফায়েল হাই স্কুলের কয়েকজন কিশোর ছাত্র বিকেল ৪ টা বিশ মিনিটে একত্রে বসে গাজা খেত লুই পাস্তুরের মুর্তির পাদদেশে । আমি প্রায় দশ বছর আগে গাঁজা খেয়েছিলাম। আমি নেশা করার জন্য খাইনি। এটার স্বাদ জানার জন্য। ফালতু জিনিস। কিন্তু আমি এই ফালতু জিনিস অনেক মানুষকে খেতে দেখেছি। ঢাকা শহরের প্রতিটি এলাকায় গাঁজা বিক্রি হয়।একটা কৌতুক বলি- একবার এক সদ্য গাজাখোর বাড়ী ফিরেছে। কোনভাবেই যেন বাবা টের না পায় সেজন্য খুব সতর্ক। দরজা খুলে দিতেই সে এ্যাজ ইউজুয়াল সালাম দিলো। তারপরে দরজা দিয়ে দিলো। বেশী রাত হয়েছে বলে তার বাবা কটমট করে তাকিয়ে আছে কিন্তু বকাবকি করছে না। বললো, ''ভাত খেয়ে নাও!''ছেলেটি গিয়ে টেবিলে বসেছে। রগচটা বাবা দাঁড়িয়ে আছে পাশে। ভয়ে ভয়ে সে খুব সতর্ক ভাবে ভাত নেয়, তরকারী নেয়, তারপরে ঠিকঠাক মত খেতে থাকে। এরপরে ডাল নেয়, ডাল দিয়ে খেতে থাকে। এবার বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে বাবা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি খুঁজে পায় না সে কি ভুল করেছে।যেই খাওয়া শেষ হয়েছে বাবা এসে মারলো জোরে একটা থাপ্পর। বললো, ''হারামজাদা, তুই যে ভাত খেয়েছিস, প্লেট কই?'' যশোর সদরের নরেন্দ্রপুর গ্রামের বটতলা রহিমের দোকান, হাঠখোলার দিঘীর পাড়, দফাদার পাড়ার দিঘীর পাড়, মিস্তী পাড়ার রাস্তায় গাঁজার আসর বেশি হয়। হুমকির মুখে পড়ছে তরুন সমাজ। দুঃচিন্তাই ভূগছেন অভিভাবকগন। মাদকের কারনে নষ্ঠ হচ্ছে ছাত্র সমাজ। এক টানে তে যেমন তেমন- দুই টানে তে প্রজা,তিন টানে তে উজির-নাজির, চার টানে তে রাজা !!!
false
ij
‘হাসন রাজা হইল পাগল লোকের হইল জানা।’ হাসন রাজারে কে বাউলা বানাল? জীবনভর এই প্রশ্নটি নিয়ে বিব্রত থেকেছেন হাসন রাজা। জীবনভর মাটির পিনজিরার ভিতর মনময়নার ছটপটানি টের পেয়েছেন। লোকে যখন বলল: তোমার বাড়িঘর ভালো না হাছন-তখন হাসন প্রশ্ন করেছেন-কী ঘর বানাইমু আমি শূন্যেরও মাঝার ...জীবনভর প্রশ্ন করেছেন- কানাই খেইড় খেলাও কেনে/ রঙ্গের রঙ্গিলা কানাই/খেইড় খেলাও কেনে। ভাবলে অবাক লাগে-হাসন রাজার মৃত্যু ১৯২২ সালে। কথাটা এই জন্য বলা হাসনের গান শুনলে মনে হয় গানগুলি অত পুরনো নয়-সাম্প্রতিক। নিশা লাগিল রে, বাঁকা দু নয়নে নিশা লাগিল রে। বাংলা এইভাবেই আবহমান। রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতির ভাষনে বলেছিলেন,‘পূর্ববঙ্গের একজন গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই। সেটি এই যে, ব্যাক্তিসরুপের সহিত সম্বন্ধসূত্রই বিশ্ব সত্য’। ‘ব্যাক্তিসরুপের সহিত সম্বন্ধসূত্রই বিশ্ব সত্য’। হাসনের গানে এই সত্যটি প্রতিফলিত। উড়িয়া যাইব শুয়া পাখি পড়িয়া রইব কায়া কিসের দেশ কিসের বেশ কিসের মায়া দয়া । নেত্রকোণার উকিল মুনশীর গানেও শুয়া চান পাখির কথা আছে। শুয়া চান পাখি আমার শুয়া চান পাখি এক ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি? সম্ভবত, শুয়া পাখি জীবনের প্রতীক। জীবন শেষ হয়ে গেলে পড়ে রইবে কেবল স্মৃতি। হাসন সেই কথাই বলছেন। এই শুয়া পাখিই আবার হাসনের মন-ময়না। মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়া রে কান্দে হাসন রাজার মনময়নায় রে। হাসন রাজার পুরো নাম দেওয়ান হাসন রাজা। জন্ম ১৮৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। সিলেট জেলার সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী (লখনছিড়ি) গ্রামের জমিদার পরিবারে। হাসন রাজার পূর্বপুরুষ অযোধ্যায় বাস করতেন এবং তারা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী । পরে পরিবারটি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে সুনামগঞ্জ আসেন এবং সেকানেই স্থায়িভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। হাসন রাজার পিতার নাম পিতার নাম দেওয়ান আলী রজা চৌধুরী। স্কুলকলেজে পড়েন নি হাসন। তৎকালীন সময়ে পূর্ববঙ্গের কুলিন পরিবারের সন্তানেরা কোলকাতায় বাড়িভাড়া করে লেখাপড়া শিখত। হাসনের ক্ষেত্রে সেরকম হয়নি। এত বড় দার্শনিক-স্কুলকলেজে কী শিখবেন! যা হোক। হাসনের পনেরো বছর বয়েসে হাসনের বাবা মারা যান। সংসার ও জমিদারি দেখা শোনার দায়িত্ব হাসনের উপর এসে পড়ে। খানিক কি উদাসীন ছিলেন হাসন? কেননা, ততদিনে বুঝে গিয়েছিলেন- মায়ে বাপে করলা বন্দি খুশির মাঝারে লালে ধলায় হইলা বন্দি পিনজিরার মাজারে। হাসনের কাছে জীবন ও জগৎ ‘খুশির মাঝার’। বিষয়টি আকস্মিক নয়। বাংলার বাউলেরা সব জগৎপ্রেমী-জগতে এত দুঃখকষ্ট সত্ত্বেও। ঐ একই গানের অন্য রুপ- মায়ে বাপে বন্দি হইল কুটির মাঝারে লালে দোলায় বন্দি হইল পিঞ্জিরার মাঝারে। মা -বাবা মিলিত হল। তারপর আমাকে লাল-সাদা জগতে বন্দি করল? লাল-সাদা জগতে সুখ থাকলেও স্বস্তি নেই। প্রাপ্তির আনন্দ থাকলে আছে - হারানোর আশঙ্কা। এই নিদারুন সত্যটি ততদিনে বুঝে গিয়েছিলেন হাসন-তাই বলছিলাম: খানিক কি উদাসীন ছিলেন হাসন? শোনা যায়-যৌবনে সৌখিন ও বিলাসী ছিলেন হাসন। মদ ও কামে মজেছিলেন। তার কৈফিয়তও দিয়েছিলেন। আমিই মুল নাগর রে। আসিয়াছি খেউড় খেলিতে, ভব সাগরে রে। আমি রাধা, আমি কানু, আমি শিবশঙ্করী। অধর চাঁদ হই আমি, আমি গৌর হরি। অতি গভীর কথা! হাসনের একটি জনপ্রিয় গান- নিশা লাগিল রে বাঁকা দু নয়নে নিশা লাগিল রে হাসন রাজা পিয়ারীর প্রেমে মজিল রে। পিয়ারী কে? কোনও নারী? জানি, হাসনগবেষকগন জানেন পিয়ারী কে। আমি অন্যভাবে দেখতে চাইছি ব্যাপারটা। এ গানটি সম্ভবত হাসনের যৌবনপর্বের গান। কিন্তু, কে পিয়ারী? কোনও নারী? ‘হাসন রাজা পিয়ারীর প্রেমে মজিল রে।’ মদ ও কামে মজে থেকেও কেবল একজনকে ভালো লাগল? হাসনের অন্য একটি গানে আছে- রূপের ঝলক দেখিয়া তার আমি হইলাম কানা। (কার পিয়ারীর?) সেই অবধি লাগল আমার শ্যাম পিরীতির টানা। (শ্যাম=কৃষ্ণ) হাসন রাজা হইল পাগল লোকের হইল জানা। নাচে নাচে তালে তালে আগে গায় গানা। শেষ দুটি চরণই বলে দিচ্ছে পিয়ারী ঠিক জাগতিক প্রেমবস্তু নয়-বরং এমন কিছু -যাকে দেখলে পাগল হয়ে যেতে হয় আর নেচে নেচে তালে তালে গান গাইতে হয়। যাক। মদে কামে ডুবে থেকেও একদিন গেয়ে উঠলেন হাসন- বাউলা কে বানাইল রে হাসন রাজারে। বানাইল বানাইল বাউলা কার নাম হইতে মৌলা দেখিয়া তার রুপের ছটক হাসন রাজা হইল বাউলা। (কার? পিয়ারীর?) হাসন রাজা হইছে পাগল প্রাণবন্দে কারণে। (কে প্রাণের বন্ধু? পিয়ারী?) বন্ধু বিণে হাসন রাজায় মন যে নাহি মানে। হাসন রাজা গাইছে গান হাতে তালি দিয়া সাক্ষাতে দাঁড়াইয়া শোনে হাসন রাজার বিয়া। (বেশ দূরুহ লাইন ...) এই গানের পর কি আর সংসারে মন টেকে? বিষয়সম্পত্তি সব বিলিবন্টন করে হাসনের বাউলা জীবনের শুরু। কেননা- ভালা করি ঘর বানায়া কয়দিন থাকমু আর আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকন্ াচুল আমার। লখনছিড়িতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেন হাসন। মেধাবী ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। হাসন রাজায় কয় আমি কিছু নয় আমি কিছু নয় অন্তরে বাহিরে দেখি কেবল দয়াময়। ভিতর থেকে গান আসছিল। একের পর এক। সে গান শুনত লোকে। দূরদূরান্ত থেকে এসে শুনত। আর সে কী গান। বাউলের জীবনদর্শন এমন সুরেলা ও ছান্দিক প্রকাশ। লোকে বলে/ বলে রে/ ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার। কি ঘর বানাইমু আমি/ শূন্যেরই মাঝার। লোকে হাসনের গান অবশ হয়ে শুনত। কেউ কেউ গানের বই বের কথার কথাও বলল। গানের বই প্রকাশ করলেন হাসন। হাছন উদাস (১৯০৭) শৌখিন বাহার, হাছন বাহার। ভারি আল্লাভক্ত ছিলেন হাসন। আমি যাইমুরে যাইমু আল্লার সঙ্গে হাছন রাজায় আল্লাবিনে কিছু নাহি মাঙ্গে। রাধাকৃষ্ণর লীলা নিয়েও গান করলেন। কেন আইলাম না রে, রাধার কালাচান্দ। বাঁশীটি বাজাইয়া আমার লইয়া যাও পরাণ। কালী মায়ের কথাও উঠে এসেছে হাসনের গানে। ওমা কালী, কালী গো, এতনা ভঙ্গিমা জান। কত রঙ্গ ঢঙ্গ করা যা ইচ্ছা হয় মন। মাগো স্বামীর বুকে পা দেও মা ক্রোদ্ধ হইলে রণ। কৃষ্ণরুপে প্রেমভাবে মামীর বসন টান। এভাবেই বাংলার গানের গুরুরা অসাম্প্রদায়িক । সেকথা আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই লেখা। আবহমান বাংলার সংস্কৃতি বিন্দুমাত্র হৃদয়ে গ্রহন করলে সাম্প্রদায়িক হওয়া যায় না। তাছাড়া, বাংলার সংস্কৃতির একটা অটুটু ঐক্যও আছে। রবীন্দ্রনাথ, লালন ও হাসন-উভয়কেই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন। হাসনের মৃত্যু ১৯২২ সালের ৭ ডিসেম্বর। চলেন আসছে শীতে সুনামগঞ্জের লখনছিড়ি যাই। শুনেছি, হাসনের ঘরবাড়ির দৈন্যদশা। (এই নিয়ে কিছুদিন আগে ব্লগে একটা লেখা পড়েছি)। লখনছিড়িতে হাসনের বাড়িঘরের বেহাল অবস্থা। আসলে এ আমাদেরই মন ও বিবেকের দৈন্যদশা। শুনেছি, সিলেটে শ্রীচৈতন্যদেবে পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি পুড়িয়ে দিয়েছে বছর কয়েক আগে। হাসনের গানগুলি ইন্টারনেটে রয়েছে। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে সে গান পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হবে। সে গান ভবিষ্যত প্রজন্ম (আপনাদেরই ছেলেমেয়ে) জানবে। তারা কেউ কেউ লখনছিড়ির তীর্থে যেতে চাইবে। তারপর তারা লখনছিড়ি পৌঁছে যা দেখবে-দেখে আমাদের বিবেকের দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন করবে। ছিঃ, আপনারা! গানের সূত্র: লোকগীতি। ই-সংকলন: সুদীপ্ত মূখার্জী, সোমেন্দ্র মোহন ভট্টাচার্য্য। তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়ায় তসিকুল ইসলামের লেখা একটি নিবন্ধ। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৪৩
false
fe
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মিথুন আহমেদের ডকুমেন্টারি ‘ট্রাইব্যুনাল ফর ওয়ার ক্রিমিনালস’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মিথুন আহমেদের ডকুমেন্টারি ‘ট্রাইব্যুনাল ফর ওয়ার ক্রিমিনালস’ ফকির ইলিয়াস======================================= বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সিদ্ধান্তটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। বাঙালি জাতির জীবনে এটি একটি বড় অধ্যায়। একটি গ্লানি মোচনের সত্রপাত। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের ভোটার সংখ্যা ছিল একত্রিশ শতাংশ। এরা সবাই স্পষ্ট জানিয়েছে, ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। সাংসদরা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে প্রজন্মের প্রতি সেই সম্মান দেখিয়েছেন। এজন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখে।বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে হবে। হওয়া প্রয়োজন। এই দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। শহীদ রুমীর মা তিনি। লাখো শহীদের মা তিনি। তার ডাকে জেগে উঠেছিল গোটা জাতি। জেগে উঠেছিল বাঙালির মানবিক সত্তা। সবাই একবাক্যে বলেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।১৯৯১ সালের শেষার্ধে শহীদ জননী যখন এই ডাক দেন, তখন অভূতপর্ব সাড়া পড়েছিল দেশে-বিদেশে। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা এই নিউইয়র্কেও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’­ যুক্তরাষ্ট্র শাখা গঠন করি। এর যৌথ আহ্বায়ক মনোনীত হন শ্রদ্ধাভাজন কাজী জাকারিয়া ও ড. নুরুন নবী। সদস্য সচিব মনোনীত হন ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী এবং যুগ্ম সদস্য সচিব মনোনীত হই আমি। এর সুবাদেই শহীদ জননীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগের একটি সুযোগ আসে। তার সঙ্গে আলাপচারিতা ছিল আমার জীবনের অত্যন্ত শাণিত সময়।১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে গণআদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শহীদ জননী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যেকোন মূল্যে গণআদালত হবেই। সে সময় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থেকে নানা হুমকি ধমকিই দিচ্ছিল শহীদ জননীকে। কিন্তু তিনি ছিলেন সিদ্ধান্তে অনড়। বলেছিলেন, কোন শক্তিই গণআদালতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।নির্মূল কমিটি যুক্তরাষ্ট্র শাখার পক্ষ থেকে তখন একজন পর্যবেক্ষক আইনজীবী ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটর্নি মি. টমাস কিটিংকে গণআদালত পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা ঢাকায় পাঠাই।তিনি তা পর্যবেক্ষণ করে এসে নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন করে সবিস্তারে বর্ণনা দেন তার অভিজ্ঞতার কথা, তার অভিমতের কথা। তিনিও সে সময় বলেছিলেন, গণআদালত তার রায় দিয়েছে। এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।দুই.১৯৯৪ সালে শহীদ জননী প্রয়াত হওয়ার পর জাতীয় সমন্বয় কমিটির কার্যক্রম বেশ স্খবির হয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিটি মুখথুবড়ে পড়ে। এ বিষয়ে সে সময়ের রাষ্ট্র পরিচালকরা ছিলেন বেশ নির্বিকার।২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। একাত্তরের কুখ্যাত ঘাতক-আলবদর নিজামী ও মুজাহিদকে মন্তী করা হয়। নরঘাতক গোলাম আযম নেপথ্যে থেকে এই দুই মন্তীর মুখ্য পরামর্শকের ভূমিকাই পালন করেছিল বলে জানা যায়।যারা যুদ্ধাপরাধী, যারা ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন, নরহত্যা, ব্যভিচারের মতো জঘন্য অমানবিক কাজগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন যুগিয়েছিল­ কেন তাদের বিচার হবে না? এই প্রশ্নটি সময়ের। এই প্রশ্নটি কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর। যারা ২০০৮ সালেই প্রথম ভোট দেবার যোগ্যতা অর্জন করেছে।১৯৭১ সালে বাংলার মাটিতে যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ, ধন ও সম্ভ্রম লুণ্ঠন হয়েছে এর সচিত্র ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্কাইভে। এদেশের গণমানুষ যে বারবার এসব দালাল-ঘাতকদের বিচার চেয়েছে তার প্রমাণও আছে বিভিন্ন ফুটেজে।এগুলো সমন্বয়, সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেই একটি প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেছেন নিউইয়র্ক অভিবাসী তরুণ সংগঠক, নির্মাতা মিথুন আহমেদ। ‘ট্রাইব্যুনাল ফর ওয়ার ক্রিমিনালস’- শিরোনামের এই ডকুমেন্টারিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সেই দিনগুলোর কথা।মিথুন আহমেদ নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় মাঠকর্মী। বিভিন্ন ঘটনা দেখেছেন খুব কাছে থেকে। ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল। ‘বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র’ কিংবা ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট’-এর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে বাঙালি মননের বোধকে পরিশুদ্ধ করেছেন মানবকল্যাণের স্বার্থে।মিথুন আহমেদের নির্মিত ‘ট্রাইব্যুনাল ফর ওয়ার ক্রিমিনালস’-এর বিভিন্ন দৃশ্য দেখে আমার মনে হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্বপ্নগুলোকে আবারও জানান দিচ্ছেন তিনি।এই ডকুমেন্টারিতে বেশ ক’জন বিশিষ্ট ব্যক্তির তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার রয়েছে। শাহরিয়ার কবির, ফজলে হোসেন বাদশাহ, লুৎফর রহমান রিটন, আমিরুল ইসলাম, আসলাম সানী, অশোক কর্মকার, মোহন রায়হান, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, কাইয়ুম চৌধুরী­ এরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল মানুষ। আছে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, মার্কিন আইনজীবী মি. টমাস কিটিংয়ের সাক্ষাৎকারও।জাতিসংঘ চত্বরে একবার একটি মৌলবাদী সমাবেশে হাজির হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মওলানা আশরাফুজ্জামান খান। তারও একটি তাৎক্ষণিক বক্তব্য দিয়েছেন মিথুন আহমেদ এই ডকুমেন্টারিতে। যদিও আশরাফুজ্জামান খান নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যে গণআদালত গঠিত হয়েছিল এর দীর্ঘ সচিত্র বর্ণনা ডকুমেন্টারিটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।আমরা জানি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মইনউদ্দিন এখন লন্ডনে এবং মওলানা আশরাফুজ্জামান খান নিউইয়র্কে অবস্খান করছে। সম্প্রতি ঢাকাস্খ মার্কিন রাষ্ট্রদত মি. মরিয়ার্টি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাইলে তারা সার্বিক সাহায্য করার কথা বিবেচনা করবেন। আমি মনে করি, এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্তণালয় যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনের সাহায্য চাইতে পারে। পালিয়ে আসা চৌধুরী মইনউদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানকে বিচারের মুখোমুখি করা সব মানবসত্তারই দায়িত্ব।বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য অনুষ্ঠানে, আন্তর্জাতিক বিচার কার্যগুলোর ধারা-উপধারা বিবেচনা করা দরকার। দেশের বিচারকরা যাতে ‘বিব্রতবোধ’ না করতে পারেন সে জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা অত্যাবশ্যক। তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহে যার কাছে যা প্রমাণ আছে, সব নিয়ে এগিয়ে আশা নৈতিক দায়িত্ব।নিউইয়র্ক, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত
false
mk
বিশ্ব শান্তি সূচকে (গ্লোবাল পিস ইনডেক্স) বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। ২০১৫ সালের বিশ্ব শান্তি সূচকে (গ্লোবাল পিস ইনডেক্স) বাংলাদেশের এ অবস্থান উঠে এসেছে। সূচকে গত এক বছরে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে ১৪ ধাপ। দক্ষিণ এশিয়ায় এবারও ভারত-পাকিস্তানের ওপরে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বিশ্বে সবেচেয়ে শান্তির ঠিকানা এবারও আইসল্যান্ড। আর সবচেয়ে অশান্তিপূর্ণ দেশের বদনাম এবারও ধরে রেখেছে গোলযোগপূর্ণ দেশ সিরিয়া। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (ইইপি) গতকাল বুধবার বিশ্ব শান্তি সূচক ২০১৫ ঘোষণা করে। এবারও বিশ্বের ১৬২টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে এ সূচক তৈরি করা হয়। সূচক তৈরি করতে এবার ২৩টি মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে। সূচক তৈরিতে মানদণ্ড : বিশ্ব শান্তি সূচক তৈরির জন্য ইইপির উল্লেখযোগ্য নির্দেশকগুলো হলো সামাজিক অপরাধ, বেসামরিক নিরাপত্তা বাহিনী, হত্যাকাণ্ড, কারাবন্দি মানুষের সংখ্যা, অস্ত্র ব্যবহারের সহজলভ্যতা, অভ্যন্তরীণ সংঘবদ্ধ সংঘাত, সহিংস বিক্ষোভ, সহিংস অপরাধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী তৎপরতা, অভ্যন্তরীণ সংঘাতে মৃত্যু, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা, সামরিক ব্যয়, সশস্ত্র বাহিনী, পরমাণু ও ভারী অস্ত্র, অস্ত্র রপ্তানি, বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, যুদ্ধ পরিস্থিতি ইত্যাদি। এ ছাড়া বিদ্যুতায়ন, সরকারের সক্ষমতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, বেসামরিক নাগরিকদের স্বাধীনতা, দুর্নীতি, লিঙ্গ বৈষম্য, বেকারত্ব, স্কুলে ভর্তির হারসহ আরো বিষয় ‘অন্যান্য নির্দেশক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শীর্ষ শান্তির ১০ দেশ : তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ১০টি দেশ হলো-১. আইসল্যান্ড, ২. ডেনমার্ক, ৩. অস্ট্রিয়া, ৪. নিউজিল্যান্ড, ৫. সুইজারল্যান্ড, ৬. ফিনল্যান্ড, ৭. কানাডা, ৮. জাপান, ৯. অস্ট্রেলিয়া ও ১০. চেক রিপাবলিক। এর মধ্যে শীর্ষ আটটি দেশ গত বছরও একই অবস্থানে ছিল। শীর্ষ অশান্তির ১০ দেশ : বিশ্বের সবচেয়ে অশান্তিপূর্ণ ১০টি দেশ হলো-১. সিরিয়া, ২. ইরাক, ৩. আফগানিস্তান, ৪. দক্ষিণ সুদান, ৫. মধ্য আফ্রিকা, ৬. সোমালিয়া, ৭. সুদান, ৮. কঙ্গো, ৯. পাকিস্তান ও ১০. উত্তর কোরিয়া। শক্তিধর ও উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান : অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবার ৯৪। গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল ১০১। এ ছাড়া জার্মানির অবস্থান ১৬, নরওয়ে ১৭, সিঙ্গাপুর ২৪, কাতার ৩০ (মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম), যুক্তরাজ্য ৩৯, ফ্রান্স ৪৫, সৌদি আরব ৯৫ ও চীনের অবস্থান ১২৪। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া : সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ ভুটান। দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে। বিশ্বে এবার ১৮তম শান্তির দেশ ভুটান। এই অঞ্চলের দ্বিতীয় শান্তিপূর্ণ দেশ হলো নেপাল। দেশটির অবস্থান ৬২তম। দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় শান্তির্পূণ দেশ হলো বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৮। এবার ৮৪। এর আগের বছর (২০১৩) বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৫। গত এক বছরে ১৪ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এবারও বাংলাদেশের পরে শ্রীলঙ্কা, অবস্থান ১১৪। ভারতের অবস্থান ১৪৩। পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৪ (গতবারও একই অবস্থানে) এবং আফগানিস্তানের অবস্থান ১৬১তম। সূত্র : ইইপি ওয়েবসাইট। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৫ সকাল ৯:০৫
false
mk
খালেদা জিয়ার ১৩ দফা এবং রাজনীতির হালচাল বেশ কয়েক মাস পর খালেদা জিয়া জনসমক্ষে এসেছিলেন গত ১৮ নভেম্বর আগামী সংসদ নির্বাচন কেমন করে ‘সুষ্ঠু’ হতে পারে তার ১৩ দফা একটি ফর্মুলা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতির সামনে হাজির করতে। আসরটি বসেছিল তাঁর বাসভবনের পাশে একটি তারকাখচিত হোটেলে। এই অনুষ্ঠানে বেশ কিছুসংখ্যক নতুন সুধীও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার আগমন, অবস্থান ও প্রস্থান অনেকটা নিষ্প্রভ ছিল। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, বিএনপিপ্রধান বর্তমানে মানসিক অবসাদে ভুগছেন। এটি স্বাভাবিক। এই বয়সে তাঁর নাতি-নাতনি পরিবেষ্টিত থাকার কথা। বাড়ির বউদের সেবা-যত্ন পাওয়ার দাবিদার। তা থেকে তিনি বঞ্চিত। প্রবাসে এক ছেলের মৃত্যু হয়েছে। অন্য ছেলে লন্ডনে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক জীবন যাপন করছেন। দুজনের পরিবারই প্রবাসে। খালেদা জিয়া দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অনেকটা একাকিত্বের অভিশপ্ত জীবন যাপন করেন। এই বয়সে এটি তাঁর হওয়া উচিত ছিল না। নিয়মিত দলীয় অফিসে এলে সময় কিছুটা ভালো কাটতে পারত। তাও সচরাচর হয়ে ওঠে না। তাঁর অনেক নিকটজনকে বলতে শুনেছি, তিনি দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে তেমন একটা আস্থায় নিতে পারেন না। একজন নেতার কারণে নাকি কেউ এখন দলীয় নীতিনির্ধারণী সভায় মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে পারেন না।২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার মিত্ররা অংশগ্রহণ করেনি। কারণ তাঁর ধারণা ছিল, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। তিনি দাবি করছিলেন, নির্বাচনের সময় একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকবে। সাংবিধানিকভাবে এটি সম্ভব ছিল না। কারণ এ ধরনের সরকারব্যবস্থাকে এরই মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সংবিধানের মূল ধারণার পরিপন্থী ঘোষণা করেছিলেন। আদালত তাঁর মন্তব্যে বলেছিলেন, ‘সংসদ যদি চায় তাহলে আরো দুই মেয়াদে এই ব্যবস্থা চালু রাখা যায়।’ এই মন্তব্য রায়ের অংশ ছিল না এবং তা মানার কোনো বাধ্যবাধকতাও ছিল না। তার পরও সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তা সংসদ গ্রহণ করেনি। সেই সংসদে বিএনপি ও তার মিত্রদের সদস্য ছিলেন। তাঁরা সেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি আর তার প্রধান মিত্র যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে এক অঘোষিত অন্তর্ঘাতমূলক যুদ্ধ শুরু করে ২০১৩ সাল থেকে। সেই যুদ্ধ অনেকটা একাত্তরে বাঙালিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধের সঙ্গে তুলনীয়। এই যুদ্ধে দেশের জানমালের প্রভূত ক্ষতি হয়। শতিনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। বাদ যায়নি অফিসফেরত কেরানি, স্কুলপড়ুয়া শিশু, পেশাদার ডাক্তার-প্রকৌশলী—এমনকি অবুঝ পশুও। তাদের বেশির ভাগের সঙ্গেই রাজনীতির কোনো সম্পর্ক ছিল না। খালেদা জিয়া এই যুদ্ধ পরিচালনার জন্য গুলশানে তাঁর দপ্তরে কমান্ড পোস্ট খুললেন। সেখানে তিনি ৯০ দিন অবস্থান করে সারা দেশে অবরোধের ডাক দিলেন। সেই অবরোধ আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে না নেওয়ায় তাত্ত্বিকভাবে তা এখনো বহাল আছে। মূল যুদ্ধ শুরুর আগে রিহার্সাল হিসেবে ২০১৩ সালের ৫ মে খালেদা জিয়া ঢাকা দখলের জন্য চরম হঠকারী উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী হেফাজতকে মাঠে নামিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার যুদ্ধে শুধু যে দেশের জানমালের ক্ষতি হয়েছিল তা নয়, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তিও কালিমালিপ্ত হয়।জাতিসংঘের প্রতিনিধি অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ সফরে এলেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলোর সঙ্গে তিনি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন। বসলেন সুধীসমাজের সঙ্গে। বাদ গেল না ভূতপূর্ব বামপন্থীরা। শোনা গেল সব পক্ষ একটি সমাধানে পৌঁছেছেন। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। অনেকটা বাড়া ভাতে পানি ঢালার মতো সব ভেস্তে গেল লন্ডন প্রবাসী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের কারণে। সেখান থেকে বার্তা এলো শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। তাদের দাবি মেনে অসাংবিধানিক অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেই শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচনের দিকে এগোল সরকার। কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়েছিল একজন শেখ হাসিনার দৃঢ়তা আর সাহসের কারণে। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা অনেকটা নিজ দায়িত্বে খালেদা জিয়াকে তাঁর সরকারি বাসভবনে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। বললেন, আসুন, আমরা নির্বাচন বা অন্য যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। অনুষ্ঠিত হোক এই নির্বাচন একটি নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত সর্বদলীয় সরকারের অধীনে। প্রধানমন্ত্রী এও বললেন, সেই সরকারের যতজন মন্ত্রী চাইবে বিএনপি ও তার মিত্ররা, তাই দেওয়া হবে। উদারতার আর কোনো উত্কৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে না। খালেদা জিয়া সেই আমন্ত্রণে সাড়া তো দিলেনই না, উপরন্তু শেখ হাসিনাকে বেশ অপমানিত করেই টেলিফোন সংলাপের ইতি টানলেন। সেই নির্বাচনের আগেও খালেদা জিয়া তাঁর কল্পিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি ফর্মুলা সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। বলেছিলেন অতীতে বিভিন্ন সময়ে যাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন তাঁদের নিয়ে নির্বাচনকালীন একটি সরকার হতে পারে। খালেদা জিয়াকে যাঁরা শলাপরামর্শ দেন অথবা যাঁরা তাঁর বক্তৃতা-বিবৃতি লেখেন তাঁদের হোমওয়ার্কের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। দেখা গেল, খালেদা জিয়া যাঁদের নিয়ে তাঁর কল্পিত সরকার গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁদের অনেকেই জীবিত নেই। যাঁরা আছেন তাঁদের দু-একজন ছাড়া অন্য কেউ এমন একটি সরকারে থাকতে মোটেও ইচ্ছুক নন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন গবেষক বাংলাদেশে এসেছিলেন নির্বাচন নিয়ে গবেষণা করবেন বলে। একপর্যায়ে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতে এলে প্রসঙ্গক্রমে তাঁকে বলেছিলাম, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারত না, কিন্তু তাদের পক্ষে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসনে জয়ী হয়ে সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা সম্ভব হতো। তাঁকে জানিয়েছি, এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছে তারা প্রচলিত অর্থে কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাদের বড়জোর একটা এলিট ক্লাবের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেটি পরিচালিত হয় লন্ডন প্রবাসী একজন অপরিপক্ব রাজনৈতিক নাদান দ্বারা। সেই গবেষককে আরো বলেছি, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি যে ঐতিহাসিক ভুল করেছে তার কারণে মুসলিম লীগের পথে তাদের যাত্রা আরো ত্বরান্বিত হবে। দলটির কর্মী-সমর্থক ছিল। নিষ্ঠাবান ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের অভাব ছিল। তাদের সঙ্গে এখানেই আওয়ামী লীগের তফাত। এক-এগারোর পর বর্ষীয়ান নেতা জিল্লুর রহমান নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দলকে ধরে রেখেছিলেন। বিএনপিতে একজন জিল্লুর রহমানের অভাব ছিল। সেই কারণেই দলের শীর্ষ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে তিনজনে চ্যাংদোলা করে এনে মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজরা খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নতুন বিএনপি গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচন নিয়ে যে পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন তা অনেকটা সেই নির্বাচনে না যাওয়ার একটা পূর্বপ্রস্তুতি। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তিনি কারো সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না তা একান্তভাবে তাঁর এখতিয়ার। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান করেছিলেন। খালেদা জিয়া এক অদ্ভুত ফর্মুলা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য, যা করতে গেলে হয়তো কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বলেছেন বিএনপি তো বটেই, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত, মুসলিম লীগ, বঙ্গবন্ধু হত্যকারীদের দল ফ্রিডম পার্টি, নেজামে ইসলামসহ বিভিন্ন ধরনের হোন্ডা পার্টি (দুই সদস্যবিশিষ্ট পার্টি) তাদের সঙ্গেও নাকি আলাপ করতে হবে এবং শেষতক এমন একটি কমিশন গঠন করতে হবে যেটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এটি একটি অসম্ভব প্রস্তাব, কারণ কোনো কিছুই সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এখানে তো কয়েকজন মানুষের কথা বলা হচ্ছে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন সবার কাছে একজন ফেরেশতাতুল্য মানুষ। অথবা প্রয়াত বিচারপতি হাবিবুর রহমান। তাঁদের সমালোচকের সংখ্যাও কম নয়।খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের মারাত্মক বিপজ্জনক প্রস্তাব হচ্ছে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান। সেনাবাহিনী দেশের বেসামরিক আইন সম্পর্কে তেমন দক্ষ নয়। তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সেনা আইন সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। সেনা আইনে কোনো সেনা সদস্যের বিচার হলে তাকে আইনি সহায়তা দেন সেনা আইনে পারদর্শী একজন সেনা কর্মকর্তা। আর দেশে যখন সেনাশাসন প্রবর্তিত হয় তখন অনেক ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি হয় সেনা আইনে। তাহলে কি খালেদা জিয়া নির্বাচনকালে দেশে সেনাশাসন প্রবর্তনের কথা বলছেন? খালেদা জিয়া জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় সেনানিবাসে কাটিয়েছেন। সেনা সংস্কৃতির অনেক কিছু তাঁর ভালো লাগাটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই বলে যে ব্যক্তি দুবার দেশের বেসামরিক শাসনকালে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি হঠাৎ করে কী উদ্দেশ্যে সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর জন্য বিচারিক ক্ষমতা দাবি করেন? নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন মনে করলে নির্বাচনের সময় সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইতেই পারে। তারা তখন সিভিল প্রশাসনের অধীনে দায়িত্ব পালন করবে। সেদিকে চিন্তা না করে সেনাবাহিনীর জন্য বিচারিক ক্ষমতা চাওয়াটা সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার খালেদা জিয়ার একটি দুরভিসন্ধি বলে অনেকের ধারণা। বিশ্বের যেসব দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হয় সেসব দেশে নির্বাচন পরিচালনার জন্য এক ধরনের রাষ্ট্রীয় সংগঠন থাকে, যাকে নির্বাচন কমিশন বা অন্য কোনো নামে ডাকা হয়। নির্বাচনের সময় তাদের সব কর্মকাণ্ড সব সময় সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকে না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী। তা গৃহীত হলে রানি তা অনুমোদন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সহায়তা করার জন্য দুজন নির্বাহী থাকেন। ২০০০ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন নানা কারণে সমালোচিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে একটি ফেডারেল নির্বাচন কমিশন থাকে। ফেডারেল কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে এবং তা সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়। সদস্য থাকেন ছয়জন। গত কয়েকটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর সে দেশের নির্বাচন কমিশনকে কারচুপি রোধে ব্যর্থতার কারণে তুমুলভাবে সমালোচিত হতে হয়। ভারতের নির্বাচন কমিশনের গঠন বাংলাদেশের আদলে। টিএন সেশান ছাড়া কোনো নির্বাচন কমিশনই বিতর্ক এড়াতে পারেননি। সেশান একজন আমলা ছিলেন। বাংলাদেশে আবু হেনা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে (১৯৯৬-২০০০) বেশ সুনাম কামিয়েছিলেন। তিনি একজন আমলা ছিলেন। বিচারপতি সাদেক (২০০০-০৫) ও বিচারপতি আজিজ (২০০৫-০৭) বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। আজিজের সময় এক কোটি ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিচারপতি সাত্তার পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের প্রধান দল হিসেবে জনগনের স্বীকৃতি লাভ করে। সাত্তার পরবর্তীকালে জিয়ার উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন এবং জিয়ার মৃত্যর পর রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদ ক্ষমতা দখলের জন্য তাঁর বুকে পিস্তল ঠেকালে তিনি মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারেননি। চেষ্টা করলে রাষ্ট্রপতি মনোনীত নির্বাচন কমিশন সব চাপ অগ্রাহ্য করে দায়িত্ব পালন করতে পারে। এমন উদাহরণ বাংলাদেশে আছে।বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নয়, সব সময়ের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশিত। নিষ্ঠাবান ও দৃঢ়চেতা মানুষের অভাব নেই। রাষ্ট্রপতিকে তাঁদের মধ্য থেকে খুঁজে কমিশন গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে তিনি যে কারো সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সব সময় সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখা বাঞ্ছনীয়। জিয়া সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে সংবিধানকে অপমানিত করেছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে তিনি পেছনের তারিখ দিয়ে পদোন্নতি নিয়েছিলেন। এসবই ছিল সংবিধান আর সব নিয়মনীতির বাইরে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক তা কাম্য নয়। খালেদা জিয়ার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কমিশন গঠন করতে হলে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হবে। তবে সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই কাম্য। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১০
false
fe
ভাষার আধিপত্য ও প্রজন্মের ভাষাপ্রেম ভাষার আধিপত্য ও প্রজন্মের ভাষাপ্রেমফকির ইলিয়াস________________________________________________বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা চালুর দাবি আমরা প্রায় চার দশক থেকেই শুনে আসছি। পূরণ কি হয়েছে? না, হয়নি। কারণ বাস্তবতা ভিন্ন। ভিন্ন আজকের বিশ্ব প্রেক্ষাপট।যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সিরিজ আয়োজিত এক সেমিনারের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল ভাষার অর্জন। একটি ভাষা কী ফসল ফলাতে পারে সে বিষয়ে ভাষা বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখছিলেন। স্প্যানিশ ভাষা বিশেষজ্ঞ জিসান রডরিগাস তার বক্তব্যে তুলে ধরেছিলেন, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে স্প্যানিশ ভাষার অগ্রগতি ও আধিপত্যের কথা। তিনি স্প্যানিশ ভাষাভাষী ক’জন নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, এরা স্প্যানিশ ভাষায়ই তাদের লেখাগুলো লিখেছিলেন। তাদের লেখার দক্ষতা, মুন্সিয়ানা, ভাবপ্রকাশ ও বিষয় নির্বাচন বিশ্বের বোদ্ধা পাঠককে সাড়া দিতে সক্ষম হয়। তারপর স্থান করে নেয় বিশ্বসাহিত্যে। একটি লেখা যখন নিজ ভাষায় বিশ্ব মানবের পক্ষে বিশ্বভাষা হয়েই মাথা উঁচু করে তখনও গোটা মানবসমাজ তা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে পড়ে। একুশে ফেব্র“য়ারি এলে বাঙালিরা বাংলা ভাষার অর্জন, দেনাপাওনার হিসাবও মেলানোর চেষ্টা করেন। সন্দেহ নেই, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে যে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করা হয়েছিল, তা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি রাষ্ট্র, একটি বৃহৎ জাতি বাংলাদেশ ও বাঙালি।একটি রাষ্ট্রে একটি ভাষাই যে সবার মাতৃভাষা হবে, তারও শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভাষার দিকে নজর দিলে আমরা সে দৃষ্টান্ত পাব। আর বহুজাতিক-বহুভাষিক ‘মাল্টিকালচারাল কান্ট্রি’ বলে সুপরিচিত যুক্তরাষ্ট্র তো এর বড় উদাহরণ। ভাষার স্বীকৃতি দিতে গিয়ে নিউইয়র্কের বোর্ড অব এডুকেশন বাংলা ভাষাভাষী দোভাষীর ব্যবস্থা করেছে। বিভিন্ন হেলথ ইনস্যুরেন্স হাসপাতালগুলো গর্বের সঙ্গে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে- ‘আমরা বাংলায় কথা বলি’। বাংলা ভাষার এই অর্জন প্রজন্মের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করছে এই বিদেশেও।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভাষার সঙ্গে অর্থনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। চীন এ সময়ে প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে বিশ্বের চারণভূমি। তাই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব শোরুম, নির্মাণ কারখানা তৈরি করছে চীনে। এজন্য এখন যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, কিংবা নিতে চাইছে তাদের জন্য চীনা ভাষা অপশনাল করা হয়েছে এবং অনেক নবিস ব্যবসায়ী নিজ ব্যবসা প্রসারের প্রয়োজনে জাপানি কিংবা চীনা ভাষা রপ্ত করে নিচ্ছেনও। লক্ষ্য একটিই, বিশ্বে ব্যবসার প্রসারকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা। চীন, জাপান, হংকং, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎই তাদের ভাষা প্রসারে বিশ্বব্যাপী ভূমিকা রাখছে। দৃষ্টি কাড়ছে বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ীদের।ভাষা একটি রাষ্ট্রের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে গভীরভাবে। যে শিশু ওই রাষ্ট্রের ভাষার মর্ম মূলে পৌঁছতে পারে, তার লক্ষ্যের পরবর্তী ধাপটি হয় সে ভাষার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা। যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোয় প্রথম থেকে পঞ্চম গ্রেডের ছাত্রছাত্রীদের একেকটি দেশের ওপর বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে ওই দেশ সম্পর্কে পুরো জ্ঞানদানে উদ্বুদ্ধ করা হয়। লক্ষ্য হচ্ছে, একজন মার্কিনি যাতে বড় হয়ে ওই রাষ্ট্র, ওই ভাষার সারটুকু আহরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারে।দুই.একটি রাষ্ট্রের ভাষা কি বদলে যায়? ভাষা কি আধুনিক হয়? এসব প্রশ্ন আমরা মাঝে মাঝেই দেখি। বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন প্রবণতা শুরু হয়েছে- ‘কবিতার ভাষা’। বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকী, লিটল ম্যাগাজিন ‘কবিতার ভাষা সংখ্যা’ প্রকাশ করছে মাঝে মাঝে। একটি ভাষায় অন্য ভাষার ঘনিষ্ঠ প্রভাব পড়াটা খুবই স্বাভাবিক। বাংলা ভাষায় অনেক ইংরেজি প্রতিশব্দ মিশে আছে, যা এখন আমরা বাংলা বলেই মনে করি।ভাষার বদলে যাওয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সুইডিশ ভাষাবিজ্ঞানী এডলফ মেকিনসের ভাষ্য হচ্ছে, যেহেতু অক্ষর ও শব্দগুলো বদলায় না, অতএব মৌলিক ভাষা বদলাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। যা বদলায় তা হচ্ছে বাক্য গঠনের ধরন। চিত্রকল্পের ব্যবহার এবং বাক্য প্রকরণের গতিবিন্যাস। যে কবি অনুপ্রাস কিংবা নেপথ্য চিত্রের আধুনিক বিন্যাস ঘটিয়ে কবিতা লিখছেন, তিনিই দাবি করছেন তিনি নতুন ভাষায় লিখছেন। যদিও শুধু তার বলার ধরনটি বদলেছে। বাংলা সাহিত্যে বিদেশী গল্প, কবিতা, উপন্যাসের ছায়া অবলম্বন করে অনেক গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটিকা রচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, একটি অন্য ভাষার লেখা যখন পাঠকের মনে দাগ কাটে, তিনি যদি লেখক হন তবে তার পরবর্তী লেখায় এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে ভাষার বিবর্তনের আলো। অন্য ভাষার দূতিময় সারমর্মকে নিজ ভাষার পাঠকের জন্য তুলে আনাকে বৃহৎ সাহিত্য ভাণ্ডার তেমন দোষের কিছু বলে বিবেচনা করে না।ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির একটি গৌরবময় অধ্যায়। কারণ একমাত্র বাঙালি জাতি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি।মাতৃগর্ভ থেকে যেমন সন্তানের জন্ম হয়, তেমনি এ দেশের জনজাতির মর্মস্থল থেকে বাংলা ভাষা উদ্ভূত হয়। সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় দেশের ভূমিজ সন্তানদের জীবনরস মন্থন করে বাংলা ভাষার জন্ম হয়, যা জাতির নিরলস চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে বিকশিত ও প্রসারিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।আঞ্চলিক প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে। প্রাকৃতজনের তথা সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাই প্রাকৃত ভাষা। ‘চর্যাপদ’ হল প্রত্নবাংলা বা আদি বাংলার নিদর্শন। প্রাকৃত ভাষা ক্রমে লোপ পায়, কিন্তু মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা টিকে থাকে।সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, বাংলা ভাষা ভুঁইফোড়ের মতো হঠাৎ করে জন্মলাভ করেনি বা একে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়নি। এর মূল জাতীয় জীবনের গভীরে প্রোথিত। শুধু ভূখণ্ড নয়, নৃতত্ত্ব-জাতিতত্ত্বের মতো ভাষাতত্ত্বের অনেক সম্পদ আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছি।আমাদের আজকের মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা সমগ্র জাতির শত-সহস্র বছরের সাধনার ফসল। তবে প্রশ্ন ওঠে, আমাদের মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার চলার পথ কি সরল-সুগম ছিল নাকি বন্ধুর-কণ্টকাকীর্ণ ছিল? এ কথা সবাই জানে, ভাষার জন্য বাঙালিকে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে যখন জাতিসত্তার বিকাশ ঘটতে থাকে, তখন থেকেই একটা বৈরী পরিবেশের মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। এখন প্রশ্ন হল, মাতৃভাষার এত বড় গৌরব ও অর্জনকে আমরা কি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি?বাংলাদেশে গত দু’দশকে নামি-দামি বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। বিশ্বের বর্তমান প্রবহমানতার নিরিখে ইংরেজি শিক্ষা অত্যাবশ্যক বলেই আমি মনে করি। কারণ ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী খুব সহজেই সমসাময়িক বিশ্বমান অর্জন করতে পারে। এর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। আর রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়োগ সম্পর্কে প্রথমে যে কথাটি আসে, রাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়া, দলিল-দস্তাবেজ এখনও যখন ব্রিটিশ শাসনের ছায়া নির্ভর, তখন শুধু ভাষা পরিবর্তনের কথা আসছে কেন? বদলালে তো আমূল বদলে দিতে হবে- পুরো দলিলপত্র, প্রক্রিয়া। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্যাণে বদলে যাচ্ছে গোটা বিশ্বের ভাষা প্রকাশের দৃশ্যকল্প। ছাপা বই প্রকাশনার পাশাপাশি এখন ইন্টারনেটে ই-বুক প্রকাশের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে পাঠকের তৃষ্ণাকে। এখন এক সঙ্গে একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পাঠক একই বই পড়তে পারছেন। মেধা ও মননের বিকাশে তাই ভাষার বিস্তার ঘটছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত।এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে যদি ভাষান্তরের মাধ্যমে বিশ্বের অন্য ভাষাভাষী মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তবেই উপকৃত হতে পারে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা। শুধু ভাষার সৌন্দর্যই নয়, রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত সৌন্দর্য, স্থিতিশীলতা এবং শান্তির অব্যাহত ধারা বহাল থাকলে বাংলাদেশও হতে পারে বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগ, পর্যটন ও বাণিজ্যনগরী। আর সে জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আমি মনে করি, প্রজন্মকে ভাষাপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হলে আগে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষার উজ্জ্বলতা দিতে হবে। সব বাধা সরিয়ে নিতে হবে। শুধু অর্জন নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তিই দিতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শান্তির নিবাস।===========================================দৈনিক যুগান্তর ॥ ঢাকা ॥ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ শনিবার
false
hm
টিউলিপ আর হাওয়াকলের দেশে ১. ইয়োরোপের মূল ভূখন্ডে সচলদের উপস্থিতি সরব নেদারল্যান্ডস আর জার্মানিতেই। বহু দূরে ইউক্রেইনে থাকেন সন্ন্যাসী। ঘুরে ঘুরে এর আগে কাসেলের সচলরা দেখা করে এসেছেন জার্মানির কয়েকজন সচলের সাথে, তাই মে মাসে কয়কেনহোফের টিউলিপ মেলাকে কেন্দ্র করে সীমান্তের ওপারে তানবীরা তালুকদারের কাছ থেকে একরকম জবরদস্তি নিমন্ত্রণ আদায় করেই ছাড়া হলো। জার্মানির ভেতরে, আগেই বলেছি, ট্রেনযাত্রার বিশেষ সুবিধা আছে। পাঁচজন মিলে একটা দল বানিয়ে সর্বনিম্ন মাথাপিছু খরচে ঘোরাফেরা করা যায় দেশটাতে, কিন্তু এ সুবিধা ইয়োরোপের অন্য দেশগুলিতে ততটা নেই [এ ব্যাপারে আমার জ্ঞান সীমিত, কারণ ইয়োরোপের খুব বেশি দেশে আমি ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারিনি] বলেই জানি। কাসেল থেকে সীমান্তের ওপারে ভেনলো শহর পর্যন্ত যেতে দু'টো প্রদেশ পড়ে, হেসেন আর নর্ডরাইনভেস্টফালেন, ছাত্রত্বের জোরে হেসেনের ওপরের আদ্ধেকটা আমি আর চৌধুরী ছাত্রটিকিটেই চলতে পারি, আর নর্ডরাইনভেস্টফালেনের জন্যে কাটা হলো প্রদেশটিকেট। সীমান্তে শেষ শহর কালডেনকিরশেন পর্যন্ত তা দিয়েই চলা যায়। একেবারে শেষ মাথায় গিয়ে টিকেটচেকার জানালো, বাকিটুকু পথের জন্যে টিকেট কাটতে হবে, নইলে জরিমানা খেতে হতে পারে। সীমান্ত অতিক্রম করার সাথে সাথেই মোবাইলে এসএমএস, বৎস, তুমি ইয়োরোপের সব জায়গায় এখন মিনিটে অত সেন্ট করে কথা বলতে পারবে, অত সেন্ট করে এসএমএস খিঁচতে পারবে। তবে এসব মাড়োয়াড়ি বুলি কানে না নিয়ে চোখদু'টোকে জানালার ওপাশে তাগ করলেই টের পাওয়া যায়, জার্মানি বোধহয় পেছনেই ফেলে এসেছি। চারদিকে বাড়িঘরের স্থাপত্য অন্যরকম, জমি আর গাছপালা অন্যরকম। ভাটির দেশ নেদারল্যান্ডসে চলে এসেছি আমরা। ভেনলোতে নেমে আইন্ডহোফেন [ডাচরা বোধহয় এইন্ডহোফেন বলে] যাবার এবং ফিরে আসার টিকেট কাটা হলো। ডাচ ট্রেনে চড়লেও টের পাওয়া যায়, জার্মানি পেছনে ফেলে আসা হয়েছে। ঝাঁ চকচকে ট্রেন, কিন্তু আসনগুলো ততখানি এর্গোনমিক নয়। মাল রাখার জায়গাটা সংকীর্ণ, লোকজন সবাই স্যুটকেস পায়ের কাছে নিয়ে বসেছে, মাথার কাছে খোপ সব খালি। ডাচরাও আকারে জার্মানদের মতোই অসুর, তাদের বাক্সপ্যাঁটরাও আসুরিক হওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু সেগুলো রাখার জায়গা সুন্দরীদের হৃদয়ের মতোই অপরিসর। আসার পথে শুরুর দিকে বিস্তর হাঙ্গামায় পড়েছিলাম আমরা, শুক্কুরবার দুপুর বলে কাসেলের সব লোক যেন গোঁ ধরে ভারবুর্গ রওনা দিয়েছিলো, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিলো অনেকখানি পথ। এক বুড়ির পাশের সীট খালি হতেই বুড়ি সুদূরে দন্ডায়মান আরেক ধলা ছোকরাকে যেভাবে কাতর স্বরে তার পাশে বসার আমন্ত্রণ জানালো, তাতে চটেমটে চৌধুরী খালি আসনের পাশেই দাঁড়িয়ে রইলেন বেশ কিছুক্ষণ। পরে বসবার অনুমতি চাইবার পর বুড়ি এমন কুইনিনগেলা চেহারা করে অনুমতি দিলো, তাতে বোঝাই যায়, একজন কালা আদমী তার পাশে বসে কোথাও যাবে, তা বরদাশত হচ্ছে না মোটেও। তবে ভারবুর্গ পেরোনোর পর বেশ জাঁকিয়ে হাতপা ছড়িয়ে কল ব্রিজ খেলতে খেলতে গিয়েছি আমরা। ভেনলো থেকে আইন্ডহোফেন পর্যন্ত ট্রেনে আর তাস না খেলে আশপাশটা দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম সবাই। গাছপালায় ছাওয়া চারপাশ, আর মাঝে মাঝে নিচু মাঠ, স্নিগ্ধ খাল, প্লাস্টার ছাড়া ইঁটের বাড়িঘর। ট্রেনে আমাদের কামরাতে নেদারল্যান্ডসের গঞ্জিকাসংস্কৃতির তিনজন সেবক নিজেদের মধ্যে কী এক ইশারার ভাষায় কথা বলতে বলতে একটু পর পর হাসছিলো, শুষ্করসের রসিক চৌধুরী বোধহয় সে কারণেই একটু পর পর গলা খাঁকারি দিতে দিতে আমস্টারডামের নাম জপ করছিলেন। ডাচ তরুণীদের বড় ভালো লেগেছে আমার। জার্মান মেয়েদের মধ্যে একটা রুক্ষভাব আছে, তারা দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন, কমনীয়তার একটু টান থাকে সাধারণত (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে ব্যতিক্রমই)। ডাচ ব্যাটামুখী মেয়েদের বাদ দিলে বাকিরা বেশ কমনীয়, ভাটির দেশের মেয়ে বলেই হয়তো। কিংবা কে জানে, হয়তো সসেজ খায় বলেই জার্মান মেয়েরা কর্কশ, আর চীজ খায় বলে ডাচ মেয়েরা একটু কম কর্কশ। মনে মনে পরিকল্পনা করলাম, এরপর একা বেড়াতে আসতে হবে। এ ব্যাপারে আরও বিশদ জ্ঞানার্জন প্রয়োজন। আইন্ডহোফেন মোটামুটি বড় স্টেশন, নেমে বাইরে দাঁড়ালাম আমরা দুলাল ভাইয়ের অপেক্ষায়। যোগাযোগ হয়েছিলো ট্রেন জার্মানি পেরোনোর আগেই, তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই দুলাল ভাইয়ের সাক্ষাৎ মিললো। পরবর্তী দিনে তাঁর সাথেই অধিকাংশ সময় আড্ডায় কেটেছে। স্বল্পবাক কিন্তু রসিক মানুষ, আর তাঁর গল্পের ঝাঁপিটি দারুণ। তানবীরা তালুকদার আর পিচকিনি মেঘলার সাথেও এই প্রথমই আমাদের সাক্ষাৎ, তাঁদের ছিমছাম বাড়িটা ঢুকেই একরকম দখল করে ফেললাম আমরা। সচলদের আড্ডায় সচলায়তনই মুখ্য হয়ে থাকে, তাই নানা লেবু চিপতে চিপতে চিপতে চিপতে একসময় দেখলাম, কয়েকটা বিয়ারের বোতল খালি, আর টেবিলে এসে জমেছে কলার খোসার ভর্তা, শুঁটকির ভর্তা, ইলিশ মাছ, কই মাছ আর চিংড়ি-সব্জি। মোটামুটি কনুই মেরে খাওয়া শুরু করলাম। এইসব জিনিস সামনে পেলে মনে হয়, কা তব কান্তা কস্তে পুত্র! শুঁটকির ভর্তা নিয়ে বলাইনীর সাথে মরণপণ লড়াই করে ভাতের হাঁড়ি খালি করে ছাড়লাম। এখনও ভার্সাই চুক্তি করে রেখেছি, কাসেলে ফিরে শুঁটকির ভর্তা খাওয়ালেই কেবল ছবি হস্তান্তর করা হবে, নইলে নয়। দিনটা শেষ হোলো তানবীরার তৈরি ঘরে পাতা দই দিয়ে। স্বভাবসুলভ ঘ্যাঙাচ্ছিলাম, না না খাবো না, মিষ্টি জিনিস কম খাই, মুখে দেয়ার পর বাকরুদ্ধ হয়ে আবার কনুই চালানো শুরু করলাম। ২. পরদিন সবাই নড়েচড়ে উঠে কয়কেনহোফের জন্যে তৈরি হলাম। ক্যামেরার ব্যাটারি চার্জ দিয়ে এসেছি একেবারে ঘর থেকেই। ডালপুরি আর স্যান্ডউইচ ধ্বংস করে দুলাল ভাইকে একরকম অস্ত্রের মুখে বন্দী করে নিয়ে চললাম। বহু দূরের লিসে শহরে আমাদের ড্রাইভ করে নিয়ে যাবেন তিনি। আইন্ডহোফেন শহরটা নিরিবিলি, রাস্তার পাশে একফালি ঘাসের পর সাইকেল চালানোর চওড়া রাস্তা। এ শহরে সাইকেলের আধিক্য দেখেই বোঝা যায়, বাসট্রামের সুবিধা কম, কিংবা টিকিটে অনেক খর্চা, রাস্তায় গাড়ির দেখা কদাচিৎ মেলে, হাজারে হাজারে সাইকেল। সাইকেল চালানোর ভঙ্গিটিতেও যেন বোঝা যায়, জার্মানিতে নেই আমরা। জার্মানরা সব কাজই করে দারুণ তাড়াহুড়ো নিয়ে, হন্তদন্ত হয়ে চলে তারা, ডাচদের শরীরের ভাষায় একটা নিশ্চিন্ত নিরিবিলি আয়েশি ভাব আছে। একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে পাশাপাশি সাইকেল চালাচ্ছে মন্দলয়ে। সমতল আর ভাটির দেশের মানুষেরা বোধহয় এই আরামটুকু সব আচরণেই ফুটিয়ে তোলে। তপন রায়চৌধুরীর [প্রথমে বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে বসেছিলাম, পাণ্ডবদা শুধরে দিলেন। আসলে ঐ ডাচ তরুণীদের কথা ভাবতে ভাবতে ... বুঝতেই পারছেন, বয়সের দোষ] বাঙালনামার কথা মনে পড়ে গেলো, তিনি সুখী ডাচ জাতির জীবনকে তাদেরই বিশেষণ "খজেলিক" দিয়ে মোহরাঙ্কিত করেছিলেন। নেদারল্যান্ডস জার্মানির চেয়ে অনেক ছোট, তাই বড় শহরগুলোও কাছাকাছি। জার্মানীতে এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে গেলে যেমন বেশ খানিকটা গ্রাম, পাহাড়, জঙ্গল (উত্তরে পাহাড় নেই) পেরিয়ে যেতে হয়, সেই ঝামেলা নেদারল্যান্ডসে নেই। আমস্টারডাম, রটারডাম, ডেন হাগ, সব কাছাকাছি যেমন। রাস্তার পাশে জমি অনেক নিচু, সাধে তো আর নেদারল্যান্ডস (নিচু দেশ) নাম হয়নি। দুলাল ভাই গাড়ি চালাতে চালাতে গল্প করছিলেন নেদারল্যান্ডবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে। আর আমরা যেমন, আমাদের সব আলাপেই বাংলাদেশ এসে উঁকি দেয় কৌতূহলী শিশুর মতো। নেদারল্যান্ডসের জমিজিরাত দেখতে বাংলাদেশের মতোই, পার্থক্য হচ্ছে জমি বিভক্ত করা খাল দিয়ে, আল দিয়ে নয়। আর বাংলাদেশটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে জিএসএম টাওয়ার দিয়ে, এদের এখানে অত উঁচু বলতে আছে কেবল উইন্ড টারবাইন। একটু পর পর এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে ফুটফুটে একেকটা উইন্ডমিল। মনে হচ্ছে কোথাও একটু গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করলেই দেখা মিলবে রোগা রোসিনান্তের পিঠে চড়া সিড়িঙ্গে মারকুটে দন কিহোতের, পেছনে গাধায় চড়ে সাঞ্চো পানজা, "থামুন সেনিওর, থামুন ...!" দুলাল ভাইয়ের গল্পগুলি নিয়ে সচলায়তনে গোটা কুড়ি মারদাঙ্গা গল্প হতে পারে, কিন্তু সেগুলি তাঁর নিজেরই লেখা উচিত, তাই গল্পগুলো এড়িয়ে ভ্রমণেই সীমাবদ্ধ থাকি। ডাচ ভাষাটাকে জার্মান আর ইংরেজিকে যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ করা একটা ভাষা বলে মনে হয়েছে, শুনে যদিও কিছু বুঝতে পারি না, তবে পড়লে দশ শতাংশের মতো আঁচ করা যায়। ট্রেনে দরজার পাশে লেখা, LAAT UITSTAPPERS VORGAAN, জার্মানের সাথে ছাপ মিলিয়ে দেখে আন্দাজ করা যায়, বলা হচ্ছে, যারা নামবে তাদের আগে যেতে দাও। জার্মানে ডিট্যুরকে বলা হয় UMLEITUNG, ডাচে OMLEIDING, এমনি ধারা আর কি। তবে ইংরেজির ব্যাপারে গড় জার্মানের যে বিতৃষ্ণা, তা গড় ওলন্দাজের নেই, পেট্রল পাম্পের দোকানদারনী ভুরু না কুঁচকে সাবলীল ইংরেজিতে কথা বলে যায়। জার্মানীতে ইংরেজি জানা লোকও ইংরেজি বলে নিতান্ত ঠ্যাকায় পড়লে, আর ইংরেজি অনেকে ভালো করে জানেও না। ভাঙা ভাঙা জার্মান বললেও তারা সহযোগিতা করে, ইংরেজি শুনলেই চটে যায়। ওলন্দাজরা এই মেজাজ থেকে অনেকটা মুক্ত। নেদারল্যান্ডসে আরো চোখে পড়লো কালা আদমী, তারা সংখ্যায় জার্মানীর চেয়ে অনেকগুণ বেশি। ভারতীয়, আফ্রিকান, দক্ষিণামেরিকান, কালো, শ্যামলা, বাদামী হরেক চামড়ার লোক রাস্তাঘাটে। কাসেলে যেমন উঠতে বসতে তুর্কি। আইন্ডহোফেন থেকে লিসে শহরে পৌঁছতে মাঝে পড়ে স্খিফোল বিমানবন্দর, হাইওয়ের দুপাশে, রাস্তায় নেমে ঢিল মারলে বিমান ছ্যাঁদা করা সম্ভব। কেএলএমের একেকটা ঢাউস বিমান দিব্যি আয়েশে বিশ্বরোডের পাশে পার্ক করে রাখা। ভাবলাম, বাংলাদেশ হলে বিমানের চাকা খুলে নিয়ে গিয়ে বেচে দিতো কোন রুস্তম। তেল তো দুইয়ে নিতোই। ৩. কয়কেনহোফে পৌঁছে দেখি বিশাল গাড়ির হাট। শত শত গাড়ি পার্ক করে রাখা মাঠে। তারই একটা করে রাখার পর হুড়মুড়িয়ে বাগানের দিকে রওনা দিলাম সবাই। বলাই একেবারে কাসেল থেকে যাবতীয় টিকেটাদি কেটে প্রিন্টাউট করে বয়ে নিয়ে এসেছেন, তাই কোন লাইন ধরাধরির ঝামেলায় আর যেতে হলো না। কয়কেনহোফের প্রবেশপথ কয়েকটা, যেদিক দিয়েই ঢোকা হোক না কেন, টাশকি খেতেই হবে। কেবল টিউলিপ আর ড্যাফোডিল দিয়ে যে এত বড় একটা জায়গাকে এত মনোহর করে সাজানো যায়, তা না দেখলে বোঝা যাবে না। আমাকে যদি কখনো বলা হয়, একেবারে একা কিছু সময় কাটানোর জন্য কোন জায়গা বেছে নিতে, নিঃসন্দেহে কয়কেনহোফকে বেছে নেবো। হাজার হাজার লোক গিজগিজ করছে চারপাশে, পটাপট ছবি তুলছে লোকজন ফুলের সামনে, যদিও ঘাসের ওপর নোটিশ লাগানো, ঘাস মাড়াবেন না। কে শোনে কার কথা? সবাই কি আর আমাদের মত ভালো লোক? চারপাশে শোনা যায় মানুষের কলকাকলি, ডাচ ফ্লেমিশ আলাদা করে বোঝার বিদ্যা নেই আমার, কী বলা হচ্ছে তার ষোল আনা না বুঝলেও জার্মান ইংরেজি ফরাসী স্প্যানিশ হিন্দি আর বাংলা যে বেশ চলছে আশেপাশে, তা টের পাওয়া যায়। আমি আমার মান্ধাতার আমলের ক্যাননেরঝোলাখানা চৌধুরীর কাঁধে চাপিয়ে ট্রাইপডের আগায় ক্যামেরা এঁটে ছবি তুলতে লেগে গেছি। আমার চেহারাটা এমনিতেই কদাকার, তারওপর হাবভাবেও একটা ক্যামঞ্জানি ভাব আছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশের লোকজন আমাকে দেখলেই সুড়সুড় করে জায়গা ছেড়ে দিতে শুরু করলো ছবির জন্যে। এক জাপানী প্রথমটায় খেয়াল করেনি আমাকে, মাজা মুচড়ে বারবার ছবি তুলছিলো একই ফুলের সামনে, যখন দেখলো আমি কোমরে হাত রেখে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছি, সে প্রায় উড়ে ভাগে আর কি! শুধু তা-ই নয়, অনেকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আমার ছবি তোলাও দেখা শুরু করলো, সাথে মৃদু ফিসফাস। এক মহিলা তাঁর মহামূল্যবান নাইকন ক্যামেরা নিয়ে ছুটে এসে পাকড়াও করলেন আমাকে, "মহাশয়, একটু কি দেখিবেন, কী সমস্যা হইয়াছে ফুটোস্কোপখানায়? টিপি কিন্তু কর্মসাধন হয় না!" আমি আমার পোড়া চেহারাকে বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতার আঁচে প্রায় অঙ্গার করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে তাঁকে হতাশ করে জানালাম, এ ত্রুটি এখানে সারাবার নহে। আপসোস, মহিলা প্রৌঢ়া ছিলেন, কোন ডাচ তরুণী হলে জান লড়িয়ে দিয়ে ক্যামেরা ঠিক করে দিতাম। কয়েক পা এগোলে কেউ না কেউ এসে উঁকি মেরে ক্যামেরার ব্র্যান্ড-মডেল দেখে যায়, আরো পোড়ো যারা তারা লেন্স দেখে। না বুঝেই অনেকে "কোয়াইট আ প্রফেশনাল গ্যাজেট" এর সার্টিফিকেট দিয়ে দিলো। মনে মনে ভাবলাম, অরূপ বা মুস্তাফিজ ভাইয়ের লেন্সগুলি নাগালে থাকলে হয়তো মুরীদও জুটিয়ে ফেলতে পারতাম কয়েকটা। হয়তো কোন ওলন্দাজ তরুণী এসে সানুদেশ আলিঙ্গন করে ফুঁপিয়ে উঠতো, "হে কেলেকিষ্ঠি কেশবৎ, আমায় ফোটো খিঁচওয়ানা শিখলা দে। ইয়ে জ্ঞান মুঝে দে দে ঠাকুর!" আশপাশে মোটামুটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অবশেষে কয়কেনহোফ ছেড়ে যখন বেরোলাম, একটা চিন্তাই কেবল মাথায় ঘুরছিলো, এত অজস্র ফুলের দেশ বাংলাদেশে এমন একটা বাগান কেন থাকবে না? কী ঘটতো এমন একটা বাগান দেশে থাকলে? লোকে ফুল ছিঁড়তো? বাগান নষ্ট করতো? চাঁদাবাজি লুটপাট চলতো? নাকি আদৌ দর্শকই হতো না? ফুলের সমঝদার কি কেউ নেই দেশে? আমাদের আরবান প্ল্যানার-ডিজাইনার আর স্থপতিরা কি কেবল কংক্রীট ইঁট-কাঠ নিয়েই ভাবেন? ৪. এরপর ঠিক করলাম, লিসে যখন এসেছি, একবার সবাই মিলে হেগে যাই। দুর্দান্তের সাথে ফোনে আলাপ হলো, তিনিও জানতে চাইলেন, আমরা হেগে যাবো কি যাবো না। ধূসর গোধূলিও সুদূর অতীতে একবার পণ করেছিলো, সে বন থেকে হেগে যাবে, কিন্তু এ যাত্রায় কী এক মাফিয়াবৃত্তিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আর সময় করতে পারেনি সে। ডেন হাগ বা দি হেগ শহরটা উত্তর সাগরের তীরে। শেভেনিঙেন সৈকতটা আমাদের কক্সবাজার সৈকতের তুলনায় তুশ্চু, তবে অনেক পরিচ্ছন্ন। গোটা সৈকত জুড়ে পায়ে হাঁটার চওড়া পথ, সৈকতের এ পাশে সার বাঁধা রেস্তোরাঁ, দূরে দেখা যাচ্ছে নোঙর ফেলা প্রকান্ড সব জাহাজ। অদূরে এক ফাইভস্টার হোটেল, শুনলাম আমাদের নেত্রীরা হেগে এলে ওখানেই ওঠেন। ম্যাকডোনাল্ডসে খানিকটা উদরপূর্তি করে সৈকতে এক চক্কর হেঁটে আবার ফিরে চললাম আমরা। বলাই সৈকতে লিখলেন, সচলায়তন, জোয়ার এলে সে লেখা মুছে দেবে নর্থ সীর ঘিনঘিনে ফেনা। আইন্ডহোফেন ফেরার পথটা কাটলো গল্পে। দুলাল ভাই পুরোটা সময়ই সুদূর অতীতে ফিরে গেলেন, গল্পে গল্পে পুরোটা পথ উপভোগ্য কাটলো। সন্ধ্যেবেলা ফিরে দেখা মিললো দুর্দান্ত দম্পতি আর তাঁদের দুই রাজকন্যার। ঘন্টাদু'য়েক হৈহল্লার পর আবার সেদিনের মতো ক্ষ্যামা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই। ৫. সব ভ্রমণের ফেরার পথটা হয়তো নিরামিষ থাকে না, তবে এবারে ছিলো। কে জানে, হয়তো দুইদিন জমজমাট দেশী আড্ডার পর আবার সেই স্তিমিত কর্মপিষ্ট জীবনে ফেরার ব্যাপারটাই সবকিছু নিরামিষ করে তোলে। তালুকদার পরিবারকে দুইদিন নিরতিশয় জ্বালাতন করে আইন্ডহোফেন থেকে বিদায় নিলাম আমরা। স্টেশনে প্রতি দশজনের একজনের হাতে প্রকান্ড ফুলের তোড়া বা টব, এরা অনেক ফুল কেনে সবাই। বাকিটা পথ সেই একই কল ব্রিজ। নেদারল্যান্ডস থেকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া কেবল মনে স্মৃতি, ক্যামেরায় ছবি আর পেটে তানবীরা তালুকদারের ভর্তা-ভাজি-বিরিয়ানি। গ্রীষ্মেই আবার কাসেলে তাঁদের সাথে জমজমাট গ্রিল-তেহারি-আড্ডা-ভ্রমণের আমন্ত্রণ ছাড়া আর কিছু তো দিয়ে আসার ছিলো না আমাদের। [কিছু ছবি পরে যোগ করবো]
false
hm
টিরোলযাত্রা গত সপ্তাহে বোঁচকার মধ্যে ক্যামেরা আর হাতে ট্রাইপড নিয়ে ছাড়া আধঘন্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম। পাশে ধূমায়মান হের চৌধুরী। তারও হাতে বোঁচকা। জার্মানিতে মিটফার বলে একটা ব্যবস্থা চালু আছে, এটা জার্মানবাসী সচলের লেখা পড়লে টের পাওয়া যায়। ব্যবস্থাটা উপকারী। ধরুন আপনি একজন গাড়িঅলা [বা গাড়িঅলি], জার্মানির এক শহর থেকে আরেক শহরে [সেটা জার্মানির বাইরেও হতে পারে] যাচ্ছেন। ম্যালা তেল খরচা হবে। এরচে সস্তায় যাওয়া যায় ট্রেনে, কিন্তু আপনাকে গাড়ি নিয়ে নড়তে হবে। আপনি তখন যেটা করবেন, একটা অনলাইন ডেটাবেজে নিখরচায় বিজ্ঞাপন দেবেন, যে আমি অমুক দিন অমুক সময়ে অমুক শহর থেকে তমুক শহরের দিকে যাচ্ছি, পথে চমুক আর সমুক শহর হয়ে যাবো, কে কে যাবি রে তোরা আয়। ভাড়া মাত্র মাথাপিছু অ্যাতো ইউরো। এই ভাড়া স্বাভাবিকভাবেই গাড়ির হালহকিকত ভেদে ওঠেনামে, তবে একাকী ট্রেনের টিকিটের চেয়ে সেটা খানিকটা সাশ্রয়ী হয়। গাড়িঅলারও পয়সা উসুল হয়ে যায়। আমার এককালের চিংকু প্রতিবেশিনীও এ যাত্রায় আমাদের সঙ্গী ছিলো। পেছনের সিটে জায়গা কম ছিলো, একদম ঠাসাঠাসি করে বসে ... ভারি মধুর অভিজ্ঞতা, বিস্তারিত কহতব্য নয়। আমরা দরিদ্র ছাত্র, তাই এই ব্যবস্থা আমাদের জন্যে ভালো, গন্তব্যটা যেহেতু মিউনিখ। সেখানে সচল তীরন্দাজ আর সচল পুতুল থাকেন, তাঁদের সাথে এক চক্কর আড্ডা মারতেই যাওয়া। সচল হাসিব যোগ দেবেন আরেক শহর থেকে। যাত্রাপথে যা ঘটলো সেগুলো নিয়ে আরেকটা গল্প লিখবো নাহয়। পৌঁছে কী হলো, সেটা নিয়েও আরেকটা গল্প লেখা যাবে। তার পরদিন যে দাওয়াত ছিলো, সেখানে নাচগান খানাপিনা হলো, সেটা নিয়েও আরেকটা গল্প লেখা যায়। এমনকি ফেরার পথে এলিভেটরে আটকা পড়ে যে ধুন্ধুমার কাণ্ড হলো, সেটা নিয়েও আমরা পাঁচজনে [সচল মনিরোশেন যোগ দিয়েছিলো রোববার। এই ব্যাটা পুরাই কুফা। সাথে থাকলে পুলিশে ধরে, কুকুরে তাড়া করে, লিফট বন্ধ হয়ে যায়, গাড়ি নষ্ট হয়, ট্রেন মিস হয়, কবে যে মনিরোশেনের সান্নিধ্যগুণে উল্কাপাতের শিকার হই সে আশঙ্কায় আছি] পাঁচ রকম গল্প লিখতে পারি। কিন্তু সেসব না বলে টিরোলযাত্রার গল্পই বলি। তবে তার আগে বলি, তীরন্দাজ মারদাঙ্গা বাঁধাকপি ভাজি করেন। সেদিন রাতে বাটি থেকে চেঁছেপুছে খেয়েছি সবাই মিলে। সচল হাসিব যে এতগুলো বাঁধাকপি এভাবে কচমচিয়ে খেতে পারেন, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। টিরোল এখন দুই দেশে ভাগ হয়ে গেছে, অস্ট্রিয়া আর ইতালি। টিরোলে প্রচুর স্কি রিসোর্ট আছে, আর দুনিয়ার কিছু বাঘা বাঘা মাউন্টেনিয়ার এসেছে টিরোল থেকে। জার্মানির বাভারিয়া প্রদেশ থেকে সীমান্ত টপকে দক্ষিণে ঢুকলেই উত্তর টিরোল প্রদেশ। এর প্রধান শহরের নামটা সম্ভবত আমাদের অনেকেরই চেনা, ইনসব্রুক। ইন নামের একটা নদী টিরোলের বেশ খানিকটা জুড়ে এঁকেবেঁকে গেছে, উপত্যকামালার নামও এই নদীর নামে, ইনটাল। তীরন্দাজ আমাদের সেই ইনটালের এক নিভৃত কোণা [জায়গাটার নাম ৎসিয়ার্ল] ঘুরিয়ে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো একটা খরস্রোতা ঝর্ণা দেখতে যাওয়া। জার্মান ভাষায় খাল বা ঝর্ণাকে বলে বাখ, এই ঝর্ণাটার নাম ফচশারবাখ। যাবার পথে একটা দুর্ধর্ষ ঢাল ছিলো রাস্তায়, সেখানে গোটা রাস্তা ম ম করছে ব্রেক পোড়া গন্ধে। মাইল্ড স্টিল পুড়ে গেলে কেমন গন্ধ বের হয়, সেটা জানার আগ্রহ থাকলে ওখানে ভালো ব্রেকঅলা গাড়ি নিয়ে চক্কর দিয়ে আসতে পারেন, কিলোমিটার খানিক রাস্তা জুড়ে এই ঘ্রাণ। এবং ঢালের ওপাশে দুর্দান্ত সুন্দর একেকটা পাহাড়, আর তারচে সুন্দর উপত্যকা। টিরোলের লোকজন মোটামুটি হাসিখুশি, শুধু তাই না, কফির সাথে এক গ্লাস পানি দেয়, যেটা বায়ার্নেও কেউ করে না। কফিঅলি চাচীকে একটা পাহাড়ের নাম জিজ্ঞেস করলাম, সে একেবারে এক পাহাড়ুকে ধরে আনলো নাম জানার জন্যে। জানলাম, সে ৎসিয়ার্লের সবচে নামকরা মাউন্টেনিয়ার এবং সে সর্বদাই সেই কফিশপে কফি খেতে আসে। মাউন্টেনিয়ার ভদ্রলোক বেশ রসিয়ে রসিয়ে সবক'টা চূড়ার নাম বললেন, ঐ যে দেখছেন গোলগালমতো ওটার নাম গোদা জলষ্টাইন [গ্রোসার জলষ্টাইন], আর ওরচে খানিক উঁচু ঐ যে ওটা দেখছেন ওটার নাম খোকা জলষ্টাইন [ক্লাইনার জলষ্টাইন] ... ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেকগুলো নাম। আমি বুঝলাম, ইনি পাহাড়গুলো চড়ে চড়ে বাকি রাখেননি কিছু। যেখানে দু'টো পাহাড় আছে বলে আমি ভাবছিলাম, তিনি আট দশটা পিক শনাক্ত করলেন। স্যান্ডউইচ বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা, কল্লোলিনী ফচশারবাখের পাশে কাপড় পেতে বসে সেটা দিয়ে লাঞ্চ হলো। জায়গাটা বেশ। ঝর্ণার কনকনে জলে পা ডুবিয়ে নিজের মোজার দুর্গন্ধ মারার জন্যে এক অসাধারণ জায়গা। গোটা যাত্রাই তীরুদার সৌজন্যে, আমাদের ভগরভগর সহ্য করে সারাটা দিন গাড়ি চালিয়ে বেচারা হয়রান হয়ে মিউনিখে ফিরেছেন। অবশ্য চোস্ত গরুর গোস্তো আর মুরগির গিলাকলিজা ছিলো রাতের মেন্যুতে, ফ্রাউ পুতুলের সৌজন্যে। মনিরোশেন এর কিছুই পায়নি। হতভাগা। ছবি দেখেন, আর কী। . . . Created with flickr slideshow.
false
fe
শঙ্কা বাড়ছে, সরকার কি অনুধাবন করছে_ শঙ্কা বাড়ছে, সরকার কি অনুধাবন করছে? ফকির ইলিয়াস========================================পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বাঙালিদের মাঝে দাঙ্গা চলছে। সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া চলছিল। এর মধ্যে দাঙ্গায় হতাহতের ঘটনা কাঁপিয়ে তুলেছে শান্তির ভিত। সরকার বিভিন্নভাবে এ দাঙ্গা দমনের চেষ্টা করলেও তা সমাধান করতে পারছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে আবারও সেনা মোতায়েন করবে সরকার। এবং তা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।এদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে ক'দিন আগে বোমাসাদৃশ বস্তু পাওয়া যায়। গেল মঙ্গলবার রাতে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে বলে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। একজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে একুশের দিনে শহীদ মিনার থেকে পুষ্পার্ঘ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রলীগ নামধারী পাষন্ডদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন একজন তরুণী।বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি তীব্র শঙ্কা আর প্রতিকূলতার মুখোমুখি বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। এই যে অশনি সঙ্কেত এর নেপথ্যে কে? বা কারা? তা খুঁজে দেখতে সরকার খুব দৃঢ় প্রত্যয় দেখাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। যদি সরকার শক্তিশালী অবস্থান নিত, তবে একের পর এক ঘটনাবলি রাষ্ট্রকে কাঁপিয়ে তুলত না।মনে রাখা দরকার, প্রতিক্রিয়াশীলরা সব সময়ই নিজেদের খোলস পাল্টায়। তারা কেন তা করে, তা বোঝা কিংবা জানা যায় কিছুদিন পরই। সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের শীর্ষ ২৪ জন ছাত্রনেতার পদত্যাগের ঘটনা তেমনি জল্পনার জন্ম দিয়েছে। শিবিরের ইতিহাসে এটি একটি বড় ঘটনা। কেন এমনটি হলো? এর দুটি কারণ অনুমান করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে, মৌলবাদী জঙ্গিপনা, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদিতার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ করে এসব নেতা পদত্যাগ করেছেন। তারা দলীয় শীর্ষ নেতাদের অবৈধ আধিপত্য মেনে নেননি।আর দ্বিতীয়টি হতে পারে, রাষ্ট্র যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে উন্মুখ তখন তারা সাময়িকভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে মুখোশাবরণে গিয়েছেন মাত্র। এটা তাদের কৌশল বদল ছাড়া অন্য কিছু নয়। তারা জনসমক্ষে 'পদত্যাগ' দেখালেও নেপথ্যে থেকে নিজেদের শীর্ষদের মতবাদই প্রচার এবং পালন করবেন।কোনটা সত্য, তা জানতে-বুঝতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে। তবে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবেই। কারণ শিবির নেতাদের এ পদত্যাগ মোটেই ছোট করে দেখার বিষয় নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর আগে 'হিজবুত তাহরীর' নামের একটি সংগঠনকে এ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল। মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রজন্মের মাঝে জঙ্গিবাদ, কট্টরবাদিতা ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা যারা করছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ধর্মীয় চেতনা প্রতিষ্ঠার নামে জিহাদী উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা একটি লক্ষ্যণীয় বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে যারা নিজেদের ধর্মীয় প্রচারণা সংগঠন বলে দাবি করে। মুসলিম উম্মাহ ইন আমেরিকা (মুনা), ইসলামিক সার্কেল ইন নর্থ আমেরিকা (ইকনা), দাওয়াতুল ইসলাম প্রভৃতি সংগঠনের সংগৃহীত বড় অঙ্কের ফান্ড কোথায় যায়, কী কাজে ব্যবহৃত হয় তা নিয়ে বেশ অনুসন্ধিৎসু যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।এটা সবারই জানা, যুক্তরাষ্ট্র সেই দেশ, যে দেশ সাংবিধানিকভাবে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। 'ফ্রিডম অব রিলিজিওন' বিষয়টি সাংবিধানিকভাবেই এখানে স্বীকৃত। কিন্তু সে স্বাধীনতার অপব্যবহার করে কেউ যদি কট্টরবাদের আশ্রয় নেয়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনি বিধিকে চ্যালেঞ্জ করে তবে তা হতে পারে জঘন্য অপরাধের শামিল। যুক্তরাষ্ট্র এখন গোটা বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নিজ ভূমির অভ্যন্তরে বিষয়টির বিস্তার সম্পর্কে বেশ সতর্ক হয়ে উঠছে।যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে যেসব মুসলিম ধর্মাবলম্বী বন্দি রয়েছেন, তাদের মাঝে ধর্মীয় বাণী প্রচারের জন্য ইমামরা দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বেশ কিছু ইমাম প্রকারান্তরে এসব বন্দির মাঝে কট্টরবাদিতা ছড়ানোর প্রয়াসী হয়েছেন। এ নিয়ে 'চ্যানেল ফাইভ' একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে। মিশিগান অঙ্গরাজ্যে এফবিআই কর্তৃক তল্লাশির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ইমাম নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন গোয়েন্দাদের গুলিতে। এ ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি উত্থাপিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী মহলে। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি প্রশাসনকে শঙ্কিত করে তুলেছে তা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় পদে আসীন মুসলিম কর্মজীবীদের কারও অপতৎপরতার আশঙ্কা। সে সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ধর্মীয় মৌলবাদ ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা। এখানে বিভিন্ন মসজিদ কর্তৃক পরিচালিত যেসব ইসলামি স্কুল রয়েছে তাদের শিক্ষা ক্যারিকুলাম সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। তারপরও ধর্মীয় অনুশাসন (কোরআন-হাদিস) পড়ানোর নামে কোন ছাত্রছাত্রীর ব্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে কি-না সে বিষয়টিও পরখ করে দেখছে শিক্ষা বিভাগ। বিশেষ করে নিইউয়র্ক, নিউজার্সি, শিকাগো, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো বহুল মুসলিম অধ্যুষিত অঙ্গরাজ্যে বিভিন্ন ইসলামি স্কুলগুলোর প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি সে সত্যই প্রমাণ করছে। বর্তমান এ সময়ে ওসামা বিন লাদেন বেঁচে আছেন কি-না তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। অনেকে মনে করেন, একটি জুজুর ভয় বাঁচিয়ে রাখতেই বিন লাদেন ইস্যুকে স্থায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে বিন লাদেন এবং তার অনুসারীরা বারবার বলছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রক্তে আমাদের বীজ পুঁতে দিয়েছি। প্রকারান্তরে তারা নতুন প্রজন্মের আমেরিকান মুসলিমদেরই বুঝাতে চাইছেন। ধর্মের মৌলবাদী উন্মাদনা কিংবা কট্টরপন্থি ধারা, সমাজের কল্যাণে কি প্রকৃতপক্ষে কোন কাজে আসে? এ প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন সম্প্রতি একটি নিবন্ধে ,যুক্তরাষ্ট্রের একজন সমাজ বিশ্লেষক ড. ওয়ারেন নিগেলস। তিনি বলেছেন, 'কট্টরপন্থিরা প্রথমে শান্তির বাণীর দোহাই দিলেও পর্যায়ক্রমে তারা নিজেদের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। আলজেরিয়া, সোমালিয়া এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অথবা শিয়া-সুন্নীদের মাঝে যে কলহ, দাঙ্গা চলছে সেটা কি প্রমাণ করে না এরা আসলে শান্তি নয় বরং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকেই লালন করছে।' বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে যে জঙ্গিবাদী গ্রুপগুলো নানা অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে এরা মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা। ১৫ কোটি মানুষের বাংলাদেশে এরা নানা প্রকারে, নানা আবরণে আবির্ভূত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এসব বিভিন্ন গ্রুপকে চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টাই করছে মাত্র। নিজ নিজ ভূমিতে এসব অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে-সেসব দেশের গণমানুষকেই। নিউইয়র্ক, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- সেলী ফর্ড
false
rg
বন্ধুদের আমলনামা-১২ _ _ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস মানে প্রাণেশ চৌধুরী ।। রেজা ঘটক ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস। অমর একুশে বইমেলায় সেদিন থাকে উপচে পড়া ভিড়। সেই ভিড় শেষ হতে রাত নয়টা সাড়ে নয়টা বেজে যায়। আমি পাঠসূত্রের সঙ্গে বইমেলায় জড়িত বলে আমাকে দোকান বন্ধ করে তারপর বের হতে হয়। ভালোবাসা দিবস শুধু মুখে বললে হবে? কাজ করে প্রমাণ দিতে হবে সত্যিই এটা ভালোবাসা দিবস। সেই প্রমাণ দিলেন আমার প্রিয় দাদা প্রাণেশ চৌধুরী আর তার প্রিয়তমা প্রেমিকা শিল্পী চৌধুরী। বাংলা একাডেমীর ঠিক উল্টো পাশে রমনা কালী মন্দির। সেখানে প্রাণেশ দা আর শিল্পী বৌদি বিয়ে করে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। ফোন করে প্রাণেশ দা বললেন, তুমি কোই? তাড়াতাড়ি আসো। আমরা বিয়ে করেছি। নতুন বিয়ে করা বর-কনেকে দেখতে খালি হাতে কিভাবে যায়? আমার সঙ্গে একগাদা বন্ধুরা। হাতের কাছে বাংলা একাডেমীর সামনের মেইন সড়কে পেলাম গজা-সন্দেশ। তাই কিনে ছুটলাম নতুন বর-কনেকে স্বাগত জানাতে। ইউসুফ জুলেখা তখন মহানন্দে। রোমিও ও জুলিয়েত তখন আপ্লুত। শিরি-ফরহাদ তখন বসন্তের উড়যনচণ্ডি হাওয়ায় প্রেমের নেশায় আত্মহারা। প্রাণেশ দা আর শিল্পী বৌদিকে নিয়ে আমরা ছবির হাটে গিয়ে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের প্রেমের কুঞ্জ কোথায় সাজাইছো? প্রাণেশ দা হেসে দিয়ে বললো, ওকে এখন কাজীপাড়ার বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। তারপর আমি ফকিরাপুলের বাসায় যাবো। আহারে স্বাদের বিয়ে। এই হচ্ছে আমার প্রাণেশ দা। বিয়ে করে বৌকে মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে ছুটলেন। কারণটা অবশ্যই আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিচারে এখনো সভ্যতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শিল্পী বৌদি মুসলমান ঘরের মেয়ে। আর প্রাণেশ দা হিন্দু ব্রাহ্মণ। তাই এভাবে বিয়ের পর বৌকে চুপিচুপি পৌঁছে দিতে হল মায়ের বাড়ি। আহা মরি মরি। ১৯৬৩ সালের ২০ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার মুজিব রোডে প্রাণেশ চৌধুরী জন্ম গ্রহন করেন। বাবা নরেশ চন্দ্র চৌধুরী ও মা বিমলা চৌধুরী। বিয়ে করেছেন শিল্পী চৌধুরীকে। প্রাণেশ চৌধুরী আর শিল্পী চৌধুরী দু'জনেই আমার বন্ধু। প্রাণেশ চৌধুরীকে আমি ডাকি প্রাণেশ দা। প্রাণেশ দা মঞ্চ নাটকের একজন একনিষ্ঠ কারিগর। প্রাণেশ দা মঞ্চে একদিকে নির্দেশনা দিয়েছেন, দিচ্ছেন, অভিনয় করেছেন, করছেন; পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। নিজে টেলিভিশনের নাটক পরিচালনা করেন, মঞ্চে অভিনয় প্রশিক্ষণ দেন। এ পর্যন্ত প্রাণেশ দা প্রায় ২৮ টি মঞ্চ নাটকে কাজ করেছেন, অভিনয় করেছেন। এই ২৮ টি নাটক প্রায় এগারো শো'র উপরে শো হয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রে প্রায় ২১টি ছবিতে প্রাণেশ দা অভিনয় করেছেন। ছবিগুলো হল-শওকত ওসমানের 'জননী', মতিন রহমানের 'এই মন চায় যে', এফআই মানিকের 'পাল্টা হামলা', হুমায়ুন আহমেদের 'দুই দুয়ারী', এফআই মানিকের 'স্ত্রীর মর্যাদা', বাদল খোন্দকারের 'দুই ভাইয়ের যুদ্ধ', আরএ খানের 'ওরা জিম্মি', স্বপন চৌধুরীর 'মহিলা হোস্টেল', স্বপন চৌধুরীর 'আগুন আমার নাম', স্বপন চৌধুরীর 'বাদশাহ ভাই এলএলবি', আরএ খানের 'ব্যারিকেড', এফআই মানিকের 'বাবা', জাহাঙ্গীর আলমের 'কালা মানুষ', জাহাঙ্গীর আলমের 'ডিরেক্ট অ্যাকশান', রাকিবুল ইসলাম রাকিবের 'রিক্সাওয়ালার প্রেম', রাকিবুল ইসলাম রাকিবের 'ঠেকাও গুন্ডামী', এমবি মানিকের 'দুর্দান্ত', সা্য়িদ খানের 'ওরা সাহসী', সোহানুর রহমান সোহানের 'সত্যের বিজয়', মতিন রহমানের 'তোমাকেই খুঁজছি', মতিন রহমানের 'রাক্ষুসি' ইত্যাদি।প্রাণেশ চৌধুরী প্রায় ১৫টি নাটকে মঞ্চে নির্দেশনা দিয়েছেন। মঞ্চ নাটক, বাংলা চলচ্চিত্র, টেলিভিশনের নাটক ও ধারবাবাহিকে প্রাণেশ চৌধুরী সবখানেই সমান প্রাণবন্ত। একটি মহা আনন্দ প্রাণ আছে যার, তিনিই প্রাণেশ চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রোডাকশান হাউজ 'লাগাম'। এছাড়া 'প্রাণেশ থিয়েটার' নামে প্রাণেশ দা'র একটি নাট্যদল আছে। উড়ুনচণ্ডি মনের এই সদাহাস্য মানুষটি দুনিয়ার যেখানেই যান একেবারে চির তরুণদের মতো ভারী হৈ চৈ করেন। সবাইকে আনন্দ দেন, নিজে আনন্দ পান। এটাই তার জীবন। যাকে ভালোবাসেন মন থেকে ভালোবাসেন। যাকে অপছন্দ করেন অকপটে স্বীকার করেন। খুবই স্পষ্টভাষী প্রাণেশ দা'র এই স্বভাবগুলো আমার ভারী পছন্দ। একবার ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাণেশ দা'র খুব গলা ভাঙলো। ব্যাপার হল অমর একুশের উপর একটি নাটক লিখেছেন কবি ও সাংবাদিক সাইফুল বারী। প্রাণেশ দা সেই নাটকটি বানিয়ে একুশের রাতে প্রচারের জন্য ভারী ব্যস্ত এবং চিন্তিত। শুটিংয়ের সময় একদল বানর থাকে যারা কাজের প্রতি সহযোগিতার চেয়ে কাজটায় একটু ঝামেলা পাকাতে পারলে মনে মনে শান্তি পায়। এটা বাঙালির চিরায়ত খাসিলত। তো প্রাণেশ দা সেরকম একটি বাঁদর দলের খপ্পরে পড়ে গলা টলা ভেঙে একাকার। প্রাণেশ দা'র কণ্ঠ পুরোপুরি চলে গেছে। জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ আমার মা মারা গেল। আমি ঢাকায় এসে প্রাণেশ দাকে ফোন করলাম। দাদা বললেন, শুটিং করতেছি। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। খুবই ছ্রাড়াব্যাড়া অবস্থা। আমি বললাম, দাদা মেজাজটা ঠাণ্ডা রেখে আগে শুটিংটা শেষ করো। তুমি যতো মাথা গরম করবা ততোই তোমার ক্ষতি হবে। বান্দর ঠিক করতে পারবা না। তারপেয়ে আগে কাজটা শেষ করো। পরে যখন নাটকটি এডিটিং প‌্যানেলে নিলেন, আমি একদিন ফুটেজ দেখতে গেলাম। প্রাণেশ দা কথা একদম বলতে পারেন না। তবু সেই কষ্টের কথা আমাকে বারবার বলতে চাইছেন। পাশাপাশি মা মারা যাবার কারণে আমাকেও শান্তনা দিচ্ছেন। আমি বললাম, চল শাহবাগ যাই। তুমি কোনো এসিট্যান্টকে এডিটরের সঙ্গে বসিয়ে নিজে একটু রেস্ট নাও। একটু খোলা হাওয়া লাগাও। আর কথা বলা একদম নিষেধ। কাগজে লিখে কথা বলো। প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া তাও বলার দরকার নেই। শেষ পর্যন্ত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে এটিএন বাংলায় নাটকটির অন-ইয়ার হল। প্রাণেশ দাকে বললাম, এখন তুমি আগে তোমার গলার চিকিৎসা করাও। নইলে কণ্ঠ আর ফিরে আসবে না। প্রাণেশ দা চিকিৎসা করাতে তখন কলকাতা গেলেন। প্রাণেশ দা পড়াশুনা করেছেন জ্ঞানদায়িনী হাই স্কুল ও সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে। তারপর নাট্যাঙ্গনে প্রবেশের পর আর ইচ্ছে করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেন নি। বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র....শিল্পী চৌধুরী পাত্রী আর আমাদের প্রাণপ্রিয় দাদা প্রাণেশ চৌধুরী হল পাত্র। আরো কতো কিছু বলতে বাকি, এ তো শুরু মাত্র....
false
rg
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার অতি উৎসাহী পুলিশবাহিনীকে এখনই সামলান নইলে বাংলাদেশে মানবতা আরো হুমকিতে পড়বে !!! বাংলাদেশে যতগুলো ছাত্র সংগঠন আছে তার মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সবচেয়ে শান্তি প্রিয় একটি সংগঠন। এই সংগঠনের নামে ইতিহাসে কোনো সহিংস আচরণ বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন একটি নিরীহ সংগঠনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির উপর বাংলাদেশ পুলিশ যে বর্বর হামলা চালিয়েছে, তা কোনো সভ্য রাষ্ট্রে কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়। এখন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজকের এই হামলা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিসএসিতে নারীদের উপর যে যৌন নিপিড়নের ঘটনা ঘটে, তখনো সেখানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা লাঞ্চনাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। পুলিশের হাতে কয়েকজন লাঞ্চনাকারীকে ধরে দিলেও, পুলিশ তখন তাদের ছেড়ে দিয়েছিল। তখন থেকেই সেই ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। পুলিশের সেদিনের আচরণ এবং আজকের আচরণের মধ্যে পার্কক্য হল, সেদিন পুলিশ ছিল নারীদের উপর যৌন নিপিড়ন দৃশ্যের একনিষ্ঠ দর্শক এবং ঘটনাস্থল থেকে নিপিড়কদের নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ায় সহায়তাকারী বান্ধব। আর আজ সেই পুলিশ নিজেরাই নারীদের উপর নিপিড়ন চালিয়েছে। পহেলা বৈশাখের নারী লাঞ্চনাকারীদের সঙ্গে আজকের পুলিশের অ্যাকশানের মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যাস্ত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। সংসদে প্রধান বিরোধীদলের নেতাও একজন নারী। বৃহত্তর বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাও একজন নারী। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী। বাংলাদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদ ও পদবিতে নারীদের অবস্থান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি অধীনে থাকা বাংলাদেশ পুলিশ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উপর আজ যে বর্বর অসভ্যতা দেখিয়েছে, তা কোনো মতেই কেবল একটি ছাত্র সংগঠনের উপর হামলা নয়। অত্যন্ত শান্তি প্রিয় নিরীহ একটি ছাত্র সংগঠনের উপর পুলিশ যে আচরণ করেছে, এটা গর্হিত অপরাধ। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এটা আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী কর্তৃক সরাসরি আইন লংঘনের ঘটনা। এর দায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এড়াতে পারেন না। নারীদের উপর যৌন নিপিড়নের বিচার চাইতে গিয়ে সেই নারীদের উপর পুলিশের বর্বর হামলাকে কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় আইনে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। যে সকল পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য এই ঘটনায় জড়িত, তাদের ছবিসহ নানান গণমাধ্যমে সেসব ফুটেজ প্রকাশ পেয়েছে। এদের খুঁজে পেতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আজকের ঘটনাকে কোনো জঙ্গি সংঘটনের হামলা হিসেবে চালিয়ে দেবারও কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ পুলিশ বিভিন্ন সময়ে জনসাধারণের উপর যে অন্যায় আচরণ করে, এটা ওপেন সিকরেট হলেও প্রমাণিত সত্য। অথচ জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় এই পুলিশের বেতন দেওয়া হয়। যেখানে জনসাধারণের সেবা করাই পুলিশের কাজ, সেখানে পুলিশের নামে বাংলাদেশে প্রতিদিনই নানান কিসিমের অপরাধের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। বাংলাদেশে পুলিশ এখন একটি স্বীকৃত দুর্নীতি পরায়ন সংগঠন। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করায় অভ্যস্থ যে সংগঠন, তার নাম বাংলাদেশ পুলিশ। এই পুলিশ বাহিনীকেই কয়েক বছর আগে রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা পদক পাওয়া একটি সংগঠনের সদস্যরা কিভাবে নারীদের উপর বর্বর হামলা করার দুঃসাহস পায়? এরা কারা? এদের পরিচয় আমরা জানতে চাই। এদের এখনই শুধু ডিপার্টমেন্টাল শাস্তির আওতায় আনলে হবে না, বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের প্রচলিত আইনেই এদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ আমরা সবাই জানি, কাক কাকের মাংস খায় না। পুলিশ অন্য পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্তে সগোত্রীয় স্বজনপ্রীতি দোষে দুষ্ট থাকবে। তাই দেশের প্রচলিত আইনে এই অপরাধীদের বিচার করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পোষাক পরলেই একজন অপরাধী আইনের চোখে ছাড়া পাবার কোনো সুযোগ নেই।পহেলা বৈশাখের নারী নিপিড়নের ঘটনায় শুরু থেকেই পুলিশ এক মহা-রহস্যময় আচরণ করছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, কোনো একটি সুনির্দিষ্ট পক্ষকে রেহাই দিতেই পুলিশ এই তালবাহানা করছে। যে কারণে আজ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে, পুলিশ সেই অপরাধীপক্ষকে বাঁচাতেই অত্যান্ত পরিকল্পিত ভাবে বিচার চাওয়া পক্ষের উপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। যা একটি রাষ্ট্রে কোনো ভাবেই মেনে নেবার সুযোগ নেই। বিচারহীনতার যে রাজনীতি বাংলাদেশে শুরু হয়েছে, তা যদি এভাবে বিচার চাওয়া পক্ষকে হামলা করে নস্যাত করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো দেশের সাধারণ মানুষ কোনো অপরাধের বিচার চাইতেই আর সাহস দেখাবে না বা উৎসাহী হবে না। এমনিতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পারতপক্ষে কোনো ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত না নিয়েই মিটিয়ে ফেলতে চায়। কারণ পুলিশের আচরণ সম্পর্কে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ অবগত। বায়ে ছুঁইলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁইলে ছত্রিশ ঘা, এটা মোটেও রূপকথা নয়, বাংলাদেশের মানুষ বছর বছর পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়ে এই পুলিশ বর্জন নীতিতে উপনীত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, তাহলে এই পুলিশ তাহলে রাষ্ট্রে কার সেবা দিতে প্রয়োজন? অবশ্যই শাসকদের আদেশ-নির্দেশ আর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই পুলিশের একমাত্র কাজ বলেই এখন স্বীকৃত। জনসাধারণের কোনো কাজে এই পুলিশকে কখনোই সক্রিয় দেখা যায় না।এই পুলিশের সামনেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে সন্ত্রাসীরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আহত করেছে অভিজিতের স্ত্রী লেখক বন্যা আহমদকে। সেই ঘটনায় পুলিশ নিরব দর্শক ছিল। রাস্তায় পুলিশের সামনে কোনো ছিনতাই ঘটনা ঘটলে এই পুলিশ বরাবরই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। কেবল প্রধানমন্ত্রী যখন রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন, তখন এই পুলিশকে আমরা সব সময় সক্রিয় দেখি। এই পুলিশ বাহিনী যদি শুধু প্রধানমন্ত্রীর চলাচল নির্বিঘ্নে করার জন্য প্রয়োজন হয়, তাহলে এই পুলিশ মোটেও জনগণের পুলিশ নয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর একটি নিরাপত্তা বাহিনী। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা পালনকারী পুলিশ যখন প্রকাশ্যে রাস্তায় নারীদের উপর বর্বর হামলা করে, তখন একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেই ঘটনাকে আড়াল করার বা সেই দায় এড়ানোরও কোনো সুযোগ নেই। পহেলা বৈশাখের নারী লাঞ্চনার ঘটনাকে চাপা দিতেই পুলিশ আজ এই বর্বর হামলা করেছে। এটাকে যদি রাষ্ট্র নিরবে হজম করার চেষ্টা করে, তাহলে বাংলাদেশের সামনে কঠিন অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার অধীনে থাকা একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী এভাবে প্রকাশ্যে অপরাধ করে ছাড়া পেতে পারে না। আর যদি এই বাহিনী কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধীকে বাঁচানোর কৌশল হিসেবে এই নির্যাতন ও হামলার পরিকল্পনা করে থাকে, তাহলে সেই অপরাধীদের অপরাধকে বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেবার সামিল হবে সেটা। যা একুশ শতকের সভ্যতায় একটি রাষ্ট্রে কোনো ভাবেই ঘটতে দেওয়া উচিত নয়। পুলিশ কখনোই জনগণের বন্ধু ছিল না, এখনো নাই। বরং পুলিশ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানোর একটি রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার। এটা বন্ধ না করলে এই রাষ্ট্র সভ্যতার দিকে অগ্রসর না হয়ে বরং মধ্যযুগীয় বর্বরতার দিকেই ধাবিত হবে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ছাড়া আর কোনো সংগঠন পহেলা বৈশাখে নারীদের উপর নির্যাতনের বিচার নিয়ে মাঠে নেই। তাই সরকার বাহাদুর যদি মনে করে, ওদের পিটিয়ে রাস্তা দিয়ে হটিয়ে দিলেই মামলা খালাস, তাহলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্যই বুমেরাং হবে। দেশের যে কোনো সামাজিক সাংস্কৃতিক সভা-সমাবেশে নারীদের নিরাপত্তা আরো হুমকির মুখে পড়বে। বিষয়টিকে মোটেও হালকা করে দেখার সুযোগ নাই। বাংলাদেশের পুলিশের সকল দায় দায়িত্ব এককথায় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। বিষয়টি নিয়ে যদি এখনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সজাগ না হন, তাহলে আগামীতে এই পুলিশের সামনেই আরো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে অপরাধীরা প্রশ্রয় পেয়ে যাবে। যা সভ্য সমাজে মোটেও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, আজকের ঘটনার সংগে জড়িত পুলিশ সদস্যদের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি পহেলা বৈশাখে সংঘটিত নারীদের উপর যৌন নিপিড়নের ঘটনারও যথাযথ বিচার করতে হবে এবং অপরাধীদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি বা দলীয় প্রীতি বা চেপে যাওয়ার প্রবনথা বরং এই ঘটনাকে ভবিষ্যতে আরো বাড়তে দেয়ারই সামিল। যা কারো কাছেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।১০ মে ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উপর পুলিশের বর্বর হামলার জন্য তীব্র ধীক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর অধীনে থাকা পুলিশ বাহিনীর এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার বিভগীয় তদন্ত ও এই ঘটনায় জড়িত অপরাধী পুলিশ সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রার্থণা করছি। আমরা নিশ্চয়ই কোনো পুলিশি রাষ্ট্রে বসবাস করছি না যে, পুলিশের অপরাধের জন্য বা তাদের ভুল কর্মকাণ্ডের জন্য বিচার চাওয়া যাবে না। আমরা আশা করব, শীঘ্রই এই ঘটনার একটি গঠনমূলক সমাধান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পালিত হবে। সবাই পুলিশ থেকে দূরে থাকুন। নিজের সম্মান নিজের কাছে রাখুন। মনে রাখবেন, পুলিশ কখনোই বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রে জনগণের বন্ধু নয়। যদিও আমাদের ট্যাক্সের পয়সায়ই পুলিশের বেতন হয়। তবুও পুলিশ থেকে সাবধান। ...............................১০ মে ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৩৪
false
fe
মানুষের আশাবাদ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের ভূমিকা মানুষের আশাবাদ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের ভূমিকাফকির ইলিয়াস =========================================কিছু কিছু আশাবাদ আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে। আমরা পথ চেয়ে থাকি। জানি সব চাওয়া পূর্ণতায় রূপ পায় না। আমরা জানি আমাদের চারপাশে না পাওয়ার হাহাকারই বেশি। তারপরও আমরা আমাদের স্বদেশ, স্বজাতি, স্বপ্রজন্মকে বলে যাই আমাদের আশার কথা। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের জন্য একটি শুভ সংবাদ বেরিয়েছে পত্রিকায়। আসছে অক্টোবরের মধ্যে নিউইয়র্ক-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে। একথা জানিয়েছেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহবুব জামিল। বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি। তিনি বলেছেন বাংলাদেশ বিমান ও মার্কিন বোয়িং কোম্পানির মাঝে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় দশটি বোয়িং বিমান দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এগুলো ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সরবরাহ করা হবে।সংবাদটি কিছুটা আনন্দ বয়ে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে। কারণ নিউইয়র্ক রুটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রবাসীদের দেশে যেতে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। বিমান কেন এই রুটে সফল ব্যবসা করতে পারলো না সে জিজ্ঞাসা এখনো রয়ে গেছে রহস্যাবৃত। অথচ এই রুটে কুয়েত এয়ারওয়েজ, অ্যামিরাটস, গালফ এয়ার, সৌদিয়া, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসসহ বেশ কিছু কোম্পানি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরে যে একটি সিন্ডিকেট সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তা ওপেন সিক্রেট। কোনো বিমান মন্ত্রী এই চক্রের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। বরং হাত মিলিয়ে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বণ্টন ব্যবস্থায় সাহায্য করেছেন। যার ফলে বিমানের এই মাফিয়াচক্র হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। আমি স্বচক্ষে দেখেছি, চেয়ে বিমানের টিকিট পাননি অনেক যাত্রী। অথচ এয়ারক্রাফটে উঠে দেখা গেলো খালি সিট নিয়েই নিউইয়র্কের আকাশ ছেড়ে যাচ্ছে বিমান। কেন এই অবস্থা? কেন এই ফাঁকিবাজি? এর কোনো জবাব নেই। আর জবাব না থাকার কারণেই অঘোষিত দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ বিমান। বিভিন্ন রুটে কর্তন করা হয়েছে ফ্লাইট।আমরা যখন জবাবদিহিতার কথা বলি, তখন আমাদের চোখের সামনে দুটি মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে। একটি রাষ্ট্রশাসকদের অন্যটি রাষ্ট্রে যাপিত জীবনের। যারা একটি রাষ্ট্রে জীবনযাপন বেছে নেন, তারা কিছু মৌলিক চাওয়া নিশ্চিত করতে চান রাষ্ট্র শাসকদের কাছ থেকে। এর প্রধান এবং প্রথমটি হচ্ছে ন্যায়ের শাসন।উদাহরণস্বরূপ দ্রব্যমূল্যের কথাই ধরা যাক। যুক্তরাষ্ট্রে চাউলের দাম গেলো দেড় মাসে অবিশ্বাস্য ধরনের বেড়ে যাওয়ার পর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রশাসনও। গত সপ্তাহে চালের দাম কমেছে কিছুটা। আর তা সম্ভব হয়েছে কিংবা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য-বিভাগের সফল প্রচেষ্টার ফলেই। কারণ তারা দিনরাত চেষ্টা চালিয়েছে এই দ্রব্যমূল্য রুখে দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশে কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লে আর কমার কোনো লক্ষণ দেখি না। এর কারণ কী? কারণ হচ্ছে কৃষি কিংবা খাদ্য মন্ত্রণালয় যথাযথভাবে বিষয়টি মনিটরিং করে না। কিংবা করার তাগিদ অনুভব করে না।আমরা অনেকেই মানবাধিকার নিয়ে কথা বলি। মানবাধিকার ক্ষুণœ হওয়া বলতে আমরা সাধারণত রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতনকেই বুঝি। এ প্রসঙ্গে আমি যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রাজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানী ড. রিবেন ওয়াটসের কথা সবসময় মনে করি। তিনি বলেছিলেন, একটি রাষ্ট্রে যতো বেশি মানুষ অনাহারি, যতো বেশি মানুষ চিকিৎসাবঞ্চিত, সে রাষ্ট্রেই মানবাধিকার বেশি লঙ্ঘিত। কারণ সবার আগে চাই অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের, চিকিৎসার নিরাপত্তা। ৩৭ বছর বয়সী বাংলাদেশে আজও আমরা কেন তা প্রতিষ্ঠা করতে পারলাম না? এ প্রশ্নটি কোথায় করবো? কাকে করবো?খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান মালয়েশিয়ায় নতুন ফ্লাট কিনছেন। মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরও তিনি কিভাবে বিদেশে যেতে পারলেন তা এখনো থেকে গেছে প্রশ্নবিদ্ধ। আজ যে সফল (?) অর্থমন্ত্রী বিদেশে ফ্লাট কিনছেন, সেই অর্থমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি নাসের রহমান-আরিফুল হক চৌধুরীর মতো শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একটি বারও রুখে দাঁড়ালেন না কেন? কেন একটি বার তিনি গণমানুষের পক্ষ নিলেন না? যদি নিতেন তাহলে তো আজকের অনেক চিত্রই ভিন্ন রকম হতো।একটি রাষ্ট্রে রাজনীতির সৃজনশীলতা নির্মাণে গণমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কোনো বিকল্প নেই। এর প্রমাণ আমরা পেলাম মার্কিনি রাজনীতিতে। ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে ওবামার মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর ওবামাকে সাহায্য সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন বিল ক্লিনটন-হিলারি ক্লিনটন দম্পতি। হিলারি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ওবামার মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার পক্ষে কথা বলতে শুরু করেছেন। এমনকি বলেছেন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্যও লালায়িত নন, যা করে দল করবে। তিনি সব সমর্থন দিয়ে যাবেন। মানুষের আশাবাদ প্রতিষ্ঠাই তার লক্ষ্য। রাজনীতিতে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কোনো বিষয় হতে পারে না। মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিতে ডেমোক্রেটিক পার্টি হাউস অব কংগ্রেস ও হাউস অব সিনেট-এ মেজরিটি নিয়ে নেয়। ন্যান্সি প্যালোসি হন স্পিকার অব দ্যা হাউস। তাই মনে করা হয়েছিল ইরাক-আফগান যুদ্ধ ইস্যু, বুশের যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে জোর উদ্যোগ নেবে ডেমোক্রেটিক পার্টি। নাÑ তার কিছুই হয়নি। তারা চাইলে জর্জ বুশকে ইমপিচও করতে পারতেন। কিš' হলো না কিছুই। কারণ রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক দুটো পার্টিই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের কাছে রাষ্ট্রের স্বার্থই সবচেয়ে বড়ো। বুর্জোয়া অর্থনীতির বাজার ও সমতা রক্ষায় দুটো পার্টিই এক সুতোয় গাঁথা। এখানে প্রতিযোগিতা আছে রাষ্ট্রের উন্নয়নের। প্রতিযোগিতা আছে; মেধাবী রাজনীতিকদেরকে সুযোগ দেওয়ার। বাংলাদেশে গাছ কেটে বন শূন্য করা হয়। জাটকা মাছ মেরে নদীর ইলিশের বংশ নিধন করা হয়। কিশোরের হাতে বোমা তুলে দিয়ে সন্ত্রাসী বানানো হয়। আর এর সবকিছুই হয় এক ধরনের রাজনীতিকদের প্রশ্রয়ে। প্রশাসনেও দুষ্টচক্র বেড়ে ওঠে তাদেরই যোগসাজশে।৩০ জুন ২০০৮----------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ । ৫ জুলাই ২০০৮ শনিবার প্রকাশিত
false
ij
জেন মানবিক অভিজ্ঞতা বলে পাথর ও সমুদ্র এক। আর সচেতন প্রাণিটি আরেক। আসলে জেন এই ভিন্নতাই দূর করতে চায়।মহাবিশ্বের সঙ্গে একাত্মবোধই জেন এর লক্ষ্য। বস্তুগত জগৎ ও সচেতন মনের মধ্যে পার্থক্য নেই-জেন একথাই বলে। এভাবে আলোকিতজন ও তার পরিবেশ থাকে একত্রে সম্পৃক্ত। এভাবে সৃষ্টি হয় শান্তির। যে কারণে , Einstein একবার বলেছিলেন-We experience ourselves, our thoughts and feelings as something separate from the rest. A kind of optical delusion of consciousness. This delusion is a kind of prison for us, restricting us to our personal desires and to affection for a few persons nearest to us. জেন শব্দটা জাপানি; উদ্ভূত হয়েছে চৈনিক শব্দ চান থেকে। আমরা যে বলি ধ্যান। সেই ধ্যানকেই চিনের লোকে বলে চান। যা হোক। জেন এর মূলেও মহান বুদ্ধ-তাঁর অনিবার্য শিক্ষা। তাঁরই শিক্ষা নানারুপে দেশেবিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল তার মৃত্যুর পর । তেমনি মহাযান ধর্মদর্শন নিয়ে ভিক্ষু বোধিধর্ম ৪র্থ খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকের শেষের দিকে গিয়েছিলেন চিনে । চিনে তিনি বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। লাওৎ-সে কর্তৃক প্রচারিত তাওবাদ আগে থেকেই জনপ্রিয় ছিল চিনে। তা মহাযান বৌদ্ধধর্মকে প্রভাবিত করল। এবং তা হয়ে উঠল ধ্যানভিত্তিক। জাপানের এই নবতর ধর্মটি গেল দ্বাদশ শতকে। জাপানে ওই ধ্যানভিত্তিক উপাসনারীতির নাম হল জেন । এখন এই নামেই বিশ্বের লোকের কাছে মহাযান বৌদ্ধধর্মটির জাপানি সংস্করনটি পরিচিত। জেন আসলে এক বিশেষ মানসিক অবস্থার নাম। যে মানসিক অবস্থাটি প্রশান্ত ও আলোকিত। যদিও সেই আলোকিত মানসিক অবস্থার কথা সহজে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। সংক্ষেপে, জেন হল মহাবিশ্বের সঙ্গে একাত্মবোধ। বস্তুগত জগৎ ও সচেতন মনের অভিন্নতাই জেনের লক্ষ্য। এভাবে আলোকিতজন ও অন্যরা থাকে সম্পৃক্ত। জেন-এ ধ্যানই মূল। তবে যে সব সময় বসে ধ্যান করতে হবে তাও নয়। জেন কখনোই দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি ধ্যানে না বসে বাজারে যেতে পারি। যেতে যেতে ভাবতে পারি আকাশের রোদ ও শহর ও আমি অভিন্ন। এই বোধে পৌঁছাই জেন-এর শিক্ষা বা ধ্যানের মূল শিক্ষা। কেননা, মহাজন বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে- জগতের প্রত্যেব সচেতন প্রাণির রয়েছে বুদ্ধস্বভাব।বুদ্ধস্বভাব কি? বুদ্ধস্বভাব হচ্ছে প্রজ্ঞা ও পুণ্যের বিকাশ। আসলে বুদ্ধস্বভাব হল মানসিক বৈশিষ্ট্য। যে কারণে জেন এর লক্ষ হচ্ছে প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সচেতন থেকে প্রতিটি জীবের ভিতর এই মানসিক বৈশিষ্ট্য আবিস্কার করা। তাহলে অস্তিত্বের নতুন সদর্থক মানে খুঁজে পাওয়া যাবে- যা সচেতন প্রাণিমাত্রকেই এক আলোকময় অনুভূতির দিকে নিয়ে যাবে। আমি বাজার করে ফিরছি। আমার সামনে ঝুড়ি মাথায় একটি গরিব বালক। হতদরিদ্র বালকটির ভিতরেও রয়েছে প্রজ্ঞা ও পুণ্যের লক্ষণ-এ ভাবনা আমাকে নিশ্চিত এক আলোকময় অনুভূতির দিকে নিয়ে যাবে। এই হচ্ছে জেন। পৃথিবীর প্রতি মহান বুদ্ধের উপহার। জেন শাস্ত্র ও তত্ত্বালোচনাকে তেমন প্রাধান্য দেয় না। ওসব আসলের বাইরের বিষয়। আসলে প্রয়োজন ভিতরে তাকিয়ে স্বজ্ঞার সচেতন চর্চার। জেন এর কতগুলি বৈশিস্ট্য এই রকমের: ১/ বুদ্ধস্বভাব অর্জন; মানে সচেতনা। ২/ বর্তমানে থাকা। অতীতের জন্য শোক না করা। বা ভবিষ্যৎ নিয়ে অযাথা উদ্বিগ্ন না হওয়া। ৩/ জেন এর লক্ষ মানসিক প্রশান্তি। ৪/ তোমার জগৎ তোমার। তাতেই তোমার মুক্তি। ৫/যেতে হবে একা। ৬/এটি দর্শন নয়। ৭/ গভীরতম কোনও প্রশ্নও নয়। ৮/ রহস্যবাদ বা মিস্টিসিজমও নয়। ৯/ভালো হওয়া, ভালো করা ও ভালো বিচার করা। ১০/ শান্ত থাকা। নির্মল থাকা। জেন বিষয়ে মতামত Emptiness is infact form when we forget the self. There's nothing in the universe *other* than ourself. Nothing to compare, name, or identify. When it's the only thing there is, how can we talk about it?? - Taizan Maezumi If you put your conditioned intellect to rest for a long time, suddenly it will be like the bottom fallin out of a bucket -- then you will naturally be happy and at peace. - Yaunwu If you are in the future, then ego seems to be very substantial. If you are in the present the ego is a mirage, it starts disappearing. - Osho Not to study the Buddha way is to fall into the realm of shameless and erroneous ways. All preceding and succeeding Buddhas always practice the Buddha way. - Dogen Zenji Do not entertain hopes for realization, but practice all your life - Milarepa If you understand, things are just as they are... If you do not understand, things are just as they are.... - Zen Saying As one lamp serves to dispel a thousand years of darkness, so one flash of wisdom destroys ten thousand years of ignorance - Hui-Neng Zen is not some kind of excitement, but concentration on our usual everyday routine - Shunryu Suzuki All conditioned things are impermanent. Work out your own salvation with diligence. - Buddha's last words A flower falls, even though we love it; and a weed grows, even though we do not love it - Dogen Zenji We do not learn by experience, but by our capacity for experience - Buddha The world is ruled by letting things take their course. - Lao-Tzu Carrying the self forward to confirm the myriad dharmas is delusion. The myriad dharmas advancing and confirming the self is realization - Dogen Zenji The fundamental delusion of humanity is to suppose that I am here and you are out there - Yasutani Roshi If you cannot find the truth right where you are, where else do you expect to find it? - Dogen Zenji Beyond, beyond, totally beyond, perfectly beyond: Awakening ..Yes! - Heart Sutra Have good trust in yourself -- not in the One that you think you should be, but in the One that you are - Maezumi Roshi I'd like to offer something to help you but in the zen school we don't have a single thing! - Ikkyu I gained nothing at all from supreme enlightenment, and for that very reason it is called supreme enlightenment - the Buddha Real Practice has orientation or direction, but it has no purpose or gaining idea, so it can include everything that comes - Shunryu Suzuki In your hopelessness is the only hope, and in your desirelessness is your only fulfillment, and in your tremendous helplessness suddenly the whole existence starts helping you. - Osho Our life is shaped by our mind; we become what we think. Suffering follows an evil thought as the wheels of a cart follow the oxen that draws it. Our life is shaped by our mind; we become what we think. Joy follows a pure thought like a shadow that never leaves. - The Buddha One who conquers himself is greater than another who conquers a thousand times a thousand on the battlefield. - The Buddha আরও জানতে চাইলে- http://www.madore.org/~david/zen/ সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫২
false
hm
হ্যাশকারির গু নাংতি বেয়ে পড়ে আপনি যদি নাকমুখ কোঁচকান শিরোনাম দেখে, তাহলে অনুরোধ করবো পোস্টটা পুরোটা পড়ে দেখতে। হ্যাশকারির গু ১. একটু আগে পড়লাম, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে উৎসুক বাংলাদেশ। নেপাল ও ভূটান থেকেও বিদ্যুৎ কিনতে চাই আমরা, ভারতের ভূমিতে সঞ্চালন অবকাঠামো ব্যবহার করে। নবায়নযোগ্য শক্তিবিদ্যার ছাত্র এবং তড়িৎকৌশলী হিসেবে আমি এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে, কিন্তু একে নাংতি বেয়ে গড়ানো গু ছাড়া আর কিছু বলতে পারছি না। এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে, দশমাস পেরিয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত তারা নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্তেই পৌঁছুতে পারছে না। ট্রাক ড্রাইভারকে রিকশা চালাতে দিলে শুনেছি সে নাকি প্রাইভেট কারের ওপরে রিকশা তুলে দিয়ে মরে, আমাদের বিদ্যুৎকর্তৃপক্ষও মহাজ্ঞানী সব উপদেষ্টার ভারে সেরকম বলীয়ান। সব লেজে গোবরে করে অবশেষে আমাদের তাকাতে হচ্ছে পড়শীদের দিকে। আঞ্চলিক সহযোগিতার অনন্য একটি দৃষ্টান্ত এটি, আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি, কিন্তু নিজেদের অদক্ষতা আর সিদ্ধান্ত নেবার অক্ষমতাই এর চালিকাশক্তি, আঞ্চলিক সৌহার্দ্য নয়। দুইদিন পর পাছা ঢাকার কাপড়টুকুর জন্যেও হয়তো আমাদের ভারত, ভূটান আর নেপালের দিকে তাকাতে হবে। গু আরো বেশি করে গড়িয়ে পড়ার আগে বাংলাদেশ তার তিন প্রতিবেশী ভারত, ভূটান ও নেপালের সাথে বসুক, হিমালয়ের বিপুল জলবিদ্যুতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কোনো বড় প্রকল্পে একমত হতে। জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে এই একীভূত আঞ্চলিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চারটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ওপরই মোটের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি। সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকগুলি বিশ্লেষণ করে সেগুলিকে দূর করা বা তীব্রতা কমিয়ে আনা অসম্ভব কিছু নয়। হ্যাশকারির গু ২. আরো কিছুক্ষণ আগে পড়লাম, চট্টগ্রামে এক ধর্মশিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বিচিত্র এক বদখদ প্রশ্ন করেছেন। উদ্ধৃত করছি, নিচের অনুচ্ছেদগুলো পড় এবং সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: হাছিনা ও খালেদা দুজন বান্ধবী। উভয় টেলিভিশনের পর্দায় বসে আছে। এমতাবস্থায় মাগরিবের আযান হল। খালেদা অজু করে নামাজ আদায় করতে গেল। কিন্তু হাছিনা টিভি দেখতে থাকল। পরে খালেদা হাছিনাকে নামাজ না পড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলল ‘মনে চাই নাই যে, তাই যায়নি।’ খালেদা বলল, কেন আত্মার কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে না? মূলতঃ জিহাদের গুরুত্ব অনেক বেশি। ক. জিহাদের সর্বশেষ পর্যায় কী? খ. জিহাদ কাকে বলে? গ. খালেদার কথা মতে হাছিনা কীভাবে জিহাদ করতে পারে? ব্যক্ত কর। ঘ. কুরআন ও হাদীসের আলোকে জিহাদের গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। অষ্টম শ্রেণীর বালিকাদের জন্যে করা একটি প্রশ্ন এটি। প্রশ্নটির মধ্যে দুই রাজনৈতিক নেত্রীর নামকে চরিত্রের নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র উইং ছাত্রলীগের ছেলেরা স্কুল ঘেরাও করেছে, এবং প্রশাসন সেই প্রশ্নকর্তা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা দুইদিন আগেই কার্টুনিস্ট আরিফকে নিয়ে অনেক কথা বলেছি, সেই একই কাহিনী নতুন মোড়কে বিক্রি হচ্ছে এখন। হাসিনা আর খালেদা নাম দু'টি স্যাক্রোস্যাংট কিছু না। সবাই একমত হচ্ছে যে ধর্মে বলা আছে টিভি দেখার চেয়ে নামাজ পড়া জরুরি, এবং সেই শিক্ষায় ব্যবহৃত চরিত্রের নাম হাসিনা না খালেদা, আমেনা না খোদেজা, লোমেলা না পামেলা তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। পড়লাম রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা পর্যন্ত করা হতে পারে। যেই দেশে সাকাচৌ এর চেয়ে শতগুণে অশালীন কথা টিভি ক্যামেরার সামনে উচ্চারণ করেছে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নামে, এবং তার সাধ্য হয় নাই সাকাচৌকে কিছু বলার বা করার, সেই দেশে এই সামান্য প্রশ্নপত্রে রাজনীতিগন্ধী রসিকতার কারণে ঐ ধর্মশিক্ষককে আরেকজন আরিফ বানানোর কোনো অর্থ হয়? এই গু মোটে গড়িয়ে পড়া শুরু হয়েছে। এর শেষ হবে তীব্র মলস্রোতে। তার জন্যে আমরা দায়ী থাকবো, যারা শুধু দর্শক। হ্যাশকারির গু ৩. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে দণ্ড থেকে মুক্তি পেয়েছেন আওয়ামী লীগনেত্রী সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহাদাব আকবর। তার নামে অভিযোগ ছিলো কর ফাঁকি দেয়ার। দেশে আরো এক আকবর কর ফাঁকির মামলায় ঝুলছে। তার নাম আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলম, বসুন্ধরার চাঁই। মনে হচ্ছে যদি আদালতের রায়ে তার সাজাও হয়, কোনো এক নেতা বা নেত্রী তাকে দত্তক নিয়ে নেবে, এবং কে না জানে, নেতানেত্রীদের পুত্রকন্যাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অন্তত একবার ক্ষমা করে দিয়েছেন। একবার যা ঘটে, তা বারবার ঘটতে পারে। আইনের শাসন, আইনের শাসন করে আমরা চেঁচিয়ে শক্তিক্ষয় না করে আসুন, বরং সাজেদা চৌধুরীর পালিত পুত্রকন্যা হবার জন্যে চেষ্টা করি। তাতে করে আইনের শাসনও বজায় থাকবে, আবার সাজার হাত থেকেও রেহাই মিলবে। উত্তরাঞ্চলের পাঠকরা বুঝবেন শিরোনামের মাহাত্ম্য। আপনি যদি দুষ্টুমি করে হাগু না করেন, চেপে রাখেন, তাহলে একসময় সেই হাগু আপনার ঊরু বেয়ে গড়িয়ে পড়বে।
false
fe
জন্মশতবর্ষে মহান বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী এই ছবিতে যে মানুষটিকে দেখছেন , তিনি বিনোদবিহারী চৌধুরী । এক মহান বিপ্লবী । এক মহান সমাজ সংস্কারক । ভাবেন, বিশ্ব নিয়ে। বিশ্বের মানবতা নিয়ে । চট্টগ্রামে এখন উৎসব চলছে একজন আজীবন সংগ্রামী শতবর্ষী বিপ্লবীকে ঘিরে। জীবনের শততম বছরের এই সন্ধিক্ষণেও বয়স তাঁর কাছে যেন হার মেনেছে। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথি, ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধের অন্যতম বীর যোদ্ধা বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি গণসমাজের জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য অভিভাবক শ্রী বিনোদবিহারীও পদার্পণ করছেন শততম বর্ষে। এই মহান বিপ্লবী আজ বয়সের ভারে ন্যুব্জ, তবু হাস্যোজ্জ্বল। এখনো তারুণ্য ঝরে পড়ে তাঁর চলন-বলন ও আলাপনে। নগরীর ১২০ মোমিন রোডের বাসভবন বিপ্লবী কুটিরে জন্মদিনে ছিল তাঁর হাসিমুখ। অনেকটা শিশুর মতো। ঘর ভর্তি আত্দীয়স্বজন, নাতি-পুতি আর শুভাকাঙ্ক্ষীর ভিড়। ছোট্ট কুটিরে ঠাঁই ধরে না। ছিল তাঁর কখনো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, কখনোবা নতুন প্রজন্মের কাছে, জাতির কাছে প্রত্যাশার কথা। সেই সঙ্গে শুনিয়েছেন, শরীর সুস্থ রাখার 'জাদুমন্ত্র'। বলেছেন, এখানেই থেমে যেতে চান না তিনি। প্রকৌশলী নাতি বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে আসার পর নাতবৌ ঘরে তুলে তবেই চলে যাওয়ার ইচ্ছা। ইঞ্জিনিয়ারিংপড়ুয়া নাতি সৌম শুভ্র চৌধুরী তখন চিরতরুণ দাদুর পাশে চৌকিতে বসা। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন অনেকেই। ছিলেন, জেলা প্রশাসক এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোকজন। শতবর্ষী বিপ্লবীকে জানালেন বিনম্র শ্রদ্ধা। ব্রিটিশবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেন ও তাঁর সাথিদের প্রাণপণ লড়াই এবং আত্দত্যাগের প্রসঙ্গ ধরে সেই বীর সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই রাগে-ক্ষোভে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন মাস্টারদার সাথী বিনোদবিহারী। বললেন, 'আমাদের প্রতি শ্রদ্ধাটা কেবল মুখের কথা, মনের কথা নয়। মাস্টারদা সূর্য সেনের নামে কোনো একটি সড়কের নামকরণ হয়নি। তাঁর বাড়িটি এখন শত্রুসম্পত্তি।' এসব বলতে গিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছিলেন তিনি। রাগ-ক্ষোভ-অপমানের জ্বালা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন-'মাস্টারদার বাড়ি কী করে এনিমি প্রপার্টি হয়? জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে যাঁরা প্রাণ দিলেন, সেখানে তাঁদের জন্য স্মৃতিসৌধ কই?' অতঃপর একটু দম নিয়ে হতাশ স্বরে বললেন, 'মাস্টারদার প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে আমি বিনোদবিহারীকে শ্রদ্ধা দেখানোর কি কোনো অর্থ হয়!' একসময় নিজেই প্রসঙ্গ পাল্টালেন। সবাইকে জন্মদিনের মিষ্টিমুখ করালেন। একটু হালকা হলেন। ঘর ভর্তি মানুষ চুপ। তারপর অনেক অনুরোধে নতুন প্রজন্মের কাছে প্রত্যাশা আর দেশ নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা বললেন অল্প কথায়। নতুন প্রজন্মের প্রতি আজীবন সংগ্রামী বিনোদবিহারী চৌধুরীর বাণী: 'দুর্বলতা পরিহার করো। ভীরুতা, কাপুরুষতা দূর করে সাহসী হও। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও, প্রতিকার করো। মনে রাখতে হবে-ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই সুখ।' নীরোগ, সুস্থ জীবনের জন্য স্বল্পাহার ও ভারী খাবার পরিহারেরও পরামর্শ দিলেন তরুণদের। আর দেশ সম্পর্কে বললেন, 'আমার সোনার বাংলা চাই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধুর এই চাওয়ার কথা সবাই কেন ভুলে যায়!' জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে ৮ জানুয়ারি থেকে পালিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী জন্মশতবর্ষ উৎসব। শুক্রবার শহীদ মিনারে বিনোদবিহারীর জন্মশতবর্ষ উৎসবের উদ্বোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। শনিবার বিকেলে জে এম সেন হলের মাস্টারদা সূর্য সেন মঞ্চে 'শতাব্দীর স্মৃতিমালা' শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক কামাল লোহানী। আলোচনা শেষে কবিগানের আয়োজন করা হয়। বিপ্লবী বিনোদবিহারীর জন্মশতবর্ষ উৎসবের তৃতীয় দিন ছিল ১০ জানুয়ারি রবিবার। নগরীর ডিসি হিলে নজরুল মঞ্চে সকাল ৮টা থেকে হয়েছে সংগীতানুষ্ঠান। এ ছাড়া ছিল মুক্তিযুদ্ধের গল্প। বেগম মুশতারি শফির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় আলোচনায় বক্তৃতা করেছেন,অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক ও মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সদস্য শীলা মোমেন। এরপর শপথ পাঠ করিয়েছেন বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী। বিকেল সাড়ে ৪টায় জে এম সেন হলের মাস্টারদা সূর্য সেন মঞ্চে আয়োজন ছিল গণসংবর্ধনার। অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথি ছিলেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন, ড. আনিসুজ্জামান, কামাল লোহানী, আতাউর রহমান খান কায়সার, ড. ভারতী রায়, ড. জামাল নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক সিকান্দর খান, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম প্রমুখ। তিনি আমাদের সমাজের পাথেয় । তাঁর আদর্শ প্রজন্মের প্রত্যয় হোক । সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:৪৮
false
mk
আওয়ামী লীগের অর্জিত সাফল্যের প্রচার নেই___ ঢাকা থেকে প্রকাশিত মিডিয়া তালিকাভুক্ত কাগজ সাপ্তাহিক ‘স্বদেশ খবর’। লক্ষ্য করছি পত্রিকাটি অন্যান্য খবরের পাশাপাশি অনেক দিন ধরে সরকারের অর্জিত সাফল্যের প্রচার-প্রচারণায় নিয়োজিত। কিন্তু অত্যন্ত উন্নতমানের নিয়মিত প্রকাশিত এ পত্রিকাটি ঢাকা শহরের পত্রিকা-স্টলগুলোতে ব্যাপক পরিমাণে পাওয়া যায় না। সমগ্র দেশের অন্যান্য জায়গার খবর না হয় বাদই দিলাম। পত্রিকার সম্পাদককে জিজ্ঞাসা করায় উত্তর পেলাম তিনি পর্যাপ্ত টাকার অভাবে পত্রিকা বেশি ছাপতে পারেন না। উপরন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে উৎসাহী হয় না। অথচ অনেক নিম্নমানের পত্রিকায়ও সরকারি বিজ্ঞাপন যাচ্ছে। এই পত্রিকার সম্পাদকের ভেতর হতাশা কাজ করছে, দুঃখও। তিনি ১২ বছর যাবৎ পত্রিকাটি বের করছেন। কিন্তু সরকারের প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেও প্রত্যাশিত সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে চাহিদা সত্ত্বেও পত্রিকাটি সারা দেশে সার্কুলেট করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে সরকারের অর্জিত সাফল্যের প্রচার প্রকাশ করেও প্রত্যাশিত পর্যায়ে গণমানুষের নিকট পৌঁছানো যাচ্ছে না। আমরা যদি বলি বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্নীতি-কুকীর্তির বহুল প্রচার দরকার; তাহলে প্রয়োজন হয় একাধিক প্রচার সেলের এবং তা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এবং নিবেদিত প্রাণ কর্মী ছাড়া সরকারের সাফল্য প্রচার একেবারে অসম্ভব। কেবল তৃণমূল জনতাকে দোষারোপ করে লাভ কি? তাদের যারা বোঝাতে পারে তাদেরই পক্ষে ভোট যায়। অথচ বর্তমান সরকারের বিপুল অর্জন-উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কিছুই জানে না তৃণমূল জনতা। এই ব্যর্থতা দলের, এই ব্যর্থতা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের। তবু এই প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ রয়েছে নানাভাবে।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। কয়েক মাস আগে তথ্যমন্ত্রী করা হয়েছে ঝানু রাজনীতিবিদ হাসানুল হক ইনুকে। তাদের দ্বারা আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার কতটুকু লাভবান হচ্ছে কিংবা হবে তা জানি না। তবে গত দুবছর ধরে আওয়ামী সমর্থক অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এই সরকারের অর্জিত সাফল্য প্রচারের দুর্বলতা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। দলের প্রচার ও তথ্য দপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা এবং অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিতে না পারায় দেশের জনগণের কাছে মহাজোট সরকার সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। বিরোধী দল এবং সরকার বিরোধী জোট যেভাবে মন্ত্রী, এমপি ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ সম্পর্কে কুৎসা রটনা করেছে, যেভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বে বিভিন্ন বিষয়ে তিলকে তাল করে প্রচার করেছে তা মোকাবেলা করতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকারের প্রেস উইং ও তথ্য মন্ত্রণালয়। উপরন্তু গোয়েন্দা সংস্থার মিডিয়া সেলকে যথাযথ ব্যবহার করতেও সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের পক্ষে নিয়মিত লিখে যাওয়া এক কলামিস্টকে দলটির জনৈক শীর্ষ নেতা বলেছেন আপনারা লিখছেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। এসব নিয়ে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য সরকারের পক্ষে নিঃস্বার্থভাবে লিখে যাওয়া কলামিস্টদের একটা ধন্যবাদ দেবার মতো দলের কাউকে কোনোদিন দেখা যায়নি। এসব লেখক কখনো দল কিংবা সরকারের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য কিংবা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য লেখেন না। বরং তারা বিশ্বাস করেন আওয়ামী লীগের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী দল ক্ষমতায় না আসলে দেশ আরো পিছিয়ে যাবে। তবে আমাদের সিনিয়র এক সাংবাদিক ও লেখক সম্প্রতি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে না। তিনি কোনো একটি কাজের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের সাহায্য চেয়েছিলেন, তারা উভয়ে তাকে নীতিকথা শুনিয়ে দিয়েছেন। যদিও ঐ উভয় ব্যক্তি আমাদের পরিচিত লেখকের অতি ঘনিষ্ঠজন। এসব বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তবু আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষেই লিখতে চাই। কারণ এই দলটি ব্যতীত সাধারণ মানুষের মঙ্গল চিন্তা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল করে না। আর গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এই দলটিই লালন-পালন ও ধারণ করছে।বর্তমান সরকারই দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারার সূচনা করেছে। এজন্য আওয়ামী সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরা নির্বিকারভাবে বর্তমান মহাজোট সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দিয়ে হরহামেশায় সমালোচনা করেন। পক্ষান্তরে বিএনপি বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে বিএনপির কর্মকা-ের সমালোচনা অসম্ভব বলেই মনে হয়। সমালোচনা সহ্য করার মতো শেখ হাসিনার যে সহিষ্ণু ক্ষমতা আছে তা খালেদা জিয়ার নেই। রাজনৈতিক গণতন্ত্রে সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক অনিবার্য। আর এসবই চর্চিত হচ্ছে বর্তমান সরকারকে কেন্দ্র করে। গণমাধ্যম স্বাধীনতা ভোগ করছে বলেই সরকারের যেকোনো ত্রুটি বিচ্যুতি সঙ্গে সঙ্গে জনগণের কাছে উন্মোচিত হচ্ছে। চলতি বছর দিগন্ত ও ইসলামী টিভি বন্ধ করা হয়েছে মূলত হেফাজতে ইসলাম ও মৌলবাদী কর্মকান্ডে উস্কানি দেওয়ার জন্য। এরই মধ্যে এপ্রিল মাসে আমরা দেখলাম অতি অল্প ব্যয়ে দেশের দক্ষ জনশক্তি বিদেশে যাচ্ছে। বিদেশে কাজের জন্য এই স্বল্প ব্যয়ে বিদেশ গমন দেশের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান সরকার আমলাদের প্রাধান্যকে কমিয়ে এনেছেন। যোগাযোগমন্ত্রীর যখন তখন আমলাদের কর্তব্য পালনে অবহেলাকে সমালোচনা ও অর্থমন্ত্রীর আমলাদের বিষয়ে পছন্দ-অপছন্দ ও স্থানান্তর এর প্রধান উদাহরণ। ইতোপূর্বে বর্তমান সরকারের সন্ত্রাস বিরোধী অবস্থানের প্রশংসা করা হয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে। কারণ ধর্মীয় মৌলবাদের শেকড় উৎপাটনেবদ্ধপরিকর এই সরকার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ হওয়ায় এদেশ সম্পর্কে বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশসমূহ ইতিবাচক ধারণা পোষণ করা শুরু করেছে।৬ জুলাই অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ভোট দেওয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সুস্থ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছে। এর আগে ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশকে আরো একবার বিশ্বের সামনে ইতিবাচক ভাবমূর্তিতে তুলে ধরেছে। অথচ কিছুদিন আগেও নানা রকম নেতিবাচক ঘটনা, সমস্যা ও সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তলিয়ে যেতে বসেছিল। উক্ত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পূর্বে ক্রিকেটের ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি, তার আগে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা কিংবা একই সময়ে দেশের মধ্যে বিরোধী দলের হরতাল ও নাশকতা অথবা জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলামের তা-ব দেখে মনে হয়েছিল দেশ বুঝি গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে সেসব পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বর্তমান সরকারের সময়োচিত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে। অন্যদিকে কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল লন্ডনের বিখ্যাত ‘দি ইকোনমিস্ট’ পত্রিকা। অথচ সাম্প্রতিককালে বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক সংবাদ। ‘এ দেশের মাটিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানো কঠিন’- এই বার্তা চলতি বছরের শুরুর প্রথম সাড়ে ৫ মাসের সবচেয়ে ইতিবাচক সংবাদ। সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের মাটিতে কাজ চালানো সন্ত্রাসীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাস নিয়ে গত ৩০ মে ওয়াশিংটনে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। ২০১২ সালের পরিস্থিতি নিয়ে ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০১২’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। পাশাপাশি বিরোধী দলের সাংসদরা সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দেয়ায় সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের পথও উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই বলেছেন বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ-আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবু আমরা আশাবাদী। ১৫ জুলাই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম এবং ১৭ জুলাই আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাজার রায় ঘোষিত হওয়ায় মানুষ আশা করছে এই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে। আর রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক কার্যক্রমের প্রচার ও প্রশংসা করা আমাদের মতো সাধারণ জনগণের উচিত বলে মনে করি।মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের প্রশংসা করার পর পরই ১১ জুন জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল ২০১৩ পাস হলো। উল্লেখ্য, বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘সন্ত্রাস দমন আইন, ২০০৯’ পাস করে। সেই আইনটিকে যুগোপযোগী করার প্রয়োজন দেখা দেয় বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ধরন দ্রুত পাল্টানোর ফলে। এজন্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) মানদ- অনুসরণ করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরপর গতবছর এক দফা আইনটি সংশোধন করা হয়। কিন্তু তারপরও আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক মহল থেকে অনুরোধ আসে। এসব বিষয় যুক্ত করতেই সরকার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত বিলটি পাস করা হয়েছে। এই বিলের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইন্টারনেট ভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিরোধে বাস্তবসম্মত ধারাসমূহ অন্তর্ভুক্তি। কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সংগঠন ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- করলে সাক্ষ্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এ-সংক্রান্ত তথ্যগুলো প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা যাবে। অন্যদিকে এই বিলে জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ধারা যুক্ত হয়েছে। আল-কায়দার সম্পদ বাজেয়াপ্ত, অস্ত্র বিক্রি ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং জঙ্গিবাদে অর্থায়নে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নেওয়া দুটি প্রস্তাবও আইনে পরিণত করা হয়েছে।সন্ত্রাস দমনের নামে এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আওয়ামী লীগকে দমন করেছিল। পক্ষান্তরে বর্তমান সরকারের আমলে প্রকৃত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অবস্থানই বিশ্বব্যাপী সরকারের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। খালেদা-নিজামী জোট আমলে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ পরিচালনাকালে হার্ট অ্যাটাকের নামে ৫৮ জন এবং ক্রসফায়ারের নামে র‌্যাব ও পুলিশ কর্তৃক ২০ মে ২০০৬ পর্যন্ত ৬২০ জন মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহের হেফাজতে কয়েকশত মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক স্থানীয় প্রভাবশালী, ত্যাগী ও সৎ নেতা-কর্মীকে ক্রসফায়ারে হত্যা এবং এসব হত্যাকা-ের মামলা গ্রহণ না করা; বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- সম্পর্কে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। জোট সরকারের নির্দেশনায় বিনা বিচারে মানুষ হত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে অভিযোগ উত্থাপন এবং তাদের বিচার করা যাবে নাÑ এই মর্মে ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি’ আইন পাশ করা হয়, যা সংবিধানের মৌলিক চেতনার পরিপন্থি ছিল। সুখের বিষয় বর্তমান সরকারের আমলে হাইকোর্ট আইনটি বাতিলের জন্য রুল জারি করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে ব্যবহার করা এবং বিরোধী দলকে (আওয়ামী লীগকে) নির্মূলের নানা ঘটনা বিবেচনায় রেখেও বলা যায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার রয়েছে ব্যাপক সাফল্য। জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র নেতাদের গ্রেফতার ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠনকে আইনের কাছে উপস্থিত করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা।বর্তমান মহাজোট সরকারের এই ধরনের সাফল্যের কথা ক্রমধারায় লেখা যায়। হয়তো আমি লিখে যাব। তাতে আওয়ামী লীগের উপকার হবে কিনা জানি না। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর তাদের কাছে সরকারের অর্জিত সাফল্য বোঝানোর জন্য টিভি মিডিয়াও অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। খুব সহজে উন্নয়নের নজিরগুলো তাদের সামনে উপস্থিত করা গেলে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেওয়া সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকে ইতিবাচক খবর প্রচারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের প্রতিটি দপ্তরকে সক্রিয় করা আবশ্যক। আর দলের প্রচারকর্মীদের শ্রমের প্রতি সম্মান দেখানো একান্ত প্রয়োজন; শীর্ষ নেতারা এক্ষেত্রে উদাসীন রয়েছেন। তাদের মনোযোগ ছাড়া আওয়ামী লীগের অর্জিত সাফল্যের কথা জনগণ জানতে পারবে কি?লেখাটি মিল্টন বিশ্বাস এর, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
false
hm
যানজট নিয়ে দুইআনা ঢাকার রাস্তা যেহেতু সময়ের সাথে বাড়ছে না, কিংবা বাড়লেও খুব সামান্য বাড়ছে, তাই প্রতিটি নতুন গাড়ি ঢাকার যানজটকে আরেকটু বাড়ানোর খানিকটা দায় মাথায় নিয়ে পথে নামছে। সরকার চাইলে দুটো ছোটো উদ্যোগ নিয়ে এই যানজট কমানোয় খানিকটা অবদান রাখতে পারে। প্রথমত, সরকার তার কর্মীদের (কর্মকতা ও কর্মচারী) পরিবহন ব্যবস্থাকে অন্যভাবে সাজাতে পারে। সরকারি পরিবহন পুলে গাড়ি যোগ করে অপচয় না বাড়িয়ে বিআরটিসিকে সরকার নতুন বাস কিনে দিতে পারে। সকালে ও সন্ধ্যায় এই নতুন বাসগুলো কেবল সরকারি কর্মী বহন করবে। সরকারি কর্মীদের মাঝে সচিত্র পরিবহন পাস সরবরাহ করা হবে, এবং তারা সেই পাস দেখিয়ে বিআরটিসির এই নতুন বাসগুলোতে চড়ে সকালে ও সন্ধ্যায় কেবল সরকারি কর্মীবাহী ট্রিপগুলোতে বিনামূল্যে শহরে চলাফেরা করতে পারবেন। দিনের বাকিটা সময় এই নতুন বাসগুলো সাধারণ যাত্রী বহন করবে। এতে করে যা হবে, সরকারি কর্মী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত যানের ব্যবহারাঙ্ক (প্রতি যাত্রায় প্রতি ঘণ্টায় প্রতি বর্গমিটার রাস্তায় পরিবাহিত যাত্রী সংখ্যা) অনেকগুণে বাড়বে। সরকারি গাড়ি পরিবহন পুলে যোগ হয়ে অপচয় বাড়াবে না। একটি বাস যদি ৬০ জন যাত্রী বহন করে, তাহলে রাস্তা থেকে বিকল্প অনেকগুলো সরকারী মাইক্রোবাস ও সেডান উঠে গিয়ে অন্যের জন্য জায়গা করে দেবে। যাত্রী পিছু রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমে আসবে বিপুলভাবে, চালক বাবদ সরকারের ব্যয়ও হবে কম, সেইসাথে সরকারি গাড়ির অপব্যবহারও কমে আসবে অনেক। দ্বিতীয় উদ্যোগটি হবে এমন, ঢাকা শহরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পারতপক্ষে কোনো অনার্ন্তজাতিক অনুষ্ঠানে সশরীরের অংশগ্রহণ করবেন না। কোনো কিছুর উদ্বোধন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানগুলোতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি নিজ কার্যালয় বা বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিঙের মাধ্যমে অংশ নেবেন। সেখানে তাঁদের বক্তৃতা এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব (যদি থাকে) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে। প্রকাণ্ড স্ক্রিনে তাঁদের বক্তব্য অনুষ্ঠানমঞ্চে দেখানো হবে। তাঁদের পক্ষ থেকে তাঁদের মনোনীত কোনো কর্মকর্তা কৃতীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। এর কারণ হচ্ছে, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যখন ঢাকা শহরে চলাচল করেন, তাঁদের যাত্রাপথ জুড়ে সব রাস্তা বন্ধ রাখা হয়। লক্ষ লক্ষ লোক এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘানি টানতে বাধ্য হন। যদি দশ লক্ষ লোকও যে কোনো সময় রাস্তায় যানজটে আটকে থাকে, আর ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে তাদের একটি ঘণ্টাও যদি নষ্ট হয়, তাহলে এক কর্মঘণ্টার মূল্য একশো টাকা ধরে নিলে, এ ধরনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির উপস্থিতির মূল্য হিসেবে ঢাকা শহরের পথযাত্রীরা দশ কোটি টাকা নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করছেন। অনান্তর্জাতিক অনুষ্ঠানগুলো কি আদপেই এতো মূল্যবান? এ দুটি উদ্যোগ নিলে ঢাকায় পথযাত্রীদের জীবন আরেকটু সহজ হবে। একই সাথে সরকার নিজে প্রথম উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে পারলে অন্যান্য বেসরকারি "গাড়ি-ভারি" প্রতিষ্ঠানকেও একই ধরনের উদ্যোগ নিতে রাজি করানোর কাজ শুরু করতে পারে।
false
rn
জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো জাগো মানুষ জাগো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো ভাঙ্গো মানুষ ভাঙ্গো পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও পোড়াও মানুষ পোড়াও সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ২:৫৪
false
rn
হাস্যকর সব বানী_ ১. “আমি হয়তো আছি তাই বাংলাদেশ নিরাপদে আছে। আমার চোখ বন্ধ হলে কী হবে তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন”। - শেখ হাসিনা ২. “আমার চেয়ে বেশী দেশপ্রেমিক আর কে আছে”? - শেখ হাসিনা ৩. “দেশের পরিস্থিতি যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো” সাহারা খাতুন। ৪. “বেশী করে আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান”-মইন ইউ আহমেদ। ৫. “শেয়ার মার্কেটে কোন ইনভেস্টর নাই, সব জুয়াড়ি”-আবুল মাল আব্দুল মুহিত ৬. “আপনারা কম খান কোন সমস্যা থাকবেনা” -ফারুক খান। ৭. “একদিন বাজারে না গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে”-আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ৮. “দূর্ঘটনার জন্য চালকরা দায়ী নন” । -শাজাহান খান ৯. “সড়কে ঝুঁকি নেই সেটা আমি বলবো না, তবে কোনো সড়কই চলার অনুপযোগী অবস্থায় নেই'' - আবুল হোসেন ১০. “অপরাধী ধরতে গেলে দু-চারটা লাশ পড়ে গেলে অপরাধ হবে না”। (নাম মনে নেই) ১১. “ইভটিজিং করতে হবে সীমার মধ্যে থেকে”- জনৈক পাতি নেতা ১২. “জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করলেও মন থেকে করেন নি”- মতিয়া চৌধুরি ১৩. “পেঁয়াজ না খেলে কি হয়?” -ফারুক খান ১৪. “এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা”।-সাহারা খাতুন ১৫. "আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই কেবল দেশে শান্তি থাকে। আর এখন কৃষক কে আর সার খুজতে হয়না, সার ই কৃষক কে খুজে" -স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ১৬. " আপনাদের ড্রাইভারের দোষ ছিল , সে ওভারটেক করতে গিয়েছিল " -আবুল হাসান ১৭. নোবেল পুরষ্কার পাতেল গ্যাস জ্বালানী নিয়ে আন্দোলন কারী আনু মুহাম্মদরা হলো টোকাই-----সংসদে/পরিবেশ মন্ত্রী হাসান মাহমুদ। ১৮. জয়নাল হাজারীর মতো ভালো মানুষ কমই আছে-----আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯. আমার বেয়াই রাজাকার হলেও যুদ্ধাপরাধী নয়--শেখ হাসিনা। ২০. বঙ্গবন্ধু জন্মের সাথে সাথেই না কেদেঁ জয়বাংলা বলে উঠেছেন--স্বরাষ্ট্র পাতিমন্ত্রী টুকু। ২১. যাদের চেহারা সুরত ভালো না, তারাই বোরখা পড়ে-----প্রতিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ২২. শেখ হাসিনা ছাড়া সৌদি বাদশা আর কারো সাথে দেখা করেননি কোনোদিনও---পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনি। ২৩. আমরা যারা রাজনীতি তাদের মাথা ঠিক রাখার জন্য মাঝে সেক্সের দরকার হয়, তাই এই ধর্ষণ------জনৈক ছাত্রলীগ ধর্ষনে সেঞ্চুরীয়ান নেতা/সিন্ডিকেটের তদন্ত কমিটির সামনে জিজ্ঞাসাবাদের সময় উক্তি। ২৪. গাবতলী গরুর হাটটি আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতার নামে ‘‘এরশাদ গরুর হাট’’ রাখা হোক-এটা আমাদের প্রাণের দাবী-------------এস এ খালেক, এমপি। ২৫. এই গরুটাকে স্টেইজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হোক---------এরশাদ/নামকরনের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে, এসএ খালেককে দেখিয়ে দিয়ে আমার নেত্রী জীবনে কখনো কোনদিন মিথ্যা কথা বলেননি।-জিল্লুর রহমান। ২৬. ভারতকে ট্রানজিটের বিনিময়ে ফি নয়, একটা কিছু নিবো-----অর্থমন্ত্রী মুহিত। ২৭. ধর্ম একটি নেশা, যেমন তামাক-মদ যেমন নেশার সৃষ্টি করে, ধর্ম তেমনি এক ধরনের নেশার সৃষ্টি করে------বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আ। লতিফ সিদ্দিকী। ২৮. মিডিয়ার মালিকরা জারজ সন্তান------বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আ। লতিফ সিদ্দিকী। ২৯. সরকার আমাকে ক্ষমতা দিয়েছে, আমার ক্ষমতা কেউ কমাতে পারবেনা-----লোটা কামাল। ৩০. মহাজোট ব্যর্থ হলে আমাকে প্রথম ফাসিঁ দেওয়া হবে----লেজেহুমু এরশাদ । ৩১. শামীম ওসমান ভালো অভিনেতা, তিনি মিথ্যাকে সুন্দর ভাবে সত্যে পরিনত করেন------অভিনেত্রী সারাহ কবরী, এমপি ৩২. রমজানে সরকারকে অভিশাপ নিবেন না-----বানিজ্য সচিব ম, গোলাম হোসেন। ৩৩. ফারুককে নির্যাতন করে গণতন্ত্রের প্যান্ট খোলা হয়েছে-------আ স ম রব। ৩৪. শেয়ার কেলেংকারীর অভিযোগ পরোয়া করিনা------লোটা কামাল। ৩৫. কবির চৌধুরী যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা হলে আমরাও মুক্তিযোদ্ধা-------জামায়াত নেতা আজহার। ৩৬. বিমান মন্ত্রনালয় চলছে সতীনের সংসারের মতো-----কর্নেল অলি। এরশাদ একটি মরা ঘোড়া--------আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাইদ। ৩৭. নিয়োগ নিয়ে কি হচ্ছে তা আল্লাহ ভালো জানেন-----স্পিকার আ: হামিদ। ৩৮. প্রশাসন কাদঁছে, আমরা দেখছি-------মাহমুদুর রহমান মান্না। ৩৯. সারাদিন মেকাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে দিন বদল দেখবে কেমনে-----মতিয়া চৌধুরী/খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে। ৪০। সন্ত্রাসী ১০০ হাত মাটির নিচ থেকে খুজে বের করা হবে -- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নাছিম। .৪১। এরশদের যদি এ ক্ষমতা থাকতো তবে সারা দেশ কচিকাচার মেলায় ভরে যেত (সাদ এর জন্ম সম্পর্কে)-- জাপা এর সাবেক এক মহিলা এমপি গার্মেন্টস এর পানি রাস্তায় ছেড়ে দেয় বলে রাস্তার এ বেহাল দশা- আবুল হোসেন। ৪২। বঙ্গবন্ধু জন্মের সাথে সাথেই না কেদেঁ জয়বাংলা বলে উঠেছেন–স্বরাষ্ট্র পাতিমন্ত্রী টুকু। ৪৩। যাদের চেহারা সুরত ভালো না, তারাই বোরখা পড়ে—–প্রতিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ৪৪। শেখ হাসিনা ছাড়া সৌদি বাদশা আর কারো সাথে দেখা করেননি কোনোদিনও—পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনি। সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩০
false
mk
বিএনপি জামাত সম্পর্ক শুধুই নির্বাচনী! বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক প্রায় ৩৮ বছরের। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন তখন থেকেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এ দলটির অনেকটা আত্মীয়তার মতো সম্পর্ক বিরাজমান। সত্যি করে বলতে গেলে জিয়াউর রহমান ১৯৭৬/১৯৭৭ সালের দিকে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা রাজনীতি করার সুযোগহীন জামায়াত নেতাদের পরামর্শে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল Ñ বিএনপি গঠন করেন। জিয়াউর রহমান জামায়াত নেতাদের পরামর্শের পুরস্কারস্বরূপ তাদেরকে এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ না পাওয়া জামায়াতে ইসলামী জিয়াউর রহমানের কৃপায় রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে নিজেদের দলকেই শুধু সংগঠিত করেনি; রাজনীতিতে আনকোরা বিএনপিকেও সংগঠিত করতে সাহায্য করেছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, জামায়াতের নেতা রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে। এছাড়া রাজাকার আবদুল আলীমের মতো বহু নেতাও জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পায়। সে হিসেবে এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, বাংলাদেশে বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠার পেছনে যেমন জামায়াতে ইসলামীর হাত আছে, তেমনি এদেশের মাটিতে জামায়াতের রাজনীতি করার পেছনেও বিএনপির বড় ধরনের অবদান আছে, যা কোনো দলই কোনো সময়ে অস্বীকার করেনি। নব্বই পরবর্তী সময়ে মাঝে মাঝে জামায়াত অন্য দলকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে (যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু) বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আবার বিএনপিও মাঝেমধ্যে জামায়াতকে তাদের জোট থেকে বের করার হুমকি দিয়েছে (যেমন সাম্প্রতিক সময়ে)। কিন্তু এসবই যে রাজনৈতিক কারণে তা সচেতন রাজনৈতিক মহলের কাছে স্পষ্ট।আসলে জামায়াত-বিএনপি সম্পর্ক কখনোই নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। এ সম্পর্ক ঐতিহাসিক, এ সম্পর্ক আত্মীক। যারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের একটি অংশের এ নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। তারা বিএনপি করেন রাজাকার আলবদররা বিএনপির সঙ্গে জড়িত আছে জেনেও। তবে বিএনপিতে যারা দীর্ঘদিন থেকে আছেন, অন্য অর্থে যারা মুক্তিযুদ্ধপন্থি তাদের অনেকেই এই দুইটি দলকে একই জোটভুক্ত হিসেবে মেনে নিতে পারেন না। তারপরও তারা বিএনপি করেন; আগে করতেন জিয়াউর রহমানকে খুশি রাখার জন্য, আর এখন করেন খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের বিরাগভাজন না হওয়ার জন্য।বিএনপির বাইরে রাজনীতি সচেতন মানুষ বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই হতাশা প্রকাশ করে থাকেন। কেউ কেউ বিএনপি’র শুভানুধ্যায়ী হয়ে বৃহৎ এ দলকে জামায়াতের সম্পর্ক ত্যাগ করতেও উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের নিবিড় সম্পর্ককে বড় ধরনের বাধা হিসেবে দেখেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো কোনো দল জামায়াত-বিএনপির জোটবদ্ধতার কারণে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে চাচ্ছে না।সাম্প্র্রতিক সময়ে জামায়াত-বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে খোদ বিএনপির নেতাকর্মীদের মোহভঙ্গ ঘটেছে। জামায়াতের কারণেই যে বিএনপি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি এটা বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া দেশ এবং বিদেশের অনেক সংস্থা, রাষ্ট্র ও সরকার দুই দলের সম্পর্কের বেশ কিছু সর্বগ্রাসী নজির দেখতে পেয়েছে। বিশেষত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র কর্মীরা দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে যে নৃশংসতা চালিয়েছে; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটেছে; তার দায়ভার বিএনপির কাঁধেও এসে পড়েছে। এর ফলে দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সহিংসতা, জঙ্গি মনোভাব ও নাশকতার সঙ্গে যুক্ত জামায়াত নামের দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এতদিন আওয়ামী লীগসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে বিএনপিকে চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু জামায়াতকে সহিংস ও জঙ্গিবাদী দল বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মানতে চায়নি, অধিকন্তু সরকার পতনের লক্ষ্যে জামায়াত-শিবিরকে ব্যবহার করার কৌশলই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। খালেদা জিয়াসহ বেশিরভাগ বিএনপি নেতাকে জামায়াত একটি নিবন্ধিত দল, বৈধ দল এমন ঠুনকো যুক্তি দাঁড় করাতে দেখা গেছে। কিন্তু ইউরোপীয় পার্লামেন্ট জামায়াতকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করার পর দলটির সংশ্রব ত্যাগের উপদেশ দেওয়ায় বিএনপি বেশ বেকায়দায় পড়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশি কিছু মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন যে, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নির্বাচনি আঁতাত, স্থায়ী কোনো বিষয় নয়। এটি বেগম খালেদা জিয়ার প্রকাশ্য বক্তব্য যেখানে জামায়াত ও বিএনপির সম্পর্ক ভোট বা নির্বাচনি বলে দাবি করা হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ১৮ দলীয় জনসভায় জামায়াতের নেতারা মঞ্চে বসেননি, জামায়াত-শিবির উপস্থিত হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে, দেখানো হয়েছে। তবে বাস্তব সত্য হচ্ছে, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ব্যানারবিহীনভাবে ওই জনসভায় উপস্থিত ছিল বলে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপি ওই জনসভায় জামায়াত-শিবিরকে না দেখানোর কৌশল থেকেই এমন কাজ করেছে বলে সব মহল থেকেই বলা হয়েছে। এমন দৃশ্য দেখানোর মাধ্যমে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে আগের মধুর সম্পর্ক নেই এমন ধারণা বিদেশিদের দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কোনো কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতগণ সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার খবর হিসেবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন বলে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো পত্র-পত্রিকাতেও নানা সংবাদ এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে যে, সহিংসতাসহ নানা বিষয়ে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমন একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা কতখানি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, পরিকল্পিত, রাজনৈতিক কূটচালের অংশ হিসেবে তা সবাই বুঝতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে। জামায়াত-বিএনপির এমন লুকোচুরির খেলা উভয় দলের আন্তঃসম্পর্কের গভীরতাকেই নির্দেশ করছে বলে মনে করা স্বাভাবিক।দেশের জনগণের সঙ্গেই নয়, বিদেশিদের সঙ্গেও এটি প্রতারণার উদ্দেশ্য থেকে করা হচ্ছে বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। বিএনপি বা জামায়াত যদি মনে করে যে তাদের এমন লুকোচুরি ভাব দেখানোর রাজনীতি কেউ ধরতে পারবে না, তাহলে সেটি মস্ত বড় ভুল বলাই শ্রেয়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির প্রতি তার নেতাকর্মীদের আস্থা বৃদ্ধির চাইতে অবিশ্বাস এবং ঘৃণাই বেড়ে যেতে পারে বলে সচেতন মহল মনে করে।প্রশ্ন হচ্ছে কেন জামায়াত ও বিএনপি এমন করছে? এর উত্তর খুব জটিল নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, দেশে-বিদেশে জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সমালোচনার পর বিএনপির পক্ষে বিদেশিদের সমর্থন পাওয়ার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেটি ঢাকতেই উভয় দলের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে জামায়াত ও বিএনপির দূরত্ব নিয়ে কথাবার্তা বলা হচ্ছে। সংবাদ প্রকাশ কিংবা জনসভার মঞ্চে আসন গ্রহণ না করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এবং জোটের সমাবেশে জামায়াত-শিবির কর্মীরা আগের মতো ব্যানার নিয়ে সম্মুখে বসার চেষ্টা না করার ভান করছে। এসবই দুই দলের সমঝোতার ভিত্তিতেই হয়েছেÑএমন বিশ্বাস করতে কারো কষ্ট হওয়ার কারণ নেই। জামায়াত বিএনপির মতো বন্ধু হারাবে, বন্ধুকে বিপদে বা সমালোচনায় ফেলবে সে রকম দলই নয়। জামায়াত জানে বিএনপি কেমন দল। বিএনপির বেশির ভাগ পেশাজীবী সংগঠন এখন চলছে জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পেশাজীবীদের নেতৃত্বে বা অংশগ্রহণে। বিএনপির অভ্যন্তরে জামায়াতের প্রভাব কতটা তা তাদের জানা আছে। বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হলে জামায়াতের লাভ কত বেশি তা দলটি জানে। ২০০১-২০০৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকার সুবাদে যে ভিত্তি তারা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে তা অন্য কোনোভাবে করা সম্ভব ছিল না। এখন বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে সবচাইতে লাভবান হয় জামায়াত, তাদের শক্তি বৃদ্ধির সুযোগগুলো পুরোপুরি তারা কাজে লাগাতে পারে, যা তারা ২০০১-২০০৬ সালে করতে পেরেছিল। সুতরাং জামায়াত এখন নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য বিএনপিকে বিপদে না ফেলে বরং রক্ষা করার কৌশল নিয়েছে। এটি উভয় দলের বোঝাপড়ার মাধ্যমেই হয়েছে। সম্মুখে এই দুই দলের মধ্যে যদি কোনো দূরত্ব কেউ আবিষ্কার করেন সেটিও হবে উভয়ের সম্মতিতেই।বিএনপির এমন অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি অনেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। কিন্তু রাজনীতিকে যারা রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন এবং প্রায়োগিকবাদের গভীর বিশ্লেষণ থেকে বোঝেন তাদের স্পষ্ট দেখতে পাওয়ার কথা যে, বিএনপি ক্রমেই মধ্যডানপন্থার অবস্থান থেকে সর্বডানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তবে নেতাকর্মীদের কারণে জামায়াতের মতো উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী দল হওয়ার সুযোগ দলটির নেই। তবে সাম্প্রদায়িকতা, ভারতবিরোধিতা, আওয়ামী বিরোধিতা, সুবিধাবাদ ও আদর্শহীনতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন রাজনীতি করতে করতে বিএনপি এখন সব কিছুতেই খেই হারিয়ে ফেলেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার আকাক্সক্ষা থেকে দলটি উগ্র জঙ্গিবাদী ভাবাদর্শের যে কোনো দলের ওপর ভরসা করতে দ্বিধা করছে না। বিএনপি মনে করছে ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে সরাতে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ও বিএনপিকে ব্যবহার করে গড়া ধনসম্পদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিএনপির আস্থার জায়গাটিতে কেন জামায়াত এতো গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমেয়। অন্যদিকে জামায়াতের কাছে বিএনপির গুরুত্ব এখন অপরিসীম। বিএনপির পাশে থাকার সুবাদে বিদেশে জামায়াত মডারেট ইসলামপন্থি দল হওয়ার সমর্থন পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বড় একটি দলকে আপদে-বিপদে পাশে পাওয়া যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শুরু থেকে বিএনপি যেভাবে জামায়াতকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে, কখনও কখনও প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে আসছে তা দল দুটির জন্মের ইতিহাসের প্রশ্নেই।বিএনপি জামায়াতকে ১৯ দলের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে, দিচ্ছে। এত বড় সমর্থন পাওয়ার পিছনে রয়েছে বিএনপির অকুণ্ঠ সমর্থন। বিএনপিও যদি আওয়ামী লীগের মতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হতো তাহলে অনেক আগেই জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বিএনপি এ প্রশ্নে নিজের নাক কেটে জামায়াতের ঘাড় রক্ষা করে চলছে। সে কারণে জামায়াত কৃতজ্ঞ; এটিই স্বাভাবিক। আদর্শিকভাবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে নৈকট্য থাকার কারণেই এমনটি ঘটেছে। অন্য আদর্শের বা মতাদর্শের দলের সঙ্গে এমনটি ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। তেমনটি কখনও ঘটে না। সুতরাং জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে যে সম্পর্ক তার পিছনে অনেকটাই মতাদর্শিক নৈকট্য (ধর্মীয় ইজম) কাজ করছে। আদর্শই উভয়কে কাছে টেনে ধরে রেখেছে। এ আদর্শ সংকীর্ণ ভোট বা নির্বাচনি আঁতাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এই আদর্শ দল দুটির জন্মরহস্যের মধ্যে লুকিয়ে আছে। এই রহস্য ব্যবহার করে বিএনপি যেমন বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থেকেছে; তেমনি জামায়াতও থেকেছে ক্ষমতার কাছাকাছি। সুতরাং খালেদা জিয়া বা বিএনপি-জামায়াতের যে যা-ই বলুক জামায়াত-বিএনপির সম্পর্কের মর্মভেদ করা খুব সহজ নয়। এ সম্পর্ক ঐতিহাসিক বন্ধন দ্বারা প্রোথিত।
false
rn
আমার মৃত্যু চিন্তা রাত ১১ টা। আমরা দু'জন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বরাবরের মতো মুহূর্তের মধ্যে সুরভি ঘুমিয়ে পড়ল। আমি এপাশ-ওপাশ করছি। আমার চোখে ঘুম নেই। অনেক চেষ্টা করলাম- কিছুতেই ঘুম আনতে পারলাম না। লাইট অন করলাম, ঘড়ির দিকে তাকাইয়ে দেখলাম- রাত দুই টায়। সুরভি বাম পাশ ফিরে বাম হাত বাম গালের উপর রেখে আরাম করে ঘুমাচ্চছে। দেখে মায়া লাগল। অথচ বিয়ের আগে সুরভি কথা দিয়েছিল- আমি ঘুমাবো তারপর সে ঘুমাবে। 'কেউ কথা রাখে না।' আচ্ছা, এক জীবনে মানুষ কর কথা দেয়, আর কত কথা রাখে না? ব্যালকনিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে পরপর দু'টা সিগারেট শেষ করলাম। ঠিক তখন আমার মাথায় মৃত্যু চিন্তা ভর করলো। আমি জীবনে যা কিছু চেয়েছি, তা পাইনি। পেলেও সময় মতো পাইনি। যেমন, আমার যখন ১৪ বছর বয়স তখন একটা সাইকেল খুব চেয়েছি- কিন্তু আমার বাবা কিনে দেয়নি। কিন্তু যখন সাইকেল চালানোর কোনো ইচ্ছে ছিল না, তখন হাতের কাছে দু'টা সাইকেল পেয়েছি। এই রকম অযুত-নিযুত লক্ষ লক্ষ স্বপ্ন জীবনে যথা সময়ে পূরণ হয়নি। তাই ঠিক করেছি, জীবনে যে ইচ্ছে বা স্বপ্ন গুলো পূরণ হয়নি তার একটা লিস্ট করবো। ইদানিং মনে হচ্ছে- আমি বেশি দিন বাঁচবো না। পুরাণ-মতে, কোনও ব্যক্তির দেহে যদি হলদেটে ভাব দেখা যায় এবং তাতে রক্তবর্ণের আভা থাকে, তবে বুঝতে হবে তাঁর মৃত্যু সন্নিকটে। কুরআনে মানুষের জন্ম ও মৃত্যু – এই দুটি-কে বহু বার আলোচনা করা হয়েছে।আমি জানি, মাতৃগর্ভের সেই একটি মাত্র কোষ ক্রমাগত বিভাজিত হয়ে দিনে দিনে গঠন করে মানবদেহ, পরিণত করে একটি বাচ্চা শিশুর শরীরকে পুর্নবয়স্ক মানুষে। আল্লাহ প্রকৃতিতেই যেমন আমাদের জীবন রক্ষার উপাদানগুলো রেখে দিয়েছেন, তেমনি এই প্রকৃতির মধ্যেই মৃত্যুর অমোঘ নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। বিজ্ঞানের কচকচানিতে আমি যাব না। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত মরতে চাননি। তিনি বলেছেন- 'মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।' মৃত্যু চিন্তা খুব অদ্ভুত একটা চিন্তা। যখনি মৃত্যুর চিন্তা মাথায় আসে প্রবল এক ঘোরের মধ্যে চলে যাই আমি। জগতটাকে খুব বেশি রহস্যময় মনে হয় তখন। জীবন এত ছোট কেনে? " -লেখকের এই ভাবনাটি বারবার গভীরভাবে ভাবিযেছে। হয়রান করেছে। জীবনের সব স্বপ্ন পূরন করতে গেলে লম্বা সময় বেঁচে থাকা দরকার। হুট করে মরে গেলে সব স্বপ্ন'ই আধুরি থেকে যাবে। এটাই মানব জীবনের সব চেয়ে বড় সমস্যা। মৃত্যু ভয়ে হাসন রাজা পর্যন্ত নিজের ঘর বাড়িটা সুন্দর করে তৈরি করতে চাননি। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- 'বর্ষাকালে এখানে, শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো – মূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে। শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে।' হাসন রাজার মৃত্যু নিয়ে খুব সুন্দর একটা গান আছে- 'একদিন তোর হইবো রে মরণ।।যখন আসিয়া যমের দূত হাতে দিবে দড়ি ~ হায়রে~ হাতে দিবে দড়ি।টানিয়া টানিয়া লইয়া ,যাবে যমের পুরি রে হাসন রাজা।' অফিসে আমার কলিগকে আমার মৃত্যু চিন্তা নিয়ে বলতেই, তিনি আমাকে বাইরে চা খাওয়াতে নিয়ে গিয়ে বললেন, খেয়াল করে দেখবেন, একজন তরুণ কীভাবে রাস্তা পার হয়! আর একজন সংসারী মানুষ কীভাবে সেই একই রাস্তা পেরিয়ে যায়। সংসারি মানুষটি হয় দায়িত্বশীল। মৃত্যুর ভয় আছে তার। জীবন তার কাছে অনেক দামী। তাই সে সাবধানী। আর তরূণ যুবকের মাঝে এসব ভাবনা নেই। পিছুটান নেই। সে হয় অসাবধানী। মৃত্যুর ভাবনা এমনই। তা জীবনকে আরও অর্থবহ করে। মানুষকে আরও কর্মঠ করে।প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চাইতেন। তিন এক আকাশ হাহাকার নিয়ে বলেছেন একটা কচ্ছপ বাঁচে ২০০ বছর আর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত বাঁচে মাত্র ৬০ বছর। অল্প কিছুদিন আমাদের আয়ু।কিন্তু আমাদের কত আয়োজন! লেখা-পড়া, ডিগ্রী, চাকরি-বাকরি, বিয়ে ঘর সংসার- সন্তানাদি। আমি অনেক লোককে দেখেছি, একটু বেশি দিন বাঁচার জন্য তাদের কত চেষ্টা। সিগারেট, মদ ছুঁয়েও দেখেন না। ডাক্তারের সব কথা মেনে চলেন। খুব ভোরে হাঁটতে বের হোন। নানাবিদ চেষ্টা করেও লাভ নেই। অবশেষে তাদের মরতে হয়'ই।আমার যখন ২১ বছর বয়স, তখন একবার আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। ঘটনাটা বলি- বড় একটা জাহাজে করে আমরা ১০০ জন সুন্দরবন যাচ্ছিলাম ৫ দিনের জন্য। আমাদের জাহাজ যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। এক সময় আমাদের জাহাজ বঙ্গোপসাগরে পৌছালো। সবাই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গেল। আমি আমার স্বভাব মতো কোনো দলের সাথেই মিশতে পারলাম না। একা একাই রইলাম। কেউ দল বেঁধে গল্প করছে, কেউ বই পড়ছে, কেউ গান গাইছে। আমি একা একা জাহাজের এপাশ-ওপাশ আর উপর নিচ করতে থাকলাম। আশে পাশে দেখার কিছু নেই। চার পাশে পানি আর পানি। কোনো পাড় দেখা যায় না। বাবুর্চি রান্না নিয়ে ব্যস্ত। খাবারের সময় সবাই মিলে নিচে গিয়ে একসাথে খাওয়া। যাই হোক, রাত দুইটা- আমার চোখে ঘুম নেই। আমার কেবিন থেকে বের হয়ে জাহাজের ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেল। চার পাশ এত সুন্দর---এত সুন্দর। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। ফক-ফকা জোছনা। জোছনা পানিতে পড়ে চারপাশ ঝিকমিক করছে। চারপাশের পরিবেশ কিয এ মায়াবি!!! ঠিক তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। খুব তীব্র ভাবেই মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, এই মধ্যে রাতের এই সুন্দর পরিবেশ আমাকে ডাকছে- সুন্দরের কাছে আমাকে যেতে হবে। এর নাম যদি মৃত্যু হয়- তাও ভালো। মৃত্যু এত সুন্দর !!! এক আকাশ জোছনায় আমি ঝাঁপ দিব- ঠিক তখন আমার আব্বা এসে আমার হাতটা ধরে ফেলল। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পূর্ব সময়ে আর্নেস্তো চে গুয়েভারাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি তার অমরত্বের কথা ভাবছেন? চে জবাব দেন ‘আমি ভাবছি, বিপ্লবের অমরত্বের কথা’। তারপর তাকে প্রায় ১০টি গুলি করা হয় এবং তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এটা ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবরের ঘটনা। সন্দেহ নেই, বিপ্লবের ব্যাপারে অবিচল পুরুষ ছিলেন আর্নেস্তো চে গুয়েভারা। কিন্তু তার যে বিপ্লব, যে আদর্শ, যে চেতনা—একে লালন করার সামর্থ্য এবং অধিকার সমকালীন পৃথিবীবাসীর নেই। (আমার মৃত্যু চিন্তা নিয়ে মুল লেখাটা আগামী পরবে লিখব।) সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৫
false
rg
সুন্দরবন ধ্বংসের পেছনে যাদের স্বার্থ আছে!! ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম জেলাগুলোর গ্রোথ সেন্টার ও ফিডার রোড উন্নয়ন প্রজেক্টে আমি কাজ করেছিলাম। তখন গোটা খুলনা জেলা, যশোর জেলা, নড়াইল জেলা ও সাতক্ষীরা জেলায় যতো রাস্তা ও বাজারঘাট পাকা হয়েছিল, সবগুলো আমি ভিজিট করেছিলাম। তখন সুন্দরবনে দীর্ঘ এক মাস কাটানোর সুযোগ আমার হয়েছিলাম। এর আগে আমি সুন্দরবন দেখতে গিয়েছিলাম দু'বার ১৯৯০ ও ১৯৯২ সালে, বন্ধুদের সঙ্গে স্রেফ বেড়াতে গিয়ে। সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের মধ্যে না ঢুকলে সুন্দরবন সম্পর্কে আসল ধারণা কারোরই হবার কথা নয়। খুবই সেনসিটিভ আমাদের এই প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। বাংলাদেশকে সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা থেকে শুধু রক্ষাই করে না, বরং সে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট যে কোনো ঝড়কে রুখে দেয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা এই সুন্দরবন কেন্দ্রীক। দেশের গোটা দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসত বাড়ির ছাউনি'র যোগান দেয় সুন্দরবনের গোলাপাতা। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সুন্দরবন ও আশেপাশের খাল-নালা ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। আমাদের বন্যপ্রাণীর অধিকাংশের বসবাস সুন্দরবনে। আমাদের জাতীয় প্রতীক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারেরর বসবাস এই সুন্দরবনে। আমাদের চিত্রা হরিণ, বলগা হরিণ, বানর, বনমোরগ, কাঠবিড়ালি, অসংখ্য প্রজাতির পাখি'র বসবাস সুন্দরবনে। 'বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে' কথাটির উৎপত্তি এবং যথার্থ অবলম্বন এই সুন্দরবনকে ঘিরেই। সুন্দরবন পৃথিবীর কোনো বিজ্ঞানের অবদানে সৃষ্ট কোনো জঙ্গল নয়। মানুষ সৃষ্ট কোনো অরণ্যও নয়। এটা স্রেফ প্রকৃতির নিঃস্বার্থ অবদান। পৃথিবীর বৃহৎতম ম্যানগ্রোভ আমাদের এই ভালোবাসার সুন্দরবন। সেই সুন্দরবনকে আমরা সুন্দর মন নিয়েই রক্ষা করব। আমাদের সরকারগুলো ৪২ বছরে দেশের প্রায় সকল রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলো ধ্বংস করেছে। প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিবর্তে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ইতিহাসই আমরা কেবল দেখতে পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হত এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। আর এখন সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গোটা এশিয়ার মধ্যেই শিক্ষামানে অনেক নিচে। আমাদের আদমজি পাটকল আমাদের সরকারগুলো ধ্বংস করেছে। আমাদের নিউজপ্রিন্ট আমাদের সরকারগুলো ধ্বংস করেছে। বিনিময়ে এখন সকল খাবারে পর্যন্ত ভেজালের উৎপাত। যে জাতি খাবারে বিষাক্ত ফরমালিন মেশাতে পারে, সে জাতি'র ধ্বংস রোধ করবে কে? তাহলে সরকার ব্যবস্থার দরকার কোথায়? যে জাতি নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নষ্ট রাজনীতির বীজ বপন করে, সে জাতির ধ্বংস রোধ করবে কে? যে জাতি মহামান্য আদালতে দলীয় লোকজন দিয়ে বিচারক কোঠা পূরণ করে, সে জাতির অন্যায় কাজের বিচার করবে কে? বিগত ৪২ বছরে বাংলাদেশ শুধু অদক্ষ ও স্বার্থন্বেসী কিছু দুবৃত্তদের কবলে পরে কেবল পেছনের দিকে হেঁটেছে। বাংলাদেশে যেদিন এনজিও'র আমদানি ঘটেছে, সেদিন থেকেই বিদেশি স্বার্থের কর্মকাণ্ডের অবাধ উন্নয়ন ঘটেছে। আমাদের ছোট্ট এই দেশে এনজিও'র নামে অসংখ্য ভুইফোর দুষ্ঠু লোকের নানামুখী কুকর্মের কেবল প্রসার ঘটেছে। আমি প্রায় দীর্ঘ ১০ বছর দেশের অনেক বড় বড় এনজিও'র নানান কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি। আমার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। গরিব মানুষের নানান বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে এরা হাজার হাজার কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। ব্যক্তি স্বার্থ মেকাপ করলেও এনজিও কর্মকাণ্ড থেকে সামষ্টিক স্বার্থ কেবল দুর্ভোগের শিকাড় হয়েছে। সুশীল সমাজের নামে এখানে তথাকথিত একশ্রেণীর এনজিও মার্কা শ্রেণীচরিত্রের উদ্ভব ঘটেছে। এই শ্রেণী নানাভাবে দেশের ও বিদেশের নানান কুকর্মের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সুর মিলিয়েছে। নিজেদের পকেট ভরে গেলে এদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের সমাজে দুই শ্রেণী'র বুদ্ধিজীবী'র উৎপাতে দেশের বারোটা বেজেছে। একশ্রেণী'র বুদ্ধিজীবী হল আওয়ামী বুদ্ধিজীবী। এরা আওয়ামী লীগের সকল কুকর্মের বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা করে বেড়ায়। আর শ্রেণী'র বুদ্ধিজীবী হল জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী। এদের চোখে বিএনপি'র কোনো কুকর্ম ধরা পড়ে না। এরা বিএনপি'র ছুড়ে ফেলা ঝোল উষ্ঠা খেয়ে সমাজে আজ প্রতিষ্ঠিত। এই দুই শ্রেণী বুদ্ধিজীবীদের নানামুখী প্রপাগাণ্ডায় বাংলাদেশ অনেক দুর্ভোগ সহ্য করছে। এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণী দুইটি কিন্তু উভয় দল থেকে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে আখের গুছিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে। আমাদের যারা কৃষক, তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায়্য দাম নেই। আমাদের যারা শ্রমিক, তাদের ন্যায্য মজুরি নেই। আমাদের যারা কামার-কুমার-ছুতার, তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো ন্যায্য মূল্যায়ন নেই। আমাদের যারা মেহনতি মানুষ, তাদের রাষ্ট্রের কোথাও কলকে নেই। আর আমাদের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের খড়গের কবলে গোটা দেশের রাজনৈতিক নের্তৃত্ব আজ অদক্ষ, অদূরদর্শী, অযোগ্য আর দুর্বল নের্তৃত্ব সংকটে নিপতিত। রাজনীতিতে এখন পেশি শক্তিই আসল শক্তি। সেই সুযোগে আসল রাজনীতি থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেখানে বাসা বেধেছে অবৈধ পথে টাকা কামানো সাবেক আমলা, অবৈধ ব্যবসার শিল্পপতি, কালোবাজারী। তারা রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে সিন্ডিকেট চালু করেছে। এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে কিছু দুবৃত্ত। এরা ইচ্ছে করলে চালের দাম বাড়ে। পিঁয়াজের দাম বাড়ে। গাড়ির ভাড়া বাড়ে। এরা ইচ্ছে করলে পরিবহণ ধর্মঘট হয়। এরা ইচ্ছে করলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের গোপন মজুদ গড়ে তোলে। গোটা দেশ এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে বিভিষিকার দুরারোগে নিপতিত। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই সিন্ডিকেট থেকে নির্বাচনকালীন চাঁদা পায়। তোরণ নির্মাণের চাঁদা পায়। গাড়ি কেনার চাঁদা পায়। পোস্টার ছাপানোর চাঁদা পায়। কোরবানীর গরু কেনার চাঁদা পায়। রাতের আঁধারে লাল পানি গেলার চাঁদা পায়। বিদেশে নিজেদের ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ চালানোর চাঁদা পায়। বিদেশ ভ্রমণের বিমানের টিকেটের জন্য চাঁদা পায়। এতো এতো সুলভে পাওয়া পাওনা থেকে বঞ্জিত হয়ে কে যাবে রাষ্ট্রের মেহনতি মানুষের সেবা করতে? তাই তারা কথায় কথায় জনগণের নাম নেয়। এটাতে জনগণের সাপোর্ট আছে। ওটাতে জনগণের রায় আছে। অমুকে জনগণের অংশগ্রহন আছে। কতো ফালতু আবদার রে ভাই। জনগণ ওসব বিষয়ে কিছুই জানেই না। অথচ জনগণের নাকি সায় আছে! আজব দেশ একখান। সবকিছু জনগণের নামে চালিয়ে দেওয়া যায় এখানে। এই কালচার বাংলাদেশকে তীলে তীলে কেবল ধ্বংস করছে। এখন সুন্দরবন ধ্বংস করতে পারলে, আখেরে এই সিন্ডিকেট ব্যবসা আরো প্রসার লাভ করবে। তখন নানান দুর্যোগে বিদেশি ত্রাণ আসবে। তা লুটপাট করা যাবে। একেবারে পাকাপাকি বন্দোবস্ত। থিউরিতে কোনো ভুল নেই। সুন্দরবন ধ্বংস হোক, তবু আমাদে ওই ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে। যে বিদ্যুৎ দিয়ে রামপাল থেকে মংলা পর্যন্ত এই সিন্ডিকেটের যারা জমি দখল করেছেন, সেখানে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। সেই কারখানায় তো বিদ্যুৎ লাগবে? সেই বিদ্যুৎ তো আর সুন্দরবনের গোলপাতা কুড়ানিরা দিয়ে যাবে না? সেই বিদ্যৎ তো আর ওখানের জেলেরা দিয়ে যাবে না? সেই বিদ্যুৎ তো আর ওখানের কৃষকরা দিয়ে যাবে না? সেই বিদ্যুৎ তো আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারে দিয়ে যাবে না? সো, কাটো গাছ, বানাও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ। কার বাপের কি? বাংলাদেশ টা এই সিন্ডিকেটের হাতে বিগত ৪২ বছরে নানাভাবে ভাগ হয়েছে। সেই ভাগের ভাগ ছেড়ে দিয়ে কার বাপের সাধ্য সুন্দরবন রক্ষা করে? পারলে সুন্দরবনে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হলেও বিদ্যুৎ বানাবে এরা। কারণ, তাদের কারখানার জন্য যে বিদ্যুৎ লাগবে। সেই বদ্যুৎ তো আর সুন্দরবন দেবে না? সো, কার বাপের কি? সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
false
rg
দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়ছে না টাইগার্সদের। ২৩ মার্চ পূর্ণশক্তি নিয়েই লড়াই করতে হবে!! ব্যাঙ্গালোরে আজকের ম্যাচ নিশ্চয়ই আইসিসি দেখেছে। অস্ট্রেলিয়ার মত মোড়লকে যেভাবে ম্যাচ জিততে নাকানি চুবানি খেতে হয়েছে, সেটা আইসিসি'র মত গোটা বিশ্বও দেখেছে। আজ তাসকিন ও সানির পর বাংলাদেশ আরেকটি দুর্ভাগ্যকে বরণ করেই খেলতে নেমেছিল। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওপেনার তামিম ইকবাল অসুস্থ। পেটের পীড়ার সঙ্গে জ্বর। এই তিন দুর্ভাগ্যকে সাথে নিয়ে একাদশ গড়তে হয়েছিল টাইগার্সদের। তারমধ্যে একটা সুখবর হলো খেলায় ফিরেছেন মুস্তাফিজ। তামিমের জায়গায় আজ ওপেন করতে হয়েছে মিথুনকে। আর একাদশে নিতে হয়েছে শুভাগত হোমসকে। এছাড়া তাসকিনের জায়গায় মুস্তাফিজ আর সানির জায়গায় খেলেছে সাকলাইন সজীব। টি২০ আন্তর্জাতিক খেলায় আজকেই ডেব্যু হয়েছে সজীবের। কিন্তু সজীবের ডেব্যুটা ক্যাপ্টেন মাশরাফির মত আমাদেরও মনে ভরেনি। ৩.৩ ওভার বল করে ৪০ রান দিয়ে কোনো উইকেটের দেখা পাননি সজীব। ক্যাপ্টেন মাশরাফির অবশ্য চাওয়া ছিল অন্তত সজীব একটা উইকেট পাক। তাই বাজিটা ধরেছিলেন সজীবের উপরেই। কিন্তু সেটা কাজে লাগেনি। উল্টো সেই ওভারেই ম্যাচ নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া। ১৬তম ওভারে মাশরাফি কেন যে সজীবকে বল করতে দিলেন এটা আমার মাথায় আসলো না। ৩০ বলে অস্ট্রেলিয়ার তখন দরকার ৩৬ রান। আগের দুটি ওভার আল-আমিন ও শাকিব টাইট বল করলেন। এই সময় কেন মাশরাফি আবার সজীবের হাতে বল তুলে দিলেন! টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হওয়া সজীব প্রথম দুটি ওভারে যেখানে ২১ রান দিয়েছে। যেখানে আল-আমিনের ওভার হাতে ছিল। মাশরাফি'র নিজের ৩ ওভার হাতে ছিল। সেখানে আল-আমিন বা মাশরাফি নিজের বল করাটাই ছিল যৌক্তিক। মাশরাফি যে বাজিটা ধরেছিলেন, সেটা শুভাগত হোমসের উপর ধরলেই ভালো হতো। কারণ শুভাগত আগে দুই ওভার বল করে মাত্র ১৩ রান দিয়েছিল। আসলে ১৬তম ওভারে সজীব যখন ১৪টি রান দিল, তখন ম্যাচটি আমাদের থেকে অস্ট্রেলিয়ার দিকেই টার্ন করলো। তখন ২৪ বলে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন আর মাত্র ২২ রান। তারপর সেই নাটকীয়তা। কিন্তু বলের চেয়ে রান তো কম। নাটকীয়তায় আর কত দূর গড়াবে এই ম্যাচ। পরের ওভারে মুস্তাফিজ মিচেল মার্শের উইকেট পেলেও অস্ট্রেলিয়া কিন্তু ততক্ষণে ১৩টি রান নিয়ে ম্যাচ নিজেদের করে ছেড়েছে। তখন ১৮ বলে অস্ট্রেলিয়ার দরকার আর মাত্র ৯ রান। হাতে ছিল ৫টি উইকেট। এমন সীমিত ওভারের ম্যাচে তখন তো অস্ট্রেলিয়ার মত বড় দলের কাছে এটা কোনো ব্যাপার না। ১৮তম ওভারে শাকিব প্রথম ও শেষ বলে দুটি উইকেট নিলেন। কিন্তু এই ঘটনাটি যদি আজকে ম্যাচের দশ ওভারের আগে ঘটতো, তাহলে ম্যাচটি আজ বাংলাদেশের হতে পারতো। শেষ ১২ বলে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৫ রান, হাতে ছিল ৭ উইকেট। ৩ বল খেলেই তারা লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। দুর্ভাগ্য টাইগার্সদের। ৯ বল হাতে রেখেই জয়ের জন্য ১৫৭ রান তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। জয় পায় ৩ উইকেটের। আজ অস্ট্রেলিয়া টস জিতে টাইগার্সদের প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায়। তামিমের জায়গায় ওপেনিংয়ে নেমে মিথুন বেশ ভালোই সামাল দিয়েছে। কিন্তু আজকেও সৌম্য ধারাবাহিকভাবেই ব্যর্থ। আমি বলব কোচ হাথুরুসিংহের উচিত সৌম্যকে একটু আলঅদাভাবে সময় দেওয়া উচিত। সৌম্য'র কনসেনট্রেশানে কোথাও একটা গলদ ঢুকে আছে। সেটা ফিরিয়ে আনতে পারলেই সে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারবে। আর সেটা ২৩ মার্চ ব্যাঙ্গালোরের চিন্নাস্বামীর এই মাঠে ভারতের বিপক্ষে নামার আগেই করতে হবে। টাইগার্সদের জন্য এই মুহূর্তে আরেকটা সুখবর হলো আজ ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন টেস্ট ক্যাপ্টেন মুশফিক। ২৩ মার্চ ভারতের বিপক্ষে মুস্তাফিজ আমাদের প্রধান অস্ত্র। মুস্তাফিজ কার্টারে ভারত বধ সম্ভব। তামিম সুস্থ হয়ে একাদশে ফিরলে হয়তো শুভাগত বা সজীবকে আবার একাদশের বাইরে যেতে হবে। বোলিংয়ে আজ শাকিব যে ফর্ম দেখিয়েছেন ৪ ওভারে ২৭ রানে ৩ উইকেট। এই ফর্মটি ভারতের বিপক্ষেও সচল থাকলে টাইগার্সদের সামনে আর কোনো সমস্যা দেখি না। পরপর দুটি ম্যাচে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হেরে টি২০ বিশ্বকাপ থেকে অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গেছে টাইগার্স বাহিনী। কিন্তু আমাদের তাসকিন ও সানিকে যারা এই টুর্নামেন্টের মাঝখানে খড়গ হয়ে আটকে দিলেন, সেই ভারতকে আটকে দেবার সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। ২৩ মার্চ ভারতকে হারিয়ে দিলেই এই মোড়লেরও টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়াটা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। কারণ ভারতের শেষ ম্যাচটি অস্ট্রেলিয়ার সাথে মোহালীতে ২৭ মার্চ। তখন মূলত দুই মোড়লের লড়াই। ভারতকে হারাতে পারলে আইসিসিকেও এক ঘা দেখানো হবে। সেটি মাথায় নিয়েই এখন টাইগার্সদের আগাতে হবে। তাসকিন ও সানিকে হঠাৎ ইস্যু করে এবারের টুর্নামেন্টে আইসিসি একটি কালো অধ্যায় রচনা করলো। নইলে ফুরফুরে মেজাজে থাকা টাইগার্সদের এবার আটকানো অনেক কঠিন হতো। বিশ্বের বিখ্যাত ক্রিকেটারগণ যেমন অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ইয়ান চ্যাপেল, ওয়াশিম আক্রামরা বিশ্বকাপের মাঝখানে এভাবে তাসকিন ও সানিকে টুর্নামেন্ট থেকে বের করে দেয়ায় খোদ আইসিসি'র সমালোচনা করেছেন। ক্রিকেট পাগল কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনও এটাকে ক্রিকেট শিল্পের সঙ্গে বেমানান বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেবল ভারতের কোনো বাঘা বাঘা প্রাক্তন ক্রিকেটারগণ তাসকিন ও সানি ইস্যুতে মুখে একদম কুলুপ এটেছেন। এটা থেকেই প্রমাণিত যে চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। ঘটনা যে ভারত নিজেদের স্বার্থেই করেছে, আর ভারতের প্রেসক্রিপশনই আইসিসি বাস্তবায়ন করেছে, এই সত্যই এখন সুস্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে। যে কারণে ২৩ মার্চ ভারতের বিপক্ষে টাইগার্সদের একটা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। সেই কাঙ্খিত জয়টি হবে তাসকিন ও সানির জন্য টাইগার্সদের সবচেয়ে সফল প্রতিবাদ।আমরা টাইগার্সদের সমর্থনে এবং তাসকিন ও সানি ইস্যুতে যত কথাই বলি না কেন, যত মানববন্ধন বা প্রতিবাদ করি না কেন, বিসিবিকে এই ইস্যুতে যথাযথ আইনি লড়াই করেই আগাতে হবে। আর সেই আইনি লড়াই করতে হবে আইসিসি'র প্রচলিত নিয়ম কানুনকে মেনে নিয়েই। যা হয়তো নিস্পত্তি হতে একমাস বা আরো বেশি সময় লাগবে। ততদিনে এই টুর্নামেন্ট বাসি হয়ে যাবে। তাই ভারতকে ২৩ মার্চ হারিয়ে টাইগার্স বাহিনী'র এই শোককে শক্তিতে পরিনত করতে হবে। এবারের টি২০ বিশ্বকাপে টিম টাইগার্সদের কাছে আমার এখন একটি জিনিসই চাওয়ার আছে, তা হলো ২৩ মার্চ ভারতকে হারানো। আর ২৬ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে টাইগার্সদের শেষ ম্যাচ। সেটি নিয়ে এখনই কোনো কথা বলতে চাই না। চাই শুধু একটি জয় আর সেটি ২৩ মার্চ বেঙ্গালোরে ভারতের বিপক্ষেই। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু ক্রিকেট।........................................................২২ মার্চ ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২৬
false
ij
এ কেমন মানুষ বোনাপার্ট_ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)। ফরাসী সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা হলেও নেপোলিয়ন বোনাপার্ট শিল্পসংস্কৃতি ঠিকই বুঝতেন । এই ছবিটায় সে কথাও যেন স্পষ্ট। অনেকটা রোম্যান্টিক কবির মতন দেখতে বোনাপার্ট বিশ্বাস করতেন- Imagination rules the world.আহ! কাজেই, আজও ইউরোপের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্ব হিসেবে বোনাপার্ট গন্য । বোনাপার্টের জন্ম ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপে- জাত সৈনিক ছিলেন; অসম সাহস ও প্রখর বুদ্ধিমত্তা নিয়েই জন্মেছিলেন । ফরাসী বিপ্লবের সময়ই বীরত্ব দেখিয়ে প্রথম ফরাসী উর্ধতন সামরিক কর্তৃপক্ষের নজরে পড়েন। ভীষণ রকম উচ্চভিলাষী ছিলেন নেপোলিয়ন। সে জন্যই কি ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে এক সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ফ্রান্সের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন? এই ঘটনার পাঁচ বছর পর বোনাপার্ট নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট ঘোষনা করেন। তারপর অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে কুক্ষিগত করার উদ্দেশে কিংবা ফরাসী বিপ্লবের সাম্য মৈত্রী সৌর্হাদ্য ছড়িয়ে দিতেই সৈন্যসামন্ত নিয়ে দিগি¦জয়ে বের হলেন। যা হয়-নিয়তির অদৃশ্য সুতার টানে প্রথম প্রথম নেপোলিয়ন ঠিকই জিতছিলেন । কিন্তু, ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমনের পরপরই তাঁর ওপর শনির কোপ পড়ল । ১৮১২ খিস্টাব্দের পর থেকেই সম্রাটের সৌভাগ্যের চাকা উলটো দিকে ঘুরতে শুরু করল। রাশিয়া থেকে সম্পূর্নত বিপর্যস্ত হয়েই পিছন হটে আপন ঘরে লুকোলেন বোনাপার্ট-হিটলারের ক্ষেত্রেও বহুবছর পর তাই হয়েছিল। ইতিহাস থেকে শিক্ষা কেউই নেয় না। যা হোক। ওদিকে ইউরোপের যৌথ বাহিনী উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছিল। সে সুযোগ এল। সম্মিলিত ইউরোপীয় বাহিনী ফ্রান্স আক্রমন করল। বোনাপার্ট একবার বলেছিলেন যে, The word impossible is not in my dictionary. কথাটা কি সত্যি? সত্যি হলে সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমনের কাছে হেরে গেলেন কেন বোনাপার্ট? জোটবাহিনী বোনাপার্টকে হত্যা না করে বরং তাঁকে ‘এলবা’ দ্বীপে নির্বাসনে পাঠাল। কেন? কেন তারা বোনাপার্টকে হত্যা করল না? এই প্রশ্নটা নিয়ে প্রায়শ আমি ভাবিত হই। যা হোক। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বোনাপার্ট বুদ্ধি করে এলবা দ্বীপ থেকে গেলেন পালিয়ে। তারপর কী ভাবে যেন ফ্রান্সে পৌঁছলেন। কী ড্রামাটিক! ফ্রান্সে পৌঁছেই পুনর্বার শক্তি সঞ্চয় করলেন বোনাপার্ট। অবশ্য এবারও ওয়াটারলুর যুদ্ধে হেরে যান। এবার তাঁকে ব্রিটিশ তত্ত্বাবধানে নির্বাসিত করা হল সেন্ট হেলেনা দ্বীপে । নির্বাসনের আগে বোনাপার্টকে জিজ্ঞেস করা হল: অন্তরীণ জীবনে কি বেছে নেবেন? উত্তরে বোনাপার্ট বলেছিলেন- বই, বই আর বই। বুঝুন তা হলে! তো প্রায় ৬ বছর ব্রিটিশ তত্ত্বাবধানে অন্তরীণ রইলেন সেন্ট হেলেনা দ্বীপে। ১৮২১ সালে মারা যান বোনাপার্ট। আজকাল অবশ্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন যে, প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে অল্প অল্প করে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল নেপোলিয়নকে। কি বিষ? আর্সেনিক। বোনাপার্ট একবার বলেছিলেন:England is a nation of shopkeepers.কথাটা কি ঠিক বলেছিলেন বোনাপার্ট? ইংল্যান্ড কি কেবলিই বেনিয়াদেশ? ইংল্যান্ড কি শেলি কীটস শেকসপীয়র বায়রন জন্মাননি? আর দোকানদারি কি এমন খারাপ শুনি। তা হলে? ব্যবসা তো সবাই করে-তা হলে কেবল ইংল্যান্ডেরই অপবাদ দেওয়া কেন? ইংরেজরা উপনিবেশ গড়ে শোষন করেছে? কেন? ফরাসীরা আলজেরিয়া মৌরতানিয়া কম্বডিয়া ভিয়েতনাম তছনছ করেনি ? তা হলে? তা হলে কেন তিনি বললেন- England is a nation of shopkeepers. এ কেমন মানুষ বোনাপার্ট? সেদিন একটা লেখার সূত্রেই ফরাসী বীর যোদ্ধা নেপোলিয়ন বোনাপার্টের কিছু খোঁজখবর করতে হল। লিখছিলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগরের মা ভগবতী দেবী সম্বন্ধে; প্রসঙ্গ- ছেলের ওপর মায়ের প্রভাব। অনেক আগেই আমি জানতাম যে- সন্তানের জীবনে মায়েদের ভূমিকা নিয়ে দারুণ এক উক্তি করেছিলেন নেপোলিয়ন: The future destiny of the child is always the work of the mother. যদিও আমি বিশ্বাস করি যে, যে কোনও মানুষের জীবনেই ভাগ্যের ব্যাপারে মায়েরদের ভূমিকা ছাড়াও আরও অনেক অনেক ফ্যাক্টর থাকে। যেমন: জিন। তারপরও যে কোনও মানুষের জীবনে মায়ের ভূমিকাই যে প্রধান-এমন এটা নিপাট সত্যকথা স্বীকার করায় নেপোলিয়নের ওপর রীতিমতো শ্রদ্ধান্বিত হয়ে উঠি। আর কি কি বলেছিলেন নেপোলিয়ন? এমন এক গভীর কৌতূহলে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় আমি ইন্টারনেটে সার্চ করতে থাকি এবং নেপোলিয়ন-এর অনেকগুলি উক্তি একসঙ্গে পেয়ে যাই এবং সেসব পড়তে পড়তে উক্তিগুলির স্ববিরোধীতা ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা উপলব্দি করে রীতিমতো শিহরিত হয়ে উঠি এবং তখনই নেপোলিয়ন সম্বন্ধে লিখব বলে সিদ্ধান্ত নিই। ২ নেপোলিয়ন কি গান শুনতেন? শুনতেন অবশ্যই। তা না হলে তিনি কেনই বা বলবেন- Music is the voice that tells us that the human race is greater than it knows. কী অসাধারন উক্তি। মানেটা বোঝা অবশ্য তত সহজ না। তবে উক্তিটি পড়ে আমি তো রীতিমতো বিস্মিত হয়ে গেলাম । অতি গভীর কথা। কোথায় যেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ উঁকি দেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন: গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি জগৎখানি / তখন তারেই জানি। প্রাসঙ্গিক বলেই হয় তো আমার সঙ্গীত সম্বন্ধে কনফুসিয়াসের একটি উক্তি মনে পড়ে গেল:Music produces a kind of pleasure which human nature cannot do without.অসাধারণ। নেপোলিয়নের কথার সঙ্গে কোথায় যেন মিল আছে! তা হলে তো দেখা যাচ্ছে অন্তত সঙ্গীত ভাবনার ক্ষেত্রে নেপোলিয়ন রবীন্দ্রনাথ কনফুসিয়াসের সগোত্র। তা হলে? আমার কপালে ভাঁজ পড়ল। অথচ আমরা তাঁকে চিনি মূলত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেই। তো সেই রাজনীতি নিয়ে নেপোলিয়নের একটা উক্তি এরকম:A leader is a dealer in hope. তরুণ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ ঘন ঘন বলছেন এই কথাটিই বলার চেষ্টা করছেন বলেই মনে হল। গতকালের উপজেলা নির্বাচনটি লেজেগোবরে হয়ে গেল। এখন দেখা যাক কী হয়। উপজেলা নির্বাচনে স্পষ্টই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় ‘আমাদের সময়ের’ সম্পাদক খুব ক্ষেপেছেন। আবদুন নূর তুষারের সামনে নাঈমুল ইসলাম খান খুব ঝারলেন গতকাল সন্ধ্যায়। উপজেলা নির্বাচনকে নাঈমুল ইসলাম খান বললেন, পচা। আশা করি আপনারা আর টিভির ‘রোড টু ডেম্যোক্রাসি’ দেখেন? নেতারা যে ‘আশার’ ব্যবসা করেন-অনুষ্ঠানটি দেখে তাই মনে হয় আমার। প্রণাম নেপোলিয়ন। যাক, এই ফাঁকে আমি মাননীয় বানিজ্যমন্ত্রীকে নেপোলিয়নের এই কথাটি মনে করিয়ে দিই -In politics stupidity is not a handicap. টিসিবি সংক্রান্ত তাঁর মূর্খ সিদ্ধান্তটি কোনওমতেই অর্থব নয়। কারণ তিনি তো পলিটিশিয়ান। তরুণ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ এর প্রতি নেপোলিয়নের উপদেশ-In politics... never retreat, never retract... never admit a mistake. কাজেই, উপজেলা নির্বাচনে তলে তলে যাই ঘটুক না কেন- সে সমস্ত কিছুতেই স্বীকার করা চলবে না! সংবিধান নিয়ে নেপোলিয়ন বক্তব্য আশ্চর্য রকম মরমী। কেননা, তিনি বলেছেন: A Constitution should be short and obscure. এই কথার মানে আমি সত্যিই বুঝিনি। সংবিধান ছোট হতে পারে কিন্তু দুর্বোধ্য হবে কেন? আমার তো মনে হয় না সংবিধান সংক্রান্ত নেপোলিয়নের মন্তব্যটির মানে বিজ্ঞ ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ কিংবা রফিক উল হক টিভির টক শোয়ে দর্শকস্রোতাকে বোঝাতে পারবেন ! আমি ভাবতে থাকি- ’৭২ এর সংবিধানের মূলমন্ত্র ছিল সংক্ষিপ্ত। সেটি ড়নংপঁৎব হওয়াই কি পরে তাতে পরিবর্তন আনা হল? কে জানে? ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র তো সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীদের বোঝার কথাই না। যা হোক। নেপোলিয়ান যে- The word impossible is not in my dictionary-এই কথাটি বলেছিলেন তা আমরা অনেকেই কমবেশি জানি। এখন এই দাম্ভিক উক্তিটি খানিক বিশ্লেষন করা যাক। আগস্ট মাসের ১৫তারিখে জন্মেছিলেন বলেই নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন সিংহ রাশির জাতক । আমার আশেপাশে যে সমস্ত সিংহ রাশির জাতকজাতিকারা রয়েছে তারা প্রায়ই প্রবল আত্মবিশ্বাসী কথাবার্তা বলে থাকেন। কাজেই রাশিগত তাড়নাই কি বোনাপার্ট ওই কথা বলেছিলেন? তবে আমি যদ্দুর জানি সিংহরা সিংহই বটে-তবে দে ক্যান নট ফ্লাই। যে কারণে দু দুবার নেপোলিয়নের ভরাডুবি আমরা দেখেছি। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল-নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও সিংহ রাশির জাতক - ঐ আগস্ট মাসের ৪ তারিখে জন্মেছেন বলেই । নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতন আমরা দেখেছি। ওবামার পতনও কি আমরা দেখতে যাচ্ছি? যে দায়িত্ব বারাক ওমাবা পালন করতে পারবেন না সে দায়িত্ব তিনি দম্ভভরে কাঁধে তুলে নিলেন কেন? রাশিগত ফুটানি? যাক। এবার নেপোলিয়নের কিছু স্ববিরোধীতার কথা না হয় বলি। জীবনভর যুদ্ধ করলেও নেপোলিয়ন ছিলেন যুদ্ধবিরোধী। কী! হ্যাঁ। নেপোলিয়ন যুদ্ধবিরোধী ছিলেন বলেই বলেছিলেন- War is the business of barbarians.এ কেমন স্ববিরোধীতা! জীবনভর কি তিনি যুদ্ধ করেননি? যুদ্ধকে বর্বরদের কাজ মনে করলে কর্সিকা থেকে ফরাসী বিপ্লব উত্তর সাংঘর্ষিক প্যারিস নগরে তার যাওয়ার কী দরকার ছিল? তার বদলে কৃষিকাজ করে কর্সিকায় নিরিবিলি একটা জীবন কাটিয়ে দিলেন না কেন তিনি? কিংবা সঙ্গীতরচনা করে? তার বদলে সৈন্য হবেন বলে প্যারিসে এলেন! এ কীরকম স্ববিরোধীতা? নাকি ভন্ডামী? তা ছাড়া, নেপোলিয়ন ছিলেন উচ্চাভিলাষী। যে কারণে বলেছিলেন, France has more need of me than I have need of France.যে কারণে বলেছিলেন, I have only one counsel for you - be master.যে কারণে বলেছিলেন, I am the successor, not of Louis XVI, but of Charlemagne. তা হলে? তা হলে তিনি কি উচ্চাভিলাষী ছিলেন না? ওপরে উঠতে হলে তো ছোটখাটো অনেক যুদ্ধ করতে হয়, সংকীর্ণ হতে হয়, অন্যকে বঞ্চিত করতে হয়। সেরকম যুদ্ধ কি তিনি করেন নি। তা হলে? তা হলে বোনাপার্ট কেন বললেন- War is the business of barbarians? তাছাড়া তিনি বলেছিলেন, The surest way to remain poor is to be an honest man.তা হলে? তা হলে তিনি কর্সিকা ছেড়ে ঝঞ্ছাবিক্ষুব্দ প্যারিসে এলেন কেন? কেন আমৃত্যু বাঁশি বাজালেন না বোনাপার্ট কর্সিকার পাথরউপকূলে বসে ? কেন তুললেন না সাগর পাড়ে কাঠের একটি বাড়ি? কেন তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে বলে বর্বর রক্তাক্ত যুদ্ধে লিপ্ত হলেন! এ কেমন মানুষ বোনাপার্ট? ৩ তা যুদ্ধ করুন আর নাই করুন। মানুষ হিসেবে মনে হয় ভালোই ছিলেন নেপোলিয়ন। নৈলে তিনি কেন বলবেন-A true man hates no one. আহ! কী আশ্চর্য গভীর বেদান্তিক উক্তি! যেন প্রাচীন কোনও ভারতীয় ঋষির অমোঘ বাণী। ব্রাহ্মী লিপিতে ভূর্জপত্রের ওপর লেখা। নেপোলিয়ন নিজে কি সেরকম সত্যপুরুষ ছিলেন? নাঃ। কেননা, তিনি বলেছিলেন: England is a nation of shopkeepers. এ কেমন মানুষ বোনাপার্ট? A true man hates no one. এই কথা বলায় নেপোলিয়নকে তো পরম ভগবত বিশ্বাসী বলেই মনে হওয়ার কথা। অথচ, নেপোলিয়ন ছিলেন, যাকে বলে যারপরনাই অ-ধার্মিক-তাই। ধর্ম সম্বন্ধে তাঁর তিনটি উক্তি পেয়ে আমি তো রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলাম। (ক) All religions have been made by men. (খ) Religion is excellent stuff for keeping common people quiet. (গ) Religion is what keeps the poor from murdering the rich. কী সর্বনাশ! দেলোয়ার হোসেন সাঈদীরা যে এত খুনখারাপি ঘটতে দিচ্ছেন না- তা কে জানত। চতুররা অবশ্য বলবেন-নেপোলিয়ন খ্রিস্টবিরোধী ছিলেন-ঠিক ইসলাম নয়? তবে নেপোলিয়নের ধর্মবিষয়ক মন্তব্য তিনটি নিয়ে নবীন প্রজন্মের ভাবা অবশ্যই উচিত। Religion is excellent stuff for keeping common people quiet. আরেক অ-বিশ্বাসী কার্ল মার্কসের জন্ম ১৮১৮ সালে। তারও কত আগে কত সত্য কথা বলে ফেলেছেন নেপোলিয়ন। অথচ, বাংলাদেশে দারিদ্রকে যাদুঘরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলেও ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ভাবে মদদ দিচ্ছি। কাজেই এবার হিসেব কষতে বসি জাতি হিসেবে আমরা নেপোলিয়নের থেকে কতটা পিছিয়ে? অথচ, আমরা ফ্রান্সের মতন উন্নত হতে চাই। আজকাল ডিজিটাল বাংলাদেশের ধোঁওয়া তোলা হলেও- আপামর মানুষের মগজের কোষে কোষে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীদেরই জয়জয়াকার-তিনি জনতাকে নিশ্চুপ রাখছেন। উল্লেখ্য, নেপোলিয়নের ধর্মবিরোধী উক্তি পেলেও ঈশ্বরবিরোধী একটি উক্তিও আমি পাইনি। এটিও একটি ইনটারেসটিং পয়েন্ট। কেননা, জগতের বিদ্যমান ধর্মগুলির বিপক্ষে অবস্থান অতি সহজেই নেওয়া গেলেও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তেমন অবস্থান নেওয়া সহজ নন ঈশ্বরের বৈশিষ্টের কারণেই। কথাটা ভাবতে ভাবতে ভাবলাম- তুমি কেমন মানুষ বোনাপার্ট? ধর্মবিরোধী ছিলেন বলেই কি দারুণ শিল্পরসিক ছিলেন নেপোলিয়ন? বলেছিলেন:A picture is worth a thousand words. শুনেছি বহু বিখ্যাত পেইনটিংস নাকি বেডরুমে রেখে দিতেন। আর, picture শব্দটাকে আজকের দিনের ‘গ্রাফিকস’ ধরে নিলে নেপোলিয়ন যে বিজ্ঞানমনস্কও ছিলেন -তাও মানতে হয়। এমন গভীর প্রজ্ঞাবান একজন মানুষের তো ঠিক ধর্মবিশ্বাসী হওয়ার কথাই নয়। যা হোক। ইতিহাস সম্বন্ধে দুটি তির্যক মন্তব্য পেলাম নেপোলিয়নের। (ক) History is a set of lies agreed upon. (খ) History is the version of past events that people have decided to agree upon. প্রায়ই একই ধরনের কথা, তবে খাঁটি কথা। ব্যাখ্যা করছি। প্রায় ছ’ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করেছি আমি। সেই সময়টা জুড়ে আমাদের ইতিহাস বিভাগের মৌলানা ছাহেবরা আমাদের মতন কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন যে -বাংলার আসল ইতিহাসের শুরু ১৩ শতকের পর থেকেই। তার আগে কি ছিল স্যার? তার আগে ছিল ধুয়া। ধুয়া? হ্যাঁ। ধুয়া। আমরা ক’জন অবশ্য এসব অর্বাচিন মুসল্লিদের কথায় বিশ্বাস না করে বরং তাদের থাবা থেকে পিছলে বেরিয়ে এসেছিলাম এবং অনেক পরে জেনেছিলাম মানবতাবাদী তুর্কি ঔপন্যাসিক ওরহার পামুককে প্রায় একই ধরনের মানসিক নির্যাতনে শিকার হতে হয়েছিল। আমাদের শৈশবে কঠিন অসা¤প্রদায়িক শিক্ষা ছিল। সে মহৎ শিক্ষাকে উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মৌলবী ছাহেবরা আমাদের মগজে কলুষ ঢুকিয়ে কিছু স্থির মিথ্যা ধারনা দেওয়ার অপ্রচেস্টায় লিপ্ত হয়েছিল । সে জন্যই বলছিলাম যে নেপোলিয়সের কথাটা খাঁটি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে সবা শিক্ষকই মুসল্লি ছিলেন না। যেমন, মেজবা কামাল, আহমেদ কামাল। আমাদের আধুনিক ইউরোপ পড়াতেন অধ্যাপক মোফাকখারুল ইসলাম। অত্যন্ত উচুুঁমানের শিক্ষক। তখন শুনেছিলাম যে-অক্সফোর্ডে তাঁর একটি বই নাকি টেক্সট। প্রায়ই ক্লাসে মোফাকখার স্যার বলতেন, এই যে এখন যে কোনও শহরেই বাড়ি বাড়ি নাম্বার রয়েছে-এই নিয়া কে প্রথম ভাবছিল জান। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। যুদ্ধ ক্ষেত্রেও এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভাবতেন নেপোলিয়ন । সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখছিলেন, প্যারিস শহরের সব বাড়ির নম্বর বসাইতে হবে। চিন্তা কর! বলে মোফাকখার স্যার কিছুটা ক্ষুব্দস্বরে বলতেন, নেপোলিয়নের জন্য সিলেবাস এত কম। শুধু নেপোলিয়নের উপরই ১০০ নম্ভর হওয়া উচিত। ৪ অনলাইনেই নেপোলিয়নের একটা উক্তি পড়ে মুচকি হাসলাম। নেপোলিয়ন বলেছেন যে-A celebrated people lose dignity upon a closer view.কী সত্যি কথা। এই জন্যেই আমি সম্প্রতি একজনকে আমার টেলিফোন নম্বর দিইনি। টেলিফোনে কথা কয়ে কয়ে তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ট হবেন, তারপর ফ্ল্যাটের ঠিকানা চাইবেন। তারপর আমার ঘরে ঢুকে আমার পাকা চুল দেখে নির্ঘাৎ মর্মাহত হবেন। আমাকে তিনি দূর থেকে দেখছেন। সেই ভালো, সেই ভালো। মনে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে লাইন দুয়েক পদ্য লিখেছিলাম-ভালোবাসা এসেছিল কাছে/পাকাচুল দেখে সরে গেছে। ব্যাক্তিগত জীবন ছাড়াও, রাজনৈতিক জীবনেও তো A celebrated people lose dignity upon a closer view.-এই কথাটা সত্য। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কথাই একবার ভাবুন না। একাত্তরে তাঁর কী ভূমিকা ছিল আর এখন তিনি উন্নয়নের নামে কী করছেন! কিংবা ভাবুন তারেক রহমানের ছোট ভাইটির কথা। বিশদ ব্যাখ্যার কি প্রয়োজন? A celebrated people lose dignity upon a closer view. তুমি কেমন মানুষ বোনাপার্ট? ৫ অন লাইনে নেপোলিয়নের এই উক্তিটি পড়ে আমি রীতিমতো স্তব্দ হয়ে গেলাম-Women are nothing but machines for producing children. ফরাসী সেই বীর পুঙ্গবটি তা হলে মনে করতেন যে-নারী কেবলই একটি সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র! আশ্চর্য! অথচ, ইতিহাস,ধর্ম, রাজনীতি এবং অন্যান্য বিষয়ে নেপোলিয়নের ধারনা যুগের তুলনায় কত অগ্রসর। অথচ, নারীভাবনায় বীর পুঙ্গবটি কী রকম সীমাবদ্ধ দেখুন! ছিঃ, পুরুষতন্ত্র একেই বলে। Women are nothing but machines for producing children. তাই স্যার? একুশ শতক প্রশ্নের তীর ছুঁড়ল নেপোলিয়নের দিকে। Imagination rules the world. এই কথাটা বলায় লোকটার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা জন্মেছিল তখন। এখন সে শ্রদ্ধাবোধ কপূর্বেরর মত উবে গেল। সঙ্গীত সম্বন্ধেও নেপোলিয়ন এক তুমুল মন্তব্য করেছিলেন:Music is the voice that tells us that the human race is greater than it knows. যে কারণে নেপোলিয়ন অন্তত সঙ্গীতভাবনার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ কনফুসিয়াসের সমকক্ষ। অথচ, নারীকে ‘কেবলই সন্তান উৎপাদনের মেশিন’ ভাবার পর নেপোলিয়নের ওপর আর শ্রদ্ধা রাখা যায় কি? তবে নারীকে যে নেপোলিয়ন ঠিক ঘৃনা করতে তা নয়। সন্তানের জীবনে মায়েদের ভূমিকার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। তা ছাড়া খুব কাছ থেকে একটা হতদরিদ্র মেয়ের অসহায় অবস্থা অনুভব করেছিলেন নেপোলিয়ন। তরুণ বয়েসে। কথাটা আমি একেবারেই বানিয়ে বলছি না- বহু আগে নেপোলিয়নের একটা জীবনীতে কথাটা আমি পড়েছিলাম। যে দিন প্রথম কর্সিকা থেকে প্যারী নগরে এলেন নেপোলিয়ন-সেদিনকার কথা- শীত। ঝিরি ঝিরি তুষার পড়ছিল। সন্ধ্যা উতরে গেছে অনেকক্ষণ। রাস্তায় পাশে পার্কের রেলিং ঘেঁষে হাঁটছিল তরুণ নেপোলিয়ন। চোখ শহরের রাস্তায়, ঘোড়াগাড়ি, ম্লান পথবাতি, দু-একটা মানুষ ও বাড়িঘরের দেওয়ালের ওপর। ‘এ শহরটা আমাকে জয় করতে হবে।’ নেপোলিয়ন শ্বাস টানল। হঠাৎ চোখ গেল পার্কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ের ওপর-বেশভূষাই বলে দেয় মেয়েটির পেশা। খদ্দেরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি? কেমন মনে হল- মেয়েটা ক্ষুধার্ত, না খেয়ে আছে। নেপোলিয়নের বুকটা টনটন করে ওঠে। শীতের রাত, তুষার ঝরছে, মেয়েটি খদ্দের পাবে কি না সন্দেহ। এদের জীবন এমন অনিশ্চিত? পকেটে হাত ঢোকাল। আমার কাছে তো হাতে গোনা টাকা। যা হোক। সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ ঝেড়ে মেয়েটির দিকে পা বাড়াল নেপোলিয়ন। সেই একই মানুষ কীভাবে বলে-Women are nothing but machines for producing children? এ কেমন মানুষ বোনাপার্ট? নেপোলিয়কে আমরা মূলত যোদ্ধা হিসেবেই জানি। অথচ, তিনি বিশ্বাস করতেন- War is the business of barbarians. এ কেমন মানুষ বোনাপার্ট? সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:২৮
false
fe
কবি ও সমাজ পরিপ্রেক্ষিত _ হায়াৎ সাইফ একটি চমৎকার লেখা। শেয়ার করার লক্ষ্যেই এখানে সংযোজন করে দিলাম । ---------------------------------------------------------------------------------- কবি ও সমাজ পরিপ্রেক্ষিত হায়াৎ সাইফ ==================================== আমাদের জাতিসত্তার উন্মেষের ইতিহাসে আমাদের সাহিত্যের বিশেষত কবিতার সম্পৃক্ততা নিশ্চিতভাবে লক্ষ্য করা যায়। জাতিসত্তার উন্মেষের সঙ্গে কয়েকটি সামাজিক বাস্তবতা নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। বিশেষত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। আমরা জানি যে, আমাদের জাতিসত্তার উন্মেষের মূল উৎসটি ভাষাগত। অর্থাৎ আমাদের সংস্কৃতির চর্চা ও বহিঃপ্রকাশের মূল বাহন ভাষা। যার সবচেয়ে পরিশীলিত অংশ কবিতার আঙ্গিকের ভেতর দিয়েই রূপ পরিগ্রহ করে। আমাদের যে মৃত্তিকালগ্নতা, যে মাটিতে শেকড় চারিয়ে আমাদের কায়িক অস্তিত্ব সেই মাটির রসেই আমাদের মানসিক জীবনও সিঞ্চিত হয়ে ওঠে। এই নিসর্গ, এই ভুবন ও তার ইতিহাস আমাদের জাতিসত্তার নির্মিতির প্রধান উপাদান। অনেকে একধরনের যুক্তি খাড়া করেন এরকম যে, বাংলাদেশ হতো না যদি পাকিস্তান না হতো অর্থাৎ ভারত বিভক্ত না হতো। এ ধরনের অদ্ভুত যুক্তি যদি অনবরত প্রয়োগ করা যায় তাহলে আমাদের গিয়ে ঠেকতে হবে এমন একটা যুক্তিতে যে, আদম-হাওয়ার সৃষ্টি না হলে আমরা হতাম না, পৃথিবী হতো না, সভ্যতা হতো না ইত্যাদি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীতে মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে এবং সমাজ সংগঠিত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে সভ্যতার উদ্ভব হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষুদ্র গ্রহের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী তাদের প্রতিভা অনুযায়ী নানা বিচিত্র সমাজ গড়ে তুলেছে এবং বিশিষ্ট সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। এই উপমহাদেশেও তেমনি স্বতন্ত্র সভ্যতা ও ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। সমাজ বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কর্মের মধ্যে বিশিষ্ট চৈতন্যের উদয় হয়েছে। আমরা যারা বর্তমান বাংলাদেশে বসবাস করি তাদেরও তেমনি বিশিষ্ট সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ইতিহাস বিদ্যমান। কিন্তু বাংলাদেশের অস্তিত্ব পৃথিবীর অন্যান্য সমাজের যে সমান্তরাল অস্তিত্ব তার মধ্যেই বিদ্যমান অর্থাৎ কোন সমাজই বা কোন মানবগোষ্ঠীই বিচ্ছিন্নভাবে তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে না। সভ্যতার ইতিহাসে এমন এক পর্যায় ছিল যখন পৃথিবীর এক অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে আরেক অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ছিল কম বা একেবারেই ছিল না। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে অন্তত এটুকু স্পষ্ট যে, বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগের প্রবণতা অনেক প্রাচীন, সাম্প্রতিককালের নয়। অনেক সময় জীবিকার প্রয়োজনে, অনেক সময় অস্তিত্বের প্রয়োজনে মানুষ দূর-দূরান্তরে পাড়ি দিয়েছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ সমাজ উদ্ভবের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। আজকের দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমূহ উন্নয়নে আমরা বিশ্ব পল্লী বা গ্লোবাল ভিলেজের কথা বলি। কিন্তু তার পরও বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে জীবনযাপনের উপকরণে রয়েছে দুস্তর ব্যবধান। ভালোমন্দের বিচার না করেও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে প্রকৃতিগত পার্থক্য ও বৈচিত্র্য রয়েছে তা মানুষের বিচিত্র প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে। মানব সমাজের এই দিকটিকেই একের মধ্যে বহু এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে সাদৃশ্যের বিষয়টিকে সুস্পষ্ট করে। মানুষের কায়িক জীবনযাপনের সঙ্গে সঙ্গে বা তার সমান্তরালে প্রবাহিত থাকে তার মানসিক জীবনের স্রোত, তার চিন্তা-চেতনার জগৎ। এই কায়িক জীবন ও মানসিক জীবন পরস্পর সম্পর্কিত বলে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সৃষ্টিশীলতা বিভিন্নতা পায়। আমাদের একটি নিজস্ব মননভূমি আছে। যেমন আছে অনান্য জাতিসত্তার। সেই মননভূমির সঙ্গে অন্য অনেক সমাজের সাদৃশ্য যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বৈসাদৃশ্য। এ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে কায়িক ও মানসিক অস্তিত্বে মোটা দাগে যেমন অনেক সাদৃশ্য রয়েছে তেমনি অনেক বিষয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বৈসাদৃশ্যও প্রবল। উপমহাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি তাদের মধ্যেও বহু বিচিত্র সাংস্কৃতিক প্রভাব ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছে। সেসব কিছু মিলেই আমরা বাংলাভাষী, বাঙালি ও বাংলাদেশী। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণ তার অধিকাংশ মানুষের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিশিষ্টতা। ভাষার দিক থেকে, চিন্তার দিক থেকে, খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে ভারতীয় বাঙালি ও বাংলাদেশের বাঙালির মধ্যে যেমন বিরাট সাদৃশ্য রয়েছে, তেমনি ছোট ছোট বৈসাদৃশ্যেরও অভাব নেই। যদি কবিতার কথাই ধরা যায় তাহলেও দেখা যাবে যে, একই উত্তরাধিকার থেকে বেরিয়ে উভয় বাংলার কবিতার বিষয়বস্তু ও তার বহিঃপ্রকাশে তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে কলকাতাকেন্দ্রিক যে মধ্যবিত্তের বিকাশ হয়েছিল এবং তৎকালীন পূর্ববাংলা ও বর্তমান বাংলাদেশে বিশেষত ১৯৪৭-পরবর্তীকালে অল্প সময়ের মধ্যে যে মধ্যবিত্তের উত্থান ঘটেছিল, তাদের মধ্যে যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য রয়েছে সেটা স্পষ্ট বলেই কলকাতার বাজারে বাংলাদেশীদের সেখানকার বণিকরা খুব সহজে শনাক্ত করতে পারেন। ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও পশ্চিমবঙ্গের কেউ এলে তাদের বাচনে ও আচরণে যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাও সহজে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। কবিতার ক্ষেত্রে বেশ নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কলকাতাকেন্দ্রিক সমাজে কবিতার চর্চা অনেক বেশি বিস্তৃত ও গভীর। এটা তো নিঃসন্দেহে বলা যায়, সেখানে কবিতার পাঠক সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় আকারে অনেক বড় এবং সোজা কথায় বলতে গেলে সেখানে কবির কদর ও কবিতার চর্চা আমাদের চেয়ে বেশি। কলকাতার অনেক আবৃত্তিকারের কণ্ঠে অপেক্ষাকৃত অজানা বা কমজানা অনেক কবির রচনা রণিত হয়। আমাদের এখানে কবিতার চর্চা সে অর্থে গভীর ও ব্যাপক নয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় আমরা ‘পদাবলী’ বলে কিছুসংখ্যক কবির একটি ফোরাম তৈরি করেছিলাম এবং বেশ ক’বছর ধরে কবির স্বকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান করা হয়েছে। তখনকার অভিজ্ঞতা ছিল এই যে, পাঠক ও শ্রোতা তৈরির বিষয়ে আমরা অনেকখানি সফল হয়েছিলাম। কেননা পরবর্তীকালে কবিতা আবৃত্তির প্রসার লক্ষ্য করা যায়। অনেক আবৃত্তি গোষ্ঠীর কথা আজকাল শুনি এবং তারা বিভিন্ন সময়ে আবৃত্তি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও করে থাকেন। কিন্তু তাতে প্রকৃত অর্থে কবিতার চর্চা এবং কবিতা শোনার কান ও মন কতখানি তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে তার নির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই। কেউ উদ্যোগ নিলে হয়তো কিছু পরিসংখ্যান পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আপাতত বিভিন্ন কাব্যপাঠের অনুষ্ঠানে যা দেখি তাতে মনে হয়, শ্রোতার সংখ্যা যেমন সীমিত তেমনি কবিতার মর্মে প্রবেশ করার প্রবণতাও যথেষ্ট নয়। পশ্চিম বাংলার ক্ষেত্রে কিন্তু ছবিটা সেরকম নয়। এর কারণ যাই হোক আমরা সাধারণভাবে দেখতে পাই যে, আমাদের সমাজে কবি অবমূল্যায়িত। আমাদের মিডিয়া জগতে তাদের উপস্থিতি অত্যন্ত ক্ষীণ। অন্যদিকে আমাদের বর্তমান সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে মিডিয়ায় বিশেষত দৃশ্যমান মিডিয়ায় যেসব আলাপ-আলোচনা দেখি সেখানে সাংবাদিক থাকেন, অধ্যাপক থাকেন, রাজনীতিবিদ থাকেন এবং সাধারণভাবে যাদের বুদ্ধিজীবী বলা হয় তারা থাকেন কিন্তু কবি একেবারেই অনুপস্থিত। অথচ উদ্দীপনার সময়, দুঃখের সময়ে কবি ও গীতিকারের যে সামাজিক প্রয়োজন তা অস্পষ্ট থাকে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় কবিতা ও গান আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে। অথচ সমাজজীবনের নানা বাস্তবতা ও সমস্যার বিষয়ে আমরা কোন সময় লেখক বা কবিকে পাই না। আমাদের সমাজে কি কবি অবমূল্যায়িত? অথচ আমাদের ভাষার যে অন্তর্নিহিত শক্তি তাকে আবিষ্কার করেছেন কবিরাই। তাহলে কি সাংস্কৃতিক দিক থেকে আমরা নিস্পৃহ হয়ে পড়ছি নাকি এক ধরনের বিশ্বায়নের আগ্রাসন আমাদের ধীরে ধীরে অধিকার করছে? এর ফলে আমাদের সাংস্কৃতিক ভবিষ্যৎ কি হবে সে সম্পর্কে কিছু বলা দুষ্কর। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, নিজের ভাষা ও নিজের সুরের ভেতর দিয়েই কেবল একটি জাতির আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটে। আমরা বাংলাদেশে আমাদের অস্তিত্বের শুরুতে বিপুল আশা ও ভবিষ্যতের বিশাল স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম। একাত্তরের সেই শুভ লগ্নে আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটেছিল কিন্তু তার পরে কি কারণে বারবার আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে তা ভেবে দেখা দরকার। আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা কি আমাদের মধ্যে তেমন কোন পুরুষার্থ রচনা করতে পারেনি যা আমাদের সমাজকে সাংস্কৃতিকভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেবে? এই উন্নয়ন কেবল পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন নয়, মূল্যবোধের ও পুরুষার্থের উদ্বোধনের সঙ্গে আদ্যোপান্ত সম্পর্কিত। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আমরা ভেবেছি এবার হয়তো শুভদিনের সূচনা হবে। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের সমাজ থেকে এমন নেতৃত্বের উদ্ভব কেন ঘটছে না যে নেতৃত্ব সম্পূর্ণ সমাজকে সুষ্ঠু সুন্দর জীবনের দিকে আমাদের পরিচালিত করতে পারবে? আশা ও উদ্দীপনার বিষয়ে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, সমাজে কবির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমরা উদ্দীপনার গান ও কবিতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছি। যিনি ওই সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে উপনীত হতে পারেননি তিনি বন্দিশিবিরে থেকেও তার মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন এবং তার নিজের মতো করে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন স্বাধীনতার স্বপ্নে। কবির যে মন তা তার ভৌগোলিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক এক বিরাট প্রেক্ষাপটে ঘটকের ভূমিকায় কাজ করে। প্রকৃতি ও মানুষের যে মিথষ্ক্রিয়া এবং সে কারণেই সমাজ বাস্তবতার যে নান্দনিক অস্তিত্ব কবির মনে সৃষ্ট হয় তা থেকেই বেরিয়ে আসে কোন এক অনন্য মুহূর্তে তার অভূতপূর্ব উচ্চারণ। এই উচ্চারণ একটি পরিপূর্ণ সামাজিকতার ভেতর থেকেই উৎসারিত। এ কারণেই কবি সমাজবিচ্ছিন্ন নন। তার মূল কাজটি একাকীত্বে সংঘটিত হলেও তার মানস ধারণ করে তার সমাজের সমস্ত আশা-আকাক্সক্ষা ও আনন্দ-বেদনার সম্পূর্ণতা। কথাটা কবি, লেখক ও সৃষ্টিশীল বিশেষত নান্দনিক সৃষ্টিশীলতার বিভিন্ন প্রকাশ মাধ্যমে যিনি কাজ করেন তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাহলে কবির বৈশিষ্ট্যটি কোথায়? বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমাজ পরিপ্রেক্ষিতে ও সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে কবির মন ও কাব্যকলা সম্পর্কে নানা সংজ্ঞা উপস্থাপিত হয়েছে; এবং কবি সম্পর্কে সমাজের ক্ষমতাবানদের দৃষ্টিভঙ্গিও সেই বিশেষ কালের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। একজন প্রাচীন দার্শনিক তার রাষ্ট্রে কবির উপস্থিতি নিরাপদ মনে করেননি। কারণটা অস্পষ্ট নয়। কবি নিত্যদিনের ঘটনাপ্রবাহ ও দৃশ্যপটের মধ্যে হঠাৎ করে চিন্তায় নতুন পরিপ্রেক্ষিত, নতুন আলোর ঝলকানি নিয়ে আসেন। তার বিশিষ্ট দৃষ্টিতে যে সত্য উদঘাটিত হয় জীবন ও জগতের, তাকেই তিনি উপমা-রূপক-উৎপ্রেক্ষা-প্রতীক-কল্পচিত্রের মাধ্যমে একটি বিশিষ্ট ব্যঞ্জনাময় ভাষায় প্রকাশ করে ফেলেন। যে সত্যটি প্রকাশিত হয়ে পড়ে তা যদি ক্ষমতাধরের জন্য নিরাপদ না হয় তখনই প্রয়োজন হয় তার কণ্ঠরোধ করার এবং রাষ্ট্র থেকে নির্বাসন দেয়ার। বিভিন্নœ কালে, বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সমাজে এমনটা ঘটতে দেখা গেছে। এর অনেক কেতূুহলোদ্দীপক উদাহরণ দেয়া চলে। এই বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নৈতিকতার দোহাই দিয়ে বোদলেয়ারের কিছু রচনা প্রকাশ নিষিদ্ধ ছিল। ব্রিটিশ ভারতে নজরুলের কথা সবার জানাই; আমাদের দেশেও অল্পকাল আগেও এমনটা ঘটেছিল। প্রাচীনকালে যখন প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষের বিপুল বিস্ময় ও অপরিসীম ভীতি বিদ্যমান ছিল তখন অনেক সময় অলৌকিক জাদুকরী ক্ষমতা কবির ওপর আরোপিতও হয়েছে। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতির ফলে আজকের দিনে ওইসব ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু শিল্পবিপ্লবের পর দুর্মর বাণিজ্যিক সভ্যতার চাপে কবি অনেক সময় হয়তো অবমূল্যায়িত হয়েছেন কিন্তু তার পরও কবিতার অগ্রগতি কিন্তু ব্যাহত হয়নি। প্রতিটি সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি জনগোষ্ঠীতে কবির উচ্চারণে সরল জাগতিক উপকার প্রত্যক্ষ না হলেও তাতে যে জীবনদর্শন প্রতিবিম্বিত তার স্পষ্ট প্রভাব মানুষের ধারণায় মিশে যায়। এ কারণেই একজন কবির উচ্চারণ সবার হয়ে উঠতে পারে এবং যখন তা সবার হয়ে ওঠে সেখানেই তার শিল্পের সার্থকতা। কাজেই মানব সভ্যতার বর্তমান যে স্তর তাতেও স্পষ্টতই দেখা যায় কবির সামাজিক প্রয়োজন সত্যিকার অর্থে শেষ হয়ে যায়নি। কোন এক জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক শিক্ষা এবং তার ফলে যে মানসিক বিকাশ ও পরিণত মনন তাই সেই মানবগোষ্ঠীর কবিতার ধরন ও মানকে নির্দিষ্ট করে। বাংলাদেশে সৌভাগ্যবশত চর্যাপদ থেকে শুরু করে আমাদের কাব্যকলায় বিপুল ঐশ্বর্যমণ্ডিত উত্তরাধিকার রয়েছে। এই উত্তরাধিকার উভয় বাংলার জন্য একই উৎস থেকে আহরিত। রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক কারণে উভয় বাংলার কাব্যিক উচ্চারণের মধ্যে বিপুল সাদৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গে কিছু বৈসাদৃশ্য থাকবে এবং সেগুলোই নির্দিষ্ট কালিক বিন্দুতে তাদের পারম্পরিক বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ নির্মাণ করবে। সভ্যতার দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতায় প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কবিতার নির্মাণ এবং তার পাঠক ও শ্রোতা আরও দীর্ঘকাল মানব সভ্যতার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ হিসেবে সচল থাকবে। বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তির কারণেই তার কবিতার উদ্বর্তন নানাভাবে হতে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কবিতার সত্যিকারের উপভোগ হয়তো আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের বর্তমান বাস্তবতার কারণে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। --------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক যুগান্তর । সাময়িকী । ১১ জুলাই ২০০৮ সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০০৮ ভোর ৫:৫৬
false
rg
নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার বনাম তারেকের বেকসুর খালাস!!! আমাদের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই একটা কথা আউরে থাকেন- রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই! আমাদের রাজনীতিবিদদের পাল্টি খেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি তাদের ভোল্ট পাল্টাতেও বেশি দেরি হয় না। দলীয় নমিনেশান না পেলে রাতারাতি তারা নৌকা ছেড়ে ধানের শীষে যেতে পারেন। ধানের শীষ ছেড়ে নৌকায় উঠতে পারেন। নৌকায় জায়গা না হলে লাঙ্গল চষতে পারেন। কিংম্বা ধানের শীষে নৌকায় ভরসা না পেলে দাড়িপাল্লায় মাপতে পারেন কোন দিকে যাবেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। যদি নৌকা ভালো চলে তো সেদিকে জোয়ার দেন। যদি ধানের শীষে হাসি ফোঁটে তো সেদিক হাসতে থাকেন। যদি লাঙ্গলে চাষাবাদ ভালো হয় তাহলে ট্রাকটর ছেড়ে সবাই লাঙ্গলের উপর ভরসা করেন। নীতি নৈতিকতার কোনো বালাই নাই। একটাই দাওয়া টাকা বানানো মেশিন। যে দলে গেলে টাকা বানানো যতো সহজ হবে, তারা সেই দলে রাতারাতি চলে যেতে দ্বিধা করেন না। গ্রামের হাট-বাজারের বিভিন্ন পন্যের যেমন ফেরিওয়ালা থাকে, ক্যানভাচার থাকে, মলম বিক্রেতা থাকে, তারা যেভাবে পন্যের গুনগান করে ক্রেতাকে পন্য ধরিয়ে দেন, পন্য কি সেটা ফেরিওয়ালার বিষয় নয়, বিক্রিটাই আসল বিষয়, তেমনি আমাদের রাজনৈতিক ক্যানভাচারগণ দল পাল্টিয়ে তখন নতুন দলে যোগ দিয়ে সেই দলের বেশি বেশি গুনকীর্তনে গলা ফাঁটাতে থাকেন। এ এক ভারী মধুর কাহিনী। যে গল্পের শেষ নেই...আজ সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০১৩, বিকাল তিন ঘটিকায় বঙ্গভবনে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রীসভা শপথ গ্রহন করবেন। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রীসভায় কোন কোন দল যোগ দিচ্ছে? বাংলাদেশে যেসব দলের বর্তমান নবম জাতীয় সংসদে সদস্যপদ আছে, কেবল সেসব দল থেকেই এই সর্বদলীয় মন্ত্রীসভায় যোগ দেবার সুযোগ আছে। তো চলুন একনজরে নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ফলাফলটা একটু দেখে আসিঃ- ৩০০ আসনের নির্বাচনে সেই ফলাফল ছিল এরকম-১. বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩০টি আসন২. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল পেয়েছিল ৩০টি আসন৩. জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ২৭ টি আসন৪. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ পেয়েছিল ৩টি আসন৫. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পেয়েছিল ২টি আসন৬. বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি পেয়েছিল ২টি আসন৭. লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এলডিপি পেয়েছিল ১টি আসন৮. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি পেয়েছিল ১টি আসন৯. স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছিল ৪টি আসনএছাড়া সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন তখন ছিল ৪৫টি। যার মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৩৬টি আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল পেয়েছিল ৫টি আসন এবং জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ৪টি আসন। সংবিধানের পঞ্চাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০। এই নতুন ৫টি আসন পেয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অর্থ্যাৎ সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমানে আসন সংখ্যা ৪১টি।মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। বিষয়টি এখনো আদালতে আপিল বিভাগে বিচারাধীন। সুতরাং আজকের সর্বদলীয় মন্ত্রীসভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র অন্তর্ভূক্তি হবার কোনো সুযোগ নেই। বাকি ৭টি দল থেকেই এই নির্বাচনকালীন সরকারে নতুন মুখ দেখা যাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সেক্ষেত্রে মন্ত্রীসভার আকার হবে প্রায় ৩০ সদস্য বিশিষ্ট। এবার চলুন আজকের নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রীসভায় সম্ভাব্য মন্ত্রীদের একটা তালিকা প্রস্তুত করা যাক। গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে যেসব নাম চাউর হয়েছে প্রথমে সেগুলো দেয়া যাক-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে:প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা আর অন্যান্য সম্ভাব্য মন্ত্রীগণ হলেনআমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবুল মাল আবদুল মুহিত, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মতিয়া চৌধুরী, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, নুরুল ইসলাম নাহিদ, দীপু মনিজাতীয় পার্টি থেকে:রওশন এরশাদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জি এম কাদের, রুহুল আমিন হাওলাদার, মজিবুল হক চুন্নু ও অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামজাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ থেকে:হাসানুল হক ইনু ও মঈন উদ্দীন খান বাদলবাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে:রাশেদ খান মেনন ও ফজলে হোসেন বাদশাজাতীয় পার্টির (জেপি) থেকে:আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আপাতত গণমাধ্যমের কাছে এই নামগুলো মোটামুটি চূড়ান্ত। শপথের আগে সেখানে আরো অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। এবার আসা যাক তারেক রহমানের বেকসুর খালাসের মামলায়।টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশনস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দায়ের করা এ মামলায় তারেক-মামুনের বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ৬ জুলাই। গতকাল সেই মামলার রায়ে, ঘুষ হিসাবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। আর তারেকের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। একই অভিযোগে একজনের সাজা এবং একজনের বেকসুর খালাসের রায় যদিও খুব আশ্চার্যজনক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো'র বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে এবং ইতোমধ্যে যেগুলো'র রায় হয়েছে, সেগুলো একটি বিরাট বাধা। তারেকের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে তার মধ্যে প্রথমটির রায় হল গতকাল। রায়ের মোটিভ থেকে এটা স্পষ্ট যে, তারেক রহমানের অন্যান্য মামলার রায়ও বিএনপি'র দাবী অনুযায়ী একই রকম হতে পারে। যেটি রাজনৈতিক সমঝোতার একটি অন্যতম লেনদেন। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এটা এক ধরনের অদৃশ্য মুচলেকা। এই মুচলেকার আরেকটি ভিন্ন অর্থ করছেন কেউ কেউ। যদি আগামী দশম সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যায়, তাহলে যাতে আওয়ামী লীগের বড় বড় দুর্নীতিগুলোর এবং ঝুলে থাকা রাজনৈতিক মামলাগুলোর অনুরূপ বিচার হয়, কিংম্বা এক ধরনের ছাড় পাওয়া যায়, সেটাই তারেকের বেকসুর খালাসের পেছনের আসল রহস্য। আরেকটি পক্ষ বলছে, আজ বঙ্গভবনে বিএনপি'র কিছু উচ্চ পর্যায়ের নেতাও মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন। সদ্য কারাগারে প্রেরিত হওয়া ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং বিএনপি নেতা ডক্টর আব্দুল মঈন খান ও ওসমান ফারুক নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে পারেন!! এছাড়া লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এলডিপি'র কর্নেল অলি আহমেদ এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি'র আন্দালিব রহমান পার্থও সর্বদলীয় মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে পারেন!!!তবে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের এবং এলডিপি ও বিজেপি'র মন্ত্রীসভায় যোগদান কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। সে অনুযায়ী মন্ত্রীসভা আজ আরো ছোট হতে পারে। তাদের যোগদানের জন্য নির্বাচনকালীণ সর্বদলীয় মন্ত্রীসভা আরো দু-চারদিন পরে হয়তো আরো বড় হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি'র সঙ্গে সরকারের লেনদেন এবং অদৃশ্য আপোষের নতুন নতুন মাত্রায় ঐক্য হলেই সেটি দেখা যাবে। নতুবা বিএনপি এই মন্ত্রীসভার বাইরে থেকেও নির্বাচনে যোগ দিতে পারে কৌশল হিসেবে। কিন্তু আপোষের যেসব অনুসঙ্গ এবং শোধবোধ তা তলেতলে সরকারের সঙ্গে হয়ে যাবে। তো আমরা আপাতত বিকাল তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি...
false
rn
প্রলয়ে যেন সকল যায়-হৃদয় বাকি রাখে চাঁদ হেলে আছে।আকাশে এখন খেলা করছে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ।সারারাত অসহ্য গরমের পর শেষ রাতে ঠান্ডা বাতাস ভেসে আসছে।এখন এই শহর কী শান্ত,সুন্দর।রাত জাগে দুই ধরনের মানুষ চোর এবং সাধু।তারাও হয়তো শেষ প্রহরে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেয়।থেমে আছে নর্তকীর পায়ের নূপুর।মাতালরাও বিভোর হয়ে পড়েছে গভীর ঘুমে।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ঘুমন্ত নগরী দেখতে দারুন লাগে।আমিও ঘুমিয়ে গেলাম একসময়।দিনের আলো ফুটে গেলেও ঘুম ভাঙ্গলো না।মানুষের জীবনে সমস্ত রাএিই ভোর হয় না।কোনো কোনো রাত থেমে যায়।আমি অনভিজ্ঞ,পৃথিবীর কোন রহস্যই বেধ করতে পারিনি আজ পর্যন্ত।নাগরিক জীবনের কোলাহল কিছুই বুঝতে পারি না।একদিন বিকেলে রমনা পার্কে বসে খুব সুন্দর একটি মেয়ের কান্না দেখে আমারও চোখে পানি এসে পড়েছিল।অতি কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিলাম-আপনি কোনো চিন্তা করবেন না,কেউ আপনাকে কোনো কষ্ট দিতে পারবে না,সব ঠিক হয়ে যাবে,মন খারাপ করবেন না প্লীজ।আমি জানি আমি খুব এলোমেলো কথা বলছি।কোনো কথার সাথেই কোনো কথার মিল নেই।পড়তেও হয়তো বিরক্ত লাগছে।আর একটু ধের্য্য ধরো বন্ধু।কিছুক্ষন পর দেখবে পড়তে আনন্দ লাগছে।আমি প্রথমেই গভীরে যেতে চাচ্ছি না।অনেক অনেক চমক অপেক্ষা করছে।আমি জানি আপনাদের ভালো লাগবেই।একটি গোল টেবিল ঘিরে বসেছে নীলা, দিলরুবা আর সামিরা।প্রত্যেকের হাতে রয়েছে জুসের গ্লাস।শুধু আমার হাতেই গ্লাস নেই।নীলা আপা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে নিলেন।দিলরুবা গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে কি বলে উঠলো শুনতে পেলাম না।সামিরা আপা মোবাইলে কথায় ব্যস্ত।কাকে যেন কি ধমক দিচ্ছেন।আমি ধুমপান করি।আমার আসক্তি ধুম পানের দিকে সবার সামনে ইতস্তত বোধ করছি।সামিরা আপা হঠাৎ গান শুরু করলেন- "তোমায় ভালোবাসি তাইচোখের দেখা দেখতে চাইথাকো,থাকো বলে ধরে রাখব না।কোনো দুঃখের কথা তোমায় বলবো না।তুমি ভালো থেকো,সেই ভালোগেলো গেলো বিচ্ছেদে প্রান...আমারই গেলো...।"আমি চোখ মেলে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। মনে হচ্ছে এখানেই ঘুমিয়ে পড়বো।মানুষের মন রহস্যে ভরা।আমরা তার কত টুকু জানি?আমাদের দেশ এখন অনেক দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।এখন আমাদের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।দেশের সব ক্ষমতা চলে যাচ্ছে খারাপ মানুষদের হাতে।কিন্তু স্বাধীনতা যুব্ধের সময় এই দেশের মানুষরাই অসাধ্য সাধন করেছিলেন।(আচ্ছা,থাক এই কথা পরে হবে।)ইদানিং আমার খুব মনে হচ্ছে আমার আশে পাশে আমার কোন প্রিয়জন নেই।আমি একা,বড় একা।মন খারাপ হলে যে কারো কাছে ছুটে যাবো বা কারো কোলে মাথা রেখে কাঁদবো-কেউ নেই,নেই নেই।আমি অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি,তলিয়ে যাচ্ছি।কোনো বাগানেই ফুল খুঁজে পাই না।ডুবে যাবার আগে শুধু অদৃশ্য ভাবে দু'টি হাত দেখতে পাই।আবার পর মুহূর্তেই নিজেকে আবিস্কার করি কোনো মসজিদের বারান্দায়।মুখ তুলে তাকাই আকাশের দিকে।জ্যোন্সা'র আলোতে দু'টি হাত আমাকে যেন কি বলে।বড্ড পানির পিপাসা পেয়েছে।এ যুগের ছেলে মেয়েরা চিঠি লিখে না তাদের আছে মোবাইল,ইন্টারনেট।আমার কাছে একটা চিঠি আছে।প্রেমের চিঠি।কার তা বলবো না।চিঠিতে লেখা-আমার প্রানাধিকাসু,তোমার জন্য আমি অস্থির হয়ে আছি।যেন তুমি অশোক বনে বন্দী সীতা।কিন্তু রামের এক জন দূত ছিল,তার নাম হনুমান।আমারতো কেউ নাই।শুধু ডাক বিভাগ ছাড়া।অনেক সাহস সঞ্চয় করিয়া চিঠি লিখিতে বসিলাম।জানি না এই চিঠি তুমি পাবে কিনা,যদি পাও তাহলে বুঝবো ইশ্বরের হৃদয়ে প্রান আছে।আগেই তোমাকে বলে নিই-আমার চোখে ঘুম নেই,খেতে ইচ্ছা করে না।শুধু কোনো রকমে বেছে আছি-শুধু তোমার জন্য।নইলে এই পোড়া জীবন কে রাখতো?কারন আমার খুব সখ তুমিই বহন করবে আমার ভবিষৎ প্রজন্ম।মায়াবতী,আমার কলিজার টুকরা তুমি।তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না।তোমার বাবা(কিছু মনে করো না)খুব বদমায়েস।তার সঙ্গে লড়তে হলে সোজা পথে হবে না।আমাকে বাঁকা পথ নিতে হবে।এখন তুমি বলো রাজি আছো কিনা?তোমাকে ঠিক করতে হবে কাকে চাও?তোমার বাবা একটি কঠিন চীজ।তিনি আমাকে দু'চোখে দেখতে পারেন না।সারা দিন তোমার বাসার সামনে ঘুরঘুর করেও তোমাকে দেখতে পেতাম না,তার জন্য।আচ্ছা,তিনি আমাদের ব্যাপারটা কি করে জানলেন?যে লোকটির সাথে তোমার সম্বন্ধ হয়েছে সে তোমাকে আমার মতো করে সুখী করতে পারবে না।আমি নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী,কিন্তু সে না।তোমার উপর সংস্কার চাপিয়ে দিবে।তোমার চিঠির আশায় গ্রীষ্মের কাকের মতো বসে থাকবো।এক আকাশ ভালোবাসা বুকে নিয়ে তোমার প্রতিক্ষায় আছি।(মায়াবতী ভেবে পায় না এর উওরে কী লিখবে।মধ্যরাতে মায়া কাগজ নিয়ে বসলো।পাশে রাখলো রবীন্দ্রনাথের কবিতার বই গুলো।)আকাশে চাঁদ নেই।রাস্তার বাতি গুলো জ্বলছে না।গভীর এক অন্ধকার গিলে ফেলেছে শহর টাকে।শহরের সবাই ঘুমিয়ে আছে।শুধু 'হিমি' আর আমার চোখে ঘুম নেই।
false
rg
গরীব কৃষকের আবার মাংস খাবার লোভ হয় কি করে!!! সরকারের মগজ যখন নগরায়নের দুষ্টচক্রে আবিষ্ট হয়ে থাকে, তখন নানান ভুলভাল প্রেসক্রিপশানে শিল্পায়নের দিকেই তার আগ্রহ বেশি হয়। তখন সেই সরকার সুন্দরবনের অস্তিত্ব কেন প্রয়োজনীয় তা যেমন ভুলে যায়। তেমনি কৃষিজমি কেন প্রয়োজনীয় তা অনুভব করতেও খেই হারিয়ে ফেলে। সরকারি সদ্দিচ্ছা পুরোপুরি কৃষি বিমুখ হয়ে গেলে, সেই দেশ যতই কৃষিপ্রধান হোক, সেই কৃষি উৎপাদন ধীরে ধীরে আর কৃষকবান্ধব থাকে না। কৃষিখাতে তখন শিল্পায়নের দানব থাবা মারতে থাকে। তখন কৃষিখাতে শ্রমিক হটানোর জন্য শহরে নানান কিসিমের চাকরির মূলা ঝুলানো হয়। বাংলায় যার নাম ফুটানি। যে ধান একসময় সে নিজে বানাতো, সেই ধানের চাল সেই ফুটানির টাকায় শহরে বসে কিনে তখন ভারী ডাট দেখায়। যাকে বলে টাউনের ডাট। এই টাউনের ডাটে যখন সরকার বাহাদুর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়, তখন সেই দেশের কৃষির কপাল লাটে ওঠে। আর তখন কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম না পেলেও, সরকারের ওই ডাটগিরির কারণেই মধ্যস্বত্তভোগী দালালরাই তখন বেশি মুনাফা লোটে। বাংলাদেশের কৃষিখাতের চিত্র বর্তমানে সেই দশায় আছে। এই যে সরকার বাহাদুর দিনাজপুরের চালকল মালিকদের কাছ থেকে যেখানে ১ লাখ ৬ হাজার টন চাল কিনবে, সেখানে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কিনবে মাত্র ৩ হাজর ৫৬১ টন ধান! আর সারাদেশের চিত্রটা একবার ভাবুন? সারা দেশের চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনবে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টন। আর কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে মাত্র ১ লক্ষ ৫০ হাজার টন। যেখানে এবার বরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টন। কোথায় ১ কোটি ৯০ লাখ টন আর কোথায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টন! এত অল্প পরিমাণ ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনে কি হবে! (লেখক কবিরউদ্দিন সরকারের স্টাটাস থেকে)। কৃষক নিজের খাবারের জন্যই লোকসান গুনে হলেও ওই ক্ষেতে পরে থাকে। সরকারের মনের খায়েস তখন পূরণ হয়। কারণ যে দুষ্ট চক্রের সিন্ডিকেট এই পুরো ব্যাপারটায় খবরদারি করে, তখন তারা বাইরে থেকে চোরাকারবারি বা অতিরিক্ত চাল আমদানিরও একটা বাড়তি সুযোগ পায়। অনেকটা ফাঁদ পেতে মাছ শিকাড়ের মত। শিল্পায়নের ভুল ফাঁদে পা দিয়ে এভাবে সরকার বাহাদুরও একসময় এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে পরাজয় মেনে নেয়। তখন গোটা দাম ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাটুকুও এই সিন্ডিকেট বা ফরিয়াদের হাতে চলে যায়। বাংলাদেশে বাজারের নিয়ন্ত্রণ মোটেও সরকারের সামর্থ্যের মধ্যে নেই। সরকার বরং এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতার ভান করে ভোট হালাল করার জন্য কল্যানমূলক রাষ্ট্রের নানান কাসুন্দি ঘাটতে ব্যস্ত হয়ে যায়। আজকে আমার কৃষক এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি খাসির মাংস কিনতে পারছে না। এটা নিয়ে সরকারের তখন কোনো আফসোস হয় না। বরং সিন্ডিকেটের নতুন নতুন বাজার কাঠামোর নানান কিসিমের ঘেরাটোপে তখন সরকার বাহাদুর নিজেরাও ঘুরপাক খায়। তখন তাদের নতুন নতুন ডিমান্ড তৈরি হয়। নতুন এয়ারপোর্টের জন্য কৃষি জমি প্রয়োজন হয়। কিন্তু কৃষি বান্ধব সড়ক বা রেল যোগাযোগ নিয়ে সরকারের তেমন ঘুম হারাম হয় না। বাংলাদেশে আরো বেশি করে এয়ারপোর্ট জরুরী নাকি সড়ক ও রেল যোগাযোগ বেশি জরুরী? এমন কি নদীমাতৃক দেশ হিসেবে আমাদের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জরুরী উপলব্ধিগুলোও তখন হারিয়ে যায়। বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মধ্যে এতো জায়গা থাকতে তখন সুন্দরবনের কাছে রামপালেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নেই সরকার বাহাদুর পাগলা হয়ে যায়। একবারও ভাবে না, দেশের কোথাও আর একটাও সুন্দরবন নেই। যে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবে। সুন্দরবন ধ্বংস করতে পারলে সরকারকে বুদ্ধি দেওয়া এসব সিন্ডিকেটেরই পোয়া বারো। তখন বছর বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হবে। সেই সুযোগে এরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে অনেকটা স্থায়ী দাওয়া মারতে পারবে। সরকারের যারা চুরিচামারি করে, তাদের চোখেমুখে তখন চকচকা হাসি ফুটবে। কারণ রিলিফ চুরি আর বিদেশি সাহায্য চুরিতে তখন সবাই মিলে হিরিক লাগাতে পারবে। ফলে বাংলাদেশের কৃষিখাতকে ধ্বংস করে দেওয়াই সরকার লালিত এসব সিন্ডিকেটের সুপ্ত কামনার মধ্যে অন্যতম। তাই এরা যত খুশি কৃষি জমি দখল করছে। গ্রাম উঠিয়ে সেখানে শহর বানাতে পাগলা হয়ে যাচ্ছে। শিল্পায়নের পেছনে সরকার বাহাদুরের এই পাগলা হওয়ার প্রবনতা টাই বাংলাদেশের কৃষির জন্য চরম বিপদ ডেকে এনেছে। কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, না বলে এখন বলতে হবে সরকার কৃষককে ন্যায্য দাম দিতে আসলে মোটেও আর ইচ্ছুক নয়। তাই রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো গড়ায় সেভাবেই কৃষি বান্ধব না করে শিল্প-বান্ধবের দিকেই সরকারের আগ্রহ। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন এই শ্লোগানেই সরকার বাহাদুর খুশি। কৃষক মাংস খেতে পারল কিনা, তাতে তো সরকারের আগ্রহ নাই। বরং সরকার পালিত সিন্ডিকেটের কর ফাঁকি, ব্যবসায়ী সুযোগ সুবিধা, লাল পাসপোর্ট, বিদেশ টাকা সরানোর নেটওয়ার্ক গুলো ঠিকঠাক কাজ করল কিনা, তা নিয়েই সরকারের যত দুঃশ্চিন্তা। সরকার বাহাদুরের কাছে বদ লোকদের কদর বেশি। একজন তৌফিক-ই-এলাহী যে রাষ্ট্রের কত বড় ক্ষতি করতে পারে, তা তখন সরকার বুঝতে পারে না। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের দেশীয় এজেন্ট তখন জ্বালানী উপদেষ্টা সেজে দেশের তেল-গ্যাস-কয়লা বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। আচ্ছা, মাগুরছড়ায় গ্যাস ফিল্ডের অগ্নিকাণ্ডে যে বিদেশী কোম্পানি জড়িত ছিল, তারা কি বাংলাদেশকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিয়েছে? সরকার বাহাদুর যে সেই ক্ষতিপূরণের টাকা তাদের মাফ করে দিয়েছে, তা কি দেশের ১৬ কোটি মানুষ জানে? ঢাকায় নিযুক্ত সেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়র্টের সঙ্গে এলাহী সাহেবের সেই যে দূতিয়ালি, তা কি বাংলাদেশ মনে রেখেছে? সেভরন, নাইকো, অক্সিডেন্টাল এরা কি বাংলাদেশের মানুষকে সেবা দিতে এসেছে বলে আপনাদের বিশ্বাস হয়? এলাহী সাহেবের ব্যাংক হিসাব কেন দুদক তলব করে না? প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলে?বরং সারের জন্য এদেশের কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ফুলবাড়িতে কয়লা উক্তোলন নিয়ে সরকার বাহাদুর একচুলও ছাড় দিতে নারাজ। কানসাটের ঘটনা এখনো বাতাসে টের পাওয়া যায়। এতসব অনিয়মের পাহাড়কে আড়াল করার জন্য এদেরই মালিকদের তৈরি করা মিডিয়ায় একশ্রেণীর টকশো বন্দোবস্ত করে জনগণকে একধরনের ন্যাপকিন পরিয়ে রাখা হয়েছে। এই নাও, তোমরা কয়লা বিদ্যুতের আলোয় ঘরে বসে বসে টকশো দেখো। অথচ সুন্দরবনের কোনো মউয়াল বা কোনো জেলে কখনো বিদ্যুতের দাবিতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে যায়নি। তাদের বিদ্যুৎ দেবার নাম করে সরকারই এসব তামাশা খেলছে। আর এসব টিকিয়ে রাখতে সরকারকে বেশি বেশি স্বৈরাচারি আচরণের উপরই জোর দিতে হচ্ছে। কারণ, জনগণের সাথে তো আর সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখানে জনসভায় টাকায় লোক ভাড়া পাওয়া যায়। এখানে ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য দলীয় চ্যালাচামুন্ডা পালতে হয়। কত কিসিমের ব্যাপার স্যাপার। সেসব আড়াল করতে ধর্মকে একটা জুতসই হাতিয়ার বানানো হয়েছে। কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করলেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার ঘটনা ঘটে। গোটা সিস্টেমটাকে একটা দুষ্টচক্রের খপ্পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাকে আমরা বলছি রাজনীতি। সেখানে গরীব কৃষক কি খেল না খেল, দুঃখে-কষ্টে থাকল কিনা, তা দেখার সময় কোথায়?যতই দিন যাবে, এসব অব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখতে সরকারকে তখন আরো বেশি বেশি বিদেশি শক্তির মুখাপেক্ষী হতে হবে। আরো বেশি সম্পদ তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। আরো বেশি নিপিড়ণমূলক আচরণেরর দিকে মনযোগ দিতে হবে। এভাবেই একটি গণতান্ত্রিক সরকার ধীরে ধীরে স্বৈরাচারে পরিনত হয়। এটাকে বলা যায় টেকঅফ স্টেজ। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সেই দুষ্টুচক্রের টেকঅফ স্টেজ পাড়ি দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলা মানে আপনি সরকারের দৃষ্টিতে জাতীয় দুশমন। কারা যে দুশমন সেই কথা কে কয়রে সূজন! ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত গেয়ে এখানে আর কি হবে? ধানের দামই যেখানে নাই। সেখানে শিবের আশির্বাদ কিভাবে পৌঁছাবে?কৃষিমন্ত্রী যেমন বলেছেন, প্রাচুর্যের বিড়ম্বনা নিয়ে আমরা সাময়িক অসুবিধায় আছি। আশা করি দ্রুত এই সমস্যা কেটে যাবে। আহা মরি মরি। জয় হরি। জয় হরি। .............................২৩ মে ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৩৯
false
hm
হুমায়ূন আহমেদ কি হুমায়ুন আজাদের পুত্রকন্যার কাছে ক্ষমা চাইবেন? বাংলাদেশের সর্বাধিক পঠিত উপন্যাসগুলির লেখক হুমায়ূন আহমেদ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্যে তিনি নিউইয়র্কে আছেন, সেখান থেকে তিনি কয়েক দিন পর পর দৈনিক প্রথম আলোতে ছোটো জার্নাল লিখে পাঠান। হুমায়ূন আহমেদ বহু দিন ধরেই নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে পাঠকের সামনে বার বার তুলে ধরেছেন, এই জার্নালগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। একজন লেখক হিসেবে তিনি বোধহয় সেটা করতেও পারেন। হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমার আগ্রহ নেই, তারপরও আমি তাঁর লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আমার এক নিকটাত্মীয় ক্যান্সারে মারা গেছেন, একজন হাস্যোজ্জ্বল স্বাস্থ্যবান সুপুরুষ একটু একটু করে একটা জীবন্ত কঙ্কালে পরিণত হয়ে একদিন এক শেষ হেমন্তের দিনে পৃথিবীর পাট চুকিয়ে ফেলেছেন। যত মৃত্যু কাছে এসেছে, তিনি একটু একটু করে পাল্টে গিয়েছেন, তাঁর ভেতর থেকে অচেনা সব মানুষ বেরিয়ে এসেছে, যাদের সাথে কখনো পরিচয় হবে বলে ভাবিনি। আমার সেই নিকটাত্মীয়ের পরিত্রাণের কোনো আশা ছিলো না, ডাক্তাররা তাকে সেই আশ্বাস দিতে পারেননি। হুমায়ূন আহমেদ কিছুটা আশ্বাস পেয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি তিনি ক্যান্সারের জটিলতা কাটিয়ে সুস্থ শরীরেই আবার বাংলাদেশে ফিরে যাবেন, লেখালেখি চালিয়ে যাবেন। তারপরও আমি একটা অসভ্য কৌতূহল নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়ি, আর ভাবি, তাঁর ভেতর থেকেও অচেনা সব হুমায়ূন আহমেদ বেরিয়ে আসবে কি না। আমরা সবাই একটা গোলকধাঁধার ভেতরে ঘুরছি, জানি আচমকা একটা মোড় ঘুরলেই মৃত্যু বেরিয়ে আসবে, কিন্তু যে একটা ঘরে বসে আছে, যার দরজা খুললেই মৃত্যু এসে ঢুকবে ঘরে, তার সাথে তো আমাদের অনেক পার্থক্য। আমার নিকটাত্মীয় লেখক ছিলেন না, শুধু তার আচরণ আর কথাই তার পরিবর্তনের সাক্ষী। হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর আবর্জনা লিখলেও তিনি যে কোনো বিচারেই একজন সুলেখক, তাই তিনি যখন এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, নিশ্চয়ই তাঁর লেখায় জিনিসটা ফুটে উঠবে। এক অসুস্থ কৌতূহল নিয়ে আমি তাই তাঁর লেখা পড়ি। কোনো সহানুভূতি, সমবেদনা ছাড়াই। হুমায়ূন আহমেদের বদলে অন্য কোনো ক্যান্সার আক্রান্ত সুলেখক এই জার্নাল লিখলেও আমি একই বিকৃত আগ্রহ নিয়ে লেখাগুলো পড়তাম। সম্ভবত আমার আত্মীয়ের মৃত্যু আমাকে বিকারগ্রস্ত করে ফেলেছে। কিন্তু সব শেষে এটাই সত্য কথা, আমি অপেক্ষা করছি, অচেনা কোনো হুমায়ূন আহমেদ বেরিয়ে আসবেন কি না। আমার অপেক্ষা বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ সম্ভাবনা প্রবল যে হুমায়ূন আহমেদ প্রথম আলোতে কোনো বাণিজ্যিক চুক্তিতেই এই লেখাগুলো লিখছেন। তিনি এমন কিছু লিখবেন না, যা পাঠককে বিকর্ষণ করবে। হচ্ছেও তাই, তিনি ঘুরে ফিরে লিখছেন নিজের সংসারের কাহিনী, তরুণী ভার্যার কথা, সন্তানদের কথা, নিউইয়র্কে ভক্তদের কথা। তাঁর একটি সাক্ষাৎকার দেখলাম ইউটিউব থেকে, বেশ তৃপ্তি নিয়ে ভক্ত-বন্ধুদের প্রতিক্রিয়ার কথা বলছিলেন। তারপরও সব লেখা পড়ে মনে হয়, ভদ্রলোক নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। এই নিঃসঙ্গতা মানুষের সঙ্গ দিয়ে মিটবে না হয়তো। ইয়োরোপে নতুন কোনো শহরে বেড়াতে গেলে তাদের বড় ক্যাথেড্রাল বা চার্চের ভেতরে ঢুকি ছবি তোলার জন্যে, ঐ বিশাল চার্চে ঢুকলে মানুষের উপস্থিতিতেও নিজেকে একা মনে হয়। হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়ে মনে হয়, তিনিও হয়তো এমন আত্মিক নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন এখন। ক্যান্সার হওয়ার কারণে সেই নিঃসঙ্গতার কথা তিনি সঙ্গোপনে এক একটা লেখায় মিশিয়ে দৈনিক পত্রিকায় লেখার সুযোগ করে নিয়েছেন। দেশ ছেড়ে আসার আগে পড়ছিলাম ওরহান পামুকের দ্য ব্ল্যাক বুক, সেখানে এক রহস্যময় সাংবাদিক চরিত্র থাকে, যে উপন্যাসের আরেক চরিত্র গালিপকে পত্রিকায় জার্নাল লিখে জানায় গালিপের ঘরপালানো স্ত্রীর কথা। উপন্যাসটা এগিয়েছে দুটো কাহিনীর গলি ধরে, বিজোড় পরিচ্ছেদগুলি গালিপের কাহিনী, আর জোড় পরিচ্ছেদগুলি সেই সাংবাদিকের এক এক পর্ব জার্নাল ধরে। অপূর্ব রসাত্মক সেই জার্নালগুলি, অদ্ভুত তাদের বিষয়, এবং আশ্চর্য সূক্ষ্ম সব পর্যবেক্ষণ মিশে আছে তাতে। বসফরাসের তলদেশে একটা গাড়ির কঙ্কালের ভেতরে দুটি পুরুষ ও নারীর কঙ্কালের কাহিনী থেকে শুরু করে কী নেই তাতে? হুমায়ূন আহমেদ জার্নাল লেখা শুরু করার পর ভেবেছিলাম তিনি ওরকম কিছুই হয়তো লিখবেন। পরে দেখলাম, খুব সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে গিয়ে নিজের পাঠক স্পেকট্রামের বড় অংশকে তিনি হারানোর পথে হাঁটবেন না। তিনি একটা মিষ্টি বিষণ্ণতা নিয়ে লিখছেন তাঁর শিশু পুত্রটির কথা যে মাত্র হাঁটতে শিখছে, তাঁর কন্যাদের কথা যারা তাঁকে ঘিরে থাকে না, তাঁর স্ত্রীর কথা যে সুখেদুঃখে তাঁর পাশে আছে, তাঁর ভক্তদের কথা যারা তাঁকে দুষ্প্রাপ্য দুর্লভ সব খাবারদাবার রেঁধে খাওয়ায়, একজন প্রধানমন্ত্রীর কথা যিনি তাঁকে দেখতে আসেন, আর মাঝে মাঝে দেশে ফিরে একটা ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির স্বপ্নের কথা। শেষ পর্যন্ত তাঁর লেখায় দেখি তিনি আত্মীয়-ভক্ত পরিবেষ্টিত একজন ক্লান্ত, নিঃসঙ্গ মানুষ, ঐ গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে আর কিছু লেখার শক্তি তাঁকে পরিত্যাগ করেছে। মন্দিরের ঘানিতে বাঁধা ছিন্নকেশ শিমশোনের মতো তিনি তাঁর লেখার যন্ত্রটিকে ঘুরিয়ে চলছেন। প্রতিটি জার্নালেই তিনি লিখে চলছেন এই একটি গল্পই। অনেক ছোটো যখন ছিলাম, যখন প্রত্যেকটা দিন একেকটা নতুন দিন ছিলো, তখন দুপুরে আম্মা আমাকে ঘুম পাড়াতো নীল হাতি পড়ে শুনিয়ে। বলতো, তুমি একটা পৃষ্ঠা পড়ো, আমি একটা পড়ি। প্রত্যেকদিন ঐ একটি বই ঘুরে ফিরে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যেতাম, তারপরও প্রত্যেকদিনই নতুন লাগতো। কিন্তু এখন কেমন যেন ছকে পড়ে যায় অনেক কিছু, স্বার্থপর পাঠকের মতো নতুন কিছু চাইতে ইচ্ছা করে। হুমায়ূন আহমেদের একনিষ্ঠ পাঠক আমি নই, কিন্তু তাঁকে বলতে ইচ্ছা করে, আপনি এই একটি গল্প বারবার লেখা বাদ দিয়ে আমাদের বলুন তো, আপনি পাল্টে যাচ্ছেন কি না? সকালে ঘুম ভেঙে বালিশে নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনতে শুনতে কি আপনার মনে হয়, আপনি আজ অন্য একজন মানুষে পরিণত হয়ে গেছেন? যদি তাই হয়, তাহলে সেই মানুষটার হাতে কলম তুলে দিন। পাঠকের কথা ভুলে গিয়ে, নিজের বৌ-পোলাপানের কথা ভুলে গিয়ে, মরতে বসেছে এমন এক লোকের মুখ থেকে স্কচ টেপ খুলে দিন। তার অনেক কিছু বলার আছে, আমি নিশ্চিত। আর খবরের কাগজে নিজের সন্তানদের নিয়ে আনন্দ বেদনার কথা বলার পাশাপাশি, একটু ভাবুন মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ ও অনন্য আজাদ নামে তিন যুবক যুবতীর কথা। এদের পিতা, হুমায়ুন আজাদকে দুই হাজার চার সালে নৃশংসভাবে আক্রমণ করেছিলো পাকিস্তানপন্থী ঘাতকের দল। ১৮ জুলাই, ২০০৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ দৈনিক সমকালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (ইমেজ লিঙ্ক) সেই আক্রমণকে প্রকারান্তরে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। : বাংলাদেশের লেখকরা কি স্বাধীন?☻ > হ্যাঁ, বাংলাদেশের লেখকরা স্বাধীন। : তাহলে ড. হুমায়ুন আজাদকে মরতে হলো কেন? > কারণ যে বইটা তিনি লিখেছিলেন, তা এতই কুৎসিত যে, যে কেউ বইটা পড়লে আহত হবে। তার জন্য মৌলবাদী হতে হয় না। হুমায়ুন আজাদ হুমায়ূন আহমেদের কলিগ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দু'জনেই দু'টি বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর ওপর ঐ হামলাকে হুমায়ূন আহমেদ নির্বিকার চিত্তে জায়েজ করে দিয়েছিলেন, এর জন্যে তাঁকে অনুতপ্ত হতে দেখিনি। তিনি তাঁর কন্যাদের সাহচর্য কামনা করে মানুষের অশ্রু মোক্ষণের চেষ্টা করেন জার্নালে, স্ত্রীপুত্রের দুঃখের কথা বলে সহানুভূতি জাগিয়ে তুলতে চান পাঠকের মনে, কখনও কি চিন্তা করে দেখেছেন, হুমায়ুন আজাদেরও তাঁর কন্যাদের বয়সী তিনটি সন্তান আছে? তারাও হুমায়ূন আহমেদের পাঠক। আমি নিশ্চিত নই, হুমায়ূনের সেই সাক্ষাৎকারটি তারা পড়েছেন কি না, কিংবা পড়ে তারা আহত হয়েছেন কি না। পাঠক হিসেবে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। যে লেখাটির কথা হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, ধরে নিচ্ছি সেটি "পাক সার জমিন সাদ বাদ" উপন্যাসটি। পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম চরণ ধরে লেখা এই উপন্যাসে হুমায়ুন আজাদ সরাসরি স্পষ্ট ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বাংলাদেশে জামায়াতি সন্ত্রাসকে, যেটা করার সাহস বা সদিচ্ছা হুমায়ূন আহমেদের কোনো লেখায় দেখিনি। এই উপন্যাসে কোনো কুৎসিত বক্তব্যও আমি এতে খুঁজে পাইনি। যদি হুমায়ূন আহমেদ বা কোনো জামাতি ক্যাডারের কাছে কুৎসিত বলে মনে হয়েও থাকে, তার উত্তরে কি লেখকের ওপর চাপাতি নিয়ে হামলা করা সিদ্ধ হয়? আমরা যদি ধরেও নিই, হুমায়ুন আজাদের লেখাটি কুৎসিত, তবুও বলবো, এর চেয়ে শতগুণে কুৎসিত লেখার লেখককেও আমরা সহ্য করে নেয়ার মতো সমাজ চাই, যেখানে একটি লেখার দায়ে লেখককে চাপাতির কোপে আহত বা নিহত হতে হয় না, এবং দুর্ভাগ্যক্রমে আহত হতে হলেও সে আঘাতকে বৈধতা দেয়ার জন্য আরেকজন লেখক কলম ধরেন না। আমাদের এই চাওয়ার জায়গাটা হুমায়ূন আহমেদ কিছুটা হলেও টলিয়ে দিয়েছেন। এই তিনজন মানুষকে উদ্দেশ করে কি ক্ষমা চাইবেন, প্রিয় "নীল হাতি"র লেখক? হুমায়ুন আজাদের কিছু আসবে যাবে না, কিন্তু আমরা যারা হুমায়ুন আজাদের লেখা, হুমায়ূন আহমেদের লেখা আর হুমায়ূন আহমেদের সেই সাক্ষাৎকারটি পড়েছি, তারা ভরসা পাবো। বিনিময়ে আপনাকে নতুন করে দেয়ার আর কিছু নেই আমাদের কাছে।
false
rn
জনম জনম তব তরে কাঁদিব প্রিয়তমাসু,লেখার ভাষা আমি হারাইয়া ফেলিয়াছি।কাগজ কলম সবই আছে ঠিকঠাক।শুধু ভাষা নাই।আমার যখন যাহা মনে লয় তাহাই লিখিয়া ফেলি।কি লিখি তাহা বিচার বিবেচনা করিতে ইচ্ছা করে না।আজ যা লিখিলাম কাল তাহা ভুল মনে হইলেও তাতে দোষ কি?কি অদ্ভুত ভাবেই না দিনরাত কাটিয়া যাইতেছে।ভাবিলে অবাক হইতে হয়।আমি খুবই তুচ্ছ ইহাতে কোনো প্রকার সন্দেহ নাই।দিন দিন আমার মানসিক আর শারীরিক অবস্থা নড়বড়ে হইতে চলিতেছে।কেহই আমারে বুঝিতে পারে না ভাবিলেই বুকে ব্যাথা হয়।টন টন করিয়া।আমার মন খারাপ হইলেই আমি আসমানের দিকে তাকাইয়া ইশ্বর কে খুঁজিয়া বেড়াই।আর মনে মনে জপ পাড়িতে থাকি,আমায় শান্ত কর।আমায় দয়া কর।পথ দেখাও।আমার মন শান্ত হয় না-তখন ইশ্বর কে কামড়াই দিতে ইচ্ছা হয়।ইদানিং বারবার বড় ইচ্ছা জাগিছে-দুরে কোথাও চলিয়া যাইবার।কিন্তু যাওয়া আর হইতেছে না।চোখের পাতা ভিজিয়া উঠে।মাথার ভেতর উঁই পোকা ঝিঁঝিঁ করে সারাক্ষন ডাকিতে থাকে।উফ্ কি যন্তনা।এতো কিছুর পরেও তবু স্নায়ু গুলি টান টান স্পর্শ কাতর যে সামান্য শব্দে বারবার চমকিয়া উঠি।কি কারনে এই রুপ ঘটিতেছে তাহা বাহির না করা পর্যন্ত আমি শান্ত হইব না।'হিমি' আর জানুক বা না মানুক তুমি তো জানো আমি কতো সরল সুন্দর বোকা জ্ঞনী।তুমি দূরে চলিয়া যাইবার পর'ই তোমার অভাব খুব বোধ করিতেছি প্রতিনিয়ত।বলতে লজ্জা হয় না তোমাকে আমার প্রয়োজন।তুমি সব সময় আমার পাশে থাকিবে হাসিবে খেলিবে গীত গাইবে।আহা এই কথা ভাবিতেও মনে সুখ বোধ হয়। আমি অনেক ভাবিয়া দেখিয়াছি সারাক্ষন তুমি আমার পাশে থাকিলে- আমার সকল অস্থিরতা সব নিভিয়া যাইবে।নিশিথে আর জাগিয়া থাকিতে হবে না।তুমি আপন হাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়া দিবে।আর কেউ না জানুক আমি তো জানি তোমার ঐ দু'হাতে কত মায়া।'হিমি' তোমার স্পর্শেই আমার জীবন হবে মঙ্গলময়।আমি অপেক্ষায় আছি।অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে।'হিমি' আমি জানি,তুমি আমার হাত ধরিলেই আমার সু- সময় শুরু হইবে।তুমি তো জানো আমি কারো কোনো ক্ষতি করি নাই।কারো অমঙ্গল কামনা করি নাই।সবাই কে ভালোবাসিতে চেয়েছি সর্বক্ষন।আমার কি হইয়াছে নিজেই বুঝিতে পারিতেছি না।নিজেকে শয়তান বলিয়া মনে হইতেছে।অতি নিষ্ঠুর বলিয়া বোধ হইতেছে।এমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক।মাঝে মাঝে আমি পাগলের মতো হইয়া যাই।তখন বারবার বলিতে থাকি খুন করিয়া ফেলিব,খুন করিয়া ফেলিব...।ক্রোধ খুব খারাপ জিনিস।তোমার কাছে ক্ষমা চাহিতে আমার লজ্জা লাগে না।আপন মানুষের কাছে আবার লজ্জা কিসের?'হিমি' আমি জানি,-তরল পর্দাথের মধ্যে কোনো বস্তু নিমজ্জিত করলে সেই বস্তু কিছু পরিমানে ওজন হারায় যে পরিমানে ওজন হারায় সেই পরিমান ওজন বস্তু'র অপসারিত তরল পর্দাথের ওজনের সমান।এক বৃষ্টির রাতে তুমি আমার কন্ঠে গান শুনতে চাহিয়াছিলে।আমি গেয়ে ছিলাম আমার সবটুকু সুর দিয়ে।-বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছেহায় বিনা কারনেনীল আকাশ থেকে একি বাজ এনেছে হায় -বিনা কারনেদিনে দিনে মূল্য বিনে,সে যে আমায় নিলো কিনে-এ মনে যতন করেনিটোল প্রেমের বীজ বুনেছেআমি তো খুঁজি কারন,মন আমার করে বারন বলে কেন এমন মরন বিনা কারনেআমি বাদী আমি বিবাদী,কোথাও অপরাধীকেন সেই রুপের আগুন বুকে জ্বেলে আছি বেঁচে বিনা কারনে...বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছেহায় বিনা কারনেকেন,তুমি আজ আমার কাছ হইতে দূরে তাহা অনেক বার ভাবিয়াছি।আর নিজেকে নিজেই গালমন্দ করিয়াছি।তারপরও আত্নার শান্তি মিলে নাই।এই মন নিয়ে তোমার হাত ধরিয়াও শান্তি পাইব না।তুমি মনে করিও না আমি কোনো রুপ আবেগ বা মোহে পড়িয়া তোমাকে এই রকম বলিতেছি।সব'ই হৃদয়ের কথা।'হিমি' কিছু দিনের জন্য আমি নীলগিরি পাহাড়ে চলে যাইব।ফিরিয়া আসিয়া তার কারন ব্যাখ্যা করিব।আমি মানুষটা খেজুর গাছের মতোন।খোঁচা না দিলে রস বেরোয় না।তাড়া না দিলে মাথায় আসে না নতুন কিছু।আমি খুব ব্যস্ত আবার অকর্মা,এই দু'ভাবেই আমাকে দেখিতে হইবে।আমাকে যদি না চিনিতে পারো,তাহলে আমার কাছে এসেও আমার আসল কাছে আসা হইবে না তোমার।আবার আমি খুব ছোটও বটে -,তুমি আমাকে দেখবে শুনবে,খাওয়াইবে,পরাইবে,সাজাইবে-আমার সে বয়সও আছে।'হিমি' রাতে যখন তুমি আমার সাথে নানান বিষয়ে গল্প বলে যাও,সে আমার খুব ভালো লাগে।রাতের আকাশের তারা ইশ্বরের খুব বড় সৃষ্টি,কিন্তু তোমার মুখের কথা গুলি আমার কাছে আকাশের তারার মতো।ঐ তারার আলো যেমন কোটি কোটি যোনন দূরের থেকে আসে-তেমনি তোমার হাসি,তোমার কথা শুনতে শুনতে মনে হয় যেন কত জন্ম -জন্মান্তর থেকে তার ধার সুধা স্রোতের মতন বয়ে এসে আমার হৃদয়ের মধ্যে এসে জমেছে। আমার মনে অনেক গ্লানি থাকিলেও আক্ষেপ নাই হিমি।আমার সব দুর্বলতা তো তোমার'ই কাছে।তুমি তো জানো আমি কখনো কোনো কাজ'ই ভাবিয়া করিনা।তুমি আমার পাশে আছো-ভয় কি!তাই আমি তোমাকে এতোটুকু বলতে পারি-দায় সবটুকু আমার'ই ছিল না।আচ্ছা,'হিমি' সম্রাট শাজাহান কি মমতাজ কে ভালোবাসিতেন?ভালোবাসিলে তার জীবনে অন্য নারী কেন আসিয়াছিল?সেই নারীদের সাথে সম্রাট শাহজাহান যখন সুখবিহার করিতেন,তখন কি মমতাজের কথা মনে পড়িত?আর একারনে কি মমতাজ খুব দুঃখ পাইতেন না?সম্রাটের অপেক্ষায় নয়,স্বামীর পথের দিকে তাকাইয়া তার বিনিদ্র রাত যখন কাটত-,তখন বুকে কান্না ছটফট করিত না?সেই মমতাজ মারা যাইবার পর যমুনা'র ওপাশে শাজাহান পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য সৃস্তিসৌধ নির্মাণ করিয়া নাম রাখিলেন 'তাজমহল'।যুগ যুগ ধরিয়া মানুষ সেই তাজমহলের সামনে দাঁড়াইয়া বলিতেছে,আচ্ছা,এই হইলো ভালোবাসা?ভালোবাসা'র মানুষের জন্য তার সমস্ত ভালোবাসা উজার করিয়া তাজমহল বানাইয়া মমতাজ কে জীবিত রেখেছে শত শত বছর ধরিয়া।কিন্তু বাঁচিয়া থাকিতে যার প্রতি একনিষ্ঠ হইলাম না।মৃত্যুর পর তাকে নিয়া লাফা লাফি করা কি রকম ভালোবাসা?'হিমি' সবাই আপন আপন লইয়া আছে।আমি কেন আপন নিয়া থাকিব না?'হিমি'সাফাই গাইতেছি না।দোষ আমার একার না।আজ আমার মনে হইতেছে আমার আরো অনেকদিন বাঁচিয়া থাকিতে হইবে।এখনো আমার অনেক কাজ জমিয়া আছে।আমি নির্বোধ না,আমি জানি,যখন আত্নবিশ্বাস চলিয়া যায় -তখন আয়ু বড় দুর্বল বলিয়া বোধ হয়।নীলগিরি পাহাড়ে ভ্রমন আমার অস্থিরতা কতক উওমশ করিতে পারে বলিয়া বাহির হইব।নচেৎ অন্য উপায় চিন্তা করিব।এই সব লেখার একটি কারন আছে-আমি তোমার কাছ হইতে একটি কথা'র জবাব চাই।শুধু তোমার মনোভাব টুকু জানিতে চাই।আমার এই সমস্ত প্রলাপে বিরক্ত হইও না।আমি বড় অসহায়,বড় হতাশ।'হিমি' আমার সব গ্লানি'র অবসান ঘটিয়ে দাও।হে নক্ষএের রানী!অন্ধকার আকাশ হতে তোমার শুচিশুভ্রচোখ মেলে তাকাও।যাকে আমি সারা জীবন ধরে খুঁজে চলেছি।আমার সেই প্রিয়তমার নামাঙ্কিত পএ রেখে দিচ্ছি আমি।
false