label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
fe
তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্ব ও বিশ্বাসের রাজনীতি তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্ব ও বিশ্বাসের রাজনীতিফকির ইলিয়াস========================================প্রেসিডেন্ট বুশ জাতিসংঘে যে ভাষণ দিয়েছেন তা মার্কিনি জনগণের মনে মোটেই রেখাপাত করতে পারেনি। তার কারণ একটিই। আট বছরের শাসনামলে বুশ গণউন্নয়নের কোনো স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। যা বলেছেন সবই ফাঁকা বুলি। ছিল মিথ্যাশ্রিত নানা ফন্দিফিকিরও। তাই মার্কিনিরা খুবই ক্ষিপ্ত। বুশের বিদায় নিতে মাত্র কমাস বাকি। তাই তার কোনো দাম্ভোক্তিই মানুষ আর শুনতে চাইছে না। বুশের এবারের জাতিসংঘ ভাষণকে রুটিন ওয়ার্ক বলেই বিবেচনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষকরা।চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে যুক্তরাষ্ট্র। তা কাটিয়ে উঠতে বুশ খোলা আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। দুই প্রধান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জন ম্যাককেইন ও বারাক ওবামা সাড়া দিচ্ছেন বুশের ডাকে। বুশ বলেছেন, গোটা মার্কিনি অর্থনীতিই ‘হাইরিক্স’ এর মুখোমুখি। তিনি এ অবস্থাকে ‘দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক রি-সেশন’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। বুশ বলেছেন, ৭০০ বিলিয়ন ডলার রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার যে বিল উত্থাপিত হয়েছে তা দ্রুত পাস করার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।এদিকে বুশের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে জন ম্যাককেইন ও বারাক ওবামা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন প্রায় তাৎক্ষণিকভাবেই। এই বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে এই চরম অর্থনৈতিক সংকটকে আর দীর্ঘ হতে দিতে পারি না। এটাই এখন আমাদের পথ ও সুযোগ, ঐক্যবদ্ধভাবে ওয়াশিংটনকে আবারো সকল শক্তি ও সাহায্য প্রদান করার। যাতে আমরা আমাদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারি’।জন ম্যাককেইন ইতিমধ্যেই তার নির্বাচনী প্রচার সংক্ষিপ্ত করে মার্কিন কংগ্রেস সামিটে যোগ দিতে ওয়াশিংটনমুখী হচ্ছেন। বারাক ওবামাও যাচ্ছেন সে সামিটে।এদিকে বড়ো বড়ো বেশকিছু স্টক মার্কেটিং কোম্পানি লেহমান ব্রাদার্স, গোল্ডম্যান শাকস, জেপি মরগান, মেরিল লিঞ্চÑ এগুলোতে ধস নেমে আসার প্রকৃত কারণ কী তা তদন্ত করে দেখতে মাঠে নেমেছে এফবিআই-এর বেশকটি টিম। কোনো ঘাপলা, দুর্নীতি করে এই ধস নামাতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কোনো ভূমিকা আছে কিনা তা সূক্ষ্মভাবে তদন্ত করে দেখবে এফবিআই। তারা রিপোর্ট প্রদান করবে মার্কিন কংগ্রেসে।অর্থনীতির এই মন্দাবস্থায় নতুন নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করে আবারো লাইমলাইটে চলে এসেছেন সিনেটর বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, আমি তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা মানুষ। আমি মানুষের দুঃখ-বেদনা অনুভব করতে পারি। আমরা ডেমোক্র্যাটরা যে পরিকল্পনা দিচ্ছি, তা জনগণ কর্তৃক গৃহীত হলে মাত্র চার বছরেই যুক্তরাষ্ট্র সব সংকট কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হবে।এটা ঠিক, শিকাগো অঙ্গরাজ্যের সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার আগে মার্কিনিরা নামও জানতো না অত্যন্ত মেধাবী, ত্যাগী এই নেতা বারাক ওবামার। সিনেটর পদে পাস করার পরই তার নাম উচ্চারিত হতে থাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে। শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন লাভে সমর্থ হন ডেমোক্রেটিক পার্টির।দুই .তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বের কথা আমরা উপমহাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে প্রায়ই শুনি। কিন্তু যারা গণপ্রতিনিধি, যারা সত্যিকারের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা নেতা, তারা কি নির্বাচন এলে মনোনয়ন পান? না, এদের অধিকাংশ নেতাই মনোনয়নের মুখ দেখেন না।আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেবে। কতোটা দেবে, তা দেখার বিষয়। তবে মহাজোট তৈরি করে আওয়ামী লীগ ওয়ান-ইলেভেন পূর্ববর্তী নির্বাচনের যে প্রস্তুতি নিয়েছিল তাতে মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্বের প্রাধান্য ছিল কি? না ছিল না। বরং জোট করতে গিয়ে কতিপয় চিহ্নিত মৌলবাদীদেরকেও মনোনয়ন তালিকায় নিয়ে এসেছিল আওয়ামী লীগ। যা ছিল মহান বিজয়ের চেতনাকে অবজ্ঞার শামিল। এবারো মহাজোটের মাধ্যমে তারা তেমনটি করবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। একটি কথা খুবই স্পষ্ট, যে নেতার নিজ দেশমাতৃকার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকে না তার দ্বারা দেশ সেবা হয় না। হতে পারে না। আজ আওয়ামী লীগের মোর্চায় যেসব কট্টরপন্থী মৌলবাদীরা ভিড়তে চাইছে তারা প্রকৃত পক্ষে এই মাটিকে কতোটা ভালোবাসে তা প্রশ্নবিদ্ধ।একই অবস্থা প্রযোজ্য বিএনপির বেলায়ও। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, আব্দুস সালাম পিন্টু, রুহুল কুদ্দুস দুলু, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বেশকিছু দাগি নেতাকে বিএনপি সরিয়ে দিতে পারে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত কী করবে তা তারাই জানে। তবে যারা সরাসরি জঙ্গি মদদ দিয়েছিল, যারা এই দেশে দফায় দফায় বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল তাদের তো এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকারই থাকার কথা নয়। তারা রাষ্ট্রের প্রতি, জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। রাষ্ট্রের আমানত রক্ষা করতে পারেনি।বিএনপি মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছেন, দেখা যাক মহাজোট গড়ে তারা কী করতে পারে। এদিকে মৌলবাদী রাজাকার শক্তি জামাতকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনমুখী বিএনপি সব প্রস্তুতিই নিতে শুরু করেছে। দুই নেত্রীর সংলাপও শেষ পর্যন্ত হবে কিনা তা নিয়ে বাড়ছে সংশয়।রাষ্ট্রীয় নীতিমালা নির্ধারণে প্রধান দল, দলের নেতানেত্রীর মাঝে মুক্ত আলোচনা হতেই পারে। তা দূরত্বকে যেমন কমিয়ে দেয়, জাতীয় সংকটের ঘনঘটাকেও তেমনি লাঘব করে। বাংলাদেশে এই সংলাপের সংস্কৃতি গড়ে উঠলে জাতি অনেকাংশেই মুক্তি পেতো। বাড়তো মানুষের মনে বিশ্বাস।জাতীয় স্বার্থে ম্যাককেইন-ওবামা দুজনেই যৌথ বিবৃতি দিয়ে এক মঞ্চে দাঁড়াতে বিন্দুমাত্র দেরি কিংবা অবহেলা করেননি। একজন জাতীয় নেতার এটাই প্রধান দায়িত্ব। দেশকে ভালোবাসতে হলে ব্যক্তিগত হীন স্বার্থ পরিত্যাগ করতেই হয়। আর সে জন্য মৃত্যুভয়ও সত্যিকার নেতানেত্রীকে কাবু করতে পারে না। জনগণের আস্থা অর্জনে রাজনীতির স্বচ্ছ নৈতিকতাই পরিপুষ্ট করতে পারে একটি জাতীয় অবকাঠামো।
false
hm
এক্সপ্লোরার ২০০২ সালের শেষ দিকে একদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখলাম, সূর্যোৎসব হবে কেওকারাডঙে। সূর্যোৎসব মানে বছরের নতুন দিনের সূর্যকে বরণ করে নেয়ার উৎসব। আগ্রহীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান সভার কর্ণধার মশহুরুল আমিনের সাথে। ছাত্রদের জন্যে তিনহাজার টাকা, অছাত্রদের জন্যে পাঁচহাজার টাকা ফি। অংশগ্রহণকারীকে অবশ্যই শারীরিকভাবে ফিট হতে হবে। আসনসংখ্যা সীমিত। নিজেকে শারীরিকভাবে আনফিট মনে করতে খুব বাধছিলো বলে দিনকতক পরে ফোন করলাম জনাব মশহুরুল আমিনকে। তিনি জানালেন, সত্তর বছর বয়স্ক জনৈক বৃদ্ধ কিছুক্ষণ আগে জানিয়েছেন, তিনি যেতে পারবেন না, কী যেন একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে। তাঁর বদলে আমাকে নেয়া যেতে পারে, যদি পরদিনই টাকাসহ যোগাযোগ করি। লালমাটিয়ায় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে পরদিন সকালেই গেলাম। উন্মাদের অফিসের সাথে ভাগাভাগি করে তখন চলতো এই সভা। মশহুরুল আমিন ইন্টারভিউ নিলেন আমার, শারীরিক ফিটনেসসহ আর নানারকম ব্যাপারস্যাপারের ওপর খোঁজখবর করলেন, যদিও তাঁকে দেখেই জিন্দালাশের মতো মনে হচ্ছিলো। পরে দেখেছি, মশহুরুল আমিন ওরফে মিলন ভাই ওরফে মহাকাশ মিলন দুর্দান্ত ফিট লোক। সূর্যোৎসবে নাম লেখানোর পর কয়েকদিন বাড়িতে বসে তুমুল ব্যায়াম করলাম। আমি বেঈমান ও নাফরমান বলে রোজার সিজনে সেহরি থেকে ইফতারের মাঝে চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় সাঁটাই বলে রোজার পর আমার রীতিমতো স্বাস্থ্য খুলে যায়, এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। সূর্যোৎসবে সেবার দলনেতা ছিলেন প্রসিদ্ধ পক্ষীপ্রেমিক ও ট্রেকার ইনাম আল হক। একটা ছোট ব্রিফিং মতো হয়েছিলো তাঁর বাসায়, সেটা আমি মিস করেছিলাম। ফলে অনেক উপদেশ অজানা থেকে গিয়েছিলো ব্যাকপ্যাক গোছানোর সময়। মিলন ভাইয়ের অতীত পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে শাহবাগ থেকে রুকস্যাক, কাকরাইলের তাবলীগী মার্কেট থেকে স্লিপিং ব্যাগ আর নানা টুকিটাকি কিনেছিলাম। আমার সেই রুকস্যাক আমার প্রাণ রক্ষা করেছিলো পরবর্তীতে, এখনও লেখার সময় কৃতজ্ঞ চোখে তাকিয়ে আছি বেচারার দিকে। অনেক ধকল গেছে তার ওপর দিয়ে। পাহাড় থেকে পড়া, সাঙ্গু নদীতে ডোবা, সাগরের পানিতে চুবানি খাওয়া থেকে শুরু করে আমার সাথে দুই দুইবার জার্মানীযাত্রার ধকল সহ্য করতে হয়েছে বেচারাকে। স্লিপিং ব্যাগের কপালে অত কিছু জোটেনি, আমার সাথে পুকুড়পাড়া যাত্রার সময় অনবধানতাবশত বিশ্রীভাবে একটা অংশ পুড়ে গিয়েছিলো বেচারার। এখন সে হয়তো ঢাকায় আমার কেবিনেটে পড়ে পড়ে ধূলো খাচ্ছে। স্লিপিংব্যাগ আর রুকস্যাক সহ টালমাটাল হয়ে যখন কলাবাগানে পৌঁছলাম শীতের ভোর পাঁচটার সময়, মেজাজটা কিছুটা খারাপই ছিলো। একটু পর দেখি অচেনা সব মানুষের ভিড়। হরেক রকম তাঁদের চেহারা, কণ্ঠস্বর, আকারআকৃতি, কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই। বাঙালির স্বভাবসুলভ সময়াধিবর্তিতার (সময়ানুবর্তিতার বিপরীত হয় না এটা?) কারণে আমাদের সেবার যাত্রা শুরু করতে করতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো। যাত্রাপথে আর বান্দরবানে রিগ্রিক্ষ্যং রিসোর্টে পৌঁছে মোটামুটি সবার সাথে পরিচয় হয়ে গেলো। কয়েকজনের সাথে আগেও সামান্য পরিচয় ছিলো, তা-ও পরিষ্কার হয়ে গেলো। সে-ই আমার প্রথম পাহাড়ে হাঁটা (পাহাড়ে চড়া ঠিক বলবো না, ঐ কাজটা একেবারেই ভিন্নরকম)। আর সেই হাঁটার সূত্রেই পরিচয় হয়েছিলো অনেক ভ্রমণপিপাসুর সাথে, যাঁদের সাথে একযোগে ঢাকায় ফিরে এসেই পত্তনি ঘটে এক্সপ্লোরারস ক্লাব অব বাংলাদেশের। এরপরের কাহিনী অনেক। প্রতিমাসে কোথাও ট্রেকিং বা হাইকিঙে যাবার পরিকল্পনা ছিলো আমাদের। সেই সূত্র ধরে আমরা ফেব্রুয়ারিতে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত হাঁটি, তো মার্চে আবার যাই মৌলভীবাজারের আদমপুরের জঙ্গলে ঘুরতে। কয়েকবার বান্দরবান-রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে অভিযান চলে আমাদের। গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে শেরপুর থেকে নেত্রকোণা পর্যন্ত এক দুর্দান্ত হাইকিং (যা আমি মিস করেছিলাম মিউনিখযাত্রার কারণে) আর সোমেশ্বরী নদীর তীর ধরে হাঁটার ট্রিপগুলিও স্মরণ করার মতো। তবে সময়ের সাথে মানুষের জীবনের মোড়গুলো আসে খুব আকস্মিকভাবে। কেমন হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেলো ছাত্রজীবন, আগের মতো আর সময় দেয়া গেলো না প্রিয় ক্লাবকে। প্রেসিডেন্ট বরুণ বকশী হুট করে একদিন পাড়ি জমালেন প্রবাসে (বরুণদা, আপনাকে আজও ক্ষমা করতে পারি না এজন্যে ...), অন্য দেশে তাঁরই পন্থার অনুগামী হলেন প্রিয় সদস্য বখতিয়ার রানা, শান্ত ভাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন টিভির চাকরি নিয়ে, উচ্ছল ভাই আর ইকবাল ভাইও নতুন চাকরির চাপে কাবু, শিলা আপা চলে গেলেন কঙ্গো, বদমেজাজি পারভিন আপাও একদিন রাগ করে নিজের মতো ঘোরা শুরু করলেন। নাজমুল ভাই, চঞ্চল আর শামীম খান নিখোঁজ, সালেহিন আর ওয়াহিদ ভাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নিজেদের কাজে, অতএব সামিয়াও গায়েব, অজর অটল শাহেদ ভাই-ই কেবল সবসময় "আছি" বলে আওয়াজ দিতেন। অভিমানী পুতুল আপাও আমাদের লুথামি দেখে তিতিবিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলেন একদিন। খুব মনে পড়ছে শেষ দু'টি এক্সকারশনের কথা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাগান দেখতে যাওয়া, আর বিডিআরের বাধা পেয়ে থানচি হয়ে রুমায় ট্রেক করতে না পেরে সাঙ্গু নদী ধরে অপূর্ব শ্বাসরুদ্ধকর এক নৌযাত্রার কথা। আমার ক্যামেরাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো সেই ট্রিপে, বেশ কিছু ভালো ছবি তাই মিস করেছিলাম, এতো দুঃখ পেয়েছিলাম যে অবশিষ্ট ছবিগুলিও আর প্রিন্ট করিনি শেষ পর্যন্ত। সঙ্গীদের ক্যামেরায় তোলা ছবি নিয়েই শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সেদিন সাল্লুর সাথে এমএসএনে আলাপ হচ্ছিলো এ নিয়ে। খুব খুব নস্টালজিক লাগে সেই দিনগুলির কথা মনে পড়লে। ক্লাবের সদস্যদের নিজের স্বজন বলেই ভাবি, তাঁদেরও খুব মিস করি। ইসিবি-র সদস্যরা, যে যেখানে আছেন, যদি এই পোস্ট পড়ার সুযোগ হয়ে থাকে, জানবেন, আপনাদের খুব ভালোবাসতাম বরাবরের মতো, এখনও বাসি। আমার জীবনের অন্যতম আনন্দময় সময়গুলি আপনাদের সাথে কেটেছে, এ জন্যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বহুদূরে চলে এসেছি, তবে ইসিবির কার্যক্রম থেমে যায়নি বলেই জানি। আজকে মেইল পেলাম আমাদের কনিষ্ঠতম সদস্য মামুনের, এভারেস্টের বেইস ক্যাম্পে পৌঁছেছে সে। মামুনকে অভিনন্দন জানাই, যদি সম্ভব হয়, তার কাহিনী সচলায়তনে তুলে ধরার ব্যবস্থা করবো।
false
rg
আগামী দুইটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ (২০১৯ দ্বাদশ এবং ২০২৩ ত্রয়োদশ) থেকে বাংলাদেশকে বাইরে রাখার নীলনকশা চূড়ান্ত !!! আমরা যেমন জানি, আগামী ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে। আর সময়টা হল ২০১৯ সালের ৩০ মে থেকে ১৫ জুলাই। আর ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলবে মোট ১০ টি দেশ। এখন প্রশ্ন হল, এই ১০টি দেশ কিভাবে বাছাই করা হবে? আয়োজক হিসেবে ইংল্যান্ড অটোমেটিক ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অলরেডি কোয়ালিফাইড দল। এছাড়া আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে আইসিসি র্যাংকিংয়ে (ICC Rankings comprising the ten full members, Ireland and Afghanistan) আয়োজক ইংল্যান্ড ও শীর্ষ সাতটি দল অটোমেটিক কোয়ালিফাই করবে। অবশিষ্ট দুইটি দলকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলে উত্তীর্ণ হতে হবে।আশংকার কথা হল, একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান নবম। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেটি অষ্টম বা সপ্তম হবার সম্ভাবনাও প্রায় খুব কম। কেন? কারণ আইসিসিতে মিস্টার নারায়ানাস্বামী শ্রীনিবাসন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন দুই বছর। ২০১৪ সালের ২৬ জুন শ্রীনিবাসন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। আইসিসির চেয়ারম্যান হিসেবে শ্রীনিবাসন দায়িত্বে থাকবেন আগামী ২০১৬ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত। শ্রীনিবাসান এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কিভাবে ধ্বংস করা যায় সেই খেলায় মেতে থাকবেন। ফলে শ্রীনিবাসন আইসিসি থেকে চলে যাবার পর বাংলাদেশের হাতে থাকবে ২৬ জুন ২০১৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত এক বছর তিন মাস ৪ দিন।আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আইসিসির দুইটি ফুল মেম্বার কান্ট্রি যখন পরস্পর সিরিজ খেলে, বা মুখোমুখি হয়, তখনই কেবল রেটিং হিসাব করার নিয়ম। অর্থ্যাৎ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ যেসব আইসিসির ফুল মেম্বার কান্ট্রির সঙ্গে খেলবে, কেবলমাত্র তখনই বাংলাদেশের সামনে রেটিং পয়েন্ট বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। এই সময়ে উক্ত খেলায় যদি বাংলাদেশ ধারাবাহিক জয় লাভ করে, কেবল তখনই বাংলাদেশের রেটিং উন্নতির সম্ভাবনা থাকবে। আর যদি বাংলাদেশ বেশি সংখ্যক ম্যাচ হারে, তাহলে রেটিং কমে নবম থেকে দশম অবস্থানে চলে যাওয়াও বিচিত্র নয়। তার মানে দাঁড়ালো, আগামী ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন বা রানারআপ হতে না পারলে, ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের ছিটকে পরার সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল।আইসিসির চেয়ারম্যান হিসেবে শ্রীনিবাসন যতদিন ক্ষমতায় আছেন, ততদিনে এই লোক বাংলাদেশের জন্য আরো কিছু সমুহ আপদ-বিপদ নিশ্চয়ই রেখে যাবার চেষ্টা করবেন। সেই হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যদি এখনই ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য ছক করে অগ্রসর না হয়, তাহলে হয়তো ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ১০ দলের তালিকায় নাও দেখা যেতে পারে। এটা সম্ভাব্য বিষয় থেকে এখন পর্যন্ত আমার ব্যক্তিগত আশংকার কথা। পাশাপাশি আশার কথা হল, আগামী বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে। সেখানে আইসিসি র্যাংকিংয়ের নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ দলগুলোর সাথে ২০১৫-২০১৭ আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ চ্যাম্পিয়নের টপ চারটি দল এবং ২০১৮ আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ চ্যাম্পিয়নের টপ দুটি দলকে নিয়ে মোট ১০ টি দল খেলবে। আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দল দুটি-ই ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নবম ও দশম দল হিসেবে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।সেই হিসেবে বাংলাদেশের জন্য আগামী ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে ঘিরে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে আমার ধারণা। আবার ২০২৩ সালের ত্রয়োদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট একক ভাবে আয়োজক হল ভারত। এবং ২০২৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেটও ২০১৯ সালের ফরমেটে অনুযায়ী হবে। অর্থ্যাৎ যদি বাংলাদেশ ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট এই জটিল ফরমেট চ্যালেঞ্জ করে খেলতে সমর্থ না হয়, তাহলে ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও বাংলাদেশকে একই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।তার মানে দাঁড়ালো, আইসিসি'র বিশ্বকাপের নতুন ফরমেটে আগামী ২০১৯ সালের লন্ডনের দ্বাদশ বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ সালের ভারতের ত্রয়োদশ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে বাইরে রাখার সকল আয়োজন বা ষড়যন্ত্র কিন্তু অলরেডি করা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড বা বিসিবি হয়তো এখনো আইসিসি'র এই কঠিন ছক বুঝতে সক্ষম হয়নি। তাই ভারতের সঙ্গে অনাকাঙ্খিত যুদ্ধে লিপ্ত হতে যাচ্ছে।বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি জাগমোহন ডালমিয়া। আগামী জুন মাসে ভারত বাংলাদেশ সফরে আসার কথা। ভারত যদি সেই সফর বাতিল করে তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আগামী অন্তত ৮ বছর কঠিন সমস্যার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তাজা'র ফেসবুক স্টাটাসে দেখলাম, তিনি বলেছেন, ''বর্তমানে বাংলাদেশে যারা ক্রিকেট পরিচালনা করছেন, ক্রিকেট কূটনীতির জায়গাটিতে রয়েছে তাদের বড় দূর্বলতা। ভারতের ক্রিকেটের দায়িত্বে এসেছেন বাংলাদেশের অত্যন্ত আন্তরিক শুভাকাঙ্খী জগমোহন ডালমিয়া। ডালমিয়ার সঙ্গে পাপন-মুস্তফা কামালদের তেমন কোনো সম্পর্কই নেই। জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক সৈয়দ আশরাফুল হকের। কিছু সম্পর্ক আছে সাবের হোসেন চৌধুরীর, সেটাও আশরাফুল হকের মাধ্যমে।''আমিও মোর্তাজা ভাইয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট কূটনীতিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা না করে, তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে আগামী দুইটি বিশ্বকাপ (২০১৯ ও ২০২৩) খেলা খুব কঠিন হবে। অন্তত এখন পর্যন্ত হিসাব নিকাশ এবং আইসিসি'র ছক ও ফরমেট সেই ইঙ্গিত দেয়। মানে দাঁড়ালো, ক্রিকেট কূটনীতিতে যদি বাংলাদেশ ফেল করে, তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আগামীতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। অতএব বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে এখনই এই বিষয়ে সচেতন না হলে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কঠিন সময়ের শুরুটা হয়তো আগামী জুন মাসেই ভারতের সফরকে ঘিরেই শুরু হচ্ছে। অতএব সাধু সাবধান।...........................................ঢাকা২ এপ্রিল ২০১৫
false
hm
সিয়েন আনিয়োস দে সোলিদাদ ডয়েচলান্ডে এক বছর কেটে গেলো আমার। এক বছর হয়ে এলো, ছেড়ে এসেছি আমার মা-কে, বন্ধুদের, আমার ঘরটাকে, আমার কম্পিউটার-গীটার-বই-ঝুল-কাগজেরগাদা-ভূমিশয্যাকে, ছেড়ে এসেছি আমার কাজ, আড্ডা আর ইতস্তত ঘোরাফেরা, ছেড়ে এসেছি সর্বশেষ যে মিষ্টি মেয়েটি আমাকে অযথাই ভালোবাসার অঙ্গীকার করেছিলো, তাকে, ছেড়ে এসেছি বারান্দা দিয়ে দেখা কয়েক টুকরো আকাশ, বারান্দার পাশে গাছের ডালে কাকের বাসায় কয়েকটি নীলচে ডিম, ছেড়ে এসেছি উল্টোদিকের বাড়ির আলসেতে শুয়ে থাকা আহত বানর, ছেড়ে এসেছি ডাইনিং হলের সোফায় শুয়ে টিভি দেখা, ছেড়ে এসেছি শহরের বৃষ্টি আর রোদ। আরো পেছনে চলে যাই। ছেড়ে এসেছি স্কুল থেকে ফিরে রান্নাঘরে বসে আমার মায়ের সাথে স্কুলের গল্প করতে করতে জানালা দিয়ে দেখা এক টুকরো নীল আকাশের ব্যাকগ্রাউন্ডে শিমুল গাছটাকে, বারান্দার ফ্রেমে উল্টোদিকের বাড়ির বিশাল কৃষ্ণচূড়াকে, আমার শৈশবকৈশোরের প্রিয় বন্ধুরা, যাদের গায়ে এখনো আমার শৈশবের গন্ধ লেগে আছে, ছেড়ে এসেছি ছুটির দিনে আমার বাবার সাথে বসে ক্যারাম খেলা। ছেড়ে এসেছি এক একটি আশ্চর্য সৌরভে ভরা মাতাল দিন, মনে হয় এই তো সেদিন আমার ভাইয়ের বাইসাইকেলের রডে চড়ে বিকেলে ঘুরতে বেরিয়েছি, হাঁটতে বেরিয়েছি আমার বোনের হাত ধরে কৃষ্ণচূড়া গাছে ছাওয়া রাস্তা ধরে, স্কুল থেকে ফেরার পথে ঝগড়া করছি বন্ধুর সাথে। আবারও সামনে আসি। ছেড়ে এসেছি প্রথম প্রেম, প্রথম বিচ্ছেদ, প্রথম সঙ্গম, প্রথম চুম্বন, প্রথম প্রত্যাখ্যান, প্রথম সাক্ষাৎ, প্রথম দায়িত্ব, প্রথম গর্জন। যাবতীয় প্রথমকে হারিয়ে অপ্রথমের পেছনে ছুটে চলি কেবল। মাঝে মাঝে এদের জন্যে কাতর হয়ে থাকি। চলে আসার কিছুদিন আগে খুব মনে পড়ছিলো শৈশবের জীবনকে, যেখানে আমরা কয়েকজন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে পরম স্বস্তির সাথে অনেকগুলো বছর বেঁচে ছিলাম, আমরা ভাইবোনবাবামা, যাঁদের কেউ এখন মৃত, বাকিরা ছড়িয়ে পড়েছি পৃথিবীর মহাদেশগুলোয়। আমার মায়ের হাঁটু জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম খুব, “কোথায়, আম্মা, কোথায় গেলো দিনগুলি?” আমার রুগ্না দুর্বল ছোট্ট মা সেদিন সবলা হয়ে ওঠেন শৈশবের দিনগুলির মতো, তিনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেন, “চলে গেছে বাবা, দিনগুলি চলে গেছে। ঐ দিনগুলি আবার আসবে, তোমার বাচ্চাদের জন্য। তাদের বোলো, তোমার বাবা, তোমার মা, তোমার ভাই তোমার বোনরা কেমন সুন্দর ছিলে, কত ভালো ছিলে একসাথে। তোমার স্কুলের কথা বোলো তাদের, বোলো তোমার বইগুলির কথা, তোমার বন্ধুদের কথা, তোমার সবকিছুর কথা ... কাঁদে না, আমার বাজান, কাঁদে না ...।“ আমি কাঁদি শুধু। মায়ের সাথে কথা হয় না দীর্ঘদিন। এই দীর্ঘ নিঃসঙ্গ প্রবাসে প্রতি রাতেই নিজের বুকের ভেতরে তাঁর অশ্রুপাতের শব্দ শুনি। অনাগত সন্তানদের অভাবে গল্পগুলি বলি সচলের অদেখা বন্ধুদের, যাঁরা সন্তানের মতোই আপন হয়ে কাছে থাকেন। আর এই এক বছরেই কাটিয়ে চলি শত শত বছরের নিঃসঙ্গতা। জমতে জমতে আমার ঘরে নিঃসঙ্গতাই হয় সবচেয়ে শরীরী, সবচেয়ে আপন, সে হয় আমার মা, আমি হই তার কোলের শিশু, আর স্মৃতির স্তন্যপান করে চলি।
false
hm
পুনর্মাশুকভব "ঐ যে পাখি! বকপাখি!" উৎফুল্ল স্বরে বলে ফাকমিদুল হক। রমণ সুমহান বেজায় বিরক্ত হন। ফাকমিদুলকে ইদানীং আর সহ্য হচ্ছে না তার। নির্বোধ লোকের সঙ্গ তিনি অপছন্দ করেন না, কিন্তু সেই নির্বোধ যদি তার প্রাপ্য থেকে তাকে বঞ্চিত করে, তার ওপর চটবার বৈধ কারণ তৈরি হয় বই কি। ফাকমিদুলকে পশ্চাদ্দেশে একটা লাথি মেরে মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দিতে ইচ্ছা করে তার, কিন্তু জীবনের সায়াহ্নে এসে তিনি বুঝতে শিখেছেন, ক্রোধ তার মহত্তম অবস্থানে পৌঁছায় সংবৃত হয়ে। তিনি মনের একটি কুঠুরি খুলে একটা চেরাগ বার করেন, তারপর রাগের দৈত্যটাকে পুরে ফেলেন তার ভেতর। ফাকমিদুলের পশ্চাদ্দেশে কোনো কিছুই এখন করতে যাওয়া সমীচীন হবে না। এখন মিত্রতার সময়। কিন্তু ফাকমিদুল কাজটা কঠিন করে তোলে মুহুর্মুহু! "ঐ যে আরেকটা পাখি! কাকপাখি!" ওমর ফারুকও বিরক্ত হয় ফাকমিদুলের ওপর। বেটা এক বছর মার্কিন দেশে থেকে এসে হিলারি ক্লিনটনের মতো আচরণ করছে। তুই তো ব্যাটা গ্রামের ছেলে, লুঙ্গি পরে গ্রামের স্কুলে যেতি, আর এখন বকপাখি কাকপাখি কপচাচ্ছিস? দুইদিনের বৈরাগী আর কাকে বলে? ড্রাইভার বদি হাসে মিটিমিটি। ওমর ফারুক প্রসঙ্গ ঘোরানোর জন্যে বলে, "ফাকমিদুল ভাই, লেখাটা এনেছেন সাথে করে?" ফাকমিদুল এবার একটু সিরিয়াস হয়, জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে বলে, "আমার কি লেখা বগলতলায় নিয়ে ঘুরতে হবে নাকি? সবকিছু মাথায় আছে। ভুলে যায়েন না, আমি একজন শিক্ষক। প্রতিদিন হাজার হাজার বেয়াদব ছেলেমেয়ের সামনে লেকচার দেই। আপনার মতো হাটেমাঠেঘাটে বক্তৃতা দিয়ে রাজনীতি করে বড় হই নাই ঠিকই, কিন্তু লোকজনের সামনে কথা বলার অভ্যাস আমার আছে।" রমণ সুমহানের মুখে পাতলা একটা হাসি খেলে যায়। লেগে যা নারদ নারদ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বাম স্টান্টবাজ ওমর ফারুকের সাথে সাদা প্যানেলঘনিষ্ঠ ফাকমিদুল হকের মধ্যে কিছু খিটিমিটি তো লাগাই স্বাভাবিক। এলজিইডির এবড়োখেবড়ো রাস্তায় মাইক্রোবাসে ঝাঁকি খেতে খেতে চলার সময়টা তাহলে নেহায়েত নিরস কাটবে না। ইদ্রিস ফকির বদিকে পথ দেখায়। "হ সামনে নিয়ে রাহেন। পরে আর যাবেনানে গাড়ি। রাস্তা নাই। হাইটে যাতি হবেনে।" ফাকমিদুল উৎকণ্ঠিত স্বরে প্রশ্ন করে, "কত দূর?" ইদ্রিস ফকির ঠাণ্ডা হাসি হেসে বলে, "বেশি দূর না স্যার। দশ পুনারো মিনিট হাটতি হবে, তারপরে পৌছয় যাবেনেন। গরিব মানুষ তো। সরকারের রাস্তা কি গরিব মানষির বাড়ির ধার দিয়ে যায়?" রমণ সুমহান একটা চাদর জড়িয়ে নেন গায়ে। "সবকিছু ঠিক আছে না ফকির সাহেব?" ইদ্রিস ফকির হাসে মিটিমিটি। "সব কি আর ঠিক থাহে স্যার? তাগো মাইয়ে মইরে গেছে। দ্যাহেন বুঝয় শুনয় ...।" ওমর ফারুকের কানে যায় না সব কথা। সে একটু অস্থির হয়ে ভাবে টাকার কথা। তাদের প্রত্যেকে দেড় লাখ করে পাবে কাজটা উদ্ধার হলে। একটা নতুন ল্যাপটপ কিনতে হবে তাকে, সেটা এই খ্যাপের টাকা থেকেই কেনা যাবে তাহলে। পুরোনো ল্যাপটপটার ব্যাটারি খুব সমস্যা করছে। জরুরি সব লেখার ফাঁকে ব্যাটারি ডুকরে উঠে কাঁদতে থাকে। খ্যাপটা যোগাড় করে এনেছেন রমণ সুমহানই। তিনি পাকা লোক, জহুরির চোখ, তাছাড়া কড়াইল বস্তিতে গবেষণার কাজে সময় কাটিয়েছেন বিস্তর। গণ্ডগোল কীভাবে লাগে, কীভাবে এগোয়, আর কীভাবে নিরসন হয়, সবই তাঁর নখদর্পণে। আর শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা গ্রামে এসব গণ্ডগোল কড়াইল বস্তির তুলনায় শতগুণে নিরীহ, বিশেষ করে ভিক্টিম যেখানে দরিদ্র ভূমিহীন। স্থানীয় প্রতিনিধিই ইদ্রিস ফকিরকে ডেকে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলো। ইদ্রিস ফকিরও বাতাসে বড় হয়নি, অনেক লোক চরিয়েই তবে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হয়েছে সে। রমণ সুমহানের চোখ দেখেই বাকিটা পড়ে নিয়েছে সে। ধর্ষক মাহবুব পলাতক, কিন্তু তার আত্মীয়স্বজনেরা তো আছে আশেপাশেই। তারা যথেষ্ট বিত্তশালীও। ধানী জমি আছে প্রচুর, আর ছেলের জান বাঁচানো নিয়ে কথা, দরকার হলে তারা কিছু ধানী জমি বন্ধকও রাখবে। এক লক্ষ করে তিনজনকে তিন লক্ষ আর স্থানীয় প্রতিনিধিকে পঞ্চাশ হাজার, মোট সাড়ে তিন লাখের প্রস্তাব দিয়েছিলো ইদ্রিস। দরদাম করাটা সংস্কৃতিরই অংশ, তাই রমণ সুমহান তাকে মিষ্টি হেসে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সাত লাখ টাকা দিয়ে মিটমাটের প্রস্তাবটা যে ইদ্রিস হেনার বড় ভাইকে দিয়েছিলো, সে সম্পর্কে তাঁরা অবগত আছেন। এরপর আর ঝামেলা করেনি ইদ্রিস, মোট সাড়ে পাঁচ লক্ষের চুক্তি হয়েছে। স্থানীয় প্রতিনিধি এক লক্ষ পেলেই খুশি। মাঘ মাসের শেষে এসে শহরে মরে যায় শীত, কিন্তু চামটা গ্রামে তার পাট্টা পতপত করে উড়ছে। গায়ে ভালোমতো চাদর জড়িয়ে নেন রমণ সুমহান। হামবাগ ওমর ফারুক পরে আছে মোটা ফ্লিসের জ্যাকেট, ফাকমিদুল স্যুট পরার সুযোগ পেয়ে সেটা আর ফসকায়নি। রমণ সুমহান মনে মনে দাঁত বার করে হাসেন। এদের কোনো ধারণাই নেই নিম্নবর্গীয়পনা সম্পর্কে। যে আলোচনা হতে যাচ্ছে সামনে, সে আলোচনায় এরা ফ্লোরই পাবে না এই শহুরে জামাকাপড় পরে। তার মতো চাদর গায়ে ছোটোখাটো মানুষের কথাই শুনবে দরবেশ খাঁ। ঐ ফ্লিসের জ্যাকেট আর উলি কটনের স্যুট অবশ্য কাজে আসবে, একটা অচেনা আবহাওয়া তৈরি করতে। সেটারও দরকার আছে। কিন্তু মঞ্চে সেগুলো নেহায়েতই কাটা সৈনিক। রমণ সুমহান ইদ্রিস ফকিরের সাথে নিচু গলায় কথা বলতে বলতে হাঁটতে থাকেন, পেছনে বকের মতো পা ফেলতে ফেলতে আসে ফাকমিদুল আর ওমর ফারুক। "আগে কখনও এসেছেন শরিয়তপুর?" ওমর ফারুক জানতে চায়। ফাকমিদুল গোমড়া মুখে বলে, "না। শরিয়তপুর আসবো কেন? কী আছে এখানে?" ওমর ফারুক চুপ করে যায়। লোকটার সঙ্গে স্বাভাবিক আলাপচারিতা চালিয়ে যাওয়াই দায় হয়েছে। ব্লগে এক পশলা চোদা খেয়ে সেইরকম ক্ষেপে আছে ব্যাটা, যাকে পায় তার ওপরই ঝাল ঝাড়ে। মনে মনে হাসে ওমর ফারুক। লবিইস্ট টিচারগুলার সমস্যা সম্পর্কে সে পূর্ণমাত্রায় ওয়াকিবহাল। এরা জানে এদের দৌড় সীমিত। শিক্ষার পরিধি আর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এরা ভেড়ার চামড়া খুলে নেকড়ের দাঁত বের করে খিঁচাতে থাকে। ওমর ফারুক মুখে বলে, "কিছু নাই। এমনিই জিজ্ঞেস করা। আপনি কথা বলতে না চাইলে ঠিকাছে।" এবার ফাকমিদুল একটু নরম হয়, সে গোঁ গোঁ করে বলে, "না আমার এদিকটায় আসা হয় নাই। আমি আসলে অ্যাকাডেমিক লোক ছিলাম বরাবরই। ঘোরাঘুরি আমার তেমন পোষায় না। আমি স্কলার মানুষ, জ্ঞানের সৈকতে নুড়ি কুড়াই, বই পড়ি, ব্লগ লিখি, ব্লগ ইস্টাডি করি ... আমার কি মাদারিপুর শরিয়তপুরে ঘোরার টাইম আছে?" ওমর ফারুক কিছু বলে না, সে নিজেও আগে শরিয়তপুর আসেনি কখনও। পদ্মার নিচে তার আসার প্রয়োজনও পড়েনি কখনও। ফাকমিদুল বলে, "আচ্ছা, অনেক কিছু বলতে হবে নাকি? অল্প কথায় কাজ সারা যায় না?" ওমর ফারুক বলে, "দ্যাখেন, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। অল্প কথায় কাজ হলে আর বেশি কথা বলতে হবে না।" ফাকমিদুল একটু চুপ করে থেকে বলে, "না ... মানে, পত্রিকায় লেখার তো ধরেন একটা মাপ আছে। এক হাজার শব্দ, দেড় হাজার শব্দ ... তো সেইজন্য ভাবছিলাম আর কি।" ওমর ফারুক চেষ্টা করেও গলার স্বর থেকে কৌতুক মুছতে পারে না, "এটা তো আর শব্দ ধরে বিল করছেন না। ফ্ল্যাট রেট।" ফাকমিদুল বিড়বিড় করে কী যেন বলতে থাকে। রমণ সুমহান ইচ্ছা করেই এ দু'জন থেকে একটু দূরে হাঁটছেন। ওমর ফারুক ছেলেটা এর আগে একবার সামান্য বেয়াদবি করেছিলো তার সাথে, নিশ্চিন্দিপুরকে পচিয়ে দৈনিক কচুবনে পাঠানো একটা লেখা এক দিন ধরে রেখেছিলো সে। এরপর শাহজাদ সরীসৃপ ভাইকে বিচার দিতে হয়েছিলো। শাহজাদ সরীসৃপ ভাইয়ের ঝাড়ি খেয়ে তারপর লেখাটা ঢোকায় ওমর ফারুক। এই বেয়াদবিটা পছন্দ হয়নি তার। সব বেটাই নিজের গণ্ডির ভেতরে ক্ষমতা দেখানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। আর ফাকমিদুলের ওপর তার ক্ষোভের কারণটা অন্য। শাহজাদ সরীসৃপ ভাইয়ের সাথে ইদানীং সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না, লোকটা কীভাবে যেন বুঝে ফেলেছে, ফেসবুকে নকল নামে অ্যাকাউন্ট করে রমণ সুমহানই শাহজাদ সরীসৃপের কবিতার কঠোর সব পোঁদপোড়ানো সমালোচনা করে যাচ্ছিলেন। রমণ সুমহান এসব ব্যাপারে যদিও খুব সাবধান থাকেন, কিন্তু কোথাও একটা কিছু গড়বড় হয়েছে নিশ্চয়ই। সেই থেকে দৈনিক কচুবন থেকে তার কাছে আর তেমন একটা লেখা চাওয়া হয় না ইদানীং। ফেসবুকে পল্লব মোহাকে টোকা দিয়েছিলেন তিনি, সেও আবোলতাবোল কথা বলে কেটে পড়েছে। অথচ তিনি জানেন, ইসলামাবাদ ব্লগে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে পল্লব মোহাই মেহেরযৌবন সিনেমার কেসটায় ফাকমিদুলের কাছ থেকে লেখা চেয়ে নিয়েছে। পল্লব মোহার উচিত হয়নি এভাবে তাকে টপকে ফাকমিদুলের কাছে যাওয়ার। বিশেষ করে পল্লব যখন জানে, তিনি সিনেমালোচনা নিয়ে বেশ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার পথে হাঁটছিলেন। নতুন কিছু কথা টুকে রেখেছেন তিনি ৎসিগমুন্ট বোমান আর জ্যাঁ বদ্রিয়ার লেখা থেকে, সেগুলো চমৎকার ফিট করে যেতো মেহেরযৌবনের সাথে। ডিরেক্টর মেয়েটা বেশ মোটা টাকা খরচ করছে বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে পত্রিকা আর টিভিতে সমর্থন আদায়ের জন্য, আর তারও কিছু টাকা দরকার ছিলো এই মুহূর্তে। পল্লব মোহাকে তিনি চটাতে চান না, বিপদে আপদে লোকটা ফিউশন চৌধুরী নিকে ভালোই সাপোর্ট দেয় তাকে, এই খ্যাপ ফসকানোর কারণে তিনি ফাকমিদুলের ওপর তাই যথার্থ ও বিশুদ্ধভাবে চটে আছেন। হাঁটতে হাঁটতে চারজনের ছোট্টো দলটা চলে আসে দরবেশ খাঁর কুঁড়ের কাছে। একেবারে হতদরিদ্র লোকের ভিটা নয়, কিন্তু দৈন্যের ছাপ সুস্পষ্ট। একটা হালকা কান্নার সুর ভেসে আসছে দূর থেকে, বাতাসে আগরবাতির বাসি ঘ্রাণ। শয়তানও বুঝবে, কেউ মারা গেছে এ বাড়িতে। হেনা নামের মেয়েটির ভাগ্য সর্বার্থেই খারাপ। প্রতিবেশী মাহবুব দীর্ঘ সময় ধরেই নিশ্চয়ই উত্ত্যক্ত করে আসছিলো মেয়েটিকে, সেদিন রাতে সে আর তর সহ্য করতে পারেনি। হেনা কেন বের হয়েছিলো রাতে বাড়ি থেকে? প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নিশ্চয়ই। সালিশে যদিও মাতবররা বলেছে অন্য কথা। কোনো ধর্মভীরু বালেগ মেয়ে কেন যাবে এত রাতে মাহবুবের নাগালের ভেতরে? তার দিলে ময়লা ছিলো। মাহবুবের গামছাটার মতোই ময়লা, যেটা দিয়ে সে হেনার হাত আর মুখ বেঁধে তাকে ধর্ষণ করেছিলো। রমণ সুমহানের মাথাটা একটু ঝিমঝিম করে ওঠে দৃশ্যটা কল্পনা করতে গিয়ে। একটা গল্প কি হয় না এ নিয়ে? পরিত্যক্ত একটা ঘরে এই বিপন্না কিশোরীকে বেঁধে প্রবল ধর্ষণে লিপ্ত এক কাপুরুষ। মেয়েটার মুখের বাঁধন হঠাৎ ছুটে গেলো, সে সারা শরীরের শক্তি ফুসফুসে সঞ্চয় করে প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠলো, "বাঁচান! আব্বা গো, বাঁচান!" মাহবুবের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কী হবে? সে মেয়েটার ভেতর থেকে নিজেকে বের করে আনবে? নাকি গলা টিপে ধরবে হেনার? নাকি আবার গামছা দিয়ে মুখটা ভালোমতো বাঁধার চেষ্টা করবে? কিন্তু হেনা ততক্ষণে এই পশুর হাত থেকে রক্ষার একমাত্র অস্ত্রটি আঁকড়ে ধরেছে, সে তীব্র, তীক্ষ্ণ, অভ্রভেদী আর্তনাদে চামটা গ্রামকে জাগিয়ে তুলেছে, "বাঁচান! আল্লার দোহাই লাগে, বাঁচান!" রমণ সুমহান কল্পনায় দেখতে পান নিদ্রিত ভূমিহীন ক্ষেতমজুর দরবেশকে। দরবেশের ঘুমের প্রলেপ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসতে শুরু করে, স্বপ্ন থেকে তন্দ্রায় নেমে সে শোনে পরিচিত কণ্ঠের আর্তনাদ। পাশের ঘরে খচমচ করে শব্দ হয়, তার ছেলে ইকবাল জেগে উঠে বলছে, হ্যানায় চিল্লাইতেছে না? অ মা, হ্যানায় চিল্লাইতেছে তো? হ্যানায় কই? এরপর আরো কয়েক মিনিট লাগে তাদের লাঠি হাতে বের হতে। ওদিকে মাহবুব তার শিশ্নের যাবতীয় রক্ত হারিয়ে ন্যুব্জ, সে দ্রুত উঠে লুঙ্গি ঠিক করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। কিন্তু মাহবুবের খরভাষ স্ত্রী শিল্পীও ঘুম থেকে উঠে গেছে, সে উঠানে বেরিয়ে এসেছে একটা দা হাতে। মাহবুবের কলেজপড়ুয়া ছোটো ভাই নিপু বুঝতে পারে ঘটনা কী হয়েছে, সে ঘরে ঢুকে আলুথালু হেনার গালে প্রকাণ্ড এক চড় কষায়। হেনা তখন ছেঁড়া সালোয়ার কোমরে জড়ো করে বিছানা ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তার ঊরুমূলে ছোপ ছোপ রক্ত, নিপুর চড় খেয়ে সে পড়ে যায়। তার কণ্ঠ ছিঁড়ে আরেকটা চিৎকার বেরিয়ে আসে, "আব্বা! আব্বা গো!" এরপর কী হয়? দরবেশ আর ইকবাল কি লাঠি আর দা হাতে ঢুকে পড়ে মাহবুবদের ভিটায়? তারা কি দেখতে পায়, তাদের কন্যা ও বোন কীভাবে একটি কাপড়ের স্তুপের মতো পড়ে আছে ঐ অন্ধকার ঘরের মেঝেতে, তাকে লাথি মারছে শিল্পী, হিসহিস করে বলছে, হ্যাটামারানি খানকি, এই আছেলে তোর মনে? বাজারে গিয়া ঘর নিতে পারিস না? রমণ সুমহান প্রবল উত্থান টের পান নিজের অন্দরে। গল্প লেখা যায় হেনাকে নিয়ে। শক্ত একটা গল্প। ৎসিগমুন্ট বোমানের তরল ভয়ের তত্ত্বটা ওখানে ফিট করে দেয়া যাবে অনায়াসে। এটা শুধু এক ধর্ষণের গল্পই নয়, বরং ধর্ষণ পরবর্তী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের গল্পও বটে। ধর্ষণ মানেই সালিশ, পাংশু মুখে বসে আছে হেনা, তার সামনে প্রবল সব সমাজপতি, মাহবুব নিখোঁজ। ঐ সালিশের অংশটুকু তিনি পুরো মুনশিয়ানায় ফুটিয়ে তুলবেন। দেখাবেন ধর্ষণ কী করে একটি ব্যক্তিক অপরাধের পাশাপাশি একটি সামাজিক সমাভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি মানুষের ভূমিকা আছে মাহবুব আর হেনার মধ্যে ঘটে যাওয়া যৌন সংস্পর্শের সাথে। এই ভূমিকাগুলো আসে না গল্পে। শুধু ধর্ষক আর ধর্ষিতার চোখ দিয়ে ধর্ষণকে দেখার সময় পার করে এসেছে পৃথিবী। একটা গল্প হতেই পারে হেনাকে নিয়ে। দোররার ঘায়ে হেনার অসুস্থ হয়ে পড়া, তারপর তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়েও সমাজপতিদের চাপে আবার ফিরিয়ে আনা, তারপর অবস্থার অবনতি হলে আবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, এবং সেখানে হেনার মৃত্যু নিয়ে তিনি আপাতত কিছু লিখবেন না। টু মাচ মেলোড্রামা রুইনস আ গুড প্লট। মেলোড্রামা ছেঁটে বাকিটুকুকে তিনি কয়েকমাস সময় নিয়ে সাজাবেন। ধর্ষণ পরবর্তী মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ড এই গল্পে একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। তাছাড়া ওটা ৎসিগমুন্ট বোমানের তত্ত্বের সাথে যায়ও না। ভালো একটা থিওরি শুধু শুধু ফ্যাক্টের মুখে ফেলে পচিয়ে কী লাভ? ইদ্রিস ফকির হাঁক দেয়, "ইকবাল, আছো নেহি ঘরে?" দরজা খোলার পর ভেতরে একটা মলিন কুপির আলো উঠানে এসে পড়ে কাঁপা পায়ে, লম্বাচওড়া এক যুবকের দেহরেখা সে আলোর পথ আটকে দাঁড়ায়। "ইদ্রিস কাকা?" ইদ্রিস ফকির সোৎসাহে বলেন, "এনারা সাম্বাদিক। ঢাকা থিকা আয়েছেন। তগো লগে কথা বলবেন।" ইকবাল সতর্কভাবে বলে, "আব্বারে ডাকপো?" ইদ্রিস ফকির সস্নেহে হাসে টেনে টেনে। "আবার দরবেশ ভাইরে টানবি ক্যা এর মধ্যি? তুই ত বাড়ির বড় ছাওয়াল, তোর সাথে কথা কলিই হবেনে।" ইকবাল মলিন গলায় বলে, "সালামালিকুম।" ফাকমিদুল এগিয়ে এসে কাশে। "ওয়ালাইকুম সালাম। আমি ফাকমিদুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তুমি নিশ্চয়ই হেনার ভাই? ... নাইস টু মিট ইউ। কীসে পড় তুমি?" ইকবাল সন্দিগ্ধ গলায় বলে, "আমি পড়ি না।" ফাকমিদুল বলে, "দ্যাটস ব্যাড। আচ্ছা, তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই আমরা। তুমি নিশ্চয়ই জানো, অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন দোহে তৃণসম দহে? এখন দ্যাখো, আমরা এই ঘৃণার রাজনীতি আর কতদিন করে যাবো?" ইকবাল বলে, "আমরা তো ইদ্রিস কাকারে কইয়ে দিছি বিচার চাই। টাহাপয়সা দিয়ে চুপ করবা ক্যা কাকা? আমার বুনের জানের এট্টা দাম নাই?" ফাকমিদুল একটা হাত উঁচিয়ে ধরেন, "এগজ্যাক্টলি! কিন্তু দাম দিয়ে কি আর জান পাওয়া যায়? দ্যাখো, যা হয়ে গেছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক, কিন্তু তোমাকে সামনে আগাতে হবে।" ওমর ফারুক বলে, "দ্যাখো ইকবাল, আমরা এই খবরটা শুনে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছি। আমি জানি, তোমার বোন আর মাহবুবের মধ্যে ভালোবাসাটা অপরাধী ...।" ইকবাল গর্জে ওঠে, "কিসির ভালবাসা? ওইথি জোর কইরে আমার বুনের ইজ্জত কাড়ছে, তার শ্লেলতাহানি করছে, তারপর সগগলে মিলে তারে মাইরে খুন করছে। হাসপাতালে নিয়ে গেছেলাম, ওরা কইছে খবরদার নিবি না, ফিরেইয়ে আন!" তার গলা বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে। রমণ সুমহান খুব সতর্ক চোখে দেখেন, ইকবালের হাতের নাগালে কোনো লাঠি কিংবা দা আছে কি না। ছোটো দা ছুঁড়ে মারলে খুব বিপজ্জনক অস্ত্র হয়। ওমর ফারুক বলে, "না ইকবাল, তুমি ভুল বুঝছো। মাহবুব আর হেনার মধ্যে ভালোবাসা হতেই পারে। এখন তুমি শোকাতপ্ত, তাই বুঝতে পারচো না, ধর্ষক আর ধর্ষিতা, নিহত ও হত্যাকারী কীভাবে পরস্পরকে ভালবাসতে পারে? এর উত্তর আছে আমার কাছে। প্রথমত, উভয়ের মন থেকে ঘটনাটির স্মৃতি মুছে ফেলে যুদ্ধ ও সংঘাতের বাইরের জমিনে তাদের নিয়ে যেতে হবে। হেনা তো মারাই গেল, এখন তার অভিজ্ঞতাটা এবং ইতিহাসটাকেও যদি নাই করে দিতো পারো, তাহলে সেই শূন্য সময়, সেই ফাঁকা স্পেসে তাদের মিলবার একটা সুযোগ থাকলেও থাকতে পারে।" ইকবাল বিভ্রান্ত কণ্ঠে বলে, "আফনি কি কতিছেন বুঝতিছি ন্যা। কিসির ভালবাসা? কি কতিছেন আফনি এগলা?" ওমর ফারুক থামে না, সে হাত তোলে ট্রাফিকের পুলিশের মতো। তার কপালে জ্বলে ওঠা ট্রাফিকের লালবাতি দেখে ইকবাল থেমে যায়। ওমর ফারুক বলে চলে, "এই ভালবাসার সাক্ষী হতে হলে দর্শকদেরও সব ভুলে যেতে হয়, চলে যেতে হয় ইতিহাস, ভূমি, মানুষ আর স্মৃতির বাইরের সেই শূন্যস্থানে। কিন্তু স্মৃতি, যন্ত্রণা, ভয় ও ঘৃণা দ্বারা ভারাক্রান্ত একটি গ্রামে কীভাবে তা সম্ভব? সম্ভব নয় বলেই ভালবাসাটা হয় অপরাধী এবং পাত্রপাত্রীদের হতে হয় অভিযুক্ত। তারা হারিয়ে যায় এবং প্রত্যাখ্যাত হয়। যেমন হয়েছে মাহবুব আর হেনা। তাদের নিষিদ্ধ প্রেম হওয়ার আরেকটি পথ হলো, সময়কে উল্টোদিকে প্রবাহিত করে খোদ নির্যাতনের ঘটনাটিকে অতীতেই রদ করা, ঘটতে না দেওয়া। কিন্তু এ দুটোর কোনোটাই সম্ভব নয়। সম্ভব একমাত্র ভবিষ্যতে, যখন উভয় পক্ষ একটা রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে নতুনভাবে মানবিক বন্ধন নির্মাণ করবে, সৃষ্টি করবে নতুন ইতিহাস এবং নতুন বাস্তবতা। তাই ইকবাল, তোমাকেই এখন এগিয়ে আসতে হবে রিকনসিলিয়েশনের জন্য। ঘৃণা নয়, পরস্পর সমঝোতার ভিত্তিতে হাঁটতে হবে নতুন পথে।" ইকবাল চিৎকার করে ওঠে, "আফনি এইগুলি কী কতিছেন?" ফাকমিদুল এগিয়ে আসে। "থামেন ফারুক, আপনি বেশি প্যাচান সব সময়। ... ইকবাল, শোনো। তুমি দুনিয়ার অনেক কিছুই বোঝো না। আমরা ঢাকায় থাকি, গবেষণা করি, অনেক কিছু জানি। যা বলি মন দিয়ে শুনে যাও শুধু। তোমার প্রতিক্রিয়ার যে গড় বৈশিষ্ট্য, তাতে মূলত আত্মীয়তার চেতনার বিপরীতে উল্লম্ব অবস্থানে রেখে ঘটনাটি বিচার করা হয়েছে। আমি হেনার মৃত্যুর ঘটনাটি বিচার করতে চাই বাংলাদেশের অন্যান্য সামাজিক সঙ্কটেরসঙ্গে আনুভূমিকভাবে। তার সঙ্গে মেলাতে চাই জাতি-রাষ্ট্র ধারণার। জাতি-রাষ্ট্র যদি বেনেডিক্ট এন্ডারসনের ভাষায় একটি ইমাজিনড কমিউনিটি অথবা গায়ত্রী স্পিভাকের ভাষায় আর্টিফিশিয়াল কনস্ট্রাক্ট হয়ে থাকে, তবে তার কল্পিত ঐক্য ও সংহতির জন্য লাগাতারভাবে একটি আদর্শ জাতীয়তার অবয়ব বা বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলতে হয় এবং স্টুয়ার্ট হলের মতে কিছু রেপ্রিজেন্টেশন-পদ্ধতির মাধ্যমে এই নির্মাণের কাজটি করতে হয়, সেই অবয়ব বা বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার জন্যও ...।" এইবার দরবেশ খাঁ বেরিয়ে আসে ঘরের স্বল্পালোকিত আয়তন ছেড়ে। ছেলের মতো সেও দীর্ঘাঙ্গ, কিন্তু কৃশ। ফাকমিদুল দুই পা পিছিয়ে যায়। ভাঙা গলায় দরবেশ খাঁ বলে, "আমরা কিছু চাই ন্যা। আমার মাইয়েডারে মাইরে ফেলাইছে, তার বিচার চাতিছি খালি। এট্টা কচি মাইয়ে, পয়সা ছেলো না ভাল খাওয়াতি পরাতি পারতাম না, ইস্কুলে দেছেলাম কুলোতি পারলাম না। কিন্তু সে তো দোষ করে নাই কোনো। তারে এম্বালা বেইজ্জত কইরে সগগলের সামনে বিচার কইরে আবার মাটিতি ফেলাইয়ে দোররা মারলো। আফনারা বড় শহরের লোক, বিচার করেন।" রমণ সুমহান এবার একটা সিগারেট ধরান। ইকবাল নিরুপায় মথের মতো ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সেই সিগারেটের আগুনের দিকে। রমণ সুমহান বলেন, "আপনার আরেকটা মাইয়া আছে না? তার তো একটা গতি করা লাগবে, নাকি?" দরবেশ খাঁ কাঁপা গলায় বলেন, "হ আমার ছোড মাইয়েডা ... সারাদিন খায় নাই কিছু, বুবুর নেইগে কানতি কানতি শ্যাষ মাইয়েডা ...!" রমণ সুমহান কথা বাড়ান না। তিনি কড়াইল বস্তিতে গবেষণার সময় প্রচুর ঝগড়া কাছ থেকে দেখেছেন, মিটমাটের ব্যাপারে তিনি ভালো বোঝেন, বিশেষ করে কিছু ঝগড়া যেখানে তিনি নিজেই লাগিয়ে দিয়েছিলেন গবেষণার অংশ হিসেবে। তিনি সংক্ষেপে বলেন, "আপনার কপাল খারাপ দরবেশ ভাই। আপনার মেয়ের নামে অনেক কথা চইলা গেছে বিভিন্ন পেপারে। তারা পয়সা খাইয়া কী না কী লেখে কোনো ঠিক নাই। আমরা আপনার দুঃখ বুঝি। আমরা আপনারে অনুরোধ করতেছি, মামলা মকদ্দমায় যাইয়েন না। মাহবুব তো আর দোররা মারে নাই হেনারে। মারছে? সে একটা বলদ, ভুল কইরা জ্বিনের আছরে একটা কাম কইরা ফালাইছে। সে তো আপনার আত্মীয়ই হয় একরকম। তো ঘরে ঘরে এইসব মকদ্দমা কইরা কি টিকতে পারবেন? করেন তো খ্যাতের বদলির কাম। এদের সাথে বিবাদ কইরা পারবেন না। তারচেয়ে মাহবুব গ্রামে ফিরলে জুতা মাইরেন। যা-ই করেন, মাইয়া ফিরত পাইবেন না। ছোটো মাইয়ার পড়াশোনা বিয়াশাদির কিছু খরচাপাতি দিবে তারা, ভালমতো ব্যবস্থা দেখেন। ফারুক, ফাকমিদুল, চলেন আমরা যাই। আসি, স্লামালিকুম।" ফাকমিদুল বলে, "এই প্রতিশোধ অথবা প্রতিরোধের ডাইকোটমি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে, ধূসর জায়গাগুলোকে বিবেচনায় আনতে হবে ...।" রমণ সুমহান হ্যাঁচকা টান দেন তার হাত ধরে, "চলেন তো!" ইদ্রিস ফকির মিহি গলায় আরো কয়েকটা বাক্য বিনিময় করে দরবেশের সাথে। রমণ সুমহান জোরে পা চালান। ওমর ফারুক চুপ করে থাকে, ফাকমিদুল বক বক করে যায়, "এই ব্যাপারটা বুঝতে হবে, এই ডিসকার্সিভ আলোচনাটা হওয়া জরুরি। ধর্ষণ হলেই লোকজন একেবারে পাগল হয়ে যায়। জাতীয়তাবাদী জঙ্গি দিয়ে দেশটা ছেয়ে গেছে, কেউ একটু ডিকনস্ট্রাক্ট করতে চায় না ধর্ষণের টেক্সটটাকে ...।" ওমর ফারুক বলে, "ফাকমিদুল ভাই, কালকে ডিসির অফিসের সামনে বক্তৃতা দিতে হবে কিন্তু। দেইখেন, গলায় কাশি যেন বসে না যায়!" ফাকমিদুল চুপ করে যায়। ইদ্রিস ফকির কিছুক্ষণ পর জোর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে এসে ধরে ফেলে তাদের । উৎফুল্ল গলায় বলে, "স্যার আফনারা অনেক কামেল আদমি! কদমবুছিটা কইরে ফেলাবো স্যার?" রমণ সুমহান তরল গলায় বলেন, "সালামি দিমু না কিন্তু! দেড় লাখ পুরাটাই দিতে হইব।" ইদ্রিস ফকির খুশির হাসি হাসে। মাইক্রোবাস নাক ঘুরিয়ে চামটা গ্রাম ছেড়ে চলে যায় অন্য পৃথিবীর দিকে। সেই পৃথিবীতে একটা পাঁচশো সিসি নরটন মোটরসাইকেলের একমাত্র সিলিণ্ডারে কাঁপন তুলে আর্জেন্টিনার আকাশের নিচে ছুটে বেড়ায় হবুডাক্তার এরনেস্তো। আর দৈনিক কচুবনের মাইক্রোবাসে চড়ে প্রাক্তন বাম ওমর ফারুক হিসাব কষে, পরশুদিন তাকে যেতে হবে খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙা উপজেলার পোড়াবাড়ি গ্রামে এক ধর্ষিতা আদিবাসীর ধর্ষকের সাথে রিকনসিলিয়েশনের কাজে।
false
mk
দেলুর ফাঁসি, দেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে___ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাকে সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। বাকি ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সেগুলো থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬, ১৯ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ দেয়া হয়েছে। অন্য ছয়টি অভিযোগে আলাদা করে কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। অন্যদিকে ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সাঈদীকে সেই সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর পরই এ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এই রায় ‘ঐতিহাসিক’। অন্যায় করে যে পার পায় না এ রায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলো। এ রায়ের মাধ্যমে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির কষ্ট দেশ কিছুটা হলেও ভুলতে পারবে, ৩০ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দ-াদেশের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে।এদিকে সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আপীল করব। কারণ উনি (সাঈদী) নির্দোষ। উনার বেকসুর খালাস পাওয়ার কথা ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে মিথ্যা সাক্ষী উপস্থাপন করে এই রায় পেয়েছে। রায় ঘোষণার উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। প্রধান গেট ছাড়ায় মূল ভবনের তিন বার চেকিং করে সাংবাদিক আইনজীবী ও পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়।ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ॥ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে সাংবাদিক, আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সকাল ১১টা ১০ মিনিটের সময় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে এজলাস কক্ষে আনা হয়। ১১টা ১১ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার জন্য চেয়ারম্যানসহ অন্য দু’বিচারপতি আসন গ্রহণ করেন। শুরুতেই চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, এটি ১২০ পৃষ্ঠার রায়। তবে আমরা রায়ের ৫৬ পৃষ্ঠার সারাংশ পড়ব।চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, ‘আমরা রায়ের আগে দুটি কথা বলতে চাই। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিচয় দেয়ার কোন দরকার নেই। ওনার ওয়াজ শোনার জন্য হাজার মানুষ যান। ওনার বর্তমান নাম আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। উনি শুধু প্রখ্যাত মাওলানা নন, উনি দুবারের এমপি। জামায়াতের নায়েবে আমির। কিন্তু আমরা তাঁকে নায়েবে আমির কিংবা সাংসদ হিসেবে বিচার করছি না। আমরা আজ থেকে ৪২ বছর পূর্বে সংঘটিত অপরাধের বিচার করছি। ওই সময় সাঈদী ছিলেন ৩০ বছরের যুবক। তিনি ছিলেন বিবাহিত, এক সন্তানের জনক। পিরোজপুরে সাউদখালীতে বাড়ি। তখন তিনি কোন ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পিরোজপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আলেম পাস। উর্দুতে ভাল কথা বলতে পারতেন। তাই পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে তাঁর ভাল যোগাযোগ তৈরি হয়। আমাদের বিচার করতে হবে, তিনি সে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না। আমরা সেই ৩০ বছরের যুবকের বিচার করছি। বর্তমানের সাঈদীর বিচার করছি না, যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে গ্রামের নিরীহ লোক ও সাধারণ মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৭ জন।রায় পড়া শুরু ॥ সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ের ৫৬ পৃষ্ঠার সারাংশ পড়া শুরু হয় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে। পিনপতন নীরবতার মধ্যে বিচারপতি আনোয়ারুল হক প্রথমে রায় পড়া শুরু করেন। এর পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সর্বশেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে শুরু করেন। শেষ করেন ১টা ৪৫ মিনিটে। সর্বশেষে পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে চেয়ারম্যান সাজা ঘোষণা করেন। ৮ ও ১০ এই দুটি চার্জে সাঈদীকে ফাঁসি দেয়া হয়।চার্জ দুটিতে কী আছে ॥ মামলার রায়ে ৮ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ মে বেলা ৩টায় সাঈদীর নেতৃত্বে তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়তায় সদর থানার চিতলিয়া গ্রামের মানিক পসারীর বাড়িতে হানা দিয়ে তার ভাই মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহিমসহ দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচটি বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সেনা ক্যাম্পে ফেরার পথে সাঈদীর প্ররোচনায় ইব্রাহিমকে হত্যা করে লাশ ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়া হয়। মফিজকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।পরে সাঈদী ও অন্যদের আগুনে পারেরহাট বন্দরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় সাঈদী সরাসরি অপহরণ, খুন, যন্ত্রণাদানের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩(২)(এ) ধারা অনুসারে অপরাধ।অভিযোগ-১০-এ বলা হয়েছে, ২ জুন সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগীরা ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার হানা দিয়ে ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব বাড়ির মালিক হলেন, চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হরেণ ঠাকুর, অনিল ম-ল, বিসা বালি, সুকাবালি, সতিশ বালা প্রমুখ। সাঈদীর ইন্ধনে তার সহযোগীরা বিসা বালিকে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। বেসামরিক মানুষের বসবাসের বাড়িতে আগুন দেয়া নিপীড়নের শামিল। সাঈদী এ ঘটনায় বাড়িঘর পোড়ানো, বিসা বালিকে হত্যার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, যা আইনের ৩(২)(এ) ধারায় অপরাধ।অন্য ৬টিও প্রমাণিত ॥ এ দুটি বাদে আরও ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সেই চার্জগুলো হচ্ছে, ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগ। চেয়ারম্যান রায়ে বলেন, ২টি অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় এসব অপরাধে নতুন সাজা দেয়ার প্রয়োজন নেই।কী আছে ঐ অভিযোগে ॥ অভিযোগ-৬-এ বলা হয়েছে, ৭ মে সাঈদীর নেতৃত্বে একদল শান্তি কমিটির সদস্য পিরোজপুর সদরের পারেরহাটে গিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের ওই এলাকায় স্বাগত জানান। মুকুন্দ লাল সাহার দোকান থেকে বাইশ সের স্বর্ণ ও রৌপ্য লুট করেন সাঈদী।অভিযোগ-৭-এ বলা হয়, সাঈদী তার সশস্ত্র সাঙ্গোপাঙ্গ ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সদর থানার ভাদুরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম সেলিমের বাড়িতে হানা দেন। পরে তিনি তাঁকে আটক করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন, যারা তাঁকে নির্যাতন করে।অভিযোগ-১১ ॥ সাঈদীর নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ইন্দুরকানি থানার টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে পাকিস্তানী সেনাদের নিয়ে যান। সেখানে সাঈদী তার বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে ধরে নির্যাতন করেন।অভিযোগ-১৪ ॥ মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় যায়। মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তখন সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকাররা তাঁকে ধর্ষণ করে।অভিযোগ-১৬ ॥ সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের রাজাকার দল পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোন মহামায়া, অন্ন রানী ও কমলা রানীকে ধরে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।অভিযোগ-১৯ ॥ সাঈদী প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ হিন্দুকে ইসলাম ধর্মে রূপান্তর করে তাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হতো।যেগুলো প্রমাণিত হয়নি ॥ ১২টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে সেই সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়। অভিযোগগুলো হলো, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮ ও ১৯।প্রথম মামলা॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রথম মামলা হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাসল গঠন করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুন তাঁকে ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতে গ্রেফতার করা হয়। শুরু হয় সাঈদীর বিরুদ্ধে বিচার কাজ। অবশেষে ২০১৩ সালের ২৯ জুন উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ (সিএভিতে) রাখেন। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষনা করে।তৃতীয় রায় ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এ ৯টি মামলার মধ্যে এটি তৃতীয় রায়। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদকে মৃত্যুদ- ও কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেন। এখন আরও ৬টি মামলা বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। মামলাগুলো হলো জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আব্দুল আলীম।আমি সন্তুষ্ট ॥ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার প্রসিকিউশনপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন আমরা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগ প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছি। আদালত পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যালোচনা করে এ রায় দিয়েছে। আমরা আটটি অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের ধারণা ছিল, ১৯টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে। তারপরও এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় ঘোষণার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম, প্রধান সমন্বয়ক (এ্যার্টনি জেনারেল পদমর্যাদায়) এম কে রহমান, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মমতাজ উদ্দিন ফকির, চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, প্রসিকিউটর হায়দার আলী, প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম, প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান, প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, প্রসিকিউটর নুর জাহান মুক্তা, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আনোয়ার হোসেনসহ সিনিয়র আইনজীবিগণ। ডিফেন্স পক্ষের সিনিয়র কোন আইনজীবী এজলাস কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। তবে জুনিয়র আইনজীবী সাজ্জাদ আলী চৌধুরীসহ চার জুনিয়র ডিফেন্স আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।এ্যাম্বুলেন্সে সাঈদী ॥ কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ঢকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। আগে দুটি ও পিছনে একটি পুলিশ ভ্যান পাহারা দিয়ে তাঁকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। জামায়াতে ইসলামী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকায় ট্রাইব্যুনালে আরও বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়।চুপ চুপ তুই রাজাকার ॥ রায় ঘোষণার পর ডকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দাঁড়িয়ে যান এবং বলতে থাকেন, ‘আপনারা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে রায় দেননি। আপনারা শাহবাগের কিছুসংখ্যক নাস্তিক ও ব্লগারদের...’ এ সময় এজলাস কক্ষে উপস্থিত অনেকে ‘রাজাকার, রাজাকার, চুপ কর’ বলে তীব্র ধিক্কার দিতে থাকেন। পরে পুলিশ তাঁকে ডক থেকে নামিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যায়।প্রমাণ করতে হবে ॥ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। বাকি ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়াত সেগুলো থেকে তাঁকে খালাস দেয়া হয়েছে। দুটিতে ফাঁসি দেয়া হলেও অন্যগুলোতে কোন সাজা দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় আসামিপক্ষ আপীল করলে যদি ২টি অভিযোগ থেকে খালাস পান সে ক্ষেত্রে তিনি কি মুক্ত হবেন।এ প্রসঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, যেহেতু ২টিতে মৃত্যুদ- দিয়েছেন, অন্য ৬টিতে দোষী সাব্যস্ত হলেও কোন সাজা দেয়া হয়নি। সাঈদীকে মুক্ত হতে হলে ৮টি অভিযোগ থেকেই মুক্ত হতে হবে। যেহেতু ২টিতে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। সে কারণে অন্যগুলোতে কোন সাজা দেয়া হয়নি।অন্যদিকে প্রধান সমন্বয়কারী এমকে রহমান বলেছেন, ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ২টিতে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। ধরে নেয়া যায় অন্য ৬টিতেও মৃত্যুদ- সমান অপরাধ। এগুলো সুপ্রীমকোর্ট ঠিক করবে।
false
rn
বাংলা সাহিত্যে অসাধরন কয়েকটি কবিতা । 'যমুনাবতী' এই কবিতাটি প্রথম কবে পড়েছিলাম তা মনে নেই, তবে কবিতার কথা গুলো মনের সাথে গেঁথে গিয়েছিল। শোষণের বেড়াজালে আবদ্ধ প্রাণের সেই আকুতি ছুঁয়ে গিয়েছিল অবচেতন মনকেও। ২। 'রাত্রি' অমিয় চক্রবর্তীর এই কবিতাটা পড়েননি-এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। অনুভূতিকে নাড়া দেবার মত প্রেমের কবিতা। ৩। 'যাত্রাভঙ্গ' গুনের এই কবিতাটা শুনলে কার সাধ্য যে যাবার পথে পা বাড়ায়! এমন আকুতি কি এই কবিতা ছাড়া আর কিছুতে মানায়? অধিকারের এই পিছুডাক!৪। 'ছুটি' এই কবিতাটি খুব সহজ, অথচ এর আবেগটা লাগাম ছাড়া। সুমনের "যাবো অচেনায়" এলবামে কিছু আবেগী কবিতা আছে-যাকে নন্দনতাত্ত্বিকরা কবিতা বলতে গড়িমসি করেন, তাতে কি? হৃদয়স্পর্শী কবিতা বলে কথা! ৫। 'বাঁশি' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাঁশি কবিতাটা যেন লিখার অক্ষর ছেড়ে মগজে ঠাঁই নেয়। হরিপদ কেরানীর একচিলতে থাকার ঘরটা আর তার যাপিত জীবন যেন ছাপোষা জীবনের মুখবন্ধ। ৬। 'কবর' কবিতাটি প্রথম দিন শুনে বিষন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। অপূর্ব কথার গাঁথুনীতে ছোট্ট বধুর আগমন আর চির প্রস্থানের গল্প বলা হয়েছে। ৭। 'অমলকান্তি' অমলকান্তি হতে চাইনি; এমন কথা বলাটা অন্যায় হয়ে যাবে। ছোটবেলায় বরং রোদ্দুর হবার ইচ্ছেটাই আমাকে বেশি টানতো। অসাধারন কবিতা।৮। 'আয়না' এই কবিতাটি পড়ার আগে নিজেকে কবিতা পড়ার জন্য প্রস্তুত করে নেই প্রতিবার। হারানো ছড়ানো পাগলের এই ঝিল্লি বাজনা কতদিন বেজেছে এই মনের মধ্যে! ৯। 'অনির্বাণ' অনির্বাণের কথা আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই! সেই যে, চুরি যাওয়া আলোয় যে দেখা দিয়েছিলো দ্বিতীয়বারের মত! সেই গান থেকে ছেঁকে নেয়া কবিতাটা কি অসাধারণ! ১০। 'সেই গল্পটা' পাহাড় আর মেঘের ভালোবাসার গল্পটা শ্বাশ্বত। যে গল্পটা আজো চলছে অবিরত। সেই পাহাড়...সেই মেঘ...আড়িপাতা ঝরনা...! পূর্ণেন্দু পত্রী একজন অসাধারন কবি। ১১। 'মেজাজ' সুভাষ মূখোপাধ্যায়। এই কবিতাটি একটি রূপক কবিতা। শাসকের স্বেচ্ছাচারিতা আর শাসিতের মৌন প্রতিবাদ...শেষে কিন্তু জিতলো শাসিতই। কালো ছেলের নাম রাখা হবে আফ্রিকা। ১২। 'পরিচয়' রবিঠাকুরের পরিচয় নিয়ে অনেক কবিতাই আছে। তার মধ্যে এই কবিতাটিই সম্ভবত সবচে বেশি মানুষের প্রিয়'র তালিকায় আছে। আর এই কবিতার সাথে আমার আছে নাড়ি ছেঁড়া স্মৃতি। কতশত নির্ঘুম রাত আউড়ে কাটিয়েছি- 'আমি তোমাদেরই লোক'। ১৩। 'চিঠি দিও' মহাদেব সাহা। শেষ কবে চিঠি পেয়েছেন কিংবা লিখেছেন? মনে আছে কি? এমন কি হতে পারেনা যে কবিতার এই কথাগুলোর খুব কাছাকাছি সময়ে চলে এসেছি আমরা? ১৪। 'যাতায়াত' হেলাল হাফিজের এই কবিতাটা কেমন যেন বিষন্ন করে দেয়! মানুষের মনের দীর্ঘ আকুতি যেন ফুটে আছে প্রতিটি পংক্তি ধরে। "শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক!"
false
mk
যুগান্তর ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শিরোনাম_ বিশৃংখলা জনপ্রশাসন পদ-পদোন্নতির বিশৃংখলার জটে জনপ্রশাসন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে শীর্ষ প্রশাসনে শত শত কর্মকর্তা বছরের পর বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় বসে আছেন । আবার পদ ছাড়াই পদোন্নতি দেয়ায় সংকটের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে । উপরন্তু সরকার পরিবর্তন হলেও কর্মকর্তাদের মাথা থেকে ওএসডি কিংবা শাস্তিমূলক বদলি আতংক দূর করা যায়নি । নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরও রাজনৈতিক অভিযোগে দক্ষ ও অধিকতর যোগ্য কর্মকর্তাদের অনেকে পদোন্নতি পাননি । ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা ওএসডি ও ডাম্পিং পোষ্টিংয়ের শিকার হয়েছেন । প্রশাসনে ফের রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি আর নানারকম স্বার্থের দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ায় বেশিরভাগ মানুষের প্রত্যাশার প্রশাসন গড়ে উঠতে পারছে না । এ সরকারের ওএসডি রদবদল গত ৭ জানুয়ারি নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হলেও ১০ জানুয়ারি থেকে প্রশাসনিক রদবদল শুরু হয় । এ হিসেবে গত এক মাসে সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারি কমিশনার, ইউএনও, এডিসি, উপ-সচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সবিচব পদে প্রায় ৩শ কর্মকর্তার রদবদল করা হয়েছে । রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে (অলিখিত) ওএসডি হয়েছে ২৩ জন । এদের মধ্যে সচিব ৭ জন, অতিরিক্ত সচিব ৪ জন, যুগ্ম সচিব ৭ জন, উপ-সচিব ২ জন এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ১ জন । ১৯৮৬ সালে এক আদেশে পাঁচ কারণে প্রশাসনে ওএসডি করার বিধান চালু হলেও মূলত এর অপব্যবহার হয়ে আসছে। শেষোক্ত কারণ হিসেবে অনিবার্য কারণবশত ওএসডি করা হচ্ছে । এছাড়া সচিব পদে ৭ জন এবং অতিরিক্ত সচিব পদে ৭২ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে । পদোন্নতির বঞ্চনার সাতকাহনপ্রতিটি রাজনৈতিক সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কর্মকর্তা চিহ্নিত করে বহু কর্মকর্তাকে প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে । জোট সরকারের সময় তা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় । কিন্তু বর্তমান সরকারের কাছে কেউ এমন আচরণ প্রত্যাশা না করলেও ঘুরেফিরে সেই শোধ প্রতিশোধের আচরণ ফিরে এসেছে । প্রশাসন দলীয় করার ক্ষেত্রে কারও কোন প্রকার ভূমিকা থাকলেও কিংবা কেউ শৃংখলা পরিপন্থি কোন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে । কিন্তু তা না করে সবাই পুরনো পথ বেছে নিচ্ছে । পছন্দ না হলেও পদোন্নতি হবে না, এমনকি ওএসডি করে ফেলে রাখা হবে । বর্তমান সরকারের বয়স বেশিদিন না হলেও ইতিমধ্যে এমন ঘটনা ঘটেছে । বেশ কয়েকজন অধিকতর যোগ্য কর্মকর্তাকে সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়নি । আবার যারা দক্ষতা প্রমাণ করে ভালো পদে কর্মরত ছিলেন তাদের এদিকে বিভাগীয় মামলাসহ নানা কারণে বহু কর্মকর্তা পদোন্নতি না পেয়ে লেফট আউট খাতায় নাম লিখিয়েছেন । পরে তাদের অনেকে দায়মুক্ত হয়ে যোগ্যতা অর্জন করলের পদোন্নতি পাচ্ছেন না । পদোন্নতি বঞ্চিত সিনিয়র ব্যাচের এসব কর্মকর্তার মধ্যে এখনও সিনিয়র সহকারি সচিব আছেন ৮১ ব্যাচের ১ জন, ৮২ ব্যাচের সহকারি সচিব ২ জন, ৮২ বিশেষ ব্যাচের ১৯ জন (৬ জন সহকারি সচিব এবং ১৩ জন সিনিয়র সহকারি সচিব) ৮৪ ব্যাচের ২৮ জন, ৮৫ ব্যাচের ৬৬ জন এবং ৮৬ ব্যাচের ৩২ জন । একই কারণে অনেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না, যারা জুনিয়রদের কাছে নিজেদের পরিচয় দিতে বিব্রতবোধ করেন । এ কারণেও প্রশাসনের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে । পদ ছাড়াই পদোন্নতি বিধিবহির্ভূতভাবে অনেক সময় পদ ছাড়াই পদোন্নতি দিতে গিয়ে প্রশাসনে এ অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে । জোট সরকারের সময় একাধিকবার শূন্যপদ ছাড়াই গণপদোন্নতি দেয়া হয় । পদের বাইরে পদোন্নতি দিতে গিয়ে বর্তমান উপসচিব পদে ৫৮৭ জন কর্মকর্তা অতিরিক্ত হিসেবে বসে আছেন । যাদের মধ্যে ২৩০ জন এখনও সিনিয়র সহকারী সচিবের চেয়ারে বসে কাজ করছেন । এজন্য পদগুলো সুপারনিউমারি করতে হয়েছে। অবশিষ্টদের মধ্যে ৫০ জনের মতো ওএসডি আছেন এবং অন্যদের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থায় প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে । নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাথায় অতিরিক্ত সচিব পদে ৭২ জনকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে পদের বাইরে ৪১ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয় । মূলত অতিরিক্ত সচিবের পদ ৬৭টি হলেও পরে প্রেষণ পদের মধ্যে ৪০টি পদ সৃষ্টি করে ১০৭টিতে উন্নীত করা হয় । পদোন্নতির অপেক্ষায় বসে আছেন যারাসময় মতো শূন্যপদের বিপরীতে পদোন্নতি না দেয়া এবং ৮২ বিশেষ, ৮৪ এবং ৮৫ ব্যাচের ন্যায় বৃহৎ তিনটি ব্যাগে ১৫শ’ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার কারণে পুরো প্রশাসনযন্ত্র ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে প্রশাসনের পিরামিড। এ সংকট দুর করতে বহু আগে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়ার প্রয়োজন থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে ৯ম ব্যাচ থেকে ২১তম ব্যাচ পর্যন্ত ৯টি ব্যাচের ১ হাজার ৪১৬ জন কর্মকর্তাকে ১০ থেকে ১৮ বছর ধরে সিনিয়র সহকারী সচিবের পদে বসে থাকতে হচ্ছে। এর মধ্যে ১৭তম ব্যাচ পর্যন্ত ৮৫৫ জন কর্মকর্তা উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করে বসে আছেন। কিন্তু সহসা পদোন্নতি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ শূন্যপদের বাইরে পদোন্নতি দেয়ার কারণে এখনই ৫৮৭ জন উপসচিব অতিরিক্ত হিসেবে বসে আছেন। একই কারণে ওপরের দিকে পদোন্নতি নিয়ে জট লেগে যাওয়ায় যুগ্ম সচিব পদেও বেশি সংখ্যায় পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবারের এসএসবির বৈঠকে বড়জোর ৮০ জনকে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হবে। অথচ যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে লেফট আউট ছাড়াই এ মুহুর্তে অপেক্ষোয় আছেন ৮২ বিশেষ, ৮৪ ও ৮৫ ব্যাচের সাড়ে ৮শ’ কর্মকর্তা।প্রেষণে পদের হিসাব নেইপ্রশাসনে প্রেষণ পদের কোন হিসাব নেই। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায়ও কোন তথ্য নেই। অথচ প্রেষণে প্রশাসন ক্যাডারের ১ হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে নিয়োগ নিয়েও প্রশাসনের বিদ্যমান হযবরল অবস্থা দুর করা যাচ্ছে না। অথচ প্রেষণে যথেচ্ছভাবে নিয়োগ দেয়া এবং ক্রমেই প্রেষণ পদের ব্যপ্তি বাড়ানোর ফলে দফতর-সংস্থায় কর্মরত সেখানকার নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকে যাচ্ছে। তাদের বহু কর্মকর্তাকে প্রত্যাশিত পদোন্নতি ছাড়াই চাকরি থেকে অবসর নিতে হচ্ছে। নিচের দিকে শূন্যপদের ছড়াছড়ি ১৯৯৯ সালের ক্যাডার কম্পোজিশন অনুয়ায়ী প্রশাসন ক্যাডারের মোট পদ ৪ হাজার ১৬৬টি । এর মধ্যে ক্যাডারের লাইন পোষ্টে ১নং গ্রেডে ২টি, ২নং গ্রেডে ১২টি, ৩নং গ্রেডে ২০টি, ৪নং গ্রেডে ১৩টি, ৫নং গ্রেডে ১৩৮টি, ৬নং গ্রেডে ২ হাজার ২০১ টি এবং ৯নং গ্রেডে ১ হাজার ৭৮০টি । কিন্ত প্রশাসন ক্যাডার এখন লাইন পোস্টের বাইরে সচিবায় ও বিভিন্ন প্রেষণ পদের বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে। নিচের দিকে এন্টি পদে সহকারী কমিশনার পদের সংখ্যা ১ হাজার ৭৮০টি হলের বাস্তবে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৯৮ জন । শূনপদ রয়েছে ৬৮২ টি । যে কারণে ডিসি অফিসগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী কমিশনার বা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নেই। সিনিয়র সহকারী কমিশনারের পদেও মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক শূন্যতা রয়েছে। সচিবালয়ে এ পদের নাম সিনিয়র সহকারী সচিব। কিন্ত এখানেও ৩ শতাধিক পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ২৩০ জন উপসচিব সুপারনিউমারি হিসেবে এ পদে বসে আছেন। যে কারণে নন-কাডার কোটায় সহকারী সচিব পদে দেড়শতাধিক কর্মকর্তার শূন্য পদে ৩ বছর ধরে পদোন্নতিও আটকে আছে।আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্যসচিবালয়ে উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের পদগুলো সব ক্যাডারের জন্য বন্টন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও কোটা পদ্ধতিতে পদোন্নতি অব্যাহত আছে। যে কারণে প্রশাসন ক্যাডার ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ বেশি সুবিধা পেয়ে আসছে । কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের রায় লাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ কারণে প্রশাসন বহর্ভূত অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। আবার একথাও সত্য, পুলিশ পররাষ্ট্র এবং কাষ্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা লাইন পোষ্টে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ওপরে উঠে গেলেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বহু জেলার এসপি কর্মরত ডিসিদের চেয়ে ৭ ব্যাচ জুনিয়র। সংকট উত্তরণে নানা মতপ্রশাসনে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যেভাবে প্রশাসন চলছে বা চালানো হচ্ছে তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, জনপ্রশাসন নামক প্রতিষ্ঠানটি নিকট ভবিষ্যতে মুখ ত্থবড়ে পড়বে। হয় এটি সরকারি দলের বৃহৎ কোন দলীয় অফিসে পরিণত হবে, নতুবা ্েরফ কেরানিগিরি করা ছাড়া ক্যাডার কর্মকর্তারা দেশের কল্যাণে ক্রিয়েটিভ কোন কাজ উপহার দিতে পারবেন না। বিশেষ কওে এ বেহালদশা দেখে নতুন চাকরিপ্রার্থীরা এ সার্ভিসে যোগ দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।তারা বলেছেন, সরকারকে সৎ মন দিয়ে প্রথমে প্রশাসনকে দলীয়করণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এরপর সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদেও পোষ্টেং ও পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যামান নীতিমালার বাইওে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কোন পথ বের করতে হবে। এদিকে প্রশাসনের এ দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, প্রশাসনের বিদ্যমান সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন । কিন্ত কোন পরিকল্পনা নেই। প্রয়োজন প্রশাসনিক সংস্কার। নিক্ত তাও নেই। আওয়ামী লীগ সরকার এর আগেও ক্ষমতায় থাকার সময় প্রশাসন সংস্কাওে কমিশন গঠন করলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। আকবর আলি খান দুঃখ প্রকাশ কওে বলেন, এখানে প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় এসে শুধু প্রশাসনের অতীত ভুল সংশোধন নিয়ে ব্যস্ত থাকে । যে কারণে তারা শুদ্ধ কাজ করার সময় পায় না। এক একটি সরকার এসে প্রশাসনের মধ্যে রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতিও ভালো পোষ্টিং থেকে বাদ দেয়। আবার পওে সরকার ক্ষমতায় এসে এর প্রতিশোধ নিতে কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি কিংবা চাকরিচ্যুত কওে বিদায় করে। বিপরীতে নিজেদেও পছন্দেও কিছু কর্মকতৗাকে প্রাইজ পোস্টেং আর দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে সন্তষ্ট রাখে। যেমনটি করেছে বিগত জোট সরকার। তারা রাজিৈতক বাছবিচার করতে গিয়ে পদোন্নতি না দেয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক কিছু ভুল কওে গেছে। এখন তার শোধ চলছে। কিন্ত এভাবে একটি প্রশাসন চলতে পাওে না। সাবেক এ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চাকরিতে সবাই পদোন্নতি পাবে না। এজন্য বাছাই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছ পদ্ধতি বের করতে হবে। কিন্ত এখন প্রশাসনের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা যোগ্যতা অর্জন করেও বছর বছর পদোন্নতির দিকে চেয়ে আছেন। আবার কিছু পদে পদেও চেয়ে অতিরিক্ত সংখ্যায় পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রশাসনের মধ্যে একটা বিশ্রংখল অবস্থা তৈরি হয়েছে। পদেও চেয়ে পদোন্নতি বেশি হলে কিছু লোকের কাজ থাকে না। তারা বসে থাকে আর রাজনীতি করে। তিনি বলেন, এভাবে প্রশাসনকে আর বেশিদিন চালানো যাবে না। দ্রুত প্রয়োজনীয় বাবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ক্লাষ্টার কওে বিশেষায়িত কর্মকর্তা তৈরি করতে হবে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবু সোলায়মান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ভালো কথা বলে তো লাভ নেই। যাদেও করার দায়িত্ব মূলত তাদেরই এর গুরুত্ব বুঝতে হবে। তাই তিনি কিছু বলতে চান না। তবে তিনি মনে করেন, কর্মকতৗাদেও যোগ্যতা-দক্ষতাকে বিবেচনায় নিয়ে পদায়ন ও পদোন্নতি নিশ্চিত করতে না পারলে সৃষ্ট সংকট থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না। সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ও প্রশাসন বিষয়ক কলামিস্ট বদিউর রহমান বলেন, অতীতে নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সমাধানের পথ একটাই সরকারকে কঠোর হতে হবে। শুন্যপদ ছাড়া পদোন্নতি দেয়া যাবে না। এসএসবির বাইওে কোন কমিশন কিংবা সরাসরি পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু কওে পদোন্নতি দিতে হবে।
false
rn
নারিকেল মামা ----- হুমায়ূন আহমেদ তাঁর আসল নাম আমার মনে নেই। আমরা ডাকতাম ‘নারকেল-মামা’। কারণ নারিকেল গাছে উঠে নারকেল পেড়ে আনার ব্যাপারে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। পায়ে দড়ি-টরি কিচ্ছু বাঁধতে হতো না। নিমিষের মধ্যে তিনি উঠে যেতেন। নারকেল ছিঁড়তেন শুধু হাতে। তাঁর গাছে ওঠা, গাছ থেকে নামা, পুরো ব্যাপারটা ছিল দেখার মতো। তাঁর নৈপুণ্য যে কোনো পর্যায়ে তা দেখাবার জন্যই একদিন আমাকে বললেন, এই পিঠে ওঠ। শক্ত কইরা গলা চাইপা ধর। আমি তাই করলাম। তিনি আমাকে নিয়ে তরতর করে নারকেল গাছের মগডালে উঠে দুই হাত ছেড়ে নানা কায়দা দেখাতে লাগলেন। ভয়ে আমার রক্ত জমে গেল। খবর পেয়ে আমার নানাজান ছুটে এলেন। হুঙ্কার দিয়ে বললেন, হারামজাদা, নেমে আয়। এই হচ্ছেন আমাদের নারিকেল-মামা। আত্মীয়তা-সম্পর্ক নেই। নানার বাড়ির সব ছেলেরাই যেমন মামা, ইনিও মামা। আমার নানার বাড়িতে কামলা খাটেন। নির্বোধ প্রকৃতির মানুষ। খুব গরম পড়লে মাথা খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায়। কিংবা কে জানে মাথা হয়ত তাঁর সব সময়ই এলোমেলো। শুধু গরমের সময় অন্যরা তা বুঝতে পারে। নারিকেল-মামার মাথা এলোমেলো হবার প্রধান লক্ষণ হলো_ হঠাৎ তাঁকে দেখা যাবে গোয়ালঘর থেকে দড়ি বের করে হনহন করে যাচ্ছেন। পথে কারো সঙ্গে দেখা হলো, সে জিজ্ঞেস করল, কই যাস?নারিকেল-মামা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলবেন, ফাঁস নিব। উঁচা লম্বা একটা গাছ দেইখ্যা ঝুইল্যা পড়ব। প্রশ্নকর্তা তাতে বিশেষ বিচলিত হয় না। বিচলিত হবার তেমন কারণ নেই। এই দৃশ্য তার কাছে নতুন নয়। আগেও দেখেছে। একবার না, অনেকবার দেখেছে। প্রশ্নকর্তা শুধু বলে, আচ্ছা যা। একবার জিজ্ঞেসও করে না, ফাঁস নেবার ইচ্ছেটা কেন হলো। তাঁর আত্মহননের ইচ্ছা তুচ্ছ সব কারণে হয়। তাঁকে খেতে দেয়া হয়েছে। ভাত-তরকারি সবই দেয়া হয়েছে। কিন্তু লবণ দিতে ভুলে গেছে। তিনি লবণ চেয়েছেন। যে ভাত দিচ্ছে সে হয়ত শুনেনি। তিনি শান্তমুখে খাওয়া শেষ করলেন। পানি খেলেন। পান মুখে দিয়ে গোয়ালঘরে ঢুকে গেলেন দড়ির খোঁজে। এই হলো ব্যাপার। সবই আমার শোনা কথা। আমরা বছরে একবার ছুটির সময় নানার বাড়ি বেড়াতে যেতাম। থাকতাম দশ-পনেরো দিন। এই সময়ের মধ্যে নারিকেল-মামার দড়ি নিয়ে ছোটাছুটির দৃশ্য দেখিনি। তাঁকে আমার মনে হয়েছে অতি ভালো একজন মানুষ। আমাদের মনোরঞ্জনের চেষ্টায় তাঁর কোনো সীমা ছিল না। একটা গল্পই তিনি সম্ভবত জানতেন। সেই গল্পই আমাদের শোনাবার জন্য তাঁর ব্যস্ততার সীমা ছিল না। কাঁইক্যা মাছের গল্প। এক দীঘিতে একই কাঁইক্যা মাছ বাস করত। সেই দীঘির পাড়ে ছিল একটা চাইলতা গাছ। একদিন কাঁইক্যা মাছ চাইলতা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে। হঠাৎ একটা চাইলতা তার গায়ে পড়ল। সে দারুণ বিরক্ত হয়ে বলল,চাইলতার চাইলতা তুই যে আমার মাইলি?উত্তরে চাইলতা বলল,কাঁইক্যারে কাঁইক্যা, তুই যে আমার কাছে আইলি?এই হলো গল্প। কেনই-বা এটা একটা গল্প, এর মানে কি আমি কিছুই জানি না। কিন্তু এই গল্প বলতে গিয়ে হাসতে হাসতে নারিকেল-মামার চোখে পানি এসে যেত। আমি তাঁর কাছে এই গল্প বারবার শুনতে চাইতাম তাঁর কা-কারখানা দেখার জন্য। সেবার রোজার ছুটিতে নানার বাড়িতে গিয়েছি। তখন রোজা হতো গরমের সময়। প্রচ- গরম। পুকুরে দাপাদাপি করে অনেকক্ষণ কাটাই। আমরা কেউই সাঁতার জানি না। নারিকেল-মামাকে পুকুর পাড়ে বসিয়ে রাখা হয় যাতে তিনি আমাদের দিকে লক্ষ্য রাখেন। তিনি চোখ-কান খোলা রেখে মূর্তির মতো বসে থাকেন। একদিন এইভাবে বসে আছেন। আমরা মহানন্দে পানিতে ঝাঁপাচ্ছি, হঠাৎ শুনি বড়দের কোলাহল_ ফাঁস নিছে। ফাঁস নিছে। পানি ছেড়ে উঠে এলাম। নারিকেল-মামা নাকি ফাঁস নিয়েছে। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। নানার বাড়ির পেছনের জঙ্গলে জামগাছের ডালে দড়ি হাতে নারিকেল-মামা বসে আছেন। দড়ির একপ্রান্ত জামগাছের ডালের সঙ্গে বাঁধা। অন্য প্রান্ত তিনি তাঁর গলায় বেঁধেছেন। তিনি ঘোড়ায় চড়ার মতো ডালের দু’দিকে পা দিয়ে বেশ আয়েশ করে বসে আছেন। আমরা ছোটরা খুব মজা পাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা লোক দড়িতে ঝুলে মরবে, সেই দৃশ্য দেখতে পাব_ এটা সে সময় আমাদের মধ্যে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। বড়রা অবশ্যি ব্যাপারটাকে মোটেও পাত্তা দিল না। আমার নানাজান বললেন, আজ গরমটা অতিরিক্ত পড়েছে। মাথায় রক্ত উঠে গেছে। তিনি নারিকেল-মামার দিকে তাকিয়ে বললেন, নাম হারামজাদা! নাকিকেল-মামা বিনীত গলায় বললেন, ‘জ্বে না মামুজী। ফাঁস নিমু।’ ‘তোরে মাইরা আজ হাড্ডি গুঁড়া করব। খেলা পাইছস? দুইদিন পরে পরে ফাঁস নেওয়া। ফাঁস অত সস্তা। রাখছস?” ‘রাখছি।’ ‘রোজা রাইখ্যা যে ফাঁস নেওন যায় না এইটা জানস?’ ‘জ্বে না।’ ‘নাইম্যা আয়। ফাঁস নিতে চাস ইফতারের পরে নিবি। অসুবিধা কি? দড়িও তোর কাছে আছে। জাম গাছও আছে। নাম কইলাম। রোজা রাইখ্যা ফাঁস নিতে যায়! কত বড় সাহস! নাম।’নারিকেল-মামা সুড়সুড় করে নেমে এলেন। মোটেও দেরি করলেন না। আমাদের মন কি যে খারাপ হলো। মজার একটা দৃশ্য নানাজানের কারণে দেখা হলো না। নানাজনের ওপর রাগে গা জ্বলতে লাগল। মনে ক্ষীণ আশা, ইফতারের পর যদি নারিকেল-মামা আবার ফাঁস নিতে যান। ইফতারের পরও কিছু হলো না। খাওয়া-দাওয়ার পর নারিকেল-মামা হৃষ্টচিত্তে ঘুড়ে বেড়াতে লাগলেন। কোত্থেকে যেন একটা লাঠিম জোগাড় করলেন। শহর থেকে আসা বাচ্চাদের খুশি করার জন্যে উঠোনে লাঠিম খেলার ব্যবস্থা হলো। আমি এক ফাঁকে বলেই ফেললাম, মামা, ফাঁস নিবেন না? তিনি উদাস গলায় বললেন, যাউক, রমজান মাসটা যাউক। এই মাসে ফাঁস নেয়া ঠিক না।‘রমজানের পরে তো আমরা থাকব না। চলে যাব। আমরা দেখতে পারব না।’নারিকেল-মামা উদাস গলায় বললেন, এইসব দেখা ভালো না গো ভাইগ্ন্যা ব্যাটা। জিহ্বা বাইর হইয়া যায়। চউখ বাইর হইয়া যায়। বড়ই ভয়ঙ্কর।‘আপনি দেখছেন?’ ‘ভাইগ্ন্যা ব্যাটা কি কয়? আমি দেখব না! একটা ফাঁসের মরা নিজের হাতে দড়ি কাইট্যা নামাইছি। নামাইয়া শইল্যে হাত দিয়ে দেখি তখনও শইল গরম। তখনও জান ভেতরে রইছে। পুরোপুরি কবজ হয় নাই।’ ‘হয়নি কেন?’ ‘মেয়েছেলে ছিল। ঠিকমত ফাঁস নিতে পারে নাই। শাড়ি পেঁচাইয়া কি ফাঁস হয়? নিয়ম আছে না? সবকিছুর নিয়ম আছে। লম্পা একটা দড়ি নিবা। যত লম্বা হয় তত ভালো। দড়ি এক মাথা বানবা গাছের ডালে, আরেক মাথা নিজের গলায়। ফাঁস গিট্টু বইল্যা একটা গিট্টু আছে। এটাই দিবা। তারপরে আল্লাহর কাছে তওবা কইরা সব গোনার জন্যে মাফ নিবা। তারপর চউখ বন্ধ কইরা দিবা লাফ।’ ‘দরি যদি বেশি লম্বা হয় তাহলে তো লাফ দিলে মাটিতে এসে পড়বেন।’ ‘মাপমত দড়ি নিবা। তোমার পা যদি মাটি থাইক্যা এক ইঞ্চি উপরেও থাকে তাইলে হবে। দড়ি লম্বা হইলে নানা দিক দিয়া লাভ। দশের উপকার। দড়ি লম্বা হলে দশের উপকার কেন তারও নারিকেল-মামা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করলেন।‘ফাঁসের দড়ি নানা কাজে লাগে বুঝলা ভাইগ্ন্যা ব্যাটা? এই দড়ি সোনারর দড়ি চেয়েও দামী। এক টুকরা কাইট্যা যদি কোমরে বাইন্ধ্যা থয় তা হইলে বাত-ব্যাধির আরাম হয়। ঘরের দরজার সামনে এক টুকরা বাইন্ধ্যা থুইলে ঘরে চোর-ডাকাত ঢোকে না। এই দড়ি সন্তান প্রসবের সময় খুব কাজে লাগে। ধর, সন্তান প্রসব হইতেছে না_ দড়ি আইন্যা পেটে ছুঁইয়াইবা, সাথে সাথে সন্তান খালাস।’ ‘সত্যি?’ ‘হ্যাঁ সত্যি। ফাঁসির দড়ি মহামূল্যবান। অনেক ছোট ছোট পুলাপান আছে বিছানায় পেসাব কইরা দেয়। ফাঁসের দড়ি এক টুকরা ঘুনসির সাথে বাইন্ধ্যা দিলে আর বিছানায় পেসাব করব না। এই জন্যেই বলতেছি যত লম্বা হয় ফাঁসের দড়ি ততই ভালো। দশজনের উপকার। ফাঁস নিলে পাপ হয়। আবার ফাঁসের দড়ি দশজনের কাজে লাগে বইল্যা পাপ কাটা যায়। দড়ি যত লম্বা হইব পাপ তত বেশি কাটা যাইব। এইটাই হইল ঘটনা। মৃত্যুর পরে পরেই বেহেশতে দাখিল। নারিকেল-মামার মৃত্যু হয় পরিণত বয়সে। ফাঁস নিয়ে না_ বিছানায় শুয়ে। শেষ জীবনে পক্ষাঘাত হয়েছিল, নড়তে-চড়তে পারতেন না। চামচ দিয়ে খাইয়ে দিতে হতো। মৃত্যুর আগে গভীর বিষাদের সঙ্গে বলেছিলেন_ আল্লাহপাক আমার কোন আশা পূরণ করে নাই। ঘর দেয় নাই, সংসার দেয় নাই। কিছুই দেয় নাই। ফাঁস নিয়া মরণের ইচ্ছা ছিল এটাও হইল না। বড়ই আফসোস! (সংকলিত)
false
hm
আবাহন ১. "উনি একজন বুজরুক ছিলেন।" শামীমের কণ্ঠস্বরে তাচ্ছিল্যের কোনো কমতি রইলো না। সোমা একটু শাসন করার চেষ্টা করলো স্বামীকে, "নিজের দাদাকে কেউ বুজরুক বলে এভাবে?" শামীম বারান্দার কাঠের রেলিঙে পা তুলে দিয়ে আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো, "এই শর্মা বলে। আর টেকনিক্যালি, উনি আমার আপন দাদা নন। বাবার চাচা। ওয়েইট। বাবার আপন চাচাও নন। দাদার ফুপাতো ভাই ছিলেন। ইয়েস, ফুপাতো ভাই। কাজেই আমি ওনার বদনাম করতেই পারি, নিজের দাদার চামড়া বাঁচিয়ে ... কী বলিস তোরা?" নাসিফ কাঁধ ঝাঁকালো। "তুই তোর দাদার বদনাম যত খুশি কর, আমার কী? আপন দাদাই হোক আর ফুপাতো দাদাই হোক।" মৌরি হাত বাড়িয়ে নাসিফের বাহুতে চিমটি কাটলো। শামীমের বাগানবাড়িতে বেড়াতে এসে তার দাদার বদনামে সায় দেয়াটা ভদ্র মনে হচ্ছে না তার কাছে। নাসিফ চোখ গোল করে মৌরির দিকে ফিরে বললো, "চিমটাও ক‌্যানো?" সোমা মৌরির চেহারার অভিব‌্যক্তি পাল্টে যেতে দেখে দুই হাতে মুখ ঢেকে হেসে ফেললো। এই পরিস্থিতি তার অচেনা নয়। ভরা মজলিশে বেফাঁস কথাবার্তা বলায় শামীমের অভিজ্ঞতাও কম নয়, তাকে আলগোছে সতর্ক করতে গেলে সেও এভাবে সকলের সামনে চিমটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। নাসিফ শামীমের ঘনিষ্ট বন্ধু কি আর সাধে? প্রসঙ্গ পাল্টাতে মৌরি তাড়াহুড়ো করে বললো, "বুজরুক মানে কিন্তু বুজুর্গ ... মানে, ঐ যে, কী বলে, সাধু ব্যক্তি। দরবেশ।" শামীম চায়ের কাপে অনাবশ্যক সশব্দ চুমুক দিয়ে বললো, "তাই নাকি? আমি তো জানতাম বুজরুক মানে ভণ্ড।" মৌরি হাত নেড়ে আলাপটাকে ভাষাতত্ত্বের কানাগলিতে ঢোকানোর চেষ্টা করলো, "হ্যাঁ ... কিন্তু এসেছে বুজুর্গ থেকে। বুজুর্গ লোকজনের কাণ্ডকারখানা দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ হয়ে লোকজন এর মানেটাই পাল্টে দিয়েছে। তাই না চুমকি?" চুমকি রোদ থেকে দূরে মনমরা হয়ে বসে ছিলো, নিজের নাম শুনে একটু চমকে উঠলো সে। "কী?" মৌরি চায়ের কাপটা তুলে সোমার দিকে তাকিয়ে নীরবে কানাগলিতে রিলে রেসের ব্যাটনটা তার হাতে তুলে দিলো। সোমা চুমকির দিকে ফিরে বললো, "বুজরুক! বুজরুক মানে বুজুর্গ, তাই না?" চুমকি গম্ভীর হয়ে বললো, "বুজরুক বুজুর্গ হবে কেন? বুজুর্গ মানে আলেম!" নাসিফ মৌরির দিকে তাকিয়ে চোখ মিটমিট করলো। চুমকি খুবই ধর্মকাতর, পান থেকে চুন খসলেই সে লম্বা লম্বা লেকচার দিতে থাকে। বুজরুক-বুজুর্গ তত্ত্বে সে নিশ্চিতভাবেই ধর্মের অপমান আবিষ্কার করে বসতে পারে। সোমা থতমত খেয়ে মৌরির দিকে তাকিয়ে ব্যাটনটা আবার ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু মৌরি ততক্ষণে অন্যদিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে হাসি লুকিয়ে চুমুক দিচ্ছে। "না না, মানে, বুজুর্গ শব্দটা থেকে বুজরুক এসেছে। ধরো গিয়ে, মমমম ... ধরো, কী আছে এমন আর ... মস্তান! মস্তান মানে তো মত্ত, মাতাল। কিন্তু আমরা তো মস্তান বলতে বুঝি গুণ্ডা। এরকম কিছু শব্দ আছে না, যেমন ধরো, অর্থ একটা, কিন্তু লোকে অন্য অর্থ বোঝানোর জন্য বলতে বলতে একসময় মানেই পাল্টে ফেলে? অ্যাই শামীম, এরকম হয় না?" শামীম নির্দোষ মুখে সোমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিলো, "না তো? এরকম হয় নাকি? যাহ!" সোমা শামীমের পাঁজরে আঙুলের গাঁট দিয়ে খোঁচা দিলো। চুমকি মাথার স্কার্ফটা হাত দিয়ে টেনে ঠিক করে গম্ভীর গলায় বললো, "বুজুর্গ হচ্ছেন আলেম ওলামারা। আর বুজরুক হচ্ছে ভণ্ড। পীরফকির। দুইটা দুই জিনিস।" নাসিফ চায়ের কাপে ফড়াৎ করে চুমুক দিয়ে বললো, "ঠিক। যেমন ডাব আর নারিকেল। বুজুর্গ আর বুজরুকের মধ্যে পাকনামির মাত্রার একটা পার্থক্য আছে। বুজুর্গ পেকে বুজরুক হয়। তারপর, চালভাজা আর মুড়ি। কড়াইতে চাল ছেড়ে দিলেই চালভাজা, কিন্তু মুড়ি হতে গেলে সেটাতে বালু থাকতে হবে। সঠিক সঙ্গ পেলে বুজুর্গ লোক ফুলে ফেঁপে ফর্সা হয়ে বুজরুক হয়ে ওঠে।" চুমকি গম্ভীর চোখে মামাতো ভাইকে নীরবে তিরস্কার করে আবার বেতের চেয়ারে হেলান দিলো। নাস্তিকমার্কা চালিয়াতি কথা বলায় নাসিফ ওস্তাদ, তার সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। একশো একটা যুক্তি দিয়ে ধর্মকে কাবু করে ছেলেমানুষি আনন্দ পায় নাসিফ। এদের সঙ্গে বেড়াতে আসাই ঠিক হয়নি। শামীম চোখের কোণে চুমকিকে দেখে নিয়ে বললো, "এনিওয়ে, আমার কুটি দাদা বুজরুকই ছিলেন। তবে মৌরি, কিছু লোক ওনাকে বুজুর্গই ভাবতো। তারা চালপড়া পানিপড়া কুমড়াপড়া ইত্যাদি হাবিজাবি নেয়ার জন্য লাইন দিতো ওনার কাছে।" মৌরি কেটলি থেকে আরেকটু চা ঢেলে নিলো নিজের কাপে। তার খুব ভালো লাগছে এখানে এসে। শামীমদের বাগানবাড়ি মির্জাপুরে। বেশ বড়সড় জায়গা নিয়ে উঁচু পাঁচিলে ঘেরা কম্পাউন্ড, চারদিকে ফলের গাছ, ছোট্টো একটা পুকুরও আছে। দুটো ইংরেজি এল-আকৃতির বাংলো-টাইপ বাড়ি, আর কিছু দূরে একটা কাঠের দোতলা বাড়ি নিয়ে জায়গাটা ছবির মতো সুন্দর। সবকিছুই বেশ পরিপাটি। ঢাকার চড়া শব্দ আর ধোঁয়ার ভারে নুয়ে পড়া বাতাসের ঝুল যেন বুক থেকে সরে যাচ্ছে এখানে এসে। গত রাতে এসে ঠিক বোঝা যায়নি আশপাশটা কেমন, কিন্তু আজ সারাদিন ঘুরেফিরে, পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করে, কিছুক্ষণ ব্যাডমিন্টন খেলে, আর বহুদিন পর একটা পেয়ারা গাছে চড়ে পেয়ারা পেড়ে খেয়ে তার খুব ভালো লাগছে। পরশু আবার তারা ফিরে যাবে ঢাকায়। মৌরি চায়ের স্রোতে সে চিন্তাটাকে চুবিয়ে মারার চেষ্টা করতে লাগলো। চুমকি নাক দিয়ে একটা শব্দ করলো, যার সম্ভাব্য অর্থ হতে পারে, কোনো সন্দেহ নেই, শামীমের কুটি দাদা লোকটা বুজরুক। চালপড়া পানিপড়া কুমড়াপড়া কখনোই কারো কোনো কাজে আসতে পারে না। তবে হ্যাঁ, খালেস দিলে আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে মুনাজাত করলে আল্লাহ হয়তো তার বাসনা পূর্ণ করতে পারেন। নাসিফ নিজের ফুপাতো বোনকে চটিয়ে মজা পায়, সে কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে প্রায়ই চুমকির ফেসবুক ওয়ালে নানা উদ্ভট গুজব শেয়ার করে আসে। কোন নভোচারী মুসলিম হয়ে গেছে, কোন বিজ্ঞানী মাছের গায়ে আল্লাহু লেখা দেখে খৎনা করে নাম পাল্টে আবু হামজা রেখেছে, এইসব খবর সে যত্নের সাথে জমিয়ে রাখে, কোন একদিন মুষলধারে চুমকির ওয়ালে পেস্ট করে আসার জন্য। বাতিল আর তাগুতের বিরুদ্ধে চুমকির লড়াকু ফেসবুক-জীবনে সে সহযোগিতার হাতই বাড়িয়ে দিতে চায়। "বলিস কী? খুবই কামেল আদমি ছিলেন মনে হচ্ছে?" নাসিফ মৌরির দিকে চায়ের খালি কাপটা বাড়িয়ে ধরলো। "যারা লাইন দিতো ওনার কাছে, তারা সেরকমই ভাবতো। তবে," একটা আলুর বড়া চামচে গেঁথে তুলে কামড় দিলো শামীম, "উনি কিন্তু লোকজনকে চালপড়া পানিপড়া কুমড়াপড়া দিতেন না।" সোমা শামীমের কুটি দাদার কথা অল্পস্বল্প শুনেছে পারিবারিক আলাপে, তার কৌতূহল তাই অন্যদের চেয়ে কম নয়। বাংলোর বারান্দায় বসে কুচকুচে কালো কাঠে তৈরি দোতলা বাড়িটাকে দেখলে যে কারো মনে কৌতূহল জাগবেই। বাড়িটায় কোনো জানালা নেই। "তাহলে ওনাকে বুজরুক ডাকো কেন?" সোমা নিজেও একটা আলুর বড়া তুলে নিলো প্লেট থেকে। মনু চাচী মারাত্মক বড়া ভাজতে জানে। শামীম কাঁধ ঝাঁকালো। "উনি ভূতপ্রেত দত্যিদানো রাক্ষসখোক্কস নিয়ে গবেষণা করতেন। ওনার ধারণা উনি ঐসবের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন। এই শখের পেছনে উনি প্রচুর টাকাপয়সাও নষ্ট করেছেন। ঘরসংসার করেননি, দিনরাত ঐ বাড়িটার একতলায় বশে যন্তরমন্তর হিংটিংছট করতেন, আর মাঝেমধ্যে হুটহাট বাড়ি ছেড়ে এদিকসেদিক চলে যেতেন। আমি যখন ছোটো ছিলাম, তখন বাবাকে দেখেছি বেশ কয়েকবার লোক পাঠিয়ে তাকে উদ্ভট সব জায়গা থেকে আবার বাড়িতে নিয়ে আসতে। বিপদে পড়লে উনি টেলিগ্রাম করতেন বা চিঠি লিখতেন, আমি অমুক জায়গায় আছি, টাকাপয়সা শেষ, আমাকে এসে নিয়ে যাও। সে এক যন্ত্রণা ছিলো।" মৌরি মাথা নেড়ে বললো, "আহহা, তাহলে বুজরুক বলছেন কেন? বেচারার মাথায় সমস্যা ছিলো বলেন।" শামীম আঙুল নেড়ে বাতাসে একটা কঠিন নেতিবাচক উত্তর আঁকলো। "মোটেও না। খুবই ট্যাটনা ছিলেন কুটি দাদা। বিশেষ করে যখন টাকাপয়সার দরকার হতো। বাবা যখনই বলতো টাকা দেয়া যাবে না, উনি ঠিকই কীসব জমির হিসাব ধানের হিসাব করে ফেলতেন মুখে মুখে। মাথায় কোনো সমস্যা তার ছিলো না। লোকটা এমনকি ডায়রিও লিখতো।" সোমা আগ্রহভরে জানতে চাইলো, "কোথায় সেই ডায়রি?" শামীম আলুর বড়া চিবাতে চিবাতে তাচ্ছিল্যের সাথে হাত নেড়ে বললো, "কয়েকটা ডায়রি আছে ঐ বাড়িতেই, যদি তেলাপোকায় কেটে না থাকে। আর বেশ কিছু ডায়রি কুটি দাদা পুড়িয়ে ফেলেছে।" মৌরি বললো, "পুড়িয়ে ফেললেন কেন?" শামীম কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, "উনি দুইদিন পরপরই এটাসেটা পুড়িয়ে ফেলতেন। ঐ বাড়িতেও নাকি একবার আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। রশিদ চাচা এখানে না থাকলে হয়তো নিজেও পুড়ে মরতেন। ওনাকে এই কারণেই আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে, যাকে বলে, খেদিয়ে এই বাগানবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো। দাদা যতদিন বেঁচে ছিলেন, উনি বেশি গণ্ডগোল করার চান্স পান নাই, কিন্তু দাদা মারা যাওয়ার পর ইচ্ছামতো গিদরামি করেছেন। আমরা ছিলাম ঢাকায়, আমার এক চাচা ছিলেন গ্রামে, এই বাড়ি দেখাশোনা করতেন রশিদ চাচা, আর কুটি দাদা রশিদ চাচাকে পাত্তা দিতেন না। খুব জ্বালান জ্বালিয়েছে লোকটা।" নাসিফ বললো, "তোরা এইরকম একটা ক্যারেক্টারকে একটু তেল-কালি মাখাইতে পারলি না? তোরা শালা টাঙ্গাইলের লোকজনগুলি এমন গা-ছাড়া ... একটু উদ্যোগ নিলেই কিন্তু মারদাঙ্গা আগুন পীর মাঠে নামায় দিতে পারতি। তোর দাদা এইসব বিটলামি ... কী হইলো, চোখ গরম করস ক্যান ... ওহ অলরাইট, তোর আপন দাদা না, ফুপাতো দাদা, হোয়াটেভার, উনি এইসব বিটলামি এরশাদের আমলে করতো না? এরশাদ তো খুবই এলিজিবল মুরিদ ছিলো, প্রায়ই এই পীর ঐ পীরের দরবারে তশরিফ রাখতো। তোদের পক্ষ থেকে একটু উদ্যোগ থাকলে এই জায়গা এতোদিনে হাইফাই পীরের গদি হয়ে যেতো। ঐদিকে ফালতু জাম্বুরা গাছটাছ কেটে একটা হেলিপ্যাড বানায় দিতে পারলেই মন্ত্রীমিনিস্টার মুরিদ কালেকশন সহজ হয়ে যেতো। বেকুব কি আর গাছে ধরে? আরে ... চিমটাও ক্যানো? ব্যথা পাই তো!" মৌরি চোখ পাকিয়ে নাসিফকে নিরুচ্চারে কয়েক সেকেন্ড ধমকে বললো, "উনি তো দেখি পুরোই প্রফেসর শঙ্কু আর হ্যারি পটার ঘুটা দিয়ে বানানো চরিত্র! আপনারা কোনো অ্যাডভেঞ্চার করেননি ওনাকে নিয়ে?" শামীম মাথা নাড়লো। "বাবা আমাদের কখনোই ওনার ধারেকাছে ঘেঁষতে দিতেন না। আমরা এই বাড়িতে প্রথম এসেছি কুটি দাদা মারা যাওয়ার পর, জানো? ওনারও আমাদের ঢাকার বাসায় যাওয়া নিষেধ ছিলো।" সোমা আনমনে কাঠের দোতলা বাড়িটার দিকে তাকিয়ে কুটি দাদার গল্প শুনছিলো। এখানে সে আগেও একবার পিকনিকে এসেছে, কিন্তু তখন আরো আত্মীয়স্বজন গমগম করছিলো পুরো কম্পাউন্ড জুড়ে, হইচইয়ের মাঝে ঐ কেঠো পোড়োবাড়ি নিয়ে কেউই মাথা ঘামানোর সময় পায়নি। বিকেলের রোদ এসে যেন হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িটার দেয়ালে, দূরে বাংলোর বারান্দার ছায়ায় বসে দৃশ্যটা দেখে একটু গা ছমছম করছে তার। কুটি দাদা ঐ বাড়িতে বসে কী করতো? কাছেই আচমকা যান্ত্রিক সুরে ঝনঝন করে আজানের শব্দ বেজে উঠলো, সোমার ঘোর লাগা ভাবটা কেটে গেলো সে শব্দে। চুমকির মোবাইলে আজানের কী একটা সিস্টেম আছে, দিনে পাঁচবার করে সময়মতো বাজতে থাকে। চুমকি বেতের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মাথার স্কার্ফ ঠিক করতে করতে বললো, "আমি নামাজটা পড়ে আসি।" নাসিফ বললো, "আমার জন্য দোয়া করিস রে। আল্লাহকে বলিস আমার দিকে যেন একটু মুখ তুলে তাকায়। খুব রাগ করে আছে লোকটা।" চুমকি জিভ দিয়ে বিরক্তিসূচক একটা শব্দ করে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। বাংলোর ঘরগুলো বেশ প্রশস্ত, বেড়াতে এসে আস্ত একটা ঘর বরাদ্দ পেয়েছে সে। সোমা মাথার চুল আঙুলে জড়িয়ে টানতে টানতে বললো, "উনি একা একটা দোতলা বাড়িতে কী করতেন?" শামীম আরেকটা আলুর বড়া তুলে নিয়ে বললো, "বুজরুকি। আবার কী? ভূতপ্রেত, তন্ত্রমন্ত্র, ঝাড়ফুঁক।" নাসিফ বললো, "তুই জানিস কীভাবে? তুই তো কখনো এসে দেখিসনি।" শামীম বড়ায় একটা জিঘাংসু কামড় দিয়ে বললো, "আমি রশিদ চাচার কাছে শুনেছি। ... ঐ যে মনু চাচী আসছে মুড়ি মাখা নিয়ে, তুই বিশ্বাস না করলে চাচীকে জিজ্ঞাসা কর।" মনু চাচীর বয়স পঞ্চাশের ঘরে, তবে সে ঘরের ছাদের কাছাকাছি। মেহমানদের জন্যে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই অবিরাম নানা নাস্তা বানিয়ে যাচ্ছেন তিনি অক্লান্তভাবে। মস্ত একটা এনামেলের বাটিতে মুড়ির সাথে এটাসেটা মেখে এখন নিয়ে এসেছেন তিনি। "ন্যাও, কহোটা মুড়ি খাউ। হাফিজের বউ পাউরোটা বানাইতাছে। হাইঞ্জা বেলায় গরুর গুস্ত দিয়া খাইও।" মনু চাচী টেবিলে মুড়ির বাটি নামিয়ে রেখে আলুর বড়ার প্রায় খালি বাটির দিকে তাকিয়ে খুশির হাসি হাসলেন। "বিলাতী আলু আছাল কহোটা। বড়া বানামু আরো?" সোমা মনু চাচীকে হাত ধরে চুমকির চেয়ারে বসিয়ে দিলো। "বসেন তো চাচী। আমাদের কুটি দাদার গল্প বলেন। শামীম কিচ্ছু জানে না, আন্দাজে খালি আবোলতাবোল কী কী যেন বলে।" মনু চাচীর মুখের হাসিটা মলিন হয়ে গেলো। "কাক্কা তো ম্যালা আগে মরছে।" মৌরি এক মুঠো মুড়িমাখা তুলে মুখে পুরে বললো, "গ্নামগ্নাম ... দারুণ মজা হয়েছে চাচী! এই কুটি দাদা নাকি জ্বিনভূত পালতেন, সত্য নাকি?" মনু চাচী মুখ কালো করে মাথা ঝাঁকালেন। "হ, হ্যার কামই আছাল খালি দ্যাউ দানো নামানি।" নাসিফ হাসিমুখে বললো, "আপনি কখনও দেখেছেন ঐ দৈত্যদানো?" মনু চাচী অস্বস্তিভরে নড়েচড়ে বসে বললেন, "দেখি নাই ... কিন্তু ... ।" তার কণ্ঠস্বর ক্রমশ মিলিয়ে গেলো নাসিফের চওড়া হতে থাকা হাসির সাথে। সোমা বললো, "কী চাচী? কিন্তু কী?" মনু চাচী বললেন, "আওজ পাইছি অনেকদিন।" মৌরি আরেক মুঠো মুড়ি নিতে হাত বাড়িয়েছিলো, সে নাসিফকে আবার চোখের ধমকে শাসন করে বললো, "কেমন আওয়াজ চাচী?" মনু চাচী শামীম আর সোমার দিকে অসহায় চোখে নিষ্কৃতি চাওয়ার ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললেন, "ইয়াল্লা, কয় কি, যে আওজ আছিলরে মা, কানকুন তালা নাইগা যাইতোগা। তুমগো কাক্কা তহনও বাঁইছা আছাল, খুপ সাহসী মানু আছিল, হ্যার বাদেও হে কুটি কাক্কারে কিছু কয়া হারে নাই, ডরে। রাইত বিরাইতে শব্দ হইতো, আজগুবি গুজগুবি আওজ। মাইনষ্যে মুনে করতো উনি জ্বিন নামাইছে। মাঝে মইদ্যেই আইড়া কাইড়া নুক আইতো হ্যার কাছে, জ্বিন নামাইবার। কাক্কা নাঠি নিয়া দৌড়ানি দিত। কিন্তু আইতের বেলার ভয়ের আওজ কমতো না। খুন খুন কইরা ক্যারা যানি কাঁনতো। খিখি আসাহাসির শব্দ হুনা যাইতো। ডরে আমগো আত্মা ধড়াস ধড়াস করতো।" নাসিফ মৌরির শাসনে হাসিটা মুখ থেকে মুছে গম্ভীর গলায় বললো, "কীরকম শব্দ চাচী?" মনু চাচী অস্বস্তিভরে নড়েচড়ে বসে বললেন, "কুনো কুনো সুমায় আবার চিকারের শব্দ পাওন যাইতো। জীব জুনাররে নাঠি দিয়া গুতানির পর যেম্বে গুঙ্গাইতো হেইরহম আওজ।" নাসিফ মৌরির দিকে ফিরে বললো, "উফফ, চিমটাও ক্যানো?" সোমা মনু চাচীকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছে, সে চাচীর হাত জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে টেনে নিয়ে বললো, "শুধু কি চিৎকারের আওয়াজ পাইতেন চাচী? কিছু দেখেন নাই কখনো?" মনু চাচী একটু ভরসা পেলেন যেন সোমার কথায়, মাথা নেড়ে বললেন, "নাগো মা, আমরা রাইতের বেলা দরজা জাল্লা বদ্দ কইরা হুইতাম। হাফিজ তহন গুদা, খুপ ডরাইতো। কুট্টি কাক্কারে ম্যালা কইছি, হাফিজ্যা ডরায়, আপনে হ্যাগো রাইতের বেলা ডাইকেন না। হে খালি আসতো, ফ্যাক ফ্যাক কইরা আসতো, আর কইতো ... ডরাইস্যা ডরাইস্যা।" মনু চাচী হাত নেড়ে গলার সুর পাল্টে কুটি দাদাকে অনুকরণ করে দেখালেন, সোমা হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরলো তাকে। শামীম মুড়িমাখা খেয়ে যাচ্ছিলো অক্লান্তভাবে, সে কোঁৎ করে মুড়ি গিলে বললো, "ভূতের দৌড়াদৌড়ির আওয়াজের কথাটা বলবা না চাচী?" মনু চাচীর হাসিটা আবার মলিন হয়ে গেলো। "হ, মাজেমইদ্যে আমরা আওজ পাইতাম। বাগানের আউলে কীয়ের জানি শব্দ। মুনে হইত গাছে বইয়া ভুইট্টা বানর পাউ নড়াইতাছে। ...না না বাজান আইসো না...বাউ বাসাতের আওজ ওইরহম না। কুটি কাক্কা মাজে মইদ্যে বাইরে আইয়া ধমক দিত। তহন আওজ বন হইয়া যাইতো। খুব ডরের মদ্যে আইত পার করছি গো আম্মা। তুমরা দেহ নাই তাই আসো।" মৌরি ফিসফিস করে বললো, "ডোঞ্চিউ রিয়েলাইজ ইট হার্টস হার? স্টপ বিয়িং সাচ আ প্রিক!" নাসিফ গম্ভীর মুখে মুড়িমাখা চিবাতে লাগলো। বিকেলের রোদ ইতিমধ্যে সরে গেছে কালো বাড়িটা থেকে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে জানালাবিহীন দেয়ালের একটা অংশ। মনু চাচী বললেন, "হাফিজ্যা বাড়িড্যা সাপ কইরা রাকছে। তুমরা দেকপার চাইলে দেইকা আইয়া হারো।" সোমা বললো, "আপনারা ঐ বাড়িতে ঢোকেন?" মনু চাচী বললেন, "ঢুকমু না ক্যা? এহন তো আর কাক্কা নাই। কুনো আওজও নাই। আমরা কয় মাস বাদে বাদেই ঘর সাপ করি। ভিতরে খাইলা। বইপুস্তক আর আবিজাবি জিনিস আছে, বাসকোতে ভইরা রাকছি।" নাসিফ বললো, "আজকে চলো সবাই রাতের বেলা ঐখানে গিয়ে আড্ডা মারি। তাস, মোনোপোলি, চা আর মুড়ি-চানাচুর সঙ্গে থাকবে। এরপর মোমবাতির আলোর সাথে রক্ত পানি করা ভূতুড়ে গল্পের কম্পিটিশন।" সোমা আড়চোখে মনু চাচীর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো, মহিলার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে। সে চাচীর হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বললো, "কী চাচী, ভয় পাইছেন নাকি?" মনু চাচী বিবর্ণ মুখেই মাথা নাড়লেন। "না না না। আমি হাফিজ‌্যার বউরে কইয়া দিমুনি, উ যানি তুমগো জুনতে নাস্তা পানির যুগার যন্ত্র কইরা রাকে।" সোমা ফিসফিস করে বললো, "আপনিও আসেন চাচী। ভূতের গল্প করি সবাই মিলে।" মনু চাচী তাড়াহুড়ো করে মাথা দোলালেন, "নারে আম্মা, আমার ভূতের হাস্তর হুনলে ডর নাগে। আমি হাড়াহাড়ি কইরা ঘুমাইয়া যামু।" চুমকি নিজের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো, তার মুখ গম্ভীর। মনু চাচীকে দেখে সে মন্দ্রস্বরে বললো, "নামাজ পড়বেন না চাচী?" মনু চাচী চমকে উঠে তাড়াহুড়ো করে উঠে বললেন, "হ হ..আমি তাইলে যাইগা আম্মা। নুমাজটা পইড়া আহি। তোমরা মুড়ি খাও।" নাসিফ তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে বাঁচা চাচীকে দেখিয়ে চুমকিকে শাসনের সুরে বললো, "তুই এখানে এসেই কীরকম ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিস, দেখলি? মনু চাচী, হাফিজ, হাফিজের বউ, তাদের একরত্তি বাচ্চা, সবাই তোর ভয়ে দরজায় ছিটকিনি আটকে ভেতরে বসে থাকে। বেচারারা গোটা বছরে যত রাকাত নামাজ পড়ে, তোর যন্ত্রণায় তারচে বেশি পড়ে ফেলেছে এই একদিনেই!" চুমকির মুখে সন্তুষ্টির পাতলা হাসি ফুটে উঠলো। দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত কয়েকটি আত্মাকে সিরাতুল মুস্তাকিমে ঠেলে তুলে সে বেশ তৃপ্ত। মৌরি বললো, "তুমি তো গল্পটা মিস করলে চুমকি। শামীম ভাইয়ের কুটি দাদা জ্বিনভূত দৈত্যদানো পুষতেন, বুঝলে?" চুমকি বেতের চেয়ারে বসে মুড়িমাখার বাটিটা নিজের কোলে টেনে নিয়ে বললো, "জ্বিন পুষতে পারেন হয়তো। কিন্তু ভূত দৈত্য এসব কিছু নেই। ওগুলো কুফরি গুজব।" নাসিফ একটা সিগারেট ধরিয়ে বললো, "হোয়াটেভার। ঐ বাড়িটায় আমরা আজ সারারাত আড্ডা মারবো ঠিক করেছি।" চুমকি বললো, "তোমরা আড্ডা মারো গিয়ে, আমি ঘুমিয়ে পড়বো।" নাসিফ বললো, "উঁহু। তোকেও থাকতে হবে। মোনোপোলি খেলা হবে। তুই ব্যাঙ্কার। আমাদের মধ্যে একমাত্র মুমিন মুসলমান তুই, অন্য কাউকে ব্যাঙ্ক দিলে টাকাপয়সা লুট হয়ে যাবে।" চুমকি বললো, "ঐ পুরোনো বাড়িতে ধুলাবালুর মধ্যে বসে মোনোপোলি খেলতে হবে কেন? এইখানেই খেলি।" চুমকি মোনোপোলির খুব ভক্ত, একবার খেলতে বসলে তাকে টেনে তোলা শক্ত। মৌরি বললো, "আরে, দারুণ একটা এক্সপেরিয়েন্স হবে। এরকম ভূতুড়ে একটা বাড়িতে বসে আড্ডা দেয়ার মজাই তো আলাদা। তাছাড়া যদি সত্যি সত্যি ভূত ... মানে, জ্বিন এসে আমাদের ওপর চড়াও হয়, চুমকি একাই দোয়া পড়ে তাদের ভাগিয়ে দিতে পারবে।" সোমা অন্যদিকে ফিরে হাসি চাপার চেষ্টা করলো প্রাণপণে। বিদ্রুপের আঁশটে গন্ধ পেয়ে চুমকির মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। "শোনো ভাবী, দোয়াদরূদ নিয়ে মশকরা করবা না। গ্রামেগঞ্জে জ্বিনের উৎপাত কিন্তু কমন জিনিস। আমার দাদাবাড়িতে আমি নিজের চোখে জ্বিন নামাতে দেখেছি ...।" নাসিফ বললো, "আহহা, এখনই বলিস না। রাতে ভৌতিক গল্প ... কী হলো, চিমটাও কেন? ... ওহ, লেট মি রিফ্রেইজ, ভৌতিক নয়, জ্বৈনিক গল্পের কম্পিটিশন হবে। তখন বলিস। আর তোমরা তো দুইপাতা বিজ্ঞান পড়ে মশকরা করো খালি, চুমকির দাদাবাড়ি কিন্তু, হুঁহুঁ বাবা, একটা রিয়েলি হন্টেড প্লেস। জ্বিনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট ঐটা। সারাদুনিয়ার জ্বিন চলাচলের পথে চুমকির দাদাবাড়িতে রিফুয়েল করতে নামে। ... আরে না, সিরিয়াসলি, আমরা ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি। একজন খুব কামেল বুজুর্গ আলেম আছেন, চুমকির চাচার বন্ধু, উনি প্রায়ই জ্বিনের টক শো হোস্ট করতেন, আমরা যখন কলেজে পড়ি। না রে চুমকি? কী হলো, এইভাবে তাকাস কেন ...?" ২. কাঠের সিঁড়িতে পা রাখার পর বিচিত্র শব্দে পুরো বাড়িটা যেন অস্ফূট গোঙানির শব্দে অতিথিদের স্বাগত জানালো। মৌরি ঘাড় ফিরিয়ে হারিকেন হাতে নাসিফের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি হাসার চেষ্টা করলো। একতলার বারান্দায় বসে মজা দেখছে সে। সোমা হাতে কিল মেরে বললো, "কাম অন মৌরি! কোনো ব্যাপারই না। দেখিয়ে দাও নাসিফ ভাইকে! তোমার হাতে হারিকেন আছে, চাবি আছে, তোমার কী ভয়?" মৌরি এক হাজার টাকা বাজি ধরেছে নাসিফের সাথে, একা একা দোতলায় উঠে তালা খুলে কুটি দাদার ঘরে ঢুকবে সে। তার আগে কনসালট্যান্ট হিসেবে মনু চাচী গোপনে জানিয়েছেন, ছাইভস্ম যা কিছু ছিলো এই বাড়িতে, সবই সাফ করা হয়েছে। দোতলার ঘরে কিছু বইপত্র আর টুকিটাকি জিনিস ছাড়া আর কিছুই নেই। তবে তেলাপোকা, মাকড়সা, টিকটিকি এসব থাকতেই পারে। নাসিফ শুরুতে একশো টাকা বাজি ধরেছিলো, তেলাপোকা-টিকটিকি-মাকড়সার মতো থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের নাম শুনে সে একটা শূন্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সোমাও শামীমের সাথে বাজি ধরতে চেয়েছিলো, কিন্তু সোমার সাহস নিয়ে শামীমের মনে কোনো সন্দেহ নেই, জানিয়েছে শামীম। অবশ্যই একা একা সোমা ভূতুড়ে খালি বাড়িতে গিয়ে তেলাপোকাকবলিত, টিকটিকিআক্রান্ত, মাকড়সামাখামাখি ঘরে ঢুকে দশ মিনিট কাটাতে পারবে। সোমা না পারলে কে পারবে? চুমকিকেও ঠেলছিলো নাসিফ, কিন্তু চুমকি এইসবের মধ্যে নেই। সে একটা মাদুর আর মোনোপোলি বোর্ড দুই বগলে নিয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করছে এইসব বাজির ভাঁড়ামো শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। তাছাড়া, বাজি ধরা গুনাহ। মৌরি হারিকেন হাতে নিয়ে দুপদাপ করে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলো। বাড়িটা কী ধরনের কাঠ দিয়ে তৈরি, মৌরি জানে না, কিন্তু কাঠের রং একেবারে কুচকুচে কালো, আর যথেষ্ট মজবুত। সিঁড়িতে পা রাখলে কিছু ক্যাঁচক‌্যাঁচ শব্দ হয় বটে, কিন্তু গোটা বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার মতো গুরুতর কিছুর আভাস তাতে নেই। মৌরি সিঁড়ির প্রথম দফা পেরিয়ে নিচের দিকে তাকালো। নাসিফ হারিকেন উঁচিয়ে জুলজুল করে তাকিয়ে আছে দেখে মনে মনে হাসলো সে। অ্যারোসলের একটা ক্যান স্যুটকেসে করে নিয়ে এসেছিলো মৌরি, সেটা বাংলো ছেড়ে বেরোনোর সময় বার করে কোমরে গুঁজে সঙ্গে আনতে ভোলেনি। তাছাড়া, মনু চাচীর ছেলে হাফিজ নাকি গতকাল সকালেই সাফ করেছে বাড়ি, কাজেই ড্রাকুলার গুদামঘরের মতো পরিস্থিতি থাকার কথাও না। মৌরি বাইরে থেকেই খেয়াল করেছে, বাড়িটা আসলে তিনতলা সমান উঁচু। কিন্তু নিচতলায় ঘরের উচ্চতা অনেক বেশি, সেটা একটা হলঘরের মতো। কুটি দাদা দোতলার দুটো ঘরের একটায় থাকতেন। অন্য ঘরটা একেবারেই ফাঁকা এখন, মেহমান এলে সেটায় থাকতো অতীতে। তিন দফা সিঁড়ি পেরিয়ে দোতলায় কুটি দাদার ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মৌরি। এখান থেকে আশপাশটা একেবারেই অন্যরকম দেখায়। কম্পাউন্ডের ভেতরে বাড়ি, পুকুর, গাছপালা, আকাশে একফালি চাঁদ, সবই সুন্দর লাগছে দেখতে। হারিকেন নিয়ে বারান্দার রেলিঙে একটু ঝুঁকে হাঁক ছাড়লো মৌরি, "হিউস্টন, আই হ্যাড নো প্রবলেম!" সোমা উৎসাহ যোগালো, "সাবাশ মৌরি! মুরগিভাজা না ফুচকা?" হারিকেন হাতে নাসিফ বললো, "বারান্দার অরবিটে চক্কর দিলেই চলবে? ল্যান্ডিং না করেই খানাপিনার হিসাব শুরু করে দিয়েছে!" মৌরি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, একটা মৃদু খসখস শব্দ এলো তার কানে। শব্দটা ঘরের ভেতরে। মৌরির মনের মধ্যে ফূর্তির অনুভূতিটা এক নিমেষে ফুরিয়ে গেলো। এই ঘরের ভেতরে শব্দ হবে কেন? নিচ থেকে চুমকির বিরস কণ্ঠ ভেসে এলো, "ভাবী, জলদি। মশা কামড়ায়।" মৌরি হারিকেন উঁচিয়ে কুটি দাদার ঘরের উঁচু, বন্ধ দরজার দিকে চেয়ে রইলো, তার কান অখণ্ড মনোযোগে কোনো শব্দ শোনার জন্যে তৈরি হয়ে আছে। তার মনের যুক্তিপ্রবণ অংশ বলছে, ঘরের ভেতরে খসখস শব্দ হওয়াই স্বাভাবিক। হয়তো তেলাপোকা উড়ছে। বা পেছনে গাছের ডাল হয়তো বাতাসে নড়ছে। ভূতপ্রেত সব বাজে কথা। কিন্তু একটা রুগ্ন রোমাঞ্চপ্রিয় অংশ বলছে, বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি? প্রকাণ্ড একটা চকচকে রূপালি তালা ঝুলছে দরজার দুই পাল্লার দুই মোটা কড়ায়। মৌরি হারিকেন নামিয়ে রাখলো দরজার সামনে, তারপর আঁচলে বাঁধা চাবিটা দিয়ে সেই তালাটা খুলে একটা কড়ায় আটকে রাখলো। হারিকেনটা তোলার জন্যে আবার ঝুঁকতেই সে ঘরের ভেতরে মৃদু খসখস শব্দটা আবার শুনতে পেলো। সেইসাথে মৌরি দেখতে পেলো, ঘরের দরজার নিচের অংশে সরু, আনুভূমিক কতগুলো ফাঁক, অনেক ভেন্টিলেটরের মতো। দরজাটা একেবারে নিরেট নয়। মৌরি হারিকেনটা হাতে নিয়ে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো ঘরের দরজার সামনে। ভেতরে শব্দ হতেই পারে, নিজেকে প্রবোধ দিলো সে। হতেই পারে শব্দ। হয়তো বাতাসের কারণে ...। নিচ থেকে চুমকির বিরস কণ্ঠ ভেসে এলো আবার, "ভাবী, মশা কামড়াচ্ছে কিন্তু।" হিউস্টনের টিটকিরিও শোনা গেলো তারপর, "ল্যান্ডিং করতে পারবে একা, নাকি কাউকে পাঠাতে হবে?" মৌরি চোয়াল শক্ত করে হারিকেনটা উঁচিয়ে ধরে কুটি দাদার ঘরের দরজায় জোরে একটা ধাক্কা দিলো। এই দরজার কব্জাজোড়া সম্ভবত বহুদিন তেলের মুখ দেখেনি, অমসৃণ হ্রেষা তুলে ধীর গতিতে খুলে গেলো দুটো পাল্লা। মৌরি হারিকেন বাড়িয়ে ধরে ঘরের ভেতরটায় আলো ফেললো। ফাঁকা। নিচ থেকে হাততালির শব্দ ভেসে এলো। "ইটস আ স্মল স্টেপ ফর আ ম্যান ... কী হলো সোমা, পরপুরুষের গায়ে খোঁচা দাও ক্যানো ... ওহ, ওকে, ইটস আ স্মল স্টেপ ফর আ উওম্যান, বাট আ জায়ান্ট লিপ ফর ... আরে আবার খোঁচাও ক্যানো?" মৌরি ঘরের ভেতরে পা রাখলো। হারিকেনের আলোয় ঘরের ভেতরের একাংশ আলোকিত হয়েছে কেবল। পুরোনো দিনের ঘর, যথেষ্ট উঁচু, সিলিঙের কাছে তাই ক্রমশ পিছু হটে গেছে আলো, বৃক্ষচারী ময়ালের ধৈর্য নিয়ে সেখানে শুয়ে আছে অন্ধকার। মৌরি খসখস শব্দটা আবার শুনতে পেয়ে ত্বরিত পায়ে বামে ঘুরলো। ঘরের ভেতরটায় একটা লোহার খাট, আর দুটো বাক্স ছাড়া আর কিছু নেই। তবে দেয়ালে একটা ক্যালেন্ডার ঝুলছে। সেটার পাতা নড়ে উঠছে একটু পরপর। শব্দটা সেখান থেকেই আসছে। মৌরি হারিকেন বাড়িয়ে ধরে জানালা খুঁজলো। কিন্তু ঘরে কোনো জানালা নেই। শিক্ষিত, বইপড়ুয়া, ব্লগ-ফেসবুকে তর্ক করা মৌরি তাকে প্রবোধ দিলো, নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে ঘরের ভেতরে বাতাস ঢোকে। নইলে ক্যালেন্ডারের পাতা নড়বে কেন? হয়তো কোনো ছিদ্র আছে দেয়ালে। কিন্তু ভূতুড়ে সিনেমাদেখা মৌরি ফিসফিস করে বলে গেলো, আছে মৌরি, ওরা আছে! মৌরি মনে মনে নিজেকে কষে ধমক দিয়ে চোখ বন্ধ করলো কিছুক্ষণের জন্য। ক্যালেন্ডারের পাতা নড়ে উঠলো আবারো। চোখ খুলে সে হারিকেন উঁচিয়ে ধরে সিলিঙের দিকে চাইলো। বিদঘুটে কোনো চেহারা বা আকৃতি তেড়ে এলো না মৌরির দিকে, বরং নিতান্তই নিরীহ একটা কাঠের পাটাতন চোখে পড়লো তার। সেইসাথে চোখে পড়লো দেয়াল আর সিলিঙের মোহনায় কয়েকটা প্রশস্ত ঘুলঘুলি। কুটি দাদার ঘরটা মোটেও বদ্ধ নয়। হাওয়া চলাচল করে এর ভেতরে। মৌরির চোয়ালের পেশী শিথিল হয়ে এলো। ভয়খোর মৌরি মুখের ওপর যুক্তির দরজা বন্ধ হওয়ার আগ মুহূর্তে ফিসফিসিয়ে বললো শুধু, দেয়ার আর মোর থিংস ...। মৌরি এবার বাস্তব পৃথিবীর হররের দিকে মন দিলো। ঘুলঘুলিগুলো খোলা, কাজেই তেলাপোকা সাপখোপ সবই থাকতে পারে ঘরের ভেতরে। তবে চামচিকা নেই, নিশ্চিত জানে সে। আলো দেখলে চামচিকা লটপট করে উড়তে থাকে। মৌরি হারিকেনের আলোয় ঘরটা চারপাশে একবার ঘুরে দেখে নিশ্চিন্ত মনে হাঁক দিলো, "ওপরে এসো তোমরা!" সিঁড়িতে দুপদাপ পায়ের শব্দ শুনতে পেলো সে। চুমকির বিরক্ত গলা শোনা গেলো, "কামড়ে আমার হাত পা ফুলিয়ে ফেললো মশা!" মৌরি এগিয়ে গিয়ে কুটি দাদার প্রাচীন খাটের পাশে রাখা বাক্সের দিকে এগিয়ে গেলো। কী আছে ভেতরে? নাসিফ হারিকেন উঁচিয়ে সবার আগে ঘরে ঢুকলো। "ঢাকায় গিয়ে টাকাপয়সার মতো নোংরা ব্যাপার নিয়ে আলাপ করা যাবে, ঠিকাছে? চুমকি, মাদুর পাত। শামীম তুই ফ্লাস্ক আর কাপ সাজা। সোমা কি টিফিন ক্যারিয়ারে মুড়িটুড়ি কিছু রাখছো আমাদের জন্য নাকি সব একাই খেয়ে ফেলছো? আরে ... বাক্স খুলতেছো কেন?" মৌরি বললো, "ভিতরে ডায়রি আছে কয়েকটা!" শামীম বললো, "পড়তে চাইলে বের করে পড়তে পারো।" মৌরি সোৎসাহে বললো, "ইন্টারেস্টিং কিছু আছে?" শামীম এগিয়ে গিয়ে বললো, "মমমমম, আছে। কিন্তু পুরোটা না। নানা আবোলতাবোল, মাঝেমধ্যে কিছু ইন্টারেস্টিং বিটস আছে। একটা লাল মলাটের খাতা আছে, সেটাতে নানা কিসিমের ভূতপ্রেত নামানোর তরিকা লেখা, ওটা পড়লেই বুঝবা কুটি দাদা কোন কিসিমের বুজরুক ছিলো।" সোমা হারিকেনের আলোয় ঘরের ভেতরটা দেখছিলো, তার কাছে মোটেই ভালো লাগছে না ঘরের চেহারা। চুমকি বিরস গলায় বললো, আমি মশার কয়েল জ্বালাচ্ছি তাহলে। মৌরি আচমকা কী ভেবে যেন বললো, "চলো আমরা একতলার ঘরটায় যাই। ওখানে গিয়ে খেলি।" শামীম একটু আড়ষ্ট হয়ে গেলো। "একতলার ঘরে?" নাসিফ গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, "এই ঘরটা কি ইনাফ ভূতুড়ে না? আমার তো গায়ে লোম দাঁড়িয়ে আছে।" সোমা এই প্রথম মৌরির কথায় আপত্তি করলো, "দরকার কী? চলো এখানেই আড্ডা মারি।" মৌরি অনুভব করলো, একতলার ঘরটার কথা সে যেন ঠিক স্বেচ্ছায় বলেনি। একতলার ঘরে গিয়ে কেন খেলতে চাইলো সে? কিন্তু আইডিয়াটা খারাপও লাগলো না তার কাছে। এ কথা স্পষ্ট যে এই বাড়িতে ভূতপ্রেত কিছু নাই। একতলার ঘরটা এই ঘরের চেয়েও উঁচু, সেখানে নিশ্চয়ই হানাবাড়ির পরিবেশটা আরো ভালোমতো পাওয়া যাবে। সে আবার বললো, "এসেই যখন পড়েছি, একতলাটা দেখে আসি চলো। মনু চাচী তো বললেন সবই পরিষ্কার করা আছে। সমস্যা কোথায়?" চুমকি খনখনে গলায় বললো, "আমাকে মশা কামড়ে শেষ করে ফেললো। তোমরা জলদি জলদি ঠিক করো কোথায় খেলবা।" শামীম মৃদু গলায় বললো, "একতলার ঘরটা একটু অন্যরকম।" সোমা টের পেলো, তার ঘাড়ের কাছে রোম দাঁড়িয়ে গেছে। অন্যরকম মানে? নাসিফ একটা সিগারেট ধরিয়ে বললো, "কীরকম? ডানজনস অ‌্যান্ড ড্রাগনস টাইপ নাকি?" শামীম কাঁধ ঝাঁকালো, "আয় দেখাচ্ছি। একটু অস্বস্তিকর আর কি।" মৌরি বললো, "শামীম ভাই, আমি লাল মলাটের খাতাটা পেয়েছি। ওটা নিয়ে আসি সাথে?" শামীম বললো, "শিওর। তবে একটু সাবধানে হ্যান্ডল কোরো। পুরোনো দিনের খাতা তো, নরম হয়ে গেছে। কালি যেন চটে না যায়।" মৌরি বাক্সের ভেতর থেকে লাল মলাটের খাতাটা বার করে হাতে নিলো। চুমকি দুপদাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেলো হারিকেন ছাড়াই। একটু পর পর চটাশ চটাশ করে মশা মারছে সে। সবাই ঘর ছেড়ে বেরোনোর পর সবশেষে ঘর ছাড়তে গিয়ে আরেকবার হারিকেন উঁচিয়ে ঘরের ভেতরটা দেখে নিলো মৌরি। নাহ, তেলাপোকা-টিকটিকি-মাকড়সা কিচ্ছু নেই। হাফিজ মনে হয় সব ঝেড়েমুছে সাফ করেছে। হারিকেনটা নাসিফের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দরজার পাল্লা টেনে আবার লাগিয়ে দিলো মৌরি। নাসিফ সিগারেট টানতে টানতে হারিকেনের আলোয় দরজার নিচের ভেন্টিলেটরটা দেখতে লাগলো। "ইন্টারেস্টিং। দেখেছো এটা?" মৌরি মাথা নাড়লো, "হ্যাঁ। ঘরটায় জানালা নেই, কিন্তু ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা আছে ভালোই।" নাসিফ নিচু হয়ে ভেন্টিলেটরের ভেতরে আঙুল চালিয়ে কী যেন পরীক্ষা করলো, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, "ইউ নো সামথিং? আই থিঙ্ক দিস কুটি দাদা চ্যাপ ওয়াজ কোয়াইট অ্যান ইন্টারেস্টিং ফেলো। এটা একটা কাঠের লুভার।" মৌরি আঁচলের চাবি দিয়ে তালা এক কড়া থেকে খুলে দুটো কড়ার ভেতরে লাগাতে লাগাতে বললো, "লুভার কী জিনিস?" নাসিফ সিগারেটে টান দিয়ে বললো, "মমমম ... কীভাবে বোঝাই? এটাতে কাঠের কতগুলো পাত একটু কোণ করে বসানো, যাতে হাওয়া ঢোকে, কিন্তু ধূলোবালি, শব্দ, রোদ না ঢোকে। আবার ঘরের ভেতরে ছাদের কাছে ঘুলঘুলিগুলো খোলা। ইন ফ্যাক্ট, এটাই কিন্তু ঘর ঠাণ্ডা রাখার এফিশিয়েন্ট ব্যবস্থা। ঠাণ্ডা বাতাস নিচ দিয়ে ঢুকবে, ঘরের ভেতরের হিট শুষে গরম হয়ে ওপরে উঠে ভেন্টিলেটর দিয়ে বেরিয়ে যাবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি এইভাবেই কুল করা হয়, শুধু কয়েকটা এগজস্ট ফ্যান থাকে ঘুলঘুলির জায়গায় ...।" মৌরি লাল মলাটের খাতাটা বগল থেকে বের করে হারিকেন নিজের হাতে নিয়ে বললো, "চলো, নিচে চলো। যন্ত্রপাতির গল্প পরে শুনবো।" নাসিফ সিগারেটে জোরে শেষ টান দিয়ে কাঠের রেলিঙে ঠেসে ধরে আগুন নিভিয়ে বাইরে ছুঁড়ে মারলো। একতলার ঘরের দরজার সামনে শামীম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সোমা ফিসফিস করে কী যেন বলছিলো শামীমকে, মৌরি আর নাসিফকে নেমে আসতে দেখে সে চুপ করে গেলো। নাসিফ হাতে হাত ঘষে বললো, "ওক্কে। ডিল হচ্ছে, আমরা এখানে ঢুকবো, ভূতপ্রেত যা-ই আছে, দেখবো, তারপর সোজা মাদুর পেতে বসে মোনোপোলি খেলা শুরু করে দেবো। উইথ চা অ্যান্ড মুড়ি-চানাচুর। ঠিকাছে মৌরি? নো মোর গ্যালিভান্টিং অ্যারাউন্ড। এলাম, দেখলাম, মোনোপোলি খেললাম। ভিনি ভিডি ... চিমটাও কেন?" মৌরি বললো, "এটার তালা কি একই চাবি দিয়ে খোলে, শামীম ভাই?" শামীম মাথা ঝাঁকালো। তার মুখের গাম্ভীর্য কি কপট, নাকি হারিকেনের আলোয় এমন মনে হচ্ছে, ধরতে পারলো না মৌরি। কিন্তু সোমাকে দেখে সে একটু দমে গেলো। বেচারি নার্ভাস হয়ে আছে। একতলার ঘরটা কাল সকালে দেখলেও চলতো। তালা খুলে মৌরি কারো দিকে না তাকিয়ে জোরে একটা ধাক্কা দিলো। দরজার পাল্লা দুটো খোলার সময় কর্কশ শব্দে কব্জায় তেলের অভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো তাদের সবাইকে। শামীম গলা খাঁকরে বললো, "ওকে, ভয়ের কিছু নেই। ঘরটা প্রায় ফাঁকা। শুধু ...।" হারিকেন বাড়িয়ে ঘরের এক কোণে ধরলো সে। মৌরি হারিকেন হাতে ঘরের ভেতরে ঢুকে শামীমের নির্দেশ করা দিকে চাইলো। একতলার ঘরটা অনেক উঁচু, হলঘরের মতো। তিনটা হারিকেনের আলো ঘরের ভেতরের একটা ছোটো অংশই কেবল আলোকিত করতে পেরেছে, সেই বলয়ের ভেতরে কিছুই চোখে পড়লো না মৌরির। সে কয়েক পা এগিয়ে হারিকেন উঁচিয়ে ধরার পর দেখতে পেলো জিনিসটা। একটা খাঁচা। সোমা অস্ফূট শব্দ করে উঠলো। ঘরের উচ্চতার সমান একটা খাঁচা, মোটা লোহার গরাদ কংক্রিটের ভিত্তির ওপর বসানো। খাঁচাটা গোল, খুব বড় নয়, কিন্তু তার উচ্চতার মাঝে একটা অশুভ ইঙ্গিত যেন আঁকা আছে। মৌরির কানে একটা ভীতু মৌরি ফিসফিস করে বললো, আমি আবার এসেছি। বলো তো এই ঘরে খাঁচা কেন? শামীম গলা খাঁকরে বললো, "জাস্ট একটা খাঁচা। চলো এবার, খেলা শুরু করি।" প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়রো বিশাল ঘরটায়, শুরু করি ... করি ... করি ... করি ... ওরি ...। সোমা বিড়বিড় করে বললো, "চলো ওপরে গিয়ে খেলি। আমার ভালো লাগছে না।" মৌরি এগিয়ে গিয়ে হারিকেন বাড়িয়ে ধরে খাঁচাটা দেখতে লাগলো। খাঁচার ভেতরে একটা কাঠের পিঁড়ি রাখা। খাঁচার একটা দরজা আছে স্বাভাবিক উচ্চতার, সেটার গায়ে ঘরের দরজার মতোই রূপালি নতুন তালা মারা। মৌরি হারিকেন যতদূর সম্ভব উঁচিয়ে ধরে খাঁচার পুরোটা দেখার চেষ্টা করলো, কিন্তু তার আলো ঘরের সিলিঙের উচ্চতার অন্ধকার দূর করার মতো জোরালো নয়। চুমকির বিরক্ত কণ্ঠ ভেসে এলো, "ভাবী, আসো তো। খেলা শুরু করি।" মৌরি ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলো, শামীম সোমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অভয় দিচ্ছে। সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো, "অ্যাই সোমা, বোকা মেয়ে! একটা খাঁচা শুধু। ভয়ের কিছু নেই।" সোমা ঝাঁঝালো গলায় বললো, "আমি ভয় পাচ্ছি না। আমার ভাল্লাগছে না, সেটা বললাম।" মৌরি সোমার কাঁধে চাপড় দিলো, "চলো, আমরা একেবারে খাঁচাটার সামনে গিয়ে মাদুর পেতে বসে খেলি।" নাসিফ খাঁচাটা দেখে কোনো মন্তব্য করেনি, সে একটা হাই তুলে বললো, "আমার বউ খাঁচার ভিতরে ঢুকে খেলার প্রস্তাব দেয়ার আগেই চলো, আমরা যে কাজটা করতে এখানে এসেছি সেটা শুরু করি। চা, মুড়ি, মোনোপোলি। চুমকি, বোর্ড সাজা। শামীম, চা বের কর। সোমা, টিফিন ক্যারিয়ার খোলো। দিস ইজ ওয়ান ব্লাডি স্পুকি প্লেস। আমরা ভূতের গল্প করে আজকে ফাটিয়ে ফেলবো।" চুমকি একটা হারিকেন তুলে স্যান্ডেল টেনে টেনে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে গেলো। সোমা এরকম বড় হলঘর আশা করেনি। বাইরে থেকে দেখে চট করে বোঝা যায় না, ঘরের ভেতরটা কত বড়। সে দেখতে পেলো, তাদের হারিকেন এই মস্ত ঘরটার ভেতরে তিনটা আলোর পুকুর তৈরি করেছে কেবল, যাকে ঘিরে আছে ক্রমশ ঘনায়মান অন্ধকার। শামীম স্ত্রীর কপালে থুতনি ঘষে বললো, "আর কিছু নেই ঘরের ভেতর। একদম খালি। চলো খেলতে বসি।" সোমার শরীরটা একটু শিথিল হয়ে এলো। খামোকাই ভয় পাচ্ছে সে। মনু চাচীর গল্প শুনে সে ভয় পেয়ে গেলো? মৌরির দিকে তাকিয়ে একটু লজ্জা পেলো সে। সেইসাথে অনুভব করলো, ভয় পাওয়ার আগ্রহই এর মূল কারণ। চুমকি যেমন মোটেও ভয় পাচ্ছে না, কারণ তার আগ্রহই নেই। সোমা জোর পায়ে এগিয়ে গেলো সামনে। চুমকি খাঁচার দুই গজ সামনেই মাদুর পেতে বসে মোনোপোলি বোর্ড মেলে ধরেছে। মৌরি তার পাশে বসে কুটি দাদার খাতাটা খুলে ধরেছে হারিকেনের আলোয়। সোমা চুমকির উল্টোদিকে বসে মাটিতে হারিকেন নামিয়ে রাখলো। তার সামনে মস্ত দানবের পাঁজরের মতো পড়ে আছে খাঁচাটা। সোমা নিজেকে শাসন করলো মনে মনে, এটা সামান্য খাঁচা একটা। একটা আধপাগল লোকের খেয়ালের ফল। মৌরি মলাট দেয়া খাতাটার পৃষ্ঠা ওল্টালো। সে অখণ্ড মনোযোগে পড়া শুরু করেছে। চুমকি ঝড়ের বেগে টাকা ভাগ করছে। দেড় হাজার ডলার বেঁটে দিতে তার দেড় মিনিটও লাগে না। "কে কী গুটি নিতে চাও? আমি জাহাজ নিচ্ছি।" নাসিফ মৌরির উল্টোদিকে বসে পড়ে বললো, "আমার একখান ইস্ত্রি আছে যদিও, আরেকটা পেলে মন্দ হয় না।" শামীম হারিকেন নামিয়ে রেখে চায়ের ফ্লাস্ক আর কাগজের গ্লাস খুলতে খুলতে বললো, "মনু চাচীকে বলে রেখেছি, রান্নাঘরের দরজা খোলা রাখা আছে। বেশি রাতে যদি চা খেতে হয়, ওদের আর বিরক্ত করার দরকার হবে না, আমরাই বানিয়ে নিয়ে আসতে পারবো। ওরা আবার একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। এন্তার পরোটা বানিয়ে রেখেছে হাফিজের বউ, হাঁড়ি ভর্তি গরুর গোস্তো আছে, আর এক থালা মুড়ি মাখিয়ে রাখা আছে। শুধু গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। কাজেই ... সারারাত ননস্টপ আড্ডা মারা যাবে।" নাসিফ বললো, "সোমা টিফিন ক্যারিয়ারটা খোলো, এক চক্কর মুড়ি হয়ে যাক। আর ননস্টপ আড্ডা মারবো কীভাবে রে, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে হবে না আমাকে? অজুর পানির কী ব্যবস্থা?" চুমকি জিভ দিয়ে ছ্যাক করে একটা শব্দ করলো। নাসিফের এসব রসিকতা পছন্দ করে না সে। নাসিফ হারিকেন উঁচু করে ধরে বললো, "আরেব্বাহ, অজুর বদনা যোগাড় করে রেখেছিস দেখি!" হারিকেনের আলোয় খাঁচার পাশে দেয়ালের কাছে একটা কাঁসার পাত্রের দিকে আঙুল তুললো সে। শামীম শুকনো হেসে বললো, "ঐটা বদনা না রে। কুটি দাদার মাম্বোজাম্বোর পাত্র।" মৌরি খাতা থেকে চোখ তুলে চকচকে বদনাটার দিকে তাকিয়ে ছিলো, সে অনেকক্ষণ পর মুখ খুলে বললো, "আয়ুষ্কটাহ!" নাসিফ চমকে ওঠার ভান করে বললো, "কস্কী! এইসব কী বলে রে?" মৌরি হাতে ধরা খাতায় আঙুল দিয়ে টোকা দিলো, "এখানে বলা আছে এটার কথা। প্রেত নামাতে এটা লাগে।" সোমা একটু কাত হয়ে উঁকি দিলো খাতার পাতায়। হলদে হয়ে এসেছে পাতাগুলো, তাতে বড় বড় গোটা গোটা বাংলা হরফে কী যেন লেখা। সেইসাথে অদ্ভুত সব নকশা আঁকা। শামীম চুমকির শ্যেন দৃষ্টি দেখতে পেয়ে থতমত খেয়ে বললো, "আমার টুপি।" সোমা অন্যমনস্কভাবে বললো, "আমার জুতো। ... এই মৌরি, কী লেখা এই খাতায়?" মৌরি চুমকির দিকে না তাকিয়ে বললো, "আমার গাড়ি। ... আর বোলো না সোমা। পুরো খাতা ভর্তি নানা ভূতপ্রেত নামানোর কায়দা। ইন্টারেস্টিং।" শামীম সোমার হাত থেকে টিফিন ক্যারিয়ার একরকম কেড়ে নিয়ে খুলে একটা বাটি আলগা করে বসলো। "আমি অনেক আগে কয়েকটা পড়েছিলাম, যখন খাতাটা প্রথম খুঁজে পাই। রশিদ চাচা তখনো বেঁচে ছিলেন। উনি বলেছিলেন, কুটি দাদা নাকি অসুস্থ হওয়ার পর এরকম আরো দশ-বারোটা খাতা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন কেরোসিন ঢেলে।" সোমা বললো, "এটা পোড়াননি কেন?" শামীম ঠোঁট উল্টে বললো, "কে জানে? বাকিগুলোই বা পোড়ালেন কেন, তা-ই বা কে জানে?" মৌরি চুমকির দৃষ্টির তাপমাত্রা টের পেয়ে তাড়াহুড়ো করে হাতে দুই ছক্কা নিয়ে বললো, "ওকে, লেটস রোল ... কে কার আগে মারবে সেটা ঠিক হোক। এই চাললাম ... দুই আর এক ... ধুত্তেরি!" খেলা শুরু হলেও একটু পর সবাই মৌরির ওপর ক্রমশ বিরক্ত হয়ে উঠলো। সে আনমনে ছক্কার চাল দিয়ে খাতার পাতা উল্টে যাচ্ছে। খেলায় একজন এমন অমনোযোগী হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বাকিরা চটে ওঠে। মিনিট চল্লিশেক খেলার পর চুমকি চটাশ করে হাতে পায়ে চাপড়ে মশা মারতে মারতে বললো, "ভাবী, তুমি হয় খেলো, নয় বই পড়ো।" মৌরি বললো, "আমি খেলছি তো! ... আর তোমাকে এতো মশা কামড়াচ্ছে কেন? কয়েল তো জ্বলছে দেখি।" চুমকি বিরক্ত স্বরে ট্রাফালগার স্কোয়ারে সোমাকে ভাড়ার টাকা গুণে দিতে দিতে বললো, "জানি না। আমার রক্ত মনে হয় বেশি টেস্টি।" নাসিফ কাপে চা ঢেলে নিয়ে বললো, "চুমকি, মোনোপোলিতে ব্যাঙ্কের সিস্টেমটা পাল্টানো যায় নাকি রে? একটু পর পর চান্স আর কমিউনিটি চেস্টে কীসব সুদের কথা বলে। এটাকে মুদারাবা বানিয়ে দিলে কেমন হয়?" চুমকি মশা মারতে মারতে আগুনঝরা চোখে নাসিফের দিকে চেয়ে ছক্কা বাড়িয়ে ধরলো। নাসিফ চাল দিতে দিতে বললো, "সুদ আর মুদারাবা সেই বুজুর্গ আর বুজরুকের মতো। আকাশপাতাল তফাৎ রে।" শামীম হাতঘড়িতে সময় দেখে বললো, "সাড়ে এগারোটা বাজে। কেউ কি গোস্ত-পরোটা খেতে চাও আবার?" সোমা কনুই দিয়ে গুঁতো দিলো শামীমকে। "সন্ধ্যা বেলায় না গপগপ করে খেলে?" শামীম বললো, "এখন আবার একটু খাবো। কে কে খাবা বলো, সেই অনুপাতে বেড়ে নিয়ে আসি।" চুমকি হাত তুললো, "আমি খাবো ভাইয়া। দুটো পরোটা।" নাসিফ বললো, "নিয়ে আসিস গোটা চারেক। সোমা লজ্জা কোরো না। কয়টা খাবা আগেভাগে বলো। পরে ভাগ চাইলে পাবা না কিন্তু।" সোমা বললো, "অ্যাই মৌরি, পরোটা খাবে?" মৌরি কুটি দাদার খাতা থেকে চোখ তুলে বললো, "শামীম ভাই, আমার আর সোমার জন্য দুটো করে। আর এক টুকরো কয়লা আনতে পারবেন?" শামীম একটু বিস্মিত হয়ে বললো, "কয়লা?" মৌরি বললো, "হ্যাঁ। মনু চাচীরা কয়লা দিয়ে রান্না করে দেখলাম। এক টুকরো হলেই চলবে।" নাসিফ বললো, "কয়লার ছাই দিয়ে দাঁত মাজবা নাকি?" মৌরি চোখ পাকিয়ে বললো, "পাকনা পাকনা কথা না বলে শামীম ভাইয়ের সাথে যাও। এতো গোস্ত-পরোটা উনি একা আনতে পারবেন নাকি? আর টিউবওয়েল থেকে বোতলে করে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এসো।" শামীম আর নাসিফ একটা হারিকেন তুলে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। চুমকি ব্যাঙ্কের টাকা সন্তর্পণে সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললো, "সোমা আপুর দান এরপর।" সোমা বললো, "আচ্ছা আসুক ওরা। খেয়েদেয়ে আবার শুরু করবো নাহয়।" চুমকি একটা হারিকেন তুলে নিয়ে বললো, "আমি ঘরটা একটু ঘুরে দেখি।" মৌরি কুটি দাদার খাতার পাতায় ডুবে আছে, সে কোনো উত্তর দিলো না। সোমা ঘষটে ঘষটে মৌরির পাশে এসে বসে বললো, "অ্যাই মৌরি ... কী পড়ছো এতো মন দিয়ে? কী লেখা আছে খাতায়?" মৌরি মুখ না তুলেই বললো, "খুবই ইন্টারেস্টিং জিনিস! আর শামীম ভাই যতোই বলুক, এই কুটি দাদা লোকটাকে আমার বুজরুক মনে হচ্ছে না। হয়তো মাথায় সামান্য গোলমাল ছিলো, কিন্তু ... অনেক গোছানো।" সোমা বললো, "কী গোছানো?" মৌরি খাতায় আঙুলের টোকা দিয়ে বললো, "অ্যাপারেন্টলি ... উনি বিভিন্ন ভূতপ্রেত নামানোর কায়দা নোট করে গেছেন। একেবারে স্কেচসহ।" সোমা গলা বাড়িয়ে খাতায় উঁকি দিলো। হলদেটে পাতায় ফাউন্টেন পেন দিয়ে স্পষ্ট হস্তাক্ষরে সমান্তরাল লাইনে লেখা। এক পাতা জুড়ে ছবি, অন্য পাতায় লেখা। মৌরি বললো, "এটা সম্ভবত একটা পাণ্ডুলিপি। উনি অন্য কোথাও রাফ করে এখানে ফ্রেশ কপি তুলেছেন। কোনো কাটাকুটি নেই। বানান ভুল আছে কিছু, কিন্তু খুব সহজ ভাষায় লেখা। কিছু কিছু শব্দের মানে জানি না, হিংটিংছট টাইপের কিছু মন্ত্রও আছে, আবার মাঝেমধ্যে আরবিফারসি কথাবার্তা ... বাট ভেরি ইনট্রিগিং! তুমি কি রক্ষ বা হাড়কুড়ানির নাম শুনেছো কখনো?" সোমা আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো, চুমকি হারিকেন হাতে ঘরের এক প্রান্তের দেয়াল ঘেঁষে হাঁটছে। সে মাথা নাড়লো, "নাহ। কী এগুলো?" মৌরি সোৎসাহে বললো, "আমিও জানি না। কিন্তু উনি ক্যাটেগোরি ভাগ করে এদের ডাকার পদ্ধতি বর্ণনা করে গেছেন। জিহ্বিক, রক্ষ, দৈত্য, গুলমন্ত, হাড়কুড়ানি, লাশখাকি, করীদানো ...।" সোমা বললো, "তারপরও তোমার মনে হয় উনি বুজরুক ছিলেন না?" মৌরি খাতা থেকে চোখ তুলে সোমার দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি জানি না সোমা। বুজরুকরা এতো ফ্যাসিনেটিং জিনিস লেখে না বোধহয়। তারা লোকজনের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে ভালোবাসে। কুটি দাদা লোকটা বরং অনেকটা ... ফ্যান্টাসি লেখকদের মতো। উনি হয়তো নিজের তৈরি একটা ফ্যান্টাসির জগতে বাস করতেন। বুজরুক বললে একটু অবিচারই হবে।" সোমা কুটি দাদার খাতায় উঁকি দিয়ে বললো, "এটা কীসের নকশা?" মৌরি বললো, "এটা হচ্ছে হাড়কুড়ানি আবাহন মঞ্চের নকশা। মাটিতে চুনের গুঁড়ো দিয়ে একটা বৃত্ত আঁকতে হবে। তারপর কয়লার গুঁড়ো দিয়ে তার ভেতরে একটা ত্রিভূজ। দুটোর মধ্যেই একটু ফাঁক রাখতে হবে যাতে হাড়কুড়ানি এসে ঢুকতে পারে ভেতরে। তাকে টোপ দেয়ার জন্যে খাসির পাঁজরের হাড়ের টুকরো এইরকম স্পাইরাল করে বিছিয়ে দিতে হবে। সবচেয়ে বড় টুকরোটা থাকবে ঐ ত্রিভূজের ভেতরে। হাড়কুড়ানি সেটা তুলতে গেলে কয়লা আর চুন দিয়ে ত্রিভূজ আর বৃত্ত বন্ধ করে দিতে হবে। ... মজার না?" সোমা ফিসফিস করে বললো, "আচ্ছা, এই যে মনু চাচীরা রাতের বেলা নানা শব্দ শুনতেন, সেগুলো কীসের?" মৌরি হলঘরের পরিসীমা ধরে পায়চারি করে বেড়ানো চুমকির দিকে চোখ রেখে আনমনে বললো, "আমার ধারণা কুটি দাদা নিজেই ঐসব শব্দ করতেন। এই খাতায় অনেক মন্ত্রটন্ত্রের কথা বলা আছে। আর দূর থেকে রাতের বেলা কোনো শব্দ এলে সেটাকে শুরুতেই ভূতের শব্দ বলে মনে হতে পারে। ... নেভার মাইন্ড। কিন্তু প্রত্যেকটা পদ্ধতিই খুব ... ইম্যাজিনেটিভ। অনেকটা সুকুমারের ছড়ার মতো লাগে পড়তে।" সোমা বললো, "কয়লা দিয়ে কী করবে তুমি?" মৌরি জিভ কেটে বললো, "আমি ভাবছিলাম, আজ রাতে একটা ভূতকে আমরা ডাকলে কেমন হয়?" সোমা চমকে উঠলো। "না না মৌরি, এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ির দরকার নেই। আমরা মজা করতে এসেছি, মজা করে চলে যাই চলো।" মৌরি বললো, "দূর বোকা! ভয়ের কিছু নেই। এটাও তো একটা মজাই?" চুমকির মশা মারার শব্দ প্রবলভাবে প্রতিধ্বনিত হলো ঘরের ভেতরে। "উফফ, এত্তো মশা!" মশা ... মশা ... মশা ... অশা ...। সোমা ফিসফিস করে বললো, "এই মেয়েটাকে এতো মশা কামড়ায় কেন?" মৌরি বললো, "জানি না। আমাকে কিন্তু এতক্ষণ একটা মশাও কামড়ায়নি।" সোমা বললো, "এই খাঁচাটার কী কাজ, কোথাও লেখা আছে খাতায়?" মৌরি আনমনে মাথা নাড়লো। "আমি পড়তে পড়তে সেটাই খুঁজছিলাম। এখন পর্যন্ত খাঁচার কথা তো কিছুই লেখা নেই। নানা মন্ত্র, নকশা, আর প্রচুর হাড্ডিগুড্ডির কথা লেখা।" চুমকি পিতলের পাত্রটার গায়ে পা দিয়ে টোকা দিতেই একটা খনখনে ধাতব শব্দ ছড়িয়ে পড়লো ঘরে। "এই ভাবী, সারা ঘরে আর কিচ্ছু নেই, জানো?" মৌরি বললো, "হ্যাঁ, সব সাফ করে রেখেছে।" শামীম আর নাসিফ কথা বলতে বলতে ঘরে এসে ঢুকলো। শামীমের হাতে একটা বড় ট্রে, আর নাসিফের হাতে একটা পানির জেরিক্যান। "এ কী? মৌরি এখনও লেখাপড়া করো নাকি?" নাসিফ হাঁক ছেড়ে বললো। মৌরি বললো, "চলো একটা ভূত নামাই।" শামীম মাদুরের ওপর ট্রে নামিয়ে রেখে বললো, "মৌরি কুটি দাদার খাতা পড়ে খুব এক্সাইটেড মনে হচ্ছে? পাতায় পাতায় এই ভূত সেই ভূত নামানোর কায়দা লেখা, তাই না?" মৌরি বললো, "শামীম ভাই কি পুরোটা ম্যানুস্ক্রিপ্ট পড়ে দেখেছেন?" শামীম বললো, "আমি ইউনিভার্সিটিতে থাকতে একবার কয়েক বন্ধুর সাথে এসেছিলাম এখানে। তখন আমরা একবার কুটি দাদার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চেষ্টা করেছিলাম। চামচিকা ছাড়া আর কিছু তো আসেনি।" মৌরি একটা কাগজের প্লেটে মাংস আর পরোটা তুলে নিয়ে বললো, "কোন ধরনের প্রেত নামানোর চেষ্টা করেছিলেন?" শামীম বললো, "মনে নেই ঠিক। মাটিতে চুনের গুঁড়া দিয়ে হিজিবিজি নকশা করতে হয়েছিলো। আর কুটি দাদার চোথায় প্রচুর উদ্ভট জিনিসের কথা লেখা। বরই গাছের ডালপোড়া ছাই, শিং মাছের মাথা, পেকে পঁচে যাওয়া আমের আঁটি ... আমরা সব জিনিস যোগাড় করতে পারিনি। মনে হয় সে কারণেই আর কিছু আসেনি শেষ পর্যন্ত।" নাসিফ পরোটা ছিঁড়ে মুখে পুরে বললো, "মৌরির গায়ে হলুদের কথা মনে পড়ে গ‌্যালো!" চুমকি এসে হারিকেন নামিয়ে খাবার বেড়ে নিতে নিতে বললো, "তোমরা একটু পর পর খালি খাচ্ছো। খেলার মুড নাই কারো। আমি বরং খেয়েদেয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ি।" নাসিফ বললো, "আরে না। ভূতুড়ে গল্পের কম্পিটিশন হবে এখন। তোর স্টকে তো অনেক সত্য গল্প আছে, ঘুমিয়ে পড়লে সেগুলো বলবে কে?" মৌরি বললো, "কয়লা এনেছো?" নাসিফ পকেট থেকে খবরের কাগজে মোড়ানো এক টুকরো কয়লা বার করে দেখালো মৌরিকে। "এখনই খাবা?" মৌরি বললো, "শামীম ভাই, চলেন খাওয়ার পর আজকে আবার কোনো প্রেতকে ডাকি আমরা।" শামীম সোমার দিকে একবার তাকিয়ে বললো, "প্রেত নামাতে একশো একটা হাবিজাবি লাগে যে?" নাসিফ গরুর মাংস চিবাতে চিবাতে বললো, "এই ডানজনের মধ্যে একটা ড্রাগনকে ডাকো মৌরি।" মৌরি চাপা হেসে বললো, "ইন ফ্যাক্ট, কুটি দাদার খাতায় ড্রাগনের জন্যও একটা ফর্মুলা আছে!" শামীম বললো, "তাই নাকি? ওটাকে ডাকতে কী লাগে?" মৌরি টিস্যুতে হাত মুছে খাতার পাতা ওল্টালো। "খুবই সিম্পল জিনিস শামীম ভাই। এক টুকরা কয়লা, আর ঐ যে ঐ পাত্রটা ... আয়ুষ্কটাহ। ওটার মধ্যে পানি ঢেলে কয়লার টুকরোর ওপর বসিয়ে মনে মনে মন্ত্র পড়তে হয়। ওহ, তার আগে তেজসৃপ আবাহন মঞ্চ আঁকতে হয়।" চুমকি পরোটার ভেতরে মাংস পুরে রোল বানিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো, "এইসব মন্ত্র পড়লে গুনাহ হয়।" শামীম সোমার দিকে তাকিয়ে বললো, "কী সোমা, নামাবে নাকি একটা ড্রাগন?" সোমা পরোটার ছোটো ছোটো টুকরো মাংস দিয়ে খেতে খেতে বললো, "চলো নামাই।" নাসিফ ঝড়ের বেগে পরোটা শেষ করছিলো একের পর এক, সে মুখভর্তি খাবার নিয়ে বললো, "ভালোই হয়। কষ্ট করে আর চুলা জ্বালতে হবে না এরপর। ড্রাগনের মুখের উপর কেটলি ধরেই চা বানানো যাবে।" চুমকি চটাশ করে নিজের পায়ে চাপড় দিয়ে বললো, "উফফফ, সাংঘাতিক চুলকাচ্ছে এখন। এত্তো মশা!" মৌরি দ্রুত পরোটা খাওয়া শেষ করে খবরের কাগজের পোঁটলা থেকে কয়লার টুকরোটা বের করে হারিকেন হাতে উঠে এগিয়ে গেলো এক পাশে। "তোমার খাওয়া শেষ হলে আলোটা একটু ধরবে? আমাকে খাতা দেখে দেখে আঁকতে হবে।" নাসিফকে ডাকলো সে। সোমা প্লেটটা নামিয়ে রেখে কাগজে হাত মুছে উঠে পড়ে বললো, "আমি আসছি দাঁড়াও। নাসিফ ভাইয়ের খাওয়া মনে হয় ভোরের আগে শেষ হবে না।" নাসিফ আরেকটা পরোটা প্লেটে তুলে নিয়ে বললো, "ড্রাগনের সাথে মারপিট করার আগে গায়ে একটু শক্তি জোগাতে হবে না?" শামীম কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো, তার মুখ গম্ভীর। চুমকি বুঝে গেছে, আজ আর মোনোপোলির মুড নেই কারো, সে জমির দলিল আর টাকা গোছাতে লাগলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ করে। মৌরি চোখ তুলে বললো, "চুমকি, ছক্কা দুটো কাজে লাগবে কিন্তু।" চুমকি চটাশ করে মশা মেরে বললো, "আচ্ছা।" নাসিফ খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে উঠে এগিয়ে গেলো, তার একটু কৌতূহল হচ্ছে। মৌরি খাতা দেখে দেখে সিমেন্টের মেঝেতে কয়লা দিয়ে একটা নকশা আঁকছে। মৌরির আল্পনার হাত বেশ ভালো, তাই জটিল নকশাটাও সহজেই তার হাতে ফুটে উঠছে মেঝেতে। একটা বৃত্তের মাঝখানে দুটো ত্রিভূজ দিয়ে আঁকা তারা, তার ভেতরে একেক অংশে বিচিত্র সব চিহ্ন। হারিকেনের আলোয় মৌরির অভিব্যক্তি দেখে নাসিফ একটু বিস্মিত হলো, এমন তন্ময়ভাবে সে মৌরিকে আগে কিছু করতে দেখেনি। সোমা হারিকেন হাতে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে, তার চেহারায় স্পষ্ট অস্বস্তি। নকশাটা যতোই পূর্ণ চেহারা নিচ্ছে, সোমার চেহারা ততোই ফ্যাকাসে হয়ে উঠছে। "তা এই ড্রাগন এসে কী করবে? আলাপসালাপ করবে আমাদের সাথে?" মৌরি খসখস করে নকশা আঁকতে আঁকতে বললো, "সেরকমই তো মনে হয়।" নাসিফ খাঁচাটা দেখিয়ে বললো, "ওটার ভিতরে আসবে তো, নাকি?" মৌরি নাসিফের ইশারা দেখে হেসে ফেললো, "হ্যাঁ! ঐ যে বদনাটা, ওর মাঝে পানি ঢেলে ওটার নিচে কয়লা রেখে ঐ কাঠের পিঁড়িটার ওপরে রেখে আসতে হবে। যদি ড্রাগন আসে, কয়লার টুকরোটা আপনাআপনি জ্বলে উঠবে। বদনার নিচে ছোটো ছিদ্র আছে, সেই ছিদ্র দিয়ে পানি বের হতে থাকবে। পানি পড়ে আগুন নিভে গেলে ড্রাগন আবার চলে যাবে।" "বাপরে! বদনাটা তাহলে একটা টাইমার? ওয়াটারক্লক?" "মমমমম ... হ্যাঁ! এর জন্যই ওটার নাম আয়ুষ্কটাহ। ড্রাগনের আয়ু আছে ওটার মধ্যে।" মৌরি খসখস করে কয়েকটা টান দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। "পানি এনেছো সাথে?" নাসিফ আঙুল বাড়িয়ে জেরিক্যানটা দেখালো। সোমার অস্বস্তিটা তার মাঝেও ধীরে ধীরে সংক্রামিত হচ্ছে। মৌরি জেরিক্যান থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে বললো, "সবার খাওয়া শেষ হলে আমরা শুরু করবো। আমি খাঁচার ভেতরে ঐ পাত্রটা রেখে আসি।" শামীম ধীরে ধীরে খাচ্ছে, সে একবার নাসিফের দিকে তাকালো শুধু। নাসিফ শামীমের কাছে এগিয়ে গিয়ে চাপা গলায় বললো, "কী রে, ভয় পাচ্ছিস নাকি?" শামীম হাসার চেষ্টা করলো। "ধুর! ... এই ঘরটাই একটু ডিপ্রেসিং। খাওয়া শেষ কর, মজাই হবে।" চুমকি মোনোপোলির বোর্ড গুছিয়ে আবার প্লেটে একটা পরোটা নিয়ে বসলো। "আমি এইসব কুফরি কাজে নেই ভাইয়া। আমি খাই, তোমরা ড্রাগন নিয়ে খেলো।" মৌরি ঘরের এক প্রান্ত থেকে পিতলের পাত্রটা নিয়ে এসেছে, তার চোখেমুখে একটা চাপা উত্তেজনা। জেরিক্যান থেকে সেটার ভেতর অল্প একটু পানি ভরে সে জিনিসটা উঁচু করে ধরলো। পাত্রটার তিনটা পায়া আছে, তার নিচে সামান্য ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে মাটির ওপর নামিয়ে রাখলে। মৌরি পাত্রের নিচে হাত ধরে দেখলো, তার হাতে সূক্ষ্ম জলের বিন্দু ঝরে পড়ছে। নাসিফ তার প্লেটে পরোটার শেষ টুকরোটা মুখে পুরে বললো, "থিওরেটিক্যালি, কয়লায় আগুন জ্বলা শুরু করলেও কিন্তু এই পাত্রের ভেতরের পানি বাষ্প হয়ে যাবে। কাজেই পানি পড়ে আগুন নিভে যাবে, সে সম্ভাবনা খুব কম।" চুমকি হেসে ফেললো। "তুমি কি ভাবছো সত্যি ড্রাগন আসবে?" নাসিফ মৌরির দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকালো। "আমি শুধু ফিজিক্যাল সমস্যাটার কথা বললাম।" সোমা এসে মাদুরের ওপর বসে দুই হাঁটু হাতে ভাঁজ করে বসলো। তার মুখ গম্ভীর। মৌরি এগিয়ে গিয়ে আঁচলের চাবি দিয়ে খাঁচার তালা খুললো। সারাবাড়িতে একই রকম তালা লাগানো, সব তালা একই চাবি দিয়ে খোলা যায়। নাসিফ দেখলো, মৌরি সাবধানে কাঠের পিঁড়িতে কয়লার টুকরোটা নামিয়ে তার ওপর আয়ুষ্কটাহ বসিয়ে হারিকেনের আলোয়া খাঁচার ভিতরটা ঘুরে ফিরে দেখছে। সে গলা চড়িয়ে বললো, "ড্রাগনের বিষ্ঠাফিষ্ঠা আছে নাকি?" মৌরি উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে এসে দরজায় আবার তালা লাগিয়ে দিলো। নাসিফ একটু অস্বস্তি নিয়ে দেখলো, মৌরি দরজাটা বার বার ধাক্কা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখছে। শামীম নাসিফের অভিব্যক্তি পাল্টে যেতে দেখে চাপা গলায় বললো, "কুটি দাদা খুব কনভিন্সিং বুজরুক ছিলেন, বুঝতেই পারছিস। মৌরি তো খুব একটা ইমপ্রেশনেবল মেয়ে না। তাহলেই ভাব, মনু চাচীরা কেন ভয় পাবে না?" সোমা মুখ তুলে মৌরিকে জিজ্ঞাসা করলো, "এখন কী?" মৌরি মাদুরের ওপর বসে পড়ে বললো, "এখন আমরা পাঁচজন চক্র তৈরি করবো ...।" চুমকি গলা চড়িয়ে বললো, "আমি নাই এইসবের মধ্যে। আমি খাচ্ছি, তোমরা চক্র করো গিয়ে।" মৌরি চুমকিকে অনুরোধ করতে যাচ্ছিলো, নাসিফ বললো, "ও এসব করতে না চাইলে সাধাসাধি করো না তো। কী করতে হবে বলো।" মৌরি নাসিফের গলায় হালকা বিরক্তির আভাস পেয়ে একটু আহত হলো। সে ক্ষুণ্নমুখে বসে পড়ে বললো, "সবাই হাত ধরে গোল হয়ে বসতে হবে।" চুমকির মোনোপোলির বোর্ড থেকে ছক্কা দুটো হাতে তুলে নিলো সে। সোমা পরিবেশ হালকা করার জন্য বললো, "এই চান্সে নাসিফ ভাইয়ের সাথে হাত ধরাধরি করা যাবে।" নাসিফ নিজেকে সামলে নিয়েছে, সে তরল গলায় বললো, "আলো থাকবে নাকি নিবিয়ে দিতে হবে?" মৌরি কুটি দাদার খাতার একটা পাতা ওল্টালো। "অন্ধকারের কথা বলা হয়েছে এখানে। আমরা হারিকেনের সলতে কমিয়ে দিতে পারি। কারণ একেবারে অন্ধকার করলে ইনস্ট্রাকশনগুলো পড়া যাবে না।" চুমকি চটাশ করে মশা মেরে বললো, "আমি খাচ্ছি তো!" নাসিফ বললো, "হারিকেন কমিয়ে দিয়ে খা না।" চুমকি গজগজ করতে করতে হারিকেনের সলতে কমিয়ে দিয়ে উঠে একটু দূরে গিয়ে বসলো। মৌরি বাকি দুই হারিকেনের সলতে নিভু-নিভু করে দিতেই ঘরটার চেহারা পাল্টে গেলো। সোমার মনে হলো, অন্ধকারের সমুদ্রে দুটো ছোট্টো আলোর ভেলা ভাসছে তাদের সামনে। একটু দূরে প্রায়নির্বাপিত আলোর সামনে চুমকিকে আবছা দেখা যাচ্ছে কেবল। মৌরি বললো, "এখানে বলা আছে, চক্র মন্ত্র দ্বারা রক্ষিত। আবাহন মন্ত্রজপপূর্বক তেজসৃপকে ডাকিতে হইবেক। তেজসৃপের উপস্থিতির ব্যাপ্তি আয়ুষ্কটাহ দ্বারা নির্ধারিত হইবেক। ।" নাসিফ বললো, "আবাহন মন্ত্রটা কী?" মৌরি পৃষ্ঠা উল্টে বললো, "ওহ, মমমমম ... না সবাইকে পড়তে হবে না। মন্ত্রটা একবার করে পড়ে এই ছক্কা দুটো মারতে হবে। একসঙ্গে দুটো ছক্কা উঠলে তেজসৃপ এসে হাজির হবে, এমনটাই বলা আছে।" নাসিফ খিকখিক করে হেসে উঠলো। "কুটি দাদা লোকটা কটঠিন চিজ! প্ল্যানচেট, উইচক্র্যাফট, হোকাসপোকাস, লুডু সব একসঙ্গে ঘুটা দিয়ে ... হিহিহিহি!" চুমকি বিরক্ত স্বরে বলে উঠলো, "হাত পা চুলকাচ্ছে! এত্তো মশা!" মৌরি ছক্কা দুটো হাতে নিয়ে বললো, "সোমা আমার কাঁধে হাত রাখো, নাহলে ছক্কা চালার জন্যে হাত খোলা পাবো না।" সোমা চুপচাপ মৌরির কাঁধে হাত রাখলো। মৌরি ছক্কা দুটো হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে খাতায় টোকা মন্ত্রটা জপতে লাগলো। তারপর গলা খাঁকরে বললো, "সবাই রেডি?" সম্মতিসূচক মৌনতা চুমকির মশা মারার শব্দটাকে জোরালো করে তুললো শুধু। মৌরি একটা শ্বাস ফেলে হাত থেকে ছক্কা দুটোকে গড়িয়ে যেতে দিলো। শামীম চোখ কুঁচকে ছক্কার রিডিং দেখার চেষ্টা করলো, কিন্তু আবছা আলোয়া কিছুই বোঝার উপায় নেই। নাসিফ ফিসফিস করে বললো, "ছক্কা দেখার দরকার কী? দুই ছক্কা উঠলে তো খোদ ড্রাগনই এসে হাজির হবে?" মৌরি হাত বাড়িয়ে ছক্কা দুটো আবার তুলে নিলো। তারপর আবার বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়তে লাগলো। সোমা ঘাড় ঘুরিয়ে খাঁচার দিকে চাইলো। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার সেখানে। মৌরি আবার ছক্কা ছুঁড়ে মারলো। সোমা টের পেলো, ঘরের ভেতরে হঠাৎ ফুরফুরে বাতাস বইছে। বাইরে আকাশে মেঘ ডেকে উঠলো একবার। নাসিফ বললো, "ড্রাগন আসুক আর না আসুক, আমার বৌ বৃষ্টি নামিয়ে দিয়েছে ছক্কা মেরে। এরপর মনে হয় বাজ পড়বে।" মৌরি মুখ দিয়ে শশশশ আওয়াজ করে আবার ছক্কা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো। মৌরির ছক্কার চালের পর গোটা ঘর ঝমঝম করে নেচে উঠলো বাইরে বৃষ্টির শব্দে। ঘরের ভেতরে একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার স্রোত বয়ে গেলো আবার। চুমকি একটু দূরে খাবারের প্লেট নামিয়ে রেখে হাত মুছতে লাগলো। নাসিফ প্রতি চালের পরপরই রসিকতা করছে। "কিন্তু না ... অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে চলে গেলো ছক্কা। ... গোলপোস্টের ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে ...। হাৎ ভাই, আসছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে, কুটি দাদা লিখিত, মৌরি বেগম পরিবেশিত, দাঁত-নখ-লেজসহ, ড্রাআআআগোনননননন!" মৌরি হাতের ছক্কা একটু জোরে গড়িয়ে দিলো। নাসিফ কিছু বলার জন্যে মুখ খুলেছিলো, কিন্তু তার চোখের সামনে একটা উজ্জ্বল আগুনের বিন্দু নিঃশব্দে জ্বলে উঠে তাকে চুপ করিয়ে দিলো। সোমা নাসিফের জোরে শ্বাস নেয়ার শব্দ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে আঁতকে উঠলো। "মৌরি!" মৌরি খাঁচার দিকে পেছন ফিরে বসেছিলো, সে আগুনটা দেখে চমকে উঠে অস্ফূটে বললো, "এসেছে!" একটু দূরে চুমকি গজগজ করে উঠলো, "কী যে চুলকাচ্ছে সারা গায়ে! এত্তো মশা!" কয়লার আগুনটা অন্ধকারে একটা হিংস্র প্রশ্নবোধক হয়ে জ্বলতে থাকলো। শামীম খাবি খাওয়া গলায় বললো, "এখন কী?" মৌরি কাঁপা হাতে খাতাটা তুলে নিয়ে চাপা গলায় বললো, "তেজসৃপের উপস্থিতি স্বল্পকালীন হওয়া বাঞ্ছনীয়। চক্র যদিও মন্ত্র দ্বারা রক্ষিত, কক্ষটি নহে। সকল প্রদীপ নির্বাপিত রাখিতে হইবেক। তেজসৃপ যেন সাধককে দেখিতে না পায়। তোমরা ... তোমরা কেউ হাত ছেড়ো না, ঠিক আছে? চক্র ভাঙা যাবে না, এটা মন্ত্র দিয়ে রক্ষিত বলছে।" শামীম চাপা গলায় বললো, "মৌরি তুমি একটা হারিকেন নিবিয়ে দাও তো!" মৌরি কাঁপা কাঁপা হাতে হারিকেনের সলতের চাবি খুঁজতে লাগলো। নাসিফ ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বললো, "কিন্তু ওটা কোথায়? খাঁচার ভেতরে তো কিছু দেখা যাচ্ছে না!" সোমা ফুঁপিয়ে উঠে বললো, "আমার পিঠে ... আমার পিঠে কে যেন শ্বাস ফেললো এই মাত্র!" নাসিফ বললো, "মৌরি ... এরপর কী করতে হবে? কয়লার আগুন তো এখনও জ্বলছে!" মৌরি খাতার পাতা উল্টে চাপা গলায় পড়তে লাগলো, "তেজসৃপের দেহ অন্ধকারে প্রজ্জ্বলিত হইয়া দেখা দিবেক। কোনরূপেই সাধক চক্রের দরজা খুলিয়া যেন বাহির না হয়।" একটা অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এলো ঘরে। দূরে কোথায় যেন একটা চাপা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেলো। শামীম ভাঙা গলায় বললো, "চক্রের দরজা?" মৌরি কাঁপা গলায় বললো, "তাই তো বলছে ... চক্রের দরজা আবদ্ধ রাখিতে হইবেক।" সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে খাঁচাটার দিকে তাকালো। খাঁচার ভেতরে কয়লার টুকরোটা ক্রমশ উজ্জ্বলতর হয়ে জ্বলছে। নাসিফ বিড়বিড় করে বললো, "চক্র হচ্ছে ঐ খাঁচাটা।" সোমা ককিয়ে উঠলো, "আমাদের ওটার ভেতরে থাকার কথা? আমাদের খাঁচার ভেতরে থাকার কথা ছিলো?" মৌরি কাঁপা হাতে পৃষ্ঠা ওল্টালো, কিন্তু এরপর নতুন অধ্যায় শুরু। করীদানো আবাহন। মৌরির হাত থেকে খাতাটা পড়ে গেলো একটা চাপা, দীর্ঘ, ঘড়ঘড়ে শব্দে। একটু দূরে চুমকির হারিকেনের পাশে একটা শরীরের আকার ফুটে উঠলো ঠাণ্ডা, নীলচে আভায়। চুমকির শরীরের। চুমকি উঠে দাঁড়িয়েছে। পাগলের মতো শরীর চুলকাচ্ছে সে। একটা ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে তার গলা দিয়ে। ধারালো কিছু দিয়ে কাপড় ছেঁড়ার ফড়ফড় শব্দ ভেসে এলো এরপর। চুমকি নিজের শরীর থেকে কাপড় ছিঁড়ে খুলে ফেলছে। তার গোটা শরীর থেকে বেরিয়ে আসছে নীলচে আভা। সে আলোয় দেখা যাচ্ছে, চুমকির গায়ে চামড়ার ওপর ছোটো ছোটো আঁশ গজিয়ে উঠছে। চুমকির একটা হাত মাথার ওপর উঠে গেলো। বাইরে ঘুলঘুলি দিয়ে চকিতে ঘরে ঢুকলো চমকিত বিদ্যুতের আলো, সে আলোয় সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্যে দেখা গেলো, চুমকির সারা গায়ে আঁশ, তার হাতে গজিয়ে উঠেছে ধারালো নখর, স্কার্ফ ছিঁড়ে ক্রমশ বিকৃত আকার নিচ্ছে তার মাথা। ড্রাগন এসেছে ডাকে সাড়া দিয়ে। মন্ত্রে রক্ষিত চক্রের ভেতরে নির্লিপ্তভাবে জ্বলতে লাগলো এক দলা কয়লা। তার বাইরে, অরক্ষিত ঘরের ভেতরটা কয়েকবার উজ্জ্বল হয়ে উঠলো দীর্ঘ, শ্বেততপ্ত শিখার স্রোতে। চারবার। [সমাপ্ত] (৮৩৫৯) টাঙ্গাইলের কথ্য ভাষায় কিছু সংলাপ অনুবাদ করে দিয়েছেন সবুজ বাঘ।
false
ij
রাগ দেশ_ নদী কিংবা মধ্যরাত্রির গভীর মাধুর্য ভারতীয় উপমহাদেশে যে কটি রাগ অত্যন্ত জনপ্রিয়- রাগ “দেশ” তার মধ্যে অন্যতম। দেশ রাগটি মধ্যরাত্রির রাগ। এবং অত্যন্ত শ্র“তি মধুর রাগ এটি। আরোহন: সা রে মা পা নি র্সা অবরোহনে কোমল নিষাদের প্রয়োগ রস বৃদ্ধি করে। রাগটির খাম্বাজ ঠাটে। খাম্বাজ ঠাটের মূল্য বৈশিষ্টই হল কোমল ণি-র ব্যবহার। এই কোমল ণি-র জন্যই খাম্বাজ ঠাট ফোক গান এর জন্য উপযোগী। ইউরোপে খাম্বাজকে বলে মিক্সিলিডিয়ান মোড। রে মাপা ণিধাপা -এই স্বরগুচ্ছগুলি দেশ রাগের পরিচয় বহন করে। মাঝরাত্তিরে যখন এই স্বরগুলি (কন্ঠে কি যন্ত্রে) বাজে তখন ... তখন কী এক অর্নিবচনীয় আবেগ টের পাওয়া যায় ...আশ্চর্য এই রাগ ... তবে মাঝরাতেই)যে দেশ রাগটি শুনতে হবে; অন্য সময়ে শোনা যাবে না এমন কথার কোনও মানে হয় না। আজকাল সময়সংক্রান্ত অনেক ধারনাই পালটে যাচ্ছে। রাগটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় এমন- ঠাট-খাম্বাজ। জাতি-সম্পূর্ন। বাদী-রে। সম্বাদী-পা। সময়-মধ্যরাত্রি। ঠাট-উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগগুলি ১০টি ঠাটের ওপর ভিত্তি করে রচিত। জাতি-একটা রাগে ক’টা স্বর ব্যবহৃত হবে- জাতির নির্ভর করে তার ওপর। ৭ স্বরের রাগ সম্পূর্ন; আবার ৫ স্বরের পেনটাটনিক রাগকে বলা হয় ঔরব। বাদী- রাগে সবচে গুরুত্বপূর্ন স্বরই বাদী স্বর। সম্বাদী-বাদী স্বরের পরেই সম্বাদী স্বরের গুরুত্ব। সময়-রাগের পূর্বাঙ্গ ও উত্তরাঙ্গর স্বরের ওপর সময় নির্ধারিত হয়। সা রে গা মা-এই চারটি স্বর হল পূর্বাঙ্গ বা লোয়ার ট্রেটরা কর্ড; মা পা ধা নি র্সা-এই চারটি স্বর হল উত্তরাঙ্গ বা আপার ট্রেটরা কর্ড; রাগটি উপভোগ করার জন্য অবশ্য এসব তত্ত্বকথা বোঝার দরকার নাই। দেশ রাগের দুটো লিঙ্ক দিলাম। একটি কন্ঠ। অন্যটি গিটার। গিটার-এ দেশ রাগ বাজিয়েছেন ব্রিটিশ গিটারিস্ট জেফ বেক। Click This Link কন্ঠ: নিতু সরস্বতী। Click This Link) সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৫৪
false
ij
None আজকাল রুপহাটি ইষ্টিশনের একটা বেঞ্চিতে বসে থাকে সে । প্ল্যাটফর্মের ওপর বেঞ্চিতে বসে থাকতে থাকতে কত কী যে দেখে সে? রেলের যাত্রী-ফেরিওয়ালা- ফকির... ওই পারের রেললাইন, ওভার বিরিজ । কত কী যে দেখে সে। দিনভর দেখে। অনেক রাত পর্যন্ত স্টেশনের বেঞ্চিতে বসে থেকে থেকে এসবই দেখে: ঘন ঘন চা খায়, একটার পর একটা সিগারেট টানে। রুপহাটির ইষ্টিশনটি এমন আহামরি কিছু নয় । এমন কী জংশনও নয় এটি । দিনে দু-তিনবার লোকাল ট্রেন থামে। আন্তনগর না থেমে- বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঝমঝম ঝমঝম করে চলে যায় ঈশ্বরদীর দিকে। ইষ্টিশন মানে- লাল রঙের ব্রিটিশ আমলের পুরনো ঝরঝরে একটা দালান; ঢোকার মুখে একটা দীর্ঘ পুরনো কড়ই গাছ। সামান্য সেড, এবড়োথেবড়ো প্ল্যাটফর্ম, কয়েকটা মলিন বেঞ্চি-তারি একটায় বসে থাকে মনিরুল। হলুদ পাঞ্জাবি, কালো প্যান্ট আর ঘন কালো ঝাঁকড়া চুলের নিচে কপাল, ... তারপর ঘন জোরা ভুরুর নিচে জ্বলজ্বলে দুটো আয়ত চোখে তাকে কেমন যেন ঘোর-লাগা দেখায় ... স্বাস্থ ভালো নয় মনিরুলের, লম্বা-ঢ্যাঙা, রংটা মিশমিশে না-হলেও কালোর দিকেই বলা যায়, ডান হাতে একটা কালো রঙের লোহার বালা-সুজারগরের বিনয় বাউলা দিসিল বছর কয়েক আগে চইত সংক্রান্তির দিনে ভাটুপাড়ায় মেলায় । মনিরুলের কালো রঙের আঙুলগুলি সরু সরু-মধ্যমায় একটি রুপার আঙটিতে মরকত পাথর বসানো। একবার আটঘরিয়ায় মোল্লা পাড়ার বেতাব গাজির বাড়িতে এক কামেল পীর এসেছিলেন। আবাবিল শাহ- তিনিই এক ঘর মানুষের সামনে শূন্য থেকে ছোঁ মেরে পাথরটা তুলে চোখের নিমিষে গুঁজে দিয়েছিলেন মনিরুলের হাতে- না, মরকত পাথরটার জন্য আবাবিল শাহ পয়সা নেননি। পাথরটা লাকড়ি পাড়ার শঙ্কর স্যাকরাকে দিয়ে বানিয়ে মধ্যমায় পরার পর থেকে মনিরুলের গলা শুকানিটা অনেকখানি কমে গেছে। আগে ঘন ঘন গলা শুকাতো মনিরুলের । কাজেই, পীর-ফকিরে ভারি ভক্তি মনিরুলের। মনিরুলের বাবা হাসেম হাজীও বেঁচে থাকতে বিস্তর পীর ফকিরের মুরিদানী করছিলেন । অনেক অনেক দিন আগে কালো পাঞ্জাবী পরা এক ফকির এসেছিল মদিনা মহলে, মানে মনিরুলদের বাড়িতে। নয়নপুরের আলেম ফকির। মনিরুলের তখন চৌদ্দপনেরো বছর বয়স। জ্বীন দেখার নেশায় পড়ে যাওয়াতে পীর-ফকিরে ভীষন আগ্রহ। সেই আলেম ফকির মনিরুলকে কোন্ এক আলীজান পীরের কথা বলছিল: কবে মইরা গেছিল আলীজান পীরে। একদিন বিহান বেলায় আমার কাছে আইসা অজুর পানি চাইল আলীজান পীরে । আতরের খোশবু- আমি তো কাইত, দিলাম অজুর পানি কোনওমতে। তারপরে দেখি নাই। কন কি? সত্য? বালক মনিরুলের চোখেমুখে বিস্ময়। হ, বাবা, সত্য। মিছা কথা কমু ক্যান-আমি পিরালি করি। বলে, আলেম ফকির হেসেছিল। ... তো, বেঞ্চির ওপর বসে বসে রুপহাটির ইষ্টিশনে মানুষজন দেখে মনিরুল। কত রকম মানুষ যে রুপহাটির ইষ্টিশনে রাতদিন ঘুরঘুর করে। এরই মধ্যে অন্ধ ফকিরের কন্ঠে আলাউদ্দীন বয়াতির গান কানে আসে -আমার প্রানের মন্দিরায়/কেড়ে নিল সাত জন চোরায় .. কোণ্ এক ঘোরলাগা মানুষের গান। সে নিজেও এক ঘোর লাগা মানুষ। ঘোরের মাথায় বাড়ি ফিরতে মনে থাকে না। তা, আজকাল তার বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায় বটে । বাড়ি কাজেই- স্টেশন থেকে হাঁটা পথে মিনিট দশকের পথ। রাতে বাড়ি ফেরার পথের ওপর অন্ধকার কিংবা জ্যোৎস্না ঝরে ঝরে পড়ে। শোনা যায় ঝিঁঝির ডাক। মাঝে মাঝে দূর থেকে শিয়ালের ডাক । সে নির্বিকার হাঁটে। সিগারেট টানে, শিস দেয় কিংবা গান গায়; আমার বাবা আলহাজ আলী/ যের কাছে মারফতের কলি/ কলব হইয়া যায় নূরানী চাইলে এক নজর...গান থামিয়ে হা হা করে হাসে। মনিরুল কিছু পাগল আছে বটে। শৈশব থেকেই ... এবং কথাটা রুপহাটির সকলেই কমবেশি জানে। খাওয়া পরার চিন্তা নাই-পাগলামী সে করতেই পারে। পৈত্রিক একটা ‘স’ মিল আছে মনিরুলের। সাত/আট বছর ধরে সেই হাসেম ‘স’ মিলটা দেখাশোনা করছে রঞ্জন । রঞ্জন তার ছোটবেলার বন্ধু। একসঙ্গে রুপহাটির প্রাইমারীতে পড়ত (হ্যাঁ, কিছুকাল পাঠশালায় গিয়েছিল বটে মনিরুল)। রঞ্জনের বাপের ভিটে উয়ভপুর- রুপহাটি থেকে খানিক দূরে বলেই ‘স’ মিলেরই পিছনে একটা ছাপড়া ঘরে থাকে রঞ্জন; বিয়ে-থা করেনি । ফরসা আর শান্ত -সুবোধ রঞ্জনের স্বাস্থও ভালো, ওকে বিশ্বাস করা যায়। রঞ্জনের এবার একটা বিয়ে দিতে হয়। কথাটা ভেবে মুচকি হাসে মনিরুল। ঠিক তখনই দূর থেকে ট্রেনের হুইসেল ভেসে আসে ... ঐ তীক্ষ্ম শব্দে কী কারণে আরিফার মুখটি ভেসে ওঠে তার মনে। মনিরুল জানে রুপহাটির ষ্টিশনটিকে সতীন ভাবে আরিফা ... আরিফার মনের জ্বালা এখানেই। বিয়ার আগে কেউ কয় নাই যে পোলার খারাপ ... তারপরেও বিয়াটা হইছিল। আরিফার বাপের সংসারে ততদিনে ধস নেমেছিল । বড় মেয়েকে পার করতে মরিয়া হয়েই ছিল উত্তরপাড়ার আসলাম মাস্টার। পাত্র রুপহাটির হাসেম হাজীর একমাত্র পুত্র। কাজেই ...। হাসেম হাজীর অবস্থা বেশ ভালো। কাজেই, বিয়েটা ধুমধামের সঙ্গেই হল। বিয়ের পর থেকেই আরিফা দেখতেছে যে ...তার স্বামী উদাসী। মানুষটা ইষ্টিশানে গিয়া বইসা থাকে। ইষ্টিশনে কী করে সে? ভেবে ভেবে কূলকিনারা পায় নি আরিফা। এদিকে আরিফা বাড়িতে একা সারাদিন । শ্বশুড় বিয়ার দুই মাস আঠারো দিন পর ইন্তেকাল করেছেন; শ্বাশুড়ি অনেক দিন থেকেই জীবিত নাই। মনিরুলের কী কারণে ভাইবোনও নাই। এমনটা হইতে পারে। উত্তরপাড়ার আজিজুল ভাইয়েরও ভাইবোন ছিল না। কত শখ ছিল আজিজুল ভাইয়ের সঙ্গে ঘর করবে আরিফা। হইল না। বাপে আর শ্বশুড়ে বইসা যুক্তি কইরা কী একটা ঘাড়ে চাপাইয়া দিল। শূন্য বাড়িতে দীর্ঘশ্বাস পড়ে আরিফার। ভিতরে একটি মানুষ বাড়তে থাকে। কয় মাস হইল? কে রাখে হিসাব? মনিরুলদের পুরনো ইঁটের উঠান-ঘেরা একতলা দালান-বাড়ি: ‘মদিনা মহল’। মনিরুলের দাদা ছিল জোরদার। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল মদিনা । এই বড় দালানটা অবশ্য তার আমলের নয়। আগে নাকি লম্বা আটচালা ছিল ঘর। - হাসেম হাজীর দিয়াশেলাইয়ের ফ্যাক্টরি ছিল লাকড়ি পাড়ায়- পাকিস্তানি সৈন্যরা পুড়িয়ে দিয়েছিল-যাক ... মদিনা মহলের উঠানে বৃষ্টিবাদলের দিন প্যাঁক কাদায় ভরা থাকে। সদর থেকে বারান্দা পর্যন্ত ইট বসানো। হাঁস-মুরগীর দঙ্গল উঠানে: সারক্ষণ প্যাঁক প্যাঁক কক কক কক কক করে। একটা বাদামী রঙের নেড়ি কুকুরও আছে। দালানের পিছনে একটা পুকুর। পুকুরের ওপারে ঘন বাঁশের ঝাড়। মেঘলা দিনে অন্ধকার হয়ে থাকে। শন শন হাওয়া-বাতাস বয়। তখন ভারি কষ্ট হয় আরিফার। বাপের অসুখ। দেখতে যে যাবে তার উপায় নেই। আরিফা বেহুলার মতন কান্দে। স্বামী উদাসী। উদাসী মানুষ মরা ... এ বাড়ির রান্নাবান্না করে সেতুর মা। মাঝবয়েসী, বেঁটে, কালো, থলথলে। কথা বলে কম। সেতুর মায়ের সঙ্গে কথা বলে মনের ভার নামানো যায় না। মর্জিনার আরও ফাপড় লাগে। কাঁদে। মোল্লা পাড়ার টুনটুনি জড়ায় ধরে বলে-কাইন্দো না বু। মেয়েটা মাঝেমাঝে আসে। বিয়ার বয়স হইছে টুনটুনির। স্বামী নিয়া স্বপ্ন দেখে, খালি বিয়ার কথা, উদাসী মানুষ বুঝে না। ওর লগে কথা হবে কী! এ বাড়ির বাজার-সদাই করে যে লোকটা- তার নাম সোলায়মান, লোকটা বুড়া, তার ওপর কানে খাটো। আদা আনতে বললে জিরা আনে। তবে প্রায় প্রতি রাতেই সেতুর মায়ের ঘরে যায় সালায়মান । আরিফার কেমন যেন সন্দেহ হয়। শ্বশুড়ও কি সেতুর মায়ের ঘরে যাইত? মনিরুল? তখন সোলায়মান কোথায় যাইত? শ্বশুড় বাঁইচা থাকতে? ইষ্টিশনের পাশের চিপা গলিতে পাড়া আছে আরিফা জানে। সেখানে? আরিফার শরীর ঘিনঘিন করে ওঠে। আল¬ারে আমি কোথায় আইসা পড়লাম? আরিফা বিধবার মতন কান্দে। ... ‘স’ মিলের ম্যানেজার রঞ্জন এসে মাস শেষে টাকা দিয়ে যায়। তখন বুকের দিকে তাকায় লোকটা । আরিফার শরীর ঝিম ঝিম করে ওঠে। রঞ্জনের হাত থেকে যন্ত্রের মত টাকা নেওয়ার সময় তলপেটের কাছে শিরশির করে আরিফার । রঞ্জনের ফরসা রঙের নিরীহ মুখ। অথচ আরিফা জানে লোকটার নাভীর কাছে লকলক করছে লোভ। “বৌদি, জল খামু।” পানি এনে দেয় আরিফা। রঞ্জনের লোভী চোখ আরিফা ভরাট বুকের ওপর ঘোরে-আঁচলটাও খানিক না সরিয়ে পারে না আরিফা। আপনি একটা বিয়া করেন রঞ্জন ভাই। আরিফা চাপা স্বরে বলে। আপনি আমার লগে যাইবেন বউদি? কথাট একদিন রঞ্জন বলেই ফেলেছিল। আরিফার শরীরে বৃষ্টিবাদলার দিনের মদিনা মহলের উঠানের ময়লা পানি ঢুকে গেছিল। আর, হাঁসের গায়ের নোনা গন্ধ পাচ্ছিল ... আপনি চইলা যান। চইলা যান কইলাম। আরিফা ফিসফিস করে বলে। চিৎকার করতে পারে না। রান্নাঘরে সেতুর মা বসে মসলা বাটতাছে। রঞ্জন পানি না খেয়েই চলে যায়। মনিরুলকে সে ভীষণ ভয় খায়। মনিরুল তার পায়ের তলার মাটি। ... সেই মনিরুল অনেক রাতে বাড়ি ফিরে এসে ঘুমায়া পড়ে । কোনও কোনও দিন খায়ও না। এত কম খায় মানুষটা। আল্লা কি দিয়া তারে বানাইছে। বউরে আদরসোহাগ করতে মনে থাকে না। ...অথচ, রঞ্জন? উত্তরপাড়ার আজিজুল ভাই? আজিজুল ভাই সারাক্ষন ঘুরঘুর ঘুরঘুর করত ... সম্পর্কে খালাতো ভাই ... ঘন ঘন বাড়ি আসত। আমিনার জন্মের পর থেকে মায়ে অসুস্থ-বিছনায় পড়া। । বাবায় ইসকুলে। আমিনা কিছু বুঝত না। আজিজুল ভাই জড়ায়া ধরত, চুমা খাইত; বুক দইটা ডলত ... আরও কত কী করত। আর এই লোকটা? দিন কয়েক হলো আরিফার কেমন সন্দেহ হয়-মানুষটা অন্য কোথাও বিয়া বসে নাই তো? কয়েক দিন পর। সকালবেলা মনিরুল বাইরে যাবে-আরিফা তাকে আটকালো। আপনি কই যান, কি করেন বইলা যান। কন্ঠস্বরে মৃদু অনুযোগ। মনিরুল বলবে কেন? সে পুরুষ মানুষ। মোল্লা পাড়ায় বেতাব গাজির বাড়িতে নাকি এক কামেল পীর আসছেন। তারে একবার নজর করতে হয়। রোদটা চড় চড় করে বাড়তেছিল। কামেল পীর আবার কখন চলে যায়। আরিফা দুইহাত তুলে পথ আগলে রেখেছিল। পথ ছাড় ...। মনিরুলের স্বরটা শীতল। না। পথ ছাড়! এবার ক্রদ্ধ স্বরে গর্জন। না। আমারে বলেন আপনি কই যান কি করেন। বিয়ের পর এই প্রথম মনিরুল আরিফাকে থাপ্পড় কষল। তারপর হনহন করে বেরিয়ে গেল। সন্ধ্যের মুখে মনিরুলকে স্টেশনের সামনে দেখতে পেয়ে ছুটে যায় সোলায়মান । তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে কী বলতে কী বলল বুড়া । মনিরুল কামেল পীরের মজবা দেখে দুপুর থেকেই সামান্য টাল হয়ে ছিল। বুড়োকে হাত নেড়ে তাড়িয়ে দিল। তারপর ইষ্টিশনে গিয়ে বসে থাকল। মাঝরাতের কিছু আগে বাড়ির পথ ধরল সে। বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আরিফাকে দেখতে পায় না। গেল কই? অন্য সময় যতই রাত করে ফিরুক- কাছে এসে দাঁড়ায়, ভাত খেতে বলে। আজ বলল না। সকালে থাপ্পড় মারছি বইলা রাগ করছে। কিন্তু, গেল কই সে? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে সে। পরদিন সকালে দেরি করেই ঘুম ভাঙ্গল মনিরুলের। ঘরে রোদ ঝলমল করছিল। আরিফাকে না দেখে ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়ল । সেতুর মা এসে বলল, কালো পাঞ্জাবি পইরা একঝন ফকিরব্যাটায় আসছিল। আমি আইটা থালাবাডি লয়া ঘাটলায় গেছিলাম। পুকুর ঘাটলা থেইকা ফির‌্যা দেখি কেউই নাই। সেতুর মায়ের কথা শুনে বুকটা ভীষন ধকধক করতে থাকে মনিরুলের। কালো পাঞ্জাবী পরা ফফির ... ভীষন অবাক হয়ে যায় মনিরুল। অনেক অনেক দিন আগে কালো পাঞ্জাবী পরা এক ফকির এসেছিল মনিরুলের বাড়িতে। নয়নপুরের আলেম ফকির। মনিরুলের তখন চৌদ্দপনেরো বছর বয়স ... কিন্তু, তা কী করে সম্ভব! পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে হন হন করে হেঁটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় । মদিনা মহলের বাইরে রোদে রোদে ভরে আছে। কলাঝোপে রোদ। কাটা গুঁড়ির ওপর রোদ। সে ধীরে ধীরে উঠান পেরিয়ে পিচ রাস্তার সামনে চলে আসে। পিচরাস্তায় একটা ট্রাক চলে যায়। ধীরে ধীরে স্টেশনের দিকে যেতে থাকে সে। ইস, কেন যে আরিফারে থাপ্পড় মারলাম! দিন কয়েক আগে আরিফার মুখে শ্বশুরের অসুখের কথা শুনেছিল মনিরুল। রাগ কইরা বাপের বাড়ি চইলা যায় নাই তো? বারোটার লোকালে উঠল সে। সোওয়া একটায় উত্তরপাড়ায় নামল। তারে দেখে ছোট শালী আমিনা কী খুশি? শ্বশুড়ও। আমার মা রে আনলা না যে? তাইলে আরিফায় এইখানে আসে নাই? গেল কই সে? বিস্ময় সামলে নিয়ে মনিরুল তার শ্বশুড়কে বলল, আমি এই দিকে অন্য কাজে আরছিলাম আব্বা। আচ্ছা। সন্ধ্যার মুখে রুপহাটি ষ্টেশনে এসে নামল মনিরুল। বাড়ি আর ফিরল না। স্টেশনেই একটা বেঞ্চির ওপর বসে থাকল। বাড়ি ফিরে কী লাভ? তখন থেকেই খালি মনে হচ্ছিল-ষ্টেশনের এই বেঞ্চে বইসা বইসা আমি কত কী দেখি। রেললাইনের ওইপারে খাম্বা। ইলেকট্রিকের লাইন। খাল। পিচরাস্তা। জিকা গাছ ... খালি আরিফারে দেখলাম না। হায়, ও চইলা গেল! পোয়াতি হইছিল। ইস, ক্যান যে থাপ্পড় মারলাম! আমি মুছাফির মানুষ। আমার কী হইছিল? দেশান্তরী হল মনিরুল । অনেক অনেক দিন আগে আলেম ফকিরের দ্যাশ ছিল ভাটি অঞ্চলে। ঘর সংসার ছিল তার, ঘর ভর্তি পুলাপান আর জুয়ান একটা বউও ছিল; তয়, একরাত্রের খোয়াবে খিজির নবী নাখোশ হয়ে আলেমকে কী বললেন - পর দিনই গায়েব হয়ে যায় সে। তবে সেসব অনেক দিনের পুরনো কথা ... আলেম ফকিরের আস্তানা এখন বিলহাটার পশ্চিমে নয়নপুর ইষ্টিশনের দক্ষিণে। নয়নপুর ইষ্টিশন থেকে আড়াই ক্রোশ পথ পার হয়ে পুরনো একটা মসজিদ লাগোয়া দালানে। নয়নপুরের লোকেরা বলে: আলীজান পীরের মসজিদ। মসজিদের সামনে একটি অনতিবৃহৎ দীঘি - গজার মাছে ভরতি সেই দীঘিতে কালো টলটলে পানি-কী কারণে কচুরিপানা নেই, আইষ্টা গন্ধও নাই । কালচে পুরনো ইঁটের আটখানা ঘাটলা আছে; পশ্চিম দিকের ঘাটলায় একটা কৎবেল গাছ ... তারপরে বেশুমার গাছপালার মইধ্যে কালা ইঁটের পুরনো দরদালানের ভগ্ন¯ত’প । দালানকোঠার পিছনে আবার ঘন বাঁশের জঙ্গল। সেখানে ঘন ছায়ার মধ্যে সার সার পুরানা পাকা কবর। নয়নপুরের লোকের বিশ্বাস: ঐ ঘন ছায়ায় আলীজান পীরের কবরও আছে। দরদালানে অন্ধকার অন্ধকার কোঠা, ইঁটের মেঝে, ফাটল ধরা। কোঠাগুলায় আগে কবুতরে বিষ্টা, ছাগলের লাদি, সাপের খোলাশ আর স্থানীয় ডাকাতদলের ফেলে যাওয়া জঞ্জালে ভর্তি ছিল - আলেম ফকিররের দোওয়ায় নাকি মুরিদানের মকসুদ পূর্ন হয়-কাজেই মুরিদরাই সাফসুতরো করে দিয়েছে কোঠাগুলি। আস্তানাটি লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে শুনশান এলাকায় হলেও দু-বেলা ভিড় কমবেশি লেগেই থাকে। সে যা হোক। সফরকালে ফকিরের নেয়ামত বাড়ে। আলেম ফকিরও বৎসরে একবার সফরে যাত্রা করেন: এইবারে যেমন সে রুপহাটির দিকে গেল। অনেক বছর ঈশ্বরদির পানে যাওয়া হয় না। রুপহাটির হাসেম হাজী আলেম ফকিরের বিশেষ পরিচিত ছেলেন; পরিচিত মানে-দশবারো বছর আগে একবার হাসেম হাজীর ‘মদিনা মহলে’ গেছিল আলেম ফকির। তখন হাজী সাহেব বাড়ির পিছনের পুকুরে জাল ফেলার নির্দেশ দিয়ে আর আতপ চালের ফিরনি পাকিয়ে বেশুমার খাতিরযত্ন করছিলেন। আফসুস- হাজী সাহেব আর জিনদা নাই। তবে যারা জিন্দা আছে তারা খুব খাতিরযত্ন করল। ছুট মিঞার ফুটফুটে বউ- ছুট মিঞা বাইত ছেল না। হাজীবাড়ির খাদেম বুড়া সোলায়মান বলল: বছর দেড়েক হইল ইন্তেকাল ফরমাইছেন হাসেম হাজী । শুনে আলেম ফকিরের দিলটা চইত মাসের মাঠের মতন ফাইটা গেল। আহা,হাজী ছাহেব বড় ভালো লোক ছিল। মদিনা মহলের পিছনে পুকুর-তারপর বাঁশঝাড়। বাঁশঝারের মইধ্যে হাজী বাড়ির গোরস্তান। সোলায়মান বুড়ায় পথ চিনায়ে নিয়া গেল- হাজী ছাহেবের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে ঝরঝর ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে কবর জিয়ারত করল আলেম ফকির। তারপর পর জোহরের নামাজ আদায় করে খেতে বসল। বারান্দায় বসে পালং শাক ডলে ভাত খেতে খেতে ছোট মিঞার বৌটির মলিন মুখখানা দেখে যা বোঝার বুঝেছিল আলেম ফকির। বউটি কেমন মনমরা হইয়া ছিল। সংসার করিয়া সুখি না হইলে সংসারে থাকিয়া কী লাভ? উপরোন্ত, অন্য পথের হদিশ জানে আলেম ফকির। সবই আল¬ার ইচ্ছে। কী এক ঘোরে ছোট মিঞার বউরে সে নিয়া যাবে বলে ঠিক করে ফেলে। এখন আম্মাজানের অনুমতি প্রয়োজন। পূর্ণিমার মতন বদনখানাও কেমন থমথম করছিল সেদিন । কাঁসার গেলাসে দুধ আনার সময় আলেম ফকির আলগোছে প্রস্তাব দিল ...না, আরিফায় চমকায় নাই ...অনেক দিন ধরেই পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিল ...কালো পাঞ্জাবি পরা ফকিরের কথায় (আমার লগে তুমি যাইবা মা?) কালো পাঞ্জাবি পরা ফকিরের কথায় কী ঘোর লাগল - যামু বাবা-বলেই ফেলল। না, ফকিরের হাত ধরে পথে নামতে বুক কাঁপেনি আরিফার। আত্মহত্যার চেয়ে ভালো। ভিতরের মানুষটা পাঁচ মাস ধরে না-বাড়লে আত্মহত্যাই করত আরিফা। কেমন স্বামী আমার-শরীরে হাত তুলে! পিছনের পুকুরের ঘাটলায় আইটা থালাবাটি নিয়ে গেছিল সেতুর মা । সোলায়মান বুড়ায় থাকা না-থাকা সমান; তারপর, কালো বোরখাটা পরে আলেম ফকিরের সঙ্গে পথে নেমে কত ঘটনা ... ট্রেনে টিকিট লাগে না, হোটেলে খাইলে বিল লাগে না ... রিকশায় উঠলে ভাড়া লাগে না। আরিফাকে নয়নপুরের আস্তানায় নিয়ে এসে মুরিদদের ডেকে ‘বেটি’ বলে পরিচয় দিল আলেম ফকির। মুরিদদের মুখচোখে সমীহের ভাব ফুটে উঠেছিল। আরিফার নতুন নাম দিল আলেম ফকির: আলেয়া। ...তারপর থেকে নয়নপুরের আস্তানায় দিন কাটছে আলেয়ার। আলেম ফকিরের শিষ্যরা আলেয়াকে বিশেষভক্তি শ্রদ্ধা করে । তাতে আলেয়ার মনের কষ্ট কমে যেতে থাকে। তার মন ঠান্ডা হতে থাকে। আর, এই জায়গাটিও কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা। আলেয়া আর কোনওদিনই রুপহাটি ফিরবে না। স্বামী এমন উদাসী এমন পাষন্ড ...উত্তরপাড়ায় বাপের বাড়িও যাবে না কোনওদিন ...তারা জেনেশুনে পাগলের সঙ্গে বিয়া দিল ... আলেম ফকিরকে সব খুলে বলে আলেয়া । আলেম ফকির বলে, থাউক মা। কান্দিস না। আল্লার মর্জিতে আগের দিন সব কবর হইয়া গেছে। কথাটা আলেয়া বোঝেনি। তবে বুকের অশান্তি কাটাতে নামাজ ধরল আলেয়া। আলেম ফফিরের ইচ্ছা আলেয়া নামাজ পড়ুক- তবে জোরজবরদস্তি করে না আলেম ফফির; সে আলীপন্থি মারাফতী তরিকার ... আস্তানায় মাঝে মাঝে বয়াতি-গায়েনরা আসে। আব্বাস গায়েন গায়-আমার বাবা আলহাজ আলী/ যার কাছে মারফতের কলি/ কলব হইয়া যায় নূরানী চাইলে এক নজর... তারপর এক সময় আলেয়া টের পেয়ে যায় আস্তানায় জ্বীন আছে। এবং জ্বীনের নাম ইসমাইল। বড় উদার এই ইসমাইল। কত কী যে এনে খাওয়ায়। হালুয়া-রুটি; সেমাই-পায়েস-ফিরনী। সাদা কাচের গেলাসে নীল সরবত...। একবার মরকত পাথর এনে দিল ইসমাইল। মরকত পাথর বসানো রুপার আঙটি পরে মানুষটা ... আলেয়ার বুক হা হা করে ওঠে। কান্দে ... মর্জিনা জ্বীন দেখলেও কখনও মৃত মানুষকে জীবিত দেখে নাই। এক সন্ধ্যায় তাও দেখল। আলেম ফকির আস্তানায় ছিল না। নাজির হাটের আটি বুড়ি আলেম ফকিরের বয়স্কা মুরিদানী। সেই আটি বুড়ির নাকি জ্বর, তাকে দেখতে গেছিল। মাগরিবের নামাজের আগে উঠানে শুকনা কাপড় তুলছিল আরিফা। হঠাৎই চোখ গেল পিছনের অন্ধকার অন্ধকার ঘন বাঁশের জঙ্গলের দিকে-যেখানে সার সার কবর.. সে দিক থেকেই কে যেন এদিকে আসতেছিল -বুড়া মতন। একটু পর উঠানে উঠে এল কালো জোব্বা পরা এক বৃদ্ধ। বৃদ্ধের মাথায় কালো পাগড়ি। গায়ের রং ধবধবের রং ধবধবে সাদা, মুখে পাকা দাড়ি। ভুরুও পাকা। কী রকম নীল নীল চোখ। বৃদ্ধ কাছে আসতেই ্র আতরের তীব গন্ধ পায় আরিফা। খসখসে কন্ঠে কী যেন বললেন বৃদ্ধ । ভাষাটা বোঝা গেল না। আরবী? আরিফা যা বোঝার বুঝে গিয়েছিল। আরিফার শরীর ভিজে যায়, শীত করে, হাত থেকে কখন কাপড়গুলি খসে পড়ে ... আরিফা এলিয়ে পড়ে। তারপর কখন যে চেতন ফিরল। পরে সব শুনে আলেম ফকিরের কী হাসি। তারপর হাসি থামিয়ে দরদ ভরা কন্ঠে বলল, তোর কাছে আলীজান পীরে আইছিল মা- অজুর পানি চাইতে। সবার কাছে চায় না। এই অধম নালায়েকের কাছে একবার চাইছিল। যখন প্রথম প্রথম এই আস্তানায় আইলাম। আলেম ফকিরের কথাটা আরিফা বোঝেনি। তার নয় মাস চলছিল। এসব ব্যাপারে নাজির হাটের আটি বুড়ির বিদ্যা দশ গেরামের লোকে জানে। তারপর এক সন্ধ্যাবেলায় আরিফার তলপেটে বেদনা উঠলে আটিবুড়ি আরিফাকে চাটাইয়ের ওপর শোয়ায়; তারপর হারিকেনের আলোয় পেটিকোট সরিয়ে আরিফার তলপেটের নিচে রোমশ জন্মনালীর ওপর ঝুঁকে পড়ে বুড়ি ... দেশান্তরী হয়ে এখানে সেখানে ঘুরছে মনিরুল । পথে পথে আরিফাকে খোঁজে সে। খুঁজলেই কী ...। বুকের ভিতরে চইত মাসের গরম বাতাস খল খল খল খল করে। কোথাও শান্তি পায় না। মাজারে মাজারে ঘুরে সে ... খালি সেতুর মায়ের কথা মনে পড়ে: কালো পাঞ্জাবি পরা ফকিরব্যাটায় আসছিল। বহুদিন আগে দেখা আলেম ফকিরও কালো পাঞ্জাবি পরত। নয়নপুরের আলেম ফকির। নয়নপুর কোথায়? এই দেশে নয়নপুরের অভাব নাই। বুকের ভিতরে অশান্তি বাড়ে তার। একদিন আলাউদ্দীন বয়াতির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর মনিরুলের মনের অশান্তি কিছু কমে। চিত্রা নদী পার হয়ে রাস্তার বাঁ পাশে একটা কড়ুই গাছের নিচে চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চিতে বসে ছিল সে। এই দেশের লোকেরা সাধারনত আলাপীই হয়। যারা গানবাজনা করে তারা আরও বেশি। আলাউদ্দীন বয়াতি সেরকমই লোক। চা খাওয়াল মনিরুলকে। চা খেতে খেতে আলাপ জমে উঠলে আলাউদ্দীন বলল -লন, আমাগো বাইত যাই। মনিরুল তখনও আলাউদ্দীন বয়াতির উদ্দেশ্য টের পাই নাই। টের পেয়েছিল অনেক পরে। মনিরুল আলাউদ্দীনের বাড়ি যেতে রাজী হয়-সে ঘোরের মধ্যে আছে। আলাউদ্দীনও এক ঘোর লাগা মানুষ। ভালো দোতরা বাজায়, গান বাধে-গানের দলও আছে। বাড়ি যেতে যেতে কত কথা বলল আলাউদ্দীন- ঘরে বাজা বউ । পোলাপান হয় নাই। বউরে জানপ্রাণ দিয়া ভালোবাসে আলাউদ্দীন। “দয়াল আমারে কত কিছু দিল; খালি সন্তান দিতে বনচনা করল দয়াল।” আলাউদ্দীনের দুঃখ এইখানে। গভীর দুঃখ। লাউমাচা আর ছোট্ট উঠান ঘেরা চকচকে টিনের বাড়ি আলাউদ্দীনের । নাড়িকেল গাছে ঘেরা হাঁস আর কচুরিপানায় ভর্তি পুকুরও আছে । উঠানের এক পাশে খড়ের গাদা, গোয়াল ঘর। বউকেও আড়ালে রাখল না আলাউদ্দীন। নতুন দোস্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। মর্জিনার বয়স ত্রিশ-পয়ত্রিশের মতন হবে। আটোসাঁটো শরীরের বাঁধন মর্জিনার; শ্যামলা মতন সুন্দর চেহারা-তবে আরিফার মতো না। স্বামীর সামনেই কেমন করে যে মনিরুলের দিকে তাকাল। মনিরুল অস্বস্তি বোধ করে। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর উঠানে মাদুর পেতে বসেছিল ওরা। উঠানটা ভাদ্রের জ্যোৎস্নায় ভরে ছিল । সেই সঙ্গে উথালপাথাল হাওয়া; বাতাসে লাউমাচা কাঁপে। কাঁপে নারকেল পাতারা। পুকুরের দিক থেকে কচুরিপানার গন্ধ ভেসে আসে। সব স্বপ্নদৃশ্যের মতো মনে হয় মনিরুলের। হায়, এখন আরিফা কোথায়? এবং, আলাউদ্দীন গানও গায়- আমার প্রানের মন্দিরায়/কেড়ে নিল সাত জন চোরায়। ...গান শুনে কী রকম যেন লাগে মনিরুলের। অনেক অনেক দিন আগে রুপহাটির ইষ্টিশনে এই গানটা শুনেছিল মনিরুল। আলাউদ্দীন আরও গায়-আমার বুকের ভিতর কঠিন তেপান্তর/ তোমার বন্ধু পাষাণী অন্তর ... গান শুনে কেমন যেন লাগে মনিরুলের। কত কত মনে পড়ে তার। অনেক রাতে মনিরুলকে কাচারি ঘরে নিয়ে এসে মশারি টাঙ্গিয়ে দিয়ে চলে যায় আলাউদ্দীন । মনিরুলের ঘুম আসে না। আরও রাতে কাচারি ঘরের দরজা খুলে যায়। মর্জিনা অন্ধকারে হারিক্যান জ্বালায়, বিছানার কাছে আসে, মশারি সরায়; তারপর ঝুঁকে মনিরুলের ঠোঁটে চুমু খায় ...মনিরুল জেগেই ছিল ... অনেকদিন পর জেগে ওঠা পুরুষঙ্গ স্পর্শ করে মর্জিনা। তারপরে মর্জিনার ভিতরে প্রবেশ করতে করতে সে সহসা বুঝতে পারে পথ থেকে কেন তাকে আলাউদ্দীনে তুলে এনেছে। আলাউদ্দীনের বাড়িতে দিন পনেরো কাটল। সুখে-সঙ্গমে; গানে-গানে। মনিরুল মাছ খেতে ভালোবাসে। কত রকম যে মাছ খাওয়াল আলাউদ্দীন। কত রকম করে সে মাছ যে রাঁধল মর্জিনা। আশ্চর্য! রুপহাটি থাকতে খিদে পেত না। এখন এত খিদে কোত্থেকে পায়? বিদায় নেওয়ার সময় মর্জিনার চোখে পানি। ভরাট শ্যামলা মুখটা অবশ্য ঝলমল করছিল। ঝলমলে মুখে চোখের জল- ওরকম মুখ সারাজীবনে আর দেখবে না মনিরুল। মনিরুল জানে সে তার বীজ মর্জিনার গর্ভে রেখে গেল। একদিন সেই বীজটি আলোর মুখ দেখবে। এই রোদে বাতাসে খেলে বেড়াবে। আলাউদ্দীনের কাছে দোতরা শিখবে। মেয়ে হলে? মর্জিনার কাছে রান্না ...পথে নেমে আরিফাকে আর খোঁজে না সে। বরং সে রুপহাটির পথ ধরে। বাড়ির পিছনে বাঁশঝাড়ে তার বাপদাদার কবর-সে ওখানেই মরবে। এই জনমে তার কাজ শেষ। তার জন্যই মর্জিনাকে অপেক্ষায় রেখেছিল দয়াল। এখন মরণের জন্য অপেক্ষা। অন্য জনমের কথা কেউই জানে না। দয়াল তোমারও লাগিয়া যোগীনি সাজিব গো। ট্রেনে এক অন্ধ ফকির গায়। রুপহাটি স্টেশনে নেমেই প্রথমে সে ‘হাসেম স’ মিলের দিকে যেতে থাকে। রঞ্জন ওকে দেখে চমকে না উঠলেও ভুরু কোঁচকালো। কিছুই আর আগের মতো নাই। রঞ্জন বিয়া করছে। এবং তারেই “স” মিলের মালিক মনে হইল। ‘স’ মিলের পাশে হাসেম হাজীর জমির ওপর ধান ভাঙ্গার কলও একখান বসাইছে। মনিরুলকে দেখে বিশেষ পাত্তা দিল না রঞ্জন। মনিরুল কাঁধ ঝাঁকায়। মুচকি হাসে। আমার তো কাম শেষ। আমি এখন ইজারাদারির কি বুঝি? বাড়ির দিকে যায় সে। মদিনা মহল খাঁ খাঁ করতেছিল। শূন্য বাড়িটা পুরনো ইটগুলি ভাঙ্গা পাঁজর নিয়ে ভুতের মতন দাঁড়িয়ে ছিল। ও কাঁধ ঝাঁকায়। মুচকি হাসে। গান গায়। কী ঘর বানাইমু আমি ...কী ঘর বানাইমু আমি ... শূন্যেরও মাঝার ...(গানটা আলাউদ্দীনের মুখে শুনেছিল) নাঃ বাড়িতে সেতুর মা বা সোলায়মান কেউই নাই। মদিনা মহল খাঁ খাঁ করে। এক বুড়িকে দেখল। ভিতরের একটা ঘরে কাঁথা মুড়িয়ে দিয়ে শুয়ে আছে। কে এই বুড়ি? আর সাত আটটা বিড়াল দেখল। ঘুরঘুর করছে। আগে এই বাড়িতে এতগুলা বিড়াল ছিল না। কুকুর ছিল। নেড়ি কুকুরটা গেল কই। মানুষ বাপদাদার ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ হইয়া গেলে তখন বাস্তু কুকুরের কী হয়? বাড়িতে সেতুর মা বা সোলায়মান কাউকেই পেল না সে । গেল কই তারা? মইরা গেছে? ও মুচকি হাসে। ও স্টেশনে ফিরে আসে। প্ল্যাটফর্মের ওপর বেঞ্চিতে বসে থাকে। এভাবে আরও কয়েকটা বছর কাটল। আজও প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চিতে বসে থাকে মনিরুল। তখন কত কী যে দেখে সে । আগে যেমন দেখত। ফকির-যাত্রী-ফেরিওয়ালা ওভার বিরিজ ... ওইপারের রেললাইন খাম্বা। ইলেকট্রিক লাইন। দোয়েল পাখি খাল পিচরাস্তা জিকা গাছ ছাগল-চরা মাঠ আবাদি জমাজমি নদী পাড় বটের ঝুড়ি আকাশ ...কখনও কখনও রঞ্জন এসে মনিরুলের পাশে বসে থাকে। পুরান দিনের কথা বলে। সেও এখন এক ভোগসুখে ক্লান্ত মানুষ। একদিন দুপুর; স্টেশনের বেঞ্চিতে বসে ছিল মনিরুল। কেমন ঝিমুনি পেয়েছিল তার। আচমকা হুইসেলের শব্দে জেগে উঠে সে। একটা লোকাল এসে থেমেছে। দৃষ্টি স্বচ্ছ হলে যাত্রীর ভিড়ে আরিফাকে দেখল সে। মনিরুলের বুকের ভিতরে তেমন অনুভূতি হলো না। হয়তো বহুবছর কেটে গেছে বলে। হয়তো তার বীজ অন্য কোথাও ফুল হয়ে ফুটে আলো দেখছে বলে। আরিফার কোলে একটি শিশু। কার? আলেয়া ওকে দেখে থমকে দাঁড়াল। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে ... সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৪৩
false
mk
তনুর হত্যাকারীরাই আন্দোলনের নেপথ্যে!!! তনু হত্যা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এখনও প্রমাণ হয়নি তনু কীভাবে মারা গেল, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা। ভিসেরা রিপোর্টে এখনও কোনো কিছুই প্রমাণ হয়নি।তাহলে কীভাবে এই অভিযোগ ওঠে যে তনুকে রেপ করা হয়েছে? এমনও হতে পারে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই এত কিছু। নাকি তনু হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে অন্য কোনো ধান্দা ফাঁদছে বিরোধী গোষ্ঠী? ইমরান এইচ সরকার কী বলছে? সে কেন একই সময়ে কৃষ্ণকলির বাসার কাজের মেয়ে কীভাবে মারা গেল তা নিয়ে আন্দোলন করছে না? তাহলে ঘটনা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, এসব কিছু পরিকল্পিত। দেশে ঘটিত আর দশটা ঘটনার মতোই একটি ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেবার চেষ্টা কোনোভাবেই মহৎ উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে না।তনুর বাবাও সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, তিনি তো এরকম অভিযোগ করেননি, কারণ তিনি জানেন সেনাবাহিনীতে কেউ এরকম অপকর্ম করার সাহস পাবে না। কারণ সেনা বাহিনীতে আইন কানুন খুবই কঠিন। অপরাধ করে কেউ কখনো পার পান না। ইমরান এইচ সরকারের বক্তব্য পুরোপুরি রাষ্ট্র ও দেশবিরোধী। তিনি কেবল সুযোগ খোঁজেন। কখন কোন ইস্যুকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়া যায়। বিনিময়ে হয়তো ভালোই উৎকোচ গ্রহণ করেন।কারণ খালেদা জিয়া সেসব ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করতে পারেন, সেসব ইস্যুই ইমরান এইচ সরকার উসকে দেন। এর আগে শিশু হত্যার ইস্যুতে ইমরান এইচ সরকারকে সরব থাকতে দেখা যায় নি। দেশের ভেতর আরও নানা সমস্যায় তাকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ কিংবা মুখ খুলতে দেখা যায় নি। আমরা জানি, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ভিন্ন ভিন্ন সময় নানারকম অপরাধ কর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। এটি এমন নয় যে উন্নত বিশ্বে অপরাধ কম হয়। উদারহণস্বরূপ যদি আমেরিকার দিকে তাকানো যায় তাহলে দেখতে পাই, সেখানে প্রতিবছর উল্লেখসংখ্যক ধর্ষণ হত্যা গুম সংঘঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু সেটা নিয়ে সেই দেশে এরকম আন্দোলন চোখে পড়ে না।আমেরিকায় আইন শৃঙ্ক্ষলা অনেক উন্নত তবুও এরকম অপরাধ হচ্ছে। সৌদি আরবেও হত্যা ধর্ষণ হয়। কিন্তু কোথাও এরকম ইস্যুতে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে দেখা যায় না। যদি প্রকৃত হত্যাকারীর বিচার চাওয়া যায় তাহলেই কেবল আন্দোলন গতি পায়। এর আগের ঘটনাগুলোও তাই বলে। তনুর হত্যাকারীদের বিচার না চেয়ে সরকারের পতন চাইলে প্রকৃতপক্ষে মনে হয়, সরকারের পতনের জন্যই তনুকে হত্যা করা হয়েছে। আর সেটা কারা করেছে, কী কারণে করেছে আন্দোলনের গতি প্রকৃতি দেখে সহজেই অনুমেয়।আরও একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের অনেককেই তনুর বিভিন্ন উলঙ্গ অর্ধোলঙ্গ ছবি শেয়ার করতে দেখা যায়। পাশের দেশ ভারতে এরকম ভিকটিমের ছবি বা ক্রিমিনালের ছবি কখনোই জনসম্মুখে প্রকাশ করতে দেখি না। কিন্তু একটি মৃত দেশের ভায়োলেন্স ও ভালগার ছবি ইন্টারনেটে যেভাবে শেয়ার হচ্ছে তা আন্দোলনকারীদের নৈতিক স্খলনেরই বহি:প্রকাশ। হিজাব পরা দুয়েকটি ছবি ছাড়া অধিকাংশ ছবি আসলে তনুর নয়। এগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের ছবিকে তনুর ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অতএব সাধ সাবধান..। ভেতরে কারা কলকাঠি নাড়ছে হয়তো খুব শীঘ্রই বের হয়ে আসবে। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৫
false
rn
আশ্চর্য মানুষ! আর আশ্চর্য তাদের জীবন! ১। মেয়ে মানুষের মধ্যে শাশ্বত কিছুই পাওয়ার নেই। রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু এসব হলো ইমোশনাল ব্যাপার স্যাপার । অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি । একজন মানুষের জীবনে নারী প্রেম কতটুকু প্রয়োজন ? কিছু বোকা পুরুষরা ব্যাপারটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলেছে ! তবে এও ঠিক, যাকে পাওয়া গেল না, যাকে পাওয়ার নয়, সেই মেয়েটির জন্য দীর্ঘকাল বুকের মধ্যে যেম কেমন করে ! সেটা হয়তো প্রেম নয় । বোকা পুরুষরা যেটা দখল করতে পারে না সেটাকে মহামানিত্ব করে তোলার চেষ্টা করে । ২। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে মরে যাই। অসৎ ব্যাক্তিরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে বছরে বই বিক্রি হয় না ১০০ কোটি টাকার। কিন্তু মাদক দ্রব্য বিক্রি হয় ৩০ হাজার কোটি টাকার।৩। যদি কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি হই এবং আমাকে বলা হয় ‘তোমার শেষ ইচ্ছা কি?’ আমি বলব, আমাকে বই দাও আমি পড়ব। কেউ কেউ একটি একটি করে বই পড়ে শেষ করেন। কিন্তু একসঙ্গে একাধিক বই পড়ার সুবিধাও আছে। কিছু বই রাতে পড়ার উপযোগী (যেমন: উপন্যাস বা কল্পকাহিনি)। আর প্রবন্ধ বা বিশ্লেষণধর্মী বইগুলো দিনে বা চলতে-ফিরতে গাড়িতে পড়তেই ভালো লাগে। একসঙ্গে বেশি বই ধরলে সময় অনুযায়ী পড়া চালিয়ে যেতে পারবেন।৪। মাঝে মাঝে মনে হয়- এই আমি, আমার অস্তিত্ব, অনর্থক। আমি বেঁচে আছি, অযথা। ৫। আমার ইচ্ছা করে সারা বাংলাদেশটা গাছ লাগিয়ে ভরে ফেলি। ৬। বর্তমানে অকবিরা কবিতার সর্বনাশ করছে। ফেসবুকের ভোট যদি আপনি আপনার লেখার মানদণ্ড বলে মানেন তাহলে কোনোদিনই আপনি লেখক বা কবি নন। ফেসবুক মূলত বাজারের চায়ের দোকানেরই প্রতিচ্ছবি, এখানে কোনো গাম্ভীর্য বা সিদ্ধান্ত আশা করা বোকামী। ৭। বইটির নাম- সোফি’জ ওয়ার্ল্ড বা সোফির জগত- লেখক- ইয়োস্তেন গার্ডার।পাশ্চাত্য দর্শনের জগতে প্রবেশের জন্য সবচেয়ে সহজ চয়েস হতে পারে এ বইটি। সারা বিশ্বে প্রায় বিশ মিলিয়ন কপি বিক্রি বলে দিচ্ছে বইটির জনপ্রিয়তার কথা।১৪ থেকে ১৫ তে পা দিচ্ছে এমন মেয়ে সোফি স্কুল থেকে ফিরে দেখলো তার চিঠির বাক্সে তার জন্য দুটি চিঠি। প্রত্যেকটাতে একটি করে প্রশ্ন। একটাতে রয়েছে: ‘তুমি কে?’ আর অপরটাতে রয়েছে-‘পৃথিবী কোথা থেকে আসলো?’এভাবে শুরু হলো একজন রহস্যময় দার্শনিকের সাথে পত্রবিনিময়। সেই রহস্যময় দার্শনিকের কাছ থেকে সে জানতে লাগলো সক্রেতিস থেকে একেবারে সার্ত্রে পর্যন্ত দর্শনের অভিযাত্রার কাহিনী।বইটি মূলত একটি উপন্যাস। আছে থ্রিলার, সাসপেন্স ও রহস্যের সমাহার। মূলত শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা হলেও বড়রাই এর থেকে পুরো সুবিধা নিতে পারবে। দর্শনকে মানুষের কাছে সহজলভ্য ও সহজবোধ্য করার ক্ষেত্রে নরওয়ের লেখক ইয়োস্তেন গার্ডারের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানানো উচিত সব পাঠকের! বইটির বাংলা অনুবাদ বাজারে পাওয়া যায়! সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৬
false
fe
যোগ-বিয়োগের রাজনীতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যোগ-বিয়োগের রাজনীতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ফকির ইলিয়াস ========================================১৮ মে ২০০৯ দিনটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য দিন। এদিন সকালেই বিশ্ববাসী জানতে পারল, শ্রীলঙ্কার বিপ্লবী তামিল নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ নিহত হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার সরকার ঘোষণা করল, তামিল বিদ্রোহী সংগঠন এলটিটিইকে পরাজিত করে তারা বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। নিউইয়র্কে বসে সকালের সংবাদটা দেখেই মনটা বেশ বেদনাক্রান্ত হলো। প্রভাকরণ নিহত হয়েছেন। তার সব ঘনিষ্ঠ কমরেডসহ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে লঙ্কান সেনাবাহিনী। এই ক'দিন থেকেই এলটিটিই ঘোষণা দিয়ে আসছিল তারা আত্মসমর্পণ করবে। তারা রণেভঙ্গ দেবে। তার প্রস্তুতিও চলছিল। তামিল টাইগাররা পরাজয় যখন মেনে নিচ্ছিল তখন শত শত কমরেডও মাটির বাঙ্কারে আত্মহত্যা করছিল। প্রভাকরণ তার স্বদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নেবেন এটাই ছিল কাম্য। তিনি যেতে চেয়েছিলেনও। বিভিন্ন সূত্র সে খবরই দিচ্ছিল। সেনাবাহিনী বলছে, তিনি সদলবলে পালানোর সময়ই তাকে হত্যা করা হয়েছে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে।বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। তামিল টাইগাররা তাদের 'স্বাধীনতা'র জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করছে গত প্রায় পঁচিশ বছর ধরে। ১৯৮৩ সালে শুরু হয়েছিল এই সশস্ত্র বিপ্লব। তারপর থেকে তামিল স্বাধীনতাকামীরা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। তামিল টাইগারদের এই অগি্নস্ফুরণ থেকে রেহাই পায়নি ভারতও। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডে তামিল আত্মঘাতীদের হাত ছিল বলে দাবি করেছিল তারা।শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মাহিন্দ রাজাপাকসে বলেছেন, এই বিজয় সাধারণ মানুষের। বিদ্রোহীদের দমনের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার সংহতি পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।তামিলরা কেন সংগ্রাম করছিল তা কারও অজানা নয়। এমন স্বাধীন ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠার দাবি ভারতেও উঠেছে ইতোমধ্যে। শিখ সমপ্রদায় তাদের 'খালিস্তান' প্রতিষ্ঠার দাবিতে সংগ্রাম করেছে দীর্ঘদিন। ঘটেছে অনেক রক্তপাতও। অনেকেই মনে করেন, ভারতীয় কংগ্রেস পার্টি খুব কৌশলে শিখ সমপ্রদায়ের প্রতিনিধি মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করে এই তুষানলে ছাইচাপা দিয়েছে। এখন 'খালিস্তান' প্রতিষ্ঠার দাবিটি প্রায় স্থিমিতই বলা যায়। শিখ সমপ্রদায়ের এই পিছু হটার পর আসাম অঙ্গরাজ্যকে 'স্বাধীন' ঘোষণার দাবিতে পিছু হটেছে সেই অঞ্চলের বিদ্রোহীরাও। অনুপ চেটিয়া পরেশ বড়ুয়ার অনুসারীরা তাদের কার্যক্রম বিচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে গেলেও তাতে খুব একটা গতি নেই।কথা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় তামিল টাইগাররা পরাজয় বরণ করার পরও বরেণ্য তামিল কমরেড প্রভাকরণকে তার সাথীদেরসহ এমন ভাগ্যবরণ করতে হলো কেন? তাকে হত্যা করাই যেন মুখ্য বিষয় হয়ে উঠল? এই সত্যটি আমরা জানি, কোন বিপ্লবী নেতাকে হত্যা করলেই তার আদর্শকে হত্যা করা যায় না। আমাদের মনে পরে যায় চে গুয়েভারার কথা। যিনি বলতেন, 'বিপ্লব বেঁচে রবে মুক্তিকামী মানুষের প্রাণে প্রাণে।'শ্রীলঙ্কার সরকার প যাই বলুক না কেন, আমি মনে করি, বিপ্লবী প্রভাকরণকে হত্যার মাধ্যমে কোন কৃতিত্ব তারা দেখার যোগ্যতা রাখে না। কারণ তার অনুগত এলটিটিই আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়ার পরপরই প্রভাকরণ এবং তার ঘনিষ্ঠ কমরেডদের বাঁচানো, নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্বটি সরকারেরই ছিল। তারা তা যথাযথভাবে পালন করেনি। বরং একজন কমরেডকে একজন মুক্তিকামী বীরকে হত্যার মাধ্যমে ঐতিহাসিক ঘৃণ্য কাজটিই করেছে। প্রভাকরণকে হত্যা করা গেলেও তার চেতনার শাণিত প্রবাহকে হত্যা করা কঠিন। আর তাই শত বছর পরে হলেও তামিল সাম্রাজ্যের গ্রামে গ্রামে যে আরও অনেক প্রভাকরণ জন্ম নেবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? মানুষের স্বাধীনতা লাভের অধিকার এবং অঙ্গীকার দমিয়ে রাখা যায় না। গণমানুষের জয় হবেই।আজ হোক কাল হোক, শতবর্ষ পরে হোক।দুই. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে ২০০৯ সালের এই পাঁচ মাসেরও কম সময়ে বেশ উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। পাকিস্তান জঙ্গি দমনে সুদৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। গিলানি-জারদারির সরকার বোমায় বোমায় বিত করেছে জঙ্গি আস্তানা। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দিয়েছে। তামিল টাইগার শোচনীয় পরাজয়ের মাধ্যমে একটি বিপ্লবের পঁচিশ বছরের অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। আর প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই পুনরায় মতায় এসেছে সোনিয়া-মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় কংগ্রেস।কংগ্রেসের এবারের বিজয়ে একটি বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ভারতের সাধারণ মানুষ ধর্মীয় মৌলবাদী আস্ফালনকে মোটেই গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে কলকাতায় রামপন্থীদের হারের পরিমাণ বুঝিয়ে দিয়েছে, সে অঞ্চলের মানুষও পরিবর্তন চাইছে। বিজেপি পরাজয় মেনে নিয়ে প্রায় ঘরকুনো হয়ে পড়েছে ইতিমধ্যেই। ক্যারিশম্যাটিক ২৭২-এর চাকাটি কংগ্রেসের দিকে সুপ্রসন্ন হওয়ার পর সোনিয়া গান্ধী আবারও ঘোষণা দিয়েছেন, মনমোহন সিংই দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।ভারতের রাজনীতিতে রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দু'জনেই দুই নত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। ভারতীয়রা বেশ পূর্ব থেকেই বলছে তারা সোনিয়া-রাজীব কন্যা প্রিয়াঙ্কার মাঝে 'ইন্দিরা মা'-জীকেই খুঁজে পাচ্ছে। এদিকে রাহুল কি শীর্ষ কোন পদ নিচ্ছেন? তা উড়িয়ে দিয়েছেন রাহুল, সোনিয়া দু'জনেই। রাহুল, মনমোহনের মন্ত্রিসভায় জুনিয়র কোন মন্ত্রী হবেন কিনা সে সায়ও এখন পর্যন্ত আসেনি গান্ধী পরিবারের প থেকে। ভারতের রাজনীতিতে গান্ধী পরিবারের একটা দাপট যে এখনও রয়েছে তা বরুণ গান্ধী, মানেকা গান্ধীর বেলায়ও দেখা গেছে।আমি মনে করি ভারতের জনগণ সুচিন্তিত রায়ই দিয়েছেন গণতন্ত্রের পক্ষে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিপুল সখ্যপ্রিয় কংগ্রেসের নীতিমালা, অন্যদিকে ভারত রাষ্ট্রটির অভ্যন্তরে পরম অহিংসতার দ্যেতনা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা নন্দিত হয়েছে। পরাজিত হয়েছে সব অপশক্তি। এখন মনমোহন সিং-এর সরকার তাদের ওয়াদা পূরণ করার পালা শুরু করতে যাচ্ছে।উপমহাদেশের জঙ্গিবাদ একটি আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। এজন্য অস্ত্র, অর্থ এবং পেশিশক্তির মদদ বিতরণ করা হচ্ছে সব দরকারি রাষ্ট্র পয়েন্টে। মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক একটি গোষ্ঠী মনে করে এই উপমহাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে তারা প্রতিষ্ঠিত হবে। আরব মুল্লুকে তারা যা পারেনি, তারা তা প্রতিষ্ঠা করবে দণি-পূর্ব এশিয়ায়। এই অশুভ শক্তিটির উদ্দেশ্য আগে যেমন সহিংস ছিল এখনও তেমনি আছে।এই অঞ্চলে মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে মানুষের চাহিদাও। বিবর্তনে বিশ্ববাসী মানুষ পরিবর্তন চায়, চাইতেই পারে। বেদনার কথা হচ্ছে, স্বাধীনতাকামীরা পরাজিত হচ্ছে। আর জিতে যাচ্ছে উগ্র জঙ্গিবাদীরা, শোষকরা। এরও একদিন পরিবর্তন আসবে। আসতেই হবে। তা না হলে তো মানুষের বিজয়ের ধারাবাহিকতাই ব্যাহত হবে। নিউইয়র্ক, ২০ মে ২০০৯--------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ।ঢাকা। ২২মে ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিতছবি - এলজিবিয়েটা সাইরুলেস্কা
false
hm
চটাশ করে থাবড়া এই ব্রিসবেনেও তামিল গুণ্ডাদের অত্যাচার! রমণ সুমহান দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। এদের জ্বালায় সিঙ্গাপুর ছেড়ে ব্রিসবেন এসেছেন তিনি। কিন্তু নিয়তি এতটুকু স্বস্তি দিচ্ছে না। সিঙ্গাপুরে যেমন যখনতখন তামিল মাফিয়া শুঁটকির দোকানে এসে চাঁদাবাজি করতো, এখানেও কি তেমন করবে? শ্যামাগোপালান যদিও আশ্বাস দিয়েছে, ব্রিসবেনে এসব বিপদের সম্ভাবনা কম, তারপরও তার ভয় দূর হয় না। যদি সেই আগের মতোই কাজ শেষ হবার পর সন্ধ্যেবেলা এসে ঘিরে ধরে মুশকো কালো কালো গুণ্ডাগুলি? মানিব্যাগ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে গালে প্রকাণ্ড একটা চটকানা মেরে ফেলে রাখে রাস্তায়? তার হাতখানা উঠে আসে বামগালে। দেশ থেকে একটা খ্যাপ এসেছে। সিনেমা নিয়ে লিখতে হবে। নিজের নামে মাঠে নামতে চাইছিলেন না তিনি। মেয়েটা ফোনে ঘড়ঘড় করে শুধু বললো, মিস্টার সুমহান, ট্রাই টু আন্ডাস্ট্যান্ড ব্রো। রোজ আমার নামে লেখা গেলে তো চলবে না। আর আম পেয়িং ইউ ইন ফাকিং ডলার্স ব্রো। ষাইট সত্তুর টাকা তো দিচ্ছি না। হোয়াটস দ্য ফাকিং প্রবলেম ইউজিং ইয়ো নেম? তিনি মনে মনে চটলেও খদ্দেরের মুখের ওপর রূঢ় হন না। একটু হাসেন। বলেন, দ্যাখেন, অন্য কাউকে যদি পান। ফারহানা পপির নামে দিয়ে দেন তাহলে, সে তো আপনার অ্যাসিস্ট্যান্টই? মেয়েটা সিনেমা ডিরেক্টর হিসেবে বালছাল হলেও টাকার ব্যাপারে যথেষ্ট প্রোফেশন্যাল। আবার ঘড়ঘড় করে শুধু বলে, ইউ আর গেটিং পেইড টু রাইট অ্যাজ আ স্কলার। ডোন্ট গিম্মি দ্যাট বুলশিট অ্যাগেইন। মেলবোর্নে আমার কাজিন আছে, সে আপনাকে টাকা পাঠিয়ে দেবে পরশু। অরাইট? ফোন কেটে যায়। তিনি মনে মনে জ্বলতে থাকেন। চুতমারানি। পয়সার গরম দ্যাখাস? রাগটা গিয়ে পড়ে ডালিয়ার উপর। তিনি গলা চড়িয়ে ডাকেন, এক কাপ চা-ই তো চাইছিলাম। জীবনে কি কিছুই পামু না? ডালিয়া রান্নাঘর থেকে বিরস গলায় শুধু বলে, আইতাছি। খাড়াও। ল্যাপটপ টেনে বসেন তিনি। সিনেমা নিয়ে লিখতে ভালোবাসেন না রমণ সুমহান। সিনেমা নিয়ে তাঁর কিছু তিক্ত স্মৃতি আছে। ওমর ফারুকের ফেসবুক নোটে চোখ বোলান তিনি। পোলাটা লাইনে চলে আসছে এখন। অবশ্য বেশি চিৎকার করা বাম পোলাগুলি এমনই হয়, ক্যাম্পাসে তো কম দেখেন নাই এদের হাউকাউ। তাঁর সমসাময়িক বামরা বরং একটু দেরিতে লাইনে আসছে ওমর ফারুকের তুলনায়। নিশ্চিন্দিপুরের ছোটোলোকগুলি যথারীতি ওমর ফারুকরে চিবি দিয়ে ধরছে। এরা তার পিছে লাগছিলো গ্যালোবার মাই নেম ইজ খান লইয়া। আবালগুলি ওত পাইতা থাকে, একটু ভুলচুক পাইলেই আইসা কাউকাউ করতে থাকে। জ্বালাতনই হইছে। এতকিছু চেক দিয়া খ্যাপের লেখা সাজানো সম্ভব? তিনি ওমর ফারুকের নোটে একটা মন্তব্য ঝাড়েন, ওমর, এই ব্লগের গুণ্ডাগুলি বুর্জোয়া ফ্যাসিবাদীদের কথাগুণ্ডা। এদের কথায় আপনি মন খারাপ কইরেন না। এরা চলে ফ্যাসিবাদীদের ইশারায়। ভুইলা যাইয়েন না, এরাই চান্দা তুইলা রাজাকার মারতে গেছিল। এরা একটা মাফিয়া সংগঠন। এদের রুখে না দাঁড়াইলে কবে চান্দা তুইলা আপনারে মারে কোনো ঠিক নাই। মনে রাইখেন, হামাসের সব টেকাপয়সা আসে প্রবাসী ফিলিস্তিনিগো পকেট থিকা। কমেন্ট পোস্ট করে মনে মনে হাসেন তিনি। বেটারা এখন এই নিয়া গিয়ানজাম হাউকাউ শুরু করে দেবে। এই ফাঁকে দৈনিক কচুবনের জন্য তিনি একটা লেখা সাজিয়ে ফেলতে পারবেন। ফাকমিদ সাহেব আজকে একটা সাবধানী লেখা দিয়েছে, তবে সেটা তার তেমন মনে ধরে নাই। খ্যাপের লেখাগুলো অবশ্য এরকম ধরি-মাছ-না-ছুঁই-পানি মার্কাই হয়, কিন্তু আরেকটু চোখা হলে ভালো হয়। রমণ সুমহান পয়েন্টগুলো মনে মনে টোকেন। ফোকাস সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে মুসলমান বনাম বাঙালি ডিসকোর্সে। ১৯৭১ এ এই আত্মপরিচয়ের সংকটের কথাটা লিখতে হবে যতদূর সম্ভব। ৎসিগমুন্ট বোমানের তত্ত্ব থেকে কয়েক লাইন ঢোকাতে হবে, তখন বাঙালি পরিচয়টা ছিলো তরল পরিচয়, ভিতরে জমাট পরিচয় ছিলো মুসলমান। বলতে হবে, বাঙালি মূল আঘাত পায় তার মুসলমান পরিচয়টা হানাদারদের ... হ্যাঁ, পাকিস্তান শব্দটা এড়িয়ে যেতে হবে যতদূর সম্ভব ... হানাদারদের চোখে নগণ্য হয়ে পড়ায়। এই আঘাত জাতির শরীরে যত না পড়ে, তারচেয়ে বেশি পড়ে মনে। এই হতভম্ব মানসই ফুটে উঠেছে সিনামায়। জ্যাঁ বদ্রিয়া থেকে কী ঢুকানো যায়? তিনি গলা চড়িয়ে ডাকেন, ডালিয়া? চা কি পামু এই বছর? ডালিয়া সাড়া দেয় না। তিনি বিরক্ত হয়ে নোট করতে থাকেন, জ্যাঁ বদ্রিয়া ... আচ্ছা, ইয়াসমিন সাইকিয়া থেকে কিছু বললে কেমন হয়? আবাল পাবলিক কি বুঝে ফেলবে? বীরাঙ্গনাদের ব্যাপারটা সাবধানে বলতে হবে। নীলা চরিত্রটাকে ফাঁপিয়ে লেখা যায়। সিনামার নামটা মাইয়াটার নামে না রাইখা নৈর্ব্যক্তিক কিছু রাখলে সুবিধা হইত। ডিরেক্টর ছাগলীটা খ্যাপের কামটাও কঠিন করে রেখেছে। এরপর আনতে হবে কর্তৃপক্ষীয় ফ্যাসিবাদের ইনটারনালাইজেশনের কথা। কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ আম্লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধরে কুক্ষিগত করেই ক্ষান্ত হয় নাই, এই আধিপত্যের অনুভূতিকে পাবলিকের মধ্যে রোপণ করার চেষ্টা করছে। মিশেলিন মেসন যারে বলছিলেন ইনটারনালাইজড অপ্রেশন। আচ্ছা, মিশেলিন মেসনই কি বলেছিলেন? নাকি অন্য কেউ? আচ্ছা, গুগল মেরে চেক করা যাবে ... এই অন্তরায়িত দমনপীড়নের ফলে পাবলিক মুক্তিযুদ্ধকে এই কর্তৃপক্ষের চোখ দিয়ে দেখার অভ্যাস থেকে বের হতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধকে দেখতে হবে আর্গাস প্যানোপটেসের মতো বহু চোখ দিয়ে, পুঞ্জাক্ষিতে বিশ্লেষণ করতে হবে এই ঘটনাকে। কেবল জাতীয়তাবাদী চাপিয়ে-দেয়া-সেকুলার চোখে মুক্তিযুদ্ধকে দেখার প্রবণতা হানিকর, এই প্রবণতা আমাদের একটি বিপজ্জনক ফ্যাসিবাদি গোষ্ঠীতে পরিণত করতে পারে, যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই নিশ্চিন্দিপুরে। সেইখানে প্রবাসী গুণ্ডারা, যারা চান্দা তুলে রাজাকার মারে, তারা আজ মুক্তিযুদ্ধ গেল গেল রবে চিৎকার করছে। আমরা দেখতে পাই, ফ্যাসিবাদ কীভাবে আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সুবিধাবাদী মহলকে আচ্ছন্ন করছে। এই যে কর্তৃপক্ষ এই সিনামাকে নিষিদ্ধ করল ... হ্যাঁ, এভাবেই চালিয়ে দিতে হবে ব্যাপারটাকে, কারণ নিষিদ্ধকরণ মানে নিপীড়ন, যদিও জিনিসটা আপোষে ডিস্ট্রিবিউটর আর ডিরেক্টরের মন্ত্রী বাপের মধ্যের ব্যাপার, কিন্তু কর্তৃপক্ষকে টেনে আনলে এক ঢিলে দুই পাখি ... এতেই বোঝা যায়, এই জাতীয়তাবাদী একচক্ষুষ্মানতা আমাদের সৃজনশীল চক্ষুটিকে কী নির্মমভাবে নিষ্ক্রিয় করার ভয়ঙ্কর নাৎসিপনার দিকে ঠেলছে। এই ফ্যাসিপনা শুধু জাতীয়তাবাদীই নয়, এই ফ্যাসিপনা নারীর কণ্ঠস্বরকে রোধ করার এক গুপ্ত বিকৃত পুরুষতান্ত্রিক মনোবাঞ্ছার উপরিতল। নারী যখন নারীর গাথা নির্মাণ করে, নারীর অভিজ্ঞতাকে পর্দায় তুলে আনতে চায়, তখন এই প্রবল দখলবাদী মধ্যবিত্ত ইগোর ষষ্ঠি বাগিয়ে তেড়ে আসে। পাকি সেনার প্রতি কিশোরীর নিরীহ বয়সোচিত প্রেমকে তাই প্রথমে আঘাত করা হয় জাতীয়তাবাদের খঞ্জর দিয়ে, তারপর সেই প্রেমের ছিন্নদেহকে টুকরো টুকরো করা হয় দখলদার পুরুষের নখর দিয়ে ... আমরা দেখতে পাই, সুসান ব্রাউনমিলার ... না থাক, সুসান ব্রাউনমিলার নিয়ে নিশ্চিন্দিপুরের বেয়াদবগুলি কী যেন একটা সমস্যা খুঁজে পাইছে ... । ডালিয়া! সরোষে ডাকেন তিনি। এক কাপ চা দিলে লিখতে সুবিধা হইত! ডালিয়া কিছু বলে না। রান্নাঘর থেকে ছ্যাঁক ছ্যাঁক শব্দ আসে। ধুর! আর কী লেখা যায়? ব্লগরে একটু গালি দিতে হবে। এই পোঁদপাকাগুলি এসেই কাজকাম কঠিন করে তুলেছে। আগে ব্লগ নামের এই বালছাল ছিলো না, যা হতো সব পত্রিকায় পত্রিকায় লড়াই, আর সেখানে একজনের শালা আরেকজনের দুলাভাই। খুব বেশি গণ্ডগোল হইতো না, একটু তিতা কথা চালাচালির পর বাকিটা সম্পাদকীয় পাতার লোকজন ম্যানেজ করে ফেলতো। ওমর ফারুক তো রোবায়েতের লেখার অর্ধেক কাইটা ফালায় দিলো, রোবায়েত কিছু করতে পারছে? কাউরে কিছু বলতে পারছে? পারে নাই। কারণ তারেও তো সেই দৈনিক কচুবনেই লিখে লিখে নাম করতে হবে। কিন্তু ব্লগের ইতরগুলির সেই পরোয়া নাই, যখন খুশি যারে খুশি টাইনা ন্যাংটা করতেছে, কোনো লঘুগুরু জ্ঞান নাই, কতগুলি বেয়াদব এক জায়গায় হইছে। আচ্ছা, তোরা কবিতা সাহিত্য কর, গল্পটল্প লেখ, এইসব লইয়া টানাটানি কেন? রমণ সুমহান নোট করতে থাকেন, তাই আমরা দেখি, বল্গাহীন ব্লগও দখল হয়ে গেছে ফ্যাসিবাদী অতিজাতীয়তাবাদী পুরুষতান্ত্রিক নব্যপাকিদের দখলে, যারা নিরীহ সিনেমাশিল্পীদের ওপর চড়াও হয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে সম্ভাবনাকে। এই নিষিদ্ধকৃত সিনেমা তাই একাত্তরের বধ্যভূমিরই সহোদর। আজ এক নির্মাতার কণ্ঠ রুদ্ধ করে দিয়ে এই বিকৃত ফ্যাসিপনা আমরা সয়ে নিচ্ছি, কাল আমাদের কণ্ঠস্বর চেপে ধরতে এলে কী করবো? মার্টিন নিমোয়েলার দিয়ে শেষ করবেন নাকি? নাহ ... সব শালা ঐ কথা বলে বলে পঁচিয়ে দিয়েছে, ভলতেয়ারের বালছাল কথাটার মতো। নতুন কিছু লাগবে। নাহ, পড়াশোনা শুরু করা দরকার আবার। খ্যাপ মারার কাজ ক্রমশ কঠিন হচ্ছে, নতুন কিছু কোটেশন দরকার। ডালিয়া! হাঁক ছাড়েন তিনি। দিবা নাকি এক কাপ চা? ডালিয়া বলে, হুঁ, আসি। রমণ সুমহান ফেসবুক খুলে ওমর ফারুকের নোটে উঁকি দেন আবার। ময়দানটা আরেকটু গরম করে রাখা ভালো। নিশ্চিন্দিপুরের ইতরগুলিকে আরো দুটো গালি দেবেন নাকি? ব্রিসবেনে আবার শালাদের কেউ নাই তো? পথেঘাটে ধরে যদি থাপ্পড় মারে ওয়াহিদুর রহিম খঞ্জনের মতো? বাম গালে পুরনো একটা ব্যথা ঊনিশশো একাত্তরের মতো নিজের অস্তিত্ব স্মরণ করিয়ে দেয় তাঁকে।
false
hm
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও পিসুনচ্ছাড় রহস্য ১. গোয়েন্দা বিভাগের দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি কচমচ করে মুড়িমাখা খেতে খেতে বললেন, "বলছি স্যার। মুড়িটা চিবিয়ে নিই আগে। আহ, বড় ভালো মুড়ি! চানাচুরটাও সাংঘাতিক! এই যে আচারের তেলটা, এর কোনো তুলনাই হয় না স্যার। শসাটা কোত্থেকে কিনে আনা?" ঝাকানাকা চায়ের কাপে প্রলম্বিত এক চুমুক দিয়ে আড়চোখে কিংকু চৌধারির মুড়ির বাটির দিকে তাকিয়ে বললেন, "আর মুড়ি নেই কিন্তু। চানাচুরও শেষ।" কিংকু চৌধারি মুখ কালো করে অবশিষ্ট মুড়িমাখা চেটেপুটে খেতে খেতে বললো, "আপনার বাড়ি এলে সবসময় এই ছোট্টো একটা বাটিতে করে মুড়িমাখা খেতে দেন স্যার ... আপনাকে সামনের জন্মদিনে বড় একটা প্লাস্টিকের বোল কিনে দেবো ভাবছি। অতিথি আপ্যায়নে খুব কাজে লাগে।" ঝাকানাকা চুরুটের গোড়ায় টান দিয়ে বললেন, "কাজের কথায় আসুন। একটু পরই টেলিভিশনে ছায়াছন্দ শুরু হবে।" কিংকু চৌধারি জিভ দিয়ে বাটিটা যতদূর চাটা যায়, চেটে নিয়ে হতাশ গলায় বললো, "পরিস্থিতি খুব খারাপ স্যার! বদমাশ বদরু এবার একেবারে মন্ত্রীদের বাড়িতে গিয়ে হানা দিয়েছে। ওপরমহল থেকে প্রচণ্ড চাপ এসেছে স্যার। বদরুকে পাকড়ে টাইট দিতে না পারলে চাকরি থাকবে না স‌্যার। কিংবা বান্দরবানে বদলি করে দিতে পারে।" ঝাকানাকা চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললেন, "বান্দরবান খারাপ কী?" কিংকু চৌধারি মন খারাপ করে বললো, "বান্দরবানে রেডিও ঝাঞ্জাইল শোনা যায় না স‌্যার। বার্মিজ রেডিওর চ্যাঁ-ভ্যাঁ শোনা যায় শুধু।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম, তাহলে তো বদরুকে পাকড়াও করতেই হচ্ছে! কী করেছে সে এবার? মন্ত্রীর বাড়িতে লুটপাট?" কিংকু চৌধারি মুখ কুঁচকে বললো, "না স্যার, তারচেয়েও ভয়ানক!" ঝাকানাকা বললেন, "কীরকম?" কিংকু চৌধারি চেয়ারে হেলান দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বসে বললো, "দূতাবাস পাড়ায় একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স আছে স্যার, নমরুদ প্যালেস। নাম শুনেছেন?" ঝাকানাকা বললেন, "না। কী হয় সেখানে?" কিংকু চৌধারি বললো, "মন্ত্রী গিজগিজ করছে স্যার সে বাড়িতে। চারজন মন্ত্রী আর একজন জেনারেল ওখানে থাকেন স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "এতগুলো মন্ত্রী এক জায়গায় বাস করা কি ভালো? তার ওপর সঙ্গে আবার একটা জেনারেল?" কিংকু চৌধারি বললেন, "তা জানি না স্যার। কিন্তু বাস করলে আমরা কী করতে পারি বলুন?" ঝাকানাকা বললেন, "হুঁ, তারপর?" কিংকু চৌধারি বললেন, "বাড়িটা স্যার, সাততলা। নিচতলায় গ্যারেজ, দোতলায় কমন রুম, আর বাকি পাঁচ তলায় এরা পাঁচজন থাকেন, সপরিবারে। বদরু খাঁ এত্তোবড়ো বদমাশ, সে এই বাড়িতে ঢুকে পিসু করা শুরু করেছে স্যার!" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে চুরুটে কামড় দিয়ে বললেন, "বলেন কী! মন্ত্রীদের গুহায় ঢুকে মুতে এসেছে?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হ্যাঁ স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "বিস্তারিত বলুন, দিনতারিখসহ।" কিংকু পকেট থেকে একটা নোটবুক বার করে বললেন, "ঘটনা শুরু হয়েছে স্যার সতেরো দিন আগে। সেদিন জেনারেল সাহেবের মেয়ে সুইমিং পুলে সাঁতরাতে নেমে স্যার, এই পিসুর কবলে পড়ে। কে বা কাহারা সুইমিং পুলে পিসু করে রেখেছে।" ঝাকানাকা বললেন, "স্টপ। সুইমিং পুলে নেমে পিসু তো যে কেউ করতে পারে। এ তো আকচারই হচ্ছে। বদরুই যে এ কাজ করেছে,তার প্রমাণ কী?" কিংকু বললেন, "জেনারেল সাহেবের মেয়ে পানিতে নেমেই বদ গন্ধ পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে এসে দ্যাখে, একটা প্লাস্টিকের এক গ্যালনের খালি ক্যান সুইমিং পুলের পাশে। সেটার গায়ে একটা স্টিকি নোট। তাতে লেখা, বদরু খাঁ-র পিসু, বাজারের সেরা পিসু!" ঝাকানাকা বললেন, "বটে? বদরু এসব শুরু করেছে আজকাল?" কিংকু বললেন, "হতভাগার সাহস কতবড়, ভাবুন একবার? গ্যালনভর্তি পিসু নিয়ে উল্টে দিয়েছে পুলে! তারপর কী করেছে শুনুন, তার দুদিন পর, পানিসম্পদ মন্ত্রী আড়িয়াল খানের গাড়ির ভেতরে একেবারে ছ্যাড়াব্যাড়া করে পিসু করে দিয়ে এসেছে স্যার। মন্ত্রীসাহেব দরজা খুলেই দেখেন এই অবস্থা। ভেতরে একটা চিরকুট ফেলে গেছে হতভাগা। তাতে লেখা, "নহে নহে প্রিয়, এ নয় আঁখিজল! ইতি বদরু খাঁ।" ঝাকানাকা চুরুটের ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, "আচ্ছা! তা সুইমিং পুলে পিসুর ঘটনার পরপরই জেনারেল সাহেব পুলিশে খবর দেননি কেন?" কিংকু বললেন, "জেনারেল সাহেবের লাইসেন্স করা বন্দুক পিস্তল আছে স্যার। উনি নিজেই সেসবে গোলাবারুদ ভরে একটু পর পর সুইমিং পুল এলাকায় হানা দিচ্ছিলেন। ওনার ভয়ে মন্ত্রীদের ফ্যামিলির লোকেরাও সুইমিং পুলের আশেপাশে ঘেঁষা বন্ধ করে দিয়েছিলো। বোঝেনই তো স্যার, রিটায়ার্ড মিলিটারি ম্যান, কমাণ্ডোপনা করে অভ্যাস, একটা মারপিটের মওকা পেলে সহজে হাত থেকে ছাড়তে চান না, পুলিশের কাজ পুলিশকে করতে দিতে চান না মোটেও।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! তারপর?" কিংকু বললেন, "তারপর আর কী, আড়িয়াল খানের গাড়ি বিএমডব্লিউ কোম্পানির ডিলারের কাছে নিয়ে গিয়ে ইশপিশাল ধোলাই করে আনা হয়েছে। কিন্তু এ তো আর কালো টাকা নয় যে সাদা করে ফেললে খুশিমনে যখন খুশি ব্যবহার করা যায়। আড়িয়াল খানের বউ নতুন একটা বিএমডব্লিউ কিনে দিতে খুব ঘ্যানাচ্ছেন।" ঝাকানাকা বললেন, "বদরু তারপর কী করেছে সেটা বলুন।" কিংকু নোটবুকের পাতা উল্টে বললেন, "এর তিনদিন পরের ঘটনা স্যার। লিফটের ভেতরে কে বা কাহারা পিসু করে রেখে গেছে। লিফটের গায়ে একটা স্টিকি নোট রেখে গেছে, "উমমমমমমমমিষ্টি একটা গন্ধ রয়েছে ঘরটা জুড়ে। ইতি বদরু খাঁ।" ঝাকানাকা গোঁফে তা দিতে দিতে বললেন, "হুমমম! তারপর?" কিংকু বললেন, "তারপর থেকে এই কাজ আরো কয়েকবার হয়েছে স্যার। দুই তিনদিন পর পর কে বা কাহারা লিফট ভাসিয়ে পিসু করে রেখে যায়। আর প্রত্যেকবারই একটা স্টিকি নোট রেখে যায়। সেখানে বিদঘুটে সব নোট লেখা স্যার। এই যে শুনুন ... ঘন ঘন রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ বরখত নীরদপুঞ্জ। ইতি বদরু খাঁ। ... তারপর দেখুন কী লিখে রেখে গেছে নচ্ছাড়টা, লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির। ইতি বদরু খাঁ। ... তারপরে আবার, গতকাল পাওয়া গেছে আরেকখান ... ঝম্পি ঘন গর্জন্তি সন্ততি ভুবন ভরি বরিখন্তিয়া। বদরু খাঁ কহ কৈছে গোঙায়বি হরি বিনে দিন রাতিয়া। ... আস্পর্ধাটা চিন্তা করে দেখেছেন স্যার?" ঝাকানাকা ভুরু সাংঘাতিক কুঁচকে বললেন, "বদরু আজকাল বৈষ্ণব পদাবলীও পড়ছে নাকি? কিংকু সাহেব, নোট করে রাখুন তো ব্যাপারটা। বদরু সামনে কবির ছদ্মবেশে হানা দিতে পারে। আর ফেসবুকে দেখবেন কেউ ব্রজবুলিতে বুকনি ঝাড়ছে কি না। সেরকম আলামত দেখলে নামটা টুকে রেখে খোঁজখবর করবেন।" কিংকু নোটবই পকেটে গুঁজে বললেন, "এখন একটা কিছু করুন স্যার। চার চারজন মন্ত্রী যেভাবে হুড়ো দিচ্ছে বসদের, আর বসেরা যেভাবে হুড়ো দিচ্ছে আমাকে, চাকরিবাকরি নিয়ে পেরেশানিতে আছি।" ঝাকানাকা বললেন, "কিন্তু এতো দিন হয়ে গেলো, মন্ত্রীরা কিছু বললো না কেন?" কিংকু ডানে বামে তাকিয়ে আশপাশটা ভালোমতো দেখে নিয়ে সামনে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললেন, "স্যার, মন্ত্রীরা পারতপক্ষে আজকাল পুলিশের কাছে যেতে চায় না। এসব খবর তো চাপা থাকে না। চলে যায় সাংবাদিকদের কাছে। আর বোঝেনই তো। বদরু খাঁ মন্ত্রীদের বাড়িতে গিয়ে লিফটে পিসু করে আসছে, এমন খবর কাগজে এলে বিরাট রাজনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে! সে কারণেই বোধহয় ওনারা এতদিন নিজেদের মতো করে ব্যাপারটা সামলানোর চেষ্টা করে আসছিলেন।" ঝাকানাকা বললেন, "কীরকম সংকট?" কিংকু চৌধারি আরো এক ধাপ ফিসফিসিয়ে বললেন, "জানেনই তো স্যার, ঐ যে কিছুদিন আগে এপিএস টাকার বস্তাসহ ধরা পড়ে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে গেলো না? এখন যদি পেপারে টিভিতে স্যার বদরুর লিকেজের খবরটা লিকেজ হয়ে যায়, এটা নিয়ে কে কীরকম বিশ্লেষণ করে, সেটা নিয়ে মন্ত্রীরা খুব দুশ্চিন্তায় আছে। কোথাকার জল কোথায় গড়ায় ... হেঁহেঁহেঁ, বুঝতেই পারছেন স্যার! তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কেউ খুশি নয়। খোদ মন্ত্রীদের বাড়িতে দুর্ধর্ষ দস্যু বদরু খাঁ নির্বিঘ্নে মুতে সটকে পড়ছে, এমন একটা খবর পাঁচকান হলে প্যানিক ছড়াতে পারে তো।" ঝাকানাকা নতুন চুরুটে আগুন ধরিয়ে বললেন, "হুমমম! তা কী মনে করে মন্ত্রীরা শেষমেশ পুলিশকে খবর দিলো?" কিংকু মাথা চুলকে বললেন, "মনে হয় ঐ জেনারেল সাহেবের চাপে স্যার। উনি মারাত্মক চটে আছেন। উনি থাকেন একেবারে টপফ্লোরে। ভোরে উঠে জগিং করতে নামার সময় লিফট খুলেই দেখেন পিসু আর বদরুর নোট। উনিই বোধহয় মন্ত্রীদের হুড়ো দিয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছেন।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। বেশ। চলুন, কাল শুক্রবার, সকালে যাবো নমরুদ প্যালেসে, সবাইকে থাকতে বলে দিন। আজ আপনি আসুন বরং, ছায়াছন্দ শুরু হয়ে গেছে।" ২. নমরুদ প্যালেস প্রকাণ্ড বাড়ি। তার এক পাশে আবার বিস্তৃত টেনিস কোর্ট আর সুইমিং পুল। কিংকু চৌধারির গাড়ি থেকে নেমেই ঝাকানাকা সেই সুইমিং পুলের দিকে এগিয়ে গেলেন। গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরা মস্ত গুঁফো এক লোক হাতে একটা শটগান নিয়ে সুইমিং পুলের কিনারে পা ফাঁক করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলেন, কিংকু চৌধারি আর ঝাকানাকাকে দেখে তিনি এগিয়ে এলেন। "আপনিই নিশ্চয়ই গোয়েন্দা ঝাকানাকা!" বাজখাঁই গলায় বললেন তিনি। "আমি জেনারেল হিম্মত জং কামানী।" ঝাকানাকা করমর্দন করে সতর্ক চোখে জেনারেলকে আপাদমস্তক দেখলেন। "আপনি বন্দুক হাতে কী করছেন জেনারেল?" জেনারেল কামানী চোখ পাকিয়ে কিংকু চৌধারির দিকে তাকিয়ে বললেন, "কিপিং ভাইজিল অন মাই গ্রাউন্ডস স্যার! পুলিশের ওপর আমি ভরসা করি না। কোনো ডিসিপ্লিন নেই তাদের। দুর্নীতি ছাড়া আর কোনো কাজই তারা ঠিকমতো করতে জানে না। লুক অ্যাট ইয়োর সাইডকিক মিস্টার ঝাকানাকা! দেখুন, বুটের অবস্থা দেখুন, হারিকেনের চাঁদিতে ওরচেয়ে বেশি কালি থাকে। ফিতার প্যাঁচটা দেখুন, কোনো কারুকার্য নেই। বেল্টের বাকলস দেখুন, কয়দিন ঘষে না কে জানে! ইউনিফর্মে বোতামগুলো দেখুন, হদ্দ ময়লা! চোর বদমাশ ডাকুরা এদের ভয় পাবে কীভাবে?" কিংকু চৌধারি কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, "আমি ... মানে, ইয়ে, হেঁহেঁহেঁ ...!" জেনারেল কামানী গর্জে উঠলেন, "স্টপ স্নিগারিং মিস্টার পোলিসম্যান! আমাকে দেখুন। আমার বয়স পঁয়ষট্টি। লুক অ্যাট মাই জুতা। দেখুন কী চমৎকার গিট্টু, দেখুন! ইউ ক্যান টেইক আ পিকচার অফ দিজ জিলাপির প্যাঁচেজ অ্যান্ড ইউজ ইট অ্যাজ ইয়োর উইপন অ্যাগেইনস্ট মিসক্রিয়্যান্টস! লুক অ্যাট মাই হাপ্প্যান্ট! ইলাস্টিক আছে তারপরও দেখুন কী সুন্দর একটা বাকলস লাগানো বেল্ট পরি, দেখুন। লুক অ্যাট মাই গেঞ্জি, অ্যান্ড দৌজ টু শাইনি বাটনস!" ঝাকানাকা আড়চোখে জেনারেলের শটগানের দিকে তাকিয়ে বললেন, "আপনি আছেন বলেই বদরু খাঁ বেশি উৎপাত করতে পারছে না, নইলে সে রোজই ঘন্টায় ঘন্টায় পিসু করে যেতো।" জেনারেল কামানী সগর্বে বললেন, "ইনডিড! আমি বুড়া মানুষ। আমি তো সারাক্ষণ বাড়ি পাহারা দিতে পারবো না। ওটা আমার কাজও নয়। আমি যখনই আশেপাশে না থাকি, তখনই দ্যাট ড্যাম ড্যাকয়েট এসে মুতে রেখে যায়। ইটস অল বিকজ অব দিজ মিনিস্টারস। এদের কোনো ডিসিপ্লিন নেই। ডিসিপ্লিন থাকলে বদরু পিসু করার সাহস পেতো না। হি উড হ্যাভ গন টু সাম রিমোট প্লেইস টু রিলিভ হিমসেল্ফ! প্রোবাবলি টু আ থানা!" কিংকু চৌধারি ম্রিয়মান গলায় বললেন, "স্যার, বদরুর নোটগুলো একটু দেখাবেন ঝাকানাকা স্যারকে?" জেনারেল কামানী বললেন, "অফকোর্স! আমি সব কয়টা ফাইলে যত্ন করে রেখে দিয়েছি অ্যাজ এভিডেন্স! আপনাদের এই বদরু, শুধু পিসু করে গেলে আমি খুব বেশি রাগ করতাম না। বাট দৌজ নোটস ... পড়লে মাথা ঠাণ্ডা রাখা খুব মুশকিল। ইট উইল পিস ইউ অফ! নট ওনলি হি ইজ পিসিং অন আজ, বাট অলসো পিসিং আজ অফ! আমি একে ধরতে পারলে টানটান করে বেঁধে ন্যাংটা করে চাবকাবো।" ঝাকানাকা আশপাশটা মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন গোঁফে তা দিতে দিতে, তিনি বললেন, "অবশ্যই চাবকাবেন। এই দেয়ালগুলোতো বেশ উঁচু দেখছি। মাথায় আবার চোখা কাঁচ বসানো। টপকে ভেতরে ঢোকা বেশ কঠিনই, কী বলেন জেনারেল?" জেনারেল কামানী হাসিমুখে বললেন, "অবশ্যই! কমাণ্ডো বাহিনীর মেজর আটরশির নাম শুনেছেন? দেশের সেরা কমাণ্ডো সে। আটরশিও এসে এই দেয়াল টপকাতে গিয়ে হিমসিম খেয়েছে। আপনাদের বন্ধু, এই বদরু খাঁ, সে কি কমাণ্ডো ট্রেনিং নিয়েছে কোথাও?" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "হ্যাঁ, সে গোটা দুনিয়া জুড়েই নানা বদমায়েশি করে বেড়ায়। কিন্তু এই দেয়াল টপকাতে গেলে তো দারোয়ানের চোখে পড়বেই, তাই না?" জেনারেল কামানী বললেন, "হ্যাঁ। তার ওপর এরা কোনো সাধারণ দারোয়ান নয়, দেশের টপ বেসরকারী সিকিউরিটি সার্ভিসের লোক। কিন্তু এরা বলছে এরা কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেখেনি।" কিংকু চৌধারি বললেন, "আমরা শুরুতেই সিকিউরিটির লোককে জেরা করেছি স্যার। ওরা বাইরের কোনো লোককেই অনুপ্রবেশ করতে দেখেনি। দেখলে গুলি করে দিতো।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমমম! এই বাড়িতে বাইরের কোনো লোক আসে না?" জেনারেল কামানী বললেন, "বাইরের লোক বলতে একমাত্র আমার মেয়ের হাউস টিউটর। হি ইজ আ নাইস ক্লিন ডিসিপ্লিনড চ্যাপ। তবে আপনারা চাইলে ইউ ক্যান কুইজ হিম এনি টাইম ইউ ওয়ান্ট।" ঝাকানাকা বললেন, "মন্ত্রীদের বাড়িতে বাইরের কোনো লোক আসে না?" জেনারেল কামানী ডানেবামে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন, "ঐ যে এপিএস বস্তাসহ ধরা পড়লো, মনে আছে? এরপর থেকে মিনিস্টাররা খুব সাবধান হয়ে গেছে। বাড়িতে বাইরের লোককে এরা কেউই ঢুকতে দেয় না, এমনকি সরকারী লোককেও না। হেহেহে, আমরা জেনারেলরা সেদিক দিয়ে একটু নিশ্চিন্তে থাকি।" কিংকু চৌধারি বললেন, "আপনাদের বস্তা কে নিয়ে আসে স্যার?" জেনারেল কামানী চোখ পাকিয়ে বাঘা গলায় বললেন, "হোয়াট আর ইউ ড্রাইভিং অ্যাট মিস্টার পোলিসম্যান? আমরা জেনারেলরা ওসব বস্তার কারবার করি না! বস্তায় কোনো ফিতা থাকে না, কোনো বাকলস থাকে না, কোনো বোতাম থাকে না! মোস্ট আনকুথ টুল ডু ডিল উইথ মানি।বস্তা নিয়ে ঘোরে সিভিলিয়ানরা। যত্তোসব!" ঝাকানাকা দেয়ালের পাশে টবে পাতাবাহার গাছ দেখছিলেন মন দিয়ে, তিনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, "এই গাছগুলোর গোড়ায় সাদা রং কেন?" জেনারেল কামানী বিস্মিত হয়ে বললেন, "কেন মিস্টার ঝাকানাকা? গোড়ায় সাদা রং ছাড়া গাছ হয় নাকি?" ঝাকানাকা জেনারেল কামানীকে আড়চোখে আবার আপাদমস্তক পরখ করে বললেন, "হুমমম, তাও তো কথা। কে করেছে এই রং?" জেনারেল কামানী বললেন, "আমার আর্দালি। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারক করেছি। ইউ উওন্ট ফাইন্ড আ সিঙ্গল প্ল্যান্ট ইন দিস কমপ্লেক্স উইদাউট দিস বিউটিফুল ডেকোরেশন। ইটস আ সিম্বল অব ডিসিপ্লিন, বাই দ্য ওয়ে।" ঝাকানাকা বললেন, "চলুন জেনারেল, মিনিস্টারদের সাথে আলাপ করে আসি।" জেনারেল কামানী বললেন, "চলুন।" পকেট থেকে একটা হুইসেল বার করে ফুঁ দিলেন তিনি। "মোশারফ! আমার বন্দুক নিয়ে যা!" গ্যারেজের এক পাশে টুল পেতে বসে থাকা এক লোক ছুটে এসে জেনারেলের শটগান নিয়ে চলে গেলো। জেনারেল কামানী টোটাগুলো খুলে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন তার আগে। ঝাকানাকা গ্যারেজের ভেতরে ঢুকে থমকে দাঁড়ালেন। "আড়িয়াল খানের গাড়ি কোথায় পার্ক করা ছিলো সেদিন?" কিংকু চৌধারি পকেট থেকে নোটবই খুলে এগিয়ে গিয়ে জায়গাটা দেখালেন। "এখানে স্যার, এই পাজেরোটার জায়গায়। বাইরের দিকে মুখ করে পার্ক করা ছিলো।" ঝাকানাকা উল্টো সারিতে পার্ক করা গাড়িগুলো দেখে বললেন, "এগুলোর মধ্যে আড়িয়াল খানের বিএমডব্লিউ কোনটা?" কিংকু চৌধারি নোটবুক থেকে প্লেট নম্বর মিলিয়ে বললেন, "এই যে স্যার, এই কালোটা।" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে গাড়িটাকে এক চক্কর ঘুরে দেখে বললেন, "গাড়ির চাবি ছাড়া ভেতরে ঢুকে পিসু করা বেশ জটিল কাজ। এই গাড়ি তো ছুঁলেই অ্যালার্ম বেজে ওঠার কথা।" জেনারেল কামানী গর্জে উঠে বললেন, "হি ইউজেজ আ লার্জ ক্যান। সে দুই তিনদিন পর পর কেন এসে পেচ্ছাপ করে? বিকজ দ্যাট স্নিকি বাস্টার্ড কালেক্টস হিজ জ্যুস ইন আ ক্যান ফর টু অর থ্রি ডেইজ। তারপর যখন ক্যান ভর্তি হয়ে যায়, সে এসে সোজা উল্টে দেয়। ইউ নো হোয়াট হি ডিড টু মাই ডটার? আমার বাচ্চাটা ... পুওর গার্ল, সে খেয়াল না করেই সুইমিং পুলে নেমে ঝাঁপ দিয়েছে, খেয়ালই করেনি যে পাশেই খালি ক্যান পড়ে আছে! আমি বারবার তাকে শিখিয়েছি, লুক বিফোর ইউ লিপ, সে আমার কথা শুনলো না!" ঝাকানাকা আনমনে বললেন, "ক্যান হাতে বদরু। হুমমমমম।" জেনারেল কামানী বললেন, "চলুন, কমনরুমে মিনিস্টাররা অপেক্ষা করছেন। বদরুর নোটভর্তি ফাইলটাও আনিয়ে রেখেছি আমি, দেখবেন চলুন।" দোতলাতেই কমনরুম, মস্ত বড় জায়গা নিয়ে। ভেতরে পুল টেবিল, আর ইতস্তত ছড়ানো সোফাসেট আর চেয়ার। এক কোণে একটা বড় স্ক্রিনের টেলিভিশন, তার উল্টোদিকেই একটা বার, কাঁচের শেলফে সাজানো সুদৃশ্য বোতল, ভেতরে নানা রঙের পানীয়। এক পাশের সোফাসেটে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন চার মন্ত্রী, সবার হাতে খবরের কাগজ। জেনারেল বাজখাঁই গলায় বললেন, "স্যারস, দেখুন কে এসেছেন। মিস্টার ঝাকানাকা হিমসেল্ফ! এবার ঐ নচ্ছাড়টার একটা হেস্তনেস্ত ইনি করেই ছাড়বেন। ফিয়ার নট মাই ফ্রেন্ডস, উই আর ইন গুড হ্যান্ডস নাও!" সড়কমন্ত্রী বাবুল বৈরাগী খবরের কাগজটা ভাঁজ করে সরিয়ে রেখে মনমরা গলায় বললেন, "একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে গোয়েন্দা সাহেব! দুইদিন পরপর লিফটে পিসু করে দিয়ে যায় ডাকুটা! সিঁড়ি দিয়ে রোজ রোজ ছয়তলায় উঠতে গেলে আমি জানে মারা পড়বো!" পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী তুফান মোহাব্বতি হেঁকে বললেন, "কিন্তু একটা জিনিস গোয়েন্দা সাহেব! সাংবাদিকদের কানে যেন কোনো কথা না যায়! ওদের কানে কথা গেলেই সব শ্যাষ! তিলকে তাল বানিয়ে একটা বাজে পরিস্থিতি বানিয়ে দিতে পারে ব্যাটারা! শেষে দেখা যাবে আমাদের নামেই লিফটে পিসুর অভিযোগ রটে গেছে। আর একবার খবরের কাগজে এলে সেটাকে টিভিতে টকশোতে নিয়ে লেজেগোবরে মাখামাখি করে সব সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিতে পারে!" ঝাকানাকা মন দিয়ে কমনরুমের ভেতরটা দেখছিলেন, তিনি সাঁ করে তুফান মোহাব্বতির দিকে ফিরে বাঘা গলায় বললেন, "আপনারা কিন্তু সন্দেহের তালিকার বাইরে নন মাননীয় মন্ত্রীবৃন্দ!" পানিসম্পদমন্ত্রী আড়িয়াল খান ফ্যাকাসে মুখে বললেন, "আমাদের নিজেদের বাড়ি, সেখানে আমরা সুইমিং পুলে, গাড়িতে, লিফটে মুতে রাখবো দুইদিন পরপর? এটা ক্যামোন ইঞ্ছাপ?" জেনারেল কামানী অট্টহাসি হেসে বললেন, "স্যারেরা, আপনারা কঠিন গোয়েন্দার পাল্লায় পড়েছেন। আপনারা সবাই লজিক্যালি সাসপেক্ট। আমি সবসময় বলি, ইউ ক্যান জাজ আ ম্যান বাই হিজ মুসট্যাশ! লুক অ্যাট আজ! ফাইন ডিসিপ্লিন্ড পিপল, উইথ ম্যাগনিফিশেন্ট পেয়ারস অব মুসট্যাশেস! ইটস আ সিম্বল অব ডিসিপ্লিন অ্যান্ড ইনটেগ্রিটি, বাই দ্য ওয়ে! গোড়ায় সাদা রং না থাকলে যেমন গাছ হয় না, মোচ না থাকলেও মানুষ হয় না।" ঝাকানাকা নিজের গোঁফে তা দিতে দিতে আড়চোখে কামানীর দিকে তাকিয়ে বললেন, "আপনিও কিন্তু সন্দেহের বাইরে নেই জেনারেল!" জেনারেল কামানী গর্জে উঠলেন, "হোয়াট? মি! সাবধান গোয়েন্দা সাহেব, ইউ আর অ্যাবাউট টু ওয়াল্টজ অন আ মাইনফিল্ড!" ঝাকানাকা কড়া গলায় বললেন, "চুপ করে ঐ সোফায় গিয়ে বসুন! আপনাদের সবার কাছ থেকে বিস্তারিত শুনবো এখন। কিংকু সাহেব, চায়ের বন্দোবস্ত করা যাবে?" নৌমন্ত্রী ভাস্কর দা গামা উঠে গিয়ে ইন্টারকম তুলে বললেন, "কমনরুমে চা নাস্তা পাঠাও।" ঝাকানাকা কমনরুমের জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি মেরে দেখে এসে বললেন, "আপনাদের এই বাড়ির চারপাশে উঁচু দেয়াল। কেউ টপকে এসে পিসু করে রেখে চলে যাবে, আর সিকিউরিটির চোখে পড়বে না, সেটা অসম্ভব। কাজেই, দুটো সম্ভাবনা বিবেচনা করে দেখছি আমি। এক, বাড়ির ভেতরের কেউ এ কাজ করেছে। দুই, বদরু বাড়ির ভেতরের কারো ছদ্মবেশ ধরে বসে আছে।" সবার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। তুফান মোহাব্বতি ক্ষেপে গিয়ে বললেন, "আমাদের বাড়ির লোকেরা কেন খামাখা লিফটে মুতবে? আপনি মশকরা করছেন নাকি আমাদের সাথে? আমরা মন্ত্রী, বুঝলেন? চাইলে গোটা দেশের উপর গিয়ে পিসু করে ভাসিয়ে দিতে পারি। প্রয়োজন হলে সেরকম করবোও! গোটা দেশ বাদ দিয়ে নিজের বাড়ির কোনাকাঞ্জিতে মোতে কেউ?" ঝাকানাকা ক্রুর হেসে বললেন, "সে কারণেই তো আপনাদের সন্দেহ থেকে বাদ দিচ্ছি না মাননীয় মন্ত্রী!" সড়কমন্ত্রী বাবুল বৈরাগী ঢোঁক গিলে বললেন, "আপনি কী বলতে চান গোয়েন্দা সাহেব? আমাদের মধ্যে কেউ একজন বদরু খাঁ, কিন্তু আমরা বাকিরা সেটা জানি না?" ঝাকানাকা বললেন, "হ্যাঁ, সেরকমটা হতে পারে। হতেই পারে। হয়তো বদরু আপনার স্ত্রীর ছদ্মবেশ নিয়ে আছে। কিন্তু আপনি জানেন না।" তুফান মোহাব্বতি বললেন, "বদরু অন্তত আমার স্ত্রীর ছদ্মবেশ নিয়ে বসে নাই, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত!" বাকিরা সবাই অস্বস্তিভরে নড়েচড়ে বসলো। ঝাকানাকা গোঁফে তা দিয়ে বললেন, "আপনাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জানতে চাই এখন। সাততলায় কে থাকেন, জেনারেল কামানী? আপনার বাসায় কে কে থাকে?" জেনারেল কামানী গোমড়া মুখে বসে ছিলেন, তিনি অভিমানভরে বললেন, "আমি, আমার মিসেস, আমার মেয়ে, আমার আর্দালি আর আমার কাজের মেয়ে।" ঝাকানাকা কিংকু চৌধারিকে বললেন, "নোট করে নিন কিংকু সাহেব। কাজের লোকদের আলাদা করে জেরা করতে হবে।" কিংকু চৌধারি হাসিমুখে বললেন, "সে আমি গতকাল সকালেই এক দফা করে জেরা করেছি স্যার। কাজের লোকদের এক পশলা করে ঠেঙিয়েছি শুরুতেই। আর মহিলা পুলিশ এসে কাজের মেয়েগুলোকে একেবারে আঁতিপাতি সার্চ করে দেখেছে। ওদের মধ্যে কেউ অন্তত বদরু নয়।" বাবুল বৈরাগী হাসিমুখে বললেন, "আমার কাজের মেয়েটা বদরু হতেই পারে না, আমি নিশ্চিত!" বাকি সবাই আড়চোখে বাবুল বৈরাগীর দিকে তাকালো শুধু। "গুড! নেক্সট, ছয় তলায় কে থাকেন? আপনি, স্যার? আপনার বাসায় কে কে থাকেন?" বাবুল বৈরাগীর দিকে ফিরে শুধালেন ঝাকানাকা। "আমি, আমার স্ত্রী আর আমাদের কাজের মেয়েটা।" বাবুল বৈরাগী জানালেন ঝটপট। "হুমমম! তারপর, পাঁচতলায় কে কে থাকেন?" ঝাকানাকা পায়চারি করতে লাগলেন মস্ত ঘরটার ভেতরে। ভাস্কর দা গামা মিহি গলায় বললেন, "আমি, আমার স্ত্রী, আর একটা বাচ্চা কাজের ছেলে।" ঝাকানাকা বললেন, "কিংকু সাহেব, কাজের ছেলেটাকে জেরা করেছেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হুঁ। সে ছোকরা বদরু নয় স্যার, আমি একেবারে নড়া ধরে তুলে চেক করেছি।" ঝাকানাকা পায়চারি থামিয়ে প্রশ্নবোধক চোখে ঘুরে তাকালেন। "আমি থাকি চারতলায়।" গলা খাঁকরে বললেন তুফান মোহাব্বতি। "আমার স্ত্রী, আমার ভাগিনা, আর কাজের বুয়া। আমার ভাগিনাই আমার এপিএস। তবে সে যদি বদরু হয়ে থাকে, আমি কোনো দায় নিতে রাজি নই। সে বদরু হলে আপনারা তদন্ত করবেন, দুদক তদন্ত করবে, পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় তদন্ত হবে ... আমাকে শুধুমুধু টানবেন না এসবের মধ্যে।" ঝাকানাকা মৃদু হাসলেন কেবল। তারপর বললেন, "ওকে, তিনতলায় কাদের নিয়ে থাকেন আড়িয়াল খান সাহেব?" আড়িয়াল খান বললেন, "আমি, আমার স্ত্রী, আমাদের ছেলে আর কাজের মেয়ে।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। তার মানে, শুধু জেনারেল সাহেব, আর আপনারই কেবল সন্তান আপনাদের সাথে বাস করে, তাই তো? জেনারেল সাহেবের মেয়েকে তো এক ছেলে পড়াতে আসে, আপনার ছেলেকে পড়াতে আসে না কেউ?" আড়িয়াল খান বললেন, "আসতো, কিন্তু ছেলের তো স্কুল ছুটি চলছে। মাসখানেক ধরে আসছে না কেউ।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! জেনারেল সাহেব, আপনার মেয়ের টিউটরকে ডেকে পাঠান তো, কথা বলা প্রয়োজন তার সাথে।" জেনারেল কামানী বললেন, "সে এখনই আছে এখানে, পড়াতে এসেছে। আমি নিচে আসতে বলছি ছোকরাকে।" উঠে গিয়ে ইন্টারকমে হাঁক দিলেন তিনি, "মোশারফ, বিল্লালকে বল নিচে কমনরুমে আসতে। ডাবল মার্চ!" বাচ্চা এক কাজের ছেলে একটা ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ঘরের ভেতরে ঢুকলো। ট্রলিতে চা আর হালকা নাশতার সরঞ্জাম সাজানো। ঝাকানাকা পায়চারি করতে করতে বললেন, "হুমমম। জেনারেল সাহেব, আপনার সেই ফাইলটা দেখান দেখি। নোটগুলো দেখা প্রয়োজন।" জেনারেল কামানী উঠে গিয়ে একটা টেবিলের ওপরে রাখা একটা প্লাস্টিকের ফাইল এনে ঝাকানাকার হাতে ধরিয়ে দিলেন। ঝাকানাকা ফাইল খুলে ভেতরে চোখ বুলিয়ে বললেন, "এখানে তো কিছু নেই।" জেনারেল কামানী বললেন, "নেই মানে? আমি নিজে কাগজে স্টেপল করে রেখেছি স্টিকি নোটগুলি! দিন তারিখসুদ্ধু!" ঝাকানাকা ফাইলটা এগিয়ে ধরলেন, 'আপনিই দেখুন। কিছু নেই ফাইলের ভেতরে। শুধু সাদা কাগজ।" জেনারেল কামানী গর্জে উঠলেন, "আমি নিজে আধঘন্টা আগে এখানে ফাইলটা রেখে নিচে গেলাম বন্দুক নিয়ে! এর মাঝে ফাইল থেকে কাগজ চুরি করলো কে? আপনারা," মন্ত্রীদের দিকে ফিরলেন তিনি, "আপনাদের সামনেই তো ফাইল রেখে গেলাম আমি! কাগজ হাপিস হলো কীভাবে?" বাবুল বৈরাগী গরম গলায় বললেন, "আপনি কী বলতে চান জেনারেল? আপনার কাগজ আমরা চুরি করেছি?" জেনারেল কামানী বললেন, "ওয়ান অভ ইউ মিনিস্টারস মাস্ট হ্যাভ প্লেইড আ ট্রিক অন দ্যাট ফাইল! ফাইল গায়েব করার ব্যাপারস্যাপার আপনাদেরই ভালো জানার কথা!" তুফান মোহাব্বতি বললেন, "আপনি নিজে খালি ফাইল রেখে যাননি, তার কী নিশ্চয়তা?" জেনারেল কামানী বললেন, "সাবধান স্যার, ইউ আর অ্যাবাউট টু ফিডল উইথ আ লঞ্চড গ্রেনেড! আমি দিনের পর দিন যত্ন করে নোটগুলো কালেক্ট করে রাখলাম গোয়েন্দাদের দেখাবো বলে, আর আপনি বলছেন আমিই নোটচোর? গোয়েন্দা সাহেব, এই মোহাব্বতিকে ভালোমতো জেরা করুন! আমার ধারণা হি ইজ দ্য ওয়ান উইথ লিকি ব্ল্যাডারস!" তুফান মোহাব্বতি গর্জে উঠলেন, "ইংরাজি আমিও জানি, শুধু বলি না দেখে! সাবধান জেনারেল! ইংরাজিতে এমন গালি দিবো যে মানেও বুঝবেন না!" ভাস্কর দা গামা হাত তুলে বললেন, "আহ নিজেদের মধ্যে আবার ঝগড়া বিবাদ কেন? গোয়েন্দা সাহেব তো আছেনই সমস্যা সমাধান করার জন্য। আসুন চা নাস্তা খাই।" জেনারেল কামানী আর মোহাব্বতি ফোঁসফোঁস করতে করতে চায়ের কাপ তুলে নিলেন। কমনরুমে এসে ঢুকলো এক টিংটিঙে তরুণ। তার পরনে ফুলহাতা শার্ট, চোখে চশমা, ছোটো করে ছাঁটা চুল, মুখে ভয়ার্ত ভাব। জেনারেল কামানী বললেন, "এসো বিল্লাল। গোয়েন্দা সাহেব, এ আমার মেয়ের টিউটর। ভালো ছেলে। লুক ‌অ্যাট হিজ জুতার ফিতা। পারফেক্ট নট, পারফেক্ট লুপস। ডিসেন্ট বাকলস। নিট বাটনস। শেভ করে, চুল ছাঁটে। আ ভেরি ডিসিপ্লিনড ইয়াং ম্যান।" ঝাকানাকা বললেন, "বিল্লাল, তুমি কি সকালেই পড়াতে আসো সবসময়?" বিল্লাল ঢোঁক গিলে বললো, "ন্ন-না স্যার! ঠিক নাই। আন্টি যেদিন যখন আসতে বলেন, সেদিন তখন আসি। লোলা একেকদিন একেকসময় বাসায় থাকে তো, তাই। আঙ্কেল গাড়ি পাঠিয়ে দেন যখন, আমি তখন চলে আসি।" ঝাকানাকা মধুর গলায় বললেন, "তুমি কি লিফটে চড়ো, নাকি সিঁড়ি ব্যবহার করো?" বিল্লাল মাথা চুলকে বললো, "মাঝেমধ্যে নামার সময় কারেন্ট থাকে না, তখন সিঁড়ি দিয়ে নামি। কিন্তু ওঠার সময় সাধারণত লিফটেই উঠি। সাততলা তো, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে অনেক কষ্ট।" জেনারেল কামানী বললেন, "বিল্লাল, তোমার বয়সে আমি পিঠে সাপ্লাই আর দাঁতে রাইফেল নিয়ে হাতে দড়ি বেয়ে বেয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাতের বেলা পাহাড়ে উঠেছি! ইউ শুড বি অ্যাশেইমড অফ ইয়োরসেল্ফ!" বিল্লাল ঢোঁক গিলে চুপ করে গেলো। ঝাকানাকা বললেন, "তুমি কি খালি হাতেই আসো এ বাড়িতে, নাকি সঙ্গে কিছু থাকে?" বিল্লাল বললো, "ইউনিভার্সিটি থেকে আসি যখন, তখন সাথে ব্যাগ থাকে। বাসা থেকে এলে খালি হাতে আসি।" ঝাকানাকা হাসিমুখে বললেন, "ঠিকাছে বিল্লাল, তুমি এখন এসো তাহলে।" জেনারেল কামানী বললেন, "হ্যাঁ, যাও পড়াতে যাও। আর ডু সাম এক্সারসাইজ। আমি সিকিউরিটিকে বলে দেবো, তোমাকে যাতে এখন থেকে লিফটে আর চড়তে না দেয়।" বিল্লাল ফ্যাকাশে মুখে চলে গেলো। ঝাকানাকা চায়ের কাপ তুলে সিঙাড়ায় একটা কামড় বসিয়ে বললেন, "আমাদের হাতে তাহলে এখন দুটো রহস্য। কে বা কারা কীভাবে পিসু করে বেড়ায়, আর এই ফাইলের ভেতর থেকে স্টিকি নোটগুলো কে বা কারা কেন সরালো।" জেনারেল কামানী তুফান মোহাব্বতির দিকে ভ্রুকুটি করে বললেন, "সঠিক!" ঝাকানাকা বললেন, "আমি কিংকু সাহেবের কাছ থেকে ঘটনার দিনতারিখসমেত নোটস আর আপনাদের সিকিউরিটি লেজার, দুটোই নিয়ে দেখেছি। ঘটনার দিন আপনারা প্রত্যেকেই বাড়িতে ছিলেন। শুধু মিস্টার মোহাব্বতির এপিএস মাঝখানে বেশ কিছুদিন অনুপস্থিত ছিলো।" মোহাব্বতি কেশে গলা সাফ করে বললেন, "হ্যাঁ, নির্বাচনী এলাকায় পাঠাতে হয় তাকে প্রায়ই। বেয়াদব লোকজন সব, কথা শুনতে চায় না। ও গিয়ে একটু শাসন করে আসে আর কি।" ঝাকানাকা চায়ের কাপটা নামিয়ে বললেন, "আপনারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রস্তুত হন। আমি একটু টয়লেট থেকে আসছি। টয়লেটটা কোন দিকে?" আড়িয়াল খান কমন রুমের একদিকে একটা দরজা দেখিয়ে দিলেন। ঝাকানাকা আয়েশী ভঙ্গিতে হেঁটে টয়লেটে গিয়ে ঢুকলেন। জেনারেল কামানী কিংকু চৌধারির দিকে তাকিয়ে বললেন, "হেহ, আমাদের মধ্যে একজন বদরু খাঁ হলে কি আমরা টের পেতাম না? কয়েক বছর ধরে এক সঙ্গে বাস করছি ... বললেই হলো আমাদের একজন বদরু? আপনার গোয়েন্দার মাথায় ছিট আছে।" কিংকু চৌধারি হাই তুলে বললেন, "স্যার, বদরু আপনার কোলবালিশের ছদ্মবেশ নিয়ে আপনার পাশে শুয়ে থাকলেও আপনি টের পাবেন না যে সে বদরু। বছরের পর বছর ধরে বদরুকে দৌড়ানি দিচ্ছি আমরা। সে অত্যন্ত ঘোড়েল চিজ।" ঝাকানাকা টয়লেট থেকে বেরিয়ে এসে গলা খাঁকরে বললেন, "প্রথম দিনের ঘটনাটা কে খুলে বলতে পারবেন?" জেনারেল কামানী বললেন, "আমি। আমার লোলা নিচে নেমেছিলো সুইমিং করতে। আচমকা শুনি তার চিৎকার। আমি বেডরুমের বারান্দা দিয়ে বেরিয়ে এসে দেখি সে পুলের পাশে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছে। আমি সাথে সাথে আমার রিভলভারটা বের করে এক এক করে ছয়টা গুলি ভরলাম। তারপর লিফটে করে নিচে নামলাম। ছুটে গেলাম লোলার কাছে। গিয়ে দেখি সে একটা ক্যান হাতে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। দেন আই রেড ইট অ্যান্ড ফিগারড অল আউট।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। সুইমিং পুলে এক ক্যান পিসু ঢালতে গেলে অনেক প্রস্তুতি লাগে। তার মানে বদরু বেশ সময় নিয়েই ঘটিয়েছে ব্যাপারটা। ... গাড়ির ঘটনাটা কী, আড়িয়াল খান সাহেব?" আড়িয়াল খান নাক কুঁচকে বললেন, "আমি সকালে আমার স্ত্রীর সঙ্গে তাদের ক্লাবে একটা অনুষ্ঠানে যাবো বলে গাড়ির দরজা খুলে দেখি ভেতরে বিকট গন্ধ! আমি তো অবাক। প্রথমে ভাবলাম আমার ছেলে নোটনের কাজ, কিন্তু সে কখনও এমন দুষ্টুমি করে না। স্কুলে একে ওকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে কয়েকবার, কিন্তু নিজের গাড়িতে পিসু করবে না সে, কখনোই না। কোনোমতে বমি চেপে বের হয়ে আসতে গিয়ে দেখি ড্রাইভারের সিটের পেছনে স্টিকি নোট সাঁটানো।" ঝাকানাকা বললেন, "গাড়ি তো চাবি মারা থাকে, নাকি?" আড়িয়াল খান বললেন, "ড্রাইভাররা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে, তারা সবসময় যে দরজা চাবি মেরে বন্ধ করে রাখে, এমন নয়। তবে ঘটনার পর ড্রাইভারকে বলেছি চাবি মেরে রাখতে। সব ড্রাইভারই তারপর থেকে চাবি মেরে রাখে।" ঝাকানাকা বললেন, "বটে? আচ্ছা, তারপর?" বাবুল বৈরাগী বললেন, "তারপর দিনদুয়েক বাদে একদিন ভোরে জেনারেল সাহেবের হাঁকডাক শুনে বের হয়ে দেখি, উনি লিফট খুলে চেঁচাচ্ছেন। আমাদের বাড়িতে লিফট বাড়ির একদিকে, আর সিঁড়ি একেবারে তার উল্টো পাশে। আমি করিডোর পুরোটা ডিঙিয়ে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে আবার করিডোর উজিয়ে গিয়ে দেখি, উনি লিফট খুলে রেখে খুব রাগারাগি করছেন। আর ভেতরে পিসুর গন্ধ। সে কী কড়ড়া গন্ধ রে বাবা! আপনাদের বদরু খায় কী? একেবারে সার কারখানার অ্যামোনিয়ার গন্ধ, মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে!" জেনারেল কামানী আড়চোখে মোহাব্বতির দিকে চেয়ে বললেন, "বদলোকের পেচ্ছাপে দুর্গন্ধ বেশি হয়!" তুফান মোহাব্বতি দাঁত বার করে হিংস্র হেসে বললেন, "একেবারে ঠিক কথা বলেছেন জেনারেল সাহেব!" ঝাকানাকা বললেন, "নোটখানা পড়েছিলেন আপনি, বৈরাগী সাহেব?" বাবুল বৈরাগী বললেন, "না, জেনারেল সাহেব সেই নোট বাজেয়াপ্ত করে নিজের কাছে রেখে দিলেন। পড়ার সময় পেলাম কই? আর এতো লেখাপড়া করার জো ছিলো না তখন, কী দুর্গন্ধ রে বাবা!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম। তারপরের ঘটনা কে দেখেছেন শুরুতে?" তুফান মোহাব্বতি বললেন, "আমি একদিন রাতের বেলা লিফটে ঢুকতে গিয়ে একই কাহিনি দেখেছি। ভয়ানক বাজে গন্ধ! আমি সিকিউরিটির লোকজনকে ডেকে ধমক দিচ্ছিলাম, তখন জেনারেল সাহেব সুইমিং করছিলেন। তিনি দৌড়ে এলেন জাঙ্গিয়া পরে। তারপর খুব রাগারাগি করলেন। জেনারেল সাহেবই স্টিকি নোট খুঁজে পেয়েছিলেন, তারপর সেটা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেলেন। সেদিন সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠতে হয়েছে। আমি হার্টের রোগী, সিঁড়ি দিয়ে চলতে ফিরতে গিয়ে মরার দশা!" ঝাকানাকা বললেন, "ইন্টারেস্টিং! তারপর?" ভাস্কর দা গামা বললেন, "আমি একদিন ভোরবেলা হাঁটতে বের হবো বলে লিফটের দরজা খুলে দেখি এই অবস্থা। লিফটের ভেতরে মারাত্মক পিসুর দুর্গন্ধ। আমি সিকিউরিটির লোকজনকে ধমক দিচ্ছিলাম ইন্টারকমে। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে জেনারেল সাহেবের সঙ্গে দেখা। উনি ছুটে এসে লিফটের ভেতরে আঁতিপাতি করে খুঁজে স্টিকি নোট বার করলেন। তারপর রাগারাগি করতে লাগলেন।" ঝাকানাকা জেনারেল কামানীর দিকে তাকিয়ে বললেন, "খুবই ইন্টারেস্টিং। সব আবিষ্কারের সময়ই জেনারেল সাহেব আশেপাশে ছিলেন দেখছি।" জেনারেল কামানী গর্জে উঠে বললেন, "দেখুন গোয়েন্দা সাহেব, আমি একজন যোদ্ধা! আই শ্যাল ফাইট ইন দ্য হাউজেজ, আই শ্যাল ফাইট ইন দ্য স্ট্রিটস, আই শ্যাল নেভার ফ্ল্যাগ নর ফেইল! হুএভার হ্যাজ বিন পিসিং ইন দ্য এলিভেটর ইজ আওয়ার এনিমি! এই শত্রুকে আমি নিশানা করে রেখেছি।" আড়চোখে মোহাব্বতির দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, "তাকে পাকড়াও করে জাস্টিসের মুখোমুখি করাই আমার যুদ্ধের লক্ষ্য!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! কিন্তু নোটগুলো সব গায়েব হয়ে গেলো তো। এখন কী উপায়?" জেনারেল কামানী হঠাৎ উজ্জ্বল মুখে বললেন, "ওয়েইট! আমার মোবাইলে ছবি তোলা আছে নোটগুলোর। ডিসপেয়ার নট, ও ব্রেদরেন!" মন্ত্রীরা একে অন্যের মুখের দিকে চাইলেন। ঝাকানাকা জেনারেল সাহেবের বাড়িয়ে ধরা ফোন হাতে নিয়ে ছবিগুলো খুঁটিয়ে দেখে গম্ভীর হয়ে গেলেন। আড়িয়াল খান বললেন, "আমার বাসা তিনতলায় বলে তেমন কষ্ট হয় না, কিন্তু অন্য সবাই আরো ওপরে থাকেন। ভাইসাহেবদের, ভাবিদের বড় কষ্ট হয়। লিফট ছাড়া শহরে বাস করতে গেলে হায়াৎ বলতে কিছু থাকে, বলেন? আমরা কয়েক সপ্তাহ ধরে সিঁড়ি দিয়ে চলাচল করে একেবারে হয়রান হয়ে গেছি। লিফট ব্যবহারই করতে পারি না। একবার ঐ মুতের গন্ধওলা লিফটে ঢুকে চলাচল করলে গন্ধটা গায়ে একেবারে সারাদিনের জন‌্য বসে যায়। লোকজন আড়ে আড়ে তাকায়। আমাদের তো বিদেশীদের সাথে মিটিং ফিটিং করতে হয়। দিনের বেলা বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রাতের বেলা সৌদি রাষ্ট্রদূত থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, সবার কাছে যেতে হয়। এইভাবে তো চলতে পারে না।" জেনারেল কামানী বললেন, "বদরু ইজ ট্রাইং টু টারনিশ আওয়ার ইমেইজ বিফোর ইন্টারন্যাশনাল ফিগারস। গায়ে পিসুর গন্ধ নিয়ে মার্কিন এমব্যাসেডরের কাছে গেলে আমাদের দেশ আর টিকবে? এমনিতেই তো তাদের চটিয়ে রেখেছি আমরা। মদের গন্ধ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়, বাট মুতের গন্ধ? নেভার! ইউ মাস্ট ডু সামথিং বিফোর ইউনাইটেড স্টেটস অফিশিয়ালি রিয়্যাক্টস!" ঝাকানাকা চিন্তিত গলায় বললেন, "জেন্টলমেন, আমি আজকে উঠবো। রহস্যটা আমি মোটামুটি উদ্ধার করে ফেলেছি, শুধু একটা জিনিস মিলছে না। আপনারা কাল কোথাও যাবেন না। সকালে এখানে থাকবেন সবাই। আপনাদের সমস্যা আশা করি আগামীকাল মিটে যাবে।" "কী জিনিস মিলছে না?" ভাস্কর দা গামা মিহিগলায় জানতে চাইলেন। ঝাকানাকা গোঁফে তা দিতে দিতে বললেন, "একদম প্রথম যে গ্যালনটা পাওয়া গেলো, সেটা।" সকলে একে অন্যের মুখের দিকে চাইলেন শুধু। ঝাকানাকা উঠে পড়লেন। কিংকু চৌধারি উঠে এলেন তাঁর পেছন পেছন। বাড়ির বাইরে বেরিয়েই ঝাকানাকা দেখলেন, বাড়ির সামনে সারি সারি টেলিভিশনের গাড়ি, আর ভিড় জমিয়েছে কয়েকজন টেলিসাংবাদিক। কারো কাঁধে ক্যামেরা, কারো হাতে ধরা বুম। কিংকু চৌধারির পুলিশি গাড়ি বেরিয়ে আসতেই সকলে এসে ছেঁকে ধরলো গাড়িকে। "গোয়েন্দা ঝাকানাকা, মন্ত্রীদের বাসভবনে কী ঘটেছে?" বুম বাড়িয়ে বললো একজন। "জনাব ঝাকানাকা আমরা খবর পেয়েছি মন্ত্রীদের বাড়িতে আবার একটি এপিএস-কাহিনী ঘটেছে। এ ব্যাপারে আপনার কী মন্তব্য?" আরেকজন বুম গুঁজে দিলো ঝাকানাকার নাকের নিচে। "চারজন মন্ত্রী কেন একসঙ্গে এক বাড়িতে থাকেন? আপনি কি সে রহস্যের সমাধান করতে এসেছেন?" হুঙ্কার দিলো আরেক সাংবাদিক। ঝাকানাকা গাড়ি থেকে নেমে হাত তুলে বললেন, "তদন্তের স্বার্থে আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে এর সাথে বদরু খাঁ জড়িত।" কথা আর না বাড়িয়ে গাড়িতে চড়ে তিনি বললেন, "চালাও গাড়ি।" কিংকু চৌধারি টুপি ঠিক করতে করতে বললেন, "স্যার, এভাবে সাংবাদিকদের সামনে বদরুর নাম বলা কি ঠিক হলো?" ঝাকানাকা গোঁফে তা দিতে দিতে আনমনে বললেন, "হুঁ। একটা টোপ ফেলা দরকার ছিলো।" কিংকু বললেন, "কী টোপ স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "কাল বলবো। আপনি কি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন কিংকু সাহেব?" কিংকু বললেন, "কোন ব্যাপার স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "ভাস্কর দা গামা চায়ের সাথে চিনি খান না। আপনি একটু খোঁজ নেবেন, উনি ডায়াবেটিক রোগী কি না। আর আপনাকে আরো কয়েকটা জিনিস খোঁজ নিতে হবে। নোট করে নিন। এক, ...।" ৪. সন্ধ্যেবেলা ঝাকানাকা টিভি ছেড়ে চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলেন। বেশি অপেক্ষা করতে হলো না তাঁকে, সন্ধ্যার খবরের পরপরই একটা এসএমএস পেলেন তিনি ফোনে। সেটা পড়ে তাঁর মুখে ভয়ানক এক হাসি ফুটে উঠলো। তিনি খুটখুট করে টিপে টিপে একটা উত্তর লিখে পাঠিয়ে দিলেন। রাতে কিংকু চৌধারি ফোন করে আনন্দিত কণ্ঠে বললেন, "স্যার, আপনার ধারণাই সঠিক।" ঝাকানাকা হাসিমুখে জেনারেল কামানীর মোবাইলে ফোন দিলেন। তারপর ফোন দিলেন তুফান মোহাব্বতির নাম্বারে। কঠিন রহস্য ভেদ করা বড় আনন্দের। ৫. সকালে নমরুদ প্যালেসের কমনরুমে আবার সকলে এসে বসেছেন। সবারই মুখে একটু স্নায়বিক পীড়ার ছাপ। ঝাকানাকা টয়লেট থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে এসে বললেন, "জেন্টলমেন, রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে!" সকলেই একে অন্যের মুখের দিকে তাকালেন। জেনারেল কামানী আড়চোখে তাকালেন তুফান মোহাব্বতির দিকে। ঝাকানাকা পায়চারি করতে করতে বললেন, "বদরু খাঁ আমার দীর্ঘদিনের শত্রু। তাকে আমি হাড়েমজ্জায় চিনি। তার পেজোমির কায়দাকানুন আমার মুখস্থ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, লোকেও সেটা জানে। জানে, কোথাও বদরুর উৎপাত হলেই আমার ডাক পড়বে।" বাবুল বৈরাগী রাগী কণ্ঠে বললেন, "কিন্তু আপনি যেভাবে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে কাল সব বলে দিলেন, সেটা কি ভালো করলেন? গতকাল রাতে সব চ্যানেলে আমাদের ওপর নিউজ হয়েছে! আজ পত্রিকার প্রথম পাতায় খবর এসেছে!" ঝাকানাকা হাসিমুখে বললেন, "কী খবর এসেছে?" বাবুল বৈরাগী বললেন, "এই যে দেখুন, দৈনিক কচুবনে কী লিখেছে! মন্ত্রীর প্রাসাদে বদরুর ছায়া! ভেতরে একগাদা আজগুবি খবর! আমরা নাকি বদরুকে পুষছি নাশকতা করার জন্যে! কেন আমরা চার মন্ত্রী আর এক জেনারেল এক সাথে থাকি, কী ষড়যন্ত্র করি, দেশের টাকাপয়সা কীভাবে মেরে সাফ করি, তার বৃত্তান্ত!" ঝাকানাকা বললেন, "তো আমার কী?" বাবুল বৈরাগী থতমত খেয়ে চুপ করে গেলেন। ঝাকানাকা বললেন, "আমার সব কেসেই বদরু কোনো না কোনোভাবে উপস্থিত থাকে। কিন্তু, মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই কেসে বদরু ছিলো না। অন্তত, শারীরিকভাবে ছিলো না। তবে তার নামখানা ছিলো।" জেনারেল কামানী বললেন, "মানে?" ঝাকানাকা গোঁফে তা দিয়ে হেসে বললেন, "কেউ একজন চাইছিলো, বদরু খাঁর নামটা ধার করে আলগোছে একটা বদমায়েশি করতে। জানা কথা, বদরু কোথাও উৎপাত করলে আমার ডাক পড়বে। কিন্তু আমার ডাক পড়ার মানেই ব্যাপারটা সাংবাদিকদের কানে চলে যাওয়া, আর তারপর বিরাট কাভারেজ পাওয়া। কাজেই, আমাকে ডাকা চলবে না। আমাকে ডাকা না গেলে বদরুর জুজুও কাজে লাগবে, আবার আমার অভাবে তার সমাধানও মিলবে না। বদরুও জানতে পারবে না, তার নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ একটা গিয়ানজাম পাকাচ্ছে কোথাও। এ-ই ছিলো আমাদের আলোচ্য পাজিটার মতলব।" ভাস্কর দা গামা বললেন, "মানে?" ঝাকানাকা বললেন, "বলছি বুঝিয়ে। কিছুদিন আগে আপনাদের এক বন্ধুর এপিএস টাকার বস্তা নিয়ে ধরা পড়ে অনেক কেলেঙ্কারি ঘটালেন, মনে আছে তো?" মন্ত্রীদের মুখ শুকিয়ে গেলো। ঝাকানাকা বললেন, "আপনারাও তারপর সাবধান হয়ে গেলেন। কেউ আর বাড়িতে এপিএসদের ঘেঁষতে দেন না। তুফান মোহাব্বতি বাদে। ওনার এপিএস ওনার আপন ভাগ্নে, তাকে হুট করে বাড়ি থেকে খেদিয়ে দিলে বরং সন্দেহ বাড়বে।" মোহাব্বতি ফ্যাকাসে মুখে বললেন, "তো কী হয়েছে? বাড়িতে এপিএস থাকা কি খারাপ?" ঝাকানাকা বললেন, "না, খারাপ হবে কেন? তাছাড়া ঘটনার সময় সে অনেকদিন ঢাকাতেও ছিলো না, আমি খোঁজ নিয়েছি।" আড়িয়াল খাঁ বললেন, "তাহলে?" ঝাকানাকা বললেন, "আপনাদের মধ্যে একজন দুষ্টু তখন টাকাপয়সা লেনদেনের জন্যে এক দারুণ ব্যবস্থা করে ফেললেন। এমন এক ব্যবস্থা, যাতে কারো কোনো সন্দেহ হবে না।" মন্ত্রীদের মুখ শুকিয়ে গেলো। ঝাকানাকা বললেন, "কিন্তু সেই ব্যবস্থায় একটাই সমস্যা। আপনারা নিজেরা যদি কেউ দেখে ফেলেন, তাহলে যে ল্যাং মারবেন না, কলকাঠি নেড়ে সেই দুষ্টুকে ফাঁসিয়ে দেবেন না, তার কী নিশ্চয়তা? কাজেই, এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কেউ সহজে এই লেনদেনের দৃশ্য দেখতে না পায়।" ভাস্কর দা গামা বললেন, "লেনদেন?" ঝাকানাকা ভয়ানক মুচকি হেসে বললেন, "হ্যাঁ। বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে ঘুষ, কমিশন, তোল্লা, চাঁদা, এসবের টাকা তো পৌঁছাতে হবে মন্ত্রীমহোদয়ে হাতে। অফিসে বসে আজকাল এসব করতে গেলে ফাঁসতে হয়, ব্যাঙ্ক লেনদেন করতে গেলে রেকর্ড থেকে যায়, তাই দরকার ক্যাশ লেনদেন। বাড়িতে বসে সেই টাকা হাতে পাওয়া গেলে সবচেয়ে ভালো।" মন্ত্রীরা ঢোঁক গিললেন, জেনারেল কামানী উল্লসিত চোখে তাকালেন মোহাব্বতির দিকে। ঝাকানাকা বললেন, "কিন্তু প্রশ্ন আসতে পারে, তার জন্যে সুইমিং পুলে কেন পিসু পাওয়া যাবে? কেনই বা পিসু পাওয়া যাবে গাড়িতে, বা লিফটে? সেই পিসু কীভাবে কে করে যাচ্ছে?" জেনারেল কামানী বললেন, "হু হাউ হোয়াই?" ঝাকানাকা বললেন, "তারচেয়েও বড় প্রশ্ন, কেন সুইমিং পুলে একবার, গাড়িতে একবার, কিন্তু লিফটে বারবার পিসু করা হচ্ছিলো?" কিংকু বললেন, "কেন স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "ওখানেই বেচারা দুষ্টু একটা ক্লু রেখে গেছে। উত্তর হচ্ছে, একটা ধারণা তৈরি করা, সারা বাড়ি জুড়ে পিসু করে বেড়াচ্ছে বদরু খাঁ। এ কারণে যত্রতত্র তার পিসু আর স্টিকি নোট পাওয়া যাচ্ছে।" জেনারেল কামানী বললেন, "কিন্তু ... আসল উদ্দেশ্যটা কী ছিলো মোহাব্বতির?" তুফান মোহাব্বতি বললেন, "সাবধান জেনারেল! ফাটা বাঁশের চিপার উপর বসে ফূর্তি করবেন না!" ঝাকানাকা বললেন, "দুষ্টু লোকটার আসল উদ্দেশ্য ছিলো, এই বাড়ির লিফটটাকে অচল করে রাখা। যাতে লোকে লিফট দিয়ে চলাচল না করে। আপনারা তো জানেন, আপনাদের সিঁড়িটা লিফটের একেবারে উল্টোদিকে। লোকে ওদিক দিয়েই বের হয়, ওদিক দিয়েই চলাচল করে, লিফটের প্রান্তটা আর ব্যবহৃত হয় না। এমনই একটা পরিস্থিতি দরকার ছিলো আমাদের দুষ্টের জন্যে।" আড়িয়াল খান বললেন, "কিন্তু বদরু জড়িত নেই, আপনি কীভাবে জানেন?" ঝাকানাকা বললেন, "স্টিকি নোটের ছবি দেখে। ওটা বদরুর হাতের লেখা নয়। ওর হাতের লেখা আমি খুব ভালো করে চিনি। অন্য কেউ বদরু সেজে ওসব লিখে রেখে গেছে। সবাই জানে বদরু ভয়ানক বদ, এইসব পেজোমি করা তার বদভ্যাস, তাই বদরুর মতো করে নোট লিখে রাখতে গিয়ে দুষ্টু লোক একটা ভুল করেছে। সে বুঝতে পারেনি, আমাকে এক পর্যায়ে ডাকা হবে। যখন সে জানতে পেরেছে, গোয়েন্দা ঝাকানাকা আসবে, তখন সে নোটগুলো হাপিস করে দিয়েছে। জেনারেল কামানী ছবি তুলে না রাখলে, আমরা আজও ছদ্মবেশী বদরুকে খুঁজে বেড়াতাম, আর ধোঁকা খেতাম।" ভাস্কর দা গামা বললেন, "আর গ্যালন?" ঝাকানাকা বললেন, "গ্যালনটা সুইমিং পুলের পাশে রাখা হয়েছে আপনাদের ধোঁকা দেয়ার জন্যে। আপনারা এর পর থেকে গ্যালন হাতে একজন বদরুকে খুঁজবেন, সে আশায় একটা খালি গ্যালনের গায়ে স্টিকি নোট রেখে সুইমিং পুলের পাশে রাখা হয়েছে। কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে, সুইমিং পুলে কেউ গ্যালন ভরা পিসু ফেলে আসেনি। জেনারেল সাহেবের মেয়ে, লোলা, সাঁতার কেটে উঠে এসে ঐ ক্যান হাতে পেয়েছে, আর নোট পড়ে তার ধারণা হয়েছে কেউ একজন পুলে পিসু ঢেলে এসেছে ক্যানে করে। আপনারা অনেকেই ঐ পুলে সাঁতরান, অনেক দিন পরপর পানি পাল্টানো হয়, কাজেই পুলের পানি এমনিতেই নোংরা হয়ে থাকার কথা। নোটটা শুধু পিসুর ধারণাটা তৈরি করেছে। আর সুইমিং পুলে খালি গ্যালন এক ফাঁকে যে কেউ প্রথমবার রেখে আসতে পারে। শুধু তা-ই নয়, আপনাদের প্রত্যেকের বাসার টয়লেটের জানালা দিয়ে একটা খালি গ্যালন নিচে ফেলা সম্ভব। কমনরুমের টয়লেট থেকে সুইমিং পুলের পাশটা পরিষ্কার দেখা যায়।" বাবুল বৈরাগী বললেন, "কিন্তু এতো খাটনি কেন?" ঝাকানাকা হাসিমুখে বললেন, "ঐ যে বললাম, নিরাপদে লেনদেনের জন্য? এই ব্যবস্থা অবশ্য সাময়িক হওয়ার কথা। সুইমিং পুলের পর গাড়িতে পিসু করে স্টিকি নোট রেখে আসার উদ্দেশ্যও একই। নজর অন্যদিকে ঘোরানো। আর তারপর শুরু হলো লিফটের ঘটনা।" জেনারেল কামানী মোহাব্বতির দিকে ফিরে বললেন, "কে সেই লোক?" ঝাকানাকা বললেন, "বলছি। সেই লোকের লেনদেনের পদ্ধতিটা বলি। টাকার বাহক তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করতো যথাসময়ে। তিনি বেরিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়াতেন। লিফটের দরজা খুলে টাকার বাহক তার হাতে টাকা ধরিয়ে দিতো। তিনি ঘরে ঢুকে যেতেন। লিফট অচল হওয়ার পর আপনাদের বাইরে বেরোনো কমে গিয়েছে, সিঁড়ি ভেঙে সহজে কেউ ওঠানামা করেন না, তাই এই লেনদেনের সাক্ষীও কেউ নেই।" মন্ত্রীরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। ঝাকানাকা হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, "বিল্লালের ব্যাগের রং কী, মাননীয় মন্ত্রী?" বাবুল বৈরাগী বললেন, "কালো।" বলেই চুপ করে গেলেন তিনি। ঝাকানাকা হাসলেন মিটিমিটি। "ঠিক! কিন্তু জেনারেল কামানীর মেয়ের টিউটরের ব্যাগের রং আপনি কী করে জানলেন?" বাবুল বৈরাগী কোনো উত্তর দিলেন না। ঝাকানাকা বললেন, "আপনি জানেন, কারণ আপনাদের ব্যবস্থাটা খুব চমৎকার। বিল্লাল একটা টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে আসে, আপনি তাকে একটা একইরকম খালি ব্যাগ দেন। সেই ব্যাগের ভেতরে একটা বোতল থাকে। বোতল ভর্তি থাকে পিসু। বিল্লাল শুধু পড়ানো শেষ করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সেই পিসু ভরা বোতল মওকামতো লিফটে উপুড় করে দিয়ে যায়। সঙ্গে রেখে যায় একটা স্টিকি নোট। তাই না?" বাবুল বৈরাগী চুপ করে বসে আছেন দেখে ঝাকানাকা বললেন, "বিল্লাল যে আপনার এপিএসের শালা, সেটাও কিন্তু আপনি জেনারেল কামানীর কাছে চেপে গিয়েছিলেন। জেনারেল সাহেব অবশ্য রাতে আমাকে জানিয়েছেন, আপনিই ছেলেটাকে রেফার করেছিলেন তার কাছে। মোহাব্বতি সাহেব সেটার সাক্ষী।" বাবুল বৈরাগী কিছুই বললেন না। জেনারেল কামানী হাঁ করে ঝাকানাকার দিকে তাকিয়ে বললেন, "মানে ... আপনি বলছেন, বিল্লাল এতদিন আমার গাড়িতে চড়ে কালো টাকা ক্যারি করে এনে মিনিস্টার সাহেবকে পৌঁছে দিতো?" ঝাকানাকা বললেন, "হ্যাঁ।" জেনারেল মুখ কালো করে বললেন, "কিন্তু হি হ্যাড ইম্যাকুলেট বাটনস, অ্যান্ড বাকলস, অ্যান্ড জুতার ফিতা! আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো?" ঝাকানাকা বললেন, "না। আর বিল্লালই আপনার ঘর থেকে ফাইলের নোটগুলো সরিয়ে রেখেছিলো এক ফাঁকে, আপনি পুলিশ ডাকার পর। গতকাল টিভিতে বদরুকে নিয়ে নিউজ হওয়া কিছুক্ষণ পরই বদরু আমাকে এসএমএস করে ঝাড়ি দিয়েছে, কেন বিনা অনুমতিতে তার নাম ব্যবহার করে আমি তদন্ত করছি। সে কপিরাইট আইনে আমার নামে মামলা করে দিতে চায়। তাকে আমি বলেছি, কে তাকে ফাঁসাতে চায়, সেটা আমি তাকে জানাবো।" বাবুল বৈরাগী হেহে করে হেসে বললেন, "আপনার কাছে কোনো প্রমাণ নাই। এই সবই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর অপপ্রচার। আপনি আমার কচুটা করবেন। আমি মন্ত্রী, ভুলে যাবেন না।" ঝাকানাকা মৃদু হেসে উঠে পড়ে বললেন, "আইন আদালত দিয়ে আপনার কিছু করা যাবে না, আমি জানি মাননীয় মন্ত্রী। আমি শুধু আপনার নামটা বদরুকে জানিয়ে দেবো আর কি।" বাবুল বৈরাগী ফ্যাকাসে মুখে বললেন, "তারপর?" ঝাকানাকা চোখ টিপে বললেন, "তারপর কী হবে, পত্রিকায় দেখে নেবেন!" ৫. দিন দুয়েক পরই কিংকু চৌধারি খবরের কাগজ হাতে নিয়ে ছুটে এলেন। "দেখেছেন স্যার, বদরুর কাণ্ড?" ঝাকানাকা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রশান্ত মুখে শিরোনামে চোখ বোলালেন। "মন্ত্রীর মূত্রস্নান: নেপথ্যে বদরু খাঁ?" কিংকু করুণ মুখে বললেন, "বদরুকে ধরতে দারুণ চাপ আসছে স্যার, কী করবো?" ঝাকানাকা বললেন, "বার্মিজ রেডিও শুনে শুনে অভ্যাস করে ফেলুন।" সত্য ঘটনার ছায়াবলম্বনে। সত্য ঘটনাটি যুগিয়েছে সঞ্জীব, তাকে ধন্যবাদ। সঞ্জীব, আপনাদের ফ্ল্যাটে যে লিফটে পিসু করতো, তাকে চটাবেন না। চটালে সে কঠিন তরল বায়বীয় সব ফ্রন্টে যুগপৎ আক্রমণ চালাতে পারে। গোয়েন্দা ঝাকানাকার একটি ফেসবুক পেইজ রয়েছে।
false
rg
।। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ তে যারা বই প্রকাশের কথা ভাবছেন, তাদের জন্য আমি কি করব, কেন করব।। ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই বাংলাদেশে এখন বই প্রকাশের হিড়িক লাগে। হিড়িক বলছি এই কারণে যে, অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষ্যে এখন আমাদের ফেব্রুয়ারি মাসেই সবচেয়ে বেশি সৃজনশীল ও মননশীল বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের তাড়াহুড়োর কারণে অনেক সম্ভাবনাময় ভালো বইটিও ভালো সম্পাদনার অভাবে ঠিক বই হয়ে ওঠে না। বই প্রকাশের এই হিড়িকে এখন নতুন লেখকদের পাশাপাশি সৌখিন লেখকরাও জড়িয়ে যাচ্ছে। জড়িয়ে যাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব, সামরিক কর্মকর্তা, আমলা, মুক্তিযোদ্ধা, পলিটিশিয়ান, গৃহিনী, এমন কি ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত। এদের সৌখিন লেখক বা অপেশাদার লেখক বা মৌসুমী লেখকও বলা যায়। সারা বছর না লিখে এরা বইমেলাকে ঘিরে এক ধরনের প্রস্তুতি নেন।বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্প এখনো সম্পাদনাসহ বইয়ের যথাযথ মার্কেটিং নিয়ে অনেক ঘাটতি মোকাবেলা করছে। বরং বলা যায়, এখনো দেশে প্রকাশনার পাশাপাশি সম্পাদনা পরিষদ সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে একটি ভালো বই যেমন পাঠকের কাছে অপরিচিত থেকে যাচ্ছে। তেমনি আবার একটি খারাপ বই বিজ্ঞাপনের কেরামতিতে অনেক পাঠক কিনে ঠকছেন। আমাদের প্রকাশকরা এখনো সম্পাদনা বিষয়ে ততোটা সিরিয়াস নন। মার্কেটিং বিষয়ে তো তারা নিজেরাই এখনো গুদামজাতকরণের প্রতিই আস্তাশীল। ফলে নতুন লেখকদের বই অমর একুশে বইমেলার পর সারা দেশের কোনো বইয়ের দোকানে আর সহজলভ্য নয়। ওটা এক বছরের জন্য প্রকাশকের গুদামের প্রিজনসেলে বন্দি থাকে। আলোচিত ও বিখ্যাত লেখকরা প্রকাশক কর্তৃক বইয়ের এই প্রিজনবাস তেমন টের পান না। কারণ, তাদের বইগুলো বইয়ের দোকানে ঠিকই কোনো না কোনো মাধ্যমে চলে যায়।বিপত্তি বাধে নতুন লেখকদের বেলায়। আর বছর ঘুরে যখন ফেব্রুয়ারি আসে, তখন প্রকাশক সেই নতুন লেখককে দেখলেই একটা ঝামটা মারেন। ভাই, আপনার বইটা তো সব রয়ে গেল। আমাদের প্রকাশকরা বিখ্যাত লেখকদের পেছনে বিজ্ঞাপনে যা খরচ করেন, তা পুরোটা তুলতে না পারলেও সেই লোকসানের ঝালটা নতুন লেখকদের উপর চোখ রাঙিয়ে তখন উসুল করার চেষ্টা করেন। ফলে, নতুন লেখকরা একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশক সমস্যায় ভোগেন। অর্থ্যাৎ গোটা যজ্ঞে এখনো আমাদের প্রফেশনালিজম গড়ে ওঠেনি। প্রফেশনালিজমের সেই ঘাটতি আর লোকসানের সকল ধক্কল নতুন লেখকদের মুখ ঝামটে উসুল করার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করেন মহামান্য প্রকাশেকরা। অন্তত মনে মনে হলেও একটু ঝাল মিটিয়ে খুশি হন।তাই বলে তো নতুন লেখকরা বই প্রকাশ থেকে পিছু হটবে না। বরং পুরাতনদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই নতুন করে নিজেদের জাত চেনাতে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে আলোচনায় উঠে আসবে। জাত লেখককে প্রকাশকরা বেশিদিন দূরে ঠেলে রাখতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। এমনিতে লেখক ও প্রকাশকদের সম্পর্ক অনেকটা টেস্ট ক্রিকেট আর বৃষ্টির সম্পর্কের মত। এই ভালো টগবগে পিয়ার তো এই আবার মৃদুমন্দ কাসুন্দিপনা। টক-ঝাল-মিষ্টি মধুর সম্পর্ক যাকে বলে। তো একজন জাত লেখককেও এই চিরায়ত পাহাড় ডিঙ্গিয়েই আসতে হয়।তাই নতুন লেখকদের জন্য প্রকাশকের মুখোমুখি হবার আগে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন লেখার স্ক্রিপ্টের খুব ভালো সম্পাদনা। যা পড়েই প্রকাশক যাতে হুট করেই ঠোঁঠের ডগায় ঝুলিয়ে রাখা 'না' শব্দটি ফট করেই বলতে না পারে। ভালো সম্পাদনা সহ একটি ভালো স্ক্রিপ্ট প্রকাশককে চট করেই সিদ্ধান্ত দেবার বদলে সেই প্রকাশকের মূল্যবান সময়কে তাড়া করতে উদ্ধুদ্ধ করে। প্রকাশ না করলেও ভালো জিনিসের কদর সেই প্রকাশকের অন্তরে একটি অনুরণন ঘটায়। যা তিনি অন্য প্রকাশকের কাছে মুখ ফসকে বলে দেন। তখন কোনো একজন প্রকাশক নতুন লেখকের সেই স্ক্রিপ্ট প্রকাশে অনেক সময় আগ্রহ দেখান। এভাবে নতুন লেখক নিজের একটি ভালো সম্পাদনা করা ভালো স্ক্রিপ্টকে প্রকাশকের নজরে আনতে নিজেকেই তৎপর করতে পারেন।যারা সৌখিন লেখক বা মৌসুমী লেখক, তাদের বেলায় প্রকাশক কে, তার চেয়ে বই প্রকাশ করার উপর তাদের বেশি আগ্রহ। অনেকে বইয়ের পুরো খরচ নিজেই বহন করেন। অনেকে প্রোডাকশন মান উন্নত করার জন্য প্রকাশককে নিজেই খরচ দেবার জন্য তাড়না দেন। অনেকে প্রকাশকের বিনিয়োগ করা পুঁজি ওঠাতে সহায়তা করার জন্য নিজেই কিছু বই অ্যাডভান্স ক্রয় করেন। প্রকাশকরা সৌখিন লেখকদের বই প্রকাশে পুরিপুরি ব্যবসায়ী চিন্তাই বেশি করেন। জাত লেখকদের বেলায়, বিশেষ করে বিখ্যাত লেখকদের বেলায় সেই একই প্রকাশক অ্যাডভান্স চেক নিয়ে বা নগদ নারায়ন নিয়ে লেখকের ড্রয়িংরুমে বসে থাকেন।অনেক সময় সৌখিন লেখকদের কোনো কোনো বইও সারা দেশে বেশ আলোচনার ঝড় তোলে। রাতারাতি সেই লেখককেও পাঠক চিনে ফেলে। কিন্তু একজন নতুন লেখকের জন্য প্রতি পদে পদেই ঝড় মোকাবেলা করেই আগাতে হয়। লেখক হবা আর কষ্ট করবা না, হাড়ে বাতাস লাগিয়ে হাঁটবা, তা কি করে হয়, মহাশয়। সুতরাং নতুন লেখকদের এবং সৌখিন লেখকদের জন্য কিছু বিড়াম্বনা বরং অপেক্ষাই করে। সেই বিড়ম্বনা থেকে উদ্ধারের একমাত্র উপায় বইয়ের স্ক্রিপ্ট ভালো করে সম্পাদনা করা। পরে ব্যাটে বলে ঠিকমত লাগলেই ছক্কা। নতুন লেখকদের জন্য কিছুটা বেশি বিড়ম্বনা থাকে। কেননা, লেখকদের তো বই প্রকাশের জন্য নিজেদের টাকা থাকার কথা না। প্রকাশক বরং লেখককে বইয়ের কপিরাইট দিতে বাধ্য। কিন্তু যার বই অবিক্রিত থেকে গেল, প্রকাশক পুঁজি ওঠাতে পারলেন না, লোকসান গুনলেন, তার কি হবে? অবশ্যই সেই লেখকও কপিরাইট পাবেন। সেক্ষেত্রে সেই লেখকের উচিত নিজ উদ্যোগে বইটির বিক্রি বাড়াতে প্রকাশককে সহায়তা করা। আবার প্রকাশকের উচিত বিখ্যাত লেখকদের বইয়ের সাথে নতুন লেখকের বইটিকে সতীন না বানিয়ে যথাযথ সম্মান দেওয়া। অন্তত সর্বত্র পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চত করা।এ বছর আমি প্রফেশনালি কিছু নতুন বইয়ের সম্পাদনা করব। যারা নিজের খরচে বই প্রকাশ করতে চান, তাদের জন্য কোয়ালিটি বই প্রকাশের সুযোগ করে দিতে চাই। আমি একটি স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসেবে এই সময়টায় কাজ করব। যারা প্রবাসে আছেন, বই প্রকাশের আগ্রহ আছে কিন্তু নিজে স্ক্রিপ্টের পেছনে সময় দিতে পারছেন না, তাদের সম্পাদনার কাজটিও আমি করতে চাই। যারা লেখা শেষ করেছেন কিন্তু ঠিক বইয়ের আকারে সাজাতে পারছেন না, কোথাও আটকে গেছেন, তাদের সেই দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করাটাই আমার কাজ।যারা নতুন লেখক, তারা যেন মনে না করেন, আপনারা রাতারাতি একজন শামসুর রাহমান হয়ে যাবেন, যে প্রকাশক নিজ গরজে আপনার বই ছাপাবে। নিজেকে একজন হুমায়ূন আহমেদ ভাবার কথাও যদি কেউ ভাবেন, তাদের পেছনে প্রকাশক কোন যুক্তিতে পুঁজি বিনিয়োগ করবে, একবার ভাবুন। জবাবটা পেয়ে যাবেন। যদি জবাব কিছু বাকি থাকে, যেমন ধরেন, কোনো প্রকাশক আপনার বই প্রকাশে সহায়তা করলো, সুতরাং আপনিও সেই প্রকাশকের খরচ উঠিয়ে আনাতে এক ধরনের সহায়তা করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন। নইলে আপনার বই প্রকাশ করার ঝুঁকি কেন প্রকাশক নেবেন, এই প্রশ্নটি নিজেকে বারবার করুন, আসল জবাবটি পেয়ে যাবেন।আমাদের কাগজের দাম বেড়েছে। ছাপার খরচ বেড়েছে। বাইন্ডিং খরচ বেড়েছে। প্লেটের দাম বেড়েছে। শুধু বাড়েনি সম্পাদনা মান। তাই বই হয়ে প্রকাশ পাবার পরেও অনেক বই ঠিক সুখপাঠ্য হয়ে উঠছে না। ভালো সম্পাদনা এই ঘাটতি অনায়াশে পুশিয়ে দিতে পারতো। প্রথমে লেখকের দায়িত্ব তার স্ক্রিপ্ট যথাযথভাবে সম্পাদনা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা। তারপর প্রকাশকের কাজ সেই স্ক্রিপ্টকে একটি সুন্দর বইয়ে রুপান্তর করা। মাঝখানে থাকে আরো অনেক যজ্ঞ। বইয়ের ভালো একটা প্রচ্ছদ করা। একজন পাঠক কিন্তু একটি সুন্দর প্রচ্ছদ দেখলেই প্রথম দর্শনেই অনেকটা কাবু হয়ে যান, বইটি পড়ার জন্য। বইয়ের নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এটি অনেকটা ভূমিকা রাখে। একটি ভালো বই অনেক সময় ভালো নামের অভাবে পাঠকের নজর কাড়তে সক্ষম হয় না। এই বিষয়গুলোতে আমি নতুন লেখকদের এবং সৌখিন বা মৌসুমী লেখকদের সহায়তা করতে চাই। করতে চাই অবশ্যই প্রফেশনালি। সোজা কথায় টাকার বিনিময়ে আমি আমার মেধা আপনার বই প্রকাশের নানান ধাপে খরচ করতে চাই। আপনার টাকা আছে, বই লেখা শেষ, কিন্তু এখন কিভাবে অগ্রসর হলে বইটি ঠিক আলোর মুখ দেখবে, সেই অবশিষ্ট কাজটুকু এগিয়ে নিতেই আমি সম্পাদনা সহ প্রকাশকের এজেন্ট হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই।আমাদের দেশে অনেক বিখ্যাত লেখক আছেন, বড় বড় পুরস্কারও পেয়েছেন, মাগার স্ক্রিপ্টে সঠিক বাক্য লিখতেই ভুল করেছেন। সেই ক্ষতটুকু সারাই করাই আমার কাজ। যারা টাকা দিয়ে নতুন বইয়ের ভালো সম্পাদনা করাতে চান, তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেন। যারা নিজের খরচে বই প্রকাশ করতে চান, তারাও যোগাযোগ করেন। আর যারা একেবারে খরচের বেলায় অনিহা, তারা দয়া করে এই কাজটুকু নিজেরাই করে নেন। তাদের বিনা পয়সায় উপকার করার সময় ভাই আমি পাব না।আমি কোনো চাকরি করি না। ত্রিশ বছর ধরে লেখালেখি করি। লেখালেখির কাজটা মন দিয়েই করি। ফুলটাইম লেখক আমি। এই কাজটা যেহেতু পারি, আর এই কাজ করে বিদেশে অনেকে আমার চেয়ে ভালো আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বেতনে বিক্রি হই নাই। চাকরামিও করি না। পলিটিক্স করি না বলে অসৎ হতেও পারি নাই। সৎভাবে জীবনযাপন করি। সত্য যত কঠিনই হোক প্রকাশ করতে আমার দ্বিধাও কাজ করে না। দলবাজিও করি না। তাই কোনো দলের মুখপাত্র হয়েও বক্তব্য রাখার আমার কোনো খায়েস নাই। আমি যে কাজ পারি, তাই করেই আমি আমার মত চলতে চাই। আমার অনেক টাকার দরকার নাই। কিন্তু থাকা, খাওয়া, বেঁচে থাকার মত ন্যূনতম খরচ যেভাবে আসে, আমি সেই কাজটি অত্যন্ত সৎভাবেই করে যেতে চাই।যাদের পোষাবে, তারা আমার থেকে উপকার পেলে আমি কিছু কাজ পাব। তাদেরও কাজটি হবে। একটি নতুন বই প্রকাশ পাবার পর একজন লেখকের যে কি আনন্দ হয়, তা যারা এখনো উপভোগ করতে পারেন নি, তাদের সেই সৌভাগ্যের পরশ ছোঁয়াতে আমার দক্ষতা হয়তো কাজে লাগবে। সুতরাং যারা ২০১৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বই প্রকাশ করার কথা ভাবছেন, তাদের সবাইকে বলছি, আমাকে কাজে লাগাতে পারেন। দিন শেষে ঠকবেন না।...................................................৩ ডিসেম্বর ২০১৪ঢাকা
false
fe
দূরের দূরবীনে সৃজনশীল ভাবনার আলো দূরের দূরবীনে সৃজনশীল ভাবনার আলো ফকির ইলিয়াস========================================অনেক দূরে থেকে স্বদেশ-স্বজাতি-স্বজনকে দেখার মাঝে কিছুটা ভিন্নতা থাকে। এ ভিন্নতা আবেগের। এ ভিন্নতা বিচার-বিশ্লেষণের। এ ভিন্নতা তুলনামূলক যাচাই-বাছাইয়ের। যারা অভিবাসী বাঙালি, তাদের প্রাণের মাঝে চির জাগরুক রঙের নাম, লাল-সবুজ। তাদের মননে জাগ্রত ঝঙ্কারের নাম-বাংলাদেশ।এই জন্মভূমি বাংলাদেশ, বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি, সভ্যতা কৃষি, ঐতিহ্য নিয়ে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে যারা সৃজনশীল ভাবনার সিঁড়ি নির্মাণ করেন, তাদের অন্যতম একজন সাঈদ-উর-রব। তার অনেক পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন দেশের জাতীয় ক্রীড়াবিদ। কুড়িয়ে এনেছেন আন্তর্জাতিক সম্মাননা।এখন অভিবাস গ্রহণ করেছেন মার্কিন মুল্লুকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানতম সাপ্তাহিক ঠিকানার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। প্রায় এক দশক সময় এ সাপ্তাহিকীর সম্পাদকের দায়িত্ব পালনসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে কাজ করছেন দুই দশকের বেশি সময় ধরে। বর্তমানে নিয়োজিত আছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্টের পদে।সাঈদ-উর-রবের প্রধান পরিচয়টি হচ্ছে তিনি একজন চিন্তক। নিজে ভাবেন। অন্যকেও ভাবান। তার ভাবনাগুলো তিনি শেয়ার করেন সমাজের কল্যাণে। অগ্রসরমান প্রজন্মের পথচলায়। তার সেই ভাবনাগুলো নিয়েই এবারের ২০১০-এর একুশের বইমেলায় তার একটি সুবিশাল গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। 'আমার ভাবনা'- নিবন্ধ গ্রন্থটিতে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তার পরিশীলিত মতামতগুচ্ছ।এই গ্রন্থে মোট একাত্তরটি নিবন্ধ গ্রন্থিত হয়েছে। এর মধ্যে দশটি নিবন্ধ রয়েছে ইংরেজিতে। বলে নেয়া দরকার, একজন সাংবাদিক, সমাজ সংস্কারক হিসেবে সাঈদ-উর-রব বাংলাদেশে, যুক্তরাষ্ট্রে এবং কানাডায় বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে যে বক্তব্য রেখেছেন এর লিখিত রূপই প্রকাশ পেয়েছে গ্রন্থের নিবন্ধগুলোতে।গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধটি হচ্ছে- 'প্রবাসীদের ভাবনায় একুশ শতকের বাংলাদেশ'। একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ হিসেবে পঠিত এ প্রবন্ধটিতে লেখক ৪১টি প্রস্তাবনা পেশ করেছেন। আর এর সব ক'টি প্রস্তাবনাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপক্ষে। জাতীয় ঐক্য, সুসংহত গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বার্থ-দলীয় স্বার্থবাজি বন্ধ করে সৎ রাজনীতি চর্চার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তিনি ধর্মের নামে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার উদার আহ্বান জানিয়েছেন।কল্যাণের কাজটি কখনই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এ সহস্র বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নামই উন্নয়ন। কিন্তু সেই উন্নয়নের পথ যদি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়, তবে জনগণ কি করতে পারে? এমনি কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছন লেখক তার 'দেশের নেতানেত্রীরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন না' শীর্ষক নিবন্ধে। তিনি লিখেছেন, 'আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকালে দেখবেন, তারা বিবেক থেকে কাজ করেন না। তারা মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ যাতে হয় সেই জিনিসগুলো নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে মত্ত থাকেন। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা দায়িত্বশীল নন। তারা জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে দলীয় প্রধানদের মনতুষ্টির কাজে ব্যস্ত।'একজন স্পষ্টভাষী লেখক হিসেবে সাঈদ-উর-রবের এ বক্তব্য কোটি প্রাণের ধ্বনি হিসেবেই সমকালে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ আমাদের ঘুণেধরা রাজনৈতিক আচার, প্রজন্মকে শুধু হতাশই করছে না, অন্ধকারেও ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের এ থেকে মুক্তির পথ অবশ্যই খুঁজতে হবে।দুই.অভিবাসী বাঙালির অন্যতম প্রধান কাজটি হচ্ছে সেই দেশের মূল ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া। সাঈদ-উর-রব খুব সুদৃঢ় হস্তে বাংলাদেশের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান, সিনেটর, প্রশাসক, মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সমাবেশে লেখক যে বক্তব্য রেখেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটেছে তার দশটি ইংরেজি নিবন্ধে। 'ইমিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স ফ্রিডম রাইট', 'রুল অফ সিভিল সোসাইটি', 'স্টুডেন্টস আর ফিউচার লিডার অফ আওয়ার নেশন', 'ইস্টার্ন কুইন্স ডেমোক্রেটিক ক্লাব', 'নিউইয়র্ক স্টেট এসেম্বলি হল', 'রিকগনাইজ দ্য হিরো'স, দোজ হু কনট্রিবিউটেড ইন আওয়ার লিবারেশন ওয়ার ইন এবরড', 'আমেরিকা ইজ এ গ্রেট ন্যাশন হেভিং ইটস ওন ইমেজ এন্ড ইউনিকনেস' প্রভৃতি নিবন্ধে তিনি গোটা জাতিকে আত্মপ্রত্যয়ী এবং শক্তিমান হওয়ার পথ দেখিয়েছেন। প্রজন্মের প্রাণে জ্বালাতে চেয়েছেন আলোর দীপশিখা।একটি জাতিসত্তার এগিয়ে যাওয়ার সোপান হচ্ছে ঐক্য এবং সৌহার্দ্য। লেখক তার অনেক নিবন্ধেই পাশ্চাত্যের এ ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসকে প্রতীক হিসেবে তুলে এনেছেন।'বিদেশী শোষকদের হাত থেকে জাতি মুক্তি পেলেও জনগণ দেশীয় শোষকদের দ্বারা প্রতারিত' এ নিবন্ধটিতে লেখক রাষ্ট্রের সামন্তবাদী মানসিকতার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন সিদ্ধহস্তে।বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির পিছিয়ে থাকার কারণগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় লুটপাট। এই যে লুণ্ঠন প্রবৃত্তি, তা ঠেকাতে রাষ্ট্র কতটা ভূমিকা রাখছে, কিংবা আদৌ রাখছে কি না-সে প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন লেখক তার বিভিন্ন প্রবন্ধে। এর পাশাপাশি গণমানুষকে শিক্ষিত হয়ে তা প্রতিহত করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।লেখক কিংবা সাংবাদিক হিসেবেই নয়, একজন সমাজ সংগঠক হিসেবেও সাঈদ-উর-রব চষে বেড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নগরে। নিউইয়র্কে দুর্বৃত্তদের হাতে সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজান হত্যাকা-, কিংবা সিলেটে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী বোমাক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় তিনি প্রবাসে রেখেছেন সাহসী প্রতিবাদীর ভূমিকা। সেই সময়চিত্রকে তিনি ধারণ করেছেন তার লেখায় অনেকটা রোজনামচা আকারে।তিন.এই গ্রন্থটির আরেকটি দালিলিক সৌকর্য হচ্ছে, গ্রন্থে সনি্নবেশিত স্থিরচিত্রগুলো। পেশাগত দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে, বিশ্বখ্যাত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সানি্নধ্য লাভ করেছেন লেখক সাঈদ-উর-রব। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর জন কেরি, খ্যাতিমান সাংবাদিক প্রয়াত পিটার জেনিংস, বিশিষ্ট সাংবাদিক ঢেউ কাপল, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও তার পত্নী আইভি রহমান, রাজনীতিবিদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আবদুস সামাদ আজাদ, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, বিশ্ব অলিম্পিয়ান কার্ল লুইস, কবি শামসুর রাহমান, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কবি শহীদ কাদরী, ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ আর অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তির সমসাময়িক স্থির চিত্রাবলী স্থান পেয়েছে এ গ্রন্থে। কালের প্রবাহে, চলমান ঘটনাবলির সাক্ষী থেকে গেছেন এসব বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।নিজে একজন কৃতি ক্রীড়াবিদ হিসেবে, লেখক বাংলাদেশের খেলাধুলার অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ করেছেন বেশ ক'টি প্রবন্ধে। প্রবাসে বাংলা সংবাদপত্রের নানা দিকের খুঁটিনাটি তিনি জানিয়েছেন তার পাঠক-পাঠিকাকে। বাংলাদেশে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ ও পৃষ্ঠপোষকতা, চিকিৎসাব্যবস্থার দুরবস্থা এবং এর উন্নয়ন, একুশের বইমেলা, বাংলা নাটকের বিনির্মাণ ও আমাদের সমাজ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখা স্থান পেয়েছে এ সুবিশাল গ্রন্থে। লেখক বারবার সমাজকে সোচ্চার করতে চেয়েছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছারিতার বিরুদ্ধে।নাগপাশের আগল ভেঙে সমাজ বিনির্মাণের প্রধান কাজটি হচ্ছে দরজায় ক্রমাগত কড়া নাড়া। সাঈদ-উর-রব নিজ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে সেই কাজটি করছেন দীপ্ত চেতনার সঙ্গে। এর আগে তার লেখা, 'অনিয়মই নিয়ম' নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যা দেশে-বিদেশে বহুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি সম্পাদনা করেছেন- 'ঠিকানা এলবাম' শীর্ষক বিশিষ্টজনদের স্থিরচিত্রের একটি কালেকশন। সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রামাণিক গ্রন্থ 'ঠিকানার মুখোমুখি সেরা ১৩৩'- শিরোনামে একটি সুবিশাল গ্রন্থের সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।৩০০ পৃষ্ঠার 'আমার ভাবনা' গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ঠিকানা পাবলিকেশনস। মূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা, বিদেশ ২৫ ডলার। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মাজহারুল আলম কিসলু। গ্রন্থে কিছু মুদ্রণ প্রমাদ চোখে পড়ে। গ্রন্থটি লেখক উৎসর্গ করেছেন, তার পিতা-মাতা-জনাব আবদুর রব ও সৈয়দা মাহেরু রবের উদ্দেশে।শুরুতেই বলেছি, সাঈদ-উর-রব, মানুষের-মানবতার উত্থানে আমূল বিশ্বাসী একজন মানুষ। প্রবাসে থেকে মা-মাটি-মানুষকে তার অনুভব সত্যিই অনুকরণীয়। তার মতের সঙ্গে সবার মতের মিল হবে- সেটি প্রত্যাশিত নয়। তিনি যে সৃজনের ডাক দিয়ে যাচ্ছেন সেটিই বড় প্রয়োজনীয় কথা।নিউইয়র্ক, ৫ এপ্রিল ২০১০ ----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৯ এপ্রিল ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
false
fe
গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় জাতিসংঘে শেখ হাসিনার চিন্তাচেতনা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় জাতিসংঘে শেখ হাসিনার চিন্তাচেতনাফকির ইলিয়াস===========================================এই সময়ে নিউইয়র্ক দেখা যায় অন্য রূপে। জাতিসংঘ অধিবেশন শুরু হলেই বদলে যায় এই নগরের চেহারা। নিউইয়র্ক এখন নিরাপত্তার চাদরে মোড়া। ৩৪ সড়ক থেকে ৪৮ সড়ক আর এভিনিউগুলো গোয়েন্দাদের দখলে। বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান আর সরকার প্রধানরা এখন নিউইয়র্কে। জাতিসংঘের অধিবেশন চলছে। বিশ্বে সন্ত্রাস ও মৌলবাদ নির্মূলে কী ভূমিকা থাকা দরকার, গণতন্ত্রের উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখা দরকার সে বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ‘সাউথ সাউথ পুরস্কার’। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অবদান এবং দারিদ্র্য হ্রাসে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই পুরস্কারের নাম দ্য ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন (আইওএসএসসি)। গেলো সোমবার সন্ধ্যায় আইওএসএসসির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। পুরস্কার গ্রহণের পর শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের জনগণ ও বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের স্বীকৃতি। এছাড়া বাংলাদেশসহ বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো যারা দারিদ্র্য বিমোচনে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার গ্রহণ করে আমি গর্বিত।’ দক্ষিণ-দক্ষিণ অঞ্চলের দেশগুলোর ত্রিমুখী সহযোগিতায় জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আইওএসএসসি গঠিত হয়। সাউথ-সাউথ সদর দপ্তরের প্রেসিডেন্ট ও সাউথ-সাউথ নিউজ এম্বাসেডর ফ্রান্সিস লরেঞ্জো সংস্থাটির সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান এবং তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের জন্য এ পুরস্কার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী আইওএসএসসি এবং বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী, ফার্স্টলেডি এবং আইওএসএসসিভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দারিদ্র্যবিরোধী লড়াই বিশেষ করে ২০১৫ সাল নাগাদ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আরো কঠোর ভূমিকা পালনে এ পুরস্কার বাংলাদেশকে উৎসাহিত করবে। এছাড়া ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উন্নয়নে যে সব লক্ষ্য ঠিক করা আছে, তা অর্জনে সমভাবে নিরলস কাজ করতেও এটি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।’ বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, ইউএনডিপিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদারদের সমর্থনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তারও ব্যাপক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, পৃথিবীকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে এবং জনগণ যাতে আরো উন্নত জীবন যাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে বিশ্ব নেতারা তার দেশের জনগণের পাশে দাঁড়াবেন এবং একযোগে কাজ করবেন। পুরস্কারটি বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এদিকে গেলো মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ‘লিডার্স ডায়ালগ : হাই লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম-ফ্রোম ভিশন টু অ্যাকশন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সাল পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা নির্ধারণ এবং ২০২০ সাল পরবর্তী জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি আইনি রূপরেখায় পৌঁছাতে হবে। ‘বিশ্ব নেতাদের এই দুটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে এবং বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে দূরদর্শী নেতৃত্ব ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে।’ আমাদের মনে আছে, জনগণকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার ‘শান্তির মডেল’ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছিল জাতিসংঘের সেকেন্ড কমিটিতে। সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়েছে ‘পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট’ শিরোনামে। সিদ্ধান্তের মূল বক্তব্য হচ্ছে- মানুষের ভোটের অধিকার, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা, সর্বস্তরে বৈষম্য দূর করা, প্রত্যেক গোষ্ঠীকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত হবার পথ সুগম করা, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবিকতার উন্নয়ন ঘটানো এবং সন্ত্রাস নির্মূল করা। অর্থাৎ সমাজ ব্যবস্থার সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। এসব কাজ করতে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করার নিরন্তর একটি প্রয়াস থাকতে হবে। এই জাতিসংঘে একাধিকবার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি তার ভাষণে বলেছেন, ‘গত অর্ধশতাব্দী ধরে আমি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। পুরো সময় জুড়ে আমি ছিলাম শান্তির পক্ষে একজন অগ্রণী ও নির্ভিক যোদ্ধা। আমি মনে করি জবরদস্তি এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতির মতো অবিচার নিরসনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। অসাম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বঞ্চনা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা, নারী এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারহীনতা এবং সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে।’ শেখ হাসিনা বিশপরিম-লে যখন গণতান্ত্রিক শান্তির আহ্বান জানাচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে চলছে নারকীয় তা-ব। এর নেপথ্যে কারা, তাদের উদ্দেশ্য কী- তা মানুষের অজানা নয়। দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চূড়ান্তপর্ব চলছে, তখন এমন আচরণ মনে করিয়ে দিচ্ছে ঐ চক্রটি এখনো একাত্তরের পরাজয় ভোলেনি। জাতিসংঘে শেখ হাসিনার সফর ও ভাষণ অবশ্যই জাতির জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের অর্জন ও প্রত্যাশাগুলো বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছেন। আর একই সময়ে বাংলাদেশে তা-ব চালাচ্ছে মৌলবাদীরা। আর এসব মৌলবাদীদের সরাসরি উসকে দিচ্ছে বিএনপি। তারা বারবার হরতাল তারা ডেকেছে, তা মূলত রাজাকার-আলবদরদের বাঁচানোর জন্যই। গেলো পাঁচ বছরে নানা মওকা তারা খুঁজছিল। এখন মৌলবাদী ক্যাডারদের মাঠে নামিয়ে তারা ফায়দা নিতে তৎপর হয়েছে। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, এই মৌলবাদীরা খুব পরিকল্পিতভাবে এই দেশে বেড়ে উঠেছে। বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ৪৭৩টি স্থানীয় ও ২৫টি বিদেশী এনজিওকে এনজিও ব্যুরোর তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসময় জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন জামাতে ইসলামীর সেক্রেটারি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদ। খালেদা জিয়ার কাছ থেকে চেয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও কৃষি এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন মুজাহিদ ও আরেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। যাদের মূল টার্গেটই ছিল সাধারণ জনগণের পর্যায়ে গিয়ে এনজিওর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে ইসলামি জঙ্গি তৈরি করা এবং তাদের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের চূড়ান্ত ক্ষমতা দখল করা। এ সময় খালেদা জিয়ার সরকার ৯০ হাজার কোটি টাকা যা আমেরিকান ১৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশী সাহায্য ১১ হাজার এনজিওর নামে আসে। অর্থ প্রদানকারী দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এমনকি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব অর্থের তদারকির জন্য ইসলামিক প-িত, ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতা, মাদ্রাসার প্রধান ব্যক্তিরা থাকতেন। ধর্মীয় নেতা বলতে জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। মাদ্রাসার প্রধান বলতে ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন কওমি মাদ্রাসার নেতারা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ থেকে অর্থ আসতো মূলত জাকাত, ফেতরা, ধর্মীয় শিক্ষা ও অরফানেজের নামে। অনাধুনিক ও ধর্মীয় গোঁড়ামির আদলে গড়ে ওঠা কওমি মাদ্রাসার নামে টাকা এনে কোমলমতি কিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদের জেহাদির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৯৯১ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর দুর্গতদের জন্য অন্যান্য সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কিছু ইসলামিক এনজিও সাহায্য দেয়ার নামে তাদের কার্যক্রম শুরু করে বলে অনেকেই মনে করেন। এরপরে আন্তর্জাতিক ইসলামি এনজিওগুলো শক্তিশালীভাবে কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের মধ্যে ছিল- বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, জনসেবামূলক যেমন: বসতবাড়ি নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, সেনিটেশন মা ও শিশু স্বাস্থ্য ইত্যাদি। এরপরেই ইসলামিক এনজিওগুলো শুরু করে তাদের মূল কার্যক্রম অর্থাৎ সন্ত্রাসী জঙ্গি তৈরির মাধ্যমে সন্ত্রাসী কায়দায় ক্ষমতারোহণে। এজন্য তারা প্রথমেই বেছে নেয় রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো। তারা জঙ্গি তৈরির জন্য সামরিক প্রশিক্ষণের গোপন আস্তানা গড়ে তোলে। এজন্য ব্যবহার করে মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলো। এ সময় রাজশাহীতে আত্মপ্রকাশ করে জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-সংক্ষেপে জেএমবি। সৌদি আরব-ভিত্তিক ইসলামিক এনজিও আল হারমাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশন সে সময় রাজশাহী অঞ্চলে বিশ কিছু মসজিদের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সাহায্য প্রদান করে বলেও সেই সময় খবর বের হয়। এছাড়াও রমজান মাসে মসজিদে ইফতার পার্টির নামেও অর্থ আনয়ন করে। এর নেতৃত্ব দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক আসাদুল্লাহ গালিব। তথ্য আছে তিনি, ইফতারের জন্য প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করেন রাজশাহীর বিভিন্ন মসজিদে। পরবর্তীতে খুলনা-সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইসলামিক এনজিওগুলো তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে। পাশাপাশি আল মারকাজুল, রাবিতা আল ইসলামসহ কয়েকটি এনজিও বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন খাতে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সাল থেকে ইসলামি এনজিওগুলো মূল টার্গেটে পৌঁছে যায়। অর্থাৎ বিন লাদেনের স্টাইলে অর্থাৎ তালেবানি শাসন কায়েম করার নিমিত্তে সার্ভেন্টস অব সাফারিং হিউমিনিটি ইন্টারন্যাশনাল সংক্ষেপে এসএস এইচআই-এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করা হয়- যার অর্থায়ন করেন লাদেন স্বয়ং। এ সময় একটি গোয়েন্দা সংস্থা উল্লিখিত এনজিওটির কার্যক্রম অর্থাৎ জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনাকারী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। বিভিন্ন ইসলামি এনজিওগুলোর তৎপরতায় সারা দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আকাশচুম্বী হয়। ১৯৭১ সালের কায়দায় সাধারণ মানুষকে নির্যাতন, হত্যা, বোমা হামলাসহ আতঙ্কিত করে তোলে বাংলাদেশকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা বিশেষ করে ১৭ আগস্ট একযোগে দেশের ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ করে তারা জানিয়ে দেয়- তাদের ক্ষমতা পাহাড় সমান। সূত্রমতে জঙ্গিদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা করে কুয়েতভিত্তিক এনজিও রিভাইভেল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি এবং যুক্তরাজ্যের একটি মসজিদের ইমাম আতাউর রহমান। এই ইমামের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন জিএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাই। জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা দেশের যে সব জায়গায় বৈঠক করে তার মধ্যে ছিল- নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও ঢাকা। এই বৈঠকগুলো তারা করে এপ্রিল থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত। তিনি ২০ আগস্ট বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-জিএমবি ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ- জিএমজি বি- শীর্ষে থাকা এই দুটি জঙ্গি সংগঠনের নেতা ১৭ আগস্টের বোমা হামলার খরচকৃত অর্থ উত্তোলনের জন্য ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখা ব্যবহার করেন। যুক্তরাজ্যের ঐ জঙ্গি মওলানা আতাউর রহমান বাংলাদেশে অবস্থানকালেই একযোগে বোমা হামলাটি হয়। ঢাকা থেকে পাঠানো টাকা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে উত্তোলন করেন মোহাম্মদ নামক এক জঙ্গি। যার ফলে এই সকল মৌলবাদী এনজিওর কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বারবারই দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা। খুব ভালো করে বলা যায়, বাংলাদেশকে একটি ‘উপযোগী’ ভূমি মনে করেই অগ্রসর হচ্ছে এই মৌলবাদী চক্র। তাই শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তির যে বাণী গণমানুষকে শোনাতে চাইছেন, তা বাস্তবায়নে দেশীয় এই মৌলবাদী চক্রের শেকড় উৎপাটন করা খুব জরুরি। আর এর জন্য সকল ত্যাগ দেশবাসীকে স্বীকার করতেই হবে। সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনই জানিয়ে যাবে, কেমন হবে আগামীর বাংলাদেশ। যারা এই দেশকে আবারো জঙ্গিবাদীদের হাতে তুলে দিতে চাইছে, তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে দেশবাসীকে। শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তির যে মডেল দেখাতে চাইছেন তা শুরু করতে হবে নিজঘর থেকেই। আর এজন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয় প্রয়োজন। যারা এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, এদের সঙ্গে কোনো আপোস হতে পারে না। প্রজন্মকে কথাটি মাথায় রেখেই এগোতে হবে।---------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা ।: শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০১৩
false
rn
বইমেলা মানেই নতুন নতুন বই বই পড়তে আমি খুব ভালোবাসি। এক সময় রাতের পর রাত জেগে বই পড়তাম। ইদানিং ইচ্ছা থাকলেও পারি না। সকালে অফিস আছে। অবচেতন মনেই একুশে বইমেলার অপেক্ষায় থাকি। সারা বছর লম্বা লিস্ট করি আর টাকা জমাই। ফেব্রুয়ারীতে এসে বই গুলো কিনি। অনেকেই নতুন লেখকদের বই কিনোট চান না। এটা মোটেও ঠিক না। আমি কিন্তু প্রচুর নতুন লেখকদের বই কিনি। তাদের অটোগ্রাফ নিই। এমনকি খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের সাথে ছবি তুলি। আর সবচেয়ে বড় কথা লেখক যদি আমার পরিচিত হয়, আপনজন হয়- তাহলে তো আনন্দ বেড়ে যায় এক সমুদ্র সম্মান। শ্রদ্ধেয় বড় ভাই হাবিবুল্লাহ ফাহাদ তার এবারে একুশে বইমেলায় তিনটি বই বের হচ্ছে। ব্যাক্তিগতভাবে হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ভাইকে আমি চিনি, জানি এবং বুঝি। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন মানূষ। সৎ এবং সাহসী। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। তিনি একজন সাংবাদিক। সবচেয়ে বড় কথা- তিনি একজন সহজ সরল ভালো মানূষ। পরোপকারী। আমি তার সাথে বিভিন্ন রিপোর্ট করতে গিয়ে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি, কিন্তু তিনি ক্লান্ত হন না। আমার মনে আছে- ফাহাদ ভাইএর সাথে সেভেন মার্ডার এর রিপোর্ট করতে গিয়ে- সারা নারায়ন গঞ্জ চষে বেড়িয়েছিলাম। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেছিলাম। তিন যোদ্ধার মুখোমুখি বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরও ভালোভাবে জানা যাবে। অতি আনন্দের সাথে আমি আপনাদের জানাতে চাই- এই তিনজনের লম্বা সাক্ষাৎকারের সময় আমি ছিলাম। আমি ছবি তুলেছি। ফাহাদ ভাই বিরামহীনভাবে সাক্ষাৎকার নিয়েছে। কত অজানা বিষয় যে উঠে এসেছে সেইসব সাক্ষাৎকারে। মুক্তিযুদ্ধকে আরও ভালোভাবে জানতে- নতুন প্রজন্মকে এই বইটি পড়তে হবে। বইটি বের করছে- বিদ্যা প্রকাশ। স্টল নম্বর- ৩৭০-৭১-৭২। 'দানামাঝির বউ' বইটিতে অনেক গুলো নানান রকম ছোট গল্প আছে। যা আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে। আমি সৌভাগ্যবান বইটি প্রকাশ হওয়ার আগেই বেশ কয়েকটি ছোট গল্প পড়েছি। অবশ্যই চমৎকার গল্প। আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি- প্রতিটি গল্প আপনার ভালো লাগবে। সহজ সরল ভাষায় এই সমাজের মানুষদের নিয়ে অদ্ভুত সুন্দর সব গল্প লিখেছেন। বইটি ছেপেছে রোদেলা প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন- ধ্রুব এষ। রোদেলার স্টল নাম্বার- ২১৩.২১৪.২১৫। স্বকৃত নোমান ভাই আমার আরেকজন প্রিয় মানূষ। প্রথম কথা হলো- তিনি এ পর্যন্ত খুব অল্প সময়ে তিন'টি বড় পুরস্কার পেয়েছেন। এই বইটি হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ভাই- অসংখ্য বিষয় নিয়ে নোমান ভাই এর সাথে কথা বলেছেন। মানব জীবনের রুপ-রস, আনন্দ-বেদনা, ভালোবাসা, রাজনীতি এবং রহস্নেয সহ অনেক কিছুই উঠে এসেছে তাদের আলাপচারিতায়। আমি মনে করি প্রতিটা সাহিত্যপ্রেমীর এই বইটি পড়া উচিত। বইটি বের করছে- বিদ্যা প্রকাশ। স্টল নম্বর- ৩৭০-৭১-৭২। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬
false
ij
ছেলেবেলায় শোনা পাখি-বিষয়ক একটি লোকগান বাংলার লোকগান যে অর্থের দিক থেকে অতি গভীর- আমরা তা জানি। সহজ ও সাধারণ বাক্যের ভিতরে লুকিয়ে থাকে অসম্ভব গভীর সব মানে। প্রতীক ও রূপকের ব্যবহার লোকগানকে করে তুলেছে গভীর রহস্যময়। লোকগানের যে ব্যাখ্যাবিশ্লেন তা বাংলার সংস্কৃতিরই অনিবার্য অঙ্গ বলে মনে হয়। মাঝেমাঝে তাই লোকগানের ব্যাখ্যাবিশ্লেষন করতেই হয়। যেমন, পাখি শব্দটি বারবারই এসেছে লোকগানে। কিন্তু, পাখির মানে কি? ছেলেবেলায় একটি গান খুব শুনতাম। হলুদিয়া পাখি সোনালি বরণ পাখিটি ছাড়িল কে গানটা শুনতাম আবদুল আলীমের কন্ঠে । অন্য কারও কন্ঠে শুনেছি বলে মনে পড়ে না। এখনও যে গানটি শোনা যায় না, তা নয়। শোনা যায়। তবে ছেলেবেলায় খুব শুনতাম। রেডিওতে। এবার এই লাইটির মানের বোঝার চেষ্টা করি। হলুদিয়া পাখি সোনালি বরণ পাখিটি ছাড়িল কে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে: একটা লোক খাঁচায় সোনালি বরণ ‘হলুদিয়া’ পাখি পুষত। তো সে খাঁচা কে বা কারা খুলে পাখিটিকে ছেড়ে দিয়েছে। কাজেই লোকটা আক্ষেপ: হলুদিয়া পাখি সোনালি বরণ পাখিটি ছাড়িল কে ... না। তা নয়। তখন, মানে ছেলেবেলায় গানটির প্রকৃত মানে কদাপি বুঝিনি। এখন ঈষৎ বুঝি যে আবদুল আলীমের গাওয়া এ গানটি গভীর দার্শনিক ভাবনায় সমৃদ্ধ ‘ম্যাটাফিজিকাল’ একটি গান। গানটিতে ‘হলুদিয়া’ পাখির কথা আছে। লক্ষ করুন, হলুদ রঙের পাখি নয়। কেননা, হলুদিয়া পাখির বরণ সোনালি। হলুদ রঙের পাখির কি সোনালি রং হতে পারে? যে কারণেই ‘হলুদিয়া পাখি’। ‘সোনার ময়না পাখি’ নয়। হলুদিয়া পাখি- যে পাখির বর্ণ সোনালি। অনেক পরে জেনেছি: লোকগানে পাখি হল জীবনের প্রতীক। কখনও বলা হয়েছে ‘অচিন পাখি’। লালনের একটি গান এরকম- চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি। পাখি কখনও কখনও প্রেমিক বা প্রেমিকার আত্মার প্রতীক। আমার সোনার ময়না পাখি/ কোন্ দেশেতে গেলা উইড়া রে/ দিয়া মোরে ফাঁকি ... তো সে অচিন জীবন-পাখি মানুষের বশে থাকে না। যে কারণে লালনের আর্তনাদ- আগে যদি যেত জানা জংলা কভূ পোষ মানে না। তবে হায় প্রেম করতাম না লালন ফকির কেঁদে কয়। পাখি কখন জানি উড়ে যায় একটা বদ হাওয়া লেগে খাঁচায়। পাখি জীবনের প্রতীক হলে সে পাখিকে কে ছাড়ল? পাখি = যদি জীবন হয় তো পাখির মালিক বা সৃষ্টিকর্তা তো ঈশ্বর। এখন তা হলে খানিক বোঝা যাচ্ছে। তা হলে মানে এই দাঁড়াল: মহাবিশ্বে প্রাণের বিকাশ কে ঘটাল? এই প্রশ্নটিই আমাদের পল্লির কবি করেছেন এভাবে- হলুদিয়া পাখি সোনালি বরণ পাখিটি ছাড়িল কে তার মানে, সোনা রঙের হলুদ পাখিটিকে (জীবনকে) বিশ্বজগতে কে ছাড়ল? একদা ঈশ্বরের কল্পনার খাঁচায় ছিল হলুদিয়া পাখি। একদিন পাখিটি ঈশ্বর ছেড়ে ছিলেন। এভাবে দার্শনিক ভাবনার সূত্রপাত হল। যে দার্শনিক ভাবনা বাংলার লোকগানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রসঙ্গত, একটি ভাবনার উদয় হয়। আমাদের গান, বিশেষ করে লোকগান কত সমৃদ্ধ তা বিশ্বের মানুষ কোনও দিনই জানতে পারবে না। কেননা, অনুবাদে লোকগান কবিতার মতোই ম্লান হয়ে যায়। “হলুদিয়া পাখি” -এই দুটো শব্দে আমরা যা বুঝব সেটা কখনোই অন্য ভাষাভাষীদের বলে বোঝানো যাবে না। যাক গে। আমাদের প্রাণসম্পদের প্রশংসা আমরাই করি। শ্রদ্ধা আমরাই করি। ভালো আমরাই বাসি। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪০
false
hm
অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগ তত্ত্বাবধানে তথ্য প্রযুক্তি কিছুদিন আগে মুন্সিগঞ্জে মেঘনায় কার্গো জাহাজের আঘাতে লঞ্চডুবি হয়ে মারা গেছেন শতাধিক মানুষ। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায় বার্ষিক ভিত্তিতে ঘটে, এবং যা কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো, তা গ্রহণে জাহাজ মালিক, জাহাজ চালক, যাত্রী ও তদারককারী সরকারি প্রতিষ্ঠান, এই চার পক্ষেরই এক আশ্চর্য নিস্পৃহ মনোভাব দেখা যায়। দুর্ঘটনার পর স্মার্ট লোকেরা অনেক স্মার্ট স্মার্ট কথা বলে, কিন্তু ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যে যেসব স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মানুষের এই নির্মম প্রাণহানি এড়ানো যাবে, তা গ্রহণে কারোই মাথাব্যথা দেখা যায় না। সহব্লগার দ্রোহী একদিন বলেছিলেন, বাঙালির দৃষ্টিসীমা অতীতে পাঁচ বছর আর ভবিষ্যতে সাত দিন। কথাটি যে সত্য, তা এ ধরনের দুর্ঘটনার সময় আরো ভালোভাবে অনুভব করি। একটা অব্যবস্থাপনা তখনই জিইয়ে রাখা হয়, যখন তা থেকে কেউ লাভবান হয়। জাহাজ মালিকরা হয়তো মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে কিছু আর্থিক লাভ করে, এবং সেই লাভের কিছু অংশ উৎকোচ হিসেবে সরকারী কর্তৃপক্ষের জায়গামতো তুলে দেয়, কিন্তু জাহাজ চালক আর যাত্রীরা, যারা নিজেরাই সেই দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে, তারা কেন একে চলতে দেয়? সদ্য ঘটিত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রাতের বেলা, ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, বালিবাহী কার্গো জাহাজের আঘাতে। লঞ্চটিতে এমনিতেই যাত্রী বেশি ছিলো (বিম্পিজামাতের মহাসমাবেশের কারণে দেশে সরকারী হস্তক্ষেপে অঘোষিত ঢাকা-অবরোধের কারণে), আবার মাঝপথে লঞ্চে কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, পেঁয়াজ প্রভৃতি কার্গো তোলা হয়। ওদিকে রাতে কার্গো জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিলো, কিন্তু সেই আজ্ঞাকে পালনে বাধ্য করার মতো লোকবল এতগুলো বছরেও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় যোগাড় করতে পারেনি। আরো জানা গেছে, জাহাজগুলো রাতে জ্বালানি খরচ বাঁচাতে আলো না জ্বালিয়ে চলাচল করে। এ ধরনের আরো কারিগরী ও পরিচালনাসংক্রান্ত ছোটো ছোটো কারণ যখন জমতে থাকে, সেগুলো জন্ম দেয় দুর্ঘটনার। আর আমাদের নীতি নির্ধারকরা তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে বড় বড় শব্দ ব্যবহার করলেও বেলা শেষে এ-ই সত্য যে আমাদের তথ্য প্রযুক্তির দিকপাল মোস্তফা জব্বারের মতো লোক। সরকার চাইলেই অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থাকে জিপিএসের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটর করার ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রতিটি নৌযানেই স্বল্প ব্যয়ে সেন্সর বসিয়ে এর মালামালের ওজন অনুমোদিত সীমার ভেতরে আছে কি না, রাতে আলো জ্বলছে কি না, ইত্যাদি কার্যকালীন প্যারামিটারসহ এর গতিবেগ ও অবস্থান জিপিএসের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কাছে নির্দিষ্ট সময় পরপর জানিয়ে দেয়া সম্ভব। আমার জানামতে, দেশে গ্রামীণফোনের ভেহিকল পুলে এমন ভেহিকেল ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু আছে বহুদিন যাবত, এটা এমন কোনো রকেট সায়েন্স নয়। নৌযানের জন্যে এ ধরনের একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং ব্যবস্থা তৈরির জন্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা নেয়া যেতে পারে, তারা ইতিমধ্যেই প্রিপেইড মিটার ও ইভিএম ডেভেলপ করে দেখিয়ে দিয়েছে যে এ ধরনের প্রযুক্তি বিকাশে তারা সক্ষম। পূর্ণাঙ্গ এক একটি মনিটরিং মডিউল বুয়েটের তত্ত্বাবধানে সংযোজন করে সেটি নিজ ব্যয়ে ইনস্টল করতে বাধ্য করার জন্যে নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে, ঠিক সিএনজিগুলোতে যেভাবে মিটার সংযোজন করানো হয়েছে। আপত্তি তোলা যেতে পারে যে এ ধরনের ব্যবস্থা ইনস্টল করলেও নৌযান মালিক বা চালকরা তা নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে, সিএনজির মিটারের মতোই। সেক্ষেত্রে যদি আইন করা হয় যে এই মনিটরিং ব্যবস্থা কোনো কারণে নিষ্ক্রিয় করা হলে বিপুল জরিমানা দিতে হবে, তাহলে সে পথ অনুসরণ করা থেকে নৌযানগুলো বিরত থাকবে। এই ব্যবস্থা নেয়া হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিটি নৌযানের আচরণ মনিটর করা সম্ভব হবে, তারা বিধিভঙ্গ করলে সে মোতাবেক স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরিমানা আরোপ করা যাবে, সর্বোপরি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বহুগুণে নিশ্চিত করা যাবে। বিটিসিএলের টেলিফোন বিল যেভাবে বুয়েটের একটি ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে করা হয়, একই ভাবে এই দায়িত্বটিও একই ইনস্টিটিউটকে দেয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতিটি খুব ব্যয়বহুল হওয়ার কথা নয়। যৎসামান্য যা ব্যয় হবে, তা অবশ্যই জাহাজ মালিক-শ্রমিক-যাত্রী-কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত গাফিলতিতে নিহতদের প্রাণের মূল্যের চেয়ে কম হবে। দীর্ঘ মেয়াদে এই ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্কৃতিতে কিছু শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। একটি মানুষের প্রাণের মূল্য তিরিশ হাজার বা পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকায় না মেপে, এক একটি লঞ্চে কিছু অর্থ ব্যয় করে মনিটরিং ব্যবস্থা ইনস্টল করা শ্রেয়তর বলে মনে করি। এই প্রযুক্তি আমাদের আয়ত্বের মধ্যেই রয়েছে, কাজে লাগানোর জন্যে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসুন, প্লিজ।
false
ij
গল্প_ অগ্নিনগর অনেক অনেক দিন আগের কথা। রাত্রির তৃতীয় প্রহরে আষাঢ়ী পূর্ণিমার ধবল আলোর ভিতরে গঙ্গা নদীর তীরে ভিড়ে ছিল একটি যাত্রীবাহী নৌকা । নৌকাখানি বেশ বড়- মাঝমধ্যিখানে বেশ প্রশস্ত ছৈ। ছৈয়ের ওপর এত রাতেও দু-একজন জোছনা-পিপাসু বঙ্গবাসী ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছে। এদের মধ্যে একজন সুরঞ্জন, সে অবশ্য পুন্ড্রবাসী; তিরিশের মতো বয়স তার; সুরঞ্জন অবশ্য অত জোছনা-প্রিয় নয়, তার নিদ্রার সমস্যা রয়েছে, বহু বছর ধরে রাতে ভালো ঘুম হয় না তার। চিকিৎসায় যথাযথ ফললাভ হয়নি। তীরে বাঁধা নৌকাখানি অল্প অল্প দুলছে। আর রাতটি আজ আষাঢ়ী পূর্ণিমার বলেই গঙ্গা নদীটি পূর্ণিমার ধবল আলোয় ছেয়ে আছে। উথাল-পাথাল বাতাস গঙ্গার বুকের জোছনার ফিনফিনে চাদরকে ছিঁড়ে ফেলছে বারবার। কী এক অলীক যাদুবলে চোখে পলকে আবার জোড়া লেগে যাচ্ছে। সুরঞ্জনের ঠিক সামনেই ছোটখাটো গড়নের একজন বৃদ্ধ বসে রয়েছেন । উত্তাল বাতাসে বৃদ্ধের পাকা চুল-দাড়ি উড়ছিল। বৃদ্ধের পরনে ধূতি আর উড়–নি। হাতে একটি কাঠের ষষ্টি। ষষ্টির শেষ প্রান্তে অলংকৃত বকের মাথা। সুরঞ্জন বৃদ্ধকে আগেই দেখেছে। তবে এখনও পর্যন্ত বৃদ্ধের সঙ্গে কথাবার্তা ঠিক হয়ে ওঠেনি। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সুরঞ্জন সাধারনত লোকজন এড়িয়ে চলে। একটু পর বৃদ্ধ নিজে থেকেই বললেন, আমার নাম গৌড়নাথ। আমার বাড়ি কামরূপ। বৃদ্ধের কন্ঠস্বর কেমন খনখনে শোনাল। আপনার বাড়ি প্রাগজ্যোতিষপুর? সুরঞ্জন সামান্য বিস্মিত হয়ে গিয়ে শুধালো। হ্যাঁ। বৃদ্ধ মাথা নাড়লেন। সুরঞ্জন জানে প্রাগজ্যোতিষপুরের কামরূপে একটি রহস্যময় মন্দির আছে। সে মন্দিরের নাম কামাখ্যা । মন্দিরটি ঘিরে নানা গা ছমছমে কাহিনী প্রচলিত। বাণ-উচাটনের জন্য বিখ্যাত কামরূপ। কামরূপে পর্বতময় স্থান। সে পাহাড়ের গভীর অরণ্যে বিষধর সাপের বাস। আপনি কি করেন? সুরঞ্জন জিগ্যেস করে। গৌড়নাথ বললেন, আমি তান্ত্রিক জ্যোতিষ। ওহ, তা এখন কোথায় চলেছেন আপনি? আমি যাব কাকদ্বীপ। তান্ত্রিক জ্যোতিষ গৌড়নাথ বললেন। জীবনে অনেক পাপ করেছি। এখন সমুদ্রসঙ্গমের পবিত্র জলে অবগাহন করে পাপ স্খলন করব। সুরঞ্জন চুপ করে থাকে। বয়স হলে লোকে পাপের কথা ভাবে বেশি। বৃদ্ধ জ্যোতিষ গৌড়নাথও সেরকমই। পাপপূণ্য নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কোনও কূলকিনারা পায়নি সুরঞ্জন। সে একবার নদীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জ্যোতিষ গৌড়নাথকে বলল, আমার নাম সুরঞ্জন। আমার বাড়ি করতোয়া পাড়ের পুন্ড্রনগর । জ্যোতিষ গৌড়নাথ মাথা নাড়ল। পেশায় আমরা শঙ্খবণিক। সুরঞ্জন বলল। অ। আমি নিঃসন্তান। বছরখানেক আগে আমার স্ত্রীবিয়োগ ঘটেছে। এখন দেশভ্রমনে বেরিয়েছি। আপাতত তাম্রলিপ্তি নগরে যাচ্ছি। যতদিন ভালো লাগে সে নগরে থাকব। তারপর কোথায় যাই ঠিকঠিকানা নেই। অ। তা তাম্রলিপ্তি কি তোমাকে যেতেই হবে? কেন? সুরঞ্জন বিস্মিত হয়। আমি জ্যোতিষ। আমি কোষ্ঠী করে দেখেছি তাম্রলিপ্তি নগরে অতিসত্ত্বর অগ্নিকান্ডযোগ রয়েছে। সুরঞ্জন অবাক হয়ে গেল। সে কি! নগরের কোষ্ঠী হয় না কি! হয় বৈ কী। নগরে কি আর জন্মমৃত্যু নেই? আছে। তাহলে? সুরঞ্জন খানিক ক্ষন চুপ করে থাকে। তারপর বলল, আমি পাপ করেছি কি না জানি না, তবে আমার বিরুদ্ধে পরমেশ্বর অন্যায় করেছেন। কি অন্যায় শুনি? ঐ যে বললাম, আমার স্ত্রীবিয়োগ হল। সুরঞ্জন কাতর কন্ঠে বলল। আবার বিবাহ করলে না যে? ছন্দশ্রী, মানে আমার স্ত্রীকে যে আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। উঠতে বসতে ছন্দশ্রীর নিটোল মুখখানা মনে ভাসে। ঐ যে নদীজলে ও ভেসে উঠছে ছন্দশ্রীর গোলপানা নিটোল মুখ। দেখুন। বড় লাবণ্যময়ী ছিল ছন্দশ্রী। অ। আমার এক বোনও ছিল। সে বোনের নাম ছিল পুষ্প, মানে পুষ্পমালা। সুরঞ্জন বলল। হ্যাঁ, তো? আমার সে বোন অনেক কাল আগে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে! হ্যাঁ। হারিয়ে গেছে! আমার তখন কিশোর বয়স। সুরঞ্জন কাতরকন্ঠে বলল। আমি আর পুষ্প প্রত্যহ ভোরবেলা করতোয়া নদীপাড়ে যেতাম। নদীপাড়ে বিস্তীর্ণ মরিচ ক্ষেত। মরিচ ক্ষেতে টিয়ে পাখির ঝাঁক এসে নামত। আমরা টিয়ের ঝাঁক তাড়াতাম। পুষ্প হি হি করে হাসত। একদিন ... একদিন ভোরে নদীপাড়ে গিয়ে দেখলাম বেশ বড় একটি ঘাসি নৌকা ভিড়ে আছে। আমরা অবাক হলাম। সাধারনত এ দিকটায় তো নৌকা ভিড়ে না। সহসা কী সব ঘটে গেল। নৌকা থেকে মুহূর্তেই রে রে রে রে চিৎকার করে কয়েকজন ষন্ডা প্রকৃতির লোক লাঠিসোটা নিয়ে নামল। তারা আমায় ঘিরে ধরল। তারপর খুব ডান্ডাপেটা করল । আর দু’জন দস্যু পুষ্প কে টেনে হিঁচড়ে নৌকায় তুলতে লাগল। পুস্পর সে কি চিৎকার ... আমি অচেতন হওয়ার আগে আমার মুখে রক্তস্রোত টের পেলাম। জ্ঞান হারানোর আগে দেখতে পেলাম জলদস্যুরা নৌকার কাঠের সিঁড়ি তুলে নিল। কুখ্যাত জলতস্কর। জ্যোতিষ গৌড়নাথ বললেন। হ্যাঁ। তাইই হবে। সুরঞ্জন মাথা নাড়ল। জ্যোতিষ গৌড়নাথ নদীর দিকে তাকালেন। একটি মহাশোল ধবল জল ফুঁড়ে উঠে আসে। চন্দ্রকিরণে মাছটির পিছল শরীর চকচক করে । সহসা ঘন আঁষটে গন্ধ ছড়ায়। উত্তাল বাতাসে কড়কড় হেলে পড়ে নৌকাটি। নৌকায় গুঞ্জন ওঠে। উপকথার মহাশোলটি অনেকেরই চোখে পড়েছে। কেবল সুরঞ্জন দেখতে পায়নি। এখন সে বোনের স্মরণে বিষন্ন হয়ে রয়েছে। জ্যোতিষ গৌড়নাথ বৃদ্ধ হয়েছেন। তিনি নদী ভাগীরথীর বিচিত্র ইতিহাস জানেন। অত্র অঞ্চলে নদীপাড়ের কিশোরী-বালিকাদের হরণ করার উদ্দেশ্যে বানিজ্য নৌকার আড়ালে জলতস্করা ঘুরে বেড়ায়। নগরে অল্প বয়েসী বালিকারা মহার্ঘ পন্য, স্বর্নের চেয়েও বহুমূল্য। নগরের ধনবান শ্রেষ্ঠীরা বালিকাদের অন্যতম ক্রেতা। সুরঞ্জন নামের যুবকটির বোনের ভাগ্যেও তেমনই ঘটেছে। কিন্তু, হতভাগী পুষ্পা এখনও বেঁচে আছে কি? জ্যোতিষ গৌড়নাথ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ২ পরের দিনে ভোরে গুঞ্জন শুনে ঘুম ভাঙল সুরঞ্জনের। চোখ কচলে গলুয়ে উঠে এল। ভোরের আলো ছড়িয়ে আছে। গলুয়ে জটলা। দূর থেকে ছায়া ছায়া তাম্রলিপ্তি বন্দর দেখে সুরঞ্জন শরীরে কাঁপন বোধ করে। ওই নগর পুড়ে যাবে। জ্যোতিষ গৌড়নাথ বলেছে। সত্যিই কি অগ্নিদগ্ধ হবে তাম্রলিপ্তি নগর? ভাবতে-ভাবতে সুরঞ্জন অভিভূত হয়ে পড়ে। জ্যোতিষ গৌড়নাথের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নৌকা থেকে নেমে এল সুরঞ্জন। গৌড়নাথ নৌকায় রয়ে গেলেন। সে আরও দক্ষিণে যাবেন। দক্ষিণে কাকদ্বীপ। সমুদ্র। এই সকালেও বন্দরে বেশ ভিড়। ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায় সুরঞ্জন। অতিথিশালাটি এদিকেই কোথাও হবে। খিদেও পেয়েছে। সে অন্নশালার খোঁজে আশেপাশে তাকায়। সে যখন অতিথিশালার কাছে পৌঁছোয় তখন সকালের রোদ রাঙিয়ে উঠেছে। ৩ সুরঞ্জন তাম্রলিপ্তি নগর ঘুরে ঘুরে দেখছে। সে পুন্ড্র নগরের উপান্তে বাস করে। পুন্ড্রনগর নগরটিও সমৃদ্ধশালী । তবে তাম্রলিপ্তি নগরের বিচিত্র শোভা তাকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করল। নগর চত্তর, পুষ্করিনী, ঋজু সড়ক, সড়কের দু-ধারে মেহগনি ও কড়ই গাছের সারি, রাজপ্রাসাদ, অট্টালিকা, মন্দির, গ্রন্থাগার ও চিকিৎসালয়-সবই যেন নগর পরিকল্পকের চিন্তা ও কল্পনার নিখুঁত বাস্তবায়ন। তবে নগরকেন্দ্রে ভগ্ন বুদ্ধমূর্তি সুরঞ্জনকে হতাশ করল। বর্তমানে বঙ্গ সেন রাজাদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। সেনগন প্রবল বুদ্ধবিরোধী। পাল আমলে বঙ্গজুড়ে অসংখ্য বৌদ্ধমূর্তি গড়ে উঠেছিল। সেনগন সে সব মূর্তি নির্দয় ভাবে ভেঙে ফেলছে। নগরমধ্যে শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়-এর প্রসাদোপম অট্টালিকাটি সুরঞ্জনকে অভিভূত করে দিল। ফটকে শস্ত্রধারী প্রহরী। সুরঞ্জন অতিথিশালায় শুনেছে -শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় তাম্রলিপ্তি নগরের শ্রেষ্ট বণিক । পেশায় সুবর্ণবণিক। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় বঙ্গের নৃপতি লক্ষ্মণ সেন-এর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। সেন পরিবারে রতœালঙ্কার সরবরাহ করেন। যে কোনও রাজকীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান। সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেন শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় । শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ের অট্টালিকাটি দ্বিতল। দ্বিতল অট্টালিকাটির পিছনে বৃত্তাকার কাষ্ঠনির্মিত প্রমোদভবন । শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ের প্রিয়তম রমনীরা ওই প্রমোদভবনে বাস করে। ৪ একদিন। সারাদিন নগরের এখানে-ওখানে ঘুরেছে। সন্ধ্যার মুখে খিদে টের পেল সুরঞ্জন। পথের পাশে একটি অন্নশালা। অন্নশালায় প্রবেশ করে সুরঞ্জন । ঘরটি বেশ বড়। প্রদীপ জ্বলে ছিল। মাটির মেঝের ওপর মাদুর বিছানো। মাঝবয়েসি একটি কালো মতন লোক অন্নব্যঞ্জন পরিবেশন করছে। লোকটিকে সাহায্য করছে একজন মাঝবয়েসী নারী। নারীটি ঈষৎ বয়স্ক হলেও দেখতে অনেকটা ছন্দশ্রীর মতো । তবে গাত্রবর্ণ শ্যামল। ছন্দশ্রী ছিল গৌড়বর্ণা, দীর্ঘাঙ্গি, রন্ধনকর্মে পটু ও শয্যায় মূর্তিমান শঙ্খিনী। সুরঞ্জন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ছন্দশ্রী বেঁচে থাকলে কি হত? পুষ্প হারিয়ে না গেলে কি হত? খাওয়া শেষ হলে অন্নশালা থেকে বেরিয়ে আসে সুরঞ্জন। তারপর হাঁটতে থাকে। নগরে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমেছে। তবে আকাশে একখানি শুল্কপক্ষের চাঁদও আছে। বাতাস নিস্তব্দ। আর বেশ গরম। গরম আর গুমোট। সহসা তার মনে কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। আমি এ নগরে কি করছি? আমি কি দেশান্তরী হয়েছি? নাকি খুঁজছি কিছু? আমি কি নিরুদ্দেশ পুষ্পমালাকে খুঁজছি? সুরঞ্জনের মুখে রহস্যময় হাসি খেলে যায়। হাঁটতে হাঁটতে ছন্দশ্রী কে ভুলে যায় সুরঞ্জন। একটি সরু গলিতে ধূপের ধোঁয়া ছড়িয়ে আছে। সেই সুগন্ধী সুরঞ্জন কাম বোধ জাগ্রত করে দেয়। এবং সে বন্দরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তাম্রলিপ্তি নগরের পতিতালয়টি সে দিকেই। সরুগলি একেঁবেঁকে মহাসড়কে উঠে গেছে । সে দ্রুত হাঁটতে থাকে। অন্নশালার মধ্যবয়েসী রমনীটি একটি আলোছায়া কক্ষে বিব্রস্ত্র হতে থাকে। উলটো দিক থেকে একটি পালকি আসছে। ঝলমলে রাজকীয় পালকি। সুরঞ্জন এক পাশে সরে যায়। সুন্দরী কোনও মুখ দেখবে বলে মুখ তুলে সুরঞ্জন । মশালের আলোয় চকিতে একটা মুখ চোখে পড়ল। অতি পরিচিত মুখ। পুষ্পমালা! সুরঞ্জন এর বুক ধক করে ওঠে। সে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। তারপর সংবিত ফিরে পেয়ে পালকি অনুসরন করতে থাকে। পালকিতে পুষ্পমালা! সত্যি? পালকি শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় এর অট্টালিকার সামনে এসে থামল। শস্ত্রধারী প্রহরী ফটক খুলে দিলে কাহাররা নিঃশব্দে পালকি নিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। সুরঞ্জন কি করবে ভেবে পেল না। ফটকের দু-ধারে মশাল জ্বলে ছিল। রেড়ির তেলের গন্ধ ছড়িয়ে আছে। অশ্বের ক্ষুরধ্বণি তুলে মহাসড়ক দিয়ে একখানি রথ চলে যায়। অট্টালিকার ফটকের দক্ষিণ পাশে একটি ছাইবর্ণের হাতী বাঁধা। জায়গাটি আলোকিত হয়ে আছে। কেননা, একখানি পূর্ণচন্দ্র কিরণ ঢেলে দিচ্ছে। বন্দরের দিক থেকে ভেসে আসে আষঁটে বাতাস। সুরঞ্জন অভিভূত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার কি ভুল হল? আমি কি পুষ্পমালাকে দেখলাম? সে মুখে কপালে ঘাম টের পায়। শরীর শীতল ঠেকছে। শরীর অবশ হয়ে আসছে। সুরঞ্জন জানে, বছরের পর বছর কেটে যায়, জীবনে কোনও কিছু ঘটে না, যখন ঘটে ...তখন...তখন একটার পর একটা ঘটনা ঘটতেই থাকে। আরও খানিক ক্ষণ শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ের অট্টালিকার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে সুরঞ্জন বিষন্ন মনে অতিথিশালায় ফিরে আসে। পুষ্পার জন্য মনটা ছটফট করছে। পালকিতে যাকে দেখলাম সে পুষ্পামালা নয়তো? নাকি অন্য কেউ। সে আর ঘরে গেল না। অলিন্দে এসে বসল। প্রদীপ জ্বলে ছিল। অলিন্দের ওপর নানা জাতের লোক বসে আছে। কেউ বণিক, কেউ তীর্থক। কেউ কেউ অক্ষক্রীড়ায় মগ্ন হয়ে আছে। কেউ-বা নীচুস্বরে কথাবার্তা বলছে। সুরঞ্জন কান পাতে। কথায় কথায় শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ের প্রসঙ্গও এল। স্থানীয় একজন বলল, শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় তাম্রলিপ্তি নগরের বণিক শ্রেষ্ট। তার ধনসম্পদ নাকি কুবেরকেও হার মানায়। পেশায় সুবর্ণবণিক হলেও শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় সেন সাম্রাজ্যে রণহস্তির যোগান দেয়; প্রাগজ্যোতিষপুর থেকে হাতী ধরে এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ভিড়ের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে। কথক বলে যায়, পক্ষান্তরে অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়। নিয়মিত কাঙাল ভোজনের আয়োজন করেন। কয়েকটি অনাথ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা। অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় । গেল বছর তাম্রলিপ্তি নগরের দক্ষিণপাড়ায় মাধব দীঘির পাড়ে শিবমন্দির গড়েছেন। বছরে একবার শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে সাগরসঙ্গমে স্নান করেন। তবে ... তবে? শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় অত্যধিক কামপ্রবণ। ভিড়ের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে। বিশেষ করে বালিকাদের প্রতি শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ের আসক্তি অত্যন্ত তীব্র। বৃদ্ধ বয়সেও নিত্য নতুন বালিকা ভোগ করেন শ্রেষ্ঠী। এ উদ্দেশ্যে শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় তস্করবৃত্তিও অবলম্বন করেন। তার ইঙ্গিতে তার অনুচরেরা বালিকাদের অপহরণ করে। নদীবক্ষে বানিজ্য নৌকার আড়ালে জলতস্করা ঘুরে বেড়ায়। জলদস্যুরা নদীপাড়ের বালিকা-কিশোরীদের হরণ করে। ভিড়ের মধ্যে একজন বলে উঠল, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। অল্প বয়েসী বালিকারা মহার্ঘ পন্য, তারা স্বর্নের চেয়েও দামী। নগরের শ্রেষ্ঠীরা অপহৃত বালিকাদের অন্যতম ক্রেতা। সুরঞ্জন টের পেল তার শরীর হিম হয়ে আসছে। ৫ এখন অনেক রাত। ভারি অদ্ভূত একটা স্বপ্ন দেখে পুষ্পমালার ঘুম ভেঙে যায়। করতোয়া নদীর পাড়ের শঙ্খবর্ণের ছবির মতো বাড়িটি সকাল বেলার মধুবর্ণ আলোয় ভরে আছে। ভোরবেলা বাবা হাটে গিয়েছিল। ফিরে এলেন মাছ, আম আর মিস্টি নিয়ে। ভাইবোনদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল। সবাই আঙিনায় মাদুর পেতে গোল হয়ে বসে খেতে বসল। সকালের দিকে গরম দুধে খই মিশিয়ে খায় পুষ্প। এখন দাসী বিমলা দু টুকরো ফলসা আম এনে খই-দুধে ডলে দিল। তাতে দুধের রং কেমন বদলে যেতে থাকে। পুষ্পমালার ছোট বোন মৌনী, দুধের রং বদলে যাচ্ছে দেখে সে ফিক করে হেসে ফেলল। সাদা রঙের বিড়াল বিক্রম। পাজীটা পায়ে পায়ে ঘুরছে। ওর আজ খুশি দেখে কে। দুধ ছাড়াও মাছের ভাগ পাবে আজ। বিক্রম খুব পাজী। প্রত্যহ পড়শী ছন্দশ্রী দের মাছ-দুধ খেয়ে আসে। সে কথা মনে করে হাসি পায় পুষ্পমালার। আঙিনায় রোদ ও শিউলী ফুলের গন্ধ। দাসী বিমলা মাছ কুটতে বসেছে। আজ মা রাঁধবে। বাবা আজ শঙ্খভর্তি নৌকা নিয়ে সমতট যাত্রা করবে । পুষ্পমালা বিষন্নতা টের পায়। বাবা বানিজ্যে গেলে কত যুগ যে পাড় হয়ে যায়, তখন বাড়িটা কেমন খাঁ খাঁ করে। আজ বাবা বানিজ্যে যাওয়া আগে মাকে একটি সাদা রঙের পায়রা দেখিয়ে বললেন, আমি বিপদে পড়লে এই পায়রাটি ছেড়ে দেব। এটির পায়ে রুপোর আংটি রয়েছে। এটি ফিরে এলে বুঝবে আমি নেই। বাবা বানিজ্যে যাওয়া দু-পক্ষকাল পরে এক মেঘলা দুপুরে একটি সাদা রঙের পায়রা উঠানের ডালিম গাছে উড়ে এসে বসল । মা বলল, দেখ তো বিমলা, কবুতরের পায়ে রুপো আঙটি বাঁধা রয়েছে নাকি। ডালিম গাছের কাছে গিয়ে বিমলা বলল, হা, মা। তাই তো দেখছি। মা চিৎকার করে মূর্চ্ছা যায় ... পুষ্পমালার ঘুম ভেঙে যায়। বিস্মরণ ও স্মৃতির ভারে পুষ্পমালার শরীর হিম হয়ে আসে। সে চারিপাশে অন্ধকার টের পায়। তবে সে জানে কাঠের এই ঘরটি বৃত্তাকার। ছাদ অনেক উচুঁতে। বড় বড় জানালা। জানালার কাছে দাঁড়ালে গঙ্গা নদী চোখে পড়ে। জানালায় বড় বড় পরদা। বাতাসে দুলছে। এক কোণে প্রদীপ জ্বলেছিল । বাতাসের ধাক্কায় পরদা সে দিকে যায়। দৃশ্যটায় কি ছিল, পুষ্পমালা অন্ধকারে হেসে ওঠে। মুক্তি এত কাছে জানা ছিল না ... ৬ সুরঞ্জন স্বপ্ন দেখছিল। ...জলের ছলাত ছলাত শব্দ হচ্ছিল আর অন্ধকার নদীতে একটি দক্ষিণমুখী সমুদ্রগামী নৌকা ভেসে আছে। পাটাতনের ওপর জ্যোতিষ গৌড়নাথ দাঁড়িয়ে। তার পরনে যজ্ঞের পুরোহিতের পোশাক। পাটাতনে পুষ্পও দাঁড়িয়ে ...সে হাতে একটি পায়রা ধরে রেখেছে । সুরঞ্জনের একবার মনে হল নৌকাটি তাম্রলিপ্তির শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় এর । পুষ্পার পাশে ছন্দশ্রী দাঁড়িয়ে, ছন্দশ্রীর মুখে কেমন কঠোর ভাব । ছৈয়ের ওপর থেকে মাঝিমাল্লারা মুহূর্তেই রে রে রে রে চিৎকার করতে করতে নেমে এল। জ্যোতিষ গৌড়নাথ দু-হাত তুলে ধরে তাদের বাঁধা দিতে চেস্টা করলেন। দু’জন মাল্লা ছন্দশ্রী কে টেনে হিঁচড়ে নৌকার কিনারে নিয়ে যেতে লাগল। পুস্পর সে কি চিৎকার ... সে চিৎকারে সুরঞ্জনের ঘুম ভেঙে যায়। অতিথিশালার ঘরটিতে অন্ধকার। একটু পর বহু কন্ঠের চিৎকার শুনতে পেল সুরঞ্জন । কী ব্যাপার? সে চমকে উঠল। মুহূর্তে সুরঞ্জন ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। খালি গা, পরনে ধূতি। কে যেন চিৎকার করে বলছে, আগুন লেগেছে ... আগুন লেগেছে ... সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাও ... সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাও । জ্যোতিষ গৌড়নাথের কথা মনে পড়ে গেল সুরঞ্জনের। আমি কোষ্ঠী করে দেখেছি তাম্রলিপ্তি নগরে অতিসত্ত্বর অগ্নিকান্ডযোগ রয়েছে। অতিথিশালার সামনে উদভ্রান্ত মানুষের জটলা। কমলা রঙের আলোয় মহাসড়ক উজ্জ্বল হয়ে আছে। কে যেন চিৎকার করে বলছে, লেলিহান আগুনের শিখায় শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ের অট্টালিকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দাউদাউ আগুনের গ্রাস থেকে পরিত্রান পেতে আতঙ্কিত লোকজন হন্যে হয়ে ছুটে আসছে বন্দরের দিকে । সুরঞ্জন দাঁড়িয়ে থাকে। সে জানে অট্টালিকার মৃতদের মধ্যে পুষ্পও রয়েছে। সে বিভ্রান্ত বোধ করে। তারপর সে একটি অগ্নিময় নগরের আরও ভিতরে প্রবেশ করতে থাকে ... সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৬
false
mk
শিবিরের ৫০ আস্তানা বোমা কারখানা !!!!! নাশকতার উদ্দেশ্যে ককটেল ও পেট্রলবোমা তৈরি হচ্ছে রাজধানীতে শিবিরের অর্ধশতাধিক আস্তানায়। তৈরি করা শত শত বোমা মজুদও করা হচ্ছে অন্তত ১২টি আস্তানায়। বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের সংখ্যা বাড়াতে ককটেলে বেশি মাত্রায় ধ্বংসাত্মক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। শিবিরের 'ককটেল টিমের' অর্ধশত কর্মী বোমা তৈরি ও বহনের কাজে নিয়োজিত আছে। পেশাদার বোমা নিক্ষেপকারীদের কাজে লাগিয়ে তারা নাশকতা চালাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে শিবিরের ১২টি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে এবং বেশ কিছু আসামি গ্রেপ্তারের পর নাশকতার রূপরেখা পেয়েছে স্থানীয় থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সর্বশেষ কল্যাণপুরে পুলিশের গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনার সূত্র ধরে গতকাল শুক্রবার শিবিরের একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরে আরেকটি আস্তানার সন্ধায় পায় ডিবি পুলিশ।সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দা নজরদারির আড়ালে থেকেই বাসা-বাড়িতে বোমা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর শিবিরের 'ককটেল টিম' একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। এবার পুলিশের ওপরই হামলার পরিকল্পনা জানতে পেরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি পুলিশের কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, র‌্যাব সদর দপ্তর, সচিবালয় ও মন্ত্রীপাড়ায়। চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে রাজধানীর ৪৯টি থানার সামনে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়।ডিবি পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের প্রধান, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অর্ধশতাধিক মেস বা বাসায় গড়ে ১০-১২টি করে বোমা তৈরি ও সরবরাহের তথ্য ছিল আমাদের কাছে। এখন যেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে সেখানেই শত শত ককটেল মিলছে। এমন বড় অন্তত ১২টি আস্তানা আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলোর সন্ধানে অভিযান অব্যাহত আছে।'এডিসি ছানোয়ার আরো বলেন, 'মেস বা বাসায় বোমা তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিবির জড়িত। তাদের অন্তত ৫০ জন কর্মী ককটেল টিমে কাজ করে বলে বিভিন্ন সময় আমরা তথ্য পেয়েছি। তারা নাশকতা চালানোর বাধা হিসেবে পুলিশকে দেখছে। তাই এখন পুলিশের ওপর হামলা চালাতে চাইছে।' বোমার ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে ছানোয়ার হোসেন বলেন, 'ককটেল তৈরির ম্যানুয়াল অনুয়ায়ী এর ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যায়। সম্প্রতি আফতাবনগরে বোমারু আনোয়ারের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া বোমাগুলো বেশি ধ্বংসাত্মক ছিল। তবে আগে ককটেলে লোহার গুঁড়ো, কাচসহ স্প্লিন্টারের পরিমাণ কম থাকত। ফলে বিস্ফোরণে হতাহত হতো কম। কিন্তু এখন ককটেলে অধিক পরিমাণে এসব ধ্বংসাত্মক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে।'গত বুধবার বিকেলে কল্যাণপুরে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে পুলিশের রিকুইজিশন একটি করা গাড়িতে আগুন দেয় শিবিরের ক্যাডাররা। সূত্র জানায়, ওই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে গতকাল কল্যাণপুরের শহীদ মিনার রোডে অভিযান চালিয়ে শিবিরের একটি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। মিরপুর বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই বাসা থেকে পুরো ঢাকায় শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা হতো। একই সঙ্গে সদস্য সংগ্রহ, চাঁদা তোলা, ককটেল তৈরি ও তাত্তি্বক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।গত ১০ নভেম্বর রাতে কাঁঠালবাগান বাজার রোডের ৮৮ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৭৯টি ককটেল ও দেড় কেজি বিস্ফোরকসহ চার শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের দুই ঘণ্টা পর কলাবাগান থানা লক্ষ্য করে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। কলাবাগান থানার ওসি মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, আস্তানাটিতে শিবিরের ১১ জন কর্মী-সমর্থক থাকত। অন্যরা আগেই হয়তো বোমা নিয়ে বেরিয়েছে। তারাই পুলিশকে ভয় দেখাতে ওই হামলা চালায়।জানা গেছে, ওই ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে ডিবি পুলিশের কাছে। ডিবি আদালতের নির্দেশে আসলাম, ফয়সাল হোসেন তারেক, দেলোয়ার হোসেন ও শফিকুল ইসলাম নামের চার শিবিরকর্মীকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ডিবির এডিসি ছানোয়ার হোসেন জানান, ওই মেসে শিবিরের মাঝারি শ্রেণীর কয়েকজন নেতার যাতায়াত ছিল। তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর জন্য ওই বাসায় বোমা তৈরি করত। পুরো চক্রটিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া বোমা নিক্ষেপকারীরা বলছে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়তে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ পুলিশ তাদের বড় বাধা।গত ১০ নভেম্বর রাতে নিউ মার্কেট ও পল্লবী থানার সামনে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। সম্প্রতি পল্টন, কারওয়ান বাজার, গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পল্টন ও মহাখালী এলাকায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এরপর তেজগাঁও থানা ও নিউ মার্কেট থানায় ককটেল ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া নয়াপল্টন, আগারগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় ককটেল হামলায় অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।সূত্র জানায়, বাসা ভাড়া করে সহজেই তৈরি করা হচ্ছে ককটেল, গ্রেনেড, পেট্রলবোমা, পাইপবোমা ও চকলেটবোমা। গোপন এসব আস্তানার বেশির ভাগই থেকে গেছে গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে। সম্প্রতি ককটেল হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ নতুন কৌশলে অভিযান শুরু করেছে। ডিবি সূত্রে জানা যায়, দেশে ককটেল তৈরি ও ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত ১২টি পেশাদার গ্রুপসহ অন্তত ৪০০ ব্যক্তি। রাজধানীতে দুই শতাধিক পেশাদার ককটেল-কারিগর আছে। এদের প্রধান ১৮ জনকেও শনাক্ত করেছে ডিবি। ডিবির অভিযানে অর্ধশতাধিক ককটেল-কারিগর গ্রেপ্তারও হয়েছে। তবে বর্তমানে পেশাদার কারিগরের চেয়ে শিবিরকর্মীরাই ককটেল বানানো ও হামলায় বেশি সক্রিয়। তাদের বলা হয় ককটেল টিম। তারা ককটেল ফাটানোকে নিজেদের ভাষায় বলে 'আওয়াজ দেওয়া'।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ১ ডিসেম্বর ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর রোডে বাসে অগি্নসংযোগের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া শিবিরকর্মী হারুনর রশিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত ৩ ডিসেম্বর রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালায় ডিবি। অভিযানে ১৫০টি চকলেটবোমা, ১৫০ গ্রাম গানপাউডার, তিন-চার কেজি পেট্রল, এক কেজি মার্বেল, তিনটি গুলতি এবং জিহাদি তৎপরতা বিষয়ের বেশ কিছু বই উদ্ধার করে ডিবি। এই আস্তানা থেকে কয়েকটি নাশকতা চালানো হয়েছে।গত ১১ নভেম্বর আজিমপুরের নিউ পল্টন ইরাকি মাঠের পাশে একটি টিনশেড বাড়ির মেস থেকে ১৫৩টি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। লালবাগ থানার ওসি নুরুল মোত্তাকিন বলেন, ককটেল মজুদকারী চক্রটিকে এখনো ধরা যায়নি। তবে জানা গেছে, শিবিরের কর্মীরা এর সঙ্গে জড়িত।একই দিন কলাবাগানের ২৪৯ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে শিবিরকর্মীদের আরেকটি মেস থেকে বোমার চালান আটক করে ডিবি পুলিশ। ডিবির অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের সিনিয়র এসি গোবিন্দ চন্দ্র পাল জানান, ২৪০টি চকলেটবোমা, ১৫ কেজি ওজনের আধাবস্তা মার্বেল ও ৩৫টি গুলতিসহ নাজিমউদ্দিন ও আহসান হাবিব নামে দুই শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।গত ৩ নভেম্বর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে বোমা হামলা চালাতে গিয়ে আনোয়ার হোসেন নামে এক বোমারু আহত হয়। গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর মেরাদিয়া এলাকা থেকে তার প্রশিক্ষক সফিকুল ইসলাম সফিককে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, 'বোমা তৈরির ম্যানুয়াল ও জিহাদি বই থেকে ধারণা করা যাচ্ছে তারা জেএমবির আদলে কোনো উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর নেপথ্যে কারা আছে সে বিষেয়ে তদন্ত চলছে।'এদিকে গত ৭ নভেম্বর আদাবরের শেখেরটেক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক, জিহাদ বিষয়ের বই, পেট্রল, ল্যাপটপ, কাচের বোতল, ২০টি হেলমেট ও লোহার পাইপসহ হুমায়ুন কবীর ও আজগর আলী নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সূত্র জানায়, এর আগে রাজধানীর শ্যামলী, কাকরাইল, হাজারীবাগ, পুরান ঢাকার শ্যামপুর ও মিরপুর এলাকার পাঁচটি ভাড়া বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক জব্দ করা হয়।মেডিক্যাল ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে শিবিরের বোমার কারখানা : রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকায় গতকাল একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বোমা, বোমা তৈরির উপাদান, বোমা তৈরির নির্দেশিকা, হামলার প্রশিক্ষণের নির্দেশনা এবং জিহাদ-সংক্রান্ত বইসহ মেডিক্যাল কলেজের ১০ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই শিবিরের সক্রিয় সদস্য। তাদের মেসে বোমা তৈরি করে মজুদ ও নাশকতার পরিকল্পনা করা হতো। এ আস্তানা থেকেই গত বুধবার কল্যাণপুরে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। অভিযানকালে বাসা থেকে ১১টি তাজা ককটেল, দুটি পেট্রলবোমা, তিনটি ল্যাপটপ ও শিবিরের চাঁদার রসিদও উদ্ধার করা হয়েছে।গ্রেপ্তারকৃত ১০ জন হলেন- ইমন সরকার, রবিউল, ইব্রাহিম খলিল, আবদুল্লাহ আল মামুন, শাখাওয়াত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, লিয়াকত, কুতুব শিকদার, শরীফুল ইসলাম ও আনিসুর রহমান। তাঁরা সবাই ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী।মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সকাল ৮টার দিকে কল্যাণপুরের শহীদ মিনার রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির পাঁচতলার একটি মেসে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পেট্রলবোমা, ককটেল, জিহাদ-সংক্রান্ত বই, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বোমা তৈরির নির্দেশিকা পাওয়া যায়। কার্যত এটি শিবিরের বোমা বানানোর কারখানা।মিরপুর বিভাগীয় পুলিশের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, তিন-চার দিন ধরে জায়গাটি নজরদারিতে রাখা হয়। এখান থেকে পুরো ঢাকায় শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা হতো।পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দুই মাস আগে ফ্ল্যাটটি মাসিক ১৭ হাজার টাকায় ভাড়া নেন কয়েকজন। বাড়ির মালিক আবদুল কবির এই বাসা ভাড়া দিয়ে বনানী এলাকায় বসবাস করেন বলে জানা গেছে। - See more at: Click This Link
false
rn
পার্লারের মেয়ে আমার নাম রোজী। বয়স আঠাশ। আমি ঢাকার নাম করা একটা পার্লারে কাজ করি। আজ আপনাদের পার্লারের সুখ দুঃখের গল্প শোনাবো। আমি এই পার্লারে কাজ করছি প্রায় তিন বছর। আমি ইডেন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছি। বিয়ে হলো চার বছর হয়ে গেল। তিন বছর প্রেম করে বিয়ে করেছি। অফিস থেকে রাতে গাড়ি করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে। এবং সন্ধ্যায় নাস্তা দেয়। দুপুরের খাবার তো বাসা থেকেই বক্সে করে নিয়ে যাই। ইদানিং ঢাকা শহরে পার্লারের অভাব নেই। অল-গলি ভরে গেছে। আমি যে পার্লারে কাজ করি, ধরুন সেই পার্লারের নাম- লাসভেগাস। ঢাকা শহরে লাসভেগাসের অনেক গুলো শাখা আছে। আমাদের শাখাতেই সবচেয়ে বেশি ইনকাম হয়। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক একজন নারী। তিনি কত টাকার মালিক কে জানে। প্রতিদিন যদি গড়ে তিন লাগ টাকা ধরি, তাহলে মাসে ৯০ লক্ষ টাকা। খরচ যদি ১০ লাখ টাকাও ধরি- তবুও থাকে ৮০ লক্ষ টাকা। আমি বুঝি না আমাদের এত ইনকাম কিন্তু বেতন এত কম দেয় কেন? আমাদের এখানে একটা ব্যাপার আমার খুব ভালো লাগে-কারো জন্মদিন থাকলে- আমরা সবাই মিলে তার জন্মদিন পালন করি। সবাই কিছু কিছু টাকা দিয়ে কেক কিনে এনে কেক কাটি। তবে আমাদের পার্লারের একটা অলিখিত নিয়ম হলো- আমরা কেউ কারো ফেসবুক ফ্রেন্ড হতে পারব না। লাসভেগাসে আমরা মোট- ৩৩ জন কাজ করি। আমি পার্লারের ক্যাশিয়ার। আমার বেতন মাত্র আট হাজার দুই শ' টাকা। কিন্তু আমাদের পার্লারে এমন অনেক আছে মহিলা আছে তাদের বেতন- ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাদের হয়তো খুব একটা লেখা পড়াও নেই। কিন্তু তারা একটা বউ সাজালে কম পক্ষে বিশ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিল হয়। আর যাতা সিনিয়ার এক্সপার্ট তারা নেয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার। আমি এত লেখা পড়া করেও মাত্র আট হাজার দুই শ' টাকা বেতন পাই। এই চাকরিতে জয়েন করার আগে- আমাকে সিভি জমা দিতে হয়েছে। মোট ৬ মাসে তিন বার সিভি জমা দিয়েছি। তারপর তারা ডেকেছে। লম্বা ইন্টারভিউ দিয়েছি। ইন্টার ভিউ'র পর ট্রেনিং হয়েছে সাত দিন। তারপর জয়েন করেছি। সপ্তাহে একদিন ছুটি। সরকারি ছুটির দিন গুলোতে কোনো ছুটি নেই। ছুটি চাইলেও পাওয়া যায় না। ডিউটি দশ ঘন্টা। মনে মনে লক্ষ সিভি জমা দিয়েছি। কোথাও কেউ ডাকেনি। কিন্তু আমি লেখা পড়ায় ভালো, আমার রেজাল্ট ভালো। শুধু আমার মামা-চাচা নেই। আর টাকার জোর নেই। আমার কি একটা ভালো চাকরি পাওয়া উচিত ছিল না? প্রতিদিন গড়ে আড়াই শ' থেকে তিন শ' মেয়ে আমাদের এখানে সাঁজতে আসে। কেউ আসে ম্যাসেজ নিতে, কেউ ভ্রু প্লাক, কেউ চুল কাটাতে। কেউ আসে বিয়ের মেকাপ নিতে, কেউ আসে বগল পরিস্কার করত, কেউ স্পা, কেউ ফেসিয়াল অথবা পেডিকিউর-মেনিকিউর ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিদিন নানান বয়সী মানূষ আসে নানান ভাবে নিজেকে সাঁজাতে। না দেখলে আপনারা বিশ্বাস করবেন না- নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থান করার জন্য বা অন্যের চোখে নিজেকে সুন্দর ভাবে প্রকাশ করার জন্য- তারা পাগল হয়ে যায়। আমাদের এখানে স্কুলে পড়া মেয়ে থেকে শুরু করে- ৫০ বছরের মহিলা পর্যন্ত আসেন। তাদের এক কথাই আমাকে সুন্দর বানিয়ে দাও। যত টাকা লাগে নাও। তারা এসে পানির মতো টাকা খরচ করে। যেমন ২/১ জন এর কথা বলি- এক ঘন্টা সার্ভিস নিয়ে তারা ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ করে ফেলে। দিনের শেষে আমাদের ক্যাশে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা জমা হয়। এই টাকার হিসাব আমি রাখি। কোনো কোনো দিন পাঁচ শ' থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত কম হয়। তখন এই টাকা আমার বেতন থেকে কেটে নেয়া হয়। এত ভিড়ের মাঝে ক্যাশ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। ক্যাশে আমরা দুইজন বসি। কেউ নগদ টাকা দেয়, কেউ ক্রেডিট কার্ড দেয়, কেউ আবার মোবাইল থেকে বিকাশ করে। পার্লারে একটানা ৮/৯ ঘন্টা কাজ করি সেটা কোনো সমস্যা না। কিন্তু বেতন খুব কম। তার চেয়ে বড় সমস্যা সারা দিনে একবারও মোবাইল ব্যবহার করা যায় না। অফিসে ঢোকার পর-পরই মোবাইল লকারে রেখে দিতে হয়। আমি ইচ্ছা করলেও সারাদিনে আমাদের বাসার কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি না। এবং কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। সারাদিন অফিস করে রাত ৯ টায় বাসায় ফিরে আমি রান্না করতে বসি। আমার স্বামী সন্ধ্যা ৭ টায় বাসায় ফিরে। আমরা দুইজন মিলে যা ইনকাম করি- তাতে আমাদের সংসার চলে। মাস শেষে হাতে কিছুই থাকে। বাড়ি ভাড়া দেই ১৪ হাজার টাকা। আমার কোনো বাচ্চা নেই। ইচ্ছা করেই বাচ্চা নেই না। এত খরচ চালাবো কি করে? খুব শখ হয়- আমার একটা বাচ্চা থাকবে। তাকে গোছল করাবো, খাওয়াবো, ঘুম পাড়াবো এবং লেখা পড়াশেখাবো। শুধু স্বপ্ন দেখি, আর রাজ্যের ভাবনা ভেবে রাখি- কিন্তু আমার কোনো স্বপ্নই সত্য হয় না। সময় হু হু করে চলে যাচ্ছে। বড় বড় শহর ছাড়া গ্রামের নারীদের কাছেও পার্লারের বেশ চাহিদা আছে। বিউটি পার্লার যেহেতু শুধু নারীদের সাজানোর ও যত্নের জন্য তাই এখানে পুরুষদের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিষেধ। মেয়েরা বিভিন্ন ডিজাইনে চুল কাটানোর জন্য পার্লারে আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চুলের আগা গোল করা, ‘ভি’ আকৃতির করা, স্টেপ করা, লেয়ার করা ইত্যাদি। আমি সৌন্দর্য চর্চার বিরোধী নই। কারণ পরিচর্যা ছাড়া কোনো কিছুই তার স্বরূপে টিকে থাকে না। বিউটি পার্লারের মেয়েরা ওড়না ছাড়া অবস্থায় থাকে। এবং তাদের কালো বা মেরুন রঙ্গের জামা পড়ে ডিউটি করতে হয়। আমার এলাকার অনেকেই আসেন আমার পার্লারে। তারা আমাকে দেখে অবাক হোন। আমি পার্লারে কাজ করি এটা যেন তারা মেনে নিতে পারেন না। যাই হোক, আমি মাসে তিন হাজার টাকার ফ্রি সার্ভিস পাই। সবচেয়ে বড় কথা পার্লারের চাকরির নিরাপত্তা আছে। এখানে কোনো পুরুষ নেই। যৌনহয়রানির কোনো ভয় নেই। সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬
false
rg
ছিটমহল সমস্যা_ আদি থেকে বর্তমান। যে কারণে এটি বাংলাদেশ ভারত ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি!!! বারো ভূঁইয়াদের একজনের নাম ছিল হাজো ভূঁইয়া। হাজো ভূঁইয়ার ছিল দুই মেয়ে। জিরা আর হিরা। সংকোশ বা সরলডাঙ্গা নদী আর চম্পাবতী নদীর মাঝখানে চিকনা পর্বতাঞ্চলে তখন ছিল মাঙ্গোলীয়দের আধিপত্য। চিকনা পর্বতের অবস্থান ডুবরী থেকে প্রায় ৫০ মাইল উত্তরে। ডুবরী হল বর্তমান আসামের গোয়ালপাড়া জেলা। চিকনা পর্বতের মাঙ্গোলীয় গোত্রের সর্দার ছিলেন হারিয়া। হরিদাস মন্ডল নামেই ইতিহাসে সবাই যাকে চেনেন। এই হরিদাস মন্ডল ছিলেন মাঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত হৈহৈ বংশের উত্তারধীকার। চিকনা পর্বতে সংঘর্ষ এড়াতে, জাতিগত দাঙ্গা বন্ধ করতে এবং শান্তি বজায় রাখতে হাজো ভূঁইয়া হরিদাস মন্ডলের সাথে তার দুই মেয়ে জিরা ও হিরা'র বিয়ে দিলেন। জিরা ও হিরা'র বিয়ের পর জিরার গর্ভে জন্ম নিল মদন আর চন্দন। অন্যদিকে হিরার গর্ভে জন্ম নিল বিশু (বিশ্ব সিংহ) ও শিশু (শিষ্য সিংহ)। হরিদাস মন্ডলের এই চার ছেলের মধ্যে বিশু (বিশ্ব সিংহ) ছিল সবচেয়ে বেশি সাহসী, বুদ্ধিমান, প্রতাপশালী এবং ক্ষমতাপিয়াসু। পরবর্তীকালে এই বিশু বা বিশ্ব সিংহের হাতেই ১৫১৫ সালে কোচ রাজবংশের গোরাপত্তন। ভারতের কোচবিহার বা কুচবিহার-এর নামটি এসেছে এই কোচ রাজবংশী থেকেই। 'কোচ' এসেছে কোচ রাজবংশী থেকে। আর 'বিহার' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'বিহার' থেকে। যার অর্থ হল 'ভ্রমণ'। জনশ্রুতি হল, কোচ রাজবংশী'র রাজা বিশ্ব সিংহ এবং পরবর্তীকালে তাঁর ছেলে মজারাজ নারা নারায়ন চিকনা পর্বতে যতোটুকু এরিয়া নিয়ে ভ্রমণ করতেন ততোটুকুই হল কোচবিহারের আয়তন। কোচবিহার রাজ্য সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল রাজা বিশ্ব সিংহের পুত্র মহারাজ নারা নারায়নের আমলে। তখন কোচবিহারের সীমানা ছিল উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ এলাকা, বর্তমান বাংলাদেশের রংপুরের সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা, বিহারের কিশানগঞ্জ জেলা, এবং ভূটানের দক্ষিণপাশের কিছু এলাকা। কোচ রাজবংশীদের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে স্বতন্ত্র ভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য কোচ রাজা স্বাধীন কমতপুর বা কমতপুরী রাজ্য গড়ে তোলেন। ইতিহাসে যেটি আসলে কামতা কিংডম। কামতা রাজ্যের দুটি প্রধান নগর বা ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। একটির নাম কোচবিহার। অপরটির নাম কোচ হাজো। পরবর্তীকালে কোচবিহারে ব্যবসা-বাণিজ্যের অযুহাতে মুঘলদের অনুপ্রবেশ ঘটল। আর কোচ হাজো নগরটি অহমদের দখলে চলে যায়। কামতা রাজ্যের তৃতীয় আরেকটি শাখা বা ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। সেটির নাম খাসপুর। খাসপুর পরবর্তীকালে কাচারি অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। আসামের প্রথম ঐতিহাসিক নগরীর নাম কামরূপ। কামরূপ নগরীর অস্তিত্ব ছিল ৩৫০ সাল থেকে ১১৪০ সাল পর্যন্ত। মোট তিনটি রাজবংশ কামরূপ শাসন করেছিল। বর্মণ রাজবংশ, মলেচ্ছা রাজবংশ এবং পাল রাজবংশ। আর ওই সময়কালে কামরূপের রাজধানী ছিল যথাক্রমে প্রাগ্যতিষপুর, হারুপেশ্বরা এবং দুর্জয়া। যা বর্তমানের গৌহাটি, তেজপুর এবং গৌহাটি। যার বিস্তৃতি ছিল গোটা ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকা, উত্তরবঙ্গ, এবং বর্তমান বাংলাদেশের কিছু এলাকা। প্রাচীন বাংলার পাল রাজবংশের লোকজন ছিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। আর কামরূপার পাল রাজবংশের লোকজন ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ওই সময়ে ক্রমাগত হিন্দুদের প্রভাব বিস্তারের ফলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ধীরে ধীরে দক্ষিণে, পূর্বে এবং উত্তর-পূর্বের দিকে সরে যেতে বাধ্য হয়। ছিটমহল সমস্যার শুরু আসলে তখন থেকেই। সীমানা সমস্যা মেটানোর জন্য কোচবিহারের রাজা এবং রংপুরের মহারাজা ১৭১৩ সালে মুঘল সম্রাটের নির্দেশে একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৭১৩ সালের ওই সীমান্ত চুক্তি অনুসারেই পরবর্তীকালে বৃটিশ আমলেও কোচবিহার ও রংপুরের সীমানা সেভাবেই ছিল। ১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টির সময় রংপুর সেই সীমান্ত সমস্যা নিয়েই পূর্ব-পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হল। আর কোচবিহার ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত স্বতন্ত্র বৃটিশ কলোনি হিসেবে থেকে পরে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হল। ১৯৫৮ সালে ছিটমহল সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ মিমাংসায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ হয়েছিল। কিন্তু সমস্যার তেমন কোনো সুরাহা তখন হয়নি। এরপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে রংপুর ও কোচবিহার সীমান্তের সেই পুরানা সমস্যা আবারো শুরু হল। ১৯ শে মার্চ ১৯৭২ সালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ বছর মেয়াদী এক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ভারত-বাংলাদেশ শান্তি চুক্তির পর উভয় দেশের মধ্যে সীমানা সমস্যা সমাধানের জন্য ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে দিল্লীতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাশ হয়। ১৯৭৪ সালের ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি অনুসারে, তখন মোট ১৫টি সমস্যার সমাধান হয়। তখন ২.৬৪ বর্গ মাইল এলাকার বেরুবাড়ি ছিটমহল ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশ পায় তিনবিঘা করিডোরের পাশে ১৭৮ মিটার X ৮৫ মিটার সাইজের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল। এছাড়া ওই চুক্তি অনুসারে মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্ত, ত্রিপুরা-সিলেট সীমান্ত, ভগলপুর রেলওয়ে লাইন, শিবপুর-গৌরাঙ্গালা সীমান্ত, বেলুনিয়া পয়েন্টে মুহুরী নদী সীমান্ত, ত্রিপুরা-নোয়াখালী সীমান্ত, ত্রিপুরা-কুমিল্লা সীমান্ত, ফেনী নদী সীমান্ত, ত্রিপুরা-হিলট্র্যাকস সীমান্ত, বিয়ানিবাজার-করিমগঞ্জ সীমান্ত, হকার খাল, বইকরী খাল, হিলি সীমান্ত, লাঠিটিলা-দুমাবেড়ী সীমান্ত এবং অন্যান্য ছিটমহলের সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কথা ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ভারত বাংলাদেশ শান্তি চুক্তি এবং ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি মুখ থুবড়ে পড়ল। এর দীর্ঘ দিন পর ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানমোহন সিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের সমস্যা জর্জরিত ১৬২ টি ছিটমহলের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি, রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সুন্দরবন সংরক্ষণ, বাঘ সংরক্ষণ, উভয় দেশের উন্নয়ন ফ্রেমওয়ার্ক, বাংলাদেশ থেকে নেপালে ট্রানজিট সুবিধা, খনিজ সম্পদ আহরণ, মৎস্য সম্পদ আহরণ, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম বিনিময়, ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশ ডিজাইন এবং বাংলাদেশের বিজিএমইএ ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি'র মধ্যে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ঢাকায় না আসায় তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি এবং ছিটমহল সংক্রান্ত সীমান্ত সমস্যা সমাধান চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সমস্যা জর্জরিত ১৬২ টি ছিটমহলের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, ছিটমহলগুলোর জনগণের নাগরিকত্ব এবং যাতায়াত সুবিধা নির্ধারণে যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেখানে ৫১ টি ছিটমহল ভারত নেবে, যার আয়তন প্রায় ৭,১১০ একর। আর ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ পাবে, যার আয়তন প্রায় ১৭,১৪৯ একর। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ভারতীয় লোকসভায় ছিটমহল সংক্রান্ত নতুন সীমানা নির্ধারণ বিলটি কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন জোট সরকার লোকসভায় পাশের জন্য উত্থাপন করলেও বিরোধীদল বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বাধার মুখে তা লোকসভায় পাশ হয় নি। ভারতীয় লোকসভায় এই বিলটি পাশের জন্য কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন জোট সরকারের দুই তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। যা কংগ্রেসের ছিল না। ফলে বিলটি আর পাশ হল না। ওদিকে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আবারো ছিটমহল সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নতুন করে গোল পাকিয়ে তখন বলেছিলেন, 'এই চুক্তিটির খসড়া করার সময় কেন্দ্রীয় সরকার একরকম কথা বলেছিলো। কিন্তু চুক্তি হওয়ার পর তা অন্যরকম হয়ে গেছে। জমি পুনর্বন্টন চুক্তির ক্ষেত্রেও আমরা প্রথম থেকেই কেন্দ্রকে বলে আসছি যে, হস্তান্তর হওয়ার কথা আছে যেসব জমির, সেখানকার বাসিন্দাদের সম্মতি নেয়া প্রয়োজন।' এছাড়া মমতা রাজ্যের জমি হারানোর প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘এই চুক্তিতে রাজ্যের ছিটমহলের ১৭ হাজার একর জমি হস্তান্তর হওয়ার কথা। বদলে আমরা পাবো মাত্র ৭ হাজার একর। সুতরাং যারা এইসব এলাকায় থাকেন তাদের সম্মতি না নিয়ে এমন জিনিস কীভাবে আমরা মেনে নিতে পারি?’ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের কাছে তখন তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই আমাদের জমি (ছিটমহল), জল (তিস্তা) বিলিয়ে দিতে এত তাড়া কীসের? কী ধরণের রাজনীতির খেলা খেলতে চাইছে তারা?’ ভারতের ১৫তম লোকসভার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ মে ২০১৪ সালে। নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী'র নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আবার বাংলাদেশেও ২৫ শে অক্টোবর ২০১৩ সালে নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয়। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ আবারো ক্ষমতাসীন হয়। নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের উপর। মোদীর প্রথম কার্যদিবস থেকেই সেই বার্তাটি আমরা দেখেছি। অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুটা নরম হয়েছেন। এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ মিনারে রাত ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পুস্পস্তবক অর্পন করেন। শেষ পর্যন্ত ৫ মে নরেন্দ্র মোদী'র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় মন্ত্রীসভা বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত বিল মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন করেন। পরদিন ৬ মে এই বিল ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। গতকাল ৭ মে এই বিল ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এই বিলে সাক্ষর করার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে এই সুসংবাদটি অবহিত করেন। নরেন্দ্র মোদী আজ চীন ও মাঙ্গোলীয়া সফরে যাচ্ছেন। মোদীর ইচ্ছা আগামী জুন বা জুলাই মাসেই বাংলাদেশ সফর করবেন। আর তখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ ৩০২ বছরের সীমান্ত জটিলতা দূর করার এই ঐতিহাসিক চুক্তি সাক্ষর হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের সীমান্ত জটিলতার অবসান হতে যাচ্ছে, যা উভয় দেশের সম্পর্কে একটি নতুন মাইলফলক রচনা করবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আন্তরিক সদিচ্ছার কারণেই দীর্ঘদিনের এই সীমান্ত জটিলতা শেষপর্যন্ত আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। যে কারণে উভয় দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের জনগণের কাছ থেকে বড় ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। পাশাপাশি ছিটমহলে আটকাপড়া বাসিন্দাদের দীর্ঘদিন পরে যে রাষ্ট্রীয় নাগরিকত্ব পাবার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, এটি শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয় গোটা বিশ্বের আলোচিত সীমান্ত জটিলতার মধ্যে অন্যতম ইস্যু। সুতরাং চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ঐতিহাসিক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি বিশেষভাবে আলোচিত হবে বলেই আমি মনে করি। বাংলাদেশ এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বাংলাদেশ সফর উপলক্ষ্যে উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় আছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্কে যে বৈরিতা শুরু হয়েছিল, ইতোমধ্যে সেটাও দূর হয়েছে। জুন মাসে ভারতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর করবে। তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও একটি টেস্ট খেলবে তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে। একটি টি২০ খেলা পাতানোরও প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যত মজবুত হবে, ততই উভয় দেশের মানুষেরই সবচেয়ে বেশি উপকার হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্ব থেকে ভারত যে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু সেটি তারা আসন্ন ঐতিহাসিক বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত চুক্তি করে আবারো প্রমাণ দিতে যাচ্ছে। আমরা চাই আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব সবসময় এমন মধুর থাকুক। সীমান্তে বিএসএফের গুলি আমরা আর দেখতে চাই না। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নিয়ে বিরোধীদলের বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে, এমন গুজবও আর শুনতে চাই না। ভারতের সংবিধান পরিবর্তন করে সীমান্ত বিল পাস হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিও ভারতেকে অভিনন্দন জানিয়েছে। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলে এবার হয়তো একটি স্থায়ী সম্পর্কের দিকে যাচ্ছে। ............................................. ৮ মে ২০১৫ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬
false
fe
নেতৃত্বের বিবর্তন ও আগামী দিনের রাজনীতি নেতৃত্বের বিবর্তন ও আগামী দিনের রাজনীতি ফকির ইলিয়াস=======================================বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক জীবন প্রক্রিয়ায় একটি স্থবিরতার ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার, যা জনজীবনের জন্য একটি সঙ্কটের সৃষ্টি করছে। এ নিয়ে বিরোধীদল ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। বিরোধীদল বিএনপি বলছে, সরকার নাকি বিচার বিভাগকেও কুক্ষিগত করার ফন্দিফিকির আটছে। এদিকে জয়েশ-ই-মোহাম্মদ নামে একটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম হোতা রেজোয়ানসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে তৎপর ছিল কিংবা আছে।খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে বোমা নিক্ষেপের ঘটনা নতুন তথ্যচিত্রে মোড় নিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকেই ছাত্রদলের জনৈক নেতা প্রদীপ সাহাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার ভাষ্য অনুযায়ী শোভন নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ শোভন বিএনপি মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পুত্র 'পবন'-এর বন্ধু। শোভনের বক্তব্য অনুযায়ী পবনই এ ঘটনার মূল কারিগর। সে নাকি একটা সিনক্রিয়েট করার জন্য এ বোমা হামলার আয়োজন করেছিল! একটি দলের মহাসচিবের পুত্রের এমন আচরণ কি প্রমাণ করে না দলটি মূলত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে একটি সঙ্কট সৃষ্টির জন্যই তৎপর রয়েছে?বিএনপির নেতাপুত্রদের এমন আত্মঘাতী কর্মকান্ড নতুন নয়। এর আগে বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা তানভীর আহমদ সিদ্দীকির পুত্র দলের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। তার এ বক্তব্যের পর তানভীর আহমদ সিদ্দীকিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখন তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। খন্দকার দেলোয়ারের জন্যও এমন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিএনপি যে অসুর শক্তি লালন করে, এ ঘটনা তা প্রমাণ করেছে।সরকার খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা পুনরুজ্জীবিত করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। তা আবার স্থগিত হয়েছে। একটি কথা ওয়ান-ইলেভেনের পর খুব স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে, উদ্দেশ্যমূলক রাজনৈতিক মামলা ধোপে টিকে থাকতে পারে না। বেগম জিয়া এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, তাদের অন্তরীণ করেও তাদের আটকে রাখা যায়নি। বরং মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বাংলাদেশে চাইলেই তারেক-কোকোর আধিপত্যকে পুরোপুরি উপড়ে ফেলা যাবে না। বরং কারণে-অকারণে বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি করা হবে মাত্র। যা ইতোমধ্যেই দেশে শুরু হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, অপরাধের বিচার করা যাবে না। বিচার অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি না দেখিয়ে সুষ্ঠু বিচারের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার দিকেই এগোতে হবে সরকারকে।বাংলাদেশে তারেক-কোকোর ত্রাস-রাজত্বের কোমর ভেঙে দিয়েছে ওয়ান-ইলেভেন। ওয়ান-ইলেভেন এটাই প্রমাণ করেছে রাজনীতিকরা রাজনীতি করবেন; কিন্তু কোন অবৈধ আধিপত্য কিংবা দীর্ঘমেয়াদি দুঃশাসনের পরিকল্পনা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। রাষ্ট্রের মানুষের পক্ষে, রাষ্ট্রসত্তার পক্ষেই সেদিন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা যৌথভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। আমার মতে, এর খুবই প্রয়োজন ছিল। তা না হলে দেশে 'হাওয়া ভবনের' পেশিশক্তি চিরস্থায়ী রূপ নেয়ার গোড়াপত্তন হতো।দুইপ্রায় একই ভাবনায় আমি ভাবিত ছিলাম সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনের শেষকালেও। দীর্ঘ ৯ বছরেরও বেশি সময় এরশাদের শাসনে পিষ্ট মানুষের কথা ভেবে আমার বারবার মনে হতো- এ জগদ্দল পাথরকে বাংলার বুক থেকে কীভাবে সরানো যাবে? কে সরাবে?কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাও সম্ভব করেছিল বাংলাদেশের মানুষ। হাওয়া ভবনের দুঃশাসনের পতন ঘটাতেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। পথ খোলা ছিল দুটি। ব্যাপক রক্তপাত অথবা জোরপূর্বক ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক খারিজ করা। জে. মইন উ আহমেদের নেতৃত্বে দ্বিতীয় কাজটি সাধিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতি মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। ঠিক একই সময়ে চরম দুর্নীতিবাজ কিছু চক্রকে চিহ্নিতকরণ, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টাও করা হয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু অবস্থাটি ঠিকমতো সামাল দিতে পারেননি সে সময়ের নেপথ্য নায়করা। ফলে জাল ছিঁড়ে রাঘববোয়ালরা বেরিয়ে আসতে পেরেছিল খুব সহজে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে একটি বিষয় গভীরভাবে লক্ষণীয়, শেখ হাসিনাপুত্র সজীব আহমেদ ওয়াজেদ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। রংপুর আওয়ামী লীগ তাদের বর্ধিত সভায় তাকে সদস্যপদ দিয়ে দলে স্বাগত জানিয়েছে। এ ঘটনার পর বিএনপিপন্থি কিছু সাংবাদিক এটা বলে বেড়াচ্ছেন, তারেক রহমানের পথ অনুসরণ করে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ রাজনীতিতে এসেছেন। এটা বলার একটা নেপথ্য উদ্দেশ্য আছে আর সে উদ্দেশ্যটি হচ্ছে, রাজনীতিতে তারেক রহমান সিনিয়র (যেহেতু তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন!) তা প্রমাণ করা। মনে রাখা উচিত, প্রকৃত রাজনীতি আর রাজনীতিকের কর্মকান্ড, প্রজ্ঞা, মেধা, মনন দিয়েই বিবেচিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বয়স মাত্র ৪৮ বছর।সজীব ওয়াজেদ বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সেমিনার, সিম্পোজিয়াম সমন্বয় করে বেশ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার আগমনী সংবাদ তাই জাতির জন্য আনন্দের কথা তো বটেই। অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণেই হোক তারেক রহমানকেও ইংল্যান্ডে রেখে নতুনভাবে প্রস্তুত করে যাচ্ছেন তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মাঝে পারিবারিক রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের যে প্রতিযোগিতা তা আপাতত মেনেই অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতি।গোটা বিশ্বেই নতুন ধ্যান-ধারণা চেতনার রাজনীতি প্রসারমান। এগিয়ে যাচ্ছে প্রজন্মের ভাবনাও। তাই রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি খেলার আগে প্রতিপক্ষের আগামী দিনের কৌশল নিয়েও ভেবে দেখা খুবই জরুরি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দল পরিচালনার ভুল থেকে প্রকৃত রাজনীতিকরা শিক্ষা নেন। তারেক রহমান তার ভুল কতটা বুঝতে পেরেছেন, তা সময়েই প্রমাণিত হবে। তবে তার অনুসারীরা তাকে যে দেবত্বের আসনে বসাতে চাইছেন তাতে অনুমান করা খুবই সহজ তারা তাদের অতীত ঘৃণ্য কর্মগুলো সম্পর্কে মোটেই অনুতপ্ত নন।রাজনীতিতে নেতৃত্বের বিবর্তন প্রয়োজন। কারণ তা না হলে জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। তবে মনে রাখতে হবে দমন-পীড়ন কিংবা মিথ্যা অজুহাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার নীতি ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে এবং জনগণ সব চালাকি ধরতে পারে।এটা খুবই পরিতাপের কথা বাংলাদেশে সব শাসকগোষ্ঠীই প্রতিপক্ষকে দমাতে যতটা ব্যস্ত, জনগণের সমস্যা সমাধানে ততটা মনোযোগী নয়। প্রায় চার দশকের সমান বয়সী বাংলাদেশে তা মোটেই কাম্য নয়। আজ ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে সামরিক শাসকের শাসনকে অবৈধ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় এসে আবার যে পরিবর্তন করবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?এদেশের মানুষকে প্রকৃত শিক্ষিত করে গড়ে তোলার কাজটিকেই প্রধানত গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ প্রকৃত শিক্ষিত মানুষের ভোট কেউ ছিনতাই করতে পারে না, সে উদাহরণ আমরা সুসভ্য, উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে প্রতি বছরই দেখছি। মানুষকে অশিক্ষিত করে রাখার যে বনেদি পরিকল্পনা, তার ভিতে আঘাত করতে এ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতেই হবে। নিউইয়র্ক, ৩ মার্চ ২০১০ --------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৫ মার্চ ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
false
fe
সভ্যতার কাছে রাজনীতির দায় সভ্যতার কাছে রাজনীতির দায়ফকির ইলিয়াস =====================================যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠছে প্রচারাভিযান। ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান দুপক্ষই মাঠে নেমেছেন মাথা বেঁধে। রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইনের বয়স ৭১ বছর। আর ডেমোক্রেটিক প্রার্থী বারাক ওবামার বয়স ৪৬ বছর। বয়সও নির্বাচনে একটা ফ্যাক্টর বটে। ডেমোক্রেটরা বলছেন, তরুণ নেতৃত্বই নিয়ে যেতে পারে আমেরিকাকে আরো সামনে। আর রিপাবলিকানরা বলছেন, তাদের প্রার্থী বেশি অভিজ্ঞ। রাজনীতিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা থেকেই যায়। কিন্তু কোনো বক্তব্য কিংবা প্রচারণা যদি জাতিসত্তার প্রতি এক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়?জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ট্যাক্সাস অঙ্গরাজ্যে একটি কনভেনশনের আয়োজন করেছিল রিপাবলিকান পার্টি। সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রচার স্টল দিয়েছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। একটি প্রচারণা প্যাভেলিয়ান থেকে একটি কোটপিন বিতরণ ও বিক্রয় করা হচ্ছিল। সেই কোটপিনে যা লিখা ছিল তার বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় এই, ‘যদি বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যান, তাহলেও কি আমরা এই ভবনটিকে হোয়াইট হাউস বলবো’?কী মারাত্মক কথা! কী বুঝাতে চাইলেন প্রচারক? এই সংবাদটি মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার পরপরই হামলে পড়ে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। প্রশাসন চালায় ঝটিকা অভিযান এই উস্কানির হেতু কী? সভ্যতা কি তাহলে জিম্মি হয়ে পড়ছে রাজনীতির কাছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রচার স্টলটি। কারা এর সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে দেখতে তৎপর হয়ে ওঠে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা। রিপাবলিকান পার্টির সব সিনিয়র নেতারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কীভাবে ঐ স্টলটি প্রচারের বরাদ্দ পেয়েছিল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রিপাবলিকান পার্টি বলেছে, এ ধরনের কোনো স্টল যাতে কোনো অঙ্গরাজ্যে প্রচারের অনুমতি না পায় তা তারা নিশ্চিত করবেন। বিষয়টি এখন গড়াতে পারে আদালত পর্যন্তও। বিশিষ্ট আইনজ্ঞ প্রফেসর জেমস চেনবিম বলেছেন, এ ধরনের কোনো মানসিকতা বর্তমান সভ্য বিশ্ব দেখতে চায় না। ইট ইজ ভেরি শেমফুল ফর আমেরিকানস।রাজনীতিতে সুসভ্য মানসিকতা প্রতিষ্ঠার চর্চাটাই হওয়া উচিত প্রধান কাজ। অমানবিক, বর্ণবৈষম্যমূলক এবং ধর্মীয় উস্কানিমূলক কোনো আচরণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ আমরা তো একটি সভ্য বিশ্বের বাসিন্দা বলেই নিজেদের পরিচয় দিচ্ছি।এই লেখাটি যখন লিখছি, তখনই একটি বাংলা চ্যানেলের সংবাদে দেখলাম, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের মেরুদণ্ডের দুটি হাড় ভাঙা বলে ধরা পড়েছে। তার কোমরের জয়েন্টেও হাড়ে ফ্রেকচার পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন দ্রুত তারেক রহমানকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা না করলে অবস্থা অবনতির দিকে যেতে পারে।বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো প্রমাণ করার দায়দায়িত্বও সরকারের। তারেক যখন গ্রেপ্তার হন, তখন তার শারীরিক অবস্থা এমনটা ছিল না। তাহলে এখন এ অবস্থা হলো কেন? একজন বন্দীর মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙলো কীভাবে? সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা কী?আরাফাত রহমান কোকোর ব্যাপারে চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি বেশ কিছু ‘ক্রনিক ডিজিজ’-এ ভুগছিলেন। তারেকের তো এমন কিছু ছিল না।একটি কথা মনে রাখতে হবে, কেউ বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে রাষ্ট্র তাকে সাজা দেবে। এর বেশি কিছু করার অধিকার মানব সভ্যতা ও ন্যায়বিচারের ইতিহাস কাউকে দেয়নি। অন্যায়ভাবে কাউকে ফাঁসাবার চেষ্টা করা হলে, তার বিচারও তো ইতিহাস করবে একদিন।জুন মাসে হঠাৎ করে অনেক পরিবর্তনই ঘটে গেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। দুজন উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও মে. জে. (অব.) গোলাম কাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এই আশাবাদকে জনগণের ধ্র“বকল্যাণ বলে আমরা ধরে নিতে চাই। কারণ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মতো উপদেষ্টারা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিলেন। আমি মনে করি তা এখন অনেকটা কেটে যাচ্ছে।সরকার সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শেখ হাসিনাও দলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনমুখী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী হবে, কিংবা হতে যাচ্ছে , সে বিষয়ে মন্তব্য করার সময় বোধহয় এখনো আসেনি তবে বিএনপি-আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে অর্থবহ নির্বাচন হবে না তা সবপক্ষই অনুধাবন করতে পারছেন তিলে তিলে।বিভিন্ন খবর বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, তারেক ও কোকোকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাবার পরই খালেদা জিয়া নিজে চিকিৎসা নিতে বিদেশ যেতেও পারেন। যদিও তিনি বারবার বলেছেন, তার চিকিৎসার জন্য দক্ষ ডাক্তার ও ভালো ব্যবস্থা দেশে আছে।শেখ হাসিনার দুমাসের জামিনের পরবর্তী অবস্থা, তারেক, কোকো ও বেগম জিয়ার মুক্তি এবং অন্যান্য রাজবন্দীদের বিষয়ে সরব দৃষ্টিভঙ্গি বলে দেবে আগামী নির্বাচনের প্রাক-পরিস্থিতি। সিটি ও পৌর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে আরো সুদৃঢ় হয়ে যাবে বর্তমান সরকারের হাত। যে কথাটি সর্বাগ্রে মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে সভ্যতা মানবতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই কিন্তু রাজনীতি। ক্ষমতার দাম্ভিকতা কারো মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার সনদ দেয় না। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে জনগণের স্বপ্নপূরণ সম্ভব নাও হতে পারে।নিউইয়র্ক ২২ জুন ২০০৮---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ। ২৫ জুন ২০০৮ বুধবার প্রকাশিত
false
rg
জীবনের প্রথম ভোটের অভিজ্ঞতা! ভোট দাও ফ্রি নাস্তা খাও!!! বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জেনারেল জিয়া নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। তারপর ১৯ দফা'র নামে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেই ১৯ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থণ আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য একটি কথাকথিত 'হ্যা' বা 'না' ভোটের আয়োজন করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের ৩০ মে প্রথম বাংলাদেশে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। লোক দেখানো সেই গণভোটে জেনারেল জিয়া দাবী করেছিলেন যে, তিনি যে কর্মসূচি দিয়েছেন, তার সমর্থণ যাচাই করার জন্য যে গণভোট হল, সেখানে অন্তত ৮৮.৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। আর জেনারেল জিয়ার কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন অন্তত কাস্টিং ভোটের ৯৮.৯ শতাংশ ভোটার। বাংলাদেশে ভোট নিয়ে মিথ্যাচারের সেই শুরু।এরপর ১৯৮৫ সালের ২১ শে মার্চ জেনারেল এরশাদ তার পূর্বসুরীর পদ অনুসরণ করে আরেকটি গণভোট দিয়েছিলেন। সেটি বাংলাদেশের তৃতীয় গণভোট। সেখানে জেনারেল এরশাদের একটি ছবি দিয়ে সেই গণভোটে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি প্রেসিডেন্ট এরশাদকে সমর্থণ করেন? সেই দ্বিতীয় গণভোটে এরশাদের পক্ষে ভোট দেখানো হয়েছিল ৩,২৫,৩৯,২৬৪টি। আর 'না' ভোট দেখানো হয়েছিল ১২,৯০,২১৭টি। বাংলাদেশে তৃতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। সেই গণভোটের বিষয় ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার কাঠামো প্রবর্তণ। সেই গণভোটে ভোট দাবী করা হয়েছিল ৮৪.৩৮ শতাংশ। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আবার প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার প্রবর্তিত হয়। গণভোট দেবার জন্য কি মানুষ ভোটকেন্দ্র যায়? নাকি নির্বাচন কমিশন একটা ফলাফল বানিয়ে সেটা ঘোষণা করে? বাংলাদেশের তিনটি গণভোটের সকল ইতিহাস আপনারা জানেন। আমার একটি গণভোটে ভোট দেবার অভিজ্ঞতা আছে। সেটি এখানে বলবো। ১৯৮৫ সালের ২১ শে মার্চ। জেনারেল এরশাদের গণভোট। আমাদের প্রাইমারি স্কুল হল ভোট কেন্দ্র। ভোটের দিন হওয়ায় সেদিন আমাদের স্কুলও বন্ধ। তো আমরা কয়েকজন আমাদের প্রাইমারি স্কুলের একটা ফাঁকা রুমে বসে দাবা খেলছি। ওপাশে কয়েকজন প্রাইমারি স্কুলের স্যাররা ভোটের আয়োজন করেছেন। কোনো ভোটারের উপস্থিতি নাই। আমাদের ডেকে বললেন, তোমরা কিছু ভোট দাও। তোমাদের জন্য নাস্তা আছে। তো আমরা কেউ সিল মারছি। কেউ ব্যালট পেপার ভাঁজ করছি। কেউ ব্যালট পেপার বাক্সে ঢুকাচ্ছি। সেকেন্দার মাস্টার বললেন, ২০/৩০ টা হ্যা সিল মারার ফাঁকে ফাঁকে ২/১টা না মারবা। আমরা সেমত মারলাম। দুপুরের আগেই মোটামুটি ভোট শেষ। এখন চারটা বাজলে ওই বাক্স খুলে ভোট গণণা শুরু হবে। ওটাই জীবনে আমার প্রথম ভোট দেবার অভিজ্ঞতা। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ভোটার বিহীন ভোটকেন্দ্রে ভোট কাস্টের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ। খুব ভালো ভোট। তো কে যেনো আমাদের হেডস্যারের বাবাকে বলেছিল যে, আজ ভোট। হেডস্যারের বাবাকে আমরা ডাকি দাদু। তো দাদু দুপুরে লান্স করে ভোটকেন্দ্রে আসলেন। ভোট দেবেন। একজন আনসারকে জিজ্ঞেস করলেন, ভোট কোন রুমে? আনসার দেখিয়ে দিলেন মাস্টারদের। দাদু স্কুল বারান্দায় মাস্টারদের আড্ডায় গিয়ে বললেন, ভোট দিতে আইছি। এক মাস্টার দাদু'র দিকে না তাকিয়ে কইলেন, ভোট শেষ। জবাবে দাদু কইলেন, এখনো তো চারটা বাজে না। ভোট কেমনে শেষ হয়? ওই মাস্টার কইলেন, আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। অমনি দাদু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। সেকেন্দার মাস্টারকে দাদু চিনতেন। দাদু কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ওই সেকেন্দার, আমি সারাদিন কোলায় (মাঠে) ছিলাম। মোর ভোট ক্যাঠায় দিল, এ্যা? মোরে চেনো না তুমি? মুই মনীন্দ্র'র বাবা? ওই সেকেন্দার, কি কতা কও না ক্যান?সেকেন্দার মাস্টার ভারী সমস্যায় পড়লেন। নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কইলেন, আসেন, দাদু, এই যে ব্যালট। নেন, ওই কোনায় ভুতের মধ্যে গিয়া ভোট দেন। জবাবে দাদু কইলো. ওই সেকেন্দার, একটু আগে তোগো মাস্টার কইলো আমার ভোট শেষ? এখন আবার কিসের ভোট? দাদু ভোট না দিয়েই ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে বাড়ি চলে গেলেন। আর মাস্টাররা আমাদের নিয়ে ভোটের বাক্স খুলে গণণা করে ফলাফল ঘোষণা করলেন, হ্যা ভোট ১৭৭৯টি আর না ভোট ১০৭টি। আহারে ভোট!!! তোরা আলু খা।
false
rg
এক ম্যাচ হাতে রেখেই ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়!!! মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ প্রথমে ব্যাট করতে নামা ভারতকে মাত্র ২০০ রানে অলআউট করেছিল বাংলাদেশ। ৬ উইকেট নিয়ে আবার প্রায় একাই ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছেন তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। বৃষ্টির কারণে ৪৭ ওভারে নেমে এসেছিল ম্যাচের আকার। ডি/এল পদ্ধতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্যও নির্ধারিত হয়েছিল ২০০ রান। ৫৪ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ এখন আরেকটি স্পেশাল বাংলা ওয়াশের অপেক্ষায়। আগামী ২৪ জুন একই মাঠে সেই নাটকের অবতারণা হবার আগ পর্যন্ত চলুন আজকের ম্যাচের বিশেষ কি-পয়েন্ট গুলো একটু বাছাই করা যাক। মাশরাফি'র সঙ্গে টস করতে নামা ভারতীয় ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি কী ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ধাতস্থ হতে পেরেছিলেন? তরুণ উদীয়মান পেসার মুস্তাফিজের প্রথম বলেই রোহিত পরাস্ত। কিন্তু প্রথম বলে জীবন পেলেও দ্বিতীয় বলে আর টেকেনি রোহিতের চেষ্টা। ম্যাচের দ্বিতীয় বল থেকেই ভারতের জন্য চাপ তৈরি করল বাংলাদেশ। ভারতের রানের চাকা সচল হবার আগেই একদিনের সবচেয়ে লম্বা ইনিংস খেলার রেকর্ড যার দখলে, সেই ২৬৪ রান করা রোহিত শর্মা শূন্য রানে মুস্তাফিজের বলে সাব্বিরকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন। ভারত ততক্ষণে বুঝতে পেরেছে আজও টাইগার্সরা ছেড়ে কথা বলবে না। শেখর ধাওয়ানের সঙ্গী হয়ে ভারতীয় ইনিংস গড়ার দায়িত্ব নিয়ে মাঠে এলেন বিরাট কোহলি। যাকে এই সময়ের ভারতীয় দলের টেন্ডুলকার বলা হয়। ধীর শান্ত ভাবে কোহলি কিন্তু ধাওয়ানকে নিয়ে শুরুও করেছিলেন। একটু খেয়াল করুন, কোহলি দলীয় ৭৪ রানের মাথায় ২৭ বলে ২৩ রান করার আগ পর্যন্ত ৩টা চার ও ১টি ছক্কা মেরে ভারতীয় সেই প্রত্যাশষাকে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলছিলেন। ব্যাপারটা শতভাগ বুঝতে পেরে টাইগার্স ক্যাপ্টেন মাশরাফি নিয়মিত বোলারদের সরিয়ে নিয়ে আসেন পার্ট-টাইম বোলার নাসিরকে। নাসির উইকেটের চরিত্র বুঝতেই তিন ওভার সময় নিলেন। তারপরেই বিরাট কোহলিকে সেই সারপ্রাইজ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ আউট করলেন। বিরাট কোহলি ব্যাপারটা মন থেকে মানতে পারেন নি। রাগে ফেটে পড়ে প‌্যাভিলনের পথে যেতে যেতে নাসিরের উল্লাস নিয়ে কিছু একটা কটুক্তি করেছিলেন ওখানে ভদ্রলোক কোহলি। মাশরাফি কেন সেই কথা হজম করবেন? পাল্টা মাশরাফিও জানিয়ে দিলেন, খাঁড়া, আজই প‌্যাকেট কইরা দিতেছি। এরপর দেব ধবল ধোলাই বাংলা-ওয়াশ। কোহলি'র হঠাৎ আউটে ভারতীয় শিবিরে যেন আতংক ভর করল। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট সেই আতংক সামাল দিলে ক্রিজে পাঠালেন ক্যাপ্টেন এমএস ধোনিকে। উদ্দেশ্য খুব পরিস্কার। দলের ভরাডবি সামাল দেওয়া। পাশাপাশি ধোনি আজ সেঞ্চুরি টাইপ কিছু একটা করে প্রথম ওয়ানডে'র একটা উচিত শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন টাইগার্সদের। কিন্তু পরবর্তী ৩৫ রানের মাথায় দলীয় ১০৯ রানের সময় শেখর ধাওয়ান সেই পার্ট-টাইমার নাসিরের কাছে পরাস্ত হন।এরপর ধোনি ঠাণ্ডা মাথায় আম্বিকা রাইডুকে নিয়ে শুরু করার আগেই আবার সেই মুস্তাফিজের আঘাত। এবার রাইডুকে নাসিরের ক্যাচে পরিনত করলেন মুস্তাফিজ। ভারতের স্কোর মুহূর্তে ২ উইকেটে ৭৪ থেকে ৪ উইকেটে ১১০-এ পরিনত হয়। ক্রিজে আসলেন সুরেশ রায়ানা। ভারতীয় দলের অপর নির্ভরতার প্রতীক। ধোনিকে নিয়ে শুরু করলেন রানের চাকা সচলের কাজ। এবার ধোনি-রায়ানা মিলে মূল্যবান ৫৩টি রান যোগ করলেন। আবারো মুস্তাফিজের শর্ট লেন্থের ইয়র্কর ডেলিভারিতে রায়ানা পুরোপুরি পরাস্থ হন। রায়ানার ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের বিশস্ত হাতে। ভারত তখন ৫ উইকেটে ১৬৩ রানে। ক্রিজে আসলেন রবীন্দ্র জাদেজা।ক্রিজে তখনো ভারতীয় ক্যাপ্টেন ধোনি মাথা উচু করে কিছু একটা করার প্রত্যয় নিয়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু আজ যে মুস্তাফিজ ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাবেন, তাকি ধোনি একবারও আন্দাজ করতে পেরেছিলেন? এবার মুস্তাফিজের বলে ধোনি সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য হলেন। ভারতের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ১৭৪ রান। ক্রিজে আসলেন অক্ষর প‌্যাটেল। মুস্তাফিজ এবার সেই দুর্দান্ত ঘুর্নিবলে প‌্যাটেলকে সরাসরি বোল্ড করে জানান দিলেন, তিনি কোন জাতের ফাস্ট বোলার। ভারতের স্কোর মুহূর্তে ৭ উইকেট ১৭৪ রান। ক্রিজে আসলেন রবীচন্দন অশ্বিন। অশ্বিন এসে বহু কষ্টে মুস্তাফিজের হেটট্রিক প্রতিরোধ করলেন। এরপর রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গী করে অশ্বিন একটা ভালো স্কোর করার স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন ভারতকে। কিন্তু টাইগার্স দলে যে একজন মুস্তাফিজ আছে, সেকথা ভারতের ভুলে গেলে তো চলবে না। দলের রান আরো ১০ না উঠতেই মুস্তাফিজ এবার অশ্বিনকে কট বিহাইন্ড উইকেট লিটন দাসের ক্যাচ বানালেন। ভারতীয় স্কোর তখন ৮ উইকেটে ১৮৪ রান। ক্রিজে আসলেন ভূবনেশ্বর কুমার। মূলত তখন গোটা ভারতীয় টিম ও ভারতের দেড়শো কোটি জনগণ জাদেজার ব্যাট থেকে অন্তত সম্মানজনক রানের ঘরে পৌঁছার একটা স্বপ্ন লালন করতে শুরু করল। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি এসে খেলা বন্ধ করে দেয়। মুস্তাফিজ ততক্ষণে ভারতীয় পঞ্চভূতকে আউট করে মাঠে রীতিমত আগুন ছড়িয়ে দিয়েছেন। মুস্তাফিজ দশম ওভারের শেষ বলটি করার আগেই বৃষ্টি খেলায় বাগড়া বাঁধাল। ৪৩.৫ ওভারে ভারতের স্কোর তখন ৮ উইকেটে ১৯৬ রান। বৃষ্টির পর মুস্তাফিজ ব্যক্তিগত দশম ওভারের শেষ বলটি করতে আসলেন। স্ট্রাইকে তখন জাদেজা। কিন্তু জাদেজাকে সরাসরি ইয়র্হরে বোল্ড করে মুস্তাফিজ ঘোষণা দিলেন, ম্যাচ সেরার পুরস্কারটিই আমার চাই। মুস্তাফিজের বোলিং বিশ্লেষণ, ১০ ওভার ৪৩ রান ৬ উইকেট। ভারতের স্কোর তখন ৯ উইকেটে ১৯৬ রান। এবার নতুন আশংকা জাগল, ভারত কী দুইশো রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারবে? শেষ পর্যন্ত শেষ দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান ব্যাটে বলে না হলেও জানপ্রান বাজি রেখে দৌঁড়ে ভারতের স্কোরকে ২০০তে নিয়ে ঠেকালেন। ওটা ছিল ৪৫ তম ওভারের খেলা। বল করছিলেন রুবেল হোসেন। রুবেল শেষ বলে কুমারকে লিটনের কাছে কট বিহাইন্ড হতে বাধ্য করলেন। ৪৫ ওভারে ২০০ রানে ভারত ন্যাক্কার জনক ভাবে অলআউট। বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করলেন ভাতিজা তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ভারতীয় বোলাররা তামিমকে শুরুতেই আউট করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন। আবারো বৃষ্টির বাগড়া। এবার আইসিসি'র ডার্কওয়াথ লুইস দুই ভদ্রলোকের ভূতুরে ডিএল থিউরিতে ম্যাচে কার্টেল পড়ল। বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য ছিল নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২০১ রানের। কিন্তু বৃষ্টি আসায় ডিএল মেথডে নতুন ছক দাঁড়ালো ৪৭ ওভারে বাংলাদেশকে করতে হবে ২০০ রান। ১টি রানের বিনিময়ে মূল্যবান তিনটি স্লগ ওভার কেটে নিল ডি-এল ভূত। সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ধাওয়াল কূলকার্নি ভারতে প্রথম সাফল্য এনে দিলেন। তামিম ২১ বলে ১৩ রান করে ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে প‌্যাভিলনে ফিরলেন। বাংলাদেশের স্কোর হয়ে গেল ১ উইকেটে ৩৪ রান। এবার সৌম্য'র সঙ্গে যোগ দিলেন গত ম্যাচেই অভিষেক হওয়া লিটন দাস। এই জুটি মূল্যবান ৫২টি রান যোগ করে বাংলাদেশকে বিপদের ঝুঁকি থেকে রেহাই দিলেন। সপ্তদশ ওভারের চতুর্থ বলে অশ্বিন ঘূর্ণি বলের জাদুতে সৌম্যকে পরাস্ত করেন। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলেন সৌম্য সরকার। ক্রিজ আসলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে নিখুত ক্ল্যাসিকাল ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। ২০তম ওভারের অক্ষর প‌্যাটেলের দ্বিতীয় বলে লিটন দাস পরাস্ত হলেন। ধোনি ক্যাচটি ধরতে একদম ভুল করেন নি। বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৯৮ রান। মুশফিকের সঙ্গে উইকেটে যোগ দিলেন শাকিব আল হাসান। শাকিব এসেই মুশফিকের সঙ্গে পরামর্শ করেন নিলেন, অ্যাটাকিং মুডেই থাকতে হবে। আমরা ঠেকানোর চেষ্টা করলে উইকেট হারাতে হবে। শুরু হল শাকিব-মুশফিকের চার ছয়ের পাল্লা। মুশফিক ১ ছক্কা ও ৩টি চার মেরে পৌঁছালেন ৩১ রানে। দ্বিতীয় রানটি না নিলেও বাংলাদেশের তেমন কোনো লোকসান হতো না। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ সেই দ্বিতীয় রানটি নিতে গিয়েই মুশফিক রোহিত শর্মার ধোনিকে ছুড়ে দেওয়া বলে দুঃখজনক রানআউট হলেন। ক্রিজে আসলেন সাব্বির রহমান। বাংলাদেশের স্কোর তখন ১৫২। মুশফিক-শাকিব জুটি মোট ৫৪ রান তুলতে সক্ষম হয়। ততক্ষণে শুধু শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে নয়, সারা দেশেই উৎসব শুরু হয়ে গেছে। কারণ, বাংলাদেশের তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন ১০৭ বলে মাত্র ৪৮ রানের। হাতে তখনো ৬ উইকেট। শেষ পর্যন্ত শাকিব-সাব্বির জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকে সেই ৪৮ রান তুলতে সময় নিলেন আর মাত্র ৮ ওভার ৫ বল। ৩৮ ওভারেই বাংলাদেশ ২০০ রানের জয়ের লক্ষ্য স্পর্শ করল। ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় নিয়ে বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-০ তে এগিয়ে গেল। বাংলাদেশের শাকিব ৫১ রানে ও সাব্বির ২২ রানে অপরাজিত রইলেন। বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারিয়ে ভারতীয় শিবিরে তখন এই ভরা জ্যোৎস্নায়ও ঘোর অমাবশ্যা। আষাঢ়ের মেঘের আড়ালে আজ যে সুন্দর জ্যোৎস্না খেলা করছে। আজকের এই দৃষ্টিনন্দন আকাশ, ভারী সুন্দর মেঘময় জ্যোৎস্না, আজকের এই শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সুরেলা বাতাস, কিছুতেই কী আর ভারতীয় শিবিরের জন্য কোনো শান্তনা বয়ে আনছে। ওপাশে তখন ধোনি বাহিনীর সামনেই টাইগার্স বাহিনী মাশরাফির নেতৃত্বে সিরিজ জয়ের উল্লাসে মিরপুরের আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে গোটা শেরে বাংলা স্টেডিয়ামকেই এক টুকরা বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলেছে। আহা এমন মধুর জয়। বিশ্বকাপের সেই বিতর্কিত কোয়ার্টার ফাইনাল যে ভারতীদের কাছেই হার মানতে হয়েছিল, শ্রীনিবাসন কেলেংকারীর ফলে। তাই আজকের এই সিরিজ জয়ের উৎসব তো একটু টালমাতাল-ই হবে। নো ডাউড, আজকের ম্যাচেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশের ড্যান্সিং রাইজিং হিরো মুস্তাফিজুর রহমান। মাত্র দুইটি একদিনের খেলায় যার উইকেট সংখ্যা ৫+৬=১১টি। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নজির আগে কে দেখেছে? এর আগে জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে ডেব্যু হওয়া জিম্বাবুয়ান ফাস্ট বোলার ব্রায়ান ভিট্টরি পর পর দুই ম্যাচে ৫+৫=১০ উইকেট নিয়েছিলেন। সেখানে মুস্তাফিজ নিলেন ৫+৬=১১ উইকেট। ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার নেবার সময় মুস্কাফিজ ঘোষণা করলেন, আমি বরং আগামী ২৪ তারিখের ম্যাচে আরো ভালো করার ইচ্ছা রাখি। সাবাস মুস্তাফিজ। তোমার জন্য বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে ৩২ কোটি চুম্মা। এই তো বাঘের মত কথা। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভারতীয় ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি বাংলাদেশের খেলার প্রশংসা করলেন। বোলারদের দোষ না দিয়ে তিনি ব্যাটসম্যানদের দুষলেন। বললেন, স্কোর বোর্ডে এমন উজ্জিবীত বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে ২০০ রান নিয়ে লড়াই করার মত শক্তি আমাদের কোথায়? বরং আমরা বাংলাদেশ সফর বেশ উদযাপন করছি। আশা করি, তৃতীয় ম্যাচে আমাদের ছেলেরা আর হতাশ করবে না। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে টাইগার্স ক্যাপ্টেন মাশরাফি বললেন, আমরা প্রতিটি উইকেট পাবার সঙ্গে সঙ্গে এক ধাপ করে জয়ের দিকে আগাচ্ছিলাম। আমরা আজকের জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি খেলা নিশ্চিত করেছি। একদিনের র্যাংকিংয়ে আমরা সাত নম্বরে উঠে গেছি। মুস্তাফিজ নিশ্চয়ই অনেক গভীর জলের মাছ। ওর বোলিং যে কত স্মার্ট তা চোখে না দেখলে বোঝা যায় না। সামনে আমাদের আরো অনেক সিরিজ খেলার সময়। দক্ষিণ আফ্রিকা আসছে বাংলাদেশ সফরে। আশা করি, আমরা এই ফর্ম ধরে রাখতে পারব। তবে আজকের ম্যাচে বিরাট কোহলি আউট হবার পর বাংলাদেশী ফিল্ডারদের দিকে তিনি যেভাবে তাকালেন, মনে মনে কি কি বিড়বিড় করলেন, তা কিন্তু গোটা বিশ্ববাসী দেখেছে। এজন্য আইসিসি এখন বিরাট কোহলি'র জন্য কী পুরস্কার ঘোষণা করে দেখা যাক। তামিমকে আউট করার পর একই কাজ করেছে ধাওয়াল কূলকার্নি। তামিমকে খুব বাজে একটা কমেন্ট করেছে কূলকার্নি। তামিম অবশ্য ধৈর্য্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে মুখবুজে প‌্যাভিলিয়নে গেছেন। কারণ আগের ম্যাচে কোনো অন্যায় না করেও মুস্তাফিজ ধোনির সাথে যৌথ দোষী হয়ে ম্যাচ ফি'র ৫০ ভাগ হারিয়েছেন। সো, জাস্ট কুল। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ এখন ভারতকে একটি ধবল ধোলাই বাংলা ওয়াশের স্বপ্ন দেখছে। আগামী ২৪ জুন একই মাঠে সেই বাংলা ওয়াশ দেখার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে থাকব। মুস্তাফিজ সেদিন কী করেন, তা সবাই দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ, মুস্তাফিজ ঘোষণা দিয়েছে, তৃতীয় ম্যাচে আরো ভালো বল করবেন। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট। ..................................২২ জুন ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৩৪
false
ij
একটি আরবি গল্পের অনুবাদ গল্পের নাম: কিভাবে আমি এক রাতের জন্য পিশাচ হয়ে ছিলাম লেখক:ইব্রাহিম আবদ আল -কাদির আল-মাজিনি বাংলা অনুবাদ করেছেন: সুমন সোহরাব ইব্রাহিম‘ আবদ আল-কাদির আল-মাজিনি(১৮৯০-১৯৪৯) মিসরিয় সমালোচক, কল্পকাহিনী লেখক, কবি, প্রবন্ধকার ইব্রাহিম ‘আবদ আল-কাদির আল-মাজিনি ছিলেন বিখ্যাত দিওয়ান দলের এক জন সদস্য। তার সাথের অন্যান্যরা হলেন ‘আব্বাস এম. আল-‘কুয়াদ এবং ‘আবদ আল-রাহমান শুকুরি। অন্য আরো অনেক নামকরা সাহিত্যিকের মত তিনিও বিভিন্ন ধারার সাহিত্য রচনা করেছেন। প্রচন্ড রোমান্টিক ধরনের কাব্য রচনার মধ্যদিয়ে তার সাহিত্য জগতে তার আতœপ্রকাশ ঘটে। ১৯২০ এর দিকে তিনি গদ্য রচনার দিকে ঝুঁকে পরেন। রসাত্মক আঙ্গিক এবং পারিপার্শি¦ক অবস্থা অনুসারে মানব চরিত্র চিত্রনের মুন্সিয়ানার কারনে তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তার কল্প কাহিনী গুলোর মধ্যে পুরোমাত্রায় আত্মচরিতের ধাচে রচিত ইব্রাহিম আল-খতিব ১৯৩০ এর দিকে পুরো আরবে জুড়ে তাকে খ্যাতি এনে দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে মাগদি ওহাবা ইব্রাহিম দ্যা রাইটার নামে এর ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশ করেন। তার অন্যান্য কল্পকাহিনী গুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যাজিক বক্স অব দ্যা ওয়াল্ড(১৯২৯), কবওয়েবস(১৯৩৫), থার্টি ম্যান এন্ড এ ওমেন(১৯৪৩), এবং ইব্রাহিম দ্যা রাইটার এর পরের অংশ ইব্রাহিমওও (১৯৪৩) , এটি অশিংক আত্মচরিতের ধাচে রচিত। কিভাবে আমি এক রাতের জন্য পিশাচ হয়ে ছিলাম যখন আমি ছোট ছিলাম, বয়স ষোল কি সতের, তখন থেকে আমি হাতের কাছে পাওয়া কম বেশী সব সুযোগই কাজে লাগাবার আপ্রান চেষ্টা করতাম। সেই সময় আমি কেবল যে সময়টা পার করছিলাম তার কথাই মাথায় রাখতাম। আমি নিজেকে বিলিয়ে দেবার জন্য আকুল ছিলাম। পরিপূর্ণতা পাওয়ার জন্য আমি ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড এক যাতনায় ভুগছিলাম। সুরা পান আর গানটান শুনে সারাটা রাত বন্ধুদের সাথে কাটাবার পর একদিন অবাক করা এক গ্রীষ্মের রাতে বাড়ি ফিরি। ভোর হয় হয় অবস্থা। এমন সময় ঘরের দরজার কাছে চলে আসা মাত্র মনে পরে, নব্বই বছর বয়স্কা দাদি ছাড়া এখন বাড়িতে আর কেউই নেই। এ অবস্থায় ভেতরে ঢোকার চাবিটা পর্যন্ত নেই আমার কাছে। আপন মনে ভাবতে ভাবতে নিজেকে আমি নিজেই প্রশ্ন করলাম “এখন কি দাদিকে আমার বিরক্ত করা ঠিক হবে? হঠাৎ করে পড়িমড়ি করে উঠতে গিয়ে সে হয়তো বড় ধরনের কোন আঘাত পেতে পারে। দেয়ালে ধাক্কা খেয়েও পড়ে যেতে পারে। বরং তাকে খানিকটা বিশ্রাম দিয়ে মা আর ভাইয়ের কাছেইবা যাইনা কেন। আর যাই হোক আকাশটা আজ খুব পরিষ্কার। হেটে হেটে নিজেকে একটু তরতাজাও করে নেয়া যাবে। এত সব সাত পাঁচ ভেবে আমি দরজা ছেড়ে ঘুরে দাড়ালাম, বাড়ি ছেড়ে চলে আসলাম। তখনো ইমাম সাফি মসজিদে যাবার পথটি বাধানো হয়নি। রাস্তায় তখন কোন ট্রাম বা বাতি পর্যন্ত ছিলনা। সব রাস্তার অবস্থা একই রকমের ছিল। মূল সড়ক ছেড়ে তাই আমি সাইদা নাফিসা মসজিদের পাসদিয়ে সোজা সাপ্টা পথ বেছে নিলাম। পথটি একটা কবর স্থানের মাঝ দিয়ে গিয়ে অন্য প্রান্ত আবার বড় রাস্তার সাথে মিশেছে। যেতে যেতে প্রায়ই আমি এটা সেটার সাথে ধাক্কা খেয়ে ব্যাথা পাচ্ছিলাম। চারপাসে ছড়ানো ছিটানো অসংখ্য কবরের ভির ছিল বলে এমন হচ্ছিলো। এক সময় অন্ধকারে পথ খুজে নেয়াই আমার জন্য কষ্টকর হয়ে দাড়ালো। তার পরও আমি এসব নিয়ে কিছু ভাবছিলাম না। নিজের দুটি পায়ের ওপর অঘাত বিশ্বাসে আমি এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতি দিনের মতই তারা হোচট খাচ্ছিলো। এখনো আমার মনে আছে, শেষ রাতে শোনা সেই গানের সুর তখনো আমার কানে বাজছে। আমার মন প্রান পুরোটা সত্তা তখন সেই সুরে আচ্ছন্ন। হাটতে হাটতে আমি তা অনুভব করছি। কিন্তু তারপরও কেন যেন মনে হচ্ছিলো এর মাঝ থেকে কোন একটা সুর যেন আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এক সময় আমি সেই সুরটা ধরতে পারি। তাই কবরের একটা পাথরে হেলান দিয়ে থেমে সেটা ভালো মতো গাইতে চেষ্টা করি। আজো আমার মনে সেদিন কার সেই ছবি স্পষ্ট করে আঁকা আছে। নাটকিয় কোন ঘটনার মত এটি আমাকে অভিভুত করে না। কবরের কথা ভাবার বদলে কেন যে আমি সুর আর সুরার নেষায় বুদ হয়ে ছিলাম, এমন কি ছিল এর ভেতর? জীবনের উন্মাতাল এ সময়টাতে মরনের মুখোমুখি হলেও বুঝি মানুষ একবারের জন্য পরপারের কথা ভাবেনা? এর থেকেতো আমাদের কারুরি নিস্তার নেই। কোন ভাবেই মরন থেকে পার পাওয়া যায় না। তার পরও কাঁচা বয়সের লোকেরা মরন নিয়ে একদমই ভাবেনা। হঠাৎ যখন তাদের কারো ভাগ্যে এটি ঘটে যায় তখন না বুঝেই ধরে নেয়া হয় পাহারের আড়ালে নিশ্চয় কিছু একটা লুকানো ছিল। ধরা ছোয়ার বাইরে অজানা একটা কিছু। মনোযোগ তখন পাহারের চুড়ায় আরহনে ব্যস্ত থাকে। আর মজাদার অবাক করা সব ঘটনা ঘটে পাহারের ঢালে! আরো দূরে চূড়ার কাছাকাছি এসে ঘটনার সঙ্কটকাল চলতে থাকে। এর পরে কি আছে মাথার ভেতর কেবল এমন বিষ্ময় ঘুরপাক খায়। সে মৃত্যুর মানে খুজতে থাকে। ধীরে ধীরে এর আকর্ষনের নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ফলে এর পর থেকে তার মন-মানসিকতা পুরোপুরি এধরনের চিন্তা-ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকে। মনে হয় পাহাড়ে আরোহনের অসম্ভব ক্লান্তি পেয়ে বসে তাকে। তাই বুঝি শরীর অবসন্ন হয়ে যায়। একারনেই জীবনের চূড়ায় উঠতে উঠতে যে কেউ বোকা বনে যায়। মৃত্যুর কথা চিন্তা করে বড় বেশী অসহায় বোধ করে। সব কিছু ভুলতে থাকে, ব্যক্তিগত কোন হিতাহিত জ্ঞান তখন আর তার মাঝে কাজ করে না। যাই হোক কিছু ক্ষন এভাবে দাড়িয়ে ছিলাম, কবরের উপর দাড়িয়ে আপন মনে গান গাইছি। আঁধারের মাঝে আমার গলার স্বর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আসপাসে থাকা কবর বা এর নিচে চাপা পড়ে থাকা দেহাবশেষের প্রতি কোন বোধ কাজ করেনি সে সময়। এক সময় এসব লোক জন আমারি মত সজীব প্রানবন্ত যৌবন অতিক্রম করেছে। আনন্দে আহলাদে মাতোয়ারা থেকে আপন যৌবন কে অবহেলা করেছে। তারা ভাবেনি সব জীবকে এক সময় বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে হবে, ভাগ্যের চুড়ান্ত মূহুর্তটিকে জড়িয়ে ধরতে হবে। আমি নিজেও অবাক হই কি করে মৃত্যু পুরির মত স্থির এ সাগরের মাঝে দাড়িয়ে থেকে মৃত্যুকে অস্বীকার করতে পারছি! আচ্ছা জীবন আসলে কেমন হওয়া উচিত? সত্যিই কি যুবকেরা করুনার পাত্র। ঠিক যেমন করে এতশত কবর দেখার পর মনটা মৃত্যুচিন্তায় কানায় কানায় ভরে ওঠে, তেমন? এমন পরিস্থিতিতে সব কিছুই কেমন যেন বিষাদ ঠেকে। মানুষের সব কৃতিত্ব আর চেষ্টা হঠাৎ কেমন এখানে এসে মিইয়ে যায়। এমন চিন্তা পুরো মানব জাতীকে দিন রাত কুঁড়ে কুঁড়ে খেলেইবা জীবনের জন্য কি এমন মঙ্গল হবে? আসলে মৃত্যু এক চুড়ান্ত হতাশা। অন্যদিকে জীবনকে যথেষ্ঠ শক্তি দেবার জন্য স্রষ্টা আমাদের অবিরাম করুনা করে আসছেন। তাই বোধ হয় মানুষের অনুভুতি খুবই দৃঢ়। নিজের ওপর তার অনেক বেশী নিয়ন্ত্রন রয়েছে। তারুণ্য বিস্ফোরন উন্মুখ এক শক্তি; তারুণ্যে জীবন অপার এক যাদুকরি মহিমার অধীকারি হয়। এর পর মধ্য বয়সে এসে জীবনকে কেমন যেন পরিচিত ঠেকে, নিজেকে কেমন যেন অভ্যস্থ মনে হয়; এসময়, কোন এক দিন কেউ একজন জীবনটা কেড়ে নেবে, এর পরিচিত সব স্বাদ অর্ন্তহিত হবে, সে ব্যপারে মনুষকে উদাসিন বলে মনে হয়। কেউ কেউ এর চলমান স্বাদেও সন্তষ্ঠ থাকে না! যদিও পৃথীবির আর সব কিছুর সাথে জীবনকে মেলানো যায়না; আমাদের চারপাসের মানুষ-জন অতি সাচ্ছন্দ্যে বেঁচে বর্তে আছে, শ্বাস নিচ্ছে, তারা একে বোঝা মনে করে মরে যেতে চাইছে না। পরিচিত এই বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে যেতেও সায় নেই তাদের মনে। সবাই এখানে নিজ নিজ কল্পনা অনুসারে জীবনে অভ্যস্থ। এখানে যার যার অনুভুতি তার তার, যা মৃত্যুকে করে তোলে কষ্টকর, আয়ুষ্মান বিশ্ব চিন্তা মানুষকে তাই বিষাদময় করে তোলে। শিশু বা পশুদের কাছে এই বোধ পুরোপুরি বিপরিত ঠেকতে পারে। সেখানেই ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে থেকে আপন মনে গান গাইছিলাম, এমন সময় একটা অবয়ব দেখতে পেলামÑআমি এক প্রকার নিশ্চিত ছিলাম এটা কোন পুরুষ লোক হবে, কারন কোন মেয়ে লোক এত রাতে বিশেষ কোন কারন ছাড়া এখানে আসার সাহস করবে নাÑসারাটা কবর স্থান জুড়ে অবয়বটি হাটাহাটি করছে। হঠাৎ ভয়পেয়ে আমি গান থামালাম। মনে হলো কোন চোর হবে হয়তো। আর যদি তা না হয়, তাহলে এমন বিরান জনহীন প্রন্তরে কোন ডাকাতই কেবল আসতে পারে। এমন কথা ভাবতে ভাবতে একটু স্থির হলাম, ভাবলাম “কিসের জন্য আমি দুঃশ্চিন্তা করছি? আমার কাছে খোয়া যাবার মতো কিছুইতো নেই; আমার কাছে সামান্য কিছু পিয়্যাসট রয়েছে, এগুলো নিয়েতো লোকটির পক্ষে ধনী হওয়া সম্ভব নয়, সামান্য এ মুদ্রা গুলো হরিয়ে আমিও একেবারে পথে বোসবোনা। সে যাইহোক, গড়ন গাড়নে আমি যেমন হালকা পাতলা ছিলাম তেমনি খুব জোড়ে দৌড়াতেও পারতাম। আর কবর স্থানে ঢোকা ও বের হবার সব পথও আমার জানা ছিল; দু’পায়ে ঝেড়ে দৌড় দিলে মনে হয়নি সে আমার সাথে পেরে উঠবে। তাই লোকটি যেই হোক না কেন তাকে ভয়ের তেমন কিছুই ছিলনা।” আসলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারন ছিলনা; আমার নড়াচড়া ও চলাফেরাতে সেটি ফুটে উঠেছিল। অশুভ কোন লোক হলে নিশ্চই এতে উৎসাহ পেতো। তারপরও সতর্ক থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে এই ভেবে নির্জন একটি কবরের পেছনে লুকিয়ে পড়লাম, এমনভাবে যেন নিজেকে সম্পূর্ন আড়াল করে কেবল আমিই তাকে দেখতে পাই। তাতে অন্তত বুঝে উঠতে পারবো লোকটা কি ধরনের, আর সামনা সামনি থেকেও গোপনে তার এগিয়ে আসা দেখার জন্য শক্তিশালি একটা অবস্থান বলে মনে হচ্ছিলো জায়গাটিকে। মনে হচ্ছিলো সাদা দাড়ি ওয়ালা কোন বৃদ্ধ শেখ এগিয়ে আসছে; হাতে জপ মালা, মুখে স্রষ্টার নাম, সাথে কোরান বা অন্য কিছু থেকে পাঠ করছে, যদিও বাস্তবে এর কিছুই আমি শুনতে পারছিলাম না। ভাবতে আমার যেন খারাপ লাগছিল কি করে এই বৃদ্ধ শেখ আমাকে ভয়ে চমকে দিয়েছে, এবার লোকটাকে খুঁটিয়ে দেখার জন্য নিজে থেকে তার পানে এগিয়ে যাবার জন্য ভেতর থেকে কেমন যেন একটা তাগিদ অনুভব করছিলাম। লোকটাকে খানিক এদিকে এগিয়ে আসার সুজোগ দিলাম, তারপর হঠাৎ আড়াল ছেড়ে একটা কবরের পেছনে দু’জনে সামনা সামনি দাড়িয়ে গেলাম। অসহায় লোকটির ভয়ে পড়ে যাবার মত অবস্থা। আবার আমি তড়িঘড়ি করে দু’ এক কদম পিছিয়ে কবরের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। চারদিকে তাকিয়ে সে কিছুই ঠাওর করে উঠতে পারলোনা। ডানে বামে থুতু ছিটিয়ে একটু ধাতস্থ হবার পর গলা চড়িয়ে অভিশপ্ত সব শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে স্রষ্টার কাছে মিনতি জানাতে লাগলো। তারপর সুরা পড়তে পড়তে জোর কদম হাটতে শুরু করে দিল। আমিও চুপিসারে পেছন দিকের কবরের সারি ধরে তার পিছু পিছু আগাতে লাগলাম। তার পা ফেলার গতি ক্রমেই বাড়ছিলো, তাতে করে বুঝতে পারছিলাম লোকটির ভয় তখনো কাটেনি। মাথা সামনের দিকে বাড়িয়ে আবার আমি হঠাৎ তাকে দেখা দিলাম, আর তার দাড়িতে টানদিয়ে বসলাম। লোকটি এবার চিৎকার দিয়ে উঠলো, আমি দৌড়ে পালিয়ে গেলাম। কবরের আড়ালে লুকিয়ে আবার তার সামনে পড়লাম। চাপা দেওয়া প্রচন্ড আমোদে আমার ফেঁটে পড়ার মতো অবস্থা। পাশদিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলাম, তারপর আমি তার কোমর বরাবর মাথা বের করে সুড়সুড়ি দিয়ে বোসলাম। হলফ করে বলতে পারি, তরবারি অথবা সাদা রঙের গরম করা লোহার শিক পেটের মধ্যে ধরলে লোকটা একদম চিৎপটাং হয়ে মাটিতে গড়াতো। বুঝতে পারছিলাম লোকটা চড়ম ভয় পেয়েছে, আওড়ানো সুরা গুলো জড়িয়ে যাচ্ছে, মনে করতে না পারলে সবার যেমন হয়, মনে মনে ভালাম এটাই সময়। ভয়ে লোকটা চিৎকার জুড়ে দিলো, “আমি শয়তানের থেকে পানা........”এবার ঠিক পেছনে এসে দাড়িয়ে হুঙ্কার দিয়ে দেখিয়ে দিলাম কতটা জোরে আমি শব্দ করতে পারি। অসহায় লোকটা এবার পড়িমড়ি করে দৌড়। এভাবে লোকটা এক সময় চোখের সামনে থেকে দূর হলো। একটানা এমন আজব খেলায় আমি নিজেও বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই পেছনে ধাওয়া করার চিন্তা বাদ দিলাম। জামা কাপড়ে লেগে থাকা ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে আস্তে ধীরে এগোচ্ছি, ঘটনাক্রমে এক সময় প্রকাশ্য রাজ পথে উঠে এলাম। তারো মিনিট পনেরো বা খানিক বাদে আমি ইমাম সুফি মসজিদের কাছে আসি। সে সময় মুয়াজ্জিন সবেমাত্র তার সুললিত সুরে আজান দিতে শুরু করেছে। লোক জন জড়ো হয়ে ফজরের নামাজ পড়ার প্রস্ততি নিচ্ছে। এমন সময় আমার সেই হতভাগ্য শেখ বন্ধুটিকে সেখানে দেখলাম, পুরো এক দল লোক তাকে ঘিরে আছে। সাবাই কে সে বলছিলো, “ কালো বিড়ালের মত দেখতে একটা জন্তু আমার ঘাড়ে উঠে পড়েছিলো, গালদুটি চেটেপুটে শেষে দু’পায়ের মাঝদিয়ে গিয়ে কাফতানের ভেতর সেধিয়ে যায় সেটি! চিৎকার করে আমি আল্লার কাছে সাহায্য চেয়েছি, তার পর মাটি ফুঁড়ে আজব সেই চিড়িয়াটি একটা গার্তের মধ্যে সেধিয়ে যায়। কিন্তু কিছু সময় পর তা আবার ভাল্লুকের বেশে ফিরে আসে, খানিক বাদে আবারো কবরের পাথরের নিচ থেকে কাফন পরে হাজির হয়; এসময় কাফনের কাপড় চিরে মুখ বেরিয়ে ছিলো জানোয়ারটির, যেন চোখ দুটো রাগি হাঙ্গরের মতো জ্বল জ্বল করে জ্বলছিলো। কোরানের যা কিছু আমার মনে ছিলো তার সবটুকুন পড়েছি। তারপরই সে ছেড়া কাফনে মুখ ঢেকে নিজ কবরে ডুব দেয়। আমি সারা জিবনেও এর লম্বা দাঁত গুলোর কথা ভুলবো না.......জ্বলন্ত কয়লার মতো লালচে দাঁত গুলো সারা মুখ জুড়ে তারার মতো জ্বলছিলো! স্রষ্টাকে অশেষ ধন্যবাদ, তিনি আমাকে এর থাবা থেকে রক্ষা করেছেন.......” কেউ এক জন তখন তাকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার কি মনে হয় জানোয়ারটা আপনাকে দমবন্ধ করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো?” “হ্যা সেভাবেই তো মারা যাচ্ছিলাম” জবাবে শেখ বোললো। “ যাচ্ছিলাম মানে বুঝেছেনতো? বলতে চাচ্ছি” এই বলে তিনি হাত দুটোকে মিনারের মত উপরের দিকে প্রসারিত করে সামনের দিকে এগিয়ে এসে বল্লেন, “এদুটো দিয়ে আমাকে ঢেকে ফেলতে নিয়েছিলো! বুকের কাঁটা গুলো তার বেওনেটের মতো চক্ চক্ করছে ! সেসময় আল্লাতায়ালা যদি আমাকে আয়াতুল কুসরি পড়ার তৌফিক না দিতেন তাহলে এত ক্ষনে আপনারা একটা লাস ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেতেন না।” অন্য আরো এক জন বলে উঠলো, “ আপনার কি মনে হয় এইটা কোন মৃত লোক ছিলো? অবাক করার মত বিষয়!” “আগুনের মত জ্বলছিলো জানোয়ারটা,” জবাবে শেখ বল্লেন। “কুসরি সুরাই একে জ্বালিয়ে মেরেছে। তারপর সড়কে ওঠার আগ পর্যন্ত আর পেছনে ফিরে তাকাইনিরে ভাই...” যেদিক থেকে লোকটি এসেছিলো আঙ্গুল দিয়ে জায়গাটা দেখাবার সময় ঘুরে দাড়িয়ে প্রথমে আমাকে তার পেছনে দেখতে পেলো। অবাক হয়ে সাথে সাথে আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে চিৎকার দিয়ে উঠলো, “এই ........ সেই........লোক.........” আমাকে ছাড়া কেউই বুঝলোনা কেন লোকটি চেঁচিয়ে উঠলো বা আঙ্গুল তাক করলো, তখন হাঁসি আটকাবার চেস্টায় আমার ভেতরটা প্রায় ফুটো হয়ে যাচ্ছিলো । অন্য দের মত আমিও সে যা দেখাতে চাইছিলো তার সন্ধানে আঙ্গুল বরাবর তাকালাম, লোকটার চারপাসে জড়ো হওয়া সবাই এক সাথে কেঁপে উঠলো। কেউ এক জন চাঁপা স্বরে জিজ্ঞস করলো “কোথায়? কোথায়? কই আমরাতো কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।” লোকটি বার কতক হাতদিয়ে মুখ মুছলো, তারপর একদম শান্ত ভঙ্গিতে বল্লো, “ অদ্ভুত, সত্যি বড়ই অদ্ভুত ঘটনা......অবিকল এই ভদ্র লোকের মত দেখতে।” আমি আর হাঁসি ধরে রাখতে পারলাম না, মুখদিয়ে থুতুর ছিটে সহ বেরিয়ে গেলো,“ তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি দেখতে পিশাচের মত?” ধারে কাছে পরিচিত এক জন ছিলো, লোকটি একই সাথে চালাক ও চতুর। বোঝাই যাচ্ছিলো এতসব অদ্ভুত কথা বার্তায় তার সন্দেহ হয়েছে, হতে পারে সত্যিকার ঘটনা টুকু আপনা থেকে সে ভেবে নিয়েছিলো। “শুনুন,” সে আমাকে বল্লো, “আপনি কোন দিক থেকে এসেছেন?” বুঝতে পারলাম লোকটা কোথায় হাত দিয়েছে, তাই ইসারায় দেখিয়ে বললাম, “আমি ওদিক থেকে এসেছি।” কথাটা মিথ্যা ছিলো, তবে আধাআধি সত্যে মেশানো। আমার ভয় ছিলো সত্য বেরিয়ে পরলে একদম বদনাম হয়ে যাবে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আপনি কি সাইদা নাফিসা না পৌরভবনের দিক থেকে এসেছেন?” “পৌরভবন হয়েইতো আসলাম,” জবাবে আমি বললাম, “ কার এত বড় বুকের পাটা যে এত গুলো সারি সারি কবরের ওপর দিয়ে এত রাতে হেটে আসে?” বিড়বিড় করে লোকটা কিছু একটা বললো, আমি সেসব শুনতে পাইনি, তারপর সে আপনা থেকে চলে গেলো। আমিও সেবারের মতো বেঁচে গেলাম। তবে একটি রাতের জন্য আমি ঠিকই পিশাচ হয়ে রইলাম! সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৮:০৮
false
fe
বিশ্বে অশান্তি উসকে দিচ্ছে কারা_ বিশ্বে অশান্তি উসকে দিচ্ছে কারা?ফকির ইলিয়াস_______________________________________________গাজা উপত্যকার মানুষ এবারের ঈদুল ফিতর কিভাবে পালন করেছেন- তা কি জানতে চেয়েছেন, বিশ্বের মানবতাবাদীরা? তারা কি দেখতে গিয়েছিলেন, সেখানের হাজারও নারী-শিশু কেমন আছেন? মাঝে মাঝে আমার খুব দ্রোহী হতে ইচ্ছে করে। আমি মার্কিনি পাসপোর্ট নিয়েছি। তার অর্থ এই নয়, আমি অন্যায়ভাবে মার্কিনি রক্তহোলি খেলা পর্বের সমালোচনা করবো না। কিংবা করতে পারবো না। নাগরিক হিসেবে আমার সেই স্বাধীনতা মার্কিনি সংবিধানই দিয়েছে। বেশি তত্ত্বকথা বলার কিংবা শোনার মানসিকতাও আমার কোনোদিনই ছিল না। অবাক লাগে, আজ পাশ্চাত্য তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যের রাজা উজিররা মুখে কুলুপ এঁটে বসেছেন। এই যে মুসলিম নিধন চলছে, এই যে নির্মম গণহত্যা চলছে, এতে কি তাদের কিছুই করার নেই?সংবাদটি খুবই মর্মান্তিক। ফিলিস্তিনি নারীদের ধর্ষণ করে এ অঞ্চলের ‘শত্রুদের’ ভয় দেখাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ওই বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের এমন পরামর্শ সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এমন বিতর্কিত পরামর্শ দিয়ে ফিলিস্তিন ও অঞ্চলটির প্রতি সংহতি পোষণকারীদের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে নিন্দার পাত্র হওয়া ব্যক্তিটি হলেন মধ্যপ্রাচ্য গবেষক ও বার-আইলান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোরদেচাই কেদার। অধ্যাপক কেদার বলেন, ‘একটি পদ্ধতিই সন্ত্রাসীদের ভয় দেখাতে পারে, যেমন তাদের শিশুদের অপহরণ করে হত্যা করা এবং তাদের মা-বোনকে ধর্ষণ করা।’তিনি বলেন, ‘যদি সন্ত্রাসীদের বলা হয়, তোমরা যদি ট্রিগারে আঙুল চাপো অথবা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটাও, তবে তোমাদের মা-বোনকে ধর্ষণ করা হবে। তাহলেই ওরা ভয় পেয়ে যাবে।’ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষকের এমন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ ইসরায়েলি সুশীল সমাজও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার তীব্র সমালোচনা চলছে। এর আগেও এ ধরনের বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করে কড়া সমালোচনায় পড়েছিলেন কেদার।এদিকে ক্রমশ প্রকৃত সত্যই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তিন ইসরায়েলি কিশোর অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় হামাস জড়িত নয়। ইতোমধ্যে ইসরায়েলি পুলিশের মুখপাত্র মিকি রোজেনফিল্ড এ কথা স্বীকার করেছেন। অথচ তিন কিশোরকে হামাস অপহরণের পর হত্যা করেছে বলে দাবি করে গেলো প্রায় চার সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। মানবতাবিরোধী এ আগ্রাসনে হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মুসলমান নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। মিকি রোজেনফিল্ড বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘তিন ইসরায়েলি কিশোরকে অপহরণের নির্দেশ হামাস দেয়নি। যারা এ তিন কিশোরকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা নিজেরাই এককভাবে এ কাজ করেছে।’গত ১২ জুন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর থেকে ইসরায়েলের তিন কিশোর নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে হামাস জড়িত অভিযোগ করেছিল। হামাস একাধিকবার ওই অভিযোগ নাকচ করে দেয়। কিশোর অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ আবু খুদায়ির নামে ১৬ বছরের এক কিশোরকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে ইসরায়েল।এছাড়া হামাস সদস্য ও ফিলিস্তিনি সংসদের স্পিকারসহ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ব্যাপক ধরপাকড় এবং অপহরণও করে ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনি শিশুরাও এ গ্রেপ্তারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে ইসরায়েল আগ্রাসন চালালেও ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।যুদ্ধের এই আগুনে হাঁপিয়ে উঠছে ইসরায়েলিরাও। অস্ত্রবিরতির দাবিতে ইসরায়েলে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। রাজধানী তেলআবিবের রবিন স্কয়ারে জড়ো হওয়া এসব মানুষ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্থায়ী শান্তির আহ্বান জানায়।এদিকে গাজা থেকে রকেট হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় তেলআবিবে সব ধরনের মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওই সময় চার ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি চলায় মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে। তারপরও মিছিল থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ। তিন হাজার মানুষ রবিন স্কয়ারে নেমে আসে। ওই সময় গুটিকয়েক মানুষ ইসরায়েলের পক্ষে একটি মিছিল বের করে। প্রতিবাদকারীরা তাদের ফেসবুক পাতায় বলে, এই যুদ্ধ উভয়পক্ষেই ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাচ্ছে এবং ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। আমরা এর একটাই উত্তর জানিয়ে দিতে চাই এবং আমাদের দাবি : এখনই যুদ্ধ বন্ধ করো! বারবার সামরিক অভিযান বন্ধ করে সংলাপ ও রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার এখনই সময়। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে সমাধানযোগ্য। এর জন্য আমাদের, ইসরায়েলের দক্ষিণ ও অন্যান্য এলাকা এবং গাজা ও পশ্চিম তীরের মানুষকে আর কতো মূল্য দিতে হবে? তারা বলেছে, ইহুদি এবং আরব- আমরা একসঙ্গে এই দখলদারিত্ব ও যুদ্ধ, পারস্পরিক ঘৃণা, উসকানি ও বর্ণবাদকে উতরে যেতে পারবো এবং জীবন ও সম্ভাবনার নতুন পথ খুঁজে নিতে পারবো।উল্লেখ্য, রবিন স্কয়ার ইসরায়েলের একটি বিখ্যাত চত্বর যেখানে রাজনৈতিক সমাবেশগুলো হয়। এই চত্বরটির নামকরণ করা হয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের নামে যিনি ১৯৯৫ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের প্রতি নমনীয় হওয়ার কারণেই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্ব আজ সাম্রাজ্যবাদী দখলদারদের লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে মিলিত হয়ে মুসলিম নিধনে ব্যস্ত শক্তিটি জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ, আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রভাব বিস্তার করে, বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে বিরাজ করতে চাইছে। এ অপশক্তি সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি দেশে বর্ণে-বর্ণে, জাতিতে-জাতিতে, দেশে-দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, বর্ণবাদী, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভেদ সৃষ্টি করে পারস্পরিক সংঘাত-সংঘর্ষ জিইয়ে রাখছে। দেশ ও জাতিসমূহকে দুর্বলতর করছে, যাতে করে দুর্বলদের ওপর নিজেদের আধিপত্য চাপিয়ে দিতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাহ, আমির, খলিফা, সুলতানদের প্রধান রক্ষক এরাই।খুবই বেদনার কথা, মুসলমানদের সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে ছুড়ে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এরা সন্ত্রাসী। এরা জঙ্গি। অথচ ফিলিস্তিন ইস্যুটি চল্লিশ বছরেও বিশ্ব মোড়লরা সমাধান করতে পারেননি। কিংবা করছেন না। উসকে দেয়া কাজটি খুবই ভয়াবহ। তা বিশ্বের নানা প্রান্তকে অশান্ত করে তুলতে পারে। আগুন ছুড়ে দিলে তা নিজের প্রতিই ফিরে আসতে পারে। মনে রাখা দরকার, মুসলমানরা যুগে যুগে অত্যাচারিত হয়েছে। কিন্তু অন্যায়ের কাছে, অসত্যের কাছে মাথা নত করেনি।--------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ০২/আগস্ট/২০১৪ শনিবার
false
hm
শ্বাসরুদ্ধকর তুর্ক-ক্রোয়াট কোয়ার্টার ফাইন্যাল আজকে এ খেলা যারা মিস করলেন, তাদের জন্যে দুঃখই হচ্ছে। থাকি তুর্কি পাড়ায়, চলতে ফিরতে রোজই তুর্কিদের সাথে দেখা। তুর্কি তরুণীরা বেশ শ্বাসরুদ্ধকর একটা ব্যাপার হলেও, ওদের মধ্যে এমন একটা রুক্ষতা আছে যে ভালো লাগে না শেষ পর্যন্ত। তুর্কি তরুণদের কথা বলার নেই কিছু, চরম অভদ্র আর উগ্র মনে হয়েছে বেশিরভাগকেই। ক্রোয়াটদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই খুব একটা। যতগুলো ক্রোয়াট দেখেছি এই স্বল্প প্রবাসজীবনে, সবক'টাই অভদ্র, জাতিবিদ্বেষী ও দুর্মুখ। তবে ক্রোয়াট মেয়েগুলি দারুণ! কিন্তু তুর্কি আর ক্রোয়াট ফুটবল অনন্য! খেলার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাণপণে খেলে দুই দল। গতি আর পায়ের কাজ চমৎকার, মাঝমাঠ থেকে হঠাৎ বল টেনে ত্বরিৎ আক্রমণে সিদ্ধপদ দুই দলই, অযথা মেরে খেলার প্রবণতাও তেমন একটা নেই। কিন্তু তুলনাহীন একজনই, তুর্কি গোলকিপার রুশতু। সময় কিভাবে যায় টের পাওয়া মুশকিল, ২০০৮ এ এসে চমকে উঠি রুশতুকে দেখে। বুড়ো হয়ে পড়েছে তুর্কি বাঘ। কিন্তু সেই বুড়ো হাড়েই ভেলকি দেখিয়ে চলেছে ১১৯ মিনিট ধরে। ক্রোয়াট মিডফিল্ডার দানিয়েল স্রনা আর তুর্কি গোলরক্ষক রুশতুর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলেছে গোটা ম্যাচ ধরে, স্রনার দর্শনীয় সব আক্রমণ চিতাবাঘের ক্ষিপ্রতা নিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে রুশতু, স্রনা আবার ঠান্ডা চোখে গোলকিপার আর মাঠ মেপে এগিয়ে আসছে হঠাৎ, পায়ে বল। ওদিকে সফট পাসে অভ্যস্ত তুর্কি মিডফিল্ডারদের কোন তোয়াক্কাই করছে না ক্রোয়াট ব্যাক সিমোনিচ, তুর্কিদের প্রত্যেকটা আক্রমণের মুখে সে একাই একশোজন হয়ে দেয়াল তুলে দাঁড়াচ্ছে। ১১৯ মিনিট ধরে এমনই চলছিলো। কখনো তুর্কিরা শিথিল হয়ে পড়ছে, বিদ্যুতের মতো এগিয়ে যাচ্ছে ক্রোয়াটরা, ভরসা তখন শুধুই রুশতু। মাঠের এক পাশ নিশ্চুপ হয়ে প্রার্থনা করছে, আরেক পাশ লাল সাদা চেক ঝান্ডা তুলে চেঁচাচ্ছে সমানে। চকিতে ঝলসে উঠছে রুশতুর গ্লাভস, বল আবার নিরাপদ দূরত্বে, নিরাপদ পায়ে, মাঠের অন্যপাশে লালে লাল তুর্কিরা শুরু করেছে চেঁচানো, ক্রোয়াটদের মুখ গোমড়া। এরই মধ্যে হঠাৎ মাঠ কাঁপিয়ে সামনে ছুটছে তুর্কি মিডফিল্ডাররা, চোখের পলকে পাঁচছয়জনের একটা দেয়াল তুলে দাঁড়াচ্ছে ক্রোয়াটরা। এমনই চলছে প্রত্যেকটা মিনিট। কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করা, ফাইবার গ্লাসের রক্ষাবরণ পরা ক্রোয়াট স্কোরার ক্লাসনিচ নেমেছেই গোল দেয়ার পণ করে। ১১৯ মিনিটের মাথায় প্রৌঢ় রুশতুর ছোট্ট একটা গাণিতিক ভুলের সুযোগ নিয়ে নিলো ক্রোয়াট বাহিনী, ক্লাসনিচের হেড মাঠের অর্ধেককে বিষন্ন করে দিয়ে জালে ঢুকে গেলো। রুশতু যেন কয়েক মাইল দূর থেকে ছুটে আসছিলো বল ঠেকানোর জন্যে, বলের সাথে সাথে সেও মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ক্লান্ত, হতাশ, বৃদ্ধ রুশতু। কমেন্টেটররা পারলে তখনই রুশতুর ব্যাগ গুছিয়ে দেয়। আহা বেচারা, এ-ই ছিলো তার শেষ টুর্নামেন্ট। বাড়ি ফিরতে হচ্ছে রুশতুকে ভিয়েনা ছেড়ে। আহা, আহা। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ কথাটার মর্ম টের পাওয়া গেলো তুর্কি মিডফিল্ডারদের আচরণে। ১২১ মিনিটের মাথায় সামিহ প্রথম সুযোগেই বল জালে পাঠিয়ে দিলো, ছয়জন ক্রোয়াটের দেয়ালকে হতভম্ব করে দিয়ে। সারাটা খেলা জুড়ে মাঠে তড়পে বেড়ানো ক্রোয়াট কোচ বোধ করি টের পেয়েছিলেন এমন কোন অশনি সংকেত, প্রাথমিক হুড়োহুড়ি কেটে যাবার পর তিনি হাত পা ছুঁড়ে সাবধান করছিলেন খেলোয়াড়দের, কিন্তু গরিবের কথা কেবল বাসি হলেই ফলে। ১২০ মিনিটের খেলা শেষ হলে পেনাল্টি শুটআউট। এই একটা জায়গায় তুর্কিরা আত্মবিশ্বাসী। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, পুরনো বাঘও চালে বাড়ে। রুশতু হতাশ করেনি তুরস্ককে। ক্রোয়াটরা হেরে গেছে। পাড়ার তুর্কি হারামজাদারা মনে হচ্ছে না আজ রাতে দু'টার আগে ঘুমাতে দেবে। পটকা ফুটছে, জঘন্য সব তুর্কি গান বেজে চলছে আশপাশে, হর্ন বাজিয়ে চলছে গাড়ির মিছিল। তবে তুরস্কের কপালে দুঃখ আছে, সেমিফাইন্যালে সেরা তিনজন খেলোয়াড়ই বাদ পড়ছে হলুদ কার্ডে নাম তুলে। সুইৎজারল্যান্ডের বাজেলে তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ঠান্ডা, হিসাবী, মারমুখো জার্মানরা। এই খেলার দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকতে হবে। মারপিট না হয়েই যায় না। এই খেলা দেখার সময় খুব মিস করছি ঢাকাকে। সবাই মিলে হইহট্টগোল করে খেলা দেখবো, একটু পর পর মুড়িমাখা আসবে, চা আসবে, প্রতিবেশীরা আসবে হৈচৈ শুনে হৈচৈ বাড়াতে, হাফ টাইমে ফোন করে ধমকাবো অন্য দলের সাপোর্টার বন্ধুদের ... তা না, একা একা চুপচাপ বসে বসে দেখলাম ম্যাচ। বাল বলে চিৎকার দিতে খুব ইচ্ছা করছে। বাল বলা ভালো নয় বলে দিচ্ছি না।
false
ij
প্রাচীন গ্রিসের সান্তোরিনি দ্বীপের অগ্নৎপাত ও ইয়ানির একটি কম্পোজিশন _____ আজ থেকে ৩,৬০০ বছর আগে এজিয়ান সাগরের সান্তোরিনি দ্বীপে এক ভয়াবহ অগ্ন্যৎপাত হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসে এই অগ্নৎপাতটি ‘থেরা ইরাপশন’ বা ‘সান্তোরিনি ইরাপশন’ নামে পরিচিত। সান্তোরিনি দ্বীপের সেই অগ্নৎপাত প্রাচীন মিনিয় সভ্যতার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, গ্রিক উপকথাকে প্রভাবিত করে এমন কী মিশরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি করে ...এই প্রলয়ঙ্করী ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার ৩,৬০০ পর ঐ অঞ্চলেরই এক কৃতি সংগীত পরিচালক ইয়ানি তাঁর এক অবিস্মরনীয় কম্পোজিশনে সান্তোরিনি দ্বীপের কথাই যেন নতুন করে বলেন... গ্রিসের মানচিত্র । দক্ষিণে ক্রিট দ্বীপের অবস্থান; এখানেই খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতকে গড়ে উঠেছিল বিস্ময়কর মিনোয়ান সভ্যতা। ক্রিট দ্বীপের রাজধানী ছিল নসস। মূলত মিনোয়ান সভ্যতা ছিল নসস কেন্দ্রিক এবং নৌ-নির্ভর সভ্যতা। যা ১৪০০ খ্রিস্টপুর্বের সান্তোরিনি দ্বীপের অগ্নৎপাতের সভ্যতাটি ফলে ধ্বংস হয়ে পড়েছিল। ইউরোপীয় শিল্পীর আঁকা মিনিয় সভ্যতার কাল্পনিক ছবি। তখন বলেছি ক্রিট দ্বীপের রাজধানী ছিল নসস। এই ছবিটি নসস এর। নসস এর মূল বৈশিষ্ট্য ছিল-পুরো নগরটিই পাহাড় কেটে তৈরি করা একটি মূল প্রাসাদেরই বিস্তার। সান্তোরিনি দ্বীপের অগ্নৎপাতের ফলে ঘন ছাইয়ের স্তূপের তলায় ঢাকা পড়েছিল ... মিনিয় সভ্যতা। এই ছবিটিও কাল্পনিক। তবে কল্পনাবিলাশ নয়, প্রাপ্ত তথ্যের ওপরই ভিত্তি করে নির্মিত। সে কালে নসস এ ষাঁড়ের লড়াইত হত। নসস নগরে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এমন সব পাথরের নল পেয়েছেন, সে নলগুলি দিয়ে যেমন পানি প্রবাহিত হত, তেমনি রাজকীয় কক্ষকে শীতল রাখার জন্য প্রবাহিত হত বাতাস ... সান্তোরিনি দ্বীপের মানচিত্র । আসলে এটি দক্ষিণ এজিয়ান সমুদ্রে অবস্থিত ক্ষুদ্র অর্ধবৃত্তাকার আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জ ।থেরা হল সবচে বড় দ্বীপ। মাঝখানে রয়েছে বিশাল অগভীর লবণাক্ত জলের উপহ্রদ বা লেগুন। সান্তোরিনি দ্বীপটি ক্রিট দ্বীপের সত্তর মাইল উত্তরে এবং গ্রিসের মূলভূমি থেকে ১২০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত । সান্তোরিনি দ্বীপের মানচিত্র ।সেন্ট আইরিনের স্মরণে সান্তোরিনি নাম দেন একজন লাতিন সম্রাট। এর আগে দ্বীপটি থেরা বা কালিসটে নামে পরিচিত ছিল। তবে মনে রাখতে হবে, এখন যেমন দেখছেন, আজ থেকে ৩,৬০০ বছর আগে দ্বীপপুঞ্জটি দেখতে এরকম ছিল না। এটি সান্তোরিনি দ্বীপের অগ্নৎপাতের পরের অবস্থা। সান্তোরিনি দ্বীপের এখনকার ছবি। এজিয়ান সমুদ্র আসলে তো মনোরম দ্বীপের সমষ্টি। ভ্রমন পিপাসুদের ভালো লাগবে অবশ্যই। উন্নত মিনোয়ান সভ্যতার অংশ ছিল বলেই সেই খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালেও সান্তোরিনি দ্বীপের জনগনের জীবনযাত্রা ছিল উন্নত। বন্দরে জাহাজ, প্রান্তরে যব ক্ষেত, উদ্যান, দ্রাক্ষাকুঞ্জ। সুপ্রশস্ত সড়ক, দু’পাশে দ্বিতল ভবন, বহুতল অট্টালিকা, স্নানাগার, পয়নিস্কাশন প্রনালী। এমন কী নসস এর মতো বায়ূ নিষ্কাশন প্রনালী প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিস্মিত করেছে। সান্তোরিনি দ্বীপের ধ্বংসাবশেষ সান্তোরিনি দ্বীপের নগর নকশা। এ জায়গাটা সান্তোরিনি দ্বীপের আকরোটিরি। এখানকার পরিকল্পিত নগর গবেষকদের অবাক করেছে। কারও কারও মতে সান্তোরিনি দ্বীপই ছিল প্লেটোকথিত আটলানটিস এবং এই বিষয়ে আমিও দ্বিমত পোষন করব না। কেননা, এতে করে আটলানটিস নিয়ে যুক্তিহীন রহস্যের ধোঁওয়া ছড়ায় না এবং আমরা আটলানটিস এর একটা বাস্তব ভিত্তি পেয়ে যাই। সান্তোরিনি দ্বীপের নগর নকশাটি আবার দেখুন। এই সান্তোরিনি দ্বীপই ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বে এক ভয়াবহ অগ্নৎপাতের ফলে ধ্বংসহয়ে যায়। অগ্নৎপাতের ফলে সান্তোরিনিসহ আশেপাশের অঞ্চল ১০০ ফুট ছাইয়ের নিচে তলিয়ে যায়। কেবল থেরা দ্বীপটি কোনওমতে টিকে থাকে। পরবর্তীকালে গবেষকরা দীর্ঘদিন এই থেরা দ্বীপেই প্রাচীন অগ্নৎপাত নিয়ে গবেষনা করেন। ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বের সেই অগ্নৎপাতের ফলে মিশরে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয় ও মিশর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। সান্তোরিনি দ্বীপের ধ্বংসাবশেষ আগেই বলেছি মিনিয় সভ্যতার কেন্দ্র ক্রিটদ্বীপেও ভয়াবহ ক্ষতি হয়। দুর্যোগ সত্ত্বেও যারা বেঁচে ছিল তারা মিশর কিংবা গ্রিসে পৌঁছতে সক্ষম হয়। গ্রিসের প্রথম সভ্যতা মিনোয়ান তথা ইজিয়ান সভ্যতা। পরে আমরা গ্রিসের মূলভূমিতে Mycenaean civilization এর উদ্ভব দেখি তা ঐ বেঁচে যাওয়া গ্রিকদের কৃতিত্ব বলে অনেকেরই ধারণা। ১৪০০খ্রিষ্টপূর্বে সংঘটিত সান্তোরিনি দ্বীপের সেই ভয়াবহ অগ্নৎপাতের ৩,৬০০ পর গ্রিক সংগীত পরিচালক ইয়ানি ‘সান্তোরিনি’ নামে একটি কম্পোজিশন করেন। ১৯৯৩ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর ‘লাইভ অ্যাট অ্যাক্রপোলিস’ কনসার্টের মাধ্যমে ইয়ানি বিশ্ববাসীর সামনে নিজেকে উপস্থাপিত করেন। ‘লাইভ অ্যাট অ্যাক্রপোলিস’ কনসার্টের প্রথম কম্পোজিশনটিই ছিল ৬মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ‘সান্তোরিনি’। বিশ্ববাসী সে কনসার্ট মনেপ্রাণে গ্রহন করেছিল। ৬৫ টি দেশের ৫০০ মিলিয়ন দর্শক দেখেছিল। ‘লাইভ অ্যাট অ্যাক্রপোলিস’ এর মিউজিক ভিডিওটি একটানা ২২৯ সপ্তাহে বিলবোর্ড চার্টের টপ পজিশনে ছিল! অ্যালবাম বিক্রি হয়েছিল ৭ মিলিয়ন । ইয়ানি । বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুরকারদের একজন। জন্ম গ্রিসের কালামাতায় ১৪ নভেম্বর, ১৯৫৪। ছেলেবেলা থেকেই আর দশ জনের মতো পিয়ানো বাজাতেন। অল্প বয়েসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। মনোবিজ্ঞানে স্নাতক। সংগীতে প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা নেই। তারপরও তাঁর কম্পোজিশনগুলি বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ইয়ানির ‘সান্তোরিনি’ কম্পোজিশনে সেই চিরকালীন সুরটিই ফুটে উঠেছে।মিনিয়ান সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়, তবে গ্রিক সভ্যতা টিকে থাকে এবং Mycenaean civilization এর মাধ্যমে। এই মিকেনাই গ্রিকরাই ট্রয় যুদ্ধ করে মানবসভ্যতায় আরেক বিস্ময়কর অধ্যায়ের সংযাজন করেছিল। সভ্যতার এই যে অলীক বিস্তার, এই যে আশাবাদী দিক- ইয়ানির ‘সান্তোরিনি’ কম্পোজিশনে তাই ফুটে উঠেছে অত্যন্ত সার্থকভাবে। অ্যাক্রোপোলিস। মানে উচুঁ নগরী। গ্রিসের এথেন্স শহরেই এর অবস্থান। এর শীর্ষে গ্রিক উপাসনালয় বা প্যানথিওন অবস্থিত। ভাবলে রীতিমতো অবাকই হতে হয় সংগীতের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে সান্তোরিনিকে তুলে ধরার জন্য ইয়ানি এই ঐতিহাসিক স্থানটিই বেছে নিয়েছিলেন। সান্তোরিনি ; ইউটিউব ভিডিও ‘সান্তোরিনি’ এমপি থ্রি ডাউনলোড লিঙ্ক http://www.mediafire.com/?hfzj1zrmdlg ইয়ানি। শিল্পীরা এভাবেই অতীত ও ভবিষ্যতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সভ্যতার শিরাউপশিরায় রক্তসঞ্চালন করে মানুষের বেঁচে থাকার পরিবেশটিকে সুস্থ্য রাখেন। ছবি ও তথ্যের উৎস: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন ওয়েভসাইট। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১০ দুপুর ১:৪৯
false
fe
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ফ কি র ই লি য়া স ---------------------------------------- মৃত্যুবরণ করেছেন পল টিব্বেটস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক নায়ক ছিলেন তিনি। ৬ আগস্ট, ১৯৪৫ সাল। পাইলট পল টিব্বেটস সেই মারণাস্ত্র বিমানটি চালিয়ে যান। হিরোশিমায় নিক্ষেপ করেন বি-২৯বোমার ‘এনোলা গে’। যে আণবিক বোমাটি কমপক্ষে সত্তর থেকে এক লাখ লোকের তাৎক্ষণিক প্রাণহানি ঘটায়। রচিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত হিরোশিমা ট্রাজেডি। পল মারা গেছেন ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের কলম্বাস নগরীতে। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। মৃত্যুর আগে তিনি বলে গেছেন ‘হিরোশিমা’ ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত নন। তিনি আরও বলেছেন, তার যেন কোন ফিউনারেলের ব্যবস্থা করা না হয়। তার সমাধিতে যেন কোন এপিটাক বা ফলক লাগানো না হয়। কেন তার এই ভীতি ছিল? পল কি মনে করেছিলেন, তার মৃত্যুর পরও তার সমাধিতে গিয়ে মানুষজন ভর্ৎসনা করবে? হয়তো তা হতেও পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে, হিরোশিমা নাগাসাকি ট্রাজেডির প্রতি বিশ্ব মানবের যে ঘৃণা তা কি কখনও প্রশমিত করা যাবে? প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত- এই ক্ষোভ সঞ্চারিত হতেই থাকবে। হিরোশিমা-নাগাসাকির মর্মবেদী ঘটনা নিয়ে লেখা হবেই প্রবন্ধ-গান-কবিতা। ৯ আগস্ট, ১৯৪৫ সালে নাগাসাকিতে দ্বিতীয় আণবিক বোমা নিক্ষেপিত হয়। ১৪ আগস্ট, ১৯৪৫ সালে জাপানিদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দৃশ্যের যবনিকাপাত ঘটে। প্রথম দৃশ্য এ জন্যই বলছি, কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রেশ এখনও বহন করে চলেছে বর্তমান বিশ্ব। এখনও সে যুদ্ধস্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন কেউ কেউ। এর আগে ঘটে যায় আরেকটি বেদনাদায়ক ঘটনা। রোববারের একটি চমৎকার সকাল। ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ সাল। মার্কিনি যুদ্ধবহরগুলো হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের পার্ল হার্বারে নোঙর করা মাত্র শেষ করেছে। হঠাৎ করেই জাপানি যুদ্ধবিমান হাওয়াইয়ের আকাশ দখল করে নেয়। দু’ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তারা একযোগে বোমা নিক্ষেপ করে। এতে ১৯টি মার্কিনি যুদ্ধজাহাজ এবং প্রায় ২০০ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত হয় প্রায় ২৪০০ মার্কিনি। ঘটে যায় ‘পার্ল হার্বার ট্রাজেডি’। ইতিহাস বলে, মার্কিনিরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েছিল। তাদের যুদ্ধে ঠেলে দেয়া হয়। এর পরের পরিণতি কি তা সবারই জানা। মূল কথা একটিই, যুদ্ধ কোন শান্তি-ই বহন করে না, বইয়ে দেয় রক্তগঙ্গা। কিন্তু সে সংগ্রাম কিংবা যুদ্ধ যদি হয় মুক্তি সংগ্রাম? মুক্তির সংগ্রাম কখনোই ঠেকিয়ে রাখা যায় না। যায় না গণঅধিকার দমিয়ে রাখতে। যারা তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত একটি প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ দেখেছেন তারা বলতে পারবেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কতটা গণহত্যামূলক ছিল। কিভাবে বাঙালি জাতির মেধা-মননকে ধ্বংস করার হীন চক্রান্ত- করা হয়েছিল। ‘মুক্তির গান’ দলিল চিত্রটির প্রায় সবটুকু ফুটেজই বিদেশী সাংবাদিকদের দ্বারা ধারণকৃত। তারা এগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে রেকর্ড করে রেখেছিলেন, তা কেউ বলতে পারবে না। যারা এই নরহত্যা করেছিল আর যারা এদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা করেছিল এরা উভয়েই যে ঘাতক, তা তো সেসব প্রামাণ্যচিত্রই প্রমাণ করছে। সে সময়ের পত্রপত্রিকা, তাদের বক্তৃতা-বিবৃতি, ষড়যন্ত্রের নীলনকশার নমুনা সবই সংরক্ষিত আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুনামগঞ্জের মাহমুদ আলীর মতো দু-চারজন রাঘব পাক সমর্থক, পাকিস্তানে চলে গেলেও অধিকাংশই থেকে যায় এই বাংলায়। এরা এখানে থেকেই নানাভাবে তাদের নখর শাণ দিতে থাকে। বিভিন্ন তথ্য এবং দলিল প্রমাণ দেয় ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর আগ পর্যন্ত- প্রায় বাইশ হাজারেরও বেশি রাজাকার, দালাল, আলবদর, আল সামশ, যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ছিল। পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলো দশ বছরের মধ্যেই প্রায় বিনা বিচারে এদের ছেড়ে দেয়। রাঘববোয়ালরা বিভিন্নভাবে ক্ষমতাসীনদের আনুকূল্য পেয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে থাকে। এই ধারাবাহিকতা চলেছে গেল ছত্রিশ বছর ধরে। এখন এদের অনেকেই মনে করছে, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটা কে না জানে, যদি কেউ খুনি হয় এবং তা প্রমাণ করা যায়, তবে যে কোন বয়সের খুনিকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব। যেমনটি এখনও হচ্ছে নাৎসিদের বিষয়ে। পঁচাত্তরের নিচের বয়সী খুনি নাৎসি খুঁজে পেলে তাকেই জেলে ঢোকানো হচ্ছে। পঁচাত্তর বয়সোর্ধ্বদের বয়কট করা হচ্ছে সামাজিকভাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে। বাংলাদেশে আজ ঘাতকদের বিচারের যে দাবি উঠেছে, তা ঐতিহাসিকভাবেই যৌক্তিক। বিএনপি, আওয়ামী লীগ যা পারেনি কিংবা করেনি তা অন্য কেউ করতে পারবে না, এমন কোন কথা নেই। যারা বাংলাদেশে আল্লাহর শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল, তাদের দুর্নীতিবাজ এমপিরা ধরা পড়ে প্রমাণ করেছে সবই ছিল নেহায়েত হিপোক্র্যাসি। কেউ ভাবেনি একসময়ের শীর্ষরা অন্তরীণ হবেন। তাও ঘটেছে বাংলাদেশে। এখন যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুঙ্গে, তখনও একটি মহল নানা ধুয়া তুলে এদের বাঁচাতে তৎপর। এই রক্ষাকারী-মুখোশধারী কারা, এদেরও চিহ্নিত করতে হবে। ঘাতকরা আইনের মুখোমুখি হবে, সেটাই প্রধান বিষয়। প্রচলিত আইনে হোক, আর বিশ্বে জেনোসাইড বিচার আইনের বিভিন্ন দৃষ্টান্ত-মূলক আইনেই হোক, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দোষীদের বিচার করা উচিত। কোন ষড়যন্ত্রকারী, খুনি, ধর্ষক কখনোই একটি জাতির মিত্র নয়। হতে পারে না। সে কথাই তারা প্রমাণ করেছে। সেক্টর কমান্ডাররা সজাগ হয়েছেন। জাতি আজ এক দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক অসাধ্য সাধন করেছে; যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিলে জাতি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। হত্যাপরাধ কখনও তামাদি হয় না। একটি ঐতিহাসিক কাজের শুভ সূচনা যে কোন সময়ই হতে পারে । ------------------------------------------------------ (উপ সম্পাদকীয়।। দৈনিক যুগান্তর/ ঢাকা/ ১১নভেম্বর ২০০৭) সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:০৪
false
mk
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং দেশ ও জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় আ্ওয়ামীলীগ এগিয়ে রাজনীতি একটি সামাজিক কার্যক্রম যার মাধ্যমে দেশ ও সমাজ শাসিত এবং পরিচালিত হয়। তাই সকল রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ দেশ ও দশের মঙ্গল করা। যাঁরা রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, আচার-আচরণ, মন-মনন ও মানসিকতাসহ সবকিছু সে আঙ্গিকেই গড়ে ওঠা উচিৎ। একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশ এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারা পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর দেশ ও দশের মঙ্গল এবং সুখ-শান্তির জন্যে রাজনৈতিক নেতাদের নিজ দেশ ও বিশ্বমানবতার ভালোর জন্যে নিবেদিতপ্রাণ হওয়া দরকার। মানব সৃষ্টির পর থেকেই অনবরত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সৃষ্টি ও বিকশিত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট একটা সমাজের রাজনৈতিক অবস্থা ও চরিত্র নির্ধারণ করে বিধায় পৃথিবীতে কখনও সামন্তবাদ, কখনও রাজতন্ত্র, কখনও একনায়কতন্ত্র, কখনও সমাজতন্ত্র, কখনও গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন তন্ত্র ও মতামতের বিকাশ ও প্রসার দেখা যায় । তাই বলা যায় যে, একটা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সে দেশের জাতিগঠন প্রক্রিয়াও সংগঠিত হয়। অতএব, জাতিগঠনে দেশ ও সমাজের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটা দেশের রাজনৈতিক চরিত্র যা-ই হোক না কেন, সার্বিক বিবেচনায় তা যদি মানুষের মঙ্গলের জন্যে কাজ করেÑ তাৎক্ষণিক বিচারে সে ব্যবস্থাকে ভালো বলতে হবে এবং তা যদি দেশ ও দশের অমঙ্গলজনক হয়, তবে তাকে অপরাজনীতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। তাই অনেক কিছু করার পরেও ইতিহাসের শেষ বিচার হিটলার, মুসোলিনি কিংবা সাদ্দাম হোসেনকে সাধুবাদ না দিয়ে ধিক্কার দিয়ে থাকে। চূড়ান্ত বিচারে তারা এক দিকে নিজেরা ব্যর্থ হয়েছেন, অন্যদিকে তারা নিজ জাতি ও মানব সভ্যতার জন্যে চরম অপমান আর দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়েছেন।বাংলাদেশেরও একটি রাজনৈতিক চরিত্র আছে। প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা আজকের অবস্থানে এসেছি। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত এ ভূখ- আর্য-অনার্য, হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-মুসলিম তথা বৃহৎ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সকলের সমন্বিত প্রয়াস ও ধ্যান-ধারণায় সমৃদ্ধ একটি অসাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠীর দেশ। বিভিন্ন পরিস্থিতি ও সময়ে এ ধারণার ব্যত্যয় হলেও তা হয়েছে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে এবং অনুকূল পরিবেশ পাওয়ার সাথে সাথে আবার তা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ফিরে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫২’র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে আমাদের জাতিসত্তা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে; যা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা (সকল ধর্মের সমান মর্যাদা), সমাজতন্ত্র (কারও প্রতি বৈষম্য নয়) ও জাতীয়তার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই শেষ বিচারে বলা যায় যে, আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে আছি। একটা দেশে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণ বিকাশ লাভ ও শক্তিশালী হতে অনেক সময় এবং একটা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া চালু থাকা প্রয়োজন। কেননা সেজন্যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের নয় বরং দেশের প্রতিটি অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানসহ আপামর জনসাধারণের মধ্যে একটা ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মন-মানসিকতার সৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন হয়। অথচ আধুনিক যুগের অধিকাংশ সময় আমরা কখনও মোঘল, কখনও ইংরেজ, আবার কখনও পাকিস্তানীদের দ্বারা শাসিত ও শোষিত হয়েছি। ফলশ্র“তিতে আমাদের দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার পরিবেশ পায়নি। তারপরও সময়ের সাথে সাথে আমাদের স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা এবং আন্দোলন জোরদার হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর স্বল্প সময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর থাকলেও তারপর একটা দীর্ঘ সময় আমাদের সামরিক কিংবা প্রায় সামরিক ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হয়েছে। ১৯৯১ সালে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসলেও সমাজের সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক মানসিকতা ও চর্চার অভাব দৃশ্যমান; যা আমাদের দেশ ও সমাজের রাজনৈতিকবাস্তবতাও বটে। আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যেও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব বিদ্যমান। শেষ বিচারে নেতার কথাই চূড়ান্ত এবং সেভাবেই দল ও সরকার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। ফলশ্রুতিতে আমাদের রাজনীতিতে ব্যক্তিপূজা আর পরিবারতন্ত্রের প্রবল উপস্থিতি লক্ষণীয়। যেকোনো জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনের সময় বিশেষ বিশেষ পরিবার থেকে মোট প্রার্থীর সংখ্যা দেখলেই ধারণাটি পরিষ্কার হবে। তাই অনেকের সাথে একমত হয়েই বলতে হয় যে, আমাদের দেশে গণতন্ত্র এখনও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ আমাদের গণতন্ত্র এখনও ভঙ্গুর অবস্থায় বা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। তাই আমাদেরকে প্রথমে গণতন্ত্র অনুশীলন নিরাপদ করতে হবে। গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রটি যাতে সঠিক হয় এবং আমরা যাতে একটা উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পেতে পারি, তার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও ধৈর্যের পাশাপাশি প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও সহনশীলতার সাথে কাজ করতে হবে।গণতন্ত্রকে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। গণতন্ত্রের জনক আব্রাহাম লিংকনের মতে উবসড়পৎধপু রং নু ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব; ভড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব; ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব. অর্থাৎ গণতন্ত্র মানুষের এবং মানুষের জন্যে গণতন্ত্রÑ যাকে গণতন্ত্রের মোদ্দাকথা হিসাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। একটি শুদ্ধ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাঁদের ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার, মৌলিক চাহিদাসহ আর্থ-সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দেশ ও সমাজ কর্তৃক সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিশ্রম আর মেধার দ্বারা সকল নাগরিকের ভাগ্য পরিবর্তনের সমান সুযোগ থাকতে হবে। পক্ষান্তরে প্রতিটি মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে হতে হবে গণতন্ত্রমনা। সবাইকে নিজের ও অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও অন্যের প্রতি সহনশীল হতে হবে। সব পরিস্থিতিতে অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সম্মান ও রক্ষা করতে হবে। সবাইকে দেশ ও দশের ভালোমন্দ বুঝতে হবে। সব অবস্থায় দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক আচরণ করতে হবে। দেশ ও সমাজের আচার-আচরণ ও আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আলোচনা-সমালোচনাকে সহজভাবে নিতে হবে। পাশাপাশি যারা সরাসরি রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হবেন, তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ সততা এবং ত্যাগ ও সেবার মানসিকতা থাকতে হবে। তাঁদের শিক্ষা-দীক্ষা, আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা, মানবপ্রেম ও দেশপ্রেম, নেতৃত্বসহ অন্যান্য গুণাবলী হতে হবে প্রশ্নাতীতভাবে উত্তম এবং মানব কল্যাণে নিবেদিত। তাঁদের মধ্যে যাঁরা যত বড় নেতা হবেন, তাঁদের ততোবেশি চিন্তা চেতনায় স্বচ্ছতা, বুদ্ধিমত্তা, সহনশীলতা, উন্নত ভিশন ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। মোদ্দাকথা হল, একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে একজন সাধারণ মানুষ থেকে দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে বিবেকবান ও দায়িত্বশীল এবং অবস্থান অনুযায়ী যোগ্য হতে হবে। আর সব অবস্থায় তাঁদের দেশ ও দশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক চিত্রে আমরা কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও পরিবেশ দেখতে পাই না বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে উল্টোটাই দেখা যায়। বিশ্বের অন্যতম ঐড়সড়মবহবড়ঁং জাতি হয়েও বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা বিভক্ত। অপ্রয়োজনীয় কারণ আর বিতর্ক নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত শক্তিক্ষয় করছি। জাতি যেমন স্বাধীনতার ইতিহাস, জাতিসত্ত্বা ইত্যাদি মৌলিক বিষয় নিয়ে বিভক্ত, আমাদের রাজনীতিও তেমনি বিভিন্ন ধারা-উপধারা এবং বিভিন্ন মূল্যবোধে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে একদিকে আমরা কাক্সিক্ষত রাজনৈতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারছি না, অন্যদিকে আমাদের জাতীয় ঐক্য ও জাতিগঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের অন্যতম কারণ হলো আমাদের দেশের রাজনীতি আর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে নেই। ব্যবসায়ী ও অবসরপ্রাপ্ত আমলাসহ বিভিন্ন পেশা ও মতের মানুষেরা আজ রাজনীতির অঙ্গনকে দখল করেছে। দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন প্রতিষ্ঠান তাদের দখলে। আমাদের সংসদের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যই ব্যাবসায়ী তাতেও কোনো অসুবিধা হতো না, যদি তারা দেশ ও দশের জন্য রাজনীতি করতেন। তাদের অধিকাংশই চিন্তা-চেতনা এবং কর্মকা-ে জনসাধারণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ফলশ্রুতিতে আমাদের রাজনীতি আজ আর মানব সেবা নয় বরং মূলত বাণিজ্যিক হয়ে ওঠেছে। রাজনীতিবিদ, ব্যাবসায়ী আর আমলাদের যোগসাজশে আমাদের রাজনীতি হয়ে পড়েছে হিংসাত্মক ও কলুষিত। তরুণ সমাজের মধ্য থেকে মেধাবীদের আজ আর রাজনীতিতে আসতে দেখা যায় না বলা চলে। তাদের মধ্যে যারা রাজনীতিতে আসেন, তাদের অধিকাংশই উপায়ন্তর না পেয়ে রাজনীতিতে আসেন এবং লাগামহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিসহ সকল ধরনের অনাকাক্সিক্ষত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। তাই শুরু থেকেই আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদদের একটা বড় অংশ ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে যায়। পাশাপাশি আমাদের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ অসুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে হিংসাত্মক মন-মানসিকতা পাচ্ছে; যা সুস্থ ও মানবিক সমাজ গঠন বাধাগ্রস্ত করবে। এ ধারা চলতে থাকলে আগামী দিনে আমাদের রাজনীতিতে মেধা ও নেতৃত্বের শূন্যতা আরো বৃদ্ধি পাবে। আরো পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের সুশীলসমাজ এবং জ্যেষ্ঠ নাগরিকগণ যাদের সমাজের বিবেক হিসেবে কাজ করার কথা, তারাও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপসকামিতা এবং রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলশ্রুতিতে যখন তাঁরা দেশ পরিচালনা করেছেন, তখন ক্ষুদ্র ব্যক্তি, পরিবার ও শ্রেণিস্বার্থের উপরে উঠে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং শেষ বয়সে এসে পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক পরামর্শ ও নির্দেশনা দিতে পারছেন না। এসব কারণে বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারি ও আধা সরকারি সংস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতার পরিবর্তে দলীয় অসুস্থ রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। মাঝে মাঝে তাঁদের দু’একজনকে ভাল কিছু করার জন্যে হুঙ্কার দিতে দেখা গেলেও তা কখনও যৌত্তিক পর্যায়ে নিতে পারেননি। পাশাপাশি আমাদের সমাজে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, ধর্মীয় উন্মাদনা, বিচ্ছিন্নতাবাদ, অতি বিপ্লববাদ, উগ্রবাদ ইত্যাদি উপাদানের উপস্থিতি বিদ্যমান এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক অনুকূল পরিবেশে তা যে কোনো সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই এ সকল অগণতান্ত্রিক এবং অপরাজনৈতিক সংস্কৃতিকে এখনই কঠোরভাবে দমন ও সংশোধন না করলে ভবিষ্যতে তা মহীরুহ হয়ে দেশ ও সমাজের সমূহ ক্ষতি করতে পারে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সুশীল সমাজসহ দায়িত্বশীল সকলকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। চলবে..
false
ij
মংগোল সম্রাট হালাকু খান কি দ্বিতীয় অশোক-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন_ মংগোল সম্রাট হালাকু খান। সময়কাল ১২১৭ থেকে ১২৬৫ খ্রিস্টাব্দ। হালাকু খান এর পিতামহ ছিলেন মংগোল সাম্রাজ্যের স্থপতি সম্রাট চেঙ্গিস খান; বাবার নাম তোলুই, মায়ের নাম সোরঘাগতানি বেইকি। হালাকু খান খ্রিস্টানদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। হালাকু খান-এর মা ছিলেন নেস্টোরিয়ান খ্রিস্টান এমন কী হালাকু খান-এর একজন সেনাপতি এবং অন্যতম প্রিয় স্ত্রী ডোকুজ খাতুন ছিলেন খ্রিস্টান । তবে একটি সূত্র থেকে জানা যায় মৃত্যুর পূর্বে হালাকু খান বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন। হালাকু খান রক্তপাতের জন্য কুখ্যাত। তারই পরিচালিত অভিযানে ১২৫৭ সালে ধ্বংস হয়েছে বাগদাদ, ১২৬০ সালে ধ্বংস হয়েছে সিরিয়া। এরকম একজন রক্তপিপাসু সম্রাট মৃত্যুর পূর্বে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করলেন! এ জন্যই প্রশ্ন ওঠে মংগোল সম্রাট হালাকু খান কি দ্বিতীয় অশোক-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন? প্রাচীন ভারতের মানচিত্র। প্রাচীন ভারতেরই এক সম্রাট যুদ্ধের তান্ডব দেখে ব্যথিত হয়ে উঠেছিলেন শান্তিবাদী বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। অশোকের সময়কাল অবশ্য খ্রিস্টপূর্ব ৩০৪ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৩২... সম্রাট অশোক। প্রাচীন ভারতের মৌর্যবংশের সম্রাট ছিলেন অশোক । শাসন করেছেন খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ থেকে ২৬৯ খ্রিস্টপূর্ব । আমরা ২৬৫-২৬৪ খ্রিস্টপূর্বে সংঘটিত কলিঙ্গ যুদ্ধ কথা জানি। কলিঙ্গর অবস্থান ছিল বর্তমানকালের উড়িষ্যায়। যে যুদ্ধের রক্তপাত দেখে হতাশ হয়ে অশোক শান্তিবাদী বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন এবং আর কোনও যুদ্ধে না-জড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন।মংগোল সম্রাট হালাকু খান এর জীবনেও তেমনই এক মানবিক ঘটনা ঘটতে দেখি। মংগোলিয়ার মানচিত্র। এখানেই উত্থান হয়েছিল চেঙ্গিস খান হালাকু খান প্রমূখ রক্তলোলুপ মংগোল সম্রাটদের। ১২৫৫ সালে মংগোলরা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া অভিমূখে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। অনিবার্যভাবেই সে অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন হালাকু খান। হালাকু খানের সফল নেতৃত্বে মংগোল সৈন্যরা ১২৫৭ সালে বাগদাদ ধ্বংস করে, এবং এর ৩ বছর পর ১২৬০ সালে সিরিয়া ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সেই সময়ে মিশর শাসন করছিল বাহরি মামলুক সুলতানরা। মিশরও পদানত করেন হালাকু খান। এভাবে মিশর থেকে মংগোলিয়া অব্দি এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। হালাকু খান মারা যান ১২৬৫ সালে। লেক উরমিয়া। উত্তর-পশ্চিম ইরানে অবস্থিত একটি লবনহ্রদ। এই হ্রদের একটি দ্বীপেই হালাকু খানের সমাধি রয়েছে। হালাকু খান এর নেতৃত্বে সামরিক অভিযানের সময় অসংখ্য মৃত্যু ও প্রচুর রক্তপাত অনুমান করা যায়। মনে প্রশ্ন জাগেএ বিষয়ে হালাকু খান এর কী রকম অনুভূতি হয়েছিল। তার কি বিবমিষা জাগ্রত হয়েছিল? তার মনে কি দয়া ও করুনার উদয় হয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর হয়ত পাওয়া যাবে না। তবে তিনি মৃত্যুর পূর্বে হালাকুর অন্যতম প্রিয় স্ত্রী ডোকুজ খাতুন এর প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন এরকম একটি তথ্য পাওয়া যায়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ... Hulagu told the Armenian historian Vardan Arewelc'i in 1264 that he had been a Christian since birth. It is recorded however that he was a Buddhist. as he neared his death, against the will of his Christian wife Dokuz Khatun. হালাকু এখনও রক্তপাতের প্রতীক। অথচ তাঁর শেষ জীবনের চিন্তার মানবিক বাঁক আজও অনালোচিত! ২৬৫-২৬৪ খ্রিস্টপূর্বে সংঘটিত কলিঙ্গ যুদ্ধের পর হতাশ হয়ে অশোক শান্তিবাদী বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন এবং আর কোনও যুদ্ধে না-জড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন। হালাকু খানও কি অভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিলেন? তবে তিনি হয়ত বৃহদকার মংগোল সাম্রাজ্যের স্বার্থেই যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নেননি। বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করাটা ছিল তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এমন তো হতেই পারে হালাকু খান রক্তপাতের ওপর বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছিলেন, বিবেকের তাড়নায় গ্রহন করেছিলেন শান্তিবাদী বৌদ্ধধর্ম। কাজেই এ প্রশ্ন উঠতেই পারে ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে মংগোল সম্রাট হালাকু খান কি দ্বিতীয় অশোক-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন? বুদ্ধ। যিনি বলেছিলেন ... Even death is not to be feared by one who has lived wisely. সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১০ দুপুর ২:১৫
false
rg
অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!!! আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার উনিশতম দিন। আজকে বইমেলায় অনেক বইপ্রেমীকে বই কিনতে দেখেছি। যা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। বইমেলায় ঢুকে আজ শুরুতেই দিব্যপ্রকাশের সামনে পেলাম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের ভাইকে। দিব্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশ পেয়েছে সাবের ভাই'র নতুন উপন্যাস 'এই কাহিনী শেষ হয়নি'। সাবের ভাই'র সাথে আড্ডা মেরে গেলাম বিদ্যাপ্রকাশের সামনে। বিদ্যাপ্রকাশের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলাম জনপ্রিয় মনোবৈজ্ঞানিক লেখক মোহিত কামালের সঙ্গে। মোহিত ভাই পাঠকদের এক আশ্চার্য জাদুতে মুগ্ধ করেন। মোহিত ভাই'র কোনো বই যে পাঠক একবার পড়েন, সে তার পরবর্তী বইগুলো এসে কেনেন। মোহিত ভাই'র কাছে সেই রহস্যের দু'একটা শুনে খুব মুগ্ধ হচ্ছিলাম। আর মোহিত ভাই'র ভক্তদের সঙ্গে তাঁর প্রয়োগ করা কৌশল শেখার চেষ্টা করছিলাম। এ বছর বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত মোহিত কামালের উপন্যাস 'তবুও বাঁধন' এবারের বইমেলায় বেস্ট সেলার তালিকার অন্যতম একটি বই। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী দেলোয়ার রিপন। বইমেলায় এলোমেলা ঘুরে ঘুরে বইপ্রেমীদের বই কেনা দেখছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। একসময় গেলাম জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির স্টলে। সেখানে জাকির হোসেন ভাই তৃষ্ণা মেটালেন। একুশের বইমেলায় এবার জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির একটি স্টল আছে। বলা যায় এবারের বইমেলার মাতুব্বর প্রকাশকদের এটা একটি অানুষ্ঠানিক অফিস। জাকির ভাই'র কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম, বইমেলায় লেখকদের বসার জন্য তাঁরা কী ব্যবস্থা আদায় করেছেন বাংলা একাডেমি থেকে? বইমেলায় বইপ্রেমীদের জন্য পানি খাবারের ব্যবস্থা নাই কেন? বইমেলায় একটি স্টল খুঁজে পাবার জন্য বইমেলায় কোনো সাইনবোর্ড নেই কেন? জাকির ভাই কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি অন্যপ্রকাশের প্রকাশক ও লেখক-নির্মাতা মাজহারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পাঞ্জেরী প্রকাশনার প্রকাশক কামরুল হাসান শায়ক ভাইকে আমি এসব প্রশ্নের জবাব পেতে মেলায় অনেক খুঁজেছি। কিন্তু না পেয়ে পরে উদ্যান থেকে এপারে এসে একাডেমিতে গিয়ে উত্তরাধিকার কার্যালয়ে গিয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক কবি সরকার আমিনের রুমে গিয়ে আবার আড্ডায় মাতলাম। আমার সঙ্গে ছিল দুই থিয়েটারকর্মী ও অভিনেতা কাজী ফয়সাল ও ইকতারুল ইসলাম। আমিন ভাই নিজ হাতে আমাদের কফি বানিয়ে আপ্পায়ন করলেন। কিছুক্ষণ পর আমাদের আড্ডায় শরিক হলেন প্রথম কানাডা প্রবাসী কবি সাদ কামালী ভাই ও পরে ডক্টর অনু হোসেন। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে আমার বসনিয়ার যুদ্ধের উপর যে ডকু ফিকশন 'বসনা' প্রকাশ পেয়েছে, সেটি সাদ ভাই নাড়াচড়া করতে করতে প্রেমে পড়লেন। সাদ ভাই 'বসনা' কিনতে খুব আগ্রহী। আমরা চা-সিগারেটের টাকা বের করার জন্য সাদ ভাইকে বললাম, এই কপিটা আপনি গায়ের মূল্যে কিনলে আমাদের একশো টাকা লাভ হবে। নতুবা আপনাকে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে কষ্ট করে সংগ্রহ করতে হবে। সাদ ভাই গাজীপুর থেকে ফেরার পথে টঙ্গীতে একটা মনোরম কফি হাউজে আড্ডা মারার পর বইমেলায় এসেছেন। ঢাকার রাস্তার জ্যামের ধক্কলে সাদ ভাই তখন কিছুটা বিধ্বস্ত! তাই আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আমাদের নগদ একশো টাকা বাড়তি দিয়ে 'বসনা' কিনলেন। আমিন ভাই অলরেডি 'বসনা' ৬০ পৃষ্ঠা পড়েছেন। আমিন ভাই বললেন, সাম্প্রতিক সময়ে একটানা এত পৃষ্ঠা পড়ার এটা একটা রেকর্ড। আমিন ভাই'র আমার 'বসনা' ভালো লাগছে জেনে খুব খুশি হলাম। অনু ভাইও 'বসনা' কেনার আগ্রহ দেখালেন। একাডেমি থেকে নিচে এসে লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গনে বহেড়াতলায় আড্ডা দিলাম কবি ওবায়েদ আকাশের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার নিয়মিত বন্ধুদেরও পেয়ে গেলাম সেখানে। তরুণ কবি ও আর্টিস্ট সাদি তাইফ দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে লিখছেন কাব্যগ্রন্থ 'পাখিশাস্ত্র'। প্রায় হাজার পৃষ্ঠার বই পাখিশাস্ত্রের বিশেষত্ব হলো বইতে সাদি নিজের আঁকা পেইন্টিং দিয়ে সুন্দর অলংকরণ করেছেন। 'পাখিশাস্ত্র' এবারের বইমেলায় সবচেয়ে বড় ভলিউমের কাব্যগ্রন্থ। সাদি যখন বইটি হাতে দিলেন, বইয়ের ভেতরটা দেখেই প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। আহা এমন একটি বই লেখার স্বপ্ন যে কোনো তরুণ কবি'র জন্য সত্যি সত্যি একটা স্বপ্ন। সাদি সেই স্বপ্ন সফল করে দেখিয়েছেন। 'পাখিশাস্ত্র'-এ ফটোগ্রাফিও আছে। তরুণ ফটোগ্রাফার হোসাইন আতাহার সূর্য'র অনেক ফটোগ্রাফি আছে 'পাখিশাস্ত্র'-এ। অভিনন্দন সাদি তাইফ। আজকের আড্ডায় ছিলেন কবি মাহমুদুল হাসান মাসুম, কবি শাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি ও দ্রষ্টব্য সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি মাহবুব আলম, শিল্পী শতাব্দী ভব, কবি অহো নওরোজ, ড. মাসুদুজ্জামান, অনুবাদক সোহরাব সুমন, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি জুয়েল মোস্তাফিজ, কবি মামুন খান, কবি আসমা বিথী, কবি স্বপন নাথ, কবি বদরুল হায়দার, কবি আলমগীর রেজা চৌধুরী, কবি শাখাওয়াত টিপু, কবি তানিম কবির, চিৎকার ব্যান্ডের শিল্পী পদ্ম, সাংবাদিক-লেখক রওশন ঝুনু, কবি অতনু তিয়াস, কবি রনি অধিকারী, কবি সোহাগ সিদ্দিকী, কবি অনিকেত শামীম, কবি মনির ইউসুফ, চলচ্চিত্র নির্মাতা নিয়াজ মাহমুদ প্রমুখ। এছাড়া নিয়মিত যাদের সঙ্গে দেখা ও কুশল বিনিময় হয় বিপ্লবী ইফতেখার আহমেদ বাবু, কবি অনার্য আদিম, শতাব্দী সানজানা, জ্যোতি, ইভা, উপমাসহ অনেকেই ছিল। আজ নিয়ে দু'দিন কবি নীল সাধু বইমেলায় অনুপস্থিত। সাধুদাকে খুব মিস করেছি। গতকাল তুলা ভাবী এসেছিলেন, আজ তুলা ভাবীও মালি দিছেন। বইমেলা থেকে বের হবার একটু আগে জানতে পেলাম একুশের বইমেলায় শিল্পী শতাব্দী ভব'র লেখা 'ভব'র চটি' বইটি, যেটা গত বছরের বই, প্রকাশ করেছিল পাললিক সৌরভ, সেটি একাডেমি'র মিডিয়া সেন্টার থেকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি নিয়ে আমি বাংলা একাডেমি কর্মকর্তা কবি হামীম কামরুল হককে জিজ্ঞেস করেছি। হামীম বললেন, ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো বই নিষিদ্ধ ঘোষণার বিপক্ষে আমি। আমি জানি না কী কারণে 'ভব'র চটি' নিষিদ্ধ করেছে। তবে শিল্পী শতাব্দী ভব জানালেন, একাডেমি থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশের চিঠি তিনি পাননি। শতাব্দী ভব এমনিতে বিপ্লবী শিল্পী। গত বছর থেকে প্রকাশিত লেখক। কিন্তু ভব'র চটি' গত বছরের বই হলেও এবার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটি, আমার কাছেও ক্লিয়ার না। তবে পাঠকদের জন্য বলতে পারি, 'ভব'র চটি' একুশের বইমেলায় নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যাবে। বাংলা একাডেমি'র কিছু খামখেয়ালীপনার প্রতিবাদ করলেও আমরা সবসময় একটি নিরাপদ ও সফল অমর একুশে বইমেলা দেখতে চাই। বইপ্রেমীদের হাতে নতুন বই দেখে আজ যেমন আমার ভালো লেগেছে। আশা করি বইমেলার শেষদিন গুলোও এমন বই হাতে সবাই নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন। আমাদের প্রাণের বইমেলাকে আমরাই সফল করে তুলব। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। অমর একুশে বইমেলা সফল হোক। .........................................১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪১
false
ij
একটি জাপানি বাদ্যযন্ত্রের নাম, '‌কোটো' ___ কোটো। জাপানের জাতীয় বাদ্যযন্ত্র। এই তারযন্ত্রটির সুরতরঙ্গ যেন জাপানের সৌম্য সংস্কৃতিরই প্রতীক ; সেই সঙ্গে গভীর স্তব্ধতার প্রেক্ষাপটে যন্ত্রটির সুরধ্বনি কেমন অলীক মনে হয় ... কোটোর ইতিহাসও কম বিচিত্র নয়, য়াটসুহাসি কেনগিও নামে সপ্তদশ শতকের একজন অন্ধ সংগীতবিদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় কোটোর ব্যাপক পরিবর্তন হয়ছিল ... জাপানের মানচিত্র । বিশ্বে জাপানই সম্ভবত একমাত্র দেশ যে দেশের আধুনিক ইলেকট্রনিক গেজেটস্ আর হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপকরণ বিশ্ববাসীকে সমানভাবে আকর্ষন করে ...একটি লেটেষ্ট মডেলের সনি ভায়ো ল্যাপটপ আর জেন উপাসনালয়ের আকর্ষন আজও বিশ্ববাসীর সমান তীব্র ... ফুজি পাহাড়ের ছবি; ঐ পাহাড় শীর্ষের সংলগ্ন স্তব্ধতাই যেন কোটোর প্রেক্ষাপট ...জাপানে কখনও কখনও কোটোকে বলা হয় সো। যাই হোক। বাদ্যযন্ত্র কোটো কে আমরা আজ যেমন দেখছি- বরাবরই এটি ঠিক এরকম ছিল না, থাকার কথাও না। খ্রিস্টীয় ৫ম শতক এর প্রাথমিক রূপটির কথা জানা যায় । যন্ত্রটির আদিরূপ চিন থেকে জাপানে আসে খ্রিষ্টীয় ৭ম/৮ম শতকে। তখন এটির তার ছিল ৫টি; পরে হয় ৭টি। অস্টম শতকের শেষের দিকে তারের সংখ্যা হয় ১২ টি । কোটো। আধুনিক কোটোর উদ্ভব বাদযন্ত্র গাকুসু নামে একটি থেকে। এটি ছিল মূলত দরবারি বাদ্যযন্ত্র। জাপানজুড়ে অভিজাত মহলের রোমান্টিক বাদ্যযন্ত্র হিসেবে কোটো সমাদৃত। এর একক বাদনকে বলে সোকিয়োকু। ষোল শতক থেকে জাপানে কোটোর ইতিহাস পরিস্ফুট হয়ে উঠতে থাকে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা কোটো বাজাতেন। সপ্তদশ শতকের বিশিষ্ট সংগীতাচার্য য়াটসুহাসি কেনগিওর (১৬১৪-১৬৮৫) নাম আগেই বলেছি। কেনগিও কোটোর সুর করার (টিউনিং) পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। ফলে সপ্তদশ শতকে কোটোর যেন নবজন্ম হয়। য়াটসুহাসি কেনগিও জাপানে ‘আধুনিক কোটোর জনক’ বলে অবহিত করা হয়। কোটো। আরেক জন অন্ধ মিউজিশিয়ান মিচিও মিয়াগি (১৮৯৪-১৯৫৬) কোটোর বিকাশে গভীর অবদান রাখেন। উনিশ শতকেই জাপানে ইউরোপীয় ভাবধারা অনুপ্রবেশ করে।মিচিও মিয়াগিই প্রথম পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কোটো সংগীতের ফিউশন করেন। পশ্চিমে প্রভাবে যখন জাপানি লোকসংগীত হুমকির মুখে পড়েছিল বলতে গেলে মিচিও মিয়াগির একক প্রচেষ্টায় কোটো টিকে থাকে। মিয়াগি ১৭ তারের বাস কোটো উদ্ভব করেছিলেন এবং এর বাদন শৈলীও উদ্ভব করেছিলেন। কোটো। কোটোর দৈর্ঘ্য ১৮০ সেন্টিমিটার। এটি কিরি কাঠে তৈরি হয়। কিরি কাঠ পাওয়া যায় পাওলওনিয়া টোমেনটোসা গাছ থেকে। তার তৈরি হয় প্লাসটিক দিয়ে, কখনও রেশম এর। সাধারনত কোটোর তার থাকে ১৩ টি, সেই সঙ্গে থাকে পরিবর্তনশীল ব্রিজ। এসব পরিবর্তনশীল ব্রিজ সরিয়ে তারের সুর করতে হয়; ব্রিজ কে বলে জি; এটি তৈরি হয় হাতির দাঁতে। মধ্যমা, বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী -এই তিনটি আঙুলের পিক (হাওয়াইন গিটারের মতো) পরে কোটো বাজাতে হয় । কোটো। একক পরিবেশনা। মনে থাকার কথা কোটোর একক বাদনকে বলে সোকিয়োকু।কোটো। সমবেত পরিবেশনাকোটো। একক পরিবেশনা১৭ তারের বাস কোটোউৎসর্গ: নতুন রাজা।
false
mk
জঙ্গি সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে হবে পত্রিকায় এসেছে যে, পুলিশের চেয়ে জঙ্গিদের প্রযুক্তি ক্ষমতা অনেক বেশি। যে কোনো দৃষ্টিভঙ্গিতে হোক জঙ্গিরা রুটিন মাফিক নির্দোষ মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে। আর আইএসের নামে দায় স্বীকারের বিবৃতি দিচ্ছে। সরকারের যত আন্তরিকতাই থাক না কেন, জঙ্গিরা অনায়াসে তাদের হত্যার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা পালাতে সক্ষম হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে জঙ্গিরা দিন দিন অথর্ব প্রমাণ করে যাচ্ছে। এটা তো খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় যে, জঙ্গিদের ভয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি বুদ্ধিজীবী, প্রতিটি মুক্ত চিন্তার মানুষ, প্রতিটি যুক্তিবাদী সৃজনশীল মানুষ ভয়ে, আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কখন ঘাড়ের ওপর চাপাতি এসে পড়বে, গর্দান কেটে ফালাফালা করে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে, মোটরসাইকেলে উধাও হয়ে যাবে, এমন রক্তাক্ত দুঃস্বপ্নে পেয়ে বসেছে মুক্তচিন্তার মানুষদের।যে দেশে মৌলবাদী জঙ্গিদের ভয়ে মুক্তির চর্চা বন্ধ হয়ে যায়, মননশীল ব্যক্তিদের মনে ও মননে ভীতি প্রবেশ করে তাও হত্যার ভীতি তাহলে সেই দেশে আগাছার জন্ম হবে; দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিন্তাশীলদের জন্ম হবে না।বাংলাদেশের সোনালি ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ছি এ কারণে যে, স্বাধীন চিন্তাশক্তির ওপর মারাত্মক আঘাত হানা হচ্ছে। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান ‘রাষ্ট্রধর্ম’ নামক একটি পক্ষপাতমূলক আইনে খণ্ডিত হয়ে আছে। চারদিকে মৌলবাদের হুমকি প্রখর হয়ে উঠেছে। পত্রিকায় দেখেছি একটি ধর্মভিত্তিক দল সরকারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, ‘অবিলম্বে ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন বাতিল ও বিতর্কিত সেক্যুলার পাঠ্যসূচি সংশোধন করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।’ (আমার সংবাদ-২৫/০৪/১৬)।এই হুমকি শুধু সরকারের প্রতি নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, সভ্যতার প্রতি। বাঙালি একটি সভ্য জাতির নাম। বাঙালি কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম নয়। মোল্লা ওমর, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, লাদেন এদের মতো রক্তপিপাসু নরদানবের দর্শন ভিত্তি করে বাঙালি জাতি গড়ে ওঠেনি। বাঙালি দর্শন সমন্বয়বাদী, বহুত্ববাদী, লোকায়ত দর্শন। এই দর্শনের ওপর ক্রমাগত সেই পাকিস্তান আমলের মতো বাঙালিত্ব বিরোধী অপশক্তি অন্ধকারের আড়াল থেকে অস্ত্রাঘাত করছে। যেভাবে বাঙালি বিদ্বানদের চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, এমন নরহত্যা কোনো সভ্য দর্শন হতে পারে না। হিংস্রতাকে সভ্যতা বলে না। মানব ধর্মকে যারা মূল্য দেয় না তারা মানব হত্যার ধর্মসাধক। এতে সন্দেহ কী? মানুষ হত্যা করে আইএসের নাম ব্যবহার করছে, তাহলে বুঝুন আইএস কত ভয়ঙ্কর মানববিধ্বংসী, রক্তপিপাসু, হিংস্র-দানবীয় সংগঠন। আইএস গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে গোরস্থানে পরিণত করেছে। শ্মশান- গোরস্থানের দর্শন তো পিশাচের দর্শন। মানুষের লাশের ওপর যারা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা নরমুণ্ডুধারী কাপালিক হতে পারে কিন্তু মানুষ হতে পারে না। আর যারা মানুষ নয় তাদের আবার ধর্ম কি? যাদেরই চিন্তা থেকে মানবতার স্খলন ঘটেছে, তারাই নরমাংসখেকো হয়েছে। হিটলার, মুসোলিনি, আইয়ুব, ইয়াহিয়া, টিক্কাখান, মওদুদী, গোলাম আযম, নিজামী এরা নরমাংস খেকো। এ কথা ভাবতেও শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে যে আইএস ও বোকাহারামের হাতে কত নারী, কত শিশু, কত মানুষ জীবন দিয়েছে। সেই আইএসের দোহাই দিচ্ছে এ দেশের জঙ্গিরা। তাহলে জঙ্গিবাদ হচ্ছে হত্যা আর খুনের দর্শন, মানুষের দর্শন নয়। তেমনি জঙ্গিবাদও ধর্ম নয়। সাম্প্রদায়িকতা যেমন ধর্ম নয়, কোনো যুক্তিতেই পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করা যায় না।কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে সরকার জঙ্গিদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। জঙ্গিরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তাদের নেটওয়ার্ক বিশাল, তাদের টার্গেট অব্যর্থ, তারা সমাজে একটা নীরব সমর্থন পাচ্ছে। তারা বোধ করি যাদের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকে, তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে তারা বিধর্মী, নাস্তিক, মুরতাদ হত্যা করে পরকালের ছওয়াবের কাজ করছে। তাদের যারা আশ্রয় দেবে তারাও ছওয়াবের ভাগ পাবে।জঙ্গিবাদবিরোধী চেতনা দেশে ও সমাজে তেমন জেগে ওঠেনি, তাই জঙ্গিরা এক একটা মানুষ খুন করে মানুষেরই মধ্যে আত্মগোপন করতে পারছে। এটা আরো খারাপ কথা যে, নিরস্ত্র সিভিল সমাজ জঙ্গিদের ভয়ে বিপন্ন। জঙ্গিরা সংখ্যালঘুদের, বুদ্ধিজীবীদের, মুক্ত চিন্তার লেখকদের জিম্মি করে ফেলেছে। যে সমাজে হত্যার ভয় ঢুকবে, সে সমাজে মুক্তচিন্তা বন্ধ হয়ে যাবে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা বন্ধ হলে সমাজে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যুক্তির চর্চা না করেও ন্যাশনাল হওয়া যায় কিন্তু মুক্তির চিন্তা না করে র্যা শনাল হওয়া যায় না।বর্তমান সরকারের মধ্যে যতটুকু ছিটাফোঁটা ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা আছে তার গলা টিপে ধরার জন্য চারপাশ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীকে নাস্তিক বলার অর্থ কী? সরকারের ওপর নানা কৌশলে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যেন সরকার সেক্যুলার দর্শনকে উৎসাহিত না করে। সরকার যেন সংখ্যালঘুদের মানবিক গণতান্ত্রিক অধিকার না দেয়। সরকারকে পাকিস্তানপন্থী দর্শনে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে ভয়ঙ্করভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে আঘাত সহ্য করা হবে না।’ এ কথার ভুল অর্থ করে মোল্লারা চাঙা হয়ে উঠেছে। পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িক-ধর্মভিত্তিক করার একটা জোরালো চেষ্টা চলছে। এখনো প্রধানমন্ত্রী আপেক্ষিক দৃষ্টিতে ‘ধর্ম’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। এটি কমন নাউন। এখন সরকারকে এবং বক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে চাপ সৃষ্টি করে কংক্রিট নাউনে আনার চেষ্টা হচ্ছে যেন তিনি বলতে বাধ্য হন, ‘এটা শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ। বাকি আট ভাগ শিয়াল, কুকুর, কীট-পতঙ্গ।’একটি পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে, ভয়াবহ হয়ে উঠেছে অধরা খুনিরা।’ এই পত্রিকা আরো শিরোনাম করেছে, ‘গাইবান্ধায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা; ‘লক্ষীপুরে দুই সহোদরকে গুলি করে হত্যা’, ‘নারায়ণগঞ্জে মসজিদের খাদেমকে কুপিয়ে জখম,’ ‘হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগ।’ একই পত্রিকা বলছে, ‘কিছুদিন আগে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা বান্দরবানে কুপিয়ে হত্যা করা হয় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে। এর রেশ না কাটতেই চলতি মাসেই কুষ্টিয়ায় একই কায়দায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমানকে। কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে সানাউরের সঙ্গে থাকা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামানকে। চলতি বছরের গত পাঁচ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় একই ধরনের ১৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে হিন্দু মঠের পুরোহিত, সাধু, বৌদ্ধ ভিক্ষু, ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান, শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা, পীরের অনুসারী, দর্জি, শিক্ষক, ছাত্র রয়েছেন।’ (আমার সংবাদ-২৭/০৫/১৬)এই হত্যার তালিকায় এলোমেলো চিত্র ভেসে উঠলেও এই তালিকায় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের কোনো লোক নেই। প্রতিদিন এভাবে চাপাতি দিয়ে যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা প্রত্যেকে জঙ্গি তালেবানি চরমপন্থার বাইরের। তারা লোকহিতৈষী, জনপ্রিয়, অজাতশত্রু, সুস্থ-প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ এবং ধর্মসাধক। এই হত্যার দায় সরকারের ওপর পড়ছে। এই হত্যা রাষ্ট্রকে ১৯৭১ সালের ভিত্তি থেকে সরিয়ে ১৯৪৭ সালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার মনস্তাত্তি¡কভাবে হলেও সংকটের মুখে পড়েছে। সরকার রাজনীতির সম্মুখ সমরে জয়ী হয়ে গেরিলা জঙ্গিদের মোকাবেলায় পিছিয়ে আছে। জঙ্গিবাদকে গুরুত্ব দিতে সরকার অনীহা প্রকাশ করছে, এটা ক্ষতির কারণ হবে। শুধু পুলিশ বা বিজিবি, র্যা ব দিয়ে প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের দমন করা সম্ভব হবে না। সরকারের উচিত হবে জঙ্গিদের ব্যাপারে সিরিয়াস হওয়া, তার দলীয় লোকজনকে দিয়ে টিম গঠন করে সক্রিয় ভূমিবা পালন করা। জঙ্গিবাদবিরোধী একটা কমন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা অতি জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করা উচিত হবে। অহমিকা, একরোখামি, অতি আত্মবিশ্বাস, আত্মতৃপ্তি ইত্যাদি খারাপ উপসর্গগুলো সরকারের মেরুদণ্ডে ঘুণ ধরিয়ে দিক, আমরা তা চাই না। জঙ্গি দমনে সরকার সফল হয়েছে কিন্তু গেরিলা জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না সরকার, এটা দুশ্চিন্তার কারণ বৈকি। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগিয়ে তুলবার কাজটা করতে হবে। তাহলে চাপাতির নরদানবরা মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারবে না।মাহমুদুল বাসার : কলাম লেখক, গবেষক। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
false
mk
বাংলা ভাষা ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও উচ্চারণে দেশের নতুন প্রজন্মকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জ্ঞানার্জন ও প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য অন্য ভাষাও শিখতে হবে, তবে তা কোনভাবেই মাতৃভাষাকে ভুলে নয়। মাতৃভাষার জন্য রক্ত দেয়া বা জীবন উৎসর্গ করার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কম দেশই দিতে পেরেছে। তাই মাতৃভাষার মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। আর নিজের মাতৃভাষায় কথা ও শিক্ষা গ্রহণ হৃদয়ে সবচেয়ে বেশি প্রথিত হয়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইংরেজী এ্যাকসেন্টে (উচ্চারণ) বাংলা শব্দ বলার বিচিত্র প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ইদানীং বাংলা বলতে গিয়ে ইংরেজীর এ্যাকসেন্টে বাংলা বলার শব্দ বলার একটা বিচিত্র প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানি না কেন এটা অনেক ছেলে-মেয়ের মাঝে একটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে যেন তাদের মর্যাদাই থাকে না, এমন একেকটা ভাব। ভাষার প্রচলিত ধারা পরিবর্তন করে ‘বাংলিশ’ ভাষায় কথা বলা ঠিক নয়। এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের সরিয়ে আনতে হবে। যখন যেটা বলব সঠিকভাবেই উচ্চারণ করেই বলতে হবে।মঙ্গলবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইংরেজী বাংলা মেশানো ভাষা যেন কেউ না শিখে সেজন্য অভিভাবকসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইদানীং ইংরেজী উচ্চারণে বাংলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে ছেলে-মেয়েদের বের করে আনতে হবে। নিজস্ব কথিত ভাষাও ভাল। তবে প্রচলিত ধারার পরিবর্তন করে ‘বাংলিশ’ ভাষায় কথা বলা ঠিক না।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনেস্কোর ভাষা বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এ্যানভিটা এ্যাবি। বক্তব্য রাখেন ঢাকায় ইউনেস্কোর আবাসিক প্রধান বিট্রেস কালডুন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হাসান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জিনাত ইমতিয়াজ আলী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা শহীদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালী জাতির যা কিছু অর্জন তার সবাই অনেক লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। বারবার আঘাত এসেছে, কিন্তু বাঙালী জাতি কারও কাছে মাথানত করেনি। আর মাতৃভাষার জন্য রক্ত দেয়া বা জীবন উৎসর্গ করার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কম দেশই দিতে পেরেছে। তাই মাতৃভাষার মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। জ্ঞানার্জন ও প্রযুক্তি শিক্ষায় অন্য ভাষাও শেখার প্রয়োজন রয়েছে, তবে কোনভাবেই মাতৃভাষাকে ভুলে গিয়ে নয়।প্রধানমন্ত্রী সারাবিশ্বের ভাষাপ্রেমীদের শুছেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাঙালী জাতির যখন যা কিছু অর্জন তা অনেক ত্যাগের মধ্যদিয়ে, সংগ্রামের মধ্যদিয়েই আমাদের অর্জন করতে হয়েছে। কাজেই সেই অর্জনকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। বাঙালীর একুশ পরিণত হয়েছে সারা পৃথিবীর মানুষের মাতৃভাষা দিবসে। আর বাংলাদেশই একটিমাত্র দেশ, যাদের মাতৃভাষার জন্য অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। মাতৃভাষাকে অর্জন করতে হয়েছে অনেক জীবনের বিনিময়ে। ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬ দফা, গণঅভ্যুত্থান এবং সবশেষে মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা।শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের মাটির সন্তান হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুধু দেশকে স্বাধীনই করেননি, স্বাধীন দেশের সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এভাবে আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এভাবে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেননি। আশেপাশের দেশে জন্ম হয়েছে। এ কারণে তাদের আমাদের মাতৃভাষার প্রতি কোন টান ছিল না। একমাত্র মাটির সন্তান হিসেবে আমরাই এদেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় সকল গণআন্দোলনের পতাকাবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফজলুল হক হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ, তমুদ্দীন মজলিস এবং আরও কয়েকটি ছাত্র সংগঠন মিলে সর্বদলীয় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে ‘বাংলাভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করে ধর্মঘট ডাকা হয় এবং সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ জনগণকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য সমগ্র দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করে। ধর্মঘট চলাকালে বঙ্গবন্ধুসহ অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। সাধারণ ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৫ মার্চ বন্দীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পাকিস্তানের যে শাসনতন্ত্র রচিত হয় সেখানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি এবং ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, ৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়া হয়। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল ঠিক তার উল্টো পথে দেশকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী প্রয়াত রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালামের সহযোগিতায় তার সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ‘অমর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রদানের বৃত্তান্তও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের ১৯০টি দেশ এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষার সুরক্ষা বিধানে ভূমিকা রাখার দায়িত্বও এখন আমাদের ওপর অর্পিত। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পৃথিবীর সকল ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে গবেষণা এবং সংরক্ষণ ও চর্চার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানকে নিয়ে এই ইনস্টিটিউট নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচীর মতো এরও নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের কাছে মাতৃভাষার কোন গুরুত্ব ছিল না।তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক ভাষা ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার এখন সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব আমাদের। পৃথিবীর যত মাতৃভাষা আছে তা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণা করা হচ্ছে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষাও সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনেক নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা থাকলেও লেখনি ছিল না। আমরা এবার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা সংবলিত ২৪ হাজার বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। তারা নিজেদের ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে। যারা ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন, তারা এই ইনস্টিটিউট থেকে অনেক সহযোগিতা নিতে পারবেন। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ক্যাটাগরি দুইতে উন্নীত করায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাতৃভাষায় শিক্ষা নেব। কিন্তু অন্য ভাষা শিখব না তা নয়। জ্ঞানার্জন ও উন্নত শিক্ষার জন্য অন্য ভাষাও শিখতে হবে। মাতৃভাষার শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি জ্ঞান অর্জন করা যায়। আমরা অন্য ভাষার বিরোধী নই, অন্য ভাষাও শিখতে হবে তবে মাতৃভাষাকে ভুললে চলবে না। আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় এক অন্যরকম মাধুর্য ও সৌন্দর্য রয়েছে। আর মাতৃভাষার মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে।বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা ঘোষণার জন্য তার সরকারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বিশ্বের দরবারে এ ভাষার গৌরব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সরকার প্রধানের দায়িত্ব লাভ করে আমি নিজেও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিয়মিত বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মধ্যে বাংলা ভাষাভাষির স্থান হচ্ছে ৬ষ্ঠ। সেজন্য জাতিসংঘ যাতে বাংলাকে দাফতরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে তারজন্য জোর প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও সংগ্রামের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাস সারাবিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার। মায়ের ভাষায় কথা বলতে এবং ভাষার অধিকার আদায়ে এতো মানুষ শহীদ হয়েছেন, জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। সেই ইতিহাসও সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৮
false
hm
প্যালিনকে দেখে উত্তেজিত জার্দারি দোষ দেবো না। "হকি-মম" সারাহ প্যালিনকে দেখে আমিই উত্তেজিত বোধ করি। মহিলা স্টুপিড হলেও দেখতে বেশ উষ্ণ, তাই কিছুক্ষণ পর নড়েচড়ে বসতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে একবার এক বন্ধুর সাথে তর্ক হচ্ছিলো, মানুষের ব্রেইনস অ্যাগেইনস্ট লুকস কার্ভ নিয়ে। আমার বক্তব্য ছিলো ব্রেইনস মাল্টিপ্লায়েড বাই লুকস ইকুয়ালস টু আ কনস্ট্যান্ট, হাইপারবোলিক একটা কার্ভ পাওয়া যাবে প্লট করলে, ঠিক যেমন বয়েল-ম্যারিয়ট ল, কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের চাপ আর আয়তনের গুণফল একটি ধ্রুব সংখ্যা। অর্থাৎ, মাগজিক X শারীরিক = ধ্রুবক এইচ মডেল ছবিতে কার্ভটি দেখুন। শারীরিক আবেদনের সাথে তাল মিলিয়ে মাগজিক আবেদন কমছে। বন্ধুটি তর্ক করছিলো যে এর মধ্যে যে কোন একটি ভ্যারিয়েবলের মাথায় একটি ঘাত বসাতে হবে, এবং এই ঘাতের ওপর ভিত্তি করে মানুষের শ্রেণীবিভাগ করা যাবে। ধরা যাক বন্ধুটির নাম চুদির্ভাই, এবং তার নামের আদ্যাক্ষর অনুসারেই সেই এক্সপোনেন্টকে C দিয়ে ভূষিত করা হবে, এক্ষেত্রে, মাগজিকC X শারীরিক = ধ্রুবক সি মডেল ওর ক্ষেত্রে তিনজন ভিন্ন মানুষের জন্যে তিনটি ভিন্ন কার্ভ, যেখানে তিনটি কার্ভের জন্য C এর মান যথাক্রমে ১, ১.২৫ এবং ১.৫। যাই হোক, যা বলতে চাইছিলাম, আমাদের দু'জনের বক্তব্যই কমবেশি এক ছিলো, বন্ধুটির ক্ষেত্রে নুয়্যান্স একটু বেশি যোগ করা হয়েছিলো, এ-ই যা। আমরা দু'জনই বলতে চেয়েছিলাম, সুরৎ ও জিসম খোলতাই হলে আকল কমতে বাধ্য। পাশাপাশি আক্কেলের বাম্পারফলন হলে চেহারাও বিদঘুটে হতে বাধ্য। জলজ্যান্ত সব উদাহরণ সামনে, স্টিফেন হকিংকে দেখুন, ডারউইনকে দেখুন, জর্জ বার্নার্ড শ'কে দেখুন, আমাকে আর আমার বন্ধুটিকে দেখুন! পাশাপাশি দাঁড় করান মেরিলিন মনরোকে। সালমান শাহকে। জিনা লোলোব্রিজিদাকে। কার্ভফিটিং নিয়ে আমাদের তেমন সমস্যা হয়নি। কিছু ব্যতিক্রম থাকবেই, যারা একই সাথে দেখতে দারুণ এবং বুদ্ধিও বাহারী, তারা নিতান্তই চ-বর্গীয় প্রাণী। তাদের হিসাবে না ধরলেও চলে। তো যা বলছিলাম, শুধু তত্ত্ব কপচালেই হবে না, তত্ত্বের প্রয়োগও তো চাই। সারাহ প্যালিনের ঘটনা পড়ে মনে পড়ে গেলো সেই ব্রেইনস ভার্সাস লুকস কার্ভের কথা। মহিলা দেখতে গরম হলেও মাথা ফাঁকা। বিভিন্ন ইন্টারভিউ দেখে মনে হয়েছে বিল মার এর কথাই সত্যি, ম্যাকেইন-প্যালিন জুটি হচ্ছে দ্য ম্যাভেরিক অ্যান্ড দ্য মিল্ফ। আসিফ জার্দারি সারাহ প্যালিনকে দেখে রীতিমতো ক্ষেপে উঠেছে। নিউ ইয়র্কে প্যালিনের সাথে সম্প্রতি সাক্ষাতের পর সে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না। জার্দারির আক্ষরিক মন্তব্যগুলি এমনঃ “You are even more gorgeous in life...” “Now I know why the whole of America is crazy about you” এক ফোটোগ্রাফার যখন দু'জনকে দ্বিতীয়বারের মতো করমর্দন করতে বলেন ছবির খাতিরে, জার্দারি সহাস্যে জানায়, “If he is insisting, I might hug ...” ব্লগার আলতাফ খান জানাচ্ছেন, পাংশু মুখে নিজের স্ত্রীর হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তীব্র শোক জ্ঞাপনের পরপরই জার্দারি ভাইসপ্রেসিডেন্টের পদে রিপাবলিকান প্রার্থী ও আলাস্কার সুন্দরী সারাহ প্যালিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন, এবং পর পর দুইবার তাঁর চোখ-ধাঁধানো রূপের প্রশংসা করেন। শাকির লাখানি ভাবছেন, জার্দারির এই আচরণ ইসলামসম্মত নয়১, আমি ভেবে পাই না, একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট কিভাবে একজন অনাত্মীয়া মহিলাকে জাবড়ে ধরার কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু জার্দারি এমনকি এ-ও বলেছেন যে তাঁর এইড জোরাজুরি করলে তিনি তাঁকে (প্যালিনকে) জড়িয়ে ধরবেন, যেখানে এইড তাঁকে (জার্দারিকে) কেবল করমর্দনের কথা বলেছেন ...। আদনান সিদ্দিকী জানাচ্ছেন, গতকাল সারাহ প্যালিনের সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি এবং সবক'টা দাঁত বার করে দেখিয়েছেন (নিশ্চিত নই সেগুলি খাঁটি কি না, কারণ শোনা যায় জেলে থাকার সময় সেগুলোকে উপড়ে ফেলা হয়েছিলো) ...। ... পুরো সাক্ষাতের সময় জার্দারিকে স্ত্রীর ব্যাপারে কোন শোকপ্রকাশ করতে দেখা যায়নি, যেমনটা তিনি পাকিস্তানের প্রতিটি প্রেস কনফারেন্সে করে থাকেন। ... ইউটিউবের কল্যাণে ভিডিওটা দেখতে পাবেন এখানেই। জার্দারির জন্যে সদুপদেশ দেয়া যেতে পারতো। এরপর এরকম হট ক্যান্ডিডেটদের সাথে সাক্ষাতের আগে আলি সাহাব যেন খাল্লাস হয়ে যান। মাথায় মাল নিয়ে ডিপ্লোম্যাসি না করাই ভালো। আর রিপাবলিকানরা এখন গর্ব করে বলতে পারবে, "লুক অ্যাট হার, শি ইজন্ট ইন দ্য অফিস ইয়েট, অ্যান্ড অলরেডি শি ইজ মেকিং থিংস হার্ড ফর দ্যা প্যাকিস্টানিজ!" ১ হাসতে হাসতে পেটটা ফেটে যাচ্ছে রে ভাই! ছবি সৌজন্য, টিথ ডট কম। তথ্য সৌজন্য, গ্লোবালভয়েসেসঅনলাইন।
false
fe
ক্ষমতার সুফল ও কর্তৃত্বের ভারসাম্যতা ক্ষমতার সুফল ও কর্তৃত্বের ভারসাম্যতা ফকির ইলিয়াস ================================== বেশকিছু ঝুঁকি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার জানে তারা কি করছে। নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে আপাতত তা নিশ্চিত। লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রস্তুতিও; কিন্তু সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে তো? এই সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলে পরিস্খিতি কেমন হতে পারে? সে বিবেচনাটিও রয়েছে সরকারের নজর তালিকায়। বড় দুটি দল নির্বাচনে অংশ নিতে বেঁকে বসলে এরপর পরিস্খিতি কীভাবে সামাল দেয়া হবে? সেই কঠিন প্রশ্নটির জবাব দু’ভাবে দেয়া যায়। প্রথমটি হচ্ছে, গণভোট অনুষ্ঠান করে একটি পছন্দের সরকার বসাবে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন করে ওই দলগুলোর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে তারা। দ্বিতীয় পছন্দের বিষয়টি হবে অনেকটা লোক দেখানো নির্বাচনের মতো। যার গ্রহণযোগ্যতা দেশে-বিদেশে কোথাও হবে না। সংসদ হয়তো হবে ক্ষণস্খায়ী। ফলে প্রথম পছন্দ ‘গণভোটের’ দিকে এগুতে পারে বর্তমান সরকার। কিন্তু এতে কি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং চর্চার পথটি সুগম হবে? একটি বিষয় ক্রমেই খুব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। দুই নেত্রী মুক্তির দাবিতে জনমত ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিএনপির সাবেক কিছু সাংসদ দুই নেত্রীর মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন। এই মুক্তি দাবির তালিকায় বেশ কিছু সাংবাদিকের নামও আমরা দেখছি। এর বিপরীতে বর্তমান সরকার দু’নেত্রীর বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা তদন্ত করার নির্দেশাবলিও দিচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টা আল জাজিরা টিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দু’নেত্রী ট্রুথ কমিশনের কোন সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। এটা খুব স্পষ্ট বর্তমান সরকার দু’নেত্রীকে যে কোন মল্যে রাজনীতি থেকে দরে সরিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। একটি রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে যে কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতেই পারে। কিন্তু তা হওয়া উচিত স্বচ্ছ, হওয়া উচিত জবাবদিহিতামলক। দুই নেত্রীর বিচারের ক্ষেত্রে আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি না। এমন কি কোন কোন ব্যাপারে এমন আচরণ করা হচ্ছে­ যাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক, সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী যেন কারও ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার। বিশেষ করে শেখ হাসিনার কানের চিকিৎসা নিয়ে রীতিমতো দুটি চিকিৎসক পক্ষ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সরকার। যারা শেখ হাসিনার চিকিৎসার সঙ্গে অতীতে বিভিন্নভাবে জড়িত; পরামর্শদাতা ছিলেন তারা বলছেন এক কথা। আর এর বিপরীতে একটি সরকারি চিকিৎসক প্যানেল তৈরি করে তাদের দিয়ে বলানোর চেষ্টা করানো হচ্ছে সরকারি ভাষ্য! চিকিৎসার নামে এই যে নির্মম উপহাস করা হচ্ছে তা সব ধরনের মানবিক বিবেকবোধকেই হরণ করছে। একটি রাষ্ট্রপক্ষের এমন আচরণ অত্যন্ত দু:খ এবং লজ্জাজনক। দুই. শেষ পর্যন্ত ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’ তাদের জাতীয় কনভেনশন করতে পেরেছে। এই কনভেনশনটি করতে গিয়ে ফোরামকে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সেক্টর কমান্ডারদের সরকারের এত ভয় কেন? যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, আজ তারাই স্বাধীন দেশে সাহস নিয়ে দাঁড়াতে পারবেন না? ফোরাম যে দাবিগুলো জানিয়েছে এর অন্যতম দাবি হচ্ছে একাত্তরের গণহত্যার নায়কদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে এবং সে দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ করার জন্য দেশে-বিদেশে অবস্খানরত প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ‘ডাকার সম্মেলন’ শেষ করে দেশে ফেরার পথে লন্ডন সফর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানেও তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বর্তমান সরকারের হাতে সময় কম। তারা এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করতে পারবেন না। কিংবা করবেন না। মোটকথা, বর্তমান সরকার যে সদিচ্ছার অভাব দেখাচ্ছে তা খুবই স্পষ্ট। তাদের সদিচ্ছা বিষয়ে আরও নানা প্রশ্নও তোলা যায়। এর একটি হচ্ছে জরুরি অবস্খা শিথিলের বিষয়টি উপদেষ্টাদের কারও কারও মতে, জরুরি অবস্খা রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। আবার প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনের আগে জরুরি অবস্খা তুলে নেয়া হবে। কিন্তু তা কবে নাগাদ তুলে নেয়া হবে, রাজনৈতিক দলগুলো কতটা মুক্ত পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবে­ সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এখনও পাচ্ছে না জাতি। অথচ পরোক্ষভাবে দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন বিষয় চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এর একটি উদাহরণ আবারও দেয়া যায়। বিদেশী কূটনীতিকদের রীতিনীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। আমরা জানি বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বিষয়েই বিদেশের ইন কিংবা তৎপরতা জড়িত। যেটি সরকারের পক্ষে যাবে­ তার বিরুদ্ধে কিছু বলা হবে না, আর বিপক্ষে গেলেই মৃদু প্রতিবাদ করবে সরকার­ এটা বাংলাদেশে রীতিমতো একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিদেশের সনদ বিএনপি-আওয়ামী লীগ সবাই নিয়েছে এবং নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদত গীতা পাসি জামায়াতের রাজাকার নিজামীর সঙ্গে বৈঠকের পর জামায়াতিরাও মার্কিনি পরশে কিছুটা আনন্দিত হয়েছে বৈকি! জঙ্গি সংগঠন ‘হুজি’কে ‘মারাত্মক’ বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেই ‘হুজি’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক জামায়াতি ইসলামের নিজামীর সঙ্গে বৈঠক করেন গীতা পাসি। এটাকে জামায়াতিরা তো ‘দলের স্বীকৃতি’ বলে ধরে নেবেই। তিন. ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের ভারসাম্যতা রক্ষা প্রসঙ্গে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মণীষী, সদ্যপ্রয়াত শিবনারায়ণ রায়ের একটি কথা এখানে প্রণিধানযোগ্য। শ্রী রায় নিউইয়র্কে এলে তার সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। প্রখর মানবতাবাদী শিরনারায়ণ রায় খুব তীক্ষ কথাবার্তা বলতেন। বিশ্ব রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘বুর্জোয়া শ্রেণীর কাজই হচ্ছে চোরাগোপ্তা রক্ত ঝরিয়ে তা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া। সবচেয়ে দু:খজনক হচ্ছে ক্ষমতা ধরে রাখা কিংবা প্রতিষ্ঠা অর্জনের জন্য তারা যে কোন মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং উস্কানিকে নিজের দরকার মতো প্রশ্রয় দেয়।’ বিশ্বে এমন তালুকদারি আমরা প্রতিদিনই দেখছি। ওয়ান-ইলেভেনের চেতনাধারীরা মার্কিনি মদদপুষ্ট, দুর্জনেরা শুরু থেকেই তা বলে আসছেন। প্রাজ্ঞ সুশীল বলে পরিচিত প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে প্রকৃত মুক্তিদিশা দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে যেতে পারতেন তার সহকর্মী উপদেষ্টামণ্ডলী সঙ্গে পরামর্শ করে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারা রসাতলে নিয়ে গেছে­ তা কারও অজানা নয়। জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফরুজ্জামান বাবর। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ভারত থেকে বন্দি অবস্খায় দেশে ফিরেছে। তার মুখ থেকে নানা কথা শোনা যাচ্ছে প্রায় প্রতি দিন। তা পড়ছি আমরা পত্রপত্রিকায়। গা শিউরে ওঠার মতো সব ভয়াবহ তথ্য দিচ্ছে ইমন! কোন অপরাধের পৃষ্ঠপোষকতা বাকি রেখেছেন বাবর? কি করেননি তিনি? ক্ষমতার সুফল (?) ভোগ করতে এবং করাতে অ হয়ে গিয়েছিলেন বাবর? না হয় মন্ত্রী হয়ে এসে জঘন্যতার পৃষ্ঠপোষকতা তিনি করলেন কিভাবে? জোটের এমন ‘বাবর’রা আরও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর রাজনীতি হাবুডুবু খাচ্ছে কর্তৃত্বের ভারসাম্যতা রক্ষার আলো-আঁধারিতে। ক্ষমতার সুফল ভোগ করবে জনগণ। রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধার মাঝে ক্ষমতার ভারসাম্যতা রক্ষা করে জনগণকে সে সুফল দেয়া সম্ভব নয়। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলে চিহ্নিত করতে না পারলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মতো কঠিনতম কাজ কি করা সম্ভব? বর্তমান ক্ষমতাসীনরা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সঠিক পরিচয়টি দিয়ে যেতে পারলে জাতি খুবই উপকৃত হতো। নিউইয়র্ক, ২৫ মার্চ ২০০৮ -------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ। ২৮ মার্চ ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত । সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০০৮ ভোর ৬:০৭
false
hm
রয়েসয়ে পুরনো লেখা সাধারণত সচলে দিই না, এই লেখাটার কথা বহুদিন পর মনে পড়লো। যাঁরা ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছেন তাঁদের কাছে ক্ষমা চাই। একটি মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনবুলি "অন্যরা যা করে কয়েক বছরে, আমরা তা করেছি কয়েক মাসে"কে পঁচিয়ে লেখা। যাঁরা পড়েননি, তাঁরা একে সত্যকাহিনীর সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। সত্য গল্পের চেয়েও খাইষ্টা। হুঁ, একটু তাড়াহুড়ো করতাম সবকিছুতেই। আজন্ম এই হুড়োহুড়ি আমার। জন্মের পর থেকেই আশেপাশের সবাইকে ব্যস্ত করে ফেলি। ট্যাঁ ট্যাঁ কান্না, গিগিগি হাসি, আর কাঁথা নষ্ট। আপত্তি করেনি কেউ, এ তো স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যদের যা করতে লাগে কয়েক বছর, আমি তা করে ফেলি কয়েক মাসে। হাঁটি, কথা বলি। দিব্যি বড়দের মতো। সবাই একটু নড়েচড়ে বসে। বলে, রয়েসয়ে! আমি রইও না, সইও না। ব্যতিব্যস্ত করে ছাড়ি সবাইকে। এটা ধরি, ওটা ভাঙি। এক বড়দের কথা অন্য বড়দের কাছে শিশুতোষ সারল্যে চালান করে দেই। পাশের বাড়ির আঙ্কেল জানতে পারেন, আমার বাবা তাঁকে ইস্টুপিট ডাকেন। আন্টি জানতে পারেন, মা তাঁকে ডাকেন ব্যাটাতুন্নেসা। একটা খিটিমিটি লেগে যায়। আমি গা করি না। ওনাদের মেয়ে লুবনার সাথে আমার দারুণ দহরমমহরম। বাপমা তো দুদিনের মায়া, লুবনাই সব। দুপক্ষের বাবামাই পক্ষ ঝাপটান, বলেন, আরে রয়েসয়ে, এই বয়সেই এই! ইস্কুলে গিয়ে আবার ব্যাপারটা একটু উল্টে যায়। অন্যরা যা কয়েক মাসে করে ফ্যালে, আমার তা করতে লেগে যায় কয়েক বছর। সব শালাশালি দেখি ফটাফট সরলাঙ্ক মানসাঙ্ক লসাগু গসাগু জ্যামিতি নিয়ে একটা দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে বসেছে। আমার তো ত্রিভূজ থেকে চতুর্ভূজের ফারাক করতেই ঝামেলা লেগে যায়। বাবা ক্ষেপে যান, মা বলেন, মনে হয় চোখের দোষ। চশমা লাগবে। লুবনা আমার কামড় খেয়ে হাসে, বলে, দুষ্টু, রয়েসয়ে। তবে গালাগালিটা ওদিকে বেশ রপ্ত করে ফেলি। অন্যদের যা শিখতে কয়েক বছর লেগে যায়, আমি তা অনায়াসে শিখে ফেলি কয়েক মাসেই। কচি কচি সহপাঠীরা সবে শকার বকার করতে শিখেছে, সস্নেহে তাদের চ-বর্গীয় গালাগালি করি। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওরা, আমি চোখ টিপি। মাস্টারদের কাছে বিচার ঠোকে কতিপয় বইখোর বোকাচো--, আমার ডাক পড়ে তদন্ত কমিটির সামনে। নিখাদ হাবলা সেজে দাঁড়াই, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি, সুন্দরী ম্যাডামের অস্বস্তি ভরে বুকের ওপর আঁচল টানেন। হতাশ হই আমি, হতাশ হন অ্যাসিস্টেন্ট হেডমাস্টারও। আমরা দুই খাঁজভক্ত একে অন্যের দিকে তাকাই। শুনতে পাই তিনি বিড়বিড়িয়ে বলছেন, রয়েসয়ে ...। এসএসসি পরীক্ষার সময় সাথের পোলাপানের সবে কচি কচি রোমের রেখা নাকের নিচে, আর আমার রীতিমতো আঁচড়ে রাখা গোঁপ। হুঁ, অন্যদের যা বাগাতে কয়েক বছর লেগে যায়, আমার সেটা কয়েক মাসেই গজিয়ে একেবারে ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থা। ইনভিজিলেটর খাবি খায় আমাকে দেখে। এক গ্লাস পানি খেয়ে ধাতস্থ হয়ে বলে, রয়েসয়ে! লুবনা ওদিকে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। চুটিয়ে রোমান্স করছি আমরা। আমার ইস্কুলের সহপাঠীরা বিষন্ন হয়ে পড়ে আমাদের হুড়োহুড়ির নমুনা দেখে। বলে, রয়েসয়ে। আমি হাসি। কিছু বলি না। আরে ওরা তো নিছক আবাল, লুবনার সিনিয়র ভাইয়েরাই আমাদের চালচলনে ঘাবড়ে যায়, বলে, রয়েসয়ে ... আর এরা তো মোটে ইস্কুল ছেড়ে বেরোচ্ছে। তো, হয়তো অন্য কেউ হলে আরো কয়েক বছর সময় নিতো, কিন্তু আমি তা করে ফেলি কয়েক মাসেই। লুবনার সাথে বিয়েটা সেরে ফেলি কাজী অফিসে গিয়ে। কাজী দুষ্টুটা কলমা পড়ায়, আমরা মিটিমিটি হাসি। বিয়ে হয়ে যাবার পর লুবনাকে চুমু খাই সিনেমার ইশটাইলে। কাজী আঁতকে ওঠে। ইউ মে কিস দ্য ব্রাইড বলা তো আর ওর ধাতে নেই। আমরা সামলে নেই, কাজী নিজের বুক আঁকড়ে কী একটা ট্যাবলেট খায়, তারপর বলে, আলহামদুলিল্লাহ, রয়েসয়ে! বাড়ি ফিরে দেখি আরেব্বাপস, বাপ মা দুজনেই চটে লাল। কত অভিযোগ। ইস্টুপিটের মেয়ে ঘরে আনলাম, ব্যাটাতুন্নেসার মেয়ে ঘরে আনলাম। দুজনে মিলে কয়েক ঘন্টায় যা বকাঝকা করে, অন্য কেউ হলে তা করতে লেগে যেতো কয়েক মাস। আমি অধোবদনে দাঁড়িয়ে থাকি, লুবনা মুচকি মুচকি হাসে। শেষে মায়ের কানে কানে আসল কথাটা বলে। শুনে তো মা ফিট! হায়রে মা, সুসংবাদ শুনে কোথায় একটু হই হল্লা করবি তা না ... এজন্যেই তো মুরুবি্বরা বলে, রয়েসয়ে। লুবনাকে বকা দেই। তখুনি বলার কী দরকার ছিলো? যা ভাবছেন তাই, অন্যরা বিয়ের পর যা করতে কয়েক বছর লাগিয়ে দেয়, আমরা তা করে ফেলি কয়েক মাসেই। যমজ এসে হাজির। সবার মুখ কিন্তু অন্ধকার, বাচ্চাগুলোই খলখল করে হাসে। পাড়ার বড় ভাইরা এসে পিঠ চাপড়ে দেয়, চোখ টিপে বলে, রয়েসয়ে! বাবা নোটিশ দেয়, চাকরি বাকরি জোটা, নইলে জুতিয়ে বার করে দেবো। আমি হাসি, বলি, আরে ইস্কুল পাসের পর অন্যদের যা করতে কয়েক বছর লেগে যায়, আমাকে তা কয়েক মাসে করতে বলছো, এ-ই কি ইনসাফ? রয়েসয়ে! বাবা জুতো হাতে তেড়ে আসেন। চাকরি একটা ধরাধরি করে পাই। সম্মানজনক কিছু নয়। পড়ালেখার পর করতে হয়। বড় চাপ। বাড়ি ফিরে এসে দেখি বাপমাবউবাচ্চা দিয়ে ঘর বোঝাই। ভাল্লাগেনা। অন্যরা হয়তো কয়েক বছর পর ধরতো, আমি কয়েক মাস পরেই ধরে ফেলি। দেশি ভদকা। একটু লেবু চিপে পান করলেই দুনিয়াটা বেশ ডগোমগো হয়ে ওঠে। হামলা করতে গেলে লুবনা বিরক্ত হয়, বলে, আহ কী হচ্ছে আবার, রয়েসয়ে! তো এভাবেই চলছে গত কয়েক বছর, বুঝলেন। অন্য কেউ হলে কয়েক মাস পরই সব ছেড়েছুড়ে তাবলীগের চিল্লায় চলে যেতো, কিন্তু আমি আঁকড়ে আছি। ভালোবাসার টান, কী করবো বলুন? তবে আপনাদের জন্য একটাই উপদেশ আমার। রয়েসয়ে। (রচনাকাল: অগাস্ট, ২০০৬)
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৩ আমি জীবনে প্রথম অ্যালকোহল চেখে দেখেছি আট বছর বয়সে। দোষটা আমার ভাইয়ের। তারও তখন ঠিক আইনসিদ্ধ উপায়ে মাল খাবার বয়স হয়নি। সবজে একটা বোতল হাতে নিয়ে বড় ভাই চোরের মতো মুখ করে সন্ধ্যেবেলা চুপিচুপি ছাদের দিকে গেলে ছোট ভাইয়ের অনুসন্ধিৎসু মনে কিছুটা দোলা লাগা স্বাভাবিক। আমি অচিরেই বড় ভাইদের সেই বিয়ারের নিষিদ্ধ আড্ডায় হানা দিলাম। প্রাচীন ভারতের কূটনীতির তৃতীয় পদ্ধতি প্রয়োগের প্রস্তাব দিয়ে বসেছিলো উপস্থিত এক পামর। কিন্তু আমার বড় ভাইয়েরা খুব স্নেহ করেছেন আমাকে সারা জীবন, মদের বোতল হাতে দন্ডনীতি প্রয়োগের চিন্তা তাঁরা করেননি। তাছাড়া মার খেয়ে আমি তো সোজা গিয়ে আমার বাবাকে বলে দিতে পারি। সেক্ষেত্রে ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামতে হতে পারে সবাইকে, সিঁড়ি দিয়ে নামার সাহস কেউ করবে না। প্রাচীন ভারতীয় কূটনীতির প্রথম তরিকায় তাঁরা কিছুক্ষণ চেষ্টা করলেন। "না না ভাইয়া, যাও ঘরে যাও, আমরা পরে আসবো, এসে বাগাডুলি খেলবো", এই গোছের সামনৈতিক মিষ্টবাক্য প্রয়োগে আমার মন ভজানোর চেষ্টা করলেন তাঁরা। আমি শিশু ছিলাম, কৌতূহলী ছিলাম, তাই অসততা নয়, কৌতূহলের বশেই ঘুষ দাবি করে বসলাম, "তোমরা কী খাও? আমিও খাবো!" বড় ভাইয়েরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেদের মধ্যে ম্লেচ্ছ ভাষায় কী যেন মত বিনিময় করে শেষে একটা গ্লাসে অল্প একটু তরল ঢেলে আমাকে দিলেন। দাননীতির সাথে আরও কিছু সামনীতির পাশাপাশি দন্ডনীতির দিকে আবছা একটা ইঙ্গিতও করলেন একজন। আমি সন্তুষ্ট হয়ে গবগব করে সেই তরলে চুমুক দিলাম। বিচ্ছিরি, অতি বিচ্ছিরি স্বাদ ছিলো সেই বিয়ারের। এতই বিচ্ছিরি যে তার পরবর্তী পাঁচবছর আমি আর বিয়ার খাইনি। খেতে চাইওনি। কিন্তু পাঁচবছরে কত কিছু ঘটে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কত জল গড়ায়, কত নিরীহ ভালোমানুষ বিয়েশাদি করে মারা পড়ে, এ ওর সাথে ভেগে যায়, প্রেমিকার নতুন প্রেমিকের ছোটবোনের সাথে প্রেম হয়, আর একটা ফালতু বিয়ারের স্বাদ জিভ থেকে মুছে যেতে এমন আর কী সমস্যা? আমি তেরো বছর বয়সে আবার বিয়ারপানের সুযোগ পেয়ে সেটার সদ্ব্যবহার করলাম। এবারও ভিক্টিম আমার ভাই। তিনি মহাবিরক্ত। প্রথমে বলার চেষ্টা করলেন, "সেইদিন না দিলাম?" আমি ইউরি গ্যাগারিনকে হার মানিয়ে নভোমন্ডল থেকে আছড়ে পড়লাম মাটিতে। "সেইদিন মানে? পাঁআঁআঁআঁচ বচ্ছর আগে একবার দিসো!" ভাই ভুরু কুঁচকে কী যেন ভেবে ম্লেচ্ছ ভাষায় কী যেন বললেন গোঁ গোঁ করে। তখনও ভাষাটা তেমন ভালো জানি না। মনে হলো তিনি খুব একটা সন্তুষ্ট না। আমি পাত্তা দিলাম না, বড় দেখে একটা বৃটিশ আমলের গ্লাস নিয়ে এসে পাতলাম বোতলের নিচে। ভাই গ্লাসের আকার দেখে চোখ পাকালেন। আমি নির্বিকার। ব্ল্যাকমেইল যখন করছি, তখন এত লজ্জা করলে চলে না। সেদিন বিয়ার খেয়ে ভালোই লেগেছিলো। সময়ের সাথে এই অভূতপূর্ব পরিবর্তন সেদিন টের পাইনি, ভেবেছিলাম, এবার হয়তো জিনিস ভালো, কিন্তু এখন মনে হয়, সেবার আমার রসনা কিছুটা পরিপক্ক হয়েছিলো। মাল খাবার সময়গুলো কেন পাঁচ বছর পর পর ফিরে আসে, কে জানে? তারও পাঁচবছর পর আবার আমার সুযোগ আসে। এবার আর ভাইকে হুমকি দিয়ে নয়, বন্ধুদের নিয়ে গ্যালাক্সিতে হানা। গাঁটের পয়সা খরচ করে রীতিমতো কিনে বিয়ার খাওয়া। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লভ্য বিয়ার, ভদকা, জিন আর হুইস্কি পান করার সুযোগ এসেছিলো। আমার ব্ল্যাকমেইলের শিকার সেই বড় ভাই একবার স্বল্পকালীন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার সময় আমার জন্যে জনি ওয়াকারের এক অপূর্ব বোতল উপহার নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু অতীত নিগৃহা স্মরণ করেই কি না কে জানে, সেই উপহারের সিংহভাগ তিনিই গলাধঃকরণ করেছিলেন। তখনও আমরা গা ঢাকা দিয়ে মদ্যপান করতাম। আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে একবার আমার ওয়ার্ডরোব সাফ করতে গিয়ে একটি সুদৃশ্য বোতল খুঁজে পেয়ে তৎক্ষণাৎ আমার মায়ের কাছে রিপোর্ট করে, এবং তিনি সেটিকে বার করে ধুয়ে মুছে আমার পড়ার টেবিলের ওপর রেখে দেন। বাড়ি ফিরেই সেদিন তোপের মুখে পড়েছিলাম। আমি ততদিনে বিয়ারের ভালোমন্দ বুঝতে শিখেছি। বাংলাদেশে আমার পছন্দের বিয়ার ছিলো কার্লসবার্গ। সেটা পাওয়া না গেলে ফস্টারস। একদমই পছন্দ করতাম না হাইনিক্কেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ টার্মের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়ার কয়েকমাস আগে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মিউনিখে কয়েক হপ্তার জন্যে একটা ভাষাশিক্ষার কোর্স করার সুযোগ হস্তগত হয়েছিলো। সেই বাহান্ন দিন আমি হাতের নাগালে বাভারিয়ার যতো রকমের বিয়ার ছিলো, সবই চেখে দেখেছি। ফ্রানৎসিস্কানার, এরডিঙ্গার, আউগুস্টিনার, পাউলানার, লোয়ভেনব্রয়, হাকার-প্শর, আর নাম মনে পড়ছে না। এদের মধ্যে আউগুস্টিনার আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো। পরে এসে দেখেছি, এগুলো খুবই ছোট ছোট স্থানীয় ভাঁটির বিয়ার, মিউনিখের আশপাশ ছাড়া নাকি পাওয়া যায় না। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রথম মনমরা পার্টিতে বিয়াররসিকদের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম, বামবার্গ এর আশেপাশে নাকি দুর্ধর্ষ সব বিয়ারের ভাঁটি আছে, এবং সেসব বিয়ার কেবল বামবার্গ শহরেই পেয়, অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বামবার্গে তাই একটা ঢুঁ মারার পরিকল্পনা মনের মধ্যে ঘুরছে। দেশে ফিরে আমি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে বিয়ার পানে ক্ষান্তি দিই। বাভারিয়ার সেইসব বিয়ারের সাথে ফস্টার্সের কোন তুলনাই হয় না। পানের জন্যে আমি আরো গুরুতর জিনিস বেছে নিই। এর পরবর্তী চার বছরের পেশাজীবী জীবনে আমি গাঁটের পয়সা খরচ করে, লোকজনকে হুমকি দিয়ে, ভালোবাসা ও স্নেহজনিত উপহার এবং সবশেষে ঘুষ হিসেবে নিয়মিত ভদকার বোতল বগলস্থ করেছি। বোতলে মনোনিবেশ করার সময় আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিলো আমার সেই বড় ভাইয়ের মুখ। উঁহু, ঠিক স্মৃতিতে নয়, তিনি আমার ঘরে টোকা দিয়ে ঢুকে বাতাস শুঁকে বলেছিলেন, "হোয়াটস আপ?" পৃথিবী গোল, এ কথা শুনেছি, বইয়ে পড়েছি, টিভিতে দেখেছি, কিন্তু উপলব্ধি করতে পারি সেইদিন। হোয়াট গোউজ অ্যারাউন্ড, কামজ অ্যারাউন্ড। আমার সেই বড় ভাই, যাকে মোটে কয়েকবার ব্ল্যাকমেইল করে সবমিলিয়ে হয়তো আধ লিটার বিয়ার খেয়েছিলাম, তিনি রাহুর মূর্তি ধরে আমার সাধের ভদকার বোতল গ্রাস করতে এসেছেন! এ হতে দেয়া যায় না। আমি বোতলের কিছু ভদকা সারেন্ডার করে সারারাত চিন্তা করে শেষে ভোরে আমার মায়ের কাছে গিয়ে ভদ্রভাবে ঘরে বসে মদ্যপানের অনুমতি চাই। তিনি ছাত্রাবস্থায় আমাকে বমাল গ্রেফতারের কথা স্মরণ করেই হয়তো কিছুক্ষণ চিন্তা করে অনুমতি দেন, শর্ত একটিই, খেলে একা খেতে হবে, আর কাউকে সাথে নিয়ে নয়। আমি আমার দুর্বৃত্ত বড় ভাইয়ের কবল থেকে বোতলটিকে উদ্ধার করে তখনকার মতো ফ্রিজে রেখে দিলাম। পরবর্তীতে সেভাবেই রাখতাম। আমি দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে একা একা মদ খেয়েছি। আমার বন্ধুদের সাথে খেয়েছি অন্যত্র বসে, কারণ সবান্ধব পানের অনুমতি বাসায় ছিলো না। মদ খাবার পর যে দুটো সাধারণ অবস্থা হয়, হ্যাপি আর হাই, বাংলা করা যেতে পারে তুষ্ট আর দুষ্ট, তার মধ্যে হ্যাপিতেই ছিলাম বেশিরভাগ সময়। বমি বা শোরগোল করে উৎপাত বাড়াইনি কখনো। সাধারণত ফূর্তি ফূর্তি ভাব একটু বেড়ে গেলে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতাম অনেক, কখনো কখনো ফোনে একে ওকে গান শুনিয়ে জ্বালাতন করতাম। মাল খেয়ে একবারই বেসামাল হুল্লোড় করেছিলাম মীরপুরে আমাদের এক বন্ধুর বাড়ির ছাদে, যতটা না মদের ঘোরে, তারচেয়ে বেশি আড্ডার আনন্দে। কাসেলে এসে আমার মদ্যপানের সম্ভাবনা বেড়েছে, কিন্তু সুযোগ বাড়েনি। এখানে কোন লুকোছাপার ব্যাপার নেই, পয়সা দিয়ে বোতল কিনে খাও যত খুশি। কিন্তু সপ্তাহভর নানা ভ্যাজালে থাকি বলে সেভাবে মন খুলে টানা যায় না। কাসেলবাসী বাঙালিদের মধ্যে আমি আর হের চৌধুরীই মদ্যপ, বাকিরা কেউই স্পর্শ করেন না। অতএব মাঝে মাঝে চৌধুরীর সাথে বসেই মদ খাওয়া হয়। এ ব্যাপারে তিনি যথেষ্ঠ উৎসাহী, প্রায়ই এক বসায় এক বোতল ভদকা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে লম্বাচওড়া বক্তৃতা দেন। বহু কষ্টে ভদকা থেকে তাকে ওয়াইনের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। বরফ পড়তে দেখলেই তিনি ভদকা আবহাওয়ার কথা বলেন, বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব দেখলেই হুইস্কির প্রস্তাব করেন। গেত্রেঙ্কেমার্কট (পানীয়ের দোকান) এ গেলে আমরা দুইজনই দীর্ঘসময় ধরে বোতলের শেলফের সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে দেখি। প্রায়ই দেখা যায়, কোন একটা কাজ "পরে করা যাবে" এমন হিসেব করে দুই বোতল ওয়াইন কিনে বসে পড়ছি, কিংবা গোটা ছয়েক বিয়ার। আজ "দুনিয়ার মালখোর এক হও" পোস্টে জাহিদ হোসেনের এক কৌতূহলী মন্তব্যের সূত্র ধরে এই স্মৃতিচারণ আর দিনপঞ্জি লিখলাম। মদ আমাকে খাওয়া শুরু করেনি এখনো, আমিই মদকে খাই। ভালো লাগে। মদ খেলে আমার মনে আনন্দময় স্মৃতিগুলোই ভেসে ওঠে, ঠিক যেভাবে প্রায়ই রাতে ঘুম ভেঙে যায় দুঃস্বপ্ন দেখে। মালের ঘোরে আমার সব কিছু খুব সুখপ্রদ মনে হয়। অনেক হাসি তখন। ভুলে যাই, যে দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম।
false
mk
বিএনপি কোন পথে যাবে_ সামনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি মেয়র নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিএনপি কি এই সুযোগ হাতছাড়া করবে? তারা কি মেয়র নির্বাচনে গিয়ে বাজিমাত করতে পারে না?জানি, এটা হবে না। অনেকের কাছেই একটা অসম্ভব কথা বলে মনে হবে। কারণ খালেদা জিয়াকে সরকার এই ধরে তো সেই ধরে অবস্থা, তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে এই বুঝি তল্লাশি শুরু হলো! তা ছাড়া চলছে পেট্রলবোমার সহিংস আন্দোলন। এর মধ্যে মেয়র নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কথাটা একেবারেই বেমানান শোনায়, তাই না? বিএনপি ধনুর্ভঙ্গপণ করেছে, যেভাবেই হোক ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচন আদায় করতেই হবে। যত দিন এ দাবি আদায় না হয়, অবরোধ চলতেই থাকবে। প্রতি রোববার থেকে প্রথমে ৭২ ঘণ্টা, তারপর সেটা বাড়িয়ে শুক্রবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত হরতাল। মানুষ কথা না শুনলে গাড়ি-বাসে চোরাগোপ্তা হামলা চালাও, আগুন জ্বালাও, ককটেল-পেট্রলবোমা মারো। এই তো?সরকারও ধনুর্ভঙ্গপণ করেছে, যেভাবেই হোক সবকিছু ঠান্ডা করে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলবে। গাড়ি-বাস চলবে। তারপর কে কোথায় মরল, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।বিএনপি তত্ত্বাবধায়কের নির্বাচন আদায় না করে ছাড়বে না। আর সরকার এখন নির্বাচনই দেবে না। মানুষও চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে কেনাকাটা, অফিস—সবকিছু চালিয়ে যাবে। এর তো একটা শেষ চাই। কীভাবে সেটা সম্ভব?বিএনপি নিশ্চয়ই তাদের আপসহীন ভাবমূর্তি খুইয়ে আন্দোলন থামাতে পারে না। আর সরকার তো ভাবছে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ অবস্থায় সরকার একটা চাল দিয়েছে। হঠাৎ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এরপর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও হবে। সরকার তো ধরেই নিয়েছে যে বিএনপি আসবে না। এই ফাঁকে দু-চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে তাদের সমর্থিত প্রার্থীকে অনায়াসে জিতিয়ে আনা যাবে।এখন বিএনপিকে ভাবতে হবে, সরকারের ইচ্ছামতো সবকিছু চলতে দেওয়া হবে কি না। সংসদ নির্বাচন না-হয় ‘নির্দলীয়’ সরকারের অধীনে ছাড়া ওরা করবে না। কিন্তু মেয়র নির্বাচনে তো সেই প্রশ্ন ওঠে না। স্থানীয় নির্বাচন সব সময় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই হয়। এ নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই।বিএনপি কি কৌশল হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে না? এটা বিএনপির পূর্ব অনুসৃত নীতির বাইরে কিছু হবে না। গত বছরের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন বর্জনের পরিষ্কার ঘোষণার মধ্যেও কিন্তু বিএনপি একের পর এক সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জিতেছিল। কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং সর্বশেষ একেবারে রাজধানী ঢাকার নাকের ডগায় গাজীপুরে নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের একেবারে ধরাশায়ী করে দিয়েছিল।সে সময় মানুষের মধ্যে একটা আশার সঞ্চার হয় যে বিএনপি হয়তো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে একইভাবে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে ক্ষমতায় পরিবর্তন আনবে, যা তখন দেশবাসী একান্তভাবে কামনা করছিল। কিন্তু বিএনপি সে পথে যায়নি। হয়তো ভেবেছিল, চারদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিপুল বিজয়ের শক্তিতে নির্বাচন ছাড়াই ওরা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে।সাদামাটা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে তুলার বস্তার মতো ছুড়ে ফেলে ক্ষমতায় যাওয়ার একটা সুবিধা আছে। তাতে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যায়। বিএনপির মধ্যে হয়তো সে রকম একটা নেশা পেয়ে বসেছিল। কারণ, অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া ক্ষমতায় গিয়ে তাদের লাভ নেই। আওয়ামী লীগ যেভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলেছে, তাতে পরিবর্তন আনতে না পারলে তাদের ১৯৭২-এর সংবিধানে চলতে হবে। এটা তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যায় না। তাই হয়তো ওরা মেয়র নির্বাচনে বিপুল সাফল্য লাভ করলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। আশা ছিল, জনরোষের কবলে পড়ে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবে।কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারেনি। খুব অদ্ভুত ব্যাপার যে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং বাকি প্রায় সব আসনে ‘আমরা আর মামারা’ প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এ রকম অস্বাভাবিক নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি তেমন কিছুই করতে পারেনি। এবং বিএনপিকে ঠান্ডা করার জন্য সে সময় সরকারকেও খুব বেশি ডান্ডাবাজি করতে হয়নি, যেমন এখন করছে।এখানে বিএনপি রাজনীতিতে বিরাট মার খেয়েছে। সরকারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছে, কিন্তু বাস্তবে সরকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন করেও দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ-পাতাল পার্থক্য কেন হলো, তা বিএনপিকে খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখতে হবে।এর একটা কারণ এই হতে পারে যে বিএনপি ভাবছিল মানুষ সনাতন রাজনীতির ধারায় ‘উৎখাতের’ লাইনে আছে। আর মানুষ ভাবছিল, নির্বাচনের মাধ্যমেই যখন সরকার পরিবর্তন সম্ভব, তাহলে বর্জনের ঝামেলায় কেন যাচ্ছে বিএনপি। এখানে মানুষের চিন্তার সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলের খুব বড় রকমের পার্থক্য হয়ে গেছে।বিএনপির যুক্তি ছিল, সিটি করপোরেশন আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক নয়। সরকার চালাকি করে সিটি করপোরেশনে বিএনপিকে জিতিয়ে তাদের জাতীয় নির্বাচনের ফাঁদে ফেলতে চায়। আর বিএনপি সেই ফাঁদে পা দিলেই ভরাডুবি হবে। নির্বাচনে সরকারিপ্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ সব আসন হাতিয়ে নেবে। কিন্তু গত বছর বিএনপির বিজয়োল্লাসের মাঝে সরকারের পক্ষে নির্বাচন ছিনতাই করা বাস্তবে কতটা সম্ভব ছিল, তা ভেবে দেখা দরকার।গত বছরের ৫ জানুয়ারি বিএনপি অংশগ্রহণ করলে যদি আওয়ামী লীগ শুধু সরকারের জোরেই নির্বাচন ছিনতাই করার বিষয়ে নিশ্চিত হতো, তাহলে ওরা কেন তখন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেয়নি? গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভরাডুবির পরই আওয়ামী লীগ নিশ্চিত হয় যে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের পরাজয় ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তাই আইনের মারপ্যাঁচে রাজধানী ঢাকার মেয়র নির্বাচন সে সময় সরকার হতে দেয়নি। যদি হতো, তাহলে তাদের নিশ্চিত পরাজয় ঠেকানো কঠিন ছিল। আর রাজধানী ঢাকায় মেয়র নির্বাচনে হারলে কোন মুখে আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচন করত? নির্বাচনে ভোটারদের সামনে দাঁড়ানোর পথই তো থাকত না।গত বছর সংসদ নির্বাচনের আগে সব কটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল এই যুক্তিতে যে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনে তাদের বাধা নেই। সেদিন যদি সরকার ঢাকায় মেয়র নির্বাচন দিত, তাহলে বিএনপি অবশ্যই অংশগ্রহণ করত। সেদিন বিএনপির বাধা না থাকলে আজ থাকবে কেন? আজ যদি বিএনপি ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে তাদের নীতিবিচ্যুতির কোনো আশঙ্কা নেই।বরং নির্বাচন করলে তাদের দুটি লাভ। প্রথমত, পেট্রলবোমা মেরেও যে মানুষকে বিএনপি রাস্তায় নামাতে পারছে না, সেই মানুষই পিলপিল করে বিএনপির পেছনে এসে দাঁড়াবে, তাদের প্রার্থীর জন্য ভোটের সংগ্রামে নামবে। রাজপথে বিএনপির হরতালে সক্রিয় জনসমর্থনের যে ভাটা এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা কেটে যাবে। মানুষ বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে ঢাকঢোল নিয়ে নামবে। তাদের জন্য এর চেয়ে বড় আশীর্বাদ আর কী হতে পারে?আর দ্বিতীয়ত, যদি বিএনপি প্রার্থী দেয়, তাহলে নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা শতভাগ। এটা তো তারাই দাবি করে এবং এই দাবি একেবারে ভিত্তিহীন বলা যাবে না। বিএনপি মেয়র নির্বাচন করলে মানুষ খুশি হবে। কারণ, বোমা-আগুন দিয়ে মানুষ মেরে সরকার হটানোর বদ চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপি নির্বাচনী রাজনীতির ধারায় যুক্তিসংগত উপায়ে জোরেশোরে নামতে পারবে। এর ফলে তাদের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আরও শক্তি ও জনসম্পৃক্তি অর্জন করবে।যেহেতু সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচন করছে, তাই নির্বাচনী সভা-সমাবেশে বিএনপিকে তাড়া করার সুযোগ সরকারের থাকবে না। খালেদা জিয়াকে গুলশানের অফিসে আটকা পড়ে থাকতে হবে না। তিনি মানুষের কাতারে এসে দাঁড়াবেন। সমাবেশের অনুমতি না দিলে তিনি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক সমাবেশ করবেন। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?বিএনপির সামনে আজ স্বর্ণসুযোগ এসেছে। মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে জোরেশোরে নেমে পড়া উচিত। এতে সহিংস রাজনীতির একটি যুক্তিপূর্ণ পরিসমাপ্তি ঘটবে। রাজনীতি গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে আসবে। মানুষ বাঁচবে। দেশ বাঁচবে।বিএনপির আর এক মুহূর্ত দেরি করা উচিত নয়।আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।quayum@gmail.com
false
ij
হামাস-এর strategy কি ভুল_ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত হামাস সদস্যদের কুচকাওয়াজ। ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে এক নির্মম ইজরাইলী গনহত্যার প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হামাস। তার পর থেকে সংগঠনটি ক্রমেই জঙ্গি হয়ে উঠেছে সমগ্র ফিলিস্তিনজুড়ে। হামাসের জঙ্গি হয়ে ওঠার কারণও আছে-ইজরাইলের একচ্ছত্র স্বৈরাচার। এবং, এই দিক থেকে বিশ্বের সকল বিবেকবান মানবতাবাদী মানুষের অবস্থান আরব গেরিলাদের পক্ষেই। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে হামাসের সামরিক strategy পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন কি না- সে প্রশ্ন আজ ইজরাইল কর্তৃক গাজা উপত্যকা ধ্বংসের প্রেক্ষাপটে উঠতেই পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে ফিলিস্তিনিদের অন্য একটি রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে -ফাতাহ। এবং আমরা এও জানি যে, ফাতাহ ইজরাইলবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও হামাসের মত অত উগ্র নয়। তারা ইজরাইলকে বাস্তব বলেই মেনে নিয়েছে। আজ যখন ইজরাইল তার সমস্ত সামরিক শক্তি নিয়ে হামাস নিশ্চিহ্ন করতে গাজায় অনুপ্রবেশ করেছে তখন হামাসের ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রথমত, যখন ফিলিস্তিনের মাটি থেকে রকেট ছুঁড়ে ইজরাইল রাষ্ট্রটিকে সর্ম্পূনত ধ্বংস করা যাবেই না- তখন ইজরাইলের উদ্দেশে রকেট ছোঁড়ারই-বা কি মানে? হামাস তো ভালো করেই জানে যে-ইজরাইলের সামরিক শক্তি সম্মিলিত আরব বিশ্বের সামরিক শক্তির চেয়েও বেশি। তা হলে কেন তার হিংস্র বাঘের লেজে অহেতুক পা দেওয়া? যখন আমরা সবাই জানি যে গুহায় একটি মানুষখেকো বাঘ রয়েছে তখন সেটিকে বর্শা দিয়ে খোঁচানোর কি মানে? হামাসের হঠকারী ভূমিকায় অস্টাদশ শতকের বাংলার সৈয়দ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীরের কথা মনে পড়ে যেতেই পারে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিতুমীরের বিদ্রোহের কথা আমরা জানি। বারাসাত নগরের কাছে নারকেলবেড়িয়ায় তিতুমীর একটি বাঁশের দূর্গ নির্মান করেছিলেন যখন ইংরেজরা যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করত দূরপাল্লার কামান! ১৪ নভেম্বর ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ। কামান থেকে গোলা বর্ষন করে নারকেলবেড়িয়ায় তিতুমীর বাঁশের কেল্লাটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় ইংরেজ সৈন্যরা। প্রশ্ন এই -তিতুমীর কি জানতেন না যে বাঁশ দিয়ে কেল্লা তৈরি করে ব্রিটিশ সৈন্যদের সস্মুখে দাঁড়ানো যাবে না? হামাস কি জানে না যে ফিলিস্তিনের মাটি থেকে মাঝে মাঝে ইজরাইলেল উদ্দেশে রকেট ছুঁড়ে ইজরাইল রাষ্ট্রটিকে সর্ম্পূনত ধ্বংস করা যাবেই না বরং তাতে গুহার ঘুমন্ত বাঘটি জেগে উঠে ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে? মাঝেমাঝে ভাবি, তিতুমীরের strategy ছিল সম্পূর্নত ভুল;তিতুমীর যদি বাঁশের কেল্লা না তুলে অরণ্যযুদ্ধের পথ বেছে নিতেন- তা হলে হয়তো বাংলার ইতিহাস অন্যরকম হত। ইজরাইলী সৈন্যরা কয়েকদিন ধরে গাজায় সাদা ফসফরাস ছিটাচ্ছে। তাতে দগ্ধ হচ্ছে শিশুদের মুখ ... তিতুমীর ও হামাস-এর হঠকারী ভূমিকায় জে এম বি ও হরকাতুল জেহাদের মতন ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলির কথাও আমার মনে পড়ে যায়। এদের strategyও ভুল। রাষ্ট্রের সদিচ্ছ থাকলে যে মৌলবাদী জঙ্গি নেতাদের ফাঁসীতে ঝোলানো যায়, সে অনন্য দৃষ্টান্ত তো আমরা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই দেখলাম; তারপরও কীসের তাড়নায় হঠকারী জঙ্গিরা গোপনে বিস্ফোরক তৈরি করে-যখন বাংলাদেশ সামরিক সেনাবাহিনীতে রয়েছে পর্যাপ্ত অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম এবং একটি গনতান্ত্রিক সরকারের জঙ্গি নির্মূলের দৃঢ় প্রত্যয়? ইজরাইল আজ হামাস নিশ্চিহ্ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মাসখানেক ধরে ইজরাইলী সৈন্যরা গাজায় তান্ডব চালাচ্ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনে হামাসের ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠতেই পারে। হামাসের strategy কি ভুল? যে ভুলের মাশুল দিচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুরা? ইজরাইলী সৈন্যরা কয়েকদিন ধরে গাজায় সাদা ফসফরাস ছিটাচ্ছে। তাতে দগ্ধ হচ্ছে শিশুদের মুখ। দিন কতক ধরে তিক্ত হয়ে ভাবছি- হামাস পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পরও বাদবাকী ফিলিস্তিনি শিশুরা বেঁচে থাকবে তো ফিলিস্তিনে? সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৩৯
false
rg
মহাজোটের মহান বিজয়ে একটি ছোট্ট আশাবাদ । রেজা ঘটক বাংলাদেশ আজ আবারো প্রমান করলো, গণ-জোয়ারের কাছে টাকার বস্তা, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, কেন্দ্র-দখল, ভোট-বাক্স ছিনতাই, ষড়যন্ত্র কতো তুচ্ছ। নির্বাচন কমিশন এবং ফকরুদ্দীন সরকারকে ধন্যবাদ একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপ্রিয় ও ফেসটিভ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য। মহাজোট তথা আওয়ামী-লীগের প্রেসিডেন্ট জননেত্রী শেখ হাসিনা-কে অভিনন্দন। চারদল তথা বিএনপি-র চেয়ারম্যান খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ। দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের দুজনের ধৈর্য এবং প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ। এবার আসল কথায় আসি। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বাংলাদেশের মানুষ নতুন বছরে বিপুলভাবে সমর্থন করার পিছনে যেসব যুক্তি ছিল, আমার আন্তত যা মনে হয়েছে, সেগুলো বলছিঃ ১. বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে, তাই ভোটেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। ২. বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের এবার একসাথে প্রতাক্ষাণ করেছে। ৩. বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় জাতী, শান্তিপ্রিয় নির্বাচনে যে শান্তিপ্রিয় জবাব দেওয়া সম্ভব, তা আবারো প্রমান হল। ৪. বাংলাদেশের তরুণ-প্রজন্মের নবীন ভোটার-রাই [১ কোটি ৭০ লাখ] এবারের নির্বাচনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। এবারের নির্বাচনে শেখ হাসিনা ১৪০ জন প্রার্থী দিয়েছিলেন যাদের বয়স ৪০ বছরের কম। এটি নতুন প্রজন্মের নতুন ভোটারদের বিপুলভাবে প্রেরণা যুগিয়েছে। ৫. এবারের নির্বাচনে ভেটার রিলে ভোটারের ছবি থাকায় দুশমন দমন করা সহজ হয়েছে। ৬. এবারের নির্বাচনে জালভোট, কেন্দ্র-দখল, ভোটবাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল না। যারা এই পথে নির্বাচনে জিততে চেয়েছিল, জনগণ, তাদেরকে গণরায়ের মাধ্যমে প্রতাক্ষাণ করেছে। ৭. ভোটের আগের রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে টাকার বস্তাসহ চার-দলের কর্মীদের হাতেনাতে থরা পরার ঘটনা, টাঙ্গাইলে প্রিজাইডিং অফিসারের কীর্তি [উনি বিএনপি-র বিসিএস উপঢৌকন], আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সতর্ক পাহারা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, নির্বাচন কমিশনের নিরন্তর নিরপেক্ষতা রক্ষার প্রচেষ্টা, ইত্যাদি জাতী বেশ সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করেছে। ভোটে তার প্রতিফলন ঘটেছে। ৮. বিগত পাঁচ বছরের বিএনপি-র দুঃসাশন, দুর্নীতি, দখল, ত্রাণলুট, বেপরোয়া হয়ে ওঠাকে জনগণ সম্পূর্ণ প্রতাক্ষাণ করেছে। ৯. আওয়ামীলীগ নির্বাচন পর্যন্ত মহাজোট টিকিয়ে রাখতে পেরেছে, যা ভোটের হিসাবে পরিবর্তনে পক্ষে ইতিবাচক ফলাফল দিয়েছে। ১০. অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার আওয়ামীলীগ অনেক বুদ্ধিমতা দেখিয়েছে। ১১. নির্বাচন কমিশন যেসব প্রার্থীকে যোগ্যতা যাচাইয়ে পর প্রাথমিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করেছে, তাদের অনেকেই সেই রায়কে চ্যালেন্স করে দলীয় বিচারপতিদের মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে পক্ষে রায় আনলেও জনগণ তাদের প্রতাক্ষাণ করেছে। ১২. নির্বাচন কমিশনে যে সব প্রার্থী ভুল তথ্য প্রদান করেছেন, জনগণ তা অবাধ মিডিয়ার মাধ্যমে খুব দ্রুত যেমন জানতে পেরেছে, ঠিক তেমনি তাদেরকে জনগণ খুব দ্রুতই ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতাক্ষাণ করেছে। ১৩. চিন্থিত খুনি, সন্ত্রাসি ও অসত প্রার্থীদের জনগণ এবার প্রতাক্ষাণ করেছে। ১৪. টাকা দিয়ে আর ভোট কেনা যাবে না, যদি না জনগণ সজাগ থাকে, নির্বাচনে এবার তার প্রতিফলন ঘটল। ১৫. প্রাশসন নিরপেক্ষ থাকলে অবাধ নির্বাচন করা যে কতো সহজ, তা আজ হাতেনাতে প্রমান করল জনতা। সর্বশেষ ফলাফল: ২৪১টি আসনের মধ্যে মহাজোট ২১১, চারদল ২৬, বিদ্রোহী ৩, স্বতন্ত্র ১ নয়া সরকারের কাছে প্রত্যাশা: ১. এবারের নির্বাচনের মহান জয়কে মরহুম নুরুল ইসলাম [গণতন্ত্রী পার্টি প্রেসিডেন্ট, মহাজোট প্রার্থী _নোয়াখালী-১] ও তার নিহত পুত্র তমোহর ইসলাম পুচি-কে উৎসর্গ করা হোক। ২. ২০০১ সালে বিএনপি-র তথাকথিত নিরন্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দাপট ও ঘোড়ারোগটি থেকে আওয়ামীলীগের অনেক কিছূই শিক্ষা নিতে হবে। জনগণই শক্তিশালী। বোমা, ভয়, দখল, অস্র, চাঁদাবাজী, খুন, গুম, সন্ত্রাসি কার্যকলাপ মোটেও শান্তিপ্রিয় জনগণের ক্ষমতার কাছে নস্যি। এটা নতুন সরকারকে মনে রাখতে হবে। ৩. ছাত্রদলের সোনার ছেলেদের সোনা মাখা কার্যকলাপ এর মতো ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের কার্যকলাপ কিন্তু জনগণ গভীরভাবে ওয়াচ করবে। আওয়ামীলীগকে তা মাথায় রাখতে হবে। ৪. যুদ্ধাপরাধীদের এবার স্পেশাল ট্রাইবুনালে বিচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের আদালতও দলীয় লোকবল দিয়েই গঠিত। প্রার্থীর যোগ্যতা প্রমানে উচ্চ-আদালতের রায় দেখলেই তার প্রমান মিলবে। ৫. আওয়ামীলীগ হারলে পুরো বাংলাদেশ হারে, আর আওয়ামীলীগ জিতলে কেবল আওয়ামীলীগ দল জেতে, পুরো বাংলাদেশ জেতে না। এটি অপবাদ না সত্য তা আওয়ামীলীগকে প্রমান করতে হবে। ৬. প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে একচোখা নীতি ফল দেবে না। কঠোর হাতে আইন যে সবার জন্য সমান, তা প্রমান করতে হবে। ৭. নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করতে হবে। ৮. রাস্তা বন্ধ করে ভিআইপিদের চলাচল বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনগণই আসল ভিআইপি, জনগণকে কোন ধরনের দুর্ভোগ দিয়ে নিজেরা ভিআইপি সাজলে, তার প্রতিফলন জনতা পরবর্তী নির্বাচনে দেবে, এটা ভুলে গেলে চলবে না। ৯. জননেতাদের সুসন্তানদের মাধ্যমে জনগণ বিগত দিনে যা পেয়ে অভ্যস্থ, তার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ১০. জনতার শাসক নয়, সেবক হতে হবে, নইলে বিএনপি-র মতো আওয়ামীলীগকেও এই জনতা শাসন আর শোষণের জবাব দিতে ভুলবে না। ১১. মাথাভারী মন্ত্রীসভা যেন মাথা ব্যথার কারণ না হয়, তা মনে রাখতে হবে। ১২. প্রশাসনের সর্বত্র জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ১৩. আইন সবার জন্য সমান, তা বিগত ৩৭ বছরে কোথাও দেখা যায় নি। যা দেখেছি, তা হল, আইন ক্ষমতাবানদের পক্ষে যায়, দুর্বলদের বিপক্ষে যায়। এই ধারাটি বদলাতে হবে, এই সরকারকেই। ১৪. বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও সবাই ধর্ম নিরপেক্ষ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ চায়। যারা বাংলাদেশের মুসলমানদের নতুন করে মুসলমান বানাতে চায়, তারা ভন্ড, তাদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আইন করে বন্ধ করতে হবে। ১৫. কথায় নয়, কাজে প্রমান করতে হবে বাংলাদেশকে আমরা কেমন সোনার বাংলা গড়তে চাই। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:২৬
false
hm
রক্ষক যখন ভক্ষক ওরফে বেড়ালছানা ওরফে আরো অনেক কিছু কলিমুদ্দির চায়ের দোকানে বসে বসে মাছি তাড়াচ্ছিলাম৷ খুব যে কষ্ট করতে হচ্ছিলো, তা নয়, কারণ মাছিগুলো ল্যান্ড করার মতো উত্‍কৃষ্ট সিঙ্গারা বা আলুপুরি খুঁজে পাচ্ছিলো না, আপনা থেকেই ভেগে যাচ্ছিলো তারা৷ তবে খাসলত বলে কথা, আমার উদাস গালটাকে তেলেভাজা ভেবে যাতে তারা হামলা না করে, সেজন্যেই হাত পা নাড়ছিলাম আর কি৷ প্রোডাকশন আপাতত বন্ধ, কলিমুদ্দি ঝিমুচ্ছে, জুম্মনটা একটা বেঞ্চে লম্বা হয়ে শুয়ে কুকুরের কান্নার মতো একটা সিনেমার গান গাইছে, সুরেশ বসাক গাঁজায় দম চড়িয়ে শিবনেত্র হয়ে বসে আছে এক কোণে৷ জুম্মনের গানের বক্তব্য শুনে আমারই কান লাল হওয়ার দশা, প্রেমিকাকে সম্ভাব্য সকরকম উপায়ে প্রেম নিবেদন করছে প্রেমিক, গানের পদে পদে খাজুরাহো-কোনার্ক গুলিয়ে মেশানো --- ভাবছি এক ধমকে থামিয়ে দেবো বেল্লিকটাকে, আরো ভাবছি আজকাল সিনেমার গানের নামে এসব কD অশালীন ছাঁইপাশ লেখা হচ্ছে, এমন সময় হুড়মুড়িয়ে দোকানে ঢুকলেন... ৷ উঁহু, যা ভাবছিলে তোমরা, তা নয়৷ পিন্টুর মেজমামা নন৷ মেজমামা দিন তিনেক হলো ঢাকার বাইরে গেছেন৷ বান্দরবানে পাহাড় ঠেলতে গেছেন তিনি, শিবলির মুখে শোনা গেছে৷ মেজমামার অনুপস্থিতির কারণে কলিমুদ্দির ব্যবসা হাফ লাটে উঠে গেছে, আর আমরা অতবড় দিলদরিয়া নই যে নিজের পয়সায় চা আর তেলেভাজা কিনে খাবো৷ অগত্যা বেচারা কলিমুদ্দিকে পাড়ার অবশিষ্ট সুধীজনের ওপর ভর করে আর ভরসা করে চলতে হচ্ছে৷ কিন্তু অবশিষ্ট সুধীজনের সংখ্যা কম, বেশির ভাগই বাকির খাতায় নাম টুকিয়ে খায়৷ তাই কলিমুদ্দি নগদের অভাবে খুবই বাটে পড়েছে৷ যা বলছিলাম, হুড়মুড়িয়ে দোকানে ঢুকলেন মনজুর চাচা৷ তাঁর হাতে একটা বোঁচকা, মুখে এক অপূর্ব অভিব্যক্তি, আধাসের রাগ, এক চিমটি দুঃখ আর এক মুঠো বিরক্তির এক বিচিত্র শরবত৷ আমি খানিকটা ঘাবড়ে যাই৷ মনজুর চাচাকে আমরা সবাই সমঝে চলি৷ মিশমিশে কালো ময়দানবের মতো গড়ন তাঁর, দেখলে মনে হতে পারে তিনি এ পাড়ার গুন্ডাসর্দার, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি পণ্ডিত মানুষ, এককালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন, যদ্দিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পণ্ডিতদের শিক্ষকতা করার সুযোগ ছিলো৷ অবশ্য তাঁর আচরণ অনেকটা টুলো পণ্ডিতদের মতোই, আমরা অনেকেই শৈশবে তাঁর হাতে মৃদু ঠ্যাঙানি খেয়েছি৷ প্রাচীন শিক্ষকদের মতো আদর্শবাদী লোক তিনি নন, বরং অনেকটা গোঁয়ারগোবিন্দ কিসিমের মানুষ, কোন কিছু তাঁর অপছন্দ হলে গায়ের জোরে সেটাকে দমন করে ফেলতে দ্বিধা করেন না৷ বৈশ্বিক ভালোমন্দের তিনি থোড়াই কেয়ার করেন, নিজের চোখে যেটা ভালো সেটার পালন এবং যেটা মন্দ সেটার দলনই তাঁর মটো৷ এ পাড়ায় অনেকেই তাঁকে ভয় করে চলে৷ তাঁর পাণ্ডিত্যকে হয়তো কেউ পাত্তা দেয় না, কিন্তু পাঞ্জার জোরকে সামলে চলে৷ কলিমুদ্দিও ঘাবড়ে যায় মনজুর চাচার মনজুড়ানো, মানে আত্মা-পানি-করা মূর্তি দেখে৷ সে এক ধমকে জুম্মনের গানটা অফ করে দেয়, সুরেশ বসাককে ঠ্যালা দিয়ে মৌতাত থেকে মুক্ত করে শঙ্কিত চিত্তে হাত কচলাতে থাকে৷ 'কী খাইবেন স্যার?' 'চা দে৷ পুরি দে৷' সংক্ষিপ্ত গর্জনে বলেন মনজুর চাচা৷ আমি যতটা সম্ভব অন্ধকারে মিশে যেতে চাইছিলাম, কারণ এখন তাঁর চোখে পড়লেই একগাদা উপদেশ ধমক আর বলা যায় না, দুয়েকটা চড়থাপড়েরও শিকার হতে পারি, কিন্তু বিধি বাম৷ মনজুর চাচা সোজা আমার সামনে এসে বসে বোঁচকাটা পায়ের কাছে ধপ করে নামিয়ে রাখলেন৷ কেমন একটা ফ্যাঁসফোঁস আওয়াজ ভেসে আসে বোঁচকা থেকে৷ আমি চমকে উঠে পা দুটো সরিয়ে নিই৷ 'কেমন আছিস তুই? তোর বাপ কেমন আছে? তোর মা? পড়াশোনা শেষ করেছিস? নাকি এখনো সেকেন্ড ইয়ারেই ঝুলে আছিস? চুলগুলো এমন বেখাপ্পা করে কেটেছিস কেন? সাপের পাঁচপা দেখেছিস? পেঁদিয়ে ফ্যাশন বের করে দেবো হারামজাদা ছেলে --- তোর বাপমা তোকে কিছু বলে না, এমন বখাটা চুলের ছাঁট নিয়ে টো টো করে ঘুরে বেড়াস যে? যা এক্ষুণি মোড়ের দোকান থেকে চুল ছাঁটিয়ে আয় ---৷' ইত্যাদি এমন আরো অনেক কিছু আশঙ্কা করছিলাম৷ কিন্তু তার পরিবর্তে মনজুর চাচা তাঁর প্রকান্ড লোমশ হাতে টেবিলের ওপর একটা চাপড় দিয়ে শুধু বললেন, 'শালা!' আমি এবার আহত হই৷ শেষ পর্যন্ত গালি দিলেন? কিন্তু আমার ভুল ভাঙে৷ আমাকে নয়, গালি তিনি অন্য কাউকে দিয়েছেন৷ আমাকে এক ঝলক দেখে নিয়ে তিনি স্নেহভরে বলেন, 'এই সন্ধ্যেবেলা তেলেভাজার দোকানে একা একা কী করিস?' আমি মিনমিন করে অনেক অজুহাত দেখাতে চাই, বলতে চাই, আমি তো একা একা ঘোরাফেরার মতো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, আর এই বিশ্বসংসারে কে-ই বা আছে আমার, যাকে সাথে করে এই তেলেভাজার দোকানে বসবো? কিন্তু মনজুর চাচা ঘাস খেয়ে বড় হননি৷ তিনি পেছন ফিরে রাস্তার উল্টোদিকের বাড়িটা দেখে নিয়ে বলেন, 'সিদ্দিক সাহেবের মেয়েটা তো কলেজে উঠলো, নাকি?' আমি ঢোঁক গিলে সায় দিই৷ তিনি বিমর্ষ চিত্তে মাথা দোলান৷ 'মেয়েটা দেখতে ভালো, কিন্তু বাপটা একটা মহা চামার৷ একদিন শালাকে ধরে মারবো দুইটা থাপ্পড়!' আমার মুখ অনিচ্ছাসত্ত্বেও উজ্জ্বল হয়ে আসে, আমি প্রাণপণে আনন্দ গোপনের চেষ্টা করি৷ হক কথা বলেছেন মনজুর চাচা৷ শ্রদ্ধায় গদগদ হয়ে মাথা নাড়ি আমি৷ কিন্তু কেন সিদ্দিক সাহেবের বিরূদ্ধে মনজুর চাচার এই বিরাগ, সেটা আমার বোধগম্য হয় না৷ না হোক, কোন সমস্যা নেই৷ সিদ্দিক চাচার আসন্ন বিপদে আমার মন উলু দিয়ে ওঠে৷ ওদিকে মনজুর চাচা আপন মনে বকে চলেন, 'সেদিন দেখি, হারামজাদা একটা রাস্তার কুকুরকে ইঁট ছুঁড়ে মারছে৷ কুকুরটা ওকে কিছু বলেও নি, তেড়েও আসেনি, চুপচাপ নিরালায় শুয়ে রোদ পোহাচ্ছিলো, এই ব্যাটা সিমার গায়ে পড়ে একটা আধলা ছুঁড়ে মারলো! --- কুকুরটা মরতেও পারতো!' আমি মনজুর চাচার কুকুর প্রীতির পরিচয় পেয়ে অভিভূত হই৷ অবোলা জানোয়ারের ওপর এই অত্যাচারের কাহিনী শুনে সিদ্দিক লোকটার ওপর আমার মেজাজ আরো এক পর্দা খারাপ হয়ে যায়৷ মনজুর চাচা হাঁক ছাড়েন জুম্মনের উদ্দেশ্যে, 'অ্যাই, ওর জন্যেও চা পুরি পাঠা৷' সদুপদেশ বা ধমকধামকের পরিবর্তে এই অযাচিত অনপেক্ষিত খাতির পেয়ে এবার আমি মনে মনে আঁতকে উঠি৷ মনজুর চাচাও কি কোন গাঁজাগুরি গপ্পো ফেঁদে বসবেন? আমার অভিজ্ঞতা বলে, যারা আমাকে সেধে সেধে এই তেলেভাজার দোকানে খাইয়েছে, প্রায় প্রত্যেকের স্টকেই বীভত্‍স সব কাহিনী ছিলো বলার মতো৷ আজও কি ইতিহাস নির্লজ্জের মতো পুনরাবৃত্ত হবে? যথাসময়ে চা আর আলুপুরি আসে, তবে ইতিমধ্যে মনজুর চাচা সিদ্দিক সাহেবের গোষ্ঠী উদ্ধারের কাজে ব্রতী হন৷ তিনি খোলাসা করেন, কেন সিদ্দিক চাচা সরকারি চাকরি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন, ঘুষের পয়সায় ঢাকা শহরের কোথায় কী কী সম্পত্তি কুক্ষিগত করেছেন, কোন কোন সিনেমার অতিরিক্তা এবং কোন কোন ঠোঙানাটকের উপনায়িকার সঙ্গে তাঁর নিষিদ্ধ দহরমমহরম রয়েছে, ইত্যাদি৷ সবশেষে একটি কুইজও আমার সামনে হাজির করেন তিনি, সিদ্দিক সাহেব দেখতে অত বদখদ, কিন্তু তাঁর মেয়েগুলো অমন পরীর মতো সুন্দর কেন? আমি লজ্জায় লাল হই৷ মনজুর চাচাও আমার মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অধিকারী, ভেবে তাঁর ওপর আমার শ্রদ্ধা বাড়ে৷ চায়ের কাপে মৃদু ভদ্রজনোচিত একটি চুমুক প্রয়োগ করে আমি ততোধিক মোলায়েম গলায় বলি, 'জ্বি, মানে, আমাকে কেন এসব বলছেন চাচা --- আমার কি এসব নিয়ে চিন্তা করা মানায়?' ভেবেছিলাম, ভদ্রতাবশে এমনই কিছু বলা উচিত, কিন্তু মনজুর চাচা চটে যান৷ চায়ের কাপটায় ফড়াত্‍ করে একটা চুমুক মেরে একটা কিল বসান টেবিলে, পুরিগুলো লাফিয়ে ওঠে৷ 'আহাম্মক কোথাকার! তুই কি দুধের বাচ্চা নাকি? বেশ তো দামড়া হয়েছিস দেখা যাচ্ছে, দিনরাত সিদ্দিকের মেয়ের সাথে টাঙ্কি মেরে বেড়াস, আর আমার সাথে সতীপনা দ্যাখাস? অবশ্যই চিন্তা করবি এসব নিয়ে, বুদ্ধির চর্চা হবে তাতে৷ --- তবে খালি মেয়ে নিয়ে ভাবলে এখন আর দিন চলবে না, মেয়ের বাপকেও খতিয়ে দেখতে হবে বৈকি৷' আমি সাথে সাথে একমত হই৷ 'জ্বি৷ ঠিক বলেছেন৷' মনজুর চাচা দুটো পুরি একসাথে মুখে পোরেন৷ 'আমি ঠিকই বলি৷ --- এই সিদ্দিক আমার সর্বনাশ করেছে, আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করেছে! ওকে আমি মেরে পস্তা ওড়াব!' আমি উত্‍সুক দৃষ্টিতে তাকানোর চেষ্টা করি৷ 'কিন্তু সব দোষ ওর ঘাড়ে ফেলাই ঠিক হবে না৷' তিনি চায়ের কাপে আরেকটা অভ্রভেদী চুমুক মারেন৷ 'তোর চাচীরও দোষ কম নয়!' এবার আমার মাথায় বজ্রপাত হয়৷ এই কালোভূত আলকাতরামুখো সিদ্দিক চাচার সাথে নিজের সুন্দরী রুচিবতী বিদূষী স্ত্রীকে জড়িয়ে মনজুর চাচা কী বলছেন এসব? তাও আবার আমার সাথে? মনজুর চাচা আমার ফ্যালফ্যাল চাহনি খেয়াল করে দেখেন না, আপনমনে গজগজ করে চলেন, 'তোর চাচী আরেকটা গবেট৷ সুন্দর মেয়েছেলেকে খোদা কোন বুদ্ধিশুদ্ধি দেয় নাই৷ বন্ধুত্ব করবি কর, তাই বলে ঐ চামারটার বউয়ের সাথে?' আমি এবার একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি৷ যাক, এবার দৃশ্যপটে সিদ্দিক চাচার বউ, কে জানে, হয়তো আমার হবুশাশুড়ির আগমন ঘটেছে৷ 'সেই বেটি আবার বেড়াল পালে!' চাচা গর্জে ওঠেন৷ 'অ্যাই, আরো দুই কাপ চা পাঠা!' জুম্মন চায়ের কেটলির কাছে উড়ে যায়৷ 'তোর চাচী, জানিসই তো, খুব চরম স্বভাবের মহিলা, একদিন দেখি ঐ সিদ্দিকের বাড়ি থেকে একটা বেড়াল নিয়ে এসেছে৷ বলে কি না, পুষবে৷ সিদ্দিকের বউ তার সই, তার সই বেড়াল পালে, কী সুন্দর কুচিকুচিকু বেড়ালের বাচ্চা, এখন সেও বেড়াল পালা শুরু করবে৷ আমি গোড়াতেই বোঝানোর চেষ্টা করলাম, দ্যাখো, বেড়াল খুব খারাপ জীব, বদমায়েশ জানোয়ার, এইসব করতে যেও না --- শুনলো না আমার কথা, গোঁয়ার মহিলা! এখন তার শখের মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাকে৷' এ পর্যায়ে আমি একটা ভুল করে ফেললাম, কেন করলাম কে জানে, সবই ওপরওয়ালার ইশারা নিশ্চয়ই৷ বেড়াল আমিও খুব একটা পছন্দ করি না, সুযোগ পেলে কষে লাথি লাগাই, আর এখন মতিভ্রমের কবলে পড়ে এই প্রবল বেড়ালবিদ্বেষী মনজুর চাচার কাছেই বেড়ালের হয়ে ওকালতি করতে গেলাম, 'কেন চাচা, বেড়াল তো নবীজির প্রিয় জীব?' মনজুর চাচা সটান সোজা হয়ে বসে আমাকে আগাপাস্তলা ভালো করে খুঁটিয়ে দেখেন, তারপর মন্দ্রস্বরে বলেন, 'আমি কি নবীজি?' আমি ঢোঁক গিলে সাথে সাথে প্রবল প্রতিবাদ করি৷ মনজুর চাচা আমাকে আরো এক দফা খুঁটিয়ে দেখে বলেন, 'তুই কি নবীজির খুব আদর্শ উম্মত? তুইও কি বেড়াল ভালোবাসিস?' আমি গা বাঁচানোর জন্যে এবার প্রাঞ্জল ভাষায় বেড়ালের বদনাম করি, 'আমি? কক্ষণো না৷ বেড়াল খুবই বদ জানোয়ার!' বেড়ালের প্রতি কোনরকম অনুরাগ দেখাতে গিয়ে ধোলাই খাওয়ার শখ আমার নেই৷ মনজুর চাচা এবার চটে যান, 'তাহলে বেড়ালের মোক্তারি করিস কেন, ইডিয়েট? চুপচাপ কথা শোন, ফালতু কথা বললে এক চড়ে তামশা দেখিয়ে দেবো৷' আমি সাথে সাথে মুখে একটা আলুপুরি গুঁজে দিয়ে মৌন মেরে যাই৷ মনজুর চাচা গুম হয়ে যান৷ তারপর গলা খাঁকরে চায়ে দু'একটা যাযাবর চুমুক দেন৷ তারপর বলেন, 'তো, তোর চাচীকে বললাম, দ্যাখো, পালতে চাও তো গরু পালো৷ বাড়ির পিছনে জায়গা আছে, গোয়ালঘর বানিয়ে দেবো, গরু পাললে দুধ খাওয়া যাবে, বাজারে পানি-মেশানো দুধের লিটার আটাশ টাকা৷ মহিলা, বিশ্বাস করবি না, একেবারে তেড়ে আসে, বলে বহুত গরুর খেদমত করেছে সে জীবনে, গরু পোষার ইচ্ছা আর তার নাই৷ এ তো পরিষ্কার আমাকেই অপমান! ইচ্ছা করছিলো, চুলের মুঠি ধরে তুলে মারি এক আছাড়, অন্যের বউ হলে তা-ই করতাম, নিজের বউ দেখে সামলে গেলাম৷ তারপর বললাম, তাহলে এক কাজ করো, খরগোশ পালো৷ দেখতে বেড়ালের চেয়ে অনেক সুন্দর, কেমন কুটকুট করে দৌড়ে বেড়ায়, সবচে বড় কথা খরগোশের মাংস খেতে বেশ, বড় বড় টুকরো করে বারবিকিউ করে খাওয়া যাবে৷ তোর চাচী শুনে কপাল চাপড়ায়৷ বলে, শুধু মাংস খাওয়ার জন্যেই যদি লোকে ঘরে জন্তুজানোয়ার পুষতো, তাহলে হাতি কী দোষ করলো? --- শোন মেয়েমানুষের কথা, হাতির মাংস কি খায় কেউ? ইচ্ছা হলো, কিছু বলি, কিন্তু বললাম না৷ খোদা যাকে বুদ্ধিশুদ্ধি দেয় নাই, তার সাথে তর্ক করতে যাওয়া বৃথা৷ তারপর বললাম, চলো মুরগি পালি, ডিমের হালি চৌদ্দ টাকা, মুরগির জোড়া দেড়শো টাকা, মুরগির একটা হারেম খুলে ফেললে আর চিন্তা নেই, এই বাজারে মুরগি খেয়ে বাঁচা যাবে৷ তখন বলে কী শোন, আমি নাকি চাষা, আমার পরামর্শ মতো চললে পাড়ায় আর প্রেস্টিজ নিয়ে বাঁচা যাবে না৷ মুরগি পছন্দ না হওয়ায় কবুতর পোষার বুদ্ধি দিলাম, পাড়ায় সম্মান বাঁচানোর জন্যে বেশ সাহিত্য মিশিয়ে বললাম, চলো পারাবত পুষি৷ এই বুদ্ধিটা ফল দিচ্ছিলো, মাটি করলাম আমি নিজেই৷ তোর চাচী পারাবত শুনে বেশ গলে গিয়েছিলো, খতিয়ে দেখছিলো, পারাবত পোষা ব্যাপারটা প্রেস্টিজের কোন ক্ষতি করতে পারে কি না৷ এর মধ্যে আমি কেন যেন আপনমনে বললাম, জালালী কবুতরের কোর্মা যা স্বাদ! আর যায় কোথায়, তোর চাচী পারলে আমাকে জুতো মেরে বের করে দেয় বাসা থেকে৷ বলে, দূর হও তুমি চোখের সামনে থেকে!' আমি আঁচ করার চেষ্টা করি, মনজুর চাচা কি গাঁটরিবোঁচকা নিয়ে অভিমানে দেশান্তরী, নিদেন পক্ষে বাসান্তরী হচ্ছেন কি না৷ তিনি বকে যান, আমি এই ফাঁকে আরেকটা পুরিতে মনোনিবেশ করি৷ 'তো, কোনমতে সামলে নিয়ে আমি তাকে আরো সদপরামর্শ দেই৷ বলি, গিনিপিগ পালো, নয়তো হ্যামস্টার, উঁহু, রাজি হয় না, তার নাকি ঘেন্না লাগে৷ চিন্তা কর একবার, বেড়াল ঘেন্না লাগে না, হ্যামস্টার ঘেন্না লাগে৷ তারপর বলি, আচ্ছা চলো তোতা পালি, তোতা পাখি দেখতে ভালো, কথাও বলে ক্যাটক্যাট করে, বেশ হবে৷ তোতা রাজি না হলে ময়না৷ কিন্তু সেগুলোও তার সয় না, তার নাকি কী একটা অ্যালার্জি আছে৷ আমি তো বরং জানতাম, অনেকের বেড়ালে অ্যালার্জি আছে, আর তোর চাচীর অ্যালার্জি তোতাময়নায়! আসল কথা হচ্ছে, মহিলার অ্যালার্জি আমার কথায়৷ আমি যা-ই বলি, কোনটাই তার পছন্দ হয় না৷ শেষে যখন বললাম, চলো কুকুর পালি, একটা ভালো টেরিয়ারের বাচ্চা চাইলে আমার বন্ধু মোফাজ্জল মাগনা দিয়ে দেবে৷ এই কথা শুনে মহিলা স্যুটকেস গোছায়৷ সে নাকি বাপের বাড়ি চলে যাবে, ঐখানে গিয়ে বেড়াল পালা শুরু করবে, তবুও বাড়িতে সে নাপাক কুকুর ঢুকতে দেবে না, খাবলুর মাংস খাওয়ার পর থেকেই মহিলার কুকুরের ওপর ঘেন্না ধরে গেছে কুকুর খেলে মুগুর দ্রষ্টব্য৷ শুধু তাই না, এখন হয় বাসায় সে বেড়াল নিয়ে থাকবে, নয়তো আমি থাকবো৷ আমাকেও সে টিকতে দেবে না! চিন্তা করে দেখ, কী উগ্র চিন্তাধারা মহিলার! আজ সমাজে সন্ত্রাস বেড়েছে এইসব মহিলার কারণে৷ এরাই যতো নষ্টের গোড়া!' আমি সমবেদনা জানাই, 'চাচা কি সেই কারণেই বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন?' মনজুর চাচা সন্তুষ্ট হাসি দ্যান৷ 'পাগল? ঐ বেটির কথায় আমি বাড়ি ছাড়বো? আমিও বাঘের বাচ্চা বাঘ৷ বললাম, ঠিক আছে, পালো বেড়াল, কিন্তু উল্টাপাল্টা দেখলে চামড়া তুলে ফেলবো, সেই চামড়া দিয়ে মানিব্যাগ বানানো হবে৷' আমি আঁতকে উঠি৷ 'উঁহু, বোকা ছেলে,' আমাকে আশ্বস্ত করেন মনজুর চাচা, '--- তোর চাচীর চামড়া নয়, বেড়ালের চামড়া৷ আমি তো আর অত বলদ নই, ওভাবে ঐ খান্ডারনী মহিলাকে তখন চটিয়ে দিয়ে খামাখা ঝামেলায় পড়তে যাবো, হুঁহ! --- তো, শুরু করলো মহিলা বেড়াল পোষা৷' চাচা গুম হয়ে আরেক কাপ চায়ের ফরমাশ দেন৷ 'এটা হচ্ছে ছয় মাস আগের ঘটনা৷' আমি একেবারে ঘায়েল হয়ে যাই৷ এ তো ইতিহাস! ইতিহাসের জের চাচা আজ পর্যন্ত টেনে চলেছেন? 'এই ছয় মাসে আবার জীবনটা কালি হয়ে গেছে!' হঠাত্‍ সর্পদংশিতলক্ষীন্দরভারেজর্জরিতা বেহুলার মতো কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেন পুরুষশার্দুল মনজুর চাচা৷ 'চিন্তা কর এই সিদ্দিকের কী কূটবুদ্ধি, একটা মাদী বিলাই গছিয়ে দিয়েছে তোর চাচীকে৷' আমি ঠিক ধরতে পারি না, বেড়ালের লিঙ্গের ঠিক কী ভূমিকা থাকতে পারে চাচার মসীলিপ্ত জীবনে৷ মাদীর বদলে মদ্দা দিলে কি সিদ্দিক চাচার সুবিধা হতো কিছু? 'বেড়াল চিনিস তুই?' মনজুর চাচা হঠাত্‍ শুধান৷ আমি মাথা নাড়ি৷ 'হ্যাঁ, চিনি৷ দেখলেই সনাক্ত করতে পারবো৷ বাঘের মতো, খালি গায়ে কোন ডোরা নাই৷ বাঘের মাসি বলে বেড়ালকে৷' মনজুর চাচা জুলজুল করে খানিকটা দেখেন আমাকে, তারপর বলেন, 'ওভাবে তো বেড়ালকে একটা ছাগলও চিনতে পারবে৷ বেড়ালের স্বভাবচরিত্রের সাথে তোর জানাশোনা আছে? মানে, কতবড় হারামজাদা একটা জানোয়ার, তা জানিস?' আমি মাথা দোলাই৷ না৷ 'শোন তাহলে৷' চোখ বুঁজে শুরু করেন চাচা, তার স্বর আবার কাঁদো কাঁদো হয়ে আসে৷ 'গান্ডেপিন্ডে গিলে শালি৷ সারাটা দিন খায়৷ হালাল যে খাবারটা দেয়া হয়, সেটা তো খায়ই, চুরি করে হারামটাও খায়৷ ফ্রিজটাকে আঁচড়ে কামড়ে ফালাফালা করে ফেলেছে৷ আমার খুব দুধ খাওয়ার শখ, এই বেড়ালি মেহমান হয়ে আসার পর আমার দুধ খাওয়া মাথায় উঠে গেছে৷ মাছ মাংস কিনে এনে দুই মিনিট ফেলে রাখা যায় না, সে সাবাড় করে ফেলে৷ তোর চাচী তাতে কী খুশি, কী যে তার আহ্লাদ তখন, দাঁত বের করে হেসে বলে, দুষ্টু! আর ঐ জানোয়ারটা তখন ল্যাজ নাড়ে, মানে, আরো খামু৷ মাঝে মাঝে পাত থেকে মাছমুরগি থাবা দিয়ে তুলে নিয়ে যায়! এই ছয় মাসে এমন কোন দিন নেই, যেদিন আমার শার্টে লুঙ্গিতে ঝোল উল্টে পড়েনি!' আমি তন্ময় হয়ে শুনি৷ 'খাওয়া চুরি করছে, ভালো, কিন্তু ভদ্রভাবে খা৷ অর্ধেক খেয়ে এঁটোটা যেখানে সেখানে ফেলে যায়৷ কখনো বাথরুমে, কখনো ড্রয়িংরুমে, কখনো শোবার ঘরে৷ সারাটা ঘরে তার ভুক্তাবশেষ৷ মেহমান এসে বসলো সোফায়, তারপর চিত্‍কার দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো৷ কী ব্যাপার, কী ব্যাপার? পেছনে তিন ইঞ্চি কাঁটা বিঁধে গেছে৷ ঘুমাতে গেছি রাতে, কম্বল গায়ে দিতে গিয়ে হাতে কাঁটা ফুটে গেলো৷' আমি মুখ বিকৃত করি৷ 'এই তো গেলো খাওয়ার কথা, খাওয়ার পর যে কাজটা সে করে সেটা শোন? বেড়াল তো আবার হেগে সেই গু লুকিয়ে রাখে৷ সারাটা ঘরে তার সেই গুপ্তধনের সৌরভ৷ কোথায় যে সে কর্মটি করে রাখে, খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷ মাঝে মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় বটে, সেটা আমার বালিশের নিচে, কম্বলে, আমার প্যান্টে৷ তার গুয়ের গন্ধ ঢাকতে গিয়ে আমার এয়ার ফ্রেশনারের পেছনে হাজার হাজার টাকা গচ্চা গেছে৷ তোর চাচীকে বিচার দিলে সে বলে কী শুনবি? বলে আমার নাকি নাকে সমস্যা৷ আর মাঝে মাঝে যে বদ গন্ধটা ঘরে পাওয়া যায়, সেটা নাকি মদের গন্ধ৷ আমি নাকি চুরি করে মদ খাই৷ তুই তো লায়েক হয়েছিস, তুই বল, মদের গন্ধ আর বেড়ালের লাদির গন্ধ এক হলো?' আমার লায়েকত্বে মনজুর চাচার অগাধ আস্থা দেখে আমি যুগপত্‍ বিস্মিত ও পুলকিত বোধ করি৷ সবক'টা দাঁত বিকশিত করে প্রবল পরাক্রমে এ দুয়ের সাদৃশ্যকে অস্বীকার করি৷ 'কক্ষণো না! মদের গন্ধ কত সুন্দর!' মনজুর চাচা ভুরু কুঁচকে বলেন, 'খুব লায়েক হয়েছিস দেখছি! তোর বাপকে বলতে হবে কথাটা, পরে কোন এক সময় --- এখন শোন, এই বেড়ালি খেয়ে আর হেগে আমার বাড়িটার ওপর যে অত্যাচার করেছে, এই ছ'টা মাস, একেবারে অবর্ণনীয়৷ অকথ্য আর অশ্রাব্যও বটে৷ কিন্তু তোর চাচী, এমন নিমকহারাম মহিলা, আমার কোন কথা সে কানে নেয় না, সে দিনরাত মশগুল হয়ে থাকে তার বেড়াল নিয়ে৷ আর তোর চাচী এমন কান্ডজ্ঞানহীন, প্রথমে বেড়ালের নাম রেখে বসেছে মন্টু মিয়া, তারপর যেই আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম যে এটা একটা মাদী বেড়াল, তখন নাম পাল্টে রেখেছে৷ পাল্টে আবার নাম দিয়েছে কী শোন, শেহরজাদি! শেহরজাদি না ঘোড়ার ডিম, হারামজাদী একটা! তার শেহরজাদির নামে কোন অভিযোগ সে শুনতে রাজি না৷ আর আমি রেগে গেলে সে বলে, বেড়াল তো আর তোমার মতো বিদ্যার জাহাজ না, মাঝে মাঝে এরকম করবেই, এটা নিয়ে বেশি ঢং করবা না৷ --- চিন্তা কর, লাই দিয়ে দিয়ে কোথায় তুললো সে বেড়ালিটাকে?' আমিও লাইপ্রাপ্ত সেই মার্জার রাজকুমারীর অবস্থানটা আঁচ করার চেষ্টা করি, যতদূর মনে হয় সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলে, সে মনজুর চাচার বেশ খানিকটা ওপরেই আছে৷ 'আর এই আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে সে বদমাশ জানোয়ারটার মাথা পুরোই খেয়েছে৷ চরিত্র বলে আর তার কিছুই রইলো না৷ তাছাড়া দেখতে হবে না, কোন বংশের বেড়াল? সিদ্দিকের বাড়ির বেড়াল তো চরিত্রহীন হবেই, এ আর নূতন কী!' আমি খুক করে কাশি৷ মনজুর চাচা পাত্তা দেন না৷ 'কয়েক মাস যেতে না যেতেই হারামজাদী একটা হুলো প্রেমিক জুটিয়ে ফেললো৷ সেই খাইষ্টা জীবটা রাতবিরাতে আমার বাড়ির দেয়ালে উঠে যে কী চিত্‍কারটা করতো, ওফ, অসহ্য৷ এক একদিন ইচ্ছা হতো গুলি করে মারি, কিন্তু বন্দুকটা পড়ে থেকে থেকে নলে ময়লা জমে বরবাদ হয়ে ছিলো, তাই কিছু করা যায়নি৷ তোর চাচী, কোথায় হুলোটাকে একটু টাইট দিবে, তা না, সে উল্টে আরো খাতির করে হারামজাদাকে, নাম দিয়েছে বাদশা মিয়া৷ বাদশা মিয়াই বাড়ির বড় কুটুম্ব তখন৷' আমি বাদশা মিয়ার সাথে নিজের সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করি, সিদ্দিক সাহেবের বাড়ির দেয়ালটার দিকে একবার তাকাই আড়চোখে৷ ওটাতে চড়ে রাতবিরাতে গান গাওয়া কি আমাকে পোষাবে? আর, সিদ্দিক সাহেবের কি আদৌ মরচে ধরা কোন বন্দুক আছে? 'শেহরজাদী আর বাদশা মিয়ার প্রেমের ঠ্যালায় আমার রাতের ঘুম হারাম৷ কুত্তার বাচ্চা বিলাই দুইটা তখন আমার বাসায় খায়, আমার খাটে হাগে, আবার আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচায়৷ চিন্তা করে দেখ, কত্ত বড় সাহস!' মনজুর চাচা চায়ের কাপটা আছড়ে রাখেন টেবিলের ওপর৷ 'তারপর?' আমি রূদ্ধশ্বাসে প্রশ্ন করি, বাদশা মিয়ার অমঙ্গল আশঙ্কায় আমার চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠে৷ 'তারপর আর কী? বেড়াল তো আর বেড়ালই৷ বাদশা মিয়া তো পাড়ার বেড়াল, বাদশা শাহজাহান তো আর না৷ তার প্রেম শিগগীরই ফুরালো৷ শেহরজাদি পেটে বাচ্চা নিয়ে আমার বাড়িতেই রয়ে গেলো, বাদশা হারামজাদা ভাগা মারলো৷ আমি তো পারলে বাসায় মিলাদ পড়াই, ভেবেছিলাম, শেষ পর্যন্ত খোদা রহম করলো, এখন আর রাতে সেই হাউকাউ ক্যাচম্যাচ শুনতে হবে না৷ কিন্তু শান্তি মিললো না৷ পেট বাঁধিয়ে ঐ কূলটা বেড়ালিটার মেজাজই পাল্টে গেলো, খালি ফ্যাচফ্যাচ করতো সারারাত, আঁচড়ে কামড়ে আমার ঘরের পর্দাগুলোর হালত্‍ খারাপ করে দিয়েছে জানোয়ারটা৷' আমি সহানুভূতিসূচক একটা হাসি কপচানোর চেষ্টা করি৷ বাদশা মিয়ার পারফরম্যান্সে কেন জানি না, মনে মনে খুশিই হই, একবার ব্যাটার পিঠও চাপড়ে দিই৷ সার্থকনামা প্রেমিক ব্যাটা৷ এমন বাদশাবৃত্তিতে নিজেকে নিয়োজিত করা যায় কি না, ভাবি আনমনে৷ 'ফ্যাকফ্যাক করে হাসিস না এমন, স্টুপিড৷ শোন তারপর কী হলো, অ্যাই ছ্যামরা, আরো দুইটা চা দে তো! --- হ্যাঁ, তোর চাচী আবার এদিকে আরেক কাঠি সরেস৷ সে শেহরজাদির এমন আদরযত্ন শুরু করলো, যেন নাতনি আসছে তার৷ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ায়, চান্দে চান্দে ওজন মাপে, কী সব আদিখ্যেতা --- যাক গিয়ে৷ কয়েক হপ্তা আগে বাচ্চা দিয়েছে হারামজাদি৷ চারটা বাচ্চা, দুটো হুলো, দুটো মিনি৷ বাচ্চাগুলো শুরুতে দেখতে ভালোই ছিলো, চোখটোখ ফোটেনি, সারাদিন কুঁইকুঁই করতো, মেঝেতে গড়াতো, মাঝে মাঝে কোলে নিলে চুপচাপ বসে গাঁইগুঁই করতো৷ এমনকি আমারও ভালো লেগেছিলো৷ আর এই সময়টায় শেহরজাদীও বেশ ভদ্র হয়ে গিয়েছিলো, কোন উত্‍পাত করেনি, ভদ্রলোকের মতো বসবাস করেছে৷ আমি ভাবলাম, যাক, সুদিন এলো শেষে৷' আমি মনজুর চাচার কাহিনীর মোড়ে হোঁচট খাই৷ 'কিন্তু বেড়ালের বাচ্চা সারাজীবন বাচ্চা থাকে না৷ খুব জলদি সেগুলোর চোখ ফোটে, তারপর সেগুলো বড় হয়ে যায়, বড় হয়ে সব শুয়োরের বাচ্চা হয়ে যায়৷ বাচ্চাগুলো বড় হতে না হতেই শেহরজাদি হারামজাদি নতুন উদ্যমে তার পুরান কারবার করা শুরু করলো৷ আর বাচ্চাগুলোও তাদের মায়ের দেখাদেখি একই কীর্তি করে৷ ফলটা কী হলো? এখন আমার ঘরে পাঁচটা বেড়াল, তারা চুরি করে, রাক্ষসের মতো খায়, খোক্কসের মতো হাগে, আর উঠতে বসতে আমাকে পেরেশান করে৷' মনজুর চাচা কপালের ঘাম মোছেন৷ আমি কিছু বলার সাহস পাই না, চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিই৷ 'তোর চাচীকে বললাম, এটা খুবই খারাপ হলো৷ কেয়ামতের আর বেশি দেরি নাই৷ এক শেহরজাদি চারখান বাচ্চা পয়দা করে বসছে, তাদের মধ্যে দুইটা মাদি৷ ওহ, তোর চাচী তো আবার অপোগন্ডগুলোর নাম দিয়ে ফেলেছে, সুয়োরাণী দুয়োরাণী লালকমল নীলকমল৷ আমি তাকে অঙ্ক কষে দেখিয়ে দিলাম, যে এই হারে চলতে থাকলে --- সব তো জন্মেছে প্রেম করার জন্যে --- আরো ছয়মাস পর বাড়িতে বেড়ালের সংখ্যা হবে সতেরো, এক বছর পর হবে তেপ্পান্নটা, শেষমেষ আমাদেরকেই বাসা থেকে উচ্ছেদ হতে হবে৷ তোর চাচী এসব হিসাব কানেই নেয় না৷ সে তার সুয়োদুয়োলালুনীলুকে নিয়ে ব্যস্ত৷ আমি সকালে কী খেলাম না খেলাম, কাপড়জামা পড়লাম কি ন্যাংটাই থাকলাম, তা নিয়ে তার ভ্রুক্ষেপ নাই, তার বেড়ালগুলি কী খাবে, সেটা নিয়ে সে ব্যস্ত৷' আমিও দুশ্চিন্তিত হই৷ বেড়াল এই হারে বাড়ে, জানতাম না৷ কিন্তু চাচার হিসেবে নিশ্চয় ভ্যাজাল আছে, তারণ তা না হলে অ্যাদ্দিনে গোটা দুনিয়া বেড়ালে ছয়লাপ হয়ে যেতো৷ তিনি শুধু নিখুঁত উত্‍পাদনের হিসেবই করেছেন, কিন্তু বাস্তব বড় খুঁতিয়াল৷ শেহরজাদী আর বাদশা মিয়া ভালো খেতে পাচ্ছে, তাই চারখানা পয়দা করে বসেছে৷ এই সুয়োদুয়োলালুনীলুরাও ভালো খেতে পাচ্ছে, তাই আশা করা যায় তারাও বাবামায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে৷ কিন্তু বাস্তবের উদ্বাস্তু বেড়ালরা পথে পথে ঘুরে বেড়ায় আর এঁটোকাঁটা খায়, তারা যে হারে জন্মায় প্রায় সে হারেই মারা পড়ে৷ তাই আমরা এখনো চরে বেড়ানোর জায়গা পাই, নইলে পেতাম না৷ ওদিকে মনজুর চাচা বকে চলেন, 'আমি এবার ঠিক করলাম, আমাকে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ তোর চাচী চেতলে চেতুক, আমার কিছুই যায় আসে না৷ আমি করলাম কী, পিচ্চিগুলিকে ঠ্যাং বেঁধে গত পরশু দিন রাতের বেলা চুপচাপ এসে সিদ্দিক হারামজাদার বাড়ির ভেতরে ছুঁড়ে পার করে দিলাম৷ ঐ শালা, ঐ শালার বউ বেড়ালরসিক, বেড়ালের সমঝদার তারা, আর এই বেড়ালের বাচ্চাগুলি হচ্ছে তাদের আসলের ওপর সুদ৷ তাদের ইনভেস্টমেন্টের হাতে হাতে ফল৷ আমি বিচার করে দেখলাম, এগুলি আইনত ন্যায্যত ধর্মত তাদেরই প্রাপ্য৷ সেধে দিলে যে সিদ্দিকের মতো ছোটলোক বেড়ালগুলিকে রাখতে চাইবে না, সেটা আমি স্পষ্ট জানি, তাই চুপচাপ খোদাতালার মতো ছপ্পর ফেড়ে দিয়ে এসেছিলাম৷ তোর চাচী তো পরদিন সকালে উঠে বাড়ি মাথায় করে ফেললো, তারা সোনারা কোথায়, কোথায় তার সাত রাজার ধনেরা৷ আমি এদিকে চুপচাপ পেপার পড়ি আর মনে মনে হাসি৷ বোঝ বেটি, এবার বোঝ মজা৷' আমি পরের ধাপটা আঁচ করে ফেলি৷ 'কিন্তু বেড়াল যে এমন প্রভুভক্ত, আমি জানতাম না৷ আমার ধারণা ছিলো কুকুরই প্রভুভক্ত, বেড়াল একটা নিমকহারাম জীব৷ কিন্তু না৷ বাচ্চাগুলি গতকাল দুপুরেই হেলতে দুলতে এসে হাজির৷ নবাবের বাচ্চার মতো হাবভাব৷ তোর চাচী তো আনন্দে গদগদ৷ ছানা খাওয়ায়, পনির খাওয়ায়৷ বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে মরে যায়, তার স্বামী দিনের পর দিন বেড়ালের এঁটো খেয়ে খেয়ে রাস্তার নেড়ির মতো হাড় জিরজিরে চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তার কোন বিকার নাই, আর বারো ঘন্টার তফাতে বেড়ালের বাচ্চাগুলি নাকি শুকিয়ে কাঠি হয়ে গেছে, তাদের ভালো পথ্য দরকার৷ পথে ছুঁড়ে ফেলে দিলেই ল্যাঠা চুকে যেতো, হাতেনাতে পথ্য পেয়ে যেতো তারা, কিন্তু কাকে বোঝাবি এ কথা? --- বিকালে আবার সিদ্দিক হারামজাদা লোক পাঠিয়েছে, সে এসে নালিশ করে, বলে আপনাদের বাড়ির বেড়াল আমাদের বাড়িতে গিয়ে খুব উত্‍পাত করেছে, জিনিসপত্র ভেঙেচুরে শেষ করে দিয়েছে, গোটা ঘর ময়লা করেছে, এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ আমি মিষ্টি করে বললাম, কেন বাবা, তোমার কেন মনে হলো এগুলো আমাদের বেড়ালের কাজ? আমি তো যতদূর জানি, তোমাদের ঘরেই এক কাঁদি বেড়াল আছে! সেই হারামজাদা তখন কী বলে শুনবি? বলে আগে ছিলো, কিন্তু সেগুলোর উত্‍পাত সহ্য করতে না পেরে সবকয়টাকে পাড়ার লোকের কাছে বিলিয়ে দেয়া হয়েছে৷ --- খালি চিন্তা করে দেখ, সিদ্দিকের মাথায় কী চোখা শয়তানি বুদ্ধি৷ নিজে সামলাতে না পেরে সেই ঝামেলা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে! আমি তখন বললাম, দ্যাখো বাবা, তোমাদের বিলানো বিলাই এই ছয়মাস আমার জীবনটা তছনছ করে ফেলেছে৷ ক্ষতি যদি কিছু হয়ে থাকে, সেটা আমারই হয়েছে৷ তার পূরণ যদি করতে হয়, তাহলে সিদ্দিক সাহেবেরই করা উচিত৷ আর আমার বাড়ির বেড়াল তোমাদের বাড়িতে গিয়ে উত্‍পাত করেছে, এটা যেমন বিশ্বাসযোগ্য না, তেমনি গ্রহণযোগ্যও না৷ তারা কেন এত আদরযত্ন ফেলে সিদ্দিকের মতো একটা চামারের কাছে যাবে? আর যদি গিয়ে থাকে, নাড়ির টানে গেছে, কারণ ঐটা তাদের নানীবাড়ি৷ নানীবাড়িতে গিয়ে লোকে একটু আধটু দুষ্টামি করেই, ঐগুলি ধরতে হয় না৷ এখন ফুটো৷' আমি শুনে যাই৷ সিদ্দিক সাহেব তাঁর মেয়েদের নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন কি না, আঁচ করার চেষ্টা করি৷ এই পাড়ার লোকের মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার পদ্ধতিটা খারাপ কিছু না৷ 'আমি তারপর ভেবে দেখলাম,' মনজুর চাচা চায়ে একটা প্রকান্ড চুমুক দেন, 'সিদ্দিককে একটা হালকা টাইট দেয়া গেছে --- হাতে না হোক, মুখে --- এবার তোর চাচীর সাথে একটা ফয়সালা হওয়া দরকার৷ মহিলা আশকারা পেয়ে পেয়ে মাথায় উঠে গেছে৷ আমি তাকে উচিত শিক্ষা দেবো বলে ঠিক করেছি৷ আজকে সে নিউ মার্কেটে গেছে ক্যাটফুড কিনতে৷ আমি এই ফাঁকে সবকয়টা হারামখোরকে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে ধরেছি৷ অবশ্য খবিশ জানোয়ারগুলি আমাকে আঁচড়ে কামড়ে শেষ করে ফেলেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবকয়টাকে আমি বস্তায় ভরতে পেরেছি, এখন ডাক্তারের কাছে ইঞ্জেকশন নিয়ে তবে আসছি৷ তোর চাচী ফিরে এসে কোন শেহরজাদি-হারামজাদি সুয়োরাণী-শুয়োরনী দুয়োরাণী-গুয়োরাণী লালকম্বলনীলকম্বল খুঁজে পাবে না৷ সে যদি জিজ্ঞেস করে, তার বেড়াল কোথায়, আমি বলবো বাদশা মিয়ার কাছে খোঁজ করতে৷ অথবা এ পাড়ায় বেড়ালের হর্তাকর্তাবিধাতা, বেড়ালসংস্কৃতির ধারকবাহকরক্ষক ঐ বেড়ালতপস্বী সিদ্দিকের পো-কে জিজ্ঞেস করতে বলবো৷ তবুও তোর চাচী আমাকেই সন্দেহ করবে, আমি জানি, সে আমাকে আরেক দফা আঁচড়ে কামড়ে শেষ করবে, দরকার হলে আমি আরেক দফা ইঞ্জেকশন নেবো৷ --- তবে সে যদি বেশি উত্‍পাত করে, তাহলে আগেই বলে রাখছি, আমার কাছে তার সাইজেরও একটা বস্তা আছে, হ্যাঁ!' আমি এতক্ষণে মনজুর চাচার পায়ের কাছে পড়ে থাকা বোঁচকাটার দিকে তাকাই৷ সেটা যেন অল্প একটু নড়েচড়ে ওঠে৷ আমি বলি, 'এই ব্যাগে করে নিয়ে এসেছেন নাকি?' মনজুর চাচা হাসেন ঠা ঠা করে৷ 'হ্যাঁ৷ মজবুত পলিথিনের ব্যাগ৷ তবে পাঁচপাঁচটা বেড়ালকে এরকম একটা ব্যাগে রেখে দিলে দুই মিনিটেই ব্যাগ ফাঁসিয়ে বেরিয়ে যাবে৷ ব্যাগে ভরে আচ্ছামতো পেঁদিয়েছি শালাদের৷ অজ্ঞান হয়ে আছে বোধহয়৷' আমি শিউরে উঠি৷ বাদশার বংশধরদের এই পরিণতি? মনজুর চাচা আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করেন৷ 'সে কী? তুই শরীর চোমড়াচ্ছিস কেন? উঁহু বত্‍স, অত নরমটি হলে চলবে না, চরমটি এবং গরমটি হতে হবে! বীরপুঙ্গব না হলে কিছুতেই সংসার করতে পারবি না, বউয়ের ধোলাই খেয়ে অচিরেই ফিট হয়ে যাবি৷ বাঘের মতো নিষ্ঠুর না হলে বেড়ালের কাছে হার মানতে হবে তোকে৷ আর তোকে কেন ছাই উপদেশ দিচ্ছি, আমার তো এ কাজটা করা উচিত ছিলো ছ'মাস আগেই! খামোকা এত ভালো একটা সমাধানকে মাথায় জিইয়ে রেখে এই ছয়ছয়টা মাস বেড়ালের উত্‍পাতে অতিষ্ঠ হতে হলো আমাকে৷' চাচা চায়ে চুমুক দেন ঠাস করে৷ 'আর একটা পরামর্শ দিচ্ছি তোকে শোন, বেড়াল মারতে দ্বিধা করবি না কখনো৷ বিয়েশাদি করলে যতো জলদি সম্ভব বেড়াল মেরে নিজের অধিকার কায়েম করবি, সম্ভব হলে বাসর রাতেই মারবি৷' নিজের বাসর রাতে করণীয় নৃশংসতার কথা ভেবে আঁতকে উঠি, খানিকটা লজ্জা লজ্জাও লাগে৷ কিন্তু সামলে যাই৷ ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করি, 'কী করবেন এখন এগুলোকে?' মনজুর চাচা চুলে হাত চালান৷ 'আমিও এ নিয়েই ভাবছি, বুঝলি? প্রথমে ভেবেছিলাম, গোয়েন্দা গুল মোহাম্মদের ঐ পোষা নেড়ি, ডগি না ভগি --- কী যেন নাম, ওটার সামনে ছেড়ে দেবো সবকটাকে৷ অত্যন্ত তেজী কুত্তা, দুই মিনিটেই পাঁচটাকে সাবড়ে দেবে৷ কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, এতে যেমন অযথা রক্তপাত হবে, পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হবে, তেমনি ডগির বদহজম হতে পারে৷ মাগনা খেয়ে খেয়ে বেড়ালগুলির যা কেঁদো স্বাস্থ্য হয়েছে, গুরুভোজনে ডগির একটা অনিষ্ট হতেই পারে৷ তাছাড়া, জ্ঞান ফিরে এলে পাঁচটা পাঁচদিকে ছুটবে, ডগি একটাকেও পাকড়ে সাবাড় করতে পারবে না৷ আর পরে ওগুলো বাসায় ফিরে আমার ওপর একহাত দেখিয়ে দেবে৷ তাই আর ডালকুত্তা দিয়ে খাওয়ানো গেলো না৷' আমি ঢোঁক গিলি৷ 'তারপর ভাবলাম, মাটিতে জ্যান্ত পুঁতে ফেলি৷ হেঁটোয় কণ্টক আর ওপরে কণ্টক৷ ডালকুত্তাদের মাঝে বণ্টক করা না গেলে এটাই পরবর্তী ভালো আইডিয়া, কিন্তু এতে করে আমাকে খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে বিস্তর, আর লোকজন দেখে ফেললে উল্টোপাল্টা সন্দেহ করবে৷ আর, কী একটা গল্প পড়েছিলাম, সেখানে এমনই কয়েকটা বেড়াল ভূত হয়ে ফিরে এসে খুব নাকাল করেছিলো নায়ককে৷ শেষটায় বেচারাকে নাকে খত্‍ দিতে হয়েছিলো৷ আমার আর এই বয়সে খত্‍ দেয়া পোষাবে না৷' 'তাহলে?' 'আমি ভাবছি,' চায়ে রসিয়ে রসিয়ে চুমুক দেন চাচা, 'এখান থেকে বাসে করে সদরঘাট যাবো, সেখান থেকে কেরানীগঞ্জের লঞ্চে চড়বো, তারপর এই ব্যাগের সাথে একটা ইঁট বেঁধে ব্যাগটাকে মাঝ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেবো৷ ঝামেলা শেষ৷ দূরে ফেলে রেখে এলে কোন লাভ নেই, এই হারামিগুলো ঠিক ঠিক রাস্তা চিনে ফিরে আসবে৷ তাই কোন রিস্কে আমি যাচ্ছি না৷ একেবারে নিখুঁত খুন করবো৷ আর হ্যাঁ, পানিতে ফেলার আগে আরেকদফা প্যাঁদাবো শালাদের৷' 'কিন্তু চাচা,' আমি খানিকটা ভেবে বলি, 'চাচী নিউমার্কেট থেকে ফিরে এলে কী বলবেন?' 'কী বলবো? আমি আবার কী বলবো? তার বেড়ালের আয়া নাকি আমি? --- আর আমি জানি ঘটনা কিভাবে এগোবে৷ বেড়ালগুলোর জন্যে তোর চাচী প্রথম কয়েকদিন ভ্যানভ্যান করবে, ফিরে আসতে না পারলে তোর চাচী পেপারে বিজ্ঞাপন দিতে চাইবে, তাদের ফিরিয়ে আনার জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করতে চাইবে, তখন মারবো এক রামধমক৷ বেড়ালের জন্যে এত দরদ কিসের? ব্যস ঠান্ডা৷ এরপর আমি যেটা করবো, কয়েক জোড়া ভালো পারাবত এনে পোষা শুরু করবো, কয়েকদিন পর তোর চাচী বেড়াল ছেড়ে আপনিই কবুতর কবুল করে নেবে৷' মনজুর চাচা তৃপ্ত হাসি ঝলকান৷ 'দাঁড়া, এক কাজ করিস, মাসখানেক পর যাস বাসায়৷ গিয়ে বলিস, চাচী কবুতরের বারবিকিউ খাবো৷ তারপর দেখিস, তোর চাচী তোকে খুন্তি তুলে কেমন দৌড়ানিটা দেয়, হে হে হে!' আমি চাচীকে হাড়েমজ্জায় চিনি, খুন্তি চালনায় তাঁর জিঙ্গিজি দক্ষতা আমরা আগেও দেখেছি, তাই এমন কোন বদসুরত্‍ উদ্যোগ নেবার চিন্তা করি না৷ চাচা বিল দিতে দিতে আপনমনে বলেন, 'আমাদের আমলে বেড়ালগুলো শালা এমন বদমায়েশ ছিলো না৷ বাড়িতে থাকতো, কারণ বাড়িতে তাদের রাখা হতো৷ বাড়ির লোকজন তাদের অমন আশকারা দিয়ে মাথায় তুলতো না৷ বেড়ালের কাজ ছিলো ইঁদুর মারা৷ ইঁদুর মারায় গাফিলতি দেখলে লাথি মেরে সেই বেড়ালকে খেদিয়ে দেয়া হতো৷ আর চুরিচামারি করলে তো কথাই নেই, একেবারে ফাঁস লাগিয়ে নিকেশ করে দেয়া হতো৷ আর আমার বাড়িতে এই আমার বুড়া বয়সে বেড়ালের উত্‍পাতে টেকা দায়৷ ইঁদুর মারবে কী, ইঁদুরে বেড়ালে পাশাপাশি বসে আমার পাত থেকে খাবার খেয়ে যায়৷ তুই বল, এরকম মজার মজার মাগনা খাবার পেলে বেড়াল কোনদিন দৌড়ঝাঁপ করে ইঁদুর মারবে? কক্ষণো না৷ আর ইঁদুর মারার ফিটনেসও নাই এই চোট্টার পুতদের৷ খেয়ে খেয়ে খোট্টাদেশের বেড়ালের মতো গতর হয়েছে একেকটার৷ --- আমার কাছে বেড়ালের পরিচয় একটাই, সে ইঁদুরের যম৷ ইঁদুরের হাত থেকে মানুষকে রক্ষাই তার ব্রত৷ সেই রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তাকে বস্তায় ভরে পেঁদিয়ে সেই বস্তাটা পানিতে ফেলে দেয়াটাই সঙ্গত৷ কী বলিস তুই, ঠিক কি না?' এরকম মারদাঙ্গা মনজুর চাচার সাথে অনৈক্যমতের ঝুঁকি নেয়াটা নিতান্তই মূর্খামি ভেবে আমি ত্বরিত সায় দিই৷ 'জ্বি চাচা৷ দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভালো৷' চাচা খুশিতে বাগবাগ হয়ে ওঠেন৷ তিনি গদগদ গলায় বলেন, 'আয় তবে আমার সাথে৷ পলিথিনের ব্যাগটা নে তুই৷ তোরা থাকতে যদি আমাকে কুলিগিরি করতে হয়, তাহলে তো ভারি সমস্যা৷ আমাকে রিকশা ঠিক করে দে একটা৷' আমি পলিথিনের ব্যাগটা নিয়ে চাচার পেছনে চলতে থাকি৷ চলতে চলতে একটা ভাবনা ঘাই মারে মাথায়৷ পলিথিনের ব্যাগ এখন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ, বিশেষ করে যে ধরনের ব্যাগে চাচা এই পঞ্চভূতকে পুরে নিয়ে চলছেন৷ এই ব্যাগ নিয়ে চলাফেরা করতে গেলে চাচা পুলিশের হাতে হেনস্থা হবেন৷ শ'পাঁচেক টাকা জরিমানাও হয়ে যেতে পারে৷ এ নিয়ে চাচাকে সতর্ক করে দেবো ভেবে মুখ খুলেছিলাম, কিন্তু রক্ষকের ভক্ষকে রূপান্তর এবং এ প্রসঙ্গে করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে তাঁর দেয়া মনোজ্ঞ বক্তৃতা শুনে মাথা ঘুরছিলো, এখন তাঁকে পুলিশের মতো নাজুক প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে আরো লম্বাচওড়া বক্তৃতা শোনার কোন ইচ্ছা আমার নেই৷ তবে তোমাদের আস্তে করে বলি, মনজুর চাচার আইডিয়াটা খুব একটা খারাপ লাগেনি আমার কাছে৷ রচনাকাল জানুয়ারি, ২০০৪। বছর আড়াই আগে অন্যত্র প্রকাশিত।
false
mk
জঙ্গি সমস্যা বাংলাদেশের সমাজের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদ যে গভীর শিকড় গ্রোথিত করেছে, তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত দুই দশক ধরে আমরা জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ও এর ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কর্মক্ষমতা দেখে এসেছি। মাঝখানে বছর দুই-তিনেক সুপ্ত থাকার পর গত দুই-তিন বছর ধরে জঙ্গিবাদের যে বিস্তার আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তাতে সমাজের প্রতিটি নাগরিক শঙ্কিত না হয়ে পারে না। গত বছর তথাকথিত ব্লগার বা মুক্তচিন্তার চর্চাকারীদের হত্যার মাধ্যমে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে সংখ্যালঘু ধর্মীয় উপাসনালয়, ধর্মযাজক, পুরোহিত ও সাধারণ বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলায় বিস্তৃত হতে দেখা গেছে। এসব ঘটনার যে একটি অভিন্ন যোগসূত্র রয়েছে, তা সাধারণ নাগরিকসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বেশি কিছু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তখন এগুলোকে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' আখ্যা দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। অতঃপর গত ১ জুলাই যখন গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম জঙ্গি হামলা হলো, তখন আর জঙ্গিবাদের নবোত্থানকে অস্বীকার করার উপায় থাকল না। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে হলি আর্টিসান হামলা একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা বলে আমি মনে করি। এ ঘটনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম যে, জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি কেবল দরিদ্র পরিবারের অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মাদ্রাসা-পড়ূয়াদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের অত্যন্ত উঁচু মহলে, উচ্চবিত্ত পরিবারের ইংরেজি শিক্ষিত ছাত্র ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রীদের মাঝেও। তাদের মধ্যে জঙ্গিবাদের ইন্ধনদাতা হিসেবে বেশকিছু শিক্ষক, ব্যবসায়ী এমনকি সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তাদের ভূমিকার কথাও আমরা জানতে পেরেছি। জঙ্গিবাদের এ ধরনের বিস্তার স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে ভাবিয়ে তুলবে যে, আমাদের আশু করণীয় কী? সরকার ও জনসাধারণের মিলিত প্রচেষ্টায় অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশেও আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যে উন্নতি ঘটে আসছে, যা কি-না সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি নজির হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে, জঙ্গিবাদের বিস্তারে তা কি চরম সংকটেই নিপতিত হবে? হলি আর্টিসান হামলার পর তার কিছু কিছু নমুনা আমরা দেখতেও পাচ্ছিলাম। বাংলাদেশে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক বা তাদের পরিবারের সদস্যদের এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেখেছি। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে এমন আঘাত যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে, বলাই বাহুল্য। আগে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করলেও জুলাইয়ে হলি আর্টিসান হামলার পরবর্তী দিনগুলোতে আমরা জঙ্গিবাদবিরোধী তৎপরতায় সরকারকে দ্রুত, বলিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখেছি। সরকার প্রথমেই জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। ফলে গ্রামগঞ্জে, স্কুল-কলেজে-মাদ্রাসায়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে_ বলা চলে সমাজের সর্বক্ষেত্রে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা তৈরি হয়েছে। তারা জঙ্গিবাদকে নির্দি্বধায় প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা দেখেছি, ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদ ছড়ানোর বিরুদ্ধে আলেম সমাজও এগিয়ে এসেছে। জঙ্গিবাদ যে ইসলামবিরোধী সে সম্পর্কে একটি ফতোয়াও জারি করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। গোটা দেশের আলেম সমাজ তাতে স্বাক্ষর করেছে।নাগরিকদের সঙ্গে যৌথভাবে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সরকার জঙ্গিবাদ দমনে একটি বিশেষ বাহিনীও গঠন করেছে। তারা ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অনেক জঙ্গিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে অথবা তাদের অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে জঙ্গিরা নিহত হচ্ছে। এর সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ শনিবার (৮ অক্টোবর) গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের তিনটি স্থানে পৃথক অভিযানে ১২ জন জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনা। বস্তুত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অনেকটা 'প্রি-এম্পটিভ' অভিযান শুরু হয়েছিল গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে অভিযানের মধ্য দিয়ে। সেখানে একসঙ্গে ৯ জঙ্গি নিহত ও একজন আহত অবস্থায় আটক হয়েছিল। তার পরের মাসে আগস্টের ২৭ তারিখ নারায়ণগঞ্জে অভিযান পরিচালিত হয়। কয়েকদিন পরে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিরপুরের রূপনগরে এবং তার পরের সপ্তাহে আজিমপুরে অভিযানে কয়েকজন জঙ্গি নিহত ও কয়েকজন আটক হয়। হলি আর্টিসানে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত সাতটি অভিযানে ২৫ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম চৌধুরী। সে নব্য জেএমবির নেতা ছিল বলে জানা গেছে। আজিমপুরে নিহত হয়েছে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর ও পরবর্তীকালে জঙ্গি দলে যোগ দেওয়া নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম ওরফে 'মেজর মুরাদ'। গাজীপুরে অভিযানে নিহত হয়েছে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর ঢাকা অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার 'আকাশ'। একই দিনে আশুলিয়ায় অভিযানের সময় পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেল নব্য জেএমবির অর্থ সমন্বয়ক আবদুর রহমান। তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর জঙ্গিগোষ্ঠী নব্য জেএমবির নেতৃত্বে কে যাচ্ছে, এ নিয়ে নানা গুঞ্জন শুনেছি আমরা। গত তিন মাসের অভিযানে নেতৃস্থানীয় সবাই প্রায় নিহত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, নব্য জঙ্গিবাদের আরেক মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনী থেকে পলাতক মেজর জিয়া আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো সময় তাকে আটক করা হতে পারে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাফল্যকে আমি সাধুবাদ জানাতে চাই। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমরা যদি তরুণদের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়া ঠেকাতে না পারি, তাহলে শুধু অভিযান চালিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য আসবে না। এ ক্ষেত্রে অভিযান ও প্রচারণার পাশাপাশি জঙ্গিবাদবিরোধী কাউন্টার ন্যারেটিভস বা পাল্টা ভাষ্যও তৈরি করতে হবে। এ ভাষ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, তথাকথিত খেলাফত রাষ্ট্র এবং তা প্রতিষ্ঠার নামে যে তৎপরতা চালানো হচ্ছে, তা আদৌ ইসলাম স্বীকৃত পথ নয়। উপস্থাপন করতে হবে যে বহু মত, পথ ও ধর্মের সমন্বয়ে গঠিত আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও প্রগতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।এর পাশাপাশি যেসব মাধ্যমে উগ্র ধর্মীয় মতবাদ ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে পিসটিভি নামক উগ্রবাদ ছড়ানো একটি বিদেশি টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরেও রাজনীতি অথবা ধর্ম প্রচারের নামে যারা উগ্রবাদ ছড়ায়, সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর কথাও আমরা অনেকদিন ধরে বলে আসছি। আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জানা মতে, দেশের বিভিন্ন কারাগারে কয়েক হাজার জঙ্গি বা জঙ্গি কার্যক্রমের সমর্থক বন্দি রয়েছে। এদের অবিলম্বে এক বা একাধিক বিশেষ কারাগারে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। কারণ কারা অভ্যন্তরে এসব জঙ্গি তাদের মতাদর্শ প্রচারের বিরাট সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। এমনকি কারাগারে থেকেও তারা বিভিন্ন পর্যায়ে পয়সা ও প্রভাব খাটিয়ে বাইরে যোগাযোগ করছে_ এমন খবরও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সুতরাং সাধারণ কয়েদিদের কাছ থেকে তাদের আলাদা করার ব্যবস্থা করতেই হবে। দীর্ঘমেয়াদে জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সাফল্য পেতে হলে এর বিকল্প নেই।একই সঙ্গে আত্মঘাতী ও সমাজঘাতী উগ্রপন্থা থেকে জঙ্গিদের আদর্শিকভাবে সরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারাবাসের পর তারা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে এবং সুনাগরিক হিসেবে বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারে। অন্যথায় ফের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে। জঙ্গিদের প্রায়োগিক দক্ষতা তৈরিতেও কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ এমনকি প্রাথমিক পুঁজিও দিতে পারে। যাতে করে তারা স্বাভাবিক জীবনে এসে সহজ জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই অভিভাবক, আত্মীয়, পরিবার-পরিজন, এমনকি প্রয়োজনে মনস্তত্ত্ববিদের সহায়তায় তাদের বোঝানো যেতে পারে; যাতে করে তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। তারা বুঝতে সক্ষম হয় যে, মানুষ হত্যা করে কখনও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ধর্মেও এ ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বস্তুত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে সাফল্য পাওয়া গেছে। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় আরেকটি কর্মসূচির সুদূরপ্রসারী সুফল পাওয়া গেছে। তা হচ্ছে, জঙ্গিবাদী বা জঙ্গিবাদ প্রচারকারী ব্যক্তিদের কারাগারের মধ্যেই ভ্রান্ত মতবাদ থেকে ফিরিয়ে এনে জঙ্গিবাদবিরোধী আদর্শে দীক্ষিত করা। এই কাজে আলেম সমাজ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাতে করে ওই জঙ্গিরা যদি কারাগারের বাইরে এসে জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেয়, তাহলে অন্যরা আর জঙ্গিবাদে ঝুঁকবে না। তাদের আগের বক্তব্যও আর অন্যদের প্রভাবিত করতে পারবে না।আমরা জানি, জঙ্গিবাদ বাংলাদেশকে এখন এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিবাদ দমনে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে জঙ্গিবাদবিরোধী মানসিকতা। এমনকি নিহত জঙ্গিদের পিতামাতাও তাদের লাশ গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছেন না। কবর হচ্ছে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে। এখন সময় এসেছে দীর্ঘমেয়াদে জঙ্গিবাদ নির্মূলে উদ্যোগী হওয়া এবং আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সুদৃঢ় মনোবল ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আমরা যদি জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে পারি, তাহলে শান্তি ও প্রগতির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
false
rg
।। আমার হাইস্কুল।। পর্ব-১ ।। ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাস। ক্লাশ ফাইভের দুটো পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। প্রথমটা স্কলারশিপ। দ্বিতীয়টা সেন্টার পরীক্ষা। আমাদের নাজিরপুর থানা থেকে ক্লাশ ফাইভে মোট ১৩ জন বৃত্তি পেল। মাত্র দুইজন ট্যালেন্টপুলে। সেই দুইজনের একজন আমি। আরেকজন আমার বন্ধু শিমুল। শিমুলের সঙ্গে তখনো আমার পরিচয় নেই। শিমুল শাঁখারীকাঠি স্কুলের ছাত্র। আর আমি চর বানিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। একই বছর আমার বড় ভাই বিয়ে করলেন শাঁখারীকাঠি মল্লিক বাড়িতে। শিমুল সম্পর্কে আমার বড় ভাবী'র চাচা। সেই সূত্রে পরে শিমুলের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের শুরু। শিমুল আমারে ডাকে মামু। আর আমি শিমুলকে ডাকি তালোই-মামু। সেই সম্পর্ক এখনো অটুট। তো কয়েক দিন পরে সেন্টার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। বরইবুনিয়া সেন্টারে আমাদের মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের সবগুলো প্রাইমারি স্কুলের ক্লাশ ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষা হয়েছিল একসঙ্গে। সেই পরীক্ষায় আমি সেন্টার ফার্স্ট হলাম। সেই বয়সে সারা গ্রামেই আমি বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলাম। এরপর ক্লাশ সিক্সে ভর্তি হলাম দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ১ লা ফেব্রুয়ারি ১৯৮০ সালে দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমাদের ক্লাশ সিক্সের প্রথম ক্লাশ। আমরা ক্লাশে তখন প্রায় ১৩৩ জন। ক্লাশ নিতে আসলেন দুই'জন স্যার। হেডস্যার বাবু মনীন্দ্র নাথ মজুমদার। আর বাংলার স্যার বাবু নির্মল কান্তি মিস্ত্রী। হেডস্যার সবার সঙ্গে পরিচিত হলেন। নিজেকে এবং নির্মল স্যারকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে স্কলারশিপ পেয়েছো কে কে? তারা দাঁড়াও? গোটা ক্লাশে ১৩৩ জন। তার মধ্যে স্কলারশিপ পাওয়া ছাত্রছাত্রী দাঁড়ালো ৬ জন। ছেলেদের এপাশে একেবারে সামনের বেঞ্চ থেকে তাপস কুমার মল্লিক। সেকেন্ড বেঞ্চ থেকে বাবুলাল মিস্ত্রী। থার্ড বেঞ্চ থেকে স্বপন কৃমার করাতী। একেবারে পেছনের দিকের একটা বেঞ্চ থেকে আমিও দাঁড়ালাম। মেয়েদের পাশের রো থেকে দাঁড়ালো সেকেন্ড বেঞ্চ থেকে শাহনাজ খাতুন। আর পেছনের দিকের একটা বেঞ্চ থেকে দাঁড়ালো ঝর্না রানী ঢালী। কারো সঙ্গেই তখনো পরিচয় হয়নি। কেবল আমাদের স্কুল থেকে যারা ভর্তি হয়েছি তারা ছাড়া। আমাদের স্কুল থেকে তখন এসেছিলাম আমি, প্রকাশ কুমার মণ্ডল, জীবন কৃষ্ণ ঘরামী, সুনীল কুমার মণ্ডল, সুবোধ চন্দ্র মণ্ডল, শেখ মোঃ কামরুজ্জামান, কেরামত আলী শেখ, সুভাষিনী পাইক ও পারুল রানী ঘরামী। আমরা এই নয় জন ক্লাশ ওয়ান থেকে একই স্কুলে ছিলাম। আমরা পরম্পর পরিচিত। নতুন কারোর সঙ্গে তখনো পরিচয় হয়নি। হেডস্যার সবার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আর একটা ছোট্ট কাগজে আমাদের ৬ জনের নাম টুকে নিলেন। মনে মনে আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। হেডস্যার চলে যাবার পর নির্মল স্যার বললেন, হেডস্যার যাদের নাম লিখে নিলেন, তাদের জন্য একটা বিপদের খবর আছে! মুহূর্তে ভয়টা আরো বেড়ে গেল। আজকে বাড়িতে গিয়ে তোমাদের যিনি গার্ডিয়ান তাকে স্কুলে আসতে বলবা। বলবা, হেডস্যার যেতে বলেছেন। না আসলে পরে সেই বিপদের কথা বলবো। এটা এখন একটু রহস্য হয়েই থাকুক। কি বলো তোমরা? ক্লাশের বাকি ১২৭ জন সমস্বরে 'জি স্যার' বলে উঠলো। আর আমরা ৬ জন তখন বুক দুরুদুরু নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। পরবর্তীতে নির্মল স্যার আমাদের ক্লাশ টেন পর্যন্ত টানা বাংলা পড়াতেন। পরে বুঝেছিলাম নির্মল স্যার আসলে বাংলা'র স্যার। আর রহস্য নিয়ে কথা বলতেই তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। আমাদের স্কুলের আকারটি ছিল ঠিক এল সেভের। দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত সব ক্লাশরুম। এরমধ্যে একেবারে দক্ষিণের রুমটি ছাত্রাবাস। সেখানে ক্লাশ টেনের যারা পরীক্ষার্থী তারা তিন-চারজন একসঙ্গে থাকতেন। পরের কক্ষটি জীবেস স্যারে বাসা। তারপরেই আমাদের ক্লাশরুম। তারপর যথাক্রমে ক্লাশ সেভেন, ক্লাশ এইট, ক্লাশ নাইন ও ক্লাশ টেন পর পর। একেবারে উত্তর মাথার শেষ ক্লাশরুম হল ক্লাশ টেনের। এটা পুরোটা পূর্বমুখী। সামনে লম্বা বারান্দা। যেখানে আমরা ক্লাশ শুরুর আগে লাইনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত করতাম। তারপর একটু ফাঁকা। ডানদিকে ঘুরে লাইব্রেরি ও স্যারদের বসার রুম আর সায়েন্স ল্যাবরেটরি। তারপর একই লাইনে একটু ফাঁকা রেখেই দীঘিরজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। লাইব্রেরি ও প্রাইমারি স্কুল দক্ষিণমুখী। স্কুলের সামনে একটু ফাঁকা লম্বা মাঠের মতো। তারপরেই বিশাল দিঘী। স্কুলের দিঘীর একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোনে একটি তালগাছ। তালগাছের পাশে দাঁড়ালে গোটা স্কুল একসঙ্গে চোখে পড়বে। তালগাছ রেখেই বিশাল খেলার মাঠ। লাইব্রেরি ও প্রাইমারি স্কুলের পেছনে দীঘিরজান বাজারের স্থায়ী দোকানগুলো। আর মাঠের একেবারে উত্তর প্রান্তেও স্থায়ী দোকান। মাঠ ছাড়িয়ে একেবারে পূর্ব পার্শ্বে মরা বলেশ্বর নদী। নদীর সাথে পার ঘেঁষে ডিস্ট্রিক বোর্ডের বিশাল রাস্তা। প্রায় সাড়ে তিন একর জমির উপর আমাদের স্কুল অবস্থিত। এর মধ্যে শনিবার আর মঙ্গলবার খেলার মাঠে দীঘিরজানের হাট বসে। আমাদের স্কুলে মোট ১১ জন স্যার। কোনো ম্যাডাম ছিল না। একজন দপ্তরি আর একজন ঘণ্টাবাদক। নারায়ন চন্দ্র রায় হল আমাদের স্কুলের দপ্তরি। ক্লাশে বেত চালান দেওয়া আর খাতাপত্র এগিয়ে দেঔযার পাশাপাশি কোনো নোটিশ থাকলে তা নিয়ে এসে ক্লাশ টিচারের হাতে দিতেন। আর সবার প্রিয় তালেব আলী নানা হল আমাদের ছুটির ঘণ্টার বাদক। স্কুলের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। আমরা সবাই ডাকতাম নানা। এগারোজন স্যার হলেন, অনন্ত কুমার মজুমদার, শুকলাল হাওলাদার, ধীরেন্দ্র নাথ হালদার, সাহাদাত হোসেন, বেলায়েত হোসেন, স্বপন গোলাদার, নিত্যানন্দ গাইন, নির্মল কান্তি মিস্ত্রী, জীবেস চন্দ্র সমদ্দার, নরেন্দ্র নাথ হালদার ও মনীন্দ্র নাথ মজুমদার। মনীন্দ্র স্যার ছিলেন আমাদের হেডস্যার। নরেন স্যার ছিলেন এসিট্যান্ট হেডমাস্টার ও ইংরেজি'র শিক্ষক। জীবেস স্যার ছিলেন ইংরেজি ও একাউন্টিং শিক্ষক। নির্মল স্যার ছিলেন বাংলার শিক্ষক। মাঝে মাঝে ধর্মও পড়াতেন। নিতাই স্যার ছিলেন অংক ও বিজ্ঞানের শিক্ষক। স্বপন স্যার ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক। ক্লাশ নাইনে আমরা স্বপন স্যারকে প্রথম পাই। বেলায়েত স্যার ছিলেন ভূগোল ও সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক। সাহাদাত স্যার ছিলেন অংক, বিজ্ঞান, ইসলাম ধর্ম ও আরবী'র শিক্ষক। ধীরেন স্যার ঠিলেন ইংরেজি ও ইতিহাসের শিক্ষক। শুকলাল স্যার হিন্দু ধর্ম আর সংস্কৃত পড়াতেন। এছাড়া স্কুলের দাপ্তরিক কাজ করতেন শুকলাল স্যার। আর অনন্ত স্যার বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান পড়াতেন। আর কোনো ক্লাশে স্যারদের সংকট থাকলে তখন হেডস্যার প্রক্সি ক্লাশ নিতেন। হেডস্যার ছিলেন বাংলা সাহিত্যে এমএ ও এমএবিএড। ভাষা বিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সরাসরি ছাত্র। হেডস্যার ক্লাশে প্রায়ই আমাদের স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ নিয়ে খুব ঝামেলায় ফেলতেন। মাঝে মাঝে কঠিন কঠিন ট্রানস্লেশানও দিতেন। আবার হুট করে কখনো ভূগোল বা চলতি বিশ্ব থেকে জিজ্ঞাসা করতেন। আমার বাংলায় সত্যিকারের কুশলী হাতেখড়ি হয়েছিল নির্মল স্যারে কাছে। আর অংকে নিতাই স্যারের কাছে। এছাড়া ইংরেজি যা শেখার তার প্রায় সবটুকু অবদান জীবেস স্যারের। মাঝে মাঝে নরেন স্যারের কাছেও ইংরেজি'র অনেক নারী নক্ষত্রের শিক্ষা পেয়েছিলাম। বিশেষ করে ভয়েস চেইঞ্জ ও ন্যারেসান, ট্রানস্লেশান ও প‌্যারাগ্রাফ রাইটিংয়ে। আর সাহাদাত স্যারের কড়াকড়ি ইসলাম ধর্ম ও আরবী থেকে বাঁচতে আমি হিন্দু ধর্ম আর সংস্কৃত নিয়েছিলাম। পরে ক্লাশ টেনের ফাইনালের সময় ধর্মের বদলে একাউনিং নিয়ে এসএসসি দিয়েছিলাম। হাইস্কুল লাইফের সেই সব হাজার হাজার ঘটনা থেকে এখানে কিছু কিছু মজার স্মৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। একবার নির্মল স্যারের খুব প্রিয় ছাত্র হয়ে গেলাম কোনো এক ভাব-সম্প্রসারণে ভিন্ন স্বাদ দিয়ে। ক্লাশের প্রায় সবাই লিখেছিল- কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবার সমান রাঙা। আর আমি লিখেছিলাম, নানান রঙের গাভীরে ভাই, একই রঙের দুধ। আর একটা মজার বিষয়ে কোথায় যেনো উদাহরণ দিয়েছিলাম- আগে কুটিয়াল, পরে অন্য। সেই হাইস্কুল জীবন মোর পুষ্পে ফলে ধন্য। গোটা হাইস্কুলে টানা ফার্স্টবয় হয়ে বলতে গেলে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলাম। সে কথা পরের পর্বে বলবো। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৫৩
false
rn
বাঁচতে হলে জানতে হবে-১৪ ১৭০০সাল(এখানে ১৭০০থেকে১৭৫০সাল পর্যন্ত দেয়া হলো।বাকি গুলো পরে যথা সময়ে দেয়া হবে।আগের গুলোর লিংক দিলাম না।)১৭০০সালমুশির্দ কুলী খান পেথম দেওয়ান নিযুক্ত হয়ে বাংলায় আসেন।কলকাতায় হিন্দুস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।স্পেনে বুল ফাইটিং এর সূচনা হয়।১৭০১সালঅ্যান্ডজুস সেলসিয়াস এর জন্ম।(জ্যোর্তি বিজ্ঞানী)১৭০৩সাললালবাগ শাহী মসজিদ নির্মিত হয়।১৭০৪সালশ্রী শ্রী কান্তজী মন্দিরের নির্মান কাজ শুরু করেন দিনাজপুর রাজবংশের রাজা প্রান নাথ।১৭০৫সালনির্মিত হয় শাহ আবদুল হামিদ মসজিদ।(সোনার গায়ের সম্রাট আওরঙ্গজ্ঞেবের আমলে)বিজ্ঞানী নিঊটন 'নাইট' উপাধি লাভ করেন।১৭০৬সালআমেরিকান খ্যাতিমান ব্যাক্তি গন্থকার এবং উদ্ভাবক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন জন্মগ্রহন করেন।১৭০৭সালসম্রাট আওরঙ্গজেব মারা যান।১৭০৯সালফ্লোরেন্স শহরে ক্রিস্তোফোরি 'পিয়ানো' আবিস্কার করেন।১৭১২সালআরব সেনাপতি মোহাব্বত কাসিম সিন্ধু বিজয় করেন।১৭১৬সালমুশির্দ কুলী খান বাংলার সুবেদার হন।১৭১৭সালমুশির্দ কুলী খান বাংলার রাজধানী মুশির্দাবাদে স্থাপনের আগ পর্যন্ত ঢাকার গৌরব অক্ষন্ন ছিল।১৭১৯সালইংরেজ ঔপন্যাসিক ড্যানিয়েল ডিফো রচিত বিখ্যাত গন্থ 'রবিনসন ক্রুসো' প্রকাশিত হয়।১৭২০সালভারত থেকে চীনে রফতানি করা হয় ১৫ মেট্রিক টন আফিম।১৭২১সালউপমহাদেশে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজের নাবিকেরা ক্রিকেটের সূচনা করেন।১৭২২সালসুবাদার মুশির্দ কুলী খান এর ভূমি রাজস্ব পব্দতি প্রচলিত হয়।১৭২৩সালবিজ্ঞানী এটনিভন লিউয়েন হুক মৃ্ত্যু বরন করেন।(তিমি অনুবিক্ষন যন্ত আবিস্কার করেন।)১৭২৪সালতামলুক মোমের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন ভ্যালিন্টাইন।১৭২৫সালগদাধর ও বলাই চাঁদ বসাকের নেতৃত্বে ইসলামপুর থেকে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের হয়।১৭২৭সালমুশির্দ কুলী খানের মৃ্ত্যু হয়।১৭৩০সালহাজী মোহাম্মদ মুহসীন এর জন্ম।১৭৩১সালবিট্রেনে বের হয় 'দ্য জেন্টলম্যানস' ম্যাগাজিন।১৭৩২সালবাংলা বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলা জন্ম হয়।১৭৩৪সালপর্তুগীজ পাদ্রী 'মোনএল দ্য' পর্তুগীজ ভাষায় প্রথম বাংলা ব্যারন রচনা করেন।১৭৩৬সালনাদির শাহ ইরানের সিংহাসন আহোরন করেন।১৭৪০সাল'আম'ওয়েষ্ট ইন্ডিজে পৌছায়।১৭৪১সালবাইরের বিশ্বের লোকজন সর্বপ্রথম আলাস্কার কথা জানতে পারে।যখন সাইবেরিয়া থেকে এক সমুদ্র যাএাকালে স্থানটি ডেনিস অভিযাএী ভিটাস জনসনের চোখে পড়ে।১৭৪৩সাল'ভোকাবুলারিও' প্রথম মুদ্রিত বাংলা ব্যাকারন গন্থটি প্রকাশিত হয়।লিবসন শহর থেকে রোমান হরফে অভিধান (Dictionary)মুদ্রিত হয়।(পৃষ্টা সংখ্যা-৬০২)১৭৪৪সালমাহতাব চাঁদ উওরাধিকার সুএে 'জগৎ শ্রেষ্ঠ' উপাধি লাভ করেন।১৭৪৫সালইতালির অ্যা্লেসান্দ্রো ভোল্ট জন্মগ্রহন করেন।তিনি প্রথম ব্যাটারি আবিস্কার করেন।১৭৪৬সালআজিমপুর মসজিদ নির্মিত হয়।১৭৫০সালকিশোরগঞ্জে 'শোকালিয়া' ঈদ্গাহ ময়দানে ঐতিহ্যবাহী অন্যতম সববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।ইংরেজদের মালিকানাধীন একটি কারখানা দখলের মাধ্যমে ফরাসি বসতির সুএপাত ঘটে।মহীশূরের টিপুসুলতানের জন্ম।
false
hm
ফুটোস্কোপিক ০১৫ ফুটোস্কোপিক হচ্ছে ফুটোস্কোপ দিয়ে দেখা গল্প। সামান্যই দেখা যায়। ... রবি ফেসবুকের লগইন টেক্সট বক্সে ঝড়ের বেগে টাইপ করলেন, ভানু ডট সিংহ অ্যাট জিমেইল ডট কম। পাসওয়ার্ড এইচ ও টি আর এ এন ইউ থ্রি টু টু থ্রি থ্রি সিক্স। ফেসবুক রবির বড় ভালো লাগে। গোটা ফেসবুক ভর্তি ডাগর সব মেয়ে। তারা স্কুলে পড়ে, কলেজে পড়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কেউ কেউ চাকরিবাকরি করে। তারা নানারকম ছবি আপলোড করে রোজ রোজ। হাসিমুখের ছবি। গোমড়ামুখের ছবি। শাড়ি পরা ছবি। গেঞ্জি পরা ছবি। রবির দিন কেটে যায় এসব ছবি দেখে। তিনি মনে মনে ভাবেন, তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা? একটা টেক্সট ফাইল ওপেন করে কথাটা লিখে রাখেন রবি। আরো কয়েক পদ জুড়ে গান বানিয়ে ফেলা যাবে নাহয়। সম্প্রতি রানু নামের এক চঞ্চলা বালিকার সাথে রবির ভাব হয়েছে। রানু বড় ছটফটে, ফেসবুকে ঢুকেই সে স্ট্যাটাসে হড়বড় করে নানা মেসেজ লেখে, ছবি আপলোড করে, অন্যের স্ট্যাটাসে গিয়ে মন্তব্য করে। রবি মাঝে মাঝে চ্যাট উইন্ডো খুলে টুকটাক আলাপ করেন রানুর সাথে। রানুর আরেকটি গুণ হচ্ছে, তার বান্ধবীরাও তার মতোই ছম্মাকছল্লো। রবি তাদেরও অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন। তাদের মধ্যে কারিনা কুলসুম*, শাফিনা শবনম*, মোদিনা মোনওয়ারা* এ পর্যন্ত সেই অনুরোধ রেখেছে। পাপিতা পাটওয়ারি* এখনও কথা রাখেনি, অ্যাড করার পর তেত্রিশ ঘন্টা কেটে গেলো ... । রবি দেখেন, অনলাইনে শাফিনার নামখানি দেখা যাচ্ছে। তিনি ক্লিক করে চ্যাট উইন্ডো খুললেন। - হাই শাফিনা। শাফিনার জবাব আসে দেরি করে। - হাই ভাইয়া। কী করেন? - এই তো, কিছু না। - কিছু একটা তো করেন? - গান লিখি। - কী গান? - আছে একটা গান। - হঠাৎ গান লেখেন কেন? - তোমার নতুন প্রোফাইল পিক দেখে একটা গান মাথায় এলো ... । - যাহ দুষ্টু। ঐ পচা শাড়ি পরা ছবি দেখে আপনি কী গান লিখলেন? - সত্যি! - কী গান? - দাঁড়াও, বলি। আজ বুকের বসন ছিঁড়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রভাতখানি / আকাশেতে সোনার আলোয় ছড়িয়ে গেল তাহার বাণী। - যাহ দুষ্টু! আপনি খুব দুষ্টু! মোটেও বসন ছিঁড়ে যায়নি, ব্লাউজটা হাতাকাটা! - আহ শোনোই না। ওরে মন, খুলে দে মন, যা আছো তোর খুলে দে / অন্তরে যা ডুবে আছে, আলোক পানে তুলে দে! - ভাইয়া! আপনি খুব পাজি! - আনন্দে সব বাধা টুটে, সবার সাথে ওঠ রে ফুটে / চোখের 'পরে আলস-ভরে রাখিস নে আর আঁচল টানি ।। - ইয়াল্লা! আঁচল টানতেই আপনার এই অবস্থা! আঁচল একটু সরালে আপনি কী লিখতেন? - দাঁড়াও ভাবি। মমমমমম ... খোলো খোলো দ্বার, রাখিও না আর, বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে ... ? - উফফফফফ। তারপর? - দাঁড়াও ভাবি ... কীভাবে মেলানো যায়? ... দাও সাড়া দাও, এইদিকে চাও, এসো দুই হুঁহুঁ বাড়ায়ে ...। - মানে? হুঁহুঁ মানে কী? - বাহু। - মোটেও না! আপনি লিক্সেন হুঁহুঁ! - টাইপো। - মিথ্যা কথা। আপনি দুষ্ট। - শিষ্ট হয়ে লাভ কী বলো? - অ্যাই যাই এখন। আর আপনি এমন করলে কিন্তু আমি আর ছবি দেক্তে দিবো না আপনাকে। - সে কী! - হুঁ। - আমার গান লেখার কী হবে তাহলে? - সবিতাভাবী দেখে লিখেন। - দুষ্টু মেয়ে! আচ্ছা, এসো নাহয়। পরে আবার কথা হবে। তোমার নতুন ছবির অপেক্ষায় রইলাম। - আমি আর শাড়িই পরবো না। বোরখা ধরবো। বোরখা পরে ছবি তুলবো। হি হি হি। - আঁধার অম্বরে প্রচণ্ড ডম্বরু? - মানে কী? - কিছু না। হিহি। - হিহি কেন? খালি পচা কথা বলেন! - হুঁ। - যাই গিয়া। খুদাপেজ। রবি আনমনে হাসেন। আবারও শাফিনার শাড়িপরা ছবি দেখেন আনমনে। হুমমমমমমমমমমমমমম। গ্লুপ করে একটা শব্দ হয়। রবি দেখেন, মোদিনা মোনওয়ারা নক করেছে তাঁকে। - সালাম ভাইয়া। কেমন আছেন? - সালাম, সালাম। এই তো। - করেন কী? - কিছু না। - ফেসবুকে ঢুকে কিছু করেন না কেন? আমার স্ট্যাটাসে একটা লাইক মেরে আসেন তাহলে। - স্ট্যাটাসে কেন? একটা ছবি আপলোড করো। লাইকাই। - মমমম, না ভাইয়া, ছবি আপলোডানো যাবে না আর। - সে কী কথা! কেন? - লোকজন বিরক্ত করে। - কোন লোকজন? কী বলে তারা? - আছে যত আজেবাজে লোকজন। এসে কীসব বলে। - ব্লক করে দিও দুষ্টের দলকে। - যাহ, তাই কি হয়? - হুঁ। ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা, হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা ...। - হা হা। মজার তো! - তাই? - হ্যাঁ। আচ্ছা দাঁড়ান, আপনাকে আমার একটা ছবি মেইল করি বরং। দেখে মুছে ফেলবেন, ওকে? - ওকে। রবি মেইল চেক করেন। মোদিনা মোনওয়ারা ছবি অ্যাটাচ করে পাঠিয়েছে। মোটাসোটা চশমা পরা গোলগাল বালিকা, বসে আছে কোনো এক বাগানে। পরনে টিশার্ট আর পৌনেপাৎলুন। রবি মনোযোগ দিয়ে দেখেন আর গুনগুন করেন, ভালো মানুষ নই রে মোরা ভালো মানুষ নই, গুণের মধ্যে ওই আমাদের গুণের মধ্যে ওই ... দেশে দেশে নিন্দে রটে, পদে পদে বিপদ ঘটে ...। - পাইসেন? - হুঁ। বড় মনোহর ছবি। - এক্সকারশনে তোলা ... ঐ যে শিলাইদহ গেসিলাম ... ঐখানে। - শিলাইদহ? সে কী কথা? ওখানে তো আমার কুঠিবাড়ি আছে। - রিয়েলি? ওটা আপনার?? - হুঁ। - খুব সুন্দর জায়গা! - আবার যেতে চাইলে বোলো। বেড়িয়ে যেতে পারো কয়েকদিন। - মমমম, বাসা থেকে দিবে না ভাইয়া । - বোলো এক বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছো। - নাহ ভাইয়া, ওভারনাইট ট্রিপ হলে মুশকিল। - হুম। হুমমমমমমমমমমমম। - কী? - নাহ, কিছু না। তবে আমন্ত্রণ রইলো সবসময়। সুযোগ পেলেই চলে এসো। দু'দিন আগে কনফার্ম করলেই হবে। - আপনি খুব দুষ্টু। - শিষ্ট হয়ে কী লাভ বলো? - হুমমম। আচ্ছা ভাইয়া, আমি আসি এখন। - ঠিকাছে। বিদায়। - খুদাপেজ! রবি মোদিনার ছবি সেইভ করে রাখেন সযত্নে। ফেসবুক ট্যাবটা কিলবিল করে ওঠে। মেসেজ ফ্রম কারিনা। রবি ট্যাব খোলেন। - হাই ভাইয়া! কী করেন? - এই তো, কিছু না। - কেন, আপনার কোনো কাম নাই? - তা কেন হবে? নিষ্কাম হওয়ার কোনো সুযোগ তো তুমি রাখোনি। - ভাইয়া! আপনি খুব দুষ্ট! - শিষ্ট হয়ে লাভ কী বলো? - আপনি কখনো সেন্ট মার্টিন গিয়েছেন? - নাহ। বিলেত গিয়েছি। সিলেট গিয়েছি। শিলাইদহ গিয়েছি। - সেন্ট মার্টিন খুব সুন্দর। আমরা যাচ্ছি। - তোমরা মানে কারা? - আমি আর আমার বান্ধবীরা। - বাহ। তা তোমরা শিলাইদহ আসো না কেন? বেরিয়ে যাও? - শিলাইদহে সী বিচ আছে? - না। কিন্তু আমার কুঠিবাড়ি আছে। সেখানে আর কেউ থাকে না। - তো? - এসে নিরিবিলি বেড়িয়ে যাও। বজরায় করে ঘুরিয়ে দেখাবো আশপাশটা। - কার সাথে যাবো? - আমার সাথেই যেতে পারো। - আর কে কে যাবে? - আবার কে যাবে? তুমি আর আমি। আমরা দু'জনা স্বর্গখেলনা গড়িব না ধরণীতে, মুগ্ধ ললিত অশ্রুগলিত গীতে ...। - ভাইয়া! আপনি খুব পাজি! - আহা। আমরা সবাই পাজি। আমরা সবাই পাজি আমাদের এই পাজির রাজত্বে ...। - না। আমি ভালু। - হুমমম। তুমি বেএএএশ ভালু। - নাহ। আপনি শুধু দুষ্টামি করছেন আজ। যাইগা। - চলে যাবে? হে ক্ষণিকের অতিথি ...। - পরে কথা হবে ভাইয়া। - বেশ। আবার যদি ইচ্ছা কর আবার আসি ফিরে ...। - বাই দ্য ওয়ে ভাইয়া, আমরা এখন সবাই রানুর বাসায়। - তাই নাকি? - হ্যাঁ। ওর পিসি থেকেই ঢুকেছি সবাই। - সবাই মানে কারা? - আমি, মোদিনা, শাফিনা, রানু ...। - ওহ! - যাইগা ভাইয়া। টিটিওয়াইএল। রবি মনে মনে প্রমাদ গুণলেন। সব ডিম এক ঝুড়িতে কেনু? কেনু কেনু কেনু? ভাবতে না ভাবতেই ফেসবুকে জ্বলজ্বল করে উঠলো রানুর নাম। - এ মনু, আপনে আছেন নাকি? - কেমন আছো রানু? -ভালোই তো ছেলাম আগে, হেয়ার পর আপনের বদমাইশি দেইখ্যা এহন এক্কারে হতবম্ব হইয়া গেছি। আপনে আমার বান্দোবিগো লগে এইসব কী আরম্ভ করছেন? - কী হয়েছে বলো তো? - বেয়ারবি। আইতে আছি খাড়ান। রবি মনে মনে ছড়া কাটেন, পাখিসব করে রব রাতি পোহাইলো ...। মিনিট খানেক বাদেই রানুর উইন্ডো গর্জে ওঠে। - আপনের মতলবডা কী? আপনে মোর বান্দোবিগো লগে এর'ম অসাইব্যোতা করেন ক্যা? - আমি আবার কী করলাম? - আপনে মোর দোস্তাইনরে লইয়া খাছড়া গান ল্যাকছেন ক্যা? - খাছড়া? সে কী! সে তো প্রভাতবন্দনার গান! - পরভাতবন্দনা না আপনের মাতা! মোরে কি এক্সের বলদ পাইসেন আপনে? আমার বান্দোবিগো লগে এক্সের অসাইব্যো কতা কয়েন, কুপরস্তাব দ্যান, আবার কয়েন মুই আবার করলামডা কী? - কী যে বলো না রানু! তোমার বান্ধবীদের আবার কী কুপ্রস্তাব দিলাম? - আপনে আমার বান্দোবিরে আপনের লগে ওভারনাইট টিরিপে যাইতে কয়েন নায়? খবরদার যদি মিত্যা কতা কইসেন... হেলে ঠ্যাং পিডাইয়া ভাইঙ্গা দিমু কোলোম! - ওহ! ওটা এমনিই। সিরিয়াস কিছু তো নয়। - সিরিয়াস কিছু নয়? সিরিয়াস কিছু নয়? অসাইব্যো কতা কইয়া ধরা খাইয়া এহন কইতে আছেন সিরিয়াস কিছু না? - আহ রানু। তুমি তো ভারি অবুঝ? - খবর্দার... এসমস্ত মিডা মিডা কতার কোনো মুইল্যো নাই... আপনে এট্টা জোম্মের অসাইব্যো ব্যেডা। - রানু! কী বলছো তুমি! - ঠিকই কইতে আছি! আপনে আমার লগে মিডা মিডা কতা কয়েন পাছ ওয়াক্ত আর ওইদিকে মোর বান্দোবিগো কুপরস্তাব দ্যান! - আহ, ভুল বুঝলে রানু! আমার পরান যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো! - আপনের সাতে আমার আর কোনো কতা নাই! আপনে এক্সের লল্পুরুষ! আপনেরে আমি বলক মারতে আছি! খুদাপেজ! রবি দ্যাখেন, রানু অফলাইন। মনটাই খারাপ হয়ে যায় তাঁর। ভাবেন, একটা মিষ্টি ক্ষমার চিঠি লিখবেন কি না রানুকে। চরণ ধরিতে দিও গো আমারে, নিও না, নিও না সরায়ে ...। ফেসবুকে ডান কোনায় একটা লাল নোটিফিকেশন আসে। রবি খুলে দেখেন, লেখা, পাপিতা পাটওয়ারি হ্যাজ অ্যাকসেপ্টেড ইয়োর অ্যাড রিকোয়েস্ট। রবি মুচকি হাসেন। গুনগুন করে ওঠেন, কে এলো আজি এ ঘোর নিশীথে, সাধের কানন শান্তি নাশিতে? পাপিতা পাটওয়ারি মেসেজ দেয়, হাই ভাইয়া! রবি গুনগুন করে চলেন, কী জানি কী হবে আজি এ নিশীথে, তরাসে প্রাণ ওঠে কাঁপিয়া ...। ... বরিশালের ভাষায় রানুর সংলাপ অনুবাদ করে দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বরিশালিয়ান ও মামুন হক। * নামগুলি কাল্পনিক।
false
rn
ইংরেজি সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (দুই) ১১। 'দ্য লস্ট সিম্বল' লেখক- ড্যান ব্রাউন। ড্যান ব্রাউনের পরিচয় দেয়ার কিছুই নেই। তাঁর লেখার জাদুতে পৃথিবী নেশায় বুঁধ হয়ে আছে প্রায় একদশক ধরে। তার লেখার মাধ্যমে আমার পরিচয় হয় অন্য এক জগৎতের সাথে। রবার্ট ল্যাংডন ড্যান ব্রাউনের সৃষ্ট অন্যতম একটি চরিত্র। দ্য লস্ট সিম্বল উপন্যাসের কাহিনীও এই সিম্বলজিস্টকে ঘিরে। বন্ধুর অনুরোধের ডেকি গিলার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় মূল কাহিনী। স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউটের একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় রবার্ট ল্যাংডনকে। না বলার কোন উপায় নেই। কারন অনুরোধটি এসেছে তার পুরনো বন্ধু এবং স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউটের প্রধান পিটার সলোমনের কাছ থেকে। রবার্ট যথাসময়ে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেমিনার যেখানে হওয়ার কথা সেখানে পৌঁছেই হতভম্ব হয়ে যায় ল্যাংডন, কারণ সেখানে কোন সেমিনার হচ্ছিল না। নিশ্চয় কোথাও ভুল হয়েছে ভেবে সলোমনের নাম্বারে ফোন করে রবার্ট। ফোনটি ধরে রহস্যময় একটি কন্ঠসর। উপহার হিসাবে পায় পিটার সলোমনের কাটা কব্জি। রবার্ট বুঝতে পারে সে ফাঁদে পরে গেছে। রহস্যময় কন্ঠসরের কথা না-শুনে কোন উপায় নাই। সে বুঝতে পারে পিটারকে যারা অপহরণ করেছে, তারাই রবার্টকে এখানে নিয়ে এসেছে। তাকে বাচাতে হলে খুজে বের করতে হবে ওয়াশিংটনে লুকানো শত বছরের পুরনো কোনো এক প্রবেশদ্বার। এভাবে পিটার জড়িয়ে পড়ে বিপজ্জনক এবং সিম্বলিক একটি মিশনে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অবশ্যই রবার্ট ল্যাংডন। কিন্তু ‘দ্য লস্ট সিম্বল’ এ সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র আমার মনে হয়েছে ভিলেন মালাখকে। যে পেতে চায় অমরত্ব। কাহিনীর কারনেই রবার্টের সাথে যোগ দেয় পিটারের বোন বিজ্ঞানী ক্যাথরিন সলোমন এবং আরো অনেকে। শেষে কি হয়েছিল তা জানতে পড়ুন ড্যান ব্রাউনর দ্য লস্ট সিম্বল।১২। 'দি অ্যামফিবিয়ান ম্যান' লেখক- আলেকযান্ডার বেলায়েভ। বইটি বাংলা ভাষার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন অনুবাদের জগতের কিংবদন্তী লেখক ননী ভৌমিক। প্রকাশ করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। আমার জানা মতে আরেক সুলেখক ও অনুবাদক কাজী মায়মুর হোসেনের করা এই বইটির আর একটি অনুবাদ প্রকাশ পেয়েছে সেবা প্রকাশনী থেকে; সেটার নাম-- “দি অ্যামফিবিয়ান ম্যান”। বইয়ের মূল চরিত্র ইকথিয়ান্ডর বছর কুড়ির এক উভচর মানুষ; জলে এবং স্থলে তার অবাধ বিচরণ। আর্জেন্টিনার সমুদ্র উপকুলের তলদেশ জুড়ে তার রাজত্ব। কখনো জেলেদের জাল কেটে মুক্ত করে দেয় বন্দি মাছের ঝাক আবার কখনো দয়া পরবশ হয়ে বড় কোনো মাছ ধরে ছুড়ে দেয় জেলেদের নৌকায়-এমনি খেয়ালী সে। রাতের আঁধারে সমুদ্র তীর থেকে ছাগল ছানা ধরে সাগরের বুকে থাকা জেলেদের নৌকায় রেখে আসবার মতো মজাও সে করে। এই সব কীর্তির জন্য উপকূলের মানুষের কাছে সে পরিচিত “দরিয়ার দানো” হিসেবে। তার এ সকল কর্মকান্ডে সহায়তা করে বন্ধু ডলফিন লিডিঙ। লিডিঙয়ের পিঠে চড়ে শাঁখ বাজাতে বাজাতে ছুটে চলে ইকথিয়ান্ডর দিগন্তের পানে। ১৩। 'অভিশপ্ত হীরা' লেখক- উইকি কলিন্স। চুরি গেল মূনস্টোন – মহামুল্যবান হীরা । কে চুরি করল ? শুরু হল তল্লাশী । তিন ভারতীয় সাধু কেন ঘুরঘুর করছে লেডি ভেরিন্ডারের বাড়ির আশেপাশে ? রহস্যময় ঘটনাটির জট আদৌ কি খুলবে ??? জানতে হলে পড়তে হবে উইকি কলিন্স এর বিখ্যাত উপন্যাস “অভিশপ্ত হীরা”।১৪। 'টাইম মেশিন' লেখক- এইচ. জি. ওয়েলস। এই বইয়ের লেখক ১৮৭৪ সালে এক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তখন সময় কাটাতে তিনি বইয়ে আসক্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তার সামনে নতুন জীবন উন্মোচিত হয়। আসলে পড়তে পড়তেই তিনি একসময় লেখালেখিতে উত্সাহী হয়ে ওঠেন। ১৫। 'নিঃসঙ্গতার একশ বছর' (ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিচ্যুড) লেখক- গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে নিঃসঙ্গতার একশ বছর-এর মতো আর কোনো উপন্যাস প্রকাশের পরপরই এতটা পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে কিনা সন্দেহ। জনপ্রিয়তার বিচারে যেমন, তেমনি শিল্পকুশলতা আর শিল্পমুক্তির ক্ষেত্রেও এটি হয়ে উঠেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কেবল স্প্যানিশ সাহিত্যেই নয়, গোটা বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসেই একটি মাত্র উপন্যাসে ইতিহাস, আখ্যান, সংস্কার, কুসংস্কার, জনশ্রুতি, বাস্তব, অবাস্তব, কল্পনা, ফ্যান্টাসি, যৌন-অযাচার ও স্বপ্ন– সবকিছুর এমন স্বাভাবিক ও অবিশ্বাস্য সহাবস্থান আগে কখনও দেখা যায়নি।১৬। 'দ্যা বেষ্ট লেইড প্ল্যানস' লেখক- সিডনি শেলডন। অনীশ দাস অপুদার অসাধারণ অনুবাদ শৈলীর বদৌলতে, আপনি চাইলেই সিডনীর বই এর স্বাদ নিতে পারেন। অবশ্যই মূল বইটিতে মজা বেশী। কিন্তু অপুদার অনুবাদের চেয়ে ভাল অনুবাদ সম্ভবত সম্ভব ছিল না। সিডনী শেলডনের প্রতিটা বই এর অনুবাদ দাদা করেছেন, অনিন্দ্য প্রকাশনের ব্যানারে।১৭। 'মাইন ক্যাম্ফ' লেখক- এডলফ হিটলার। হিটলার তার আত্মজীবনী 'মাইন ক্যাম্ফ' থেকে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছিলেন। আর এ বইটি ইংরেজিতে প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন জেমস মারফি। বইটির দুইটি খণ্ড রয়েছে। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে, এবং দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে। বইটি লেখার সময় হিটলার জেলে ছিলেন। এই বইয়ে হিটলার নাৎসিবাদ সম্পর্কে নিজস্ব ধারণা দেন। ১৮। 'রেইডার্স অব দ্যা লস্ট আর্ক' লেখক- ক্যাম্পবেল। ১৯৩৬ সালের কথা। ইন্ডিয়ানা জোনস নামের এক আর্কিয়লজির অধ্যাপক একটি সোনার মূর্তির খোঁজে দক্ষিণ আমেরিকায় পাড়ি জমালেন। দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে ঘুরতে লাগলেন মূর্তির খোঁজে। সেখানে তিনি একটি মৃত্যু-ফাঁদে পতিত হওয় থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান। ১৯। 'হার বেনি' লেখক- সাইলাস হকিং। চমৎকার একটি বই। কিশোর বয়সে পড়ে চোখে পানি এসে পড়েছিল। ২০। 'সাইকো' লেখক- রবার্ট ব্লচ। অনুবাদ :অনীশ দাস। 'সাইকো' রচিত হয়েছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে । ভয়, উত্তেজনা, রোমাঞ্চ আর শিহরনের দারুন এক কম্বিনেশন । এক কথায় সবাই এটাকে সর্বকালের সেরা সাইকোলজিকাল থ্রিলার হিসেবে মেনে নিয়েছেন । আলফ্রেড হিচকক এই কাহিনী অবলম্বনেই বানিয়েছিলেন তার বিখ্যাত 'সাইকো' ছবিটি! সেটিও সেরা দশ সাইকো-থ্রিলারে স্থান করে নিয়েছে অনায়াসে । অনীশ দাস অপুর রুপান্তরে পড়ুন বিশ্ব সেরা এই থ্রিলার উপন্যাস!
false
rn
কন্যা রাশি (আগস্ট ২৪- ২৩ সেপ্টেম্বর) শরৎ ঋতুর দ্বিতীয় রাশি এই কন্যা। ভাদ্র ও আশ্বিনে হয় শরৎ ঋতু। ভাদ্রে যে সৌন্দর্য প্রকৃতির মধ্যে ফুটে ওঠে আশ্বিনে তা হয় পরিপূর্ণ। কন্যারাশির ছবিতে দেখা যায় ধানের শিষ হাতে দাড়িয়ে রয়েছে একটি কন্যা। এই সময় পৃথিবী শস্যশ্যামলা হয়ে এক নতুন রূপ ধারণ করে। কন্যারাশির জাতক অত্যন্ত প্রশংসাপ্রিয়। অপরের প্রশংসাবানী না পেলে জাতক কোন কাজেই উৎসাহ পাবে না। সবাইকে আপনার করে নেবার একটা প্রবল ইচ্ছা জাতকের মধ্যে দেখা যায়। জাতকের কাছে আপন-পর ভেদ নেই। অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ও আমোদ আহ্লাদপ্রিয়। কন্যার জাতকের আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত প্রবল। যে কোন অবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা অপরিসীম। অদ্ভুত খেয়ালী ও রোমান্সপ্রিয়।গ্রিক ও রোমান পুরাণ মতে, দেবী দিমিটার জিউসের ঔরসে কুমারী মা হিসেবে জন্ম দেন পারসেফোনিকে। শষ্য ও উর্বরতার দেবী কুমারী মা ডিমিটারের অবয়বই দেখা যায় কন্যাম-লীতে। অন্য এক পুরাণ অনুসারে, কন্যা রাশি কুমারী দেবী ইউসতিশিয়ার প্রতীক।হাস্য কৌতুকে ভরপুর, এক কথায় প্রানবন্ত হয়ে থাকে এই রাশির মেয়েরা। তার মানে এই নয় যে সে লজ্জাবতী ললনাদের বাইরের জগতের কেউ অথবা রাখঢাকের আবরনে সে নিজেকে কখনো লুকায়না। সে যাকে ভালবাসে তার জন্য সে তার শেষ চেষ্টাটুকুও নিঃশেষে শেষ করতে পারে। আর ভালবাসার সংজ্ঞা তার কাছে বিশুদ্ধ ভালবাসাটুকুই।চাতুর্য ও মাধুর্যে পুর্ন। সততা , বাস্তবতা , আবেগ , রোমান্স আর কমনসেন্স এর জটিল সমন্বয় থাকে তার ভালবাসায় , তার চরিত্রে। দুনিয়া তোলপাড় হয়ে গেলেও সম্পর্কের জন্য সে প্রয়োজনে উত্তর মেরুর মতই ঠাণ্ডা থাকতে প্রস্তুত। সেই সে অতি প্রাচীন কাল থেকেই আকাশের তারাদের দিয়ে নানা প্রকারের ছবির কল্পনা করেছে মানুষ। আদি কালের যাযাবর জাতীর যাযাবর লোক খোলা আকাশের নিচে তাদের পালিত গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি রাতের পর রাত পাহারা দিতে দিতে আকাশে ফুটে থাকা অসংখ্যা অগুনিত তাঁরাদের দেখে দেখে এঁকেছে তাদের কল্পনার ছবি তাঁরাদেরই নিয়ে। নিজেদের আকা তাঁরাদের সেই সব ছবি নিয়ে দিনের বেলা হয়তো তারা কত গল্প করতো।কন্যা রাশি,১২ রাশির মাঝে সবচেয়ে আবেগ প্রবণ রাশি।এরা জীবনের প্রতি টা বিষয় আবেগ দিয়ে বিচার করে থাকে।এদের প্রধান চালিকা গ্রহ বুধ।এরা মাঝে মাঝে খুব চঞ্চল হয়ে উঠে আবার হঠাৎ করেই খুব শান্ত হয়ে যায়। বিনোদন জগত নিয়ে এদের থাকে আলাদা একটা জগত।মায়ের নীতি ও উপদেশ বাক্য এদের একদম ভালো লাগে না।এরা ভালো বাসা ছাড়া থাকতে পারে না।প্রেম এদের জীবনের নিত্য সঙ্গি।তবে প্রেমে সফলতার চেয়ে বিফলতাই বেশি হয়।এরা টাকা পয়সা ভালোই সঞ্চয় করে রাখতে পারে।বুঝে শুনে এরা অর্থ খরচ করেন।এই রাশির মেয়েরা একটু সাজ- গোঁজ বেশি পছন্দ করে থাকেন।এই রাশির মানুষেরা সবার সাথে খুব সহজেই মিশে যেতে পারে। রাশিচক্র একটি ফালতু ব্যাপার।
false
mk
খালেদা জিয়া ইতিহাস বিকৃতিতে নেমেছেন কেন_ ‘যোগ্য পুত্র’-এর পথেই হাঁটছেন ‘যোগ্য মাতা’। যদি তা না হয়, তবে সার্কিট পূর্ণ হবে কিভাবে! ভবিতব্যের পথে যেতে হবে না! প্রবাদ বলে, অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী। অল্প বিদ্যা! ছোটবেলার কোনো গণ্ডমূর্খ কোনো মতে ম্যাট্রিক পাস করে যদি হাবভাবে নিজেকে জাহির করতে যেত; তবে আমরা মজা করে বলতাম, ডিগ্রি হচ্ছে টি.টি.এম.পি অর্থাৎ টেনে টুনে ম্যাট্রিক পাস। পুত্র তেমন ডিগ্রিপ্রাপ্ত। আর মাতা ওই ডিগ্রির কাছেও পৌঁছাতে পারে নি। এমন যাদের ডিগ্রি, ইতিহাস সম্পর্কে তারা কতটুকু যোগ্য তা সহজেই অনুমেয়। বিদ্যার এই জাহাজের মধ্যে যদি থাকে প্রচণ্ড লোভ ও প্রতিহিংসা, তবে তা হয় সোনায় সোহাগা। লোভ ও প্রতিহিংসাজাত নিজ স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য তখন ভয়ঙ্কররা দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য ‘আপসহীন’ হয়ে ওঠে। ভয়ঙ্কর হওয়াটা তখন পৌঁছে চরমে। বলাই বাহুল্য, এই ধরনের গণ্ডমূর্খ, অতি লোভী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তিরা যত থাকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের উচ্চাসনে, ততই তা প্রকাশিত হয় তত সর্বনাশা রূপ নিয়ে। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে এবং আরো হবে বলে ধারণা করা চলে।বুদ্ধ পূর্ণিমা মানবজাতির ইতিহাসে এক মহান দিন। এই দিনে অহিংসার বাণীর পথিকৃত গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ, বোধিসত্ত্ব লাভ এবং মৃত্যুবরণ করেন। লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ, দ্ব›দ্ব-সংঘাতে আমাদের দেশসহ সমগ্র বিশ্ব যখন রক্তাপ্লুত, এত উন্নতি-অগ্রগতির মধ্যে মানবজাতির রক্তক্ষরণ যখন বন্ধ করা অসম্ভব ঠেকছে, তখন এই দিনটির তাৎপর্য আরো বেড়ে গেছে। এই মহান দিনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে। প্রসঙ্গত এটাই রেওয়াজ হয়ে গেছে যে, ধর্মীয় উৎসবের সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক দিকটাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট ধর্মের নেতারা শুভেচ্ছা জানাতে যান প্রধান দলগুলোর নেতাদের কাছে। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক অঙ্গনে টেনে আনার ফলাফল বিশেষত পলেটিক্যাল ধর্মের ব্যবহার কখনো ভালো হয় না বিবেচনায় নিয়েও বলি, দেশের বর্তমান অবস্থা ও জনগণের চেতনা বিবেচনায় এটা করা ভিন্ন বিকল্প নেই। কিন্তু ভালো করতে গিয়ে তা কতটা মন্দে রূপ নিতে পারে, তা করে দেখালেন খালেদা জিয়া।স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে খালেদা জিয়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রতিনিধিদের বলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা চেয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের দল নয়। মিথ্যা ও ঔদ্ধত্যের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে তিনি আরো বলেন যে, জিয়াউর রহমান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে ছিলেন আরাম-আয়েশে। তিনি আরো বলেন, ‘যার স্বাধীনতা ঘোষণা করার কথা ছিল, তিনি তো পাইপ-টাইপ নিয়ে চলে গেলেন পাকিস্তানে। সেখানে আরামেই দিন কাটালো।’প্রবাদ বলে, পাগলে কি না বলে। পাগলের কথা ও কর্মকাণ্ড ধর্তব্যের মধ্যে নেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু খালেদা জিয়া তো আর পাগল নয়, ‘পাগল ও শিশু’ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের নেত্রী। তার রয়েছে ২০ দলীয় জোট এবং মতান্ধ সংকীর্ণ বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন সমর্থক। দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। রয়েছে পাকিস্তানসহ বিদেশি প্রভুও। সাম্প্রতিক সময়ে দুইবার তিনি গৃহযুদ্ধ বাধানোর হীন উদ্দেশ্য নিয়ে দেশকে পেট্রলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। এমন একজন যদি হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ইতিহাসের চরম বিকৃতি করে, তবে অন্ধদের ওপর এর প্রভাব সহজেই অনুমান করা চলে। প্রবাদ বলে, সব শিয়ালের এক রা। শিয়ালের দলপতি যদি ‘হুয়াক্কা হুয়া’ রব তোলে, তবে তা বেড়ে চলতেই থাকে।এই বিবেচনায়ই এই বিকৃত ইতিহাসের মুখোশ উন্মোচনে সত্য ও প্রকৃত ইতিহাসের চর্বিত চর্বন একান্ত আবশ্যক। কেননা আমাদের সমাজ ও রাজনীতি এমনই যে, মিথ্যা ও বিকৃত ইতিহাসের পেছনেও মানুষকে ছুটতে দেখা যায়। তবে এই কলামের উদ্দেশ্য তা নয়। কলামটি লেখা হচ্ছে এই জন্য যে, বর্তমানে বিএনপি দলটি যখন বিপর্যয়ে পড়ে বিধ্বস্ত অবস্থায়, তখন খালেদা জিয়া পুত্র তারেক জিয়ার পথ ধরে ইতিহাসকে এমন ডাহা বিকৃতির মধ্যে টেনে নামাতে গেলেন কেন? এই কেন এর উত্তর খুঁজে যদি ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তবে লোভ-লালসা ও প্রতিহিংসাজাত দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াইকে ইস্পিত লক্ষাভিমুখী পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এই দিক বিবেচনায় নিয়েই উল্লিখিত কেন এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা এই ক্ষুদ্র কলামে করা হলো।প্রথমত. একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, ক্রমেই খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, বিএনপি, ২০ দলীয় জোট দেশবাসীর পক্ষে জাতীয় রাজনীতিতে পজেটিভ কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। জাতির জন্য মঙ্গলজনক ও ভালো কিছুতে বিএনপির নাম উচ্চারণ হচ্ছে না। সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে ভালো কিছু দিতে আর দলটি পারছে না এবং আর পারবে বলেও কেউ মনে করছে না। খারাপ যা কিছু হচ্ছে, তার মধ্যে বিএনপির নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মানুষ তাদের গুপ্তহত্যা-খুন থেকে শুরু করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি তথা মন্দ সব কিছুতে সন্দেহ বা অভিযুক্ত করছে। মন্দের ঘুরপাকে যে পূর্বাপর নিমজ্জিত সে কি ভালো পরিবেশ চাইতে পারে। পানি ঘোলা করাই তো হবে এর উদ্দেশ্য। চোর কখনো কি চায় পূর্ণিমার আলো! চাইবে অমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকার। বলাই বাহুল্য, অন্ধকারকে আরো ঘোর করার জন্যই ইতিহাসকে মিথ্যা ও বিকৃত করে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টায় মেতেছেন খালেদা জিয়া।দ্বিতীয়ত. এমন সব মিথ্যা ও বিকৃত কথা না বলে কি বলবেন খালেদা জিয়া। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, হাওয়া ভবন ও বিএনপি-জামায়াতের অপশাসন-দুঃশাসন-লুণ্ঠনের প্রেক্ষাপটে ১/১১-এর জরুরি আইনের শাসন এবং সবশেষে ২০০৮ সালের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে খালেদা জিয়া যখন নিজ কর্মফলেই ‘স্বর্গ থেকে বিদায়’ সম্পন্ন করলেন অর্থাৎ সিংহাসন হারালেন; তখন তিনি আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের সরকার উৎখাতের কথা বলতে থাকলেন। এক পর্যায়ে তারিখ পর্যন্ত দিতে থাকলেন। পরবর্তীতে সরকার উৎখাতের তারিখ দিয়ে পেট্রলবোমা নিয়ে ক্যাডার সন্ত্রাসীদের মাঠেও নামালেন। কিন্তু সবটাই হলো বুমেরাং। ফলে এখন বলবেনটা কী! সংগঠন টিকিয়ে রাজনৈতিকভাবে মাঠে থাকতে হলে তো কিছু বলতে হবে।ইতিহাসকে যথার্থভাবে তুলে ধরে কি বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে মাঠে থাকতে পারে! পারে না; কারণ জন্মই যে হয়েছে দলটির বেআইনিভাবে অন্ধগলির ইতিহাসের আঁতুড় ঘরে। অন্ধকার যদি করতে হয়, তবে সার্বিক অন্ধকারই হোক, এটাই এখন বিএনপি সব দিক থেকে চাইছে। এই উদ্দেশ্য নিয়ে মিথ্যার অন্ধকার সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। সুদূরপ্রসারী হীন লক্ষ্য হচ্ছে এই যে, যদি কখনো প্রাসাদ ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে পুনরায় স্বর্গে প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়; তবে আগের মতো আধাখেঁচড়া নয়, পাকিস্তান যেমন চায় ঠিক তেমন খোলনলচে পরিবর্তন করা যাবে ইতিহাসের আর সেই সঙ্গে দেশেরও। এ থেকেই অনুধাবন করা যায়, কতটা এসপার ওসপার করতে নেমেছেন জামায়াতসহ ধর্ম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া।তৃতীয়ত. এটা কি বুঝে নেয়া যায় না যে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে কালো গহŸরে ছিলেন খালেদা জিয়া, তা আড়াল করার একটা অদম্য ইচ্ছা রয়েছে এই ইতিহাস বিকৃতির মধ্যে। মানুষ সব সময়েই নিজের মতো করে সবাইকে দেখতে চায়। অন্ধরা বাদে এটা আজ সর্বজনস্বীকৃত যে, খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন আরাম-আয়েশে। পাকিস্তানি আর্মির অফিসার হিসেবে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্র নামাতে গিয়ে স্বামী জিয়া বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং অনেকের পরে ও অনেকের সঙ্গে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে ভাষণও দেন। স্বাভাবিকভাবেই সেক্টর কমান্ডার জিয়া ভারতে গিয়ে গৃহবধু স্ত্রীকে খবর পাঠান এবং ব্যবস্থাও করেন নিরাপদে ভারতে চলে যাওয়ার। কিন্তু যান নি খালেদা জিয়া। এ জন্য পাকিস্তানি জেনারেলের মৃত্যুর পর তিনি শোকাহত হয়ে কালো কাপড় পর্যন্ত পরেছিলেন। সুদীর্ঘ সময় বিএনপির অবস্থা যখন ছিল জামায়াতকে নিয়ে রমরমা, তখন এর সবই খালেদা জিয়া স্থ’ূলভাবে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এখন বিপর্যয়ে পড়া খালেদা জিয়ার কাছে ওইসব অপবাদ বোঝাস্বরূপ। ওই বোঝাকে আড়াল বা চাপা দেয়ার জন্যই এখন বঙ্গবন্ধুর আরাম-আয়েশের বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। প্রসঙ্গত মানবিক দিক থেকে খালেদা জিয়া যে নিষ্ঠুর ও জিঘাংসাপরায়ণ তা প্রমাণ রেখেছিলেন, জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালন করে। ইতিহাসের প্রতিও কতটা নিষ্ঠুর ও জিঘাংসাপরায়ণ হতে পারেন খালেদা জিয়া এটাও উল্লিখিত বিকৃতির মধ্য দিয়ে প্রমাণ রাখলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দুই দুইবার যে অবিসংবাদিত নেতা দেশ ও দশের মুক্তির লক্ষ্যে ফাঁসি কষ্ঠের দোরগোড়ায় গিয়েছিলেন, সেই নেতাকে নিয়ে এমন মিথ্যা যিনি বলেন, তিনি নরাধম। পাঠকরা মাপ করবেন, নরকের কীট শব্দটাই এখন কেবল মনে পড়ছে।চতুর্থত. কেন যেন মনে হয় খালেদা জিয়া এমন পরিস্থিতি চাচ্ছেন, যাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। এমনটা হলে ‘আপসহীন’ কথাটা আবার সামনে আনা যাবে এবং অস্থির-অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরিরও পরিবেশ পাওয়া যাবে। এটা তো সর্বজনস্বীকৃত যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এমন কথা বলা সংবিধান ও আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমনিতেই তিনি আছেন নানা দুর্নীতির মামলায়। এতে তিনি এক সময় জেলেও যেতে পারেন। বলুন তো পাঠকরা, কোনটাতে জেলে গেলে খালেদার লাভ। নিঃসন্দেহে দুর্নীতির মামলায় নয়, রাজনৈতিক মামলায় জেলে যাওয়াই তার হীন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শ্রেয়তর। এতে দেশি-বিদেশি পরাজিত শক্তির সাপোর্ট পাওয়া যাবে সহজে এবং ভুল ইতিহাসে মাঠও গরম করা যাবে। দুর্নীতিকে করা যাবে রাজনীতিতে ট্রান্সফার। ফৌজদারি মামলাকে রাজনৈতিক মামলায়। খালেদা জিয়ার পরামর্শক দেশি-বিদেশি মাস্টারমাইন্ডরা সুকৌশলী বটে! তবে সংবিধান ও আইনকে পাশ কাটিয়ে যে যাওয়ার উপায় নেই এবং তাতে যে শাস্তি পেতে হবে, এটা বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রীকে অনুধাবন করতেই হবে।আইন যাই থাকুক, যেভাবেই খালেদা জিয়া অগ্রসর হোক না কেন, জনতার আদালতে এসব উক্তি ও এতদ্সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য খালেদা জিয়া কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই আছেন। জনতার আদালতের বিচারে খালেদার শাস্তি হচ্ছে ও হতেই থাকবে। প্রবাদ বলে, প্রদীপ নেভার আগে জ্বলে বেশি। ক্ষমতা হাতছাড়া হতে থাকায় তিনি জ্বলছেন এবং নিজের আগুনে দেশ ও মানুষকে জ্বালিয়ে মারতে চাইছেন। কিছুদিন আগেও খালেদা জিয়া পাকিস্তানের মুসলিম লীগের মতো ‘ভারত’ জুজু দেখিয়ে মানুষকে মাত করতে চাইতেন। এখন সেই পথ খালেদা জিয়ার জন্য বন্ধ। এখন আছে পাকিস্তান আমলের মতোই কেবল ধর্মের জুজু। এটাও ভোঁতা হতে বসেছে। মানুষ বলে, খালেদার জীবনাচরণ ধর্মের সঙ্গে যায় না। আর ভারসাম্য বজায় না রাখতে পারায় জাতিকে আর সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগকে অনেক মূল্য দিতে হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ধর্ম যাবে, এটাও মিথ্যা প্রমাণিত হতে বসেছে। এই অবস্থায় বিএনপির দীপ নিভে যাওয়া ছাড়া আর উপায় আছে কী!শেখর দত্ত : রাজনীতিক, কলাম লেখক। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
false
rn
১৯৭৪ সাল ১৯৭৪ সালের, সকালবেলা। ফুটপাথ থেকে লাশ কুড়িয়ে নিচ্ছে আঞ্জুমান ই মফিদুল ইসলামের লোকেরা।১৯৭৪ সালের অক্টোবরে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দুর্ভিক্ষের জন্য প্রকাশ্যে সরকারের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে সর্বদলীয় ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।১৩ই অক্টোবর ঢাকার সংবাদপত্র সূত্রে জানা যায় যে, প্রতিদিন গড়ে ৮৪টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন হচ্ছে। ২৭শে অক্টোবর খবর আসে জামালপুরে প্রতিদিন অনাহারে শতাধিক লোক মারা যাচ্ছে। সরকার এই মৃত্যুকে পুষ্টিহীনতা বলে অভিহিত করে। অনাহারে মানুষ মরছে সরকার সেটা অস্বীকার করে। ২৫শে অক্টোবর ঢাকার সংবাদপত্রে বের হয় ট্রাক বোঝাই ধানচাল ভারতে পাচাঁর হচ্ছে।১৯৭৪ সালে ২রা অক্টোবর প্রকাশিত লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় জেকুইস লেসলীর কলাম অনুসারেঃ “একজন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,আর অসহায় দুষ্টিতে তার মরণ-যন্ত্রণাকাতর চর্মসার শিশুটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হতে চায় না, তাই কথাটি বোঝাবার জন্য জোর দিয়ে মাথা নেড়ে একজন ইউরোপীয়ান বললেন, সকালে তিনি অফিসে যাচ্ছিলেন,এমন সময় এক ভিখারি এসে হাজির। কোলে তার মৃত শিশু। বহু বিদেশী পর্যবেক্ষক মনে করেন বর্তমান দুর্ভিক্ষের জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। “দুর্ভিক্ষ বন্যার ফল ততটা নয়,যতটা মজুতদারী চোরাচালানের ফল”-বললেন স্থানীয় একজন অর্থনীতিবিদ। আবুল মনসুর আহমদের লেখা আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর, ৪৯৮ নং পৃষ্ঠায় উনি লিখেছেন, “সীমান্তের ১০ মাইল এলাকা ট্রেডের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হলো। এর ফলে ভারতের সাথে চোরাচালানের মুক্ত এলাকা গড়ে উঠে। পাচার হয়ে যায় দেশের সম্পদ।” ২৩শে সেপ্টেম্বর সারাদেশে ৪৩০০ লঙ্গরখানা খোলার কথা ঘোষণা করা হয়। সে সমস্ত লঙ্গরখানার ইতিহাস আর এক করুণ কেলেঙ্কারীর ইতিহাস। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ট্রাজেডির নাম ‘বাসন্তী’। কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় এক জেলে পরিবারের বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে বাসন্তীর জাল পরে লজ্জা নিবারণের ছবি প্রকাশিত হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। আর সেই বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত ছবির ফটোগ্রাফার ছিলেন ইত্তেফাকেরই নিজস্ব আলোক চিত্রি আফতাব আহমেদ। অনেকে ছবিটির নাম দিয়েছেন জাল-বসনা বাসন্তী। ছবিটিতে দেখানো হয় বাসন্তী ও দুর্গাতি নামের দুই যুবতী মেয়েকে। অভাবের জন্য যারা সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারছিল না। ছবিতে বাসন্তীর পরনে ছিল একটি মাছ ধরার জাল। এই ছবি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধু সরকারকে রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছিল। দেশের আনাচে কানাচে দুর্ভিক্ষের আগমনী বার্তা পৌঁছে দেয়। তাঁদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে রেখেছিল বিশাল ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু সরকারের পতনকেও ত্বরান্বিত করে ছবিটি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং এই ছবির মধ্যেও যোগসূত্র রয়েছে এমন দাবী অনেকেরই। কিন্তু সেই ছবি প্রকাশিত হওয়ার কিছুকালের মধ্যেই বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য। বাসন্তীকে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতা ও নোংরা রাজনীতির খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছে আসল রূপ। পরিষ্কার হয়ে যায় ছবিটি ছিল সাজানো। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন ছাপা হয় পরবর্তীতে।১৯৭২ সালের যে কোন খবরের কাগজ খুললে দেখা যাবে প্রায় সব খবরই হচ্ছে খুন, রাহাজানি এবং ছিনতাই সংক্রান্ত।রিলিফ নিয়ে লুটপাটের কাহিনী পাওয়া যাবে ১৯৭৪ সালের আগষ্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসের সংবাদপত্রসমূহে। অবাধ লুটপাট চলে বাশঁ, টিন, খাদ্যসামগ্রী, রিলিফের ঔষধপত্র এবং কম্বল নিয়ে। প্রতিদিনের সংবাদপত্রে ছাপা হয় ক্ষুধাতুর মানুষের ছবি। অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, মাথা গোজাঁর ঠাই নেই। কোটি কোটি লোক হয় ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুহারা। ৩রা আগষ্ট ইত্তেফাকে ছাপা হয় এসব ছবি। দৈনিক বাংলায় খবর বের হয়, বমি খাচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশ রেডক্রস সর্ম্পকে প্রকাশিত হয় চুরি, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অসংখ্য অভিযোগ। মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ কেড়ে নেয় লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। হাজার হাজার চাষী যারা একদা কষে ধরতো লাঙ্গল, মাঠ ভরে তুলত সবুজ শস্যের সমারোহে, তারা ভিক্ষার জন্য শহরের মানুষের কাছে হাত পাতে। ফিরে যায় ভিক্ষা না পেয়ে। তারপর বেওয়ারিশ লাশ হয়ে পড়ে থাকে। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম প্রতিদিন ঢাকা শহর থেকেই তিরিশ থেকে চল্লিশটি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করছিল। সে কাহিনী ও ছবি আছে সেই সময়কার দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর পাতায় পাতায়।১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৪ জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এর কিছু অংশঃ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ সময়ের দিক থেকে মাত্র তিন বছর। এ কথা সত্য যে, তিন বছর আপনাদের কিছু দিতে পারব না, এ কথা আমি আপনাদের বলেছিলাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেয়ার খাতা একেবারে শূন্য পড়ে থাকেনি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য কোটি কোটি মণ খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করা ছাড়াও ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, শ্রমিক ভাইদের নিুতম মজুরি বৃদ্ধি, বেতন কমিশনের সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন, পাটের নিুতম মূল্য বৃদ্ধি এবং প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদা দিয়ে বর্ধিত হারে বেতন প্রদান- এই জাতীয় কয়েকটি ব্যবস্থা, যা সরকার কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও কার্যকর করেছে। একই সাথে আমাদের দেশের বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে শুধু পুনঃপ্রতিষ্ঠাই করা হয়নি, মিরপুর, নয়ারহাট, তরাঘাট প্রভৃতি স্থানে নতুন নতুন সেতু নির্মাণ করে দেশে উন্নততর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই এটাও জানেন, যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জরিপকাজের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে, খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। দেশবাসীও শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির কিছুটা ফল লাভ করতে শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয়, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপযোগী প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী, বিডিআর, রক্ষী বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে নতুন করে গঠন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশ পুনর্বাসন পর্যায় শেষ করে প্রবেশ করেছে পুনর্গঠনের নতুন দিগন্তে।আমাদের নতুন প্রতিরোধ সংগ্রামে সর্বশেষ ও সর্বপ্রধান শত্রু চোরাকারবারি (স্মাগলার), কালোবাজারি, মুনাফাবাজ ও ঘুষখোরের দল। মানুষ যখন অনাহারে মারা যায়, তখনো এসব নরপশুর দল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখের গ্রাস অন্যত্র পাচার করে দিয়ে থাকে। বিদেশ থেকে ধার-কর্জ, এমনকি ভিক্ষা করে আনা পণ্য ও বাংলার সম্পদ মজুদের মাধ্যমে তারা মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে। তাদের কোনো জাত নেই, নেই কোনো দেশ। এসব নরপশুকে উৎখাতে আমি আপনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা চাই। সরকার ইতোমধ্যেই সামরিক বাহিনী নিয়োগের মাধ্যমে সীমান্তে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। কিছুসংখ্যক চোরাচালানিকে গুলি করে হত্যাও করা হয়েছে।একটি কথা আমি প্রায়ই বলে থাকি। আজো বলছি, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। শোষিত, নির্যাতিত ও লুণ্ঠিত বাংলাদেশের সমাজদেহে সমস্যার অন্ত নেই। এ সমস্যার জটগুলোকে খুলে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এ অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কি না সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের সবাইকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনি আপনার কর্তব্য দেশের ও দেশের জনগণের প্রতি কতটা পালন করেছেন, সেটাই বড় কথা।
false
fe
পরাশক্তির কক্ষপথে বিশ্বের আগামী পরাশক্তির কক্ষপথে বিশ্বের আগামীফকির ইলিয়াস------------------------------------------যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের সিংহভাগ চীনের দখলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, তিনি এ অবস্থা কাটিয়ে উঠবেন। তিনি বলেছিলেন, চীনকে একচেটিয়া ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। কীভাবে হবে না? তা ঠেকানো হবে কীভাবে? তা দেখার সময় ঘনিয়ে আসছে। এটা অনেকেরই জানা চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পর্ক মধুর নয়। কারণ মার্কিনি একক পরাশক্তি কোনো সময়ই অন্য কারো তাঁবেদারি মেনে নেয়নি। নিতে চাইবেও না।খবর বেরিয়েছে- ২০১৭ সালে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের। যুক্তরাষ্ট্রের হিউসটনে সফরে আসছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইয়ং ওয়েনের। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাত হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে এমন সম্ভাবনার পক্ষেই কথা বলেছেন ট্রাম্প। যদি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কথা হয়, সাক্ষাত হয় তাহলে তাতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টান পড়তে পারে।এ ছাড়াও নির্বাচনে রাশিয়ার হ্যাকিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। বিশ্ব মিডিয়াগুলো বলছে- তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাব্যতাকে উন্মুক্ত রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইয়ং ওয়েনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে ৭ জানুয়ারি। ওইদিন তিনি হিউসটনে থাকবেন। তারপর আবার ১৩ জানুয়ারি থাকবেন সানফ্রান্সিসকোতে। এ সময়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে ট্রাম্পের।তিনি তার মার-এ-লাগো এস্টেটে নতুন বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমরা বিষয়টি দেখবো। পরে সাংবাদিকদের পীড়াপীড়িতে তিনি বলেন, প্রটোকল অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তিনি সাক্ষাত করবেন না। কিন্তু ট্রাম্প কি তা মানবেন? এটাই এখন আলোচিত হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে। কাছে থেকে নজর রাখছে চীনও।গেলো ৮ নভেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার অল্প পরেই ট্রাম্পকে ফোন করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট। তিনি তাকে অভিনন্দন জানান। ট্রাম্প ওই ফোন ধরার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে চীন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের গড়ে উঠেছে ‘ওয়ান-চায়না’ নীতি। এ সম্পর্ক কয়েক দশক ধরে চলছে। কিন্তু তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার কারণে বেইজিং ক্ষুব্ধ হয়। এখন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কে আরো বড় ধরনের ফাটল ধরতে পারে।অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হ্যাকিংয়ের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন হ্যাকিংয়ের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আছে বলে দাবি করলেও ট্রাম্প বলেন, আমরা মনে করি এটা ঠিক না। এটা হতে পারে অন্য কেউ। যে কোনো কম্পিউটারই হ্যাক হতে পারে। কোনো কম্পিউটারই নিরাপদ নয়। তাই তারা যা বলছে তাতে আমি পরোয়া করি না।একটা বিষয় খুব স্পষ্ট- ট্রাম্প প্রশাসন অস্ত্রের বদলে বাণিজ্য দিয়ে বিশ্বকে শাসন করার পরিকল্পনা করছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলেছেন, হোয়াইট হাউজে প্রবেশের প্রথম দিন থেকেই তিনি আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারিত্ব (টিপিপি) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনতে সব চেষ্টা করবেন। তার এ ঘোষণা চীন গ্রহণ করেছে আনন্দের সাথেই। চীনা গণমাধ্যমগুলোও ট্রাম্পের বক্তব্য সাদরে গ্রহণ করেছে।এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১২টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত টিপিপি চুক্তিকে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ছিল। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার অনুসারীরা বরাবরই দাবি করে আসছেন, টিপিপি হবে মার্কিন নেতৃত্বের বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে, যখন ক্রমেই এশীয় পরাশক্তি হয়ে ওঠা চীন এ অঞ্চলের নেতৃত্বস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে দিতে চাইছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসন যদি টিপিপি থেকে পিছুটান দেয়, তবে বেইজিং ও ওয়াশিংটন উভয়েরই মিত্র দেশগুলোর চোখে এ অঞ্চলে একটি ভূরাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে।গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স ফার্ম ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার বলেছেন, ‘এর মানে হলো, এখন থেকে এশিয়ায় আর কেউ যুক্তরাষ্ট্রকে যোগ্য নেতা হিসেবে দেখবে না। সুতরাং বাধ্য হয়েই তাদের চীনা নেতৃত্বের আশ্রয়ে যেতে হবে। বিষয়টি বেইজিংয়ের জন্য আনন্দের উপলক্ষ হয়ে এসেছে।’তিনি বলেন, চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই আঞ্চলিক নেতৃত্বের নতুন স্থাপত্য সৃষ্টিতে সক্রিয় হবে। কারণ বেইজিং বুঝতে পারছে, ওয়াশিংটনকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। ব্রেমার আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের জয়ের পর এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে চীনা কর্মকর্তারা সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ব্যাপারে তারা বেশ আনন্দিত।’পরাশক্তির বাহু দেখাবার একটা অলিখিত মহড়া চলছে- তা এখন ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশটি যত দ্রুত সম্ভব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে চায়। এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শেন দানিয়াং বলেছেন, আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) নিয়ে আলোচনার জন্য তার দেশ কাজ করে যাবে। এপেক সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, নিজেদের অর্থনীতিকে আরো বেশি উদার করা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে চীন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।শেন বলেন, ‘আরো বেশি মুক্ত ও সুবিধাজনক বৈশ্বিক বাণিজ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে চীন বহুপক্ষীয় বা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিগুলোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে কাজ করে যাবে; তা আরসিইপি বা টিপিপির ভবিষ্যৎ যা-ই হোক না কেন।’বিভিন্ন আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে অনেক দিন ধরেই চীন, যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই নেতৃত্বের শিখরে আরোহণের চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশ দুটি প্রতিনিয়তই একে অন্যকে টেক্কা দিতে সচেষ্ট। এ কারণেই হয়তো ১২ জাতির টিপিপি থেকে বাদ পড়েছে বেইজিং। একইভাবে ১৬ জাতির প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আরসিইপিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাম নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সমান্তরালভাবেই এগোচ্ছে বাণিজ্য প্রতিযোগিতায়। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র মহড়াও চলছে- যা খুব একটা দৃশ্যমান নয় এ সময়ে।২০১৭ সাল কিংবা এর পরবর্তী সময়ে বিশ্ব যে বড় সংকটের মুখোমুখি হবে তা হলো- যদি কোথাও যুদ্ধ লেগে যায়!একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের সিংহভাগ মানুষই চান না- আরেকটা হিরোশিমা-নাগাসাকি হোক। সমীক্ষাটি বলছে- অন্যান্য সম্ভাবনা বাদ দিলেও- যদি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধে তাহলে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। যার ফলে মোটামুটি ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে মানবসভ্যতা। একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণামূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউকিয়ার ওয়ার’ ও ‘ফিজিশিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ যৌথভাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে খুব ছোট পর্যায়েও পারমাণবিক অস্ত্রের লড়াই হলে বিশ্বের আবহাওয়া মণ্ডলের ব্যাপক ক্ষতি ও শস্যক্ষত্র ধ্বংস হবে। পরিণামে খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে। খাদ্য-শৃঙ্খলায় দেখা দেবে বিশৃঙ্খলা। এর আগে সংগঠন দুটি ২০১২ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে ধারণা দিয়েছিল, এ রকম একটি পারমাণবিক যুদ্ধে ১০০ কোটির বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। গবেষণার দ্বিতীয় সংস্করণে সংগঠন দুটি বলেছে, দুই দেশের সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধে চীনের ওপর প্রভাবের বিষয়টি তারা অনেকটাই এড়িয়ে গেছে। তবে বিশ্বের জনবহুলতম এ দেশ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়তে পারে বলে এতে আশঙ্কা করা হয়। পরমাণু যুদ্ধের ফলে আবহাওয়ামণ্ডলে যে কার্বন অ্যারোসল কণা ছড়াবে, তাতে চীনে প্রথম চার বছর গড়ে ২০ শতাংশ ও পরের ছয় বছর আরো ১০ শতাংশ ধানের উৎপাদন কমে যাবে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে গমের উৎপাদনও। শুধু প্রতিবেশী দেশ নয়, এ কণার প্রভাবে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রেও এক দশক শস্যকণা ও সয়াবিনের উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবে। প্রতিবেদনের লেখক আইরা হেলফান্দ বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ মারা যাওয়া নিশ্চিতভাবেই মানব ইতিহাসের জন্য এক বিপর্যয়। এর সঙ্গে চীনের আরও ১৩০ কোটি মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। এর যে ফল আমরা পাব তা হলো, স্পষ্টতই একটি সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ হেলফান্দ আরো বলেছেন, ‘আধুনিক যুগের পারমাণবিক অস্ত্র ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা মার্কিন পরমাণু বোমার চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ওই বোমায় ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। না- আমার মনে হয় না বিশ্বের কোনো পরাশক্তিই এমন কিছু করতে চাইবে। অদূর অতীতেও আমরা দেখেছি- কাছাকাছি গিয়েও চীন-আমেরিকা কেউ কাউকে আক্রমণ করেনি। বিশ্ব তথ্য-প্রযুক্তিতে এগোচ্ছে। প্রজন্মকে এ সুবিধা ও শান্তি ভোগ করার জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এ জন্য সকল আলোচনার জানালা খোলা রাখতে হবে। পৃথিবী যদি মানুষের জন্যই হয়- তাহলে মানুষকে সম্মান দেওয়ার মাঝেই রয়েছে সকল মানবতাবাদ। এ কথাটি সবাইকে মনে রাখতে হবে।==================================================দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ৬ জানুয়ারি ২০১৭ শুক্রবার সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৭
false
rg
১৯৭৩ সালে ওয়াশিংটন সফরের সময় জেনারেল জিয়া সিআইএ এবং আইএসআই'র সঙ্গে বৈঠক করেই মুজিব হত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত করেছিলেন!!! বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত ও রাশিয়া হয়ে উঠেছিলো বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন, সেই বাংলাদেশ বিরোধী জোটের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নের জন্য যুদ্ধকালীন সময়ের শত্রুদেশের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উন্নয়ন সহায়তা পাবার প্রত্যাশা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন সহায়তা পাবার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে বঙ্গবন্ধু ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ কর্নেল জিয়াউর রহমানকে তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৩ সালে ওয়াশিংটনে পাঠান। বাংলাদেশের তখনকার ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ কর্নেল জিয়াউর রহমান ৬ সপ্তাহের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় পেন্টাগন, সিআইএ এবং স্টেট ডির্পাটমেন্টের প্রধানদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে কর্নেল জিয়াউর রহমান লন্ডনে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনের এ্যাটাশে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জীর সঙ্গে দেখা করেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক রহমানের একটি স্যুটকেস ও কর্নেল ব্যাটনটি গচ্ছিত ছিলো শশাঙ্ক ব্যানার্জীর কাছে। লন্ডন থেকে ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগে ফারুক রহমান তার একটি স্যুটকেস ও কর্নেল ব্যাটন রেখে যান শশাঙ্ক ব্যানার্জীর কাছে। জিয়াউর রহমান মূলত লন্ডন সফরকালে ফারুক রহমানের স্যুটকেসটি ফেরত নিতে গিয়েই শশাঙ্ক ব্যানার্জীর সঙ্গে দেখা করেন। ভারতীয় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক ব্যানার্জী জিয়াউর রহমানের ওয়াশিংটন সফরের আদ্যোপান্ত আগে থেকেই জানতেন। শশাঙ্ক ব্যানার্জী জিয়াউর রহমানের কাছে জানতে চাইলেন,‘একজন উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকতা হয়েও তিনি কেন ফারুক রহমানের মতো অধীনস্ত কর্মচারীর স্যুটকেস নেওয়ার মত তুচ্ছ কাজ করতে যাচ্ছেন?’ জবাবে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, কনের্ল ফারুক আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই তার স্যুটকেসটি আমি নিজ হাতে পৌঁছে দিতে চাই।’ তখনই শশাঙ্ক ব্যানার্জী সামরিক ক্যুর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল করার গোপন ইচ্ছের বিষয়টা বুঝতে পারেন। ১৯৭৩ সালে জিয়াউর রহমানকেই টার্গেট করে রাওয়ালাপিণ্ডির সামরিক কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনা ছক করেন। রাওয়ালাপিণ্ডির সামরিক গোয়েন্দা ও জেনারেলরা এ্যাবোটাবাদের যে প্রশিক্ষণ শিবিরে ট্রেনিং নিয়েছেন জিয়াউর রহমানও একই স্থানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। তাছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতেই কর্মরত ছিলেন। তাই পাকিস্তানি গোয়েন্দা ও জেনারেলদের জন্য জিয়াউর রহমান ছিলেন একটি ভালো অপশন। ১৯৭৩ সালের দিকে ভারতে একটি গুজব চলছিলো যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, এই দুই গোয়েন্দা সংস্থা মিলে শেখ মুজিবের হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আর সেই সময়ে জিয়াউর রহমান ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। লন্ডনে ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক ব্যানার্জীর সঙ্গে দেখা করার পর ওয়াশিংটন সফরকালে পাকিস্তানি মিলিটারির সঙ্গে জিয়াউর রহমানের কী ধরনের কথা হয়েছে সে বিষয়ে মিস্টার ব্যানার্জী জানতে চাইলে জিয়াউর রহমানকে তখন খুব নার্ভাস দেখাচ্ছিল। মিস্টার ব্যানার্জী বলেন, একটি দেশের আর্মির ডেপুটি চিফ অব স্টাফকে এভাবে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে তাঁকে রীতিমত জেরা করে প্রশ্ন করার কারণে তিনি নিজেও প্রায় অজ্ঞান হবার যোগার হয়েছিলেন। শশাঙ্ক ব্যানার্জী বলেন, একজন সিনিয়র সামরিক অফিসারের তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলার মতো উস্কানিমূলক প্রশ্ন ছিলো সেগুলো। তবে শশাঙ্ক ব্যানার্জীর খোঁচাখুচির জবাবে জিয়াউর রহমান স্মিত হেসে জবাব দিয়েছিলেন,‘আপনার ইশ্বর প্রদত্ত উর্বর কল্পনা শক্তি আছে, একটি স্যুটকেস নিয়ে আপনি আমার সঙ্গে রসালো যুদ্ধ খেলা খেললেন।’মিস্টার শশাঙ্ক ব্যানার্জী বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছিলাম জিয়াউর রহমান ওয়াশিংটনে গিয়ে পাকিস্তানি মিলিটারী এ্যাটাশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অথচ জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে (শশাঙ্ক ব্যানার্জী) লন্ডনে বৈঠকের সময় কিন্তু নিজে থেকে একবারও বলেননি যে, তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর বৈঠক হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে আমি জানতে চাইলে জিয়াউর রহমান স্বীকার করেন, তিনি পাকিস্তানি মিলিটারি এ্যাটাশের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইন্দিরা গান্ধি সরকারের ওপর ক্রোধান্বিত ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গোপসাগরে নিক্সনের পাঠানো ৭ম নৌবহরের উপস্থিতি উপেক্ষা করে ভারতীয় বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে। মার্কিন বাহিনীর ৭ম নৌবহর একটি গুলি না ছুঁড়েও ফিরে যাওয়া ছিলো চীনের সামনে মার্কিনীদের বিশাল পরাজয়। তাই ইন্দিরা গান্ধীর আর্শিবাদপুষ্ট সরকারকে উৎখাত করতে পারলে নিক্সনের ব্যক্তিগত ক্রোধ কিছুটা হলেও কমবে, এমনটি ধারণা করছিলেন মিস্টার শশাঙ্ক ব্যানার্জী।শশাঙ্ক ব্যানার্জীর মতে, লন্ডনে ‘স্যুটকেস ওয়ার গেইম’ বৃত্তান্তই মুজিব হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আমাকে সহায়তা করেছে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে লন্ডনের কথোপকথনের বিস্তারিত নিয়ে শশাঙ্ক ব্যানার্জী দিল্লীতে একটি রিপোর্ট পাঠান। তিনি যে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত দিল্লিতে পাঠাবেন এই বিষয়টি জানানোর পর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘আপকে পাস ইতনা খিয়ালি পোলাও হ্যায়?’ আপনার ফরেন সার্ভিসে কাজ না করে গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করা উচিত ছিলো মিস্টার ব্যানার্জী।শশাঙ্ক ব্যানার্জীর রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবুর রহমানকে সতর্ক করে বার্তা পাঠানোর পর শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান ও ফারুক রহমান আমার ছেলের মতো, ছেলেরা কখনো পিতা-মাতাকে হত্যা করে না। শশাঙ্ক ব্যানার্জী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের নিজেকে জেনারেল পদে উন্নীত করতে বেশি সময় লাগেনি। আর ১৯৭৬ সালের নভেম্বর মাসেই সামরিক একনায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেন। স্যুটকেস ওয়ার গেইম এভাবেই পূর্ণতা পেলো।কর্নেল ফারুক রহমানের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও মুজিব সরকারকে উৎখাতের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান যে আরো আগে থেকেই হচ্ছিল তার প্রমাণ মেলে ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জীর লেখা ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ (অ্যা পলিটিক্যাল ট্রিটিজ) গ্রন্থে। এই বইয়ের ১৬তম অধ্যায়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে শশাঙ্ক ব্যানার্জী লিখেছেন, ‘১৯৭৩ সালে লন্ডনে যুদ্ধখেলায় যুক্ত হয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।’ মুজিব হত্যার পরিকল্পনা কত আগে থেকে কোথায় কীভাবে কারা নিয়েছিলো, সে বিষয়ে মিস্টার শশাঙ্ক ব্যানার্জীর এই বইটি একটি প্রামাণ্য দলিল। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় কূটনীতিক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন মিস্টার শশাঙ্ক এস ব্যানার্জী। ১৯৭৩ সালে তিনি ভারতের লন্ডন দূতাবাসের এক এ্যাটাশে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে কর্নেল জিয়াউর রহমান লন্ডনে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনের এ্যাটাশে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জীর সঙ্গে দেখা করেন। ভারতের বিচক্ষণ গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডির সদর দফতরে জেনারেলরা হতাশা ও ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করছেন কিভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের গণ্ডগোলের মধ্যে একজন জেনারেলের সামরিক ক্ষমতা গ্রহণ ঘটতে পারে কিনা সে বিষয়েও সম্ভাব্য অপশনগুলো আলোচনা হয়েছে রাওয়ালপিণ্ডিতে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা গোপনে একটি জনপ্রিয়তা যাচাই ক্যাম্পেইন করতে চাইছিলো যাতে এই বিশেষ অপারেশনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তার আগে তারা সাধারণ জনগণের মধ্যে মুজিবের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা তৈরি করে।এছাড়া জিয়া ও কর্নেল ফারুকের বন্ধুত্ব সম্পর্কে সাংবাদিক এ্যান্থনী মাসকারেনহাসকে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি লে. কর্নেল ফারুক রহমান ও কর্নেল আবদুর রশিদের সাক্ষাৎকারে কর্নেল ফারুক স্বীকার করেছিলেন- বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত ও রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের ব্যাপারে জিয়াউর রহমান আগে থেকেই জানতেন। কর্নেল ফারুক রহমান তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎখাতের পর ক্ষমতায় বসানোর জন্য তাদের সন্দেহাতীত পছন্দ ছিলো আর্মি ম্যান জিয়াউর রহমান। কর্নেল ফারুকের মতে, সেই সময়ে জিয়া বিতর্কিত ছিলেন না। ওই সাক্ষাৎকারে মুজিব হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ বিকেলে কর্নেল ফারুক রহমান মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন বলে স্বীকার করেছিলেন। কর্নেল ফারুক রহমান জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে জেনারেল জিয়া বলেছিলেন, তিনি সিনিয়র অফিসার, তিনি এধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না, তবে জুনিয়র অফিসাররা যদি চায় তাহলে তারা এটা করতে পারে (মুজিব সরকারকে উৎখাতের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান)। ওই সময়ে কর্নেল ফারুক জিয়াউর রহমানকে বলেছিলেন- তারা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব মাথায় রেখেই মুজিব হত্যার পরিকল্পনা করেছে, এ বিষয়ে তারা জিয়াউর রহমানের সহযোগিতা চায়।মুজিব হত্যার চূড়ান্ত নীলনকশায় জেনারেল জিয়া শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ইতিহাসের এই কালো অধ্যায় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে জানার জন্য তাই ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জীর লেখা ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ (অ্যা পলিটিক্যাল ট্রিটিজ) বইটি একান্তভাবেই পড়া উচিত। .................................১৫ আগস্ট ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৫৬
false
hm
হাদুল্লাপুরে ওম শান্তি বড় বড় খবরের কাগজের বড় বড় সম্পাদকেরা সম্পাদকীয় পর্ষদে আলোচনা করেন ব্যাপারটা নিয়ে। বড় বড় টেবিলের এপারে ওপারে বড় বড় সাংবাদিকেরা ঘটনার সব চুল এক এক করে ছেঁড়েন, তারপর চেরেন। ছোটো ছোটো পিয়নেরা মাঝারি আকৃতির ট্রেতে করে কয়েক দফা ছোটো ছোটো কাপে চা আর ছোটো ছোটো পিরিচে কেক-বিস্কুট দিয়ে যায়। মোটামুটি বড় বড় মিটিং রুমের বাতাসে বড় বড় গোল গোল শব্দ ইতস্তত ভেসে বেড়ায়। তারপর সকলেই ঐকমত্যে পৌঁছান, খবরটা যেতে পারে। বড় বড় কলামিস্টদের মোবাইলে ছোটো ছোটো বার্তা যায়, এ নিয়ে বড় বড় বিশ্লেষণধর্মী স্তম্ভ রচতে হবে। আধুনিকরা ল্যাপটপে হামলে পড়েন, বুড়ো বুড়ো কয়েকজন জলছাপ মারা প্যাডে কলম নিয়ে ঝুঁকে বসেন। স্ক্রিনে আর পাতায় ফুটে উঠতে থাকে বড় বড় কথা। হাদুল্লাপুরে আম্লীগ ও বিম্পি এক টেবিলে বসেছে অবশেষে। তারা সিদ্ধান্তে এসেছে, এখন থেকে দুই যুযুধান দল মিলে মিশে নাশকতা প্রতিরোধ করবে। আর এই দুই দলকে এক টেবিলে বসিয়েছেন হাদুল্লাপুরের সাংবাদিকরাই। আর ছোট্টো হাদুল্লাপুরের ছোট্টো প্রেসক্লাবে রাতবিরাতে অনুষ্ঠিত সুদীর্ঘ মিটিঙের খবর বড় ঢাকার বড় বড় খবরের কাগজগুলোর টনক একেবারে টনটনিয়ে ছাড়ে। জামাত-শিবিরের খুনীরা গত সপ্তাহেই হাদুল্লাপুরের দামালপুর বাজারে আম্লীগের এক বড় নেতাকে ধরে কসাইকোপান কুপিয়েছে। আহত শেখ ফটিক এখনও হাসপাতালে। তার শরীরে সেলাইয়ের দাগে দাগে ফুটে আছে ফাঁসির অপেক্ষায় প্রহর গোণা মুজাহিদ-কামারুজ্জামান-সাঈদীর কুটিল ভ্রুকুটি। শেখ ফটিকের গা ধরে বসে আছে কখনও তার স্ত্রী, কখনও সন্তান, শিয়রের কাছে হাসপাতালের খাটের হুকে সর্বক্ষণ ব্যঙ্গমী হয়ে ঝুলতে থাকা স্যালাইনের ব্যাগ। জামাত-শিবিরের খুনীরা কসাইপনা সেরে নির্বিঘ্নে সটকে পড়ে, রাস্তায় পড়ে থাকে শেখ ফটিকের রক্তাক্ত শরীর, আর সে শরীরের দিকে তাকিয়ে দেঁতো হাসে হাদুল্লাপুর সদরে বিম্পি নেতা উকিল টিপু সুলতানের বাড়িটা। বাজার থেকে একদল মানুষ শেখ ফটিককে ধরাধরি করে রিকশায় বসিয়ে নিয়ে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, আরেক দল এগিয়ে যায় টিপু উকিলের বাড়ির দিকে। সে বাড়ি যাওয়ার পথেই পড়ে বিম্পির আরেক নেতা বাতেন ভুট্টোর আটার কল আর সিমেন্টের দোকান। একটা মুদি দোকানও পড়ে সে পথে, যার সামনে দিয়ে আরোহীর কোলে নেতিয়ে পড়া শেখ ফটিক পথে রক্তের ফোঁটা ছড়াতে ছড়াতে চলে যায়। মুদি দোকানি ঝাঁপটা নামিয়ে বেরিয়ে আসে, হাতে কেরোসিনের টিন। হাদুল্লাপুর বাজারে মানুষের মিছিল আস্তে আস্তে দীর্ঘ হয়। একটু পর টিপু সুলতান উকিলের বাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। বাতেন ভুট্টোর আটার কল আর সিমেন্টের দোকানও সাড়া দেয় সে সংলাপে। বাতেনের মোটর সাইকেলটা একা একা পোড়ে এক কোণায়। প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জেলার বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা শেখ ফটিককে অস্ত্রোপচারের পর দেখে ফিরে আসে টিপু সুলতানের পোড়া বাড়িটা এক নজর সরজমিন ঘুরে দেখতে। বাতেন ভুট্টোর আটার কল আর সিমেন্টের দোকানটাও তাদের যাওয়ার পথেই পড়ে। তারপর তারা আম্লীগ আর বিম্পির বাকি নেতাদের মোবাইলে কল দেয়। বলে, বাহে অ্যানা আইসেন, সগলায় বসিয়া কতা কই। ভাইদের একদল শেখ ফটিককে দেখতে গিয়েছিলেন জেলা শহরে, তারা আপত্তি করেন না। ভাইদের যে দল টিপু সুলতানের বাড়ি এক নজর ঘুরে দেখে এসেছেন, তারাও রাজি হয়ে যান। প্রেসক্লাবে রাতের বেলা কেউ রিকশায়, কেউ সাইকেলে, কেউ সদলে পায়ে হেঁটে অগ্রহায়ণের শেষ ভাগের রাতের কুয়াশা আর শীত ঠেলে চলে আসেন। আম্লীগ আর বিম্পির নানা উপসর্গখচিত দলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকেরাও আসেন। সকলেই একটু ক্লান্ত, আর গম্ভীর। মাফলারের পেছনে তারা উৎকণ্ঠিত ঢোঁক গেলেন, একে অন্যের দিকে আড়ে আড়ে চান। হাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোটর সাইকেলে তালা দিয়ে গটগট করে ভেতরে ঢোকেন। বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্জ একাব্বর হোসেন, ব্যবসায়ী মকিম ভরসা, ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি সৈয়দ আলি হায়দার, সকলেই গাড়িতে চড়ে আসেন, আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে। বৈঠক চলে। হাদুল্লাপুরের ছোট্টো প্রেসক্লাবের ছোট্টো বায়ুমণ্ডলে অনেক ছোটো ছোটো কথা ইতস্তত ভাসে। কিছু কথা একটু বেশি সময় ধরে বুদ্বুদ হয়ে ভেসে থাকে, কিছু কথার বুদ্বুদ চট করে ফেটে যায়। দূরে জেলা শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেখ ফটিক কাতরায়। ডিউটি নার্স কর্কশ কণ্ঠে তার শিয়রে অপেক্ষমান ছেলেকে কী একটা হুকুম দেয়, পাশের বেডে আরেক রোগী কাতরায়, হাসপাতালের পাশের গলিতে একটা বেড়াল আরেকটা বেড়ালকে ধমকায়। ছোট্টো হাদুল্লাপুরের ছোট্টো প্রেসক্লাবে শেখ ফটিকের নাম কয়েকবার উচ্চারিত হয়, বিম্পির নেতারা স্বীকার করেন, কোরবানির গরুর মতো একজন মানুষের বাজারে খোলা আকাশের নিচে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকা সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। আম্লীগ নেতারা স্বীকার করেন, টিপু সুলতানের বাড়ি কোনো দোষ করেনি, যেমন দোষ করেনি বাতেন ভুট্টোর আটার কল, সিমেন্টের দোকান, বা তার মোটর সাইকেলটি। হাদুল্লাপুর বিম্পির সাধারণ সম্পাদক ওমর আলি পল্টু দীর্ঘ আলোচনার পর চামড়ার জ্যাকেটের ভেতর থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে বলেন, হাদুল্লাপুরে মাইনষের জানের উপ্রে, মালের উপ্রে কোনো ক্ষতি আইসে, অ্যাঙ্কা কাম হামরা কক্ষনো করোং নাই, কোরব্যারো নোং। হামরা তো মানুষ, নাকি? মানুষ হয়া ভাই, মাইনষের সাতে অ্যাঙ্কা কেউ করে? আম্লীগ সভাপতি ইয়াসিন ব্যাপারি বলেন, আজনীতি কল্লে এট্টু-আট্টু মতের অমিল তো হবারই পারে। তার জন্যে তো মিছিল হয়, মিটিং হয়। আগাআগি চিল্লাচিল্লি সবে হয়। কিন্তু মাইনষোক জবো করা বা দোকানপাট ঘরবাড়ি পুড়ি দেওয়া যত কম হয় তত ভালো। হাদুল্লাপুরের ছোট্টো প্রেসক্লাবের বাইরে রাত ভরে ওঠে কুয়াশায়। বারান্দার বাইরে রাখা সাইকেল, মোটর সাইকেল আর গাড়িগুলো গোপনে হিমে কাঁপে। নারকেল গাছে একটা ক্লান্ত প্যাঁচাকে ঠোকরায় কয়েকটা ক্রুদ্ধ কাক। জানালার বাইরে সোয়েটারে, চাদরে, মাফলারে ওম খোঁজা সাধারণ মানুষ কান পেতে শোনে, প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা কী কী যেন বলছেন, তাদের শীতে অবশ নাকে প্রেসক্লাবের জানালা গলে ভেসে আসা বাতাস আশার স্ফূলিঙ্গের ছোঁয়াচ দেয়। হাদুল্লাপুর থানার ওসি গলা খাঁকরে চড়া গলায় বলে, হাদুল্লাপুরের প্রেসক্লাব যে শান্তির উদ্যোগ নিলো, তা সারাদেশে মডেল হয়ে থাকবে। এরপর আরো অনেকে অনেক কথা বলতে থাকেন। বাড়ির মালিক, গাড়ির মালিক, কলের মালিক, দোকানের মালিকরা একটু জোর দেন শান্তির ওপরে। বিম্পি নেতার দোকান আর বিম্পি নেতার মাকানের ওপর হামলা ঘটার পরই কেবল হাদুল্লাপুর টের পায়, শান্তি রক্ষা করতে হবে, নাশকতা রুখতে হবে। হাদুল্লাপুর ঝিম ধরে থেকে সে শান্তির কথা শোনে। প্রেসক্লাবে শান্তি চুক্তির ওপাশে ঝোপের আড়ালে ত্রস্ত পায়ে ছুটে যায় কে যেন। জামাত? শেয়াল? মতিউর রহমান? বোঝা যায় না। কিছু সংলাপ উত্তরবঙ্গে চলতি ভাষায় অনুবাদ করে দেওয়ার জন্যে প্রদীপকে ধন্যবাদ।
false
ij
ক্লাইটেমনেসস্ট্রা ক্লাইটেমনেসস্ট্রা। প্রাচীন গ্রিক রাজ্য মাইসিনির রাজা আগামেমনন এর স্ত্রী। গ্রিক উপকথায় ক্লাইটেমনেসস্ট্রা Femme fatale হিসেবে চিহ্নিত । এই ফরাসি শব্দ গুচ্ছের মানে, ‘ভয়ঙ্কর রমনী!’ কেননা, ক্লাইটেমনেসস্ট্রা তার স্বামী আগামেমনন কে হত্যা করে ধারাবাহিক হত্যাকান্ডের পথ উন্মুক্ত করেছিলেন । অবশ্য এখন আর ক্লাইটেমনেসস্ট্রা কে অনেকেই ভয়ঙ্কর রমনী মনে করেন না। কেন? আজ আমরা এই প্রশ্নটির উত্তরই খুঁজব। মানচিত্রে গ্রিক রাজ্য মাইসিনির অবস্থান। পুরাকালের এক গ্রিকরাজ্য মাইসিনি; তারই রাজা ছিলেন আগামেমনন । আগামেমনন -এর স্ত্রী ক্লাইটেমনেসস্ট্রা; তাদের ছিল চারটি ছেলেমেয়ে। ছেলের নাম ওরেস্টেস এবং মেয়েদের নাম যথাক্রমে, ইপহিজেনিয়া, ইলেকক্ট্রা এবং ক্রাইসোথেমিস ।আগামেমনন। মাইসিনির এই রাজাকে আমরা ইউরোপীয় সাহিত্যে বারবার দেখেছি। এমন কী কবি শামসুর রাহমানও আগামেমনন কে নিয়ে বিষাদগ্রস্থ দীর্ঘ কবিতা লিখেছেন। ধরা যাক, মাইসিনির রাজপ্রাসাদে আগামেমনন -ক্লাইটেমনেসস্ট্রার সংসার সুখেশান্তিতেই কাটছিল। এর পর, মানুষের সংসারে যা হয়- ঝড় উঠল। সেই ঝড়ের ইতিবৃত্তটি আমরা অল্পবিস্তর জানি। এখানে সংক্ষেপে বলি। মাইসিনি রাজ্যটি ছিল পেলোপন্নেসাস বলে ৮,২৭৮ স্কোয়ার মাইল আয়তন বিশিষ্টি দক্ষিণ গ্রিসের একটি সুবৃহৎ উপদ্বীপে। সেখানেই স্পার্টা নামে আরেকটি রাজ্য ছিল। স্পার্টার রাজা মেনেলাউস; সম্পর্কে আগামেমনন এর ভাই । মেনেলাউস এর স্ত্রী সুন্দরী হেলেন। ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস সুন্দরী হেলেন কে হরণ করে। এতে করে ট্রয় যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে । সেকালের জাহাজ।স্পার্টার রাজা মেনেলাউস ক্ষুব্দ। তিনি স্ত্রীর শোকে জর্জরিত হয়ে ট্রয় নগরী সমূলে ধ্বংসের উদ্যোগ নিলেন। তারপাশে এসে দাঁড়ালেন মাইসিনির আগামেমনন। তিনি ট্রয় যুদ্ধে অংশ নিতে চাইলেন। আগামেমনন এর নেতৃত্বে ট্রয়ের উদ্দেশ্যে ভেসে চলার জন্য তৈরি হল মাইসিনির রণতরী । তবে বাতাস অনুকূলে ছিল না বলে জাহাজ ছাড়া যাচ্ছে না। সবাই বন্দরে উৎকন্ঠিত হয়ে অপেক্ষা করছে। কী করা যায়। সময় মতো ট্রয় পৌঁছতে হবে। তখনই দৈববাণী শোনা গেল। দেবী আর্টেমিস-এর উদ্দেশে আগামেমনন-কন্যা ইপহিজেনিয়া কে বলি দিতে হবে। কী ভয়ঙ্কর কথা! ইপহিজেনিয়ার মা ক্লাইটেমনেসস্ট্রা নিশ্চয়ই এ দৈব নির্দেশ অগ্রাহ্য করতেন । আগামেমনন পুরুষ বলেই কি আপন কন্যাকে দেবীর উদ্দেশ্যে বলি দিতে প্রস্তুত হলেন?আগামেমনন তার স্ত্রী ক্লাইটেমনেসস্ট্রা কে বললেন ইপহিজেনিয়া কে বন্দরে পাঠাতে।কেন?ওকে ট্রয়ে নিয়ে গিয়ে একিলিসের সঙ্গে বিয়ে দেব।বীর যোদ্ধা একিলিস!হ্যাঁ।ক্লাইটেমনেসস্ট্রা মেয়েকে বন্দরে পাঠিয়ে দিলেন। ইপহিজেনিয়াকে বলি দেওয়া হল।এভাবে ধারাবাহিক হত্যাকান্ডের পথ উন্মুক্ত করলেন স্বার্থান্বেষী আগামেমনন। ক্লাইটেমনেসস্ট্রা দুঃসংবাদ শুনলেন। শোকে কাতর হলেন তিনি। ক্লাইটেমনেসস্ট্রা তথাকথিত স্বামীর ওপর ঘৃনায় মন ছেয়ে গেল। ক্লাইটেমনেসস্ট্রা ছিলেন সুন্দরী। আগামেমননশূন্য মাইসিনির রাজপ্রসাদে অনেক পুরুষই ক্লাইটেমনেসস্ট্রার আশেপাশে ঘুরঘুর করত। এদের একজন এইজিসথাস। সম্পর্কে আগামেমনন-এর কাজিন। কন্যাশোক ভুলতে এবং স্বামীকে অপমান করকেই যেন এইজিসথাসএর সঙ্গে অবাধ প্রেমে মগ্ন হলে শোকগ্রস্থ রানী। ক্লাইটেমনেসস্ট্রার গর্ভে একটি মেয়ের জন্ম হল। সেই মেয়ের নাম রাখা হল এরিগোনে। ওরেস্টেস তখন ছোট। মায়ের অনৈতিক জীবন ইলেকক্ট্রার মনে বিষাদময় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তবে আরেক কন্যা ক্রাইসোথেমিস এর মনে নাকি মায়ের পরকীয়ায় কোনও ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়নি!গ্রিক মিথ এখানেই বিস্ময়কর। প্রাচীন কালে সবচেয়ে আলোচিত যুদ্ধ ট্রয়যুদ্ধ। তবে এখনকার ঐতিহাসিকগন বলছেন সুন্দরী হেলেনের জন্য ট্রয়যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। তাহলে? ট্রয়যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নৌবানিজ্য পথের দখল। বিশেষ করে লবনের ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা ...এখন যেমন তেলের জন্য ইঙ্গমার্কিনীরা জোট বেঁধেছে, সেরকম। তাহলে রাজা আগামেমনন এর কন্যাবলি অর্থনৈতিক স্বার্থেই? রাজা আগামেমনন ফিরে এলেন। সঙ্গে কাসান্ড্রা । ট্রয়ের রাজা প্রিয়ামের কন্যা। যুদ্ধজয়ের পুরস্কার হিসেবে লাভ করেছেন আগামেমনন। ক্লাইটেমনেসস্ট্রা স্বামীকে স্বাগত জানাল। আগামেমনন প্রাসাদে ঢুকলেন। স্নান করতে গেলেন। কাসান্ড্রা রথে অপেক্ষ করছিল । বলা হয় ট্রয়ের নারী পুরোহিত। কাসান্ড্রা দৈববশে আগামেমনন হত্যাদৃশ্যটি অবলোকন করে। ভবিতব্য মেয়ে নিয়ে প্রাসাদে প্রবেশ করে। ক্লাইটেমনেসস্ট্রা অপেক্ষা করছে। স্নানঘর থেকে আগামেমনন বেরিয়ে এলেন। ক্লাইটেমনেসস্ট্রা এক টুকরো কাপড় দিয়ে স্বামীর গলায় ফাঁস ...এরপর উপর্যপুরি ছুড়িকাঘাত করলেন। এইজিসথাস কাছাকাছিই ছিল। ইলেকট্রা। মিথ ও ইউরোপীয় সাহিত্যে তীব্র মানসিক যন্ত্রনায় ভোগা একটি নারী চরিত্র। ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানের ‌'ইলেকট্রা কমপ্লেক্স' ইলেকট্রার নাম থেকেই এসেছে। মেয়েদের নাকি বাবার প্রতি আকর্ষন থাকে ...যেমন আগামেমনন এর প্রতি টান ছিল ইলেকট্রার ...মাকে ঘাতকের ভূমিকায় দেখে ইলেকট্রার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ওরেসটেস তখন নাবালক। ওরেসটেস কে অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এথেন্স পাঠিয়ে দিল। ইলেকট্রা কেন মনে করেছিল ওরেসটেস কে ক্লাইটেমনেসস্ট্রা হত্যা করতে পারে? নিজেকে ইলেকট্রা নিরাপদই ভেবেছিল কেন? যা হোক। মায়ের এহেন নৈতিক অপকর্মে ক্রাইসোথেমিস এর নাকি কোনও প্রতিক্রিয়া হয়নি! ক্রাইসোথেমিস কি বোন ইপহিজেনিয়ার হত্যাকান্ড ভুলতে পারেনি? নিহত আগামেমনন ও ক্লাইটেমনেসস্ট্রা। যা হোক। আগামেমনন এর মৃত্যুর পর এইজিসথাস হল মাইসিনির রাজা। আর ক্লাইটেমনেসস্ট্রা রানী।আট বছর কেটে গেল। ইলেকট্রা ও ওরেসটেস।এথেন্স থেকে মাইসিনি ফিরল যুবক ওরেসটেস। সে শোকার্ত হৃদয়ে পিতার সমাধি তে গেল। কে যেন ছায়াচ্ছন্ন করিডোরে দাঁড়িয়ে। কে?আমি।আমি কে?আমি ইলেকট্রা। ওহ্ । দুঃখিনী বোন আমার ...ওরেসটেস?বল।পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে না তুমি?পিতার হত্যার প্রতিশোধ?হ্যাঁ। বলে ইলেকট্রা ভাইকে সব খুলে বলে। আগামেমনন এর মুখোশ। এটি মাইসিনি তে খননকার্য চালিয়ে পাওয়া গেছে। তারপর?তারপর ইলেকট্রার প্ররোচনায় ওরেসটেস তার মাকে আর মায়ের প্রেমিক এইজিসথাসকে খুন করে। ক্লাইটেমনেসস্ট্রা অবশ্য ছেলের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল। ওরেসটেস ক্লাইটেমনেসস্ট্রা ও এইজিসথাসকে খুন করছে! ১৬৫৪ সালে বেরনারদিনো মেই-এর আঁকা।মাইসিনির রাজপ্রাসাদ আবার রক্তাক্ত হল। যে রক্তপাতের সূত্রপাত করেছিলেন দৈবে বিশ্বাসী কাপুরুষ আগামেমনন। দেবী আর্টেমিস কে খুশি করতে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আপনকন্যা ইপহিজেনিয়া কে উৎসর্গ করেছিলেন। আগামেমনন পুরুষ বলেই তাইই করলেন! ক্লাইটেমনেসস্ট্রা কন্যার মৃত্যুশোকে কাতর হলেন। তিনিও হত্যা ও প্রতিশোধের পথ খুঁজতে থাকেন। সে সুযোগ তিনি পেয়েও যান। যে জন্য ক্লাইটেমনেসস্ট্রা গ্রিক ইতিহাসে Femme fatale বা ভয়ঙ্কর রমনী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছেন। প্রাচীন দেয়ালগাত্রে ক্লাইটেমনেসস্ট্রা হত্যার দৃশ্য। একুশ শতকে অবশ্য ক্লাইটেমনেসস্ট্রার প্রতিশোধপরায়ন আচরনের নতুন ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। স্বামীর ওপর তীব্র ঘৃনা থেকেই ক্লাইটেমনেসস্ট্রা পরকীয়া ও রক্তপাতের পথ বেছে নিয়েছিলেন। কেননা, ক্লাইটেমনেসস্ট্রা বলেছেন, “To give birth is a dreadful thing; despite suffering badly one cannot bring oneself to hate those she has born.”ক্লাইটেমনেসস্ট্রার পাশে আমরা আরেকজনকে পাই। সে হচ্ছে ক্রাইসোথেমিস!মাইসিনির রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ার। এখানেই পুরাকালে এক নৃশংসতম পারিবারিক হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছিল । কত বিয়োগান্ত ঘটনার সাক্ষী এই প্রাসাদ। বিয়োগান্ত,- কেননা গ্রিক নাট্যকার ইউরিপিদেস বলেছেন: শেষ মুহূর্তে নাকি ইপহিজেনিয়া কে বলি দেওয়া হয়নি! টাওরাস নগরে নিয়ে রক্ষ করা হয়েছিল ইপহিজেনিয়া কে এবং আর্টেমিস এর বদলে হরিণ বলি হয়েছিল। এখানেও আমরা মধ্যপ্রাচ্যের আব্রাহামিক ধর্মের একটি বিশেষ ঘটনার সঙ্গে গ্রিক মিথের সাদৃশ্য খুঁজে পাই ...ক্লাইটেমনেসস্ট্রা সম্পর্কে সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে জানতে হলে এখানে ক্লিক করুন ... ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেট।
false
rn
নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে___ (পর্ব - পাঁচ) হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে সব কথাই বলা হয়ে গেছে,সব বিশেষণই দেওয়া হয়ে গেছে। তিনি আমাদের কালের সবচেয়ে বড় নায়ক, আমাদের সময়ের সবচেয়ে ধারালো চোখের অধিকারী, সবচেয়ে বড় ম্যাজিশিয়ান। কিন্তু সময় এসেছে হুমায়ূন আহমেদ মানুষটাকে নির্মোহভাবে বোঝার। যে যার মতো করে বুঝুক। গল্পের চরিত্রকে যেমন একেকজন পাঠক একেকভাবে বোঝেন, একেকভাবে পাঠ করেন, সেই রকম করে তাঁকে বোঝাবুঝি হোক।গুলতেকিন। হুমায়ূনে আহমেদের চার সন্তানের মা। গুলতেকিন ছিলেন হুমায়ূনের উত্থানের কারিগর। গুলতেকিন ছিলেন হুমায়ূনের সেই বিজয় লক্ষ্মী নারী। অসাধারণ সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। দাদা প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাম সারা উপমহাদেশে। সচ্ছলতা তার পায়ে পায়ে। সেই অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বে, পাগলের মতো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন প্রায় কপর্দকশূন্য, নামযশহীন ৮০০ টাকা বেতনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষককে। এই অবস্থা থেকে তিনি ৩০ বছর ধরে একটু একটু উপরে তুলে ধরেছেন হুমায়ূন আহমেদকে। গুলতেকিন সব সময় চেয়েছেন হুমায়ূন বড় হোক। আমার আমিতে হুমায়ূন লেখেন, গুলতেকিনই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী। গুলকেতিন কে ছেড়ে হুমায়ূন আহমেদ চার বছর একা জীবন যাপন করেছেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো- তখন তার মা ভাই বোন পুত্র কন্যা কেউই তার সাথে যোগাযোগ রাখেন নি। সে-সময় কি কষ্টটাই না তার হয়েছে। যে মানূষ সব সময় চেয়েছিলেন সবাইকে কাছে নিয়ে থাকতে।এই মহান মানুষটিকে নিয়ে অনেকেই কুৎসিত কথা বলেন। হুমায়ূন আহমেদ বার বার বলেছেন, দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় আমাকে নিয়ে কী ভাবছেন তা জানার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। আমি জানতে চাই একজন সাধারণ মানুষ, যে আমার বই পড়েছে, নাটক দেখছে—সে আমাকে নিয়ে কী ভাবছে। ওদের ভাবনা আমি জানি। আর জানি বলেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ভাবনা-চিন্তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। শেষ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুমায়ূন আহমেদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি হুমায়ূন আহমেদকে দেখার জন্য নিউইয়র্কে তার বাসায় গিয়েছেন। তাকে দশ হাজার ডলার সাহায্য দিয়েছেন অনেকটা জোর করেই। যদিও হুমায়ূন তা পরে ফেরত দিয়েছেন বিনয়ের সঙ্গে। বলেছেন, এই টাকা যেন কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বেগম জিয়া ছিলেন হুমায়ূনের একজন গুণগ্রাহী। হুমায়ূন আহমেদ এটা জানতেন। এ বিষয়ের ওপর কয়েকটি তথ্য দিতে চাই। ১৯৯৩ সালে আবদুল হাই শিকদার খালেদা জিয়ার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের উপর একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করে বিটিতে প্রচার করেন। যা বানানো হয়েছিল শুধু মাত্র হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই অনুষ্ঠান দেখে খালেদা জিয়া মুগ্ধ হয়ে যান। তখন হুমায়ূন আহমেদ তখন ‘আগুনের পরশমণি’ নির্মাণ নিয়ে মেতে উঠেছেন। কিন্তু হার হাতে টাকা ছিল না। সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছবি। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিষয়টা জেনে তত্কালীন তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বলে দিলেন, যদি একটা ছবিকেও অনুদান দিতে হয় তাহলেও সেটা যেন হুমায়ূন আহমেদের ছবিকে দেয়া হয়। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সানন্দে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করলেন। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, ছবি রিলিজ হয়েছে কিন্তু এফডিসিতে বকেয়া পড়ে গেছে ২০ লাখের ওপর টাকা। আবারও এগিয়ে এলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বললেন, ছবি বানাচ্ছেন হুমায়ূনের মতো নন্দিত কথাশিল্পী। ছবিটার উপজীব্য মুক্তিযুদ্ধ। এ ছবি তো পুরোটাই রাষ্ট্রের টাকায় হওয়ার কথা। তারপর এফডিসির পুরো পাওনা মওকুফ হয়ে গেল। ছবিটা আরও অনেকের সাথে হুমায়ূন আহমেদ এবং খালেদা জিয়া দেখেন। ছবি শেষে খালেদা জিয়াকে দেখা যায় চোখ মুছতে।সাত বছর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলেন হুমায়ূন আহমেদ তখন পকেটে মাত্র ৫০ ডলার। এই মানূষটা টাকা জমাতে জানতেন না। যা আয় করতেন সব বন্ধু বান্ধব নিয়ে খরচ করতেন। কাছের মানূষদের নিয়মিত উপহার দিতেন। কুমির মার্কা প্রতীকের প্রার্থী কবি নির্মেলেন্দু গুনের পক্ষে নির্বাচনের জন্য চলে গেছেন বারহাট্রা মোহনগঞ্জে। ছাত্র অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, নন্দিত নরকে, তোমাদের জন্য ভালোবাসা, শঙ্খনীল কারাগার ইত্যাদি। এক অধ্যাপক আমাকে বললেন, হুমায়ূন সাহিত্য আগামী দশ বছর পরে আর পাওয়া যাবে না। আমি তাকে বললাম, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন হুমায়ূন আহমেদ থাকবে। পৃথিবীর যে প্রান্তে যেখানেই যতদিন বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের অস্তিত্ব থাকবে সেখানেই তিনি স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে বেঁচে থাকবেন। সবার উচিত হুমায়ুন স্যারকে নিয়ে কোন ধরনের আলোচনার পূর্বে অন্ততপক্ষে তার 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসটি পড়ে দেখা উচিত।হুমায়ূন আহমেদ পৃথিবীর যে দেশেই বেড়াতে গেছেন যাদু দেখানোর জিনিসপত্র কিনেছেন। দেশে ফিরে নিয়মিত যাদু চর্চা করে, তারপর বন্ধুদের যাদু দেখিয়ে অবাক করে দিতেন। এইসব দিনরাত্রি নাটকে একজন তরুণ ম্যাজিশিয়ানের চরিত্র ছিল। মিষ্টি স্বভাবের এই তরুণ খুব গরিব। এক বড়লোকের বাড়ির চিলেকোঠায় থেকে লেখাপড়া করে। তার প্রেমে পড়ে গেল বাড়ির আদুরে মেয়েটি। 'এইসব দিনরাত্রি' নাটকে জুয়েল আইচ অভিনয় করেছিলেন, এটাই তার জীবনে প্রথম এবং শেষ অভিনয়। যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ এর বাসায় হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লীতে ফলানো টাটকা শাক সবজি দিয়ে পাঠাতেন। ঈদের সময় পাঠাতেন পাঞ্জাবী বা শার্ট। অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা করে সবাইকে অবাক করে দিতে খুব পছন্দ করতেন হুমায়ূন আহমেদ।হুমায়ূন আহমেদ বলেন, 'কোনো লেখা ছাপা হয়ে বের হওয়ার পর লেখার বিষয়ে আমার কোনো উৎসাহ থাকে না। বইয়ের কাহিনী, পাত্র-পাত্রীদের নাম এবং অনেক সময় বইয়ের নাম পর্যন্ত ভুলে যাই।' সাহ্যিতিকদের জন্য এই ভুলে যাওয়া খব দরকার। তা না হলে নতুন কিছু লেখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত স্মৃতি নেই, প্রিয় লেখক পাঠক সম্পর্ক ছাড়া। রোগশয্যায় থেকেও নিউ ইয়র্কের ভাড়া বাড়িতে রোপন করেছিলেন বেশ কয়েকটা চারা গাছ।সাহিত্যসভায় কালজয়ী সাহিত্যিক হওয়া সম্ভব, কবি সম্মেলনে নিভৃতিচারী কবি হওয়া সম্ভব, সাহিত্যপত্রিকার জীবনঘনিষ্ট লেখক হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু পাঠকের হুমায়ূন আহমেদ, বইমেলার হুমায়ূন আহমেদ হওয়া সম্ভব নয়। এটিই তিতকুটে সত্য, নির্জলা বাস্তবতা।এ রকম প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরা সৃষ্টিশীল একজন মানুষকে আরও কিছুদিন বাঁচতে দিলে সৃষ্টিকর্তার এমন কী ক্ষতি হতো!
false
mk
নাম তার মতিউর রহমান নিজামী নাম তার মতিউর রহমান নিজামী। একাত্তরে এদেশে মানুষ তাকে নাম দেয় মইত্যা রাজাকার। তবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে বানায় বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীর সুপ্রীম কমান্ডার। জামায়াত তাকে নিখিল পাকিস্তান ছাত্রসংঘের (বর্তমানের ছাত্র শিবির) সভাপতি বানায়। একাত্তরের ৯ মাসে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় মানব সভ্যতার বিপরীতে এমন পাপ ও জঘন্য কাজ নেই যা নিজামী করেনি। নিজ জন্মভূমির মানুষের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা এবং ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয় নিজামী। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আগ মুহূর্তে পালিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের পরশ মেহেরবানিতে আবার উদয় হয়ে বাংলার যাত্রাপালার ভিলেনের মতো হা হা করতে করতে বাংলাদেশের বুকের ওপর কঠিন পাথরের মতো চেপে বসল। পাপের বোঝায় ভারি হলো ৩০ লাখ শহীদের বাংলাদেশ। এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমরা এখনও করে যাচ্ছি, এদের আওলাদ বাহিনী একাত্তরের মতো এখনও গুপ্ত কৌশলে খুন করছে বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের, হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এক সময় মইত্যা রাজাকার হয়ে গেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ভাগ্য সুপ্রসন্ন, শনৈঃশনৈঃ উন্নতি। গোলাম আযমের পর জামায়াতের আমির হলেন। পাবনার এক অভিশপ্ত এলাকার মানুষ ভোট দিয়ে তাকে সংসদ সদস্য বানালেন। এবার মাওলানা নিজামী আবিষ্কার করলেন, ‘একাত্তরে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, ওটা ছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।’ এখানেই শেষ নয়। আরও উন্নতি হলো। জিয়াউর রহমানের উপযুক্ত পুত্র তারেক রহমান জামায়াত শিবিরকে মায়ের পেটের ভাই ঘোষণা দিলেন। সুতরাং ভাইয়ের উন্নতির জন্য যা করা দরকার তা-ই করা হলো। ২০০১ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে প্রথমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৃষি এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বানায়। তখনও চাকরিরত কিছু মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাথায় বাজ পড়ে, মহাবিপদে পড়লেন তারা। কোন দেশে কোন কালে সে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের এমন পরাজয়বরণ করতে হয়নি। জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে প্রধানমন্ত্রী বানালেন রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজুর রহমানকে। বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত একজন সেক্টর কমান্ডারের কাছ থেকে সালাম বা স্যালুট নেয়ার সূক্ষ্ম পরিকল্পনা আঁটলেন শাহ আজিজুর রহমান। জাত পলিটিশিয়ান শাহ আজিজ জানে কিভাবে প্রতিশোধ নিতে হয়। তখন সেনাবাহিনীর পাঁচটি এরিয়ার মধ্যে দুটি এরিয়ায় কমান্ডার ছিলেন দুইজন সেক্টর কমান্ডার। শাহ আজিজ তার নিজ এলাকার পার্শ্ববর্তী যশোর সেনানিবাস পরিদর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে জিয়াউর রহমান তার অনুমোদন দিলেন। তখনও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত গরম। যশোরের এরিয়া কমান্ডার শাহ আজিজুর রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে অস্বীকার করলেন। কিন্তু ২০০১ সালে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সেদিন আর রইল না। মন্ত্রী হওয়ার পর নিশ্চয়ই নিজামী দরজা বন্ধ করে একাকী অট্টহাসি হেসেছেন। নিজের ও দলের ভাগ্যের রমরমায় মনে মনে নিশ্চয়ই ভেবেছেন ৩০ বছর পরে হলেও একাত্তরে ভালবাসার পাকিস্তান ভাঙ্গায় জড়িত ভারতীয় হিন্দুদের দালাল আর দুষ্কৃতকারীদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার শক্তি এখন তার হাতের মুঠোয়। সুতরাং নিজামী মিশন ঠিক করে ফেললেন। প্রথমত. উপযুক্ত দীক্ষা দিয়ে মাঠে নামালেন সশস্ত্র জঙ্গী সংগঠন গুপ্তঘাতক বাহিনী জেএমবি। দ্বিতীয়ত. পাকিস্তান ভাঙ্গার আরেক শত্রু ভারতকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার জন্য অসমের স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন উলফাকে (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম) সব রকম অর্থ আর অস্ত্রের যোগানদারের সহায়কের ভূমিকা গ্রহণ করলেন স্বয়ং নিজামী নিজ হাতে। জেএমবি এবং হুজি মিলে দেশব্যাপী মসজিদ, গির্জা, মন্দির, আদালত, বার, বিচারক, বিদেশী রাষ্ট্রদূতসহ বাঙালিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী মানুষ ও সংগঠনের ওপর একের পর এক বোমা আর গ্রেনেড হামলা শুরু হয়ে গেল। জেএমবি নেতা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাই রাজশাহীর বাগমারায় নিজস্ব হুকুমাত কায়েম করলেন। বিরুদ্ধবাদীদের থেকে বাছাই করে ২৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করলেন। মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এক হতভাগ্যের মৃতদেহ উল্টো করে গাছের ডালের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখলেন। এর ছবি সাংবাদিকরা নিজামীকে দেখানোর পর তিনি বললেন, এসব মিছা কথা, সাংবাদিকদের বানানো গল্প। বিশাল ট্রাক-বাস মিছিল নিয়ে দিনের বেলায় রাজশাহী শহরে গেলে তৎকালীন এসপি মাসুদ বাংলাভাইকে অভ্যর্থনা জানালেন। টেলিভিশন ও পত্রিকায় ছবিসহ খবর প্রকাশের পর নিজামী আবার বললেন, ‘এসব মিছা কথা, বাংলাভাই বলে কেউ নেই।’ বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সবাই নীরব রইলেন। তারপর উলফার জন্য দশ ট্রাক অস্ত্র পাচারের সব ব্যবস্থা হলো নিজামীর শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংরক্ষিত এলাকা চট্টগ্রামের সারখানার জেটির মাধ্যমে। দশ দিন চোরের একদিন গেরস্তের ফর্মুলায় ২০০৪ সালে ২ এপ্রিল ধরা পড়ে গেলেন নিজামী ও গং। বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ নির্বাক ও হতভম্ব। নিজ দেশের নিরাপত্তাকে ভয়ানক হুমকির মধ্যে ফেলে পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে অসমের উলফাকে অস্ত্র পাচারে জড়িত দেশের স্বয়ং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ এবং রাষ্ট্রের টপ নিরাপত্তা কর্মকর্তাগণ। ভাবা যায় না, বিশ্বে এমন উদাহরণ বিরল। সেই অস্ত্র চোরাচালান মামলায়ও নিজামীর ফাঁসি হয়েছে। কথায় আছে পাপে ছাড়ে না বাপেরে। যুদ্ধাপরাধের মামলায় আপীল বিভাগ রায়ে উল্লেখ করেছেন, ‘একাত্তরে নিজামীর ন্যূনতম অপরাধগুলোও ছিল ভয়ঙ্কর ও বীভৎস। এ কারণেই মৃত্যুদ- ছাড়া অন্য কোন শাস্তি হতে পারে না। মৃত্যুদ-ই তার ন্যূনতম শাস্তি’ (জনকণ্ঠ-১৬ মার্চ ২০১৬)। কিন্তু নিজামী ও গংদের কোন আফসোস নেই, দুঃখ প্রকাশ নেই, ক্ষমা চাওয়া নেই। এখনও এদের আওলাদেরা ‘ভি’ চিহ্ন দেখায়। দেশের অভ্যন্তরে জামায়াতের আর্থিক সাম্রাজ্য এবং বিএনপির মিত্রতাই তাদের এমন সাহস ও ঔদ্ধত্যের মূল উৎসস্থল। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলে দিলেন নিজামী, সাকা, মুজাহিদ কোন অপরাধ করেনি, এদের মুক্তি দিতে হবে (সমকাল ২০ অক্টোবর, ২০১১)। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার খোন্দকার মাহবুব হোসেন তার বিদ্যা-বুদ্ধির ওপর নিচে যা আছে তার সব দিয়ে চেষ্টা করছেন এহেন খুনী যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য। বাংলাদেশের এক শ্রেণীর ছদ্মবেশী জামায়াতপ্রেমিক মানুষরা বলে বেড়ান এতদিন পর এই বিচারের প্রয়োজন কেন হলো? এরা সব জেনেও সত্যকে গোপন করেন। এদের জন্য একটা উদাহরণ দেই। সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাতে গত ৩০ এপ্রিল পত্রিকায় একটা খবর পড়লাম। তাতে দেখলাম ৯৪ বছর বয়সের এক নাৎসি বাহিনীর যুদ্ধাপরাধীকে সম্প্রতি বিচারের জন্য জার্মানির আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। তার নাম রেইনহোল্ড হ্যানিং। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি হিটলারের এসএস বাহিনীর সামান্য একজন গার্ড (সেপাই) হিসেবে অন্যদের সঙ্গে দায়িত্বে ছিলেন একটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, যেখানে ১ লাখ ৭০ হাজার বন্দীকে হিটলারের ঘাতক বাহিনী হত্যা করে। ৭০ বছর পর রেইনহোল্ড হ্যানিং এখন আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমি অত্যন্ত ব্যথিত, দুঃখিত, মর্মাহত। কারণ আমি এমন একটা বাহিনীর সদস্য ছিলাম, যারা নির্বিচারে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, অগণিত ফ্যামিলির দুঃখ-কষ্ট ও ধ্বংসের কারণ হয়েছে। হ্যানিং আদালতে মাথানত করে বলেছেন, আমি লজ্জিত, সে সময়ে আমার সামনে ও জ্ঞাতসারে, এমন বর্বর হত্যাকা- ঘটেছে, যা প্রতিহত করার জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি। আমার আচরণের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ আর বাংলাদেশের নিজামীরা একাত্তরে ঘাতক বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। নিজামী হুকুম দিয়েছেন, হত্যাযজ্ঞে পাকিস্তানীদের সহযোগিতা করেছেন এবং নিজেও প্রবল জিঘাংসায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর। তার পরেও এদের কোন আফসোস নেই, লজ্জা নেই বরং তাদের আওলাদ ও মিত্র জোটসঙ্গী নেতাদের কথাবার্তা, কার্যকলাপ শুধু দুঃখজনক বললে কম বলা হবে। বাংলাদেশ আজকে যে জঙ্গীবাদের সঙ্কটে পড়েছে এবং টার্গেটেড কিলিং হচ্ছে তার মূলেও রয়েছে, জামায়াতের উত্থান ও বিস্তৃতি। রিভিউ পিটিশনের শুনানির সময় আদালত বলেছেন, ‘এই নিজামী গংদের সহযোগিতা না পেলে দুই মাসের মধ্যে পাকিস্তানী বাহিনী পরাজিত হতো।’ আদালতের এই পর্যবেক্ষণটি খুবই সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ। দুই মাসে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পরাজিত হলে বাংলাদেশের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানি অনেক কম হতো। ৩০ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হতো না। এর অর্থ এই ৩০ লাখ মানুষের জীবনপাতের জন্য পাকিস্তানী বাহিনীর থেকেও এই নিজামী গংদের দায় অনেক অনেক বেশি। যারা বলেন, মূল হোতা পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বাদ দিয়ে সহযোগীদের বিচার করা ঠিক হচ্ছে না, তাদের জন্য আদালতের উপরোক্ত পর্যবেক্ষণটি একটা উপযুক্ত জবাব। তাই বাংলাদেশের মানুষের আরেকটি বহুল প্রতীক্ষার অবসান হলো ৫ মে বৃহস্পতিবার। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত রিভিউ পিটিশন খারিজ করে নিশ্চিত করলেন মৃত্যুদ-ই নিজামীর ন্যূনতম শাস্তি।লেখক একে মোহাম্মাদ আলী শিকদার : ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৭
false
ij
পারস্যের এক প্রেরিতপুরুষ পারস্যের এক প্রেরিত পুরুষের নাম মনি Mani. তাঁর সময়কাল ২১০ -২৭৬ খ্রিস্টাব্দ। তিনি ছিলেন মনিবাদ বা Manichaeism-এর প্রবক্তা। মনির জন্ম হয়েছিল বতর্মান বাগদাদের কাছাকাছি এক পার্থিয়- ইরানীয় পরিবারে। শোনা যায় বেশ বনেদী বংশ। মনির বাবার নাম ছিল পাটিগ (কিংবা ফাটিক) মায়ের নাম মারিয়াম। এরা ছিলেন মূলত হামাদানের লোক। (হামাদান বর্তমান ইরানের একটি জায়গা) সেই সময়, অর্থাৎ সেই খ্রিস্টাব্দ তৃতীয় শতকে, আমরা এখন যেভাবে ওই অঞ্চলটিকে দেখি: ইরান, ইরাক-সে রকম কোনও রাজনৈতিক ভাগ ছিল না; ওই সমগ্র অঞ্চলটি ছিল পারস্যের সাসানিদ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। পাটিগ কিংবা ফাটিক এবং মারিয়াম - এই নাম দুটি, পন্ডিতদের মতে, সিরিয়। মনি যে ভাষায় কথা বলতেন তা ছিল মধ্য-পারসীয় বা সিরিয়। মনির মায়ের নাম, লক্ষ করুন, মারিয়াম। নামটি আমাদের কাছে খ্রিস্টান অনুসঙ্গ বলেই মনে হয়। সে যাহোক। ছোটবেলা থেকেই মনি ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা? অন্তমূর্খী? এসব ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায় না। কাজেই এসবই অনুমানের বিষয়। তকে বালক মনি যে তুমুল স্পর্শকাতর ছিলেন তা অনুমান করি। যে কোনও বিষয়ের গভীরে প্রবেশের তীব্র ইচ্ছে ছিল। ভালো লাগত সংগীত রোদ ও রং। নারী? মনি যে নগরে বেড়ে উঠছিল, মানে তৎকালীন বাগদাদ, এখন যেটা ইঙ্গমার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা তছনছ করছে-সে নগরে ছিল “এলকাসিটেস” নামে এক ইহুদি সম্প্রদায়। যুবা বয়েসে সেই সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে মিশে মনি নাকি ধর্ম সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। যে কোনও বিষয়ের গভীরে প্রবেশের তীব্র ইচ্ছে ছিল। তৎকালীন আরও কিছু ধর্মীয় মতবাদ মনিকে প্রভাবিত করেছিল। মনির প্রবল জ্ঞান তৃষ্ণা ছিল-যা স্বাভাবিক। একাদশ শতকের পারস্যের প্রখ্যাত পন্ডিত আলবেরুনি। জ্যোর্তিবিদ্যা, গণিত বাদেও আত্মজীবনী লিখতেন বেরুনি। তাঁরই একটা লেখা থেকে জানা যায়: যুবা বয়েসেই নাকি মনির ঈশ্বরদর্শন হয়েছিল। উত্তরাধুনিক মনোবিজ্ঞান বিষয়টিকে অবশ্য অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে। ঈশ্বরদর্শন সবার হয় না কেন? ঈশ্বর কি সবার নন? সব মানুষের স্নায়ূতন্ত্র এক রকম নয়? কেন? মনে করা হয় যে তিনি-মনি, ভারতে এসেছিলেন। স্পর্শকাতর মানুষেরা ভ্রমনে আগ্রহী হয়ে থাকেন। কিন্তু, মনি কেন ভারতে গিয়েছিলেন? কার মুখে বুদ্ধের কথা ওই আলোর কথা শুনেছিলেন? পন্ডিতদের মতে-২৪০ কিংবা ২৪১ খ্রিস্টাব্দের দিকে নৌপথে সিন্ধু উপত্যকায় এসেছিলেন। আরও বলা হয় যে তিনি ভারতের বৌদ্ধ রাজা তুরাণ শাহ কে ধর্মান্তরিত করেছিলেন।কে এই তুরাণ শাহ? কোন ধর্মে? বর্তমান আফগানিস্থানের বামিয়ান-এর অনেকগুলি ধর্মীয় চিত্র মনিকে নিয়েই বলে মনে করা হয়। এক সময় মধ্য এশিয়ায় মনির ধর্মের গভীর প্রভাব ছিল। মনি ভারত থেকে পারস্যে ফিরে এলেন। তারপর ধর্ম প্রচার করতে থাকেন। তো, তখনকার পারস্যের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল? মনির সময়কাল পারস্যে ছিল সাসানিদ রাজবংশ। রাজবংশটির সময়কাল ২২৬-৬৫১ খ্রিস্টাব্দ. সপ্তম শতকের মুসলিম অভিযান রাজবংশটির পতনের কারণ হয়ে ওঠে। সে যা হোক। সাসানিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম ছিল প্রথম আর্দাশির। একে নিয়ে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই; অবশ্য এঁর ছেলেকে নিয়ে আছে। এঁর ছেলের নাম ছিল শাহপুর-মহান সম্রাট শাহপুর। সম্রাট শাহপুর ছিলেন বিশাল মনের মানুষ । কথাটা বলার কারণ আছে। ওই সময়ে পারস্যে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ছিল জরথুশত্রবাদ। তা সত্ত্বেও মনিকে পৃষ্ঠপোষক করেছিলেন শাহপুর। সম্রাট শাহপুরের ভাই পেরোজ (ফিরোজ?) কে ধর্মান্তরিত করেছিলেন মনি। ধর্মপ্রচারের জন্য তুর্কিস্থান মেসোপটেমিয়া পারস্য ফিলিস্তিন সিরিয়া মিশর এবং ভারতের কুষান সাম্রাজ্যে মিশনারী পাঠিয়েছিলেন মনি । অবশ্য পরবর্তী পারশিক সম্রাটদের আনুকূল্য পাননি মনি। ততদিনে মহান শাহপুর মৃত। পারস্যের সিংহাসনে তখন প্রথম বাহরাম । লোকটা দারাশিকোর মতন উদার পরমতসহিষ্ণু ছিলেন না বরং ছিলেন আরঙ্গজেবের মত। আরঙ্গজেব এক পবিত্র শিখগুরুকে হত্য করেছিল। বাহরাম মনিকে। অবশ্য তাকে প্রভাবিত করেছিল এক জরথুশত্রবাদী পুরোহিত। তার নাম কার্তির। রাজদরবারে প্রভাবশালী ছিল কার্তির । কার্তিরের প্ররোচনায় মনিকে বন্দি করা হয়। অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। নিজস্ব মত প্রচারের জন্য মৃত্যুকেও মেনে নিতে পারে কিছু কিছু মানুষ? কেন কিছু কিছু মানুষের জীবনবোধ তার নিজের জীবনেরও চেয়েও মূল্যবান? কবিদের যেমন কবিতা। প্রেরিতপুরুষেরা কি তাহলে কবি? না ব্যাখ্যাতীত সত্ত্বা। কারাগারেই মৃত্যু হয় মনির। এবং মনি নিরেশ্বরবাদী ছিলেন না। জরথুশত্রর মতোই ঈশ্বরের দ্বৈতসত্তায় বিশ্বাসী ছিলেন।মনির ঈশ্বর মনিকে রক্ষা করেনি। ঈশ্বর কি তা হলে নির্বিকার? তা হলে নির্বিকার সত্ত্বায় মানুষের কি প্রয়োজন? কত কত মানুষ ঘুমিয়ে থাকল-আর মনি পারস্যের পথে পথে ঘুরে দান করলেন উপদেশ যা মানুষের জন্য পরম হিতকর আর তাকেই সইতে হলো যন্ত্রনা ... ঈশ্বর নির্বিকার কেন? যা হোক। কিন্তু, কি ছিল মনির শিক্ষা? আত্মসংযম। নিরামিষ আহার। যৌনসংগম থেকে বিরত থাকা। উপবাস। দান। এসবই দেখছি মঠবাসী খ্রিস্টধর্ম আর বৌদ্ধধর্মের প্রভাব? নিশ্চয়ই। খ্রিস্টধর্মের আবহে বেড়ে উঠেছিলেন মনি। তাঁর মায়ের নাম মারিয়াম। তদুপরি, ভারতে এসেছিলেন মনি। কাজেই তাঁর জীবনবোধে খ্রিস্ট ও বুদ্ধের প্রভাব থাকাই স্বাভাবিক। মনি নিজেকে সর্বশেষ প্রেরিতপুরুষ দাবি করেছিলেন। তাঁর মতে অন্যান্য প্রেরিত পুরুষগন হলেন-সেথ, নূহ নবী, ইব্রাহীম, শেম, নিকোথেওস (কে ইনি?) এনচ (কে ইনি?) জরথুশত্র, বুদ্ধ ও জেসাস। বুদ্ধ? এখানেই আমাদের আগ্রহ। মনি নিজেকে খ্রিস্টের প্রতিভূ মনে করতেন। এটি অবশ্য তাঁর নিজস্ব মত। নিকট প্রাচ্যে মুসলিম অভিযানের পূর্বে ভাষা ছিল সিরিয় বা সিরিয়াক। সেই ভাষাতে সাতটি ( ৭সংখ্যাটি কারও কারও কাছে রহস্যময়) ধর্মীয় গ্রন্থ লিখেছিলেন মনি। ওঁর সবচে গুরুর্ত্বপূর্ন গ্রন্থের নাম ‍"আরজাঙ্গ"।(কেউ এই গ্রস্থটি সম্বন্ধে কোনও তথ্য পেলে জানাবেন।) ছবিও আঁকতেন মনি। আরজাঙ্গ-এর রঙীন ছবিগুলো নাকি মনিরই আঁকা। আবার কোনও কোনও পন্ডিতের মতে মনির আদি গ্রন্থগুলি সংরক্ষণ করা যায়নি। অল্পবিস্তর যা পাওয়া গেছে তা মিশরীয় কোপটিক* লেখমালা এবং চৈনিক মনিবাদী রচনার সূত্রেই। বিষয়টি অবশ্য পন্ডিতদের। আমাদের নয়। মনির মৃত্যুর পরে ইউরোপ থেকে চিন অবধি তাঁর অনুসারীরা ছড়িয়ে যায়।কয়েক শতাব্দী জুড়ে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল Manichaeism বা মনিবাদ।প্রথম জীবনে রাজদরবারের পৃষ্টপোষকতা পেলেও - যে মতবাদটি প্রচারের জন্য অশেষ নির্যাতন সহ্য করে অনিবার্য মৃত্যুকে মেনে নিতে হয়েছিল মনিকে। আজকের পৃথিবীতে যদিও মনিবাদের একজনও অনুসারী খুঁজে পাওয়া যাবে না, অথচ আরও আরও প্রাচীন মত আজও টিকে রয়েছে- এখানেই আমাদের আগ্রহ। নিজস্ব মত প্রচারের জন্য অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলেন পারস্যের এক বিস্মৃত প্রেরিত পুরুষ, যিনি বুদ্ধকেও প্রেরিত পুরুষ মনে করতেন-এখানেই আমাদের আগ্রহ। *মিশরীয় কোপটিক লেখমালা নিয়ে পরে লিখব। (মনির ওপর আমি একটা গল্প লিখছি। যা যথাসময়ে এই ব্লগে প্রকাশিত হবে। তারই ভূমিকা হিসেবে এই লেখাটা ...।) সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩০
false
rg
হিমালয় কন্যার দেশে সাত রজনী। পর্ব পাঁচ ।। রেজা ঘটক আপনারা যারা নেপালে ভ্রমণ করতে যেতে চান তাদের জন্য কিছু ছোট্ট টিপস দিতে পারি। ঢাকার জাতিসংঘ রোডে নেপালি হাইকমিশন অফিস। সেখানে ভিসার জন্য আবেদন করলে কোনো ঝামেলা না থাকলে পরিদন ভিসা পেয়ে যাবেন। ঢাকা থেকে বিমানে নেপালে গেলে ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েও ভিসা নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার এয়ারপোর্টে একটু সময় লাগবে বেশি। এয়ারপোর্টের ফরমালিটিসে ঢাকা থেকে ভিসা নেওয়া থাকলে এক্কেবারে দুই মিনিটের ব্যাপার। নেপাল একটি পর্যটন দেশ হওয়ায় ত্রিভূবন বিমানবন্দরে বেশ ভিড় থাকে। সো, ঢাকা থেকে ভিসা নেওয়া অনেক ভালো। আপনি যদি নেপালে প্রথম বেড়াতে যাবার জন্য কোনো পর্যটক হন, সেক্ষেত্রে আপনার কোনো ভিসা ফি লাগবে না। এটা সার্ক দেশভুক্ত হওয়ায় আপনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে এই সুযোগটি পাবেন। আর দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার হলে অবশ্যই ফি লাগবে। এটা এখন মাত্র দুই হাজার টাকা। ক্যাশ দিতে পারবেন। অনলাইন থেকে ভিসা ফরম ডাউনলোড করে তা প্রিন্ট দিয়ে পূরণ করলেই চলবে। আপনি নেপালে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে ডলার না ভাঙানোই ভালো। কারণ, বিমানবন্দরে ডলারের রেট সবচেয়ে কম। সেক্ষেত্রে আপনার পরিচিত কেউ কাঠমুন্ডুতে থাকলে একটু বাড়তি সুবিধা পাবেন। আমরা কাঠমুন্ডু'র পর্যটন প্রাণকেন্দ্র থামেলে উঠেছিলাম। থামেলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানি এক্সচেঞ্জ আছে। আপনি যে কোনো টি থেকে ডলার ভাঙাতে পারবেন। কিন্তু একটু বুদ্ধি করে দর কষাকষি করতে ভুলবেন না। আমাদের ডলার ভাঙানো নিয়ে স্বামীজী রামকৃষ্ণ একটা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। রামে'র থামেলে একটা ছোট্ট ফ্যাশন হাউজ আছে। রাম অবশ্য তেমন বসে না। রাম নতুন নতুন ফ্যাশনের ডিজাইন করা নিয়ে মেইন অফিসে ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া রাম আবার বৌদ্ধনাথ স্তূপা সংঘের একজন নিয়মিত সদস্য। সপ্তাহে দুইদিন রাম স্তূপায় যায় প্রার্থণা করার জন্য। যদিও রাম একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি রামের বিশেষ দুর্বলতা আছে। রাম বৌদ্ধ ধর্মের সব ফিলোসপি খুব সুন্দর ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করতে পারে। থামেলের মেইন সড়কে রামে'র যে ফ্যাশন হাউজের দোকান সেখানে বসেন রামের পিসামশাই। অমায়িক ভদ্রলোক। খুব মৃদুভাষী। কিন্তু খুব হাসিখুশি। রাম তার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনিই আমাকে ডলার ভাঙাতে খুব সহযোগিতা করেছিলেন। খোদ থামেলে আমি ডলার ভাঙাতে গিয়ে দেখি আমাকে দিতে চায় ১০০ ডলারে ৮, ৫৩৪ নেপালি রূপি। আর সেখানে দশ মিনিট পরে রামের পিশামশাই সেই ১০০ ডলার ভাঙিয়ে এনে আমাকে দিলেন ৮, ৮৮৭ নেপালি রূপি। এবার বুঝুন, পার্থক্যটা কেমন হয়? পরে আমি পিশামশাইয়ের মাধ্যমেই প্রায় সময় ডলার ভাঙিয়েছি। বড় বড় খাবারের রেঁস্তোরায় আপনি ইচ্ছে করলে ডলারে পেমেন্ট করতে পারবেন। কিন্তু তাতে আপনার নিশ্চিত লস হবে। সো, যা খরচ করবেন, তা আগে নেপালি রূপিতে ট্রান্সফার করে নিতে ভুলবেন না। গোটা কাঠমুন্ডু শহর এখন ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে এসেছে। আপনি যে কোন রেঁস্তোরা বা হোটেলে বা বড় বড় দোকান থেকে খুব সহজেই একটি নম্বর নিয়ে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার হাতে অবশ্যই একটি নেপালি সিম বা ইন্টারন্যাশনাল সিমসহ মোবাইল থাকতে হবে। আর নেটওয়ার্ক ঢাকার চেয়ে একশো ভাগ উন্নত। কিন্তু কাঠমুন্ডু'র সাইবার ক্যাফেগুলো এখনো ঢাকার চেয়ে পিছিয়ে। আর ওরা পর্যটনের দোহাই দিয়ে দাম হাকায় ইচ্ছে মতো। সো, প্রয়োজন ছাড়া সাইবার ক্যাফেতে না বসাই ভালো। আপনি যদি লোকাল কল ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফোন কল করতে চান, সেক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দোকানে দোকানে আলাদা রেট। সো, যাচাই বাছাই করে ফোন করুন। ৮ এপ্রিল ২০১৩ । সকালে মায়া আর আমি গাইয়াতে নাস্তা করতে করতেই প্রতীক হাজির হল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, গোটা থামেল একটু পায়ে হেঁটে ঘুরবো। কোথায় কি পাওয়া যায়, জিনিসপত্র দেখা আর দরদাম যাচাই বাছাই করা। আমরা দুইটি মিউজিক স্টলে কয়েকটি বাদ্যযন্ত্রের দাম যাচাই বাছাই করলাম। একটি বইয়ের দোকানে অনেকক্ষণ ঢু মারলাম। প্রায় সকল বই নেপালের টুরিজ্যমের উপর। কয়েকটি ছবির দোকানে ঢু মারলাম। কয়েকটি ফ্যাশন হাউজে ঢু মারলাম। একটি ছেলে বয়স একুশ বছর। খুব সুন্দর ইংরেজি বলে। মায়াকে খুব সুন্দর করে পটালো। মায়া তার দোকান থেকে চুলের ফিতা, ওড়না আর কি কি যেনো কিনলো। আমি একটা নেপালি টুপি পছন্দ করে দাম জিজ্ঞেস করলাম। ছেলেটি জবাবে বললো, এটা আমার ন্যাশনাল সিম্বল। আপনি যা দিবেন, আমি তাই নেব। ছেলেটি জানালো, টি-২০ বিশ্বকাপ দেখতে সে ঢাকায় এসেছিল। তখন তিন দিন ঢাকায় ঘুরেছে। সময় পেলে আবার ঢাকায় বেড়াতে আসবে। ১৮ হাজার টাকা রূপি নিয়ে এই ছোট্ট দোকান শুরু করেছে। দোকান ভাড়া তিন হাজার রূপি। মাসে তার ভালোই আয় হয়। সে পরিকল্পনা করছে আগামী তিন বছরের মধ্যে বিয়ে করবে। মাসিক আয় থেকে বাবা-মাকে আর ছোট বোনের পড়ার খরচ দেয় সে। নিজের লেখাপড়া এইট ক্লাশ পর্যন্ত। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ওই ছেলেটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা অনেক ছেলেমেয়ের চেয়ে ইংরেজিতে ভালো কথা বলতে সক্ষম। উন্নতি তার হবেই। নেপালে আরেকটা জিনিস খুব চোখে পড়ার মত, শিক্ষিত শ্রেণী ছাড়াও ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রায় সবাই ইংরেজিতে চালিয়ে নেবার মতো দক্ষতা সম্পন্ন। যা পর্যটন নগরী হিসেবে কাঠমুন্ডুকে অনেক দ্রুত উন্নত করাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নেপালে বাহারি খাবারের বাহাদুরি সেই রকম চোখে পড়ার মতো। আপনি কোন ধরনের খাবার চান? নেপালি? ইন্ডিয়ান? চাইনিজ? তিব্বতী? থাই? জাপানিজ? ইতালীয়? ড্যানিস? সবই পাওয়া যায় কাঠমুন্ডুতে। আপনি যদি খুব ঘরোয়া পরিবেশে একেবারে নেপালি লোকাল খাবার খেতে চান সেই ব্যবস্থাও আছে। আপনি খরচ বাঁচাতে চান? সেই ব্যবস্থাও আছে। আবাসিক হোটেল ফাইভ স্টার থেকে শুরু করে দুইশত পঞ্চাশ রূপিতে রুম পাওয়া যায়, এমন আবাসিক হোটেলও আছে। সাধারণত যারা মাউন্টারিং করতে যায় তারা কাঠমুন্ডু কয়েক দিন থেকে তারপর চলে যায় তাদের সুনির্দিষ্ট ক্যাম্পে। সাধারণত মে মাসে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের জন্য সেখানে মাউন্টারিয়ানরা যায়। যে কারণে এপ্রিল মাসে তাদের প্রাথমিক ভিড়টা থাকে কাঠমুন্ডু শহরে। কাঠমুন্ডুতে অসংখ্য মাউন্টারিং ক্লাব আছে। সেখানে তারা প্রথমে ওরিয়েন্টশান করে। তারপর সিলেকটেডদের নিয়ে তারা ক্যাম্প করে। মাউন্টারিয়ানদের জন্য আছে অসংখ্য দোকান। তাদের নির্দিষ্ট পোষাক, জুতা, ব্যাকপ‌্যাক ইত্যাদি সব জিনিসপত্র সেসব দোকানে অনায়াসেই চোখে পড়বে। গোটা থামেল পায়ে হেঁটে চষে আমরা যখন ক্লান্ত তখন লান্স করার জন্য একটা মিনি-ওয়েস্টার্ন-কাম নেপালি রেঁস্তোরায় ঢুকলাম। সেখানে সাইবার ক্যাফেও আছে। মায়া আধা ঘণ্টা কম্পিউটারে বসলো। আমি ক্যাফে মালিকের সঙ্গে কথা বলি। ভদ্রলোক চমৎকার ইংরেজি বলেন। একেবারে শুদ্ধ উচ্চারণে। আমি জানতে চাইলাম, তিনি এতো ভালো ইংরেজি কিভাবে শিখলেন? তিনি জানালেন, ১৪ বছর তিনি ইউরোপে ছিলেন। তারমধ্যে ৬ বছর ছিলেন খোদ লন্ডনে। আর তার পার্টনার হলেন হোটেলের প্রধান পাচক। সে ১৭ বছর দুবাই ছিল। দুই পার্টনারে হোটেল এবং সাইবার ক্যাফে চালান। তাদের কোনো এসিট্যান্ট নেই। আমরা দুপুরের খাবারের অর্ডার দিলাম। পাচক রান্না করতে গেলেন। সাধারণত অর্ডারের পরেই ওই হোটেলে রান্না শুরু হয়। আমরা সময় কাটাতে একটু ড্রিংকস নিলাম। লেবুর সরবত সে এমনভাবে পরিবেশন করলেন, আমাদের ঢাকায় পাঁচতারা হোটেল তার কাছে ফেল। তারপর পাচকের রান্না শেষ। পরিবেশন করলেন তার পার্টনার। যে আইটেম রান্না শেষ হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে গরম গরম আমাদের সামনে তা পরিবেশন করছেন ভদ্রলোক। দুই পার্টনারের কেরামতি দেখে আমার অবস্থা কেরোসিন। এছাড়া আবার তাদের একটি টুরিস্ট গাইডের ব্যবসা আছে। কাঠমুন্ডু থেকে যারা শহরের বাইরে এসি বা নন এসি বাস বা মাইক্রোবাসে ঘুরতে যেতে চান, সেই ব্যবস্থাও ওনারা করে দেন। আমরা নগরকোট যাবার খরচ এবং আনুষঙ্গিক সবকিছু ওনাদের কাছে বিনা পয়সায় ধারণা নিয়ে নিলাম। লান্সের পর আমরা আমাদের হোটেল রুমে ফিরে আসি। সেখানে নতুন একজন ভদ্রলোকের আগমন ঘটেছে আমাদের পাশের রুমে। আমরা তা জানি না। ইতোমধ্যে ডেনিসও এসে পড়লো। আমরা চিৎকার করে গান বাজনা করছি। হঠাৎ আমাদের দরজায় ডাকাত পড়ার মতো জোড়ে জোড়ে কে যেনো নক করলো। প্রতীক উঠে দরজা খুললো। ভদ্রলোক বললেন, তিনি ব্যাংকক থেকে একটু আগে লম্বা জার্নি করে এসেছেন। এখন আমাদের হৈ হল্লার কারণে তার ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে। আমরা গান বন্ধ করে ছাদে গেলাম। তখন বিকাল চারটার মতো বাজে। কিছুক্ষণ পরে লোকটিও ছাদে আসলো। এবং এক ধরণের অপরাধ বোধ নিয়ে আমাদের দেখলো। সন্ধ্যায় গাইয়া রেঁস্তোরায় কফির টেবিলের পাশেও লোকটির আগমন ঘটলো। তার সঙ্গে এবার ১৪ বছরের এক নেপালি বালক। ভদ্রলোক দু'জনের খাবার অর্ডার করলেন। প্রতীক আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, গান বন্ধ করুন। আমি খুব টায়ার্ড। এখন আপনাদের জন্য ঘুমোতেও পারছি না। আসল ব্যাপার হলো, লোকটিকে দেখামাত্র আমরা অটোমেটিক গান গেয়ে উঠলাম সবাই। ও মেরি দেওয়ানি। ও মেরি দেওয়ানি.... ..............চলবে......................... সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৬
false
hm
পিচ্চিতোষ গল্প ১৩: অনেক রকম গন্ধ ঘুম থেকে উঠে পিপলু চোখ পিটপিট করে কিছুক্ষণ ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর হাত বাড়িয়ে তার কোলবালিশটাকে খোঁজে। কিছুক্ষণ কোলবালিশটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে সে সকালের শব্দগুলো শোনে। তরকারিঅলা, মুরগিঅলা, ফেরিঅলা এসে ডাকাডাকি করে, রিকশা চলে যায় পাশের গলি দিয়ে টুংটাং করে, বারান্দায় চড়াই আর নারকেল গাছের ওপরে বসে কাক ডাকে। পিপলু ঘুমমাখা চোখে বিছানায় শুয়েই আস্তে করে ডাক দেয়, "মা!" আস্তে করে ডাকলে মা সাড়া দিতে পারে, যদি মা নিজের ঘরে থাকে। সাড়া পায় না পিপলু। তার মানে মা রান্নাঘরে, নাস্তা বানাচ্ছে। পিপলু আরো জোরে ডাকে, "মা! মা! মা!" পিপলুর মা দূর রান্নাঘর থেকে সাড়া দেন, "এই যে আমি এখানে!" পিপলু আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে তারপরও। পর্দা ঠেলে সকালের রোদ এসে পড়েছে বিছানায়। কেমন একটা ধূলো ধূলো ঘ্রাণ চারদিকে। পিপলু উঠে পড়ে, তারপর সাবধানে বিছানা থেকে নামে। এরপর সে একছুটে রান্নাঘরে মায়ের কাছে গিয়ে হাজির হয়। পিপলুর মা আটা গুলে রুটি বানাচ্ছেন। পিপলু পেছন থেকে মা-কে জড়িয়ে ধরে। রুটি বানানোর ব্যাপারটা পিপলুর খুব ভালো লাগে। একগাদা সাদা আটা নিয়ে গরম পানি দিয়ে একটু গুলে, কাঁই বানিয়ে, সেখান থেকে একদলা করে নিয়ে, কাঠের ওপর একটু সাদা আটা ছিটিয়ে, তারপর ডলে ডলে কী সুন্দর গোল এক একটা রুটি হয়! সেটাকে তারপর তাওয়ার ওপর সেঁকা হয়। মা মাঝে মাঝে পিপলুর জন্যে ছোটো করে রুটি বানিয়ে দেন। সেগুলোর পেটের কাছটা একটু ফুলে ওঠে, সারা ঘরটা রুটি আর কাঁচা আটার গন্ধে কেমন ঝনঝন করে ওঠে। পিপলুকে দেখে পিপলুর মা নাক কুঁচকে হাসেন। বলেন, পিপলু যাও দাঁত মেজে এসো! মুখচোখ ধুয়ে এসো! ঘুম থেকে উঠে মুখ না ধুয়ে রান্নাঘরে এসেছো কেন? পিপলু তবুও মায়ের কাছ ঘেঁষে কিছুক্ষণ রুটির গন্ধ শোঁকে। মায়ের শরীরটাই একটা বড় ফুলকো রুটির মতো ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। সে বলে, আমাকে কয়েকটা ছোটো রুটি বানিয়ে দাও! পিপলুর মা বলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার ছোটো রুটিই বানাচ্ছি। মুখ ধোও এখন। পিপলু এবার বাথরুমে চলে আসে মুখ ধুতে। বাথরুমে ঢুকে তার নাক কুঁচকে আসে, বাবা বাথরুমে সিগারেট খেয়েছে, গোটা বাথরুমটা সিগারেটের ভারি গন্ধে গম্ভীর হয়ে আছে। পিপলু পানির ট্যাপ ছাড়ে, বেসিনে সে মুখ ধুতে পারে না এখনও, শুধু কোনোমতে দাঁত মেজে পেস্ট ফেলতে পারে। টুথব্রাশে অনেকখানি টুথপেস্ট নিয়ে পিপলু শুঁকে দেখে সেটা। মিষ্টি ঝাঁঝালো একটা গন্ধ। পিপলু চুপচাপ দাঁত মাজতে থাকে। তার মুখটা ফেনায় ভরে উঠছে আস্তে আস্তে। সাবধানে সে বেসিনে ফেনাগুলি থু করে ফেলে। হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে পিপলু রান্নাঘরে যায় আবার। বাবা নিজের ঘর থেকে ডাক দেন একবার, পিপলু উঠেছো? নাস্তা খেতে বসো! পিপলু রান্নাঘরে গিয়ে দেখে, মা চায়ের পানি বসিয়েছেন। গরম তেলে ডিমভাজার গন্ধে রান্নাঘর মাতোয়ারা। ডিমভাজা দিয়ে রুটি খেতে পিপলুর ভালো লাগে না, কিন্তু বাবা বকা দেবে না খেলে। বাবার সাথে বসে নাস্তা খেতে খেতে পিপলু ভাবে, বড় হয়ে সে-ও চা খাবে নাস্তার সাথে। বাথরুমে একটা সিগারেটও খাবে। যদিও সিগারেটের গন্ধ পিপলুর সহ্য হয় না। কিন্তু বাবা যখন পারে, পিপলুও পারবে। পিপলু মাঝে মাঝে বাবার চায়ের কাপের শেষ অর্ধেকটা চেয়ে নিয়ে খায়। বাবার মনমেজাজ ভালো থাকলে ঐটুকু তাকে দিয়ে দেয়, না থাকলে বকা দেয়, বলে বাচ্চাদের চা খেতে নেই। আজ বাবার মুখচোখের দিকে তাকিয়ে পিপলু ভরসা পেলো, বাবার মুখটা হাসি হাসি। পিপলুর মা এক কাপ চা এনে রাখেন টেবিলে। চায়ের গন্ধটা পিপলুর বড় ভালো লাগে, গরম মিষ্টি চোখা একটা ঘ্রাণ, নাকে ঢুকলেই ভালো লাগে। বাবাও নিশ্চয়ই চা খেয়ে খুব মজা পায়, চোখ দুটো একেবারে বুঁজে হাসিমুখে এক একটা চুমুক দেয়। পিপলু বাবার কোল ঘেঁষে গিয়ে চা খাবার বায়না ধরে। পিপলুর বাবা বলে, তুমি তোমার ছোটো কাপটা নিয়ে এসো, আমি ঢেলে দিই? পিপলু বলে, না আমি তোমার কাপে খাবো! পিপলুর বাবা হাসতে হাসতে পিপলুর মাথায় হাত বুলিয়ে কাপটা রেখে উঠে পড়েন। পিপলু বাবার চেয়ারে বসে বাবার মতো করে বসে চোখ বুঁজে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। সেখানে চায়ের ঘ্রাণের পাশাপাশি হালকা তামাকের গন্ধ। পিপলু এখনও স্কুলে যায় না। বাবা বলেছে আগামী বছরই তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেবেন। স্কুলটা বাড়ির কাছেই, অফিসে যাবার পথে বাবা পিপলুকে নামিয়ে দেবেন, মা গিয়ে পরে নিয়ে আসবেন। আরেকটু বড় হলে নাকি পিপলু একাই যেতে পারবে। বাবা চলে যাবার পর তাদের বাসাটা চুপচাপ। মা রান্নাঘরে টুকটাক কাজ করেন, নয়তো এক কাপ চা নিয়ে এসে বারান্দায় বসেন, নয়তো পিপলুকে একটু একা রেখে পাশের বাসার আন্টির সাথে গল্প করতে যান। পিপলু সারাটা দিন ঘরে খেলে, বিকেলে একটুক্ষণের জন্যে বাইরে খেলে, মা তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাহারা দেন। মা রান্নাঘর থেকে ডাকেন, পিপলু, তুমি দুষ্টুমি কোরো না কিন্তু, হ্যাঁ? আমি যাই একটু তোমার আন্টির কাছে? পিপলু বলে, আমি খেলতে যাই নিচে? মা রাজি হন না। বলেন, না এখন অনেক রোদ। তুমি বিকেলে খেলো। এখন ঘরে খেলো? পিপলুর ঘরে খেলতে খুব একটা ভালো লাগে না। আর খেলার তেমন কিছু নেই। দাদা-দিদি ছুটিতে বাড়িতে এলে পিপলুর সাথে খেলে, কিংবা তাকে বেড়াতে নিয়ে যায়, একা একা ঘরে বসে পিপলুর খেলার সুযোগ কম। পিপলু বসার ঘরে গিয়ে বই হাঁটকাতে থাকে ছবির বইয়ের খোঁজে। পিপলু কিন্তু পড়তে পারে। স্কুলে গিয়ে তার সমস্যা হবে না। সে বানান করে বাংলা অনেক কিছু পড়তে পারে, তবে সব বোঝে না। সে দুয়েকটা বই নামিয়ে দেখে, সেগুলোতে কোনো ছবি নেই, খুদিখুদি অক্ষরে অনেক কিছু লেখা, সব সে বোঝে না। নাকের কাছে নিয়ে সে বইগুলো শুঁকে দেখে। বইয়ের ভেতরে একটা কেমন যেন গন্ধ। পিপলু একটা বই রেখে আরেকটা বই খোলে। সেটা দেখতে একটু ময়লা, গন্ধটাও অন্যরকম। আবার সাদা কাগজের বইগুলোর গন্ধ আলাদা। এক একটা বইয়ের গন্ধ এক একরকম। পিপলু কিছুক্ষণ বই ঘেঁটে একটা বল নিয়ে বারান্দায় আসে। দাদা তাকে একটা খেলা শিখিয়ে গেছে, একটা ঝুড়ি শুইয়ে রেখে কিক করে বলটাকে তার মধ্যে ঢোকানো। মজার খেলা। কিছুক্ষণ খেলার পর পিপলু দেখে, মা আবার ফিরে এসেছেন। সে মায়ের পিছুপিছু রান্নাঘরে ঢোকে। কী রান্না করো? পিপলু জানতে চায়। পিপলুর মা বলেন, শাকভাজা আর ডাল। আর মুরগির মাংস আছে, মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খেও। পিপলু রান্নাঘরে বসে বকবক করতে থাকে মায়ের সাথে। এটা কী, ওটা কী, এটা কী কাটো, ওটা কী বাটো? রোজই সে একই প্রশ্ন করে যায় মা-কে, মা-ও রোজই তাকে একই উত্তর দিয়ে যান। ডালের জন্যে মশলা ভাজার সময় হতেই পিপলু বলে, আমি ঢালবো, আমি ঢালবো! পিপলুর মা হাসতে হাসতে অল্প একটু ডালসেদ্ধ একটা বড় ডালের চামচে করে তুলে দেন পিপলুর হাতে, পিপলু সেটা নিয়ে ঢেলে দেয় কড়াইতে। ভুশভুশ করে শব্দ হয়, তারপর ছ্যাঁৎ করে জ্বলে ওঠে যেন সব। সারাটা ঘর ডালের কর্কশ গন্ধে ভরে যায়। পিপলু মাকে জড়িয়ে ধরে বকবক করতে থাকে আবোলতাবোল। পিপলুর মা মুখ টিপে হাসেন আর পিপলুর কথায় তাল দিয়ে যান। পিপলু মায়ের শাড়ি শুঁকে দেখে, একদম ডালের গন্ধ, মনে হয় মা যেন একবাটি ডাল! সেদিন বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় সাথে একটা মাছ নিয়ে এসেছিলেন। মাছের গন্ধ পিপলুর ভালো লাগে না, মা মাছটা কাটার পর সে মাকে জাপটে ধরতে গিয়ে দেখে, মা-ও একটা মাছ হয়ে গেছে, মায়ের শাড়িতে হাতে মাছের গন্ধ। মা যা রাঁধে, তা-ই হয়ে যায়। রান্নাবান্না শেষ হবার পর পিপলুর মা পিপলুকে বলে, এবার চলো তোমাকে গোসল করিয়ে দেই! পিপলু সাথে সাথে ছুট লাগায়। মায়ের সাথে এটা তার একটা খেলা। সারাঘরে অনেক ছোটাছুটি দাপাদাপি শেষে মা তাকে পাকড়াও করেন, হুমহাম করে টেনে নিয়ে যান গোসল করিয়ে দিতে। ঝর্ণা ছেড়ে ভিজতে ভিজতে পিপলু অনেক দুষ্টুমি করে, মাকে ভিজিয়ে দেয়, সাবান মাখাতে গেলে চিৎকার করে, চোখ জ্বলে গেলো, চোখ জ্বলে গেলো! পিপলুর মা তাকে আচ্ছা করে সাবান মাখিয়ে গোসল করিয়ে দেন। পিপলু বলে, শ্যাম্পু করে দাও? শ্যাম্পুর গন্ধটা পিপলুর কাছে খুব ভালো লাগে, সাবানের গন্ধের চেয়েও। শ্যাম্পুর ফেনা চোখে গেলে আরো বেশি জ্বলে, কিন্তু তখন সে চুপ করে থাকে। মিষ্টি ভারি একটা গন্ধে তার মাথার চারপাশটা কেমন ডুবে যায়। পিপলুকে গোসল করিয়ে দিয়ে মা বলেন, এবার তুমি মাথা মুছে বারান্দায় রোদে চুপ করে বসো। আমি গোসল করে আসি। পিপলু উদোম গায়েই ছুটে গিয়ে বারান্দায় রোদের মধ্যে বসে। তার গা ভেজা, সে একটা টাওয়েল নিয়ে মাথায় ঘষতে থাকে। বাইরে ঝকঝকে রোদ, পরিষ্কার নীল আকাশ। পিপলুর মা গোসল সেরে এসে বলেন, বললাম মাথাটা মুছতে, তুমি ভেজা মাথা নিয়েই রোদে বসে আছো? এই বলে পিপলুর মাথাটা গামছা দিয়ে কষে ডলতে ডলতে মুছে দেন তিনি। পিপলু মাকে জড়িয়ে ধরে শুধু শুধু চিৎকার করতে থাকে। পিপলুকে নতুন একটা হাফপ্যান্ট পরতে দিয়ে এবার মা তাকে ভাত খাওয়াতে বসেন। মুরগির মাংস আগের দিন রান্না করা, সেটা আবার গরম করার পর রান্নাঘরটা ভরে ওঠে ঝোলের গন্ধে। পিপলু চুপচাপ চেয়ারে গিয়ে বসে। সে মায়ের সাথেই খায়, আলাদা প্লেটে তার খেতে ভালো লাগে না। মা নিজে খেতে খেতে তাকে খাইয়ে দেন। পিপলুর মা প্রথমে শাক দিয়ে ভাত মাখেন, পিপলু মাথা নাড়ে, সে একেবারে মুরগি দিয়ে ভাত খাবে। পিপলুর মা গল্প করতে করতে একটা লোকমা মাখিয়ে আলগোছে পিপলুর মুখে তুলে দেন। পিপলু সেটা চিবিয়ে খেয়ে বলে, আর খাবো না। মুরগি খাবো। পিপলুর মা বলেন, আচ্ছা আর একটা। তারপর কী হয়েছিলো কাল নাইট রাইডারে? পিপলু উৎসাহ নিয়ে নাইট রাইডারের গল্প বলে যায়। পিপলুর মা মনোযোগ দিয়ে শোনেন আর একটু একটু করে শাক দিয়ে ভাত খাইয়ে দেন পিপলুকে। তারপর মুরগি দিয়ে ভাত মাখেন, তারপর ডাল দিয়ে। পিপলু গল্প বলতে বলতে সবই খায়। ভাত খাবার পর পিপলুর চোখ একটু ভারি ভারি হয়ে আসে। সে নিজেই গিয়ে মায়ের বিছানায় শুয়ে পড়ে। পিপলুর মা বলেন, পিপলু সোনা বই পড়ে শোনাবে না মা-কে? পিপলু উঠে গিয়ে আবার "নীল হাতি" নিয়ে আসে। পিপলুর মা পিপলুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, তুমি একটা পৃষ্ঠা পড়ো, আমি একটা পৃষ্ঠা পড়ি। পিপলু শুয়ে শুয়ে বইটা খুলে জোরে জোরে পড়তে থাকে। এক পৃষ্ঠা পড়া হয়ে যাবার পর পিপলু বইটা মায়ের হাতে দিয়ে বলে, এবার তুমি পড়ো আমি শুনি। মা বইটা নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টান, পিপলু মাকে জাপটে ধরে শোয়। পিপলুর মা বই পড়ে যান, পিপলু চুপচাপ মায়ের গন্ধ নেয় শুয়ে শুয়ে। এই গন্ধটা মায়ের গন্ধ। এই গন্ধটা রুটিতে নেই, চায়ে নেই, বইতে নেই, মাছে নেই, মাংসে নেই, ডালে নেই, সাবানে নেই, শ্যাম্পুতে নেই। এই গন্ধটা শুধু তার মায়ের গায়ে আছে। পরের পৃষ্ঠায় কী হয়, পিপলু শুনতে পায় না। সে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৭ ১. কাসেল শহরে প্রচুর অগ্নিকান্ড হয়। অন্তত, অগ্নিকান্ডের রিপোর্ট আসে প্রচুর। রোজই তীব্রস্বরে সাইরেন বাজিয়ে ফয়ারভেয়ার বা দমকলবাহিনী ছুটে যায় বিভিন্ন প্রান্তে। কাসেল শহর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের অন্যতম আস্তানা ছিলো, এখন যেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানেই ছিলো নাৎসি বাহিনীর অস্ত্র তৈরির কারখানা। চিমনিটা এখনো রয়ে গেছে, সেটাকে সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তবে চিমনির ওপরে সেলুলার ফোনের বেজ স্টেশন বসানো হয়েছে। মিত্রবাহিনী কাসেল শহরটা মোটামুটি চূর্ণ করে দিয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তাই এর বেশির ভাগটাই আবার নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। পুরনো শহরাংশ নর্ডষ্টাট (উত্তর শহর)-এ কিছু পুরনো ঢঙের বাড়ি টিকে আছে, যেগুলোতে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি, সেখান থেকেই রিপোর্ট আসে বেশি। দমকলকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছেই, তাই প্রায় প্রত্যেকদিনই তাদের সশব্দ অভিযান কানে বাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন, যেটাকে আমরা কাভে-দ্রাই বলি, সেখানে বড় ল্যাবরেটরিগুলো স্বাভাবিকভাবেই হয় নিচতলায় বা মাটির নিচে, সেখান থেকে মাঝে মাঝে ফায়ার অ্যালার্ম চলে যায় দমকলের কাছে, আমাদের তখন রয়েসয়ে ভবন ছেড়ে বাইরে গিয়ে জমা হতে হয়। এদের তড়িৎগতি দেখার মতো, পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভবনের যে অংশ থেকে অ্যালার্ম এসেছে, সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে পজিশন নেয় দমকলযোদ্ধারা। দুয়েকবার সঠিক আগুনের খবর এসেছে, বেশিরভাগ সময়ই অন্য কোন ভুলে অ্যালার্ম বেজে ওঠে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়কে জরিমানা গুণতে হয় সাতশো ইউরো। আমি যে পাড়ায় থাকি, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের না হলেও পুরনো, যাকে বলা হয় আল্টবাউ। সেখানে হিটিং সিস্টেমের ধরনও পুরনো, যার ফলে আগুন লাগার সম্ভাবনা আরেকটু বেশি নতুন বাড়িগুলোর থেকে। আমি ঘরে বসেও তাই সাইরেনের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাই না, হপ্তায় অন্তত তিনদিন শুনতেই হয়। জার্মানিতে শক্তি খরচ পদ্ধতিকে আরো দক্ষ করে তোলার জন্যে এখন বাড়ি নির্মাণের সময় বেশ কিছু নতুন গাইডলাইন ধরিয়ে দেয়া হয়। বর্গমিটার পিছু বছরে শক্তি খরচ কমিয়ে প্রায় তিনভাগের এক ভাগে নিয়ে আসা সম্ভব, যদি বাড়িঘরের ইনসুলেশন নতুন গবেষণালব্ধ নকশা অনুসরণ করে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে। ২. রান্নাবান্না করতে ভালো লাগে না বেশিরভাগ সময়ই। সসেজ-রুটি, ফ্রিকাডেলে-রুটি কিংবা পিৎজার ওপর দিয়ে চালিয়ে দিই, নিতান্ত দেশি খাবার খেতে ইচ্ছা করলে হের চৌধুরীর সাথে কোয়ালিশনে রান্না করি। উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, গরুর মাংস। আমার বাসায় ডিপ ফ্রিজ নেই বলে গরুর মাংস একবারে কিনে হপ্তা ধরে সংরক্ষণ করতে পারি না, তাই চৌধুরীর বাড়িই ভরসা। পুরনো ঢাকার জনৈক মামার সাগরেদি করে হের চৌধুরী গরুর মাংসে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন, তাই তাঁকে কিছু কাটাকুটি করে এগিয়ে দিলে তিনি দয়াপরবশ হয়ে সেই বেলার খাবারটা তাঁর ওখানেই সেরে যেতে বলেন। তবে যখন চৌধুরী ব্যস্ত থাকেন, কিংবা আমারই ব্যস্ততার কারণে বাড়ি ছেড়ে বেরোনো সমস্যা হয়ে যায়, তখন নিজেকেই রেঁধে খেতে হয়। আমি কোন রান্নার বই সাথে নিয়ে আসিনি, বিপদে পড়ে দেশে ফোন করেও রেসিপি জেনে নিইনা, অনলাইনেও রান্নার কোন বাতেনি কৌশল খুঁজি না। আমি আবিষ্কারের চেষ্টায় থাকি। বেশিরভাগ সময়ই অখাদ্য হয় সেগুলি, তবে ফাঁকতালে কিছু কিছু জিনিস জিভে বেশ ইতিবাচক হিট করে। উদাহরণ দিই, খিচুড়ি হয়ে ওঠার মিনিট দশেক আগে তাতে পালং শাকের কুচি বা বল ছেড়ে দিয়ে একটা ঘুঁটা মারতে পারলে জিনিসটার রং একটু সবজে মেরে আসে, আর দারুণ একটা স্বাদ হয়। এক্ষেত্রে খিচুড়িকে ভুনা হলে চলবে না, কিঞ্চিৎ ল্যাটকা হতে হবে, আর মুগ-মসুর দুই পদের ডাল মিলিয়ে রান্না হতে হবে। তবে কেউ যদি ডিসকভারি চ্যানেলে গরিলার গু কখনো দেখে থাকেন, তাঁর খেতে একটু অভক্তি লাগতে পারে। একদিনের পুরনো মসুরের ডালকে আরেকটু পানি দিয়ে একেবারে গলিয়ে মারুন। তারপর সয়া সস আর কুচো চিংড়ি দিয়ে ভাজুন। তারপর সেটা ন্যুডলসের সাথে আরেকদফা ভাজুন। একেবারেই অন্য কিসিমের স্বাদ হবে, খেয়ে ভালোই লাগার কথা। পরিমাণ আপনাকে আন্দাজ খাটিয়ে দিতে হবে আর কি। আজ রান্না করলাম মুরগি-মটর। আমি নিশ্চিত, এ নতুন করেই চাকা আবিষ্কার। পেঁয়াজ, গাজর, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচের ফালি হাঁড়িতে চড়ান, তার ওপর মাখন দিন কিছু, তারপর জিরা দিন সামান্য। মাখন গলার পর ঘুঁটা মেরে চলুন। তারপর যোগ করুন রসুন। তেজপাতা এলাচ দারচিনি গোলমরিচ লবঙ্গ দিয়ে দিন। ঘাঁটুন, ভাজুন কিছুক্ষণ। তারপর হলুদ-মরিচ-ধনিয়া ঢালুন। ঘুঁটা মেরেই চলুন। তারপর মুরগির বুকের মাংসের ফিলে [Fillet] কুচি কুচি করে দিন সেখানে, সাথে কিছু আদাকুচি। আবারও ঘুঁটা মারুন। তারপর যোগ করুন মটরশুঁটি, পরিমাণ আন্দাজমতো। তারপর আবারও ঘুঁটৌষধি প্রয়োগ করুন যতক্ষণ জোশ বজায় থাকে। তারপর আন্দাজমতো পরিমাণ লবণ ছড়িয়ে দিয়ে তাদের গলে জল হবার সুযোগ দিন। পেঁয়াজের পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে ঝোলের পরিমাণ। সেদ্ধ হয়ে যাবার পর গরম গরম ভাতের সাথে খাবেন নাকি রুটি দিয়ে খাবেন সেটা আপনার ব্যাপার। ৩. নানা গ্যাঞ্জামের পর একটু ঝিমানোর ফুরসত পেয়ে সেদিন দেখলাম ফ্র্যাকচার। দুর্দান্ত লেগেছে। অ্যান্থনি হপকিন্স সেই সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস এর ছোঁয়াচ কাটিয়ে উঠছেন না কিছুতেই। ঘাগু বদমায়েশ চরিত্রে তাঁর সমকক্ষ অভিনেতা আছেনও কম। বহু আগে দেখেছিলাম রোড টু ওয়েলভিল, রীতিমতো অশ্লীল কমেডি, সেটা খুঁজলাম নেটে, কিন্তু পেলাম না।
false
ij
প্রসঙ্গ অ্যাভেটার_ কল্পবিজ্ঞানের কাঠামোয় চলচ্চিত্রের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ভূমিকা ___ ইরাকে আফগানিস্তানে প্রতিদিন শত শত নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে-এমন রক্তাক্ত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আরেকটি রোমান্টিক প্রেমের ছবির স্যুটিংয়ে কীভাবে ব্যস্ত থাকেন একজন বিবেকসম্পন্ন চিত্রপরিচালক? যদি ভুল বুঝে না থাকি- ঠিক বারাক ওবামার মতো না ...অ্যাভেটার ছবিটির পরিচালক জেমস ক্যামেরুন মার্কিন প্রশাসনে যুদ্ধবিরোধী শান্তিবাদী মানুষ চাইছেন । অ্যাভেটার ছবিটির শেষ দৃশ্যে দূর গ্রহ প্যানডোরা আগ্রাসনের অন্যতম খলনায়ককে তীরধনুকের মাধ্যমে হত্যার দৃশ্যটি দেখতে দেখতে আমার মনে হল-জেমস ক্যামেরুন চাইছেন ইরাকিরা নিজস্ব পন্থায় ইঙ্গ-মার্কিন শক্তিকে পরাস্ত করুক। অ্যাভেটার ছবিটির মহিমা এখানেই।এবং ছবিটি নিছক থ্রিডি টেকনোলজি নির্ভর সস্তা কল্পকাহিনী মাত্র নয়। কানাডিয়ান পরিচালক জেমস ফ্রান্সিস ক্যামেরুনের বিশ্বময় পরিচিতি একটি প্রেমের ছবি দিয়ে। ‘টাইটানিক’। সে সময় অনেকেই আশা করেছিলেন ক্যামেরুনের পরের ছবিটিও রোমান্টিক ধরনের হবে। অথচ, বাস্তবে দেখা গেল নয়া ঔপনিবেশিক শাসন-শোষনের মতো একটি মর্মান্তিক বিষয় বেছে নিলেন ক্যামেরুন।ক্যামেরুনের এই মানসিক পালাবদলের কারণ কি?ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইরাক এবং আফগানিস্তান আগ্রাসন। ইরাকে আফগানিস্তানে প্রতিদিন শত শত নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে-এমন রক্তাক্ত বৈরী বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আরেকটি রোমান্টিক প্রেমের ছবির স্যুটিংয়ে কীভাবে ব্যস্ত থাকেন একজন বিবেকসম্পন্ন মানুষ? অধিকন্তু, ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এরূপ অমানবিক আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে অচিরেই সমগ্র মানবসভ্যতার অস্তিত্ব ভয়াবহ এক সঙ্কটের মুখে এসে পড়বে। এর প্রতিবাদ করা উচিত। যিনি লেখেন তার প্রতিবাদ প্রকাশ পায় লেখায়, একজন নাট্যকর্মীর অভিনয়ে। জেমস ক্যামেরুনের মাধ্যম চলচ্চিত্র; এটাই স্বাভাবিক যে তিনি মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদ করবেন তাঁরই নিজস্ব মাধ্যমে। উপরোন্ত একজন শিল্পীর উপকরণ হলো প্রতীক-রূপক-ম্যাটাফোর ইত্যাদি। অ্যাভেটার ছবিতে এসবই ক্যামেরুন ব্যবহার করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কল্পবিজ্ঞানের কাঠামোয়। যেহেতু ক্যামেরুন কানাডিয়ান এবং বাস করেন বাঘের ঘরের খুব কাছেই-কাজেই ছলের আশ্রয় তাঁকে নিতেই হয়। কুচক্রী প্যান্টাগন তাঁকে ফাঁসাতে চাইবেই। আর, কানাডার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। কাজেই তিনি ছল করে বললেন, অ্যাভেটারের আইডিয়া প্রথম মাথায় এসেছে ১৯৯৮ সালে, অর্থাৎ ইরাক যুদ্ধের অনেক আগেই। কিন্তু, কতজন অ্যাভাটার ছবিটির অর্ন্তগত মানেটি ধরতে পেরেছে?ডেইলি স্টার এর সহায়ক পত্রিকা -ছোটদের ‘রাইজিং স্টার’ ম্যাগাজিনে ইংলিশ মিডিয়ামের পড়া এক নতুন প্রজন্মের লেখা অ্যাভেটার ছবিটির রিভিয়্যূ পড়তে পড়তে আমার মনে হল যে ইয়ং জেনারেশন ছবিটির অ্যানিমেশন, কালার কনসেপ্ট, মেকিং, থ্রিডি টেক এসব নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন- ক্যামেরুনের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বক্তব্যের উপলব্ধিজাত কোনও আলোচনা নেই। সমস্যা এখানেই।সমকালীন ইয়ং জেনারেশন বড্ড বেশি এপোলিটিকল, অর্থাৎ রাজনৈতিক চেতনাশূন্য। দেশে-বিদেশে লোভনীয় চাকরির লোভে এদের বাবা-মারা ছেলেমেয়েদের রাজনৈতিক চেতনাশূন্য করে রাখছে। কেননা, পলিটিক্স মানে তো খুলনার বিএল কলেজে ছাত্রলীগ ও শিবিরের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত! বিদেশি কোম্পানীর কাছে স্বল্প লাভে গ্যাস-ব্লক ইজারা দিলেও প্রতিবাদের প্রয়োজন নেই, কেননা, এও পলিটিক্স!যদি ভুল বুঝে না থাকি তো বলি-অ্যাভেটার ছবির পরিচালক জেমস ক্যামেরুন ইরাক ও আফগানিস্তানে ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসন অবসানের লক্ষে পশ্চিম গোলার্ধের মহৎ হৃদয়ের অধিবাসীদের আত্বত্যাগের আহবান জানিয়েছেন।জেমস ক্যামেরুনের আগ্রাসনবিরোধী উপলব্ধি মহত্তম, মানবিক ও মানব ইতিহাসে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।
false
ij
গল্প_ পিদিম এবার হল একটা বাঘ আগের পর্ব বিকেল থেকেই রাঘবদের দিঘীর পাড়ের মাঠে চরে বেড়াচ্ছিল মালা। সন্ধ্যাবেলা মাঠে এসে মনোয়ার দেখল মাঠটা ধু ধু করছে, মালাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মনোয়ারের বুকটা ধরাস করে উঠল। এ কী! মালা গেল কোথায়? মালাকে দেখছি না কেন? মালাকে কেউ কি ছেড়ে দিল ? তিতা-কটূ নয়তো? তা হলেই তো সর্বনাশ! এখন তা হলে কোথায় খুঁজব মালাকে ? সালমার কাছে যাব? এইসব ভাবতে-ভাবতে কী মনে করে খাল পাড়ে চলে এল মনোয়ার। তারপর খালের উপর বাঁশের সাঁকেটা পার হয়ে ঝিলিমিলি নদীর পাড়ে অশথ গাছের তলায় এসে দাঁড়ল । সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকজন সচরাচর এখানে আসে না। এই স্থানটা সম্পর্কে নানা ধরনের কথা প্রচলিত আছে। এখন কিন্তু নিরুপায় হয়েই মনোয়ারকে আসতে হল। মালাকে খুঁজে না-পেলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ও ভাবছিল এদিকটা দেখে তারপর সালমাদের আমবাগানটা দেখবে। তারপর না হয় সালমার সঙ্গে বিলাইমারির জঙ্গল যাওয়া যেতে পারে।কিছুই করার নেই বলে অশথ গাছের ডালে বসে ঝিমাচ্ছিল পিদিম। এখন একবার কী মনে করে চোখটা খুলতেই গাছের তলায় মনোয়ারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সুড়–ত করে গাছ থেকে নেমে এসে একেবারে মনোয়ারের সামনে এসে পিদিম বলল, কী ব্যাপার মনোয়ার, তুমি এই ভর সন্ধ্যেবেলা এখানে কী করছ? জান না সন্ধ্যের পর অশথতলায় কত রকম ভুতপ্রেত দৈত্যিদানো বেরোয়? যদি তারা তোমার ঘাড় মটকে দেয় আর তারপর চো চো করে তোমার রক্ত পান করে?পিদিমের কথা শুনে সাংঘাতিক ভয় পেয়ে গেল মনোয়ার । ও ঠকঠক করে কাঁপতে-কাঁপতে বলল, আমি ইচ্ছে করে এখানে আসিনি ভাই। মালা হারিয়ে গেল বলে খুঁজতে বেরিয়েছি ।পিদিমের নাকের ওপর একটা মশা ঘুরঘুর করছিল। ওটাকে হাতের ঝাপটায় তাড়িয়ে দিয়ে বলল, ও এই কথা, দাঁড়াও আমিই মালাকে খুঁজে বার করছি। তার আগে চল তোমায় বাড়ি পৌঁছে দিই। বলেই চোখের পলকে বড় একটা ধবধবে রাজহাঁস হয়ে গেল পিদিম। সেই রাজহাঁসটা বলল, নাও, এবার লক্ষ্মীছেলের মতন আমার পিঠে উঠে পড় তো ।পিদিমকে রাজহাঁস হয়ে যেতে দেখে মনোয়ার মোটেও অবাক হল না। ও ভালো করেই জানে পিদিম একটা সাদা ভূত। আর পিদিম ভূত হলেও ভালো। সেদিন রসগোল্লা খাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে পিদিম আবার ফিরে এসেছিল। বসে কত গল্প করল। এখানে খাওয়ার কষ্ট। গ্রামের লোকেরা পান্তা খায়। শহরের থাকার সময় কেক-পেষ্ট্রি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করত নাকি পিদিম। মনোয়ারের ছোটবোন ফরিদা আবার কেক-পেষ্ট্রি, ব্রেকফাস্ট - এসব শব্দের মানে জানে না। পিদিম বুঝিয়ে দিল। এভাবেই কেমন করে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল পিদিমের। মনোয়ারের মা জমিলা বলল, খাওয়ার যখন এতই কষ্ট তুমি মাঝে আমাদের এখানে আসবা, খাবা। ফরিদা বলল, জান পিদিম মার রান্না না খুব ভালো। জলপাই দিয়ে পুঁটিমাছের টক খেলে জীবনে ভুলতে পারবে না।পিদিম আবদার করে বলল, আমি জলপাই দিয়ে পুঁটিমাছের টক খাব জমিলা খালা।জমিলা হেসে বলল, আচ্ছা, এদিন আমি রেঁধে খাওয়াব।মনোয়ার রাজহাঁসের পিঠে চরে বসতে বসতে সেসব কথাই ভাবছিল।রাজহাঁসটা আকাশে উড়ল।তখন সন্ধ্যেবেলা বলেই অশথ গাছের বাশিন্দার জেগেই ছিল। কেউই ঘুমায়নি। পিদিম একটা বড় রাজহাঁস হয়ে মনোয়ারকে পিঠে নিয়ে উড়ে যেতে দেখে দাঁড়কাক গড়ান গম্ভীর গলায় বলল, পিদিমের কেরামতি দেখলে চিরি? চিরি হাততালি দিয়ে বলল, হ্যাঁ, দেখলাম বৈ কী। ছেলেটাকে আমি চিনি। ওর নাম মনোয়ার।কুটুস বলল, ভারি সুন্দর তো। কী সুন্দর কালো-কোঁকড়া চুল। কী সুন্দর শ্যামলা গায়ের রং। দাঁতগুলিও ঝকঝকে, নিশ্চয়ই খুব গাজর খেতে ভালোবাসে।পিঁপড়ের দল লালসারি বলল, হ্যাঁ, ছেলেটা বেশ সুন্দর দেখতে। মনে হয় রোজ দু কাপ করে চিনি খায়।ভূতুম চিন্তিত হয়ে বলল, আমি ভাবছি পিদিম কী করে ছেলেটা কে চিনল।চিরি বলল, চিনিতেই পারে। সেটা আর এমন কী। কেন তুমি আমবাগানের সালমাকে চেন না?ভূতুম বলল, ভালোই চিনি। আমায় রোজ চিংড়ি খেতে দেয়। তা পিদিম ভূতটা খুব ভালো।চিরি কেন যেন অহেতুক ফুঁসে উঠে বলল, আমি কী বলেছি খারাপ!কুটুস মাথা নেড়ে মন্তব্য করল, কীসের মধ্যে কী।ভূতুম বলল, আমি কি বলেছি তুমি পিদিমকে খারাপ বলেছ?লালসারি প্রায়ই ভূতুমের পিঠে চড়ে বেড়ায় বলে ভুতুমের পক্ষ নিয়ে বলল, বললেই তো।কখন বললাম?এই তো এখন বললেবলিনিবলেছ।বলিনি।বলেছ।গড়ান ধমক দিয়ে বলল, এই তোমরা সামান্য ব্যাপার নিয়ে কী শুরু করেছ?চিরি রেগে উড়ে বলল, সামান্য ব্যাপার না গড়ানদা। আমি জানি আমি দ্রুত উড়তে পারি বলে ভূতুম আমায় ইর্ষা করে।বাজে কথা। লালসারি প্রতিবাদ করে বলল।ভূতুম বলল, আর আমার শক্ত খোলের জন্য তুমি আমায় ইর্ষা কর না চিরি। কতদিন সেকথা আমায় আভাসে ইঙ্গিতে বুঝিয়েও দিয়েছ। আমার এই শক্ত খোলের জন্য তোমার লোভ। জান, শহরের পন্ডিতেরা কাছিমের খোলকে বলে,“ কূর্মপৃষ্ঠ”। বলে ভূতুম কত কত করে হাসল।চিরি বলল, দেখলে দেখলে কেমন অসভ্যের মতন হাসছে।লালসারি ভূতুমের ন্যাওটা বলেই চিরিকে থ্রেট দিল, এই চিরি, মুখ সামলে কথা বল। নৈলে?নইলে কী করবে শুনি? নাহ্, তোমার অনেক বার বেড়েছে ভূতুম। আমার বিরুদ্ধে লালসারিকে লেলিয়ে দিলে। এবার ভাবছি আমি তোমায় একট গালি দেব ভূতুম।গাল দেবে? দাও তো দেখি।তুমি একটা কচ্ছপ।ভূতুম হো হো করে হেসে উঠে বলল, যা বাবা। এটা কোনও গালি হল নাকি। কচ্ছপ হল আমার বাপের দেওয়া নাম। আর কাছিম হল আমার মায়ের দেওয়া নাম। চিরি রাগ ভুলে জিগ্যেস করল, আর ভূতুম? ভূতুম খানিকটা স্মৃতি রোমন্থন করে বলল, আমার ভূতুম নামটা গড়ানের দেওয়া । গড়ানের পর আমিই কিনা প্রথম আসি অশথগাছে থাকার জন্য। এর আগে আমি ছিলাম কালিগঙ্গা নদীর পাড়ে। তো, ওখানে ছিল ভারি বদমাস একটা ভোঁদর। সে আমায় ভারি জ্বালাত বলেই পালিয়ে এলাম। চিরি কৌতূহলী হয়ে জিগ্যেস করল, কী করে জ্বালাত?ভূতুম বলল, এই ধরো আমার মাছগুলি খেয়ে ফেলত কি আমি মাছ ধরব তখন জল ঘোলা করে দিত। এইসব।চিরি অবাক হয়ে বলল, সত্যি ভূতুম?হ্যাঁ। ভূতুম হেসে বলল।এভাবে ওদের মধ্যে যখন আবার মিলমিশ হয়ে গেল তখন পিদিম গড়পাড়া গ্রামের আকাশে উড়ছিল। ওর পিঠে শক্ত করে পালক আঁকড়ে বসে রয়েছে মনোয়ার। অত উঁচুতে উঠে মনোয়ারের বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। এর আগে এত উচুঁতে কখনও ওঠেনি ও । বড়জোর নীপা সাহাদের নাগপুকুরের পাড়ের তালগাছের মাথা আর চৈত্রসংক্রান্তির মেলায় সেগুনবাড়ির মাঠের নাগরদোলা। ও নীচে চেয়ে দেখল অনেক নীচে ঝিলিমিলি নদীর জল ঝিকমিক করছে। ফুটফুটে জোছনায় গড়পাড়া গ্রামটা ছড়িয়ে রয়েছ । ইশকুল ঘরের টিনের চালটা চকচক করছে। রাঘবদের দিঘীতে মস্ত একটা চাঁদ। দূরে বিলাইমারির জঙ্গলে শেয়াল ডাকছে।মিনিট দুই পরে রাজহাঁসরুপী পিদিম মনোয়ারদের উঠানে ল্যান্ড করল। মনোয়ার ধীরেসুস্থে নামল। দাওয়ায় বসে ছিল ফরিদা। বড় ভাইকে বিশাল একটা রাজহাঁস থেকে নামতে দেখে ওর চোখদুটো ছানাবড়া হয়ে যাওয়ারই কথা। পিদিম বলল, তুমি অপেক্ষা কর। আমি দেখছি মালা কোথায়। আচ্ছা। মনোয়ার মাথা নেড়ে জানাল।পিদিম বিদ্যুতের সালমাতের আমবাগানে এল। তন্ন তন্ন করে ...না কোথাও নেই। গেল কোথায়? চোখ কপালে তুলে ভাবতে লাগল পিদিম। পিদিমের হঠাৎই মনে হল ইস, বিলাইমারী জঙ্গলটা তো দেখা হল না। মালা ওখানে যায় নি তো? ভাবতেই পিদিম বিলাইমারি জঙ্গলের দিকে যেতে লাগল । বিলাইমারির জঙ্গলটা খাল পেরিয়ে, ঘন বাঁশের ঝাড় পেরিয়ে আর গ্রামের শ্মশানটা পেরিয়ে গড়পাড়া গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে । জায়গাটা ভাল না। সাপখোপ আর দৈত্যদানোর ভয়ে লোকে সচরাচর এদিকে রাতের বেলা আসে না দিনের বেলাতেও আসে না। বিলাইমারি জঙ্গলভরতি পুরনো দিনের উঁচু উঁচু গাছ। ঝিলিমিলি নদীটা জঙ্গলের একপাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ভয়ঙ্কর এই বিলাইমারির জঙ্গলের একটা বহুদিনের পুরনো হরীতকি গাছের নীচে থামল পিদিম । রাত বাড়ছিল বলে পাতলা জোছনা ঘন হয়ে উঠছিল। জঙ্গলটা শুনশান হয়ে আছে। ঝিঁঝি ডাকছে। মাঝে মাঝে শেয়াল। শনশন করে নদীর দিক থেকে হাওয়া বয়ে গেল। পিদিম চারিদিকে চেয়ে দেখল। আরেকটু ভালো করে তাকাতেই পিদিম দেখল দূরে আর তিনটে ছায়ামূর্তি ওরা কী নিয়ে কথা বলছিল। আসলে ওরা হল তিতা-কটূ আর সার্কাসের মালিক রাব্বানীর ডানহাত গাবু। পিদিমের তো তা জানার কথা নয়। আরেকটু ভালো করে তাকাতেই পিদিম দেখল একটু দূরে একটা কামরাঙা গাছের গুঁড়িতে মালাকে বেঁধে রেখেছে। মনে হচ্ছে ওরাই কান্ডটা করেছে। ওই তিনজন কী বলে তা শোনার জন্য পিদিম কান পাতল।গাবু বলছিল, না না কুড়ি হাজার বেশি হয়ে যায়। আমি সাতশ টাকা দেব। তোমরা বেশি দাম হাঁকলে পির ছাহেব নারাজ হবেন।কটূ কী বলতে যাবে। পির সাহেবের কথায় বলল না। আসলে হয়েছে কী, কাল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নাইওরিগঞ্জের লবেযান পিরের বার্ষিক ওরস মোবারক। গাবু আবার বহুবছর ধরে নাইওরিগঞ্জের লবেযান পিরের মুরিদ। গরু কিনে পিরের থানে গেলে সম্মান বাড়বে গাবুর। অন্যরাও ইর্ষা করবে। তিতে-কটূকে আজ বিকেলে দেখে শস্তায় একটা গরুর কথা বলে রেখেছিল গাবু। তিতে-কটূ মালার কথাই ভেবেছিল। মালাকে সবই ঠিকঠাক মত চলেছিল। তিতা-কটূ সন্ধ্যের মুখে মালাকে রাঘবদের দিঘীর ...তুলে এনেছে বিলাইমারীর জঙ্গলে। এখন গোল বেঁধেছে দরদাম নিয়ে। কটূ বলল, এত বড় গরু মাত্র সাতশ টাকা দেবেন। না, না, আমরা পয়ত্রিশ হাজারের নীচে ছাড়ব না।পয়ত্রিশ হাজার! বল কী। ইয়ারকী নাকি। চুরির গরুর অত দাম হয় নাকি?হয় না আবার। কুরবানী ঈদ পর্যন্ত এটাকে রাখতে পারলে বিয়ালি¬শ হাজার পাব জানেন।ঠিক আছে সাতশ টাকা সাড়ে আটশ টাকা দেব।এই তিতা চল। মালাকে কোথায় রেখে বাড়ি যাই। খিদে পেয়েছে। বিকেলবেলা মাকে বলতে শুনলাম,“ রাতে ধনেপাতা দিয়ে কই রাঁধিস মল্লি¬কা।”তাই চল।আরে দাঁড়াও দাঁড়াও তোমরা দেখছি বড্ড রেসিক আদমী হ্যায়। মুলোমুলির ধার ধারও না। আসলে মুলোমুলি মানে বারগেনিংটা হচ্ছে একটা কালচার। আমি একবার হাতির বাচ্চার দরদাম করতে থাইল্যান্ড মানে তাইল্যান্ড গেলাম। হাতির বাগারে আগুন। একজকত চাইল?কত চাইল?হ্যাঁ।বিয়াল্লিশ হাজার আমি সাড়ে সাতশ বলতেই রাজী হয়ে যায় আর কী ... পিদিম বেশ বুঝতে পারল দুটি দুষ্টু ছেলে মালাকে চুরি করে এনে একটাবেঁটে মতন পাজী লোকের কাছে বিক্রি করে দিতে চাইছে। তাই নিয়েই দর কষাকষি চলছে। পিদিম সময় নষ্ট করল না। চোখের নিমিষে ও একটা প্রকান্ড ডোরাকাটা বাঘ হয়ে গেল। যে সে বাঘ নয়। একেবারে সুন্দরবনের ডাকসাইটে রয়্যাল বেঙল টাইগার। বাঘ হয়েই গর্জে উঠল পিদিম, হালুম।বাঘ! ওরে বাবারে ... বাঘ ...। কথাটা কে বলল বোঝা গেল না। তবে গলা শুনে মনে হল গাবুই বলল। পালা কটূ। কথাটা বলামাত্র তিনজনই ছুট লাগাল ঘুরে। গভীর বনের মধ্যে দিয়ে ছুটতে ছুটতে গাবু ভাবল, সর্বনাশ! সার্কাসের বাঘটা ছুটল কী করে। এখন গ্রামে লোকজন ধরে ধরে খাবে। তা হলেই সর্বনাশ। লোকে তাহলে সার্কাসের তাবুতে আগুন দেবে। কিন্তু এ কী! তিতা-কটূ গেল কই। আসলে তিতাকটূ ততক্ষনে উর্ধশ্বাসে দৌড়ে শ্মশানটা পেরিয়ে ঘন বাঁশের ঝাড় পেরিয়ে খাল পেরিয়ে তালপুকুরের পাশে ময়নার মাঠে এসে হাঁপাতে লাগল। কী আজব এন্ড কোং সার্কাসের তাবু এই ময়নার মাঠের এককোণে পড়েছে। এখান থেকে ওদের মন্ডলবাড়ি খুব একটা দূরে না। কিন্তু ওদের বাঘের ভয়ে বাড়ি যাওয়ার হিম্মত হল না। ময়নার মাঠে অনেক গাছ। সেদিকে চেয়ে কটূ বলল, এই তিতা বাঘে কি গাছে চরতে পারে?জানি না। পারে মনে হয়। এখন মনে আসছে না।বকুল গাছ?মনে হয় না।তাহলে চল ওই বকুলগাছে উঠে আজ রাতটা কাটিয়ে দিই।হ্যাঁ। সেই ভালো। ওরা তরতর করে একটা বকুল গাছের ডালে চরে বসল। ওদের ঠকঠকানি কাঁপুনি তখনও কমেনি।ওদের তিনজনকে অমন ভাবে পালাতে দেখে পিদিম তো হেসেই খুন। ও মুহূর্তেই বাঘের রুপটা বদলে নিল। নইলে মালা ভয় পাবে যে। রুপ বদলে মনের আনন্দে কয়েকবার ডিগবাজী খেল পিদিম। তারপর পরম আনন্দে মালার দড়িটা কামরাঙ্গা গাছ থেকে খুলে নিয়ে মনোয়ারদের বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।মালা পিদিমকে ঠিকই চিনেছে। ও তাই কয়েকবার খুশির চোটে হাম্বা হাম্বা করে ডেকে উঠল। আরেকটু হলেই ভন্ড পিরের আস্তানায় প্রাণটা জবাই হয়ে যাচ্ছিল। এত কান্ড করে করে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল পিদিম। এখন তাই হাত পা ছড়িয়ে গভীর ঘুমে পড়ে ছিল ঘাসের বনের ভিতরে। রাতের খাওয়াটা পিদিম মনোয়াদের বাড়িতেই সেরেছিল। বেলে মাছের ঝোল দিয়ে পেটপুরে ভাত খেয়ে নিয়েছিল। জমিলা খালা এখন অনেকটাই সুস্থ। মাছ তিনিই রেঁেধছিলেন। খালার হাতের রান্না খেয়ে রাতে নাকি ভালো ঘুম হয়।ফরিদা তো তাইই বলল।
false
ij
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল_ রহস্য কি ফুরাল_ আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য সেই ১৯৭৫ সালেই ফুরিয়েছে। তারপরও আশির দশকে, আমাদের কৈশরে, সেই রহস্য জিইয়ে রেখেছিল সেবা প্রকাশনী । তো, কী ভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য ফুরালো? বলছি। ঢাকার শনির আখড়ার নাম তো শুনেছেন- ডেমরা থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যে অভিশপ্ত (!) জায়গাটি সড়ক দূর্ঘটনার জন্য কুখ্যাত। আসলে হিসেবনিকেশ করে দেখা যাবে শনির আখড়ার দূর্ঘটনার সংখ্যা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের দূর্ঘটনার সংখ্যা থেকে খুব একটা বেশি নয়-শনির আখড়া নিয়ে খামাখা চাঞ্চল্যকর কাহিনী ছড়ানো হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য সংক্রান্ত এরকমই এক হিসেব দাখিল করেছিলেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভারসিটির গ্রন্থাগারিক লরেন্স ডেভিড কাসচি। তিনি ১৯৭৫ সালে “দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল মিসট্রি : সলভড” নামে একখানি বই প্রকাশ করেন। যে বইয়ে কাসচি যুক্তিপ্রমাণ হাজির করে দেখান যে আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য নিয়ে অতিরঞ্জিত কাহিনী ছড়ানো হয়েছে। আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ‘মিসটিফাই’ বা রহস্যঘন করা হয়েছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে গায়েব হয়ে যাওয়া জাহাজ ও উড়োজাহাজের সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের নৌ ও বিমান দূর্ঘটনার সংখ্যা চেয়ে খুব বেশি নয়! ত্রিভূজ কল্পনা না করলে জায়গাটিকে সাধারন স্থানই বলে মনে হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অবস্থান ক্যারিবীয় সমুদ্রে। এর এক প্রান্ত ছুঁয়েছে বারমুডায়, অন্য প্রান্তটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মায়ামি এবং আরেকটি প্রান্ত স্পর্শ করেছে পুয়োর্তরিকোর সাজ জুয়ান। (ছবি দেখুন) ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে অ্যাসোসিয়েট প্রেসের এক প্রবন্ধে সাংবাদিক ই ভি ডাবলিউ জোনস প্রথম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অস্বাভাবিক ঘটনার কথা লিখেন । লেখাবাহুল্য, শনির আখড়ায় প্রথম দূর্ঘটনার দিনক্ষণ বাঙালির মনে থাকার কথা নয়। এর দুই বছর পর, অর্থাৎ ১৯৫২ সালে ‘ফেট’ ম্যাগাজিন-এর জর্জ এক্স সান্ড লিখেন “সি মিসট্রি অ্যাট আওয়ার ব্যাক ডোর”। বাংলা ভাই যেমন মিডিয়ার তৈরি, বুঝতেই পারেন ...মিডিয়া কী ভাবে একটি অঞ্চলকে রহস্যঘন করে তুলতে পারে। আর কেউই বিশ্বাস নাই করুক আমি অন্তত বিশ্বাস করি যে এখানেই ছিল প্রাচীন আটলানটিস। অবশ্য গ্রিক ইতিহাস আর মানচিত্র সম্বন্ধে যাদের বিন্দুমাত্র জানাশোনা আছে তারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। কেননা, সমুদ্রসভ্যতা আটলানটিস-এর কথা প্রথম উল্লেখ করেন মাননীয় গ্রিক দার্শনিক প্লেটো। প্লেটোর পক্ষে যেমন আই পি এল, ললিত মোদী কিংবা ক্যারিবীয় ক্রিকেটের কথা জানা সম্ভব নয়, তেমনি ক্যারিবীয় সমুদ্রের কথাও জানার কথা নয় ...যা হোক ‘ফেট’ ম্যাগাজিন-এর সাংবাদিক জর্জ এক্স সান্ড ৫ জন ইউএস নেভি সহ ১৯ নং ফ্লাইটের নিখোঁজ সংবাদ ছাপেন । এই জর্জ এক্স সান্ড বিশাল কামেল লোক। কেননা, সান্ডই প্রথম ঐ এলাকায় কাল্পনিক একটি ত্রিভূজ আঁকেন। বুঝেন এইবার, লোকটা কত বড় মাতবর! এরে এখন ঢাকায় জীবিত পেলে ‘কালের কন্ঠ’ আর ‘প্রথম আলো’ কী রকম টানাটানি করত ভাবেন একবার ...যা হোক। সান্ড লিখেছে ... নিরুদ্দিষ্ট ১৯ নং ফ্লাইটের ক্যাপ্টেইন নাকি বলছিলেন- “আমরা ক্রমশ সাদা পানিতে ঢুকে পড়েছি। কিছুই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আমরা জানি না আমরা কোথায়। পানি সাদা না সবুজ। ”প্রশ্ন : আচ্ছা, যে প্লেনটি চিরতরে হারিয়ে গেল তার পাইলটের কথা কীভাবে শোনা গেল? উত্তর: কেন প্ল্যানচেটের মাধ্যমে।আর কি কি ভাবে কখন কোন্ কোন্ জাহাজ বা বিমান ওই রহস্যময় (!) স্থানে গায়েব হয়ে গেছে তার তালিকা দিয়ে অহেতুক এই পোষ্ট লম্বা করে লাভ নেই। উনিশ ’শ পঞ্চাশের পর দীর্ঘদিন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে ঘিরে নানান গা-ছমছমে রোম-খাঁড়ানো কল্প কাহিনী আপনার আমার মতো পৃথিবীর রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য (!) নিয়ে রচিত হয়েছে অজস্র বই, নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র-এমন কী চলচ্চিত্রও। সে রকম এক চলচ্চিত্রের দৃশ্য অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভারসিটির লাইব্রেরিয়ান লরেন্স ডেভিড কাসচি পৃথিবীর রোমাঞ্চ প্রিয় মানুষের অতি উৎসাহে পানি ঢেলে দিয়েছেন। আগেই বলেছি কাসচি ১৯৭৫ সালে “দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল মিসট্রি : সলভড” নামে একখানি বই প্রকাশ করেন। সে বইটি কাসচি কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা জানান: ১ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে নিরুদ্দিষ্ট জাহাজ ও উড়োজাহাজের সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি নয়। (আমি মনে করি ঢাকাস্থ ডেমরা থানাধীন শনির আখড়া সম্বন্ধেও একই কথা প্রয়োজ্য ...)২ ক্যারিবীয় সমুদ্রের ওই বিশেষ জলসীমায় প্রায়ই ট্রপিক্যাল ঝড় ভয়ঙ্কর রুপ নেয় , কাজেই ঝড়েন ঘূর্ণিপকে জলযান নিঁখোজ হওয়াটা কি রহস্যময় ? সাংবাদিক ই ভি ডাবলিউ জোনস, জর্জ এক্স সান্ড প্রমূখ যারা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ঘিরে রহস্য ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা ঝড়ের কৌশলে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে।৩ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে গায়েব হয়ে যাওয়া জাহাজ/উড়োজাহাজ সংখ্যা যত না - তার চেয়ে বেশি দাবী করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি জাহাজ নিখোঁজ হলে সিরিয়াসলি রিপোর্ট করা হয়েছে কিন্তু ফিরে এলে সে ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকেছে।৪. কোনও কোনও সময়ে নিরুদ্দেশের ঘটনাই ঘটেনি। বলা হয়েছে ১৯৩৭ সালে একটি প্লেন ক্র্যাশ করেছে। আসলে ওমন কিছুই ঘটেনি।৫. আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য হল ‘প্রস্তুতকৃত রহস্য’ বা ম্যানুফাকচারড মিসট্রি ...যা লেখকরা ভুল ধারণার ওপর জিইয়ে রেখেছে, এর পিছনে কাজ করেছে মিথ্যে যুক্তি আর রগরগে কাহিনী ছড়ানোর বাতিক। আমরা দিন কয়েক আগের ভন্ডপির সংক্রান্ত ‘প্রথম আলোর’ সেই তোলপাড় করা প্রতিবেদনের কথা মনে করতে পারি। ১৯৭৫ সালে কাসচি যাইই লিখুন আজও রোমাঞ্চপ্রিয় বিশ্ববাসীর বিশ্বাস ক্যারিবীয় সাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল অতি রহস্যময় স্থান। আসলে লরেন্স ডেভিড কাসচি অতি বাস্তববাদী লোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান তো-একঘর বইয়ের মধ্যে বাস করে রসকষ শুকিয়ে গেছে কাসচি-র। আসলে বেঁচে থাকতে চাই বিস্তর রসবোধ। আপনার পাশের বাড়ির ছাদে যদি মধ্যরাতে ভূতপ্রেতের আড্ডা নাই বসে তো তাহলে কেমন অস্বস্তি হয় না? তাই বলছি, আপনি যদি মনে করেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বাস্তবিকই অতি রহস্যময় স্থান আর কাসচি লোকটাই ভূয়া ... তাহলে আপনাকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন আমি অন্তত বলব না । যতদিন বেঁচে থাকা যায় ততদিন গালগপ্পে ভরা রগরগে জীবনই ভালো-অফিসের টিফিন টাইমে কলিগদের বলবেন মাঝরাতে জানালার পর্দা ফাঁক করে পাশে বাড়ির ছাদে কি সব দেখলেন ...তাইই বলছিলাম এইটুকুন জীবনে এত কট্টর যুক্তিপ্রমান দিয়ে কি হবে। জীবনে প্রচুর রহস্যরোমাঞ্চ থাক-আমরাও যন্ত্রের চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়া অভাগা মানুষ সামান্য কল্পকথার তোড়ে তেলতেলে হয়ে টইটুম্বুর ভাবে বেঁচে থাকি না কেন...কাসচির যুক্তির চেয়ে এই গা ছমছমে ছবিটা টানে বেশি উৎসর্গ: সুরঞ্জনা। বেশ কিছুকাল ধরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য নিয়ে লিখব-লিখব ভাবছিলাম। সুরঞ্জনা আপা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
false
ij
শচীনকর্তা শচীন কর্তা "His range was unbelievable. To think that the same man composed for both Chalti Ka Naam Gadi and Sujata!"- জাভেদ আখতার। ১৯০৬ সালের কুমিল্লা জেলা কেমন ছিল? নির্জন। নির্জন ও ব্রিটিশশাসিত। সেই কুমিল্লা জেলায় বেড়ে উঠেছিল এক বালক; যে বড় হয়ে অঞ্চলটি লোকগানের সুর ছড়িয়ে দেবে আরও বৃহত্তর পরিসরে, সারা পৃথিবীতে। বালকটির নাম শচীন, শচীন দেববর্মন। শচীনরা আদতে আগরতলার বাসিন্দা হলেও শচীন দেবের শৈশব কেটেছিল কুমিল্লায়। শচীন দেববর্মণের বাবা নবদ্বীপচন্দ্র দেববাহাদুর ছিলেন ত্রিপুরা রাজবংশের সন্তান। শচীনের জন্ম ১ অক্টোবর ১৯০৬। তাই তখন বলছিলাম ১৯০৬ সালের কুমিল্লা জেলা কেমন ছিল? নির্জন। নির্জন ও ব্রিটিশশাসিত। এবং তখনও জেলাটি কবি নজরুলের পদচারণায় ধন্য হয়নি। ১৯০৬ সালে কবি নজরুলের বয়স ৭। জীবনানন্দেরও। দুজনেরই জন্ম ১৮৯৯। যা হোক, আগরতলাবাসী ত্রিপুরা রাজবংশের সন্তান নবদ্বীপচন্দ্র দেববাহাদুরের গানের গলা ছিল চমৎকার। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও সাধনা করেছিলেন। শচীনকর্তার ভাগ্য ভালোই বলতে হয়-এমন বাবা পাওয়া! তো, কুড়ি শতকের প্রারম্ভে কুমিল্লা অঞ্চলে যে সব লোকগীতি গাওয়া হত ছেলেবেলায় সেই গানগুলি শুনে বালক শচীনের মনে যে রকম তোলপাড় উঠেছিল -সে সম্বন্ধে আমরা আন্দাজ করতে পারি। বাঁশী শুনে আর কাজ নাই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশী। কিংবা নিশীতে যাইও ফুলবনে ও ভোমরা নিশীতে যাইও ফুলবনে। (এই গানটা যদি সাদামাটা মনে হয়; তা হলে ইংরেজি অনুবাদ করে দেখুন- চমকে যাবেন। নজরুলের অনেক গানেও কৌশলটা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।) যা বলছিলাম। বালক শচীন লোকগানে মুগ্ধ। বালকটি সাধারন হলে ওখানেই থমে পড়ত। না। শচীন লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করতে লাগলেন। রাগ সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয়েছিল বাবার কাছে। ধীরে ধীরে রাগ সঙ্গীতের ওপর ধারনা স্বচ্ছ হল। অনেক কিছু জানলেন। যেমন, লৌক্ষ্ম শহরের বাইজি পাড়ায় গভীর নির্জন রাতে যে রাগটা বাজে, তার নাম পিলু; আর, কলাবতী রাগের সুরে যে সাপেরা আকৃষ্ট হয়! গানের পাশাপাশি চলল লেখাপড়া। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ পাশ করলেন, করে ত্রিপুরার রাজদরবারে চাকরি করলেন কিছুদিন। গানের এমনই নেশা যে- কিছুতেই চাকরিতে মন বসে না। আবার কোলকাতায় ফিরে গুরুদের পায়ে পড়লেন। ভাগ্যিস গুরুরা সদয় ছিল। সঙ্গীতের তালিম শুরু হল। শচীনকর্তার ওস্তাদদের মধ্যে ছিলেন আলাউদ্দীন খাঁ, বাদল খাঁ, ফৈয়াজ খাঁ, আবদুল করিম খাঁ। পন্ডিতদের মধ্যে ভীষ্মদেব ও কানা কৃষ্ণর নাম উল্লেখযোগ্য। ১৯২৩। কোলকাতা বেতারে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ হল। বাঁশী শুনে আর কাজ নাই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশী ... সামান্য নাকি সুর হলেও আলোরণ উঠল। ১৯৩২ সালে বেরুল প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড। আলোরণ উঠল। আব্বাসউদ্দীনের পর লোকসঙ্গীতে এমন আলোরন আর কে তুলেছিল? নজরুলসঙ্গীতের রেকর্ডও বার করেছিলেন শচীন কর্তা। নজরুল নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তাছাড়া অনেক বাংলা গানের সুর করলেন। ১৯৩৪। নিখিল ভারত সঙ্গীত সম্মেলনে গান গেয়ে পেলেন স্বর্ন পদক। ১৯৩৭ সালের পর অনেকগুলি বাংলা ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন। আর সেসব ছবির গানের কী সুর। সুর আধুনিক হলেও একই সুরে লোকগীতির কি সূক্ষ্ম উপস্থাপনা। লোকের ভালো লাগল। লোকে ভালোবেসে নাম দিল শচীনকর্তা। ১৯৪৪। বোম্বে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিলেন কর্তা। তারপরে ইতিহাস ত্রিপুরা রাজবংশের এক সঙ্গীতঅন্তপ্রাণের ভারত-কাঁপানোর ইতিহাস। কর্তাকে নিয়ে দেব আনন্দের মন্তব্য-"He was one of the most cultured and sophisticated music director I have ever encountered." সেই উত্তাল দিনগুলি নিয়ে সম্প্রতি একটি ওয়েভসাইট কি লিখেছে পড়ুন-Dada has scored music for 89 hindi and 31 bangla movies. other than he has scored almost 137 bangla nonfilm songs as well as 26 hindi no film songs. all nonfilm songs are belssed with dada's voice except one which is sung by lady of the house Meera Dev Burman. ১৯৬৯। পদ্মশ্রী উপাধি পেলেন শচীনকর্তা। নানা দেশ ঘুরেছেন কর্তা। বই লিখেছেন। বইয়ের নাম: “সরগমের নিখাদ।” (বইটি খুঁজছি।) বিয়ে হয়েছিল মীরা দেবীর সঙ্গে। গানও গাইতেন মীরা দেবী। এদেরই পুত্র রাহুল দেববর্মন। বাবা বেঁচে থাকতেই গানের জগতে প্রতিষ্ঠিত রাহুল। বোম্বের লোকেরা নাকি মজা করে বলত- Amazingly dada has scored music for film "Dil Ki Rani" where his son Rahul Dev Burman has composed for "Dil Ka Raja". কর্তার মৃত্যু। ১৯৭৫। বোম্বে। তথ্য আলি নওয়াজ লিখিত বাংলাপিডিয়ার একটি প্রবন্ধ সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:২৭
false
fe
ইতিহাসের আলোয় সুশাসনের সদিচ্ছা ইতিহাসের আলোয় সুশাসনের সদিচ্ছা ফকির ইলিয়াস=========================================একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদ শিরোনাম দেখে রীতিমতো শঙ্কা হয়েছে। ওই শিরোনামে বলা হয়েছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিতব্য চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘সৎ নেতৃত্ব’ খোঁজা হচ্ছে। ওই দৈনিকে চারজন প্রার্থীর ছবিসহ নামও ছাপা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকারি বিভিন্ন সংস্খার নির্বাহী কর্মকর্তারা এসব ‘সৎ ব্যক্তিত্বের’ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং এই ‘সৎ নেতৃত্ব প্রকল্পকে’ নেপথ্যে সমর্থন দিচ্ছে জামায়াত। কিংস পার্টির এই কর্মযজ্ঞ ভাবিয়ে তুলেছে দেশবাসীকে। (দেখুন দৈনিক সমকাল ২৭ জুলাই ২০০৮)।এখানে একটি কথা স্মরণ করা যেতে পারে, বর্তমান ওয়ান ইলেভেনের চেতনাধারী সরকার ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা দিয়েছিল, তারা যোগ্য ও সৎ নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিদায় নেবে। যা জাতিকে আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু সেই সৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার ও স্বাধীনতা তো রাষ্ট্রের জনগণেরই থাকার কথা। নির্বাচন এলে আমরা দুটি শক্তির বিচরণ লক্ষ্য করি। একটি হচ্ছে টাকাওয়ালা পেশিশক্তি। যারা টাকা ও বাহুবল দিয়ে ভোট দখলের স্বপ্নে বিভোর থাকে এবং কখনও তারা জিতেও যায়। অন্যদিকে সৎ এবং নিষ্ঠাবান প্রার্থীরা তাদের নীতি ও আদর্শ নিয়ে হাজির হন মানুষের কাছে। আর এসব প্রার্থীর নিকট অতীতে জিতে আসতে বেশ বেগ পেতেই হয়েছে বলা যায়।বাংলাদেশে কালো টাকা ও পেশি সন্ত্রাসের জন্ম কারা দিয়েছে? এর সহজ উত্তর হচ্ছে­ এক শ্রেণীর রাজনীতিকই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল কিংবা হয়রানি করার জন্য নিজ নিজ অঞ্চলে মস্তান পুষেছেন। আর এসব সন্ত্রাসী রাজনৈতিক মদদ পেয়েই এক সময় রাজধানীতে এসে নিজ নামের সঙ্গে ‘কুত্তা’, ‘টোকাই’, ‘বানর’ ইত্যাদি উপাধি লাগিয়ে ত্রাস হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য।এই যে একটি চরম ত্রাসের রাজত্ব­ তা কি একদিনে সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশে? না একদিনে হয়নি। আর এই অস্বস্তিকর পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে সুবিধাবাদী রাজনীতিকরাই ভমিকা রেখেছে সবচেয়ে বেশি। যারা এসব অনিয়ম, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলতে চেয়েছেন, তাদেরই খুন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ময়েজউদ্দিন, শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, জাসদ নেতা কাজী আরেফ আহমদ এমনকি বিশিষ্ট সাংবাদিক শামছুর রহমানও এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এই বাংলাদেশে।কিন্তু ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, যারা প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী ভেবে তাদের খুন করিয়েছিলেন, সেই হীনমনা নেতারা কি সমাজে টিকে থাকতে পেরেছেন? না, তারা আজ ভাল অবস্খায় নেই। কারণ ইতিহাসের সত্যস্তম্ভ কালে কালে স্বার্থপরদের চিহ্নিত করেই যায়।রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকতেই পারে। আর সেই ভিন্নতা ডিঙিয়ে যারা টিকে যেতে পারেন তারাই কালের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক। প্রতিবেশী দেশ ভারতে মনমোহন সিং সরকার আবারও টিকে গেছে সাংসদের ভোটে। এই যে উদাহরণ­ সেটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রকৃত শিক্ষা। খুবই পরিতাপের কথা, বাংলাদেশে সেই আদর্শ চর্চা অতীতে হয়নি। এখনও হচ্ছে না।সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ‘সৎ নেতৃত্ব’ প্রতিষ্ঠার নামে যদি কোন বিশেষ মহলের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয় তবে তা হবে জাতির জন্য খুবই দু:খজনক অধ্যায়। কারণ এই নির্বাচনের ভবিষ্যতের ওপরই নির্ভর করছে বাকি নির্বাচনগুলোর ধারাবাহিকতা। বড় দল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদি কিংস পার্টির প্রার্থীদের সিটি মেয়র হিসেবে জিতিয়ে আনার তদবির করা হয় তবে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ আরও আঁধারে নিমজ্জিত হতে পারে। দুই.সত্যকে ঢেকে দেয়া কিংবা মিথ্যার বেসাতি ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা বাঙালি জাতিকে বরাবরই পিছিয়েছে। আর ইতিহাস পাল্টে দিতে যারা এদেশে বেশি তৎপর থেকেছে তাদেরই সহচর হয়েছে বারবার সেই পরাজিত রাজাকার-আলবদর চক্র।জেনারেল জিয়ার মন্ত্রিপরিষদে শাহ আজিজ, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, ড. আলীম আল রাজীর মতো রাজাকার চক্রের সমাবেশ যেমন ঘটেছিল, তেমনি ঘটেছিল এরশাদের স্বৈরশাসনের সময়ও। মাওলানা আবদুল মান্নানের মতো রাজাকারের পরামর্শেই এরশাদ একেক দিন একেক মসজিদে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতেন বলে কথিত আছে। ইতিহাস পাল্টাতে, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে ধর্মীয় বৈষম্যের বীজ ছড়াতে এদেশে এরশাদের ভমিকা কোন অংশেই কম ছিল না। সেই এরশাদ এখন আওয়ামী লীগের ‘মহাজোটে’ মিশে গিয়ে নির্বাচনী ভাগবাটোয়ারায় অংশ নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানও তেমন ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও তিনি বলেছেন, সব ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবেন শেখ হাসিনা।আমি সবিনয়ে আবারও এ প্রশ্নটি করতে চাই, স্বৈরশাসক এরশাদ কি কোনকালে অসাম্প্রদায়িক শক্তি ছিল? এরশাদের দল কি প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী বলে দাবি রাখে? তারাই তো দেশে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ প্রবর্তন করে পরোক্ষভাবে মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশে।আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং এই দিবসটিতে সরকারি ছুটি দিতে হাইকোর্টে মামলা করতে হয়েছে। মামলায় জয়ী হওয়ার মাধ্যমে আবার জাতি পালন করবে জাতীয় শোক দিবস। জাতির জনক বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের যারা হত্যা করেছিল, তাদের উচ্চাভিলাষ ছিল সুদরপ্রসারী। জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ উভয়েই সেই ঘাতক চক্রের বেনিফিশিয়ারি। এই দুই সামরিক শাসকই নিজেদের মনগড়া ‘সৎ ব্যক্তিত্ব’দের ক্ষমতায় বসিয়ে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগের স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু দুই ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের’ প্রবক্তার বর্তমান পরিণতিও দেখছেন দেশবাসী।বাংলাদেশে সুশাসনের সদিচ্ছা নিয়ে খুব কম শাসকই এসেছেন। এরা মুখে এক কথা বললেও কাজ করেছেন ভিন্ন স্বার্থ রক্ষা করে। খুব নিকট ভবিষ্যতে কি হবে, কিংবা হতে যাচ্ছে তাও বলা খুব কঠিন। আমরা দেখছি, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাদের বিভিন্ন চেতনা থেকেই ক্রমেই সরে যাচ্ছেন। গ্রেফতারে নতুন মুখ যোগ হলেও প্রকৃত দুর্নীতিবাজ অনেকেই থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। হঠাৎ করে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমদের পরিবারের বিভিন্ন দুর্নীতি, দখলের খবর বেরুচ্ছে পত্রপত্রিকায়। এসব কিসের আলামত তা কিছুই বলা যাচ্ছে না। অথচ ওয়ান ইলেভেনের প্রথম ও প্রধান চেতনা ছিল দেশকে দু:শাসন, দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে মুক্ত করা।রাষ্ট্রের জনগণ ভাল সব কাজকেই সমর্থন দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও দেবে। তবে চাপিয়ে দেয়া কোন বোঝা জাতি অতীতেও বহন করেনি, আগামীতেও করবে না। ইতিহাসে মুখ দেখে সুশাসনের সদিচ্ছা প্রসারিত করলেই বর্তমান ক্ষমতাসীনরা সবচেয়ে মহৎ কাজ করবেন।নিউইয়র্ক, ২৯ জুলাই ২০০৮ -------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১ আগষ্ট ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
hm
পুরনো বাড়ি কবেকার মৃত কাক: পৃথিবীর পথে আজ নাই সে তো আর; তবুও সে ম্লান জানালার পাশে উড়ে আসে নীরব সোহাগে মলিন পাখনা তার খড়ের চালের হিম শিশিরে মাখায়; তখন এ পৃথিবীতে কোনো পাখি জেগে এসে বসেনি শাখায়; পৃথিবীও নাই আর; দাঁড়কাক একা — একা সারারাত জাগে; কি বা হায়, আসে যায়, তারে যদি কোনোদিন না পাই আবার। নিমপেঁচা তবু হাঁকে : ‘পাবে নাকো কোনোদিন, পাবে নাকো কোনোদিন, পাবে নাকো কোনোদিন আর।’ --- "এই সব ভালো লাগে", জীবনানন্দ দাশ টুলুর দিকে ঘাড়টা হালকা কাত করে তাকিয়ে আছে কাকটা। টুলু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কাঠের খেলনা বন্দুকটাতে একটা বরইয়ের বিচি ফিট করা আছে। কিন্তু হাতটা শরীরের পেছনে লুকানো। কাকটার মাথায় অনেক বুদ্ধি। একটু নেচে সামান্য ঘুরে দাঁড়ায় কাকটা। তারপর তিড়িক তিড়িক করে লাফিয়ে কার্ণিশের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ায়। গলাটা একটু সামনে বাড়িয়ে নির্বিকার গলায় শুধু বলে, "ক্ক!" টুলু জানে, কাকটা দেখছে ওকে। কাকটা সব বোঝে। মাথাটা হঠাৎ ঘুরিয়ে অন্য চোখ দিয়ে দেখে, টুলুর হাতে এখন কী। যদি দেখে, টুলুর হাতে বন্দুক, তাহলেই ফসকে যাবে। একবার উড়তে শুরু করলে আর ওকে গুলি করা যাবে না। টুলু একদম কাঠের পুতুলের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কাকটাও উদাস বৈরাগ্য নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। পৃথিবীতে আর কোন কাজ ওর আর নেই আজকের দিনটায়। সে শুধু টুলুর হাতের দিকে নজরদারি করেই বেলাটা কাটিয়ে দেবে। টুলু শরীরের ভর বদল করে, বাম থেকে ডান পায়ে। কাকটা তিড়িক করে নেচে ঘুরে দাঁড়ায়, অন্য চোখ দিয়ে টুলুকে দেখতে থাকে। আর একবার বিদ্রুপের সুরে বলে ওঠে, ক্ক্যা? টুলু নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে। দাদা যেমনটা বলেছিলো, শিকারী হতে হলে চাই ধৈর্য। টুলু মনে মনে বলে, আমি শিকারী। আমার অনেক ধৈর্য। ও অন্যদিকে না ফেরা পর্যন্ত, আমি নড়বো না। এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো। আমি শিকারী। কাকটাও যেন বোঝে, টুলু শিকারী। তার হাতে আছে একটি কাঠের বন্দুক। সেই বন্দুকে গোঁজা আছে একটি অমোঘ বরইয়ের বিচি। সামান্যতম বেখেয়াল যদি সে হয়, যদি সে নাচতে নাচতে কার্ণিশের ঐধারটায় গিয়ে টুলুর হাত থেকে চোখ ফিরিয়ে একটি বার দাঁড়ায়, অমনি টুলুর হাতে নিমেষে উঠে আসবে বন্দুকখানা, ট্রিগারে চেপে বসবে আঙুল, আর প্রচণ্ড গর্জনের পর অনেক কালো বারুদের ধোঁয়া চিরে ছুটে আসবে একটি বরইয়ের বিচি, চুরমার করে দেবে তার নশ্বর কাকের পাঁজর। তাই সে-ও নড়ে না, ঠায় দাঁড়িয়ে ঘাড় কাত করে চোখ রাখে টুলুর শিকারী হাতের ওপর। টুলু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কাকটা বাঘের মতো চালাক। কোন সুযোগই সে দিতে নারাজ টুলুকে। দাদা বলেছিলো, কাক মারতে হলে তোর লাগবে ইস্পাতের স্নায়ু। তোর কি সেটা আছে রে টুলু? টুলু ঢোঁক গিলে সায় দিয়েছিলো। ইস্পাতের স্নায়ু ব্যাপারটা সে বোঝেনি, স্নায়ুই সে ঠিকমতো বোঝে না, কিন্তু যদি সে বলতো, তার ইস্পাতের স্নায়ু নেই, দাদা কি তাকে বন্দুকটা এনে দিতো? দিতো হয়তো। দাদা প্রায়ই এটা সেটা এনে দেয় টুলুকে। সেগুলির সব ক'টার পরিণতি যে ভালো হয়, এমন নয়। একটা আতশ কাঁচ এনে দিয়েছিলো দাদা। রোদের মধ্যে একটা দেয়াশলাইয়ের কাঠি রেখে বলেছিলো, দ্যাখ, কীভাবে আগুন ধরিয়ে দিলাম। টুলু দারুণ খুশি হয়েছিলো। কিন্তু পরদিন সকালে দাদারই কী একটা কাগজ রোদে রেখে আতশ কাঁচ দিয়ে বড় করে পড়তে গিয়ে সেটাতে বেমালুম আগুন ধরে গেলো। দাদা এসে টুলুকে দিয়েছিলো কষে এক চড়। মার খেয়ে টুলু কাঁদতে কাঁদতে মা-কে গিয়ে নালিশ করেছিলো বটে, কিন্তু মা ওসব নালিশে পাত্তা দেন না। দাদাকে শুধু গলা চড়িয়ে বলেছিলেন, ভালো হয়েছে। হাবিজাবি জিনিস আরো এনে দে। পুরা বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিক। বন্দুকটা টুলু মা-কে শুরুতে দেখাতে চায়নি, কিন্তু মা অচিরেই সেটা আবিষ্কার করে হইচই শুরু করে দিয়েছিলেন। নিজের চোখেমুখেই যে গুলি করবি না, তা কে বলবে? তারস্বরে চেঁচাচ্ছিলেন মা। এইসব ঘোড়ার ডিম কেন এনে দিস ভাইকে? দাদা মা-র চিৎকারকে পাত্তা দেয়নি, উদাস গলায় শুধু বলেছিলো, খেলুক না। বিড়াল তাড়াতে পারবে। কীরে টুলু, পারবি না? টুলু বুক ঠুকে রাজি হয়ে গিয়েছিলো। মনের চোখে দেখতে পাচ্ছিলো, কার্ণিশে গুটিসুটি মেরে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর একটা বিড়াল। আর একটা লাফ দিলেই সে দুধের হাঁড়িতে গিয়ে মুখ দিতে পারবে। কিন্তু লাফ দেয়ার আগেই গর্জে উঠলো টুলুর বন্দুক, কাঁধের ওপর গুলি খেয়ে ঢলে পড়ে গেলো ভয়ঙ্কর বিড়ালটা। দূরে আগুন জ্বলে উঠলো, শহরের লোক হই হই করে উঠলো, মারা গেছে, মারা গেছে, রুদ্রপ্রয়াগের বিড়ালটাকে মেরে ফেলেছে টুলু করবেট। সকালে উঠে টুলু ফিতা দিয়ে মেপে দেখছে, বিড়ালটার লেজ থেকে নাকের ডগা পর্যন্ত আট ফুট লম্বা। পায়ের নিচে সজারুর কাঁটা বিঁধে আছে। আহারে। ওর জন্যেই বেচারা নিজে জঙ্গলে ইঁদুর শিকার না করে টুলুদের বাড়িতে দুধ চুরি করে খেতে আসতো। ও কি আর জানে, টুলুর এখন একটা বন্দুক আছে? ইস্পাতের স্নায়ুর ব্যাপারটাতে রাজি হয়ে বন্দুকটা পেয়ে গেছে টুলু। ভারি ভালো জিনিস। খট করে একটা শব্দ হয় শুধু। ভেতরে বরইয়ের বিচি, ছোট গোল নুড়ি ভরলে দুরন্ত বেগে ছুটে বেরোয়। টুলু দারোয়ানের ছেলে আমজাদকে নিয়ে মেপে দেখেছে, বাইশ ফিট পর্যন্ত দারুণ জোরে যায় গুলিগুলো। আমজাদ অবশ্য ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখেনি, তাই আরো দূরে কতটুকু জোরে গিয়ে লাগে, সেটা টুলু বুঝতে পারেনি। আমজাদ সহযোগিতা করলে বন্দুকটার রেঞ্জ টুলু ফিতা ধরে মাপতে পারতো। কিন্তু বাইশ ফিটের দরকার নেই। বদমায়েশ কাকটাকে মারার জন্যে দশ-বারো ফিটই যথেষ্ঠ। কিন্তু কার্ণিশটা এমন হতচ্ছাড়া জায়গায়, যে বারান্দা পেরিয়ে কোথাও লুকালে আর কাকটাকে দেখা যায় না। ড্রয়িং রুমের জানালা দিয়ে গুঁড়ি মেরেও দেখা যায় না কার্ণিশ, তা না হলে টুলু দিব্যি ওঁত পেতে থেকে মারতে পারতো কাকটাকে। ভাগ্যের ফেরে আজ মানুষখেকো কাকটার মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে টুলু করবেটকে। টুলু অবশ্য দাদাকে সকালে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলো, মাদী কাকের ডাক ডাকলে মদ্দা কাক এসে বসবে কি না জানালার পাশে। দাদার মেজাজটা ভালো নেই, প্রচণ্ড এক ধমক দিয়ে টুলুকে ভাগিয়ে দিয়ে সে কী একটা কাজে বেরিয়ে গেছে বাসা থেকে। টুলুর মনটাই খারাপ হয়ে গেছে। গতকাল রাতেও দাদা কত ভালো ভালো আইডিয়া দিলো তাকে। একটা ইঁদুর মেরে রেখে দিলে নাকি কাক জায়গামতো আসবে মড়ি খেতে। তখন আড়াল থেকে টুলু সেটাকে পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলতে পারবে। যদিও হাতের কাছে মারার মতো ইঁদুর নেই, কিন্তু তারপরও কী দারুণ বুদ্ধি! টুলু আবারও শরীরের ভর বদলায়। কাকটা এবার মহা আলস্যে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকায়, তারপর টুলুর দিকে ফিরে ক্কা করে একটা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে নাচতে নাচতে কার্ণিশের সামনের দিকটায় গিয়ে বসে, এবার টুলুর দিকে পেছন ফিরে। টুলুর সমস্ত রক্ত যেন কানের পাশ দিয়ে টগবগ করে ফুটতে থাকে। অতি সন্তর্পণে সে বন্দুকটা কাঁধে নিয়ে নল বরাবর তাকায়। দাদা এক টুকরো তার দিয়ে কী সুন্দর একটা মাছি বানিয়ে দিয়েছে বন্দুকের নলে। যোগচিহ্নের মতো একটা আকার, দাদা বলেছে মাঝখানের পয়েন্টটা নিশানা বরাবর রেখে মারতে। টুলু ট্রিগারে চাপ দেয়। বরইয়ের বিচিটা কাকটার পাশে গিয়ে কার্ণিশে ঠোক্কর খায় তীব্র বেগে। কাকটা একবার তাচ্ছিল্যের সাথে ঘাড় ফিরিয়ে টুলুকে দেখে, তারপর নিতান্ত বিরক্ত হয়ে কার্ণিশ থেকে লাফিয়ে পড়ে বাতাসে। তারপর কয়েকবার ক্কা ক্কা করে ডেকে উড়ে যায় পাশের বাড়ির নারকেল গাছটার দিকে। টুলুর চোখে জল চলে আসে। মানুষখেকোটা পার পেয়ে গেলো আবারও। টুলু রেলিঙের ওপর ঝুঁকে কাকটাকে দেখার চেষ্টা করতে যাবে, এমন সময় লোকটাকে দেখতে পায় সে। টুলুর বুকটা ধ্বক করে ওঠে। লোকটা তাদের বাড়ির বাউন্ডারির ভেতরে দাঁড়িয়ে। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে সে টুলুকে দেখছে। টুলু তাড়াতাড়ি পকেট হাতড়ায়। তার পকেটে একটা ছোট প্লাস্টিকের প্যাকেট ভর্তি গোল গোল নুড়ি, সে আর আমজাদ সেদিন পেছনের মাঠ থেকে খুঁজে খুঁজে বার করেছে নুড়িগুলো। পেছনের মাঠে কী একটা কাজের জন্য পাথর জড়ো করে রাখা, বন্দুকের মাপের অনেকগুলি নুড়ি খুঁজে পেয়েছে তারা। টুলু লোকটাকে এক নজর দেখেই ভয় পেয়েছে। লোকটা ভীষণ লম্বা, মিশমিশে কালো, মুখভর্তি গোঁফদাড়ি, মাথায় লম্বা লম্বা চুল। ঠিক যেন দস্যু বীরাপ্পন! টুলু কাঁপা হাতে বন্দুকে একটা নুড়ি ভরে। তারপর সাহস করে আবার তাকায় লোকটার দিকে। লোকটা এখনও তাকিয়ে আছে টুলুর দিকে। টুলু দৌড়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে যায়। তারপর বিছানার ওপর উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে আলগোছে উঁকি দেয়। লোকটা এবার তাকিয়ে আছে জানালার দিকে! ভয়ে টুলুর শরীরটা অবশ হয়ে আসে। সে বন্দুকটা হাতে মুঠো করে ধরে রান্নাঘরে ছুটে যায়। মা! একটা লোক! একটা ভীষণ লোক! আমাদের মাঠে দাঁড়িয়ে আছে! টুলু হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে বলে। টুলুর মা করলা কুটছিলেন, তিনি একটু ঘাবড়ে যান টুলুকে দেখে। টুলু কখনো রাস্তার লোক দেখে এভাবে ছুটে এসে কিছু তো বলে না। টুলু মা-কে হাত ধরে টানতে টানতে তার শোবার ঘরের জানালার কাছে নিয়ে আসে। সাবধানে তাকাও! লোকটা দেখে ফেলবে! টুলুর মা আলগোছে পর্দা ফাঁক করে বাইরে তাকান। কই? কোথায় লোক? টুলু এবার হাঁচড়ে পাঁচড়ে বিছানায় উঠে মায়ের পাশে গিয়ে পর্দার ফাঁক দিয়ে তাকায়। মাঠ খালি! কেউ নেই সেখানে। টুলুর মা টুলুর মাথায় হাত রেখে বললেন, রোদে ঘুরে ঘুরে তো কুটকুটে কালো হয়ে গেছিস! গোসল করে আয়। মাথা গরম হয়ে গেছে তোর, কী দেখতে কী দেখিস। কোথায় ভীষণ লোক? টুলু কিছু বলতে যাবে, এমন সময় ঘরের কলিং বেলটা হুঙ্কার দেয় কোকিল পাখির সুরে। টুলু মায়ের হাত আঁকড়ে ধরে, মা! ঐ লোকটা! টুলুর মা এবার একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, দাঁড়া দেখি। তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? তোর না বন্দুক আছে? তুই না শিকারী? হ্যাঁ? আয় আমার সাথে। টুলু বন্দুক হাতে নিয়ে মায়ের পেছন পেছন গুটিসুটি পায়ে গিয়ে দাঁড়ায় দরজার পাশে। দরজার ম্যাজিক আইতে চোখ রাখেন টুলুর মা, তারপর হেসে ফেলেন। দরজা খুলতে খুলতে বলেন, টুনু এসেছে। তোর দাদা এসেছে। দাদাকে লোক বলছিস? টুলু জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। টুনু বাড়িতে ঢুকে মা-কে বলে, মা, একজন গেস্ট এসেছেন। টুলু এবার চমকে ওঠে। সেই ভীষণ লোকটা, দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে! টুনু টুলুর মাথায় হাত রাখে। কী রে শিকারী? মেহমান এসেছে, বন্দুক সরিয়ে রাখ। লোকটা দাদার চেয়েও অনেক লম্বা, টুলু দেখে। গায়ে একটা বাদামী জ্যাকেট। চোখে একটা চশমা। টুলুকে দেখে লোকটা হাসে এবার। টুনুর মা মাথায় ঘোমটা টেনে চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকান টুনুর দিকে। টুনু বলে, মা, ইনি হাসান ভাই। ওনারা আগে আমাদের বাসাটাতে থাকতেন। হাসান নামের ভীষণ লোকটা এবার হাতের প্যাকেটটা খুব বিনয়ের সাথে বাড়িয়ে ধরে টুলুর মা-য়ের দিকে। সালামালাইকুম। টুলু চমকে ওঠে লোকটার গলা শুনে। কী ভীষণ ভারি ডাকাতের মতো গলা! লোকটার পকেটে নিশ্চয়ই পিস্তল আছে। না হলে লোকটা জ্যাকেট পরে কেন? তার মুখে এত দাড়িগোঁপ কেন? চুল এত লম্বা কেন? টুলুর মা অস্ফূটে সালামের প্রত্যুত্তর দেন, টুনু স্মার্ট ভঙ্গিতে প্যাকেটটা নিয়ে ডাইনিং টেবিলের ওপর নিয়ে রাখে। টুনু বলে, মা, হাসান ভাই অনেকদিন ছিলেন না দেশে। শহরে এসেছেন, তাই আমাদের বাসাটা একবার ঘুরে দেখে যেতে চান। হাসান দরজার সামনেই ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে এবার ঘর দেখতে থাকে ঘুরে ফিরে। টুলু শরীরের ভর পাল্টায়, বাম পা থেকে ডান পায়ের ওপর। টুনু এবার টুলুকে বকা দেয়, টুলু, বন্দুকটা রেখে আয়! মেহমানের সামনে বন্দুক নিয়ে ঘুরছিস কেন? ঘাড় ফিরিয়ে সে হাসানকে বলে, আমার ভাই, খুব চঞ্চল। বন্দুকটা পেয়েছে হাতে, এখন সারাদিন এটা নিয়েই পড়ে আছে। রাতে বন্দুক নিয়ে ঘুমাতে যায়। হাসান নামের ভীষণ লোকটা হাসে শব্দ করে। টুলুদের বসার ঘর কেমন ঝনঝন করে ওঠে। টুলু ভাবে, লোকটা হাসেও ডাকাতের মতো। আমি দেখছিলাম ওকে অনেকক্ষণ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাক শিকার করছিলো। হাসান বলে গমগমে গলায়। টুনু হাসে, হাসেন টুলুর মা-ও। কাকের সঙ্গে শত্রুতা খুব। টুনু বলে। আপনাদের বারান্দায় গ্রিল নেই। হাসান বলে হঠাৎ। টুনু থতমত খায়। মমমম, না, গ্রিল ছিল আসলে, অনেক আগে, কিন্তু নড়বড়ে হয়ে খুলে পড়ে গেছে আমরা আসার কিছুদিন আগেই। হাসান এবার হঠাৎ এগিয়ে এসে বসে পড়ে একটা সোফায়। বেতের সোফাটা মচমচ করে ওঠে তার ভীষণ ভারে। কবে এসেছেন আপনারা এখানে? টুলুর মা এবার এগিয়ে এসে বসেন একটা মোড়ায়। অনেকদিন হয়ে গেলো, বছর পাঁচেক ... তাই না টুনু? টুনু মাথা দোলায়। আমি ক্লাস এইটে এসে ভর্তি হয়েছিলাম স্কুলে। হাসান টুনুর দিকে তাকিয়ে হাসে। আপনি তো তাহলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র? টুনু মাথা চুলকায়। এখনো না। সামনে অ্যাডমিশন টেস্ট। হাসান বলে, আগে গ্রিল ছিলো। টুনু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে, জ্বি? হাসান বলে, আগে গ্রিল ছিলো বারান্দায়। আমরা যে বছর চলে যাই এখান থেকে, সে বছর লাগানো হয়েছিলো। বিশ্রী লাল রং করা হয়েছিলো তাতে। টুনু মায়ের দিকে তাকায় হালকা অস্বস্তি নিয়ে। টুলুর মা বলেন, "আপনার কবে চলে গেলেন?" হাসান স্পষ্ট, গমগমে গলায় বলে, "কুড়ি বছর আগে।" টুনু বলে, অনেক দিন তো! হাসান মাথা দোলায়। সে তারপর মন দিয়ে ঘরের বিভিন্ন জিনিস দেখতে থাকে। টুনু মা-কে তাড়া দেয়, মা, কিছু খেতে দাও হাসান ভাইকে। টুলুর মা উঠে দাঁড়িয়ে আবার ঘোমটা টানেন। আপনি হাতমুখ ধুয়ে আসুন বরং, ভাত দিই গরম গরম? হাসান তড়াক করে উঠে দাঁড়ায়। না! প্লিজ, ভাত খাবো না! আমাকে একটু চা দিতে পারেন বরং। টুলু শরীরের ভর পাল্টায় অন্য পায়ের ওপরে। টুলুর মা কী ভেবে আর জোরাজুরি করেন না। টুলু দেখেছে, তাদের বাসায় এ সময়ে কেউ এলে মা ভাত না খাইয়ে ছাড়েন না। কিন্তু এই ভীষণ ডাকাতটাকে নিশ্চয়ই মা-ও ভয় পেয়েছেন! টুনু হাসান নামের ভীষণ লোকটার সঙ্গে আলাপ করতে থাকে, টুলু এক ছুটে রান্নাঘরে গিয়ে মা-কে ধরে। মা! লোকটা ডাকাত! টুলুর মা হেসে ফেলেন। বলেছে তোকে, লোকটা ডাকাত! আমাদের বাসায় আগে সে থাকতো, অনেকদিন পরে এসেছে, তাই বাসাটা দেখতে এসেছে। ডাকাত কি মিষ্টি নিয়ে আসে সাথে? টুলু উঁকি দেয়, দেখি কী মিষ্টি? টুলুর মা বাক্সটা খুলে ধরেন। অনেক পদের মিষ্টি, খোপ খোপ করে সাজানো। দুই কেজির মতো হবে। টুলুকে জিজ্ঞেস করেন, খাবি একটা? টুলু মিষ্টির ভক্ত নয়, সে কালোজাম ভালোবাসে শুধু। টুলু আঙুল দিয়ে দেখাতে টুলুর মা একটা পিরিচে করে মিষ্টি দেন টুলুকে। এখানে বসে খা, ওখানে যাবি না। মেহমানের আনা জিনিস মেহমানের সামনে খেতে নেই। টুলু রান্নাঘরে পায়চারি করতে থাকে বন্দুক আর মিষ্টির পিরিচ হাতে। টুলুর মা একটা দুধের কৌটা থেকে কতগুলি বিস্কিটের প্যাকেট বার করেন, আরেকটা দুধের কৌটা থেকে চানাচুর। ও বাসা দেখতে আসলো কেন? টুলু মিষ্টি খেতে খেতে জানতে চায়। হয়তো ও তোর মতো ছোট থাকতে ছিলো এ বাসায়। অনেকদিন পর মনে হয়েছে ছোটবেলার বাসার কথা, দেখতে এসেছে। তুই আজকে থেকে বিশ বছর পর যখন অনেক বড় হবি, বিদেশে চাকরিবাকরি করবি, তখন দেশে ফিরলে একবার আসবি না এখানে? টুলুর মা প্লেটে বিস্কুট আর চানাচুর সাজাতে সাজাতে বলেন। টুলু কাঁধ ঝাঁকায়। টুলুর মা চায়ের পানি গরম দিয়ে বলেন, আর কোথায় ভীষণ লোক? ও তো তোর ছোটমামার মতো। চুলমোচদাড়ি একগাদা। টুলু মিষ্টি অর্ধেকটা খেয়ে ফিল্টারের সামনে একটা গ্লাস ধরে। ফিল্টার থেকে পানি খেতে তার খুবই ভালো লাগে। না, ছোটমামা তো ভালো লোক। এই লোকটা ডাকাত। টুলুর মা মিটিমিটি হাসেন। টুলু অনেক গল্প শোনে তার দাদার কাছ থেকে, অনেক বই পড়ে শুয়ে শুয়ে, টিভিতে আজগুবি সব সিনেমা দেখে। এর আগে তার বাবার এক বসকেও ডাকাত বলেছিলো। মেজফুপুর বিয়েতে ফুপুর শ্বশুরকেও ডাকাত বলেছিলো। টুলু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আবার ড্রয়িংরুমে আসে। হাসান নামের ভীষণ লোকটা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বুক শেলফের সামনে। ঠিক এই জায়গাটায় আমাদের বুকশেলফটাও ছিলো, জানেন? গমগমে গলায় বলে সে। আপনাদেরটা একটু ছোট, আমাদেরটা আরো বড় ছিলো। মিস্ত্রি ডেকে বানানো। গরীব ছিলাম আমরা, নতুন একটা খাট কেনা হলো, পুরনো খাটের তক্তা দিয়ে ভাইজান রাতারাতি একটা বুকশেলফ বানিয়ে ফেললেন। ছোট একটা বেতের বুকশেলফ ছিলো, সেটা ঐ কোণায় রাখা ছিলো, যেখানে আপনারা একটা কাঁচের শেলফে টুকিটাকি জিনিস রেখেছেন। টুনু বলে, অনেক বই ছিলো আপনাদের? হাসান হাসে। এখনও আছে। আরো বেশি আছে। কয়েক টন বই। ভাইজান যতদিন বেঁচে আছেন, টনেজ বাড়তেই থাকবে। বইখোর লোক। টুনু বলে, বাসা পাল্টানোর সময় নিশ্চয়ই অনেক ঝামেলা হয়েছে? হাসানের হাসিটা মলিন হয়ে আসে। হ্যাঁ, তা হয়েছে। বাক্স যোগাড় করা, বই তাতে প্যাক করা, পরে আবার সেসব বই খুলে ঠিক করা, একটা বিরাট হ্যাপা গেছে। বই হচ্ছে বড়লোকের জিনিস, বুঝলেন, যাদের বাসা পাল্টাতে হয় না। টুলু চুপ করে হাসানকে দেখে আর শোনে। হাত পা নেড়ে কথা বলে যাচ্ছে লোকটা। আপনাদের মতো আমাদেরও বেতের সোফা ছিলো। ইন ফ্যাক্ট, এখনও আছে। আমরা মাঝে মাঝে নিজেরা ঐ সোফা সিরিশ দিয়ে ঘষে রং করতাম। টুলু দেখে, দাদা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছে। হাসান হাত পা নেড়ে বকে যায়। এখন তো দেখছেন কী ভালো ডিসটেম্পার করা দেয়াল, আমরা যখন ছিলাম, বাড়িঅলা শুধু মাঝে মাঝে চুনকাম করে দিতো। ঘরের দরজা জানালা পাইকারি হারে রং করে দিয়ে যেতো, কোন ছিরিছাঁদ ছিলো না রে ভাই। টুলু দেখে, হাসান খুব হাসছে। প্রত্যেকটা কথাই যেন তার হাসি হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আপনাদের তো এই ঘরে একটা সিঙ্গেল খাট পাতা, আমাদের ছিলো বিশাল ডাবল খাট একটা। যখন ছুটিতে সবাই একসাথে হতাম, ভাইবোনেরা, তখন বাসা ভর্তি করে থাকতাম আমরা। আপনারা কয় ভাই বোন? টুনু বলে, আমরা দু'জনই। হাসান বলে, আমরা ছিলাম চারজন। আমাদের হইচইয়ে গোটা বাড়ি কাঁপতো। তখন গ্রিল ছিলো না বারান্দায়। টুনু বলে, আপনি গ্রিলের ব্যাপারটা খুব মনে রেখেছেন দেখছি। হাসান অন্যমনস্ক হয়ে যায়। হ্যাঁ। আমাদের বারান্দায় অনেকগুলি ফুলের টব ছিলো। আপনাদের বারান্দায় নেই দেখছি। টুনু মাথা চুলকায়। আমরা অতটা ফুলের ভক্ত নই আর কি। ছাদে কিছু ফুলের গাছ আছে অবশ্য। মা দুয়েকটা লাগিয়েছেন ওখানেই। হাসান বলে, আমাদের একটা বেলি ফুলের গাছ ছিলো। বৃষ্টির পর পর তাতে ফুল ধরতো। কী যে সুন্দর গন্ধ তাতে! বেলি ফুলের গন্ধ কেমন, জানেন? টুনু বোকার হাসি হেসে মাথা নাড়ে। হাসান বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আরো ফুলের গাছ ছিলো। সন্ধ্যামালতী, নয়নতারা, গন্ধরাজ, আরো অনেক ফুল, নামও জানি না। আমরা যখন শহর ছেড়ে চলে গেলাম, ফুলগাছগুলির মায়া ছাড়তে পারিনি। টানতে টানতে নিয়ে গেলাম ঢাকায়। ট্রাকে করে কি আর ফুলগাছ নেয়া যায়, বলেন? যায় না। টবগুলি ভেঙে গেলো। ফুলগাছগুলি চোখের সামনে মরে গেলো। যেগুলি মরেনি তখনও, সেগুলিও ফেলে দিতে হলো। কী করবো? নতুন বাসায় জায়গা নাই। নিজেরা কোনমতে থাকি জড়োসড়ো হয়ে। টুনু বললো, আপনারা চলে গিয়েছিলেন কেন? হাসান চমকে ওঠে। হ্যাঁ? ওহ। চলে তো যেতে হয়ই সবাইকে। সারাজীবন তো আর কেউ এক জায়গায় থাকতে পারে না। বাবা বদলি হয়ে গেলেন, আমরা চলে গেলাম। টুনু বলে, হ্যাঁ, আমরা আগে রাজশাহী ছিলাম। ওখান থেকে এসেছি এখানে। হাসান এগিয়ে গিয়ে রেলিঙের ওপর হাত রাখে। আজ থেকে বত্রিশ বছর আগে আমরা এই বাসাটাতে প্রথম আসি। তখন এই রেলিঙের কাঠটা ছিলো পঁচা। ঝুরঝুরে। ইঁট আর কাঠের মাঝে সরু একটা ফাঁক ছিলো। আমি ঐ ফাঁকে চোখ রেখে বাইরের পৃথিবীটা দেখতাম। তখন শহর ছিলো ফাঁকা, দেখতাম মাঝে মাঝে দুয়েকটা বাস যাচ্ছে, রিকশা যাচ্ছে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে। মানুষজন হাঁটছে দেখতাম। কোন গ্রিল ছিলো না। পুরোটা আকাশ দেখা যেতো। আরো যখন বড় হলাম, লম্বা হলাম, মাথা বার করে পুরোটা পৃথিবী দেখতাম। মানে যতদূর দেখা যায় আর কি। গ্রিল বসানোর পর দেখা যেতো না সেসব। পৃথিবীটা ছোট হয়ে গেলো। ... ভালো হয়েছে, আপনাদের বারান্দায় এখন গ্রিল নেই। আমাদের বারান্দার মতো। টুনু মাথা চুলকায়। হাসান বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে রেলিঙের ওপর কনুই রেখে। টুলুর মা ডাক দেন, টুনু, চা তৈরি। টুনু বলে, হাসান ভাই, আসুন, কিছু চা নাস্তা হোক। হাসান ঘুরে দাঁড়ায় অন্যমনস্কভাবে। টুলুর মা চা এগিয়ে দেন। আমি চিনি দিইনি। আপনি নিয়ে নিন যতটুকু লাগে। হাসান বসে পড়ে চায়ের কাপ তুলে নেয়। তার মুখ বিষণ্ন। কেমন হয়েছে চা? টুলুর মা জানতে চান। হাসান যেন অন্য পৃথিবী থেকে ফিরে আসে। জ্বি? জ্বি, ভালো। হ্যাঁ, চা ভালো হয়েছে। চায়েরই তো শহর এটা, হা হা। চা ভালো হয়েছে খুব। টুলু মন দিয়ে দেখে ভীষণ লোকটাকে। টুনু কিছু বলতে যাবে, এমন সময় খুব অভিমান নিয়ে হাসান বলে, কৃষ্ণচূড়া গাছটা নেই। টুনু বলে, কোন কৃষ্ণচূড়া গাছ? হাসান বলে, উল্টোদিকের বাড়ির কৃষ্ণচূড়া গাছ। টুনু বলে, কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিলো নাকি ওখানে? হাসান হঠাৎ অধৈর্য হয়ে ওঠে, সশব্দে কাপে একটা চুমুক দিয়ে কাপ নামিয়ে রাখে। কিচ্ছু জানেন না। কীভাবে জানবেন, আপনি জন্মাননি তখন। কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিলো একটা। বিশাল। এই বাড়ির চেয়ে উঁচু। এত উঁচু হয় না সব কৃষ্ণচূড়া। যখন ঝড় হতো, তখন ঝর্ণা আপাদের বাড়ির কৃষ্ণচূড়া গাছের পাঁপড়ি আশপাশে ছড়িয়ে যেতো। ঝর্ণা আপা ছিলো আমার বোন স্বর্ণা আপার বান্ধবী। ঝর্ণা আপার মা ছিলেন বদ্ধ উন্মাদ। মাঝে মাঝে ওনাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হতো। আমরা বিকালে বারান্দায় বসে সবাই গল্প করতাম, চা খেতাম এক সাথে, ঝর্ণা আপা এসে আমাদের সাথে গল্প করতো। ওনার তো মায়ের সাথে বসে গল্প করা হয় না, চা খাওয়া হয় না, তাই উনি চলে আসতেন আমাদের বাসায়। রাস্তা পার হলেই তো আমাদের বাসা। ... ওনাদের কৃষ্ণচূড়া গাছটা নেই! টুনু চুপ করে থাকে। হাসান এবার তার অবিন্যস্ত লম্বা চুলে আঙুল চালাতে থাকে। ধরা গলায় বলে, আমরা চলে গেলাম, তারপরে এই শহরেই আর আসতে ইচ্ছে হতো না। যতবার আসি, দেখি একটা না একটা জিনিস হারিয়ে গেছে। চোরের মতো অন্য পথ দিয়ে চলাফেরা করতাম, আমাদের এই বাসাটার দিকে যেন তাকাতে না হয়, যেন এমন কিছু না দেখি, যাতে কষ্ট পাই। কিন্তু কৃষ্ণচূড়া গাছটা যে নেই, সেটা জানা হয়নি। টুলুর মা কোমল গলায় বলেন, আপনারা অনেক বছর ছিলেন এখানে, না? হাসান মাথা নাড়ে। তেরো বছর। আমি এই বাসাটাতে বড় হয়েছি। টুলুর মা বলেন, টুনু, ওনাকে তোমার ঘরটা দেখিয়ে আনো। হাসান উঠে দাঁড়ায় ঝট করে। না! না না। থাক। আমি আর দেখবো না। আমি শুধু ... আমি দেখতে এসেছিলাম বাসাটা, কিন্তু অনেক কিছু পাল্টে গেছে। টুনু অপ্রস্তুত মুখ করে বসে থাকে। হাসান চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দেয় বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে। টুলু বলে, বিস্কুট খাবেন না? হাসান যেন চমকে ওঠে টুলুর রিনরিনে কণ্ঠস্বর শুনে। তারপর হেসে ফেলে। হা হা, না না টুলু, আমি বিস্কুট তেমন একটা খাই না। চা খাই শুধু। টুলুর মা হেসে ফেলেন ছেলের কথা শুনে। টুনু ভাইকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। হাসান চায়ের কাপে চুমুক দেয়, তার মুখ আস্তে আস্তে ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। আমিও টুলুর মতো ছিলাম। ওর মতো চঞ্চল ছিলাম। আজকে ও বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাক মারছিলো, আমি ভীষণ চমকে উঠেছিলাম, মনে হচ্ছিলো নিজেকেই দেখছি। পাশের বাড়িটা দেখছেন, এটা তখন টিনশেড ছিলো। ওরা কিন্তু নারিকেল গাছগুলো কাটেনি। বৃষ্টি হলে আশেপাশের সব ক'টা বাড়ির টিনের ছাদে ঝমঝম আওয়াজ হতো, ঝড় হলে নারিকেল আর সুপারি গাছে ভীষণ শোঁ-শোঁ আওয়াজ হতো। বাতাসে সুপারি গাছগুলি হেলে পড়তো, বাজ চমকালে দেখা যেতো কী ভাষণ তাণ্ডব চলছে! টুলু মন দিয়ে শোনে ভীষণ ডাকাত লোকটার কথা। আমার স্কুল ছিলো মর্নিং শিফটে। স্কুল ছুটির পর আমরা ক্রিকেট খেলতাম, ফুটবল খেলতাম, ভলিবল খেলতাম। দুপুরে ফিরে গোসল করে এই বারান্দাটায় বসে রোদ পোহাতাম। আমার আম্মা তখনও রান্না চড়িয়েছেন মাত্র। যেদিন ডাল রান্না হতো, সেদিন আমি দৌড়ে যেতাম, ডালে বাগাড় দেয়ার সময় একটা ফোঁসফোঁস আওয়াজ হতো, সেটা শোনার জন্যে। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে দেখা যেতো, পেছনে চৌধুরীবাড়ির শিমুল গাছটা। বসন্তে, বছরের শুরুতে, আকাশটা নীল হয়ে থাকতো, নীল আকাশে শিমুল গাছটা আগুনের মতো জ্বলতো। দেখেছেন নিশ্চয়ই? টুলুর মা দুঃখিত চোখে তাকান হাসানের দিকে। এই নীরবতার অর্থ বুঝতে সময় লাগে একটু, হাসানের মুখ থেকে রক্ত সরে যায়। দেখেননি? শিমুল গাছটা নেই? টুলুর মা কিছু বলেন না। হাসান উঠে দাঁড়ায়, আমি একটু ... একটু রান্নাঘরটা ...? টুনু বলে, আসুন, দেখাচ্ছি। টুলু ছুটে যায় আগে আগে, রান্নাঘরে আধখাওয়া মিষ্টির পিরিচটা পড়ে আছে, সে সেটা আড়াল করে দাঁড়ায়। হাসান যেন রুদ্রপ্রয়াগের চিতার মতোই ঝড়ের গতিতে এসে দাঁড়ায় রান্নাঘরের জানালার সামনে। জানালার সামনে আকাশের চিহ্নমাত্র নেই, পেছনে ঢ্যাঙা একটা সিরামিক ইঁটের দালান তার শ্বদন্তগুলি বার করে তাকিয়ে আছে মানুষখেকোর মতো। হাসান চুপ করে তাকিয়ে থাকে জানালার দিকে। অনেকক্ষণ। টুলু দাদার দিকে তাকায়। দাদা অপরাধীর মতো মুখ করে চেয়ে থাকে হাসানের দিকে। হাসান খুব দুর্বল গলায় বলে, ভাই, একটু পানি খাওয়াবেন? টুনুর কিছু করতে হয় না, টুলু ছুটে গিয়ে ফিল্টারের সামনে একটা গ্লাস ধরে। পানির গ্লাসটা নিয়ে তাতে একটা মৃদু চুমুক দেয় হাসান। আমার মায়ের বড় প্রিয় ছিলো ঐ দৃশ্যটা। রান্না করার সময় আমি তাঁকে জ্বালাতন করতাম এসে, স্কুলের গল্প বলতাম, বন্ধুদের গল্প বলতাম, তিনি আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে রান্না করতেন। আমি মাঝে মাঝে তাঁকে দেখতাম, কী সুখী মুখ, পেছনে ঐ নীল আকাশ, ঐ লাল শিমুল ...। আহ! টুনু কিছু বলে না। টুলুর মা এসে পরম স্নেহে হাসানের মাথায় হাত রাখেন। একটু লেবুর শরবত দেই? হাসান যেন সেই স্পর্শ অনুভব করে না, ঘোরের মধ্যে যেন বলে যায়, আমার ভাইজানের সাইকেলের রডে চড়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হতাম, কত ছোট ছিলাম তখন। সামনের রাস্তাটার দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিলো তখন। বৃষ্টির পর মনে হতো কেউ দুই পাশ লাল রঙে নকশা করে দিয়ে গেছে। আমার বোনের সাথে মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতাম, তাঁর বান্ধবীর বাড়িতে। বন্ধুর বাড়িতে ফুটবল নিয়ে খেলতে যেতাম, সন্ধ্যার আজানের আগে ফিরে আসতে হতো, নাহলে বাবা বকতো। কত কত স্মৃতি! সেগুলোর কোনটাই তো ফিরে চাইনি! আমি শুধু শিমুল গাছটা, কৃষ্ণচূড়া গাছটা দেখতে চেয়েছিলাম। দুইটা সামান্য গাছ, কারো কোনো ক্ষতি তো করেনি! আপনারা কীভাবে থাকেন এ বাড়িতে? এখানে তো কিছু নেই! কিচ্ছু নেই! টুলু অবাক হয়ে দেখে, হাসান নামের ভীষণ ডাকাত লোকটা রুদ্রপ্রয়াগের চিতার মতোই কিভাবে হাঁটু মুড়ে মাটিতে ভেঙে পড়ে হু হু করে কাঁদতে থাকে। নিঃশব্দ সে কান্না, শুধু হাসানের পিঠের বাদামী জ্যাকেট কেঁপে কেঁপে ওঠে তার দমকে। সেই কান্নাও যেন টুলুদের এই নিঃস্ব বাড়ির মতো, তাতে শব্দ নেই, আছে শুধু স্মৃতিঘাতের শোক, ঐ কান্নাটুকুতে একটা নীলরঙের আকাশে ফুটে ওঠা লাল শিমুলের জন্যে বিষাদ আছে, একটা বুড়ো কৃষ্ণচূড়া গাছের জন্যে লালিত ভালোবাসা আছে। এক বুক কান্না নিয়ে হাসান নামের লোকটা ওলটপালট হতে থাকে টুলুদের রান্নাঘরের মেঝেতে। টুলু পরিচিত একটা শব্দ শুনতে পায়, ক্ক! পেছনের বারান্দার রেলিঙে এসে বসেছে একটা কাক। সেই মানুষখেকো কাকটা নিশ্চয়ই। শুধু কাকেরাই একরকম থেকে যায়, বদলায় না এতটুকু। . . এ গল্পটি ২০১০ এ প্রকাশিত গল্প সংকলন ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প"-তে অন্তর্ভুক্ত
false
ij
Basques কারা_ বাস্ক-অধ্যুষিত স্পেনের মানচিত্র। আসলে স্পেন হল ইউরোপ ও আফ্রিকার ক্রশরোড। প্রাচীনকাল থেকে কত কত জাতি যে আফ্রিকা থেকে ইউরোপ এল। ইউরোপ থেকে আফ্রিকা গেল। ভ্যান্ডাল, ভিসিগথ। এই আসা যাওয়ার পথে একটি জাতি আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাস্ক। দক্ষিণ ফ্রান্স ও উত্তর স্পেনে ছড়িয়ে থাকা বাস্করা আজও স্বাধীনচেতা। তাদের শ্লোগান: দাসও না, স্বৈরাচারও না। স্পেনের উত্তরের অঞ্চলটিকে বলে বাস্ক কানট্রি। আলাভা, গুইপুজকোয়া আর ভিযকায়া নিয়েই বাস্ক দেশ । এর উত্তরে বিসকেই উপসাগর ও ফ্রান্স; পুবে নাভাররা, পশ্চিমে কান্টাব্রিয়া, দক্ষিণে লা রিওজা এবং কাসটিল -লেওন। বাস্করা বাস করে বাস্ক কানট্রি তে। বাস্কদের শুরুটা নিয়ে আজও বিতর্ক প্রবল। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় যে এদের ভাষা প্রথা ঐতিহ্য ইউরোপের অন্যদের চেয়ে অনেকই আলাদা । তবে ক্রোমোজম পরীক্ষা করে দেখা গেছে স্পেন পর্তুগাল ব্রিটেন আইরিশ ও ফরাসীদের পূর্বপুরুষ আর বাস্কদের পূর্বপুরুষ অভিন্ন। বাস্ক ভাষাকে বলে উসকারা। রয়েছে আঞ্চলিক বিভাগ। The Basque vocabulary contains no original words for abstract concepts and no words for tools or utensils brought into use in modern times. To designate such objects the Basques employ a Latin, French, or Spanish word with a Basque ending. For example, the word fork (French fourchette) becomes fourchetta in Basque. The Roman alphabet is used in the written language, which is based on French or Spanish orthography and is phonetic.(Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved.) বাস্করা ওদের প্রাচীন আইন মেনে চলে। তাদের জীবনে রয়েছে সেই প্রাচীন আইনের গভীর প্রভাব। এই আইনগুলি পরিচালনা করে জান্তা। জান্তার হয় নির্বাচিত। নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তা অবলম্বন করা হয় - যেন জাল ভোট না পড়ে। নির্বাচনসংক্রান্ত বাস্কদের বৈঠকে যেমন জেলেও উপস্থিত থাকে তেমনি উপস্থিত থাকে অভিজাতও । পরিবারিক বন্ধনের ওপর ভীষন গুরুত্ব দেয় বাস্করা। ওদের দলবদ্ধ নৃত্য ওদের জীবনে একটি অনিবার্য উপাচার। বাস্ক সঙ্গীতও ভারি প্রাণবন্ত; দ্রুত তালে বাজে ড্রামস। গিটার। আসলে বাস্করা বাঁচতে জানে। বাস্করা আসলে রোমান ক্যাথলিক। ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষার প্রযোজনে যুদ্ধও করেছে তারা। আমরা যে জেসুইট পাদ্রীদের কথা শুনি -তার প্রতিষ্ঠাতা একজন বাস্ক। নাম সেন্ট. ইগনাটিয়াস অভ লোয়োলা। (এঁর কথা পরে লিখব।) ২ লিখিত ইতিহাসে বাস্কদের কথা প্রথম পাওয়া গেল খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে। যখন তারা রোমান আগ্রাসন রুখে দিয়েছিল। স্পেন আসলে আইবেরিয় উপদ্বীপের একটি দেশ। অন্যদেশটি পর্তুগাল। পিরানিজ পর্বতমালা ইউরোপ থেকে আইবেরিয় উপদ্বীপকে বিচ্ছিন্ন করেছে। আইবেরিয় উপদ্বীপ শাসন করেছিল রোমানরা। সেই রোমান শাসনেও স্বাধীন ছিল বাস্করা। স্মরণ করুন বাস্কদের শ্লোগান: দাসও না, স্বৈরাচারও না। বাস্করা খ্রিস্টানধর্ম গ্রহন ৩ থে ৫ম শতকের মধ্যে। ৬ষ্ট শতকে ভিসিগথদের বিরুদ্ধে লড়ে তারা। ওই ৬ষ্ট শতকেই একদল বাস্ক পিরানিজ পাড় হয়ে উত্তরে অ্যাকুইটানিয়া যায়। তারপর থেকে ওই জায়গার নাম হয় গ্যাসকোনি। যারা স্পেনে থাকল তারা মুরদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হল। ৮ম থেকে ১০ম শতক অবধি বেশির ভাগ আইবেরিয় উপদ্বীপ দখলে রেখেছিল মুররা। মধ্যযুগেও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছিল বাস্করা। পঞ্চদশ শতক। আইবেরিয় উপদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত হল স্পেনিশ রাজতন্ত্র। ১৮৭৬ অবধি বাস্করা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারল। তারপর বাস্ক কান্ট্রি গ্রাস করে নেয় স্পেন। আপনারা স্পেনিশ গৃহযুদ্ধের কথা শুনে থাকবেন। স্পেনিশ গৃহযুদ্ধের সময়কাল ১৯৩৬ ১৯৩৯। তখন একবার প্রজাতন্ত্র গঠিত হলে বাস্করা স্বাধীন হয়ে গিছল। তবে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর জাতীয়তাবাদীরা জিতে গেলে প্রজাতন্ত্রের দিন শেষ হয়ে যায়। চল্লিশের দশকের পরের তিনটি দশক ছিল ভীষন উদ্বেগের। বাস্করা, আগেই বলেছি স্বাধীনচেতা। ১৯৭০ দশকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আরম্ভ হল। তারপর নানা রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩। স্প্যানিশ সরকার বাস্কদের নির্বাচিত আইনসভাসহ সীমিত স্বায়ত্বশাসন দেয়। আগুন তবু নিভল না। ১৯৯৭। গোপনে প্রতিষ্টিত হয় ETA (Euskadi Ta Askatasuna, Basque for Basque Homeland and Liberty) ETA সদস্যরা একজন স্প্যানিশ কাউন্সিলরকে হত্যা করে। গোটা স্পেনজুড়ে ধিক্কার ওঠে। In early December 1997, 23 leaders of Herri Batasuna, the political party affiliated with the ETA, were sentenced to seven years in prison for collaborating with the terrorists by showing ETA members in a campaign video. Human rights organizations criticized the trial for its questionable charges. The sentences prompted more ETA assassinations, which continued in 1998. Most of the killings targeted politicians who were members of Spain’s ruling party, which refused to negotiate with the ETA. Tensions flared again in early 1999 when Spanish and French authorities arrested about 20 suspected ETA members and raided Herri Batasuna headquarters in San Sebastián. In May, the Spanish government held its first talks with the ETA, but nothing resulted from the discussions and ETA violence continued. মার্চ। ২০০৪। এক আক্রমনে ১৯২ জন মারা যায়। সবাই সন্দেহ করল পরে জানা গেল আল কায়দা। এই আক্রমনের পর সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতায় আসে। ২০০৬ সালে আত্মসমর্পন করে। আত্মঘাতি হামলা বাদ দিয়ে রাজনৈতিক পথ ধরে। তথ্যসূত্র: Shearer, James F. "Basques." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩
false
hm
দাবি ১. মাঝে মাঝে আমার বের হতে ইচ্ছে করে না গাড়িটা থেকে। কালো কাঁচ তুলে গাড়িটার ভেতরে একবার বসলে ঘোর লাগে। বাইরের বিষিয়ে যাওয়া বাতাস, সহ্যসীমা টপকে যাওয়া শব্দ, বাতাসে ভেসে বেড়ানো মানুষের ঘাম আর সিয়েনজি পোড়া ধোঁয়ার বিকট গন্ধ, লোকজনের হিংস্র হিংসুক দৃষ্টি, হামলে আসা ভিক্ষুকদের ভিড় ... এ সবকিছু থেকে নিমেষে পালিয়ে যাওয়া যায় গাড়িটার ভেতরে ঢুকলে। কেমন এক আশ্চর্য নিঝুম আশ্রমের মতো স্নিগ্ধ এর ভেতরটা, চলার সময় একটা ক্ষীণ গুঞ্জন কানে আসে শুধু। জার্মানরা গাড়ি বানাতে জানে বৈকি। তাদের ধ্রুপদী সঙ্গীতের মতোই মধুর তাদের এনজিনের কূজন। শহরে এখন মাঝে মাঝে ঢুকি, চেষ্টা করি জরুরি মিটিংগুলো আমাদের স্যাটেলাইট শহরের কোনো রেস্তোরাঁ বা কনভেনশন সেন্টারে সেরে ফেলতে। শহরটায় ঢুকতে আর ভালো লাগে না। পাঁচ বছর আগে যখন সবকিছু সরিয়ে নিয়ে চলে গেলাম স্বর্ণদ্বীপে, তখন পেছন ফিরে তাকানোর রুচিও হয়নি। তবুও একবার তাকিয়েছি, বিবমিষা দমন করতে হয়েছে তারপর। বিবর্ণ একটা কংক্রিটের এবড়োখেবড়ো জঙ্গল, ধূসর বাতাসে ছাওয়া ঢাকা। স্বর্ণদ্বীপ আমার মতো মানুষদের জন্যে তৈরি ছোট্ট উপশহর। দ্বীপ না হলেও, কার্যত একটা দ্বীপের চেহারাই নিয়েছে শহরটা। একটা চমৎকার পরিখা ঘিরে রেখেছে গোটা শহরকে, তার পাশে রয়েছে পার্ক, সেখানে ভোরে দৌড়োয় আমার মতো লোকজন, বিকেলে হাঁটে আমার স্ত্রী-কন্যার মতো মানুষ, টেনিস কোর্টে আমরাই দাপিয়ে বেড়াই। এই নোংরা শহরটা থেকে বেরিয়ে একটা শান্ত নির্জন বাসোপযোগী জায়গা। কোন হট্টগোল নেই, ঝামেলা নেই। পুলিশের বিশেষ শাখা এখন দূতাবাস-চ্যান্সারির পাশাপাশি এ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। মাঝে মাঝে আমার বন্ধু সানাউলের ছেলের মতো কিছু বেয়াড়া বেয়াদব যে কিছু গণ্ডগোল ঘটায় না, এমনটা বলবো না, কিন্তু তাদেরও ভদ্রভাবে, তমিজের সাথে নিরস্ত করার প্রশিক্ষণ আছে এই বিশেষ পুলিশের। সব মিলিয়ে, ভালো লাগে। আজ শহরে ঢুকছি বিশেষ মিটিঙে। অর্থমন্ত্রীর সাথে কিছু কথা আছে আমার। বাংলাদেশ ইউরেনিয়াম মাইনার্স অ্যান্ড এনরিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে কিছু কথা ঐ টেকো বুড়োটাকে জানিয়ে দিতে হবে আমাকে। ২. অর্থমন্ত্রীর নামটা বিরাট লম্বা, তবে এককালে তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো, তাই মিডিয়া আশেপাশে না থাকলে তাকে মাহুত ভাই বলেই ডাকি। মন্ত্রকে তাঁর ঘরে শুনেছি গোয়েন্দারা আড়ি পাতে, কিন্তু ঐ দুই পয়সার গোয়েন্দাদের পাত্তা দিলে আমার চলবে না। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে কফির কাপটা তুলে শুঁকি। "খোরশেদী, তুমি এতো শোঁকাশুঁকি করো ক্যান?" মাহুত ভাই গমগমে গলায় বলেন। "এইটা সরকারি কফি না। আমার মেয়ের জামাই নিয়াসছে, ব্রাজিলের কফি, খাঁটি অ্যারাবিকা। টান দাও।" আমি হাসি। রয়েসয়ে চুমুক দিই। "বলো কী বলবা।" মাহুত ভাই হাত পা ছড়িয়ে হেলান দেন সোফায়। বিইউএমইএ-র আগের সভাপতি লোকটার ওপর আমার তেমন ভক্তি নেই। অপদার্থ কিসিমের লোক, নানা কলকাঠি নড়িয়ে তাকে সভাপতির পদে বসিয়েছিলো সংগঠনের আসল রাঘব বোয়ালরা। আমি সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছা যখন প্রকাশ করি. তারা সকলেই একটু নড়েচড়ে বসেছিলো, কিন্তু বেশি সুবিধা করতে পারেনি। আমি আঁটঘাট বেঁধেই নামি। "মাহুত ভাই ...", কফির কাপটা নামিয়ে রাখি আমি, "কথা শুরুর আগেই একটা কথা বলি, আপনি কিন্তু আমাকে চেনেন। চেনেন না?" অর্থমন্ত্রী তাকিয়ে থাকেন নিঃশব্দে। আমি হাসি। এই হাসিতে কোনো শব্দ নেই, শুধু আমার দাঁত খানিকটা বেরিয়ে পড়ে। মাহুত ভাই দ্রুত চোখের পলক ফেলেন কয়েকবার। "বিইউএমইএ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের নব্বই ভাগের জন্য কৃতিত্ব দাবি করে।" শুরু করি আমি। "কিন্তু আপনারা এই খাতটাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। কারণটা কী?" মাহুত ভাই ক্লান্ত গলায় বলেন, "এইসব বালছাল স্ট্যাটিসটিক্স দিও না খোরশেদী। কাজের কথায় আসো সরাসরি। আর কফিটা ঠাণ্ডা কইরো না।" আমি কফির কাপ তুলে নিই আবার। "ঠিক আছে। আপনার ডিজেলের দাম বাড়াইছেন আবার। আমরা এই বাড়তি দাম দিমু না। কারেন্টের দাম বাড়াইছেন, এইটার বাড়তি দাম আমরা দিমু না।" মাহুত ভাই তাকিয়ে থাকেন। আমি বলে যাই, "বিল যারা দেয় নাই, তাদের কারখানার কানেকশন কাটা যাবে না।" মাহুত ভাই কিছু বলেন না। "ডিজেলে, ফার্নেস অয়েলে ভর্তুকি দিতে হবে। পানির কানেকশন ফ্রি করতে হবে। আমাদের ট্র্যান্সপোর্ট ভেহিকেলগুলির জন্য বিভিন্ন সেতুতে যে বিপুল খাজনা দিতে হয়, সেটা পুরোপুরি তুলে নিতে হবে।" কফির কাপে চুমুক দিই আমি। মাহুত ভাই চেয়ে থাকেন আমার দিকে। আমি বলে যাই, "আমাদের সংগঠনের সদস্য ও তাদের পরিবারের জন্য ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট বরাদ্দ করতে হবে।" তাকিয়ে দেখি, মাহুত ভাইয়ের কপালের রগটা লাফাচ্ছে। বলে চলি, "এই খাতে যত যন্ত্রপাতি আছে, সবকিছুর আমদানির ওপর শুল্ক সরিয়ে নিতে হবে। আমাদের ওপর রাজস্ব বিভাগের গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি সরাতে হবে।" অর্থমন্ত্রী চেয়েই থাকেন আমার দিকে। কফি খাই এক চুমুক। কফিটা ভালো। অদ্ভূত ধারালো ঘ্রাণ। মাথাটা একদম খুলে যায়। বলি, "স্বর্ণদ্বীপে বসবাসের জন্যে যে বিশেষ কর দিতে হয় আমাদের সংগঠনের সদস্যদের, সেটা মকুব করতে হবে।" মাহুত ভাই বলেন, "শেষ?" কফির কাপটা নামিয়ে রাখি। বলি, "হ্যাঁ, আরেক কাপ খাওয়ান। ... আর হ্যাঁ, ঐ মন্দা থেকে উত্তরণের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ, সেটা থোক বরাদ্দ করতে হবে আমার দেয়া তালিকা অনুযায়ী। কুড়ি হাজার কোটি টাকা আমরা কাজে লাগাতে পারবো। ঈদে বোনাস দিতে হবে আমাদের শ্রমিকদের।" মাহুত ভাই কিছু বলেন না, চুপচাপ কফির দামি ফ্লাস্কটা এগিয়ে দেন আমার দিকে। কফি ঢালি। একটা রসিকতা করার ইচ্ছাকে গলা টিপে মারি। মাহুত ভাই মুরুব্বি মানুষ, আমার বড় ভাইয়ের বাল্যবন্ধু, কীভাবে বলি এসব? আমাকে সাংঘাতিক চমকে দিয়ে মাহুত ভাই বলেন, "খোরশেদী, সরকারের পয়সায় সুন্দরী তরুণীদের রিক্রুট করে তোমাদের সংগঠনের সদস্যদের সপ্তায় সপ্তায় ব্লোজব দিতে পাঠানোর দাবি করলা না যে?" হেসে ফেলি। কফিটা আসলেই ভালো। হৃষ্টচিত্তে চুমুক দিই। মাহুত ভাই হাসেন না, ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে থাকেন কেবল। এই শহরে এসে গাড়ির বাইরে বেরিয়ে বহুদিন পর আবার ভালো লাগে আমার।
false
ij
জয়দেব_ দ্বাদশ শতকের সেই সংগীতজ্ঞ কবি আপনি কখনও সাউথ ইন্ডিয়ায় বেড়াতে গেলে পুরাতন মন্দিরগুলি ঘুরে দেখবেন । সম্ভব হলে মন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে দেখা করবেন। বলবেন: “আমি বাঙালি। আমি জয়দেবের দেশের লোক।” দেখবেন পুরোহিত আপনার দিকে অদ্ভূত চোখে চেয়ে আছে। তার কারণ আছে। ১২ শতকের এক অসামান্য বাঙালি কবি নৃত্যাচার্য ও প্রতিভাবান সংগীতজ্ঞের কথা তিনি জানেন এবং জানেন যে সেই কবির লেখা একটি অসামান্য কাব্যগ্রন্থ আজও দক্ষিণ ভারতের কলাকেন্দ্রসমূহকে আলোকিত করে রেখেছে। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের গায়ে আপনি যে নারী ভাস্কর্যের নৃত্যরত মুদ্রাটি দেখবেন -তা সম্ভবত সেই বাঙালি কবি জয়দেব-এরই নির্দেশিত এবং যে নারীর ভঙ্গিমাটি দেখবেন তা সম্ভবত জয়দের দক্ষিণ ভারতীয় স্ত্রী পদ্মাবতীর অনুকরণে তৈরি। দক্ষিণ ভারতের মন্দির নৃত্যরতা নারী। এই ভঙ্গিটির পিছনে রয়েছে এক বাঙালি নৃত্যবিদের সৃজনশীলতা কেবল দক্ষিণ ভারতেই নয়- জয়দেবের সংগীতপ্রতিভার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সারা ভারতবর্ষে। এমন কী ‘১৬ শতক রচিত শিখদের ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেবে জয়দেবের দুটি শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে।’ (পরেশচন্দ্র মন্ডল: বাংলাপিডিয়া) জয়দেবের এরকম আসমুদ্রহিমাচল খ্যাতির কারণে উড়িষ্যার পন্ডিতের দাবী জয়দেব উড়ে, মানে জয়দেবের জন্ম হয়েছিল উড়িষ্যায় ; বাংলার পন্ডিতের দাবী নাকচ করে দিয়ে বলে আসছেন যে পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম জেলার অজয়নদের তীরবর্তী কেঁদুলি গাঁয়ে জয়দেবের জন্ম । যে গাঁয়ে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে বসে জয়দেব মেলা। যে মেলায় বাউলেরা আর বৈষ্ণব সহজিয়ারা ভিড় করে ... সুতরাং জয়দেব বাঙালিই ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে বীরভূম জয়দেবের বাবার নাম ভোজদেব (পেশা জানতে পারিনি) Ñ মা বামাদেবী; স্ত্রী পদ্মাবতী। পদ্মাবতীর জন্ম দক্ষিণ ভারতে। মেয়েবেলায় সংগীত ও নৃত্যর শিক্ষা হয়েছিল। তৎকালে গুণী কন্যাকে দেবালয়ে উৎসর্গ করার চল ছিল। মা বাবা নিয়ে এলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। পুরীর জগন্নাথ মন্দির। এখানে থাকাকালীন পদ্মাবতীর মা-বাবা দৈববানী শুনতে পান: জয়দেব হবেন পদ্মাবতীর স্বামী। তাইই হয়েছিল। গীত ও নৃত্যপটিয়সী পদ্মাবতী জীবনভর স্বামীর সঙ্গে একসঙ্গে গান করেছেন। নেচেছেন। হলায়ূধ রচিত ‘শেখ শুভোদয়া’ একটি ঐতিহাসি গ্রন্থ। তাতে জয়দেব আর পদ্মাবতীর সম্পর্কে নানা অলীক কাহিনী রয়েছে। একবার। পদ্মাবতী গঙ্গায় নাইতে যাচ্ছিলেন। পাশেই রাজা লক্ষণ সেনের (১১১৯-১২০৫) প্রাসাদ। বিপুল করতলধ্বনি শুনে রাজসভায় উপস্থিত হলেন। জয়দেব লক্ষণসেনের রাজসভার পঞ্চরতেœর অন্যতম। প্রায়ই জয়দেবের সঙ্গে রাজা লক্ষণ সেনের দরবারে উপস্থিত হয়ে নাচগান করেন। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করে শুনলেন, মিথিলার সংগীতাচার্য বুড়ণ মিশ্র রাজা লক্ষণ সেনের কাছ থেকে জয়পত্র (সম্মান সূচক উপাধি) নেবেন। কেন? পদ্মাবতী বিস্মিত। কেননা তিনি গান গেয়ে গাছের পাতা ঝরিয়েছেন। একজন সভাষদ বললেন। পদ্মাবতী এগিয়ে গিয়ে রাজ লক্ষণ সেনকে বললেন, আমার স্বামী বেঁচে থাকতে ইনি জয়পত্র নেবেন কেন? রাজা বললেন পদ্মাবতী ইনি জয়পত্র নেবেন কারণ ইনি অসাধারণ গায়ক। তিনি গান গেয়ে গাছের পাতা ঝরিয়েছেন। বুড়ণ মিশ্র জিজ্ঞেস করলেন ইনি কে? রাজা বললেন ইনি পদ্মাবতী ; বাংলার প্রখ্যাত গায়ক জয়দেবের স্ত্রী । যা হোক। পদ্মাবতী মিথিলার সংগীতাচার্য বুড়ণ মিশ্র কে পরাজিত করার জন্য মালব গৌড় রাগে আলাপ ধরলেন। গঙ্গার নৌকাগুলি দুলে দুলে উঠল। রাজার কাছ থেকে জয়পত্র পদ্মাবতীই নিলেন। এসই হল গালগপ্পো; সে কালের লোকে বিশ্বাস করত; আমরা বিশ্বাস করি না। তবে বোঝা যায় পদ্মাবতীজয়দেবযুগল কী ভীষণ শিল্পময় জীবন যাপন করতেন। জর্মন মহাত্মা নিৎসে বলেছেন, “আর্ট ইজ দ্যা প্রপার টাস্ক অভ লাইভ।” জীবন শিল্পশূন্য হলেই উগ্রপন্থার জন্ম হবে। বাউলের জীবন বিপদজনক হয়ে উঠবে। তখন একবার লিখেছি বীরভূম জেলার অজয়নদের তীরবর্তী কেঁদুলি গাঁয়ে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে বসে জয়দেব মেলা। যে মেলায় বাউলের আগমন ঘটে। বাউলশ্রেষ্ঠ লালন গেয়েছেন: এই মানুষে হবে মাধুর্য-ভজন তাই তো মানুষ-রুপ গঠলেন নিরঞ্জন এখানে আমার এক ভাবনার কথা বলি। ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় লিখেছেন, “রাধাকৃষ্ণের ধ্যান-কল্পনাও বোধ হয় এই পর্বের বাঙলাদেশেরই সৃষ্টি এবং কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ- গ্রন্থেই বোধ হয় প্রথম এই ধ্যান-কল্পনার সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রচলিত রুপ আমরা দেখিতেছি।”(বাঙালীর ইতিহাস। পৃষ্ঠা; ৫৪৮) তার মানে দ্বাদশ শতকের কবি জয়দেবের লেখাতেই প্রথম রুপ পেলেন শ্রীরাধিকা। শ্রীরাধিকা। কল্পনা প্রথম করলেন জয়দেব। এর পিছনে পদ্মাবতীর প্রভাব উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইস কৃষ্ণ একা সঙ্গীনি জুটিয়ে দাও। খাটো করছি না। রাধাকৃষ্ণ। ভাবলে অবাক হতে হয়। রাধাকল্পনা এক বাঙালি কবির ... জয়দেবরচিত অন্যতম কাব্যগ্রন্থ হল গীতগোবিন্দ। বিষয়: রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা। কাব্যটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা। সংস্কৃত কেন? সেকালের রীতি। সময়টা সেন আমল। সেন রাজারা হিন্দু। সংস্কৃত দেবভাষা। এ জন্যই । করুণাময় গোস্বামী ‘বাংলা গানের বিবর্তন’ বইতে লিখেছেন: ‘ বাংলা গানের ইতিহাসে, এবং বলতে গেলে ভারতবর্ষের সংগীত ও নৃত্যকলার ইতিহাসে এক অতুলনীয় স্থান অধিকার করে আছে গীতগোবিন্দ গ্রন্থটি।’ (পৃষ্ঠা, ২৩) অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ রাধাকৃষ্ণের বিরহ-মিলন কাহিনী অবলম্বনে রচিত জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যটি সমধিক পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই কাব্যটির ওপর ৪০টিরও অধিক টীকা রচিত হয়েছে। তা থেকে এর সর্বভারতীয় খ্যাতির পরিমাপ করা যায়। ’ (প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ২য় খন্ড; পৃষ্ঠা, ৩৫৫) ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে তথা বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে জয়দেবই প্রথম দেবতার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষের দিকে তাকালেন। অধ্যাপক অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “অলৌকিক দেবতাদের মানবীকরণের ইঙ্গিত তিনিই প্রথম দেন।” ( প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ২য় খন্ড; পৃষ্ঠা, ৩৫৫) এ কারণে জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দের গানগুলি বলা যায় মানুষের গান। এর অর্ন্তগত গানগুলি অষ্টপদী বা আট লাইনের। গীতগোবিন্দ বারোটি সর্গে ও চব্বিশটি গানে বিভক্ত। প্রতিটি গানের ওপরে রাগ ও তালের নাম লেখা আছে। চর্যাপদের শীর্ষেও তেমন রাগের নাম উল্লেখিত আছে। তবে তালের নাম উল্লেখ নেই। গীতগোবিন্দের কয়েকটি তালের নাম: রুপক, নিঃসার, যতি, একতালী, অষ্টতাল। রাগের নাম: মালবগৌড়, গুজ্জরী,কর্ণাট, দেশাখ, ভৈরবী, বিভাস, বসন্ত। গীতগোবিন্দ সংস্কৃত ভাষায় লেখা বলে সংস্কৃত সাহিত্যের অর্ন্তগত। তবে সংস্কৃতকাব্যের সঙ্গে পার্থক্যও রয়েছে। যেমন অন্তমিল। গীতগোবিন্দের অন্তমিল বিস্ময়ের উদ্রেক করে। এই লেখার সূচনায় দক্ষিণ ভারতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলাম। সেই প্রসঙ্গটি আবাও উত্থাপন করি। দক্ষিণ ভারতের অন্যতম সাধক কবির নাম ত্যাগরাজ । তাঁর সময়কাল ১৭৬৭/১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দ। বাঙালি সমাজে লালন ও রবীন্দ্রনাথের যে স্থান ও সম্মান, দক্ষিণভারতের সমাজেও ত্যাগরাজের স্থানও অনুরুপ। তাঁর ‘ প্রহলাদ বিজয়ম’ এর ভূমিকায় ত্যাগরাজ বাঙালি কবি জয়দেব কে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন । এ থেকে দক্ষিণ ভারতে জয়দেবের গ্রহনযোগ্যতা অনুমান করা যায় । ত্যাগরাজের কয়েকটি গীতিনাট্যগুলি জয়দেবের অনুপ্রেরণায় রচিত। দক্ষিণের ভারতীয় নারীদের নৃত্যের অনুশীলন। ১৭ শতক থেকে তামিলনাড়–তে গীতগোবিন্দের রুপায়ন হতে থাকে। সাধারণ মানুষের মধ্যে জয়দেবের গীত-নৃত্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অন্ধ্রের নৃত্যকলার মতন তামিল নৃত্যেও জয়দেবের গীতগোবিন্দের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তাঞ্জোর জেলার অনেক কাব্য অষ্টপদী র আঙ্গিক। কথাকলি নৃত্যের ওপরও জয়দেবের প্রভাব স্পষ্ট। পরবর্তীকালে বাংলা পদাবলী সাহিত্যে জয়দেবের গভীর প্রভাব পড়েছে। ভগবান শ্রীচৈতন্যদেবপন্থী বৈষ্ণব সহজিয়াগন জয়দেবকে আদিগুরু এবং নবরসিকের অন্যতম বলে মর্যাদা দিয়েছেন। মনিপুরেও জয়দেবের অপরিসীম সম্মান। মনিপুরী ধর্মীয় জীবনে রাধাকৃষ্ণলীলা অপরিহার্য বিষয়। ষোড়শ সপ্তদশ শতক থেকে মনিপুরে গীতগোবিন্দ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। তথ্যসূত্র: ১ করুণাময় গোস্বামী ; বাংলা গানের বিবর্তন। ২ অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায়; প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ২য় খন্ড; ৩ বাংলাপিডিয়া সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:৪৩
false
mk
বিএনপির বিদেশী নির্ভর রাজনীতি দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা অবরোধ ও হরতাল এবং সেই সঙ্গে সহিংসতা, অগ্নিদগ্ধ মানুষের যন্ত্রণা, অন্যদিকে ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যা এবং গণতন্ত্র হত্যা- দুইয়ে মিলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, দেশবাসী তার থেকে পরিত্রাণ চায়। কিন্তু ভাবগতিক দেখে মনে হয় সহসা এই বিভীষিকা থেকে মুক্তি মিলছে না। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, গত দুই মাসে দুপক্ষের সহিংসতায় মারা গেছেন ১১৫ জন। তার মধ্যে পেট্রলবোমা ও আগুনে পুড়ে মারার সংখ্যা ৬২ জন। বন্দুকযুদ্ধ ও তথাকথিত গণপিটুনিতে মৃত্যু ৩৬ জন। সংঘর্ষ, 'গুলিবিদ্ধ লাশ' ও 'সড়ক দুর্ঘটনায়' ১৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।দুই বিবদমান পক্ষের মধ্যে যে সংঘাত চলছে তার সঙ্গে কিন্তু জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিরোধী পক্ষ হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যেতে পারলেও জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারেনি। হয়তো বলা হবে যে, বিরোধী দলকে তো শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশই করতে দেওয়া হচ্ছে না। রাস্তায় নামলেই তো গ্রেফতার। এমনকি ক্রসফায়ারের আশঙ্কাও আছে। এই অভিযোগের সত্যতা আছে। তবু বলব, জনগণের পক্ষের সত্যিকারের সংগ্রামী দল হলে তো প্রতিকূল পরিবেশেও মানুষ রাস্তায় নামতো। কিন্তু বিএনপি বা খালেদা জিয়ার জন্য মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন রাস্তায় নামবে? স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে হয়তো নেগেটিভ ভোটে বিএনপির জেতার সম্ভাবনা ছিল। গত বছরের উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল দেখে তাই মনে হয়। কিন্তু নির্বাচনে ভোট দেওয়া এক জিনিস আর জানবাজি রেখে রাস্তায় নামা আরেক জিনিস।বিরোধী জোট দুই মাস ধরে অবরোধের পাশাপাশি হরতালও দিচ্ছে। এই হরতাল ডাকার একটা প্যাটার্ন তৈরি হয়েছে। প্রথমে রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা এবং তারপর আরও ৪৮ ঘণ্টা বর্ধিত করা হয়। মনে হয়, যেন তারা আন্দোলনের নামে তামাশা করছেন। এই তামাশার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঢাকা শহরে হরতাল-অবরোধ কোনোটাই কার্যকরী নয়। ঢাকার বাইরে বোমাতঙ্কে হরতাল হচ্ছে। প্রধানত দূরপাল্লার যানবাহন দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। সাধারণ গরিব মানুষ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু জনগণের নাম নিয়ে রাজনীতি করা বিএনপি মানুষের ভালোমন্দ নিয়ে কবে ভেবেছে? বিগত ছয় বছরে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় বিএনপি গরিব মধ্যবিত্তদের দাবি নিয়ে কোনো একটি সভাও করেনি। তাদের কোনো আর্থ-সামাজিক কর্মসূচিও নেই। এভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডাকা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বহন করে।অন্যদিকে সরকারও সমভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা রাজনৈতিক সংকটের কথা অস্বীকার করে মিথ্যাচার ও ফ্যাসিসুলভ আচরণ করে চলেছেন। একটি বিখ্যাত কথা আছে 'ট্রুথ ইজ দ্য ফাস্ট ক্যাজুয়েলিটি অব ওয়ার' অর্থাৎ যুদ্ধে প্রথম যা বলি হয় তা হলো 'সত্য'। বর্তমানে দুই বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে সেই সত্য নামক শব্দটি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রথমে দেখা যাক, বিরোধীপক্ষ কিভাবে মিথ্যাচার করেছে। ছয়জন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের নামে যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপি নেতারা যে জাল বিবৃতি দিয়েছিলেন তা দলটির চরম দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে। প্রথমত, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ। দ্বিতীয়ত, বিদেশ-নির্ভরতা। একইভাবে ভারতের শাসক দল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গে ফোনালাপ নিয়েও সংশয় আছে।এ ধরনের মিথ্যা বিবৃতির উদ্দেশ্য কি? জনগণ এবং হতাশ হয়ে যাওয়া দলের কর্মীদের আশ্বাস দেওয়া যে, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণের ওপর আস্থা থাকলে বিদেশিদের দিকে তাকাতে হয় না। বিদেশ-নির্ভরতা শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং জোট সরকারেরও বৈশিষ্ট্য। একই সঙ্গে তারা সত্যের অপলাপ করে চলেছেন অবলীলাক্রমে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রথম দেখা যাক তারা বিরোধী দলকে দমনের জন্য কি ধরনের নিকৃষ্ট কৌশল গ্রহণ করেছেন এবং একই সঙ্গে সত্যের অপলাপ করে চলেছেন। ক্রসফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধের নামে মিথ্যা নাটক সাজানোর ব্যাপারটি তো বেশ পুরনো। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গণপিটুনির নামে বিচার-বহির্ভূত হত্যা। গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের কাজীপাড়ায় তিন তরুণ গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়। তারা নাকি নাশকতামূলক কাজ করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন এবং গণপিটুনিতে নিহত হন। কিন্তু পরদিনই পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায় তিনজনের দেহে অন্তত ৫৪টি গুলি রয়েছে। এমনকি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান পর্যন্ত মন্তব্য করেছেন 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা দেখে মনে হয় তারা ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার করেছেন। এ ক্ষেত্রে এমন কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। অনেক সময় বন্দুক যুদ্ধের পর নিহত ব্যক্তির পাশে পেট্রলবোমা রাখা হচ্ছে।' (বাংলাদেশ প্রতিদিন-৬ মার্চ ২০১৫)ইতিপূর্বেও আমরা দেখেছি খালেদা জিয়ার কার্যালয় তালা মেরে বলা হচ্ছে যে তিনি অবরুদ্ধ নন। বালুর ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করার পরও জনৈক মন্ত্রী বলেছেন, বাড়ি মেরামত করার জন্য বালুর ট্রাক রাখা হয়েছে। এ সবই নিকৃষ্ট ধরনের মিথ্যাচার। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিকৃষ্ট ধরনের কৌশল। যথা বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া, অথবা বাইরে থেকে খাবার আনতে না দেওয়া। এসব কর্মকাণ্ড অতি নিকৃষ্ট সাংস্কৃতিক মান ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় বহন করে। বিবদমান দুদল যে ধরনের অতি নিম্নরুচি ও সংসৃ্কতির পরিচয় দিয়েছে তাতে বিশ্বের কাছে আমরা বড় ছোট হয়ে গেছি।বিশ্বের কাছে আমরা যে কত ছোট হয়েছি তার আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। কিছু দিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক এক কমিটির নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপারে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিথ্যাচার করে দাবি করল, তারা নাকি কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। অর্থাৎ জনগণকে বোঝানো হয়েছে, বিদেশিরা সরকারের সঙ্গে আছে। বিদেশ-নির্ভরতা ও মিথ্যাচারের আরেকটি দৃষ্টান্ত। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যকে খণ্ডন করে সেই কমিটির নেতা ঢাকায় বসেই বললেন, 'উদ্বিগ্ন বলেই তো বাংলাদেশে এসেছি'। দেশের মানসম্মান সবটাই এভাবে ভূলুণ্ঠিত হয় সত্যের অপলাপকারী ও অর্বাচীন সরকারের কারণে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেরকার বক্তব্যের সংশোধনী আনতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমন ঘটনা নজিরবিহীন।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যে বৈঠক হয় সেখানে কি আলোচনা হয়েছিল তা নিয়েও সরকার অর্ধসত্য বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারি ভাষ্যে সে কথা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছিল। বিরোধীপক্ষ যেমন দেখাতে চায়, বৈদেশিক শক্তি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, তেমনি সরকারও আশ্বাস দিতে চায়, বিদেশিদের কোনো চাপ নেই, তারা নাকি সবাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন মেনে নিয়েছে।এদিক দিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অনেক বেশি স্পষ্টভাষী। তিনি মার্কিন সহকারী মন্ত্রীকে দুই আনার মন্ত্রী বলে উপেক্ষা ও তাচ্ছিল্য করতে পেরেছেন। এমনকি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের তোয়াক্কা না করে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে (সদ্য বিদায়ী ড্যান মোজীনা) বাসার কাজের মেয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ভাবখানা দেখে মনে হয়, সরকার যেন হঠাৎ করে বামপন্থি হয়ে গেছে। তবে বামপন্থি ও কমিউনিস্ট কোনো নেতা সত্যিকার অর্থে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও এমন ভাষা ব্যবহার করবেন না। কারণ এটা সাধারণ সৌজন্যবোধের পরিপন্থী। সরকারের আরেক মন্ত্রী বলে গেলেন, পাকিস্তান দূতাবাসে তালা লাগানো হবে। মন্ত্রীদের কথাবার্তায় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পাকিস্তান একটি প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে আমি যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম, সেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। তথাপি বঙ্গবন্ধু নিজেই পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। সেই কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকা অবস্থায় কি কোনো মন্ত্রী তাদের দূতাবাসে তালা লাগানোর ঘোষণা দিতে পারেন? বাংলাদেশ এক আজব দেশে পরিণত হয়েছে।হয়তো মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের দুই নম্বর শীর্ষ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে ঘৃণা ও ক্ষোভ এতটাই বেশি যে, তিনি ভদ্রতার তোয়াক্কা করেননি। আমি তাকে শাবাশ দিতাম যদি না সরকারের আরেক মন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটনে ছুটে যেতেন মার্কিন প্রশাসনকে তুষ্ট করার জন্য। সরকার যে তড়িঘড়ি করে বঙ্গোপসাগরের তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছে সেটিও দৃষ্টির বাইরে রাখা যাবে না।মোট কথা সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়ই মিথ্যাচার এবং বিদেশ-নির্ভরতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছে। এখন যে রাজনীতি চলছে তা হচ্ছে সহিংসতা-নৃশংসতা গণতন্ত্র হরণ এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিথ্যাচার ও বিদেশ-নির্ভরতা। এটি সামগ্রিকভাবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের চরম দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে। তাই রাজনৈতিক সংকটও নিরসন হচ্ছে না। আমি জানি না এই রাজনীতি দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে।তবু আশা রাখব। আশা করব, সব পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বিরোধীপক্ষ অবরোধ প্রত্যাহার করে সন্ত্রাসী রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে। সরকারও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করে গণতন্ত্রের পথে আসবে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেবে। ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ বন্ধ হবে। বিরোধী দলের নেতারা মুক্ত হবেন এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথ খুঁজবেন। জোর করে ক্ষমতা অাঁকড়ে থাকার অপচেষ্টা থেকে বিরত হবেন। এই যে আশাবাদ সেটা কেবল আমার না, প্রতিটি গণতন্ত্রকামী শান্তিপ্রিয় মানুষেরই মনের কথা। কিন্তু আশাবাদ যদি ব্যর্থ হয় তাহলে সামনে যে দুর্দিন আসবে তা ভাবতেও শঙ্কিত হচ্ছি। আশঙ্কা হয়, এই সংকটের মাঝখান দিয়ে মৌলবাদ আরও হিংস্র জঙ্গিরূপে আত্দপ্রকাশ করবে। আর সরকারও আরও ফ্যাসিবাদী রূপ পরিগ্রহ করবে।তাহলে ভরসার জায়গা কোথায়? শেষ ভরসার জায়গা জনগণ। এই জনগণ উভয়পক্ষকে পরিত্যাগ করে নতুন গণতান্ত্রিক শক্তির অভ্যুদয় ঘটাবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ'। সেই বিশ্বাস আমিও এই দেশের মানুষের ওপর রাখতে চাই। (কলাম লেখক: হায়দার আকবর খান রনো, বাংলাদেশ প্রতিদিন)
false
rg
।। চলে গেলেন এ সময়ের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক অনিল ঘড়াই।। ২২ নভেম্বর ২০১৪, শনিবার রাত সাড়ে বারোটায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইহকাল ত্যাগ করেন এই সময়ের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক অনিল ঘড়াই। দীর্ঘ আট মাস দিন ধরে তিনি কিডনির কঠিন অসুখে ভুগছিলেন ৷‌মৃত্যুকালে এই লেখকের বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৭ বছর ৷‌ কথাসাহিত্যিক অনিল ঘড়াই ১৯৫৭ সালের ১ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার অম্তর্গত রুক্সিণীপুর গ্রামে জন্মগ্রহন কেরন ৷‌ তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে নদীয়া জেলার কালীগঞ্জে ৷‌ তিনি পড়াশুনা করেছিলেন টেলি-কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি চক্রধরপুরে রেলের ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি খড়গপুর রেলবিভাগে বদলি হন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়েতে আধিকারিক হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরিসূত্রে চক্রধরপুর ও পরে খড়্গপুরে বসবাস করতেন। ১৯৯০ সালে তাঁর প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয় `দেশ' পত্রিকায়। ১৯৯৪ সালে তিনি দলিত সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত 'সর্বভারতীয় সংস্কৃতি পুরস্কার' লাভ করেন। নদিয়ার রাজোয়াড় বিদ্রোহ নিয়ে তাঁর লেখা উপন্যাস `অনন্ত দ্রাঘিমা' ২০১০ সালে `বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার' লাভ করে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘নুনবাড়ি’ এবং গল্প-সঙ্কলন ‘কাক’ থেকেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য সাহিত্য সৃষ্টির যাত্রা শুরু ৷‌ অনিল ঘড়াই'র সাহিত্যের মূল সম্পদ হল দলিত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনচর্যা। তাঁর লেখনির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল জীবনের বিস্তৃত পরিসর, মানসিক টানাপোড়েন, জীবনঘনিষ্ট খুঁটিনাটি অনুসঙ্গ। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা ষাটেরও বেশি। ঔপন্যাসিক ও গল্পকার পরিচয়ের আড়ালে তিনি ছিলেন আসলে অসাধারণ এক আত্মভোলা কবি। কবিতা ছিল তাঁর প্রথম প্রেম ৷‌ কবিতার জন্য তিনি পেয়েছেন ‘আকাশ সাহিত্য পুরস্কার’ ও ‘কবি নিত্যানন্দ পুরস্কার’৷‌ এছাড়া কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন 'সোমেন চন্দ পুরস্কার', 'তারাশঙ্কর পুরস্কার (২০০১)', 'মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (১৯৯৪), 'তিস্তা-তোর্সা সম্মাননা-সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা ৷‌ তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প-উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘পরীযান ও অন্যান্য গল্প’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘কামকুঠিয়া’, ‘ফুলপরী’, ‘জন্মদাগ’, ‘নীল দুঃখের ছবি’, ‘সামনে সাগর’, ‘দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান’, ‘বনবাসী’, ‘জার্মানের মা’, ‘লোধগ্রামে সূর্যোদয়’, 'বিপরীত যুদ্ধের মহড়া', 'চৈত্রফুল', 'নুনা সামাদের গল্প', '২৫টি নির্বাচিত গল্প', 'খেলাঘর', 'অন্তজা প্রেমের গল্প', 'বক্ররেখা', 'শ্রেষ্ঠ গল্প', 'স্বপ্নের খোড়াপাখি', 'মিঘ জীবনের তৃষ্ণা', 'কলের পুতুল', '৫১টা গল্প', 'বাবাবাসি', 'জ্ঞানবৃক্ষের ফুল', 'গর্ব দাও', 'আগুন', 'পরাধীন', 'শ্বেতপদ্ম' প্রভৃতি ৷‌ এছাড়া হিন্দী ও ইংরেজি ভাষাতেও তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি সমানে চালিয়ে গেছেন তাঁর সাহিত্যকর্ম। আর ‘তূর্য’ পত্রিকার সম্পাদনাসহ অন্যান্য লেখালেখির কাজ। মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা ও স্ত্রী রেখে গেছেন। গতকাল রবিবার নদিয়ার কালীগঞ্জের আদি বাড়িতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কথাসাহিত্যিক অনিল ঘড়াই'র বাবার নাম অভিমন্যু ঘড়াই আর মাতার নাম তিলোত্তমা ঘড়াই। মানুষের প্রতি আন্তরিক ব্যবহার ছিল কথাসাহিত্যক অনিল ঘড়াই'র চরিত্রের একটি অন্যতম উজ্জ্বল দিক। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য হারালো চলমান সময়ের একজন শক্তিশালী কথাসাহিত্যিককে। ২০১৩ সালে আমার চতুর্থ গল্পগ্রন্থ 'ভূমিপুত্র' প্রকাশিত হয় অন্যপ্রকাশ থেকে। বইটি বাংলা একাডেমি'র অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসে ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি। ২২ তারিখ গল্পকার রাজীব নূর (Rajib Noor) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, বইয়ের কী নাম রাখছেন, রেজা ? বললাম 'ভূমিপুত্র'। রাজীবদা বললেন, রেজা, ওই নামে তো মিলন ভাই'র একটা বই আছে। কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস 'ভূমিপুত্র'। সম্ভবত ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে। আমি তো কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম, এখন কী হবে? যাউকগা!! মিলন ভাইয়ের সাথে দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নেব, এমনটা মনে মনে ভাবলাম। কিন্তু মিলন ভাইকে একথা আজ পর্যন্ত আর জানানো হল না। তাছাড়া মিলন ভাই'রটা উপন্যাস। আমারটা ছোটগল্প। কি আর করা। রাতে বাসায় ফিরে ইন্টারনেটে 'ভূমিপুত্র' লিখে সার্স দিলাম। গুগল মহাশয় তিনটি নাম শো করলো। ইমদাদুল হক মিলন, অনিল ঘড়াই আর রেজা ঘটক। আরো সার্স দিয়ে পেলাম যে, অনিল ঘড়াই'র বইটিও একটি গল্পের বই। তখন থেকেই একটা চাপা কষ্ট আমাকে পেয়ে বসল। যে করেই হোক অনিল ঘড়াই'র সঙ্গে যোগাযোগ করে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। মনে মনে ভাবলাম, কার কাছে অনিলদা'র ইমেইল অ্যাড্রেস পাওয়া যাবে? টোকন ঠাকুর (Tokon Thaakoor), তপন বাগচী (Tapan Bagchi), জাকির তালুকদার (Zakir Talukder), শামীম রেজা (Shamim Reza), আলফ্রেড খোকন (Alfred Khokon), সায়মন জাকারিয়া (Bhab Nagar)? কিন্তু এদের অনেকের সাথে এরপর দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। কিন্তু অনিলদা'র ইমেইল অ্যাড্রেস চাইতে ভুলে গেছি। আমার ইমেইল অ্যাড্রেস আর নেওয়া হয়নি। দু"খপ্রকাশও করা হয়নি। কাল রাতে জাকির (Zakir Talukder) ভাই'র ফেসবুক স্টাটাস পড়ার পর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। পৃথিবীতে কত যে কাজ যে সময় মত মনে পড়ে না। অনিলদা'র সঙ্গে কথা হল না। দেখা হল না। আড্ডা হল না। অথচ মাত্র ৫৭ বছর ২১ দিন কি এমন সময়? এই বয়সে এভাবে চলে যেতে হবে দাদা!!! দাদা, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার আত্মা চির শান্তি পাক, এই কামনা করি... সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৪
false
rg
ছিটমহল সমস্যা_ আদি থেকে বর্তমান, সমাধান নেই!! বারো ভূঁইয়াদের একজনের নাম ছিল হাজো ভূঁইয়া। হাজো ভূঁইয়ার ছিল দুই মেয়ে। জিরা আর হিরা। সংকোশ বা সরলডাঙ্গা নদী আর চম্পাবতী নদীর মাঝখানে চিকনা পর্বতাঞ্চলে তখন ছিল মাঙ্গোলীয়দের আধিপত্য। চিকনা পর্বতের অবস্থান ডুবরী থেকে প্রায় ৫০ মাইল উত্তরে। ডুবরী হল বর্তমান আসামের গোয়ালপাড়া জেলা। চিকনা পর্বতের মাঙ্গোলীয় গোত্রের সর্দার ছিলেন হারিয়া। হরিদাস মন্ডল নামেই ইতিহাসে সবাই যাকে চেনেন। এই হরিদাস মন্ডল ছিলেন মাঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত হৈহৈ বংশের উত্তারধীকার। চিকনা পর্বতে সংঘর্ষ এড়াতে, জাতিগত দাঙ্গা বন্ধ করতে এবং শান্তি বজায় রাখতে হাজো ভূঁইয়া হরিদাস মন্ডলের সাথে তার দুই মেয়ে জিরা ও হিরা'র বিয়ে দিলেন। জিরা ও হিরা'র বিয়ের পর জিরার গর্ভে জন্ম নিল মদন আর চন্দন। অন্যদিকে হিরার গর্ভে জন্ম নিল বিশু (বিশ্ব সিংহ) ও শিশু (শিষ্য সিংহ)। হরিদাস মন্ডলের এই চার ছেলের মধ্যে বিশু (বিশ্ব সিংহ) ছিল সবচেয়ে বেশি সাহসী, বুদ্ধিমান, প্রতাপশালী এবং ক্ষমতাপিয়াসু। পরবর্তীকালে এই বিশু বা বিশ্ব সিংহের হাতেই ১৫১৫ সালে কোচ রাজবংশের গোরাপত্তন। ভারতের কোচবিহার বা কুচবিহার-এর নামটি এসেছে এই কোচ রাজবংশী থেকেই। 'কোচ' এসেছে কোচ রাজবংশী থেকে। আর 'বিহার' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'বিহার' থেকে। যার অর্থ হল 'ভ্রমণ'। জনশ্রুতি হল, কোচ রাজবংশী'র রাজা বিশ্ব সিংহ এবং পরবর্তীকালে তাঁর ছেলে মজারাজ নারা নারায়ন চিকনা পর্বতে যতোটুকু এরিয়া নিয়ে ভ্রমণ করতেন ততোটুকুই হল কোচবিহারের আয়তন। কোচবিহার রাজ্য সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল রাজা বিশ্ব সিংহের পুত্র মহারাজ নারা নারায়নের আমলে। তখন কোচবিহারের সীমানা ছিল উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ এলাকা, বর্তমান বাংলাদেশের রংপুরের সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা, বিহারের কিশানগঞ্জ জেলা, এবং ভূটানের দক্ষিণপাশের কিছু এলাকা। কোচ রাজবংশীদের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে স্বতন্ত্র ও টিকিয়ে রাখার জন্য কোচ রাজা স্বাধীন কমতপুর বা কমতপুরী রাজ্য গড়ে তোলেন। ইতিহাসে যেটি আসলে কামতা কিংডম। কামতা রাজ্যের দুটি প্রধান নগর বা ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। একটির নাম কোচবিহার। অপরটির নাম কোচ হাজো। পরবর্তীকালে কোচবিহারে ব্যবসা-বাণিজ্যের অযুহাতে মুঘলদের অনুপ্রবেশ ঘটল। আর কোচ হাজো নগরটি অহমদের দখলে চলে যায়। কামতা রাজ্যের তৃতীয় আরেকটি শাখা বা ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। সেটির নাম খাসপুর। খাসপুর পরবর্তীকালে কাচারি অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। আসামের প্রথম ঐতিহাসিক নগরীর নাম কামরূপ। কামরূপ নগরীর অস্তিত্ব ছিল ৩৫০ সাল থেকে ১১৪০ সাল পর্যন্ত। মোট তিনটি রাজবংশ কামরূপ শাসন করেছিল। বর্মণ রাজবংশ, মলেচ্ছা রাজবংশ এবং পাল রাজবংশ। আর ওই সময়কালে কামরূপের রাজধানী ছিল যথাক্রমে প্রাগ্যতিষপুর, হারুপেশ্বরা এবং দুর্জয়া। যা বর্তমানের গৌহাটি, তেজপুর এবং গৌহাটি। যার বিস্তৃতি ছিল গোটা ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকা, উত্তরবঙ্গ, এবং বর্তমান বাংলাদেশের কিছু এলাকা। প্রাচীন বাংলার পাল রাজবংশের লোকজন ছিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। আর কামরূপার পাল রাজবংশের লোকজন ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ওই সময়ে ক্রমাগত হিন্দুদের প্রভাব বিস্তারের ফলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ধীরে ধীরে দক্ষিণে, পূর্বে এবং উত্তর-পূর্বের দিকে সরে যেতে বাধ্য হয়। ছিটমহল সমস্যার শুরু আসলে তখন থেকেই। সীমানা সমস্যা মেটানোর জন্য কোচবিহারের রাজা এবং রংপুরের মহারাজা ১৭১৩ সালে মুঘল সম্রাটের নির্দেশে একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৭১৩ সালের ওই সীমান্ত চুক্তি অনুসারেই পরবর্তীকালে বৃটিশ আমলেও কোচবিহার ও রংপুরের সীমানা সেভাবেই ছিল। ১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টির সময় রংপুর সেই সীমান্ত সমস্যা নিয়েই পূর্ব-পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হল। আর কোচবিহার ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত স্বতন্ত্র বৃটিশ কলোনি হিসেবে থেকে পরে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হল। ১৯৫৮ সালে ছিটমহল সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ মিমাংসায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ হয়েছিল। কিন্তু সমস্যার তেমন কোনো সুরাহা তখন হয়নি। এরপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে রংপুর ও কোচবিহার সীমান্তের সেই পুরানা সমস্যা আবারো শুরু হল। ১৯ শে মার্চ ১৯৭২ সালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ বছর মেয়াদী এক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ভারত-বাংলাদেশ শান্তি চুক্তির পর উভয় দেশের মধ্যে সীমানা সমস্যা সমাধানের জন্য ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে দিল্লীতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাশ হয়। ১৯৭৪ সালের ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি অনুসারে মোট ১৫টি সমস্যার সমাধান হয় তখন। তখন ২.৬৪ বর্গ মাইল এলাকার বেরুবাড়ি ছিটমহল ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশ পায় তিনবিঘা করিডোরের পাশে ১৭৮ মিটার X ৮৫ মিটার সাইজের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল। এছাড়া ওই চুক্তি অনুসারে মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্ত, ত্রিপুরা-সিলেট সীমান্ত, ভগলপুর রেলওয়ে লাইন, শিবপুর-গৌরাঙ্গালা সীমান্ত, বেলুনিয়া পয়েন্টে মুহুরী নদী সীমান্ত, ত্রিপুরা-নোয়াখালী সীমান্ত, ত্রিপুরা-কুমিল্লা সীমান্ত, ফেনী নদী সীমান্ত, ত্রিপুরা-হিলট্র্যাকস সীমান্ত, বিয়ানিবাজার-করিমগঞ্জ সীমান্ত, হকার খাল, বইকরী খাল, হিলি সীমান্ত, লাঠিটিলা-দুমাবেড়ী সীমান্ত এবং অন্যান্য ছিটমহলের সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কথা ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ভারত বাংলাদেশ শান্তি চুক্তি এবং ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি মুখ থুবড়ে পড়ল। এর দীর্ঘ দিন পর ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানমোহন সিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের সমস্যা জর্জরিত ১৬২ টি ছিটমহলের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি, রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সুন্দরবন সংরক্ষণ, বাঘ সংরক্ষণ, উভয় দেশের উন্নয়ন ফ্রেমওয়ার্ক, বাংলাদেশ থেকে নেপালে ট্রানজিট সুবিধা, খনিজ সম্পদ আহরণ, মৎস্য সম্পদ আহরণ, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম বিনিময়, ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশ ডিজাইন এবং বাংলাদেশের বিজিএমইএ ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি'র মধ্যে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ঢাকায় না আসায় তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি এবং ছিটমহল সংক্রান্ত সীমান্ত সমস্যা সমাধান চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সমস্যা জর্জরিত ১৬২ টি ছিটমহলের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, ছিটমহলগুলোর জনগণের নাগরিকত্ব এবং যাতায়াত সুবিধা নির্ধারণে যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেখানে ৫১ টি ছিটমহল ভারত নেবে, যার আয়তন প্রায় ৭,১১০ একর। আর ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ পাবে, যার আয়তন প্রায় ১৭,১৪৯ একর। চলতি বছরের (২০১৩ সালের) আগস্ট মাসে ভারতীয় লোকসভায় ছিটমহল সংক্রান্ত নতুন সীমানা নির্ধারণ বিলটি কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন জোট সরকার লোকসভায় পাশের জন্য উত্থাপন করলেও বিরোধীদল বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বাধার মুখে তা লোকসভায় পাশ হয় নি। ভারতীয় লোকসভায় এই বিলটি পাশের জন্য কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন জোট সরকারের দুই তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। যা কংগ্রেসের নেই। ফলে বিলটি আর পাশ হল না। ওদিকে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আবারো ছিটমহল সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নতুন করে গোল পাকিয়ে বলেছেন, 'এই চুক্তিটির খসড়া করার সময় কেন্দ্রীয় সরকার একরকম কথা বলেছিলো। কিন্তু চুক্তি হওয়ার পর তা অন্যরকম হয়ে গেছে। জমি পুনর্বন্টন চুক্তির ক্ষেত্রেও আমরা প্রথম থেকেই কেন্দ্রকে বলে আসছি যে, হস্তান্তর হওয়ার কথা আছে যেসব জমির, সেখানকার বাসিন্দাদের সম্মতি নেয়া প্রয়োজন।' এছাড়া মমতা রাজ্যের জমি হারানোর প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘এই চুক্তিতে রাজ্যের ছিটমহলের ১৭ হাজার একর জমি হস্তান্তর হওয়ার কথা। বদলে আমরা পাবো মাত্র ৭ হাজার একর। সুতরাং যারা এইসব এলাকায় থাকেন তাদের সম্মতি না নিয়ে এমন জিনিস কীভাবে আমরা মেনে নিতে পারি?’ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের কাছে তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই আমাদের জমি (ছিটমহল), জল (তিস্তা) বিলিয়ে দিতে এত তাড়া কীসের? কী ধরণের রাজনীতির খেলা খেলতে চাইছে তারা?’ সামনে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। ১৫তম লোকসভার মেয়াদ শেষ হবে ৩১ মে ২০১৪ সালে। আবার বাংলাদেশেও সামনে জাতীয় নির্বাচন। ২৫ শে অক্টোবর ২০১৩ সালে নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে হবে। একথা প্রায় নির্দিধায় বলা যায় যে, ভারতে কংগ্রেস সরকার এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার উভয় দেশের আগামী নির্বাচনে পুনঃনির্বাচিত না হতে পারলে ছিটমহল সমস্যা আবারো মুখ থুবড়ে পড়বে। আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার ছিটমহল সমস্যা সমাধানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে কূটনৈতিক তৎপরতায় কম গুরুত্ব দেওয়ায়, একা মমতাই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টেক্কা মেরে ছিটমহল সমস্যা এবং তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি আটকে দিতে সক্ষম হলেন। আগামীতে ভারতে কংগ্রেস দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এমন কি আগামী নির্বাচনে কংগ্রেস সরকার গঠন করতে পারবে কিনা তা নিয়েও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা চিন্তিত। ভারতে যে দলই কেন্দ্রে সরকার গঠন করুক না কেন, রাজ্য সরকারকে পাশ কাটিয়ে কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার ক্ষমতা কেন্দ্রের কার্যত নেই। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দোপাধ্যায় একটি ফ্যাক্টর থেকেই যাচ্ছে। আর বাংলাদেশে তো আগামী দশম সাধারণ নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, তা নিয়েই এখনো সরকার ও বিরোধীদল কোনো সমঝোতায় বসার উদ্যোগ নেয়নি। অর্থ্যাৎ আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে সেই প্রশ্নে দিন দিন দেশ একটি ভয়াবহ সমস্যার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। তাই ভারত এবং বাংলাদেশের ছিটমহল সমস্যা এবং তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি কখন কিভাবে হবে, চুক্তি হলেও তা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, তা একটি গহীন ধোয়াশার মধ্যেই পতিত হয়েছে। ১৭১৩ সালে যে সমস্যার আনুষ্ঠানিক শুরু এবং যে সমস্যাটির বয়স এখন ৩০০ বছর, সেই সমস্যা সমাধানে উভয় দেশের রাজনৈতিক নের্তৃত্বের যেমন আরো অনেক প্রাজ্ঞ এবং দূরদর্শী হতে হবে, তেমনি ভারত বাংলাদেশ পারস্পরিক আস্থা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী না হলে ছিটমহল সমস্যা আগামী ১০০ বছরেও সমাধান হবার কোনো লক্ষণ নেই। উভয় দেশের এই ১৬২ টি ছিটমহলে প্রায় ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ জনবসতি। ভারত বাংলাদেশ সীমানার দৈর্ঘ ৪,১৫৬ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ সীমানার সীমান্তের এপাশে বাংলাদেশে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আর ওপাশে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিএসএফ। প্রায়ই সীমান্ত আইন লংঘন করে বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করছে। অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এটা প্রায় প্রতিদিনের খবর। আজ রৌমারীতে তে কাল বুড়িমারীতে। আজ গোদাগাড়িতে তো কাল সোনা-মসজিদে। বিএসএফের এই অবৈধ তৎপরতা বন্ধ করতেই যেখানে খোদ ভারত সরকারের এক ধরনের গড়িমসি ভাব প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, সেখানে ছিটমহল সমস্যা বা তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি চালবাজ কিনা সে বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো সজাগ হতে হবে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, কেন্দ্র আর রাজ্য দু'জনেই সবকিছু জানেন, কিন্তু ঘটনাকে রাজনৈতিক মেরুকরণের জন্য এবং সময় ক্ষেপণের কৌশল হিসেবে কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন সরকার একটি রাজনৈতিক ভেলকি হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। কারণ, তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি এবং ছিটমহল সমস্যা নিয়ে ভারতের কেন্দ্র বা রাজ্যের মধ্যে সমঝোতা বা ঐক্যহীনতা একটি রাজনৈতিক খোসগল্প। সেই গল্পের আড়ালের খবর হল, আগামী নির্বাচনে ভারতের সীমান্তবর্তী মানুষকে দলে ভেড়ানো। এমনিতে আসামে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নানা সময়ে মূল ভারত থেকে আলাদা নাগাল্যান্ড গঠনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সেসব বিষয়কে আড়াল করে হুট করেই তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি করা বা ছিটমহল বিনিময় করা বেশ দুরুহ কাজও বটে। এটি করতে গিয়ে যদি গোটা আসামকেই ভারত থেকে আলাদা হবার মতো রাজনৈতিক বলি দিতে হয়, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই ভারতের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক কুতুবরা একটেবিলে বসেই এসকল বিষয়ে শলাপরামর্শ করেন বলেই আমার ধারণা। অদূর ভবিষ্যতে তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি করার জন্য আন্তর্জাতিক নদীর শর্তানুসারে, ভারতের উপর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক চাপ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি চুক্তি স্বাক্ষর করে তা বাস্তবায়নের দিকেই বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে এককাতারে আসতে হবে। সরকার বা বিরোধীদলের সেই এককাতারে আসা না আসার উপর ঝুলে থাকবে তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি। আর ছিটমহল নিয়ে যেহেতু বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই জোড়ালো সমর্থণ আদায় করা সম্ভব না, ব্যাপারটা অনেকটাই দ্বিপাক্ষিক, বিশ্বের অনেক দেশে এখনো ছিটমহল সমস্যা বিদ্যমান। সে হিসেবে বলা যায়, ছিটমহল সমস্যার শীঘ্রই কোনো সমাধান হবে না। ছিটমহলবাসীর জন্য তাই কোনো সুখবর সত্যি সত্যিই নেই। আসলেই নেই। এক লাখ ছিটমহলবাসী তোমরা পৃথিবীর রাষ্ট্র আইনে সত্যি সত্যিই নরকে বসবাস করছো। এটাই সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয়।। সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৩
false
rn
ফোটোগ্রাফী-১৪ কিছু কথা যা কখনো একজন ফোটোগ্রাফারকে কে বলা উচিত নয় ! বললে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে তার একটি বিশ্লেষণ -১। বাহ ! আপনার ক্যামেরাটা তো দারুন ছবি তুলে...প্রতিক্রিয়াঃ হ ! তুলবে না আবার !!! আমি তো ক্যামেরাডারে সব হাতে কলমে শিখায় দিসি ! এখন ঐ নিজে নিজে গিয়া ফটো তুইলা আনে...২। ওয়াও ! ইউ হ্যাভ এ গ্রেট ক্যামেরা..প্রতিক্রিয়াঃ ভাই ! থামেন !!! নান্নায় বিরানি খায়া ভাল লাগলে কি বাবুর্চিরে ডাইকা বলেন ‘ওয়াও ইউ হ্যাভ এ গ্রেট চুলা’ ?৩। এহ মা ছবিতে আমার চেহারা কি বাজে আসছে !!! (এইটা মেয়েরা বেশী বলে)প্রতিক্রিয়াঃ বাস্তবের অপু বিশ্বাস কি ক্যামেরায় শ্রী দেবী হয়ে যাবে নাকি ? এইটা ক্যামেরা আলাউদ্দিনের চেরাগ না সিস্টার...৪। সামনে আমার অমুক নানাত ভাইয়ের তমুকের বিয়া ! আপনারে ইনভাইট দিলাম ! আসার সময় ক্যামেরাটা নিয়া আইসেন...প্রতিক্রিয়াঃ বাঙ্গালির ফ্রি কাম করনের অভ্যাস আর গেলো না...৫। আপনের ক্যামেরার megapixel কতো ?প্রতিক্রিয়াঃ আইছে আমার আইনস্টাইন ! megapixel দেইখা ক্যামেরা বিচার করা আর জার্সির রঙ দেইখা টিম সাপোর্ট করা একই কথা...৬. ৬। ৬। আমার দাঁত উঁচা-উচা আসছে ! এগুলা photoshop দিয়ে ঠিক করে দিবা...প্রতিক্রিয়াঃ মনটা চায় একটা থাবড়া দিয়া দাঁতগুলা permanently ঠিক কইরা দেই...৭. ছবি তোলার জন্য আবার টাকা দিতে হবে কেন ?প্রতিক্রিয়াঃ আপনের কি ধারনা আমি ক্যামেরা লেন্স-ফ্ল্যাশ এগুলা লাক্স সাবানের লগে ফ্রি পাইছি ?!? ৮। বেশীর ভাগ মেয়ে বলে থাকেন- আমার ছবি যেন সুন্দর হয়। প্রতিক্রিয়াঃ সুন্দর হবে কিভাবে ? মুখে একগাদা আটা লাগিয়ে রাখলে।৯। ছবিতে যেন আমাকে মোটা না লাগে ।প্রতিক্রিয়াঃ ক্যামেরা কি যাদুর বাক্স ? মোটাকে চিকন বানিয়ে ফেলব । আজিব । ১০।আপনি অনেক সুন্দর ছবি তুলেন।প্রতিক্রিয়াঃ যে ছবি তুলে সে ভালো করেই জানে তার দৌড় কোন পর্যন্ত।একজন ভাল ফটোগ্রাফার হতে হলে আপনাকে ধৈর্য্য থাকতে হবে। থাকতে হবে পড়ার ও সেই মতে চেষ্টা করার ইচ্ছা।ছবি তোলার সময় যদি ক্যামেরা কেঁপে যায়, তাহলে ছবিটি ব্লার হয়ে যেতে পারে। যদিও দিনের বেলায় প্রচুর আলোতে তুললে এটি নাও হতে পারে, তবে রাতের বেলায় এক চুল নড়া মানেও ছবির দফা রফা হয়ে যাওয়া! সূর্যের আলো যখন প্রখর তখন আপনার ক্যামেরার এ্যাপাচার ঠিক করুন f/16 এবং ক্যামেরার সাটার স্পিড কম পক্ষে 1/100 রাখুন। ছবি তোলার সময় সঠিক ISO নির্বাচন করাটা একটা গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। সাটার স্পিড কমিয়ে বাড়িয়ে বেশ সুন্দর ছবি পেতে পারেন। বিয়েবাড়িতে ছবি তুলতে হলে ফ্ল্যাশ লাইট কম ব্যবহার করুন। বিয়েবাড়িতে সাজগোজের ক্ষেত্রে মেকআপের ব্যবহার বেশি হওয়ায় ফ্ল্যাশের আলো দিয়ে ছবি তুললে ছবি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্যামেরার সঙ্গে থাকা (বিল্ট-ইন) ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তুললে ছবি ভালো পাওয়া যাবে।কম্পোজিশনের উপর নির্ভর করে আপনার ছবি কতখানি ভালো হবে।( চলবে...)
false
rn
প্রেম ভালোবাসা এবং বিয়ে----অতপর______ একটি ঘটনা দিয়ে লেখাটি শুরু করি- আজ থেকে বত্রিশ বছর আগে-একজন তরুণী মেয়ে মুন্সিগঞ্জ-বিক্রম পুর যাচ্ছে, তার স্বামীর খোঁজে । স্বামীর তিন মাস ধরে কোনো খোঁজ খবর নেই। এতদিন বাচ্চাদের খরচ চালাতো বাচ্চার নানা-নানী। কিন্তু অসুস্থাতার কারনে নানা-নানী মারা জান। তরুনী মেয়েটির কোলে তার তেরো মাসের বাচ্চা। আর দুই বছরের ছেলেটাকে ইদ্দীস আলী কোলে নিয়ে হাঁটছেন । তাদের নিয়ে যাচ্ছে- মেয়েটির দূরসম্পর্কের এক ভাই ইদ্দীস আলী। ইদ্দিস আলী বিআরটিসি বাস চালায়। এখন বিক্রম পুর যেতে সময় লাগে এক-দুই ঘন্টা। কিন্তু তখন সময় লাগতো- আট থেকে বারো ঘন্টা। পদ্মা নদী পাড় হয়ে নৌকা থেকে যখন তারা নামলো- তখন ভর সন্ধ্যা। হঠাত শুরু হলো কাল বৈশাখী ঝড়। তরুনী মেয়েটি কোলের বাচ্চাটিকে শাড়ির আঁচল দিয়ে ভালো করে ঢেকে নিল কিন্তু বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে পারল না। গ্রামের রাস্তা কাঁদা মাটির, কাঁদা মাটিতে পা ডেবে যাছে। হাঁটতে খুব কষ্ট হয়ে। ঝড়ের কারনে ঠিক ভাবে হাঁটা যাচ্ছে না। গাছের ঢাল ভেঙ্গে পড়ছে।ইদ্দীস আলী তার বোনের বড় ছেলেটিকে কোলে নিয়ে হাঁটছেন। দীর্ঘ দুই ঘন্টা ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করে- মেয়েটি তার স্বামীর বাড়ীর সন্ধান পায়। জানা যায়- স্বামীটি গ্রামে আরেকটি বিয়ে করেছে। মেয়েটি সেই রাতেই কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা চলে আসে। এই তরুনী মেয়েটি হচ্ছে আমার মা। যে ঝড়ের মধ্যে এক মুহূর্তের জন্যও তার ছেলেকে কোলে থেকে নামান নি।বুকের মধ্যে ঝাপটে ধরে রেখেছিলেন। বড় ছেলেটির নিমোনিয়া হয়ে গিয়েছিল। সেই নিমোনিয়া থেকে হয়ে যায় হাপানী, যা আজও ভালো হয়নি। এটা হচ্ছে আমার মায়ের গল্প। খুবই দুঃখময় ইতিহাস। যাই হোক, মূল লেখায় যাই, এই ব্যাপারে অন্য কোনো লেখায় বিস্তারিত লিখব। ইদ্দীস মামা গত বছর মারা যান। কোন এক সময় মামাকে নিয়ে অবশ্যই একটা লেখা লিখব। শুক্র বার। সকাল এগারোটা। আমি একটি হোটেলে নাস্তা খেতে যাই। শুক্র বার বলেই হোটেলটি ফাঁকা। আমি নাস্তা খাচ্ছি, গরুর মাংস ভূনা আর নান রুটি। আমার পাশের টেবিলে খুব সুদর্শন একটি ছেলে বসে নাস্তা খাচ্ছে। হঠাত শুনি ছেলেটা ফোনে কোনো মেয়েকে বিচ্ছিরি ভাষায় গালাগালি করছে। খ - ম দিয়ে ওই বাজে বকা টা বার বার দিচ্ছে। খুবই বাজে ব্যবহার এবং খুবই নোংরা কথা। মেয়েটি কি করে সহ্য করছিল- কে জানে ! আমার নিজেরই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আরেকটি ঘটনা বলি- একদিন দেখি- রাস্তায় একজন লোক তার বৌ কে খুব মারছে। আশে পাশে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছে। এবং তাদের সবার মতামত হচ্ছে- বৌ টার দোষ। ঠিকই আছে, মারছে- এটা ভালোই করছে। বৌ কে কিভাবে মারছিল বলি- চুলের মুঠি ধরে টানছিল, সব শক্তি দিয়ে হাতের আঙ্গুল উলটো দিকে ধরেছিল। বুকের মধ্যে লাথথি মারছিল। এইসব দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি সাহায্যের জন্য গিয়েছিলাম- কিন্তু আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বামী স্ত্রীর ব্যাপারে আমি বাইরের মানুষ যেতে পারি না, তারা বলেছিল। এইবার বলি- আমাদের ভাড়াটিয়ার কথা। অল্প বয়সী দুইটি ছেলে থাকে। তারা বিয়ে করে ফেলেছে। কিন্তু বিয়ের কথা ছেলে বা মেয়ের বাসার কেউ জানে না। মেয়ে দু'টা বোরকা পড়ে নিয়মিত বাসায় আসে- দুই তিন ঘন্টা থাকে। তারপর চলে যায়।মেয়ে দু'টা লেখা-পড়া করছে প্রাইভেট ভার্সিটিতে। তারা বিয়ে করেছে দুই বছর হয়ে গেছে। একদিন আমি ছেলে দু'টার ঘরে গিয়ে দেখি- তাদের ঘরে অসংখ্য কনডমের প্যাকেট চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এতে ছেলে দু'টোর কোনো লজ্জাবোধ নেই। দু'টা ছেলের সাথে কথা বলে আমি জানতে পারি- তারা গোপনে বিয়ে করেছে-, কিন্তু তাদের সাথে কোনো দিনই তারা ঘর সংসার করবে না। যথা সময়ে তারা মেয়ে দু'টাকে ফাঁকি দিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে। মেয়ে দু'জন তাদের গ্রামের ঠিকানা জানে না। কয়েকদিন কান্না কাটি করে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বোকা মেয়ে দু'টা তাদের চালাকি ধরতে পারেনি। বরং মেয়ে দু'টা এমন পাগল হয়েছে- তারা মায়ের গয়না চুরী করে নিয়ে এসে ছেলেটার হাতে দেয়। সেই গয়না বিক্রি করে- তারা বিলাসিতা করে। এক ছেলে বলল- আমি সুযোগে আছি- ব্যবস্থা হয়ে গেলেই বিদেশে চলে যাবো। বিদেশ গিয়ে মেয়েটাকে ফোন করে বলব- যাও, এবার কলা খাও। এতদিন প্রেম ভালোবাসার অভিনয় করেছি স্রেফ শরীরের আনন্দের জন্য। এই সমস্ত ব্যাপার আমি দেখার পর কান টা ধরে তাদেরকে বাসা থেকে বের করে দেই। এরকম অসংখ্য ঘটনা প্রতিদিন এই সমাজে ঘটছে। তারপরও মেয়েদের হুশ হয় না। তারা একের পর ভুল করেই যাছে। এই সমাজে কাউকে বিশ্বাস করতে নেই। বিশ্বাস করলেই ঠকতে হবে-কাদতে হবে। সারা জীবন ধরে কাঁদতে হবে। পনের বছর থেকে ষাট বছরের বুড়া পর্যন্ত প্রেম ট্রেম করে। কুষ্টিয়ার স্কুল শিক্ষকের কথা তো সবাই জেনেছেন। এই রকম স্কুল শিক্ষকের মতন লোকের অভাব নেই আমাদের সমাজে। খুব অল্প সংখ্যক ছেলে সত্যিকারের সত্য প্রেম করে। যার সাথে প্রেম করে তাকেই বিয়ে করে। বিয়ের পর স্ত্রীকে সুখে রাখতে চেষ্টা করে। অনেক ছেলে-মেয়েকে দেখা যায় প্রেম ভালোবাসার নাম দিয়ে রিকশার মধ্যে চুমাচুমি করে। বোকা মেয়ে গুলো বুঝে না- ছেলেটা যদি তাকে সত্যিকারের ভালোবাসতো- তাহলে তাকে সম্মান করতো। চলতি রিকশার মধ্যে চুমু দিত না। কোমড়ে বা বুকে সুযোগ পেলেই হাত রাখত না। এই ধরনের ছেলে মেয়ে গুলো খুবই অসভ্য হয়- কেউ কেউ এমন ভাব করে- যেন এটাই আধুনিকতা। আমি এক সময় ভাবতাম এই রকম শুধু গার্মেন্সের ছেলে-মেয়েরাই করে থাকে কিন্তু ঘটনা তা নয় শিক্ষিত পরিবারের স্কুল-কলেজের মেয়েরাই এমন করে। তাদের চেয়ে গার্মেন্সের মেয়েরা অনেক ভালো। বিয়ের পরও তো কত ঘটনা ঘটে। যে স্বামী এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে আপনাকে গালে চুমু পর চুমু খেয়েছে, মুখ দিয়ে হাজার হাজার ভালোবাসার কথা বলেছে- সেই স্বামী আপনার চুমু খাওয়া গালে জুতা দিয়ে মারতে একটু চিন্তা করবে না, যে মুখ দিয়ে হাজার হাজার ভালোবাসার কথা বলেছে- সেই মুখ দিয়ে অকথ্য ভাষায় বিনা দ্বিধায় গালাগালি করবে। কেউ যদি আমার কথায় অবিশ্বাস করেন- তাহলে আপনার এলাকার সিটি কর্পোরেশন অফিস গিয়ে দেখতে পারেন- প্রতিদিন কতগুলো করে তালাক হচ্ছে। থানায় গিয়ে খোঁজ করতে পারেন- প্রতিদিন কত নারী কাঁদতে কাঁদতে থানায় গয়ে স্বামীর নামে জিডি করছে। মামলা করছে। আমার নিজের চোখে দেখা একটা ঘটনা বলি- ছোট ভাইয়ের বন্ধুকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে- তাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় যাই। তখন রাত বারোটা। ডিউটি অফিসারের সাথে কথা বলছি- তখন দেখি পঁচিশ বছরের একটি মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে থানায় আসছে; ঠিক ভাবে হাঁটতে পারছে না। শাড়ি এলোমেলো, সারা শরীরের মারের চিহ্ন । দেখলাম- থানার সব গুলো পুলিশ মেয়েটাকে চোখ দিয়ে চাটছে। একটা পুলিশ তো কোমরে হাত দিয়ে বলল- হুম অনেক মেরেছে- এই যে কোমরে কালচে দাগ হয়ে আছে। আমার কথা হলো- আমি আমার দেশকে অনেক ভালোবাসি। আমি চাই এই ছোট্র বাংলাদেশে সবাই মিলেমিশে থাক। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে থাক এক আকাশ স্বচ্ছ ভালোবাসা। প্রেম-ভালোবাসার মধ্যে থাক সৌন্দর্য এবং পবিত্রতা। বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা করুন- কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু সেখানে যেন প্রতারনা না থাকে। একজনকে ভালোবাসুন। এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে সারা জীবন একজনের সাথেই থাকুন। দেখবেন, অনুভব করতে পারবেন জীবন অনেক সুন্দর। শারীরিক সম্পর্কই জীবনের সব নয়। আমি মনে করি- আপনি আপনার প্রিয় মানুষের সাথে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে হাত ধরে সমুদ্রের পাড়ে হাঁটলেন, আপনার প্রিয় মানুষটি নীল একটা শাড়ি পড়েছে- সাথে নীল কাঁচের চুড়ী এবং কপালে বড় একটা নীল টিপ, বাতাসে তার চুল উড়ে এসে আপনার চোখে মুখে পড়ছে- এটা অনেক আনন্দময় একটা ব্যাপার। তা না করে যদি একটা বন্ধ করে চুদুর বুদুর করে- সেটা ভালো ব্যাপার নয়। সবাই ভালো থাকুন- সুন্দর থাকুন। হয়তো কেউ দেখেনি- কেউ জানে না কিন্তু যদি খারাপ কিছু করে থাকেন তার শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে।
false
mk
উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতিতে দক্ষ, মেধাবী এবং কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তির বিকল্প নেই। যদি এভাবে দেশের সকল কর্মক্ষম মানুষকে দক্ষ করে গড়ে তোলা যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা কঠিন কোনো কাজ নয়। কিন্তু তরুণ, যুবকসহ যারা চাকরি বাজারে প্রবেশ করছে তাদের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই অদক্ষ হিসেবে আসছে। সরকারের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশে কারিগরি শিক্ষা এখনো রয়েছে উপেক্ষিত। যে স্বল্পসংখ্যক তরুণ কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কর্মবাজারে প্রবেশ করেছে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না। এমনি অবস্থায় সরকারের সামনে কারিগরি শিক্ষার প্রসার, এ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান অপরিহার্য। যথাযথভাবে এসব কাজ করা গেলে দেশের বর্ধিত জনসংখ্যা সমস্যা না হয়ে পরিণত হবে সম্পদে। বিশ্বে এখন মানুষের জন্য প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে ওঠছে। আগামীদিনে প্রযুক্তির প্রায়োগে দক্ষতাই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হবে। এ গুরুত্ব বিবেচনায় বিশ্বের ভবিষ্যৎ কর্মবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দেশে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবির)। সম্প্রতি তাদের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও গণপ্রকৌশল দিবসের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এ আহ্বান জানান। এটি সত্য, বিশ্বে প্রযুক্তির নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য বৈশ্বিক কর্মবৈচিত্র্যতার নিরিখে দেশের কর্মক্ষম মানুষকে অধিকতর সৃজনশীল ও দক্ষ করে গড়ে তোলা দরকার। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে দেশের ঈর্ষণীয় অর্জন, বিশ্বে বাংলাদেশকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সরকারের নানামুখী কর্মপ্রচেষ্টা ও প্রচেষ্টায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় প্রায় ১৫শ ডলারে উপনীত হয়েছে। নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭.১১ অর্জন করেছে। দক্ষতার সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের আগে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। মোট জনগোষ্ঠীর ৭৫ ভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেনে উন্নীতসহ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় দেশে এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের জন্য শ্রেষ্ঠ স্থান হিসেবে মনে করছে বিদেশিরা। এর মধ্যে ২০৩০ সালে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সোনালি সম্ভাবনা বাংলাদেশের সামনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আত্মমর্যাদাশীল সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত দেশ গড়ে তুলতে এ সংগঠন প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। ইতোমধ্যে আইডিইবির পক্ষে জাতির নিকট যেসব আহ্বান রাখা হয়েছিল; তার মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি চিন্তাহীন রাজনীতি শোষণের হাতিয়ার জাতীয় উন্নয়নে এডহক ইজম নয়-সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা চাই, সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করা, জাতীয় উন্নয়নে জাতীয় ঐকমত্য চাই, জীবন ও উন্নয়নের জন্য পানি, জীবন ও জীবিকার জন্য কারিগরি শিক্ষা, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন, উন্নয়ন-উৎপাদনে ইতিবাচক আন্দোলনের সংস্কৃতি পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি টেকসই উন্নয়নে সহায়ক, সচল নদী-সচল অর্থনীতি, পরিবর্তনের জন্য প্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি, প্রযুক্তিতে গণমানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা গণমুখী তথ্যপ্রযুক্তি-বদলে দেবে অর্থনীতি কৃষি জমি রক্ষা কর-পরিকল্পিত গ্রাম গড় গণমুখী প্রযুক্তিই-গণমানুষের মুক্তি, জীবন জীবিকা সমৃদ্ধির জন্য দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা, সংস্কৃতি-জাতীয় সমৃদ্ধি প্রযুক্তি ও দক্ষতায়-মুক্তি সমৃদ্ধি বিল্ড স্কিল বাংলাদেশ ইত্যাদি। প্রসঙ্গত: অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়া সত্ত্বেও গণচীন এবং ভারত বিশ্বচ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে ইতোমধ্যে দক্ষ চীন, দক্ষ ভারত নির্মাণের ঘোষণা করেছে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী এই গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ২০ ভাগে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন জনশক্তির বিকল্প নেই। অথচ দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অদক্ষতা বিদ্যমান। প্রতিবেশী ভারতে একজন আইসিএস অফিসার যে কাজ একজনে করতে পারে, সমপরিমাণ কাজের জন্য এখানে ৫ থেকে ৭জন বিসিএস অফিসার নিযুক্ত থাকে। উন্নত দেশে একজন কৃষক বা শ্রমিক যে কাজ করে এখানে তা করতে ৮ থেকে ১০ জন কৃষক শ্রমিক প্রয়োজন হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে অনুরূপ চিত্র বিদ্যমান। এ দায়বোধ থেকে আইডিইবির এবারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে গণপ্রকৌশল দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঝশরষষ ভড়ৎ ভঁঃঁৎব ড়িৎষফ ড়ভ ড়িৎশ অর্থাৎ বিশ্বের ভবিষ্যৎ কাজের জন্য দক্ষতা। গত বছর তাদের গণপ্রকৌশল দিবসে প্রতিপাদ্য ছিল 'ইঁরষফ ঝশরষষ ইধহমষধফবংয' বা দক্ষ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। লিখিত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুর রহমান বলেন, কর্মক্ষম জনশক্তি থাকার পরও দেশের পোশাক খাতে ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজারের অধিক বিদেশি বিশেষজ্ঞ কর্মরত আছে। এটা দুঃখজনক। সে কারণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে এখনই গুরুত্ব দেয়া উচিত কারিগরি শিক্ষায়। বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ, স্বল্পসম্পদ ও বিশাল জনরাশির দেশ বাংলাদেশ। ১৬ কোটি মানুষের নূ্যনতম অধিকার-অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। প্রশ্ন হচ্ছে- ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সক্ষমতা-সম্পদ কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়- তার উপায় উদ্ভাবন অপরিহার্য। নতুবা প্রতিযেগিতার এ যুগে টিকে থাকা অসম্ভব।এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জাতীয় উৎপাদনে শ্রমশক্তির অবদান দেশে মাত্র ১১১ মার্কিন ডলার, সেখানে ভারতে ১৮৩ মার্কিন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৬৬১ মার্কিন ডলার এবং জাপানে তা ১০৭৯৪ ডলার। অর্থাৎ শ্রমশক্তির অদক্ষতার কারণে এদেশের জাতীয় উৎপাদন বিশ্বের প্রায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে। শ্রমশক্তির অদক্ষতার কারণে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে মাথাপিছু আয় ১৩১৪ ডলার। সরকারের বাস্তবমুখী উদ্যোগে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৪৬৫ ডলারে। ভারতে ১৬৩০ ডলার, মালয়েশিয়া ১০৮৩০ ডলার, জাপান ৩৬১৯৪ ডলার এবং সিঙ্গাপুরে ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার। আমাদের শ্রমশক্তির অদক্ষতা ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে আমরা এতটা পিছিয়ে। তাই বলা যায়, দারিদ্র্যতা আমাদের নিয়তি নয়। পরিকল্পনা আর প্রযুক্তির সমন্বয়ে যদি দেশকে এগিয়ে নেয়া যায় তাহলে সম্ভাবনার সোনালি ফসল ঘরে তোলা অসম্ভব নয়। স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকের পথপরিক্রমায় অনেক অর্জন যেমন রয়েছে, তেমনি হয়েছে অনেক অপার সম্ভাবনার অপমৃত্যু। প্রযুক্তিমনস্ক দক্ষতানির্ভর বাংলাদেশ গড়তে না পারায় সার্বজনীন অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন মন্থরগতিতে এগুচ্ছে। অথচ দারিদ্র্য নিরসনের মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও কর্মসংস্থানমুখী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন পরিকল্পনা। এ বাস্তবতায় ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। সমাজে, রাষ্ট্রে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায়, দেশে চালু হয়েছে এক ধরনের শ্রমবিমুখ ফাঁকিবাজির সংস্কৃতি। যেখানে মানুষ কাজ না করে ধনী হতে উন্মুখ অনেকেই। দেশের বিস্ময়কর অর্জন আর অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী দেশি ও আন্তর্জাতিক মহল দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উস্কে দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এই দানবীয় শক্তির উত্থান ঠেকাতে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, অগ্রগতি বিপন্ন হবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'মারসার প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয় 'শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। পরিসংখ্যানে বলা হয় বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের হার ৪৭%। শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে ১২৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। এছাড়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২২ দেশের মধ্যে ১৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের পরে রয়েছে বাংলাদেশ। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে তাজাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার পর বাংলাদেশের অবস্থান। ১০০ স্কোর ধরে পরিচালিত এ গবেষণায় বাংলাদেশের স্কোর ৫৭.৬২। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের ৮২ শতাংশ কর্মে নিয়োজিত থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৬.৩ শতাংশ উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন। বাকিদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ মাঝারি দক্ষ ও ৪০.৭ শতাংশ অদক্ষ। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে কর্মেনিয়োজিতের হার ৫৯ শতাংশ। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, বিজনেস স্কুলের মান মাঝারি ধরনের, স্কোর ৭-এর মধ্যে ৩.৭২। এ স্কোর গণিত বা বিজ্ঞানশিক্ষার ক্ষেত্রে ৩.৩৬, বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ সেবায় ৩.১১, মেধা আকর্ষণ ক্ষমতায় ২.৪ ও মেধা ধরে রাখার ক্ষমতায় ২.৭১। পেশার সঙ্গে শিক্ষার অসামঞ্জতার চিত্রও উঠে এসেছে এ গবেষণায়। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ৩ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও আইন বিষয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার, মানবিক বিভাগে ১ লাখ ১০ হাজার ও বিজ্ঞান বিভাগে ৩৫ হাজার। অথচ প্রকৌশল, উৎপাদন ও নির্মাণ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে মাত্র ১৪ হাজার। স্বাস্থ্য সেবায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী। বাকিরা অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। উন্নত দেশে উচ্চ শিক্ষার হার ৫-৭ ভাগ। বর্তমানে এ হার ৫-৭ ভাগ অর্জিত হয়েছে। চাকরির বাজারে মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ের চাহিদা কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংযোগও সেভাবে নেই। দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি অনীহায় তথ্য অনুযায়ী এ হার শতকরা ১৩.৬ ভাগ। অথচ বিশ্বচ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনশক্তির হার বৃদ্ধির বিকল্প নেই। উন্নত দেশসমূহে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ২৫ থেকে ৭৫ ভাগ। যে দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার যত বেশি সে দেশের তত উন্নত। জাপান, গণচীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের নাম উল্লেখ করা যায়। দেশে মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। দেশে সরকারি ও বেসরকারি সাত হাজার ২টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নানামুখী উদ্যোগে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ১.৮ ভাগ থেকে বর্তমানে ১৩.৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে। 'দক্ষ বাংলাদেশ' গড়ে তুলতে প্রয়োজন অধিক হারে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা।'জীবনের জন্য শিক্ষা-জীবিকার জন্য কর্মদক্ষতা' আইডিইবির এই দর্শন উল্লেখ করে সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম এ হামিদ বলেন, এই চিরন্তন দর্শনকে সামনে রেখে জীবন ও কর্মচ্র্চায় বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। বৈশ্বিক বাস্তবতায় জীবনের সকল স্তরে দক্ষতার বিকল্প নেই। সকল উন্নয়ন যেহেতু মানবকল্যাণ কেন্দ্রীক, তাই দক্ষতার ক্ষেত্রে মানবিক দর্শন থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ দক্ষতার সুফল তখনই সার্থক হয়, যখন দেশ জাতির অগ্রগতিতে সেটি নিবেদিত থাকে। পাশাপাশি ব্যক্তির দায়বদ্ধতা, কর্মকৌশলের নৈপুণ্যতা অর্জন ও মানসিকতা সৃষ্টি, সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, দায় এড়ানো নয়-দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করে আইডিইবি। আমরাও অনুরূপ মনে করি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন এমন প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের কাছে। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২১
false
mk
আনাড়ি তাবিথ, গায়ে জামাতের রঙ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে উত্তরের বিএনপি মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। রাজনীতিতে ‘আনাড়ি’ তাবিথের ‘সাবালক’ হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা প্রশংসা যেমন পাচ্ছে, সমালোচিতও কম হচ্ছে না। এসবকে বাঁকা চোখে দেখছেন অনেকে। দলের মধ্যেও রয়েছে তার কঠোর সমালোচক। তবে সাধারণ ভোটারের মধ্যেই এর মাত্রা বেশি। তিনি কোন দলের- বিএনপি’র নাকি জামায়াতের নাকি ২০-দলের সে নিয়েও রয়েছে কানাঘুষা। মাত্র কিছুদিন আগে যাকে কেউ চিনতো না, সেই তাবিথকেই এখন মেয়রের চেয়ারে দেখার স্বপ্ন দেখছে ২০ দলীয় জোট। আর সেখানেই আপত্তি সচেতন মহলের। অনেকে বিষয়টিকে সুখকর হিসেবে দেখছেন না। ক্রমেই প্রকাশ্য হয়ে উঠছে তাদের কিছু প্রশ্ন। রাজনীতিতে যার নেই সামান্য হাতেখড়িও তিনিই যখন আলোচনার কেন্দ্রে চলে এলেন তখন প্রশ্ন উঠছে পুরোপুরি অনভিজ্ঞ এ তরুণ কীভাবে সামলাবেন এমন গুরু দায়িত্ব! অনেকেরই আরও প্রশ্ন, তাবিথ মেয়র হলে তা রাজধানীবাসী বা দেশের রাজনীতির জন্য কতটা ইতিবাচক হবে? পিতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুই তার প্রথম পরিচয়। তাবিথকে কেউ চেনেন না। তাই ভোট চাইতে গেলেও তাকে প্রথমেই দিতে হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ধনী ব্যবসায়ী মিন্টুর পরিচয়। ওদিকে, মাঠের রাজনীতিতে এই মিন্টুরও কোনও অভিজ্ঞতা নেই। তিনি নিজে প্রার্থী হলেই কতটা সফল হতেন সে প্রশ্নও বড় করে ঝুলছে ভোটারদের সামনে। সেখানে ছেলেতো তার চেয়েও যোজন দূরের। এতে দলীয় রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমনটাও মনে করছেন অনেকে। এমনকি দলেরও ভেতরও রয়েছে এ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া। মাঠের রোদে পোড়েননি তাবিথ, তৃণমূলের রাজনীতির পাঠ নেই তার। সেই তিনি রাজনীতিতে বড় ভূমিকা কীভাবে পালন করবেন- সেটাই অনেকের প্রশ্ন। কেউ কেউ তুলনা করছেন তাবিথের সবচে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হকের সঙ্গে। তারা বলছেন, আনিসের রয়েছে দীর্ঘদিনের পরিচিতি। তাবিথের মতো ‘বড়লোক’ বাবার পরিচয়ে নয়, আনিসুলের বর্তমান পরিচয় নিজেরই গড়া। তাই বয়স, অভিজ্ঞতা বিচারে আনিসের সঙ্গে তাবিথের প্রতিদ্বন্দ্বীতা মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। ২০ দলীয় জোটের অনেকেই তাবিথকে আপন করতে পারছেন না, স্রেফ জোটের প্রার্থী বলেই মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু তাদের আচরণ বুঝিয়ে দিচ্ছে, ‘মেনে নেওয়া ও মনে নেওয়ার ফারাক অনেক’। বিএনপির নেতাকর্মীদেরও কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, সোনার চামচ মুখে নিয়ে যে তাবিথের জন্ম, তিনি কীকরে তৃণমূলের নেতা হবেন? নগরের ছিন্নমূলের প্রতিনিধি হবেন? তার আধুনিক স্মার্ট স্টাইলের প্রশংসা যেমন আছে কেউ কেউ আবার নিন্দাও করছেন। তারা এসবকে রাজনীতির মাঠে ছেলেমানুষি বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, তাবিথ যদি মেয়র হন, ‘সুখপাঠ্য’ ও ‘সুখশ্রাব্য’ ইশতেহার ভুলতে হবে তাকে। আওয়ামী লীগের সরকারে বিএনপির হয়ে তাবিথ মেয়র নির্বাচিত হলে তা তার জন্য বুমেরাং হযে দেখা দেবে এমনটাও মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, মেয়র হয়ে রাজধানীবাসীর নেতা হবেন তাবিথ, কিন্তু খালেদার আহ্বান ফেলবেন কীকরে? জোটনেতা খালেদা যদি আন্দোলনের ডাক দেন, রাজধানীতে মিছিল-মিটিং-সমাবেশের ডাক দেন, তা এড়ানোর ক্ষমতা থাকবে না তাবিথের। দলের প্রতি তার নিষ্ঠা ও ভালোবাসা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, যিনি কোনদিন দলের কোন কিছুতেই ছিলেন না, তিনি দলকে আসলেই ভালোবাসেন কি? দলের দুঃসময়ে পাশে থাকবেন কি এ ব্যবসায়ী? প্রশন তাদের। একটি গোষ্ঠী তাবিথের রাজনৈতিক দর্শন নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। যার পিতা কখনো আওয়ামী লীগের স্বার্থ দেখেছেন, কখনো দেখেছেন বিএনপির স্বার্থ, কিংবা নিজের স্বার্থে দুই দলের কাছেই আপন সেজেছেন, সেই পিতার ছেলে নিজে কি এর বাইরে যেতে পারবেন? সে প্রশ্ন যেমন আছে তার চেয়েও স্পর্শকাতর হিসেবে সামনে এসেছে বৈবাহিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ। তাবিথের শ্বশুর ইস্কান্দার আলী জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালীদের একজন। শ্বশুরের রাজনৈতিক আদর্শ তাকে কাজে কর্মে সিদ্ধান্তে একেবারে প্রভাবিত করবে না এমনটা ভাবা কঠিন। কিংবা তিনি নিজেও এখনও এমন কোনও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন নি যা তাকে জামায়াতের বলয়মুক্ত বলে নিশ্চিত করেছে। বরং জামায়াতের প্রভাবশালীর মেয়ে বিয়ে করে সে দিকে তার ঝোঁকেরই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। এনিয়ে খোদ বিএনপিতেও প্রশ্ন, তাবিথের রাজনৈতিক দর্শন কী? কাদের আপন করবেন তিনি? তাবিথের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হয়েছিলো এক একান্ত সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি তৃণমূলকে কতটা বোঝেন তার উত্তর দিয়েছিলেন, বস্তির মাঠে ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতার কথা বলে।রাজনীতির তার বিশ্বাস কোনটা সেটা স্পষ্ট না হলেও নিজেকে বিএনপি’র নয় ২০ দলের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ২০-দলের অন্যতম শরিক দল জামায়াত, সেটাও সবার জানা।
false
mk
মুক্তিযুদ্ধকে আর কত অবমাননা করবে বিএনপি!!! একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর তৈরি আলবদর বাহিনীর সুপ্রিমো, বাঙালী বুদ্ধিজীবী হত্যার কমান্ডার এবং হালের জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে ১০ মে দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে। একাত্তরে কৃত অপরাধের জন্য তাকে এই শাস্তি প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আরেকটি মাইল স্টোন স্থাপিত হলো। তাই সঙ্গত কারণেই কাজটির সুসম্পন্নের খবরের আশায় ১০ মে সন্ধ্যার পর থেকে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের চোখ ছিল টেলিভিশনের পর্দার ওপর। শহরের মানুষ যার যার ঘরে বসে টেলিভিশন দেখেছে। তাতে কার কি প্রতিক্রিয়া সেটি তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায় না। কিন্তু গ্রাম-গঞ্জের রাস্তাঘাটের মোড়ে মোড়ে, বাসস্ট্যান্ড, পান-বিড়ি, চা এবং মুদির দোকানের টেলিভিশনকে ঘিরে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখে বৃহত্তর জনগণের মনের খবর বোঝা যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অনেক টেলিফোন পেয়েছি। সকলের প্রশ্ন ছিল কখন ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে, এত দেরি হচ্ছে কেন ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার দু’একটি শঙ্কার কথাও বলেছেন। সকলকে বিনয়ের সঙ্গে বলেছি, আপনারা টেলিভিশনে যা দেখছেন, জানছেন, আমিও ততটুকুই জানছি। এর বেশি কিছু আমারও জানার সুযোগ নেই। তবে সবাইকে বলেছি এ পর্যন্ত শঙ্কার কোন কারণ দেখছি না। এই কথাগুলো উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, প্রবল উত্তেজনা আর গভীর আগ্রহসহকারে গ্রামের মানুষ রাত জেগে বসে থাকছে কখন নিজামীর ফাঁসির দ- কার্যকর করা হয় সেই খবরটি শোনার জন্য। এটাই বাংলাদেশের বৃহত্তর মানুষের ইচ্ছা ও মতের বহির্প্রকাশ। সামান্য কিছু স্বার্থান্বেষী ধর্মান্ধ পাকিস্তানীপ্রেমিক ব্যতিরেকে বাংলাদেশের মানুষ রাজাকার, জামায়াত, জঙ্গী, হেফাজত, তালেবান ও সাতচল্লিশের চেতনামুক্ত বাংলাদেশ চায়, যে লক্ষ্য অর্জনের পথে গত ৪০ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী প্রবল বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তাই নিজামীর ফাঁসির মাধ্যমে তাদের একটি বড় উইকেটের পতন হলো। প্রমাণ হয়েছে সত্যের জয় চিরদিন হয়।ন্যায়ের পক্ষে, মানবতার পক্ষে মানুষ থাকে, প্রকৃতি এবং সর্বশক্তিমানও থাকে। সভ্যতার ইতিহাসও সেই কথা বলে। শেষ বিচারে ভিলেনেরা পরাজিত হয় এবং নায়কেরাই জয়ী হয়। বাংলাদেশেও তা-ই হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে ইনশাল্লাহ। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এটাই হলো আমাদের সকল শঙ্কা জয় করার মহৌষধ, আত্মবিশ্বাসের মূল জায়গা। এত বড় শক্তি পাকিস্তানীপ্রেমীদের কাছে নেই। এজন্য আমরা ৩০ লাখ শহীদকে সেল্যুট করি এবং তাদের চরণে মাথা নোয়াই, কদমবুছি করি। অন্যদিকে পাকিস্তানীপ্রেমীরা ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কারণ, বাঙালীর সমস্ত শক্তির জায়গা, আত্মবিশ্বাসের জায়গা সম্পর্কে বিতর্ক তুলে, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এর মৌলিক শক্তিকে তারা অবদমিত করতে চায়। ১৯৭৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের কার্যকলাপ, কথাবার্তার দিকে তাকালে এর কারণও সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। এ সত্য বারবার প্রমাণ হয়েছে, এ পৃথিবী মানুষের তরে, দানবের নয়। কিন্তু কথা অন্য জায়গায়। নিজামীর রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, নিজামীকে এদেশের মন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা ২ লাখ নারীর গালে চড় মারা হয়েছে। এটা জাতির জন্য চরম লজ্জা ও অবমাননা। অভাবনীয় বিজয় অর্জনকারী জাতিকে যারা এত বড় চপেটাঘাত করলেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কি কোন পরিবর্তন হয়েছে, নাকি এর চেয়ে আরও বড় চপেটাঘাত করার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন? বাঙালিত্ব ও পূর্ণ অসাম্প্রদায়িকত্বে বিশ্বাসী মানুষ, বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে অনুরোধ করছি তারা যেন আমার উপরোক্ত প্রশ্নটির গভীরে প্রবেশ করেন, বাংলা মাকে রক্তক্ষরণ থেকে রক্ষার জন্য ভূমিকা রাখেন। একাত্তরে তাদের মতো বয়সে আমরা সেই ভূমিকা নিয়েছিলাম। কিন্তু এই আলবদর, জামায়াত, রাজাকার, মুসলিম লীগারদের বেঈমানীর কারণে আমাদের সকল চেষ্টা সত্ত্বেও ৩০ লাখ মানুষের রক্ত ঝরেছে। তখন বিজয়ের পর ভেবেছিলাম আর বোধ হয় রক্ত দিতে হবে না। কিন্তু ১৯৭৫ সালে কি ঘটল, তারপর কি ঘটেছে এবং এখন কি ঘটছে তা আমরা দেখেছি এবং দেখছি। একটু চোখ মেলে দেখুন, জামায়াতের সব নেতাকর্মী মিলে বাংলাদেশের যত ক্ষতি করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে যত হেয় ও অপমান, অবমাননা করেছে তার থেকে শতগুণ সেসব কাজ করেছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ অকাট্যভাবে প্রমাণ হওয়ার কারণেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সাকার ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন এবং ২১ নবেম্বর ফাঁসির দ- কার্যকর হয়। এই সাকা চৌধুরীর পক্ষ নিয়ে পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কি ধরনের ঔদ্ধত্য আচরণ করেছে তা আমরা দেখেছি। আমরাও উপযুক্ত জবাব দিয়েছি এবং আগামীতেও দেয়া হবে। দেশ হিসেবে সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। পাকিস্তানকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। তাই পাকিস্তানের কথা বাদ দিয়ে ফিরে আসি বাংলাদেশের কথায়। ১৯৭৫ সালের পর থেকে শুরু করে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে সাকা চৌধুরী যত অবমাননাকর বক্তব্য ও বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করেছে তা একটা স্বাধীন দেশে ভাবা যায় না। এটাকে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি বলা যায়। কিন্তু শেষ বিচারে প্রমাণ হয়েছে পাপ বাপেরেও ছাড়ে না। এহেন সাকা চৌধুরীর জন্য পাকিস্তানের মাতমের কারণ থাকতে পারে। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু যখন দেখা গেল এতকিছুর পরেও সদ্য সমাপ্ত জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি সাকা চৌধুরীর জন্য আনুষ্ঠানিক শোক প্রস্তাব গ্রহণ করল, তখন মুক্তিযুদ্ধের ওপর আগামীতে আবার চপেটাঘাতের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। নিজামী গংয়ের বিচার ও ফাঁসির দ- কার্যকরের মধ্য দিয়ে একটি অধ্যায়ের হয়ত শেষ হবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর থেকে গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের যে ক্ষতি তারা করেছে এবং রাষ্ট্র ও রাজনীতির অঙ্গনে যে বিভ্রান্তি, হট্টগোল, বহুবিধ সঙ্কট সৃষ্টি করেছে তা থেকে আমরা কিভাবে ও কবে বের হতে পারব? এটাই হবে আগামী দিনের জন্য মুখ্য প্রশ্ন। এই যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে সমানে সমান মোকাবেলা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এক শ্রেণীর ভেতরেও পদস্খলন ঘটেছে। সামগ্রিকভাবে রাজনীতিতে নীতি-আদর্শ বলতে কিছু নেই। তাই রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘকে মানুষের ওপর আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখা কঠিন, বাইরে যত খাবারের ব্যবস্থাই থাকুক না কেন। এখানেও একমাত্র ভরসা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা। তিনিই কেবল সব পক্ষকে প্রতিহত করার সক্ষমতা রাখেন।গত বছর ২১ নবেম্বর সাকা, মুজাহিদের ফাঁসির রাতে এবং ১০ মে নিজামীর ফাঁসির রাতে গ্রাম-গঞ্জ থেকে সেই বার্তাই পাওয়া গেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষ দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীদের সমর্থনে গ্লাবস হাতে আবার মঞ্চে ওঠার জন্য লম্ফঝম্প করছে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য তো নে-ই, আদর্শের পদস্খলনের খবর দেখি পত্রিকায় প্রতিনিয়ত। পত্রিকায় ছবিসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপা হয় এই মর্মে যে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজাকারের ছেলেও নৌকা প্রতীক পেয়েছে। আদর্শের প্রশ্নে যারা অনড়-আপোসহীন, তাদের জন্য এসব খবর শঙ্কার সৃষ্টি করে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার জন্য এখনও আওয়ামী লীগই একমাত্র ভরসার জায়গা। আওয়ামী লীগের ১৯৭৪ সালে সূর্যসেন হলের সেভেন মার্ডারের কথা মনে রাখা প্রয়োজন। রাজাকার গমির উদ্দিন প্রধানের ছেলে শফিউল আলম প্রধান কিভাবে সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়ে এখনও কি করছে। আমরা এখন সামান্য পাবলিক, কিছুই করার সুযোগ নেই। পত্রিকার সম্পাদকদের আগ্রহে দু’য়েক কথা লিখি এই যা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এসব লেখা পড়েন কিনা জানি না। কিন্তু সাধারণ পাবলিকের পড়ার ফিডব্যাক আসে বলেই আবার লেখার অনুপ্রেরণা পাই, মনে আগ্রহ জাগে। নিজামী গংয়ের দ্বারা বাংলাদেশের যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এবং রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে যতটুকু পিছিয়ে পড়েছে তার কিছুটা পূরণ করা যাবে যদি ইসলামী ব্যাংকসহ জামায়াতের পাঁচশতের অধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা যায়। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই এ দাবি প্রবলভাবে উত্থাপিত হয়েছে। তাই জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী রাজনৈতিক সংগঠনের বিচারে যে আইন হচ্ছে তার সঙ্গে সম্পদ বাজেয়াফত করার বিষয়টি যেন সেখানে সংযোজন করা হয়। আর রাজনৈতিক সঙ্কট ও উগ্রবাদী জঙ্গীদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য তরুণ প্রজন্মকে জেগে উঠতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাম্প্রদায়িক সাতচল্লিশের চেতনার রাজনীতিকে না বলতে হবে। শহরের অলিতে-গলিতে, গ্রাম-গঞ্জে তরুণরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে, নিজেদের সুবিধামতো কৌশল বের করে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ালে উগ্র জঙ্গীরা পালাতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশ অবশ্যই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিজামী গংয়ের ফাঁসির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ওপর চপেটাঘাতের একটা সমুচিত জবাব দিতে সক্ষম হয়েছে। শুক্রবার সকালে লেখাটি যখন শেষ করেছি তখন খবরে দেখলাম নিজামীর ফাঁসির প্রতিবাদে তুরস্ক তাদের ঢাকার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের পথে তুরস্কের এমন আগ্রাসী ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য এবং অবশ্যই নিন্দনীয়। আমাদের পুরনো কথার যথার্থতা আবার প্রমাণ হলো। জামায়াতসহ সব ধরনের জঙ্গীদের গোড়া হলো ওয়াহাবীতন্ত্র ও মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড, যারা এখন তুরস্কের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে। সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪৬
false
ij
পাগানিনি ও ভানেসা মেই (উৎসর্গ_ মুয়ীজ মাহফুজ) ভানেসা মেই। পুরো নাম-ভানেসা মেই ভানাকোরন নিকলসন। দুর্দান্ত বেহালাবাদক। সেই নব্বুয়ের দশক থেকেই বেহালা বাজিয়ে দুনিয়া কাঁপাচ্ছেন ভানেসা মেই; বাজানোর স্টাইলটি অনেকটাই টেকনো ।। ছড়ের টানে আছে লুকানো বিদ্যুৎ-আঙুলের চালনায় আগুনের ঝিলিক। আশ্চর্য এই-ভানেসা মেই-এর সঙ্গে উনিশ শতকের আরও একজন বেহালাবাদকে নানা বিষয়ে মিল রয়েছে-তিনি হলেন পাগানিনি। ভানেসা মেই-র জন্ম সিঙ্গাপুরে ২৭ অক্টোবর ১৯৭৮। বাবা থাই; মা চৈনিক। তারপর এক সময় ভানেসা মেই-র মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ভানেসা মেই-র মা বিয়ে করেন গ্রাহাম নিকলসন নামে একজন ইংরেজ ভদ্রলোককে। পরিবারটি তারপর ইংল্যান্ডে চলে যায়; ভানেসা মেই-এর বয়স তখন মাত্র ৪। ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে লন্ডনে বড় হয় ভেনেসা। ৩ বছর বয়েসে পিয়ানোয় হাতেখড়ি। পাঁচ বছর বয়েসে বেহালায়। বেশি দেরি হয়নি সুর ফোটাতে। বালিকা বয়েস থেকেই নিয়মিত টিভি শো করত ভেসেনা। বেহালার ছড়ের টানের জাদু দেখে সবাই চমৎকৃত। কয়েকদিন আগে আমি ইতালিয় বেহালাবাদক নিকোলো পাগানিনিকে নিয়ে লিখেছিলাম। লিখেছিলাম: আধুনিক ভায়োলিন বাজানোর কৌশলের পথিকৃৎ পাগানিনি। বেহালায় পাগানিনি এমন সব কৌশল দেখিয়ে গেছেন পরের প্রজন্মকে -পরের প্রজন্মকে এমন সব সুর দিয়ে গেছেন-যে কারণে আরজও বলা হয় ভায়োলিন ও পাগানিনি সমার্থক। আশ্চর্য এই-Vanessa-Mae, born October 27, 1978, coincidentally shares her birthday with famed violinist Niccolò Paganini, who was born 196 years earlier on October 27, 1782. এ ছাড়াও পাগানিনির সঙ্গে ভানেসা মেই-এর আরও কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। পাগানিনি। পাগানিনির জন্ম জন্ম ইতালির জেনোয়ায়- অক্টোবর ২৭;১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে।৫ বছর বয়েসে বাবার কাছে প্রথমে ম্যান্ডোলিন শিখতে শুরু করে শিশু পাগানিনি-পরে ৭ বছর বয়েসে বেহালার ছড় তুলে নেন। লোকে বালকের প্রতিভা দেখল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আয় হতে লাগল বেহালা বাজিয়ে।ধীরে ধীরে নাম ছড়াতে লাগল। স্থানীয় লোকে কদর করলেও -ইউরোপ চিনছিল না পাগানিনিকে। ট্যুরে বেরুলেন। লোকে তাঁর কনসাটে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। লন্ডন। প্যারিস। ভীষন জুয়াও খেলতেন পাগানিনি। ছিলেন রমনীমোহন। তাতে সিফিলিস ধরা পড়ল। অষুধ খেতে হল। সেসময় সিফিলিসের অষুধ তৈরি হত পারদ দিয়ে-তাই হল কাল। ১৮৩৪ সালে থ্রোট ক্যানসারে মারা গেলেন ইতালির নিসে। তবে, পাগানিনির জীবন যেমনই হোক- অতুলীয় সংগীত স্রষ্টা ছিলেন পাগানিনি। তখন বলছিলাম- আশ্চর্য এই-ভানেসা মেই-এর সঙ্গে উনিশ শতকের আরও একজন বেহালাবাদকে নানা বিষয়ে মিল রয়েছে-তিনি হলেন পাগানিনি। আসলেই তাই-তরুণীজীবনে কী কারণে সহসা খানিকটা উগ্র হয়ে উঠলেন ভানেসা । বদলে গেল গানের ধরন- পোশাক-আশাকেও লাগল পরিবর্তনের ছোঁওয়া। বেহালার ছড়ে ছড়ে বিদুৎ। স্টেজে উদ্দাম নাচ।ঈষৎ খোলামেলা পোশাক ... নিচের ছবিটা দেখলে কিছুটা আঁচ করা যায়- তবে পাগানিনি বাজাতে বড় ভালোবাসেন ভানেসা । সময়সুযোগ পেলেই পাগানিনি বাজান। কখনও রিমিক্স করে বাজান-কখনও আদিরুপ বজায় রাখেন। পাগানিনির ২৪ নম্বর ক্যাপ্রিসও বাজিয়েছেন ভানেসা। ইউরোপীয় সঙ্গীতে caprice হল;a piece of music, usually fairly free in form and of a lively character. পাগানিনির ২৪ নম্বর ক্যাপ্রিস জগদ্ববিখ্যাত এক কম্পোজিশন। জাসচা হেইফ্লেটয-এর বাজানো ২৪ নম্বর ক্যাপ্রিস গিটারে পাগানিনির ২৪ নম্বর ক্যাপ্রিস এবার দেখুন ভানেসা মেই ওর ব্যান্ড নিয়ে ২৪ নম্বর ক্যাপ্রিস কীভাবে বাজিয়েছেন- সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:২৩
false
fe
মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও একজন জর্জ হ্যারিসন মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও একজন জর্জ হ্যারিসনফকির ইলিয়াস=========================================বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী ছিল তা কারো অজানা নয়। সেদেশের তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। কিন্তু মার্কিনি মানুষেরা চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সেদেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, সংবাদিকরা।স্বাধীন স্বদেশ অর্জনে আমাদের অনন্ত গৌরব, মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অজস্র ঘটনাবলী।BANGLADESH, BANGLADESHWHERE SO MANY PEOPLE ARE DYING FAST AND IT SURE LOOKS LIKE A MESSI’VE NEVER SEEN SUCH DISTRESSNOW WON’T YOU LEND YOUR HAND AND UNDERSTANDRELIVE THE PEOPLE OF BANGLADESH.১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের প্রখ্যাত ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর উপরোক্ত গানের বাণীগুলো জাগিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। আর এই গানের অমর শিল্পী ছিলেন জর্জ হ্যারিসন। যাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সেদিন দাঁড়াতে হয়েছিল অনেক প্রতিক‚লতার মধ্য দিয়ে। জর্জ হ্যারিসন তার বিবেকী শিল্পী সত্তাকে মানবতার কল্যাণে, মুক্তিসংগ্রামের স্বপক্ষে নিবেদিত করেছিলেন সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিপক্ষে ছিল, সেখানে বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশংকরের পৃষ্ঠপোষকতায় জর্জ হ্যারিসন এগিয়ে এসেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সাহায্যার্থে। শুধু তাই নয়, মার্কিনি জনমতও সেদিন এই কনসার্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছিল সে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা।একটি দেশকে না দেখেই সে দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার যে হাত প্রশস্ত করেছিলেন জর্জ হ্যারিসন তা একটি বিরল ঘটনা। সেই গণশিল্পী জর্জ হ্যারিসন ২৯ নভেম্বর ২০০১ চলে যান পরপারে। তিনি মিশে গেছেন পরম সত্তার সঙ্গে। তার মৃত্যু সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বারবার এসেছিল ‘বাংলাদেশ’-এর কথা। টিভির সংবাদ পাঠকরা সেই ঐতিহাসিক ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর কথা উল্লেখ করেছেন। আবারো মার্কিনি টিভির পর্দায় দেখানো হয়েছে কনসার্টের অংশবিশেষ।মর্মান্তিক কথা হচ্ছে, যে জর্জ হ্যারিসন একটি দেশ, একটি জাতির অভ্যুদয়ের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন, সেই জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ সফরের সৌভাগ্যটুকু হয়নি। অন্যদিকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মধ্যে দ্ব›দ্ব দেখা দিয়েছিল শুরুতেই। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সহায়তা করবে কিনা এ নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়। কারণ এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে সোভিয়েত ইউনিয়নও জড়িয়ে পড়বে- এ ভয় ছিল। ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধিকার আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিআইএ এর সমন্বয়ে গঠিত সিনিয়র রিভিউ কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সম্ভাব্য ভাষণ, ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, পূর্ব-পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলন ও সামরিক উপায়ে সংঘাত মোকাবিলা এবং ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। অর্থাৎ বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন যখন স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নিতে শুরু করল, তখন থেকে ঘটে যাওয়া সবকিছুতে কলকাঠি নেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সব ঘটনাই সংঘটিত হয়েছে আমেরিকার জ্ঞাতসারে। ২৫ মার্চ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধে না জড়িয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে। জুলাই- সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার গোপনে পাকিস্তানের সহায়তায় চীন সফর করেন। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মৈত্রী চুক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সমস্যার ক‚টনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং ভারতকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানায়।এর পরের ঘটনাগুলো আরো জটিল। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত ভারতীয় সেনা সদস্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক সরকার ও বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের (যারা ভারতে অবস্থান করেছিলেন) মধ্যে গঠনমূলক একটি রাজনৈতিক সংলাপ আয়োজনের চেষ্টা করে। কিন্তু তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সময়ে বাংলাদেশের যুদ্ধ উপমহাদেশে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে উপমহাদেশের সংঘাতের জন্য মুখ্যত ভারতকে দায়ী করে। ৪ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জার নিরাপত্তা পরিষদের আহ‚ত অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি সম্বলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার প্রস্তুতি নেন। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব-স্ব সীমান্তের ভেতরে ফিরিয়ে নেয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।মোটামুটি এই ছিল একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা। একটি বিষয় বলা দরকার, কোনো রাষ্ট্রের নীতি কারো বিপক্ষে থাকলেও সেই দেশের মানুষের সহমত ভিন্ন হতে পারে। আমেরিকার মানুষ যে বাংলাদেশের সঙ্গেই ছিলেন- তা পরবর্তী সময়ে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।দুই.আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জাতির সম্মান কিছুটা হলেও বাঁচিয়েছে। বিদেশি বন্ধুদের সম্মান জানিয়েছে। এটা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। বিশ্বসভায় শির উঁচু করে দাঁড়াবার কাজে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশে এই যে উদ্যোগ নেয়ার অভাব, সেটাই উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপকে পিছিয়ে দিয়েছে নানা পর্যায়ে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনা, চোরাকারবারিদের দাপট, দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য, দলীয় স্বার্থরক্ষার নামে সন্ত্রাস, অবিচার নিষ্পেষণ। যে চেতনা নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তা এক ধরনের সামন্তবাদী শক্তির হাতে বারবারই হয়েছে প্রতারিত, লাঞ্ছিত। সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায় হচ্ছে, বাংলাদেশের একশ্রেণীর রাজনীতিক মিথ্যাশ্রয়ী। তারা মহান স্বাধীনতার অনেক অধ্যায়কে স্বীকার করতে এখনো নানাভাবে নারাজ। এরা ব্যস্ত খলনায়কদের নায়ক বানাতে। অথচ কে খলনায়ক আর কে মহানায়ক তা ইতিহাসের সত্য স্তম্ভগুলোর দিকে তাকালেই কারো না বুঝার কথা নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছিলেন, তারা কী চেয়েছিলেন? এ প্রশ্নটির উত্তর বাংলদেশে সব দলের রাজনীতিকের (শুধু আলবদর, রাজাকারচক্র বাদে) না জানার কথা নয়। শোষিত, নিষ্পেষিত মানুষের অধিকারের জন্যই ছিল সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। কিন্তু তারপর কী হলো? সেই অধিকার কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে না পেয়েই দিন গুজরান করতে হচ্ছে আপামর মানুষকে। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মাঝে যে প্রবণতাটি প্রকট তা হচ্ছে- ব্যর্থতার দায় না নেয়ার মানসিকতা। ব্যর্থতা স্বীকার করলেই কোনো রাজনীতিক যে জীবন থেকে খারিজ হয়ে গেলেন, এমন কোনো কথা নেই। তারপরও জুড়ে বসে থাকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেশের মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলছে। চলমান সময়ে প্রজন্মের জন্য সুযোগ সৃষ্টির প্রত্যয়, বিশ্ব মানবতার কল্যাণের জন্য তা খুবই অপরিহার্য বিষয়। তা না থাকলে একটি রাষ্ট্র কখনোই শক্ত মেরুদণ্ড নিয়ে দাঁড়াতে পারে না। বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন মুখপাত্রের সঙ্গে আমার মাঝে মধ্যে ফোনালাপ হয়। জানতে চাই বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব। এসব মুখপাত্রের প্রায় সবাই একটি কথা বেশ জোর দিয়ে বলেন। আর তা হচ্ছে- সমস্যাটি যে ভূখণ্ডের সেই ভূখণ্ডের মানুষকেই এর সমাধান করতে হবে। কিন্তু আমি বিষয়টিকে ভাবি ভিন্নভাবে। ক‚টনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধের এ চলমান সময়ে যারা পরাক্রমশালী তারা এখন স্বার্থরক্ষা করতে চায় বিশ্বের সর্বত্র। সর্বভুক এ মানসিকতা যারা ধারণ করেন, তাদের লক্ষ্য একটিই সেই দেশের মানুষের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থরক্ষা করা। একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষও তো পশ্চিমা হায়েনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল নিজেদের স্বাধীনতার জন্য। মুক্তি সংগ্রাম করেছিল। সেই মুক্তি সংগ্রামকে নিক্সন-কিসিঞ্জার শাসকগোষ্ঠী সমর্থন করেনি কেন? বাংলাদেশ নামক ভূখন্ড থেকে তাদের কোনো স্বার্থ রক্ষা হবে না বলে?যে পাকিস্তানিদের, সেদিন তারা যাদের সমর্থন দিয়েছিল, এরা ছিল মূলত অসভ্য। গাদ্দার। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস কখনোই করেনি। যদি করত তবে তাদের নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষী জাতি বাঙালির ভাষাকে উপেক্ষা করে বলতে পারতেন না- ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। মার্কিনি ইতিহাসবেত্তারা যাই বলুন না কেন, আমি খুব দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি মার্কিনি শাসকগোষ্ঠী একাত্তরে পাক হায়েনাচক্রকে সমর্থন করে ভুল করেছিল। কারণ এই সেই পাকিস্তান, এই সেই পাকিস্তানিরা, যারা গণতন্ত্রের নামে এখনো মূলত মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, কট্টরবাদীকেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে। পাকিস্তান এখন মাকির্নিদের দ্বারাই জঙ্গিবাদীদের স্বীকৃত চারণভূমি।অথচ বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি একটি সভ্য জাতি হিসেবে উঠে দাঁড়ানোর নিরন্তন চেষ্টা করছে। পাক তমদ্দুনপন্থি বিএনপি-জামায়াতিদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে একটি মননশীল জাতি হিসেবে দাঁড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা করছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মাঝে বর্তমান পার্থক্য কী, সেটাও মার্কিনি নীতি-নির্ধারকদের এখন আর অজানা নয়। ৪৫ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ এখন পশ্চিমা অনেক শক্তিধরের পরিচিত, প্রিয় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। হ্যাঁ, বলতে দ্বিধা নেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দখলদারির মনোভাবও দেখাচ্ছে মাঝে মধ্যে। এই যে দখলদারিত্বের রক্তচক্ষু, তা কেন দেখাচ্ছে ওরা? তার কারণও আমাদের দেশের রাজনীতিকদের অদূরদর্শিতা। বুর্জয়ারা সব সময়ই শোষকশ্রেণির স্বার্থরক্ষা করে। তা নিজ দেশেই হোক আর প্রতিবেশী দেশেই হোক। এটা কে না জানে, হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রায় গোটা বিশ্বকেই তাদের সর্বগ্রাসী ফিতা দিয়ে বেঁধে ফেলেছে। এ বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রজন্মকে সমকালীন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।বাংলাদেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা কথায় কথায় একাত্তরে মার্কিনি শাসকগোষ্ঠীর বিরোধিতার ধুয়া তুলে বাংলাদেশে এখন মার্কিনবিরোধী জিগির তোলেন। অথচ দেখেছি এরা নিজেরা অথবা তাদের পোষ্যরা নানাভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের মদত নিচ্ছেন। রসদ খাচ্ছেন। তাদের এসব আচরণ নেহায়েতই ভণ্ডামির মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে মার্কিনি জনগণের সিংহভাগেরই বাঙালি জাতির প্রতি ‘মর‌্যাল সাপোর্ট’ ছিল। সমর্থন ছিল মিডিয়ারও। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বিরোধিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আটকাতে পারেনি। একাত্তরের সেই চেতনা নিয়ে বাংলাদেশকে এখনো দাঁড়াতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন ক‚টনৈতিক বিচক্ষণতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা।---------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১২ মার্চ ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩
false
rg
কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল_ কিছু সত্য কথন। পর্ব ছয়। রেজা ঘটক সম্ভবতঃ ৫ জানুয়ারি ২০০৫ সালে পালাকার-এর কার্যালয় যখন ৪৬ দিলু রোডে তখন আমিনুর রহমান মুকুল সাদি করলো। আমরা ভাবী হিসেবে পেলাম মাহফুজা হিলালী হ্যাপিকে। সবাই ডাকে হ্যাপি ভাবী। পালাকার তখন পালাকার-কিডস নামে শিশুদের নাটকের নিয়মিত প্রযোজনা শুরু করলো। বিপুল উদ্দামে পালাকার বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকে এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে শুরু করলো। আমি তখন ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশান (ক্যামপে)-এর একটি শিক্ষামূলক কাজে ছয় মাসের রিসার্স ওয়ার্কে উত্তরবঙ্গ সফর করছি। উত্তর বঙ্গে আমার রিসার্স কাজে সফর এলাকা ছিল পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ হয়ে টাঙ্গাইল শেষ করে ঢাকায় ফিরতে ছয় মাস চলে গেল।পালাকার ততোদিনে আরো অনেক নতুন নাটক প্রযোজনা করলো। এই পর্বে পালাকার=এ যাদে অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল তারা হল- আমিনুর রহমান মুকুল, সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, অজয় দাস, মামুন তালুকদার, সায়েম বিপ্লব, নকুল কুমার দেবনাথ, কাজী ফয়সাল, রবীন, ইকতারুল ইসলাম, রাজীব, অন্তু আজাদ পায়েল, স্বরূপ আনন্দ, কলি আপা, লুবনা ভাবী (বন্ধু জায়েদের বউ), আলী আহমদ মুকুল (ছোট মুকুল), নয়ন মনি চৌধুরী, ইসরাফিল বাবু, শাহজাহান সম্রাট, অপূর্ব এবং আরো অনেকে। মেমোরি থেকে লিখছি বলে কারো নাম আগে পরে আসতে পারে। পালাকার-এর সকল সহকর্মীরা (সাবেক ও বর্তমান) যেনো এটা নিয়ে কেউ রাজনীতিতে লিপ্ত না হয়, সেই বিনীত অনুরোধ রইলো। ঘটনা আমার যেভাবে মনে পড়ছে সেভাবে লেখার চেষ্টা করছি। সবার উচিত আমাকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা।এভাবে ধীরে ধীরে পালাকার নতুন নতুন নাটক নিয়ে বড় হতে থাকলো। ইতোমধ্যে পালাকার-এর যেসব সফল প্রযোজনা গুলো মঞ্চায়ন হয়েছে সেগুলো হল- ১. 'তাইরালীর বুকে মিজু মুন্সীর পাও'- রচনা ও নির্দেশনা আমিনুর রহমান মুকুল২. 'বাহান্ন বাজার তেপান্ন গলি'- রচনা ও নির্দেশনা আমিনুর রহমান মুকুল৩. মৃত্তিকাকুমারী'-রচনা ও নির্দেশনা আমিনুর রহমান মুকুল৪. 'প্রজেক্ট ১০০ প্লাস'-রচনা ও নির্দেশনা আমিনুর রহমান মুকুল৫. 'মানগুলা'- রচনা- গোলাম সফিক ও নির্দেশনা আমিনুর রহমান মুকুল৬. 'তিনকন্যা'- রচনা ও নির্দেশনা আমিনুর রহমান মুকুল৭. 'বাংলার মাটি বাংলার জল'- রচনা সৈয়দ শামসুল হক ও নির্দেশনা আতাউর রহমান৮. 'ডেথ নকথ'-রচনা ও নির্দেশনা আমিনুর রহমান মুকুল৯. 'টাইম স্কোপ'-রচনা ও নির্দেশনা আমিনুর রহমান মুকুল১০. 'ডাকঘর'- রচনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নির্দেশনা শামীম সাগর১১. 'বাসন'-১২. 'রিকোয়েস্ট কনসাট'- ১৩. 'নারীগণ'-১৪. 'কালবেলা'-১৫. 'সাদা-কালো'১৬. দীর্ঘ এই ১১ বছরে পালাকারকে নানা সময়ে নানা জায়গায় কার্যালয় বদল করতে হয়েছে। সিদ্ধশ্বরী থেকে ৪৬ দিলু রোড। ৪৬ থেকে ৩২ দিলু রোড। দিলু রোড থেকে বেইলি রোড। বেইলী রোড থেকে মগবাজার গাবতলা। গাবতলা থেকে মগবাজার ওয়ারলেস গেট। দীর্ঘ এই সময়ে পালাকার-এর পরিধি যেমন নানাভাবে বিস্তৃত হয়েছে। তেমনি নানান জটিলতায় এবং ভুল বোঝাবুঝিতে অনেক সক্রিয় নাট্যকর্মী দল ছেড়ে গেছেন। নতুনরা অনেকে দলে এসেছেন। সেই আলোচনা অনেক দীর্ঘ। সেই প‌্যাঁচালী অনেক অম্ল। পালাকার-এর এই ১১ বছরে সেই অম্ল এবং মধুর দুটো বিষয় নিয়েই আমি সময় করে লিখতে চাই। আমি আজো জানি না পালাকার-এর সবচেয়ে চৌকশ নাট্যকর্মী মামুন তালুকদার ঠিক কি কারণে পালাকার থেকে বেরিয়ে গেল? মামুনের জবানবন্দি শোনার ইচ্ছে রইলো। আমি এখনো জানি না সায়েম বিপ্লব ঠিক কি কারণে পালাকার ছেড়ে গেল? বিপ্লবের কাছে সেই জবানবন্দি শোনার ইচ্ছে রইলো। আমি এখনো জানি না সুদত্ত চক্রবর্তী পবন ঠিক কি কি কারণে পালাকারে ইনাক্টিভ? পবনের কাছে সেই জবানবন্দি শোনার ইচ্ছে রইলো। আমি এখনো ঠিক জানি না নয়ন মনি চৌধুরী কি কি কারণে পালাকারে ইনাক্টিভ? নয়নের কাছে সেই জবানবন্দি শোনার ইচ্ছে রইল। আমি এখনো ঠিক জানি না নকুল, স্বরূপ, ইকতার, রবীন, রাজীব (শামীম সাগরের ছোট ভাই), লিমন, পায়েল, ইসরাফিল বাবু, চারু পিন্টু, কলি আপা, দুই ফারুক সহ অনেকে পালাকারে কেন ইনাক্টিভ?এই মুখ গুলো এবং পালাকার কখনো আলাদা করা কি যায়? যারা সেই আলাদা করার কাজে ন্যূনতম ভূমিকা রেখেছিল বা যাদের কারণে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হল, আমাদের চৌকশ সব নাট্যকর্মী দল থেকে ছিটকে গেল, পালাকার থেকে নিস্ক্রীয় হল, সেই সব কারণ আমি জানি না। সেসব কারণ জানতে চাইবার সময়ও হয় না। ঝামেলা না বাড়িয়ে সেসব সময় করে শুনতে পারলে খুব ভালো লাগতো। পালাকার একদা যে সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়ে ঢাকার নাটক পাড়ায় সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল, সেই পালাকারে কোথায় যেনো একটা ভুল একটা ভুল বোঝাবুঝি আকারে তালগোল পাকিয়েছে। আমরা সেই ভুল থেকে বেরোনোর উপায় খুঁজতে চাই। ভুলগুলো সংশোধন করাও তেমন কঠিন কাজ নয় বলেই আমি মনে করি। আমি অন্তঃত সেই বিষয়গুলো একটু জানতে চাই। কি কারণে একজনের পর একজন টৌকশ নাট্যকর্মী পালাকার থেকে চলে গেলেন বা নিস্ক্রীয় হলেন? আমার জানার খুব ইচ্ছে। পরবর্তী পর্বে সেই সব টক ঝাল মিষ্টি কথাবার্তা থাকবে। অতএব সাধু সাবধান।।
false
mk
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিলেন ১১৪ লাশ! টানা অবরোধের ২ মাস পূরণ হচ্ছে আজ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ চলার পাশাপাশি হরতালও ডেকেছে জোটটি। এ পর্যন্ত অবরোধকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছেন ১১৪ জন, এর মধ্যে পেট্রলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৬১ জন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৩৬ জন। সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ লাশ ও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৭ জন। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে ১ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। এ ছাড়া আহতের সংখ্যা সহস্রাধিক। পুলিশ আহতের সংখ্যাও ৩ শতাধিক। আগুন ও ভাঙচুরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৩শ’ যানবাহনের । কমবেশি ককটেল নিক্ষেপ হয়েছে সারাদেশে ৩ হাজারেরও বেশি। গ্রেফতার হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের হিসাব মতে, অবরোধের কারণে ব্যবসা খাতে ক্ষতি হয়েছে গড়ে প্রতিদিন ২৭০০ কোটি টাকা করে। সে প্রেক্ষাপটে অবরোধের ২ মাসে ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। পুলিশ সদর দফতরের হিসেবে, চট্টগ্রাম অঞ্চল, উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা, সাতক্ষীরা স্পর্শকাতর জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ জেলাসমূহে সহিংসতার ঘটনা বেশি হয়েছে। রাজধানী ঢাকাতেও অবরোধ বা হরতালের সমর্থনে মিছিল সমাবেশ তেমনটি না হলেও গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও অন্যান্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ব্যাপক হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের অভিমত, সারাদেশ থেকে শিবির কর্মীদের রাজধানীতে জড়ো করে আনা হয়েছে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা করা হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির একতরফা (বিএনপির ভাষায়) নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ১ম বর্ষপুর্তির দিন বেগম জিয়া তার গুলশানস্থ কার্যালয় থেকে সরকারি বাধার কারণে তার জনসভায় যেতে ব্যর্থ হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেন এবং তা অব্যাহত রাখার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সে থেকেই বিবৃতি আর অজ্ঞাত স্থান থেকে ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে অবরোধ কর্মসূচি চলছে। অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে চলছে হরতাল। অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অবরোধ শুরুর দিকে এক সপ্তাহের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে এমনটি সরকারি দলের নেতারা দফায় দফায় বললেও কার্যত অবরোধ প্রত্যাহারে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। অবরোধে জীবনহানি, দেশে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস, বহির্বিশ্বে জঙ্গিধারায় নেতিবাচক পরিচিতি, অর্থনৈতিক স্থবিরতাসহ সার্বিক অর্থেই বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট পার করছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে পুলিশ সদর দফতরের দু’মাসের প্রতিবেদনে ক্রসফায়ারে নিহতের সংখ্যা ১৯ জন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, সহিংস ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৬৩ জন। এদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। দেশ স্বাধীনের পর এ ধরনের টানা অবরোধ কর্মসূচি এবারই প্রথম। দু’দফায় বিশ্ব এজতেমা, এসএসসি পরীক্ষা, সরস্বতী পূজা, পবিত্র আশুরা, মহান ভাষা দিবস, গ্রন্থমেলা ও বাণিজ্যমেলা, শুক্র, শনি ছুটির দিনসমূহেও অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে বিরোধী দল। এমনকি অবরোধ চলাকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়াতে মারা গেলে পরবর্তীতে তার মরদেহ দেশে আনলেও মুহূর্তের জন্য অবরোধ শিথিল করা হয়নি। অবরোধের মাধ্যমে বেগম জিয়া সরকারি দলকে পদত্যাগের করে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। অন্যদিকে, সরকারি দল বিএনপি আহূত এ অবরোধ কর্মসূচিকে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে তা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তারা বিরোধী দলকে সন্ত্রাস পরিহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। পাশাপাশি বিরোধী দলের সংলাপে বসার প্রস্তাবকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সারাদেশে পেট্রলবোমায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ২১১টি, অন্যান্য উপায়ে ৫ শতাধিক, অন্যান্য স্থাপনায় ৩৩টি, যানবাহন ভাঙচুর ৪ শতাধিক, অন্যান্য স্থাপনা ভাঙচুর ১৪টি, ককটেল নিক্ষেপ প্রায় ২ হাজার, অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত ৪৩ জন, ককটেল ও অন্য ধরনের আক্রমণে আহত ২৩৮ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ৪৪ জন, অন্যভাবে নিহত (ক্রসফায়ার) ১৯ জন, পুলিশ আহত ৩ শতাধিক, পুলিশ নিহত ১ জন, সাধারণ জনগণ আহত ৬৮৫ জন, সাধারণ জনগণ নিহত ৬৩ জন। তবে, পুলিশ সদর দফতর সারাদেশের গ্রেফতারের প্রকৃত চিত্র দিতে পারেনি। অবরোধ শুরুর পরপরই বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী, রিজভী, আলাল, দুদু, শাহজাহান, আশরাফ উদ্দীন নিজানসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হয়ে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাতারাতি হাওয়া হয়ে যান। দলের পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরোধের পরপরই অলিখিতভাবে বন্ধ হয়ে আছে। গুলশান কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অবস্থান করছেন। চলমান অবরোধে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের অভিযোগে বেগম জিয়া অন্তত দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৫টি মামলায় হুকুমের আসামি হয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ডিএমপিতে, পেট্রলবোমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৭১টি, অন্য উপায়ে ১৩০টি, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ৯টি, যানবাহন ভাঙচুর ৪৬টি, অন্যস্থাপনা ভাঙচুর ২টি, ককটেল নিক্ষেপ ৪২৩ জন, অগ্নিদগ্ধে আহত ৪৩ জন, ককটেল ও অন্য উপায়ে আহত ১ শত ৪৭ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ৩ জন, অন্যভাবে নিহত ১ জন, পুলিশ আহত ৪৬ জন, নিহত ১ জন, সাধারণ মানুষ আহত ১ শত ৯০ জন ও নিহত ৪ জন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে(সিএমপি) পেট্রলবোমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৩টি, অন্য উপায়ে ১৯টি, যানবাহন ভাঙচুর ১৩টি, ককটেল নিক্ষেপ ১৮৩টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ১১ জন, ককটেল ও অন্য ধরনের আক্রমণে আহত ৩৫ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ১ জন, অন্যভাবে নিহত ১ জন, পুলিশ আহত ৪ জন, সাধারণ মানুষ আহত ৪৬ জন ও নিহত ২ জন। রাজশাহী মেট্রপলিটন পুলিশের (আরএমপি) হিসাবে পেট্রলবোমায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ৬টি, যানবাহনে অন্য উপায়ে অগ্নিসংযোগ ৪টি, অন্য স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ৩টি, যাবাহন ভাঙচুর ৮টি, ককটেল নিক্ষেপ ২৭টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ৬ জন, ককটেল ও অন্য ধরনের আক্রমণে আহত ৫ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ১ জন, পুলিশ আহত ৫ জন, সাধারণ মানুষ আহত ১১ জন ও নিহত ১ জন। খুলনা মেট্রপলিটন সিটি (কেএমপি)-তে পেট্রলবোমায় যানবাহনের অগ্নিসংযোগের ঘটনা নেই, অন্য উপায়ে অগ্নিসংযোগ ১টি, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ১টি, যানবাহন ভাঙচুর ১৯টি, অন্য স্থাপনা ১টি, ককটেল নিক্ষেপ ১৪৩টি, ককটেল ও অন্য আক্রমণে আহত ১৭ জন, পুলিশ আহত ২ জন, সাধারণ মানুষ আহত ১৭ জন। কেএমপিতে কোনো নিহতের ঘটনা নেই। বরিশাল মেট্রোপলিটন সিটিতে (বিএমপি) পেট্রলবোমায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৩টি, অন্য উপায়ে ৩টি, স্থাপনা ৩টি, যানবাহন ভাঙচুর ৬টি, ককটেল নিক্ষেপ দুটি, অগ্নিদগ্ধে আহত দু’জন, পুলিশ আহত ১ জন এবং সাধারণ মানুষ আহত ২ জন। সিলেট মেট্রপলিটন সিটিতে (এসএমপি) পেট্রলবোমায় যানবাহন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৮টি, অন্য উপায়ে ১৪টি, যানবাহন ভাঙচুর ১৫টি, অন্য স্থাপনা ভাঙচুর ১টি, ককটেল নিক্ষেপ ৯৬টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ২ জন, ককটেল ও অন্য আক্রমণে আহত ৮ জন, অন্যভাবে নিহত ১ জন, সাধারণ মনিুষ আহত ১০ জন এবং নিহত ১ জন। এ শহরে পুলিশ আহত ও নিহতের ঘটনা নেই। ঢাকা রেঞ্জে পেট্রলবোমায় যানবাহন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৩১টি, অন্য উপায়ে ৭৮টি, স্থাপনা অগ্নিসংযোগ ৩টি, যানবাহন ভাঙচুর ৬০টি, ককটেল নিক্ষেপ ১৩০টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ৩৯ জন, ককটেল ও অন্য ধরনের আক্রমণে আহত ৪৬ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ৩ জন, অন্যভাবে নিহত ১ জন, পুলিশ ২৮ জন, সাধারণ জনগণ আহত ৮৫ জন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ নিহত ৪ জন। চট্টগ্রাম রেঞ্জে পেট্রলবোমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৩৫টি, অন্য উপায়ে ১০৮টি, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ৬টি, যানবাহন ভাঙচুর ১২৩টি, স্থাপনা ভাঙচুর ৪টি, ককটেল নিক্ষেপ ৩৯৫টি, অগ্নিসংযোগে আহত ৩৭ জন, ককটেল ও অন্য আক্রমণে আহত ৮০ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ১০ জন, অন্যভাবে নিহত ৮ জন, পুলিশ আহত ১১৮ জন, সাধারণ জনগণ আহত ১১৭ জন এবং সাধারণ মানুষ নিহত ১৮ জন। রাজশাহী রেঞ্জে পেট্রলবোমায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ২৩টি, অন্য উপায়ে অগ্নিসংযোগ ৯৮টি, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ৪টি, যানবাহন ভাঙচুর ৫০৫টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ৩১ জন, ককটেল ও অন্য আক্রমণে আহত ৪৯ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ৫ জন, অন্যভাবে নিহত ৬ জন, পুলিশ আহত ৪৪ জন, সাধারণ মানুষ আহত ৮০ জন এবং নিহত ১১ জন। খুলনা রেঞ্জে পেট্রলবোমায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৮টি, অন্য উপায়ে ২২টি, যানবাহন ভাঙচুর ১৫টি, ককটেল নিক্ষেপ ৭টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ৭ জন, নিহত ১ জন, পুলিশ আহত ১২ জন, সাধারণ জনগণ আহত ১৫ জন ও নিহত ১ জন।রংপুর রেঞ্জে পেট্রলবোমায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ১৩টি, অন্যান্য উপায়ে ৩৩টি, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ২টি, যানবাহন ভাঙচুর ২১টি, অন্যান্য স্থাপনা ভাঙচুর ১টি, ককটেল নিক্ষেপ ২৮টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ৫৩ জন, ককটেল ও অন্যভাবে আহত ১২ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ১৫ জন, অন্যভাবে নিহত ১ জন, পুলিশ আহত ২ জন, সাধারণ মানুষ আহত ৬৫ জন ও নিহত ১৬ জন। বরিশাল রেঞ্জে পেট্রলবোমায় যানবাহন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ৭টি, অন্য উপায়ে ১৪টি, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ১টি, যানবাহন ভাঙচুর ৩৩টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ৩ জন, ককটেল ও অন্য উপায়ে আহত ১ জন, পুলিশ আহত ৪১ জন, সাধারণ জনগণ আহত ৩৮ জন ও নিহত ১ জন। অন্যদিকে, সিলেট রেঞ্জে পেট্রলবোমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ৩টি, অন্য উপায়ে ১৪টি, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ১টি, যানবাহন ভাঙচুর ৩৩টি, অগ্নিদগ্ধে আহত ৩ জন, ককটেল ও অন্য উপায়ে আহত ৩৫ জন, অগ্নিদগ্ধে নিহত ১ জন, পুলিশ আহত ৪১ জন, সাধারণ মানুষ আহত ৩৮ জন এবং নিহত ১ জন। - See more at: Click This Link
false
fe
ইতিহাস যখন আত্মানুসন্ধান করে ইতিহাস যখন আত্মানুসন্ধান করে ফকির ইলিয়াস --------------------------------- কয়েকটি রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে আবার জমে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, তাকে বাদ দিয়ে হলেও প্রয়োজনে দল যেন নির্বাচনে অংশ নেয়। তিনি আরও বলেছেন, যে কোন কৌশলে তাকে আগামী নবম সংসদ নির্বাচন থেকে দরে রাখা হতে পারে। তার পরও যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগ যেন নির্বাচনে অংশ নেয়। কারণ নির্বাচনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সঠিক পথ। শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পর একটি চিহ্নিত মহল বলতে শুরু করেছে, শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের একটি গোপন সমঝোতা হয়েছে। আর এর ভিত্তিতেই শেখ হাসিনা নিজ দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলছেন। এটা সবার জানা, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। তাদের রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় শক্ত ভিত্তি। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে আওয়ামী লীগ অবশ্যই বাংলাদেশের যে কোন নির্বাচনে একটি ফ্যাক্টর। এসব জেনেশুনেই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তার দলকে নির্বাচনমুখী তৎপরতা আরও জোরদার করার দিকনির্দেশনা দিতেই পারেন। তাতে দোষের কি আছে? যারা হঠাৎ করেই এই বক্তব্যের সঙ্গে সমঝোতার গ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাদের প্রকৃত মতলবই বা কি? বরং আমি মনে করি, শেখ হাসিনা অন্তরাল থেকেও গণতন্ত্রের পক্ষে, গণমানুষের আশা-আকক্ষার পক্ষে কথা বলছেন। তার দলকে সুসংহত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। নানী তৈয়বা মজুমদারের শবদেহ দেখার জন্য প্যারোলে কয়েক ঘন্টার জন্য মুক্তি পেয়েছিলেন তারেক রহমান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা যে এত ডেঞ্জারাস (বিপজ্জনক) তা জানতাম না’। তার এই বক্তব্যটিও ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে দেশে-বিদেশে। তারেক রহমান এবং তার হাওয়া ভবন দেশের জন্য ‘বিপজ্জনক’ ছিলেন, নাকি ‘ত্রাণকর্তা’ ছিলেন এ নিয়েও যুক্তিতর্ক দেখানো হচ্ছে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন আলোচনায় আড্ডায়। একটি বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে, ২১ আগস্টের মর্মান্তিক গ্রেনেড হামলার সঙ্গে হাওয়া ভবন জড়িত ছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু প্রমুখের সরাসরি যোগসাজশে এ পরিকল্পিত হামলাটি করা হয়। এমন অনেক কথা আমরা এখন প্রায় প্রতিদিনই পত্রপত্রিকায় দেখছি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার দৃষ্টান্ত যে এত লোমহর্ষক, বর্বর হতে পারে তার উদাহরণ ছিল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। হামলার পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা বাবর-তারেক চক্র করিয়েছে। হাওয়া ভবনের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল এ হামলার পেছনে তাও বলেছিলেন শেখ হাসিনা। তা হলে তো হাসিনার কথাই সত্যে পরিণত হতে যাচ্ছে। অত্যন্ত জঘন্য এই হামলার প্রত্যক্ষ মদদদাতা যদি তারেক রহমান, বাবর, পিন্টুরা হয়ে থাকেন তবে তারা এই দেশ ও জাতির জন্য ‘ডেঞ্জারাস’ নয় কি? জনপ্রিয়তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে গিয়ে সহিংস আক্রমণ করাকে কোন রাজনৈতিক সভ্যতা গ্রাহ্য করে না। আজ সেই সত্যটিই বাংলাদেশে প্রমাণিত হতে চলেছে। প্রভাব খাটিয়ে গোয়েন্দা তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল। দেশটাকে কীভাবে মগের মুল্লুক মনে করেছিলেন তারেক-বাবর চক্র। দুই. মাতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও কয়েক ঘন্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসায় গিয়েছিলেন তিনিও। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, চল্লিশ টাকা চালের সের। এ অবস্খায় মানুষ কেমন আছে তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। যে কথাটি না বললেই নয়, তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিগত জোট সরকার খুব আন্তরিক ছিল কি? বরং নানা রকমের সিন্ডিকেট, মজুদদার, কালোবাজারিরা বেড়ে উঠেছিল জোট সরকারের ছায়াতলে। কৃষি, খাদ্য মন্ত্রণালয়গুলো ছিল সবচেয়ে বেশি নির্বিকার। বেগম জিয়ার সরকারে যারা ব্যর্থ মন্ত্রী ছিল, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাদের সরিয়ে দিতে পারতেন। যাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, যেমন আমীর খসরু চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন কিংবা এবাদুল হক চৌধুরী তারা ছিলেন হয়তো হাওয়া ভবন না হয় অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বিরাগভাজন। আজ সেই সাইফুর রহমানই কি-না বেগম জিয়ার বিপক্ষে দলে ঝাণ্ডা ধরতে তৎপর। নিজ পুত্রদ্বয়কে বাঁচাতে এবং নিজের হীন গডফাদারতন্ত্র ঢেকে দিতে এই প্রবীণ বয়সে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সাইফুর রহমান। কথা হচ্ছে যারা মারাত্মক ব্যর্থ হওয়ার পরও ক্ষমতা ছাড়েননি তারাই আজ দেশ নিয়ে ভাবছেন। তাদের ভাষায় নিজেরা ছিলেন সবচেয়ে বেশি সফল সরকার। তাদের আস্তিনের পকেটে বেড়ে উঠেছিল শায়খ রহমান, বাংলাভাইয়ের মতো শীর্ষ জঙ্গিরা। বেগম জিয়ার জোট সরকার যদি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা না করত, তবে হয়তো আজকের বাংলাদেশ এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতো না। মুক্ত চিন্তা এবং মানবাধিকার বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন ‘ফিন্সডম হাউজ’ বাংলাদেশকে ‘আংশিক মুক্ত’ দেশ বলে জানিয়েছে তাদের প্রতিবেদনে। অর্থাৎ বাংলাদেশে এখনও স্বাধীনমত প্রকাশ মানবাধিকার সমুন্নত নয়। এটা বিশ্ববাসী জানে, বাংলাদেশে এখন বিশেষ ক্ষমতা আইন চলছে। ওয়ান ইলেভেন অনেক অধিকারই খর্ব করে দিয়েছে। কিন্তু এর আগে কেমন ছিল দেশের পরিস্খিতি? মৌলবাদী ফতোয়াবাজদের দাপট, জঙ্গিদের মহড়া, গোটা দেশজুড়ে বোমা হামলা, আদালত প্রাঙ্গণে বোমা আক্রমণ কাঁপিয়ে তুলেছিল গোটা দেশ। সিন্ডিকেট, লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর হাওয়া ভবনের দাপট সর্বত্র সর্বনাশের কিনারায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছিল। আর নেপথ্যে দেশে শক্তি সঞ্চয় করেছিল একাত্তরে পরাজিত সেই অপশক্তি। তিন. সেনাবাহিনী প্রধান মইন উ আহমেদ আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি রাষ্ট্রপতি হবেন না। আর্মি রাষ্ট্রক্ষমতাও নেবে না। তার এই বক্তব্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক। কারণ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মানুষকে গেল ৩৬ বছরের অধিকাংশ সময়ই কাটাতে হয়েছে নানা শঙ্কায়, নানা উৎপীড়নে। দেশের সাধারণ মানুষ যে স্বপ্ন এবং চেতনা নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এর সিকিভাগও বাস্তবায়িত না হওয়ার বেদনা আক্রান্ত করেছে বারবার সাধারণ মানুষের পাঁজর। প্রকারাস্তরে সেই পরাজিত রাজাকার গোষ্ঠীই ফুলেফেঁপে উঠেছে। অর্থ এবং শক্তি দুটিই সঞ্চয় করেছে তারা। অনুষ্ঠিতব্য, ২০০৮ সালের বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে তারা তাদের সে শক্তি আবারও দেখাতে পারে। বিভিন্ন মৌলবাদী শক্তি ভেতরে ভেতরে সংঘটিত হচ্ছে। যারা সাধারণ মুসল্লি, যারা ধর্ম-কর্মকে ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন, এদের কাছে জামায়াতিরা বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের নীরব প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মুসলিম উম্মাহর ভোটব্যাংক সামনে রেখে এগুচ্ছে তারা। এ বিষয়টি অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও বিবেচনায় রাখতে হবে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই পতিত শক্তি, সংঘটিত হতেই থাকবে। পাশাপাশি এদের সহযোগী জঙ্গিবাদী স্কোয়াডও সক্রিয় থাকবে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উথান মূলত ১৯৭৭ সাল থেকেই। এরা কীভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে, তা কারও অজানা নয়। আজ যারা বারবার বলছেন, দেশকে ওয়ান ইলেভেনের পর্বাবস্খায় ফিরিয়ে নেয়া উচিত নয় কিংবা ফিরতে দেয়া হবে না তাদের একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। আর তা হচ্ছে, ওয়ান ইলেভেন পর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশে হাসিনা-খালেদা রাজনীতিই শুধু ফ্যাক্টর ছিল না। এর চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর ছিল মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদী রাজনীতির উস্কানি। এসব উস্কানি যারা দিয়েছিল তারা এখনও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের শীর্ষ গডফাদাররা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজধানীতে। এদের বহাল তবিয়তে রেখে ওয়ান ইলেভেনের প্রকৃত চেতনা প্রতিষ্ঠা করা যাবে কি? এদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারলে, দেশ আজ হোক কাল হোক ওয়ান ইলেভেন পর্ববর্তী অবস্খায়ই ফিরে যাবে। বাংলাদেশে ইতিহাসের আত্মানুসান খুবই জরুরি। ইতিহাস যখন আত্মানুসানে ব্রতী হয় তখনই একটি জাতির জন্য খোলে নতুন দরজা। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা বিষয়গুলো নিয়ে ভাববেন আশা করি। ------------------------------------------------------------------------------ দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ২৫ জানুয়ারী ২০০৮ শুক্রবার। সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৯:৪২
false
rn
তুলা রাশির দিনকাল আপনি সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসেন। কিন্তু অভিমানী। আপনি ভাই-বোনদের স্নেহ করলেও সবসময় তাদের কাছ থেকে মনোমত ব্যবহার পাবেন না। পিতা-মাতার প্রতি আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকলেও আপনার প্রতি তাদের খুব একটা সুবিচার থাকবে না। আত্মীয়রা আপনার কাছে সুযোগ নেবে কিন্তু কৃতজ্ঞতাবোধ থাকবে না। আপনার দাম্পত্য জীবন সুখের হলেও স্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ প্রায়শ:ই হবে।কর্মজীবনে জাতক খুবই সংযত ও কর্তব্যপরায়ণ। কোনমতেই কোন কাজে গাফিলতি করে না।তুলারা মানুষ ভালোবাসে, কিন্তু অনেক মানুষের ভিড় তাদের অপছন্দ। শান্তির পায়রাদের মতোই সুশীলভাবে তারা অন্যদের ঝগড়া-বিবাদে মধ্যস্থতা এবং মীমাংসার জন্য যায়। তারা সুশীল এবং তাদের সঙ্গ আনন্দদায়ক। তুলা জাতকেরা খুবই বুদ্ধিমান। একই সাথে, তারা চরমভাবে সরল। সহজেই এরা অন্যের প্রতারণার শিকার হয়। আপনি ভ্রমনপিপাসী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আপনাকে বরাবরই আকর্ষণ করে।শরাশিচক্রের সপ্তমরাশি তুলা। তার প্রতীক তৌলদন্ড (দাড়িপাল্লা)। তুলার অধিপতি শুক্র। আবার তুলার অষ্টমস্থ বৃষরাশির অধিপতিও শুক্র। পার্থিব ভোগ সুখের কারক এই শুক্র। কিন্তু মনে রাখতে হবে তৌলদন্ডে মেপে নেওয়ার কথা অর্থাৎ জীবনের মাপকাঠির যেন এদিক-ওদিক না হয়।তুলারাশির জাতক-জাতিকার বিচার-বিশ্লেষণের ও লোকচরিত্র বোঝবার ক্ষমতাও রয়েছে। চিত্রা, স্বাতী ও বিশাখা এই তিনটি নক্ষত্রের সমবায়ে এই রাশি।সৃষ্টিধর্মী কাজ ও বিচার বিবেচনার কাজে তুলার জাতকের বিশেষ আগ্রহ থাকে।তুলাদের কণ্ঠস্বর সাধারণত মিষ্টি এবং কলিং বেলের মতোই পরিষ্কার। এই মানুষগুলো সাধারণত নিজেদের কণ্ঠস্বরকে কর্কশ কিংবা তীক্ষ করে তোলে না। সমগ্র পৃথিবীতে তুলা জাতকই একমাত্র ব্যক্তি যার কণ্ঠে শুনবেন, 'আমি তোমাকে ঘৃণা করি, এবং এখন তোমার নাকে একটা ঘুষি মারবো,' অথচ আপনার মনে হবে সে যেন মহাদেব সাহার কবিতা আবৃত্তি করে বলছে। বস্তুত, তুলার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন জাতকের মুখ দেখলে মিষ্টি বিস্কুটের কথা মনে পড়বে। তুলারাশির জাতক সব কাজ নিখুঁতভাবে করতে চাইবে। ভোগবিলাসে জাতকের সুরুচি প্রকাশ পাবে। সুখ ও দুঃখকে সমানভাবে গ্রহণ করে থাকে। সামাজিক ব্যবহার অত্যন্ত মধুর। নিজের সাধনার পথে অবিচল থেকে তার সুষ্ঠ রূপায়ণে সচেষ্ট হবে। আত্মবিশ্বাস জাতকের মধ্যে খুব বেশী থাকবে। তুলারাশির চরিত্রের দৃঢ়তা দেখাবার মত। সবার সঙ্গে মিশতে পটু। তুলারাশির জাতকের ভাগ্যের মধ্যবয়সের কাছাকাছি সময়েই বিশেষ উন্নতি হয়। প্রথম বয়সে ভাগ্য সাধারণতঃ অনিশ্চিত থাকবে। ৩৯ থেকে ৪৫ বর্ষ সময়টি জাতক বিশেষ আনন্দে কাটায়।এমন কোনো তুলাজাতককেই খুঁজে পাওয়া যাবে না যার হাসিটা এক টুকরো নরম সাদা মেঘের মতো সুশ্রী নয়। তুলার হাসি শক্ত একটা চকলেটকেও নিমিষে গলিয়ে দিতে পারে। আর যখন এই হাসি আপনার উপর পূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে তখন একদম বদখত মুখটিকেও আপনার চমত্কার সুন্দর বলে মনে হবে। প্রথমে তারা কথার ঝড় বইয়ে দেবে, এবং একাই কথা বলে পুরো আলোচনাটা মুখর করে রাখবে। বিবাহিত জীবন সুখের হয়। তীব্র বাসনা ও কামনা জাতককে বিশেষভাবে উত্তেজিত করে তোলে। স্ত্রী সুন্দরী ও বিদুষী হয়। দাম্পত্যজীবনে জাতক স্ত্রীকে একান্তভাবে পেতে চায়। নিবিড় প্রীতির সম্পর্কও যেমন থাকবে তেমনি মনকষাকষিও কম হবে না। বিবাহোত্তর জীবন জাতকের বিশেষ আনন্দমুখর হয়। স্ত্রীর প্রভাবে উন্নতির সক্ষম হয়। স্ত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে জাতককে বিশেষ কষ্ট পেতে হয়। কোন দূরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সন্তান সংখ্যা মাঝামাঝি হয়। গ্রিকদের সুবিচারের দেবী জিউসকন্যা অ্যাস্ট্রিয়া। তার এক হাতে একটি দাঁড়ি-পাল্লা নিরপেক্ষতার প্রতীক হিসাবে শোভা পায়। এই দেবীকেই গ্রিকরা তুলা রাশি চক্রের তারকামন্ডলী হিসেবে জ্যোতির্মন্ডলে কল্পনা করতো।[তুলা রাশি,সেপ্টেম্বর ২৩-নভেম্বর ২১,রত্ন :পান্না, ফিরোজা, ওপাল, ক্যাটস আই,তুলা ব্যক্তিত্ব -আলফ্রেড নোবেল, আইজেন হাওয়ার, জিমি কার্টার, মহাত্মা গান্ধী, স্যার সৈয়দ আহমদ, রবার্ট ক্লাইভ, শেখ হাসিনা, উইলিয়াম ফকনার, মাও সে তুং, বেগম আখতার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।]
false
rn
আই লাভ ইউ ট্রাম্প ঢাকা শহরের সব মানূষ গুলো ছাগল'- এক পাগল মগবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছে। আমি অফিস যাওয়ার পথে পাগলের কথা শুনে থমকে দাড়ালাম। পাগলের কথাটা আমার মনে ধরেছে। সে খুব একটা ভুল বলেনি। আমাকে প্রায়ই অফিসের কাছে নানান জাগায় যেতে হয়, তখন আমি উপলব্দি করি- 'ঢাকা শহরের মানুষ গুলো ছাগল'। আমার বন্ধু রফিক এর অফিসের কয়েকটা কথা বলি। সেদিন ছুটির দিনে চায়ের আড্ডায় রফিক বলল, দোস্ত আমাদের অফিসে বেশ কয়েকটা ছাগল আছে। ১০০% ছাগল। আমার ইচ্ছা করে ওদের সকাল সন্ধ্যা থাপ্পড় দেই। বড় বড় পদ নিয়ে বসে আছে-কাম-কাজ কিছুই করে না। মোটা অংকের টাকা বেতন নেয়। আর যারা পরিশ্রম করে, তাদের পদ ছোট, বেতনও কম পায়। আবার নানান কটু কথা শুনতে হয়। আর কথায়-কথায় অপমান তো আছেই। আর তারা কি সুখে আছে। অফিসে আসে এগারোটায়। তাদের আঙ্গুলের ছাপও দিতে হয় না। কখনও এরা একেবারে দুপুরের খাবার বাসা থেকে খেয়ে অফিসে আসে। অফিসে এসে বলবে- মিটিং করে আসলাম- অমুক কোম্পানীর সাথে। রফিকের জন্য আমার খুব মায়া হয়। খুব ভালো ছেলে, সহজ সরল। সবচেয়ে বড় কথা খুব পরিশ্রমী। প্রতিটা কাজ খুব মন দিয়ে করে। কাজে ফাঁকি দিতে জানেই না। আর এই সমস্ত ফাঁকিবাজদের কত বড় বড় কথা। তারাই অফিসের হিরো। অন্য সহকর্মীরা তাদের বস-বস বলে ডাকে। আমার যে কয়জন চেনা জানা আছে- তাদেরকে বলেছি রফিকের একটা চাকরির জন্য। আসলে সত্যি কথা বলতে কি- সব অফিসের ২/৪ জন ফাঁকিবাজ আর ভন্ড আছেই। তারা প্রচুর মিথ্যা বলে, মিথ্যা অভিনয় করে চেয়ারম্যান, এমডি'র প্রিয়ভাজন হয়ে যায়। তখন তারা অন্যদের তুচ্ছজ্ঞান করে। কথায়-কথায় চাকরি খায়। তারা চায়- চেয়ারম্যান এমডি ছাড়া বাকি সবাই পা চাটা কুকুর হয়ে থাক। যে কুকুর হয়ে না থাকবে- তাকে কান ধরে বের করে দেয়া হবে। একবার চাকরি গেলে আবার যে চাকরি পাওয়া যাবে সে নিশ্চয়তা নেই। তাই তারা সবাই পা চাটা কুকুর হয়েই থাকে। অন্য কোনো উপায় তো আর নেই। আজ আমার লেখার বিষয় এটা ছিল না। একটা লিখতে গেলে আরেকটা বিষয় চলে আসে। আমি সামলাতে পারি না। মানে দুই নৌকায় পা দেবার মতো। শেষে দুই নৌকা দু'দিকে চলে যায়, ডুবে মরতে হয়। লেখাটা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। যেমন আজ আমার এই লেখাটা ভিজে গেল, নষ্ট হয়ে গেল। বাংলাদেশের মানূষ গুলো আসলে ভালো। তারা ভালো হবার প্রধান কারণ হচ্ছে- তারা দুঃখী। ভাতে দুঃখী, কাপড়ে দুঃখী। ৭১ সালে মানুষ গুলোর কথা ভেবে দেখুন। কোথাও আগুন লাগলে দেখবেন- সাহায্যের জন্য সাধারণ মানূষ গুলো এক বুক সাহস নিয়ে এগিয়ে আসে। নিজের চোখে দেখেছি- রানা প্লাজা যখন ভেঙ্গে পড়ল- সাধারন মানূষ গুলো আকাশের মতো বিশাল হৃদয় নিয়ে- সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সুযোগে আমার বউ এর কথা একটু বলি- তাকে আমি যে কয়টাকা হাত খরচ দেই- সে তা দরিদ্র মানূষকে দিয়ে দেয়। বুড়ো রিকশাওয়ালাকে দেখে- তার মায়া লাগে। বৃদ্ধ ভিক্ষুককে দেখে তার মায়া লাগে। সে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে। বাংলাদেশের তরুন ছেলে-পেলে গুলোও যে ভালো তার একটা প্রমাণ দেই- বাসে মুরুব্বী দেখলে তারা সিট ছেড়ে দেয়। মুরুব্বী দেখলে তারা হাতের সিগারেট লুকিয়ে ফেলে। সালাম দেয়। আমার মায়ের কথা বলি- আমার মা একা রাস্তা পার হতে পারে না, সে দাঁড়িয়ে থাকে তখন আমার মতো কোনো ছেলে এসে- মাকে রাস্তা পার করে দেয়। আমাদের এই দরিদ্র দেশের ছেলে মেয়েরাই বাড়ি-বাড়ি থেকে শীতের কাপড় সংগ্রহ করে গ্রামে গিয়ে দরিদ্রলোকদের বিলিয়ে দেয়। ট্রাম্প লোকটার সাথে কিন্তু আমার চেহারার সাথে মিল আছে। আমার যখন ট্রাম্পের মত বয়স হবে- তখন আমাকে ট্রাম্পের মতোই লাগবে। আশা করি, লোকটি সারা বিশ্বের জন্য ভালো কাজ করবেন। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৭
false
fe
মাটির মননে চৈতন্যের বীজ প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবী প্রয়াত ড. আহমদ শরীফের একটি ভাষণ আমার প্রায়ই মনে পড়ে। তিনি বলতেন, আমি শঙ্কিত নই। যা বিশ্বাস করি তাই বলি। আমার কথা এবং কর্মে কোন অমিল নেই। শঙ্কা মানুষের হৃদয়ের প্রকৃত শক্তিকে হরণ করে। আর যার হৃদয়ে সৎ শক্তি থাকে না সে তো মানুষ নয়। ড. আহমদ শরীফ আড়াই দশক আগে যে কথাটি বলে গেছেন, সেই শঙ্কা নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে আজকের বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি। কারণ এই রাষ্ট্রটিকে এমন এক অবস্থায় পতিত করা হয়েছে, সবকিছু নিয়েই আজ সন্দেহ। সবকিছু নিয়েই আজ শঙ্কার রাজনীতি। সবাই, অর্থাৎ যারা রাষ্ট্রের শাসক-কর্ণধার, তারা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারছেন না জনগণ তাদের কতটা বিশ্বাস করে কিংবা চায়। আর চাওয়া না চাওয়ায় তাদের কিই-বা আসে যায়। তারা চেপে বসেছেন। তাদের টলাতে পারে এমন সাধ্য কার আছে! চলমান, মননশীল এবং আধুনিক প্রগতির ধারাকে কারা বারবার বাংলাদেশ স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে তা কারও অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, এসব মৌলবাদীরা খুব কৌশলে রাষ্ট্র ক্ষমতা স্পর্শ করতে পেরেছে। যারা গ্রামে-গঞ্জে ফতোয়া দিয়ে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নকে ব্যাহত করে দিতে চেয়েছে তারাই নিজেদের প্রয়োজনে বুলি পাল্টিয়েছে বারবার। এরা তো সেই হীন মৌলবাদী যারা এক সময় গ্রামের মাঠে ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদকে ‘নাজায়েজ’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। তারা বলেছিল ট্রাক্টর নাকি রাষ্ট্রীয় সুদের টাকায় কেনা হয়। তাই ট্রাক্টরে চাষ করা ধানগুলো হারাম। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ওইসব পাষণ্ডদের এসব ফতোয়ার কথা আমাদের এখনো মনে আছে। সেই ফতোয়াবাজরাই, সেই আলবদর ঘাতকরাই জাতীয় পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে ‘উজির’ হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। অথচ তাদের হাত থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পবিত্র রক্তের দাগ শুকায়নি। এই মন:পীড়া নিয়েই যাপিত হচ্ছে বাঙালির জীবন। শোকে মুহ্যমান হচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বাংলাদেশের আজ এমন অবস্খা কেন? কেন একটি জাতির ভবিষ্যৎ এতো বেশি শঙ্কাপুর্ণ? আমার কখনো কখনো মনে হয় পরপারে থেকে, নরকের ওপার হতে খুনি আইউব-ইয়াহিয়ারাও বোধ হয় বাংলাদেশের আজকের অবস্খা দেখে হেসে উঠে মাঝে মাঝে। তাদের হাসার প্রধান কারণ হচ্ছে তারা এই বাংলাদেশে তাদের যোগ্য (!) উত্তরাধিকারীদের রেখে যেতে পেরেছে। যারা আজ বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাপক্ষাকে পদদলিত করে একটি বর্বরতম জঙ্গিবাদের ধারা-উপধারাকে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে তারা আইউব ইয়াহিয়ার চেয়েও জঘন্য নয় কি? বাঙালি জাতিকে এই বিষয়টি খুব গভীরভাবে অনুধাবন করার সময় বয়ে যাচ্ছে। দুই.যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ‘এন্টি টেরোরিজম’ কোর্সটি যুক্ত হওয়ার পরপরই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এর ছাত্রছাত্রী সংখ্যা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও এ কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য ট্রান্সফার নিয়ে প্রচুর ছাত্রছাত্রী আসছে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার জন্য। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষক-অধ্যাপক হিসেবে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন এরা সবাই সামরিক, গোয়েন্দা, স্পেশাল সার্ভিস কিংবা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস আইনে দক্ষ ব্যক্তিত্ব। কেউ কেউ বিভিন্ন সংস্খার সাবেক কর্মকর্তা।২০০১ সালের আগেও এ কোর্সটির খুব একটা কদর ছিল না যুক্তরাষ্ট্রে। সেপ্টেম্বর ইলেভেনের পর এর কদর বেড়ে গেছে বহু গুণ। অপরাধের ধরন বাড়ছে। পরিসর বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সন্ত্রাস দমনের উপায় নিয়েও বিশ্বের রাজনীতিক, সমাজবিজ্ঞানী, সংস্খা ও সংগঠনগুলো উদ্বিগ্ন। এন্টি টেরোরিজম কোর্সের তিন-চার বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রজন্মের ক্যারিয়ারেও যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবেই অনেকে নিতে চাচ্ছে এটাকে।একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট, বিশ্ব এগুচ্ছে সমসাময়িক ঘটনাবলি এবং সমস্যা সম্ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এ প্রজন্মকেও তাই গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সমসাময়িক অবস্খার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের অধ্যাপক রাশেল রোলিনের সঙ্গে। তিনি এখানে ‘এন্টি টেরোরিজম’ পড়ান। অধ্যাপক রোলিন বলেন, একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে আজ থেকে বিশ বছর আগে কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এমন মুক্ত এবং অবাধ প্রবাহ ছিল না। ইন্টারনেট এখন গোটা বিশ্বকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। এর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সাইবার ক্রাইমও। তাই বাধ্য হয়ে নতুন আঙ্গিকের সেই ক্রাইমকেও রোধ করতে ব্যবস্খা নিতে হচ্ছে সরকারকে। প্রণীত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন আইন।আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনের বেলায়ও প্রফেসর রোলিনের একই কথা। তিনি বললেন, খুব শিগগিরই হয়তো এমন সময় আসবে যে এই এন্টি টেরোরিজম সিলেবাসটি গোটা বিশ্বে একটা অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে সমাদৃত হবে। যারা উচ্চপদস্খ হবেন­ তারা সবাই এসব বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে দীক্ষিত করে তুলবেন নিজেদের। তার কথার সঙ্গে একমত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। যদি বাংলাদেশের অতীত শিক্ষা সিলেবাসের প্রতি নজর দেই তবে দেখা যাবে, একসময় ছিল যখন একজন পিতা তার সন্তানকে বিএ, এমএ অথবা এমনি সমপর্যায়ের এডুকেটেড করে গড়ে তুলতেই আগ্রহী ছিলেন। সময়ের আবর্তে এখন তা অধিক ক্ষেত্রেই বদলেছে। নতুন নতুন সিলেবাসের প্রতি, বিষয় ও পেশার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। বিশ্ব পরিমণ্ডলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফার্মেসি, ফাইন আর্টস, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, মাইক্রোবায়োলজি, এস্ট্রনমি (মহাকাশ বিজ্ঞান) প্রভৃতি চমকপ্রদ বিষয় শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। পরিবর্তন কিংবা দিনবদলের এই যে অগ্রযাত্রা তা আমাদের আশার আলো দেখায় অবশ্যই।আমি বলছি না বাংলাদেশকে রাতারাতি বদলে দেয়া যাবে। তবে শুরুটা তো করতে হবে। স্যাটালাইট টিভির পর্দায় মুঠোফোনের বিপনন প্রাচারণাদখল করছে আমাদের প্রজন্মের মগজ।এর সাথে পাল্লা দিয়ে দেশ এগুচ্ছেনা আশানুরূপ ভাবে।মাটির মননে চৈতন্যের এই বীজ টি বপনে আর কতোনেতৃত্বের অপেক্ষা করতে হবে কে জানে !ছবি - হিরন্ময় চন্দ
false
ij
মার্কসবাদের ইতিহাস পড়তে পড়তে অনিবার্যভাবেই আমার লালনের কথা মনে পড়ে গেল মাঝে মাঝে আমি ভাবি: সভ্যতার ইতিহাসে কে প্রথম বললেন যে, ঈশ্বর বাস করেন মানুষের ভিতর। কথাটা যে লালন বিশ্বাস করতেন তা আমরা জানি। কিন্তু, তার আগে? দ্বাদশ শতকের পারস্যের কোন কবি? নবম-দশম শতকের কোনও সুফীসাধক? ভাবলে অবাক লাগে ইউরোপও প্রগতিশীলেরাও ওই একই ধারণায় পৌঁছেছিল। কখন? কার্ল মার্কসের তরুন বয়েসে। জার্মানিতে। ১৮৩৬। কার্ল মার্কস বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলেন । এর ৫ বছর আগেই হেগেল মারা গেছেন। হেগেলের প্রভাব অবশ্য তখন সারা জার্মানীর শিক্ষিত সমাজে তুঙ্গে। মার্কসও তখন আইন পড়া বাদ দিয়ে রাতদিন হেগেল পড়ছেন। হেগেলের অনুসারীরা ততদিনে দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একদল রক্ষণশীল, গোঁড়া; অন্য দলটি র‌্যাডিকাল। হেগেলের র‌্যডিকাল অনুসারীরাই Young Hegelians নামে পরিচিত । মার্কস বলাবাহুল্য র‌্যাডিকাল Young Hegelians দের দলেই যোগ দিলেন। হেগেলের কাছে ঈশ্বর ছিল Absolute বা পরম মন। বা যৌক্তিক সত্যের নিরঙ্কুশ সমগ্রতা। বা ধারণাগত যৌক্তিকতা। (দর্শনের ভাষা এমনই হবে, করার কিছুই নেই) হেগেল মনে করতেন যে- ঈশ্বরের অবস্থান মানুষের চেতনায়। অনত্র নয়। ইতিহাসের গতিপথে ঈশ্বর প্রকাশিত হন সীমিত মানব মনে, সামাজিক প্রতিষ্ঠানে। T.Z .Livine লিখেছেন, "God exists only as He is revealed, manifested, externalized, and embodied in human consciousness, in finite minds, in social institutions, in the course of history." ( From Socrates to Sartre. page, 264) তরুন হেগেলবাদীরা এই যুক্তিতে হয়ে উঠলেন নিরীশ্বরবাদী। তাদের কথা হল, যে ঈশ্বর কেবলি মানুষের মনে বাস করে যে ঈশ্বরের অস্তিত্বই নেই। মানুষ আছে তো ঈশ্বর আছে। নৈলে নাই। ক্ষুদ্র মানুষের ওপর নির্ভরশীল সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর। Young Hegelians আরও একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিল। হেগেলের মতে ঈশ্বর বা পরম মনের বিকাশ হয় মানবীয় অভিজ্ঞতার মধ্যে। সেহেতু মানুষই ঈশ্বর। মানবসত্ত্বাই প্রকৃত স্বর্গীয়। মানুষই ঈশ্বর। মানুষের পবিত্রতা; তার ঐশ্বিরিক সমমানতা এর আগে ( অন্তত ইউরোপে) অনুভূত হয়নি। কাজেই Young Hegeliansরা বলল, পৃথিবীতে মানুষ বাঁচবে ঈশ্বরের মতন। স্বাধীন। সর্বশক্তিমান হয়ে। তারা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। তারা বলল, পৃথিবীকে মানুষ-ঈশ্বরের বাসযোগ্য করার জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিপ্লবের। Ludwig Feuerbach (1804-72) ছিলেন Young Hegelians পাঠচক্রের এক প্রধান পুরুষ। মানুষই যে ঈশ্বর তা একটি বই লিখে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। বইয়ের নাম, The essence of Christianty. সে বইয়ে Feuerbach বললেন: মানুষের সারবস্তুই (essence) খ্রিস্টধর্মে ঈশ্বরে আরেপা করা হয়েছে। অবশ্যই যা ভ্রান্ত। এখন উচিত ঈশ্বরের essence মানুষে প্রযুক্ত করা। Feuerbach আরও বললেন যে, হেগেল আসলে ভাববাদী। কেননা, হেগেলের পরম মন বা Absoluteই হচ্ছে খ্রিষ্টান ঈশ্বরের ধারনা। হেগেলের মতে Absolute বা পরম হচ্ছে মানুষের ঐতিহাসিক অর্জন। ঈশ্বর সম্বন্ধে হেগেল যা বলেছেন এখন থেকে তা আমাদের ভাবতে হবে মানুষ সম্বন্ধে। ২ তখন বলছিলাম,কার্ল মার্কস বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলেন ১৮৩৬ সলে। ১৮৩৬ সালে লালনের বয়স কত? প্রায় ৬২। ততদিনে হয়তো-বা লিখে ফেলেছেন- কে কথা কয় রে দেখা দেয় না নড়েচড়ে হাতের কাছে খুঁজলে জনম-ভর মেলে না। আপন দেহের ভিতর ঈশ্বরকে লালন এভাবেই খুঁজেছেন। বলেছেন, হাতের কাছে হয় না খবর কি দেখতে চাও দিল্লি-লাহোর? প্রখ্যাত লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী লিখেছেন, “বাউলের সাধনা দেহকেন্দ্রিক। তাই চলতি কথায় বাউলের গানকে দেহতত্ত্বের গানও বলা হয়। এই দেহের মধ্যেই “পরম পুরুষ” “সহজ মানুষ” “রসের মানুষ” “অটল মানুষ” “অধর মানুষ” “ভাবের মানুষ” “মনের মানুষ” “অচিন পাখি” বা “সাঁই নিরঞ্জনের” গুপ্ত-অবস্থিতি।” (লালন সাঁইয়ের সন্ধানে। পৃষ্ঠা, ৩৯) আমরা জানি, লালন বিশ্বাস করতেন যে মানুষের দেহের ভিতর ঈশ্বর বাস করেন। আর Young Hegeliansরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে, মানুষই ঈশ্বর। পৃথিবীতে মানুষ বাঁচবে ঈশ্বরের মতন। স্বাধীন। সর্বশক্তিমান হয়ে। আর এর জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিপ্লবের। লালন প্রাজ্ঞ বলেই বিশ্ববিপ্লবের ডাক দেন নাই। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯
false
rg
কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল_ কিছু সত্য কথন। পর্ব চার। রেজা ঘটক ধানমন্ডির শুক্রাবাদ বাস স্টপিজের পাশে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি। ওই ইউনিভার্সিটির পাশেই একটি ভাবনের দোতলায় সাকরিন-তুহিন ভাইদের সাইবার ক্যাফে। ওটা আমাদের আরেকটা আড্ডার জায়গা। ওই একই বিল্ডিংয়ের চার তলায় অপু'দার একটি সাইবার ক্যাফে আছে। অপু'দা-ফাহমিদা আপারা প্রথম সাইবার ক্যাফে খুলেছিল। ওটা এসি। সাকরিনদেরটা নন-এসি। তাই অপু'দার সাইবারে আওয়ার প্রতি রেন্ট বেশি জনসমাগম কম। আর সাকরিনের সাইবার নন-এসি, রেন্ট কম, ডেফোডিলের অনেক স্টুডেন্ট ওখানে ভিড় করে। শুক্রাবাদ পৌঁছে হ্যারি বললো, ওর একটু সাইবার ক্যাফেতে বসতে হবে। হ্যারি অপু'দার এসি সাইবার ক্যাফেতে উপরে চলে গেল। আমি দোতলায় সাকরিনের সাইবারে ঢু মারতেই নাছিম, রিয়াজ, পুলক আর নাহিদকে পেলাম। কম্পিউটার খালি নেই। আমি নাহিদের পাশে বসলাম। রাত দশটায় আমরা একবার নিচে আসলাম চা খেতে। নাছিম জিগাইল, কয় জন দেছে টাকা? কইলাম, একজন। নাছিমের প্রশ্ন- কে? জবাবে কইলাম, বাবু'দা। নাছিম জিগাইল, হ্যারি কোই? তোমরা একসাথে ছিলা না? সারা দিন হ্যারিকে দেখি না? কইলাম, উপরে অপু'র সাইবারে। আমি নাছিম রিয়াজ পুলক আর নাহিদ চা খেয়ে আর উপরে যাব। রিয়াজ বললো, সে আর উঠবে না। বাস স্টপিসে দাঁড়িয়ে পেপার পড়বে। আমি রিয়াজের কম্পিউটারে গিয়ে ওদের সঙ্গে বসলাম। এগারোটার আগে আগে রিয়াজ মিস কল দিল। মানে তোমরা নামো। সাকরিনও তাড়া দিচ্ছিল, কোথায় কোন বিয়ের দাওয়াতে যাবে। সাধারণত সাকরিন তাড়া লাগায় না। আমরা রাত বারোটা পর্যন্ত থাকলে সাকরিনেরই লাভ। আমরা নিচে নামার আগে নাছিম বললো, হ্যারি কি নামছে? নিচে নেমে দেখি, রিয়াজ একা একা পেপার পড়ছে। হ্যারি নামেনি। হ্যারিকে ডাকতে আবার উপরে গেলাম। গিয়ে দেখি, হ্যারিকে অপু আটকে রাখছে। হ্যারি'র কাছে টাকা নাই। ১১০ টাকা বিল হয়েছে। হ্যারি আমাদের কথা বলছে। অপু বলেছে, ওরা না আসা পর্যন্ত বসে থাকো। হ্যারি চুপচাপ অপু'র সাইবারে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল। আমি উপরে যাবার পর, অপু বললো, আপনাদের বন্ধু আজও টাকা আনে নাই। ১১০ টাকা হবার পর কম্পিউটার থেকে উঠিয়ে দিছি। আর বলেছি, টাকা না দিয়ে যাবা না? অপু'র সঙ্গে আমার তর্ক হল। হ্যারিকে কেন সে আটকে রাখলো? আমি নাছিমকে ফোন করে উপরে আসতে বললাম। নাছিম উপরে এসে অপু'র সঙ্গে আরেক দফা ঝগড়া করলো। নাছিমের কাছেও তখন টাকা নেই। অপু বললো, বন্ধু'র জন্যে এতো দরদ হলে টাকা দিয়ে দেন। নাছিম বললো, তোমার কাছে ওই ১৫০ টাকা আছে না? ওখান থেকে দিয়ে দাও। আমি তোমাকে পরে দিয়ে দিচ্ছি। এখানে একটি কথা বলে নি। হ্যারি রোজ আমাদের কারো স্পন্সরে সাইবারে বসে। হ্যারি বাসা থেকে বেরোনোর সময় আওয়াজ তোলে- আজ আমার স্পন্সর কে? আমরা যে কেউ সানন্দে হ্যারির স্পন্সর হই। হ্যারি রোজ আমাদের কারো স্পন্সরে সাইবারে ওর জাপানি বান্ধবী মাদোকার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট করে। অপু'র কাছে হ্যারির আরো ৪৫০ টাকা বকেয়া ছিল। নাছিম ওটা পরদিন অপুকে দিয়ে দেবার প্রতিশুতি করার পর আমরা হ্যারিকে নিয়ে রওনা হলাম। আমরা হেঁটে হেঁটে কাঁঠালবাগান যাচ্ছি। নাছিম হ্যারিকে বললো, এরপর থেকে তুমি টাকা না নিয়ে সাইবারে বসবে না। কেউ সাথে থাকলে বসবা নইলে আমরা কেউ আসা পর্যন্ত ওয়েট করবা। হ্যারি জবাবে বললো, আমি জানতাম তোমরা আছো। আর লোকটা বেশি ভালো না, বুঝলা? আমাকে অনেক কথা কইছে। কাঁঠালবাগান আমিন নিলয়ে পৌঁছে আবার যথারীতি পবন-অজয় জুটির গান-বাজনা শুরু হল। সাধারণত রাত সাড়ে দশটা-এগারোটার দিকে নয়ন বাসায় চলে যায়। সেদিন মুকুলের জন্য অপেক্ষা করে মুকুলের আসতে দেরি দেখে নয়ন লাকি হোটেল থেকে আমাদের চা খাইয়ে হ্যারির ঘটনা সব শুনে চলে গেল। একটু পরেই মুকুল আসল। জানতে চাইলো, কী অবস্থা? কয় জনে টাকা দিছে? কইলাম, একজন। মুকুল কইলো, সকালে আবার সবাইরে নক করো। আর নগদ লও। বাইক্যার সুযোগ দিও না। আমরা আবার আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। আড্ডার এক পর্যায়ে মুকুল নাছিমের থেকে হ্যারি আর অপু'র কাণ্ড আপডেট হইলো। মুকুল তখনো জানে না, পালাকার-এর প্রথম কালেকশানের টাকা খরচ করেই হ্যারিকে ছাড়ানো হয়েছে। মুকুল হ্যারিকে ডেকে কইলো, ধরো, এই নাও ৫০০ টাকা। কাল সারাদিন সাইবার করবা, আর বাকি বকেয়া থাকলে তা দিয়া দেবা। হ্যারি রাত পোহানোর আগেই স্পন্সর পাওয়ায় মহা খুশি। আমরা সবাই আবার বুড়ির আস্তানার উদ্দেশ্যে তামুকের সন্ধানে বের হলাম। পরদিন শুক্রবার। সো সারারাত আড্ডা হবে। সকালে মুকুল আমাকে জিগাইলো, বাবু'দা যে ১৫০ টাকা দিছে, ওইটা কি করছো? কইলাম, হ্যারির পারপাস ১১০ টাকা অপুরে দিছি। নাছিম ওটা দিয়ে দেবে। নাছিম ধার নিছে। সঙ্গে সঙ্গে মুকুল তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। মুকুলের পুটকি ফাঁটানো চিৎকারে নাছিম এগিয়ে আসলো নাকি নাছিমকে মুকুলই ডাকলো ঠিক মনে নেই। তবে ঘণ্টাখানেক এই নিয়ে মুকুল-নাছিম-আমার মধ্যে বাগবিতণ্ডা হল। সিদ্ধান্ত হল, নাছিম সেদিনই টাকাটা ফেরত দেবে। আর ভবিষ্যতে এরকম একটাকাও খরচ করা যাবে না। পরের বৈঠকে আমাদের ১৫ সদস্যের ফাউন্ডার মেম্বার নিয়ে পালাকার আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরু করলো। পালাকার-এর পনেরো জন ফাউন্ডার মেম্বাররা হল- ১. আমিনুর রহমান মুকুল, ২. অনিকেত পাল বাবু, ৩. রেজাউল কবীর নাছিম, ৪. নয়ন মনি চৌধুরী, ৫. সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, ৬. খোকন কায়সার, ৭. আলমগীর বিপ্লব, ৮. রিয়াজুল হক শিকদার, ৯. রেজা ঘটক, ১০. অজয় দাস, ১১. জাফর আহমেদ রাশেদ, ১২. রাজীব নূর, ১৩. শাহরিয়ার খান রিন্টু, ১৪. জায়েদউদ্দিন ও ১৫. আলী আহমদ মুকুল (ছোটো মুকুল)। পালাকার-এর কার্যক্রম তখন তুঙ্গে। বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ১ লা বৈশাখ ১৪০৯ সালে নতুন বছরের দিন শুভ নববর্ষে পালাকারও আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে। শুরু হল সেই আনুষ্ঠানিক যাত্রার তোড়জোড়। পালাকার-এর দলীয় শ্লোগান ঠিক হল জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন 'শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়' লাইনটি। পালাকার-এর দলীয় সঙ্গীত লিখলেন কবি জাফর আহমেদ রাশেদ। আমাদের প্রিয় বন্ধু জাফর ভাই। গানটির যতোদূর মনে পড়ছে 'আজ, কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পায়ে আগুন লেগেছে, কাল, ঝড়া পাতার রোদন ছিল প্রসূতি মা'র বোধন হল, আজ, কণ্ঠ থেকে আদিমতার কান্না জেগেছে ...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো .... কাল, দিন থাকতে সূর্য গেছে নেমে, সাথে অন্ধ পথে চন্দ্র গেছে থেমে, আজ মেঘনা পারে ডাকবে পাখি বংশি বেজেছে ...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো .... আজ, দিন ফুরাবে অনেক কাজের শেষে, সব হাওয়ায় হাওয়ায় সহজে অক্লেশে, ঠিক খুলে দেবে অভিমন্যুর পথ, তাই দিক-বিদিকে ছুটছে রঙিন রথ, আজ, হাতে সবার পাখির পালক, ফড়িং সেজেছে... ...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো .... পালাকার-এর সবাইকে বলবো, গানটির কোথাও কোনো ভুল থাকলে আমাকে একটু তথ্য দিয়ে জানাবেন প্লিজ। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, দলের অনেকেই এখন আর গানটির লিরিক ঠিক মতো বলতে পারে না। উল্টাপাল্টা বলে। যা খুবই দুঃখজনক। তার মানে দলীয় সঙ্গীতটা কি এখন আর তেমন একটা গাওয়া হয় না। পালাকারের উচিত রোজ রিহার্সাল শুরুর আগে গানটি একবার অন্তঃত সবাই মিলে গাওয়া। আর গানটির সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের পরিচয় জানানো। এতে পালাকারে এখন যারা নতুন তারা সত্যটা জানতে পারবে। গানটি সুর করার দায়িত্ব পরলো সুদত্ত চক্রবর্তী পবনের উপর। বন্ধু পবন গানটির একটি চমৎকার সুর করলো। ওই সময় অজয় একটি চাকরি পেয়েছিল মনি'দার জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালে। অজয় তখন কক্সবাজারের কর্মস্থলে। পবন পালাকার-এর দলীয় সঙ্গীতের সুর করছে কিন্তু তাল দেবার কেউ নেই। পবন অনেকটা জোর করে আমাকে বললো- তুমি একটু টুং টাং করার চেষ্টা করো। আমার সমস্যা হল, আমি তবলা বাজাতে পারি না। তবলার কোনো তালই আমি জানি না। কিন্তু কেউ বাজালে তখন একটা লয় মেলানোর চেষ্টা ভেতরে ভেতরে করি। এমনিতে অজয় কক্সবাজার চলে যাবার পর পবনের সঙ্গে আমি টুক টাক বাজাই। সেটা কেবল বন্ধুদের আড্ডায়। বাইরে কোথাও না। পবন বললো, তুমি তবলা ধরো। হবে। পবন নিজের মতো করে সুর করার চেষ্টা করছে। আমি তবলা নিয়ে বসে আছি। বাজাতে পারছি না। পবন জানতে চাইছে কখন কোন সুরটা আমার ভালো লাগে? আমি আমার মতামত দিলাম। পবন বললো, এবার তুমি বাজানোর চেষ্টা করো। আমি যখন ঢুগি-তবলা দুটো নেই, তখন আর কিছু বাজাতে পারি না। কোনো এক হাত হঠাৎ অকেজো হয়ে যায়। সুর কেটে যায়। লয় কেটে যায়। পবনকে বললাম, হচ্ছে না। এক কাজ করি, আমি শুধু বায়াতে একটু কমফোর্ট ফিল করি। বললাম, শুধু বায়াতে একটু তোমাকে তাল দিয়ে হেল্প করি। পবন বললো, ঠিক আছে, বাজাও। তারপর পবন পালাকার-এর দলীয় সঙ্গীতের এক ভূবন জয়ী সুর করলো। সেই সুরে আত্মহারা হয়ে আমি আমার মতো করে বাজালাম। মুকুল বাসায় ফিরলে মুকুলকে শোনালো হল। নাছিম, রিয়াজ, মুকুল সবার সেই সুর ভালো লাগলো। পালাকার-এর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান হবে ১লা বৈশাখ। এজন্য আমরা অফিস খুঁজতে শুরু করলাম। সিদ্ধেশ্বরীকে একটা ফাঁকা মাঠের পুরানা বিল্ডিংয়ের খোঁজ আনলো জায়েদ। জায়েদের চেষ্টায় আমরা সেই পুরান বিল্ডিং-ই ভাড়া নিলাম পালাকার-এর অফিস ও রিহার্সাল রুমের জন্য। ওদিকে পালাকার-এর আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে অনিকেত পাল বাবু'দা একটি কোরিওগ্রাফি করবেন দলীয় সঙ্গীত দিয়ে। সাভারে বাবু'দা তিনটি মেয়েকে নিয়ে ট্রেনিং করছেন। আমাদের গানটি রেকর্ড করে পাঠাতে হবে। পবন দলীয় সঙ্গীতটি গাইলো। আমি শুধু বায়া বাজালাম। নাছিম পবনের পুরানা ক্যাসেট প্লেয়ারে সেটি রেকর্ড করলো। গানে যখন দোহার প্রয়োজন তখন পবনের সঙ্গে নাছিম, রিয়াজ, মুকুল আর আমিও কন্ঠ মেলালাম। দলীয় সঙ্গীত রেকর্ড হল ক্যাসেটে। আমরা যতোবার শুনলাম, ততোই ভালা লাগা শুরু হল। সবাই তখন হাঁটতে বসতে খাইতে বাথরুমে সবখানে ওই অমর সঙ্গীত গাইছি- 'আজ কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পায়ে আগুন লেগেছে....হো হো হো...হো হো হো...হো হো হো...। .................চলবে....................... সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭
false
ij
জারেকসেস_ প্রাচীন পারস্যের সম্রাট। এটি ‘থ্রি হানড্রেড’ ছবির জারেকসেস; আসলে তিনি যে কেমন দেখতে ছিলেন ... শব্দটা ফারসীতে ‘খাসহাইয়ার’। অবশ্য আমার ভুলও হতে পারে, আমি ফারসী বিশারদ নই। ইংরেজিতে বলা হয় Xerxes; আমরা বলব জারেকসেস। ইনি ছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ বা Darius-এর জ্যেষ্ট পুত্র- এবং প্রাচীন পারস্যের আকানেমিদ রাজবংশের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য সম্রাট। জারেকসেস-এর জন্ম ৫২০ খ্রিস্টপূর্বে; পারস্যের দক্ষিণে ফারস প্রদেশে। ওই ফারস প্রদেশেই ছিল পারস্যের আকামেনিদ সাম্রাজ্যের রাজধানী পার্সিপোলিস-যেটি পরে আলেকজান্দার পুড়িয়ে ফেলেছিল । খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৬ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৫ অবধি পারস্য শাসন করেছেন জারেকসেস। সম্রাট দারায়বৌষ সম্রাট সাইরাস-এর এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। সম্রাট সাইরাসের সেই মেয়ের নাম ছিল আতোসা। ইনিই জারেকসেস-এর মা। সম্রাট হিসেবে অভিষেক হওয়ার আগে ব্যাবিলনে প্রাদেশিক শাসনকর্তা ছিলেন জারেকসেস। জারেকসেস যখন পারস্যে শাসনভার পেলেন সেই সময়টায় মিশরে পারশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। অত্যন্ত কঠোর হাতে সে বিদ্রোহ দমন করলেন জারেকসেস। তারপর মিশরের ওপর পারস্যের কাঠোর কর্তৃত্ব আরোপ করলেন। মিশরের বিদ্রোহ দমন করে জারেকসেস পশ্চিমে তাকালেন। পশ্চিমে গ্রিস। সম্রাট দারায়বৌষের আমল থেকেই গ্রিসের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ম্যারাথন যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল পারস্য। সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ৪৮১ -৪৮০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে সসৈন্য গ্রিক অভিযানে বের হলেন জারেকসেস। উত্তর গ্রিস, মানে, থ্রাস-মেসিডোনিয়া পদানত করল পারশিক বাহিনী। র্থামোফাইলে স্পার্তানরা পারশিক বাহিনীকে বাধা দিল। (এই ঘটনা নিয়েই হলিউডি ছবি ‘থ্রি হানড্রেড: হিরোজ অভ থার্মোফাইল।') স্পার্তানদের পরাস্ত করে সসৈন্য আথেন্সে-এর দিকে এগিয়ে গেলেন জারেকসেস। আথেন্স অবরোধ করলেন। আথেন্স-এর খুব কাছেই ছিল অ্যাক্রোপলিস-গ্রিকদের উপাসনালয়, শৌর্যবীর্যের প্রতীক । ওটা পুড়িয়ে দিলেন জারেকসেস। (অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে- পরবর্তীকালে (খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০) আলেকজান্দার পার্সিপোলিস পুড়িয়ে দিয়েছিল এ কারণেই।) পারশিক বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন মারদোনিয়াস। তার কাছে যুদ্ধের দায়িত্ব দিয়ে জারেকসেস পারস্যে ফিরে যান। কেননা, তিনি ভেবেছিলেন, সম্রাটের বেশিদিন সাম্রাজ্যের বাইরে থাকা ঠিক নয়। সালামিসের যুদ্ধে পারশিকরা হেরে যায়। পরবর্তীতে আরও কটি যুদ্ধে পারশিকদের ভরাডুবি হল ওই নেতৃত্বহীনতার কারণেই। পারশিক বাহিনী কখনেই গ্রিকদের মতো সুশৃঙ্খল ছিল না। খোদ গ্রিসের ভূখন্ডে পারশিক আক্রমন গ্রিকদের জন্য শুভ হয়েছিল। তারা দেলিয় লিগ গঠন করে পারস্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আথেন্স হয়ে উঠেছিল গ্রিক অর্থনীতি-বানিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। সম্রাট জারেকসেস -এর সময় পারস্যের রাজধানী ছিল তিনটি। সুসা, একবাতানা ও পার্সিপোলিস। জারেকসেস আর যুদ্ধে জড়াননি। তিনি ভোগ বিলাসে ডুবে গেলেন। ‘থ্রি হানড্রেড’ ছবিটায় তার কিছু আলামত আমরা দেখি। সম্রাট ভোগী হলে যা হয়-আকামেনিদ সাম্রাজ্যের শক্তি ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে লাগল। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৫। নিহত হলেন জারেকসেস। সম্ভবত তারই এক ছেলের নির্দেশে। ছেলের নাম আর্তাজারেকসেস। তিনিই হয়েছিলেন পারস্যের পরবর্তী সম্রাট। সূত্র: উইকিপিডিয়া। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৫৬
false
rn
হিমু এবং রানা রানা জেলের মধ্যে ঢুকেই দেখতে পায়- হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক লোক বসে আছে। মাথার চুল এলোমেলো এবং মুখ ভরা দাড়ি। লোকটি জেলখানার ছোট্র জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে যেন কি বলছে।রানা হলুদ পাঞ্জাবি ওয়ালাকে বলল- ভাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে কী দেখেন? হলুদ পাঞ্জাবি পরা লোকটি কিছু বলল না,শুধু একবার রানা'র দিয়ে তাকালো। পাঞ্জাবি ওয়ালার চোখ দেখে রানা খুব ভয় পেল।রানা খুব নরম গলায় বলল- ভাই, আপনার নামা কি? হলুদ পাঞ্জাবি পরা লোকটি বলল- আমার নাম হিমু।রানা বলল- বাহ! এটা আবার কেমন নাম আগে শুনি নাই তো। হিমু রানা নামের লোকটির দিকে তাকালো। লোকটি চোখে মুখে এক আকাশ ভয় এবং অস্থিরতা।সামান্য শব্দে কেঁপে উঠছে রানা। জেলখানার পরিবেশের সাথে সে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছে না।একবার সে দাড়াচ্ছে,একবার বসছে। আবার হাটছে।হিমু বলল- চুপ করে বসেন। রানা রেখে গিয়ে কঠিন চোখে বলল-চুপ থাক।হিমু বলল- আমি একজন বিখ্যাত মানুষ, আমার চুপ করে থাকলে চলবে না। আমার অনেক কথা বলতে হবে।আমি তো আপনার মতন কোনোদিন তেলের ব্যাবসা করি নাই। রাজনীতি করি নাই। মুরাদ গং নামের কোনো লোকের চামচামি করি নাই।অসৎ ভাবে টাকা ইনকাম করি নাই। রানা রেগে গিয়ে বলল- খবরদার, আর একটা কথা বলবি না।একদম চুপ।চিনিস আমাকে?আমার কিচ্ছু হবে না। কয়েক মাস পর আমি হাজত থেকে ছাড়া পাবো, পাবোই। হঠাৎ করে হিমুর খুব রাগ হলো, যে কাজ হিমু কোনো দিন করেনি- আজ করল। রানার গালে ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিল। রানা ছিটকে পড়ল। এইবার হিমু বলল- চিনতে পেরেছো আমাকে? আমি কে? আমি হচ্ছি হিমালয়। বাবা আমাকে আদর করে ডাকে হিমু।রানা উঠে দাঁড়িয়ে বলল- হিমুদা, আমাকে বাঁচান। আপনি ছাড়া আমাকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না। আপনি যা বলবেন- আমি শুনবো। আজ থেকে আপনিই আমার সব। গং বাদ। কোনোদিন আর রাজনীতি করবো না, দরকার হলে না খেয়ে থাকব। সময় রাত এগারোটা। রানা বসে আছে হিমুর পায়ের কাছে।সে হিমুর পা টিপে দিচ্ছে।হিমু গভীর ঘুমে। রানা জানে হিমু যদি চায় তাহলে সে জেলখানা থেকে ছাড়া পাবে। আর জেলখানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে বাকি জীবনটা হিমু ভাইজানের সাথে কাটিয়ে দিবে।হিমু ভাই যা বলবে- সে তাই করবে।হিমু ভাই যদি বলে-রানা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক, তাহলে সে তাই-ই করবে। যদি তার হিমু ভাইয়ের সাথে আগে পরিচয় হতো- তাহলে সে কোনো দিনও মুরাদ গং ভাইয়ের সাথে মিশতো না। প্রয়োজনে বাপের তেলের ব্যবসা দেখাশোনা করতো। রানার এখন ইচ্ছা করছে হিমু ভাইকে ডেকে কিছু কথা বলতে। যা বলা খুব দরকার। কেন জানি মনে হচ্ছে- তার হাতে বেশী সময় নেই। হিমু এখন গভীর ঘুমে- স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নটা এই রকম- অনেকদিন পর সে হিমির সাথে দেখা করতে গেছে। হিমির বাসায় গিয়ে দেখল হিমি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হিমি ভীষণ অসুস্থ- স্কয়ার হাসপাতালে ভরতি। হিমু একটা চায়ের দোকানে বসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ভাবছে- হিমিকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে যাবে কিনা ।পরপর দুই কাপ চা আর দুইটা বেনসন সিগারেট শেষ করে, হিমু সিদ্দান্ত নিলো সে অবশ্যই যাবে হাসপাতালে। এবং যাওয়ার আগে সে খুব বড় দেখে একটা তরমুজ কিনে নিল। হিমি তরমুজ খুব পছন্দ করে। স্কয়ার হাসপাতালের সিকুরিটি গার্ড কিছুতেই হিমুকে তরমুজ নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে দিবে না। ... হিমুর ঘুম ভাঙ্গে ফযরের আযানের পর। ঘুম থেকে উঠে দেখে- তার বালিশের পাশে একটা চিঠি এবং রানা মরে পড়ে আছে- তার মুখ থেকে এখনও রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এই চিঠি কে লিখেছে, এবং চিঠিতে কি লেখা আছে হিমু সব জানে। হিমুদের সব জানতে হয়। কিন্তু আশে পাশের মানুষরা ভাবে হিমুরা বুঝি কিচ্ছু দেখে না, কিচ্ছু বুঝে না। শুধু হন হন করে রোদ বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে বেড়ায়। হিমু এবং রানার গল্প এইখানেই শেষ। তারপরও হয়তো অনেকে জানতে চাইবেন রানা কিভাবে মরলো? এবং চিঠিতে কি লেখা ছিল? উৎসাহী পাঠকদের জন্য শুধু রানার শেষ লেখা চিঠির দুইটা লাইন বলি- হিমু ভাইজান, বিল্ডিংটা ধসে পড়ে যাওয়ার পর এক মিনিটের জন্যও শান্তি পাচ্ছি না।সব গুলো মৃত শ্রমিক সারাক্ষন আমার পাশে ঘুর ঘুর করে। তাদের কারো পা কাঁটা, কারো হাত।হাত পায়ের কাঁটা অংশ থেকে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে। তাদের চোখে মুখে এক আকাশ ঘৃ্না ।ওদের কাঁটা হাত গুলো এসে বার বার আমার গলা টিপে ধরছে। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:৩৬
false
fe
স্বাধীনতার অসমাপ্ত প্রথম পর্বে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার অসমাপ্ত প্রথম পর্বে দাঁড়িয়ে ফকির ইলিয়াস ==================================যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়েছিল তার সিকিভাগও এখনও পূরণ হয়নি। এমন একটি প্রমাণ আমরা আবারও পেলাম। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের জাতীয় কনভেনশনের অনুমতি দেয়নি বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বলা হয়েছে, আইন পরিস্খিতির অবনতি এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কা রয়েছে। এখানে দুটি প্রশ্ন আসছে। প্রথমেই আইন-শৃখলার অবনতি কারা ঘটাতে পারেন? মুক্তিযোদ্ধারা কি তা করবেন? নিজেরা কনভেনশন করে তো তেমনটি করার কোন কথা নয়। আর দাঙ্গা-হাঙ্গামা কারা বাধাতে পারে? মুক্তিযোদ্ধাদের কনভেনশনে কি কেউ আক্রমণ করতে উদ্যত হবে? এরা কারা? সরকার কাদের সন্দেহ করছে? এরা কি একাত্তরের পরাজিত সেই দানব রাজাকার শক্তি? যারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কনভেনশন ভণ্ডুল করতে পারে?আমরা দেখেছি সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ইতোমধ্যে দেশের বিভাগীয় শহরে মতবিনিময় করেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এসে সেসব কনভেনশনে যোগ দিয়েছেন স্বত:স্ফূর্তভাবে। সবার দাবি একটাই, মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন চাই।সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক লে. জে. (অব.) হারুন অর রশিদ বলেছেন, যারা এটি কনভেনশনের অনুমতি দেয়নি তারা নিশ্চয়ই প্রধান উপদেষ্টা, বর্তমান সেনাপ্রধানের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান। তা না হলে যখন প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান এবং সিইসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যৌক্তিকতার পক্ষে মত দিয়েছেন, সেখানে প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি কনভেনশনের অনুমতি আটকে দিল কিভাবে?প্রধান সমন্বয়ক হারুন অর রশিদ বলেছেন, তারা এই মার্চ মাসেই কনভেনশনের আয়োজন করবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি না পেলে তাদের কিছু করার থাকবে না।কথা হচ্ছে সরকার কেন অনুমতি দেবে না? প্রকাশ্যে রাজনৈতিক দল যেখানে আত্মপ্রকাশ করছে সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কনভেনশন করতে পারবেন না­ এটা কেমন কথা? এজন্যই কি আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল? একটি বিষয় কেন জানি খুব ঘোলাটে হয়ে উঠছে দিন দিন। আর তা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের কিছু শীর্ষ ব্যক্তির রাজাকারদের প্রতি পক্ষপাত। ‘মাইনাস’-এর ঝড় এখনো জামায়াতের ডেরায় আছর করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির পরও জোট সরকারের কৃষি মìণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রি, নিজামী, মুজাহিদের বিরুদ্ধে জোরালো কোন ব্যবস্খা নেয়া হয়নি। বিডি ফুডসের ব্যানারে বিদেশে হেরোইন পাচারকারী চক্রটিও এখনও দাঁড়ায়নি কাঠগড়ায়। বরং এই পরাজিত অপশক্তি দাপটের সঙ্গেই নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে দেশের সদরে অন্তরে। যা তারা শুরু থেকেই করছে।দেশে যাদের কোন অস্তিত্বই থাকার কথা ছিল না তারাই ফুলেফেঁপে উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে।না, এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি। আমরা ক্ষমতার হাত বদল দেখতে চাইনি কোন কালেই। দেশটিকে পুরোপুরিই তাদের চারণক্ষেত্রে পরিণত করেছিল জঙ্গিবাদীরা। খুব স্পষ্ট করে বলা যায়, যারা পল্টনে, বায়তুল মোকাররমে গলা ফাটিয়ে মৌলবাদের বিস্তার ঘটিয়েছিল বাংলাদেশে এরা এখন অনেকটা খামোশ। কেন খামোশ তারা? তারা হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, বিভিন্ন সশþ মৌলবাদীর ঘাড়ে চড়ে দেশে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছে। এখনও তারা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। আবার হয়তো তৈরি করছে নতুন কোন ফন্দি, নতুন কোন ফিকির।দুই .বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাওয়ার পরও জাতি নানাভাবে প্রতারিত হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে। এরা কারা? কি প্রকৃত মতলব ছিল তাদের? এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসান এবং বিবেচনার দাবি রাখে। গেল ১৮ মার্চ ’০৮ মঙ্গলবার (নিউইয়র্ক সময় দুপুরে) চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানটি দেখছিলাম। এতে অতিথি ছিলেন মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। মহান স্বাধীনতার প্রথম দশক নিয়ে তার একটি বিশ্লেষণধর্মী বই আছে। ''এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক''- শিরোনামের বইটি ২০০০ সালে বের করে মাওলা বাদার্স। এর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে জেনারেলের লেখাগুলো ধারাবাহিকভাবে বের হয়।তার গ্রন্থটি আমার কালেকশনে আছে। জেনারেলের সাক্ষাৎকার শুনছিলাম। আর পাতা উল্টাচ্ছিলাম বইটির। মে. জে. মইনুল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন স্বাধীনতার প্রথম দশক নিয়ে।তিনি জানাচ্ছেন....­ক. ‘ডিসেম্বর মাসেরই শেষের দিকে মেজর জলিলকে খুলনা থেকে ধরে এনে বন্দি করার জন্য আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তৎকালীন ক্যাপ্টেন কে এস হুদা (পরে কর্নেল ’৭৫-এর সাত নভেম্বর অভ্যুথানে নিহত) তাকে ধরে নিয়ে আসেন। মেজর জলিলের বিরুদ্ধে উচ্ছৃখলতা ও অন্যান্য সামরিক শৃখলা ভঙ্গের অভিযোগ ছিল। খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক জলিলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও গ্রেফতার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। যদিও প্রচার করা হয় যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক অস্ত্রশস্ত্র লুটতরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। (পৃষ্ঠা ২২- মেজর জলিলের গ্রেফতার)।খ. সিরাজ সিকদার হত্যাকাণ্ড আসলেই রহস্যজনক। সত্যিকার ঘটনা যে কী ছিল বা তার মৃত্যুর জন্য দায়ী কে তা এখনও পরিষ্কার নয়। দেশে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড নিয়ে বর্তমানে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সিরাজ সিকদার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোন তদন্তের আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ওই সময় ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের তৎকালীন একজন উচ্চ পদস্খ কর্মকর্তার সঙ্গে সিরাজ সিকদার প্রসঙ্গে কথা বললে তিনি হঠাৎ বলে বসেন, কর্নেল সাহেব আমাদের এবং আপনাদের যুদ্ধের মধ্যে তফাত এটাই। শুনেই আমি চমকে উঠি, একটু হতভম্ব হয়ে পড়ি। (পৃষ্ঠা-৬৪, সিরাজ সিকদার, হত্যা না মৃত্যু!)।গ. ওই রাতেই প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, যিনি একজন ছাত্রনেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতে প্রথম সামরিক অফিসার্স কোর্সে (শর্ট সার্ভিস-১) সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। ও যুদ্ধের সময় কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেন। তিনি ধানমণ্ডি এলাকায় তার সাতজন সমবয়সী বুকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে শহরে টহলে বের হন। এক পর্যায়ে সিরাজ সিকদারের খোঁজে টহলরত স্পেশাল পুলিশ তাদের মাইক্রোবাসটি দেখতে পায় এবং সন্দেহ ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কোন সতর্ক সংকেত না দিয়েই অতর্কিতে মাইক্রোবাসের ওপর গুলি চালায়। এতে কামালসহ তার ছয় সঙ্গী আহত হন।.............।প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব, কামালের ওই রাতের অবাঞ্ছিত ঘোরাফেরায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মন:ক্ষুন্ন হন।........এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষীরা এ ঘটনাকে ভিন্নরূপে প্রচার করে। ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে কামাল পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে তারা প্রচারণা চালায়। এবং দেশে-বিদেশে ভুল তথ্য ছড়াতে থাকে। যদিও এসব প্রচারণায় সত্যের লেশমাত্র ছিল না। (পৃষ্ঠা-৬৫, ৬৬, গুলিবিদ্ধ শেখ কামাল)। এভাবেই একজন জেনারেল লিখেছেন নানা ঘটনার ইতিবৃত্ত।বইটি আমি প্রথম যখন পড়ি তখনই মনে হয়েছে এভাবে প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমেই লিখিত হতে পারে আমাদের মহান স্বাধীনতার প্রাপ্তি, প্রত্যাশা এবং পরবর্তী সময়ের সব রোজনামচা।প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে বাঙালি জাতি? দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে, নাকি সেই পরাজিত রাজাকার শক্তির বিরুদ্ধে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হলে প্রথম পর্ব শেষ হতো। শুরু করা যেতে পারত দ্বিতীয় পর্ব। দুর্ভিক্ষ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। আমরা থেকে গেছি এখনও স্বাধীনতার অসামান্য প্রথম পর্বে। এই প্রজন্মের কাছে বিনীত অনুরোধ করি, সত্যের অনুসানে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আপনারা পড়ূন। জানুন স্বাধীনতা-পরবর্তী সত্য ইতিহাসগুলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা বেঁচে আছেন, তারা তাদের শেষ মেধা-শ্রম দিয়ে এই প্রজন্মকে এগিয়ে নেবেন এটাই হোক মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা। শেষ।নিউইয়র্ক, ১৯ মার্চ ২০০৮।---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ , ২১ মার্চ ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত ।
false
mk
হোমওয়ার্ক ছাড়াই বেগম খালেদা জিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা ২১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হোটেল ওয়েষ্টিনে এক সংবাদ সমে§লনে মহাজোট সরকারের সমালোচনা ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের একটি রূপরেখা প্রদান করেন। রূপরেখায় উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত¦াবধায়ক সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে ১০ জন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী ০৫ জনের নাম প্রস্তাব করবে ক্ষমতাসীন দল ও অবশিষ্ট ০৫ জনের প্রস্তাব করবে বিরোধী দল । এছাড়া সরকার ও বিরোধী দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ০১ জন স¤মানিত নাগরিককে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথাও তিনি বলেন। সংসদ যেভাবে রাষ্ট্রপতি, ¯িপকার ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যদের নির্বাচিত করে, একইভাবে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে যাবার আগে প্রয়োজনে ঐ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও সেভাবে নির্বাচিত করার প্রস্তাব করেন বিরোধীদলীয় নেতা। অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা ছাড়াও বেগম জিয়া তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও সৎ লোকদের দিয়ে সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বশীল একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার উšèয়ন ও জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দমনে প্রতিবেশী দেশ গুলোকে নিয়ে একযোগে কাজ করা হবে। এছাড়া তাঁর বক্তব্যে একটি তিনি বলেন, যারা তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরূদ্ধে অতীতে নানা অন্যায়-অবিচার করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমন করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন, তিনি তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেন। ভবিষ্যতে সরকারে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ নেবেন না । খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও রাজনেতিক সংগঠনগুলো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রবীণ আইনজীবী ব্যারি¯টার রফিক-উল-হক বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রস্তাব সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও এটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে সরকারী দল প্রস্তাবটি কীভাবে নেবে, তার উপর নির্ভর করবে সমঝোতার উদ্যোগ । ড. আকবর আলী খান এর মতে, সমঝোতার পথ রূদ্ধ হয়েছে বলেই মনে হয় । কারণ এজন্য সংবিধানে ৩টি সংশোধনী আনার প্রয়োজন হবে । তবে সমঝোতায় পৌঁছাতে হলে দু’পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। যদি এক পক্ষ মনে করে অন্য পক্ষ স¤পূর্ণ আত্মসমর্পন করবে তা ভুল । কারণ বাংলাদেশে এখন সেই পরিস্থিতি নেই । দুই দলের দুটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসলে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসতে পারে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সংবিধান পরিপন্থী । বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়েই সরকার গঠন করতে হবে । অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠন করা যাবে না। তবে সংবিধান মানুষের কল্যাণে তেরী করা হয় । রাজনেতিক দলগুলো চাইলে প্রয়োজনে তা সংশোধন করতে পারে। খালেদা জিয়ার এই প্রস্তাবনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এফবিসিসিইই ও ডিসিসিইই এর নেতৃবৃন্দ বলেছেন যে, দু’টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং এ জন্য তারা উদ্যোগ নেবেন ।তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও যুগ্ম-সাধারণ স¤পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব ¯¦বিরোধী। কারণ তিনি ১৯৯৬ সালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের উপর অনাস্থা জানিয়েছিলেন। বিএনপি আগের অবস্থানে অনঢ় । তবে সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা হতে পারে। সিপিবি’র মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন যে, দুই প্রস্তাবের মধ্যে মৌলিক মতবিরোধ আছে । দ্রুতই সমঝোতা হওয়া উচিত, যাতে নির্বাচন করা যায় । তবে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবিত প্রস্তাবে ১৯৯৬ এবং ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাগণের মধ্যে ০৪ জন ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন, কয়েকজন অসুস্থ, ০২ জন দুই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই উপদেষ্টা ছিলেন এবং ০২ জন ইতোমধ্যেই নতুন করে দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। যারা বর্তমানে আছেন তাদের শারীরিক অবস্থাও ভালো না। ১৯৯৬ সালের তত্ত¦াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে : (১) বিচারপতি হাবিবুর রহমান (প্রধান উপদেষ্টা, বর্তমানে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে বিভিšè শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানা যায়)। (২) ব্যারি¯টার সৈয়দ ইসতিয়াক ইহমেদ (উভয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন এবং ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন)। (৩) প্রফেসর ড. মুহা¤মদ ইউনুস (গ্রামীন ব্যাংক ইস্যুতে বর্তমানে বিতর্কিত)। (৪) অধ্যাপক মোঃ শামসুল হক (ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন)। (৫) সাবেক গভর্ণর সেগুফতা বখত চৌধুরী (বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে কাজ করছেন)।(৬) মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুর রহমান খান। (৭) সাবেক সচিব, এজেডএম নাসির উদ্দিন। (৮) অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ (বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং নতুন করে দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন)। (৯) সৈয়দ মঞ্জুরে এলাহী (উভয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, বর্তমানে একটি বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন) । (১০) অধ্যাপক ড. নাজমা চৌধুরী (বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ)। (১১) অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী (বেসরকারী এশিয়া প্যাসিফিক বিশ¡বিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন) ।২০০১ সালের তত্ত¦াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে (১) বিচারপতি লতিফুর রহমান (প্রধান উপদেষ্টা, ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিতর্কিত)। ব্যারি¯টার সৈয়দ ইসতিয়াক ইহমেদ (উভয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন এবং ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন) । বিচারপতি বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী (ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন)। (৪)সাবেক ইইজিপি, এএসএম শাহজাহান (বর্তমানে বিভিšè সামাজিক কর্মকান্ড ও পুলিশের সংস্কার বিষয়ে তৎপর রয়েছেন)। (৫)সৈয়দ মঞ্জুরে এলাহী (উভয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, বর্তমানে একটি বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন)।(৬) সাবেক সচিব, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী (বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের সাথে জড়িত বলে জানা যায়)। (৭) ইঞ্জিনিয়ার একেএম ইমানুল ইসলাম চৌধুরী (বিদ্যুৎ সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা যায় (৮)সাবেক অডিটর জেনারেল, এম হাফিজ উদ্দিন খান (টিইইবি এর সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। নতুন করে দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন)। (৯) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আব্দুল মালেক (হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানের তত্ত¦াবধান করছেন)।(১০) মেজর জেনারেল (অবঃ) মইনুল ইসলাম চৌধুরী (ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন)। (১১) রোকেয়া ইফজাল রহমান (এফবিসিসিইই এর দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন) ।সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, বেগম জিয়ার প্রস্তাব সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক । কারণ, সংসদ সদস্য হতে প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার হওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে । সংবিধানের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ অনুচ্ছেদ একসাথে ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় যে, বর্তমান মন্ত্রীসভা যদি পদত্যাগ না করে তাহলে তাঁদের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি কোন কারণে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন বা সংসদের আস্থা হারান তাহলেও নির্দলীয় কোন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই । প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ কোন আস্থাভাজন সদস্যকে অর্থাৎ সংসদ সদস্য ছাড়া প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কোন সুযোগ নেই । এছাড়া ত্রয়োদশ সংশোধনীর বাতিল মামলা রায়ে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বাধ্যবাধকতা । ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের সংক্ষিপ্ত রায়ে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ আগামী দু’টি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার অভিমত দিয়েছিল । কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুধুমাত্র জনগনের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যগণ দ্বারা গঠিত হতে পারে । কারণ জনগণের সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমাতয়ন, গণতন্ত্র, প্রজাতান্ত্রিকতা, বিচার বিভাগের ¯¦াধীনতা এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর বিষয়ে এই রায়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । বেগম জিয়া রাষ্ট্রপতি, ¯পীকার ও মহিলা আসনের সংসদ সদস্যরা যেভাবে নির্বাচিত হন সেভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও ¯পীকারের নির্বাচন জাতীয় সংসদ করে থাকে । অন্যদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন হয় সংসদে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত আনুপাতিক হারে । তাই সংবিধান সংশোধন ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় উপদেষ্টা নিয়োগ সম্ভব নয় ।পরিশেষে এটুকু বলা যায় যে, বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আলোকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা প্রদান করলেও, তিনি মূলতঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকার প্রধান রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান না । তাই জেনে শুনেই দর কষাকষির জন্য সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক প্রস্তাবনা দিয়েছেন। যা একেবারেই সংবিধান পরিপন্থী। এ সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো, সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সংসদদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে জনগণের দেয়া রায়কে মেনে নেওয়া।
false
rn
বদরুল এবং হিমু সকালে ঘুম ভাঙতেই হিমু নিজেকে সরকারি হাসপাতালে আবিস্কার করলো। কে বা কারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে কিছুই সে জানে না। তার শুধু মনে আছে, সে দুই দিন ধরে না খেয়ে ছিল। হঠাৎ সে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে, তাদের প্রতি এক আকাশ কৃতজ্ঞতা বোধ করল। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, হিমু মনে মনে ভাবলো এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে এখনও মানুষের মধ্যে মায়া-মমতা ভালোবাসা আছে। একজন নার্স এর কাছে চাইতেই পাওয়া গেল- খবরের কাগজ। হিমু খবরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম দেখে অবাক। প্রচন্ড অবাক! হেড লাইনটি এই রকম- ''নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষগুলোর কাছে আমি সবিনয়ে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া কেউ আপন নয়।''হাসপাতাল থেকে হিমুকে সকালে নাস্তা দেওয়া হয়েছে- একটি ছোট কলা, দু'টো পাতলা রুটি আর ভাজির মতোন কিছু একটা। হিমুর খুব ক্ষুদা পেয়েছে। সে খুব আরাম করে নাস্তা খেল। আর দু'টা রুটি হলে ভালো হতো। হিমুর আশে পাশে বেডের রুগীরাও খুব আয়েশ করে নাস্তা খাচ্ছে। হিমুর ঠিক পাশের বেডে একজন রোগা যুবক শুয়ে নাস্তা খাচ্ছে, তার চোখ মুখ ফুলে আছে, বুঝাই যাচ্ছে- তাকে অনেক পিটুনি দেওয়া হয়েছে। তার ডান হাতে হাতকড়া বেড এর সাথে লাগানো। পাশে একজন রোগা পুলিশ বসা। তার মানে সে একজন আসামী। রোগা যুবকটি হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল, হিমু ভাইজান আপনি কেমন আছেন? হিমু পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে রোগা যুবকটির দিকে তাকিয়ে বলল- আমি এখন ভালো আছি বদরুল। এবং তুমি শুনলে অবাক হবে- আমি পত্রিকাতে তোমার ঘটনাটিই পড়ছিলাম। যাই হোক, তুমি আমাকে চিনলে কি করে? বদরুল হেসে বলল- আপনার হলুদ পাঞ্জাবী দেখে। বদরুল বলল, হিমু ভাই আমি কি ছাড়া পাবো? নাকি ওরা আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেবে? আমার দলের লোকজন কি আমার মুক্তির ব্যবস্থা করবে না। ফুলের মালা পরিয়ে আমাকে হাজত থেকে বের করবে না? হিমু বলল, আস্থা রাখো, অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। যখন কিছু ঘটে, খুব দ্রুত'ই ঘটে। বদরুলকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে না। সে শিস দিয়ে একটা গানের সুর তোলার চেষ্টা করছে। হিমু বলল, বদরুল ছোটবেলায় তোমার প্রিয় খেলা কি ছিল? বদরুল বলল, আলমারি থেকে সমস্ত কাপড় মাটিতে ফেলে দিয়ে আলমারির মধ্যে বসে থাকতাম। তখন আমার বয়স চার/পাঁচ হবে। এখনও মাঝে মাঝে এই খেলাটা খেলতে খুব ইচ্ছা করে। ধোয়া কাপড় মেঝেতে ফেলার জন্য মা খুব বকা ঝকা করতো। হিমু, ভাই আমি কিন্তু আমার মাকে অনেক লাভ করি। মা'র চোখে সমস্যা। ইদানিং সে সব কিছুই ঝাপসা দেখে। মা'র চিকিৎসা করাতে হবে। বদরুলের চোখে জল। সে হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল- হিমু ভাই, আমি জানি আপনার অনেক ক্ষমতা। আমি যদি আপনার কাছে কিছু চাই, তাহলে কি পাবো? হিমু বলল, আগে কি চাও শুনি। বদরুল বলল- এই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা আমার একটুও ভালো লাগছে না। আমাকে ঢাকার স্কায়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আমার ভালোবাসার মানুষ আছে। দুইজন একই হাসপাতালে থাকব, ভাবতেই অনেক আনন্দ হচ্ছে! বদরুল এর চোখের জল গাল বেয়ে পড়ছে। হিমু ভাইজান, যদি ছাড়া পাই এবং মেয়েটা যদি বেঁচে যায় তাহলে আমি মেয়েটাকে বিয়ে করবো। অনেক ভালোবাসবো তাকে। বোকা মেয়েটা আমার স্বচ্ছ এবং পবিত্র ভালোবাসাটা বুঝতেই চাইল না। কত্ত ভাবে বুঝাতে চাইলাম। আমি ফোন দিলে ধরে না, বরং অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলে। খুব রাগ লাগল, নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হলো, ক্ষুদ্র মনে হলো- অসহায় মনে হলো। বোকা এবং নির্বোধ এর মতোন রাগের মাথায় পকেটে যে কয় টাকা ছিল-একটা ছোট ছুরি কিনে নিলাম। তারপর... নিজের ভালোবাসার মানুষকে মারতে, আমার কষ্ট হয়নি(?) খুব কষ্ট হয়েছে। কলিজাটা ছিড়ে গেছে। সত্যি বলছি হিমু ভাই, ওকে আমি খুন করতে চাইনি। ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম। নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করে আহত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাত কি থেকে কি হয়ে গেল। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। ও পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হবে, আমি ডাব হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু ... হিমু ভাই, জীবনানন্দ দাশের কবিতা আমার অনেক ভালো লাগে। রাত জেগে-জেগে আমি জীবন বাবুর কবিতা মুখস্ত করতাম। খাদিজাকে শোনাবো বলে। হিমু বলল, কোন কবিতাটা। বদরুল চোখের পানি মুছতে মুছতে আবৃত্তি করল- ''এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;/সারারাত দক্ষিনা বাতাসে/আকাশের চাঁদের আলোয়/এক ঘাইহরিণীর ডাক শুনি,/-কাহারে সে ডাকে!''ডাক্তার এসে হিমুকে বলল, আপনি এখন সুস্থ। আপনি বাসায় চলে যান। হিমু বলল, শরীর খুব দুর্বল লাগে ডাক্তার, আমি আর কয়েকটা দিন এখানে থেকে যাই। হিমুর কথা শুনে ডাক্তার মেয়েটি হেসে ফেলল। সুন্দর হাসি। হাসি দেখে হিমুর রুপা'র কথা মনে পড়ল। অনেকদিন দেখা হয় না রুপা'র সাথে। হিমু বদরুলকে বলল, মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীতে একেকজন মানুষের মনমানসিকতা একেক রকমের। প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ভিন্ন ভিন্ন জগৎ এবং প্রত্যেকটি মানুষের পছন্দ ও নিজস্ব চিন্তাভাবনা আলাদা। কিছু মানুষ আছে, যারা নিজেকে আহত বা নিজের ক্ষতি করে অথবা কোনো প্রিয় জনকে। কিন্তু তাদের আসলে মৃত্যুবরণ করার কোনো প্রকৃত ইচ্ছা নেই। একে বলে প্যারাসুইসাইড। মানুষের জন্যই মানুষ। সংকটে, বিপদে মানুষই ছুটে এসে সাহায্য করবে এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। না হলে মানব-জন্ম অনেকটাই অসম্পূর্ন থেকে যাবে। সন্ধ্যা সাত টায় হিমু হাসপাতাল থেকে বের হলো। সে কোথায় যাবে- জানে না। মেসে ফিরতে ইচ্ছা করছে। রাস্তায় চলাচলরত মানুষের দারুন ব্যস্ততা। মানুষের ব্যস্ততা দেখতে ভালো লাগছে। হিমু লক্ষ করে দেখেছে- প্রতিটা মানুষ সন্ধ্যায় অস্থির বোধ করে। কারণ সারাদিন কর্ম ব্যস্ততায় ভর সন্ধ্যায় ছুটে যেতে ইচ্ছা করে প্রিয় মানুষের কাছে। রুপা ছাড়া হিমুর প্রিয় মানুষ আর কে আছে! হিমু এখন যাবে রুপার কাছে। রুপাকে বলবে- ইলিশ মাছের দিম ডিয়ে ভাত খাবো। সাথে ঘন ডাল। হিমু আগ্রহ নিয়ে খাবে, রুপা পাশে বসে থাকবে। হিমু গপ গপ করে খাবে। রুপা বলবে, এই আস্তে খাওতো। খাবার খেতে হয় আরাম করে। হিমু বলবে, আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। দুই দিন ধরে না খেয়ে আছি। এই কথা শুনে রুপার চোখ কি ভিজে উঠবে না! সুন্দর জোছনা আজ। চাঁদের আলোতে হিমুর লম্বা ছাড়া পড়েছে। হিমু বদলরুলের কথা ভাবতে-ভাবতে রুপা'র বাড়ির দিকে যাচ্ছে। বাস্তব বড় কঠিন। বাস্তবতার কাছে বদরুল'রা পরাজিত হয়। মেধাবি ছাত্র বদরুল। দু'বার বৃত্তি পেয়েছে। বাবা ছিলেন কৃষক। বদরুল টিউশনি করে নিজের লেখা পড়ার খরচ চালাতো। টিউশনি'র টাকা থেকে মাকে কিছু দিত। পরিবারের জন্য তার ছিল অনেক ভালোবাসা। মাকে বলতো- আর কিছু দিন কষ্ট করো মা, চাকরিটা পেলেই তোমাকে ঢাকা নিয়ে গিয়ে চোখের চিকিৎসা করাবো। পরিবারের জন্য আমার যতটুকু দায়িত্ব তার থেকে অনেক বেশি আমি করতে চাই। বড় ভাই দারিদ্রতার কারনে লেখা পড়া করতে পারে নি। সে একজন দর্জি। খুব যত্ন নিয়ে ছোট ভাই বদরুলের জামা বানিয়ে দেন। বদরুলের মা'র স্বপ্ন ছেলে মাস্টার্স শেষ করে বড় চাকরি করবে। তার চোখের চিকিৎসা করবে। ছোট বোনটাকে ঝাঁকজমক অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেবে। পরিবারের সবাই তাকিয়ে আছে বদরুলের দিকে। বদরুলের একটা ভুলের জন্য- একটা দুঃখী পরিবার তছনছ হয়ে গেল। হলে সিট না পাওয়ার কারনে খাদিজাদের বাসায় থাকতে হয়েছিল বদরুলকে। একদিন এক বড় ভাই তাকে বুদ্ধি দিলো- ছাত্র রাজনীতি করো, তাহলে হলে সিট পেতে সুবিধা হবে। তাছাড়া ছাত্রলীগ করলে সব ছেলে-মেয়েরা তোমাকে খাতির করবে। অনেক সুযোগ সুবিধা পাবে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবি ছাত্র বদরুল তার মেধা দিয়ে ছাত্রলীগে জায়গা করে নেয়। একজন মানুষকে অন্য একজনের ভালো লাগতেই পারে। খাদিজাকে তার ভালো লাগে। খাদিজা যদি বদরুলের ভালোবাসায় সম্মতি জানাতো- তাহলে বদরুল খুব মন দিয়ে তার লেখা পড়া শেষ করে, ভালো একটা চাকরী করত। তারপর তাদের বিয়ে হতো। তাদের ঘরে একটা বাবু আসতো। হাসি খুশি আনন্দময় একটা জীবন। এখন, বদরুলের ভুলের জন্য গোটা ছাত্রলীগকে দোষ দেয়া ঠিক হবে না। দোষ যদি দিতেই হয়, কাউকে দায়ী যদি করতেই হয়- তাহলে এই সমাজ এবং সমাজ ব্যবস্থা দায়ী। ছাত্রলীগ তো আর বলে নাই- যাও বদরুল খাদিজাকে কোপাও। ইচ্ছে মতো কোপাও। আমি যদি আজ কোনো অপরাধ করি, তাহলে কি আমার বাবা-মাকে দোষ দেয়া ঠিক হবে? পৃথিবীর ইতিহাস বলে, অনেকেই তার প্রেমিকাকে খুন করেছে। হিটলার তার প্রেমিকা কে না পেয়ে কি করেছে তা তো আজ সারা দুনিয়া জানে। মেধাবী ছাত্র গুলো আজ জঙ্গী হচ্ছে। ছেলে তার বাবাকে হোন্ডা না কিনে দেয়ায় শরীরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সমাজের এই পচন আমাদের রোধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। সমস্যা থাকলে, তার সমাধানও আছে। সব কিছুর সাথে সব কিছুর সামঞ্জস্য আছে। বদরুলের এই কর্ম কান্ডের জন্য আপনিও কোনো না কোনো ভাবে দায়ী। সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৪৫
false