label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
mk
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত খুনিদের রক্ষায় এখনও তৎপর বিএনপি-জামায়াত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃসহ অত্যাচার, অনাচার এবং দুর্নীতির প্রেক্ষিতে দেশের মানুষ নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বজন প্রশংসিত নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করার মাত্র ৪৭ দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। বর্বরোচিত ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সর্বমোট ৭৪ জন প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ৫৭ জন ছিল দেশের সূর্যসন্তান মেধাবী সেনা কর্মকর্তা। এটি সহজেই অনুমেয় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তি নবগঠিত একটি সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল। কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির আগে থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিডিআর বিদ্রোহ যে সংঘটিত হবে, তা জানতেন। এ জন্য তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে একটি কালো কাচ ঘেরা গাড়িতে করে সেনানিবাসের তৎকালীন তার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি সেনানিবাসের বাসায় ছিলেন না। তিনি ছিলেন অজ্ঞাত স্থানে। বিডিআর বিদ্রোহ প্রশমিত হলে খালেদা জিয়া অজ্ঞাত স্থান থেকে বেরিয়ে এসে তড়িঘড়ি বিবৃতি দেন, ‘বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা কর্মকর্তা হত্যার পেছনে ছিল রহস্য। সেখানে ষড়যন্ত্র করে সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে।’খালেদা জিয়া এ জাতীয় বিবৃতি দিলেও ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি কোথায় ছিলেন, কেন ছিলেন, কেন সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ করলেন, কেন ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে লন্ডনে অবস্থানরত পুত্র তারেক রহমানের সাথে ৮৮ মিনিটের ফোনালাপ করলেনÑতার কোনো জবাব কোনো সময়েই তিনি বা তার দল দেয়নি; যা আজো মানুষের কাছে রহস্যে ঘেরা রয়ে গেছে। এ ছাড়া আরো কিছু প্রশ্নও মানুষের মনে এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন, পিলখানায় বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টু কার নির্দেশে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বাহিনীকে খাবার ও পানি যোগান দেয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খুনীদের পালিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেয়। কার নির্দেশে খুনিদের বেসামরিক পোশাক ও নৌকা জোগাড় করে দেয়। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকে কার নির্দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর প্রচারপত্র বিলি করে বিডিআর বাহিনীকে অশান্ত করেছিল?সে যাই হোক, বিডিআর বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার পর নবগঠিত মহাজোট সরকার কালবিলম্ব না করে তিন পর্যায়ে এই ঘটনার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে। স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্যই মহাজোট সরকার বিডিআর কর্তৃক তদন্ত, সেনাবাহিনী কর্তৃক তদন্ত এবং জাতীয় তদন্তের ব্যবস্থা করে। তদন্ত শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্রোহের বিচার সামরিক আইনে করা ও চাহিদা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা। সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সেনা কর্মকর্তাদের সকল দাবি মেনে নেয়। সেই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়াকে বিতর্কের ঊর্ধেŸ রাখার জন্য ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬-এর অধীনে সুপ্রিম কোর্টে রেফারেন্স প্রেরণ করেন। ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ১০ জন সিনিয়র আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিএনপি-জামায়াত জোট বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সংক্রান্ত কার্যক্রম ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একের পর এক অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনী এবং দেশের মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে জড়িত ছিল; এমনকি এখনও জড়িত রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক নেতাই ওই সময়ে সেনা বিধি ৫ (পাঁচ) মোতাবেক সেনা আইনে বিদ্রোহের বিচারের বিরোধিতা করতে থাকেন। সে সময় এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা যেসব বক্তব্য প্রদান করেন তাতেও প্রতীয়মান হয় নৃশংস বিডিআর হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত খুনিদের রক্ষায় তখন এবং এখনও তৎপর রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট।সে সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবী টি এইচ খান বলেছিলেন, ‘সেনা আইনে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সম্ভব নয়। এই রেফারেন্স ষড়যন্ত্রমূলক এবং সুপ্রিম কোর্ট মতামত দিতে বাধ্য নয়।’বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন বলেছিলেন, ‘সেনা আইনে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে সেনা বিধির ৫ ধারায় দুইটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।’জামায়াত-বিএনপি জোটের আদর্শপুষ্ট আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেওয়া সম্ভব নয় বিধায় সেনা আইনে বিচার সম্ভব নয়।’বিএনপির শাসনামলে নিয়োজিত অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ হাসান আরিফ বলেছিলেন, ‘সেনা আইনে বিচার সম্ভব নয়। তবে দ্রুত বিচার আইনে বিচার সম্ভব।’ রেফারেন্স পাঠানো ঠিক হয়নি বলেও হাসান আরিফ মন্তব্য করেন।জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা এই ধরণের মতামত প্রদানের আগে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগদান করেন এবং সেখান থেকে নির্দেশিত হয়ে তারা প্রায় একই রকম মন্তব্য করেন। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও সেনা আইনে বিডিআর হত্যাযজ্ঞের বিচারের ঘোর বিরোধিতা করেন।পৃথিবীর ইতিহাসে আসামির সংখ্যা বিবেচনায় এতো বড় বিচার কার্যক্রম কোথায়ও কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। সঙ্গত কারণেই এ বিচারকে অধিকতর স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীত করার জন্য রায় পেতে প্রায় ৪ বছর ৯ মাস সময় লেগেছে। এই সময়ের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিরতিহীনভাবে নানাবিধ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা ক্ষমতায় গেলে বিজিবি’র নাম পরিবর্তন করে বিডিআর এবং আগের পোশাক বহাল রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। এভাবে বিভিন্ন সময়ে বাহিনীর ভেতরে-বাইরে উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছে।বিজিবিতে ভবিষ্যতে যে কোনো প্রকার বিদ্রোহ বন্ধের জন্য বর্তমান সরকার ‘বিজিবি অ্যাক্ট-২০১০’ জাতীয় সংসদে পাস করেছে, যা আর্মি অ্যাক্টের অনুরূপ। এই আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এ প্রেক্ষিতে বিএনপি-জামায়াত জোট ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, ক্ষমতায় গেলে তারা এই আইন বাতিল করে পূর্বের আইন বহাল করবে।এ ধরণের অভিপ্রায় মূলত খুনিদের উৎসাহ দেওয়ারই নামান্তর। আমাদের সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের এবং দেশের আপামর জনগণের আজ বুঝতে বাকি নেই, বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার পাঁয়তারা করছে। বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের অনেকেই যে তথ্যটি জানে না তা হলো মেধাবী সেনা অফিসারদের খুনি পথভ্রষ্ট বিডিআর সদস্যদের রক্ষার জন্য জামায়াত-বিএনপি জোট তথা স্বাধীনতাবিরোধী আদর্শে বিশ্বাসী আইনজীবীরা খুনিদের রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটনকারী আসামিপক্ষের আইনজীবীদের তালিকা দেখলেই সচেতন দেশবাসী এই সত্য অতি সহজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, নৃশংস বিডিআর হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের রক্ষায় আইনজীবী হিসেবে আসামি পক্ষের পাশে দাঁড়ায় বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। বিএনপির-জামায়াতের আদর্শপুষ্ট এই আইনজীবী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুব উদ্দিনের জুনিয়র হিসেবে কাজ করতেন এবং তিনি বিএনপির একজন সক্রিয় রাজনৈতিক নেতা।অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ। জামায়াতপন্থি এ আইনজীবী ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের হল কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। এছাড়া তিনি বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি ছিলেন।অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ। বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত এ আইনজীবী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞার জুনিয়র হিসেবে কাজ করেন।অ্যাডভোকেট মো. জামাল উদ্দিন খন্দকার। তিনি বিএনপি সমর্থিত একজন আইনজীবী হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত।অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান। জামায়াতের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট এ আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাজী নজরুল ইসলামের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেন।অ্যাডভোকেট শাহিন সুলতানা। তিনি বিএনপি সমর্থক আইনজীবী হিসেবে পরিচিত।অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বিএনপি-জামায়াত আদর্শপুষ্ট একজন আইনজীবী। অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম সরকার। তিনি বিএনপি-জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী একজন আইনজীবী।এভাবে বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচারে সম্পৃক্ত আইনজীবীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, নৃশংস এ হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের রক্ষা করতে জামায়াত-বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মূলত তৎপর রয়েছে। তারা নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করাসহ বিচারকে কৌশলে বাধাগ্রস্ত করারও চেষ্টা করেছে। আর বিচারকাজে জড়িত আইনজীবীদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে চলেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থি রাজনীতিবিদরা।ফলে এটি সহজেই অনুমেয় বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের আদর্শপুষ্ট ব্যক্তিবর্গ স্পষ্টতই খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা নানাবিধ উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সেনাবাহিনী তথা দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এবং আবেগপ্রবণ একটি বিষয়কে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা ও ভুল ব্যাখার মাধ্যমে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার হীন চক্রান্তে লিপ্ত।বাংলার মানুষ বায়ান্নতে ভুল করেনি, ভুল করেনি ঊনসত্তর, সত্তর কিম্বা একাত্তরে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, আজ তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে জাতি গণতন্ত্র রক্ষায় দৃঢ়প্রতীজ্ঞ। এ জাতি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত হতে দেখেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রত্যক্ষ করছে এবং অবশ্যই বিডিআর বিদ্রোহের নারকীয় ঘটনার খুনিদের বিচারের ঘোষিত রায় কার্যকর হওয়া অবলোকন করবে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন জামায়াত-বিএনপির মায়াকান্নাকে ভুল প্রমাণিত করে বিডিআর হত্যাকান্ডের সকল অপরাধীদের সমুচিত বিচারের রায় বাংলার মাটিতে কার্যকর হবে।
false
fe
রাজনীতিক পীর হবিবুর রহমানের প্রতি আমাদের দায় রাজনীতিক পীর হবিবুর রহমানের প্রতি আমাদের দায়ফকির ইলিয়াস==========================================গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, গণতন্ত্রী পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য পীর হবিবুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী।তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল দুবার। প্রথমবার খুব সম্ভবত ১৯৭৬ সালে। দেশে তখন সামরিক বুটের দাগ। আমি তখন স্কুল ছাত্র। এই দেশের ভবিষ্যৎ কী? কোথায় যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ? কিছুই জানি না। শুধুই শুনি। তার দিকে তাকিয়ে থাকি। তিনি পীর হবিবুর রহমান। ন্যাপের নেতা। এটুকুই জানি- তিনি আমার এলাকার এক উজ্জ্বল মানুষ। কুঁড়েঘর- তাদের দলের প্রতীক ছিল। এই প্রতীকের অর্থ ছিল দিনমজুরের ঠিকানা। তারা এই দেশে সমাজতন্ত্র চেয়েছিলেন। মানুষের সমান অধিকার চেয়েছিলেন।১৯২৭ সালের ৯ অক্টোবর সিলেট শহর থেকে মাইল ছয়েক দূরে বাগরখলা নামক গ্রামে এক পীর বংশে পীর হবিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন।রাজনীতিতে প্রথম জীবনে মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিমের প্রভাবে মুসলিম লীগের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক ঘটনা প্রবাহ এবং পরবর্তী সময়ে বাঙালিদের প্রতি মুসলিম লীগের বিদ্বেষমূলক আচরণ তাকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। তখনই তিনি বিরোধী ভূমিকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সাতচল্লিশ-পূর্ব আসাম প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তাসাদ্দুক আহমদের হাত ধরে প্রগতিশীল রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। আত্মগোপনকারী কমিউনিস্টদের অনুপ্রেরণায় গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে ইয়ুথ লীগে যোগ দেন। খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে সমাজের আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য বিবেচনা করে ব্রতী হন সাম্যবাদের।১৯৫০ সালে সমগ্র দেশব্যাপী মুসলিম লীগের গুণ্ডাবাহিনী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তাণ্ডব লীলায় মেতে ওঠে তখন সিলেটেও তার চরম উস্কানির সৃষ্টি হয়। পীর হবিবুর অত্যন্ত দুঃসাহসিকভাবে ৪/৫ জন সহকর্মী বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সেদিন সিলেটে মুসলিম লীগের গুণ্ডাবাহিনীর দাঙ্গা প্রতিহত করেছিলেন। সমগ্র দেশব্যাপী দাঙ্গা হলেও সিলেটে সেদিন দাঙ্গা হয়নি। প্রথম জীবনের এরূপ দুঃসাহসিক ঘটনায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৫১ সালে যুবলীগ গঠনে তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ১৯৫১ সালে প্রশাসনের তীব্র দমননীতির মুখেও দেশের প্রথম অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন।১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে সিলেটে ভাষা-আন্দোলনের সূচনা ও পরিচালনায় দায়িত্বশীল সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ সিলেটে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সংগঠক। ১৯৫২ সালে সিলেটের ভাষা-আন্দোলনের সর্বদলীয় কর্ম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন তিনি। উল্লেখ করা দরকার, পীর হবিবুর রহমানের নেতৃত্বেই সিলেটে ভাষা আন্দোলনের সূচনা ও আন্দোলন গড়ে ওঠে।পীর হবিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের কথা তার একটি লেখায় বর্ণনা করেছেন এভাবে-‘সিলেট শহরের শেখঘাট মহল্লা। দেওয়ান আবদুর রহিম চৌধুরী পিপি সাহেবের বাসা। তার স্ত্রী বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরী আসাম প্রদেশ মুসলীম মহিলাদের মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনে ছিলেন অগ্রপথিক। রাজনৈতিক কর্মীর সুবাদে বেগম সাহেবা আমাকে জায়গির দেন। আমি তখন এমসি কলেজের ছাত্র। একদিন রাতের বেলা বেগম সাহেবার বড় ছেলে মোয়াজ্জম আহমদ চৌধুরী আমাকে ডেকে পাঠান। তার কামরায় গিয়ে দেখি আমাদের পুরনো বন্ধু শাহেদ আলী বসে আছেন। শাহেদ আলী ঢাকায় তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক। মোয়াজ্জম সাহেব এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে আমাকে ফরমায়েস করলেন। আমি খুশি মনে রাজি হলাম। বাস শাহেদ আলী সাহেবও দায়িত্ব আনজাম করে খুশি মনে সেখান থেকে ঢাকার গাড়ি ধরতে বেরিয়ে পড়লেন। নদী ভাঙায় যেমন মানুষের ক্ষেত-খামার, রাস্তা-ঘা আর বাপ-দাদার ভিটাটুকুও যায়, তেমনি আমাদের ঘরে ধস নেমেছে। পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী ছিলাম। সিলেট আমাদের পদভারে টালমাাল ছিল মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায়। আমরা ‘ভারতের দালাল’ কমিউনিস্ট তকমা পেয়েছি। সবই সুন-সান। কর্মী বলতে আমি আর মকসুদ মাত্র এই দু’জন। এখন তো ‘বাংলা রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করে বসে আছি। পরদিনই মকসুদের বাসায় গেলাম। আমরা দু’জনে আবার বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরীর কাছে এলাম। ভাষা আন্দোলনের তিনি অগ্রণী সৈনিক ছিলেন। তার সঙ্গে আলোচনায় সিলেটে তমদ্দুন মজলিসের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলো। আর কমিটির নামেই গোবিন্দ পার্কে ৮ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবসের জনসভা আহ্বান করা হলো। আমরা দু’লক্ষীন্দরে মিলে সভার ইশতেহার লিখলাম। জালালাবাদ প্রেসে ছাপালাম। তারপর রিকশায় চড়ে স্লোগান দিয়ে সভার এলান দিলাম। আর ইশতেহার বিলি করলাম। গোবিন্দ পার্কে সভা। বর্মণ কোম্পানির সাইকেলে আমরা দু’জন ৩টায় পার্কে হাজির হলাম। বিশিষ্টরা সভায় হাজির হলেন, মাহমুদ আলী (সাবেক আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সেক্রেটারি), দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ (অধ্যাপক), এ জেড আবদুল্লাহ (মোতাওয়াল্লি দরগাহে শাহজালাল), মো. নুরুল হক দশঘরি (সেক্রেটারি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ), দেওয়ান ওহিদুর রাজা চৌধুরী, ছাত্রনেতা আবদুস সামাদ (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী), শাহ শামসুল কিবরিয়া (সাবেক অর্থমন্ত্রী), আফসার উদ্দিন (অধ্যাপক) প্রমুখ। সভার নির্বাচিত সভানেত্রী বেগম জোবেদা খাতুন চৌধুরী। তিনি না আসায় সভা শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। কিছু লোক বাঁশের ছাতা মাথায় এক পাগল নিয়ে সভাস্থলে হাজির হয়। সে নাচে আর গান গায়, ‘বাংলাভাষা হিন্দুর ভাষা, বাংলা ভাষা কাফেরের ভাষা, উর্দু ভাষা মুসলমানের-উর্দু ভাষা মুমিনের ভাষা।’ এই দৃশ্য দেখে আমি আতঙ্কিত হলাম। হঠাৎ আমাদের এক সময়ের সহকর্মী বাহাউদ্দিন এম এ বারীর (ধলাবারী) নাম সভাপতিত্ব করার জন্য প্রস্তাব করে বসল। আমি তাড়াতাড়ি সভাপতির আসন জুড়ে ফেলার জন্য মাহমুদ আলী সাহেবের নাম প্রস্তাব করলাম। কিন্তু মাহমুদ আলী চেয়ারে বসলেন না। অপরদিকে এম এ বারী সভাপতির চেয়ারে বসতে উদ্যত হলেন। আমি চেয়ার আগলে দাঁড়ানোর ফলে বারী সাহেব বসতে পারলেন না। ইত্যবসরে বাহাউদ্দিন নিজের নাম নিজেই প্রস্তাব করে চেয়ারে এসে বসে পড়ল। আমি তাকে ধাক্কা দিতেই সে উঠে সরে গেল। আমার বোঝা হয়ে গেল যে, মুসলিম লীগ আমাদের সভা করতে দেবে না। আর সে শক্তির মোকাবেলা করার সামর্থ্য তো নেই। একমাত্র ভরসা জেলা মুসলিম লীগ সেক্রেটারি মনির উদ্দিন সাহেব। তিনি যদিও উর্দুরই সমর্থক, আমাকে খুব স্নেহ করেন, কারণ আমি মুসলিম লীগের ভালো কর্মী ছিলাম। আমার বিশ্বাস তিনি আমার বিপদে আমাকে বিমুখ করবেন না। আমি মকসুদসহ বন্ধুদের বুঝিয়ে বললাম, আপনারা এখন সভা শুরু করবেন না। আমি নদীর দক্ষিণ পাড়ে লীগ সেক্রেটারির কাছে সাহায্যের জন্য যাচ্ছি। বলেই আমি দ্রুত চলে গেলাম। জনাব মনির উদ্দিন আমার কথা শুনে দ্বিরুক্তি না করে ঝটপট ময়না মিয়াকে ডেকে দু’গাড়ি লাঠিয়াল নিয়ে আমার সভা রক্ষায় যাওয়ার আদেশ দিলেন। আমি হাতে আসমান পেয়ে গেলাম। এ কথা শোনার পর আর দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে আবার সভাস্থলে রওনা দিলাম। কিনব্রিজে উঠতে যাচ্ছি এমন সময় একজন সাইকেলের ব্রেক টেনে আমাকে সম্বোধন করে বলেন, হবিব মিয়া সাহেব আপনার মিটিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর খুব সম্ভব মকসুদ মারা গেছে। ‘মকসুদ মারা গেছে’ তারপর আমার আর কোনো জ্ঞান হুঁশবুদ্ধি নেই। আমি গোবিন্দ পার্কে কেমনে এসে পড়েছি বলতে পারব না। দেখছি একটা বড় মিটিং চলছে। সিলেটের সর্বজনপ্রিয় নেতা আজমল আলী চৌধুরী বক্তৃতা করছেন। আমার কিন্তু আর কিছুতেই মন নেই, সভার চতুর্দিকে ঘুরছি আর চেনা মুখ খুঁজছি। উদ্দেশ্য মকসুদের খবর শোনা। হঠাৎ নয়া সড়কের আমার চেনা এক লোক খপ করে আমার হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে পার্কের বাইরে নিয়ে গেল। আমি বলি- মকসুদের খবর বলেন, সে শুধু টানে বাইরের দিকে। বাইরে আসার পর সে বলল, আপনি কোন সাহসে এখানে ঢুকেছেন। লেংড়া মৌলভী দলেবলে আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে আর বলছে, একটাকে খতম করেছি। আর একটা বাকি রয়েছে তাকেও খতম করতে হবে। সেই লোকের মুখে আদ্যোপান্ত সব বিবরণ শুনলাম। জানা গেল, আমি চলে যাওয়ার পর পার্কের পশ্চিম প্রান্তে আজমল আলী চৌধুরী সাহেব সভা শুরু করেন। তিনি বাংলার দাবিদারদের ভারতের দালাল, হিন্দুর গোলাম, কাফের, বেইমান ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করছিলেন। তখন আমাদের বন্ধুরা বিক্ষুব্ধ হয়ে এখানেই সভা শুরু করে। এই সভার মাইকের আওয়াজ শুনে আজমল আলীর সভার বেশির ভাগ লোক এই সভায় চলে আসে। তখন সেখানে থেকে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে এই সভায় আক্রমণ চালানো হয়।’আজকে অনেকেই ভাষা সৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, সংবর্ধিতও হয়েছেন। অথচ যার হাত ধরে সিলেটে ভাষা আন্দোলনের সূচনা ও পরিপূর্ণতা পেল সেই নির্ভীক প্রচারবিমুখ মানুষটি সম্পর্কে সমাজ ও রাষ্ট্রের সংকীর্ণ ভূমিকা বড়ই লজ্জাকর।সিলেটে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে পীর হবিব ছিলেন অন্যতম। ১৯৫৪-এর ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে সিলেটের নির্বাচন পরিচালনা সাবকমিটির আহ্বায়ক এবং নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেল থেকে মুক্তিলাভের পর ১৯৫৬ সালে সিলেট সদর আসনের যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন বৃহত্তর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪, ১৯৫৮ ও ১৯৬০-এর দশকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাবরণ এবং বিভিন্ন পর্যায়ে আত্মগোপন ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষক খেতমজুর ও জনগণের মধ্যে কাজ করেন। তারই এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে বিরোধী দলের ডাক গঠিত হলে ডাক-এর আহ্বানে দেশব্যাপী নির্বাচনী কাজে পীর হবিব সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সালে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ওই বছরই সিলেট জেলা ন্যাপ সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের পর ন্যাপ কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং ১৯৭৭ সালে ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে ন্যাপের মাধ্যমে আইয়ুব বিরোধী মোর্চা গঠনে ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে ধৈর্যশীল ও অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং সফলতা অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে দিনরাত শ্রম নিবেদন করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন থেকে আট দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (হারুন) ও একতা পার্টিকে ঐক্যবদ্ধকরণে প্রধান উদ্যোক্তা, এনএপি বা ঐক্য ন্যাপ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং অন্যতম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে এনএপির (ঐক্য-ন্যাপ) সঙ্গে ন্যাপ মোজাফফর) ঐক্য সম্মেলনে ন্যাপকে পুনর্গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৯০ সালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সৎ ও দেশপ্রেমিকদের একটি বিকল্প পার্টি গড়ার লক্ষ্যে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য ঐক্য প্রচেষ্টায় যোগদান করেন। এ সময় অসুস্থ শরীর নিয়েও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন।মনে পড়ছে পীর হবিবুর রহমানের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে। এই প্রজন্ম ঘিরেই তার স্বপ্নের কথা তিনি বলেছিলেন। বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা। সে সময় তা আমাদের কাছে এক স্বপ্ন ছিল তো বটেই। এ দেশে আলবদর-রাজাকারদের বিচার হবে!২০০৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার সিলেট শহরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজনীতিক পীর হবিবুর রহমান আজ এই প্রজন্মের কাছে বিস্মৃত প্রায়। তাকে- তার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জীবনে তিনি কিছুই চাননি। তাই এই লেখার শেষে এসে আমি একটি প্রস্তাব করতে চাই। সিলেটের কাজীর বাজারে সুরমা নদীর ওপর যে সেতু হয়েছে- এর নাম ‘পীর হবিবুর রহমান সেতু’ রাখা হোক। এ বিষয়ে মাননীয় সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তোলা দরকার। আমরা যদি আমাদের বরেণ্য রাজনীতিকদের মূল্যায়ন না করি- তবে বিবেকের কাছেই দায়ী থেকে যাব।---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৪
false
ij
আজকের বই_ ইমদাদুল হক মিলন-এর ‘প্রেমে পড়ার সময়।’ আসলে গল্প লিখিয়েরা সব সমাজেই অসম্ভব জনপ্রিয়। বাংলায় ইমদাদুল হক মিলন তেমনি ... তখন স্কুলে পড়ি। এই ক্লাশ নাইন কি টেন। সে সময়টায় একটা বই ভীষন হইচই ফেলে দিয়েছিল। ‘ও রাধা ও কৃষ্ণ’। ভীষন নাকি 'ইরোটি'। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে পড়তাম, ইরোটিক শব্দের মানে ঠিকই বুঝতাম। তো, আমাদের বাসায় বই পড়ার চল ছিল। খবরের কাগজে মুড়িয়ে সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’ পড়তেন মা। মা স্কুলে পড়াতে গেলে আমি লুকিয়ে সেটা পড়ে ফেলতাম। পড়ার সময় বুক ঢিপ ঢিপ করত। সে ভাবেই ‘ও রাধা ও কৃষ্ণ’ বইটা পড়ে শেষ করলাম। হ্যাঁ। আ বিট ইরোটিকই বটে। ওই বয়েসে দারুন উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। পড়তে পড়তে বুক ঢিপ ঢিপ করছিল। আরও পরে বুঝেছিলাম- এমন কিছু না । তবে লেখকের নামটা মনে গেঁথে গিয়েছিল। ইমদাদুল হক মিলন। মিলনের জন্ম ১৯৫৫। সেপ্টেম্বর ৮। বাংলার অতি বিখ্যাত স্থান- বিক্রমপুরে। মুনশীগঞ্জ আর লিখলাম না। কেননা, স্বয়ং মিলন মনে করেন যে বিক্রমপুর শব্দটায় কেমন একটা পুরনো ঐতিহ্যবাহী ব্যঞ্জনা রয়েছে যেটা মুনশীগঞ্জ শব্দটায় নেই। মিলন যে কারণে মুনশীগঞ্জের বদলে বিক্রমপুর বলার পক্ষপাতি। এমনই প্রখর ইতিহাসবোধ এ লেখকের। ছেলেবেলা কেটেছে নদীনালাখালবিলময় নিভৃত সবুজ গ্রামেই। সেসব শৈশব দিনের কথা অনিবার্যভাবে উঠে এসেছে লেখায়। আজ থেকে বহুদিন আগে বিক্রমপুরের এক গ্রামের খালপাড়ের ডুমুর গাছের তলায় দাঁড়িয়ে এক বালক নিজের কাছে শপথ করেছিল-আমি যা যা দেখছি; অবিকল তাইই একদিন লিখব বড় হয়ে। মিলনের ‘ভূমিপুত্র’ উপন্যাসটি তাঁর শ্রেষ্ট লেখার একটি। সে উপন্যাসের একটি অনুচ্ছেদ এইরকম- নাওয়ের পাছায় পা ছড়িয়ে বসেছিল বাদলা। খালি গা, পরনে তাঁতীবাড়ির ত্যানাত্যানা একখান লুঙ্গি। লিকলিকে পা দুটো জিংলার পালার মত পড়ে আছে। দু’পায়ের তলা হা করে তাকিয়েছিল কাদেরের দিকে। কী সাদা! জল-কাদায় পায়ের তলার চামড়া খুব খেয়েছে। আঙুলের ফাঁকগুলো থিকথিক করছে। মানুষের পাড়ায়-পাড়ায় কাদা শুকিয়ে যেমন দাদরা-খাদরা হয় তেমন দেখতে পায়ের তলা বাদলার। হ্যাজা। দেখে লগি মারা ভুলে খেঁকিয়ে ওঠে। কাদের। ঐ ব্যাডা, তরে না কইছি পায়ে কেরাসিন তেল দিতে। দুইদিন দিলে হ্যাজা কইম্মা যাইবো। তাই বলছিলাম, গ্রামীন শৈশব দিনের কথা উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। অজস্র আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করেছেন মিলন। উঠে এসেছে লোকজ সংস্কৃতি। তাঁর একটি লেখায় গরু দৌড়ের বর্ননা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। বিক্রমপুরের মানুষ এ লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন। ছেলেবেলা থেকেই বাড়িতে পড়ার পরিবেশ ছিল ভাগ্যিস। বাড়িতে বই ছিল। সমরেশ বসুর লেখা ভালো লাগত। আর শরৎচন্দ্র। গল্প বলার কৌশল তাঁর কাছ থেকেই তো শিখেছিলেন মিলন। তো, যথাসময়ে ঢাকায় এলেন পড়তে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলেন জগন্নাথ কলেজ থেকে । লিখছেন অবশ্য তারও আরও আগে থেকেই। কৈশরেই আবিস্কার করেছিলেন লেখালেখির এক মহাসূত্র। লেখায় সে মহাসূত্র প্রয়োগ করতে লাগলেন। মহাসূত্রটি এই রকম: উপন্যাস আর জীবন আলাদা না। গল্পের চরিত্ররা হবে আমি যাকে যাকে চিনি-তারাই। সাহিত্যকে কাল্পনিক স্তর থেকে নামিয়ে সকালবেলার চায়ে কাপে আর বাজারের থলেতে এনে ঠেকাতে হবে। মিলনের মহাসূত্রটি ভীষন কাজে লেগেছিল। আমি তখন স্কুলে পড়ি। সে সময়টায় একটা বই ভীষন হইচই ফেলে দিয়েছিল ওই সূত্রের বলেই। আর ... নাওয়ের পাছায় পা ছড়িয়ে বসেছিল বাদলা। খালি গা, পরনে তাঁতীবাড়ির ত্যানাত্যানা একখান লুঙ্গি। লিকলিকে পা দুটো জিংলার পালার মত পড়ে আছে। দু’পায়ের তলা হা করে তাকিয়েছিল কাদেরের দিকে। কী সাদা! ... আজ থেকে বহুদিন আগে বিক্রমপুরের এক গ্রামের খালপাড়ের ডুমুর গাছের তলায় দাঁড়িয়ে এক বালক নিজের কাছে শপথ করেছিল-আমি যা যা দেখছি; অবিকল তাইই একদিন লিখব বড় হয়ে। মিলনের প্রথম উপন্যাস ‘ভূমিপুত্র’ নয়। মিলনের প্রথম উপন্যাস ‘যাবজ্জীবন’ গ্রামজীবন নিয়েই । সম্ভবত ’৭৫ এর দিকে লেখা। ২১ বছর বয়েস। ওই বয়েসেই অসম্ভব পাঠক টেনেছিল বইটায়। আসলে গল্প লিখিয়েরা সব সমাজেই আদরনীয়। ইমদাদুল হক মিলন তেমনি বাংলাদেশে। মানুষের মন তো বিচিত্রমূখী। সে এক জীবনেই নানা জীবনের স্বাদ নিতে চায়। কাজেই, মিলনকে টানছিল বিদেশ; ঢাকা আর ভাল লাগছিল না। জার্মানি যাওয়ার সুযোগ এলো। গেলেনও। না এলেই ভালো লাগত। সে কী দুঃসহ অভিজ্ঞতা! পরে সে দুঃস্বপ্ন লেখায় উঠে এসেছিল ‘পরাধীনতা’ নামক উপন্যাসে। তারপর থেকে আর লেখার বাইরে যাননি কখনও। যদিও বহুবার বিদেশ গিয়েছেন। আজ অবধি একটানা লিখে যাচ্ছেন মিলন। প্রায় দুশোর ওপর বই লিখেছেন। ১৯৭১ নিয়ে লিখেছেন-‘কালো ঘোড়া।’ ৮ বার পদক লাভ করেছেন। প্রথমবার ১৯৮৬ সালে; সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে। আজকাল মিডিয়ায় উপস্থাপা করছেন মিলন। ‘কী কথা তাহার সনে’- সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; তার প্রধান কারণ- মিলনের কথা বলার আন্তরিক ঢং। নবীন লেখকদের জন্য মিলনের উপদেশ-লিখতে হলে শরৎচন্দ্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হবে। http://www.mediafire.com/?utmmvzy4myq সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৪৪
false
fe
উন্নয়নকামী রাষ্ট্রে প্রত্যয়ের প্রতিপক্ষ উন্নয়নকামী রাষ্ট্রে প্রত্যয়ের প্রতিপক্ষফকির ইলিয়াস========================================সংবাদটি নিঃসন্দেহে ছিল একটি বিরল দৃষ্টান্ত। একজন গ্রামীণ জনপদের মানুষ হাসমত আলী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর শোকাতুর হয়েছিলেন খুব বেশি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা-শেখ রেহানাকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন নিজের কন্যা হিসেবে। নিজ গ্রামে, প্রচুর খাটুনি খেটে অর্থ কামিয়ে একখন্ড জমি শেখ হাসিনার নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছিলেন। আহা! মানবতা। আহা! মানুষের প্রতি, আদর্শের প্রতি মানুষের ভালবাসা। এ সংবাদটি একটি জাতীয় দৈনিকে পড়ার পর আমি অশ্রুসিক্ত হয়েছিলাম, সুদূর প্রবাসে থেকেও। গ্রামীণ জনপদের একজন মানুষের এ মহানুভবতা আমাকে স্পর্শ করেছিল গভীরভাবে। এই যে খেটে খাওয়া মানুষেরা, এরাই দেশের মেরুদন্ড। এরাই বাঁচিয়ে রেখেছেন দেশকে। হাসমত আলী আজ আর বেঁচে নেই। বেঁচে আছেন তার স্ত্রী রমিজা খাতুন। সেই রমিজা খাতুনের সংবাদটি পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খোঁজ নেয়ার জন্য তৎপর হন। গণভবনে তাকে ডেকে নিয়ে তার সব ব্যয়ভার শেখ হাসিনাই গ্রহণ করেন।বাংলাদেশে ভোগবাদী মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ত্যাগী মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই যে ত্যাগী মানুষেরা, তারা কি তাদের ন্যায্য পাওনাটি পান? না, পান না। যদি পেতেন তবে এ রাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা হতো বৈষম্যহীন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার জন্যই আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন। বাংলাদেশে ভোগবাদী মানুষ ও মানসিকতার হিংস্রতা যে দিনে দিনে বাড়ছে তার সাম্প্রতিক অনেক উদাহরণ আছে। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে, অবৈধভাবে দখলের পেশিশক্তি। এই পেশিশক্তিকে মদদ দিচ্ছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিমন্ডল। খবরের কাগজ খুললেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গ্রুপ-উপগ্রুপের যে রক্তাক্ত মহড়া হচ্ছে তার খবর আমরা পড়ি। কিন্তু এসব মহড়ার নেপথ্য নায়করা সংযুক্ত আরও শীর্ষপর্যায়ে। তারা এতটাই নির্ভয় যে, এসব রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সামান্য ধারও ধারে না তারা। কারণ তারা মনে করে, রাজনীতির লেবাস তাদের রক্ষা করবে। এবং সেটাই হয়। সভ্য বিশ্বে চরম দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহস না পেলেও বাংলাদেশে জঘন্য দুর্নীতিবাজরা আয়েশের সঙ্গেই সময় কাটিয়ে দেয়।সম্প্রতি পুরনো ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে যে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি হয়েছে, এ নির্মমতম ঘটনা আমাদের জানান দিয়ে গেছে, সতর্ক না হলে এ জাতিকে আরও চরম মাশুল দিতে হতে পারে।ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। একটি ভবন নির্মাণের সময় যদি তার চারপাশে অগি্ননির্বাপক গাড়ি ঢোকার পরিসর রাখা না হয় তবে সেখানে কীভাবে আগুন নেভানো যাবে? এ ভাবনাটি মাথায় না রেখেই গড়ে উঠছে স্থাপনা। গলিপথগুলোকে এতই সরু করা হচ্ছে ক্রমে, যা দেখলে রীতিমতো ভয় পেতে হয়। অথচ এসব হচ্ছে রাষ্ট্রের 'বিল্ডিং কোড' না মেনেই। যারা এটা করছে, তারা কীভাবে তা করতে পারছে?টিভিতে দেখেছি, ঢাকার কয়েকটি হেলে পড়া ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। দু-একটা ভবন ধসের পর এমন কিছু ভাঙার কাজ সব সময়ই আমরা দেখি। অথচ একই সময়ে শহরের অন্যপ্রান্তে এ রকম আরও অনেকগুলো ভবন গড়ে ওঠে অবৈধভাবে।নিমতলীর অগ্নিকান্ডে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। তাদের তিনজন রুনা, রত্না এবং আসমা'র দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে, প্রধানমন্ত্রী নিজে মায়ের ভূমিকায় থেকে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। ১৫ কোটি মানুষের বাংলাদেশে এটাও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর মাধ্যমে মাতৃরূপা শেখ হাসিনার মহানুভবতা ফুটে উঠেছে আবারও। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঘনবসতিপূর্ণ এ রাষ্ট্রে এমন স্বপ্নভাঙার শত শত ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। সে খবর কে রাখবে? রাখা কি সম্ভব?দুইবাংলাদেশে এখন চলছে একটি রাহুশক্তির মহড়া। সে মহড়ার কিছু চিত্র আমরা সম্প্রতি টিভিতে দেখলাম। বাংলাদেশের রাঘব বোয়াল ভূমি ব্যবসায়ী আর গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি একটি বৈঠকে বসেছিলেন। সে বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতা এবং বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার শাহ আলম এবং প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের সঙ্গে তুমুল বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সভা সমাপ্ত হয়েছে সিদ্ধান্ত ছাড়াই।বাংলাদেশে কীভাবে প্লট এবং ফ্ল্যাট ব্যবসা হবে তার একটা গাইডলাইন স্পষ্ট হওয়া দরকার। এখানে ব্যবসায়ীদের সরকারি অনুকম্পা চাওয়ার যেমন সুযোগ নেই তেমনি সরকারেরও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈরীসুলভ আচরণের কোন কথা নয়। কিন্তু তারপরও আমরা দেখছি, বড় বড় ব্যবসায়ীদের অনেকেই ভূমি অধিগ্রহণের সরকারি নীতিমালা মানছেন না। তারা টাকার জোরে অনেক কিছুই হালাল করে নিতে চাইছেন। তার সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নিজেদের মিডিয়াশক্তি। এসব মিডিয়া দ্বারা সরকারকে, রাষ্ট্রপক্ষকে এক হাত দেখে নেয়ার একটা মানসিকতা খুব দ্রুতই বাড়ছে। মন্ত্রী এবং ব্যবসায়ী নেতাদের বাকবিতন্ডার খবর কিছু কিছু মিডিয়া কীভাবে প্রকাশ করেছে তা পড়লেই কারও না বোঝার কথা নয়, কার প্রতিপক্ষ কে?বাংলাদেশের মানুষের কাজ করার উদ্যম আছে। প্রত্যয় আছে তরুণ প্রজন্মেরও। কিন্তু একটি ভোগবাদী তৃতীয় শক্তি সব সময়ই এ প্রত্যয় এবং প্রাণশক্তির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ ভোগবাদীদের দাপট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাষ্ট্রটি স্বাধীন হলেও মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা বারবার হোঁচট খেয়েই পড়ছে।জেনে বেশ আশ্বস্ত হয়েছি এবারের বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তারা যাতে আজীবন বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ করতে পারেন এমন প্রস্তাবনাও সরকার বিবেচনা করছে বলে অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণে বলেছেন। একটি কথা আমাদের মানতেই হবে, ১৫ কোটি মানুষের দেশে বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা খুব বেশি নয়। জাগতিক নিয়মে আর ৩০-৩৫ বছর পর বাংলাদেশে কোন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে থাকবেন না। তাই এ সময়টুকু এসব সূর্যসন্তানদের সম্মানিত করতে পারলে গোটা জাতিই সম্মানিত হবে।বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, যে জাতি যত বেশি প্রত্যয়ী, যত বেশি অধ্যবসায়ী, তারাই বেশি উন্নতির শিখরে আরোহন করতে পেরেছেন। আর এ প্রত্যয়ের পথে পথে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় তা সরিয়ে যেতে হয় সরকার পক্ষকেই।বাংলাদেশে হাসমত আলী-রমিজা খাতুনের সংখ্যাই বেশি। যাদের চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি নেই। এ দেশে ভূমিখেকো অজগরদের সংখ্যা কিন্তু হাতেগোনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পায় সেই অজগররাই। যদি হাসমত আলী-রমিজা খাতুনরা পৃষ্ঠপোষকতা পেত তবে রাষ্ট্রের চিত্র ভিন্নরকম হতো।যে কোন দেশের সমস্যাগুলোকে বৃহৎ বিবেচনায় সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিতে হয়। একটি-দুটি ভবন হেলে পড়লেই সবাই সরগরম হবেন, আবার সপ্তাহ-দিন পরে সবকিছু ভুলে যাবেন-তা কোন স্থায়ী সমাধান আনতে পারবে না। সামগ্রিকভাবে সমস্যা সমাধানে আন্তরিক না হলে ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে। নিউইয়র্ক/ ১৬ জুন ২০১০ -----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৮ জুন ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - ক্রিস হ্যামিলটন
false
rg
সুন্দরবনে ট্যাংকার ডুবি পরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী সুন্দরবন ধ্বংসের মহাযজ্ঞ এগিয়ে চলছে। বন ও প্রাণী বিশেষজ্ঞদের কথায় কান দেবেন না!! নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাহজাহান খান বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, মাত্র ৭৭ হাজার গ্যালন (প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার) ফার্নেস তেল নিয়ে ডুবে যাওয়া ট্যাংকারের তেলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। আমাদের বিশেষজ্ঞ মন্ত্রী বাহাদুর কইছেন, সুন্দরবনের কিচ্ছু হবে না। তো কার বাপের কি? গত পাঁচ দিনে ২২টি জোয়ার-ভাটায় সুন্দরবনের মাত্র ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল ছড়িয়েছে। আরো ছড়ালে বা কি? সুন্দরবন তো অনেক বড়। বাংলাদেশের সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। মাত্র ৩৫০ বর্গকিলোমিটার কোনো ব্যাপার না। আরো দুই চারটা ট্যাংকার ডুবলেও সুন্দরবনের কোনো ক্ষতিই হবে না, ইনশাল্লাহ! হাতুড়ে পদ্ধতিতে ফার্নেস তেল অপসারণে কয়েকশো নৌকায় করে কয়েক হাজার স্থানীয় জেলে-শ্রমিক কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত এসব স্থানীয়রা সংগ্রহ করেছেন প্রায় ২৩ হাজার লিটার তেল। এভাবে হাতুড়ে উপায়ে তেল তুলতে আমাদের অন্তত মাস দুয়েক সময় লাগবে। কোনো ব্যাপার না। স্থানীয় মানুষজন মাছ ধরার বদলে এখন তেল তুলছে। এতো বিপ্লব হয়ে যাবার মত ঘটনা। ৩০ টাকা লিটার দরে আহরিত ওই তেল সুন্দরবনে বসেই কিনে নিচ্ছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি। এর চেয়ে আপনি আর কি সুবিধা চান , বলেন? গত মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ‘টোটাল’ নামে একটি কার্গোর ধাক্কায় ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ ডুবে যায়। ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের ট্যাংকারটি গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাচ্ছিল। এ ঘটনায় জাতিসংঘসহ কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওদিকে সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে বিস্তীর্ণ এলাকায় ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের নিজেদের অংশে সতর্কতা জারি করেছে ভারত। কিন্তু আমাদের নৌ-পরিবহণমন্ত্রী একাই সুন্দরবন রক্ষা করার জন্য যথেষ্ঠ। আমাদের হাতুড়ে পদ্ধতিতে এর নিশ্চয়ই একটা রফাদফা হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ডলফিন মরলো কেন? কুমিরের গায়ে ক্ষত হল কেন? গাছ বিবর্ণ হচ্ছে কেন? ট্যাংকার জাহাজের চালক (মাস্টার) মোখলেসুর রহমানের (৫০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্যাংকার জাহাজের মাস্টার কিভাবে মারা গেল? নাকি তাকে খুন করা হয়েছে? ট্যাংকার জাহাজের অন্য সাতজন সাঁতার কেটে নিরাপদে কূলে আশ্রয় নিতে পেরেছে। হঠাৎ করে সুন্দরবনে ট্যাংকার ডুবির ঘটনা ঘটল কেন? এমন হাজার কেন-এর কোনো জবাব বন বিভাগ বা নৌ-পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে নেই। নেই কেন? মংলার নালা ও রামপালের কুমার নদী ভরাট হয়ে ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল রুট ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের নৌবাণিজ্য যোগাযোগ পথ হিসেবে ব্যবহৃত ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তখন থেকেই সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে শেলা নদীকে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ। সুন্দরবনের শেলা নদী দিয়ে নৌচলাচল বন্ধ করতে সুন্দরবন বিভাগ গত ৩ বছরে ৭ বার চিঠি দেয় বিআইডাব্লিউটিএ’কে। সুন্দরবন বিভাগের ওই সব চিঠিতে জাহাজ চলাচলে শেলা নদীতে ইরাবতি ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিনের অভয়াশ্রম ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জাহাজ চলাচল বন্ধ করতে বলা হয়। কিন্তু বছরে এসব চিঠিতে কর্ণপাত না করে অবৈধভাবে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখে বিআইডাব্লিউটিএ। কার স্বার্থে ওই নৌ রুট চালু রাখা হল? নৌ-পরিবহণমন্ত্রী এর কোনো জবাব দেন নাই। কেন দেন নাই? কারণ, সুন্দরবন ধ্বংস করার জন্য একটি মাস্টারপ্লান হাতে নেওয়া হয়েছে। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এর প্রাথমিক পরিকল্পনা। যা নিয়ে সারা দেশে হাজারবার বিক্ষোভ হয়েছে। সরকার গা করেনি। সুন্দরবনের কিচ্ছু হবে না, এমন দাবি করেছে সরকার। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে জয়মনির ঘোল এলাকায় সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার নিয়ে একটি কার্গো জাহাজ ডুবে যায়। তার আগে ১২ সেপ্টেম্বর পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকায়ও ক্লিংকারবাহী একটি কার্গো ডুবে যায়। ওই জাহাজ দুটি এখনও ওঠানো সম্ভব হয়নি। সুন্দরবন যখন থেকেই আলোচনায় তখন থেকেই ওই অঞ্চলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও রহস্যজনক কারণে বাড়ছে। কিন্তু সরকার বাহাদুর নিরব। কেন নিরব? প্রশ্ন সামান্য। কত হাজার কোটি টাকায় সুন্দরবন ধ্বংস করার মাস্টারপ্লান করলেন মশাইরা? নমুনা কিন্তু টের পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্লাবন থেকে বাংলাদেশকে কে রক্ষা করবে? ওই টাকার যারা ভাগ পেয়েছেন, তারা কারা? প্রশ্নই ওঠে না। ওরা তো নিরাপদ সেকেন্ড হোমে পাড়ি জমাবেন। কিন্তু সুন্দরবন মরে গেলে কার কার লাভ? ভারত কেন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিজেরা করল না? ভারতের বনবিভাগ তাদের ছাড়পত্র দেয়নি, তাই তারা নিজেরা করেনি। বাংলাদেশ কেন করবে? বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করার জন্য? ওরে আমার আলোরে!! শাহাজাহান খানদের মত দুবৃত্তরা এক সময় গোটা বংশ সহ বিদেশে পাড়ি দেবে। তাদের জন্য রয়েছে নিরাপদ সেকেন্ড হোম। কিন্তু বাংলাদেশের কি হবে? সুন্দরবন মারা গেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্লাবনে যে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মরবে, বন্যপ্রাণী মরবে, তাতে কার বাপের কি? ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় সঙ্কটে সুন্দরবনের ৩৫ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছ। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৫০ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের মধ্যে ৩৫টি প্রজাতি রয়েছে আমাদের সুন্দরবনে। সুন্দরবনে থাকা ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালার মধ্যে মাত্র ৩৫ প্রজাতিই ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনে ৪৪৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মধ্যে ৬৩টির বসবাস এই শেলা নদী এলাকায়। দুর্ঘটনার পর এসব রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও দেখা মিলছে না। কয়েক বছর আগেও প্রাণি বিজ্ঞানীদের কাছে ইরাবতি ছিল হারিয়ে যাওয়া ডলফিন। বিশ্বের সবাই জানতো ইরাবতি ডলফিন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের একদল প্রাণি বিজ্ঞানী কয়েক বছর আগে সুন্দরবনসহ উপকুলে খুঁজে পান হারিয়ে যাওয়া ওই ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন। হারিয়ে যাওয়া ডলফিন ইরাবতি সুন্দরবনে রয়েছে এ খবরে তখন বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ট্যাঙ্কার ডুবির পর ওই দিন থেকে শেলা নদীতে ডলফিনের অভয়াশ্রমে আর দেখা মিলছে না ডলফিনের। গেল কোথায় এরা? বাংলাদেশে সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে স্থল ভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১শ’ ৪৩ বর্গ কিলোমিটার। আর ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খাল নিয়ে জল ভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার। গাছ চুরি, ঝড়-জলচ্ছ্বাসের কারণে বিগত ৩৭ বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমেছে ১৪৪ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরী গাছ কমেছে ২৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে পানিতে ভেসে থাকা এই জ্বালানি তেল অপসারণ বা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার বাহাদুর আঙুল চুষছেন কার স্বার্থে? সুন্দরবনের ধ্বংস আপনারা চান, কত টাকার প্রকল্প এটা? তেল অপসারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞ সাহায্য কেন এই পাঁচ দিনেও নেওয়া হল না? হাতুড়ে পদ্ধতিতে দুই মাস ধরে তেল তুললে সুন্দরবন রক্ষা পাবে মশাইরা? আজ রোববার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে যে এলাকায় জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার ডুবেছে, ওই এলাকায় নৌরুট স্থায়ীভাবে বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। ৩ বছর কেন বনবিভাগের চিঠির কোনো তোয়াক্কা করা হল না? আজ কেন আবার সুপারিশ আসল? এই সুপারিশ কি কেবল কাগজে কলমেই থাকবে? সরকার বাহাদুর যতোই নাদান হোন, আপনাদের সুন্দরবন ধ্বংসের মহৎ উৎসবে কোনো ভাটা পড়বে না বলেই আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে। আচ্ছা সুন্দরবন ধ্বংসের মাস্টারপ্লানের টাকা কে কে ভাগ পেল? বন ও পরিবেশমন্ত্রী চুপচাপ কেন? মঞ্জু সাহেব, আপনার বাবা মানিক সাহেব জীবিত থাকলে সুন্দরবন ধ্বংসের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে নিশ্চিত উনি কলম যুদ্ধ করতেন। আর আপনি সুন্দরবন ধ্বংসের এই মহাযজ্ঞের সময় একেবারে চুপ মাইরা আছেন কার ইসারায়? হে সুন্দরবন প্রেমীরা, তোমরা যতোই গলাবাজি করো না কেন, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে তোমাদের সুন্দরবনকে তামাতামা বানানো হবে। কেবল তো মাত্র খেলা শুরু। আরো কত হাজার ঘটনা ঘটানো হবে। তামাশার আর দেখছ কি? সবেতো মাত্র শুরু। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। চোখের সামনেই তো আর রাতারাতি প্রজেক্ট শেষ করা যায় না রে পাগল। সবুর কর। সবুরে মেওয়া ফলে। সুন্দরবন, তোর আর ছাড়ন নাই। তোরে এবার গোষ্ঠিসহ মারা হবে। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি। .................................... ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ঢাক [সূত্র: বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে] সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৩
false
rn
বই যারা লিখেন অনেক তপস্যা করে লিখেন ''রুটি মদ ফুরিয়ে যাবেপ্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবেকিন্তু একটি বই অনন্ত যৌবনাযদি তা তেমন বই হয়''বই নিয়ে ওমর খৈয়ামের এ কবিতার পর বলার আর কী থাকতে পারে। চারদিকে বই আর বই। বইয়ের আলোচনায় মূখর সবাই। আর কয়েকদিন পর একুশে বইমেলা। বাংলা একাডেমী চত্বরে লেখক পাঠকের মিলন মেলা। এ বই মেলার ইতিহাস আনেক আগের। বইমেলার বিশ্বে বাংলাদেশের একুশের বইমেলাই একমাত্র যা মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৫ তে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমী। বর্তমান বাংলা একাডেমী ভবনের আগের নাম ছিলো বর্ধমান হাউজ।আমাদের প্রতি মুহূর্তে মনে করা উচিত, এ পৃথিবীতে আমাদের সময় খুব, খুব সামান্য। আমাদের প্রয়োজন টাকা, আমাদের প্রয়োজন সম্পদ, কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, এসব অর্জনেরও একটা সীমা আছে। মানুষের জীবনে সত্যিকার অর্থে দুটি সমস্যা আছে—স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য।জগতে চিত্তবিনোদনের অনেক উপাদান আছে। আপনাকে কর্মে সফল হতে হলে ওই সব থেকে অবশ্যই নিজেকে দূরে রাখতে হবে। পৃথিবীর সবেচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তির দিকে তাকান, তিনিও বলবেন, ভয় লাগে, কখন সব শেষ হয়ে যায়! আপনি যদি এই অনিশ্চয়তার ভয় কাটাতে পারেন, তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।অনেকেই আপনাকে খারাপ মানুষ মনে করতে পারে। কিন্তু আপনি নিজেকে কখনোই খারাপ মনে করেন না। নিজের জীবনে মানুষ কখনো নিজেকে ‘খলনায়ক’ হিসেবে দেখে না। সে কখনোই ভাবে না যে সে একজন খারাপ মানুষ।জীবনে সফল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য কিছু অর্থ উপার্জন করুন। দ্যাটস অ্যানাফ! যখন একটি পশু মারা যায়, সে আসলে মারাই যায়। পশুদের এমন কোনো প্রজন্ম নেই যারা তাদের জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সরবরাহ করতে পারে। কোনো পশুই বই লিখতে পারে না, যে বই বছরের পর বছর অন্য প্রাণীরা পড়তে পারে, কিন্তু মানুষ পারে। তাই মানুষের জ্ঞান আসলে ‘সেকেন্ডহ্যান্ড নলেজ!’মার্কটোয়েনের কথাতো সবাই জানি, বই ঠাসা তার ঘর, মেঝেতে পা ফেলার আয়গা নেই। পড়ার জন্য বই ধার করে এনে ফেরত না দিয়ে গড়েছে লাইব্রেরী। বুড়ো সময়ের কথা চিন্তা করা যাক। যখন কেউ সঙ্গ দিবেনা। বই ই হবে একমাত্র সঙ্গী। কিন্তু যার বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেনি, ছোট বেলায় বইয়ের সাথে বন্ধুত্ব পাতা হয়নি, বুড়ো অবস্থায় ইচ্ছে করেও সে বইয়ে মনযোগ দেয়া সম্ভব নয়।বই যারা লিখেন অনেক তপস্যা করে লিখেন। পৃথিবীর সামান্যই আমরা দেখছি, জানি। গোটা পৃথিবীতে আমাদের জানার ও দেখার বাইরে অনেক জিনিস রয়েছে। বই না পড়লে আমরা এসব জানবো না। আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য আছে লেখকরা এসব কিছু খুজে বের করে আমাদের জন্য তৈরি করেন। আসুন অনেক বই কিনি এবং পড়ে ফেলি। “তিনটি ভাল বই একবার করে পড়ার চেয়ে একটি ভাল বই তিনবার পড়া বেশি উপকারী।”মিসরীয় সাহিত্যিক আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ।বিঃ দ্রঃ এবার একুশে বইমেলাতে আমার একটি বই বের হচ্ছে, 'বিকল্পহীন রবীন্দ্রনাথ'। রোদেলা প্রকাশনী থেকে। আশা করি, সবাই সংগ্রহ করবেন এবং পড়বেন।
false
mk
শেখ হাসিনা ও বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা, পরিকল্পনা এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষের উদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আমূল পরিবর্তনের দিকে অগ্রসরমান। তার দৃশ্যরূপ ধরা পড়ে সমগ্র দেশের অবকাঠামোগত রূপান্তরের মধ্যে। এর বিকশিত রূপটি পরিস্ফুটিত হতে সময়ের প্রয়োজন আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। পরিবর্তনের বেগ যেসব ক্ষেত্রে মোটাদাগে নজর কাড়ে সেগুলো হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি। এসব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অর্জন ঈর্ষণীয়। জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশ তো পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর জন্যও অনুকরণীয়। দেশের উন্নয়নে সর্বদা নতুন পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে। উদ্ভাবন হচ্ছে নতুন কৌশল ও কর্মপন্থা। ২০০৯ সালে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর, সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলে দুর্নীতির মহোৎসব ও দারিদ্র্য বা মঙ্গাপীড়িতের হতদশা কাটিয়ে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। দেশের রাজনীতির ইতিহাস, ক্ষমতার পালাবদল আর রাষ্ট্রনায়কদের খামখেয়ালিপনা, দুঃশাসনের ইতিবৃত্ত পর্যালোচনার পর দ্বিধাহীনভাবেই বর্তমান সময়কে, বঙ্গবন্ধুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সময় বলে আখ্যায়িত করা যায়। এর শতভাগ অবদান বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ওয়ান-ইলেভেনের সময়, দেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে, কারাগারে বসে বঙ্গবন্ধুকন্যা রূপরেখা তৈরি করেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমৃদ্ধির সোপানে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এ সফলতাকে ম্লান করে দিতে উদ্যত। বিশেষ কিছু ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার কারণে উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ প্রতিশ্রুত উন্নয়ন সহযোগিতা থেকে পিছিয়ে গেছে। দেশেও অস্থিরতা তৈরির নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশেষ একটি মহল, যারা সব সময়ই দেশের অমঙ্গল কামনা করেন। তবে জনসাধারণের সুবিবেচনার কাছে তাদের ফন্দি-ফিকির বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে দেশের অনিষ্টকারীরা কখনো সফল হতে পারবে না। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা ও নেতৃত্বদানের স্বভাবসুলভ সূক্ষ্মবোধ এবং দূরদর্শিতার কাছে সব ষড়যন্ত্র ম্লান হয়ে গেছে।শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী ক্ষমতার আরেকটি প্রকাশ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নতুন উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে নেওয়া আট কর্মসূচিকে ব্র্যান্ডিং করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে এবার বিনিয়োগ বিকাশ কর্মসূচি যুক্ত করা হয়েছে। বাকি কর্মসূচিগুলো হচ্ছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, যা আগামী বছরে পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক নামে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এরপর রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিট কিনিক ও শিশু বিকাশ এবং সামষ্টিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এতে নতুন সংযোজিত হয়েছে বিনিয়োগ বিকাশ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির বাইরে পরিবেশ সুরক্ষা নামে আরও একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ব্র্যান্ডিংয়ের আরেকটি অনুষঙ্গ ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচি। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তি উদ্যোগে যে দশটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তার অন্যতম এটি। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে দেশে বিনিয়োগের খরা কাটবে। ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ বহির্বিশ্বে এমনভাবে ব্র্যান্ডিং করা হবে যাতে বিদেশিরা এ দেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেন। এ ছাড়া দেশি উদ্যোক্তাদেরও আস্থা ফিরিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগের প্রধান বাধাগুলো কি তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব বাধা দূর করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় শিল্পনীতিও বিনিয়োগবান্ধব করা হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত জাতীয় শিল্পনীতির খসড়ায় বলা হয়েছে কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বা প্রায় আট কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে অথবা কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ১৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সরকারের এই উদ্যোগকে বিদেশিরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।এ ছাড়া ভারত, চিন, জাপান ও কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়াতে ওই দেশগুলোর জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। এ ছাড়া দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী পনেরো বছরে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর ফলে দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ১ কোটি মানুষের।প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, যা ‘শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ’ নামে পরিচিত। এসব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা (এসডিজি) আগামী পনেরো বছরের মধ্যে পূরণ করতে হলেও এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। বিনিয়োগ আকর্ষণে আগামী নতুন বাজেটেও বিশেষ কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। বিদ্যমান বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়িয়ে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অর্থলগ্নির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অর্ধদশক আগের চেয়ে বাংলাদেশ এখন এক ভিন্নরকম দেশ। বাংলাদেশের মানুষ এখন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। তারা যে কোনো অসম্ভব কাজকে বাস্তবায়ন করতে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী ও অঙ্গীকারবদ্ধ। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় স্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সুন্দর দেশ। আসুন, এখানে বিনিয়োগ করুন। আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আপনাদের সক্রিয় অংশীদার হওয়ার এখনই যথার্থ সময়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারপারসন হিসেবে আমি আপনাদের, বিশেষ করে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা আপনাদের বাস্তবভিত্তিক বিনিয়োগ প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশে আপনার বিনিয়োগের সুরক্ষা ও বৃদ্ধি সুনিশ্চিত।’আমাদের রয়েছে বিপুলসংখ্যক যুব কর্মশক্তি। বিশাল বাজার, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং সুদৃঢ় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কার্যকর বাজার অর্থনীতির যথাযথ ব্যবহারের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পদ্ধতিগত সরলীকরণ করা হয়েছে। ব্যক্তি খাতের নীতিনির্ধারণবিষয়ক সমস্যাগুলো তথ্যনিষ্ঠ ও গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত করা ও তার সমাধানের জন্য ‘প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট পলিসি কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ (পিএসডিপিসিসি) নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সরকারি এবং ব্যবসায়ী চেম্বার ও বাণিজ্য সংস্থাগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিল্প অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণ এবং এ খাতে বৈচিত্র্য আনা, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর পরিধি ও কর্মকা- বিস্তারের মাধ্যমেও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হচ্ছে। সব ধরনের বেসরকারি বিনিয়োগে রাজস্ব এবং রাজস্ববহির্ভূত আকর্ষণীয় প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের প্রবেশ এবং বহির্গমন সহজ করা হয়েছে এবং তারা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ও মুনাফা সহজেই দেশে নিয়ে যেতে পারেন।বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে অন্তর্ভুক্তি ও সমসুবিধা নিশ্চিত করার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। জনগণের গড় আয়ু বেড়ে ৭০ দশমিক ৭ বছর হয়েছে এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে মা ও শিশুর যতেœ বাংলাদেশ সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেছে। দারিদ্র্যসীমা হ্রাস পেয়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে আমাদের অফুরন্ত সামুদ্রিক সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহারের জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে। ব্লু ইকোনমি আমাদের এখন নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে একশটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করা এবং গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ১৬শ’ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ২ হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি আমদানির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এ জন্য এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। গত ৬ বছরে আমাদের বাজেটের আকার ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। তা আজ পৌনে আটগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বের ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের জোর প্রচেষ্টার ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের দিকগুলো আরও গভীর ও বিস্তৃৃত হয়েছে। ব্যবসায়ী ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা উন্মোচিত হয়েছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবে প্রবৃদ্ধির একটি বৃহৎ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফলে আমাদের ব্যক্তি খাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের দক্ষতা বেড়েছে। উদ্যোক্তাদের মনোবল এবং দক্ষতা বেড়েছে। আমাদের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সাহসী উদ্যোগ শেখ হাসিনার সরকার নিয়েছে, তা আমাদের সক্ষমতারই পরিচয় বহন করে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ অব্যাহত রেখেছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা দূর করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য।বিনিয়োগ বাড়াতে শেখ হাসিনার বিশেষ এ উদ্যোগ যে ফলপ্রসূ, তা একটি উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে উঠবে। সাড়ে ৭০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চিনকে অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকার সে অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে চিন। বর্তমানে চিনা বাজারে ৪ হাজার ৭০০ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। তামাক ও তামাকজাতদ্রব্য, গার্মেন্ট ও লেদারসহ নতুন আরও ১৭টি পণ্যের এ সুবিধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিনে বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশি স্টলের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার ও প্রসারে সুযোগও চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য চিনা ভিসা সহজ করার দাবিও তোলা হয়। আনন্দের খবর হলো, চিন এ বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছে। সফলতার এই সূচকগুলো বিবেচনায় রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে নিরঙ্কুশ করা ষোলো কোটি মানুষের দায়িত্ব বলে মনে করি। সেই সঙ্গে দলীয় এবং সরকারের দায়িত্বশীল মহলেরও উচিত হবে প্রধানমন্ত্রীকে নির্ঝঞ্ঝাট সহযোগিতা দান করা। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮
false
rn
ধর্মের বদমাশেরা "কোনো রকম শারীরিক বা মানসিক দুঃখ উপস্হিত হলে যদি অনেক চেস্টায় ও তা দূর করতে না পারিস তাহলে ঐ দুঃখের চিন্তা করবি না।চিন্তা না করাই দুঃখকে শান্তি করার মহৌষধ।চিন্তা করলে কখনো দুঃখ কমে না,বরং বেড়েই চলে।তাই শাস্ত্র জ্ঞান দ্বারা মানসিক দুঃখ আর ঔষধ দ্বারা শারীরিক দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করবি।"………….. বাবা লোকনাথ। আধুনিক বিশ্বে ধর্ম নিয়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফলহলেন পীর সাহেবানরা।আর সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ হলো এই পীর ব্যবসার সবচেয়ে উর্বর ভূমি। চরমোনাই , আটরশি , ফরিদপুরের জাকের পার্টি , দেওয়ানবাগি , কুতুববাগি সহ সারাদেশের আনাচে কানাচে যে কত হাজার পীরের খানকা আছে তা পরিসংখ্যানের বাইরে। দেশের ধর্মিয় জ্ঞ্যানে অজ্ঞ লোকগুলোই এই ব্যবসার পুজি।পীর আওলিয়াদের কবরের কারণে সিলেট কে পুন্য ভূমি বলা হয়। সঠিক ইসলামিক জ্ঞান থাকলে এই কথাটি এখন কেউ বলতেন না।আরব যুগের সময় আরবরা পাথরকে মুর্তি বানিয়ে পূজা করত , যা শিরিক ! আর এখন আমরা আল্লাহ'র কাছে সরাসরি চাইতে লজ্জাবোধ করি তাই মৃত ব্যাক্তির কবরকে চারপাশ ঘেরা আবদ্ধ রুমে মর্তিরুপ মাজার বানিয়ে ফুল দিয়ে পূজা করছি , সিজদা দেই , কবর ধরে চুমু খাই , মোম প্রজ্জলিত করে মানত করি , রিযিক খুজি , বিপদ থেকে মুক্তি চাই। হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন সারা বিশ্বের গোটা মানবজাতির কল্যাণের জন্য।নবী করিম (সঃ) আখেরী নবী হিসেবেই খোদা কতৃক প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লাহ পাক নিজেই বলেছেন, “আমি যদি রসূল (সঃ)-কে সৃষ্টি না করতাম তবে আসমান-জমিন, লৌহ-কলম কিছুই সৃষ্টি করতাম না”। প্রকৃতপক্ষে ঐ ব্যক্তিই অলী যাঁর প্রতিটি কাজকর্মে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিকট দৃশ্যমান হওয়ার সমতুল্য হন। এটা রাসূল (সা এর মহান হাদীস দ্বারাও সুপ্রমাণিত। রাসূল (সা বলেছেন:- ‘‘তুমি এমনভাবে এবাদত করবে যেন তুমি খোদাতালাকে দেখছ। সত্যিই অলীদের অলীত্ব সাধারণ মানুষের জন্য এক মহা সম্পদ। মাইজভান্ডারী দর্শন হচ্ছে একটি ধর্মীয় বিপ্লব, এটি আদর্শ আধ্যাত্মিক চেতনা, পার্থিব ও নৈতিক জীবনে উৎকর্ষতা অর্জনের উৎকৃষ্ট পন্থা, খোদার নৈকট্য লাভের একটি মহান উপায় বা দুর্লভ সুযোগ, জগৎ ও জীবনের রক্ষাকবচ, চির শান্তির কপোত, সর্ববেষ্টনকারী আন্দোলন, ইহকাল ও পরকালের মুক্তিসনদ, স্বর্গীয় শারাবান তহুরার এক অনন্ত ঝর্ণা, পৌত্তলিকতাবাদ, নাস্তিকতাবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামীর চরম শত্রু, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ধর্ম সাম্যের সার্বজনীন আবেদনসমৃদ্ধ মানবতাকামী এক মহানতত্ত্ব।অনেক পীর সাহেব নাকি মুরীদদেরকে বলে থাকেন:আমার কাছে মুরীদ হও।তাহলে,আমি তোমাদেরকে হাত ধরে ধরে বেহেশতে নিয়ে যাব।বড় পীর যাকে বলা হয় তিনি কি জীবিত থাকতে বলেছিলেন যে তিনি কবরের মধ্যে মহাকাল জীবিত থাকবেন এবং আমি তোমাদের বড় পীর; আমার তরিকার নাম হবে কাদেরীয়া তরিকা; তিনি কি বলেছিলেন যে কোন কিছু চাইলে যেন আল্লাহর কাছে না চেয়ে বড় পীরের কবরের কাছে চাই??মাইজভান্ডার দরবার শরীফঃ গাউছুল আজম হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এরখোদাপ্রদত্ত আধ্যাত্মিক ক্ষমতায় আকৃষ্ট হয়ে মানুষ তার কাছে ভীড় জমাতে থাকে। এভাবে একসময়ের ছায়া ঘেরা নিভৃত পল্লীগ্রাম ‘মাইজভান্ডার’ হযরত কেবলার খোদাপ্রদত্ত গাউছিয়ত ক্ষমতার প্রভাবে পরিণত হয় ‘মাইজভান্ডার দরবার শরীফে’।মাইজভান্ডারের দেয়ালে ওরা লিখে রেখেছে ( আমি স্রষ্টার গুনে গুনাম্বিত, তাই প্রকৃতির মত নিরব। গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী) {যে কেহ আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করিবে আমি তাকে উন্মুক্ত সাহায্য দান করিব। আহমদুল্লাহ মাইজভান্ডারী} ইত্যাদি।মাইজভান্ডারী গান মাইজভান্ডারী ধারার অনুসারীদের গাওয়া মরমী গান। এ ধারার প্রবর্তক সৈয়দ আহমদুল্লাহ মাইজভান্ডারী। একশ বছরের ও আগে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় এ ধারার উদ্ভব হয়। আজ পর্য্যন্ত শতাধিক ভক্ত কবি হাজারের ও বেশি গান রচনা করেছেন। রমেশ শীল, আবদুল হাদি, বজলুল করিম, মাহাবুব উল আলম (সাহিত্যিক) প্রমুখ মাইজভান্ডারী গান রচনা করে সুনাম অর্জন করেন।মুসলিম সব রকম পীর ফকির এবং মাজারের ভন্ডামি থেকে দূরে থাকুন। ওরসের সময় হাজার হাজার মুর্খ মানুষ সেখানে জড় হয়। ঢোল তবলা বাঁশি বাজিয়ে নারি পুরুষ একসাথে নেচে গেয়ে মাতিয়ে তোলে। পীর কে সিজদা করে , মহিষ, গরু, ছাগল পীরের নামে জবাই করে। রাতে পীরের নামে জিকির করে।প্রমাণিত ভণ্ড গুরুদেরও যে মুরিদ থাকতে পারে সেটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার! উদাহরণস্বরূপ, সাই বাবা'র ভণ্ডামি হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও কিন্তু তার অসংখ্য মুরিদ আছে – এই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগেও!ধার্মিকদের অনুরোধ করি, আপনারা অযৌক্তিক যুক্তি দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ করবেন না।এতে করে ধর্মই বরং অপমানিত হবে। ইমাম আবু হানিফা (রহ এরশাদ করেন- আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি । অতঃপর তাঁর মাযারে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ।যেই সব পাগল ছাগল এসব ভন্ড ব্যাবসায়ী পীরদের কাছে যায় তাদের কাছে প্রশ্ন টাকার বিনিময়ে এরা কেন আমার আপনার জন্য দোয়া করবে? আল্লাহ তো সবার জন্য। আপনার দোয়া আপনিই করেন না? চোর,ডাকাত সবারই যদি মানত পূরন হোত তাহলে ধ্বংসের বাকী থাকত না। আর সবচেয়ে বড় কথা যারা মাজার নিয়ে লাফান তারা কি জানেন না মৃত ব্যাক্তির কোন ক্ষমতা থাকে না। ইসলাম যদি একে সমর্থন করত তবে পৃথিবির সবচেয়ে বড় মাজার হোত আমাদের মহান নবীর মাজার অথচ সেখানে কিছুই করতে দেওয়া হয় না। আল্লাহ আপনাদের শুভ বুদ্ধি দিক। সুদূর ইয়েমেন থেকে সিলেটে এসে সিলেট বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারে নেমেছিলেন ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজলাল (রহ.)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ৩৬০ জন আউলিয়া। হযরত শাহজালাল (রহ.)’র ওফাত দিবসে প্রতি বছর উরস অনুষ্ঠিত হয়।এক পীরের দরগাহ তে জসনে জুলুশ হচ্ছে । দরগাহের একপাশে পুরুষ ,আরেক পাশে মহিলা । মাঝখানে পর্দা নিয়ে আলদা করা আছে। নির্দিষ্ট সময় পর পীরসাহেব(!?) বক্তৃতা দিতে আসল । প্রথমেই সে শুরু করল এভাবে ,"মনের পর্দা বড় পর্দা , সব পর্দা ফালায়া দাও!! " পীরদের আয়াত একটাইঃ যার পীর নাই তার পীর শয়তান । নিজেরা এ আয়াত তৈরি করে নিয়েছেন । এ আয়াত তৈরি করে নিজেরা এক একজন মস্তবড় শয়তানে পরিনত হয়েছে।মুরিদদের টাকা পয়সায় সুন্দর আরাম আয়েশে জীবন... আহা !!বাংলাদেশের পীর মুরদি হচ্ছে টাকা ছাড়াই জমজমাট ব্যাবসা। ধর্মের দোহাই দিয়ে নির্বাচন করা । নির্বাচনের আগে বক্তিতায় খুব ভাল কথা বলে, এবার অমুক মাদ্রাসা করব এতটা মসজিদ ঠিক করে দিব অথচ নিজেই সিজদাহ দিতে জানে না ।আজও লাখ লাখ মানুষ তার মাজার শরিফ জেয়ারত করতে ভিড় জমায়।কবর-মাজারের ভক্তরা যখন সে সকল স্থানে গমন করে, তারা সাথে নিয়ে যায় গরু, ছাগল, মুরগি, ডিমসহ নানারকম খাদ্য সামগ্রী অর্থকড়ি। উদ্দেশ্য এগুলো মাজারের অধিবাসীর নৈকট্য হাছিলের জন্য পেশ করা।যে গোসল করেনা গা থেকে পাঠা ছাগলের গন্ধ বের হয় সে হল বাবা। যে ল্যাংটা হয়ে বসে থাকে সে আরেকটু উপর পর্যায়ের ল্যাংটা বাবা । আর যে নামাজ কালাম অজু গোসল কিছুই করেনা তারা হল আরো বড় হুজুর কেবলা, বিশ্ব অলী শাহেন শাহ। চরমোনাই, মাইজভান্ডারী, আশেক রাসূল, পীর, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, আটরশি, চিশতীয়া - এই সব ভন্ড। সাধারন মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।আমাদের বাংলাদেশের একটা ভুয়া কালচার আছে সেটা হলো ... যদি কোনো পির,ফকির,দরবেশ,আলেম,অথবা বড় কোনো হুজুর মারা যায় তাহলে তার মৃত্যুর পরে তার কবর হয়ে যায় মাজার শরিফ।প্রতি রজব মাসের প্রথম সপ্তাহে আজমির শরিফসহ উপহাদেশের সর্বত্র পালিত হয় ওরস মোবারক।মাজার বানিয়ে ব্যবসা চলছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের ভণ্ড পীর, খানকা বাবাদের অবস্থা।এই নেংটা বাবা, খানকা বাবা, আটরশ্নি-পেটরশ্নি, চরমোনাইরা ইসলামের বেশী ক্ষতি করছে। এবং এই মাজার ব্যবসা, কবর ব্যবসা, নেংটা বাবা, খানকা বাবা ব্যবসার সবচেয়ে বড় মক্কেল হচ্ছে মহিলারা। এদেরকে সচেতন মানুষরা এসব ভণ্ডদের ভণ্ডামী সম্পর্কে শত বুঝানোর পরও বুঝতে চায়না।এই ব্যবসার শিকড় তুলে ফেলতে হবে। এক লোক পায়খানা প্রসাবের পর পানি ব্যবহার করেনা তারপরেও তার মুরীদের অভাব নেই।হিন্দু হোক আর মুসলিম হোক, সব সাধুরাই আজব সব কারিশমা দেখানোর চেষ্টা করে , যাতে করে তার ভক্তকুল/মুরিদ সংখ্য বৃদ্ধি পায়।গাঁজা এবং পীর, একটির সাথে আরেকটি না থাকলে পীর তন্ত্র পরিপুর্নতা লাভ করেনা ।দেশের চিপা কাঞ্চিতে পীর আর গায়িবি মাজারের আনাগোনা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। মনের কামনা বাসনা পূরন করতে অনেকেই ছুটে যায় তথা কথিত পীর বাবা অথবা মাজারের পূজা করতে। মাজার ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। মাজার মানেই নোংরামি। গুলিস্থানে গোলাপ শাহ মাজার- শুধু টাকার খেলা। সমস্ত মাজারের টাকা পয়সা দিয়ে- রাতভর চলে মদ জুয়া নারী।
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮৬ বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যরা তাদের সাহিত্যে যে মুসলিম বিরোধী বিষ উদগিরণ করেছেন সেটি বাংলার সমাজ ও আলোবাতাস থেকে উদ্ভুত হলে তার নমুনা মধ্য যুগের বা আদি যুগের সাহিত্যেও পাওয়া যেত। কিন্তু তা নেই। তাদের মগজে ঘৃনাপূর্ণ মিথ্যার বিষটি ঢুকিয়েছিল বস্তুত ইংরেজগণ। তারাই প্রথম আবিস্কার করে, ভারতের মুসলিম শাসন শুধু ধ্বংস, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও শোষণ ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। বলেছে, মন্দির ভেঙ্গে তার উপর মসজিদ গড়েছে। তাদের লেখনিতে শিবাজীর চরিত্র অংকিত হয়েছে হিন্দু জাগরনের এক মহান ও আদর্শনীয় বীর রূপে, আর মোঘল বাদশা আওরঙ্গজীব চিত্রিত হয়েছেন কুৎসিত ভিলেন রূপে। বাংলায় হিন্দুদের বাস মুসলমানদের চেয়ে অধিক কাল ধরে। অথচ তাদের ব্যর্থতা হল, সমগ্র ইতিহাস ঘেঁটে একজন হিন্দুকেও বের করতে পারে যিনি স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাংলার মানুষের সামনে আদর্শ হিসাবে চিত্রিত হতে পারেন। তেমন চরিত্রের তালাশে বঙ্কিম ও মাইকেল মধুসূদন যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, রবীন্দ্রনাথও ব্যর্থ হয়েছেন। সে এক বিশাল শূন্যতা। ঐতিহাসিক ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ “হিন্দু জাতীয়তা জ্ঞান বহু হিন্দু লেখকের চিত্তে বাসা বেঁধেছিল, যদিও স্বজ্ঞানে তাঁদের অনেকেই কখনই এর উপস্থিতি স্বীকার করবেন না। এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে, ভারতের শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ যাঁর পৃথিবীখ্যাত আন্তর্জাতিক মানবিকতাকে সাম্প্রদায়িক দৃ্ষ্টভঙ্গীর সঙ্গে কিছুতেই সুসংগত করা যায় না। তবুও বাস্তব সত্য এই যে, তাঁর কবিতাসমূহ শুধুমাত্র শিখ, রাজপুত ও মারাঠাকুলের বীরবৃন্দের গৌরব ও মাহাত্মেই অনুপ্রাণিত হয়েছে, কোনও মুসলিম বীরের মহিমা কীর্তনে তিনি কখনও একচ্ছত্রও লেখেননি –যদিও তাদের অসংখ্যই ভারতে আবির্ভূত হয়েছে। এ থেকেএ প্রমাণিত হয় উনিশ শতকী বাংলার জাতীয়তা জ্ঞানের উৎসমূল কোথায় ছিল।” শরৎচন্দ্রের কাছে লেখা রবীন্দ্রনাথের এ চিঠিতে যে পোষমানা চেতনার প্রকাশ ঘটেছে সেটি শুধু রবীন্দ্রনাথের একার ছিল না। এমন একটি উপলব্ধি ছিল সে আমলের অধিকাংশ শিক্ষিত হিন্দুদের। আর এখানেই ব্রিটিশ প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থার বড় সাফল্য। শিক্ষার লক্ষ্য শুধু অক্ষরজ্ঞান, হিসাবজ্ঞান বা কারিগরিজ্ঞান নয়, বরং শিক্ষার মধ্য দিয়েই ধর্ম, চিন্তা-চেতনা, দর্শন, রাজনীতি¸ সমাজনীতি, সংস্কৃতি ও রুচীবোধে আসে বিপ্লবী পরিবর্তন। মন পায় সঠিক দিকনির্দেশনা। তবে শিক্ষা শুধু সুশিক্ষা নয়, কুশিক্ষাও হতে পারে। ফিরাউন, নমরুদ, হিটলার, মুসোলিনির মত অতি দুর্বৃত্তদেরও একটি শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল। আজকের সাম্রাজ্যবাদী দুর্বৃত্তদেরও আছে। ভারতে তেমনি ব্রিটিশ শাসকদেরও ছিল। শিক্ষার মধ্য দিয়ে মিশনারিরা যেমন ছাত্রদের নিজ ধর্মের দিকে টানে, সাম্রাজ্যবাদীরা তেমনি গড়ে নিজেদের পক্ষে লাঠিধরার লোক। ভারতে তারা এতটা বিপুল সংখ্যায় গড়ে উঠেছিল যে তাদের ১৯০ বছর ঔপনিবেশিক শাসনে তাদের নিজেদের লাঠি ধরার প্রয়োজন খুব একটা দেখা দেয়নি। আর বাঙালী হিন্দুগণ লাঠিধরার কাজে ভারতের অন্য যে কোন ভাষাভাষীদের চেয়ে অধিক সংখ্যায় ছিল তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাশি বছর বেঁচে ছিলেন।তার লেখা পড়ে অনেকেই তার সংগে দেখা করেছেন, আবার চিঠি লিখে মন্দলাগা-ভালোলাগাটুকু জনিয়েছেন। চিঠির মাধ্যমে কবির সংগে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন অনেকে। পৃথিবীর কোন কবিতার অনুরাগী বা পাঠকদের কাছে এতো চিঠি লেখেননি। পাঠকদের সংগে ছিলো কবির সুসম্পর্ক। অসীম ধৈর্য ও পরিশ্রমের বিনিময়ে এ সম্পর্ক তিনি আজীবন বজায় রেখেছেন। বিদেশি বন্ধুদের পাঠানো চিঠির উত্তর লিখেছেন যথাসময়ে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি শুধু বড়দের চিঠির উত্তর দিয়েছেন? না, তিনি ছোটদের চিঠি পেলেই সাথে উত্তর লিখে পাঠিয়েছেন পত্রপ্রেরকের কাছে।প্রবোধচন্দ্র ঘোষ রবীন্দ্রনাথের বাল্যবন্ধু। প্রবোধচন্দ্র ঘোষ নিজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে না পারলেও তিনি বন্ধুর ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠার সূচনা করে দিয়েছিলেন তার প্রথম গ্রন্থ ‘কবি কাহিনী’ প্রকাশ করে। রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন মাত্র সতেরো, তখন তিনি বিদেশে। প্রবোধচন্দ্র এই বইটি ছাপিয়ে রবীন্দ্রনাথকে পাঠিয়ে বিস্মিত করেছেন। তাঁর সঙ্গে বালক বয়সে রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তা জানা যায় প্রবোধচন্দ্রের লেখা চিঠি থেকে। প্রিয়নাথ সেন রবীন্দ্রনাথের তরুণ বয়সের সাহিত্যকর্মের প্রধানতম অনুরাগী পাঠক ও পরামর্শক। উৎসাহদাতা, পৃষ্ঠপোষক ছাড়া মহৎ জ্ঞানও অঙ্কুরে বিনষ্ট হবার সমূহ আশঙ্কা থাকে। রবীন্দ্রনাথের তরুণ বয়সের বহু লেখার প্রথম পাঠক ছিলেন প্রিয়নাথ সেন। প্রিয়নাথ সেনকে রবীন্দ্রনাথের লেখা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পত্রে এ বিষয়ের স্বীকৃতি মেলে। প্রিয়নাথ সেন শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের উৎসাহদাতাই ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথের সাংসারিক ও বৈষয়িক বিষয়েরও অন্তরঙ্গ পরামর্শদাতা ছিলেন।
false
mk
তারেকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের নোটিশ! সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল। আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা ও হত্যার অভিযোগে এই ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি (ওয়ান্টেড পারসনস) হিসেবে তারেক রহমানের নাম-পরিচয় ও বিবরণ রয়েছে। তবে সেখানে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির তারিখ উল্লেখ নেই।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) প্রধান মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন আগেই ইন্টারপোলে এ নোটিশ পাঠিয়েছিলাম।’ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের ৬১ জন তালিকাভুক্ত ব্যক্তির নাম রয়েছে। তালিকায় সবার শেষে তারেক রহমানের নাম, ছবি ও বিবরণ রয়েছে। তাঁর আগে আছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ড পাওয়া পলাতক আসামি আবদুল জব্বারের নাম।ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে তারেক রহমান সম্পর্কে বিবরণে বলা হয়েছে, তাঁর জন্ম ১৯৬৭ সালের ২০ নভেম্বর। তিনি বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু ভাষা জানেন। এতে তারেক রহমানের উচ্চতাসহ শারীরিক বিবরণও আছে।এ ব্যাপারে তারেক রহমানের অন্যতম আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রথম আলোকে বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই।' তিনি আরও বলেন, 'ইন্টারপোল কোনো রাষ্ট্র বা সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডায় কাজ করে না বলেই আমি জানি।'উল্লেখ্য, ইন্টারপোলের নোটিশে মামলার কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়। এই গ্রেনেড হামলায় ২২ জন নিহত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ লোক আহত হন। ২০০৮ সালের ১১ জুন এ মামলায় ২২ জনকে আসামি করে সিআইডি প্রথম অভিযোগপত্র দেয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ মামলার অধিকতর তদন্ত করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। মোট ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৯ জন পলাতক আছেন। আসামিদের তালিকায় আরও আছেন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান দৈনিক প্রথম আলো
false
fe
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের সাহসিকতা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের সাহসিকতা ফকির ইলিয়াস ====================================== যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গোয়েন্দা বিভাগ একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে বেশ চমকে দিয়েছে। নিউইয়র্কের বিখ্যাত টাইম স্কোয়ার এলাকার ৪৭ স্ট্রিটের কর্ণারে একটি বিলবোর্ড রয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং মোস্টওয়ানটেডদের নাম ও ছবি দেখা যাবে। এদের কাউকে চিনতে পারলে গোয়েন্দা সংস্থাকে ফোন করার হটলাইন ফোন নম্বরও থাকবে পাশাপাশি। এটা একটি বড় ধরনের ‘ন্যাশন ওয়াইড প্রজেক্ট’ হিসেবেই দেখছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার স্পেশাল এজেন্ট রিচার্ড কালকো বলেছেন, আমরা কিছু মন্দলোককে আরো বিখ্যাত করার পরিকল্পনা নিয়েছি! আশা করছি আমরা তাদেরকে দ্রুতই হাতকড়া পরাতে পারবো। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের বিলবোর্ড প্রদর্শনের কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। বড় বড় বিশটি শহরে এ ধরনের প্রায় এক হাজারটি বিলবোর্ড রয়েছে। টাইম স্কোয়ারে যে বিলবোর্ড নির্মিত হয়েছে, তাতে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া বালক-বালিকার ছবিও। শিগগিরিই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীচক্রের হোতা, মৌলবাদী শীর্ষ জঙ্গিদের ছবি দিয়েও এমন বিলবোর্ড বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকে জনসমক্ষে তোলে ধরে গণসচেতনতা তৈরি করা। এই যে প্রচেষ্টা এর প্রধান লক্ষ্য কী? প্রধান উদ্দেশ্যটি হচ্ছে রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের জন্য শান্তির দরজা অবারিত করা। যারা দুর্বৃত্ত, তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করা। এই কাজটি করতে না পারলে একটি রাষ্ট্রে আইনের শাসন মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি নিউইয়র্কে ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। একজন খ্যাতিমান টিভি নিউজম্যান মি. ডমিনিক কার্টারের সাজা হয়েছে একটি মামলায়। খ্যাতিমান এই টিভি ব্যক্তিত্ব ‘ডমেস্টিক এ্যবিউস্’- তথা গৃহ নির্যাতন করার মতো জঘন্য অপরাধ করেছিলেন। নিউইয়র্ক ওয়ান টিভি চ্যানেলে মি. ডমিনিক কার্টার ‘ইনসাইড দ্যা সিটি হল’ নামক একটি পলিটিক্যাল প্রোগ্রামের হোস্ট ছিলেন। তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন তার স্ত্রী। পরে তা নিজেদের মাঝে মিটমাট করে ফেললেও আইন তার পিছু ছাড়েনি। মাননীয় বিচারক তার রায়ে বলেন, একজন বিশিষ্ট টিভি ব্যক্তিত্ব কিভাবে অপরাধ করেছেন, তা একটি উদাহরণ হিসেবেই থাকা উচিৎ। সে বিবেচনায় বিচারক, মি. ডমিনিক কার্টারকে এক মাসের জেল দিয়েছেন। আরেকটি ঘটনা খুব সাড়া জাগিয়েছে নিউইয়র্কে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের স্টেট সিনেটর মি. হাইরাম মনসারাত তার স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্ততার হয়েছিলেন। সেই মামলাটির এখনো পূর্ণ নিষ্পত্তি হয়নি। এই মামলায় হাইরাম মনসারাতের সাজা হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে যদিও তিনি বলছেন তার বান্ধবীর (গার্লফ্রেন্ড) সঙ্গে দফারফা হয়েছে, তারপরও আইন তার পিছু ছাড়ছে না। তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেট কমিটিতেও অনাস্থা উঠতে পারে। মোট কথা তার রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানতে হতে পারে। তাছাড়া সামাজিক অপমানতো রয়েছেই! তার স্টেট সিনেটর এর পদটি ইতোমধ্যে কেড়ে নেয়া হয়েছে । কোনো প্রভাবশালী কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বারা একটি রাষ্ট্রের আইন, রাষ্ট্রতন্ত্র কখনোই প্রভাবিত হতে পারে না। হওয়ার কথাও নয়। আর যে রাষ্ট্রে তেমনটি ঘটে, সেখানে গণমানুষের দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। দুই. সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আবার কাঁপিয়ে তুলেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। এটি নির্মাণ করেছেন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, গবেষক, লেখক শাহরিয়ার কবির। ‘জেহাদের প্রতিকৃতি’ শিরোনামের এই ডকুমেন্টারিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রের অন্যতম জঙ্গি মুফতি হান্নানের একটি ভাষ্য দেখানো হয়েছে। যা বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে ইতিমধ্যে আংশিক দেখানো হয়েছে। এই ভাষ্যচিত্রটি আমিও দেখেছি। তা দেখে আমার মনে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তা সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। প্রথমত, এই ভিডিও চিত্রটি কোথায় কবে, ধারণ করা হয়েছে এর কোনো সঠিক দিনক্ষণ নেই। মূল প্রামাণ্য চিত্রটি যেহেতু আমি এখনো দেখিনি, তাই টিভিতে দেখা অংশ থেকে সেটাই জানা যাচ্ছে। আমরা জানি, মুফতি হান্নান এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপক্ষের নিয়ন্ত্রণে, কারাগারে বন্দী। এই ভিডিও চিত্রটি কি তার বন্দীদশায় ধারণ করা হয়েছে? যদি তাই করা হয়ে থাকে, তবে একজন বিচারাধীন বন্দীর ভাষ্য এভাবে জনসমক্ষে এলো কী করে? এভাবে আসা কি উচিত? এবার আশা যাক মুফতি হান্নানের বক্তব্য প্রসঙ্গে। তিনি বলেছেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করা হয় ‘হাওয়া ভবন’-এর ছত্রছায়ায়। সেখানে মূল পরিকল্পনায় কারা কারা ছিলেন তাদের নামও বলেছেন মুফতি হান্নান। তার ভাষ্যমতে বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পুত্র ‘তারেক জিয়া’ ছিলেন এর প্রধান পরিকল্পক। কী সর্বনাশের কথা ! এটা দেশবাসী, বিশ্ববাসীর জানা- সে সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত জোট। আওয়ামী লীগ ছিল বিরোধী দলে। শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী। তাকে নিঃশেষ করার জন্যই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয় তা খুবই স্পষ্ট। কোনো সরকারি দলের প্রধান নেপথ্য নায়ক এমন জঘন্য মানসিকতা ধারণ করেন- তা ভাবতেও তো ভীষণ কষ্ট হয় বৈকি! সেই পরিকল্পনা বৈঠকে কে কে ছিলেন তাদের নামও বলেছেন মুফতি হান্নান। জামাতের একজন শীর্ষ নেতা, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের একজন খুনি মেজর নূরসহ আরো বেশ কিছু নাম জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনাটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে তা- রাষ্ট্রের জন্য, জাতিসত্তার জন্য কতো দুর্ভাগ্যজনক তা অনুমান করা মোটেই কঠিন নয়। একুশে আগস্টের নির্মমতম হত্যাকাণ্ডে জাতি হারিয়েছে একজন বলিষ্ঠ নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ বেশ কিছু দেশপ্রেমিক নাগরিককে। পরবর্তী সময়ে এই আক্রমণ, এই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেবার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে নাটক সাজানো হয়েছে। এই বর্বরতম ঘটনায় যদি সরকারের নেপথ্য মদদ না থাকতো তবে, সরকার সুবিচারের উদ্যোগ নিতো, এ বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে দেশে বহুমুখী অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, জনপ্রিয় সাংসদ, শ্রমিকনেতা আহসানউল্লাহ্ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছিল খুনি ভাড়া করার মাধ্যমে। বিশেষ করে এই দুইজন নেতা হত্যার মতো জঘন্য মানসিকতা আমাদেরকে মনে করিয়ে দিয়েছিল একাত্তরের শেষ প্রান্তে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। কারণ রাষ্ট্রকে মেধাশূন্য করে পঙ্গু করা যায়। তেমনি একটি দলের প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব ধ্বংস করে দলকেও গুঁড়িয়ে দেয়া যায়। যা আমরা পঁচাত্তরেও দেখেছি। খুনিরা একই কায়দা নিয়ে চেয়েছিল ২০০২-২০০৬ সময়ে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি একটি মহলের ক্ষোভ থেকেই যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, এই দলটির নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ, মানবিক মূল্যবোধ, গণমানুষের চেতনা ধারণ করে আর কোনো দল গঠিত হবে না, তা কেউ কখনো বলেনি। যারা এই প্রসঙ্গে বাকশালের কথা তুলবেন, তাদেরকে সবিনয়ে বলি- বাকশাল আঁতুড় ঘরেই নিহত হয়েছিল। তাতে কি ছিল- না ছিল তা আংশিক নয়, পূর্ণাঙ্গভাবে দয়া করে পড়ে দেখুন। কারা কারা কীভাবে বাকশালে যোগ দেবার জন্য লাইন ধরেছিলেন, তাও জানুন শুদ্ধ করে। বাংলাদেশে সেই একাত্তরের আদর্শে যদি আরো কোনো বড় রাজনৈতিক দলের জন্ম হতো তবে আদর্শিক দ্বন্দ্ব এতোটা প্রকট হতো না। কিন্তু বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে যারা আওয়ামী লীগকে সমূলে ধ্বংসের পাঁয়তারায় মেতেছিলেন, তারা হাত মিলিয়েছিলেন সেই পরাজিত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী শক্তির সঙ্গে। আর এই শক্তিই দেশে আইনের শাসনকে হত্যা করতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনাশ করতে ভূমিকা রেখেছে সবচেয়ে বেশি। একটি রাষ্ট্রশক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে সেই রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার ব্যবস্থা। কারণ তা দিয়েই দমন করা যায় সকল দুষ্টগ্রহকে। বাংলাদেশে সেই শক্তিকে বিনষ্ট করা হয়েছে মারাত্মকভাবে। যার কুকর্ম ভোগ করতে হচ্ছে সকলকেই আজ। বহুগামী অরাজকতার যে শিকড় বাংলাদেশের শাখা-প্রশাখায় আজ বিস্তৃত তার নবতর রূপ দিয়েছিল ‘ভবনধারী’ সেই চক্রটি। যারা মৌলবাদী আধিপত্যবাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কায়েম করতে চেয়েছিল, অষ্টম জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার পরপরই। সেসব ঘটনা দেশবাসী কখনোই ভুলে যাবেন না। কথাটি খুবই স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে আইনের শাসন কায়েম করা না গেলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কোনোমতেই সম্ভব হবে না। তাই দলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় স্বার্থ, জনস্বার্থ রক্ষার প্রতি সুদৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। ‘অপরাধীরা যতোই ক্ষমতাবান হোক- তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে’এই আপ্তবাক্যের সঠিক প্রয়োগ করতে না পারলে রাষ্ট্রব্যবস্থা শুধুই মুখ থুবড়ে পড়বে। --------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ / ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ রোববার প্রকাশিত ছবি- প্রিসিলা নরিস সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৫:৪৪
false
mk
বিরোধী দল নাকি সংসদে যাবে ! সংসদ সদস্যরা নিয়মিতভাবে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দেবেন। তারা সংসদের কার্যবিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। একজন সংসদ সদস্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বনপূর্বক বিল উত্থাপন করতে পারবেন। তিনি অন্য কোনো সংসদ সদস্যের উত্থাপিত বিলের ওপর ভোট দিতে পারবেন। তিনি ১৫ দিনের নোটিশ সাপেক্ষে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন। স্পিকারের অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণমূলক বক্তব্য দিতে পারবেন। একজন সংসদ সদস্য পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিতে হয়ে। তিনি একনাগাড়ে ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ হারাবেন। পদমর্যাদার দিক থেকে মন্ত্রীদের পরেই সংসদ সদস্যের অবস্থান।উপরের সবই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের কথা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় সংসদই সব আলাপ-আলোচনা ও জবাবদিহির কেন্দ্রবিন্দু হবে। জনপ্রতিনিধিদের গঠনমূলক তর্ক-বিতর্ক গণতন্ত্রের এক অপার সৌন্দর্য। বিশ্বব্যাপী তাই হয়ে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, বাংলাদেশে ঘটছে উল্টোটা। যুক্তিহীনভাবে সংসদ শুধু বর্জনই হচ্ছে না, রীতিমত রেকর্ড হচ্ছে একের পর এক। সংসদ অধিবেশন বর্জনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও দেশের প্রতি অবশ্যপালনীয় এক দায়িত্ব তারা এড়িয়ে চলছেন। সংসদ বর্জনের মাধ্যমে তারা গণতন্ত্রের এক নির্মম প্রহসনের সৃষ্টি করেছেন। ভুলণ্ঠিত করছেন সংবিধান। জনগণের সঙ্গে করছেন তামাশা।সরকারের সাড়ে চার বছরে ১৭টি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৭০। সবশেষ অধিবেশন শেষ হয় ৩০ এপ্রিল। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি সংসদে গেছে মাত্র ৫৪ দিন। আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংসদে উপস্থিতি মাত্র আট কার্যদিবস। অর্থাৎ সংসদ বর্জনে তাদেরই করা অতীত সব রেকর্ড ভেঙেছে দলটি। সংবিধানের ৬৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্পিকারের অনুমতি ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ শূন্য হয়ে যায়। বর্তমানে তাদের অনুপস্থিতি ৮২ দিন। আর আট কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলেই সদস্যপদ হারাতে হবে। বিএনপি সে ঝুঁকি নেবে না। পদ রক্ষার জন্য যথারীতি সংসদে যাচ্ছেন তারা। দলের পক্ষ থেকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে, আগামী ৩ জুন শুরু হতে যাওয়া বাজেট অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমাদের প্রয়োজনেই আমরা সংসদে যাব। সরকারের সাড়ে চার বছর ধরেই বিএনপি জোট শুধু সদস্যপদ রক্ষার জন্য সংসদে গেছে। অধিবেশনে অংশ না নিলেও বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধার শতভাগ ঠিকই ভোগ করছেন তারা। নিয়েছেন বিদেশ ভ্রমণ ভাতা, শুল্কমুক্ত বিলাসবহুল অত্যাধুনিক দামি গাড়ি।যে কোনো সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন, সংসদীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র জাতীয় সংসদ বা আইনসভা। সংসদকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারা। প্রাণবন্ত আলোচনা, যুক্তি-তর্কে প্রণীত হয় আইন, সেই আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয় একটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সংসদে শুধু আইন প্রণয়ন নয়, উন্নয়ন-অগ্রগতির অর্জন, ব্যর্থতার কথাও আলোচিত হয়। জনগণ অধীর অপেক্ষায় থাকেন, তাদের প্রতিনিধি সংসদে গিয়ে কী বলছেন? ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিতে সংসদে কথা বলার চেয়ে উৎকৃষ্ট প্ল্যাটফর্ম আর নেই। গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শক্তি হলো একটি কার্যকর ও গতিশীল সংসদ। সংসদ সদস্যরা যুক্তি, পাল্টা যুক্তিতে জনগণের নানা সমস্যা-সম্ভাবনার কথা বলবেন। সমাধানের সিদ্ধান্তগুলোও আসবে তারই আলোকে। এর মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটে থাকে। সে কারণে সংসদের অধিবেশনে সব দল ও সদস্যের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ জায়গাটিতেই একটি বিস্ময় চিহ্ন হিমালয় আকার ধারণ করেছে। বিরোধী দলগুলো সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন। সংসদবিমুখ বিরোধী দল রাজপথে কর্মসূচি দিয়ে জ্বালাও-পোড়াওতে বেশি আগ্রহী। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করেন তারা।বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার সংসদে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিরোধী দল থেকে বলা হচ্ছে, সংসদে যাওয়ার পরিবেশ নেই। সংসদে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। সংসদে পরিবেশ নেই বললেও দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতির কারণে সদস্যপদ যখন যায়-যায় অবস্থা, তখন পদ রক্ষার জন্য তারা ওই পরিবেশেই সংসদে যাচ্ছেন। সংসদকে ‘না’ বললেও স্থায়ী কমিটির সভাগুলোতে নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। পরিস্থিতি এমনই যে, পঞ্চম সংসদে বর্জনের হার ছিল ৩৪ শতাংশ, নবম সংসদে তা ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এখন দাবি উঠেছে আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধ করার। কিন্তু তা কি সংসদ সদস্যদের জন্য মর্যাদার হবে?ঠুনকো অজুহাত, রেকর্ডবিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে বিএনপির ৩৫, জামায়াতে ইসলামীর দুই, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির এক ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একজন। চলতি সংসদের প্রথম অধিবেশনে বিএনপি যোগ দেয়। সামনের সারিতে কম আসন রাখার শিশুসুলভ অভিযোগ তুলে প্রথম অধিবেশন থেকেই সংসদ বর্জন শুরু করে বিরোধী জোট। তবে ওই সময় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১৮ দলীয় জোটে না থাকায় দলটির একমাত্র সদস্য অলি আহমদ সংসদে যেতেন। সংসদ বর্জনের অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে চারটি সংসদে বিরোধী দলের কম-বেশি অধিবেশন বর্জন চলে আসছে। তবে বর্তমান সংসদের প্রায় পুরোটা সময় বিরোধী দল সংসদ বর্জনে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২৩ বছরের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিএনপিই সবচেয়ে বেশি সংসদ বিমুখ। অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি ছিল ক্ষমতাসীন দল। তখন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ৩৭৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২২৩ দিন অনুপস্থিত ছিল। সপ্তম সংসদের বিরোধী দল বিএনপি ৩৮২ কার্যদিবসের মধ্যে ১৬৩ দিন বর্জন করে। পঞ্চম সংসদে বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ৪০০ কার্যদিবসের মধ্যে ১৩৫ দিন সংসদ বর্জন করে। পঞ্চম ও অষ্টম সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে ১৩৫ ও ৪৫ কার্যদিবস। আর ষষ্ঠ ও নবম সংসদের ১৭তম অধিবেশন পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে মাত্র ২৮ ও ৮ কার্যদিবস। চলতি সংসদে বিরোধী দল ও বিরোধীদলীয় নেতার সংসদ বর্জনের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে।বেতন ভাতা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে না নেইসংসদ বর্জন করলেও বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে না নেই জনপ্রতিনিধিদের। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন বাবদ ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা তুলেছেন। মন্ত্রী পদমর্যাদার কারণে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন। তিনি বিমান ভাড়া বাবদ এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা পেয়েছেন। অন্যান্য ভাতা তুলেছেন ৫৭ লাখ টাকা। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্য হিসেবে যাতায়াত ভাতাও নিয়েছেন। কমিটির বৈঠক অনুযায়ী তারা টাকা তুলেছেন। বিদেশে গেছেন। নিয়েছেন বিদেশ ভ্রমণ ভাতা। সংসদ সদস্য হিসেবে অনেকে শুল্কমুক্ত বিলাসবহুল অত্যাধুনিক গাড়ি নিয়েছেন। বিরোধী দলের সদস্যরা মোট প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়েছেন। চলতি পুরো এক বছরে তাদের পেছনে আরও ব্যয় হবে পাঁচ-ছয় কোটি টাকা। তাও তারা তুলবেন বলে আশা করা যায়।শুভ সূচনা, অতঃপরবহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের সেই সরকারের পর আসে অনেক প্রত্যাশার মহাজোট সরকার। ২০০৮ সনের ২৯ ডিসেম্বর দেশে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়। অনেক সমালোচনা থাকলেও এখন গণতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনা করছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ সরকার যাত্রা শুরু করে। ২৫ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত আটটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদ বিদায় নিয়েছে। নানা কারণে নবম সংসদ একেবারেই ভিন্ন। প্রথম অধিবেশনে ৪৮ মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। এ সরকারের আমলে দেশে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলকে পাঁচটি সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ দেওয়া, নারী স্পিকার পদ প্রদানসহ নারীকে সংসদ উপনেতা, হুইপ ও সভাপতির পদ দেওয়া ছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করা, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা, অর্পিত সম্পত্তি আইনসহ বহুল আলোচিত বিল পাস হয়। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন চালু, প্রথমবারের মতো অধিবেশনে শিশু গ্যালারি স্থাপন, সবার জন্য সংসদ ভবনের প্রবেশ দ্বার উন্মুক্ত করা, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিষয়ে সর্বসম্মতিতে সংসদে বিল পাসের মতো আলোচিত অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এগুলোর একটিতেও বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নেই।প্রতিশ্রুতি ভঙ্গবিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে সংসদকে কার্যকর ও সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি ছিল। এলাকার উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা বলার জন্য সংসদ-সদস্য নির্বাচন করেন সাধারণ মানুষ। বিরোধী দলের যে কয়জন সদস্য আছেন, তাদের দিকেও চেয়ে আছেন জনগণ। কিন্তু কী প্রতিদান দিয়েছেন তারা? নির্বাচিত হওয়ার শুরু থেকেই বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের পালা চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি এক চরম বিশ্বাসঘাতকতা। নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে যেমন, তেমনি জাতির সঙ্গে চরম অবমাননা ভোটারদের সম্মানের। জাতীয় সংসদ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সরকারি দলের একচেটিয়া অধিকারভুক্তও নয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এখানে কথা বলবেন তাদের জনগণের। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে তাদের মুখে। সেই জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে সংসদ বর্জন করে চলেছেন। আবার অবিবেচকের মতো, সংসদ থেকে সব সুযোগসুবিধা ভোগ করছেন। সরকারি গাড়ি নিচ্ছেন। গণতন্ত্রের জন্য এ এক অভূতপূর্ব প্রহসন। বিশ্লেষকদের মতে, সংসদ বর্জনের এ রাজনীতি মানুষ এখন আর পছন্দ করেন না। এমনকি বিএনপির ঘোর সমর্থকরাও এ প্রবণতাকে ভালো ভাবে দেখছেন না। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি সংসদে কথা বললে তা-ই তাদের জন্য ভালো হতো। জনসমর্থনও বাড়তো। কিন্তু তা না করে হঠকারী পথ বেছে নিয়েছে দলটি। দীর্ঘ সময় ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে। দিচ্ছে একের পর এক হরতাল। এতে সহিংসতা বাড়ছে, মানুষ মরছে।সুযোগের অপব্যবহার, আইনের সুপারিশসংবিধান অনুযায়ী টানা ৯০ কার্যদিবস অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকার সুযোগ পান সংসদ সদস্যরা। কিন্তু এই সুযোগের অপব্যবহার করে বিরোধী দল নিরন্তর সংসদ বর্জনের রেওয়াজ করে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধের সুপারিশ করেছে। সংস্থাটির মতে, সংসদ কার্যকর ও গণমুখী করা এবং সংসদের মালিকানায় জনগণের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিদ্যমান আইন ও চর্চাকে ঘোষণাপত্রের আলোকে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে। আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধ করা, আইন প্রণয়ন ও সংসদীয় কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। টিআইবি বলছে, বাংলাদেশের মতো সংসদ বর্জনের দৃষ্টান্ত বিশ্বের অন্য কোনো দেশে নেই। আইন করে সংসদ বর্জন বন্ধ করা এবং দলগতভাবে সংসদের অধিবেশনে যোগদান থেকে সর্বোচ্চ ৩০ দিন বিরত থাকার বিধান রাখা উচিত। একাধারে সাতদিনের বেশি অনুপস্থিত থাকা যাবে না, এমন বিধানও করা যেতে পারে। সংসদ সদস্যদের আচরণবিধিকে আইনে রূপান্তরের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। টিআইবির তথ্যানুযায়ী, ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের হার ছিল শতকরা ৩৪ ভাগ। আর তা বর্তমানে ৮০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের জবাবদিহিতার অভাব থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংসদ সরকারি দলের আবাসস্থল নয় যে, তাদের আমন্ত্রণ বা আচার-আচরণের ওপর নির্ভর করে বিরোধী দল সংসদে যাবে। জনগণ তাদের ভোট দিয়েছে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। তারা সংসদে যাবেন অধিকার এবং দায়িত্ববোধ থেকে। ৯০ দিন নয়, সংসদে টানা ৩০ দিন অনুপস্থিত থাকলেই সদস্যপদ বাতিলের বিধান করা উচিত। এতে সংসদ বর্জনের প্রবণতা কমবে।’ সংসদ বর্জন বন্ধে আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও। তিনি বলেন, ‘আইন করে হলেও সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। এ রীতি আমাদের বাদ দিতে হবে। সংবিধান সংশোধন করে এমন আইন করতে হবে যেন, কোনো সংসদ সদস্য যদি ৩০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তার সদস্য পদ বাতিল হবে। এমনকি পরবর্তীতে সেই আসনে উপ-নির্বাচন হলেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।’ফের পদ রক্ষার যোগদানপ্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের স্বার্থে ও নিজেদের প্রয়োজনে আমরা আসন্ন অধিবেশনে যাব। তবে সেখানে আমরা কতো দিন থাকব, তা নির্ভর করবে সরকারি দলের আচরণের ওপর।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘ক্ষমতাসীনরা গত সাড়ে চার বছরে সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছে।’ মওদুদ আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা সংসদে যাওয়ার কথা বলেছেন। আমরা কারো আহবানে নয়, জনগণের তাগিদে সংসদে যাব।’ বিএনপির অনুপস্থিতিতেই গত ৩০ এপ্রিল সংসদের সপ্তদশ অধিবেশন শেষ হয়। টানা ৭৭ দিন অনুপস্থিতির পর সর্বশেষ গত বছরের ১৮ মার্চ সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। মওদুদ বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দলকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। আমাদের নেতার বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখা হয়। এবারও যদি এ রকম অবস্থা ঘটে, তা হলে আমরা সংসদে কীভাবে থাকব?’ বিএনপির এ অন্যতম নীতিনির্ধারকের বক্তব্যেই স্ববিরোধিতা লুকিয়ে আছে। তিনি বলেছেন, জনগণের তাগিদে তারা সংসদে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, সেই তাগিদ তারা এতোদিন অনুভব করেননি কেন? অবশ্য, ‘নিজেদের প্রয়োজনে’ সংসদে যাচ্ছেন, কথাটি তিনি সঠিক বলেছেন। কারণ সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে হবে। টানা সংসদ বর্জন করে আসা বিরোধী দলের সদস্যদের অনুস্থিতি ৮২ কার্যদিবস ছুঁয়েছে। এখন পদ ও সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার তাগিদেই তারা সংসদে যাচ্ছেন।
false
fe
ভাষার মুনাফা, প্রজন্মের আগ্রহ ভাষার মুনাফা, প্রজন্মের আগ্রহফকির ইলিয়াস==================================ভাষা নিয়ে গর্ব করার মতো অনেক কিছুই আছে। বিশেষ করে সেই ভাষা যদি মানুষের যাপিত জীবনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। সে ভূমিকাটি কী রকম? তা হচ্ছে এরকম- একজন ইংরেজি ভাষাভাষী আমেরিকান, তার ব্যবসার প্রয়োজনে চীনে গিয়ে চাইনিজ ভাষাটি শিখে নিচ্ছেন। বাংলা ভাষায় কবিতা লিখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। বাংলা ভাষায় গান লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ সেই কবিতা, সেই গান অন্য ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। পাশ্চাত্যের কোনো প্রকাশনী তা প্রকাশ করে লুটে নিতে চাইছে মুনাফা। সবই হচ্ছে বাণিজ্যের কারণে। ভাষা যদি মুনাফা লাভের সিঁড়ি হয়ে ওঠে, তাহলে তা যে কোনো মহলে আদৃত হবে না কেন ?বাংলাদেশই বাংলা ভাষার চারণভূমি হিসেবে টিকে থাকবে। কথাগুলো বলছেন বাংলা ভাষাভাষী অনেক প্রাজ্ঞজন। অথচ এ বাংলাদেশেই এখন অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। অভিভাবকরা জানেন ও বোঝেন তাদের সন্তানদের বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে।ভাষাবিদ্যায় পারদর্শী হওয়ার কথা ভাবলে আমরা যে চিত্রটি প্রথমেই দেখি, তা হচ্ছে একটি অগ্রসরমান প্রজন্মর ভবিষ্যৎ। তা নির্মাণে প্রয়োজন নিরলস অধ্যবসায়। একটি প্রজন্ম শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে দুটি বিষয়ের প্রয়োজন পড়ে খুব বেশি। প্রথমটি হচ্ছে সৎভাবে সমাজের অবকাঠামো নির্মাণ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সমকালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর্মপরিধির ব্যাপ্তি ঘটানো। কাজ করতে হলে একটি যোগ্য কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন পড়ে, যারা তাদের মেধা ও মনন দিয়ে কাজ করবে নিরন্তর।জ্ঞানার্জনে ভাষা একটি ফ্যাক্টর তো বটেই। কারণ মানুষ না জানলে, সেই তথ্য-তত্ত্ব এবং সূত্রগুলোকে নিজের জীবনে, সমাজজীবনে প্রয়োগ করতে পারে না। সেজন্য প্রয়োজন পড়াশোনা। পড়াশোনা করতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন। প্রয়োজন সেই ভাষাটিও রপ্ত করা। বাংলাদেশের নিরক্ষর মানুষ প্রয়োজনীয় অক্ষরজ্ঞান পেলে নিজেদের জীবনমান যেমন বদলাতে পারবেন, তেমনি পারবেন সমাজের চিত্রও বদলে দিতে। একজন শিক্ষিত মা-ই পারেন একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে। আমরা সে কথাটি সবাই জানি এবং মানি।ভাষার যত রকম প্রয়োজনীয়তার সংজ্ঞা আমরা তুলি না কেন, প্রধান কথাটি হচ্ছে একটি জাতিকে শিক্ষিত করে তোলার গুরুত্ব। মানুষ সুশিক্ষিত হলেই তার জ্ঞান খুলবে, সে উদার হবে, সৎ কাজগুলো করবে। এটাই নিয়ম। পাশ্চাত্যে আমরা উচ্চশিক্ষিতের যে হার দেখি, ওই জনশক্তিই রাষ্ট্র গঠন, পরিচালনায় একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।আমার এক বন্ধু নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পোলিশ এ বন্ধুটির সঙ্গে আমার নানা বিষয়ে কথা হয়। সমাজবিদ্যার এ শিক্ষক আমাকে বারবার বলেন, শক্তিশালী ভাষাই বিশ্বে পুঁজির আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করছে। তার কথাটি মোটেই মিথ্যা নয়। নিউইয়র্ক তথা গোটা উত্তর আমেরিকার একটি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা নরটন অ্যান্ড কোম্পানির বেশ কয়েকজন কর্ণধারের সঙ্গে ‘ভাষা ও সাহিত্য’ বিষয়ে আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয়েছে। তারা একবাক্যে বলতে চান, মুনাফার লোভেই তারা মহাকবি ওমর খৈয়াম, জালালুদ্দিন রুমী থেকে নাজিম হিকমত, রবীন্দ্রনাথ কিংবা মাহমুদ দারবিশের রচনাবলিকে ইংরেজিতে অনুবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, নিজস্ব আঙ্গিকে। তারা তা ইংরেজিতে ছাপিয়েছেন। বাজারজাত করেছেন। এতে বিশ্বসাহিত্যে এসব মহৎ লেখক যেমন আদৃত হচ্ছেন কিংবা হয়েছেন, তেমনি তাদের বই বিক্রি করে আয় হয়েছে লাখ লাখ ডলারও।বাংলা ভাষার সন্তান বাঙালি জাতি। জাতিসত্তা থেকে এ চেতনা আমরা কোনো মতেই সরাতে পারব না। পারার কথাও নয়। কিন্তু এই বলে আমরা অন্যভাষা রপ্ত করব না বা করার আগ্রহ দেখাব না; তা তো হতে পারে না।এখানেও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির বিষয়টি আগে আসে খুব সঙ্গত কারণে। ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ু নামে দুটি অঙ্গরাজ্যের কথা আমরা জানি। কেরালা অঙ্গরাজ্যের মানুষ দুটি ভাষা জানেন বিশেষভাবে। একটি কেরালাদের নিজস্ব ভাষা মালেআলাম আর অন্যটি ইংরেজি। সেখানে হিন্দির তেমন দাপট নেই। একই অবস্থা তামিলনাড়ুতেও। তারা তামিল এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। বিদেশে চাকরি নিয়ে কেরালা-তামিল থেকে যারা আসেন, দেখলে মনে হয় ইংরেজি যেন তাদের মাতৃভাষাই। তাদের লক্ষ্যটি হচ্ছে, ভাষার আলো গ্রহণ করে একজন দক্ষ আইন প্রফেশনাল কিংবা টেকনোলজিস্ট হওয়া। আর সেজন্য তারা ইংরেজিকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন স্কুলজীবন থেকেই।স্যাটেলাইট টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে বাংলাদেশের বইমেলার ওপর অনুষ্ঠানগুলো প্রতিদিনই দেখি। মনে পড়ছে একবার একটি অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, একজন লেখক তার বইয়ের প্রচার করছেন একটি লাইভ অনুষ্ঠানে। তার গ্রন্থের বিষয় কীভাবে আলুর অধিক ফলন করা যায়। বিষয়টি চমকপ্রদ। বর্তমান বিশ্বে আলু চাষের প্রতিযোগিতা চলছে। খাদ্য হিসেবে পাশ্চাত্যে বিভিন্ন আইটেমের আলুখাদ্য জনপ্রিয় হলেও প্রাচ্যে তা জনপ্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি মনে করি একজন শিক্ষিত কৃষক ক্ষুদ্র আকারে তার নিজের অধিক ফলন অভিজ্ঞতা বিষয়টি হাতে লিখে, কম্পোজ করিয়ে অন্যদের মাঝে বিতরণ করতে পারেন। বিষয়টি ক্ষুদ্র হলেও প্রধান দিকটি হচ্ছে একজন শিক্ষিত কৃষকই তা পারবেন। আর সেজন্যই শিক্ষার বিষয়টি আগে আসছে। শিক্ষিত হলেই মনের প্রখরতা বাড়ে। আর শিক্ষাগ্রহণ করা যায় জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত।প্রতি বছর বাংলাদেশে ভ্রমণবিষয়ক অনেক বই বের হয়। ট্যুরিজম আজকের প্রজন্মের একটি শখের বিষয়। সিলেট কিংবা রাঙ্গামাটিতে কী দেখা যাবে- তা জানতে পারছে তারা ওই বই পড়েই। কয়েক বছর আগে আমরা ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কয়েকটি কৃষিফার্ম সফর করতে গিয়েছিলাম। ফ্লোরিডায় বেশকিছু ফার্ম আছে, যেগুলোর সব কর্মীই স্প্যানিশ ভাষাভাষী। এরা ইংরেজি একটি অক্ষরও জানেন না। সেখানে কৃষিবিষয়ক সরকারি পুস্তিকাগুলো স্প্যানিশ ভাষায়ই বিতরণ করা হয় সরকারি উদ্যোগে।হ্যাঁ, ভাষার আলো ছড়িয়ে দিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা উদ্যোগের প্রয়োজন খুবই জরুরি। বাংলাদেশের ভেতরে আদিবাসী ভাষার অনেক কবি, সাহিত্যিক, মনীষী, চিন্তাবিদ, দীক্ষক আছেন যাদের নামটি পর্যন্তও হয়তো আমরা জানি না। তাদের চিন্তাচেতনা যদি বাংলায় রূপান্তরিত হতো তবে বাংলা ভাষাভাষীরা হয়তো তা জেনে উপকৃত হতে পারতেন। একই দেশের ভেতরেই আছে অনেক ভাষা। আর এক বিশ্বে কত ভাষা আছে তা জানার সুযোগ হয়তো সব মানুষের পুরো জীবনেও আসবে না।আমি সব সময়ই রূপান্তরে বিশ্বাস করি। রূপান্তরই হচ্ছে ফিরে আসা, অনূদিত হওয়া কিংবা বিবর্তিত হওয়া। বিবর্তন না হলে নতুনের উন্মেষ ঘটে না। তুলনামূলক আলোচনা ছাড়া জানা যায় না বিশ্বের ভাষার নান্দনিক বিবর্তন কীভাবে ঘটছে। লক্ষ করেছি, চলতি সময়ে বইমেলায় বেশকিছু দুর্লভ প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্য যেমন চর্যাপদ, সিলেটি নগরী, আদিবাসী শ্লোক নিয়ে বেশ কাজ হয়েছে। আজকের লেখকরা বাংলা ভাষায়ই লিখছেন ক্যারিয়ার গড়াবিষয়ক বই। ওপরে কীভাবে উঠবেন। চাকরির সিঁড়ি কীভাবে নির্মাণ করবেন। ভাষা প্রয়োজনেই শেখে মানুষ।নিউইয়র্কের একজন নতুন প্রজন্মের বাঙালি-মার্কিন আইনজীবীকে জানি যিনি তার পেশাগত কারণেই শিখে নিয়েছেন বাংলা ভাষা, বাংলা অভিধান তালাশ করে।এগুলো আশার বিষয়। আমি মনে করি এসব উৎস সন্ধানই প্রজন্মকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের পাশাপাশি ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনেও এগিয়ে যাবে স্বপ্নের বাংলাদেশ।বাংলাদেশে এখন বইমেলা চলছে। বই প্রকাশিত হতে শুরু করেছে লন্ডন, নিউইয়র্ক থেকেও স্থানীয় বাংলা প্রকাশনীর মাধ্যমে। কারণ বাংলা কম্পোজ এখন খুবই সহজ।বিভিন্ন ভাষার বেশ কিছু অনুবাদগ্রন্থ এরই মধ্যে বেরিয়েছে। বাংলাদেশের প্রকাশকরা অনুবাদ গ্রন্থের প্রতি যত মনোযোগী হবেন, ততই লাভ বাংলা ভাষার। বাংলা সাহিত্যের। মূল কথা হল, সাহিত্যের রস আস্বাদন করা। তা যদি ইংরেজিতেও হয় ক্ষতি কী?ভাষার আলো গ্রহণের একটা প্রতিযোগিতা চলছে আজকের বিশ্বে, নিজেকে টিকিয়ে রাখার কারণেই। বাঙালি প্রজন্ম তা থেকে পিছিয়ে থাকবে কেন? মনে রাখতে হবে, ‘ভাষার অর্থনীতি’ নামে একটি শক্তি এখন প্রজন্মের দরজায় কড়া নাড়ছে। যত জ্ঞান-তত অর্থ, এমন একটা নীতি চালাতে চাইছে পশ্চিমা বিশ্ব। ফলে প্রযুক্তির শক্তির পাশাপাশি ভাষার শক্তিও দিনে দিনে প্রখর হচ্ছে। যে আলো ধারণ করা প্রয়োজন প্রতিটি অগ্রসরমান মানুষেরই। ---------------------------------------------------------------------দৈনিক যুগান্তর ॥ ঢাকা ॥ প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ শনিবার সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১২
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮৭ রবীন্দ্রনাথের জন্মের সময় সারদা দেবীর বয়স ৩৪-এর মত৷ রবীন্দ্রনাথের রচনায়, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিতে মায়ের উপস্থিতি অবিশ্বাস্য রকম কম৷ রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন তেরো বছর দশ মাস, তখন তিনি মাকে হারান৷ ততোদিনে তাঁর কবিতা লেখা শুরু হয়ে গেছে৷ কবিতা শুনিয়ে সন্দিগ্ধ ও মুগ্ধ করেছেন সবাইকে৷ এমনকি সেকালের বিখ্যাত সাময়িক পত্র ‘তত্ত্ববোধিনী'-তে ‘অভিলাষ' নামে তাঁর একটি দীর্ঘ কবিতাও ছাপা হয়ে গেছে৷ কবিতার নিচে অবশ্য রবীন্দ্রনাথের নাম ছিলো না৷ লেখা হয়েছিলো ‘দ্বাদশ বর্ষীয় বালকের রচিত'।অবাক করা বিষয় হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মায়ের সম্পর্কে কোথাও কিছু লেখেন নি তেমন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ছেলেবেলা’ ও ‘জীবনস্মৃতি' পড়ে খুবই সামান্য তাঁর মায়ের সম্পর্কে জানা যায়।বিভিন্ন বই-পত্র পড়ে যতোটুকু জানা যায়, তাতে দেখা যায় যে- তিনি একেবারেই একজন সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের এক বোন স্বর্ণকুমারী দেবী এক জায়গায় লিখেছেন-“মাতাঠাকুরাণী ত কাজকর্ম্মের অবসরে সারাদিনই একখানি বই হাতে লইয়া থাকিতেন। চাণক্যশ্লোক তাঁহার বিশেষ প্রিয় পাঠ ছিলো, প্রায়ই বইখানি লইয়া শ্লোকগুলি আওড়াইতেন। তাহাকে সংস্কৃত রামায়ণ মহাভারত পড়িয়া শুনাইবার জন্য প্রায়ই কোনো না কোনো দাদার ডাক পড়িত।” এই ডাকে রবীন্দ্রনাথকেও সাড়া দিতে হয়েছিলো। রবীন্দ্রনাথ মাকে এইসব শুনাতে পারছেন! এতে তাঁর যেমন অহঙ্কার হতো, তেমনি মায়েরও অহঙ্কার হতো যে তাঁর সন্তান এতো সুন্দর করে রামায়ণ মহাভারত পড়তে পারছে। রবীন্দ্রনাথের মায়ের জীবন যাপন একেবারেই ছিলো সাদামাটা। ভিতর বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে গল্প-গুজব করে কাটাতেন। রবীন্দ্রনাথ মায়ের এই আড্ডার কথা লিখেছেন এভাবে, ‘মনে পড়ে বাড়ি-ভিতরের পাঁচিল-ঘেরা ছাদ। মা বসেছেন সন্ধেবেলায় মাদুর পেতে, তাঁর সঙ্গিনীরা চারদিকে ঘিরে বসে গল্প করছে। সেই গল্পে খাঁটি গল্পের দরকার ছিলো না। দরকার কেবল সময় কাটানো।... মায়ের সঙ্গিনীদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তি ছিলেন ব্রজ আচার্য্যরি বোন, যাঁকে আচার্যিনী বলে ডাকা হ’ত। তিনি ছিলেন এ বৈঠকে দৈনিক খবর সরবরাহ করবার কাজে।” রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একেশ্বরবাদী এবং ব্রাহ্মধর্মে বিশ্বাসী। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি মুসলমানদের সঙ্গে এই বাংলাদেশেই কাটিয়েছেন। তাঁর অজস্র রচনা, বিশেষ করে কবিতা ও ছোটগল্পে মুসলমানদের প্রসঙ্গ বারবার উচ্চারিত হয়েছে। ধর্মেকর্মে তিনি ছিলেন সর্বজনীন এবং মানবতাবাদী। তাঁর সাহিত্যের সীমানা শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। তিনি ইসলাম ও ইসলাম ধর্মের 'প্রফেট' সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে সচেতন ছিলেন। ১৯৩৩ সালের ২৬ নভেম্বর পবিত্র মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে মুম্বাই শহরে একটি সমাবেশ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মির্জা আলী আকবর খান। রবীন্দ্রনাথ এ সভায় ইসলামের আদর্শ-মহত্ত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে একটি অপূর্ব বাণী প্রেরণ করেছিলেন। সভায় তাঁর প্রদত্ত বাণী পড়ে শুনিয়েছিলেন সরোজিনী নাইডু। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাণীতে লিখেছিলেন, জগতে যে সামান্য কয়েকটি মহান ধর্ম আছে, ইসলাম ধর্ম তার মধ্যে অন্যতম। মহান এই ধর্মমতের অনুগামীদের দায়িত্বও তাই বিপুল। ইসলামপন্থীদের মনে রাখা দরকার, ধর্মবিশ্বাসের মহত্ত্ব আর গভীরতা যেন তাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ওপরও ছাপ রেখে যায়। আসলে এই দুর্ভাগা দেশের অধিবাসী দুটি সম্প্রদায়ের বোঝাপড়া শুধু তো জাতীয় স্বার্থের সাম্প্রতিক উপলব্ধির ওপর নির্ভর করে না। সত্য দ্রষ্টাদের নিঃসৃত শাশ্বত প্রেরণার ওপরও তার নির্ভরতা। সত্য ও শাশ্বতকে যাঁরা জেনেছেন ও জানিয়েছেন তাঁরা ঈশ্বরের ভালোবাসার পাত্র এবং মানুষকেও চিরকাল ভালোবেসে এসেছেন। হাইকু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জাপান যাত্রী তে বলেন,‘এ ছবি দেখার কবিতা, গান গাওয়ার কবিতা নয়।’সবচেয়ে নামকরা হাইকু কবি বাশো (১৬৪৪-১৬৯৪) জেন বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ছিলেন। এরপর দুজন নামকরা কবি হচ্ছেন বুসন (১৭১৫-১৭৮৩) ও ইসা (১৭৬৩-১৮২৭)। হাইকু অনুবাদ করা কঠিন। এর মধ্যে উদ্ধৃতি, উপমায় দ্ব্যর্থবোধক ভাব রয়েছে। এ ছাড়া বহু সিলেবল-বিশিষ্ট জাপানি ভাষা থেকে অনুবাদ করাও বেশ কঠিন। হাইকু অনেক সময় সমগ্র কোনো ভাব বা সম্পূর্ণ কোনো বক্তব্যের নিদর্শন নয়। ( চলবে...।)
false
rg
বুশ প্রশাসনের অফিসিয়াল দুষ্কর্মের প্রামান্য দলিল_ দ্য নিউ পার্ল হারবার।। রেজা ঘটক ঐতিহাসিক ৯/১১ প্রসঙ্গে কেয়ারমন্ট স্কুল অব থিওলজির প্রফেসর, এমিরেটস এবং সেখানকার সেন্টার ফর প্রসেস স্ট্যাডিজের কো-ডিরেক্টর ডেভিড রে গ্রিফিন দুটো বই লিখেছেন। ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার: ডিস্টার্বিং কোয়েশ্চনস অ্যাবাউট দ্য বুশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ৯/১১’ (২০০৪) এবং ‘দ্য ৯/১১ কমিশন রিপোর্ট- অমিশনস অ্যান্ড ডিস্টরশনস’ (২০০৫)। ৯/১১ ঘটনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’। নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বিল্ডিং এবং পেন্টাগনে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর-এর হামলার পেছনে নানান রহস্যময় সংযোগ আছে আর সে সবের একটা ধারাবাহিক পর্যালোচনা করতে গিয়ে গ্রিফিন যে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন- তা এই বইতে স্থান পেয়েছে। ৯/১১-এর হামলা সম্পর্কে বুশ প্রশাসনের অফিসিয়াল ব্যাখ্যায় যে সমস্ত ফাঁক-ফোকর আছে, সে সবের বিপে সম্পূর্ণ আবেগ বিবর্জিত অথচ ভারসাম্য রাকারী এবং গবেষণা ও তথ্য নির্ভর একটি মূল্যবান বই ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সেই বিভীষিকাময় সকাল থেকে বুশ প্রশাসনের অনবরত প্রচার করতে থাকা নানান ‘ষড়যন্ত্র থিয়োরির’ দিকে আমেরিকানদের নজর স্থির ছিল বলে ইতিহাসের গতিধারা বদলে দেয়া সেই সন্ত্রাসী হামলার ভেতরে যে আরো কিছু ছিল, গ্রিফিন সেই ঘটনার পরে ও বিপরে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছেন এই বইতে। ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ গ্রিফিনের একটি অত্যন্ত সাহসী ও নিখুঁত দৃষ্টান্তমূলক কাজ। সুচিন্তিত এবং গবেষণা করে অনেক যতেœ লেখা এই বইটির পৃষ্ঠা ওল্টানো হবে পাঠকদের জন্য বড় বেদনাদায়ক ও অস্বস্থিকর। তবু আমাদের পৃষ্ঠা উল্টে যেতে হবে, কারণ সেই ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের সম্পর্কে সত্য কথাটা জানতে হবে আমাদেরকে। ৯/১১ কে ঘিরে এবং তার আগের ও পরের বুশ প্রশাসনের ঘটনাপ্রবাহকে আমাদেরকে অন্যসব গতানুগতিক জ্ঞানের কার্পেটের নিচে গুজে রাখলে আসল সত্য চিরকালই কৌটাবন্দি হয়েই থাকবে।আপনি যদি মাত্র ২০ ভাগ খোলা মন নিয়েও ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বইটি পড়েন, তাহলে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার সরকারি মহলের সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ে কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাসি বা সাংবিধানিক গণতন্ত্র যেভাবে কাজ করে বলে এতোদিন সবাই জেনে এসেছেন, তাদের সে ধারনা নিশ্চিত বদলে যাবে। বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে মতাধর রাষ্ট্রটির বিদ্যমান রাজনৈতিক বৈধতার গভীর সঙ্কট অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই বইতে। বুশ প্রশাসনের অনেক কুকীর্তির কথাই এই বইতে অত্যন্ত জোড়ালো ভাষায় খুব নিখুঁতভআবে সাহসীকতার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন এক আমেরিকান প্রফেসর গ্রিফিন। স্যার গ্রিফিন টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে চালু আছে এমন অনেক অজানা, অব্যাখ্যাত সত্য ঘটনা ছাড়াও ৯/১১-এর স্বাধীন তদন্ত প্রভাবিত করতে তৎকালীন মতাসীন বুশ প্রশাসনের নানামুখী প্রয়াস এবং ৯/১১-এর আগে বুশ প্রশাসনের ভেতরের লোকদের তৈরি করা প্রচুর ব্লু প্রিন্টের অনেক প্রমান হাজির করেছেন ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বইতে। ৯/১১ হামলার পর বুশ প্রশাসনের প্রায় প্রত্যেকে সেই ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ীই কাজ করে গেছেন চাবি দেয়া পুতুলের মতো। গ্রিফিন অসাধারণ ধৈর্য, তিতিা ও মেধা নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য টুকরো টুকরো তথ্য উদ্ধার করে একত্রিত করেছেন এই বইতে। ৯/১১-এর পর আমেরিকান মিডিয়ার মূলস্রোত হ্যান্ড-ইন-গ্লাভ বা চোরের সাী গাঁটকাটার মতো একজোট হয়ে সরকারের সহযোগী হিসাবে কাজ করেছে। বিনা প্রশ্নে সবকিছু মেনে নেয়াই দেশপ্রেম- বুশ প্রশাসনের এই নীতির কেউ ভিন্ন মত পোষণ করলে পরিণাম শুভ হবে না বলে পরো হুমকিকে সেদিন মিডিয়া ভয়ে রা শব্দটি করেনি। মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বুশ প্রশাসনকে ৯/১১ সঙ্ক্রান্ত কোন কঠিন প্রশ্ন করা হলে জবাব দেয়ার বদলে কাগজের তৈরি ছোট ছোট আমেরিকান পতাকা দোলানো তখন রীতি হয়ে গিয়েছিল। কোথাও পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখলে শ্লোগান উচ্চারিত হতো- ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড। ৯/১১-এর দুই বছর পূর্তি উপলে এক টিভি সাক্ষাৎকারে জর্জ বুশের ডিফেন্স সেক্রেটারি ডোনাল্ড রামসফিল্ড বিষয়টাকে বর্ণনা করেন- ‘এ ব্লেসিং ইন ডিসগাইস’ বা ছদ্মবেশে নিয়ে আশা আর্শীবাদ হিসেবে। ৯/১১-এর আসল সত্যকে পুরোপুরি মিথ্যার কম্বল দিয়ে যত্নের সাথে মুড়ে রাখার বুশ প্রশাসনের প্রচেষ্টাকে গ্রিফিন এই বইয়ের মাধ্যমে পাঠকদের বুশ প্রশাসনের ষড়যন্ত্র থিয়োরির বীভৎস সত্যের মুখোমুখী দাঁড় করান। সম্মিলিত অসত্য ভাষণ আর অস্বীকৃতির কারণে আমেরিকার জনতার বিবেক যেখানে ঘুমিয়ে ছিল- গ্রিফিন তাঁর ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বইটি তাদের জন্য অ্যন্টিডোট বা প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করবে। আরেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন একবার গণতন্ত্র রার হাতিয়ার হিসেবে এই বলে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন যে- ‘প্রাইজ অব লিবার্টি ইজ ইটারনাল ভিজিলেন্স’। স্বাধীনতার মূল্য হচ্ছে অবিরাম সতর্কতা। আমেরিকা এতোদিন যে রাজনৈতিকভাবে ধোয়া তুলসি পাতার ছদ্মাবরণ পড়ে সাধুর আচরণ করে এসেছে গ্রিফিনের ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ সেই মুখোশটি খুলে দিয়ে সেখানে তাদের ছদ্ম গণতন্ত্রের গ্রহনযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন। নিজের উদ্দেশ্য পূরণে ‘সুযোগ সৃষ্টি করে’ তা কাজে লাগানোর দীর্ঘ ইতিহাস আছে আমেরিকার। বিশেষ করে যুদ্ধ আর শান্তির ক্ষেত্রে। ৯/১১-এর আক্রমণকে কেন্দ্র করে বুশ প্রশাসনের সরকারি ব্যাখ্যার বিপরীতে বাছাই করা কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে গবেষণা করে গ্রিফিন আবারো প্রমাণ করলেন আমেরিকা স্বার্থের জন্য কী বীভৎস কুকর্ম করায় অভ্যস্থ এক সাক্ষাৎ শয়তান। বুশ প্রশাসনের ‘ওয়ার অন টেরর’ ছিল আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদ বা গ্লোবাল ডমিনেশন প্রজেক্ট। ঐতিহাসিকরা একদিন ঠিকই পেছন ফিরে তাকাবেন এবং কেন ২,৮১০ জন নিরীহ মানুষকে ৯/১১-এ প্রাণ হারাতে হয়েছিল এবং কীভাবে একুশ শতকের সত্যিকারের শুরুটা হয়েছিল, সে বিষয়ে সবাই নিশ্চিত হতে চাইবেন। প্রফেসর গ্রিফিন ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বইতে ৯/১১ ঘটনার সেই সব অজানা অথচ নির্মম সত্যের ভিত্তি রচনা করেছেন। বুশ প্রশাসনের যে সকল দলিলে ‘রি-বিল্ডিং আমেরিকান’স ডিফেন্স’ বা আমেরিকার প্রতিরা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য ‘নতুন পার্ল হারবার’ -এর প্রয়োজন আছে বলে সুস্পষ্ট উলে­খ আছে। ‘প্রজেক্ট ফর দ্য নিউ আমেরিকান সেঞ্চুরি’ নামের এক সংগঠন যে প্রকল্পের স্রষ্ঠা। ৯/১১ ঘটনা আমেরিকান ফরেন পলিসির ইতিহাসে অন্য অনেক ঘটনার সঙ্গে ফরাসি কেমিস্ট লুই পাস্তুরের বিখ্যাত স্বতঃসিদ্ধ ‘ফরচুন ফেভার্স দ্য প্রিপ্রেয়ার্ড মাইন্ড’-এর মতোই অনেক নমুনা হয়ে থাকবে। ৯/১১-এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে- সেন্টগ্যাস (CentGas vs Central Asia Gas Pipeline) নামের কয়েকটি তেল কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত বিশাল এক কনসোর্টিয়ামকে সুবিধা করে দেয়া। সউদি আরবের ডেল্টা অয়েল আর আমেরিকার অয়েল জায়ান্ট ইউনোকাল হচ্ছে এই কনসোর্টিয়ামের মাথা। ইউনোকালকে তুর্কমেনিস্তানের বিশাল প্রাকৃতিক ভাণ্ডারের তেল-গ্যাস আরব সাগর পর্যন্ত নিয়ে যেতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে সুদীর্ঘ পাইপ লাইন বসানোর সুবিধা করে দিতেই ৯/১১-এর এই হামলা চালানো হয়েছে। প্রফেসর গ্রিফিনের গবেষণায় এটাই প্রমাণ হয়েছে যে- ৯/১১ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেইনি, প্রতিরা সচিব ডোনাল্ড রামসফিল্ড, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর কন্ডোলিৎসা রাইস, সিআইএর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবি বাজি ক্রনগার্ড, সিআইএ-র পরিচালক জর্জ টেনেট, হোয়াইট হাউজ, পেন্টাগন, এফবিআই, ওসামা বিন লাদেন, সৌদি রাজপরিবার, আল কায়েদা, আইএসআই, ইউনোকাল, ডেল্টা অয়েল একত্রিত হয়ে অফিসিয়াল দুষ্কর্মের মাধ্যামে তাদের ‘ভিশন ফর টুয়েন্টি টুয়েন্টি’-এর সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে ৯/১১-এর ঘটনা ঘটিয়েছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জন বুকানন তাঁর এক জ্বালাময়ী ভাষণে স্বীকার করেন- আমরা সবাই ৯/১১ নিয়ে মিথ্যা কথা বলেছি। সেই অনুষ্ঠানে জন বুকানন গ্রিফিন রে ডেভিড-এর ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বইটির অনেক তথ্য উপাত্ত উপস্থিত আমেরিকানদের কাছে তুলে ধরে দাবী করেন- ৯/১১-এর ঘটনা নতুন করে পূর্ণ তদন্তের প্রয়োজন। গ্রিফিন হয়তো আমাদের কাছে অনেক অপ্রিয় সত্য তুলে ধরে ইতিহাসকে তার সঠিক পথে হাঁটতে প্রাথমিক কাজটি করেছেন। চঅঠঊচঅডঝ বা উত্তর আমেরিকান এয়ার স্পেসের সফিস্টিকেটেড রেডার মনিটরিং সিস্টেমের কাজ ও সমতা সম্পর্কে বলা হয় যে- ডাজ নট মিস এনিথিং অকারিং ইন নর্থ আমেরিকান এয়ার স্পেস। ইট ইজ ক্যাপাবল টু ডিটেক্টিং অ্যান্ড মনিটরিং এ গ্রেড নাম্বার অব টার্গেটস। অথচ ৯/১১-এর ঘটনায় পেন্টাগন যেটি হলো বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান, সেখানে হামলা হবার পরেও এক ঘণ্টা তাদের ফাইটার বিমানগুলো সেদিন ঘুমিয়ে ছিল এবং সেদিন তারা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা প্রচলিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে ৯/১১-এর হামলা প্রতিহত করার উদ্যোগ নেয়নি। প্রফেসর গ্রিফিন তাঁর ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বইতে বুশ প্রশাসনের অফিসিয়াল দুষ্কর্মের ক্রনিক্যাল খতিয়ান অত্যন্ত স্পষ্টভাবে খুবই যত্নের সাথে তুলে ধরে এক অভাবনীয় দুঃসাহসীকতার পরিচয় দিয়েছেন। যা যে কোন পাঠককেই অধীর আগ্রহ নিয়ে খুব ঠাণ্ডা মাথায় হজম করতে হবে। ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বইতে পাঠক জানতে পারবেন কীভাবে ৯/১১ ঘটনায় পাইলট বিহীন বিমান দিয়ে দূর নিয়ন্ত্রিত রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে হামলা করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আগে হামলা হলেও কীভাবে সাউথ টাওয়ার প্রথমে ধ্বসে যায়। আর অতো বড় টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষ থেকে কেউ যাতে কোনো প্রমাণ সামগ্রী হাজির করতে না পারে সে জন্য বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমে গোটা টাওয়ারের সবকিছুকে ধুলায় পরিনত করে কালো মেঘ বানিয়ে সেদিন উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে মজার যে ব্যাপারটি সেটি হলো- পেন্টাগনে বোয়িং ৭৫৭-এর হামলা বলে যা চাউর করা হয়েছিল, সেটি ছিল আসলে একটা মিসাইল হামলা। ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য দুষ্কর্মটি করে তাকে খোড়া অজুহাত বানিয়ে বুশ প্রশাসন কীভাবে আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা চালিয়ে পূর্ব-পরিকল্পিত ভিশন ফর টুয়েন্টি টুয়েন্টি বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছিল, সেই সব কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে পাঠককে প্রফেসর গ্রিফিনের ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বারবার পড়ার জন্য প্রেরণা যোগাবে। ওসামা বিন লাদেন, আল-কায়েদা যে বুশ প্রশাসনের সৃষ্টি এবং লাদেন আর বুশের মধ্যে যে সুগভীর বন্ধুত্ব এবং পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক এখনো বর্তমান তা ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ পাঠের আগে পাঠক কল্পনায় ভাবতে পারবেন না। প্রফেসর গ্রিফিনের ‘দ্য নিউ পার্ল হারবার’ বইটি একটি ঐতিহাসিক সত্য ঘটনার দলিল হয়ে থাকবে বলে পাঠক মাত্রই দাবী করবেন। দ্য নিউ পার্ল হারবার।। ডেভিড রে গ্রিফিন।। অনুবাদ: ইফতেখার আমিন।। প্রচ্ছদ: মশিউর রহমান।। প্রকাশক: আলমগীর সিকদার লোটন।। মূল্য: ২০০ টাকা।। পৃষ্ঠা: ২০৮।।গাবতলা, মগবাজার, ঢাকা ১৮ মার্চ ২০১০। ৪ চৈত্র ১৪১৬
false
fe
নীতির প্রতি আনুগত্য, রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা নীতির প্রতি আনুগত্য, রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা ফকির ইলিয়াস ========================================= পাশ্চাত্যের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে একটি প্রথা খুব জোরালোভাবে চালু আছে। কোনো রাজনীতিক, সরকারি দায়িত্ব নেয়ার আগে তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন কিংবা ছিলেন কি না। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নতুন কেবিনেটের যারা সদস্য হয়েছেন, তাদের ব্যাপারেও এই পর্যবেক্ষণটি কাজ করেছে খুব শক্তভাবে। প্রেসিডেন্ট ওবামা যাদের তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেককেই যেতে হয়েছে এসব ব্যাপক তল্লাশির মধ্যদিয়ে। অর্থবিষয়ক সেক্রেটারি মি. থিমোথি গেইথনারের নিয়োগের বিষয়টি ঝুলে আছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তিনি একবার তেতাল্লিশ হাজার ডলার ট্যাক্স প্রদান করেননি। নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হন্ডারের বিষয়টিও ঝুলে আছে। তার বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইভাবে স্বাস্থ্য ও মানবকল্যাণবিষয়ক সেক্রেটারি টম ডেশেলের বিরুদ্ধেও কর প্রদানে গড়িমসির বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজনে তার নিয়োগ কনফার্ম করতে দেরি হচ্ছে। সব আনুষঙ্গিক তদন্ত রিপোর্ট সম্পন্ন হলে এরা সবাই নিজ নিজ পদে নিয়োগের নিশ্চয়তা পেতে পারেন মার্কিন সিনেট-কংগ্রেস দ্বারা। অর্থাৎ বিষয়টি হচ্ছে এরকম, প্রেসিডেন্ট তার পছন্দের ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবেন। তবে তার কনফার্ম করবে সিনেট এবং কংগ্রেস। হিলারি রডহাম ক্লিনটন সেক্রেটারি অব স্টেটস হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সিনেট তা কমফার্ম করেছে। তিনি ৯৪-২ ভোটে এই নিশ্চিতি পেয়েছেন। যে দু’জন সিনেটর এই মনোনয়নের বিরোধিতা করেছিলেন- এরা হচ্ছেন, লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর মি. ডেভিড ভিটার এবং সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর মি. জিম ডেমিন্ট। তারা তাদের বিরোধিতার ব্যাখ্যায় বলেছেন, হিলারি ক্লিনটন সাবেক ফার্স্টলেডি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একটি আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংগঠন চালান। ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশন’ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় ডোনেশন পেয়ে থাকে। আর এর প্রভাব পড়তে পারে হিলারি ক্লিনটনের কর্মকান্ডে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বার্থ বিভিন্নভাবে ক্ষুন্ন হতে পারে। হিলারি ক্লিনটন তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেছেন এই যুক্তি। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের কোনো কাজে তার ব্যক্তিগত জীবনের কর্মকান্ড প্রভাব ফেলবে না। তিনি সে শপথ নিয়েই সেক্রেটারি অব স্টেটের দায়িত্ব নিচ্ছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, ওবামা প্রশাসনের সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে হিলারিকে পেতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন সিনেটর জন ম্যাককেইন। অথচ রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন ছিলেন বারাক ওবামার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট প্রতিদ্বন্দ্বী। সিনেটর ম্যাককেইন জোর দিয়ে বলেন, ‘আমেরিকান জাতি সব সময়ই ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় প্রয়োজনে, আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে আমরা আমাদের ঐক্যের শক্তি প্রদর্শন করেই যাবো।’ দুই. একটি পরিশুদ্ধ জাতি গঠনে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। মূলধারার পক্ষে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার প্রয়োজনে সব রাজনীতিককে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নামই প্রকৃত রাজনীতি। এই যে মার্কিন মুল্লুক, তা গড়ে উঠেছে বহুজাতিক, বহুভাষিক মানুষের সমন্বয়ে। বারাক ওবামা তার শপথ অনুষ্ঠানের ভাষণে সে কথা আবারো মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, এই দেশ খ্রিস্টান-মুসলিমদের। এই দেশ জুইশ-হিন্দুদের। এই দেশ তাদেরও, যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। বারাক ওবামার ভাষণে একটি বিষয় খুব উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, তিনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বে সন্ত্রাস দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চান। তিনি চান, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পারস্পরিক সৌহার্দ্যতার উন্নয়ন ঘটাতে। তার এই যে প্রত্যয়, তা আমরা শুরুতেই দেখছি। তিনি বহুল বিতর্কিত গুয়ান্তানামো বে-এর সামরিক প্রিজন সেলটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে আগামী ১২০ দিন সেখানের সব বিচার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে এবং ক্রমশ তা বন্ধ করা হবে। এই প্রিজন সেলটিতে অত্যন্ত অমানবিকভাবে বন্দিদের নির্যাতন করা হতো বলে বিভিন্ন মিডিয়া সংবাদ করেছে। কিন্তু বুশ প্রশাসন এতে মোটেই কর্ণপাত করেনি। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনে প্রথম কর্ম দিবসেই মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনী মোবারক, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট, জর্ডানের বাদশাহ কিং আব্দুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে কথা বলেছেন বারাক ওবামা। মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামা সাবেক ডেমোক্রেটিক লিডার সিনেটর জর্জ মিশেলকে দায়িত্ব দিয়ে একটি মিশন পাঠাবার প্রস্তাবও করেছেন। যা আপাতদৃষ্টিতে বেশ শুভ লক্ষণ বলেই মনে হচ্ছে। মানব সভ্যতার প্রথম শর্ত হচ্ছে শান্তি। আর বিশ্বে যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করা না যায় তবে ক্রমশ হানাহানিই হয়ে উঠবে মানবজাতির প্রধান নিয়ন্ত্রক। শান্তি প্রতিষ্ঠার কর্মপরিধির সঙ্গে আরেকটি অন্যতম ধাপ হচ্ছে, পরিশুদ্ধ নেতৃত্বের বিকাশ। কোনো রাষ্ট্রের নেতারা যদি দুর্নীতিবাজ হন, তবে সে রাষ্ট্রের প্রজন্মের ভবিষ্যৎ দীর্ঘকাল আঁধারেই নিমজ্জিত থেকে যায়। অখন্ড পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের গাদ্দারির কারণেই গণতন্ত্রের পথে এগুতে পারেনি। বারবার সামরিক দানবেরা এসেছে, গণতন্ত্র আসেনি। সবশেষে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়েই স্বাধীন হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশেও যদি প্রত্যেক নেতার ব্যক্তিগত জীবনাচার, তাদের কর্মকা- গভীরভাবে বিচার করার উদ্যোগ গৃহীত হতো, তবে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ দুর্নীতি প্রথমেই লোপ পেতো। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নই রাষ্ট্রে দেউলিয়াপনা টেনে আনে। যিনি কর দেবেন না, যিনি স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতি করবেন তিনি গণপ্রতিনিধি হবেন কেন? রাষ্ট্রে কি সৎলোকের অভাব আছে? এই যে দখল করে রাখার মানসিকতা সেটি একটি উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়। ব্যাহত করে মানুষের পথচলা। সৎ নীতির প্রতি আনুগত্য না থাকলে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। বাংলাদেশে গেল সাঁইত্রিশ বছরে শুধুই রাজনৈতিক তস্কর তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক কচ্ছপও তৈরি হয়েছে। যারা সময়ে সময়ে বুলি পাল্টায়, সব সময় সরকারি দলই তাদের দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসার পর এখন দেশে অনেকেই নব্য আওয়ামীলীগার। এরা শুধু দলের শত্রুই নয়, সমাজেরও শত্রু। এদের উচ্চাভিলাষের কাছেই পরাজিত হয় গণস্বপ্ন। এদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারলেই বাংলাদেশ একটি শুদ্ধ সমাজের মুখ দেখবে, সন্দেহ নেই। নিউইয়র্ক / ২৩ জানুয়ারি ২০০৯ ------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি । ঢাকা। ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ রোববার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৯:৪০
false
rg
টোকন ঠাকুরের কবিতাত্রয়ী খাদ্যখাবারদিঘিতে হাঁস শামুকদানা খোঁজেশরীর ভাসে… নাখমুখঠোঁট জলেদিঘিতে হাঁস ঝিনুকদানা খোঁজে…মৃগয়াকে ব্যাঘ্র… বনস্থলেপ্রয়োজনীয় খাদ্য মনে করেতোমার বুকে কী খুঁজেছি কালশামুক? ঝিনুক? মাতৃশিশুকাল?তোমার বুকে কী পেয়েছি কাল–পুরো শৈশব, হুলো বাল্যকাল?মৃগয়াকে ব্যাঘ্র… বনস্থলেনিজের জন্য খাদ্য কনফার্ম করেকাল কি ছিল অতিরিক্তকাল?তোমার বুকের তিলটি ছিল তাল… !এমন কি তিল কৃষ্ণ নহে, লাল?কালকে আকাশপাতাল ছিল কাল… !কালকে আমি বনস্থলে ছিলামপ্রমাণ ছিল, ব্যাঘ্র আমার নামতোমার বুকের মাংশ ছিল, কাঁচাতাই খেয়েই তো আজ পর্যন্ত বাঁচা–কাল পর্যন্ত বাঁচতে যদি চাইব্যাঘ্র আমি, কাঁচামাংশই চাইবকের চোখে পুঁটির ছবি আঁকাপুঁটির চোখেও কেঁচো আঁকা ছিলতোমাকে খেয়ে আমার বেঁচে থাকানা খেয়ে কারও বেঁচে থাকা ছিল?২৩/২/২০০৯তরুণ কবিযদি… মাত্র… তবেহবে কি হবে না হবে?নদী মাত্রই জলউতলা ধরণী তল…নারী মাত্রই, ঠারে-ভাব, আকারে-বাকারেইথারে চিরকালের কথাঘুরিছে নিয়মমাফিক, প্রথাপ্রেম?প্রথার মধ্যেই পড়েধাক্কা তুমুল ঝড়ের…ঝড় মাত্রই থামেআকাশ দূরে নামে–মাঠকে আড়াআড়িতরুণ কবির বাড়ি… (তার)ফেরার টাইম কই?ছাপা হচ্ছে বই…ছাপা হচ্ছে জ্বালাঅগ্নি-কর্মশালাছাপা হচ্ছে দুঃখ(আত্মপ্রকাশ মুখ্য)ছাপা হচ্ছে দ্রোহঅনন্ত নীল গ্রহনীল গ্রহেই থাকেতরুণ কবি যাকেনিজের ছবি আঁকেযার ভেতরে আঁকেতার ভেতরে আঁকেশরীর মনের বাঁকেশরীর হয়েই থাকেমন যে শরীর আঁকে…আঁকা লেখার ছবিখা খা একার ছবিদগ্ধ দেখার ছবিমুগ্ধ থাকার ছবিদুক্কুরেও ভৈরবি… (হায়)তিন রাস্তার মোড়েঘুর্ণি হাওয়া ওড়েনেশাও আসে নেশারমহাজাগতিক পেশা–দাঁড়িয়ে থাকে দাহেরুক্ষ তরুণ কবিবৃক্ষ তরুণ কবিসূর্য তরুণ কবিদগ্ধ তরুণ কবিকী চায় তরুণ কবি?৬/৩/২০০৯বসন্তরজনীতে বসিয়া রচিত কবিতানিষ্প্রয়োজনেআমিছোট্ট নাম লেখাতে গেছিকবির খাতায়নিজ প্রয়োজনেআমিনক্ষত্রের দেনানিয়েছি মাথায়বিষ-প্রয়োজনেআমিসাপ ও বেদেনীচেয়েছি দুটোয়দুহাতে দুধের ছানা, বেপরোয়া মুঠোয় মুঠোয়সম্পূর্ণ ফুটেও নারী, ক্লাসিক্যালি অস্ফূট…So, আজ আমাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো–আমি কি কবি ছিলাম? সাপুড়ে ছিলাম? নাকি ছিলাম যা, তাই?শিস্ প্রয়োজনেআমিহাওয়া ধাক্কা দিচ্ছিবসন্ত-জঙ্গলে গাছদেবতারশুকনো পাতায়কে আমি? বিখ্যাত কেউ? কী ছিলাম? গুরু কেউ? লঘু ঢেউ?ঝরনার বাথরুমে শাওয়ার ছিলাম?সুহাসিনীর ড্রেসিং টেবিলে আয়না ছিলাম?গুপ্তকথা হচ্ছে, আদতে সেই রাক্ষসদের ছেলে, মানুষের ছদ্মবেশে থাকিযোগ্যতা, নিজের মুখে জোসনারাত অনুবাদ করতে পারি, এর বাইরেআমি যা ছিলাম, তাই…ছিলাম যা, তাই…৫/৩/২০০৯
false
mk
পনেরো জন সম্পাদকের রহস্যময় বিবৃতি আমাদের বাল্যকালে কলকাতা থেকে আসা শ্রী স্বপন কুমার রচিত মিনি গোয়েন্দা উপন্যাসগুলো আমাদের প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল; যেমনটা আজকের প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদ বা জাফর ইকবালের রচনা। শ্রী স্বপন কুমার তাঁর গোয়েন্দা উপন্যাসে দু’টি কালজয়ী গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন, দীপক চ্যাটার্জি আর তার সহকারী রতন লাল। দু’জনকেই শার্লক হোলমস হতেও বড়মাপের রহস্যভেদী মনে হতো আমার কাছে। দুনিয়ার এমন কোন খুনখারাবি বা রহস্য ছিল না যার সমাধান এই দু’জনে মিলে বের করতে পারতেন না। আট আনা দামের ষাট থেকে সত্তর পৃষ্ঠার এই চটি মিনি উপন্যাস বা বড় গল্প প্রতিসপ্তাহে একটা করে বের হতো। স্কুলের টিফিনের পয়সা জমিয়ে ওই বই কিনে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তা পড়ে শেষ করে ফেলতে পারতাম। তবে এই মিনি উপন্যাসের শুরুতে যে রহস্য বা অপরাধটার বর্ণনা থাকত তার সমাধানটা কি হতে পারে তার একটা আগাম ধারণা পেতে ব্যর্থ চেষ্টা করতাম। ঠিক এমন একটি পরিস্থিতিতে ফেলেছে সম্প্রতি দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি আর দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে দেয়া পনেরো জন সম্পাদকের একটি জোরালো বিবৃতি। তাঁদের এই বিবৃতির সমালোচনা করে ইতোমধ্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, মুহম্মদ শফিকুর রহমান, ড. মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, রাহাত খান, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বিভিন্ন গণমাধ্যমে (বিশেষ করে দৈনিক জনকণ্ঠে) লিখেছেন। বুলবুল বাংলা নিউজ ২৪ ডটকমে এবং আমি নিজে বিডিনিউজ২৪ ডটকমে লিখেছি। দৈনিক সমকালের সম্পাদক যিনি পনেরো জনের একজন, শ্রদ্ধাভাজন গোলাম সারওয়ার তিনি আবার তাঁর পত্রিকায় এই প্রসঙ্গে কিছুটা কৈফিয়তমূলক একটি মন্তব্য প্রতিবেদনও লিখেছেন। একদল সম্পাদকের একটি বিবৃতি নিয়ে এই ধরনের তুলকালাম কা- অনেকটা নজিরবিহীন। ওই পনেরো জন সম্পাদকের দুই একজনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে, তাঁদের অনেকেই নিজস্ব পেশায় বেশ সুনামের সঙ্গে পেশাদার সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও তাঁদের কয়েকজন আছেন ইতোমধ্যে সাংবাদিকতার নামে অসত্য-বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের আশ্রয় নিয়েছেন। এমন গর্হিত কাজকে তাঁরা বাক্স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এই পনেরো জনে অন্তত একজন আছেন যিনি আওয়ামী লীগ যেন আর কোনদিন ক্ষমতায় ফিরতে না পারে তার জন্য তাঁর সঞ্চালিত মধ্যরাতের টকশোতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন; কারও কারও মতে তিনি এই কাজে এখন ওভারটাইম খাটছেন। যেহেতু বিষয়টা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক লেখালেখি হয়ে গেছে নতুন করে আর কোন কিছু লেখার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু প্রয়োজন দেখা দিল যখন দেখি এখনও বিভিন্নজন সুযোগ পেলেই এই বিষয়ে টিভির টকশোতে কথা বলছেন এবং এই বিষয়ে উল্লেখিত মন্তব্য প্রতিবেদনগুলোতে নানা ধরনের মন্তব্য আসা অব্যাহত রয়েছে। এটি একটি ভাল লক্ষণ। কারণ তা প্রমাণ করে পাঠক বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। আমার লেখায় দুই-একজন পাঠকের মন্তব্যের জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি। একজন মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশে যদি হিযবুত তাহরীরকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে ছাত্রলীগকে নয় কেন? তিনি যথারীতি বিশ্বজিতের ঘটনা উল্লেখ করতে ভুললেন না। তাঁর উদ্দেশে বলি, হিযবুত তাহরীর বা ছাত্রশিবির একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ঠিক যেমনটি করত হিটলারের জামানায় নাৎসি পার্টির এসএস বা গেস্টাপো, অথবা ইতালির মুসোলিনির ব্ল্যাক শার্ট। সত্তর ও আশির দশকে ভারতে আনন্দমার্গীরাও একই কাজ করত। এখন মাওবাদীরা করে। ছাত্রলীগ কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমানে সন্ত্রাস করে না। এই সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল একটি আদর্শ ছাত্র সংগঠন হিসেবে, যার জন্ম বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। অযোগ্য নেতৃত্বের হাতে পড়ে এটিতে এখন কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়েছে, যার ফলে এরা নানা কারণে সন্ত্রাস করে। এখানে কোন আদর্শের বালাই নেই। স্রেফ সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে উঠেছিল অত্যন্ত শক্তিশালী মাফিয়া চক্র অথবা ইতালিতে কসা নস্ত্রা, যারা পরবর্তীকালে কানাডায় শাখা বিস্তার করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কেকেকে একটি আদর্শনির্ভর সন্ত্রাসী সংগঠন, যেটির আদর্শই হচ্ছে বর্ণবাদ। তারা মাথায় সাদা কাপড়ের হুড বা গলা পর্যন্ত টুপি পরে কালোদের বাড়ি পোড়াতে যায় অথবা নিজেদের সভা-সমাবেশ করে। সংগঠনটিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ না করলেও ওই ধরনের পোশাক পরে তারা এখন আর তাদের কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারে না। এক পাঠক আমাকে এই তথ্যটি মনে করিয়ে দিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ। ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ত্রাস করে না। তারা সন্ত্রাস করে স্রেফ নিজেদের স্বার্থে। এরই মধ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য ছাত্রলীগের কিছু কর্মী নিজ দল হতে বহিষ্কৃত হয়েছেন অথবা তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এটি একটি ভাল লক্ষণ। উল্লেখিত বিদেশের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো হয় নিষিদ্ধ অথবা প্রকাশ্যে তারা তাদের কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারে না। সে সব দেশে কোন সম্পাদক এদের বাক্স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়েছে বলে বিবৃতি দেন না; যেমনটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে। প্রশ্ন উঠতে পারে সম্পাদকরা বিবৃতি দিয়ে কি কোন কবিরা গুনাহ করেছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে হবে ? সেটির উত্তর না সূচক হতো যদি সেই বিবৃতিতে শুধু দৈনিক ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত অথবা মানবজমিনের সম্পাদক স্বাক্ষর করতেন। গোল বেঁধেছে বাকিদের নিয়ে। কারণ তাদের অনেকের সম্পর্কে পাঠক সমাজে একটা শ্রদ্ধাবোধ আছে। যেমন আমি অবাক হয়েছি অন্তত দু’জনের স্বাক্ষর দেখে। প্রথম জন আমার বন্ধু সহপাঠি মাহফুজ আনাম আর দ্বিতীয় জন বাংলাদেশের সিনিয়র পেশাদার সাংবাদিকদের অন্যতম দৈনিক সমকালের শ্রদ্ধাভাজন গোলাম সারওয়ার। তিনি একজন আপাদমস্তক পেশাদার সাংবাদিক। তিনি যে পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেই পত্রিকা সফল হয়েছে। সব সময় তাঁর সম্পাদিত পত্রিকাগুলোকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের বাহন হিসেবে সচেতন পাঠক মহল বিবেচনা করেছেন। আমার সঙ্গে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করতে পারেন কিন্তু মাহফুজ আনাম সম্পাদিত ডেইলি স্টারকেও একটি বস্তুনিষ্ঠ পত্রিকা মনে করি; যদিও এক- এগারোর সময় তাঁর ভূমিকা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে। অন্য আর দু’চারটি পত্রিকার মতো বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে তাদের কোন গোপন এজেন্ডা আছে কি-না আমার পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। গোলাম সারওয়ার বা মাহফুজ আনাম বা তাঁদের মতো আরও কিছু সম্পাদকের উল্লেখিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেখে স্বাভাবিক কারণেই পাঠক খুবই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়েছে। বুঝতে হবে, এই সম্পাদকদের ওপর পত্রিকার সাধারণ পাঠক অনেক আস্থা রাখেন এবং তাঁদের শ্রদ্ধা করেন। আস্থা বা শ্রদ্ধার ব্যক্তিটি যদি আস্থা ভঙ্গ করেন তাহলে তাঁদের গুণগ্রাহীরা আহত হবেন এবং তার বহির্প্রকাশ ঘটতে বাধ্য। এবার আসি কিঞ্চিত দৈনিক আমার দেশ, তার স্বনামখ্যাত ‘সম্পাদক’ মাহমুদুর রহমান আর দু’টি বন্ধ হয়ে যাওয়া টিভি চ্যানেল প্রসঙ্গে। পাঠকদের একটু পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এক-এগারো পরবর্তী দৈনিক জনকণ্ঠ অফিস হতে তার সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে রাত আনুমানিক নয়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতার করার অজুহাত ছিল সম্ভবত সেনানিবাসে তাঁর বাড়ির সীমানা নিয়ে কোন একটা বিরোধ। টিভির স্ক্রলে সংবাদটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি তখন জনকণ্ঠে কর্মরত সাংবাদিক অনুজপ্রতিম আলী হাবিবকে ফোন করি। আলী হাবিব অনেকটা বাকরুদ্ধ কণ্ঠে জানায়Ñ তাদের সম্পাদককে এইমাত্র গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং এই ঘটনায় তারা শুধু হতভম্বই নয়, ক্রুদ্ধও। কিছু পরে শুরু হয় একটি টিভি চ্যানেলের টকশো। সঞ্চালক পনেরো জন সম্পাদকের একজন। শুরুতে আলোচক (নামটি এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না বলে দুঃখিত) বিষয়টির অবতারণা করলে সঞ্চালক তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেনÑউনাকে অন্য কারণে গ্রেফতার করা হয়েছেÑ সম্পাদক হিসেবে নয় আর উনি তো সঠিক অর্থে সম্পাদকও নন। ওই বিষয়ে আলোচনার ওখানেই সমাপ্তি। মাহমুদুর রহমান ‘সম্পাদক’। তিনি প্রায় প্রতিদিন নিজ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় স্বনামে মন্তব্য প্রতিবেদন ছাপেন যার অধিকাংশই উস্কানিমূলক, অতিরঞ্জিত এবং অসত্য ও অর্ধসত্যের ওপর ভিত্তি করে রচিত। তিনি সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারকের স্কাইপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কথোপকথন রেকর্ড করে এবং তা প্রকাশ করে শুধু দেশীয় আইনেই নয় আন্তর্জাতিক আইনেও একটি অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ব্লগারদের তিনি নাস্তিক আর মুরতাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর ফলে ব্লগার রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হলে তিনি চাঁদে সাঈদীকে আবিষ্কার করেছেন; যার ফলে বগুড়ায় ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেক প্রাণহানি হয়েছে। পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তনের একটি ছবিকে ছাপিয়ে বলেছেন সাইদীর ফাঁসির রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কাবা শরিফের ইমামদের প্রতিবাদ সমাবেশ। দৈনিক সংগ্রামের অনলাইন সংষ্করণে একই ছবি প্রচারিত হয়, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর তারা তা প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু দৈনিক আমার দেশ আর মাহমুদুর রহমান তাঁদের এই সব অপকর্ম পরিচালনায় অবিচল থাকেন। তখন কিন্তু এই পনেরো জন সম্পাদকের কেউই দু’লাইনের বিবৃতি দিয়ে বলেননি যে, এটি অপসাংবাদিকতা এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে তা বন্ধ করা উচিত এবং এই সব কর্মকা- নিন্দনীয়। যেদিন হেফাজত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে তাদের দিনভর তান্ডব চালাচ্ছিল সেদিন সরাসরি দিগন্ত আর ইসলামী টিভিসহ কয়েকটি টিভি চ্যানেল মতিঝিলের শাপলা চত্বরের হেফাজতি বয়ান সম্প্রচার করছিল। সাধারণত ইসলামী টিভি ওয়াজ-নসিহত নিয়ে ব্যস্ত থাকে; এই ধরনের অনুষ্ঠানে তাদের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। এই দু’টি চ্যানেল শুধু মঞ্চের বক্তৃতা প্রচার করছিল না, তারা অংশগ্রহণকারী দর্শক-শ্রোতাদের বক্তব্যও সরাসরি প্রকাশ করছিল। যেমন একজন গায়ে কাফনের কাপড় পরিহিত উন্মাদপ্রায় (হেফাজতিরা বলবেন আল্লাহর প্রেমে দেওয়ানা ) দর্শকের সামনে মাইক ধরে তাকে প্রশ্ন করা হলোÑআপনি কেন এসেছেন এখানে ? উত্তর ‘বিদেশ থেকে এসেছি, শহীদ হতে।’ ‘উনি বিদেশ হতে শহীদ হতে এসেছেন।’ এ সময় কিছু হেফাজতি একটি মৃতদেহ কাঁধে মঞ্চের সামনে প্রবেশ করলেন। দিগন্ত টিভি: ‘এইমাত্র একজন শহীদের মৃতদেহ এখানে আনা হয়েছে, আরও আসছে।’ ইসলামী টিভিও ঠিক একই কায়দায় তাদের অনুষ্ঠান প্রচার করছিল। এই সব শুনে মনে হবে, দেশে বুঝি একটা ধর্মযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে এবং তা সরাসরি টিভিতে প্রচার করা হচ্ছে। অন্য টিভি চ্যানেলগুলো কিন্তু এমনটা করেনি। প্রিন্ট আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছেÑ প্রিন্ট মিডিয়ার সুবিধা সব মানুষ পায় না, দেশের সকল অঞ্চলে সময়মতো পত্রিকা পৌঁছায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে একজন ব্যক্তির যদি অক্ষরজ্ঞান না থাকে তা হলে তার পক্ষে কোন পত্রিকা পড়া সম্ভব নয়। এর বিপরীতে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমটি বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। যাঁরা বর্তমান সরকারকে কোন কিছুর জন্যই কৃতিত্ব দিতে কুণ্ঠিত তাঁরা অন্তত এই ব্যাপারে একমত হবেন যে, এই সরকারের আমলে অন্তত কমপক্ষে ডজনখানেক নতুন প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং প্রায় সব টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ দেখতে এবং শুনতে পারে, তার জন্য তার অক্ষরজ্ঞানের কোন প্রয়োজন নেই। এটাও ঠিক, বর্তমান সরকারের আমলে যে সকল টিভি চ্যানেলের অনুমতি দেয়া হয়েছে তার একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চ্যানেল বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। এর ফলাফল আগামী সংসদ নির্বাচনের সময় পাওয়া যাবে বলে মনে করি। মে মাসের ৫-৬ তারিখ রাতে হেফাজত মতিঝিল দখল করল। এর একদিন আগে ৪ তারিখ বিএনপি প্রধান বেগম জিয়া সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বললেনÑএর মধ্যে যদি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে না নেয় তা হলে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, বিএনপির একজন বড় মাপের নেতা গত বুধবার ‘সময়’ টিভির সম্পাদকীয় অনুষ্ঠানে নির্দ্বিধায় বললেন: বেগম জিয়া আল্টিমেটাম দিয়েছেন সংলাপের জন্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নেয়ার জন্য নয়। সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক নেতারা দেশের আমজনতাকে নিরেট মূর্খ ভাবেন এবং মনে করেন তাঁরাই একমাত্র সবজান্তা; অন্যরা নিম্নশ্রেণীর উজবুক। এই মুহূর্তে বলতে দ্বিধা নেই, বেগম জিয়ার ৪৮ ঘণ্টার হুমকি হতে শুরু করে ৬ তারিখ রাতের প্রথম প্রহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘অপারেশন শাপলা’ পর্যন্ত পর্বটা বর্তমান সরকারের জন্য একটি অত্যন্ত সঙ্কটকালীন ও নাজুক সময় ছিল। এই সঙ্কট সৃষ্টির পেছনে বিরোধী দল, বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি অপশক্তি তো কাজ করেছেই; আরও কাজ করেছে দেশের কিছু গণমাধ্যম, একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী আর সরকারের ভেতরে থাকা কিছু অপরিণামদর্শী ব্যক্তি। তবে ন্যূনতম রক্তপাত ও শক্তি প্রয়োগ করে অনেকটা যথাযথ রণকৌশল প্রয়োগ করে সরকার যে এই যাত্রায় দেশটাকে কিছু অর্বাচীনের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। অবশ্য বিরোধী দল সেই রাতে একটি গণহত্যা হয়েছে বলে চিৎকার করছে। এরই মধ্যে হেফাজত ‘কেন এই গণহত্যা‘ শীর্ষক এক সচিত্র পোস্টার দিয়ে দেশের বিভিন্ন শহর ছেয়ে ফেলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বলতে পারেনি তাদের কোন্ কোন্ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সব কুবুদ্ধি যত না হেফাজতের তার চেয়ে বেশি জামায়াত-বিএনপির এবং বর্তমান মন্ত্রণাদাতা স্বঘোষিত নাস্তিক এবং ‘এবাদত’ নামার রচয়িতা ফরহাদ মজহার। অনেক বিএনপি নেতার কাছে জানতে চেয়েছি, হঠাৎ করে ফরহাদ মজহার কেন বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার কাছে এত সমাদৃত। তাঁরা এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে একজন ব্যারিস্টার নেতা ঠাট্টা করে বলেছেনÑকে জানে হয়ত শেখ হাসিনাই বিএনপির রাজনীতিকে বরবাদ করার জন্য ফরহাদকে বিএনপিতে ঢুকিয়েছেন। অনেকের পছন্দ হবে না, তারপরও বলতে হয়Ñদৈনিক আমার দেশ এবং ওই দু’টি চ্যানেলের বিরুদ্ধে সরকারের অনেক আগেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তা যদি হতো তা হলে দেশের অনেক জানমাল রক্ষা পেত। স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে স্বীকৃত। স্বাধীন গণমাধ্যমের অর্থ দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার স্বাধীনতা নয়। যখন এই তিনটি গণমাধ্যম এতসব উস্কানিমূলক কর্মকা- করছিল তখন এই পনেরো জন সম্পাদকের কেউই তার বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেনি। কিছুটা ব্যতিক্রম ডেইলি স্টার। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের আগে সতর্ক করা উচিত ছিল। কিন্ত তারা যখন পত্রিকা প্রকাশ অথবা টিভি চ্যানেল চালু করার লাইসেন্স নিয়েছেন তখন তারা কিছু নিয়মনীতি মেনে চলবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। সেই আইন তারা পদে পদে ভঙ্গ করেছেন এবং এর ফলে দেশের নিরাপত্তা ও মানুষের জানমাল হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। কোন সরকারই এই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারে না। ইংল্যান্ডের বহুল প্রচারিত ১৬৫ বছরের পুরনো ‘নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকা রাজনীতিবিদদের টেলিফোন হ্যাকিংয়ের অভিযোগে বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে কোন সম্পাদক তাঁদের পক্ষে বিবৃতি দেননি। পনেরো জন সম্পাদকের বিবৃতি নিয়ে এতদিন চলমান আলোচনা-সমালোচনার একটাই কারণ: এদের অনেকের ওপরই দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা আছে। কারও কারও কোন গোপন এজেন্ডা থাকতে পারে; তবে তা সাধারণ মানুষ তেমন একটা জানতে পারে না এবং তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। লেখার শুরুটা করেছিলাম আমার শ্রী স্বপন কুমারের মিনি গোয়েন্দা কাহিনীর রহস্য ভেদের ব্যর্থতা দিয়ে। সে বাল্যকালে যেমন শুরুতে তার কাহিনীর রহস্য ভেদ করতে পারিনি, ঠিক এখনও কেন পনেরো জন নানা মতের সম্পাদক একটি বিতর্কিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তার রহস্যও আমার কাছে পরিষ্কার নয়, যদিও এ ব্যাপারে বাজারে অনেক কথা চালু আছে। তার কোন্টা বিশ্বাসযোগ্য আর কোন্টা নয়, তাও আমার কাছে পরিষ্কার নয়। সে কারণে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হতে বিরত রইলাম। আবদুল মান্নান লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক। মে ৩১, ২০১৩ সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৩ সকাল ৮:২১
false
ij
আজ বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। ১৯২৭ সালে লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস লিখেছিল,জগদীশচন্দ গ্যালিলিও ও নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী। রেডিও আবিস্কারের কৃতিত্বটা এক ইতালিওকে দেওয়া হলেও আমরা জানি তার বিহীন সংযোগের (বেতার) কল্পনা প্রথম কে করেছিলেন। মুন্সিগঞ্জের রাঢ়িখাল। ১৮৫৮। ৩০ নভেম্বর। বসু পরিবার এতদ্বঞ্চলে এক বিশিষ্ট শিক্ষিত পরিবার। সেই পরিবারে আজ সুখ আর আনন্দপ্লাবন। সে বাড়িরই এক বউ বামাসুন্দরী। তার আজ এক ছেলে হয়েছে। বামাসুন্দরীর দেবীর স্বামী ভগবানচন্দ্র বসু । ভগবানচন্দ্র বসু ফরিদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট। দিনকয়েক পর সুসংবাদ শুনে আড়াই মন মিষ্টি নিয়ে তিনি ফরিদপুর থেকে চলে এলেন রাঢ়িখালে । বড়ই আনন্দিত ভগবানচন্দ্র বসু । পুত্রমুখ দর্শনে কার না সুখলাভ হয়। অন্নপ্রাসন্নের দিনে ছেলের নাম রাখা হল জগদীশ। বসু পরিবারের এক অশিতিপর বৃদ্ধ বললেন, দেখ কালে কালে এ ছেলের নাম ছড়াবে। তাই হয়েছিল কিন্তু। ছোটবেলা থেকেই বালক জগদীশ কেমন শান্ত। চুপচাপ। আর অনুধ্যানশীল। কলকবজায় ভারি আগ্রহ। যন্ত্রের কলকবজা খুলে খুলে দেখে। একবার বাড়ির একটি পুরনো ওয়ালক্লক সারিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। আরেকবার ছাদে বৃষ্টির পানি জমিয়ে সে পানি কী ভাবে যেন স্নানঘরে নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। তো, রাঢ়িখালে নয়-বালক জগদীশের স্কুলজীবন কেটেছিল ফরিদপুরে। ভগবানচন্দ্র বসু ছেলেকে ফরিদপুরের বাংলা স্কুলে ভরতি করিয়ে দিলেন। ছেলের প্রতিভা টের ঠিকই পেয়েছিলেন ওই প্রাজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটটি। ছেলেকে কোলকাতা পড়াবেন বলে ঠিক করলেন। কেননা, ওই শহরটিই তো তখন ছিল দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষাদীক্ষার পবিত্র তীর্থ। কত স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় যে ছিল তখন ওই শহরটায়। ১৮৭৯। কোলকাতার ডেভিড হেয়ার স্কুলে ভর্তি হল জগদীশ। পরে অবশ্য ওখান থেকে সেন্ট জেভিয়ার স্কুলে। ওই সময়েই একবার জগদীশ ওর বাবাকে বলল, বাবা। আমার মনে হয় গাছের প্রাণ আছে। বলিস কী! ভগবানচন্দ্র বসু তো রীতিমতো ঘাবড়ে গেলেন। হ্যাঁ। আমার সেরকমই বোধ হয়। আমি বাগানে ঘুরে ঘুরে বাকলে কান পেতে টের পেয়েছি। কথাটা ... কথাটা তুই প্রমান করতে পারবি জগ? ভগবানচন্দ্র বসু বুকখানি ধকধক করছিল। খুব পারব, বাবা। আমার আরও ভাবতে হবে। ভাব। গাছের প্রাণ আছে, কথাটা তুই যদি প্রমাণ করতে পারিস, তালে ... তালে, বাঙালির মেধায় জগৎ তাক লেগে যাবে। ১৮৭৫। এনট্রান্স পাশ করল জগদীশ। ভর্তি হল সেন্ট জেভিয়ার কলেজে। ততদিনে সে মোটামুটি নিসন্দেহ- গাছের প্রাণ আছে। ১৮৭৯ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হলেন বিজ্ঞানে স্নাতক। সেই ছোটবেলা থেকেই শুরু। তারপর জীবনভর নানান বৈজ্ঞানিক যন্ত্র তৈরি করেছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু। যেসব মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য যন্ত্র হল : বেতারপ্রেরক যন্ত্র, বেতারগ্রাহক যন্ত্র, অণুতরঙ্গগ্রাহক যন্ত্র, হর্ন, ফটোসিনথেটিক বাবলার। ইত্যাদি। গাছের প্রাণ আছে, অনুভূতি আছে এই সত্যেওর আবিস্কর্তা স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। রেডিও আবিস্কারের কৃতিত্বটা এক ইতালিওকে দেওয়া হলেও আমরা জানি তার বিহীন সংযোগের (বেতার) কল্পনা প্রথম কে করেছিলেন। এই মহান বিজ্ঞানী মারা যান ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর। বিহারের গিরিডিটিতে শীতকালীন অবকাশ যাপন করছিলেন। তখন। আজ স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী। দূর থেকে প্রণাম। সূত্র: প্রথম আলো। শনিবারের ক্রোড়পত্র। ছুটির দিনে। ২৯ নভেম্বর। ২০০৮। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৭
false
ij
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর ‘অবরোধবাসিনী’ থেকে পাঠ (৩) [ ৭ ] প্রায় ২৫ বৎসর পূর্ব্বে বঙ্গদেশের জনৈক জমীদারের বাড়ীতে বিবাহ হইতেছিল। অতিথি অভ্যাগতে বাড়ী গম্গম্ করিতেছে। খাওয়া দাওয়ায় রাত্রি ২টা বাজিয়া গিয়াছে, এখন সকলের ঘুমাইবার পালা। কিন্তু চোর চোট্রা ত ঘুমাইবে না-এই সুযোগ তাহাদের চুরি করার। সিঁধ কাটিয়া চোর ঘরে প্রবেশ করিয়াছে। একজন চৌকিদার চোরের সাড়া পাইয়া বাড়ীর কর্ত্তাদিগকে সংবাদ দিয়াছে। কর্তারা ছিলেন, পাঁচ ছয় ভাই। তাঁহারা প্রত্যেকে কুঠার হস্তে সে ঘরটার চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলেন চোরের সন্ধানে। চোরকে পাইলে সে-সময় তাঁহারা কুঠার দিয়া কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করিতেন। হু-চোরের এত বড় আস্পর্দ্ধা! ঘরের ভিতর বিবিরা চোরকে দেখিয়া আরও জড়সড় হইয়া চাদর গায়ে দিয়া শুইলেন,-একেবারে নীরব, যেন নিশ্বাস ফেলিবারও সাহস নাই। বিশেষতঃ “বেগানা মরদটা” যেন তাঁহাদের নিশ্বাসের শব্দও না শুনে। চোর নিঃশঙ্কচিত্তে সিন্দুক ভাঙ্গিয়া নগদ টাকা ও গহনা পত্র বাহির লইল। পরে একে প্রত্যেক বিবির হাত পায়ের গহনা খুলিয়া লইতে লাগিল। তাহা দেখিয়া বিবিরা তাড়াতাড়ি নাক, কান ও গলার অলঙ্কার খুলিয়া শিয়রে রাখিতে লাগিলেন। ইহাতে চোরের বেশ সুবিধাই হইল-সে আর অনর্থক বেগম খানমদের নাক, কান বা গলা স্পর্শ করিবে কেন? সেই ঘরে একটি ছিলেন নূতন বউ-সে বেচারী নাকের নথটী ত খুলিয়া দিয়াছেন, কিন্তু তাঁহার কানের ঝুমকা প্রভৃতি গহনাগুলি পরস্পরে জড়াইয়া বড় জটীল হইয়া পড়িল-কিছুতেই খোলা গেল না। চোর মহাশয় ভদ্রতার অনুরোধে কিয়ৎক্ষণ অপেক্ষা করার পর কলম-তারাশ ছরী দিয়া বউ বিবির উভয় কান কাটিয়া লইয়া গহনার পুঁটলিতে সেই সিঁধ-পথে পলায়ন করিল। ঘরের ভিতর এত কাণ্ড হইয়া গেল-বাহিরে পুরুষগণ কুঠার হস্তে চোরের জন্য অপেক্ষা করিতেছেন। কিন্তু বিবিরা কেহ টু শব্দ করিলেন না-পাছে “বেগানা মরদটা” তাঁহাদের কণ্ঠস্বর শুনে! চোর নিরাপদে বাহির হইয়া গেলে পর বিবিরা হাউমাউ আরম্ভ করিয়া দিলেন। পাঠিকা ভগিনী! এইরূপে আমরা অবরোধ প্রথার সন্মান রক্ষা করিয়া থাকি। [ ৮ ] এক বাড়ীতে আগুন লাগিয়াছিল। গৃহিণী বুদ্ধি করিয়া তাড়াতাড়ি সমস্ত অলঙ্কার একটা হাত বাক্সে পূরিয়া লইয়া ঘরের বাহির হইলেন। দ্বারে আসিয়া দেখিলেন সমাগত পুরুষেরা আগুন নিবাইতেছে। তিনি তাহাদের সম্মুখে বাহির না হইয়া অলঙ্কারের বাক্সটী হাতে করিয়া ঘরের ভিতর খাটের নীচে গিয়া বসিলেন। তদবস্থায় পুড়িয়া মরিলেন, কিন্তু পুরুষের সম্মুখে বাহির হইলেন না। ধন্য! কুল-কামিনীর অবরোধ! [ ৯ ] এক মৌলভী সাহেবের মৃত্যু হইল। তাঁহার একমাত্র পুত্র এবং বিধবা অবশিষ্ট ছিলেন। মৌলবী সাহেব কিছু রাখিয়া যান নাই, সুতরাং অতি কষ্টে তাঁহার বিধবা সংসার চালাইতেন। পুত্রের বিবাহের জন্য তিনি বহু কষ্টে কতকগুলি অলঙ্কার গড়াইলেন। অলঙ্কারগুলি বেশ ভারী দামের হইল। বিবাহের দুই তিন দিন পূর্ব্বে সিঁধ কাটিয়া চোর গৃহে প্রবেশ করিল। সে ঘরে তিনি একমাত্র দাসীসহ শুইয়াছিলেন। চোরের সাড়া পাইয়া তিনি উঠিয়া বসিলেন এবং চুপি চুপি বাঁদীকে জাগাইলেন। চোর ভাবিল, সর্ব্বনাশ-দেই দৌড়! কিন্তু চোরের সঙ্গীরা বলিল, আচ্ছা একটু ফিরিয়া দাঁড়াইয়া দেখি না, কি হয়। হইল বেশ মজা- বিবি সাহেবার সঙ্কেত মত দাসী একখানা কাপড় দিয়া তাঁহার খাটের সম্মুখে পর্দ্দা টাঙ্গাইয়া দিল। পরে চাবির গোছা দেখাইয়া চোরদিগকে বলিল, “বাপু সকল! তোমরা পর্দ্দার এদিকে আসিও না, তোমরা যাহা চাও, আমি সিন্দুক খুলিয়া বাহির করিয়া দিতেছি।” পরে সমস্ত দামী কাপড় ও অলঙ্কার বাহির করিয়া চোরের হাতে দিল। তাহারা গহনা নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিয়া বলিল,-“নথ কই?-সেটা সিন্দুকে আছে বুঝি?” কর্ত্রীর সঙ্কেত অনুসারে দাসী বলিল, “দোহাই! তোমরা এদিকে আসিও না-আম্মা সা’ব কেবল নথটা রাখিয়াছেন যে পরশু দিন বিয়া-একেবারে কোন গয়না রহিল না-নথটাও না থাকিলে বিয়া হয় কি করিয়া? তা যদি তোমরা চাও, তবে নেও-নথ লও-পর্দ্দার এদিকে আসিও না।” চোরেরা ভারী খুশি হইয়া পরস্পরে গল্প করিতে করিতে চলিয়া গেল। তখন রাত্রি তিনটা কি চারিটা। এত সহজে সিদ্ধিলাভ করায় আনন্দের আতিশয্যে তাহারা একটু জোর গলায় কথা কহিয়াছিল। পথে চৌকিদার তাহা শুনিতে পাইয়া তাহাদিগকে ধরিবার জন্য তাড়া করে। সকলে পলাইল। একটী চোর হোঁচট খাইয়া পড়িয়া যাওয়ায় চৌকীদার তাহাকে ধরিয়া ফেলিল। অগত্যা সে চৌকীদারের সঙ্গে চূরি-করা বাড়ী দেখাইয়া দিতে গেল। ততক্ষণে ভোর হইয়াছে। চৌকীদার গিয়া দেখে, বিবি সাহেবা তখনও পর্দ্দার অন্তরাল হইতে বাহির হন নাই-“যদি ব্যাটারা আবার আসে”-তবে তাঁহাকে দেখিতে পাইবে যে! দাসীকেও চেঁচামেচি করিতে দেন নাই যে শোরগোল শুনিয়া যদি কোন পুরুষমানুষ তাঁহার ঘরে প্রবেশ করে। চোরের হাতে সর্ব্বস্ব সমর্পণ করিয়া তিনি অবরোধ প্রথার সম্মান রক্ষা করিলেন। [ ১০ ] কোন জমিদার গৃহিণী ছোট ভাইয়ের বউ আনিবার জন্য ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ী গিয়াছেন। একদিন হঠাৎ গিয়া দেখেন নববধূকে তাঁহার ভ্রাতৃবধূ ভাত খাইয়াইতেছেন। ভাতের বাসনে একটা কাঁচা মরিচ ছিল। তিনি সরল মনে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমাদের বউ ঝাল খাইতে ভালবাসে নাকি?” বউয়ের ভাবীজান উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, বড্ড ঝাল খায়!” পরে তিনি বউ লইয়া নৌকাযোগে কলিকাতায় আসিলেন। পথে তিনি চারি দিন নৌকায় থাকা হইল। এই সময়ে তিনি যাহা কিছু রান্না করাইতেন, তাহাতেই অতিরিক্ত ঝাল দেওয়াইতেন। আসল কথা এই যে, বউ মোটেই ঝাল খাইতে অভ্যস্তা নহেন। খাইবার সময় কাঁচা লঙ্কার খোশবু শুঁকিয়া ভাত খাইতেছিল। তাই ঠাট্রা করিয়া তাঁহার ভাবীজান ঝাল খাওয়ার কথা বলিয়াছিলেন। ফলে বেচারীর প্রাণ লইয়া টানাটানি। ননদ মহাশয়া কাঁচা লঙ্কা দিয়া মুড়ি মাখিয়া ভাই-বউকে আদর করিয়া কাছে বসাইয়া খাইয়াইতেন। বউ-এর দুই চক্ষু বহিয়া টস্টস্ করিয়া জল পড়িত-মুখ জিহবা পুড়িয়া যাইত-তবু বড় ননদকে মুখ ফুটিয়া বলেন নাই যে, তিনি ঝাল খান না!! ও সর্ব্বনাশ! একে নূতন বউ,-তাতে বড় ননদ-প্রাণ গেলেও কথা কহিতে নাই। [ ১১ ] গত ১৯২৪ সনে আমি আরায় গিয়াছিলাম। আমার দুই নাতিনীর বিবাহ এক সঙ্গে হইতেছিল, সেই বিবাহের নিমন্ত্রণে গিয়াছিলাম। নাতিনীদের ডাক নাম মজু ও সবু। বেচারীরা তখন “মাইয়াখানায়” ছিল। কলিকাতায় ত বিবাহের মাত্র ৫/৬ দিন পূর্ব্বে “মাইয়াখানা” নামক বন্দীখানায় মেয়েকে রাখে। কিন্তু বেহার অঞ্চলে ৬/৭ মাস পর্য্যন্ত এইরূপ নির্জ্জন কারাবাসে রাখিয়া মেয়েদের আধমরা করে। আমি মজুর জেলখানায় গিয়া অধিকক্ষণ বসিতে পারি না-সে রুদ্ধ গৃহে আমার দম আটকাইয়া আসে। শেষে এক দিন একটা জানালা একটু খুলিয়া দিলাম। দুই মিনিট পরেই এক মাতব্বর বিবি, “দুলহিনকো হাওয়া লাগেগী” বলিয়া জানালা বন্ধ করিয়া দিলেন। আমি আর তিষ্ঠিতে না পারিয়া উঠিয়া আসিলাম। আমি সবুদের জেলখানায় গিয়া মোটেই বসিতে পারিতাম না। কিন্তু সে বেচারীর ছয় মাস হইতে সেই রুদ্ধ কারাগারে ছিল। শেষে সবুর হিষ্টিরিয়া রোগ হইয়া গেল। এইরূপে আমাদের অবরোধে বাস করিতে অভ্যস্ত করা হয়। [ ১২ ] পশ্চিম দেশের এক হিন্দু বধূ তাহার শাশুড়ী ও স্বামীর সহিত গঙ্গাস্নানে গিয়াছিল। স্নান শেষ করিয়া ফিরিবার সময় তাহার শ্বাশুড়ী ও স্বামীকে ভীড়ের মধ্যে দেখিতে পাইল না। অবশেষে সে এক ভদ্রলোকের পিছু পিছু চলিল। কতক্ষণ পরে পুলিশের হল্লা।-সেই ভদ্রলোককে ধরিয়া কনষ্টেবল বলে, “তুমি অমুকের বউ ভাগাইয়া লইয়া যাইতেছ।” তিনি আচস্বিতে ফিরিয়া দেখেন, আরে! এ কাহার বউ পিছন হইতে তাঁহার কাছার খুঁটি ধরিয়া আসিতেছে। প্রশ্ন করায় বধূ বলিল, সে সর্ব্বক্ষণ মাথায় ঘোমটা দিয়া থাকে-নিজের স্বামীকে সে কখনও ভাল করিয়া দেখে নাই। স্বামীর পরিধানে হলদে পাড়ের ধূতি ছিল, তাহাই সে দেখিয়াছে। এই ভদ্রলোকের ধূতির পাড় হলদে দেখিয়া সে তাঁহার সঙ্গ লইয়াছে! [ ১৩ ] আজিকার (২৮ শে জুন ১৯২৯) ঘটনা শুনুন। স্কুলের একটী মেয়ের বাপ লম্বা চওড়া চিঠি লিখিয়াছেন যে, মোটর বাস তাঁহার গলির ভিতর যায় না বলিয়া তাঁহার মেয়েকে “বোরকা” পড়িয়া মামার (চাকরাণীর) সহিত হাঁটিয়া বাড়ী আসিতে হয়। গতকলা গলিতে এক ব্যক্তি চায়ের পাত্র হাতে লইয়া যাইতেছিল, তাহার ধাক্কা লাগিয়া হীরার (তাঁহার মেয়ের) কাপড়ে চা পড়িয়া গিয়া কাপড় নষ্ট হইয়াছে। আমি চিঠিখানা আমাদে জনৈকা শিক্ষয়িত্রীর হাতে দিয়া ইহার তদন্ত করিতে বলিলাম। তিনি ফিরিয়া আসিয়া উর্দ্দু ভাষায় যাহা বলিলেন, তাহার অনুবাদ এইঃ “অনুসন্ধানে জানিলাম হীরার বোরকায় চক্ষু নাই। (হীরাকে বোরকা মে আঁখ নেহী হায়)! অন্য মেয়েরা বলিল, তাহারা গাড়ী হইতে দেখে, মামা প্রায় হীরাকে কোলের নিকট লইয়া হাঁটাইয়া লইয়া যায়। বোরকায় চক্ষু না থাকায় হীরা ঠিকমত হাঁটিতে পারে না-সেদিন একটা বিড়ালের গায়ে পড়িয়া গিয়াছিল,-কখনও হোঁচট খায়। গতকল্য হীরাই সে চায়ের পাত্রবাহী লোকের গায়ে ধাক্কা দিয়া তাহার চা ফেলিয়া দিয়াছে।”* দেখুন দেখি, হীরার বয়স মাত্র ৯ বৎসর-এতটুকু বালিকাকে “অন্ধ বোরকা” পরিয়া পথ চলিতে হইবে! ইহা না করিলে অবরোধের সন্মান রক্ষা হয় না! —————————————* এখনই আষাঢ় মাসের “মাসিক মোহাম্মদী”তে শ্রীমতী আমিনা খাতুনের লিখিত প্রবন্ধের একস্থলে দেখিলাম,-“কতক্ষণের জন্য নাক, মুখ, চোখ বন্ধ করিয়া বেড়ান (এইরূপ পর্দ্দায় পরপুরুষের ঘাড়ে পড়া সম্ভবপর)-উহা ইসলামের বাহিরের পর্দ্দা।” [ ১৪ ] প্রায় ২১/২২ বৎসর পূর্ব্বেকাল ঘটনা। আমার দূর-সম্পর্কীয়া এক মামীশাশুড়ী ভাগলপুল হইতে পাটনা যাইতেছিলেন; সঙ্গে মাত্র একজন পরিচারিকা ছিল। কিউল ষ্টেশনে ট্রেণ বদল করিতে হয়। মামানী সাহেবা অপর ট্রেণে উঠিবার সময় তাঁহার প্রকাণ্ড বোরকায় জড়াইয়া ট্রেণ ও প্লাটফরমের মাঝখানে পড়িয়া গেলেন। ষ্টেশনে সে সময় মামানীর চাকরাণী ছাড়া অপর কোন স্ত্রীলোক ছিল না। কুলিরা তাড়াতাড়ি তাঁহাকে ধরিয়া তুলিতে অগ্রসর হওয়ায় চাকরাণী দোহাই দিয়া নিষেধ করিল-“খবরদার! কেহ বিবি সাহেবার গায়ে হাত দিও না।” সে একা অনেক টানাটানি করিয়া কিছুতেই তাঁহাকে তুলিতে পারিল না। প্রায় আধ ঘন্টা পর্য্যন্ত অপেক্ষা করার পর ট্রেণ ছাড়িয়া দিল! ট্রেণের সংঘর্ষে মামানী সাহেবা পিষিয়া ভিন্নভিন্ন হইয়া গেলেন,-কোথায় তাঁহার “বোরকা”-আর কোথায় তিনি! ষ্টেশন ভরা লোক সবিস্ময়ে দাঁড়াইয়া এই লোমহর্ষক ব্যাপার দেখিল,-কেহ তাঁহার সাহায্য করিতে অনুমতি পাইল না। পরে তাঁহার চুর্ণপ্রায় দেহ একটা গুদামে রাখা হইল; তাঁহার চাকরাণী প্রাণপণে বিনাইয়া কাঁদিল, আর তাঁহাকে বাতাস করিতে থাকিল। এই অবস্থায় ১১ (এগার) ঘণ্টা অতিবাহিত হইবার পর তিনি দেহত্যাগ করিলেন! কি ভীষণ মৃত্যু! [ ১৫ ] হুগলীতে এক বড়লোকের বাড়ীতে বিবাহ উপলক্ষে এক কামরায় অনেক বিবি জড় হইয়াছেন। রাত্রি ১২টার সময় বোধ হইল, কেহ বাহির হইতে কামরায় দরজা ঠেলিতেছে, জোরে, আস্তে-নানা প্রকার দরজা ঠেলিতেছে। বিবিরা সকলে জাগিয়া উঠিয়া থরথর কাঁপিতে লাগিলেন-নিশ্চয় চোর দ্বার ভাঙ্গিয়া গৃহে প্রবেশ করিবে। আর বিবিদের দেখিয়া ফেলিবে! তখন এক জাঁহাবাজ বিবি সমস্ত অলঙ্কার পরিয়া ফেলিলেন, অবশিষ্ট পুটলী বাঁধিয়া চাপা দিয়া ঢাকিয়া রাখিলেন। পরে বোরকা পড়িয়া দ্বার খুলিলেন। দ্বারের বাহিরে ছিল,-একটা কুকুরী! তাহার বাচ্চা দু’টী ঘটনাবশতঃ কামরার ভিতর ছিল, আর সে ছিল বাহিরে। বাচ্চার নিকট আসিবার জন্য সেই কুকুরী দরজা ঠেলিতেছিল। [ ১৬ ] বেহার শরীফের এক বড়লোক দার্জ্জীলিং যাইতেছিলেন, তাঁহার সঙ্গে এক ডজন ‘মানব-বোঝা” (ঐঁসধহ-খঁমমধমব) অর্থাৎ মাসী পিসী প্রভৃতি ৭ জন মহিলা এবং ৬ হইতে ১৬ বৎসর বয়সের ৫জন বালিকা। তাঁহারা যথাক্রমে ট্রেণ ও ষ্টীমার বদল করিবার সময় সর্ব্বত্রই পাল্কীর ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। মণিহারী ঘাট, সক্রিগলি ঘাট ইত্যাদিতে পাল্কী ছিল। বিবিদের পাল্কীতে পুরিয়া ষ্টীমারের ডেকে রাখা হইত। আবার ট্রেণে উঠিবার সময় তাঁহাদিগকে পাল্কী সহ মালগাড়ীতে দেওয়া হইত। কিন্তু ইক্স বিক্স রেলওয়ে লাইনে আর পাল্কী পাওয়া গেল না। তখন তাঁহার ট্রেণের রিজার্ভ করা সেকেণ্ড কাসের গাড়ীতে বসিতে বাধ্য হইলেন। শিলিগুড়ি ষ্টেশনেও পাল্কী বেহারা পাওয়া গেল না। এত বড় বিপদ-বিবিরা দার্জ্জালিঙ্গের ট্রেণে উঠিবেন কি করিয়া? অতঃপর দুইটা চাদর চারিজন লোকে দুই দিকে ধরিল,-সেই চাদরের বেড়ার মধ্যে বিবিরা চলিলেন। হতভাগা পর্দ্দাধারী চাকরেরা ঠিক তাল রাখিয়া পার্ব্বত্য বন্ধুর পথে হাঁটিতে পারিতেছিল না। কখনও ডাইনের পর্দ্দা আগে যায়, বামের পর্দ্দা পিছনে থাকে; কখনও বামের পর্দ্দা অগ্রসর হয়, আর ডাইনের পর্দ্দা পশ্চাতে। বেচারী বিবিরা হাঁটিতে আরও অপটু-তাঁহার পর্দ্দা ছাড়িয়া কখনও আগে যান, কখনও পিছে রহিয়া যান! কাহারও জুতা খসিয়া রহিয়া গেল-কাহারও দোপাট্টা উড়িয়া গেল! [ ১৭ ] প্রায় ১৪ বৎসর পূর্ব্বে আমাদের স্কুলে একজন লক্ষ্ণৌ নিবাসী শিক্ষয়িত্রী ছিলেন, নাম আখতর জাঁহা। তাঁহার তিনটি কন্যাও এই স্কুলে পড়িত। একদিন তিনি একালের মেয়েদের নির্লজ্জতার বিষয় আলোচনা প্রসঙ্গে নিজের মেয়েদের বেহায়াপনার কথা বলিয়া দুঃখ প্রকাশ করিলেন। কথায় কথায় নিজের বধূ-জীবনের একটা গল্প বলিলেনঃ “এগারো বৎসর বয়সে তাঁহার বিবাহ হইয়াছিল। শ্বশুরবাড়ী গিয়া তাঁহাকে এক নির্জ্জন কক্ষে থাকিতে হইত। তাঁহার এক ছোট ননদ দিনে তিন চার বার আসিয়া তাঁহাকে প্রয়োজন মত বাথ-রুমে পৌঁছাইয়া দিত। একদিন কি কারণে সে অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত তাঁহার সংবাদ লয় নাই। এদিকে বেচারী প্রকৃতির তাড়নায় অধীরা হইয়া পড়িলেন। লক্ষ্ণৌ-এ মেয়েকে বড় বড় তামার পানদান যৌতুক দেওয়া হয়। তাঁহার মস্ত পানদানটা সেই কক্ষেই ছিল। তিনি পানদান খুলিয়া সুপারীর ডিবেটা বাহির করিয়া সুপারীগুলি একটা রুমালে ঢালিয়া ফেলিলেন। পরে তিনি সেই ডিবেটা যে জিনিষ দ্বারা পূর্ণ করিয়া খাটের নীচে রাখিলেন, তাহা লিখিতব্য নহে! সন্ধ্যার সময় তাঁহার পিত্রালয়ের চাকরাণী বিছানা বাড়িতে আসিলে তিনি তাহার গলা ধরিয়া কাঁদিয়া ডিবের দুর্দ্দশার কথা বলিলেন। সে তাঁহাকে সান্ত্বনা দিয়া বলিল, “থাক, তুমি কেঁদ না; আমি কালই ডিবেটা কালাই করাইয়া আনিয়া দিব। সুপারী এখন রুমালের বাঁধা থাকুক।” [ ১৮ ] লাহোরের জনৈক ভুক্তভোগী ডাক্তার সাহেবের রোগিনী দর্শনের বর্ণনা এইঃ সচরাচর ডাক্তার আসিলে দুইজন চাকরাণী রোগিণীর পালঙ্কের শিয়রে ও পায়ের দিকে একটা মোটা বড় দোলাই ধরিয়া দাঁড়ায়। ডাক্তার সেই দোলাইয়ের একটু ফাঁকের ভিতর হাত দিয়া রোগিণীর নাড়ী পরীক্ষা করেন।* এক বেগম সাহেবা নিউমোনিয়া রোগে ভুগিতেছিলেন। আমি বলিলাম ফেফড়ার অবস্থা দেখা দরকার; আমি পিঠের দিক হইতে দেখিয়া লইব। হুকুম হইল, “ষ্টেথিসকোপের নল যেখানে বলেন, চাকরাণী রাখিয়া দিবে!” সকলেই জানেন, ফেফড়া বিভিন্ন স্থান হইতে পরীক্ষা করিলে পর রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। কিন্তু আমি অগত্যা কর্ত্তার হুকুমে রাজী হইলাম। চাকরাণী নলটা দোলাইয়ের ভিতরে বেগম সাহেবার কোমরে নেফার (পায়জামার উপরাংশের) কিছু উপরে রাখিল। কিছুণ পরে আমি আশ্চর্য্য হইলাম যে কোন শব্দ শুনিতে পাই না কেন? দুঃসাহসে ভর দিয়া দোলাই একটু উঠাইয়া দেখিলাম,-দেখি কি নলটা কোমরে লাগান হইয়াছে! আমি বিরক্ত হইয়া উঠিয়া আসিলাম।** —————————————– * আমাকে জনৈকা নন-পর্দ্দা মহিলা জিজ্ঞেস করিয়াছিলেন (লেডী ডাক্তারের অভাবে পুরুষ), “ডাক্তারকে জিহবা দেখাইতে হইলে আপনি কি করিবেন? দোলাই ফুটা করিয়া তাহার ভিতর হতে জিহবা বাহির করিয়া দেখাইবেন নাকি?” আমি পাঠিকা ভগিনীদিগকে ঐ প্রশ্নের এবং আমার নিন্মোক্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে অনুরোধ করি। ডাক্তারকে চোখ, দাঁত এবং কান দেখাইতে হইলে তাহারা কি উপায়ে দেখাইবেন? ** ডাক্তার সাহেবের নিজের ভাষায় শুনুনঃ “লা হাওল বেলা কুওৎ! মঁয় দিক হো কর উঠ আয়া। আর নওয়াব সাহেব পুছতে হেঁ কে কেয়া পাতা লাগা? মঁয় কেয়া খাক বাতাতা কে কেয়া পাতা লাগা?” [ ১৯ ] জনৈক রেলপথে ভ্রমণকারীর বৃত্তান্তের সারাংশ এইঃ ষ্টেশনে টিকিট কেটে মনে মনে একটা হিসেব করলাম। তিনখানা ইন্টার কাসের দরুন দেড় মণ জিনিষ নিতে পারবো, কিন্তু আমাদের জিনিষপত্তর ওজন করিলে পাঁচ মণের কম কিছুতেই হবে না। অনেক ভেবে-চিন্তে লগেজ না করাই ঠিক করলাম। মেয়েদের গাড়ীতে জিনিষপত্তর তুলে দিলে আর কে চেক করতে আসবে? খোকা জিজ্ঞেস করলে,-তোমার সঙ্গে কোন জ্যান্ত লগেজ আছে নাকি? আবার আছে না কি! একেবারে এক জোড়া! একে বুড়ী, তায় আবার থুড়থুড়ি। খোকা বল্লে-তবেই সেরেছে। যখন ঘুম ভাঙল, তখন বেশ রাত হয়েছে। অনুমানে বুঝলাম, একটা বড় ষ্টেশনে গাড়ী থেমে আছে। হঠাৎ মনে হ’ল, বহরমপুর হবে হয়ত। দরজাটা খুলে নামতে যাব, এমন সময় মনে হ’ল যেন শুনতে পেলাম, আমারই নাম ধরে কারা ডাকাডাকি করছে-“ও টুনু-টুনু, এতো ভারী বিপদে আজ পড়লাম, -টুনুরে!” একে মেয়েলী গলা, তার ওপর আবার করুণ। আমি ব্যস্ত হয়ে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম। দেখলাম, দুই বুড়ী মাটিতে দাঁড়িয়ে মহা কান্নাকাটি শুরু করেছে, আর জিনিসপত্তর গুলোও সব নামানো হয়েছে। চারদিকে তিন চার জন কুলী ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমার মেজাজ গরম হয়ে উঠল। টিক্সটিক্সসি অর্থাৎ চেকারগুলো যে রাত্রিবেলা মেয়েদের গাড়ী চেক ক’রে-মালপত্তর সব নামিয়ে দেবে এতো কম অন্যায় কথা নয়। আমি কুলীগুলোকে খুব বকে দিলাম, জিনিষ-পত্তর আবার গাড়ীতে তুলে দিতে বল্লাম। আর একবার কুলীগুলোকে এক চোট বকে দিলাম, এবং টিক্স টিক্স সিক্সদের নামে যে রিপোর্ট করতে হবে, সে রকমও অনেক কথা বল্লাম। ঠাকুরমা কেঁদে বল্লেন, “আরে টুনু, আমরা যে এসে পড়েছি।” অবশেষে একটা কুলী সাহস করে বল্লে, “বাবু ঘাট আ গিয়া।” আমি ঠাকুরমাকে বল্লাম,-তাহলে টিক্স টিক্স সিক্স চেক করে নামিয়ে দেয়নি-ঘাটে পড়েছে; সে কথা আমাকে আগে বল্লেই হত, এ জন্য কান্নাকাটি কেন? [ ২০ ] জনৈকা পাঞ্জাবী বেগম সাহেবা নিন্মলিখিত গল্প কোন উর্দ্দু কাগজে লিখিয়াছেনঃ আমরা একটা গ্রামে কিছুকাল ছিলাম। একবার তত্রত্য কোন সম্ভ্রান্ত লোকের বাড়ীতে আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল। সেখানে গিয়া কুমারী মেয়েদের প্রতি যে অত্যধিক জুলুম হইতে দেখিলাম, তাহাতে আমি প্রাণে বড় আঘাত পাইলাম। আমরা যথাসময় তথায় পৌঁছিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, বাড়ীর মেয়েরা কোথায়? শুনিতে পাইলাম তাহারা সকলে রান্নাঘরে বসিয়া আছে। আমি তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাহিলে, কেবল একা আমাকে সেইখানে ডাকিয়া লইয়া হইল। রান্নাঘরে ভয়ানক গরম, আর স্থানও অতিশয় অল্প। কিন্তু উপায়ান্তর না দেখিয়া সেইখানে বসিয়া সেই “মজলুম” কিন্তু মিষ্টভাষিণী বালিকাদের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতে লাগিলাম। একজন দয়াবতী বিবি আমাদের প্রতি কৃপাপরবশ হইয়া বলিলেন, “তোমরা সাবধানে লুকাইয়া উপরে চলিয়া যাও।” আমি মনে করিলাম, সম্ভ্ববতঃ পুরুষমানুষদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাই সাবধানে লুকাইয়া যাইতে বলিলেন। কিন্তু পরে জানিলাম, এ পর্দ্দা সাধারণ অভ্যাগতা মহিলাদের বিরুদ্ধে ছিল। উক্ত বিবি সাহেবার হুকুমে দুইজন মেয়েমানুষ মোটা চাদর ধরিয়া পর্দ্দা করিল, আমরা সেই চাদরে অন্তরাল হইতে উপরে চলিয়া গেলাম। উপরে গিয়া আমি আরও বিপদে পড়িলাম। আমি মনে করিয়াছিলাম, ছাদের উপর আরামে বসিবার কোন কামরা হইবে, অথবা কমপক্ষে বর্ষাতি চালা হইবে। কিন্তু সেখানে কিছুই ছিল না। একে ত প্রখর রৌদ্র, দ্বিতীয়তঃ বসিবারও কিছু ছিল না। সমস্ত ছাদ জুড়িয়া অর্দ্ধ শুষ্ক ঘুঁটে ছড়ান ছিল; তাহার দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত হইতেছিল। বহু কষ্টে একজন চাকরাণী একটা খাটিয়া আনিয়া দিল, আমরা অগত্যা তাহাতেই বসিলাম। নীচে বাজনা বাজিতেছিল, উৎসব হইতেছিল। কিন্তু অভাগিনী অনূঢ়া বালিকা কয়টি অপরাধিণীর ন্যায় রৌদ্রে বসিয়া ঘুঁটের দুর্গন্ধে হাঁপাইতেছিল। কেহই ইহাদের আরামের জন্য একটুকু খেয়াল করিতেছিল না। ক্রমশ সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:২৫
false
rg
গাইবান্ধার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও বিচারহীনতার বাংলাদেশ! গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত। আর সেই পরিকল্পনার নাটের গুরু গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আলম বুলবুল। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, এই শাকিল আলম বুলবুল আবার ওখানকার ‘ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি'-র সভাপতি। গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে হামলার ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের এই ছাত্রনেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ প্রযোজনায় ঘটেছে। নব্বই পরবর্তী বাংলাদেশে প্রায় প্রত্যেকটি এ ধরনের হামলার ঘটনায় হামলাকারী ও ভিকটিমদের মধ্যে একই ধরনের সাদৃশ্য দৃশ্যমান। নব্বই পরবর্তী বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের অনেক ছাত্রনেতা খোদ মন্ত্রী পরিষদের মন্ত্রীদের চেয়েও শক্তিশালী। বাংলাদেশে পাঁচজন মন্ত্রী'র একত্রে যে ক্ষমতা তার চেয়ে একজন ছাত্রনেতার ক্ষমতা অনেক বেশী। এই বাস্তবতা বাংলাদেশের প্রশাসনও খুব ভালোভাবে জানে এবং তা মেনে চলতে বাধ্য হয়। এই বাস্তবতা মেনেই বাংলাদেশের প্রশাসন জোড়াতালি দিয়ে চলে। বাংলাদেশে তাই মন্ত্রী পরিষদের বাইরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতাদের নিয়ে যে অদৃশ্য ছায়ামন্ত্রী পরিষদ থাকে, তারাই প্রশাসনকে সবধরনের আদেশ-নির্দেশ দেয়। এই ছায়ামন্ত্রী পরিষদের আদেশ-নির্দেশ বাংলাদেশের প্রশাসন অমান্য করতে পারে না। যদি প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা দুঃসাহস দেখিয়ে এই ছায়ামন্ত্রী পরিষদের আদেশ-নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে সেই কর্মকর্তার চাকরি জীবনই বরং একটা নতুন বিড়ম্বনায় পরিণত হয়। এভাবেই নব্বই পরবর্তী বাংলাদেশে ক্ষমতা ও প্রশাসন চলছে। এই বাস্তবতা মেনেই বাংলাদেশের মিডিয়া চলে। এই বাস্তবতা মেনেই বাংলাদেশে টেন্ডারবাজি চলে। এই বাস্তবতা মেনেই বাংলাদেশে উন্নয়ন কার্যক্রম চলে। এই বাস্তবতা মেনেই বাংলাদেশে হামলা, মামলা, দখল, উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। এই বাস্তবতা মেনেই বাংলাদেশে নষ্ট রাজনীতির দুষ্টু ঘোড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা ঘটনা পরম্পরায় সওয়ার হয়। আর খোদ বাংলাদেশ সরকার এভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেই হামলাকারীদের ও আক্রান্ত ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা ভিকটিমদের সঙ্গে নানান কিসিমের নেগোসিওটরের ভূমিকা পালন করে। অর্থ্যাৎ খোদ সরকার এখানে কার্যকর বিচার বা আইন প্রয়োগের বিপরীতে ভিকটিম আর হামলাকারীদের মধ্যে এক ধরনের দায়সারা গোছের ফয়সালা করতে শালিশ টাইপের নেগোসিওটরের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয়। গ্রামে একটি মারামারি হলে একজন চেয়ারম্যান ও কিছু মাতবর মিলে যেমন উভয় পক্ষকে নিয়ে শালিশ-বিচার করে একটা মৌখিক মিটমমাটের ব্যবস্থা করে। তেমনি বাংলাদেশে সরকারও এখানে এ ধরনের পূর্ব-পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলোতে ভিকটিম ও হামলাকারীদের মধ্যে একটি নেগোসিওটরের কাজ করে। মাঝখানে যেটা হয়, ওই হামলার ঘটনাটির এক ধরনের মিটমাট হয়, উভয়পক্ষ একধরনের শর্তশাপেক্ষে সেই শালিশ মেনেও নেয়। কিন্তু হামলার প্রকৃত বিচার যেমন হয় না। তেমনি ভিকটিমদের জন্য তৈরি হয় পরবর্তী সময়ের জন্য এক শর্তসাপেক্ষ নরকবাসের জীবন। এভাবেই বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। দেশের আইন ও আদালতের বাইরে এভাবেই সরকার একটা জোড়াতালি দিয়ে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে কোনো ঘটনায় হামলাকারী থেকে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে। কোনো কোনো ঘটনায় হামলাকারী বরং ক্ষমতা ও প্রশাসনের দাপটে উল্টো ভিকটিমকে ভিটেমাটি ছাড়া করছে। আর যদি কোনো ঘটনায় আদালতে মামলা হচ্ছে, সেই মামলাগুলো আদালতে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে যাচ্ছে। হামলাকারী পক্ষ শক্তিশালী হওয়ার কারণে ভিকটিম বা বাদীপক্ষ বরং মামলা করার কারণে আসামীপক্ষ কর্তৃক দেখানো নতুন ভয়ভীতি ও আতংকের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দুর্বল ভিকটিম পক্ষ একসময় বাধ্য হয়ে মামলা তুলে নিচ্ছে। অথবা দুর্বল সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে খোদ আদালতই সেই মামলাগুলো খারিজ করে দিচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশে সরকার ও প্রশাসন জেনেশুনেই একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি লালন-পালন করছে। সেই হামলার ঘটনায় নেগোসিওটরের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হচ্ছে। যার প্রকৃত ফলাফল দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। যা হামলাকারীদের নতুন নতুন হামলা করায় উৎসাহ যোগাচ্ছে। বিচারহীনতার কারণে হামলাকারী এই ধরনের ঘটনায় লাভবান হচ্ছে বলেই তারা আবার নতুন চক্রান্ত করার জন্য তৈরি হচ্ছে। ভিকটিম এখানে চরমভাবে অবহেলিত। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো ক্ষমতার পেছনে পেছনে ছোটার যে নতুন সংস্কৃতি চালু করেছে, যে কারণে অধিকাংশ সময়ে এ ধরনের হামলার ঘটনা খোদ মিডিয়াগুলোতেই দু'ভাবে প্রচার হচ্ছে। কে ভিকটিম আর কে হামলাকারী এটা বুঝে ওঠার আগেই আবার নতুন কোনো ঘটনা ঘটছে। মানুষের চোখ তখন পুরাতন ঘটনা ফেলে মিডিয়ার এই অসত ক্যারিশমার কারণে নতুনের দিকে চলে যাচ্ছে। মিডিয়া এখানে প্রচ্ছন্নভাবে সরকার ও হামলাকারীদের এক ধরনের উপকার করছে। ভিকটিমের জন্য যতটুকু খবর প্রচার হওয়ার কথা, ক্ষমতা, প্রশাসন ও হামলাকারীদের দাপটের কাছে মিডিয়ার নতজানু চরিত্র এক ধরনের আপোষ করে, ঘটনাকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও মিডিয়া সেখানে এই আপোষ চরিত্রের কারণে দায়সারা খবর প্রচার করে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। পুরাতন হামলার ঘটনায় মিডিয়া গুরুত্ব কম পেয়ে নতুন খবরের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে কোনো হামলার ঘটনায় মিডিয়ার যে নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকার কথা, মিডিয়ায় ঘটনার যেভাবে প্রচার হওয়ার কথা, সেগুলোর দুর্বলতা থেকে ফায়দা লুটছে হামলাকারী পক্ষ। অথচ মিডিয়ার খবর প্রচারের পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সুস্পষ্ট করার যে দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্ব এড়িয়ে বরং মিডিয়াগুলো বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে প্রচ্ছন্নভাবে সহায়তা করছে। ফলে ঘটনার যারা ভিকটিম তারা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরেও মিডিয়ার উদাসীনতা, প্রশাসনের নিস্ত্রিয়তা ও সরকারের উভয়পক্ষের সঙ্গে আপোষকারী চরিত্রের কারণে হামলাকারী থেকে যাচ্ছে বিচারের বাইরে। যা হামলাকারীদের নতুন হামলা ঘটানোর জন্য উৎসাহিত করছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকায় আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ওপর হামলা অত্যন্ত পূর্বপরিকল্পিত৷ জমি দখল করতেই পরিকল্পিতভাবেই সাঁওতালদের উপর গুলি চালানো হয়েছে। সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়েছে। আর এই পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আলম বুলবুল। মজার ব্যাপার হলো, এই শাকিল আলম বুলবুল আবার ওখানকার ‘ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি'-র সভাপতি। চিনি কলের জন্য বরাদ্দ করা জমিতে তিনি আদিবাসী সাঁওতালদের ঘর তোলার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। সাঁওতালদের তিনি ওই জমিতে দখল নেবার জন্য প্ররোচণা দিয়েছেন। আবার স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আদিবাসী সাঁওতালদের উপর হামলায়ও নেতৃত্ব দিয়েছেন এই শাকিল আলম বুলবুল। কিন্তু এই ঘটনায় গোটা বাংলাদেশ কী জানলো? গোটা বিশ্ব কী জানলো? সবাই জানলো যে, সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশের গুলিতে তিন আদিবাসী সাঁওতাল নিহত (শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মাড্ডি ও রমেশ টুডু) ও আহত পঞ্চাশের উপরে। গোটা বহির্বশ্ব জানলো, যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি সংখ্যালঘু আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উপর খোদ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন হামলা চালিয়েছে। বহির্বিশ্বে যে বার্তাটি গেল সেটি হলো, খোদ একটি রাষ্ট্র একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করেছে!রংপুর চিনি কলের জন্য ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তখন শর্ত ছিল আখ চাষ না করলে ওই কৃষিজমি প্রকৃত মালিকদেরকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সেই জমি বছরের পর বছর আখ চাষের বদলে বাণিজ্যিক ইজারা দিয়ে অধিগ্রহনের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। যার বিপরীতে ওই জমি প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এখন ওই জমির প্রকৃত মালিক দরিদ্র আদিবাসী সাঁওতালরা ফেরত চাচ্ছেন। আর আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় যাতে ওই জমি দখল করতে যায়, সেই কাজে উৎসাহ যুগিয়েছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আলম বুলবুল। কারণ এই শাকিল আলম বুলবুল আবার ওখানকার ‘ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি'-র সভাপতি। রংপুর চিনিকল কার্যালয় সূত্র মতে, ১৯৫৫ সালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে চিনিকলটি স্থাপিত হয়। ১৯৬২ সালে আখ চাষের জন্য সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর, রামপুরা, ফকিরগঞ্জ এবং সাহেবগঞ্জ ও কাটাবাড়ি ইউনিয়নের কটিয়াবাড়ি এলাকায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তখন থেকে এসব জমিতে উৎপাদিত আখ চিনিকলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। এসব জমি দেখভালের জন্য সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে ওঠে।অর্থ্যাৎ গাইবান্ধার ওই ঘটনার প্রকৃত পক্ষ দুটি। একটি চিনিকল কর্তৃপক্ষ এবং অপরটি আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়। আরো মজার ব্যাপার হলো, চিনিকল কর্তৃপক্ষ যে জমি অধিগ্রহন করেছে তার প্রায় ৯০ ভাগ জমির মালিক স্থানীয় সনাতন ও মুসলিম সম্প্রদায়। আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জমি সেখানে মাত্র ১০ ভাগ। আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় যেহেতু সংখ্যালঘু আবার একেবারে ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠী। তাই স্থানীয় ওই নেতা শাকিল আলম বুলবুল কৌশলে 'ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি'-র সভাপতি হিসেবে আদিবাসী সাঁওতালদের ওই জমিতে দখল করার জন্য ইন্ধন যোগান। স্থানীয় অমোন শক্তিশালী নেতার ইন্ধনে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় তাই গত ১ জুলাই প্রায় ১০০ একর জমি দখলে নিয়ে সেখানে একচালা ঘর নির্মাণ করেন। ওই দিন থেকেই তাঁরা তির-ধনুক নিয়ে জমি পাহারা দিচ্ছেন। তারপর ১২ জুলাই চিনিকল কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ওই জমি উদ্ধার করতে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ ‘দখলদারদের’ বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানায় চারটি মামলা করে। এরপর থেকে দুই পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।নভেম্বরের ৮ তারিখ আবার চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নিয়ে উদ্ধার করতে গেলে আবারো উভয়পক্ষ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। এবার আবার সেই স্থানীয় নেতা চিনিকলের পক্ষে পুলিশের সঙ্গে হামলায় নেতৃত্ব দেন। ফলাফল তিন আদিবাসী সাঁওতাল নিহত (শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মাড্ডি ও রমেশ টুডু) আর উভয় পক্ষে মোট প্রায় ৫০ জনের মত আহত। এবারের হামলার ঘটনায় দুইজন নিহত হওয়ার কারণে ঘটনা অন্যদিকে মোর নিয়েছে। গোটা রাষ্ট্র যেন এই ঘটনায় এখন কেবল দর্শকের ভূমিকায়। কিন্তু ঘটনার নেপথ্যে যে ওই স্থানীয় নেতা শাকিল আলম বুলবুল, যিনি উভয় পক্ষে দখল ও হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার আসল অর্থ হলো, আদিবাসী সাঁওতালদের আরেকটু একঘরে করে দেয়া। যা সাঁওতাল পল্লী'র মানুষজন ইতিমধ্যেই টের পাচ্ছেন। গাইবান্ধার এই ঘটনায় চিনিকল ও আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় পক্ষ-বিপক্ষ হলেও স্থানীয় রাজনীতির কৌশলের কারণে এখানে সবচেয়ে লাভবান পক্ষটি হলো ওই নেতা শাকিল আলম বুলবুল। আর এই ঘটনায় খোদ রাষ্ট্র বা বর্তমান সরকার ওই ঘটনায় নিজের দলের স্থানীয় নেতা সম্পৃক্ত থাকার কারণে এখন হয়তো আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সঙ্গে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে একটা শালিশ করাবেন। কিছু রিলিফ বণ্টন হবে। সেই রিলিফ বণ্টনে হয়তো আবারো ওই নেতাকেই সবার সামনে দেখা যাবে। কিন্তু মাঝখান থেকে দুই আদিবাসী সাঁওতাল লাশ হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে কোনো বিচার হয় না। কোনো হামলার ঘটনায় যদি মামলা হয়, তখন দেখা যায় আদালতে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে মামলাও টেকে না। সাক্ষী খুঁজলে ভয়ে কেউ নাম বলতে চায় না। আবার এ ধরনের মামলায় যদি কোনো আসামী গ্রেফতার হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই আসামী কয়েকদিন পরেই জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। আসামী জামিনে মুক্ত হয়ে আবার বাদীকে মামলা তুলে নেবার জন্য নানান কিসিমের হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করে। বাদীর ওপর সারাক্ষণ চাপ থাকে মামলা থেকে নাম কাটানোর। একসময় এই মামলাগুলো কেবল কাগুজে আবর্জনায় পরিণত হয়। অপরাধীদের কিচ্ছু হয় না। তারা প্রকাশ্যে খুব দম্ভের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। মামলার বাদীকে হুমকি প্রদানসহ নতুন করে হামলা করারও ভয় দেখানো হয়। শেষপর্যন্ত এভাবে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার মামলাগুলো নিয়ে আদালত বা প্রশাসনেরও আর কোনো আগ্রহ থাকে না। যা বাংলাদেশে এক ভয়ংকর বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী, বিগত ৫ বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ের ওপর ২৮০৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর বাংলাদেশ পুলিশের তথ্যমতে, এই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ২৭৩টি। অর্থ্যাৎ, হামলার ঘটনা প্রায় তিন হাজার, সেখানে মামলার ঘটনা মাত্র প্রায় তিনশো। অনুপাত হিসেবে প্রতি হাজার হামলায় একশো মামলা। সেই মামলাগুলো থেকে আবার কোনো বিচার হয় না। একবার ভাবুন, কী ভয়ংকর বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে গড়ে উঠছে বাংলাদেশ। এখন আমরা সবাই জানি, গাইবান্ধার আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উপর এই হামলারও কোনো বিচার বাংলাদেশে হবে না। স্থানীয় প্রশাসন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ এবং ভিকটিম আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়কে কিছু নতুন শর্ত দিয়ে সরকার একধরনের শালিশ মাধ্যমে ঘটনার একটা মিমাংসা করবে। যা প্রকৃত অর্থে বিচারহীনতা। যা আবার কয়েক মাস পর শাকিলদের মত কোনো নেতার উসকানিতে আবার নতুন ঘটনার জন্ম দেবে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাবে। যা সত্যি সত্যিই মাল্টি-কালচার চর্চার জন্য বাংলাদেশের জন্য এই সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ! ..............................১১ নভেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪
false
fe
মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিসংগ্রাম ও আগামী মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিসংগ্রাম ও আগামীফকির ইলিয়াস==============================================দেশে আবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এর আগেও অনেকবার হয়েছে। এতবার কেন হচ্ছে? এর কোনো জবাব নাই। জবাব নাই এ জন্য, আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করি না। জবাব নাই এ জন্য, আমরা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করি। জবাব নেই এ জন্য, আমরা জানি না আমাদের প্রকৃত গন্তব্য কোথায়?আমি মনে করি আমাদের মুক্তিসংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি। মুক্তির সংগ্রাম মূলত শেষ হয় না। যারা এ সংগ্রাম করেন- তারা আসলে একটি পর্ব শেষ করেন। বাকি পর্বটি অন্য কাউকে শেষ করতে হয়। অন্য কাউকে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। আমাদের অনেকেই তা পারছি না। আর পারছি না বলেই অপশক্তি সেই স্থান দখল করে নিচ্ছে। কীভাবে নিচ্ছে- তার নমুনা আমরা এখন প্রায়ই দেখছি।একটি সংবাদ আমাদের সম্প্রতি চমকে দিয়েছে। ২০১৬-এর বিজয় দিবসে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীর হাত থেকে সম্মাননা নিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ। ১৭ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাঈদীপুত্র মাসুদ।গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর সকালে পিরোজপুরের জিয়ানগরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মাসুদ সাঈদী। এরপর সকাল ৮টায় একটি বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে তার নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, প্রেস ক্লাব, মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও প্যারেড প্রদর্শন হয়। এরপর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেন তিনি।অনুষ্ঠানের ছবি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাঈদীপুত্র মাসুদ। ১৬ ডিসেম্বর দেওয়া একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জিয়ানগর উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পুরস্কার নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব বেলায়েত হোসেন, বর্তমান উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বপন কুমার রায়, সাবেক কমান্ডার মাহবুবুল আলম হাওলাদার (আমার আব্বার মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী), মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার ফকির। উপস্থিত আছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন বাচ্চু, ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম মিজানুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট এম মতিউর রহমান, সেক্রেটারি মৃধা মো. মনিরুজ্জামানসহ মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ।’১৭ ডিসেম্বর অন্য আরেকটি পোস্টে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাঈদীর পুত্র মাসুদ লিখেছেন, ‘মহান বিজয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান। স্মৃতিচারণা করছেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জিয়ানগর উপজেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুল লতিফ হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জিয়ানগর উপজেলার বর্তমান ডেপুটি কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু স্বপন কুমার রায়, যুদ্ধকালীন পাড়েরহাট ক্যাম্প কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোকাররম হোসেন কবির।’এই হলো আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা। এ বাস্তবতাকে কেমন দেখছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় র‌্যালিতে সাঈদীপুত্রের অংশগ্রহণের ছবি নিজের ফেসবুক পেজে তুলে দিয়ে শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ লিখেছেন, ‘বিজয়ের ৪৬তম বছরের প্রথম সকাল হতবাক করেছে। রাজাকারপুত্র এবং মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে বিজয় দিবস উদযাপন করছে! আর আমরা দেখছি! কী সুন্দর সকাল হওয়ার কথা ছিল আজ, তাই না!’শাওনের পোস্টে মন্তব্যের ঘরে সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল লিখেছেন- ‘শহীদ বীর আলতাফ মাহমুদের কন্যা কাঁদছে, কেন? সবই তো আগের মতোই আছে!’ সেখানে একজন তাকে প্রশ্ন করেন, “আগের মতোই আছে? পূর্ব পাকিস্তানের মতন? তাহলে ‘বাংলাদেশ’ নামটা হয়েছিল কোন দুঃখে?” উত্তরে বুলবুল লিখেছেন, ‘আমি এখন যুদ্ধরত, জিতলে কথা হবে, অনেক।’আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল যে মুক্তিসংগ্রামের কথা বলেছেন- সেই যুদ্ধ চলছে। অবশ্যই চলছে। এ যুদ্ধ না চললে একটি জাতি তার অতীত ভুলে যায়।এর পরের সংবাদ থেকে আমরা জানছি- জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীর কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মাননা নেওয়ায় ক্ষমা চেয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সমীর কুমার দাস বাচ্চু। পিরোজপুর প্রেসক্লাবে জিয়ানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চান। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বলেন, ‘মাসুদ সাঈদী মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মাননা দিয়েছেন তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে কালিমা লেপন করা হয়েছে।’ ক্ষোভের সঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাও কি ছিল না বিষয়টিতে প্রতিবাদ করার। যেসব মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমরা এখনও জানি না। তবে এটুকু জানি, আমাদের চারপাশে বৈভব দেখিয়ে এমন অনেকেই এখন দখলের ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমরা দেখছি- প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, আবেদনকৃত ও তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিরীক্ষণ হচ্ছে। তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে উপজেলা, জেলা-মহানগর যাচাই-বাছাই কমিটি করেছে সরকার। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ জানুয়ারি এসব কমিটি গঠনের আদেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে এর আগে গঠিত সব কমিটি বাতিল করেছে।আদেশে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাইয়ের আওতাধীন কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা প্রতিনিধি এসব কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না। যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি (সংসদ সদস্য ছাড়া) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত হবেন। বলা হয়েছে ‘এই কমিটিকে ইতোপূর্বে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল কর্তৃক প্রেরিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তথ্যাবলি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নির্দেশিকা ২০১৬ অনুরসণ করে যাচাই-বাছাই করতে হবে।’মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ও একেক সময় একেক রকম তথ্য পাওয়া পাওয়া গেছে। এরশাদের আমল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ দফায় তালিকা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন প্রায় ২৬ হাজার। এর মধ্যে সাময়িক সনদ পেতে ১৭ হাজার এবং যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরো ৮ হাজার আবেদন নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এ সংখ্যা ছিল প্রথম দফায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯ জন। পরে তা ২ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জনে উন্নীত হয়। এর আগে ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভোটার তালিকায় ৮৬ হাজার এবং ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের খসড়া তালিকায় ছিল ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯০ জনের নাম।এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮৬-৮৭ সালে জাতীয় কমিটি কর্তৃক প্রণীত তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৮ জন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিবার্তা (লাল মলাটে) পত্রিকায় প্রকাশিত নামের তালিকাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়। লাল মুক্তিবার্তায় ১ লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় মুক্তিবার্তার লাল মলাটের বাইরে যারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়েছেন তাদের অনেকে এখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যমান গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় প্রায় ৪০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ঢুকে পড়েছে। ডিজিটাল ডাটাবেজ তালিকায় যাদের বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাই হোক, মুক্তিযোদ্ধারা আসলে কেমন আছেন? বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে অর্ধাহারে। এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত। সম্পদ ও কর্মহীন অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার তাদের পরিবারের সদস্যদের খাদ্যের জোগান দিতে এখনো ভিক্ষাবৃত্তি, দিনমজুরি, রিকশা চালানোসহ অনেক কঠোর পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবনযাপন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করে, মনগড়া কল্পিত ও মিথ্যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করে আদর্শহীন, দুর্নীতিবাজ একটি শ্রেণি ব্যক্তি ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত, নষ্ট ও ধ্বংস হয়েছে এদের হাতেই।অন্যদিকে রাজাকার আলবদর গোষ্ঠীর নেতারা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে কতিপয় মুক্তিযোদ্ধাকেও। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে একটি বিশেষ অংশগ্রহণ ছিল নারী সমাজের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের ৩০ লাখ মানুষের গণহত্যার শিকার হয়, যার অন্তত ২০ শতাংশ নারী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সরকারি নথিপত্রে এর কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। বিভিন্ন ভাষ্যমতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু মাঠভিত্তিক গবেষণা চালাতে গিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের গবেষণাকর্মীদের মনে নিশ্চিত ধারণা জন্মেছে মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা যা এতদিন বলা হয়ে আসছে, আসলে তা এর চেয়েও অনেক বেশি।তবে এতদিন পর তথ্য-প্রমাণ দিয়ে হয়তো এসব প্রমাণ করার সুযোগ কম। তাছাড়া নির্যাতিতরা সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তার কারণেই চান না এতদিন পর এসব নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি হোক। এসব কারণেই অনেক নির্যাতিত নারী তাদের ওপর নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী গবেষণাকর্মীদের কাছে মুখে মুখে বললেও তা টেপরেকর্ডারে রেকর্ড করতে বা লিপিবদ্ধ করতে দিতে চাননি।আজ যে সাঈদীপুত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দিচ্ছেন, একাত্তরে কেমন ছিল সেই সাঈদীর ভূমিকা? আমাদের মনে আছে প্রসিকিউশন তাদের স্টেটমেন্টে বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা সাঈদী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাড়েরহাট বন্দরের বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে নিয়মিত যৌননির্যাতন করতেন। বিপদ সাহার বাড়িতেই আটকে রেখে অন্যান্য রাজাকারসহ ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। একসময় ভানু সাহা দেশত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।স্টেটমেন্টে আরো বলা হয়, সাঈদী একাত্তরে অসংখ্য হিন্দুকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেছিলেন, নামাজ পড়তেও বাধ্য করেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন করে এবং কেউ কেউ ভারতে চলে যান।এই হলো আমাদের মুক্তিসংগ্রামের একটি খণ্ডচিত্র। কী মূল্য দিয়ে কেনা আমাদের স্বাধীনতা! অতীতে যে তালিকাগুলো হয়েছে সেগুলো কি স্বচ্ছ ছিল। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অনেক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকলেও তাতে ঠাঁই হয়নি কুড়িগ্রামের বীর প্রতীক তারামন বিবির নাম। ২০০৫ সালের ২১ মে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় ৩৭৫৫ নম্বর থেকে ৩৮৭৪ নম্বর পৃষ্ঠায় কুড়িগ্রাম জেলার ৩ হাজার ৬১৪ জন মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত তারামন বিবির নাম নেই, তা ধরা পড়ে জেলা পোর্টাল তৈরি করতে গিয়ে। এই হলো আমাদের তালিকার অবস্থা!মুক্তিযোদ্ধারা চিরদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন না। কিন্তু তাদের কর্ম, তাদের স্বপ্ন, তাদের গৌরবগাথা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। জাগ্রত থাকবে তাদের চেতনা। থাকতেই হবে। না থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব থাকবে না। সেই প্রত্যয় এবং ঐতিহ্যের শক্তিই প্রজন্ম ধরে রাখতে চায়।তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। আমরা দেখছি আজ রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। বুলি পাল্টে এরাই হতে চাইছে মুক্তির নিয়ামক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মান চান। যে দেশে কোটি কোটি টাকা লুটেরা শ্রেণি প্রতিদিন লুটপাট করে সেই দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা যথার্থ সম্মানী ভাতা পাবেন না, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাই হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়, রাষ্ট্রীয় সম্মান, রাষ্ট্রের মানুষের সম্মান বাড়ানোর জন্যই জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক পুনর্বাসন খুবই দরকারি। দরকার পরলোকগত মুক্তিযোদ্ধদের পোষ্য, সন্তান, পরিবারকেও সার্বিক সহযোগিতা করা। কারণ একাত্তরের বীর সেনানীরা বারবার জন্ম নেবেন না।আগেই বলেছি, মুক্তিসংগ্রাম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশকে সেই শক্তি ও সাহস নিয়েই এগোতে হবে। এ প্রজন্মকে করতে হবে সেই মন্ত্রে দীক্ষিত। ---------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ২০ জানুয়ারি ২০১৭ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৪৫
false
mk
সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য সম্প্রতি সময়ের পর পর বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনা এবং রাজধানীর হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে আর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলার পর এই সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করার জন্য জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে জঙ্গিবাদীদের তৎপরতা। এই তৎপরতা রুখতে না পারলে বাংলাদেশও একদিন পাকিস্তান, আফগানিস্তান সিরিয়ার মতো অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে। দেশের সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ দমন করার লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ার জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। সরকার প্রধানের এই ডাকে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বিভিন্ন সামাজিক এবং পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সরকারের এই আহ্বানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। দেশের প্রতিটি জেলায় গড়ে উঠেছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি। অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বদানকারী বিএনপির প্রধান বেগম খালেদা জিয়াও জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই দুই আহ্বানের মাঝে এক ধরনের বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়। গত ১৭ জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মঙ্গোলিয়া সফর শেষে দেশে ফিরে যে সংবাদ সম্মেলন করেন তাতে তিনি জাতীয় ঐক্যর অগ্রগতির কথা বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঐক্যর কথাকে কটাক্ষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি ধান ভানতে শিবের গীত গাইলেন। তার কথায়ও আবার বৈপরীত্যের সুর পাওয়া যায়, নজরুল ইসলাম খানও বলেছেন জাতীয় ঐক্য অগ্রাহ্য করা বিপজ্জনক। নজরুল ইসলাম খানসহ বিশ দলের নেতৃত্ব কী বোঝাতে চাইছেন জাতীয় ঐক্যর বিষয়ে। জাতীয় ঐক্যর সংজ্ঞাটা কী? ২০ দল কি চাচ্ছে দেশের সকল রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক ব্যানারে এসে সমবেত হোক। তার মাধ্যমে তারা সরকারবিরোধী প্লাটফরম গড়ে তুলুক। আর এই প্লাটফরমের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়ে যাবে। এখানে প্রশ্ন জাগে জাতীয় ঐক্য কি ক্ষমতা বদলের জন্য প্রয়োজন নাকি প্রকৃতার্থে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য প্রয়োজন। ২০ দলীয় জোটের উচিত আগে তা নির্ধারণ করা। বর্তমান পেক্ষাপটে জঙ্গি এবং সন্ত্রাস এমন এক চরম অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে তা নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক খেলা খেললে তা সমগ্র জাতির জন্য হয়ে উঠবে ভয়ঙ্কর। তাই দলীয় মোড়কে বা ব্যানারে নয় জাতীয় ঐক্য জাতীয়ভাবে গড়ে ওঠা প্রয়োজন। তাছাড়া জাতীয় ঐক্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়া ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠনগুলোর নৈতিক এবং আদর্শিক দিকগুলো বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন আছে। যেমন বিশদলীয় জোটকে নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠন করা হলে ওই জাতীয় ঐক্য দিয়ে কোনো দিনই সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব নয়। কারণ বিশদলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত। বর্তমান দেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসের উৎপত্তি জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে। জামায়াত বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটায় আর সেই জামায়াত হলো ২০ দলের অন্যতম শরিক। তাছাড়া ২০১৩ সালের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হরতাল অবরোধ এর নামে যে নারকীয় কর্মকা- ঘটেছিল তা কিন্তু দেশবাসী ভুলে যায়নি। আদালত কর্তৃক মানবতাবিরোধী '৭১-এর ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি ঘোষণার পর দেশব্যাপী জামায়াত যে নারকীয় কর্মকা- চালায় তার সূত্র ধরেই আজকের জঙ্গি সন্ত্রাসের উদ্ভব। পুলিশ ফাঁড়ি লুট, পুলিশ হত্যা, যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে আগুন, ট্রেনের বগি পুড়িয়ে দেয়াসহ নানা তা-ব সংঘটিত হয়েছে এ দেশে তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে। আর এইসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ২০ দলীয় জোট। এখন ২০ দলীয় জোটকে একীভূত করে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য কি গঠন করা সম্ভব। রাজনৈতিকভাবে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্য গড়তে মুক্তিযুদ্বের আদর্শের এবং চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি প্লাটফরমে আসতে হবে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্বের স্বপক্ষের কিছু দল এমন রাজনৈতিক আচরণ করছে যার ফল প্রত্যক্ষভাবে পরোক্ষভাবে জামায়াতের পক্ষেই যায়। তাই এ ধরনের রাজনৈতিক শক্তি যদি জাতীয় ঐক্যর ব্যানারে একীভূত হয় তখন তো তারা জাতীয় ঐক্যর ভিতর থেকে জামায়াতের পক্ষে রাজনৈতিক ইন্ধন জোগাবে। কিছু বাম দল নিজেদেরকে থার্ড লাইনের শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচয় দিতে একটি প্লাটফরম গড়তে ব্যস্ত। তাদের এই কার্যকলাপের রাজনৈতিক ফসল তাদের ঘরে ওঠে না । এই ফসল পরোক্ষভাবে চলে যায় জামায়াতের ঘরে। জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের মসজিদগুলোতে জুমার দিন এক ধরনের খুতবার বয়ানের ব্যবস্থা করেছেন যার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হলো ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাস করছে তাদের সম্পর্কে মুসলমানদের ধারণা দেয়া এবং সামাজের তৃণমূল পর্যায়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। কিন্তু এই প্রচেষ্টায় নানাভাবে বাদ সাধছেন কেউ কেউ_ যেমন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী বলছেন, এ রকম খুতবা দশবার পড়লে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। হেফাজতের প্রধান হুজুর মাওলানা শফী বলছেন, মসজিদ দখলের চেষ্টা চলছে। তাই জাতীয় ঐক্য তৈরি যেমন জরুরি সেই সঙ্গে ঐক্য তৈরিতে সাবধানতা অবলম্বন করাও প্রয়োজন। দেশের সাম্প্রতিককালের সন্ত্রাসী কর্মকা- মুক্তিযুদ্বের চেতনা, লক্ষ্য ও আদর্শকে আঘাত করছে। স্বাধীনতার বিরোধীশক্তি ৪৫ বছর পর আবার আঘাত হানছে মুক্তিযুদ্বের আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে। তাই এই সন্ত্রাসী কর্মকা-কে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত নয়। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল কেন সন্ত্রাসী কর্মকা- হচ্ছে তার কারণ আতশি কাচ দিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তাদের এই কারণ বের করার কৌশলটাতে দেখা যায় তারা পরোক্ষভাবে ওই সন্ত্রাসীদের মদদ জোগাচ্ছেন। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলছেন, সন্ত্রাসী কর্মকা- হওয়ার পেছনের কারণ হলো দেশের গণতন্ত্রহীনতা, ক্ষোভ, হতাশা। আসলে কি তাই? বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেই কি গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেল। যারা এ ধরনের কথায় বিশ্বাসী তারা গণতন্ত্রের প্রকৃত সংজ্ঞা বোঝেন না। দেশের গণতন্ত্র কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি নয়। কিন্তু তাদের কথায় মনে হয় বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিএনপির কাছে লিজ দেয়া হয়ে গেছে তাই বিএনপি না এলে নির্বাচন গণতন্ত্রহীনতার কবলে পতিত হবে। একটি দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় কোনো দিন গণতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে না আর যদি গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েই থাকে এর জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দায়ী। বর্তমানে দেশে যতটুকু গণতন্ত্র আছে তা কি জিয়া এরশাদের আমলে ছিল, যারা নানা তাত্তি্বকতায় বর্তমান গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেন তারা একটু ভেবে দেখবেন। ১৯৭৫-১৯৯০ এই সময়টায় খুব লালন করে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করা হয়। আর এই ব্যবহারের মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটে মৌলবাদী উগ্রতা যার ফল আজকের সন্ত্রাসী কর্মকা-। জাতীয় ঐক্যর ক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টিও দেখতে হবে, যেসব রাজনৈতিক দলে নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে তারা জাতীয় ঐক্যে একীভূত হলে কোনো ফলদায়ক ফলাফল পাওয়া যাবে না। মার্কসীয় আদর্শ লালন করে দেশে একশ্রেণির প্রতারকের উদ্ভব হয়েছে, যারা বামপন্থী বাতাবরণে মানুষের টাকা মারছে, পার্টির সম্পত্তি কুক্ষিগত করছে তাদেরকে দিয়েও এই জঙ্গিবাদ প্রতিহতের জাতীয় ঐক্য করলে কোনো লাভ হবে না। নৈতিক স্খলনঘটিত এই বাম নেতারা যেভাবে মার্কসীয় আদর্শের বাতাবরণে মানুষ ঠকাচ্ছে অনুরূপভাবে পবিত্র ধর্মের নামে জঙ্গিরা মানুষ হত্যা করছে। জঙ্গি আক্রমণের কবলে পড়লে মানুষের প্রাণ যায় আর এক ধরনের বাম নেতার প্রতারণার কবলে পড়লে অর্থ হারিয়ে তিলে তিলে জীবন্ত অবস্থায় একজন সুস্থ মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। ্ওই বামপন্থীরা গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু গণতন্ত্রের লেশমাত্র নিজেদের মধ্যে নেই। পার্টির গণতন্ত্র অনুযায়ী পার্টি চলে না। তাই এই ধরনের লুম্পেনদেরকে জাতীয় ঐক্যে অন্তর্ভুক্তি করার প্রয়োজন নেই। কিছু বাম এবং বিএনপির ঘরানার বুদ্ধিজীবী ড. জাফর উল্লাহ বলেছেন, বাবাকে মারলে ছেলে জঙ্গি হবেই। তিনি আরও বলেছেন বর্তমান জঙ্গিবাদ নাকি এক ধরনের প্রতিবাদ। যদিও তিনি আবার এক জায়গায় বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার প্রতিবাদকে তিনি সমর্থন করেন না। তার কথায় আশ্চর্য হতে হয় জঙ্গিবাদও নাকি এক ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ। যেসব জঙ্গিী ধরা পড়েছে বা নিহত হয়েছে তাদের কারো পরিবার পুলিশে হাতে নিগৃহীত হয়নি। তাছাড়া দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী কথা একজন বুদ্বিজীবী কিভাবে বলতে পারেন? এদেশে জঙ্গিদের উত্থানে এ ধরনের কথিত বুদ্ধিজীবীরা পরোক্ষভাবে ইন্ধন জোগাচ্ছেন এ কথা বললে কি ভুল হবে। কিছু বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলের কর্মকা- পরোক্ষভাবে ইন্ধন জোগায় সন্ত্রাসী কর্মকা-কে। জাতীয় ঐক্য গড়তে হলে এ ধরনের ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আচরণিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ জরুরি। সর্ষের মধ্যে যেন ভূত না ঢোকে এ ব্যাপারে সকলের সজাগ থাকতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত, ঘুষখোর, অনৈতিক কাজ করা ব্যক্তি এবং প্রতারকদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়লে একসময় অর্থের বিনিময়ে মৌলবাদীরা ওদের সঙ্গে ঢুকে পড়বে জাতীয় ঐক্যে। দেশের সাধারণ মানুষ যারা রাজনৈতিক দলভুক্ত নন তারা কোনো সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। তাই জাতীয় ঐক্য গড়তে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দেন এমন রাজনৈতিক দলকে এবং প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত কথিত বাম চেতনার রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত না করলেও সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যর কোনো ক্ষতি হবে না। '৭২-এর সংবিধানের কথা মুখে বলে আর প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এবং রাজনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক শক্তির জোগান দেয় তাদের কাছ থেকে জাতীয় ঐক্যকে দূরে রাখতে হবে। সুপ্তভাবে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি নানা প্রলেপের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্লাটফর্মগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকা- করছে তাই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নেই। বর্তমান সরকারের সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কাজে জনগণের সমর্থন রয়েছে। দেশের ব্যাপক অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি এই কার্যক্রমগুলোর মধ্য দিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তার পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী। শাহ মো. জিয়াউদ্দিন: কলাম লেখক সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩
false
fe
সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা ও রাষ্ট্রীয় শপথ সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা ও রাষ্ট্রীয় শপথফকির ইলিয়াস::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। এজলাসে এসেছেন মাননীয় বিচারক। কাঠগড়ায় যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি একজন রাজনীতিক। অ্যাসেম্বলিম্যান ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি ফান্ডের বড় অংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। মাননীয় বিচারক রায় দেবেন। তিনি তার পূর্বভাষণে বললেন, সম্মানিত রাজনীতিক, আপনি রাষ্ট্রীয় শপথ ভঙ্গ করেছেন। আপনি শপথ করে বলেছিলেন, আপনি স্বজনপ্রীতি করবেন না। আপনি দুর্নীতি করবেন না। কিন্তু আপনি তা করেছেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাই আপনাকে দ- দেয়া হচ্ছে। এটাই হলো বিচারিক নিয়ম। হ্যাঁ, আমি মার্কিন আদালতের কথা বলছি। আমার ভাবতে খুব অবাক লাগে, বাংলাদেশের মন্ত্রী, এমপিরা রাষ্ট্রীয় শপথ কিভাবে ভঙ্গ করেন। কিভাবে তারা ভুলে যান- তারা শপথ নিয়েছিলেন এই দেশের জানমাল রক্ষার জন্য। বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এরপরই নবম জাতীয় সংসদের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে খোদ সরকার পক্ষ থেকেই। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সাতজন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা হলেন- সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সংসদ সদস্য আসলামুল হক, সংসদ সদস্য এনামুল হক, কক্সবাজার-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ জব্বার।জানা গেছে, প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরে এমপি আবদুর রহমান বদির আয় বাড়ে ৩৫১ গুণ। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, তার নিট সম্পদ বেড়েছে ১৯ গুণের বেশি। বদির হলফনামায় শুধুমাত্র আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক। দেখা করবেন দুদকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে। দুদক চেয়ারম্যানের কাছে চিঠির মাধ্যমে সময় চেয়ে কমিশনে আসার কথা জানান বলে নিশ্চিত করেন দুদকের সূত্র। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় আসলামুল হক উল্লেখ করেছেন, তিনি ও তার স্ত্রী এখন ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর জমির মালিক। জমির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা। ৫ বছরে স্বামী-স্ত্রীর জমি বেড়েছে ১৪০ একরের বেশি। আর বাড়তি এ জমির মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। হলফনামায় এভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন অনেক মন্ত্রী-এমপি। দুদক সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের দুর্নীতির খোঁজে নেমে পড়েছে। তারা ইতোমধ্যেই তার মালিকানাধীন গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজ ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার বিপুল হালদারের মালিকানাধীন আন্ধারমানিক ট্রেডার্স গত ৫ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যেসব কাজের টেন্ডার নিয়েছে তার কাগজপত্রসহ নির্বাহী প্রকৌশলী কলাপাড়া সার্কেলকে ঢাকায় তলব করেছে। নির্বাহী প্রকৌশলী কলাপাড়া সার্কেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া দুদক পটুয়াখালী সদর পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস থেকেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে বলে অফিস সূত্র জানিয়েছে।এদিকে বিগত ৫ বছরে মাহবুবুর রহমানের লুটপাটের সাথী উপজেলার ৫ অনুগত আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এ মন্ত্রীর সততার পক্ষে সাফাই গেয়ে, একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। আতঙ্কে আছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের কর্মকর্তারা। এদিকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর ধারণা দেশব্যাপী কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী ও এমপির অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্ত কমিটি করায় দুদক থেকে রেহাই পেতে মাহবুবুর রহমান দলীয় যেসব নেতাকর্মী দিয়ে অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরও সম্পদের হিসাব নেয়ার দাবি এলাকাবাসীর। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য সাউদার্ন এরিয়ায়’ পরিণত হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপির অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে দুদকের সচিব মোঃ ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যতোই প্রভাবশালী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। কথা হচ্ছে, দুদক কি পারবে এদের আইনের আওতায় আনতে? নাকি সবই লোক দেখানো? প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছেÑ মহাজোট সরকারের সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদারসহ ডজন খানেক এমপি-মন্ত্রীর অবৈধ সম্পদ যাচাই-বাছাই করছে দুদক। যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেবে। এই মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই ক্ষমতায় থেকে বিপুল অর্থ-সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করলেও হলফনামায় তা অনেক কম করে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হলফনামার বাইরে প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ কতোটুকু, দুদক অনুসন্ধান করে সেটাও বের করবে বলে সূত্র জানায়।এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান বলেছেন, ‘হলফনামা ধরেই সাবেক তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপির অস্বাভাবিক সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। আরো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এমন অস্বাভাবিক সম্পদের প্রাথমিক সত্যতা পেলেই তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পরিচালনা করা হবে।’ ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদক কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই দুদক কাজ করছে। দুর্নীতিবাজরা যতো বড় ক্ষমতাশালী হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, বিশ্বের সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় এ বছর ১৬তম স্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতি ধারণাসূচক ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের এ নতুন অবস্থান। আগের বছর এই অবস্থান ছিল ১৩তম। টিআইয়ের জরিপে দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশের ‘তাৎপর্যহীন’ অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। দুর্নীতিবিষয়ক বৈশ্বিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এই প্রতিবেদন বিশ্বের ১৭৭টি দেশে একযোগে প্রকাশ করা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে বাগাড়ম্বর যতোটুকু ছিল, দুর্নীতি দমনে কার্যকর দৃশ্যমান বিশ্বাসযোগ্য কার্যক্রম তেমন দেখা যায়নি।জরিপ অনুযায়ী এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে একটি দেশ। তা হলো আফগানিস্তান। বাংলাদেশের স্কোর ২৭। টিআই বলছে, ২০১৩ সালে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সোমালিয়া, উত্তর কোরিয়া ও আফগানিস্তান। সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখবো কয়েকমাস আগেও এদেশের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ড. মহীউদ্দীন খান আলগগীর। তিনি ২০১৩ এর আগস্ট মাসে একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ‘বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল, বিচারকের আসনে থেকে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালানো ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করা রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি। এসব রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির দিকে নজর না দিয়ে প্রান্তিক দুর্নীতি রোধ করে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া যাবে না।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিমিনোলজির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক কে এ এম সাদ’উদ্দীন। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি রোধ না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছোটখাটো দুর্নীতিরোধের কার্যক্রমে ক্ষেত্রে বিশেষে হাততালি পেলে সমাজ উপকৃত হবে না।’ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে তিন মাসের জন্য নিযুক্ত হয়েছেন। পরে জোর করে ক্ষমতায় গেছেন। দুই বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। এটি সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি।’ খুব দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের এমন বড় বড় বুলি চার দশক থেকেই। তারপরও দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি সিকিভাগও- যে চেতনা নিয়ে এই দেশ বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। বাংলাদেশ বড় দুঃখী দেশ। এদেশে জননেতা জন্ম নিয়েছেন খুব কমই। একটা সংবাদ পড়ে আমার মনে হয়েছে- এটাও দেখতে হলো! ‘দুর্নীতির দায়ে দল থেকে বহিষ্কার হতে পারেন দীলিপ বড়ুয়া।’ খবরে প্রকাশ, সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দীলিপ বড়ুয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সাম্যবাদী দলের (এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হারুন চৌধুরী। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দীলিপ বড়ুয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন দুর্নীতি, দলের স্বেচ্ছাচারী নেতৃত্ব ও অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়ায় দলীয় ইমেজ সংকটে ফেলার অভিযোগে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কী ভয়ানক খবর! এসব বিষয়ের প্রতিকার দরকার। আমরা দেখছি, অপেক্ষাকৃত নতুন ও কম অভিজ্ঞদের নিয়ে গত মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এবার আর সে পথে হাঁটেনি দলটি। নবগঠিত ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভার ২৪ জনই নতুন। নতুনদের প্রায় সবাই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী। পুরোনো মন্ত্রীদের মধ্যে বিতর্কিত ও পাঁচ বছরে যাদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক অর্থসম্পদ গড়াসহ নানা অভিযোগ আছে, তাদের অনেকেরই নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি। তাদের বদলে এবার অভিজ্ঞ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিকরাই নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, ‘গত সরকারে যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি, প্রধানমন্ত্রী তাদের এই মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’বিতর্কিতরা এই মন্ত্রিসভায় নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের পর সবারই দৃষ্টি ছিল মন্ত্রিসভা কেমন হবে। আমার মনে হয়, মোটামুটি ক্লিন মন্ত্রিসভা হয়েছে। টেম্পটেডরা (বিতর্কিত) নেই বললেই চলে।’ আওয়ামী লীগ নতুন কাউন্সিল করার কথা ভাবছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পাশাপাশি দলেও চলবে শুদ্ধি অভিযান। দলকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর চিন্তাও করছেন সর্বোচ্চ মহল। এ জন্য চলতি বছরেই সংগঠনের বিশেষ কাউন্সিল ডাকা হবে। উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বিশেষ কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হতে পারে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন হবে। আমাদের দেশের মাননীয় মন্ত্রীরা দায়িত্বজ্ঞান ভুলে যান। কোথায় ধূমপান করতে হবে- আর কোথায় করা যাবে না- তাও বলে দেবেন তাদের এপিএসরা? এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাংলাদেশে খুবই দুর্লভ। সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা দরকার সকল রাজনীতিকের, সকল মানুষের। মনে রাখা দরকার লিখিত শপথবাক্যই শুধু নয়, নৈতিক-মানসিক অবস্থার উন্নতি করতে না পারলে কোনো জাতি এগোতে পারে না।আবারো বলি, যারা শপথ ভঙ্গ করেন তারা মূলত গণশত্রু। এদের চিনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষকেই। বিশ্ব এখন তথ্যনির্ভর। তাই লুটপাট করে পার পাওয়া যাবে না। শুধু সজাগ থাকতে হবে এই প্রজন্মকে।------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
false
fe
শীর্ষ যু্দ্ধাপরাধীদের তালিকা_ ইসলামী ঐক্যজোটের দৃষ্টিতে দৈনিক আমাদের সময় । ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ রোববার। ============================================ ১৫ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করেছে ইসলামী ঐক্যজোট খাদ্য সচিব আইয়ুব মিয়ার নামও রয়েছে তালিকায় ------------------------------------------------------------------------------- দীনেশ দাস: পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শীর্ষ ১৫ যুদ্ধাপরাধীর নামের তালিকা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট। বাকী ৩০ জনের নাম ঘোষণা করা হবে শিগগিরই। এই তালিকায় খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের নামও রয়েছে। গতকাল দুপুরে দলের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৫ যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করেন। এরা হলেন, আলবদর বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার ও বর্তমানে জামায়াতে ইসলামের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলবদর বাহিনীর উপপ্রধান ও জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত বদর বাহিনীর সহকারী প্রধান, বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও রাবেতা আলম ইসলাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর, ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্র শিবির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রথম সভাপতি মীর কাশেম আলী, বদর বাহিনীর কমান্ডার, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও জামায়াতের প্রয়াত নেতা মুহাম্মদ ইউনূস, জামালপুর বদর বাহিনীর কমান্ডার ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, ময়মনসিংহের দায়িত্বপ্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার ও বর্তমানে ব্যবসায়ী আশরাফ হোসাইন, ঢাকার আলবদর বাহিনীর উপকমান্ডার জামায়াতের মজলিসে শুরার সদস্য আসম রুহুল কুদ্দুস, বদর বাহিনীর ঢাকা শহরের প্রধান কমান্ডার ও বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক সরদার আবদুস সালাম, বদর বাহিনীর রাজশাহী জেলার কমান্ডার ও বর্তমানে দুবাইয়ে ব্যবসারত আবদুল হাই ফারুকী, বদর বাহিনীর চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার, বর্তমানে ইবনে সিনা ও ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম মালিক আবদুল জাহের মোহাম্মদ আবু নাসের, আলবদর বাহিনীর অপারেশন গ্র“পের ঢাকার উপপ্রধান বর্তমানে লন্ডনে বসবাসকারী চৌধুরী মঈন উদ্দিন, বরিশাল শহর আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ও বর্তমানে খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব আইউব মিয়া, আলবদর বাহিনীর সিলেট শহরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ও সুপ্রিম কোর্টের আইন ব্যবসায়ী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, আলবদর বাহিনীর সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও জামায়াতের সাবেক এমপি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী এবং আলবদর বাহিনীর ঢাকা শহরের প্রধান ও বর্তমানে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ সামসুল হক। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে প্রথম কিস্তিতে প্রকাশিত ১৫ জনের তালিকায় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামের আমীর অধ্যাপক গোলাম আজমের নাম না থাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, গোলাম আজম একজন শীর্ষ স্বাধীনতা বিরোধী হলেও যুদ্ধাপরাধ আইনের সজ্ঞায় তার যুদ্ধাপরাধসমূহ তদন্তের কাজ চলছে। তা উদঘাটিত হলে পরবর্তী কিস্তিতে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, শিগগিরই জামায়াত নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত আলবদর বাহিনীর আরও ১৫ জন, মুসলিম লীগসহ বিভিন্ন স্বাধীনতা বিরোধীদের সমন্বয়ে গঠিত রাজাকার বাহিনীর ১০ জন এবং নেজামে ইসলামের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত আলশামস বাহিনীর ৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রধান করে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, বিশিষ্ট আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়ে বলেন, সেখানে ইসলামী ঐক্যজোটের সংগৃহিত যুদ্ধাপরাদের প্রামাণিক দলিল এবং যুদ্ধাপরাধের শিকার ৬৫১ জনের তৈরি করা জবাবনবন্দী দাখিল করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ঐক্যজোট নেতা যুদ্ধাপরাধের তদন্ত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ৫ মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি হচ্ছে, ১ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত দেশের সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়, ২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল দলীয় প্রধানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মান, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিশ্ববরেণ্য মানবতাবাদী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যৌক্তিকতা উত্থাপন, একই সঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে ২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফরের মাধ্যমে সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন। ২০ থেকে ২৫ মে ঢাকায় দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাদের জাতীয় সম্মেলন করে ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে অভিমত নেয়া হবে। ২৬ জুলাই ঢাকায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে বিশ্বের বরেণ্য মানবাধিকার ও যুদ্ধবিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণ করা হবে। এরপর ২৮ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সম্পাদনা: দুলাল আহমদ চৌধুরী সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৫৬
false
fe
অপশক্তিই যখন রাজনীতির ভূষণ অপশক্তিই যখন রাজনীতির ভূষণ ফকির ইলিয়াস-------------------------------------------------------------একটি তীব্র বেদনায় আবারও কেঁপে উঠল গোটা দুনিয়া। মুম্বাইয়ে যে বোমা এবং অস্ত্র হামলা হলো তা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে। ডেকান মুজাহিদীন নামের নব্য এই জঙ্গি সংগঠন ঘটনার দায় স্বীকার করলেও এর শেকড় কোথায় বিস্তৃত্ব তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ঘটনার পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এই পদত্যাগের তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঘটনার জন্য পাকিস্তানের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেও তা কোন স্খায়ী সমাধান নয়, তা তিনিও জানেন। কারণ পরমাণু অস্ত্র যেমন ভারতের কাছে আছে, তেমনি আছে পাকিস্তানের কাছেও। ফলে আইএসআইয়ের প্রধান ঘটনার বাস্তবতা দেখার জন্য ভারত যাওয়ার কথা প্রথম দিকে বললেও পরে তা অজ্ঞাত কারণে বাতিল করা হয়। যারা মুম্বাইয়ে আক্রমণ করেছে এরা খুবই সংগঠিত একটি গ্রুপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মৃত্যুর জন্য তারা ভীত নয়। আর নয় বলেই তারা যাচ্ছেতাই করার সাহস করেছে। সরলপ্রাণ মানুষকে হত্যার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এসব জঙ্গিবাদী ইসলাম ধর্মের নামে গোটা বিশ্বে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে। অথচ ইসলাম কখনই হানাহানিকে প্রশ্রয় দেয়নি। এই যে চরম সক্ষিণ, তাকে মদদ দেয়ার জন্যও বিশ্বে একটি মহল সদা তৎপর। এরা ক্ষমতা লুটে নেয়ার মধ্যস্বত্ব ভোগ করতে চায় জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে। এরা জঙ্গি গোষ্ঠীকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। দক্ষিণ-পর্ব এশিয়ার জন্য জঙ্গিবাদ একটি মারাত্মক বিষফোঁড়া। এই বিষাক্ত ছোবল থেকে কারও বাঁচা সম্ভব নয়, যদি এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা না যায়। কিন্তু পরিতাপের কথা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেন না। বরং কোন না কোনভাবে এরা ইন পাচ্ছে রাজনীতিকদের কাছ থেকেই।মুম্বাইয়ের ঘটনার পর আসামেও ট্রেনে বোমা হামলা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশে ভাস্কর্য ভাঙার নামে মৌলবাদী নব্য বিভিন্ন সংগঠনের জন্ম হচ্ছে। হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি ইত্যাদির সদস্যরা নতুন নতুন নামে আবির্ভূত হচ্ছে। তথাকথিত আল বাইয়্যিনাত নামক একটি মোল্লাবাদী সংগঠন মতিঝিলের বলাকা ভাস্কর্য ভাঙার সাহস দেখিয়েছে। তারা আরও বলেছে, বাংলাদেশে কোন ভাস্কর্যই তারা থাকতে দেবে না। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এমন হুঙ্কার! এরা এমন সাহস পাচ্ছে কোথেকে। দেশে জরুরি অবস্খা থাকার পরও এরা লালন ভাস্কর্য ভেঙেছে। এরপর বলাকা ভাস্কর্যের ওপর আঘাত হেনেছে। তারপর অপরাজেয় বাংলা শহীদ মিনার কিংবা জাতীয় স্মৃতিসৌধের ওপর এরা হামলা চালাতে পারে। ভেবে অবাক হতে হয়, সরকার এদের বিরুদ্ধে নামমাত্র মামলা করলেও কোন জোরালো অভিযান চালায়নি। অথচ বিজ্ঞ উপদেষ্টামণ্ডলী দেশের যত্রতত্র সুশীল উপাদান মিশ্রিত বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা কি বুঝতে পারছেন না, একসময় তারাও এই দেশে নিরাপদভাবে রাস্তায় হাঁটাচলা করতে পারবেন না। তখন তাদের কেমন প্রতিক্রিয়া হবে? বলাকা ভাস্কর্যের ওপর হামলার পরও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সিরিয়াস কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তারা ব্যস্ত নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ধান্দায়। জোট কিংবা মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে জেতাই তাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু এই জেতা কার জন্য? জিতে যদি মানুষের মঙ্গল সাধনই লক্ষ্য হয় তবে মৌলবাদী জঙ্গিহোতারা রাজনীতির মাঠে মদদ পাচ্ছে কীভাবে? দুইরমনা বটমূলে জঙ্গি হামলার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। মুফতি হান্নান কিংবা তার কিছু চেলাচামুণ্ডা এই মামলার আসামি হলেও নেপথ্যের গডফাদাররা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাংলাভাই কিংবা শায়খ রহমানকে ফাঁসি দিয়ে দিলেই যে জঙ্গিবাদ দমন করা যাবে না সেই প্রমাণটি ক্রমশ করছে নব্য নামধারী জঙ্গিরা। মূলত তাদের শিকড় এক। এবং বাংলাদেশের কিছু উগ্রবাদী ধর্মীয় রাজনৈতিক দল এদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ভারত, পাকিস্তান কিংবা ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত রয়েছে বিভিন্ন নামে তাদের সহযোগী সংগঠন। আর এ সংগঠনগুলো পরিচালিত হচ্ছে একই নেটওয়ার্কে। একই লক্ষ্যবিন্দুকে সামনে রেখে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, মাওলানা মিসবাহুর রহমানের ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে একটি সভা করেছেন। সে দৃশ্য ও বক্তব্য টিভিতে দেখলাম। শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি এবং তার দল ক্ষমতায় গেলে ‘সাউথ এশিয়ান টাস্কফোর্স’ নামে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর কাছে প্রস্তাব করবেন। মুম্বাইয়ে হামলার পর, ভারতের বর্তমান সরকার বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ ইতিমধ্যে নিয়েছে। পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে যৌথ আলোচনার জন্য প্রতিনিধি পাঠাতে রাজি হয়েছে। সবমিলিয়ে পাক-ভারত একটি দ্রুত সিদ্ধান্ত ও কর্মপথ তৈরি করবে প্রত্যাশা করা যায়। এর সঙ্গে বাংলাদেশকেও যুক্ত হওয়া জরুরি। কারণ গেল এক দশকে বাংলাদেশ জঙ্গিদের শক্তিশালী চারণভমিতে পরিণত হয়েছে দেশের রাজনীতিকদের গাফিলতির কারণেই। আজ যারা নবম জাতীয় সংসদে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা সংসদে দাঁড়িয়েই বলেছিল, দেশে বাংলাভাই নামক কোন বস্তুর অস্তিত্ব নেই। জামায়াতের দুই মন্ত্রী অনেকটা প্রত্যক্ষভাবেই বাংলাভাই ও শায়খ রহমানের পক্ষ নিয়েছিল। আর এভাবে দেশের রাজনীতিকে একটি সশস্ত্র অপশক্তির হাতে জিম্মি করার চেষ্টা ছিল অব্যাহত। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার অভিযুক্ত মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে মনোনয়ন দিতে চাইছে বিএনপি। পিন্টুর মনোনয়ন টিকবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবু বিএনপি আমলে এদেশে কি চায়­তা খুব ষ্পষ্ট হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। কারণ বিএনপির যারা মনোনয়ন পেয়েছে, তাদের মাঝে প্রকৃত দুর্নীতিবাজ, লুটেরা শ্রেণী এবং জঙ্গিবাদের প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় গডফাদার কতজন তা দেশবাসীর অজানা নয়। বিএনপি এখন চাইছে, তারা যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে নাও পারে তবু বিরোধী দল হিসেবে আগামী টার্মে থেকে তাদের কালিমা কিছুটা হলেও মোচন করতে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তারেক রহমানসহ আরও পতিত অনেককেই প্রার্থী করবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর এই নিশ্চয়তার গ্যারান্টি পাকাপোক্ত করার জন্য যে কোন অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলাতে বিএনপি আপস করবে না। তা এর মধ্যেই পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। কিন্তু এই যে দু:সময়ের ঘর্ণিচক্র এ সময়ে আওয়ামী লীগ তথা চৌদ্দ দলীয় মহাজোট কতটা শক্তি নিয়ে এগুতে পারবে? ধর্মীয় রেনেসাঁর একাংশকে মহাজোটে যুক্ত করে শেখ হাসিনা কি তার স্বপ্নের বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে যেতে পারবেন? পতিত স্বৈরশাসক এরশাদকে রাষ্ট্রপতি কিংবা ঐক্যজোটের সঙ্গে চুক্তিনামা করে নিজেদের দুর্বলতার পরিচয়ই দেবে আওয়ামী লীগ। সবচেয়ে বড় অপশক্তি জঙ্গিবাদ ঠেকাতে এটা যথাযথ কৌশল ছিল কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবে এর আগে বাংলাদেশে আবারও বড় ধরনের নাশকতা আক্রান্ত হয় কিনা সে শঙ্কা থাকছেই। নিউইয়র্ক ৩ ডিসেম্বর ২০০৮---------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ৫ ডিসেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
mk
রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত হচ্ছে রাজনীতির নামে এক বছরের বেশি সময় ধরে আমরা অনেক সহিংস কর্মকাণ্ড দেখেছি, যাকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক রাজনীতি বলা চলে না। এই সহিংসতায় জনজীবন রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মানুষ কায়মনোবাক্যে সহিংসতার সমাপ্তি আশা করছিল। মানুষ যেন তাদের সেই আশারই একটি বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পেয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত সোমবার বিএনপির জনসমাবেশের মধ্যে। এক মাসেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত বিএনপির এ সমাবেশ ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যোগ দিতে আসা ও ফিরে যাওয়া এবং সমাবেশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা- কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। একই দিনে প্রধানমন্ত্রীও সাতক্ষীরার একটি জনসমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা ঘোষণা করেছেন। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে এখন এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল, যারা গত প্রায় দুই যুগ ধরে পালাক্রমে দেশ চালিয়ে আসছে, তাদের রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ওপর দেশের উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্য যে অনেক বেশি নির্ভরশীল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই দেশের মানুষ নিরন্তর তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দুই দলের যুদ্ধংদেহি মনোভাব মানুষকে প্রায়ই হতাশ করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও অব্যবহিত পরে অনেক দুঃখজনক ঘটনা ঘটলেও অতিসম্প্রতি কিংবা বলা যায় গত সপ্তাহখানেকের মধ্যে আমরা রাজনীতিতে একটি নতুন মোড় লক্ষ করছি, আশাবাদী হওয়ার মতো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক চাপের কারণে হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, দেশে সাম্প্রতিক অশান্তির অন্যতম কারণ জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রক্ষা করে চলছে বিএনপি। গত সোমবারের সমাবেশেও জামায়াত-শিবিরের সরব উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা আগের অনেক সমাবেশেই দৃষ্টিকটুভাবে দেখা গেছে। অন্যদিকে বিএনপির যেসব নেতা কারাগারে ছিলেন তাঁরা একে একে ছাড়া পেতে শুরু করেছেন। বিএনপির মিছিল-সমাবেশ ঠেকাতে পুলিশের তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। পাশাপাশি দুই দলের দুই প্রধান নেত্রী এবং পরবর্তী নেতাদের কিছু কিছু বক্তব্য আমাদের হতাশও করেছে। দুই নেত্রী সেদিনও পরস্পরের প্রতি যে ধরনের দোষারোপ করেছেন কিংবা ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, তা মানুষের কাঙ্ক্ষিত নয়। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি চেয়ারপারসন হেফাজতের মতিঝিলের সমাবেশ, সাতক্ষীরা ও গাইবান্ধায় যৌথ বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে প্রতিবেশী দেশের প্রতি ইঙ্গিত করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কোনোভাবেই দায়িত্বশীল বক্তব্য হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না।আমরা আশা করি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরোত্তর শক্তিশালী হবে। আর সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে কথায় ও কাজে আরো বেশি সহনশীল ও গণতান্ত্রিক হতে হবে। তাদের আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
false
fe
পতিত রাজনীতি, রাজনীতির পতিতজনরা পতিত রাজনীতি, রাজনীতির পতিতজনরাফকির ইলিয়াস-------------------------------------------একটি রাষ্ট্রে রাজনীতির পতন হলে সে দেশের মানুষের দাঁড়াবার জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসে। মানুষ হতাশ হয়। রাজনীতিকরা সমাজের আইকন। কিন্তু এদের স্খলন দেখলে সাধারণ অপরাধীরাও ভাবে- দেশ এখন মগের মুল্লুক। তাই তারাও বড় বড় অপরাধের ধৃষ্টতা দেখাবার প্রয়াস পায়। বাংলাদেশে রাজনীতির পরিশুদ্ধ ধারার পতন ঘটেছে বিভিন্নভাবে। প্রথমত হত্যার রাজনীতি ভেঙে দিয়েছে দেশের গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সামরিক জান্তারা ছিনিমিনি খেলা শুরু করে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে। সামরিক ব্যক্তি জিয়াউর রহমান ‘হাঁ’-‘না’ ভোট দিয়ে মসনদ পাকাপোক্ত করার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করেন। বাংলাদেশে পতনের রাজনীতির শুরু সেদিন থেকেই। মুসলিম লীগের কিছু পতিত দালাল- শাহ আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, আলীম আল রাজী প্রমুখকে মন্ত্রী করে ‘ডিফিকাল্ট’ রাজনীতির ঝাণ্ডা উড়ান এই জিয়াউর রহমান। একই ধারা অব্যাহত রাখেন আরেক সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনিও বিভিন্ন দল থেকে পতিত রাজনীতিকদের সমন্বয় ঘটান তার দলে। এরাই পরবর্তী সময়ে লুটপাটের রাজনীতির গোড়াপত্তন করে। ছাত্ররাজনীতিতে অস্ত্রের মহড়া দেখায় এরাই।রাজনীতির পতন ত্বরান্বিত করে ভোগবিলাসের অব্যাহত ধারা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পতিত রাজনীতিকদের মধ্যে রয়েছেন- প্রাজ্ঞ আওয়ামী লীগার মিজানুর রহমান চৌধুরী, জাসদের শাহজাহান সিরাজ, জাসদের মেজর (অব.) আব্দুল জলিল, এমন আরো অনেক নাম। এরা রাজনীতিতে কী চেয়েছিলেন, আর কী পেয়ে তাদের যাত্রা সমাপ্ত করেছেন, তা আমাদের অজানা নয়। বাংলাদেশে একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট। ক্ষমতায় থাকলে এরা কথা বলেন এক সুরে। ক্ষমতায় না থাকলে অন্য সুরে। উদাহরণ হিসেবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর কথা বলা যায়। তিনি যখন বিএনপির রাজনীতি করতেন তখন যা বলেছিলেন- বিএনপি থেকে বেরিয়ে কিংবা বাদ পড়ে বলেছেন এর ঠিক উল্টো। বি চৌধুরী এখন মাঝে মাঝে যে নীতিবাক্য শোনান- তা তার মুখে আগে ছিল না কেন? একই কথা বলা যায় আরেক পতিত রাজনীতিক কর্নেল অলি আহমেদের বিষয়েও।আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন ড. কামাল হোসেন। না, তিনি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। তার ‘গণফোরাম’ গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। একইভাবে ছিটকে পড়া আরেক রাজনীতিক কাদের সিদ্দিকী। তিনিও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বেরিয়ে নতুন দল করেছেন ঠিকই। কিন্তু মানুষের কোনো কাজে লাগছে না ঐ দল। আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে আরো যেসব তারকা খসে পড়েছেন এর মাঝে আছেন- মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাহমুদুর রহমান মান্না। সুলতান মনসুর ও মাহমুদুর রহমান মান্না হালে সুশীল সমাজের প্রবক্তা। অতি সম্প্রতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন- ‘বিএনপি সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমাদের উদ্দেশ্য দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করা। সংবিধানের যে সমস্ত ধারা প্রধানমন্ত্রীকে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে কার্যত ক্ষমতাহীন করেছে, পার্লামেন্ট অকার্যকর করে রেখেছে সেই ধারাগুলো বাতিলই আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।’মান্নার মিশন বিষয়ে নানা কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। সমালোচকরা বলছেন, নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে মান্নার প্রথম টার্গেট হলো সরকারের তীব্র সমালোচনায় থেকে তাকে আমলে নেয়া হোক এবং সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ তাকে ফিরিয়ে নিক। দ্বিতীয় মিশন হলো, আন্তর্জাতিক অপশক্তির মদদে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশের প্রধান দুই দলের সাংঘর্ষিক প্রেক্ষিত পুঁজি করে তৃতীয় শক্তির মাঝে নিজের নাম লেখানো। তৃতীয় চিন্তাটি হলো, এভাবেই নীতিকথার মাঝে থেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে রাজনীতির জল যে দিকে গড়ায় সে দিকেই নিজেকে সঁপে দেয়া। তিনি কখনই দেশে মূলধারার রাজনৈতিক নতুন শক্তি চাননি। শেখ হাসিনা কর্তৃক উপেক্ষিত হওয়ার পর মহাজোট সরকারের শেষ মেয়াদে তিনি নাগরিক ঐক্য নিয়ে হাজির হন। নবম সংসদ নির্বাচনের পর এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারালে তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর চিফের কাছে নয়াদিল্লি পর্যন্ত যান, সেখানে লক্ষ্য ছিল, ‘র’ চিফকে দিয়ে শেখ হাসিনাকে সুপারিশ করা- যাতে তাকে সসম্মানে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এরকম কথাও রাজনীতির হাটে চাউর আছে।বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেক বিশিষ্ট পতিতজন আবদুল মান্নান ভুঁইয়া। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, ২০০৭ সালের ২৫ জুন উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে বেশ কিছু দরকারি কথা বলেন। এগুলোর মাঝে ছিল- দলের ভেতর গণতন্ত্রচর্চা, পরিবারতন্ত্র বিলোপ, সৎ, মেধাবী ও যোগ্য রাজনীতিক নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, দলে ও সরকারে কর্তৃত্ববাদিতার অবসানকল্পে দুই মেয়াদের বেশি দলীয় ও সরকারপ্রধান না থাকা, এক ব্যক্তির দলীয় ও সরকারের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত না থাকা, মনোনয়ন বাণিজ্য রোধ, সম্মেলন ও নেতাকর্মীদের মতামত ছাড়া নেতানেত্রীর ইচ্ছায় কমিটি গঠন বন্ধ এবং সর্বোপরি দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের প্রস্তাব। এরপর তার পরিণতি কী হয়েছিল- তা আমরা জানি।আওয়ামী লীগেও আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ তাদের বহু সহকর্মী সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। রাজ্জাক-আমু-তোফায়েল-সুরঞ্জিতকে বলা হতো রেটস ( RATS ) পরবর্তী সময়ে পদের লোভে বশ মানলেও অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মনসুর এদের ভাগ্য বদল হয়নি। স¤প্রতি পতন ঘটেছে আরেক বহু ঘাটের জল খাওয়া রাজনীতিক এ কে খন্দকারের। তিনি মনগড়া যে তথ্য দিয়ে বই লিখেছেন তা কেউই মেনে নেননি, কিছু ইতিহাস বিকৃতকারী ছাড়া। স্বার্থের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিকরা অনেক কিছুই করতে পারেন।আমরা তাজ্জব হয়ে শুনলাম বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে থাকা গণজাগরণ মঞ্চের একটি স্মারকলিপি নেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা সিরাজুল হকের সঙ্গে পিয়াসের বাবা এম এ করিমের বন্ধুত্ব ছিল বলে এই পরিবারটি তার বহুদিনের চেনা। ‘এম এ করিম কুমিল্লার স্বনামধন্য আইনজীবী ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের ফাউন্ডার ছিলেন। ১৯৬৫ সালের নির্বাচনে বিরোধী জোটের হয়ে নির্বাচনেও প্রার্থী ছিলেন তিনি।’আনিসুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে লিফলেট বিতরণের জন্য ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি বাড়ির ফটকের সামনে থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পিয়াস করিমকে ধরে নিয়ে সার্কিট হাউসে আটকে রাখে, তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর। ‘এম এ করিমকে পাকিস্তানি বাহিনী সার্কিট হাউসে ডেকে নিয়ে যায়। তিনি বন্ড দিয়ে পিয়াস করিমকে ছাড়িয়ে নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাস দুয়েক আগে তাকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়।’ ওই সময় ‘চাপ’ দিয়ে পিয়াস করিমের কাছ থেকেও বন্ড নেয়া হয়েছিল বলে আইনমন্ত্রী জানান। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দিতে এম এ করিমকে দেখেছিলেন জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে আটক করা হলেও এর ৮/১০ দিন পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এটা সাধারণ ক্ষমা নয়।’ঘটনা অন্যখানে- এ কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। পিয়াস করিমের প্রতি আইনমন্ত্রীর এই আদর্শিক অবস্থানের পেছনে ব্যক্তি অনুরাগ, না অন্য কিছু আছে তা বাছবিচারে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সংগঠনগুলো কট্টর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা সামাজিক মাধ্যমে দাবি করছে, পিয়াস করিমের বোন দীর্ঘদিন ধরে আইনমন্ত্রীর জুনিয়র হিসেবে কাজ করায় এমন বক্তব্য রাখতে পেরেছেন। এই বক্তব্যের পর আইনমন্ত্রীর রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা উঠছে আওয়ামী লীগেই।যে কথাটি না বললেই নয় তাহলো বাংলাদেশে রাজনীতি হওয়ার কথা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্ভর। ৩০ লাখ শহীদের রক্তঋণ স্বীকার করে। এই কাজটি খুব কম রাজনীতিকই করছেন। ফলে তাদের পতন হচ্ছে। জয়ী হচ্ছে ভোগবাদ। মদদ পাচ্ছে লুটেরা শ্রেণী। পরাজিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। যারা রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে ভাবেন- তাদেরকে এই বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ করেই এগোতে হবে।এই লেখাটি যখন শেষ করবো, তখনই খবর বেরিয়েছে, আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। সদ্যপ্রয়াত বিতর্কিত টিভি আলোচক পিয়াস করিমের ‘পক্ষ’ নেয়ার অভিযোগ তুলে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি সংগঠন। তাহলে কি আরেকজন মন্ত্রীর বিদায় ঘণ্টা বাজছে? তা সময়ই বলে দেবে। তবে পতিত হয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না- এমন প্রমাণ আমরা বারবারই দেখেছি।============================================দৈনিক ভোরের কাগজ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৪ প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৪০
false
fe
ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ও আজকের বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ও আজকের বাংলাদেশফকির ইলিয়াস=========================================একটি সংবাদ পিলে চমকানোর মতো। মূল কথা হচ্ছে ওরা বসে নেই। তারা চাইছে যে কোনোভাবে বর্তমান সরকারের পতন। খবর বেরিয়েছে, জামায়াতের অর্থায়নে দেশে একটি ‘পরিবর্তন’ আনার অপচেষ্টা চলছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ঊর্ধ্বতন এজেন্ট ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা। এতে বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হচ্ছে। বিশেষ করে বেশ কয়েকজনের হাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতনবিরোধী প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। এসব প্ল্যাকার্ডের একটিতে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হত্যা বন্ধ করার স্লোগান রয়েছে।ইসরায়েলি বার্তা সংস্থা জেরুজালেম ডটকমের বরাতে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত নির্যাতনের বিষয়ে বিশ্ব বিবেককে সোচ্চার হতে বলছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের পতন হলে পরবর্তী সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ ও তাদের সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। সংবাদ থেকে আরো জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ষড়যন্ত্রে এবার জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ষড়যন্ত্র সফল করতে মৌলাবাদী এই দলটির পক্ষ থেকে মোসাদের পেছনে এরই মধ্যে বিপুল অঙ্কের তহবিল জোগান দেয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্রের ফ্রন্টলাইনে আছেন জামায়াতের দেশি-বিদেশি শক্তি ছাড়াও বিএনপির কয়েকজন নেতাও।আরেকটি সংবাদ আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন- খালেদা জিয়া পাকিস্তানের এজেন্ট। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের জন্য ‘অব্যাহতভাবে আইএসআই এজেন্টদের কাছ থেকে অর্থ’ গ্রহণ করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। উল্লেখ্য, এর আগে খালেদা জিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কমনওয়েলথের একটি বৈঠকে আলোচনার প্রস্তাব তুলেছিল পাকিস্তান।৫৩টি রাষ্ট্রের জোট কমনওয়েলথের মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাকশন গ্রুপ সদস্য দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটলে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কোনো দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত হলে তা পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপও আসে এই ফোরাম থেকে। সেই ফোরামে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ প্রস্তাবটি তুলেছিলেন। কিন্তু লন্ডনে কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের ওই বৈঠকে সদস্য অন্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা উড়িয়ে দেয়ায় ইসলামাবাদের ওই প্রস্তাব হালে পানি পায়নি। এ নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি আগেই বলেছি খালেদা জিয়া পাকিস্তানি এজেন্ট। তিনি অব্যাহতভাবে নির্বাচনগুলোর জন্য আইএসআই এজেন্টদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে আসছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এখন পাকিস্তানি সরকার তার পক্ষে প্রকাশ্যে তদবির করছে।’এই যে বিষয়গুলো ঘটে যাচ্ছে, তা কিন্তু বাংলাদেশের ভাবার বিষয়। আমাদের জানা আছে ইসরায়েল কে, তারা বিশ্বে কি করছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আটকে রেখেছে এই ইসরায়েল। আমাদের মনে আছে ২০১৪ সালের নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা। ওই গাজা হত্যাকাণ্ড শিরোনাম ছিল কয়েক মাস ২০১৪ সালে। এ নিয়ে বিশদ লিখেছিলেন ম্যাক্স বুমেনথাল। যিনি একজন পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক এবং একটি বেস্ট সেলার বইয়ের লেখক। তার সর্বশেষ বই হচ্ছে ‘গোলিয়াথ : লাইফ এন্ড লোদিং ইন গ্রেটার ইসরায়েল’।গত ১১ জুলাই ২০১৪ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা প্রচার করেছিল কানাডার বাল্টিমোর থেকে পরিচালিত ডেইলি ভিডিও নিউজ ও প্রামাণ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি) প্রচারের সংবাদ সংস্থা ‘দ্য রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্ক’ এর ওয়েবসাইট ‘দি রিয়েলনিউজ’ ডটকম। সাংবাদিক আবুনিমাহ এবং ম্যাক্স বুমেনথালের আলোচনায় সঞ্চালক ছিলেন দ্য রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্ক-এর প্রযোজক এন্টন ওরোনজাক। ওই আলোচনায় ম্যাক্স বুমেনথাল বলেছিলেন- ‘গাজা উপত্যকায় যেসব ফিলিস্তিনি বসবাস করছে তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই শরণার্থী। ১৯৪৭ ও ১৯৪৮ সালে যেসব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে বর্তমান ইসরায়েল হয়েছে তাদের উত্তরসূরি এসব শরণার্থী। এখন তাদেরকে বলা হচ্ছে এখান থেকেও সরে যাওয়ার জন্য। তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। বোমার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই গাজাতে। এই শরণার্থীদের কোথাও পালানোরও জায়গা নেই। মিসরে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মিসরে প্রবেশ করতেও দেবে না। তাই এটা আরেকটা মানব বিপর্যয় হতে যাচ্ছে যেটা ইসরায়েল প্রতি দুবছর পরপরই এই গাজা উপত্যকায় ঘটিয়ে থাকে।’এই হলো ইসরায়েলের চরিত্র। যে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক যোগাযোগ নেই। তারপরও তারা এখন বাংলাদেশে খবরদারি করতে চাইছে। কথাগুলো আরো স্পষ্ট করে বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলছেন, সরকারের কাছে খবর আছে, বিএনপি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে তারা তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে।প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে। এটা যে কত বড় অপরাধ! আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে এসব সাক্ষ্য-প্রমাণকে এক জায়গায় করে বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার আদৌ আছে কি না। নৈতিক অধিকারের বাইরে গিয়ে বলব, তাদের কোনো অধিকারই নেই। কারণ তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে।’সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন অনেক চাপের মুখোমুখি। মাত্র কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। সব বৈঠকে উভয় পক্ষ একমত হয়েছেন আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ওপরই নির্ভর করতে হবে। এই সরকার অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে তা দেশকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তেমনি আঞ্চলিক নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেবে। সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশ সফরকে ‘ফলপ্রসূ’ উল্লেখ করে নিশা বিসওয়াল লিখেছেন, ‘খুনি ও সন্ত্রাসীরা মৌলিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে অবমূল্যায়ন করার পাশাপাশি ভয়ের বীজ বপন করতে চায় এবং তাদের ঠেকানো আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য।’এরপরও আমাদের ভাবতে অবাক লাগে, ইসলামের নামে রাজনীতি করা কিছু দল কিভাবে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে, যারা প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যা করছে। আসলে তারা ইসলামের কথা বলে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকেই শুধু কাজে লাগাতে চায়। ভয়াবহ খবরটি হচ্ছে- ‘জেরুজালেম অনলাইন ডট কম’ এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারকে ‘বাংলাদেশে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার’ বলে অবিহিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কাজ করছেন ইসরায়েলের প্রভাবশালী নেতা মেন্দি এন সাফাদি। এরপর নতুন একটি সরকার আসবে যারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে ক‚টনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে। সংখ্যালঘুদের নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং বঞ্চিত হাজার হাজার নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর বিলীন হওয়া ঠেকাতেও কাজ করছেন সাফাদি।বাংলাদেশ ৪৫ বছর সময় ইসরায়েলকে বাদ দিয়েই বিশ্বে চলতে পেরেছে। আজ বাংলাদেশের সেসব ‘মুসলিম’ কেন ইহুদিদের সঙ্গে হাত মেলাবার জন্য এত উদ্গ্রীব হয়ে পড়লেন? এতে কি প্রমাণিত হচ্ছে না- ক্ষমতার কাছে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ খুবই তুচ্ছ! বাংলাদেশ এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের উর্বর ভূমি। ব্যবসায়ী ইহুদিরা সেই মাটিটুকু চাইছে। আর এদের মদত দিচ্ছে বাংলাদেশের সুবিধাবাদীরা। এদের শিকড় চিহ্নিত করা দরকার। দেশের মানুষকে তা বিশদভাবে জানানো দরকার। কারা ষড়যন্ত্র করছে, কেন করছে। সরকার এ বিষয়ে কঠোরতম না হলে যে কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে।--------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৪ মে ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৬ ভোর ৬:২৪
false
ij
None কবি দু ফু। চিনের কবি। দুঃখী কবি। বেঁচে থাকতে কবি হিসেবে মর্যাদা পাননি। লিখেছিলেন: “ বাতাসে আমার দুঃখগুলি লিখছি এক আঙুলে ।” একাদশ শতকে তাঁর কবিতা আবিস্কৃত হলে হইচই পড়ে গেছিল। তাঙ যুগের কবি দু ফু। তাঙ রাজাদের সময়কাল ৬১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দ। সেই সময়কালের ঘটনাবলী দু ফুর কবিতায় রয়েছে- সে জন্য দু ফু-র অভিধা- ঐতিহাসিক কবি। কবির বড় ইচ্ছে ছিল রাজকর্মচারী হওয়ার। মন্দ ভাগ্য। ৭৫৫ খিস্টাব্দে চিনে ভয়ানক এক বিদ্রোহ হয়েছিল: এন লুশান বিদ্রোহ। কোটি কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল সে বিদ্রোহে। ৭৫৫ খিস্টাব্দ থেকে পরের ৭/৮ বছর দু ফু আর তাঁর পরিবারকে কাটাতে হয়েছিল চরম অনিশ্চয়তায়। সেই অভিজ্ঞতা দু ফু-র ‘পেং-আ সড়ক’ কবিতায় রয়েছে। আমার মনে আছে - আমরা উত্তরাঞ্চলের ভয়ঙ্কর গিরিখাতের ভিতর দিয়ে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। মধ্যরাত্রির চাঁদটা জ্বলজ্বল করছিল সঙ্কীর্ণ পেং-আ সড়কে আমরা হাঁটছিলাম; বিধস্ত-প্রায়- পথে আগুন্তকদের মুখোমুখি হতে আমাদের সঙ্কোচ হচ্ছিল। অল্প সংখ্যক পাখি ডাকছিল উপত্যকায় নীড়ে ফেরা পাখিদের অবশ্য চোখে পড়েনি। আমার ক্ষুধার্ত মেয়েটি আমায় কামড়াচ্ছিল খিদের জ্বালায় চিৎকার করছিল নেকড়েদের কানে যাবে বলে আমি ওর মুখ চেপে ধরি ও ছটফট করে কাঁদতে থাকে। আমার ছেলেটা পরিস্থিতি বোঝে ও আশেপাশে খাবার খুঁজছিল। তারপর শুরু হল প্রবল বৃষ্টি একটানা পাঁচ দিন ... ঠান্ডা কাদা ঠেলে আমরা হাঁটছি আমাদের পোশাক নেই, আশ্রয় নেই আমরা ভিজে শীতল পোশাক পরে আছি এভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে প্রতিদিন এক মাইল দু’-মাইল এগোন যায়। বুনো ফলমূল খাচ্ছি গাছের ডালই আমাদের ছাদ ভোরে নদী পেরুলাম সন্ধ্যায় দূরে তাকিয়ে ধোঁওয়া সন্ধান করলাম তারপর একটা জলাভূমির কাছে পৌঁছলাম জায়গাটা পেরুনোর সময়ই সুনের সঙ্গে দেখা সুনের ক্ষমতা আকাশ-ছোঁওয়া আমরা অন্ধকার থেকে এসেছি দরজা খুলে প্রদীপ জ্বালিয়ে দিল ভৃত্যরা আনল গরম জল আমরা আমাদের আহত পাগুলি ধুয়ে নিলাম আমাদের সম্মানে তারা কাগজের ব্যানার টাঙ্গাল। সুন তার বাচ্চাদের নিয়ে এল বাচ্চারা আমাদের দুর্দশা শুনে কাঁদল। আমার বাচ্চারা ক্লান্ত; ঘুমিয়ে পড়ল পরে ওদের খেতে ডাকলাম। আমার আশ্রয়দাতা শপথ করল: সে চিরদিন আমার ভাই হয়েই থাকবে; আর, তার ঘরটা আমাদের ঘর হবে আমাদের সুখের নিমিত্তে। এমন দুঃসময়ে কে ভাবতে পারে আকস্মিক এমন উদ্ধার সম্ভব? সেই ভয়াল রাতের পর এক বছর কেটে গিয়েছে। এখনও বর্বরেরা যুদ্ধ করছে! আমার যদি হাঁসেদের মত ডানা থাকত আমি তার কাছে উড়ে যেতাম! তখন আমি বলছিলাম। বেঁচে থাকতে কবি হিসেবে মর্যাদা পাননি। একাদশ শতকে তাঁর কবিতা আবিস্কৃত হলে হইচই পড়ে গেছিল। হইচই পড়ার কারণ শেষের দুটো চরণে নিহিত বলে আমার বিশ্বাস। যা হোক। তাঙ রাজবংশের রাজধানী ছিল চাঙান। মানচিত্র। দু ফুর সময়ে চিন। দু ফুর জন্ম চাঙান। জন্মের পরই মা মরে গিয়েছিল। বাবা আবার বিয়ে করেন। অনেকগুলি ভাইবোন ছিল। তাদের কথা কবিতায় এলেও সৎমায়ের কথা আসেনি। ছেলেবেলায় নিশ্চয়ই কবিতা লিখতেন। সেই কবিতাগুলি পাওয়া যায় নি। দু ফুর গ্রামের বাড়ি রাজকীয় পদ গ্রহনের উদ্দেশে তরুণ বয়েসে পড়ালেখা করে কাটান। বিশেষ করে, কনফুসিয়াসের রচনাবলী। দেশভ্রমনে বেরুলেন। চাঙান ফিরে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিলেন- ব্যর্থ হলেন। পরের যুগের পন্ডিতেরা এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন দুবোর্ধ্য গদ্য লেখাই দু ফু-র ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। অনেকে অবশ্য মনে করেন দু ফুর মামা-কাকার জোর ছিল না। যাক। মনের ভিতরে ব্যর্থতার বিষাদ। আবার দেশভ্রমনে বেরুলেন। পরে আবার রাজধানী ফিরলেন। বিয়ে করলেন। পাঁচটি ছেলেমেয়ে হল। যাদের কথা ‘পেং-আ সড়ক’ কবিতায় রয়েছে। দু ফু-র হাঁপানি ছিল। সেই কষ্ট। যাক। ৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে চাকরি পেলেন। মন্দ ভাগ্য। এন লুশান বিদ্রোহ সূত্রপাত হল। যে বিদ্রোহ দমন করতে ৮ বছর লেগেছিল। দু ফু সরকারী কর্মচারী- বিদ্রোহীদের লক্ষ। তাইই পালিয়ে যাওয়া- ৭৭০ খ্রিস্টাব্দে চ্যাঙশা প্রদেশে কবির মৃত্যু। এবার দু ফুর আরও কটা কবিতা পাঠ করা যাক। তুষারের মুখোমুখী যুদ্ধ, কান্না- আরও অনেক ভূত আমিও বুড়িয়ে গেছি- বিষন্ন হয়ে পাঠ করছি কবিতা। বুনো মেঘের দল নিচু হয়ে স্পর্শ করছে ক্ষীন সন্ধ্যাকে । ঘূর্নায়মান বাতাসে দ্রুত তুষারেরা নাচছে পরিত্যক্ত কলস; পানপাত্রে নেই সবুজ মদ শূন্য উনুনে অবশ্যি আগুন এখনও লালাভ কোনও সংবাদ নেই, প্রদেশগুলি বিচ্ছিন্ন বাতাসে আমার দুঃখগুলি লিখছি এক আঙুলে । ভগ্ন রেখা নদীটা এতই নীল হয়ে রয়েছে যে- পাখিদের সাদা মনে হয় সবুজ পাহাড়ের ফুলগুলো রক্তবর্ণের বসন্ত কি ফুরিয়ে যাচ্ছে? আমি কি বাড়ি ফিরতে পারব? দু ফু-র কবিতা গ্রামের নদী গ্রামটাকে ঘিরে ফেলতে স্বচ্ছ নদীটি বেঁকে গেছে এই দীর্ঘ গ্রীস্মে এখানেই সবই উদ্বেগহীন পাখিরা আসে আর যায় চিরকালের মতোই হাঁসেরা ছটফট করছে জলে আমার বউ ছবি আঁকছে আমার ছেলে বড়শীঁতে সুতো ভরছে আমার বন্ধুরা যতদিন আমাকে আশ্রয় দেবে আমার তুচ্ছ শরীর আর কী চাইবে। বসন্তের রাতে বৃষ্টি বৃষ্টিরা জানে কখন ঝরতে হয়। ভরা বসন্তেই বৃষ্টিরা আসে ... বাতাসে ভেসে এসে রাত্রিতে বিলীন হয়ে যায় শব্দহীন ভিজিয়ে দেয় সব। কালো নির্জন পথ- কালো মেঘ নদীতে নৌকা; সেই আলো শুধু। ভোরে সবই লাল আর ভেজা ফুলে ফুলে ভরে আছে চারপাশ দু ফুর কুঁড়েঘর চন্দ্রিমা রাত আজ রাতে ফুঝুনের আকাশে উঠেছে চাঁদ আমার বউ একাই দেখবে অনেক দূরে আমি আমার সন্তানের কথা ভাবছি যাদের চাঙান-এর কথা মনে নেই। সুগন্ধী কুয়াশায় মেয়েটি নম্র চুল ছড়ায় স্বচ্ছ জ্যোস্নায় শীতল নিটোল বাহু শূন্য পরদার মাঝখানে কখন আমরা ঝুঁকব? আমাদের মুখে শুস্ক কান্নার আলো। কবির কবিতার লিঙ্ক http://www.blackcatpoems.com/f/du_fu.html সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:০৮
false
fe
চ্যালেঞ্জ আছে, শঙ্কাও কম নয় চ্যালেঞ্জ আছে, শঙ্কাও কম নয়ফকির ইলিয়াস===========================================আলোচনা-সমালোচনা যতোই হোক না কেন, বিদেশের সব রাষ্ট্রই যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়টি নিজেদের মাঝে সমাধান করতে বলে। একই ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশের বেলায়ও। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বর্তমান নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। এটাই নিয়ম। কারণ বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান করবে এ দেশের মানুষ।বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। এমপিরা শপথ নিয়েছেন। শপথ নিলেন মন্ত্রীরাও। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হু মু এরশাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত নিযুক্ত হয়েছেন। এটাই চাইছিলেন এরশাদ। গেলো পাঁচ বছর যাবৎ তার এই খায়েশ ছিল। তা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়েছে। এরশাদ জয়ী হয়েছেন আপাতত। একই সঙ্গে পরাজয় হয়েছে দেশে পরিশুদ্ধ গণতন্ত্র চর্চার। ‘রাজাকারের চেয়ে স্বৈরাচার ভালো।’ এই যুক্তি অনেকবার দেখিয়েছেন বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবী। খালেদা জিয়া, রাজাকার নিজামী-মুজাহিদের গাড়িতে মন্ত্রিত্বের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সেটা করেননি। বিএনপি বলেছে, এটা একতরফা নির্বাচন। আর আওয়ামী লীগ বলছে, তারা সংবিধান রক্ষা করছে। সংবিধান বাংলাদেশে অনেকভাবেই সংশোধিত হয়েছে। পনেরোতম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিপুপ্ত করে মহাজোট। এটা ছিল মহাজোটের একটি একচেটিয়া শক্তি পরীক্ষা। কারণ বিএনপির ২৮ জন এমপি নিয়ে ভোটাভুটির কোনো সুযোগ বিএনপির ছিল না। এর আগে যে প্রশ্নটি আসে, তাহলো বিএনপি ২০০৮-এর নির্বাচনে এমন পরাজয় বরণ কেন করেছিল? এর প্রধান কারণ ছিল, দলটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবক্ষয়। মীর শওকত আলী কিংবা আজকের এলডিপির অলি আহমেদও সেদিন প্রশ্ন তুলেছিলেন বিএনপির জঙ্গিবাদ প্রিয়তা নিয়ে। তারা দল ছেড়েছিলেন সে কারণেই।বলা দরকার, বিএনপি যদি মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক না হতো, তাহলে আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অন্যরকম হতো। এই কথাটি এসেছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেও। বিদেশী সংবাদ মাধ্যমই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি-জামাতের গাঁটছড়া নিয়ে। অবশ্য একটা আশার কথা শুনিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোটপ্রধান খালেদা জিয়া জামাতে ইসলামীর সঙ্গে তার দলের স্থায়ী আঁতাত নেই বলে জানিয়েছেন। জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি সময় এলে বিবেচনা করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমসকে খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসায় এক সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে সরকারের দাবি মোতাবেক জামাতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খালেদা জিয়া উত্তরে এ কথা বলেন। নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে ‘সহিংসতা’ এবং ‘জঙ্গি’ জামাতকে ছেড়ে সংলাপে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘যতোদিন বিএনপির কাঁধে জামাত থাকবে ততোদিন কোনো গঠনমূলক আলোচনা সম্ভব নয়।’ বিবিসি বাংলাকে দেয়া অপর এক সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানের উত্তরে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী’ নির্দেশনা দিতে পারেন না। তিনিও জামাতের সঙ্গে ছিলেন। তিনি জামাতের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির কথাও ভেবেছিলেন। আমরা তার নির্দেশনা অনুযায়ী দল চালাবো না। আমাদের দল স্বাধীনভাবে চলে। সুতরাং আমরা আমাদের দলকে নিজেদের পন্থাতেই চালাবো।’ অবশ্য এটা অনেকেরই জানা, যুদ্ধাপরাধ ইস্যু এবং সাম্প্রতিক সহিংসতার পর বিএনপির কিছু নীতিনির্ধারক জামাতকে নিজেদের মিত্র ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তারা জানান, জামাতকে জোট থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে কিছু অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।এদিকে শোনা যাচ্ছে, আগামী ২৬ মার্চ ২০১৪, স্বাধীনতা দিবসে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির জামাতের সঙ্গত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়। আর যদি তারা এটা সম্ভব করতে পারেন, তবে বাংলাদেশে একটি নতুন ধারার রাজনীতির দ্বার উন্মোচন হবে। যা হবে বিজয়ের পর একটি রাজনীতির মাইলফলক। আমরা জানি, এক সময় আওয়ামী লীগও জামাতকে প্যারালাল সঙ্গে নিয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলন করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করতে পেরেছে। তাহলে আজ বিএনপি পারবে না কেন? মহাজোট সরকারকে হটাতে বিএনপি সব চেষ্টাই করেছে। কিন্তু সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি। এই না পারার প্রধান কারণটি হলো, দেশে এখন সজাগ মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এরা আওয়ামী লীগকে পছন্দ না করতে পারে। কিন্তু তারা সহিংসতা, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ চায় না। তারা সাম্প্রদায়িক হামলা দেখতে চায় না। আর চায় না বলেই ভবনকেন্দ্রিক বিএনপির নেতাদের ডাকা আন্দোলন ফানুসের মতো উড়ে গেছে বারবার। এখন কথা হচ্ছে, এই দশম জাতীয় সংসদের সরকার কতোদিন বহাল থাকবে? সেটাও নির্ভর করবে বিএনপির আচরণের ওপর। বিস্ময়ের কথাটি হলো, জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হলেও তারা মন্ত্রিত্বও নিয়েছে। জাতীয় পার্টি এই যে দ্বৈতনীতি গ্রহণ করলো, তাতে আওয়ামী লীগের মদত- লীগের জন্য ক্রমশ কাল জয়ে দাঁড়াতে পারে। সমঝোতার সরকার কিংবা জাতীয় সরকার কখনই বড় একটি রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এতে বরং ভাগ-বাটোয়ারার হিসেবই বাড়ে। ফড়িয়া শ্রেণী লাভবান হয়। খুবই দুঃখের কথা, বাংলাদেশ সবদিক থেকেই এখন ক্ষতির মুখোমুখি। কিছু রাজনীতিবিদ লুটপাট করছে। আর কিছু রাজনীতিবিদ জ্বালাও-পোড়াও করছে। নির্বাচনের পর যে লুটপাট হয়েছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে তা মানবতার সকল নীতিকে প“লিত করেছে। এটা রুখতে সরকারের ব্যর্থতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। এই ধ্বংসযজ্ঞ আর কতো চলবে? খবর বেরিয়েছে, লাগাতার অবরোধ ও লাগাতার হরতাল কর্মসূচি থেকে সরে আসছে বিএনপি। নতুন ধারায় সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার কথা ভাবলেও আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি ও জোটের শরিকদের মধ্যে মতভিন্নতাও দেখা দিয়েছে। জোটের অন্যতম শরিক জামাতে ইসলামী চায় আন্দোলনে ঘুরে দাঁড়াতে ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে অবরোধের পাশাপাশি টানা কয়েক দিনের হরতাল ডাকতে। এমনকি ২০ জানুয়ারির মধ্যে এ কর্মসূচি পালনের কথাও বলছে তারা।বিএনপির একটি অংশ জামাতের এ অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও অন্য অংশের তাতে সায় নেই। তারা বলছে, কঠোর কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা হ্রাস পাওয়ায় আপাতত তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তারা জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে। তবে এ অংশের নেতারা নতুন সরকার শক্ত অবস্থানে দাঁড়ানোর আগেই কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও পক্ষে। বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শক্তি যেমন সমালোচনা করছে, তেমনি বিরোধী জোটের অবরোধকে ঘিরে নাশকতারও সমালোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রভাবশালী একাধিক দেশ সংঘাতের বিপক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের কর্মসূচি থেকে সরে আসারও আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিশেষ করে আমেরিকা নাশকতার জন্য জামাতের সঙ্গ ত্যাগের কথাও বলেছে বিএনপিকে।বিএনপি মনে করেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারবে না। তা ঠেকাতে পারেনি জামাত-বিএনপি জোট। এই ধারাবাহিকতায় যদি একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়, সেখানেও বিএনপিকে অনেক কিছুই ছাড় দিতে হতে পারে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নতুন মন্ত্রিপরিষদে বিতর্কিত অনেকেই স্থান পাননি। দেশের মানুষ, মিডিয়া ও বিবেকবানদের সমালোচনা শেখ হাসিনা যে অনুধাবন করেছেনÑ সেটা তারই প্রতিফলন। কিন্তু এখনো ছয়টি মন্ত্রণালয় রয়ে গেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে। মন্ত্রিপরিষদ, সশস্ত্র, প্রতিরক্ষা ও জনপ্রশাসন এই চারটি মন্ত্রণালয় সবসময়ই পদাধিকার বলে প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে। এখন স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও রয়ে গেছে শেখ হাসিনার হাতে। তাছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়েও পূর্ণ মন্ত্রী নেই। যে কথাটি না বললেই নয়, তা হলো আগামীতে ঐ দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিত নেতারা যেন খালি থাকা মন্ত্রীর পদগুলো বাগিয়ে না নেয়। এই প্রজন্ম দেখলো রাজাকারমুক্ত একটি নির্বাচন। ষোলো কোটি মানুষের দেশে এটি একটি আনন্দ সংবাদ তো বটেই। সরকার চলুক এর সঙ্গে প্রস্তুতি নেয়া হোক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। সেই সঙ্গে বন্ধ হোক সন্ত্রাসের তা-ব । এই সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। সেই সঙ্গে আছে শঙ্কাও। শঙ্কার প্রধান কারণ, গেলো মহাজোট সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা। আমরা দেখেছি, প্রায় চল্লিশজন প্রাক্তন মন্ত্রী বর্তমান ক্যাবিনেট থেকে বাদ পড়েছেন। কেন বাদ পড়েছেন? দেশে এখন অবাধ, মুক্ত মিডিয়ার বিচরণ রয়েছ। এর ফলেই অনেক মন্ত্রী, এমপির দুর্নীতির চিত্র এখন মানুষের মুখে মুখে। এটা প্রধানমন্ত্রীরও অজানা নয়। এসব দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা দরকার। বিচারের আওতায় আনা দরকার। তা না করতে পারলে রাজনৈতিক শঙ্কা শুধুই বাড়বে। সরকারের প্রতিপক্ষ সুযোগ পাবে। মনে রাখা দরকার, যে পরিস্থিতিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে, তা অনেক রক্তস্রোতের সাক্ষী। অনেক মানুষ বলির শিকার হয়েছেন এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গিয়ে। যে নিরপরাধ মানুষদের বাসে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, যে পুলিশ সদস্যদের আক্রমণ করে মারা হয়েছে- তাদেরও তো এই বাংলাদেশে বাঁচার অধিকার ছিল। এই সরকার তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে- এটাই সময়ের দাবি।--------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৪
false
rg
আমার স্কুল!!! ভারতে প্রায় দুইশো বছরের বৃটিশ শাসনামলে ইংরেজ শাসকগণ ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। যদিও ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্কুল প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব ডেনিসদের। ১৭১৬ সালে ভারতের দক্ষিণের তামিলনাডু প্রদেশের নাগাপত্তনাম জেলার ট্রাংকুইভার টাউনে (বর্তমান নাম তরঙ্গমবাদি) ডেনিশরা প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের নাম ছিল নরমাল স্কুল। ১৬৮৫ সালে ফ্রান্সের রিমস শহরে বিশ্বের সর্বপ্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন সেইন্ট জন ব্যাপ্টিস্ট ডে লা সাল্লে। ফরাসি ভাষায় নরমাল স্কুলকে বলা হতো ইকোলে নরমালে। এখন আমরা যেটাকে বলি টিটার্স ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট। পরবর্তী সময়ে প‌্যারিসে উচ্চশিক্ষার জন্য উচ্চতর নরমাল স্কুল বা ইকোলে নরমালে সুপারিয়ারে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইংরেজদের ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা বিস্তারের অংশ হিসাবে উইলিয়াম কেরি বোম্বে শহরে ১৮০২ সালে প্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। একইভাবে ১৮৫২ সালে কলকাতায় প্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৫৬ সালে হুগলি ও ১৮৫৭ সালে ঢাকায় প্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে সেই প্রথম নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৮৬৩ সালে ঢাকার সুত্রাপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মেয়েদের জন্য একটি নরমাল স্কুল। যেটি অবশ্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অভাবে ১৮৭২ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একই সময়ে ঢাকার আর্মানিটোলায় আর্মেনিয়ানসরাও একটি নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৭৪ সালে লেফটেন্যান্ট গভর্নর ক্যম্পবেল গোটা ভারতীয় বঙ্গপ্রদেশে (পশ্চিমবঙ্গ, পূর্ববঙ্গ ও আসাম) মোট ৪৬টি নরমাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করার অনুমোদন দিয়েছিলেন। তখন নরমাল স্কুলে দুই ধরনের কোর্স চালু ছিল। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের জন্য দুই বছরের কোর্স আর নিম্ন-মাধ্যমিক স্কুলের জন্য তিন বছরের কোর্স। এছাড়া মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত উচ্চমানের শর্ট-টার্ম গুরু ট্রেনিং কোর্স। তখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের কোর্সগুলো ছিল অবিকল ল্যাবরেটরি স্কুলের মত। সেই আমলে নরমাল স্কুল থেকে পাস করা যে কোনো শিক্ষককে বলা হতো পণ্ডিৎ। আর বঙ্গদেশে বৃটিশদের প্রতিষ্ঠিত এসব নরমাল স্কুলকে বলা হতো গুরু ট্রেইনিং স্কুল। ঊনবিংশ শতকের প্রথম দশকের দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর মহাকুমার নাজিরপুর থানার দীঘিরজান গ্রামের শ্রী রূপচান হালদারের পুত্র শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার ছিলেন তৎকালীন ঢাকার গুরু ট্রেনিং স্কুলের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। তখন তিনি মাসিক এক টাকা পঁচিশ পয়সা বেতন পেতেন। ওই সময়ে লর্ড কার্জন ঢাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার তখন ঢাকায় গুরু ট্রেনিং স্কুলের শিক্ষক থাকার কারণে ইংরেজদের শিক্ষা বিস্তারের কর্মসূচি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত ছিলেন। যে কারণে শিক্ষা নিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি নিজের এলাকা দীঘিরজান গ্রামে একটি ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। দীঘিরজান গ্রামে বাবা রূপচান হালদারের বাড়ির সামনে খালপাড়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুল (ই.এম. স্কুল)। তৎকালীন সময়ে রূপচান হালদারের খালপাড়ে শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার প্রতিষ্ঠিত এই দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুল (ই.এম. স্কুল) ছিল গোটা পিরোজপুর মহাকুমায় প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ মিডল স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯২১ সালে শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ মিডল স্কুলে পরবর্তী সময়ে সপ্তম শ্রেণী চালু করে এই ইংলিশ মিডল স্কুলকে ইংলিশ হাই স্কুলে রূপান্তর করা হয়। তখন এই স্কুলের নতুন নামকরণ করা হয় দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল। তখনকার দিনে ইংলিশ হাই স্কুলগুলো ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। পুরোপুরি হাই স্কুল করার জন্য তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি অনুমোদন প্রয়োজন হতো। তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। দীঘিরজান গ্রামের শ্রী সনাতন মজুমদারের পুত্র শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদার দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুলে (ই.এম. স্কুল) ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। কাছাকাছি কোথাও ইংলিশ হাই স্কুল না থাকায় তিনি তখন বানড়ীপাড়া ইংলিশ হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং দশম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে পড়াশুনা করেন। দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুলের অনুমোদন পাবার জন্য ১৯২৩ সালে দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রী যতীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, একই স্কুলের শিক্ষক শ্রী ললিত কান্তি বলকে সঙ্গে নিয়ে শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদার কলকাতায় গমন করেন। ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তখন রোগশয্যায় হাসপাতালে ভর্তি। কলকাতা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ শ্রী হিরম্ব মিত্রকে তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয়েছে। শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দলকে হাসপাতাল থেকে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় একটি চিঠি লিখে ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর শ্রী হিরম্ব মিত্র'র কাছে পাঠান। ওই চিঠিতে ভাইস চ্যান্সেলর দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুলকে দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল করার পরামর্শ দেন। ভাইস চ্যান্সেলরের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর শ্রী হিরম্ব মিত্র তখন তৎকালীন বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল জেলার সমন্বয়ে গঠিত শিক্ষা অঞ্চলের পরিদর্শক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনকে টেলিফোন করেন। পরবর্তী সময়ে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বেশ কয়েকবার দীঘিরজান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিদর্শন করেন এবং সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হাই স্কুলের অনুমোদন পাবার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করেন। সেই শর্তগুলো ছিল হাই স্কুল ও স্কুলের খেলার মাঠের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং রিজার্ভ ফান্ডের টাকার যথাযথ ব্যবস্থা করা। ওই সময় দীঘিরজান গ্রামের প্রয়াত রাম চন্দ্র মজুমদারের পুত্র শ্রী প্রসন্ন কুমার মজুমদার হাই স্কুলের জন্য দীঘিরজান বাজার সংলগ্ন জমি দান করেন। আর চালিতাবাড়ি গ্রামের জনাব মোহাম্মদ রসুলের পুত্র জনাব বাবর আলী প্রয়োজনীয় ফান্ডের টাকা প্রদান করেন। ইংলিশ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সকল শর্ত পূরণের পর ১৯২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুলকে প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য সাময়িক অনুমোদন প্রদান করা হয়। যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বারক নং ৩৩। আনুষ্ঠানিকভাবে হাই স্কুলের অনুমোদন পাবার পর শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদার প্রতিষ্ঠিত দীঘিরজান ইংলিশ মিডল স্কুল রূপচান হালদারের খালপাড় থেকে দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল নামে বাজারের কাছে নতুন জায়গায় স্থানান্তিরত হয়। দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার পেছনে যাদের অবদান চির স্মরণীয় সেই সকল স্বপ্নদ্রষ্টা শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণ হলেন শ্রী ইশান চন্দ্র হালদার, শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদার, জনাব বাবর আলী, প্রধান শিক্ষক শ্রী যতীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, শিক্ষক শ্রী ললিত কান্তি বল, জনাব আবদুল কাদের হাওলাদার প্রমুখ। দীঘিরজান ইংলিশ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে পিরোজপুর মহাকুমার সাব ডিভিশনাল অফিসার (এসডিও) ছিলেন জনাব বাহাদুর। তিনি পদাধিকার বলে তখন স্কুল কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। স্কুল কমিটির প্রথম সেক্রেটারি নিযুক্ত হন দীঘিরজান গ্রামের নসাই হালদারের পুত্র শ্রী চন্ডিচরণ হালদার। পরবর্তী সময়ে ১৯২৬ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একটানা ২৭ বছর স্কুল কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদার। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত আমি দীঘিরজান মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়েছি। তখন আমাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন রুহিনী কুমার মজুমদারের পুত্র শ্রী মণীন্দ্র নাথ মজুমদার এবং প্রিয় শিক্ষক ছিলেন শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদারের পুত্র শ্রী অনন্ত কুমার মজুমদার। সম্পর্কে মণীন্দ্র স্যার ও অনন্ত স্যার কাজিন। ওই সময় আমার ক্লাস ফ্রেন্ড ছিল প্রাণেশ কুমার হালদার ও প্রদীপ কুমার মজুমদার (খোকন)। প্রাণেশ হলো শ্রী ঈশান চন্দ্র হালদারের নাতী। আর খোকন হলো শ্রী প্রহ্লাদ চন্দ্র মজুমদারের নাতী। ............................................. চলবে........................................১৯ জুন ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:৪৫
false
ij
None কমলগঞ্জের পীরসাহেব সম্প্রতি খুন হয়েছেন।অত্র এলাকার নামকরা পীর ছিলেন কমলগঞ্জের পীরসাহেব: লোকে একনামে চিনত । পীর সাহেবের আসল নাম কেউই জানে না, কমলগঞ্জের পীরসাহেব নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন।কমলগঞ্জের পীরসাহেব নাকি বড় বাতেনী পীর ছিলেন; জ্বীন পুষতেন: বাস করতেন ছোটখাটো একটি দিঘি ঘিরে পুরনো তিনমহলা মঞ্জিলে । কমলগঞ্জের পীরসাহেব ঠিক উঠতি পীর নন-তার পীরের বংশ; পীরসাহেবের দাদার দাদা পীর সাহিব আলী বখত গজনভীও নাকি জবরদস্ত রুহানী পীর ছিলেন। তিনিও নাকি জ্বীন পুষতেন!কিন্তু, কার এতবড় সাহস - কে কমলগঞ্জের পীরসাহেবকে খুন করার হিম্মত রাখে? সন্দেহের তীর পীরসাহেবের চতুর্থ স্ত্রীর দিকে। পীরসাহেবের চতুর্থ স্ত্রী রোজিনা বেগম ছিলেন রসুলপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী । সাতান্ন বছর বয়েসে পীরসাহেব রোজিনা বেগমকে চতুর্থ স্ত্রী করে ঘরে তুলেছিলেন। রসুলপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমান বছর তিনেক আগে প্রায়ই কমলগঞ্জের পীরসাহেবের মঞ্জিলে যাওয়া-আসা করতেন;-তারপর কী যে হল ... ইদানিং নাকি মোস্তফা নামে পীরসাহেবের এক যুবক মুরিদের সঙ্গে রোজিনা বেগমের গোপন মেলামেশার কথা শোনা যাচ্ছিল। পীরসাহেব খুন হওয়ার পর দুজনই পালিয়ে গেছে। এতসব কিচ্ছা মমতাজ শুনতে চায় না। তার বুকে অসহ্য যন্ত্রণা আর শূন্যতা। একটি বিশেষ প্রয়োজনেই মমতাজ কমলগঞ্জের পীরসাহেব কাছে তদবির নিয়ে গেছিল । ইদানিং মমতাজের কাছে মমতাজের স্বামীর ভাবসাব ভালো ঠেকছিল না । পান খাওয়া ধরছে আফতাব, রাত করে বাড়ি ফিরে আর আফতাবের শার্টে অন্য মেয়েমানুষের গন্ধ পায় মমতাজ। অনেকটা নিরুপায় হয়েই পীরসাহেব কাছে গিয়েছিল। সবশুনে পীরসাহেব বলছিলেন, তর স্বামীরে পরীতে ধরছে। তয় চিন্তার কিছু নাই- আজ রাইতে আমি মোরাকাবায় বইসা জ্বীন চালান দিমু। ইনশাল্লা, তর স্বামী তর কাছে ফির‌্যা আসব দেখিস। সেই পীরসাহেব খুন হয়ে গেল? এখন? এখন মমতাজ কি করবে? কার কাছে যাবে। মমতাজের বুকে অসহ্য যন্ত্রণা আর শূন্যতা। পীরসাহেব বুজুর্গ ব্যাক্তি ছিলেন। আল্লা তারে বাঁচাইতে পারল না-এমন একটি অস্বস্তিকর ভাবনাও উঁকি দিল মমতাজের মনে।আফতাব সত্যসত্যই পূবপাড়ার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হাবিবের বউয়ের সঙ্গে অল্পবিস্তর জড়িয়ে গেছে । পূবপাড়ার হাবিব বছর দুই হল মালয়েশিয়া। এই সুযোগে নয়নতারা উড়াল দিয়েছে। তেমন সুন্দরী না হলেও নয়নতারা সারাক্ষণই ভীষণ ছটফট করে। কমলগঞ্জের ফারুক খোনকার কাছাড়ি বাড়িতেই আফতাব প্রথম নয়নতারাকে দেখেছিল। তার পরপরই নয়নতারার ছটফটানি কী ভাবে যেন আফতাবের ভিতরেও ঢুকে যায়। নয়নতারা বিল্লালের সঙ্গে ফারুক খোনকার কাছাড়ি বাড়িতে গিয়েছিল। বিল্লাল এখন নয়নতারার প্রেমিক; বিল্লাল ফারুক খোনকারের অনুগতদের একজন। যা হোক। সবাইকে খুশি রাখতে হয় ফারুক খোনকারকে; আফতাবের অস্থিরতা টের পেয়ে ফারুক খোনকারই নয়নতারার সঙ্গে তার ঘনিষ্ট হওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। সেই নয়নতারার রুপে মজে আছে আফতাব; নয়নতারার সেন্টের গন্ধ আফতাবের শার্টে লাগে ...মমতাজ টের পায়। তবে কদিন আগে নয়নতারা সম্বন্ধে ফারুক খোনকার যা বলল, তাতে আফতাব ভীষণ ভয় খেয়ে গেছে: নয়নতারার নাকি কীসব অসুখবিসুখ আছে। ফারুক খোনকারের কথা অস্বীকার করার উপায় কী-এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞত মানুষ সে, কৈশরে তার সঙ্গেই মদনগঞ্জের বেশ্যাবাড়িতে গিয়েছিল আফতাব। তা ছাড়া ফারুক খোনকার কমলগঞ্জের ছোটখাটো জোরদার - নানা ধরনের ব্যবসা আছে। ধনের পার্থক্য থাকলেও ফারুক খোনকার কখনও আফতাবের সঙ্গে অবজ্ঞা করে না-আফতাব তার বন্ধু মানুষ, একসঙ্গে আলী বখত গজনভী স্কুলে পড়েছে। বড়বাড়ির অনেকটা বাইরে আমবাগানের ভিতরে ফারুক খোনকারের কাচারি বাড়ি। পাকা। দোতলা। একতলায় গুদামঘর। দোতলায় বেশ ক’টা গোপন কোঠাও আছে। নয়নতারার সঙ্গে তারই একটি কোঠায় কয়েকবার মিলিত হয়েছিল আফতাব। এখানেই সে কমলগঞ্জের পীরসাহেব মুরিদ মোস্তফাকে দেখে ভিমরি খায় । ফিসফিস করে সে ফারুক খোনকার কে বলে, তুমি এরে আশ্রয় দিস? পুলিশ না এরে খুঁজতেছে?ফারুক খোনকার এর কন্ঠস্বরটা চিকন আর ফ্যাসফ্যাসে। সে ফ্যাসফ্যাসে সুরে বলে, তুমি জান না, মোস্তফা আমার পিয়ারের লোক? বুঝছি। আফতাব বলে।ফারুক খোনকার লোকটা আফতাবেরই সমান বয়েসি, এই চল্লিশ কি বেয়াল্লিশ। চোয়াল ভাঙ্গাকালো মুখে বসন্তের দাগ, মাঝখানে সিথি কাটা কোঁকড়া চুল, চোখে বাইফোকাল চশমা; অনেকটা স্কুল মাস্টারদের মতন চেহারা-কিন্তু কে বলবে বছরে দু-চারটা প্রাণ তার ইঙ্গিতেই ঝরে যায়। আফতাব দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। জানালার বাইরে তাকায়। আমপাতায় ঝলমলে রোদ। টকটক গন্ধ পায় সে। সে জানে ফারুক খোনকার পিয়ারের লোক মোস্তফা । কমলগঞ্জের পীরসাহেবের সঙ্গে কী সব গোপন ব্যাবসাপাতি ছিল ফারুক খোনকারের-সেসব মোস্তফাই দেখাশোনা করত। ফারুক খোনকার আফতাবকে বিশ্বাস করে। সেজন্যই হয়তো সে বলে, ভিতরে কোঠায় হুজুরের স্ত্রী রোজিনা বেগমও আছেন।কও কি! আফতাফ ভীষণ চমকে ওঠে।ফারুক খোনকার সিগারেট টানছিল। ধোঁওয়া ছেড়ে বলল, তয় রোজিনা বেগম বা মোস্তফায় হুজুর রে খুন করে নাই।কও কি? আফতাবের বুক ঢিপ ঢিপ করে। পুলিশ কি ফারুক খোনকারের কাছারি বাড়িতে আসতে পারে। মনে হয় না। পুলিশের সঙ্গে ফারুক খোনকারের ওঠাবসা আছে। তারপরও বলা যায় না। ফারুক খোনকার বলল, রোজিনা বেগম বা মোস্তফায় পীরসাহেব রে খুন করে নাই। তাইলে? পীরসাহেবরে কে খুন করছে? এই প্রশ্নটা সে না জিজ্ঞেস করে পারল না। কে কইতে পারে। ফারুক খোনকার কাঁধ ঝাঁকায়। আফতাব জিজ্ঞেস করে, তয় মোস্তফায় রোজিনা বেগমরে লইয়া পলাইল ক্যান?আহা, পুলিশে সন্দেহ করব না? তাগো লইয়া আগে থেকেই কানাঘুঁষা চলতেছিল।বুঝছি। আফতাব মাথা নাড়ে। একটা কাক ডাকছিল। জানালার বাইরে। সে সেদিকে তাকায়। কাকটা দেখতে পায় না। তবে তার একবার রোজিনা বেগমরে মুখটা দেখার ইচ্ছে হয়। খুবই সুন্দরী নাকি। এর পরপরই নয়নতারার প্রসঙ্গ তোলে ফারুক খোনকার-নয়নতারার নাকি কীসব অসুখবিসুখ আছে। বিল্লাল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। কদমতলীর শামসের ডাকতারের চিকিৎসা নিতেছে; তুমি ওই মাগীর কাছ থেকে সইরা আস আফতাব। মাগীরে আর আমি এখানে ঢুকতে দিমু না। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে ফারুক খোনকার। ফারুক খোনকারের কথা অমান্য করার উপায় নেই। বন্ধু হলেও ফারুক খোনকারই তার উপরওয়ালা, তাছাড়া শুভাকাঙ্খি-আপদে বিপদে পাশে থাকে।আফতাব মনে মনে তওবা করে । বেপথে সে আর যাবে না। তা ছাড়া মমতাজ এখনও যৌবতী আছে। মমতাজরে এখনও আদরসোহাগ করে আরাম পাওয়া যায়। আফতাব ঠিক করল; পান খাওয়াও ছেড়ে দেবে সে। নয়নতারা সোহাগ করে তারে পানের নেশা ধরিয়েছিল। ভালো মানুষের মতন ঘরে ফিরে আসে আফতাব। তার আগে মমতাজের জন্য শাড়ি কেনে। গতমাসে ফারুক খোনকার-এর একটা বিশেষ কাজ করে দিয়েছিল সে। কিছু টাকা পেত, আজ সে টাকা পাওয়া গেল। সে টাকায় গঞ্জের শাহী নূর মার্কেট থেকে ফিরোজা রঙের একটা সুতির শাড়ি কিনল সে । বাড়ি ফিরতে ফিরতে আফতাবের কী কারণে মনে হল: কমলগঞ্জের পীরসাহেবের চতুর্থ স্ত্রী রোজিনা বেগম রসুলপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ছিলেন। ওসি সাহেব কি এখন প্রতিশোধ নিবেন?স্বামীর হাতে শাড়ি দেখে মমতাজ রীতিমতো অবাক। মুহূর্তেই মমতাজের বুকের গভীরে সুখের ঢেউ খেলে যায়। ও আল্লা, এ কি হইল? মমতাজ এত খুশি রাখবে কই? দিন কয়েক বাদে স্বামীর আচরণে মমতাজ আরও অবাক। বিয়ার পরে লোকটা যেমন ছিল - ঠিক তেমনই আচরণ করছে, ঘর থেকে বের হয় কম, সিগারেট খাওয়াও কমে গেছে আর পান তো খায়ই না। কি হইল কি? মমতাজ আর ভাবে। কমলগঞ্জের পীরসাহেব মুখটা মনে পড়ে। সবই পীরসাহেবের দোয়া। পীরসাহেব কইছিলেন, তর স্বামীরে পরীতে ধরছে। তয় চিন্তার কিছু নাই- আজ রাইতে আমি মোরাকাবায় বইসা জ্বীন চালান দিমু। ইনশাল্লা, তর স্বামী তর কাছে ফির‌্যা আসব দেখিস।পীরসাহেবের কথাই সত্য হইল। বারো বছরের সংসার মমতাজের, পীরসাহেবের দোয়ায় টিকে গেল। তবে পরীটা কে ছিল-সেটা জানার জন্য মমতাজ জান ছটফট করে। আহা, পীরসাহেবে বাঁইচা থাকলে জাইনা নিতাম। না কইলে পীরসাহেবের পায়ে পড়তাম। মমতাজের মনে সুখের ফুল ফোটে। ফিরোজা রঙের শাড়িটা বারবার ঘুরেফিরে দেখে। পরে। রান্না করতে করতে গুনগুন করে গান গায়। তার ভিতরে সুখের ফুল গন্ধ ছড়ায়। ভারি মিস্টি সুগন্ধ। মনে মনে শতবার পীরসাহেব কে সালাম দেয়। মমতাজের মনের কোণে আশঙ্কার কালো মেঘও জমা হয়- সুখের ফুল ঝরে পড়ে কি না। দিন কয়েক পর মমতাজের আশঙ্কাই সত্য হল। এক ভোরবেলা পুলিশ বাড়ি ঘিরে ফেলে। আফতাব পেচ্ছাপ করতে উঠেছিল। পায়খানা থেকে বেরুতেই আফতাবকে জাপটে ধরে। মমতাজের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। কমলগঞ্জের পীরসাহেব সম্প্রতি খুন হয়েছেন।মমতাজ এখন কার কাছে যাবে?
false
hm
চতুর্ভুজ প্রেমের গপ্পোঃ মালিকের মালিকানা ১. মালিকের দিন ভালোই কাটছিলো। ক্রিকেট খেলতো। কাচ্চু খেলতো। খেতো সব্জি, মাংস, বিক্কু, পান করতো কেবল দুদু। হঠাৎ তার মাথায় বাই চাপলো বিয়ের। নিজের পাড়া মহল্লায় যোগাযোগের রিস্কে আর গেলো না সে, সেখানে সবাই সব কিছু জানে। তখন বিংশ শতাব্দীর নটে গাছ মুড়িয়ে যাচ্ছে, চারদিকে ইন্টারনেটের জয়জয়কার, মালিক অহরহ নেট থেকে নেংটু ছবি নামিয়ে দেখতো অবসরে, এক বন্ধু পরামর্শ দিলো, পাক-সর-জমিন-শাদী ডট কমে যোগাযোগ করতে। মালিক নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে একটি ভদ্রগোছের ছবি আপলোড করলো। বিশদ পরিচয় দিলে আবার লোকে অবিশ্বাস করতে পারে, তাই নাম লিখলো এস. মালিক, পেশা লিখলো মডেলিং। নেসলের কতশত দুধের বিজ্ঞাপন সে করেছে! মডেল হিসেবে নিজেকে সে দাবি করতেই পারে। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না মালিককে। এক তরুণী তাকে মেইল ঠুকে বসলো। তরুণীর নাম সিদ্দিকা, সে দুশমন রাষ্ট্র হিন্দুস্তানের বাসিন্দা, তবে খাঁটি মুসলমান। অন্তঃপুরবাসিনী হলেও সে তেজস্বিনী, তাই একটি স্কিনটাইট বোরখা পরিহিত ছবি আপলোড করতে দ্বিধা করেনি। ছবি দেখে মালিক ঐমানিক সঙ্কটে পতিত হলো মারাত্মকভাবে। এ কী হেরিলো সে? বোরখাটি একেবারে স্থানে স্থানে প্লাস্টারের মতো লেপ্টে গিয়ে এ কী অপরূপ জিসম-জৌলুশ ফুটিয়ে তুলেছে! তরুণীর নয়নযুগল আরবসাগরের গোয়াদার উপকূলের জলরাশির ন্যায় সবজেটে, কুচ পীন, ক্ষীণ কটি. গুরু নিতম্বের আভাস টের পাওয়া যায়, যদিও কমজাত ফোটোগ্রাফারের কারণে বাকিটা অনুমান করে নিতে হয়। কাফের শায়ের রবিন্দরনাথ এ কারণেই বলে গেছে, কুছ দিদার হায় ইশারেঁমে, কুছ মিলতা হায় আন্দাজসে। স্থানীয় একটি প্যাকেটজাত তরল দুধ উৎপাদকের বিজ্ঞাপনে বল হাতে মডেল হয়েছিলো মালিক। তাদের স্লোগান তার মনে পড়ে গেলো, তৈয়ার হচ্ছে পাকিস্তান। বলিষ্ঠ ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে অপরিহার্য তাদের দুধ। বিলবোর্ডে মালিকের ছবি। এক হাতে ক্রিকেটের বল মুঠো করে ধরা, অন্যহাতে ঝকঝকে পিত্তলনির্মিত দুগ্ধবাহী বদনা। ব্যাকগ্রাউন্ডে চৌচির স্টাম্পের ছবি। মালিক সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে না। চটজলদি যোগাযোগ করে মেয়ের বাবার সাথে। এমন খাপসুরাত জেনানা উৎপাদিত হচ্ছে হিন্দুস্তানের হায়দরাবাদে, আর পাকিস্তান ভর্তি শুধু বেঢপ জেনানা। বেনজির ভুট্টো ছাড়া আর কাউকেই তো পদের মনে হয় না! দুবাইতে বিয়ের আয়োজন হয়। কাজি এসে মন্ত্র পড়ান, প্রবল উত্তেজনা চেপে রেখে মালিক সব কাগজপত্রে ঘ্যাঁচাঘ্যাঁচ সই করে যায়। কবুল কি না, জানতে চায় কাজি। মালিক হাসে। আবাজিগস! ২. বাসর রাতে মালিকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এ কে তার খাটে? এ কী! কোথায় সেই আরবসমুদ্রের শুক্তিবন্দী সবুজ মুক্তার মতো চোখ? তার পরিবর্তে দুই কপি ম্যাড়ম্যাড়ে ধূসর চোখ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। কোথায় সেই বিল্বফলের ন্যায় সুপুষ্ট, ক্রিকেট বলের ন্যায় পরিষ্কার সিমযুক্ত বর্তুল পীনদেশ? জেনানাটির বক্ষ আর উদর যে আলাদা করে চেনা মুশকিল। কোথায় সে ক্ষীণ কটি? কটিদেশ বলতেই তো কোনো কিছু চোখে পড়ছে না! মালিক হাউমাউ করে কাঁদে। বলে, লুট লিয়া। পালঙ্কবর্তিনী সিদ্দিকা উত্তরে বিলুপ্ত গুজরাটি সিংহিনীর মতো বিপুল লম্ফে তার ওপর এসে পড়ে, মুখে এটিএম শামসুজ্জামানের ভিলেনি হাসির মহিলা সংস্করণ। কিন্তু মালিক পাক দলের ক্রিকেট খেলোয়াড়, হাজারো জুয়াবাজির প্যাঁচে পড়ে পড়ে সে ঝানু, সে পালানোর চেষ্টার ত্রুটি করে না। সিদ্দিকা তার পাৎলুন ধরে তাকে পাকড়ে ফেলে মাটিতে। মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মাধুরীর মতো করে হেঁচড়ে হেঁচড়ে দরজার দিকে এগোতে এগোতে মালিক কাঁদে সুর করে, মার ডালা ... মার ডালা ...। কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। ভোরবেলা ছিন্নবস্ত্র রক্তচক্ষু মালিক সকলের অগোচরে হোটেল ত্যাগ করে খোঁড়াতে খোঁড়াতে। করাচি ফিরে গিয়েই ফিজিও হতচ্ছাড়াটার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। পাক পেপারে মালিকের ইনজুরির কথা আসে, কিন্তু পাকজনতা হিসেব মেলাতে পারে না। তবে সবাই ধরে নেয়, নিশ্চয়ই কোনো বুকির হাত আছে এতে। পরবর্তী ক্রিকেট ম্যাচে বাজির দরে একটু ঢেউ খেলে, তবে তা নিতান্ত নগণ্য। মাসখানেক পরেই ইন্টারনেটে একটি দক্ষিণ ভারতীয় নেংটু ছবির সাইটে অনুপ্রবেশ করে মালিক চমকে ওঠে। সিদ্দিকার পাঠানো মেইলে যে মেয়েটির ছবি সংযুক্ত ছিলো, সেই মেয়েটিই সেই ওয়েবসাইট আলো করে বসে। আজ তার পরনে একটি চোলি, এবং তার সাথে রংমেলানো হটপ্যান্ট। মালিক রূদ্ধশ্বাসে একের পর এক ছবি ডাউনলোড করতে থাকে, কোনোটিতে মেয়েটির পরনে ঘাগড়া কিন্তু ঊর্ধ্বাঙ্গ কলাজাতীয় কোনো উদ্ভিদের পাতায় আড়াল করা, কোনোটিতে আপন কেশরাশিতে বক্ষদ্বয় সুগোপন থাকলেও নিম্নাঙ্গে একটি প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চার পরিধেয় প্যান্ট আব্রু রক্ষার গুরুভার নিয়েছে, আবার কোনো ছবিতে আপাদমস্তক কাপড়ে ঢাকা হলেও সেসব কাপড় মাকড়ের জালের মতো স্বচ্ছ ও আঁটোসাটো। তাড়াহুড়ো করে মালিক নাম পরীক্ষা করে এই রঙ্গিনীর, কিন্তু বিধি বাম, মেয়েটির নাম দুর্গম দুরুচ্চার্য তামিল, অতএব সে হিন্দু, পাক সংস্কৃতি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের মতো পরিস্থিতিতে সম্ভোগযোগ্যা। রাগে দুঃখে মালিক মাথার চুল খামচায়। কত বড় পাপিষ্ঠা এই হায়দরাবাদিনী সিদ্দিকা, সে একটি নেংটু ছবির সাইট থেকে ছবি টুকে সম্পর্ক পাতিয়েছে! মালিক তড়িঘড়ি করে একটি লোশনের বোতল হাতে নিয়ে জনৈক বুকিকে ফোন করে জানায়, আগামী আরো একটি ম্যাচ সে ইনজুরড থাকতে ইচ্ছুক, এবার তার ঘা লেগেছে দিলে। ফোন রেখে মালিক ভাবতে থাকে, বর্তমান সেনাপ্রধান মুশাররফকে জপিয়ে ভারত আক্রমণের একটা ব্যবস্থা করা যায় কি না। দক্ষিণ ভারতে সৈন্য নামাতে পারলে সেও যুদ্ধে যোগদান করতো। ৩. মির্জা যখন টেনিস খেলে, তখন সকলে রূদ্ধশ্বাসে দেখে। সে এক দেখার মতোই দৃশ্য বটে। বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করে কালিদাসকে বিব্রত না করে বরং তার সাথে সেই সময়টা আকাশে মেঘ দেখাই বরং শ্রেয়। শুধু টেনিসবঞ্চিতদের খাতিরেই বলে রাখা যাক, মির্জা অত্যন্ত স্বাস্থ্যবতী। শৈশব থেকেই সে নিয়মিত কমপ্লান খায়, হরলিক্স খায়। তাকে বাংলাদেশের একটি প্যাকেটজাত তরল দুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি তাদের সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে চুক্তি করার জন্যে রুটিন করে আদাজল পান করে মাঠে নেমেছিলো, মির্জা টাকার অঙ্ক শুনে নথবিদ্ধ নাক সিঁটকেছে। বলেছে, একটা দেশলাই কাঠি জ্বালাও, তাতে আগুন পাবে ... ♪♫। তবে এও জানানো প্রয়োজন যে মির্জা টেনিস খেলে রেগুলেশন লেংথের প্যান্ট পরিধান করেই। সালোয়ার পরে কে কবে টেনিস খেলে ম্যাচ জিতেছে? আপনার মনে হতে পারে এ প্রসঙ্গ গল্পে কেন এলো? উত্তরে শুধু বলতে পারি, জ্যামিতির খাতিরেই। ৪. মির্জা সিদ্ধান্ত নেয়, হায়দরাবাদের আর পাঁচটা খান্দানি মেয়ের মতো পাকিস্তানেরই কোনো তুলনামূলকভাবে কম দুশ্চরিত্র স্পোর্টসম্যানের কণ্ঠে বরমাল্য পরাবে সে। সিদ্দিক পরিবারের সাথে মির্জা পরিবারের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। সিদ্দিকের প্রপিতামহ মির্জার প্রপিতামহের সাথে একত্রে এলাচের ব্যবসা করতেন, করোমণ্ডল উপকূলে তাদের বেশ কয়েকটি জাহাজ চলতো। সেই বৃদ্ধ সিদ্দিক একবার বৃদ্ধ মির্জার ভাইঝির বিয়ের দাওয়াতে পাতে মুসাল্লামের আকার একটু ক্ষীণ হওয়ার কারণে চোস্ত ফারসিতে কয়েকটি অপমানসূচক বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। অপমানিত মির্জা তখন শপথ নিয়েছিলেন, জমিন ফেটে চৌচির হবে, চন্দ্রসূর্য নিভে যাবে, কিন্তু হাজারিপ্রসাদ এই থাপ্পড় নেহি ভুলেগি ... বা এই ধরনের কিছু। হাজারিপ্রসাদ কে, এর উত্তর এ গল্পে পাবেন না। যাকগে, বংশপরম্পরায় এই পরস্পর খিটিমিটি ও অপমানের প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দিয়ে আসা হয়েছে। সিদ্দিকা পরিবারের মেয়েরা বেঢপ ও পর্দানশিন, তাই মির্জা পরিবারের মেয়েরা নিজেদের অবয়বসচেতনা, এবং টেনিস ভলিবল প্রভৃতি হাফপ্যান্ট-ক্রীড়ার প্রতি অনুরক্তা। চারশো বিশ ধারায় সিদ্দিকা মালিকের ওপর আক্রমণ করেছে, এ ব্যাপারটা মিডিয়ায় ফুটিয়ে তোলার জন্যে মির্জা সিদ্ধান্ত নেয় বরমাল্য সে মালিকের কণ্ঠেই পরাবে। তাছাড়া মালিক ছোকরাটা দুবলা, একটু বলিষ্ঠও হওয়া প্রয়োজন তার। আকরামের প্রতি মির্জার একটু টান থাকলেও তার আব্বুজি জানিয়েছেন, আকরাম লোক সুবিধার নয়। নানা নষ্ট মেয়েছেলের সাথে তার ওঠবোস। মির্জা ঘোষণা দেয়, সামনে তার বিয়ে, মালিককেই সে বিয়ে করবে। অনেক রুগ্ন বলপিয়াসী ভারতবাসী ছেলেছোকরা এতে বেশক অসন্তুষ্ট হয়। কত বালকের স্বপ্ন চুরমার হয়, কত কিশোর বাথরুমের দরজার ভেতরের পাশ থেকে মির্জার পোস্টার টেনে ছেঁড়ে। ৫. তারপর কী চলছে, আপনারা হয়তো জানেন। মামলা মকদ্দমা চলবে। মালিক এখন হায়দরাবাদে, পাসপোর্ট ঠোলারা জব্দ করেছে। কুকিলের ঘরে উকিল পরিস্থিতি, খুপ খ্রাপ। মালিক মির্জা পরিবারের প্রস্তাব পেয়ে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলো। আবার হায়দরাবাদ! ওয়েবসাইট থেকে মির্জার কিছু ছবিও সে ডাউনলোড করেছিলো, সেগুলো পুনরায় হিডেন ফোল্ডার থেকে বার করে সে নিশ্চিত হয়, এগুলো ফোটোশপের কাজ। মেইলে অ্যাটাচ করা ছবিগুলো দেখে সে আরেকটু নিশ্চিন্ত হয়েছে। তবে সারা দক্ষিণ এশিয়ায় কত লোকে টেনিস দেখে, সেটার হিসাব ইন্টারনেটে দেখে তার মনটা একটু খারাপ। টেনিস না বাল, কী দেখতে বসে এই লম্পটগুলো, তার জানতে আর বাকি নেই। সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, বিয়ে করেই হানিমুনে প্রথমে যাবে দুবাই, সেখান থেকে মক্কা। উমরাহ করে এসে মির্জার উমরাও জান য়াদা পাকাপোক্তভাবে ঢেকেঢুকে রাখার ব্যবস্থা সে হাতে নেবে। মুসলমানের মেয়ে খ্যালে খেলুক, মুসলমানের বউয়ের এত খ্যালাধূলা ঠিক নয়। ৬. তবে শিরোনামখানা দেখে যারা ভাবলেন, চতুর্ভুজ প্রেম কী করে হলো, তাদের শুধাই, তিলে খচ্চর ধর্মব্যবসায়ী জোকার নায়েকের কথা কি ভুলেই গেলেন? ঐ যে প্রতিটি ওয়াজে যে কি না মির্জার প্যান্টের দৈর্ঘ্যের সাথে খোদার আরশের কম্পনাঙ্কের ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক বার করে বলেছিলো, L× f = ধ্রুবক যেখানে, L = মির্জার প্যান্টের দৈর্ঘ্য [মিটার] আর f = খোদার আরশের কম্পাঙ্ক [হার্টজ] ... সেই নায়েক হচ্ছে এই গল্পের চতুর্থ বিন্দু। হাপুশ নয়নে কাঁদছে বেচারা। পাকিস্তান দেশটার ওপরই অভক্তি চলে এসেছে তার। নিমকহারাম শালারা। আর মির্জা পরিবারের ওপর আরো কঠোর ফতোয়া হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে কুরান পুরাণ ঘেঁটে। কিন্তু বারবার তার টুপির নিচে মাথায় আঘাত হানছে একটা হাদিস, বেড়াল নবীজির বড় প্রিয় জীব ছিলো।
false
hm
নিরিবিলি বই পড়া অমিত আহমেদের সাথে আলাপ হচ্ছিলো গোয়েন্দা গল্প নিয়ে। দেখা গেলো, আমার দুই গোয়েন্দা চরিত্র, যথাক্রমে গোয়েন্দা ঝাকানাকা আর গোয়েন্দা গুল মোহাম্মদের মধ্যে প্যাঁচ লেগে যাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্যাঁচ ছাড়ানোর জন্যে তাই পুরনো একটা লেখা তুলে দিচ্ছি। বহু আগে অন্যত্র প্রকাশিত। ১. রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস হাতে পেলে গুল মোহাম্মদের আর হুঁশ থাকে না। তিনি নাওয়াখাওয়া এবং হাওয়া খাওয়া ভুলে সেই বই নিয়ে মেতে থাকেন। আর একবার বই হাতে নিলে সেটার শেষ না দেখে, একটা হেস্তনেস্ত না করে ছাড়েন না তিনি। এক আসরেই একটা বই মাত করে দেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত গোয়েন্দা। কিন্তু গুল মোহাম্মদ দরিদ্র মানুষ, দরাদরি করে কিনে বই পড়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। আর যেসব মারদাঙ্গা কিসিমের বই তিনি পড়েন, সেগুলো লাইব্রেরিতে পাওয়া যায় না। লাইব্রেরিগুলো যেন পণ করেছে, যাবতীয় নিরামিষ গদ্যপদ্যপ্রবন্ধ পড়িয়ে পড়িয়ে ন্যুব্জপৃষ্ঠক্যুব্জদেহ ভেতো বাঙালিকে ভেতোতর করে তুলবে। পানসে কিছু প্রেমের উপন্যাস আর সেগুলোর কিছু নিরামিষ সমালোচনাগ্রন্থ দিয়ে শেলফ সব জায়গায় বোঝাই, সেগুলো পড়তে গেলেই ভারি ঘুম পায়। তাই তিনি লাইব্রেরিবিমুখ হয়ে, ওদিকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, আর অনেক মাথা খাটিয়ে বিনা পয়সায় বই পড়ার একটা ফন্দি বের করেছেন। পাড়ার যাবতীয় ছেলেছোকরার সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করে তিনি একটা পঞ্চবার্ষিকী বই লেনদেন প্রকল্প দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। এখন যেটা হয়, পিন্টুর কাছ থেকে তিনি বই এনে পড়েন, তারপর সেটা পড়তে দেন মিন্টুকে। এর বদলে মিন্টুর কাছ থেকে যে বইটা পান, সেটা আবার পড়া শেষ হলে পিন্টুকে পড়তে দেন। এমনি করে আরো অনেকের সাথে বিনিময় করে তিনি দুকূল বাঁচিয়ে চলছেন, আবার পয়সাও খরচা হচ্ছে না। তবে একটা ব্যাপারে গুল মোহাম্মদ ভারি ভয়ে আছেন, গোয়েন্দা গল্প পড়ে পড়ে যদি এই ছোকরাগুলো তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ব্যবসাটা মাটি করে, তাহলে? গুল মোহাম্মদ অত বেছে পড়েন না, একটা গোয়েন্দা মাকর্া বই হলেই তাঁর একদিন চলে যায়। তবে তাঁর সবচেয়ে পছন্দ হচ্ছে আলোছায়া প্রকাশনীর বাঁধা লেখক নিঝুম পুরীর 'গোয়েন্দা ঝাকানাকা' সিরিজ। সেখানে গোয়েন্দা ঝাকানাকা এক বিশাল বড়লোক মানুষ, হাতে কোন কাজ নেই বলে সময় কাটানোর জন্যে সে এমনি এমনি বিনিমাগনা লোকের রহস্য সমাধান করে দেয়। গোয়েন্দা ঝাকানাকা ভারি দরদী লোক, গরীব দুঃস্থদের কাছ থেকে সে কোন পয়সা নেয় না, কিন্তু ধনী লোকদের জন্যে তার ফি ভারি চড়া। হয়তো কোন রিকশাওয়ালার স্যান্ডেল চুরির রহস্য সে নিখরচায় করে দিলো, উল্টে নিজের গাঁট থেকে আরো পঞ্চাশটা টাকা সে বেচারার হাতে ধরিয়েও দিলো, কিন্তু শহরের বিখ্যাত ধনী আবদুল গোলাম হক, যিনি ফি হপ্তায় একটা না একটা রক্তজলকরা রহস্য নিয়ে গোয়েন্দা ঝাকানাকার শরণাপন্ন হন, তাঁর জন্যে পঞ্চাশ হাজার এক টাকা রেগুলার রেট। পঞ্চাশ হাজার টাকা গোয়েন্দা ঝাকানাকার তরফ থেকে গোপনে নানা রকম দাতব্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায়, আর এক টাকা সে একটা মাটির টুনিব্যাঙ্কে জমিয়ে রাখে --- এটাই তার নেশা। তার একগাদা গাড়ি আছে, ছয় সাত রকমের অস্ত্রশস্ত্র আছে, তার আলিশান বাড়িতে ছদ্মবেশ নেয়ার জন্যে বিশাল একটা মেকআপ রূম আছে, মাসে মাসে মাইনে দিয়ে রাখা মেকআপম্যান আছে --- এক কথায় গোয়েন্দা ঝাকানাকা সবসময় সবরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। সে প্রয়োজনে কখনো গোলাপ গাছের ছদ্মবেশে গিয়ে কোন ঘাগু খুনীকে ধরে ফেলতে পারে, আবার কখনো ল্যাম্পপোস্টের ছদ্মবেশে বসে থেকে দুর্ধর্ষ ডাকাত বদরু খাঁ, যে কিনা শুধু রাত বারোটায় খুন করে, তার কোন বদখদ অপরাধের পরিকল্পনা বানচাল করে দিতে পারে। ঝাকানাকার অসাধ্য, এমন কিছু নেই বললেই চলে। যার যেটা নেই, তার সেটার প্রতিই টান থাকবে। সে জন্যেই গোয়েন্দা ঝাকানাকার নানা অভিযানের গল্প পড়ার জন্যে আমাদের গোয়েন্দা গুল মোহাম্মদ অত টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে বই যোগাড় করে পড়েন। পড়েন আর ভাবেন, ইশ, আমারও যদি ভাড়াটে চিলেকোঠার বদলে ওরকম একটা বাড়ি থাকতো, গুলতির বদলে অমন বন্দুক পিস্তল থাকতো, ওরকম মেকআপরুম মেকআপম্যান দু'টোই থাকতো --- তিনি ভাবেন আর ভাবেন, আর ফোঁসফোঁস করে দুঃখের শ্বাস ফেলেন। পঞ্চাশ হাজার এক টাকার প্রসঙ্গ এলে তিনি আরো কাতর হয়ে যান। মাটির টুনিব্যাঙ্ক একটা তাঁরও আছে, তবে সেটার অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। যাই হোক, আজ সকালে তিনি তাঁর লেনদেন প্রকল্পের অন্যতম সদস্য, তাঁর বাড়িওয়ালার ছেলে হাবলুর কাছ থেকে ঝাকানাকা সিরিজের শাঁসালো একটা বই বাগিয়েছেন, সেটা নিয়েই তিনি তাঁর চিলেকোঠার সামনে খোলা ছাদে মাদুর বিছিয়ে যোগাসনে শুয়ে শুয়ে পড়ছিলেন। বইটার নামটাও রীতিমতো রোমহর্ষক, 'খানবাহাদুর হত্যা রহস্য।' প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে ইয়া মোটাসোটা মোচওয়ালা এক ভদ্রলোক, তিনিই সম্ভবত খানবাহাদুর, কারণ তিনি উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন আর তাঁর পিঠে খাসি কাটার একটা খাসা ভোজালি খুব নৃশংস ভঙ্গিতে বিঁধে আছে। গুল মোহাম্মদ নিজের মুখে একমুঠো ছোলা গুঁজে দিয়ে সবেমাত্র প্রথম পাতায় চোখ রেখেছেন, এমন সময় তিনি সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পেলেন। স্যান্ডেলের বিচ্ছিরি খসখসানির শব্দ শুনেই তিনি বুঝলেন, এটা তাঁর বাড়িওয়ালা শাহেদ সাহেবের আগমনের আলামত। শাহেদ সাহেব প্রতি তিনদিন পর পর ভাড়ার তাগাদ দিতে আসেন। গত চার পাঁচমাস ধরে গুল মোহাম্মদ বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না, কোন কেসটেস নেই তাঁর হাতে, কিন্তু সে কথা তো শাহেদ সাহেব বুঝতে রাজি নন। আজকেও তিনি ছাদে গুল মোহাম্মদ দেখার সাথে সাথে ঘ্যানর ঘ্যানর করা শুরু করলেন। 'না না না গুল মোহাম্মদ সাহেব, এ আপনার ভারি অন্যায়। আপনি কি আমাকে না খাইয়ে মারতে চান?' নাকি গলাটাকে বাজখাঁই করে তোলার একটা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার বৃথা চেষ্টা নিয়ে বলেন তিনি। গুল মোহাম্মদ বইটা বন্ধ করে উঠে বসে বলেন, 'কেন? আমার কি আপনাকে খাইয়ে দেবার কথা?' যুৎসই কথাটা বলেই গোয়েন্দা ঝাকানাকার মতো একটু মুচকি হাসি হেসে গোঁফে তা দেন তিনি, যদিও তাঁর গোঁফ নেই। এ কথা শুনে, আর হাসিটা দেখে, আর নেই মোচে তা দেয়ার ভঙ্গি দেখে শাহেদ সাহেব আরো চটে যান। 'পাঁচমাসের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়ে আছে ভাই সাহেব। পাঁচ দুগুনে দশ হাজার টাকা। অমন দশাসই অঙ্কের টাকা আপনি বাকি বকেয়া ফেলে রেখেছেন।' বকেয়া নিয়ে বকে যান তিনি। 'দশ হাজার টাকা নগদানগদি হাতে পেলে কত কিছু করা যায়, জানেন? আমারও তো ঘর সংসার আছে, ছেলেপুলের পড়াশোনার খরচ আছে, কলাটামূলোটাকচুটা খাবার খরচ আছে ---।' তিনি এক গাদা খাতে টাকা পয়সার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে যান, আর গুল মোহাম্মদ মাথা চুলকাতে থাকেন। শাহেদ সাহেবের মুখে কলা, মূলো এবং কচু খাবার কথা শুনে তাঁর কেমন কেমন যেন লাগে। এই খাদ্যদ্রব্যগুলো কি নিতান্ত দরিদ্র লোকেরই ভোগ্যবস্তু নয়? শাহেদ সাহেব কি মুরগি-গরু-খাসির গোস্ত ফেলে এগুলো খাবার জন্যে অতটাই লালায়িত? দশ হাজার টাকার কলা, মূলো এবং কচু তো পাড়াপড়শি সবাই মিলেও খেয়ে শেষ করতে পারবে না। তাছাড়া, এত কলার খোসা, মূলোর ডগা এবং সর্বোপরি কচুর ভগ্নাবশেষ তাঁর গোয়েন্দাদৃষ্টি এড়িয়ে যাবে কোথায়? ওদিকে একটানা বকে বকে এক পর্যায়ে হাঁপিয়ে গিয়ে শাহেদ সাহেব একটু দম নেবার জন্যে থামেন, তখন গুল মোহাম্মদ গম্ভীর মুখে বলেন, 'আপনার জীবনে কোন রহস্য নেই?' এটাই তাঁর মোক্ষম অস্ত্র, বার্টার নীতিতে, মালের বদলে মাল লেনদেনেই তিনি বিশ্বাসী। অমনি শাহেদ সাহেব ভারি চটে যান। 'আপনি পেয়েছেন কি? রহস্যের সমাধান করে আপনি দশ হাজার টাকা শোধ করবেন? না ভাই, আমার জীবনে অ্যাতো বড় রহস্য কোনদিন ছিলও না, আজো নেই। তবে আপনি এই হারে ভাড়া বাকি ফেলা শুরু করলে দু'দিন পর একটা রহস্য গজাবে। সেটা হলো গিয়ে, আমি কিভাবে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে বাঁচবো? আপনি যদি ঐ রহস্য জন্মানোর আগেই সমাধান করতে চান, আমার বাড়ি ভাড়া শোধ করে দিন, ল্যাঠা চুকে যাবে।' গুল মোহাম্মদ আবার থমকে যান। এহহে। ব্যাপারটার মধ্যে কেমন একটা প্যাঁচ বোধ করতে থাকেন তিনি। রহস্য সমাধান করলে তিনি টাকা পাবেন, কিন্তু সে টাকা আবার সমাধানের পেছনেই বেরিয়ে যাবে। তা হলে ঐ রহস্য সমাধান করার কি দরকার, থাক না সেটা অমনি পড়ে? গোটা ব্যাপারটার মধ্যে একটা আমলাতান্ত্রিক ঝামেলা দেখতে পান তিনি। শাহেদ সাহেব সরকারী চাকরি করতেন বলেই বোধহয় সোজা জিনিসক পেঁচিয়ে এতো জটিল করতে পারেন। তাছাড়া, তাঁর ধারণা, শাহেদ সাহেব ভারি অপয়া মানুষ, কারণ এই লোকটার বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে আসা ইস্তক গুল মোহাম্মদ সমস্যার মধ্যে আছেন, কোন কেসটেস জুটছে না তার। গুল মোহাম্মদ শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করেন, ভারি হতাশার একটা শ্বাস ফেলে বলেন, 'আচ্ছা ঠিক আছে। আগামী সোমবার, মাসের শুরুতে আপনাকে বাড়ি ভাড়া কড়ায় গন্ডায় চুকিয়ে দেবো। দরকার হলে আমার কাপড়জামা বাসনকোসন, এমনকি বদনা অবধি মহাজনের কাছে বন্ধক দেবো, তবুও আপনার পাই পয়সা বাকি ফেলবো না। আপনি এবার খুশি?' শাহেদ সাহেবের গোমড়া কালো মুখে খুশির আলো ফোটে। 'আচ্ছা আচ্ছা, অত কিছু করতে হবে না, তবে নিতান্ত যদি বন্ধক দিতেই হয়, আমার চেনা মহাজন আছে, আপনাকে আলাপ করিয়ে দেবো নাহয়।' আনন্দিত গলায় বলেন তিনি। 'তা কী করছেন এই রোদে শুয়ে শুয়ে?' বলতে বলতে তাঁর নজর পড়ে গুল মোহাম্মদের হাতে ধরা বইটার দিকে। 'অ্যাঁ? আপনিও পড়ছেন বইটা? খানবাহাদুর হত্যা রহস্য?' চেঁচিয়ে ওঠেন তিনি। গুল মোহাম্মদ খানিকটা লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে সাফাই গাইতে যান, কিন্তু তার আগেই শাহেদ সাহেব বকতে থাকেন, 'ওফ, বেড়ে একখানা বই লিখেছে নিঝুম পুরী। সেদিন আমার হাবলুর কাছ থেকে নিয়ে পড়লাম। পড়ে আমার রাতে এমন কষে ঘুম হয়েছে, কী বলবো? পড়ে দেখুন, আপনারও হবে। প্রথম খুনটার কথা কী বলবো ভাইসাহেব, দারুণভাবে করেছে লোকটা। তবে মাঝে মাঝে গা ছমছম করে ওঠে, বুঝলেন, বিশেষ করে যখন খানবাহাদুরের খুনী দ্বিতীয় খুনটা করে ---।' 'নাআআআআআআআআ!' গুল মোহাম্মদ আঁতকে ওঠেন। 'প্লিজ, প্লিজ! বলবেন না। গল্পের মাঝখানটা বলে দিলে গল্প পড়ার মজা পনেরো আনা নষ্ট হয়ে যায়, তা আপনি জানেন না?' শাহেদ সাহেব এই কথা শুনে মোটেও বিচলিত হন না। 'আরে সাহেব, কিসের মজা নষ্ট? আপনি শুনে রাখেন আমার কাছ থেকে। এতে করে আপনার বাকি অর্ধেক পড়ার জন্যে একটা প্রিপারেশন হবে ---।' তিনি আবার মুখ খোলার আগেই গুল মোহাম্মদ চোখের পলকে উঠে দাঁড়ান। শাহেদ সাহেব একটু ঘাবড়ে গিয়ে পিছিয়ে যান, বেলি্লক গোয়েন্দাটা না আবার তার ওপর হামলা চালায় ভেবে, এই ফাঁকে গুল মোহাম্মদ তাঁর মাদুর ভাঁজ করে চট করে ঘরে রেখে আসেন, তারপর হাফপ্যান্টের ওপরেই প্যান্ট পরে, তাঁর দুর্ধর্ষ সবুজ টুপি মাথায় চাপিয়ে, মুখে আরও একমুঠো ছোলা গুঁজে, খানবাহাদুরের বইটাকে তাঁর ঝোলায় পুরে এক ছুটে ছাদের কার্নিশ টপকে পানির পাইপ বেয়ে একতালায় নেমে পড়েন। প্রায়ই তিনি প্র্যাকটিসের জন্যে পাইপ বেয়ে ওঠেন আর নামেন, এই বিদ্যেটা কখন কোন তদন্তের জন্যে কাজে লাগে কে জানে? শাহেদ সাহেব প্রথমটায় ভেবেছিলেন গুল মোহাম্মদ বুঝি আত্দহত্যা করতে যাচ্ছেন, কিঞ্চিৎ সন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন অবশেষে চিলেকোঠাটা খালি হলো ভেবে, আবার পুলিশকে সামলানোর জন্যে টাকাপয়সা খরচ হবে ভেবে খানিকটা মুষড়েও পড়েছিলেন, তিনি যখন দেখলেন গুল মোহাম্মদ বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে মোড়ের দিকে চলছেন, মনে মনে ভারি চটলেন। ২. গুল মোহাম্মদ ছুটতে ছুটতে ভাবছিলেন, কোথায় নিরিবিলি শুয়ে শুয়ে বইটা রসিয়ে রসিয়ে পড়ে শেষ করা যায়। নিজের ঘরে যখন টিকতে পারলেন না, অন্য কারো বাসায় গিয়ে পড়ার ভরসা তাঁর নেই। দেখা যাবে যাঁর কাছে যাবেন, সে-ই বইটার অর্ধেক কাহিনী বলে দিচ্ছে। ভারি মুশকিল। মোড়ের পাতিমুদি দোকানদার আক্কাস আলির দোকানের সামনে একটা বেঞ্চ আছে। কথাটা মনে পড়তেই গুল মোহাম্মদ সেদিকে হনহন করে এগোলেন। বেঞ্চটা ছায়ায় পেতে, ঝোলাটা মাথার নিচে গুঁজে তিনি আরাম করে শুয়ে পড়তে পারবেন। যাক, হাতের কাছেই একটা নিরিবিলি জায়গা পাওয়া গেলো। চৈত্র মাসের দুপুর বেলা, চারিদিকে আগুন হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, রাস্তা শুনশান, শুধু মাঝে মাঝে পাড়ার দস্যি ছেলেরা সেখানে হৈহৈ করে ছুটে যাচ্ছে। আক্কাস আলির দোকানের পাশে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ, সেখানে একটা কাক ছায়ায় বসে ঝিমুচ্ছে। গুল মোহাম্মদ এগিয়ে গিয়ে ধপ করে বসেন বেঞ্চের ওপরে, তারপর গামছা দিয়ে মুখ মোছেন। কাকের অভ্যেস জানেন তিনি, তাই একবার পরখ করে নেন, কোনভাবে তাঁর মাথার ওপর কাকের বসার মতো জায়গা আছে কি না। তাঁকে মাথা নাড়তে দেখে কাকটা কর্কশ গলায় একটা ডাক দিয়ে উড়ে চলে যায়। হঠাৎ গুল মোহাম্মদের মাথায় কাব্য ছলাৎ করে ঘা মারে, নিমেষে একটা চার লাইনের পদ্য বানিয়ে ফেলেন তিনি, যেমনটা তিনি আগে কখনো হাজার চেষ্টা করেও মেলাতে পারেননি। ভারি অবাক হয়ে যান তিনি, ব্যাপারটা একটা নূতন রহস্য বলে ঠ্যাকে তার কাছে। নিজের মনে লাইন চারটা খানিক গুনগুন করে দোকানে বসা আক্কাস আলিকে ডেকে বলেন তিনি, 'কি আক্কাস ভাই, একটা পদ্য শুনতে চাও?' আক্কাস আলি খানিকক্ষণ চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে গুল মোহাম্মদের দিকে, তারপর গুরুগম্ভীর অমুদিসুলভ গলায় হেঁকে বলে, 'বলেন, শুনি।' গুল মোহাম্মদ গলা খাঁকরে চোখ বুঁজে একটা হাত তুলে শুরু করেন: চৈত্র মাসের দুপুর বেলা, আগুন হাওয়া বয় দস্যি ছেলে ঘুরে বেড়ায় সকল পাড়াময় কাকেরা সব ছায়ায় বসে এদিকসেদিক চায় শুকনো গলায় ডাকছে, কা কা, হঠাৎ উড়ে যায়। আক্কাস আলি আরো খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, 'তো?' গুল মোহাম্মদ ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, 'না, মানে, এটা এইমাত্র বানালাম মনে মনে, তাই ভাবলাম তোমাকে শোনাই ---।' আক্কাস আলি আরো গম্ভীর হয়ে বলে, 'এইটা আপনে এখন বানাইলেন?' গুল মোহাম্মদ মাথা ঝাঁকান। আক্কাস আলি হঠাৎ চটে ওঠে। 'বিটলামির আর জায়গা পান না? এইটা তো আমার পোলার ইস্কুলের বইতে লেখা আছে!' গুল মোহাম্মদের সহসা মনে পড়ে যায়, সত্যিই তো, এমন একটা ছড়া ইস্কুল আমলেই পড়েছিলেন তিনি। সেজন্যেই বোধহয় অত চটজলদি মাথায় খেলে গেলো, নইলে এমন ছন্দ তো তিনি কখনোই মেলাতে পারেন না! মাথায় চিড়বিড় করতে থাকা রহস্যের সমাধান করতে পেরে খুশি হয়ে ওঠেন তিনি, বলেন, 'হ্যাঁ, তাই তো!' আক্কাস আলি ক্ষেপে ওঠে, 'আরে ভাই, আরেক লোকের কবিতা নিজের নামে চালাইতাছেন ক্যা?' গুল মোহাম্মদ থতমত খেয়ে বলেন, 'না না, এটা আমার না, আমি অন্য আরেকটা বানিয়েছি।' আক্কাস আলি চোখ সরু করে বলে, 'তাই নাকি? বলেন দেখি?' গুল মোহাম্মদ একটু বিব্রত হয়ে বলেন, 'এটা ইংরেজিতে।' আক্কাস আলি চুপ করে যায়। নিজের তীক্ষ্ম বুদ্ধির দৌড় দেখে গুল মোহাম্মদ মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে দেন। তারপর বেঞ্চের ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে, ঝোলাটা মাথার নিচে গুঁজে দিয়ে, আয়েশ করে বইটা খুলে বসেন। খানবাহাদুর খুন হয়ে গেছেন, ওদিকে বাসাভর্তি লোকজন, তাদেরই কেউ একজন খুন করেছে ব্যাটাকে। সবার সন্দেহ গিয়ে পড়েছে খানবাহাদুরের আদরেআহ্লাদেবখেযাওয়া ভাগ্নে ঈমান পাশার ওপর। কেবল ঈমানই এমন বেঈমানের মতো পাশবিক একটা খুন করার লায়েক, অন্য কেউ নয়। খুনের মোটিভও নিশ্চয়ই আছে, একটু ভালো করে খুঁজলেই পাওয়া যাবে। পুলিশও তাকে খুব করে চেপে ধরেছে, রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে প্যাঁদানোর হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু ঈমান পাশা রোজ সকালে বারবেল ভাঁজে, ছোলা খায়, পুলিশের মারকে সে থোড়াই কেয়ার করে, সব হুমকির মুখে সে কেবল হো হো করে হাসে, আর গম্ভীর হয়ে একটা কথাই বারে বারে বলে, 'আমি কিছু জানি না, অ্যান্ড আই ডোন্ট কেয়ার!' কাজেই গোয়েন্দা ঝাকানাকাকে খবর দেয়া হলো। হঠাৎ আক্কাস আলি বলে ওঠে, 'কী, এই বইখানও কি আপনের লেখা?' গুল মোহাম্মদ ধড়ফড় করে উঠে বসেন। 'অ্যাঁ? আরে না, এটা নিঝুম পুরীর লেখা গোয়েন্দা ঝাকানাকা সিরিজের "খান বাহাদুর হত্যা রহস্য!"' আক্কাস আলি এগিয়ে আসে। 'কন কী? আপনিও পড়তাছেন এইটা? আরে, জব্বর কাহিনী, বুঝলেন? আমি তো কাইল সারারাইত ধইরা জাইগা পইড়া শ্যাষ করছি এইটা!' গুল মোহাম্মদ খানিকটা শঙ্কিত হয়ে বলেন, 'ওহ, তাই!' আক্কাস আলি আরো এগিয়ে আসে। 'কদ্দূর পড়ছেন, দেখি? মাত্র বারো লম্বর পৃষ্ঠা? এহহে! অহনও খেইল শুরু হয় নাই। ঈমান পাশা এই খুন করে নাইক্কা। কিন্তু ঝাকানাকা তারে ধইরা এমন ধোলাই দিছে, যে সে কবুল করছে, সে-ই গলা টিপ্যা মামুরে খুন করছে। কিন্তুক ঝামেলা হইলো, খান সাবেরে তো গলা টিপ্যা মাঠার করা হয় নাই, করা হইছে একটা চাক্কু দিয়া! তখন গোয়েন্দা ভাইজান ---।' গুল মোহাম্মদ এক সেকেন্ডও দেরি করেন না, বইটা চোখের পলকে ঝোলায় ভরে, দুকানে আঙুল দিয়ে নক্ষত্রবেগে ছুট লাগান। ৩. তেলেভাজার দোকানী কলিমুদ্দির কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা বাকি ফেলেছেন গুল মোহাম্মদ। কিন্তু রোজই তার দোকানে গিয়ে তেলেভাজা খান তিনি, নইলে তাঁর সন্ধ্যেটাই আলুনি ঠ্যাকে। গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ বিশ্লেষণ করে তিনি সিদ্ধান্তে এলেন, আক্কাস আলির হাতে বিপুল সময় থাকায় সে তার স্কুলপড়ুয়া ছেলের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে নিঝুম পুরীর রহস্যরোমাঞ্চোপন্যাস সবই পড়তে পারছে। কিন্তু কলিমুদ্দি মহা ব্যস্ত মানুষ, হাজারটা কাজ তার, সে কখনো এই জাতীয় বই পড়ে সময় নষ্ট করবে না। কাজেই ওর দোকানের নিরালায় বসে বইটাকে শেষ করাটাই সঙ্গত ঠেকে তাঁর কাছে। তিনি হনহনিয়ে যথাযথ দিকে রওনা দেন। দোকানে ঢুকতে না ঢুকতেই কলিমুদ্দি হাঁ হাঁ করে ওঠে, 'গোয়েন্দা ভাই, আপনের বিল ---।' গুল মোহাম্মদ হাত নাড়েন। 'দিয়ে দেবো, অত জলদি কিসের? আর আজকে মাসের কত তারিখ খেয়াল আছে? মাস শেষে পয়সা চাও কেন? মাসের শুরুতে চাও না কেন?' কলিমুদ্দি গম্ভীর গলায় বলে, 'আইজকা ছয় তারিখ।' গুল মোহাম্মদ ভারিক্কি চালে বলেন, 'দুপাতা ইংরেজি পড়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছো মনে হচ্ছে? সব কিছু খালি ইংরেজিতে মাপো? বাংলা মাসের শুরুতে তোমার বিল শোধ করে দেবো না হয়।' কলিমুদ্দি মাথা চুলকায়, বাংলা মাসের হিসাব রাখা তার জন্যে ভারি শক্ত কাজ, জানেন গুল মোহাম্মদ। নিজের পিঠ আরেক দফা চাপড়ে দিয়ে তিনি ধপ করে একটা বেঞ্চে বসে পড়েন, তারপর সন্তর্পণে ঝোলা থেকে বইটা বের করে পড়া শুরু করেন। হারামজাদা আক্কাস আরেকটু হলেই দিতো বইটার মজা মাটি করে। পড়তে থাকেন তিনি বারো নাম্বার পৃষ্ঠা থেকে। আসলেই, গোয়েন্দা ঝাকানাকা অকুস্থলে এসে দুয়েকটা সূত্র যাচাই করে কেন যেন হঠাৎ ক্ষেপে গেলেন, পকেট থেকে একটা পাটের দড়ি বের করে ঈমান পাশার হাত পা কষে বাঁধলেন, তারপর তার মুখে নিজের পা থেকে খুলে নেয়া একটা ময়লা মোজা গুঁজে দিয়ে কোত্থেকে একটা কাঠের রুলার যোগাড় করে এনে সেটা দিয়েই আচ্ছা করে শুয়োরপেটা পেটালেন তাকে। মারের চোটে ঈমান পাশার সব স্মার্টনেস হাওয়া হয়ে গেলো, সে কিছুক্ষণ মাটিতে কইমাছের মতো লাফঝাঁপ দিয়ে অবশেষে মরার মতো পড়ে রইলো। তারপর তার মুখ থেকে মোজা খুলে নেয়ার সাথে সাথে সে স্বীকার করলো, সে নিজের হাতে তার মামা ওরফে খানবাহাদুর চমনকুমারকে গলা টিপে খুন করেছে। কিন্তু চমনকুমারের গলায় কোন দাগদুগ নেই, বরং পিঠের ওপর একটা পেল্লায় সাইজের ভোজালি আমূল বিদ্ধ! এটুকু পর্যন্ত পড়েই গুল মোহাম্মদের ভেতরটা কেমন যেন খালি খালি লাগে। ঘটনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তাহলে? অনেক বিশ্লেষণ করে তিনি সিদ্ধান্তে আসেন, তাঁর ক্ষিদে পেয়েছে। সেই কখন কিছু ছোলা খেয়েছেন, এখন ঝাঁ ঝাঁ দুপুর, কিছু খেতে হবে। কিন্তু কলিমুদ্দির তেলেভাজার দোকানে পুরিসিঙ্গারা ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। সাতপাঁচ ভেবে তিনি হাঁক ছেড়ে জুম্মনকে ডাকেন, দুটো সিঙ্গারার অর্ডার দেন। অবিলম্বে জুম্মন ছোকরা একটা স্টিলের প্লেটে দুটো গরমাগরম সিঙ্গারা আর জঘন্য চেহারার কমলা রঙের নামকাওয়াস্তে তথাকথিত সস নিয়ে হাজির হয়। প্লেটটা নামিয়ে রেখে তাকে চলে যাওয়ার ইশারা করেন গুল মোহাম্মদ, কিন্তু জুম্মন দুপাটিতে বত্রিশখানা দাঁত বায়ুমন্ডলে বার করে রাখে। 'কী হলো?' ভুরু কুঁচকে বলেন গুল মোহাম্মদ। 'হে হে, এই বই পড়তাছেন?' জুম্মন হাসে। 'তাতে তোর কী? যা ভাগ!' 'জোস বই, স্যার! আমিও পইড়া ফালাইছি!' জুম্মন আরো হাসে। গুল মোহাম্মদ আঁতকে ওঠেন। 'বলিস কী?' প্রমাদ গোনার প্রস্তুতি নেন তিনি। 'হ স্যার। এই সময় তো কোন কাম থাকে না, দোকানে বইসা বইসা বই পড়ি।' জুম্মন খুশির চোটে গড়িয়ে পড়ে, কেন কে জানে। 'ভালো করিস। এখন ফোট!' গুল মোহাম্মদ সিঙ্গারায় কামড় দেন। জুম্মন কিন্তু আপনাআপনি ফোটে না, গুল মোহাম্মদের জন্যে সে তার পাঠকহৃদয় কুসুম বিকশিত করে তোলে একেবারে। 'আপনাগো স্যার, ইশটাইলই আলাদা।' 'আমাদের কোন ইশটাইল?' গুল মোহাম্মদ ক্ষেপে ওঠেন, জুম্মন তাঁর নিখরচায় রোজ রোজ সিঙ্গারাসেবনের দিকে কটাক্ষ করছে ভেবে। 'মানে স্যার, গোয়েন্দাগো কামকারবার স্যার।' জুম্মন শুদ্ধিপত্রে প্রকাশ করে। 'কেন, কী করেছি আমি?' গুল মোহাম্মদ নিজের গোয়েন্দাসুলভ ইশটাইল সম্পর্কে সচকিত হয়ে ওঠেন। 'আপনে আর কী করবেন, কিছুই করেন নাই। মাগার, এই ঝাকানাকা ভাইসাব, কঠিন পাবলিক স্যার! ঈমান পাশা নামের এক মস্তানরে বাইন্ধা এমন কচুয়া মাইর লাগাইছে, ঐ হালায় কানতে কানতে স্বীকার গেছে স্যার, সে নাকি নিজেই গলা চাইপ্যা তার মামুরে ফিনিশ কইরা ফালাইছে! কিন্তুক, মামু হালায় তো ছেনির কোপ খায়া মরছে। তারপর, বুঝলেন স্যার, আপনারে আর কী কমু, আপনে নিজেও তো গোয়েন্দা, ঝাকানাকা ভাইসাবে গিয়া হেই খানবাহাদুরের ভাইস্তারে শুরু করলো মাইর। ঐ হালায় আবার এক মন্ত্রীর শালা, কিন্তুক ঝাকানাকা এইসব মন্ত্রীপেসিডেন্টগো পোঁছে না স্যার, তারে মাইরা ভর্তা বানায়া তারে দিয়া কবুল করাইছে, যে হেই ব্যাডাই খুনী। হেই ব্যাডা নিমকহারাম ভাইস্তা তখন কয় কি, হ্যায় নাকি নাইনশুটার দিয়া গুলি কইরা মারছে তার চাচারে ---।' গুল মোহাম্মদ একটা সিঙ্গারা প্রায় শেষ করে এনেছিলেন, পরবর্তীটাকে বগলদাবা করে ঝেড়ে দৌড় মারেন তিনি, তবে তার আগে বইটাকে ঝোলায় পুরে নিতে ভোলেন না। ৪. পার্কে শুয়েই বইটা পড়া শেষ করতে হবে, ভাবলেন গুল মোহাম্মদ। পার্কটা এখান থেকে মোটামুটি দূরে, কাজেই জোর হাঁটা শুরু করলেন তিনি। এ কী ঘোর বিপর্যয় তাঁর সামনে, জুম্মন পর্যন্ত তাঁর আগে এই বই পড়ে শেষ করে ফেলেছে। পথে পিন্টুর সাথে দেখা হলো তাঁর, ঝট করে টুপিটা খুলে মুখ আড়াল করলেন তিনি, পিন্টু নিঃসন্দেহে বইটা পড়ে ফেলেছে, এবং তাঁর সাথে দেখা হলেই এটার আরো খানিকটা তাঁকে শুনিয়ে দেবে সে। কোন দরকার নেই। পিন্টুকে পাশ কাটিয়ে গটগটিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। খানিক বাদে মিন্টুকেও একই কায়দায়, ক্যামোফ্লেজের মাধ্যমে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সামনে এগিয়ে যান তিনি। তবে পিন্টু আর মিন্টুর মধ্যে দেখা হওয়ার পর তাদের কথোপকথনটা তিনি শুনতে পান না। মিন্টু জানায়, গুলু ভাইয়ের মাথা পুরোপুরি আউট হয়ে গেছে। আজ সকালে নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো, ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার জন্যে খুব লাফাচ্ছিলো, হাবলুর বাবা না থাকলে এতক্ষণে আঞ্জুমানে মফিদুলে খবর দিতে হতো। আর আক্কাস আলির দোকানে গিয়েও খুব উৎপাত করেছে, ইস্কুলের বই থেকে কি কি যেন মুখস্থ বলা শুরু করেছিলো। পিন্টু জানায়, তারও সেরকমই ধারণা। একটু আগে সে দেখেছে, কলিমুদ্দির দোকানে ঢুকে জুম্মনের একটা ইন্টারভিউ নিয়েছে গুলু ভাই। তারপর কি একটা জিনিস কেড়ে নিয়ে দোকান থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে বেরিয়ে এসেছে। তাকে দেখে টুপির আড়ালে আত্মগোপন করতে গিয়েছিলো ব্যাটা, কিন্তু টুপিটা যে তার শরীরের মাপে না বানিয়ে মাথার মাপে বানানো হয়েছে, এই কথাটাই লোকটার মনে ছিলো না। ওদিকে আধঘন্টা হনহনিয়ে হেঁটে পার্কে পৌঁছে একটা পরিচ্ছন্ন বেঞ্চ খুঁজে নিয়ে ঝোলাটা মাথায় গুঁজে বইটা খুলে বসেন গুল মোহাম্মদ, আর আপন মনে গজরাতে থাকেন। এই জুম্মনটাও এই সব বই পড়া শুরু করে দিয়েছে? বখে যাবার আর বাকি রইলো কী তবে? পড়তে পড়তে গুল মোহাম্মদ আবিষ্কার করেন, কথা সত্য, গোয়েন্দাদের ইশটাইলই আলাদা। ঝাকানাকা ঈমান পাশাকে পেঁদিয়ে তার মুখ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করেও সন্তুষ্ট হন না, কী আরেকটা সূত্র যাচাই করে তিনি এবার খানবাহাদুর চমনকুমারের ভ্রাতুষ্পুত্র খাজা খরমুজ মোহান্তের ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে পড়েন। তাঁর নির্দেশে পুলিশ খাজা খরমুজ মোহান্ত, যে কি না দেশের তৎকালীন ছাগলসম্পদ মন্ত্রীর নিতান্ত আপনজন, চরম কুটুম্ব, পিছমোড়া করে বাঁধে, তারপর তাঁকে ফ্যানের হুকের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে দেয়। তারপর ঝাকানাকা একটা রুমাল পাকিয়ে ঠাস ঠাস করে মারতে থাকেন মোহান্তের মুখে। প্রথম প্রথম মোহান্ত খুব চোটপাট করছিলো, থানার ওসিকে নাকি সে খাগড়াছড়ি বদলি করে দেবে, ঝাকানাকাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ধরে নিয়ে গিয়ে এই প্যাঁদানির শোধ নেবে, কিন্তু আধ ঘন্টা ধোলাই দেবার পর সে সুর পাল্টায় এবং স্বীকার করে, কথা সত্য, সে নিজে একটা নাইনশুটার দিয়ে নয়টা গুলি গুনে গুনে করেছে চাচার পেটে। ব্যাপারটা খানিকটা অবিশ্বাস্য, কারণ মোহান্ত নয় পর্যন্ত গুনতে জানে, এই কথাটা কেমন যেন জল মেশানো। কিন্তু, যা আগেই জেনেছেন গুল মোহাম্মদ, নিহত খানবাহাদুর কোন গুলি খেয়ে মরেননি, বরং কে বা কাহারা ইয়াবড় একটা ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে তাঁর ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়েছে। এ পর্যায়ে কে যেন গুল মোহাম্মদের কানের কাছে বলে ওঠে, 'এই বাদেএএএএএম!' মনোযোগ নষ্ট হওয়ায় চটে যান গুল মোহাম্মদ। ঘাড় ফিরিয়ে বাদামওয়ালা ছোকরাটাকে কষে ধমক দেন তিনি, 'এই দিনে দুপুরে গোল করছিস যে বড়? যা ভাগ!' ছোকরা তবুও বাদাম সাধে তাঁকে। 'লন স্যার, বাদাম খাইতে খাইতে পড়েন।' গুল মোহাম্মদ আড়চোখে বাদামগুলোকে খানিকটা দেখে নিয়ে বলেন, 'উঁহু, বাদাম খাওয়ার পয়সা নেই সাথে। তবে তুই যদি আমাকে দুটাকার বাদাম এমনি এমনি দিস, তাহলে তোকে এই বইটা থেকে একটা গল্প শোনাতে পারি।' বাদামওয়ালা ছোকরা হো হো করে হাসে। 'কী যে কন স্যার!' গুল মোহাম্মদ তাকে পাল্টা প্রলোভন দেখান। 'আরে ব্যাটা, গল্প শুনতে সমস্যা কী তোর? সারাদিন ঘুরে ঘুরে বাদাম বেচিস, একটা গা ছমছমে গল্প শুনলে তোর রাতে ভালো ঘুম হবে!' এবার ছোকরা চোখ টিপে বলে, 'এই বইটা স্যার আমি অলরেডি পইড়া ফালাইছি!' গুল মোহাম্মদের প্রায় বেঞ্চ থেকে পড়ে যাবার দশা। 'বলিস কী? তুই বই পেলি কোথায়?' কোনমতে টাল সামলে বলেন তিনি। 'বাদামের ঠোঙ্গা বানামু দেইখা এক জায়গা থেইক্কা দুই ট্যাকা দিয়া কিনছিলাম বইটা, তো মনে করলাম, ঠোঙ্গা বানানের আগে একটু পইড়া দেহি কী লিখছে। --- জব্বর একখান বই স্যার, দুই লম্বর খুন যখন হয়, ঝাকানাকা ভাইজানের তো মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা! যারে সে প্রথমে ভাবছিলো খুনী, হেই ঈমান পাশারে কে জানি আইসা গলা টিপ্যা মাইরা রাইখা গেছে। বুইঝ্যা দ্যাহেন স্যার, এমুন জোয়ান লোকরে গলা টিপ্যা মারতে পারে, কে সেই তালেবর ---?' সেই তালেবরের পরিচয় বলে দেয়ার আগেই গুল মোহাম্মদ বিকট একটা চিৎকার দেন, তারপর ঝোলার মধ্যে বইটা পুরে কষে একটা দৌড় দেন পার্কের কোণাকুণি রাস্তা ধরে। ৫. ঝুম বৃষ্টি নামে। গুল মোহাম্মদ বুঝতে পারেন, এই বৃষ্টিতে তিনি বাইরে ঘোরাঘুরি করতে পারবেন না। শুধু তাই না, তিনি পার্কে একটু শান্তিমতো শুয়ে বইটা পড়তে পারবেন না, বাদামবাজ ছোকরাটা তাঁকে তাড়া করে সেই ঈমানঘাতী তালেবরের পরিচয় শুনিয়ে ছাড়বে। কলিমুদ্দির দোকানে বৃষ্টির সাথে তেলেভাজা বেশ জমতো, কিন্তু জুম্মন রাসকেলটা তাঁকে ছাড়বে না, গল্পের আরো খানিকটা শুনিয়ে দেবে তাঁকে, মন্ত্রীর শালাদের লাঞ্ছিত হবার গল্প শোনানোর এমন সুযোগ কি জুম্মন ভবিষ্যতে আর কখনো পাবে? আক্কাস আলির দোকানের বাইরে সেই বেঞ্চটায় বসার আর জো নেই, বৃষ্টিতে একেবারে কাকভেজা হয়ে যাবে সেটা, আর যদিও বা না যায়, আক্কাস আলি তাঁর সর্বনাশ করে ছাড়বে, গল্পের মুখরোচক সব অংশ মাটি করে ছাড়বে। এর মানে হচ্ছে, আবার তাঁকে সেই হতচ্ছাড়া হাবলুর বাবা শাহেদ সাহেবের বাড়ির চিলেকোঠাতেই ফিরে যেতে হবে। কিন্তু বাড়ি ফেরা মাত্রই শাহেদ সাহেব উজিয়ে এসে খুনীর নামটা বলে দেবেন, গল্পের মজাটাই নষ্ট করে দেবেন, শালা! এর কী সমাধান? চটজলদি গুল মোহাম্মদের উপমহাদেশখ্যাত মস্তিষ্কে একটা বুদ্ধি খেলে যায়, তিনি হুঙ্কার ছেড়ে একটা রিকশা ডাকেন। এক বাচ্চা ছোকরা, সারা গায়ে পলিথিন জড়ানো, ভারিক্কি চালে প্যাডেল মেরে হাজির হয় তাঁর সামনে। তিনি রিকশায় চড়ে বসেন, হুডটা তুলে দেন, একটা ক্যানভাস টেনে নেন শরীরের ওপর, তারপর ঝোলা থেকে বইটা বের করে তাঁর বাসস্থানের ঠিকুজি চিনিয়ে দেন পিচ্চি রিকশাওয়ালাটাকে। তারপর পড়তে থাকেন। এই রিকশায় বসে বসেই বইটা পড়ে শেষ করবেন তিনি। পড়তে পড়তে শিউরে ওঠেন গুল মোহাম্মদ। আশ্চর্য! ঈমান পাশাকে কে বা কাহারা গলা টিপে খুন করে রেখে গেছে। নিজের বাড়ির বৈঠকখানায় ইজিচেয়ারে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলো ঈমান পাশা, আর ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো, তাকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করে তার বাবুর্চি, জিভ বেরিয়ে আছে, চোখ খোলা। তাড়াহুড়ো করে পুলিশে ফোন করে সে। পুলিশ আবার ফোন করে ঝাকানাকাকে। ঝাকানাকা অকুস্থলে গিয়ে কয়েকটা সূত্র খুঁটিয়ে দেখে বাবুর্চিটার কান মলে দিয়ে গালে কষে একটা থাপ্পড় মারেন। তিনি বলেন, এমন নিম্নমানের ঝালমুড়ি কাউকে খেতে দেয়া হলে সে নিঃসন্দেহে দম আটকে মরবে, ঈমান পাশা তো আর এক্কাগাড়ির সাথে জুতে দেয়া ঘোড়া নয়, যে যা সামনে পাবে তা-ই গিলে খাবে, তারও তো একটা রুচিবোধ আছে। বাবুর্চিকে আরেকটা থাপ্পড় মারতে যাবেন ঝাকানাকা, এমন সময় পুলিশের ডাক্তার ঘোষণা করে, ঈমান পাশাকে মুড়ি খাইয়ে নয়, বরং গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে, তার গলায় স্পষ্ট দাগ দেখা যাচ্ছে, যা কোন ঝালমুড়ির পক্ষে গলার ভেতরে অবস্থান করে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। ঝাকানাকা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন, আরো দুয়েকটা সূত্র আরো ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে তিনি ছুটে যান খাজা খরমুজ মোহান্তের বাড়িতে। সেখানে সুইমিং পুলে এক লাস্যময়ী তরুণীর সাথে একটা লাল প্লাস্টিকের হাফপ্যান্ট পরে সাঁতার কাটছিলো মোহান্ত, ঝাকানাকা তাকে চুলের মুঠি ধরে সুইমিং পুল থেকে বেড়ালছানার মতো টেনে তুলে আনেন, তারপর সেই লাস্যময়ীর সামনেই পেঁদিয়ে মোহান্তকে একশা করে ছাড়েন। মোহান্ত প্রথমটায় খুব তড়পাচ্ছিলো, বলছিলো ঝাকানাকার পেছনে নাকি মাফিয়া লেলিয়ে দেবে, বম্বের গুন্ডাসর্দার দাউদ আব্রাহাম নাকি তার ছোটবেলার বন্ধু, ইত্যাদি, কিন্তু কুলাতে না পেরে অবশেষে ভেজা বেড়ালের মতো মোহান্ত স্বীকার করে, সে-ই ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করেছে ঈমান পাশাকে। কিন্তু, কী আপদ, ঈমান পাশাকে তো গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে, মোটেই তাকে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় নি! তখনকার মতো মোহান্তকে সেই লাস্যময়ীর কোলে ছুঁড়ে ফেলে রেখে ফিরে যান ঝাকানাকা। পরের কয়েকটা দিন নিজের ঘরে বসে দিনরাত পায়চারি করে, মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে অবশেষে ঝাকানাকা যখন প্রায় খুনীকে ধরে ফেলেছেন, তখন ফোন আসে, খাজা খরমুজ মোহান্তকে কে বা কাহারা সুইমিং পুলের পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে, তার ইয়া মোটা হাতির মতো লাশ ভাসছে পানিতে, পরনে সেই লাল প্লাস্টিকের হাফপ্যান্ট। অমনি ঝাকানাকা অকুস্থলে ছুটে যান, তারপর সেই লাস্যময়ী তরুণী, যে কিনা তৎকালীন তামাকসম্পদ মন্ত্রীর খালাত বোন --- মোহান্ত নিজেও মন্ত্রীর আত্মীয়, তাই সে মন্ত্রীর আত্মীয় ছাড়া কারো সাথে বড় একটা মেশে না --- তাকে চুলের মুঠি ধরে পুলের সামনে নিয়ে আসেন, তারপর একেবারে দজ্জাল স্বামী যেভাবে নিরীহ বউকে পিটিয়ে নারীনির্যাতন করে, সেভাবে মেয়েটাকে আগাপাশতলা ধোলাই লাগান। সত্যি, আশ্চর্য এই গোয়েন্দাপ্রবরের ইশটাইল। মারের চোটে অস্থির হয়ে মেয়েটা স্বীকার করে, সে-ই এককেজি ইঁদুর মারা বিষ মদের সাথে গুলিয়ে খাইয়ে ঐ হাতির মতো মোটা মোহান্তকে খুন করেছে। কিন্তু, আবারও সেই ফ্যাকড়া, কী যন্ত্রণা, মোহান্তর শরীরে বিষক্রিয়ার কোন চিহ্ন নেই, বরং তাকে যে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়, অটোপ্সিতে তার ফুসফুস ভর্তি ক্লোরিন মেশানো পানি পাওয়া গেছে। এতটুকু এসে কাহিনী খুব জটিল মোড় নেয়, আর রিকশাটাও এক জটিল মোড় নিয়ে গুল মোহাম্মদকে হাজির করে তাঁর বাড়ির সামনে। ততক্ষণে বৃষ্টি কমে এসেছে। গুল মোহাম্মদ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে যাবেন, যাতে ঐ শাহেদ সাহেব নামের বাজে লোকটার সাথে তাঁর মুখোমুখি হতে না হয়। পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করে রিকশাওয়ালা ছোকরার দিকে বাড়িয়ে ধরেন তিনি। কিন্তু ছোকরাটা চরম খ্যাঁচখ্যাঁচ করতে থাকে। এই বৃষ্টির মধ্যে সে ছোটমানুষ বাতাস ঠেলে ঠেলে এতদূর প্যাডেল চালিয়ে এসেছে, কমসে কম দশটাকা ভাড়া দেয়া উচিত তাকে। গুল মোহাম্মদ তেড়ে ওঠেন। 'বটে, পয়সা সস্তা পেয়েছিস? আর তুই তো দেখছি আগাগোড়া পলিথিনে মোড়া, বৃষ্টির মধ্যে এসেছিস তো কী হয়েছে? আর বাতাস কি ঠেলার মতো জিনিস নাকি রে ব্যাটা মর্কট? বাতাস কি ঘানিগাছের হ্যান্ডেল, যে ঠেলে বেড়াবি?' ছোকরাটা তবুও ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের আলোকে নানা যুক্তি তুলে ধরে সে। ট্যাক্সমন্ত্রী যে কী চামারের মতো নির্লজ্জভাবে দরিদ্রের লুঙ্গির গিঁটে গোঁজা যৎসামান্য পয়সা চালডালের দামবাড়িয়ে দিয়ে লুটে নিচ্ছেন, তার এক চিত্রসফল বর্ণণা দেয় সে। এবং এই মন্ত্রীর অত্যাচারের হাত থেকে টিকে থাকার জন্যে তাকে কমসে কম আট টাকা ভাড়া দিতে হবে, সাফ জানিয়ে দেয় সে, নয়তো অচিরেই তার লুঙ্গিটিও নাকি মন্ত্রী খুলে নিয়ে যেতে পারেন, কিছুই বলা যায় না। গুল মোহাম্মদ নিজেও এই আলোচ্য মন্ত্রীটির ওপর খাপ্পা, তাঁর মনে কিঞ্চিৎ সহানুভূতি জেগে ওঠে, অতিরিক্ত একটি এক টাকার কয়েন তিনি ছোকরার দিকে বাড়িয়ে ধরেন। রিকশাওয়ালা কয়েনটা হাতে নিয়ে সেই আলোচ্য মন্ত্রীআক্রান্ত বিপর্যস্ত লুঙ্গিটির গিঁটেই গোঁজে, তারপর বলে, 'আর দুই ট্যাকা?' এই বাড়াবাড়িতে গুল মোহাম্মদ ক্ষেপে ওঠেন, 'ঐ গেলি, নাকি মন্ত্রী ডাকবো?' ছোকরা এবার ঠান্ডা চোখে তাঁকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে। তাঁর মাথায় চাপানো দুর্ধর্ষ সবুজ টুপি, তাঁর কাঁধের ঝোলা, তাঁর হাতে ধরা 'খানবাহাদুর হত্যা রহস্য', তাঁর পায়ের মলিন স্যান্ডেল, সবই সময় নিয়ে দেখে সে। তারপর ঠান্ডা গলায় বলে, 'যাইতাছিগা। কিন্তুক একখান কথা হুইন্যা রাখেন!' গুল মোহাম্মদ তেড়ে যান তার দিকে। 'কী, কী শোনাবি তুই আমাকে?' ছোকরাটা তাঁর হাতে ধরা বইটার দিকে ইশারা করে, তারপর বলে, 'এই বইটা কি আপনের পড়া শ্যাষ?' গুল মোহাম্মদ খানিকটা শান্ত হয়ে বলেন, 'না, মাত্র তিরিশ পৃষ্ঠা শেষ হয়েছে, আরো পঞ্চাশ পৃষ্ঠা বাকি। কেন?' এবার ছোকরা সন্তুষ্ট গলায় বলে, 'আর পইড়েন না।' গুল মোহাম্মদ তেড়িয়া হয়ে বলেন, 'কেন হে বদ বালক? পড়বো না কেন?' এবার রিকশাটা ঘুরিয়ে নিতে নিতে রিকশাওয়ালা বলে, 'মাঠারগুলি সব খান সাহেবের দ্বিতীয় পক্ষের বউ করছে!' (সেপ্টেম্বর ১৯, ২০০৩)
false
ij
গল্প_ দীক্ষা ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে লালনের কি সত্যিই দেখা হয়েছিল? কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়া থেকে শিলাইদহের কুঠিবাড়ির দূরত্ব কতই- বা? মধ্যিখানে গড়াই নদী আর পূর্বদিকে অর্ধক্রোশের মেঠোপথ-এই তো? তারপরও এই প্রশ্ন ওঠে -লালনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কি সত্যিই দেখা হয়েছিল? আমরা জানি না। তবে, পত্রপুট কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘কতদিন দেখেছি ওদের সাধককে।’ কে এই সাধক? লালন? কে জানে। কেননা, দুজনের যে সত্যি সত্যিই দেখাসাক্ষাৎ হয়েছিল- সেই বিষয়ে গবেষকদের হাতে এখনও কোনও অকাট্য প্রমাণ নেই। স্বয়ং অন্নদাশঙ্কর রায় এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, “দুই জ্যোতিষ্কের সাক্ষাৎকার প্রমাণাভাবে অসিদ্ধ।” সৈয়দ মুর্তাজা আলীর মতও সেরকমই। তারপরও প্রমাণ ছাড়াই অনেকেরই দাবি: দুই জ্যোতিষ্কের নাকি দেখাসাক্ষাৎ হয়েছিল। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইলসূত্রে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর শিলাইদহের জমিদারীর মালিক হন। রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার শিলাইদহে আসেন ১৮৯০ সালের শেষের দিকে। লালনের মৃত্যু ঐ বছরই অর্থাৎ ১৮৯০ সালের অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখ। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশিষ্ট লালনগবেষক আবুল আহসান চৌধুরী তাঁর ‘লালন সাঁইয়ের সন্ধানে’ বইটিতে লিখেছেন, ‘তবে জমিদারীরর দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে বাল্যকাল থেকেই বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্রনাথ একাধিকবার শিলাইদহে এসেছেন। সেই সময়ে লালন ফকিরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হওয়া অসম্ভব ছিল না। তবে এ ক্ষেত্রে স্থির সিদ্ধান্তে আসার পক্ষে সুস্পস্ট তথ্য প্রমাণের একান্তই অভাব।’ (পৃষ্ঠা, ৭৩) আমি অবশ্য বিশ্বাস করি যে: লালনের মুখোমুখি রবীন্দ্রনাথ ঠিকই হয়েছিলেন- তবে রবীন্দ্রনাথের পরিণত বয়সে নয়- কিশোর বয়েসে। একখানি গল্প লিখে কথাটা বোঝানো যাক- ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দের শেষ শ্রাবণের এক মধ্যাহ্ন। ছেঁউরিয়ার আখড়াবাড়ির সুমুখে একটি আয়না পালকি আসিয়া থামিল। পালকিটি থামিতেই পনেরো-ষোল বছরের একটি লম্বা সুদর্শন কিশোর পালকি হইতে লাফাইয়া নামিল । কিশোরটিকে ঈষৎ কৌতূহলী বলিয়াই মনে হইল। কারণ, কিশোরটি আখড়াবাড়ির পরিপার্শ্ব চাহিয়া চাহিয়া দেখিতেছিল। সকাল হইতেই আকাশ মেঘলা হইয়া ঝিরিঝিরি করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছিল। এক্ষণে অবিশ্যি বৃষ্টি সম্পূর্নরূপে থামিয়া গিয়া চরাচরে একপ্রকার নম্র হলুদ রোদ উঠিয়াছে। আখড়াবাড়ির ঠিক পার্শ্বেই একখানা বিস্তীর্ণ মাঠ দেখিতে পাইল কিশোর- মাঠ ঘিরিয়া তালতমালের অপরূপ বন। কলিকাতা শহরের গঙ্গাপাড়ের এক সংকীর্ণ গলিতে কিশোরের জন্ম হইলেও তেপান্তরের মাঠবন কিশোরের বিশেষ ভালো লাগে। সুতরাং, সে আদিগন্ত তেপান্তরের রৌদ্রময় মাঠখানির দিকে ছুটিয়া যায়। আখড়াবাড়ির আঙিনা হইতে শিলাইদহের জমিদারের আয়না পালকিটি দেখিবামাত্র দুই-একজন বাউল তড়িঘড়ি করিয়া আগাইয়া আসিল। দুই পক্ষের কুশল বিনিময় ও সামান্য কথাবর্তার পর ধুতি তুলিয়া কাদা এড়াইয়া আখড়াবাড়ির দিকে যাইতে থাকেন দেবেন্দ্রনাথ। আখড়াবাড়ির বাইরে তালতমালের বন ঘেরা আদিগন্ত তেপান্তরের মাঠ জুড়িয়া নম্র হলুদ রোদ ছড়াইয়া ছিল। বৃষ্টিত্তোর সে রোদে কত যে হলুদ প্রজাপতি উড়িতেছে। হলুদ প্রজাপতির ভিড়ে একটিও ফড়িংও কি নাই নাকি? কিশোর কৌতূহলী হইয়া উঠিল। সে মাঠের আরও গভীরে প্রবেশ করে। মাঠের এখানে সেখানে বৃষ্টির জল ছিল। তাহার পা দুটি সে জলে ভিজিয়া যায়। সে ভ্রূক্ষেপ করে না। কেননা, কবিস্বভাবের কিশোরটি সোনালি কিরণসিগ্ধ মাঠের সৌন্দর্য দেখিয়া কাতর ও বিস্মিত হইয়া উঠিয়াছে। মাঠভরতি সোনালি রোদ। ঝকঝকে শেষ শ্রাবণের আকাশ। ঝাঁক ঝাঁক হলুদ প্রজাপতি হলুদ তরঙ্গ তুলিয়া নাচিতেছে। দূরে একটি নিঃসঙ্গ তালগাছ। কী সুন্দর। কিশোরটি মুগ্ধ হইয়া যাইতে থাকে। সে এইই প্রথম পূর্ববঙ্গে আসিয়াছে। তাহার কী যে ভালো লাগিতেছে। কলিকাতায় বৃষ্টি ঝরিলেও, বৃষ্টির পর হলুদমতন রোদ উঠিলেও এঁদো গলি ইটের বাড়ির আক্রোশে হলুদ প্রজাপতিসকল কোথায় যে লুকাইয়া থাকে! শিলাইদহ তেমন নয়। যে কারণে, শিলাইদহের মনোরম রোদ আকাশ জল কিশোর ভালোবাসিয়া ফেলিয়াছে। তালতমালের বনের দিক হইতে কে একজনকে আসিতে দেখা গেল। বৃদ্ধা বলিয়াই মনে হইল। শাদা শাড়ি পরিহিতা বৃদ্ধার হাতে একখানা একতারা। বাউল কি? তাই হবে। জ্যোতিদা বলিয়াছে: ছেঁউরিয়ার প্রসিদ্ধ বাউলসাধকের শিষ্যরা গ্রামের পথে পথে একতারা হাতে গান করিয়া বেড়ায়। এই বৃদ্ধা কি ছেঁউরিয়ার আখড়াবাড়ির বাউলসাধকের শিষ্য? তাই হবে বোধহয়। কিশোর কৌতূহলী হইয়া উঠিল। মাঠের উপর লম্বা সুদর্শন বালকটিকে একা পাইয়া বৃদ্ধা দ্রুতপদে আগাইয়া আসিল। বৃদ্ধা বাউল বলিয়াই এই বয়েসেও রসে টইটম্বুর হইয়া আছে। সুতরাং, রসস্থ বোধ করায় বৃদ্ধা একতারাটির তারে একটি টোকা দিলেন। তাহাতে মাঠময় হলুদ আলোর ভিতর সুমিষ্ট স্বরধ্বনি ছড়াইয়া গেল । তক্ষনাৎ কী যে হইয়া গেল-কাচের মতন রৌদ্রমুখর ঝকঝকে আকাশ হইতে আলোকেরই ঝর্ণাধারা নামিয়া আসিয়া যেন কিশোরকে অন্ধ করিয়া দিল। কিশোরটি তাহার অনুভবে দুটি চরণের উপস্থিতি টের পাইল। ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে/ তাই হেরি তাই সকলখানে।’ আশ্চর্য! কিশোর দিশেহারা বোধ করে। কে কথা বলিয়া উঠিল ভিতরে? সাঁইজির কাছে এসেছো বুঝি? বৃদ্ধা আরও খানিক আগাইয়া আসিয়া শুধাইল। কী মধুর কন্ঠ। হ্যাঁ? কিশোরটির খানিক থতমত খাইয়া বলিল। শাদা শাড়ি পরিহিতা বৃদ্ধার গাত্রবর্ণ শ্যামল, পলিতকেশ চূড়া করিয়া বাঁধা। তীব্র বেলী ফুলের গন্ধ পাইতেছিল কবি কিশোর। তা কোথা থেকে আসা হল শুনি? যেন প্রশ্নটি এমনি এমনি করা-উত্তরটি বৃদ্ধা বিলক্ষণ জানেন। কাচারিবাড়ি, ...মানে ঐ শিলাইদহ। কিশোর হাত তুলিয়া দেখাইল। ও। তাই বলি। আর আমি ভাবলাম আকাশের চাঁদ নেমে এসেছে বুঝি। বৃদ্ধা রসিকতা করিয়া বলিল । কে চাঁদ? কিশোর বিস্মিত। ও। তুমি তালে চাঁদ নও ঠাকুর - তুমি তাহলে রবি? ঠাকুর! আশ্চর্য! আমার নাম তো রবি। ও। কিশোর ঠাকুরের নাম বুঝি রবি? তাই তো। বাহ্, বেশ সুন্দর নাম তো। বৃদ্ধা উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল। তা, রবি ঠাকুর? তুমি নিশ্চয়ই গান কর? হ্যাঁ। রবি বলিল। বলিয়া সে বালিকার মতো ঈষৎ লাজুক হইয়া উঠিল। তা হলে একখানি গান শোনাও তো দেখি। এখন? এইখানে? হ্যাঁ, এখন এখানে। তুমি গান ধরো। আমি একতারা বাজাচ্ছি। বলিয়া বৃদ্ধা একতারার তারে টোকা দিতে লাগিল। যন্ত্রটির একখানিমাত্র তার। তবে সেটির খোলের আবদ্ধ বায়ুর নিনাদে কী যে সূক্ষ্ম কৌশলেই না অপূর্ব শব্দ তরঙ্গ উত্থিত হয়। রবির সর্বাঙ্গে শিহরণ বহিয়া যায়। রবি আপনাআপনি গাহিতে লাগিল। আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তায় সকল খানে। বাহ্! বৃদ্ধা উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিলেন। আছে সে নয়নতারায় আছে সে নয়নতারায় আলোক-ধারায়, তাই না হারায়- ওগো তাই দেখি তায় ... ওগো তাই দেখি তায় ... ওগো তাই দেখি তায় তাহার পর রবি আর গাইতে পারিল না। কেমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া চুপ করিয়া থাকিল সে। একতারাখানি বাজানো বন্ধ করিয়া বৃদ্ধা হাসিয়া কহিল, কী হইল ঠাকুর? থামলে কেন? গাও। আর জানিনে যে। বৃদ্ধা তখন হাসিয়া বলিলেন, জানবে। আজই। মানে! মানে পরে বুঝোক্ষণ। এখন, ধর, এই নাও । কী নেব। বৃদ্ধা বলিলেন, আমার এই একতারা। তোমায় দিলাম। পঞ্চাশ বছর এই একতারাটি আমার সঙ্গে ছিল। আজ তোমায় উপহারস্বরূপ দিলাম ঠাকুর। চিরদিন যত্ন করে আগলে রেখো। কেমন? আর, বিশ্বসভায় বলো, বাংলার তালতমাল বনের ধারের সাধকেরা তাদের মনের ভাবনা কী ভাবে গানে গানে প্রকাশ করে । বৃদ্ধার কথা শুনিয়া রবি হতভম্ভ হইয়া যায়। আমি আবার বিশ্বসভায় কি বলিতে যাইব? সে বৃদ্ধার হাত হইতে একতারাটি লইয়া ঘুরাইয়া ফিরাইয়া দেখিতে লাগিল। বৃদ্ধা বলিলেন, দেখ ঠাকুর, এটির খোলের সঙ্গে নারীর মধ্যাঙ্গের বিচিত্র সাদৃশ্য। নারীর বিশেষ অঙ্গ হতেই তারটি উঠে গেছে উর্ধ্বাকাশের সৃষ্টিলোকে। একদিন তুমি এসব নারীতন্ত্রতত্ত্ব সবই জানবে ঠাকুর। নারীই জগতের মূল। জগৎ নারীরূপ। পুরুষ অপ্রধান, প্রকৃতি ত্রিগুণাত্বক চঞ্চলা। নাও, অনেক হয়েছে। এখন আমার পা ছুঁয়ে মাতৃজ্ঞানে একটা প্রণাম করো দিকি সোনা। তা হলেই দীক্ষা পূর্ণ হয়। রবি ভাবিল: বৃদ্ধা আমাকে একতারা উপহার দিলেন। এঁকে মাতৃজ্ঞানে প্রণাম করাই যায়। রবি উপুড় হইয়া বৃদ্ধার পা ছুঁইয়া প্রণাম করিল। তাহার পর উঠিয়া দাঁড়াইল। ততক্ষণে বৃদ্ধা অদৃশ্য হইয়াছেন। ৩ আখড়াবাড়ির ভিতরের একটি ঘরে অর্ধ-শয়ানে ছিলেন লালন সাঁই। সাঁইজী অতিশয় বৃদ্ধ হইয়াছেন। তিন বৎসর হইল তিনি শতবর্ষীয় হইয়াছেন। মাথার চুলে পাক ধরিয়াছে, তবে মাথার চুল এখনও চূড়া করিয়াই বাঁধেন। বাউলশ্রেষ্ঠর শরীরটিও বড় শীর্ণই দেখায়- তবে সৃষ্টিমূলের পরম হকিকত জীবদ্দশাতেই জানিয়াছেন বলিয়াই তাঁহার দিব্যদৃষ্টির নুরানি জ্যোতিটি আজও ম্লান হইয়া যায় নাই। সাধকের আয়না বসানো বুকে নিয়মিত শ্বাস ওঠে, শ্বাস নামে; আর সাধক নিয়ত তাহা লক্ষ করেন। সাধক ঠিকই জানেন আর ঠিক তেরো বৎসর পর মধ্য কার্তিকের এক ভোরে তিনি পাখির রুপ ধরিয়া অনন্তে ফিরিয়া যাইবেন। তাঁহার দীর্ঘশ্বাস পড়িল। এমন সময় প্রিয় শিষ্য দুদ্দু ঘরে আসিল। সে যাহা বলিবার ছিল- বলিল। জমিদার দেবেন বাবু আসিয়াছেন শুনিয়া কিঞ্চিত বিস্মিত হইলেন লালন। দুদ্দু সরিয়া যাইতেই জমিদারকে দরজার কাছে দেখিয়া উঠিতে উঠিতে বলিলেন, আপনি কষ্ট করে এয়েছেন। ডাকলে আমি নিজেই যেতাম। থাক। থাক। আপনি উঠবেন না সাঁই। আপনি আরাম করে থাকুন। এখানে আসতে আমারও যথেষ্ট আয়াস হয়েছে। বলিয়া ঘরের ভিতরে ঢুকিলেন। দুদ্দু দ্রুত মেঝেতে একখানি পিঁড়ি পাতিয়া দিল। পিঁড়ির উপরেই বসিলেন দেবেন্দ্রনাথ। আসলে তিনি জমিদার হইলেও প্রাণগত দিক হইতে গঙ্গাপারের জোড়াসাঁকোর রাখাল বৈ তো নয়। পিঁড়িতে বসিয়া দেবেন্দ্রনাথ চারিদিকে তাকাইলেন। ঘরটির চাল ছন দিয়া ছাওয়া। মেঝে ও দেওয়াল মাটির। পালঙ্ক তো দূরের কথা একটি তক্তপোষও নাই। মেঝেতে চাটাইয়ের ওপর ছেঁড়া মলিন কাঁথা বিছাইয়া বাউলশ্রেষ্ঠর শয্যা। শয্যার কাছে কলসী, পানপাত্র রাখা। ঘরের বাতাসে শুকনো নিমপাতার গাঢ় গন্ধ ভাসিতেছিল। সাঁইজীর মাথার কাছে একখানি একতারা। ঘরের একটি জানালা। ছোট। জানালা দিয়া উঠানের কলাগাছ দেখা যায়। কলাপাতায় ঝলমলে রোদ পড়িয়াছে। দরজার দিকে তাকাইলেন দেবেন্দ্রনাথ। শিলাইদহের পাইকটি চৌকাঠের নিকটে দাঁড়াইয়া ছিল। দেবেন্দ্রনাথ পাইককে ইঙ্গিত করিলেন। পাইকটি ঘরে ঢুকিয়া বড় এক খানি ঝুড়ি মেঝের উপর রাখিল। এসব আবার কি! লালনের কন্ঠস্বর সামান্য তীক্ষ্ম হইয়া উঠিল। গুরুর প্রনামী বৈ তো নয়। জমিদার হাসিয়া কহিলেন। তা কি প্রণামী শুনি? লালনকে কেমন শিশুর ন্যায় কৌতূহলী দেখাইল। জমিদার রঙ্গ করিয়া বলিলেন, প্রণামীর কথা তার গৃহিনী জানে। তবে অনুমান করা যায়-চারটে পাকা বেল ফল, পোয়াটাক তিল, গুড়ের একখানি পেটি, এক কাঁদি কলা, মর্তমানই বোধ হয়, দুটো কুমড়ো, এক মুষ্টি ডালের বড়ি। ইত্যাদি। দক্ষিণার নমুনা শুনিয়া লালন ঈষৎ হাস্য করিলেন। বলিলেন, গুরুর যে একটিও দাঁত নাই-জমিদার গিন্নী কি সে কথা জানে? দেবেন্দ্রনাথ হাসিলেন। তিনি জানেন-রসিকতা সঙ্গীতজ্ঞের মজ্জাগত। যে রসিক নয়-সে কদাপি সঙ্গীতজ্ঞ হইতে পারে না। লালনের ইঙ্গিতে দুদ্দু ঝুড়িটি ভিতরে লইয়া গেল। দেবেন্দ্রনাথ এইবারে আলোচনায় প্রবৃত্ত হইলেন। আপনার শরীরের গতিক কেমন সাঁই? আর শরীর? সাঁইয়ের খেয়ালের খেসারত দিতেছে। ঘুন ধরিছে শরীরে। নিত্য ঘুনপোকোর ঘস ঘস ঘস ঘস শব্দো শুনতে পাই। অলখে দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া দেবেন্দ্রনাথ বলিলেন, আখড়া বাড়িটি নিষ্কর করে দেব ভেবেই এলাম। তাতে কী লাভ? কেন? দেবেন্দ্রনাথ ইষৎ বিস্মিত। লালন গেয়ে উঠলেন- বিধাতা সংসারের রাজা আমায় করে রাখলেন প্রজা। কর না দিলে দেয় গো সাজা কারও দোহাই মানে না। গান শেষ করিয়া লালন বলিলেন, মর্ত্তের জমিনদার কর মাফ কইরলে কী হবে-বিধাতার কর বিধাতা আদায় করে নেবেন ঠিকই। এই কথার পর ঘরে খানিক নিরবতা জমিবার কথা। জমিল। দেবেন্দ্রনাথ নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, নতুন কি গান বেঁধেছেন সাঁই? আর গান? গান কি আমি বাধি গো কর্তা? তাই তো। দেবেন্দ্রনাথ মাথা নাড়লেন। এ সমস্ত অপৌরুষেয় তত্ত্বাদি তিনি খানিক বোঝেন বই কী। লালন: (উদাস কন্ঠে) কে যে গায়। আর কে যে শোনে? বলিয়া লালন গাহিয়া উঠিলেন- ভেবে অন্ত নাহি দেখি কার বা খাঁচায় কে বা পাখি। দেবেন্দ্রনাথ: তাই তো। (মাথা নাড়িয়া) আপনার সেই গানটি একবার শুনতে ইচ্ছে করছে বড়। লালন: কোণ্টি গো? দেবেন্দ্রনাথ: যেটি আপনার শিষ্যরা গায়। সেদিন কাঙাল হরিনাথের মুখেও শুনলাম। লালন: (গম্ভীর হইয়া) তা কেমন আছে সে? দেবেন্দ্রনাথ: কে? আপনি কার কথা বলছেন? (খানিক বিস্মিত হইয়া) লালন: হরি। হরিনাথ? দেবেন্দ্রনাথ: ওঃ। ভালোই তো মনে হল। পত্রিকা নিয়ে ব্যস্ত। লালন: ভালো থাকলে ভালো। এদিকে অনেক দিন আসে না। ওরে দুদ্দু, একতারাটি ধর তো বাপ। দুদ্দু চৌকাঠের নিকট দাঁড়াইয়া ছিল। এবারে ঘরে ঢুকিয়া দেবেন্দ্রনাথের অদূরে পিঁড়ির উপর বসিল। তাহার পর একতারাখানি তুলিয়া লইল। লালন: তখন কোন্ গানের কথা কলেন কর্তা? দেবেন্দ্রনাথ: (ঈষৎ আবেগরুদ্ধ হইয়া) ঐ যে-ভজন সাধন আমাতে নাই/কেবল মহৎ নামের দেই গো দোহাই। লালন: ও বুয়েছি। ধইরছি তা’লে। বলিয়া লালন গাইতে লাগিলেন- কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়; আমি বসে আছি আশাসিন্ধুর কূলে সদাই। এই অবধি গাহিয়া সাঁইজী কাশিতে শুরু করিলেন । এই বয়েসে দম পান না। ওরে দুদ্দু তুই ধর। শ্লেষ্মাজড়িত কন্ঠে বলিলেন। গানে বাধা পড়িলেও দুদ্দু একতারা বাজানো থামায়নি। সে ধরিল- চাতক যেমন মেঘের জল বিনে অহর্নিশি চেয়ে থাকে মেঘের পানে। ও সে তৃষ্ণায় মৃত্যুগতি জীবন হল ঐ দশাই আমার। লালন এইবার দুদ্দুর সঙ্গে গলা মিলাইলেন। ভজন সাধন আমাতে নাই কেবল মহৎ নামের দেই গো দোহাই তোর নামের মহিমা জানাও গোসাঁই পাপীর হোন সদয়। দেবেন্দ্রনাথ প্রগাঢ় ব্রহ্মবাদী। একমেবাদ্বিতীয়াম তত্ত্বে বিশ্বাসী; যে তত্ত্বানুযায়ী গুরুশিষ্য একাকার। তাহার পরেও হয়তো কতকটা বৈষ্ণব মতের প্রাবল্যেই দেবেন্দ্রনাথ গুরুতত্ত্ব মানিতেন। উপরোন্ত, তাহার বয়েসও নিছক কম হয় নাই। সদ্যশ্রুত গানটির আবেগ ও করুণ রসের আঘাতে তাঁহার চোখ দুটি জলে ভরিয়া উঠিয়াছে। জমিদারীর লেবাস ছাড়িয়া ক্ষানিক কাঁদিবেন বলিয়াই তিনি ছেঁউরিয়ার আখড়াবাড়ি আসিয়াছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া জানালার বাইরে তাকাইলেন দেবেন্দ্রনাথ। শেষ শ্রাবণের মধ্যাহ্নে রৌদ্রমেঘের খেলা চলিতেছে। সহসা তিনি সচেতন হইয়া উঠিলেন। রবি? রবি গেল কোথায়! ৪ আখড়াবাড়ি সংলগ্ন মাঠটিতে রীতিমতো বিস্মিত হইয়া দাঁড়াইয়া ছিল রবি । সেই বাউল বৃদ্ধাটি কোন শূন্যে যে অদৃশ্য হইয়াছেন। সহসা মাঠময় হলদে রোদ ও হলদে প্রজাপতিগুলোনও যে সব মুছিয়া যাইতে লাগিল। কী এক যাদুবলে যেন রবির চারপাশের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হইয়া গেল। তাহার হাতে বৃদ্ধার দেওয়া সেই একতারাটি। বৃদ্ধা গেল কোথায়? আশ্চর্য! আকাশ মাটি জল-সব, সব যেন মিথ্যা হইয়া আছে। যেন একমাত্র এই একতারাটিই সত্য। সত্য আর কিছুই নহে। রবির ঘোর লাগিল। তবে তাহার সে ঘোর ভাঙ্গিতেও বিলম্ব হইল না। হঠাৎ তাহার বাবার কথা মনে পড়িয়া গেল। বাবা গেল কোথায়? রবি এদিক-ওদিক চায়। ছোট কর্তা। ও ছোট কর্তা। বাবু আপনেরে ডাকতেছেন। সে দেখিতে পাইল কাচারিবাড়ির পাইকটি হন্তদন্ত হইয়া এদিকেই আসিতেছে। রবি পায়ে পায়ে আখড়াবাড়ির দিকে যায়। উঠানে নারীপুরুষের ভিড়। এরা কি প্রত্যেকেই বাউল? রবি যাইতেই ফিসফিস ধ্বনি উঠিল। যেন সবাই রবির অপেক্ষাতেই ছিল। যেন সেই প্রকৃত জমিদার-তাহার পিতা নয়। সবাই রবির হাতের একতারাটি দিকে চাহিয়া আছে। গুঞ্জন কী কারণে ভারী হইয়া উঠিল। একে অন্যের মুখের দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকাইল। রবি বিস্মিত। সে উঠানের বাতাসে তীব্র বেলী ফুলের গন্ধ পাইতেছিল। সহসা বৃদ্ধার একটি কথা মনে পড়িয়া গেল তার: ‘আর, বিশ্বসভায় বলো, বাংলার তালতমাল বনের ধারের সাধকেরা তাদের মনের ভাবনা কী ভাবে গানে প্রকাশ করে ।’ উঠান পাড় হইয়া দাওয়ায় উঠিয়া আসিল রবি। তাহার পর চৌকাঠের নিকটে দাঁড়াইল। নিমিষে স্থানটি যেন আলোকময় হইয়া উঠিল । দুদ্দু শাহ বিস্মিত না হইলেও দেবেন্দ্রনাথ ঠিকই বিস্মিত হইয়া গেলেন। ঘরের ভিতরে তাকাইয়া রবি এক অতি বৃদ্ধকে মেঝের উপর অর্ধ-শয়ানরত দেখিল। শীর্ণ শরীর। পলিত কেশ চূড়া করিয়া বাঁধা। অতি সাধারণ। আস। সাধক বলিলেন। রবি পা ঘরে রাখিল। মুহূর্তে তাহার শরীরে শিহরণ খেলিয়া গেল। সে বাবার পার্শ্বে পিঁড়িতে বসিল। ফিসফিস করিয়া বলিল, ইনিই কি সেই সাধক বাবা? যার কথা জ্যোতিদাদা আমায় বলেছিল? হ্যাঁ। বলিয়া দেবেন্দ্রনাথ লালনের দিকে তাকাইয়া বলিলেন, এ হচ্ছে রবি। আমার ছোট ছেলে। বড়টিকে তো দেখেছেন। তো, এই বয়েসেই গানে রবির ভারি সুনাম হয়েছে সাঁই। এ বয়েসেই কত যে গান বেধেছে রবি। বেশ। বেশ। সাধক মিটিমিটি হাসিলেন। যেন ভারি আমোদ পাইয়াছেন তিনি। দেবেন্দ্রনাথ কোমল স্বরে বলিলেন, ছেলেটিকে আপনার কাছে অর্পণ করতেই এসেছি। আপনি এটিকে দীক্ষা দিন। লালন বলিলেন, দীক্ষে আমি দেব কী। নারীর কাছ থিকিই দীক্ষে নিতে হয় গো কর্তা-পুরুষবেটারা দীক্ষের কি বোঝে । তো, সেই দীক্ষে আপনার ছেইলের হইয়ে গিয়েছে আশাসিন্ধুর পাড়ের তেপান্তরের মাঠটিতে। এই কথার মাথামুন্ডু দেবেন্দ্রনাথ বুঝিবেন কী। সাধকের কথাটি তিনি নিছকই বাউলের হেঁয়ালি ভাবিলেন। তবে বাউলবৃদ্ধের কথায় যে রবি প্রচন্ড বিস্মিত হইল সন্দেহ নাই। সে প্রগাঢ় সংশয়ী দৃষ্টিতে সাধকের জ্যোর্তিময় নূরানি মুখটির দিকে তাকাইল। সাধক মিটিমিটি করিয়া হাসিতে হাসিতে কহিলেন, বেশ বেশ। এইবার সেই গানখানি ধরো গো সোনা। দেখবে কেমনে তরতর কইরে বেড়িয়ে পড়ছে। বলিয়া অদূরে বসিয়া থাকা দুদ্দুর দিকে তাকাইয়া বলিলেন, একতারাখানি তুমিই বাজাও গো দুদ্দু । রবির বীর্য এখনও তেমন ঘন হয়ে ওঠেনি বলে ওর হাত গূঢ়যন্ত্রে এখনও পেইকে ওঠেনি কো। কাজেই, সেই অলীক মুহূর্তটিতে দুদ্দু শাহ একতারায় টোকা দিয়াছিল। তাহার পর বাউলশ্রেষ্ঠর ঘরটিতে অনন্তের পবিত্র ধ্বনি ছড়াইয়া পড়িয়াছিল নিশ্চয়ই। রবিও বিস্ময় সম্বরণ করিয়া গাহিতে আরম্ভ করিয়াছিল। আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তায় সকল খানে। আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তায় সকল খানে। আছে সে নয়নতারায় আছে সে নয়নতারায় আলোক-ধারায়, তাই না হারায়- ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায় তাকাই আমি যে দিক-পানে। আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তায় সকল খানে। আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তায় সকল খানে। রবির কন্ঠস্বর সামান্য নাকি শুনাইল।ও তাহার কন্ঠস্বর বালিকার কন্ঠস্বর বলিয়া বোধ হইল। রবি গাহিতে থাকে- আমি তার মুখের কথা শুনব ব'লে গেলাম কোথা, আমি তার মুখের কথা শুনব ব'লে গেলাম কোথা, শোনা হল না, হল না- আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি শুনি তাহার বাণী আপন গানে। পুত্রের গান শুনিতে শুনিতে দ্বিজেন্দ্রনাথ বিস্ময়ে স্তব্ধ হইয়া গেলেন। রবির মুখে তিনি এযাবৎ অনেক গান শুনিয়াছেন বটে- কিন্তু, এমনতরো গান পূর্বে কখনও শোনেন নাই। গানটি কেমন- বাউল অঙ্গের। আজ রবির কী হইল? কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল বেশে দ্বারে দ্বারে দেখা মেলে না, মেলে না- তোরা আয় রে ধেয়ে, দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে- ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে। রবির গাওয়া গানখানিও একসময় সমাপ্ত হইয়াছিল বুঝি। বাউলশ্রেষ্ঠর ঘরটিতে প্রগাঢ় নির্জনতা জমিয়া উঠিয়াছিল নিশ্চয়ই। রবির ধ্যানমগ্ন গায়কির স্বতঃস্ফূর্ততায় প্রত্যেকেই যেন খানিক বিস্মিতই হইয়া গিয়াছিল। এই বয়েসেই এত সাবলীল। স্বয়ং লালন খানিক বিস্মিত হইয়া বালকের সুন্দর মুখের দিকে তাকাইয়া ছিলেন। ‘আমার প্রাণের মানুষ।’ অলখে তাঁহার দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়িল। তিনি জানেন, তাঁহার বয়স হইয়াছে, চলিয়া যাওয়ার সময় হইয়াছে। কিন্তু, তাহাতে দুঃখ নাই। আজ তিনি তাঁহার শ্রেষ্ঠ শিষ্যটিরে কাছে পাইয়াছেন। এখন হইতে তিনিও রবি হইয়া রবির ভিতরে বাঁচিয়া থাকিবেন। চিরকাল। চিরকাল একত্রে দুইজনে কিরণ বিলাইবেন বঙ্গের প্রাণপ্রিয় মানুষসকলের উপর। তাহারা দীক্ষিত হইবে। সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩১
false
fe
আল জাজিরা’র ভিডিও ফুটেজ ও সাঁওতাল উচ্ছেদপর্ব আল জাজিরা’র ভিডিও ফুটেজ ও সাঁওতাল উচ্ছেদপর্বফকির ইলিয়াস----------------------------------------------------------------------------আল জাজিরা টিভির একটি ভিডিও ফুটেজ আবার বিশ্বব্যাপী আলোচনায়। দৃশ্যটি আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনের। তাতে দেখা যাচ্ছে- বাংলাদেশ পুলিশের কয়েকজন সদস্য সাঁওতাল বস্তিতে আগুন দিচ্ছেন। গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের খবরও প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এ ঘটনার জন্য সাঁওতালরা স্থানীয় গ্রামবাসীকে দায়ী করেছিলেন। কিন্তু এ ভিডিও পাল্টে দিয়েছে সকল ধারণা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা’য় প্রচারিত এক ফুটেজে দেখা যায়-পুলিশ সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে।আল জাজিরা দাবি করেছে, বারবার চেষ্টা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মন্তব্য তারা পায়নি। ইউটিউব চ্যানেলে ‘বাংলাদেশ সাঁওতাল ট্রাইব ফাইটিং অথরিটিজ ইন অ্যা ল্যান্ড ডিসপিউট’ শীর্ষক ভিডিও ক্লিপসটিতে জাতিগোষ্ঠীটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড ব্যাপ্তির ওই ভিডিওতে ৩৮ সেকেন্ডে একজন পুলিশ সদস্যকে একটি ঘরে আগুন জ্বালাতে দেখা গেছে। তিনি আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে সাদা পোশাকধারী দুই ব্যক্তি সহায়তা করছেন। এ ভিডিওটি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আসার পর, সেটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছে স্থানীয় পুলিশ। তবে একইসঙ্গে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলছে।চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জায়গা থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে আল-জাজিরা টেলিভিশনে যে প্রতিবেদন প্রচার হয়, সেখানে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাঁওতালদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছে। সাঁওতালদের বসতির পাশেই দাঁড়িয়ে অনেক পুলিশ গুলি করছে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে তাদেরই মধ্য থেকে মাথায় হেলমেট এবং বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা একজন পুলিশ সদস্য সাঁওতালদের বাঁশ এবং ছনের তৈরি ঘরের কাছে গিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় এবং পাশের ছনের ঘরগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সিভিল ড্রেসে কয়েকজনকে জনকে দেখা যাচ্ছে।গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, পুলিশ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়নি। এরপরও তারা ভিডিওটি খতিয়ে দেখবেন। তিনি বলেছেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছে। আগুনের পাশে হয়তো পুলিশকে দেখা যেতে পারে। কারণ পুলিশ আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। এবং পুলিশ দমকল বাহিনীকে ডেকেছিল।’তিনি আরো বলেন- ‘দমকল বাহিনীও সেখানে গিয়েছিল। ততক্ষণে হয়তো ছোট ছোট কিছু ঘর পুড়ে গেছে। ফলে পুলিশের আগুন লাগানোর বিষয় সঠিক নয়। এরপরও ভিডিওটি খতিয়ে দেখা হবে।’এদিকে সেখানকার সাঁওতালদের একজন নেতা সেলিমন বাস্কে বলেছেন, ‘পুলিশের সঙ্গে যখন সংঘর্ষ হচ্ছিল তখন, একপর্যায়ে আমাদের চোখের সামনেই প্রথমে পুলিশ আমাদের ঘরে আগুন দেয়। ভিডিওর ছবি সঠিক এবং আমরা মামলাতেও তাই বলেছি।’এখানে উল্লেখ করা দরকার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে গোবিন্দগঞ্জে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাঁওতালদের নিয়ে গণ-শুনানি করেছেন। সাঁওতালরা তীর ধনুক এবং লাঠি নিয়ে সেই শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, মামলা থাকায় ভয়ের কারণে তারা তীর ধনুক নিয়ে শুনানিতে আসার কথা তাদের জানায়। তিনি আরো বলেন, সাঁওতালদের উচ্ছেদের ঘটনা আইনগতভাবে হয়নি। কারণ যথাসময়ে নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। শুনানি থেকে তারা এ চিত্র পেয়েছেন।এদিকে, উচ্ছেদের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের আদেশে সাঁওতালদের ‘বাঙালি দুষ্কৃতকারী’ বলা হয়েছিল, এ নিয়ে এক রিট মামলায় হাইকোর্টের তলবে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।এখানে যে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার, তা হলো সাঁওতালরা বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের এভাবে উচ্ছেদ কিংবা নির্যাতন করা হবে কেন? পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল কর্তৃৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। সেই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা।যে প্রশ্নটি আসছে, কে চুক্তি ভঙ্গ করেছে ? সরকার, না জনগণ? যদি সরকার করে থাকে তাহলে মানুষের উপর এমনভাবে হামলা হলো কেন?চুক্তি ভঙ্গ করার কারণেই সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বিরোধপূর্ণ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে।অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ জমি উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে সাঁওতালদের সংগঠিত করে চিনিকলের জমিতে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করিয়েছিল। ওই জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতেই উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হয়েছে। উচ্ছেদের পর মাদারপুর গ্রামের গির্জার সামনে যে মাঠে অনেক সাঁওতাল আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেছেন- সংবিধান অনুযায়ী এদেশে সাঁওতাল, গারো, চাকমা, হিন্দু, মুসলিম সকলের সমান অধিকার। কিন্তু সাঁওতাল পল্লিতে সরকারি উদ্যোগ ‘যথেষ্ট হয়নি’।‘চিনিকল বন্ধ কিংবা অন্য কোনো কারণে মিলের জমি যদি লিজ দিতে হয়, তবে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাঁওতালদের দিতে পারতো। কিন্তু কোনোভাবেই প্রভাবশালীদের দেওয়া ঠিক হয় নাই’ কথাগুলো যোগ করেছেন তিনি।বাংলাদেশে আদিবাসীদের বিভিন্নভাবে কারা নির্যাতন করছে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া দরকার। চিনিকলের জমি থেকে সাঁওতালদেরকে উচ্ছেদের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলার চেয়ারম্যান আবদুল লতিফের হাত আছে বলে অভিযোগ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তারা জানিয়েছেন, সাঁওতালদের উচ্ছেদ করা হলেও চিনিকলের ওই এলাকায় জায়গায় সংসদ সদস্যের ১৫টি পুকুর রয়েছে। রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করে নির্মূল কমিটি। ওই জমি থেকে সাঁওতালদের শতাধিক বাড়িঘর উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় তাদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনার তদন্তে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শামসুল হুদার নেতৃত্বে একটি দল পাঠায় নির্মূল কমিটি। কমিটির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে গণশুনানিও করে তারা। এ অভিজ্ঞতাই তারা সাংবাদিকদের জানাচ্ছেন।বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, ‘গোবিন্দগঞ্জের হামলায় এমপি ও চেয়ারম্যানের জড়িত থাকার বিষয়টি মদদ ছিল স্পষ্ট’। তিনি বলেন, ‘চুক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে আখ চাষ না হলে সে জমির মালিকদের ফেরত দিতে হবে। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না।’বিরোধপূর্ণ জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সমালোচনা করে শামসুল হুদা বলেন, ‘এটা কি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার বর্ডার যে তারকাটা দিয়ে বেড়া দিতে হবে। এটা মানবাধিকারের চরম লংঘন।’সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করা, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং আলাদা সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেই সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘২০১২ সালে রামুতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘হামলাকারী যে দলেরই হোক না কেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা দাবি করেছিলাম। দাবি করেছিলাম তাদের সম্পত্তি যেন বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্তু কোনোটাই তো হয়নি বরং তারা পুলিশের দুর্বল চার্জশিটের কারণে সবাই জামিনে বেরিয়ে গেছে। হামলার শিকাররা মামলা প্রত্যাহারও করে নেয়। আমরা একই দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে।’শাহরিয়ার কবির বলেন, নাসিরনগরে মাদ্রাসা থেকে মৌলবাদীরা ও হেফাজতিরা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। ব্যবহার করেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে।’মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, জামায়াত ও পাকিস্তান মিলে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের চেষ্টা করছে। জামায়াত রোহিঙ্গাদের তালিকা করে জিহাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে। ২০০৬ সালে এরকম ১৭টি জিহাদি সংগঠনের কথা প্রকাশ করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন শাহরিয়ার।ইসলামী ব্যাংক জঙ্গিদের জিহাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে অভিযোগ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে ও পাকিস্তানে বসে থাকা কুদ্দুসের নেতৃত্বে হরকাতুল জিহাদ আরাকান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’বাংলাদেশের জন্য এগুলো খুবই ভয়াবহ সংবাদ। এমনভাবে নিগৃহীত হওয়ার জন্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। সকল জাতি-ধর্মের মানুষের রক্ত সেদিন একাকার হয়ে গিয়েছিল। তাহলে আজ আদিবাসীরা এমনভাবে রক্তাক্ত হবে কেন?আল জাজিরার এ ফুটেজের সত্যতা খতিয়ে দেখা দরকার। কারা এর নেপথ্যে ছিল তা শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করা দরকার। বাংলাদেশে এখন চলছে ভোগ-বিলাস-দখলের খেলা। সরকারি উষ্ণতা গায়ে নিয়ে যারা দখলদারি করছে- তাদের ব্যাপারে সরকারকে কঠোর হতে হতে হবে। এদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তা না করতে পারলে আমাদের বিজয়ের চেতনা বারবারই মুখ থুবড়ে পড়বে। আর শক্তিশালী হবে এর প্রতিপক্ষ। ------------------------------------------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ সোমবার সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
false
hm
ইসলামাবাদে বোমা হামলা জেনারেল পারভেজ মুশাররফ গদি ছাড়তে না ছাড়তেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন গণতন্ত্রোদ্ধারী বাহিনী পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়েছে পাকিস্তানে। দু'দলে গোলাগুলিও বিনিময় হয়েছে কিছু, যদিও তা নিয়ে দু'পক্ষই পড়ে কিল চুরি করছে। রাজধানী ইসলামাবাদে বোমাবাহী ট্রাক পার্লামেন্টভবনে হামলা করতে না পেরে উড়িয়ে দিয়েছে পাশের হোটেল ম্যারিয়ট। এবিসি নিউজের মার্ক করকোরানের স্মৃতিচারণ অনুযায়ী, হোটেল ম্যারিয়ট হচ্ছে পাকিস্তানে তথ্য কেনাকাটার অন্যতম স্থান, যে তথ্য সেখানে ক্ষমতার খেলাকে প্রতিমূহুর্তে প্রভাবিত করছে। ৯/১১ এর পর ম্যারিয়ট হয়ে পড়েছিলো মিডিয়ার আস্তানা, তার প্রতিটি রুম নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার মধ্যে একটা কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিলো, আর ২০০৪ থেকেই ম্যারিয়টের ওপর শুরু হয়েছে বোমা হামলা। ম্যারিয়ট ছিলো রাজনীতিক, কূটনীতিক, ওয়ারলর্ড, মাদকমোগল আর আইএসআইয়ের এজেন্টদের সম্মিলনস্থল। শনিবারে এক ট্রাক এসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ম্যারিয়টকে প্রায় ধ্বসিয়ে ছেড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রধান রেহমান মালিক জানিয়েছে, আজ সকাল সাড়ে নয়টা অব্দি ৫৩ জন নিহত এবং ২৬৬ জন আহত হয়েছে। আহত ও নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত ইভো জ্দারেকও রয়েছেন, ডেনমার্কের একজন কূটনীতিক হামলার পর নিখোঁজ হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই নিরাপত্তারক্ষী ও স্থানীয় মানুষ। মালিক আরো দাবি করেছে, হামলাকারী আত্মঘাতী আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলের লোক এবং সেই ট্রাকে ৬০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ছিলো। এক কৌতূহলোদ্দীপক ফুটেজও দেখিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, হোটেলের সিসিটিভি থেকে পাওয়া। সেখানে দেখলাম, একটা ট্রাক এসে হোটেলের ব্যারিয়ার ভেঙে ঢুকে থেমে গেলো, তার কিছুক্ষণ পর তাতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। নিরাপত্তাকর্মীরা ইতস্তত ছোটাছুটি করছে, একজন অগ্নিনির্বাপক এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বিস্ফোরণের দৃশ্য এই মিনিটখানেকের ফুটেজে নেই। বিবিসির পক্ষ থেকে আত্মঘাতী প্রাথমিক বিস্ফোরণ এবং পরবর্তী ধ্বংসস্তুপের ফুটেজ পাবেন এখানে। আকাশ থেকে নেয়া ধ্বংসযজ্ঞের ফুটেজ পাবেন এখানে। পাকিস্তানের বড় বড় নেতাদের নাকি ম্যারিয়টে সেদিন নৈশ আহারের পরিকল্পনা ছিলো। তারা বহাল তবিয়তেই আছে, মারা গেছেন নিরীহ মানুষ। পাকিস্তানীরা যে বিষবৃক্ষের বীজ নিজেরা বপন করেছে, লালন করেছে, রক্ষা করেছে এতদিন, সেই বিষবৃক্ষের ফল তাদের এখন ভোগ করতে হচ্ছে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাবেন কি না জানি না, তাঁদের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা। আজ আপনারা যে কয়েকটি লাশ চোখের সামনে রেখে কাঁদছেন, তেমনি লক্ষ লক্ষ লাশ চোখের সামনে রেখে আমরা কেঁদেছি। আপনারা তখন হন্তারক ছিলেন, এখনও সে ইতিহাসকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। দুনিয়া গোল। যে মৃতদেহ আমাদের মাটিতে পঁচে গলে মিশে গেছে, তা আপনাদের মাটিতে আবার ভেসে উঠছে।
false
fe
মহান মুক্তিযুদ্ধই আমাদের ঐক্য ও শক্তির উৎস মহান মুক্তিযুদ্ধই আমাদের ঐক্য ও শক্তির উৎস ফকির ইলিয়াস -------------------------------- বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে এখন অনেক পক্ষ। কেউ কাউকে রক্ষা করতে ব্যস্ত । কেউ কাউকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত। একটি রাষ্ট্রে কাঠামোগত পটপরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিলে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ নেপথ্যে কার কী চেহারা ছিল, তা বেরিয়ে আসে খুব সহজে। বর্তমান সরকারে যারা আছেন, যারা পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ, তাদের ভেতরেও আমরা কিছু আত্মঘাতী বক্তব্য লক্ষ্য করছি। কারণ তারা যেসব বক্তব্য এড়িয়ে গিয়ে ঐক্যের প্রতীক স্খাপন করতে পারতেন, এমনটি আমরা লক্ষ্য করিনি ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর মাঝে। তারা এমন বক্তব্য মাঝে মধ্যে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন যা পরস্পরবিরোধী বলেই বিবেচিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের একটি বক্তব্যও তেমনি আলোচনার ঝড় তুলেছে। মাননীয় উপদেষ্টা বলেছেন, বর্তমান সরকার ঘাতক-দালাল-রাজাকারদের বিচার করবে না। তিনি বলেছেন, একটি মহল এই দাবি তুলে সরকারকে বিব্রতবোধ করতে চাইছে। উপদেষ্টা বলেছেন, যে বিচার গেল ৩৬ বছরে করা হয়নি তা এখন করার জন্য দাবি তোলা হচ্ছে কেন? আমরা লক্ষ্য করেছি, মাত্র ক’দিন আগে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। এদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করলে তাও গ্রহণ করবে বর্তমান সরকার, এই প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাত্তরের কুখ্যাত দালাল-রাজাকার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেশের একাধিক স্খানে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরও করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মানিত সেক্টর কমান্ডারবৃন্দের নেতৃত্বে দেশব্যাপী এসব মামলা প্রক্রিয়া মনিটর করা শুরু হয়েছে। ‘সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম’ পুরো দেশবাসীকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। একাত্তরের রাজাকার আলবদর-আলশামসদের বিচারের দাবিতে জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ, তখনই আইন উপদেষ্টা এমন বক্তব্য গোটা দেশবাসীকে একটি দু:খজনক শঙ্কা ও সংশয়ে নিপতিত করেছে। আইন উপদেষ্টা বলেছেন, তারা নির্বাচন করে বিদায় নিতে চান। রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে আগামী নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। কোন যুক্তিতে মাননীয় উপদেষ্টা এই বক্তব্যটি দিয়েছেন তা মোটেই আমার বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ আমরা দেখছি অনেক ভিআইপি দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আদালতে বিচার সম্পন্ন করা হচ্ছে। শাস্তি প্রদান করে মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে একের পর এক। তাই যদি সম্ভব হয়, তবে রাজাকার ঘাতকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার দ্রুতবিচার করা যাবে না কেন? দেশে-বিদেশে ইতোমধ্যেই দাবি উঠেছে, দুর্নীতিবাজদের যেমন তালিকা প্রণয়ন করে গ্রেফতার, বিচার করা হচ্ছে; ঠিক সেভাবে রাজাকারদের তালিকা ও বিচার করা হোক। দুই. আমরা লক্ষ্য করেছি মাননীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ তার বিভিন্ন বক্তব্যে বার বার বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত। তিনি সদ্য যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বলেছেন, আগামী নির্বাচনের পর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে সৃজনশীল অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তিনি বলেছেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এর আগে তো প্রায় ১৪/১৫ মাস সময় আমাদের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তিনি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারেও বলেছেন, তিনি যে কোন মূল্যে জাতির পক্ষে দাঁড়াবেন এবং কাজ করে যাবেন। তার এসব আশার বাণী থেকে আমরা ধরে নিতে পারি একজন অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে তিনি জাতির পাশে আছেন এবং থাকবেন। তা হলে প্রশ্ন হচ্ছে, আইন উপদেষ্টা হঠাৎ করে এমন বক্তব্য দিয়ে প্রকারান্তরে রাজাকারদের আরও অভয়বাণী শোনানোর হেতু কি? ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে প্রায় একমত পোষণ করেছে। ঠিক এমনি সময়েই ৩৬ বছরের দোহাই দিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘসূত্রিতায় ঠেলে দেয়ার কথাগুলো রাষ্ট্রের মানুষকে চরমভাবে হতাশ করেছে। ৩৬ বছর বিচার হয়নি বলে এখন হবে না এমন কোন বিধিনিষেধ নেই বিশ্বের কোথাও। চল্লিশ বছর আগে খুন করার অপরাধে একজন মার্কিন নাগরিককে শাস্তি দেয়ার ঘটনা আমরা দেখেছি। বিশ্বে এমন উদাহরণ অহরহ ঘটছে। সবচেয়ে দু:খজনক হচ্ছে, কোন ঘটনা চেপে যাওয়ার প্রচেষ্টা। আর তা যদি হয় ক্ষমতাসীনদের কারও কারও, তবে তো জনগণ দাঁড়ানোর জায়গা খুঁজে পাবে না। বর্তমান সিইসির একটি ঘোষণা, সমগ্র বাঙালি জাতিকে বেশ আঁধারে ঠেলে দিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা বলেছেন, ডকট্রিন অফ নেসেসিটির কারণেই সাইফুর-হাফিজ গ্রুপের বিএনপি নেতৃত্বকে ইসি চিঠি দিয়েছে। এই যে নেসেসিটির সংজ্ঞা সিইসি দিয়েছেন, তা কি আদৌ কোন জাতীয় সঙ্কট? না, তা বোধ হয় বলা যাবে না। বলার কোন যৌক্তিকতাও নেই। মনে পড়ছে, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ যখন প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন, তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেট নেতা আল গোর। বিভিন্ন সত্র এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী আল গোর গণভোটে সে নির্বাচনে জিতেছিলেন। ইলেকটোরাল ভোটের তেলেসমাতি, বাইরে অবস্খানরত মার্কিনিদের ভোট, সব মিলিয়ে বেশ টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছিল সে সময় মার্কিনি রাজনীতিতে। সে সময় মার্কিন প্রধান বিচারপতি ‘ডকট্রিন অফ নেসেসিটি’র কথা বলে বুশকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। আল গোরসহ ডেমোক্রেটিক পার্টির সবাইও তা মেনে নেন। একটি রাষ্ট্রে জাতীয় সঙ্কটময় মুহর্তে শুধু প্রধান বিচারপতিই ডকট্রিন অফ নেসেসিটির সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘোষণা দিতে পারেন। অìত সভ্য গণতানত্রিক বিশ্বের রাষ্ট্রীয় সংবিধানগুলো সে বিধানই এ পর্যন্ত সমুন্নত রেখেছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা কোন্দল এমন কি জাতীয় সঙ্কট সৃষ্টি করল যে, সিইসিকে এমন কথা বলতে হবে? ভেবে অবাক হই, একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ একপক্ষ কিংবা গ্রুপিংকে প্রশ্রয় দেয়ার মানসে আজ ডকট্রিন অফ নেসেসিটির ধুয়া তোলা হচ্ছে। অথচ রাজাকার-আলবদরদের মতো ভয়াবহ রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিষয়টিকে বেমালুম চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয় সঙ্কট কী, জাতীয় শক্র কারা, কাদের নেপথ্য ইঙ্গিতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তা নিশ্চয়ই চোখে আঙুল দিয়ে মাননীয় উপদেষ্টামণ্ডলীকে দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। এর প্রমাণাদি দেশব্যাপী রয়েছে। পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান সংস্কারে সরকার খুশি নয়। আমার কথা হচ্ছে, একটি দল যদি এখন তাদের নেতৃত্ব বদলিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে আবার পুরনো নেতৃত্ব ফেরত নিয়ে আসে, তবে তাদের আটকাবে কে? যদি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করানো হয়, কিংবা রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় তাদের নিবন করা না যায় তাহলে তো সুবিধাবাদী রাজনীতি এদেশে চলতেই থাকবে। তা কে আটকাবে? কীভাবে আটকানো যাবে? প্রায় একইভাবেই রাজাকার আল-বদররা তাদের পুনর্বাসন ঘটিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের তাত্ত্বিক নেতা গোলাম আযমকে নেপথ্য আমির রেখে জামায়াত ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে আব্বাস আলী খানকে দিয়ে দায়িত্ব চালিয়েছে। পরে সময় মতো গোলাম আযম দলের নেতৃত্বে এসেছেন। তাই বর্তমান সরকারের উচিত দলের সংস্কার বিষয়ে বেশি সময় নষ্ট না করে, রাষ্ট্রের মৌলিক সমস্যা এবং কাঁটাগুলো সরিয়ে যাওয়া। বর্তমান সরকারের বেশ ক’জন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা রয়েছেন যারা অìত তাদের বিবেকের কাছে জাগ্রত। এই বিশ্বাস দেশবাসী করছেন এবং করবেন। আর মহান মুক্তিযুদ্ধই যে বাঙালি জাতির চির ঐক্যের প্রতীক তা যুগে যুগেই প্রজন্মের কাছে জানান দিয়ে যাবে আমাদের ইতিহাস। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে, সিভিলওয়ার বলতে চায় তাদের এ ভূমি ত্যাগ করে যাওয়াই উচিত চিরতরে। কিন্তু আমরা দেখছি অতীতের সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ওই পরাজিত শক্তি আবারও বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ অবস্খা থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য মাননীয় উপদেষ্টা এবং সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। শহীদের রক্ত আর সম্ভ্রমহারা নারীর সম্মানেই আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ হই। ================================== ( দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৬ নভেম্বর ২০০৭ , শুক্রবার ) সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:০৭
false
rg
আজ আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো___আজ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ'র মৃত্যুবার্ষিকী।। রেজা ঘটক আজ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ'র ২১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯১ সালের ২১ জুন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৫৬সালের ১৬ই অক্টোবর জীবনানন্দের দেশে বরিশালে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। একজন প্রয়াত বাংলাদেশী কবি ও গীতিকার যিনি " প্রতিবাদী রোমান্টিক" হিসাবে খ্যাত। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কয়জন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন রুদ্র তাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম "যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক, সে মাঠে আজ বসে নেশার হাট", "বাতাসে লাশের গন্ধ"। এই কবি রুদ্র'র স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে "রুদ্র স্মৃতি সংসদ"। ১৯৮১ সালে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বিয়ে করেন বিতর্কিত বাংলাদেশী নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে। ১৯৮৬ সালে তাঁদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। কবি রুদ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। সক্রিয়ভাবে ছাত্র ইউনিয়ন সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ডাকসু'র ইলেকশান করে হেরে গিয়েছিলেন নিজেরই বন্ধুর কাছে। চূড়ান্ত বাউন্ডুলে এই কবির বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা তাঁর নিজেরও অজানা ছিল। তিনি ছিলেন এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। আর এই আন্দোলনের খাতিরেই তিনি গড়ে তোলেন 'সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট'। কবি এরশাদ ও তার ভাড়াটে কবিরা তাদের বাহাদুরি দেখাতে ঢাকায় যখন করেন 'এশীয় কবিতা উত্সব' তখন তার বিপরীতে রুদ্র দাঁড়িয়ে যান 'জাতীয় কবিতা উত্সব' নিয়ে। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ'র জন্ম তাঁর পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৫ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং 'ভালো আছি ভালো থেকো' সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন এবং ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাশ করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত দেশে যতোগুলো আন্দোলন হয়েছে তার সবগুলোতে কবি রুদ্র'র সশরীর অংশগ্রহণ ছিল। কবিতা, গল্প, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধ, গান যেখানেই শিল্প সাহিত্য সেখানেই ছিলেন কবি রুদ্র। কণ্ঠে কবিতা আর রক্তে ছিল বিদ্রোহ। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতার বই 'উপদ্রুত উপকূলে'। প্রথম বইয়ের 'বাতাসে লাশের গন্ধ' কবিতা সকলের মনোযোগ কেড়ে নেয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় কবিশত্রু। রুদ্র'র দ্বিতীয় বই 'ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম' প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। তারপর একে একে প্রকাশিত হয় 'মানুষের মানচিত্র' (১৯৮৪), 'ছোবল' (১৯৮৬), 'গল্প' (১৯৮৭), 'দিয়েছিলে সকল আকাশ' (১৯৮৮), 'মৌলিক মুখোশ' (১৯৯০)। মোট ৭টি কবিতার বই। এছাড়া প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ 'সোনালি শিশির'। আর আর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় নাট্যকাব্য 'বিষ বিরিক্ষের বীজ'। 'ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো'র মতো অসম্ভব সুন্দর আর জনপ্রিয় গান লিখেছেন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। 'অন্তর বাজাও' নামে একটি গানের দল গড়েছিলেন। এছাড়া শেষ জীবনে ফিল্ম বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যু তাঁর সবকিছু ঠেকিয়ে দিল। বড় ভীষণ এক খামখেয়ালীর জীবন ছিল তাঁর। পারিবারিক স্বচ্ছলতা থাকা স্বত্বেও সেপথে যাননি কবি। চাকরির প্রাতিষ্ঠানিকতায় নিজেকে বাঁধেননি কখনো। নিজের কয়েকটা রিক্সা ছিল, তা থেকে যা আয় হতো তাতেই বেশ চলতেন। এছাড়া ঠিকাদারী করেছেন। চিঙড়ির খামার করেছেন। আর দু'হাতে টাকা উড়িয়েছেন। পাঞ্জাবী আর জিন্সের যুগলবন্দী পোষাকে তখন বোধহয় তিনি একাই ছিলেন। পরে জেমস এটা জনপ্রিয় করেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের মতোই রুদ্র'র ছিল ভারী মদ্যপ্রীতি। প্রতিসন্ধ্যায় হাটখোলার নন্দের দোকানে হাজিরা দিতেই হতো তাঁকে। জল বিনা তাঁর যে চলে না দিন। হুইস্কির তিনি বাংলাকরণ করেছিলেন 'সোনালী শিশির'। এই নামে পরে একটা গল্পগ্রন্থও লিখেছিলেন। শেষদিকে কাগজে কলমে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মানবধর্ম গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। উকিলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু তার আগেই মৃত্যু তাঁকে ডেকে নিয়ে গেল গভীর এক ঘুমের দেশে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তসলিমা নাসরিনকে। তখনো তসলিমা নাসরিন নামে খ্যাতি পাননি। সে বিয়ে অবশ্য ৫ বছরের বেশি টেকেনি। অবশ্য ৯০’র শেষদিকে তসলিমার সঙ্গে আবারো প্রেম শুরু হয়েছিল রুদ্র'র। কিন্তু সেটা ছিলো তসলিমার দ্বিতীয় বিবাহ থেকে তৃতীয় বিবাহে উত্তরণের মধ্যবর্তী সময়ে। ফলে সে প্রেমও টিকলো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্যামা তরুণী শিমুলের সঙ্গে রুদ্র'র প্রেম হল। কিন্তু শিমুলের অভিভাবক রাজী হল না। সে সম্পর্কও চুকে বুকে গেল। সেই থেকে রুদ্র আরো বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে যেতে লাগলেন। ভেতরে ভেতরে একা হয়ে যেতে লাগলেন। ক্ষয়ে যেতে লাগলেন। শেষ হতে লাগলেন। অতিরিক্ত অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার ফলে আলসারে পেয়ে বসেছিল তাঁকে। পায়ের আঙ্গুলে রোগ বাসা বেধেছিল। ডাক্তার বলেছিলো পা বাঁচাতে হলে সিগারেট ছাড়তে হবে। তিনি পা ছেড়ে দিয়ে সিগারেট নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যার কারণে রুদ্র;র নতুন ঠিকানা হল হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ২৩১ নম্বর কেবিনে। ১৯৯১ সালের ২০ জুন ভালো হয়ে পশ্চিম রাজাবাজারের বাড়িতেও ফিরে গেলেন রুদ্র। কিন্তু ২১ জুন ভোরে দাঁত ব্রাশ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাংলা ভাষায় অসামান্য এই কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। মাত্র ৩৫ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। মাটি ও মানুষের প্রতি আমূল দায়বদ্ধ এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাঁকে দিয়েছে সত্তর দশকের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি। অকালপ্রয়াত এই কবি তাঁর কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’—এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন—‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাঁকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীকে'। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। অমর এই কবির কাব্য প্রতিভার কাছে আজ নতজানু হয়ে নতুন করে পড়া যেতে পারে চির সবুজের কবিতা – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ'র কবিতা। আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে। ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম তেমনি তোমার নিবিড় চলা মরমের মূল পথ ধরে। পুষে রাখে যেমন ঝিনুক, খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া ভিতরের নীল বন্দরে। ভালো আছি, ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো দিও তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটা রে। আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে। বাতাসে লাশের গন্ধ আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি, ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে… এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ? বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ। এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো। জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর, আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়। এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী, স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ? একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ? জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন। বাতাশে লাশের গন্ধ নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান। মাটিতে রক্তের দাগ- চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড় এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা- তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার, নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ মুণ্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি ঘুমুতে পারিনা… রক্তের কাফনে মোড়া– কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা। স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন- স্বাধীনতা– আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল। ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা। কথা ছিলো সুবিনয় কথা ছিলো রক্ত-প্লাবনের পর মুক্ত হবে শস্যক্ষেত, রাখালেরা পুনর্বার বাঁশিতে আঙুল রেখে রাখালিয়া বাজাবে বিশদ। কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বোসবে না, চিত্রার তরুণ হরিণেরা সহসাই হয়ে উঠবে না রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট। কথা ছিলো , শিশু হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদের নাম। নদীর চুলের রেখা ধরে হেঁটে হেঁটে যাবে এক মগ্ন ভগীরথ, কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো না কোনোদিন। অথচ দ্রাক্ষার রসে নিমজ্জিত আজ দেখি আরশিমহল, রাখালের হাত দুটি বড় বেশি শীর্ণ আর ক্ষীণ, বাঁশি কেনা জানি তার কখনোই হয়ে উঠে নাই কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো। একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে সহজিয়া বাউলেরা, তাদের মায়াবী আঙুরের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়- একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধরে বোলবে- উদ্ধার পেয়েছি। কথা ছিলো, ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াবো ঘিরে আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরণ্য, জমিন, আমাদের পাহাড় ও সমুদ্রের আদিগন্ত উপকূল- আজন্ম এ-জলাভূমি খুঁজে পাবে প্রকৃত সীমানা তার। কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ-জমিন অনার্যের হবে। অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের ধারাবাহিকতা কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ। মাতৃভূমি-খন্ডিত দেহের পরে তার থাবা বসিয়েছে আর্য বণিকের হাত। আর কী অবাক! ইতিহাসে দেখি সব লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা, প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়। কথা ছিলো ’আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন’, আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ। অথচ পাণ্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে। জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি, আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: কাব্যগ্রন্থ: 'উপদ্রুত উপকূল' (১৯৭৯) 'ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম' ১৯৮২ 'মানুষের মানচিত্র' (১৯৮৪) 'ছোবল' (১৯৮৬) 'গল্প' (১৯৮৭) 'দিয়েছিলে সকল আকাশ' (১৯৮৮) 'মৌলিক মুখোশ' (১৯৯০) ছোটগল্প: 'সোনালি শিশির' নাট্যকাব্য: 'বিষ বিরিক্ষের বীজ' পুরস্কার: 'মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার' (১৯৮০) সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮
false
mk
সাফল্য আছে তো, অস্বীকার করার কী আছে_ দেশের জনগণের কাছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার যে অঙ্গীকার বর্তমান সরকার করেছে তা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবার বিপুল চাহিদা পূরণ করতে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে বিটিআরসি। তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ সুবিধা সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে দেশের মানুষের জীবনধারা হয়ে উঠেছে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ব্যবসা খাত হয়ে উঠেছে খুবই সহজতর ও ফলপ্রসূ। নতুন নতুন টেলিযোগাযোগ সেবা ও ব্যবস্থাদি প্রবর্তন, প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ তার নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা এবং সহযোগিতার ফলেই বিটিআরসি’র পক্ষে ভয়েস কল, এসএমএস ট্যারিফ হ্রাস, আন্তর্জাতিক বহির্গামী কলের ট্যারিফ হ্রাস, আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের পরিমাণ বৃদ্ধি, টেলিফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাস সম্ভব হয়েছে। বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিটিআরসি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বিটিআরসি প্রদান করেছে আইপি টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্স, কল সেন্টার লাইসেন্স; চালু করেছে ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সার্ভিস, এডুকেশন লাইন, টেলিহেলথ, কৃষি জিজ্ঞাসা, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, মোবাইল রেমিট্যান্স সার্ভিস, মোবাইলে লটারি টিকিট বিক্রয়, রেলওয়ে টিকিট বিক্রয়, ব্যাংক ইনফরমেশন, ব্লাকবেরী সেবা, কলব্লক সার্ভিস, মোবাইল ব্যাকআপ সার্ভিস, লাইভ শেয়ারবাজার তথ্যাদি, বিবিসি জানালা এবং মোবাইলে বাংলা কী-প্যাড। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ‘বিডিমার্ট’ গঠন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ভিত্তিক অপরাধ দমনে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান বছরের মধ্যেই টেলিটকসহ অন্যান্য বেসরকারি অপারেটরদের থ্রিজি, ফোরজি ও এলটিই টেলিকম সেবার জন্য লাইসেন্স প্রদান করা সম্ভব হবে।বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিকম সুবিধায় আনার চলমান প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করাই বিটিআরসির অন্যতম লক্ষ্য বলে স্বদেশ খবর প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস। তিনি আরো জানান, বিটিআরসি তার এই অঙ্গীকার পূরণে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে সদা প্রস্তুত। দেশ তথা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বিটিআরসির এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বিটিআরসির বর্তমান চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস।বিটিআরসির সাধারণ উদ্দেশ্যাবলী২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কয়েকটি সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি। এগুলো হলোÑবাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং সুসংহত করতে পারে এমন একটি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল উন্নয়ন এবং তাতে উৎসাহ দান; দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য, যুক্তিসঙ্গত ব্যয় নির্ভর ও আধুনিক মানের টেলিযোগাযোগ সেবা ও ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করা; জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিযোগিতা করার মতো আধুনিক মানের টেলিযোগাযোগ সেবা ও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা; টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার অবসান ও নতুন নতুন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রবর্তন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।বিটিআরসি’র সাফল্য২০১১-১২ অর্থবছরে টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে টু-জি লাইসেন্স নবায়ন, নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কার্যক্রম গ্রহণ ও ব্যান্ডউইথের মূল্যহ্রাসের মাধ্যমে দেশের জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক তথা সার্বিক জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধিসহ মোবাইলে বাংলা কী প্যাড প্রবর্তন, মোবাইল ব্যাংকিং, কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য করা হয়েছে।বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আধুনিক টেলিযোগাযোগ সার্ভিস থ্রিজি’র লাইসেন্স প্রদানের লক্ষ্যে কমিশন হতে গাইড লাইন প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। থ্রিজি নিলাম ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন ব্যক্তিত্ব আবদুল্লা ফেরদৌসকে। বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেলিটকসহ মোট ৫টি অপারেটরকে থ্রিজি লাইসেন্স প্রদান করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, থ্রিজি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর; যার আবেদনের শেষ তারিখ এ মাসের ১২ আগস্ট। থ্রিজি’র জন্য প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ডলার। একটি অপারেটরকে ন্যূনতম ৫ স্পেকট্রাম ক্রয় করতে হবে। পরামর্শক নিয়োগ করায় আশা করা যায় শীঘ্রই থ্রিজি সার্ভিস জনগণের হাতের নাগালে চলে যাবে এবং গ্রামবাংলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় আনা এবং টেলিযোগাযোগের সকল ক্ষেত্রে উন্নত ও দ্রুততর সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিটিআরসি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকল্পে এ পর্যন্ত ১৪০টি প্রতিষ্ঠানকে সাইবার ক্যাফে (আইএসপি) লাইসেন্স প্রদান করেছে। স্বল্প সময়ে ও কম ব্যয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের বিকল্প হিসেবে টেরিষ্ট্রিয়াল ক্যাবল সংযোগ গ্রহণের জন্য বিটিআরসি থেকে ৬টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ৮৩টি গেটওয়ে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি আইপি বেইজড ভয়েজ কলকে আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ৩৭টি আইএসপি প্রতিষ্ঠানকে আইপি-টিএসপি লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। বিটিআরসি সারা দেশে একটি সাধারণ ও একক টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণ নেটওয়ার্ক তৈরি এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২টি প্রতিষ্ঠানকে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন (এনটিটিএন) নেটওয়ার্ক লাইসেন্স এবং পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অফ বাংলাদেশকে দেশব্যাপী অপটিক্যাল ফাইবার টেলিযোগাযোগ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক লাইসেন্স প্রদান করেছে। এসব সার্ভিস চালু হওয়ায় গ্রামবাংলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় আনাসহ জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বিটিআরসি।বিটিআরসির কার্যকরী ভূমিকার ফলে মোবাইল পেনিট্রেশন বিগত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ৩৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ব্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাসের কারণে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বিশেষত: মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ কোটি ৬৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিটিআরসির মতে, এভাবে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের টেলিডেনসিটি ৮৫ শতাংশ এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ৩০ শতাংশে উন্নীত হবে। বিটিআরসি মনে করে, সারাদেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নসহ জীবনযাত্রার মান বেড়েছে এবং মোবাইল মানি ট্রান্সফার, ই-ব্যাংকিংসহ কৃষি, শিল্প ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য হয়েছে।বিটিআরসি মনে করে, বাংলাদেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকরা বর্তমানে বিশ্বে অন্যতম কম কলরেটের সুবিধা ভোগ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের অনুমোদিত কলরেট প্রতি মিনিট সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ২ টাকা নির্ধারণ করা আছে। বাংলাদেশে ২০০১ সালে গড় কলরেট ছিল ৯ টাকা ৬০ পয়সা; যা গত ১০ বছরে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা কমেছে। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকাংশে কমানো হয়েছে, যা বর্তমানে মাত্র ১০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টুয়েন্টিওয়ান প্রকল্পের আওতায় বিএসটিআই কর্তৃক প্রদত্ত ‘মোবাইলফোন বাংলা কী-প্যাড স্পেসিফিকেশন’ এর ওপর ভিত্তি করে গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মোবাইল ফোনে বাংলায় এসএমএস আদান-প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।টেলিযোগাযোগ খাতের পাশাপাশি বিভিন্ন স্যাটেলাইট সার্ভিসসমূহ যাতে উন্নত ও সহজলভ্য সেবা পেতে পারে সে লক্ষ্যে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার কর্তৃক ‘প্রিপারেটরি ফাংশনস এন্ড সুপারভিশন ইন লঞ্চিং এ কমিউনিকেশন এন্ড ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট’ শীর্ষক প্রকল্প গৃহীত ও অনুমোদিত হয়েছে, যা বিটিআরসি কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিটিআরসির ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে একদিকে যেমন জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি করে যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে, তেমনি দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।জুন ২০১২ সালে মোট মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৬ এ উন্নীত হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ। এ সময়ে মাসিক গ্রাহকের ধারাবাহিক বৃদ্ধির হার প্রায় ২ শতাংশ ছিল। মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মার্কেটের সাম্যাবস্থা ইতিবাচক দিকে অগ্রসর হওয়ায় মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা শীঘ্রই ১২ কোটিতে উন্নীত হবে বলে বিটিআরসি আশা করছে।একই সময়ে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বিশেষত মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ বছর ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৪২ শতাংশেরও বেশি। এ সময়ে মাসিক বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। এছাড়া ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের নেটওয়ার্ক বিস্তার এবং আইএসপি অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের হার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ব্রডব্যান্ড গ্রাহক সংখ্যা ২ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যার ঘনত্ব ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। তারহীন ব্রডব্যান্ড সেবার জনপ্রিয়তা ব্রডব্যান্ড সেবার ভবিষ্যৎ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে বিটিআরসি আশা করছে।বিটিআরসি থেকে ইস্যু করা লাইসেন্সসমূহের কার্যক্রম:ক. ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিস (আইজিডব্লিউ)- আন্তর্জাতিক ইনকামিং ও আউটগোয়িং বৈধ পথে কল পরিচালনার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। সরকারের অনুমোদনক্রমে বিটিআরসি থেকে এ পর্যন্ত ২৪টি আইজিডব্লিউ লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।খ. ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ সার্ভিস (আইসিএক্স)- আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কল ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বিটিআরসি থেকে ২৩টি আইসিএক্স লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।গ. ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস (আইআইজি)- ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য এবং গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করার জন্য এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। বিটিআরসি থেকে আইআইজি লাইসেন্স ইস্যুর পরিমাণ ৩৪টি।ঘ. ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস এক্সেস সার্ভিস (বিডব্লিউএ)- সেলুলার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভয়েস সার্ভিস প্রদানের পাশাপাশি উচ্চতর গতিসম্পন্ন ডাটা সার্ভিস প্রদান এবং গ্রামবাংলাকে ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত করার জন্য এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।ঙ. ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল সার্ভিস (আইটিসি)- দেশের স্থলপথে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করে পাশের অন্যান্য দেশের সাথে এবং মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সুপার হাইওয়ে অর্থাৎ সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযোগ স্থাপন করে বিরতিহীনভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করা এই সার্ভিসের লক্ষ্য। বিটিআরসি থেকে আইটিসি লাইসেন্স ইস্যুর সংখ্যা ৬টি।এছাড়া বিটিআরসি থেকে আরো কয়েকটি সার্ভিসের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যেমন পিএসটিএন অপারেটর লাইসেন্স, এনটিটিএন লাইসেন্স, ভেহিকল ট্রেকিং লাইসেন্স, আইপিটিএসপি লাইসেন্স, আইএসপি লাইসেন্স, সাইবার ক্যাফে লাইসেন্স, কল সেন্টার লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (আইআইএক্স) লাইসেন্স ইত্যাদি।রাজস্ব আয়২০১১-১২ অর্থবছরে বিটিআরসির বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৩০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর রাজস্ব ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৯৫৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং রাজস্ব ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ৩ হাজার ৯১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মোবাইল ফোন অপারেটর, পিএসটিএন, আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, আইআইজি, আইএসপি ও ভি-স্যাটসহ বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি, লাইসেন্স নবায়ন ফি, রেভিনিউ শেয়ারিং ফি, এবং স্পেকটার্ম চার্জ ও সার্ভিস চার্জ আদায় বাবদ বিটিআরসি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়।সবশেষে বলা যায়, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের বর্তমান অবস্থার উন্নতি হবে। এভাবে সবার জন্য নব প্রযুক্তির সমন্বয়ে মানসম্মত ও সুলভ মূল্যে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিটিআরসি কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতেও বিটিআরসির এ সফল অগ্রযাত্রা দেশ ও জনকল্যাণে অব্যাহত থাকবে।
false
fe
এনআরবি সম্মেলন _ যে স্বচ্ছতা জরুরী ছিল এনআরবি সম্মেলন : যে স্বচ্ছতা জরুরী ছিল ফকির ইলিয়াস ============================================= নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী (এনআরবি) সম্মেলন নিয়ে দেশে-বিদেশে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী বলতে মূলত: অভিবাসী বাংলাদেশী সমাজকেই বুঝায়। অবশ্য এর বাইরেও কিছু বাঙালী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন পেশাগত প্রয়োজনে, ট্রেনিং-প্রশিক্ষনে কিংবা অস্খায়ী ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের বাইরে অবস্খান করছেন। তবে প্রধানত: যারা অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে, দেশের মৌলিক কাঠামোকে সাহার্য করছেন বিদেশে থেকে, তাদেরকেই এনআরবি অভিধায় অভিষিক্ত করা যায়। প্রথম এনআরবি সম্মেলনটি আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর ২০০৭, তিন দিন ঢাকা শেরাটনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর উদ্বোধনী সেশনে উপস্খিত থাকবেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ। সমাপনী সেশনে অতিথি হিসেবে উপস্খিত থাকবেন বর্তমান সেনাপ্রধান মি. মইন উ. আহমেদ। বলা যায় তিন মাসের কম সময়ের নোটিশে এই সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনটি আয়োজনের জন্য ‘স্কলারস বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, এর সম্পূর্ণ খরচ বাংলাদেশ সরকার পক্ষই বহন করছেন। পুরো আয়োজনের হাক-ডাক দেখে মনে হচ্ছে এটা একটি ব্যয় বহুল সম্মেলন। নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশীদের জন্য এমন একটি সম্মেলনের আয়োজনের জন্য বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ধন্যবাদের দাবীদার। দেশে প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয় থাকার পরও বিগত গণতান্ত্রিক সরকারগুলো যা করেনি, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা করতে এগিয়ে এসেছে। উদ্যোগটি নি:সন্দেহে অত্যন্ত মহৎ। কিন্তু কথা হচ্ছে ‘স্কলারস বাংলাদেশ’ নামক যে আন্তর্জাল (ইন্টারনেট) সর্বস্ব সংগঠনটিকে এর স্বাগতিক সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা কতোটা যুক্তিযুক্ত? এবং তারা কি তা সুচারুরূপে পালন করতে পেরেছে? বিদেশে নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশীদের সংখ্যা কত? এর একটি হিসেব নিশ্চয়ই সরকারের কাছে আছে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, কানাডা, জাপান, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। রয়েছে ইলেকট্রনিক মিডিয়াও। কিন্তু ‘স্কলারস বাংলাদেশ’ এই প্রথম এনআরবি সম্মেলন সম্পর্কে বিজ্ঞাপন দেয়াতো দূরের কথা, একটি পরিশুদ্ধ প্রেস রিলিজ পর্যন্ত দেয়নি। এর কারণ কি? সঙ্গত কারণে প্রশ্ন আসে তাহলে কি ‘স্কলারস বাংলাদেশ’ দেশ ও জনগণের টাকা খরচ করে তাদের ইচ্ছেমতো লোকজনকে নিয়ে সম্মেলন করতে চাইছে? যদি তাই হয়, তবে মাননীয় সরকার পক্ষ তাদেরকে এই সুযোগটি করে দিলেন কেন? প্রথম এনআরবি সম্মেলন উপলক্ষে ওয়াশিংটনস্খ বাংলাদেশ দুতাবাস একটি আমন্ত্রণ পত্র ইস্যু করেছে। তাতে ‘স্কলারস বাংলাদেশ’ কে সার্বজনীন স্কলারদের প্লাটফর্ম বলে দাবী করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তিন বছর বয়সী এই সংগঠনটি সম্পর্কে কতো জন নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী জানেন এ পর্যন্ত? তাদের ওয়েবসাইটে কতোজন স্কলারের ডাটাবেজ আছে? এই সংগঠন প্রবাসী বাঙালীল কল্যাণে এ পর্যন্ত কি করেছে? এর পূর্ব পর্যন্ত তাদের কি কি পরিকল্পনা ছিল? ‘স্কলার বাংলাদেশ’ যে একটি দম্পতির নিজস্ব উদ্যোগ তা এই ওয়েবে ঢু মারলেই বুঝা যায়। মাহবুব এলাহী চৌধুরী শামীম এবং তার সহধর্মিনী দিলরুবা রূপা নিউইয়র্কে ছিলেন। শামীম ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট’ এর যুক্তরাষ্ট্র শাখার একাংশের প্রতিনিধি ছিলেন। জোট শাখাটি দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যাবার পরে (অন্য অংশের প্রতিনিধি মিথুন আহমেদ)। শামীম-রূপা দম্পতি উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখা গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এরপর এক সময় উদীচীর পসরা চুকিয়ে তারা চলে যান বাংলাদেশে। দেশে যাবার পরই ওয়েবে ‘স্কলারস বাংলাদেশ’ নামক সাইটরি আত্মপ্রকাশ আমরা দেখি। ‘স্কলার বাংলাদেশ’ এরপর জয়েন্ট ভ্যাঞ্চারে একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে প্রবাসীদের জন্য একটি পাতা প্রকাশ শুরু করে। যা মাসে একবার প্রকাশিত হয়। কোন ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ওয়েব সাইট কিভাবে সর্বজনের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারে, এর উদাহরন বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাসির ওয়েব সাইটে আছে। ‘স্কলারস বাংলাদেশ’ সাইটটি তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। না পাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে উপাত্ত সংগ্রহের অভাব কিংবা অমনোযোগিতা। তারপরও তেমন একটি প্লাটফর্মকে কেন একটি রাষ্ট্রপক্ষ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে কিংবা করতে চাইছে- প্রশ্নটি উঠছে সেখানেই। দুই. এই প্রবাসেও আমরা প্রতিদিন নানা রকম প্যাড সর্বস্ব সংগঠন দেখি। প্রবাসীদের কাছে এদের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। তেমনি একটি ব্যানারকে এনআরবি সম্মেলনের দায়িত্ব দেয়ায় প্রবাসে, এর বিপক্ষে সমালোচনাটি তীব্রতর হয়েছে। স্বচ্ছতার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনুষ্ঠিতব্য প্রথম এই এনআরবি সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা অংশ নিতে যাচ্ছেন, তাঁদের অন্যতম একজন ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। শহীত ডা. শামসুদ্দিন আহমেদের সুযোগ্য সন্তান। ডা. জিয়া ফিলাডেলফিয়ার ড্রেক্সেল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষকতা করেন। আমি ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদকে এ বিষয়ে তাঁর মতামত জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি জানান, আমরা চাইছি এনআরবি সম্মেলনের মাধ্যমে কাজটির দ্বা উম্মোচন হোক। স্বাগতিক সংগঠনটির প্রচুর ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কাজটি আরো সুশৃংঙ্খলভাবে করা যেতো। কিন্তু উদ্যোক্তরা তা করেননি, কিংবা পারেননি। তারপরও কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হতো। ‘স্কলারস বাংলাদেশ’ সে দায়িত্বটি পালন করছে মাত্র। ডা. জিয়া উদ্দিন আরো বলেন, প্রবাসে যারা আছেন, তাদের সবার ইচ্ছা-দেশের জন্য কাজ করার। সরকার সে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে চাইছে। আমরা এর সমন্বয়টি সাধন করে এগিয়ে যেতে চাই। অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে ডা. জিয়া উদ্দিন জানান, আগামীতে এনআরবি সম্মেলন বিদেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আমার ধারণা। এবং এর স্বাগতিক সংগঠনের দায়িত্বও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনকে দেয়া হতে পারে। উল্লেখ্য, এ সম্মেলনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বেশ ক’জন বাঙালী পেশাজীবীকে বিদেশের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাঁদের ছবি ও পরিচিতিও এনআরবি সম্মেলনের ওয়েব পেজে রয়েছে। এরা মূলত: কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। বিভিন্ন সূত্রের মতে সরকার প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে স্বদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যেই, এ সম্মেলনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, প্রথম এনআরবি সম্মেলনের যারা পদক পেয়েছেন, তাদেরকে কোন বিবেচনায় মনোনীত করা হয়েছে? এ নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ভূমিকা কতটুকু। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশী অর্গানাইজেশন অব নর্থ আমেরিকা’ (ফোবানা) গঠিত হয়েছিল। মাত্র ক’বছরের মাথায় তা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। পরে ত্রিথা, এমনকি বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। স্বদেশ কিংবা প্রজন্মের কল্যাণে এই ফোবানা মূলত: কিছুই করতে পারেনি। শুধুমাত্র একটি বড় ধরনের আড্ডাই বলা যায় এটাকে প্রতি বছর। এনআরবি সম্মেলনও যদি তেমন মেধা ও মননের স্পর্শে সঠিক দিক নির্দেশনা না পায়, তবে পুরো উদ্যোগই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। প্রথম এনআরবি সম্মেলনে যে সব সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আলোচানার তালিকা আমরা এ পর্যন্ত দেখেছি, তাতে বিশেষ গুরুত্ববাহী কিছু আছে বলে প্রবাসের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না। অন্যদিকে নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশ কনফারেন্সের নামে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীল ইমেজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সাধারণ প্রবাসী সমাজ কখনোই মেনে নেবেন না। যারা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, তাদেরকে সুযোগ করে দিতে হবে সরকারকেই। সে বিনিয়োগ, অর্থ, বিত্ত, মেধা মনন যে কোন কিছুরই হতে পারে। যদি প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয় সরাসরি এ দায়িত্বটি নিতো, তবে শুরুতেই এতো বির্তকের সৃষ্টি হতো না। নিউইয়র্ক, ১৭ ডিসেম্বর ২০০৭ --------------------------------------------------------------------------------- সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:২৪
false
mk
জঙ্গি দমনে সাফল্য ও করনীয় বাংলাদেশের সমাজের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদ যে গভীর শিকড় গ্রোথিত করেছে, তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত দুই দশক ধরে আমরা জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ও এর ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কর্মক্ষমতা দেখে এসেছি। মাঝখানে বছর দুই-তিনেক সুপ্ত থাকার পর গত দুই-তিন বছর ধরে জঙ্গিবাদের যে বিস্তার আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তাতে সমাজের প্রতিটি নাগরিক শঙ্কিত না হয়ে পারে না। গত বছর তথাকথিত ব্লগার বা মুক্তচিন্তার চর্চাকারীদের হত্যার মাধ্যমে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে সংখ্যালঘু ধর্মীয় উপাসনালয়, ধর্মযাজক, পুরোহিত ও সাধারণ বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলায় বিস্তৃত হতে দেখা গেছে। এসব ঘটনার যে একটি অভিন্ন যোগসূত্র রয়েছে, তা সাধারণ নাগরিকসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বেশি কিছু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তখন এগুলোকে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' আখ্যা দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। অতঃপর গত ১ জুলাই যখন গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম জঙ্গি হামলা হলো, তখন আর জঙ্গিবাদের নবোত্থানকে অস্বীকার করার উপায় থাকল না। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে হলি আর্টিসান হামলা একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা বলে আমি মনে করি। এ ঘটনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম যে, জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি কেবল দরিদ্র পরিবারের অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মাদ্রাসা-পড়ূয়াদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের অত্যন্ত উঁচু মহলে, উচ্চবিত্ত পরিবারের ইংরেজি শিক্ষিত ছাত্র ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রীদের মাঝেও। তাদের মধ্যে জঙ্গিবাদের ইন্ধনদাতা হিসেবে বেশকিছু শিক্ষক, ব্যবসায়ী এমনকি সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তাদের ভূমিকার কথাও আমরা জানতে পেরেছি। জঙ্গিবাদের এ ধরনের বিস্তার স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে ভাবিয়ে তুলবে যে, আমাদের আশু করণীয় কী? সরকার ও জনসাধারণের মিলিত প্রচেষ্টায় অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশেও আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যে উন্নতি ঘটে আসছে, যা কি-না সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি নজির হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে, জঙ্গিবাদের বিস্তারে তা কি চরম সংকটেই নিপতিত হবে? হলি আর্টিসান হামলার পর তার কিছু কিছু নমুনা আমরা দেখতেও পাচ্ছিলাম। বাংলাদেশে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক বা তাদের পরিবারের সদস্যদের এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেখেছি। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে এমন আঘাত যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে, বলাই বাহুল্য। আগে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করলেও জুলাইয়ে হলি আর্টিসান হামলার পরবর্তী দিনগুলোতে আমরা জঙ্গিবাদবিরোধী তৎপরতায় সরকারকে দ্রুত, বলিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখেছি। সরকার প্রথমেই জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। ফলে গ্রামগঞ্জে, স্কুল-কলেজে-মাদ্রাসায়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে_ বলা চলে সমাজের সর্বক্ষেত্রে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা তৈরি হয়েছে। তারা জঙ্গিবাদকে নির্দি্বধায় প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা দেখেছি, ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদ ছড়ানোর বিরুদ্ধে আলেম সমাজও এগিয়ে এসেছে। জঙ্গিবাদ যে ইসলামবিরোধী সে সম্পর্কে একটি ফতোয়াও জারি করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। গোটা দেশের আলেম সমাজ তাতে স্বাক্ষর করেছে।নাগরিকদের সঙ্গে যৌথভাবে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সরকার জঙ্গিবাদ দমনে একটি বিশেষ বাহিনীও গঠন করেছে। তারা ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অনেক জঙ্গিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে অথবা তাদের অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে জঙ্গিরা নিহত হচ্ছে। এর সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ শনিবার (৮ অক্টোবর) গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের তিনটি স্থানে পৃথক অভিযানে ১২ জন জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনা। বস্তুত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অনেকটা 'প্রি-এম্পটিভ' অভিযান শুরু হয়েছিল গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে অভিযানের মধ্য দিয়ে। সেখানে একসঙ্গে ৯ জঙ্গি নিহত ও একজন আহত অবস্থায় আটক হয়েছিল। তার পরের মাসে আগস্টের ২৭ তারিখ নারায়ণগঞ্জে অভিযান পরিচালিত হয়। কয়েকদিন পরে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিরপুরের রূপনগরে এবং তার পরের সপ্তাহে আজিমপুরে অভিযানে কয়েকজন জঙ্গি নিহত ও কয়েকজন আটক হয়। হলি আর্টিসানে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত সাতটি অভিযানে ২৫ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম চৌধুরী। সে নব্য জেএমবির নেতা ছিল বলে জানা গেছে। আজিমপুরে নিহত হয়েছে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর ও পরবর্তীকালে জঙ্গি দলে যোগ দেওয়া নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম ওরফে 'মেজর মুরাদ'। গাজীপুরে অভিযানে নিহত হয়েছে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর ঢাকা অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার 'আকাশ'। একই দিনে আশুলিয়ায় অভিযানের সময় পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেল নব্য জেএমবির অর্থ সমন্বয়ক আবদুর রহমান। তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর জঙ্গিগোষ্ঠী নব্য জেএমবির নেতৃত্বে কে যাচ্ছে, এ নিয়ে নানা গুঞ্জন শুনেছি আমরা। গত তিন মাসের অভিযানে নেতৃস্থানীয় সবাই প্রায় নিহত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, নব্য জঙ্গিবাদের আরেক মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনী থেকে পলাতক মেজর জিয়া আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো সময় তাকে আটক করা হতে পারে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাফল্যকে আমি সাধুবাদ জানাতে চাই। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমরা যদি তরুণদের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়া ঠেকাতে না পারি, তাহলে শুধু অভিযান চালিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য আসবে না। এ ক্ষেত্রে অভিযান ও প্রচারণার পাশাপাশি জঙ্গিবাদবিরোধী কাউন্টার ন্যারেটিভস বা পাল্টা ভাষ্যও তৈরি করতে হবে। এ ভাষ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, তথাকথিত খেলাফত রাষ্ট্র এবং তা প্রতিষ্ঠার নামে যে তৎপরতা চালানো হচ্ছে, তা আদৌ ইসলাম স্বীকৃত পথ নয়। উপস্থাপন করতে হবে যে বহু মত, পথ ও ধর্মের সমন্বয়ে গঠিত আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও প্রগতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।এর পাশাপাশি যেসব মাধ্যমে উগ্র ধর্মীয় মতবাদ ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে পিসটিভি নামক উগ্রবাদ ছড়ানো একটি বিদেশি টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরেও রাজনীতি অথবা ধর্ম প্রচারের নামে যারা উগ্রবাদ ছড়ায়, সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর কথাও আমরা অনেকদিন ধরে বলে আসছি। আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জানা মতে, দেশের বিভিন্ন কারাগারে কয়েক হাজার জঙ্গি বা জঙ্গি কার্যক্রমের সমর্থক বন্দি রয়েছে। এদের অবিলম্বে এক বা একাধিক বিশেষ কারাগারে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। কারণ কারা অভ্যন্তরে এসব জঙ্গি তাদের মতাদর্শ প্রচারের বিরাট সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। এমনকি কারাগারে থেকেও তারা বিভিন্ন পর্যায়ে পয়সা ও প্রভাব খাটিয়ে বাইরে যোগাযোগ করছে_ এমন খবরও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সুতরাং সাধারণ কয়েদিদের কাছ থেকে তাদের আলাদা করার ব্যবস্থা করতেই হবে। দীর্ঘমেয়াদে জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সাফল্য পেতে হলে এর বিকল্প নেই।একই সঙ্গে আত্মঘাতী ও সমাজঘাতী উগ্রপন্থা থেকে জঙ্গিদের আদর্শিকভাবে সরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারাবাসের পর তারা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে এবং সুনাগরিক হিসেবে বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারে। অন্যথায় ফের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে। জঙ্গিদের প্রায়োগিক দক্ষতা তৈরিতেও কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ এমনকি প্রাথমিক পুঁজিও দিতে পারে। যাতে করে তারা স্বাভাবিক জীবনে এসে সহজ জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই অভিভাবক, আত্মীয়, পরিবার-পরিজন, এমনকি প্রয়োজনে মনস্তত্ত্ববিদের সহায়তায় তাদের বোঝানো যেতে পারে; যাতে করে তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। তারা বুঝতে সক্ষম হয় যে, মানুষ হত্যা করে কখনও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ধর্মেও এ ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বস্তুত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে সাফল্য পাওয়া গেছে। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় আরেকটি কর্মসূচির সুদূরপ্রসারী সুফল পাওয়া গেছে। তা হচ্ছে, জঙ্গিবাদী বা জঙ্গিবাদ প্রচারকারী ব্যক্তিদের কারাগারের মধ্যেই ভ্রান্ত মতবাদ থেকে ফিরিয়ে এনে জঙ্গিবাদবিরোধী আদর্শে দীক্ষিত করা। এই কাজে আলেম সমাজ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাতে করে ওই জঙ্গিরা যদি কারাগারের বাইরে এসে জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেয়, তাহলে অন্যরা আর জঙ্গিবাদে ঝুঁকবে না। তাদের আগের বক্তব্যও আর অন্যদের প্রভাবিত করতে পারবে না।আমরা জানি, জঙ্গিবাদ বাংলাদেশকে এখন এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিবাদ দমনে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে জঙ্গিবাদবিরোধী মানসিকতা। এমনকি নিহত জঙ্গিদের পিতামাতাও তাদের লাশ গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছেন না। কবর হচ্ছে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে। এখন সময় এসেছে দীর্ঘমেয়াদে জঙ্গিবাদ নির্মূলে উদ্যোগী হওয়া এবং আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সুদৃঢ় মনোবল ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আমরা যদি জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে পারি, তাহলে শান্তি ও প্রগতির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪২
false
mk
জামায়াত গণতন্ত্রেরই শুধু শত্রু নয়, জামায়াত ইসলামেরও শত্রু -ফরহাদ মজহার জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়ফরহাদ মজহার: কবি, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।। ১৯ পৌষ, ১৩৯৯ শ্যামলী।ভারতে কতিপয় সাম্প্রদায়িক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভা...ঙার পর, আগে নয়। ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও তার সহযোগী শাসক শ্রেণী বাবরি মসজিদ ভাঙা হোক সেটা চেয়েছিল কিনা বলা মুশকিল, তবে দৃঢ়ভাবে ভাঙন ঠেকিয়ে হিন্দুদের তারা রুষ্ট করতে চায়নি। রুষ্ট করলে আগামী নির্বাচনে হিন্দুদের ভোট তারা হারাবে। বাবরি মসজিদ ভাঙা ও ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ভূমিকার মধ্য দিয়ে একটি দিক স্পষ্ট হচ্ছে: ভোটকেন্দ্রিক রাজনীতি ‘গণতন্ত্রকেও রক্ষা করতে পারে না। ভোটের একটা নিজস্ব গতিপ্রতিক্রিয়া আছে, যাদের হাতে ভোট আছে তারা যতোই অসচেতন, সাম্প্রদায়িক ও গণতন্ত্রবিরোধী হোক তাদের চটানো যাবে না। ‘গণতন্ত্র’ কথাটি আমি এখানে ঊদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করছি এ কারণে যে এই গণতন্ত্র দিয়ে প্রধানত ভোটাভুটিকেই বোঝানো হয়। অর্থাৎ এই ধারণায় প্রক্রিয়াটাই মুখ্য, গণতন্ত্রের আসল মর্মটা নয়।কেন শুধু প্রক্রিয়াটাই ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে মুখ্য হলো, আসলটা নয়? গণতন্ত্রের আসল মর্মশাসটা আমরা ধরি না বা ধলতে পারি না কেন? এর কারণ হলো আমরা ছিলাম দুই শ বছর ব্রিটিশদের গোলাম। আমরা ছিলাম দাস ওরা মনিব। যখন দেশ চালানোর দায় আমাদের ওপর ন্যস্ত হলো তখন আমরা মনিবের বহিরঙ্গ, আচার আচরণ, ওঠাবসা, ইত্যাদি নকল করলাম। আমরা ভাবলাম বাইরের প্রক্রিয়াটাই হলো আসল, ওটাই নকল করতে হবে। ফলে ভোটাভুটি, পার্লামেন্ট, মন্ত্রিসভা, সরকার গঠন, ইত্যাদির ভড়ংটা আমরা নিলাম। কিন্তু গণতন্ত্র তো তড়ং নয়। তার একটা সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও নীতিগত ভিত্তি আছে। ইয়োরোপের নিজস্ব ইতিহাস আছে। সেখানকার গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রবক্তা যে বুর্জোয়া শ্রেণী তার গড়ে ওঠার, তার শিক্ষা ব্যবস্থার, আচার আচরণ ও সংস্কৃতির একটা বিবর্তন আছে। তাকে রক্তক্ষয়ী ভাবে সামন্ত শ্রেণীর সঙ্গে লড়ে ক্ষমতায় আসতে হয়েছে। আমাদের শাসক শ্রেণী আর যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী গণতন্ত্র নিয়ে লাফঝাঁপ করে তার সেই ইতিহাস নেই। সে কারণে গণতন্ত্র যেখানে ইউরোপের মর্মের মধ্যে ইতিহাসের প্রক্রিয়ায় স্থান করে নিয়েছে, সেটা আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের শাসক ও শোষক শ্রেণী এবং তাদের সমর্থকরা মর্মে মর্মে সাম্প্রদায়িক, পশ্চাৎপদ, গণতন্ত্রবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল থেকে গেছে।এই দিকটা যদি আমরা বুঝি তাহলে ভারতের ঘটনা থেকে আরেকটি শিক্ষা লাভ করতে হবে আমাদের। সেটা হলো, সংবিধানে লিখে রেখে, সাংবিধানিকভাবে বা আইনি পদ্ধতিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা যায় না। এই শিক্ষাটা আমরা বাংলাদেশ গড়ার সময় লিখিনি। যেহেতু অন্যের দোষ আমরা সহজে ধরতে পারি এবং উল্লাস বোধ করি, ফলে ভারতের অবস্থা দেখে কিছুটা যদি আমরা শিখি। ইউরোপ বা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সংবিধানগুলো নকল করে একটি ‘গণতান্ত্রিক’ সংবিধানি তৈরি করলেই একটি সমাজ ও রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না। সংবিধান দিয়ে গণতন্ত্র গড়ার চেষ্টা বাংলাদেশে বিফল হয়েছে তার জয়ের পরপরই। অবশ্য ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান গণতান্ত্রিক উপাদান ছিল সেটুকুও রক্ষা করতে পারিনি আমরা। ভারতে গণতন্ত্র সংবিধানে, এমনকি রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও দেখা যাচ্ছে যে কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করে নেওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে নালিশ জানানোর ও বিচার পাওয়ার সুযোগ আছে। তবুও সমাজের মর্মে গণতন্ত্র শেকড় লাভ করেনি। অর্থাৎ বহিরঙ্গেই থেকে গেছে, থেকে গেছে বাইরে বাইরে। এর ফলে ভারতের কোনো উপকার হয়নি, সে কথা আমি বলছি না। বা বহিরঙ্গ নকল করলেই সেটা খারাপ এটাও আমার থিসিস নয়। আমরা কোনো কিছু শেখা যখন শুরু করি তখন অনুকরণ করে শেখাটা অন্যায় নয় মোটেও। কথা হচ্ছে, মর্মে যদি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা না ঘটে, তাহলে বহিরঙ্গের ভড়ং দিয়ে গণতন্ত্র অর্জন করা যাবে না। ভোটাভুটির প্রক্রিয়া চালু করে নয়, সংবিদান দিয়েও নয়। গণতন্ত্রের প্রশ্নে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর দুর্বলতা এবং অসততার জন্য আমরা ডিগবাজি খেয়েছি আগে। ভারত খাচ্ছে একটু পরে এই হলো তফাৎ। ভেতরে না থাকলে বাইরে থেকে নকল করে কোনো কিছুর প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।ভারত তার অন্তর্নিহিত সাম্প্রদায়িকতার মূলোচ্ছেদ করতে পারেনি, ভেতরে যা নষ্ট হয়ে থাকে তাকে বাইরে থেকে দেখা যায় না এবং ধরাও যায় না। সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজাধারী হিসেবে দেখা যাচ্ছে শুধু সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে। সেই দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানেও আমাদের শেখার আছে। সেটা হলো এই, গণতন্ত্র বলতে যদি আমরা বুঝি যেকোনো মত, আদর্শ, চিন্তা ইত্যাদি প্রচার করার অধিকার তাহলে ভারত সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে সেই দলগুলোর যারা সমর্থক তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করেছে। এতোদিন যদি তাদের সেই অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে এখন তা হরণ করে নিতে হচ্ছে কেন? এখান থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রের স্ববিরোধীতা খুব ন্যাংটোভাবে ধরা পড়ছে। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতীয় রাষ্ট্র ও রাজনীতির যে দার্শনিক ও নীতিগত ভিত্তি তার গোড়াটাই দেখা যাচ্ছে এখানে নড়বড়ে। সেই দার্শনিক ও নীতিগত ভিত্তিটা হচ্ছে এইরকম: গণতন্ত্র মানে যে কোনো মত, আদর্শ ইত্যাদির প্রচার ও তার ভিত্তিতে ক্ষমতা দখল করার অধিকার। এখন দেখা যাচ্ছে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে যেকোনো মত, আদর্শের প্রচার ও তার ভিত্তিতে ক্ষমতা দখল করার অধিকার বহাল রাখা যায় না। কারণ যারা গণতন্ত্রী নয়, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাদের মত প্রচার ও দল করার অধিকার দেওয়া হলে গণতন্ত্রের খোদ ভিত্তিটাই তারা উপড়ে ফেলতে সক্ষম। অতএব এদের বিরুদ্ধে সাফ সাফ একনায়কতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ দরকার। যারা গণতন্ত্রী ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাদের জন্য গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার, আর যারা গণতন্ত্রের দুষমন আর অগণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাদের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রও বল প্রয়াগ করে।ভারতে সাম্প্রদায়িক দল নিষিদ্ধ করার ঘটনাটি সে কারণে দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ। এর রাজনৈতিক-দার্শনিক তাৎপর্য দারুণ। সে বিষয়ে অল্প কিছু কথা বলার আছে, বলছি পরে। তার আগে যে কথা বলার জন্য কলম ধরা সেটা বলে রাখা দরকার। ভারতে সাম্প্রদায়িক দল নিষিদ্ধকরণের এই উদাহরণ একটি নীতিগত অবস্থানকে দৃঢ় করে। সেটা হলো, জামায়াতে ইসলামীসহ যেকোনো রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের কখনোই কোনো স্থান দেওয়া উচিত নয়। কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের কোনো সুযোগ করে দেওয়া চলবে না। সেটা হবে বিপজ্জনক। মূল কথা হচ্ছে গণতন্ত্র মানে সকলের অধিকার নয়, সকল মত ও পথের অধিকার গণতন্ত্র স্বীকার করে না। কারণ তখন গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্র বিরোধীরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফলতে পারে।গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে ব্যক্তি সার্বভৌম, ব্যক্তির সার্বভৌম ইচ্ছার অভিপ্রকাশ হবে রাষ্ট্র। কোনো সমাজে যদি ব্যক্তি নিজের এই সার্বভৌম সত্তাকে উপলব্ধি করতে না পারে এবং সেই উপলব্ধির জন্য জরুরি আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শর্ত যদি গরহাজির থাকে সেই সমাজে ভোটাভুটির প্রক্রিয়া চালু করে কিংবা সংবিধানে বানিয়ে, আইন তৈরি করে, কোর্টকাছারি আদালত খাটিয়ে গণতন্ত্র হয় না, হবে না। সেক্ষেত্রে কর্তব্য হচ্ছে গণতন্ত্রের বৈষয়িক ও সাংস্কৃতিক শর্তগুলো তৈরি করা।গণতন্ত্রের দার্শনিক ও নীতিগত ভিত্তিটাকে যদি আমরা উপলব্ধি নাও করি তবুও শেষের যুক্তিটা এখানে খুবই সহজ এবং পরিক্ষার। ধরা যাক গণতন্ত্রকে আমরা স্রেফ একটা নিয়ম বা প্রক্রিয়ার অধিক ভাবতে শিখিনি। ধরা যাক আমরা শুধু এতোটুকুই বুঝতে পারি যে গণতন্ত্র হচ্ছে এমন একটা নিয়ম বা প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের শাসক নির্বাচন করি এবং সেই শাসকের কর্তব্য হচ্ছে সেই নিয়মটিকে রক্ষা করা যাতে একটা সময়ের ব্যবধানে একই নিয়মে আমরা নতুন শাসক নির্বাচন করতে পারি। এখন কেউ যদি পরিষ্কার বলে যে আমরা এই নিয়মে শাসক হবো ঠিকই, কিন্তু শাসক হয়েই আমরা এই নিয়ম আর রাখবো না। কেন? কারণ এই ধরনের নিয়ম, প্রক্রিয়া বা সংবিদান মানুষের তৈরি। মানুষের তৈরি বিধান দ্বারা রাষ্ট্র ও সমাজ চলতে পারে না। রাষ্ট্র ও সমাজকে চলতে হবে আল্লাহর তৈরি বিধান দ্বারা, কোরআন সুন্নাহর ভিতিতে। তাহলে কি হবে এখানে? একটা নিয়ম বা প্রক্রিয়ার সুযোগ গ্রহণ করে সেই নিয়ম বা প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার জন্য যে সকল শক্তি তৎপর তাদেরকে কি সেই সুযোগ আমরা দেব? যদি আসলে এই ধরনের নিয়ম বা প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা ও চর্চার মাধ্যমে সেই নিয়ম আর প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করাই আমাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে তো কিছুতেই জামায়াতে ইসলামী বা নিয়ম ধ্বংসকারী কোনো শক্তিকে আমরা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে দিতে পারি না। মূলত এই সকল শক্তিকে দমন ও ধ্বংস না করলে এই ধরনের কোনো নিয়ম বা প্রক্রিয়া কোনো দিনই প্রবর্তন করা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ গণতন্ত্রের এই সীমিত সংজ্ঞার পরিমণ্ডলেও দেখা যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নিয়মনীতি প্রবর্তনের খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ।অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে ঠিকই তো, আল্লার বিধানেই তো মানুষ চলবে, মানুষের আবার বিধান কিসের? ঠিক আছে। কোথায় আছে সেই বিধান? সেটা আছে কোরআনে, আল্লাহর কালামে। আর কোথায় আছে? আছে হাদিসে, নবীর কথায়, ‘তাঁর জীবন যাপনে। কিন্তু সেই কালাম, কথা এবং জীবনযাপন ব্যাখ্যা করে আমাদের সময়কালে গ্রহণযোগ্য বিধান কে দেবে? জামায়াতে ইসলামী বলছে সেটা দেবে তারা। কোরআন সম্পর্কে তাদের ব্যাখাই বিধান। তাদের কথা মতো আমাদের চলতে হবে, আমাদের রাষ্ট্রের নীতি, কাঠামো, আইন কি হবে তার ব্যাখ্যা দেবে জামায়াতে ইসলামী। সেটাই আল্লার বিধান আকারে আমাদের মানতে হবে। নবীর কথা এবং জীবনযাপনের ব্যাখ্যাও দেবে তারা। ওদের ব্যাখ্যাই হচ্ছে, আল্লাহর বিধান। দেখা যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী নিজেই আসলে আল্লাহর স্থান দখল করে নিতে চাইছে। এখানেই হলো জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক। জামায়াত গণতন্ত্রেরই শুধু শত্র“ নয়, জামায়াত ইসলামেরও শত্র“। জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান খোলামেলাভাবে শেরেকী। আল্লাহর কালামকে ব্যাখ্যা করার স্বঘোষিত কর্তৃত্ব যারা গ্রহণ করে তারা আল্লাহর সঙ্গে শেরেকী করে। ইসলামের দৃষ্টিতে তারা আসলে কাফের।জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ফাণ্ডামেন্টালিজম বা মৌলবাদের এখানেই হচ্ছে মৌলিক ফারাক। বাংলাদেশে ইরানের বিপ্লবের পর ওকে হেয় করার জন্য পশ্চিমে মৌলবাদী ইসলাম কথাটার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। কিছুটা আমাদের অজ্ঞতায় এবং কিছুটা পশ্চিমের বর্ণবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ইসলাম হচ্ছে ট বর্বর ধর্ম, মূসলমান মানেই একটি পশ্চাৎপদ দাঁড়ি টুপি পাগড়ি পড়া, মধ্যযুগীয় চরিত্র - পশ্চিমের বর্ণবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এটাই ক্রমাগত প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। আসলে পশ্চিমের এই বর্ণবাদিতা ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে। আয়াতুল্লাহ খোমেনী বা হিযবুল্লাহ ধরনের মৌলবাদ নাকচ করছে পশ্চিমেক আগাগোড়া। তারা আধুনিক বিশ্বের আলোকে ইসলামকে গ্রহণযোগ্যভাবে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার দায় কাঁধে নেয়নি। তাদের সাধনা হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর মতো ইসলামকে আধুনিক করে তোলা নয়, বরং ইসলামকে বিশুদ্ধভাবে আত্মস্থ করা। অর্থাৎ আল্লাহর কালামে বা ছহি হাদিসে ইসলাম যেভাবে আছে সেই মূল ধারাকেই চিহ্নিত করা ও গ্রহণ করা। মৌলবাদ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, পশ্চিমা সভ্যতার সকল ধরন ও অভিপ্রকাশের বিরুদ্ধে তার জেহাদ। সেই সভ্যতার ধ্বংস ছাড়া ইসলামের মুক্তি নেই বলে মৌলবাদী ইসলাম বিশ্বাস করে। মৌলবাদী ইসলামের মূল প্রবণতা ইসলামের ব্যাখ্যা নয়, আল্লাহর ওপর কর্তৃত্ব করা নয়। বরং সেই আদি বাক্য, কালাম বা বিধানে প্রত্যাবর্তন করা যা আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে বলে তারা বিশ্বাস করে।জামায়াতে ইসলামী ও মৌলবাদের এই আকাশ পাতাল তফাৎ খেয়াল রাখলেই আমরা বুঝব কেন জামায়াতে ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী আর কেন মৌলবাদ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও বিশুদ্ধ ইসলামের প্রবক্তা। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়বার নৈতিক ও মানসিক শক্তি অর্জনের জন্যই মৌলবাদ বিশুদ্ধ ইসলামের কাছে তার তার্কিক ও মতাদর্শিক ভিত্তি অন্বেষণ করে, কারণ পশ্চিমের কাছ থেকে সে কিছুই গ্রহণ করতে রাজি নয় আর সাম্রাজ্যবাদের দোসর হওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই ইসলামের বিকৃতি সাধন করে কারণ তার কাজ হচ্ছে ইসলামের ছুতোয় সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য ও আগ্রাসনের প্রসার ঘটানো। মৌলবাদ সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফিরে যেতে চায় আইয়ামে জাহেলীয়া যুগের অল্প পরের ইসলামী যুগে; নবীর জীবন, শিক্ষা ও কথার কালপর্বে। আর জামায়াতে ইসলামী চায় সেই যুগটাকেই আধুনিক লেবাস পরিয়ে বর্তমান কালের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে যাতে সাম্রাজ্যবাদের খোদ চেহারাটা আমরা আর বুঝতে না পারি।যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামকে কোনো স্থান আমরা না দেই তাহলে কি মৌলবাদকে আমরা স্থান দেব? যদি জামায়াতে ইসলামীকে আমরা নিষিদ্ধ করি তাহলে কি মৌলবাদকেও নিষিদ্ধ করতে হবে না? মৌলবাদের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা না করার প্রশ্ন সবসময় খাটবে না। কারণ ইসলামী মৌলবাদ বিশ্বাস করে এবং বলে যে তথাকথিত ‘গণতন্ত্র’ একটি পশ্চিমা জিনিস। মৌলবাদী ইসলাম কখনোই ব্যক্তিকে সমষ্টির ওপরে স্থান দেয়নি। অর্থাৎ ইসলাম ব্যক্তিতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। যীশু নিজে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে সমস্ত মানবজাতির মুক্তি এনেছেন। খ্রিস্ট ধর্মে ক্রুশে কষ্ট পাওয়া ব্যক্তি যীশুর এই ভাবমূর্তির ওপর গড়ে ওঠছে, ব্যক্তিতন্ত্রের নৈতিক ও আদর্শিক ভিত্তি। পুঁজিতন্ত্র এর বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে ও তার প্রসার ঘটিয়েছে। মৌলবাদী ইসলাম খ্রিস্টধর্ম, ব্যক্তিতন্ত্র ও পুঁজিতন্ত্র এই তিনেরই ঘোর বিরোধী। মৌলবাদী ইসলাম ব্যক্তির প্রতি নিষ্ঠুর কিন্তু সমষ্টির স্বার্থে অঙ্গীকারবদ্ধ। মৌলবাদী ইসলাম যেহেতু খ্রিস্টধর্মের ঔরসজাত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না সে কারণে তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সে অংশগ্রহণও করে না। তার ক্ষমতা দখলের পথটা হচ্ছে বিপ্লবী পথ। কিন্তু জামায়াতের অবস্থান ভিন্ন। সে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, এবং নিজের একটা স্থান করে নিতে চায়। জামায়াতকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া বা না দেওয়া কিংবা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবহায় স্থান দেওয়া বা না-দেওয়ার প্রশ্ন আছে, মৌলবাদী ইসলামের ক্ষেত্রে সেটা নেই।অনেকে দাবি করতে পারেন যে জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে জামায়াতকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। জামায়াতে ইসলামী যদি কোনো রাজনৈতিক দল না হতো তাহলে সেটা একটা পথ হতে পারত। কারণ সমাজে আরো বহু গণতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা, চেতনা, মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশ আছে। সেগুলোকে যেভাবে মুক্তচিন্তার চর্চা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলন দিয়ে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি আমরা সেভাবে জামায়াতকেও মোকাবিলা করা যেত। কিন্তু জামায়াত ক্ষমতা চায়; কারণ জামায়াত জানে একমাত্র ক্ষমতা দিয়েই সে তার অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম হবে। জামায়াত যেখানে ক্ষমতা দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, সেখানে ক্ষমতা লাভের জন্য জামায়াতকে অবস্থা ও শর্ত তৈরি করে দেওয়াটা হলো স্রেফ আত্মহত্যার সামিল। জনমত সৃষ্টি করে জামায়াতকে প্রতিরোধ করার ধারণা সে কারণে মারাত্মক ভুল। কিন্তু তার মানে এই নয় যে জামায়াতের বিরুদ্ধে জনমত আমাদের সৃষ্টি করতে হবে না। হবে। কিন্তু কি ধরনের জনমত সৃষ্টি করা হবে? যদি জনগণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করতে চায় তাহলে সেই রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় জামায়াতকে কোনো স্থান দেওয়া যাবে না এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জামায়াতে ইসলামীসহ সকল অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে। জনগণের কাছে। অর্থাৎ জনমত সৃষ্টি করতে হবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য, শুধু জামায়াতী চিন্তাধারার বিরোধিতা করার জন্য নয়।ভারতে সাম্প্রদায়িক দল নিষিদ্ধ করার ঘটনাটির রাজনৈতিক -দার্শনিক তাৎপর্য সম্পর্কে যে কথা বলতে চেয়েছি সেটা এখন বলি। মার্কস, লেনিন আর তাঁদের অনুসারী কমিউনিস্টদের একনায়কতন্ত্রবাদিতার পক্ষে নয়। কিন্তু এর পেছনে কিছু কথা আছে। কমিউনিস্টদের বক্তব্য হলো, ক্ষমতার চরিত্রই হচ্ছে এই যে তার উদ্ভব ও প্রয়োগ একনায়তান্ত্রিক হতে বাধ্য। সেটা যেকোনো শ্রেণীর ক্ষমতাই হোক না কেন। অগণতান্ত্রিক শক্তি যে অগণতান্ত্রিক সেটা আমরা জানি। কিন্তু বুর্জোয়া গণতন্ত্রীদের ক্ষমতাও যেমন অগণতান্ত্রিক হতে বাধ্য তেমনি শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে যে বৈপ্লবিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয় সেটাও একনায়তান্ত্রিকই হবে। ভারতের বুর্জোয়া শ্রেণী শ্রমিক, কৃষক মহেনতি মানুষের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে সকল প্রতিক্রিয়াশীর ও অগণতান্ত্রিক শ্রেণীর সঙ্গে জোট বেঁধে যে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা এতদিন প্রয়োগ করে আসছিল তাকে ধরা যাচ্ছিল না, গণতন্ত্রের লেবাসে সেটা ঢাকা ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন বুর্জোয়া শ্রেণী এখন যখন দেখছে যে সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি তাদের কর্তৃত্ব ও আধিপত্যকেই চ্যালেঞ্জ করে বসেছে তখন তাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে তারা। অর্থাৎ আঁতাত ভেঙে তাদের শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে তারা দেরি করেনি। ক্ষমতার চরিত্র সম্পর্কে একনায়কতান্ত্রিকতার যে তত্ত মার্কস এবং লেনিন পেশ করেছিলেন, সেটাই ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এখানে প্রমাণিত হলো। কমিউনিজমের এই কঠিন সময়ে কেউই আর একনায়তন্ত্র সংক্রান্ত তত্ত নিয়ে কথাবার্তা বলতে চায় না। ভারতের ঘটনা থেকে বোঝা যায় ক্ষমতার লড়াই ও শ্রেণীর সঙ্গে শ্রেণীর সংঘাত বোঝার জন্য একনায়কতান্ত্রিকতার তত্ত্বটা খুবই জরুরি।জামায়াতে ইসলামী ও সকল অগণতান্ত্রিক শ্রেণী ও শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক শ্রেণীর মৈত্রীর ভিত্তিতে বৈপ্লবিক একনায়তন্ত্রই এখন আমাদের দরকার। তার মানে হচ্ছে গণতন্ত্র শুধু গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও তার চর্চার নিষ্ঠাবান শ্রেণীর জন্য, আর অগণতান্ত্রিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে দরকার একনায়কতন্ত্র।রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বা, অন্যভাবে বললে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের রূপান্তরের একটা চরিত্রলক্ষণ হবে এই যে সেই রাষ্ট্রে এবং সমাজে কোনো অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপের সুযোগ থাকবে না।ভারতের ঘটনা থেকে এই শিক্ষা লাভ করলে গণতন্ত্রীরা উপকৃত হবে। মূল লিঙ্ক
false
hm
আমি অবাক হয়ে শুনি ড. ইউনূস আপাত অনাড়ম্বর জীবনযাপনের কারণে তাঁর ভক্তমহলে সমাদৃত। তাঁর গ্রামীণ চেকের পাঞ্জাবি তাঁর পেশাগত সততা ও নিষ্ঠার একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নোবেলজয়ের অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে তিনি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের কাছে সমাজসেবা, দেশপ্রেম ও দুর্নীতিমুক্ত নেতৃত্বের আইকন হিসেবে কিঞ্চিৎ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে খোদ সরকার প্রধান ইউনূস সম্পর্কে রুষ্ট বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের চোখে ইউনূসের কার্যক্রম সম্পর্কে সরকারের মনোভাব অনুসন্ধানী না হয়ে প্রতিশোধপরায়ণ হিসেবে বিবেচিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর, ২০১০ তারিখে বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত এক খবর [১] থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন, "গরীব মানুষের রক্ত চুষে বেশি দিন টেকা যায় না সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। এই অভিযোগের ভালোভাবে তদন্ত হওয়া উচিৎ।" অতীতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, এ ধরনের বক্তব্য শেখ হাসিনা আগেও দিয়েছেন। ৪ জুন, ২০০৭ তারিখে বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত আরেকটি খবর [২] থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "কীভাবে হাজার হাজার গরীব নারী পুরুষের রক্ত চুষে মুনাফা করতে হয় ড. ইউনূস তা ভালোই জানেন।" ইউনূসের প্রতি শেখ হাসিনার এই বিরূপ মনোভাবের কারণ নিয়ে তিনটি তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে, তবে এই পোস্টের স্কোপের বাইরে বলে এ নিয়ে আলোচনা করছি না। মার্চের শুরুতে ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। ইউনূস আদালতের শরণাপন্ন হন, কিন্তু আদালতের রায় তাঁর অনুকূলে যায়নি। ড. ইউনূস ও তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কিছু কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি সরকার একটি কমিটি গঠন করে, এবং কমিটির প্রতিবেদনে [৮] বেশ কিছু অভিযোগ উঠে আসে। পাশাপাশি ইউনূসের প্রতি সরকারের বিরূপ মনোভাবের কারণে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সাংবাদিকদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, এবং তার ফলে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া কিছু তথ্য সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত হয়। সরকারী কমিটির সদস্যরা হলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মনোওয়ার উদ্দিন আহমদ (চেয়ারম্যান), বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা, সাবেক ডেপুটি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল সৈয়দা রোকিয়া দীন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) প্রাক্তন অধ্যাপক আর এম দেবনাথ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহসিন রশীদ। উত্থাপিত এই অভিযোগগুলোর একটি সামারি আমি এই পোস্টে প্রস্তুত করতে চাই। অভিযোগগুলোর বিপরীতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জনসংযোগ শাখা থেকে প্রতিবাদ এসেছে [৩]। কিন্তু এই প্রতিবাদে অভিযোগ খণ্ডনের পরিবর্তে অস্বীকারের সুরটিই বেশি প্রবল। ড. ইউনূস বাংলাদেশের একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব, তাঁকে পীরজ্ঞানে ভক্তি করেন, এমন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকারের চক্রে কোথাও যুক্তিসমর্থিত ফ্যাক্টনির্ভর আলোচনা হচ্ছে না। ইউনূসভক্তরা হয় অভিযোগগুলোকে আমলে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন, অথবা আবেগসর্বস্ব কথা বলছেন, যার মূল্য খুব একটা নেই। আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য, ইউনূসের ভক্তদের মাঝে যারা যুক্তিচর্চার অনুরাগী, তাঁদের কাজটি সহজ করে দেয়া। সরকারি কমিটি সরকারের মনোভাবের ফান্ডামেন্টাল ফ্রিকোয়েন্সি এবং হায়ার হারমোনিকস ধরতে কখনোই তেমন অদক্ষ নন। সাংবাদিকদের কাছ থেকেও সবসময় বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপিত হয় না। তাই এই অভিযোগগুলোর মেরিট যাচাই করার কাজটা বড় বড় মানুষদের পাশাপাশি আমাদেরও করতে হবে। মানীর মান ঈশ্বর সবসময় রক্ষা করতে পারেন না। ইউনূসের আবেগসর্বস্ব যুক্তিপঙ্গু ভক্তদের সংখ্যা কম নয়, এবং ইন্টারনেটে তাদের বিচরণও প্রবল। তাদের প্রতি একটিই অনুরোধ, নিজে না পারলেও অন্যকে যুক্তিচর্চার সুযোগ করে দিন। যুক্তিকুশলদের কাছ থেকে এই অভিযোগগুলো খণ্ডিত হতে দেখার অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ। এক. ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধার পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দান সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৪], "প্যাকেজেস কর্পোরেশন" ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯০ হতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড (এসভিসিএফ) থেকে প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে ৯ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ওই ঋণের মধ্যে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা মওকুফ করে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। এখানে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই পণ্য/সেবা ক্রয় করা হয়েছে এবং অর্থায়ন ও ঋণ মওকুফ করা হয়েছে, যাতে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ বিদ্যমান। এ ছাড়া প্যাকেজেস কর্পোরেশন উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই প্রিন্টিং ও কম্পিউটার সামগ্রী কিনে ব্যাংকের নিজস্ব ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৬], গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ব্যাংকের তখনকার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোজাম্মেল হক। সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, আপনার পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশনে বিনিয়োগকৃত সুদে আসলে প্রায় ২ কোটি টাকা। আপনার পরিবারের পক্ষে আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে। যদিও গ্রামীণ ব্যাংকের অধিকাংশ ছাপার কাজ অনেকের মধ্যে বাজার মূল্যের প্রায় ৪০% উর্ধ্ব ধরে কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়া আপনাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে দিয়ে ছাপানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ছাপার গুনগত মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের নীচে থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণ ব্যাংকে তা গ্রহণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সময়েই প্যাকেজেস কর্পোরেশনের সাথে আপনার সম্পর্ক এর আর্থিক লেনদেন নিরীক্ষণ করলে আপনারও গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য তা অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং লজ্জার ব্যাপার হবে। ব্যক্তিগত কাজে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবহার সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৪], ইউনূস সেন্টার নামীয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র ভাড়ায় ব্যাংকের ১১ হাজার বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ব্যক্তিগত আয়করদানে অনিয়ম ১২ এপ্রিল, ২০১১ তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে জানাচ্ছে [৫], ইউনূসের ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় হিসেবে প্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৫ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউনূসের সাথে যোগাযোগ করে জেনেছেন, এ টাকা তিনি বিদেশে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করে আয় করেছেন। এ অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি জমা (এফডিআর) হিসেবে রক্ষিত। কিন্তু এনবিআর 'বিদেশে উদ্ভূত আয় কর অব্যাহতি যোগ্য নয়' যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবেদনে বলছে, 'ড. ইউনূস যে এসআরওর উল্লেখ করে বিদেশে উদ্ভূত আয়ের ওপর কর অব্যাহতি নিয়েছেন তা আইনানুগ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। মূলত বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের আয়কে করমুক্ত করার জন্যই ওই এসআরও জারি করা হয়। তিনি কোনোক্রমেই একজন ওয়েজ আর্নার নন। তাঁর বিদেশে উদ্ভূত আয় বাংলাদেশে উদ্ভূত আয় হিসেবেই গণ্য হবে। যদি তা না হয়, তবে সব রপ্তানিকারকের আয় কর অব্যাহতিযোগ্য হতো। কারণ রপ্তানিকারকের আয়ও বিদেশে উদ্ভূত হয় এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে আসে।' ড. ইউনূসের এ ছাড়া বেতন-ভাতা, নোবেল পুরস্কারের অর্থ ও বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া আরো কিছু অর্থ এই ৫৪ কোটি টাকার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দায়িত্ব পালনে অনিয়ম সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৬], গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ব্যাংকের তখনকার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোজাম্মেল হক। সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, ব্যাংকের এত সংকটের মধ্যেও আপনি মাসে গড়ে ১২দিন অর্থাৎ বছরে প্রায় ১৩০ দিন দেশেই থাকেন না। নভেম্বর' ৯৯ তে আপনার পক্ষে মাত্র ৩ দিন ব্যাংকে আসা সম্ভব হয়েছে। ক্ষমতা এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আপনার অপারগতা গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যেহেতু আপনার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও কার্যত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। তার কারণ আপনি ইতিমধ্যেই ব্যাংক ব্যবস্থাপনার Chain of command এর ভারসাম্য নষ্ট করেছেন এবং নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন। উপরন্তু আপনি বছরে ৪ মাস যেসব উদ্দেশ্যে বিদেশ সফর করেছেন তাতে আপনার ব্যক্তিগত লাভ ও প্রচার বাড়ছে, কিন্তু ব্যাংকের কোন লাভ হচ্ছে না বরং ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আপনার খ্যাতি ও প্রতিপত্তি এমন এক পর্যায়ে এসেছে যে আপনি কোন প্রকার জবাবদিহিতার অনেক উপরে অবস্থান করছেন। জুলাই' ৯৭ এর মেমোতে আমি যেসব সংকটের কথা উল্লেখ করেছিলাম সেসব সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে যার কারণে বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্মুখীন। অননুমোদিত দায়িত্ব পালন সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৭], গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ১৪(৪) ধারানুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ণকালীন প্রধান নির্বাহী। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়মিত কর্মকর্তা হওয়ায় ড. ইউনূসসহ অন্যান্য গ্যারান্টি প্রদানকারীগণ পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ব্যতীত নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনে সংযুক্ত হয়েছেন ও গ্যারান্টি প্রদান করেছেন যা আইন বর্হিভূত হয়েছে। কোনরকম অনুমোদন ছাড়াই তারা এসব প্রতিষ্ঠান গঠনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনে সংযুক্ত হওয়া ও গ্যারান্টি দেওয়াও নিয়ম বর্হিভূত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন ব্যতিরেকেই ২০০৩ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ পরিবারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান বা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে বিষয়টিকে পরবর্তীতে বৈধতা দিতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৩ তারিখে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় তাঁকে ২০টি প্রতিষ্ঠানের চেয়্যারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে "কার্যোত্তর অনুমতি" দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম কর অব্যাহতির শর্ত লঙ্ঘন ১২ এপ্রিল, ২০১১ তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে জানাচ্ছে [৫], গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৫ সাল থেকে যে কর অব্যাহতি পেয়েছে, তা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে এবং এতে সরকারের সম্ভাব্য রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫১৪ কোটি সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। কর অব্যাহতির অর্থ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ ব্যাংক সদস্যদের পুনর্বাসনকাজে ব্যয় করার কথা থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শর্ত ভঙ্গ করে সেই টাকা লাভজনক সহযোগী প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গ্রামীণ ব্যাংকের আয়কর অব্যাহতি সংক্রান্ত এসআরও নং-৩৬/আইন/২০০৩ এবং এসআরও নং-৯৩/আইন/২০০০ থেকে দেখা যায়, অব্যাহতিপ্রাপ্তির জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গীকার ছিল : আয়ের ওপর আরোপনীয় কর, সুপার ট্যাঙ্ ও ব্যবসার মুনাফা কর প্রদান থেকে গ্রামীণ ব্যাংককে অব্যাহতি দেওয়া হলে ব্যাংকটি পুনর্বাসন তহবিল গঠন করে সব লভ্যাংশসহ করের অর্থ তহবিলে জমা করবে। এ তহবিল প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের পুনর্বাসনকাজে ব্যবহার করবে। এনবিআর বলেছে, 'কিন্তু প্রতীয়মান হয় যে, গ্রামীণ ব্যাংক ওই অর্থ গ্রামীণ কল্যাণ ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানান্তরের মাধ্যমে কর অব্যাহতিপ্রাপ্তির মূল শর্ত লঙ্ঘন করেছে।' অস্বচ্ছ তহবিল স্থানান্তর সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৬], গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ব্যাংকের তখনকার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোজাম্মেল হক। সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, গ্রামীণ ব্যাংক মে' ৯৭ তে গ্রামীণ কল্যাণের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদিত করে যা ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৬ থেকে বলবৎ করা হয়। এই চুক্তির ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকগণ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে অনুদান হিসাবে প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা পান, সমূদয় অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকের একটি ঘুর্ণায়মান তহবিল (রিভলবিং ফাণ্ড) থেকে সদস্য/সদস্যদের ঋণ কর্মসূচীকে ক্রমাগতভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যেই মূলতঃ দেয়া হয়েছিল। এবং এক অর্থে এটাকে ব্যাংক ইকুইটি হিসাবে দেখানো হলে ব্যাংকের আর্থিক ভিত অনেক মজবুত দেখাবে। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকগন তাদের অনুদানে পাওয়া রিভলবিং ফাণ্ড প্রথম গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে উপহার/দান হিসাবে দেয়। যে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য/সদস্যাদের কোন প্রকার প্রতিনিধিত্ব নেই, এবং এই উপহার/দানের অর্থ আবার গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকেরা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ধার নেয়। যদিও এ ধার পরিশোধের কোন সময়সীমা বা সুদের হারের কোন উল্লেখ নেই। এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় অনেকেই এখন প্রশ্ন করবেন যে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রায় ২২ লক্ষ শেয়ার হোল্ডার আসলেই কি ব্যাংকের মালিক? নাকি জনগণ যেভাবে দেশের মালিক তারাও সেভাবে ব্যাংকের মালিক ? দাতা সংস্থা থেকে এভাবে কেন ধার নেয়া হলো এবং তা চুক্তির পরিপন্থি, এ বিষয়ৈ জানতে চাওয়া হলে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসাবে আপনি দাতা সংস্থাকে জানিয়েছেন যে গ্রামীণ ব্যাংক এত বড় অংকের টাকা দক্ষতার সাথে ম্যানেজ করতে পারবে না। গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্ট অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণ এটা দক্ষতার সাথে ম্যানেজ করতে পারবে। যদিও ব্যাখ্যা করা হয়নি যে, গ্রামীণ কল্যাণের কি ধরণের বাড়তি দক্ষতা আছে যেটা গ্রামীণ ব্যাংকের নেই। প্রতিষ্ঠানকে বিধিবহির্ভূত ঋণ প্রদান সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৬], গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন ব্যাংকের তখনকার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোজাম্মেল হক। সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে অডিট করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে বলা হয় যে, গ্রামীণ ব্যাংক কেবলমাত্র ভূমিহীন ও বিত্তহীনদের আহরিত তহবিল থেকে ক্ষুদ্র ঋন বিতরণ করতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই গ্রামীণ ব্যাংক কোন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করতে পারে না। কাজেই গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঋন প্রদান গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৯নং ধারার লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট গ্রামীণ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে গোপন রাখা হয়েছে এবং খুব সম্ভবত গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও এ অডিট রিপোর্ট সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি। বিধিবহির্ভূত পন্থায় প্রতিষ্ঠান পত্তন সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ২৪ জানাচ্ছে [৭], গ্রামীণ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল পৃথক করে গ্রামীণ ফান্ড ও গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পরে এসব সংস্থার অর্থায়নে ও ঋণে আরো প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক এসব প্রতিষ্ঠান গঠন ও অর্থায়ন করতে পারে না। পুরো প্রক্রিয়াটি গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষমতা বহির্ভূত। প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রামীণ ফান্ডের অর্থায়ন ও ঋণে ১৫টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। এগুলো হলো, গ্রামীণ ব্যবসা সেবা লিমিটেড , গ্রামীণ বাইটেক লিমিটেড, গ্রামীণ সাইবারনেট লি, গ্রামীণ নীটওয়্যার লি, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি, গ্রামীণ সলিউশন লি, গ্রামীণ আইটি পার্ক লি, টিউলিপ ডেইরী এন্ড ফুড প্রোডাক্টস লি, গ্লোব কিডস ডিজিটাল লি, গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লি, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি, রফিক অটোভ্যান ম্যানুঃ ইন্ডাঃ লি, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ সামগ্রী। গ্রামীণ কল্যাণ কর্তৃক অর্থায়নকৃত (ইকুইটি/ঋণের মাধ্যমে) ১৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো- গ্রামীণ নীটওয়্যার লি, গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশ, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি, গ্রামীণ আইটি পার্ক লি, গ্রামীণ সলিউশন লি, গ্রামীণ ডানন ফুডস লি, গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি, গ্রামীণ টেলিকম লি, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি, গ্রামীণ ফেব্রিক্স এন্ড ফ্যাশনস, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন। অন্যদিকে গ্রামীণ কল্যাণের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম অর্থায়ন করেছে আরো ১২টি প্রতিষ্ঠানকে। [১] অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী [২] ড. ইউনূস একজন 'ভাল ব্যবসায়ী': হাসিনা [৩] 'স্পষ্ট ধারণা ছাড়াই প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি' [৪] পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণও নীতিমালা ভেঙে [৫] এনবিআরের প্রতিবেদন - ব্যাংকে জমা ইউনূসের নিজস্ব ৫৪ কোটি টাকাও করমুক্ত! [৬] ইউনূসকে সতর্ক করেছিলেন মোজাম্মেল [৭] 'গ্রামীণ ব্যাংক নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে না' [৮] তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন
false
rg
নিরবে চলে গেলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম!!! আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে অবশেষে দেহান্তরিত হলেন। আজ সকালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার হাসপাতালে তিনি পরলোক গমন করেন। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙ্গালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম। রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত দুই বাঙালি। তারপর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। জাতিসংঘ তখন ঘোষণা করে- এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। গোড়ার ইতিহাস:বিগত নব্বই শতকের শেষ দিক। সবকিছুর পুরোধা ছিলেন রফিক (রফিকুল ইসলাম) নামের এক ক্যানাডা নিবাসী বাঙালি। চেহারা ছবিতে অসাধারাণ কিছু মনে হবে না দেখলে। চিরায়ত বাঙালি চেহারা, আলাদা কোন বিশেষত্ব চোখে মুখে নেই। কিন্তু যে কেউ একটু কথা বললেই বুঝবেন যে সাধারণ এই লোকটির মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অমিত শক্তির স্ফুরণ। একসময় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দেশ-মাতৃকাকে মুক্ত করেছেন না-পাক বাহিনীর হাত থেকে। তো এই লোকটি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত করার সম্মুখ যোদ্ধা হবেন না তো কে হবেন?১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে এক রফিক পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়ে একুশে ফেব্রুয়া্রিকে অমর করেছিলেন। তার ৪৬ বছর পরে আরেকজন রফিক সুদূর কানাডায় বসে আরেক দুঃসাহসী কাজ করে ফেললেন ।১) ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারী রফিক জাতিসংঘের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারী কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে রফিক ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে কফি আনানকে প্রস্তাব করেন ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’হিসেবে যেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।২) সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের (যিনি একজন সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত) নজরে এ চিঠিটি আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন।৩) সেই উপদেশ মোতাবেক রফিক তার সহযোদ্ধা আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড” নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজীভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিজভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড”-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন, এবং চিঠির একটি কপি ইউএনওর ক্যানাডিয়ান এম্বাসেডর ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করেন।৪) এর মধ্যে একটি বছর পার হয়ে গেলো। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাসান ফেরদৌস সাহেব রফিক এবং সালামকে উপদেশ দেন ইউনেস্কোর ভাষা বিভাগের জোশেফ পডের সাথে দেখা করতে। তারা জোশেফের সাথে দেখা করার পর জোশেফ তাদের উপদেশ দেন ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করতে। এই আনা মারিয়া নামের এই ভদ্রমহিলাকে আমরা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করবো, কারণ এই ভদ্রমহিলাই রফিক-সালামের কাজকে অনেক সহজ করে দেন। আনা মারিয়া রফিক-সালামের কথা মন দিয়ে শোনেন এবং তারপর পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫ টি সদস্য দেশ – ক্যানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হতে হবে।৫) সে সময় বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী এম এ সাদেক এবং শিক্ষা সচিব কাজী রকিবুদ্দিন, অধ্যাপক কফিলউদ্দিন আহমেদ, মশিউর রহমান (প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারিয়েটের তৎকালীন ডিরেক্টর), সৈয়দ মোজাম্মেল আলি (ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত), ইকতিয়ার চৌধুরী (কাউন্সিলর), তোজাম্মেল হক (ইউনেস্কোর সেক্রেটারি জেনেরালের শীর্ষ উপদেষ্টা) সহ অন্য অনেকেই জড়িত হয়ে পড়েন।তারা দিন রাত ধরে পরিশ্রম করেন আরো ২৯ টি দেশকে প্রস্তাবটির স্বপক্ষে সমর্থন আদায়ে। অন্যান্য বাংলাদেশী এবং প্রবাসীদের কাছে ব্যাপারটা অগোচরেই ছিল- পর্দার অন্তরালে কি দুঃসাহসিক নাটক চলছিলো সে সময়। এই উচ্চাভিলাসী প্রজেক্টের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এবং ক্যানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরের জনা কয়েক লোক কেবল ব্যাপারটা জানেন, এবং বুকে আশা নিয়ে তারা সেসময় স্বপ্নের জাল বুনে চলেছেন প্রতিদিন।৬) ১৯৯৯ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বর। ইউনেস্কোর প্রস্তাব উত্থাপনের শেষ দিন। এখনো প্রস্তাব এসে পৌঁছায়নি। ওদিকে রফিক সালামেরা ব্যাপারটি নিয়ে বিনিদ্র রজনী অতিক্রম করে চলেছেন। টেলিফোনের সামনে বসে আছেন, কখনো চোখ রাখছেন ইমেইলে। আসলে প্রস্তাবটির পেছনে প্রধাণমন্ত্রীর একটি সই বাকি ছিলো। আর প্রধানমন্ত্রী তখন পার্লামেন্টে। পার্লামেন্টের সময়সূচীর পরে সই করতে করতে প্রস্তাব উত্থাপনের সময়সীমা পার হয়ে যাবে। সেটা আর সময় মত ইউনেস্কো পৌঁছুবে না। সব পরিশ্রম জলেই যাবে বোধ হয়।৭) প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে অনুরোধ করা হলো তিনি যেন প্রস্তাবটি সই করে ফ্যাক্স করে দেন ইউনেস্কোর দপ্তরে। অফিসের সময়সীমা শেষ হবার মাত্র একঘণ্টা আগে ফ্যাক্সবার্তা ইউনেস্কোর অফিসে এসে পৌঁছুলো।৮) ১৬ই নভেম্বর কোন এক অজ্ঞাত কারণে (সময়াভাবে ?) বহুল প্রতাশিত প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সভায় উত্থাপন করা হলো না। রফিক সালামেরা আরো একটি হতাশ দিন পার করলেন।৯) পর দিন – ১৭ই নভেম্বর, ১৯৯৯। এক ঐতিহাসিক দিন। প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো সভার প্রথমেই। ১৮৮ টি দেশ এতে সাথে সাথেই সমর্থন জানালো। কোন দেশই এর বিরোধিতা করলোনা, এমনকি খোদ পাকিস্তানও নয়। সর্বসম্মতিক্রমে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গৃহীত হলো ইউনেস্কোর সভায়।এভাবেই একুশে ফেব্রুয়ারি একটি আন্তর্জাতিক দিনে পরিণত হলো। কিন্তু এতো কিছুর পরেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল উদ্যোক্তা রফিক এবং সালাম সবার কাছে অচেনাই রয়ে গেলেন। তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা আর পরিশ্রম অজ্ঞাতই থেকে গেল। কেউ জানলো না কি নিঃসীম উৎকন্ঠা আর আশায় পার করেছিলেন তারা ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসের শেষ ক’টি বিনিদ্র রজনী। কেউ জানলো না, কিভাবে সমর্থন যুগে চলেছিলেন তাদের স্ত্রী, পরিবার, এবং কাছের বন্ধু বান্ধবেরা। কত অজ্ঞাতকূলশীলেরাই বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক পেয়ে যান এই অভাগার দেশে আর রফিক সালামেরা উপেক্ষিতই থেকে যান।[সূত্র: মুক্তমনা, লেখক: অভিজিৎ]বলতে গেলে বাংলাদেশের মানুষের সবার অগোেচেরই অত্যন্ত নিরবেই চলে গেলেন এই বীর সেনানী রফিকুল ইসলাম। কয়েক দিন ধরে রফিকুল ইসলামের সর্বশেষ খবরাখবর নিয়মিত জানাচ্ছিলেন কানাডা প্রবাসী কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। দুলাল ভাইয়ের আজকে ফেইসবুকে স্টাটাস ছিল এরকম-''আজ সকালে ভ্যাঙ্কুভার হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে পরাজিত হয়ে চির বিদায় নিয়ে চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার রফিকুল ইসলাম।---------------------------আমরা জাতি হিসেবে কি বেঈমান? আমাদের কি কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ নেই! দেশ ও জাতি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মানুষটির একটি বারও কেউ খোঁজ-খবর নিলো না!''আমরা কি সত্যিই একটা অভাগা জাতি? রাষ্ট্রীয়ভাবে রফিকুল ইসলামের পাশে কেউ দাঁড়ানোর ছিল না? আমাদের স্মার্ট ব্যস্ততম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি কি করেছেন এই সময়ে? আজ হয়তো উনি মন্ত্রীসভায়ও নেই। ওনার স্থলাভিসিক্ত হচ্ছেন এ এইচ মাহমুদ আলী। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এখন উচিত হবে রফিকুল ইসলামকে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানে শেষ শ্রদ্ধা জানানো। আমি অভিজিৎ-এর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হয়ে দাবী করছি যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা সদ্য প্রয়াত রফিকুল ইসলাম ও কানাডা প্রবাসী আবদুস সালামকে ভাষা সৈনিকের একুশে পদক প্রদান করা হোক। রফিকুল ইসলামরা যুগে যুগে জন্ম নেবে আর এভাবে নিরবে আমাদের কাঁদিয়ে রাষ্ট্রের অগোচরেই চলে যাবে, আর রাষ্ট্রের সেখানে কিছুই করার থাকবে না, এটা মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়। রফিকুল ইসলামের আত্মা শান্তি পাবে যদি বাংলাদেশ তাঁকে হৃদয়ে ধারণ করে। আসুন, সবাই রফিকুল ইসলামের পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাই। রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের গর্ব। আমরা তাঁকে আমাদের স্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, ততোদিন রফিকুল ইসলামকে আমাদের স্মরণ করা দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। জয়তু রফিকুল ইসলাম। জয়তু আবদুস সালাম।
false
rg
ওরে সুন্দরবন আজ থেকে তোর কপাল পুড়ল!!! ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানমোহন সিং রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিবেশগত দিকটির সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী'র পরিবেশগত দিকটির এই আশংকার বিষয় থেকেও এটি এখন সুস্পষ্ট যে, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের জন্য হুমকি বয়ে আনবে। আর সেই হুমকির প্রধান টার্গেট হবে সুন্দরবন। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে হাজার হাজার টন কয়লা আসবে, তা কোন পথে আসবে? সুন্দরবনের পেটের ভেতর থেকে। সেই জাহাজগুলোর শব্দে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে কেমন প্রভাব পড়বে? বনের পশুপাখিরা একটু ভয় পাবে। পাখিরা আকাশে উড়ে ভয়ে চিৎকার করবে। আর কি হবে? কয়লা ওঠানামা করার সময় সামান্য কিছু ডাস্ট নদীর পানিতে পড়বে। সেই সামান্য কয়লা নদীর পানিতে মিশে কি হবে? সামান্য পানি নষ্ট হবে। সেই নষ্ট পানি খাইলে কি হবে? কিছু বন্যপ্রাণী মারা যাবে। আর কি হবে? কিছু মাছ মারা যাবে। আর কি হবে? কিছু সাপ কোপ জন্তু জানোয়ার মারা যাবে। আর কি হবে? কিছু গাছপালা মারা যাবে। আর কি হবে? কিছু পাখি মারা যাবে। আর কি হবে? কিছু মানুষের পেটের পিড়া হবে। আর কি হবে? কিছু মানুষও মারা যাবে। আর কি হবে? কিছু বন মারা যাবে। আর কি হবে? আরো কিছু কিছু মারা যাবার আশংকা হবে? সেই আরো কিছু কি কি? ধরেন, সুন্দরবন মারা যাবে। বনের পশুপাখি মারা যাবে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মারা যাবে। মাছ মারা যাবে। কিন্তু ভাই তারা মারা যেতে যেতে প্রায় ৩০-৪০ বছর লাগবে। এই ৩০-৪০ বছরে ওখানে আর কি কি হবে? ধরেন, নতুন কিছু শিল্প কারখানা হবে। সেখানে কিছু লোক চাকরি পাবে। সেই শিল্পের পন্য বিদেশে রপ্তানি হবে। কিছু টাকা আসবে। সেই টাকা যাবে শিল্পের মালিকের পকেটে। আর কি কি হবে? ধরেন, যারা এখন মাছ মারে তারা তখন ওই কারখানায় ঘুরবে কাজের জন্য। এখন যারা গোলপাতা কাটে, তখন তারা কয়লার বস্তা ওঠানামা করাবে। এখন যারা মধু সংগ্রহ করে, তারা হয়তো কযলার তলানি সংগ্রহ করবে। বলা তো যায় না সেই কয়লার তলানি কোন রঙের কাজে লাগে। আর কি কি হবে? আরে ভাই, আপনি তো ভারী নাচ্ছোর বান্দা! আর কি কি হবে? রামপালের শিল্প-কলকারখানায় বিদ্যুৎ আসবে। সুন্দরবনের ভেতরেও লাইট আসবে। আর রামপালের গ্রামে কি বিদ্যুৎ যাবে? আরে ভাই আপনি আছেন গ্রাম নিয়া। আপনে একটা গাঁইয়া। গ্রামে বিদ্যুৎ গেলে বা কি আর না গেলে বা কি? আর কি কি হবে? কিছু লোকের পয়সা হবে। কিছু লোকের টাকা হবে। অনেক টাকা। বিদ্যুতের আলোর মত চকচকা টাকা। আর কি হবে? আরে ভাই, আর কি হবে আপনে জানেন না? আমনের সুন্দরবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন কি হবে? আরে ভাই তখন কি হবে, খোদা জানেন। ঝড়-বন্যা-সাইক্লোন? এসব কি হবে? হইলে হবে। ঝড়-বন্যা-সাইক্লোন এখন বুঝি হয় না? আরে ভাই, তাইলে সুন্দরবনের কাম কি? ওই জঙ্গল পুষে এতো দিন কি লাভ হইল? খাঁড়ান, একটু মুইতা আসি। আমনের কথা চিন্তা কইরা উত্তর দেওন লাগবে...হে হে হে... সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৫৭
false
ij
ধস! এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে চলছে নিদারুন অর্থনৈতিক মন্দা। দেশে দেশে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ডাউনসাইজ অর্থাৎ কর্মী ছাঁটাই চলছে। সে হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও সেরকম পর্যায়ে না গেলেও রপ্তানীনির্ভর প্রতিষ্ঠানে আশঙ্কা রয়েছে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের । এইরকম সম্ভাবনার মুখে এদেশেরই পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত আমার পরিচিত এক যুবকের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অনুমান করে বিমর্ষ বোধ করছি। মাসুম; আমার এক ছোট ভাই- বেশ ক’বছর ধরে একটা বায়িং হাউজে আছে; ভারি পরিশ্রম করে ছেলেটা-ফ্ল্যাটে ফিরতে ফিরতে প্রায়ই রাত হয়ে যায়- এ নিয়ে ওর বউয়ের অনেক অনুযোগ। আমাকে সময় দেয় না। ১৬ ডিসেম্বর সেজেগুজে বসে আছি-ওমা, অফিস থেকে ফোন এল। আর, সঙ্গে সঙ্গে আমার বরের দৌড় যদি দেখতেন। কী করব? মাসুম কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে-শিপমেন্ট আর শিপমেন্ট ...বলে সিগারেটে টান দেয়। ভারি ব্যস্ত সে-তারপরও সময় পেলে আমার ঘরে আসে-সিগারেট টানে-ক্লান্ত বিধ্বস্ত মুখ; এক সময় গান গাইত; এখন ওসব গেছে! সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে -একটা মেয়ে হয়েছে; চৌদ্দ মাস বয়েস। মাসুম ওর বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকে। নইলে সে যে বেতন পায় তাতে বাড়ি ভাড়া দিয়ে এ শহরে থাকাই যে সম্ভব না; ঢাকায় তো আর নিজস্ব বাড়ি নেই-ক’জনের থাকে। ওর ভাইটাও ভারি ভালো মানুষ, ভাবীটাও যেন মাটি দিয়ে গড়া। মাসুমের নতুন বউ- অ্যাডজাস্ট করে নিচ্ছে জয়েন্ট ফ্যামিলিতে। তবে কয়েকমাস আগে মাসুমকে ওর বউ বলল-গরমে বাচ্চাটার সাঙ্ঘাতিক কষ্ট হচ্ছে- ঘরে একটা এসি লাগাও। মাসুম কিছুটা অবাক হয়ে বলল, ফ্যান আছে, একুশ তলার উপরে ফ্ল্যাট ... ভাবীদের ঘরে এসি আছে। ভাবীদের বাচ্চার তো আর কষ্ট হয় না ... মাসুমের বউয়ের কন্ঠস্বর ভারি হয়ে উঠতে থাকে। যা হোক। হাতে টাকা না-থাকলেও মাসুম তার বউয়ের বায়না কোনওভাবেই এড়িয়ে যেতে পারল না। লোনটোন করে কোনওমতে ঘরে একটা হাইয়ার স্পি­ট এসি বসালো। ইলেকট্রিক বিলও বাড়ল। ওদিকে বেতন বাড়ছে না। গাধার খাটুনি। খালি বলে: চাকরি ছেড়ে দেব। চাকরি ছেড়ে দেব। চাকরি আর ছাড়া হয় না। ওর কন্ঠে তিক্তটা ঠিকই টের পাই আমি। আমার ঘরে এসে বসে থাকে। চুপচাপ সিগারেটে টান দেয়। বলে-সিলেটে একটা সুন্দর জায়গা আছে। যাব। এই কথাটা প্রায়ই বলে মাসুম। আমি সতর্কভাবে জিজ্ঞেস করি- একা? হ্যাঁ। একা। তো, সিলেটের সেই সুন্দর জায়গায় মাসুমের আর যাওয়া হয় না। শিপমেন্ট আর শিপমেন্ট ... আমি জিজ্ঞেস করি-বউ আলাদা হতে চায়? না। এখনও এ দিক থেকে ভালো আছি। মিথ্যে কথা। এ যুগে কে জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকতে চায়। বিয়ের আগে হয়তো বলেছিল-কয়েকটা মাস ... খবরের কাগজজুড়ে কেবলি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা আর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা । তার কিছু নেতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে দেশিয় অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। যেমন-চামড়া শিল্পে। গেলবার কুরবানী ঈদের সময় দেখলাম পাড়ার পোলাপানের মুখ কালো- ট্যানারিতে চামড়া বিক্রি করে নাকি লাভ হয়নি। ট্যানারিঅলারা বলে-বিদেশ থন অডার নাই-বেশি দাম দিমু কেমতে? তাই তো। অর্থনীতিবিদদের ধারণা- বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অচিরেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্পেও ব্যাপক ধস নামতে পারে। অনেক শিপমেন্ট ক্যানসেল হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী তাতে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মাসুমের শ্যামলা মুখটা মনে পড়ল। চোখের সামনে কি দেখব একটা ধস? মাসুমের ধস? অনেক কষ্টে মাসুম বায়িং হাউজে জবটা পেয়েছে-মাসে তিরিশ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্দিত্ব বরণ করেছে; সেই বেতনের উপর নির্ভর করে বিয়ে করেছে-একটা মেয়েও হয়েছে। মাসুমের বউয়ের একটাই অনুযোগ -ও এত ব্যস্ত - আমাকে সময় দেয় না। দুটো ঈদে খালি ছুটি পায়। এইই। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে মাসুমের বউয়ের কোনওরুপ ধারণা আছে কিনা বলতে পারছি না। থাকার কথা নয়। মনে মনে বলি: মাসুমের এই ব্যস্ততাটুকু থাক- বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা আরও তীব্র হয়ে উঠলে মাসুমের চাকরিটা নাও থাকতে পারে। তখন ওর অখন্ড অবসর ... তখন তো ওর বিরুদ্ধে আর এই অভিযোগ থাকবে না। তখন? আমি কি চোখের সামনে একটা ধস দেখতে যাচ্ছি? মাসুমের ধস? সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৫৫
false
fe
ঐক্যের পথে যে সব অন্তরায় ঐক্যের পথে যে সব অন্তরায়ফকির ইলিয়াস========================================== মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে ঐক্যের অন্তরায় কারা তৈরি করছে, কেন করছেÑ তা ভাবা খুব জরুরি। সিলেটে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে আহত করা হয়েছে। কারা করেছে? কেন করেছে? এই ঘটনায় সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করা হয়েছে। এর অর্থ কী দাঁড়ায়? নিশ্চয়ই কেউ এই কাজটি করেছে- যারা ছাত্রলীগের সঙ্গে আছে। নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকমাস বাকি। এই সময়ে এমন কাজগুলো কী বার্তা বহন করছে? দেশ আবার উত্তাল হয়েছে উঠেছে প্রজন্মের উচ্ছ্বাসে। একাত্তরের নরঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয়েছে আপিল আদালতে। দেশে গণজাগরণের এই যে ফসল, তা সমৃদ্ধ করেছে গণমানুষের মানসকে। এই সময়ে ঐক্য ধরে রাখা যেখানে জরুরি সেখানে কিছু লোক সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে খুব ন্যক্কারজনকভাবে। অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই সরকারি পেশিতন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার কি করেছে বিএনপি। এই সেই বেগম জিয়া যিনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি কোনোদিনই বাংলাদেশে করতে দেয়া হবে না। ‘শিশু’ ও ‘পাগল’ ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ নয়। ইত্যাদি ইত্যাদি। তার প্ররোচনায় ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০১-এ যখন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বিচারপতি লতিফুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও কোনো ছলাকলার আশ্রয় নেয়নি। অষ্টম জাতীয় সংসদে চারদলীয় জোট জিতে। কিন্তু অষ্টম জাতীয় সংসদের শেষ দিনগুলোতে কী দেখলো বাংলার মানুষ? হাওয়া ভবনের নেপথ্য নায়করা ক্রীড়নকের দায়িত্ব নিলেন। তারা অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করে শেষ পর্যন্ত ‘সাংবিধানিক দোহাই’ দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকেই তত্ত্বাবধায়কের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলেন। তারপর ঘটে গেলো আরো অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা। এর নেপথ্য ইচ্ছেটি ছিল, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে স্থায়ী রূপলাভ দেয়া। বাংলাদেশে ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ খ্যাতি পেয়েছিল এই হাওয়া ভবনধারীরা। বাংলাদেশে শুদ্ধ ও ঐক্যের রাজনীতির চর্চার খুবই অভাব। তারপর আবার যদি রাজনীতিকরাই প্রকাশ্যে দুর্নীতিবাজদের সাফাই গাইতে থাকেন, তাহলে জনগণ দাঁড়াবে কোথায়? প্রতিহিংসার রাজনীতি সমাজকে শুধু ধ্বংসই করে না, সমাজের ভিত্তিও ক্রমশ নিঃশেষ করে দেয়। আমরা অনেক আগেই জেনেছি, খালেদা জিয়া ড. ফখরুদ্দীন আহমদ, জে. (অব.) মইন উ আহমেদের বিচার করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। একসময় তিনি শেখ হাসিনা-ইনু-মেননদের বিচারের দাবিও করবেন। কেন তার এই ক্ষোভ? ওয়ান ইলেভেন তাদের ‘স্বপ্নের চূড়া’ ধ্বংস করে দিয়েছিল বলে? বাংলাদেশের মজলুম মানুষের কোনো স্বপ্নচূড়া নেই। তাদের রয়েছে বেঁচে থেকে হেঁটে যাওয়ার ছোট্ট সড়ক। তারা সেই সড়কের দুধারেই স্বপ্নের বাগান নির্মাণ করে যান। ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা যদি সেই বাগানটির সামান্য পরিচর্যা করতেন, তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্নরকম হতো। সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান সরকার সব দাবি পূরণ করতে পারছে না। এটা তাদের অপারগতা, ব্যর্থতা। আর বিরোধী দল আগুনে ঘি ঢালছে। তাদের মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। জনসেবা নয়। তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদ নিউইয়র্কে এক সমাবেশে বলেছিলেন, বাংলাদেশ দুর্বৃত্তদের টাকা বানানোর জন্য বিশ্বের প্রধানতম দেশ! স্বয়ং স্পিকারের মুখে এ কথা কি প্রমাণ করে না, দেশের প্রকৃত অবস্থা কী! এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। গণমানুষের হাঁটার সড়ক নির্মাণে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিকদের ভ-ত্বের লেবাস খুলতে হবে প্রজন্মকেই। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা উচিত, খন্দকার মুশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের মতো মীরজাফররা সে সময় আওয়ামী লীগেই ছিল। অথচ জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে এদের প্রত্যক্ষ ম“ ছিল। ইতিহাস সে সব ঘটনার আজো সাক্ষী হয়ে আছে। এভাবেই বিশ্বাসঘাতকদের একটি মহল এখনো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে একটি বলয়ের মাঝে রেখেছে। যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রকৃত অবস্থা জানাতে চায় না কিংবা চাইছে না। রাষ্ট্রের চারপাশে যখন সম্মিলিত পাপ দানা বাঁধে তখন তা প্রতিহত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই ক্ষণে এসব হায়েনাচক্র নীরব থাকবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা মরণ কামড় মারতেই পারে। তাই সবদিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রে যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে পরিশুদ্ধ হাতে। বাংলাদেশে ভোগবাদী মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ত্যাগী মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই যে ত্যাগী মানুষেরা, তারা কি তাদের ন্যায্য পাওনাটি পান? না, পান না। যদি পেতেন তবে এ রাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা হতো বৈষম্যহীন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার জন্যই আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন। বাংলাদেশে ভোগবাদী মানুষ ও মানসিকতার হিংস্রতা যে দিনে দিনে বাড়ছে তার সাম্প্রতিক অনেক উদাহরণ আছে। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে, অবৈধভাবে দখলের পেশিশক্তি। এই পেশিশক্তিকে ম“ দিচ্ছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিম-ল। খবরের কাগজ খুললেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গ্রুপ-উপগ্রুপের যে রক্তাক্ত মহড়া হচ্ছে তার খবর আমরা পড়ি। কিন্তু এসব মহড়ার নেপথ্য নায়করা সংযুক্ত আরো শীর্ষপর্যায়ে। তারা এতোটাই নির্ভয় যে, এসব রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সামান্য ধারও ধারে না তারা। কারণ তারা মনে করে, রাজনীতির লেবাস তাদের রক্ষা করবে। এবং সেটাই হয়। সভ্য বিশ্বে চরম দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহস না পেলেও বাংলাদেশে জঘন্য দুর্নীতিবাজরা আয়েশের সঙ্গেই সময় কাটিয়ে দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার পাশে আমরা নতুন কিছু মুখ দেখছি। এরা কারা? তাদের পুরো পরিচয় জয়ের জানা দরকার। কারণ জয় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা কীভাবে সম্ভবÑ তা জয়কেই ভাবতে হবে। উপগ্রুপ করে শুধু দলেরই ক্ষতি হবে নাÑ রাষ্ট্রের ক্ষতিই ডেকে আনা হবে। এই দেশে যদি মৌলাবাদী-জঙ্গি শক্তি ক্ষমতা পায়, তাহলে তারা কী করবে সেই ছক করে রেখেছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ যদি সেই নৃশংসতা দেখতে না চান, তবে একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিষদাঁত ভেঙে দিতেই হবে। রাষ্ট্র ও মানুষের শান্তিরক্ষার জন্য সচেতনতা খুবই জরুরি।----------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩
false
mk
মূল হোতা মেজর জিয়া! মুক্তমনা লেখক, ব্লগার অভিজিত্ রায় ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা এবং প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যা চেষ্টা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) চূড়ান্ত করেছে পুলিশ। এসব মামলায় গ্রেফতারকৃতরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছে, সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে বরখাস্তকৃত মেজর জিয়াই এসব হত্যাকাণ্ড ও হামলার পরিকল্পনাকারী। তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে এসব হত্যা ও হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, তিনটি অভিযোগপত্রেই গুরুত্বপূর্ণ আসামি হিসেবে মেজর জিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শিগগিরই অভিযোগপত্রগুলো আদালতে দাখিল করা হবে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক বর্তমানে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দায়িত্বে আছেন। তার পরিকল্পনাতেই একে একে খুন করা হয়েছে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের। স্লিপার সেল গঠন করে ব্লগারদের হত্যা করিয়েছেন তিনি।গত বছর একুশে বই মেলার কাছে জঙ্গি হামলায় নিহত হন মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অভিজিত্ রায়। একই বছরের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে নিজ প্রকাশনা অফিসে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়। তার কয়েক ঘণ্টা আগে লালমাটিয়ার আরেক প্রকাশনা অফিসে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিন জনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে মেজর জিয়া ব্লগার হত্যায় জড়িত। আমরা তাকে খুঁজছি। লেখক অভিজিত্ এবং প্রকাশক দীপন হত্যার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পুরস্কার ঘোষিত আনসার আল ইসলাম নেতা সুজন ওরফে সাদকে সমপ্রতি গ্রেফতার করেছে ডিবি। হত্যায় সরাসরি অংশ না নিলেও হত্যাকারীদের প্রশিক্ষণ এবং হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে সে। অভিজিত ও দীপন হত্যা এবং টুটুল হত্যা চেষ্টার কথা সে স্বীকার করেছে। মাদ্রাসায় পড়ার সময় কথিত এক বড় ভাই তাকে টার্গেট করে। সেই বড় ভাই তাকে জানায়, এখন ভালো করে পড়াশোনা করো, পরে যখন হিজরতের সময় হবে তখন জানানো হবে। পরে সেই হিজরতের পথে নিয়ে যায় তাকে। আর সেই বড় ভাই হলেন মেজর জিয়া।’গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মেজর জিয়ার পরিকল্পনা, পরামর্শ ও নির্দেশনায় হিযবুত তাহরীরের অনেক সদস্য নতুন করে সংগঠিত হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের জন্ম দেয়। এবিটির ৪-৫ জন করে সদস্য নিয়ে ছোট ছোট স্লিপার সেল তৈরি করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়া অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর চড়াও হয় সেই সব স্লিপার সেল। তারা ব্লগারদের নির্মমভাবে হত্যা শুরু করে। সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫০
false
rg
'ব্ল্যাকআউট' ছবি’র সিলেট শো।। রেজা ঘটক ২০০৯ সালের ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর তিন দিনের প্রথম শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখ ফিল্ম সোসাইটি। চোখ ফিল্ম সোসাইটির প্রথম শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনীতে আমারও যাবার সুযোগ হয়েছিল। টোকন ঠাকুরের নের্তৃত্বে আমাদের ফিল্ম ‘ব্ল্যাকআউট’ নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম সিলেটে। প্রদর্শনীতে তিন দিনে মোট ১৩ টি স্বল্প ও পূর্ণ্য দৈর্ঘের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। ছবিগুলো হল- ‘ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি’, ‘মানুষ কয়টা আসছে?’, ‘শিকড়’, ‘জলছাপ’, ‘পাতার নৌকা’, ‘কুমির’, ‘দুধ কয়লা’, ‘বাউল করিম’, ‘Define Bangladesh’, ‘Innocent Face’, Snore’, ‘Peace’ ও ‘Blackout’। ফিল্ম প্রদর্শনী শেষে প্রতিদিন ছিল একজন ডিরেক্টরের সঙ্গে দর্শকের মুখোমুখী অনুষ্ঠান। ২১ ডিসেম্বর দর্শকের মুখোমুখী হন নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝর, ২২ ডিসেম্বর দর্শকের মুখোমুখী হন নির্মাতা টোকন ঠাকুর এবং ২৩ ডিসেম্বর দর্শকের মুখোমুখী হন নির্মাতা শ্যামল কান্তি ধর। যদিও ফ্যাস্টিভালের নামকরণ ছিল ফার্স্ট শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল কিন্তু ফ্যাস্টিভালে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ফুললেন্থ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিল ‘ব্ল্যাকআউট’। ‘ব্ল্যাকআউট’ নিয়ে সিলেট যাবার পরিকল্পনায় যিনি প্রথম ঢাকায় সচেষ্ট ছিলেন তিনি হলেন মুভ্যিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন। ঢাকায় আমরা তখন আমাদের নতুন টেলিভিশন সিরিয়াল ’ভুলগুলি ফুলগুলি’ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। এর আগে ১১ ডিসেম্বর ২০০৯, শুক্রবার ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের ধানমণ্ডি আলমগীর কবির চলচ্চিত্র কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘দর্শকের মুখোমুখী টোকন ঠাকুর’ অনুষ্ঠানে প্রথমে ‘ব্ল্যাকআউট’-এর সর্বশেষ এডিটিং ভার্সান প্রদর্শিত হল। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর সভাপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বাদল রহমানের অসুস্থতা জনিত অনুপস্থিতির কারণে সভাপতিত্ব করেছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর সাধারণ সম্পাদক সুশীল সুত্রধর। ছবি প্রদর্শন শেষে অনুষ্ঠানে ‘ব্ল্যাকআউট’ ছবির উপর আলোচনা করেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ইমাম চৌধুরী ও বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর সাধারণ সম্পাদক সুশীল সুত্রধর। অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন মুভ্যিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ফেডারেশান অফ ফিল্ম সোসাইটি-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন। অনুষ্ঠানে ‘ব্ল্যাকআউট' নিয়ে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ‘ব্ল্যাকআউট’-এর নির্মাতা টোকন ঠাকুর। ওই অনুষ্ঠানেই মামুনের মাধ্যমে সিলেটের চোখ ফিল্ম সোসাইটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মামুন আমাদের সিলেটে ‘ব্ল্যাকআউট’ নিয়ে যাবার জন্যে অনুরোধ করলেন। যদিও সিলেটের ফিল্ম ফ্যাস্টিভালের আয়োজনটি শর্ট ফিল্ম নিয়ে, তাই নির্মাতা টোকন ঠাকুরের প্রথমে আপত্তি থাকলেও মামুনের অনুরোধ উপেক্ষা করার চেয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহে আমরা ওই ফ্যাস্টিভালে ‘ব্ল্যাকআউট’ দেখাতে রাজী হলাম। ঢাকায় তখন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেও সিলেটে যাবার জন্যে আমাদের আগ্রহকে টোকন ঠাকুর প্রথমে ভর্ৎসনা করলেও পরে একটা শর্তে নিমরাজী হলেন। শর্ত হল চলমান প্রডাকশনের কোনো ধরনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকটা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেলেই কেবল আমরা ২১ তারিখ সকাল ৭টায় কমলাপুর থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ধরবো। আর ২২ তারিখ ‘ব্ল্যাকআউট’ প্রদর্শন শেষে ওই রাতেই ঢাকায় ফিরবো। ১১ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত সিলেট পর্বের সকল ঝামেলা সামলানোর দায়িত্ব নিলেন স্বয়ং মামুন। ২০ ডিসেম্বর রাতেও আমরা জানি না সিলেট যাওয়া হচ্ছে কিনা? রাত একটায় মামুন ফোন করে জানালো পারাবাত এক্সপ্রেসে ৩টা টিকিটি কাটা হয়েছে। সকাল সাত টায় কমলাপুর থাকতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সারা রাত চলমান প্রডাকশানের কাজ করে সিলেটে যাবার ট্রেনে ঘুমিয়ে নেবো। সকাল ছয়টায় আমরা চলমান প্রডাকশানের কাজ স্টপ রেখে সাড়ে ছয়টায় কমলাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের দলে তখন ‘ব্ল্যাকআউট’-এর নির্মাতা টোকন ঠাকুর, ‘ব্ল্যাকআউট’-এর এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টার রেজা ঘটক, ‘ব্ল্যাকআউট’-এর এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টার জন রোমেল, চলমান প্রডাকশনের শিক্ষানবিশ এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টার ডিজি শাকিল ও চলমান প্রডাকশনের শিক্ষানবিশ এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টার ইমন। মামুনের কাছে তিনটা টিকেট। আমাদের আরো তিনটা টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। মামুন বাসা থেকে সরাসরি কমলাপুর যাবে। আমরা কমলাপুর পৌঁছালাম সাতটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে। মামুনের দেখা নাই। মামুন জানালো কারওয়ান বাজার ক্রস করছে। মামুন অবশ্য ট্যাক্সি নিয়ে আসছে। সকালে ঢাকার রাস্তা ফাঁকা থাকে সেটাই ভরসা। কমলাপুর টিকেট কাউন্টার থেকে আমাদের জানালো আপনাদের লোক না আসলেও ট্রেন ঠিক সাতটায় সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। আপনারা টিকেট নিলে নেন, না নিলে বাড়ি চলে যান। কথা ফাইনাল। আমরা কাউন্টার বন্ধ করছি। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সাতটা। মামুনের দেখা নাই। সো, সিলেট যাওয়া হচ্ছে না। ঢাকার ট্রেন কি ঠিক টাইমে স্টেশান ছাড়ে? আমাদের দুর্ভাগ্য ২১ ডিসেম্বর ২০০৯ সকাল সাতটায় পারাবাত এক্সপ্রেস একেবারে পাংকুচয়াল। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আমরা হতাশ হয়ে নাস্তা করা যায় কোথায় তাই ভাবছি। ওই সময় পেছন থেকে মামুনের চিৎকার। আইসা পরছি ভাইজান!এখন উপায়? টিকেট কাউন্টার বন্ধ। ওনারা বললেন, ট্রেনে টিকেট কাটতে পারবেন। যেতে চাইলে দৌড়ে ট্রেনে ওঠেন। তারপর আমরা সবাই এক একজন জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট। আমরা সবাই বাংলাদশের শাহ আলম। আমরা সবাই আমেরিকার টাইসন গে। পারাবাত এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌঁড়াচ্ছি কমলাপুর স্টেশান প্লাটফরমে। গোটা স্টেশানের মানুষ আমাদের বিখ্যাত দৌড় দেখে রীতিমত থ। কেউ কেউ আমাদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করল, ‘পাগল’। স্টেশান যেখানে শেষ ঠিক তার আগেই আমরা পারাবাতের দরজায় একজন একজন করে বাঁদুরের মত ঝুললাম। ট্রেনের লাস্ট বগির লাস্ট দরজায় টোকন ঠাকুর আর মামুন, তারপরের দরজায় রোমেল আর আমি, আর তারপরের বগির লাস্ট দরজায় শাকিল আর ইমন। ট্রেন ছুটছে আমরা দরজায় বাঁদুর ঝোলা ঝুলে আছি। আমাকে এক ঝটকায় ট্রেনের ভেতর টেনে তুললো রোমেল। টোকন ঠাকুরকে টেনে তুললো মামুন। শাকিল আর ইমন তো চড়ুই পাখি। নিজেরাই ট্রেনের ভেতর উঠে পড়লো। এবার আমাদের কোন বগিতে আসন তা খোঁজার পালা। আমরা ট্রেনে উঠতে পেরেছিলাম একেবারে লাস্ট বগিতে। আর আমাদের টিকেট অনুযায়ী আসন মাঝামাঝি 'ছ' নাম্বার বগিতে। ট্রেনের দোলায় দোল খেয়ে খেয়ে আমরা আমাদের আসন খুঁজে পেলাম। কিন্তু তিনজনের টিকেট নেই। এখন উপায়? ইতোমধ্যে মামুনের মাধ্যমে ট্রেনের টিটি জেনে গেলেন আমরা সবাই ফিল্মের মানুষ। তারা সবাই আমাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়ে গেল। ট্রেনের কয়েকজন টিটি এসে আমাদের সঙ্গে ছবি তুললেন। আমরা চা খুঁজতে ট্রেনের ক্যান্টিনে গেলাম। সেখানেও ফিল্মের মানুষ হওয়ায় আলাদা খাতির যত্ন। ট্রেনে উঠেই বুঝলাম সিলেটে আমাদের জন্যে আরো অনেক বড় খাতির যত্ন অপেক্ষা করছে। তারপর যে যার মতো একটু ঘুম দিলাম। আমাদের ‘ব্ল্যাকআউট’-এর স্টিল ফটোগ্রাফার রিচার্ড রোজারিও সিলেট দলে না থাকায় ক্যামেরা চালানোর দায়িত্ব আমার কাঁধে পরলো। কে কিভাবে ঘুমালো, কে কিভাবে ঘুরলো, কে কিভাবে লম্ফঝম্ফ করলো সব ধরা পরলো ঝন্টু যোগী’র কাছ থেকে ধার করা আমার হাতের ক্যামেরায়। আমরা সিলেট পৌঁছালাম বেলা তিনটায়। স্টেশানে আমাদের নিতে আসলো চোখ ফিল্ম সোসাইটি’র সভাপতি মামরুল ইসলাম রাকিব আর সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান। তিনটা সিএনজি ভাড়া করে আমরা সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। তার আগে অবশ্য স্টেশানে আমরা অনেক ছবি তুললাম। পূণ্যভূমি সিলেটে ওটাই যে আমাদের প্রথম পা রাখা। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে আমরা যখন ক্যাম্পাসে ঢুকলাম তখন আবিষ্কার হল কারো কাছেই রোমেলের সঙ্গে থাকা গিটারটি নেই। গিটার হারিয়ে রোমেল অনেকটা পোটকা মাছ পেটের হাওয়া ছেড়ে যেমন গুটিয়ে যায় তেমনি চুপষে গেলো রোমেল। টোকন ঠাকুর শাকিল আর ইমনকে একটু বকাঝকা করলেন। রোমেল ঠাকুরকে থামালো। বললো- দাদা, গিটার ঢাকায় গিয়ে আবার কেনা যাবে। আমরা আনন্দ করতে আসছি, সবাই ডু স্ফূর্তি। গিটারের কথা ভুলে যান। আমরা সবাই গিটার হারানোর বিষয়টি সহজে ভুলতে পারছিলাম না। যখনই মনে পড়ছে তখনই শাকিল আর ইমনের দিকে সবার বাঁকা নজর। ওরাই সিএনজিতে গিটার রেখে বেরিয়ে এসেছিল। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে চোখ ফিল্ম সোসাইটি’র রাকিব, ইমরান, মুরাদ, বাবু, সোহেল, কিরণ, টুটুল, সামি, বাদল, সুজনরা আমাদের নিয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয় রেস্ট হাউজে। সেখানেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা। প্রত্যেক রুমে দুটো করে খাট। ১ নাম্বার রুমে শাকিল আর ইমন ঢুকে পরলো সবার আগে। ২ নাম্বার রুমে ঢুকলো রোমেল আর মামুন। ৩ নাম্বার রুমে ঢুকলাম ঠাকুর আর আমি। আমরা হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হতেই কিরণরা আমাদের নিয়ে গেল রেস্ট হাউজের ডায়েনিং রুমে। বিশাল দোতলা রেস্ট হাউজ। বিশাল ডায়েনিং রুম। বিশাল ডায়েনিং টেবিল। খুব পরিচ্ছন্ন রেস্ট হাউজ। রাকিবরা জানালো, ভিসি স্যার প্রথম এই রেস্ট হাউজে উঠেছিলেন। সকল নতুন টিচার এখানে এসে প্রথম এই রেস্ট হাউজে ওঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো ধরনের অতিথিদের জন্য এই রেস্ট হাউজ সব সময় উন্মুক্ত। রেস্ট হাউজের পাশেই পাহাড়ের টিলার উপরে ভিসি স্যারের সরকারি বাসভবন। সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুব সুন্দর। অনেক খোলামেলা। বিশাল ক্যাম্পাস। সিলেট শহর থেকে বাইরে। মূল ক্যাম্পাসের মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস, টিচার কোয়ার্টার এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাসা। ক্যাম্পাসের একেবারে পেছনে উত্তর-পশ্চিমের দিকে পাহাড়ের উপরে নৈসর্গিক এক ম্যান মেড সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। বাংলাদশে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর এবং পরিকল্পিত শহীদ মিনারটি নিঃসন্দেহে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসের সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রও এই শহীদ মিনার। গোটা বিকাল আমরা শহীদ মিনারের ছায়া শীতল পাহাড়ি পরিবেশে পাখির কুঞ্জনে সবার গুঞ্জনে শান্তির নিরিবিলি আবেশে ভারী বিভোর ছিলাম। সন্ধ্যা ছয়টায় ফিল্ম প্রদর্শনী শুরু হল। ভাইস চ্যাঞ্চেলর প্রফেসর গাজী সালেহউদ্দীন তিন দিনের ফিল্ম প্রদর্শনীর শুভ উদ্ভোধন করেন। ‘Define Bangladesh’ শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী দিয়ে শুরু হল ফার্স্ট শর্ট ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল। এরপর একে একে সেদিন প্রদর্শিত হয় ‘ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি’, ‘Innocent Face’, ‘মানুষ কয়টা আসছে?’। এরপর রাত সাড়ে দশটায় দর্শকের মুখোমুখী হন নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝর। উৎসুক দর্শকদরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নির্ঝর ভাই। তারপর আবার সবাই চলে যাই রেস্ট হাউজে রাতের ডিনারের জন্য। ডিনারের পর নির্ঝর ভাইয়ের ল্যাপটপে আমরা দেখে ফেলি তাঁর বহুল আলোচিত ছবি ‘আহা’। ‘আহা’ নির্মাণ পর্বের নানা ঘটনার স্টিল ফটোগ্রাফস দেখা আর জাম্পিস আড্ডা চলে শেষরাত পর্যন্ত। সূর্য উঠতে কত দেরী, মাধুকরী? সূর্য উঠতে না উঠতেই ক্যামেরা নিয়ে আমি আর ঠাকুর বেড়িয়ে যাই গোটা ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখার জন্যে। আমাদের টিমের সবাই ঘুমোচ্ছে আর আমরা গোটা ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছি। শাহ পরাণ হল, দ্বিতীয় ছাত্র হল ঘুরে ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে পাহাড়ের টিলা ভেঙ্গে চিকিৎসা কেন্দ্রের সামনে চা পান। আবার এলোমেলা ঘোরাঘুরি আবার চায়ের দোকানে ঢু। এভাবে সকাল নয়টা। আমরা তখন চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে আমরা সবার কাছে ফিল্মের মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছি। যারাই আমাদের দেখছে তারাই আমাদের সঙ্গে ছবি তুলছে। এরমধ্যে এক ছেলে এসে আমাকে বললো, ভাই, আপনাদের এক লোক খুঁজছে? জানতে চাইলাম, কোথায়? ছেলেটি বললো, ওই খানে বাসে আছে। ছেলেটির সঙ্গে সেখানে গিয়ে দেখি, লোকটিকে আমার পরিচিত মনে হল না। দু’এক কথায় লোকটি জানালো, গতকাল আপনারা আমার সিএনজিতে একটা গিটার ফেলে গেছেন। আজ আমি কাজে না গিয়ে আপনাদের খুঁজতে বের হলাম। ঠাকুরকে ডাকলাম। সিএনজি ড্রাইভার সেদিন আমাদের কারণে কাজ বন্ধ রেখে রোমেলের গিটার নিয়ে শাহজালাল ক্যাম্পাসে হাজির হলেন। সঙ্গে তার বউ। তাদের সঙ্গে আমরা ছবি তুললাম। চা খেলাম। রোমেলকে ফোন করে চায়ের দোকানে আসতে বললাম। রোমেল এসে দেখে তার গিটারে ঠাকুর টুং টাং করছেন। ব্যাপার কী? তারপর লোকটিকে জড়িয়ে ধরে রোমেল প্রায় কেঁদে ফেললো। সকল মূহূর্তের ছবি আমি ক্যামেরাবন্দী করলাম। আমরা গিটার পেয়ে আবার রেস্ট হাউজে ফিরে এসে গা গোসল করলাম। তারপর নাস্তা খেয়ে ক্যাম্পাসে সবাই মিলে এলোমেলো ঘোরাঘুরি। রোমেল গিটার পেয়ে গিটার নিয়েই চায়ের দোকানের সামনে ছোটখাটো জটলা পাকিয়ে ফেললো। ইমন বেঞ্চে তাল বাজালো। আহা হারানো গিটার ফিরে পেয়ে রোমেল যেনো নতুন আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠলো। আমরা ঘুরে ঘুরে গোটা ক্যাম্পাসে তুমুল আড্ডা দিলাম। আমাদের ইচ্ছে ক্যাফেটেরিয়ায় লান্স করে সরাসরি রেস্ট হাউজে ফিরে একটু রেস্ট নেব। কারণ, সন্ধ্যায় ‘ব্ল্যাকআউট’-এর শো। গতকাল নতুন অডিটোরিয়ামে ফিল্ম শো হয়েছিল। সাউন্ড নিয়ে আমাদের খুব খুঁতখুঁত ছিল। আমরা রেস্ট না নিয়ে আবার অডিটোরিয়ামে গেলাম সাউন্ড টেস্ট করতে। না, এখানে ‘ব্ল্যাকআউট’ শো করলে দর্শকদের খুব একটা সুবিধা হবে না। আমরা ভিসি স্যারকে রিকোয়েস্ট করলাম। এর আগে ইমরানদের কাছে শুনেছিলাম, টিচার্স কাউন্সিল অডিটোরিয়ামের সাউন্ড সিস্টেম অনেক ভালো। আমরা ভিসি স্যারকে অনুরোধ করলাম, অন্তঃত ‘ব্ল্যাকআউট’ শো-টা যেনো সেখানে আয়োজন করা হয়। সে অনুযায়ী নতুন করে আবার ভেনু বদল করে ‘ব্ল্যাকআউট’-এর জন্য সেখানে ব্যবস্থা করা হল। ছবি শুরুর আগে নির্মাতা টোকন ঠাকুর ‘ব্ল্যাকআউট’ নিয়ে ছোট্ট বক্তৃতা করলেন। একে একে আমাদের সবাইকে মঞ্চে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ঠাকুর। দর্শকদের মুহূর্মুহু করতালির মধ্যে আমরা মঞ্চ থেকে নেমে ‘ব্ল্যাকআউট’ অন করে দিলাম। দর্শকদের চোখ তখন হলের বিশাল পর্দায়। আর আমাদের চোখ অন্ধকারের দর্শকদের চোখে মুখে কী যেনো খুঁজে ফিরলো। ছবি শেষ হতেই সবাই উচ্চারণ করলো 'আর্ট ইজ গুড ফুড'। লাস্ট ডায়লগ অব ব্ল্যাকআউট। দর্শকদের ‘ব্ল্যাকআউট’ ভালো লেগেছে এটাই আমাদের মধ্যে অনেক স্পিরিট এনে দিল। ভিসি স্যারের সঞ্চালনে মঞ্চে আবার উঠলেন ‘ব্ল্যাকআউট’-এর নির্মাতা টোকন ঠাকুর। দর্শকদের নানান কৌতুহলী প্রশ্নের জবাব শেষে হলরুম থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি রাত তখন দশটা। এর আগে সন্ধ্যায় আমাদের বন্ধু দম্পতি প্রশান্ত মৃধা আর ফারজানা সিদ্দিকা রনি প্রদর্শনী শুরু আগে তাদের বাসায় আমাদের ডিনারের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রশান্ত সিলেট মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের বাংলা’র শিক্ষক আর রনি শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি’র শিক্ষক। ওদের বাসা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মেইন গেটের ঠিক উল্টো পাশের গলিতে। প্রশান্ত আর রনি’র একমাত্র ছেলে আট বছরের তাতা। তাতা’র পছন্দ স্পাইডারম্যান। বাসায় তাতা সারাক্ষণ স্পাইডারম্যান সেজে সবাইকে নানান ভেলকি দেখাল। রাত সাড়ে দশটায় ওদের বাসায় ঢুকে প্রথম পনের মিনিট আমরা তাতা’র নানান স্পাইডারম্যানশিপ কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করলাম। তারপর রনি’র হাতের সুস্বাদু খাবারে বেজায় ভুরি ভোঁজ। রাত বারোটা নাগাদ আমরা ওদের বাসা থেকে বের হয়ে রেস্ট হাউজে গিয়ে ছটপট লাগেজ গুছিয়ে সোজা ফাজিল চিস্ত আবাসিক এলাকায় ইমরান-বাবুদের ব্যাচেলর মেসে। সারারাত সেখানে ছবি দেখা, গান শোনা, পানাহার আর আড্ডা চললো। শেষ রাতে একটা পাখির ঘুম। পাখির ঘুমে সকাল দশটা বাজল। গা গোসল দিয়ে নাস্তা খেয়ে সবাই বেরিয়ে পরলাম শাহজালাল (দ.)-এর মাজার দেখতে। চট্টগ্রাম আর সিলেট শহরকে বলা হয় মাজারের শহর। বাস্তবেও তাই দেখলাম। চট্টগ্রাম শহর আমার খুব চেনা। সিলেটে প্রথম এসেই দেখলাম এটাও চট্টগ্রামের মত মাজারের শহর। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে মাজার। রিক্সায় আমরা শাহজালাল (দ.)-এর মাজারে পৌঁছে এক মজার অভিজ্ঞতা হল। শাকিল আর রোমেল মোমবাতি আর মাছের খাবার কিনল। মোমবাতি জ্বালিয়ে দীঘির জলে হাজার হাজার গজার মাছকে খাবার দেওয়া শেষে আমরা কিছুক্ষণের জন্য জালালী কবুতরের ভিড়ে হারিয়ে গেলাম। ভিড় থেকে বেরিয়ে দেখি কোথাও মামুন নেই। কোথায় গেল মামুন? মামুনকে খুঁজতে আমরা মাজারের মেইন গেটে হাজির হতেই সেখানে পুলিশের ডিটেক্টটিভ ব্রাঞ্জের সদস্যরা আমাকে চ্যালেঞ্জ করলেন। তাদের বক্তব্য মাজারে ছবি তোলা নিষেধ। আমাদের রিক্সা পেছনের গেট দিয়ে মাজারে প্রবেশ করেছিল। আর মামুন ও ঠাকুর প্রবেশ করেছিল মেইন গেট দিয়ে। আমরা ঠাকুরকে মেইন গেটের সামনে খুঁজে পেলেও মামুনকে তখনো পাইনি। মাঝখানে পুলিশের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ শুরু হল। পুলিশের সদস্যরা জানেই না যে আমার হাতের ক্যামেরায় মাজারের অসংখ্য ছবি ইতোমধ্যেই তোলা হয়েছে। বললাম, ভাই মাজারে এসে ছবি তোলা যাবে না এমন কোন সাইনবোর্ড আমার চোখে এখনও পড়েনি। আপনারাই প্রথম এমন কথা বলছেন। তাছাড়া অনেকেই তো ছবি তুলছে। আমার ছবি তুলতে দোষ কোথায়? তক্ষুণি মামুন আগরবাতি, মোমবাতি আর কি কি সব জিনিসপত্র একটা ছোট্ট ব্যাগে নিয়ে সেখানে হাজির হল। মামুন ছদ্মবেশি পুলিশ ভাইদের বলল, ভাই আপনাদের আর কোনো কাজকাম নাই? ছবি তোলার জন্য তর্ক করতাছেন? ঠাকুর পুলিশদের অনেকটা ধমকের সুরে বললেন, আমরা আমাদের কাজ করছি, আপনারা আপনাদের কাজ করেন। কারো কাজে বাগরা দিয়েনা না। জানতাম, পুলিশ মানুষের বন্ধু। এখন অভিজ্ঞতা বলছে উল্টো। পুলিশ মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় বেতন নেয় আর মানুষকে খামাখা বিরক্ত করাই তাদের কাজ। ব্যাপার বেশি সুবিধার নয় বুঝে তারা মটর সাইকেল স্ট্যার্ট দিয়ে স্থান ত্যাগ করলো। এই পর্যায়ে মামুন বললো, মা কিছু ফরমায়েস করেছিলেন। মাজারে গেলে কি কি করতে হবে? মায়ের আদেশ পালন করছি। চলেন আমরা মাজারে যাই। মাজারের উপরে উঠলে জুতা খোলার নিয়ম। উপরে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলাও নিষেধ। মসজিদের ভেতরেও ছবি তোলা নিষেধ। আমরা জুতা খুলে সবাই দলবেধে উপরে গেলাম। মাজারের দেয়ালে একটা ছোট্ট সাইনবোর্ডে চোখ আটকে গেল। ওজু করার স্থানে সেই ছোট্ট সাইনবোর্ডে লেখা- ‘সাবধান, পকেট চোর, ছদ্মবেশী ধোকাবাজ হইতে সাবধান’। ঠাকুরকে দেখিয়ে বললাম, পকেট সাবধান! জবাবে ঠাকুর বললো, এখানেও ধোকাবাজ পকেটমার আছে? পরে আমরা গোটা মাজার ঘুরলাম। মামুন দোয়া করলো। আর আমরা খুঁজে পেলাম বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানি সাহেবের কবর। ঠাকুরের নের্তৃত্বে আমরা বঙ্গবীরকে সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার প্রদান করলাম। ক্যামেরা বের করে গার্ড অব অনারের ছবিও তুললাম। তারপর জেনারেল সাহেবকে ঘিরে অনেকক্ষণ আমরা বসে থাকলাম। ঠাকুর বললো, সিলেট আসা স্বার্থক হল। জেনারেল সাহেবকে স্যালুট করতে পারায় এখন দিলে একটু শান্তি লাগছে। পাশে শুয়ে থাকা হুমায়ন রশীদ চৌধুরী সাহেব আমাদের তারুণ্য দেখে হো হো করে হাসলেন। মাজার থেকে ফেরার পথে এক পাগল আমার হাতের ক্যামেরা দেখিয়ে বললো, ওটা দিয়ে কি করো? বললাম, ছবি তুলি। পাগল চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললো, ওটায় আমার ছবি উঠবে না? পরপর সেই পাগলের কয়েকটা ছবি তুললাম। রোমেলও সেই পাগলের সঙ্গে ক্যামেরায় পোস দিল। পরে পাগলকে দেখালাম, এটা দেখো, চিনতে পারো কিনা? জবাবে পাগল বললো, বাড়িতে গিয়ে দেখবি, কোনো ছবি নাই! মাজার থেকে ফিরে আমরা ক্যাম্পাসে খুব ঘুরলাম। আবারো শহীদ মিনারে গেলাম। শহীদ মিনারে রোমেল আর ইমন গিটার নিয়ে গান করলো। আমরা শাহ পরানের থেকে পাওয়া তামাকে ধোয়া উড়ালাম। সন্ধ্যায় বাবুদের মেসে ভুড়ি ভোঁজ শেষে আমরা খাসি পল্লীতে পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলাম। সেখানে খোলা চা বাগানের ছোট্ট রাস্তায় আমরা বেঞ্চিতে বসলাম। খাসি পল্লী’র ছোট্ট ঘরের মায়াবি জলপানে আমরা অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার উদযাপন করলাম। আর মনে হল আবার কখন সিলেট আসবো? দেখা হল না শাহ পরাণের সঙ্গে। কথা হল না হাছন রাজার সঙ্গে। ভাব বিনিময় হল না রাধা রমনের সঙ্গে। গান শোনা হল না শাহ আবদুল করিমের। ঘোরা হল না মনিপুরি, গাড়ো, বিষ্ণুপ্রিয়া, পাত্র, ত্রিপুরা, সাঁওতাল পল্লী। দেখা হল না ঐতিহ্যবাহী কিয়ান ব্রিজ আর আল আমজাদ ঘড়ি। তবু ‘ব্ল্যাকআউট’-এর ফিল্ম শো’র কল্যানে স্বল্প সময়ের সিলেটে অবস্থান সারা জীবন আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠা জুড়ে থাকবে। স্টেশান রোডে আমাদের রাত বারোটার ঢাকার গাড়ি অপেক্ষা করছে। আমরা খাসি পল্লী’র গাঢ় অন্ধকার ফুড়ে স্টেশানে আসতেই ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁই ছুঁই। ঝটপট স্টেশানের হোটেল ইতালিয়ায় ইন্ডিয়ান খাবার গিলে বাসে উঠে বসতেই চোখ জুড়ে নেমে আসলো বিগত তিন দিনের কান্তি। ওম শান্তি। ওম খাসি পল্লী’র দো’চোয়ানী। ওম ব্ল্যাকআউট। ওম অমাবস্যার গাঢ় অন্ধকার। জয়তু সিলেট ট্যুর। জয়তু 'ব্ল্যাকআউট'। জয়তু কিচ্ছু 'মনে নেই'।
false
mk
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়া___ গত ১১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখ, সন্ধ্যা ৭টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেতর ও টিভির মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দিয়েছেন। পত্রপত্রিকার সূত্র মতে ভাষণটি তার প্রদান করার কথা ছিল ৬ জানুয়ারি। ঐ সময় তিনি ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ায় ঐ ক’দিন বিলম্বিত হয়েছে। ২৯ মিনিটের উক্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী গত ৪ বছর তার সরকার যেসব উন্নয়নমূলক কর্মকা- করেছে তার একটি বিবরণ দেশ ও জনগণের সম্মুখে উপস্থাপন করেছেন। বিরোধী দল এটিকে কথার ‘ফুলঝুরি’, ‘গতানুগতিক’, ‘মিথ্যাচার’ বলে বিবৃতি দিয়েছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় গত ১৪ তারিখ ‘প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বহীন ভাষণ’ শিরোনামে একটি কলাম লিখেছেন। দৈনিক প্রথম আলো ১৪ তারিখ সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন করেছে, ‘শুধুই সাফল্য, কোনো ব্যর্থতা নেই’? বাম নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ‘কোন দিকনির্দেশনা নেই’ বলে উল্লেখ করেছেন।প্রধানমন্ত্রীর ২৯ মিনিটের একটি ভাষণে ১৬ কোটি মানুষ সমানভাবে সন্তুষ্টি হয়েছে তা দাবি করার কোনো কারণ নেই। তবে যারা এই ভাষণকে গতানুগতিক, দিকনির্দেশনাহীন ও গুরুত্বহীন বলে অভিহিত করেছেন, তারা ভাষণের ভেতরের তথ্যপ্রমাণসমূহ ভুল, মিথ্যা, অসত্য, বাড়াবাড়ি এমনটি বলেছেন বলে শুনিনি। তারা যদি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে দেয়া বিভিন্ন খাতে তার সরকারের আমলে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ, উন্নয়ন বা সাফল্য সম্পর্কে কোনো বিশ্লেষণে যেতেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খ-ন করতেন তাহলে একটা কিছু করা হতো বলে ধরে নেয়া যেতো। আমরাও বুঝতে পারতাম প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে কোথায় কোথায় বিভ্রান্ত করছেন, ভুল তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু সেই চেষ্টা বা কষ্ট বিরোধী দলের কোনো নেতা করেছেন বলে মনে হয় না। বিএনপি নেতৃবৃন্দের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। আওয়ামী লীগ কোনো কথা বললে বিএনপি তা শুনলেও প্রতিক্রিয়া হবে তাদের মতো করে, আওয়ামী লীগের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ বিএনপি মেনে নেবে বা স্বীকার করবে তেমন সংস্কৃতি দেশে এখনো চালু হয়নি। কিন্তু বাম নেতৃবৃন্দ বিষয় বিশ্লেষণে কেন একরৈখিক হবেন তা কোনোভাবেই বোধগম্য হচ্ছে না। কাদের সিদ্দিকী সাহেবের এমন শিরোনামের লেখা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করাই বোধহয় ভালো। গণমাধ্যমের মন্তব্যও বেশ লক্ষণীয়। তাদের কোনো কোনোটি বলার চেষ্টা করেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ‘সাফল্যের বয়ানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, ব্যর্থতার দিকটি স্বীকার করে ভবিষ্যতে তা দূর করার প্রত্যয় থাকলে ভাষণটি পূর্ণতা পেতো।’ এমন মতামত শুনতে বেশ ভালো লাগে, ভারসাম্যমূলক মনে হয়। তবে ব্যর্থতার দিকটি যে কোনো কাজের একটি চূড়ান্ত বিষয় বলে জানা হয়ে যায়, এরপর যখন আর কিছু করার থাকে না তখনই ব্যর্থতার সিদ্ধান্ত টানা যায়।একটি সরকারের মেয়াদ শেষেই কেবল সাফল্য ও ব্যর্থতার চূড়ান্ত রেখা টানা যেতে পারে। সরকারের মেয়াদ এক বছর বাকি থাকতে সরকার কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে তা বলবে, স্বীকার করবে এমনটি বোধহয় যথার্থ নয়। যদি গণমাধ্যম থেকে বলা হতো যে, প্রধানমন্ত্রী যেসব ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে পিছিয়ে আছেন তা উল্লেখ করতেন তাহলে সকলে কথাসমূহ মিলিয়ে দেখতে পারতো। গণমাধ্যমগুলো মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দুটো শব্দকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে থাকে। একটি ‘সাফল্য’, অন্যটি ‘ব্যর্থতা’। এটি আমাদের রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা থেকে বহুলভাবে ব্যবহৃত প্রবণতা। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন-অনুন্নয়ন বেশ জটিল এবং আপেক্ষিক ধারণা। বর্তমান বছরে যে ক্ষেত্রে বেশ ভালো উন্নয়ন ঘটেছে, সাফল্য ধরা দিয়েছে, নানা কারণেই পরের বছর তা নাও ঘটতে পারে। চেষ্টার ক্ষেত্রে হয়তো কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু নানা বাস্তবতা থাকতে পারে যা অতিক্রম করা হয়তো সরকারের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ঠিক একইভাবে এ বছর দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটেনি, সাংবাদিক বা আলোচকের ভাষায় সাফল্য আসেনি। তিনি চট করে এটিকে ব্যর্থতা বলে চালিয়ে দিলেন। তাতে প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের কর্মপ্রবাহে বড় ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি হতে পারে। ধরে নিলাম, উদ্যোক্তারা এসব কথায় তেমন কান দিলেন না, তারা পারের বছর দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হলেন, এমন একটা সাফল্য দেখালেন যা আগের বছর কারো কারো মতো ব্যর্থতা হিসেবে ছিল, কিন্তু পরের বছরই সে ক্ষেত্রে সাফল্য ধরা দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কিভাবে সম্ভব? এখানে কোন মূল্যায়নটি ঠিক? ধারাবাহিকতা বিবর্জিতভাবে কোনো উন্নয়ন হয় না তবে প্রাথমিকভাবে কোনো কোনো উন্নয়ন কর্মকা- ততোটা দৃশ্যমান হয় না, বেশ দেরিতে হয়। সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে জটিল এসব দিককে বিবেচনায় না নিয়ে আমাদের রাজনীতি ও গণমাধ্যম যেভাবে প্রায়শই উন্নয়ন সম্পর্কে চূড়ান্ত মত দিয়ে ফেলে তা আসলেই বিস্ময়কর বিষয়। এতে সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির চিন্তা যুক্তিনির্ভর বা শাণিত হয় না, হয় আবেগনির্ভর সংকীর্ণ। লক্ষ্য করা যেতে পারে যে, আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ২০১১ সালে বেশকিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সময়মতো ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণেই তেমনটি ঘটেছিল। গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহল এ ক্ষেত্রেও সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে তখন অভিহিত করে যে ধরনের প্রভাব ফেলে দিয়েছিল তাই যদি চূড়ান্ত সত্য হতো তা হলে এক বছর পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এতোসব উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হতো না। যোগাযোগমন্ত্রীর হাতে নিশ্চয়ই আলাদীনের চেরাগ নেই। তিনি সময় মতো উদ্যোগগুলো নিতে পারায় বড় ধরনের সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেখা দেয়নি। ফলে একটি স্বস্তির অবস্থা যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরাজ করছে।অন্যদিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেসব তুলনামূলক আলোচনা ও তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছেÑ তা কি নিতান্তই সাফল্যের বয়ান? বাংলাদেশে এতোগুলো খাতে এতোসব বড় ধরনের উদ্যোগ, অগ্রগতি অতীতে খুম কম সময়েই ঘটেছে। উপাত্ত নিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে গণমাধ্যম বা বিরোধী রাজনৈতিক মহলে ইতিবাচক দেশের যে কোনো অগ্রযাত্রাকে স্বাগত কমই জানানো হয়, জানানো না হওয়ারই উদাহরণ খুব বেশি। অন্যদিকে কোথাও সমস্যা দেখা গেলে সেটাকে সামগ্রিক বিপর্যয়ের পর্যায়ে ফেলে দেয়া হয়। সমস্যার পরিধি ও গভীরতা কতোটা তা নির্ধারণ করে দেখা হয় না, ফলে সরলীকরণকৃত ধারণা দেয়া ও পাওয়ার বেশ চেষ্টা হয়। জনমনে সেই প্রচারটিই বিস্তৃত করা হয়। জনগণ এর ফলে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারছে না। জনগণকে রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ, কার্যকারণ, পরিণতি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দিতে হয়। সেভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করতে হয়। সেটি দলগুলোতে হয় না। গণমাধ্যম বলে খ্যাত পত্রপত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াও সিরিয়াসলি তা করে বলে আমার কাছে মনে হয় না। ফলে আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারার বিকাশ গতি লাভ করতে পারছে না। অথচ নেতিবাচক যে কোনো প্রচারণা এতো বেশি উৎসাহ লাভ করে যার ফলে বেশিরভাগ মানুষই ঘটনা বা বিষয়ের চারদিক থেকে দেখা ও বোঝার সুযোগ পাচ্ছে না। আমাদেরকে সত্যিই একটি যুক্তিবাদীবিরোধী দেশে পরিণত হচ্ছে। বলা হয়েছে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে কিছু বলেননি, বলেননি পদ্মা সেতু নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের গণমাধ্যম বা বিরোধী রাজনৈতিক দল যতোটা সোচ্চার ততোটা কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় উপাদান ও করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে না, এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হচ্ছে না। যেন বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এলেই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। অথচ নিকট অতীতে যেসব তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখানে ছিল সেগুলোর দুর্বলতা তলিয়ে দেখা হচ্ছে না, সেগুলোর প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন তা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয় তা থেকে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ার নজির থাকার পরও আমাদের বেশিরভাগ গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষেই ওকালতি করছে। এর ফলে জনমনে একটি ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে যেন কোনোকালেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। চিন্তার এমন দৈন্যদশা থেকে বের না হতে পারলে আমাদের দেশ প্রতি ৫ বছর পরপরই বড় ধরনের সংকটে পড়বেই। আমাদের সকলেরই যেখানে জোর দেয়া প্রয়োজন ছিল সেখানে সবকিছু উপেক্ষা করে আমরা তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্বাবধায়ক বলে শক্তি ও মনোযোগ ক্ষয় করছি। আমি জানি না, এমন সংকীর্ণ চিন্তা-ভাবনার শেষ পরিণতি কী হবে? তবে গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়। কোনো সরকারই নির্বাচনের সময় ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় যেতে পারবে, জনগণ চুপ করে ঘরে বসে থাকবে তেমন নজির বাংলাদেশেই নেই।সুতরাং, রাজনৈতিক দলগুলোকেই জনগণকে আস্থায় নেয়া ও বিশ্বাস করার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হতে হবে। অন্যের সহায়তায় নির্বাচন করে দেশের দলগুলোর কোনোকালেই গণতন্ত্রের চর্চা করতে শিখবে না। একইভাবে পদ্মা সেতু নিয়েও দেশে দুর্নীতি হওয়ার যে প্রচারণা চালানো হয়েছিল তা বিশ্বব্যাংক ও দুদকের তদন্ত ও মামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হওয়াটি জরুরি হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার সরকার তেমন একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। দেশের প্রচার মাধ্যম, রাজনৈতিক ও সুধীসমাজ যেভাবে হাওয়া উত্তপ্ত করেছিল তা বোধহয় সঠিক নাকি বেঠিক তা আগে নির্ধারিত হওয়া জরুরি। এরপর দুর্নীতি না হলে টাকা বাংলাদেশ পাবেই। তেমন টাকা নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে তবেই আমাদের জাতীয় মর্যাদা ঊর্ধ্বে থাকতে পারে। যে ধরনের অভিযোগ গত এক বছর পদ্মা সেতু নিয়ে সর্বত্র শোনা গেছে তাতে দুর্নীতিবাজ সেজে বিশ্বব্যাংকের টাকা নেয়ার গ্লানি আমাদের কুড়ে কুড়ে খেতো। এখন মনে হচ্ছে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, দুদকের প্রতিবেদন ও মামলায় বিশ্বব্যাংকের তদন্ত দল সন্তুষ্ট। তাহলে এতোদিন কী শুনেছি, এখন সেসব গেলো কোথায়?এ ধরনের একটি উদগ্র প্রচারণার বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার ভাষণটি কতোটা নিষ্ঠার সঙ্গে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়।
false
rg
যৌন নিপিড়ন ও ধর্ষনের ঘটনায় নিপিড়ক ও ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে !!! মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলর ঘটনা মোটেও একদিনে সৃষ্টি হয়নি। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রায়ই ছাত্রীদের যৌন হেনস্থার খবর শোনা যায়। কিছু ঘটনা কেবল ডেপার্টমেন্টের বারান্দার বাইরে যায় না। কিছু ঘটনা কেবল সেই শিক্ষকের ড্রয়িংরুমের বাইরেও যায় না। কিছু ঘটনা সেই ছাত্রী নিজের বুকের ভেতর গোপন রেখে এই সমাজের কাছে নিজের সম্মানকে আর খাটো করতে দেয় না। কিছু ঘটনা বেশি জানাজানি হলে নানান কিসিমের আপোষ শালিশের মাধ্যমে মেটানোর এক ধরনের ব্যবস্থাপত্র এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অলিখিতভাবে চালু আছে। যার সারমর্ম দাঁড়ায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চরিত্র মোটেও ধোয়া তুলশিপাতা নয়। সুযোগ পেলেই অতি উচ্চ শিক্ষিত এসব লোলুপ লম্পটদেরও মেয়েদের শরীরের প্রতি বরাবরাই শকুনি নজর ফেলতে দেখা যায়। ফলে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনো ধরনের সামাজিক লোকচক্ষুকে পাত্তা না দিয়ে যে কাজটি অনেকটা নিয়মিত প্রাকটিসে পরিণত করেছেন, সেখানে একই ক্যাম্পাসের তাদেরই ছাত্ররা তো ওস্তাদের পদ অনুসরন করেই এগোবে এবং আসলে হচ্ছেও তাই। শিক্ষক যদি এই বিষয়ে সচেতন থাকতেন, তাহলে তার ছাত্রও কিছু হলেও শিখত। এটা এমন ঘটনা যে অর্থনীতির ভাষায় এটাকে বলা হয় র্যাচেট ইফেক্ট বা প্রদর্শন প্রভাব। একই ক্যাম্পাসের অন্য সকল পুরুষ প্রজাতির মধ্যেই শিক্ষকদের প্রদর্শিত সেই কুকর্মের একটা দীর্ঘ এবং ধারাবাহিক প্রদর্শন প্রভাবের কারণে এখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী-সুইপার সহ সকল স্তরে সবার মধ্যেই এই যৌনবিষ উলম্ফিত। এবার আপনারাই বলুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কলেজে প্রভাব ফেলবে কিনা? কলেজের শিক্ষকদের সাথে কি লিঙ্গ নেই? কলেজের শিক্ষকদের শরীরে কি রিপুর তাড়না নেই? কলেজের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী-সুইপার তাদের মধ্যে কি কাম-খায়েস নেই? কলেজের ছেলেদের মধ্যে সেই বিষবাস্প ছড়াবে না, এটা আপনি কিভাবে চিন্তা করতে পারেন? ফলে আমাদের কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদর্শিত পথই কেবল অনুসরন করছে। এবার আসুন স্কুলের কথায়। স্কুলকে আপনি কয়ভাগে ভাগ দেখাতে চান? হাইস্কুল, প্রাইমারি স্কুল, প্রি-স্কুল বা আরো কিছু ভাগ? যত ভাগেই স্কুল দেখান, সেখানেও লোলুপ পুরুষের অভাব নেই। সেখানেও পরিমলদের অভাব নেই। সেখানেও ছাত্রীদের যৌন নিপিড়কদের অভাব নেই। কেবল ঘটনা যতগুলো ঘটে, তা সেই সুনির্দিষ্ট ক্যাম্পাসের দেয়ালের বাইরে আর কয়টা যায়? কয়টা পত্রিকার সাংবাদিকদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়? কয়টা যৌন নিপিড়নের ঘটনাকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই আমলে নেয়? এই দীর্ঘ প্রাকটিসের ফসল এখন আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে প্রকাশ্যে রাজপথে ঘটতেও দেখছি। পহেলা বৈশাখের ঘটনা এখন আর মোটেও কেবল পহেলা বৈশাখেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে রাষ্ট্রের পুলিশও হাজার হাজার সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনে সেই একই প্রাকটিস করে দেখিয়েছে। গাউসিয়া-নিউমার্কেটের ভিড়ের মধ্যে যে ঘটনা নব্বই দশকেও ঘটত, এখনো ঘটছে। এখন তো যে কোনো ভিড়ের মধ্যেই এই যৌন নিপিড়নের ঘটনা অহরহ ঘটছে। পাবলিক বাসে কি ঘটছে না? কোথায় কোথায় রাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে? এখন দিল্লীর অনুকরণে নারায়নগঞ্জেও বাসের মধ্যে গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফেরা ক্লান্ত নারী শ্রমিক বাসের ড্রাইভার-হেলপার-কন্টাক্টরদের দ্বারা গ্রুপ ধর্ষনের শিকার হচ্ছে। যে রাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যায়লের শিক্ষকদের যৌন নিপিড়নের কোনো বিচার হয় না, ছাত্রদের ধর্ষনের সেঞ্চুরি ঘটনার কোনো বিচার হয় না, পুলিশের নারী নিপিড়নের কোনো বিচার হয় না, সেই বিচারহীনতার দেশে কোথাকার কোন মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর এক ছোট্ট শিশুকে যৌন নিপিড়নের বিচার হবে, এটা আপনি কিভাবে আশা করেন?এই ঘটনা কি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের মধ্যে এখন আর সীমাবদ্ধ আছে? এই ঘটনা কি এই রাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে সংক্রামিত হয় নাই বলে আপনি দাবি করতে পারবেন? কোনো অফিসে বসের কাছে কোনো নারী কর্মী যৌন নিপিড়নের শিকার হয় নাই এমন ঘটনা কি আপনি অস্বীকার করতে পারবেন? আমাদের মিডিয়াপাড়ায় চাকরির নামে, বিভিন্ন পদ পাওয়ার নামে, বসের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে ক্যারিয়ার গঠনের নামে, বিভিন্ন ঘটনায় যত ওপেন সিকরেট নারী ধর্ষনের ঘটনা মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, এগুলো কি আপনি সব মিথ্যা বানোয়াট বলতে চান?আমাদের আমলাদের বিদেশ সফরের সময় অফিসের সুন্দরী অধিনস্ত নারী কর্মীদের যে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে সফর সঙ্গী করা হয়, সেখানেও নারী ধর্ষনের ঘটনা একদম ঘটে না, আপনি কি এসবও অস্বীকার করতে চান? এই রাষ্ট্রে নারী ধর্ষন বা নিপিড়নের আর কোন কোন ঘটনাকে আপনি অস্বীকার করতে চান? এবার বলুন, আপনি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ঘটতে থাকা কয়টি নারী ধর্ষন বা নিপিড়নের ঘটনার বিচার করেছেন? কয়টি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে রাষ্ট্রের বিচারকাঠামো? যে দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনি পহেলা বৈশাখের নারী নিপিড়নের ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে আড়াল করার চেষ্টা করছেন, সেই একই দৃষ্টিভঙ্গিতে এই রাষ্ট্রে সংঘটিত অপর প্রায় সকল নারী ধর্ষন ও নিপিড়নের ঘটনাকে আড়াল করার কৌশল কি আপনি মোটেও অস্বীকার করতে পারবেন?আজ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, আজ যদি সেঞ্চুরি করা ধর্ষকছাত্রের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, আজ যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিমলদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, আজ যদি পহেলা বৈশাখের ঘটনাকে রাষ্ট্র যথাযথভাবে আমলে নিয়ে দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতো, আজ যদি প্রকাশ্যে পুলিশের নারী নিপিড়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো, আজ যদি অফিস-আদালত-রাজপথ সর্বত্র নারীদের প্রতি রাষ্ট্রে সম্মান প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে আর নতুন করে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে ছোট্ট শিশুর প্রতি যৌন নিপিড়নের ঘটনা হয়তো ঘটত না। এই রাষ্ট্রে যারা আইন তৈরি করেন, সেই আইন প্রণেতাদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে যে আবাসিক ভবন নির্মান করা হয়েছে, সেখানে কত ধরনের ধর্ষনের ঘটনা, নারী নিপিড়নের ঘটনা রোজ ঘটছে, তার কয়টি ঘটনা রাষ্ট্র জানতে পারছে? কয়টি ঘটনা কতভাবে আড়াল করা হচ্ছে, তা কি আমরা কেউ জানি? একদিকে রাষ্ট্র নারায়নগঞ্জের মত স্বীকৃত পতিতাপল্লী বা অন্যান্য কান্দিপট্টি ধর্মের দোহাই দিয়ে ঊঠিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে বনানী, গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি, বনশ্রী, মগবাজারে হাজার হাজার প্রাইভেট আবাসিক কান্দিপট্টি গড়ে তুলছে। এই রাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, অফিস-আদালত, সরকারি বেসরকারি কোয়ার্টার কোথায় বলুন অলিখিত কান্দিপট্টি নেই? আপনি এই রাষ্ট্রের কোন কোন ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করবেন? মূল বিষয় হল, প্রায় প্রতিটি নারী নিপিড়নের ঘটনায় রাষ্ট্র এক ধরনের নিরব দর্শক থাকার চেষ্টা করে। একান্ত যে ঘটনায় কিছুটা সাড়া না দিলেই নয়, একেবারে বেশি মাত্রায় জানাজানি হয়ে গেছে, অন্য কোনো বিকল্প নেই, তখন এই ঠুটো জগন্নাথকে কিছুটা সচল হবারই কেবল উদাহরণ আছে। অন্যান্য সকল ঘটনায় আশ্চার্য এক নিরবতা পালনে বা আমলে না নেবারই কেবল উদাহরণ আমাদের। এভাবে আমাদের সামাজিক কাঠামোতে নারীদের প্রতি আচরণের বা দৃষ্টিভঙ্গির যে প্রাকটিস গড়ে উঠেছে সেটি এখন ভয়ংকর রকম আতকে ওঠার মত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নের ঘটনা ঘটল, তার যদি আপনি বিচার না করেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেঞ্চুরি করা ধর্ষক ছাত্রের যদি আপনি বিচার না করেন, পহেলা বৈশাখের নারী নিপিড়নের ঘটনাকে নানান কিসিমের কাসুন্দি দিয়ে যদি আপনি ধামাচাপা দিতে চান, তাহলে বুঝতে হবে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের ছোট্ট শিশুর প্রতি যে যৌন নিপিড়নের ঘটনা ঘটেছে, ওটাকেও আপনি কোনো না কোনো অযুহাতে এড়িয়ে যাবার কৌশল নেবেন। একদিকে রাষ্ট্রে আইনের শাসনের কোনো বালাই নেই। সরকার বাহাদুরের কারো কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। খুন-ধর্ষন-গুমের কোনো বিচার নেই। অন্যদিকে কিছু সুনির্দিষ্ট ঘটনায় স্বয়ং এসব অপরাধীদের পুরস্কৃত করার রাষ্ট্র যেনো এক পুতুল খেলার তাসের ঘরে পরিনত হয়েছে। যে কারণে এসব ঘটনা দিন দিন ক্রমেই কেবল বেড়েই যাচ্ছে। আর ধীরে ধীরে বাংলাদেশ যেনো মধ্যযুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সত্যি সত্যিই এক অদ্ভুত উটের পৃষ্ঠে চলছে এই দেশ। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নের ঘটনা কোনোভাবেই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এই রাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বিচারহীনতা ও নারী নিপিড়নের ধারাবাহিক প্রাকটিসের এক জলন্ত দৃষ্টান্ত ওটা। যতক্ষণ না রাষ্ট্র এই বিষয়ে আন্তরিক সদিচ্ছা দেখিয়ে নারী নিপিড়নের যে কোনো ঘটনায় 'নো টলারেন্স' নীতি গ্রহন না করবে, পূর্বে সংগঠিত ঘটনাগুলোর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না করবে, ততক্ষণ এই ঘটনা কেবল ঘটতেই থাকবে। এটা অনেকটা ভূমিকম্পের পর আফটার শকের মত এক ধারাবাহিক প্রবনতা। রাষ্ট্র এ বিষয়ে এখনই আন্তরিক না হলে ভবিষ্যতে এটা আমাদের সমাজের সকল স্তরে সংক্রামকের মত ছড়িয়ে যাবে। দেশে নারী নিপিড়ন, ধর্ষন ইত্যাদির অনেক কঠিন আইন আছে বটে, কিন্তু সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগের দায়টি সরকার বাহাদুর কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। অতএব সাধু সাবধান। ..............................১৫ মে ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার। আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার কুঁড়িতম দিবস। আজ সত্যিকার ভাবেই বইমেলা জমে উঠেছিল। আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় শুক্রবার। সকালে মেলায় কিছুটা ভিড় কম থাকলেও সকালটা ছিল শিশু প্রহর। তাই সকালে বইমেলায় শিশুদের বেশ ভিড় ছিল। এবার বাংলা একাডেমির ভেতরে যে শিশু কর্নার করা হয়েছে, সেখানে বড় বড় প্রকাশকদের শিশুদের জন্য প্রকাশিত বইগুলো না থাকায়, শিশুরা এক ধরনের বঞ্চিত হচ্ছে ভালো বই কেনা থেকে। কারণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় প্রকাশকদের স্টল থাকায় সেখান থেকে শিশুদের জন্য বই কেনা একটু বিব্রতকর হচ্ছে। অনেক প্রকাশক তাই বাংলা একাডেমির সমালোচনা করেছেন। শিশুরা একাডেমির কর্নার থেকে কিছু বাজে বই বা কার্টুন বই কিনে বাসায় ফিরছে আমাদের কোমলমতি শিশুরা। ভালো বইগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মেলায় থাকায় শিশুরা তা থেকে একপ্রকার বঞ্চিত হচ্ছে। প্রকাশকরা আশা করেন, ভবিষ্যতে শিশুদের কর্নারে তাদের বই রাখারও ব্যবস্থা করবে একাডেমি। আজ বইমেলা শুরু হয়েছে সকাল এগারোটায়, একটানা চলেছে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। আজ মেলায় দুপুরের পর থেকে ছিল বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। আজ কিন্তু বইপ্রেমীরা বই কিনেছেন। যেমন ভিড় ছিল, তেমন বই বিক্রিও হয়েছে প্রচুর। প্রকাশকরা অবশ্য সঙ্কায় আছেন আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে বইমেলায় বইপ্রেমীদের কতোটা ভিড় থাকবে তা নিয়ে। অথবা মেলার বাকি দিনগুলোতে কতোটা বই বিক্রি হবে তা নিয়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট ২৪ ঘণ্টা অবরোধ স্থগিত করায় দুপুরের পর থেকেই সত্যিকার ভাবেই অমর একুশে বইমেলা প্রাণ ফিরে পায় বইপ্রেমীদের ভিড়ে। কিন্তু রবিবার থেকে আবার টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকায় প্রকাশকদের মনে সেই আশংকা আবারো বেড়েছে।আজ অমর একুশে বইমেলায় এসেছে আমার লেখা 'বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী- মুজিব দ্য গ্রেট'। বইটি প্রকাশ করেছে ত্রয়ী প্রকাশন। বঙ্গবন্ধুর ছবি অবলম্বনে বইটির প্রচ্ছদ আমি নিজেই করেছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ত্রয়ী প্রকাশনের স্টলে (স্টল নং ১৩৯-১৪০) পাওয়া যাচ্ছে বইটি। বইটির মূল্য ধরা হয়েছে ১৭৫ টাকা। এছাড়া আজ চৈতন্য প্রকাশনী থেকে মেলায় এসেছে কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধার গদ্য সংকলন 'নদীর জলে ছায়া'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী তৌহিন হাসান। বইটির মূল্য ধরা হয়েছে দুইশো টাকা। 'নদীর জলে ছায়া' বইটির প্রডাকশান এতই ভালো হয়েছে যে, যে কারো বইটি হাতে নিলেই মনে ভারী প্রশান্তি আসবে। কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধার ব্যক্তিগত এই গদ্যের বই অনেকটাই তাঁর গল্প বলার সেই চেনা ঢঙ্গের মতই। যেখানে ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পারিপার্শ্ব, সমাজ ও রাষ্ট্র। প্রশান্ত'র গদ্যে তাই উঠে এসেছে চেনাজানা চৌহদ্দির পাশাপাশি ব্যক্তির অন্তর্গত অনুভূতি। যা মিলেমিশে অনেকটা একাকার কাহিনিগদ্যের ধরন আর ব্যক্তিগত গদ্যের কৌতূহলী পরিব্রাজকের ভঙ্গিতে সমাজে বসবাসকারী প্রতিজন মানুষের জীবনযাপনে জড়িয়ে থাকা বিষয় আশয় হিসেবে ফুটে উঠেছে।আজ অ্যাডর্ন প্রকাশন থেকে বইমেলায় এসেছে লেখক ও গবেষক জয়শ্রী বীথি'র উপন্যাস 'অম্বা আখ্যান'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। বইটির দাম রাখা হয়েছে দুইশো বিশ টাকা। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অ্যাডর্নের স্টলে (স্টল নং ২২২-২২৪)। আজ শুদ্ধস্বর থেকে মেলায় এসেছে কবি জুয়েল মাজহারের কবিতার বই 'মেগাস্থিনিসের হাসি'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কবি বিধান সাহা। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুদ্ধস্বরের স্টলে (স্টল নং ১৭৪-১৭৬)। সকালে আমার প্রকাশক মাধবদা ফোন করে জানান, 'মুজিব দ্য গ্রেট' মেলার মাঠে এসেছে। আমি মেলার মাঠে পৌঁছাতে বারোটা বেজে গেল। নতুন বই হাতে পেয়ে বুকটা ভরে গেল। বারবার সন্তানের গায়ের গন্ধ নিচ্ছিলাম। মাধবদা লিটলম্যাগ চত্বরে বিক্রির জন্য আমাকে দশকপি বই দিলেন। বই নিয়ে একাডেমি প্রাঙ্গনে প্রিয় লিটলম্যাগ চত্বরে গিয়ে নন্দন-এর স্টল খুলে বসতেই কবি সরসিজ আলীম ইসারায় ডাক দিলেন। 'মুজিব দ্য গ্রেট' এর প্রথম কপির ক্রেতা কবি সরসিজ আলীমের কন্যা সেঁজুতি। কন্যার মা আমার কাছ থেকে মেয়ের জন্য বইয়ে অটোগ্রাফ নিলেন। ভাবীকে লিটলম্যাগ চত্বরে রেখে আলীম আর আমি চা খেতে বাইরে গেলাম। ফিরে এসে লিটলম্যাগ চত্বরে পেলাম আমার প্রশান্তদাকে। কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা। প্রশান্তদা'র বাড়ি বাগেরহাট। আর আমার বাড়ি পিরোজপুর। কিন্তু কোনাকুনি নৌকা পথে বা হাঁটা পথে আমাদের দুজনার বাড়ির দূরত্ব মাত্র চৌদ্দ-পনের মাইল। টানা অবরোধ থাকায় এবার প্রশান্তদা বইমেলায় আসতে দেরি করল। দাদা জানাল, ছেলে তাতা প্রায় বাবার সমান লম্বা হয়ে গেছে। তাতার মা ফারজানা সিদ্দিকা রনি ইউনিভার্সিটির ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত। চৈতন্যে দাদার বই দেখার পর আমরা আবার উদ্যানে যাই দাদার অন্য বইগুলোর খোঁজ নিতে। জানা গেল দুই একদিনের মধ্যে বাকি বইগুলো মেলায় আসবে। উদ্যানে গিয়ে দেখা হল আরজু দম্পতির সঙ্গে। আরজু আজ আমার দুইটা বই কিনেছেন। ছোটদের গল্প 'গপ্পো টপ্পো না সত্যি' আর আমার গল্প সংকলন 'পঞ্চভূতেষু'। এছাড়া প্রশান্তদা'র 'নদীর জলে ছায়া' কিনেছেন আরজু। আমরা লাঞ্চের জন্য বের হব। পথে একাডেমির মিডিয়া সেন্টারে বই জমা দিতে আমার একটু দেরি হল। তারপর আমরা চাঁনখারপুলে গিয়ে লাঞ্চ করলাম। আবার মেলায় ফেরার পথে দাদা বলল, এবার আমাকে গুলশানে শ্বাশুড়ির বাসায় হাজিরা দিতে যেতে হবে। কাল বেহানে মেলায় থাকমুনে। তুই থাকবি তো? বললাম-হু থাকমু। তুমি তাড়াতাড়ি আইসো।এরপর লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে ঢুকেই পেলাম কবি ও গবেষক রণদীপম বসুকে। ছেলেসহ দাদা আজ মেলায় এসেছেন। প্রান্ত দীপম আজ মেলায় ঘুরে ঘুরে বই কিনবে। মুজিব দ্য গ্রেট এককপি কিনল প্রান্ত। প্রান্তকে ছেড়ে দিয়ে রণদা আর আমি সিগারেট টানলুম। প্রান্তকে নিয়ে রণদা চলে যাবার পর এলেন কবি অমিতাভ পাল। অমিতাভদা আমার সঙ্গে নন্দনের স্টলে বসলেন। মুহূর্তে পরপর চারটা 'মুজিব দ্য গ্রেট' ও একটা 'পঞ্চভূতেষু' বিক্রি হল। এই সময় কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর এসেছেন দুই ভাগ্নি বর্ষা আর তাথৈকে নিয়ে। বর্ষা আজ ঘুরে ঘুরে মেলায় আমাদের ছবি তুলেছে। তাথৈ আমার কোলে উঠে এক মিনিটে গোটা ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় আসার বিবরণ শোনাল। এরমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল চৈতি আপার মেয়ে মেধা। মেধা টোকন ঠাকুরের 'রাজপুত্তুর' ছবিতে তিনটা চরিত্রে অভিনয় করেছে। বইমেলায় রোজ চৈতি আপার সাথে আসে মেধা। তাথৈ মেধাকে পেয়ে বর্ষার সঙ্গে ঘুরতে গেল। অমিতাভদা টোকন আর আমাকে সিগারেট দিলেন টেনে আসতে...ততক্ষণে মেলার মাঠে তীল ধারণের ঠাই নাই। আমরা কবি জুয়েল মুস্তাফিজকে নিয়ে পানির সন্ধানে ছুটলাম। একাডেমির নতুন ভবনের সামনে সৈয়দ তারিক ভাই আমাদের পানি খাওয়ালেন আর ছবি তুললেন তার দলবল নিয়ে। আবার লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে আসার পর আমাদের সঙ্গে যোগ দিল কবি আয়েশা ঝর্না ও কবি সেঁজুতি বড়ুয়া। ঠাকুর বলল, বর্ষা আর তাথৈকে বাসায় রেখে আবার মেলায় আসবেন। তখন জুয়েল তার নানীকে নিয়ে লেখা 'মেরাতুন্নেসা-মনমহাজনের কথা' বইটি কিনে ঠাকুরকে গিফট করল। কিছুক্ষণ পর তরুণ কবি বিদ্রোহী কৃষকের কবিতার বই 'পাইপ'-এর মোড়ক উন্মোচন হল লিটলম্যাগ চত্বরে আমাদের সবার উপস্থিতিতে।এরপর অমিতাভদা আর আমি আবার স্টলে বসলাম দোকানদারি করতে। মুহূর্তে বিক্রি হল পাইপের দুইটা কপি আর 'মুজিব দ্য গ্রেট'-এর দুইটা কপি। এরপর বিচ্ছিন্ন কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। দৌড়ে এসে সিগারেট খাওয়ালেন কবি নীলসাধু। দেখা হল, আড্ডা হল কবি ও গবেষক সায়মন জাকারিয়া, কবি অতনু তিয়াস, কবি শতাব্দী কাদের, কবি মাসুম মোকাররম, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি কাজী টিটো, কবি আরণ্যক টিটো, কবি সাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ, কবি আয়েশা ঝর্না, কবি সেঁজুতি বড়ুয়া, কবি মুর্শিদা ঋশাত মণি সহ অনেকের সঙ্গে। ততক্ষণে মেলায় ছুটির ঘণ্টা পড়ে গেল। আজ কখন যে মেলার সময় ফুরিয়ে গেছে কিচ্ছু টের পাইনি। বড় ঘোর লাগা ছোট্ট একটা মুহূর্ত যেন। এক নিমিষেই ফুরিয়ে গেল। আহা এ বছর আজ প্রথম প্রাণের বইমেলা আড্ডায় আড্ডায় জমে উঠেছিল। তারপর অতনু, শতাব্দী, মাসুম, সেঁজুতি সহ আমরা একদল মেলা থেকে বের হয়ে টিএসসি এসে চা খেলাম। তখন বন্ধু নাহিদ আর টোকন ঠাকুর ফোন করল। আমি ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ছবিরহাট এসে আবার নাহিদ, টোকন, তিতিল, সূর্যদের সঙ্গে আরেক দফা আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।যে মুহূর্তে আমি এই লেখা লিখছি, ততক্ষণে একুশে ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার, মাননীয় বিরোধীদলের নেতা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সবার ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে পুস্পস্তবক অর্পন করা শেষ। এখন চলছে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্য সর্বস্তরের মানুষের ঢল। কণ্ঠে সবার 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি' গান। আগামীকাল বইমেলা শুরু হবে সকাল আটটায়। চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারির এই সূচনা মুহূর্তে সকল ভাষা শহীদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। রফিক-সফিক-বরকত-সালাম লাল সালাম লাল সালাম। একুশের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। ............................ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
ij
বিরূঢ়ক প্রাচীন ভারতের কোশল রাজ্যের এক রাজপুত্র ছিল বিরূঢ়ক । পিতা ও মাতৃকূলের অবহেলার কারণে ক্রোধে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল সে ...তার কারণেই সমূলে ধ্বংস হয়েছিল কোশল রাজ্যের রাজধানী সমৃদ্ধশালী শ্রাবস্তী নগর এবং বুদ্ধের জন্ম-নগরী সুসমৃদ্ধ কপিলবস্তু নগর; বিরূঢ়ক এর নির্মম ঘটনাটি ঘটেছিল বুদ্ধের জীবদ্দশায় ... বিরূঢ়ক বুদ্ধের সমসাময়িক ছিল বলেই তার বিধ্বংসী কর্মকান্ডে শান্তিবাদী বুদ্ধে মনে তীব্র কষ্ট পেয়েছিলেন ... এই ঐতিহাসিক নিবন্ধটি ২৫০০ বছর আগেকার ওই প্রতিশোধ পরায়ণ পাষন্ড যুবকটিকে নিয়েই ...প্রাচীন ভারতের মানচিত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতকে প্রাচীন ভারতে ট্রাইবাল সমাজ ভেঙে ১৬ টি বৃহদাকার জনপদ বা রাজ্য গড়ে উঠেছিল। বৌদ্ধ সাহিত্যে এদেরকে সম্মিলিতভাবে ‘ষোড়শ মহাজনপদ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ষোড়শ মহাজনপদ- এর মধ্যে অন্যতম ছিল কোসল রাজ্য। কোশল রাজ্যের রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী। ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা/ মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য ...সেই শ্রাবস্তী। বর্তমান ভারতবর্ষের উত্তর প্রদেশের আউধ- এ ছিল সুপ্রাচীন কোশল রাজ্যের অবস্থান। ভাস্কর্য খোচিত শ্রাবস্তী নগরের প্রাচীর কোসল রাজ্যের রাজা ছিলেন প্রসেনজিৎ। শ্রাবস্তী নগরে তার সুরম্য প্রাসাদ। যা হোক। সেকালে যুদ্ধবিগ্রহ ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। কাশী রাজ্য (আরেকটি মহাজনপদ) যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন কোসলরাজ প্রসেনজিৎ । পরাজিত হন। রণাঙ্গন থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। পথে এক মালাকারের বাড়ি। তার বাড়ি আত্মগোপন করে থাকলেন ক’দিন। আশ্রয়দাতা সেই মালাকারের এক পরম রুপবতী কন্যা ছিল সেই মেয়ের নাম মল্লিকা। মল্লিকাকে দেখে লালসা জেগে ওঠে কোসলরাজ প্রসেনজিৎ -এর। পরে বিপদমুক্ত হয়ে শ্রাবস্তী ফিরে এলেন কোসলরাজ প্রসেনজিৎ । মল্লিকাকে বিয়ে করলেন । বর্তমান নেপাল। এই নেপালেই ছিল কপিলবস্তু নগর। বুদ্ধের জন্মস্থান। উচ্চকূলজাত শাক্যবংশীয় শাসন। কপিলবস্তুর বানান কপিলাবস্তু নয়- কপিলবস্তু বা কপিলবাস্তু; দ্র; সুভাস ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘ বাংলা: লেখক ও সম্পাদকের অভিধান।’ (পৃষ্ঠা: ৫৬)কোসলরাজ প্রসেনজিৎ এর পরে মনে হল মল্লিকা তো নীচকূলজাত। এ কোসল রাজ্যে রানী হয় কি করে! যার পিতার পেশা মালা তৈরি করা। আসলে লোকটার মল্লিকার শরীর ভোগের তৃষ্ণা মিটে গিয়েছিল। কাজেই মালাকারকন্যা মল্লিকার ভাগ্যে কি ঘটেছিল আমরা অনুমান করতে পারি। আমাদের মনে রাখতে হবে ... এই ঘটনাগুলি পালি ভাষায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দ্বারা লিখিত এবং বৌদ্ধ সাহিত্যের অর্ন্তভূক্ত । এর অনেক অসংগতি হয়তো সেইসব বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চোখে পড়েনি। আমাদের সময়ে ঘটনাগুলি আমরা আমাদের মতো করে ইন্টারপ্রিট করছি। যুগ যুগ ধরেই নারী শক্তিমান পুরুষের খেয়াল খুশির শিকার । মালাকারকন্যা মল্লিকার করুন জীবন যেন তারই এক বিয়োগান্ত উদাহরণ। যা হোক। কোসলরাজ প্রসেনজিৎ উচ্চকূলজাত বংশে বিয়ে করবেন বলে মনস্থির করলেন। তৎকালে হিমালয়ের পাদদেশের কপিলবস্তু নগরীর শাক্যবংশীয়া ছিল উচ্চকূলজাত। উল্লেখ্য, বুদ্ধের জন্য কপিলবস্তু নগরীর শাক্যবংশেই হয়েছিল।মানচিত্রে কপিলবস্তু। কপিলবস্তু নগরের নাম হয়েছে সাংখ্য দার্শনিক কপিলের নামে। শ্রীমাধবচন্দ্র চাক্মা কর্ম্মী বিরচিত শ্রীশ্রীরাজনামা এবং রাজা ভুবনমোহন রায় বিরচিত চাক্মা রাজবংশের ইতিহাস গ্রন্থ থেকে তুলে দিচ্ছি: “...একদা অযোধ্যা রাজ্যে অরঞ্জিত নামক এক রাজার দুইটি মহিষী ছিল। প্রথমা রানীর গর্ভে তিনটি পুত্র, একটি কন্যা, দ্বিতীয় রানির গর্ভে একটি কন্যা ও একটি পুত্র হয়। ছোট রানির প্ররোচনায় মহারাজ অরঞ্জিত প্রথমা রানির গর্ভজাত রাজকুমারগনকে অযোধ্যা রাজ্য হইতে নির্বাসিত করেন। রাজকুমারগন পিতৃসত্য পালনের জন্য দ্বিরুক্তি না করিয়া অনুরাগী প্রজাবৃন্দসহ অযোধ্যা নগর হইতে বর্হিগত হইয়া হিমালয় পর্ব্বতের সান্নিধ্যে কপিল মুনির আশ্রমে গমন করিলেন। তথায় মুনির আজ্ঞা গ্রহণ করতঃ কপিলবস্তু নামক নগর নির্মান করিয়া রাজত্ব করিতে লাগিলেন। লোক পরম্পরায় মহারাজা অরিঞ্জিত কুমারগনের এতাদৃশ রাজ্য স্থাপনের কথা শুনিয়া মন্ত্রণাকুশল মন্ত্রীগনকে এবং দৈবজ্ঞ ব্রাহ্মণগনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “রাজকুমারগন সেখানে বাস করিতে শক্য কিনা।” তদুত্তরে তাহারা বলিয়া উঠিল, “মহারাজ,কুমারগন উত্তম স্থান প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাঁহারা সেখানে সম্পূর্নরুপে বাস করিতে সমর্থ বা শক্য”। ইহার পর হইতে অযোধ্যা হইতে আগত সুর্যবংশীয় রাজকুমারগন শাক্য নামে বিখ্যাত হইল। কপিলবস্তুর রাজকুমারগন সকলেই শাক্য নামে অবহিত হইয়াছিল।” (পৃষ্ঠা ৪০) কপিল>কপিলবস্তু>সাক্য>শাক্য বংশ> বুদ্ধ ... প্রতিশোধ পরায়ণ বিরূঢ়ক এই শাক্যবংশই ধ্বংস করেছিল। অসাধারণ যোগাযোগই বটে!যা হোক। কোসলরাজ প্রসেনজিৎ শাক্যবংশজাত কোনও রাজকুমারীকে বিয়ে করা জন্য কপিলবস্তু দূত প্রেরণ করেন। শাক্য গোত্রের জাত নিয়ে গর্ব ছিল অথচ শক্তিধর কোসলরাজ প্রসেনজিৎ প্রত্যাখান করতে পারে না। শাক্যদের রাজা তখন ছিলেন মহানাম। তার নাগমুন্ডা নামে এক দাসীর গর্ভে বাসবক্ষত্রিয়া নামে বিবাহযোগ্যা একটি কন্যা ছিল। কোসলরাজ প্রসেনজিৎ বাসবক্ষত্রিয়ার বিবাহ হয়। যথাসময়ে পুত্র সে পুত্রের নাম রাখা হয় বিরূঢ়ক । পরে কোসলরাজ প্রসেনজিৎ শাক্যদের ছলনার কথা জানতে পারেন। ক্রোধান্বিত হয়ে স্ত্রী-পুত্রকে ত্যাগ করেন। বুদ্ধ। যিনি বলেছিলেন,‘জলের ফোঁটার জন্যও আমার দয়া হইত।’ তিনি তো অসহায় বাসবক্ষত্রিয়ার দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়াবেনই। বুদ্ধ তখন ভারতবর্ষে ‘ধর্ম’ প্রচার করছেন। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোসল রাজ্যেও আসতেন। শ্রাবস্তী নগরের কাছেই জেতবন নামে একটি আমবাগান। সেখানেই এক কুঠিরে বুদ্ধ তখন বাস করছেন। স্বামী হারিয়ে আশ্রয়চ্যূত বাসবক্ষত্রিয়া তখন আতঙ্কিত হয়ে ছেলে বিরূঢ়ক কে নিয়ে বুদ্ধের কাছে ছুটে গিয়ে পায়ে পড়লেন। প্রভূ, আমায় রক্ষে করুন।কি হয়েছে?আমার স্বামী আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে। তাড়িয়ে দিয়েছে? কেন? আমি নীচকূলজাত প্রভূ। জানেনই তো আমার মা দাসী নাগমুন্ডা ।বুদ্ধ মাথা নাড়লেন। তিনি সবই জানেন। তাঁর জন্মও কপিলবস্তুর শাক্য গোত্রে। সে গোত্রের অহঙ্কার বুদ্ধের শাক্য গোত্র পরিত্যাগ করার অন্যতম কারণ। বুদ্ধ জাতপাত মানেন না। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে চল।কোথায়? ক্রন্দনরতা বাসবক্ষত্রিয়াকে কেমন বিমূঢ় দেখাল।আহা, চলই না। বুদ্ধ ঈষৎ বিরক্ত হয়ে বললেন। কিশোর বিরূঢ়ক সবই দেখছিল। সে নত হয়ে বুদ্ধের পায়ে চুম্বন করে।বুদ্ধ আর্শীবাদ করলেন।বিরূঢ়ক এর চোখে জল আসে। পিতার নির্মম আচরণে সে বাকরুদ্ধ। মায়ের কান্না সে সহ্য করতে পারছে না। পিতাকে হত্যা করার জন্য ফুঁসে উঠছে রক্ত। শ্রাবস্তী নগরের কাছে জেতবন। ঠিক এই জায়গায় ছিল বুদ্ধের কুঠির। আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে এই কুঠিরেই অবস্থানরত মহামতি বুদ্ধের কাছে বিপদগ্রস্থ বাসবক্ষত্রিয়া তার ছেলেকে নিয়ে ছুটে এসেছিল । বুদ্ধ। বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর মানবিক ভূমিকার কথা বিশ্বের তত্ত্বদর্শী মহল অবগত। সে জন্যই তাঁর কল্পিত ভাস্কর্যটি যেন পরিনত হয়েছে শান্তির আইকনে ...৩টি কারণে বাংলার সঙ্গে বুদ্ধের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। (১) প্রাচীন বাঙলার মানুষ শান্তিপ্রিয় ছিল বলেই প্রাচীন বাংলাই প্রথম তাঁর মতাদর্শ গ্রহন করেছিল। (২) ভারতবর্ষে যখন ব্রাহ্মণ্যবাদী আগ্রাসনে বৌদ্ধধর্ম বিলুপ্তির পথে - বাংলা তখন ও বৌদ্ধ ধর্মকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল, একে আশ্রয় দিয়েছিল। (৩) বাংলা বৌদ্ধ দর্শনকে ব্যাখ্যা করে নারীকে প্রাধান্য দিয়ে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের ভিত রচনা করেছিল। বুদ্ধ বাসবক্ষত্রিয়া আর তার ছেলে কে নিয়ে শ্রাবস্তী নগরের রাজপ্রাসাদে নিয়ে গেলেন। তারপর অবিচল কন্ঠে কোসলরাজ প্রসেনজিৎ কে বুদ্ধ বললেন, বাসবক্ষত্রিয়ার পিতা শাক্যরাজ, বিরূঢ়ক এর পিতাও কোসলরাজ। এই কারণে বাসবক্ষত্রিয়া অবশ্যই স্ত্রীর মর্যাদা পেতে পারে। কোসলরাজ প্রসেনজিৎ বলল, প্রভূ, আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি বটে তবে আপনার অনুরোধ আমি রাখতে পারব না।বুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এ পৃথিবী কি কোনওকালে জাতপাতের উর্ধে উঠতে পারবে? কোসলরাজ প্রসেনজিৎ কে চাপ দিয়ে লাভ নেই। বড় একগুঁয়ে মানুষ। নারীদের আজও বাসবক্ষত্রিয়ার মতো বিরূপ পরিস্থিতিতে নিক্ষিপ্ত হতে দেখি ...বিষন্ন মনে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলেন বুদ্ধ। তাঁর পিছনে ক্রন্দনরতা বাসবক্ষত্রিয়া ও ক্রোধান্বিত কিশোর বিরূঢ়ক। চৈত্র মাস। মধ্যাহ্ন বেলা তার প্রখর সূর্যালোক আর উষ্ণতা ছড়িয়েছে। পিপাসায় কন্ঠ শুকিয়ে আসে। বুদ্ধ বললেন, বাসবক্ষত্রিয়া।আজ্ঞে, বলুন। তোমাকে একটা কথা বলি শুন।বলুন।তুমি এখন পথে পথে কোথায় ঘুরে মরবে। তুমি বরং ছেলেকে নিয়ে একবার কপিলবস্তু যাও। হাজার হলেও কপিলবস্তুর রাজপ্রাসাদ তোমার পিত্রালয়, শাক্যরাজ মহানাম তোমার পিতা। আমি আপনার নির্দেশ মাথা পেতে নিলাম। বাসবক্ষত্রিয়া বলল।বুদ্ধের নির্দেশে বাসবক্ষত্রিয়া ছেলেকে নিয়ে কপিলবস্তু রওনা হয়ে যায়। ২এর পর বেশ ক’বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে বাসবক্ষত্রিয়ার সঙ্গে বুদ্ধের আর দেখা হয়নি। তবে বুদ্ধ শুনেছেন কপিলবস্তুর শাক্য পরিবার বাসবক্ষত্রিয়া আর তার ছেলে কে গ্রহন করেনি। বুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এ পৃথিবী কি কোনওকালে জাতপাতের উর্ধে উঠতে পারবে? আপন আত্মজার সঙ্গে কেমন প্রতারণা? বাসবক্ষত্রিয়ার জ ন্ম দাসীর গর্ভে বলেই কি অচ্ছুত হয়ে গেল? ছিঃ! মানুষ এত সংর্কীণ হয় কি করে। অথচ জীবনের আয়োজন উপাচার কত মহৎ কত বিশাল ...যা হোক। বেশ ক’বছর বাসবক্ষত্রিয়ার কোনও সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে না। বেশ ক’বছর পর বুদ্ধ বিরূঢ়ক -এর সংবাদ শুনলেন। বিরূঢ়ক তখন যুবক। যা শুনলেন তাতে রীতিমতো শিউরে উঠলেন বুদ্ধ। ক্রোধে উন্মক্ত বিরূঢ়ক নাকি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে শ্রাবস্তী নগর আক্রমন করার পর ধ্বংস করেছে। কোসলরাজ প্রসেনজিৎ মগধে পালিয়ে যাওয়ার পথে নাকি মৃত্যুবরণ করেছেন।প্রতিশোধ পরায়ন তরুণ বিরূঢ়ক এখন নাকি কপিলবস্তু নগরী ধ্বংসের জন্য উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।বুদ্ধ অত্যন্ত উৎকন্ঠিত হয়ে উঠলেন।জ্ঞাতিকূলের আসন্ন বিপর্যয় ঠেকাতে অতিসত্ত্বর কপিলবস্তু রওনা হলেন। এবং পথিমধ্যে বিরূঢ়ক কপিলবস্তু নগরীর কাছেই ছোট্ট একটি নদীর পাড়ে সৈন্য শিবির স্থাপন করেছিল। বুদ্ধ বিরূঢ়ক কে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কপিলবস্তু নগরী আক্রমন হতে বিরত করলে। সসৈন্য কোসল রাজ্যে ফিরে গেল। মানচিত্রে কপিলবস্তুবিরূঢ়ক এখন কোসল রাজ্যের নৃপতি। তা সত্ত্বেও শাক্য পরিবারের অপমান বিরূঢ়ক ভুলতে পারেনি। শোকে-দুঃ খে জর্জরিত হয়ে তার মা বাসবক্ষত্রিয়ার করুণ মৃত্যু হয়েছে। বিরূঢ়কও সৈন্য বাহিনী গড়ার জন্য বছরের পর বছর অনাহারে অর্ধাহারে শ্বাপদশঙ্কুল হিমালয়ের গভীর অরণ্যে কঠিন সময় অতিবাহিত করেছে। কাজেই, বিরূঢ়ক আরও দু’বার কপিলবস্তু আক্রমনের উদ্যেগ নেয়।অবশ্য বুদ্ধ তাকে নিবৃত্ত করেন। তা সত্ত্বেও বিরূঢ়ক তার প্রতিশোধ পরায়ন আগ্রাসী মনোভাব পরিত্যাগ করেনি। সে কপিলবস্তু আক্রমনের উদ্যেগ নেয়। এবার কপিলবস্তুর শাক্যকূলও বিরূঢ়ক এর ওপর ভয়ানক ক্ষেপে উঠল। কপিলবস্তুর কাছের সেই ক্ষুদ্র নদীর জলে বিষ মিশিয়ে দিল- যাতে বিরূঢ়ক-এর সৈন্যরা বিষ মিশ্রিত জল পান করে মৃত্যুবরণ করে। (এই ঘটনাটি কেমন অবাস্তব মনে হয় ...)নদীর জলে বিষ মিশিয়ে দেওয়ায় বুদ্ধ মনে অত্যন্ত কষ্ট পেলেন। এবার তিনি বিরূঢ়ক কে নিবৃত্ত করলেন না!বিরূঢ়ক কপিলবস্তু নগর ধ্বংস করে।এমন কী রাজপরিবারের ছোট ছোট শিশুদেরও রেহাই দেয়নি। সুসমৃদ্ধ কপিলবস্তু ধ্বংস হয়ে যায়। ৩সুসমৃদ্ধ কপিলবস্তু ধ্বংস করে বিরূঢ়ক সীমা লঙ্ঘন করেছিল বটে, তবে কপিলবস্তু ধ্বংসের জন্য বিরূঢ়ক এর চেয়ে অহঙ্কারী শাক্যবংশই দায়ি। কেননা:(১) শাক্য গোত্রের জাত নিয়ে গর্ব ছিল অথচ শক্তিধর কোসলরাজ প্রসেনজিৎ প্রত্যাখান করতে পারে না। শাক্যদের রাজা তখন ছিলেন মহানাম। তার নাগমুন্ডা নামে এক দাসীর গর্ভে বাসবক্ষত্রিয়া নামে বিবাহযোগ্যা একটি কন্যা ছিল। কোসলরাজ প্রসেনজিৎ বাসবক্ষত্রিয়ার বিবাহ হয়।(২) কপিলবস্তুর শাক্য পরিবার বাসবক্ষত্রিয়া আর তার ছেলে কে গ্রহন করেনি।কপিলবস্তুর ধ্বংসাবশেষ। তারপর? তারপর বিরূঢ়ক এর কি হয়েছিল?যথাসময়েই বিরূঢ়ক-এর মৃত্যু হয়েছিল। তবে কোসল রাজ্যটি আক্রমন করে অধিকার করে নিয়েছিল পাশ্ববর্তী আরেকটি শক্তিশালী রাজ্য - মগধ; এবং তার পরাক্রমশালী সম্রাট অজাতশত্র“। সম্রাট অজাতশত্র“ ছিলেন মগধের সম্রাট বিম্বিসারের পুত্র । সম্রাট বিম্বিসার আমাদের অপরিচিত নন। পাঠ করুন:হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরেঅনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতেসেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। হয়তো বুদ্ধ বিরূঢ়ক এর রোষ থেকে কপিলবস্তুর নগরটি রক্ষা করতে পারেন নি; তথাপি তাঁর মানবিক ভূমিকার কারণে আজও তাঁর প্রতি তাঁর ভক্ত অনুসারীর দ্বারা নিবেদিত হয় গভীর শ্রদ্ধা ...তথ্যসূত্র: ১. শ্রী শান্তিকুসুম দাশ গুপ্ত; বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম এবং প্রাচীন বৌদ্ধ সমাজ। (বিরূঢ়ক এর মূল কাহিনী এই বইতে পেয়েছি)২. শ্রীশ্রীরাজনামা এবং রাজা ভুবনমোহন রায় বিরচিত চাক্মা রাজবংশের ইতিহাস। (কপিলবস্তুর শাক্যদের ইতিহাস এই বইতে আলোচিত হয়েছে।) ৩. সুনীল চট্টোপাধ্যায়: প্রাচীন ভারত (১ম খন্ড) (বুদ্ধযুগের ভারতবর্ষের সম্পর্কে তথ্যাদির জন্য এই বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন) ৪. ডি.ডি কোসাম্বী; ভগবান বুদ্ধ। (বুদ্ধের পরিব্রাজক জীবনের নানা কাহিনী এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। ) ৫. রিস ডেভিস; বুদ্ধিস্ট ইন্ডিয়া । (কোশল রাজ্যের বিস্তারিত ইতিহাস এখানে রয়েছে।)
false
hm
দেজা! পাঁপড়ির সাথে ফটিকের বিচ্ছেদের ঘটনা শুনে আমরা যত না মর্মাহত হয়েছিলাম, তারচেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছি পাঁপড়ির সাথে প্রেমযাত্রার পর ফটিকের আচরণে। মানিক ওরফে মাইনকার ধারণা ছিলো, যার নাম ফটিক, বন্ধুরা যাকে ফইটকা বলে ডাকে, তার কখনোই কোন বাঙালি তরুণীর সাথে প্রেম হওয়া সম্ভব নয়। অন্তত এই কুড়ি বছর বয়সে নয়। তার জন্যে ফইটকাকে আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে এফিডেভিট করে নাম পাল্টে নেয়ার পর। নতুন নামটাকে রইয়ে সইয়ে হালাল করে নেয়ার পর কিছু একটা হোলেও হোতে পারে। তাছাড়া ফইটকা দেখতেও বানরের মতো, লেখাপড়ায়ও মাঝারি, আর বাপেরও পকেট থেকে টাকা ছিটকে পড়তে দেখা যায় না। প্রেম বিষফোঁড়া নয়, কোষ্ঠকাঠিন্যও নয়, যে এমনি এমনি হয়ে যাবে। অনেক কার্যকারণ থাকতে হবে। তাছাড়া সৌরজগতে আর তার বাইরে অনেক গ্রহনক্ষত্রকে লাইনে আসতে হবে ফইটকার প্রেমের জন্যে, আদৎ-সুরৎ-দৌলৎ এর কথা বাদই দেয়া যাক। কিন্তু মানিক যথেষ্ঠ সুদর্শন হওয়া সত্ত্বেও ফটিক মানিকের এই সম্ভব-নয় তত্ত্বকে গুল্লি মেরে নিজের পিতৃদত্ত নাম আর চেহারা নিয়েই পাঁপড়ির মতো শাঁসালো এক তরুণীর সাথে প্রেম বাঁধিয়ে ফেললো। মাইনকার উর্দু ফ্যাক্টরগুলিতে কিসমতের ব্যাপারটা ছিলো না, দেখা গেলো ওর জোরেই ফইটকা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। পাঁপড়ি দেখতে বেশ, দূর থেকে দেখতে ভালোই লাগে। কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় না, কারণ পাঁপড়ি আশেপাশে থাকলে ফটিক আমাদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয় না, দেখলে খ্যাঁক করে ওঠে। হাবিব, যাকে আমরা গত আট বছরে কখনো হাইব্যা ছাড়া অন্য কিছু ডাকিনি, শান্তশিষ্ট ছেলে বলেই হয়তো পাঁপড়ি-ফটিক জুটিকে খোঁচানোর সব পরিকল্পনায় ভেটো দিয়ে চলছিলো। "থাক না ওরা ওদের মতো!" এই ছিলো তার করুণ আর্তি। ওর চশমার পেছনে ভেজা বেড়ালের মতো চোখ দেখে আমরা ওকে তখনকার মতো ক্ষমা করে দিলেও ফইটকাকে জ্বালানোর প্ল্যানগুলিতে পানি ঢেলে দেয়ার ফলে জোশ হারিয়ে ফোঁসফোঁস করতাম। পাঁপড়ি-ফটিক একসাথে সিনেমা দেখতে যাবে, আমরা কি ঘটনাচক্রে কাকতালীয়ভাবে ওদের আশেপাশেই গিয়ে সে সিনেমা দেখতে বসতে পারি না? ফটিক পাঁপড়িকে কবিতার বই কিনে উপহার দেবে বইমেলা থেকে, আমরা কি ঘটনাচক্রে সেই আসরেই ফইটকাকে "দুষ্টু মেয়ে" উপন্যাসটি কিনে উপহার দিতে পারি না? ফটিক পাঁপড়িকে খাওয়াতে নিয়ে যাবে বুমারস এ, আমরা কি ফটিকের বাবাকে সেদিন চাঁদা তুলে বুমারস এ খাওয়াতে নিয়ে যেতে পারি না? হাইব্যা রাজি হয় না। শুধু নেতিবাচক কাতর শব্দ করে। ইচ্ছা করে ধরে লাত্থি মারা শালাকে। সন্দেহ হয়, ফটিকের সাথে হাইব্যার কোন টেবিলাচ্ছাদিত লেনদেন আছে কি না। হয়তো পাঁপড়ির ছোট বোন ঠুমরি, যে কি না দেখতে পাঁপড়ির চেয়েও অনেক মিষ্টি ও দুষ্টু, তার সাথেই হয়তো একটা কিছু ঘটিয়ে দেবার অঙ্গীকার করেছে ফইটক্যা। হয়তো বলেছে, "দোস্ত! একটু দেখিস! ঠুমরি কিন্তু ঐদিন তোর কথা জিগাইতেসিলো!" তাই হয়তো হাইব্যা দেখছে ফইটক্যাকে। হাইব্যাই ফোন করে জানায় আমাকে। "মইত্যা রে, ফইটকার তো প্রেম ভেঙে গেসে!" মইত্যা নামটা আমার পছন্দ না, এই নামে রাজাকার আর ধান্ধাবাজ আছে অনেক, কিন্তু যার নাম মতিউর তাকে মইত্যাই ডাকে লোকে। আমি উল্লসিত হয়ে বললাম, "পাঁপড়ির ফোন নাম্বার আছে না তোর কাছে?" হাইব্যা পষ্টাপষ্টি অস্বীকার করলো। একটু পরেই মাইনকার ফোন। "পাঁপড়ি এখন রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত। ফোন নাম্বারটা দে।" আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালাম যে পাঁপড়ির ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই। থাকলে এই ফাউল প্রেম অনেক আগেই ভেঙে যেতো। মাইনকা আত্মবিশ্বাস নিয়ে সায় দেয় আমার কথায়। আমার কাছে ফোন নাম্বার থাকলে নাকি অনেক আগেই সেটা নিয়ে ও পাঁপড়ির সাথে ভাব জমিয়ে ফেলতো। ফোন করি ফইটকাকে। ফইটকার ছোট ভাই ছইটকা জানায়, দাদার ঘর বন্ধ। টোকা দিলে হুঙ্কার দিচ্ছে। পরদিন মাইনকা বাসায় এসে হাজির। "চল ফইটকার বাসায় যাই। বোকাচোদা শালা নাকি ঘরের দরজা খুলতাসে না।" আমি বলি, "দাঁড়া, ওর মনটা ভালো করা দরকার। কিছু জিনিস নিয়ে যাই।" এরই মধ্যে হাইব্যাও এসে হাজির। "আমি একটা বোতল নিয়ে এসেছি।" মাইনকা ব্যাগ থেকে একটা বোতল বার করে। হাইব্যা নিরাশাবাদী বলে খুঁতখুঁত করতে থাকে, "এটা তো অর্ধেক খালি!" মাইনকা বলে, "ন্যাকামি করিস না। এইটার অর্ধেক ভরা!" হাইব্যা বলে, "এইসবে কাজ হবে? এই দ্যাখ ... আমি দুইটা চুটকির বই নিয়ে এসেছি!" আমি আমার শেলফের গোপন কন্দর থেকে কিছু জিনিস বার করি। হাইব্যা বলে, "এগুলি আবার ক্যান?" মাইনকা বলে, "কাজে লাগবে। ফইটকার এখন এগুলি কাজে লাগবে।" তিনজনে দুড়দাড় করে যাই ফটিকের বাসায়। ছইটকা বাড়ি ছিলো না, ফটিকের মা বিরক্ত হয়ে বললেন, "শুরু করসে এক ঢং! ঘর ছাইড়া বাইর হয় না! আসুক ওর বাপ!" আমরা ফইটকার ঘরে টোকা দেই। "ফটু! ফটু রে! আছিস? আমরা আসছি, দরজা খোল!" ফইটকা দরজা খুলে সন্দিহান চোখে তাকায় আমাদের দিকে। "কী হইসে? কী চাস?" আমরা দরজা আবার লাগিয়ে দিয়ে বলি, "তোমার পোন্দে লাত্থি মারতে চাই! তোর কী হইসে খুইলা ক। দরজা বন্ধ কইরা থিয়েটার করস ক্যান?" ফইটকা কিছু বলে না, গম্ভীর মুখে একটা বই খুলে বসে আবার। মানিক গিয়ে বইটা টান মেরে ওর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বলে, "এ কী? তুই ফ্রেঞ্চ শিখতাসস নাকি? অলিয়ঁসে?" ফটিক গম্ভীর হয়ে বলে, "উই!" মানিক বলে, "কইতি আমাগো। আমরাও শিখতাম তোর লগে।" ফটিক আবার বইটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টায়। মানিক ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দ্যায়। "কোন ব্যাপার না। জীবনটাই এমন। মাইয়ারা আসবে আর যাবে। তুই হবি প্ল্যাটফর্ম। মেয়েরা হবে ট্রেন। একের পর এক আসবে, কিছুক্ষণ থামবে, চলে যাবে।" ফটিক অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় মাইনকার দিকে। মানিক বলে, "আচ্ছা আচ্ছা, তুই প্ল্যাটফর্ম না। তুই ট্রেন। মাইয়ারা হইলো গিয়া প্ল্যাটফর্ম। তুই একের পর এক প্ল্যাটফর্মে যাবি, খাড়াবি, আবার রওনা দিবি। চিয়ার আপ বাডি!" আমি বলি, "ফইটকা রে, এই দ্যাখ কী নিয়াসছি!" নেংটু সিডি বার করে দেখাই ওকে। দেখে ফটিকের ভাবান্তর হয় না। কাভারটা মনোযোগ দিয়ে দেখে সে ঘোঁৎ করে শুধু বলে, "দেজা ভু!" আমরা একে অন্যের দিকে তাকাই। মানে কী এর? ফইটকাই ব্যাখ্যা করে, "দেখসি এইটা, অলরেডি দেইখা ফালাইসি!" মাইনকা ব্যাগ থেকে বোতলটা বার করে। "আয় মাল খাই। বাসায় ফান্টা আছে?" ফইটকা বোতল দেখে মুখ কুঁচকায়, বলে, "দেজা বু!" দেজা ভু শুনে আমরা গোঁৎ খেয়েছিলাম, দেজা বু শুনে আবারও হোঁচট খাই। ফইটকাই টীকা যোগ করে, "খাইসি, অলরেডি খাইসি একটু আগেই।" ঘরের কোণে টুলের ওপর একটা খালি বোতল দেখায় সে আঙুল দিয়ে। হাইব্যা ব্যাগ থেকে চুটকির বই দুইটা এগিয়ে দেয়। "এগুলি পড়। হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাবি! একটা শোনাই দাঁড়া ...।" ফটিক বই দুইটা হাতে নিয়ে দ্যাখে। তারপর ফিরিয়ে দেয় আবার হাইব্যার হাতে। "দেজা লু!" আমরা আঁচ করতে পারি। ফইটকা বই দুইটা পড়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। মানিক ক্ষেপে যায়। "ঐ হারামী, তোরে এতো খাতির যত্ন করতেসি, আর তুই পাত্তা দেস না আমাগো! ঐ মাইয়ার লাইগা অ্যাতো অ্যাতো অপমান আমাগো?" ফইটকা গোঁ গোঁ করতে থাকে। হাইব্যা বলে, "বল। সব খুইলা বল। অ্যাতো দুঃখ কীসের?" আমি বলি, "দোস্ত, কদ্দুর কী হইসিলো বইলা ফেল।" মাইনকা বদমাইশটার কোন মায়াদয়া নাই, সে বলে, "হ, কইয়া ফালা সব। দেজা চু?" ফইটকা অম্নি ক্ষেপে ওঠে দারুণ। লাফিয়ে উঠে আমাদের ঠেলতে থাকে। "বাইরা, বাইরা সব! হালারা! আসছে আমারে জ্বালাইতে!" আমরা হতবাক হয়ে যাই এই আচরণে। ফইটকা আমাদের হাত থেকে বোতল, বই আর সিডি কেড়ে নিয়ে একরকম ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয় ঘর থেকে।
false
fe
স্বাধীনতার নৈতিক মূল্যবোধ ও বাঙালীর স্বপ্নের গন্তব্য স্বাধীনতার নৈতিক মূল্যবোধ ও বাঙালির স্বপ্নের গন্তব্য ফকির ইলিয়াস ---------------------------------------------------------------- যে চেতনা, স্বপ্ন এবং প্রত্যাশার লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় হয়েছিল তা আজ কতোটা বাস্তবতার পরশ পেয়েছে, সে প্রশ্নটি উত্থাপিত হচ্ছে বারবার। প্রায় চার দশক সময়, একটি জাতি এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনে কম সময় নয়। রাষ্ট্রের রাজনীতিকরা চাইলে অনেক কিছুই হতে পারতো। কিন্তু হয়নি। কেন হয়নি সে প্রশ্নের জবাব কারোরই অজানা নয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মৌলিক মূলনীতি ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ। একটি দেশে গণতন্ত্রের পাশাপাশি সমাজতন্ত্র চলতে পারে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তারপরও ঊনসত্তর-সত্তর-একাত্তরে জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল ঐ চার মূলনীতির পক্ষে। যার ওপর ভিত্তি করে সংগঠিত হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। এটা খুবই হতাশা এবং দুঃখের কথা, যে চেতনা নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল, স্বাধীনতা অর্জনের পর সে চেতনা আর রাষ্ট্র পরিচালকদের অনেকের মাঝে সমুন্নত ছিল না। যার ফলেই পরাজিত মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠীটি সুযোগমতো তাদের ছোবল দিতে তৎপর ছিল। ‘একশ এক’ টাকা কিংবা ‘এক হাজার এক’ টাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি কাউকে দান করে দেয়ার রেওয়াজ বিশ্বের অন্য কোনো দেশে আছে কি না- তা আমার জানা নেই। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিতেই গেলো চার দশকে অনেক মূল্যবান ভবন, হাজার হাজার একর পতিত জমি, খাসভূমি উদ্যান, নামমাত্র মূল্যে বিলি-বণ্টন করে নিয়েছেন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক-পরিচালকরা। কতোটা মগের মুল্লুক মনে করলে এমনটি করা যেতে পারে তা ভাবলে গা শিউরে ওঠে। কিন্তু রাষ্ট্রের জনগণ এতোই অসহায় যে তারা প্রতিবাদ তো দূরের কথা ‘রা’ শব্দটি পর্যন্ত করেন না। কিংবা করতে পারেন না। ভেবে অবাক হতে হয় দেশের প্রতিটি সরকারই গেলো চার দশকে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে মনোযোগী না হয়ে বরং চেপে গেছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, রাজনৈতিক নিপীড়ন এগুলোর মতো বড় ইস্যুর কথা যদি বাদই দিই তবে তো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো দায়িত্ব থাকে না। তারপরও আছে আরো অনেক ছোট ছোট জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাংলাদেশে লঞ্চ-স্টিমারডুবির মতো একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে প্রায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে। পত্র-পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী প্রায় প্রতি বছরই লঞ্চ-স্টিমারডুবির ঘটনায় বাংলাদেশে সহস্র লোকের প্রাণহানি ঘটে। পরিতাপের বিষয় এর কোনো তদন্ত হয় না। লঞ্চ-স্টিমার-জাহাজ নিয়ন্ত্রণবিধি বলে কোনো নিয়ম-কানুন নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরই এক একটি মিনি স্বৈরকেন্দ্র। চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যাংকিং, ডাক, তার, টেলি, সড়ক, পরিবহন সবকটি গণপ্রয়োজনীয় সেক্টরই নিয়ন্ত্রণ করছে এক একটি স্বৈর পেশিশক্তি। কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে আগে তার পকেট গুনে দেখার চেষ্টা করা হয় রোগীটি ধনী না গরিব। ধনী হলে তাকে চিকিৎসকদের পছন্দমতো (যেগুলো নেপথ্য পার্টনার তারা নিজেরাই) ক্লিনিকে ভর্তির উপদেশ (!) দেয়া হয়। আর রোগীটি গরিব হলে তার স্থান হয় হাসপাতালের বারান্দায়। একই অবস্থা শিক্ষাক্ষেত্রেও। মন্ত্রী-আমলা-বড় কর্তাদের সন্তানদেরকে লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হয় বিদেশে। আর গরিব মধ্যবিত্তদের সন্তানদেরকে রাজনীতিকরা ব্যবহার করেন তাদের হাতিয়ার হিসেবে। শিক্ষকরা পরামর্শ দেন প্রাইভেট কোটিং সেন্টার, প্রাইভেট স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদেরকে ভর্তি হওয়ার। বৈষম্য আর কতোটা নগ্ন হতে পারে? বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরটিও এখন দখল হয়ে গেছে রাজনীতিকদের দ্বারা। বড় বড় সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালক নিয়োগগ্রাপ্ত হন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। ডাক ব্যবস্থার কাছে জিম্মি দেশের মানুষ। ভেঙে পড়েছে এর অবকাঠামো। আজ ২০১০ সালে এই ডাক ব্যবস্থাকে ‘ডিজিটাল’ করার কথা বলা হলেও গেলো বিশ বছরে এর প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছে দেশের সিংহভাগ মানুষ। শুধুমাত্র অব্যবস্থার কারণে। তার ও টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক আধিপত্য চরম অবস্থা বিরাজ করেছে সব সময়। কিছু মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করার সুযোগ পেলেও এখনো সে দরোজা অবারিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এটিএন্ডটির মতো বৃহৎ বাণিজ্যিক টেলি কম্যুনিকেশন কোম্পানিটি বারবার আবেদন করেও বাংলাদেশে বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ পায়নি। মার্কিন এটিএন্ডটি সংস্কারের মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশে আধুনিক ল্যান্ডফোন সিস্টেম পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের টিএন্ডটির চরম বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা, রেলযোগাযোগ এখনো ধারণ করে আছে শত বছরের দারিদ্র্য। লোক দেখানো কিছু উন্নয়ন হলেও এখনো বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় রাজধানী ঢাকা শহর। মন্ত্রীরা গাড়ি হাঁকাতে পারলেও জনসাধারণ হেঁটেও পথ চলতে পারেন না। তার ওপর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে রাজনৈতিক নেতা ও তাদের দোসরদের ভবন-দালান। দখল হয়ে যাচ্ছে লেক, পার্ক, নদীর চর, এমন কি কখনো কখনো নদীও। যারা ক্ষমতায় থাকছে তাদের নেতাকর্মীরাই ভোগ করছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় বিভিন্ন ঈদ-পার্বণ, উৎসবে দেশে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে। তাহলে দেশটির গায়ে দারিদ্র্যের ছাপ কোথায়? কে বলবে বাংলাদেশ গরিব দেশ? হ্যাঁ, দারিদ্র্য জড়িয়ে আছে দেশের পাঁজরে, অস্থি, মজ্জায়। কয়েক হাজার পরিবার ধনাঢ্য ব্যক্তিত্বের উত্থান হলেও অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দরিদ্র করে রাখা হয়েছে আপামর জনসাধারণকে। মৌলিক উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া রাষ্ট্রের কাঠামোতে লাগেনি। ন্যায্য ইস্যু নিয়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কিছু বললে তারা ধর্মঘটের হুমকি দেন। শিক্ষক, বৈমানিক, ব্যাংকার, কর্মকর্তারা, শ্রমিকসহ প্রায় প্রতিটি সেক্টরের মানুষের এক অনন্য শক্তি হচ্ছে তারা কর্ম বয়কট করবেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে তারা নিজেরা আয়নায় নিজের চেহারা দেখেন না। নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত না হলে দেশপ্রেম প্রতিষ্ঠা হয় না। আর দেশপ্রেম প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশের কল্যাণে কাজ করার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রতিটি জাতির প্রবাসীদের দেশপ্রেম অনন্য। তার কারণে তারা দেশের বাইরে থেকেও দেশের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে পারেন। বাংলাদেশের প্রবাসীরা কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান। আর নিজেরা দেশে গিয়ে সামান্য সামাজিক নিরাপত্তাটুকুও পান না। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল। বিজয় এসেছে। কিন্তু পরাজয়ের মৌন ধারাবাহিকতায় ক্রমশ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে সেই স্বপ্নসৌধ। বলতে দ্বিধা নেই যদি একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা কিংবা নেত্রী কঠোর হয়ে বাংলাদেশের হাল ধরতেন তবে আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্নরকম হতো। বাঙালির সামনে এখন আর বিশেষ কোনো স্বপ্ন গন্তব্য নেই। শুধু আছে একটি পরিশুদ্ধ, ইতিহাস অন্বেষী প্রজন্ম গঠনের প্রত্যয়। যারা সত্যের ওপর শক্তিশালী বুক নিয়ে দাঁড়াবে। বাঙালি জাতি যদি এই স্বপ্নটি পূরণেও ব্যর্থ হয় তবে জাতির যাযাবরত্ব আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে। স্বপ্ন এখন একটিই এই প্রজন্ম জাগবে। ভেঙে দেবে কালো আঁধারের লৌহ দরোজা। ------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ । ঢাকা । ২০ মার্চ ২০১০ শনিবার প্রকাশিত ছবি- অনিতা ডিয়েলেন সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ৭:০৬
false
rn
গরমে কি করবেন গ্রীষ্ম হলো বছরের উষ্ণতম কাল।পৃথিবীর সর্বত্রই গ্রীষ্ম হলো কর্মোদ্যমের সময়। বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশগুলোতে গ্রীষ্ম খুবই আরাধ্য, কেননা সেসকল দেশে শীতকালে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না, গ্রীষ্মকালেই সব ফসল উৎপাদন করে রাখতে হয়।বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ জুড়ে গ্রীষ্মকাল। এই সময় সূর্যের প্রচন্ড তাপে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভূমি, পানি শুকিয়ে যায়, অনেক নদীই নাব্যতা হারায়, জলশূণ্য মাটিতে ধরে ফাটল।গ্রীষ্মকালের শেষার্ধ্বে সন্ধ্যাসমাগত সময়ে ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এসময় গাছে গাছে বিভিন্ন মৌসুমী ফল দেখা যায়, যেমন: আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুয়ায়ী এর পরের ঋতুটিই হলো বর্ষাকাল। সেসময় প্রচন্ড বৃষ্টিপাত গ্রীষ্মকালীন সব তপ্ততা মিটিয়ে দেয়। জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে ঋতু ব্যাপক ভূমিকা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষ করে বসন্ত ঋতুতে ফুল ফোটে; শজারু শীতকালে ঘুমিয়ে থাকে। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল চলে। মহাসাগর থেকে নিয়ে আসা মেঘ বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে শীতল ও শুষ্ক বাতাস মুখোমুখি হয়ে পরস্পরের সংস্পর্শে এলে তা প্রবল ঝড়ের রূপ ধারণ করে। শুরু হয় প্রবল ঝড়। এই ঝড়কে আমরা কালবৈশাখী ঝড় বলে থাকি। গ্রামের ছেলেমেয়েরা একটু ঝড় কিংবা দমকা বাতাস হলেই ছুটে যায় আমতলায়-জামতলায়। ঝরে পড়া আম, ছিটকে পড়া জাম কুড়িয়ে পাওয়ার যে আনন্দ, তার কোনো তুলনা মেলে না কিছুতেই। সেজন্য আমাদের পল্লীকবি জসীম উদ্দীন যথার্থ বলেছেন‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে/ আম কুড়াতে সুখ,পাকা জামের শাখায় উঠে/ রঙিন করি মুখ।’ গরমের সময় অতিরিক্ত ঘামের চাপে ঘর্মগ্রন্থিটি কিংবা ঘাম শরীরের বাইরে বহনকারী সেই নালীটিই ফেটে যায় এবং ত্বকের নিচে ঘাম জমতে থাকে। ত্বকের নিচে জমে থাকা এ ঘামই ঘামাচি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পানির মধ্যে চন্দন পাউডার মিশিয়ে ওই পানি গরম করে নিন। গোসলের পানির মধ্যে ওই পানি মিশিয়ে গোসল করুন। এতে আপনার মধ্যে দিনভর সতেজ ভাব বজায় থাকবে। গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় লবণ আর পানি। এটা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু এ পানিরঅভাবও পূরণ হওয়া চাই। গরমে ডাবের পানি ভালো। ডাবের পানি ঘামের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।পানি আছে এমন শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন লাউ, শসা, গাজর, আলু, তরমুজ, ফুটি, পেঁপে ইত্যাদি।পর্যাপ্ত পানি পান না করলে বেশি গরমে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হতে পারে হিট স্ট্রোক। জ্বর, ঘামহীন শুষ্ক ত্বক, শ্বাস প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, খিঁচুনি, এমন কি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।গরমে বাইরে রোদে ধুলোময়লা, রোদের তাপ, বেশিক্ষণ এয়ারকন্ডিশনে থাকা, এ রকম নানা কারণে আমাদের চুল সৌন্দর্য ও কোমলতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে যায়।খেয়াল রাখবেন চুলের মধ্যে যেন হাওয়া চলাচল করতে পারে।ধুলো-ময়লা, বৃষ্টির পানিতে ভিজে অনেক সময় চুল নিস্তেজ হয়ে যায়।চুলে শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই ভালো কোম্পানির কন্ডিশনার লাগান।প্রতিকদিন কিছুটা সময় চুলের যত্ন নিন।এই গরমে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন, প্রচুর পানি খান, বার বার মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন এবং সবার ওপরে নিজের ত্বককে ভালোবাসুন।গরমকাল মানেই ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের বেশি বংশবিস্তারের আশঙ্কা থাকে। খাবার বা পানিবাহিত অসুখ_ টাইফয়েড, জন্ডিস এসব অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ এ সময় বেশি হয়। সে জন্য ফুটপাতের শরবত, খোলা খাবার বা কাটা ফল খাওয়া পরিহার করা উচিত। একসঙ্গে বেশি পরিমাণ খাবার না খেয়ে বার বার অল্প পরিমাণে হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। টক দই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গরমে নানাভাবে টক দই খাওয়া দরকার। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী হলো সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন। এর পাতার ভেতরের থকথকে আঠালো অংশটুকু সরাসরি ত্বকে লাগাতে হবে। সঙ্গে সঙ্গেই অনুভব করবেন, ত্বকের জ্বালাভাব কমে যাচ্ছে এবং নিয়মিত ব্যবহারে উজ্জ্বল স্বাস্থ্যকর ত্বক ফিরে পাবেন। এটি যে কোনো ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অতি সংবেদনশীল ত্বক কিংবা ব্রণ ওঠার প্রবণতা যাদের বেশি তারা এর থেকে অনেক বেশি উপকার পাবেন।
false
rg
বাংলাদেশীদের ইন্ডিয়ান ভিসা বিড়াম্বনা !!! প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ছয় থেকে আট লাখ বাংলাদেশী নাগরিক নিয়মিত ভারত ভ্রমণ করেন। গড়ে প্রতি মাসে ৫৫ থেকে ৬৫ হাজার বাংলাদেশী নাগরিক ভারত ভ্রমণ করেন। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী হওয়ায় চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা, ভ্রমণ, বিনোদনসহ নানান কারণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশের মানুষ ভারত ভ্রমণ করেন। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশের মানুষের ভারতীয় ভিসা পাওয়ার জন্য চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিস্টার নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় ভিসা সহজ করার কথাটি বেশ আলোচনায় ছিল। তখন শোনা যাচ্ছিলো এখন থেকে ভারতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশী নাগরিকরা ই-টুরিস্ট ভিসার ফ্যাসিলিট পাবেন। তখন বলা হচ্ছিলো বাংলাদেশী যে কোনো নাগরিক, যাদের পাসপোর্টে অন্তত ছয় মাসের ভ্যালিডিটি আছে, তারা ভারতে প্রবেশের জন্য ৬০ মার্কিন ডলার ভিসা ফি দিয়ে এই ই-টুরিস্ট ভিসা নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একজন ভারত ভ্রমণেচ্ছু বাংলাদেশী নাগরিককে ভারত সরকার অন্তত এক মাসের ভিসা দেবেন। আর ই-টুরিস্ট ভিসার জন্য বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতে প্রবেশের মিনিমাম চার দিন আগে এই ই-টুরিস্ট ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী গত বছর ৬ ও ৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেন। তখন বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ সংক্রান্ত বহুল আলোচিত ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। এছাড়া তখন উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা জটিলতার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটি রহস্যময় কারণে তখন আর আলোর মুখ দেখেনি। এমনিতে ভারত বিশ্বের ৪৫টি দেশের নাগরিকদের এই ই-টুরিস্ট ভিসা সুবিধা দিচ্ছে। চলতি বছর এই সুবিধা আরো ৩০টির বেশি দেশকে দেবার পরিকল্পনা থাকলেও এখনো বাংলাদেশ সেই সুবিধা পায়নি। বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশন এমনিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের যে ভিসা প্রদান করে, সেখানে কোনো ভিসা ফি নাই। কিন্তু ভিসা প্রসেসিং ফি-র নামে ভারতীয় হাই কমিশন ৬০০ ও ৭০০ টাকার একটা নমিনাল ফি আদায় করে। কিন্তু ভারতীয় ভিসা পাওয়ার জন্য যে কোনো বাংলাদেশী নাগরিকের বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনের দালালদের মাধ্যমে এই ৬০০ ও ৭০০ টাকার ভিসা প্রসেসিং ফি ছাড়াও বাড়তি মিনিমাম তিন হাজার থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনের একশ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারী আবার এসব দালাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশী যে কোনো নাগরিক ভারতীয় ভিসার জন্য যখন দালালদের মাধ্যমে আবেদন করেন, তখন যে বাড়তি তিন হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করেন, তার ভাগ পায় ভারতীয় হাই কমিশনের ওই সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনের সঙ্গে জড়িত এই দালাল সিন্ডিকেটের বাইরে অনলাইনে ভারতীয় ভিসা ফরম পূরণ করার সুযোগ কোনো বাংলাদেশী নাগরিকের নাই। কেউ যদি এই দালাল সিন্ডিকেটের বাইরে অনলাইনে নিজেই ভিসার আবেদন ফরম পূরণ করেন, তাহলে তাকে ভারতীয় ভিসার টোকেন পাওয়ার কোনো উপায় নাই। এই সিন্ডিকেটে টাকা যাবার পরেই এই টোকেন পাওয়ার অলিখিত একটা নিয়ম চালু হয়ে আছে। এই নিয়মের বাইরে কারো পক্ষে ভারতীয় ভিসা পাওয়া সম্ভব নয়। তবে যদি কেউ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ কর্মকর্তা দিয়ে ভারতীয় হাই কমিশনে তদবির করাতে পারেন, তাদের বেলায় এই অনিয়ম প্রযোজ্য নয়। কিন্তু সাধারণ বাংলাদেশী যে কোনো নাগরিকের জন্য ভারতীয় ভিসার জন্য এই বিড়ম্বনা এড়ানোর শূন্য ভাগ সম্ভাবনাও নাই। অথচ বাংলাদেশী নাগরিকরা সারা বছর এই বিড়ম্বনার শিকার হয়েও ভারতীয় ভিসার জন্য ভারতীয় হাই কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে। কিন্তু এই বিড়ম্বনার শেষ কোথায় তা কেউ বলতে পারে না!এমনিতে ভারত থেকে কোনো ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশ ভ্রমণে কোনো ভিসা ফি লাগে না। কিন্তু বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা প্রসেসিং ফি'র নামে ৬০০ ও ৭০০ টাকা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় হাই কমিশন নিচ্ছে। আবার দুর্নীতি ও অসততার আড়ালে হাই কমিশনের দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আরো তিন থেকে ছয় হাজার টাকা নিচ্ছে। কিন্তু এই টাকা নেবার পরেও ভিসা প্রাপ্তিতে বিড়ম্বনার কোনো শেষ নাই। এ যেন ভীনদেশী এক অলিখিত আজব নিয়ম! বিশ্বের কোথাও এই নিয়মের দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ আছে কিনা আমার জানা নেই। ভারতীয় নাগরিকরা বিনা ভিসা ফি-তে বাংলাদেশ ভ্রমণ করার সুযোগ পাচ্ছেন কিন্তু বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য এই বৈষম্যমূলক আচরণের আড়ালে ভারতের বড় ভাই সুলভ দাদাগিরিই দায়ী। পাশাপাশি ভিসার ক্ষেত্রে এটা উভয় দেশের সমান সুযোগের একটি বিসদৃশ্য চিত্র। যা বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিরও একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। ভারত যদি বাংলাদেশী নাগরিকদের কাছ থেকে ভিসা প্রসেসিং ফি নিতে পারে বাংলাদেশ কেন ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সম-পরিমাণ ফি আদায় করবে না? এই না করার মধ্যে কোনো ন্যূনতম মহত্ব নাই বরং এটা ভারতীয় নীতির কাছে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতিকেই সুস্পষ্ট করে। ভারতীয় যে কোনো সম্মানিত অতিথি যখন বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য ভিসার আবেদন করেন, তখন বাংলাদেশ যে আতিথিয়তা দেখায়, ভারত ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশী সম্মানিত নাগরিকরা ভারতের কাছ থেকে সেই আতিথিয়তা বা সম্মান তো পায়-ই না। উল্টো তাঁদেরও একই ধরনের ভিসা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি অসীম সাহাকে আগামী ১৪ আগস্ট কোলকাতা অবনীন্দ্র সভাঘরে কোলকাতা লিটল ম্যাগাজিন ফোরামের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা। একই দিন সকালে তারা টিভিতে কবি অসীম সাহা'র বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা-অনুষ্ঠান করার কথা। এছাড়া আগামী ১৮ আগস্ট কোলকাতার চোখ পত্রিকার উদ্যোগে কবি অসীম সাহাকে ‘বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ডায়মন্ড হারবারে আগামী ২০ আগস্ট ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়ার কথা। কবি অসীম সাহা কোলকাতার এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করলে হাই কমিশন কবিকে আগামী ১৪ আগস্ট ডেট দিয়েছে। অথচ একই সঙ্গে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করা কবিপত্নীর জন্য ডেট দিয়েছে ১১ আগস্ট। এটা ভারতীয় হাই কমিশনের কোন ধরনের আচরণ!১৪ আগস্ট যদি কবি ভিসা পেয়েও যান, ১৪ আগস্ট কোলকাতায় সকাল ও বিকালের অনুষ্ঠানে কবি অসীম সাহা কীভাবে যোগ দেবেন? এর আগে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন একই ধরনের আচরণ করেছে ২০১৪ সালে শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত নির্মাতা মাসুদ পথিকের সঙ্গে। নির্মাতা মাসুদ পথিকেরও কবি হিসাবে আগামী ২০ আগস্ট কোলকাতার ডায়মন্ড হারবারে ‘ঋত্বিক ঘটক স্মৃতি পুরস্কার’ নেবার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন মাসুদ পথিককে ভিসা দেয়নি। বাংলাদেশের বিশিষ্ট ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ভারতীয় হাই কমিশনের এই আচরণ সম্পূর্ণ কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং খুবই নিন্দনীয় একটি গর্হিত কাজ বলেই আমি মনে করি। ভারতীয় বিশিষ্ট ও সম্মানিত ব্যক্তিদের যেখানে বাংলাদেশ অনেকটা মাথায় নিয়ে নাচার মত অতিথিয়তা দেখায়, সেখানে ভারতীয় পক্ষের এমন শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত ভারতীয় হাই কমিশনারকে তলব করে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ও সম্মানিত নাগরিকদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণের যথাযথ ব্যাখ্যা দাবি করা। পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য সম-পরিমাণ ভিসা প্রসেসিং ফি আরোপ করা। দুইটি বন্ধত্বপূর্ণ দেশের কূটনৈতিক শিষ্টাচার উভয় দেশের মান-সম্মান এবং নাগরিকদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত। তা না হয়ে সেখানে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণেই আজ ভারতীয় হাই কমিশন এ ধরনের শিষ্টাচার বহির্ভূত ঔদ্বত্বপূর্ণ আচরণ দেখাতে পেরেছে বলেই আমি মনে করি। এটা কেবল বাংলাদেশের দু'জন ব্যক্তির মান-সম্মান নয়, এটা গোটা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের লজ্বা। ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী। ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিক এখনো স্মরণ করে প্রাণ থেকে কৃতজ্ঞতা জানায়। কিন্তু তার বিনিময়ে যদি ভারতের কাছ থেকে এ ধরনের শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ সহ্য করতে হয়, তা বাংলাদেশী যে কোনো নাগরিকের জন্যই বিশাল কষ্টের ব্যাপার। বাংলাদেশী নাগরিকদের চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা, ভ্রমণসহ নানান কারণে ভারত ভ্রমণ একটা নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। অথচ এই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা বিড়ম্বনার আজ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি, এটাই দুঃখের আরেকটা বড় কারণ।ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিস্টার নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতীয় ভিসার ক্ষেত্রে যে সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমরা আশা করব সেই প্রতিশ্রুতি মাননীয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শীঘ্রই বাস্তবায়ন করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা জটিলতা ও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করবেন বলেই আমরা প্রত্যাশা করি। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি স্থাপনে যতটা প্রয়োজনীয়, ঠিক উভয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করতে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে পারে বলেই আমরা আশাবাদী। যে কারণে বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা জটিলতা দূর করণে ভারত সরকার অগ্রাধীকার ভিত্তিতে এর সমাধানে আগ্রহ দেখাবে বলেই আমরা প্রত্যাশা করি। কাউকে ছোট করে বন্ধুত্ব দেখানোর মধ্যে কোনো মহত্ব নাই। ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরো শক্তিশালী হোক আমরা দৃঢ়ভাবে সেই প্রত্যাশা করি।.................................১২ আগস্ট ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:১৪
false
rn
আমি মনে হয় আর বেশি দিন বাঁচবো না স্বপ্নে দেখি- আমি একটা অলৌকিক ক্ষমতা পেয়েছি। শূণ্যে ভেসে থাকতে পারি। এক স্থান থেকে আরেক স্থানে মুহূর্তে চলে যেতে পারি। সারা ঢাকা শহরের মানুষ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। স্বপ্নের মধ্যেই আমি ব্যাপারটা খুব উপভোগ করি। আমার আকাশে উড়া সুপার ম্যানের চেয়ে আধুনিক। সুপারম্যান তো এক মুষ্ঠিবন্ধ করে সামনের দিকে বাড়িয়ে রাখে। আর আমি মেঘের মতো ভেসে-ভেসে, ঘুড়ির মতো উড়ি। ইচ্ছা হলে স্প্রীড বাড়াই, ইচ্ছা হলে স্প্রীড কমাই। ইদানিং খুব বেশি- ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। সারা দিন খুব পরিশ্রম করি- তবুও ঘুম আসে না। সুরভি শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়ে। ল্যাপটপ বা বই পড়তে পারি না। লাইট অন করলে সুরভি'র ঘুমের সমস্যা হবে। একবার এপাশ- একবার ওপাশ। এইভাবে ভোর হয়ে যায়। ঠিক তখন রাজ্যের ঘুম আসে। কিন্তু তখন ঘুমাতে পারি না। অফিসের জন্য রেডি হতে হয়। অফিস শুরু হওয়ার দুই ঘন্টা আগে বের হতে হয়- রাস্তায় থাকে জ্যাম। বেশির ভাগ সময় বাসও পাওয়া যায় না। হেঁটে যাই। সময় মতো অফিস পৌছাতে না পারলে সমস্যা। বেতন থেকে টাকা কেটে নেয়। অফিসের কাজে নানান কাজে বাইরে যেতে হয়- বিকেল থেকে শুরু হয় প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। এত ব্যাথা মনে হয় অন্ধ হয়ে যাব। অজ্ঞান হয়ে যাব। বাসায় ফেরার পর সুরভি যথাসাধ্য চেষ্টা করে ব্যাথা কমাতে। কখনও কখনও এই ব্যাথা ৫ ঘন্টা থাকে। ইদানিং দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছি। গায়ের রং হয়ে গেছে কালো। প্রতিটা জামা কাপড় ঢোলা হয়ে গেছে। চোখ জ্বলে। কোনো খাবার খেয়েই স্বাদ পাই না। রাতের বেলা ভয় পাই। দিনের পর দিন একই ভাবে কাটছে। হুট করে যদি মরে যাই- তাহলে সুরভি'র কি হবে? সে আর বিয়ে করবে না, সেটা আমি জানি। হয়তো একটা চাকরি করবে। দুঃখে কষ্টে বাকি জীবনটা পার করে দিবে। সে যাইই হোক, অফিসের কাজে ফরিদপুর গিয়ে কালো হয়ে গেছি। অবশ্য ফরিদপুর যাওয়ার আগে গিয়েছিলাম কক্সবাজার। ছোটবেলা আমি ধবশবে ফর্সা ছিলাম। স্কুলের শিককরা আমাকে সাদা বিড়াল বলে ডাকতেন। ভাবছি ডাক্তার দেখাবো। যাই যাই করেও যাওয়া হচ্ছে না। আমাদের বংশে সবাই লম্বা সময় বেঁচেছে। আমার দাদা প্রায় ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি সারা জীবন জমিদারগিরি করেছেন। আমাদের গ্রামে একমাত্র তিনিই কককাতা থেকে কাপড় আয়রন করে আনতেন, এমন কি পানের জর্দা পর্যন্ত কলকাতা থেকে নিয়ে আসতেন। গ্রামের মানুষ তার বিলাসিতা দেখে তাকে বলতেন নওসা মিয়া। যদিও তিনি হঠাত করে অন্ধ হয়ে যান, তখন তার বয়স ৪০ বছর। যাই হোক, আমি আমার মুল আলোচনায় আসি। এবার ফরিদপুর গিয়ে তিন-তিনবার হোন্ডা এক্সিডেন্ট করি। কিন্তু আমার কিছুই হয়নি। যে হোন্ডা চালাচ্ছিল তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। মৃত্যু এবং মৃত্যু যন্ত্রণা প্রত্যেক মানুষের জন্য অনিবার্য। মহান আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় রাসূল সা: কে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়েছিলো। আর যখন তিনি মৃত্যুর কিনারায় পৌছেছিলেন, যখন তিনি মৃত্যু যন্ত্রণায় আক্রান্ত হলেন। তখন নিজের সাথে এক জগ পানি রেখেছিলেন, আর সেখান থেকে নিজের হাত ডুবিয়ে নিয়ে মুখ মুছতেন এবং বলতেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইন্না লিল মাওতি লা সাকারাত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” -অর্থাৎ নিশ্চয়ই মৃত্যু যন্ত্রণা বড়ই তীব্র এবং বড়ই কঠিন! যদি খোদ রাসূল সা: মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর হন, তাহলে আমাদের কেমন হবে? অবশ্যই কঠিন। অতএব বন্ধুরা, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিন। ক্ষণস্থায়ী জীবনের স্বাদ নিতে গিয়ে অনন্ত জীবনকে ভুলে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথই তো বলেছেনই—‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট, বেদনা থেকে মুক্তি, আবার কখনো মনে হয় মৃত্যু মানেই নরক নামক সীমাহীন যন্ত্রনার হাতছানি। জগতের সবচেয়ে রহস্যময় জিনিস আমার মনে হয় মৃত্যু। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৪৩
false
rg
আজ ছফা ভাইয়ের জন্ম দিন ছিল। বাংলাদেশের কোথাও আজ তাঁর নাম উচ্চারিত হয় নি। এটাই দুঃখের বিষয়। রেজা ঘটক আহমদ ছফা (জুন ৩০, ১৯৪৩ - জুলাই ২৮, ২০০১): একজন বাংলাদেশী লেখক, কবি ও সমাজবিজ্ঞানী। তাঁর লেখায় বাংলাদেশী জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণ প্রাধান্য পেয়েছিল। তিনি ২০০২ সালে সাহিত্যে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। জীবদ্দশায় আহমদ ছফা তাঁর প্রথাবিরোধী, নিমোর্হ, অকপট দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য বুদ্ধিজীবি মহলে বিশেষ আলোচিত ছিলেন। ১৯৪৩ সালের ৩০শে জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামে আহমদ ছফা জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা মরহুম হেদায়েত আলী ওরফে ধন মিয়া। মা মরহুমা আসিয়া খাতুন। দুই ভাই চার বোনের মধ্যে আহমদ ছফা ছিলেন বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান। আহমদ ছফার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ গাছবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬০ সালে নিজের গ্রামের নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় সুধাংশু বিমল দত্তের মাধ্যমে কৃষক সমিতি-ন্যাপ বা তৎকালীন গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে তিনি যুক্ত হন। মাস্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা কয়েকজন বন্ধু মিলে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইন উপড়ে ফেলেছিলেন। পরে গ্রেপ্তার এড়াতে কিছুকাল পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মগোপন করেছিলেন। ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম নাজিরহাট কলেজ থেকে আহমদ ছফা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। একই বৎসরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। যদিও তিনি পরে বাংলা বিভাগে ক্লাশ করা অব্যাহত রাখেননি। ১৯৬৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে তিনি প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে এমএ পরীক্ষা দেয়ার আগেই বাংলা একাডেমীর পিএইচডি গবেষণা বৃত্তির জন্য আবেদন করেন এবং তিন বছরের ফেলোশিপ প্রোগ্রামের জন্য আহমদ ছফা মনোনীত হন। গবেষণার বিষয় ছিল ‘১৮০০ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত বাংলার মধ্যবিত্তশ্রেণীর উদ্ভব, বিকাশ, এবং বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তার প্রভাব’। ১৯৭১ সালে প্রাইভেট ভাবে আহমদ ছফা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পরীক্ষা দেন। মৌখিক পরীক্ষা হয় একুশে মার্চ। আহমদ ছফা'র পক্ষে পিএইচডি সম্পন্ন করা পরে আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ১৯৮৬ সালে জার্মান ভাষার ওপর গ্যোটে ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ডিগ্রিও লাভ করেন আহমদ ছফা । যে জ্ঞান তাঁকে পরবর্তী সময়ে গ্যাটের অমর সাহিত্যকর্ম 'ফাউস্ট' অনুবাদে সাহস জুগিয়েছিল। তিনি সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। গল্প, গান, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী মিলিয়ে তিরিশটির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন আহমদ ছফা । আহমদ ছফার প্রথম গ্রন্থ একটি উপন্যাস- 'সূর্য তুমি সাথী'। প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গ্রন্থ হিসেবে মুক্তধারা থেকে প্রকাশ পায় তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থ 'জাগ্রত বাংলাদেশ'। প্রকাশকাল শ্রাবণ ১৩৭৮ বা জুলাই ১৯৭১ সাল। ১৯৭০ সালে পিএইচডি অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সান্নিধ্যে আসেন। দীর্ঘকাল তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। ১৯৭১ সালে তিনি ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ গঠন এবং এর বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। সাতই মার্চ তিনি ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা’ হিসেবে প্রতিরোধ প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আহমদ ছফা এপ্রিল মাসে কলকাতা চলে যান। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সেখান থেকে 'দাবানল' নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর আহমদ ছফা বাংলাদেশে ফিরে লেখালেখি করতে থাকেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক গণকণ্ঠে ধারাবাহিকভাবে ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ রচনা প্রকাশ করেন। এর কারণে তৎকালীন সরকারের রোষে পড়তে হয় তাঁকে। ১৯৭৯ সালে 'সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস' গ্রন্থ প্রকাশ পায়। ১৯৮০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন মোস্তানের সহায়তায় কাঁটাবন বস্তিতে ‘শিল্পী সুলতান কর্ম ও শিক্ষাকেন্দ্র’ চালু করেন। বাংলা একাডেমী থেকে 'বাঙালি মুসলমানের মন' প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশ পায় ১৯৮১ সালে । ছফা মহাকবি গ্যোতের 'ফাউস্ট' অনুবাদ শুরু করেন ১৯৭০ সালে । মুক্তধারা থেকে ফাউস্টের অনুবাদ বের হয় ১৯৮৬ সালে । ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস 'অলাতচক্র'। স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতির গোপন-রহস্য, শৌর্য মৃত্যু ও কপটতার গীতিকা এই উপন্যাস। ১৯৯৬ সালে 'পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ' এবং 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' প্রকাশিত হয়। ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ পূর্বে একটা সাপ্তাহিক পত্রিকায় 'প্রাণপূর্ণিমার চান' নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। জাপানী ভাষায় 'পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ' উপন্যাসের অনুবাদ প্রকাশ পায় ১৯৯৮ সালে । 'পুষ্প, বৃক্ষ, বিহঙ্গপূরাণ' উপন্যাসে সুশীল সমাজের ব্যবচ্ছেদ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ও সমসাময়িক কালের বিশিষ্ট পণ্ডিত অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের প্রসঙ্গে রচিত 'যদ্যপি আমার গুরু' প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। তাঁর জীবদ্দশায় 'আহমদ ছফা রচনাবলী' প্রকাশ শুরু হয়। ২০০১ সালে 'আহমদ ছফা রচনাবলী' দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ পায়। জীবিত থাকাকালীন 'আহমদ ছফা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কলাম লেখা অব্যাহত রেখেছেন। প্রবন্ধ: 'জাগ্রত বাংলাদেশ', ১৯৭১ 'বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস', ১৯৭২ 'বাংলা ভাষা: রাজনীতির আলোকে', ১৯৭৫ 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা', ১৯৭৭ 'বাঙালি মুসলমানের মন', ১৯৮১ 'শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য প্রবন্ধ', ১৯৮৯ 'Aspect of Social Harmony in Bangla Culture and Peace Song', ১৯৯১ 'রাজনীতির লেখা', ১৯৯৩ 'আনুপূর্বিক তসলিমা ও অন্যান্য স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ', ১৯৯৪ 'নিকট ও দূরের প্রসঙ্গ', ১৯৯৫ 'সঙ্কটের নানা চেহারা', ১৯৯৬ 'সাম্প্রতিক বিবেচনা: বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস', ১৯৯৭ 'শরবর্ষের ফেরারী: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়', ১৯৯৭ 'শান্তিচুক্তি ও নির্বাচিত প্রবন্ধ', ১৯৯৮ 'বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র', ২০০১ 'উপলক্ষের লেখা', ২০০১ 'আমার কথা ও অন্যান্য প্রবন্ধ', ২০০২ 'সেইসব লেখা', ২০০৮ অনুবাদ: 'তানিয়া' (মূল: পি. লিডভ), ১৯৬৭ 'সংশয়ী রচনা: বার্টাণ্ড রাসেল', ১৯৮২ 'ফাউস্ট' (মূল: ইয়োহান ভোলফ্‌ গাঙ ফন গ্যোতে), ১৯৮৬ কবিতা: 'জল্লাদ সময়', ১৯৭৫ 'দুঃখের দিনের দোহা',১৯৭৫ 'একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা', ১৯৭৭ 'লেনিন ঘুমোবে এবার', ১৯৯৯ উপন্যাস: 'সূর্য তুমি সাথী', ১৯৬৭ 'ওংকার', ১৯৭৫ 'একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন', ১৯৮৮ 'মরণবিলাস', ১৯৮৯ 'অলাতচক্র', ১৯৯৩ 'গাভী বিত্তান্ত', ১৯৯৫ 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী', ১৯৯৬ 'পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ', ১৯৯৬ গল্পসংগ্রহ: 'নিহত নক্ষত্র',১৯৬৯ ইতিহাসগ্রন্থ: 'সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস', ১৯৭৯ সৃজনশীল জীবনী: 'যদ্যপি আমার গুরু', ১৯৮৮ কিশোর গল্প: 'দোলো আমার কনকচাঁপা', ১৯৬৮ শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ: 'গো-হাকিম', ১৯৭৭ পুরস্কার: আহমদ ছফা 'লেখক শিবির পুরস্কার' ও বাংলা একাডেমী কর্তৃক 'সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার' প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি 'ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার' গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁকে ২০০২ সালে সাহিত্যে (মরণোত্তর) 'একুশে পদক' প্রদান করা হয় । মৃত্যু: ২০০১ সালের ২৮শে জুলাই অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবি গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:২৪
false
rn
বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (নয়) ৮১। 'কারাগারে রাত দিন' লেখক- জয়নাব আল গাজালী। একটি ইসলামী আন্দোলন কি পরিমান জুলুম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ধৈর্য্য ও বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় সেই অবিস্মরণীয় সত্য ঘটনা জানতে বইটি পড়ুন। ৮২। মন প্রকৌশল স্বপ্ন অনুপ্রেরণা আর জীবন গড়ার ফরমুলা - রাগিব হাসান । বইটা পড়ে এক ধরনের অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। এতে স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে, ঘুরে দাঁড়ানো মানুষদের কথা বলা হয়েছে। অসংখ্য উদাহরণ দেয়া হয়েছে, অসংখ্য গল্প বলা হয়েছে। আমাদের তরুণদের কিছু বাঁধাধরা সমস্যা আছে সেই সমস্যাগুলোর কথা বলা আছে। হতাশ হয়ে যাওয়া সেই তরুণদের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই এই বইটা পড়ে এক ধরনের শক্তি পাবে, এক ধরনের সাহস পাবে, নিজের ভেতর অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে। ৮৩। আরজ আলি মাতুব্বর এর রচনাসমগ্র- প্রথাবিরোধী ধর্মদর্শনের প্রাচীন ধারাবাহিকতার বাংলাদেশী রূপকার হলেন আরজ আলি মাতুব্বর। তিনি মনে করতেন পশু যেমন সামান্য জ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে ধর্মবাদী ব্যক্তিগণও তেমনি সামান্য জ্ঞান নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। মেধার বিকাশ, মুক্তচিন্তা, মুক্তজ্ঞান, বিজ্ঞান চেতনা ইত্যাদি মুক্তবৌদ্ধিক মনোভঙ্গির বিপক্ষে ধর্মপ্রবণ ব্যক্তিগণ দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। তাই ধর্ম অনেকাংশেই মানুষের মানবিক বিকাশকে সমর্থন করে না; মুক্তবুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা, উদারতা, সহানুভূতিশীলতা, মানবিকতা প্রভৃতির প্রসার-প্রচারকে অনেকাংশেই সীমিত করে তোলে। তিনি জানেন সমাজের যথার্থ মুক্তি ঘটে একমাত্র বস্তুবাদী দর্শনের চর্চাতেই। নিজের প্রান্তিক জীবনের সাধারণ কয়েকটি ঘটনাতেই তিনি বুঝে নিয়েছেন তার ও তার সমাজের আচরিত ধর্মের স্বরূপ। ক্রমাগত গ্রন্থ পাঠে বুঝে নিয়েছেন এর কারণাবলী। এই অন্ধকারাচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। তাই তিনি অনবরত প্রশ্নবাণে দগ্ধ করেছেন তথাকথিত সমাজপিতা ও তাদের আচরিত-প্রচারিত ধর্ম ও দর্শনকে। ৮৪। 'বিবর্তনের পথ ধরে' লেখক- বন্যা আহমেদ। বিবর্তন নিয়ে বাংলা ভাষায় এখন পর্যন্ত রচিত নিঃসন্দেহে সবচেয়ে শক্তিশালী বই এটি। না পড়লে চোখ বুজে বলে দেয়া যায় আপনি ঠকলেন।৮৫। 'যে গল্পের শেষ নেই' লেখক- দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। "যে গল্পের শেষ নেই" বইটি ১৯৫১ সালে প্রকাশিত হয়। প্রাক মানুষ, মানুষ, পরিবার, সমজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তর মোটা মোটা বই লেখা হয়েছে, রয়েছে অতি মূল্যবান রেফারেন্স বই কিংবা এনসাইক্লোপেডিয়া। কিন্তু এই বইটিতে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে শুন্য থেকে শুরু করে মানুষের উদ্ভব এবং আজকের সমাজ ব্যবস্থা পর্যন্তসকল বৈশিষ্টকে। এই বইটিতে দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একেবারে গল্পের মত করে শুধুই মানুষের কথা বইটির প্রতিটি পাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হোক না তা বহু বছরের আগের কথা, কথাগুলো তো আজও সত্য। ৮৬। 'ভোলগা থেকে গঙ্গা' লেখক- রাহুল সাংকৃত্যায়ন। 'ভোল্গা সে গঙ্গা' গ্রন্থখানি ২০টি ছোটো গল্পের সমাহার। এই ছোটো ছোটো গল্প বা কাহিনীগুলো নিছক কল্পনা প্রসূত নয়, সমাজবিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ের দিকে লক্ষ্য রেখে গল্পগুলো ধারাবাহিক ভাবে রচিত হয়েছে। ইতিহাস আর সমাজবিজ্ঞান এর মূলতত্ত্বকে সর্বত্রই মেনে চলা হয়েছে। প্রায় ৬০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে ভোলগা নদীর তীরে যে মানবগোষ্ঠী পরিবার স্থাপন করেছিলো, তাদেরই আবাস ও জীবন নিয়ে রচিত হয়েছে প্রথম গল্পটির দৃশ্যপট। ক্রমে সেই মানুষ মধ্য ভলগাতটে অগ্রসর হয়ে মধ্য এশিয়া অতিক্রম করেছিলো। উত্তর কুরু, তাজিকিস্তান পেরিয়ে একসময় সমগ্র গান্ধার এলাকা জুড়ে বসতি স্থাপন করেছিলো এই আর্যরা। ইতিহাসের এই ধারায় বিংশ শতাব্দীতে পৌছে সমাপ্ত হয়েছে গ্রন্থটির আখ্যান। এই ধারাবাহিকতা নিয়েই রচিত হয়েছে প্রতিটি গল্পের দৃশ্যপট।৮৭। 'নারী, সৃষ্টি ও বিজ্ঞান' লেখক- পূরবী বসু। পূরবী বসুর দুটি পরিচয়- কথাশিল্পী এবং পুষ্টিবিজ্ঞানী। উভয়ক্ষেত্রে তাঁর পরিচিতের পরিধি সুবিস্তৃত। বিজ্ঞানজগতে পূরবী বসু একটি সম্মানিত নাম, বাংলাসাহিত্যে তাঁর কলমের খ্যাতি সর্বত্র। তাঁর প্রতিভার এই দ্বিমুখী ধারা এই গ্রন্থটির মধ্যে এক অপূর্ব মোহনায় মিশেছে- বইটি পড়ে এই মনে হয়েছে আমার। ৮৮। 'ঈশ্বরের বাগান' লেখক-অতীন বন্দোপাধ্যায়। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্ম ১৯৩৪ সালে বাংলাদেশের ঢাকায়। ‘ঈশ্বরের বাগান’ উপন্যাসটিতে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বাস্তু পরিবার, তাদের দৈনন্দিন যন্ত্রণা, চারিত্রিক বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্বময় সংঘাতের ছবি এঁকেছেন। লেখকের জাদুকরী কলমের টানে উপন্যাসটি অনন্যতার দাবি রাখে। বিদগ্ধ পাঠকমণ্ডলীর সংগ্রহশালায় এ উপন্যাস অপরিহার্য।৮৯। 'আয়না' লেখক- আবুল মনসুর আহমদ। আয়না গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্প 'হুজুর কেবলা'র শুরুটি এরকম_ এমদাদ তার সবগুলি বিলাতি ফিনফিনে ধূতি, সিল্কের জামা পোড়াইয়া ফেলিল; ফ্লেক্সের ব্রাউন রঙের পাম্পশুগুলি বাবুর্চিখানার বঁটি দিয়া কোপাইয়া ইলশা-কাটা করিল। চশমা ও রিস্টওয়াচ মাটিতে আছড়াইয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিল; ক্ষুর স্ট্রপ, শেভিংস্টিক ও ব্রাশ অনেকখানি রাস্তা হাঁটিয়া নদীতে ফেলিয়া দিয়া আসিল; বিলাসিতার মস্তকে কঠোর পদাঘাত করিয়া পাথর বসানো সোনার আংটিটা এক অন্ধ ভিক্ষুককে দান করিয়া এবং টুথক্রীম ও টুথব্রাশ পায়খানার টবের মধ্যে ফেলিয়া দিয়া দাঁত ঘষিতে লাগিল।৯০। 'ত্রিপিটক' –গৌতমবুদ্ধ। ত্রিপিটক বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থের নাম। বুদ্বের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। এটাকে নির্বাণ বলা হয়।
false
fe
পথ ও মত নিয়ে কালের দর্পনে স্বনামধন্যরা পথ ও মত নিয়ে কালের দর্পনে স্বনামধন্যরাফকির ইলিয়াস-----------------------------------------------------সব পথ এবং মত এসে মিশে যায় মানুষের কল্যাণে। যে সূর্য নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের ছায়া, সেই ছায়া দেখে মানুষ জেনে যায় দুপুর কিংবা বিকেলের বেলাক্ষণ। একজন মানুষ যখন তার মুক্তমত প্রকাশ করেন তখন তিনিও হয়ে যান ক্রমশ সমাজের ধারকশক্তি। এমন কিছু মত ও ভিন্নমতের সংকলন হয়েই প্রকাশিত হয়েছে ‘ঠিকানা’র নির্বাচিত ‘ঠিকানার মুখোমুখি সেরা-১৩৩’ নামক সুবৃহৎ গ্রন্থটি।সাপ্তাহিক ঠিকানা সুদূর নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত একটি জনপ্রিয় বাংলা সাপ্তাহিকী। একুশ বছর ধরে প্রকাশিত এই নন্দিত কাগজটিতে বিভিন্ন সময়ে এ পর্যন্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি বিশিষ্টজনেরা। সেই সব সাক্ষাৎকার থেকে বাছাই করে ১৩৩ জন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার ও সুদৃশ্য ছবি নিয়ে বেরিয়েছে এই সংকলনটি ২০১০ এর একুশে বইমেলায়। এটি সম্পাদনা করেছেন; সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রেসিডেন্ট সাঈদ-উর-রব। এই মহামূল্যমান দলিল গ্রন্থটিতে যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, মানবগোষ্ঠীর কল্যাণে তারা কী ভাবেন তা যেমনি একটি আগ্রহের বিষয়, তেমনি আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সময়ের বিবর্তনে তারা নিজেরা কতোটা মত পরিবর্তন করেছেন। তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন কি না, অথবা তারা নিজেরাই ক্রমশ আত্মঘাতী হয়ে সমাজের চোখে বিতর্কিত হয়েছেন কি না, সেই বিষয়গুলোও জানা যাবে প্রায় বিশ বছর ধরে প্রকাশিত বিভিন্ন সময়ের এই সাক্ষাৎকারগুলোতে।ধরা যাক এই সংকলনটির প্রথম সাক্ষাৎকারটির কথা। প্রথম সাক্ষাৎকারটি দেশের কৃতি সাংবাদিক প্রয়াত শাহাদত চৌধুরীর। শাহাদত চৌধুরী তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “শেখ মুজিব বাংলাদেশের জন্য কি হলে হতেও পারেন, তবে বাঙালি জাতির পিতা তিনি নন কোনোভাবেই।” তিনি আরো বলেছেন, তিনি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক মনে করেন, অবশ্য এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারেন না জিয়া সেই ঘোষণা শেখ মুজিবের পক্ষে দিয়েছিলেন কি না।ভাবতে অবাক লাগে শাহাদত চৌধুরীর মতো একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিক কিভাবে এমন ডকুমেন্টারিতে, এরকম আত্মঘাতী বক্তব্য দিয়েছিলেন। গোটা জাতি শুনেছে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে এই ঘোষণা পাঠ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তারপরও শাহাদত চৌধুরী কেন এ ধরনের অবিবেচক বক্তব্য দিয়েছিলেন তা অনেকেরই বোধগম্য না হতে পারে।বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, এই সংকলণে যার তিনটি সাক্ষাৎকার স্থান পেয়েছে। প্রথম সাক্ষাৎকারটি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ফ্লোরিডা এলে, সেখানেই নেয়া। সেই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার কথা বলেছেন।দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারটি ২০০২ সালে নেয়া। সে সময় নির্বাচনে হেরে আওয়ামী লীগ আবারো বিরোধী দলে। ২০০১ এর নির্বাচনে হারার করান, দুর্নীতির দায়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রতি গণমানুষের অভিযোগ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময়ও তিনি ফ্লোরিডায় তার কন্যার বাসায় অবস্থান করছিলেন।জননেত্রী শেখ হাসিনার তৃতীয় সাক্ষাৎকারটিও ফ্লোরিডাতে নেয়া। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। দেশে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদী অপশাসন যখন তুঙ্গে তখন খুব সুদৃঢ় কণ্ঠেই শেখ হাসিনা দাঁড়িয়েছিলেন বাঙালি জাতিসত্তার সপক্ষে। তার এই সাক্ষাৎকারটি অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। খুবই লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই সুবিশাল গ্রন্থটিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সাক্ষাৎকার নেই। বেগম জিয়া মিডিয়ার মুখোমুখি হন, খুবই কম। তা কারো অজানা নয়। সাপ্তাহিক ঠিকানাও বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সাক্ষাৎকার নিতে পারেনি, এটা ঠিকানার ব্যর্থতাই বলতে হবে। এই সংকলনে ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, দীর্ঘদিনের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জ্যোতি বসুর একটি সাক্ষাৎকার রয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি ফারাক্কা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি সদয় হতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ভারতের বর্তমান অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার রয়েছে। এটি ধারণ করেছেন ঠিকানার কলকাতা প্রতিনিধি সুপর্ণা চক্রবর্তী। এই সাক্ষাৎকারে প্রণব মুখার্জী ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়ে বেশ দরকারি কথা বলেছেন। ভারতের তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেত্রী মমতা ব্যানার্জির সাক্ষাৎকারটিও সমৃদ্ধ করেছেন সংকলনের পরিসরকে। বর্তমানের রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, টিপাইমুখ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়াও ট্রানজিট নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ মতৈক্যের ভিত্তিতে কাজ করার আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন তিনি। এই গ্রন্থে দেশের শীর্ষ রাজনীতিকরা বলেছেন নানা খোলামেলা কথা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও কোনো সাক্ষাৎকার এখানে স্থান পায়নি। রাজনৈতিক কালাকাল বিবেচনায় তার একটি সাক্ষাৎকার নিতে পারলে ভালো হতো।বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান বিচারপতি (অব.) হাবিবুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হায়দার আকবর খান রনো, কমরেড খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, নূরে আলম সিদ্দিকী, বর্তমান তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক স্বররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম সোহেল তাজ, সাবেক স্বররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, রহমত আলী এমপি, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, বর্তমান শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়-য়া প্রমুখ রাজনীতিবিদদের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যাচ্ছে অনেক নেপথ্য কথা। সংকলনটির একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিশিষ্ট কবি ও লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা। দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী, বাংলা মাটির টানে আত্মমগ্ন হয়ে বড় উদারকণ্ঠে বলেছেন, ‘প্রবাস কারো স্বদেশ হয় না। বাঙালি ছাড়া আমার আর কোনো পরিচয় নেই।’বাংলা সঙ্গীত, শিল্প ও সংস্কৃতি জগতের তারকারা তাদের বক্তব্যে জানিয়েছেন নতুন স্বপ্ন নির্মাণের কথা। চারজন ভিনদেশী বিশেষ ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার রয়েছে এই গ্রন্থে। এরা হচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল ওয়েন, বাংলাদেশে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত মি. আনোয়ার চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ভারমন্ট এর স্টেট গভর্নর ড. হাওয়ার্ড ডিন। তারা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সৌহার্দ্য নিয়ে বেশ প্রয়োজনীয় মতামত দিয়েছেন। ঢাকার বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টিরও একটি সাক্ষাৎকার রয়েছে।যারা সমাজকে বিনির্মাণ করেন, কিংবা সংস্কার করতে চান সামাজিক আঁধার, তাদের গুরুত্ব মানবসমাজে অপরিসীম। এই সংকলনে এমন কিছু আলোকিত মানুষের সাক্ষাৎকার সংযোজিত হয়েছে। এরা হচ্ছেন, নোবেল বিজয়ী কৃতী বাঙালি ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ফজলে হাসান আবেদ, রাশেদা কে চৌধুরী, ড. শাহেদা ওবায়েদ, শিরিন আক্তার, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আবুল বারকাত, ডা. এ কে এম সিরাজুল ইসলাম, পান্না কায়সার প্রমুখ। বাংলাদেশের সাংবাদিক মহলের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকারও রয়েছে এই গ্রন্থে। এনায়েত উল্লাহ খান, আজিজ মিসির, আলমগীর মহিউদ্দীন, ফজলে রশীদ প্রমুখ বলেছেন বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগত এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে। রয়েছে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় এবং তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারও। সংকলনটিতে স্থান পেয়েছে আরো বেশ কজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা, লেখক, রাজননীতিক, শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদসহ নানা ক্ষেত্রে কৃতিমান ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার যাদের সবার নাম এ পরিসরে উল্লেখ করা গেল না । বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতির প্রচারণা যারা করেন, তারাও দাবি করেন তারা গণসমর্থিত। জামাতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযম, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামাত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রমোটার মওলানা আবুল কালাম আজাদের সাক্ষাৎকারও রয়েছে এতে। গোলাম আযমের একটি ঘৃণিত পরিচয় আছে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক বাহিনীর অন্যতম দোসর ছিলেন। এই সংকলনে গ্রন্থিত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা স্বাধীনতাবিরোধী হলে জনগণের সামনে টিকতে পারতাম না।’ ঠিক একইভাবে নিজে রাজাকার নন বলে দাবি করেছেন মওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, মহাকালের ইতিহাস অবশ্যই সত্যকে খুঁজে বের করে তা ধারণ করবে। প্রজন্ম দাঁড়াবেই সত্যের সপক্ষে।৬৬০ পৃষ্ঠার এই দলিল গ্রন্থটি বহন করছে দুই দশক সময়ের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষীপ্রমাণ। এই সংকলনটি উৎসর্গ করা হয়েছে শান্তির দূত শ্রী চিন্ময় এবং বিশ্বের প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি। সময় বয়ে যায়। থেকে যায় কথার মোহর। এই সাক্ষাৎকার সম্ভারটি সেই স্রোতই বহন করছে নিয়ত। -------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ/ ঢাকা / ২৬ এপ্রিল ২০১০
false
mk
পাকিস্তান নাখোশ কেন_ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তাদের দন্ড কার্যকর করায় পাকিস্তান মহা নাখোশ। পাকিস্তান সরকার এবং সেখানকার পার্লামেন্টের মৌলবাদ সমর্থক সদস্যদের এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখা যায়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ কার্যক্রম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানের বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়া হয়েছিল। ১৯৭১ এ বাংলাদেশের মাটিতে যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল তাতে হানাদার-পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামীর নেতাকর্মী ও চেলা-চামুন্ডাদের প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। অর্থাৎ ঐ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল উপরে উলি্লখিত সংস্থা ও দলসমূহের পূর্ণ সহযোগিতায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে ইসলামী 'তাহজিব-তমুদ্দুন পুনঃপ্রতিষ্ঠা' এবং তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে 'ভারতের প্রভাব' থেকে মুক্ত করে সেটিকে 'সাচ্চা মুসলমানদের' আবাসভূমি বানানোর এক 'মহান ও ঐশ্বরিক' দায়িত্ব পালনের নামে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ ও সম্পদ-সম্পত্তি ধ্বংস করতে মেতে ওঠে।পাকিস্তানি শাসকরা বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির চর্চা একেবারেই সহ্য করতে পারত না। এর কারণ তাদের নিকট বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আদতে হিন্দুয়ানী সভ্যতা-সংস্কৃতির অন্তর্গত বিষয় ছিল। তাদের বিবেচনায় পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমানরা পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানদের মতো সাচ্চা মুসলমান ছিল না। আর তাই এদেরকে খাঁটি মুসলমান বানাতে হলে প্রথমেই এদের মন-মানসিকতা থেকে 'হিন্দুয়ানী ভাবধারা' দূর করতে হবে। এবং সেটি করতে হলে বাংলা ভাষার হরফ, ব্যাকরণ, শব্দ-ভান্ডার ইত্যাদিও বদলে ফেলতে হবে। পাশাপাশি বাংলা ভাষায় 'মুসলমানী শব্দাবলী' ও প্রকাশভঙ্গি আরোপ করে এবং 'হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির' সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পালা-পার্বণ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিহার করতে এ অঞ্চলের মানুষদের উদ্যোগী করে এক কিম্ভূতকিমাকার পাকিস্তানি তমদ্দুন চাপিয়ে দেয়ার নীতি গ্রহণ করে তারা।পাকিস্তান যেহেতু দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছিল এবং বাংলার মুসলমানরাও পাকিস্তানের জন্য প্রাণপাত সংগ্রাম করেছিল সেজন্য বাংলার মুসলমানদেরকে ওরা খাঁটি মুসলমান মনে না করলেও ঐ রাষ্ট্রে তাদের ঠাঁই না দিয়ে তাদের উপায়ও ছিল না। কেননা, পাকিস্তান হবে কি হবে না সে বিষয়ে ১৯৪৬ সালে যখন উপমহাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে লাহোর প্রস্তাব বিষয়ে ভোটগ্রহণ করা হয় তখন একমাত্র বাংলা ছাড়া অন্য কোন মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল এর সমর্থনে রায় দেয়নি। বাংলার মুসলমানদের শতকরা ৯৭ জনই সে নির্বাচনে লাহোর প্রস্তাবের পক্ষে তাদের রায় দেয়ার কারণেই উপমহাদেশে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার দাবি ও স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার পথ তৈরি হয়। উল্লেখ্য, বাংলার শেরে বাংলা ফজলুল হক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি সৃষ্টির কথা বলা হয়নি। কথাটি ছিল ভারত-ভূমির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোর সমন্বয়ে পৃথক পৃথক মুসলিম আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার। আর সেই মোতাবেক উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলা নামক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদায় আত্মপ্রকাশ করবে। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবকে ঈমানের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়ে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ ১৯৪৬ সালে যে নির্বাচনে অংশ নিলেন এবং বাংলা ছাড়া আর কোথাও মুসলমানদের মন গলাতে পারলেন না সেই নেতৃবৃন্দই পরে স্ব স্ব শ্রেণী ও গোষ্ঠী স্বার্থে ও মতলবি রাজনীতি চরিতার্থ করতে পৃথক পৃথক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের সে দাবি থেকে সরে এসে একটিমাত্র স্বতন্ত্র মুসলিম আবাসভূমি প্রতিষ্ঠাকে মেনে নিলেন। আর সে ক্ষেত্রে হিন্দু মহাসভা, কংগ্রেস হাইকমান্ড ও বঙ্গীয় মুসলিম লীগের এক শ্রেণীর মতলববাজ রাজনীতিকের অপতৎপরতায় বাংলাকে তথাকথিত হিন্দু বাংলা ও মুসলমান বাংলায় বিভক্ত করা হলো। অথচ, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে নানান জনপদ সমন্বয়ে সৃষ্ট বঙ্গ বা বাংলা নামক অঞ্চলে আবহমানকাল ধরে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সঙ্গে বসবাস করে এসেছে। শুধু তাই নয়, বুদ্ধিভিত্তিক দিক দিয়ে বাংলা কি ব্রিটিশ যুগে কি প্রাক ব্রিটিশ যুগে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে। চিন্তার অগ্রনায়ক হিসেবে বাংলার সুখ্যাতি বারবার ঘোষিত হয়েছে। মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতিসহ বাংলার বিভিন্ন এলাকায় যেসব বৌদ্ধ বিহারের নিদর্শন পাওয়া যায় তা প্রাক্তন বাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চতা এবং শিল্প-সংস্কৃতি-সভ্যতার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের অসামান্য উৎকর্ষেরই পরিচয় বহন করে।প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলায় আমরা পাল, সেন ও নবাবী আমলগুলিতেও সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর মাঝে মানবতাবাদের চর্চা ও অনুশীলন লক্ষ্য করি। এর প্রধানতম কারণ বাংলার জলবায়ু ও প্রকৃতি। এই প্রকৃতি কোমলে-কঠোরে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বাংলার মানুষকে রুদ্র কঠিন প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় বলে সাগরে ছোট্ট ডিঙি নিয়ে ভেসে বেড়ায় এরা ঝড়-ঝঞ্জার কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে। গ্রীষ্মের খরতাপ, বর্ষার অবিরাম বারিধারা আর প্রচন্ড শীতের প্রকোপ উপেক্ষা করে খেতে-খামারে ফসল ফলাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলে এদেশের কৃষক। ঝড়-বৃষ্টি, গ্রীষ্ম-শৈত্য কোন কিছুই বাংলার মানুষের সংগ্রামী চেতনাকে এতটুকুও দমাতে পারে না। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান পাশাপাশি বাস করেছে, পাড়া-প্রতিবেশী হিসেবে একে-অপরের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হয়েছে মানবতার রসে সিঞ্চিত মন নিয়ে। গৌতম বুদ্ধের অহিংস নীতি ও সকল মোহ ত্যাগের কঠোর তপস্যা, শ্রী চৈতন্যের ভক্তিরসধারায় জীবাত্মা ও পরমাত্মার অপূর্ব সম্মিলন সাধনা আর সুফিবাদী দর্শনতত্ত্বের প্লাবনে মানবতার জয়গান মুখরিত প্রেমের ঐশী বাণী_ এই তিন মানবতাবাদী ও অহিংস-নীতিধর্মী দর্শনের চর্চার মধ্য দিয়ে বাঙালির মানস কাঠামোটি গঠিত হয়েছে। ফলে হিংসা-হানাহানি কিংবা ধর্মীয় উন্মাদনা বা জাতি-বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্য মতলববাজরা এখানে অনেক সময়ই অনেক রকম চেষ্টা-চরিত্র করা সত্ত্বেও তা কখনোই প্রকট আকার ধারণ করতে পারেনি। পাল বা সেনদের আমলে হিন্দু ও বৌদ্ধদের পরস্পরবিরোধী সাম্প্রদায়িকতার কিছু নিদর্শন পাওয়া যায় বটে তবে মনে রাখতে হবে যে, সেগুলো শাসকবর্গ ও তাদের তাঁবেদাররা নিছক গোষ্ঠী ও মতলবি স্বার্থে এই সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছে। সমাজ-মানসে এর তীব্র বিদ্বেষীরূপ ফুটিয়ে তুলে এক কর্তৃক অপরকে বিতাড়ন বা নির্মূলের উন্মাদনা সৃষ্টিই ছিল ওইসব কুমতলবি শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্য। এই হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষীয় ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত লোকদের নারী সম্পত্তি ইত্যাদি ভোগ বা জবরদখল করা হতো। এ হচ্ছে নিছক স্থূল ও দুনিয়াবি মতলব হাসিলের বিষয়।তবে যেহেতু মানবতাবাদী রসধারায় ঐ সকল ধর্মীয়দর্শন সিক্ত ছিল সেহেতু সমাজের উদার ও উন্নত চেতনার মানুষদের নিরবচ্ছিন্ন চর্চার কল্যাণে সমাজের অভ্যন্তরে অনির্বাণ দীপশিখার মতোই মানবতার চেতনাটি সদা জাগরুক থাকত বৈকি! ধর্মের দর্শনগত ও মর্মগত বাণীকে পুরোহিত ও অন্যান্য ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ আদায়ে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেতাইভাবে অপব্যাখ্যা করে ফিরত। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে কুসংস্কারের বাতাবরণে আবদ্ধ রেখে ঐ ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মকে শোষণ-বঞ্চনার হাতিয়ার বানায়। দুনিয়াবি যাবতীয় আরাম-আয়েশ ভোগ করতে থাকে ধর্মের নামে মানুষকে ঠকিয়ে। অথচ দেখা যাবে সব ধর্মেই আচার-অনুষ্ঠানের বেশিরভাগ বিষয়গুলো ঐ ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা সৃষ্টি। ধর্ম মূলত মানুষের আত্মিক ও ইহজাগতিক মানসিক উন্নতির লক্ষ্যে সৃষ্ট আর মানবতার পরিচর্যার প্রয়োজনও এই ধর্ম থেকে উৎসারিত। এক্ষেত্রে মানুষই প্রধান উপজীব্য। সে মানুষ কোন ধর্ম বা গোত্রাবলম্বী সেটি প্রণিধানযোগ্য নয় বা বিবেচ্য বিষয় নয়। কোন মানুষ বিপন্ন-বিপথগ্রস্ত হলে তাকে সহায়তা করাই সকল ধর্মের মানুষের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। কিন্তু ধর্মগুলোর মূল সুর বা মর্মবাণীকে গোষ্ঠীস্বার্থে নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়ে অসৎ-অসাধু ধর্মব্যবসায়ীরা সমাজে কর্তৃত্ব ফলায়। ইউরোপের মধ্যযুগ তো ধর্মের নামে অধর্মের চরমতম বিকাশের এবং মানবাত্মার যাচ্ছেতাই লাঞ্ছনা ও অবমাননার কাহিনীতে ঠাঁসা।যাই হোক, আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধর্মকে রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছ সকল নাগরিকের সকল প্রকার অধিকারকে নিশ্চিত করার প্রয়োজনে। তাই এসব রাষ্ট্রে 'ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার' এটিই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দর্শন। যে ধর্ম মানে রাষ্ট্র যেমন তার, তেমনি যে ধর্ম মানে না রাষ্ট্র তারও। সকলের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য বটে, কিন্তু ধর্মকে হিংসা-বিদ্বেষের হাতিয়াররূপে ব্যবহার বা কোন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের মতলবি চেষ্টাকে দমন করে রাখাও রাষ্ট্রের শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে একান্তই প্রয়োজন।পাকিস্তান রাষ্ট্রটির মূল দ্রষ্টারা একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নই দেখেছিলেন কিন্তু সেখানে শুরু থেকে একটি অসাধু ও ধর্মব্যবসায়ী মহল ক্ষমতা দখলে সক্ষম হওয়ায় সকল-প্রকার অগণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা ও বঞ্চনা বৈষম্য জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়। আর সেক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু বাঙালিদেরকে ক্ষমতার বাইরে রাখা এবং তাদেরকে নতুন করে মুসলমান বানানোর অপচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথকে বর্জন ও বাঙলা ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আঘাতের পর আঘাত হানতে থাকে। এর বিরুদ্ধে তেইশ বছরব্যাপী সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাদেরকে আর তারই শেষপর্বে করতে হয়েছে সশস্ত্র যুদ্ধ। সে যুদ্ধে আমরা আমাদের শৌর্য-বীর্য-পরাক্রমের পরিচয় দিয়ে বিশ্বসভায় নিজেদের অবস্থান করে নিতে সক্ষম হই। আর সে পরিচয় আমাদের বাঙালি জাতিসত্ত্বা, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্যের ভিত্তিতে রচিত। কোন ধর্মীয় পরিচয়ে নয় জাতিসত্ত্বার পরিচয়েই আমরা বিশ্বে সমাদৃত ও পরিচিত।ইতিহাসের এই স্বাভাবিক গতিধারার বিপরীতে একটি কৃত্রিম প্রতিক্রিয়াশীল ধারা তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার সচেতন ও উদ্দেশ্য-প্রণোদিত প্রয়াস চলে গোটা পাকিস্তান আমলটিতে। বিএনপি-জামায়াত স্বাধীন বাংলাদেশে এ পরিতাজ্য ও কৃত্রিম ধারাটির পুনঃপ্রবর্তনের রাজনীতিতেই আকণ্ঠ নিমজ্জিত।একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার ও দ-দানকে ঘিরে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ঐ বস্তাপচা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারই ধারাবাহিকতা মাত্র। পাকিস্তানি চর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করায় গত ২২ নভেম্বর পাকিস্তানি সংসদে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে তার মধ্য দিয়েই ঐ যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের গভীর সম্পর্ক আরও স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ সরকার ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে তাদের বিষোদগার ও বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্ত প্রকট থেকে প্রকটতর হতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি দূতাবাসের কর্মকর্তারাও এখানে জঙ্গিদের নানান মদত দিচ্ছে এমন অভিযোগ নতুন নয়। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক পাকিস্তানি কূটনীতিককে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে স্বদেশে ফেরত নিতে বাধ্য করা হয়। এর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তান কোন অভিযোগ ছাড়াই সেখানকার এক বাংলাদেশি কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। এই অভব্য ও অশিষ্ট ব্যবহার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বর্বর মানসিকাটিই প্রকট করে মেলে ধরে মাত্র। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ_ বিশেষত বেলুচিস্তান, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মানুষ দারিদ্র্যক্লিষ্ট, অসহায় ও নানানভাবে শোষিত-বঞ্চিত। অন্যদিকে সামন্তবাদী ব্যবস্থা বহাল থাকায় একটি শ্রেণী বিত্ত-বৈভবে আর প্রভাব-প্রতিপতি্বতে অভাবনীয় দাপটের অধিকারী হয়ে বসে আছে। আর সেনা-শাসনের যুপকাষ্ঠে সেই শুরুতেই দেশটিকে বলি চড়ানোর ফলে দেশের অর্থনীতির বা সম্পদ-সম্পত্তির সত্তর-পঁচাত্তর ভাগের মালিক-মোকতার হচ্ছে সেনাবাহিনী। ফলে সেনা-কায়েমী স্বার্থের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত সেখানকার জনগণ। সন্ত্রাস ও মৌলবাদী জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত সেখানে ঐ কায়েমী স্বার্থের প্রয়োজনেই চলছে দেদার। একটি অত্যন্ত আধুনিক মনস্ক এলিট শ্রেণীও পাকিস্তানে আছে। অর্থে-বিত্তে, শিক্ষা-দীক্ষায় এদের অবস্থান খুবই উচ্চে। কিন্তু এদের শ্রেণী চরিত্র সর্বদাই সাধারণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতধর্মী। ফলে এদের কাছ থেকে জনকল্যাণ আশা করা যায় না। এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সেখানে প্রগতিবাদী ও গণমানুষের কল্যাণধর্মী বুদ্ধিজীবী ও মানুষ রয়েছে বটে কিন্তু তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত নয় নানান হুমকি-ধমকি, ভয়-ভীতি ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াসহ সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সার্ক, ওআইসি, কমনওয়েলথ প্রভৃতি সংস্থায় উভয় দেশের অবস্থানের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে এই সম্পর্ক ছিন্ন না করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ।এমতাবস্থায়, একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন-কিসিঞ্জারের বাংলাদেশবিরোধী ন্যক্কারজনক ভূমিকার বিষয়টি খুব মনে পড়ছে। অন্যদিকে গোলাম আযমের 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার' কর্মসূচি আর একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর জামায়াতী নেতাদের প্রতি সকল প্রকার সহযোগিতা দিয়ে সৌদি আরব সেদিন বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে যে জঘন্য ভূমিকা পালন করে তা আমরা এতো সহজে ভুলি কেমনে? স্মর্তব্য যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, এর আগে নয়! অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধুর সরকারকে তারা হিন্দু তথা ভারতীয়দের তাঁবেদার সরকার মনে করত। আজ যখন কিসিঞ্জার বর্ণিত 'বটমলেস বাস্কেট'টি বিশ্বের সবচেয়ে আশার আলো জাগানিয়া দেশ হিসেবে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও প্রতিভাত হচ্ছে তখন আমরা খানিক পুলকিত বোধ করছি বৈকি! আবার যে সৌদি আরব সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে সেদিন জামায়াতী কুলাঙ্গারদের প্ররোচনায় হিন্দু রাষ্ট্র বলেই মনে করত (সেখানে কিনা মুসলমানরা যারপরনাই নির্যাতিত হচ্ছে!) সেই সৌদি আরব এখন ইসলামী সম্মেলন সংস্থায় ও তার নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী জোটের অন্যতম সদস্য বলে বিবেচিত করছে। একেই বলে-'Man proposes God dispose' অর্থাৎ, মানুষ ভাবে এক হয় আর! তাই যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব আজ তাদের কাছে সেদিনের নিন্দিত বাংলাদেশকে আজ প্রশংসা না করে পারছে না।যাহোক, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে কি করবে না তা একান্তই আমাদের নিজস্ব ব্যাপার ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এতে তাদের এই নাকগলানো অনুচিত ও অশোভন। আমরা আজও ভুলে যাইনি যে, একাত্তরে পাকিস্তানিদের জঘন্য পৈশাচিকতা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেদিন কোন উদ্যোগ তো ছিলই না বরং একে জায়েজ বলে মনে করেছে তারা এবং এই গণহত্যাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জাহির করেছে সেদিন। তবে আজ কেন তাদের এই পরিবর্তন? বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে সকলকে। সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
false
fe
প্রযুক্তি নিয়ে শঙ্কা, বিজ্ঞানের প্রতি ভরসা প্রযুক্তি নিয়ে শঙ্কা, বিজ্ঞানের প্রতি ভরসাফকির ইলিয়াস=============================================একটি সংবাদ তোলপাড় তুলেছে মার্কিনি মহলে। সম্প্রতি মার্কিনি গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই চাইনিজ বংশোদ্ভূত একজন নাসা বিজ্ঞানীকে গ্রেপ্তার করেছে। তার অপরাধ তিনি মার্কিনি বেশ কিছু স্পেস বিষয়ক গোপন তথ্য চায়নার বিজ্ঞানীদের কাছে পাচার করতে চেয়েছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত এই বিজ্ঞানীর নাম- বো জিয়াং। যুক্তরাষ্ট্রের লেঙলে রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত ছিলেন এই বিজ্ঞানী। তিনি চীনে ফ্লাই করার প্রাক্কালে বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি এমন কিছু তথ্যে বিদেশী গোয়েন্দাদের প্রবেশাধিকার দিয়েছেন, যা আমেরিকার জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। নাসার ইন্সপেক্টর জেনারেল পল মার্টিন বলেছেন, তার কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে বো জিয়াং কমপক্ষে দুশ জন চাইনিজ গবেষককে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেছেন, যা মার্কিন মুল্লুকের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। এর আগে ২০০৯ সালে একজন বোয়িং ইঞ্জিনিয়ার মিঃ ডুংফান গ্রেগ চাং, চীনের কাছে মার্কিনি ‘স্পেস শাটল সিক্রেটস’ পাচারের অভিযিগে দ-িত হয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন চাইনিজ বংশোদ্ভূত। একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রও সাইবার অ্যাটাক নিয়ে বেশ চিন্তিত। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক ভাষণে বলেছেন, আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে যদি কোনো আক্রমণ করা হয়, তা কিভাবে প্রতিহত করতে হবে- তার জোর প্রস্তুতি আমাদের রাখতে হবে। আরেকটি ভয়ঙ্কর সংবাদের দিকে আমরা নজর দিতে পারি। পল হিনক্লে নামের ৬৯ বছর বয়স্ক এক মার্কিনিকে গোয়েন্দারা গুরুতর অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার করেছিল কয়েক বছর আগে। তার অপরাধ সে ইন্টারনেটে চ্যাটিং করে কেসি নামে ১১ বছরের এক বালিকা এবং ওই বালিকার ২৯ বছর বয়স্ক মা শেরিলের সঙ্গে অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে জানানো হয়ছিল, ‘সল্টিঅল্ড সেইলর ২০০২৬৯’ এই স্ক্রিন নামে পল হিনক্লে কেসি ও শেরিলের সঙ্গে ইন্টারনেটে আলাপ করে আসছিল। মূলত ১১ বছরের বালিকা কেসি ও তার মা শেরিলের ছদ্ম নামে চ্যাটিং করেছিল দুজন মহিলা গোয়েন্দা। পল হিনক্লে নিউইয়র্কের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্ট বিজনেস ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা ও ধনকুবের। তার কোম্পানির নাম জেএমজে এন্টারপ্রাইজেস। ৬৯ বছরের বৃদ্ধ পল এক পর্যায়ে ১১ বছরের বালিকা ও তার মায়ের সঙ্গে ফোনালাপেও রত হয়। গোয়েন্দারা সব ফোনালাপ রেকর্ড করে। মা ও মেয়েকে নিউইয়র্কে আসার আমন্ত্রণ জানায় পল। ছদ্মবেশী গোয়েন্দারা মা ও মেয়ে সেজে জানায়, তারা কলরাডো অঙ্গরাজ্য থেকে নির্দিষ্ট দিনে এসে নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে অবতরণ করবে। বৃদ্ধ পল জানায়, সে হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছে। এবং সেই ‘গ্লোরিয়াস নাইট’-এর জন্য অপেক্ষা আর সইছে না। এয়ারপোর্টে অপেক্ষারত অবস্থায়ই গোয়েন্দারা পলকে গ্রেপ্তার করে। পলের গাড়ি থেকে রশি, মাদকদ্রব্য, কনডম ও ভায়াগ্রা উদ্ধার করা হয়। পলের বক্তব্য থেকে জানা যায়, সে ১১ বছর বয়সী বালিকার প্রতি এতোই আসক্ত হয়ে পড়েছিল যে, যৌনাচারের প্রয়োজনে রশি ব্যবহারের জন্য সে তা গাড়িতে রেখেছিল। তার পরিকল্পনা ছিল প্রয়োজনে রশি দিয়ে বালিকাটির হাত-পা বেঁধে ফেলবে। ইউএস অ্যাটর্নির দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল এই জঘন্য, হীন মানসিকতা পোষণ এবং নাবালিকার প্রতি এমন আচরণের প্রস্তুতির জন্য পলের সর্বনিম্ন ৩০ বছর জেল হতে পারে। সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদ-। তার জামিন নামঞ্জুর করে আদালত ইতোমধ্যেই তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। আমরা জানি প্রযুক্তিপ্রিয়, সভ্য বিশ্বের জন্য, পরিশীলিত মানব সমাজের জন্য এসব সংবাদ বেদনাদায়ক অবশ্যই। প্রযুক্তির দরজা যখন উন্মুক্ত হয়ে মানবকুলকে সৃজনের পথে আহ্বান জানাচ্ছে তখন পাশাপাশি এই ভাবনাও আসছে, প্রযুক্তির নেগেটিভ দিকগুলো কী কী? এগুলো থেকে মানব সমাজকে কিভাবে বাঁচানো যায়। ইন্টারনেট প্রযুক্তিটি পুরোদমে চালু হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনগত কঠোরতা বেড়েছে। হ্যাকিং করে অন্যের ব্যাংকের অর্থ, বিভিন্ন তথ্যসহ বায়োডাটা কিংবা অন্যান্য জরুরি ডাটা চুরির প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে গোটা বিশ্বে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ, খুনখারাবি, ছিনতাই, রাহাজানি, ধর্ষণ, ব্যভিচার, সন্ত্রাসসহ নানা চরম, হীন কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে তো বটেই, প্রাচ্যের ভারত, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কায়ও সাইবার অপরাধ দমনে বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী ‘অপরাধ দমন স্কোয়াড’ গঠন করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করে গড়ে তুলতে নানা কর্মশালা পরিচালিত হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে একটি সামাজিক সচেতনতার বিজ্ঞাপন জনমনে খুবই নাড়া দেয়। রাত এখন ৯টা। ‘আপনি জানেন কি আপনার সন্তান এখন কোথায়? আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনার হাতে।’ এই বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি এখন যুক্ত হয়েছে নতুন একটি সামাজিক বিজ্ঞাপন। ‘আপনার সন্তান ইন্টারনেট জগতে ঢোকার আগে, আপনি সে জগৎ ভালো করে রপ্ত করে নিন।’ ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ ধাপগুলো ভালো করে জানুন । লক্ষ্য রাখুন, ইন্টারনেটে আপনার সন্তান কী করছে। এক সময় ছিল যখন ইউরোপ-আমেরিকা অভিবাসী অভিভাবকরা গর্ব করে বলতেন, আমার ছেলেমেয়ে খুব ভালো ইংরেজি জানে। অথচ তারা ভুলে যেতেন একটি প্রজন্ম ইংরেজিভাষী দেশে বেড়ে উঠলে ইংরেজি তো তার প্রথম ভাষা হবেই। এতে অহঙ্কার করার তেমন কী! সেই মনমানসিকতার দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে, যা অভিবাসী প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক। এখন অভিবাসী অভিভাবকরা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কার সন্তান কতো ভালো বাংলা ভাষা জানবে, শিখবে বাংলা সভ্যতা-সংস্কৃতি। রেওয়াজ করবে সৃজনশীল তাহজিব-তমদ্দুন। ধর্মীয় শিক্ষাসহ এ যুক্তরাষ্ট্রেও এখন গড়ে উঠেছে বাংলা ভাষা, গান, নাচের অনেক স্কুল। এসব শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষকরা বেশ গর্বিত তাদের ছাত্রছাত্রী নিয়ে। শিকড়ের সন্ধানে নিজ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সাহিত্য শেখার এবং জানার বিকল্প আর কী হতে পারে? যে সত্যটি সব অভিভাবককেই মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে, তার সন্তান যেন সুষ্ঠু গাইডেন্স পেয়ে বড় হতে পারে। প্রযুক্তি মানব সমাজের জন্য আশীর্বাদ হলেও তা মানব জীবনের একমাত্র নিয়ন্ত্রক কিংবা নিয়ামক নয়। মনে রাখতে হবে, কম্পিউটারের ডাটাবেইসে যে তথ্য আপলোড করা হবে, তাই কিন্তু সার্চ করে পাওয়া যাবে। কম্পিউটার এমন কোনো শক্তি নয় যা অদৃশ্য, অস্পর্শ কিছু বলে দিতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে এবং বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশেও সাইবার নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা জরুরি। যাতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিয়োগাত্মক দিকগুলো আমাদের প্রজন্মকে ধ্বংস করতে না পারে। মুক্তপ্রবাহের যুগে তথ্য নিয়ন্ত্রণ নয়, অসাধু তৎপরতা, অসামাজিক কর্মকা- যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে নজর রাখতে হবে। প্রযুক্তির দরজা দ্রুত উন্মুক্ত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা যেন প্রমাদজনিত ভাইরাসে না ভুগি। কারণ, কোনো অপস্বাধীনতা মানব জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে না। আনতে পারে না। একটি রাষ্ট্রে সৃজনশীল বিবর্তন সবসময়ই কাম্য হয়। কারণ নান্দনিক পরিবর্তন, ভাঙচুরের মাধ্যমেই এগিয়ে যায় মানব সমাজ। গেলো এক যুগে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ফিল্ডে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে বলা যায়। এর পাশাপাশি অবশ্য নানা শঙ্কা-সংকটও বেড়ে উঠেছে নানাভাবে। মনে পড়ছে প্রখ্যাত কথাশিল্পী শ্রদ্ধেয় শওকত ওসমান একটি সেমিনারে বলেছিলেন, সংস্কৃতির আবিষ্কার এবং আগ্রাসন দুটিই আছে। প্রজন্মকে ঠিক করতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোনটা গ্রহণ করবেন। আর অভিভাবককে গাইড দিতে হবে সে আলোকেই, তারা তাদের সন্তানদের কী শেখাতে চান। বাংলাদেশে ধনীর দুলালদের বখাটেপনার বেশ কিছু খবর আমরা পত্রপত্রিকায় পড়ছি। এদের কেউ কেউ মাত্র ক’ হাজার টাকার একটি সেলফোনের জন্য মানুষ খুন করতে পর্যন্ত উদ্যত হচ্ছে। মোবাইল ফোনের বিল মেটাতে গিয়ে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি করছে কিশোর-যুবকরা। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে প্রায় সাড়ে ছয় কোটির কাছাকাছি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। কোনো কোনো মধ্যবিত্ত একের অধিক মোবাইল বহন করেন। আর উচ্চবিত্তের কথা না হয় বাদই দিলাম। একটি দেশে প্রযুক্তি শিল্পের প্রসার বাড়বে, তা আনন্দের সংবাদ বৈকি। কিন্তু এর পাশাপাশি জনস্বার্থ সংরক্ষণ আইনগুলো কি কঠোরতর করা হচ্ছে? না, হয়নি। হচ্ছে না। মোবাইল ফোনে সংকেত দিয়ে মানুষ খুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। অথচ সে ফোন দ্রুত এবং সহজে খুঁজে বের করার ট্র্যাকিং সিস্টেম বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শক্তিশালী এবং পর্যাপ্ত নয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষও খুব জোরালো ভূমিকা রাখছে না। একটি দেশে দুর্বৃত্তপনা ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে, সে দেশের তরুণ প্রজন্মকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করা। আজ বাংলাদেশের রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে ফেনসিডিলের পর ‘ইয়াবা’ নামের নতুন মাদকদ্রব্য তৈরি, বাজারজাত করার খবর আমরা দেখছি। এদের নেপথ্য হোতা কারা, তাদের শিকড় কতোদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তা খতিয়ে দেখা দরকার, সরকারের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবন এবং সামাজিক জীবন দুটোই আজ এতোটা বিপন্ন যে, একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটি নিয়ে ভাবলে লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছা যাবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর, ক্ষমতাসীন সরকার পক্ষের জবাবদিহিতা করার মতো প্লাটফর্ম অতীতে থাকত তবে হয়তো দেশ এতোটা লুটেরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি পতিত হতো না। একাত্তরের পরাজিত রাজাকার শক্তি, দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নানাভাবে আনুকূল্য পেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলাকে এরা চ্যালেঞ্জ করছে। এই যে সামাজিক আস্ফালন, তা তারা সম্ভব করতে পেরেছে শুধু প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উদাসীনতার কারণে। ভূমি-মানুষ-সার্বভৌমত্ব-সমাজ রক্ষা এবং এর উন্নতি সাধন করাই একটি সরকারের প্রধান দায়িত্ব। এর প্রয়োজনে তাদের যতোটা দরকার জবাবদিহি করতে কারোরই কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। শেষ পর্যন্ত দেশে যেসব দল টিকে থাকবে এবং যারা ক্ষমতায় যাবে, তাদের সবারই এ চিন্তাটি মাথায় রাখার সুযোগ উন্মুক্ত হলে পাল্টে যেতে বাধ্য দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. হুমায়ুন আজাদের একটি বিখ্যাত কবিতা আছে, ‘আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’। হ্যাঁ, নিজ সত্তা নিয়ে অন্যদের সময়ে বেঁচে থাকা বড় দুঃখজনক এবং কঠিন কাজ। দেশে এখন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী হাওয়া বইছে। এই ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার খুবই দরকারি। আর তা কাজে লাগাতে হবে পজিটিভ পথে। আমাদের চারপাশে এখন ডিজিটাল মিডিয়ার কৃতিত্ব। বাংলাদেশেও এর সুষ্ঠু ব্যবহার প্রয়োজন। বাঙালি জাতির এটা চরম দুর্ভাগ্য, একটি ভালো সিনেমার বদলে দলীয় পোষ্যদের নির্মিত চলচ্চিত্র, টেলিফিল্ম, নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় গায়ের জোরে। ফলে সুস্থ, মেধাবী নির্মাতারা ক্রমেই মাঠ ছেড়েছেন। গ্রন্থ প্রকাশ এবং বিপণনেও দলীয় পক্ষপাত, পথে নামিয়েছে সৃজনশীল প্রকাশক-লেখকদের। অন্যদিকে নগদকড়ি কামানোর ধান্ধায় প্লট, ফ্ল্যাট, মোবাইল ব্যবসা, ইজারাদারিসহ বিভিন্ন ‘হট’ ব্যবসায় দেশের রক্ষকদের এজেন্টরা বসিয়েছে কমিশনের ভাগ। একটি দেশে যখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রশ্রয় পায় তখন সবাই লুটপাটে উন্মত্ত হয়ে ওঠে, যা শতভাগই ঘটেছে বাংলাদেশের বেলায়। এই সুযোগে সব শ্রেণীর কালো শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মানুষকে অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত করে রাখার এই যে বনেদি প্রচেষ্টা তা বাস্তবায়িত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। প্রাইভেট স্কুল-কলেজ বনাম সরকারি স্কুল-কলেজের দুটি শ্রেণী বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠলেও সামাজিক শান্তি দুপক্ষের কেউই পায়নি কিংবা পাচ্ছে না। প্রজন্মের পথচলায় সংস্কৃতির বিবর্তন অবশ্যই অপরিহার্য। কিন্তু সে পথে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা দান এবং সামাজিক আইনি নিরাপত্তা বিধানও জরুরি। কারণ, একটি অন্যটির পরিপূরক। শুরুতেই বলেছি, বিবর্তিত প্রাযুক্তিক ধারা নিয়ে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো উদ্বিগ্ন। তারপরও বিজ্ঞানের অগ্রসরমান চেতনাই মানুষকে এগিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে চিকিৎসা, গবেষণা, আবিষ্কার, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিবেশ- এই ক্ষেত্রগুলোতে বিজ্ঞানকে পাশে রেখেই এগোচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশকে, বাঙালি প্রজন্মকে বিষয়গুলো মনে রেখেই তাকাতে হবে আগামীর দিকে।----------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ১ জুন ২০১৩
false
mk
পাকিস্তানের তাণ্ডব বাংলাদেশে!!! সারাদেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে মত্ত হয়েছে হিংস্র জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। মানবতাবিরোধী অপরাধী ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডাদেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে ব্যাপক নাশকতা চালাচ্ছে তারা।তাদের অব্যাহত তা-বের অংশ হিসেবে গত সোমবার সাতক্ষীরায় বিজিবির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে ৩ জন এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে পুলিশ ও বিজিবিসহ জামায়াত-শিবিরের অন্তত ১২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৬০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।এদিকে মহেশখালী, লৌহজং, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী সদর ও সোনাগাজী, নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, মন্দির ও পূজাম-পে হামলা, ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। কক্সবাজারে ইউএনও গাড়িতে হামলা ও অগি্নসংযোগ করে জামায়াত কর্মীরা। রংপুরে শহীদ মিনার ও গণজাগরণ মঞ্চে হামলা ও ভাঙচুর চালায় তারা। এছাড়া সাতক্ষীরার কলারোয়ার পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ চালায় হরতালকারীরা। ঈশ্বরদীতে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে তারা।এছাড়া কোটচাঁদপুর কমলগঞ্জের ভানুগাছসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে শিবিরকর্মীরা। বগুড়ার ৬ উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতার আশংকায় নতুন করে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বাসে অগি্নসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, জেলা বার্তা পরিবেশক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে-নওগাঁ : সোমবার দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমাইতারা বাজার থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী একটি মিছিল বের করে উপজেলার দিকে আসছিল। এ সময় পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় হামলাকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে।সাতক্ষীরা : জামায়াত আহূত হরতালে জেলা শহরে কোন প্রভাব না পড়লেও শহরের সব প্রবেশ মুখে সড়কে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে সাতক্ষীরা অবরুদ্ধ করে রাখে। শহরের চারদিকের বিভিন্ন সড়কের ওপর এ ধরনের ব্যারিকেড সৃষ্টি করায় সাতক্ষীরার সঙ্গে খুলনা, যশোর ও রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সোমবার সকালে কলারোয়া-সরসকাটি সড়কের উফাপুর এলাকায় গাছের গুঁড়ি অপসারণ করতে গেলে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই সহোদর জামায়াত কর্মীসহ ৩ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছেন।এছাড়া রোববার মধ্যরাতে জামায়াত-শিবির কর্মীরা বাবুলিয়ার কাছে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালালে সদর থানার ওসি গাজী মো. ইব্রাহিম আহত হন। তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। মধ্যরাতে শহরের অদূরে কুচপুকুর গ্রামে আওয়ামী লীগ কর্মী নজরুল ইসলামের বাড়ি ও ধানচালের আড়তে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। কিছু সময় পর জামায়াত কর্মীরা নজরুলের বাড়ির সব আসবাবপত্র রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়।বরিশাল : পুলিশ ও যুবলীগের সঙ্গে জামায়াতের সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। জামায়াত কর্মীরা এ সময় পুলিশের একটি মাইক্রোবাস ও যুবলীগের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করেছে।সোমবার ভোর ৬টায় নগরীর ২৯নং ওয়ার্ডে বরিশাল-লাকুটিয়া সড়কের বাঘিয়া এলাকায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মুক্তি পরিষদের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা।সিরাজগঞ্জ : জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাহফুজ হোসেন নামের এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছে। ২ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে আরও ১৫ জন। নিহত মাহফুজ উল্লাপাড়া উপজেলার ফলিয়া গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। সে ফলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ও শিবিরের কর্মী বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।এর আগে হরতাল চলাকালে সদর উপজেলার বায়ৈতারা, কাশিয়াহাটায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কয়েকদফা সংঘর্ষে আরও ১৫ জন আহত হয়। রাতে উল্লাপাড়ায় গণজাগরণ মঞ্চ পুড়িয়ে দিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।এছাড়া সিরাজগঞ্জ সংযোগ সড়কের বায়ৈতারায় ব্রেইলি ব্রিজের পাটাতন খুলে ফেলাসহ বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের পূর্বদেলুয়ায় একটি ব্রিজে ভাঙচুর করেছে জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা। দুপুরে উপজেলা প্রশাসন উল্লাপাড়া বাজার এলাকাসহ বালশাবাড়ী থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এছাড়া বেলকুচি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ২ জনকে আটক করেছে।রংপুর : বদরগঞ্জে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজাগরণ মঞ্চে হরতাল সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় ওই জামায়াত-শিবির কর্মীরা গণজাগরণ মঞ্চ শহীদ মিনারে হামলা চালায়। এ সময় তারা শহীদ মিনার ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। হামলাকারীরা গণজারণ মঞ্চে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে লাগানো বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠে সেখানে রাখা ফুল পদদলিত করে উল্লাস করতে থাকে।বগুড়া : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন জেলা শহর এবং ছয়টি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। রোববার সন্ধ্যায় সকাল থেকে এ আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। ফলে জনগণ স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন না। শহরে অস্ত্র উঁচিয়ে বিজিবি, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে জনগণকে সরিয়ে দিচ্ছেন।যেসব এলাকায় ১৪৪ ধারা রয়েছে_ বগুড়া শহর, শিবগঞ্জ উপজেলায় উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের মোকামতলা, রায়নগর ও দেউড়ি ইউনিয়ন, দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর ও বগুড়া-দুপচাঁচিয়া সড়ক, নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর ও বগুড়া-রাজশাহী মহাসড়ক, গাবতলী উপজেলা সদর, সোনাতলা উপজেলা সদর এবং শাজাহানপুর উপজেলা।চট্টগ্রাম : ডিসি হিলপার্ক, আসকারদিঘি, বহদ্দারহাট ও ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়। সীতাকু-ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা একটি ট্রাক ও একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ নাশকতার অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ : মন্দিরে আগুন, মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ সড়কে গাছ ও ইটপাটকেল ফেলে রেখে হরতাল পালন করে জামায়াত-শিবির। সোমবার ভোররাতে শিবগঞ্জের বট-পেকুড়তলা সার্বজনীন দুর্গাপূজা সংঘের মন্দিরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।সিলেট : নগরীর উপশহর সেন্ট্রাল কলেজের সামনে ও উপশহর ডি বস্নক মেইন রোডে হরতালকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এছাড়া ঝটিকা মিছিল দিয়ে সোবহানীঘাট এলাকায় ৩-৪টি তিন চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিবিরের ৭ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।যশোর : সোমবার যশোরে উত্তাপহীন হরতাল পালিত হয়েছে। সকালে মূল শহরে কোন পিকেটিং চোখে পড়েনি। তবে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা শহরের প্রাণ কেন্দ্রের বাইরে কয়েকটি নসিমন ও ইজিবাইক ভাঙচুর ছাড়া আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়নি।ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর নাওডাংগার বালারহাটে জামায়াত-শিবির তান্ডব চালিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসসহ বালারহাট বাজার ও বকুলতলা বাজার এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসেন আলী ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলীর বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এ হামলায় জামায়াতের দুই কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।ঈশ্বরদী (পাবনা) : ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুরের পর আতঙ্কিত হয়ে অফিসটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।দিনাজপুর : দিনাজপুর শহরে জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ ৩ শিবির ক্যাডারকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করে। এদিকে চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর (রানীরবন্দর) ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আলম সিদ্দিকী নয়নকে গত সোমবার ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে।নাটোর : সকাল ৭টার দিকে সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকায় নাটোর-পাবনা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। জেলার বড়াইগ্রাম, বাগতিপাড়া ও সিংড়ায় মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।কালাই (জয়পুরহাট) : কালাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ, সংঘর্ষ ও ভাঙচুর করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাস্থলে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করায় উপজেলা সদরে বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।কেশবপুর (যশোর) : সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেশবপুর সীমান্ত বাজার সরসকাঠিতে হরতালকারীরা পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় শত শত নারী-পুরষ পুলিশ-বিজিবির ওপর হামলা চালায় এবং অস্ত্র কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালালে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করে। এ সময় পুলিশ বিজিবির গুলিতে অসংখ্য মানুষ আহত হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩ জনকে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।পিরোজপুর : হরতালে পিরোজপুরে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থান ও বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৯ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া কাউখালীতে নাশকতামূলক কর্মকা-ের অভিযোগে রোববার রাতে পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গোয়ালিমান্দ্রা মনিপাড়া এলাকার কালীমন্দিরে কে বা কারা ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় দুর্বৃত্তরা কালীমূর্তিটি ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বাকি ৩টি ছোট মূর্তি ভাঙচুর করে। নাশকতামূলক কর্মকা- চালানোর জন্য পরিকল্পনা করার ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
false
rn
ফোটোগ্রাফী- ১৯ ক্যামেরা মোডগুলো আপনাকে দেখাবে ঠিক কি কি ভাবে আপনি ক্যামেরায় ছবি তুলতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে ফোকাস একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পারফেক্ট ফোকাস করতে পারলে- ছবি সুন্দর হয়। ঝামেলা যেন না হয় এজন্য আজকাল অনেকেই অটো-ফোকাস ব্যবহার করেন। তবে অল্প আলোতে (বিশেষ করে রাতে অটো-ফোকাস না ব্যবহার করাই ভালো।) ক্যামেরা আপনার পছন্দ অপছন্দ বুঝবে না। তাই আপনিই ঠিক করুন কোনটা ফোকাস করবেন। নিয়মিত চর্চা থাকলে যে কেউ ভালো ছবি তুলতে পারবে। ডিজিটাল ক্যামেরা বা মোবাইল এর ক্যামেরায় অটো-ফোকাস থাকায়, কিভাবে ফোকাস করবো, কোথায় ফোকাস করবো- এই নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারন নেই।সিঙ্গল-লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরায় (এসএলআর) ভিউফাইন্ডারে একাধিক অটোফোকাস পয়েন্ট থাকে। (ম্যাক্রো লেন্স বলে একধরনের লেন্স পাওয়া যায়। এর বৈশিষ্ট হচ্ছে খুব কাছে থেকে ফোকাস করা যায়, একেবারে ফুলের সাথে লাগিয়ে। একটি মাছির ছবি উঠানোর সময় তার মাথা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, অথচ সামান্য দুরে তার শরীর ঝাপসা হয়ে গেছে। ম্যাক্রো লেন্স নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো।) প্রথমে ভেবে নিন আপনার সাবজেক্ট কি। ফোকাস কোথায় করবেন। পেছনটা কি ব্লার করবেন নাকি পেছনটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। নাকি পুরো ছবিটাকেই ফোকাস করবেন বুঝে নিন। যদি লেন্সে কোন দাগ বা আঁচড় থাকে তবে তা ক্যামেরা ছবির ফোকাসের উপর প্রভাব ফেলবে।সামনে ও পেছনে অবস্থিত দুটি সাবজেক্টের ছবি তুললে উভয়কেই ফোকাস করা অসম্ভব। একটি ফোকাস হবে, আরেকটি আউট অফ ফোকাস। দুটি সাবজেক্টকে একই সাথে মোটামুটি ফোকাস করতে দুজনের মধ্যকার দূরত্বের মাঝামাঝি ফোকাস করতে হবে।ক্যামেরার এই ‘ফোকাস’ এর ব্যবহার জীবনের ক্ষেত্রেও বহুল ব্যবহৃত। জীবনের লক্ষ্য কি হবে, কি করতে চাই, কি হতে চাই – ইত্যাদি মিলিয়ে জীবনের ফোকাস। একটি প্রেম করা, কিংবা একটি সরকারী চাকরী পাওয়া জীবনের ফোকাস হতে পারে না। তেমনি একটি প্রেম করা, একটি সরকারী চাকরি পাওয়া, একটি বাড়ি করা, একটি কোম্পানির ডিরেক্টর হওয়া – ইত্যাদিও ফোকাস হতে পারে না। এর সাথে বরং অ্যামেচার ফিল্মমেকারদের ডিএসএলআর ক্যামেরায় ইচ্ছেমত ফোকাস-ব্লার করার সাথে মিলে যায়। একটু ভেবে নেয়া উচিত – সেট ইয়োর ফোকাস, দেন রান ইয়োর ফিল্ম। আপনি ক্যামেরার কথা শুনবেন না, ক্যামেরা যেন আপনার কথা মতো চলে, এজন্য নিজের মনের মত করে ক্যামেরার সব অপশন সেটিং করে নেন।ফোটোগ্রাফী একটি মহান পেশা। যদিও বেশীর ভাগ মানুষ একজন ফোটোগ্রাফারের প্রাপ্য সম্মান দিতে কুন্ঠিত বোধ করেন। এত সংকুচিত হবে কেন মানুষের মন? সাধারন মানূষের ধারনা নেই- একজন ফোটোগ্রাফারকে একটা ছবি তোলার সময় কত দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। যেমন- এক্সপোজার, কম্পোজিশন, শাটার স্পীড, আইএসও, অ্যাপারচার, ফোকাস ইত্যাদি। একজন ফটোগ্রাফার তার ক্যামেরা ব্যবহার করে যথেষ্ট পরিশ্রম করেই ছবি তোলেন। তার ন্যায্য মূল্য তাকে দেয়া উচিৎ, তিনি সম্পর্কে যিনিই হোন না কেন।
false
fe
বৃটিশ এম পি রুশনারা আলী ও অভিবাসী জীবনের প্রতিচিত্র বৃটিশ এম পি রুশনারা আলী ও অভিবাসী জীবনের প্রতিচিত্র ফকির ইলিয়াস=======================================অনেক প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একজন বাঙালি বংশোদ্ভূত এমপি স্থান করে নিয়েছেন। তিনি রুশনারা আলী। জন্ম বাংলাদেশের সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের বুরকী গ্রামে। মাত্র সাত বছর বয়সে অভিবাসী হয়ে ইংল্যান্ডে যান রুশনারা আলী। লেখাপড়া শেষ করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর ক্রমে জড়িয়ে পড়েন ব্রিটিশ রাজনীতিতে। যে আসন থেকে তিনি এমপি হয়েছেন, সেই আসনের সাবেক এমপি ওনা কিংয়ের ক্যাম্পেনের অন্যতম দায়িত্ব ছিল রুশনারা আলীর ওপর। ফলে এ 'বেথনাল গ্রিন-বো' আসনটির নাড়ি-নক্ষত্র ছিল তার হাতের মুঠোয়। লেবার পার্টির ফাইনাল নমিনেশন পেতে প্রায় ৫০ জন প্রতিদ্বন্দ্বীকে ডিঙাতে হয়েছে তাকে। তারপর পেয়েছেন সেই গণভোটের বিজয় মুকুট।রুশনারা আলীর এ বিজয়ে আনন্দে কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ববাঙালি। টরেন্টো থেকে টোকিও। সিডনি থেকে নিউইয়র্ক। লন্ডন থেকে রিয়াদ। ঢাকা থেকে রোম।আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে সিলেটে। আমি যখন টিভিতে রুশনারা আলীর সাক্ষাৎকার দেখছিলাম, তখন তার মুখে খাঁটি সিলেটী কথা শুনে আপ্লুত হয়েছি বারবার। তিনি তো আমাদেরই প্রতিনিধি, আমাদেরই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার।পাস করার পর একটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রুশনারা আলী। বলেছেন, আমি আমার এলাকার সব ব্রিটিশ নাগরিকের এমপি। আমাকে সবার জন্য সমানভাবেই কাজ করতে হবে। দল-মত, জাতি, বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে আমি সব মানুষের প্রতিনিধি।তার এ কথাগুলো আমার খুবই ভাল লেগেছে। একজন মা তার সন্তানকে লালন করে, মানুষের মতো মানুষ করে সমাজে পাঠান। আর সেই সন্তান ক্রমে সমাজের কল্যাণেই নিজেকে নিবেদন করেন। এটাই শাশ্বত সত্য। রুশনারা আলী তাই অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গেই সেই দায়িত্বটির কথা স্মরণ করেছেন। তিনি বিশ্বমানবের কল্যাণে তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একজন শক্তিমান মানুষ এভাবেই নিজেকে সব মহৎ কাজে নিয়োজিত করেন।রুশনারা আলীর এ মহাবিজয়ের পর আমার বারবার যে মানুষটির কথা মনে পড়েছে, তিনি হচ্ছেন বিলাত অভিবাসী প্রয়াত শ্রদ্ধাভাজন তাসাদ্দুক আহমদ। মহান মুক্তি-সংগ্রামের অন্যতম প্রবাসী সংগঠক এ মানুষটি ১৯৮৫-৮৮ সালের দিকে একজন ব্রিটিশ-বাঙালি এমপির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিলাত অভিবাসী বাঙালি সমাজকে। তিনি বিভিন্ন সভা, সমাবেশে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন-'হে প্রজন্ম জাগ্রত হও। তোমরা তোমাদের মাঝ থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তোমাদের প্রতিনিধি পাঠাও।'ব্রিটেনের টাওয়ার হ্যামলেটস বরোটি যারা দেখেছেন, তারা জানেন, ওই এলাকার যে কোন সড়ক দিয়ে হাঁটলে মনে হবে তিনি বোধহয় সিলেটের কোন জনপথই পাড়ি দিচ্ছেন। প্রশ্ন সেটাই ছিল, তাহলে ওই মানুষেরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাঠাতে পারবেন না কেন? সে কাজটিই হয়েছে। এ শুরুর মাধ্যমে অভিবাসী প্রজন্ম একটি মাইলফলক নির্মাণ করেছে। আশাকরি এ যাত্রা অব্যাহত থাকবেই। দুইআজকাল অনেককেই বলতে শুনি, বিশ্বে অভিবাসন প্রক্রিয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। কথাটি মিথ্যে নয়। এটা আমরা জানি এবং বুঝি, উন্নত জীবনের লক্ষ্যেই মানুষ নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে অন্যদেশে অভিবাসন জীবন বেছে নেয়। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি মহাদেশগুলো এভাবেই তাদের মুক্ত হাত দিনদিন বাড়িয়ে দিয়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি। কিন্তু অতি সম্প্রতি ধর্মীয় কট্টরবাদিতা, জঙ্গিবাদী মৌলতত্ত্ব, সহিংস আক্রমণের মানসিকতার কারণে আঁতকে উঠেছে ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ। একের পর এক ঘটনা কাঁপিয়ে তুলেছে এসব অঞ্চলের জনজীবন। এর সর্বশেষ ঘটনাটি বহুল অলোচিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে গাড়িবোমা রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে ফয়সল শাহজাদ নামে একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। ঘটনা প্রবাহ থেকে জানা যাচ্ছে, ফয়সল শাহজাদ ছাত্র ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে আমেরিকা আসে। এখানে সে উচ্চতর ডিগ্রিও নেয়। হুমা মিয়া নামে এক সুদর্শিনীকে বিয়ে করে। তাদের ছোট্ট দুটি সন্তানও রয়েছে।কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ব্রিজপোর্ট শহরে তাদের একটি ছিমছাম বাড়িও ছিল। মোট কথা, একটি সুন্দর জীবনের অধিকারী ছিল এ ফয়সল শাহজাদ। যে অভিবাসী হিসেবে মার্কিন নাগরিকত্বও নিয়েছিল। সে জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। মার্কিনি গোয়েন্দাদের মতে, টাইমস স্কোয়ারে এ বোমাটি বিস্ফোরিত হলে হাজার মানুষের প্রাণনাশ হতে পারত।এখন এ ফয়সল শাহজাদ মার্কিনি মিডিয়ার শিরোনাম প্রায় প্রতিদিন। বিভিন্ন সূত্র খতিয়ে দেখছে, তার সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক আল কায়দার সরাসরি সংযোগ ছিল।এই যে অপকর্মের মহড়া, তা গোটা অভিবাসী সমাজকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। অভিবাস জীবন গ্রহণ করে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রচেষ্টা না করে ধ্বংসাত্মক মনোবৃত্তি কী লক্ষ্য বহন করছে তা আলোচিত হচ্ছে বিভিন্নভাবে।ইউরোপ-আমেরিকায় একটি অপশক্তি নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে, যারা এখানের প্রজন্মকে 'ধর্মীয় জোশের' নামে ব্রেনওয়াশ করে বিপথগামী করতে চাইছে। সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছে। তাই এ চরম ক্রান্তিকালে প্রতিটি সচেতন প্রবাসীকে সতর্ক এবং সজাগ থাকাটা খুবই জরুরি। মনে রাখা দরকার, যারা ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে সমাজকে বিষাক্ত করতে তৎপর তারা সিংহ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই, তারা যতটা সংগঠিত-শান্তিকামী সিংহভাগ মানুষরা ততটা সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ নন। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সবাইকে শান্তির অন্বেষণ করা প্রয়োজন।অভিবাসে বাঙালি প্রজন্মের অনেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল সফলতার সাক্ষর রাখছেন। এসব অর্জনকে সমুন্নত রাখতে হবে। একজন রুশনারা আলীর কাজকে একজন ফয়সল শাহজাদের হীনকর্ম কোনমতেই যেন ম্লান করতে না পারে।বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে পুরো বিশ্বই এখন রাহুশক্তির কবলে। রাজনীতির বিবেকসত্তাই এ রাহুগ্রাস থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। আর সেজন্য মানুষের ভূমিকাই হতে হবে অগ্রণী। বিশ্বের জনমানুষের মিলিত উদ্যোগের শক্তিতে পরিবেশকে রাহুমুক্ত করতে হবে।নিউইয়র্ক, ১১.মে.২০১০ -----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৪ মে ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
false
ij
গল্প_ ভেঙে পড়ে স্বপ্নের ভিত আজ বাড়ি ফিরতে রাত এগারোটার মতো বাজল। গলির ভিতরে দুর্গন্ধ, অনেকটা অন্ধকার । এমনিতেই ক’দিন ধরে পাড়াটা থমথম করছে। গালর্র্স স্কুলের জমিতে স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বহুতল শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা আঁটছে। তারই জের ধরে গালর্র্স স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী দিন কয়েক আগে খুন হয়েছেন। খুনির নাম নিয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে। রিয়াদ তার ঘামে ভেজা শরীরে শীতল স্রোত টের পায়। যথারীতি লোড শেডিং চলছে। বাড়িটা অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ি মানে আড়াই কাঠা জমির ওপর চারতলা দালানের রংশূন্য ধস্ত একটা কাঠামো। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সইবার কথা নয়। বাইরের আস্তর উঠে গেছে, একবারই রং করা হয়েছিল ... আর করা হবে কিনা কে জানে। রিয়াদের বাবার শেষ বয়েসে বাড়ি করার নেশা চেপেছিল। জীবনে তেমন কিছুই করতে পারেননি ভদ্রলোক, সম্ভবত বাড়িটা করে নিজের হীনমন্যতা ঢাকতে চেয়েছিলেন। সেই বাড়িই এখন লোড শেডিংয়ের খপ্পড়ে পড়ে অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। লোহার গেট ঠেলে ভিতরে পা রাখতেই কারেন্ট এল। তবুও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করল না রিয়াদ। বাড়িটা কোনওমতে শেষ করে বাবা হঠাৎই স্ট্রোক করে মারা গেলেন । আত্মীয়স্বজন এর-ওর কাছে টাকা ধার করে বাড়ির পিছনে ঢেলেছিলেন; তারা এখন টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য ভয়ানক চাপ দিচ্ছে । তা ছাড়া ট্যাক্সের ঝামেলা এড়াতে হাউস বিল্ডিংয়ের লোন নিয়েছিলেন। সুদের হার বেড়েই চলেছে । ঘন ঘন চিঠি আসছে, আসছে ক্রোকের নোটিশ। ওদের ফ্ল্যাটটা চারতলায়। ওর কাছে এক্সট্রা চাবি থাকে। চারতলায় উঠে দরজা খুলল। খাওয়ার ঘরে আলো জ্বলছে। মা কি ঘুমিয়ে পড়েছে? মায়ের শরীর এখন অনেক দূর্বল। সারাক্ষণ ঝিমুনির ভাব। ডাক্তার বলেছেন- এই সময় এরকম হতেই পারে। তার ওপর মার ঠিকঠাক যত্ন হয় না। জেরিন মাকে দেখে না; সারাক্ষণ বাড়ির বাইরে-বাইরে থাকে, কিছু বলা যায় না। বললে ভয়ানক চিৎকার-চেঁচামেচি করে। কাজের একটা মেয়ে আছে। ঝর্না, অল্প বয়েস; মেয়েটা যতটুকু পারে মাকে দেখে। রিয়াদ জানে: মার আজকাল রাতে ভালো ঘুম হয় না। অসুখের দুশ্চিন্তায়। অবশ্য আরলি স্টেজ। তবু টেনশন আছেই। কলাবাগান থেকে মমতাজ খালা ঘন ঘন আসছেন। তিনিই মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। দুজনে মিলে ফিসফিস করছেন। রিয়াদের তখন নিজেকে অনেক দূরের মনে হয়।আজ বাড়িতে পা রাখতেই আলো আসল। রিয়াদ তবুও ও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করল না। এ বাড়ির এক, দুই ও তিন তলা ভাড়াটে থাকে। ভাড়া যা পায় তাতে সংসার খরচ ও মায়ের চিকিৎসায় চলে যায়। জেরিনের ডিম্যান্ডও কম নয়। তা ছাড়া হাউস বিল্ডিংয়ের লোনের মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। রিয়াদ দু-তিনটে টিউশনি করছে। এ বছর সেমিষ্টার ড্রপ দিতে হচ্ছে। বন্ধুরা সব অনার্স পাস করে যাবে ...আজকাল খালি পেটে থাকলে হাত-পা কাঁপে, চোখেমুখে অন্ধকার দেখে। হাতমুখ ধুয়ে এসে খেতে বসল। জেরিন-এর ঘরে বন্ধ। তবে দরজার নিচে আলো দেখা যায়। টিভি চলছে বলে মনে হল। মাস তিনেক হল ড্রইংরুমের টিভিটা নিজের ঘরে নিয়ে গেছে। মা আর টিভি দেখে না-এই অজুহাতে। যতক্ষণ ঘরে থাকে টিভি দেখে আর ফোনে কথা বলে। কে ওর বিল মেটায় কে জানে। জেরিন আজও রাত করে বাড়ি ফিরেছে মনে হল। কলেজে ওঠার পর কেমন বদলে যেতে জেরিন। সুন্দরী। মডেলিং করার জন্য এখানে-ওখানে দৌড়ায় ...তখনই হয়তো মানিকের সঙ্গে পরিচয়। বছর খানেক হল জেরিন মানিকের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করছে। মানিক উঠতি মাস্তান, স্থানীয় এমপির পোষা ক্যাডার। মানিকের মধ্যে কি পেল জেরিন? হয়তো মানিক ওকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। দু-বছর আগে এ্যালিফেন্ট রোডে মানিককে ছিনতাই করতে দেখেছে রিয়াদ। জেরিনকে শাসন করে লাভ হয়নি। বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার হুমকি দিয়েছে। ওকে নিয়ে এক সময় মায়ের যথেষ্ট উদ্বেগ ছিল। এখন মা কিছু বলে না ...নিজের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে ভীষণ কাহিল মা...রিয়াদ খাওয়া শেষ করে ছাদে উঠে এল। সিঁড়িতে ওঠার সময় হাঁপিয়ে গেল। আজকাল খুব ঘাম হয়, সন্ধ্যোর দিকে শরীর কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে, গলার কাছে তৃষ্ণার ভাব, ঘন ঘন প্রশ্রাব হয়, খালি পেটে হাত-পা কাঁপে, সিঁড়ি ভাঙলে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে। পাড়ার এক বন্ধু রিপন; প্রাইভেট একটা মেডিকেল কলেজে ফোর্থ ইয়ারে পড়ছে - তাকে খুলে বলেছিল। রিপন ব্লাড টেস্ট করতে বলছে। রিয়াদ এড়িয়ে চলে। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরুতে পারে।মাস কয়েক হল সে ছাদঘরে উঠে এসেছে। টিন শেডের ঘরটা ছোট। ভিতরে আস্তর করা হয়নি। দুটো চেয়ার, একটা খাট। আগে এ ঘরে আলম থাকত, ছেলেটা এ বাড়ি দারোয়ান। আলমকে নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে। রিয়াদ পাখি ভালোবাসে। দরজার কাছে চেয়ারে বসে পাখি দেখে। ছাদে কত রকমের পাখি আসে। ছাদের রেলিং ঘেঁষে নাড়কেল গাছে টিয়ে পাখিরা ঝুল খায়। কোনও কোনও নির্জন দুপুরে সে অপার্থিব দৃশ্য দেখে রিয়াদ। বিছানায় হেলান দিয়ে সিগারেট ধরালো। গরম লাগছে। গরমের দিন বলেই করগেটের ছাদটা তেতে আছে। সবুজ রং করা পুরনো একটা ফ্যান আছে। ওটা চলার সময় বিশ্রী ঘরঘর শব্দ ওঠে। মনে হয় যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়বে ... এতক্ষণে শুভ্রার মুখটা মনে পড়ল। শুভ্রাও ওর জীবন থেকে সরে যাচ্ছে। শুভ্রাকে ও স্কুলজীবন থেকেই চেনে, একই পাড়ায় বেড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন একটা মনোরম সম্পর্ক ছিল শুভ্রার সঙ্গে। আজকাল কেবলই মনোমালিন্য হয়ে যাচ্ছে। রিয়াদ এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় গ্যাপ দিচ্ছে। টাকা জমিয়ে মায়ের ট্রিটমেন্ট করবে। ব্যাপারটা শুভ্রার ভালো লাগেনি। আজকাল প্রায়ই বলে: তোমাদের এত সমস্যা ...আমার আর ভাল্লাগে না। রিয়াদ জানে, শুভ্রা আজকাল মঈনের সঙ্গে ঘুরছে। মঈন রিয়াদেরই ফ্রেন্ড-একই স্কুল-কলেজে পড়েছে। আজকাল রিয়াদের ফোন করলে শুভ্রা আর ফোন ধরে না। মাস তিনেক আগে জেরিনকে বিচ্ছিরি একটা গালি দিয়েছিল শুভ্রা। রিয়াদ শুভ্রাকে চড় দিয়েছিল । চড় মারতে চায়নি। বোনের নামে বাজে কথা বলল, মাথায় রক্ত চড়ে গেল ...অবশ্য বাজে কথা না ...জেরিন ... রিয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গুমোট রাতের দূর আকাশের পানে চায়। মার্চের মেঘশূন্য রাত্রির আকাশে কিছু তারা মিটমিট করে। দূরের নক্ষত্রগুলি রিয়াদের সান্ত্বনার কারণ হয়ে ওঠে না। কোথায় এই দুঃখের সূত্রপাত? সে গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। দিনটা আজ অসহ্য ঠেকছিল। টিউশনি সেরে সন্ধ্যার মুখে নীলক্ষেত গিয়েছিল। অনেকক্ষণ ঘোরঘুরি করে একটা বই কিনল। Our Place in the Universe; ... Norman K. Glendenning এর লেখা। এ ধরনের বই সে সচরাচর পড়ে না। তার উৎসাহ পাখিতে, পাখি বিষয়ক বই পেলে কিনে। আজ কী মনে করে জ্যোর্তিবিজ্ঞানের বই কিনল। পাখিরা যে বাস্তব ভৌত জগতে বাস করে সে সম্বন্ধে তার উৎসাহ কম। তারচে তার ভালো লাগে পাখি, পাখির রুপ, পাখির কূজন, পাখির জীবন। ধনেশ পাখি তার প্রিয়। একটা সময় ছিল যখন ও বন্ধুদের নিয়ে পাখি দেখতে মেঘনা পেরিয়ে গোমতী নদী অবধি চলে যেত। সেসব সুখের দিন এখন ফুরিয়ে এসেছে। এখন ভারি দুঃসময়; এখন দুঃখের দিনে ফিরে তাকাতে চায় মহাবিশ্বে ...আজকাল সে কেবলি ভাবে কেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হল? যখন কারও কারও জীবন কেবলই দুঃখযন্ত্রণার দীর্ঘ বিস্তার। হঠাৎ কী মনে হতেই Norman K. Glendenning এর লেখা Our Place in the Universe বইটি তুলে নেয়। পাতা ওল্টায়। এ বইয়ে দুঃখ-কষ্টের সূত্রপাতের কথা লেখা আছে? রিয়াদ পড়তে থাকে। ... In an instant of creation about 14 billion years ago the universe burst forth, creating space where there was no space, and time when there was no time. It was so hot and so dense that not even nucleons, the building blocks of atomic nuclei, had as yet formed. Until about 1/100,000th of a second all that existed was an intense fire and primitive particles called quarks and electrons and all their heavier kin together with their antiparticles; in a sense, these were the elementary particles conceived of by two early Greek philosophers of the fifth century BC, ...After that first brief moment, the quarks coalesced into neutrons, protons and other versions of these nucleons, never to be free again. In that inferno the lightest elements | deuterium and helium | were forged from the neutrons and protons during the next few minutes. These two primordial elements make up fully one-quarter of the mass in the universe today...পড়তে পড়তে রিয়াদ সচেতন হয়ে ওঠে। এসব বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও অনুমানের সঙ্গে আমার জীবনের সর্ম্পক কোথায়? আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম। সে স্বপ্নের ভিত এখন ধ্বসে যাচ্ছে। আমি এখন কি করব? আমি এখন কি করতে পারি? পাখি দেখতে আর ভালো লাগে না ...মানিকের ব্যাপারে জেরিন মাস দুয়েক আগে রিয়াদকে গালাগাল করেছিল। স্থানীয় গালর্র্স স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী খুন হওয়ার পর পুলিশ মানিককে সন্দেহ করছে। মানিক গা ঢাকা দিয়েছে। নিহত প্রধান শিক্ষয়েত্রী অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। পাড়ার লোকে জেরিন সঙ্গে মানিকের সর্ম্পকের কথা জানে। রিয়াদের আশঙ্কা তারা ক্ষেপে উঠে তাদের বাড়িটি যে-কোনও মুহূর্তে আক্রমন করতে পারে। মানিক কোথায় লুকিয়ে আছে তা জেরিন নিশ্চয়ই জানে। মাঝেমাঝে জেরিন টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার নিয়ে কই যেন যায়। তখন জেরিন বোরখা পড়ে। তখন জেরিনকে আরও অপরিচিত লাগে। রিয়াদের শরীর হিম হয়ে আসে।আজও লাল ছাপ মারা সর্বনাশা ক্রোকের চিঠি এসেছে। গতকাল ঝিকাতলা থেকে ইসহাক চাচা ফোন করেছিলেন। কি রে রিয়াদ? টাকার কি হল রে ? শাহিনার বিয়ে। তোদের উপকার করতে গিয়ে আমার মেয়ের বিয়ে আটকে থাকবে তাতো হয় না।রিয়াদের শরীর হিম হয়ে আসে।ডাক্তার খান মাকে বলছেন, এখন আপনার আরলি স্টেজ। একবার সিঙ্গাপুর কিংবা ব্যাঙ্কক গিয়ে চেক আপ করিয়ে এলে ভালো হয়, রিস্ক থাকে না। এসব সেনসেটিভ ব্যাপার। কয়েক মাস আগে পাড়ার নাজিম আঙ্কেল বলছিলেন, রিয়াদ, তোমার মাকে বল এত টাকার ধার শোধ হবে না। তারচে তোমার মা বরং জমিসহ বাড়িটা বেচে দিক । আমি পার্টি দেখি। আমার এক বন্ধু-রিয়েল স্টেট ফার্মে আছে-হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর নাম শুনেছে? সেখানে। আশরাফ সব শুনে ইন্টারেষ্ট দেখাল। কথাটা মাকে বলা যাচ্ছে না। মা ভীষণ ভেঙে পড়বেন।নাজিম আঙ্কেল শুভ্রার বাবা; তাঁর কাছ থেকে বাবা সাত লাখ টাকা লোন নিয়েছিলেন। ইসহাক চাচা বাবার চাচাতো ভাই-তিনি পান সাড়ে চার লাখ...রিয়াদের শরীর হিম হয়ে আসে।গতকাল অরুণ একটা অদ্ভুত কথা বলল। জাহিদের সঙ্গে শুভ্রার বিয়ে ঠিক। শুভ্রা নাকি অষ্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে। জাহিদ শুভ্রার কাজিন, অনেকদিন ধরেই অষ্ট্রেলিয়ায় সেটলড; ‘শেল’- এ চাকরি করে। অরুণও শুভ্রার কাজিন। অরুণ কি মিথ্যা বলল? না, অরুণকে অবিশ্বাস করার কিছু নেই, দীর্ঘদিনের বন্ধু, একই পাড়ায় একই সঙ্গে বড় হয়েছে। রিয়াদ অবাক হয়ে ভাবল শুভ্রা যখন জাহিদ সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়া চলেই যাচ্ছে তাহলে ও মঈনের সঙ্গে এত ঘুরছে কেন?আসলে এই ভৌত জগতে মানুষের এই সম্পর্কজাল বড় জটিল। মা দেবীদ্বার চলে যেতে চাইছে। দেবীদ্বার উপজেলার উত্তর জাফরগঞ্জ মায়ের বাবার বাড়ি। সেখানেই মায়ের জন্ম। জায়গাটা গোমতী নদীর পাড়ে । সুখের দিনে কলেজের বন্ধুদের নিয়ে গোমতী নদীর পাড়ে পাখি দেখতে গিয়েছিল। অরুণ মঈন শিবলী রঞ্জু। প্রত্যেকেই গোমতীর রুপে মুগ্ধ হয়েছিল। ওরা প্রচুর পাখির ছবি তুলেছিল। বিশেষ করে, বড় আকারের লম্বা লেজের নিচু বাঁকা ঠোঁটের হর্ণবিল বা ধনেশ পাখির ছবি। ধনেশ পাখির গেছো স্বভাব। রিয়াদ আগে থেকেই জানত- বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের ধনেশ পাখি পাওয়া যায়। তখনই লক্ষ করেছিল-ধনেশ পাখি গাছের খোড়লে বাসা বানায়; স্ত্রী ধনেশ ঠোঁট দিয়ে কাদা বিষ্ঠা ইত্যাদি দিয়ে বাসার মুখে একটি সরু ফাঁক রেখে বাকিটা আটকে দেয় ...মা কি গোমতী নদীর পাড়ে মেয়েবেলায় এসব লক্ষ করেছিল? পশুপাখিরা বাসাকে কি যতœ করে আটকে রাখে? অথচ কিছু কিছু মানুষ নক্ষত্রের ফেরে উৎখাত হয়ে যায়।চোখ টনটন করছে। রাতটা ক্রমশ ভোরের দিকে হেলে পড়ছে। হাত থেকে কখন খসে পড়েছে জ্যোর্তিবিজ্ঞানের অবাস্তব বইটা। দরজাটা খোলা। ঘরে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকছে। একটা সিগারেট ধরাতে যাবে- ঘরের বাতাসে মিষ্টি গন্ধ পেল। ছাদজুড়ে নানা সাইজের টবে ফুলের গাছ। গন্ধরাজ ডালিয়া সন্ধ্যামনি দোপাটি মোরগঝুঁটি ... মা শখ করে করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মা ছাদের বাগানে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। রিয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে...রিয়াদ জানে ...গোমতী পাড়ে রিয়াদের মাতৃপুরুষের ভিটে এখন প্রায় শূন্য, তবুও মা সে শূন্য ভিটায় অভিমান করে চলে যেতে চাইছেন। মা চলে যাবেই ...মা খুব জেদি। জেরিনের পাটও চুকল এ বাড়ি থেকে। জেরিন আগুন নিয়ে খেলছে। যারা আগুন নিয়ে খেলে তারা এক জায়গায় দীর্ঘদিন বাস করতে পারে না ...মার তাহলে কি দোষ?বাকি রইল সে আর ঋনগ্রস্থ একটি দালান ... রিয়াদ ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে আসে। ভোরের হাওয়ায় শরীর হিম হয়ে আসে। খালি গা, পরনে পায়জামা। ওকে রাতজাগা তরুণ কবির মতো দেখায়। নম্র আলোয় ভরে উঠছে ছাদ। পুবের আকাশে আর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে রঙের হোলি খেলা। শীতল হাওয়ায় ফুলের গন্ধ। এখনও আজান হয়নি। রিয়াদ ছাদের কিনারায় পৌঁছে কি মনে করে নিচে উঁকি দিল। নিচে গেটের কাছে কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে, দারোয়ান আলমের সঙ্গে কথা বলছে। দূরে একটা ভ্যান থেমে। রিয়াদের বুক ধক করে ওঠে। জেরিনকে অ্যারেষ্ট করতে এসেছে?ও দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। দেখল সিঁড়িঘরের সামনে ঝর্না । দৌড়ে এদিকেই আসছে। চিৎকার করে বলল, মামা, মামা। তাড়াতাড়ি আসেন, খালাম্মা কেমন জানি করতেছে।রিয়াদের শরীরটা জমে ওঠে। ও ঘোরের মধ্যে সিঁড়ি ঘরের দিকে যেতে থাকে। এই মুহূর্তে সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে: পুলিশ আসার আগেই যেন মা চলে যায় ...
false
rn
হিটলারকে কি ক্ষমা করা যায় না_ বেশ কিছুদিন ধরে হিমি আমাকে বারবার বলছে,নতুন কিছু একটা লিখতে।হিমি'র মন খুব খারাপ হয়ে আছে।আমার লেখা পড়লে নাকি তার মন ভালো হয়ে যায়।সে অনেক শান্তি আর আনন্দ পায়।মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না!সময়ের অভাবে আমার আর কিছু লেখা হয়ে উঠছে না।গত চারদিন ধরে একটা কবিতা মাথায় নিয়ে ঘুরছি।লিখি লিখি করে আর লেখা হচ্ছে না।আমি আছি নানান ঝামেলায় অস্থির হয়ে।ওদিকে হিমিও অস্থির হয়ে আছে।হিমির অস্থিরতা পলকে পলকে আমাকে ছুঁয়ে যায়।আমি হিমিকে বোঝাই,অপেক্ষা করো।সে অপেক্ষা করে কিনা জানি না,শুধু দেখি তার চোখে জল।প্রিয় মানুষের চোখে জল দেখলে,বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।কিছুদিন আগে আমি অনেক পড়াশোনা করে,হিটলারকে নিয়ে দুই পর্বের (শয়তান হিটলার) একটা লেখা লিখি।তারপর থেকে রাতে আমি ঘুমাতে পারছি না।ঘুমালেই স্বপ্নে দেখি করুন চেহারা করে হিটলার আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।যেন সে বলতে চায়,আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?আমি ঘুমের মধ্যেই ছটফট করে উঠি।আমার গলা শুকিয়ে যায়।তারপর সারারাত আর ঘুম হয় না।গত দুইদিন ধরে আমি হিটলারকে নিয়ে আরো ব্যাপক পড়ালেখা শুরু করি।আমার চিন্তা একটাই হিটলারের কি কোনো ভালো দিক নেই!হিটলার কেন এত জঘন্য সব কাজ করলেন?এর পিছনে দায়ী কে?আমার আগের দু'টো লেখায় হিটলারের শুধু খারাপ দিক গুলোই তুলে ধরেছি।আমি মনে হয়, বক বক বেশী করছি।ভনিতা না করে মূল কথায় চলে যাই -এক ইহুদি মেয়েকে (স্টেফানি ইসাক) একতরফা ভালোবাসার পর তাকে না পেয়ে চরম মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন হিটলার।প্রিয়তমাকে না পাওয়ার কষ্টে নিজের মধ্যেই দিনদিন দগ্ধ হয়েছিলেন তিনি।আর মনের এই আগুন তাকে শেষ পর্যন্ত প্রেমিকের আসন থেকে টেনে নামিয়ে ইতিহাসের খলনায়কের আসনে বসিয়ে দেন।হিটলারের মহা স্বৈরাচার হয়ে ওঠার গল্পটা বলেছেন,তার'ই বাল্যকালের বন্ধু (কুবিজেক) তার 'দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ' নামক বইয়ে।বইটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে প্রেমিক হিটলারের নানা অজানা কাহিনী।একটি ব্রিটিশ দৈনিকে চাঞ্চল্যকর এই বইয়ের কথা প্রকাশ পেয়েছে।('দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ')এডলফ হিটলারের বয়স যখন ষোলো তখন হঠাৎ একদিন অষ্ট্রেলিয়ায় স্টেফানি ইসাকের সাথে তার পরিচয় হয়।ছিপছিপে এই ইহুদি সুন্দরীকে প্রথম দর্শনেই ভালোবেসে ফেলেন হিটলার।সেই থেকে দীর্ঘ চারটি বছর প্রেমের জোয়ারে ভাসা।কুবিজেক লিখেছেন -এডলফ পাগলের মতো স্টেফানিকে ভালোবাসতেন।স্টেফানি যদি একবার হেসে তাকাতো তার দিকে ওতেই ধন্য হয়ে যেতেন তিনি।তার সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতেন হিটলার।কিন্তু স্টেফানি কোনোদিনও হিটলারকে ভালোবাসেনি।এতে হিটলার রাগ হয়ে একবার স্টেফানিকে অপহরন করতে চেয়েছিলেন।প্রয়োজনবোধে দু'জন পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল হিটলারের।স্টেফানিকে শেষ পর্যন্ত না পাওয়ার যন্তনা তাকে চরম ইহুদিবিদ্বেষী করে তোলে।হয়তো এই প্রেম প্রত্যাখ্যান'ই তাকে ইহুদি নিধনযজ্ঞে প্ররোচিত করে এবং এখান থেকেই তার মধ্যে দেখা যায় এক যুদ্ধবাজকে।কুবিজেক লিখেছেন- ইভা ব্রাউনের জায়গায় যদি স্টেফানি থাকতেন তাহলে ইতিহাস অন্যরকম হতো।হায়রে স্টেফানি....!!!অনেক কাল আগে আমার প্রিয় বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন, 'বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সব বুঝি।শুধু নারীকে বুঝলাম না'।
false
fe
প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ ভাষণে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের সিঁড়িগুলো প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ ভাষণে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের সিঁড়িগুলোফকির ইলিয়াস============================================একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন সাধনের জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। দরকার হয় পথের সন্ধানের। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সেই সন্ধানটি করে যাচ্ছে। আমরা তা দেখছি- সরকারের পরিকল্পনার মাঝে। দেখছি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সনদে। নিউইয়র্কে এখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলছে। বিভিন্ন দেশের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান এখন নিউইয়র্কে। তারা জাতিসংঘে তাদের মতবিনিময় করছেন। তারা বলছেন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পথ কী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এখন নিউইয়র্কে। এবার জাতিসংঘে তার ‘জঙ্গি দমন নীতি’ বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তিনি জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে বলেছেন-‘আমি সন্ত্রাসী এবং উগ্রবাদীদের অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রের জোগান বন্ধ এবং তাদের প্রতি নৈতিক এবং বৈষয়িক সমর্থন না দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গুলশান হামলার বিষয়টি তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভয়ঙ্কর ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে আমরা এই নতুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি।’ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে তাতে বিশ্ববাসীর সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে ভাষণে এই আহ্বান জানান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো এখন কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিশ্বের সব স্থানেই ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো দেশই আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ নয়, কোনো ব্যক্তিই সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুর বাইরে নয়। তিনি মনে করিয়ে দেন- ‘আমেরিকা থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে এশিয়ায় অগুনতি নিরীহ মানুষ সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে।’ এর শিকড় খুঁজতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- ‘সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে এদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি যোগ করেন- ‘কী অপরাধ ছিল সাগরে ডুবে যাওয়া সিরিয়ার ৩ বছর বয়সী নিষ্পাপ শিশু আইলান কুর্দির? কী দোষ করেছিল ৫ বছরের শিশু ওমরান, যে আলেপ্পো শহরে নিজ বাড়িতে বসে বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে? একজন মা হিসেবে আমার পক্ষে এসব নিষ্ঠুরতা সহ্য করা কঠিন। বিশ্ব বিবেককে কি এসব ঘটনা নাড়া দেবে না?’ শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কেন্দ্র’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত সহিংসতার কবল থেকে বেরিয়ে আসা দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ করে দেবে।’ শেখ হাসিনা সাহসের সঙ্গে কথাগুলো বলেছেন। এই কথাগুলো সব বাঙালির। এই কথাগুলো আপামর মানুষের। আশার কথা জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে আজকের বাংলাদেশ।তার ভাষণে তিনি গত বছর গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিতের ওর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমরা একটি উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন এজেন্ডা এসডিজি গ্রহণ করেছি। এই এজেন্ডার রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে পশ্চাৎপদ দেশগুলোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ এবং অর্থবহ অবলম্বনে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন। এ জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ভিশন-২০২১’ এবং ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে তার সরকার। তিনি বিশ্ববাসীকে জানান ‘আমাদের লক্ষ্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, শক্তিশালী, ডিজিটাল এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সে জন্য আমাদের সরকার উদ্ভাবনমূলক সরকারি সেবা বিতরণ, জনসাধারণের তথ্য লাভের অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনা ও সেবা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।’ জনগণের দোরগোড়ায় ২০০ ধরনের সেবা পৌঁছে দিতে প্রায় ৮ হাজার ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন, স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ও ডিজিটাল ল্যাব ব্যবহারের কথা বলেন তিনি। নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু, একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা এবং রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরুর কথাও তিনি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন।জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং সংসদ উপনেতা সবাই নারী।’ আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপাল (বিবিআইএন)-এর মধ্যে ‘মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক’ তৈরি এবং বিনিয়োগ বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অনেকগুলো উন্নয়ন অর্জনকে হুমকির মুখোমুখি করছে জানিয়ে ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তিটি অনুসমর্থনের জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।তিনি জানিয়ে দেন- ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এই জলবায়ু চুক্তিটি অনুসমর্থন করেছে। আমি আশা করি বৃহৎ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলি অতি সত্বর চুক্তিটিতে অনুসমর্থন জানাবে।’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে- এই উপলব্ধি থেকে সহযোগিতার নতুন পথ খুঁজতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এদিকে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গত সোমবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দফতরের কাছে ইউএন প্লাজা হোটেল মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জয়ের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন হলিউডের অভিনেতা রবার্ট ডেভি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার চালানো শিখেছি, এ জন্য সে আমার শিক্ষক। শুধু তাই নয়, তথ্যপ্রযুক্তির সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র মেহনতি মানুষ থেকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তার মন্ত্র এসেছে জয়ের কাছে থেকেই। এমন সন্তানের মা হতে পেরে আমি গৌরবান্বিতবোধ করছি।’জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) গৃহীত হওয়ার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গভর্নেন্স অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস, প্ল্যান ট্রিফিনিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিউ হেভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস সম্মিলিতভাবে এ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ২০০৭ সালে ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার’ নির্বাচন করেছিল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওই সম্মান পান তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। যিনি এই প্রজন্মেরই একজন সুযোগ্য প্রতিনিধি।শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল। তেমনি সময়ে জয়ের জন্ম। সে সময় আত্মীয়স্বজন কাউকে পাশে পাইনি।’ আর জয় যখন হার্ভার্ডে, তখনও বাংলাদেশে জরুরি অবস্থার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নিজের বন্দি থাকার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।এ পুরস্কারের প্রবর্তকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকার স্বীকৃতি প্রকারান্তরে বাংলাদেশের মানুষের অদম্য কর্মস্পৃহার প্রতিই সম্মান বলে মনে করছি। পুরস্কার নেয়ার পর আবেগ আপ্লুত জয় বলেন, আমার মা তার কষ্টের কাহিনী বললেন, আমার জন্মের সময়ের অসহনীয় দুর্দশার দিনগুলো তিনি ভোলেননি।হ্যাঁ এই অর্জন গোটা দেশের মানুষের। যারা একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেন প্রতিটি ভোরে। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য দরকার ছিল একটি গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার। এই সরকার এখন ক্ষমতায়। প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে তুলনা করে বিবেচনা করতে হবে। অতীতে কারা কিভাবে মানুষের পাঁজরের ওপর দিয়ে সামরিক বুট চালিয়েছে- তা মনে রেখে এগোতে হবে। এই দেশের মানুষ বড় কর্মঠ। আর এটাই রাষ্ট্রের প্রধান শক্তি।----------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ শনিবার সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:০৮
false
fe
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আয়নায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আয়নায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমাফকির ইলিয়াস==========================================আমার একটা অহঙ্কার আছে। তা হলো আমি সিলেটে জন্মেছি। জন্মেছি হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাটিতে। দক্ষিণ সুরমা এলাকা একসময় সিলেট সদরের অধীন ছিল। সময়ের বিবর্তনে নতুন উপজেলা হয়েছে। সুরমা নদী বিভক্ত করেছে উত্তর সিলেট-দক্ষিণ সিলেট। আর সুরমার দক্ষিণ জনপদেই গড়ে উঠেছে এই উপজেলা। বলে রাখি, মোহাম্মদ নওয়াব আলী আমার অনুজ প্রতিম। আমরা বেড়ে উঠেছি একই এলাকায়। তাই তার সাহিত্য-সংস্কৃতি ভাবনা ও কর্মযজ্ঞ আমার খুব পরিচিত। ‘দক্ষিণ সুরমার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বিষয়ে একটি বই করতে আগ্রহীÑ তা আমি জেনেছিলাম মোহাম্মদ নওয়াব আলীর কাছ থেকে কয়েক বছর আগেই। মোহাম্মদ নওয়াব আলী ‘মাসিক বাসিয়া’ সম্পাদক। বাসিয়া নদী বয়ে গেছে আমার বাড়ির পূর্ব দিয়েই। আমি যেটুকু লেখালেখি করি তার ঋণ ঐ বাসিয়া নদীর কাছেই। ঐ বাসিয়া নদীই আমাকে কবি হতে শিখিয়েছে। শত শত বাউল গান লিখতে সাথী হয়েছে। মোহাম্মদ নওয়াব আলী যে কাজটি করেছেনÑ তা শিকড়ের সন্ধান। ‘দ্যা রুটস’-এর লেখক অ্যালেক্স হ্যালির কথা আমরা জানি। নাÑ শিকড়ের সন্ধান ছাড়া কোনো মানুষই তার আত্মানুসন্ধান করতে পারে না। ৪৮০ পৃষ্ঠার ‘দক্ষিণ সুরমার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বইটি সম্পাদনা করে এই তরুণ সম্পাদক সেই গুরুদায়িত্বটি পালন করেছেন। মোট ১৫টি অধ্যায় রয়েছে এই দলিলগ্রন্থটিতে। গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা গঠনের ইতিবৃত্ত, ঐতিহাসিক ও পরিসংখ্যানসহ ভৌগোলিক বিবরণ। উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ৩(২) ধারা বলে ২১ মার্চ, ২০০৫ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গঠিত হয়। সিলেট সদর উপজেলার সতেরোটি ইউনিয়ন থেকে নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে উক্ত উপজেলা গঠিত হয়। পরে নতুন ইউনিয়ন গঠনের প্রজ্ঞাপন অনুসারে কামালবাজার ইউনিয়ন উক্ত উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে মোল্লারগাঁও, বরইকান্দি, তেতলী, কুচাই, সিলাম, লালাবাজার, জালালপুর, মোগলাবাজার, দাউদপুর ও কামালবাজার এই দশটি ইউনিয়ন নিয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গঠিত। মোগলাবাজার ইউনিয়নের নৈখাই নামক স্থানে উপজেলার সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত উপজেলায় দক্ষিণ সুরমা ও মোগলাবাজার নামে দুটি থানা (পুলিশ স্টেশন) এবং দক্ষিণ সুরমা থানার অধীনে সিটি কর্পোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে। এই অধ্যায়ে উপজেলার মানচিত্র, প্রশাসনিক ভবনের ছবি, বিভিন্ন পরিসংখ্যান, বিভিন্ন ইউনিয়নের মানচিত্রসহ বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং তিনটি ওয়ার্ডের বিশদ বিবরণ ও তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও নামের তালিকা ও সময়কাল প্রদত্ত হয়েছে। এক কথায়, ইউনিয়নসমূহ ও ওয়ার্ডসহ উপজেলার সম্যক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে দশটি ইউনিয়ন ও তিনটি সিটি ওয়ার্ডের মানচিত্রসহ পূর্ণ পরিচিতি দেয়া হয়েছে। ইউনিয়নওয়ারী প্রদত্ত পরিসংখ্যান ও ২৫, ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ডের পরিসংখ্যানসহ পূর্ণ পরিচিতি পাঠককে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবে। তৃতীয় অধ্যায়ে উপজেলার ইউনিয়নভিত্তিক গ্রাম ও মৌজার তালিকা, নদী, খালবিল, জলমহাল, টিলা, হাটবাজারসমূহ, সিটি ওয়ার্ড সমূহের গ্রামের তালিকা প্রদত্ত হয়েছে। সুরমা, বাসিয়া ও বড়ভাগা-উপজেলার এই তিনটি নদীর উৎপত্তি ও অবস্থান সম্পর্কে এই অধ্যায়ে সুন্দর তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। এই উপজেলার ত্রিশটি বিল ও দশটি জলমহালের তালিকাও উল্লিখিত আছে। চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক মসজিদ, মন্দির, গির্জার তালিকা, মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকার ভূমিকা ও গণকবর সম্পর্কিত তথ্য। পঞ্চম অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থানের বর্ণনা রয়েছে। দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। প্রথমে শহিদ বুদ্ধিজীবী ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা একুশজনের তালিকা ও তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য তথা মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, যা মর্মান্তিক ও স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবজনক শাহাদতের স্বাক্ষর বহন করে। এই একুশজনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. আবদুল মুক্তাদিরের নামও রয়েছে। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে। তিনি দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। অন্যান্য বিশজন শহিদ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করে শাহাদতবরণ করেন। গ্রন্থের লেখক তাদের সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ করে গ্রন্থিত করার কারণে গ্রন্থের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অধ্যায়ে ইউনিয়নওয়ারী ও তিন ওয়ার্ডের ২০৭ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রদত্ত হয়েছে। মোল্লারগঁাঁও ইউনিয়ন ১৫ জন, বরইকান্দি ইউনিয়ন ১৭ জন, তেতলী ইউনিয়নে ১৮ জন, কুচাই ইউনিয়নে ২৭ জন, সিলাম ইউনিয়নে ৫২ জন, মোগলাবাজার ইউনিয়নে ৪১ জন, দাউদপুর ইউনিয়নে ১৬ জন, কামালবাজার ইউনিয়নে ১০ জন ও তিনটি ওয়ার্ডে ১১ জন। এখানে ২০৭ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা গেজেট ও মুক্তিবার্তা নম্বরসহ গ্রন্থিত হয়েছে। তাছাড়া গ্রন্থিত হয়েছে শিক্ষক, কবি লেখক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য। এ বৃত্তান্তে প্রবীণ থেকে বর্তমান প্রজন্মের পরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্যিকদের নাম রয়েছে। তাছাড়া এই ষষ্ঠ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার সাংবাদিকতা, রাজনীতি ও সমাজসেবা, ক্রীড়া, আইন বিচার প্রশাসন, কৃষি শিল্প বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, উচ্চ পদে কর্মরত, চিকিৎসা ও প্রবাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত পরিচয় গ্রন্থিত হয়েছে। সপ্তম অধ্যায়ে বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের পরিচয় ও কীর্তির বিবরণ রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ। গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে দক্ষিণ সুরমার একুশটি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিলেট বিভাগীয় সদর দপ্তর, ডিআইজি অফিস, সিলেট শিক্ষাবোর্ড, সিলেট বিসিক শিল্পনগরী, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, দক্ষিণ সুরমা মেট্রোপলিটন থানা, মোগলাবাজার মেট্রোপলিটন থানা, সিলেট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ ইত্যাদি। নবম অধ্যায়ে রয়েছে দশটি শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দশম অধ্যায়ে পনেরোটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসসহ অবস্থান ও কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বয়ান রয়েছে গ্রন্থটিতে। গ্রন্থের একাদশ অধ্যায়ে রয়েছে ৩৩টি মাদ্রাসার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ভৌগোলিক অবস্থান। ফাজিল মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসার অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী ধর্মীয় ও কার্যকরী শিক্ষা গ্রহণ করছেন। দ্বাদশ অধ্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইউনিয়নওয়ারী সংখ্যা, অবস্থান ও পরিচিতি। দক্ষিণ সুরমায় ৮৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯টি রেজিস্টার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২টি রেজিস্টার্ড (কমিউনিটি) প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্তসহ পরিচালনা কমিটির নামধামসহ বিদ্যালয়সমূহের পরিচিতি পাঠক সমীপে তুলে ধরা হয়েছে। ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ৪টি সংসদ নির্বাচন, একটি উপজেলা নির্বাচন ও ২টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিশদ পরিসংখ্যান ও বিবরণ রয়েছে। সংসদ নির্বাচনগুলো ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত, উপজেলা নির্বাচন ২০০৯ সালে ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০০৩ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কাসহ সকল প্রতিযোগির প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাসহ তালিকা প্রদত্ত হয়েছে। চতুর্দশ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার ওলি, আউলিয়া, ফকির দরবেশ, হযরত শাহজালালের সফরসঙ্গীদের সচিত্র মাজার পরিচিতি ও অন্যান্য দরবেশদের সচিত্র মাজার পরিচিতি গ্রন্থিত হয়েছে। এই অধ্যায়ে হযরত শাহজালালের ৩২২জন সঙ্গীর তালিকা রয়েছে এবং দক্ষিণ সুরমায় এরূপ ২২ জন আউলিয়ার মাজার রয়েছে। এই মাজারগুলোর প্রতিবেদন ও চিত্র রয়েছে গ্রন্থটিতে। তাছাড়া ওলি-আউলিয়া বুজুর্গদের তালিকায় আরো ৬৮ জনের নাম ও সচিত্র মাজার রয়েছে। পঞ্চদশ অধ্যায়ে বিবিধ বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে বেসরকারি বৃত্তি পরীক্ষাসমূহ রেজি. সমাজকল্যাণ সমিতি, বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ব্যাংক ও কমিউনিটি সেন্টারের বিবরণ ও তথ্য সংগ্রহে সহায়তাকারী ও সহায়ক গ্রন্থের বিবরণ। এই গ্রন্থটি লিখতে কিংবা সম্পাদনা করতে সম্পাদককে যারা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, তাদের নাম এবং সহায়ক গ্রন্থগুলোর তালিকা যুক্ত হয়েছে বইয়ের শেষে। সুদূর নিউইয়র্কে অনেক মমতায় বইটি আমার কাছে পাঠিয়েছেন সম্পাদক মোহাম্মদ নওয়াব আলী। আমি যখন বইটিতে মনোনিবেশ করেছি, তখনই আমার সামনে ভেসে উঠেছে দক্ষিণ সুরমার পথ-ঘাট, নদী-নালা, ওলি-আউলিয়ার মাজার। আমার কানে বেজে গেছে ফকির শাহ আব্দুল লতিফ কিংবা ফকির আরকুম শাহের গান। বলতে পারি, একটি কঠিন কাজ সম্পন্ন করেছেন এই নিষ্ঠাবান সম্পাদক। বলা দরকার, এই বইটি কারো কারো মতে একটি সম্পূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে। ভুলবশত কিছু তথ্য বাদ পড়তেই পারে। তবে এই বিশাল গ্রন্থটি আগামী দিনের গবেষকদের জন্য একটি মাইলস্টোন হিসেবে বিবেচিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চাররঙা কালারে চমৎকার প্রচ্ছদ করেছেন কৃতী চিত্রশিল্পী ধ্রুব এষ। প্রকাশক- বাসিয়া প্রকাশনীর পক্ষে মকসুদ আহমদ বাসিত। অঙ্গসজ্জা- মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান ও এম ইসলাম। অলোকচিত্র- মোঃ রিয়াজউদ্দিন ও আজাদুর রহমান সুমন। মূল্য রাখা হয়েছে- পাঁচশত টাকা। বিলাতে দশ পাউন্ড। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে- সম্পাদকের দাদা মোহাম্মদ কাজিম, পিতা মোঃ পীর বকস, মাতা আফলাতুন নেসা, চাচা নূর বকস গেদু মিয়াকে। যারা সম্পাদককে দিয়েছেন শিকড়ের সন্ধান। অফসেট পেপারে ছাপা গ্রন্থটি যে কোনো পাঠকের মন ও সংগ্রাহকের গ্রন্থালয়কে আলোকিত করবে। এটা দুঃখের কথা, সরকারি পর্যায়েও ইতিহাস-ঐতিহ্যভিত্তিক গ্রন্থগুলো কিনে নিয়ে সরকারি লাইব্রেরিগুলোকে সমৃদ্ধ করতে অনেক কার্পণ্য করা হয়। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। বই মানুষকে ঝলমলে জীবনের সন্ধান দেয়। আমি চাইবো, দক্ষিণ সুরমা এলাকাসহ গোটা বাংলাদেশের চিত্তবান-বিত্তবান মানুষেরা এই বইটি কিনে তাদের প্রিয়জনকে উপহার দেবেন। নিজ সংগ্রহে রাখবেন।--------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৩
false
fe
নির্বাসনে সাংবাদিক, নির্যাতিত সাংবাদিকতা নির্বাসনে সাংবাদিক, নির্যাতিত সাংবাদিকতা ফকির ইলিয়াস ----------------------------------- বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন তা আশঙ্কাজনক। সাংবাদিকদেরকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যোগ নেই। এই মন্তব্য করেছেন মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা থেকে প্রকাশিত ‘লে জার্নাল হেবডোমেডের’-এর প্রকাশক মি. আবুবকর জামাল। তিনি এখন নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। এই আন্তর্জাতিক বুলেটিনে ম্যাথিও হেনসেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মরক্কোর এই প্রকাশক মরক্কোর শাসক কিং হাসানেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন। যে দেশগুলোতে সাংবাদিকতা মুখ থুবড়ে পড়ছে তার একটি সাম্প্রতিক তালিকাও প্রকাশ করেছে সিপিজে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং শাসকদের নির্যাতনে সাংবাদিকদের স্বদেশ ত্যাগের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এরা প্রাণ বাঁচাতে, তাদের পরিবার-পরিজন রক্ষার্থে বিভিন্ন দেশে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিচ্ছেন। গ্রহণ করছেন নির্বাসিত জীবন। ২০০১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যìত মোট ২৪৩ জন সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে)। এলিজাবেথ উইচেল ও ক্যারেন ফিলিপস লিখিত একটি সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে এসব সাংবাদিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক হত্যা, জেল-জুলুম, সামাজিক হয়রানি এবং রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার। ফলে তাদের নির্বাসিত জীবন গ্রহণ ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না। জরিপে দেখা গেছে, নির্বাসিত নতুন জীবনে এসব সাংবাদিকদের প্রায় শতভাগই তাদের নিজ সাংবাদিকতা পেশা ধরে রাখতে পারেননি। সিপিজের সমীক্ষায় দেখা গেছে ৯৪ জন সাংবাদিক চরম হুমকির মুখে তাদের স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে কলম্বিয়া, হাইতি, আফগানিস্তান এবং রয়ান্ডা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। মেটি ৩৬টি দেশের ২৪৩ জন সাংবাদিক নির্বাসিত হলেও এর অর্ধেক হচ্ছেন জিম্বাবুয়ে, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, কলম্বিয়া এবং উজবেকিস্তান থেকে। সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, ২৪৩ জনের মধ্যে ৩৪ জন নির্বাসন থেকে স্বদেশে ফিরে গেছেন। ২০৯ জন এখনো নির্বাসনে রয়েছেন। নির্বাসনে থাকা সাংবাদিকদের মধ্যে আছেন জিম্বাবুয়ে থেকে ৪৮ জন, ইথিওপিয়া থেকে ৩৪ জন, ইরিত্রিয়া থেকে ১৯ জন, কলম্বিয়া থেকে ১৭ জন, উজবেকিস্তান থেকে ১৬ জন, হাইতি থেকে ১৪ জন, আফগানিস্তান এবং লাইবেরিয়া থেকে ১০ জন, রুয়ান্ডা থেকে ৯ জন, গাম্বিয়া থেকে ৬ জন এবং ইরান থেকে ৫ জন। এসব সাংবাদিকদের ৭২ জন যুক্তরাষ্ট্রে, ২৪ জন ব্রিটেনে, ২১ জন কেনিয়ায়, ২০ জন কানাডায়, এবং ১৪ জন সাউদার্থ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা থেকেও বেশ কিছু সাংবাদিক ইউরোপ আমেরিকায় ‘এক্সাইল লাইফ’ বেছে নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সমর্থিত সূত্র নিশ্চিত করলেও সিপিজের সমীক্ষায় এর কোনো উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে সিপিজে কোনো ফুটনোটও প্রদান করেনি। তবে সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে বিগত জোট শাসনামলে বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে। কয়েকজন প্রতিতযথা সাংবাদিক হত্যার বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। এদিকে ‘ডেঞ্জারাস অ্যাসাইনমেন্টস’ নামক বার্ষিক বুলেটিন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে সিপিজে। ‘কভারিং দ্য গে­াবাল প্রেস ফিন্সডম স্ট্রাগ’ বিষয়ে গ্রীষ্মকালীন ২০০৭ এই সংখ্যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংবাদ সেন্সর এবং সাংবাদিক নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ইরাকে ২০০৬ সালে ৩২ জন কর্মরত সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ পর্যìত ইরাকে মোট ১১৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। গোটা বিশ্বে ২০০৬ সালে মোট ৫৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৬ সালে যেসব উল্লেখযোগ্য সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে­ এর মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান সাংবাদিক মিস আনা পলিটকোভোস্কি, সুদানের আল ওয়ফাক সম্পাদক মোহাম্মদ তাহা। মিসরীয় ইন্টারনেট লেখক আব্দুল করিম সোলাইমানকে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন মিসরীয় প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। যা ছিল আলোচিত ঘটনা। ‘ইরাকি সাংবাদিকদের কাছে আমাদের ঋণ’ শিরোনামে জর্জ পেকার একটি মর্মস্পর্শী নিবন্ধ লিখেছেন এই বুলেটিনে। মোহাম্মদ আল বান (মৃত্যু ১৩ নভেম্বর ২০০৬), আসওয়ান আহমেদ লুৎফুল্লাহ (মৃত্যু ১২ ডিসেম্বর ২০০৬), নাকশিন হাম্মা রাশিদ (মৃত্যু ২৯ অক্টোবর ২০০৬), আহমেদ হাদি নাজি (মৃত্যু ৫ জানুয়ারি ২০০৭), খামেইল খালাফ (মৃত্যু ৫ এপ্রিল ২০০৭), ওসমান আল মাশাদানি (মৃত্যু ৬ এপ্রিল ২০০৬) এদের হত্যাকাণ্ডকে বড়ো নির্মমভাবে বর্ণনা করেছেন লেখক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন তা আশঙ্কাজনক। সাংবাদিকদেরকে রক্ষায় আìতর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যোগ নেই। এই মìতব্য করেছেন মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা থেকে প্রকাশিত ‘লে জার্নাল হেবডোমেডের’-এর প্রকাশক মি. আবুবকর জামাল। তিনি এখন নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। এই আìতর্জাতিক বুলেটিনে ম্যাথিও হেনসেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মরক্কোর এই প্রকাশক, মরক্কোর শাসক কিং হাসানেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন। যে দেশগুলোতে সাংবাদিকতা মুখ থুবড়ে পড়ছে তার একটি সাম্প্রতিক তালিকাও প্রকাশ করেছে সিপিজে। ৩ মে ২০০৭ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফিন্সডম ডে উপলক্ষে প্রকাশিত এই তালিকায় বলা হয়েছে­ গেলো পাঁচ বছর এর জরিপে দশটি দেশ নানাভাবে সংবাদপত্র, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদেরকে ঘায়েল করার মতো জঘন্য কাজ করেছে। এই তালিকার প্রথম দেশটি হচ্ছে ইথিওপিয়া। যার নেতৃত্বে রয়েছেন মেলেস জেনাউয়ি। তিনি ১৮ জন সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিয়েছেন। প্রায় ১০০ সাংবাদিককে জোরপূর্বক বিদেশে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। বিদেশী বেশ কজন সাংবাদিককে তার দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন। কয়েকটি সংবাদপত্র, সংবাদ ওয়েব বন্ধ করে দিয়েছেন গেলো বছরে। সুনাম ক্ষুন্ন হওয়া তালিকার দ্বিতীয় দেশটি হচ্ছে গাম্বিয়া। রাষ্ট্রপ্রধানের নাম ইয়াহিয়া জামেহ। সম্পাদক ডেয়ডা হায়দারাকে খুন করা হয় ২০০৪ সালে। ২০০৬ পর্যন্ত ১১ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে। ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ নামের প্রভাবশালী সংবাদপত্রটি বন্ধ করা হয়েছে সরকারি নিপীড়নের মাধ্যমে। তৃতীয় দেশটি হচ্ছে রাশিয়া। রাষ্ট্রপ্রধান ভ­াদিমির পুতিন। তিনটি টিভি চ্যানেলই এখন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন। ১১ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে গেলো পাঁচ বছরে। কোনো ন্যায়বিচার হয়নি। তিনজন সাংবাদিক কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। চতুর্থ দেশটি হচ্ছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো। রাষ্ট্রপ্রধান জোশেফ কাবিলা। গেলো দু বছরে দুজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। ৯ জনের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। সাংবাদিকদেরকে ক্রিমিনাল এ্যাক্টে গ্রেপ্তারের প্রবণতা বেড়েছে অধিক হারে। পঞ্চম দেশটি হচ্ছে কিউবা। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান রাউল কাস্ট্রো। ২০০৩ সালের ক্র্যাক ডাউনে ২৯ জন সাংবাদিককে জেলে ঢুকানো হয়। ২০০৫ সালের অপজিশন মিটিং কভারিং করার দায়ে পাঁচজন বিদেশী সাংবাদিক ঐ দেশ থেকে তাড়িত হন। ২০০৬ সালে ফিদেল কাস্ট্রো রোগাক্রান্ত হলে ১০ জন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করার সময়ে নিগৃহীত হন। ষষ্ঠ দেশটি হচ্ছে পাকিস্তান। রাষ্ট্রপ্রধান পারভেজ মুশাররফ। গেলো পাঁচ বছরে ৮ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। দেশের গোয়েন্দা সংস্খাগুলো সাংবাদিকদেরকে স্বাধীন মতপ্রকাশের চেতনাকে রুদ্ধ করার প্রয়াসী হচ্ছে বিভিন্নভাবে। এই তালিকার সপ্তম দেশটি হচ্ছে মিসর। রাষ্ট্রপ্রধান হোসনি মোবারক। সম্পাদক রেদা হেলালকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয় ২০০৩ সালে। সরকারি গোয়েন্দা এজেন্টরা ইন্টারনেট, সংবাদ মাধ্যম এবং ফিন্স ল্যান্স সাংবাদিকদেরকে নির্যাতন করছে বিভিন্নভাবে। অষ্টম দেশটি হচ্ছে আজারবাইজান। রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন ইলহাম আলীয়েভ। সম্পাদক এলমার হোসেইনভ খুন হন ২০০৫ সালে। ১৪ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্রাইমের সাজানো মামলা দায়ের করা হয়। দুজন সিনিয়র সাংবাদিককে কিডন্যাপ করা হয় ২০০৬ সালে। বেশ কজন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েই যাচ্ছে কে বা কারা। নবম দেশটি হচ্ছে মরক্কো। রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন, কিং মোহাম্মদ (ষষ্ঠ)। দেশটি এখন আরব বিশ্বের ‘সাংবাদিকদের কারাগার’ বলে খ্যাতি পেয়েছে। তিনজন সিনিয়র সাংবাদিককে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। স্প্যানিশ ভাষাভাষী ‘আল পেইস’ পত্রিকাটি ব্যান্ড করা হয়েছে। সম্পাদক আলী লামরাবেটকে তার সম্পাদনার দায়িত্ব থেকে ১০ বছরের জন্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দশম দেশটি হচ্ছে থাইল্যান্ড। বর্তমান শাসক হচ্ছেন সুরাইয়ুড চুলানন্ট। এই সামরিক জাìতা একমাত্র প্রাইভেট টিভি চ্যানেলটির নিজস্ব খবর প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারি সংস্খা কর্তৃক সরবরাহকৃত সংবাদ প্রচারে বাধ্য করা হচ্ছে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা মুখ থুবড়ে পড়েছে মারাতকভাবে। এই দশটি দেশ ছাড়াও ভেনেজুয়েলা, তুরস্ক, মেক্সিকো, পেরু, ইরানকেও সাংবাদিকদের শত্রুরাষ্ট্র বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিপিজের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মি. জয়েল সাইমন বলেছেন, এই অগ্রসরমান গণতান্ত্রিক বিশ্বে সাংবাদিকরা কথা বলতে পারবেন না, সরকারের খবর লিখতে পারবেন না­ তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্বব্যাপী এই অধিকার সোচ্চার করে তোলার লক্ষ্যেই সিপিজে কাজ করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, সিপিজে প্রতি বছর নিউইয়র্কে ‘প্রেস ফিন্সডম অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে থাকে। এ বছর ২০ নভেম্বর ২০০৭ মঙ্গলবার এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে ওয়ার্ল্ড এস্টোরিয়া নামক আন্তর্জাতিক হোটেলের গ্র্যান্ড রুমে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে চলবেই আমাদের কলম­ এই প্রত্যয় নিয়ে এবারো হাজার হাজার সাংবাদিক সমবেত হবেন নিউইয়র্কে। তারা আবারও সমবেত কন্ঠে আওয়াজ তুলবেন, স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার দেশে দেশে প্রতিষ্টিত হোক। সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:২২
false
mk
ব্লাসফেমি আইনের বিভীষিকা পাকিস্তানের একটি সামাজিক সেবা সংস্থার উদ্যোক্তা, অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত ৮০ বছর বয়সী সমাজসেবক আখতার হামিদ খানকে ১৯৯২ সালে গ্রেপ্তার করা হয় ইসলামের অবমাননার অভিযোগে। তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত হওয়া এক সাবেক কর্মী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তিনি একজন ভারতীয় সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসলামের অবমাননা করেছেন। আদালতে সে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে তিনি মুক্তি পান। কিন্তু একই বছর আবারও গ্রেপ্তার হন। এবার তাঁর বিরুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর জামাতা হজরত আলী (রা.)-কে অবমাননার অভিযোগে মামলা করেন মাওলানা এহতেরামুল হক থানভি নামের এক ব্যক্তি। থানভি তাঁর অভিযোগে বলেন, খান শিশুদের জন্য একটি গল্প লিখেছেন, যেটির শিরোনাম ‘শের আউর আহমেক’। খান এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করে বলেন, গল্পটি তিনি লিখেছেন জেনারেল জিয়াউল হক ও জুলফিকার আলী ভুট্টোকে নিয়ে। কয়েকজন ইসলামি পণ্ডিত বিষয়টি খতিয়ে দেখে মন্তব্য করেন, খানের গল্পে কোনো ধর্মীয় অবমাননা ঘটেনি। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে দুটো মামলাই প্রত্যাহার করা হয়।২০০৩ সালের ২৩ আগস্ট লাহোরের যুবক দিনমজুর, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী স্যামুয়েল মসিহকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার আগে একটি মসজিদের ইমাম ও কয়েকজন মুসল্লি স্যামুয়েলকে বেদম প্রহার করেন এই অভিযোগ তুলে যে স্যামুয়েল ওই মসজিদের দেয়ালে আবর্জনা ছুড়ে ফেলেছেন। তাঁরা স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি আইন নামে পরিচিত পাকিস্তান দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২২ মে পর্যন্ত তিনি বিনা বিচারে লাহোর কারাগারে বন্দী থাকেন।যক্ষ্মারোগী স্যামুয়েলের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে লাহোরের গুলাব দেবী হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে তাঁকে পাহারা দেওয়ার জন্য চারজন পুলিশও পাঠানো হয় তাঁর সঙ্গে। ২৪ মে খুব ভোরে হাসপাতালে চার পুলিশ প্রহরীর উপস্থিতিতেই স্যামুয়েলের ওপর খোয়া ভাঙার হাতুড়ি নিয়ে চড়াও হন ফারিয়াদ আলী নামের অন্য এক পুলিশ কনস্টেবল, যিনি সে সময় অফ-ডিউটিতে ছিলেন। মাথায় হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর আহত স্যামুয়েলকে লাহোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চার দিন পর তিনি মারা যান। একটি তথ্যানুসন্ধানী দল ঘটনা তদন্ত করে জানতে পারে, হত্যাকারী পুলিশ কনস্টেবল ফারিয়াদ আলী পরে পুলিশকে বলেছেন, ‘ওই লোকটিকে হত্যা করে আমি আমার ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেছি। আমি আত্মিকভাবে তৃপ্ত। এ জন্য যেকোনো পরিণতির মুখোমুখি হতে আমি প্রস্তুত।’পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালা জেলার এক মসজিদের ইমাম ১৯৯৩ সালের ১১ মে কোট লাদা থানায় অভিযোগ করেন, তিন ব্যক্তি তাঁদের মসজিদের দেয়ালে মহানবী (সা.)-এর অবমাননাসূচক কথা লিখেছেন এবং একই ধরনের অবমাননাসূচক লেখাসহ এক টুকরা কাগজ মসজিদের ভেতরে ছুড়ে দিয়েছেন। তাঁরা তিনজন হলেন রেহমাত মসিহ (৪৪), মনজুর মসিহ (৩৮) ও সালামত মসিহ নামের ১১ বছরের এক বালক। তাঁরা খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। সালামত মসিহ ও মনজুর মসিহ একেবারেই অক্ষরজ্ঞানহীন হওয়া সত্ত্বেও রেহমাত মসিহর সঙ্গে ওই দুজনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ তদন্ত করতে গেলে অভিযোগকারী ইমাম পুলিশকে বলেন, তিনি মসজিদের দেয়ালের লেখাগুলো মুছে দিয়েছেন। কারণ, সেগুলো ছিল মহানবী (সা.)-এর প্রতি অবমাননামূলক। নাবালক বলে সালামতকে সঙ্গে সঙ্গে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়, আর রেহমাত ও মনজুর জামিনে মুক্তি পান সাত মাস কারাভোগের পর ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে। এপ্রিলে মামলার শুনানি শেষে ওই তিন আসামি জেলা ও দায়রা আদালত থেকে বেরিয়ে এলে তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। গুলিতে মনজুর প্রাণ হারান, সালামত ও রেহমাত আহত হন। তবে প্রাণে বেঁচে যান তাঁরা। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সালামত ও রেহমাতের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে লাহোর হাইকোর্ট এই বলে তাঁদের বেকসুর খালাস দেন যে তাঁরা খ্রিষ্টান, আরবি জানেন না, আরবিতে কীভাবে আল্লাহর নাম লিখতে হয়, তা তাঁদের জানা নেই। মুক্তি পাওয়ার পর তাঁরা হত্যার হুমকি পেতে শুরু করলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।সালামত ও রেহমাত মসিহকে মুক্তি দিয়েছেন লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি আরিফ ইকবাল ভাট্টি। ১৯৯৭ সালে তাঁকে তাঁর হাইকোর্টের চেম্বারে খুন করেন এক ব্যক্তি। সে খুনের অভিযোগে পুলিশ ১৯৯৮ সালে শের খান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। ওই ব্যক্তি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, বিচারপতি ভাট্টিকে তিনি হত্যা করেছেন। কারণ, তিনি সালামত ও রেহমাতকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তারপর শের খান পুলিশ হেফাজত থেকে রহস্যজনকভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।১৯৯৪ সালে হাফিজ ফারুকি সাজ্জাদ নামের এক মুসলমানের বাড়িতে আগুন লেগে কোরআন পুড়ে যায়। স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়, একজন খ্রিষ্টান কোরআন পুড়িয়েছেন। ক্রুদ্ধ লোকজন সাজ্জাদের বাড়ি ঘেরাও করে, তাঁকে গণপিটুনি দিতে শুরু করলে পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। ক্রুদ্ধ লোকজন থানা ঘেরাও করে, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং শেষে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, থানার সব পুলিশ পালিয়ে যায়। সাজ্জাদ পুড়ে মারা যান। ২০১২ সালে বাহাওয়ালপুরে এক মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ক্রুদ্ধ জনতা থানা-পুলিশের হেফাজত থেকে বের করে এনে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলে। গুজব রটানো হয়েছিল যে ওই ব্যক্তি কোরআন পুড়িয়েছেন। একই বছর ৩৫ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তিকে কোরআনে আগুন ধরানোর অভিযোগে ক্রুদ্ধ লোকজন পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। তারপর হাজার খানেক লোক থানা ঘেরাও করে লোকটিকে পিটিয়ে হত্যা করে তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।২০০৯ সালে পাঞ্জাবের ফয়সালাবাদে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের দুই বৃদ্ধ লোক কোরআনের অবমাননা করেছেন—এমন অভিযোগ ছড়িয়ে পড়লে ক্রুদ্ধ মুসলমান জনতা খ্রিষ্টানদের ৭৫টি বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে সাতজন খ্রিষ্টান পুড়ে মারা যান।পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইন অপব্যবহারের রোমহর্ষক ঘটনার যেন শেষ নেই। দেশটিতে কেউ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তোলামাত্রই অভিযুক্ত ব্যক্তির জীবনে বিপন্ন দশা উপস্থিত হয়; অভিযোগের সত্য-মিথ্যা যাচাই পর্যন্ত যেতে হয় না। অনেক ব্লাসফেমি মামলার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু তাতে ওই ব্যক্তিদের জীবনে স্বাভাবিক নিরাপত্তা, স্বস্তি, সামাজিক মর্যাদা আর ফিরে আসেনি। অনেকে আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে খুন হয়েছেন, অথবা সামাজিক ঘৃণা-বিদ্বেষ ও হত্যার হুমকি সইতে না পেরে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনেকে স্বদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ব্লাসফেমির অভিযোগে মামলার শিকার না হয়েও কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে অনেক মানুষ ঘৃণা-বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। পাকিস্তানে যাঁরা ব্লাসফেমি আইনের সমর্থক, তাঁদের একটা যুক্তি হচ্ছে, ধর্মীয় কারণে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়া ঠেকাতে এই আইন ফলপ্রসূ হবে। কিন্তু সেটা যে হয়নি, তা পাকিস্তানের মানুষ মর্মান্তিকভাবে উপলব্ধি করছে। যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো অজুহাতে এই আইনের অপব্যবহারের বলি হতে পারেন—এই মারাত্মক ঝুঁকি সত্ত্বেও আইনটি বাতিল বা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে কোনো সরকার সাহস পাচ্ছে না চরম উগ্রপন্থী ইসলামি কয়েকটি গোষ্ঠীর কারণে। তা ছাড়া সাধারণ মুসলমানদেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, নিজে ব্লাসফেমি আইনের শিকার হওয়ার আগে পর্যন্ত, ভাবছে যে এই আইনটি দরকারি।বাংলাদেশেও এই চিন্তাধারার কিছু মানুষ আছেন, এ কথা সত্য। কিন্তু যে সমাজের মানুষ চাঁদের বুকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখচ্ছবি দেখার সুপরিকল্পিতভাবে প্রচারিত গুজব বিশ্বাস করে ওই রকম দৃষ্টি-বিভ্রমের শিকার হন, যে সমাজে মসজিদের মাইকে গুজব ছড়িয়ে ব্যাপক সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো সম্ভব, সেখানে ব্লাসফেমি আইন ভীষণ বিপজ্জনক হতে পারে। রাজনৈতিক দিক থেকে এটা হবে আরও বেশি গুরুতর: বিরুদ্ধ মতের, প্রতিপক্ষ দলের যেকোনো নেতা-কর্মী বা সমর্থকের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে মামলা করে তাঁর জীবন বিপন্ন করা নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠবে। এখনো ব্লাসফেমি আইন ছাড়াই, যাকে ইচ্ছা তাকে কথায় কথায় নাস্তিক বলা হচ্ছে। এমনকি লেখক, কবি, সাংবাদিক, অধ্যাপক, মানবাধিকারকর্মী, তরুণ নাগরিক সমাজের নেতাদের নাস্তিক বলে প্রচার করে তাঁদের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো ও আক্রমণের উসকানি সৃষ্টির প্রবণতাও সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে।পাকিস্তান যে বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে চাইছে, বাংলাদেশ কেন সেই বিপদে প্রবেশ করবে? পৃথিবীর সব সমাজ এগিয়ে চলে সামনের দিকে। কোনো সমাজ এগোয় দ্রুতগতিতে, কোনোটা ধীরে। কিন্তু অগ্রসরের গতিমুখটা সামনের দিকেই; পেছনের দিকে নয়, মধ্যযুগের দিকে নয়।[এই লেখা তৈরি করা হয়েছে পাকিস্তানের ডন, দ্য ডেইলি টাইমস, দ্য নেশন, দ্য হেরাল্ড, দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ইত্যাদি ইংরেজি দৈনিকের বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল অব পাকিস্তান, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ক্রিশ্চিয়ান সলিডারিটি ওয়াল্ডওয়াইড ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।]মশিউল আলম: সাংবাদিক।
false
fe
নিউইয়র্কে এবিসি সম্মেলন _ দেশ ও প্রবাসের সেতুবন্ধনের আলোকবর্তিকা নিউইয়র্কে এবিসি সম্মেলন : দেশ ও প্রবাসের সেতুবন্ধনের আলোকবর্তিকা ফকির ইলিয়াস=========================================নিউইয়র্কে ১৭ ও ১৮ জুলাই-২০১০ শনি ও রোববার এবিসি (আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ম্যারি লুইস একাডেমির সুবিশাল চত্বরে এ সম্মেলন ছিল অভিবাসী বাঙালির প্রাণের মেলা। ২০০৯-এ শুরু হওয়া এ সম্মেলনের এটি ছিল দ্বিতীয় বছর। বিদেশে বাঙালিদের মহামিলন মানেই স্বদেশ ভাবনা। এর সঙ্গে ক্রমেই যুক্ত হচ্ছে, পরবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের সঙ্কট, সম্ভাবনাসহ নানা দিক। এবারের সম্মেলনটি ছিল অত্যন্ত জমজমাট। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য তো বটেই, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া থেকেও শিকড় সন্ধানী বাঙালি অভিবাসীরা ছুটে এসেছিলেন এই সম্মেলনে। পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের বিশিষ্ট অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত ছিল হাজার হাজার মানুষের এ উৎসব।এবারের সম্মেলনের সেমিনারগুলো ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এই সেমিনারগুলোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা তারা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠাবেন। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে অভিবাসী বিশেষজ্ঞদের এসব গঠনমূলক সুপারিশ তুলে ধরা হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে।'স্বদেশ বিনির্মাণে প্রবাসীদের বিনিয়োগ ও মেধা ব্যবহারে সরকার কতটা আন্তরিক' শিরোনামে সেমিনারটিতে মূল প্রবন্ধ পড়েন সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. ফাইজুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ঢাকা'র উপদেষ্টা ড. মনজুর আহমেদ, ড. মোস্তাফা চৌধুরী, ড. হাসান মাহমুদ, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এ সেমিনারে সব বাধা সরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও মেধাবৃত্তি চর্চার দরজা অবারিত করার আহ্বান জানানো হয়।'সুস্থ রাজনীতির বিকাশ এবং মানবাধিকার রক্ষায় সরকার ও বিরোধীদলের ভূমিকা' শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ড. আলী রীয়াজ। আলোচনায় অংশ নেন ড. মাহফুজুর রহমান, ড. মাহবুবুর রহমান, ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ মূলধারার বেশ কিছু রাজনীতিক ও মানবাধিকার নেতারা। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে সহনশীল এবং বিরোধীদলকে গঠনমূলক কর্মকান্ডে প্রত্যয়ী হওয়ার আহ্বান আসে বক্তাদের পক্ষ থেকে।'প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে নতুন প্রজন্মের সংঘাত ও সমাধানের উপায়' সেমিনারটি ছিল নতুন প্রজন্মের বাঙালি আমেরিকানদের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসম্যান পদপ্রার্থী রেশমা সুজানী। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ রাজনীতিক তার বক্তব্যে অভিবাসী জীবনের সৌন্দর্য এবং প্রতিকূলতা তুলে ধরেন নতুন প্রজন্মের সামনে। তা কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও ছিল তার আলোচনায়। ড. ইলোরা রফিক, ড. রিফাত সালাম, ডা. ইভান খানসহ এ প্রজন্মের বেশ ক'জন পেশাজীবী এতে অংশ নেন।'গণতন্ত্রের বিকাশ ও উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা' সেমিনারটি ছিল দর্শক শ্রোতার কানায় কানায় পূর্ণ। প্রধান আলোচক ছিলেন, বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রধান সাবির মোস্তফা। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন 'যায়যায়দিন'র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শফিক রেহমান। অংশ নেন, সাবেক প্রেস মিনিস্টার ফজল এম. কামাল, ভয়েস অব আমেরিকার সরকার কবির উদ্দিন, রোকেয়া হায়দার, ড. এবিএম শফিকুর রহমান, এনা সম্পাদক লাবলু আনসার প্রমুখ।প্রথমদিন বিকেলে সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিরলপ্রজ কবি শহীদ কাদরীকে নিয়ে কবিতা-আড্ডা। মুক্তমঞ্চে এই জনাকীর্ণ আড্ডায় কবিতা পড়েন- লুৎফুন নাহার লতা, তমিজ উদদীন লোদী, শামস আল মমীন, সালেম সুলেরী, জেসমিন মোশতাক প্রমুখ। এ আড্ডাটি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। আড্ডা শেষে কবি শহীদ কাদরীর হাতে 'এবিসি সম্মেলন সম্মাননা পদক' তুলে দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আরেকজন কৃতী বাংলাদেশের সন্তান ড. ওসমান সিদ্দিক। কবি শহীদ কাদরী গভীর আপ্লুত হয়ে বলেন, কবিতা লিখে এমন বিরল সম্মান পাব, তা কোনোদিন ভাবিনি। তিনি প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি চর্চায় গভীর অনুরাগী হওয়ার আহ্বান জানান।১৭ জুলাই সন্ধ্যার পর জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। পদক প্রাপ্তরা হচ্ছেন- আবদুল মালেক বীরবিক্রম, ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সিতারা রহমান বীরপ্রতীক, আবু তাহের বীরপ্রতীক, লেফটেন্যান্ট (অব.) মমতাজ হাসান বীরপ্রতীক এবং ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সৈয়দ মাইনুদ্দিন আহমেদ বীরপ্রতীক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জে. (অব.) সি আর দত্ত বীরউত্তম। এদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা রথীন্দ্রনাথ রায়, উমা খান, কাদেরী কিবরিয়া, মনজুর আহমেদ ও শহীদ হাসানকেও বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।১৮ জুলাই রোববার পাঁচটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেমিনারটি ছিল-'অভিবাসী কমিউনিটির কল্যাণে সামাজিক সাংস্কৃতিক আঞ্চলিক সংগঠনের ভূমিকা'। প্রধান আলোচক ছিলেন ইউএস সেন্সর ব্যুরোর ড. খন্দকার মনসুর, মডারেটর ছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. জাফরুল হাসান, এতে অংশ নেন ড. কুসুমিতা প্যাটারসন, প্রাবন্ধিক লিয়াকত হুসেন আবু প্রমুখ। আঞ্চলিক সামাজিক সংগঠনগুলোকে আরো গতিশীল করে কমিউনিটির উন্নয়ন সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।'বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা' শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন এমআইথ্রি'র ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. জন এস বারটনি। মডারেটর ছিলেন আবু হানিফ। অংশ নেন ড. শাহজাহান মাহমুদ, ড. মহসিন পাটওয়ারী, অধ্যাপক স্বপন গায়েন, ড. নাজিম উদ্দিন, ড. মোহাম্মদ ফারুক প্রমুখ।'প্রবাসে দাম্পত্য কলহ এবং তা প্রতিকারের উপায়' শিরোনামের সেমিনারটি ছিল বেশ উপভোগ্য। মূল প্রবন্ধ পড়েন হিউম্যান রাইটস নেত্রী নাহার আলম। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাটর্নি অশোক কুমার কর্মকার। এতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপিকা আসমা আব্বাসী, ড. মনসুর খান, প্রফেসর গোলাম মাতবর, অ্যাটর্নি সমতলী হক প্রমুখ। নিজস্ব কৃষ্টি এবং সভ্যতা সমুন্নত রেখে পারিবারিক সামাজিক জীবন পরিচালনার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আলোচকরা।'পরিবেশ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত' শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পড়েন ড. নজরুল ইসলাম। মডারেটরের দায়িত্বে ছিলেন, বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. সুফিয়ান খন্দকার। এতে বক্তব্য রাখেন ল্যান্স সিমেন্স, প্রফেসর মিয়া আদিল খান, ড. খালেকুজ্জামান, অ্যাটর্নি তওফিক চৌধুরী, ড. সারওয়ার চৌধুরী প্রমুখ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিরোধে একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর ব্যাপক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আলোচকরা।সম্মেলনের শেষ সেমিনারটি ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতি শিল্পবিষয়ক। এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। জনপ্রিয় এই ঔপন্যাসিকের উপস্থিতিতে সেমিনারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। 'বহির্বিশ্বের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্পচর্চার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে কি?' বিষয়ে এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন, ফেরদৌস সাজেদীন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় অভিবাসে বাংলা চর্চার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশই বাংলাভাষার বাংলা সংস্কৃতির মূল ভরসা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এ সংস্কৃতি বিশ্ব থেকে মুছে যাবে না।সম্মেলনের শেষ দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। এরা হলেন, ফুটবলার প্রাণ গোবিন্দ কুন্ডু, ক্রিকেটার ইউসুফ বাবু, ফুটবলার মোহাম্মদ আবদুল গাফফার, ভলিবল খেলোয়াড় দেওয়ান মোস্তাক রাজা, জাতীয় অ্যাথলেট আরিফুল হক, সাঁতারু সরওয়ার ইমাম লিটু, অলিম্পিয়ান শাহজাহান মোবিন, অলিম্পিয়ান শাহান উদ্দিন, সাঁতারু কারার মিজান, মহিউদ্দিন দেওয়ান প্রমুখ।দেশ ও প্রবাসে বিশেষ অবদানের জন্য কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনকেও পদক প্রদান করা হয় এ সম্মেলনে।দুই দিনের সম্মেলনে বাংলাদেশের কৃতী চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর তার আঁকা চিত্রের একক প্রদর্শনী করেন।এবারের সম্মেলনের আহ্বায়ক ছিলেন সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক ও লেখক সাঈদ-উর-রব। তার নেতৃত্বে একটি সুদক্ষ পরিচালনা টিম সম্মেলনটি অত্যন্ত সুচারুভাবেই সম্পন্ন করেছে।দুই দিনের সম্মেলনের বিভিন্ন পর্বে বিশিষ্ট অতিথিদের মাঝে আরো ছিলেন দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, শিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার সাবেক এমপি মাহবুবুর রব সাদী, মার্কিন কংগ্রেসম্যান অ্যান্থনি উইনার, কংগ্রেসওম্যান ইভেট ডি. ক্লার্ক, নিউইয়র্ক সিটির কন্ট্রোলার জন ল্যু, নিউইয়র্ক টাইমসের মেট্রো এডিটর কার্ক সেম্পল প্রমুখ। সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক পর্বে দুই দিনে অংশ নেন, সুবির নন্দী, কনক চাঁপা, নাফিজা, নওশীন, বালাম, ফকির শাহাবুদ্দিন, মাহমুদুজ্জামান বাবু, অভিনেতা হাসান মাসুদ, কলকাতার শিল্পী গায়ত্রী শর্মা প্রমুখ।এবারের এবিসি সম্মেলনের মূলমন্ত্র ছিল 'সবার উপরে দেশের ঠাঁই, হিংসা নয় মৈত্রী চাই'। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত হয়েছিল 'ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা (ফোবানা)'। এ ফোবানা সম্মেলন এখন বহুধাবিভক্ত। অনিয়ম আর ব্যর্থতার কারণে ফোবানা সম্মেলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন প্রবাসী সমাজ। সে সময়ে এবিসি সম্মেলন দেশ ও প্রবাসের সেতুবন্ধনের আলোকবর্তিকা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে সার্বজনীনভাবে, সব অভিবাসী উত্তর আমেরিকাবাসীর কাছে। নিউইয়র্ক , ২১ জুলাই ২০১০----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২৩ জুলাই ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবিতে - বক্তব্য রাখছেন এবিসি সম্মেলনের কনভেনর সাঈদ উর রব
false
rg
।। স্বপ্নে দেখা ঢাকার লেখক সম্মেলন।। স্বপ্নে দেখলাম, ঢাকার অভিজাত চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি লেখক সম্মেলন বসেছে। দেশের নামি দামি মাল্টি কর্পোরেট অর্গানাইজেশানগুলো সেই লেখক সম্মেলনের স্পন্সর। তাদের বাছাই করা কয়েকজন কথা সাহিত্যিককে তিন দিনের জন্য ওখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রত্যেকে একটা করে উপন্যাস লিখবেন। সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল- যাঁর উপন্যাস সস্পন্সরদের নির্বাচিত প‌্যানেল বিচারকদের যাচাই বাছাইয়ে শ্রেষ্ঠ হবে তাঁকে বাংলাদেশী নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে। তারা বলছেন, লেখকদের জন্য সময় মাত্র তিন দিন। আর পুরস্কারের মূল্যমান দশকোটি টাকা। খাবার দাবার, ঘুমানোর ব্যবস্থা, লাইব্রেরি, ডিকশোনারি, বিনোদন সকল বিষয়ের যথেষ্ট সাপোর্টও রয়েছে সেখানে। নাচ, গান, বিনোদন, সুইমিং, এ ধরনের সুযোগ সুবিধাও রয়েছে। কিন্তু আয়োজকরা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যে, ওই তিন দিন অংশগ্রহনকারী কোনো লেখক তাদের উপন্যাস লেখা কার্যক্রম শেষ না করে বাসায় যেতে পারবেন না। উপন্যাস তাঁকে তিন দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। তো চলুন আমরা সেই লেখক সম্মেলনে লেখকদের কোনো ধরনের ডিসটার্ব না করে কে কি লিখছেন একটু পড়ে আসি। গোটা বাংলাদেশের চোখ তখন ওই লেখক সম্মেলনের দিকে। কে পাচ্ছেন বাংলাদেশী নোবেল!কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ শুরু করেছেন- একটা আজিব টাইপের নয়া হিমু ক্যারেক্টার দিয়ে। দিনের বেলায় এই হিমু সম্মেলন কেন্দ্রের ছাদে উঠে বসে থাকে। রাতের বেলায় সে হলে ঢুকে কাপের্টের নিচে তার নিখোঁজ প্রেমিকাকে দুরবীন দিয়ে খোঁজে। হিমুর ধারণা, তার প্রেমিকা হয়তো হাওয়া খেতে পাশের চন্দ্রিমা উদ্দ্যানে একা একা ঘুর ঘুর করছে। কিন্তু তার নাগাল সে কিছুতেই পাচ্ছে না। প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল শুরু করেছেন- সূর্যের আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি নিয়ে আদম নামের এক বিজ্ঞানীর গবেষণা দিয়ে। আকাশের অদৃশ্য সেই ফুটোটি বন্ধ করার উপায় বের করবেন এই আদম। আর এজন্য তার সঙ্গে আছে তেরো জন লিলিপুট বিজ্ঞানী। যাদের বয়স তেরো থেকে ঊনিশ। যারা আন্ডারগ্রাউন্ডে দিনরাত আদমের নের্তৃতে গবেষণায় মত্ত। পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক করতে গ্রিন হাইজ এফেক্ট তারা যে করেই হোক ঠেকাবেন। নইলে পৃথিবীকে নাকি আর রক্ষা করা যাচ্ছে না। সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। পরিবেশ প্রকৃতি দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আদম মনে করেন, তাদের গবেষণা ব্যর্থ হলে পৃথিবী নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যাবে।সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক শুরু করেছেন, এক অদ্ভুত মানুষ টাকু সোলায়মানের গল্প। এই টাকু সোলায়মান শুধু হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। জন্মের সময় টাকু সোলায়মান দেখতে হয়েছিল একশো কুঁড়ি বছরের বৃদ্ধের মতো। মাথায় তার বিশাল টাক। মুখ ভরতি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। যতোই তার বয়স বাড়ে ততোই এই টাকু সোলায়মান বৃদ্ধাবস্থা থেকে ইয়ং হতে থাকে। সবার বয়স বাড়লে যেমন বুড়ো হয় এই টাকু সোলায়মান তার ঠিক উল্টো। তার লাইভ সাইকেল উল্টো। বৃদ্ধ থেকে ধীরে ধীরে সে একদিন শিশু হয়ে যাবে। এবং একেবারে ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো হয়ে যাবার পর এই টাকু সোলায়মানের হয়তো মৃত্যু হবে। তার একমাত্র মেয়ের মেয়ে মানে তার নাতনী তখন তাকে কোলে করে ঘুরবে। কারণ, টাকু সোলায়মানের বউ ততোদিনে একশো বছরের বৃদ্ধা। কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন শুরু করলেন, এক মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নারীকে দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই নারীর বিয়ের রাতেই তার স্বামী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ঘর ছাড়েন। আজো তার স্বামী বেঁচে আছেন কীনা সখিনা বিবি তা জানেন না। সারা বাংলাদেশের বদ্যভূমি গুলো সে এখনো চষে বেড়ায়। সখিনা বিবির ধারনা, তার স্বামী যদি যুদ্ধে মরেও যায় বদ্যভূমিতে সে তাঁর লাশ খুঁজে পাবেন।জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন শুরু করলেন ভারত বাংলাদেশ বর্ডারের নো ম্যানস ল্যান্ডে বিএসএফের গুলিতে নিহত এক কিশোরীর গল্প দিয়ে। ছিটমহলের বাসিন্দা এই কিশোরী'র নাম হেনা। কিশোরী হেনা গুলিতে নিহত হবার আগে কয়েকজন দুষ্টু কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছিল। অমাবস্যার রাতে সে ছিটমহলের বাড়ি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে গিয়েই বিএসএফের গুলির মুখে পরে। তারপর যত্তোসব বিপত্তি। কথা সাহিত্যিক নাসরিন জাহান শুরু করেছেন, অদ্ভুত এক কালো বিলাই দিয়ে। এই কালো বিলাই দিনের বেলায় সম্মেলন কেন্দ্রে লেখকদের টেবিলের নিচে আরামে ঘুমিয়ে থাকে। রাতের বেলায় এই কালো বিলাই ভৌতিক সব কর্মকাণ্ড শুরু করে। কালো বিলাইকে আটক করার জন্য সিকিউরিটির লোকজনদের সাথে বিশাল এক ঝামেলা হয়। সেখানে আমাদের এলিট ফোর্স র‌্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিড়াল আটকানোর। ঘটনা কোন দিকে যাবে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন শুরু করেছেন এক গোয়েন্দার গল্প দিয়ে। এই গোয়েন্দার নাম মাসুদ রানা। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় যে বিডিআর বিদ্রোহ হয়েছিল তার নেপথ্যে কে বা কারা জড়িত ছিল তাদের খুঁজে বের করতেই মাসুদ রানা অভিযান শুরু করেছেন। বর্তমানে সে বিভিন্ন বিডিআর ক্যাম্পে ইমাম সেজে তার গোয়েন্দা কাজকর্ম করছেন। সম্মেলন চলাকালীন সময়ে মাসুদ রানা কুড়িগ্রামের রৌমারী ক্যাম্পে যাবার জন্য পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ঘাটে অপেক্ষা করছেন। জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক শুরু করেছেন, এক বোবা মেয়ের প্রেমের গল্প দিয়ে। বোবা মেয়েটি ইন্টারনেটে চ্যাট করতে করতে এক সময় শহরের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী, পুলিশের তালিকায় যে কীনা এক নম্বর দাগী আসামী, তাকে ভালোবাসতে থাকে। যেদিন বোবা মেয়েটি তার প্রেমিকের সাথে দেখা করবে, সেদিনই বাংলাদেশ পুলিশ ওই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। মেয়েটি যে বোবা তা সে ওইদিন-ই প্রথম বুঝতে পারে। জেলখানায় বসে সে মনে মনে শপথ করে, ছাড়া পেলে সে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছেড়ে দিয়ে বোবা মেয়েটিকে বিয়ে করে বিদেশে কোথায় চলে যাবে।ঘুরতে ঘুরতে আমরা যখন আমাদের প্রিয় কথা সাহিত্যিক জাকির তালুকদারের সামনে আসি তখন দেখি, তিনি শুরু করেছেন চলনবিলের নিচে এক বিশাল রত্ন ভাণ্ডারের খোঁজে একদল খনিশ্রমিক দিনরাত খনন করে যাচ্ছেন, এমন এক জটিল আজগুবি গল্প দিয়ে। সেখানে উপস্থিত বাংলাদেশী ভূ-তাত্ত্বিকবিদগণ, খনি গবেষকগণ, প্রকৌশলী আর খনিশ্রমিকদের ধারনা- পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পারমানবিক বোমা তৈরির উপাদান ইউরেনিয়াম আর সাদা গ্রাফাইটে চলনবিলের তলদেশ নাকি পুরোপুরি ভরপুর। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশী যে সকল ভূতাত্ত্বিক এই কাজে জড়িত তাঁরা সবাই এটা ঠিকমতো বুঝতে পারছেন না। রাজনৈতিক দলগুলো আবার এটা নিয়ে মহা ক্যাচাল শুরু করেছে। কেউ বলছেন, রাশিয়া বা ভারত থেকে খনি বিশেষজ্ঞ আনা হোক। কেউ বলছেন, আমেরিকা বা পাকিস্তান থেকে আনা হোক। একদল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রীরা আবার দেশী বিশেষজ্ঞ দিয়ে কাজটা করানোর জন্য মহা আন্দোলনে যাবার হুমকি দিচ্ছেন। খনি থেকে ইউরেনিয়াম আর সাদা গ্রাফাইট তোলার কাজ আপাতত বন্ধ। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কোনদিকে যায় সেই অপেক্ষায় সবাই। তার মধ্যে গুজব শোনা যাচ্ছে, কে বা কারা যেনো রাতের অন্ধকারে চলনবিলের নানা পয়েন্টে খনন কাজ করছে। তারা কখন কি করছে, কি নিয়ে যাচ্ছে এই নিয়ে জনমনে তখন নানা প্রশ্ন। পত্র পত্রিকা টেলিভিশনের একটা বিশাল অংশ চলনবিলের অজ্ঞাত ওই গুপ্ত সম্পদের খবরাখবর নিয়ে ইদানিং ভারী ব্যস্ত। আমরা যারা লেখক সম্মেলনে ঘুরে ঘুরে লেখকদের চলমান প্রতিযোগিতার লেখার অংশ বিশেষ পড়ছিলাম, হঠাৎ নাসরিন জাহানের কালো বিলাইয়ের দেখা মিলতেই আমরা সবাই ভয়ে দ্রুত সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে চলে আসলাম। চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে আমরা 'কে জিতবে প্রথম বাংলাদেশী নোবেল' এই নিয়ে আড্ডায় ব্যস্ত। হঠাৎ কে যেনো চিৎকার করে বললো, ওই যে হিমু ...চন্দ্রিমা উদ্যানের দিকে যাচ্ছে। সেই হৈ হল্লায় হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল।
false
fe
সমন্বয় চাই, চাই ক্ষমতার সদ্ব্যবহার সমন্বয় চাই, চাই ক্ষমতার সদ্ব্যবহার ফকির ইলিয়াস ----------------------------------------------------------- বাংলাদেশে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বেশ কিছু সহিংসতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তিন শতাধিক আসন পেয়েছে। একটি বিষয় ভাবার মতো। আর তা হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে জামায়াতের ভিত্তি। বেশ কিছু আসন পেয়েছে এই দলটি। যদিও বলা হয়ে থাকে উপজেলা চেয়ারম্যান ব্যক্তিইমেজেই নির্বাচিত হন, তবুও বলতে হবে, জামায়াতের এভাবে আসন পাওয়ার কথা ছিল না। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র এক মাসের কম সময়ের মধ্যে হলো এই উপজেলা নির্বাচন। যার ফলে মানুষের মাঝে আগ্রহ ছিল কম। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ ভোটার ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে। কেন এমন হলো তাও ভাবার বিষয়। কারণ স্খানীয় প্রশাসনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে গণমানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রয়োজন। প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টির। নির্বাচিত সরকারের অধীনে এটাই ছিল একটি বড় নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন খুব বেশি সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন বলে মনে হয়নি। বেশ কিছু সাংসদ, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি, ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি আলোচিত হয়েছে দেশে-বিদেশে। উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরদিনই ‘ভয়েস অফ আমেরিকা’ থেকে আমাকে ফোন করেছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক দিলারা হাশেম। তিনি সংক্ষিপ্ত একটি সাক্ষাৎকার নিলেন আমার। সেই সাক্ষাৎকারেও আমি স্পষ্ট বলেছি, মানুষ বড় আশা করে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। শেখ হাসিনার উচিত হবে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তঋণের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সৎ ও মহৎভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। বলেছি, মৎস্য ও পশুসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে­ এর সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্খা নেয়া হোক। এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। তা আমরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেছি। ২৬ জানুয়ারি নিউইয়র্ক সময় সকাল আটটার চ্যানেল আই সংবাদে দেখলাম, সে অভিযোগ অস্বীকার করছেন মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস। মন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, প্রভাব খাটাতে চাইলে তিনি ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে বসেই খাটাতে পারেন। এজন্য এলাকায় যাওয়ার দরকার কি? মন্ত্রীর কথায় যুক্তি আছে। তবু এর প্রেক্ষাপটে প্রশ্নও আছে অনেক। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য তো আরও অনেকে আছেন। এর মধ্য থেকে বিশেষভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে কেন? তার স্বশরীরে সেখানে উপস্খিত থাকাবে কারণই-বা কি? এই বিষয়টি আরও ব্যাপক তদন্তের দাবি রাখে। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, তিনি কোন পেশিশক্তিকে প্রশ্রয় দেবেন না। এই প্রত্যয়ের বাস্তব প্রতিফলন প্রয়োজন। কেবিনেটে যেই থাকুন না কেন, সরকারি বিধিনিষেধ তাকে মানতেই হবে। প্রটৌকলের ঊর্ধ্বে তো কেউ নেই। এ ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীকে। আমরা দেখেছি, একটি সরকারকে অস্খিতিশীল করে তুলতে ঘরে-বাইরে দুটি চক্র তৎপর থাকে। বাইরের চক্রটি সম্পর্কে বেশ কিছু আগাম গোয়েন্দা রিপোর্ট আঁচ করতে পারলেও ঘরের শত্রদের চেনা বড় দায়। আর এরাই ক্ষমতাসীনদের ক্ষতি করে সবচেয়ে বেশি। দেশে আর ক’দিন পরই বিশ্ব এজতেমা শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা নিচ্ছে সরকার। একুশে ফেব্রুয়ারিতে সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনার কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী। সেজন্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছে। কিন্তু কেউ যদি সরকারের ভেতরে থেকে কলকাঠি নাড়ে, ষড়যন্ত্র করে তাদের রুখবে কে? বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে সর্বোতভাবে। দুই. এদিকে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। তারা রাষ্ট্রপতির ভাষণ বয়কট করে ওয়ার্কআউট করেছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধান লঘন করেছেন। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন দেননি। বিষয়টি আসলেই হাস্যকর। কারণ এই রাষ্ট্রপতি বিএনপিরই মনোনীত। তাদের ঘরানার লোক। তারাই তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল। সেই স্বপ্নে গুড়েবালি দিয়ে আসে ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ পরিবর্তন। দেশকে দু:শাসনের হাত থেকে বাঁচাতে অপরিহার্য ছিল এই ওয়ান-ইলেভেন। আজ সেই রাষ্ট্রপতির ‘ইমপিচমেন্ট’ চাচ্ছে বিএনপি! এর চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে। এই ঘটনার মাধ্যমে বিএনপি প্রমাণ করল, তারা ষড়যন্ত্র করেই ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক প্রধানের পদে। তিনি তাদের মতলব হাসিল করতে পারেননি বলেই তাদের এত ক্ষোভ! স্পীকার আবদুল হামিদ ও ডেপুটি স্পীপকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী নির্বাচিত হওয়ার পর সংবিধান সংশোধন করে নতুন ডেপুটি স্পীকারের আরেকটি পদ সৃষ্টি করতে চাইছে সরকার। বিএনপি বলেছে তারা এই ‘অনুকম্পা’ গ্রহণ করবে না। সঙ্গত কারণেই সরকারি দল আরেকটি ডেপুটি স্পীকারের পদ সৃষ্টি করতে চাইছে। কারণ স্পীকারের অবর্তমানে ডেপুটি স্পীকার দায়িত্ব পাবেন। এক্ষেত্রে সরকারি দল, বিরোধী দলের হাতে স্পীকারের একক ক্ষমতা দিতে চায় না। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, শেখ হাসিনা হয়তো নিজেও জানতেন না তারা ব্রুট মেজরিটি পাবেন। এই ব্রুট মেজরিটিই অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। সংবিধান সংশোধনের একক শক্তি চলে এসেছে আওয়ামী লীগের হাতে। বাংলাদেশের জনগণ হয়তোবা তেমনটিই চেয়েছেন। তারা চেয়েছেন সংবিধান সংশোধন করে ঘাতক-দালালদের বিচার সুনিশ্চিত হোক। তারা চেয়েছেন সংবিধান সংশোধন করে জাতিরজনক হত্যার বিচার সুপ্রতিষ্ঠিত করা হোক। শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা হোক। সব ধর্মের অধিকার সমানভাবে প্রতিষ্ঠা করা হোক। রাষ্ট্রের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়ে এই রায় দিয়েছেন। তাই বর্তমান সরকারের উচিত হবে ভেবেচিন্তে মানুষের প্রত্যাশাকে মূল্যায়ন করা। স্খানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয়ে দু’জন করে মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী যারা এই মন্ত্রণালয়ে আছেন তারা প্রায় সবাই নতুন। নতুনদের কর্মস্পৃহা থাকে অদম্য। তারা তা কাজে লাগিয়ে প্রজন্মের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজটিকে এগিয়ে নেবেন বলেই প্রত্যাশা করা যায়। সরকার পরিচালনায় প্রধান প্রয়োজনটি হচ্ছে সমন্বয় সাধনের। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মন্ত্রণালয় একে অন্যের সম্পূরক। কর্মের পথ সব সময়ই পঙ্কিল। এরপর রয়েছে বিরোধীদলের নানা ধরনের উৎপীড়নের সম্ভাবনা। বিরোধীদল বলেছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশটি অধ্যাদেশের সরাসরি বিরোধিতা করবে। তারা তা করতেই পারে। কিন্তু অধ্যাদেশ পাশের আগে সরকারি দলকে ভাবতে হবে, প্রণীত আইনটি বৃহত্তর মানুষের কতটা কাজে আসবে। কিংবা আদৌও কাজে আসবে কি না। রাষ্ট্রক্ষমতার সদ্ব্যবহার করাটা সবসময়ই জরুরি। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে তা অতি জরুরি। তাই এর ব্যত্যয় ঘটালে, প্রকারান্তরে বিরোধীদলকেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হবে। নিউইয়র্ক ২৭ জানুয়ারি ২০০৯। --------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা।৩০ জানুয়ারি ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:১৬
false
mk
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র___ ১০ এপ্রিল গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ অল ইন্ডিয়া রেডিওর শিলিগুড়ি কেন্দ্রকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে সেখান থেকে ভাষণ প্রদান করেন। এরপর আরও কিছুদিন ওই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের নেতাদের বক্তব্য প্রচার করা হয়। ২৫ মার্চের পরবর্তী কয়েকটি দিনের ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের নতুন পর্যায়ে প্রচারমাধ্যম হিসেবে বেতার কেন্দ্রের গুরুত্ব সম্যক উপলব্ধি করেছিলেন। জাতীয় নেতাদের পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং এমনকি বেতারের কর্মীদের চিন্তাধারা ছিল অভিন্ন। সে সময়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এবং ভারতে টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা ছিল সীমিত। একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কি ক্লানডেসটিন বা গোপন বেতার কেন্দ্র ছিল? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে এর প্রতিষ্ঠা হয়। কোত্থেকে এর প্রচার হতো, সেটা অনেকেরই জানা ছিল না। কিন্তু লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা এবং হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর কোটি কোটি নারী-পুরুষ প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য_ ইথারে যখন ভেসে আসবে 'জয় বাংলা, বাংলার জয়' সূচনা সঙ্গীত।গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। স্পেনে ফ্যাসিস্টপন্থি জেনারেল ফ্রাঙ্কো ক্ষমতা দখলের পর কমিউনিস্ট পার্টি তৎকালীন সোভিয়েত ভূখণ্ডে ১৯৪১ সালে স্থাপিত একটি গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে ফ্রাঙ্কোকে উৎখাতের আহ্বান জানাতে নানা অনুষ্ঠান প্রচার করত। স্পেনের জনগণের জন্য তা ছিল অনুপ্রেরণা। ষাটের দশকে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরস্পরের বিরুদ্ধে গোপন বেতারে প্রচার চালায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নও স্নায়ুযুদ্ধের সময় গোপন বেতার ব্যবহার করে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করত। উত্তর আমেরিকায় কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মদদে বেতারে গোপন অনুষ্ঠান প্রচার করেছে নির্বাসিত কিউবানরা।১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রকে ঠিক এ ধারার গোপন বেতার কেন্দ্র বলা যাবে না। এ বেতার কেন্দ্র প্রথমে চালু হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিশন কেন্দ্র হতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের মাধ্যমে। এটি পাঠ করেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান। ২৫ মার্চ পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ঢাকায় গণহত্যা অভিযান শুরুর পর তৎকালীন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মী (যেমন বেলাল মোহাম্মদ ও আবুল কাসেম সন্দ্বীপ) সিদ্ধান্ত নেন যে, স্বাধীনতার পক্ষে বাঙালিদের সচেতন করতে তারা এ বেতার কেন্দ্র কাজে লাগাবেন। তারা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের নাম দেন 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র'। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেন। যেসব বাঙালি সৈনিক এবং ইপিআর বাহিনী-পুলিশ বাহিনীর সদস্য স্বাধীনতার আহ্বানে সাড়া দেন_ এ কেন্দ্র তাদের জন্যও প্রেরণা হয়ে ওঠে। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় এ কেন্দ্র থেকেই সে সময়ের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। পরদিন বেতার কেন্দ্র থেকে 'বিপ্লবী' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। এই দু'দিনের অনুষ্ঠান ঢাকাতেও অনেকে শুনতে পান। ৩০ মার্চ বেতার কেন্দ্রে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী হামলা চালালে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পরের দিন বেতারের কয়েকজন দুঃসাহসী কর্মী সেখান থেকে একটি সম্প্রচার যন্ত্র উদ্ধার করেন এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে নিয়ে যান।১০ এপ্রিল গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ অল ইন্ডিয়া রেডিওর শিলিগুড়ি কেন্দ্রকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে সেখান থেকে ভাষণ প্রদান করেন। এরপর আরও কিছুদিন ওই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের নেতাদের বক্তব্য প্রচার করা হয়। ২৫ মার্চের পরবর্তী কয়েকটি দিনের ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের নতুন পর্যায়ে প্রচারমাধ্যম হিসেবে বেতার কেন্দ্রের গুরুত্ব সম্যক উপলব্ধি করেছিলেন। জাতীয় নেতাদের পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং এমনকি বেতারের কর্মীদের চিন্তাধারা ছিল অভিন্ন। সে সময়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এবং ভারতে টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা ছিল সীমিত। বাংলাদেশ সরকার কিংবা অন্য কেউ এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবেনি। সে প্রযুক্তিও আয়ত্তে ছিল না। কিন্তু বেতার কেন্দ্র ছিল সব বিবেচনাতেই আয়ত্তের মধ্যে এবং বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ তা দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগায়। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আরও সংগঠিতভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কাজে ভারত সরকারের দেওয়া শক্তিশালী ট্রান্সমিটার খুব সহায়ক হয়। এ সময়ে বেতার কেন্দ্রের কাজে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানদের পাশাপাশি একদল শিল্পী-কলাকুশলীও মুজিবনগরে সমবেত হয়েছেন। সরকার নতুন পর্যায়ে বেতার কেন্দ্র চালুর দিন নির্ধারণ করেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন ১১ জ্যৈষ্ঠ (সে বছর ২৫ মে)। কলিকাতার ৫৭/৮নং সার্কুলার রোডের একটি বাড়িতে স্থাপিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কার্যালয়।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যে কোনো মানদণ্ডেই ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ বেতার কেন্দ্র। অথচ এর প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সময় হাতে মিলেছিল মাত্র এক মাস সাত দিন। স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত ও নির্মূল করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করা, বাংলাদেশের আপামর জনগণের মধ্যে সাহস ও ভরসার মনোভাব সৃষ্টি এবং শত্রুর মধ্যে শঙ্কা ও ভীতি জাগিয়ে তোলার মহৎ লক্ষ্য নিয়ে এ কেন্দ্র কাজ করে এবং তাতে পরিপূর্ণ সফলতা মেলে। এ কেন্দ্রের বার্তা বিভাগের প্রধান কামাল লোহানী বলেছেন, 'আমাদের কাছে এ বেতার কেন্দ্র ছিল মনস্তাত্তি্বক যুদ্ধক্ষেত্র, যার মাধ্যমে আমরা জনগণের সাহস বাড়াতে সহায়তা করি।' সঙ্গত কারণেই অধিকৃত বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শ্রবণ ছিল গুরুতর অপরাধ। এ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শোনার 'অপরাধে' রাজাকার ও পাকসেনারা অনেকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আর 'সৌভাগ্যবান হলে' চরম হয়রানি-লাঞ্ছনা শেষে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন কেউ কেউ। শত্রুপক্ষ সঠিকভাবেই বুঝতে পেরেছিল এ কেন্দ্রের গুরুত্ব।এ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রচারিত হতো যেসব অনুষ্ঠান সেগুলো হচ্ছে_ কোরআনের বাণী, সংবাদ, চরমপত্র, রণাঙ্গনের খবরাখবর, কথিকা, নাটক, মুক্তিযুদ্ধের গান ও কথিকা। এ কেন্দ্র থেকে প্রচারিত অনেক গান বাঙালিদের মুখে মুখে ফেরে। সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল খ্যাতিমান সাংবাদিক এমআর আখতার মুকুলের চরমপত্র। তিনি পুরনো ঢাকার জনপ্রিয় ভাষায় নিজের লেখা পাঠ করতেন অনবদ্য ঢঙে। প্রকৃত অর্থেই সে সময়ে চরমপত্র হয়ে ওঠে উদ্দীপনার অনন্য হাতিয়ার। এ কেন্দ্র থেকে যারা খবর পাঠ করতেন, স্বাধীন দেশে তাদের কেউ কেউ এ পেশায় হয়ে ওঠেন বিশ্বমানের খবর পাঠক। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি এবং উর্দুতে খবর পাঠ করা হতো। এ ধরনের সিদ্ধান্তের পেছনে ছিল দূরদৃষ্টি। ইংরেজি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুল প্রচারিত ভাষা। আর উর্দু বেছে নেওয়া হয় অধিকৃত বাংলাদেশে উর্দু ভাষাভাষীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পেঁৗছে দেওয়ার জন্য। সে সময়ে ঢাকা রেডিও স্টেশন চালু ছিল। শহরগুলোতে দেখা যেত ঢাকা টেলিভিশনের অনুষ্ঠান। কিন্তু রাজাকার-আলবদর-শান্তি কমিটির কিছু সমর্থক ছাড়া সব বাঙালির কাছে আকর্ষণ ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের। একইভাবে জনপ্রিয় ছিল আকাশবাণী কলিকাতার অনুষ্ঠান। বিবিসির বাংলা সার্ভিসও ছিল পরম কাঙ্ক্ষিত।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-কলাকুশলীদের মধ্যে প্রবীণ ও নবীন বয়সী নারী-পুরুষ আর শিশুরা ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অধিকৃত বধ্যভূমির জনপদ অতিক্রম করে তারা কলিকাতায় হাজির হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অবদান রাখার জন্য। এ বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কর্মী আলী যাকের বলেন, দেশপ্রেম থাকলে সবকিছুই ঠিকঠাক চলে। এ বেতার কেন্দ্রে যারা কাজ করেছেন তাদের প্রত্যেকেই সেখানে হাজির হয়েছেন একটি মহৎ লক্ষ্য নিয়ে_ স্বাধীনতা। বলতে পারি যে, দক্ষতা ও যোগ্যতার সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রকাশ ঘটানোর জন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। ব্যক্তিগত স্বার্থ-সুবিধা এ সময়ে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল।বেতার কেন্দ্রে কাজ করা অনেকের পরিবার অধিকৃত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছিল এবং এ জন্য কাউকে কাউকে ছদ্মনাম ব্যবহার করতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়েই নিজের নাম ব্যবহার করেছেন।বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য একাত্তরে ১১টি সামরিক সেক্টরে ভাগ করা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে অনেকে যথার্থভাবেই বলছেন যে, এ প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃতপক্ষে কাজ করেছে ১২তম সেক্টর হিসেবে। স্বাধীনতার জন্য এ কেন্দ্রের অবদানের তুলনা মেলা ভার।অজয় দাশগুপ্ত :সাংবাদিকajoydg@gmail.com
false
mk
বঙ্গবন্ধুর ডাক অগি্নঝরা মার্চের আরেকটি উত্তাল দিন ছিল ৬ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এদিনও হরতাল হওয়ায় গভীর উৎকণ্ঠায় পড়ে পাকিস্তান সরকার। প্রচ- বিক্ষোভ হয় ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। বন্দি যুবকদের সঙ্গে কারারক্ষীদের সংঘর্ষে ৭ জন নিহতসহ অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। যদিও কারা অভ্যন্তরে সংগঠিত এ সংঘর্ষের সুযোগে মোট ৩৪১ বন্দি বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়। যাদের সবাই অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন।তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে এদিন সবার অপেক্ষাই ছিল মহান নেতার নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে। অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদিন পর কী আদেশ দেবেন_ সেটাতেই চোখ ছিল মুক্তিপ্রিয় সাড়ে সাত কোটি বাঙালির।একাত্তরে পহেলা মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ৭ মার্চ ঘোষণা করা হবে। এজন্যই যেন গোটা জাতির তর সইছিল না। তবে ৬ মার্চ পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। তিনি বলেন, যাই ঘটুক না কেন যতদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আমার হুকুমে রয়েছে এবং আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি ততদিন পর্যন্ত আমি পূর্ণাঙ্গ ও নিরঙ্কুশভাবে পাকিস্তানের সংহতির নিশ্চয়তা বিধান করব। এ সময় তিনি ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের অব্যবহিত পরেই বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটির এক যুক্ত জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু বলেন, শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে তিনি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।একদিকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ অন্যদিকে পাক প্রেসিডেন্টের হঠকারী ভাষণের পর দাবি আদায়ের আন্দোলন যেন নতুন মাত্রা পায়। ঘর থেকে রাজপথে নেমে আসে বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী বাঙালি। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস কর্মচারীদের বেতন দেয়ার জন্য খোলা থাকে। কুখ্যাত পাকিস্তানি বর্বর অসভ্য, অশিক্ষিত শাসক ও শাসনের বিরুদ্ধে কারফিউ ভঙ্গ করে সভা, মিছিল এবং মিছিলে গুলিতে হত্যা_ সব মিলিয়ে এক বিস্ফোরন্মেুাখ উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় দেশজুড়ে।এদিকে ৬ মার্চ লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ-শাসনের বৈধ অধিকার রয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তরের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে হবে। প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে পরিস্থিতি অবনতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর দোষারোপ করায় নূর খান দুঃখ প্রকাশ করেন।অন্যদিকে পেশোয়ারে পাকিস্থান মুসলিম লীগ প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম খান ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পিডিপি প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ দৌলতানা ইয়াহিয়া খানের ঘোষণাকে স্বাগত জানান। সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
false
fe
আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এঁর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী তাঁর কাছে আমার ঋণ অনেক। যে কজন মানুষের সান্নিধ্য আমাকে শাণিত করেছে তিনি তাদের অন্যতম। একটি মৌলবাদমুক্ত , রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল তাঁর। মনে ছিল অসীম প্রত্যয়। বলেছিলেন এই প্রজন্ম একদিন ওসব হায়েনাদের বিচার করবেই। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা জিতে এসেছে, এই প্রজন্মের প্রায় এককোটি ভোটার তাদের পক্ষে ,সেই রায়টিই দিয়েছে। তাঁর স্বপ্নটি সেদিনই পূরণ হবে , যেদিন এই বাংলায় আলবদর-রাজাকার- আলশামস দের বিচার সম্পন্ন হবে । তাঁর আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক । শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ================== শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ মে। মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে। তাঁর পারিবারিক নাম জাহানারা বেগম ওরফে জুড়ু। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। পরে জুড়ুকে জাহান নামে ডাকা হতো। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। বাবার কাছেই তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু। শিক্ষা জীবনে তাঁর বাবা সব ধরনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। শিশুকাল থেকে তিনি ছিলেন খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। দশ থেকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত জাহানারার সময় কেটেছে কুড়িগ্রামে। এ সময় জাহানারা ফ্রক পরে রীতিমতো সাইকেল ও নানা খেলাধুলায় মেতে থাকতেন। কিন্তু তাঁর বয়স বারো পেরোতেই সাইকেল চালানো বন্ধ হয়ে গেলো। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে প্রথা অনুসারে নিষিদ্ধ হয়ে গেলো বাড়ির বাইরে যাওয়া। বাবার চাকুরির (ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট) কারণে কখনো সেতাবগঞ্জ, কখনো ঠাকুরগাঁ, কখনো খেপুপাড়া বসবাস করতে হয়েছে তাঁকে। বাল্যকাল থেকে তিনি পড়াশুনার পাশাপাশি প্রচুর বই পড়তেন। বাসায় নিয়মিত আসতো পত্রপত্রিকা। দৈনিক আনন্দবাজার, অমৃতবাজার, আজাদ, ষ্টেটসম্যান, সাপ্তাহিক শনিবারের চিঠি, ইলাষ্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়া, মাসিক ভারতবর্ষ, প্রবাসী, বসুমতি আর মোহাম্মদী। বাড়িতে কলের গান ছিলো। আর ছিলো হারমোনিয়াম। সপ্তাহে দু-দিন তাঁকে গানের মাস্টার এসে গান শিখিয়ে যেতেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, নারী শিক্ষা আন্দোলন, মুসলিম সমাজের জাগরণে বেগম রোকেয়ার সাধনা- এসব বিষয়ের ওপর রচিত বই, যা তাঁর মেধা ও মনজগৎকে গঠন করেছে। কুড়িগ্রামে মেয়েদের স্কুল ছিল না বলে ছেলেদের স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে জাহানার নাম লেখানো হয়। ১৯৪১ সালে কুড়িগ্রাম থেকে বদলি হয়ে তাঁরা চলে এলেন লালমনিরহাটে। লালমনিরহাটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবার জন্য সেন্টার ছিলো না। তাই জাহানারা ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলেন রংপুর থেকে। দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করলেন জাহানারা ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাসের স্বীকৃতি পান। ভর্তি হলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। এই কলেজ থেকে আইএ পাস করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। এই কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে বিএ পাসের স্বীকৃতি পান। এরপর বিএড-এ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। ১৯৬০ সালে প্রথম শ্রেণীতে বি.এড ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৪ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশীপ পেয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানডিয়াগো স্টেট কলেজ থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। শিক্ষকতার মাধ্যমে জাহানারা ইমামের কর্মজীবন শুরু হয়। সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে ১৯৪৮-৪৯ পর্যন্ত তিনি ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী গার্লস হাই স্কুলে ছিলেন। বিয়ের পর ঢাকায় এসে ১৯৫২ সালে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যুক্ত হন। এখানে তিনি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি বুলবুল একাডেমির কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী সহ আরও দুইটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৪ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশীপ পেয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা যান। সেখান থেকে ফিরে ১৯৬৬-৬৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। তিনি বাংলা একাডেমীর কার্যনির্বাহী পরিষদে জুলাই ১৯৮০-৮২ সাল পর্যন্ত সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউটে খণ্ডকালীন চাকরি করেছেন। ১৯৬০ সালে তিনি এডুকেশনাল বোর্ডের প্রতিনিধি হয়ে সিলেবাস সেমিনারে পশ্চিম পাকিস্তানের পেশোয়ারায় যান। তিনি ‘গার্লস গাইড’, ‘পাকিস্তান উইমেন্স ন্যাশনাল গার্ড’, ‘খেলাধুলা’, ‘অল পাকিস্তান উইমেন্স এসোসিয়েশন’ সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকা বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেছেন। তিনি ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি মঞ্চে’ শেক্সপিয়ারের একটি নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ৯ আগস্ট শরীফুল আলম ইমাম আহমদের সঙ্গে জাহানারা বেগমের বিয়ে হয়। শরীফ ইমাম ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৫১ সালের ২৯ তাঁদের পরিবারে জন্ম হয় শাফী ইমাম রুমীর। এই রুমীই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন দুঃসাহসী গেরিলার ভূমিকায় ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান। জানোয়ার বাহিনী রুমীকে নির্মমভাবে অত্যচার করে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর শহীদ রুমী বীরবিক্রম (মরণোত্তর) উপাধিতে ভূষিত হন। প্রাণপ্রিয় সন্তান রুমীকে ঘিরেই জাহানারা ইমাম রচনা করেন অমর গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’। ১৯৫৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর তাদের দ্বিতীয় সন্তান সাইফ ইমাম জামীর জন্ম হয়। তাঁর স্বামী শরীফুল আলম ইমাম ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা যায়। কলেজে জাহানারা ইমামের সহপাঠী অঞ্জলি। এই অঞ্জলির কাছে কমিউনিজমের পাঠ নেন তিনি। তাঁর বাবা মেয়ের হাতে কমিউনিস্টদের পত্রিকা ‘জনযুদ্ধ’ দেখে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। মেয়ে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকুক এটা তাঁর বাবা চাননি। স্বামী শরীফও চাননি। তাই রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কেড়ে নিলো তাঁর বুকের মানিক রুমীকে। প্রিয়তম স্বামী শরীফকে। পুত্র এবং স্বামী হারানোর কষ্টকে বুকে ধারণ করে বেঁচে ছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে তিনি আক্রান্ত হলেন ক্যান্সারে। প্রতি বছর একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো তাঁকে। এভাবেই কাটছিল তাঁর দিন। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের লোভ ও অদূরদর্শিতার কারণে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকার আলবদরদের ক্রমশঃ উত্থান তাঁকে বিচলিত করে তুলেছিলো। এই ধর্মান্ধ মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উত্থানকে রুখে দিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন জাহানারা ইমাম। ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারী ১০১ সদস্যবিশিষ্ট ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠনে তিনিই মূল ভূমিকা রাখেন। আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। দেশের লাখ লাখ মানুষ শামিল হয় নতুন এই প্লাটফর্মে। এই কমিটি ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ‘গণআদালত’-এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠিত করে। গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। সমবেত লক্ষ লক্ষ মানুষের পক্ষ থেকে জাহানারা ইমাম গণআদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এই গণআদালতের সদস্য ছিলেন-এডভোকেট গাজিউল হক, ড.আহমদ শরীফ, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বেগম সুফিয়া কামাল, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, শওকত ওসমান, লেঃ কর্নেল (অবঃ) কাজী নূরুউজ্জামান, লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী এবং ব্যারিষ্টার শওকত আলী খান। সেদিন পুলিশ ও বিডিআরের কঠিন ব্যারিকেড ভেঙ্গে বিশাল জনস্রোত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে পড়েছিলো। সেই বিশৃঙ্খল পরিবেশে বর্ষীয়ান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও কথাশিল্পী শওকত ওসমানকে গণআদালত মঞ্চে (ট্রাকে) উপস্থিত করা সম্ভব হয়নি বলে মাওলানা আবদুল আউয়ালকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে গণআদালত সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গণআদালত অনুষ্ঠিত হবার পর সরকার ২৪জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে অজামিনযোগ্য মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করেন। তারপর লাখো জনতার পদযাত্রার মাধ্যমে জাহানারা ইমাম ১২এপ্রিল ১৯৯২ গণআদালতের রায় কার্যকর করার দাবী সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করেন। চিন্তায় চেতনায় মননে ও মেধায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালনকারী ১০০ জন সাংসদ গণআদালতের রায়ের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করলে আন্দোলনে যুক্ত হয় নতুন মাত্রা। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, সংসদ যাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মহাসমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার ৩০ জুন ১৯৯২ সংসদে ৪ দফা চুক্তি করতে বাধ্য হয়। তবে এ চুক্তি কার্যকর হয়নি আজও। ২৮ মার্চ ১৯৯৩ নির্মূল কমিটির সমাবেশে পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জে আহত হন জাহানারা ইমাম। তিনি প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান রাজপথে। এ সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও গঠিত হয় নির্মূল কমিটি এবং শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। পত্রপত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠলে আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন জাহানারা ইমাম। গোলাম আযমসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনকে সমর্থন দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। ২৬ মার্চ ১৯৯৩ স্বাধীনতা দিসবে গণআদালত বার্ষিকীতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষিত হয় এবং আরো ৮ জন যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের ২য় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাজপথের বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে জাতীয় গণতদন্ত কমিশিনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা হচ্ছেন_ শওকত ওসমান, কে এম সোবহান, সালাহউদ্দিন ইউসুফ, অনুপম সেন, দেবেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, খান সারওয়ার মুরশিদ, শামসুর রাহমান, শাফিক আহমেদ, আবদুল খালেক এবং সদরুদ্দিন। এই সমাবেশে আরো ৮ জন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় খুব দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। লে ১৯৯৪ সালের ২ এপ্রিল চিকিৎসার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ডেট্রয়েট হাসপাতালের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন তিনি মারা যান। তিনি‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনা করে পৌঁছে যান পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। তাঁর রচনার ও অনুবাদের মধ্যে রয়েছে- অনুবাদ: তেপান্তরের ছোট্ট শহর, নদীর তীরে ফুলের মেলা, সাতটি তারার ঝিকিমিকি, নগরী, ডালাস, অব ব্লাড এন্ড ফায়ার। উপন্যাস ও অন্যান্য: গজকচ্ছপ, ভেতর আগুন, নাটকের অবসানে, দুই মেরু, নিঃসঙ্গ পাইন, নয় এ মধুর খেলা, মূল ধারায় চলেছি। স্মৃতিকথা: অন্য জীবন,একাত্তরের দিনগুলি, প্রবাসের দিনলিপি । জীবনী গ্রন্থ: বীরশ্রেষ্ঠ। ছোটগল্প: জীবন মৃত্যু, একাত্তরের দিনগুলি'র কিশোর সংস্করণ ‘বিদায় দে মা ঘুরে আসি, চিরায়ত সাহিত। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ : ক্যান্সারের সাথে বসবাস। # সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১০ সকাল ৭:০২
false
ij
ক্রিট দ্বীপের প্রাচীন সভ্যতা ক্রিটদ্বীপের মানচিত্র। গভীর নীল সমুদ্রে ক্রিট নামে এক দ্বীপ রয়েছে। সুন্দর ও ঐশ্বর্যশালী রাজ্য, যার চারদিকে আছড়ে পড়ছে ঢেউ, যার নব্বুইটি নগরে রয়েছে ঘন লোকবসতি। (হোমার। ওডিসি। ১৯,১৭২-১৭৪) মাঝে মাঝে আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে: ইউরোপের প্রাচীনতম সভ্যতা কোন্ টি? এর উত্তর-ক্রিটদ্বীপের সভ্যতাই ইউরোপের প্রাচীনতম সভ্যতা । ক্রিট, আমরা কমবেশি জানি, ভূমধ্যসাগরের একটি দ্বীপ। যে দ্বীপে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল আজ থেকে ৪০০০ বছর আগে। ২৬০০-২১০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়কালকে ধরা হয় লৌহযুগ । মানবসভ্যতায় লোহার ব্যবহারে রয়েছে আনাতোলিয়ার অবদান। আনাতোলিয়া হচ্ছে এখনকার তুরস্ক বা এশিয়া মাইনর। তো সেই সময়, অর্থাৎ লৌহযুগে ক্রিটের নৌবন্দরগুলি ভারি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। ক্রিটিয় ব্যাবসায়ীরা সাইপ্রাস অবধি চলে যেত তামার জন্য; সোনারুপার জন্য যেত এজিয়ানের সাক্লাদেস দ্বীপগুলিতে। এজিয়ানের একগুচ্ছ দ্বীপমালাকে বলা হত সাক্লাদেস । পাথরের জন্য ক্রিটিয় ব্যাবসায়ীরা জাহাজ ভাসিয়ে যেত মেলস। (মেলস কোথায়? বলুন) এভাবে সেই লৌহযুগেই গ্রিকবিশ্ব ও এশিয়া মাইনরের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল ক্রিটের ব্যবসায়ী শ্রেণির। গভীর যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল মিশরের সঙ্গেও। মমি করতে যে সিডার গাছ লাগত তেল লাগত সেসব যোগাত ক্রিট। আর সেই সময়টায় মৃৎশিল্পে এগিয়ে ছিল ক্রিট। মাটির তৈজষ বেচে ভারি লাভবান হত ক্রিটিয় ব্যবসায়ীরা।মধ্যগ্রিসের সঙ্গেও গভীর বানিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ক্রিটের। গভীর বানিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সিরিয়া, ফিনিশিয়া ও এশিয়া মাইনরের সঙ্গেও। এভাবে প্রচুর ধনসম্পদ আসতে লাগল ক্রিটদ্বীপে। নসস ছিল ক্রিটদ্বীপের কেন্দ্র। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০। সেখানেই প্রথম প্রাসাদ গড়ে উঠল । নসস-এ গড়ে উঠল উপাসনালয়। দূর্গ। কোষাগার। খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ তে ভূমিকম্প হল। তবে ক্রিটিয় সভ্যতা ছিল অব্যাহত। নসস এর রাজপ্রাসাদটি ছিল বহুতল, তার অসংখ্য সিঁড়ি, প্রাঙ্গন। করিডোর, স্তম্ভ; দেওয়ালে খোদিত নকশা। প্রার্থনা ঘর। সব মিলিয়ে ধনসম্পদ, শিল্প ও স্থাপত্যের বিস্ময়কর সমাহার। প্রাসাদের পয়নিস্কাসন ব্যাবস্থাও ছিল যুগের তুলনায় এগিয়ে। অবশ্য প্রাসাদে কেবল অভিজাতরাই থাকত। তৎকালীন ক্রিটিয়সমাজে অনিবার্য শ্রেণিবৈষম্য ছিল। বেশির ভাগ দ্বীপবাসীই ছিল কৃষক। কিংবা শ্রমিক। কিংবা জেলে। ক্রিটদ্বীপ শাসন করত পুরোহিত-রাজা। তারই খেদমত করত সুবিধাবঞ্চিরা। ১৫৮০ তে ক্রিট বর্হিশক্র দ্বারা আক্রান্ত হয়। এরপর আমরা পাই রাজা মিনোসকে। তিনি ছিলেন ক্রিটের ৯০ টি নগরের রাজা। যার কথা হোমার লিখেছেন ওডেসিতে। গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস-এর মতে ট্রয় যুদ্ধের ৯০ বছর আগে মারা যান রাজা মিনস। তার সময়ে এক অতুলনীয় উন্নতির সোপানে পা রেখেছিল ক্রিট। যে কারণে ক্রিটিয় সভ্যতাকে বলা হয় মিনিয় সভ্যতা। থেরা দ্বীপটি ছিল ক্রিট দ্বীপের ৭৫ মাইল উত্তরে। থেরা দ্বীপকে সানতোরিনিও বলা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫০। সেই থেরা দ্বীপে এক ভয়াবহ অগ্নৎপাত হল। যার ফলে সৃস্টি হয়েছিল সুনামি। বর্তমানকালের বিজ্ঞানীরা থেরাদ্বীপের বিস্ফোরন নিয়ে বহু হিসেব কষেছেন। সেই সময় ঢেউ নাকি ফুঁসে উঠেছিল প্রায় ৩২৮ ফুট! তার মানে ভীষন তীব্র ঢেউ ক্রিটের উত্তরে আঘাত হেনেছিল ২০ মিনিট পর । আর দূরন্ত বাতাস ভাসিয়ে নিয়ে গেছিল ঘন কালো ছাই। ৪ ইঞ্চি পুরু প্রলেপ পড়েছিল ঘরবাড়ি, প্রাসাদ আর ফসলের জমির ওপর। যে কারণে নষ্ট হল ফসল। আঁধারে ঢাকল সভ্যতা। আরও জানতে হলে- http://www.west-crete.com/cretan-history.htm সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:১১
false
ij
ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশ এর একটি কবিতা_ আইডেন্টটিটি কার্ড আইডেন্টটিটি কার্ডলিখে রাখ!আমি একজন আরব,আর আমার আইডেন্টটিটি কার্ড নম্বর পঞ্চান্ন হাজার,আর আমি আট সন্তানের পিতাআর আগামী গ্রীষ্মের পর নয় নম্বরটি আসছে ।তুমি কি রেগে যাবে?লিখে রাখ!আমি একজন আরব,আর আমি আমার সহযোগী শ্রমিকদের নিয়ে পাথর খুঁড়ি, আর আমি আট সন্তানের পিতা।ওদের মুখে রুটি তুলে দিতে রাতদিন অমানুষিক পরিশ্রম করি,ওদের পোশাক ও স্কুলের খাতা যোগাইপাথরের সঙ্গে যুদ্ধ করে।আমি ভিক্ষের জন্য তোমার দুয়ারে যাই নাতোমার দুয়ারে বসে চিৎকারও করি নাতুমি কি রেগে যাবে?লিখে রাখ!আমি একজন আরব।আমি শিরোনামহীন একটি নাম একটি দেশে বেঁচে থেকে যে ধৈর্য্যশীলযদিও আমার শিকড়ে জড়ানো সন্ত্রাসযে সন্ত্রাস সৃষ্টির পূর্বেই পরিকল্পিতশতাব্দীর পূর্বেই সূচিতসাইপ্রেস আর জলপাই গাছের পূর্বেই অস্তিত্বশীল যে সন্ত্রাসঅস্তিত্বশীল চারণভূমির বিস্তারের পূর্বেই।আমার বাবার পরিবারটি ছিল লাঙলের কারিগর ,অভিজাত শ্রেণির নন,আমার পিতামহ ছিলেন চাষী,নীল রক্তের উচ্চবংশের নন।বই পড়তে শেখার আগেই যিনি আমাকে সূর্যের অহংকার শিক্ষা দিয়েছিলেন। আমাদের বাড়িটি ছিল খড়কুটোয় তৈরিপর্যবেক্ষকের কুঠির।এভাবে, আমার আমার অবস্থান কি তোমাকে সন্তুষ্ট করে?আমি শিরোনামহীন একটি নাম লিখে রাখ!আমি একজন আরব,আমার চুলের রং কালো,আর চোখের রং বাদামী।আমার স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য:আমি মাথায় টুপি পরিআর আমার করতল পাথরের মতন কর্কসযারা ছোঁয় তারা পায় টের,আমার ঠিকানা:আমি একটি প্রতিরক্ষাহীন বিস্মৃত গ্রাম থেকে এসেছিযে গ্রামের রাস্তার কোনও নাম নেইযে গ্রামের সবাই মাঠে ও পাথরের খনিতে কাজ করে।আমার প্রিয় খাবারজলপাই তেলে ভাজা শাক।তুমি কি রেগে যাবে? লিখে রাখ!আমি একজন আরব,এবং তুমি আমার পূর্বপুরুষের শিরা-উপশিরা লুঠ করেছ,যে ভূমি আমি কর্ষন করতামআমার সন্তানাদি,পাথর ছাড়া তুমি আমার আর নাতি-নাতনীর জন্যকিছুই রাখনি। তোমার সরকার নাকি আমার সর্বশেষ আশ্রয় অধিগ্রহন করবে?কাজেই,প্রথম পাতায় লিখে রাখ!আমি কাউকে ঘৃনা করি নাআমি লুঠপাটও করি নাতবে যদি আমি ক্ষুধার্ত হইআমি জবরদখলকারির মাংস খাবকাজেই সাবধানআমার ক্রোধ ও ক্ষুধা সর্ম্পকে সচেতন হও।Identity CardBy Mahmoud Darwish (Palestine)Record!I am an Arab,And my identity card number is fifty thousand,And I have eight kidsAnd the ninth one is coming after summer.Would you be angry?Record!I am an ArabAnd I work with my fellow labors at a quarry,And I have eight kids.I struggle to get them loaf of bread,Clothes and notebookFrom the rocks.I do not plead for your alms at your doorNor do I decry at the tiles of your thresholdSo, would you be angry?Record!I am an Arab.I am a name without a title,Patient living in a countryWherein everything that lives in it is outragedMy rootsHad been ingrained before the birth of timeBefore the blooming of epochs,Before the cypress and olive trees,Before the growing of pasture....My father is from the family of the plow,Not from the privileged classes,And my grandfather was a cultivator,Neither well-bred nor well-born,Teaching me the pride of the sunBefore teaching me how to read the books.My house is like a watchman’s hutMade of reeds and canesThus, does my status satisfy you?I am a name without a title.Record!I am an Arab,The color of hair is black,and the color of eyes is brown.My distinctive features:I wear ghatta w’igal on my head,And my palm is solid like a rock.It scratches whoever touches it.My Address:I am from defenseless and forgotten villageIts streets have no namesAnd all its men are in the field and the quarry.My favorite mealIs olive oil and oregano.Would you be angry?Record!I am an Arab,You robbed the vines of my ancestors,And a land I used to cultivateAlong with my children,And you left nothing for us and for all my grandchildrenBut these rocks.Thus, will your government seize them, as it said?Therefore,Record on the top of the first page!I do not hate peopleNor do I rob othersBut if I become hungryI will eat the flesh of my usurper.Thus bewareBeware of my hungerOf my anger.
false
mk
পাকি কমান্ডো ট্রেনিং প্রাপ্তদের আনা হয়েছে টার্গেট- ০ ভয়ঙ্কর কিছু ঘটানো জামায়াতের মিত্র দেশ পাকিস্তান থেকে কমান্ডো ট্রেনিংপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন দক্ষ সদস্য এখন দেশে অবস্থান করছে। তাদের এমন সব অবস্থানে রাখা হয়েছে যে, সাধারণ মানুষ দেখলেও চিনতে পারবে না। তারা জামায়াত-বিএনপির কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যে কোন সময় তারা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে পারে। বড় ধরনের রক্তপাত ঘটানোর জন্য জামায়াত-বিএনপি মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণেই তাদের মিত্র দেশের কয়েকজন কমান্ডো এনে মিশন বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করছে। জামায়াতের টার্গেট সচিবালয়, রেলপথ, বড় বড় বিদ্যুত কেন্দ্র উড়িয়ে দেয়া। নির্দিষ্ট কিছিু ব্যক্তিকে হত্যা করা। এমন খবর দিয়েছে সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা।জানা গেছে, জামায়াত-বিএনপির এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বিরাট অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। আসছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকেও জামায়াতের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ। দেশকে চরম অস্থিরতার মধ্যে ফেলতে তাদের এই নীলনক্সা শুধু হরতাল কেন্দ্রীকই থাকবে না, এটা চলবে দীর্ঘ মেয়াদী। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও বিচার বানচাল করার জন্যই জামায়াতের পরিকল্পনা দীর্ঘ মেয়াদী। বিএনপি জামায়াতের পরিকল্পনার সমর্থন দিয়ে যাবে। তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে তারা সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রাখবে। সংস্থাটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ককটেলসহ অন্যান্য ধ্বংত্মাক জিনিসপত্র উদ্ধার করছে। জামায়াত-বিএনপির ক্যাডাররা দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ সব জমা করেছে হরতালের শুরু বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। গত কয়েকদিনের অভিযানে বোমা তৈরি উপাদান, ককটেল ও গানপাউডার উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে সহিংসতার আশঙ্কা করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। টানা ৮৪ ঘণ্টার হরতালের মধ্যে তিন দিন পার হয়ে গেলেও জামায়াত বিএনপি খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। গোয়েন্দা নজরদারির ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টানা অভিযান জামায়াত-বিএনপির পরিকল্পনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। তাদের পরিকল্পনায় ছিল ব্যাপক নাশকতা চালানো। এই বিষয়টি আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সরকার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা বাহিনী হার্ডলাইনে রয়েছে। ইতোমধ্যে সহিংসতারোধে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও অনেক নেতাকর্মী গোয়েন্দা নজরদারিতেও রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে দেশকে আফগানিস্তানের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। এটা হতে দেয়া হবে না বলে রাজধানীসহ সারাদেশে র্যাব সদস্যরা যে কোন ধরনের নাশকতা ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশ বাহিনীকেও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।গোয়েন্দা সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, জামায়াত-বিএনপি দেশজুড়ে চরম অরাজকতার সৃষ্টি করে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর কাছে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা দেশের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের আসতে মানা করেছে। যে হারে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে তাতে বিদেশীরা এখানে নিরাপদ বোধ করছেন না। গাজিপুরে ঘুমন্ত শিশুর ওপর বোমা মেরে হত্যার পর থেকে বিদেশীরা বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। জামায়াত-বিএনপির চিহ্নিত পয়েন্টগুলোতে বোমা বিস্ফোরণসহ আরও ভারি অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারে এমন খবরও গোয়েন্দাদের কাছে চলে আসে। ওই সব পয়েন্টে আগে থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ফলে জামায়াত-বিএনপি পরিকল্পনা বদলিয়ে নতুন কৌশলে হরতাল পালন করে যাচ্ছে। জামায়াত বিএনপিকে সহযোগিতায় দিচ্ছে জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকত উল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি), হিযবুত তাহরীর, ইসলামী ডেমোক্যাটিক পার্টি (আইডিপি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশসহ (জেএমজেবি) বেশ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠন। যদিও এসব সংগঠন নিষিদ্ধ। জামায়াত-বিএনপির মেইন টার্গেট ছিল রেলপথে নাশকতা চালানো। হরতালের শুরুর দিন দু’একটি জায়গায় রেললাইনের ফিশ প্লেট খুলে ফেলেছিল। কিন্তু পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতিটি লাইন পরীক্ষা করে ট্রেন চলাচল করিয়েছে। জামায়াত-বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের আঁধারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন তুলে ফেলা অথবা রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে রেখে দেবে। এ ঘটনা ঘটলে বেশি মানুষ হতাহতের শিকার হবে। বেশি মানুষ মারা গেলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো ফলাও করে খবর প্রকাশ করবে। এমন পরিকল্পনা নিয়েছে জামায়াত-বিএনপির ক্যাডাররা। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোও তাদের টার্গেটে রয়েছে। একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে তারা মরণ কামড় দেবে। গোয়েন্দা সংস্থাটি বলেছে, একটি বিশেষ দেশের কাছ থেকেও তারা বোমা ও অস্ত্র সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জামায়াত-শিবিরসহ নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করছে। ওই গোয়েন্দার লোকজন জামায়াত-শিবিরের বোমা তৈরিতে সহযোগিতা দিচ্ছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় বোমা তৈরির বিষয়টি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে। বিষয়টি সরকারের ওপর মহলে জানানো হয়েছে বলে সংস্থাটি খবর দিয়েছে।তথ্যসূত্র: জনকণ্ঠ
false
rn
জেনে নিন ঠোঁটকে সুন্দর রাখবার উপায় গুলো কে না চায় একজোড়া সুন্দর ও আকর্ষণীয় ঠোঁট? কেবল একজোড়া স্বাস্থ্যজ্জ্বল ঠোঁটই আপনার হাসিকে করে তুলতে পারে আরো আকর্ষণীয়, চেহারাকে করে তুলতে পারে মোহনীয়। আর তাই জেনে নিন ঠোঁটকে সুন্দর রাখবার উপায়গুলো। আসুন, জেনে নেয়া যাক সুন্দর গোলাপি ঠোঁট পেতে কী কী করবেন ও করবেন না-যা করতে পারেন-১. একটি পাতলা লেবুর টুকরোর ওপরে খানিকটা চিনি ছিটিয়ে প্রতিদিন ঠোঁটে ঘষুন। চিনি ঠোঁটের মরা চামড়াগুলোকে পরিষ্কার করতে এবং লেবু সূর্যের ফলে কালো হয়ে যাওয়া ঠোঁটের চামড়াকে উজ্জবল করতে সাহায্য করে। ২. মধুর সাথে চিনি এবং কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে ১০ মিনিট ঠোঁটে ঘষুন। ৩. ঠোঁটকে উজ্জ্বল করতে ল্যাক্টিক এ্যাসিড খুব উপকারী। নিয়মিত দুধ খাবার সাথে সাথে খানিকটা দুধ তুলোয় করে ঠোঁটে ঘষে নিন। শুষ্ক চামড়াকে তুলে ফেলার মাধ্যমে দুধ ঠোঁটের কালো হওয়াকেও প্রতিরোধ করে। ৪. গোলাপের পাপড়িও ঠোঁটের গোলাপী ভাব আনতে সাহায্য করে। এজন্য গোলাপের পাপড়ি দুধের মধ্যে রেখে তাতে মধু ও গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। প্রলেপটি ১৫ মিনিট ঠোঁটে মাখুন। এরপর দুধ দিয়ে ঠোঁটকে মুছে নিন। প্রতিদিন এই প্রলেপটির ব্যবহার আপনার ঠোঁটকে করে তুলবে আকর্ষনীয়। ৫. লেবুর ভেতরের এসিড ঠোঁটের শুষ্ক চামড়াকে তুলে ফেলতে সাহায্য করে। তবে লেবুর রসের সাথে খানিকটা চিনি ও মধু মিশিয়ে ঘরে বসেই নিতে পারেন ঠোঁটের পুরোপুরি যত্ন। প্রলেপটি মাখার একঘন্টা পর ধুয়ে নিন। ৬. লেবুর রসের সাথে খানিকটা গ্লিসারিন মিশিয়ে ঠোঁটে মাখুন। কয়েকদিনেই আপনি পাবেন চমত্কার ফলাফল। ৭. বাদামের তেল, মধু ও চিনির মিশ্রন করুন। প্যাকটি আপনার ঠোঁটকে কেবল সুন্দরই করবে না, কোমলতাও বাড়াবে। ৮. ঘুমানোর আগে ঠোঁটে পালং পাতা ঘষে নিন। সাথে রাখতে পারেন জাফরানও। এই দুটি সহজলভ্য উপাদানের নিয়মিত ব্যবহার আপনার শুষ্ক ঠোঁটকে সারিয়ে তুলবে এক নিমিষেই। ৯. কমলালেবু খাবার সময় এর বীচিগুলোকে সংরক্ষণ করুন এবং নিয়মিত ঠোঁটকে এগুলোর দ্বারা পরিষ্কার করুন। ১০. প্রতিদিন টমেটো পেষ্ট করে ঠোঁটে মাখুন। আপনার ঠোঁট হবে উজ্জ্বল। ১১. শশার রসও ঠোঁটের কালো হওয়কে প্রতিরোধ করে। ফলাফল পেতে প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট শসার রস ঠোঁটে ঘষুন। মনে রাখবেন-১. ধুমপান ঠোঁটের জন্যে ক্ষতিকর। তাই ধুমপান থেকে বিরত থাকুন। ২. রাতে ঘুমাতে যাবার আগে লিপস্টিক তুলে ফেলতে ভুলবেননা। ৩. জিহ্বা দিয়ে অবিরত ঠোঁট ভেজানো বন্ধ করুন। এতে সাময়িক আরাম মিললেও আসলে ঠোঁটের সৌন্দর্য হানি হয়। বদলে ব্যবহার করুন লিপজেল। ৪. ফাস্টফুডের পরিবর্তে শাক-সব্জী খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান। ৫. চা এবং কফির পরিবর্তে পানি খাবার পরিমাণ বাড়ান। প্রচুর পরিমাণে পানি আপনার ঠোঁটকে রাখতে পারে সুস্থ ও স্বাভাবিক সৌন্দর্যময়।জন্মগতভাবেই ঠোঁটের রং কালো হতে পারে, আবার কখনো কখনো হরমোনের প্রভাবেও ঠোঁট ও মাড়ির রং কালো হয়ে যায়। আবার রঙিন টুথপেস্ট, কমলার খোসার রস কিংবা আমের কষ লেগেও ঠোঁট কালো হতে পারে। এসব কারণে যদি ঠোঁট কালো হয়ে থাকে, তবে এগুলো এড়িয়ে চলুন। দাঁত মাজার সময় ব্যবহার করুন সাদা রঙের পেস্ট। আর হরমোনজনিত কারণে হলে পরীক্ষা করে দেখতে হবে আগে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র। তাই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। (সংগ্রহ)
false
ij
গল্প_ স্পর্শ বাসে স্টেলাকে বলছিলাম, রবীন্দ্রনাথের মতো কবির কেন পশ্চিম বাংলায় জন্ম হয়েছে জান?কেন?পশ্চিমবাংলার তিনটে নদীর নাম ময়ূরাক্ষী, রুপনারায়ন ও সুবর্ণরেখা। যে দেশের নদীর নাম এত সুন্দর আর এত কাব্যিক সে দেশে তো রবীন্দ্রনাথের মতো কবির জন্ম হবেই। স্টেলাকে কিছুটা বিমূঢ় দেখাল। এমন সব বিস্ময়কর ইতিহাস-পুরাণ বলে বলে ক’দিন ধরে ওকে বিমূঢ় রাখছি। বললাম, দেখ যে ক’দিন পর পৃথিবীর সবাই বলবে যে-বাংলা ভাষাই পৃথিবীর সবচে মধুর ভাষা।ওহ্ ।স্টেলা আজ নীল পাড়ের সাদা রঙের সুতীর একটা শাড়ি পরেছে, সেই সঙ্গে কালো ব্লাউজে চমৎকার মানিয়েছে ওকে। মার্কিনী তরুণীর পরনে বাঙালি নারীর ভূষন - বাঙালি পরিচ্ছদের মহিমাই যেন তুলে ধরে। সোনালি চুলগুলি পিছন দিকে টানটান করে বাঁধা। সাদা কপালে বড় লাল টিপ। কানে লাল রঙের মাটির দুল। গোল ফ্রেমের চশমাটা গাম্ভীর্য় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।বাসের জানালা দিয়ে ভ্যান দেখেছে। ভ্যানে চড়ব। দশ মাইল বাজারে বাস থেকে নেমেই স্টেলা বালিকাদের মতো আব্দার করে বসল । আমি মুচকি হাসলাম। চারিদিকে বৈশাখের রোদ থইথই করছে। সেই সঙ্গে বাংলার বিখ্যাত উথাল-পাথাল বাতাস। ধুলোও কিছু কম উড়ছে না। অদূরে ভ্যানের জটলা। সেদিকে যেতে থাকি।চ্যাংড়া মতন দেখতে একজন ভ্যানওয়ালার সঙ্গে কথা হল। আঠারো-উনিশ বছরের ঝকঝকে শ্যামল মুখ। পরনে চেক লুঙ্গি ও ছেঁড়া গেঞ্জি। নাম বলল, মইনুল ইসলাম জুয়েল। বাড়ি এই সুন্দরপুর ইউনিয়নেই-ঢেপা নামে একটি নদীর পাড়ে । নদীটা নাকি এখান থেকে প্রায় এক মাইল পশ্চিমে। কান্তজিউ মন্দিরে যাব। বলে দু’জনে ভ্যানে উঠে পড়লাম, তারপর পা ঝুলিয়ে পাশাপাশি বসলাম। জুয়েল ভ্যান ঘুরিয়ে নিল। বিদেশিনীকে দেখে উৎসাহ পেয়েছে। ছেলেটি এখনও জানে না আর কিছুক্ষণ পর বিদেশিনী ওর ঘামে ভেজা কালো কপালটি গভীর মমতায় স্পর্শ করবে । আমি সিগারেট ধরাতে যাব- ধরালাম না। মেয়েদের শরীর ফুলগাছের মতো, এই মুহূর্তে স্টেলার শরীর থেকে কী রকম বেলী ফুল বেলী ফুল গন্ধ ছড়াচ্ছে। বৈশাখের রক্ষুসী বাতাস সে সুগন্ধকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। গন্ধটা আরও নষ্ট করতে আর সিগারেট ধরালাম না । সাত সকালে দিনাজপুর শহর থেকে ঠাকুরগাঁওগামী বাসে উঠে দশমাইল নেমেছি। দিনাজপুর শহরে আমরা দু’জন গতকাল সন্ধ্যায় এসে পৌঁছেছি। উঠেছি রাধারানী মাসীর বাড়ি। রাধারানী মাসী মঞ্জু খালার সই, ষাটের দশকের শেষের দিকে মঞ্জু খালা আর রাধারানী মাসী ইডেন কলেজে পড়তেন। ভারি হাসিখুশি মহিলা, ঢাকায় অনেকবারই দেখেছি, আমি কখনও দিনাজপুর শহরে এলে রাধারানী মাসীর বাড়িতেই উঠি। রাধারানী মাসী স্টেলাকে মুহূর্তেই আপন করে নিয়েছেন। স্টেলার গলায় যে রামনগরী পুঁতির মালা ঝকমক করছে, সেটি রাধারানী মাসীর গিফট । রাধারানী মাসী আদর করে ওর নাম রেখেছে শ্রাবণী। স্টেলাকে আমি কখনও-সখনও বলি, বর্ষন। যেহেতু স্টেলার নবজন্ম হয়েছে।ক’দিন ধরেই স্টেলাকে বাংলার ইতিহাস বলে যাচ্ছি। এখন বললাম, অস্টাদশ শতক ছিল বাংলার জন্য পালা বদলের কাল।পালা বদলের কাল? কেন?কারণ অস্টাদশ শতকে বাংলায় মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে আর ইংরেজ শাসন শুরু হয়। ও।অস্টাদশ শতকে এই দিনাজপুর জেলার মহারাজা ছিলেন প্রাণনাথ রায়। তিনি কৃষ্ণের আরাধনা করতেন। এই ফাঁকে বলে নিই যে বিষ্ণু হলেন ভারতবর্ষের অন্যতম বৈদিক দেবতা আর কৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অবতার। বুঝেছি।বাংলার নদীয়ার শ্রীচৈতন্যদেব আবার কৃষ্ণর অবতার। যা হোক, সেসব কথা অন্য সময়ে বলব। কৃষ্ণর জন্ম হয়েছিল উত্তর ভারতের মথুরায়। সেই কৃষ্ণের উপাসনা করতেন দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ রায়। দীর্ঘদিন ধরে কৃষ্ণর আরাধনা করছেন, মনের ইচ্ছে কৃষ্ণর নামে একটি মন্দির নির্মান করবেন । কোথায় করা যায়। অনেক ভেবেচিন্তে কান্তপুর গ্রামকেই কান্তজিউ মন্দির নির্মাণের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। কান্তজিউ?কান্তজিউ মানে কৃষ্ণজী বা শ্রীকৃষ্ণ। ওহ্ ।স্থান নির্বাচনের পর কৃষ্ণ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তার আগে বাংলার নানা প্রান্ত থেকে শিল্পীরা নির্মাণ শ্রমিকেরা মহারাজা প্রাণনাথ রায়ের দরবারে ছুটে আসে। তাদের বেশির ভাগই মুসলিম। যা হোক। মহারাজ ঘুনাক্ষুরেও টের পাননি একদিন দেশবিদেশ থেকে পর্যটক এসে কান্তজিউ মন্দির দেখে মুগ্ধ অভিভূত হয়ে যাবে। কান্তজিউ মন্দির হয়ে উঠবে দিনাজপুরের গৌরব। বাননগর জায়গাটি দিনাজপুরের গঙারামপুরের কাছে । সেখানে নাকি একটি প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ছিল। সেই ধ্বংসাবশেষ দিয়েই নাকি নির্মাণ উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছিল। সত্যমিথ্যা জানি না। লোকে বলে। এর আগেরবার যখন এসেছিলাম, তখন শুনেছি। যা হোক। মহারাজা প্রাণনাথের স্ত্রীর নাম রুকমিনি দেবী। প্রাণনাথ-রুকমিনি দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন।আহা।তবে একটি পুত্র সন্তান দত্তক নিয়েছিলেন। সেই ছেলের নাম ছিল রামনাথ।রামনাথ?হ্যাঁ। রামনাথ। যাহোক। মন্দিরের কাজ অসমাপ্ত রেখে ১৭২২ সালে মহারাজা প্রাণনাথ মারা যান। এরপর তাঁর দত্তকপুত্র রামনাথ রাজা হন। মহারাজা প্রাণনাথ রায়ের মৃত্যুর ফলে মন্দিরের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মহারাজা প্রাণনাথের স্ত্রী রুকমিনি দেবী তখন গভীর শোকে শোকাচ্ছন্ন। তা সত্ত্বেও তিনি প্রবল শোক কাটিয়ে উঠে ছেলেকে বললেন, তুই তোর বাবার আরাব্ধ কাজ শেষ করবি নি রাম? ছেলে বলল, করব মা। মন্দিরের নির্মাণ কাজ আবার শুরু হল। যা হোক। ১৭৫২ সালে মন্দিরের কাজ শেষ হয়। তোমাকে আমি ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনের কথা বলেছি না সেদিন?হ্যাঁ। কান্তজিউ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ভাষা আন্দোলনের ঠিক ২০০ বছর আগে।ওহ্ । এর আরও ৫ বছর পর অর্থাৎ ১৭৫৭ সালে বাংলা ব্রিটিশ বেনিয়াদের দখলে চলে যায়।ওহ্ । এই পর্যন্ত বলে আমি চারিদিকে তাকালাম। স্টেলা গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। গায়ে রোদ পড়ছে। অপরিসর রাস্তাটি বেশ আঁকাবাঁকা। দু’পাশে নাগলিঙ্গম গাছ, নাড়িকেল গাছের সারি, দীর্ঘ দীর্ঘ কড়–ই গাছ, তার মনোরম ছায়া। প্রবল বাতাসের বিরুদ্ধে প্রাণপন যুদ্ধ করে ভ্যান টানছে জুয়েল । এদেরই পূর্বপুরুষ সম্ভবত এখানকার রাজরাজড়াদের পালকি টানত । কত বছর আগে এ পথেই মহারাজা প্রাণনাথ, রাজা রামনাথ পালকি করে গিয়েছেন । মহারাজা প্রাণনাথ রায়ের স্ত্রী রুকমিনি দেবী কি পালকি কিংবা হাতীর পিঠে চড়ে মন্দির আসেন নি? নিশ্চয়ই এসেছেন। কিন্তু মহারাজা প্রাণনাথ রায়ের রাজবাড়িটি কোথায় ছিল? আশেপাশেই সম্ভবত। মহারাজা প্রাণনাথ রায়ের বসতভিটে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অথচ তাঁর কীর্তি আজও টিকে রয়েছে। কী আশ্চর্য!স্টেলার মোবাইলটা বাজল। কার সঙ্গে কথা বলল কিছুক্ষণ। তারপর ফোন অফ করে বলল, মনিকা চাকমা। ওহ্ ।মনিকা চাকমা রাঙামাটির মেয়ে। আমরা যখন রাঙামাটির সাপছড়ি যাই তখনই ওর সঙ্গে পরিচয়। মেধাবী ঝকঝকে এক কিশোরী। স্টেলার সঙ্গে মনিকার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হয়ে উঠেছে। মনিকা চাকমার ছোট ভাইয়ের নাম অঢং চাকমা- বারো বছরের নাদুসনুদুস বালক। অঢং -এর একটি পোষা ময়না ছিল, সেটি কী ভাবে যেন পালিয়ে যায় -আমরা যখন সাপছড়িতে ওদের বাড়ি ছিলাম তখনকার ঘটনা। অঢংয়ের সে কি কান্না, আর সবার মন খারাপ। সেই ময়নাই নাকি আবার ফিরে এসেছে। মনিকা চাকমা তাই জানাল ফোনে। যাক। স্টেলাকে কেমন নিশ্চিত লাগছে। আশ্চর্য! এক মার্কিনী মন কী ভাবে যেন বাংলার বনপাহাড়ী সত্তায় ক্রমশ মিশে যাচ্ছে। কান্তজিউ মন্দিরের সামনে একটা পুরনো বটগাছ। তার সামনে ভ্যান দাঁড় করালো জুয়েল। এই সকালেও বেশ ভিড়। ভ্যানের জটলার পাশে ইউএনডিপির একটা মাইক্রোবাস থেমে আছে। মনে পড়ল ফ্রান্সের কারিগররা কান্তজিউ মন্দিরের স্থাপনা অক্ষুন্ন রেখে সংস্কার করেছিল। কয়েক জন ফরেনার দাঁড়িয়ে আছে মাইক্রোবাসের সামনে। বিদেশি মহিলারা স্টেলার দিকে তাকাল। স্টেলা কে শাড়ি পরা কেল্টিক দেবীর মতন লাগছে। (স্টেলার পূর্বপুরুষরা ছিল আইরিশ) ...অদূরের ৫২ বর্গফুট আয়তনের মন্দিরের লালচে অবয়বের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে স্টেলা । বেশ বুঝতে পারছি পাঁচতলা উঁচু মন্দিরের লাল রঙের স্থাপত্য স্টেলার চোখ কেড়েছে। জুয়েলকে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কুড়ি টাকা দিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই। চারিদিক বৈশাখি রোদে ডুবে আছে। মন্দিরের সামনে সিমেন্টের চত্তর, সেই সিমেন্টের চত্তরের এপাশে ঘাস, একটি বাছুর চড়ে বেড়াচ্ছে। সিমেন্টের চত্তরের পর ভিত। ৩ ফুট উঁচু ভিতের ওপর পুরো মন্দির দাঁড়িয়ে। তিনটি ধাপে উঠে গেছে। তিনটে খিলান-দরজার ওপর চোখ রাখতেই মুহূর্তেই সময় যেন আড়াই ’শ বছর পিছনে চলে গেল। স্টেলা অভিভূত হয়ে দেখছে। মুখে বিস্ময়ের ছাপ স্পষ্ট। ওকে বললাম, এই মন্দিরটি কিন্তু নবরতœ মন্দির নামেও পরিচিত। নবরতœ মন্দির? কেন?মন্দিরের চারপাশে ৯টি শিখর ছিল। এখন আর নেই। ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে হয়েছিল। তখন ধ্বংস হয়ে যায়।ওহ্ ।মন্দিরটি এখন মাটিতে ধীরে ধীরে ডেবে যাচ্ছে ।ওহ্ । আমরা আরও এগিয়ে যাই। স্টেলা ওর ক্যামেরার প্যারামিটার অ্যাডজাস্ট করছে। মন্দিরের ভিত থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত দেয়ালের ভিতরে বাইরে প্রতিটি ইঞ্চিতে পোড়ামাটির অলঙ্করণ। পোড়ামাটির এই অলঙ্করণই মন্দিরের মূল আকর্ষন। পোড়ামাটির অলঙ্করণ ফুল-ফল-লতা-পাতাসহ নানা পৌরানিক কাহিনী ফুটে উঠেছে। খুব কাছ থেকে টেরাকোটার অপূর্ব সব কাজ দেখে স্টেলা অস্ফুট স্বরে বলল, আশ্চর্য!বললাম, মন্দিরের কাজ শেষ করতে সব মিলিয়ে তিরিশ বছর লেগেছে। পৌরানিক কাহিনীর চিত্রগুলি ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত থেকে নেয়া। দেখ যে ... রাধাকৃষ্ণর কাহিনীও ফুটিয়ে তুলেছে। সেই সময়ের মানুষের সাধারন জীবনের ছবিও আছে। আর দেখ ... এই যে ... মুগল বাদশাদের জীবনযাত্রা। সেদিন তোমায় মুগলদের সম্বন্ধে বলেছি না?হ্যাঁ। মনে আছে-তখন আমি বলেছিলাম যে অস্টাদশ শতক ছিল বাংলার জন্য পালা বদলের কাল। কারণ অস্টাদশ শতকে বাংলায় মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে আর ইংরেজ শাসন শুরু হয়। হ্যাঁ।এই যে দেখ ... সৈন্যদের পরনে ইউরোপীয় পোশাক। মোট কথা তখনকার দিনের সামাজিক-রাজনৈতিক জীবন ফুটে উঠেছে পোড়ামাটির কারুকাজে । আর, একটা কথা এই মন্দিরের পোড়ামাটির মৃৎশিল্পীরা কিন্তু মুসলিম ছিল।হ্যাঁ। তখন একবার বলেছিলে। রাজা প্রাণনাথ রায় ও রামনাথ রায় দু’জনই কিন্তু মানুষ হিসেবে অত্যন্ত উদার ছিলেন। মন্দিরের অলঙ্করণের কাজ মুসলমান শিল্পীদের দিয়ে করিয়েছেন। ভাবলে অবাক হতে হয় ধর্মপ্রাণ মুসলিম শিল্পীরা রামায়ন-মহাভারত রাধাকৃষ্ণের লীলার ছবি এঁকেছে। ধর্মপ্রাণ বললাম এই কারণে যে মুসলিম শিল্পীরা নামাজ পড়ার জন্য নিজেরাই একটি মসজিদ নির্মান করেছিল। তাই নাকি?হ্যাঁ। তারাই আবার সেই মসজিদের দেয়ালে পোড়া মাটির অলঙ্করণ করেছে । কোথায় সেটি? স্টেলার মুখেচোখে গাঢ় বিস্ময় ফুটে উঠতে দেখলাম। এখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। নয়াবাদ বলে একটি জায়গায়। গতবার যখন এসেছিলাম, তখনই একবার গিয়েছিলাম।আমি যাব।আচ্ছা, ঠিক আছে।স্টেলা ঘুরে ঘুরে দেখছে। ছবি তুলছে। এরই এক ফাঁকে ওকে বললাম, সবাই জানে ভারতবর্ষ মন্দিরের দেশ।হ্যাঁ। তাই তো। কিন্তু এখন সবাই জানে, কান্তজিউ মন্দিরের চেয়ে সুন্দর মন্দির ভারতীয় উপমহাদেশে আর একটিও নেই। ওহ্ । আসলেই। আমি ভীষন ... ভীষন মুগ্ধ। বাংলাদেশের একটি নিভৃত গাঁয়ে পোড়ামাটির এমন অপরুপ কারুকাজ দেখব ভাবতেই পারিনি ...মানে মানে ...আমি কি বলব বুঝতে পারি না ... আমি চুপ করে থাকি। তারপর বললাম, কান্তজিউ মন্দির কেবল সুন্দরই নয় এর তাৎপর্যও অনেক গভীর।যেমন?যেমন মন্দিরটি ব্রিটিশ-পূর্ব সময়ের বাংলার আন্ত;ধর্মীয় স¤প্রীতির অন্যতম নিদর্শন। বিশ্বজুড়ে যার বড় অভাব আজ। স্টেলা মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। কিন্তু, আমি ভাবছি কান্তজিউ মন্দিরে পোড়ামাটির কারুকাজের ভাবনাটা কার মাথায় এসেছিল- মহারাজা প্রাণনাথ রায়ের না রাজা রামনাথ রায়ের? বললাম, যারই হোক, শিল্পীর মন ছিল তাঁর। মহারাজা প্রাণনাথ রায়, রাজা রামনাথ রায়-এরা দু’জনই ছিলেন অস¤প্রদায়িক। ভাবলেই অবাক হতে হয় প্রায় তিরিশ বছর ধরে একটি কৃষ্ণমন্দির গড়ে উঠছিল কয়েকজন মুসলমান মৃৎশিল্পীর হাতে! সেই মুসলিম শিল্পীরা নামাজ আদায়ের জন্য একটি মসজিদ নির্মান করে। নয়াবাদে সেই মসজিদেও পোড়া মাটির অলঙ্করণ করেছে তারা। নিশ্চয়ই রাজা রামনাথ এর অনুমোদন ছিল, সেজন্য অর্থও বরাদ্ধ করেছিলেন রাজা। আরও গভীরে যাই। মহারাজা প্রাণনাথের স্ত্রী রুকমিনি দেবী, দত্তকপুত্র রাজা রামনাথ এর ওপর যাঁর গভীর প্রভাব ছিল। মুসলমান কারিগরেরা নয়াবাদে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে যে মসজিদের দেওয়ালে থাকবে পোড়ামাটির কারুকাজ ... সেই বিষয়ে রুকমিনি দেবীর সম্মতি নিশ্চয়ই ছিল। স্টেলা শ্বাস টানল। তারপর গভীর আবেগে বলল, শুধুমাত্র ... শুধুমাত্র এই একটি মাত্র কারণেই দুই বাংলার প্রতিটি বাঙালিরই জীবনে অন্তত একবার এই কান্তনগর আসা উচিত তাদের...তাদের উদার মহৎ পূর্বপুরুষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। স্টেলার আবেগ আমাতেও সংক্রমিত হয়েছে। উত্তরে কি বলতে যাব-বিজবিজ বিজবিজ করে আমার পুরনো নকিয়াটা বাজল । অপরিচিত নম্বর। আমি অবাক। কে হতে পারে? বললাম, হ্যালো। নমস্কার দাদা। আমি মনোরঞ্জন শীল গোপাল। স্থানীয় সংসদ সদস্য।জ্বী। বলুন। একটু আগে রাধারানী সরকার আমায় আপনার নম্বর দিলেন। রাধারানী সরকার? ওহ্, রাধারানী মাসী ...হ্যাঁ বলুন। আজ দুপুরে আমার এখানে চারটা ডালভাত খেলে খুউব খুশি হতাম। দুদিন ধইরে আমি দশ মাইলে আছি। কালও থাকব। তারপর কাহারোল চলে যাব, বুইঝলেন। ইরিগেসন সমস্যা চইলছে, বুইঝলেন না? বললাম, অনেক ধন্যবাদ দাদা। বিদেশি গেস্ট নিয়ে আপনাদের এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখছি, কখন কোথায় থাকি ঠিক নেই। পরে আপনার সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করব।ঠিক আছে। তালে আমার নম্বরটা সেভ করে রাখেন। কোনও সমস্যা হলি পর জানাবেন।ওকে। ফোনটা অফ করে স্টেলার দিকে তাকালাম। মুখে ঘাম জমেছে। রুমাল বের করে মুছিয়ে দিতে পারছি না। আমরা দু’জন ঠিক এখনও অতটা ঘনিষ্ট বন্ধু হয়ে উঠিনি যে কৌশলে বলব রুমাল বের করে মুখটা মুছে নিলে হয় না। আমি বড়জোড় একজন গাইড। হ্যাঁ, গাইড। যে কি না এই মার্কিনী তরুণীকে কৌশলে জানিয়ে দিচ্ছে এই পৃথিবীরই আশ্চর্য এক লোকালয়ের বিস্ময়কর উপকথা ...যে লোকালয়ের মানুষের জীবনধারা ও চিন্তাভাবনা নিয়ে পৃথিবীর লোকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে ...ফ্রান্সের প্যারিসের লালনের ভাস্কর্য তৈরি হচ্ছে। তারপরও কি এই মার্কিনী মেয়েটাকে সবটা বলা যাবে? যায়? যদি বলি আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে খুব কাছেই ‘পুনর্ভবা’ নামে একটি নদী বয়ে চলেছে, যে নদীর নাম হাজার বছরের পুরনো একটি শিক্ষিত জনসমাজের কাব্য রুচির প্রতিফলন ...অথচ ...অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠা এই সেদিন ১৯২১ সালের পর ...আচ্ছা মন্দিরের শিল্পীরা কি সবাই দিনাজপুরের?স্টেলার প্রশ্নে বাস্তবে ফিরে এলাম। বললাম, না, না, তা কি করে হয়। শিল্পীরা তো এক জায়গায় থাকে না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তবে শিল্পীরা সবাই বাঙালি। অনেকেই কৃষ্ণনগর বলে একটা জায়গার। কৃষ্ণনগর জায়গাটা এখন পশ্চিম বাংলায়। বলতে বলতে মন্দিরের মূল প্রাঙ্গন থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসেছি। নয়াবাদে যে মসজিদ আছে, ওটা চোখে দেখার আগ্রহ স্টেলার মুখেচোখে প্রবল। মসজিদ দেখে আবার এখানেই ফিরে আসব। বিকেলের আগেই আবার দশ মাইল বাজার থেকে দিনাজপুরের বাসে উঠব। ভ্যানের জুয়েল দাঁড়িয়ে ছিল। আইসক্রিম খাচ্ছিল। আমাদের দেখে হাসল। কি রে জুয়েল। তুই নয়াবাদের মসজিদটা চিনিস না?জুয়েল মাথা ঝাঁকাল। ওখানে যাব। আমাদের নিয়ে যাবি?জুয়েল মাথা ঝাঁকাল। হাসল।রসিকতা করে বললাম, যাব তো। কিন্তু, দুপুরে খিদে পেলে-তখন?জুয়েল হাসল। তোদের বাড়িতে আজ কি রেঁধেছে রে?টাকি মাছের ভর্তা। ঢেপা নদীর টাকি?হয়। মেজ ভাই ধরিছে।আজ যদি দুপুরে তোদের বাড়িত যাই তো ? ... আমাদের দু’জনের পাতে ভাতের সঙ্গে অল্পখানি টাকি মাছের ভর্তাজুটবে তো?জুয়েল মাথা ঝাঁকাল। হাসল। স্টেলা আমাদের কথা শুনছিল। আগামাথা বুঝছিল না কিছু। বোঝার কথাও না, এ গভীর মধুর বুঝতে হলে ওকে আরও হাজার বছর বাংলার এই বিস্ময়কর জলহাওয়ায় বেঁচে থাকতে হবে। ঘুরে একবার ক্যামেরায় মন্দিরের শট নিল স্টেলা। তারপর আপন মনে বলল, সে যুগের বাংলার সমাজ এত অসাধারন উদার শিল্পীর জন্ম দিয়েছে যারা প্রার্থনার জন্য মসজিদ তৈরি করেছিল আবার কৃষ্ণমন্দিরে মাটি পুড়িয়ে রাধকৃষ্ণের লীলার ছবি ফুটিয়ে তুলেছিল ... ভাবলে কেমন যেন লাগে ... হ্যাঁ। মুহূর্তেই আমার জয়নুল আবেদীন আর এস. এম সুলতানের কথা মনে পড়ে গেল। সে কথা ভেবে বললাম, এই জুয়েলও কিন্তু সেই সমাজেরই একজন। বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করলাম। অনেকক্ষণ ধোঁয়া গিলছি না, মাথাট টলছে। কথাটা স্টেলা শুনল। ওর মুখের ঘোর তখনও কাটেনি। অভিভূত স্টেলা সামান্য ঝুঁকে জুয়েলের ঘামে ভেজা কালো কপালটি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্পর্শ করল।আমি আর সিগারে ধরালাম না। র্স্পশের এই সুন্দর দৃশ্যটি তামাকের কটূ গন্ধে ম্লান করার অধিকার আমার বিন্দুমাত্র নেই।উৎসর্গ; রেজওয়ানা আর সোহামনি।
false
rn
আমি বলতে চাই- কয়েকদিন পর ঈদ। সবার মনে এক আকাশ আনন্দ। আমি জানি, আজ বাংলাদেশের সব মানূষ বড় অস্থির আর ব্যাপক চিন্তিত। সমস্যা থাকলে তার সমাধানও আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত বুদ্ধিমতি এবং সাহসী। আমার বিশ্বাস তিনি সঠিক সিদ্দান্ত নিবেন এবং দ্রুত সব ঠিক করে দিবেন। অতীতে তার বড় বড় সিদ্দান্তের কথা গুলো আমরা ভুলে যাইনি। আমাদের দেশে এই সব ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে? তাদের লাভ টা কি? কিছু খারাপ মানূষ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। আর এই খারাপ মানূষ গুলোই দেশে-দেশে নানান সমস্যা সৃষ্টি করে। আদিকাল থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। কিছু লোক খারাপ কাজ করে তাদের প্রচুর টাকা নেই বলে আর কিছু লোক খারাপ কাজ করায় তাদের প্রচুর টাকা আছে বলে। গত রাতের ঘটনায় ৬ জন হামলাকারি নিহত এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। এইসব বাজে মানূষদের শিকড় এখন অনেক গভীরে চলে গেছে। এইসব হামলাকারি অবশ্যই অনেক শক্তিশালি। অবশ্যই সারা বাংলাদেশময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শুধু সরকার এদের ঝাঁটা দিয়ে পিটিয়ে দূর করতে পারবে না। এদের একেবারে নির্মূল করতে হলে সারা দেশের মানূষকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। তবে, আমরা এই সব জঙ্গি সংগঠন গুলোকে অবশ্যই দেশ থেকে বিতারীত করতে পারব। ৭১ সালে আমরা অসাধ্য সাধন করেছি। আমরা দরিদ্র দেশ্র জনগন হতে পারি কিন্তু আমাদেরে সাহস আর মনোবলের অভাব নেই। রাজাকারদের আমরা ছাড় দেইনি। তাদের সাঁজা হয়েছে। অনেকে হয়তো বলবেন, ৪৫ বছর লেগেছে। আমি বলব, 'দেরি হোক, 'যায়নি সময়।' আমার বিশ্বাস সরকার এবং সারা দেশের মানূষ মিলে ২/৩ বছরের মধ্যে এইসব জঙ্গি অনেক কমিয়ে ফেলতে পারবে। জনগনের প্রবল প্রতিরোধে হামলা গুলো একটু একটু করে কমতে থাকবে। শেষে দেখা যাবে- বছরে একটা দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপর দেখা যাবে তিন বছরে একটা ঘটছে। সকালে বাসের মধ্যে শুনলাম দুই লোক আলাপ করছে- এই কাজ করেছে আমেরিকা। আমেরিকা চায় হাসিনার সরকার কে সরিয়ে দিতে। প্রতিদিন দেশে চোরাগুপ্তা হামলা চলবে, একসময় দেশের মানূষ সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আমেরিকা তাদের পছন্দ মত সরকার ক্ষমতায় বসাবে। ইত্যাদি ইত্যাদি... আমরা দেশের সাধারণ জনগন চায় শান্তি। বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগনের মধ্যে এমন কেউ নাই দেশকে ভালোবাসে না। হ্যা তারা মাঝে মাঝে নিজেরা ঝগড়া করে মারামারি করে। কিন্তু তারপরও আমি বলব তাদের মধ্যে মায়া-মমতা আছে, ভালোবাসা আছে। একটা ঘটনা বলি, অনেকদিন আগে আবুল আর কাদের নামে দুই ছেলে খুব মারামারি করছে। তখন এক বড় ভাই এসে তাদের থামিয়ে দিয়ে, আবুল এর হাতে একটি ধারালো ছুড়ি দিয়ে বললেন, কাদের কে মেরে ফেল। কিন্তু আবুল কিছুতেই কাদেরকে মারবে না। তারপর বড় ভাই কাদের এর হাতে ছুড়ি দিয়ে বললনে, আবুল কে মেরে ফেল। কিন্তু কাদের কিছুতেই আবুলকে মারবে না। তখন বড় ভাই বললেন, তোমরা দুইজন খুব মারামারি করছিলে। একজন আরেকজন মেরে জামা ছিড়ে ফেলছে, চুল টেনে ছিড়ে ফেলছো কিন্তু ছুরি হাতে দেয়ার পর কেউ কাউকে একেবারে জানে মারতে চাইছো না কেন? কাজেই তোমাদের বিবেগ আছে । মন আছে, ভালোবাসা আছে। যারা জীবনে কারো কাছ থেকে স্বচ্ছ ভালোবাসা পায়নি তারাই একসময় হিংস্র হয়ে যায়। নানান অরাজাকতা ঘটায়। কাল রাতের ঘটনার কারনে খুব অস্থির লাগছে। মন খারাপ লাগছে। কি করি, কিছুই ভালো লাগছে। অফিসে এসে কোনো কাজই করতে পারছি না। খুব অস্থির সময় পার করছে সারা দেশের মানুষ। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:০৬
false
mk
যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীন বিএনপি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এ পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ৫ জন নেতার বিরুদ্ধে ফাঁসির দ-াদেশ ও ১ জনকে ৯০ বছরের কারাদ- প্রদান করেন। সর্বশেষ ১ অক্টোবর ফাঁসির দ-াদেশ দেওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। জামায়াতের ৬ নেতার ফাঁসির আদেশ ও কারাদ-াদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। জামায়াতের ৬ নেতার দ-াদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ জামায়াতকে একাই হরতাল ভাঙচুরসহ ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। বিএনপি কিছু রুটিন বক্তব্য দিলেও জামায়াত নেতাদের অনুরোধেও তাদের হরতালে কোনোরূপ সমর্থন দেয়নি বিএনপি। যদিও জামায়াত ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম অংশীদার। অবাক করা বিষয় হলো সাকা চৌধুরী বিএনপির অন্যতম নেতা হলেও তার ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো হরতালের ডাক দেয়নি বিএনপি। যদিও চট্টগ্রাম বিএনপি রায়ের পরদিন ২ অক্টোবর বন্দরনগরীসহ রাঙামাটি ও বান্দরবানে সাকার ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক দেয়; কিন্তু সে হরতাল ছিল ঢিলেঢালা। চট্টগ্রাম বিএনপির মুক্তিযুদ্ধপন্থি অনেক নেতাকেই হরতালে সাড়া দিতে দেখা যায়নি।সাকা চৌধুরীর ক্ষেত্রে হরতালের ডাক না দিয়ে ৩ অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি তাদের দলের এ নেতার পক্ষেও জামায়াতের নেতাদের মতোই আচরণ করেছে। এতে প্রতীয়মান হয় যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় আছে বিএনপি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোকÑএটা দেশের প্রায় ২ কোটি তরুণ ভোটারের প্রাণের দাবি। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করলে বিএনপিও বোঝে এই বিপুল তরুণ ভোটারের ভোট তারা পাবে না। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপি তাদের শরিক জামায়াত নেতাদের দ-াদেশের বিরুদ্ধে কোনো সক্রিয় প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এমনকি তাদের দলের একজনের ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধেও বিএনপি সক্রিয়তা দেখায়নি। সাকা চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার একদিন পর তারা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যেখানে জামায়াত তাদের নেতাদের রায়ের দিন এবং রায় ঘোষণার পর টানা একাধিক দিন হরতাল করেছে।এক্ষেত্রে বোঝা যায় যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিএনপি। তারা তরুণ সমাজের ভোটও চায়। আবার জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গও চায়। এক্ষেত্রে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধপন্থি ও প্রগতিশীল নেতারা চায় বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করুক; আবার প্রভাবশালী একটি অংশ চায় যুদ্ধাপরাধীরা যে যুদ্ধাপরাধী নয়, এই ইস্যুতে বিএনপি জোরালো ভূমিকা নিক। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে রাখলে তরুণ ভোটারদের ভোট হারাতে হয়; আর সম্পর্ক ত্যাগ করলে জামায়াতে ইসলামীর ভোট হারাতে হয়Ñএই ইস্যুতে বিএনপির মধ্যে এখন শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি এখন জামায়াত তথা যুদ্ধাপরাধীদের গিলতেও পারছে না আবার উগড়ে দিতেও পারছে না। আসলে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে উভয় সংকটে এখন বিএনপি।আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাবে উদ্বিগ্ন নেতা-কর্মীরাযুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভোট ব্যাংকে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা উপলব্ধিতে আছে বিএনপির প্রায় সব নেতা-কর্মীর মধ্যেই। এ নিয়ে তারা প্রবলভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ একেকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দ-াদেশ হওয়ার পর তরুণ সমাজ যে উচ্ছ্বাস ও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেÑএই দ- আওয়ামী লীগ কার্যকর করতে পারলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ যে পুরোপুরি ইউটার্ন নেবে তা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বোঝে বলেই তারা এখন চরম উদ্বিগ্ন। আর এ উদ্বিগ্নতার কারণেই বিএনপির প্রভাবশালী একটি অংশ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় রত। এই অংশটি চাচ্ছে আওয়ামী লীগকে দিয়ে একটি একতরফা নির্বাচন আয়োজন করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলতে। যাতে পরবর্তীতে আন্দোলনের মুখে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু চাপা পড়ে যায়; নির্বাচন ইস্যু সামনে চলে আসে। বিএনপির জামায়াতপন্থি এই প্রভাবশালী অংশটি মনে-প্রাণে চাচ্ছে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিতে। এতে তাদের ধারণা একতরফা নির্বাচন আন্দোলনের মুখে ভেস্তে দিয়ে নতুন নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে পারবে। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।বিএনপির একটি পক্ষ এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইলেও মুক্তিযুদ্ধপন্থি বিএনপি নেতারা উদ্বিগ্ন এজন্য যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ অন্যান্য দলকে নিয়ে যে নির্বাচন আয়োজন করবে, তার ফলাফলের ভিত্তিতে দলটি আবারো পুরো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় বসে যেতে পারবে। এ অংশটির ধারণা আওয়ামী লীগ আরেক টার্ম ক্ষমতায় থাকতে পারলে যুদ্ধাপরাধী প্রত্যেকের বিচার হবে, জামায়াত নিশ্চিন্ন হয়ে যাবে এবং দুই-তিন টুকরা হয়ে বিএনপিও নখদন্তহীন একটি দলে পরিণত হবে। তখন বিএনপির আম-ছালা দুটোই যাবে।
false
rg
বিরহের সুর বাজে প্রাণের মিলনমেলায়!!! অমর একুশে বইমেলার আর মাত্র দু'দিন। এরপরেই ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী এই অমর একুশে বইমেলা, আমাদের প্রাণের মিলনমেলা ভাঙছে। এখন চলছে বইপ্রেমীদের শেষ সময়ের পছন্দের বই কেনার হিরিক। বইপ্রেমী বন্ধুরা প্রিয়জনকে বই কিনে উপহার দিচ্ছেন। একুশের বইমেলার স্মৃতি হিসেবে নিজেদের গ্রুপ ছবি তুলছেন। কেউবা শেষ সময়ে আনা বইটি বন্ধুদের দেখাচ্ছেন। কেউবা প্রিয় পাঠককে দিচ্ছেন অটোগ্রাম। এ বছর অটোগ্রাফের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফটোগ্রাফ। গোটা ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই আমরা বই নিয়ে, লেখা নিয়ে, একুশের বইমেলার নানান সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে অনেক আড্ডা দিয়েছি। সেই আড্ডায় উঠে এসেছে আগামী দিনের প্রত্যয়। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রত্যয়টি ছিল, মৌলবাদী শক্তি যতই চোখ রাঙাক, যতই উসকানি দিক, যতই জুজুর ভয় দেখাক, শেষ পর্যন্ত আমাদের সবার প্রাণবন্ত উপস্থিতি, সকলের সহযোগিতার আগ্রহ ও মনোভাব, প্রাণের টান ও বন্ধুত্বের স্মারক, অদম্য উচ্ছ্বাস ও স্থির প্রত্যয়ে অমর একুশে বইমেলা সফলভাবে সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বছরের মত একুশের বইমেলাকে দু'ভাগে ভাগ করা হলেও, গত বছরের তুলনায় এবারের বইমেলা অনেক বেশি গোছানো ছিল। কিন্তু বইমেলার বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থীদের জন্য স্টলের মানচিত্রের অভাব যেমন ছিল, তেমনি লেখক-পাঠকদের জন্য বসার পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল, বইপ্রেমীদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পানির ব্যবস্থা ছিল না, পর্যাপ্ত ধুলা তাড়ানোর ঘাটতিসহ আয়োজক বাংলা একাডেমি'র জন্য ছিল শিক্ষণীয় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীতে একাডেমি একুশে বইমেলার এসব চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে বইপ্রেমীদের জন্য একটি সুন্দর, গুছানো ও নিরাপদ বইমেলা আয়োজন করতে সক্ষম হবে।এবারের বইমেলার সবচেয়ে খারাপ দিক ছিল- বইয়ের মোড়ক উন্মোচন নিয়ে রীতিমত পাগলামীটা। আর সবচেয়ে ভালো দিক ছিল- কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা মাত্র নির্দিষ্ট বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া। তবে বইমেলা দু'ভাগে ভাগ থাকায়, বইমেলায় প্রবেশে অনেকের নানান কিসিমের জটিলতা হয়েছে। যেমন- কেউ উদ্যান থেকে একাডেমির লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে বা একাডেমি থেকে উদ্যানে শেষ সময়ে আড্ডা দিতে বা বই কিনতে যেতে-আসতে চাইলেও, একাডেমি আটটার পরে আর কাউকে বইমেলায় প্রবেশ করতে দেয়নি। অনেক প্রকাশকের উভয় পাশে স্টল থাকায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের। তবে এবারের বইমেলায় উদ্যানের টাওয়ার প্রান্তের দিকে যাদের স্টল পড়েছে, তাদের বই বিক্রির হার তুলনামূলক কম। তারচেয়ে বরং উদ্যানে ঢুকেই শুরুর দিকে যাদের স্টল, তাদের বেচাবাট্টা তুলনামূলক একটু বেশি হয়েছে। তবে যে সকল প্রকাশনা ভালো বই প্রকাশ করেছে, সে বইগুলো ঠিকই বইয়ের যারা আসল পোকা, তারা মৌমাছির মত ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন। আর কোথাও বসতে না পেরে, পানি খেতে না পেরে, তারা ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি যে সকল খাবারের দোকানকে সুনির্দিষ্ট মূল্যতালিকার বিনিময়ে বইমেলায় সুযোগ দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে প্রায় সকল ক্ষুধার্ত মানুষই গলাকাটা দামে খাবার বিক্রির অভিযোগ করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একাডেমির সুনির্দিষ্ট মূল্য তালিকার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি দামে তারা খাবার বিক্রি করেছেন। যে কারণে অনেকেই আগে খাবার খেলে আর বই কিনতে পারেননি। আরা যারা আগে বই কিনেছেন, তাদের আর খাবার কেনার সুযোগ হয়নি। আগামীতে একাডেমির এই বিষয়টি আমলে নেওয়া উচিত। একাডেমি যে মূল্যতালিকায় খাবার বিক্রির সুযোগ দিয়েছিল, খাবার বিক্রেতারা তা রীতিমত লঙ্ঘন করেছে। এর দায় একাডেমি কিছুতেই এড়াতে পারে না। চা নিয়ে আমাদের ব্যাপকমাত্রায় বিক্ষোভ ও চিৎকারের পর, একাডেমি পুকুরপাড়ে ২০ তারিখের পর একটি মাত্র চায়ের স্টল দেবার সুযোগ দিয়েছিল, যেটি ছিল বইমেলায় আগত চাখোরদের চাহিদার তুলনায় রীতিমত মস্করা!আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামলেছেন। সেজন্য তাদের আন্তিরক ধন্যবাদ জানাই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে- আগামী দুইদিন, বইমেলার একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে এই সাফল্য ধরে রাখবেন। অনেক বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশাকে না মেটানোতে একাডেমিকে অনেক সময় গালমন্দ করেছি, প্রতিবাদ করেছি, অনেকের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করেছি, তা কেবল একটি প্রাণান্ত একুশে বইমেলার স্বার্থেই। বাংলা একাডেমি আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান। আমাদের সকল আন্তরিক প্রত্যাশাকে মেটানোর দায়িত্বও একাডেমির উপর বর্তায়। তবুও দীর্ঘ এক মাস একাডেমির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী দিনরাত যে কঠোর পরিশ্রম করে, একটি প্রায় সফল বইমেলা করেছেন, সেজন্য একাডেমির সবাইকে আমি উষ্ণ অভিনন্দন জানাই।পাশাপাশি সারা বাংলাদেশে, জেলায় জেলায়, উপজেলায় উপজেলায় এমনকি প্রামপর্যায়ে একুশের বইমেলাকে ছড়িয়ে দেবার জন্য, একাডেমির প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল। ঢাকার বাইরের অনেক বইপ্রেমী বন্ধুরা সময়াভাবে একুশের বইমেলায় আসার সুযোগ পায়নি, বইমেলাকে তাদের দ্বোরগোড়ায় নিয়ে যাবার জন্য বাংলা একাডেমিকেই আগামীতে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি প্রকাশক ও লেখক সম্প্রদায়কেও এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। আমাদের দেশের আঠারো কোটি মানুষের মধ্যেই সৃজনশীল ও মননশীল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মধ্যেই বইমেলার আসল উদ্দেশ্য নিহীত। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি নানামুখী বাস্তব উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা চাই, বছর জুড়েই অমর একুশে বইমেলার মত, প্রাণের বইমেলায় গোটা বাংলাদেশ শরিক হোক। বছর জুড়েই দেশের নানান প্রান্তে বইমেলা হোক। বছর জুড়েই প্রকাশকরা বই প্রকাশ করুক। কেবল ফেব্রুয়ারি মাস কেন্দ্রীক একুশে বইমেলা ও বই প্রকাশের কারণে, লেখক ও প্রকাশক উভয়ের মধ্যেই এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। যে কারণে অনেক মান সম্মত বই-ই প্রকাশ পায় না। তড়িঘড়ি করে, সম্পাদনা না করেই অনেক বই বইমেলায় প্রকাশ পায়। যা পাঠকের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণার সামিল। পাঠক আপনার বই কিনছেন বইটি পাঠ করার জন্য। পাঠের সেই সত্যিকারের তৃপ্তিটা না পেলে, পাঠক হয় সেই লেখকের লেখা ভবিষ্যতে এড়িয়ে যাবেন, নতুবা বই কিনে পাঠক যে অতৃপ্তির ঠেকুর গিলতে বাধ্য হলেন, সেটি বই পড়ার প্রতি পাঠকের বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হতে উৎসাহিত করতে পারে। যা ফেসবুক যুগে বই পড়ার জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। দেশে অনেক টেলিভিশন চ্যানেল হয়েছে, অনেক জাতীয় পত্রিকা রয়েছে, কিন্তু একুশের বইমেলা কভার করার জন্য, যে ধরনের রিপোর্টার বইমেলায় থাকা উচিত ছিল, বিশেষ করে যারা প্রকৃত লেখকদের অন্তত ভালোমত চেনেন, ভালো বইটির রীতিমত খবর রাখেন, সেখানে আমাদের মিডিয়া, আমার দৃষ্টিতে ভয়ংকরভাবে ফেল করেছে। আমাদের মিডিয়া যে স্টাইলে বইমেলা কভার করেছে, আগামীতে আমি এদের জন্য অন্য কোনো লেখায় কিছু পরামর্শ দিতে চাই। বইমেলা কভার জন্য অন্তত লেখাপড়া জানা অনুসন্ধানী রিপোর্টার বইমেলার মাঠে খুব জরুরি। যার যোগান দিতে আমাদের এবার মিডিয়া সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ধারণা, খুব সুন্দর চেহারার একটি মেয়েকে দিয়ে বা কোনো তারকাকে দিয়ে বইমেলা কভার করালে বুঝি, ওটি দেখতে খুব সুন্দর হয়। কিন্তু বইমেলা কভার করার জন্য ন্যূনতম লেখাপড়া জানা, সে যে চেহারার হোক না কেন, দক্ষ রিপোর্টার খুব জরুরি। যিনি লেখককে ঠিক প্রশ্নটি করতে জানেন, ঠিকঠাক ভালো বইটি চট করেই আবিস্কার করার যোগ্যতা রাখেন, বইপ্রেমীদের আবর্জনার স্তূপ থেকে ভালো বইয়ের খবরটি জানাতে পারেন, তেমন চৌকশ রিপোর্টার বইমেলা কভার করার জন্য খুব জরুরি। আমাদের পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে তেমন অনেক রিপোর্টার আছেন, কিন্তু মিডিয়াগুলো বইমেলা কভার করার জন্য এক ধরনের আতলামী করেছে, যা একটি ভালো বইয়ের পরিবর্তে পাঠক ঠকানো অনেক খারাপ বই বইপ্রেমীদের কিনতে উৎসাহ জুগিয়েছে। আমাদের মিডিয়ার এত বড় অধপতনে আমি খুব অবাক হয়েছি। একটি জাতি গঠনে মিডিয়ার সত্যিকারের যে রোলপ্লে করার কথা, মানুষের অন্তর্চক্ষু খুলে দেবার জন্য মিডিয়ার যে ভূমিকায় থাকার কথা, আমাদের মিডিয়া দিনদিন সেখানে পাপেট শো করে যাচ্ছে। দিনদিন জনগণের সঙ্গে একটা তামাশার সম্পর্ক গড়ে তুলছে। আমাদের একজন চৌকশ তথ্যমন্ত্রী আছেন। আমাদের একজন অলরাউন্ডার সংস্কৃতিমন্ত্রী আছেন বটে, কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে যেভাবে জাগ্রত করার জন্য, তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, সেখানে তাদের আমার রীতিমত পাশ মার্ক দিতেই কষ্ট হচ্ছে। সরকার সংস্কৃতিবান্ধব সমাজ গড়ার মানসে মুখে যে উন্নয়নের ফানুস উড়ান, মাঠপর্যায়ে সেখানে সংস্কৃতি ও কৃষ্টির পরিবর্তে মৌলবাদ শক্তভাবে শিকড় গেড়েছে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানসপটে যে সত্যিকার আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মনন ও শৈলীতে মানুষ গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা সরকার দাবি করেন, বাস্তবে কার্যকর ব্যবস্থার অভাবে তার উল্টো জোয়ারের পাল্লাই ভারি। সারা দেশে ধর্মান্ধ মানুষের সংখ্যা বরং দিনদিন বাড়ছে। অমর একুশে বইমেলার যে মূল চেতনা, সেই চেতনার মধ্যেই একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজবেষ্টিত বাংলাদেশের স্বপ্নের কথাই আমি বুঝি। বাস্তবে কার্যকর উদ্যোগের অভাবে বরং উল্টো বাংলাদেশ এক ধর্মান্ধ সমাজের দিকেই কেবল অগ্রসর হচ্ছে।বাংলা একাডেমি এবার একুশে বইমেলা আয়োজনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনেরও আয়োজন করেছিল। কিন্তু সেই সম্মেলন একাডেমির প্রচার ও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে, খোদ কবি-লেখকদের মধ্যেই কোনো সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে একুশের বইমেলাকে ঘিরে একটি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন হয়ে গেল, অথচ সেটি কেবল কাগুজে বাঘ আর কাজীর গরুর আচরণ করলো, এটা কেমন যেন একটি হাস্যকর ব্যাপার হয়ে গেল। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীতে একাডেমি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন করার আগে, অন্তত কবি-লেখকদের সেই সম্মেলনে বিদেশী কবি-লেখকদের সঙ্গে একটি মেলবন্ধন ঘটানোর উদ্যোগ নেবেন। নইলে এ ধরনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন কেবল কাগুজে উদাহরণ হয়েই থাকবে, এটা নিয়ে দেশের নতুন প্রজন্মের কবি-লেখকদের মধ্যে তাড়না বা উৎসাহ কাজ করবে না। অমর একুশে বইমেলার আগামী দুটি দিন বইপ্রেমীদের জন্য আনন্দমুখর হয়ে উঠুক। সবাই পছন্দের বই কিনুক। আমরা একটি সফল ও নিরাপদ একুশে বইমেলা দেখেই, আমাদের এই প্রাণের মিলনমেলা থেকে অন্তত এইটুকু ভালো স্মৃতি নিয়েই ঘরে ফিরতে চাই। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। জয়তু অমর একুশে বইমেলা। জয়তু প্রাণের মেলা। .............................................২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:০৯
false
rn
মাউন্ট এভারেস্ট মাউন্ট এভারেস্ট বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।এটি হিমালয় পর্বতমালার একটি অংশ, এশিয়ার নেপাল এবং চীনের সীমানার মধ্যে এর অবস্থান। ২০০৮ সালের শেষ পর্যন্ত ২,৭০০ জন পর্বতারোহী সর্বমোট ৪,১০২ বার এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেছেন।১৮৫২ সালে বাঙ্গালি গণিতবিদ ও জরিপকারক রাধানাথ শিকদার দেরাদুনে অবস্থিত জরিপ সদর-দপ্তরে বসে হিসাব-নিকাশ করে এভারেস্টের সঠিক উচ্চতা আবিষ্কার করেন এবং একে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেন।তিনি নিকলসনের তথ্যের ভিত্তিতে ত্রিকোণমিতিক পদ্ধতিতে এই হিসাব সম্পন্ন করেন।১৮৬৫ সালে রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটি আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ার নামকরণ করে মাউন্ট এভারেস্ট।১৯৭৮ সালের ৮ মে অস্ট্রিয়ার পিটার হেবলার এবং ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার প্রথম অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট এর চূড়ায় সফলভাবে অরোহণ করেন।১৯৭৫ সালের ১৬ মে প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করার কৃতিত্ব লাভ করেন জাপানের জুনকো তাবেই।প্রথম প্রতিবন্ধী হিসেবে ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টম হুইটেকার এভারেস্টের চূড়ায় উঠেন। একটি কৃত্রিম পা নিয়েও তিনি এভারেস্ট জয় করে বিশ্ববাসীকে চমকে দেন।পৃথিবীর এই উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ সব ধরণের পর্বতারোহীদের আকর্ষণ করে- একেবারেই নতুন পর্বতারোহী থেকে শুরু করে বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পোড়-খাওয়া পর্বত-অভিযাত্রীরাও এতে সফল আরোহণের জন্যে পেশাদার পর্বত পথ-প্রদর্শকদের পেছনে দেদারসে টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করে না।নেপালের আপা শেরপা সবচেয়ে বেশিবার এভারেস্ট জয় করেছেন। ১৯৯০ সালের ১০ মে থেকে ২০১১ সালের ১১ মে পর্যন্ত তিনি মোট ২১ বার তিনি এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন। পর্বতারোহীরা নেপালের পর্যটন আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস, কারণ এভারেষ্ট পর্বতশৃঙ্গ আরোহণে ইচ্ছুক প্রত্যেক পর্বতারোহীকে নেপাল সরকারের কাছ থেকে ২৫,০০০ মার্কিন ডলার মূল্যের একটি ব্যয়বহুল পারমিট সংগ্রহ করতে হয়।এতে আরোহণ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২১০ জন পর্বতারোহী প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে ৮ জন ১৯৯৬ সালে পর্বতের অত্যন্ত উঁচুতে ঝড়ের কবলে পড়ে প্রাণ হারান। বিশেষত ডেথ জোন এ আবহাওয়া এতোটাই প্রতিকূল যে বেশিরভাগ সময় হতভাগ্য পর্বতারোহীর মৃতদেহ সেখান থেকে উদ্ধার করা সম্ভবপর হয় না।১৮৬৫ সালে স্যার জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে পর্বতের নামকরণ করা হয় মাউন্ট এভারেস্ট। কিন্তু এ নামকরণে তাঁর ঘোর আপত্তি ছিল।গত ছয় দশকে প্রায় তিনশ অভিযাত্রী এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে মারা গেছেন, যাদের কারো কারো দেহাবশেষ হিমালয়েই রয়ে গেছে। নেপালে হিমালয় পর্বতারোহনের সবচেয়ে ভাল সময় বলে মে মাসকে মনে করা হয়, কারণ এই সময়ে সেখানে আবহাওয়া থাকে পর্বতারোহনের অনুকুল।প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে মুসা ইব্রাহিম এভারেস্ট চূড়ায় ওঠেন ২০১০ সালের ২৪শে মে।২০১১ সালের ২১শে মে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসাবে এভারেস্ট জয়ের গৌরব অর্জন করেন এম এ মুহিত।এরপর গত বছর প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে নিশাত মজুমদার ১৯ মে এভারেস্ট জয় করেন। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়া থেকে ফিরে আসার পথে বাংলাদেশী একজন পর্বতারোহী মোহাম্মদ খালেদ হোসেন (৩৫) মারা গেছেন।পঞ্চম বাংলাদেশি হিসাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে গত ১১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘কাজলের দিনরাত্রি’র পরিচালক খালেদ, যিনি সজল খালেদ নামেই পরিচিত।খালেদ ও শৈলীর একমাত্র ছেলে সুস্মিতের বয়স আড়াই বছর। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় তাদের বাসা। প্রকৌশলের ডিগ্রিধারী সজল খালেদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে।ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।পর্বতারোহণ নিয়ে এডমন্ড ভিস্টর্সেলের লেখা একটি বইও তিনি অনুবাদ করেছেন, যার নাম ‘পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ’। রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবের এক নারী এই প্রথম বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন।সৌদি আরবের বন্দর নগরী শহর জেদ্দায় জন্ম নেয়া রাহা বর্তমানে দুবাইয়ে থাকেন।এভারেস্ট জয়ের এই মিশনে চারজনের দলে ছিলেন রাহা, যার সঙ্গে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে একজন কাতারি ও একজন ফিলিস্তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠার চেষ্টা করেন।
false
mk
আন্দোলন_ দোটানায় জামায়াত যুদ্ধাপরাধের বিচার, শীর্ষনেতাদের ওপর ফাঁসির খড়গ, দলীয় নিবন্ধন বাতিল, নেতাকর্মীদের ওপর মামলার হুলিয়াসহ অস্তিত্ব সঙ্কটে কঠিন সময় পার করছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াতে ইসলামী। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির ঘোষিত ঈদের পর আন্দোলন নিয়ে দোটানায় রয়েছে দলটি। তাদের শীর্ষ পর্যায়ের একটি গ্রুপ আন্দোলনের পক্ষে মত দিলেও বৃহত্তর পক্ষটি এই মুহূর্তে আন্দোলনে রাজি নয়। বরং তাদের অভিমত, বিএনপির সঙ্গে জোটে নামমাত্র সঙ্গী হয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায় বিএনপির আন্দোলনের ফাঁদে পড়ে নিজেদের আরও ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। দলটির ঘনিষ্ঠসূত্র এসব তথ্য জানায়।সূত্রমতে, বর্তমান সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করতে বিএনপি ঈদের পর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন করতে চায়। সেই আন্দোলনে সঙ্গী হিসেবে পেতে চায় জামায়াতকে। কারণ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যদলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি নেই বললে চলে। আন্দোলনের পরিকল্পনা ঠিক করতে সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে জামায়াতের পক্ষে দলটির নায়েবে আমির একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিচারাধীন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদীসহ প্রবাসী জামায়াত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা তারেকের সঙ্গে ইফতার মাহফিলেও অংশ নেন।জানা গেছে, বৈঠকে ঈদের পর ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে জামায়াতকে। বিষয়টি উপস্থিত নেতাদের মাধ্যমে দলটির শীর্ষপর্যায়ে জানানো হয়েছে। এরপর থেকেই মূলত ঈদের পর আন্দোলন করা নিয়ে দোটানায় রয়েছে জামায়াত। আন্দোলন নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। নেতাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।সূত্র জানায়, ঈদের পর আন্দোলন করা নিয়ে দলটির নেতারা বিভক্ত। মাঠ পর্যায়ের একটি গ্রুপ সরকারকে চাপে রাখতে বিএনপির সঙ্গে ধারাবাহিক আন্দোলন করতে চায়। এজন্য অতি সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলটির নেতা আব্দুল হালিম, মঞ্জুরুল হক ভুঁইয়া আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা এই মুহূর্তে বিএনপির কথায় মাঠে না নামার পক্ষে মত দিয়েছেন। ওই গ্রুপটি বিএনপির আন্দোলনের ওপর কোনো ভরসা করতে পারছে না। তাদের মতে গত পাঁচ বছর বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করে তাদের কোনো কাজ হয়নি। বরং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। এখন নতুনকরে আন্দোলন করলে আরও বিপাকে পড়তে হতে পারে। মামলার হুলিয়া থাকায় দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদসহ শীর্ষনেতাদের জেলে যেতে হতে পারে। একাধিক মামলার হুলিয়া নিয়ে এখনও তারা দল পরিচালনা করছেন। তাছাড়া আন্দোলন করলে জেলে আটক বিচারাধীন শীর্ষনেতাদের আরও বিপদে পড়তে হতে পারে, দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে এবং গণগ্রেপ্তারের পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে বলেও দলটির এ অংশের নেতাদের অভিমত।জানা গেছে, জামায়াতের অন্যতম নীতিনির্ধারক ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর বিএনপির কথায় আন্দোলনে গেলে তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। দেশে ফিরতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।সূত্র আরও জানায়, বর্তমান সঙ্কট, ভবিষ্যতের আশঙ্কা সবকিছু বিবেচনা করে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে চায় জামায়াত। তবে বিএনপি জোটের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে থাকতে চায় দলটি। প্রয়োজনে জোটকে খুশি করতে দলটি বিএনপির সঙ্গে নামমাত্র কর্মসূচিও দিতে পারে বলে তাদের এক নেতা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঈদের পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শীর্ষনেতাদের একের পর এক বিচারের রায়। এ মুহূর্তে বিএনপির কথায় এখনই আন্দোলনে নেমে বাড়তি ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছেন নেতারা। অথচ গত পাঁচ বছর বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিলেও তাদের নেতাকর্মীকে মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে চায় দলটি।’জামায়াতের এক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল দাবি করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াত কিছু কৌলশ নিতে পারে, তাই বলে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছে বিষয়টি সঠিক নয়। ঈদের পর থেকে সময়-সুযোগ বুঝে তারা আন্দোলন করতে পারে বলেও আভাস দেন তিনি।’জানা গেছে, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মামলার হুলিয়া নিয়ে দল পরিচালনা করলেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন তাদের শীর্ষনেতাদের ছেলেরা। মামলা-মোকাদ্দমায় জড়ানো হতে পারে এ আশঙ্কায় তাদের দলের পদ পদবীতে রাখা হয়নি। দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীসহ শীর্ষ জামায়াত নেতাদের ছেলেরা দলটির পদ-পদবীতে না থাকলেও নেপথ্যে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার ধারাবাহিকতায় অতি সম্প্রতি সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গিয়ে বিএনপিজোট নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ও বৈঠক করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অনানুষ্ঠানিক দেখা সাক্ষাতের আড়ালে আন্দোলন পরিকল্পনাসহ জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে বলে জানা গেছে।(এমকে/জুলাই ২৭, ২০১৪ - See more at: Click This Link
false
hm
ফিলিপ কিনড্রেড ডিকের একটি গল্পের ভূমিকার অনুবাদ [আইজাক আজিমভ বা আর্থার সি ক্লার্ক আমাদের কাছে যতোটা পরিচিত, ফিলিপ কে ডিক ততোটা নন। আমি নিজেই তাঁর লেখা গল্পগুলো পড়া শুরু করেছি মাত্র কয়েক বছর আগে। তাঁর গল্পগুলোর মধ্যে নিতান্ত গড়মানের গল্প যেমন আছে, তেমনি পাঠককে স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো গল্পের সংখ্যাও কম নয়। আমার বিবেচনায় কল্পবিজ্ঞান ছোটোগল্পের মধ্যে সেরাগুলোর মধ্যে আর্থার সি ক্লার্কের "নাইন বিলিয়ন নেইমস অব গড" আর ফিলিপ কে ডিকের "সেকেণ্ড ভ্যারাইটি" রয়েছে। ডিকের গল্পগুলো কেমন, সেটা পাঠক নিজেই পড়ে যাচাই করে নিতে পারবেন। আমি কল্পবিজ্ঞান লেখকদের লেখার পেছনে ভাবনা নিয়ে কোনো লেখা পেলে আগ্রহ নিয়ে পড়ি। ডিজনি ফিল ডিকের "কিং অব দ্য এল্ভস" নিয়ে সিনেমা বানাবে, কয়েকদিন আগে এমন কথা শুনে আবার তার গল্পসমগ্রের প্রথম খণ্ড খুলে গল্পটা পড়া শুরু করেছিলাম। পড়তে পড়তে ফিল ডিকের প্রথম বিক্রি হওয়া গল্প "রুগ"-এর ওপর তার লেখা একটি নোট পেয়ে ভাবলাম, এটা বাংলায় ভাবানুবাদ করে তুলে দিই।] নিজের প্রথম গল্পটা বিক্রি হওয়ার পর লোকে প্রথমেই যা করে, সবচেয়ে জিগরি দোস্তকে ফোন করে ঘটনাটা তাকে জানায়। কিন্তু সে যখন মুখের ওপর ফোন রেখে দেয়, তখন ধন্ধে পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু একটা সময় গিয়ে বোঝা যায় ব্যাপারটা, দোস্তও গল্প বিক্রি করার চেষ্টা করছে, কিন্তু এখনও করে উঠতে পারছে না। তখন লোকে একটু ধাতস্থ হয়। কিন্তু বউ ঘরে এলে তাকে যখন ব্যাপারটা বলা হয়, সে তো আর মুখের ওপর ফোন রেখে দিতে পারে না, উল্টে অনেক খুশি হয়। আমি যখন ফ্যান্টাসি অ্যান্ড সায়েন্স ফিকশনের অ্যান্থনি বাউচারের কাছে রুগ বিক্রি করলাম, তখন আমি একটা গানের রেকর্ডের দোকানে খণ্ডকালীন কামলা দিচ্ছি, আর খণ্ডকালীন লেখালিখি চালিয়ে যাচ্ছি। আমাকে যদি তখন কেউ জিজ্ঞাসা করতো, আমি কী করি, আমি সবসময় বলতাম, আমি একজন লেখক। বার্কলির ঘটনা এটা, সন ১৯৫১। সবাই তখন লেখক। কেউ কোনো গল্প বিক্রি করে উঠতে পারেনি। আমি যাদের চিনতাম, তাদের বেশিরভাগই ভাবতো পত্রিকায় গল্প বিক্রি করাটা একটা খোট্টামো আর সম্মানছাড়া কাজ; তুমি গল্প লিখেছো, বন্ধুদের সামনে জোরে জোরে পড়েছো, তারপর সেটার কথা শেষমেশ সবাই ভুলে গেছে। সে সময় বার্কলি এমন ধারাই ছিলো। সবাই তব্দা খাইয়ে দেওয়ার কাজে আমার জন্যে আরেকটা সমস্যা ছিলো, আমার গল্পটা ছোটো কোনো পত্রিকায় সাহিত্যিক কর্ম ছিলো না, ছিলো কল্পবিজ্ঞান গল্প। বার্কলির লোকে সে সময় কল্পবিজ্ঞান পড়তো না (অল্প কিছু বিদঘুটে ভক্ত বাদে, যাদের দেখলে জীবন্ত সব্জি বলে মনে হতো)। "কিন্তু তোমার সিরিয়াস লেখালিখি কদ্দূর?", লোকজন আমাকে শুধাতো। আমার অবশ্য ধারণা ছিলো, রুগ বেশ সিরিয়াস একটা গল্প। এতে ভয়ের কথা আছে, বিশ্বস্ততার কথা আছে, ধোঁয়াটে ভয়ঙ্করের কথা আছে, আর আছে একটা ভালো প্রাণীর কথা, যে সেই ভয়ঙ্করের কথা পছন্দের লোকজনকে জানাতে পারে না। এরচেয়ে সিরিয়াস আর কী হতে পারে? লোকজন সিরিয়াস বলতে আসলে বোঝাতো "গুরুত্বপূর্ণ"। সংজ্ঞা অনুযায়ীই কল্পবিজ্ঞান ছিলো অগুরুত্বপূর্ণ। রুগ বিক্রি হওয়ার পরের কয়েক হপ্তা আমি কুঁকড়ে থাকতাম, কারণ আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আমার গল্প, যেটা কি না আবার কল্পবিজ্ঞান, বিক্রি করে আমি একটা সিরিয়াস আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছি। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলো, যখন আমি এই কল্পবিশ্বাসকে লালন করতে লাগলাম যে আমি হয়তো লেখক হিসেবে করে খেতে পারবো। আমার মনের মধ্যে কল্পনাটা ছিলো এমন, আমি রেকর্ডের দোকানে আমার কামলা ছেড়ে দিয়ে একটা আরো-ভালো টাইপরাইটার কিনে পুরোটা সময় লিখে যাবো, আর এই করে করে আমার বাড়ির কিস্তির টাকা শোধ করে যেতে পারবো। তখনই আবার মনে হতো, এই বুঝি লোকজন এসে পাকড়ে ধরে নিয়ে যাবে, আমার ভালোর জন্যেই। সুস্থ হওয়ার পর আর এসব চিন্তা মাথায় খেলবে না। আবার রেকর্ড স্টোরের কাজে ফিরে যাবো (কিংবা সুপারমার্কেট, কিংবা জুতো পালিশের কাজে)। লেখক হওয়া আসলে ... কীভাবে বোঝাই ... একবার এক দোস্তকে শুধালাম, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে সে কোন খাতে ঢুকবে, সে ব্যাটা বললো, "আমি জলদস্যু হবো।" সে একেবারে খাড়ার ওপর সিরিয়াস ছিলো। রুগ বিক্রি হলো, তার কারণ টোনি বাউচার আমাকে ছক কেটে দেখিয়েছিলো, মূল লেখাটা কীভাবে পাল্টানো উচিত। ওর সাহায্য ছাড়া আমি হয়তো এখনও রেকর্ডের দোকানে পড়ে থাকতাম। আমি খুবই সিরিয়াসলি বলছি এ কথা। টোনি তখন একটা ছোটো লেখার টোল চালাতো তার বার্কলির বাড়ির বৈঠকখানায় বসে। সে আমাদের গল্পগুলো জোরে জোরে পড়ে শোনাতো, আর আমরা টের পেতাম --- গল্পগুলো যে নাখাস্তা, শুধু তা-ই নয় --- গল্পগুলোকে কী করে সারিয়ে তোলা যায়। আমাদের লেখা গল্পগুলো ভুয়া ছিলো, এটা ধরিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট নয়, এমনটাই মনে করতো টোনি; গল্পটার আগাপাশতলা পাল্টে সেটাকে একটা শিল্পকর্ম কীভাবে করে তোলা যায়, সে ব্যাপারেও সে সহায়তা করতো। হপ্তায় এক ডলার করে দাম হাঁকাতো সে। এক ডলার! এ দুনিয়ায় যদি কখনো কোনো ভালো মানুষ থেকে থাকে, সেটা অ্যান্থনি বাউচার। আমরা তাকে সত্যিই ভালোবাসতাম। হপ্তায় একবার সবাই একসাথে বসে পোকার খেলতাম আমরা। পোকার, অপেরা আর লেখালিখি, সবই টোনির কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আমি ওকে বড় মিস করি। ১৯৭৪ সালে একবার স্বপ্নে দেখলাম, মরে গিয়ে পরের দুনিয়ায় চলে গেছি, টোনি সেখানে সব ঘুরিয়ে দেখাবে বলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। স্বপ্নটার কথা ভাবলে চোখ জলে ভরে যায়। দেখলাম, সে ঐ বাঘাটোনির রূপ ধরেছে, ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালের বিজ্ঞাপনে যেমনটা দেখায়। স্বপ্নে সে আনন্দে ডগমগ করে উঠেছিলো, আমিও। কিন্তু ওটা একটা স্বপ্ন; টোনি বাউচার মরে গেছে। কিন্তু আমি এখনও লেখক, ঐ লোকটার জন্যেই। আমি যখনই একটা উপন্যাস বা গল্প লিখতে বসি, এই লোকটার কোনো না কোনো স্মৃতি মনে পড়ে। হয়তো সে-ই আমাকে শিখিয়েছে, লিখতে হয় লেখার প্রতি ভালোবাসা থেকেই, উচ্চাশা থেকে নয়। এ জগতে সব কাজের জন্যেই এটা একটা ভালো শিক্ষা। এই ছোটোগল্পটা, রুগ, একটা সত্যিকারের কুকুরকে নিয়ে, যে টোনির মতোই এখন বিগত। সত্যিকারের কুকুরটার নাম ছিলো স্নুপার, আর আমি যেমন আমার কাজে বিশ্বাস করি, স্নুপারও তেমনি নিজের কাজে বিশ্বাস করতো। তার কাজ ছিলো (যা মনে হয় আর কী) খেয়াল রাখা, যাতে কেউ এসে তার মালিকের আবর্জনার পাত্র থেকে খাবার চুরি না করে। স্নুপার এই ভুল ধারণায় ভুগছিলো যে তার মালিক ঐ আবর্জনাকে মূল্যবান মনে করে। প্রতিদিন তারা কাগজের ঠোঙা ভর্তি সুস্বাদু খাবার বয়ে নিয়ে খুব সাবধানে একটা শক্ত ধাতব পাত্রের ভেতরে রাখে, তারপর ঢাকনাটা শক্ত করে এঁটে দেয়। হপ্তা যখন ফুরোয়, তখন পাত্রটা ভরে ওঠে --- আর তখন সৌরজগতের সবচেয়ে দুষ্ট সত্ত্বাগুলো একটা ইয়াব্বড় ট্রাকে চড়ে এসে সে খাবার চুরি করে। হপ্তার কোন দিন এটা ঘটে, স্নুপার সেটা জানতো, সবসময়ই শুক্রবারে ঘটে ব্যাপারটা। শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে স্নুপার ডাকা শুরু করতো। আমার বউ আর আমি চিন্তা করে দেখলাম যে ঠিক ঐ সময়ই আবর্জনাকর্মীদের অ্যালার্ম ক্লক বাজতে শুরু করে। ওরা কখন বাড়ি ছাড়ে, স্নুপার সেটা জানতো। সে ওদের শুনতে পেতো। কী ঘটতে যাচ্ছে, একমাত্র সে-ই জানতো, বাকিরা কিছুই পাত্তা দিতো না। স্নুপার নিশ্চয়ই ভাবতো, সে পাগলে ভরা একটা গ্রহে বাস করে। তার মালিকরা, আর বার্কলির বাকি সবাই, শুনতে পেতো যে আবর্জনাকর্মীরা আসছে, কিন্তু কারো কোনো চ্যাতবোধ ছিলো না। প্রতি হপ্তায় স্নুপারের ঘেউঘেউ শুনে আমার মাথা বিগড়ে যাওয়ার দশা, কিন্তু আমি স্নুপারের যুক্তি নিয়ে যতোটা উদ্বেলিত ছিলাম, আমাদের জাগানোর ব্যাপারে তার উন্মত্ত চেষ্টা নিয়ে ততোটা বিরক্ত ছিলাম না। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, এই কুকুরটার চোখে দুনিয়াটা কেমন? আমরা যেভাবে দেখছি, ও নিশ্চিত সেভাবে দেখছে না। সে নিজের একটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস দাঁড় করিয়ে নিয়েছে, ওর জগদ্দর্শন আমাদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কিন্তু যেসব প্রমাণের ওপর ও সেটা দাঁড় করিয়েছে, সেগুলোর কথা ভাবলে, সে জগদ্দর্শন যৌক্তিক। এটাই আমার সাতাশ বছরের পেশাদার লেখালিখির ভিত্তির একটা আদিরূপ: আরেকটি মানুষ, বা আরেকটি প্রাণীর মনের ভেতরে ঢুকে তার চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করা। সে আমাদের বাকিদের চেয়ে যতো ভিন্ন হবে, ততোই ভালো। একটা সজ্ঞান সত্ত্বাকে দিয়ে আমি শুরু করি, তারপর তার জগত নিয়ে অনুসিদ্ধান্তে আসি। তার পৃথিবী কেমন হবে, তা পুরোপুরি জানা নিশ্চিতভাবেই অসম্ভব, কিন্তু ভালো অনুমান তো করাই যায়। আমি এই ধারণাটা ক্রমশ গড়ে তুলি যে প্রতিটি প্রাণীই বাকিদের চেয়ে ভিন্ন এক জগতে বাস করে। আমি এখনও এ ধারণাকে সত্য মনে করি। স্নুপারের চোখে আবর্জনাকর্মীরা ছিলো ক্ষতিকর আর ভয়ানক। আমার মনে হয়, আমরা যেভাবে তাদের দেখেছি, স্নুপার তারচেয়ে ভিন্নভাবে দেখেছে। এই ধারণাটা, যে প্রত্যেক প্রাণী বাকিদের চেয়ে ভিন্ন চোখে দুনিয়াটাকে দেখবে, সবাই এ ব্যাপারে আমার সাথে একমত হবে না। টোনি বাউচার একজন বিশেষ বড় সংকলককে (ধরা যাক তার নাম জে.এম.) রুগ পড়ানোর ব্যাপারে উদগ্রীব ছিলো, যদি সে গল্পটাকে কোথাও কাজে লাগায় এ-ই ভেবে। মহিলার প্রতিক্রিয়ায় আমি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। "আবর্জনাকর্মীরা দেখতে ওরকম নয়", তিনি লিখলেন আমাকে, "তাদের পেন্সিলের মতো সরু ঘাড় আর ল্যাগবেগে মুণ্ডু থাকে না। তারা লোকজনকে ধরে খায় না।" আবর্জনাকর্মীরা দেখতে কেমন, আমার গল্পে তার বর্ণনায় মনে হয় ডজনখানেক ভুল তিনি ফর্দ করেছিলেন। আমি পাল্টা লিখলাম, ব্যাখ্যাসহ, যে হ্যাঁ, তিনি ঠিকই ধরেছেন, কিন্তু একটা কুকুরের চোখে --- আচ্ছা ঠিকাছে, কুকুরটাও ভুল করেছে। ঠিকই তো। কুকুরটা এই ব্যাপারে একটু পাগলা ছিলো। এখানে তো যে-সে কুকুর আর যে-সে কুকুরের চোখে আবর্জনাকর্মী নিয়ে কথা হচ্ছে না, বরং একটা পাগলাটে কুকুর --- যে কি না প্রতি হপ্তায় আবর্জনার পাত্রের ওপর হামলা দেখে দেখে পেগ্লে গেছে। কুকুরটা মরিয়া হয়ে উঠেছে, আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। সত্যি বলতে কী, এটাই আমার গল্পের মূল প্রতিপাদ্য; কুকুরটার হাতে আর কোনো উপায় নেই, আর এই সাপ্তাহিক আয়োজন তাকে পাগল করে তুলেছে। আর রুগের দল সেটা জানতো। তারা সেটা উপভোগ করতো। তারা কুকুরটাকে খ্যাপাতো। তারা কুকুরটার পাগলামোতে আশকারা দিতো। মিস জে.এম. আমার গল্পটা তাঁর সংকলনে নিলেন না, কিন্তু টোনি সেটা ছাপালো, এখনও ছাপা হচ্ছে গল্পটা; এখন গল্পটা হাই স্কুলে পাঠ্য করা হয়েছে। এক হাই স্কুল ক্লাসের সাথে আমি এ নিয়ে কথা বলছিলাম, যাদের বাড়ির কাজ হিসেবে গল্পটা দেওয়া হয়েছে, সব ক'টা বাচ্চাই গল্পটা বুঝতে পেরেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এক অন্ধ ছাত্র গল্পটা সবচেয়ে ভালো ধরতে পেরেছে। সে শুরু থেকেই বুঝতে পেরেছে, রুগ মানে কী। কুকুরটার হালছাড়া ভাব, কুকুরটার হতাশ ক্রোধ, আর ক্রমাগত পরাজয়ের তিক্ত উপলব্ধি। হয়তো ১৯৫১ আর ১৯৭১ সালের মধ্যে সাধারণ জিনিসের বিপদ আর রূপান্তরের মধ্যেই আমরা বেড়ে উঠেছি, যা আমরা আগে কখনো বুঝতে পারিনি। কী জানি। যাই হোক, রুগ, আমার প্রথম বিক্রি, আত্মজৈবনিক; আমি কুকুরটাকে ভুগতে দেখেছি, আর একটু বুঝতে পেরেছি (খুব বেশি না, কিন্তু একটুখানি হয়তো), কী তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো, আর আমি তার হয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। এটাই গোটা ব্যাপারটা। স্নুপার কথা বলতে পারতো না, আমি পারতাম। আমি তা লিখতে পারতাম, কেউ সেটা ছাপাতে পারতো আর অনেকে সেটা পড়তে পারতো। সাহিত্যের এটাই করণীয়: কণ্ঠহীনের কণ্ঠ হয়ে ওঠা। এ লেখকের নিজের স্বর নয়, যে সকল স্বর অশ্রুত থেকে যায়, তারই যোগফল। স্নুপার নামের কুকুরটা মরে গেছে, কিন্তু গল্পের যে কুকুরটা, বরিস, সে জীবিত। টোনি বাউচার মরে গেছে, যেমনটা আমিও একদিন মারা যাবো, আর হায়, আপনিও। কিন্তু যখন ঐ হাই স্কুল ক্লাসে রুগ নিয়ে কথা বলছিলাম, ১৯৭১ সালে, গল্পটা বিক্রির ঠিক কুড়ি বছর পর --- স্নুপারের ঘেউঘেউ আর তার যন্ত্রণা, তার মহৎ চেষ্টা, সবই জীবন্ত ছিলো, যা তার প্রাপ্য। আমার গল্পটা একটি জন্তুর প্রতি আমার উপহার, একটি জন্তু যে এখন দেখেও না, শোনেও না, আর বেঁচেও নেই। কিন্তু যা-ই বলেন না কেন, সে ঠিক কাজটিই করছিলো। এমনকি মিস জে.এম. সেটা না বুঝলেও। (রচনাকাল: ১৯৭৮)
false
mk
আর কতো লাশ চাই খালেদার_ অবরোধে সহিংসতার শিকার হওয়ার পর প্রাণ হারালেন আরও দুজন নিরীহ ব্যক্তি। তাঁদের একজন ট্রাকচালকের সহকারী আবদুর রশিদ (৩৮) মারা যান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে। অপরজন সিলেটের ট্রাকচালক বকুল দেবনাথ (৩৮) একই দিন সকালে মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলায় চার দিন আগে রশিদ এবং সপ্তাহ খানেক আগে বকুল দগ্ধ হয়েছিলেন।গতকাল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হয়েছেন আরও দুজন। বগুড়ায় আগুনে পুড়েছে সিমেন্টবোঝাই দুট ট্রাক। সিরাজগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। চাঁদপুরে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে অটোরিকশায় আগুন দেওয়া হয়েছে।বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের ২২তম দিন ছিল গতকাল। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সহিংসতা হয় ছয়টি জেলার অন্তত ছয় স্থানে। পাঁচটি যানবাহনে দেওয়া হয় আগুন। নাশকতার আশঙ্কা, সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ, মামলা ও অন্যান্য ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় ৩৫০ জনকে।গত বছরের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে টানা এ অবরোধ চলছে। তবে সহিংসতার শুরু এর দুই দিন আগে থেকেই। গত ২৪ দিনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩৮ জন। আগুন দেওয়া হয় ৩৩৮টি যানবাহনে এবং ভাঙচুর করা হয় ৪৩১টি।ঢাকার বাইরের চিত্র: অবরোধের আগুনে দগ্ধ ট্রাকচালকের সহকারী আবদুর রশিদ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে মারা যান। তাঁর বাড়ি দিনাজপুর সদরে। ট্রাক নিয়ে রংপুর থেকে দিনাজপুর যাওয়ার পথে ২৩ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের ভুষিরবন্দর সেতু এলাকায় দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি।ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হয়েছেন ট্রাকচালক আজিজুর রহমান (৩৫)। এ ঘটনায় দগ্ধ হন তাঁর সহকারী মো. শামীম (২৩)। গতকাল সকাল সাতটার দিকে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের শুকলালহাট সেতু এলাকায় এ হামলা হয়।আজিজ বলেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে ট্রাক নিয়ে ফিরছিলাম। সীতাকুণ্ড পার হয়ে আসার পর পাশ থেকে দুই যুবক রাস্তায় উঠে এসে বোমা ছুড়ে মারে। আগুন ধরে যায় আমার শরীরে। এ অবস্থায় ট্রাক ব্রেক করতে করতে রাস্তার পাশে লাফ দিয়ে খাদের পানিতে গিয়ে পড়ি। ট্রাকও পড়ে যায়।’দগ্ধ দুজনেরই বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলায়। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। আজিজের কোমর, দুই হাত, পাসহ শরীরের ২০ ভাগের মতো পুড়ে গেছে। শামীমের পুড়েছে বাঁ হাত ও পা। কেটে গেছে কপাল। এ নিয়ে এই ইউনিটে অবরোধের মধ্যে দগ্ধ চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচজনে। বাকি তিনজনের একজন রাজমিস্ত্রি, একজন ট্রাকচালক ও অপরজন রিকশাচালক।চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনের সড়কে গত সোমবার রাতে একটি অটোরিকশায় পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন জানান, কাউকে আটকও করা যায়নি।চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি মুখার্জিঘাট এলাকায় যাত্রী নামাতে যান। এরপর সেখান থেকে অটোরিকশাটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে এলে দুটি ছেলে অটোরিকশা থামায়। এদের একজন ভেতরে ঢুকেই পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্যজন পেছনে পেট্রলবোমা মেরে পালায়।বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় সোমবার রাত ১১টার দিকে সিমেন্টবাহী দুটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনটি ককটেলেরও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভান। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে ট্রাক দুটি দিনাজপুরে যাচ্ছিল। ট্রাকচালকদের একজন ফজলুল হক বলেন, পেট্রল দিয়ে পোড়ানোর আগে দুর্বৃত্তরা ট্রাকের দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধেয়ে আসে। এ সময় তাঁরা ট্রাক থেকে নেমে দৌড়ে নিজেদের রক্ষা করেন।রাজশাহী নগরে গতকাল পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছুড়েছেন ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, সকাল ১০টার দিকে ছাত্রশিবির কর্মীরা সাগরপাড়া পদ্মা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রাস্তায় আগুন জ্বেলে বিক্ষোভ করেন। পরে সেখানে পুলিশ গেলে তাঁরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে দুটি হাতবোমা ছুড়ে পালিয়ে যান। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হননি।সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দিয়েছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিরাজগঞ্জ-নলকা সড়কের চণ্ডীদাসগাতী বেইলি ব্রিজের পাশে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে হাটিকুমরুলগামী প্রান্তিক পরিবহনের একটি বাস চণ্ডীদাসগাতী বেইিল ব্রিজের কাছে পৌঁছালে সেটি থামিয়ে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। আতঙ্কে যাত্রীরা নেমে গেলে বাসটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
false
rg
আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি না।। রেজা ঘটক আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি না। ভাত থাকতে ভাত না থাকার অভাবও বুঝি না। জাত থাকতে জাতের মর্যাদার কথাও বেমালুম ভুলে যাই। ঘাট থাকতে ঘাটের ইতিহাসও ভুলে যাই। পাট থাকতে পাটের জৌলুসও হারিয়ে ফেলি। খাট থাকলে ফ্লোরে কাটানো ব্যাচেলর লাইফের কথা ভুলে যাই। মাঠ থাকলে ফসলের হাসির কথাও ভুলে যাই। তাঁত থাকতে তাঁতির গৌরবের কথা ভুলে যাই। কাঠ থাকতে কাটপিঁপড়ার কথা ভুলে যাই। জ্ঞাত থাকলেও আমরা প্রতিদিন গন্তব্যে যাবার কথাও ভুলে যাই। সবকিছুতে আমাদের এই যে জাতীয় চরিত্র, এই যে অবহেলা, এই যে না বোঝার ভান করা, এই যে এড়িয়ে চলা, এটাই আমাদের পিছিয়ে দেয়। শাহবাগে নতুন প্রজন্মের ডাকে একাত্তরের সকল মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক আন্দোলনও এই দুষ্টচক্রের খপ্পরের বাইরে নয়। মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী যে রাজনৈতিক দলেরই হোক, যার প্রশ্রয়েই থাকুক, যার থলের ভেতরে লুকাক, যার সাথেই ষড়যন্ত্র করুক, যার আঁচলের নিচেই পালাক, যার সাথেই ওঠাবসা করুক, তাদের আসলে একটাই পরিচয়- সে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী। তার অন্য সকল পরিচয় মুখোশের বহিরাবরণ। বাংলাদেশে সকল মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে না পারলে, তাদের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে না পারলে, তারা আগামী ১০০ বছরেও এভাবে কারো ছত্রছায়ায়, কারো ভোটের হিসাব নিকাশে, কারো স্বার্থরক্ষায়, কারো লেনদেনে বহাল থাকবে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে শুধু শীর্ষ গুটিকয়েক মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীর বিচার করলে, আর তা নিয়ে কয়েকদিন আন্দোলন করলে, শর্ষের ভেতরের ভূত কোনদিনই যাবে না। একাত্তরে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দল যদি সঠিক ভাবে তাদের অবস্থান তুলে ধরা, অন্তরের চাওয়া আর সেই বিচার বাস্তবায়নে তালবাহানা বা কুটরাজনীতির বেড়াজাল তৈরি করে গোটা ব্যাপারটাকে ধোয়াশা করে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে চায়, ইতিহাস একদিন সেই ঝাপসার বিচার করবে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অসুস্থ রাজনীতির মুখোশ ৪২ বছরে হাড়ে হাড়ে ধরে ফেলেছে। নতুন প্রজন্মের সবাই সেই মুখোশের ঘাপটি মারা অপরাজনীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে চায়। আমার পতাকা, আমার শহীদ মিনার, আমার বাংলা ভাষা, আমার মাতৃভূমি, আমার কথা বলার স্বাধীনতা, আমার লেখালেখির স্বাধীনতা, আমার সংস্কৃতি চর্চা করার স্বাধীনতা, আমার নিরাপদ বাসযোগ্য অধিকার কোনো উশকানি দিয়ে, কোনো রাজনৈতিক দাবার ঘুটির রক্তলোলুপে বলি হতে পারে না। নতুন প্রজন্মের সকল তরুণদের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। তরুণরা সবাই রাজনীতি সচেতন। তাদের গুজব দিয়ে মাথা গরম করা যাবে না। তাদের নিয়ে রাজনীতি খেলাও যাবে না। আমাদের একটাই দাবি- মানবতা বিরোধী সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হবে। তাদের ফাঁসি চাই। এই তাদের নিয়ে নতুন প্রজন্মের একুশ শতকের বাংলাদেশে আর কোনো অসুস্থ রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না। জয় বাংলা। জয় মেহনতি মানুষের জয়। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
false
ij
প্রাচীন ভারতের চার্বাক মত প্রাচীন ভারতের নিরেশ্বরবাদী চিন্তাকে বলা হয় চার্বাক। চার্বাক মতকে লোকায়ত মতও বলা হয়। চার্বাক একজন না অনেকজন সে বিষয়ে বির্তক রয়েছে। কারও কারও মতে "চারুবাক" থেকে চার্বাক শব্দের উৎপত্তি। চার্বাকরা সম্ভবত মিষ্টি মিস্টি কথা বলত, মানের রসের কথা বলত। "কী হবে সাধনা করে-একটাই যখন জীবন-তখন যতটুকু পার সুখভোগ করে নাও না কেন!" মনে করা হয় যে বৃহস্পতি নামে একজন নিরেশ্বরবদী দার্শনিক চার্বাক মতবাদের প্রবক্তা। বৃহস্পতির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৬০০। বৃহস্পতি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। বিশ্বাস করতেন না বেদ-এ। মানতেন না বৈদিক যাগযজ্ঞ। কেন? কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন-এ জগতে কিছুই অমর না। এমন কী মানবজাতিও। সবই যখন মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে তখন সুখভোগই মুখ্য হোক না কেন জীবনে? এমন কথা ওই সময়ের গ্রিসের দার্শনিক এপিকিউরিয়াসও বলতেন। যখন পরলোক নেই-তখন এ জগতে মন দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। "The four elements, earth, water, fire and air, have entered into the composition of the human body; consciousness results form their combination even as inebriation results from the use of intoxicants. Similarly, the soul takes its birth simultaneously with the body and is dissolved with its dissolution. The reaping of the fruits of good or evil deeds is, therefore, an utter impossibility. The soul is called into existence as the result of the combination of the four elements and is annihilated synchronously with the dissolution of the body. Therefore, the existence of the soul, after death, is not demonstrable by direct cognition. They believe in direct cognition only, because the inferential and cognate modes of reasoning have for their basis direct cognition. Therefore direct cognition being of primary importance, all the rest sink into secondary importance, and are, therefore, not acceptable. The enjoyment that results from embracing a beautiful woman is the greatest reward of human effort. The Charvakas reviled the Vedas saying that they were composed by buffoons, scoundrels and devils. They read their unauthoritative books and others that condoned their sensual and pleasurable life. . Renunciation of carnal pleasure is considered foolish, because it is mixed with pain. A wise man should reject pain and enjoy pleasure. কারও কারও মতে অবশ্য চার্বাক মতবাদের পথিকৃৎ একজন। তাঁর নামই চার্বক। চার্বাক Bārhaspatya-sūtras নামে বই লিখেছেন। তেরো শতকের দক্ষিণ ভারতের একজন প্রখ্যাত বেদান্ত পন্ডিত ছিলেন মাধবাচার্য। তিনি "সর্ব দর্শন সংগ্রহ" নামে এক বই লিখেছিলেন। সে বইয়ে চার্বাকদের নিয়ে একটি অধ্যায় আছে। মাধবাচার্য অবশ্য চার্বাকমত খারিজ করার জন্যই যা লেখার লিখেছেন। "সর্ব দর্শন সংগ্রহ"-এ তিনি লিখেছেন- ...but how can we attribute to the Divine Being the giving of supreme felicity, when such a notion has been utterly abolished by Charvaka, the crest-gem of the atheistic school, the follower of the doctrine of Brihaspati? The efforts of Charvaka are indeed hard to be eradicated, for the majority of living beings hold by the current refrain: While life is yours, live joyously; None can escape Death's searching eye: When once this frame of ours they burn, How shall it e'er again return? এমন কী মুগল সম্রাট আকবরের দরবারের ঐতিহাসিক আবুল ফজল তাঁর আইন-ই-আকবরী গ্রন্ধে চার্বাকদের নানা সামাজিক কল্যাণকর কাজকর্মের প্রশংসা করেছেন। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া। এবং Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৪৪
false
mk
বহু ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য অভূতপূর্ব রাজপথে সংঘাত-নৈরাজ্য ছেড়ে সংসদে আসার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনের শুরুতে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে গত চার বছরে বিরোধী দল নিয়মিতভাবে সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিয়ে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। আদালত অচিরেই মানবতা-বিরোধী, যুদ্ধাপরাধের সব মামলার রায় ঘোষণা করতে সম হবেন বলেও আশা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই ভবিষ্যতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হবে। ১৪৮ পৃষ্ঠার রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রায় পুরো অংশজুড়ে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাফল্যগাথা তুলে ধরা হয়। নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংসদের রেওয়াজ। সেই রেওয়াজ অনুযায়ী ২০১৩ সালের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপতি ১৪৮ পৃষ্ঠার ভাষণের ভূমিকাংশ পাঠ করেন। পরবর্তী অংশ পঠিত বলে গণ্য করেন স্পিকার। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, ‘বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতর থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, উন্মুক্ত ও পরমতসহিষ্ণু আচরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সব পরে সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা, সমস্যা নিরসনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রধান বিরোধী দল গত চার বছর সংসদীয় কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ না নিয়ে বিরত থেকে তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো বিশেষ অবস্থানে আঁকড়ে থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত জিইয়ে রাখা কিংবা সংসদ বয়কটের ব্যাপারে অনমনীয় থেকে জনগণ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন না করা গণতান্ত্রিক আচরণের পরিপন্থী।’ রাষ্ট্রপতি বিরোধী দলের প্রতি সংসদে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংসদ ও সরকার মেয়াদের সমাপনী বছরে এসে বিরোধী দলকে আবারও আহ্বান জানাব, বয়কট ও জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাত-নৈরাজ্যের পথ পরিত্যাগ করুন। আপনাদের যাবতীয় অভিযোগ, প্রস্তাব, সুপারিশ ও মতামত সংসদের ভেতরে এসে বলুন।’ বর্তমান নির্বাচন কমিশনই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আলোচনা প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আলোচনা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে একটি স্বাধীন, নিরপে ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে ও আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীতে একটি অবাধ, নিরপে ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সম হব।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ পর্যন্ত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ৫ হাজার ৫১০টি নির্বাচন/উপনির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিল বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার এই বিচারকাজ শুরু করেছে। আশা করা যায়, আদালত অচিরেই মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের সব মামলার রায় প্রদানে সম হবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদপে নিয়েছে। জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতি তার কলঙ্কের দায় লাঘব করতে সমর্থ হয়েছে। পলাতক খুনিদের আইনের আওতায় আনতে পারলে এই প্রয়াস পূর্ণতা পাবে।’ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের বিচার বিডিআর আইন অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে। হত্যাযজ্ঞ মামলার বিচারকাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে।’ রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে অর্থনীতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিটিক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ-সংক্রান্ত মামলায় জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বাংলাদেশের সাফল্য ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৬৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জনগণের মতায়ন ও উন্নয়ন’ মডেল এবং অটিজম বিষয়ে দুটি পৃথক রেজুলেশন গৃহীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গত চার বছর দেশের উন্নয়নের জন্য কঠোর ও নিরলস পরিশ্রম করেছে। অনেকক্ষেত্রেই অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। সমাপনী বছরে সরকার অবশিষ্ট নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি আশা করেন।রাজপথে সংঘাত-নৈরাজ্য ছেড়ে সংসদে আসার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনের শুরুতে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে গত চার বছরে বিরোধী দল নিয়মিতভাবে সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিয়ে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। আদালত অচিরেই মানবতা-বিরোধী, যুদ্ধাপরাধের সব মামলার রায় ঘোষণা করতে সম হবেন বলেও আশা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই ভবিষ্যতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হবে। ১৪৮ পৃষ্ঠার রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রায় পুরো অংশজুড়ে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাফল্যগাথা তুলে ধরা হয়। নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংসদের রেওয়াজ। সেই রেওয়াজ অনুযায়ী ২০১৩ সালের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপতি ১৪৮ পৃষ্ঠার ভাষণের ভূমিকাংশ পাঠ করেন। পরবর্তী অংশ পঠিত বলে গণ্য করেন স্পিকার। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, ‘বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতর থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, উন্মুক্ত ও পরমতসহিষ্ণু আচরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সব পরে সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা, সমস্যা নিরসনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রধান বিরোধী দল গত চার বছর সংসদীয় কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ না নিয়ে বিরত থেকে তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো বিশেষ অবস্থানে আঁকড়ে থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত জিইয়ে রাখা কিংবা সংসদ বয়কটের ব্যাপারে অনমনীয় থেকে জনগণ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন না করা গণতান্ত্রিক আচরণের পরিপন্থী।’ রাষ্ট্রপতি বিরোধী দলের প্রতি সংসদে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংসদ ও সরকার মেয়াদের সমাপনী বছরে এসে বিরোধী দলকে আবারও আহ্বান জানাব, বয়কট ও জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাত-নৈরাজ্যের পথ পরিত্যাগ করুন। আপনাদের যাবতীয় অভিযোগ, প্রস্তাব, সুপারিশ ও মতামত সংসদের ভেতরে এসে বলুন।’ বর্তমান নির্বাচন কমিশনই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আলোচনা প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আলোচনা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে একটি স্বাধীন, নিরপে ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে ও আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীতে একটি অবাধ, নিরপে ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সম হব।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ পর্যন্ত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ৫ হাজার ৫১০টি নির্বাচন/উপনির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিল বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার এই বিচারকাজ শুরু করেছে। আশা করা যায়, আদালত অচিরেই মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের সব মামলার রায় প্রদানে সম হবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদপে নিয়েছে। জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতি তার কলঙ্কের দায় লাঘব করতে সমর্থ হয়েছে। পলাতক খুনিদের আইনের আওতায় আনতে পারলে এই প্রয়াস পূর্ণতা পাবে।’ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের বিচার বিডিআর আইন অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে। হত্যাযজ্ঞ মামলার বিচারকাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে।’ রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে অর্থনীতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিটিক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ-সংক্রান্ত মামলায় জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বাংলাদেশের সাফল্য ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৬৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জনগণের মতায়ন ও উন্নয়ন’ মডেল এবং অটিজম বিষয়ে দুটি পৃথক রেজুলেশন গৃহীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গত চার বছর দেশের উন্নয়নের জন্য কঠোর ও নিরলস পরিশ্রম করেছে। অনেকক্ষেত্রেই অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। সমাপনী বছরে সরকার অবশিষ্ট নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি আশা করেন।
false
rn
ফরমালিন ফরমালিন প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংক্রমিত হতে না দেয়া। অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলতে পারে। রং তৈরী, বস্ত্রখাতে কাপড় কুঞ্চিত হতে না দেয়া, সংরক্ষণ, বিস্ফোরণ এবং পলিমার তৈরীতে এটি ব্যবহৃত হয়। ১০ জুন, ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল টক্সিকোলজি প্রোগ্রাম কর্তৃক ফরমালিনকে মানুষের ক্যান্সার রোগ সৃষ্টিতে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে জানায়।ফরমালিন মানুষের জন্য কতটা মারাত্মক তা বলে শেষ করা যাবে না।ফরমালডিহাইডের (রাসায়নিক সংকেত HCHO) ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ জলীয় দ্রবণই হলো ফরমালিন। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মিথানল মিশ্রত থাকে। পৃথিবীর সমস্ত রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণকারী এজেন্সি ফরমালিনকে কারসিনোজেনিক হিসাবে শ্রেনীভূক্ত করেছে। প্রকৃতিতে ফরমালিন কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের সংমিশ্রণে তৈরী হয়।শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ফর্মালিনের জলীয় দ্রবনকে ফর্মালিন হিসাবে ধরা হয়। ফর্মালিন সাধারনত টেক্সটাইল, প্লাষ্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।সভ্য কোনো দেশে খাদ্যে ফরমালিন দিয়ে বাজারজাতকরণের নজির চোখে পড়ে না। অতিলোভী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ফরমালিন মিশিয়ে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।এফবিআই আমেরিকার খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান ও মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ দেশটিতে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। ফরমালিনের মাধ্যমে অল্প খরচে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাছ সংরক্ষণ করা যায় বলে এর ব্যবহার অধিকমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। বিশেষত যেসব মৃত মাছ বিদেশ থেকে আসে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফরমালিনের উপস্থিতির খবর প্রায়ই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। কিন্তু ফরমালিন যুক্ত মাছ মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।বেশির ভাগ বড় মাছে ফরমালিন মেশানো হয়।১ নভেম্বর রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে ফরমালিন শনাক্তকরণ যন্ত্র চালু করা হয়।বিদেশ থেকে আমদানি করা এই যন্ত্রটির দাম এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা।যন্ত্রটি মাছের ওপরে ধরলেই তাতে ফরমালিনের মাত্রা উঠছে। এ কাজ পরিচালনার জন্য দুই ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। হার্টকে দুর্বল করে দেয়। ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে।ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই ফরমালিনমুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি।সর্বোচ্চ ১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান করে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ প্রণয়ন করা হচ্ছে। পানিতে প্রায় ১ ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফর্মালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়।ভিনেগার ও পানির মিশ্রনে (পানিতে ১০ % আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফর্মালিনই দূর হয়।ফল ও সবজি থেকে ফর্মালিনের দূর করতে-১০ মিনিট গরম লবণ পানিতে ফল ও সবজি ভিজিয়ে রাখতে হবে।এক গবেষনায় দেখা গেছে কাওরান বাজারে আসা মাছের প্রায় ৫% মাছই ফরমালিন যুক্ত। আর এই ফরমালিন যুক্ত মাছের মধ্যে সবচে বেশি হলো রুই জাতীয় মাছ ।ফরমালিন মূলত বিভিন্ন ল্যাবরেটরি ও শিল্পে ব্যবহৃত হয়। স্কুল-কলেজ ছাড়াও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও এর বহুল ব্যবহার রয়েছে মূলত নানা জিনিস সংরক্ষণের জন্য। তাছাড়া চামড়া, টেক্সটাইল, মেলামাইন এবং হ্যাচারি শিল্পেও এর বহুল ব্যবহার যৌক্তিক কারণেই।লিচুতে বিষাক্ত রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করে গাঁড় মেজেনটা রং তৈরি করা হয়। তাই গাঁড় মেজেনটা রঙ্গের লিচু কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
false
rn
বাচঁতে হলে জানতে হবে-১১ ১৬০০সাল১৬০০সালইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী গঠিত হয়।অর্কেষ্টা বাদনের প্রথম যুগ।১৬০২সালমুসা খান কে দমন করার জন্য রাজা মান সিংহ ভাওয়াল গড় থেকে তার সদর দপ্তর ঢাকায় স্থান্তর করেন।১৬০৪সালপর্যন্ত রাজা মান সিংহ ঢাকা ছিলেন।১৬০৫সালসমাট্র জাহাঙ্গীর দিল্লীর সিংহাসন আরোহন করেন।১৬০৬সালঢাকা কে বাংলার রাজধানী করা হয়।১৬০৮সালইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী বাংলা'য় আসে।হল্যান্ডের 'হান্স লিপার্শে' দূরবীন প্রথম তৈরী করেন।১৬০৯সালজার্মানিতে প্রথম নিয়মিত ভাবে সংবাদ পএ প্রকাশ শুরু হয়।১৬১০সালইতালির বিজ্ঞানী হ্যালিলিও টেলিস্কোপ তৈরী করেন।১৬১১সালনাসির খান ও দরিয়া খান মুঘলদের কাছে আত্নসমর্পন করেন।১৬১৩সালসমাট্র জাহাঙ্গীর আগ্রার নিকটে সিকান্দায় পিতা আকবরের সমাধি তৈরী করেন।১৬১৪সালনবাব কাসিম খান চিশতি ওরফে মাহতিশাম খান সুবাদার নিযুক্ত হয়ে আরাকান রাজ্যের বিরুব্ধে অভিযান চালান।১৬১৬সালশ্রেক্সপিয়ারের জন্ম হয়।১৬১৮সালনতুন সুবাদার নিযুক্ত হন সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের ভাই নবাব ইব্রাহীম খান ফতেহ জঙ্গ ওরফে মীর্জা ইবরাহীম।১৬২২সালপ্রথম ইংরেজী সংবাদ পএ প্রকাশিত হয়।১৬২৩সালমুসা খান ঢাকায় মৃত্যুবরন করেন।১৬২৪সালৈসয়দ মীর মুরাদ ঢাকায় ঐতিহাসিক হুসনী দালান নির্মান করেন।১৬২৬সালমগ রাজা খান দ্রামনি এক বিরাট নৌবাহিনী নিয়ে ঢাকা আক্রমন করেন।১৬২৭সালমারাঠী শক্তির সংগঠক শিবাজীর জন্ম।ফিদাই খান বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন।১৬২৮সালসমাট্র শাহজাহান কাসিম খান কে বাংলার গর্ভনর হিসেবে প্রেরন করেন।১৬২৯সালম্যানরিক লিখেছেন,প্রতি বছর শত শত বড় নৌকা ভরতি চাল ও অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য বাংলার বন্দর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো।১৬৩২সালনির্বাচিত নকশা অনুযায়ী তাজমহলের নির্মান কাজ শুরু হয়।ওলন্দাজ'রা হুগলিতে আসেন।১৬৩৩সালইংরেজরা হরিপুর ও বালেশ্বরে কুটি স্থাপন করে।১৬৩৫সালসুবাদার হয়ে আসেন মীর আবদুস সালাম ওরফে নবাব ইসলাম খান মুখহেদী।১৬৩৭সালভেনিস শহরে প্রথম অপেরা হাউস স্থাপিত হয়।১৬৩৮সালজন মিল্টন(কবি) ইউরোপে ভ্রমনে বের হন।১৬৩৯সালপর্যন্ত ২য় ইসলাম খান ঢাকার সুবাদার ছিলেন।১৬৪০সালদিনেমার(জাতি) ১৮টি জাহাজ ভারতে পাঠায়(ডেন মার্কের অধিবাসীরা বাংলায় দিনেমার নামে পরিচিত)।১৬৪২সালস্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্ম।১৬৪৩সালফ্রান্সের সিংহাসনে বসে ছিলেন রাজা চতুর্দশ লুই।১৬৪৪সালচালু হয় সংবাদ পএের লাইসেন্স প্রথা।ঢাকার নারিন্দায় নির্মিত হয় ব্যাপারী মসজিদ।১৬৪৭সালইতালির বিজ্ঞানী ইভান জেলিসটা টরিসেলী পারদ বায়ুচাপ মাপক যন্ত উদ্ভাবন করেন।১৬৫০সালচুড়িহাট্টা মসজিদ নির্মিত হয়।একটি মিশরীয় বীজ গনিতের সমস্যা আজও সংরক্ষিত আছে।১৬৫১সালবাহাদুর খান বাংলাসহ উড়ুষ্যা প্রদেশের সুবাদারির দায়িত্ব গ্রহন করেন।১৬৫২সালআরাকান রাজসভার কবি আলাওল 'পদ্মবতী' রচনা করেন।১৬৬০সালমধ্য আমেরিকায় কফির ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে।১৬৬১সালশেষ দিকে ইহতিশাম খানকে জাহাঙ্গীর নগরে প্রশাসক নিয়োগ করেন।১৬৬২সাল(Malpigi)ব্যাঙ্গের ধমনী ও শিরার যোগ সুএ আবিস্কার করেন।১৬৬৩সালদ্বিজ গিরিধর রচনা করেন-সত্য পীরের অলৌক কাহিনী সম্বলিত প্রাচীনতম পুঁথি।ওলন্দাজরা ঢাকায় বানিজ্য কুঠি স্থাপন করে।১৬৬৪সালবড় কাটরা নির্মান করা হয়।(ঢাকার চক বাজারে)শায়েস্তা খান প্রথম ঢাকায় আসেন।১৬৬৫সালটাইটান আবিস্কার করেন ক্রিষ্টিয়ান হেগেন্স।ফ্রান্সে টির্চাস ট্রেনিং এর প্রথম সূচনা হয়।১৬৬৬সালশায়েস্তা খান চট্রগ্রাম জয় করে।১৬৬৭সালঅন্দরকিলা মসজিদ নির্মিত হয়।বিশ্বের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠে লন্ডন শহরে।১৬৬৮সালফরাসিরা বাংলায় আসে।১৬৬৯সালফসফরাস আবিস্কৃত হয়।(হেনিগ ব্যান্ড,জার্মানির রসায়নবিদ)ইংরেজরা ঢাকায় বানিজ্য কুঠি স্থাপন করে।১৬৭০সালমুদ্রন প্রযুক্তি বোম্বাইয়ে চালু হয়।১৬৭২সালশায়েস্তা খান ইংরেজদের বিনা শুল্কে বানিজ্যের অধিকার প্রধান করেন।প্যারিসে মান মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।১৬৭৪সালপ্রথম স্ব-উব্দাবিত অনুবিক্ষনের সাহায্য জীবানুর অস্তিত্ব প্রমান করেন,লেভেন হুক।১৬৭৫সালচক মসজিদ নির্মিত হয়।১৬৭৮সাললালবাগ কেল্লা নির্মিত হয়।(যুব রাগ আযম)১৬৭৯সালশায়েস্তা খান কাওরান বাজারে একটি মসজিদ ও সেতু নির্মান করেন।১৬৮০সালনীল বিদ্রোহের অবসান ঘটে।সাত গুম্বজ মসজিদ নির্মিত হয়।১৬৮২সালফরাসিরা ঢাকায় বানিজ্য কুঠি স্থাপন করে।১৬৮৪সালঢাকায় প্রবল বন্যার ফলে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়ে ছিল।১৬৮৫সালসর্বপ্রথম 'ক্রিকেট' কথাটি প্রচলন হয়।১৬৮৬সালইংরেজরা প্রথম বারের মতো বাংলা আক্রমন করে।১৬৮৭সালস্যার আইজ্যাক নিউটন মধ্যাকর্ষন সুএ আবিষ্কার করেন।(যুক্ত রাষ্ট)শায়েস্তা খান ইংরেজদের হুগলিতে আসার নির্দেশ দেন।১৬৮৮সালশায়েস্তা খান কে আগ্রায় বদলি করা হলে বাংলায় তার সুবাদারির অবসান ঘটে।১৬৮৯সাললন্ডন শহরে ঝুকি হস্তান্তর বা অবলিখন প্রক্রিয়া শুরু হয়।১৬৯০সালইংরেজরা একটি বনিক সংঘ স্থাপন করে ভারত বর্ষে ব্যাবসা শুরু করে।১৬৯১সালবিট্রিশ রসায়ন বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল মৃত্যুবরন করেন।১৬৯৭সালমায়া সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে।
false
mk
যেভাবে আলোচনায় আল্লামা শফী মূলত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আহমদ শফীর নেতৃত্বে ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলামের যাত্রা শুরু হয়। আহমদ শফী এ মুহূর্তে বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক। তার পড়াশুনা ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায়। সম্প্রতি শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করেই ইসলামিক গোষ্ঠী হেফাজত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। এছাড়া সংগঠনটির ১৩ দফা দাবিও সুশীল মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এসব দাবির মধ্যে ছিল নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিষিদ্ধ করা, বিদেশি সংস্কৃতি নিষিদ্ধ করা, মোমবাতি প্রজ্বলন নিষিদ্ধ করা। ঢাকায় গত ৬ এপ্রিলের সমাবেশে এই দাবিগুলো পেশ করে হেফাজত। সমাবেশের দিন নারী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় হেফাজতের লোকজন। হেফাজতের সামবেশে নারী সাংবাদিক কেন, মাথায় কাপড় নেই কেনÑএ ধরনের অজুহাত তুলে তাদের হেনস্তা করা হয়। একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক নাদিয়া শারমিনকে প্রচ- মারধর করা হয়। নাদিয়া হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের খবর সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় সমাবেশ থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ‘পুরুষের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন?’ একপর্যায়ে নাদিয়াকে মারতে মারতে সমাবেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়। বাংলানিউজ টোয়েন্টি ফোর ডট কমের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট জাকিয়া আহমেদ ৬ এপ্রিল কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির কাছে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে মারকাজুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশের ব্যানারে একটি মিছিল যাচ্ছিল। জাকিয়া সড়ক বিভাজনের পাশে দাঁড়িয়ে মিছিলের স্লোগান টুকে নিচ্ছিলেন। এ সময় মিছিলের মাঝখান থেকে একজন আঙুল তুলে জাকিয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ওই মাইয়্যা, মাথায় কাপড় নাই ক্যান?’বহুল আলোচিত-সমালোচিত ভিডিও ক্লিপে শফী বলেন, ‘মেয়েরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায়। তাদের চার-পাঁচ ক্লাস পড়লেই চলবে। বিয়ের পর তারা স্বামীর টাকা-পয়সার হিসেব রাখবে, এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট।’ মোবাইল ফোন নিয়েও শফী ভীষণ বিরক্ত। বর্তমান সময়কে মোবাইল ফোনের যুগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল ফোন রয়েছে। পুরুষ শিক্ষার্থীরা মেয়েদের ফোন নাম্বার যোগাড় করে এবং মেয়েরাও স্কুল-কলেজে গিয়ে পুরুষ শিক্ষার্থীদের নাম্বার নেয়। শিক্ষার নামে এটাই চলছে।’ হেফাজতে ইসলামের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বাড়ির বাইরে যেয়ো না। রাস্তায়, স্টেশনে, বাজারে, মাঠে নগ্ন হয়ে ঘোরাফেরা করো না। সাবধান! কেনাকাটা করতে যাবে না। তোমার স্বামী বা ছেলেকে বলো বাজার করার জন্য। তোমাকে কেন যেতে হবে? তুমি শুধু বসে থাকো এবং ছেলেকে হুকুম করো। তোমাকে কেন এই ঝামেলা পোহাতে হবে?’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১০ সালের হিসাব মতে, দেশের চাকরিজীবী নারীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। ২০০২-২০০৩ সালে এটা ছিল এক কোটি। তবু পুরুষের তুলনায় তা অর্ধেক।নারী সমাজের প্রতিক্রিয়াহেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শফীর নারী বিরোধী নানা অশ্লীল বক্তব্যের ভিডিওচিত্র সামাজিক গণমাধ্যম ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ায় দেশের নারী সমাজ ক্ষব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তার এ বক্তব্যে রাজনীতিতেও প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে একটি ওয়াজ মাহফিলে হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী নারীর বিরুদ্ধে দেয়া বক্তব্যের ভিডিওচিত্র ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে দেয়া এ ধরণের নোংরা বক্তব্যের জন্য আল্লামা শফীর শাস্তি দাবি করেছেন নারী নেত্রীরা। এদিকে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেত্রীরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নারী নেত্রীরা বলেছেন, আল্লামা শফীর মতো একজন বিজ্ঞ আলেম ব্যক্তির মুখে এ ধরণের বক্তব্য শোভা পায় না। ধর্মে নারীকে এভাবে বিকৃত করার অধিকার কাউকে দেয়নি। বিশিষ্ট নারী নেত্রী শিরীন আখতার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, এই বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য। তার মুখে নারীকে নিয়ে এ ধরণের কথা মানায় না। আল্লামা শফী সাহেব যদি বিশ্বাস করেন, ‘নারী তেতুলের মতো’ তাহলে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করা বৃথা। নারীকে ধর্মে বিকৃত করার জায়গা নেই। নারীকে বিকৃত করার অধিকারও ধর্ম কাউকে দেয়নি। তিনি আরও বলেন, বিবি খাদিজা (আ.) যেখানে নারীদের মধ্যে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, সেখানে নারীর মর্যাদা ইসলামে অনেক। সুতরাং আমরা মনে করি, এভাবে ধর্মকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করা ঠিক নয়। এ সময় তিনি আল্লামা শফীর বক্তব্য প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানান। বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার এমপি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, নারীকে নিয়ে এ ধরণের বক্তব্য দেয়া কোনো রুচিশীল ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লামা শফী সাহেবের এ ধরণের বক্তব্য নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর ও অরুচিকর বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ধরণের বক্তব্য দেয়ার জন্য তার বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন এ নারী নেত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন তানিয়া হক আল্লামা শফীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, আল্লামা শফী সাহেব তো নারীকে পুতুল, তেতুল, জীব-জন্তুর সাথে তুলনা করেছেন। তিনি কী জানেন, আল্লাহর এ রকম একটা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে কারও সাথে তুলনা করা যায় কিনা। তিনি যদি ইসলাম বুঝে থাকেন তাহলে এ ধরণের বক্তব্য দিতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, ইসলামের নাম করে, পর্দার নাম করে ম্যানুপুলেশন করে নারীর কাজ করার সমান অধিকার পুনরায় বন্ধ করার চেষ্টা করছে। রাসুল (সা.) তো কখনো এগুলো করেননি। তিনি বলেন, দেশেতো আসলে উন্নয়নমূলক কোনো ইস্যু নেই। দেশের উন্নয়নের কোনো খোঁজ নেই। তারা একেকটি ইস্যু তৈরি করে রাজনীতি করে। রাজনীতিবিদরা ধর্মকে ব্যবহার করে স্বার্থ উদ্ধারে তৎপর থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষকও আল্লামা শফীর বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক ড. কাবেরী গায়েন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, আল্লামা শফী সাহেবের বক্তব্য খুবই দুঃখজনক, অনভিপ্রেত। নারী-পুরুষের সমান অধিকার। রাষ্ট্র থেকে প্রতিহত করা হয় না বলে শফী সাহেবের মতো অনেকেই নারীকে নিয়ে এ ধরণের বক্তব্য দিতে উৎসাহ বোধ করে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এ ধরণের বক্তব্য বন্ধ করে দেয়া উচিত। তিনি নারীকে নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীরের এ ধরণের বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করেন।ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুসরাত তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ধর্মগুরু সেজে এরা শুধু ইসলামকে নিয়ে তামাশা করছে। বিকৃত মস্তিষ্কের এ মানুষটির বিচার এখন সময়ের দাবি হয়েছে দাঁড়িয়েছে। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা বলেন, এ ধরণের কোনো বক্তব্য আমি শুনি নাই। অতএব না জেনে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়। একই কথা বলেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা। তিনি এ বিষয়ে না জেনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।আহমদ শফীর গ্রেফতার দাবিনারীদের স্বাধীনতা, শিক্ষা ও চাকরি সম্পর্কে হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দেওয়া কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে রাজধানীতে মানববন্ধন হয়েছে। ১১ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জনতার শক্তি ও নারীদের নিয়ে নিউজপোর্টাল অপরাজিতা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ধর্মের নামে নারীর প্রতি এই মধ্যযুগীয় অবমাননা মানিনা। আমরা শফীর এ রকম বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নাট্যকার রোকেয়া প্রাচী বলেন, আল্লামা শফীর মতো একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ নারীদের নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং তাকে এ বক্তব্য প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানাই।হেফাজতের বক্তব্যনাস্তিক, ইসলামবিদ্বেষী ও তাদের সহযোগীদের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশের নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গত ১০ জুলাই এক বিবৃতিতে তিনি একই সঙ্গে কোনো মহলের চাপে তথাকথিত ‘প্রতিবাদী নারী সমাজ’-এর মহাসমাবেশ কিংবা শাহবাগিদের ‘গণজাগরণ মঞ্চের’ শ্রমিক সমাবেশের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নে নারীশ্রমিকদের ব্যবহার করতে না দেয়ার জন্য গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠন, মালিকসহ বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ’র নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে আল্লামা আহমদ শফী আরও বলেন, হেফাজতের লংমার্চ এবং মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সারাদেশে তৌহিদি জনতার যে মহাজাগরণ শুরু হয়েছে, তাতে ভীত ও দিশেহারা হয়ে নাস্তিক-বামপন্থী এবং তাদের সহযোগীরা এখন মিথ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরলমনা নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য তারা কর্মজীবী নারীদের ভুল বুঝিয়ে উসকে দিয়ে মাঠে নামাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও বামপন্থী নাস্তিকদের নেতৃত্বাধীন কিছু নারী সংগঠন ও এনজিও বিভিন্ন নামে এরই মধ্যে রাস্তায় মানববন্ধন, সভা-সেমিনার করে হেফাজতে ইসলামের দাবির ব্যাপারে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছে। তাদের সহযোহিতা করছে সুশীল সমাজ নামধারী কিছু ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি। তারা হেফাজতের ব্যাপারে নানা বিষোদগার করা ছাড়াও হেফাজতের দাবি মানা হলে ‘দেশ মধ্যযুগে ফিরে যাবে’ এবং ‘তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত হবে’ মর্মে কাল্পনিক বক্তব্য দিচ্ছে। তারা নারী ও দেশের তৌহিদি জনতা এবং ইসলামের চিরায়ত সংস্কৃতিকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। আল্লামা শফী বলেন, কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে নাস্তিক-মুরতাদ ও তাদের দোসরদের এ অপচেষ্টাও সফল হবে না ইনশাআল্লাহ।তিনি বলেন, যারা আজ হেফাজতের বিরুদ্ধে নারীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে, তারা অতি পরিচিত মুখ। তাদের বেশিরভাগই শাহবাগের নাস্তিকদের নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চে গমনকারী এবং তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণকারী। এসব পরিচিত মুখ সবসময় ইসলামের কৃষ্টি-কালচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে এবং বিজাতীয় ও ইসলামবিরোধী সংস্কৃতির চর্চায় লিপ্ত। এসব চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষীর কথায় এদেশের ধর্মপ্রাণ নারী সমাজসহ তৌহিদি জনতা বিভ্রান্ত হবে না।তিনি বলেন, মূলত শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চকে ঘিরে সেখানে নারী-পুরুষের যেভাবে অবাধ মেলামেশা, একত্রে রাত যাপন, এমনকি বৈধ সম্পর্ক ছাড়াই পর নারী-পুরুষের একই তাঁবুতে, একই কম্বলের নিচে অবস্থান করে রাত যাপনের ঘটনা ঘটছে। সেখানকার স্লোগান কন্যাদের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার বিষয় পত্র-পত্রিকায়ও এসেছে। শাহবাগি নাস্তিকদের দাাবির মুখে একটি পত্রিকা তাদের একটি গল্প প্রত্যাহার করে, গল্পের জন্য ক্ষমা চেয়ে, গল্পের লেখক ক্ষমা চেয়ে ঘটনার সত্যতাই অনেকাংশে প্রমাণ করে দিয়ে গেছে।
false
mk
জঙ্গিবিরোধী ঐক্য সম্রাট আকবরের সময় নাকি বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খেতো। যথারীতি এ ব্যাপারেও রয়েছে ভিন্ন মত। কেউ বলেন, বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খেতো বটে, তবে সে সময় মহিষের খরচা নাকি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কারণ বাঘ জল খাওয়ার পরই একটি করে মহিষ খেয়ে ফেলত। তখন ঘাটে আরেকটি নতুন মহিষ আনা হতো। এভাবে মহিষের চালান বাড়িয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খাওয়ানোর ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছিল। আরেকদল পণ্ডিতের মতে, একদিন সম্রাট ঠিক করলেন বাঘ আর মহিষকে তার প্রাসাদে দাওয়াত খাওয়াবেন। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, বাঘ আর মহিষ এলো দাওয়াত খেতে, তাদের দু’জনের সামনে খুবই সমাদর করে বিশাল বিশাল দু’টা হরিণের রোস্ট খেতে দেওয়া হলো। বাঘ তো মহা খুশি! আহা এতো মজার সুস্বাদু খাবার কতদিন খাই না বলেই ইয়ামি! ইয়ামি! বলে খাওয়া শুরু করলো। চেটে-পুটে সবটা সাবাড় করে কোমল পানীয় পান করে পরম তৃপ্তিতে একটা বিকট আওয়াজসহ ঢেঁকুর তুললো। এদিকে তো মহিষ বেচারা মন খারাপ করে, মুখ চুন করে বসে আছে, সে কি করে খাবে এই হরিণের মাংস? কোনোদিন খায়নি হরিণের মাংস, কি করে খেতে হয় তাও জানে না, সবচেয়ে বড় কথা হলো তার শরীরের গঠন, তার খাদ্যাভ্যাসে, তার পরিপাকতন্ত্রের গঠনে মাংস খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই দেখে তো সম্রাটের কপালে ভাঁজ! হায় ! হায় ! মেহমান খেতে পারছে না! এ দফা এভাবেই গেল।অনেক ভেবেচিন্তে সম্রাট কিছুদিন পর ওই মেহমানদের আবার দাওয়াত করল। এবার তিনি দু’জনের সামনেই নরম কচি তাজা তাজা সবুজ ঘাস দিলেন। মহিষের তো আজকে পোয়াবারো! জিভে জল এসে যাচ্ছে! সে তো আর সইতে না পেরে হম্ হম্ করে সুস্বাদু, পুষ্টিকর ঘাস খাওয়া শুরু করল। বাঘ বেচারার তো গালে হাত, সে কি খাবে! ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। এই দেখে সম্রাট মহাফাঁপরে পড়ে গেলেন, কি মুশকিল! এদের দু’জনকে তো ঠিকমতো মেহমানদারি করা যা্চ্ছে না!কিছুদিন পর তিনি আবার ওই দুই অতিথিকে দাওয়াত করলেন। এবার আর তিনি আগের ভুল করলেন না। সম্রাট মহোদয় গত দু’বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাঘকে দিলেন বিশাল বড় আকারের হরিণের রোস্ট, আর মহিষকে দিলেন বিরাট বড় রাজ থালায় তাজা তাজা ঘাস। এইবার বাঘ আর মহিষ দু’জনেই পেটপুরে, আয়েশ করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে হাসিমুখে সম্রাটের দরবার থেকে বিদায় নিলেন। সম্রাটও বুঝলেন যে কখন, কাকে, কীভাবে তার প্রয়োজনমতো, চাহিদা অনুয়ায়ী ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়!সম্প্রতি সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা’র আহবান প্রসঙ্গে এই গল্পটি মনে পড়ে গেল। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদী তত্পরতা মোকাবিলার জন্য কার্যকর ঐক্যবদ্ধ জাতীয় উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সবাই ‘বাঘ’ নয়, আবার সবাই ‘মহিষ’ও নয়। কেউ কেউ বাঘ, কেউ কেউ মহিষ। তাহলে বাঘে-মহিষে কী ঐক্য সম্ভব? কবি গুরুদাস পালের লেখা বিখ্যাত গানের কথাগুলো আমরা কেমন করে ভুলে যাব? তিনি লিখেছেন: “থাকিলে ডোবাখানা, হবে কচুরিপানা,/বাঘে হরিণে খানা একসাথে খাবে না/ও মরি, স্বভাব তো কখনো যাবে না!/জলের স্বভাব যেমন ধারা নিম্নদিকে ধায়,/আগুনেরই স্বভাব যেমন সবকিছু পোড়ায়/ছারপোকারই স্বভাব যেমন রক্ত চুষে খায়/তাকে না থুইলে বস্তু খায় উইপোকায়/পাতিকাক পুষে ঘরে, যতই পড়াও না তারে/সে শুধুই কা কা করে, ‘কেষ্ট’ ‘কেষ্ট’ বলে না/ও মরি, স্বভাব তো কখনও যাবে না!”“সাপের স্বভাব যেমন মারে বিষাক্ত ছোবল/ছেলে-ছোকরার স্বভাব যেমন পাকায় গণ্ডগোল/বিড়ালেরই স্বভাব যেমন হাঁড়ির পানে চায়/কখন শিঁকে পড়বে ছিঁড়ে তারই লালসায়। বুনো ওল খেলে পরে/গলাটা কুট কুট করে/ও যেমন সিঁধেল চোরে/ধরা পড়ে কবুল করে না/ও মরি, স্বভাব তো কখনো যাবে না! ও মরি, স্বভাব তো কখনো যাবে না!”আসলে স্বভাব সহজে যাবার নয়। যার যেমন স্বভাব তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করা দরকার। জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্যে কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গিবাদ সমর্থকদের নেয়া যাবে? ‘বাঘে-মহিষে’ বা ‘বাঘে-হরিণে’ খানা কী কখনও কোথাও খেয়েছে? না তাই সম্ভব?স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ঐক্য কী করে হবে? কীভাবে হবে স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য? আমাদের রাজনীতিতে জামায়াত আর বিএনপির সম্পর্ক তামাক আর ফিল্টারের মত—দু’জনে দু’জনার! আর জামায়াত সম্পর্কে অভিযোগের অন্ত নেই। এই দলটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে বাঙালি-নিধনে ভূমিকা পালন করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।আরও একটি কারণে জামায়াত প্রগতিশীল গণতন্ত্রমনা মানুষের কাছে ধিকৃত। কারণটি হচ্ছে তাদের ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। যারা জঙ্গি তত্পরতা চালাচ্ছে, ধর্মের নামেই চালাচ্ছে। তাই এই ধরনের তত্পরতায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে, জামায়াতের গোপন সম্পর্কের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। কয়েকটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কারো কারো শেকড় ছিল জামায়াতে এটাও ধরা-পড়া জঙ্গিদের কাছ থেকে জানা গেছে। এই জামায়াতকে কোলে নিয়ে বিএনপি বর্তমানে জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের তত্ত্ব-তালাশে ব্যস্ত!এইসব দল নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়া কী আদৌ বাস্তবোচিত? তাতে কি সুফল আসবে? স্বাধীনতার শত্রু, যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে না, যারা সংবিধান ও শাসনতান্ত্রিক মূলনীতি, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে কিসের ঐক্য? কার ঐক্য? মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ওই হিংস্র শক্তিগুলো আবার যে কোনো উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে তত্পর। আর তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতা হিসেবে বিএনপির নাম জোরে-শোরেই উচ্চারিত হচ্ছে।আমরা কী করে ভুলে যাব, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর চারদলীয় জোট কর্তৃক জঙ্গিবাদী সব অপশক্তিকে মদদ দেয়ার ঘটনা? আওয়ামীবিরোধী সন্ত্রাস, বোমাবাজি, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার ক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের কারো কারো সঙ্গে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর গোপন সংযোগের কাহিনি? তখন জঙ্গিবাদী কর্মতত্পরতাকে অস্বীকার করার চেষ্টা হয়েছে। বিভিন্ন নেতাকর্মীকে হত্যায় জঙ্গিদের আর্জেস গ্রেনেডসহ নানা অস্ত্র প্রয়োগের ঘটনাগুলো কী ভুলে যাওয়া যায়? ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমা হামলা, বিচারক হত্যা, শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অনেক নেতাকর্মী হত্যায় জঙ্গিবাদীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং সরকারের মদদের কথা কী ভুলে যাওয়া যায়? ১০ ট্রাকসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোপন পথে বিদেশ থেকে এনে দেশের ভেতরে ও বাইরে নেয়া এবং ব্যবহার করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তাতে জঙ্গিবাদের বিস্তার এবং এদের ওপর বিএনপির নির্ভরশীলতার কথা কী ভুলে যাওয়া যায়?২০০৮ সালে নির্বাচনে বিপর্যয় ঘটার পর বিএনপি আরও বেশি মৌলবাদী ভাবধারায় পুষ্ট হয়। চারদলীয় জোট ২০ দলে সম্প্রসারিত হয়। হেফাজতে ইসলামের সহযোগিতায় ২০১৩ সালের ৫ মে সরকার উত্খাতের যে নীলনকশা হয়েছিল তা রাজনীতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। এই হেফাজতকে প্রকাশ্য সমর্থন জানায় বিএনপি। এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক বিশ্বাস ও অবস্থান বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার হুমকি সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ভুল করার জন্য জামায়াত-হেফাজতসহ নানা গোষ্ঠী রাজনীতির মাঠে সশস্ত্র তত্পরতা চালায়। লাগাতার হরতাল-অবরোধের নামে বিভিন্ন যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে অসংখ্য মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। এখন জঙ্গিরা যা করছে, তখন জামায়াত-বিএনপি জোট সেই মানুষ হত্যার কাজটিই করেছিল।ঐক্যের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে এই ঐক্য হতে হবে স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তি ও দলগুলোর মধ্যে। ইতোমধ্যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখনও ঐক্যের কি বাকি আছে? সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য তো ইতোমধ্যে হয়েই গেছে। গ্রামে গ্রামে কমিটি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। অবশ্য যারা আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, যারা যুদ্ধাপরাধী এবং জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত তাদের কথা আলাদা। তারা ‘সর্প হয়ে দংশন করে, ওঝা হয়ে ঝাড়ে।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, যাদের ঐক্য হলে সত্যিকারভাবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দূর করা যাবে, তাদের ঐক্য ঠিকই গড়ে উঠেছে। এই ঐক্য টিকে থাকবে, এটাই বাস্তবতা। দেশের মানুষকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতন ও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি এর বিরুদ্ধে প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে বলেন।কথা ঠিক। সব দলকে, ‘বাঘ-মহিষ’কে একসঙ্গে, একমঞ্চে কেন উঠতে হবে? জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চাইলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে, নিজ নিজ দল ও জোট থেকেই তা করা হোক না কেন। জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্য চাইলে অবশ্যই বাঘ-সাপ-হায়েনা, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়-মদদদাতাদের বাদ দিয়েই করতে হবে। না হলে জোট হবে, ঐক্যও হয়তো হবে, কিন্তু এর ফাঁক দিয়ে জঙ্গিরা ঠিকই তাদের হিংস্রতা চালিয়ে যাবে! সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩
false
rg
৩৩ রান নাকি ২ উইকেট! কার পাল্লা ভারী!!! চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ড বনাম বাংলাদেশের মধ্যেকার প্রথম টেস্টে রেজাল্ট হবে। এটা এখন শতভাগ নিশ্চিত। বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৩ রান। আর ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২ উইকেট। চতুর্থ দিন শেষে টাইগার্সদের ডেব্যু ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান অপরাজিত ৫৯ রানে। সাব্বিরকে সহযোগিতার জন্য অপর ব্যাটসম্যান তাইজুল ইসলাম অপরাজিত ১১ রানে। আগামীকাল খেলার পঞ্চম দিন। প্রথম সেশানেই চট্টগ্রাম টেস্টের রেজাল্ট আসবে। এখন ক্রিকেট বোদ্ধাদের সকল হিসেব নিকেশ কে জিতবে চট্টগ্রাম টেস্ট। ইংল্যান্ড না বাংলাদেশ? নাকি টাই হবে এই টেস্ট? টাইগার্স ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান আজ যে মেজাজে ব্যাট চালিয়েছেন, সেদিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ সমর্থকরা এখনো আশায় বুক বাধছেন। ঠিক ২৮৬ রানের লক্ষ্য পেয়ে ম্যাচ জেতার ঘটনা ইতিহাসে আছে মাত্র একটি। ১৯২৯ সালে মেলবোর্ন টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ৫ উইকেট হারিয়ে খুব সহজেই সেই ম্যাচ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এবার কী সেই একই লক্ষ্যে বাংলাদেশ জিততে পারবে?বাংলাদেশ অলরেডি ৮ উইকেট হারিয়েছে। যে কারণে অস্ট্রেলিয়ার মত এখানে সমীকরণটি মোটেও সহজ নয়। এর আগে টেস্টে ২৮৫ বা তার বেশি রান তাড়া করে জেতার ঘটনা টেস্ট ইতিহাসে মাত্র ৩৪বার ঘটেছে। ২২২৪ টেস্টের ইতিহাসে ৩৪ কিন্তু খুব ছোট্ট একটা সংখ্যা। টেস্ট ক্রিকেটে রান তাড়া করে সবচেয়ে বড় জয় পাওয়ার রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০০৩ সালে অ্যান্টিগুয়া টেস্টে ৪১৭ রান তারা করে ৭ উইকেট হারিয়ে ৪১৮ রান করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ব্রায়ান লারার দল। আর টেস্টে চারশো রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার ঘটনা মাত্র তিনটি। এখন চট্টগ্রাম টেস্ট পুরোপুরি সাইকোলজি গেম। যারা টেমপারমেন্ট ধরে রাখতে পারবে, আগামীকাল সকালে সেই দল জিতবে। বাংলাদেশ গত ১৪ মাস টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে ছিল। সেখানে ইংল্যান্ড এই সময়ে ১২টি টেস্ট খেলেছে। একদিক দিয়ে এখন ইংল্যান্ড এগিয়ে। ওরা আমাদের থেকে অভিজ্ঞ দল। আমরা নবীন। অন্যদিক দিয়ে টাইগার্সরা এগিয়ে। কারণ বিগত ১৪ মাস টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে থেকে ইংল্যান্ডকে এমন একটি পর্যায়ে টেনে আনার সবটুকু কৃতিত্ব টাইগার্সদের। আমি বরং এই পর্যায়ে আমাদের সিলেকটরদের ভুল দেখতে পাই। অভিজ্ঞ জেনুইন পেসার আল আমিন, রুবেল, ইবাদতদের একাদশের বাইরে রেখে শফিউল আর রাব্বিকে নেয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের পেস অ্যাটাক এই টেস্টে জিরো লেভেলে। সিলেকটররা দ্বিতীয় যে ভুলটি আজ করেছে, সেটি হলো রাব্বীর জায়গায় তাইজুল বা সফিউলকে পাঠালে হয়তো বাংলাদেশের হাতে এখনো তিন উইকেট থাকতো ৷ কারণ, তখন ইংলিশ ক্যাপ্টেন আলস্টার কুক আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে দিনের অবশিষ্ট ৫ ওভার স্পিন আক্রমণে রিস্ক নিতে বাধ্য হতেন ৷কেননা এই পর্যায়ে পুরো খেলাটা এখন চরম মনসতাত্বিক গেইম ৷ আর স্পিন দিয়ে এই শেষ ৫ ওভার ওরা আক্রমণে থাকলে হয়তো সাব্বির আজকেই এক ঐতিহাসিক জয় এনে দিতে পারতেন। বাংলাদেশের জয়ের এখনো নিভু নিভু প্রদীপটা জ্বালিয়ে রেখেছে এই নবম উইকেট জুটি। চূড়ান্ত প্রত্যাশা নিয়ে এখনো উইকেটে আছেন সাব্বির। অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সাত নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে ফিফটি করা মাত্র চতুর্থ ব্যাটসম্যানের কীর্তিও গড়েলেন আজ সাব্বির। পাশাপাশি সাব্বিরের জন্য এখন আরেক ঐতিহাসিক মুহূর্তের মঞ্চ প্রস্তুত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মহানায়ক হয়ে ওঠার এক বিশাল সুযোগ সাব্বিরের সামনে। সাব্বির রাত পোহালে সেটা কোথায় কীভাবে নিয়ে যাবে, এটা এখনই বলা মুশকিল!বাংলাদেশ ৩৩ রান করে জয় ছিনিয়ে নিতে পারলে তা হবে টেস্ট ক্রিকেটে এক ঐতিহাসিক বিজয়। অন্যদিকে ইংল্যান্ড মাত্র ২টি উইকেটের জন্য প্রাণপন লড়াই করবে। এমন পরিস্থিতিতে যারাই সাইকোলজিক্যালি স্ট্রং থাকবে, তারাই জিতবে। পুরো ব্যাপারটা সাব্বির কীভাবে সামাল দেবে, তার উপর এই জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে। এমনিতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২টি ভালো বল। তাছাড়া বিতর্কিত আউট দেওয়ার জন্য মাঠে দুই আম্পায়ার ধর্মসেনা আর গ্যাফানে তো আছেই। যে কারণে আমি ভরসা রাখতে পারছি না পুরোপুরি। বাট, চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি আশাও ছাড়ছি না। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ টাই হবারও লক্ষণ কিন্তু আছে। সংক্ষিপ্ত স্কোর:ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৯৩ (মঈন আলী ৬৮, বেয়ারস্টো ৫২; মিরাজ ৬/৮০, সাকিব ২/৪৬, তাইজুল ২/৪৭)বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৪৮ (তামিম ৭৮, মুশফিকুর ৪৮, মাহমুদুল্লাহ ৩৮, সাকিব ৩১; স্টোকস ৪/২৬, মঈন আলী ৩/৭৫, রশিদ ২/৫৮, ব্যাটি ১/৫১)ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৪০ (স্টোকস ৮৫, বেয়ারস্টো ৪৭, ওকস ১৯*; সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ২/৪১, মিরাজ ১/৫৮, কামরুল ১/২৪)বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৭৮ ওভারে ২৫৫/৮ (তামিম ৯, ইমরুল ৪৩, মুমিনুল ২৭, মাহমুদুল্লাহ ১৭, সাকিব ২৪, মুশফিকুর ৩৯, সাব্বির ৫৯*, মিরাজ ১, কামরুল ০, তাইজুল ১১*; ব্যাটি ৩/৬৫, ব্রড ২/২৬, মঈন ২/৬০, রশিদ ১/৫৫)।................................২৩ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৫৩
false