label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
ij
গল্প_ বব ডিলানের একটি যুদ্ধবিরোধী গান ও একটি মানবিক কবিতার খসড়া ___ আফগানিস্তানের আকাশে একটি অ্যাপাচে এ এইচ ১ হেলিকপ্টার উড়ছে। হেলিকপ্টারের অভ্যন্তরে মজুদ সিআরভি ৭ রকেট; এম টু ২৩০ চেইন গান; এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার মালটি-প্ল্যাটফর্ম, মালটি-টারগেট মডুলার মিসাইল সিসটেম । এখুনি এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার নামক মিজাইলের আঘাতে গুঁড়িয়ে যাবে একটি পশতুন গ্রাম; নিহত হবে পাহাড়িয়া এলাকার বেশ ক’জন নিরীহ আফগান শিশু । এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কে বলা হয় হেলিকপ্টার-লঞ্চড ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট ওয়েপন। এটি লেজার গাইডেন্স সিসটেমে নিয়ন্ত্রিত হয় । দৃশ্যটি অত্যন্ত মর্মান্তিক বলেই প্রশ্ন উঠতে পারে-কারা ঐ হেলিকপ্টার এর মালিক? এবং কি তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য? কেন তারা হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে এবং এসব প্রশ্নগুলি জরুরি ... আলেকজান্ডার জ্যাকব; মার্কিন আমর্স ম্যানিউফ্যাকচার কোম্পানী “রিচার্ড মার্শাল” এর একজন সাবেক পরিচালক ; বয়স ৬৫; এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির রাজধানী ট্রেনটন শহরের গিভসন জেনারেল হাসপাতালের একটি কক্ষে শুয়ে থেকে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। বৃদ্ধের শুভ্র কেশ আর বলিময় চৌকো তামাটে মুখে জীবনঅভিজ্ঞতার ছাপ। তবে মুখটি এখন পান্ডুর আর বির্বন দেখায় । কে যেন সমস্ত জীবনীশক্তি শুষে নিয়েছে। মৃত্যুর আগে প্রত্যেক মৃত্যুপথযাত্রীই সম্ভবত ক্ষণিকের জন্য হলেও সুস্থ্য বোধ করে। আজ দুপুরের পর থেকে সেরকমই বোধ করছেন আলেকজান্ডার জ্যাকব। কোণে একটি টিভি। শব্দ কমিয়ে অন করা। সি এন এন। মনিটরে ধূসর একটি আকাশ। আকাশে একটি অ্যাপাচে এ এইচ ১ হেলিকপ্টার উড়ছে। আফগানিস্তান? আলেকজান্ডার জ্যাকব দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তিনি সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান “রিচার্ড মার্শাল” এর একজন ডিফেন্স কনট্রাক্টর। এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার তার প্রতিষ্ঠানের সফল উদ্ভাবন। তিনি জানেন: এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কে বলা হয় হেলিকপ্টার-লঞ্চড ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট ওয়েপন। গুলি করে ধ্বংস করে ভুলে যাও ধ্বংসের স্মৃতি। আলেকজান্ডার জ্যাকব ভুলে যেতে পারছেন না। কারণ তিনি এখন একা ...নিঃসঙ্গ। এ সময় মানুষের ওপর স্মৃতি ভর করে। তার মনে পড়ে মার্কিন সরকার যাতে এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কেনে সে জন্য রাজী করাতে সিনেটরকে ৩ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, মার্কিন সরকার এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কিনেছিল। এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার এর আঘাতে কতজন এশিয় মারা গেল? এখন সেই ভাবনা উঁিক দিচ্ছে। কারণ, এখন তিনি ট্রেনটন শহরের গিভসন জেনারেল হাসপাতালের ৫১২ নং কক্ষে শুয়ে রয়েছেন। সুস্থ্য থাকলে তিনি এখন হয় তো থাকতেন মনোরম কোনও ভিলার সুইমিংপুলের পাশে কিংবা টেনিস কোর্টে; দেশিবিদেশি বন্ধুদের উষ্ণ সান্নিধ্যে। কবে যেন বেহনাম ফারশাদ-এর ভিলায় পার্টি ছিল ...কবে? বেহনাম ফারশাদ অভিজাত আফগান মিলিয়নিয়ার। আফগানিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র -দু’জায়গায় বাস করেন এই দুদে ব্যবসায়ী। বেহনাম ফারশাদ-এর স্ত্রী আফসান আরা। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই সুন্দরী মহিলার গায়ের রং ইরানি গোলাপের মতন। আফসান আরার সঙ্গে আলেকজান্ডার জ্যাকব-এর অনেক অনেক দিনের সম্পর্ক। আলেকজান্ডার জ্যাকব-এর বয়স ষাট ছাড়িয়ে গেছে। তাতে কি? আমেরিকানা বাঁচতে জানে। তবে আজকাল তার মনে হল-আফগানিস্তান ধ্বংস হলেও এই আফগান অভিজাত দের কিছু যায় আসে না বরং পূর্ব উপকূলের নির্জন ভিলায় গোলাপি রঙের আফসান আরা এশিয় রতিকৌশল আর গোপন রোমাঞ্চ নিয়ে উচ্ছ্বল হয়ে ওঠে। কালো রঙের পুরু সোফার ওপর প্রেমহীন আনন্দর জন্য ঘাম ঝরে। হ্যাঁ, এইসব শারীরিক বোঝাপরায় প্রেম ভালোবাসারও একটা ব্যাপার আছে বৈ কী। দার্শনিক এরিক ফ্রম ‘দি আর্ট অভ লাভিং’ গ্রন্থে লিখেছেন: ‘ দ্য প্রিন্সিপালস অভ দ্য ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটি অ্যান্ড দ্য প্রিন্সিপালস অভ লাভ আর ইনকম্পাটিবল।’ দরজায় মৃদু শব্দ । আলেকজান্ডার জ্যাকব ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন। ৩২/৩৩ বছরের একজন শান্ত চেহারার যুবক রুমে প্রবেশ করল। নীল রঙের ব্লেজার পরা য্বুকটির চোখে চশমা, হাতে ফুলের তোড়া। আলেকজান্ডার জ্যাকব মাথা নাড়লেন । ফিসফিস করে বললেন, এস এটহ্যান। দানিয়েল এটহ্যান, আলেকজান্ডার জ্যাকব-এর মেয়ের জামাই । আলেকজান্ডার জ্যাকব-এর একটাই মেয়ে। মুহূর্তেই জানেট-এর একমাথা সোনালি চুল আর সুন্দর মুখটি মনে ভেসে ওঠায় আলেকজান্ডার জ্যাকব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। জানেট দু-বছর আগে এক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়। তারপর থেকে দানিয়েল এটহ্যান-এর সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীন হয়ে এসেছিল। ছেলেটি আজ এল বলে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলেন তিনি। ধীর পায়ে বিছানার কাছে এসে ঝুঁকে পাশের টেবিলে ফুলের তোড়া রেখে দানিয়েল দাঁড়িয়ে থাকে। আলেকজান্ডার জ্যাকব বললেন, দাঁড়িয়ে রইলে কেন? বস। দানিয়েল বসে। তোমার মা কেমন আছেন? আলেকজান্ডার জ্যাকব জিজ্ঞেস করলেন। আছে একরকম। শুনেছি- আলেকজান্ডার জ্যাকব কথা শেষ করলেন না। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। দানিয়েল বলল। ট্রিটমেন্ট চলছে ঠিকঠাক? হ্যাঁ। চলছে। দানিয়েল বলল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আলেকজান্ডার জ্যাকব বললেন, কাল জিম মারা গেল। জিম-এরও ক্যান্সার হয়েছিল। জিম? দানিয়েল -এর ভ্রুঁ কুঁচকে ওঠে। জিম ফষ্টার। বৈজ্ঞানিক। এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার মিজাইল-এর মেইন কনসেপ্টটা ওরই। ওহ্। ঘরটিতে স্তব্ধতা জমে ওঠে। একটু পর আলেকজান্ডার জ্যাকব ফিসফিস করে বললেন, সারা জীবন আমর্স ডিল করলাম ... নিজের মৃত্যুর কথা যে ভাবিনি তা নয়। এখন ...এখন ...নিজের মৃত্যুর মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। কথাগুলি আলেকজান্ডার জ্যাকব এমন ভাবে বলছেন যেন দানিয়েল এটহ্যান একজন পুরোহিত। আর তিনি কনফেস করছেন। যেন জীবনে অনেক পাপ করেছেন, এখন স্বীকারোক্তির সময় এসেছে। দানিয়েল চুপ করে থাকে। সে তার শ্বশুরকে পছন্দ করে না। দানিয়েল অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ঘৃনা করে। ট্রেনটন-এর থমাস এডিসন স্টেট কলেজে শিক্ষকতা করে সে; র‌্যালফ ওয়ালডো এমারসন পড়ায়- যিনি বলেছিলেন: Children are all foreigners. ঈযরষফৎবহ ধৎব ধষষ ভড়ৎবরমহবৎং. কেন বলেছিলেন? দানিয়েল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শ্বশুরের মুখের দিকে তাকায়। জানেট এর বাবা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। লোকটা এখন অনুতপ্ত। এরই প্রতিষ্ঠানের তৈরি মারনাস্ত্রের আঘাতে কত নিরপরাধ এশিয় শিশুর প্রাণ ঝরে গেছে। প্রাণ কি রহস্যময় নয়? এই প্রশ্নটিই জানেট করেছিল। তরুণী জানেট এর সঙ্গে পরিচয় ইউরোপে; জারমাট নামে সুইজারল্যান্ডের এক গ্রামে। স্কী করার সময় দূর্ঘটনায় পড়েছিল জানেট; দানিয়েল জানেট এর অচেতন দেহটি পাইন বনের ভিতর থেকে উদ্ধার করে ঘন তুষারের ওপর দিয়ে তিন মাইল হেঁটে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। জ্ঞান ফেরার পর জানেট সব শুনে ভীষন থমকে গিয়েছিল। ফিসফিস করে বলেছিল: বেঁচে থাকা কি ভালো। আর ... আর প্রাণ কি রহস্যময় নয়? দানিয়েল, আমি ... আমি আপনার মত কারও জন্যে অপেক্ষায় করছিলাম। জানেট এর নীলাভ নর্ডিক চোখ আর জাইলোফনিক কন্ঠস্বরে দানিয়েল মুগ্ধ। তরুণী জানেট এর সর্বাঙ্গে কী এক মধুময় আবেশ। আর সে আবেগ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারঙ্গম সে। জানেট সুস্থ হয়ে ওঠার পর তারা নির্জন পাইনবনের ভিতর একটা কাঠের কেবিনে দু সপ্তাহ ছিল । চৌদ্দটা দিন গভীর প্রেমে মগ্ন হয়েছিল তারা। সুইজারল্যান্ডেই বিয়েটা সেরে ইউ এস ফিরল তারা ... আলেকজান্ডার জ্যাকব কী যেন বলছেন। দানিয়েল কান পাতে। ... আমি ছিলাম ডিফেন্স কনট্রাক্টর। মার্কিন সিনেটরদের ঘুষ দিতাম রিটার্ড মার্শাল এর ওয়েপন কেনার জন্য। বলে চুপ করে থাকেন আলেকজান্ডার জ্যাকব। একটু পরে বললেন, তোমার প্রভাবেই সম্ভবত জানেট আমাকে “রিচার্ড মার্শাল”-এর চাকরি ছেড়ে দিয়ে পেনসিলভানিয়ায় জমি কিনে খামার করতে চাপ দিয়েছিল। ওর কথা আমি শুনিনি। কেন? ওই ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার নেশা। মাসে দু-একবার হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ডিনার, ঘন ঘন পেন্টাগনে সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং, সিনেটরদের জমকালো পার্টি। ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছোনো আমার জীবনের লক্ষ ছিল। আমার জন্ম নিউ ইয়র্কের এক দরিদ্র পরিবারে। রেলওয়েতে চাকরি করতেন আমার বাবা; যখন কলেজে পড়ি, হঠাৎ বাবা মারা যান, বছর না ঘুরতেই মা আবার বিয়ে করেন; আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। নিরাপদ আশ্রয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাতারাতি নিউ ইয়র্ক শহরের হোমলেস দের কাতারে নেমে গেলাম। শীতের রাতে গরম কাপড় পাইনি, বছরের পর বছর একবেলা খেয়ে কাটিয়েছি। তিক্ত জীবন সংগ্রাম কাকে বলে আমি জানি। জীবনে যাতে তিক্ততার মুখোমুখি না হতে হয় সেজন্য ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছোনো আমার জীবনের লক্ষ ছিল। কী করে যে পড়ালেখা শেষ করেছি তা আমিই জানি। পড়ালেখার পাশাপাশি এমন কোনও কাজ নেই করিনি। পড়াশোনা শেষ করে ফেডারেল কার্টিজ কোম্পানীতে জয়েন করি। “রিটার্ড মার্শাল” এ জয়েন করি আরও অনেক পরে। সেই বয়েসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই মনে করতাম পৃথিবী। “রিটার্ড মার্শাল” অস্ত্র তৈরি করে; সে অস্ত্র মার্কিন সরকার কেনে; যুদ্ধ না বাধালে অস্ত্র বিক্রি সম্ভব না, আমার বেতন জুটবে না -এতসব তখন ভাবিনি ... বলে আলেকজান্ডার জ্যাকব চুপ করে থাকেন । মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। দানিয়েল বৃদ্ধের তামাটে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিলের মুখের সঙ্গে মিল আছে মুখটার। স্যাম বিল। দানিয়েল এটহ্যান এর ছোটবেলার বন্ধু। ছোটবেলায় বোঝা যায় না বড় হয়ে কে কবি হবে আর কে সৈন্য হবে। গিটার বাজিয়ে চমৎকার গান করত বিল। বিশেষ করে বব ডিলানের যুদ্ধবিরোধী গান মাস্টার্স অভ ওয়র ... Come you masters of war You that build all the guns You that build the death planes You that build all the bombs You that hide behind walls You that hide behind desks I just want you to know I can see through your masks. তার পরও সৈনিকের জীবন বেছে নিল বিল। জয়েন করল ইউএস মিলিটারিকে । বিল এর বাবা ভিয়েতনামের যুদ্ধে পঙ্গু; বিল নিহত আফগানিস্তানে। অ্যাপাচে এ এইচ ১ হেলিকপ্টার পাইলট ছিল। তালিবান লকেট লাঞ্চার আঘাতে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল সেটি। আলেকজান্ডার জ্যাকবএর তামাটে মুখের সঙ্গে বিল এর মুখের অদ্ভুত মিল। ঘুমন্ত কিংবা মৃত লোকটা দিকে তাকিয়ে আছে দানিয়েল ... লোকটা খুনিদের একজন। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই খুনি; মহাকালের কাছে অপরাধী। (কথাটা দানিয়েলের মা বলতেন, ভদ্র মহিলা একজন কবি ...) আলেকজান্ডার জ্যাকব খুনিদের একজন। বৃদ্ধের ঘুম ভাঙছে না। বেঁচে আছেন তো? নাকি কনফেসন শেষ বলে চলে গেছেন? আমার অপেক্ষায় ছিলেন বৃদ্ধ? দানিয়েল কাঁধ ঝাঁকালো। তারপর উঠে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে । বৃদ্ধের জীবনকাহিনী শোনার ধৈর্য্য নেই তার। তিনি কী বলবেন তা দানিয়েল জানে। তার দায়িত্ব শেষ। জানেট এখন স্বপ্নে এসে অভিযোগ করে বলবে না: বাবা হাসপাতালে। বাবাকে তুমি দেখতে যাচ্ছো না। লোকটা যতই খুনি হোক। মৃত্যুপথ যাত্রী। একবার গেলেও তো পার ...এজন্যই আজ হাসপাতালে আসা। দানিয়েলের মা কবি রবার্টা অ্যালিসন; তিনিই আজ জোর করে ছেলেকে হাসপাতালে পাঠালেন; কবি বলেই মহিলা হয়তো অসম্ভব সংবেদনশীল, ছেলের স্বপ্নে এসে অভিযোগ করে মৃত পুত্রবধূ জানেট । জীবনে এ এক শিহরণ জাগানো ঘটনা। হাসপাতালের বাইরে শেষ বিকেল ঝলমল করছিল। ট্যাক্সি নিল দানিয়েল । মা আর ছেলের গাড়ি নেই-কোনওকালেই ছিল না; দুজনেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে, দুজনেই নিরামিশাষী, দুজনেই ব্যাতিক্রমী আমেরিকান। দানিয়েলের বাবা চাকরি করতেন পোস্টাল ডিপার্টমেন্টে। স্বামীর মৃত্যুর পর দানিয়েলের বিধবা মা আর বিয়ে করেনি। ... তখন কী বললেন জানেট এর বাবা? যখন কলেজে পড়ি, হঠাৎ বাবা মারা যান, বছর না ঘুরতেই মা আবার বিয়ে করেন; আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। এই জবানবন্দিতে একজনের অস্ত্রব্যবসায়ী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত রয়েছে কি? দানিয়েল ভাবল। ... না, দানিয়েলের বিধবা মা কবি রবার্টা অ্যালিসন স্বামীর মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেনি। কলেজের শিক্ষকতা আর কয়েক হাজার বইয়ের ভিড়ে জীবনের এক কঠিন তাড়নাকে ভুলে ছিলেন-যাকে বলে সেক্স; যা চিন্তাশীল মানুষের জন্য এড়িয়ে চলা কঠিন নয় ... একমাত্র ছেলেকে শৈশব থেকেই কাব্যমূখি করে গড়ে তুলেছেন কবি। তার প্রিয় কবিদের একজন র‌্যালফ ওয়ালডো এমারসন। যিনি বলেছিলেন:চিলড্রেন আর অল ফরেনার্স। কেন বলেছিলেন? দানিয়েল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এখন খাবার টেবিলে বসে মার সঙ্গে শিল্পসাহিত্য নিয়ে কত কথা হয়। অস্ত্রব্যবসায়ীর মেয়ে জানেট এর সঙ্গে বিয়ে হোক মা তা চাননি ... মা বলে ...মানুষকে দেখতে শিখতে হবে। আলেকজান্ডার জ্যাকবরা দেখতে পায় না বলেই মারণাস্ত্রের ব্যবসা করে ... দেবদূতের খুনি হয়ে ওঠে! এশিয়ার বুদ্ধ দেখতে চাইলেন বলে প্যালেস ত্যাগ করলেন। আজও তাঁর কথা আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। (কবি রবার্টা অ্যালিসন এশিয়াকে বলেন বুদ্ধের মহাদেশ!) ...মায়ের কথাগুলির সঙ্গে দানিয়েল ও একমত ... তবে -জানেট তাকে গ্রাস করছিল; যে কারণে জানেট এর সঙ্গে বিয়ের পর মায়ের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল। দু-বছর আগে এক সড়ক দূর্ঘটনায় জানেট নিহত হলে মা আবার ছেলের জীবনে ফিরে আসেন। ট্রেনটন শহরে ছেলের সঙ্গেই থাকেন কবি রবার্টা অ্যালিসন । তিনিও ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগী-ট্রিটমেন্ট চলছে। কবি রবার্টা অ্যালিসন এখন অবসর জীবন যাপন করছেন । জাপানি কবি সাকাকি নানাও এর জীবনদর্শনের ওপর বই লিখছেন । সে বইয়ের নাম: ‘দি অ্যালকেমি অভ অ্যাওয়ারনেস’; সাকাকি নানাও যুদ্ধ বিরোধী ও পরিবেশবাদী কবি হিসেবে বিশ্বময় সমাদৃত । তাঁর কবিতায় প্রাচীন ভারতে উপনিষদের শান্তির বাণী ধ্বনিত হয়। কবি সাকাকি নানাও এর কবিতাগুলির রচনাশৈলী প্রবন্ধের মতন। তাঁর একটি কবিতা পাঠ করা যাক- ENVIRONMENTAL CASE: NUCLEAR POWER PLANTS AND EARTHQUAKES IN JAPAN Fifteen nuclear power plants north of Kyoto, I visit there many times I stay at Shingon or Zen temples that are anti-nuke. Mostly Japanese Buddhists very conservative, they never talk about nuclear power issue but the monks at those temples shout, "no nukes, no nukes!" Kyoto is so close to the plants, only 100 miles and wind always blowing: Kyoto to Osaka to Kobe Because of wind course if something happens millions of people must die. Already the government thinks 5 million will die if some- thing happens to a power plant. Like an earthquake. আজও কবিতা লেখেন কবি রবার্টা অ্যালিসন । অনেকে মনে করেন কবি রবার্টা অ্যালিসন এর কবিতার ওপর জাপানি কবি সাকাকি নানাও এর প্রভাব রয়েছে। তবে এই প্রভাবের বিষয়টি বড় নয়, বড় হল কবি রবার্টা অ্যালিসন এর প্রত্যয়। পরিশেষে কবি রবার্টা অ্যালিসন-এর সা¤প্রতিক লেখা একটি কবিতার খসড়া পাঠ করা যাক - এরা দেখতে পায় না বলেই মারণাস্ত্রের ব্যবসা করে ধনী ও সুখি হতে চায়। এরা দেখতে পায় না- এশিয়ার পাহাড়ি দেশের আঙ্গিনায় খেলা করে সফেদ শিশুরা; এরা প্রত্যেকেই দেবদূত - র‌্যালফ ওয়ালডো এমারসন যেমনটা বলেছেন। এরপরও আফগানিস্তানের ধূসর আকাশে একটি অ্যাপাচে এ এইচ ১ হেলিকপ্টার উড়ছে। তোমাদের কি জানা আছে- এ জি এম -১১৪ হেলফায়ার কে বলা হয় হেলিকপ্টার-লঞ্চড ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট ওয়েপন। লেজার গাইডেন্স সিসটেমে এটি নিয়ন্ত্রিত হয় । এটি গিয়ে এশিয়ার পাহাড়ি দেশের আঙ্গিনায় দেবদূত খুন করে; দৃশ্যটি অত্যন্ত মর্মান্তিক! আর দৃশ্যটি অত্যন্ত মর্মান্তিক বলেই আজ চিৎকার করে প্রশ্ন তোলো-কারা ঐ হেলিকপ্টার এর মালিক? এবং কি তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য? কেন তারা হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে এবং সাকাকি নানাও মনে করতেন এ সমস্ত প্রশ্ন তোলা অত্যন্ত জরুরি ... তিনি আরও মনে করতেন, বিশ্বজুড়ে অস্ত্রব্যবসায়ীরা দেখতে পায় না বলেই মারণাস্ত্রের ব্যবসা করে দেবদূতের খুনি হয়ে ওঠে! উৎসর্গ: সাদা কালো এবং ধূসর সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:০০
false
ij
None দিন কয়েক আগে; তখন অনেক রাত, ঘুমিয়ে ছিল রাধা; হঠাৎ ই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তার; এবং তারপরে বাঁশী র সুর শুনতে পায়; কে বাঁশী বাজায়? কৌতূহলী হয়ে উঠে দ্রুতপদে আলুথালু হয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে ম্লান জোছনার ভিতর হাসনুহানার গন্ধ-ভাসা উঠানে এসে দাঁড়ায়। বাঁশী র সুর নদী র দিক থেকে ভেসে আসছিল। দ্রুত পায় নদী পাড়ে যেতে থাকে রাধা । নদী পাড়ের বটের তলায় আলোছায়ায় মিশে অপূর্ব ভঙ্গিমায় বসে এক শ্যামল স্বাস্থ্যবান পুরুষ নিমগ্ন হয়ে বাঁশী বাজাচ্ছিল। দৃশ্যটায় কী ছিল। থমকে গিয়েছিল রাধা। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বাঁশীর সুরে ডুবে গেল। রাগ বসন্ত। সা গা, ক্ষ্মা দা, র্ঋা, র্সা/ র্ঋা না, দা, পা ক্ষ্মগক্ষ্মদা, ক্ষ্মগঋসা। রাত্রির শেষ প্রহরের রাগ। রাধা জানে। তারপর এক সময় বসন্ত-র সুর থেমে গেলে রাধা অনেচনা বাঁশরিয়া পুরুষটিকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে গো? এত সুন্দর করে বাঁশী বাজাও। পুরুষটি বলল, আমার নাম কৃষ্ণ। রাধা। (উচ্ছসিত হয়ে) কৃষ্ণ? কৃষ্ণ। (মাথা নেড়ে) হ্যাঁ। কৃষ্ণ। রাধা। (কৃষ্ণের মুখোমুখি বটের গুঁড়িতে বসে শুধাল) কী তোমার পরিচয়? কৃষ্ণ। (মৃদু হেসে।) আমি পথিক। রাধা। বুঝলাম, পথিক। তা পথিকের বুঝি ঘর থাকে না? কৃষ্ণ। থাকে বুঝি? রাধা । (হেসে) থাকে না আবার। তা তোমার কোথায় ঘর শুনি ? কৃষ্ণ। আমার ঘর মথুরায়। বৃন্দাবনের কাছে। রাধা। মথুরা-বৃন্দাবন? সে কোন্ দিকে? কৃষ্ণ। তা ধরো এখান থেকে পশ্চিমে। রাধা। বেশ। তা বাংলা দেশে কি বেড়াতে এসেছ? কৃষ্ণ। হ্যাঁ। পথিক তো ঘুরে বেড়ায়। রাধা। মথুরা কোথায় গো? কৃষ্ণ। যমুনা নদীর পাড়ে। রাধা। ধ্যাত। যমুনার পাড়ে তো তোমার রাধার বাড়ি। কৃষ্ণ। তোমার নাম বুঝি রাধা? রাধা। হ্যাঁ। বললে না মথুরা কোথায়। কৃষ্ণ। যমুনা নদীর পাড়ে। রাধা। (আপন মনে) তা কি করে হয়, যমুনা নামে কি দুটি নদী হয়? কৃষ্ণ। জগতে কত নদী রাধা। দুটো নদীর নাম মিলে গেলে কি এমন ক্ষতি শুনি? রাধা। (অভিমানী সুরে) ক্ষতির কথা আমি বললাম বুঝি। কৃষ্ণ। বলনি? রাধা। না। বলিনি। আচ্ছা তুমি এত সুন্দর করে বাঁশী বাজাও কি করে? কৃষ্ণ। আমার ভিতর থেকে কে যেন বাজায়। রাধা। কে সে? কৃষ্ণ। জানি না। তাকে খুঁজতেই তো পথে নামলাম। রাধা। পেলে? কৃষ্ণ। পেলাম মনে হয়। রাধা। (অবাক হয়ে) কে সে? কৃষ্ণ। আজও চিনতে পারিনি তবে নারীরুপী কেউ। রাধা। নারী! কৃষ্ণ। হ্যাঁ। তাই তো মনে হচ্ছে। সেই শুরু। তারপর থেকে প্রতিরাতে নদীপাড়ের বটের তলায় কৃষ্ণর সঙ্গে দেখা হচ্ছে রাধার। দিনমানে কৃষ্ণর কথা ভেবে বড় উত্তেজনা বোধ করে রাধা। তার কারণ আছে। কৃষ্ণ পুরুষ; রাধা নারী। কৃষ্ণ সবল তনুর অধিকারী। সংসারের কাজের অবসরে কৃষ্ণের নিটোল দেহটি ভেবে ভেবে রাধার পক্ষে কামবোধে জর্জরিত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু বাঁশী সুরে কি যাদু আছে। রাত্রে বাঁশীর সুর ভেসে এলে রাধার দেহমন কেমন শীতল হয়ে ওঠে। তারপর কৃষ্ণের মুখোমুখি হলে সর্বাঙ্গে অবশ বোধ করে রাধা। কামের কথা মনেও পড়ে না। এ কী যাদু! নিষ্কাম না হলে বুঝি ঈশ্বরদর্শন হয় না? সে কারণেই দেবতা জগতে বাঁশীর সুর দিয়েছেন। রাধা এমনই ভাবে। এক পলক কৃষ্ণকে দেখার তৃষ্ণায় বিকেল থেকেই রাধা ভারি উতলা বোধ করতে থাকে। রাধার স্বামী অয়ন ঘোষ। স্বামী কখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে, রাধা অভিসারে বেরুবে-বিকেল থেকে এই আশায় থাকে। যমুনার পাড়ে কৃষ্ণ অপেক্ষা করছে। অয়ন ঘোষ আজ হাট থেকে দেরি করে ফিরেছে। ভোরবেলা দুধ নিয়ে হাটে গেছে । তারপর হাট থেকেই সোনাতলার গন্ধবণিক ননীগোপালের ভাইপো মাধব তাকে সোনাতলায় ধরে নিয়ে গেল। আজ সোনাতলার গন্ধবণিক ননীগোপালের দৌহিত্রের অন্নপ্রাসন্ন ছিল। মিষ্টান্ন দেখভাল করে ঘোষপাড়ায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়াল। যমুনায় নাইতে গেল সে। নদীটি বাড়ির খুব কাছেই। নদীর পাড়ে সুবিস্তীর্ণ তেপান্তরের মাঠ, সে মাঠের পূব-উত্তর কোণেই ঘোষপাড়া। ঘোষপাড়ার দক্ষিণ পার্শ্বে উঠান ঘিরে চারখানি মাটির ঘর অয়ন ঘোষের । একপাশে ভাঁড়ার ঘর, লাউয়ের মাচা; অন্যপাশে গোয়াল ঘর। সব মিলিয়ে আহিরের সম্পন্ন সংসার। আজ আষাঢ়ী পূর্ণিমা। আজ যে আকাশে একখানি পরিপূর্ণ নিটোল ধবধবে চাঁদ উঠবে তার ইঙ্গিত এখনই স্পষ্ট। মৃদমন্দ বাতাস বইছিল। খালি গায়ে ধূতি পরে কাঁধে গামছা ফেলে অয়ন ঘোষ পা চালিয়ে নদীপাড়ের দিকে যেতে থাকে। তেপান্তরের মাঠে তালতমালের বন, পদ্মদিঘী। পদ্মদিঘীর জল ছুঁয়ে আষাঢ়ী সন্ধ্যার বাতাস আরও মধুর হয়ে ওঠে। অয়ন ঘোষের দেহমন স্পর্শ করে সে মধুর বাতাস। নদীপাড়ে এসে সে থমকে যায়। যমুনায় পূর্ণ রুপা গলা জল । সে মুগ্ধ হয়ে দেখে। নদীর বাতাস যেন তাকে উড়িয়ে নেবে। কোজাগরী পূর্ণিমায় যমুনার রুপা গলা জলে অবগাহন করে পরম শান্তি পেল অয়ন ঘোষ। ফেরার পথে বয়েসি বটের তলায় কাকে যেন দেখে থমকে দাঁড়াল সে। ঝুপসি অন্ধকারে ঠিক বোঝা যায় না। পুরুষালি ছায়ামূর্তি। ঘোষপাড়ার লোকে বলাবলি করে: আজকাল মধ্যরাতে কে যেন নদীপাড়ের তেপান্তরের মাঠে বাঁশী বাজায়। সে নয়তো ...অচেনা আগন্তুকের বাঁশীর সুর সেও শুনেছে । বাঁশী শুনতে ভালোবাসে অয়ন ঘোষ। অনেক অনেক কাল আগে ... অয়ন ঘোষ তখন যুবক ... মধ্যরাতে নদীপাড়ে বসে তন্ময় হয়ে বাঁশী বাজাত। তখনও বউ হয়ে রাধা এ গাঁয়ে আসেনি। কুমোর পাড়ার মেয়ে বৈশাখী। বাঁশির সুরের টানে নদীপাড়ে চলে আসত। তখন রাত ভোর না হওয়া অবধি দু’জনের কত কথা হত। সেই বৈশাখী মরল ওলাউঠায়। ওলাই-চন্ডীকে ডেকে ডেকেও কোনও লাভ হয়নি। অয়ন ঘোষের বাবা সামন্ত ঘোষও ওই ভেদ বমন রোগেই মারা গিয়েছিলেন ... বৈশাখীর মৃত্যুর পর অয়ন ঘোষ আর বাঁশী বাজায়নি। মধ্যরাতের অচেনা আগন্তকের বাজানো বাঁশীর সুর ভেসে এলে রাধা যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় - অয়ন ঘোষ তা জানে। বৈশাখীর কথা ভেবেই বাধা দেয়নি। রাধার ভিতরে বৈশাখীর পুর্নজন্ম হয়েছে। তারপর রাধার ভিতরে বৈশাখী লীন হয়ে গেছে। অয়ন ঘোষ এমনই ভাবে। উঠান জোছনার আলো থই থই করছিল। আলোর প্রয়োজন ছিল না। রাধা তবু দাওয়ায় মাটির প্রদীপ জ্বেলেছে। অয়ন ঘোষ খেতে বসেছে। কলা পাতায় আতপ চালের সাদা ধবধবে ধোঁওয়া ওঠা ভাত, এক পাশে বেগুন ভাজা, তেঁতুলের চাটনি; মাটির বাটিতে মৌরালা মাছের ঝোল; রাধা নিজেই রেঁধেছে। খেতে খেতে মাথা নাড়ে অয়ন ঘোষ। রাধা রাঁধে ভালো। বউটি তার সত্যি ভালো। তবে মাঝে-মাঝে রাধা বড্ড উদাসী হয়ে ওঠে। কী যেন ভাবে। দূর থেকে রাধার সে অপূর্ব বিষন্ন মূর্তি মুগ্ধ হয়ে দেখে অয়ন ঘোষ। শ্যামলা ছিপছিপে গড়ন রাধার; মাথায় মেঘবরন চুল, টলটলে কাজলকালো দুটি চোখ, ছোট্ট শ্যামল নাকে রুপার নথ। করতোয়া পাড়ের নন্দীগ্রামের মেয়ে রাধা। দেখেশুনে সম্বন্ধ করেই তবে বিয়ে করেছে অয়ন ঘোষ। ঠকেনি মোটেও । বউকে আদর করে ডাকে রাই। খেতে খেতে খুশি খুশি গলায় আয়ান ঘোষ বলে, বুঝলি রাই। আজ সোনাতলার গন্ধবণিক ননীগোপালের দৌহিত্রের অন্নপ্রাসন্ন ছিল। সে কথা আমি সাবিত্রী বুড়ির মুখে শুনেনি। হ্যাঁ। ননীগোপালের ভাইপো মাধব আমায় হাট থেকে সোনাতলায় ধরে নিয়ে গেল। মধু ময়রার আসার কথা ছিল, সে আসেনি। আমাকেই দইমিষ্টির ভার নিতে হল। তো সে অনুষ্ঠানে এক কবির সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হল। কবি! রাধার মুখটি ঝলমল করে ওঠে। জগতে কী এক গূঢ় রহস্যে নারী ও কবি পরস্পর পরস্পরের প্রতি গভীর টান অনুভব করে। একমাত্র কবিই যে বোঝে নারীর সুপ্ত অনুভূতি। একারণেই? হ্যাঁ। কবি। অয়ন ঘোষ বলে। কী নাম গো কবির? জয়দেব। জয়দেব। বাহ্, ভারি সুন্দর নাম তো। তা কোন্ গাঁয়ে বাস গো তোমার কবির? অজয় নদীর পাড়ে কেঁদুলি গাঁয়ে। কেঁদুলি গাঁয়ে? সে আবার কোথায় গো? করতোয়ার পাড়ে আমাদের নন্দীগ্রামের দিকে? না। অজয় নদীর পাড়ে কেঁদুলি গাঁ বাংলার পশ্চিমে। ও। তা কবির বয়স কেমন? তরুণ। ঘুরতে বেড়িয়েছেন। ভারি দিব্যকান্তি দেখতে। আমার তৈরি মিষ্টি খেয়ে ভারি প্রশংসা করল। গৌড়াধিপতি রাজা লক্ষণসেন নাকি তাঁর কাব্য শুনে মুগ্ধ। এখান থেকে নাকি উড়িষ্যা যাবেন কবি। কবিকে কাল্ নেমতন্ন করব ভাবছি। এতবড় কবি যখন। আচ্ছা, করো। কাল হাট থেকে বোয়াল মাছ এনে দিও। মাছ ভেজে দেব। এত বড় কবি যখন- ছোট মাছ খাওয়াই কি করে বল! তারপর অনেক রাতে অয়ন ঘোষ ঘুমিয়ে পড়লে রাধা যমুনামুখি হয়। আজও নদীপাড়ের বটমূলে বসেছিল কৃষ্ণ। আপনমনে ললিত রাগে ধূন বাজাচ্ছিল। ন্ঋগমা ক্ষ্মমগা ক্ষ্মধর্সা।/ র্ঋা নধা ক্ষ্মধা ক্ষ্মমগা ঋাসা। রাধা চুপচাপ কৃষ্ণর মুখোমুখি বসে। মুগ্ধ হয়ে শোনে ললিতের সুর যতক্ষন না শেষ হয়। অনেক ক্ষণ পর। বাঁশী থেমে গেছে। চরাচর জুড়ে স্তব্ধতা নেমেছে। কৃষ্ণ তন্ময় হয়ে বসে আছে। তারপর এক সময় তার ঘোর কাটলে রাধার দিকে তাকালো কৃষ্ণ। রাধা নরম স্বরে শুধোল, আমায় তুমি ভালোবাস কৃষ্ণ? কৃষ্ণ। বাসী রাধা। রাধা। তুমি বাঁশী বললে? কৃষ্ণ। তুমিই তো আমার বাঁশী যে। বলে ঝুঁকে রাধার কপাল স্পর্শ করে কৃষ্ণ। রাধা কেঁপে ওঠে। এই প্রথম পূজারীর স্পর্শ পেল রাধা। মথুরায় যা হয় হোক; বাংলায় নারীই উপাস্য। উপাসকের স্পর্সের পর রাধা শরীরময় অদ্ভূত অনুভূতি নিয়ে চুপ করে বসে থাকে। কৃষ্ণ ঝুঁকে রাধার কপাল স্পর্শ করছে ... এই দৃশ্যটি দেখে থমকে যান কবি জয়দেব। তিনি সোনাতলার গন্ধবণিক ননীগোপালের আতিথ্য বরণ করেছেন। রাতের আহার সেরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎই তাঁর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। আষাঢ়ী পূর্ণিমার কথা স্মরণ হতেই তৎক্ষণাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে দক্ষিণমুখি পথ ধরে যমুনার পাড়ে ছুটে এসেছেন। চলতে চলতে ললিত রাগে ধূন শুন থমকে দাঁড়িয়েছেন। তারপর অপূর্ব সুন্দরী এক শ্যামল তন্বী নারীকে দেখলেন। কবি জয়দেব অবাক হয়ে ভাবছেন: কে ওই নারী? আর তখন অসংলগ্ন তুমুল হাওয়ারা নদীর দিক থেকে ছুটে আসে । সে বাতাসে রাধার চুল ছড়িয়ে যায়। তারপর চোখেমুখে লাগে। বাতাসের ঘর্ষনে বটপাতায় সরসর শব্দ ওঠে। সমুখের তেপান্তরের মাঠটি এই মুহূর্তে কোজাগরী জোছনায় উজ্জ্বল । একপাল গরু চড়ছে। কাদের গরু ওগুলো? রাধা অবাক হয়ে ভাবল। টি টি শব্দে একঝাঁক রাতচরা পাখি উড়ে গেল যমুনার দিকে। রাধা অবাক হয়ে ভাবল: কৃষ্ণ কেন বলল- তুমি আমার বাঁশী যে। কৃষ্ণ খানিকটা গম্ভীর স্বরে বলে, কাল ভোরে আমি চলে যাচ্ছি রাধা। এই কথার পর যেন অনন্তকাল কেটে গেল। রাধা অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে বলল, কাল চলে যাচ্ছ। কোথায়? কৃষ্ণ বলল, যেখান থেকে আমি এসেছি। সেই মথুরায়। রাধা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর জিজ্ঞেস করে, যেতেই হবে? হ্যাঁ। কেন? আমার সব তো ওখানে ... মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন। তাহলে পথে নামলে যে- পথে নেমেছি একটা প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে । কি সে প্রশ্ন? একটু চুপ করে থেকে কৃষ্ণ বলল, আমার ভিতরে বাঁশী কে বাজায়। পেলে উত্তর? হ্যাঁ। উত্তর পেলাম। বাংলা দেশে এসে পেলাম। রাধা চুপ করে থাকে। কৃষ্ণের সঙ্গে একবার তার মিলনের সাধ জাগল। তবে আকাশে বাতাসে বাঁশীর রেষ ফুরোয়নি তখনও। নাঃ, শরীর জাগবে না। কে সে? রাধা শুধালো। কার কথা বলছ তুমি? কৃষ্ণ অবাক হয়ে শুধায়। যে তোমার ভিতরে বাঁশী বাজায়। তুমি জান না কে সে? রাধা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। একজন যখন আমাকে জানল তখন সংসারে ফেরাই যায়। কেউ না জানলে সংসারের দিনগুলি দমবন্ধ হয়ে ওঠে। এখন অনেক নির্ভার লাগছে। রাধা এখন জানে কৃষ্ণের ভিতরে বাস করে কে বাঁশী বাজায়। রাধা উঠে দাঁড়ায়। কৃষ্ণ চেয়ে চেয়ে দেখে একটি নারী কোজাগরী জোছনায় মিলিয়ে যাচ্ছে। সে ম্লান হাসে। কবি জয়দেবও কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে নারীটিকে চলে যেতে দেখলেন। আয়ান ঘোষ-এর ঘুম আসছিল না। ঘরের জানালা দিয়ে হু হু করে সাদা পালের মতন জোছনাময়ী বাতাস ঢুকছিল ঘরে। বাতাসের ধাক্কায় তার ঘুম ভেঙে যায়। কিংবা অনেক অনেক দিন আগে বেঁচে থাকা বৈশাখীকে স্বপ্ন দেখছিল সে। আয়ান ঘোষ উঠে বসে। রাধা পাশে নেই-কোথায় গেল রাধা। দরজা ভেজানো দেখে মুচকি হাসল। দাওয়ায় এসে দাঁড়াল সে। উঠানে টইটুম্বুর কোজাগরী পূর্ণিমা , উথালপাথাল হাওয়া। রাধা সারা বাড়িতে কোথাও নেই। রাধা কই গেছে তা অয়ন ঘোষ জানে। সে তারপরও ক্রোধে উন্মক্ত হয়ে উঠতে পারে না ... উতল শীতল বাতাস এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কিংবা তার বৈশাখীর কথা মনে পড়ে । কে যেন তার কানে ফিসফিস করে বলে: নারীপ্রকৃতি হল ধরনীর মতো; একে একা একা ভোগ করলে স্বার্থপরের মতো দেখায় না? সবই যখন অনিত্য, ক্ষণস্থায়ী -তখন প্রাচীন চার্বাক ঋষির কথা ভাবো না কেন। আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে উঠানের জোছনায় ভূতের মতন দাঁড়িয়ে ছিল আয়ান ঘোষ। রাধা স্বামীকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। রাধা। (সামান্য রেগে গিয়ে) কি বলবে বল। অয়ন ঘোষ। এ কী রাই! কাঁদছিস যে তুই? রাধা। ( ফুঁপিয়ে উঠে ) কাঁদছি মনের সুখে। অয়ন ঘোষ। হঠাৎ এত সুখ উথলে উঠল যে তোর? রাধা। আজ আমাকে একজন চিনে ফেলল যে। অয়ন ঘোষ। হুম। যে তোকে চিনতে পেরেছ তাকে আমার ভীষণ ইর্ষে হচ্ছে রে রাই। রাধা। কেন? তাকে আপনার ইর্ষা হচ্ছে কেন? অয়ন ঘোষ। (দীর্ঘশ্বাস চেপে) আমি যে তোকে ঠিক চিনতে পারলাম না রাধা। রাধা। একেবারেই কি চেনেননি? অয়ন ঘোষ। তা ক্ষানিক চিনেছি বটে। যতটুকু চিনেছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট রে রাধা। রাধা। (নরম স্বরে) সে আমার বড় সৌভাগ্য স্বামী। অয়ন ঘোষ। তাছাড়া তুই ঘরদোরের যতœ নিস। আর রাঁধিসও ভালো। রাধা। (হেসে) আমি ভালো রাঁধি? না, আপনি ভোজনরসিক? অয়ন ঘোষ। (হেসে) সে একই হল। যা । এখন ঘরে গিয়ে শুয়ে পড় গে যা। কাল আবার ভোরে উঠে দুধ দুইতে হবে। রাধা ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কী কথা মনে পড়তে অয়ন ঘোষ বলে, ওহ্ হো। এই রাই শোন। আবার কী হল? কাল খানিকটা দুধ সরিয়ে রাখিস । কেন? তোর মনে নেই? কাল কবি জয়দেব আসবেন। পায়েস রাঁধিস। হাট থেকে পাটালি গুড় এনে দেব। রাধার মনে পড়ল কবি জয়দেবের কথা। রাধা ঠিক করল কবিকে সে সব বলবে। কে আমি কে কৃষ্ণ ...ললিতের বসন্তের সুরের কী মানে ...সব ...সব কবিকে রাধা বলে দেবে। ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢেকে রাধা। একা হতেই রাধার মনে হল- কৃষ্ণ কাল ভোরে মথুরায় ফিরে যাবে। রাধার অভ্যন্তরে দুঃখেরা তরল দুধের মতন ফেনিয়ে ওঠে। কান্নাভেজা চোখে রাধা জানালা দিয়ে চেয়ে দেখল ধবল পূর্ণিমার রাতটি নিমিষে কালো মেঘে ঢেকে গেছে। । কৃষ্ণরাত যেন! নাঃ, কবিকে কিছুই বলবে না রাধা। যদি সে প্রকৃতই কবি হয় তো সে কবি ভেবে নিক ঠিক কী ঘটেছিল যমুনা তীরে ... সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:০৪
false
hm
চ্ছিলনা! সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হয়েছে, যদিও আদালত কিছু সামরিক ফরমানকে সংবিধানের চেতনানুগ বিবেচনা করে ক্ষমা করেছেন। এই রায়ের বেশ ক'টি ইমপ্যাক্টের একটি হচ্ছে, দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে। এ নিয়ে নানারকম পরস্পরবিরোধী ও কিছু স্ববিরোধী কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। প্রথম আলোর এই খবরটি থেকে জানতে পারছি, নির্বাচন কমিশন [প্রথম আলোর মতো পত্রিকাও একে ইসি ডাকা শুরু করেছে, মনে হয় বেশি ফ্যাশনদুরস্ত শোনায়, ভবিষ্যতে হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের এফেফ লিখবে পত্রিকাটি, জিকে {জিকে মানে গড নৌজ}] "রায় কার্যকর হবার পর সিদ্ধান্ত নেবে", ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন থাকবে কি থাকবে না। এই রায় কার্যকর করবে সরকার। ব্যাপারটা এখানেই ঘোলাটে। আপিল বিভাগের রায় কার্যকর না করার এখতিয়ার কি সরকারের আছে? এদিকে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হবে না। রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকা না-থাকার বিষয়টি নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। ব্যাপারটা তৈলাধার পাত্র না পাত্রাধার তৈল গোছের তর্কে চলে গেলো না? প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ থাকবে না বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটি মোটেই সত্য নয়। নাগরিকের অনুভূতিতে আঘাত লাগবে—সংবিধানে এমন কোনো সংশোধনী আনা হবে না। আপিল বিভাগের রায় যদি কার্যকর করা হয়, সংবিধানে অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক শক্তির জুড়ে দেয়া এই "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" বাক্যটিও বিলুপ্ত হবার কথা। এই রায় প্রয়োগে "নাগরিকের অনুভূতি"র মতো অসংজ্ঞায়িত বিষয় বিবেচনায় নেয়া হবে ঠিক কীভাবে? আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক, এবং সংবিধানের শুরুতে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" সংযোজনকে আমি অপ্রয়োজনীয় এবং সংবিধানে বর্ণিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার ভিত্তির একটি, ধর্মনিরপেক্ষতার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করি। আরব বিশ্বে সিরিয়ার মতো দেশের সংবিধান, যেখানে প্রেসিডেন্টের ধর্ম ইসলাম নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে, সেখানেও সংবিধানের শুরুতে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" সংযোজন করা হয়নি। এর কারণ হতে পারে, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম প্রকৃত পক্ষে নেই। রাষ্ট্রের খৎনা দিতে হয় না, রাষ্ট্রকে মুতে এসে নুনুর আগায় কুলুখ এঁটে চল্লিশ কদম হাঁটতে হয় না, রাষ্ট্রকে অজু করে এসে নামাজ পড়তে হয় না, রাষ্ট্রকে রোজা রাখতে হয় না, রাষ্ট্রকে হজ করতেও যেতে হয় না, রাষ্ট্রের দুই কাঁধে ফেরেশতা বসানো থাকে না, কিংবা রাষ্ট্রের মৃত্যুর পর কবরে এসে কেউ তাকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে না। রাষ্ট্র একটি কাঠামো, এই কাঠামোর ভেতরে ধর্ম কীভাবে চর্চিত হবে, তা আলাদাভাবে বিবৃত থাকতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের ধর্ম থাকে না, যেভাবে ধর্ম থাকে না একটা চেয়ারের, একটা অপারেটিং সিস্টেমের, কিংবা একটা ব্রেসিয়ারের। এগুলো সবই কাঠামো মাত্র। সংবিধানের শুরুতে কোনো একটি ধর্মানুগ বাক্যাংশ বা রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে একটি বিশেষ ধর্মকে ঘোষণার এখতিয়ার খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান বা এরশাদের চ্ছিলনা। তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যেই এই অপ্রাসঙ্গিক সংযোজনগুলো করেছিলো। যারা বলে, এসব জুড়ে মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিক রপ্তানির সুবিধা হয়েছে, তারা আশা করি ভারত বা ফিলিপাইনের দিকেও তাকাবে। বিসমিল্লাহ বা রাষ্ট্রধর্ম কোনোটিই তাদের সংবিধানে নেই, মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল সংখ্যক জনশক্তি রপ্তানিতে দু'টি দেশই এগিয়ে আছে। সংবিধানের আগায় বিসমিল্লাহ লাগালেও বাংলাদেশের মুসলমান নাগরিকের ধর্ম ইসলাম থাকবে, বিসমিল্লাহ না লাগালেও থাকবে। আসল উদ্দেশ্যটি রাজনীতির। এই দু'টি সংযোজন বস্তুত সংবিধানের ওপর বিষ্ঠাত্যাগের বাকি দৃষ্টান্তগুলোকে রক্ষা করার একটি কুচেষ্টা। জানা কথা, সংবিধানের পঞ্চম বা অষ্টম সংশোধনী বাতিল করলে এগুলোও বাতিল হয়ে যাবে, আর কোনো সরকারই এগুলো বাতিল করে নিজেকে "অজনপ্রিয়" করতে চাইবে না। এটা অনেকটা ধূলোর ওপর জরুরি ফোন নাম্বার লিখে রাখার মতো কাজ, ধূলো মুছতে গেলে নাম্বারও যাবে। এই ধরনের সস্তা গ্রাম্য রাজনীতি যে কাজে দেয়, সেটা আমরা টের পাই, যখন সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করতে আমাদের ৩৩ বছর লেগে যায়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আপিল বিভাগের রায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সম্ভবত আওয়ামী লীগের উচ্চনেতৃত্ব দু'টি আশঙ্কা করছেন। এক, সংবিধানের শুরুতে অপ্রয়োজনীয় বিসমিল্লাহ আর রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক অষ্টম সংশোধনীতে বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সরিয়ে দিতে গেলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে সরকারের জনভিত্তি দুর্বল করে দেবে। দুই, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে বহুধাবিভক্ত দলগুলো সব বিএনপির পেছনে কাতার বেঁধে দাঁড়াবে। সরকারের প্রথম আশঙ্কাটি অমূলক নয়, কিন্তু এর মাত্রা অনেকখানি ওভাররেটেড। ২০০২ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম জায়গামতোই ছিলো, তাতে কোনো লাভ হয়নি। ভোটের আগে মানুষের বিবেচনায় থাকে চালের দাম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর স্থানীয় ইস্যু। ৯৬ এর নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগ প্রথমটি ঈষৎ সামাল দিতে পারলেও বাকি দু'টোতে হাল ধরতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াতের আলবদর সরকারও কিন্তু আল্লাহ আর ভারতের নাম জপে গত সংসদ নির্বাচনে কিছু করতে পারেনি, গোহারা হেরেছে। তার কারণ একটিই, সংবিধানের গোড়ায় বিসমিল্লাহ আছে কি নাই, সেটি বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মপরিচয় বা ধর্মচর্চার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না [ক্ষুণ্ণ করে অপর ধর্মের অনুসারীদের]। দ্বিতীয় আশঙ্কাটি সর্বাংশে সত্য, কিন্তু এ পরিস্থিতি কি নতুন কিছু? গত সংসদ নির্বাচনে কি প্রায় সবক'টি ইসলামের নাম বেচে খাওয়া রাজনৈতিক দলই বিএনপির পেছনে কাতার বেঁধে দাঁড়ায়নি? তারা ভবিষ্যতেও বিএনপির সাথেই দাঁড়াবে, যদি আওয়ামী লীগ কোনো কৌশলী রাজনীতি অবলম্বন না করে। এই ভুঁইফোঁড় ধর্মবেচা দলগুলোর মিত্রতা অবলম্বন করেও মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসেনি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি শুধু ভোটের হিসাবের জন্যেই নিষিদ্ধ করা বা না করার কথা বিবেচনা করা উচিত নয়। বাংলাদেশে গত ৩৯ বছরে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও গণের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কোনো কর্মসূচি হাতে নিয়ে মাঠে নামেনি। প্রতিটি ধর্মভিত্তিক দল বাংলাদেশকে ঠেলতে ঠেলতে একটি উদ্ভট উটের পিঠে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেছে, বিরতিহীনভাবে। এই প্রচেষ্টাকে কখনও সামরিক শাসক, কখনও আওয়ামী লীগ, কখনও বিএনপি এসে সমর্থন দিয়ে সবল করেছে। ধর্মের নামে রাজনীতির সুযোগকে রূদ্ধ করতে হবে অনাগত সময়ের বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে। আমরা কি বাংলাদেশকে একটি অগ্রসর, উদারমনা, মেধাচালিত রাষ্ট্র হিসেবে নির্মাণের পরিবর্তে একে একটি উপপাকিস্তানে পরিণত করার পথে হাঁটবো? আমাদের সংবিধান প্রণেতারা ঐ ক'টি মূলনীতি যোগ করেছিলেন অনেক মানুষের রক্তস্রোত সাঁতরে এসে। পাকিস্তান হতে চাইনি বলেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা নিহত, ধর্ষিত, লুণ্ঠিত, বিতাড়িত, দগ্ধ, অপমানিত হয়েছিলেন। আজ ৩৩ বছর পর সংবিধানের গায়ে যত কাটাছেঁড়া হয়েছে, তার সবকিছু মুছে আবারও সেই স্বপ্নতাড়িত মানুষদের কাতারে দাঁড়ানোর সুযোগ আমাদের আছে। ভাবীকালের বাংলাদেশে যারা বেড়ে উঠবে, তাদের আমরা আবার যদি ভুল করে উপপাকিস্তানের দিকে ঠেলে দিই, চারপাশের নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাদের ক্ষমা করবে না। একবার ভুল সবাই করে, বারবার করে নির্বোধ। আমাদের বিবেচনাবোধ নিয়ে যেন ভাবীকালের তরুণ জিয়াউর রহমানের মতো অতীতের দিকে আঙুল তুলে "চ্ছিলনা" বলার সুযোগ না পায়, সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে কাতর অনুরোধ করি।
false
ij
উয়ারী-বটেশ্বর কি প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কেন্দ্র ছিল_ দিন যত যাচ্ছে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে মানুষের আগ্রহ যেন বেড়ে চলেছে। একটা সময় ছিল যখন ঐতিহাসিক তথ্যাদিতে কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় ঐতিহাসিকের আগ্রহ ছিল, এখন সাধারণ মানুষও সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কৌতূহলী হয়ে উঠছে। এর কারণ বোধহয় মিডিয়ার সক্রিয় ভূমিকা। আজকাল প্রধান দৈনিকের লাইফস্টাইল ম্যাগাজিনগুলোও বাংলাদেশি পুরাকীর্তি সম্বন্ধে সচিত্র প্রতিবেদ প্রকাশ করে। পাহাড়পুর কিংবা ময়নামতির বৌদ্ধবিহারের ওপর নির্মিত প্রামাণচিত্র ড্রইংরুমের টিভির পর্দার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে নানা বয়েসি টিভির দর্শকের কাছে। এটা গেল বাঙালির অতীতচর্চার একদিক। অন্যদিকে বাংলার অপার প্রত্নসম্পদ ধীরে ধীরে উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে । বাংলা যে এত অমূল্য প্রত্নরাজি তার নরম পলল মাটির বুকে লুকিয়ে রেখেছিল তা কে জানত! এখন সেসব আবিস্কৃত হচ্ছে। একশ কি দুশো বছর আগে গ্রামের রাখাল পথের পাশে মাটির নিচে কাঁচের পুঁতি কি কালো রঙের রুলেটেড মৃৎপাত্র খুঁজে পেলে ভাবত জ্বীনভূতের কান্ড, ... কিংবা নিজেই আত্মসাৎ করত পুরাবস্তু। আর এখন? এখন গ্রামাঞ্চলে অকস্মাৎ কুড়িয়ে পাওয়া সাত রাজার ধন নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হয়, তারপর ওগুলো জেলা সদরে ঠিকই পৌঁছে যায়; পত্রিকায় ছবি ওঠে, দেশের মানুষ জানতে পারে ঐশ্বর্যময়ী বাংলার প্রত্নস্থল আর প্রত্নসামগ্রীর কথা। আর এভাবেই পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এল ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার এক সুপ্রাচীন কীর্তি। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উয়ারী এবং বটেশ্বর নামে দুটি গ্রামে প্রাচীন যুগের প্রত্নবস্তু পাওয়া যাওয়ায় হইচই পড়ে গেছে। দেশে ও বিদেশে যথেস্ট কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বাঙালি প্রত্নতাত্ত্বিকগন যথেষ্ট মাথার ঘাম ফেলছেন একে বোধগম্য পর্যায়ে তুলে আনতে। নরসিংদী জেলার মানচিত্র । এককালে উয়ারী গ্রামের উত্তর দিকে কয়রা নদী। সে নদীটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বইত; এখন নদীটি প্রায় মৃত । নরসিংদীর পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে অবস্থিত হাজার বছরের প্রাচীন এক দুর্গনগরীর কথা জানা গেছে। ইংরেজিতে যাকে বলে Citadel । তাহলে হাজার বছরের পুরনো বাঙালি কেবলমাত্র কৃষিকাজই করেনি -সে দুর্গনগরীও তৈরি করেছিল? সে নগরীতে আসত ভিনদেশি বণিকেরা। কয়রা, ব্রহ্মপুত্র নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদী তে ভাসত ওয়ারী-বটেশ্বর বণিকের ধনররত্নপূর্ণ নৌকা? উয়ারী এবং বটেশ্বর গ্রামে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্বন্ধে এম.এম হক এবং এস.এস মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন, ‘১৯৩৩ সালে মুহম্মদ হানিফ পাঠান নামে একজন স্কুল শিক্ষক সর্বপ্রথম ওয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব জনসমক্ষে তুলে ধরেন। পরবর্তীকালে দীর্ঘ সময় ধরে তার পুত্র সৌখিন প্রতœতাত্ত্বিক মুহম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান ওয়ারী-বটেশ্বর থেকে প্রত্নবস্তু সংগ্রহ এবং পাশাপাশি গবেষণাও আরম্ভ করেন। বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের ফলে আবিস্কৃত হয়েছে যে, ওয়ারী-বটেশ্বর গ্রাম দুটির অধিকাংশ স্থানজুড়ে প্রাচীন বসতি ছিল। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রাম যেমন-রাঙ্গারটেক, সোনারুতলা, কেন্দুয়া, মরজার, চন্ডীপাড়া, পাটুলি, জয়মঙ্গল, হরিসাঙ্গন, যশোর, কুন্ডাপাড়া, গোদাশিয়া এবং আব্দুল্লানগরেও প্রাচীন বসতি চিহ্ন পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর পরিমানে স্বল্প-মূল্য পাথরের পুঁতি, কাঁচের পুঁতি, লৌহনির্মিত প্রত্নবস্তু, ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রাসহ আরও অনেক ধরনের প্রত্নবস্তু পাওয়া যায়। জমি-চাষ, পুকুর- খনন, বৃষ্টির কারণে ভূমির উপরিভাগের ক্ষয় প্রভৃতি কারণে প্রত্নবস্তুর দৈবাৎ প্রাপ্তি। স¤প্রতি এক সীমিত আকারের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর সন্ধান মিলেছে। এগুলির মধ্যে রুলেটেড মৃৎপাত্র, নবড্ মৃৎপাত্র, উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, স্বল্প-মূল্য পাথরের পুঁতি, কাঁচের পুঁতি, পাথরের ফ্লেক, চিলতা এবং সার অংশ, লৌহবস্তু এবং লৌহ গলানোর ফলে তৈরি বল জাতীয় বস্তু, মাটির দেয়ালের অংশ এবং পোড়ানো কার্যক্রমের চিহ্ন খুবই গুরুত্ব বহন করে ।’ (বাংলাপিডিয়ার প্রবন্ধ থেকে) উয়ারী এবং বটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু; হাজার বছর আগে বেঁচে থেকে প্রাচীন বাংলার বাঙালিরা এসব সামগ্রী স্পর্শ করেছে, ব্যবহার করেছে ...এমন ভেবে গভীর শিহরণ অনুভব করাই যায়। উয়ারী এবং বটেশ্বর এ খনন কার্য চলছে। উয়ারী এবং বটেশ্বর সম্বন্ধে দৈনিক পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখা হচ্ছে। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে । ভিড় করছে ইতিহাসে আগ্রহী তরুণ-তরুণীরা। তারা বিস্ময়ের সঙ্গে অবলোকন করছে নানাবিধ প্রত্নসম্ভার, সোনার বাংলার গৌরবময় সোনালি অতীত। ইতিহাসশাস্ত্রের শিক্ষা ব্যতীত কেবলমাত্র মানবিক প্রজ্ঞা প্রয়োগ করে তারা বুঝতে পারে যে জাতি হাজার বছর আগেই দুর্গনগরী নির্মাণ করার কলাকৌশল আয়ত্ম করতে সক্ষম হয়েছিল, কেবলি কৃষিকাজে লিপ্ত থাকেনি-কালের ধারায় সে জাতির স্বাধিকার ও সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত। সে জাতিকে কেউই ‘দাবায়ে রাখতে’ পারবে না। দর্শনার্থীদের কারও কারও মনে একটি প্রশ্ন উকিঁ দেওয়ার কথা: উয়ারী- বটেশ্বর-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কি কোনও সম্পর্ক ছিল? গ্রিক সম্রাট আলেকজান্দার ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চল আক্রমন করেছিলেন। সেই সময়কার প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গঙ্গাঋদ্ধি নামে একটি পরাক্রান্ত ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের কথা শোনা যায়। গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রটি গঙ্গারিডি, গঙ্গারিডই, গঙ্গাহৃদি, গঙ্গাহৃদয়, গঙ্গারাঢ় গঙ্গারাষ্ট্র প্রভৃতি নামেও পরিচিত। এমন নামের কারণ? যে রাষ্ট্র গঙ্গা দ্বারা ঋদ্ধ বা সমৃদ্ধ সেই রাষ্ট্রই গঙ্গাঋদ্ধি, গঙ্গাহৃদি বা গঙ্গাহৃদয়। বিদেশি ভাষায় ঋদ্ধি হয়ে গেছে রিডি বা রিডই। নদীজল দ্বারা একটি অঞ্চল ঋদ্ধ হতেই পারে। কেননা, সভ্যতায় নদীর ভূমিকা অপরিসীম। জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন, Approximately 5000 years ago the first complex, politically centralized civilizations began to crystallize independently along a number of river valleys throughout the southern half of Asia and northern Africa . These civilizations constitute the next step in the organization and centralization of human economic, political, religious, and social institutions and practices. তবে প্রাচীন ভারতের বুক চিরে উত্তর-পশ্চিম থেকে পুব-দক্ষিণে গঙ্গা নদীটি বইতে বলে গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অবস্থান সম্বন্ধে কি সিদ্ধান্তে আসা যায়? ‘প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী’ গ্রন্থে কাবেদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘প্রাচীন গ্রীক ও রোমান লেখক-ঐতিহাসিকদের লেখনীতে বহুলকথিত ‘গঙ্গারিডি’ বা ‘গঙ্গারিডাই’ জাতি ছিল সম্ভবত প্রাচীন বঙ্গজাতি, গ্রীকবীর আলেকজান্ডারের আক্রমনকালে যার পরাক্রমশালী নৃপতি ছিলেন নন্দবংশীয় কোনও সার্বভৌম রাজা। আর এই বঙ্গ রাজ্যেরই অন্যতম গাঙ্গেয় বা সমুদ্র-বন্দর ছিল ‘গাঙ্গে’ বা ‘গাঙ্গে-নগরী’। অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ নন্দবংশীয় রাজা ধননন্দ আলেকজান্ডারের সমসাময়িক। এঁর রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। গ্রিক লেখকদের কাছে ইনি ‘আগ্রামেস’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তাঁর সৈন্যবাহিনীতে ২০,০০০ অশ্বারোহী, ২০০,০০০ পদাতিক, ২০০০ রথ এবং ৩০০০ হাতি ছিল। গঙ্গাহৃদি ও প্রাসি তাঁর শাসনাধীন ছিল।' (প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ১ম খন্ড। পৃষ্ঠা, ১৩১) ঐতিহাসিক শ্রীরমাপদ চন্দ লিখেছেন,‘রাঢ়ে তখন পরাক্রান্ত গঙ্গরিডই রাজ্য প্রতিষ্ঠিত।’ প্রাচীন রাঢ়-এর অবস্থান ছিল বর্তমান পশ্চিম বাংলায়। ঐতিহাসিক শ্রীরমাপদ চন্দর বক্তব্য অনুযায়ী প্রাচীন বাংলার পশ্চিম অংশ গঙ্গা গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অংশ ছিল। তা হলে , উয়ারী- বটেশ্বর-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কি কোনও সম্পর্ক ছিল? উয়ারী- বটেশ্বর কি প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের -এর অংশ? কিংবা উয়ারী- বটেশ্বর-এর কি গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্র বা রাজধানী ছিল? সৌখিন প্রত্নতাত্ত্বিক মুহম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান এরকম সম্ভাবনার কথা একবার উল্লেখ করেছিলেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী মনে করেন যে, এ অঞ্চলের (উয়ারী- বটেশ্বর) সঙ্গে দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া এবং রোমান সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ছিল। উয়ারী- বটেশ্বর গ্রামে রুলেটেড মৃৎপাত্র, নবড্ মৃৎপাত্র, স্যান্ডউইচ কাঁচের পুঁতি, স্বর্ণ দিয়ে আবৃত এক ধরণের কাঁচের পুঁতি, উচ্চ মাত্রায় টিন মিশ্রিত ব্রোঞ্জ পাওয়া গেছে। দিলীপ কুমার চক্রবর্তী যে অনুমান করেছে এসব প্রত্নবস্তু তার পক্ষে প্রমাণ দেয়। তবে বর্তামান উয়ারী- বটেশ্বর এর অবস্থান আর গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্রটি একই স্থানে ছিল না। ড. অতুল সুর লিখেছেন, ‘গ্রিক রোমান ও মিশরীয় সূত্র থেকে আমরা মাত্র এইটুকু জানতে পারি যে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র গঙ্গানদীর মোহানা দেশে অবস্থিত ছিল এবং ওই রাষ্ট্রের প্রধান বন্দরের নাম ছিল ‘গাঙ্গে’। তার মানে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র যে নিম্ন-বাঙলায় ছিল, সে সম্বন্ধে কোনও সন্দেহ নেই। যদিও ভারতীয় সাহিত্যে গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের কোনও উল্লেখ নেই, তবু যারা বাঙলাদেশের সঙ্গে বানিজ্য করত তারা যখন গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের উল্লেখ করে গেছে, তখন গঙ্গারিডির অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দিহান হবার কোন কারণ নেই।’ ( দ্র. কাবেদুল ইসলাম। প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী। পৃষ্ঠা, ৯৯) গ্রিক ঐতিহাসিক ডিওডোরাস সিকুলাস লিখেছেন,‘সমুদ্রের মোহনায় গঙ্গা যেখানে আত্মবিসর্জন দেয় সেটা ‘গন্ডারিডাই’ রাজ্যের পূর্বসীমা।" রোমান ঐতিহাসিক প্লিনি লিখেছেন, "গঙ্গার অন্তিম প্রবাহ‘ গঙ্গারিডেস’ দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত।" পক্ষান্তরে প্রাচীন বাংলায় উয়ারী- বটেশ্বর এর অবস্থান নরসিংদীর পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে অবস্থিত। যেখানে হাজার বছরের প্রাচীন এক দুর্গনগরী আবিস্কৃত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, উয়ারী- বটেশ্বর গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের না হলে গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্র বা রাজধানী কোথায় ছিল? আধুনিক ঐতিহাসিকদের অনুমান কলকাতার ৩৫ কিলোমিটার উত্তপুবে বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে প্রাচীন চন্দ্রকেতুগড় ছিল গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্র বা রাজধানী । অমিতা রায় লিখেছেন: Chandraketugarh an archaeological site. Located on the Vidyadhari, once an important tributary of the Bhagirathi, Chandraketugarh (Chandraketugad) is situated 35 kilometres northeast of calcutta in the district of 24 Parganas of West Bengal. Excavations at the site for several years have revealed materials, which prove the antiquity of the site and its archaeological importance. The excavated material is in the collection of the asutosh museum and the State Archaeological Museum, Calcutta, and in addition there are a number of private collections in and around the town. .... The site still remains to be definitely identified. But there is reason to believe that this was possibly the ancient 'Gange', a place mentioned both by Periplus and Ptolemy. (বাংলাপিডিয়া) ড. অতুল সুর এর বক্তব্য আবার স্মরণ করি, ‘গ্রিক রোমান ও মিশরীয় সূত্র থেকে আমরা মাত্র এইটুকু জানতে পারি যে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র গঙ্গানদীর মোহানা দেশে অবস্থিত ছিল এবং ওই রাষ্ট্রের প্রধান বন্দরের নাম ছিল ‘গাঙ্গে’। প্রাচীন বাংলার মানচিত্র । ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন,‘ গ্রীকগন গন্ডরিডই অথবা গঙ্গরিডই নামে যে এক পরাক্রান্ত জাতির উল্লেখ করিয়াছেন, তাহারা যে বঙ্গদেশের অধিবাসী, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। ...গঙ্গানদীর যে দুইটি স্রোত এখন ভাগীরথী ও পদ্মা বলিয়া পরিচিত, এই উভয়ের মধ্যবর্তী প্রদেশে গঙ্গরিডই জাতির বাসস্থান ছিল। ’ ... নরসিংদী জেলার অবস্থান পদ্মার উত্তরে হওয়ায় এই প্রশ্ন ওঠে-তাহলে নরসিংদী জেলার উয়ারী এবং বটেশ্বর সংস্কৃতির সঙ্গে গঙ্গরিডই জাতির কি সম্পর্ক? গঙ্গরিডই জাতির দুটি সংস্কৃতিক কেন্দ্র? উয়ারী-বটেশ্বর সংস্কৃতির সময়কাল সম্বন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন,‘ দুর্গপ্রাচীর, পরিখা, ইটের স্থাপত্য, চুন-সুরকির রাস্তা, কারিগরশ্রেণীর উপস্থিতি, কারখানা, মুদ্রা ও বণিকশ্রেণীর উপস্থিতি আদি-ঐতিহাসিক যুগের (৬০০-৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) নগরব্যবস্থার কথা পরিস্কার ঘোষনা করে। ’ (দৈনিক প্রথম আলো। ২৫/৭/২০০৮) প্রখ্যাত ঐতিহাসিক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী মনে করেন যে, উয়ারী-বটেশ্বর টলেমি উল্লেখিত সোনাগড়া। কার্বন-১৪ পরীক্ষার ফলে এ পর্যন্ত খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের মানববসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। উৎপত্তি ও বিকাশ খ্রিস্টপূর্ব ৭০০-১০০ এবং খ্রিষ্টীয় ৫০ অব্দ। প্রশ্ন হল, প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের সঙ্গে উয়ারী- বটেশ্বর-এর দুর্গনগরীর কি কোনও সম্পর্ক আছে? সম্পর্ক যে ছিল সেটি বোঝা যায়। তবে সম্পর্কের ধরণটিই এখনও বোধগম্য নয়। উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতা প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কেন্দ্র না হলেও যে গুরুত্বপূর্ন নগরী ছিল তা অনুমান করা যায়। গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে প্রাসির শাসনাধীন ছিল। প্রাসি হল মগধ। প্রাসি শাসন করত নন্দ বংশের রাজারা। এই বংশের শাসনকাল ৩৬৪ থেকে ৩২৪ খ্রিস্টপূর্ব। তাহলে উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতাও কি মগধের অধীন ছিল? হ্যাঁ, সেরকম অনুমান অসিদ্ধ নয়। কেননা, নন্দদের উৎখাত করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (৩২৪-৩০০খ্রিস্টপূর্ব) মগধ জয় করেছিলেন এবং খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকেই পুন্ড্রবর্ধন (বর্তমান বগুড়া) মৌর্যদের অধীন চলে গিয়েছিল। পুন্ড্রবর্ধন এর অবস্থান ছিল উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতার পশ্চিমে । এ কারণেই অনুমিত হয় উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতাও মগধের অধীন ছিল। যা হোক। উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতার সঙ্গে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের সর্ম্পকটির বিষয়টি সম্পর্কে কোনও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়। কেননা, কোনও কোনও ঐতিহাসিক এই দাবী করছেন যে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যেই প্রাচীন বাংলার প্রথম সার্বভৌম রাষ্ট্র। তা হলে এই প্রশ্নও উঠতে পারে যে গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হলে সে রাষ্ট্রটি মগধের অধীন যায় কি করে? পরিশেষে একথা বলা যায়। ঠাকুরমার ঝুলির দিন শেষ। এ যুগে ইতিহাস হয়ে উঠেছে বিজ্ঞান। অতীতের প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে নিরিখ করে সন্তোষজনক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে উয়ারী-বটেশ্বর প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কেন্দ্র ছিল কি না? উৎসর্গ: সালাউদ্দীন শুভ্র এবং এসরেজওয়ানা তথ্যসূত্র: কাবেদুল ইসলাম। প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী। অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ১ম খন্ড। বাংলাপিডিয়া এবং http://wari-bateshwar.blogspot.com/ সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:২৫
false
mk
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য কেন বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা এত অল্প সময়ে পূর্ব বাংলায় প্রায় প্রত্যেকটি মানুষকে দ্রুততার সঙ্গে ৬ দফার প্রতি সমর্থনে উদ্বুদ্ধ করল, তার কারণ অনুসন্ধানে এটা অবশ্যই প্রতীয়মান হবে যে ৬ দফা শুধু একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। মুখ্যত অর্থনৈতিক বিষয় ছিল এর মূল প্রাণশক্তি। যে কোনো দেশে যখন অর্থনৈতিক কারণে রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয় তখন তার সমাধানকল্পে অনুসৃত রাজনৈতিক কর্মসূচি যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয় না। অর্থনৈতিক কর্মসূচিরও সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন পড়ে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর হতে পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর (বাঙালি) নির্যাতন ও নিপীড়ন সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে অব্যাহত ছিল। যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে পাকিস্তানের পশ্চিমাংশ দিনে দিনে সমৃদ্ধ হচ্ছিল, পর পর তিনটি রাজধানী গড়ে উঠেছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের বার্ষিক আয় পূর্ব পাকিস্তানের গড় আয় থেকে অনেক বেশি হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার তখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিল। সংগৃহীত রাষ্ট্রীয় সম্পদের ৬২% যখন দেশ রক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হচ্ছিল, অন্যদিকে পূর্ব বাংলার মানুষ নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হচ্ছিল। খাদ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়ছিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাখ লাখ বাঙালি প্রাণ দিলেও কেন্দ্রীয় সরকার কখনো উদ্বেগ প্রকাশ করা বা প্রয়োজনীয় সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করছিল না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন বলতে যখন পূর্ব বাংলার কোনো কিছুই হচ্ছিল না, ১৯৬৫ সালের পাক যুদ্ধে যখন পূর্ব বাংলার জনগণ অত্যন্ত অসহায় বোধ করছিল, যখন বৈষম্যের পাহাড় দুই অঞ্চলের মধ্যে গড়ে উঠেছিল, অর্থনৈতিক সমস্যা দূরীকরণে তখন তিনি ৬ দফাভিত্তিক ফর্মুলা দিলেন। তাই ৬ দফা বিশ্লেষণে এটা প্রতীয়মান হয় যে, শুধু ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থাভিত্তিক একটা রাষ্ট্র এবং প্রতিটি বয়স্ক নাগরিকের ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন এবং নাগরিকদের প্রতিটি মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিতকরণ ৬ দফার মূল লক্ষ্য ছিল না। বরং ৬ দফার মূল লক্ষ্য দুটি অঞ্চলের ভিতর বৈষম্য দূর করে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে, পাকিস্তানের প্রত্যেকটি অঞ্চলের প্রতিটি নাগরিকের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এমন সমতা ও ন্যায়-প্রতিষ্ঠা যাতে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রকৃত অর্থে সংশ্লিষ্ট হয়ে উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি ছিল দুটি দিকে। প্রথমে যে কারণে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে, তার অবসান ঘটানো। একই সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিটি অঞ্চলে প্রত্যেক মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করা। তাই দেখা যায় ৬ দফায় এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে, যাতে পূর্ব বাংলার সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে না পারে এবং এটা করতে হলে মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন ছিল, বঙ্গবন্ধু তাই করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হয় পাকিস্তানের দুই অংশে দুটি আলাদা মুদ্রার প্রচলন থাকবে এবং পৃথকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং এক অংশ থেকে অন্য অংশে মুদ্রা পাচার করা যাবে না। শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে জমা হবে। প্রাদেশিক সরকারে তা জমা করবে না। অথবা পাকিস্তানের উভয় অংশে একই মুদ্রা প্রচলন থাকবে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুটি পৃথক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ করবে। এক অংশ থেকে অন্য অংশে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রাদেশিক সরকারের মতামত লাগবে। শুধু ব্যাংকিং নয়, ইন্স্যুরেন্স, শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের খাতে যাতে না পৌঁছায় তারও অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধের সময় মাত্র ৯ মাসে পূর্ব পাকিস্তান ১৬০ কোটি পাট রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হলেও এর এক টাকাও পূর্ব বাংলায় ফিরে আসেনি, সব পশ্চিম পাকিস্তানে জমা ও উন্নয়নে ব্যয় হয়। অনেকে সমালোচনা হিসেবে বলেছিলেন, সব অর্থই পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যায়, সরকার কীভাবে চলবে এবং সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার কীভাবে চলবে। এরূপ সমালোচনা ঠিক নয়। কেননা ৬ দফায় বলা হয়েছিল একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিশেষ করে সামরিক ব্যয় ও পররাষ্ট্র ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা হবে ও আলোচনার মাধ্যমে তা নির্ধারিত হবে। পাকিস্তানের সংসদে বঙ্গবন্ধু বার বার বলেছিলেন একমাত্র দেশ রক্ষা ও পররাষ্ট্র ছাড়া আর কোনো কিছুই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে না। লাহোর প্রস্তাবে যোগাযোগ ব্যবস্থাও না রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যুক্তি দিলেন সমগ্র উপ-মহাদেশে পাকিস্তানের দুই অংশে যোগাযোগব্যবস্থা একই নীতি দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না। পূর্ব বাংলার দুটি পৃথক অংশে যোগাযোগব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকা উচিত নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানকে সরাসরি বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনায় বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির অধিকারের কথা বলা হয়। শিল্প-কলকারখানা, আন্তঃ ও বহির্বাণিজ্য সবকিছুই প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের কথা ছিল ৬ দফায়। এটা বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা (পাটের টাকায়) ওইভাবে তিনটি রাজধানী গড়ে উঠতে পারত না। সামরিক বাহিনীর জন্য রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬২ ভাগ ব্যয় করা হতো এবং পূর্ব বাংলায় ১০% লোকও সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন না। দেশের মূল সম্পদের সবটাই পশ্চিমাদের জন্য ব্যয় হতো। এজন্য বঙ্গবন্ধু সামরিক বাহিনীতে আরো বাঙালিকে নিয়োগ দেয়ার কথাই বলেননি, বরং তিনি দাবি করেন নেভি হেড কোয়ার্টার পূর্ব বাংলায় আনতে হবে। পূর্ব বাংলায় অস্ত্রাগার নির্মাণ এবং পূর্ব বাংলার জন্য পৃথক মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করতে হবে। এসব দাবি ছিল বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ দিনের এবং সংসদে এসব দাবি বার বার তিনি তুলেছিলেন। এসব দাবির পেছনে বোধহয় বঙ্গবন্ধুর মনের কোনো একটা বিশেষ ইচ্ছা লুকায়িত ছিল। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন পূর্ব বাংলাকে যদি সামরিক প্রস্তুতিতে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছে দেয়া যায়, তাহলে বিনা বা কম রক্তপাতে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করা সম্ভব হবে। কেন্দ্রীয় সরকার কোনো দাবি গ্রহণ করেনি বরং ইপিআরকে কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনীর আওতায় আনা হয়। শুধু মুদ্রা পাচারই নয়, মুদ্রাস্ফীতিজনিত কারণে পূর্ব বাংলার যে দুর্মূল্যের সৃষ্টি হয় এবং পাট চাষিরাও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেই কারণে তিনি মুদ্রানীতি পরিবর্তনও করতে চেয়েছিলেন। তবে মুদ্রা পাচার বন্ধ করতে না পারলে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয়, তা তিনি ৬ দফায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারে তিনি শাসনতান্ত্রিক বাধ্য-বাধকতা আরোপ করতে চেয়েছিলেন। অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা যাতে পূর্ব বাংলায় থেকে যায় এবং পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকে, বিনা শুল্কে উভয় অংশে আমদানি-রপ্তানি, বিদেশে ট্রেড মিশন ও চুক্তি সম্পাদনের অধিকার, আমদানি রপ্তানির অধিকার ৬ দফায় আঞ্চলিক সরকারের হাতে দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। সব ধরনের ট্যাক্স, খাজনা আদায় ও ধার্য্য আঞ্চলিক সরকারের হাতে ন্যস্ত ছিল। শুধু নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা হবে। ৬ দফার অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষণ যখন তিনি বাংলার জনগণের কাছে উত্থাপন করলেন জনগণ তা লুফে নিল। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এক সর্বাত্মক গণজাগরণ সৃষ্টি হলো। অবস্থা এমন দাঁড়ালো গ্রামের একজন বৃদ্ধ কৃষক রাতে সময় মশাল জ্বেলে দাঁড়িয়ে থাকতেন মুজিবকে একবার দেখার জন্য, কেননা ওই পথ দিয়ে বঙ্গবন্ধু যাবেন। বঙ্গবন্ধুর ছিল অসংখ্য সচেতন কর্মী বাহিনী, বাংলার প্রতিটি গ্রামে হয়তো তিনি যেতে পারেননি, তার প্রাণপ্রিয় অনুগত কর্মীরা তার বক্তব্য পেঁৗছে দেন গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। বাংলার আকাশে, বাতাসে, ইথারে বহমান একটা নাম শেখ মুজিব, শেখ মুজিব। আমার নেতা তোমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব। মুজিব যখন কোনো জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে জনতা তার কথা শুনত ও তার নির্দেশমতো কাজ করতে উদ্যোগী ছিল। ইস্পাত কঠিন ঐক্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন বলেই ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে (১৬৯-১৬৭) বিজয়ী হয়ে বাংলার মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে সেই আহ্বান ঘরে ঘরে পেঁৗছে দেন। তাই ৬ দফাকে বলা হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। ৭ জুন এক ঐতিহাসিক দিন। এক কালজয়ী ক্ষণ। বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়ার দিন। ৬ দফাই এনেছে স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতির মুক্তি। এজন্য ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলে আখ্যা দেয়া হয়। ডা. এসএ মালেক: রাজনীতিক ও কলাম লেখক সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯
false
hm
"পৈচাশিক": একটি কোয়াজাই-সায়েন্টিফিক আলাপগর্ভ ইংরেজিশব্দভারাক্রান্ত গল্প কড়া আলো পিচাশ করিমের পছন্দ নয়। নিরেট অন্ধকারও ভালোবাসেন না তিনি। এই দুটোই হচ্ছে দৃষ্টিগ্রাহ্য পৃথিবীর দুই চরম অবস্থা। তিনি ভালোবাসেন রহস্য, যা থাকে আবছায়ায়। আলো আছে, কিংবা আলো নেই, এমন সরল বাইনারির জগতে যারা বাস করতে চায়, তাদের জন্যে প্রতিনিয়ত করুণার ভারে পিষ্ট হন পিচাশ। মূর্খ, ভালগার একটা সোসাইটি। কিন্তু হাজার সংগ্রামের পর কিছু আবছায়া তৈরি করতে পেরেছে এই সমাজ। এমনই একটি সাফল্যের নীরব নিদর্শন এই বিচ্ছিরি শহরের নাভিমূলে মিডিয়ালোকবঞ্চিত মিডিয়াঁধার দ্বীপ, বণিতা, বার অ্যান্ড রেস্তোরাঁ। রসিকেরা মিষ্টি করে ডাকে, বার বণিতা। পিচাশ করিম আর দশজন গুণী মানুষের মতোই ভালোবাসেন সাহসিনী, সংস্কারমুক্ত তরুণীদের সঙ্গ। বার বণিতায় তাদের দেখা প্রায়ই মেলে, তবে বার বণিতার বাইরে যে মেলে না, এমনটা নয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি একটু অভিযানপ্রবণ হয়ে ওঠেন, তখন ইচ্ছে করে মৃগয়ায় নামতে। যেসব তরুণী যেচে তাঁর কাছে আসে, বিরক্ত মাছির মতো উজিয়ে এসে নিজেই জড়ায় জালে, এবং বিরক্তিকর মুখ করে মাকড়সার অপেক্ষা করে, তাদের মনোটোনি কাটিয়ে দেয় বার বণিতার জঙ্গুলে হরিণীরা। তারা সবাই হয়তো তরুণী নয়, কিন্তু হরিণী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চতুর শম্বরের মতো তারা শ্বাপদের অপেক্ষায় থাকে, তারপর চলতে থাকে শিকার। পিচাশ করিম নিজেকে আরেকটু ভালো করে খুঁজে পান এই মৃগয়ায়, তাই তিনি ডায়রির বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাগুলোকে বার বণিতার জন্যেই দাগিয়ে রাখেন। কিন্তু আজ বারে ঢুকে তাঁর মনটা বিষিয়ে যায়। এ কী? লোডশেডিং কেন? বারের আবছা ঘষা কাঁচের শেডে ছাওয়া বাতিগুলোর জন্যে সামান্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা গেলো না? মোমের আলোয় মৃগয়া চলে? তাও যদি বুদ্ধি করে কিছু রঙিন কাঁচের বা কাগজের শেডের ব্যবস্থা করতো বেয়াক্কেলগুলো। কতগুলো ছোটো ভদকার গ্লাসে মোমবাতি জ্বালিয়ে এ কোণে ও কোণে ছড়িয়ে রেখেছে। হয়তো শূকরও একদিন ডানা ঝাপটে উড়বে, কিন্তু এই আনকুথ ফিলিস্টাইনগুলো একটা রোমান্টিক ব্যাকড্রপের মর্ম বুঝবে না। একটা মিষ্টি আবছায়া ছড়িয়ে না গিয়ে জায়গায় জায়গায় দলা পাকিয়ে আছে আলো আর অন্ধকার। সেই সরল বাইনারি। সাদা নয়তো কালো। ডাইকোটমি। অশিক্ষিতের শেষ আশ্রয়। হোয়াট অ্যাবাউট শেডস অব গ্রে? হোয়াট অ্যাবাউট দেম? খুব বিরক্ত লাগে তাঁর। পিচাশ করিম সাধারণত দরজার দিকে মুখ করে কোণের একটা ছোটো টেবিলে বসে হুইস্কির অর্ডার দিয়ে থাকেন, কিন্তু আজ আর এই আলোগোলা অন্ধকারে তার বসতে ইচ্ছে করলো না। কাউন্টারে গিয়ে কড়া গলায় অর্ডার দিলেন তিনি, একটা জিম বিম, ডাবল, অন দ্য রকস। কাউন্টারের ওপর প্রদীপের নিচের অন্ধকার, বারম্যানের মুখে কৃত্রিম হাসি, সেই দেড়শো বছর আগে ইংরেজের নিজের হাতে এঁকে দেয়া। হাসির নিচের মেরুদণ্ডটাও ইংরেজের নকশা করা। ব্লাডি ফুল, ইউ আর সেলিং দ্য আলটিমেট এলিক্সির হিয়ার, হ্যাভ সাম গাটস টু ফ্রাউন, ওয়াইপ দ্যাট ব্লাডি সার্ভাইল স্মার্ক অফ ইওর মাগ! পিচাশ করিম নিজের ভেতরে ভেতরে বিস্ফোরিত হন রাগে। ইমপ্লোশন, ইমপ্লোশন, দ্য ঔনলি সাইন অব স্যানিটি আ কালচার্ড পারসন কুড নার্চার হিয়ার। বারম্যান ড্রিঙ্কটা এগিয়ে দেয়ার পর তার চোখে পড়ে মেয়েটাকে। প্রায় অন্ধকারে মিশে আছে সে, শুধু একটু আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে কাঁধের ওপর লুটিয়ে পড়া এলোচুল। আহ, শেডস, শেডস অব গ্রে! ভালো করে মেয়েটাকে পরখ করার চেষ্টা করেন তিনি। আবছায়া কেবল। আবছায়ার সম্মোহনী ইঙ্গিতে এগিয়ে গিয়ে বারের একটা টুলে চড়ে বসেন তিনি। "হাই!" খসখসে গম্ভীর স্বরে বলেন তিনি, তারপর চুমুক দেন পানীয়তে। "আমি পিচাশ।" তরুণী একটু হাসে কেবল, অন্ধকারে তার সাদা দাঁতের সারি ক্ষণিকের জন্যে ফুটে ওঠে। "তুমি যদি কারো জন্যে অপেক্ষা না করো, তাহলে আমরা কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি। ইন ফ্যাক্ট, কিছুক্ষণ নয়, অনেকক্ষণই কথা বলতে পারি।" ধীরে ধীরে বলেন তিনি, প্রত্যেকটা শব্দ মেপে। মেয়েটা হাসে আবারও। "তুমি হয়তো ভাবছো, আই উইল অ্যাস্ক ইউ টু স্পেন্ড দিস বিউটিফুল ইভনিং উইথ মি। না না, বলতে হবে না, তোমার হাসি দেখে বুঝতে পারছি আমি। ইটস ন্যাচরাল, ইজন্ট ইট, নিশ্চয়ই সব সমর্থ পুরুষই তোমাকে এমন করে বলবে। ওয়েল, পারহ্যাপস নট অল ওফ দেম, ওনলি দ্য ওয়ানস উইথ সাম গাটস। বাট ডোন্ট টেইক ইট ফর গ্র্যান্টেড। এত সরলভাবে এটাকে নেরেইট করা সম্ভব নয়।" মেয়েটা মুখ নত করে, কাঁধের ওপর নেচে ওঠে অন্ধকার চুলের স্তুপ। "আই আন্ডারস্ট্যান্ড, বাট দ্য হোল ওয়ার্ল্ড শুড ডুয়েল অন টলারেন্স, তাই না? এখানে জোরাজুরির কিছু নেই, ইউ জাস্ট হ্যাভ টু বিয়ার উইথ দ্য বার্ডেন অফ ইয়োর বিউটি। কিন্তু একই সাথে, টলারেন্সের ভারটা কিন্তু পুরুষদেরও নিতে হবে। পুরুষের টলারেন্স যদি ভালো ইন্টারকোর্স, সোশ্যাল ইন্টারকোর্স আই মিন, ভালো ইন্টারকোর্সের মাপকাঠি হতো, আজ আমাদের সোসাইটির ইতিহাস অন্য রকমের হতো। আই নো।" বড় একটা চুমুক দেন তিনি জিম বিমে। মেয়েটা আবার হাসে। ওহ, কী অপূর্ব এই নীরবতা! পিচাশ করিম উপভোগ করেন এই মুহূর্তগুলো। "আমাদের মেইন স্ট্রিম পপ সেক্সিজমের নেরেইটিভে এই ব্যাপারটা আছে, যে পুরুষ গায়ে পড়ে প্রস্তাব দেবে কেন? ইটস ট্যান্টামাউন্ট টু সেকশুয়াল হ্যারাসমেন্ট! বোলোক্স! পপিকক! হোয়াই নট? ইটস ঔনলি আ সাজেসশন! দ্য হোল সিভিলাইজেশন স্ট্যান্ডস অন দ্য রক অব সাজেসশনস ফ্রম ওয়ান হিউম্যান বিয়িং টু অ্যানাদার, অ্যান্ড ইফ শি ডিক্লাইনস, টু অ্যানাদার ওয়ান, অ্যান্ড সো অন! এটাকে অস্বীকার করে, এটাকে কাবার্ডে ভরে, এটাকে কার্পেটের নিচে চাপা দিয়ে আর কতদিন? ন্যাকা বাঙালি!" মেয়েটার দাঁত ঝিকমিক করে আবারও। পিচাশ করিম এক চুমুকে গ্লাস খালি করে কাউন্টারে আছড়ে রাখেন। "আরেকটা! ডাবল, বরফ!" বারম্যান দ্রুত হাতে আরেকজনের গেলাসে মদ ঢালতে থাকে। "এভরিওয়ান হ্যাজ দ্য রাইট টু লাভ, অ্যান্ড মেইক লাভ লাইক ব্যাজারস ইন আ বুশ, লাইক দেয়ারস নো টুমরো!" পিচাশ করিম দৃপ্ত কণ্ঠে বলতে থাকেন। "জার্মান সোলজাররা হলোকাস্ট ভিক্টিমদের সাথে প্রেম করেছে, ইংরেজ প্ল্যান্টার চা বাগানের কামিনের সাথে শুয়েছে, হোয়াই শুডন্ট আই বি ডুয়িং দ্য সেইম ওল্ড থিং? ইফ সামথিং ওয়ার্কস, আই স্টিক টু ইট। ইটস দ্য ঔনলি মানবিক নেরেইটিভ, বেইব। বিলিভ মি, দ্য ঔনলি ওয়ান।" মেয়েটা চুপ করে শোনে তাঁর কথা। "বাট ডোন্ট গেট মি রং। কলোনিয়াল লাভ মেকিং আমার উদ্দেশ্য নয়। প্যাট্রিয়ার্কাল লাভ মেকিংও নয়। এরা সব পচা। এদের মধ্যে কোনো গুণগত পার্থক্য নেই। বাট লেটস মেইক সাম ডিফরেন্স। লেটস গেট আউট অব দিস হোল বুলশিট, অ্যান্ড স্টার্ট এক্সপ্লোরিং। চলো দেখি, নতুন কোনো রোল আমরা খুঁজে পাই কি না। দেখি কোনো রোল দানা বাঁধতে পারে কি না।" মেয়েটা হাতের গেলাসে ছোট্টো চুমুক দেয়, পিচাশ করিমের ডাবল জিম বিম চলে আসে গেলাসে বরফ ডুবিয়ে। "না, সোভিয়েত আমলের ভালগার সোশ্যালিস্ট রিয়্যালিস্ট এক্সপেরিমেন্ট আমি করতে চাই না। বাট লেটস হ্যাভ আ ডিফরেন্ট লুক অ্যাট দ্য টেক্সট অব ফরনিকেশন।" গেলাসে ঢক ঢক করে চুমুক মারেন পিচাশ। "এই টেক্সটের একজন পাঠক হিসেবে এর কোন অ্যাসপেক্টগুলোকে গুরুত্ব দেয়া উচিত, আর কোন অ্যাসপেক্টগুলোকে গুরুত্ব দেয়া উচিত না, সেটাই আমার কাছে মূল্য বহন করে। বাকি সবকিছু বল্ডারড্যাশ। এই যে লোকজন বার থেকে মেয়ে তুলে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে, কিংবা গেস্ট হাউসে, তারপর একসঙ্গে শুচ্ছে, এর মধ্যে টেক্সটটা কোথায়? এটা কোথায়, এর ভিত্তি কোথায়? এর টেকনিক্যাল ট্রিটমেন্টগুলো কোথায়, এসথেটিক ট্রিটমেন্টগুলি, টেক্সচুয়াল ট্রিটমেন্টটা কোথায়? কোথায়? কোথায়? কোথায়?" মেয়েটা একটু ঝুঁকে আসে সামনে। "হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি, তুমি বোভোয়ার সেকেন্ড সেক্সের প্রসঙ্গ টেনে আনবে।" পিশাচ হাতের গেলাসটা নামিয়ে রাখেন কাউন্টারে। "কিন্তু আমি মনে করি না, ইটস গোয়িং টু বি আ সেক্সিস্ট রিলেশনশিপ। ইট উইল বি অ্যান ইন্টেলোবায়োলজিক্যাল জেনিটোসেরেব্রাল রিলেশনশিপ টোটালি ডিকাপল্ড ফ্রম সেক্স, ইভেন জেন্ডার, ইফ ইউ ওয়ান্ট টু টেইক ইট দ্যাট ফার। সেক্স হচ্ছে, যখন সেক্সকে নির্মাণ করা হয় সোশ্যালি, পলিটিক্যালি, সেক্স তখনই প্রাসঙ্গিকতা পায়। যেমন ধরো, একাত্তর সালে পশ্চিম পাকিস্তানিরা যখন আমাদের মেয়েদের চুদেছে, তারা কিন্তু এটাকে সেক্সের ফ্রেমওয়ার্কে ব্যাখ্যা করে করেনি। আমি জাস্ট সেক্সিজম কথাটাকে এরকম বোরাটের বৌয়ের মতো ঢিলাঢালা লুজভাবে ব্যবহার করতে চাচ্ছি না। ইজ দ্যাট ওকে? ইজ দ্যাট ক্লিয়ার? ইন ফ্যাক্ট, আমি সেক্স কথাটাই ব্যবহার করতে চাচ্ছি না, কারণ সেক্স কথাটা একটা ইয়েলো সাবমেরিন, একটা লুসি ইন দ্য স্কাই উইথ ডায়মন্ডস, একটা কোয়াজাই-সায়েন্টিফিক মিস্টেকেন ক্যাটাগরি, যেটাকে সবুজ বাঘ বলেছেন, একটা ভ্রান্ত ধারমা। এগুলো সিরিয়াস টার্ম, এদের প্রত্যেকের পেছনে একটা বৈজ্ঞানিক ইতিহাস আছে, সো বি কেয়ারফুল, বি ভেরি কেয়ারফুল, অ্যান্ড গিম্মি হোপ বিফোর দ্য মর্নিং কামস।" মেয়েটা চুপ করে থাকে। পিচাশ করিম গেলাস তুলে চোঁ চোঁ করে শেষ করে ফ্যালেন তার আধেয়, তারপর কাউন্টারে সজোরে ঠক করে রাখেন। আর তখনই চারদিক আবারও অশ্লীল আলোয় ভরিয়ে ফিরে আসে শহরের বিদ্যুৎ। আবছায়াটা ফুরিয়ে যায় চোখের পলকে, সেইসাথে হারায় রহস্য, হারায় গোপনীয়তা, হারায় মৃগয়ায়র ক্রীড়ামোদ। বিদ্যুতের আলোয় পিচাশ করিম দেখতে পান, সামনে বসে একটি পরিচিত মুখ। কাঁধ ভর্তি এলোচুল, পরনে টিশার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার্স। কিন্তু কোথায় যেন একটা গড়বড় আছে। পরিচিত চেহারাটা হাসে। মিটিমিটি। পিচাশ করিম অস্ফূটে বলে ওঠেন, "দোরা কাউয়া!" প্রিন্স-কাট দাঁড়িগোঁফের ভেতর দিয়ে কবি ঢ়ৈষূ ঢালী হাসে। পিচাশ নিজেকে অপ্রস্তুত হতে দেন না। হাত বাড়িয়ে ঢ়ৈষূর ঊরুতে হালকা চাপড় দিয়ে তিনি বলেন, "নেভার মাইন্ড, ডিসকার্সিভ আলোচনা করলাম একটু। উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখিত, ওল্ড চ্যাপ।" ঢালী কবি মধুর হেসে মধুরতর কটাক্ষ হেনে বলে, "না, না, না ... আপনি রেগুলার এরকম উত্তেজিত হবেন! এইটাতো খারাপ কিছু না!" [প্লটকৃতজ্ঞতা: সাফি]
false
rg
বিএনপি'র শুভ বোধদয় ও সাধারণ মানুষের কল্যানে করণীয় কিছু প‌্যাঁচালী!! বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর নের্তৃত্ব শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভুল রাজনীতি বুঝতে পেরে লাগাতার অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করল। শুভস্য শীঘ্রম অশুভস্য কালহরনামঃ। তাদের এই শুভবুদ্ধি উদয় হবার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই। এখন খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন আসে, বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ভুল রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের বিগত তিন বছরে যে বিশাল ক্ষতি হল, তার দায় তাহলে এখন কার? সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নাশকতা, যাত্রীবাহী বাসে আগুন, চলন্ত রেলগাড়িতে আগুন, রেললাইন খুলে ফেলা, যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন, মানুষের ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন, গাছকাটা, পেট্রোল বোমা, সাধারণ নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে কতিপয় সন্ত্রাসী দিয়ে বিএনপি যে জনসম্পৃত্তহীন রাজনীতি করে আসছে, সেই দায় বিএনপি'র এড়ানোর সুযোগ নেই। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের পোড়া মানুষের আর্ত-চিৎকার কেন বিএনপি নের্তৃত্বের কানে পৌঁছাতে এতো দেরি হল? কেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হল? তাদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট হল? তাদের মা বোনেরা ধর্ষিত হল? এসব ঘটনার দায় এখন বিএনপিকেই নিতে হবে। নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি ছিল প্রধানবিরোধী দল। একটি দেশের প্রধানবিরোধী দল কেন দেশের জন্য এমন এমন আত্মঘাতী রাজনীতির পথ বেছে নিল? নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি'র সাংসদ ছিলেন সাকুল্যে ৩০ জন। কিন্তু তারা লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। আবার সরকারি সুযোগ সুবিধা যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য সদস্যপদ বাতিল হবার আগে আগে সংসদে হাজিরা দিয়েছিল। ছল ছুতা অযুহাত দিয়ে আবার লাগাতার সংসদ বর্জন অব্যাহত রেখেছিল। এক সময় আন্দোলনের জন্য একটি মোক্ষম অযুহাতও পেয়ে গেল। নির্বাচন কালীন সরকার। বিএনপি দাবী করল, সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে এনে সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি এই দাবীটা তোলার আগে আয়নায় কি নিজেদের চেহারা একবারও দেখেছিল? নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে ২০০৬ সালে বিএনপি কি করেছিল? কেন বিএনপি তখন একটি ইয়াজউদ্দিন সরকার গঠন করেছিল? তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সেই আইন তো বিএনপি'র করা। সেখানে যতোগুলো অশুভ লক্ষণের সুযোগ ছিল, সেই সুযোগটি তখন কেন তারা অপব্যবহার করেছিল? কেন তখণ বিএনপি ইয়াজউদ্দিনকেই তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করেছিল? বিএনপি'র সেই আগের করা ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতেই আওয়ামী লীগ নবম সংসদে চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের সুযোগে সেই কালো আইনটি সংবিধান থেকে তুলে নিল। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। এটি দীর্ঘ দিন চলতে পারে না। বাংলাদেশকে নির্বাচন কালীন সরকার প্রশ্নে আজ হোক কাল হোক একটি স্থায়ী সমাধানে যেতে হবে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই প্রশ্নে রায়ের পর আওয়ামী লীগ সেই সুযোগটি আর হাতছাড়া করেনি। আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার উদ্যোগ নিল, তখন বিএনপি কেন সংসদে গিয়ে তাদের সকল যুক্তি তুলে ধরল না? তখন কেন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্বলতা গুলো সংসদে গিয়ে জাতির সামনে তুলে ধরল না? তখন কেন নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলল না? তখন কেন নির্বাচন কালীন সময়ে জনপ্রশাসনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কেমন চেহারা দরকার সেটি বিএনপি সংসদে তুলল না? এর প্রধান কারণ, বাংলাদেশের দুর্বল নির্বাচন কমিশনের অপব্যবহারের সুযোগটি বিএনপিও নিজেদের পক্ষে নেবার জন্য একপায়ে খাঁড়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্বলতার ফাঁকফোকরগুলো বিএনপিও নিজেদের পক্ষে নেবার জন্য প্রস্তুত। এটা একটা খোড়া অযুহাত। তাই বিএনপি সংসদে এই বিষয়ে কথা না বলে রাজপথের আন্দোলনকে বেছে নিল। বিএনপি'র এই রাজপথের আন্দোলনে প্রধান ভরসা কি ছিল? প্রধান ভরসা ছিল বিএনপি'র মিত্র জামায়াত শিবির। জামায়াত শিবির কেন বিএনপিকে রাজপথের আন্দোলনে নামাতে বাধ্য করল? কারণ, একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। সেখানে জামায়াতের বড় বড় নেতারা সবাই কাঠগড়ায়। তাদের বিচার চলছে। তাদের বাঁচানোর জন্য জামায়াত শিবিরের রাজপথের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। তাদের সেই আন্দোলনে বিএনপি কেন বলি হবে? কারণ, বিএনপি যদি আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে ভোটের রাজনীতিতে হারাতে চায়, তাহলে এককভাবে সেটি সম্ভব নয়। জামায়াতের সঙ্গে আতাত করে অতীতে এটার সফল পাওয়া গেছে, তাই জামায়াত বিএনপি'র কাছে ভোট ফ্যাক্টর। যদি জামায়াত বিএনপি'র শুধু ভোটের মিত্র হয়, তাহলে যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বিএনপি কেন দেশের মানুষের কাছে তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান খোলাসা করছে না? রহস্যটা এখানেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বিএনপি এখনো চরিত্রহীন। বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় এসে এই বিচার প্রত্রিয়া বন্ধ করে দিয়ে তাদের নেতাদের মুক্ত করবে নাকি এই বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারবে, তা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপি'র কোনো সুস্পষ্ট কথা নেই। অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করেছিলেন। তখন একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছিল, তা বন্ধ করেন। পাশাপাশি মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অন্তত বিশ হাজারেরো বেশি জেলে বন্দী জামায়াতের নেতাদের জেনারেল জিয়া মুক্ত করে দেন। গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ধর্ম ভিত্তিক যে চারটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই দলগুলোকে আবার জেনারেল জিয়া রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। বেগম জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে সেই ধারবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। বেগম জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে সেই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখেন। তখন বেগম জিয়া চরম ঔদ্বত্য দেখিয়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী বানিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চরম অবমাননা করেন। মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী সেই জামায়াতের নেতাদের বিচার বেগম জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে যে বন্ধ করে দেবেন, এটা দেশের সাধারণ মানুষ স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারে। আর যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে বিএনপি'র কোনো সুস্পষ্ট কথা নেই। তাদের কথা হল বিচার আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। বিচার স্বচ্ছ হতে হবে। এটা একটি গোয়েবলীয় ধোয়াশা। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে চলমান মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করাই হবে তাদের প্রধান কাজ। এটা দেশের সাধারণ মানুষ বিএনপি'র এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকেই বুঝতে পারে।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে যেখানে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহনে তরুণ প্রজন্মের নের্তৃত্বে একটি শাহবাগ আন্দোলন হয়ে গেল, সেখানেও বিএনপি কার্যত নিরব ছিল। তাদের এই নিরাবতাও প্রমাণ করে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না। বরং বিএনপি অনেক জনসভায় প্রকাশ্যে এই যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দাবী করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেগম জিয়ার সামনে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বন্দী নেতাদের মুক্তি চাই খচিত ব্যানার ফ্যাস্টুনের শো ডাউন করেছে। বেগম জিয়া তখনো এই বিষয়ে জামায়াতের পক্ষে সাফাই গেয়ে তাদের নেতাদের মুক্তি দাবী করেছেন। এই বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত যতগুলো রায় এসেছে সেখানে বিএনপি নিরব ছিল। রায় নিয়ে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছিল না। এমন কি কসাই আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবার পর যখন পাকিস্তানের হাতীয় পরিষদ নিন্দা প্রস্তাব পাশ করেছে, তখনো বিএনপি শুধু 'মর্মাহত' এই একটি শব্দ উচ্চারণ করেছে। এই মর্মাহত মানে হল বিচারে কসাই কাদেরের ফাঁসিতে বেগম জিয়া আসলে মর্মাহত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় আর দশম সাধারণ নির্বাচন একই সময়ে হওয়ায়, বিএনপি জামায়াতকে সাথে নিয়ে রাজপথে যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, সেটাকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলন বলার সুযোগ নাই। এটি স্রেফ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে এটি স্রেফ নাশকতা। আল কায়েদা জঙ্গী সংগঠনের মত গোপন ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বিএনপি যে আন্দোলনে নের্তৃত্ব দিয়েছে, সেটি ছিল দেশের মানুষের বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাসী হামলার জলন্ত উদাহরণ। দেশের মানুষের সেবা করার রাজনীতির কথা বলে সেই দেশের মানুষের উপর এমন বর্বর হামলার নাম রাজনীতি হতে পারে না। নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়া একটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অধিকার। বিএনপি'রও সেই অধিকার আছে। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়ে বিএনপি সর্বশেষ যে কাণ্ডটি করেছে, সেটি সরাসরি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর। ভোটকেন্দ্রে হামলার নামে বিএনপি জামায়াত শিবির আসলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের সেই পুরানো খেলায় মেতে উঠেছিল। ভোটারদের হামলা করে বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে শক্তি প্রয়োগ করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। লাগাতার অবরোধ-হরতাল দিয়ে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করে, দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে বিএনপি নির্বাচনী ট্রেন মিস করেছে। এখন দেরীতে হলেও বিএনপি বুঝতে পেরেছে যে, এতোদিন তারা ভুল রাজনীতি করেছিল। তাহলে দেশের এই যে এতো প্রাণহানী, এই যে এতো ধ্বংস এর জন্য বিএনপি কেন আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াবে না? ভুল রাজনীতি করে দেশের মানুষের উপর সন্ত্রাসী হামলা করা, বা দেশের সম্পদ ধ্বংস করার এই লাইসেন্স কি বিএনপি পেয়েছে? যদি না পায়, তাহলে বিএনপিকেই এই দায় নিতে হবে। বিএনপি'র নের্তৃত্ব দেরীতে হলেও বিষয়টি এখন বুঝতে পেরেছে যে, এভাবে আন্দোলন করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। এখন তারা বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিএনপিকে যে জিনিসটি সবার আগে বুঝতে হবে সেটি হল, বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশ কিভাবে চলবে, কিভাবে উন্নয়ন করবে, কে সরকারে থাকবে, কে বিরোধীদলে থাকবে, কিভাবে দেশে শান্তি বজায় থাকবে, তা বাংলাদেশের মানুষকেই ঠিক করতে হবে। আর সেটি ঠিক করতে হবে একটা প্রশ্নে সরাসরি অবস্থান নিয়ে। বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কোনো অধিকার নাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ চলবে। সেই চেতনার যারা শত্রু, তাদের নিয়ে হাজারো ষড়যন্ত্র করেও শেষ রক্ষা হবে না। বিদেশী কূটনীতিকদের বুদ্ধিতে ষড়যন্ত্র করেও কোনো লাভ হবে না। যা করার জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের সঙ্গে মিলেই করতে হবে। বেগম জিয়া হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, এতো বিতর্কের পরেও নতুন সরকার শপথ নেবার সময় সেখানে বঙ্গভবনে বিদেশী কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। একে একে বিদেশী রাষ্ট্রনেতারা নতুন সরকারকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তাদের শুভেচ্ছা জানানো বা না জানানোর উপরেও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ একেবারে নির্ভর করে না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রটি কিভাবে চলবে তা বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবে। কোনো বিদেশী কূটনীতিকদের ইসারায় তা ঘটবে না। এমনকি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যদি কোনো বিদেশী কূটনীতিক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশি লাফালাফি করেন, তাদেরকে বহিস্কার করারও এখতিয়ার বাংলাদেশের রয়েছে। তাই বিএনপি যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে চায় এবং দেশের মানুষকে সেবা করতে চায়, তাহলে কয়েকটি বিষয়ে বিএনপিকে এখনই নাকে খত দিতে হবে।বিএনপিকে দেশের মানুষের কাছে যেসব বার্তা নিয়ে সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে হবে সেগুলো হল-১. একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়, প্রশ্রয়, সহযোগিতা দেওয়া, আর তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও বন্ধুত্ব করার অভ্যাসটি ত্যাগ করতে হবে। ২. বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে। পাকিস্তানের অপশক্তির ভূত মাথায় নিয়ে পাকিস্তান প্রীতি মাথায় নিয়ে, বাংলাদেশে রাজনীতি করা চলবে না।৩. রাজনৈতিক আণ্দোলনের ভাষা হতে হবে জনগণের কল্যানের কথা বিবেচনা করে জনকল্যানমুখী। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, নাশকতা করে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করে, জানমালের ধ্বংস করে, হনসম্পৃক্তহীন রাজনীতি করে পার পাওয়া যাবে না।৪. নির্বাচন কালীন সরকার প্রশ্নে আলোচনার টেবিলে সুস্পষ্ট প্রস্তাব নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধানের উপায় বের করার জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সংলাপ করতে হবে। সেই সংলাপ যতবেশি গঠনমূলক হবে, যতবেশি জনগণের কল্যানের কথা বিবেচনায় রেখে হবে, যতবেশি শান্তিপূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে হবে, ততবেশি সেটি কার্যকর হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে। নির্বাচনের মাধ্যম ছাড়া ক্ষমতায় যাবার আর যে কোনো উপায় নেই, সেই সত্যকে মেনে নিয়েই নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই বিএনপিকে আলোচনার জন্য সরকারের সঙ্গে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসতে হবে। শুধু আলোচনা করলে হবে না, আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধানের উপায়ও বের করতে হবে। ৫. নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য বিএনপিকেই সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরতে হবে। দায়সারা ভাবে একটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় গিয়ে সেটি ভুলে যাবার মানসিকতাও ত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে কতভাবে শক্তিশালী করা যায়, নির্বাচন কমিশনে কারা থাকবে, কিভাবে থাকবে, নির্বাচনের সময় রিটার্নিং অফিসার কারা থাকবে, নির্বাচনী দায়িত্ব কারা পালন করবে, কিভাবে পালন করবে, ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে, ভোটার লিস্ট কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ডিজিটাল করা যায়, জাল ভোট এড়ানোর কি কৌশল হবে, মোদ্দাকথা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে কোন আধুনিক পদ্ধতি সবার কাছে গ্রহনযোগ্য, সেসব বিষয় নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য সঙ্গেই নিয়েই বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। বসতে হবে সকল রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে। ৬. নির্বাচন কালীন সহিংসতা বন্ধে স্থায়ী সমাধান কি হবে, সে বিষয়ে যদি কঠোর আইন করতে হয়, সেই আইনে কি থাকবে, তা নিয়েও আলোচলনায় বসতে হবে। ৭. দেশের যে কোনো রাজনৈতিক সংকটে সংখ্যালঘুরা কেন বারবার আক্রান্ত হবে, তার সমাধানের জন্য স্থায়ী টিকা আবিস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে সন্ত্রাস দমন আইন বা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মত সংখ্যালঘু নির্যাতন আইন পাশ করতে হবে। সেই আইনে বিএনপি কিভাবে সহায়তা করতে চায়, সেই আইন কিভাবে কার্যকর করা যায়, তা খুঁজে বের করতে হবে।৮. দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে সহায়তা করবে, দুর্নীতি দমন কমিশন কিভাবে স্বাধীন ও শক্তিশালী হবে, সে প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে একটি স্থায়ী সমাধানের উপায় বের করতে হবে। ৯. বাংলাদেশ কি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকবে, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা যাবে কিনা, সেই প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলকে একটি স্থায়ী সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ১০. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কত সময় সীমার মধ্যে শেষ করা হবে, সে প্রশ্নে একটি স্থায়ী সমাধানে আসতে হবে। যুদ্ধাপরাধী যে দলেরই হোক, তার বিচার করতে হবে, সে যেনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ে বিচার থেকে রেহাই না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ১১. দেশের আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের যৌথ করণীয় কি, সেই প্রশ্নে একটি জাতীয় ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। ১২. বাংলাদেশের যে কোনো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দল ও নীতি নির্ধারকদের নিয়ে কিভাবে একটি জাতীয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ গঠন করা যায়, যাতে যে কোনো রাষ্ট্রীয় দুর্যোগের সময় সেই পরিষদ একত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেটি কিভাবে গঠন করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ১৩. দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা কিভাবে আধুনিক করা হবে, মাদ্রাসা থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েরা পরবর্তী সময়ে কোথায় কি কাজ করবে, তার একটি স্থায়ী সমাধান বের করতে হবে। ১৪. দেশের জনপ্রশাসনকে কিভাবে রাজনৈতিক দলের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করা হবে, সে বিষয়ে একটি বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে যাতে রাজনৈতিক দলের প্রভাব বলয়ে থেকে কাজ করতে না হয়, স্বাধীনভাবেই তারা যাতে আইনের শাসনর প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তা করতে পারে, সে বিষয়ে একটি স্থায়ী উপায় বের করতে হবে। ১৫. কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায়্য মূল্য নিশ্চিত করার জণ্য মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ব কিভাবে খাটো করা যায়, কৃষিকে কিভাবে আরো আধুনিক করা যায়, কৃষিকে আরো কিভাবে রপ্তানিযোগ্য করা যায়, তার জন্য একটি স্থায়ী উপায় বের করতে হবে। ১৬. পরিবেশ বান্ধব শিল্পকে কিভাবে আরো গতিশীল করা যায়, সেই সমাধান বের করতে হবে। ১৭. দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করে সেখানে সত্যিকারের শিক্ষার পরিবেশ কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, শিক্ষাকে কিভাবে আরো আধুনিক করা যায়, তার উপায় বের করতে হবে।১৮. দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান কিভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তার উপায় বের করতে হবে। ১৯. দেশের আবাসন ও মানুষের বসবাসের স্থায়ী সমাধান কি হবে তা বের করতে হবে। বাড়িভাড়া আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য বাড়িওয়ালাদের বাধ্য করার জন্য কি কি করতে হবে, সেই উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। ২০. দেশের পররাষ্ট্র নীতি কি হবে, সে বিষয়ে আরো যুগপযুগী সিদ্ধান্ত গ্রহন করার উদ্যোগ নিতে হবে।২১. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কিভাবে আরো শক্তিশালী করা হবে, তা কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতে আসতে হবে। দেশের যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহনযোগ্য সমাধানের উগ্যোগ গ্রহন করার জন্য বিএনপিকে এখন সরকারের উপর রাজনৈতিকভাবেই চাপ প্রয়োগ করতে হবে। শুধু ক্ষমতার প্রশ্নে কিছু কিছু মিট মীমাংসা করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন নিয়ে কালবাহানার আলোচনা করে বিএনপি এখন আর সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। নিজেদের ভুলগুলো স্বীকার করে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে এই ভুল আর হবে না, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সকল রাজনৈতিক হত্যার বিচার করতে হবে। বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে। আর দেশের মানুষের সেবা করার জন্য দেশের মানুষের কল্যানের বিবেচনায় রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে হবে। যেখানে জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহন থাকবে। সন্ত্রাসী কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। সন্ত্রাসীকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিন্থিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনাতে হবে। সেই যজ্ঞযাত্রায় তালবাহানার কোনো সুযোগ নেই। দেশের মানুষ এখন আর কোনো মিথ্যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে না। সেই সুযোগ নিয়ে অন্দরমহলের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করার দিন শেষ। বিএনপিকে এই বাস্তবতা স্বীকার করেই নাকে খত দিতে হবে। যদি বিএনপি এই কাজগুলো না করে আবারো ভুল রাজনীতির পথে পা দিয়ে জনগণের সম্পৃক্তাহীন আন্দোলন চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এই বৃহত রাজনৈতিক দলটি অচিরেই মুসলিম লীগের মত হারিয়ে যাবে। আর যদি জনগণের জন্য সত্যিই সেবার করার ওয়াদা করে আবারো জনগণের কাছে বিএনপি ফিরে আসতে চায়, তাহলে তাদের সৃষ্ট ভুল রাজনীতির যারা বলি, সেই সব দায় স্বীকার করে, তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে আবারো সুস্থ রাজনীতি করার সুযোগ বিএনপি'র সামনে এখনো খোলা রয়েছে। নতুবা বিএনপি এখন তো শুধু ক্ষমতার বাইরে, ভবিষ্যতে এই বৃহত রাজনৈতিক দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আমরা আশা করব, বিএনপি'র ভেতরে এসব ভাবনাকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানোর মত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মেধার কোনো অভাব নেই। সেই শুভ প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি আবারো রাজনীতির মাঠে জনগণের পাশে দাঁড়াবে বলেই আমি বিশ্বাস রাখতে চাই।
false
rn
ডি জে পার্টি ডি জে পার্টি অসহ্য। খুব অসহ্য। আজকাল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান যেন ডি জে ছাড়া সম্ভবই নয়। একটা ছেলে ( ডিজে) বিকট সব গান বাজনা চালায় ( বেশীর ভাগই হিন্দি গান) মাইক্রোফোন দিয়ে মাঝে মাঝে কি যেন বলে- নিজে নাচে অন্যদেরও নাচায়। তখন নানান রকম লাল নীল বাতি জ্বলে নিভে। একদল তরুন তরুনী তখন হাত বা ছুড়ে নাচানাচি করে। হিন্দি সিনেমা নাটক দেখে দেখে তারা শিখেছে। এটা কি রকম আনন্দ আমি বুঝি না। আসল আনন্দ বাদ দিয়ে নতুন প্রজন্ম নকল আনন্দ নিয়ে লাফালাফি করছে। আমি জানি, উঠতি বড়লোকের ধনীর টিনেজার ছেলে-মেয়েরা এই ডি জে পার্টির আয়োজক। ঝাঁটা পিটা করে আমাদের দেশ থেকে এই ডিজে দূর করতে হবে। ডিজে তার যন্ত্রপাতি চালানোর সময় মুখের ভাব ভঙ্গি এমন করে- যা দেখলেই জুতা খুলে মারতে ইচ্ছা করে। কেনরে ভাই, হারমোনিয়াম তবলা আর গিটার বাজিয়ে কি গান বাজনা করা যায় না। সহজ সরল সুন্দর ভাবে ? এরকম বিকট সব মিউজিকের সাথে- বাঁকা তেড়া ভাবে হাত-পা নাচালেই কি আধুনিক হওয়া যায়? যদি একটা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এরকম কুৎসিত গান বাজনা না করা হয়- তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আপনার অনেক টাকা আছে- এটা বুঝানোর জন্য কি ডিকে পার্টি করতে হবে? ডিজের নামে রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলগুলোতেও চলে নানা বীভৎস অনুষ্ঠান। প্রতিরাতেই বেশ কিছু কমিউনিটি সেন্টার, সামাজিক ক্লাব ও পাঁচ তারকা হোটেলে চলে এ ধরনের পাটি। আর ডিজে পার্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এখানে আসা যুবক-যুবতীরা মেতে ওঠে জমজমাট সিসা, মদ ও ইয়াবা সেবনে। আমরা তো বাঙ্গালী। কেন বিদেশীদের দেখে আমরা তা নকল করবো? আমাদের তো সুন্দর একটা ইতিহাস আছে। গ্রাম দেশে কিভাবে বিয়ে হতো- তা কি আপনারা ভুলে গেছেন? আমি মনে করি, হিন্দি নাটক সিনেমা দেখে-দেখে ছেলে-মেয়েদের আজ এই অবস্থা। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। শুধু টিনএজ নয় বিভিন্ন বয়সীদের কাছেও ডিজে পার্টি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগে শুধু বিশেষ দিবসগুলোতে বিশেষভাবে ডিজে পার্টির আয়োজন করা হতো। আর সেই ডিজে পার্টি শুধু ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন তা বাইরে ছড়িয়ে গেছে। খোলা জায়গাতেও এখন ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়। নেট থেকে জানতে পারি- ডিজে মানে হলো- ডিজে ইংরেজি শব্দ। যার মূল অর্থ করলে দাঁড়ায় ডিস্ক জকি। একজন ব্যক্তি যখন তার সংগ্রহে দেশি-বিদেশি গান নিজের পছন্দমতো আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানে অতিথির উদ্দেশে প্লে করে তখন তাকে ডিজে বলা হয়। আর ওই গানের তালে তালে অতিথি তার মনের অনুভূতি নৃত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। ডিজেরা মিউজিক প্লে করেন বিশেষ একটি ডিস প্লেয়ারের মাধ্যমে। নিকষ কালো অন্ধকারের মাঝে লেজার লাইটের ঝলকানি। হিন্দি ও ইংরেজি পপ গানের কান ফাটানো শব্দ। এর মধ্যে সিসা আর সিগারেটের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। আর নেশার ঘোরে চলছে বেসামাল তরুণ-তরুণীদের উন্মাতাল নাচ। একজন চিয়ার্স গার্ল, প্রথম দিকে ডিজে পার্টিতে পার নাইট হাজার-বারো’শ পেতাম। এখন পাই আড়াই থেকে তিন হাজার। ডিজে পার্টি হয় গভীর রাতে। রাত জাগার জন্য আর ফিগার ঠিক রাখার জন্য ইয়াবা খাওয়া শুরু করি। ইয়াবার খরচ যোগাতে আমাকে অনৈতিক কাজও করতে হয়।রাতভর চলা ডিজে পার্টির রঙচঙে চিয়ার্সগার্লদের সিংহভাগের জীবন কাহিনী অনেকটা এমনই। [ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাজধানীতে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে পুলিশের অনুমোদন নিতে হয়। অুনুষ্ঠানের প্রকৃতি বিবেচনা করে সন্তুষ্ট হলে অনুমতি দেয় পুলিশ। মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ডিজে পার্টিগুলো পুলিশের অনুমোদনের তোয়াক্কা করে না। তারা কোনো না কোনো প্রভাবশালীকে ম্যানেজ করে তার ছত্রছায়ায় অনুষ্ঠান আয়োজন করে। আর পাঁচ তারকা হোটেলে ডিজে পার্টি আয়োজিত হলে সেখানে অবস্থানরত বিদেশী অতিথিদের বিষয়টি বিবেচনা করে পুলিশকে নীরব থাকতে হয়। নগরজীবনের ব্যস্ততা ও নানাবিধ হতাশা ভুলতে অনেকেই ছুটছেন ডিজে ক্লাবে। এখানে মিউজিকের তালে তালে এক মায়ানগরীতে ভাসে সবাই। বিশাল স্পিকার থেকে ভেসে আসে বুক কাঁপানো সুর। কানে হেডফো চোখের সামনে রাখা ডিস্ক প্লেয়ারে চলে ডিজেদের দক্ষ হাতের জাদু। আঙুলের নিয়ন্ত্রণে চলে ভিন্ন ধরনের মিউজিকের খেলা। ডিস্ক জকির বাজনার জাদুতে মোহাচ্ছন্ন হয়ে নাচে এক দল মানুষ। এদের বেশিরভাগই তরুণ। চোখ ধাঁধানো আলো-আঁধারির খেলায় হারিয়ে যায় সব বেদনা ও হতাশা। অভিজাত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেদের অনেকেই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতে ডিজে পার্টিতে আসে। আবার অনেকে আসে একাকী। একাকী যারা আসে, তাদের জন্যই পার্টিতে থাকে চিয়ার্স গার্লরা। পয়সাওয়ালা পুরুষরাই থাকে চিয়ার্সগার্লদের মূল টার্গেট। আয়োজকরাই ইশারায় চিয়ার্সগার্লদরে চিনিয়ে দেয় মালদার পুরুষকে। ব্যাস, তাকে টার্গেট করেই এগিয়ে যায় একেকজন স্বল্পবসনা চিয়ার্সগার্ল। নাচের নামে একটু একটু করে বাড়ায় ঘনিষ্ঠতা। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০
false
fe
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা ও আগামী দিনের বিশ্ব ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা ও আগামী দিনের বিশ্বফকির ইলিয়াস---------------------------------------------------------------------------------কারো মনে ভয়। কারো মনে নতুন আনন্দের ঝিলিক। নতুন প্রেসিডেন্ট আসছেন। কেউ কেউ বলছেন- ‘ট্রাম্প আমার প্রেসিডেন্ট নয়’। কেন নয়? কারণ আমি ভোট দিইনি তাঁকে! তাতে কী? তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। পাশ করেছেন। এটাই শেষ কথা। রাজপথ দখল করে তো আর মার্কিন রাজনীতির পট বদলানো যাবে না। এখন বাংলাদেশেই যাচ্ছে না। আর এটা তো আমেরিকা।না- ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইমিগ্রেশন বিষয়ে আপাতত ‘ধর-পাকড়’ কিছুই নেই! তিনি যা বলছেন, তা ডলার আর বাণিজ্য নিয়ে। তিনি আমেরিকার অর্থনীতি চাঙ্গা করতে চান। ব্যবসা বাড়াতে চান। মানুষের চাকরি দিতে চান। বেকারত্ব দূর করতে চান।ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে প্রচারের সময় মানুষের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা অবশ্যই পূরণ করা হবে। পরিকল্পনাগুলো নিয়ে তিনি আলোচনা করছেন তার সম্ভাব্য সেক্রেটারি (মন্ত্রী)দের সঙ্গে। এসব প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্যই কাজ করবে ট্রাম্প প্রশাসন। আর ওই শক্তি, সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা দিয়েই দল গঠন করবেন ট্রাম্প। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়েই কাজ শুরু করবে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন চুক্তি হবে অন্য দেশের সঙ্গে তবে এতে প্রাধান্য পাবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো। যাই হবে তা হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে।যে পাঁচটি পরিকল্পনাকে ট্রাম্প প্রায়োরিটি দিচ্ছেন, তা হলো উত্তর আমেরিকান মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে (নাফটা) থাকা বা না থাকা, ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের চুক্তি, ‘অনৈতিক আমদানি’ বন্ধ করা, ‘অনৈতিক বাণিজ্য’ বন্ধ করা এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির দিকে জোর দেওয়া। সাধারণ আমেরিকানের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের প্রাধান্য পাবে। আর এ ক্ষেত্রে আলোচিত হবে ব্যবসা সংক্রান্ত কর কমানো, ব্যবসায় শর্ত কমানো। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ শক্তিসম্পদে নিয়ন্ত্রণ রাখবে ট্রাম্প প্রশাসন।নতুন এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্য দুই দেশের সঙ্গে ‘ক্ষতিকর’ কিছু হয় কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে তাঁর সরকার। বাণিজ্যের কারণে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নজর রাখার নির্দেশ দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে তার টিমের। আন্তর্জাতিক কর্পোরেট আদান-প্রদানের বিষয়ের ক্ষেত্রেও পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশও আসতে পারে।যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিকে ঝুঁকবেন ট্রাম্প। আর এ ব্যাপারে কংগ্রেসও এগিয়ে আসবে প্রেসিডেন্টকে সাহায্য করার জন্য। এখন প্রেসিডেন্ট খুব সহজে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস এ সুবিধা দিয়ে রেখেছে। সেটা হয়তো বেড়ে ২০২১ পর্যন্ত যাবে।একটি বিষয় খুব জোর দিয়ে বলা দরকার, ট্রাম্প নিয়ে প্যানিক যারা তৈরি করতে চাইছেন এরা মূলত কারা? কী মতলব তাদের? যারা বলছেন, ট্রাম্প ঘোর মুসলিমবিরোধী, সেটাই বা কতটুকু সত্য? না- ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে এমন কিছুই আমেরিকায় ঘটেনি, যা মুসলিমদের জন্য শংকার কারণ হয়েছে। যারা আটক হয়েছে- এরা বিভিন্নভাবে ক্রিমিনাল। তাদের অপরাধই তাদের জন্য কাল হয়েছে। এরা সহিংস কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে আইনের হাতে ধরা পড়েছে, কিংবা পড়ছে। ট্রাম্প প্রায় তিরিশ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করার কথা তার নির্বাচনী অঙ্গীকারে বলেছিলেন।যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কাজ করা ট্রাম্পের জন্য সত্যিই খুব কঠিন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার অবৈধ অভিবাসীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড আছে। অথচ প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বের করে দেওয়াটা সহজ কাজ নয়। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন কয়েক হাজার সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। সিনেট কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে। আর এর জন্য বিলিয়ন ডলারের রাষ্ট্রীয় বাজেট লাগবে ট্রাম্প প্রশাসনের।ট্রাম্প সাধারণ মানুষকে যে বিষয়টি বুঝিয়েছেন- তা হলো, সাধারণের ট্যাক্সের ডলারেই অবৈধরা এখানে নানা সুবিধা নেয় কিংবা নিচ্ছে। যেমন ধরা যাক- যুক্তরাষ্ট্র মানবিক কারণে এখানে ভিজিট ভিসায় আগত কোনো নারীর সন্তান প্রসবকালীন সকল খরচ বহন করে। তা হতে হয় অপরিকল্পিত। কিন্তু কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্রে এসে এখানে সন্তান প্রসব করে সেই সন্তানের জন্য আমেরিকার জন্মসনদ-পাসপোর্ট বানাতে চান, সেটা এক ধরনের অনৈতিক কাজ। দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে এরকম অনাহুত ‘অতিথি’র সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। বলে নেওয়া দরকার, একজন নারীর প্রসূতিকালীন খরচ বাবদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার ডলার খরচ হয়। এ ডলারের যোগান আসে, জনগণের ট্যাক্সের ডলার থেকে। ট্রাম্প সেই জায়গাটায় আলো ফেলতে চেয়েছেন। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। এরকম ফাঁক-ফোকর অনেক আছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে যত দ্রুত সম্ভব তিনি একটি শক্ত দেয়াল তৈরি করবেন। বাস্তবে তা কতোটা সম্ভব হবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশ বাতিলের যে শপথ ট্রাম্প নিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তা করতে পারবেন ট্রাম্প। ওবামা তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে ৩২টি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো মিয়ানমারের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া। তবে তার সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী ও বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ ছিল, লাখো অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়নের হুমকি থেকে রক্ষা করা ও তাদেরকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।কারা আসছেন ট্রাম্পের কেবিনেটে- সেটাই এখন আমেরিকায় প্রধান আলোচনার বিষয়। কারণ এসব নেতারাই নির্ধারণ করবেন আগামী বিশ্বের রাজনীতির ভবিষ্যৎ। সেক্রেটারি অর্থাৎ মন্ত্রিসভার সদস্য এবং উপদেষ্টা হিসেবে সম্ভাব্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি, সাবেক স্পিকার নিউট গিংরিচ, আলাবামার সিনেটর জেফ সেশনস, ট্রাম্পের ন্যাশনাল ফাইন্যান্স চেয়ারম্যান স্টিভেন নুচিন, নিউ জার্সির গর্ভনর ক্রিস ক্রিস্টি। সিনেটর জেফ সেশনস-কে এটর্নি জেনারেল করতে পারেন ট্রাম্প। এছাড়াও সিআইএ প্রধান হিসেবে ক্যানসাস এর কংগ্রেসম্যান মাইক পম্পিও, ন্যাশনাল সিক্যুরিটি এডভাইজার হিসেবে (অব.) লে. জেনারেল মাইক ফ্লিন, কে নিয়োগ দিতে পারেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাজনীতিবিদ মিট রমনিকে নিয়োগ দিলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।ট্রেজারি সেক্রেটারি হতে পারেন স্টিভেন নুচিন। ডিফেন্স সেক্রেটারি হিসেবে পদের জন্য এগিয়ে আছেন, ম্যারিন কোরের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জেমস ম্যাটিস। সিড মিলার হতে পারেন কৃষি বিভাগীয় সেক্রেটারি। উইলবার রসকে বাণিজ্য সেক্রেটারি হিসেবে পছন্দ তালিকার শীর্ষে রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এন্ড্রু পুজডার-কে শ্রম সেক্রেটারি করা হতে পারে।হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিস সেক্রেটারি পদে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর টম প্রাইস-কে আনা হতে পারে। তাছাড়াও হাউজিং সেক্রেটারি পদে রবার্ট উডসন, ট্রান্সপোর্টেশন সেক্রেটারি পদে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর জন মিকা, এনার্জি সেক্রেটারি পদে হেরল্ড হাম, এডুকেশন সেক্রেটারি পদে রাজনীতিক লিউক মেসার, হোমল্যান্ড সিক্যুরিটি সেক্রেটারি পদে মাইক ম্যাকাল, এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন সেক্রেটারি পদে লিসলে রুটলেজ, এবং ডিরেক্টর অব অফিস ম্যানেজম্যান্ট এন্ড বাজেট পদে, এরিক উলেন্ড-কে নিয়োগ দেওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। যে বিষয়টি এখানে লক্ষণীয়, তা হলো যারা সেক্রেটারি অর্থাৎ মন্ত্রিত্বের পদে আসীন হচ্ছেন এরা সকলেই ঝানু রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ। যারা এর আগেও মার্কিনি নীতি নির্ধারণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। ট্রাম্পের সময়ে কেমন হবে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে আমেরিকার আচরণ? এ প্রশ্নটিও আসছে- নানাভাবে ঘুরে-ফিরে।রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন, টেলিফোন আলাপে ট্রাম্পের সঙ্গে একমত হয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বর্তমান সম্পর্ক একেবারেই অসন্তোষজনক। এ সম্পর্ক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজও করতে হবে। তাদের আলোচনায় সিরিয়া ইস্যুও স্থান পেয়েছে।আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন ট্রাম্প-পুতিন। আমরা দেখেছি- কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে ওবামার যুক্তরাষ্ট্র আর পুতিনের রাশিয়া। যার সর্বশেষ প্রকাশ ঘটেছে সিরিয়ায়। মস্কো সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আর ওয়াশিংটন সমর্থন দিচ্ছে বাশার বিদ্রোহীদের। তবে মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্ক উন্নয়নের আভাস মিলছে। যা বিশ্বের জন্য একটি আশার বাণী। আমার কাছে মনে হচ্ছে, ট্রাম্প নির্বাচনের আগে মুখে না না ধরনের অশ্লীল শব্দাবলি উচ্চারণ করলেও পাশ করার পর তিনি বেশ সংযত হয়েই এগোচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতার সঙ্গেও রাষ্ট্রক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে কথা বলেছেন। এর মাঝে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের, প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী কংগ্রেসওম্যান তুলসি গাববার্ড।পেরুর রাজধানী লিমায় এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে সহযোগিতা করতে চান এবং তার দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা ঠিক করার জন্য সময় দিতে চান। তিনি খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন- ‘কোনো ইস্যুতে যদি মার্কিন মূল্যবোধ ও আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং ওই আদর্শ রক্ষায় আমার ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি, তাহলে তখন তা বিবেচনা করে দেখবো।’বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লাতিন আমেরিকা ও বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সময় দিন। ওবামা বলেন, ‘আপনাদের উদ্দেশে আমার মূল বার্তা হচ্ছে, যে বার্তা আমি ইউরোপেও দিয়েছি- অত্যন্ত বাজে কিছু ঘটবে এমন ধারণা করে নেবেন না’। পেরুতে তরুণদের সঙ্গে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে ওবামা এ কথা বলেন।ওবামা বলেছেন- ‘প্রশাসন দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং তাদের নীতিগুলো একসঙ্গে কার্যকর করা শুরু না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তখন আপনারা বিচার করতে পারবেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থের সঙ্গে এবং শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বাস করার সঙ্গে সেগুলো সঙ্গতিপূর্ণ কি-না।’‘তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি বিচার না করাটাই এখন সবার জন্য ভালো হবে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে তার দলবল নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ইস্যুগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিতে হবে, তাদেরকে তাদের নীতি নির্ধারণ করতে দিয়ে দেখতে হবে। কারণ, আমি সব সময়ই বলি, একজন যেভাবে নির্বাচনী প্রচার চালান, সেভাবে শাসন না-ও চালাতে পারেন।’ যোগ করেন বারাক ওবামা।ট্রাম্পের প্রশাসন ‘মেক আমেরিকা বেটার’ স্লোগান দিয়ে কাটাবে আগামী দুই বছর। কারণ তাদের হাতে অনেক কাজ। তাই বিশ্বের জন্য আমেরিকা যুদ্ধংদেহী হবে- এমনটি আপাতত ভাবার দরকার নেই। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি আলোকিত বিশ্ব, আলোকিত প্রজন্ম গঠনের জন্য কাজ করে যাবেন- সেই প্রত্যাশাই আমরা করতে পারি। ----------------------------------------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ২৫ নভেম্বর ২০১৬ শুক্রবার সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪
false
rn
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,চিরদিন কেন পাই না (ইদানিং 'হিমি'র বেশ নাম ডাক হয়েছে।সবাই ফোন করে 'হিমি'র খোঁজ খবর জানতে চায়।হাজার টা মেইল করে ।সেদিন লন্ডন থেকে একজন ফোন করে জানতে চাইলেন 'হিমি' কেমন আছে?আর তরুনী মেয়ে গুলো প্রথমে জানতে চায় আচ্ছা,'হিমি বলে কি কেউ সত্যি আছে?আর অনেকে জানতে চায় কতদিন হয়ে গেল কেন 'হিমি'কে নিয়ে কিছু লেখা হচ্ছে না?আমি কারো প্রশ্নের ঊওর দেই না,ছোট করে একটু হেসে দেই শুধু।)এক আশ্চর্য সুন্দর মেয়ের নাম 'হিমি'।মনের ভেতর একসঙ্গে খেলা করে তার প্রকৃ্তির মতো সরলতা আবার জটিলতা ।আঁষাঢ় মাসের মেঘের মতো মনের আকাশে ভেসে বেড়ায় তার সাদা মেঘের ভেলা।হেমন্তে বয়ে আসে অচিন লোকের মাতাল হাওয়া।শীতে কুয়াশায়,শিশিরে শিশিরে সুক্ত হয়।আমার আশে পাশে অদৃশ্য ভাবে সব সময় একজন থাকে।তার নাম 'হিমি'।তার অনেক ক্ষমতা।সে আমার সমস্ত দুঃখ কষ্ট নিমিষে ভুলিয়ে দিতে পারে।হিমি'তোমার জন্য প্রবল তৃষ্ণা পুষে রেখেছিলাম বলেই কি তোমাকে পাবো না?আমি কি তোমাকে আনন্দ দিতে পারবো না কিংবা সুখ?কিসে একটি মানুষ সুখী হয়?বৃষ্টির রাতে হাত ধরাধরি করে,যখন আমরা এক সাথে ভিজব,তখন কি গভীর আবেগ তোমাকে এটুও আচ্ছন্ন করবে না?'হিমি' বুকের মধ্যে এক ধরনের ব্যাথা হয়।তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।সে সময় একটি সুখকর স্পর্শের জন্য মন কাঁদে।কিন্তু তুমি দূরে দূরে রইলে!আহ্ তোমাকে কতদিন দেখি না!তোমার গোলগাল আদুরে মুখ।মাঝে মাঝে তোমার জন্য খুব কষ্ট হয়।ইচ্ছে হয় আবার নতুন করে শুরু করি।তাহলে ভুল গুলো শুধরে নিতে পারব।আমার-তোমার সম্পর্ক শেষ ভাবলে নিজেকে খুব তুচ্ছ ও সামান্য মনে হয়।তোমার দেয়া সামান্য আঘাত আমার জন্য তীব্র রুপ ধারন করে।'হিমি' তুমি-আমি বড় বেশী অভিমানী হয়ে জন্মেছি।'হিমি' ভালোবাসা ধরে রাখার ক্ষমতা হয়তো আমার নেই।আর হয়তো এ কারনেই আমি আজ বিচ্ছিন্ন।"যে চলে যায় সে তো কভু,আসে না আর ফিরে যে ছবি আঁকা হয়,সে কভু যায় না মুছে"।মনে করো যেন আকাশ পেরিয়ে-সাগর ছাড়িয়েবহু দূরে ওই দিগন্তের ওপারে আমি তুমি।দিগন্তের শেষে অন্যভুবন,অন্য জগৎ আদ্যন্ত ভালোবাসা।"একদিন সকালে 'হিমি' আমাকে ফোন করে জানতে চায় বলতো "For God's sake,hold your tongue and let me love"এই কথাটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কোন লেখায় বলেছিলেন।আমার খুব রাগ লাগলো।ঘুম থেকে তুলে এই রকম প্রশ্ন করার মানে কি?রাগ টা দমন করে হাসি মুখে বললাম।এই কথাটা রবীন্দ্রনাথ চুরি করেছেন।এবং তার শেষের কবিতা উপন্যাসে ব্যাবহার করেছেন।তার পর আমি "দোহাই তোদের এতোটুকু চুপ কর/ভালোবাসিবার দে মোরে অবসর' এই কথাটা বলেই ফোন কেটে দেই।দুঃখ কেন পাবো মাঝে মাঝে ভাবি,হিমি।তোমার 'দেখা' আমার জন্য বয়ে এনেছিল তা দুঃখে-সুখে মেশা এক মিশ্র অনুভূতি।সারল্য ও সততার মূল্য তো আমি একাই দিচ্ছি না।কড়ি গোনাতে তুমিও তো আছো আমার সঙ্গে ,কি?পুরোপুরি তো আছো?তাছাড়া,তোমার সব বক্তব্যই শেষ হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি না।সিদ্ধান্ত দুজনের এক সাথে নিতে হবে।আমি তো কোনো সম্পর্ক গড়ার জন্য তেমন তাড়া অনুভব করিনি।তার পরেও হঠাৎই তুমি এলে এবং আমার মনে হলো -কোনো অদৃশ্য সুখকারী দেবী'র দানেরই মতো,শ্রাবনের ঝঁড়ের ফুল অথবা ভুলেরই মতো।আমার কোনো তাড়া ছিল না।কিন্তু সব কথা অকপটে আমাকে প্রথমবার জানানোর পর থেকেই তোমার খুব তাড়া ছিল।তবুও তোমার জন্য জানতে পেরেছি যে-কোন অন্তজগৎ এখন ও বেঁচে আছে এই পৃথিবীতে ,যে পৃথিবীতে 'হিমি' নামের একটি মেয়ে বাস করে,যার দু'চোখে কৌতুহল,যার অন্তরে নির্মল সততা,সুরুচি সম্পন্ন মানসিকাতা এবং সংবেদনশীলতা।'হিমি' আমি চাই সব সময় তোমারই জয় হোক।মনটা ভিষন খারাপ হয়ে আছে ।আমাকে একটি সুন্দর চিঠি দিবে।যে চিঠি পড়ে আমার মন ভালো হয়ে যাবে।'হিমি' তোমাকে আমি ভালোবাসি।যেহেতু তুমি আমার কাছে কখনো ছিলে না,ইচ্ছে হলে যখন তখন তোমাকে দেখতে পেতাম না।চাইলে বা না চাইলেও কাছে পেতাম না।তাই তোমাকে আলাদা করে কিছু ভাবিনি।নিজের ছায়াকে তো মানুষ গুরুত্ব দেয় না।দিন দুপুরে ছায়াহীন মানুষের কষ্ট কি তা এখন বুজতে পারছি।'হিমি' কে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।'হিমি' বলে কি কেউ আছে?হয়তো কেউ নেই।সবই মায়া।সব রহস্যের সমাধান আছে।একদিন সব রহস্য জানা হয়ে যাবে।সেই একদিন টা কবে?একদিন বিকেলে আমি ঘুমিয়ে আছি,তখন 'হিমি'আমার ঘরে এসে বালিশের নীচে একটা চিরকুট রেখে যায়।লিখেছিল- উওর পাড়া যাবা না/ভাজা পোড়া খাবা না/আমি যে কবিরাজ কাউরে কবা না।এই কথাটার মানে কি কে জানে!আজও বের করতে পারিনি।কিন্তু একটা জিনিস পেরেছি।একটা কবিতা লিখে ফেলেছি।হিমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাসছে।কিন্তু কি নিরব সেই হাসি!তার হাতে চায়ের কাপ।হিমি'র চোখে নক্ষএ।কিন্তু কি বিকট তার দীপ্তি!হিমি'র ঠোটে চাঁদ।কিন্তু চাঁদের মতো হিম নয়,আগুনের মতো উওপ্ত।নীল শাড়ি,সবুজ পাড় মাথার চুল খোলাশঙ্গশাসা হাতহিমি স্থির চোখে তাকিয়ে আছে।(পৃথিবীতে অনেক নারী আছে,অনেক পুরুষ আছে।কিন্তু বিশেষ কোনো নারী,বিশেষ কোন পুরুষ কে প্রত্যাক্ষান করলে-দীর্ঘ পরিচয়ের পরেও সেই পুরুষের ব্যক্তিত্বে দারুন একটা আঘাত লাগে।)
false
ij
চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে_ লালনের দুর্বোধ্যতম একটি গান। শুনেছি বিতর্ক আছে যে “চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে” গানটি আদৌ লাগনের গান কি না। স্বয়ং ফরিদা পারভীনের অভিমত এ রকমের। অন্য আরও অনেকেরই। গানটি লালনের নামে গানটি চলছে; তাদের বক্তব্য এ রকম। আমরা সেই তর্কে যাব না। বরং গানটির অর্ন্তগত মানে বোঝার চেষ্টা করব। কিন্তু, তা কি সম্ভব? কেননা, বাউলতত্ত্ব বাংলার প্রায়-গুপ্ত এক সম্প্রদায়ের তত্ত্ব। তারা সহজে এটি সাধারণ্যে জানাতে চায় না। (দ্র: মাকসুদুল হক রচিত “বাউলিয়ানা।”) জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে চলেন। আমরা জানি, নগরের বিস্তারহেতু ছেঁউরিয়া এখন মহানগরের অনেকই কাছে। তার আগে, বছরের পর বছর বাউল গান বাংলার বিচ্ছিন্ন পল্লির নিরালা অন্তরেই বেজেছে। তবু আজ আমরা বাউলমত বুঝতে চাই। সত্য এই। কেননা, বাউল মত এক অনিবার্য সত্যকে ধারণ করে রয়েছে। জগতের সব মতই যখন ব্যর্থ -যখন সবখানেই রেষারেষি আর রক্তপাত; তখন মানবতাবাদী বাউলমতের সারকথার খোঁজখবর নিতেই হয় । গানের ব্যাখ্যা করতেই হয়। যেহেতু বাউল দর্শন গানে ব্যাখ্যাত। হয়তো এ ব্যাখ্যায় ভুল থাকতে পারে। তবু চেষ্টা অব্যাহত থাক না; যখন বাউলগুরুরা মুখ খুলবেন না। মুখ খুললেও যখন তাঁদের গূহ্য শব্দ বোঝা যাবে না। আর লালনের মহপ্রয়ানের পরই তো ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ছেঁউরিয়ায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছিল। কথাটা এই জন্য বলা যে, লালনের গান একেক লালনপন্থি উপসম্প্রদায় একেক রকম ভাবে ব্যাখ্যা করে। কাজেই বাজারে যখন লালনের গানের নানা রকম ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে তখন আমাদের সহজ বুদ্ধিতে যদ্দুর বোঝা যায় তারই ভিত্তিতে লালনের এই দুর্বোধ্যতম গানের ব্যাখ্যা উপস্থান করতে সঙ্কোচ কোথায়। এবার না-হয় মূল গানটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেই- চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে আমরা ভেবে করব কি। ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম; তারে তোমরা বলবে কে। ৬ মাসের এক কন্যা ছিল ৯ মাসে তার গর্ভ হল; ১১ মাসে তিনটি সন্তান কোনটা করবে ফকিরি? ঘর আছে তার দুয়ার নাই লোক আছে তার বাক্য নাই। আবার কে তাহারে আহার যোগায়? কে দেয় সন্ধ্যাবাতি? ফকির লালন ভেবে বলে: ছেলে মরে মাকে ছুঁলে, আবার এই কয় কথার অর্থ নৈলে তার হবে না ফকিরি ... কি বুঝব? কে বুঝেছে? নারীগর্ভের কথা আছে বোঝা যায়। ফকিরের কথা আছে। সবই রহস্যময়। গানটির ইংরেজি অনুবাদ কি গানটির মানে বুঝতে সাহায্য করতে পারে? One moon has touched the body of another, what shall we do, having thought of that? The mother's birth is from the daughter's womb; what do you call her? There was a girl of three months; in nine months she conceived. In eleven months there were three offsprings; which one will the fakir take? Sixteen arms, thirty-two heads; the child speaks within the womb. Who are its mother and father? That's a question to be asked! There is a room with no doors; there is a man who doesn't speak. Who furnishes his food: who lights the evening lamp? Lalon Shah, the fakir, says, " If the mother touches, the son dies. He to whom these words have meaning, to him, indeed, belongs fakirdom. ইংরেজি অনুবাদ করেছেন Charles Capwell কিছু বোঝা গেল কি? নগর ছেড়ে চলে গেলে বোঝা যাবে কি? কোনও দিন? লালনের গান বা বাউল গান বুঝতে চেয়েও বুঝতে না-পারাটাও অনিবার্য লালনচর্চা বলেই মনে হয়। তবে মাঝে মাঝে এও ভাবি-এটিই পৃথিবীর দুর্বোধ্যতম গান কি না। (ইংরেজি অনুবাদের সূত্র: আবুল আহসান চৌধুরী রচিত ‍"লালন সাঁইয়ের সন্ধানে।") সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩২
false
hm
মহাকাগু, তোমারে সেলাম খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, অভ্র আর অভ্রের ডেভেলপারদের যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি করে পত্রিকায় আর্টিকেল ফেঁদেছিলেন বিজয় কীবোর্ডের প্রণেতা মোস্তফা জব্বার। তার মূল রাগ ছিলো, কেন নির্বাচন কমিশন তার বহুমূল্য সফটওয়্যারটির লাইসেন্স না কিনে কোথাকার কোন এক বিটকেল ছোকরা মেহদী হাসান খান আর তার ইয়ারদোস্তোদের ঘরের চিবিয়ে বনের মোষ পেঁদিয়ে বানানো বিনামূল্য অভ্র সফটওয়্যার ব্যবহার করেছিলো, তা নিয়ে। নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ূন কবিরও বাদ পড়েননি জব্বারের রোষানল থেকে। ইউএনডিপিকেও চোর ডেকে বসেছিলেন জব্বার। চোরে চোরে চোরাক্কার পৃথিবীতে এরপর অনেক জল গড়িয়েছে, আমরা টুকটাক জানি। কপিরাইট অফিসে ধর্ণা দিয়ে মেহদীর বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনেক তর্ক বিতর্ক আর উকিলি প্যাঁচঘোঁচ শেষে জব্বার আর মেহদী এক মঞ্চে বসে ঠিক করেছিলেন, যে কীবোর্ড লেআউটটিকে জব্বার তার সবেধন নীলমণি বিজয় এর কপি হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন, সেটিকে মেহদী তার অভ্রের পরবর্তী সংস্করণ থেকে সরিয়ে দেবে। মেহদী ছেলেটা কথা দিলে কথা রাখে। নতুন অভ্রে বিজয়-বিজয় গন্ধ বার হতে পারে, এমন কোনো লেআউট নেই। তবে নতুন ৫.০.৮ সংস্করণ নামিয়ে দেখলাম, অভ্রের এই বিটা সংস্করণে যুক্ত হয়েছে ANSI সাপোর্ট। সেইসাথে, অভ্রে একটি ফিচার অনেক আগে থেকেই ছিলো। যে কেউ চাইলেই নিজের পছন্দসই একটি লেআউট ডিজাইন করে নিতে পারেন। আপনি যে লেআউটটি ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেটি সামান্য কষ্ট করে আপনি নিজেই সেট করে নিতে পারবেন। কিংবা কে জানে, আপনার কাছে যে লেআউটটি প্রিয়, সেটি হয়তো আপনার কোনো বন্ধু আগেই তৈরি করে রেখেছে অভ্রে ব্যবহারের জন্যে। মাত্র কয়েকশো কিলোবাইটের একটি প্যাচ ফাইল ইনস্টল করে আপনি একদম নিজের মনের মতো একটা লেআউট বানিয়ে ফেলতে পারবেন। ব্যাপারটা তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এমন, আপনি অভ্র ব্যবহার করে ফোনেটিক লেআউট কিংবা নিজের তৈরি আমার্লেআউটেআমিলিখিভালোনালাগ্লেভাগ লেআউটেও ANSI মোডে লিখে যেতে পারবেন। অর্থাৎ, প্রকাশনার জগতে যে ANSI ফন্টগুলো বহুল ব্যবহৃত, তা নিয়ে ইলাসট্রেটর, পেইজমেকার বা ফোটোশপের মতো সফটওয়্যারে কাজ করতে আপনাকে আর কষ্ট করে পয়সা দিয়ে কোনো বদ বেনিয়ার বানানো বদখদ সফটওয়্যার খরিদ করতে হবে না। বিনামূল্যে ওমাইক্রনল্যাব থেকে নামিয়ে নিন অভ্র। ইউনিকোড আর এএনএসআই, দু'টোতেই এখন এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেইসাথে যোগ হয়েছে ইউনিকোড থেকে একটি জনপ্রিয় ANSI লেআউটে রূপান্তরের অত্যন্ত মসৃণ একটি রূপান্তরক। ইউনিকোডে লেখা ডকুমেন্ট নিয়ে পেইজমেকার বা ইলাসট্রেটরে কাজ করতে চাইলে ওখানে পেস্ট করে কনভার্ট করে নিন। তারপর কাজ করতে থাকুন। সামনে আসছে গোয়েন্দা ঝাকানাকা কমিক। এর টেক্সটের কাজটা পুরোটাই হবে অভ্রে, ANSI মোডে। ওমাইক্রনল্যাবের কাছে আরেক দফা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে যাই আগেভাগে।
false
ij
আমরা কি অভ্যন্তরীন পর্যটনের কথা ভাবতে পারি_ (৪) উৎসর্গ: প্রিয়কবি ফারিহান মাহমুদ। অভ্যন্তরীণ পর্যটন তত্তের উদ্ভাবক জুবায়ের রহমান গত পৌষে হোসেনপুর গ্রাম বেড়িয়ে গেলেন। যে-কটা দিন জুবায়ের রহমান হোসেনপুর গ্রামে ছিলেন রহমান সাহেব উত্তেজিত হয়েই ছিলেন। তার কারণ ছিল। জুবায়ের রহমান অভ্যন্তরীণ পর্যটন সস্পর্কে আরও কটি নতুন কনসেপ্ট দিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ক) সন্ধ্যার পর বাউল কনসার্ট। খ) সপ্তাহব্যাপী পিঠা মেলা। গ) পাল পাড়ায় একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র। শীত সকালের মিঠে রোদে কাচারিবাড়ির টানাবারান্দায় বসে গুড়ের চা খেতে খেতে জুবায়ের রহমান বললেন, পাল পাড়ায় যারা মূর্তি তৈরি করে প্রথমেই তাদের প্রথম শ্রেণির শিল্পীর মর্যাদা দিতে হবে। রহমান সাহেব মাথা নাড়লেন। পাল পাড়ার বিপিন রহমান সাহেব-এর ছোটবেলার বন্ধু। কত সুন্দর ছবি আঁকত বিপিন। ঘুড়ি তৈরি করত। সেদিন বিকালে হোসেনপুরের হাটে বিপিনকে দেখলেন রহমান সাহেব। অনেক দিন পর। কেমন বুড়িয়ে গেছে বিপিন। অভাব। জুবায়ের রহমান চা শেষ করে ততক্ষণে একটা সিগারেট ধরিয়েছেন। একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বললেন, পাল পাড়ায় একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। শহর থেকে লোকে যেহেতু হোসেনপুরে আসতে শুরু করেছে, ক্রেতা তারাই। আপনি ঠিকই বলছেন। রহমান সাহেব বললেন। জুবায়ের রহমান বললেন, তাতে সম্প্রদায়টা বাঁচবে। আগে মূর্তি গড়ার মাটি ফ্রি পেত ওরা। এখন কিনতে হয়। হ। জানি। বিপিনের বহুৎ কষ্ট। বিপিন কে? জুবায়ের রহমান কিঞ্চিত বিস্মিত। রহমান সাহেব বললেন, আরে বিপিন। পালপাড়ায় বাড়ি। আমার ছুটবেলার দোস্ত। ও। তো ওদের বাজার তৈরি করতে হবে। পন্য উৎপাদনকারীদের জন্য বাজারই হচ্ছে আসল। জুবায়ের রহমান বললেন। শহরের পর্যটকরাই পাল পাড়ার মূর্তিগুলি কিনবে। দেখবেন তখন ওদের অবস্থাটা বদলে যাবে। আর? আর? রহমান সাহেব সামান্য ঝুঁকে পড়েন। জুবায়ের রহমান বললেন, সন্ধ্যার পর বাউল গানের কনসার্টের আয়োজন করতে পারেন। সন্ধ্যার পর তো অতিথিরা ঘুরে বেড়ায় না। এই উঠানেই মঞ্চ করুন না কেন? গ্রামের বাউলদের সঙ্গে চুক্তি করুন। তা হলে ওদের হাতে কিছু পয়সা আসবে। বাংলাদেশে বাউলদের দুঃখকষ্ট দেখে এত কষ্ট লাগে যে কি বলব? অথচ ওদের মতন শুদ্ধাত্মা আর কোথায় আছে? কথাট রহমান সাহেব বুঝলেন না। বললেন, তয় গান কি ফ্রি হবে? না, না ফ্রি হবে কেন? পৃথিবীতে কোন্ জিনিসটা ফ্রি বলুন। গান শোনার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। ১০ টাকা হলেও দিতে হবে। আসলে আমি চাইছি অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে করের আওতায় আনতে। আপনিও বছর শেষে আয়ব্যয়ের হিসাব করে কর দেবেন কিন্তু। রহমান সাহেব বললেন,দিমুনা মানে। জীবনে হারাম খাইনি। এখন এই শেষ বেলায় আমার কী ভূতে ধরবে? জুবায়ের রহমান বললেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটন করের আওতায় এলে সরকার আরও রাজস্ব পাবে। তখন জনগনের আরও সেবা করতে পারবে। আমি কেবল পদ্মা ব্রিজের কথা ভাবি না রহমান সাহেব। আমি লক্ষ্মীপুর-ভোলা ব্রিজ ... মানে মেঘনা ব্রিজ নির্মানেরও স্বপ্ন দেখি। কথাটা রহমান সাহেব ঠিক বুঝলেন না। তিনি বললেন, আর পিঠা উৎসবের কথা তখন কি ...কথা শেষ হল না। রহমান সাহেবের মোবাইল বাজল। পুরনো মডেলের একটা মোটোরোলা। নীল রঙের। হ্যালো। কে? ও আপনি। আরে চিনুম না মানে? আপনার মেয়ে কেমন আছে। ভালো। যাক। আসলে আমি কই কি-শহরের মানুষের মনের দুঃখের নিদান পল্লীর কাদাপানিতে আছে। আল্লায় রাইখা দিসে। আর কে রাখব। শোনেন আপনারে একটা কথা কই। ১০ বছর আগে আমার কি হইল জানেন। তখন খুলনায় ইউসুফ জুটমিলে চাকরি করি। খালি পানির পিপাসা। ঘন ঘন প্রশ্রাব। বাসে উঠলে ঝামেলা। মেয়ে পড়ে ময়মনসিং মেডিকেলে। ডাক্তারে কইল ডায়াবেটিস। শুইনা এমন মন খারাপ হইল। তখন আমার এক কলিগে কইল হাঁটেন আর কালিজিরার তেল খান। খাইলাম। ইনশাল্লা এখন অবধি সমস্য নাই ... তাই কইলাম, শহরের মানুষের মনের দুঃখের নিদান পল্লীর কাদাপানিতে আছে। আল্লায় রাইখা দিসে। আর কে রাখব। আবার কবে আসবেন। পোলা-মাইয়া নিয়া আইসেন। আরও কিছুক্ষণ কথা বলে মোবাইল অফ করলেন রহমান সাহেব। সিগারেট শেষ করে অ্যাসট্রেতে গুঁজে সিধে হয়ে বসে রহমান সাহেবের দিকে তাকালেন জুবায়ের রহমান। চোখে প্রশ্ন। রহমান সাহেব বললেন,মিসেস রুবি ইসলাম। গত বছর আসছিল। মেয়ের সমস্যা ছিল। গায়ে কাদা মাখায়া ঠিক হইয়া গেছে। ও। জুবায়ের রহমান অবাক হলেন না। তিনি পদ্মাপাড়ের জলকাদা অনেক আগেই শরীরে মেখেছেন। ছাত্রজীবনে। তা তখন পিঠা লইয়া কি কইতেছিলেন? রহমান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন। জুবায়ের রহমান বললেন, এই রকম শীতের সময়ে পিঠা উৎসব করতে পারেন। গ্রামের মেয়েরা অংশ নেবে। তবে একসঙ্গে সবাই না। একদিন একটা পরিবার। আগে থেকে তারিখ বলে দেবেন। চমৎকার। আচ্ছা। তয় রাঙার মা রে দিয়া শুরু করি। আগামী পরশু। তালতলার মাঠে। রাঙার মা স্পেশাল। আজ সকালে চিতই পিঠা খাইলেন না? খাইনি আবার। কতদিন পর মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। জুবায়ের রহমানের কন্ঠে বাস্প জমে। এমনিতেই তিনি নিছক আবেগ পাত্তা দেন না। বাস্তববাদী চিন্তাবিদ বলেই হয়তো। পিঠা কে করসে কন তো? রাঙার মা? তাইলে বুঝেন। তা হইলে রাঙার মারে দিয়াই শুরু করি। তুই কি কস শামসুল? শামসুল কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে হাসল। মাথা নাড়ল। রহমান সাহেব বললেন, চলেন পাল পাড়ায় যাই। প্রদর্শনী কেন্দ্র কোথায় হবে ঠিক কইরা আসি। তয় বিপিনের বাড়িতে করলেই ভালো। রানি মাসিমা আমারে যে কি স্নেহ করতেন। আমি আর বিদেশ গেলাম না। চলেন। জুবায়ের রহমান উঠে দাঁড়ালেন। মাথা সামান্য টলে উঠল। কদিন ধরে অল্প অল্প উইক লাগছে। কালিজিরার তেল খেতে হবে। হোসেনপুর থেকেই নিয়ে যাবেন ১ কেজি। রহমান সাহেব বললেন, আসার পথে মোমিন বাউলের বাড়িও যামু। প্রথম চুক্তি তাঁর সঙ্গেই করমু। শুনছি শরীরটা নাকি তার ভালা না। বিজয় সরকারের দারুণ ভক্ত মোমিন বাউলা। কি চমৎকার বিজয় সরকারের গান গায়! জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি। তা হলে তো শুনতে হয়। জুবায়ের রহমান হেসে বললেন। নিশ্চয়ই শুনবেন। ওরা উঠানে নেমে আসেন। শামসুল দুজন পাগলাটে মানুষের পিছু নেয়। জুবায়ের রহমান ততক্ষণে আরেকটা সিগারেট ধরিয়েছেন। ইয়ে, মানে, সিগারেটটা ছাড়লে হয় না? রহমান সাহেব মিনমিন করে বললেন। কি দরকার। মাই ওনলি ভাইস। জুবায়ের রহমান বললেন। বাদ দেন। এখন শুনেন কি বলি। বাংলাদেশে প্রায় সত্তর হাজার গ্রাম,না? হ। ঢাকা শহরের মানুষই ধরুন দেড় কোটি মানুষ। আমি মাত্র ২ লাখ মানুষ চাই। ক্যান? বলছি। ঢাকা শহরের দেড় কোটি মানুষের মধ্যে যদি মাত্র ১ লাখ মানুষ বা আরও কিছু বেশি মানুষ নিয়মিত গ্রামে ভিজিট করে তো শহরের টাকা গ্রামে চলে আসে না। আসে। তখন ৭/৮ কোটি ছিন্নমূল মানুষের অন্নের সংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা ... কথাগুলি শামসুল ঠিক বুঝল না। তবে এটুকু বুঝল-একদিন ওর একটা গাড়ি হবে। ওর গাড়ির খুব শখ। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৯
false
rn
আসুন সিরিয়া দেশটি সম্পর্কে জানি না সিরিয়া এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র। একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আরবি ভাষা সিরিয়ার সরকারী ভাষা। এখানকার প্রায় চার-পঞ্চমাংশ লোক আরবি ভাষাতে কথা বলে। আয়তন : ৭১,০৬২ বর্গমাইল। দামেস্ক সিরিয়ার রাজধানী ও প্রধান শহর। মোট জিডিপি : ১০৭ দশমিক আট বিলিয়ন (ডলার) মাথাপিছু জিডিপি : ৫,১০০ ডলার ।৬৭'র যুদ্ধ পরবর্তী জরূরী অবস্থার ভেতর ক্ষমতায় আসে সামরিক বাহিনী'র হাফিজ আল আসাদ, বর্তমান প্রেসিডেন্টের পিতা। হাফিজ আল-আসাদ ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৭১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর। তাঁর মৃত্যু হয় ২০০০ সালে। ক্ষমতায় বসানো হয় তাঁর পুত্র বাশার আল-আসাদকে। বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় দেওয়া ১৪০টি দেশের মধ্যে সর্বশেষ স্থানে রয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০০ সাল থেকে এই নগরীর ইতিহাস সমৃদ্ধ।সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ হল সূন্নী। শতকরা মাত্র ১৩ ভাগ আলাভী শিয়া এবং শতকরা ১০ ভাগ খৃষ্টান। অথচ ফরাসীদের শাসনামলে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সংখ্যাগরিষ্ঠ অফিসার রূপে যাদের নিয়োগ দেয়া হয় তাদের অধিকাংশই হল আলভী শিয়া,এবং পরিকল্পিত ভাবে দূরে রাখা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সূন্নীদের। ৭ম ও ৮ম শতাব্দীতে ইসলামী উম্মাহর শাসনকালে দামেস্ক রাজধানীর মর্যাদা পায়। ১২ শতকে এসে সিরিয়ান মুসলিম জেনারেল সালাহ আদ দ্বীন আল আইয়ুবী খ্রিস্টানদের ক্রুসেডের যুদ্ধে পরাজিত করে। আধুনিককালের সিরিয়া অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে চলে যায়। ১৯৪৬ সালে ফ্রান্সের উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে ১৯৬১ সালে সংযুক্ত আরব রিপাবলিক থেকে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে। ১৯৬৩ সাল থেকে বাথ পার্টি ক্ষমতা দখল করে সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। ইসলামী বিশ্বে সিরিয়া বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এই জন্য যে সিরিয়ার ব্যাপারে মহানবী (স) অনেক ভবিষ্যৎ বানী করে গিয়েছেন। সিরিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য অতি সমৃদ্ধ । আরবদের কাছে সিরিয়ার এলাকা “বালাদে শাম” বলে পরিচিত। পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের সেই “ফি আদনাল আরদি” বা নিকটতর নিম্ন এলাকার দেশ হল সিরিয়া। সিরিয়াতে মানব ইতিহাসের প্রধান প্রধান সভ্যতার চূড়ান্ত সংঘাতগুলি হয়েছে। সেটি যেমন ইরানীদের সাথে গ্রীক ও রোমানদের, তেমনি খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের। সিরিয়ার ভূমিতেই মুসলমানগণ তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমানদের পরাজিত করে প্রধান বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভূত হয়। মুসলিম বীর সালাউদ্দিন আয়ুবী এ ভূমিতেই ইউরোপীয় ক্রসেডার বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলিমদের হৃতগৌরব উদ্ধার করেছিলেন। অনেকে মনে করেন- ৪০ বছর ধরে চলা পারিবারিক শাষনতন্ত্র এই ২০১২ সালে কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য না। এর অবসান প্রয়োজন!!! সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ১১ হাজার বন্দীকে নির্যাতন ও হত্যার। এ অভিযোগের পর তীব্র সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর জনবল প্রায় ৪ লাখ। ইতিমধ্যে তিন লাখ সিরিয়ান উদ্বাস্তু রূপে আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী জর্ডান, তুরস্ক, লেবানন ও ইরাকে। প্রতিদিন শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছে হাজার হাজার মানুষ। সিরিয়াতে আজ যে বিপ্লব শুরু হয়েছে সেটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে না গিয়ে দিন দিন রক্তাক্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চক্র ব্যস্ত দেশটিকে আরও দুর্বল করা নিয়ে। এ বিষয়টি আরব বিশ্বের ইসলামের পক্ষ শক্তি যেমন বুঝে তেমনি ইসলামের শত্রুপক্ষও বুঝে। তাই সিরিয়ার চলমান লড়াইটি আজ আর শুধু সিরিয়ানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দেখা যায় পাশের দেশের মুসলিম যুবকরাও এসে শামিল হচ্ছে এ সংগ্রামে। সিরিয়া দেশে উর্বর উৎকৃষ্ট সমতল ভূমি আছে আবার ঊষর মরুময়, পাথুরে, বেলেপাথরময় অঞ্চল আছে। আছে পাহাড়ের সারি। আছে গাছপালা। সিরিয়ায় দারিদ্র্য প্রকট নয়। বৈদেশিক বিনিয়োগ স্বল্প, বেকারত্বের হার অধিক। গ্যাসের রিজার্ভ ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। অর্থনীতির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৫ দশমিক ৭।তেল উৎপাদন : ৩৩৯,৯০০ ব্যারেল/প্রতিদিন। ১,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরীয়রা বিদেশি শাসকশ্রেণিকে উচ্ছেদ করে এবং ফেরাউন সিরিয়া দখল করলেন। এ আমলে বহু সিরীয় শামিত মিশরে পাড়ি জমাল। আমরা ইয়াকুবের (আঃ) পুত্রগণের মিশরে গমনের গল্প, মিশরে ইউসুফ-জোলেখার কাহিনী জানি। খ্রিস্টপূর্ব ৬৪ অব্দে রোমানেরা সিরিয়া অধিকার করে। তখন হেরদ নামে এক রোমের দালাল ইহুদি জেরুজালেমের রাজা হন। হেরদ ছিলেন হেলেনীয় তমদ্দুনের ধামাধারী। পরে রোম জেরুজালেম সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এ আমলে সিরিয়ায় গ্রিক ছিল সংস্কৃতির ভাষা, রোমান ছিল প্রশাসনের, আর আরামি ছিল জনগণের ভাষা। হজরত মুহাম্মদের (দঃ) মৃত্যুর পর খলিফা আবু বকর (রঃ) ও পরে উমরের (রঃ) আমলে মুসলমান বাহিনী সিরিয়া আক্রমণ করে। অল্পদিনেই খলিফার বাহিনী রোমের সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে গোটা সিরিয়া অধিকার করে। উমর (রঃ) নির্দেশ দিলেন মুসলমানেরা যেন সিরিয়ায় চাষবাসে জড়িয়ে না পড়ে। স্থানীয় খ্রিস্টান অধিবাসীদের থেকে যেন আলাদা থাকে। মঙ্গল ও তৈমুরের পর মধ্য এশিয়া থেকে এল ওসমানি তুর্কিরা ষোড়শ শতকে মামলুকদের পরাজিত করে সিরিয়া দখল করে। ওসমানি সিরিয়ায় প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় আলাদা আলাদা মিল্লাত হিশাবে ক্রিয়া করত। বেদুইন, আলবি, ইসমাইলি, প্রভৃতি গোষ্ঠী নিজ নিজ ব্যবস্থায় চলত। ১৯০৮ সালে তুরস্ক থেকে সিরিয়া হয়ে মদিনা অব্দি হিজাজ রেলওয়ে চালু হয়। সুয়েজ খাল চালুর ফলে সিরিয়া হয়ে যাওয়া মরুপথগুলোর গুরুত্ব হ্রাস পায়। অবাধ আমদানির ফলে দেশীয় শিল্প আরো দুর্বল হয়। প্রথম মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে সিরীয়রা আরব জাতীয়তাবাদী জায়গা থেকে সংগঠিত হতে থাকে। সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৫
false
rg
নব্বই দশকের এক তরুণ অবহেলিত কবি ও কথাসাহিত্যিক মামুন মিজান ভারী অবেলায় হারিয়ে গেলেন।। রেজা ঘটক কাল রাতে ফেইসবুক খুলে দেখি প্রিয় খালেদ ভাই (কবি খালেদ হোসেইন) একটি স্টাটাস দিয়েছেন-''কবি মামুন মিজানের মৃত্যু-সংবাদও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? ছাত্র ছিল আমার। ভালোবাসতাম।'' আমি খবরটি ধাতস্থ হবার আগেই কিকো চিৎকার শুরু করলো। কিকো আমাদের নতুন ফ্যামিলি মেম্বার। আমেরিকান এক্সিমো ডগ। কিকোর বয়স মাত্র ২ মাস। ১৮ জুন ২০১৩ থেকে আমাদের সঙ্গী। কিকোর চিৎকারে আমি কম্পিউটার ছেড়ে উঠে যাই। কিকো বাথরুম করেছে ড্রয়িং রুমে। সেই ঝামেলা সামাল দিয়ে রাতে আর ফেইসবুকে বসা হয় নি। সকালে আবার খবরটি পড়ার আগেই চোখ যায় বন্ধু টোকন ঠাকুরের স্টাটাসে। টোকন ঠাকুর লিখেছেন- ''আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে মামুনের জন্য। মামুন খুব ভালো কবিতা লিখত, কলেজে পড়াত, গাইবান্ধায়। ও যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে, আমি পড়তাম ঢাকায়, চারুকলায়। আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের দিনগুলোতে। তখন বাংলা একাডেমি থেকেই, প্রকল্পের আমাদের ৪০ জনের বই একসঙ্গে বের হয়, প্রথম বই প্রায় সব্বারই। গত সপ্তাহে মামুন ঢাকায় এলো, হঠাৎ আমাদের সঙ্গে ওর দেখা হলো চারুকলার সামনে। অনেকদিন পর দেখা... কয়েকটি কথাও হলো। আজ খালেদ ভাইয়ের ( কবি খালেদ হোসেইন) স্ট্যাটাস পড়ে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, মামুন মারা গেছে। মামুন ঢাকায় এসে একবার ওর উপন্যাস পড়তে দিল। খুবই পরিশ্রম করে লেখা। আরেকটি উপন্যাসের প্লট শোনাল একবার আমার বাসায় বসে...আজ সেই মামুন নেই? আমাদের অনেক স্মৃতি আছে জ্বলজ্বলে...মামুনের কবিতা আমার পছন্দ ছিল প্রথম থেকেই। খুব খারাপ লাগল এই সংবাদটা...আমাদের বন্ধু, কবি মামুন মিজান নেই? শোকাহত আমি...'' সত্যিই এটা মানা খুব কষ্টের। একজন তরুণ লেখকের মৃত্যু আমাকে আরো বেশি অপরাধী করে দেয়। আরো বেশি খারাপ লাগলো যখন দেখলাম বন্ধু মাহবুব মোর্শেদের স্টাটাস। ''পত্রিকা খুলে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কালের কণ্ঠের ১৩ পৃষ্ঠায় বেশ যত্ন করে একটা খবর ছাপা হয়েছে। কবি মামুন মিজান আর নেই। Mamun Mizan আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড, তারও চেয়ে বড় কথা জাহাঙ্গীনগরের বড় ভাই। বাংলাবিভাগে ২০ তম ব্যাচে পড়তেন। ক্যাম্পাসে খুব বেশি সময় তাকে পাইনি। ঢাকায় কিছুটা পেয়েছি। খুব সামান্যই যোগাযোগ। তবু এলাকার সূত্রে কি না জানি না, উনি আমার সঙ্গে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা অনুভব করতেন। মাঝে মাঝে ফোন দিতেন। ৩১ মে শুক্রবার ১২টার দিকে বেরিয়েছি, শাহবাগ এলাকায় যাবো। মামুন ভাই ফোন দিলেন। বললেন, ঢাকা এসেছেন। আমার সাথে কি দেখা হওয়া সম্ভব? আমি বললাম, আজকে সারাদিন শাহবাগ এলাকায় থাকবো আপনি এলেই দেখা হবে। শাহবাগ গিয়ে আজিজ মার্কেটে বই দেখলাম। অনুরণনের জন্য সুকুমার রায় সমগ্র কিনলাম। প্রিন্স এলো, কল্লোল এলো, Mohammad Arjuও। মামুন ভাই আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে গেল। হালকা ভাঙ্গা পদক্ষেপে উনি বৃষ্টি নিয়ে এলেন। Shakoor ভাইও আসলেন। অনেক কথা হচ্ছিল। মামুন ভাইয়ের মধ্যে একটা উদ্বেগ টের পাচ্ছিলাম। লেখকত্ব নিয়ে গভীর এক উদ্বেগ। কোনো ঈদ সংখ্যায় যদি উপন্যাস ছাপা যায় বা কোনো নামী প্রকাশনা সংস্থা থেকে যদি বের করা যায়, তবে হয়তো তার খেটে লেখা উপন্যাস কেউ কেউ পড়বে। লেখা পড়ানো একটা চ্যালেঞ্জ বটে, বিশেষ করে যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তাদের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ। আমি যে বিশেষ কোনো সহযোগিতা করতে পারবো না তা উনি বুঝতে পারছিলেন। সাহিত্যের জগৎটা নিষ্ঠুর। কারো কারো জন্য মাখনের মতো নরম, কারো কারো জন্য লোহার মতো কঠিন। আমি মামুন ভাইয়ের উদ্বেগের ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ব্যস্তটার কী আছে? হাতে সময় আছে, ধীরে ধীরে আগাতে হবে, এমনই নানা কথা আমি বলছিলাম। এইসব পলিটিক্স অব সাইলেন্সের মধ্যে মামুন মিজানের মতো সাহিত্যিকের সার্ভাইভাল কীভাবে সম্ভব ভাবছিলাম। আমি তো আর জানতাম না মামুন ভাই এরই মধ্যে পরপারের ডাক পেয়েছেন। যে একবার যে ডাক পায় তাকে তো একটু তাড়াহুড়া করতেই হয়। শেষ দিন ১৪ জুন বসুন্ধরা সিটিতে মোস্তফা মার্টে কেনাকাটার ফাঁকে তার কথা মনে হয়েছিল। ফোন করার কথা ছিল। কেন যেন ওই সময়েই মনে পড়লো। বলছিলাম, ব্যস্ততার কিছু নেই। ধীরে ধীরে সবই জয় করা যাবে। তা আর হলো কই? গুড বাই মামুন ভাই।'' তারপর আমি কালের কণ্ঠে চোখ বুলাই। কালের কণ্ঠ লিখেছে-''নব্বই দশকের কবি ও কথাসাহিত্যিক মামুন মিজান আর নেই। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি স্ত্রী, দুই সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাইবান্ধার ডেভিড কম্পানিপাড়ায় প্রথম জানাজা এবং নলডাঙ্গায় নিজ বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে। ১৯৭০ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মামুন মিজান। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'আন্তঃস্বরের গান' (কাব্যগ্রন্থ), 'হাড় বণিক' (উপন্যাস), 'অপরাজেয়' (গল্পগ্রন্থ) ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন দৈনিক ও লিটল ম্যাগাজিনে তাঁর বহু কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সম্পাদনায় 'সবুজপাতা' নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার অনেকগুলো সংখ্যা বের হয়েছে। কর্মজীবনে তিনি গাইবান্ধা আবুল হোসেন সরকার মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।'' এখন আমি খালেদ ভাইয়ের আক্ষেপটা বুঝতে পারি। বুঝতে পারি টোকন ঠাকুর কেন শোকাহত। বুঝতে পারি মাহবুব মোর্শেদ কেন বাংলাদেশের সাহিত্য রাজনীতির চড়াই উৎড়াইয়ের মধ্যে মামুন মিজানের মতো সাহিত্যিককে নিয়ে উদ্বিগ্ন। বুঝতে পারি বন্ধু আলফ্রেড খোকন কেন মামুনের কবিতার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ও জানাজানি আছে বলে চুপ হয়ে যায়। আর মামুনের সাথে আমার পরিচয় ২০০৯ সাল থেকে। সেটা সম্ভবত ২০০৯ সালের ঘটনা। আমি তখন পাঠসূত্রে বন্ধু গল্পকার রাজীব নূরের সঙ্গে কাজ করি। পাঠসূত্রের পাণ্ডলিপি বাছাইয়ের সঙ্গেও আমি তখন জড়িত। পাঠসূত্র নিয়ে আমরা তখন অনেক বড় বড় পরিকল্পনা করতাম। তখন এক দিন মামুন মিজান পাঠসূত্রের অফিসে এসেছিলেন। আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল। রাজীব নূর মামুনের বই প্রকাশের ব্যাপারে 'না' বললেও মামুনের লেখা নিয়ে বেশ প্রশংসাই করেছিল। তখন মামুন মিজানের বুকে একটি ক্ষত সৃষ্টি করেছিল বটে, তা আমরা টেরও পেয়েছিলাম। আমরা চা আড্ডায় সেই ছোট্ট অনুশোচনা হজম করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মামুনের বই আর প্রকাশ করা হয়নি। তারপর ২০১০ সালের অমর একুশে বইমেলায় মামুন মিজানের সঙ্গে আবার আমার দেখা হয়। ততোদিনে পাঠসূত্র অনেক নামকরা নবীন প্রকাশনা হিসেবে দেশ জয় করে ফেলেছে। অনেক পুরষ্কারও বাগিয়েছে। মামুন তখন কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে আড্ডা দিল। মামুন বলছিলেন, খুব কষ্ট করে একটা ভালো উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছেন। আমি আমার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করছিলুম। সম্ভবত বাংলা একাডেমী'র গল্পকার মাহবুব আজিজ আমাকে ধরে নিয়ে যান তার রুমে কি যেনো দেখাবেন বলে। সেখান থেকে ফিরে মামুনের সঙ্গে আমার আর দেখা হয় নি। তারপর অনেক দিন আর দেখা হয় না। সাধারণত অমর একুশে বইমেলার সময় ঢাকার বাইরের লেখক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। আড্ডা হয়। মামুন গাইবান্ধা একটি কলেজে বাংলা পড়াতেন। লেখার হাত চমৎকার। ব্যক্তি মামুন মিজানের চেয়ে তার লেখনির সঙ্গেই আমার বেশি পরিচয়। মামুনের 'আন্তঃস্বরের গান' (কাব্যগ্রন্থ), 'হাড় বণিক' (উপন্যাস), 'অপরাজেয়' (গল্পগ্রন্থ) আমার পড়া। মামুনের লেখায় একটি অভিমান লুকিয়ে থাকে। শব্দের ব্যবহারে ব্যঞ্জনা প্রাধান্য পায়। আর ইঙ্গিত করে না বলা অনেক জটিল মানবিক বায়বীয় জলতরঙ্গ। সেই তরঙ্গের মধ্যে সাহিত্যের পাঠক মাত্রই হারাতে পারেন নিযুত সময়। মামুনের লেখা উপন্যাসটি কোনো ভালো প্রকাশনা থেকে প্রকাশ পেলে আমার ভালো লাগবো। এমনিতে ঢাকার বাইরের লেখক. কবি, সাহিত্যিকরা সবচেয়ে অবহেলিত বাংলাদেশে। লিটল ম্যাগাজিন, বিভিন্ন সাহিত্যের কাগজই তাদের মূল ভরসা। আর ঢাকার দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে কবিতা গল্পের নামে যে চাটুকরী তামাশা ছাপা হয়, সেই তামাশায় আমিও আগে জড়িয়েছিলাম। পরে রাজনীতিটা বুঝতে পেরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। দেখা গেল সাহিত্য পাতার যে সম্পাদক, তারই সাহিত্য জ্ঞান আমার কাছে প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার। তার কাছে আমি কি লেখা দেব। সে তো আমার লেখা বুঝতেই পারবে না। উল্টো ভাব-ভঙ্গি দেখাবে যেনো সে নোবেল কমিটির সভাপতি। বাংলায় বললে বলতে হয় সোজা কথায় এই ভাব ...টাইম নাই আমার। লেখার কাজটা আমি আমার মত করি। এটাই আমার লেখার বৈশিষ্ট্য। কারো খবরদারী আমার পছন্দ না আমার লেখায়। আমার গল্প হল কি হল না, তার বিচারক কাকে বানাবো আমি? যার পড়াশুনা নেই। বিশ্ব সাহিত্যের ক খ গ...ও জানে না। কিন্তু ভাবটা বিশাল পণ্ডিৎ। তার কাছে অনুরোধের আসরের নাটক করার আমার টাইম নেই, ভাই। মামুন মিজান সাহিত্যের রাজনীতিটা ধরতে পারেন নি। ঢাকার বাইরে থাকায় সেই সুযোগও তার কম ছিল। কিন্তু মামুনের কলমটি কারো রাজনীতির কোপানলে পড়েনি বলে মামুনের নির্ভেজাল গদ্য, বুক উচাটন কবিতা, শব্দ নিয়ে খেলাটা আমার ভালো লাগে। আর দুঃখ লাগে যে, বাংলাদেশে মামুনদের কদর নেই। খোন্দকার আশরাফ হোসেনদের দাম নেই। সব তোষামোদী সাহিত্যকর্মীদের ভারী দাম। তাদের নাকের উচু ভাব দেখলে মনে হবে, তাদের সাহিত্য চর্চা না করে দেশের নষ্ট রাজনীতি করাটা বড় ভালো ছিল। মামুনদের যতোদিন আমরা সত্যি সত্যি মূল্যায়ন করতে না পারব ততোদিন আমরা মূর্খদের তেলেভাঁজা গোবর গণেশ নিয়েই হৈ চৈ করে কাটাব। আর নিরবে নির্ভতে একে একে চলে যাবেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন, মামুন মিজান...আরো কতো জন!!! মামুন মিজান, আপনি যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন। অন্তরের আশির্বাদ থাকবে আমার। সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
false
fe
কবিতার ভাষামিথ _ হামিদ রায়হান যারা - কবিতা কী জানতে চান, তাদের জন্য একটি দরকারী লেখা। এই লেখাটি ১৪ জানুয়ারী ২০০৫ শুক্রবার দৈনিক ইত্তেফাক এর সাহিত্য সাময়িকীতে ছাপা হয়েছিল। কবিতার একটি দিক নিয়ে লেখক তার চিন্তা-চেতনা তুলে ধরেছেন খুব সাবলীল ভাবে। এখানে সবার সাথে শেয়ারকরার মানসে তুলে দিলাম।-----------------------------------------------------------------------------কবিতার ভাষামিথ হামিদ রায়হান========================================একটি রূপকে অন্য রূপে পাল্টে নেয়ার আয়োজনই ভাষা। ধ্বনি যত প্রান্তিকের দখলে যায় তত কেন্দ্রিকতায় তার উপস্থিতি হ্রাস পায়। যেখান থেকে ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য তার উদ্ভব। ধ্বনি পরিবর্তিত হয় চিত্রকল্পে, পরিবর্তন ও পুনরাবৃত্তিই কবিতার চরিত্রনির্যাস, যার ডাইভার্স বা দ্বৈরাজ্যের অবিরাম বৈচিত্র্য নিখিল কবিত্ব। মিলন ও বিচ্ছেদের অযুত চক্র রূপরূপান্তর। যার প্রত্যেকটিতে নিহিত ব্যাপ্তিচ্ছা। এইসব সমারোহে সমগ্রকবিতা গড়ে ওঠে। জীবন যেরকম। যেমন রচিত নিখিলবিশ্ব। পদে পদে তার দ্বৈরাজ্যের যে ব্যাপ্তি দ্বৈরাজ্যে। সেই পরম দ্বৈরাজ্যের স্মরণ কবিতার নিভৃত আয়োজন। শিল্পমাত্র সেই আয়োজনের প্রদর্শন।এখন শিল্প-সাহিত্যে একই সঙ্গে প্রান্তিকতা ও কেন্দ্রিকতা প্রযুক্তি ও মেঠোকে মিলিয়ে দেয়ার তোড়জোড়। সমাজ জীবনে ঐক্য সঙ্গতির যে সংজ্ঞা যখন ক্রিয়াশীল থাকে তারই পৃথক পৃথক আয়োজন প্রদর্শন। লোকাচারে বা ধর্মাচারে সংখ্যা জাহিরের একই ছন্দানুগমন। কিš' ছন্দের অভিধানিক অর্থবোধকতা ব্যাপক। এ অর্থবোধক কবিতার সমগ্রে নিহিত সূক্ষ্ম মিলনাকাঙক্ষা-যুগ্মরূপের সত্তায়। যেন সবকিছু গ্রাস করে তার অর্থবৃত্ত। সেখানে ছন্দের অর্থ, ইচ্ছা, তাৎপর্য, অবয়ব সংস্থান, নির্মাণকৌশল, গঠন প্রকার, গোপনীয় অভিপ্রায় পূরণের উপায় ইত্যাদি প্রত্যেকটি অর্থ কবিতার বেলায় প্রয়োগ করলে ছন্দের অর্থবৃত্ত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন, এটা জানা যে, ছন্দের কারণে কবিতা স্মৃতিগ্রাহ্য। আর এ কারণে যুগ্মের তল্লাশীতে ছন্দের প্রয়োগ যত সার্থক স্মৃতিগ্রাহ্যতা তত গভীর। কেবল ধ্বনি বা গণিত হিসেবে নয়, তাৎপর্যের দিক থেকেও এটা একই মূল্যে গ্রাহ্য। এ গ্রাহ্যতার সঞ্চার ইহপার্থিব। ফলে একটা অসম্পূর্ণতার ঝোঁক থেকে যায়। যা গতিউৎসুক। তাই যেখান থেকে এটা দেখা হয়, পুনরাবৃত্তি ও পরিবর্তন, জগৎ সংসারের ছন্দঃরহস্য। দেখে, ছন্দের অবলম্বন। তার প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ, নৈকট্য ও দূরসূত্র। অর্থাৎ আধিপত্যবাদের কেন্দ্র শিথিল হলে তবেই প্রান্তিকের অবসর। কবিতা এমনই কল্পলতা। কবিতা ঘুরে ফিরে এই নামগান। নাম গান-কল্পলতা তেমনই এক যুগ্মরূপ। এইরূপ কল্পলতার কাছ থেকে যা চাইতে ইচ্ছে হয়, ধ্বনির মধ্যে দিয়ে কামসূত্রের গ্রন্থন। এই গ্রন্থনা মানে ধ্বনিমিথুন। যা মিল দেখায়।কবি ক্রান্তদর্শী, আবিষ্কর্তা। কবি সর্বদা অভিনব পথে পা রাখতে পছন্দ করেন। চলার ধ্বনি, চলাফেরার আওয়াজে চিনতে শেখে প্রাণী বিশেষের উপস্থিতি। আদি অবস্থায় ধ্বনি থাকে অনিবার্য সহায়ক; এমন কি ভাষা আয়োজন সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে। আত্মরক্ষা ও আক্রমণের তাৎক্ষণিক ঔচিত্যকে মিলিয়ে দেখে নেয় দৈনন্দিন জীবনে আর স্থায়ী যাপন ব্যবস্থায়। লুকানো ও বেরনোর মুহূর্তগুলো থাকে ধ্বনি নিয়ন্ত্রিত। যার ক্রমস্ফীতি ও ক্রমবিস্তার এই জগৎ, সেখানে আদি বিভাজন তরঙ্গ ও কনায়। এই বিভাজন থাকে ক্রমস্ফীতির সর্বত্র রূপ রূপান্তরে। আর্থিবের আচরণে যেমন, ধৈর্য ও গতিতে। প্রকৃতি ও পৌরুষে। এ আদি বিভাজনের ফলে জাগরুক তীব্র মিলনাকাঙক্ষা। তার ব্যাপ্তি সর্বময়। এখানেই প্রশ্ন অবস্থানের। এটা একটা অর্থ যা দ্বিখণ্ডিত, যা দ্বৈরাজ্যময়তার ধারক। কেননা কবি সর্বদা কালপ্রাসঙ্গিক। আপন সময়কে তিনি ঠিকমত সনাক্ত করতে সক্ষম। সেখান থেকেই তিনি বের করে আনেন তার অনুধাবন। তার ভাষা আয়োজনে থাকে সময়ের জ্ঞাপন এলাকা। তার অন্তর্গত যথার্থতা যেখান থেকে চিরদিনের মুগ্ধতা ছড়ায় আর যুগ্মরূপ বা পরিপূরকের সম্পৃক্ত সংবাদবাহক যখন তার সমারোহের মধ্যে নিহিত ক্রিয়াশীলতাকে উন্মোচিত করে দেয়, এর উদ্ভূত সুরে মানব সভ্যতার সমগ্র ইতিহাস ভেসে ওঠে। এই পার্থক্য এই ভাষাগত একত্রীকরণের অভিসন্ধিকে অভিসরণ করে বোধের যুগ্মরূপ। অনবছিন্নের দিকে গতিময়তায় এখানেই কালপ্রাসঙ্গিকতার বা সময় সাধনার ঔচিত্য। স্বররচনার মধ্যে তার পার্থক্যের মূলসূত্র। এ রহস্যের ক্রমউন্মোচনের মধ্য দিয়ে সম্পর্কসূত্র অন্বেষার তোড়জোড়। অর্থময়তার বয়নসাধনের নবীকরণের প্রস্তাব। যেজন্য কবিতার কোন বাঁধাধরা পরিভাষা নেই। নিরন্তর কবি মাত্র তার মত করে পৃথক পরিভাষা গড়ে তোলে। নিছকের যে কোন একটি অঞ্চল তাক করে এই পরিভাষা রূপ পায়। পায় ভাষার নাগাল স্বরনালীর সমান্তরাল রদবদলে। প্রত্যেক জীবের নাগালের মধ্যে নিহিত আছে এক বিশেষ জীবনোপায়। সেইমত তার শরীর ও আচরণ, নিজের ভিতর ও বাহিরের মানে খোঁজা, আত্মরক্ষা ও আক্রমণে যুগপৎ লিপ্ত হওয়া, শিল্পবোধ ও শিল্পসৃজন তার ব্যতিক্রম নয়-যেভাবে রেখে যাওয়ার কথা তার জৈবধর্মের প্রমাণ। যেখান থেকে বাইনারি বা দ্বৈততার চেতনার সূত্রপাত, পুনরাবৃত্তি ও পরিবর্তনের ক্রিয়মানতায়সহ উপস্থিতির ক্রমব্যাপ্তি। আধার ও আধেয়র সম্পর্কসূত্রে নির্ভর করে শেষাবধি দেখে মিল তার ন্মুক্ত স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক মিলনাকাঙক্ষার বাঁধন। যেখানে ছন্দপূর্বতা পায়, পায় মুক্তি, গড়ে ওঠে মুক্তির চিরকালীন শিবির। প্রত্যেক শব্দের অর্থবোধকতাও নির্ভর করে তার প্রয়োগের ওপর। কারণ প্রত্যেক শব্দ একটা অর্থ সঞ্চয় প্রকল্প।নিজের ও নিজের চারপাশের সবকিছুর মানে অন্বেষণ, তার দ্বান্দ্বিকতার সন্ধান, তার অর্থময়তা গড়ে তোলার আয়োজন, নানাভাবে উপ্ত থাকে মানুষের জীবনের তাগিদ। দৈনন্দিন যাপনের অর্থময়তার এলাকাকে কিংবা তদাবধি অর্থ সংলগ্ন পরিসরকে অতিক্রম করে এক আনকোরা অর্থময়তাকে ঠাঁই দেয় কবিতার আয়োজনে। যা আলাদাভাবে না দেখে এক সঙ্গে দেখার কথা তাকে এক জায়গায় এনে ফেলার অবিরাম ক্রিয়াশীলতা। কবিতা নির্মাণ যার অবিরাম মহড়া। কবিত্ব তার যাবতীয় আবিষ্কার প্রবণতার কেন্দ্র। যেখান থেকে বাইনারি বা দ্বৈততার চেতনার সূত্রপাত। এই দ্বৈরাজ্যময়তাকে দেখা ও দেখানোই শিল্পবোধ, শিল্পসৃজন। যে কোনভাবেই অনিবার্য এই প্রবণতার প্রস্ফুট। যে জন্য কবিতার কোন বাঁধাধরা পরিভাষা নেই। নিরন্তর কবি নিজের মত করে পৃথক পরিভাষা গড়ে তোলেন। নিছকের যে কোন একটি অঞ্চল তাক করে পরিভাষা গড়ে ওঠে। ভাষা ও অর্থের বিশাল তোড়জোড় এই যাপন। সম্পর্কসূত্র অন্বেষণের তোড়জোড়। তবে যে বুনোটে অর্থবোধকতার ক্রমপ্রসারণ, সেই অর্থবোধকতাকে কবি দেখে, শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে আধার ও আধেয়র সম্পর্কসূত্রে। যেখানে ভাষায় যাবতীয় মনন আশ্রিত হয়। কিš' অর্থ, তার শব্দের সমস্যা, সেখানে কবি চিড় ধরিয়ে দেন। সমস্ত পুরনো অর্থময়তাকে মুক্তি কিংবা আত্মস্থ দ্বারা লুকানো ও বেরোনোর মুহূর্তগুলো ধ্বনি নিয়ন্ত্রিত নবাঞ্চল গড়ে তোলেন। যেহেতু অর্থ সমাধান নয়, বরং সমস্যা, সেখান থেকে অবিরাম বেরিয়ে আসার তোড়জোড় রাখা খুবই জরুরী। এভাবেই তাঁর রস ও রসদের সম্পর্ক। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দ্বৈততার পরিসর। এ যোগসূত্রের তল্লাশী তার অন্বিষ্ট। কবির রচনার তাড়না।২. কেবল বাঁকে সীমিত থাকে ব্যক্তি। বাঁকের সঙ্গে কিংবা বাক্যের সঙ্গে কাব্যের এখানেই পার্থক্য। কাব্য উন্মোচিত করে এই আচরণ প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত লুকানো বেরোনোর দ্বৈরাজিক পাঁয়তারা চলে। যেজন্য আপাত অসংলগ্নতাকে নিঃসংশয়ে কবি যোগ দিয়ে চলে বহু রৈখিক জ্যামিতির আশ্রয়। জ্যামিতির ছক তাঁর বুনোটের গভীরে। এর কারণ, সূত্রগুলো সর্বত্র এক। তবে পার্থক্য কেবল অবলোকন পদ্ধতিতে। সহজে যেখানে সব মিশে যায়। কেননা কবি আশ্রয় নেন সমদর্শনের। আর তার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে সমমর্যাদা, যা জীবনের সর্বত্র কাঙিক্ষত। তার বিবেচনামত নির্মাণ করে নিরাপদ আশ্রয়। লুকানো ও বেরোনো, স্মৃতি ও স্বপ্নের দ্বৈরাজ্যে-এই চরাচর। শব্দ সাধন যেমন টানা ও পোড়েন খোঁজে ভাষার বুনোটে। অবিরাম জড়ো করে যোগচিহ্ন। যে অসংখ্য যোগচিহ্নের যোগসাধন জীবন। যাকে কবিতার সম্পর্ক সাধন সনাক্ত করে। যেহেতু অবস্থান গোপন করে জীব জগৎ, তাই অবস্থান জ্ঞাপন করে কবি।কবি সর্বদা কাল প্রাসঙ্গিক। তাই তার ভাষা আয়োজনে থাকে সময় জ্ঞাপন এলাকা। অনবচ্ছিন্নের দিকে গতিময়তায় এখানেই কাল আচরণের পরিবর্তিত কালখণ্ডে বা সময় সাধনার ঔচিত্য। প্রাকৃতিক ও মানুষের স্বরচনার মধ্যে পার্থক্যের মূলসূত্র। কাল সাপেক্ষানুমানের স্বাভাবিক ক্রিয়মানতা কবির এই অবস্থান ভিন্নতাকে ধরিয়ে দেয়। ফলে ভাষাগত একত্রীকরণের অভিসন্ধিকে অভিসরণ করে বোধের যুগ্মরূপের ক্রিয়াশীলতাকে কবি উন্মোচিত করে দিতে চান। যেভাবে শব্দের একদিকে স্ববিনষ্ট হওয়া আর অন্যদিকে স্বোপার্জনের ক্রমপরিণতি। সাপেক্ষানুমানের স্বাভাবিক ক্রিয়মানতা। এভাবেই একীভূত দ্বৈরাজ্যময়তার চরাচরে বিভেদ ও ভেদের ধাপগুলো ক্রমশ অতিক্রম করে শব্দের ধ্বনিবাহকতা ও অর্থবাহকতার যে সম্পর্ক সূত্রের মধ্যে কাল আচরণের পরিবর্তিত কালখণ্ডে ভাটার টান। সেদিকে প্রাসঙ্গিক বিবেচনার সূত্রপাত। শব্দে শব্দার্থে বা শব্দের পারস্পরিক সম্পর্কে যে আমূল পরিবর্তন, তার সমার্থক জ্ঞানের বিভাজিত সীমা অতিক্রম করে ঐক্যসূত্র। এই অতিক্রমের ঔচিত্য কবির কাছে স্পষ্ট। তার নাগালে অনেক বেশী স্পষ্ট এই অনিবার্যতা। সম্পর্ক বদল মানুষ টের পায় যাপনের নিজস্ব শর্তে। সেই জনমানসকেই কবি উন্মোচিত করেন। তবে অর্থের অনুষঙ্গটি শব্দের মধ্যে সবসময় উপস্থিত থাকে না। তিরিশ পঁয়ত্রিশ বছরের ব্যবধানে প্রকাশিত দুটো অভিধান পাশাপাশি রেখে দেখলে তাদের শব্দের থেসোরাসটি বোঝা যাবে। এ অনিবার্যতা যাপন ও শব্দার্থের আদি আদিগন্তে। যেখানে প্যারাডাইম সম্ভাবনার উদ্ভাবিত সুরে মানব সভ্যতার সমগ্র ইতিহাস ভেসে ওঠে। কেননা শব্দ ইতিহাসের ছায়া। শব্দ এবং ইতিহাস উভয়ই জীবন চর্চা আর শিল্প চর্চার অন্তর্গত যথার্থতা। শব্দ ও ইতিহাস একই ঘটনাক্রম থেকে সৃষ্ট। কালপ্রাসঙ্গিকতায় কবি যথার্থ ইতিহাসমনস্ক। সেখান থেকেই তিনি বের করে আনেন তাঁর অনুধাবন। বর্ণের সঙ্গে বোধের সম্পর্ক, ধ্বনি ও বর্ণের যে সম্পর্ক যাপনের সর্বত্র ক্রিয়াভিত্তিক ভাষার গঠনে, স্বতঃস্ফূর্ত খেলাচ্ছলের মধ্য দিয়ে তাকে ফাঁস করে দেন। এজন্য সব আছির সঙ্গে তার নিজের আছির যোগসূত্রের তল্লাশী। যে উশখুশ থেকে রচনার তাড়না। এই নেশা বা রহস্যই তাঁকে সচল রাখে। নিত্য নতুন সৃজনশীলতায় তাঁ বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। এভাবেই তাঁর রস ও রসদের সম্পর্ক। যে সম্পর্কের বুনোটে অর্থবোধকতার ক্রমপ্রসারণ। অর্থবোধকতা শেষাবধি নির্ভর করে আধার ও আধেয়র সম্পর্ক সূত্রে। প্রতিটি শব্দের অর্থবোধকতাও নির্ভরশীল তার প্রয়োগের ওপর। নিজের ও নিজের চারপাশের সবকিছুর অর্থ অন্বেষণ, অর্থবোধকতার সন্ধান, অর্থময়তা গড়ে তোলার আয়োজন, নানাভাবে থাকে জীবনের তাগিদ। এভাবেই তার অগ্রসর, চলার ভঙির মূলসূত্র। কেননা প্রকৃতির আয়োজনে আগামীর সঙ্গে আজকের পার্থক্য হয়। চলা যেমন স্থির অর্থাৎ পরিবর্তনসহ পুনরাবৃত্তি। পুনরাবৃত্তি ও পরিবর্তন পাশাপাশি, একত্রে উপস্থিত। সচলতার অন্তর্নিহিত বুনোট। দ্বৈততার প্রতিনিয়ত প্রদর্শন। ক্রিয়মান তার পারস্পরিক অবস্থান।কবিত্ব জীবের প্রধান গুণগরিমা। কবিত্ব মানুষ জীবের অবিচ্ছেদ্য স্বাভাবিকতা, যে কোনভাবেই অনিবার্য এই প্রবণতার প্রস্ফুট। তার মধ্যে দ্বৈততার সূত্রের রহস্য নিহিত। কবিত্বের অর্থ নিরন্তর এই মেলবন্ধনের নবাঞ্চলের অন্বেষণ। স্থিতি ও জঙ্গমের আনুপাতিক বিবরণী। বুঝের ব্যাপকতা। এভাবে দাঁড়ানো প্রকল্প তার বাঁক অন্তর্গত আছে। দীর্ঘকালীন বিকাশে উপলব্ধি করা যায় তার চলার ভঙ্গির সূত্র। কিš' এই চলা কেবল পুনরাবৃত্তি নয়। যেমন পৃথিবী আহ্নিক গতির দৈনন্দিন পুনরাবৃত্তির অধীন। চলার ছন্দের প্রতিরূপ। প্রকারান্তরে অনুধাবন করা যায় এই ক্রিয়মানতায় রূপের পারস্পরিক অবস্থান। যার অর্থবোধকতায় দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ সমার্থক। অর্থবোধতার এই পিছু টান শিল্পকে (কবিতাকে) রহস্যময় বা নাগাল অস্থিরতায় তন্ময় রাখে। এমন অবস্থা প্রত্যেক ব্যবহৃত শব্দের। এ অঞ্ঝরী-সীমায় কেবল কবি নিয়ে যেতে পারেন। যা অনতিব্যক্ত থেকে ব্যক্ত। দ্বৈততার দোলাচল বিনাশের পথ। সম্পর্কের ক্রমবিকশিত তাৎপর্য। চলনে বলনে ক্রমশ উন্মোচিত হতে চায়। কেননা এ দাঁড়ানো প্রকল্পের জন্য পরস্পরের আয়োজনে আসে পরিপূরক ভিন্নতা। শব্দের মধ্যে অর্থ পুরে দেয়ার পুরুষকার। পরিপূরকতার সমন্বয়। অস্তিত্বে আত্মসম্পূর্ণতা যত প্রখর মিলনাকাঙক্ষা, তার সবটাই ভর করে বাইপেডালিজমের সূত্রে। সমন্বয় গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে পেয়ে যায় তার প্রামামিকতা। শেষাবধি সবকিছুকে দাঁড়াতে বা যোজিত হতে হয় কোথাও না কোথাও যে কোন পারস্পরিকে। কবিতা সেই অর্থবোধকতার আবহমান সূত্র। প্রতিপন্নের এলাকা, অনুমেয়র ব্যাপ্তি। সমগ্রকে স্পর্শ করার অনুভূতির নাগাল। প্রকাশ ও অপ্রকাশের সমুচ্চয় গড়ে ওঠে। দাঁড়ানো জীবনে যেমন আসে মীমাংসা তেমনই অমীমাংসেয়তার পরিসর হয় ব্যাপ্ত। দাঁড়ানো থেকেই প্রস্ফুটিত হয় আলিঙ্গন। দাঁড়ানো থেকেই চৈতন্যের সীমাহীন বিস্তার। শিল্পের দাঁড়ানো থেকে অর্থ পুরে দেওয়ার পুরস্কার পর্যন্ত বিস্তৃত তার প্রয়োগ। আধার ও আধেয়র সম্পর্কসূত্রের চক্রব্যূহ।কবি শব্দের একটি অর্থ মীমাংসক। প্রতি মুহূর্তে তিনি খোঁজেন নতুন শব্দ। আরো অভিনব শব্দ সমন্বয়। নিজের চারপাশের সবকিছুকে নাগালে আনতে যুৎসই শব্দের ঘেরাটোপে ঘিরে ফেলা, একদিকে শব্দের মধ্যে ধরে রাখা। অন্যদিকে সেই বিষয়টিকে সম্ভাবনার দিকে জাগরুক রাখা। অর্থাৎ সমাজের সর্বস্তরে কেন্দ্র-প্রান্ত বিভাজন, শব্দের মানের এলাকায় যথারীতি। দাঁড়ানো প্রকল্পের দ্বৈততার ছায়াপাত অর্থবোধকতা থেকে মুক্তি দিয়ে গড়ে তোলে নতুন অভিষেক। ঠেলে দেয় নতুন সম্পর্কের আশ্রয়ে। একটি পরিচিত বিষয়কে নতুনভাবে দেখিয়ে দেওয়ার আয়োজন। ভাষার এক ভিন্ন ছিরিচাঁদ গড়ে তোলা। কবি ভিন্ন বিশ্বাসযোগ্যতা সৃজন করেন। পুনরাবৃত্তির মধ্যে দেখা দেয় পরিবর্তন। সুনিশ্চিতের পাশে গড়ে তোলেন ঝুঁকি। দেখিয়ে দেন সীমালঙ্গনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া রৈখিকতাকে ধরে রাখে সম্পর্কের বিন্যাসে। সম্পর্ক আবিস্কারের যোগসাধনে। কবিতার অন্বিষ্ট এই সমদর্শন। যে জন্য আপাত সংলগ্নগুলোকে কবি নিঃসংশয়ে যোগ দিয়ে চলেন বহুরৈখিক জ্যামিতির আশ্রয়ে। একটা জ্যামিতিক ছক তাঁর বুনোটের গভীরে। তিনি জানেন দু’টো সমান্তরাল রেখা কোথাও না কোথাও গিয়ে মেলবে। স্পাইরাল চিহ্নিত বিন্দু তার শঙ্খিল আচরণে আবার দেখা দেবে একই জায়গায়। কেননা সূত্রগুলো সর্বত্র এক, পার্থক্য কেবল অবলোকন পদ্ধতিতে। যেখানে অনায়াসে সব মিশে যায় ফলে কবি আশ্রয় নেওয়া সহজ হয়ে যায় সমদর্শনে, কারণ সমদর্শন থেকেই গড়ে ওঠে সমমর্যদা, যা জীবনের সর্বত্র কাঙিক্ষত।৩. কবিতা অনুধাবন করে জীবনছন্দ। নবাঞ্চলের তল্লাশী। ফলে পুরনো ছন্দ আয়োজনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব জীবন সম্মত নয়। উদ্দেশ্যহীনভাবে জীবনে কোন পরিবর্তন আসে না। জীবনই জীবনে পরিবর্তন আনে। যা সমান্তরালভাবে কবিতায় দেখা যায়। যে যত বেশি করে সনাক্ত করতে পারেন, আঞ্চলিকতা, স্থানিকতা, বিষয়ান্ত, অর্থবোধকতার প্রান্তিকতা, তাঁর কবিতায় লক্ষ্যগুলো তত বেশী স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই প্রান্তিকতার প্রতি, ব্রাতের প্রতি যে সমমর্যাদার দাবি জীবনের মৌল অন্বিষ্ট।একটি মাত্র বিশেষণে একজন কবির সমগ্র প্রস্তুতি। এ বিবেচনা এক রৈখিক। কবি ও কবিতার সামগ্রিকতাকে, তার জীবননির্বাহের অঞ্চলগুলোর প্রতি উপেক্ষা বা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা। প্রত্যেক কবি পড়েন সেই ফাঁদে। পাঠকের কাছেও সে ফাঁদ থাকে সমান বাধা। আসলে ‘সম’ ধারণার হিসেবকে গোলমাল করে দেওয়ার জন্য অসমবাচক শব্দপ্রয়োগ। বিবেচনই অসম নির্মাণের এ প্রক্রিয়াকে ফাঁস করে দিতে চায়। এগুলো দিয়ে বাঁধার বহুরৈখিতা গড়ে তোলে। ফলে সাংখ্যসীমাকে অতিক্রম করে, এলোমেলোর মধ্যে, অনির্ণেয়তার মধ্যে, অনিশ্চয়তার মধ্যে যে প্রান্তিক পরিসর, তাকেই স্পর্শ করে কবিতার এলাকা, প্রাত্যহিকের অভ্যন্তর। যেভাবে পার্থিবে অগোচরে ঘটে দৈনিক ও বার্ষিক গতি সমন্বয়ের প্রতিফলন। যেখানে কীভাবে তাপ্পি মেরে বহুরঙা করে এক আপাতসম্পূর্ণতা গড়ে ওঠে তা ধরে ফেলা সহজ নয়। অথচ আয়রনি গড়ে ওঠে অপ্রদর্শনযোগ্য বোধকে চারিয়ে দেওয়ার জন্য। যাকে নিয়ে জীবনছন্দের রহস্য। সাংখ্য, যে ভুমিকা পালন করে ভাষার স্থানিকতার সংবেদনায় তাকে অনুসরণ করে নিরন্তর অবস্থানবদল ঘটে। যেখানে পরখ করা হয় সাংখ্যের সমন্বয়, যেখান থেকে আসে জীবনের ছন্দ। সাংখ্যের অন্তর্নিহিত দর্শনের উন্মোচন। ধ্রুবক ও চলকের সম্পর্কের বিন্যাসকে স্পষ্ট করে দিতে চায় পূর্ণতার সঙ্গে শূন্যতার সম্পর্ক। শূন্যের সঙ্গে একের সম্পর্ক যেভাবে। ছন্দ গতি ও স্থৈর্থের সমন্বয়। যেমন গতি ও স্থৈর্থের নিজস্বতা টের পাওয়া যায় না। এখানে স্থানিকতার সংবেদনা প্রযুক্ত সেই অর্থে। একেবারে পাকা ঘষামাজা ধ্রুবক ও চলকের সম্পর্কের বিন্যাসের বয়নে। জীবনের আরেক প্রান্তিক বাক এলাকা। অর্থাৎ ভূমিকার সঙ্গে ছন্দের সমন্বয় স্পষ্ট করে দেয়। যাকে নিয়ে জীবন ছন্দের রহস্য। যেখানে পরখ করা হয় সংখ্যার সমন্বয়, যেখান থেকে আসে জীবনের ছন্দ। সংখ্যা নির্ধারণ সংখ্যা সাজানো সংখ্যার বহিঃপ্রকাশ, সংখ্যা বিশেষের সঙ্গে এলাকার সম্পর্ক, স্থিতি ও গতির সম্পর্ক। সংখ্যা যে ভূমিকা তৈরী করে। যা সরাসরি ভূমিকার চত্বরে এনে রাখা। বাঁক এলাকার কবিতার আয়োজনে ঈষৎ মনোনিবেশের গুরুত্ব, কেননা যেখানে প্রান্তিক অর্থবোধকতার রদবদল।সমগ্রের ইস্যু বের করা কঠিন। জীবন ছন্দের স্ফূরণ স্থানিকতা নির্ভর, আঞ্চলিকতার তন্ময়ে। এভাবে যাপনের প্রত্যেক এলাকায় ছন্দের প্রতিফলনের রহস্যকে বিশ্লেষণ করলে কবিতার ছন্দের সঙ্গে তার যোগসূত্র তাৎপর্য এবং অনিবার্যতা স্বয়ং স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমন্বয়ের ঔচিত্য ধরা দেয়। গতি ও সমন্বয়ের প্রসঙ্গেই আয়রনি। অর্থাৎ আয়রনি দেখতে হয় জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে। মেজাজের দিক থেকে, নিহিতার্থ ও বহিরার্থে যোগসূত্রে একই খেলা।সংখ্যানির্ভর ছন্দও এমনই মায়াজাল। একা একা কোন অহং-এর অস্তিত্ব নেই, টিকে আছে অন্যপক্ষ আছে বলেই। প্লুবালিজমের তাৎপর্যের একটি অন্যতম দিক। কবিতা সনাক্ত করে সেই অন্যপক্ষকে। শব্দের কোন দ্ব্যর্থহীন অর্থ নেই। অর্থ দাঁড়ায় তার অবস্থানের প্রেক্ষিতে। শব্দের এ স্থানিকতা অর্থবোধকতার স্থানিকতায় প্রতিফলিত হয়। অবস্থান বা স্থানিক সম্পর্ক ছন্দ আয়োজনকে ব্যাখ্যা করে। তার প্রকৃতি প্রত্যয়ে যতই অর্থ বদল ঘটতে থাকে, অবস্থান বা স্থানিকতা নতুন অর্থবোধকতার দিকে ঠেলে দেয়। সম্পর্ককে বা সম্পর্কের সমমর্যাদা তার বিবেচনে মিলের তাৎপর্য বহন করে। পার্থক্যগুলোর পারস্পরিক স্থানিক অবস্থান। ঠিক যেমন প্রান্তিক জীবন সম্পর্কে কেন্দ্রিকতার ধারণা। যা বোধ হয়, তার স্থানিকতাকে সনাক্ত না করায় কিংবা সমমর্যাদা না দেয়ায়। ছন্দবদলের সীমালঙ্ঘনের প্রতি সহনশীলতা ও ধারণাগুলো গড়ে ওঠে। ভেদ যেভাবে অভেদকে ক্রমশ সনাক্ত করে। সেখান থেকে বের করে আনে অপ্রচলিত শব্দ সম্পর্কের সাজগোজ ফেলে দিলেই অর্থবোধকতার এক ভিন্ন অস্থিরতা সৃজিত হয় যা স্বাভাবিকভাবে হতে থাকে বাঁক এলাকায়, যেখান থেকে সম্পর্ক সূত্রের তল্লাশী। যা দ্রষ্টা ও দ্রষ্টব্যের মধ্যে দূরত্ব গড়ে দিতে থাকে। ফলে বাড়ে কেন্দ্রিকতা ও প্রান্তিকতার ব্যবধান। এই ব্যবধানের ফলে পরিপূরকতার বোধ ব্যাহত হয়। কেননা জীবনের বা জীবের আয়োজনের লক্ষ্য পূর্ণতার বোধ, অনবচ্ছিন্ন চেতনা। এ নাগালের দিকে নিয়ে যেতে চায় চেতনা কাঠামো। চেতনায় স্বায়ত্ত বজায় রাখে সম্পর্কের গভীরতা। জীবনছন্দের সেই বাঁক এলাকার অন্বেষণ। এ অন্বেষা আনে আত্মানুসন্ধানের মুখোমুখি। কবিতা নতুন করে পাশ ফেরার সুযোগ পায়। আত্মসম্পূর্ণতার অহং ঘিরে ফেলে, আনে নতুন আঞ্চলিকতার বিপন্নতা, যে যার মতো ফুঠে ওঠে নিজের ভঙ্গিমায় পরিপূরকতার সুর বজায় রেখে তার প্রতিফলনের অপেক্ষা। এ টান প্রকৃতি প্রদত্ত পরিপূরকতার ধারণা থেকে আত্মসম্পূর্ণতার দিকে, তার গতিপথ আত্মসম্পূর্ণতার বৈধতা থেকে মান্য পরিপূরকতার দিকে। একইভাবে কেন্দ্র ভেঙে দেয়ার তোড়জোড়। প্রান্তিকতার গন্তব্য যেখান থেকে শুরু।বহুত্ববাদ স্পর্শ করে কবির সামাজিক অবস্থান আর জীবনসূত্রের অবস্থান মতো। যাপনের সর্বত্র যা প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য। যখনই স্থানিকতা বা আঞ্চলিকতার একজোট স্পষ্ট করে তোলে পার্থক্যের বা বহুত্বের বহুরৈখিকতার, অবলোকন পদ্ধতিতে এবং প্রকৃতিপ্রদত্ত অনবচ্ছিন্ন থেকে সরে আসে অবচ্ছিন্নে, এই অবচ্ছিন্নের সবচেয়ে বড় ধারক ভাষা স্বয়ং। যেজন্য ভাষাকে অবচ্ছিন্নের ভার থেকে মুক্তি দেয় কবি। সেই মুক্তির দিকে রচনা করে চলে নিত্য নতুন আয়োজন। ভাষা যেখানে যাপনের আঞ্চলিক এলাকানির্ভর। মানব নিয়ন্ত্রিত ভাষার অনবচ্ছিন্নে যার আশ্রয়। সবকিছুকে এক বিশ্বনিখিলের আশ্রয়ে আনার প্রয়োজন। এ আয়োজন পৃথক অর্থবোধকতার সন্ধানে। ভাষার অবচ্ছিন্নের ভার থেকে মুক্তি। বাঁক এলাকানির্ভর ভাষার নবাঞ্চল থেকে অনবচ্ছিন্নের যাত্রা। ভাষা আর অনবচ্ছিন্ন সমার্থক। সেই অনবচ্ছিন্ন ভাষা আয়োজনের সাধন প্রকল্পের যাত্রা যেমন অভেদের দিকে, তেমনই সবদিকে অভেদের ক্রমমিলনের প্ররোচনা। এভাবে প্রতিটি শব্দ একটি সূত্রায়নে গাঁথা। যা প্রত্যয়ের সূত্র। এদিকেই যাপনের যাবতীয় আয়োজন। প্রকৃতি প্রত্যয়ের সম্পর্কের এই লক্ষ্য। প্রান্তিকতায় যার সর্বোপরি গন্তব্য। যেভাবে পার্থিব আয়োজনের সর্বত্র সেই নিয়মের জাগরণ। অনবচ্ছিন্ন বোধের গভীরে সেই উপস্থিতি। যেজন্য কবি বলেন, হয়ে ওঠা। তাই যাপনের সর্বত্র এই সম্পর্কসূত্র ব্যাখ্যা করা হয় এবং মিলনের সম্ভাবনার পথগুলো বিশ্লেষণ করা। কবির কাজ এই সর্বমাত্রিক মেলবন্ধকে ব্যাখ্যা করা এবং তাকে ঘটমান করে তোলা। সংগতি তার অভিপ্রায়। কেন্দ্র যেখানে সদা আক্রান্ত। প্রাকৃতিক দ্বৈরাজ্য যে কারণে সদাদ্রোহী। কবি প্রচলিত ভাষামিথ ভেদে দেন। কারণ ভাষামিথ অর্থবোধকতার কেন্দ্রের ধারক। জীবনের সর্বত্র ভাষামিথের আধিপত্যের ও প্রভুত্বব্যঞ্জকতার এই ভূমিকা বোধকে চারিয়ে যাপনের সর্বত্র জাগিয়ে রাখে। যেজন্য ইজমের পরিসরকে অতিক্রম করে সমমর্যাদার প্রশ্নকে সবার ওপরে রাখে। সর্বমাত্রিক সাম্যের জন্য সংঘর্ষ তার চরিত্রের মর্মে। মিথ ভেঙে ফেলাই কবিতা যা বিপরীত দিক তাতিয়ে রাখে। কর্তৃত্বের ধারণা ছিল তার উৎসে। অনবচ্ছিন্নের সমান্তরাল পরিসকে উন্মোচিত রাখে মিথ, পালন করে ভাষাবদলের ভূমিকা। অন্যদিকে কবিতাভাষা কর্তৃত্বমূলক বাচনের এক কেন্দ্রিকতাকে শিথিল করে দিয়ে পরিবর্তমান বাচনপরিসর নির্মাণ করে। এ নির্মাণ নির্দিষ্টতা ব্যাগ্র, সীমাব্যাকুল শব্দ, অর্থবোধকতা আর ধ্বনিবোধ অতিক্রমণ। নিরন্তর নির্দিষ্টতা ব্যাগ্রের যথার্থতা অন্বেষণ। কারণ, ভাষাবদল ও শব্দ আয়োজনের পরিবর্তনের লক্ষ্য, যাপনের আয়োজনে পরিবর্তনের চেতনা কাঠামো। ভাষামিথ এ সর্বমাত্রিক মেলবন্ধকে ব্যাখ্যা করে যেখানে ‘সম’ শব্দের স্পর্শ সর্বমাত্রিক সাম্যে। শব্দ অর্থ ধ্বনির ত্রিসীমানা। যেভাবে জীবন বদলায় তার সমান্তরাল এই পরিবর্তন। ভাষামিথ শিল্প আর জীবনে যে যোগসূত্র। সাংখ্য এই অখণ্ডকতাবোধের হাতছানি গড়ে তুলতে চায়। বোধময়তার অতলে যে ব্যাকুলতা তা আবহমানতায়, ক্রিয়মানতায় চিহ্নিত হয়। যা আরও ক্রমপরিণত ভাষামিথান্তিকে। এই অনিবার্যতা যাপন ও শব্দার্থের আদিগন্তে। *************
false
ij
মেহদী হাসান_ আপনি আমাদের ক্ষমা করুন মেহদী হাসান। গজল সম্রাট।লোকে শ্রদ্ধাভরে ডাকে,‘খান সাহেব।’ গজলকে এক আলোকময় স্তরে নিয়ে গিয়েছেন মেহেদী হাসান তাঁর অসাধারণ গায়কিতে । যে কারণে, লতা মুঙ্গেশকার-এর বিশ্বাস-মেহদী হাসানের কন্ঠে বাস করেন স্বয়ং ঈশ্বর । লতাজীর এই বিশ্বাস নিছক অমূলক নয়। ভারত-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কোটি কোটি গজলপ্রেমী মানুষ জানে-একজন মেহেদী হাসান অতি বিরল এক সঙ্গীত- ব্যাক্তিত্ব- এক সহস্রাব্দে একজনমাত্র জন্মায়। যাঁর সুরের মায়ায় ক্ষণিকে জন্য হলেও দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে অদৃশ্য স্বর্গলোক! পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম মেহদী হাসান দীর্ঘদিন ধরে রোগশয্যায়। এখন তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। অথচ, এই গুণী শিল্পীর যথার্থ চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসার ব্যয় ভার শিল্পীর পরিবার বহন করতে পারছে না। গজলসম্রাট ধুঁকছেন হাসপাতালের বেডে। ছবিতে দেখলাম বিবর্ণ মুখচোখ।সঙ্গীতের মতন এক পবিত্র ভাবের সাধনা যিনি করলেন তার এমন পরিনাম-স্বর্গমর্ত্য কি অলীক মনে হয় না। এই মহান শিল্পীর জন্য সরকারি সাহায্যও নাকি তেমন জুটছে না। ভারত সরকারও উদাসীন। অথচ মেহেদী হাসানের জন্ম ভারতের রাজস্থানের এক গ্রামে ১৯২৭ সালে। মুসলিম পরিবারে জন্ম বলে দেশবিভাগের পর পাকিস্তান চলে যেতে হয়েছিল। তারপর পাকিস্তানেই এই গুণী শিল্পীর প্রতিষ্ঠা। কিন্তু, শিল্পীর কি কোনও দেশ থাকে? আমার শৈশবে মেহদী হাসান সম্পর্কে আমাকে সচেতন করেছিলেন একজন কমিউনিষ্ট নেতা। তখনই বুঝেছিলাম প্রকৃত মহৎ শিল্পীদের কোনও দেশ থাকে না। তাঁরা দেশও কালের সংকীর্ণ সীমারেখার বহু উর্ধ্বে। শ্রদ্ধেয় মেহেদী হাসান। আপনার কাছে আমাদের বাঙালিদের অনেক ঋন। আপনি না থাকলে আমরা নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর মতন গুণী শিল্পীকে পেতাম না- আরও অনেককেই পেতাম না। এদেশে যারা মার্গ সঙ্গীতের চর্চা করেন-তারা এ সত্যটি জানেন। বাংলাদেশের ক্লাসিকাল মহলে আপনার ঈশ্বরতুল্য সম্মান। মেহদী হাসান। আপনি, আমাদের ক্ষমা করবেন। আপনি অসুস্থ হয়ে রোগশয্যায় । অর্থের অভাব আপনাকে গ্রাস করেছে। আর, পাকিস্তান কোটি কোটি ডলার পাচ্ছে আমেরিকার কাছ থেকে কথিত জঙ্গি দমনের নামে। কেবলমাত্র বসবাস করার জন্যই মুম্বাই শহরে অনিল আম্বানিদের ৬০ তলা বহুতল উঠছে । আর আপনি ধুঁকছেন! ভুগছেন অর্থকষ্টে! মেহদী হাসান: আপনি আমাদের ক্ষমা করুন পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানি জনগনের উদ্দেশে বলছি-আমরা আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তাঁর শেষ জীবনে যেভাবে বুকে আগলে রেখেছিলাম-যেভাবে বিদ্রোহী কবির সেবাশুশ্রুষা করেছিলাম-আপনারাও ঠিক সেভাবেই মেহেদী হাসানের পাশে এসে দাঁড়ান। আর, তেমনটা না হলে- মেহদী হাসান: আপনি আমাদের ক্ষমা করুন। গানের লিঙ্ক সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৯
false
fe
২১ আগস্টের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে মনে রেখে ২১ আগস্টের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে মনে রেখেফকির ইলিয়াস_________________________________________________২০০৪ সালের ২১ আগস্টের কথা আপনাদের মনে আছে? মনে আছে সেই ভয়াল দিনটির কথা? যে দিনটিকে তুলনা করা যায় একাত্তরের কোনো দিনের সঙ্গে। ২১ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার একটি ঘৃণ্য চক্রান্তের দিন এটি। সভ্য জগতের অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাকা- চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। রক্ত-ঝড়ের প্রচ-তায় মলিন হয়ে গিয়েছিল বাংলা ও বাঙালির মুখ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে।শোকাবহ-রক্তাক্ত আগস্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়েনার দল গ্রেনেড দিয়ে রক্তস্রোতের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশ স্থলে। টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা চালায় এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ। জাতির সামনে আবারো স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধস্পৃহা। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকার সময়ই খোদ রাজধানীতে দিনে প্রকাশ্যে চালানো হয়েছিল এই ভয়াল ও বীভৎস গ্রেনেড হামলা। ওই সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই যে এই নারকীয় হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তা তদন্তে ক্রমশ বেরিয়ে আসছে।হিংস্র শ্বাপদের ভয়াল ছোবলে সেদিন মানবঢাল রচনা করে নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা করতে পারলেও ওই নৃশংস হামলায় ঝরে পড়েছিল বেগম আইভি রহমানসহ চব্বিশটি তরতাজা প্রাণ। আহত হওয়া পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর অনেকেই ঘাতক গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়েই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। হাত-পা-চোখসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীরা পঙ্গুত্ববরণ করে জীবনধারণ করছে। ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ হানিফ মাথায় বিঁধে থাকা স্প্রিন্টারের জীবনযন্ত্রণা ভোগ করেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল ঘাতক চক্র। ঘাতকের গ্রেনেড হামলায় রীতিমতো রক্তগঙ্গা বইয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের প্রাঙ্গণ। সন্ত্রাসবিরোধী আওয়ামী লীগের জনসভাকে ঘিরে কোলাহলপূর্ণ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল বীভৎস মৃত্যুপুরীতে। সুপরিকল্পিত ও ঘৃণ্য এই গ্রেনেড হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত ও শোকাবহ আগস্টে আরেকটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিল পরাজিত ঘাতক চক্র। তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে হায়েনাদের হামলার ধরনও ছিল রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের মতোই।ভয়াল সেই হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে গেলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হারিয়েছেন তার দুকানের স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানও সেদিন সামান্য আহত হয়েছিলেন। ওইদিন তার প্রিয়পত্নীআইভি রহমানকে হারানোর শোক বয়েই তিনিও আজ পরপারে। বীভৎস এই হামলার ঘটনায় দেশে-বিদেশে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করলেও বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং আলামত নষ্ট করার নানা চক্রান্ত চলে। তবে এই ভয়াল ও নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তা সময়ের ব্যবধানে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ পেয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ওই বীভৎস হামলার সঙ্গে জড়িত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ উগ্র জঙ্গিবাদের সশস্ত্র ক্যাডাররা। এই ভয়াল গ্রেনেড হামলার প্রত্যেকটি বার্ষিকীতে নিহতদের পরিবার ও আহতরা এই কাপুরুষোচিত হামলার নায়ক ও নেপথ্যের ম“দাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।এই লোমহর্ষক গ্রেনেড হামলার ঘটনা ধামাচাপা, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও আলামত নষ্টসহ হেন কোনো কাজ নেই যা করে যায়নি বিএনপি-জামাত জোট সরকার। হাওয়া ভবনে বসে তখন জজ মিয়ার নাটক সাজানোর ঘটনা এখন দেশবাসীর মুখে মুখে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এই হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎসের সন্ধান পেয়েছে তারা। তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অনেক রাঘব-বোয়ালদের জড়িত থাকার প্রমাণ হাতে পেয়েছে তারা। বিভিন্ন সূত্র বলছে, এ মামলার অধিকতর সুষ্ঠু তদন্তে তৎকালীন রাজপ্রসাদের ষড়যন্ত্রকারী কেউ কেউ ফেসে যেতে পারেন। এ মামলার পুনর্তদন্তে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, হরকত-উল-জিহাদের সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মওলানা আবদুস সালাম, বিএনপির ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল হক আরিফসহ প্রায় এক ডজন ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।সেদিনটি ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মানুষের স্রোত সমাবেশটিতে। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগুতে থাকলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগলো একের পর এক গ্রেনেড। আর জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে খই ফোটার মতো একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশ স্থল। রক্তগঙ্গা বইয়ে যায় এলাকাজুড়ে।ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা। পরিস্থিতির তাৎপর্য বুঝতে ট্রাকে অবস্থানরত নেতৃবৃন্দ ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যাকে। নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটাতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা। গ্রেনেডের আঘাতে পরাস্ত করতে না পেরে ওইদিন শেখ হাসিনার গাড়িতে ঘাতকরা ছুড়েছিল বৃষ্টির মতো গুলি। একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ। পরিকল্পিত হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনা ফিরে এলেও ওইদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা।২১ আগস্টের সেই রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। নারী নেত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত অন্যরা হলেন- শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (সবার প্রিয় আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।এই ঘটনা বাঙালি জাতি কোনো দিনই ভুলতে পারবে না। ’৭১-এর পরাজিত শক্তিরা মুছে দিতে চেয়েছে বারবার মুক্তিযুদ্ধের স্তম্ভগুলো। ২১ আগস্টও ছিল সেই প্রচেষ্টা। আমরা মিডিয়ায় দেখছি- গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নারকীয় ২১ আগস্টে হত্যাযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে সব সংকট দূর করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিযোগপত্রের সব সাক্ষীর সাক্ষ্য নাও নেয়া হতে পারে। মামলার অভিযোগ প্রমাণে যতোজন প্রয়োজন, ততোজনের সাক্ষ্য নেয়া হবে। আর এ সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জন হতে পারে। এ ছাড়া এ মামলার আসামির বিরুদ্ধে অন্য জেলায় ভিন্ন কোনো মামলা থাকলে ওই জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে মামলার তারিখ নির্ধারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যাতে ২১ আগস্টের মামলার নির্ধারিত দিনে অন্য কোনো মামলার তারিখ না থাকে। তাহলে আসামিকে অন্য জেলায় যেতে হবে না। এমন পরিস্থিতিতে মামলার বিচার প্রক্রিয়া খুব শিগগিরই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে আশা মামলা সংশ্লিষ্টদের।জানা গেছে, জঘন্যতম ঘটনার ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই গ্রেনেড হামলার বিচার গত বছর শেষ করার ইচ্ছা থাকলেও নানামুখী সংকটের কারণে তা করতে পারেনি তৎকালীন মহাজোট সরকার। ধীরগতিতে মামলার প্রক্রিয়া এগোতে থাকায় বিচারকাজের অগ্রগতি হয় সামান্যই। এতে বিচারের প্রতীক্ষায় থাকা আহত ও নিহতদের পরিবারের স্বজনদের মাঝে এ নিয়ে ছিল শুধু হতাশা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চার্জশিটে অতিরিক্ত সাক্ষীর নাম উল্লেখ থাকায় মামলার বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলে। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ বলেছেন, প্রসিকিউশন আইনজীবী কোনো সাক্ষীকে গুরুত্বহীন মনে করলে তার সাক্ষ্য নাও নিতে পারেন। এ ক্ষমতা তার রয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিশেষ এজলাসে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার চলছে। অতিরিক্ত সাক্ষী এবং আসামিদের অন্য মামলায় বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়ার কারণে ২১ আগস্ট মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছিল ধীরগতিতে। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, এ মামলায় যারা আসামি তারা সারা দেশে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি। কাজেই দেশের অন্যান্য আদালতেও আসামিদের নেয়া হয়। ফলে ২১ আগস্ট হামলার বিচারিক ট্রাইব্যুনালের পক্ষে টানা বিচারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি।বাংলার মাটি থেকে এসব চক্রান্তকারীদের সমূলে বিনাশ করতেই হবে। কারণ এরা সুযোগ পেলেই মুছে দিতে তৎপর হবে আমাদের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা। প্রজন্মকে বিষয়গুলো বুঝতে হবে, কেন পেছন দুয়ার দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সুযোগ খোঁজা হয়। কেন ওরা ’৭১ কে বলে ‘গন্ডগোলের বছর’।দেশে আইনি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এসব বিচার কাজ শেষ করতেই হবে। এর নেপথ্যে কারা ছিল- তা বের করে আনতে হবে। দাবিটি গোটা বাঙালি জাতির। যারা বুকে একাত্তরকে লালন করেন।---------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥: ২৩/আগস্ট/২০১৪ শনিবার প্রকাশিত
false
ij
কামিল পিসারো _ অনবদ্য এক ইমপ্রেশনিষ্ট চিত্রকর কামিল পিসারো: রাষ্ট্রের প্রতি উদাসীন প্রবল নৈরাশ্যবাদী এই শিল্পীর ছিল শ্রমিক-কৃষকদের প্রতি অপরিসীম মমতা। শুধু তাই নয়- দরিদ্র সহশিল্পীদের পিতার দরদে আগলে রেখেছিলেন এই মহৎ হৃদয়। বেঁচে থাকতে ছবি তেমন বিক্রি করতে পারেন নি পিসারো। অথচ- ২০০৫ সাল অবধি ৪ মিলিয়ন ডলারেও তাঁর ছবি বিক্রি হয়েছে! পিসারোর ব্যাকগ্রাউন্ড খানিকটা জটিল। প্রথমত-তিনি ফরাসি ইমপ্রেশনিষ্ট ঘরানার জনক হলেও ফরাসি নন। তাঁর জন্ম পর্তুগিজ সেফারদি ইহুদি পরিবারে। স্পেন ও পর্তুগালের ইহুদিদের বলা হয় সেফারদি। এবং পিসারোর জন্ম ফ্রান্সেও নয়-বর্তমানকালের ক্যারবিয় সাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রাধীন ভার্জিন আইল্যান্ডে। ভার্জিন আইল্যান্ডের রাজধানী সেন্ট টমাস দ্বীপের শার্লোট অ্যামালি। ১৮৩০ সালের ১০ জুলাই শার্লোট অ্যামালি শহরে জন্ম গ্রহন করেন পিসারো। পিসারোর পুরো নাম জ্যাকব আব্রাহাম কামিল পিসারো; বাবার নাম আব্রাহাম গাব্রিয়েল পিসারো। মা ছিলেন ডোমিনিকান রিপাবলিকের এর নারী; নাম- রাচেল মানজানো পোমি। তাই বলছিলাম পিসারোর ব্যাকগ্রাউন্ড খানিকটা জটিল। বাল্যবয়েসে যথারীতি ছবি আঁকত বালক পিসারো। ধনীদরিদ্রের বৈষম্য মেনে নিতে পারত না। সামাজিক রীতিনীতি হাস্যকর ঠেকত। ১২ বয়স অবধি সেন্ট টমাসেই ছিল বালক পিসারো। এরপর পড়াশোনার জন্য প্যারিসের একটি বোর্ডং স্কুলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিশোর বয়েস থেকেই রাষ্ট্রবিরোধী নৈরাশ্যবাদের দিকে ঝুঁকেছিল। যা হোক। পরিনত বয়েসে প্যারিসের অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে জানা শোনা হল তাঁর। প্রবল ব্যাক্তিত্বের কারণে শৈল্পিক আড্ডার মধ্যমনি হয়ে উঠছিলেন। সেই সঙ্গে চলছিল ছবি আঁকা। প্যারিসে বাস করলেও অবশ্য জন্মনগর শার্লোট অ্যামালি শহরের সঙ্গে সর্ম্পক ছিল-মাঝেমাঝে জাহাজে চেপে চলে যেতেন সেন্ট টমাস দ্বীপে। সেন্ট টমাস দ্বীপের খাড়ি সত্যিকারের শিল্পী বলেই সমাজের নিুকায় মানুষের জন্য কেমন এক দুর্নিবার মায়া ছিল পিসারোর। বিয়ে করেছিলেন মায়ের এক পরিচারিকা সেন্ট টমাস দ্বীপের দরিদ্র ঘরের মেয়ে জুলি ভেলাই কে। জুলি ভেলাইয়ের গর্ভেই একে একে আট সন্তান হয়েছিল পিসারোর। যা হোক। পিসারো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেশবিদেশ ঘুরেছেন। ১৮৭০ সালের ফ্রাঙ্কোজার্মান যুদ্ধের কারণে কিছুকাল লন্ডনে গিয়ে থাকলেন। এরই ফাঁকে ফাঁকে ছবি আঁকতেন বিশেষ করে ফরাসি গ্রামীন দৃশ্য। শ্রমিক কৃষকদের প্রতি মমতা প্রকাশ পেয়েছে। পিসারোকে আজ বলা হয় ফরাসি প্রতিচ্ছায়াবাদের (ইমপ্রেশনিস্ট) জনক। পল সেঁজা ও পল গঁগার মতন শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন পিসারো। নভেম্বর ১৩; ১৯০৩ সালে পিসারোর মৃত্যু প্যারিসে। প্যারিসেই শিল্পীর সমাধি। পিসারোর আঁকা আরও ছবি দেখুন http://www.camille-pissarro.org/ সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:৫০
false
fe
আলোর জন্য মানুষের তৃষ্ণা আলোর জন্য মানুষের তৃষ্ণা ফকির ইলিয়াস ========================================= লোডশোডিংমুক্ত বাংলাদেশ! বিষয়টি ভাবতেই চমকে উঠবেন অনেকে। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ২০১৪ সালের মধ্যে লোডশেডিংমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে। যদি তাই হয় তবে তা হবে বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই ৩৮ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। সে তুলনায় মাটি বাড়েনি। এই অবস্থায় ২০২০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত হবে? সে প্রশ্নটি সঙ্গত কারণে আসতেই পারে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রাকে থামানো যাবে না। যেমনটি যায়নি এই বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের ব্যবহার। আমি আমার বিভিন্ন লেখায় বলি, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বাণিজ্যে যতটা এগিয়েছে অন্য খাতে ততটা এগুতে পারছে না কেন? এর প্রধান অন্তরায় কি? আমার জানা মতে, ১৯৯৮ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত ফোন কোম্পানি এটিএন্ডটি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিল। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা হয়নি। সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। কোন বিদেশী সংস্থা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে গেলেই একটা সুর ওঠে- 'এই বুঝি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এলো!' ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। বাঙালির সে অবস্থাই হয়েছে। যারা বারবার শোষিত হয় তারা তো ভয় পাবেই। তেমন অবস্থা বদলেছে গেল দশ বছরে। আমরা এখন বিভিন্ন বিদেশী বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে দেখছি। পুরো সমাজকেই কিনে নিতে চাইছে করপোরেট বাণিজ্য সংস্থাগুলো। এসব বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের হাত এখন প্রসারিত মিডিয়া হাউজের দিকেও। খাতায় সব প্রকার বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের মালিকানা তালিকা থাকবে, আর একটা মিডিয়া থাকবে না, তা কি হয়? তাই মিডিয়া নিয়ন্ত্রণেও এখন কালো হাতের ছড়াছড়ি। দৈনিক, পাক্ষিক না হয় মাসিক। টিভি স্টেশন স্থাপন করতে না পারলে নিতান্তপক্ষে একটা রেডিও। রয়েছে অনলাইন নিউজ সংস্থার প্রতিযোগিতা। যারা ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সংবাদ ছড়িয়ে দিতে পারছে বিশ্বব্যাপী। এই যে অর্জন, তা সাধিত হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। কিন্তু এই প্রবাহ কি সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত? না, প্রভামুক্ত নয়। এটা অনেকেই জানেন। মিডিয়ার বার্তাকক্ষে পৌঁছে যায় রাজনীতিবিদ মালিকের হাত। থাকে তার চোখ। তিনি চান, তার মিডিয়াটি তার দলের কথা বলুক। দলের সিনিয়র নেতার কভারেজ একটু বেশি করে দিক। না, পাশ্চাত্যের মিডিয়া যে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত সেটা আমি বলছি না। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মন মতো না হলে তারাও আপনার 'চিঠিপত্র' ছাপবে না। যদিও তাদের করপোরেট সেস্নাগান 'সকল সংবাদই ছাপার দাবি রাখে'। এমনটি ভাবার সুযোগ নেই, নিউইয়র্ক টাইমসে ইহুদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোন বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে তারা তা ছাপবে? না, ছাপবে না, যত টাকাই দেয়ার কথা বলা হোক না কেন! তাহলে মিডিয়াকে গণমানুষের বন্ধু বলা যাবে কিভাবে? কিভাবে নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে মিডিয়া? এই পথটি সহজ করার জন্যই নিরন্তর সংগ্রাম করতে হচ্ছে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে। তারা পিষ্ট হচ্ছেন একহাত থেকে অন্য হাতে। সম্প্রতি বোস্টনে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অতিথি হয়ে এসেছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. জেমস এফ মরিয়ার্টি। তিনি সেই সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন, বর্তমান সময়ে একটি-দুটি মিডিয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার সুযোগ নেই। কয়েকটি মিডিয়া মিলিয়ে দেখে তবেই সত্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত। তার কথাটি মিথ্যে নয়। যুক্তরাষ্ট্রেও গসিপ ম্যাগাজিনগুলোর পাঠক বেশি। তারা এসব সংবাদকে এক ধরনের প্রমোদ বলেই বিবেচনা করে। 'ইউএস টুডে' কিংবা 'ওয়াশিংটন পোস্ট' ভাবনার খোরাক দেয়। সত্য-মিথ্যের হিসাব মেলানোর সুযোগ দেয়। গসিপ ম্যাগাজিনগুলো তো তাও দেয় না। প্রজন্মকে এই সত্য অনুধাবনের কাছাকাছি যেতে হবে। এটা খুবই আশার কথা, এখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তিন-চার হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন দিয়েও ওয়েব ব্রাউজ করা যায়। জরুরি সংবাদটি এসএমএস করে পাঠানো যায়। আরেকটু দামি ফোন দিয়ে ছবি তুলেও পাঠানো যায় দেশে-বিদেশে। তাহলে সত্যটি দাঁড়াচ্ছে এই একটি ফোন একজন মানুষকে 'অন দ্য স্পট' থেকে রিপোর্টার করে তুলতে পারছে বেশ সহজেই। যে হিসেবে একজন সচেতন মানুষই হতে পারছেন এক একজন মিডিয়া প্রডিউসার, ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও। এই যে প্রাপ্তি, তার চেতনাকে ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে পারে একটি জাতিসত্তা। বলার অপেক্ষা রাখে না, তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ বলে দাবিদার বাংলাদেশের সরকারপক্ষ থেকে শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ সমর্থন জনগণ পাবে, তা ভাবতেও কষ্ট হয় কি! কারণ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই তার ঘনিষ্ঠ দলবাজরা স্বার্থ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, খেলাধুলা, সড়ক-জনপথ, ব্যবসা-বাণিজ্য, কূটনীতির সেক্টর সবখানে সেই দলবাজরা প্রাধান্য পায়। সরকারে থাকা শীর্ষরা এটাকে একটা উপহার প্রদান বলে যেমন গণ্য করেন, তেমনি তারা তেমন সিকিউরড অনুভব করেন অনুগতদের হাতে। আর এভাবেই রাষ্ট্রের মেধাবীরা বাদ পড়ে যায়। সুযোগ পেয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা লাইম লাইটে চলে আসে। এমনকি নিজ দলের মেধাবীরাও হেরে যায় তদবিরবাজদের কাছে। বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই এই প্রতিযোগিতা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছে। এই মানসিকতার কোন উন্নয়ন ঘটেনি কিংবা ঘটছে না। ওয়ান-ইলেভেনের পর বাংলাদেশে এই সত্যটি আরও সুদৃঢ় করছে, উদার হতে হবে রাজনীতিকদেরই। কারণ একটি দল রাষ্ট্রশাসন করে পাঁচ বছর মেয়াদে। আর জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পান পাঁচ বছর পর একবার। এই পাঁচ বছরে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কারণে ভোটারের মত পরিবর্তনের সুযোগও পায়। ভোট কিনেও নেয়া যায়। আবার স্থানীয়, আঞ্চলিক, ব্যক্তিগত ইমেজ প্রভৃতি বিষয় ফ্যাক্টর হয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে। যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মিডিয়ারও একটা ভূমিকা থাকে। কারণ মিডিয়া জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারে ওই প্রার্থীর একটি সুস্পষ্ট চিত্রমালা। ঠিক একইভাবে আজ দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা নিরসন কিংবা সমাজ নির্মাণে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হচ্ছে এর জন্যও দরকার মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নেও দরকার সরকার ও এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। একটা কথা স্পষ্ট করে বলি, কোন এলাকায় কে সংগ্রামী, কে অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িত তা ওই এলাকাবাসীর অজানা থাকার কথা নয়। তারা যদি সম্মিলিতভাবে এসব অপশক্তিকে রোধে তৎপর হন এবং সরকারের সাহায্য চান তবেই একটি যৌথ প্রয়াস গড়ে তোলা সম্ভব বলে আমি মনে করি। এক্ষেত্রে সরকারের পোষ্য ভাড়াটে বাহিনীর বিরুদ্ধেও গণমোর্চা গড়ে তুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে মানুষকেই। মানুষ আলো চায়। এর জন্য পথ করে দিতে হবে। এই আলো সমাজ-মানবতা-জাতি বাঁচানোর আলো। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বাস্তবতার অনুকূলে কাজই তা ত্বরান্বিত করতে পারে। নিউইয়র্ক , ২০ অক্টোবর ২০০৯ ------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ।ঢাকা। ২৩ অক্টোবর২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - পল পোলজার্টি সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৯:১৮
false
ij
বেহালার পাগানিনি নিকোলো পাগানিনি। ইতালিয় বেহালাবাদক। আধুনিক ভায়োলিন বাজানোর কৌশলের ইনিই পথিকৃৎ। বেহালায় পাগানিনি এমন সব কৌশল দেখিয়ে গেছেন পরের প্রজন্মকে -পরের প্রজন্মকে এমন সব সুর দিয়ে গেছেন-যে কারণে আজও বলা হয় ভায়োলিন ও পাগানিনি সমার্থক। সত্তর ও আশির দশকের হেভি মেটাল মিউজিককেও প্রভাবিত করেছেন পাগানিনি। জিজ্ঞেস করে দেখুন-বিশ্বের সব শিক্ষার্থী গিটারবাদকরা পাগানিনির মতো করে বাজাতে চায়। আজকে আমরা বেহালার যে রুপটি দেখি-সেটির উদ্ভব কিন্তু ইউরোপে- পঞ্চদশ শতক থেকেই বেহালার উৎপত্তি হতে থাকে ইউরোপে । রেনেঁসা যুগে পৌঁছে ইউরোপের সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে গেল। বাদ্যযন্ত্রের ওপরও পড়ল সেই প্রভাব। ক্রিমোনা জায়গাটি ইতালিতে। ১৫৩৫ থেকে ১৬১১ খ্রিস্টাবে ক্রিমোনায় বাস করতেন বাদ্যযন্ত্র নির্মাতা আন্দ্রেয়া আমাতি। তিনিই বেহালাযন্ত্রটির নির্মানের পথিকৃৎ। তবে, আন্দ্রেয়া আমাতি বেহালা নির্মান করলেও নিকোলো পাগানিনি দেখিয়ে কীভাবে যন্ত্রটি বাজাতে হয়। পাগানিনির জন্ম জন্ম ইতালির জেনোয়ায়- অক্টোবর ২৭;১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে।বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। তবে ব্যবসাবানিজ্যে প্রায়ই মার খেতেন। ম্যান্ডোলিন বাজিয়ে আয় করতেন। ৫ বছর বয়েসে বাবার কাছে প্রথমে ম্যান্ডোলিন শিখতে শুরু করে শিশু পাগানিনি-পরে ৭ বছর বয়েসে বেহালার ছড় তুলে নেন। লোকে বালকের প্রতিভা দেখল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আয় হতে লাগল বেহালা বাজিয়ে। ধীরে ধীরে নাম ছড়াতে লাগল। স্থানীয় লোকে কদর করলেও -ইউরোপ চিনছিল না পাগানিনিকে। ট্যুরে বেরুলেরন। লোকে তাঁর কনসাটে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। লন্ডন। প্যারিস। ভীষন জুয়াও খেলতেন পাগানিনি। ছিলেন রমনীমোহন। তাতে সিফিলিস ধরা পড়ল। অষুধ খেতে হল। সেসময় সিফিলিসের অষুধ তৈরি হত পারদ দিয়ে-তাই হল কাল। ১৮৩৪ সালে থ্রোট ক্যানসারে মারা গেলেন ইতালির নিসে। তবে, পাগানিনির জীবন যেমনই হোক- অতুলীয় সংগীত স্রষ্টা ছিলেন পাগানিনি। কালে কালে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেন পাগানিনি। কথাটা এই জন্যেই বলা- জাপানি মেয়ে আকিকো সুয়ানাই-এর জন্ম ১৯৭২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাপানে । আকিকো সুয়ানাই ইউরোপীয় ক্লাসিকাল বেহালা বাজান। অল্প বয়েসেই সারাবিশ্বের সঙ্গীতঅনুরাগীদের দৃষ্টি আর্কষন করেছেন। পাগানিনি বাজাতে ভালোবাসেন আকিকো সুয়ানাই । দেখুন মাত্র ১১ বছর বয়েসে কেমন বাজাচ্ছে আকিকো- সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৫
false
rg
হিমালয় কন্যার দেশে সাত রজনী। পর্ব ছয়।। রেজা ঘটক পরদিন ৯ এপ্রিল সকালে আমরা গাইয়াতে নাস্তা করে একটু এদিক সেদিক ঘুরলাম। এগারোটায় প্রতীক আসলো। আমরা যাবো পশুপতিনাথ মন্দিরে। ডেনিস নাক্সাল থেকে সরাসরি পশুপতিনাথ মন্দিরে গিয়ে আমাদের সঙ্গে মিলিত হবে। মায়া, প্রতীক আর আমি একটা ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হলাম। কাঠমুন্ডু থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে একেবারে শহরের পূর্ব সীমান্তে বাগমতী নদীর তীরে পশুপতিনাথ মন্দির। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন হিন্দু মন্দির। এখন এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ। এটিকে বলা হয় মহাশ্রষ্ঠা শিবের মন্দির। পশুপতিনাথ হলেন ভগবান শিব। পশুপতি হলেন বানর। বাগমতি নদীর উভয় পাশে এই মন্দিরকে ঘিরে হাজার হাজার বানরের বসতি। হিন্দু ধর্মের মানুষদের শেষকৃর্ত্য এই পশুপতিনাথ মন্দিরে বাগমতি নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। মায়া'র বাবা ডাক্তার সুরেন্দ্র লোহানী ২০০৯ সালের ২৫ মে মারা গেলে, তার শেষকৃর্ত্যানুষ্ঠানও এখানে হয়েছিল। জায়গাটি সবার কাছে ভারী পবিত্র স্থান। বাগমতী নদী এখন অনেকটা মরে গেছে। কিন্তু এখানেই রোজ নেপালের হিন্দুদের শেষকৃর্ত্য অনুষ্ঠিত হয়। পশুপতিনাথ মন্দিরের সঙ্গে নেপালের সকল হিন্দু মানুষের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি জড়িত। এখানেই মৃত সবাইকে দাহ করা হয়েছে। মূল মন্দিরটি আগে ছিল গোটা্টাই স্বর্ণের। এখনো মন্দিরে অনেক কিছুই স্বর্ণের। বিশেষ করে ভগবান শিবের মূর্তি। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে থেকে ভগবান শিব, যিনি পশুদের পিতা, স্বর্গ থেকে এখানে এসে প্রথম বসবাস করেছিলেন। সেই থেকে এখানে এই মন্দিরের অস্তিত্ব। প্রকৃত জনশ্রুতি হল, ভগবান শিব একবার মৃগ সেজে এখানে বাগমতী নদীর পূর্ব তীরের জঙ্গলে খেলা করছিলেন। মৃগ বা হরিণ হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাহন। তখন তিনি মহাশ্রষ্ঠা ভগবান বিষ্ণু'র কাছে ধরা পড়েন। তখন তার সিং ভেঙে যায়। সেই ভাঙা সিং এই বাগমতী নদীতে ফেলা হয়। আর ভগবান শিবকে জোরপূর্বক আগের ফরমে ফিরিয়ে নেয়া হয়। কয়েকশো বছর পর এক রাখাল দেখেন যে তার গাভী এই বাগমতী নদীতে দুধ ফেলে দিচ্ছে। দুধ কুড়াতে গিয়ে সে ভগবান শিবের সেই ছদ্মবেশী মৃগের সিং খুঁজে পায়। তখন থেকেই এখানে গ্রামবাসী মিলে ভগবান পশুপতিনাথের নামে এখানে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।আরেকটি জনপ্রিয় জনশ্রুতি হল, ভগবান শিব আর দেবী প্রভাতী কাঠমুন্ডু ভ্যালীতে বেড়াতে এসেছিলেন। তারা বাগমতী নদীতে স্নান করার সময় ওপারের জঙ্গলের সৌন্দর্য দেখে ভগবান শিব আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারপর তারা ওই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য দু'জনেই মৃগ সাজলেন। তারপর স্থানীয় গ্রামবাসী ও ভগবান এদের খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু প্রভাতীকে পাওয়া গেলেও ভগবান শিব মৃগ ফরমেই রয়ে যান। প্রভাতী'র বাবা ভগবান শিবকে তেমন পছন্দ করতেন না। পরে তাকে ধরতে গেলে তার সিং ভেঙে যায়। আর শিবকে আগের ফরমে জোরপূর্বক বদল করা হয়। সেই সিং এই বাগমতী নদীতে ফেলা হয়। যে কারণে বাগমতী নদী হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র নদী। আর তখন থেকেই সবার সমাধী হয় এই নদীতে। ধারণা করা হয় পরবর্তীতে ভগববান শিব পশুতে রূপান্তরিত হয়ে এই জঙ্গলেই বসবাস করেন। আরেকটি জনশ্রুতি হল, প্রভাতী'র বাবা মোটেও ভগবান শিবকে পছন্দ করতেন না। কিন্তু শিব প্রভাতীকে খুব ভালোবাসতেন। তাই ভগবান শিব পৃথিবী মাথায় নিয়ে স্বর্গ থেকে পাতালে রওনা দিলেন। প্রভাতী তখন সতী নামে ভগবান শিবের সঙ্গে অবতরণ করলেন এই বাগমতী নদীর তীরে। পাতালে আসার সময় যেখানে যেখানে শিবের পিঠ থেকে পৃথিবীর খণ্ড ছুটে পড়েছে সেখানেই শিবমন্দির তৈরি হয়েছে। আর মেইন শিব মন্দিরটি এই বাগমতী নদীর তীরে পশুপতিনাথ মন্দির। বর্তমান মন্দিরটি সপ্তদশ শতকে রাজা ভূপেন্দ্র মাল্লা নির্মাণ করেন। চৌদ্ধদশ শতকে এখানে কয়েকটি বৈষ্ণব মন্দির ও কয়েকটি রাম মন্দিরও নির্মান করা হয়। অষ্টাদশ শতকে আদি শংকরাচার্য্য গোটা ভারতবর্ষে একই নিয়মে শেসকৃর্ত্যানুষ্ঠানের একটি নিয়ম চালু করেছিলেন। মৃতব্যক্তির লাশ চারজন পুরোহিতই কেবল স্পর্শ করতে পারবে। সেই নিয়মে বাগমতী নদীর তীরে শেষকৃর্ত্যানুষ্ঠান হতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই নিয়ম আর অনুসরণ করা হয় না। আরেকটি জনপ্রিয় জনশ্রুতি হল, ভগবান বিষ্ণু বুদ্ধের রূপ ধারণ করে সৌরাষ্ট্রা থেকে মান্দিহাতু পর্বতের মাঝখানে এসে ধ্যান করছিলেন। তখন তার চারপাশে চারটি আগুনের শিখা ছিল। আর মাথায় ছিল সূর্য। ভগবান বিষ্ণু'র সেই প্রগাঢ় ধ্যানের সময় সৃষ্ট ঘাম থেকেই মনিমতি নদীর উৎপত্তি। এই সময় প্রভাতী দেবী ভগবান বিষ্ণু'র বৌদ্ধ ধ্যানে খুশি হয়ে নিজেও বৌদ্ধ দেবী ভজরাওগিনি সেজে ভগবান বিষ্ণু'র কাছে আশির্বাদ প্রার্থণা করেন। তখন ভগবান বিষ্ণু এই মর্মে আশির্বাদ ঘোষণা করেন যে, বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ এই কাঠমুন্ডু ভ্যালী'র পবিত্র জায়গায় শান্তিতে বসবাস করবেন। তখন প্রভাতী দেবীও একটি বর দেন যে, নেপালের এই পবিত্র ভূমিতে শিবের অনুসারীরা আর বৌদ্ধের অনুসারীরা পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করবে। তখন ভগবান বিষ্ণু এই বাগমতী আর মনিমতি নদীর তীরে একটি বিষ্ণু মন্দির আর একটি বৌদ্ধ স্তূপা তৈরি করে দেন। আর এই ভ্যালী তখন থেকেই স্বর্ণ আর রুবীতে ভরে যায়। যে কারণে এই ভ্যালী'র আরেকটি নাম হল পশুপতিপুরী বা ঐশ্বর্যপুরী। শিব মন্দির কেন্দ্রে রেখে এর চারপাশ তখন সোনা আর রুবীতে ভরে ওঠে। আর মন্দির নির্মাণ শেষ হলে ভগবান বিষ্ণু আবার স্বর্গে গমন করেন। প্রতি মঙ্গলবার পশুপতিনাথ মন্দিরে সূর্যাস্তের পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত কীর্তন হয়। পশুপতিনাথ মন্দিরে এবং বাগমতী নদীর দু'পারে সে এক অভাবনীয় দৃশ্য এবং আবহ সৃষ্টি হয়। আমরা যখন মন্দিরের বেদিতে প্রবেশ করলাম তখন পাশেই চারটি লাশের সৎকৃর্ত্য চলছিল। তাদের আত্মীয়স্বজনরা সেখানে আনুষ্ঠানিকতা করছিল। মায়া বললো, তাতা'র শেষকৃর্ত্যানুষ্ঠানে সকল আনুষ্ঠানিকতা মায়া আর প্রতীককে করতে হয়েছিল। কারণ, ডেনিস তখন চীনে ছিল। আর ডেনিসের মেডিকেল পরীক্ষা চলছিল। বাবাকে মায়া, প্রতীক, ডেনিস আর ডেভিড তাতা ডাকে। ডেনিস আর ডেভিড তখন ওখানে ছিল না। ডেনিস থাকে নেদারল্যান্ড। মায়া আর প্রতীক তখন এই পশুপতিনাথ মন্দিরে বাবার শেষযাত্রায় উপস্থিত ছিল। খুবই আশ্চার্যের ব্যাপার হল, আমরা চারজন যখন মন্দির রেখে বাগমতী নদীর ব্রিজ পেড়িয়ে ওপারে গিয়ে পাহাড়ের সাথে বানানো সুন্দর বসার জায়গায় বসে পশুপতিনাথ মন্দিরের এক্টিভিটিজ দেখছিলাম, তখন সবাই নিজের মতো চুপচাপ। কারণ, জায়গাটি খুব পবিত্র আর সবার পূর্বপুরুষের সঙ্গে এটি মিশে আছে। আমার তখন বারবার মনে হচ্ছিল, আমি তাতাকে ওপারে দেখেছি। বেশ সুন্দর সুটেট বুটেট যেমনটি তিনি সব সময় থাকতেন। আর আমাদের চারজনকে দেখে তিনি মিটমিট করে হাসছেন। রাতে আমরা হোটেলে ফিরে মায়া আর ডেনিস, প্রকীককে সে কথা বলায়, ওরাও স্বীকার করলো, তাতাকে তারাও দেখেছে। তাতা খুব খুশি। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময় যখন সেখানে সূর্যের শেষ কিরণের বিচ্ছুরন অমন প্রকৃতির সঙ্গে এক ঘোরলাগা আলোর খেলা করছিল, তখন ওরাও নাকি তাতাকে স্পষ্টভাবেই নদীর ওপারে দেখেছে। আর মায়া তো ওই বাগমতী নদীর কাছে গেলেই তাতাকে ফিরে পায়। তাতা'র সঙ্গে মায়া'র শেষ স্মৃতি যে এই নদীর তীরে এই পশুপতিনাথ মন্দিরের সামনে। সূর্যাস্তের পর নদীর পূর্বপাশে আমরা যেখানে পাহাড়ের উপরে বসেছি, সেখানটার ঠিক নিচে বসলো কীর্তনের আসর। আর নদীর দু'পাড়ে তখন হাজার হাজার মানুষ। কীর্তনের সুরে সুরে সবাই যখন হাতে শব্দ করছিল, তখন এক অভাবানীয় অলৌকিক যাদু তৈরি হয়েছিল সেখানে। পাহাড়, বাগমতী নদী, মন্দিরের আলোকসজ্বা, হাজার হাজার মানুষ নদীর দু'পারে আর তাদের কীর্তনের তালে হাততালি, আর সেই শব্দের প্রতিধ্বনি সব মিলে সেখানে যেনো এক অন্য র্পথিবীর গান হচ্ছিল। সেখানে ধর্মের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। সেখানে হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান সবাই সেই সুর-লহরীতে ধর্মের আবরণ ফেলে এক অন্য জগতে একাকার হয়ে গিয়েছিল। রোজ পশুপতিনাথ মন্দিরে হাজার হাজার পর্যটক আসেন। আর মঙ্গলবার একটু বেশি। তারা সবাই সেই সুরে তখন পূর্বপুরুষ আর উত্তরপুরুষ, স্বর্গ আর পাতাল, জাগতিক আর মহাজাগতিক সুরের এক অপূর্ব ঘোরলাগা ভূবনে হারিয়ে গিয়েছিল। কীর্তন যখ শেষ হল তখন রাত দশটা। আমি সেই কীর্তনের অনেকটাই ভিডিও করেছিলাম। ক্যামেরার চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় শেষের দিকে আর রেকর্ড করতে পারিনি। তাতা'র সঙ্গে পশুপতিনাথ মন্দিরের পাশে বাগমতী নদীর পারে এভাবে দেখা করে আমরা একটা ট্যাক্সি নিয়ে থামেলের হোটেলে ফিরলাম। ..................চলবে............................
false
rg
প্রসঙ্গ তিন সিটি করপোরেশান নির্বাচন _ টক ঝাল মিষ্টি পর্ব দুই!!! ঢাকা সিটি করপোরেশান দক্ষিণের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে কিছু পরিসংখ্যানে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। এক নজর ঢাকা সিটি দক্ষিণ :★ মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৬ টি।★ মেয়র প্রার্থী ২০ জন।★ কাউন্সিলর সাধারণ আসনে ৫৪৮ জন।★ কাউন্সিলর সংরক্ষিত আসনে ১০৫ জন।★ সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি।★ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯টি।★ মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৮৯টি।★ মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪৭৪৬টি।★ অস্থায়ী মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১টি।★ অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ৬১২টি।★ মোট ভোটার সংখ্যা ১৮,৭০ ৭৫৩ জন।★ পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১০,৯,২৮৬ জন।★ নারী ভোটার সংখ্যা ৮,৬১,৪৬৭ জন।ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীরা হলেন:১. মির্জা আব্বাস ২. ড. এসএম আসাদুজ্জামান রিপন৩. মোহাম্মদ সাঈদ খোকন৪. হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন৫. আক্তারুজ্জামান আয়াতুল্লাহ ৬. আব্দুল খালেক৭. জাহিদুর রহমান৮. আবু নাসের হোসাইন৯. বাহারানে সুলতান বাহার১০. এএসএম আকরাম১১. শাহিন খান১২. দিলীপ ভদ্র১৩. শহিদুল ইসলাম১৪. শফিউল্লাহ চৌধুরী১৫. আব্দুর রহমান১৬. বজলুর রশীদ ফিরোজ১৭. মশিউর রহমান১৮. গোলাম মাওলা রনি১৯. রেজাউল করিম চৌধুরী২০. অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আইয়্যুব হোসেন।নির্বাচনী ফলাফল:ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।৮৮৯টির মধ্যে ৮৮৬ কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে ইলিশ প্রতীকের মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস মগ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট।গোলযোগের কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হলেও ওই সব কেন্দ্রের ভোটের যোগফল দুই প্রার্থীর ব্যবধানের চেয়ে কম হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ আওয়ামী লীগ সমর্থিত মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।ঢাকা দক্ষিণের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আব্দুর রহমান ফ্লাস্ক প্রতীকে ১৪,৭৮৪ ভোট, সোফা প্রতীকে জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন মিলন ৪৫১৯ ভোট, চরকা প্রতীকে আবু নাছের মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইন ২,১৯৭ ভোট, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে রেজাউল করিম চৌধুরী ২,১৭৩ ভোট, জাহাজ প্রতীকে শাহীন খান ২,০৭৪ ভোট, আংটি প্রতীকে গোলাম মওলা রনি ১,৮৮৭ ভোট, বাস প্রতীকে শহীদুল ইসলাম ১,২৩৯ ভোট, টেবিল প্রতীকে সিপিবি-বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ ১,০২৯ ভোট, ল্যাপটপ প্রতীকে জাহিদুর রহমান ৯৮৮ ভোট, কমলা লেবু প্রতীকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন ৯২৮ ভোট, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে এএসএম আকরাম ৬৮২ ভোট, হাতি প্রতীকে দিলীপ ভদ্র ৬৬৯ ভোট, কেক প্রতীকে আব্দুল খালেক ৫৫০ ভোট, ময়ূর প্রতীকে শফিউল্লাহ চৌধুরী ৫১২ ভোট, চিতা বাঘ প্রতীকে মশিউর রহমান ৫০৮, লাউ প্রতীকে মো. আকতারুজ্জামান আয়াতুল্লাহ ৩৬২ ভোট, ঈগল প্রতীকে আইয়্যুব হোসেন ৩৫৪ ভোট এবং শার্ট প্রতীকে বাহরানে সুলতান বাহার ৩১৩ ভোট পেয়েছেন।সাঈদ খোকন দুই লাখ একচল্লিশ হাজার পাঁচ (২,৪১,০০৫) ভোটের ব্যবধানে মির্জা আব্বাসকে পরাজিত করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনটি সিটি নির্বাচনের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছেন। প্রশ্ন: ৮৮৯টি ভোটকেন্দ্রের ৪৭৪৬টি ভোটকক্ষে একজন করে পুলিং এজেন্ট দেবার সামর্থ্য কয়জন মেয়র প্রার্থীর ছিল?মন্তব্য:## ঢাকা সিটি দক্ষিণের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ খোকন ও মির্জা আব্বাস ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীর সেই সামর্থ্য ছিল না। যিনি তৃতীয় হয়েছেন তার প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে খুবই নগন্য। ## ঢাকা সিটি দক্ষিণে ২০ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও মূল লড়াই হয়েছে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে। অন্যান্য ১৮ জন মেয়র প্রার্থী এই নির্বাচনে ন্যূনতম ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন কি ৮৮৯টি ভোট কেন্দ্রের ৪৭৪৬টি ভোট কক্ষে পুলিং এজেন্ট দেবার মত সক্ষমতাও তাদের ছিল না।## ঢাকা সিটি দক্ষিণে তুলনামূলক বেশি ভোট কাস্ট হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন তুলনামূলকভাবে বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাসের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। সাঈদ খোকন ঢাকার প্রাক্তন মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সুযোগ্য সন্তান। এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশানকে দুইভাগে ভাগ না করলেও সাঈদ খোকন হতেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী। সেই তুলনায় বিএনপি প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে বাদ দিয়ে মির্জা আব্বাসকে মেয়র প্রার্থী করায় খোকার বিরাট সমর্থকগোষ্ঠীর সমর্থন মির্জা আব্বাস পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাদেক হোসেন খোকা যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক থাকলেও ঢাকা সিটি দক্ষিণের নির্বাচনে তিনি দূর থেকেও মির্জা আব্বাসের জন্য এক নাম্বার শত্রু হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পেরেছেন।## আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন হাজী সেলিম যিনি নির্বাচনের আগেই সাঈদ খোকনকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, যা ভোটের রাজনীতিতে সাঈদ খোকনের জন্য আশির্বাদ হিসেবে কাজ করেছে। অন্যদিকে সাদেক হোসেন খোকা মাঠে অনুপস্থিত থাকলেও মির্জা আব্বাসের জন্য তার ভূমিকা অভিশাপ হিসেবে কাজ করেছে। ## মির্জা আব্বাস পলাতক থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। যা সাধারণ ভোটারদের কাছে কোনো ধরনের অনুকম্পা বা বাড়তি আকর্ষন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং মির্জা আব্বাস যদি পলাতক না থেকে প্রকাশ্যে বের হয়ে এসে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করতেন, সেক্ষেত্রে তা ভোটারদের বেশি আকর্ষন করতে পারতো। আর যদি তখন মির্জা আব্বাসকে পুলিশ গ্রেফতারও করতো তাহলে বরং সাধারণ মানুষের এক ধরনের সমর্থন তিনি অটোমেটিক পেলেও পেতে পারতেন। তাছাড়া বিগত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি যেভাবে মাঠে না থেকে গুহা থেকে হরতাল অবরোধ জ্বালাও পোড়াও পেট্রোল বোমার যে নেগেটিভ রাজনীতি করে জনসাধারণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে, সেই কার্যক্রমের মূল হোতা বা পরিকল্পকদের একজন ছিলেন মির্জা আব্বাস। সাধারণ নাগরিক ভোট দেবার সময় তেমন একজন বিধ্বংসী নেতাকে ভোটপ্রদানে বর্জন করবে এটাই বরং স্বাভাবিক চিত্র। কেবল বিএনপি'র অন্ধ সমর্থক ছাড়া কোনো সাধারণ ভোটারের সমর্থন এমন নেতার পাবার প্রশ্নই ওঠে না। বরং এখনো যে এমন একজন দুশমন টাইপের নেতা দুই লাখের উপরে ভোট পেয়েছেন, এই খবরটি আতকে ওঠার মত। ## মানুষ হত্যার রাজনীতি করে যে নেতার প্রকাশ্যে জনসাধারণের সামনে আসার মত স্বাভাবিক সাহস নেই, তাকে যে জনসাধারণ প্রত্যাখ্যান করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। বরং সে তুলনায় মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস হয়তো জনসাধারণের অনেক কাছাকাছি যাবার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। বিএনপি বরং আফরোজা আব্বাসকে প্রার্থী করলে ঢাকা সিটি দক্ষিণে হয়তো আরো প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন হতো। প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপি কোনো দক্ষতা দেখাতে পারেনি।## বিএনপি নির্বাচনে ভোটের দিন অর্ধেক সময় হাতে রেখে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই নির্বাচন বর্জন করেছে। একজন পলাতক আসামীকে বাঁচানোর জন্য এটা বিএনপির সেই পুরনো কৌশল। তাই মওদুদের নির্বাচন বর্জনের সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা আব্বাসের উপস্থিতি সেই পূর্ব পরিকল্পনাকেই প্রমাণ করে।## মির্জা আব্বাসকে বিএনপি একবার সিলেকশানে বিনা ভোটে ঢাকার মেয়র বানিয়েছিল। তখন মির্জা আব্বাস ঢাকাবাসীর জন্য কোনো অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং দুর্নীতি ও দখল বাণিজ্যে তিনি আগের রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। যা সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি এড়ায়নি।## মেয়র প্রার্থী হিসেবে মির্জা আব্বাসকে আওয়ামীলীগকে মোকাবেলা করার আগে নিজ দলের সাদেক হোসেন খোকাকে মোকাবেলা করতেই নির্বাচনের সময় ক্ষণ ফুরিয়ে গেছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়িয়ে একজন পলাতক আসামী যে মেয়র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পেরেছে, তার সকল ক্রেডিট তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের।## মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারী মামলা রয়েছে ৩৭টি, আর অতীতে ছিল ২৪টি। নির্বাচনী হলফনামায় পেশা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন ব্যবসা, মির্জা এন্টারপ্রাইজ। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস।বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন, বাড়ি ভাড়া, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান অন্যান্য ভাড়া বাবদ ১ কোটি ৫ লাখ ৮১,৫৪৩ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক আয় ৬ কোটি ২৭ লাখ ১৫,২৯০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৭৪,২৫০ টাকা।অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন, নগদ টাকা ৫০ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ১০ লাখ ৬২,১২৩ টাকা; বন্ড ৩৫ কোটি ৬ লাখ ৭৯,১০০ টাকা ও ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫,৮৪৫ টাকা। স্থায়ী আমানত রয়েছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭,১৪৯ টাকা, ৯৭ লাখ ৫০,০০০ টাকার একটি গাড়ি। স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে ২ লাখ টাকা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ১০ লাখ টাকা, আসবাবপত্র ৭ লাখ টাকা ও অন্যান্য ৯০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মির্জা আব্বাস প্রায় ১০০ কোটির টাকার মালিক বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।মির্জা আব্বাস হলফনামায় যে তথ্য স্বীকার করেছেন, তা থেকেই বোঝা যায়, বিএনপি শাসনামলে মন্ত্রী থাককালে কি পরিমাণ দুর্নীতি ও অবাধ সম্পত্তির তিনি মালিক হয়েছেন। কিন্তু তার আসল সম্পত্তি হলফনামায় প্রকাশ করা সম্পত্তির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। সাধারণ মানুষ এই মিথ্যাকে গ্রহন করেনি। এমন একজন ব্যক্তি ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি যে আরো সম্পত্তি বানাতেই আত্মনিয়োগ করবেন, এই উপলব্ধি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কাজ করেছে, যা নির্বাচনে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।## বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়া, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে পুলিং এজেন্ট রাখা এবং সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আনায় উৎসাহের চেয়ে কখন মওদুদীয় সূত্রের সেই ভোট বর্জনের নির্দেশ আসে সেই অপেক্ষাই বেশি কার্যকর ছিল। তাই গোটা ভোটের দিন বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে একধরনের ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি মার্কা একটা দায়সারা উপস্থিতি ছিল। যা মওদুদের সেই পূর্বপরিকল্পিত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তে মিলিয়ে যায়। ## ভোটে অংশগ্রহন করেও বিএনপি একটি অপকৌশল নিয়ে নির্বাচন বর্জন করে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে তামাশা করেছে। যে দুই লাখের বেশি ভোটার তাদের সমর্থন দিয়েছে, তারা তো কেউ অপরাধ করেনি। ভোট বর্জনের সোজা মানে দাঁড়াল সেই দুই লাখের বেশি সমর্থকদের মতামতকেও বিএনপি একেবারে আমলে নেয়নি। যা সাধারণ ভোটারদের জন্য একটি অশনিসংকেত। ## ধ্বজভঙ্গ বিএনপি'র সঙ্গে আওয়ামীলীগের এভাবে পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে থাকাটা গণতন্ত্রের জন্য মোটেও শুভ সংকেত নয়। ঢাকা সিটি দক্ষিণে এমন কি সুইডিশ অ্যাম্বাসিডর পর্যন্ত পর্যন্ত ভোট দেখতে গিয়ে লাঞ্চিত হয়েছেন। যা দেশের ভাবমুর্তি খাটো করেছে।## বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনকে যতদিন শক্তিশালী করা না হবে ততদিন ভোটের রাজনীতিতে প্রশাসনিক অপতৎপরতা বন্ধ হবে না। ## বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভোট আয়োজন শেষ করাকেই শুধু দায়িত্ব মনে করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভোটারদের সচেতনতা বাড়াতে এই কমিশনের কোনোই ভূমিকা নজরে আসেনি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে মনে হয়েছে সরকার যতটুকু চেয়েছে তার চেয়ে উদার হস্তে সরকার দলীয়দের ফেবার দেবার খায়েস বেশি ছিল। যা সরকারের ভাবমুর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমনকি এই কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি মানতে প্রার্থীদের বাধ্য করাতে পর্যন্ত পারেনি। ## কোনো কোনো পত্রিকায় একজন নির্বাচন কমিশনারের তাড়া খাওয়ার খবর এসেছে। যা কমিশনের জন্য মোটেও সুখের অভিজ্ঞতা নয়। ## নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে আশানুরূপ তৎপরতা সিটি নির্বাচনে অনুপস্থিত ছিল। ## ঢাকা সিটি দক্ষিণের নির্বাচনে সংঘটিত কিছু কিছু কেন্দ্রের যেসব ঘটনা পত্রিকায় এসেছে, সেগুলো বিজয়ী দলের ভাবমুর্তিকে খাটো করেছে। এসব না করলেও সাঈদ খোকন হয়তো বিজয়ী হতেন। তবুও এসব ছোটখাটো ঘটনা সেই বিজয়কে বরং কলংকিত করল।## ঢাকা সিটি দক্ষিণের নবনির্বাচিত মেয়র জনাব মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, আপনাকে অভিনন্দন। নির্বাচনের আগে আপনি বলেছিলেন নগরপিতা হিসেবে নয় নগরপুত্র হিসেবে ঢাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। নাগরিকরাই আপনার সেনাবাহিনী। সেই কথাটি যেন আপনার মনে থাকে। আশা করি, নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপনি ঢাকাকে গড়ে তোলার কাজে এখন পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করবেন। আপনার বাবাকে ঢাকাবাসী যেভাবে সম্মান করতো, আপনি সেই সম্মানকে আরো উঁচু স্তরে নিয়ে যাবেন, এটাই প্রত্যাশা করি। ঢাকা সিটি দক্ষিণের একজন বাসিন্দা হিসেবে আপনি এখন আমারও মেয়র। আপনার নতুন রাজনৈতিক জীবন কর্মময় হোক। সেই শুভ কামনা রইল। .....................................২৯ এপ্রিল ২০১৫ঢাকাতথ্যসূত্র: বিভিন্ন পত্রিকা, ব্লগ, নির্বাচন কমিশন ও টেলিভিশনের খবর
false
ij
অভ্যন্তরীণ পর্যটন_ প্রজেক্টের নাম আরণ্যক নোমান অনেকদিন পর এল। কাল দুপুরে ওর সঙ্গে ভাত খেলাম। মিস্টি কুমড়ার ভাজি, ডাল আর কি একটা মাছ ছিল। খেতে খেতে নোমানকে অভ্যন্তরীণ পর্যটন সম্পর্কে আমার সাম্প্রতিক চিন্তাভাবনা খুলে বললাম। ও মিথুন রাশি। দারুণ উৎসাহ দেখাল। বলল, উনছি প্রাঙ-এ অভ্যন্তরীণ পর্যটনের একটি কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। ওর কথা শুনে মনে আশা জাগল। এতদিন থিউরি কপচাচ্ছি। এখন যদি তত্ত্বটা প্রয়োগ করা যায় তো মন্দ কি। নোমান উনছি প্রাঙ-এর কথা বলল। তা উনছি প্রাঙ কি? উনছি প্রাঙ একটা জায়গার নাম। একটা গ্রাম। টেকনাফে। মানে টেকনাফ যেতে দু-তিন স্টেশন আগে। নীলার নাম শুনে থাকবেন। তারও আগে। ওই উনছি প্রাঙ -এই নোমান-এর বাড়ি। ঢাকায় ল পড়ছে। একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইন্টারটা আমাদের বাড়িতে থেকেই পড়েছিল। কাজেই, ঘনিষ্টতা তুমুল। খাওয়া শেষ করে আমার ঘরে এসে বসেছি। বলল, আমার থিউরি কি বোঝা গেছে? গেছে মামা। নোমান বলল। তা হলে বল কি বুঝলা? আমি সক্রেটিসের মতন সন্দিহান হয়ে উঠি। ও যা বলল তাই গুছিয়ে লিখছি। আদিবাসী গ্রাম আছে উনছি প্রাঙ-এ। ওখানে আমাদের জমি আছে। ওখানেই কটেজ তুলব।দু-তিন রুমের। বাথরুমের দিকটা খেয়াল রেখ। বললাম। হ্যাঁ। বাথরুম হবে ঘরসংলগ্ন। পরিস্কার। পানির ব্যবস্থা কর। প্রথমে পেপারে বিজ্ঞান দেব। বিজ্ঞাপানের ভাষা হবে ঘরোয়া। আন্তরিক। আসুন, আদিবাসী গ্রাম বেরিয়ে যান। বাড়ির কাছেই পাহাড়ি ঝর্ন। আমাদের লোক বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকবে। নিরাপত্তার ভাবনা নেই। ইত্যাদি। পর্যটকদের সঙ্গে গাইড থাকবে। উনছি প্রাঙ-এর পিছনটা পাহাড়। মাঝে মাঝে হাতি নামে। ফরেস্ট অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করব। গ্রামের একটা ম্যাপ করব। সেটার কপি অতিথিদের দেব। তা ছাড়া গাইড থাকবে সঙ্গে। আর আদিবাসী গ্রামে একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র গড়ে তুলব। ওখানে আদিবাসী নারীপুরুষের তৈরি নানা রকম জিনিস থাকবে। তবে দাম গলাকাটা হবে না। আসলে আমার কটেজের কোনও কিছুর দামই মাত্রাতিরিক্ত হবে না। উনছি প্রাঙ-এ ডাক্তার আছে। সব সময় যোগাযোগ থাকবে। তা ছাড়া দরকারি অষুধপত্র কটেজেই রাখব। অতিথিরা রাতে টিভি দেখবে না। বরং আদিবাসীদের গান শুনবে উপকথা শুনবে। গ্রামের বেকাররা হবে গাইড আর কটেজ-এর কর্মচারী। ঠিক হল প্রজেক্টের নাম হবে -আরণ্যক। আমি প্রধান উপদেষ্টা। আর ও প্রজেক্টের চেয়ারম্যান+সি ই ও ...ইত্যাদি ... আগডুম বাগডুম ... নোমান-এর বয়স এখন ২২। মেধাবী ঝকঝকে তরুন। অভ্যন্তরীণ পর্যটনের প্রয়োজনীয়তা সহজেই বুঝতে পেরেছে। বললাম, শহরের লোকদের দু-তিন দিন সুখশান্তি দিয়ে যে টাকা পাবে তা থেকে তোমার খরচ মিটিয়ে সামান্য লাভ তুলে বাকি টাকা স্থানীয় মানুষের কল্যাণে ব্যয় কর। সীমান্ত এলাকায় বাস করে তোমার পূর্বপুরুষ এতকাল যা করেছে -তুমি আর ওসব করো না। কাঠের ব্যবসা, চিংড়ির ঘের যথেস্ট হয়েছে। এবার একুশ শতকে ভিন্ন রকমের চিন্তাভাবনা কর। আগে ল পড়াটা শেষ কর। তারপর ঢাকায় প্র্যাকটিস কর। তোমার একটা ভালো সামাজিক পরিচয় থাকলে কটেজ ব্যবসার ভালো হয়। তার পাশাপাশি আরণ্যক চলবে। একটা সময় দেখবে তোমাকে আর ঢাকা থাকতে হচ্ছে না। নোমান মাথা নাড়ল। ওর একটা বড় সুবিধে এই যে- ওরা দীর্ঘদিন টেকনাফে স্থানীয়। ওর পরিবার টেকনাফে বেশ ডাকসাইটে। চিংড়ি ঘেরের ব্যবসা। থানার সঙ্গে ওঠাবসা রয়েছে। কাজেই নোমানের পর্যটনের ব্যবস্থা স্থানীয় বখাটেদের উৎপাতে ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর প্রজেক্ট আরণ্যক এর শুভ সূচনা। আপনাদের এখনি আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০৪
false
hm
হ্যাকিং ঘটেছে কোন প্রান্তে? উচ্চ আদালতের একজন বিচারক ও আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারার্থে গঠিত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারক নিজামুল হক নাসিম ও আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে স্কাইপিতে সাধিত কথোপকথন হ্যাক করে প্রকাশের ঘটনা এখন সকলেই জানেন। বিষয়টি গোচরে আনে যে পত্রিকাটি, সেই দি ইকোনমিস্ট এই হ্যাকড ম্যাটেরিয়াল নিয়ে টেলিফোনে একজন দায়িত্বাসীন বিচারকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে তার ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টাও করেছে। বিচারক পাল্টা আইনী ব্যবস্থার কথা রুল জারি করে তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর আমরা দেখতে পেলাম, যুক্তরাজ্যের দি ইকোনমিস্ট নিজেদের পত্রিকায় এ ব্যাপারে কোনো কিছু প্রকাশ না করে বানিয়ান শিরোনামে তাদের ব্লগে এ সংক্রান্ত একটি সংক্ষিপ্ত লেখা পোস্ট করে এবং প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশের দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় এই হ্যাকড কথোপকথনের অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পত্রিকা ও ব্লগের মধ্যে পার্থক্য করতে অক্ষম বাংলাদেশী মিডিয়া সেটিকেই দি ইকোনমিস্টের "প্রতিবেদন" জ্ঞান করা শুরু করে এবং ব্লগটির বাংলা অনুবাদ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত বিচারক ও আইনজ্ঞের মধ্যে কথোপকথন, স্কাইপিতে তাদের কথোপকথন হ্যাক করার সম্ভাব্যতা, ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে পত্রিকায় নানা কথা হয়েছে, কিন্তু উচ্চ আদালতের একজন বিচারকের কথোপকথন হ্যাক করা কত বড় অপরাধ, এবং এই ধরনের অপরাধের বিচার বা শাস্তি প্রসঙ্গে আমাদের মিডিয়া মৌনীবাবার ভূমিকা নিয়েছে। আলোচ্য বিচারক ও আইনজ্ঞের কথোপকথন থেকে পরিষ্কার হয়, তাঁরা একটি সুগঠিত রায় ও সুচারু বিচারকাজের জন্য কী গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিজেদের ভেতরে লালন করেন। কিন্তু তাদের গোপনীয় আলাপ যারা আড়ি পেতে ধারণ করে প্রচার করলো, তাদের এই আড়ি পাতার কাজটি কতটুকু প্রসারিত, তা নিয়েও মিডিয়া চুপ। বিচারকের আলাপ যদি আড়ি পেতে শোনে কেউ, সে যে সাক্ষীদের গোপন রাখা পরিচয়ও হ্যাক করে কাজে লাগায়নি, তারই বা নিশ্চয়তা কী? কিছু সাক্ষী যে শেষ মুহূর্তে সাক্ষ্য দিতে নিজেদের অপারগতার কথা জানিয়েছেন, সেটি থেকেও কি আমরা বুঝতে পারি না, এই সাক্ষীদের পরিচয় ফাঁস হয়েছে, এবং তাদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে? এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে সম্ভবত বিব্রত হবে সরকারের সেই অংশটিই, যাদের দায়িত্ব ছিলো গোপনীয় তথ্যকে গোপনীয় রাখা। আজ বিচারকের আলাপ হ্যাক হচ্ছে, কাল যে খোদ প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির ফোন আলাপ হ্যাক হবে না, আমরা কীভাবে নিশ্চিত হবো? আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারার্থে গঠিত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান যদি হ্যাকিঙের শিকার হন, আর সেই হ্যাকিঙের বিচার চেয়ে মিডিয়াতে যদি কোনো প্রশ্ন না ওঠে, তাহলে কি এই সঙ্কেতই দেয়া হয় না, যে হ্যাকিংকে আমরা মেনে নিচ্ছি? এই প্রশ্নগুলো ওঠার আগেই তাই অনলাইনে এই হ্যাকারদের প্রোপাগাণ্ডা অংশ অভিযোগের আঙুল তুলছে আইন বিশেষজ্ঞ ড. জিয়াউদ্দিনের দিকেই। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে কিছু কাঠবলদ ও পিতৃপায়ুজাত গর্ভস্রাব। তারা বলতে চায়, ড. জিয়াউদ্দিনই এই অডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ড. জিয়াউদ্দিন নিজেকে বিপন্ন করে এই বিচার প্রক্রিয়াকে কোন দুঃখে স্যাবোটাজ করতে যাবেন? আর নিরীহ আইনজ্ঞ জিয়াউদ্দিনকে যূপকাষ্ঠে চড়ালে কি বিচারককে গোপনীয়তা প্রদানে ব্যর্থ সরকারের বিশেষ কর্তাদের সদুত্তর দেয়ার খাটনি কমে যায়? জামাতের প্রোপাগাণ্ডু মূর্খের দল নিজেদের অজান্তেই নিজেদের দাবির বিরুদ্ধে প্রমাণ তুলে দিয়েছে ইউটিউবে। যারা ইউটিউবে বিচারক ও আইনজ্ঞের মধ্যে কথোপকথন শুনেছেন, তারা পরিষ্কার খেয়াল করেছেন একটি ব্যাপার। এই অডিওতে ড. জিয়াউদ্দিনের কথা এসেছে কাটা কাটা, যেখানে বিচারকের কথা এসেছে পরিষ্কার। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের কচ্ছপগতির কারণে স্কাইপি বা গুগলটকে অপর প্রান্ত থেকে ভয়েস ডেটা আসে ভেঙে ভেঙে, যে কারণে কথা যান্ত্রিক শোনায়। বিচারকের কম্পিউটারে আড়ি পাতার কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বলেই সেখানে মন্থর নেটসংযোগের কারণে ড. জিয়াউদ্দিনের কথা এসেছে ভেঙে, আর সরাসরি মাইকে ধারণকৃত বিচারকের কথা স্পষ্ট শোনা গেছে। যদি ড. জিয়াউদ্দিনের প্রান্ত থেকে এই কথোপকথন রেকর্ড করা হতো, তার নিজের কথা কখনোই ভেঙে যেতো না। কথোপকথনের নমুনা এই পোস্টে দিচ্ছি না, কারণ উচ্চ আদালতের একজন বিচারকের হ্যাক করা কথোপকথনের আংশিক বা পূর্ণাংশ পরিষ্কারভাবেই অবৈধ, এবং এর ব্যবহারের ওপর পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে আদালত থেকে। যার আগ্রহ আছে, তিনি ইন্টারনেটে জামাতের প্রোপাগাণ্ডুদের ছড়িয়ে দেয়া অডিও থেকে শুনে যাচাই করে দেখতে পারেন। এই ঘটনায় দুটি অপরাধ সাধিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে দু'জন মানুষের কথোপকথন হ্যাক করা এবং সেই হ্যাক করা তথ্য প্রকাশ করা। এই দুটি অপরাধেরই আশু বিচার কামনা করছি। আমরা এই হ্যাকারদের পরিচয় জানতে চাই, শাস্তি চাই, আর এই হ্যাকড ম্যাটেরিয়াল যারা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রকাশ করলো, তাদের শাস্তি চাই। যারা এই প্রসঙ্গে সংশয় বা দ্বিধায় ভুগছেন, জেনে রাখুন, আপনাদের সংশয়ই একাত্তরের ঘাতকদের শক্তি। ছাগুদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনের ময়দানে লড়াই করা একজন সহযোদ্ধা নিজের কানের চেয়ে ছাগু-প্রোপাগাণ্ডাকে বেশি মূল্য দিয়েছেন শুনে যেমন বিস্মিত হয়েছি, তেমনি আঘাতও পেয়েছি। আপনি একটা স্লো লাইনে বসে স্কাইপিতে বিদেশের কারো সাথে কি জীবনে কথা বলেন নাই? স্লোগান দিতে গিয়ে আমি বুঝতে শিখি, কে ভাই, কে দুশমন, গানটা তো আপনিও শুনেছেন। নাকি শোনেন নাই? গ্ল্যাডিয়েটর সিনেমায় ম্যাক্সিমাসের একটি সংলাপ আমার প্রিয়, সেটি দিয়েই শেষ করি। হোল্ড দ্য লাইন।
false
fe
গণআদালত থেকে গণজাগরণের বাংলাদেশ গণআদালত থেকে গণজাগরণের বাংলাদেশফকির ইলিয়াস==================================অনেকদিন পর আবার স্লোগান দিলাম। প্রচন্ড বরফ পড়েছে নিউইয়র্কে ৯ ফেব্রুয়ারি। ১০ ফেব্রুয়ারি রোববার নিউইয়র্কে ছিল সমাবেশ। শত শত অভিবাসী জ্যাকসন হাইটসের চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলেন। সমাবেশে যাবার আগে ফোন দিলাম কবি শহীদ কাদরীকে। তিনি আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। অনেক কিছুই তাঁর সাথে শেয়ার করি। জানতে চাইলাম দেশে বিদেশে এই যে গণজাগরণ এ বিষয়ে কিছু বলুন। শহীদ কাদরী নির্ভীক মানুষ। এখনো তাঁর কথা আমাকে শাণিত করে। শহীদ কাদরী মুখ খুললেন। বললেন, শাহবাগ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা আমাকে আবারো চমকে দিয়েছে। যেমনটি আমি একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালির মাঝে দেখেছিলাম। কবি বলেন, আমি ভেবে পাই না একাত্তর পরবর্তী সময়েই কেন এসব ঘাতক-দালালদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কি এমন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, যারা কাদের মোল্লার মতো একজন খুনিকে হত্যা করতে পারলো না! ভেবে অবাক হই, এমন চিহ্নিত একজন ধর্ষক কিভাবে এতোদিন বেঁচে আছে! তাঁর কথা শুনে শিউরে উঠি। কবি শহীদ কাদরী বলেন, আমরা জানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়েল হয়। সেখানে নাৎসিদের কিভাবে বিচার করা হয় তা আমরা জানি। সেই সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের শয্যা সঙ্গিনী হয়েছিল যেসব গণিকাÑ তাদেরও হত্যা করা হয়। এটাই ইতিহাস। বাঙালিরা একাত্তরের ধর্ষকদের সেই শাস্তি দিতে পারেনি বলেই- আজ আমাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কবি বললেন, আমি আজকের এই প্রজন্মের কাছে ঋণ স্বীকার করে বলতে চাই, আমি খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে- বাঙালি কি আর ঘুরে দাঁড়াবে না! আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকার মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। আমি খুবই আশান্বিত। তিনি বলেন, সরকারের উচিত অতি দ্রুত এই গণদাবি মেনে নিয়ে বিচারের রায় ত্বরান্বিত করা। কারণ ‘রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ’ এই প্রজন্মের প্রাণের দাবি। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ রোববার বিকেলে নিউইয়র্কে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মহাসমাবেশের আয়োজন চলছিল-ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর এই কথা অনেক প্রবাসীর জন্য ছিল প্রেরণার উৎস। কবি বলেন, আমি সমাবেশে যেতে পারবো না ঠিকই- কিন্তু আমার আত্মিক সমর্থন থাকছে এই আন্দোলনের সঙ্গে। আমি জানি, বাঙালির জয় সুনিশ্চিত। খুব দৃঢ়তার সাথে বলেন কবি শহীদ কাদরী। বিকেল চারটায় সমাবেশে পৌঁছি। সাথী বন্ধুরা সেøাগান ধরেন। বরফের হিম আমাদের কণ্ঠ রোধ করতে পারে না। সেদিনই জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনলাম টিভিতে। শেখ হাসিনা সেদিন ছিলেন আবেগ আপ্লুত। তিনি বলেছেন, ‘তাদের শপথের প্রতিটি বাক্য শুনেছি। তাদের প্রতিটি বাক্য যুক্তিযুক্ত। তাদের এই শপথ বাস্তবায়নে যা যা করার দরকার করবো।’ শাহবাগের প্রেরণায় সারা দেশে আন্দোলনের বিস্তারকে ‘অভূতপূর্ব’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়েছে। অদ্ভুত জাগরণ ঘটিয়েছে। প্রতিটি গ্রামে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমি যখন দেখি তরুণ প্রজন্ম কিভাবে জেগে উঠেছে, আমারো মন ছুটে যায়।’ পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের সঙ্গে সাক্ষাতে একাত্তরে পাক বাহিনীর বর্বরতার কথাও জানানোর কথা বলেন শেখ হাসিনা। ‘তাকে বলেছিলাম, আমরা ক্ষমা করতে পারি। কিন্তু, আমরা ভুলবো না। জাতিসংঘে দেখা হয়েছিল। তাকে আমি এই কথা বলেছিলাম।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন- ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবে। এখন আমি স্বস্তিতে মরতে পারবো, শান্তিতে মরতে পারবো।’ আমরা দেখছি, ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ আইন সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়েছেন। জাতীয় সংসদে তা পাস হবার পর নতুন আইন কার্যকর হবে। অন্যদিকে এই গণজাগরণকে থামিয়ে দেবার জন্য তৎপর রয়েছে একটি মহল। এরা যে সব বিষয় বলতে চাইছে তার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আলবদর রাজাকারদের বাঁচানো। এসব রাজাকার দোসরদের বক্তব্যের কিছু সার সংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা দরকার মনে করি। তারা বলছেÑ ১. দেশকে বিভক্ত করা ঠিক হবে না। ৪২ বছর পর মিলেমিশে দেশ চালানো দরকার। ২. দেশ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, খুন, রাহাজানি, রাজনৈতিক পীড়ন ইত্যাদিতে সয়লাব। এগুলো দূর না করে সরকার কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চাইছে? ৩. এই গণজাগরণের দাবির সাথে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু’ যোগ করা দরকার। সরকার শাহবাগ আন্দোলনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। ৪. ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনের বেনিফিশিয়ারি হতে চাইছে। ইত্যাদি। তাদের এই ফর্দ দীর্ঘই হচ্ছে। কারণ তারা এখন দিশেহারা। বিএনপির হান্নান শাহ, কিংবা সাদেক হোসেন খোকার মতো নেতারা এখনো পরোক্ষভাবে রাজাকারদের পক্ষ নিচ্ছেন। আর মওদুদ আহমদ, আব্দুল্লাহ আল নোমানের মতো নেতারা সরাসরি সমর্থন দিচ্ছেন আলবদরদের। এটা খুব নিশ্চিত, বেগম খালেদা জিয়াই আলবদরদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি তার তনয় তারেক রহমানকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চাইছেন। ভাবতে অবাক লাগে আজ বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার নামে ঘাতক দালালদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে প্রধান বিরোধী দল। অবশ্যই বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের বিচার দেশবাসী চান। কিন্তু তার অর্থ এই নয় বিএনপি, একাত্তরের পরাজিত আলবদরদের কোলে নিয়ে তাদের পারপাস সার্ভ করবে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, আওয়ামী লীগ জামাতকে নিয়ে প্যারালাল আন্দোলন করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো এখন তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে সামনে এগিয়েছে। বিএনপি এখনো রাজাকারদের সাথে গভীর মিত্রতা ছিন্ন করতে পারছে না কেন? ১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার চ্যানেল আই-এর ‘তৃতীয়মাত্রা’ অনুষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের ছয়জন ব্লগার ও অ্যাকটিভিস্টকে আনা হয়েছিল। এরা সকলেই শাহবাগের আন্দোলনের সাথে যুক্ত। এই তরুণরা বলেছেন, তারা সব সমস্যারই সমাধান চান। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটি সব কিছুর আগে। আমরা দেখছি কেউ মওদুদীর সাথে শেখ মুজিবের ছবি ফেসবুকে প্রচার করছে। এটা কি কোনো বিষয় হলো? মওদুদী ও শেখ মুজিব দুজনের পথ দুদিকে গিয়েছে বেঁকে। শেখ মুজিব কী মওদুদীর চিন্তা-চেতনা লালন করতেন? নাকি তা প্রতিষ্ঠা করেছেন? এসব নাদানদের তা কে বুঝাবে? না আমরা আশাহত হচ্ছি না। আমরা জেনেছি, শাহবাগ আন্দোলনের জন্য চারুকলায় রাত জেগে চলছে জাহানারা ইমামের প্রতিকৃতি তৈরির কাজ। একদল তরুণ-তরুণী আপন মনে তৈরি করছে বিশাল এক প্রতিকৃতি। সারাদিন আন্দোলন আর রাত জেগে প্রতিকৃতি তৈরির বিনিময়ে তারা চান শুধুই ফাঁসি। গণজাগরণ চত্বরে তরুণ তরুণীরা এসেছেন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। এরা পূর্ব পরিচিতও নন। প্রত্যেকে আন্দোলনকে উজ্জীবিত করার স্বার্থেই এ কাজে অংশ নিয়েছেন। ফেইসবুকে ও বিভিন্ন ব্লগে প্রতিকৃতিটি বানাতে অংশ নেয়ার আহ্বান দেখেই তারা একসঙ্গে এসেছেন। এখানে অর্থের জোগানে কোনো রাজনৈতিক হাত নেই। প্রত্যেকে নিজেদের পকেট থেকে চাঁদা তুলে এ প্রতিকৃতিটি তৈরি করেছেন। প্রতিকৃতি নির্মাণকারীরা বলেছেন, ‘আন্দোলনের আয়োজক ও ব্লগারদের উদ্যোগেই জাহানারা ইমামের এ প্রতিকৃতি তৈরি করা হচ্ছে। এখানে সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্লগ থেকে খবর পেয়ে।’ হ্যাঁ, ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তার জাগরণ ঘটতে লেগেছে একুশ বছর। আর বাঙালি এভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে জানে। যার প্রমাণ আজকের শাহবাগ থেকে গোটা বাংলাদেশ। যে কথাটি না বললেই নয়, তা হচ্ছে- ব্লগ ও অনলাইনে অ্যাকটিভিটি আমাদের ছেড়ে দিলে চলবে না। কারণ আমরা দেখছি একটা গ্রুপ এখন নানা কথা বলে অনলাইনের দখল নিতে চাইছে। তারা মহানবী (সাঃ)-এর প্রসঙ্গ তুলে ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চাইছে। আমরা দেখছি শোলাকিয়ার মহামান্য ইমাম মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ গণজাগরণে এসেছেন। সেখানে দোয়া মাহফিল হয়েছে। মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন। তারপরও ঐসব কুলাঙ্গাররা বসে থাকবে না। তাই সবাইকে সতর্ক হতে হবে। যে বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে, তা হচ্ছে সাগর-রুনি হত্যাকা- ইস্যুতে বাংলাদেশের সকল সাংবাদিক এক হলেও গণজাগরণ ইস্যুতে বিএনপি-জামাতের কিছু সাংবাদিক পক্ষান্তরে আলবদর রাজাকারদের পক্ষ নিয়েছেন। তা এখন খুব স্পষ্ট। একটি রাজনৈতিক দলপ্রধানের একজন উপদেষ্টা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছেন। এদের বিষয়েও সাবধান থাকা জরুরি। কারণ ‘ওয়াশিংটন টাইমস’-এর নেপথ্য লেখকরা নানাভাবেই ছোবল দিতে চাইছে- চাইবে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো গণসংহতি। গণজাগরণে, সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হবে। যে চেতনা নিয়ে জাতীয় টিমের ক্রিকেটাররা ছুটে এসেছেন, সেই চেতনা সবাইকে ধারণ করতে হবে। দলীয় স্বার্থ কিংবা নেতৃত্বের স্বার্থ নয়, দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে এগিয়ে যেতে হবে। যে দেশপ্রেম থেকে এগিয়ে এসেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।---------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
false
rg
কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার!! পর্ব-২ !!! আফ্রিকা মহাদেশ:এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য যার নাম বেশ আলোচিত হচ্ছে তিনি হলেন সোমালিয়ার ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন ফারাহ। ১৯৭০ সালে নিজের দেশ সোমালিয়া ছাড়ার পর থেকে তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসিত একজন লেখক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, সুইডেন, সুদান, ভারত, উগান্ডা, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি বিভিন্ন সময়ে বসবাস করেছেন। জীবিত কনটেম্পোরারি লেখকদের মধ্যে ফারাহ অন্যতম। তাঁর সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলো কালজয়ী। ১৯৪৫ সালের ২৪ নভেম্বর নুরুদ্দিন ফারাহ ইতালিয়ান সোমালিয়াল্যান্ডের বাইদোয়ায় জন্মগ্রহন করেন। বাবা হাসান ফারাহ ছিলেন মার্সেন্ট আর মা আলীলি ফাদুমা ছিলেন একজন স্বভাব কবি। সোমালিয়া ও প্রতিবেশী দেশ ইথিওপিয়ার স্কুলে ছোটবেলায় ফারাহ পড়াশুনা করেন। তিনি ইংরেজি, আরবি ও আমহারিক ভাষায় পড়াশুনা করেন। ১৯৬৩ সালে সোমালিয়ার স্বাধীনতার সময় সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফারাহকে জোরপূর্বক ওগাডেন-এ নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়। তারপর থেকে বিভিন্ন দেশে তিনি বসবাস করেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করছেন। নুরুদ্দিন ফারাহ'র প্রথম উপন্যাস 'ফ্রোম এ ক্রুক রিব' ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়। যেখানে এক নোমাদ বালিকার সঙ্গে এক বুড়োর বিয়ে ঠিক হবার পর ওই বালিকা পালিয়ে যায়। ইউরোপ সফরের সময় ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস 'এ ন্যাকেট নিডেল'। এই বই প্রকাশের পর সোমালিয়ান সরকার ফারহ'র বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তারপর টানা ২২ বছর তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। ভারতের চন্ড্রিগড়ের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ফিলোসফি, লিটারেচার ও স্যোসিওলজি'র উপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন। তাঁর বিখ্যাত ট্রিলজি 'সুইট অ্যান্ড সৌর মিল্ক' (১৯৭৯), 'সারডিন' (১৯৮১) ও 'ক্লোজ সেসাম' (১৯৮৩)। এই তিনটি উপন্যাস একত্রে 'ভ্যারিয়েশানস অন দ্য থিম অফ অ্যান আফ্রিকান ডিকটেটরশিপ' নামে বহুল পরিচিত। এছাড়া তাঁর 'ব্ল্যাড ইন দ্য সান' বিখ্যাত উপন্যাস। তাঁর উপন্যাস 'গিফটস' ১৯৯৩ সালে এবং 'সিকরেটস' ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি লেখেন পরবর্তী ট্রিলজি 'লিংকস' (২০০৪), 'নটস' (২০০৭) ও 'ক্রোসবোনস' (২০১১)। তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস 'হাইডিং ইন প্লেইন সাইট' ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়। ফারাহ'র লেখা নাটকগুলো হলো- 'এ ড্যাগার ইন ভ্যাকিউম' (১৯৭০), 'দ্য অফারিং' (১৯৭৫), 'ইউসুফ অ্যান্ড হিজ ব্রাদার্স' (১৯৮২), 'টারটার ডেলাইট' (১৯৮০) ও 'এ স্প্রেড অব বাটার' ইত্যাদি। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের শর্ট লিস্টে রয়েছেন সোমালিয়ার এই নির্বাসিত লেখক নুরুদ্দিন ফারাহ। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পাবার শর্ট লিস্টে আছেন নাইজেরিয়ার লেখক বেন ওর্কি। বেন ওর্কিকে তুলনা করা হয় সালমান রুশদি ও গ্যাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কুয়েজের সঙ্গে। ওর্কি'র বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো- 'ফ্লাওয়ার্স অ্যান্ড স্যাডোস', 'দ্য ল্যান্ডস্কেপস উইদিন', 'দ্য ফামিশড রোড', 'সঙস অব এনচ্যান্টমেন্ট', 'অ্যাস্টোনিসিং দ্য গডস', 'ড্যাঞ্জারাস লাভ', 'ইনফিনিট রিচেস', 'ইন আর্কাডিয়া', 'স্টারবুক' ও 'দ্য এজ অব ম্যাজিক'। বেন ওর্কি'র আলোচিত বইগুলো হলো- 'ইনসিডেন্ট ইন দ্য শ্রিন' (ছোটগল্প), 'স্টার্স অব দ্য নিউ কারফিউ' (ছোটগল্প), 'অ্যান আফ্রিকান এলিজি' (কবিতা), 'বার্ডস অব হ্যাভেন' (প্রবন্ধ), 'এ ওয়ে অব বিয়িং ফ্রি' (প্রবন্ধ), 'মেন্টাল ফাইট' (কবিতা), 'টেলস অব ফ্রিডম' (ছোটগল্প), 'এ টাইম ফর নিউ ড্রিমস' (প্রবন্ধ), 'ওয়াইল্ড' (কবিতা) ইত্যাদি। ২০১৪ সালে ওর্কি'র 'দ্য ম্যাডনেস অব রিজন' উপন্যাস দিয়ে নির্মিত হয় ফিচার ফিল্ম 'এন'। এর আগে ওর্কি ম্যান বুকার পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও ডিগ্রি পেয়েছেন। অ্যাংগোলার কথাসাহিত্যিক পেপেটেলা এ বছরের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের শর্ট লিস্টে রয়েছেন। পেপেটেলা নামে লিখলেও তাঁর আসল নাম আর্থার কার্লোস মাউরিসিউ পেসতানা ডোস সান্তোস। পর্তুগিজ অ্যাংগোলায় ১৯৪১ সালে পেপেটেলা জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো 'মায়োম্বি', 'ইয়াকা', 'এ গ্লোরিওসা ফ্যামিলিয়া', 'লুইজি', 'ও কুয়াসে ফিম ডো মুন্ডো', 'ও প্লানালটো ই এ এস্টেপে', ইত্যাদি। অ্যাংগোলার স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস পেপেটেলার উপন্যাসে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে উঠে এসেছে। রাজনীতি, সমাজ, স্যাটায়ার, আর সন্ত্রাস পেপেটেলার লেখার বিষয়বস্তু। পেপেটেলার বিখ্যাত নাটক দুটি হলো 'এ কোর্দা' এবং 'এ রিভোলটা দা কাসা দোস ইদোলোস'। এ বছর পেপেটেলা সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হলে অবাক হওয়ার কিছু নাই।দক্ষিণ আফ্রিকার নাট্যকার ও কবি উইলমা স্টকেনস্ট্রম এ বছর সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার শর্ট লিস্টে রয়েছেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী জেএম কোয়েটজি সম্প্রতি উইলমারের উপন্যাস 'দ্য এক্সপেডিশান টু দ্য বাওবাব ট্রি' ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এটি সারা বিশ্বে খুব আলোড়ন তোলে। ল্যাংগুয়েজ ও মেটাফোর ব্যবহারের পাশাপাশি উপন্যাসটি সার্বজনিন স্বাধীনতার কথা বলে। উপন্যাস লেখার পাশাপাশি উইলমা রেডিও নাটক লেখেন, কবিতা লেখেন। কিন্তু নিজে থিয়েটারে অভিনয় করেন। একজন থিয়েটার অন্ত প্রাণ হলো উইলমা। এ বছর তিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হলে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন। মোজাম্বিকের লেখক মিয়া কোউটো এ বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর শর্ট লিস্টে রয়েছেন। ২০১৪ সালে তিনি সাহিত্যের প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার নিউস্টাট ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্য দুনিয়ায় তিনি 'স্মাগলার রাইটার' হিসেবে বিখ্যাত। তাঁর কন্ট্রাডিকটোরি ওয়ার্ডস, ভাষা এবং বিষয়বস্তুর জন্য তিনি ইতোমধ্যে সাহিত্যাঙ্গনে ঝড় তুলেছেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো 'এ ভারান্দা দো ফ্রাঙ্গিপানি', 'মার মে কুইয়ার', ' ভিন্টে ই জিঙ্কো', 'ও আলটিমো ভো দো ফ্লামিংগো', 'জেসুসালেম', 'এ কনফিসাও দা লিওয়া' ইত্যাদি। ...........................চলবে.............................. সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:২০
false
mk
রিজার্ভ ও ব্যাংক বিষয়টি যে খুব ছোট নয়, তা ইতিমধ্যেই বিস্তর বলেছেন দেশের অর্থনীতির বিশেষজ্ঞগণ। যদিও কেউবা প্রথমে তা উড়িয়ে দেওয়ার মতো ভাব করছিলেন। বিষয়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা নিউইয়র্কের রিজার্ভ ব্যাংক থেকে লাপাত্তা। হয়তো বিষয়টি কেউ ধাপ্পাবাজি ভেবেছিলেন, কেউবা গোপনে গোপনে সারতে চেয়েছিলেন, কেউবা তুচ্ছ বলে চাপা রাখতে কসুর করেননি, আরও কেউবা তাচ্ছিল্যভরে বাতিল করে দিয়েছিলেন।কিন্তু বাধ সাধলো ফিলিপিন্সের পত্রিকা। সে রীতিমতো হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিল। তারপর তুলকালাম। সরে যেতে হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। অতঃপর মাননীয় অর্থমন্ত্রী একটি দৈনিকে এ বিষয়ক সাক্ষাৎকার দিলেন, পরেরদিন যথারীতি তার নিজের বক্তব্য তিনি করলেন প্রত্যাখ্যান। এসব তুঘলকির ভেতর আবার দুই মন্ত্রী (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের) আদালত অবমাননা করে ফেলেছেন, তারা দুজনেই প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। এ নিয়েও আদালতপাড়ায় চলছে তর্ক-বিতর্ক। কথাগুলো বলছি প্রতিবেদকের মতো। কিন্তু আমি তো প্রতিবেদক নই। কিছু বিবেচনার শিকার হয়ে উপর্যুক্ত বিষয়ক কিছু আত্মসমালোচনা করতে চেষ্টা করছি মাত্র। এখন প্রশ্ন, এসব বিষয় কেন ঘটলো? সবকিছুরই তো নেপথ্য কারণ থাকে, বিশেষ করে সরকারের পদস্থ ব্যক্তিরা যখন কিছু একটা করেন তখন এখানেও কী তেমন কিছু? না নেহাতই এসব ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ কিংবা অপ্রসঙ্গ?২.অনেকগুলো টাকা লোপাটের বিষয়ে এদেশের অনেকেই খুব কষ্ট পেয়েছেন। কেন? কেউ ধরে নিয়েছেন, ক্ষমাতাসীনদের কারসাজি আছে এর মধ্যে। কেউবা বলেছেন, সরকারের অদক্ষতা; কেউবা প্রশ্ন তুলছেন, গভর্নর দোষী, কেউ বলছেন অর্থমন্ত্রী তো দায় এড়াতে পারেন না ইত্যাদি। আবার এমন প্রশ্নও উঠেছে, কই কেউ তো এ নিয়ে তেমন কিছু বলছে না কারণ কী? মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের প্রতি এ দেশ নিয়ে অনেক শুদ্ধ প্রত্যাশা ও স্বপ্ন আছে। হয়তো প্রত্যক্ষ দল করেন না কিন্তু সমর্থন আছে।যুক্তি ও সত্য ইতিহাস খুঁজলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম থেকে আজকের এ পর্যায় পর্যন্ত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায়ের সত্য প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের চর্চার ভেতর দিয়ে জননিমিত্ত রাষ্ট্রকাঠামো নির্ণয় ও নির্মাণের জন্য দলটির আজন্ম ভূমিকা নিরপেক্ষ চোখে কেউ অস্বীকার করবে না।এসব যখন কোনো সজাগ ও সচেতন ব্যক্তির ভেতর নির্মীয়মান থাকে তখন এই যে অদক্ষতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা উধাও ব্যাপার ওঠে, কিংবা তার দায়িত্বশীল কোনো সদুত্তর মেলে না, পেছনে পেছনে চলে প্রশ্নবোধক বিবিধ কালোছায়া তখন সবকিছু কেন যেন বেসুরো মনে হয়। খুব তুচ্ছতায় বা অনেক ঘটনার মধ্যে ‘দুর্ঘটনা’মানতেও মন সায় দেয় না। কারণ কী? কেন গভর্নর এমন একটি ঘটনা প্রায় চল্লিশ দিন চেপে রেখেছিলেন, বললেন না কেন? সংবাদ সম্মেলনে তার সে উত্তরটা ঠিকঠাক সন্তুষ্ট ঠেকে না, অনেকের কাছে বোধ করি টেকেও না। খুব হাল্কা, খোলামকুচির মতো উড়ে যায় সবকিছু। অর্থমন্ত্রী যা বলেন তাও ঠিক গ্রহণযোগ্যতার পর্যায় পড়ে না। যাক, এসব অর্থনীতির হিসাব-কেতাব; সবার মগজে সবকিছু ধরার কথাও নয়। কিন্তু আদতে কী হলো! উন্নয়নশীল দেশের ভাবমূর্তি, অর্থনীতি বিষয়ক অদক্ষতা যা অন্য দেশকেও এমন কাজ না ঘটার ব্যাপারে সতর্ক করে তুলল। একটা নেগেটিভ উদাহরণ তৈরি করলো।তলিয়ে দেখা হচ্ছে আইটি সেক্টরের অব্যবস্থাপনা। সেটা কারা কীভাবে করবে, জানা যায় না। হ্যাকারদের কী পাওয়া যাবে? এতো বড় একটা কাজে আইটি নিরাপত্তা কীভাবে ঠুনকো হয়, তার মনিটরিংইবা কোথায় ছিল, আর যতোই ছুটির দিন হোক এসব টেকনিক্যাল ও জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় তদারকিতে নিয়োগ ব্যবস্থাপনার মানুষজন কোথায় ছিল? পাসওয়ার্ড হ্যাক হলো, সংবাদও এলো কিন্তু কেউ তা আঁচ করতে পারলো না। এদিকে টাকা কয়েকজনের হাত ঘুরে ক্যাসিনোতে ঢুকে গেছে, দেশ বদলও করে ফেলেছে অথচ কিছুই হলো না! এমন ব্যাংক ব্যবস্থাপনার কোনোটাই কী মেনে নেওয়ার মতো? অর্থমন্ত্রী এরকম বলেছেন, জনসংযোগ ছাড়া আতিউর অন্যদিকে মনোযোগী নন। এটা কবে থেকে তিনি আঁচ করেছেন, তবে তার মন্ত্রণালয় তাকে এভাবে পুষলো কেন? এনবিআরকেইবা পুষছে কেন? এগুলোর সদুত্তর কোথায়?টাকা লোপাটে দেশের নানা স্তরের মানুষের সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে, দ্রবীভূত হচ্ছে পারস্পরিক দ্বেষ ও হিংসা। আমরা আর যাই করি, দেশটাকে নিয়ে যেন ছিনিমিনি না করি। এর আগে হলমার্ক কেলেঙ্কারীর কথা মনে আছে। ডেসটিনির কথাও ভুলে নাই কেউ। এগুলোর কূলকিনারা সম্পর্কে দেশের মানুষ তো এখনও অন্ধকারেই আছে।অনেককিছুই হয়তো মানুষ ভুলে যায়। এই ভোলাটা কী পুঁজি করার মতো কিছু? ভুলের ভেতরেই কী ক্রমশ সবকিছু সহনশীল হয়ে উঠবে? নাকি সত্যিকারের সুরাহার পথ তৈরি হবে।যদি না হয়, তবে সন্দেহ তো অমূলক নয়। বিশেষ করে যে দল এখন ক্ষমতাসীন তাদের হাতে এমন ঘটনাগুলো ক্রমশ একটার পর একটা পেরিয়ে যাক আর বোঝা ভারি হোক সেটা অনেকেই কিন্তু চায় না। ট্র্যান্সপারেন্সী কী অধরা হয়েই রইলো নাকি? নাকি এটিই এখন ধারাবাহিক চলমান সংস্কৃতির অংশ। বিষয়টি প্রশ্নবোধক নয় কী?৩.গ্রীক দার্শনিক প্লেটো তার নগররাষ্ট্রে একজন দার্শনিক খুঁজছিলেন। তিনি ঠিক করেছিলেন দার্শনিকই হবেন রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আমাদের রাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই ভিশনারী, সোজা কথায় বললে ক্ষমতার বিষয়টিও তাকে ঘিরে আবর্তিত, সিদ্ধান্ত গ্রহণও প্রায় ক্ষেত্রেই তার শরণাপন্ন হন হয়তো অনেকেই। তবে তিনি প্লেটোকথিত দার্শনিক কী! আমরা এ সময়ের আধুনিক মানুষ, কর্পোরেট পুঁজির দাস হিসেবে নিরত কর্মরত, তাই বলে দার্শনিক প্রজ্ঞাটুকু রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিসর্জন পাক কেউই তা চাইবে না। কারণ, কে কাকে বাজাবে, বিন্দু বৃত্তকে না বৃত্ত বিন্দুকে সেটি কিন্তু বড় প্রশ্ন। নীতির প্রশ্নে, সততার প্রশ্নে, দায়বোধের প্রশ্নে বর্তমান সরকারপ্রধান তর্কাতীত (যদিও এ প্রশ্ন তোলা সঙ্গ কি-না!) কিন্তু কেন যেন রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ ঠিকমতো সহজপথে চলে না। আইন-শাসন ও বিচার বিভাগে, পরিশুদ্ধ বিবেচনার ঊর্ধ্বে তো কেউ থাকতে পারছেন না। কারণ কী? কালো টাকা, অর্থপাচার, অরাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও অদক্ষ নতুন প্রবণতা সৃষ্টি কোনোটাই কী এক্ষণে সঠিক পথ?সমালোচনা নয়, গুণগত উৎকর্ষই চলতি রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান হওয়া উচিত। একটি সত্য কথা মনে পড়ছে, যখন আওয়ামীলীগ বা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকেন তখন সব থাকে কিন্তু তিনি ক্ষমতায় না থাকলে আমরা সব হারিয়ে ফেলি। কথাটা একজন সংস্কৃতি কর্মীর। শিল্প বলি, সাহিত্য-সংষ্কৃতি, নাটক করা, গান করা, সাম্যবাদের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া কোনটা নয় সবই আমরা ভাবতে পারি কারণ, দেশজন্মের-জাতিজন্মের যে অধ্যায় তার সাথে আওয়ামীলীগেরই পরিপূর্ণ সম্পর্ক। তাই স্বপ্নও দেখতে হয় এই দলকে নিয়ে। কিংবা কেউ যদি বলে এ দল না করে প্রগতিশীল চিন্তাই শুধু লালন করবো তখনও এই দলকে ক্ষমতায় রেখেই করা সম্ভব হয়। কিন্তু বিপরীতপন্থী কেউ ক্ষমতায় থাকলে তখন অনেককিছুই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সুতরাং ওই সংস্কৃতিকর্মীর কথাটা সত্য বলেই মনে হয়।৪.২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের কাজ করেছে অনেক। এই উন্নয়নের সঙ্গে ‘ভালো থাকা’কে যদি যুক্ত করি তাতে সংকট বাড়ে বৈকি। প্রযুক্তি এখন মানুষের হাতে হাতে; শিক্ষা নিচ্ছে অনেক মানুষ, সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত-বেসরকারিভাবে। বাংলা-ইংরেজি-আরবি মাধ্যমে পড়ালেখা চলছে। পড়ালেখার জন্য এখন অনেক প্রতিষ্ঠান গজিয়েছে। কর্ম নিয়ে মানুষ দেশে-বিদেশে যাচ্ছে। যোগাযোগে বেশ কাজ হয়েছে। যাওয়া আসায় সহজতর এখন অনেককিছু, সময় অনেক কমেছে। হু-হু করে মানুষও বাড়ছে। কিন্তু সব মিলে আমাদের পারিবারিক-সামাজিক-রাজনৈতিক বন্ধন ও কৃষ্টি কী এগিয়েছে? মানুষের মানবিক অনুভূতিগুলো কতোটা অকৃত্রিম কিংবা এই সমাজ কী দুর্গম নয়, রাজনীতির সংস্কৃতি তৈরি হওয়া বা সম্মুখপানে এগিয়ে নেওয়া কী সম্ভবপর হয়েছে! এই প্রশ্নের উত্তরটা এখন খুব জরুরি। দেশে আমলাতন্ত্র তো বৃটিশ আমলেরই কাঠামোতে রয়ে গেছে।বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভাগ খুলছে, অবকাঠামো বিনির্মাণে কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে কিন্তু বুদ্ধিমনস্ক মানুষ কোথায়? যদি সরদার ফজলুল করিম খুঁজি তবে কী খুঁজে পাওয়া যাবে? মুহম্মদ হাবিবুর রহমান খুঁজলে পাওয়া যাবে? হয়তো কেউ কারো মতো নয় কিন্তু নিজের মতো করে মানুষ দীক্ষিত হতে পারে চলতি সমাজে কী তা হচ্ছে? প্রশ্নটি রিজার্ভ ব্যাংকে থেকে টাকা চুরির ব্যর্থতা থেকে করছি না। এটি কিন্তু সম্পূরক বিষয় বলেই মনে হয়। কারণ, দক্ষতা চুরি করে তৈরি হয় না বা আলাদা কোনো পরিমণ্ডল থেকে তা গড়েও ওঠে না। এটি একটি সামষ্টিক পরিমণ্ডলের ব্যাপার। এই বিপর্যয়গুলো আমরা বিচ্ছিন্ন করে দেখে কিন্তু সমাধান পাবো না। একে মৌলিক চিন্তাশীলতার অগ্রগতি হিসেবেই দেখতে হবে। দায়িত্ব বলি, সৃষ্টিশীলতা বলি, ভাবমূর্তি বলি সবই চর্চার বিষয়। মানবিক মূল্যবোধ থেকেই তা তৈরি। আইনস্টাইন অংক জানতেন, অন্য বিষয়ের পরীক্ষায় ভালো করেননি; কিন্তু বড় বিজ্ঞানী হয়েছিলেন। সব বিষয়ে পড়ে ভালো ছাত্র হওয়ার চেয়ে স্বাধীন মন নিয়ে আবিষ্কারে উন্মত্ত হলে সে কী পিছিয়ে পড়ে?স্কুল পালিয়ে রবীন্দ্রনাথ হয়তো সবাই হতে পারে না কিন্তু গ্রন্থগত বিদ্যা আহরণের জন্য যে আনন্দ তা তো শিক্ষার্থীর থাকতে হবে। তাই আমাদের শিক্ষা বাড়ছে কিন্তু দক্ষতা বা বোধবুদ্ধিসম্পন্ন শূন্য মানুষ অনেকাংশে বাড়ছে না! দায়িত্ব ও কর্তব্যের উদাসীনতা কী কমছে না? যে কোন প্রতিষ্ঠানের চাকরি কিন্তু শুধু চাকরি নয়, প্রতিষ্ঠানের সাথে দেশ-জাতির উন্নতিও জড়িত। সেটা কী আমাদের সব প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি ও ভাবনায় কাজ করে? কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যখন মেধা ও দায়িত্ব অর্থ দিয়ে কিনে নিচ্ছে, পণ্য করছে তখন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি অপচয় কর্মহীনতা দলাদলি কমছে না। ফলে খাল শুকানোর মতো অফিস-প্রশাসনও শুকিয়ে যাচ্ছে মাথাভারি হচ্ছে, হয়রানি চলছে, জনস্বস্তি বাড়ছে না। আধুনিকায়ন শূন্যতার রশিতে ঝুলছে। বড় বড় আভিজাত্যমার্কা নেমপ্লেট ঝুলছে কিন্তু সেবা নেই।লালফিতার অহঙ্কারে চতুর্দিকে অপচয় আর অস্বস্তি। কথাগুলো একদম সরল ও একমুখো হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অনেকটাই তো সত্য! তবে উন্নতি কাকে বলব? কীভাবে উন্নয়ন হয়, কার উন্নতি দেশের উন্নতি তা বোঝার জন্য এক্ষুণি মূলে হাত দিতে হবে। পরিবর্তনটা মৌলিক, যুগোপযোগি ও ভেতর থেকে হওয়া দরকার। মন্ত্রীরা সাংসদরা আইন প্রণয়ন করেন কিন্তু ক্ষমতার মৌরসীপাট্টা বা জীবনবিলাস কার উদ্দেশে, কেনই বা বেফাঁস ও দায়িত্বহীন কথাবার্তা!আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে পরিবর্তিত প্রায়োগিক ও আধুনিক মূল্যবোধের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই। বিদেশীদের কাছে আর যেন লজ্জায় পড়তে না হয়, অন্তত আমাদের কষ্টার্জিত অর্থটা আমাদের থাক কিংবা এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কানকথা না চলুক, কেউ পুঁজি না করুক দেশটাকে আমরা তো অনেকদূর এগিয়ে নিতে পারি, কর্মনিষ্ঠ তরুণ প্রজন্ম আর ওই দার্শনিক সৎ দেশপ্রেমিক জননেত্রীকে নিয়ে কিন্তু গ্রহণযোগ্য সৎ ও কার্যকর পরামর্শটি তো তিনি বা তারা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পেতেই পারেন নইলে কীসের এতো উপদেষ্টা আর পার্ষদ নিয়োগ!শহীদ ইকবাল : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। shiqbal70@gmail.com সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫
false
ij
একটি আত্মসমর্পণের দলিল ও ব্যাক্তিগত কিছু প্রসঙ্গ। আত্মসমর্পণের দলিল। ১৯৭১ সালের ষোলই ডিসেম্বর। বিকাল ৫টা। রমনা রেসকোর্স স্বাক্ষরিত হয় আত্মসমর্পণের এক দলিল। যে দলিলের পিছনে ছিল- আক্ষরিক অর্থেই এক নদী রক্ত। আজও আমার মনে আছে। ছোট একটি ছইঅলা নৌকা। রোদ। নদীর ঝিকিমিকি জল। ছইয়ের নিচে ক’টা উদ্বিগ্ন মুখ। খিদে পেলে নাবিস্কো বিসকিট। নীল রঙের প্লাসটিকের গ্লাসে পানি। নদীতে ভাসমান লাশ। লাশের ওপর ক’টা কাক। ঠোকরাচ্ছে সে লাশ। আমার মা আমার চোখ ঢেকে দিচ্ছে। ১৯৭১। তখন আমার বয়স চার।’৭১ সালের কথা আমার বিশেষ ভাবে মনে আছে। অথচ ’৭২ বা ’৭৩ সালের কথা সেভাবে মনে নেই। এর কারণ কি? যুদ্ধের বছরটা নিয়ে পরে এত আলোচনা হয়েছে যে-মনে একটা ছবি গেঁথে গেছে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকটায় ঢাকা শহরটা মাংসপোড়া গন্ধ আর কালো ধোঁওয়ায় ঢেকে যাচ্ছিল। আব্বা ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা সে সময় দাদাবাড়ি যেতে সদরঘাট থেকে লঞ্চে উঠতাম। এপ্রিলের শেষের দিকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গিসল কিনা বলতে পারি না-আমরা ছইঅলা ছোট নৌকায় উঠলাম। আমাদের সদরঘাট পৌঁছে দিয়েছিল আমার ছোটমামা। ছোট মামা এখন বিরাট পন্ডিত। অ্যামাজান ডটকমে ছোট মামার বই বিক্রি হয়। অবশ্য ইঞ্জিনীয়ারিং-এর টেক্স। তো মামার সঙ্গে দিন কয়েক আগে একটা ব্যাপারে আমার সামান্য মনমালিন্য হল। পরে আবার ঠিক হয়ে গেল। মামা বলল, কি রে মাইন্ড করছিস নাকি? আমি বললাম, না। সত্যি? পন্ডিতেরা কমবেশি সংশয়ী হয়। আমি বললাম, হ্যাঁ। কারণ হিসেবে বললাম, সেভেনটি ওয়ানে আপনার লাল রঙের একটা ভক্সওয়াগেন ছিল। আপনি আমাদের সদরঘাট পৌঁছে দিয়েছিলেন। ঘাটে পাকিস্থানী আর্মি গিজগিজ করছিল। মামা ইংরেজীতে বললেন, তোর ঐতিহাসিকের মন। মনে মনে বললাম, হবে না কেন- একাত্তরে আমি সদরঘাটে পাকিস্থানী আর্মির ভিড় দেখেছি। নদীতে লাশের ওপর কাকের ঠোকরানি দেখেছি ... ধনাগোদা নদীটা চাঁদপুরে কাছে মেঘনায় পড়েছে। তো, ধনাগোদা পাড়ে আমরা যে লঞ্চঘাটে নামতাম তার নাম নায়ের গাঁও বাজার। আমাদের গ্রামটা ধনাগোদা নদীর তীর থেকে এই মাইল আড়াই পুবে। সে পথে এখন রিক্সা চললেও ২০/২২ বছর আগে নৌকাই ছিল ভরসা। নায়ের গাঁও বাজারের পিছন ছিল খাল। খালের ঘাটে ছিল নৌকার ভিড়। আমাদের গ্রামের নাম বারো গাঁ। বাড়ির নাম পাটারি বাড়ি। আসলে পাটোয়ারি বাড়ি। অনেকেই মনে করে পাটোয়ারিরা হল পাটের কারবারি। আসলে ঘটনা সেরকম নয়। পাটোয়ারিরা ছিল মুঘল আমলের হিসাব রক্ষক। পরে জেনেছি। যাহোক। উঠান ঘেরা টিনের বাড়ি। পিছনে আবার উঠান, অবশ্য ছোট, ঢেঁকি ঘর, লাউমাচা, ক্ষিরা ক্ষেত, গাব গাছ, কালো পানির পানা পুকুর। ঘাটটা তালের গুঁড়ি। ওপাশে আবার খাল। খালে কচুরি পানা। খাল পেরিয়ে ধানের ক্ষেত। আমার দাদা ফজর আলী পাটারির তিন কানি ধানের ক্ষেত। চাষবাস করেন আমার মেজ চাচা। মেজ চাচার নাম কেরামত আলী পাটারি। আমার বাপ-চাচারা সবাই চিটাগাঙে পড়াশোনা করেছেন। অবশ্য কেরামত চাচার ভাগ্যে বিদ্যার্জন জোটেনি। কেরামত চাচা চিটাগাঙে পড়তে গেলে ফজর আলী পাটারির কানি কানি সম্পদ রক্ষা করবে কে? এক বিকেলে উঠানে পিঁড়ির ওপর বসে আছি। জেঠি আম্মা (কেরামত চাচার স্ত্রী) মাছ কুটছেন। মাঝারি সাইজের বোয়াল। বসে থেকে আমি মাছ কুটা দেখছি। বেয়ালের পেট থেকে বেরুল একটা ছোট লালচে সিঙ মাছ। আশ্চর্য! আমি অবাক হঠাৎ খালপাড় থেকে কেরামত চাচার চিৎকার। হেরা আইসে, তোরা বাইর হ।হেরা আইসে, তোরা বাইর হ। সবাই বুঝল পাকিস্থানী আর্মি। চুলায় আগুন ছিল। তাতে পানি ঢেলে কে কোন্ দিকে লুকাল। আমি পুকুরপাড়ে দৌড়ে গেলাম। দলবেধে কারা যেন আসছে। অনেক লোক। খেয়াল করে দেখি। বড় চাচা, মেজো চাচা, চাচী, তাদের ছেলেমেয়ে। সবাই চট্টগ্রাম থাকে। সেখান থেকেই এসেছে। পাটারি বাড়িতে হুল্লোড় পড়ে গেল। যেন যুদ্ধ নয় ঈদ! আমার ঈদের আনন্দ তখন আরও গাঢ়। কেননা, ততদিনে আমার পুব পাড়ার এক তরুনের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে। আমি তাকে রেখা কাকা বলে ডাকি। রেখা কাকা আমায় ভীষন আদর করত। কোনও কোনও বিকেলে রেখা কাকার সঙ্গে চলে যেতাম পুব পাড়ার বিশাল ফাঁকা মাঠে। বিশাল সেই মাঠের ওপরের আকাশের যে কী রং ছিল আজ আর তা আমার মনে নেই। রেখা কাকার হাতে নারকেলের মালা। তাতে কালো রঙের শক্ত সূতা জড়ানো। আকাশে প্রকান্ড এক ঘুড়ি। সেই বোঁ বোঁ আওয়াজ আজও শুনতে পাই। সময়টা যুদ্ধের। অথচ- পাটরি বাড়ি ভরতি লোক। অনেকটা আকস্মিক সম্মেলন। সময় সুখেই কাটছিল। তবে পাকবাহিনীর আক্রমনের আশঙ্কাও ছিল। মোহনপুরে নাকি বাজার পুড়িয়ে দিয়েছে। আশ্বিনপুরের এক বাড়িরই অষ্টাশি জনকে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরেছে। উঠানে পাটি পেতে সন্ধ্যা বেলায় সবাই বসতাম । স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতাম। কিংবা বি বি সি। কেরামত চাচা শান্তিকমিটির মেম্বার হয়েছেন। বাড়ির সুখশান্তি বজায় রাখার জন্যই নাকি। খুব বেশি আপত্তি ওঠেনি বলেই মনে হল। মুক্তি যোদ্ধারা গভীর রাত্রে আসত। নৌকায়। আমার মায়ের কাছে আসত। আমার মা ছিলেন আলোকিত সত্তা। ৬১ সালে ইডেন কলেজে আই এ পড়ার সময় নাটক করত মা। অপরকে আপন করে নিতে পারত মা মুহূর্তেই। মুক্তিযোদ্ধারা সব আমার ফুপাত ভাই ও তাদের গ্রামের বন্ধুরা। সবাই আমার আম্মার ভীষন ভক্ত। আমার মা আর জেটিম্মা ওদের খাওয়াত। মায়ের সঙ্গে ফিসফিস করে কী সব কথা হত মুক্তিযোদ্ধাদের । অন্যরা তখন ঘুমাত। বিশেষ করে পুরুষেরা। কেরামত চাচা শান্তি কমিটির মেম্বার হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারা কেরামত চাচাকে ধরে নিয়ে যেতে চায়। জবাই করবে। পরে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। মায়া বশত ছেড়ে দিয়েছে। আপন মামাকে জবাই করতে পারেনি ভাগ্নেরা! জুন মাসে আমার এক চাচাতো বোন হল। সংগ্রামের বছর বলেই সবাই উৎসাহভরে সে মেয়ের নাম রাখল ‘সংগ্রামী’। ২০০০ সাল। সংগ্রামী এফিডেভিড করে নাম বদলে ফেললো। সংগ্রামী নামটা নাকি চলে না। মানে, ভালো শোনায় না। সংগ্রামীর ভালো নাম ছিল দিলশাদ জাহান। ওই নামই চূড়ান্ত হল। পরের বছরই বি এন পি -জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। আমার ৭১ সালের কথা বিশেষ ভাবে মনে আছে। অথচ ’৭২ বা ’৭৩ সালের কথা সেভাবে মনে নেই।এর কারণ কি? যুদ্ধের বছরটা নিয়ে পরে এত আলোচনা হয়েছে যে-মনে একটা ছবি গেঁথে গেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি আমরা ঢাকা ফিরে আসি। ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তের কারণ জানি না। রেখা কাকা আমাদের সঙ্গে এল। আমাদের খুশি দেখে কে। এত গল্প জানত রেখা কাকা। সদরঘাট থেকে ঘোড়াগাড়ি করে শান্তিনগর ফেরাটা মনে আছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পশ্চিমে আমাদের বাড়ি। বিপদজনক এলাকা। আমরা বাসা বদলালাম। সেই বাড়িটা ছিল এখনকার বেলি রোডের একটা গলিতে। সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের একেবারে গা ঘেঁষে। এক তলা বাড়ি। বেশ বড় বড় রুম। আর কেমন নিঝুম। কেমন সোঁদা সোঁদা গন্ধ। দিনের বেলায় কেমন অন্ধকার অন্ধকার। মনে আছে, আমরা ভাইবোনেরা পানিতে ডানো গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে খেতাম। মেঝেতে শুতাম। চিৎকার চেঁচামেচি একেবারে নিষেধ। তারপরও রেখা কাকা ফিসফিস করে রুপকথার গল্প শোনাত। অনেক পরে জেনেছি। আমাদের বাড়ির পাশেই থাকতেন সেলিনা পারভীন। ষাটের দশকের প্রথিতযশা লেখিকা। বুদ্ধিজীবি বলেই খুন করতে মধ্য-ডিসেম্বরে আর্মিরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। রাতে। আমি হয়তো ঘুমিয়ে ছিলাম ... তারপর রায়ের বাজার বধ্যভূমি ... একরাতের কথা মনে আছে। মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে আছি। কেমন অন্ধকার। আর গাঢ় নির্জনতা। তখনকার ডিসেম্বরের শীত। অনেকক্ষন দরজায় ঠক ঠকঠক ঠক শব্দ। আমরা মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। ওরা দরজা ভাঙ্গেনি। হয়তো মানুষ খুন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর। আজও মনে আছে। দিনটি ছিল রোদেলা । শীত শীত। আর নির্জন। দুপুর তিনটের দিকে শুনলাম: জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা ................................... আম্মার মুখটা হাসিতে ভরে গেল। আব্বারও। আমরা দরজার বাইরে এসে দাঁড়ালাম। বেইলি রোডের রাস্তায় মোটরসাইকেলের মিছিল। ওরাই চিৎকার করছে। শান্তিরগর মোড় থেকেও ভেসে আসছিল জয়বাংলা ধ্বনি। আব্বা রেখা কাকাকে বললেন, যা তো, দেইখা আয় কী হইচে। মিনিট দশেক পর রেখা কাকা লাফাতে লাফাতে ফিরে এসে বলল, দেশ স্বাধীন হইছে দেশ স্বাধীন হইছে দেশ স্বাধীন হইছে দেশ স্বাধীন হইছে দেশ স্বাধীন হইছে দেশ স্বাধীন হইছে ... আমি তখন কী বুঝেছিলাম মনে নেই। আমি তো স্বাধীনই ছিলাম। নৌকা করে দাদাবাড়ি বেড়িয়ে এলাম। আমি তখনও জানিনি আর ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে একটি আত্মসমর্পনের দলিল, যে দলিলের পিছরে রয়েছে আক্ষরিক অর্থেই এক নদী রক্ত। তখনও জানিনি-আজ জেনেছি- At the time of surrender only a few countries had provided diplomatic recognition to the new nation. Bangladesh sought admission in the UN with most voting in its favor, but China vetoed this as Pakistan was its key ally. However, the United States was one of the last nations to accord Bangladesh recognition. To ensure a smooth transition, in 1972 the Simla Agreement was signed between India and Pakistan. The treaty ensured that Pakistan recognized the independence of Bangladesh in exchange for the return of the Pakistani PoWs. India treated all the PoWs in strict accordance with the Geneva Convention, rule 1925[citations. It released more than 90,000 Pakistani PoWs in five months. সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৩
false
mk
জয়কে অপহরণের চেষ্টা!!! সংসদ ভবন, ৮ মার্চ, ২০১৫ (বাসস) : সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অপহরণ চেষ্টার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন।আজ সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যরা এ ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানান।আলোচনা শেষে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এ ব্যাপারে দেয়া রায় পর্যালোচনা করে এর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নারী আত্মঘাতির মাধ্যমে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সংসদ থেকে সংগ্রহ করে তদন্ত করারও পরামর্শ দেন স্পিকার।এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তারা বলেন, ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তরা স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পর হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে বিএনপি’র হাইকমান্ড জড়িত। এই হাইকমান্ড কারা তা জানতে আরো তদন্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আমেরিকা যাওয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।তারা বলেন, হত্যা, ক্যু এবং ষড়যন্ত্র জিয়াউর রহমাহের সময় থেকে শুরু হয়েছে, তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দেশের প্রতিটি হত্যাকান্ডের সাথে এই পরিবারটি জড়িত।তারা বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্রই নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের উত্তরসূরি। সে একজন প্রতিভাবান আইটি বিশেষজ্ঞ, এদেশের সম্পদ। তার হাত ধরে শিগগিরই দেশের আইটি সেক্টর বিশ্বের অনেক দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাও জয়ের মাধ্যমে পাওয়া। তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশের মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ষড়যন্ত্র হয়েছে জাতিকে নেতৃত্ব ও মেধাশূন্য করার। কিন্তু খুনিরা সেদিন ব্যর্থ হয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই ২১ আগস্টসহ ২১ বার হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে।তিনি বলেন, আমেরিকায় সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্রের সাথে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত। এ ব্যাপারে এদেশেও একটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। মুখোশ উন্মোচন শুরু হয়েছে, আরো উন্মোচিত হবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হতেই হবে।আলোচনার সূত্রপাত করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করে বড় ধরনের ক্ষতির ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একজন এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ প্রদানে জড়িত থাকার দায়ে একজন বাংলাদেশীসহ দু’জনকে কারাদ- দিয়েছে। এদের মধ্যে একজন হলেন- রিজভী আহমেদ সিজার ।সে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। অপর ব্যক্তি হলেন- মার্কিন নাগরিক জোহান থালের। আদালত সিজারকে ৪২ মাস এবং ঘুষদানে মধ্যস্থতাকারী মার্কিন নাগরিক জোহান থালেরকে ৩০ মাসের কারাদন্ড দেয়।তিনি বলেন, তারা উভয়েই আদালতের কাছে নিজেদের অপরাধ ও ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেছে। আদালতের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতেই অভিযুক্তরা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনার কথা জানায়।রিজভী আদালতে দেয়া তার স্বীকারোক্তিতে জানায়, বিএনপি’র উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ৫ লাখ ডলার ঘুষের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। থালের ও সিজার উভয়েই স্বীকার করে যে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করে ২০১২ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পর্কে এফবিআই’র কাছে থাকা তথ্য পাচার করে দেয়ার জন্য এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সঙ্গে তারা ৫ লাখ ডলারে চুক্তিবদ্ধ হন।এই চুক্তির আওতায় এফবিআই’র কাছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান ও ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর অর্থপাচারের যেসব তথ্য রয়েছে তাও সরিয়ে ফেলার প্রতিশ্রুতি দেয় ওই এজেন্ট। ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে থালের ও লাস্টিকের মধ্যে ম্যাসেজ বিনিময়ও চলে। এফবিআই’র এই বিশেষ এজেন্টকে তারা প্রাথমিকভাবে ৪০ হাজার ডলার ঘুষ দেন এবং পুরো কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে আরও ৩০ হাজার ডলার করে মোট ৫ লাখ ডলার দেয়ার প্রতিশশ্রুতি দেন।দেশের সুশীল সমাজ শয়তানের পক্ষে কথা বলছেন উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিবেক যারা বিক্রি করে শয়তানের কাছে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন, জয়ই জয়ী হবেন।পয়েন্ট অর্ডারে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন- সরকারি দলের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আবদুল মতিন খসরু, এডভোকেট তারানা হালিম, জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান ও স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী।
false
ij
উদিত সূর্যের দেবতা মারদুক এবং তার পীঠস্থান জিগুরাট জিগুরাট। প্রাচীন ইরান ও ইরাকের প্রধান দেবতার বৃহদাকার উপাসনালয়। কয়েকটি ধাপ সম্বলিত, সিঁড়িযুক্ত প্রায় দেড়শ থেকে তিনশ ফুট উঁচু জিগুরাট এর আকার ও গঠন আজও মানুষের বিস্ময়ের উদ্রেক করে। এ অব্দি ৩২টি জিগুরাট-এর কথা জানা গেছে; এর মধ্যে ২৮টি ইরাকে এবং ৪টি ইরানে অবস্থিত। অনেকে মধ্য আমেরিকার মায়া-অ্যাজটেক জিগুরাট-এর কথা বলে। ওসব আসলে জিগুরাট নয়, অন্যকিছু। কেননা, জিগুরাট শব্দটি আককাদিয় ভাষার শব্দ। এর অর্থ, উঁচু স্থানের নির্মান। জিগুরাট নির্মিত হয়েছিল সুপ্রাচীন ব্যাবিলনিয় সভ্যতায় । ব্যাবিলনিয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল প্রাচীন মধ্য ও দক্ষিণ ইরাকের ব্যাবিলন নগরকে কেন্দ্র করে । ব্যাবিলন নগরের দক্ষিণে ছিল উর; সেই নগরটিও ছিল ব্যাবিলনিয় সভ্যতার অর্ন্তগত । ধ্বংসপ্রাপ্ত সুমের ও আককাদ সভ্যতার ওপর সম্রাট হাম্মুরাবি (খ্রিস্টপূর্ব ১৬৯৬-১৬৫৪) ব্যাবিলনিয় সভ্যতার ভিতটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেসময় রাষ্ট্রীয়কার্যে লিখিত ভাষারুপে ব্যবহৃত হত সেমিটিক আককাদিয় ভাষা; তবে ব্যাবিলনের ধর্মীয়জীবনের ভাষা ছিল সুমেরিয়। সুমেরিয় ভাষা কথ্য ভাষা ছিল না, মানে যখন সম্রাট হাম্মুরাবি ব্যাবিলনিয় সভ্যতার ভিতটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই সময়। ব্যাবিলনিয়ার ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিল সুমের ও আক্কাদ । ইরাকের মানচিত্র। বাগদাদ। এখানেই ছিল প্রাচীন ব্যাবিলন নগর। সুপ্রাচীন ব্যাবিলনিয়ায় তখনও একেশ্বরবাদ গড়ে ওঠেনি। (একেশ্বরবাদী আব্রাহাম এর জন্ম হয়েছিল উর নগরে; ওই প্রাচীন পুরুষের সময়কাল ধরা হয় ২০০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব। আমি আরও আগের কথা বলছি।) সুপ্রাচীন ব্যাবিলনিয়ায় ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যটি ছিল বহুঈশ্বরবাদী। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেত সে ধর্ম, যে কারণে উপসনালয়গুলি রাষ্ট্রীয় উদ্যেগেই গড়ে উঠত । আর, ব্যাক্তিজীবনে ছিল যাদুটোনা আর তুকতাক । নগরে ছিল নগর দেবতা। তবে দেবতাদের মর্যাদা সমান ছিল না, কেননা, নগরের প্রভাবশালী পুরুষদের মর্যাদা সমান ছিল না। ব্যাবিলন। দজলা (তাইগ্রিস নদী) সুপ্রাচীন ব্যাবিলনিয়ার প্রধান দেবতা ছিলেন মারদুক। এবং তার পুত্র নাবু। স্বভাবতই পুত্র নাবুর স্থান ছিল পিতা মারদুক-এক পরেই, যেমন সম্রাটের পরেই ছিল প্রধান পুরোহিতের দোদর্ন্ড প্রতাপ। ব্যাবিলনিয়ার অসংখ্য নগরে ছিল এদের উপসনালয়, বহু নগরের রাজনৈতিক উত্থানপতনের পিছনে ছিল ভিন্ন মতালম্বীদের সংঘাত। কেননা, একেক সম্প্রদায় বিচিত্র উপায়ে পিতাপুত্রের আরাধনা করত এবং একেক সম্প্রদায় মনে করত যে তাদের উপাসনা পদ্ধতিই সঠিক। প্রধান দেবতা মারদুক। প্রধান দেবতা মারদুক কে নিয়ে রাজনীতিও কম হয়নি কিন্তু। সম্রাট আলেকজান্দার সৈন্যবাহিনী নিয়ে ৩৩১খ্রিস্টপূর্বের অক্টোবর মাসে ব্যাবিলন নগরে প্রবেশ করেন। ব্যাবিলনবাসীকে খুশি করার গূঢ় উদ্দেশ্যেই তিনি মারদুককে ঈশ্বর মেনেছিলেন! মিশরেও একই কাজ করেছিলেন সেই যুদ্ধবাজটি! মারদুক- এর প্রতীক প্রধান দেবতা মারদুকের অন্যনাম বেল (বা বাল) মারদুক। এর মানে প্রভূ মারদুক। তিনিই ছিলেন ব্যাবিলন নগরের প্রধান দেবতা। অন্যান্য দেবতাদের উপাসনালয় থাকলেও কেবল তারই রয়েছে জিগুরাট। জিগুরাট শব্দটি আককাদিয় ভাষার শব্দ। এর অর্থ, উঁচু স্থানের নির্মান। ব্যাবিলন নগরে জিগুরাট নির্মিত হয়েছিল নগরের মাঝখানে। সাতটি ধাপ, ধীরে ধীরে উঠে গেছে, মাঝখানে সিঁড়ি, উঁচুতে ওঠার জন্য। লোকে বলত, এসগালিয়া। এই শব্দটি অবশ্য সুমেরিয়; অর্থ, উপসনালয়। তখন বলেছি, ব্যাবিলনিয়ার ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিল সুমের ও আক্কাদ । যা হোক। ব্যাবিলনবাসীর ধারণা ছিল জিগুরাট নির্মান করেছেন স্বয়ং দেবতা। একেক স¤প্রদায় অবশ্যি ঘটনাটি ব্যাখ্যা করত একেকভাবে। মারদুক এর ড্রাগন সুপ্রাচীন ব্যাবিলনিয়ায় প্রজ্ঞার দেবতা ছিলেন য়েয়া: তারই ছেলে মারদুক । অত্র অঞ্চলে কী ভাবে যেন ছড়িয়ে পড়েছিল: মারদুক উদিত সূর্যের দেবতা । তা কীভাবে তিনি কৌলিন্য লাভ করলেন? কথিত আছে দুরাত্মা টিয়ামাৎ আক্রমন করেছিল ব্যাবিলনিয়ার প্রাচীন দেবতাদের, মারদুক সেই নারীকে পরাজিত করেছিলেন। দুরাত্মা টিয়ামাৎ তাহলে নারী? স্বাভাবিক। তখন নারীর ক্ষমতা লোপ পাচ্ছিল, কৃষির উদবৃত্ত থেকে গড়ে উঠছিল নগর, নারীকে ভয় পাচ্ছে পুরুষতন্ত্র ...নারীকে বর্ণহীন করার চেষ্টা চলছে .. যা হোক। মারদুক সেই নারীকে পরাজিত করে অর্জন করেন শ্রেষ্ঠ দেবতার স্থান । এই শ্রেষ্ঠত্ব আসলে আশেপাশের নগরের তুলনায় ব্যাবিলন নগরেই শ্রেষ্ঠত্ব। উদিত সূর্যের দেবতা ছেলের নামটি বলা হয়েছে আগেই। ছেলে ত আর আকাশ থেকে পড়েনি; কাজে কাজেই স্ত্রীর নাম, সারপানিতু। উদিত সূর্যের দেবতার সৌভাগ্য সংখ্যা ১০; গ্রহ, মঙ্গল। রং? সম্ভবত লাল। কেননা, অন্যএক সূত্রে জেনেছি মঙ্গল-এর রং লাল। উদিত সূর্যের দেবতা মারদুক এর পীঠস্থান জিগুরাট অনেক অনেক পরে মারদুককে মনে করা হল ইউফ্রেতিস-টাইগ্রিস উপত্যকার সাম্রাজ্যের ভাগ্য নির্ধারণকারী; ...মানে, ব্যাবিলন কে শাসন করবে-সেটি নির্ভর করে মারদুকের ইচ্ছায় অনিচ্ছার ওপর । আরও অনেক কাল পরে মনে করা হল বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং মারদুক । মানবসভ্যতা বহুদেবোপাসনা থেকে একেশ্বরবাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পরবর্তীকালে হিব্রুভাষীদের ইয়াওয়ের (হিব্রু ঈশ্বর) ধারনার পিছনে কার্যত সক্রিয় ছিল ব্যাবিলনের উদিত সূর্যের মারদুক দেবতা। প্রাচীন মিশরে যে সূর্যদেব -এর উপাসনার হত তা সেই একই ধারণার বিস্তার মাত্র; একেশ্বরবাদী মোজেজ যথাসময়ে গ্রহন করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে একেশ্বরবাদ সভ্যতার একটি অধ্যায় মাত্র, চূড়ান্ত কোনও কিছু নয়; অস্টাদশ শতকে সভ্যতা একেশ্বরবাদ থেকে বাঁক নিয়ে নিরেশ্বরবাদের দিকে চলেছে বলেই বোধ হয়... ব্যাবিলন নগরে বিশুদ্ধ স্বর্নে নির্মিত মারদুকের একটি ভাস্কর্য ছিল । এছাড়াও আরও অনেক অলংকৃত মূর্তি ছিল তার। দেবতার সোনার মূর্তি? ব্যাবিলনবাসী তাহলে সচ্ছল ও ধনী ছিল? তা কি করে হয়, স্বচ্ছল ও ধনী ছিল কেবল জনসংখ্যার ৫% । বাদবাকিরা? শোষিত শ্রমজীবি। তাদের নিস্তেজ চেতনায় পুরোহিতগনের দ্বারা সচেতনভাবে পরকালের স্বপ্ন সঞ্চারিত হচ্ছিল। ‘তোমরা উদিত সূর্যের দেবতা এবং সম্রাটগনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিও না ... কেননা, সম্রাটগনের ভোগবিলাস এবং কর্তৃত্ব উদিত সূর্যের দেবতার ইচ্ছায় অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল ।’ যাক। ব্যাবিলনিয় নববর্ষে মারদুককে বহন করে নগর প্রদক্ষিণ করত ব্যাবিলনবাসী । জিগুরাট-এর নির্মাণ শ্রমিকেরাও নিশ্চয়ই উদিত সূর্যের দেবতার সে আনন্দযজ্ঞে যোগ দিত। উৎসবে ডুবে থেকে ভুলে থাকত চিরব্যথার ক্ষুধা-বাস্তবতা! উদিত সূর্যের দেবতার প্রভাব ব্যাবিলনবাসীর মনে ছিল তীব্র হিপনোটিক; যে কারণে উদিত সূর্যের দেবতার আসন ব্যাবিলনবাসীর হৃদয়ে ছিল সুগভীর। ১৫৯৫ খ্রিস্টপূর্বে হিট্টি সম্রাট প্রথম মুরসিলিস (হিট্টি সাম্রাজ্যটি ছিল ব্যাবিলনের উত্তর-পশ্চিমে) ব্যাবিলন আক্রমন করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান ; তারপর তিনি ব্যাবিলনবাসীর মানসিক শক্তি ধ্বংস করার জন্যই দেবতা মারডুকের স্বর্ননির্মিত মূর্তিটি নিয়ে যান। মূর্তিটি কাসিতরা উদ্ধার করে পুনরায় ব্যাবিলনে স্থাপন করে ব্যাবিলনবাসীর মন জয় করে নেয় । তো, কারা কাসিত? কাসিতরা ছিল প্রাচীন পারস্যের একটি গোত্র। ব্যাবিলন জয় করে তারা ৪৫০ বছর শাসন করেছিল। কাসিত সভ্যতার সময়কাল: ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ । এ কারণেই আমি বলছিলাম উদিত সূর্যের দেবতার আসন ব্যাবিলনবাসীর হৃদয়ে ছিল সুগভীর। কাসিতরাও জিগুরাট নির্মান করেছিল। কাসিতদের রাজধানী ছিল দুর কুরিগালজু। জায়গাটা ব্যাবিলনের কাছেই। দুর কুরিগালজু। এবার জিগুরাট প্রসঙ্গে আসি। বলেছি। এ অব্দি ৩২টি জিগুরাট-এর কথা জানা গেছে; এর মধ্যে ২৮টি ইরাকে এবং ৪টি ইরানে অবস্থিত। প্রাচীন ব্যাবিলনিয়ার যে কোনও নগরে জিগুরাটই ছিল সবচে বড় ধাপবিশিস্ট বিশাল কাঠামো। একেবারে শীর্ষে উদিত সূর্যের দেবতার উপাসনালয়। নগরে কেউ এলে প্রথমেই তার চোখের দৃষ্টি যেত জিগুরাটের দিকে। কাজেই সেই বিশালাকার স্থাপনাটি কেবল ধর্মস্থানই নয় নগরের গৌরবের প্রতীকও বটে। অনেক অনেক দূর থেকে দেখা যেত জিগুরাট। যেটির নির্মানের বিশালত্ব আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে। ব্যাবিলনিয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট হাম্মুরাবির (খ্রিস্টপূব১৬৯৬-১৬৫৪) কথা আগেই উল্লেখ করেছি। তার সময়ে জিগুরাটের উচ্চতা ছিল প্রায় ১৫০ ফুট। পরবর্তী সময়ে নির্মিত জিগুরাটগুলির উচ্চতা দ্বিগুন হয়ে উঠতে থাকে, অর্থাৎ প্রায় ৩০০ ফুট। মনে রাখতে হবে। জিগুরাট কেবল ব্যাবিলন নগরেই নির্মিত হয়নি, অন্যান্য নগরেও নির্মিত হয়েছে। যেমন উর নগরের জিগুরাট বিখ্যাত। উর নগরের এক রাজার নাম ছিল উর-নামমু। সময়কাল? ২১১২-২০৯৫ খ্রিস্টপূর্ব। সম্রাট উর-নামমু-এর আমলেই প্রথম জিগুরাট গড়ে উঠছিল। সেসব জিগুরাট ছিল তিন ধাপ বিশিষ্ট। পরে অবশ্য জিগুরাটগুলি হয়ে ওঠে সাত ধাপের। প্রথম ধাপের উচ্চতা ১১০ ফুট উঁচু । তারপর ওপরের দিকে উচ্চতা কমে গেছে। যেমন সপ্তম ধাপ-এর উচ্চতা, ৫০ ফুট। উর। এখন প্রশ্ন এই, উঁচু করে কেন নির্মিত হত জিগুরাট? আকাশ ছোঁওয়ার জন্য। কেননা, আকাশে উদিত সূর্যের দেবতা বাস। মারদুকের যে মূর্তিটি দেখি, সে তো উদিত সূর্যের দেবতা প্রতীক। দেবতার যত কাছে যাওয়া যায় তত মঙ্গল নয় কি? তবে মাটিতেও উদিত সূর্যের দেবতার আরাধনা করা যায়; তবে আকাশ বলে কথা। এ বিষয়ে লালনের একটা তির্যক গান আছে- কেন জিজ্ঞাসিলে খোদার কথা দেখায় আশমানে? এমন উদ্ভট ধারণার সূত্রপাত তাহলে উর নগরের সম্রাট উর-নামমু-এর আমলেই এবং যে ধারনাটি পরে মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। যাক। মেঘবৃষ্টির পিছনের কারণ না ভেবে তখনকার লোকে এমনটাই ভাবত। যা হোক। জিগুরাট নির্মানের প্রধান উপকরণ ছিল পায়ে দলা কাদা । বাইরের দিকটা হত ইটের। ওপরে যাওয়ার জন্য চওড়া সিঁড়ি উঠে গেছে। সিঁড়ি ৩০ ফুট চওড়া হত। নিচে পুরোহিতের বাসস্থান, আর ছোট ছোট কোঠা। শষ্যভান্ডার। ব্যাবিলনের হিপনোটিক জনগন উদিত সূর্যের দেবতাকে অর্ঘ্য দিত। সেসব তো পুরোহিতের ভোগেই লাগত। আর, জিগুরাট নির্মাণশ্রমিক? শ্রমসাধ্য জিগুরাট নির্মানকালে শ্রমিকের মৃত্যু যে হত না তা নয়, উপরোন্ত তারা ন্যয্য পাওনাও বোধহয় পেত না। এসব নিয়ে তৎকালে কে আর ভাবত। এতকাল পরে আমরাই ভাবি না! বিদ্রোহ করলে তো নরকবাস। উর এর জিগুরাট ব্যাবিলন নগরের জিগুরাট জিগুরাট এর মডেল ওপর থেকে জিগুরাট এর মডেল সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:১৪
false
fe
দেশ কি জরুরি অবস্থার দিকে এগুচ্ছে_ দেশ কি জরুরি অবস্থার দিকে এগুচ্ছে?ফকির ইলিয়াস==========================================ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস ভ্রমণ এলার্ট জারি করেছে মার্কিন নাগরিকদের জন্য। বাংলাদেশ সফরের বেলায় এই এলার্ট। বলা হয়েছে ৭ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত এই এলার্ট বলবৎ থাকবে। ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দূতাবাসের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক থাকতে পারে। তাই মার্কিন নাগরিকদের ঢাকা সফরের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এটা মার্কিন দূতাবাসের রুটিন ওয়ার্ক। যে কোনো কঠিন সময় এলেই দূতাবাস সেই রাষ্ট্র সম্পর্কে তার নাগরিকদের আগাম সতর্কবার্তা জানায়। বাংলাদেশ আবারো সেই তালিকায়Ñ তা দেখে মর্মাহত না হয়ে উপায় নেই।কী হচ্ছে বাংলাদেশে? দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, বিরোধী দলের অবরোধে গাড়িতে আগুন এবং ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন- ‘লঞ্চ আর ফেরি ডুবিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এই তথ্য আমাদের কাছে আছে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে কিছু লুকিয়ে রাখা যায় না।’ কথা হচ্ছে, এসব জানার পরও দেশের কর্ণধাররা বিহিত ব্যবস্থা করছেন না কেন? বাংলাদেশে এখন অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ‘সমঝোতা হলে সব কিছুই সম্ভব।’ বিরোধী দল মনোনয়নপত্র দাখিল প্রক্রিয়ায় না আসায় তফসিল পরিবর্তনের কোনো সুযোগ রয়েছে কিনা- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সিইসি একথা বলেন। জনগণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশায় আছে- মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘আমি এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, দুদলই এগিয়ে আসেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেন। জনগণকে প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দিন।’ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দুই প্রধান দল সমঝোতায় আসেনি। দেশের ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলার মতো ঘটনা প্রমাণ করছে, এই দেশে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে বিঘিœত করাই একটি মহলের অন্যতম উদ্দেশ্য। এরা কারা। কী তাদের উদ্দেশ্য- তা সরকারের অজনা নয়। বাংলাদেশে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হোক, তা চাইছেন বিদেশের বন্ধুরাও।জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ফার্নান্দেজ তারানকো ৬ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসার কথা রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ৪ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করেছেন। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক হবে কিনা- তার কোনো হিসাব কিছুই বলা যাচ্ছে না। দেশের রাজনীতিতে আরেক খেলোয়াড় হয়ে ভানুমতির খেল দেখাচ্ছেন প্রাক্তন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন- তিনি নির্বাচন করবেন না। কেন করবেন না এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা তার নেই। অথচ তিনি নির্বাচনকালীন সরকারে তার দলের মন্ত্রী-উপদেষ্টা সবই দিয়েছেন। ওরা এখনো পদত্যাগও করেননি। এরশাদ বলছেন, তার দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন এরশাদ মত পাল্টাবেন। ১৩ ডিসেম্বর তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না।সংবাদ সম্মেলন করে এরশাদ নিখোঁজ হয়ে গেছেন, এমন খবরও এসেছে মিডিয়ায়। একটা কথা বলা দরকার, এরশাদ এখন তার নিজ দলেই অনেকটা আগন্তুকের মতো। কারণ এরশাদের অন্যতম খলিফা কাজী জাফর আহমদ এখন খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠভাজন হবার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি একটি দলও গঠন করেছেন। জাতীয় পার্টিকে ভাঙার কাজটি সফলভাবেই করতে পেরেছে বিএনপি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এরশাদ কি নির্বাচন বর্জন করে টিকে থাকতে পারবেন? না পারবেন না। কারণ তার ওপর অনেক খড়গ এখনো ঝুলে আছে। অমীমাংসিত রয়ে গেছে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর দায়ের করা সেই মামলাটি। যে মামলাটিতে এরশাদের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিষয়টি ছিল। তার বিরুদ্ধে যে মামলাটি দায়ের করা হয়, তা হচ্ছে- মতিঝিল থানা : ডাইরি নং- ৭২৬ তাং-১৩/১২/৯০ ইং। মামলাটি দায়ের করেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এরশাদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান অভিযোগটি ছিলÑ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল। স্বৈরাচার এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে সামরিক আইন জারি করে রাখেন চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। তারপর প্রহসনমূলক নির্বাচনের আশ্রয় নিয়ে তার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর আনীত বিলের সাহায্যে অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করে নেন। এরশাদ কোন পথ বেছে নেবেন তা দেখার জন্য আমাদের ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এর মাঝে দেশে অন্যান্য ধারাবাহিক কাজগুলো হবে কিনা- তা নিয়েই কথা উঠছে। অন্যতম যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগে কার্যকর করা হবে কিনা- তা এখনো স্পষ্ট নয়।দেশে প্রতিদিন গণহত্যা হচ্ছে। অবরোধের নামে মানুষ মারা হচ্ছে। অবরোধ দীর্ঘতর হচ্ছে। অন্যদিকে সংবিধান রক্ষার নামে একতরফা নির্বাচনের দিকেই এগুচ্ছে সরকার। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিগৃহীত হচ্ছেন। গোলাম রব্বানী কিংবা তানভীর ইমামের মতো নেতারা নাজেহাল হয়েছেন। কারো বাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। কেউ আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। কথা হচ্ছে, তাহলে তো আওয়ামী লীগের ভেতরেই ‘চেইন অব কমান্ড’ কাজ করছে না। বড় দলে বহুমত থাকবে এমনটি বলে নির্বাচন নিয়েও দলীয়-অভ্যন্তরীণ তেলেসমাতি হবে, আর মানুষ তা বুঝবে না? মানুষকে কি এতোই বোকা ভাবছেন রাজনীতিকরা?একটা ছোট্ট সংবাদ আমরা আবারো পড়তে পারি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খেটে খাওয়া একদল দিনমজুর স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর দিনমজুররা গুলশান-বনানী এলাকায় মিছিল করেন। গেলো মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তারা একটি মিছিল নিয়ে রওনা হন। পুলিশ দিনমজুরদের খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে দেয়নি এবং তাদের স্মারকলিপিও গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। মানুষ নিরূপায়। এই অবস্থায় দেশের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন আসছে। দেশ রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। দেখা যাচ্ছে, পুলিশ- র‌্যাবের ওপরও চড়াও হচ্ছে হামলাকারীরা।এ অবস্থায় সরকার পিছু হটার কোনো উপায় নেই। বরং যে কোনো মূল্যে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা পুনর্বহাল করাই প্রধান কাজ। দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হলে সাময়িকভাবে সকল সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে। এটা যদিও স্থায়ী কোনো সমাধান নয়, তবুও পরিস্থিতি শান্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে এগোনো যেতে পারে।মনে রাখতে হবে এই দেশের রাজনীতি গণমানুষের জন্য। মানুষ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ চায় বলেই ৩০ লাখ শহীদ প্রাণ দিয়েছিলেন। এই সেই ডিসেম্বর মাস- যে মাস আমাদের বিজয়ের। এই মাস আমাদের মহান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর মাস। বাঙালি জাতি পশ্চিমা হায়েনাদের হটিয়েছে। আজ এই কালোশক্তিকেও রুখে দেবে। আবারো বলি, প্রয়োজনে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হোক। খেটে খাওয়া মানুষেরা আর এই লাশের ভার বইতে পারছেন না। তাদের মুক্তি দেয়া হোক। যারা এই হীন কর্মকা-ের মদতদাতা- তাদের বিচারের কাটগড়ায় দাঁড় করানো হোক। আমরা যে বিজয়ের বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, সেই বিজয়ের চেতনায়ই উদ্বুদ্ধ হোক আজকের প্রজন্ম।---------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৩
false
rn
কোনোদিন তবে আর শুভময় হবে না জীবন সময় দুপুর দু'টা।শাপলা চত্বর রোদে ঝলমল করছে।বাস,ট্যাক্সি,প্রাইভেট,রিকশা,সিএনজি,মানুষ সবাই খুব ব্যাস্ত।সবাই শুধু ছুটছে।আমি একটা রিকশা থেকে নামলাম।যখনই আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি,নিজেকে মনে হয় যুদ্ধ ফেরত।এখন আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে।প্রিয় মানুষ আমার ওপর অভিমান করে মাঝে মধ্যে গাঢ়তর অন্ধকার উপহার দেয়।সে যে কী কষ্টকর!কী পাথরের মতো কঠিন সেখান কার অন্ধকার।এতো কষ্টের পরেও মনে হয় 'হিমি' আমাকে ভালোবাসে।পাহাড়ের উপর 'হিমি'র জন্য খুব পুরনো বিশাল একটা জমিদার বাড়ি কিনব।বিকাল চারটা।শেরাটন হোটেল থেকে বের হয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুক্ষন আগে একটা সুখব শুনেছি।ঢাকার বাতাস,রোদ,রাস্তা,গাড়ি সব অন্য রকম লাগছে।যেন বিদেশী সিনেমা'র রোদ্দু'র,বাতাস।চলন্ত গাড়ি গুলোর রং কি একটু বেশী উজ্জল মনে হচ্ছে!কেন এমন হঠাৎ করে পালটে গেল ঢাকা শহর।খুব ছোট বেলার সৃস্তি তো কারো মনে থাকে না,কিন্তু আমার এখন সবই মনে পড়ছে।ছোট বেলা রোজি মিস্ আমাকে একটা বইয়ের সন্ধান দিয়েছিলেন,যাতে লেখা আছে কী করে মানুষকে ভালোবাসা যায়।মানুষের দুঃখ কষ্ট বেদনা ভুলিয়ে দেয়া যায়।কিভাবে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়।রাত নয় টা।ঝুম বৃষ্টি পড়ছে।এখন বাসায় ফিরব না।দীর্ঘক্ষন আড্ডা না দিলে মাথা ফাঁকা হবে না।আড্ডার সাবস্টিটিউট কি কিছু হয়,যে সব মানুষ আড্ডা দেয় না,তারা বোধ হয় জুতো পড়েই রাতে ঘুমোতে যায়।চারপাশে কত আনন্দ পড়ে আছে!পার্কে,লেকে,সিনেমায়,পার্টি,মেলায়,থিয়েটারে কত লোক যাচ্ছে,হাসছে,ভিড়ের মধ্যে দু'একটা প্রেমও হয়ে যাচ্ছে।এই সব আনন্দের বাইরে কেন আমি পড়ে থাকব?সাবের ভাই ঠিকই বলতেন,প্র্যাকটিক্যাল হও।একটাই জীবন,যতটা পারো নিজেকে মেলে ধরো ক্যারিয়ার বানাও।বাইরে বিশাল জগৎ অপেক্ষা করে আছে।আমি সাবের ভাই কে প্রশ্ন করে ছিলাম আচ্ছা,ওই জগতের কারিগর কারা? অনুভব করি আমার জীবন একটা নয়,অনেক!শিশু জীবন,শৈশব জীবন,আড্ডার জীবন,প্রেমের জীবন,খেলার জীবন,দুঃখ কষ্টের জীবন,ভালোবাসা না পাওয়ার জীবন,আনন্দের জীবন খন্ড খন্ড প্রচুর জীবন।কোনো কিছুই লেখা আমার উচিত নয়।গল্প লিখতে হয় অনেক গুছিয়ে।কিন্তু আমার সব লেখাই এলোমেলো হয়ে যায়।আমারই বা দোষ কি?আমি যে রকম বিষয়ে লেখার চেষ্টা করি তার পুঁজি তো অফুরন্ত নয়,আমার অভিজ্ঞতা সীমিত।শরৎ কালের আকাশের ফালি ফালি টুকরো সাদা মেঘের মতো ছেঁড়া ছেঁড়া সৃস্তি।তারই মধ্যে থেকে পুরনো দিনের মানুষ জন কে খুঁজি গল্প লেখার জন্য।তেমন লোকই বা কয় জন!রাত বারো টা।বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সিগারেট নিয়ে ব্যালকনিতে বসলাম।এক কাপ চা হলে দারুন হতো।চায়ের কথা কাউকে বলতে সাহস পাচ্ছি না।আমার ব্যবহারে অনেকে আঘাত পায় কিন্তু আমি আঘাত দিতে চাই না।শুধু নিজের কাজ টা ঠিক ভাবে করতে চেয়েছি।এখন সব জায়গাতেই প্রফেশন্যালিজম...।যে করে হোক প্রতি পক্ষকে হারিয়ে দিতে হবে। জয় চায় জয়।জিততেই হবে সময় খুব কম।রসায়ন।সব কিছুর মূলেই রসায়ন।এই যে জগৎ জীব ন....।কথার ভিতরে লুকিয়ে থাকা কথা বুঝতে পারি না,এমন নয়।না-বোঝার ভান করে থাকি।ভান যে শুধু অপরকে ধ্বংস করার জন্যই কাজে লাগে,আমি বিশ্বাস করি না।ভালো মানুষত্ব অর্জন করার জন্যও মাঝে মাঝে ভানের দরকার হয়।আরেকটা সিগারেট জ্বালাই।আহ্ কেউ যদি একটু চা করে দিত!ইদানিং যেন কোনো কিছুতেই আর উৎসাহ পাই না।সমস্ত সম্পর্ক গুলোকেই কি রকম আলগা মনে হয়।বোধ হয় এটাই নিয়ম-নিজের বাঁচার রসদ ফুরিয়ে গেলে প্রিয়জনকে ও পর মনে হয়।মনের গতি কমলে পায়ের গতি ও বুঝি নিঃশব্দ কমে যায়।কান্না চেপে রাখা কী এমন শক্ত কাজ পোড় -খাওয়া মানুষের পক্ষে!চমকে উঠি।ভিতরের ভাঙ্গাচোরা চেহারা টা কি মুখে ফুটে ঊঠেছে?কই আপনজনেরা তো কেউ কখনও দেখতে পায় না সেসব,বরং মনটাকে আরও ভেঙ্গে দিয়ে যায়।বার বার।রাত দু'টা।সাত বছর আগেকার খবরের কাগজের একটা রির্পোট খুঁজছি।হুম,খুঁজে পেয়েছি।এখন বই'ই আমার বড় ধরনের সঙ্গী।টিভি দেখতে কেন জানি ভালো লাগে না।পএিকা,বই টই কম্পিউটার নিয়েই সময় কাটে।খুব ভালো সময় কাটে,মানুষের সঙ্গের চেয়ে।এ জীবনে কখনো অসৎ হইনি।তাই কি সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি না?এখন যে সব ঝকঝকে নতুন দামি বাড়ি উঠছে,যেসব অ্যাপার্টমেন্ট,মাল্টি ষ্টোরিড বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে,সেসব আবাসনের বাসিন্দাদের দৃষ্টি ভঙ্গিতে আমার প্রতি এক ধরনের তাচ্ছিল্য লক্ষ করি।আমি খুব বুজতে পারছি আমার কঠিন অসুখ হয়েছে।কিন্তু আমার রোগ পৃ্থিবীর কোনো ই সি জি মেশিনে ধরা পড়বে না।আধুনিকতম যন্ত ও না।অদৃশ্য বুকের ব্যাথা কোনো ঔষধে কমবে না।শুনেছি সমুদ্রের ধারে কুড়িয়ে পাওয়া বড়ো ঝিনুক শামুকের খোলা বা শাঁখে কান ঠেকালে নাকি সমুদ্রের শোঁ শোঁ আওয়াজের মতো একটা অস্পষ্ট শব্দ শোনা যায়?
false
ij
গল্প_ এক ধরনের মৃত্যু। An honor killing is the murder of a family or clan member by one or more fellow family members, when the murderers (and potentially the wider community) believe the victim to have brought dishonour upon the family, clan, or community, normally by (a) utilizing dress codes unacceptable to certain Islamic people or (b) engaging in certain sexual acts... শাহনাজ কিচেনের দরজায় কাছে দাঁড়িয়ে; ওর পাশে স্টিভ । স্টিভের ফরসা পেশল শরীর । কাঁধ অবধি দীর্ঘ সোনালি চুল। হাত নেড়ে নেড়ে স্টিভকে কী যেন বোঝাচ্ছে শাহনাজ: ওদের দুজনকেই ভীষন অস্থির মনে হচ্ছিল সঙ্গীতার। গ্লাসে কফি ঢালতে ঢালতে ওদের দিকে আড়চোখে আরেকবার তাকাল সঙ্গীতা। ক’দিন ধরে ভীষন নার্ভাস আচরণ করছে শাহনাজ। সঙ্গীতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। স্যান্ডউইচের প্লেট আর কফির গ্লাসটা ট্রেয়ের ওপর রেখে দ্রুত কিচেনের দরজার কাছে চলে এল ও। স্টিভ আর শাহনাজ সরে দাঁড়াল। সকাল এগারোটার মতন বাজে; অফিস টাইম, তবু কফিশপে বেশ ভিড়। সিগারেটের ধোঁওয়া। সঙ্গীতার দম বন্ধ হয়ে আসে। কী করা। একটু স্বাধীন থাকার জন্যই এই জবটা। আর, ওর তো পড়াশোনা এখনও শেষ হয়নি। ট্রে নিয়ে প্রায় কাউন্টারের কাছে চলে এল ও। মি: মোশে মেইর পেপার পড়ছেন। বৃদ্ধ আজ হলুদ শার্ট পড়েছেন । শনের মতন চুল। ধূসর মুখে অজস্র বলিরেখা। কত হবে বয়স? ষাট? সত্তর? কে জানে। রোজ সকালের দিকে ঠিক এই সময়ে কফিশপে আসবেন মি: মেইর। অনেকক্ষণ ধরে কফি আর স্যান্ডউইচ খাবেন, ‘সান’ পত্রিকায় চোখ বোলাবেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ছড়িটা তুলে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে যাবেন। মি: মেইর জু। তারচেয়েও বড় কথা মি: মেইর নিঃসঙ্গ। দাদুর সঙ্গে মি: মোশে মেইর-এর চেহারার অদ্ভূত মিল! দাদু অবশ্য দেখতে শ্যামলা ছিল। আর মি: মেইর ফরসা। তাতে কী? একই গ্রহের দু’জন মানুষ -অভিন্ন প্রজাতি। দাদুর কথায় মন সামান্য খারাপ হল সঙ্গীতার। গত মাসের মাঝামাঝি কোলকাতা থেকে রমা পিসির টেলিফোন এল। দাদু নেই। মৃত্যুর সময় দাদু বরিশালে ছিল। আশ্চর্য! গুড মর্নিং মি: মেইর। গুড মনিং গার্ল। বৃদ্ধের সামনে স্যান্ডউইচের প্লেট আর কফির গ্লাস নামিয়ে রাখল সঙ্গীতা। মি: মেইর হাসার চেষ্টা করলেন। কেমন ফ্যাকাশে দেখাল। দাদুর সঙ্গে কী মিল। এঁর জন্ম কোথায় কে জানে। দাদুর জন্ম বরিশালে। দেশবিভাগের পর পূর্ববাংলা ছেড়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হন। বাবাজেঠারা সব ব্যারাকপুরে মানুষ। তারপর নব্বুয়ের দশকের শুরুতে বিলেত। দাদুকে কত করে বলা হল, দাদু বিলেত আসল না। তার বদলে দাদু প্রায়ই বাংলাদেশে যান । বরিশালে। সেই বরিশালেই দাদুর মৃত্যু হল। আশ্চর্য! মি: মেইর ইজরাইলে চলে যাননি কেন? কিচেনে ফেরার সময় সঙ্গীতা আড়চোখে দেখল শাহনাজ ওদিকের একটা টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অর্ডার নিচ্ছে। স্টিভ বোধ হয় কিচেনে। শাহনাজের মুখটা ফরসা, ভরাট, বাদামি চুল, চোখ আর ভুরু দুটো প্রমিনেন্ট। সঙ্গীতারই সমবয়েসী শাহনাজ-এই আঠারো-উনিশের বেশি না। মুখটা আজ কেমন শুকিয়ে আছে ওর। যে রকম বিপদে পড়েছে ও... এই কফিশপে কাজ করতে আসার আগে শাহনাজ-এর সঙ্গে সঙ্গীতার পূর্বপরিচয় ছিল না। প্রথম প্রথম সঙ্গীতাকে বাংলাদেশি মনে করে অ্যাভোয়েড করত শাহনাজ। সঙ্গীতা পরে ওকে বুঝিয়ে বলেছে -পার্টিশানের আগে আমাদের রুট বাংলাদেশে থাকলেও তারপর থেকে আমরা ওয়েস্ট বেঙ্গলেই সেটলড। কথাটা শুনে মুখ গোমরা করে শাহনাজ বলেছিল, তা হলে তো তোমরা ইন্ডিয়ান? কাঁধ ঝাঁকিয়ে সঙ্গীতা বলেছিল, সো হোয়াট! তবে শাহনাজের শীতল নিস্পৃহ খোলশটা ছাড়তে সময় লাগেনি। মেয়ে বলেই হয়তো। এই কফিশপটায় পুরুষকর্মীই বেশি। এ কারণেই হয়তো শাহনাজ সঙ্গীতার কাছে চলে এল। দ্রুত। ওরা দুজন ছাড়াও আরও ক’জন মেয়ে কাজ করে এই কফিশপটায়। কারমেলা গ্রিক; তিরিশের মতন বয়স, সারাক্ষণ কেমন গম্ভীর হয়ে গুটিয়ে থাকে, জু বলেই কি না কে জানে। উনিশকুড়ি বছরের রাইসা মেয়েটা রাশান। ব্রুনেট। দেখতে বেশ সুইট। তবে রাইসা ভীষনই প্রগলভ। সারাক্ষণই বকবক করে, বারাক ওবামার ভীষন ফ্যান রাইসা; আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে যে ওবামাই জিতে যাবে - সে ব্যাপারে রাইসার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। মিশরীয় মেয়ে হালিমার বয়সও কুড়ি ছাড়িয়েছে। হালিমা শব্দটির মানে, ‘নম্র।’ হালিমার কাছেই জেনেছে সঙ্গীতা। তবে কেন যেন মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও হালিমার চেয়ে সঙ্গীতার সঙ্গেই শাহনাজ বেশি ক্লোজ। লন্ডনে প্রায়ই আদনান সামীর কনসার্ট থাকে: শাহনাজ আর সঙ্গীতা টিকিট কিনে সেই কনসার্ট দেখতে যায়। হালিমা আদনান সামীর নাম পর্যন্ত শোনেনি! ‘ভিগি ভিগি রাতও মে’ গানটার জন্য শাহনাজ আর সঙ্গীতা- দুজনই আদনান সামীকে ভালোবাসে। সঙ্গীতা তো হিন্দি জানেই। তাই শাহনাজের সঙ্গে মনের কথা বলতে সমস্যা হয়নি। (ইংরেজি ব্যবহারের ভাষা বলেই মনের কথা ঠিক জমে না।) দু’জনই দুজনার সিক্রেট শেয়ার করে। স্টিভকে ভালোবাসে শাহনাজ। সমস্যা এখানেই- স্টিভরা খাঁটি ব্রিটিশ, শাহনাজরা পাকিস্তানি। এদিকে প্রেম-ভালোবাসা স্বর্গের অধীন বলেই শাহনাজ আর স্টিভের সম্পর্কটা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। সঙ্গীতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শাহনাজের বাবা আজমল আঙ্কেল রিলিজিয়াস। মেয়েকে একটা পুরুষভরতি ব্রিটিশ কফিশপে ঠেলে চাকরি করতে পাঠালেও ব্রিটিশ তরুণের সঙ্গে মেয়ের মাখামাখি তিনি কিছুতেই মেনে নেবেন না। আতরের ব্যবসা করেন আজমল আঙ্কেল; দোকানটি ব্রিকলেইন-এ । শাহনাজের বড় ভাই ঈস্রাফিল। বিশালদেহী। হুম্মা মার্কা গাড্ডুস গুড্ডুস চেহারা। বক্সার। শাহনাজই একবার ফিসফিস করে বলেছিল, ভাইয়ার সঙ্গে মনে হয় আন্ডারগ্রাইন্ড কানেকশান আছে গীতা। আল কায়দা? সঙ্গীতার বুকটা ধক করে ওঠে। গত বছর জুলাই মাসের সাত তারিখের লন্ডন বিস্ফোরণ এখনও সঙ্গীতার স্মৃতিতে পোড়া ক্ষতের মতন দগদগে। আই অ্যাম নটা সিওর। শাহনাজের সঙ্গে স্টিভের অ্যাফেয়ারটা জানাজানি হলে ঈস্রাফিল কী ধরনের অ্যাকশন নিতে পারে? কথাটা ভাবতেই শিউরে উঠল সঙ্গীতা। ও জানে, দিন দিন ‘অনার কিলিং’ বাড়ছে এই লন্ডন শহরে। ২ দুপুরের কিছু পরেই কফিশপ থেকে বেরিয়ে গেল সঙ্গীতা। বাইরের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কানে সাদা রঙের ইয়ার ফোনটা গুঁজল: তারপর আইপড অন করে হাঁটতে থাকে। প্রথমে কিছুক্ষণ ড্রামস্ আর রিদম বাজল। তারাপর, Meredith Brooks গাইতে লাগল- I hate the world today You're so good to me I know but I can't change tried to tell you but you look at me like maybe I'm an angel underneath innocent and sweet Yesterday I cried You must have been relieved to see the softer side I can understand how you'd be so confused I don't envy you I'm a little bit of everything all rolled into one (Chorus): I'm a bitch, I'm a lover I'm a child, I'm a mother I'm a sinner, I'm a saint I do not feel ashamed I'm your health, I'm your dream I'm nothing in between You know you wouldn't want it any other way So take me as I am This may mean you'll have to be a stronger man Rest assured that when I start to make you nervous and I'm going to extremes tomorrow I will change and today won't mean a thing Just when you think you've got me figured out the season's already changing I think it's cool you do what you do and don't try to save me I'm a bitch, I'm a tease I'm a goddess on my knees when you hurt, when you suffer I'm your angel undercover I've been numbed, I'm revived can't say I'm not alive You know I wouldn't want it any other way এই গানটা শুনলে কী রকম যেন লাগে সঙ্গীতার। বিশেষ করে লিরিকটা। এমন করে বলা যায়। পুরুষ এতই দূরে চলে গেছে নারীর? এই সত্যটা কুড়ি শতকের শেষে এসে নারী আবিস্কার করল? আশ্চর্য! এখন তাহলে কী হবে। নারী যে আর পুরুষকে সইতে পারছে না। I'm a bitch, I'm a tease I'm a goddess on my knees when you hurt, when you suffer I'm your angel undercover তা হলে? কফি শপটা নর্দাম্পটন রোডে, সঙ্গীতা থাকে ইস্টন স্ট্রিট, জায়গাটা নর্দাম্পটন রোডে কাছেই; হেঁটেই যাওয়া যায়। সঙ্গীতা হেঁটেই যায়। সামার প্রায় শেষ। এ সময়টা হালকাপাতলা বৃষ্টি ঝরে। যেমন এখন এই মুহূর্তে ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছে। অবশ্য রোদও আছে। ব্রেনডান কি আমাকে ফলো করছে? সহসা সঙ্গীতা সচেতন হয়ে উঠল। কফিশপ থেকে বেরোলেই ব্রেনডান ওকে ফলো করে। রোজ। কফিশপের বাইরের ফুটপাতের ওপর ঘোরাঘুরি করতে থাকে ব্রেনডান । সঙ্গীতা বেরোলেই ওকে ফলো করতে থাকে। সঙ্গীতার তখন হাসি পায়। তবে ব্রেনডান খুব মজার মানুষ। সঙ্গীতাকে খুশি করার জন্যই আজকাল মাছমাংস ছেড়ে নিরামিষ খাচ্ছে ব্রেনডান, (যেন সঙ্গীতা নিজে কত নিরামিষ খায়!) কোত্থেকে পতঞ্জলির বই যোগার করে ধ্যান করছে; সবই সঙ্গীতার জন্য। বেচারা ব্রেনডান! ও তো আর জানে না- কোলকাতার রমা পিসির এক বান্ধবীর ছেলের সঙ্গে সঙ্গীতার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। সুদীপ্তদা আমেরিকার মিনেসোটা থাকে, ইনটেল-এ আছে। বরপক্ষ দেরি করতে চাইছে না। Meredith Brooks-এর ‘ Bitch ’ গানটা রিপিট দেওয়া আছে। একটানা চলছে। গানটা শুনতে শুনতে ঝিরঝির বৃষ্টির ভিতর হাঁটছিল সঙ্গীতা। রোদ আরও টলটলে আরও সোনা সোনা হয়ে উঠেছে। সে সোনারোদে ব্যস্ত লন্ডন শহর। তার বিখ্যাত লাল রঙের ডবল ডেকার বাস। সহসা ওর ঠিক পাশে ব্রেনডান যেন আকাশ থেকে ঝুপ করে পড়ল স্পাইডার ম্যানের মতন । আজ, সাদা পায়জামার ওপর কালো পাঞ্জাবি পরেছে ব্রেনডান । কাঁধে শান্তিপুরী ঝুলি। পায়ে চটি। লম্বা, ঢ্যাঙ্গা শরীর ব্রেনডান-এর । একমাথা সোনালি কোঁকড়া কোঁকড়া চুল । কেমন হিপি হিপি দেখতে। আইপডটা বন্ধ করল সঙ্গীতা। কান থেকে ইয়ার ফোনটাও খুলে নিল। পাশেই একটা পার্ক। চুপচাপ হেঁটে ওরা পার্কটায় ঢুকল। রোদটা আরও ঘন হয়ে উঠল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিটা এইমাত্র থেমে গেল। ওরা একটি বেঞ্চে বসল। এইটুকুই যা অবসর। তবে ভয় হয় সঙ্গীতার। যদি সুব্রতদা দেখে ফেলে! পায়ের কাছে ঘাসের ওপর পায়রা। ওদিকে নিঃসঙ্গ এক মা।প্যারাম্বুলেটর। ঠেলছে। প্যারাম্বুলেটরে সোনালি চুলের ধবধবে রঙের শিশু। মা’টি নিঃসঙ্গ কেন? সঙ্গীতার মাথর ভিতরে Meredith Brooks গেয়ে উঠল- I'm a bitch, I'm a lover I'm a child, I'm a mother এই পার্কে গাছের এত ভিড়। ব্রেনডান মন্তব্য করল। তাই তো। কাঁধ ঝাঁকায় সঙ্গীতা। ব্রেনডান যেখান থেকে এসেছে সেখানে সমুদ্র উপকূল আর পাথর। ব্রেনডানদের বাড়ি আয়ারল্যান্ড। মানে পশ্চিম আয়ারল্যান্ডের কননাচস্ট প্রদেশে। জায়গাটার নাম নাকি মায়ো। অতলান্তিক সমুদ্রের তীর ঘেঁষে। ওদের পরিবারের পেশা মাছ ধরা। ভেড়া পালে নির্জন প্রান্তরে। কাজেই পার্কে এসেও ওর মনে হয় গাছের ভিড়! শহর লন্ডন ভালো লাগে না ব্রেনডান-এর। ওর শরীরে মনে হয় রয়েছে পর্যটকের রক্তজিন। একদিন কৌতূহল ভরে ও মায়ো ছেড়ে ওর গন্ডীর বাইরে চলে এসেছিল। প্রথমে ডাবলিন। তারপরে লন্ডন। যেহেতু, লন্ডন কেন্দ্র, সেজন্য। ব্রেনডান এখন ক্লান্ত। ও এখন ফিরে যেতে চায়-যেখান থেকে এসেছিল, সেখানে। অন্যরা হয়তো লন্ডনের পর নিউইয়র্ক কিংবা ডালাস যাত্রা করত। ব্রেনডান ঠিক ও রকম নয়। ওর নার্ভ অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। তারপর কত কী কথা হল। ছেঁড়া ছেঁড়া কথা। বিকেলের আলো আরও সামান্য ফিকে হয়ে এলে ব্রেনডান উঠে দাঁড়াল। ও এখন ল্যাথোম রোডের কাছে উপটন পার্কের দিকে যাবে । ওস্তাদ আফতাব আলী খাঁর কাছে সেতার শিখতে শুরু করেছে ব্রেনডান: (সঙ্গীতার মন জয় করার জন্যই) আফতাব আলী খাঁ পাকিস্তানি। উপটন পার্কের দিকেই থাকেন ওস্তাদজী। একা একা হেঁটে সঙ্গীতা ওদের ইস্টন স্ট্রিট-এর কাছাকাছি এসে পড়ে। টের পায় মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শাহানাজের মুখটা মনে পড়ে। বেচারি। অলখে ওর দীর্ঘশ্বাস পড়ে। শেষ বিকেলের রোদের ভিতর নিজেকে কেমন খাপছাড়া লাগে। এই শহর লন্ডনে। দাদুর যেমন লাগত বরিশাল থেকে ব্যারাকপুরে পৌঁছে। দাদুর ব্যারাকপুর ভালো লাগত না। ব্রেনডান যেমন প্রায়ই বলে: লন্ডন শহর আর ভালো লাগে না আমার । এখানে পার্কেও গাছের ভিড়। চল মায়োতে চলিয়া যাই। (ব্রেনডান বাংলাও শিখছে। বেশ মেধাবী আছে সে। বেশ রপ্ত করে ফেলেছে ভাষাটি। ওর অবশ্য চলিত ভাষার চেয়ে সাধু ভাষা ভালো লাগে।) ব্রেনডান বলে, চল, মায়োতে চলিয়া যাই। ওখানে অনেক নিরিবিলি আছে। সমুদ্রের পাড়, খাড়ি, সবুজ প্রান্তর, ভেড়াসমূহের ধবল সমাবেশ। আমি উড়োজাহাজের দুইখানি টিকিট কাটিয়া রাখিয়াছি গীতা। যখনই বলিবে, আমরা যাত্রা আরম্ভ করিব। আমি আর লন্ডন নামক কেন্দ্রে ফিরিব না। তুমি ফিরিবে কিনা-তাহাও নিগূঢ় হইয়া ভাবিও। নাঃ, সঙ্গীতা কী করে যায়-ওর বাবা-মা, ভাইবোন সবাই যে এখানে। এই শহরকেন্দ্রে। তখনও সঙ্গীতা জানত না যে ও খুব শিঘ্রই ওর মত বদলে ফেলবে। কয়েক মাস আগে ব্রেনডান বলছিল: তোমার কথা আমি আমার মাতাকে বিস্তারিত লিখিয়াছি। মা তোমাকে দেখিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমার সঙ্গে কবে আয়ারল্যান্ড যাইবে বল? আমি যাব আয়ারল্যান্ড? হা। তা কী করে সম্ভব! সঙ্গীতা ম্লান হাসে। কেন সম্ভব না? সম্ভব হইলে আমি ধর্মান্তরিক হইব গীতা। ব্রেনডান কাতর কন্ঠে বলে। আজ্ঞে, না স্যার। সনাতন ধর্ম ইসলামের মতন proselytic ধর্ম নয়। বা খ্রিস্টানধর্মের মতনও নয়। হোয়াট ডু ইউ মিন? proselytic ? ব্রেনডান চোখ দইবড়া। সঙ্গীতা হাসি চাপল। এখন আইরিশকে ইংরেজি শেখাতে হবে। ও বলল, proselytic ধর্ম নয় মানে হিন্দু ...মানে সনাতন ধর্ম ঠিক প্রচারের বিষয় নয়। কথাগুলি বলতে বলতে দাদুর কথা মনে পড়ে গেল সঙ্গীতার। বলল, আমার দাদু বলতেন, ধর্ম জিনিসটা হইল জন্মগত, এইটি বিলানের জিনিস না। মূর্খেরা কি তাহা বোঝে? এক অঞ্চলের ধর্ম অন্য অঞ্চলে প্রচার করিলে সেই অঞ্চলের পেরাকিতিক শুদ্দতা বিনষ্ট হইয়া যায় না? এ হইল এক ধরনের আত্মিক স্বৈরাচার। সত্য সবখানেই আছে, তাহা মানিয়া লইলেই হয়। ব্রেনডান বলল, মানিয়া লইলাম। মানিয়া লইলাম। আমাদের আয়ারল্যান্ড দ্বীপে সাধু প্যাট্রিক যে খিশচ্চিনিটি প্রচার করিয়াছেন স্বয়ং যিশূও তাহা চিনিবেন না। তাহলে? তাই তো । ব্রেনডান থতমত খায়। ও আইরিশ বলেই সম্ভবত ভারি সরল। বর্ণবাদ ঠিক বোঝে না। কেননা সে ভারতীয়দের মতন বহুমুখি জটিল আর্যদ্রাবিড় সংস্কৃতির মিশ্রনে বেড়ে ওঠেনি বরং ব্রেনডান বেড়ে উঠেছে এক বিচ্ছিন্ন একরৈখিক আবহে। আর, দেশবিভাগের পর ভারতে যেয়েও দাদু দীপেন রায় চৌধুরীর মন মানল না- সময় পেলেই বরিশাল চলে যেত দাদু; আবেগ এমনই এক গভীর বিষয়। দাদু সারাজীবন কোথাও থিতু হতে পারেনি । না নলছিটি, না ব্যারাকপুরে। বি এন পির আমলে একবার বাংলাদেশি সীমান্ত কর্র্তৃপক্ষ দাদুকে হেনস্তা করেছিল । আপনি ঘন ঘন বাংলাদেশে আসেন যে? কি মতলব আপনার? সত্তর বয়েসী দাদু কি বলবে? এরাই একবার রবীশঙ্করের ভিসা আটকে দিয়েছিল। অথচ, রবীশঙ্কর কী কষ্ট করেই না নিউইয়র্কের কনসার্ট অর্গানাইজ করলেন একাত্তরের যুদ্ধের সময় । সঙ্গীতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ৩ ক’দিন পর। কিচেনে ছিল সঙ্গীতা ট্রেতে কফি ঢালছিল। আজ শাহানাজ আসেনি। নোকিয়াটা বার করে তখন ফোন করল । ডিসকানেকটেড। শাহানাজদের ফ্ল্যাটটা গ্রিন লেন-এ, নর্দাম্পটন রোডের কাছেই। একবার গিয়েছিল সঙ্গীতা। হালিমার সঙ্গে। শাহ্নাজের বাবা আজমল আঙ্কেল নিজ হাতে নান রোটি আর অনিয়ন বিফ রেঁধে খাইয়েছিলেন। সঙ্গীতা অবশ্য বিফ খায়নি। পরে শাহানাজ বলেছিল: আব্বার হালিমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। নবীর দেশের মেয়ে। নবীর দেশের মেয়ে মানে? সঙ্গীতা তো থ। মিশর দেশেই তো পয়দা হয়েছেন ইছুপ নবী। হালিমা ইজিপশিয়ান। শাহানাজ বলল। ওহ্। সঙ্গীতা হাসবে না কাঁদবে। শাহানাজ হাসতে হাসতে বলল, হালিমার আব্বার কাছে আব্বা বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে। হা হা হা। হালিমা তো ম্যারিড। আব্বা জানে না। সঙ্গীতা মনে মনে বলেছিল, তোর আব্বা কত কিছু জানে না রে নাজ। সেদিন আমি তোর বাড়ি গেলাম। তোর বাবা অনিয়ন বিফটা না রাঁধলেও পারতেন । স্টিভও আজ আসেনি। ওকেও ফোন করল । বিজি টোন পেল। ওরা কি পালাল? সঙ্গীতার বুকটা ধক করে উঠল। ট্রেতে স্যান্ডউইচ আর কফির কাপ তুলে ঘুরে যায়। শপটা আজ অনেকটা ফাঁকা। এখন অফিস টাইম। অন্যদিন আরও ভিড় থাকে। আজ মি: মোশে মেইর আসেননি। সঙ্গীতার বুকটা ধক করে উঠল। ভদ্রলোক আজ আসেন নি কেন? যাক। সেসব নিয়ে ভাবার সময় কই? সঙ্গীতার মনমেজাজ খিঁচড়ে ছিল। কিচেনে ফিরে একটা কাপ ভাঙ্গল। ডোন্ট ওরি, আমি দেখছি। বলে কারমেলা উবু হল। কারমেলা গ্রিক জু বলেই গুটিয়ে রাখে; আজ সাহায্য করল বলে সঙ্গীতা অবাক। তখনও সঙ্গীতা জানে না ও ব্রেনডান-এর সঙ্গে প্লেনে চড়বে। হালিমা আজ জলদি বাড়ি ফিরে যাবে। ওর বরের জ্বর। বোরখা পরেছে । ইরাকি শোকার্ত নারীদের মতন লাগছে হালিমাকে। হালিমা সঙ্গীতার কাছে এল। তারপর নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল, হোয়াটস রং উইদ য়্যূ? ইউ লুক পেল। কিছু না। সঙ্গীতা অস্ফুট স্বরে বলল। সঙ্গীতা তো আর হালিমাকে বলতে পারে না: মিনোসোটা থেকে সুদীপ্তদা আসছেন সেপ্টেম্বরে। বাবা আর দেরি করতে চায় না। বাবার গত মার্চে একবার মাইল্ড স্টোক হয়ে গিয়েছে। রমা পিসিরা আসছেন সব কোলকাতা থেকে। ঢাকা হয়ে আসছেন। এবারের বিয়েটা হবে জামদানী স্পেশাল। হালিমা চলে যায়। সঙ্গীতা তো আর হালিমাকে বলতে পারে না:কাল ব্রেনডান সঙ্গীতাদের ইস্টন স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। মা না করলেও বাবা ওর সঙ্গে কুল ব্যবহার করেছে। ব্রেনডান অবশ্য ডিড নট মাইন্ড। ও বরাবরই ডিড- নট -মাইন্ড টাইপের। সুব্রতদাই সবচে গম্ভীর ছিল। কিছু একটা আঁচ করেছে সুব্রতদা। যেন পূর্ববঙ্গের রায় চৌধুরীদের কৌলিন্য রক্ষার দায় তার ওপরই বর্তেছে। আশ্চর্য! সুব্রতদা এত কনজারভেটিভ হল কীভাবে? দাদা তো দারুন শিল্পপ্রবণ - তুখোর সেতার বাজায়: বরেন্য পাকিস্তানি সেতারি লতিফ আলী খাঁর শিষ্য। সুব্রতদার নরফোক কনসার্টেই তো ব্রেনডান এর সঙ্গে পরিচয় সঙ্গীতার। সুব্রতদার অটোগ্রাফ চাইতে এসেছিল ব্রেনডান । তারপর সঙ্গীতার মুখের দিকে চেয়েই থমকে গিয়েছিল। কেন? মেয়েরা সেসব বোঝে। সঙ্গীতা মনে মনে মুচকি হেসেছিল। চালাকি করে সুব্রতদার ‘সেতার শিখব’ মিশে যায়। সুব্রতদা এখন অবশ্য ব্রেনডান কে সেতার শেখাচ্ছে না। ও তারপর আফতাব আলী খাঁ সাহেবের কাছে গেল শিখতে। সঙ্গীতার জন্যই। ব্রেনডান এখন পরিপূর্ন বাঙালিয়ানা চর্চায় মগ্ন। ধুতিপাঞ্জাবি তো পরেই। সন্ধ্যায় ধূপ জ্বালায়। গ্লুসেস্টার রোড স্টেশনের কাছে ক্রমওয়েল রোডে থাকে ব্রেনডান। ফ্ল্যাটের দেওয়ালে বেলায়েৎ খাঁর একখানা ছবিও সেঁটেছে। গায়ত্রী মন্ত্র মুখস্ত করছে (গায়ত্রী মন্ত্র সঙ্গীতা নিজেও জানে না) কোত্থেকে কালীঘাটের পট যোগার করে এনেছে। বাংলাদেশি শুঁটকি মাছ ও রসমালাই খাচ্ছে নিয়মিত ব্রিকলেনে গিয়ে। কাল রাতে দু’বার ফোন করেছিল ব্রেনডান। সঙ্গীতা কেটে দিয়েছে। সুব্রতদা ঘরে ছিল। কাল রাতে সুব্রতদা ওকে বলেছিল, দেখ গীতা, সেতারফেতার বাজিয়ে কিচ্ছ্যু লাভ নেই। রেইমন্ডদের সঙ্গে ব্যবসা করব ভাবছি। সুদীপ্তদা মিনোসোটায়-মানে, ইনটেলে আছে। তোর সঙ্গে বিয়েটা হয়ে যাক। তাতে আমার ব্যবসার সুবিধে। ওদের কত কী লাগে। সঙ্গীতা বলল, আমি এখন বিয়ের কথা ভাবছি না দাদা। তখনই প্যান্টের পকেট থেকে ফস করে কালো রঙের পিস্তল দেখিয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে ফ্যাঁসফ্যাঁসে সুব্রতদা বলল: এতে একটা মাত্র গুলি আছে গীতা । কথাটা বুঝে নে। যা বোঝার সঙ্গীতা বুঝে গিয়েছিল। ব্রেনডানকে সহ্য হচ্ছে না সুব্রতদার। পূর্ববঙ্গের রায় চৌধুরীদের কৌলিন্য রক্ষার দায় তার ওপরই বর্তেছে। ছিঃ, এত নিচে নেমে যেতে পারে দাদা! ছিঃ! রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করার জন্য পিস্তল দেখাল! ছিঃ! বিন বিন করে নোকিয়াটা বাজল। স্টিভ। বলল। গীতা ...গীতা হ্যাঁ। নাজ .. নাজ ...। গ্রিন লেন ... কুইক। কী! চমকে উঠল সঙ্গীতা। হ্যালো ... স্টিভ, হ্যালো। স্টিভ । লাইন কেটে দিয়েছে। অ্যাপ্রোনটা খুলতে যত দেরি। কারমেলা সামনে ছিল। আমি আমি ...একটু বাইরে যাচ্ছি ... ও কে। কারমেলা আর কী বলল। সঙ্গীতা শুনল না। প্রায় দৌড়ে কফিশপের বাইরে এল ও। কী হয়েছে শাহানাজের? বুকটা ভীষন কাঁপছে। হাতে নকিয়া। স্টিভের নাম্বারের ট্রাই করল। ধরছে না। কী হয়েছে শাহানাজের? কী হয়েছে শাহানাজের? ফরসা মতন শান্ত মুখ শাহ্নাজের। ভারী শান্ত মেয়ে। ব্রেনডানের সঙ্গে কোথায় যেন মিল। নর্দাম্পটন রোড থেকে গ্রিনলেনের মধ্যকার দূরত্বটা ঝড়ের বেগে পেরুল সঙ্গীতা। শাহানাজদের ফ্ল্যাটের নিচের ফুটপাতে ভিড়। গলির মুখে অ্যাম্বুলেন্স। সাইরেন বাজছে। পুলিশের গাড়িগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে। পুলিশ। স্টিভ কি এখানে? ভিড়ের মধ্যে খুঁজল। পেল না। সঙ্গীতা ঘামছিল। কী হয়েছে? শাহানাজের ভাই ... ঈস্রাফিল। বিশালদেহী। হুম্মা মার্কা গাড্ডুস চেহারা। ইস্ট এন্ডের লো গ্রেডের বক্সার। ওকে ঘিরে কয়েকজন পুলিশ । গাড়িতে তুলছে। আমি কি ভিতরে যাব? ... শাহানাজের কথাগুলি মাথায় ঘুরছিল: ভাইয়ার সঙ্গে মনে হয় আন্ডারগ্রাইন্ড কানেকশান আছে গীতা। আল কায়দা? সঙ্গীতার বুকটা ধক করে ওঠে। একটা স্ট্রেচার। অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে স্ট্রেচারটা ওঠানো হচ্ছে। নার্স; অক্সিজেনের বোতল। স্যালাইন। সাদা কাপড়ে ঢাকা স্ট্রেচার । শাহানাজ? তা হলে? স্টিভের সঙ্গে শাহানাজের সম্পর্ক অনেকদূর এগিয়ে গেছে। সঙ্গীতার সঙ্গে শাহানাজ সিক্রেট শেয়ার করত। সঙ্গীতা জানত শাহানাজ স্টিভের সিড ক্যারি করছিল। শাহানাজের গর্ভে ছিল -তা হলে? ওটাও ...। এ কি ধরনের মৃত্যু? কেন? কাল সুব্রতাদা আমায় পিস্তল দেখাল। মনে পড়তেই ওর শরীরে হিমস্রোত বইল। সঙ্গীতা হঠাৎ পিছিয়ে যেতে শুরু করে। তারপর দৌড়তে থাকে। ভীষন ঘামছে। আদনান সামীকে চিঠি লিখেছিল শাহানাজ। উত্তর পায়নি। বেচারা। কী হয়েছে শাহানাজের? বুকের ভিতর হাতুরি পিটছে । এতে একটা মাত্র গুলি আছে গীতা । কথাটা বুঝে নে। দৌড়তে দৌড়তে ও নোকিয়াটা বার করে। হাতটা ভীষন কাঁপছে। চেনা নম্বরে ...হ্যালো ব্রেনডান হ্যালো। হ্যালো হ্যালো হ্যালো। হ্যালো ব্রেনডান হ্যালো। আমি আসছি। মেট্রোর সামনে। তুমি জলদি এসো। সঙ্গীতা দৌড়াতে থাকে। দিনটা আজ মেঘলা। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছিল। এদিকে ইহুদিদের একটা সেমিট্রি আছে। নীল রঙের একটা গাড়ি থেকে একটা কফিন নামছে। মি: মোশে মেইর কি? এও এক ধরনের মৃত্যু। সুন্দর মৃত্যু। মি: মোশে মেইর এর বয়েস হয়েছিল। তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষজন তাঁকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে। কিন্তু, শাহানাজ? দাদুর কথাও মনে পড়ে গেল সঙ্গীতার। দাদুর চিতা পুড়েছিল কীর্তনখোলা নামে এক নদীর পাড়ে। দাদু, আজ আমি ধর্মান্তরিত হলাম। জানি- সনাতম ধর্ম গ্রহন করা যায় না। কিন্তু, ত্যাগ করা যায় ...একটা ট্যাক্সি থামল। ব্রেনডান। বেরিয়ে এসে দরজা খুলে সরে দাঁড়াল। সঙ্গীতা দ্রুত উঠল ট্যাক্সির ভিতরে । সাদা টি শার্ট আর নীল জিন্স পরেছে ব্রেনডান; লাগেজ ছাড়াও গিটারটাও দেখল গাড়ির ভিতরে। তখন দৌড়ে ভীষন ঘেমে গেছে সঙ্গীতা। বুক কাঁপছিল। সুব্রতদা পিস্তল কিনেছে। আশ্চর্য! ওহ্ গড! ও চোখ বোজে। শরীর আলগা করে বসল সিটে। ততক্ষণে ট্যাক্সিটা ছেড়েছে। ব্রেনডান চুপ করে আছে। সে জানে- সঙ্গীতা রায়চৌধুরী আজ পালিয়ে যাবে। দূরে। জটিল ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে অনেক অনেক দূরে ...অনেক অনেক দূরে। অতলান্তিক সমুদ্রের এক নিভৃত পাড়ে। এক ধরনের মৃত্যুকে ও এড়িয়ে অনেকদূরে চলে যাবে আজ- যেখানে শুধুই গাঙচিল পাথর আর ভেড়াদের ভিড়,আর অটুট নৈঃশব্দ। সেই অটুট নৈঃশব্দে ধর্মান্তরিত হবে সঙ্গীতা রায়চৌধুরী। অচিরেই। * Bitch গানটি অনেকেই গেয়েছে। Meredith Brooks এর গাওয়া আমার বেশি ভালো লাগে বলে উল্লেখ করলাম। আর যারা এ গানটি শোনেননি তাদের জন্য গানের লিঙ্ক:- http://www.youtube.com/watch?v=V8kiNMQIctg সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৪০
false
mk
ছিটমহল চুক্তিতে বাংলাদেশ সফল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট ভারতীয় আইনসভার উভয় কক্ষেই স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলটি পাস হয়েছে। সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসেও এটি একটি বিরলদৃষ্ট ঘটনা। একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে বিলটি আবার সংসদে উপস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দিলেও আশা করা যায় ত্রুটি সংশোধনের পর একইভাবে তা উভয় সভায় অনুমোদিত হবে (এই লেখাটি লেখার আগেই সংশোধিত বিলটি রাজ্যসভায় পাস হয়ে গেছে)। বিলটি পাস হওয়ার ফলে একচল্লিশ বছর আগে ভারত ও বাংলাদেশ এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পাদিত স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথে আইনগত একটি বড় বাধা দূর হবে। অবশ্য বাধাটা এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নয়, ভারতের দিক থেকেই ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দুই দেশের সীমান্ত চিহ্নিতকরণের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে দিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান নিজ নিজ দেশের পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর ওই বছরই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে তা অনুমোদিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতকে অর্পণও করে। কিন্তু নানা সমস্যা ও অজুহাতে ভারত তার দিক থেকে গত চার দশক এই চুক্তিটি কার্যকর করার পথে অগ্রসর হয় নি বা হতে পারে নি। কখনো এই চুক্তি বা তার কোনো অংশ কার্যকর করার বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ চেয়ে ভারতীয় নাগরিকদের কারো মামলা, কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা, কখনো কোনো রাজ্য সরকার বা তার শরিক দলের আপত্তি, কখনো স্থানীয় জনগণের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ভারতকে চুক্তি বাস্তবায়নের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে কিংবা থাকতে সাহায্য করে। রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপনের সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যে বিলটি বাস্তবায়নে বিলম্বের জন্য ‘নানা সময়ে নানা কারণে নানান উদাসীনতা’কে দায়ী করেছেন, বলা বাহুল্য সে ‘উদাসীনতা’ বাংলাদেশের তরফ থেকে ততটা ছিল না যতটা ছিল ভারতের দিক থেকে। এমন নয় যে, ১৯৭৫ এ বাংলাদেশে রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতায় আসা সামরিক সরকার বা তাদের উত্তরসূরিদের তরফ থেকে এ ব্যাপারে কখনোই কোনো রকম উদ্যোগ বা তাগিদ ছিল না। আমাদের মধ্যে যাঁরা তা বলছেন তাঁরা জেনে বা না-জেনে আসলে সত্যের অপলাপ করছেন। এ ব্যাপারে ভারতের মনোভাবটা ছিল, ভারত বিশাল ও এক গণতান্ত্রিক দেশ, ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও রাজ্য সরকারের মতামতকে তার গ্রাহ্যের মধ্যে নিতে হয়। আর আদালতের রায় বা বিচার প্রক্রিয়ায়ও সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যুক্তি হিসেবে কথাটা যে একেবারে গুরুত্বহীন বা ফেলনা, তা আমরা বলব না। তবে তার ফলেই চুক্তিটি বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করতে ভারতের এতগুলো বছর পার করতে হল। আর তার শিকার হতে হল উভয় দেশেরই কয়েক হাজার ছিটমহলবাসী মানুষকে। দেশ-ঠিকানাহীন ‘ছিটের মানুষ’ হিসেবে কিভাবে তারা বছরের পর বছর নাগরিক ও মানবিক সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রায় মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে, দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা এ দুটি বাংলাদেশী ছিটমহলের বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা তা বুঝতে পারি।১৯৫৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর মধ্যে উভয় দেশের সীমান্ত চিহ্নিতকরণ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা আজ নুন-নেহেরু চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি অনুযায়ী বেরুবাড়ির উত্তরাংশটি ভারতের ও দক্ষিণাংশটি পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে পড়ে। কিন্তু ভারতের অনাগ্রহ কিংবা তাদের তরফে সৃষ্ট নানা জটিলতার (সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, লোকগণনার অসুবিধা ইত্যাদি) কারণে চুক্তি বাস্তবায়নের কাজটি পরে আর অগ্রসর হতে পারে নি। দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা এ সময় ভারতের এলাকাভুক্ত ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির শর্তে ভারতকে বেরুবাড়ি হস্তান্তরের পরিবর্তে বাংলাদেশকে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা এই দুটি ছিটমহল নিজেদের দখলে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। সেই সাথে ছিটমহল দুটির মানুষ যাতে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, তার জন্য তিনবিঘায় স্থায়ীভাবে একটা করিডোর দেওয়ার কথাও চুক্তিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় জনগণের আন্দোলনের মুখে ভারত সরকার বাংলাদেশকে তিনবিঘা লিজ দেওয়ার সেই শর্ত পূরণ থেকে পিছিয়ে যায়। এমন কি বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা ১৯৭৯ ও ১৯৮১ সালে যথাক্রমে ভোট গ্রহণ ও আদমশুমারির প্রয়োজনে তিন-তিনবার দহগ্রাম যাওয়ার চেষ্টা করেও স্থানীয় ভারতীয় জনগণের প্রতিরোধের মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এরশাদ আমলে দু-দেশের সরকারের মধ্যে করিডোরের ব্যাপারে একটা সমঝোতা এবং তার ভিত্তিতে নতুন একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, ‘কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটি’র (১৯৭৯ সালে গঠিত) রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট সে চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে। ১৯৯০ সালে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়; কিন্তু সেবারও ‘কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটি’ তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামে। তাদের আহ্বানে এ সময় এলাকায় দু-দুটি বনধ পালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের দ্বিতীয় বড় শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরেক বামপন্থী দল এসইউসি ছাড়াও কংগ্রেস ও বিজেপির স্থানীয় শাখাও সে আন্দোলনে শরিক হয়। এমন কি যে-সীমান্ত বিলটি এবার প্রথমে রাজ্যসভা ও পরে লোকসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হল, দু-বছর আগে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার যখন সে বিলটিই রাজ্যসভায় পেশ করে তখন বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস ও অসম গণপরিষদ একযোগে তার বিরোধিতা করেছিল। এবারও বিলটি পাসের আগে এ ব্যাপারে অসম গণপরিষদের আপত্তির কথা শোনা গিয়েছিল। এমনও শোনা গিয়েছিল আসামকে বাদ দিয়েই আপাতত সীমানা চিহ্নিতকরণের ব্যাপারটি চূড়ান্ত হবে। লোকসভায় বিলটি নিয়ে আলোচনাকালেও আসাম থেকে নির্বাচিত একজন সাংসদসহ কয়েকজন তাঁদের ভিন্নমত তুলে ধরেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধ রেখে তাঁরাও শেষ পর্যন্ত বিলটির পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। অবশ্য সংসদে বিলটি পাস হওয়া মানেই তা বাস্তবায়নের পথে সমস্ত বাধা দূর হয়ে যাওয়া, এমন কিন্তু নয়। যেহেতু এটি সাধারণ কোনো আইন নয়, একটি সংবিধান সংশোধনী বিল, তাই বাস্তবায়ন পর্যায়ে যাওয়ার আগে এর পক্ষে ভারতের রাজ্য বিধান সভাগুলোর অন্তত অর্ধেকের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। বাংলা ভাষায় একটা কথা আছে, ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই’। আমরাও তাই আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি, যাকে বলে সতর্ক আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণ করতে চাই। আর তা কেবল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বেলায়ই নয়। উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাকি সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তি এবং সম্পর্ক উন্নয়নের আর পাঁচটি ক্ষেত্রেও। ভারত বিভাগের পর ইতিমধ্যে আটষট্টি বছর পার হয়ে গেছে, স্যার র‌্যাডক্লিফ ও তাঁর বাউন্ডারি কমিশনের সদস্যদের তাড়াহুড়ো ও খামখেয়ালির শিকার বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ১৬২টি (বাংলাদেশের ৫১ ও ভারতের ১১১) ছিটমহলের অধিবাসীরা অতঃপর দ্রুত তাদের নাগরিক অধিকার ফিরে পাক, পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যে আপন ইচ্ছা অনুযায়ী তারা তাদের বসবাসের ঠিকানা খুঁজে নিক, উভয় দেশের অপদখলকৃত জমিগুলো উদ্ধার ও পুনর্বণ্টনের পর উভয় দেশের সীমান্ত স্থায়ী শান্তির এলাকা হিসেবে গণ্য হোক, কাঁটাতারের বেড়া উঠে যাক, সেই সঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশও বন্ধ হোক, বিএসএফ বা বিডিআর কাউকে যেন আর গুলি ছুঁড়তে না হয়, এই কামনা আমাদের। তবে দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা সমাধানের তাগিদ থেকে যতটা না, তার চেয়ে বেশি মনে হয়, ভারতের ‘জাতীয় স্বার্থে’ বিজেপি-কংগ্রেস-কমিউনিস্ট নির্বিশেষে সবকটি রাজনৈতিক দল আজ শূন্য-বিরোধিতা ভোটে পার্লামেন্টে এই বিলটি পাস করিয়ে দিল (সংসদে বিলটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এই ‘জাতীয় স্বার্থে’র কথা খোদ ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজই বলেছেন)। নিকট অতীতে, একমাত্র ১৯৭১ এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়টি ছাড়া, আর কখনো এই দলগুলো সংসদে বা সংসদের বাইরে কোনো বিষয়ে এ রকম ঐকমত্যের পরিচয় দিয়েছে বলে মনে পড়ে না। এমন কি এই মুহূর্তেও ভূমি অধিগ্রহণ বিলসহ নানা ব্যাপারে কংগ্রেস, তৃণমূল, কমিউনিস্ট, সমাজবাদী প্রভৃতি দল ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে কী তাদের ‘জাতীয় স্বার্থ’ যা পার্লামেন্টের প্রকাশ্য বিতর্কের আগে বা তার বাইরে তাদের নেপথ্য সমঝোতাকে সম্ভব করে তুলল? আর তা এই সময়ে এসে? কৌতূহলী ও চিন্তাশীল মানুষের মনে এ প্রশ্নটা জাগা কি স্বাভাবিক নয়? আগামী দিনগুলোতে হয়তো এ-প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে।বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলীয় নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ভারতীয় পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল পাসের এই ঘটনাটিকে তাঁদের সরকারের সাফল্য বলে দাবি করেছেন। অবশ্যই তাঁরা তা করতে পারেন। এমনিতেও রাজনীতিকরা সাধারণত তাঁদের শাসনামলে ঘটা যে-কোনো ভালো ঘটনার কৃতিত্ব নিজেরা নেন, আর খারাপ যা কিছু তার দায়দায়িত্ব বিরোধীদের ওপর চাপিয়ে দেন। বিশেষ করে আমাদের দেশে সব সময় এমনটাই দেখা যায়। নিশ্চয় ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত সমস্যার নিষ্পত্তি, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন ইত্যাদির মতো ব্যাপারগুলোতে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের ভূমিকার আমরা ভূয়সী প্রশংসা করব। এ বিষয়গুলোতে তাঁর সরকার জাতীয় স্বার্থরক্ষায় যে অনমনীয়তার পরিচয় দিয়েছে, দরকষাকষির ক্ষেত্রে যে সামর্থ্য দেখিয়েছে, তা যে কোনো স্বাধীন দেশের পররাষ্ট্রনীতির জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটাকে যখন কেউ এভাবে ব্যাখ্যা করতে চান যে, বাংলাদেশের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ আছে বলেই ভারত সীমান্ত চুক্তি বিল পাসের উদ্যোগ নিয়েছে ও সেদেশের পার্লামেন্ট তা পাস করেছে, তখন তাঁদের সে বক্তব্যের পেছনে যে মনোভাব সক্রিয় থাকে, তা আমাদেরকে শঙ্কিত করে তোলে। তাদের বক্তব্য সত্যি হলে, সে ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অভিপ্রায় এবং চুক্তি বাস্তবায়নে সদিচ্ছার মাত্রা নিয়েও সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগের বদলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো দল বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে তখন কি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া থেমে যাবে? এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে এখানে অতীত একটি ঘটনার উল্লেখ করতে চাই। আমরা জানি, ভারত ও পাকিস্তান এ দুটি দেশের সম্পর্ক প্রায় স্থায়ী বৈরিতার। দুটি দেশের জন্মের ইতিহাসের মধ্যেই সে বৈরিতার বীজ নিহিত। উপরন্তু কাশ্মীর সমস্যা দুটি দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে আজও এক বড় বাধা হয়ে রয়েছে। পাকিস্তান প্রথম থেকেই অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়ে এবং কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকানি ও সাহায্য-সহায়তা দিয়ে সমস্যাটিকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করেছে। তবে কাশ্মীর সমস্যার জন্য পাকিস্তানকে একা দায়ী করাও ঠিক হবে না। যদি আমরা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবটি (১৯৪৮) অগ্রাহ্য করার ক্ষেত্রে নেহেরু বা ভারত সরকারের একগুঁয়েমির কথাটি মনে রাখি। যাই হোক, ১৯৭১ এর বাংলাদেশ সংকটেরও আগে শুধু কাশ্মীর নিয়েই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দু-দুটো যুদ্ধ হয়েছে। অথচ কাশ্মীর ও অন্যান্য প্রশ্নে এই বিবাদ ও বৈরিতার মধ্যেই ১৯৬০ সালে পাকিস্তান ও ভারত সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ও প্রধানমন্ত্রী নেহেরু তাঁদের নিজ নিজ দেশের পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। একে পৃথিবীর খুব কার্যকর পানিবণ্টন চুক্তির একটি বলে গণ্য করা হয়। এই চুক্তির ফলে সকল মওসুমে পাকিস্তানের পশ্চিমাংশে সিন্ধু নদীর অবাধ পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। বিশ্বব্যাংক এই সমঝোতার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করলেও, পাকিস্তান তার ‘জাতীয় স্বার্থ’কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার ফলেই এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হয়েছিল। কাশ্মীর বা কচ্ছ কোনো সমস্যাই সেক্ষেত্রে তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। অথচ পাকিস্তানেরই পূর্বাংশে পদ্মা বা অন্যান্য নদীর পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে তেমন কোনো সমঝোতার চেষ্টা পুরো পাকিস্তান আমলে হয়নি। ফারাক্কায় ভারতের বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধেও কোনো শক্ত অবস্থান পাকিস্তান সরকার নেয় নি। কারণ পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যাকে তারা জাতীয় স্বার্থ হিসেবে দেখে নি। প্রতিটি দেশ, দেশের নেতৃবৃন্দ তাদের জাতীয় স্বার্থকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এমনটাই হয়ে আসছে সব সময়। সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদের বুলি আওড়েও রাশিয়া ও চীন কিন্তু তাই করেছে। আমেরিকা ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বায়নের স্লোগানও আসলে তাদের জাতীয় স্বার্থবুদ্ধি থেকেই। এটা ইতিমধ্যে প্রমাণিত সত্য। তাই ওসব দেশে সরকার বদলেও দেশগুলোর আর্থিক বাণিজ্যিক ও বৈদেশিক নীতির তেমন পরিবর্তন হয় না। দলমতের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে এই উপলব্ধি, আত্মসচেতনতা ও ঐক্যবোধ আমাদের মধ্যে দেখা দেবে কবে? দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়া ভারতের পার্লামেন্টে সীমান্ত চুক্তি বিল পাসের এই ঘটনাটিকে ত্বরিত ও দ্বিধাহীন কণ্ঠে স্বাগত জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটা একটা শুভলক্ষণ। ভারত বিভাগোত্তর দীর্ঘ ছয় দশকের অচলাবস্থা কাটিয়ে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া এই বিলটি যে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, এ সত্যকে কোনো দিক থেকেই অস্বীকারের সুযোগ নেই। আর যখন যারাই বাংলাদেশের বা ভারতের ক্ষমতায় থাকুক, ভারতের মতো একটি বৃহৎ প্রতিবেশী যার সঙ্গে আমাদের রয়েছে কয়েক হাজার মাইলের দীর্ঘ সীমান্ত, তার সঙ্গে বিরোধ জিইয়ে রেখে কিংবা তা নিষ্পত্তির সামান্যতম সম্ভাবনাকেও কাজে লাগানোর পরিবর্তে যাঁরা তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা ওঠাতে চান, তাঁদের দূরদর্শিতা বা বাস্তববুদ্ধি কোনোটারই আমরা প্রশংসা করতে পারব না। ভারতভীতি ও ভারতপ্রীতি দুয়েরই ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিক, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কসহ বৈদেশিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে এই মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গিই প্রাধান্য পাক, এটাই সকল অবস্থায় কাম্য।রাজ্যসভায় বিলটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এই বিল প্রণয়নের ব্যাপারে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বা তাঁর সরকারের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠিত হন নি। সরাসরিই তিনি বলেছেন, ‘এই বিল মনমোহনজিরই। তাঁর শুরু করা কাজ আমরা সম্পন্ন করলাম।’ লোকসভায় বিলটি পাসের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজ আসন থেকে নেমে প্রথমে বিরোধী কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর এবং তারপর একে একে বিরোধী অন্য সব দলের নেতার কাছে যান ও বিলটি পাসে সহযোগিতার জন্য তাঁদের অভিনন্দিত করেন। ১৯৯১ সালে আমাদের দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন বিল পাসের সময় অনেকটা এরকমই একটা দৃশ্য আমরা দেখেছিলাম। জাতীয় স্বার্থে আমাদের নেতৃবৃন্দকে আবার কখনো কি আমরা এমন ভূমিকায় দেখব? আমরা আশাবাদী হতে চাই। - See more at: Click This Link
false
hm
ভুতুড়ে গল্পঃ উকিলের ঘরে কুকিল ১. বৃষ্টিবাদলার দিন। সারাদিন কখনো টিপটিপ, কখনো ঝরঝর, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। দুলাল ঘ্যাঙাচ্ছিলো পরোটা দিয়ে গরুর মাংস খাওয়ার জন্য। সাথে কাঁচা পেঁয়াজ। একটু আচার। টেনে থাবড়া মারতে ইচ্ছা করছিলো, কিন্তু জিভের জল সংবরণের পাশাপাশি সেই জলে রাগটাকেও চুবিয়ে মারি। আর দৈব বিপাকে মোবাইলটাও ঝনঝন করে বেজে ওঠে অ্যাসিস্টেন্ট হেডমিস্ট্রেসের ধমকের মতো। ফোন তুলে চৌধুরীর হাসি হাসি গলা শুনি। "চলে আসুন।" বলেন তিনি। "আজ সারাদিন বৃষ্টিবাদল। গরম কিছু খাওয়া দরকার।" বাইরে উঁকি দিয়ে আকাশের আমার মতো কালোপানা মুখটা দেখি। "হ্যাঁ, মানে ... বৃষ্টি তো ...।" "পরোটা আর গরুর গোস্ত ভুনা কেমন চলবে? গুর্দাফ্যাপসাকলিজা সহ?" একটু পর দেখি রিকশায় আমি বিরসমুখে বসে, পাশে দুলালের বিকশিত খান চল্লিশেক দাঁত। অচিরেই আমরা চৌধুরীর বাড়ির সামনে অবতরণ করি। ছাতা গুটিয়ে রিকশা ভাড়া দিয়ে কয়েক তালা সিঁড়ি ভেঙে চৌধুরীর ঘরে শুধু কলিংবেলটা টিপেছি ... এমন সময় চারদিক অন্ধকার করে লোডশেডিং শুরু হলো। চৌধুরী দরজা খুললেন একটু বাদে, বৈদ্যুতিক বাতি হাতে। মুখচোখ হাসি হাসি। "আপনারা যে অপয়া তা মাঝে মাঝেই মনে হয়।" অমায়িক ভঙ্গিতে বললেন তিনি। "যখনই আসেন একটা না একটা দৈব গোলযোগ ঘটে। ভাগ্যিস সকালে উঠে আপনাদের দেখতে হয় না!" মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। "আপনিই না ফোন করে ...।" "হ্যাঁ। আরে ওসব পয়া অপয়ায় বিশ্বাস করলে চলে?" হাসেন তিনি খিলখিল করে। রাগটা একটু পড়ে আসতেই তিনি আবার শুরু করেন। "তবে রিগ্রেশন অ্যানালাইসিস বোঝেন তো? ধরুন, এমন যদি হয়, আপনাদের উপস্থিতি আর দৈব গোলযোগের ঘটন, দু'টা সবসময় একসাথে ঘটে, তাহলে আবার ... হেঁ হেঁ হেঁ ...।" দুলালের চামড়া মোটা দেখে সে এসব কানেই তোলে না, উৎফুল্ল গলায় বলে, "একটু চা খাই কী কন?" চৌধুরী উদার ভঙ্গিতে বাতিটা দুলালের হাতে ধরিয়ে দেন। "সবই তো চেনেন? রান্নাঘর, কাবার্ড, দুধের কৌটা, চাপাতার কৌটা, চিনির কৌটা, এলাচের কৌটা ... শুধু বাতি ফেলে দেখে নেবেন আর বানাবেন। তিন কাপ।" বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা না করে চৌধুরী কাটাকুটিতে মনোনিবেশের বুদ্ধি দেন চায়ের কাপ তুলে নিয়ে। "পেঁয়াজ কাটুন। একেবারে সরু মিহি মসলিন কুচি। একেবারে স্বচ্ছ করে ফেলুন পেঁয়াজের ফালিগুলোকে। মন দিয়ে, গতর খাটিয়ে কাটুন।" আমাকেই বেশি স্নেহ করেন চৌধুরী। "আর দুলাল, আপনি গোস্ত কাটুন। ছোট ছোট টুকরো করবেন। লুডুর ছক্কার সাইজের। তাহলে মশলা গিয়ে ঠিকমতো ঠুকবে।" "আপনি পরোটা বানাবেন?" আমার মুখ ফসকে প্রশ্ন বেরিয়ে যায়। "আপনাদের মতো দু'জন কর্মঠ ইয়ংম্যান থাকতে আবার আমি কেন ... হেঁ হেঁ হেঁ ...।" চৌধুরী আরাম করে বসেন একটা টুলের ওপর। আমি পেঁয়াজ নিয়ে ছুলতে থাকি চুপচাপ। চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন, "আজ আবহাওয়াটা খুব নস্টালজিক, বুঝলেন? একটা ভুতুড়ে ভাবসাব আছে। এই যে স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার চারদিক, এমনটা হলেই আমার মনে পড়ে যায় আমার বন্ধু আহাম্মদ আলি আকন্দ আর আরাফাত হাবিবের কথা ...।" ২. আমি আর দুলাল খাটতে খাটতেই চৌধুরীর গল্প শুনতে থাকি চুপচাপ। জানতে পারি, চৌধুরীর নাকি মধ্যযৌবনে দুই বন্ধু ছিলো। চৌধুরীর এখনকার বয়েস আন্দাজ করতে গেলে বলতে হয়, সে বহু আগের কথা। যা-ই হোক, তাদের নাম ছিলো যথাক্রমে আহাম্মদ আলি আকন্দ ও আরাফাত হাবিব। আহাম্মদ আলি আকন্দ ছিলো দুঁদে সাংবাদিক, দেশের প্রথম পাঁচজন টেলিপ্রিন্টার ব্যবহার করা সাংবাদিকদের একজন, তাবড় তাবড় লোকজন তার ভয়ে থরহরিকম্প হয়ে থাকতো। আহাম্মদ আলি আকন্দ পত্রিকায় কারো নামে প্রতিবেদন ঠুকে দিলে তার আর রেহাই ছিলো না। ভীষণ কড়া ছিলো তার লেখনী, ধারে আর ভারে একেবারে হাড়েহাড়ে কাটতো। এমন কোন বদলোক এলাকায় ছিলো না যে আহাম্মদ আলি আকন্দকে সমঝে না চলতো। বিদেশী এক বেয়াদব টেলিফোনকোম্পানীকে তো আহাম্মদ আলি আকন্দ বলতে গেলেই একাই লড়ে দেশছাড়া করেছিলো। এমনই ভয় পেয়েছিলো সেই দুইনাম্বারের দল, যে পাশে ভারত বা বার্মাতেও ব্যবসা খুলতে সাহস পায়নি, এমনই তেজ আর তান্ডব ছিলো আকন্দের কলমে। ওদিকে আরাফাত হাবিব ছিলো দুঁদে উকিল। অল্প বয়সেই মারাত্মক ছিলো তার পসার। মফস্বলের সেই শহরে কোন বেসামাল মোকদ্দমায় ফাঁসার আরেক অর্থ ছিলো আরাফাত হাবিবের শরণাপন্ন হওয়া। বাঘা বাঘা হাকিমরাও আরাফাত হাবিবের সামনে কেঁচো হয়ে কুঁকড়েমুকড়ে থাকতো। বদলোকের বদকাজের ভরসাই ছিলো আরাফাত হাবিব। দিনেদুপুরে শ'খানেক লোকের সামনে খুন করার পরেও কেবল আরাফাত হাবিবকে উকিল ধরে বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে, এমন লোক খুঁজলে এখনও জীবিত পাওয়া যাবে প্রচুর। ওদিকে নিরীহ স্কুলমাস্টারকে ব্যাঙ্ক ডাকাতির অভিযোগে বারো বছর ঘানি টানানোও ছিলো আরাফাত হাবিবের জন্যে ছেলেখেলা, স্থানীয় স্কুলের মাস্টাররা সর্বদাই তাই তটস্থ হয়ে থাকতেন। দু'জনে ছিলো ছেলেবেলার বন্ধু। একই স্কুলে একই কলেজে লেখাপড়া, একই মেয়ের সাথে প্রেম করতে গিয়ে ছ্যাঁকা খাওয়া দুই হরিহরাত্মা ছিলো তারা। একই শুঁড়িখানায় একই বোতলের মদ দুই গেলাসে ঢেলে তারা বহুবার খেয়েছে। দু'জনেই দেখতে ছিলো ভিলেনের মতো। আহাম্মদ আলি আকন্দের কপালে ছিলো এক নিদারুণ আঁচিল, আর আরাফাত হাবিবের ছিলো রোমশ জোড়া ভুরু। এহেন বদলোকের সাথে চৌধুরীর বন্ধুত্ব নিয়ে কিছু বলতে যাবো, কিন্তু থেমে গিয়ে পেঁয়াজ কুচাতে থাকি। বিচিত্র কিছু তো নয়! দু'জনেরই সমস্যা ছিলো এক। সুন্দরী মেয়ে বা মহিলা দেখলেই তাদের নানা কুমতলব মাথাচাঁড়া দিতো। আহাম্মদ আলি আকন্দ মাঝে মাঝে উঠতি নায়িকাদের বাড়িতে অসময়ে বেনামী ফোন দিয়ে খোশগল্পের চেষ্টা করতো, মিটিংফাংশনে পরিচয় লুকিয়ে চিঠিচিরকুট পাঠাতো। আর আরাফাত হাবিব চেষ্টা করতো নিত্যনতুন স্যুটকোটটাই পড়ে সুন্দরী মেয়েদের সাথে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে। বড় দুইদিস্তার একখানা অ্যালবাম সে প্রায় বোঝাই করে এনেছিলো সেসব গাঘেঁষা ছবি দিয়ে। কিন্তু যত দিন যায়, আহাম্মদ আলি আকন্দ আর আরাফাত হাবিবের পরিবার থেকে চাপ আসতে থাকে বিয়ে-থা করে সংসারী হবার জন্যে। আহাম্মদ আলি আকন্দের বাবা মরার আগে নাতির মুখ দেখে যাবার জন্যে একরকম মারাত্মক গোঁ ধরে বসেন। ওদিকে আরাফাত হাবিবের মা-ও মৃত্যুর আগে নাতনিদর্শনের এক মর্মান্তিক আব্দার ফেঁদে বসেন। পরিবারের চাপে আকন্দ ও হাবিব, দু'জনেই নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। যদিও হাবিব আকন্দকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, "সন্তানকে বাৎসল্য দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের প্রবণতা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে, নিবারণে চাই কঠোর আইন" শিরোনামে একটি আর্টিকেল দেশের বড় একটি দৈনিকে ঠুকে দিতে। আকন্দ রাজি হননি, যদিও তিনি হাবিবোদ্ধারের মহতী উদ্দেশ্যে "মৃত্যুর আগে নাতনিদর্শনঃ মায়েদের স্বার্থোদ্ধারের কূটকৌশল" শিরোনামে একটি আর্টিকেল প্রায় গুছিয়ে এনেছিলেন। আকন্দ তার আঁচিল পাকিয়ে তাকিয়ে বললেন, "ভাই হেবো, এই স্ফূর্তিময় জীবনে মনে হয় একটি দাঁড়ি যোগ করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে। চলো আর গিয়ানজাম না করে একটি সরলস্বভাবা নারীকে বিবাহ করে সংসারধর্ম পালন করি। রবি ঠাকুরের ইশটাইলে প্রচুর সন্তানাদি উৎপাদন করে মহিলাকে সংসারের ঘানিগাছ ঠেলতে দিয়ে বছর পাঁচেক পর নাহয় আবার এই স্ফূর্তিময় জীবনে পুনর্প্রবেশ করবো। তখন আরশ কাঁপিয়ে দিবো! এমন ঝাঁকুনি লাগবে যে ঈশ্বর পড়ে গিয়ে বুড়ো হাড়ে চোট পাবেন!" হাবিব তার জোড়া জঙ্গুলে ভুরু কুঁচকে বললেন, "দোস্ত আক্কু, এই রঙিন নেশারু রাত্রিগুলির ওপর রুলজারি করতে হবে। চলো ভোলাভালা একটি রমণীকে মুসলিম আইন অনুযায়ী শাদী করে কাবিননামা দেখিয়ে বাপমাকে আগে শান্ত করি। এক বা একাধিক সন্তানের ট্যাঁওট্যাঁও কান্না শুনিয়ে তাঁদের সংক্ষুব্ধ চিত্তে একটু ঠান্ডা পানি ঢালি। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলিকে রদ করে রাখলে অচিরেই প্রচুর সন্তানাদি উৎপন্ন হয়ে স্ত্রীকে সাংসারিক কৃত্যাদিতে ব্যস্ত করার পর নাহয় আবার শুঁড়িখানা প্রমোদালয় গরম করবো। তখন আরশ কাঁপিয়ে দেবো। এমন লাড়া লাগাবো যে ঈশ্বর সীটবেল্ট বেঁধে বসবেন!" দুই বাল্যবন্ধু এক হপ্তার ব্যবধানে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়লেন। প্রথমে কবুলমন্ত্র আবৃত্তি করে উত্তেজনায় ভরপুর ব্যাচেলর জীবনের খাতা থেকে নাম কাটিয়ে নিলেন আহাম্মদ আলি আকন্দ। বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন আরাফাত হাবিব। বিয়ের মঞ্চে বসে তিনি আকন্দকে বললেন, "আক্কু, তুমি তো ভাগ্যবান হে! সারাজীবন বদমায়েশি করে এসে এমন পরীর মতো সুন্দরী বৌ পেলে!" আকন্দ কিছু বললেন না। বৌ খুব বেশি পছন্দ হয়নি তার। পরের হপ্তায় আরাফাত হাবিব মুখে রুমাল গুঁজে বরযাত্রার অগ্রভাগে চললেন। বিয়ের মঞ্চে বসে আকন্দ তার কানে কানে বললেন, "দোস্ত, তুমি তো কামাল কর দিয়া! সারাজীবন ধ্যাষ্টামো করে এসে এমন নায়িকার মতো ঝলমলে বৌ পেলে!" হাবিব জোড়া ভুরু কুঁচকে তাকালেন কেবল, কিছু বললেন না। বৌ খুব বেশি পছন্দ হয়নি তার। ৩. দুলাল সোৎসাহে মাংস কাটা শেষ করে বললো, "তারপর তারপর?" চৌধুরী চায়ের কাপ নামিয়ে বললেন, "তারপর পরোটার লেই থেকে টুকরো টুকরো করে খাবলে নিয়ে এই বেলনটা দিয়ে গোলগাল পরোটা বেলতে থাকুন। বাংলাদেশের ম্যাপ বানালে চলবে না। পরোটা হতে হবে গোলগাল, আকন্দ আর হাবিবের বৌদের মতো।" দুলাল থতমত খেয়ে লেইয়ের থালাটা হাতে নিয়ে বেলনকাঠ খুঁজতে লাগলো। আমি পেঁয়াজ কুচাতে লাগলাম, তারপর কী হলো আর জানতে চাইলাম না। চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন, "কৌতূহল কম থাকলেই কি আর খাটনি থেকে রেহাই পাওয়া যায়? পেঁয়াজ কুচানো শেষ হলে রসুন আর আদা কুচিয়ে ফেলুন। একেবারে পাউডার বানিয়ে ফেলুন।" ৪. খাটতে খাটতেই শুনতে থাকি আকন্দ আর হাবিবের জীবনকাহিনী। সরলস্বভাবা নারী বিবাহের এরাদা থাকলেও আকন্দ আর হাবিব, উভয়েরই ললাটলিখনে অতিশয় কূটবুদ্ধিসম্পন্না দুই রমণীর বায়োডেটা ২০ সাইজের ফন্টে বোল্ড ফরম্যাটে লিখিত ছিলো। আকন্দের স্ত্রী, যার নাম চৌধুরী ভুলে গিয়েছিলেন বলে গল্পে তাকে আক্কুনি বলে চালিয়ে দিতে চাইলেন, ছিলেন চলিত অর্থে রূপসী ও খরবুদ্ধিসম্পন্না। হাবিবের স্ত্রী, যার নাম বিস্মৃত হয়েছেন বলে চৌধুরী তাকে হেবোনি বলে উল্লেখ করতে চাইলেন, তিনিও ছিলেন অনুরূপ রূপবতী ও বুদ্ধিমতী। আকন্দ অনুভব করলেন, তার স্ত্রী আক্কুনির জিহ্বা তার কলমের চেয়ে কোন অংশে কম তীক্ষ্ণ নয়, সেটিও ভারে-ধারে প্রতিপক্ষকে একেবারে ফর্দাফাই করে ছাড়ে। ওদিকে হাবিব দেখলেন, জীবনের এই মামলায় তিনি একেবারে সানডেমানডে কোলোজ করে হারছেন, তার বৌ হেবোনির উকিলি বুদ্ধি তারচেয়ে বহুগুণে শাণিত, পদে পদে নানা আবছা কালাকানুনের প্যাঁচ মেরে মেরে তিনি হাবিবকে পর্যুদস্ত করে ছাড়ছেন। আকন্দ আর হাবিব পরস্পরের জানি দোস্ত হলেও তাদের স্ত্রীদের মধ্যে কোন সখ্যতা গড়ে উঠলো না। আক্কুনি প্রায়শই আকন্দকে হাবিবের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করতে লাগলেন, এবং হেবোনির নানা ত্রুটি ফলাও করে ব্যাখ্যা করতে লাগলেন। এসব আলোচনা শয্যায় হতো বলে বেশিরভাগ সময় আকন্দকে আক্কুনির বক্তব্যে সম্মতিজ্ঞাপন করে উত্তমজাঝাবাদ জানাতে হতো, অন্যথায় আক্কুনি প্যারাসিটামলঘাতী, জিত্যাসপিরিন এক অচিন্ত্যনীয় অসহনীয় মাথাব্যথায় আক্রান্ত হতেন। ওদিকে হেবোনির আচরণও কিছুটা আক্কুনির কার্যক্রমেরই কার্বনকপি হিসেবে বিবেচনার যোগ্য ছিলো, তিনিও বছরের যেসব ঋতুতে শয্যায় একটু ঘনীভূত হয়ে শয়নের তাগিদ জোরদার হয়, সেসব ঋতুতে হাবিবকে তার বন্ধু আকন্দের নানা দোষ সম্পর্কে আলোকিত করতেন, আর আক্কুনির সাথে যে কলতলায় সমবেত গাগরীভারাবনতা মুখরা মাগীদের কোন পার্থক্য নেই, সে ব্যাপারে বিশদ যুক্তিবিস্তারে সচেষ্ট থাকতেন। ঐকমত্যে না পৌঁছালে তিনি হাবিবকে শয্যাত্যাগ করে মেঝেতে শুতে বাধ্য করতেন। ফলে বছরখানেক অতিক্রান্ত হবার পর দুই বন্ধুর দোস্তি শীতল ও শিথিল হয়ে এলো। তারা আর বিবাহিত জীবনের শুরুতে যেমন মাঝে মাঝে বৌদের খরচক্ষু ফাঁকি দিয়ে শুঁড়িখানায় কয়েক পাত্র মেরে আসতেন, তেমন প্রীতিসাক্ষাতে মিলিত হতে পারতেন না। কদাচিৎ আকন্দ অফিসের পর একটি আধপাঁইটের বোতল চটের ব্যাগবন্দী করে সন্তর্পণে হাবিবের চেম্বারে ঢুকতেন, কিংবা হাবিব লাঞ্চব্রেকে আকন্দের অফিসে একটি শিশুতোষ আকৃতির মদের বোতল নিয়ে বন্ধুসাক্ষাতে আসতেন। আক্কুনি আর হেবোনি কোন দাওয়াত-ফাংশন-সম্মেলনে মুখোমুখি হলে পরস্পরকে অতিশীতল ভঙ্গিতে গ্রহণ করতেন। দু'জনেই সম্ভাব্য সকলরকম প্রকাশ্য অলঙ্কারে ভূষিত হয়ে অপরকে হিংসায় জর্জরিত করার চেষ্টা করতেন, জনান্তিকে নানা তির্যক মন্তব্য করে প্রতিপক্ষকে খাটো করার চেষ্টা করতেন। তবে বড় কোন পারমাণবিক হলোকস্ট তারা ঘটাননি, বা ঘটাতে পারেননি। দিন এভাবেই যাচ্ছিলো। কিন্তু দুলালের পরোটা বেলার উৎসাহে ভাঁটা পড়ায়, আর আমার আদারসুন কুচিয়ে চূর্ণীকরণ মোটামুটি সমাপ্তি পাওয়ায় চৌধুরী দিনের গতিতে রাশ টেনে কাঁচামরিচ ধরিয়ে দিলেন গোটাবিশেক। "লম্বালম্বি ফাড়ুন। ব্যাঙ কাটার মতো শুধু মাঝে পুঁচিয়ে রেখে দেবেন না। একেবারে দুইভাগে ভাগ করে ফেলুন উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার মতো।" দুলাল বেলন রেখে একটু জিরোচ্ছিলো, চৌধুরী তাকে মিষ্টি হেসে বললেন, "হাঁপিয়ে গেছেন? মেয়েদের পরোটা বেলতে দেখেননি বোধহয়? আমাদের মাখালারা তো শ'খানেক পরোটা বেলতেন। অবশ্য আপনারা পেলব শহুরে নওজোয়ান, বড়সড় একটা রজনীগন্ধার ডাঁট বাগিয়ে একটা বাড়ি দিলে মূর্ছা যাবেন ...।" দুলাল আবার ঘ্যাঁচাঘ্যাঁচ পরোটা বেলতে বেলতে বললো, "তারপর?" তারপর একদিন ঘটলো এক কিমাশ্চর্যম। হাবিব আকন্দের অফিসে একটি প্রমাণ আকন্দোচিত কলেবরের বোতল নিয়ে এসে হাজির। "দোস্ত আক্কু!" উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন হাবিব। "আসো সেলিব্রেট করি!" আকন্দ চোখ থেকে চশমা খুলে বললেন, "কিভাবে মরলো?" হাবিব থতমত খেয়ে বললেন. "কে মরবে?" আকন্দ সামলে নিয়ে বললেন, "না ... মানে, ঐ আর কি ... তা সুখবরটা কী?" হাবিব বললেন, "বাচ্চা হবে দোস্ত! অবশেষে পরওয়ারদিগার কেশছেদন বাদ দিয়ে একখানা কাজের কাজ সম্পন্ন করেছেন! বৌ সামনে কয়েকটা বছর বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে! একটু শান্তির মুখ দেখতে পাবো!" আকন্দের মনে আনুষঙ্গিক আপদের ভাবনা এলেও এই শুভলগ্নে তিনি আর খোঁচ ধরলেন না, বড় দুইখানা গেলাস বার করলেন আলমারি থেকে। পরের হপ্তায় আকন্দ হাবিবের চেম্বারে একটি হাবিবসম্ভব আকারের দারুর বোতল নিয়ে তশরিফ রাখলেন। হাবিব ফাইল থেকে চোখ তুলে বললেন, "কত ধারায় ফাঁসাতে হবে?" আকন্দ থতমত খেয়ে বললেন, "কাকে ফাঁসাতে চাও?" হাবিব সামলে নিয়ে বললেন, "না ... মানে, ভাবছিলাম আর কি ... তা ঘটনা কী?" আকন্দ উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন, "বাপ হতে যাচ্ছি দোস্ত! সামনে কয়েকটা বছর বৌ বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, আমাকে জ্বালানোর ফুরসতই পাবে না! আজ ফির জিনেকি তামান্না হায় ... ও ও ও ও ও ও ...!" হাবিব ভাবলেন, আকন্দকে বুঝিয়ে বলবেন, যে সামনের ক'টা দিন গর্ভবতী বৌ আকন্দের জীবন আরো কড়া আঁচে ডুবো তেলে ভাজবে, বাচ্চা হবার পর তো কড়াই থেকে সোজা উনুনে ... কিন্তু সাতপাঁচ ভেবে সামলে নিয়ে তিনি ড্রয়ার থেকে দু'টো বড় গেলাস বার করলেন। ৫. কড়াইয়ে তেল ছেড়ে দিয়ে চৌধুরী পরোটার আকার নিয়ে দুলালের সাথে তর্ক করতে লাগলেন। "আপনার এই পরোটাটি মোটেও ভদ্রজনোচিত হয়নি। সজারুর মতো হয়েছে।" একটা পরোটা তিনি বাতিল করে দিলেন। আরেকটা দেখে পাসমার্ক দিলেন এই বলে, "এটা কিছুটা ঠিকাছে, গর্ভবতী অবস্থায় হেবোনির মতোই লাগছে দেখতে।" আরেকটাকে তিনি গ্রেসমার্ক দিয়ে ছাড়পত্র দিলেন, "এটা যদিও আকন্দের আলমারিতে রাখা মালের বোতলের মতো হয়েছে দেখতে, তবে খেতে খারাপ লাগবে না।" এভাবে বাকিগুলো যথাক্রমে পাস বা ফেল করে ভাজার থালায় পড়লো বা বেলনকাঠের সংশোধনাগারে চড়লো। আমার কাজ শেষ, তাই বললাম, "তারপর কী হলো?" চৌধুরী উদাস হয়ে আবার গল্প শুরু করলেন। ৬. দিন যাচ্ছিলো। আকন্দ আর হাবিবের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছিলো, গর্ভবতী অবস্থায় তাদের স্ত্রীরা আরো হিংস্র ও পূর্বাভাষের অযোগ্য হয়ে পড়লেন। বছরখানেকের বিবাহিত জীবনে যেসব ইশারাইঙিত অনুধাবন করে প্রিয়েমটিভ স্ট্রাইকের কলাকৌশল আকন্দ আর হাবিব শিখেছিলেন, তা সবই জলে বিসর্জিত হলো। দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা আক্কুনি ও হেবোনি নানা অনুযোগ, অভিযোগ, আর্তনাদ ও আব্দারে তাদের দু'জনকে ব্যতিব্যস্ত করে ছাড়লেন। আকন্দ যেচে পড়ে হাবিবের নামে গালমন্দ করে এবং হেবোনির রুচিবোধের নিন্দাবাদ করে আক্কুনিকে বশ করার চেষ্টা করলেন, আক্কুনি তাতে একরাতের মতো সন্তুষ্টিবাচক নীরবতা পালন করলেও পরদিন আবার অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেন। হাবিবও আকন্দের অজান্তে স্বাধীনভাবে বন্ধুগীবতের পথটি আবিষ্কার করে কিছুদূর তাতে হেঁটে একরাতের মতো স্বস্তি পেলেন, কিন্তু হেবোনি পরদিন ভোরেই আবার লেলিহান শিখা বাগিয়ে তেড়ে এলেন। আকন্দ অফিসে প্যাটারনিটি লিভ দাবি করে বিফল হয়ে পত্রিকায় এ নিয়ে জোর লেখালেখি শুরু করলেন, অন্তত পাঁচমাসের প্যাটারনিটি লিভ যে প্রতিটি পিতৃত্বলব্ধ পুরুষের অবশ্যপ্রাপ্য, তা নিয়ে অনলবর্ষী সব আর্টিকেল লিখে চললেন। ওদিকে হাবিব স্থানীয় বদলোকদের হাতেপায়ে ধরে তাদের পাঁচটা মাসের জন্যে পেজোমি একটু থামাতে অনুরোধ জানিয়ে বিফল হয়ে আদালতে ঘুরঘুর করতে লাগলেন মোকদ্দমার তারিখগুলো একটু গ্যাপ দিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে। স্থানীয় স্কুলের মাস্টাররা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। সন্তানপ্রসবের মাস দু'য়েক আগে আক্কুনি আর হেবোনি তাদের পিত্রালয়ে যাত্রা করলেন। বৌদের বাপের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসে আকন্দ আর হাবিব বিবাহের পর প্রথমবারের মতো ভোর পর্যন্ত স্থানীয় গোপন মদের আড্ডায় একেবারে চুরচুর হয়ে মাল টেনে বাড়ি ফিরলেন। তারপর একদিন আকন্দ শ্বশুরবাড়ি থেকে খবর পেলেন, তার একটি কন্যা জন্মেছে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাবিবকে ফোনে এ সংবাদ জানাতে গিয়ে তিনি শুনলেন, হাবিব একটি পুত্রের জনক হয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতে ছুটে গিয়ে সদ্যোজাত কন্যাকে পরম স্নেহে কোলে তুলে নিয়ে আকন্দ একটু থতমত খেলেন। দিব্যি ওঁয়া ওঁয়া করছে মেয়েটি, হাত পা চোখ নাক কান সবই ঠিকাছে, মায়ের মতোই ফর্সা হয়েছে সে, কিন্তু কী একটা হিসাব যেন মিলছে না! হাবিবও শ্বশুরবাড়িতে ছেলেকে কোলে নিয়ে চমকে উঠলেন। সদ্যপ্রসূত ছোকরাটি হাত পা নাড়ছে, তার চোখ নাক কান সবই ঠিকাছে, কিন্তু কোথায় যেন হিসাবে গরমিল রয়ে গেছে! পরদিন শ্বশুরবাড়ি থেকে গাড়ি চালিয়ে আসতে আসতে হঠাৎ আকন্দের মাথাটা দপদপ করে উঠলো। তিনি অ্যাকসিলারেটরে পা দাবিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চললেন হাবিবের বাড়ির দিকে। যখন পৌঁছলেন, তখন সন্ধ্যে হবো হবো করছে। হাবিবের বাড়িতে তখনও অন্ধকার। লোকজন সব হাবিবের শ্বশুরবাড়িতে। হাবিব বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে স্বাগত জানালেন বন্ধুকে। "দোস্ত আক্কু, কংগ্রাচুলেশনস!" উত্তরে আকন্দ একটা লোহার রড বাগিয়ে হাবিবের মাথার একেবারে মাঝখানে, জোড়াভুরুর মধ্যিখানে কষে একটা অন্তিম বাড়ি বসিয়ে দিলেন। সেই জোড়াভুরু, যা তার মেয়ের কপালেও শোভা পাচ্ছে! ৭. দুলাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, "জোড়াভুরু আছে তো কী হইছে?" চৌধুরী বঙ্কিম চোখে দুলালের দিকে তাকিয়ে কড়াইয়ের ভাজা পেঁয়াজের ওপর মাংস ঢাললেন। "বিশেষ কিছু হয়নি। বদলোকের মন তো ... কখন কু-ডাক দেয়, বলা মুশকিল!" আমি বললাম, "তারপর?" ৮. আকন্দ সেই লোহার রড দিয়ে চ্যাঙাব্যাঙা করে পেটালেন হাবিবকে। তার রাগ যখন পড়ে এলো, তখন দেখলেন, হাবিব আর বেঁচে নেই। আকন্দ পাকা লোক, তিনি হাবিবের লাশখানা হাবিবেরই বাড়ির পাশের বাগানে পুঁতে ফেললেন। গাড়িতে একটা বেলচা ছিলো, সেটা দিয়ে অতিদ্রুত বাগানের নরম মাটি খুঁড়ে তিনি হাবিবকে গাপ করলেন। তারপর ফিরে চললেন নিজের বাড়ির দিকে। বাড়ির কাছাকাছি এসে তিনি দেখলেন, বাড়িতে কোন আলো জ্বলছে না। জ্বলবে কিভাবে, লোকজন তো সবই তার শ্বশুরবাড়িতে। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে ঢুকে তিনি থমকে গেলেন। দেখলেন, তার বন্ধু হাবিব, যাকে তিনি একটু আগে বেধড়ক পেঁদিয়ে মেরে তারই বাগানে তালের আঁটির মতো পুঁতে রেখে এসেছেন, সে পাগলের মতো তার বাড়ির বাগানের মাটি খুঁড়ছে, পাশে পড়ে আছে একটা মৃতদেহ, সেটার নাকমুখ ঠিক আস্ত নেই, বাকি শরীরের মতো সেগুলোও থ্যাঁতলানো, কিন্তু কপালের মস্ত আঁচিলটা অক্ষত রয়েছে। আকন্দ বিকট এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। ৯. দুলাল রূদ্ধশ্বাসে বললো, "কন কী? কন কী হালায়?" চৌধুরী বললেন, "হুঁ। হাবিবের ছেলের কপালেও আঁচিল ছিলো!" আমি বললাম, "তারপর?" চৌধুরী বললেন, "তারপর আর কী! আকন্দ আর হাবিব, দুইজনেই সেই মফস্বল ছেড়ে চলে গেলেন অন্যত্র!" দুলাল বললো, "আপনে এই হিষ্টুরি জানলেন ক্যামতে?" চৌধুরী মৃদু হেসে একটা কিছু বলতে যাবেন, এমন সময় কারেন্ট আবার ফিরে এলো। তিনি বৈদ্যুতিক বাতিখানা নিবিয়ে দিয়ে বললেন, "সবকিছু কি আর ব্যাখ্যা করা যায় দুনিয়াতে? নিন, পরোটাগুলি ভাজতে শুরু করুন।" [সমাপ্ত। গেটলক।]
false
ij
None মুসলিম ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সলিম জায়েদপুরী ছিলেন সপ্তদশ শতকের মানুষ । তাঁর জন্ম ভারতের উত্তর প্রদেশের জায়েদপুরে। পরিনত বয়েসে তিনি বাংলার মালদহ জেলায় চলে আসেন। সেখানে মুনশি (লেখক) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তৎকালে মালদহের কর্মার্শিয়াল রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ উড্নীর-তার অধীন পোস্ট মাস্টারের চাকরি নেন সলিম। সলিম এর ছিল গবেষনায় আগ্রহী অনুসন্ধিৎসু মন । বিশেষ করে ইতিহাস-পুরাবৃত্তে আগ্রহ প্রবল। উড্নীর জানতে পারলেন গোলাম হোসেন সলিম প্রচুর পড়াশোনা করেন। বিশেষ করে ইতিহাস-বিষয়ে। ইংরেজ মননশীল জাত-উড্নীর তাঁকে বাংলার ইতিহাস লিখতে বলেন। ১৭৮৬ সালে সলিম বাংলার মুসলিম শাসনের ইতিহাস লিখতে শুরু করেন। রিয়াজ-উস-সালাতীন শব্দটি সংখ্যাসূচক রূপক। এর মানে ১৭৮৮। কারণ, ১৭৮৮ সালে সলিম এর বাংলার ইতিহাস লেখার কাজ শেষ হয়। ফারসি ভাষায় লেখা রিয়াজ-উস-সালাতীন বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গ্রন্থ। ১২০৪-০৫ সালে বখতিয়ার খলজীর নদীয়া বিজয় থেকে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ অবধি ঘটনাবলীর বিবরণ রয়েছে। তবে বাংলার ইতিহাসের কিছু কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা সলিম উল্লেখ করেন নি। বিশেষ করে মুগল বাংলার গৌরবময় অধ্যায় শায়েস্তা খান এর শাসনকাল সম্পর্কে তিনি কী কারণে নীরব থেকেছেন। যা হোক। গোলাম হোসেন সলিমের বড় কৃতিত্ব এই যে, তিনি মূলত মুসলিম বাংলার ঐতিহাসিক। তাঁর পূর্ববর্তী ঐতিহাসিকগন বাংলার সীমিত সময়ের বা বিশেষ বিশেষ দিকের ইতিহাস বর্ণনা করেন। কিন্তু সলিম তাঁর ইতিহাসে ধারাবাহিকভাবে বাংলায় প্রথম মুসলিম অভিযান থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত ঘটনাবলী বর্ননা করেছেন। রিয়াজ-উস-সালাতীন একটি আকর গ্রন্থ। পরবর্তীযুগের বাংলার ঐতিহাসিকগন তথ্যউপাত্তের জন্য গ্রন্থটির কাছে বারবার ফিরে গেছেন। বইটি পাঠকালে সলিম এর অভিজ্ঞ পেশাধারী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। রিয়াজ-উস-সালাতীন আটটি ভাগে বিভক্ত । ১. বাংলার সীমানা, ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং জনসংখ্যা; ২.বাংলার জনগনের উদ্ভব ও জীবন-যাত্রার নমুনা;৩. বাংলার কিছু নগরের বিবরণ; ৪.বাংলায় হিন্দু শাসনের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা; ৫. দিল্লির সুলতান ও তাঁদের নিয়োজিত গর্ভনরগন; ৬. বাংলার স্বাধীন সুলতানগন; ৭.বাংলায় মুগল শাসন ও ৮. বাংলায় পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজ জাতি ও বাংলায় ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা। বাংলার প্রথম আধুনিক ইতিহাস গ্রন্থ লেখেন ক্যাপ্টেন চার্লস স্টুয়ার্ট । তিনি তাঁর হিস্ট্রি অভ বেঙ্গল লেখার সময় রিয়াজ-উস-সালাতীন -এর ওপর নির্ভর করেন এবং অধ্যায়গুলি অনুরূপভাবে বিন্যস্ত করেন। ১৮১৭ সালে গোলাম হোসেন সলিম মৃত্যুবরণ করেন। মালদহ শহরে চক কোরবান আলী নামক এলাকায় তাঁর কবর। সৌভাগ্যক্রমে ইন্টারনেটে রিয়াজ-উস-সালাতীন বইটির ইংরেজি অনুবাদের পিডিএফ ভার্সানটি পেয়ে গেলাম। আপনাদের জন্য রিয়াজ-উস-সালাতীন ডাউনলোড লিঙ্ক ... http://www.mediafire.com/?ggetekingwm ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সলিম জায়েদপুরীর সম্পর্কে তথ্যের উৎস-বাংলাপেডিয়ার আবদুল করিমের লিখিত একটি নিবন্ধ ... সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:২২
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! রেজা ঘটক ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শনিবার। অমর একুশে বইমেলার আজ ছিল শেষ দিন। আজও মেলায় ছিল বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। আজ বই যেমন বিক্রি হয়েছে, তেমনি আড্ডাও হয়েছে লাগাতার। আড্ডায় সবার কথায় ঘুরে ফিরেই অভিজিতের হত্যা প্রসঙ্গ এসেছে। পুলিশ কেন নিরব ভূমিকায় ছিল, তা নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলেছে। একজন লেখককে এভাবে হত্যা করার পরেও বাংলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। যা সবাইকে খুব আহত করেছে। বাংলা একাডেমি জাতির মননের প্রতীক থেকে দিন দিন নপুংসকদের মত আচরণ করছে। অথচ এই বাংলা একাডেমি হেফাজতের নালিশের কারণে আগ বাড়িয়ে রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দিয়েছিল। এমন কি বিতর্কিত বইটি না পড়েই একাডেমি সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কেউ কেউ মন্তব্য করেন যে, রোদেলা প্রকাশনীকে বন্ধ করে দেওয়ার পর ধর্মান্ধরা আরো শক্তি পেয়েছে। এবারের বইমেলায়ও অনেকটা ২০০৪ সালের মত এক ভূতুরে পরিবেশ ছিল। যতই পুলিশ দাবি করুক গোটা ক্যাম্পাসে তিন-চার স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ছিল, কিন্তু হাজার হাজার মানুষের সামনে এভাবে অভিজিতকে সন্ত্রাসীরা হামলা করল, আর পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল, এখানেই পুলিশের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলেছে। বিষয়টি এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ইনভেস্টিগেশনে থাকায় অনেককেই এই বিষয়ে কথা বলতে অনাগ্রহীও দেখা গেছে। আজ অমর একুশে বইমেলায় বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে আলোচনার বিষয় ছিল 'নাট্যকার শম্ভুমিত্র'। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্প সমালোচক আবুল হাসনাত। আলোচক ছিলেন হাসান ইমাম, এস.এম. মহসীন এবং শাহাদাৎ হোসেন নিপু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।সন্ধ্যা ছয়টায় ছিল অমর একুশে বইমেলা ২০১৫-র সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বইমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫’র সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গ্রন্থমেলা আয়োজন সহযোগী টেলিটক বাংলাদেশের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ জুলফিকার হায়দার এবং লন্ডনে বাংলা একাডেমি বইমেলা আয়োজনের সংগঠক গোলাম মোস্তফা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, বইমেলার সম্মুখে মৌলবাদী ঘাতকচক্র যেভাবে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে, তাতে প্রমাণ হয় এ অন্ধকারের অপশক্তি জ্ঞান বা যুক্তি নয় বরং হত্যা, ঘৃণা ও সন্ত্রাসের পথে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চায়। অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পর, দু’দিন গ্রন্থমেলায় যে বিপুল জনসমাগম ঘটেছে, তা প্রকৃতপক্ষে এই হত্যাকাণ্ড এবং দেশে বিরাজমান সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। এবছর অমর একুশে বইমেলায় মোট ৩৮২৫টি নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। বাংলা একাডেমি এবারের মেলায় প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। আর প্রকাশকরা প্রায় ২২ কোটি টাকার বই বিক্রি করেছে। প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পরিচালিত 'সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৪' প্রদান করা হয় কবি ও কথাসাহিত্যিক ইকবাল হাসান এবং লেখক ও চিত্রশিল্পী সৈয়দ ইকবালকে। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক, পুষ্পস্তবক, সনদ এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।২০১৪ সালে সর্বাধিক সংখ্যক গুণমানসম্মত গ্রন্থ প্রকাশের জন্য মাওলা ব্রাদার্স-কে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’, মুর্তজা বশীরের আমার জীবন ও অন্যান্য গ্রন্থ প্রকাশের জন্যে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড এবং রবীন্দ্রসমগ্র খণ্ড-২৩ প্রকাশের জন্যে পাঠক সমাবেশ-কে ‘শহিদ মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৪ সালে সর্বাধিক সংখ্যক গুণমানসম্মত শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সময় প্রকাশন-কে ‘রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ হিসেবে পচিশ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড-কে বিশ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ এবং স্টল ক্যাটাগরিতে প্রথমা প্রকাশন এবং জ্যার্নিম্যান বুকস্-কে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ হিসেবে প্রত্যেককে পনের হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন প্রকাশক এবং পাঠক প্রজন্ম গড়ে উঠছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের ভিত্তি তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অশুভশক্তি যখন মুক্তচিন্তার দিকে ঘাতক হয়ে তেড়ে আসছে, তখন আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটি ২০১৫-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ ২৩ দফা সম্মিলিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। যেখানে দ্বিতীয় দফায় বাংলা একাডেমির ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করার কথা বলা হয়। যে সম্মেলন থেকে দেশের নতুন প্রজন্মের কবি-সাহিত্যিক-লেখকরা সত্যি সত্যিই কিছুই পায়নি। শুধুমাত্র লোক দেখানো এমন আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করে বাংলা একাডেমি গোটা জাতিকে মিডিয়ার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে একটি বড় ধরনের ধোকা দিয়েছে। দেশের নতুন প্রজন্মের কোনো কবি-লেখক এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন থেকে কিছুই অর্জন করতে পারেনি। প্রতিবেদনের চতুর্থ দফায় একাডেমি প্রাঙ্গনে যে ৩২টি শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি ইউনিট, ২৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪টি ইউনিট, ১৯টি মিডিয়া ও আইটি প্রতিষ্ঠানকে ২০টি ইউনিট এবং ১৭টি অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২২টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে হাতে গোনা তিন-চারটি শিশু-কিশোর প্রকাশনা ছাড়া বাকি প্রকাশনাগুলো শিশু-কিশোরদের জন্য এক ধরনের অখাদ্য-কুখাদ্য প্রকাশনা এবার মেলায় এনেছে। যে ২৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এবার মেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের সবারই নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র থাকা সত্বেও অমর একুশে বইমেলায় তাদের জন্য প্রতিবছর স্টল বরাদ্দ করার সত্যি সত্যিই কোনো যুক্তি নেই। কারণ প্রতিবছর এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান পুরনো বই বিক্রি করে থাকে। অমর একুশে বইমেলায় ১৯টি মিডিয়া ও আইটি প্রতিষ্ঠানকে এবং ১৭টি অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে যেসব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, বাংলা একাডেমি বরং এসব বরাদ্দ দিয়ে অমর একুশে বইমেলার পরিবেশ নষ্ট করেছে। মিডিয়া কেন বইমেলায় স্টল বরাদ্দ পাবে? বাংলা একাডেমি কোন যুক্তিতে মিডিয়াকে ১৯টি স্টল বরাদ্দ দিল, তারা সেসব স্টলে কি করেছে, তা মেলায় আগত সকল বইপ্রেমীরা সরাসরি দেখেছে। মেলায় আগত এসব মিডিয়া বরং মেলার সুন্দর পরিবেশকে একটি আবর্জনায় পরিনত করার চেষ্টা করেছে। প্রতিবেদনের নবম দফায় বলা হয় একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে দুটি লেখককুঞ্জ ছিল। এসব লেখককুঞ্জ বিশেষ করে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের লেখককুঞ্জে দেশের নবীন ও প্রবীণ লেখকেরা নিজেদের মধ্যে, প্রকাশক ও পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আড্ডায় অংশ নিয়েছেন। প্রকৃত সত্য হল, আমি মেলায় এবার মোট ২৬ দিন গেছি। কোনো দিন এসব কথিত লেখককুঞ্জে কোনো লেখক-প্রকাশককে আড্ডা দিতে দেখিনি। বরং এসব লেখককুঞ্জ মেলায় আগত রাম-শ্যাম-যদু-মধুরা নিজেদের ইচ্ছেমত বসেছে, আড্ডা দিয়েছে। বাংলা একাডেমির প্রতিবেদনের নবম দফায় উল্লেখিত এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতিবেদনের পনেরোতম দফায় বলা হয়, প্রতিবারের মতো এবারেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল নজরুল মঞ্চে। এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে অনেক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। নানা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নিয়েছেন। এবার অন্তত ২৭৫ টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এসবের খবর সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছে। প্রকৃত সত্য হল, এসব মোড়ক উন্মোচিত হওয়া বইগুলোর অন্তত শতকরা ৯৫ ভাগই অখাদ্য-কুখাদ্য ও আবর্জনা। বরং এভাবে অখাদ্য-কুখাদ্য বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে দেশের মন্ত্রী, সাংসদ, আমলা, কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীরা অংশ নিয়ে বই প্রকাশে অখাদ্য-কুখাদ্য বইকে এক ধরনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। যা বইমেলার নামে সাহিত্যের দিন দিন বারোটা বাজাচ্ছে। প্রতিবেদনের ষোলতম দফায় বলা হয়, ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিস্মৃতপ্রায় বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশের নবীন-প্রবীণ কবি-লেখক ও গবেষকবৃন্দ। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারি স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর এবং অমর একুশে বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন ছিল গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে। আসলে প্রতিবছরই বাংলা একাডেমি একুশের বইমেলায় যে সেমিনার বা আলোচনার নামে যে জ্ঞানগর্ব বিষয়টি উপস্থাপন করে, তা যে কতোটা বাস্তবতা বিবর্জিত, কতোটা অশালীন, কতোটা শ্রোতাবিমুখ, তা যদি কেউ সরাসরি না দেখে থাকেন, তাহলে বলব, এদের মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রতিবছর ফাঁকা চেয়ারের উদ্দেশ্য বা মেলায় আগত বইপ্রেমীদের যারা একটু বিশ্রাম নিতে ওসব ফাঁকা চেয়ারে বসেন, তাদের উদ্দেশ্যে এমন জ্ঞানগর্ব আলোচনা যে কতোটা দৃষ্টিকটু, কতোটা অসহায়, কতোটা হাস্যকার, এই বিষয়টা বুঝতে বাংলা একাডেমিকে আর কত হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে? যারা আলোচনায় অংশগ্রহন করেন, তাদেরও কি একটুও লজ্বা লাগে না???প্রতিবেদনের আঠারোতম দফায় বলা হয়, ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫’-এর নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে দুটি প্রকাশনীর স্টল বরাদ্দ বাতিল করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। কপিরাইট অফিসের সহায়তায় বই পাইরেসির বিরুদ্ধে গ্রহণ করা হয় বিশেষ ব্যবস্থা। এখানে একটি বিষয় আবারো উল্লেখ করা প্রয়োজন, রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দিয়ে বাংলা একাডেমি যে সরকারের পুতুল হিসেবে শুধু হুকুম পালন করেছে এবং বিতর্কিত বইটি যে তারা এখন পর্যন্ত ছুঁয়েও দেখেনি, তাহলে বাংলা একাডেমির এই সিদ্ধান্তটি কেমন ছিল, যা বইমেলায় ধর্মান্ধদের আরো উৎসাহিত করেছে। যারই ধারাবাহিকতায় লেখক অভিজিৎ রায়কে সন্ত্রাসীরা হত্যা করতে পেরেছে। বাংলা একাডেমি এই দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। প্রতিবেদনের বাঁইশতম দফায় একাডেমি কিছু সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে দায় এড়াতে চেয়েছে। সেগুলো হল-(১) টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তায় কোনো কোনো দিন সম্পূর্ণভাবে হকারমুক্ত রাখা যায়নি। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীদের সদস্যদের আন্তরিক চেষ্টা সত্বেও এক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল হয়নি বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে। (২) ভীড়ের দিনগুলোতে মেলায় প্রবেশ ও বহির্মুখগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলাফেরা করা যায় এমন অবস্থায় রাখা যায়নি। সেই দিনগুলোতে অনেকের কষ্ট হয়েছে। (৩) এবার মেলার পরিসর অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিছু প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে পূর্বদিকে যাঁরা ছিলেন তাঁদের কাছে পাঠক-বইপ্রেমীদের খুব সমাগম হয়নি। আমরা আগামী বছর এদিকটা বিবেচনায় রেখে নতুনভাবে পুরো স্থানটিকে বিন্যস্ত করার চেষ্টা করবো। (৪) আমরা জানি ৩ হাজারের বেশি নতুন বই এবার প্রকাশিত হয়েছে। তবে বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। সুন্দর পরিবেশ ও মানসম্মত বইই মেলার প্রাণশক্তি। মানসম্মত বই প্রকাশ করার ব্যাপারে লেখক-প্রকাশ-পাঠকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। এই বিষয় নিয়ে পরবর্তী কোনো লেখায় আমার বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে রইল।প্রতিবেদনের চৌদ্দতম দফায় বলা হয়, নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে ছিল ৭৫টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। অথচ পুলিশের সামনে সন্ত্রাসীরা লেখক অভিজিত রায়কে হত্যা করে নিরাপদে কেটে পড়তে সক্ষম হল। এখন পর্যন্ত পুলিশ অভিজিতের উপর হামলাকারীদের ধরতে পারেনি। তাহলে অমর একুশে বইমেলা নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ছিল, এই কথাটি কতোটা যৌক্তিক। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আরো বড় এরিয়া জুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে। গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যে পথ দিয়েই বইমেলায় প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ রয়েছে, সেই পথগুলোও যে ভবিষ্যতে নজরদারির আওতায় আনতে হবে, সেটি হয়তো তাদের নতুন করে পরিকল্পনায় নেওয়া উচিত। নতুবা কথিত নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয়টি কেবল লোক-দেখানো হবে। দেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংশতার ভেতরেও হাজার হাজার বইপ্রেমী মানুষ জীবনের নিরাপত্তার কথা আমলে না নিয়েও যে প্রতিদিন একুশের বইমেলায় গেছে, বইমেলাকে প্রাণবন্ত করেছে, তাদের বরং সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ ও সাধুবাদটি পাবার কথা। সরকার ও বাংলা একাডেমিকে অমর একুশে বইমেলা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এখন। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী একটি বইমেলা সামলাতে রাষ্ট্র এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং হাজার হাজার শ্রেণীপেশার মানুষ যে হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা ব্যয় করছে, এই হিসেবটি সবার আগে করা উচিত। একুশে বইমেলা মাসব্যাপী করে আমরা কি ফল পাচ্ছি? এবার অন্তত ৩৮২৫টি নতুন বই মেলায় প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে কয়টি বই গুণগত মানসম্পন্ন সেই প্রশ্নটি সবার আগে আসার কথা। মেলা উপলক্ষ্যে এতো বই প্রকাশ করার কি মানে আছে? এর মধ্যে কয়টি বই পড়ার যোগ্য? একুশের বইমেলাকে মিনিমাম সাতদিনের মধ্যে সীমিত করার পক্ষে আমি। মেলা উদ্ধোধন হতে পারে প্রতিবছর ১২ ফেব্রুয়ারি। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি এই সাতদিন চলবে অমর একুশে বইমেলা। এছাড়া গুণগত মানসম্মত বই প্রকাশের ব্যাপারে বাংলা একাডেমিকেই এগিয়ে আসতে হবে। লেখক-প্রকাশকদেরও আন্তরিক হতে হবে। হাজার হাজার অখাদ্য-কুখাদ্য বই প্রকাশ করে কি পাচ্ছি আমরা? আমাদের শিশুরা এসব আবর্জনা দিয়ে কি শিখবে? আমাদের মন্ত্রী, সাংসদ, আমলা, কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীরা যারা বইটি সম্পর্কে না জেনেই মোড়ক উন্মোচন করার জন্য এক পায়ে লাফিয়ে বেড়ান, তারা জাতিকে আসলে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে, এসব ভাবার হয়তো এখনই সময়। সরকারি প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দিয়ে বাংলা একাডেমি একুশের বইমেলাকে আবর্জনার স্তূপে পরিনত করছে। একুশের বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও একাডেমি প্রাঙ্গন এই দুইভাগে ভাগ হওয়ায়, প্রকৃত বইপ্রেমীদের আসল বইটি খুঁজতে এবারো অনেক কসরত করতে হয়েছে। অনেকে পছন্দের বইটি শেষ পর্যন্ত কিনতে পারেননি। যা কিনেছেন বা অনুরোধের ঢেকুর গিলে যে বইটি নিয়েছেন, তা কতোটা পাঠযোগ্য, এসব এখনই ভাবার সময়। নইলে এই জাতিকে কোনো দিন সত্যিকারের মানুষ বানানো যাবে না। প্রতিবেদনের তৃতীয় দফায় বলা হয়, বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে স্থাপিত হয় একটি সুউচ্চ টাওয়ার। এটি মেলার সামগ্রিক বিন্যাস ও সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যুক্ত করে। এই প্রসঙ্গে বলব, বাংলা একাডেমি চত্বরে টেলিটকের টাওয়ার স্থাপন করে একাডেমি যে অসভ্যতা করেছে, তা কারো রুচিতে লাগতে পারার কথা নয়। এবারের একুশের মেলায় সবচেয়ে ডিসটার্বিং এলিমেন্ট ছিল টেলিটকের সিম বিক্রি করা। মেলার স্পন্সর হয়ে তারা বইমেলার সকল সৌন্দর্য ধ্বংস করেছে। অনেকে বইমেলায় এসেছে কেবলমাত্র টেলিটকের সিম কেনার জন্য। মেলার শেষ দিন পর্যন্ত সিম কেনা ও ফরম পূরণের লম্বা লাইন ছিল। যাকে একাডেমি কোন রুচিতে সৌন্দর্য বলছে, এটা আমার ঠিক মাথায় আসে না। বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে টেলিটকের টাওয়ার অচিরেই সরিয়ে ফেলা হোক। দেশের সকল কবি-লেখক-প্রকাশক-পাঠক এবং সর্বস্তরের জনসাধারণকে আহবান জানাচ্ছি, বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে টেলিটকের টাওয়ার সরিয়ে ফেলার জোড়ালো আবেদন জানানোর জন্য। আগামীতে শুধুমাত্র একাডেমি চত্বরেই অমর একুশের বইমেলার আয়োজন করা হোক। প্রয়োজনে নতুন নীতিমালা করে মানসম্মত প্রকাশকদের শুধু স্টল বরাদ্দ করা হোক। ফেব্রুয়ারির অন্য দিনগুলোতে বা বছরের অন্য সময়ে অন্যান্য প্রকাশকদের নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলাদাভাবে বইমেলা আয়োজন করা যেতে পারে। নইলে অমর একুশের যে ঐতিহ্য ও গৌরব, তা দিনদিন টেলিটক বা স্পন্সর কোম্পানির টাকার আড়ালে প্রতিবছরই হারিয়ে যেতে বসেছে। এই জায়গাটি যদি সরকার ও বাংলা একাডেমি গুরুত্ব না দেয়, তাহলে আগামীতে অমর একুশে বইমেলা আরো আবর্জনায় ভরে যাবে। একাডেমি চত্বরে মাত্র ৩০০ টি প্রকাশনাকে স্টল বরাদ্দ দিয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করার কথা ভাবতে হবে। সেই ৩০০ জনকে জায়গা দেবার মত স্থান একাডেমি চত্বরেই রয়েছে। প্রকাশকরা তখন জানুয়ারি মাসেই তাদের নতুন বইয়ের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মেলার সাতদিন পাঠকদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে বাধ্য হবেন। বইপ্রেমীরাও সাতদিনের মধ্যে কোন কোন দিন মেলায় গিয়ে কি কি বই কিনবেন, তা আগেভাগেই ঠিক করে নিতে পারবেন। খামাখা গায়ে গায়ে ভিড় করে তো বই বিক্রি হচ্ছে না। আর অমর একুশে বইমেলা চলার সময়ে গোট দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত বারোয়ারি কোনো পসরা একদম এলাউ করা উচিত নয়। হকারদের সঙ্গেও কথা বলে জেনেছি, তারা পুলিশকে টাকা দিয়েই এই রাস্তায় বসার ব্যবস্থা করেছে। আবার পুলিশ উপরের নির্দেশ পেলে মাঝে মাঝে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ ও হকারদের এই সাপলুডু খেলাটি সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আজ বইমেলার সমাপ্তি দিনেও মেলায় ১২৫টি নতুন বই এসেছে। এটি কোনোভাবেই পাঠকদের জন্য কোনো সুখবর নয়। একুশের বইমেলা যদি ১৩ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি করা হয়, আর নিশ্চিতভাবে প্রকাশিত বইগুলো যদি একাডেমি নোটিশবোর্ডে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই টানিয়ে দেওয়া যায়, আর একুশের বইমেলায় স্টল বরাদ্দ পাওয়া প্রকাশকগণ যদি সেই বইগুলো ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যেই প্রস্তুত রাখেন, তাহলে পাঠক নোটিশ বোর্ড দেখে পছন্দের বইগুলো আগেভাগেই ঠিক করে নিতে পারবে। আমরা বাঙালিরা এমনিতে ভারি অলস একটা জাতি। গোটা ফেব্রুয়ারি মাস এক একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে কত হাজার শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হয়, তার হিসেব যদি বাংলাদেশ করত, তাহলে আমাদের এই অপরিপক্ক মাসব্যাপী মেলার প্রয়োজনীতার কথা বাংলা একাডেমি বা সরকার বাহাদুর আরো আগেই সংকুচিত করার কথা ভাবতেন। যেহেতু ১লা ফাল্গুন একুশের বইমেলা জমতে শুরু করে। আর ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের এই আয়োজনের প্রধান দিন। তাই এর বাইরে বর্ধিত দিনগুলো কেবল অপচয় বলেই আমি মনে করি। বাংলা একাডেমি একমাত্র একুশের বইমেলার আয়োজক হয়েই বাকি এগারো মাস নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়। এক ভারী আশ্চার্য কুম্ভকর্ণ এই বাংলা একাডেমি। বাকি এগারো মাস এই একাডেমি কি করে, তা কেউ জানে না। একুশের মেলা আয়োজন করাটাই যেন একাডেমির একমাত্র কর্ম হয়ে গেছে। এই সংস্কৃতি থেকে একাডেমিকে মুক্ত করতে হবে। একাডেমির প্রধান কাজ সারা বছর গবেষণা করে, নতুন নতুন বিষয় জাতিকে উপহার দেওয়া। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, একমাত্র একুশের বইমেলা আয়োজন করেই একাডেমির দায়িত্ব পালন শেষ, এমন একটি পদ্ধতির প্রচলন হয়ে গেছে। এমন একটি গোলক ধাধায় একাডেমি দিনদিন বন্দি হয়ে গেছে। এই অকর্মন্য একাডেমিকে নিজের পায়ে শক্ত হয়েই দাঁড়াতে হবে। নইলে জাতির মননের প্রতীক থেকে এটি ধীরে ধীরে টেলিটক মার্কা অখাদ্য আবর্জনা হবার ঝুঁকি রয়ে গেছে। আমরা বাংলা একাডেমিকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতে দেখতে চাই। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন বছরের অন্যান্য সময়ে আয়োজন হলেই বরং সেখানে নতুন প্রজন্মের কবি-লেখকদের নিয়ে আরো কার্যকর সম্মেলন হতে পারে। একুশের বইমেলার সময় কবি লেখকরা নিজেদের বইপ্রকাশ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাদের পক্ষে এই সম্মেলনে হাজির হওয়াটাও একটা যৌক্তিক প্রশ্ন। নতুন প্রজন্মের কবি-লেখকরা যদি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে হাজির হতে না পারলো, তাহলে সেই সম্মেলন আয়োজন করে গোটা জাতির কি লাভ হবে?বন্ধুরা, গোটা ফেব্রুয়ারি মাস আমরা প্রাণের বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে অমর একুশে বইমেলায় ছুটে গেছি। আমাদের সেই যাওয়া আসায় অনেক লাভ হয়েছে। কিন্তু আমরা আমাদের একজন বিজ্ঞান লেখককে এবার সন্ত্রাসীদের হাতে বলি হতে দেখেছি। এই শোক যেন আমরা ভুলে না যাই। আমরা যেন বিজ্ঞান লেখক অভিজিত রায়কে ভুলে না যাই। নতুন প্রজন্মের ভেতর থেকে হাজার হাজার অভিজিত তৈরি হবে, এমন স্বপ্ন নিয়েই আমরা বেঁচে থাকব। রাষ্ট্র আমাদের এখন কোন সভ্যতার দিকে নিয়ে যাবে, সেই প্রশ্নটি বারবার মনে জাগে। আমরা কি সভ্যতার দিকে হাঁটছি নাকি ধর্মান্ধদের চাবুকের তোড়ে রক্তবর্ণ চোখ রাঙানিতে বর্বর অন্ধকার যুগের দিকে যাচ্ছি, সেই চিন্তা আপনাদেরও করতে হবে। নইলে আমরা আর কবে মানুষ হব। মনে রাখতে হবে, এই বাংলায় একজন হুমায়ুন আজাদ বা একজন অভিজিত রায় বছর বছর জন্ম নেয় না। দেশের শ্রেষ্ট সন্তানদের যদি আমরা মূল্যায়ন করতে না পারি, তাহলে আমরা যে সোনার বাংলা গড়তে চাই, সেই স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকেই যাবে। মাঝখানে দুবৃত্তায়নের রাজনীতি সবকিছু গুবলেট পাকিয়ে দেবে। অতএব সাধু সাবধান। সবাইকে গোটা মাস সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। একুশের বইমেলা থেকে যে বইগুলো কিনেছেন, সেগুলো পড়বেন, বই নিয়ে আলোচনা করবেন, তাহলেই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গাটি আরো পাকাপোক্ত হবে। সবার জন্য শুভ কামনা।...................................১ মার্চ ২০১৫ঢাকা
false
hm
দেখা হয় নাই জিহ্বা মেলিয়া ১. "চলুন, চা খাই। সাথে পুরি।" চৌধুরী বেশ উদাত্ত আহ্বান জানান। দুলাল সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। "চলেন চলেন!" আমার পাপী মনটা খুঁতখুঁত করতে থাকে। ব্যাপার কী? চৌধুরী কি আজ এত দূর থেকে আমাদের ডেকে এনে চা আর পুরির ওপর দিয়েই চালিয়ে দেবে? তেলেভাজার দোকানের ভেতরে ঢুকে চৌধুরী বেশ জাঁকিয়ে বসেন একটা বেঞ্চে, আমরা উল্টোদিকের বেঞ্চে বসি। বাইরে আমগাছের ডালে বসে একটা কাক কা-কা করে ডেকে ওঠে। "বলুন, কোন পুরি খাবেন। ডাল না আলু?" চৌধুরী মধুর হেসে বলেন। দুলাল বলে, "ডাইলপুরিই হোক।" আমি আলুপুরির পক্ষে যাই। চৌধুরী বিকট হাঁক ছাড়েন, "ওরে ছোকরা, এদিকে তিন পনেরো পঁয়তাল্লিশটা পুরি পাঠা। বিশটা আলুপুরি আর পঁচিশটা ডালপুরি। তিন কাপ চা দিয়ে যা তার আগে। তুরন্ত!" দুলাল ঘাবড়ে গিয়ে বলে, "পয়তাল্লিশটা পুরি খাইবো ক্যাঠায়?" চৌধুরী হাসিমুখে বলেন, "বারেবারে ভুলে যাই যে আপনারা নাজুক শহুরে যুবা। গায়ের ওপর শিশির পড়লে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে হয়। আমরা যখন আপনাদের বয়সী ছিলাম, চায়ের সাথে পনেরোটা পুরি কোনো ব্যাপারই ছিলো না। তখন চায়ের কাপের সাইজও ছিলো এখনকার গোসলের মগের মতো। আর পুরির ডায়ামিটার ছিলো এক বিঘত। আর বিঘত মানে আপনাদের এই নাজুক কলমিলতা মার্কা হাতের বিঘত নয়, পালোয়ানদের হাতের বিঘত ...।" আমি বলি, "পনেরোটা পুরি খেলে পোলাও খাবো কীভাবে?" চৌধুরী হাসিমুখে বলেন, "পোলাও খাওয়ার দরকারটা কী? পনেরোটা পুরিতে পেট ভরে যাবে। তারপর বাসায় চলে যাবেন।" দুলাল মুষড়ে পড়ে। হতভাগা চৌধুরী পোলাওয়ের লোভ দেখিয়েই আসতে বলেছিলো আজ আমাদের। সাথে মুরগি ভুনা। পোলাওয়ের চাল বাছতে হবে না, সেই আশ্বাসও দিয়েছিলো ব্যাটা। আর এখন পুরির ওপর চালাচ্ছে। বাটপার আর কাকে বলে! আমি বলি, "চলেন তাহলে উল্টাদিকের দোকানে গিয়ে পারাটা দিয়ে মুরগির চাপ মেরে আসি। এইসব পুরিটুরি থাক।" চৌধুরী চোখ বুঁজে স্নিগ্ধ হাসেন। "কোন দোকান?" আমি এবার ভালো করে উল্টোদিকের দোকানের দিকে তাকাই। লখনৌ কাবাব হাউস। দোকান খোলা, কিন্তু লোকজন কেউ নেই। ক্যাশে একজন বসে আছে গালে হাত দিয়ে। এক ছোকরা এসে ঠক ঠক করে তিন কাপ চা রেখে চলে যায় ঊর্ধ্বশ্বাসে। বাইরে আরো কয়েকটা কাক উড়ে এসে বসে ডাকতে থাকে। চৌধুরী বলেন, "লখনৌ কাবাব হাউসে তো দারুণ সব ঘটনা ঘটে গেলো গত কয়েকদিনে। জানেন না?" দুলাল মাথা নাড়ে। কাজেই গল্প শুরু হয়ে যায়। ২. ম্যাজিস্ট্রেট খোকনউদদৌলার নাম শুনেছি কি আমরা? উত্তরে নেতি পেয়ে হতাশায় নেতিয়ে পড়েন চৌধুরী। খোকনউদদৌলার নাম না শুনলে জীবন আধেক বৃথা। সংক্ষেপে তারপর যা জানতে পাই, তা হচ্ছে, খোকনউদদৌলা সরকারের পক্ষ থেকে এক ক্রুসেডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভেজালবিরোধী অভিযান। সারা দেশেই নামে বেনামে, স্ববেশে ছদ্মবেশে, একা এবং কয়েকজন নিয়ে খোকনউদদৌলা ভেজালের বিরুদ্ধে এই জেহাদে নেমেছেন। ঘটনার শুরু শেখ আলমকে দিয়ে। গুঁড়া মরিচের ব্যবসা করতেন এই জনৈক শেখ আলম। জয়দেবপুরে তার আবার ইঁটের ভাঁটা আছে কয়েকটা। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে খোকনউদদৌলা হানা দিলেন একদিন। মরিচের কারখানায় নয়, ইঁটের ভাঁটায়। তাওয়া থেকে নামানো গরম গরম পুরি চলে আসে তিনটা প্লেটে। দুলাল একটা পুরি তুলে ঘ্যাঁচ করে কামড় দেয় বেজির মতো। "ক্যান ক্যান ইঁটের ভাঁটায় ক্যান?" চৌধুরী একটা পুরি নিয়ে চিবাতে চিবাতে বলেন, "সরকারী কর্তাদের হাবভাব বোঝা একটু মুশকিল। খোকনউদদৌলা সেই আলম ব্রিকস অ্যাণ্ড কোঙে গিয়ে প্রথমেই সার্ভেয়ার দিয়ে চিমনির উচ্চতা পরীক্ষা করান। তারপর ভাঁটায় ব্যবহৃত কয়লায় গন্ধকের পরিমাণ মাপজোক করান কেমিস্ট দিয়ে। ইঁট বানাতে ব্যবহৃত মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করান। ইঁটের আকার, ওজন, রং, গন্ধ সবই হাতেকলমে মেপে দেখেন। তারপর পাঁচশো টাকা জরিমানা করে চলে আসেন দলবল নিয়ে।" আমি বলি, "কেন, পাঁচশো টাকা জরিমানা কেন?" চৌধুরী বলেন, "ইঁটগুলো বেশি হালকা ছিলো, সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী দশ ইঞ্চি ইঁটের ওজন আরো কয়েকশো গ্রাম বেশি হবার কথা। লোকে বলে, আলম ব্রিকসের সাথে নাকি হরতাল মকবুলের বেশ ব্যবসা আছে।" আমি বলি, "হরতাল মকবুল কে?" চৌধুরী চায়ে চুমুক দিয়ে বলেন, "আপনারা শহরে বাস করলে কী হবে, শহরের কোনো খোঁজখবরই রাখেন না। হরতাল মকবুল হচ্ছে দেশের টপ হরতাল-ব্যবসায়ী। কোথাও হরতাল হলে সেখানে সে ইঁটের আধলা, কাঁচের বোতল, গজারির ডাল, পটকা এইসব সাপ্লাই দেয়। ইদানীং সে ভিডিও সার্ভিসও দেয় শুনেছি। পয়সা দিলে কয়েকজন ক্যামেরাম্যান হরতালে পুলিশের কাণ্ডকারখানা সব রেকর্ড করে রাখবে, বিয়ের ভিডিওর মতো আর কি। আজকাল সবকিছুই ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে, এজন্যে শুনলাম শিগগীরই টুইটার সার্ভিস খুলবে সে, পিকেটারদের হয়ে টুইট করে দেবে তার লোকজন ... তো যা-ই হোক, স্ট্যান্ডার্ড ইঁটের আধলা একটু ভারি। ওজনটা কয়েকশো গ্রাম কমিয়ে দিলেই সেটা একটা দারুণ প্রোজেক্টাইল হয়ে যায়। আপনাদের মতোই তো ললিত ফুলবাবু সব, আমাদের আমলে আধলা-ফাধলা না, আস্ত ইঁট ছুঁড়তাম আমরা!" দুলাল বললো, "লখনৌ কাবাব হাউসের সাথে হরতাল মকবুলের কী সম্পর্ক?" চৌধুরী বললেন, "কোনো সম্পর্ক নাই। হরতাল মকবুলের সম্পর্ক আলম ব্রিকসের শেখ আলমের সাথে। শেখ আলমের পাতলা ইঁটগুলোই আধলা হয় হরতাল মকবুলের ওয়ার্কশপে। তারপর সেগুলো মনোরম খবরের কাগজ দিয়ে মুড়ে সাপ্লাই হয় হরতালের সময়। দাঙ্গা পুলিশ অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলো, তাই খোকনউদদৌলা আলম ব্রিকসে হানা দেয়।" আমি বললাম, "তো?" চৌধুরী সুড়ুৎ করে কাপে চুমুক দিয়ে বলেন, "পাঁচশো টাকা জরিমানার ব্যাপারটা ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্যে লজ্জাস্কর নয়? খোকনউদদৌলা সারা দেশে যেখানে ভ্যাজালকে নানা ফ্রন্টে পেঁদিয়ে একশা করছেন, কাউকে তিন লাখ, কাউকে ছয় লাখ, কাউকে পঞ্চাশ হাজার জরিমানা করছেন, সেখানে মোটে পাঁচশো টাকা তো ক্যারিয়ারের গায়ে পানের পিকের দাগের মতো। তাই ব্যাপারটা খোকনউদদৌলার আঁতে ঘা দেয়। তিনি হন্তদন্ত তদন্তে নামেন।" আমি আলুপুরি খেতে খেতে বলি, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউসের সাথে পাঁচশো টাকা জরিমানার কী সম্পর্ক?" চৌধুরী গল্পের বাকিটা বলে চলেন। ট্রেড লাইসেন্সের সূত্রে ধরে খোকনউদদৌলা জানতে পারেন, শেখ আলমের গুঁড়া মরিচেরও ব্যবসা আছে, সেখানে কাঁদুনি ব্র্যান্ডের গুঁড়া মরিচ বাজারে ছাড়া হয়। খোকনউদদৌলা নিজের রসুইখানা ঘুরে এসে জানতে পারেন, তিনিও কাঁদুনি ব্র্যান্ডের গুঁড়া মরিচই গত কয়েক বছর যাবৎ খেয়ে আসছেন। এবার তিনি টের পান, ইদানীং তাঁর পান থেকে চুন খসলেই আঁতে ঘা কেন লাগছে। আঁত, অর্থাৎ অন্ত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে তার, শরীরটাও ম্যাজম্যাজ করে, ডাক্তার হতভাগাগুলো ঠিকঠাক ওষুধ দিতে পারে না ... খোকনউদদৌলা দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে এবার হানা দিলেন আলম মশল্লা অ্যান্ড কোঙে। সেটাও জয়দেবপুরেই, আলম ব্রিকস অ্যান্ড কোঙের উল্টোদিকেই, টাঙ্গাইল মহাসড়কের এপারে। এবার খোকনউদদৌলার জরিমানাবান্ধব মনটা একটু শান্ত হয়। আলম মশল্লা অ্যান্ড কোঙে প্রভূত বিটকেলপনা চলছিলো। এক বস্তা শুকনো মরিচের সাথে সেখানে এক রিকশাভ্যান ইঁট গুঁড়ো করা হয়। তারপর সুদৃশ্য মনোরম ফুড গ্রেড পলিপ্যাকে মোড়কজাত করা হয়। প্যাকেটের গায়ে নানা ক্যালরি আর ভিটামিন-মিনারেলের হিসাব লেখা। খোকনউদদৌলার সাথে পুলিশ ছিলো, তারা ফ্যাক্টরির কর্মরত সব শ্রমিককেই আটক করে। র‍্যাবের হাতে ধরা পড়ে পলায়নরত ফ্যাক্টরি ম্যানেজার। তার অফিসে বসেই খোকনউদদৌলা দশ লাখ টাকা জরিমানা করেন আলম মশল্লাকে। তারপর সব কাগজপত্র সিজ করে বাড়ি চলে আসেন। দুলাল চায়ে হিরোশিমার বোমা ফাটার মতো আওয়াজে চুমুক দিয়ে বললো, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউস ...?" চৌধুরী বললেন, "আছে। ঐ কাগজের মধ্যে লখনৌ কাবাব হাউসের নামও আছে। আলম মশল্লার কর্পোরেট ক্লায়েন্ট তারা। সারা দেশে লখনৌ কাবাব হাউসের যত শাখা আছে, সবখানে যায় আলম মশল্লার গুঁড়া মরিচ।" আমার একটু সন্দেহ হয়, জানতে চাই, "কবে ঘটে এই ঘটনা?" চৌধুরী বলেন, "মাস তিনেক আগে।" দুলাল চমকে উঠে বলে, "আরে, তিন মাস ধইরাই তো লখনৌ কাবাব হাউসে মুরগির ঝাল ফ্রাই আর আগের মতো ঝাল নাই!" চৌধুরী মৃদু হাসেন। বলেন, "ডিজিটাল যুগ। সব খবর সবাই জেনে ফেলে খুব দ্রুত। খোকনউদদৌলা রেইড করার পাঁচ মিনিটের মাথায় শেখ আলম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বসেছে, আমার মরিচের কারখানায় খোকনউদদৌলার কালো হাত কেন কর্তৃপক্ষ জবাব চাই!" আমি বলি, "কারখানা কি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো?" চৌধুরী বলেন, "না, কারখানা বন্ধ হয়নি, তবে কড়াকড়ি বেড়েছে আর কি। ওখানে প্রায়ই সরকারি লোকজন গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। মরিচের প্যাকেট খুলে দেখে সেটাতে ইঁটের সালফার পাওয়া যায় কি না। এক পরিবেশ আন্দোলন সমিতি আগে ইঁটের ভাঁটা তুলে দেবার জন্যে আদালতে রিট পিটিশন করেছিলো, তারা নতুন রিট পিটিশন ঠুকেছে, ইঁট ভাঁটার দশ কিলোমিটারের মধ্যে মশলা কারখানা চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে।" দুলাল বলে, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউস বন্ধ কেন?" চৌধুরী পুরি চিবাতে চিবাতে বলেন, "বলছি।" খোকনউদদৌলার ক্রুসেড চলতে থাকে। মধ্যযুগীয় নাইটদের মতোই তিনি একের পর এক দোকান কারখানার ভেজালের কারবারের বারোটা বাজিয়ে ছাড়তে থাকেন। ঘটনাচক্রে তিনি একদিন হানা দেন সায়দাবাদের আলম অটোমোবিল ওয়ার্কশপে। না, এই আলম শেখ আলম নয়, জানে আলম। জানে আলম জানে খোকনউদদৌলা কী চিজ। সে তাই নিজে উপস্থিত থেকে তার গোটা গ্যারেজ ঘুরিয়ে দেখায় খোকনউদদৌলাকে। খোকনউদদৌলা প্রতিটি রেঞ্চ, প্রতিটি অ্যালেন কী, প্রতিটি নাট বল্টু দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখেন। গ্যাস কাটিঙের সিলিণ্ডার আলাদা করে খুলে অক্সিজেন আর এসিটিলিনের কোয়ালিটি পরীক্ষা করান কেমিস্ট দিয়ে। গাইগার কাউন্টার দিয়ে গ্যারেজের প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে তেজস্ক্রিয়তা মাপেন। কিন্তু জানে আলম বড়ই পটু মেকানিক, খোকনউদদৌলা কিছুতেই তাকে পাঁচশো টাকার বেশি জরিমানা করতে পারলেন না। আমি জানতে চাই, "পাঁচশো টাকা কেন?" বাইরে গাছে বসে কাকের দল কা-কা করে ডেকে আমার প্রশ্নে সমর্থন জানায়। চৌধুরী পুরি খেতে খেতে বলেন, "একটা গাড়ির ব্যাটারি থেকে সীসার পাত খুলে বাইরে ফেলে রেখেছিলো মিস্ত্রির দল। সেই সীসার পাত দিনরাত বৃষ্টিতে ভেজে, সেই পানি আবার গড়িয়ে পাশের পুকুরে পড়ে। পুকুরের পানিতে লেড পয়জনিং হতে পারে, এই আশঙ্কায় মৃদু সতর্কতামূলক জরিমানা আর কি।" দুলাল ঘাবড়ে যায়। বলে, "বাপরে! এত করা ম্যাজিস্ট্রেট?" চৌধুরী বলেন, "নৃশংস!" আমি বলি, "কিন্তু মাত্র পাঁচশো টাকা ... ?" চৌধুরী বলেন, "হুঁ, আঁতে ঘা লাগে আবার। খোকনউদদৌলা খুবই চটে ওঠেন আলম অটোমোবিল ওয়ার্কশপের ওপর। সারা দেশের বাসট্রাকের সার্ভিসিং করে জানে আলম, কিন্তু তার ওয়ার্কশপে কোনো ভ্যাজাল নেই, ব্যাপারটা তিনি মোটেও মেনে নিতে পারেন না। দিনরাত তিনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ নিয়ে ভাবেন।" জানা যায়, বেশিদূর ভাবতে হয় না, ট্রেড লাইসেন্সের জাবদা খাতা আর জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেস থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে জানা যায়, জানে আলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ গুলবদনের নামে জানে গুল এডিবল অয়েলস এর লাইসেন্স বরাদ্দ করা আছে। সেটার কারখানাও সায়দাবাদেই, মহাসড়কের এপারে। খোকনউদদৌলা এক ভোরে পাইকলস্কর নিয়ে হানা দেন সেখানে। সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুষ্টিবিজ্ঞানে পিএইচডি করা এক বিজ্ঞানী, আণবিক শক্তি কমিশনের এক প্রকৌশলী আর ৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেডের এক ট্রাক সৈন্য। খোকনউদদৌলার আঁত একটু ঠাণ্ডা হয় সেদিন। আলম অটোমোবিলে যাবতীয় বাসট্রাকের পোড়া মবিল সব বড় বড় ড্রামে করে চলে আসে জানে গুল এডিবল অয়েলসে। সেখানে পাম অয়েলের সাথে মেশানো হয় সেসব। তারপর একটু সেন্ট্রিফিউজ করে মনোরম পেট বটলে ভরে বেদুইন মার্কা খাঁটি সয়াবিন তেল হিসেবে বাজারে ছাড়া হয়। বোতলের গায়ে ক্যালোরি, ভিটামিন আর মিনারেলের রূপকথা লেখা। খোকনউদদৌলা নিজের হেঁসেল বরাবর মোবাইল মেরে জানতে পারেন, ওখানে বেদুইন মার্কা তেলেই রান্না হয়ে আসছে গত কয়েক বছর ধরে। দশ লাখ টাকা জরিমানা ঠুকে দেন খোকনউদদৌলা। পুলিশের লোকজন কারখানার সব শ্রমিককে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায় হাজতে। র‍্যাবের লোকজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজারকে লুকিয়ে রাখা অস্ত্র উদ্ধার করতে নিয়ে যাবার ভয় দেখায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানী টেস্ট টিউবে করে যাবতীয় নমুনা নিয়ে যান। আণবিক শক্তি কমিশনের প্রকৌশলী বিরস মুখে ৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেডের ইউনিট কমাণ্ডার এক ছোকরা ক্যাপ্টেনের সাথে গল্পগুজব করতে থাকেন, কারণ হুদাই এদের ডেকে আনা হয়েছে। খোকনউদদৌলা সব কাগজপত্র জব্দ করেন কারখানা থেকে। দুলাল জানতে চায়, "কবেকার ঘটনা এইটা?" চৌধুরী আরো তিন কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বলেন, "মাস দুই হয়ে গেলো।" দুলাল রুদ্ধশ্বাসে বলে, "আরে, গত দুই মাস ধইরাই তো লখনৌ কাবাব হাউসের পারাটাগুলি এইরাম কাচা কাচা লাগে!" চৌধুরী বলেন, "হাঁ! লাগাই স্বাভাবিক। জব্দ করার কাগজপত্র থেকে দেখা যায়, জানে গুল এডিবল অয়েলসের অনেক কর্পোরেট কাস্টোমারদের মধ্যে একটি হচ্ছে লখনৌ কাবাব হাউস চেইন। সারা দেশে লখনৌ কাবাব হাউসে তেল যেতে জানে গুল এডিবল অয়েলস থেকে। ঘটনার পর পরই মোছাম্মৎ গুলবদন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো, দুর্নীতিবাজ খোকনউদদৌলা দেশের ভোজ্য তেলের বাজারকে সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে!" আমি চুপচাপ পুরি খাই। দুলাল টেবিল কিল মেরে বলে, "তারপর?" চৌধুরী উদাস গলায় বলেন, "তারপর কী হয় শোনেন।" তারপর খোকনউদদৌলাকে বিশেষ মিশনে হানা দিতে হয় বালু নদীতে। সেখানে জেগে ওঠা চরের বালুমহাল ইজারা নিয়েছে আলম ফাইন স্যান্ডস। না, শেখ আলম বা জানে আলম নয়, এর মালিক সৈয়দ আলম। খোকনউদদৌলা মেজারিং চেইন, জিপিএস, লেজার গাইডেড মেজার গান আর কোস্ট গার্ডের এক নৌকা সেপাই নিয়ে সেই চরে হানা দেন এক বিকালে। কিন্তু না। সৈয়দ আলমের বালু মহালে নিয়ম মেনেই বালু তোলা হচ্ছে। নদীর প্রবাহকে বিপন্ন করে সেখানে কিছু হচ্ছে না। খোকনউদদৌলা মিলিমিটার ধরে সব কিছু মেপে দেখলেন, দাঁড়িপাল্লা দিয়ে বালুর বস্তা ওজন করে ডেটা নিয়ে ল্যাপটপে ঢুকিয়ে তার মিন মিডিয়ান মোড আর স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন বার করলেন, স্কাউট মাইক্রোস্কোপে বালির দানা পরীক্ষা করে দেখলেন, ঠিক মাপের বালুই তোলা হচ্ছে কি না, বালুমহাল থেকে নদীতে কোনো কনটামিন্যান্ট ফেলা হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করলেন। তারপর বিষণ্ণ মনে পাঁচশো টাকা জরিমানা করে চলে এলেন। পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হয়েছে শিশু শ্রমের জন্যে। একটা বাচ্চা ছেলেকে দিয়ে বালুমহালের অফিসে চা তৈরি করানো হচ্ছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই খোকনউদদৌলার অন্ত্র আবার আহত হয়। তিনি আলম মশল্লার পরিবর্তে মশাল মার্কা গুঁড়া মরিচ আর বেদুইন মার্কা সয়াবিন তেলের বদলে শেভরন সয়াবিন দিয়ে ভাজা মুচমুচে সমুচা খেতে খেতে সৈয়দ আলমের ঠিকুজি সন্ধানে হাত দেন। বেশি কষ্ট করতে হয় না, সৈয়দ আলমের ছেলে সৈয়দ আলম জুনিয়রের নামে বরাদ্দ আলম আটা অ্যান্ড কোঙের লাইসেন্সের হদিশ পেয়ে যান খোকনউদদৌলা। ফ্যাক্টরিটাও পরিচিত এলাকায়, বালু নদীতে, বালুমহালের কাছেই, নদীর তীরে। একদিন দুপুরে কয়েকজন ফ্রগম্যান, নৌ-পুলিশ আর বাপেক্সের একজন ভূতত্ত্ববিদকে সঙ্গে নিয়ে খোকনউদদৌলা আলম আটা কোম্পানিতে হানা দেন। ফ্রগম্যানরা পলায়নোদ্যত ফ্যাক্টরি ম্যানেজারকে পিছু ধাওয়া করে বালু নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকড়াও করে আনে। শ্রমিকদের সবাইকে বেঁধে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। কারণ আর কিছুই নয়, খোকনউদদৌলার হৃষ্ট অন্ত্র। আলম আটা কোম্পানিতে এক বস্তা আটার সাথে সমপরিমাণ মিহিদানা বালু মিশিয়ে মনোরম পলিপ্যাকে মোড়কজাত করা হচ্ছে। আটার প্যাকেটের গায়ে লেখা, আলমের ময়ূরীমুনমুন মার্কা আটা, খেলে বাড়ে বুকের পাটা। সেইসাথে ক্যালরি ভিটামিন মিনারেলের আমলনামা। খোকনউদদৌলা মোবাইল টিপে যোগাযোগ করেন, তার গরীবখানার রান্নাঘর থেকে রিপোর্ট আসে, আলমের ময়ূরীমুনমুন মার্কা আটা দিয়েই গত কয়েক বছর সকালে রুটি পরোটা আর বিকেলে সিঙাড়া সমুচা ভাজা হচ্ছে। কাজেই তৎক্ষণাৎ দশ লাখ টাকা জরিমানা। দুলাল গপগপ করে পুরি খেতে খেতে বলে, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউস ... ?" চৌধুরী বলেন, "হ্যাঁ। জব্দ করা কাগজপত্রে লখনৌ কাবাব হাউসের নাম ওপরের দিকে। তারা আলম আটা কোম্পানির বড় ক্লায়েন্টদের একজন। সারা দেশে তাদের দোকানে আলমের আটা কেনা হয়।" দুলাল বলে, "এইটা কি এক মাস আগের ঘটনা?" চৌধুরী মাথা নাড়েন। হ্যাঁ। দুলাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। "হ, গত এক মাস ধইরা লখনৌ কাবাবে পারাটা চিকন কইরা বানায়, আর আগের মত মচমচা নাই।" চৌধুরী বললেন, "বানাবে না কেন বলুন? ঘটনার পরপরই তো সৈয়দ আলম জুনিয়র ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো, সরকারকে করি মানা, করবেন না আলম আটাকে জরিমানা, পথের বাধা সরিয়ে দিন, দেশকে এগোতে দিন।" দুলাল বলে, "তারপর?" চৌধুরী বলে যান গল্প। খোকনউদদৌলার কার্যপরিধি সারা দেশে বিস্তৃত। শুধু ঢাকাতেই আরবান গেরিলা হয়ে থাকলে কি চলবে? ঢাকার বাইরেও তাকে ক্র্যাক কমাণ্ডো অপারেশনে যেতে হয়। একদিন তিনি তাই অতর্কিতে লোকলস্কর নিয়ে ঢুকে পড়লেন বগুড়ার আঞ্জুমানে শফিদুল গবাদিপশু হাসপাতালে। আঞ্জুমানে শফিদুল একেবারে মরণাপন্ন পশুর চিকিৎসা করতে আগ্রহী। যেসব গরুমহিষ বা ছাগল ভেড়া জটিল কোনো রোগ বা বার্ধক্যের ভারে কাবু হয়ে প্রায় মরো মরো, সেগুলোকে তাদের মালিকেরা গায়ে ছালা চাপিয়ে সাইকেল ভ্যানে চড়িয়ে নিয়ে আসে এই হাসপাতালে। জনস্বাস্থ্যের খাতিরে ইন্তেকাল করা জন্তুটির দাফনকাফনের দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয়, উল্টে কিছু টাকা পয়সাও দেয় মালিককে। উত্তরবঙ্গের যাবতীয় অসুস্থ গরুমহিষের মালিকের ভরসার জায়গা আঞ্জুমানে শফিদুল। সেই হরিয়ানা থেকে মরণাপন্ন গরু মহিষ এসে এই ৩০ শয্যার হাসপাতালের একটায় অন্তিম শয্যা বরণ করে। খোকনউদদৌলা হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসা বিভাগ ঘুরে দেখেন, অ্যানেসথেশিয়া আর শল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করেন, সঙ্গে করে আনা একটি গরুকে অজ্ঞান করে দেখেন সে ঠিকঠাকমতো অজ্ঞান হচ্ছে কি না। ওষুধের মেয়াদের তারিখ, সিল, এক্সরে যন্ত্রপাতি সব তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করে তিনি চটেমটে পাঁচশো টাকা জরিমানা করে আবার ফিরে আসেন ঢাকায়। পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হয়েছিলো হাসপাতালের ডিসপেনসারিতে মশার কয়েল আর বাটারবন বিক্রির জন্যে। কিন্তু ইরাক যুদ্ধের মতো এমন একটি ব্যয়বহুল আন্তর্জেলা অপারেশনে বেরিয়ে মাত্র পাঁচশো টাকা জরিমানা খোকনউদদৌলার অন্ত্রের জন্যে অবমাননাকর। তিনি বগুড়া জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে ব্যাপক তোলপাড়ের পর বিডিআর সেক্টর দপ্তর থেকে দুই গাড়ি বিডিআর সেনা নিয়ে হানা দিলেন আঞ্জুমানে শফিদুল পশু হাসপাতালের অদূরে আলম বিফ অ্যান্ড মাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে। শফিদুল আলম নামক জনৈক নরাধমের এই মাংসের ফ্যাক্টরিতে গিয়ে খোকনউদদৌলার মনটা ভালো হয়ে গেলো। ফ্যাক্টরির ভেতরে পশু হাসপাতাল থেকে আনা সদ্যমৃত গরুমহিষের ছাল ছাড়ানো হচ্ছে আধুনিক মেশিনে। মাংসগুলোও ঝোপ বুঝে কোপ মেরে কেটেকুটে ওজন করে প্যাকেটে ভরছে প্রশিক্ষিত কসাই। প্যাকেটের গায়ে লেখা, আলমের পপি বিফ, সেরা বিফ। ফ্যাক্টরির তাবৎ লোককে দড়ি বেঁধে থানায় নিয়ে গিয়ে দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হলো আলম বিফ অ্যান্ড মাটনকে। শফিদুল আলমের ও লেভেল পাশ মেয়ে পপি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো, da bstd plce arstd ma men and dmnd ghush ... fck u gvmnt! আলম বিফ আর আলম মাটনের বড় ক্রেতা খুব বেশি নেই, দুয়েকটা চিড়িয়াখানা, দুয়েকটা জেলখানা, দুয়েকটা এতিমখানা আর, লাস্ট বাট নট লিস্ট, লখনৌ কাবাব হাউস। দুলাল এক কামড়ে আদ্ধেকটা পুরির মুণ্ডু চিবিয়ে খেয়ে বলে, "বুচ্ছি বুচ্ছি, দুই সপ্তাহ আগের কথা! গত দুই সপ্তা ধইরা লখনৌ কাবাবে খাসির চাপ আর গরুর চাপের দাম বাইড়া রইছে!" আমি বলি, "কিন্তু লখনৌ কাবাব হাউস বন্ধ হলো কেন? কাঁচামালের অভাবে?" চৌধুরী হাসেন, আর চায়ে চুমুক দেন। খোকনউদদৌলা একদিন টাউন হলে বাজার করতে গিয়ে ভাবেন, পরোটা দিয়ে মুরগির চাপ খাবেন। তিনি করিৎকর্মা মানুষ, বাজারের ব্যাগ গাড়িতে ফেলে রেখে সোজা চলে আসেন লখনৌ কাবাব হাউসে। দুটো পরোটা আর একটা চাপ অর্ডার দিয়ে একটা কোল্ড ড্রিংক নিয়ে বসেছেন, স্ট্র লাগিয়ে মৃদু মৃদু স্মার্ট চুমুক দিচ্ছেন, আচমকা তার মনে পড়লো, লখনৌ কাবাব হাউসেই তো আলম মশল্লার মরিচ, জানে গুল অয়েলের তেল, আলম বিফ ইন্ডাস্ট্রিজের মহিষের মাংস আর আলম আটার আটা আসে। তিনি মোবাইলে ফোর্স তলব করেন। তারপর পরোটা দিয়ে রসিয়ে রসিয়ে মুরগির চাপ খান। তারপর এক কাপ চা নিয়ে বসেন। এর মধ্যে ফোর্স চলে আসে। মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ আর র‍্যাবের প্যারাকমাণ্ডো ইউনিট। থানার পুলিশ জ্যামের কারণে আসতে একটু দেরি হয়েছে, আর প্যারাকমাণ্ডো ইউনিট ময়মনসিংহে প্যারাস্যুট জাম্পিং প্রশিক্ষণে ছিলো, খবর পেয়ে জোর বাতাসে ভেসে একেবারে শহীদ পার্কে ল্যাণ্ড করেছে। সবাইকে নিয়ে খোকনউদদৌলা হানা দেন লখনৌ কাবাব হাউসের রান্নাঘরে। এদিকে লখনৌ কাবাব হাউসের প্রোপ্রায়েটর চৌধুরী মনসুর আলি খান লখনবি গণ্ডগোলের খবর শুনে দোকানের সলিমুল্লাহ রোড শাখায় এসে হাজির। দুলাল বলে, "বাপরে বাপ! খুবই খানদানি লোক মালুম হইতেছে! ইনি কি বলদিয়ার জমিদার বংশের কেউ নাকি?" চৌধুরী হাসেন। "না, বলদিয়ার জমিদার না।" আমি বললাম, "খাস লখনৌ থেকে আমদানি নাকি? কাবাব হাউসের নাম লখনৌ কাবাব, আবার নামের শেষেও লখনবি?" চৌধুরী বলেন, "না, সাতকানিয়ার লোক, কিন্তু হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে এখন দিনরাত হিন্দিতে কথা বলে। চৌধুরী মনসুর লখনবির চেহারাটাও বেশ মোগলাইমার্কা। মোটাসোটা গোলগাল নাদুসনুদুস, হাতে হীরার আংটি, কানে আতর মাখানো তুলা, পরনে ফিনফিনে কুর্তা আর চুড়িদার পায়জামা, পায়ে নাগরা। সে এসে খুব হম্বিতম্বি শুরু করে দিলো খোকনউদদৌলার ওপর।" কিন্তু খোকনউদদৌলা ঘাগু মাল। তার সাথের লোকজন ছবি আর ভিডিও ক্যামেরায় সব রেকর্ড করতে থাকে। লখনৌ কাবাব হাউসের রান্নাঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ফ্রিজের ভেতরে কোথাও কাঁচা মাংস নেই, সব ফ্রিজারে বরফ দিয়ে রাখা। ফ্রিজে শুধু মশলা মাখানো মাংস, সেখান থেকে টপাটপ বার হয়ে চলে যাচ্ছে চুলোতে। সব্জির জন্য আলাদা ফ্রিজ, ড্রিঙ্কসের জন্যে আলাদা ফ্রিজ। সবকিছু পরিচ্ছন্ন। টিপটপ। কিন্তু রান্নাঘরের পাশে কসাইঘরে এক ভিন্ন দৃশ্য। সেখানে একটা বড় ট্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক লোক। তার সামনে একটা মুরগি। মুরগিটা জবাই করা নয়, কিন্তু জিভ বার করে এলিয়ে পড়ে আছে ঢাকাই সিনেমার স্মৃতিভ্রষ্ট নায়িকার মতো, নড়ছে-চড়ছে না। খোকনউদদৌলা মুখে বিজয়ীর হাসি নিয়ে চৌধুরী মনসুর লখনবিকে বললেন, "চৌধুরী সাহেব, আমি গরীব হতে পারি, কিন্তু আমার সঙ্গে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ওস্তাদ বিলাতফেরত ডাক্তার আছে! ডাক্তার সাহেব, লাগান স্টেথো!" বিবেকের মতো ধবধবে সফেদ কোট পরা গম্ভীর ডাক্তার এগিয়ে এসে মুরগির বুকে স্টেথোস্কোপ চেপে ধরলেন, কিছুক্ষণ শুনলেন, তারপর গম্ভীর মুখে স্টেথো নামিয়ে বললেন, "আই য়্যাম সরি!" খোকনউদদৌলা পকেট থেকে জরিমানার রসিদ বই আর একটা ইকোনো ডিএক্স কলম বার করে অট্টহাসি দিয়ে বললেন, "মরা মুরগির মাংস খাওয়ানো হচ্ছে? য়্যাঁ?" চৌধুরী মনসুর লখনবি ডুকরে উঠে ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মুরগির বুকে, "নেহিইইইইইইইইইইই! য়্যায় আমার মুরগা, আঁখ খোলো!" তিনি মুরগির ঠোঁট ফাঁক করে সিপিআর দিতে লাগলেন দুই হাতের তালু এক করে। জরিমানার রসিদ লিখতে লিখতে খোকনউদদৌলা বলতে লাগলেন, "মৃত প্রাণীর মাংস বিক্রি ১৮৯৩ সালের প্রাণীজ আমিষ (জনস্বাস্থ্য) আইনের ২৯ নং ধারার গ উপধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আপনাকে পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হলো।" চৌধুরী মনসুর লখনবি পাগলের মতো মুরগির বুকে কিল মারতে মারতে বলতে লাগলেন, "কেনু কেনু কেনু? কিঁউ কিঁউ কিঁউ? এ হতে পারে না, পারে না, পারে না!" তখনই মুরগিটা একটা চোখ পিটপিটিয়ে খোলে। তারপর কেশে ওঠে কক কক করে। লখনবি দারুণ এক চিৎকার করে ওঠেন, "জিন্দা হায়! এ জিন্দা আছে! মাজিস্টার সাহাব, জরিমানা মৎ করো, এ মুরগি জিন্দা আছে!" মুরগিটা এবার শ্বাস নিতে শুরু করে, তার বুক ওঠানামা করতে থাকে নৃত্যরতা অঞ্জু ঘোষের মতো। লখনবি তাকে সাশ্রুনয়নে কোলে তুলে নিয়ে বলেন, "মেরা মুরগা জিন্দা হায়!" খোকনউদদৌলা ক্ষেপে গিয়ে ডাক্তারকে বলেন, "ব্যাপার কী ডাক্তার সাহেব?" ডাক্তার গম্ভীর মুখে বললেন, "ব্যাপার আবার কী? মুরগি বেঁচে আছে!" খোকনউদদৌলা হাতে কিল মেরে বললেন, "ঠিক আছে, কিন্তু এই মুরগি আমি বাজেয়াপ্ত করছি। একে সিএমএইচে নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনো অসুখ বিসুখের আলামত পেলেই ...!" লখনবি হুঙ্কার দিয়ে বললেন, "দরকার হলে থাইল্যাণ্ডের বুমরুঙরাদে নিয়ে হামি হামার মুরগার চিকিৎসা কোরবে, লেকিন বাজেয়াপ্ত কোরতে দেবে না!" তুমুল ঝগড়াঝাঁটি শুরু হয়, আর মুরগিটা রাজ্জাকের আলিঙ্গনে নিশ্চিন্ত শাবানার মতো সজল নয়নে মুখ গুঁজে রাখে লখনবির বুকে। শেষ পর্যন্ত আর জরিমানা হয় না। সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী, পুলিশ আর র‍্যাবও তাদের ডেরায় ফেরে কিছু লেনদেনের পর, আর অন্ধকারে বসে সিগারেট টানতে টানতে চিন্তাভাবনা করতে থাকেন খোকনউদদৌলা। সাংবাদিকরা লিড নিউজ করে টিভিতে, ম্যাজিস্ট্রেটের চুলচেরা পরীক্ষায় পাশ করলো লখনৌ কাবাব। মধ্যরাতের টকশোতে ভ্রাম্যমান সম্পাদক আলতামাস কায়কাওয়াদ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নিজামরুল তুমুল প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলেন লখনৌ কাবাবকে, আর খোকনউদদৌলার মুণ্ডপাত করলেন। শেয়ার বাজারে লখনৌ কাবাবের শেয়ারের দর চড়চড়িয়ে বেড়ে গেলো। দুলাল বলে, "মানে কী? লখনৌ কাবাবে কোনো কিছু পাওয়া যায় নাই?" চৌধুরী স্মিতহাস্যে বললেন, "না।" আমি বললাম, "তাহলে খোকনউদদৌলা দোকান বন্ধ করে দিলো কেন?" চৌধুরী একটা সদ্য পরিবেশন করা ধূমায়িত আলুপুরি মুখে পুরে বললেন, "খোকনউদদৌলা দোকান বন্ধ করেনি।" তারপর গল্পের শেষটা বলতে লাগলেন। সমস্যাটার শুরু নাকি শেয়ারাবাজারেই। খোকনউদদৌলার কমাণ্ডো হামলায় আলম মশল্লা, জানে গুল এডিবল অয়েলস, আলম আটা আর আলম বিফ অ্যান্ড মাটন শুধু জরিমানাই দেয়নি, শেয়ার বাজারে চড়চড়িয়ে তার দর পড়ে গেছে। আর গত হপ্তায় লখনৌ কাবাবের দর বাড়তে বাড়তে তার প্রাইস আর্নিং রেশিও চার থেকে পঞ্চাশে গিয়ে ঠেকেছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, লখনৌ কাবাবের বেশ কিছু শেয়ার খোকনউদদৌলার বউ বিক্রি করেছে চড়া দামে। দুলাল বললো, "কিন্তু লখনৌ কাবাব বন্ধ ক্যান?" চৌধুরী বললেন, "খোকনউদদৌলা খুব ধুমধাম করে লোক দেখিয়ে লখনৌ কাবাবের রান্নাঘরে হানা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আসল অ্যানালাইসিস করে দেখেনি।" আমি বললাম, "কী অ্যানালাইসিস?" চৌধুরী হাসি হাসি মুখে বললেন, "এই এলাকায় একেবারেই কাক দেখা যেতো না। লখনৌ কাবাব চারদিন আগে বন্ধ হবার পর থেকে আবার কাক দেখা যাচ্ছে!" দুলাল চোখ বড়বড় করে বলে, "মানে কী?" চৌধুরী বলেন, "মানে সহজ। লখনৌ কাবাবে মুরগির নাম করে কাকের মাংসের চাপ বিক্রি হয়। কে বা কাহারা সেই কাক প্রসেস করার ছবি তুলে চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। খোকনউদদৌলাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে বড়কর্তারা, আর লখনবি হতভাগা শুনলাম দোকানপাট বুঁজিয়ে দিয়ে সৌদি আরব চলে গেছে।" আমি বললাম, "আপনি কি বলতে চান, আমরা এতদিন ইটের গুড়া মেশানো কাকের মাংস আর অসুখে মরা মহিষের চাপ খেয়েছি পোড়া মোবিলে ভাজা বালু মেশানো পারাটা দিয়ে?" চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, "হুঁ!" দুলাল ক্ষেপে ওঠে, বলে, "তাইলে কোনো কিছু টের পাইলাম না ক্যান?" বাইরে কয়েকটা জ্যান্ত কাক কেশে উঠে বলে, "ক্ক্যা?" চৌধুরী পরিতৃপ্ত প্রসন্ন মুখে বললেন, "আলম কেমিক্যালসের মালিক আলম খানের রঙের ফ্যাক্টরির লাগোয়া আলম স্পাইসেজ থেকে আসা মশলা মিক্সের কারণে।"
false
rg
মেঘনার বালু সন্ত্রাসীদের শিকার এবার কবি ও সংস্কৃতকর্মী শাহেদ কায়েস।। রেজা ঘটক আজ সকাল ১০ টায় কবি ও সংস্কৃতকর্মী শাহেদ কায়েসকে অপহরণ করে মেঘনার বালুসন্ত্রাসীরা। পরে বেলা তিনটার দিকে শাহেদ কায়েসকে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার রামপুরা নামক স্থান থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হত্যার উদ্দেশ্যে বালুসন্ত্রাসীরা তাঁর গলায় ছুড়িকাঘাত করে। এছাড়া তাঁর হাতের রগ কাটারও চেষ্টা চালানো হয়েছিল। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, উদ্ধারের পরে তাঁকে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ ঘাটের ইজারাদার সেলিনা ইসলামের লোকজন তাঁকে অপহরণ করতে পারে বলে ধারণা করছেন শাহেদ কায়েসের সহযোগী মিস্টার আনিস। কবি ও সংস্কৃতকর্মী শাহেদ কায়েস দীর্ঘদিন ধরেই সোনারগাঁ উপজেলার মায়াদ্বীপ এবং নুনেরটেক চরের বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন। এর আগে তিনি বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করেন। গত ১০ জুন ২০১৩ কবি শাহেদ কায়েস বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে মায়াদ্বীপ এবং নুনেরটেক রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তারপর থেকেই তাঁকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে কবি ও সংস্কৃতকর্মী শাহেদ কায়েস সোনারগাঁয়ের মায়াদ্বীপ এবং নুনেরটেকের অবহেলিত জনগোষ্টীদের ভাগ্যোন্নয়নে গঠন করেন সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশন। তিনি এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। মায়াদ্বীপে কবি শাহেদ কায়েস তিনটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সবাই ঋষি পাড়ার এবং জেলে পাড়ার। কবি শাহেদ কায়েস আমার বন্ধু। ভারতে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশুনা করার পর বিদেশী স্কলারশিপ ত্যাগ করে নিজ এলাকায় প্রান্তিক ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার আলো হাতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করছেন। মায়াদ্বীপের তিনটি স্কুল সম্পর্কে প্রায়ই আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হতো। সুবর্নগ্রাম ফাউন্ডেশান নামে যে প্রতিষ্ঠান কবি শাহেদ কায়েস শুরু করেছেন, সেটার অনেক প্রোগ্রামের সঙ্গে আমি অনেক সময় জড়িত ছিলাম। মেঘনার বালু সস্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়েই কবি'র উপর এই হামলা হল খুবই পরিকল্পিতভাবেই। আমরা এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহবান জানাই। দীর্ঘদিন ধরে একশ্রেণীর বালু ব্যবসায়ীরা মেঘনার বালু নিয়ে ব্যবসা করে আসছিল। বালু সন্ত্রাসীদের অবাধ বালু উত্তোলনের কারণে মেঘনা নদী এখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। এমনিতে বালু সন্ত্রাসীদের স্বেচ্ছাচারিতায় মেঘনা নদী এখন স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। মেঘনা নদীর স্বাভাবিক গতি প্রকৃতির উপর অসংখ্য পরিবারের জীবন যাপন পরিচালিত হয়। বালু সন্ত্রাসীদের আক্রমণে সেই স্বাভাবিক জীবনযাপন এখন হুমকির মুখে। বিষয়টি নিয়ে কবি শাহেদ কায়েস প্রতিবাদ করায় তার উপর এই জঘন্য হামলা হয়েছে বলেই আমরা অনুমান করি। সোনারগাঁও পুলিশ এবং প্রশাসন বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত বিচারে সচেষ্ট হবেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি। কবি শাহেদ কায়েস দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্মে আবারো প্রাণ সঞ্চার করবেন বলেই আমরা হৃদয়ে শক্তি রাখতে চাই। আমার বন্ধু রাজীব নূরকে ফোন করে আমি শাহেদের সর্বশেষ অবস্থা জেনে একটু প্রাণ ফিরে পেলাম। আশা করছি বিষয়টি সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবেন। নইলে একজন কবি ও সংস্কৃতকর্মীকে প্রাণনাশের হীনচেষ্টার প্রতিবাদে সংস্কৃত অঙ্গন ফুঁসে উঠবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। কবি শাহেদ কায়েস যতো দ্রুত আরোগ্য লাভ করে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন ততোই আমরা উদ্বিগ্ন থেকে স্বস্থি পাব। কবি শাহেদ কায়েসের উপর বালু সন্ত্রাসীদের নগ্ন হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৩৬
false
mk
কেবল ধর্ম শিক্ষিত শিবিরকর্মীরাই এসব নোংরা কথা লিখতে পারে জামাত শিবিরের কর্মীরা ইসলাম ধর্মে শিক্ষিত। প্রতিটি কর্মীকে ধর্মের অনেক বই পড়তে হয়। প্রতিদিন নামাজ পড়লে একটা বইয়ে টিক চিহ্ণ দিতে হয়। কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়া হলো। কতজনকে ছালাম দেওয়া হলো। কয়পারা কোরআন পড়া হলো। এরা জানে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জীবনী। আর যারা শাহবাগ আন্দোলনকারী? তারা কি এতো কিছু জানে? তারা তো শিবির কর্মীদের মতে নাস্তিক। কাফের। তাদের কি সাধে ধর্মের খোঁজখবর নেওয়ার? কখনোই না। তাহলে প্রশ্ন হলো, যিনি নূরানী চাপা ব্লগটি লিখেছেন, তিনি কীভাবে এত তথ্য আয়ত্ব করলেন? ধরা যাক, রাজীব লিখেছেন, তাহলে রাজীব ধর্মের অনেক কিছুই জানেন। কিন্তু ব্যাপারটা কি এরকম? মোটেই না। কারণ সেটা সম্ভব নয়। নূরাণীচাপা আমি যতটুকু পড়েছি, কেবলমাত্র একজন ধর্মশিক্ষিত লোকেই এত তথ্যবহুল একটি ব্লগ লিখতে পারে। এবং সেটা কোন বিষয় নিয়ে লিখলে সাধারণ মানুষের আবেগকে আঘাত করা যেতে পারে সেই বিষয়টা তুলে আনতে হবে। সাধারণত; আমরা যারা অল্প বিস্তর ধর্ম মানি- তাদের পক্ষে এরকম তথ্যবহুল লেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যেমনটা শিবিরকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেন না। ইতিহাস জানেন না বলে তারা কখনো ভাবতেই পারেন না গোলাম আযম, নিজামী, সাইদী ৭১ এ কী করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভয়াল ভূমিকার কথা। তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্লগারদের মতো এতোটা গবেষণাও করেন না। ইতিহাস নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। এমনিতে পাকিস্তান বলতে তারা বাপ বাপ। এখনো পাকিস্তান-ই তাদের মা বাপ। জন্মদাতা। বাংলাদেশ নামক একটা স্বাধীন দেশে বাস করেও তারা পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে রাস্তায় মিছিল মিটিং করে। স্বাধীন দেশের পতাকার পোড়ায়! শহীদ মিনার ভাঙে! বায়তুল মোকাররম মসজিদের জায়নামাজে আগুন লাগায়! গোলাম আযম নিজামীদের মুক্তির জন্য রাস্তায় গাড়ি পোড়ায়, মানুষ পোড়ায়! বুকের মধ্যে লিখে রাখে-সাঈদীর কিছু হলে...। এসব কীটপতঙ্গরুপী ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীদের কথা ইসলাম ধর্মে অনেক আগেই মহানবী(সাঃ) বলে গেছেন। এবং তার উম্মতদের সাবধান বাণীও দিয়ে গেছেন। আসলে নবীজী জানতেন, একটা সময় আসবে যারা ধর্মের আড়ালে ব্যবসা ফাঁদবে। সাধারণ মানুষকে বোকা বানাবেন। এদের লাখো লাখো ভক্ত থাকবে। এদের চিনে রাখারও কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন। লক্ষণ দেখে আর বোঝার বাকি নেই-জামাত শিবিরই সেই দল। পাকিস্তান দেশটাকে এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে। প্রতিদিন সেখানে শত শত নারী শিশু বোমার আঘাতে মারা যাচ্ছে। অথচ তাদের বোধোদয় হচ্ছে না, ধর্ম আসলে এগুলো না। ধর্ম তো শান্তির পথ দেখায়। ধর্ম তো সমাজকে সুশৃঙ্খলতার পথ তৈরি করে। মহানবী (সাঃ) যতোগুলো মানুষকে যুদ্ধ করে ইসলাম ধর্মের পথে আনতে পারে নাই-তার চেয়ে বেশি মানুষকে ইসলামের পতাকাতলে নিয়ে এসেছিলেন ব্যবহার দিয়ে। মানুষ তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আর এখন? বিচারপতির স্কাইপ যদি সত্যিই হয়ে থাকে, তাহলে সাইদীর ফোনালাপও সত্যি! আর এরকম একজন জগণ্য ব্যক্তির শত শত অনুসারী? সত্যি আফসোস হয়। অশিক্ষিত-অল্পশিক্ষিত মানুষদের ভুলিয়ে ভালিয়ে রাস্তায় লেলিয়ে দেওয়ার নাম কি ইসলাম? অসম্ভব। এই যদি ইসলাম হয়, তাহলে জঙ্গি তৈরির ইসলামের পতাকাতলে মানুষ জমায়েত হতে ভয় পাবে। ৭ শ কোটি মানুষের বিশ্বে মাত্র ১.৫শ কোটি লোক কেন ইসলাম ধর্মানুসারী? আর সেই ১.৫শ কোটি মুসলিমের মধ্যে কতোজন মাত্র প্রকৃত ইসলাম মানে? সেটা নিশ্চয় খুব হতাশার পরিসংখ্যান। সময় কি আসে নাই এসব পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবনার? শিবির-কর্মীরা, আপনারা তো লীগ কিংবা দল নন। আপনারা কি চান? ক্ষমতা না ইসলাম? কোনটা? দেশ শাসনে আপনাদের এতো লোভ কেন? আর যদি থেকেই থাকে তাহলে-আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, কোনো নারীকে দলনেতা হিসেবে ইসলাম কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। তাহলে আপনাদের নেতা গোলাম আযম কেন খালেদা জিয়াকে নেতা মানেন? নিশ্চয় আপনাদের কোরআন-হাদিস তা সাপোর্ট করে না, কিন্তু আপনারা তা করতেছেন! আপনারা জানেন, স্বাধীন দেশে এই গোলাম আযমকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে সাধারণ জনগণ জুতাপেটা করেছে। আপনারা কি সেই ছবি দেখেন নি? কেন করেছে, সেই উত্তর কি খোঁজার চেষ্টা করেছেন কখনো? শুধু সেই উত্তরটা খুঁেজ বের করে নামাজ পড়ানো শুরু করুন, আমরা মুসলিম হিসেবে আছি সেই নামাজে। কারণ মারা গেলে জানাযা সব মুসলিম-ই-রি হবে। হোক সে যত বড় নাস্তিক। কারণ আপনারা-আর ব্লগাররা সবাই জন্মসূত্রে মুসলমান। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭
false
fe
তার আগে চাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার তার আগে চাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারফকির ইলিয়াস--------------------------------------------বাংলাদেশ সরকারের একজন অপসারিত মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরেছেন। তিনি বাংলাদেশের জন্মসূত্রে নাগরিক। তিনি তার নিজ দেশে ফিরতেই পারেন। আমার মনে হয়, তিনি খারাপ করেননি দেশে ফিরে। তবে এ কথা ঠিক তিনি বেশ ভেবে-চিন্তেই দেশে এসেছেন। আর এসেছেন নিশ্চয়ই সরকারপক্ষের সবুজ সংকেত পেয়ে। এসেই তিনি আইনের হাতে নিজেকে সোপর্দ করেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। এখন তার বিচার চলবে। মাননীয় আদালত বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচার করবেন এবং রায় দেবেন- সেটাই মানুষের প্রত্যাশা।আমরা জানি, লতিফ সিদ্দিকী ঝানু রাজনীতিবিদ। জেল-জুলুম অনেক সহ্য করেছেন জীবনে। কিন্তু শেষ বয়সে এসে যে গর্হিত কাজটি করেছেন- তাহলো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে তিনি কথা বলেছেন। এমন কথাবার্তা- গোত্রগত, ধর্মগত সংঘাত ছড়ায়। যা মানবতাবাদকে হত্যা করে। লতিফ সিদ্দিকী একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তা দাবি করেন নিজেকে। আর এই দাবিদার হয়ে তিনি ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে পারেন না। সমস্যাটা সেখানেই হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তা জেনেই তিনি দেশে ফিরেছেন। তিনি তা আইনিভাবেই মোকাবেলা করবেন। সেটাও ধরে নেয়া যায়।বলা দরকার তিনি এখনো একজন বহাল সাংসদ। এ দিকে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার শিরীন শারমিন বলেছেন, সংসদ চত্বরের বাইরে থেকে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই। তার বক্তব্য এরকম- ‘সংসদ চত্বর থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতির বিষয়ে কার্যপ্রণালী বিধিতে সুস্পষ্ট বিধি রয়েছে। তবে সংসদ চলার সময় কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে আইনের বিধান রয়েছে, সেটি একজন সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।’বাংলাদেশের সংবিধান যা বলছে তা সবারই জানা দরকার। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, ‘স্পিকারের অনুমতি ব্যতিরেকে সংসদের সীমার মধ্যে কাহাকেও গ্রেপ্তার করা হইবে না।’ সংসদ সীমার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সংসদ-কক্ষ, লবি, গ্যালারি এবং সাময়িকভাবে স্পিকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানসমূহ।কার্যপ্রণালীতে আরো বলা হয়েছে, ‘কোনো সদস্য ফৌজদারি অভিযোগে বা অপরাধে গ্রেপ্তার হইলে কিংবা কোনো আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইলে বা কোনো নির্বাহী আদেশক্রমে আটক হইলে ক্ষেত্রমত গ্রেপ্তারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ তৃতীয় তফসিলে প্রদত্ত যথাযথ ফরমে অনুরূপ গ্রেপ্তার, দণ্ডাজ্ঞা বা আটকের কারণ বর্ণনাপূর্বক অবিলম্বে অনুরূপ ঘটনা স্পিকারকে জানাইবেন।’লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের পর সেই ধূম্রজাল কেটে গেছে। বিচারের প্রক্রিয়ায় কি আছে সংবিধানে- তা একটু পড়া যাক। আমরা পত্রপত্রিকায় পড়েছি, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ও ২৯৮ ধারায় ডজনখানেক মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যার মধ্যে সাতটি মামলা ঢাকার আদালতের। দুটি ধারাই জামিনযোগ্য। দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় অন্যের ধর্ম বিশ্বাসের অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে বিদ্বেষমূলক কোনো কাজ করলে দুই বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। আর দণ্ডবিধির ২৯৮ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে বিদ্বেষমূলক শব্দ উচ্চারণ করলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কী করে- তা দেখার বিষয়। তবে যে বিষয়টি না বললেই নয়, তাহলো এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে একটি গোলযোগ বাধাবার চেষ্টা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক কথা হচ্ছে, এই ঘুরপাক ঘিরে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত মৌলবাদী-জঙ্গি সংগঠনগুলো মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। এরা দেশে চরম গোলযোগ বাধাবার চেষ্টা করতে পারে। এসব কথা সরকারের যে বিবেচনায় নেই, তা আমি বলছি না। তবে তা মোকাবেলায় সরকার কতটা প্রস্তুত এবং সে সঙ্গে সরকারের অভ্যন্তরের নীতিনির্ধারকরা পা পিছলে পড়বেন কিনা- সে প্রশ্নটি আসছে খুব সঙ্গত কারণেই। তার কারণ সরকারের সামনে এখন অনেকগুলো কাঁটা। বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, এর কিছু কর্মী যেভাবে দখলদারীর ভূমিকা নিয়েছে, তা দেশবাসীকে জিম্মিদশায় ঠেলে দিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেয়ার কথা। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান ও পুলিশ কমিশনার মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বোধহয় এক সমস্যা দেখা দিয়েছে, এ সম্পর্কে পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে জানতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘এখানে একটা নির্দেশ আমি দিতে চাই, যারাই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস করবে, যে দলের হোক, কে কোন দলের সেটা দেখার কথা না, যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে একশন নিতে হবে।’ এরপর সিলেটের পুলিশ কমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘গত ২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে একজন ছেলে নিহত হয়। ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণ করেছি। তা না হলে হয়তো আরো ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত।’ তিনি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে; বিশেষ অভিযানে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সিলেটের পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ‘এই অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।’ সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো দিকে না তাকিয়ে, কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেবেন এটাই আমরা চাই।’ সিলেটের সঙ্গে আরেকদিন ভিডিও কনফারেন্স করবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি চলমান থাকবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব।’ প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক, সুখে থাকুক, উন্নত জীবন পাক- এটাই আমরা চাই।’ কিন্তু এটাই কি শেষ কথা? নির্দেশ জারি হলেই তা কি পালিত হচ্ছে? না হচ্ছে না। আর হচ্ছে না বলেই দেশে লাশ পড়ছে। মওকা পাচ্ছে, সরকারবিরোধী মহল। দুঃখের কথা আমাদের রাজনীতিকরা বিশ্বরাজনীতির সৃজনশীলতা দেখেন না। একটি সা¤প্রতিক খবর সবার নজরে পড়েছে।মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল পদত্যাগ করেছেন। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান প্রতিরোধ ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। প্রায় দুই বছর তিনি এই পদের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিও প্যানেট্টার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র ইসলামিক স্টেটের উত্থান প্রতিরোধ বিষয় নয়, রিপাবলিকান অধ্যুষিত কংগ্রেসও চাইছে না আর তাকে। দীর্ঘদিন ধরে হেগেলের সঙ্গে কংগ্রেসের ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল। স¤প্রতি হয়ে যাওয়া মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে উভয় হাউসে রিপাবলিকানদের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ডেমোক্র্যাটরা। আসছে জানুয়ারি ২০১৫ থেকে শুরু হতে যাওয়া কংগ্রেসের পরবর্তী অধিবেশনে প্রতিক‚ল পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা থেকেই চাক হেগেল পদত্যাগ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।প্রেসিডেন্ট ওবামা চাক হেগেলের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। গেল ২৪ নভেম্বর ২০১৪ সোমবার দিনের শেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চাক হেগেলের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে সিনেটে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নাম ঘোষণার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন চাক হেগেল, জানিয়েছেন ওবামা প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। চাক হেগেলের স্থলাভিষিক্ত হতে সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্লোরনয় এবং সাবেক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টারের নাম শোনা যাচ্ছে। ব্যর্থ হলে যে সরে যেতে হয়, এটা তারই একটি ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেটা নেই। আর নেই বলেই রাষ্ট্র আজ জিম্মিকাল অতিক্রম করছে। এসব দখলদারদের থামাতে হলে সরকারকে কঠোর হতে হবে। আইনের শাসনকে সম্মান দিতে হবে। এই অঙ্গীকার যত সুদৃঢ় হবে, ততই মঙ্গল হবে দেশ ও মানুষের।----------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত
false
fe
শিক্ষার নামে কী শেখানো হচ্ছে_ শিক্ষার নামে কী শেখানো হচ্ছে?ফকির ইলিয়াস====================================অনেক কিছুই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। খবর বেরিয়েছে, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রীর পরিচালিত ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বাড্ডা থানা শাখার আমিরসহ ১৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মানববতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল বলে জানিয়েছে পুলিশ। শামসুন্নাহার নিজামী নিজেও জামায়াতের নেতা। তিনি দলটির মহিলা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল জানিয়েছেন, ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটির দু’টি শাখা রয়েছে। একটি গুলশানে আর অন্যটি মেরুল বাড্ডার যে স্কুলটিতে অভিযান চালানো হয়েছে সেটি। দু’টি শাখারই অধ্যক্ষ শামসুন্নাহার নিজামী। এম এ জলিল জানিয়েছেন, বাড্ডা থানা জামায়াতের আমির ফখরুদ্দিন মো. কেফায়েতুল্লাহ স্কুলটির ভাইস প্রিন্সিপাল। তিনিই এই শাখাটি চালাতেন। তাকে আটক করা হয়েছে। তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। বাড়ির মালিক বিল্লাল হোসেনসহ মোট ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ রকম আরো কিছু সংবাদ পড়া যাক; যা এই কয়েক সপ্তাহে ঘটেছে।১. কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রীদের একমাত্র হল নবাব ফয়জুন্নেছা ছাত্রী হল থেকে জঙ্গি সংগঠনের ৩ মহিলা সদস্যকে ২৬ জুলাই বুধবারের মধ্য রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা বাতুল, অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী সালমা আক্তার, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী সম্পা। ছাত্রীদের গ্রেপ্তার ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুর রশীদ জানিয়েছেন, ছাত্রীরা নিজেরাই স্বীকার করেছে যে তারা জড়িত রয়েছে। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ডা. জাকির নায়েকের বইপত্র, আফগানিস্তানের বিভিন্ন বইসহ জিহাদি বই পাওয়া গেছে।২. আরো ভয়াবহ সংবাদ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৪ মহিলা জঙ্গিকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সন্ধান পাওয়া গেছে, বড় ধরনের মহিলা জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্যও। নারী জঙ্গিরা জেলা পর্যায়ে পাড়া-মহল্লায় ধর্ম প্রচারের নামে ও ছোট ছোট সাপ্তাহিক ধর্মসভার আড়ালে কাজ করছে। পুুরুষদের পাশাপাশি জঙ্গিবাদে মহিলাদের তৎপরতায় শঙ্কা বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যেমনি, তেমনি জনগণের মধ্যেও। শুধু ঢাকায় নয়, নারী জঙ্গি আটক করা হয়েছে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, লক্ষীপুর, ঝিনাইদহ থেকেও।গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা পরিকল্পনা করার পর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজেই এখন নারী জঙ্গিদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি অর্থায়নের মাধ্যমে নারীদের দিয়ে গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সারা দেশেই জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী ও সংগঠনে নারীদের নিয়োগ করা হচ্ছে।এরা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায়। জঙ্গি সংগঠনগুলো এই নারী জঙ্গিদের দিয়ে ধর্মীয় ও জিহাদি কথা বলে ধর্মপ্রাণ মা-বোনদের উদ্বুদ্ধ করে এবং আর্থিক সহায়তা নিয়ে থাকে। কিন্তু আড়ালে তারা জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। যে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল প্রকাশ্য নারী বিদ্বেষী, সেই তারাই গড়ে তুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। তাদের একটি অংশকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে এই সংস্থার সদস্য প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে এক হাজার সাতাত্তর জন জঙ্গিবাদে দীক্ষিত। এমন রিপোর্টই বের হচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়ায়।দেশব্যাপী প্রশিক্ষণে বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে নেমেছে এই নারীরা। গ্রেপ্তার হয়েছে যারা, তাদের কাছে ককটেল, গ্রেনেড তৈরির উপকরণ, জিহাদি গ্রন্থ, লিফলেট, প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচিসহ নানা তৎপরতার তথ্য পেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণীরাও জড়িত হয়ে পড়েছে। জামায়াত পরিচালিত ও অর্থায়নে গড়ে ওঠা বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানগুলো জঙ্গি মনমানসিকতা তৈরি করে আসছে। শিক্ষিত তরুণীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গিপনার যোগসূত্রগুলো কাজে লাগাচ্ছে। এই যে শিক্ষার নামে এক ধরনের সন্ত্রাসী উন্মাদনা তা কে ঠেকাবে, কিভাবে ঠেকানো যাবে?ঢাকায় প্রকাশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছে দা’ওয়াতে ইসলাম নামের উগ্র মৌলবাদী একটি সংগঠন। মোহাম্মদপুরের একটি চারতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে রীতিমতো সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চলছে কার্যক্রম। মাস দুই আগ থেকে সংগঠনটি মহিলা শাখার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংগঠনটির বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কর্মী সংগ্রহ করার অভিযোগ রয়েছে। দেশের ১৭ জেলায় থাকা ৭০টি বিহারি ক্যাম্প ও জামায়াত-শিবিরের প্রভাব থাকা জেলাগুলোতে প্রায় তিন বছর ধরে গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে সংগঠনটি। তবে আচমকা ঢাকায় হেড অফিস খুলে তৎপরতা চালানোর ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, দাওয়াতে ইসলামী একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিহ্নিত। জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতের গবেষণা মোতাবেক দেশে জঙ্গি ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সংখ্যা ১২৫। এর মধ্যে দা’ওয়াতে ইসলাম অন্যতম। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও সংগঠনটিকে অর্থায়ন করছে।বাংলাদেশে তরুণদের বিপথগামী করে এই কালো আঁধারে নামাচ্ছে কারা? আমাদের স্মরণ আছে, ১৯৯৯ সালে কবি শামসুর রাহমানকে হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়। ২০০৪ সালের ২৭ ফেরুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে টিএসসিতে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদকে আহত করা হয়। পরবর্তীতে বিদেশে তার মৃত্যু, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের ব্লুগার ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা, ২০১৩ সালের গত ৯ এপ্রিল দিনদুপুরে বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আবাসিক ছাত্র আরিফ রায়হান দীপকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন রামকৃষ্ণ (আর কে) মিশন রোডের বাড়িতে জবাই করে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি ও বিশ্বত্রাণ কর্তা দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুক (৫৫), তার ছেলে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সদরঘাট শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানোয়ারুল ইসলাম মনির (৩০), গৃহকর্মী হিসেবে ওই বাড়িতে থাকা লুৎফুর রহমানের সেবক বা খাদেম মঞ্জুর আলম (২৮), মুজিবুল সরকার (৩২), শাহীন (২৪) ও রাসেলকে (৩৭) হত্যা, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাড়িতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের শান্তির পথে ও কাফেলা নামক ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুুরুল ইসলাম ফারুকীকে জবাই করে হত্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিত রায়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা ও তার স্ত্রীকে আহত করা হয়। রাজধানীতে ব্লুগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যাকালে দুই মাদ্রাসা ছাত্র হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর উগ্র মৌলবাদী সংগঠন ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে। এসব হত্যাকাণ্ডে উগ্র মৌলবাদী সংগঠন জড়িত বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এক প্রকার নিশ্চিত।সবচেয়ে অবাক করা কথা হচ্ছে, এক ধরনের শিক্ষার নামে এদের গড়ে তোলা হয়েছে। যার ফলশ্রæতিতে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঘন্য আক্রমণ করা হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে জঙ্গিবাদের প্রসার আমাদের সবার জন্যই শঙ্কার কারণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ একদিন শিক্ষিত মানুষের দেশ হবে। দেশের কোনো ছেলেমেয়েই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে না। প্রত্যেক ছেলেমেয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত রাখবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগামীতে দেশকে তারাই নেতৃত্ব দেবে। এ জন্য এখন থেকেই তাদের যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তাই জঙ্গিবাদ নয়, সুস্থ মস্তিষ্কেই বেড়ে উঠবে আগামীর প্রজন্ম। আমরাও এমন প্রত্যাশা করি। কিন্তু এ জন্য সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনোভাবেই যেন অজগর ঢুকতে না পারে।------------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥শনিবার, ২৭ আগস্ট ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৫৫
false
mk
ফিরে দেখা_ পিলখানা হত্যাকাণ্ড, বিচারে এক অনন্য নজির ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় ইতিহাসের বর্বরতম যে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়, সেই হত্যাযজ্ঞের খলনায়কদের বিচারের রায় ঘোষিত হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। মাত্র ৪ বছর ৯ মাসের মাথায় এতো বড় একটি ঘটনার তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়াকে তাই দল-মত নির্বিশেষে সবাই শেখ হাসিনা সরকারের অনন্য সাফল্য হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। সাবেক বিডিআর বর্তমান বিজিবি সদর দপ্তরে যখন বিডিআর বিদ্রোহ সংঘটিত হয়, তখন মাত্র ৪৭ দিন বয়সী মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত ঠা-া মাথায় চূড়ান্ত ধৈর্য প্রদর্শন করে বিদ্রোহীদেরসাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যুৎপন্নমতিতার পরিচয় দিয়ে বিদ্রোহ দমনে সক্ষম হন। ওই বিদ্রোহের ঘটনায় ২০০৯ সালে অনেক কিছুই ঘটতে পারত। মাত্র দেড় মাস বয়সী মহাজোট সরকারের পতন ঘটতে পারত, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারত এবং দেশে বড় ধরণের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা প্রয়োগ করে কোনো ধরণের সংঘর্ষে না জড়িয়ে মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মাথায় বিদ্রোহ দমনে সমর্থ হন। বিদ্রোহের পরপরই মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, ‘যারা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং দ্রুততম সময়ে পিলখানায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।’প্রধানমন্ত্রী তাঁর কথা রেখেছেন। যেভাবে তিনি দ্রুততার সাথে বিদ্রোহ দমন করেছেন, সেভাবেই দ্রুততম সময়ে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের খলনায়কদের বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন। মহাজোট সরকারের অব্যাহত সহযোগিতায় গত বছরের ৫ নভেম্বর বিডিআর বিদ্রোহের রায় ঘোষিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের ন্যক্কারজনক হত্যাকা-ের কলঙ্কমোচন হয়। পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ হয়। বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- হয়। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয় ২৬২ জনের। মামলায় খালাস পায় ২৭১ জন।এই মামলাটি ছিল ফৌজদারি আদালতের ক্ষেত্রে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা। দ-াদেশের ক্ষেত্রেও পৃথিবীর সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এই মামলা। এই হত্যা মামলার রায়ে ফাঁসির হুকুম হয়েছে ১৫২ জনের। কোনো একটি মামলায় এতো বেশি সংখ্যক ফাঁসির আদেশের নজির আর নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে আসামির সংখ্যা বিবেচনায় এতো বড় বিচার কার্যক্রম কোথাও কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। সঙ্গত কারণেই এই বিচারকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীত করার লক্ষ্যে চার বছর ৯ মাসের মতো সময় লেগেছে। তারপরও বলা চলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহ ও সহযোগিতায় এই মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হয়েছে।বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের মামলাটি যখন দায়ের করা হয় তখন অনেকেই বলেছিলেন, এই মামলাটি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকবে। কোনো ধরণের নিষ্পতি না হয়ে একদিন এই মামলাটিও ফ্রিজ হয়ে যাবে। অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন ১৫ আগস্টের ঘটনার মতো, জাতীয় চার নেতার হত্যাকা-ের মতো, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার মতো, রমনার বটমূলে বোমা হামলার মতো এই ঘটনাটির বিচার প্রক্রিয়াও হবে দীর্ঘ। কিন্তু সব নিন্দুকের মুখে চুনকালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাত্র চার বছর নয় মাসের মাথায় পিলখানায় বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, যা ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে।মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাসের (৪৭ দিন) মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য পরীক্ষা হয়ে এসেছিল বিডিআর বিদ্রোহ। নিষ্ঠুর সে ঘটনায় পিলখানায় ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। তাদের অনেকের লাশ গর্তে পুঁতে ফেলা হয়। সেসময় সেনাবাহিনীকে অপারেশনে পাঠানোর পরিবর্তে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমঝোতার পথ বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সমঝোতার মাধ্যমে পিলখানায় আরো ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানো সম্ভব হয়। সমঝোতার সিদ্ধান্তের বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পেরেছেন। ঘটনার মাত্র ৪ বছর ৯ মাসের মাথায় দায়ীদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিজ্ঞা বাস্তব রূপ পায়।সেদিন যা ঘটেছিল২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরের দরবার হলে শুরু হয় তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহ। বাংলাদেশ রাইফেলস সপ্তাহ উপলক্ষ্যে দরবার হলে বিডিআর মহাপরিচালক ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিডিআর সদস্যদের সমাবেশস্থল দরবার হল থেকেই এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে দরবার হলে একদল বিডিআর সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। সেনা কর্মকর্তারা হাত তুলে দরবার হল থেকে বের হতেই গুলি চালানো হয়। প্রথমেই বিডিআর মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বাকি কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে দরবার হলের বাথরুম, মঞ্চের গ্রীনরুমসহ পর্দার আড়ালে আত্মগোপন করেন। কিন্তু বিডিআর সদস্যরা দরবার হলে খুঁজে খুঁজে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে। বিডিআর সদস্যরা অস্ত্রাগার লুট করে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে নেয়। পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারে হামলা চালিয়ে কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আটক করে কোয়ার্টার গার্ড-এ জিম্মি করা হয়। ঘটনা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পিলখানার আশেপাশে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্রোহীদের মধ্য থেকে ১৪ বিডিআর সদস্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন। কিন্তু বিডিআর সদস্যরা আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর প্রধানরা পিলখানায় বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিলখানায় প্রবেশ করে বিডিআর সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা নেওয়া শুরু করলেও আধঘণ্টা পর আবারও বিডিআর সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে নেয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে দেশের অন্যান্য ব্যাটালিয়নেও বিডিআর সদস্যরা বিদ্রোহ করে। রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, সাতক্ষীরা, খুলনা চট্টগ্রাম, সিলেট, নওগাঁ, যশোর, কুমিল্লাসহ বেশিরভাগ ব্যাটালিয়ন ও সেক্টরে বিডিআর সদস্যরা বিডিআর কর্মকর্তাদের (সেনা কর্মকর্তা) জিম্মি করে। এদিন দুপুর ২টার দিকে শুরু হয় জিম্মি উদ্ধার। ২৬ ফেব্রুয়ারি বেলা ৪টার দিকে সেনা কর্মকর্তারা পিলখানায় প্রবেশ করেন।প্রায় ৩৬ ঘণ্টার এ বিদ্রোহের পর পিলখানা তৈরি হয় একটি মৃত্যুপুরীতে। চারিদিকে শুধু রক্ত আর রক্ত। বিদ্রোহে ব্যাটালিয়নের বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর করা হয়। সেনা কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কামরাঙ্গীরচরের একটি সুয়্যারেজ লাইন থেকে ৯ সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হাসপাতালের পেছনের একটি গণকবর থেকে উদ্ধার হয় ৩৯টি লাশ। এমটি গ্যারেজ মাঠের গণকবর থেকে উদ্ধার হয় আরো ৯ সেনা কর্মকর্তার লাশ। এ বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, ১ জন সৈনিক, ২ জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৭ জন বিডিআর সদস্য ও ৬ জন পথচারীসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন।ঘটনার তদন্ত ও অন্যান্যবিডিআর হত্যাকা-ের পরপরই সরকার কালবিলম্ব না করে তিন পর্যায়ে এই ঘটনার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে। তিনটি পর্যায় হলো, বিডিআর কর্তৃক তদন্ত, সেনাবাহিনী কর্তৃক তদন্ত এবং জাতীয় তদন্ত। তদন্ত শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবিদাওয়া উত্থাপিত হয়। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্রোহের বিচার সামরিক আইনে করা। সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সেনা কর্মকর্তাদের সকল দাবি পূরণ করেন। একই সাথে বিচার প্রক্রিয়াকে বিতর্কের ঊর্ধেŸ রাখার জন্য ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬ এর অধীনে সুপ্রিম কোর্টে রেফারেন্স প্রেরণ করেন। ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ১০ জন সিনিয়র আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করা হয়। এরপর নানান প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ৫ নভেম্বর বিডিআর হত্যাকা-ের রায় ঘোষিত হয়। বিডিআর হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই বিরোধিতায় নামে বিএনপি-জামায়াত জোট। এই জোট বিচার বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিরতিহীনভাবে এখনো নানাবিধ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গেলে বিজিবি’র নাম পরিবর্তন করে আগের নাম এবং পোশাক বহাল রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তাছাড়া এই জোট সেনা বিধি ৫ (পাঁচ) মোতাবেক সেনা আইনে এ বিদ্রোহের বিচারের বিরোধিতা করে; যা এখনো অব্যাহত আছে।বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রহস্যজনক অবস্থান নিয়ে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। সে সময় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা কর্মকর্তা হত্যার পেছনে ছিল রহস্য। সেখানে ষড়যন্ত্র করে সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে।’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বেশ কয়েকবারই বিডিআর বিদ্রোহে ষড়যন্ত্রের কথা বললেও ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকা-ের সময় তিনি কোথায় ছিলেন সে রহস্য উন্মোচন করেননি। ঘটনা শুরুর পরপরই খালেদা জিয়া কালো কাচ ঘেরা গাড়িতে করে সেনানিবাসের তৎকালীন বাসা থেকে বেরিয়ে যান। দুই রাত তিনি বাসায় ছিলেন নাÑএটা সকলেই জানেন। তিনি কেন সেনানিবাসের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন, বেরিয়ে কোথায় গেলেন, কেন গেলেন, বেরিয়ে যাওয়ার আগে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে ৮৮ মিনিটের ফোনালাপ কেন করেছেনÑএ জাতীয় নানান রহস্যের কোনো ব্যাখ্যা কোনোকালেই খালেদা জিয়া বা তার দল দেয়নি। যা মানুষের মধ্যে বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বিডিআর হত্যাকা-ের বিচার এবং সরকারের সফলতা২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। এটি ছিল জাতির জীবনের অন্যতম কলঙ্কিত অধ্যায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃসহ অত্যাচার, অনাচার এবং দুর্নীতির প্রেক্ষিতে দেশের মানুষ নিজের অধিকার আদায়ের জন্য সর্বজন প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে মহাজোটকে দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার মাত্র ৪৭ দিনের মাথায় এ ধরণের বর্বরোচিত হত্যাকা- সংঘটিত হয়। এই ঘটনায় সর্বমোট ৭৪ জন প্রাণ হারায়। যার মধ্যে ৫৭ জন ছিল দেশের মেধাবী সেনা কর্মকর্তা। এটি সহজে অনুমেয় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তি নব গঠিত সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্যই এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।নানা অপপ্রচার ও প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও দৃঢ় সংকল্পের কারণে সাড়ে চার বছর সময়ে দীর্ঘ এ বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের ন্যক্কারজনক হত্যাকা-ের কলঙ্ক মোচন হলো। পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয়েছে ১৬২ জনের। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ২৭১ জন।দুঃখজনক হলেও সত্য, বিএনপি-জামায়াত জোট আজ বিডিআর’র বিচার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনী এবং দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। তাদের অনেকেই ঐ সময় সেনাবিধি-৫ মোতাবেক সেনা আইনে এ বিদ্রোহের বিচারের বিরোধিতা করেছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রহস্যজনক অবস্থান অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। পূর্ববর্তী বিএনপি শাসনামলে ১৯৭৭-১৯৮১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২১টি সামরিক অভ্যুত্থানে ১২০০’র বেশি সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য নিহত হলেও এসব অভ্যুত্থানের কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এমনকি অনেক মামলার নথিও গায়েব হয়ে গেছে।১৯৭১-এ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজাকার নেতা গোলাম আযমকে জেলে পাঠানোর পর সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সদস্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চক্রান্ত নিয়ে একটি অভ্যুত্থানের ছক আঁকে এবং সেই ছকে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাতের নীল নকশাকে সরকার অত্যন্ত সফলতার সাথে দমন করে। বাংলাদেশে একটি বিরোধী চক্র বারবার সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছে গত ৪০ বছরে। সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কিছু সদস্য শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছে ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিনের মাথায়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট সেনা অফিসাররা স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারছে না। তাই তারা একটির পর একটি সেনা অভ্যুত্থানের চক্রান্তে মদদ দেওয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।আমরা যদি একটু পেছনে ফিরি, প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি কট্টরপন্থি বিপথগামী অংশ; সে ইতিহাস বিশ্ববাসীর জানা। ওই বছরের ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেন প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশতাককে। সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান হন গৃহবন্দি। অবশ্য এর ৪ দিনের মাথায় কর্নেল আবু তাহের, মেজর জলিলের নেতৃত্বে ‘সিপাহী জনতার বিপ্লব’-এ নিহত হন খালেদ মোশাররফ। কিন্তু সেনাপ্রধানের পদ ফিরে পেয়েই মুক্তিদাতা তাহের-জলিলকে বন্দি করেন জিয়া। পরে ফাঁসিতে ঝোলান তাহেরকে। এরপর ১৯৭৭ সালে সফল ‘ক্যু’-এর মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। তাঁর আমলে ২১ বার ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। মারা যান বহু সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি। কোর্ট মার্শাল-এর নামে প্রহসনের নাটক করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় প্রায় দেড় হাজার সেনা ও বিমানসেনা অফিসার এবং জওয়ানকে। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সফরের সময় মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুরের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হন প্রেসিডেন্ট জিয়া।এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদের নির্দেশে দ্রুত বিদ্রোহ দমন করা হয়। নির্মমভাবে খুন করা হয় মেজর জেনারেল মঞ্জুরসহ কয়েকজন বিদ্রোহী সেনা অফিসারকে। জিয়া হত্যার অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয় ১৩ জন সেনা অফিসারকে। যদিও পরবর্তীকালে বিভিন্ন মহল থেকে এরশাদকেই জিয়া হত্যার নেপথ্যচক্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও তার আগেই ১৯৮২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে দেশের মসনদে বসেন জেনারেল এরশাদ। ১৯৯০ সালে এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের পরই রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়।সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে একটি কুচক্রী মহল রয়েছে, যারা বারবার মাথা চাড়া দেওয়ার দুঃসাহস দেখায়; যারা দেশটির স্বাধীনতালগ্ন থেকেই ছক এঁকে চলেছেন। যারা দেশটির স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি, তারাই দেশের সর্ববৃহৎ সুশৃঙ্খল এই বাহিনীকে বারবার প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন। এর সর্বশেষ ছকটি আমরা পিলখানা হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে দেখতে পাই। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে বিএনপির একজন সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টুর প্রত্যক্ষ মদদ ও তার দলটির ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ম্যান্ডেট অনুযায়ী ক্ষমতা গ্রহণের পর যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে দেশকে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়াই যাদের মূল লক্ষ্য ছিল।এই ন্যক্কারজনক হত্যাকা-ের পর বর্তমান সরকার দ্রুততার সাথে বিডিআরকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সংস্থার নাম ও পোশাক পরিবর্তন করা হয়। বিজিবিকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ‘বর্ডার গার্ড আইন-২০১০’ সংসদে পাশ করা হয়েছে। ফলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশÑবিজিবি নামে আত্মপ্রকাশ করেছে বিডিআর। নতুন পোশাক, নতুন নাম ও সংশোধিত আইন নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান আবারও দৃঢ় পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে মাথা উঁচু করে। শুধু তাই নয়, বিদ্রোহে নিহত সামরিক অফিসারবর্গ ও তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকার নানাভাবে সহায়তা ও সহযোগিতা করে। বিডিআর হত্যাকা-ে শহীদ সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের পুনর্বাসন ও কল্যাণেও সরকারের পক্ষ হতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।ইতোপূর্বে বাংলাদেশে অনেক সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে। কিন্তু পূর্বেকার কোনো সরকার তার সুষ্ঠু বিচার করেনি। শুধু ১৯৭৫ থেকে ৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কয়েক হাজার সদস্য নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার এর কোনো বিচার করেননি। বলা হয়ে থাকে ওই সময় প্রায় ২২টির মতো ক্যু সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো কোনো রকম সুষ্ঠু বিচারের মুখ দেখেনি।পরিশেষে এ কথা বলা যায়, নানান প্রতিকূলতা, অপপ্রচার ও চক্রান্তকে অতিক্রম করে বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত ও বিচার সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সঠিকভাবে সরকার তার দায়িত্ব পালনের কারণে যারা নানান ধুম্রজাল সৃষ্টি করে এ ন্যক্কারজনক হত্যাকা-ের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল তাদের অপপ্রয়াস নস্যাৎ হয়েছে। জাতি একটি কলঙ্কের দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে দ্রুত বিডিআর বিদ্রোহের রায় ঘোষিত হওয়ায় পুনর্গঠিত বিজিবি অতীতের গ্লানি ভুলে নতুন উদ্যমে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। একই সাথে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে বিজিবিতে এসেছে স্বস্তি এবং সেনাবাহিনীর মধ্যেও বর্তমান সরকারের অবস্থান হয়েছে আরো সুসংহত।
false
fe
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও একটি শায়েস্তা খাঁ তত্ত্ব ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও একটি শায়েস্তা খাঁ তত্ত্ব ফকির ইলিয়াস==========================================স্খানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বেশ আশাবাদী বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। যারা মনোনয়ন দাখিল করেছেন তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। কেউ কেউ স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়ন দাখিল করলেও তাদেরও নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। একটি রাষ্ট্রে স্খানীয় সরকার কাঠামোটি, একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফেডারেশন সরকারের অধীনে, অঙ্গরাজ্যের স্খানীয় সরকারের কার্যক্রম সেভাবেই পরিচালিত হয়। পরিপূরক হিসেবে স্খানীয় সরকারই সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভমিকা রাখে।বাংলাদেশে সিটি করপোরেশন কিংবা পৌরসভার নামে কোন কোন অঞ্চলের মানুষকে যে ‘নাগরিক সুবিধা’ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়­ তার প্রকৃত চিত্র কেমন তা বাংলাদেশবাসীর অজানা নয়। যদিও ‘নাগরিক’ এবং ‘গ্রামীণ’ এই শব্দ দুটির প্রয়োগ সম্পর্কে আমার ভিন্ন মত রয়েছে। রয়েছে নিজেস্ব ব্যাখ্যাও। একটি রাষ্ট্রের অধিবাসী মাত্রই, জন্মসূত্রে কিংবা মাইগ্রেশনসূত্রে সে দেশের নাগরিক। পর্যটন কিংবা চাকরিসূত্রে অবস্খানরতরা এর আওতায় পড়েন না। তা হলে এখানে ‘নাগরিক’ এবং ‘গ্রামীণ’ শব্দ দুটি আসবে কেন? কেন করা হবে শ্রেণী বিভাজন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা ‘রুরাল’ এবং ‘আরবান’ দুটি শ্রেণী দেখলেও নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে কোন বৈষম্য নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ছোট অঙ্গরাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে দেখা যায় ওসব অঞ্চলে যাতায়াত, খাদ্য, চিকিৎসা সুবিধা বরং শহরগুলোর চেয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে অধিক ভাল।বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা এর বিপরীত চিত্রই শুধু নয় বরং কোন কোন সিটিতে দুর্বিষহ অবস্খা দেখতে পাই। একটি বাংলা টিভি চ্যানেলে বরিশাল সিটি করপোরেশনে ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন দেখলাম। এখনও টিউবওয়েল দিয়ে পানি সাপ্লাই দেয়া হয় বরিশাল মহানগরে। পাঁচ বছরে সেখানে ন্যনতম উন্নয়নের ছোঁয়া পর্যন্ত লাগেনি। অথচ সেই সিটির মেয়র ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে এখন অন্তরীণ য়েছেন।অন্য বড় সিটিগুলোর অবস্খাও একই। ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেটের মতো নগরে দেখেছি একদিন মুষলধারে বৃষ্টি হলেই নর্দমার ময়লা রাজপথে উঠে আসে। হাঁটুপানি জমে যায় যত্রতত্র। এই যদি হয় নাগরিক সুবিধার নমুনা তা হলে গ্রামীণ জনপদের মানুষ কেমন আছেন কিংবা কেমন থাকতে পারেন তা সহজেই অনুমেয়। এই যে চরম দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার বাহাদুরি, তার প্রধান কারণটি হচ্ছে স্খানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা কোন না কোন ভাবে রাজনৈতিক দলগুলো দ্বারা প্রভাবিত।বিশ্বের সভ্য গণতান্ত্রিক সবদেশেই মেয়র, কাউন্সিলর স্টেট সিনেটররা দলীয় বলয়ে থেকেই নির্বাচিত হন। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে তারা দলীয় স্বার্থের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দেন না। দলও তাদের ওপর প্রভাব খাটায় না।বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আমরা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করার কথাটি শুনে আসছি। কিন্তু সে ব্যবস্খা বাস্তবতার পরশ পায়নি কোন সরকারের আমলেই। বর্তমান সরকার সিটি, পৌরসভা, উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনের উদ্যোগী হয়েছেন। আমি মনে করি উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি মেয়র, পৌর চেয়ারম্যানসহ ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, কমিশনারদের সেবা দানের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত সরকারের। প্রয়োজন হলে জেলা পরিষদকে আরও বেশি ক্ষমতা প্রদান করে ‘জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান’ পদটি ও নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকর করা যেতে পারে। এতে জাতীয় সংসদ সদস্যদের একক কর্তৃত্ব ও দাপট কিছুটা হলেও কমে আসবে।বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক সভ্য দেশেই সাংসদ, সিনেটর, কংগ্রেসম্যানরা রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন বিষয়ক জরুরি রাষ্ট্রকার্যগুলো সম্পন্ন করেন। এলাকার উন্নয়নে কাজ করেন মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেম্বাররা। আবার দুটি পক্ষই রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন তাদের কর্মের জন্য। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সব স্খানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কাজটি বর্তমান সরকার সহজতর করবেন বলেই আমি আশাবাদী।দুই.স্খানীয় সরকার নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক সাড়া পড়েছে দেশের সব অঞ্চলে। আওয়ামী লীগ জোরেশোরে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির কিছু প্রার্থীও বিচ্ছিন্নভাবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। জামায়াত বলেছে তারা কোন প্রার্থী দেবে না। জামায়াত মলত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের আজ্ঞাবহ হিসেবেই এসময়ে দিন পার করে দেবে বলে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছে। যদিও ভেতরে ভেতরে তারা অন্য কোন মিত্র পেলেও গাঁটছাড়া বাঁধতে দেরি করবে না।এদিকে ‘সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরাম’ ঘোষণা দিয়েছে, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, আলবদর যে কোন প্রার্থীকে স্খানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিহত করা হবে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের তিরোধানের পর এই ফোরামই ঘাতক দালালদের রুখতে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশে বিদেশে। স্খানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতিটিতে জনগণ এসব হায়েনা চক্রকে রুখে দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১৪ জুলাই ’০৮ এর পর কোন প্রার্থী দলীয় পরিচয় দিতে পারবেন না। দলীয় পরিচয় দিয়ে প্রচারণা করলে তার প্রার্থিতা নির্বাচনী আচরণ বিধি মোতাবেক বাতিল হয়ে যাবে। বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রে প্রার্থী এবং ভোটারকে দলীয় প্রভাব ও নিয়মমুক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। কারণ এখানে দলীয় একটি ইজম এতো শক্তভাবে প্রতিষ্টিত হয়েছে যে­ এর টুঁটি চেপে ধরলে পুরো নির্বাচনী আমেজই হয়তো বিনষ্ট হয়ে যাবে। অতীতেও বিভিন্ন ভোটার বিহীন নির্বাচন বেশিদিন স্খায়িত্ব পায়নি। গ্রহণযোগ্যতাও পায়নি দেশে-বিদেশে। অবশ্য এজন্য ভোটারদের সচেতন করে তোলার বিষয়টিও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। যে দেশে দু’বেলা অন্ন সংস্খান কিংবা দুটি মোটা কাপড়ের জন্য ভোট বিক্রি হয়ে যেতে পারে­ সে দেশে সচেতন ভোট প্রয়োগ কীভাবে সম্ভব হতে পারে? দারিদ্র্যবিমোচন মানুষকে অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং স্বাবলম্বী প্রকল্পের শক্তিশালী হাত নির্মাণের মাধ্যমেই এই কাজটির শুভসূচনা ঘটানো সম্ভব হতে পারে। কিন্তু খুবই দু:খজনক হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের কোন সরকারই আন্তরিকভাবে চায়নি। এদেশের মানুষ সুশিক্ষিত, অধিকার সচেতন হয়ে গড়ে উঠুক।তিন.রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন পক্ষের অসংলগ্ন বক্তব্য দেশের জনগণকে শুধু হতাশই করে না, কখনও কখনও চরম ভোগান্তির দিকে ঠেলে দেয়। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের একটি বক্তব্য দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছেন, এই যুগে কেউ যদি শায়েস্তা খাঁর আমলের দ্রব্যমল্য আশা করে­ তা হলে তা কি মানা যাবে? ২০০৮ সালে কেউ শায়েস্তা খাঁর আমলের দ্রব্যমল্য আশা করেন­ তেমন কোন কথা দেশের কোন ভোগ্যপণ্য ক্রেতাই বলেননি। এটা আমরা জানি, প্রযুক্তি, যোগাযোগ, চিকিৎসা, বাসস্খান এবং সামাজিক ক্ষেত্রে এখন অনেক সুবিধা আছে যা শায়েস্তা খাঁর সময় ছিল না। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে ক্রমানুপাতিক হারে। সইকিছুর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। বাজারে কেউ মগের মুল্লুক প্রতিষ্ঠা করুক­ তা কোন নাগরিকই মেনে নিতে পারেন না। অথচ আমরা দেখলাম জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মনগড়া হারে ভাড়া আদায়ের হিড়িক পড়ে যায়। চাল, তেল এবং ডালের দাম বাড়তে থাকে লাগামহীনভাবে। যারা কাঁচামাল বাজারে আনতে যানবাহনের সাহায্য নেয় না­ তারাও বাড়িয়ে দেয় শাকসবজির দাম। বাজারগুলোতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্খা না থাকার কারণে এক ধরনের পেশাশক্তি কায়েম হয়ে যায় রাতারাতি। পরে জিনিসপত্র পর্যাপ্ত হওয়ার পরও দাম আর কমে না।বর্তমান অর্থ উপদেষ্টার এই ‘শায়েস্তা খাঁর তত্ত্ব’ বিতরণের পর এক ধরনের অশুভ ব্যবসায়ী প্রশ্রয়ই পাবে­ তা নিশ্চিত করে বলা যায়। কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্খার তীর্যক ব্যবস্খাদি না থাকলে বাংলাদেশে নতুন নতুন চক্র লাই পেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠে তা বারবার আমরা দেখেছি। এবার স্বয়ং অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যের পর এর সঙ্গে নতুন উপসর্গ যোগ করবে ব্যববসায়ীরা। মুনাফাখোররা হামলে পড়বে জনগণের ওপর।আমরা একটি বিষয় স্পষ্ট লক্ষ্য করছি, তা হচ্ছে সরকার যে কোনভাবে জনগণের কাছে আসার চেষ্টা করছে। আর এজন্য তারা কখনও রাজনৈতিক রোষানলের কিছুটা পক্ষে, কখনও বাজার বাণিজ্যের কিছুটা পক্ষে অবস্খান নিয়ে সময় পার করতে চাইছে।সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মি. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত যারা আপিল করবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। এটা বলার মাধ্যমে প্রকারান্তরে প্রত্যেক দুর্নীতিগ্রস্খ ভিআইপিকে আপিল করতে আগ্রহী করে তোলা হবে বলে আমি মনে করি। আপিল গ্রাহ্য হোক আর না হোক পিটিশন দাখিল করেই তারা মনোনয়ন দাখিল করবে কিংবা করাবে। সিটি নির্বাচনে অন্তরীণ ব্যক্তির পক্ষে মনোনয়ন দাখিল করতেও তো দেখছি আমরা। আপিল নিষ্পত্তিতে যদি পাঁচ বছর লেগে যায় তবে ওই পাঁচ বছর কি ক্ষমতায় থাকবে কেউ?প্রচলিত আইনের মারপ্যাঁচ সবার জন্যই সমান। এই সত্যকে অনুধাবন করে সরকারকে নীতিনির্ধারণ করতে হবে। মানবাধিকার বিষয়টির পাশাপাশি সুশাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে প্রাধান্য দিতে হবে সর্বত্তোভাবে। নবনিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশন স্টিফেন ইভান্স তার প্রথম প্রেস কনফারেন্সে সে কথাটি আবারও সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। জরুরি অবস্খার মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না­ সে কথা বলেছেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদত মি. জেমস মরিয়াটিও। শেখ হাসিনা, আরাফাত রহমান কোকোর পর এবার তারেক রহমানকেও একটি মামলায় সশরীরে আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন মাননীয় আদালত। এই ধারাবাহিকতা কি ভবিষ্যৎ বহন করছে তা স্পষ্ট নয়। নিউইয়র্ক, ৮ জুলাই, ২০০৮ ----------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১১ জুলাই ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
mk
জঙ্গি আস্তানা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ এ মুহূর্তে একটি বিশ্বজনীন সমস্যা। এই সমস্যা কোন কোন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বাংলাদেশ প্রথম থেকেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জঙ্গীগোষ্ঠী দমনে গঠন করা হয়েছে ‘কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম’ ইউনিটসহ নানা সংস্থা। সরকার দেশে তালেবান ও আইএসের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও নানা আদলে খোদ রাজধানীতেই এদের ছায়া সংগঠনগুলোর তৎপরতা যে চলছে তা সহজেই অনুমেয়।খোদ রাজধানীতে আবারও জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলেছে। প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে আরও একটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেল। এর মধ্যে মিরপুরে অভিযান চালিয়ে তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাড়িতে জঙ্গীদের বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পায় ডিএমপি। একই দিন রাতে বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকায় অভিযানকালে দুই জঙ্গীকে আটক করা হয়। বাড্ডার জঙ্গী আস্তানাটি মূলত আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের হেড কোয়ার্টার্স হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মুক্তমনা প্রগতিশীল মানুষ, সাধারণ মানুষ কিছুই বাদ যায়নি জঙ্গীদের আক্রমণ থেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। বলা যায় জঙ্গীদের শক্তিমত্তা ও তৎপরতার যতটুকু পরিচয় পাওয়া গেছে তাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। বিগত সময়ে জঙ্গী তৎপরতা বিষয়গুলোর দিকে তাকালে সহজেই ধারণা করা যায়, জঙ্গীদের প্রস্তুতি দুর্বল নয়। নামে-বেনামে কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এরা সক্রিয় রয়েছে।এ কথা সত্য যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ নানা কারণে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদসহ কিছু দেশের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে। তারা নানাভাবে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশে জঙ্গী তৎপরতা প্রকাশ্য হয় ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ শতাধিক স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি নামের জঙ্গী সংগঠন। জেএমবি ছাড়াও সে সময় হুজিসহ আরও কিছু জঙ্গী সংগঠনের নাম শোনা যায়। পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ধারাবাহিকভাবে জঙ্গী তৎপরতা মোকাবেলায় বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়। জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত থাকায় বহু ব্যক্তিকে আটকসহ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে সংগঠন নিষিদ্ধ হলেও তাদের পলাতক ও জামিনে বেরিয়ে আসা সদস্যরা নতুন নামে সংগঠিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু নতুন জঙ্গী গ্রুপের তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিগত সময়ে মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যার দায় তারা স্বীকারও করেছে।জঙ্গী উত্থানের বিষয়টি যে কোন দেশের জন্যই উদ্বেগের কারণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন অভিযানের পরও দেশে জঙ্গী তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, এটি একটি বাস্তবতা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায়ই জঙ্গী সংগঠনের সদস্য ধরা পড়ছে। রাজধানীর আশপাশ এলাকায়ও জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলেছে। জঙ্গীদের এ সক্রিয়তায় তাদের দমনের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আরও বেশি গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। জঙ্গী সংগঠনগুলোর অর্থ ও অস্ত্রের উৎস খুঁজে বের করা জরুরী। প্রয়োজনে মানুষের মধ্যে জঙ্গীবিরোধী উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচী গ্রহণ করা যেতে পারে। দেশে জঙ্গী দমনে কঠোরতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মতো একটি শান্তিপূর্ণ দেশে জঙ্গী সংগঠন যেন কোনভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫
false
hm
বিভিন্ন ব্যাঙ্কনোটে প্রাণীর প্রতিকৃতি বিশ্বের পয়সাওয়ালা দেশগুলির ব্যাঙ্কনোটের ছবি দিচ্ছি, কারণ গরীবের বউ সবার ভাবী। শুরু করি অস্ট্রেলিয়া দিয়ে। অস্ট্রেলিয় এক ডলারের নোট, ১৯৮৩ সালে ইস্যু করা। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ একা থাকলে কথা ছিলো, সাথে আবার কোট অব আর্মসের দুই পাশে ক্যাঙারু আর এমু। শুধু তা-ই নয়, উল্টোপিঠে আদিবাসীদের শিল্পকর্ম, সেখানেও নানা জীবজন্তুর ছবি। এক ডলারের কথা ছাড়ি, আসুন দুই ডলারের কথা বলি। অস্ট্রেলিয় দুই ডলারের নোট, ১৯৮৫ সালে ইস্যু করা। এখানেও এক পিঠে জন ম্যাকআর্থার আর একটা আস্তভেড়া, উল্টোপিঠে উইলিয়াম ফারার আর গমের শীষ। পাঁচ ডলারের নোটটা দেখুন, ১৯৯০ সালে ইস্যু করা। এখানে এক পিঠে জে. ব্যাঙ্কস, উল্টোপিঠে সি. কিশোম। আরো কিছু ইকড়িমিকড়ি চামচিকড়িও রয়েছে। অনেক আদমসন্তানের মাথা দেখা যায় ১৯৯২ সালে ইস্যু করা পাঁচ ডলারের নোটে আবার রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রের মাথা, তাঁর মাথা তো নোটে থাকবেই। তাঁর মাথা থাকবে না তো কার মাথা থাকবে? কিন্তু কেন তাঁর মাথা থাকবে? কী আপদ, ১৯৯৮ সালে ইস্যু করা নোটেও রাণীমা। এদের রাণীমা ফেটিশ তো কিছুতেই যাচ্ছে না নোট থেকে। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। কিন্তু নোট ওদের, ভক্তি ওদের, আমার কী বলার থাক্তে পারে? ওরা চাইলে রাণীর ছবি দিক, চাইলে ক্যাঙারুর ছবি দিক, আমার কী? ২০০১ সালে এসে ইস্যু হওয়া পাঁচ ডলারের নোট থেকে অবশেষে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথে হঠেছেন, কিন্তু আপসোস, তাঁর জায়গা দখল করে বসেছেন দুইজন ব্যক্তি, এইচ. পার্কস আর সি. এইচ. স্পেন্স। ১৯৯১ সালে ইস্যু করা দশ ডলারের নোটের দুই পিঠে গ্রীনওয়ে আর লসনের ছবি। নাহ, প্রাণীর প্রতিকৃতি হঠছে না নোটের গা থেকে। এদের রগে রগে মজ্জায় মজ্জায় বাতিল-বেদাতের জীবাণু। আর ১৯৮৮ সালে ইস্যু করা দশ ডলারের নোটে ক্যাপ্টেন কুক। ক্যাপ্টেন কুক একা নন, একজন আদিবাসীর আবক্ষ প্রতিকৃতিও দেখা যাচ্ছে। সে আবার বেপর্দা। বোঝাই যাচ্ছে আমল-আকিদার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ানদের কোন হুঁশ হয় নাই এখনো। ১৯৯৮ সালে ইস্যু করা দশ ডলারের নোটে প্যাটারসন, গিলমোর আর ঘোড়া। ঘোড়া একা নয়, ঘোড়ার পিঠে ঘোড়সওয়ার রয়েছে। একে রামে রক্ষা নাই, সুগ্রীব দোসর। কে এদের বোঝাবে. কে দেখাবে সত্যের সরল পথ, আর আলো? ২০০৬ সালে ইস্যু হওয়া দশ ডলারের নোটে দেখতে পাচ্ছি এবি "ব্যাঞ্জো" প্যাটারসন আর মেরি গিলমোরকে। এঁরাও বিভিন্ন কারণে স্মরণীয়, বরণীয়। ভেবেছিলাম ১৯৯৮ সালে ইস্যু হওয়া কুড়ি ডলারের নোটে এসে বোধহয় এদের একটু হুঁশজ্ঞান হবে, কিন্তু ওখানেও মেরি রাইবি আর রেভারেন্ড জন ফ্লিনের চেহারা, আর পবিত্র প্রাণী উট (পবিত্র জকিসহ)। ১৯৯৫ সালে ইস্যু হওয়া পঞ্চাশ ডলারের নোটেও বেদাতি কাজকর্ম চলছে সমানে। ডি. উনাইপন আর ই. কাওয়ান এর ছবি দেখা যাচ্ছে দু'পিঠে। ১৯৯৬ সালে ইস্যু হওয়া একশো ডলারের নোটে এন. মেলবা আর জে. মোনাশের ছবি শোভা পাচ্ছে। হায় রে, কোথায় যাই? বড়লোক হয়েও শান্তি নাই। আমার কেন যেন মনে হয় অস্ট্রেলিয়ায় কোন মুমিন ব্যক্তি বাস করলে পদে পদে গুনাহগার হন । ছবিসৌজন্য ব্যাঙ্কনোটস ডট কম।
false
ij
গল্প_ দূরবর্তী এক নদীর উপকথা এই সকালে কুয়ালালামপুর শহরটা নরম রোদের আলোয় ডুবে রয়েছে। সেই সঙ্গে মৃদুমন্দ বাতাসও বইছে। রোদ ছড়িয়ে আছে সেগামবুট, দামানসারা, লেইক গার্ডেন্স, তাসিক টিটিওয়াঙ্গসা, আমপাঙ এবং স্টেডিয়াম নেগারার ওপর । মৃদুমন্দ বাতাস বইছে জালান সুলতান সালাহুদ্দিন সড়ক, জালান সুলতান ইসমাইল সড়ক, এবং এর উত্তরে পুত্রা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, দক্ষিণে মারদেকা স্কোয়ার এবং চায়নাটাউন-এর ওপর। সেই রোদ জামালের ঘামে ভেজা শরীরটিও ছুঁয়ে যায় বৈ কি। আজও আঠারো তলার ওপরে চেন লি ওং ভয়ঙ্কর নির্দেশ দিতে পারে। জামাল ঘামস্রোত টের পায়। পয়তাল্লিশ বছর বয়েসি চিনাটির হলদে মুখটি গোলাকার, তির্যক চোখে শীতল চাউনি; জামালকে দিয়ে বিপদজনক সব কাজ করিয়ে নেয়। লোকটা কি মানসিক ভারসাম্যহীন? জামাল জানে সব চিনেই হয়তো চেন লি ওং এর মতো মানসিক বিকারগ্রস্থ নয়, কেবল চেন লি ওং-ই ওরকম ...কুয়ালালামপুর শহরের মারদেকা স্কোয়ার। সেখানেই গড়ে উঠছে বহুতল বানিজ্যিক ভবনটি। মাস ছয়েক ধরে কাজ করছে জামাল। কন্সস্ট্রাকশন সুপারভাইজার চেন লি ওং প্রথম থেকেই ওর ওপর অজানা কারণে খড়গহস্ত। বাংলাদেশি শ্রমিক বলে? মালয়েশিয়ার কন্সস্ট্রাকশন সার্কেলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা গিজগিজ করছে। এদের দাপটে একদিন মালয়েশিয়ায় চিনেরা সংখ্যালঘু হয়ে উঠতে পারে -এ কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চিনেদের এত ভয়?বাংলাদেশিদের প্রকৃত আত্মাকে এইসব চিনেরা কোনওদিনই চিনতে পারবে না।যেমন, জামালের জন্ম পদ্মা নদীর তীরে। হরিরামপুরের রামকৃষ্ণপুর বলে একটি জায়গায়। বাড়ির সামান্য দক্ষিণে পদ্মার বিরাট প্রবাহ। ছেলেবেলা থেকেই পদ্মার বিশাল বি¯তৃতি নিয়ে বড় হয়েছে ও। প্রথম প্রথম বিস্ময় ছিল, পরে সে বিস্ময় কাটিয়ে নিজেকে আবিস্কারের নেশা। পদ্মায় সাঁতার কাটা, নৌকা বাওয়া ...এতে করে ওর বুকে যে দুর্দন্ত সাহসের জন্ম নিয়েছে তা চিনে কন্সস্ট্রাকশন সুপারভাইজার চেন লি ওং এর জানার কথা না। নদীর ধার ঘেঁষেই কাটল জীবনের বাইশ বছর।তারপর জীবিকার সন্ধানে প্রথমে শহর ঢাকা, তারপরে কুয়ালালামপুর শহর। ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে বাবা পৈত্রিক জমাজমি নগদ ২ লাখ ১০ হাজার বিনিময়ে বিক্রি করতে কার্পন্য করেননি-এমনই বিরাট হৃদয় তার। তবে বিদেশে এসে দিশেহারা জামাল। নির্মীয়মান ভবনটির নিচের দিকের একটি কক্ষে জামালের ঘুমাবার স্থান। খাওয়া-দাওয়া অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গেই। রান্নাবান্না, গোছলের পানি নিয়ে প্রতিনিয়ত তামিল শ্রমিকদের সঙ্গে যুদ্ধ। এরাও বাংলাদেশিদের ওপর বিরূপ। জামালের কান্না পায় ...তাও ভালো; কারণ, ১ হাজার ৪৫৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিক এখন মালয়েশিয়ার জেলে দুঃসহ সময় পাড়ি দিচ্ছে ... ... বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কেফায়েত উল্লাহ বলেন, বিদেশে কোনো শ্রমিক গ্রেপ্তারের খবর পেলেই দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁরা খোঁজখবর নেন এবং মুক্ত করার চেষ্টা করেন। মালয়েশিয়ার এই শ্রমিকদের বিষয়টি হাইকমিশন এবং মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তাঁদের কীভাবে দেশে ফেরত আনা যায়, সে ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট আছে। তবে অবৈধভাবে যেন কেউ মালয়েশিয়ায় না যান, সে ব্যাপারে তিনি সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।কেফায়েত উল্লাহ জানান, আটক শ্রমিকদের মুক্তিসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী এ মাসেই মালয়েশিয়া যাবেন। আশা করা যায়, এরপর ইতিবাচক কিছু হবে।মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব ও শ্রম কাউন্সেলর মাসুদুল হাসান বলেছেন, কোনো শ্রমিকের গ্রেপ্তারের সংবাদ জানতে পারলেই হাইকমিশন তাঁর ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়। এরপর তাঁরা যে কোম্পানিতে কাজ করতে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে সরাসরি অভিবাসন কর্তৃপক্ষকেও চিঠি দিয়ে শ্রমিকদের মুক্তির অনুরোধ জানানো হয়।যেসব কারণে গ্রেপ্তার: মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের কারণে অথবা মালয়েশিয়ায় থাকার বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে এসব বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও পালিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেন। ফলে তাঁরা গ্রেপ্তার হন।মাসুদুল হাসান জানান, মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন-১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন ১৯৬৬-এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী এসব বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন-১৯৫৯-এর ৬(১) সি ধারায় বলা হয়েছে, বৈধ অনুমতি ছাড়া কেউ মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবে না। আর ১৫ (১) সি-তে বলা হয়েছে, কেউ যিনি দিনের ভিসা বা অনুমতি নিয়ে মালয়েশিয়া আসবেন, সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর থাকতে পারবেন না। পাসপোর্ট আইন ১৯৬৬-এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি পাসপোর্ট বা ভিসা জালিয়াতি করেন বা কোনো মিথ্যা তথ্য দেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।হাইকমিশন ও মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা অনেকেই জানিয়েছেন, অনেকেই সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া আসেন এবং তাঁদের এই ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অনেকেই নির্ধারিত চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও মালয়েশিয়া থাকেন। ফলে পুলিশ তাঁদের আটক করে।বিভিন্ন শিবিরে বন্দী ৯২৯ জন: মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শিবিরে মোট ৯২৯ জন আটক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে লেংগিং শিবিরে এক নারীসহ মোট ২৯১ জন বন্দী আছেন।মাসুদুল হাসান জানান, কাউকে গ্রেপ্তারের পরপরই শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারের রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে শিবিরে থাকতে হয়। রায় হওয়ার পর তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। আবার সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশে ফেরত আসার আগেও তাঁকে কয়েক দিন শিবিরে থাকতে হতে পারে।মালয়েশিয়া থেকে ফিরে আসা ফেরদৌস ও জুয়েল নামের দুই শ্রমিক জানান, শিবিরগুলোতে প্রায়ই বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতন করা হয়। অনেক সময় ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না। বিভিন্ন সময়ে ফেরত আসা আরও অনেক শ্রমিক একই অভিযোগ করেছেন।জেল খাটছেন ৫২৮ জন: মালয়েশিয়ার জেলে সাজা খাটছেন এক নারীসহ ৫২৮ জন। অভিবাসন আইন ভাঙায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, মাদক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলিবু জেলে ৩২ জন সাজা খাটছেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা আইন ১৯৯০-এর অধীনে শাদুল ইসলাম নামের একজন সাজা খাটছেন টেমপাট তাহানান পারলিনডুংগান জেলে। (তথ্যসূত্র: প্রথম আলো। শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০০৯)... রান্নাবান্না, গোছলের পানি নিয়ে প্রতিনিয়ত তামিল শ্রমিকদের সঙ্গে যুদ্ধ। এরাও বাংলাদেশিদের ওপর বিরূপ। জামালের কান্না পায় ...অন্ধকারে মায়ের প্রসন্ন শ্যামলা মুখখানি ভেসে ওঠে। অন্ধকারে বোন শিউলির মুখ ভেসে ওঠে।অন্ধকারে প্রেমিকা শিরিনের মুখ ভেসে ওঠে।...জামালের বয়েস তখন আঠারো কি উনিশ । সে, আশ্বিনের এক সুন্দর সকালে রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে বালিকা শিউলি ও কিশোরী শিরিনকে নৌকায় তুলে দক্ষিণে যাত্রা করে। ওপারে চর বয়রা। আশ্বিনের মনোরম দিনটি ঝলমলে রোদে ভাসছিল। পদ্মা নদীর পানি ঝিকমিক করছিল। আর গাঙের বাতাস ঝাপটা মারছিল ওদের মুখচোখে। স্বাধীনতার আস্বাদ পেয়ে বালিকা শিউলি ও কিশোরী শিরিন-এর মুখ আনন্দে চকচক করছিল। তারা নৌকার গলুয়ের ওপর পাশাপাশি বসে গল্প করছিল। ঘন্টা দেড়েক পরে চর বয়রার ঘাটে নৌকা ভেড়ায় জামাল। তখন আশেপাশে গভীর ছায়া জমেছে। চর বয়রার ঘাটে বন্ধু সুশান্ত দাঁড়িয়ে ছিল। ওকে আগেই খবর দিয়ে রেখেছিল। সুশান্ত জামালদের দেখে খুশি হয়। চেক লুঙ্গির ওপর হলুদ রঙের শার্ট পরেছে সুশান্ত। ওর কাঁধ অবধি ঢেউ খেলানো বাতাসে ওড়ে। সুশান্ত এখন টেমপাট তাহানান পারলিনডুংগান জেলে।সুশান্তর বাড়ি চর বয়রার কুমার পাড়ায়। চরের বালিতে পা ডুবিয়ে তারা সেদিকে যেতে থাকে। শিউলির কানে কানে শিরিন কী সব বলে। শিউলি হাসে। আড়চোখে সুশান্তর দিকে তাকায়। শিরিনও হাসে। তবে ও খানিকটা সুন্দরী বলেই গম্ভীর হয়ে থাকে।কোথাও ঢাক বাজছে। এ মাসেই পূজা। সুশান্তদের উঠান ঘেরা ছিমছাম ঘরদোর। এখানে ওখানে মাটির তৈরি হাঁড়িপাতিল ছড়িয়ে। সুশান্তর মা আর বোনেরা নতুন অতিথিদের দেখে ভারি খুশি হয়ে ওঠে। কাঁসার থালায় নাড়– এল, মুড়ি এল, গুড় এল। কাঁসার গেলাসে এল ডাবের পানি। উষ্ণ অভ্যর্থনায় শিউলি ও শিরিন-এর মুখ আনন্দে চকচক করছিল। জামাল লক্ষ করছিল।দুপুরে কি দিয়া ভাত খাবা মায়েরা? সুশান্তর মা মনোরমা মাসী জানতে চাইলেন। মাসীর মিষ্টি কন্ঠস্বরে শিউলি অবাক হয়ে যায়। জামাল মিটমিট করে হাসলেও শিউলি ও শিরিন চুপ করে থাকে।বুঝছি। যাও অখন আমাগো গ্রামখানি ঘুইরা দেইয়া আস। ওর দৌড়ে উঠান পেরিয়ে আসে। সঙ্গে জুটল সুশান্তর বোন বীণা। ফরসা, দীর্ঘাঙ্গি বীণা কিশোরী। ওর হাঁটাচলায় লীলায়িত ছন্দ । জানা গেল বীণা নাচতে জানে। (শিরিন লক্ষ করছিল জামাল ঘন ঘন বীণার ফরসা সুন্দর মুখের দিকে তাকাচ্ছিল কি না ...)শিরিন বলল. তোমার নাচ দেখুম বীণা।হ, হ, দেখুম। শিউলিও বলে ওঠে।বীণা প্রথমে রাজী হয় না। পরে রাজী হয়। ততক্ষণে ওরা এক মাঠের মতন নির্জন স্থানে চলে এসেছে। আকাশে ও চর বয়রার মাটিতে গাছপালার ওপর গভীর ছায়া পড়েছে। শিউলি খুব রেডিও শোনে। সে অনেক গান জানে। শিউলিই গাইল। ‘পলাশ ডাকা কোকিল ডাকা আমার এদেশ ভাইরে।ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলানো এমন কোথাও নাইরে ।’বীণা নাচে।ওর নৃত্যরত ভঙিতে সকলেই বিস্মিত হয়ে যায়। চর বয়রার কুমারপাড়ার মেয়ে - এমন করে নাচতে শিখল কি করে। শিউলির কন্ঠস্বরটিও কিন্তু চমৎকার। জামাল অবাক হয়ে যায়।দুপুরে মনোরমা মাসী চিংড়ি মাছের ভর্তা ও বেলে মাছের তরকারি রেঁধেছিলেন। ওরা আরাম করে খায়। তবে শিরিনের মুখটি গম্ভীর দেখায়। কেননা, এক ফাঁকে বীণা জামালের পাতে এক টুকরো বেলে মাছ তুলে দিয়েছে। বীণাকে শিরিণ ঈর্ষা করতে থাকে। এবং এ নিয়ে পরে জামালের সঙ্গে ঝগড়া করবে বলে ঠিক করল। খেতে খেতে মাসীর রান্নার অকুন্ঠ প্রশংসা করে। মনোরমা মাসীর প্রসন্ন ফরসা মুখটি তে আনন্দের আভা ফোটে। যেন এই প্রশংসার জন্যই অপেক্ষা করেছিলেন। যাওয়ার সময় মনোরমা মাসী বললেন, তুমরা আবার আইস। পূজার সময়-আসুম মাসী। আপনিও রামকৃষ্ণপুর যাইয়েন।যামু। ঘাটে সুশান্তর কাছে বিদায় নিয়ে সন্ধ্যার আগেই রামকৃষ্ণপুর ঘাটে নৌকা ভেড়ায় জামাল ...২জামালকে আজ সুপারভাইজার চেন লি ওং কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে।মারদেকা স্কোয়ারের একটি নির্মীয়মান বানিজ্যিক ভবনের প্রায় একশ আশি ফুট ওপরে বিপদজনক ভঙ্গিতে ঝুলতে থাকে জামাল। তবে দূরবর্তী এক নদীর পাড়ের ছায়া ও নদীর বাতাস ওকে সাহস যোগায় ... সে ছায়ায় কখনও-বা পদ্মাপাড়ের শিরিনের মুখটি ভেসে ওঠে ...সুপারভাইজার চেন লি ওং টের পায় না ...বিকারগ্রস্থ লোকটার টের পাবার কথাও না ...
false
rg
বিতর্কিত ২০ তম বিসিএস ও কিছু প্রাসঙ্গিক খোলামেলা কথামালা।। রেজা ঘটক ২০০০ সাল। ২০ তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হল। আমরা দেখলাম, ফলাফলে প্রায় সবই আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ থেকে এবং টাকার বদৌলতে কিছু দুষ্কৃতিকারী এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোঠা ও জেলা কোঠায় আসল ফলাফল ছিনতাই করা হল। আমরা তখন একদল ফলাফল বঞ্চিতরা পিএসসি'র তৎকালীন চেয়ারম্যান মোস্তফা চৌধুরীর পদত্যাগ সহ ফলাফল বাতিলের দাবীতে প্রথমে প্রেসক্লাব ও পরে জাতীয় শহীদ মিনারে কয়েক দিন আন্দোলন করেছিলাম। আমাদের সেই আন্দোলন আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ দিয়ে হটিয়ে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। আমাদের যে সকল বন্ধুরা তখন জেলা কোঠায় বা মুত্তিযোদ্ধা সন্তান কোঠায় বিসিএসে চাঞ্চ পেয়েছিল, তাদের দিকে তথন তাকানো যাচ্ছিলো না। তাদের তখন ধারণা হয়েছিল, আমরা আন্দোলনে স্বার্থক হলে তাদের পক্ষের সেই ফলাফল বাতিল হবে। অনেকের সাথেই তখণ থেকেই আর আমার বন্ধুত্ব নেই। এক সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ শেষ করে সামান্য বিসিএস পরীক্ষার বৈষম্যমূলক ফলাফলের পক্ষের ও বিপক্ষের মধ্যে তখন দুটো দল হয়ে গিয়েছিল। আমার অনেক বন্ধু তখন আমার লেখা বিসিএস গাইড পড়ে পরীক্ষা দিয়েছিল আর ফলাফল পক্ষে থাকায় বেজায় খুশিতে ছিল। আর আমাদের আন্দোলনের কারণে ভারী উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ছিল। কয়েকজন বন্ধুর বাবা-মা আমাকে বাসায় ডেকে নিয়ে আন্দোলন থেকে বেড়িয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারণ, তাদের সন্তানটি বিসিএসে চাঞ্চ পেয়েছিল। আমাদের আন্দোলনে তাদের সন্তানের সেই সোনার হরিণে পেছনে আমরা কেন উঠে পড়ে লাগলাম তাও অনেকে খোটা মেরেছিল। তাদের অনেকেই এখন এসপি, এডিসি, টিএনও। বন্ধুত্ব সেখানেই এক প্রকার শেষ। মোস্তফা চৌধুরীর চামড়া, তুলে নেব আমরা। মোস্তফা চৌধুরীর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে। এসব শ্লোগানে আমরা তখন সরগরম করে তুলেছিলাম। কিচ্ছু হয়নি। আন্দোলনের এক পর্যায়ে কিছু ছাত্রদলের ফলাফল বঞ্চিত ছেলেরা আমাদের আমান উল্লাহ আমান এমপি ও মাহবুব উদ্দীন খোকন এমপি'র মাধ্যমে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করানোর ব্যবস্থা করলেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী বললেন, তোমরা কেউ বাদী হয়ে আদালতে মামলা ঠুকে দাও। আমরা ক্ষমতায় গেলে ২০ তম বিসিএসের ফলাফল বাতিল করে, ফলাফল পুনঃমূল্যায়ন করে তোমাদের ক্যাডার প্রদান করব। আমি আর আমার বন্ধু তুহিন, আমরা দু'জন ছিলাম মোটামুটি কোনো ধরনের রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে। আমাদের দু'জনকেই বাদী বানাতে তাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ হল। ২৯ মিন্টু রোড থেকে রাত দশটায় বের হয়ে আমি আর তুহিন সেদিন থেকেই আন্দোলনে ইস্তফা দিয়ে ঘরে ফিরলাম। কারণ, রাজনীতিতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছে আমাদের ছিল না। পরবর্তীতে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলো। ২০ তম বিসিএসের কথা একটি বারও বেগম জিয়া বা তার দল উচ্চারণ করেননি। বরং তারাও পরবর্তী বিসিএস গুলো নিজেদের দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল থেকে নিয়োগ দিল। এভাবেই স্বাধীনতার পর থেকে সকল বিসিএস পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতী হয়েছে। আগামী দিনেও বাংলাদেশে এটা চলতে থাকবে। কারণ, আমরা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দিয়ে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই। বিসিএসের মাধ্যমে দলীয় লোকজন দিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে কি করে আমরা একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আশা করতে পারি? কি করে আমরা একটি নিরপেক্ষ জাতীয় নির্নাচন প্রত্যাশা করত পারি? প্রশাসনে তো আওয়ামী লীগ আর বিএনপি'র লোক বাদ দিলে যারা থাকবে তারা ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা। তাদের প্রমোশন হয় না। তাদের বদলি হয় ঘন ঘন। তাদের নানামুখী দৌড়ের উপর জীবন এক প্রকার অতিষ্ট। আমি ২০ তম বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক গোলাম রসুল সাহেবের বোর্ডে পড়েছিলাম। আমার ভাইভা হয়েছিল বিকালে। সেই দিনের শেষ পরীক্ষার্থী। আমাকে ৪৯ মিনিট জেরা করা হল। আমার ২০ তম বিসিএসে প্রথম পছন্দ ছিল পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার। কারণ, আমি যখন ভাইভা দিচ্ছিলাম, তখন আমার বয়স ৩০ ক্রোস করেছে। আমার একটা ক্যাডার লাগবে সেই কারণে আমি পরিবার পরিকল্পনা প্রথম পছন্দ দিয়েছিলাম। আর ১৭ তম ও ১৮ তম বিসিএসে আমি প্রশাসন ক্যাডার থেকে ভাইভা দিয়ে ফলাফল ছিনতাইয়ের নাটক দেখেছিলাম। ১৭ তম বিসিএস নিল বিএনপি সরকার। ১৮ তম নিল বিএনপি+আওয়ামী লীগ ভাগাভাগি করে। আমরা কলকে পেলাম না। ২০ তম বিসিএসে আমি বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আমার যুক্তিগুলো বেশ সুন্দর করেই তুলে ধরেছিলাম। গোলাম রসুল স্যার আমাকে সরাসরি প্রশংসা করেছিলেন। বিসিএস আমার হল না। আন্দোলনও আর হল না। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তারপর রিসার্স, লেখালেখি আর সিনেমা করে ১০ বছর কাটিয়ে দিলাম। এখন আমার বিসিএস ক্যাডার বন্ধুদের চেয়ে রাষ্ট্রের গন্যমান্য ব্যক্তিরা কিন্তু অনেকেই আমাকে বাই নামে চেনেন। চাকরি আর করা হল না। কারণ বাংলাদেশে চাকরি করে যারা চাকর তারাই। মেধাশূন্য অজ্ঞ অশিক্ষিত হীনমন্যতার মালিকদের অধীনে চাকরি করে নিজেকে আর ছোট করতে চাইনি। তাই ফ্রিল্যান্স কাজ করি। একেবারে স্বাধীন। ভালো লাগলে করি। না লাগলে সরাসরি না বলে দি। খবরদারি করার কেউ নাই। বিসিএস লিখিত পরীক্ষাগুলোর সময় আমি যে হলে পরীক্ষা দিতাম, অনেকেই পরীক্ষা শেষে আমার সঙ্গে পরিচিত হতে আসতো। কারণ, তারা শুনে যেতো যে, তারা যে গাইড বই পড়ে পরীক্ষা দিতে এসেছে, ওটা আমারই লেখা। লেখকের সঙ্গে পরিচিত হতে আসতো। জীবন থেকে সেই সব স্মৃতি এখন বিস্মৃতি হয়ে গেছে। তাই এখন যখন বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে মিছিল মিটিং আন্দোলন দেখি, খুব হাসি পায়। আমাদের অনেক বন্ধু বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় পাস করেনি অথচ বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। এমন উদাহরণও আছে। সো, তোমরা কিসের আন্দোলন করতেছো? তোমরা আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চরিত্রের গতি-প্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করো। আন্দোলন না কইরা নেতার বাসায় যাও। পরবর্তী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাই এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলের ফসল ঘরে তুলবে। থামাখা তোমরা রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচলে বাগড়া দিতাছো কেন?তোমরা কে কোন ক্যাডার চাও, তা ঠিক করার মালিক তো পিএসসিতে নয়রে বাবা। ব্যাপার বোঝার চেষ্টা করো। এক সময় তোমরা নিজেরাও পিছিয়ে যাবা। কারণ প্রত্যেকের কাজ আছে। জীবন তো আর শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার নোংরা রাজনীতির কারণে বসে থাকবে না। পিএসসি হল একটা দলীয় কর্মকর্তা উৎপাদনের আকড়া। সেই আকড়ার খপ্পর থেকে বের হয়ে বরং অনেক ভালো ভালো বেসরকারি ব্যাংক আছে সেখানে চেষ্টা করো। ক্যাডারগিরি মারাইতে গেলে অনেকেই আমার মত ধরা খাইবেন ভাইজানেরা। আমি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বললাম। আর কিছু কইতে চাই না। নিজের জীবন নিজের মত করে গড়ে নেবার অনেক সুযোগ আছে। নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে নিজেরাই কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলো। তোমাদের ক্যাডার বন্ধুরা তাই দেখে পরে আফসোস করবে। সো, ডিসিশান ইজ ইয়োর'স। হাউ ক্যান ইউ লিড ইয়োর লাইফ? ওকে? সবাই ভালো থাকবেন।
false
rg
অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি! গতকাল রাতে কলকাতা থেকে ফেরার পর আজ ছিল এবারের অমর একুশে বইমেলায় আমার প্রথম দিন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার প্রধান অংশে পামট্রি'র নিচে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম লেখক বন্ধুরা। হঠাৎ একজন পুলিশ সদস্য এসে বললেন, এখানে একসঙ্গে সাত-আট জন দাঁড়িয়ে গল্প করা যাবে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ যদি হয়, তাহলে বইমেলার শেষপর্যন্ত এখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেব। তার আগে বলুন, কে এই নিয়ম চালু করেছে? এখানে আমরা সবাই লেখক। লেখকরা বইমেলায় একত্রে আড্ডা দিতে পারবে না, এটা কে চালু করেছে বলুন?পরে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও সাংবাদিক নজরুল কবীর, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান ও অন্যরা আমাকে থামিয়ে দিয়ে, পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মোস্তফা খুব সুন্দর করে কথা বলে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এখানে সবাই লেখক দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু পুলিশ সদস্য তখন কিছুটা বিব্রত!হায় রে অমর একুশে বইমেলা! সরকার কী একুশের বইমেলা পুলিশ দিয়ে করাবে? নাকি এটা লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও বইপ্রেমীদের বইমেলা? বইমেলার মাঠে একজন আহমাদ মোস্তফা কামাল যেখানে দাঁড়ায়, সেখানে আট দশজনের ভিড় হবে এটাই স্বাভাবিক। একজন নজরুল কবীর যেখানে দাঁড়ায়, সেখানে ভিড় হবে এটা একেবারেই নরমাল ব্যাপার। একজন স্বকৃত নোমান যেখানে দাঁড়াবে, সেখানে ভিড় লাগবে এটাই স্বাভাবিক চিত্র। এমন কি একজন রেজা ঘটক বইমেলায় উপস্থিত হওয়া মানে সেখানে জটলা লাগবে, বন্ধুদের আড্ডা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক চিত্র। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর অমর একুশে বইমেলায় লেখকদের আড্ডায় পুলিশ নাক গলায়, এটা কোন রাষ্ট্রে বসবাস করছি আমরা? আমরা কী স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণ? আমাদের কী সার্বভৌমত্ব আছে? সরকারের আচরণে কিন্তু বিসর্জনের অনেক গন্ধ টের পাওয়া যায়। এখনই এসব শক্ত হাতে কন্ট্রোল করতে না পারলে দেশটা যে মৌলবাদের হাতেই ছেড়ে দিয়ে এই সরকার বিদায় নেবে তা কী আর মুখ ফুটে বলতে হবে! আমি বইমেলার মাঠের ভেতরে কোনো পুলিশ দেখতে চাই না। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রবেশ পথে সবাইকে চেক করুক। লেখকদের যেখানে পুলিশের নিরাপত্তা দেবার কথা, সেখানে পুলিশ এসে লেখকদের আড্ডায় নাক গলাচ্ছে, তাও অমর একুশে বইমেলায়? এ কোন দেশে বসবাস করছি, দয়াল? রক্ষা কর!! ধরণী দ্বিধা হও! বাংলা একাডেমি'র লিটল ম্যাগাজিন প্রাঙ্গন ঘুরে আমার মনের অবস্থা খুব খারাপ। লিটল ম্যাগ চত্বরে বিক্রি হচ্ছে বাংলা বাজারের সস্তা কপি-পেস্ট পাইরেসি বই। শিশুদের বই, চোরাই বই! এসব কী? লিটল ম্যাগ চত্বরে কী এসব বই বিক্রি হবার কথা? আমি লিটল ম্যাগ চত্বর ঘুরে বাংলা একাডেমি'র পরিচালক ডক্টর সরকার আমিনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। পরে ডক্টর সরকার আমিন লিটল ম্যাগ চত্বর ঘুরে ওইসব স্টলকে মৌখিকভাবে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছেন। কয়েকজন সেই নোটিশ পেয়ে কিছু বই লুকিয়েছে। ডক্টর আমিন আমাকে বলেছেন, আগামীকাল আবার দেখলে ওইসব স্টল বন্ধ করে দেবেন। এ বিষয়ে আমি লিটল ম্যাগ চত্বরের দায়িত্বে থাকা স্বকৃত নোমানের সঙ্গেও কথা বলেছি। নোমান বলেছেন, আজ আমরা মৌখিকভাবে নোটিশ দিয়েছি। আগামীকাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আগামীকাল লিটল ম্যাগ চত্বর আবারো ঘুরে দেখব, এই বেহাল দশার কী হাল হলো! লিটল ম্যাগ কর্নারে সাম্প্রতিক ও সপ্তবর্ণ ছাড়াও উন্মুক্ত প্রাঙ্গনের ১২টি স্টলের ২৪টি ছোট কাগজ গোটা লিটল ম্যাগ চত্বরের পরিবেশ দূষণের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী। আমরা প্রাণের লিটল ম্যাগ কর্নারে এসব বস্তাপচা আবর্জনা দেখতে চাই না। আশা করি একাডেমি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন!এ বছর ডক্টর সরকার আমিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় যাবার কারণে লিটল ম্যাগ চত্বরে ছোটকাগজের ব্যানার ছোটকাগজের লেখক-সম্পাদকরা নিজেরাই লাগিয়েছেন, যা খুবই দৃষ্টিকটু একটা জগাখিচুরি অবস্থা হয়েছে। প্রতি বছর বাংলা একাডেমি থেকে লিটল ম্যাগ কর্নারে ব্যানার ছাপিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এবার তার ব্যতিক্রম হওয়ায় যে যার ইচ্ছেমত সাইজের ব্যানার লাগিয়েছে। যা গোটা লিটল ম্যাগ কর্নারের সৌন্দর্য্যকে মারাত্মকভাবে দূষিত করেছে। আশা করি, বাংলা একাডেমি ভবিষ্যতে বিষয়টির প্রতি সদয় নজর দেবেন। আজ আমি কেবল বইমেলায় চক্কর দিয়েছি। ভিজিট করেছি আমার তিন প্রকাশনার স্টল বিদ্যাপ্রকাশ, শ্রাবণ ও সব্যসাচী। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস 'বসনা'। এটি বসনিয়ার যুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধকালীন জীবন ব্যবস্থার এক ঐতিহাসিক দলিল। মজিবর রহমান খোকা ভাইকে খুব মিস করেছি। খোকা ভাই সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় বিদ্যাপ্রকাশের স্টলে কিছুটা ছন্দপতন টের পেলেও স্টলে ভিড় ছিল, কিন্তু মোহিত ভাইকে (লেখক মোহিত কামাল) না পেয়ে হতাশ হয়েছি। শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে 'ফিদেল দ্য গ্রেট কমরেড'। এটি কমরেড ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র ৬৩৮বার হত্যা প্রচেষ্টার চক্রান্ত ও প্রসঙ্গগুলো নিয়ে। আর সব্যসাচী থেকে প্রকাশ পাবে আমার গল্প সংকলন 'গল্পেশ্বরী'। এটি হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় আসবে, তেমনটি জানিয়েছেন প্রকাশক শতাব্দী ভব। আমার প্রথম দিনের বইমেলায় অনেক বন্ধু কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রকাশক, পাঠক ও ভক্তদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আড্ডা হয়েছে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও সাংবাদিক নজরুল কবীর, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, গাণ্ডীব সম্পাদক তপন বড়ুয়া, দ্রষ্টব্য ও করাতকল সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি ও সম্পাদক নীল সাধু, কবি শাফি সমুদ্র, শিল্পী ও প্রকাশক শতাব্দী ভব, শিল্পী শাকিলা চয়ন, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, প্রকাশক রবীন আহসান, কথাসাহিত্যিক মণিকা চক্রবর্তী, কবি অনার্য আদিম, লেখক ও ফটোজার্নালিস্ট শাহাদাত পারভেজ, কবি শামসুদ্দিন হিরা, কবি মাহমুদুল হাসান মাসুম, কবি দাউদ আল হাফিজ, কবি মাহবুবা ফারুক, কবি ও নির্মাতা দিলদার হোসেন, কবি রনি অধিকারী, শিশু সাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন, প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার, কবি সরকার আমিন, শিল্পী ও কবি সিলভিয়া নাজনীন, সাংবাদিক সঞ্জয় ঘোষ, কবি শিল্পী নাজনীন প্রমুখের সাথে। বইমেলায় আমার অনেক প্রিয় মুখের সঙ্গেই দেখা হয়েছে। জ্যোতি ও মণি দম্পতি। আজ মণি'র মা, শাশুড়ি ও খালা শাশুড়ির বই প্রকাশিত হয়েছে। ওনাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় হয়েছে। ওনাদের বই দেখলাম। দেখা হয়েছে তানভীর গং, জয় অ্যান্ড কোং, শতাব্দী সানজানা, আয়ুশী ঘোষ, দোস্ত আফসানা অ্যান্ড গং, কবি ইকবাল, টুম্পা ধর, শিমুল আহমেদ তুলা ভাবী, শামীমা আপাসহ অনেকের সাথে। বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া শুরু হচ্ছে বিকাল তিনটায়। আর বইমেলা শেষ হচ্ছে রাত আটটায়। কেবল ছুটির দিন মেলা শুরু হচ্ছে সকাল ১১টায় আর শেষ হচ্ছে রাত সাড়ে আটটায়। আজকে বইমেলায় সকালে ছিল শিশু প্রহর। আমি সকালে যেতে পারিনি বলে ছোট্ট বন্ধুদের মিস করেছি। বন্ধুরা, বই মেলায় আসুন। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। বই কিনে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয়নি!জয়তু অমর একুশে বইমেলা।বি.দ্র. ছবিতে যে বই দেখা যাচ্ছে এসব বই কী লিটল ম্যাগ চত্বরে বিক্রি হবার কথা? বাংলা একাডেমি জবাব চাই!......................................১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪৮
false
ij
গল্প_ নম্রমালিকা উপাখ্যান মাস কতক হইল, শ্রাবস্তী নগরের ঐশ্বর্যবান শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় মনে মনে দারুণ ক্লেশ ভোগ করিতেছে। সে বণিকের ধর্ম ভুলিয়া গিয়া দিনমানে শ্রাবস্তী নগরে সাধুসন্তগনের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়ায়, অধিকরাত্র করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসে, কোনও কোনও রাত্রে বাড়ি ফিরিতেও ভুলিয়া যায়; তাহার পরিধেয় পরিচ্ছদ শতছিন্ন হইয়া গিয়াছে, তাহার শ্যামল রঙের গাত্রবর্ণ আরও অধিক কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করিয়াছে; তাহার মাথায় জট ধরিয়াছে, চোয়ালখানি ভঙ্গুর দেখায়, চোখের কোণে ধূসরবর্ণের ঘন কষ জন্মিয়াছে। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় মধ্যবয়েসি বলিয়া দিনমানে রৌদ্রদগ্ধ শ্রাবস্তী নগরের পথে পথে আর অলিতেগলিতে ঘুরিয়া ঘুরিয়া শারীরিক ক্লেশও ভোগ করে বৈ কী। তাহার মনোবেদনার হেতু- শ্রাবস্তী নগরের এক অপরুপা ভিক্ষুণী । ভিক্ষুণীর নাম নম্রমালিকা। নম্রমালিকা বয়সে তরুণীই হইবে। নারীসাধিকার ধূসর আভরণে ভিক্ষুণীটির রুপলাবণ্য ঢাকা পড়ে নাই বরং দ্বিগুণ-চর্তুগুণ হইয়া বৃদ্ধি পাইয়াছে। শ্রাবস্তী নগরে তরুণী ভিক্ষুণীটি সদ্য আসিয়াছে- যে বৎসর বুদ্ধ মগধ হইতে জেতবনে আসিলেন, সে বৎসরই ভিক্ষুণী নম্রমালিকা শ্রাবস্তী নগরে আসিয়াছে। তাহার পর বুদ্ধ শ্রাবস্তী নগর ছাড়িয়া চলিয়া গেলেও ভিক্ষুণীটি কী মনে করিয়া যায় নাই । সে যদি শ্রাবস্তী নগর ছাড়িয়া চলিয়া যাইত তো বেশ হইত-মধ্যবয়েসে পৌঁছাইয়া ক্লেশ সহ্য করিতে হইত না: শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় এইরুপ ভাবে বৈ কী। ভিক্ষুণী নম্রমালিকা কেন ভিক্ষুণী হইল এই প্রশ্নেও শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় দিশাহারা, উদভ্রান্ত। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়-এর অগাধ সম্পদ-সে তাহার অতুল বৈভব দিয়া কি করিবে? সমূদয় বিত্ত সে অচিরাবতীর জলে বিসর্জন দিবে? বৎসর দুই হইল শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় বিপতিœক হইয়াছে। তরুণ বয়স হইতেই শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় এর ধর্মে মন ছিল, স্ত্রীবিয়োগ ঘটিলে ধর্মে মন দিল। এমনিতেই সে নির্লোভ ও সৎচরিত্রের -তাহা সত্ত্বেও একদিন ধর্মশালায় নিজ হস্তে সাধুগনকে খাওয়াইবার কালে এক অপরুপা ভিক্ষুণী কে দেখিয়া অবশ হইয়া পড়িল। হলুদ রঙের কষায়বস্ত্র ভেদ করিয়া অপরুপা ভিক্ষুণীর লাবণ্য টলটল করিতেছিল; তাহার দহনে তাহার পর হইতে শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় ক্লেশ ভোগ করিয়া আসিতেছে। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় সর্বদা সহস্রাধিক সশস্ত্র ভৃত্য পরিবৃত হইয়া থাকে; তাহার অঙুলি হেলনে শ্রাবস্তী নগরে লঙ্কাকান্ড ঘটিয়া যাইতে পারে, তাহার অনুগত অনুচরেরা অনায়াসে ভিক্ষুণী নম্রমালিকাকে হরণ করিতে পারে; হরণ করিয়া নগরের উপান্তের আম্রকুঞ্জের গহীনে প্রমোদভবনে লইয়া যাইতে পারে। নাঃ, তাহা সে করিতে পারে না। সাধারণ গৃহিণী হইলে অপহরণ করিবার কথা ভাবা যাইত, কিন্তু, সাব্ধী ভিক্ষুণী কে কি করিয়া হরণ করে? বুদ্ধ এখনও আর্যাবর্ত্মে বাঁচিয়া আছেন এবং আর্যাবর্তে¥র রাজন্যবর্গ তাঁহাকে অসীম শ্রদ্ধা করে। বুদ্ধনিয়ন্ত্রিত সাব্ধীসংঘের কোনওরুপ অপমান হইলে রাজন্যবর্গ ক্রোধে অন্ধ হইয়া যাইবে না? শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় বিষম বিপদেই পড়িয়াছে। তাহা ছাড়া ভিক্ষুণী নম্রমালিকা কে মনের আপন অনুরাগের কথা খুলিয়া বলিতে পারিতেছে না। একজন সংসারত্যাগী নারীর নিকটে মনের আপন অনুরাগের কথা খুলিয়া বলিলে ছোট হইয়া যাইবে না সে? তাহার অহংকার ধুলায় লুটাইবে। ভিক্ষুণী নম্রমালিকা তাহার বলবীর্য বিত্তবৈভব দেখিয়া কাছে আসিবে না। হায়, সে যে সাধিকার জীবন বাছিয়া লইয়াছে! শ্রাবস্তী নগরের পথেঘাটে ঘুরিয়া ঘুরিয়া শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় এর বিমর্ষ ম্লান দিনগুলি অতিবাহিত হইতেছে। একদিন মধ্যাহ্নবেলায় শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় ভিক্ষুণী নম্রমালিকার সন্ধানে হাঁটিতে হাঁটিতে শ্রাবস্তী নগরীর উপান্তে চলিয়া আসিল। গ্রীষ্মকাল বলিয়াই খরতাপে বায়ূ উষ্ণ হইয়া ছিল। রৌদ্র চিতাকাষ্ঠের অগ্নির ন্যায় উজ্জ্বল হইয়া ছিল। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় ক্লান্ত ঘর্মাক্ত হইয়াই হাঁটিতেছিল। নিকটেই একটি পুস্করিণী চোখে পড়িল বটে তবে পুস্করিণীর পাড়ে একটি হরীতরী বৃক্ষের নীচে এক প্রবীণ সাধু বসিয়া ছিল দেখিয়া সে কৌতূহলী হইয়া উঠিল। কোনও সাধুর সঙ্গে কথা বলিয়া এই প্রথম তাহার মনের ভার লাঘব করিবার কথা ভাবিল। সে আগাইয়া যায়। উত্তপ্ত রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের হরীতরী বৃক্ষের সুনিবিঢ় ছায়ার নীচে উপবিষ্ট মুন্ডিত মস্তক সাধুর কাঁধে একখানি কৃষ্ণ বর্ণের উত্তরীয় দেখিয়া সাধুটিকে শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ের মহাকালিক বলিয়া বোধ হইল। মহাকালিকগন মহাকালের ধ্যান করে; তাহারা কেবলমাত্র ছাগদুগ্ধ ও হরিৎবর্ণের উদ্ভিদ ভক্ষন করিয়া বাঁচিয়া থাকে। উপরোন্ত মহাকালিকগন সংগীতের ঘোরবিরোধী; কেননা, সংগীত মহাকালের শাশ্বত-তরঙ্গের ঐক্যটি বিনষ্ট করে! শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় সাধুটির সম্মুখে আসিয়া বসিল। সাধুর মুখোশ্রী তাম্রাভবর্ণের এবং শ্বেত তিলকলিপ্ত । শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় কোনওরুপ সঙ্কোচ না করিয়া ভিক্ষুণী নম্রমালিকাবিষয়ক তাহার মনোবেদনার কথা সমস্ত খুলিয়া বলিল। প্রবীণ সাধুটির নাম চন্দ্রকান্ত ; সে সঞ্জয়ের একপাক্ষিক প্রণয়পর্বের সমস্ত বৃত্তান্ত মনোযোগ দিয়া শুনিল। তাহার পর ক্ষাণিক ভাবিয়া বলিল, জীবনে দুঃখকষ্টের অবসান ঘটানোই বোধিপ্রাপ্ত ব্যক্তির মোক্ষ। তুমি কামলোভের তাড়নায় মোহগ্রস্থ হইয়া পড়িয়াছ বলিয়াই মনোবেদনা পাইতেছ। এরুপ মোহঘোর সম্পূর্নরুপে কাটাইয়া উঠা বড়ই কঠিন। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় নিরুপায় হইয়া মাথা নাড়িল। সাধু চন্দ্রকান্ত বলিল, তুমি বরং সন্ন্যাসী হইয়া যাও না কেন? তা হইলে বৃথা মনঃকষ্টে ভুগিবে না। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় তৎক্ষাৎ বলিয়া উঠিল, আমার গৃহীর স্বভাব, সন্ন্যাস আমার জন্মের বীজে নাই। আমি সন্ন্যাস লইলে গুড়ে বালি পড়িবে না? হুমম। বুঝিয়াছি। বলিয়া প্রবীণ সাধু চন্দ্রকান্ত ক্ষণকাল নিশ্চুপ হইয়া রহিল। অদূরে একখানি গাভী ডাকিল, চৈত্রের বাতাস খড়কুটা উড়াইয়া নিয়া গেল, পুস্করিণীর পাড়ে একজন মধ্যবয়স্কা রমনী আসিয়াছিল, তাহার জল প্রক্ষপনের মৃদু শব্দ উঠিল। পুস্করিণীর পাড়ের সড়কের উপর দিয়া একখানি রাজকীয় রথ চলিয়া গেল। সেই দিকে একবার দৃকপাত করিয়া সাধু চন্দ্রকান্ত বলিল, দেখ বৎস, তুমি নারীটিকে পাইলে ক্ষণকালের সুখ লাভ করিবে বটে তবে তাহার পর মোহ কাটিয়া গেলে দীর্ঘকাল বিষাদ ভোগ করিবে। অহেতুক জীবনে বিষাদ টানিয়া আনিবে কেন? তুমি বরং নারীটিকে দূর হইতেই দেখিবার অভ্যাস কর, তাহার সঙ্গে মানসিক প্রনয়ে লিপ্ত হওয়া তোমাদের গৃহীদের পক্ষে তাহা দোষের নয়, এইভাবে কাল্পনিক তৃপ্তি লাভ কর। প্রবীণ সাধু চন্দ্রকান্ত এই সমস্ত অনেক কথা কহিল। সাধু চন্দ্রকান্তর কথায় শ্রেষ্টী সঞ্জয় সন্তুষ্ট হইল। সে উঠিয়া দাঁড়াইল। সে আবার রাজপথে হাঁটিতে হাঁটিতে ভাবিল সে আর নম্রমালিকার নিবিড়সান্নিধ্য কামনা করিবে না, তাহার পিছুও লইবে না। সে কেবল দূর হইতে মনশ্চক্ষে নম্রমালিকার সৌন্দর্যলাবণ্য আস্বাদ করিবে, কখনও ছুঁইয়া দেখিতে যাইবে না। আজই সে অচিরাবতীর শান্ত জলে স্নান-অবগান প্রভৃতি নিষ্পন্ন করিয়া আপন গৃহে ফিরিবে। আর নিছক নারীর মূর্তরুপের পিছনে ছুটিবে না; বরং কল্পনারীতে মনস্থির করিয়া সুপ্ত কামনা চরিতার্থ করিবে। সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইলে শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় অচিরাবতীর তীরে আসিয়া দাঁড়াইল। গোধূলি লগ্ন অতিক্রান্ত হইলে নদী তীরে অন্ধকার ঘনাইয়া উঠিয়াছিল। এখন সপ্তমীর চাঁদের ক্ষীণ আলোয় অন্ধকার ঈষৎ দূরভীত হইয়াছিল বটে তবে নদীর জল সম্পূর্নরুপে দৃশ্যমান হয় না। বাতাস উত্তাল হইয়া এই পরিবর্তিত পুরুষটিকে ঘিরিয়া ধরিল, যেন তাহাকে নদীবক্ষে টানিয়া ফেলিয়া দিবে। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় ঈষৎ হাস্য করিল। সে জানে, ঈশ্বর এইভাবেই প্রকাশিত হন, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে ক্ষণে বায়ূর রুপ ধরিয়া আসেন। এই সমস্ত ভাবিয়া শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় অন্যমনস্ক হইয়া পড়িয়াছিল। কখন যে ভিক্ষুণী নম্রমালিকা নির্জন ঘাটে আসিয়া দাঁড়াইল সে টের পাইল না। ভিক্ষুণী নম্রমালিকা নম্রস্বরে বলিল, শ্রেষ্ঠী? শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় চমকাইয়া উঠিল না। বরং নম্র স্বরে বলিল, বলুন। আমি কাল প্রভাতে নগর হইতে চলিয়া যাইব। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় চুপ করিয়া থাকিল। বায়ূরুপী ঈশ্বরের কথা ভাবিল। এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলিল। নদীপাড়ের বাতাস ততক্ষণে আরও অশান্ত হইয়া উঠিয়াছে। আপনার জানিতে ইচ্ছা হয় না আমি কোথায় যাইব? শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় চুপ করিয়া থাকিল। বাতাসের স্পর্শ বড় মধুর লাগিতেছে। আপনি কিছু বলিতেছেন না। তাহা হইলে আমি কি চলিয়া যাইব? শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় চুপ করিয়া থাকিল। সে বিস্মিত হইয়া ভাবিল, আজ কতকিছু ঘটিয়া যাইতেছে, দীর্ঘকাল কিছু ঘটিতেছিল না। তাহার মহাকালিক সাধু চন্দ্রকান্তর তাম্রাভবর্ণের তিলকলিপ্ত মুখোশ্রী স্মরণ হইল। শ্রেষ্ঠী? আমার উপস্থিতি কি আপনার কাছে অসহ্য বোধ হইতেছে? শ্রেষ্ঠী সঞ্জয় চুপ করিয়া থাকিল। রাত্রির আকাশে টি টি শব্দ করিয়া কী এক পক্ষি ডাকিয়া গেল ; দুপক্ষ চুপ করিয়া শুনিল। অচিরাবতীর জলে ঢেউ, নদীর জলের রং ক্রমশ উজ্জ্বল হইয়া উঠিতেছিল যতই দিগন্তরেখার ওপরে চাঁদটি পূর্ণবয়স্ক হইয়া উঠিতেছিল... নম্রমালিকা বলিল, আমি আমার জীবনের উপাখ্যানটি আপনাকে বলিতে চাই শ্রেষ্ঠী? আমি শুনিব না। এক্ষণে কথা কহিতে পারিল শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়। ভিক্ষুণী নম্রমালিকা নিথর হইয়া থাকিল। তাহার পর কতকাল যে কাটিয়া গেল ... তাহার পর নম্রমালিকা চলিয়া গিয়াছিল, তাহার যেখানে যাইবার কথা ছিল, সেখানে। শ্রেষ্ঠী সঞ্জয়ও মনের বিষাদ টের পাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়াছিল। কেননা সে জানিত ভিক্ষুণী নম্রমালিকা শ্রাবস্তী নগর হইতে চলিয়া গেলে তাহার দুঃখ আরও প্রগাঢ় হইয়া উঠিবে। সে সেই দুঃখ উপভোগ করিবে বলিয়া নিজেকে সান্ত্বনাও দিয়াছিল ... সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৯
false
ij
শেষ শীতের জার্নাল। একুশ শতকে পৌঁছার অনেক আগেই প্রকৃতি হয়ে উঠেছে হতশ্রী, ম্লান। ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে নিয়ত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। তবু যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন-একুশ শতক তাদেরই। যারা প্রকৃতির মাঝে খুঁজে ফেরেন সৌন্দর্য ও মহাকালের ইঙ্গিত- একুশ শতক তাদেরই। আর যারা সৌন্দর্যর মানে বোঝে না, অসার মানবরচিত শাস্ত্রে খোঁজে মহাকালের নির্দেশ-একুশ শতকে কী তাদের অবস্থানও-তা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। গত বছর ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি আমার এক ছোট ভাই এল মার্কিন মুলুক থেকে। আমার জন্য উপহারসরুপ সঙ্গে নিয়ে এসেছে রিচার্ড ডাওকিন্স-এর লেখা - The God Delusion বইটি । ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী ডাওকিন্স-এর নাম আমি আগেই শুনেছি। স্টিভেন পিঙ্কারের বই (হাউ দ্য মাইন্ড ওয়ার্কস) পড়ার সময় ডাওকিন্স-এর লেখা ‘দি সেলফিস জিন’ বইটির নাম পেয়েছি। ১৯৭৬ সালে ‘দি সেলফিস জিন’ লিখে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেন ডাওকিন্স। তখন খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি- রিচার্ড ডাওকিন্স-এর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৬ মার্চ। অক্সফোর্ডের নিউ কলেজে পড়ান। ডাওকিন্স-এর The God Delusion বইটার নামটাও আমি আগেই শুনেছি, হাতে এই প্রথম পেলাম-বুকটা ধক করে উঠল। কারেন আমসষ্ট্রংয়ের ‘আ হিস্ট্রি অভ গড’ বইটা পড়ছিলাম। Delusion টা পেয়ে ভালোই হল। আমার আবার একই সময়ে একই বিষয়ে কয়েকটি বই পড়ার অভ্যেস। বইটা হাতে পেয়ে ছোট ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ দিই। সে বির্বতনবাদ ভালোই বোঝে। মেধাবী ছাত্র। আমেরিকায় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস করছে। চা শেষ করে সিগারেট ধরিয়ে সে বলল, বিবর্তনবাদ না-বুঝেই এদেশে মানে, বাংলাদেশে খুব লাফঝাঁপ হয় । কাজেই, ডাওকিন্স-এর পারমিশন নিয়ে তাঁর The God Delusion বইটি ‘ঈশ্বরবিভ্রাট’ নাম দিয়ে খুব শিগগির বাংলা অনুবাদ করা উচিত। এখানে গল্পের চর্চা বেশি হয়ে যাচ্ছে। আগে সবাই গল্পের জগৎ থেকে বেরিয়ে আসুক। বেরিয়ে এসে দেখুক ইউরোপ-আমেরিকায় গত দুশো বছর ধরে যুক্তিপূর্ন গদ্যে কী লেখা হচ্ছে, কী বলা হচ্ছে। তারপর, হয় বিবর্তনবাদবিরোধীরা হাইবারনেশনে যাক-নয়তো বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে কলম ধরুক! আমি মুচকি হেসে বললাম, বিবর্তনবাদ মিথ্যে হলেই তো লাভ? কেন, কেন? ছোট ভাইর মুখচোখে প্রশ্ন। আমি বললাম, তা হলে ঈশ্বর তাহলে বেঁচে থাকলেন। ভক্ত বিপদে পড়লে এগিয়ে আসবেন। ধর, রাস্তায় জ্যাম। দেরি করে পৌঁছলে বিপদ। তখন ঈশ্বর এসে তাঁর নিয়মের বাইরে যেয়ে জ্যাম ছুটিয়ে দেবেন। তানিম আমাকে চোখ রাঙিয়ে জিজ্ঞেস করল, ঈশ্বর কি আছে? কে জানে। আমি শ্রাগ করি। তানিম বলল, অনেক আগে থেকেই এদেশের মানুষের বিবর্তনবাদী ধ্যানধারনার সঙ্গে পরিচয় থাকলে ভালো হত। কেন? আমি খানিকটা বিস্মিত। তানিম বলল, বিবতর্নবাদ চর্চা চিন্তার শৃঙ্খলা বাড়ায়। যেমন? আমি উৎসুক হয়ে উঠি। যেমন-এই ধরুন। সে বলল- ২০০১ সালের পর বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়ল-এটা কি চিন্তার বিশৃঙ্খলা নয়? কাজেই প্রশ্ন উঠবেই-তসলিমা নাসরিনকে খোঁড়া অজুহাতে নির্বাসিত করা হল কেন? তসলিমা কি গোলাম আযম-নিজামীদের চেয়েও বড় পাপী? বিশ্ববাসী কি এসব দেখছে না? দেখছে। তা হলে? মনে রাখবেন চিন্তার বিশৃঙ্খলা নিয়ে ১৫ কোটি মানুষের উন্নতি কোনওদিনই সম্ভব নয়। আমরা পৌরাণিক চিন্তায় আচ্ছন্ন বলেই আমরা আমাদের চিন্তার বিশৃঙ্খলা বুঝতে পারি না-মনে করি আমরা যা ভাবি তাই ঠিক। হুঁ। আমি নিরুত্তর থাকি। আমার ঘরের দেয়ালের লালনের প্রতিকৃতি আঁকা। সেদিকে তাকিয়ে থাকি। লালন ‘বিশ্বাসীদের দেখাশোনা করেন’ বলে তাঁর একটি গানে উল্লেখ করেছেন। অলখে আমার দীর্ঘশ্বাস পড়ে। ভাবছি-চিন্তায় শৃঙ্খলা না এনেই আমরা একুশ শতকে পৌঁছে গেলাম। এভাবে আর কতকাল। আরও কিছুক্ষণ বসে তানিম চলে যায়। আমি The God Delusion -এর পাতা উলটাই। মারিনার কোম্পানির ঝকঝকে বই। দাম ১৫.৯৫ ডলার। উলটেপালটে দেখলাম-২০০৬ সালের বেস্টসেলার The God Delusion বইটি আপাদমস্তক বিবর্তনবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা-ফলে বইটি হয়ে উঠেছে কট্টর নিরেশ্বরবাদীদের বাইবেল। আজ অবধি (বাংলা বাদে) ৩১ টি ভাষায় বইটি অনুদিত হয়েছে। বিক্রি হয়েছে ১.৫ মিলিয়ন কপি । বইটিতে রিচার্ড ডাওকিন্স-এর সিদ্ধান্ত: যে অলৌকিক শক্তিই (God ) নেই-তাতে গভীর বিশ্বাস গভীর বিভ্রম সৃষ্টি করে বৈ কি। বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে (‘দ্য গড হাইপোথেসিস’) মার্কিন কবি এমারসনের একটি উক্তি দেখে চোখ আটকে গেল। The religion of one age is the literary entertainment of the next. ভীষনই ঝাঁকুনি দেওয়া অসাধারণ উক্তি-সন্দেহ কী! সেইসঙ্গে তসলিমার মুখটিও আমার মানসপটে ভেসে উঠল । এই কথাটা বলার জন্যই তাঁকে দুঃখজনকভাবে নির্বাসিত করা হয়েছিল। এক যুগের ধর্ম-পরের যুগের সাহিত্যিক বিনোদন! বাহ! কী চমৎকার কথা। এমন ভাবে ভাবিনি তো আগে। এমারসন সম্বন্ধে কৌতূহলী হয়ে উঠি আমি । Delusion টা রেখে কম্পিউটার অন করে ঝটপট তাঁর সম্বন্ধে কয়েকটি কথা জেনে নিলাম । # পুরো নাম: রালফ ওয়ালডো এমারসন। # উনিশ শতকে অন্যতম শ্রেষ্ট মার্কিন কবি, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। # প্রতিষ্ঠিত ধর্মের প্রতি ছিলেন উদাসীন। # উনিশ শতকের মার্কিন দেশের Transcendentalist আন্দোলনের প্রধান পুরোধা ছিলেন এমারসন । Transcendentalism-এর যে কী মানে? অভিধান খুলে দেখলাম। Transcendentalism -এর বাংলা করা হয় তুরীয়বাদ বা অতিন্দ্রীয়বাদ । প্রতিষ্ঠিত ধর্মের প্রতি ছিলেন উদাসীন এমারসন। ছিলেন অতিন্দ্রীয়বাদী আন্দোলনের প্রথিকৃৎ। আমার কেমন ঘোল লাগে। মূলধারার ধর্মের প্রতি উদাসীন থেকে অতিন্দ্রীয় মনোভাবের শিল্পিত প্রকাশই তো বাংলার চিন্তাধারার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আমি কৌতূহলী হয়ে উঠি। তখনও আমি জানতাম না যে-এমারসনের সঙ্গে বঙ্গীয় সংস্কৃতির যিনি মূল খুঁটি-সেই শ্রীচৈতন্যদেবের জীবন ও আত্মার সাদৃশ্য বিস্ময়কর। ২ রালফ ওয়ালডো এমাসনের জন্ম ১৮০৩ সালে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন, ম্যাসাচুসেটট-এ । বাবা ছিলেন ইউনিটারিয়ান মিনিষ্টার। ইউনিটারিয়ান কথাটা এখানেই সামান্য খোলাসা করে নিই। ক্যাথলিকরা বিশ্বাস করে যে একই ঈশ্বরের রয়েছে তিন তিনটা সত্তা- যা হচ্ছে ট্রিনিটিবাদ। ট্রিনিটিবাদের বিরুদ্ধে ইউনিটারিয়ানপন্থিদের বক্তব্য হল-ঈশ্বরের ব্যাক্তিত্ব একক; তিনটে নয়। এমারসনের মনমানসিকতায় ইউনিটারিয়ান পরিবেশ প্রভাব বিস্তার করে থাকবে। পরে অবশ্য ইউনিটারিয়ান এর বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন এমারসন। যা হোক। আট বছর বয়েসে এমারসনের বাবা মারা যান। বালক এমারসন শৈশবে বস্টন লাতিন স্কুলে পড়েছে । এর পর পড়াশোনা হার্ভাড কলেজে। পড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করতেন, লিখতেন কবিতা । এপ্রিলের বাতাস জাদু আছে। মানুষের সুরেলা কাঠামোয় সে বাতাস ঝাঁকুনি দেয়। যুবকেরা, তরুণিরা বাগানে হাঁটার সময় সেরকমই পায় টের। ঝোপগুলো সব হিরকে হিরকে রত্নময়, মাদকতাও আছে ছড়িয়ে বাতাসে, মাকড়শার জাল বলে দ্যায়: ‘ঐ যে রোজামন্ড-এর পথ!’ প্রেমিককে দেখিয়ে দ্যায় জলাশয়ের পথ। জলের প্রতিটি তিল পাথরে পাতার ছায়া করতে পারে বিভ্রান্ত, বিষন্ন, তোষামদ; ফিসফিস ষড়যন্ত্রে করতে পারে তাড়িত। ভালোমানুষ, ভূত ও ক্ষুদে শয়তানরা যে কোনও বইয়ের চেয়ে জানে বেশি। তোমার বিষন্ন দুঃখেরা দূর হয়ে যাক তুমি রৌদ্রময় নদীটির তীরটিতে বস। দক্ষিণা বাতাস দ্রুত সঞ্চরণশীল, স্কুলগুলি বিষন্ন ও ঢিলেঢালা; শিক্ষকেরা সব অদৃশ্য হও। আমাদের উপকথার দিকেই ঝোঁক। (আমার কাছে এমারসন কবি, অতীন্দ্রিয় এক কবি। এই কবিতায় আমেরিকার ম্যাসাচুসেটট অঙ্গরাজ্যের এপ্রিল মাসের বর্ননা দিয়েছেন এমারসন। কবিতাটি পাঠ করে এই শীতেও মনটা কেমন চৈত্র মাসের জন্য হু হু করে উঠল টের পাই। কবিতার নাম-‘এপ্রিল’। আমার একটি অসফল অনুবাদপ্রচেষ্টা।) যা হোক। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে কিছুকাল স্কুলে পড়ান এমারসন। তারপর হার্ভাড ডিভিনিটি স্কুলে গেলেন পড়তে। এখানে বলে রাখি যে- ক্যামব্রিজ ম্যাসাচুসেটট-এ অবস্থিত হার্ভাড ডিভিনিটি স্কুলে হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক স্কুল। উদ্দেশ্য শিক্ষিত ধর্মীয় নেতা পয়দা করা। আসলে হার্ভাড ডিভিনিটি স্কুল হচ্ছে খ্রিস্টান মাদ্রাসা। তো ওখান থেকে পাস করে বস্টনের সেকেন্ড চার্চে যোগ দিলেন এমারসন। জীবন তখনও জটিল হয়ে ওঠেনি। কবিরা তীব্র কামে ভোগেন। বিয়ের কথা ভাবছিলেন কবি। বিয়ে করলেন অস্টাদশী ইলেন লুইজা টাকার-কে। সোনালি চুল-ফুটফুটে মুখ। আয়ত চোখ। নীলাভ। বিয়ের পর কতই না ভালোবাসাবাসি হল ... কিন্তু, জগৎ কি ঈশ্বর শাসিত? নৈলে ইলেনের যক্ষা ধরবে কেন? যক্ষার ছোবল পড়েছিল অস্টাদশী ইলেন-এর ওপর । মৃত্যু অবধারিত। অত্যন্ত বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়লেন এমারসন। জীবনজগৎ অর্থহীন ও আকস্মিক বলেই মনে হল। এবং এই প্রথম উপলব্দি করলেন যে জগৎ ঈশ্বরশাসিত হলেও নির্বিকার। বাংলায় চৌদ্দ শতকের গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যদেব সঙ্গে এমারসনের জীবনের মিল এখানেই। শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথমা স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীকে সাপে কেটেছিল! হ্যাঁ, ঠিকই ভারতীয় বেদান্ত দর্শন পাঠ করছিলেন ওই মার্কিন কবিটি। নিরাকার ব্রহ্মাকে নিয়ে কবিতাও লিখেছেন। আমারই করা এমারসনের ব্রহ্মা কবিতাটির (অসফল) বাঙলা অনুবাদটি এই রকম- নির্বিকার খুনি যদি ভাবে যে সে-ই খুন করছে অথবা নিহত যদি ভাবে সে নিহত হয়েছে তা হলে বলি-সূক্ষ্ম খেলার তারা কী-ই বা বোঝে! এসবই আমি দেখি, আর ঘুরে যাই বারবার। সুদূর ও বিস্মৃতি আমার খুব কাছে মনে হয়; ছায়া ও সূর্যালোকও কি অভিন্ন নয়? অদৃশ্যমান ঈশ্বর আমার কাছে হন প্রতিভাত; খ্যাতি কিংবা লজ্জ্বাবোধ কি একই নয়? যখন তারা ভাবে যে আমি প্রায় নির্বাপিত তখন আমাকে ওড়ালে আমি হই ডানা। আমিই সন্দেহকারী ও সন্দেহ। এবং, আমিই -ব্রাহ্মণেরা যে গীত গায়- তাই স্বয়ং অসীম দেবতারা আমার ঘরের দেওয়াল তাতেও ঘোচেনা পবিত্র সাতের দুর্জ্ঞেয়তা। হে, শুভ্রতার নম্র প্রেমিক, স্বর্গের দিকে পিঠ ঘুরিয়ে আমাকেই খুঁজে নাও। এমারসন কি একনিষ্ট বেদান্তপন্থি হয়ে উঠেছিলেন? হ্যাঁ, সেরকম তো হতেই পারে। একজন যুক্তিনিষ্ট স্বচ্ছ বুদ্ধির মানুষের তো বোঝা উচিৎ-উপনিষদের বাণী কেন মহত্তম। এসব কারণেই কি ইলেনের মৃত্যুর পর একটি আব্রাহামিক ধর্মের প্রতিভূ সেই বস্টনের সেকেন্ড চার্চ গির্জের সঙ্গে তুমুল মতবিরোধে জড়িয়ে পড়লেন এমারসন যেহেতু ঈশ্বর নির্বিকার? ১৮৩২ সালে গির্জের মিনিস্ট্রিয়াল পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। ঐ বছরই এমারসন তাঁর জার্নালে লিখলেন- "I have sometimes thought that, in order to be a good minister, it was necessary to leave the ministry. The profession is antiquated. In an altered age, we worship in the dead forms of our forefathers". তো, হৃদয়ে অশান্তি। অস্টাদশী বউটির মুখ খালি ভাসে। গভীর মানসিক দহন নিবৃত্তিকল্পে ভ্রমনের সিদ্ধান্ত নিলেন এমারসন। এ ক্ষেত্রে ইউরোপ । এবং লন্ডন শহরে জগতের জিজ্ঞাসু পড়–য়ারা সবাই একবার পা রাখতে চায়। লন্ডন শহরে ওয়াডসওয়ার্থ, কোলরিজ প্রমূখ দীপ্যমান রোম্যান্টিক কবি কূলের বাস। নমস্যদের সঙ্গে জানাশোনা হল এমারসনের। জানাশোনা হল জন স্টুয়ার্ট মিল, কাররাইল-প্রমূখ ঘাগু চিন্তাবিদদের সঙ্গেও। তাতে হৃদয়ের জ্বলুনি কি কমল কবি? হায় প্রেম! ১৮৩৩ সালে ম্যাসাচুসেটট ফিরে এলেন এমারসন। সেখানে, মানে ম্যাসাচুসেটট-এ কনকর্ড নামে ভারি সুন্দর একটি স্থান রয়েছে; স্থানটি হ্রদময় ও ছবি মতন সুন্দর। সেখানেই বাড়ি কিনলেন এমাসন। দ্বিতীয়বার বিবাহ করলেন। শ্রীচৈতন্যদেব সঙ্গে আমি তখন এমারসনের সাযুজ্যের কথা বলছিলাম। শ্রীচৈতন্যদেবও অনিচ্ছা সত্ত্বেও দ্বিতীয়বার বিবাহ করেছিলেন। দেশে এবার থিতু হয়ে তুরীয়-অতীন্দ্রিয়-মানে Transcendentalist ক্লাব গঠন করলেন এমারসন। সবাইকে আহবান জানালেন নিজেদের মতন করে লিখতে-যেন কেউই ইউরোপের, বিশেষ করে ব্রিটিশ ইংলিশ বাগবিধি অনুসরণ না করে। কোলকাতাকেন্দ্রীক বাংলা ভাষা ও ঢাকাকেন্দ্রীক বাংলাদেশি ভাষার পার্থক্য নিয়ে যারা বিস্তর মাথা ঘামান-তথ্যটা তাদের জানিয়ে রাখলাম। তখনই একবার হার্ভাডের ডিভিনিটি স্কুলে-মানে সেই খ্রিস্টান মাদরাসায় স্মারক বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ পেলেন এমারসন। ডিভিনিটি হলের মঞ্চে সবার সামনে দাঁড়িয়ে এমারসন বললেন: God does not have to reveal the truth but that the truth could be intuitively experienced directly from nature. ডিভিনিটি হলে গুঞ্জন উঠল। এসব কথার মানে কী। মি: এমারসন কী বোঝাতে চান। ডিভিনিটি হলের গুঞ্জন উপেক্ষা করে এমারসন আরও বললেন, বাইবেলের গল্পগুলিকে নিছকই গল্প বুঝলেন। এর মানে এই নয় যে যিশু ছিলেন না-না তা নয়; যিশু অবশ্যই ছিলেন এবং যিশু নিজে ভালো মানুষ ছিলেন। তা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক খ্রিস্টবাদ যিশুকে অধঃঈশ্বরে পরিনত করেছে। এখানেই আমার প্রতিবাদ। গ্রিকরা যেমন অ্যাপোলোকে, মিশরীয়রা যেমন ওসিরিসকে ডেমিগড-এ পরিনত করেছে, সেরকমই ঐতিহাসিক খ্রিস্টবাদ যিশুকে এক অধঃপতিত নরদেবতায় পরিনত করেছে। তাঁর মন্তব্যে খ্রিস্টান মাদরাসার আগত অতিথিবৃন্দ ক্ষেপে যায়। ‘অ্যাথেইস্ট’, ‘অ্যাথেইস্ট’-বলে চিৎকার উঠল হলজুড়ে। একে থামাও। এ চন্ড খ্রিস্টবিরোধী তরুণদের মন যে বিষিয়ে তুলবে। হইচই উঠলে এমারসন নিরব রইলেন। এই আশায়- যাতে অন্যরা তাঁর পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করতে এগিয়ে আসে । এমারসনের সঙ্গে এ জায়গায় আমার ভারি মিল। যে কারণে আমিও আমার ব্লগে আমার বিরুদ্ধে লিখলে বা মাইনাস দিলে আর্গুমেন্ট করি না; এই আশায় যে- অন্যরা তাঁর যুক্তি আমার পক্ষে প্রদর্শন করবে । যা হোক। মৃত্যুর আগে স্মৃতিশক্তি প্রায় লোপই পেয়েছিল এমারসনের -এমন কী নিজের নামও নাকি মনে করতে পারতেন না। তখন তাঁকে ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করলে এমারসন উত্তর দিতেন: ভাল। মনের শক্তি হারিয়েছি বটে, তবে এমনিতে ভালোই আছি। ধন্যবাদ। এরপর আর বেশিদিন বাঁচেননি এমারসন। এমারসন সম্বন্ধে প্রাথমিক খোঁজখবর নিয়ে আমি আমার ল্যাপটপের ঝাঁপি বন্ধ করি। হাতে আবার ডাওকিন্সের The God Delusion বইটি তুলে নিই। মাথার মধ্যে এমারসনের কথাটা ঘুরছে:The religion of one age is the literary entertainment of the next. সহসা মনে পড়ল-বুয়েটের এক মেধাবী এক ছাত্র-তাবলীগ জামায়াত করত- বছর কয়েক আগে এক বিকেলে আমাকে সে সাহিত্যিক বিনোদন দিতে এসেছিল:সে সময় আপ্লুত আমিও হয়েছিলাম। ৩ আমার এক ভগ্নিপতি তাবলীগ জামায়াত করেন। বিশ্ববিদ্যায় জীবনে অবশ্য বাসদ করতেন। পরে জীবনের হিসেব মেলে নাই বলেই হয় তো ধীরে ধীরে দ্বীনের দিকে ঝুঁকেছেন। বিষন্নতা এড়াতে গ্র“প থেরাপির আশ্রয় নিয়েছেন। তো, আমার ভগ্নিপতির ইচ্ছে আমিও তাবলীগ জামায়াতে যোগ দিই, দিয়ে ঘন ঘন কাকরাইল মসজিদে যাই এবং, বুধবার, বুধবার ‘গাস্ত’ এ বেরই। (এই গাস্ত শব্দটার যে কী মানে-আল্লা মালুম!) আমার ভগ্নিপতি স্পষ্ট আমার মুখচোখে প্রবল অনীহা দেখেন; এবং আমার উপর চাপ প্রয়োগ করলে তার অব্যবহিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে চুপ করে যান। তার জানার কথা নয় যে আমি জাপানের কামিপন্থি শিন্টোধর্মকেই পৃথিবীর শ্রেষ্ট মনে করি এবং বিশ্বাস করি ইতিহাসের ধারায় ৩টি আব্রাহামিক সেমেটিক ধর্মের উদ্ভব না হলে পৃথিবীতে আরও সুখশান্তি বিরাজ করত এবং আমার ভগ্নিপতির এও জানার কথা নয় যে আমি শৈশবে ঢাকা শহরের প্রখ্যাত সব যুক্তিবাদী নিরেশ্বরবাদীদের সান্নিধ্যে লালিত হয়েছি এবং এক সময়ের বিশিষ্ট বামপন্থি তাত্ত্বিক অধ্যাপক (‘ডায়ালেকটিক বস্তুবাদের’ লেখক) আবদুল হালিমের বাড়িতে ১৯৮৬/৮৭ সালেই বরিশালের লামচরি গ্রামের জ্ঞানীবৃদ্ধ শ্রদ্ধেয় আরজ আলী মাতুব্বরকে স্বচক্ষে দেখেছি যখন মহাত্মার খ্যাতি ঢাকার সুশীল সমাজে প্রগাঢ় বিস্ময়ের সৃষ্টি করে নাই । যা হোক। আমার ভগ্নিপতি আমাকে মুগ্ধ করার জন্য নতুন পথ ধরলেন। বুয়েটের অনেক মেধাবী তরুণই তাবলীগ জামায়াতের সদস্য। এতে আমি বিস্মিত হই না। আমি পিথাগোরাসের ইতিবৃত্ত জানি। সেইরকম একজন মেধাবী তরুণকে আসরের নামাজের পর বাসায় ডেকে আনলেন আমার ভগ্নিপতি: ভাবখানা এই-যদি বুয়েটের এই মেধাবী ছেলেটিকে তাবলীগ আকৃষ্ট করতে পারে তা হলে কি তাবলীগের মধ্যে কিছুমাত্র সত্য নাই? আর তুমিই সব বোঝ? মেধাবী তরুনটি পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা আর শ্যামলা, চশমা পরা, ইষৎ গম্ভীর; টুপির পিছনের চুলগুলি খাড়া খাড় আর সমান করে ছাঁটা। আমি আতরের গন্ধ পাই ও কৌতূহলী হয়ে উঠি। আমার মুখোমুখি সোফায় বসতে বলি তাকে। অত্যন্ত বিনয়ী ভঙ্গিতে সে যা বলার ছিল বলল। আমি শুনলাম। জায়ামাতিরা দাওয়াত দেবার সময় অনুরাগবশত শ্রোতার হাত, কাঁধ কি চিবুক স্পর্শ করে। আমার গিটারটা সোফার ওপর পড়ে ছিল। আমি মেধাবী তরুণটির কথা শুনতে শুনতে সামান্য ঝুঁকে তারগুলিতে আঙুল বুলিয়ে দিই-টুং টাং শব্দ ওঠে। ছেলেটির অস্বস্তি হয় সম্ভবত। যেন মাদ্রাসার নিষ্পাপ কিশোর-ভুল করে বাঈজীর ঘরে ঢুকে পড়েছে। যা হোক। কথার ফাঁকে আমি বললাম, তোমার দেশের বাড়ি কই? সে: বাগেরহাট। আমি: যাও? সে: মাসে দুবার। আমি: কী সে? বাসে? সে: হ্যাঁ। লঞ্চে পদ্মা পার হই। আমি: নদী দেখ? সে: নদী? (ইষৎ বিস্মিত) আমি: হ্যাঁ, নদী। দেখ? সে: হ্যাঁ। লঞ্চে উঠলে তো চোখে পড়ে। আমি: আলাদা করে দেখ না? সে: কি! আমি: নদী সে: নদী? আমি: হ্যাঁ, নদী। পদ্মা নদী। ছেলেটি কেমন বিমূঢ় বোধ করে। নদী- ঠিক- সেভাবে- দেখার- কী- আছে! আমি ভাবলাম, এখন যদি আমি ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে আবৃত্তি করি- হে আকাশ, একদিন ছিলে তুমি প্রভাতের তটিনীর; তারপর হয়ে গেছ দূর মেরুনিশীথের স্তব্দ সমুদ্রের। ভোরবেলা পাখিদের গানে তাই ভ্রান্তি নেই, নেই কোনও নিস্ফলতা আলোকের পতঙ্গের প্রাণে। বানরী ছাগল নিয়ে যে ভিক্ষুক প্রতারিত রাজপথে ফেরে- আঁজলায় স্থির শান্ত সলিলের অন্ধকারে- খুঁজে পায় জিজ্ঞাসার মানে। যদি আমি আবৃত্তি করি জীবনানন্দের ‘কবিতা’-তা হলে কী হতে পারে ছেলেটির মুখচোখের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া?যাক। আমি আর ছেলেটিকে হতাশাগ্রস্থ করে না তুলে বলতে থাকি- জানেন তো-মানুষ আসলে গল্প শুনতে পছন্দ করে। বলতেও। আর কেবল পরিশ্রমী গুণিরাই গল্প লিখতে পারে-কাজটা সহজ নয়। আপনারা আসলে কাকরাইলে যান গল্পের লোভে। আপনাদের বিশ্বাসের পুরো ব্যাপারটাই আসলে গল্প। আপনাদের বিশ্বাস একটা গল্প দিয়ে শুরু হয়। গর্ভে থাকতে বাবা মারা গিছল-তারপর কি হইল। মানুষ কৌতূহল হয়ে উঠবেই। আহা কী কষ্ট! তারপর আক্রমনকারী আবরাহা, আবাবিল পাখির কংকর নিঃক্ষেপ- মানুষ আসলে গল্প শুনতে ভালোবাসে। ওল্ড টেস্টামেট্টও একটা গল্পের বই। আপনারা আসলে আজও সেই ঐতিহ্যই ধরে রেখেছেন। গল্পের বদলে গদ্যের যুক্তিতে এলে আপনাদের আসর ফাঁকা হয়ে পড়বে। আমি আরেকটা কারণে আপনাদের গল্পের আসরে যাব না। আমি ইতিহাসের ছাত্র-আমার দিনক্ষণ চাই। বললেই হবে না-অমুক ছাহাবা অমুক দিনে টিস্যু পেপার দিয়া ... এরকমই আরও কি কি যেন বলেছিলাম ছেলেটিকে। ছেলেটি ছিল মেধাবী। সে আমার কথা যা বোঝার বুঝে গিয়েছিল। কাজেই এরপর আমার সামনে আর আসেনি। মানে আমার ভগ্নিপতিও তারে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়েও আনতে পারে নাই। ঘটনাটি ঘটেছিল বেশ কয়েক বছর আগে। তখনও আমি এমারসনের- The religion of one age is the literary entertainment of the next -এই কথাগুলি জানতাম না। তবে দুজনই প্রায় একই রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি বলে মনে মনে মুচকি হেসেছি। আমার তো এখন মনে হয়, এখানে ধর্ম নিয়ে যা হচ্ছে -তা এক তরফাভাবে গল্প বলাই। দেখুন না- হূমায়ূন আহমেদ আর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীরা কী রকম জনপ্রিয় এদেশে। একজন টিভিতে গল্প বলেন, আরেকজন ওয়াজে। ওদিকে যে ডারুইনের On the Origin of Species বইটি বাংলায় অনুবাদ হয়ে গিয়েছে এবং বাংলা একাডেমি সেটি প্রকাশও করেছে-সে খবর আমরা রাখি না, রাখার প্রয়োজনও বোধ করি না। সেই ছেলেটির কথ ভাবতে ভাবে আমার ছোট ভাইটির কথাও মনে পড়ল। আমাকে যে ডাওকিন্স-এর The God Delusion বইটি উপহার দিয়েছিল। সে বলেছিল- বিবর্তনবাদ না-বুঝেই এদেশে মানে, বাংলাদেশে খুব লাফঝাঁপ হয় । কাজেই, ডাওকিন্স-এর পারমিশন নিয়ে তাঁর The God Delusion বইটি ‘ঈশ্বরবিভ্রাট’ নাম দিয়ে খুব শিগগির বাংলা অনুবাদ করা উচিত। এখানে গল্পের চর্চা বেশি হয়ে যাচ্ছে। আগে সবাই গল্পের জগৎ থেকে বেরিয়ে আসুক। বেরিয়ে এসে দেখুক ইউরোপ-আমেরিকায় গত দুশো বছর ধরে যুক্তিপূর্ন গদ্যে কী লেখা হচ্ছে, কী বলা হচ্ছে। তারপর, হয় বিবর্তনবাদবিরোধীরা হাইবারনেশনে যাক-নয়তো বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে কলম ধরুক! আমি তখন মুচকি হেসে বলেছিলাম, বিবর্তনবাদ মিথ্যে হলেই তো লাভ? ৪ আমরা প্রায় অনেকেই The International Society for Krishna Consciousness (ISKCON)–এই সংগঠনটির নাম জানি। ১৯৬৬ সালে নিউ ইর্য়কে এই নব্যবৈষ্ণববাদী সংগঠনটির শিলান্যাস করেছিলেন বিশিষ্ট বৈষ্ণবসাধক এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভূপাদ। ‘ইসকন’ প্রতিষ্ঠার মূল প্রেরণা ছিল চৌদ্দ শতকের বাংলার গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদী দর্শন;-এবং আমরা জানি, সেই গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদী দর্শনটি গড়ে উঠেছিল নদীয়ার শ্রীচৈতন্যদেব প্রেমময় জীবন ও ভক্তিবাদী সাধনার উপর। একুশ শতকের নব্যবৈষ্ণবদের কাছে সত্য (ট্রুথ) ধ্যানগোচর- কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত ধর্মের অন্ধ অনুকরণ নয়-শ্রীচৈতন্যদেব সেসবের ধারও ধারতেন না । এবং এই কথাটিই নব্যবৈষ্ণববাদীরা প্রচার করে বেড়ায়-এমারসন যে সত্যটি প্রচার করেছিলেন উনিশ শতকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পৃথিবীর নানাদেশে ইসকনের শাখা রয়েছে। ঢাকাতেও ISKCON এর আশ্রম রয়েছে। আমি তখন এমারসন প্রসঙ্গে কোলকাতাকেন্দ্রীক বাংলা ভাষা ও ঢাকাকেন্দ্রীক বাংলাদেশি ভাষার পার্থক্যর কথা বলছিলাম। আমার একজন কবিবন্ধু, অবশ্য আমার সিনিয়র; কবিতায় ও গদ্যে ঢাকাকেন্দ্রীক বাংলাদেশি ভাষার প্রচলনের পথিকৃৎ। তিনি আমার একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ট সুহৃদ, আমার সঙ্গে ঘন ঘন দেখা না হলেও তাঁর সঙ্গে প্রায়ই ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। তো, আমার ঐ সুহৃদ কবিটি দিন কয়েক আগে ফোন করে বললেন, সন্ধ্যার পর ইসকনের আশ্রমে গিয়েছিলাম। একটা আধোঅন্ধকার ঘরে সবার সঙ্গে বসে দীর্ঘক্ষণ হরে রাম, হরে কৃষ্ণ, হরে হরে জপ করলাম । মনে বড় শান্তি পেলাম। আমি ভাবলাম, তাঁর সংসারে অশান্তি চলছে-সুগন্ধি ঘরে সবার সঙ্গে বসে গ্রুপ ‘থেরাপি’ হয়ে গেল-শান্তি তো পাবেই। কবিবন্ধুটি অবশ্যি সঙ্গে সঙ্গে দোহাই দিয়ে বললেন যে-আমি ঠিক ধর্ম পালন করিনি-বোঝেনই তো। অতীন্দ্রিয়বাদ আর ধর্ম এক নয়। অতীন্দ্রিয়বাদ আর ধর্ম যে এক নয়- তা আমি জানি বটে; বরং অতীন্দ্রিয়বাদীদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিপক্ষেই। বাউল। লালন। জালালউদ্দীন রুমী। এমারসন। এমারসন ছিলেন উনিশ শতকের মার্কিন দেশের Transcendentalist আন্দোলনের প্রধান পুরোধা। এর আগেও আমি একবার বলেছি যে-সাধারনত Transcendentalism -এর বাংলা করা হয় তুরীয়বাদ বা অতিন্দ্রীয়বাদ ।Among transcendentalists' core beliefs was an ideal spiritual state that 'transcends' the physical and empirical and is only realized through the individual's intuition, rather than through the doctrines of established religions. তুরীয়বাদীরা যে প্রচলিত ধর্মীয় আচারপ্রথাকে অস্বীকার করে -এটা একটা দিক। অন্য দিকটি হল, এই উপলব্দিতে পৌঁছা যে- কেবলমাত্র অভিজ্ঞতা দিয়ে সত্যকে বোঝা যায় না-সত্য জিনিসটাই স্বজ্ঞালব্দ। যে কারণে এমারসন বিশ্বাস করতেন, All things are connected to God and, therefore, all things are divine. (আমি মনে করি এই উপলব্দিটি তাঁর ভারতীয় দর্শন পাঠের ফলও হতে পারে। মনে রাখা দরকার ইনিই ব্রহ্মাকে নিয়ে পদ্য লিখেছিলেন।) এ কারণেই তুরীয়বাদ অলৌকিক, ঠিক লৌকিক নয়। অভিজ্ঞতায় নয় বরং মানসিক প্রক্রিয়ায় জ্ঞানলাভে বিশ্বাসী তুরীয়বাদীরা। এমারসনের সময়ে মার্কিন দেশে তুরীয়বাদী আন্দোলন আসলে সূচিত হয়েছিল ধর্মভিত্তিক মার্কিন সমাজ ও সংস্কৃতির বিদ্যমান অবস্থার প্রতিবাদসরুপ। তৎকালীন সময়ে তুরীয়বাদের অবস্থান ছিল কুসংস্কারগ্রস্থ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্রিস্টান মাদরাসার কট্টর মনোভাবের বিরুদ্ধে।খ্রিস্টান ডিভিটিনি মাদরাসায় এমারসনের সেই প্রতিবাদী ভাষনের কথা আমরা মনে করতে পারি। মার্কিন ইউনিটারিয়ান গির্জের বিরুদ্ধেও ছিল মার্কিন তুরীয়বাদীদের অবস্থান। তুরীয়বাদীরা বারবার ধর্মতাত্ত্বিকদের প্রতি আঙুল তুলে বলেছে -প্রকৃতির দিকে তাকাও- মা-প্রকৃতির সৌন্দর্যর মানে বোঝ। যে কারণে অসার শাস্ত্রভিত্তিক ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গভীর আবেগের বশবর্তীতে হয়ে এমারসন বলেছেন: God does not have to reveal the truth but that the truth could be intuitively experienced directly from nature. যে কোনও বিচারেই উক্তিটি অসাধারন । কাব্যিক। মিস্টিক। এবং রাবীন্দ্রিক। এবং একই সঙ্গে গভীর দার্শনিকতায় আচ্ছন্ন। এবং এই লাইনটি পড়তে পড়তে আমার মনে এই প্রশ্নটি জাগে-তাবলীগ জামায়াতের (বুয়েটের) সেই মেধাবী ছাত্রটির মনে এই কথাগুলি কী প্রতিধ্বনি তুলবে। সে কি সাড়া দেবে? সে কি বুঝতে পারবে? সে কি বুঝতে পারবে যে তার পঠিত সমগ্র শাস্ত্রের চেয়েও এই কথাটি কত গভীর ও দরকারি সমগ্র মানবসভ্যতার জন্য। সে কি শাস্ত্র বিসর্জন দিয়ে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়াবে? নদীর মানে বুঝবে? বুঝবে কোনওদিন সে-একটা নদীর কি মানে! এমারসনের কথায় আমার সেই সুহৃদ কবিবন্ধুটির কথাও মনে পড়ে যায়- ‘আমি ঠিক ধর্ম পালন করিনি-বোঝেনই তো। অতীন্দ্রিয়বাদ আর ধর্ম এক নয়।’ আমি তা জানি। এমারসনও ঈশ্বরকে অস্বীকার করেননি; যিশুকেও না। তবে ধর্ম ও প্রেরিতপুরুষদের বিষয়ে তাঁর মূল্যায়ন ছিল নিজস্ব। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ঈশ্বরের নির্বিকার ভূমিকার কথা উপলব্দি করেছিলেন এমারসন শ্রীচৈতন্যদেবের মতন। অসার বৈদিকশাস্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শ্রীচৈতন্যদেব গানে গানে ঈশ্বরপ্রেমের পথ দেখিয়েছিলেন চতুদর্শ শতকের বাঙালিকে-হয়তো প্রথমা স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীর অপমৃত্যুর শোক ভুলে যেতেই। সে শোক অতি গভীর হওয়ায় শেষ অব্দি প্রকৃতিতে মিশে গিয়েছিলেন। নিজেকে বিসর্জন দিয়েছিলেন নীলাচলের জলে। অবশ্য এমারসনের স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছিল। এমারসন ও শ্রীচৈতন্যদেব- এঁরা দুজনেই বুঝেছিলেন যে, এ পৃথিবীটি মহাবিশ্বের দরিয়ায় বাদামের খোসার মতন ভাসছে। তাতে ধর্মের কী-ঈশ্বরেরই-বা কী। হ্যাঁ। তারপরও সম্পর্ক একটা স্থাপন করা যায় মহাকালের সঙ্গে। সম্পর্কটা প্রকৃতির নাড়ীর স্পন্দন শোনার পরই গড়ে উঠতে পারে। জীবনানন্দ যেমন লিখেছেন- আমাদের হাড়ে এক নির্ধুম আনন্দ আছে জেনে পঙ্কিল সময়স্রোতে চলিতেছি ভেসে; তা না হলে সকলি হারায়ে যেত ক্ষমাহীন রক্তে-নিরুদ্দেশে। সময়স্রোত যে পঙ্কিল- আমরা তা জানি। সম্প্রতি গাজায় জাফনায় যা হয়ে গেল তাতে সভ্যতার পঙ্কিলতার অধিক প্রমানের আর কী প্রয়োজন? কিন্তু, ‘আমাদের হাড়ে এক নির্ধুম আনন্দ আছে’। সারকথা এখানেই। ‘তা না হলে সকলি হারায়ে যেত ক্ষমাহীন রক্তে-নিরুদ্দেশে।’ এই উপলব্দি তুরীয়। ধ্যানগোচর। মিষ্টিক। জীবনানন্দ আরও লিখেছেন- হে আকাশ, একদিন ছিলে তুমি প্রভাতের তটিনীর; তারপর হয়ে গেছ দূর মেরুনিশীথের স্তব্দ সমুদ্রের। ভোরবেলা পাখিদের গানে তাই ভ্রান্তি নেই, নেই কোনও নিস্ফলতা আলোকের পতঙ্গের প্রাণে। বানরী ছাগল নিয়ে যে ভিক্ষুক প্রতারিত রাজপথে ফেরে- আঁজলায় স্থির শান্ত সলিলের অন্ধকারে- খুঁজে পায় জিজ্ঞাসার মানে। জীবনের একটা মানে আছে বলেই রাজপথে প্রতারিত ভিক্ষুক জিজ্ঞাসার মানে খুঁজে পায় আঁজলায় স্থির শান্ত সলিলের অন্ধকারে। এ কারণেই জীবন অর্থহীন নয়। জীবন যে অর্থহীন নয়-তা কবির আবিস্কার। এখানে প্রেরিতপুরুষের অঙুলি হেলনের কী প্রয়োজন বলুন! জীবনানন্দ আরও লিখেছেন- চামচিকা বার হয় নিরালোকে ওপারের বায়ূসন্তরণে; প্রান্তরের অমরতা জেগে ওঠে একরাশ প্রাদেশিক ঘাসের উন্মেষে; জীর্ণতম সমাধির ভাঙা ইঁট অসম্ভব পরগাছা ঘেঁষে সবুজ সোনালিচোখ ঝিঁঝি-দম্পতির ক্ষুধা করে আবিস্কার। একটি বাদুড় দূর স্বোপার্জিত জ্যোৎøার মনীষায় ডেকে নিয়ে যায় যাহাদের যতদূর চক্রবাল আছে লভিবার। হে আকাশ, হে আকাশ, একদিন ছিলে তুমি মেরুনিশীথের স্তব্দ সমুদ্রের মতো; তারপর হয়ে গেছ প্রভাতের নদীটির মতো প্রতিভার। (কবিতা: সাতটি তারার তিমির।) ঠিকই তুরীয়বাদী কবি ছিলেন জীবনানন্দ। ঠিক অভিজ্ঞতায় নয়-বরং ভিতরের ধ্যানে স্বজ্ঞায় ধরতে চেয়েছিলেন অপরুপা দক্ষিণ বাংলার মানে? এ কারণেই একমাত্র তাঁরই শুদ্ধতম কবির সম্মান । ৫ তখন আমি রিচার্ড ডাওকিন্স-এর একটা বইয়ের কথা বলছিলাম। আগাগোড়া বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী ডাওকিন্স। এমারসনের সময়ে-মানে, উনিশ শতকের মাঝামাঝি, বিবর্তনবাদ ঠিক সেই ভাবে আলোচ্য হয়ে ওঠেনি। তেমনটা হলে এমারসন কি বিবর্তনবাদের পক্ষে দাঁড়াতেন? সে যাই হোক। কট্টর বিবর্তনবাদী বলেই ডাওকিন্স অজ্ঞেয়বাদের বিরোধী। মাকর্সবাদের ইতিহাসে আমরা দর্শনের দারিদ্র, দারিদ্রের দর্শন-এই কথাগুলি শুনেছিলাম। ডাওকিন্স অজ্ঞেয়বাদকে দরিদ্র আখ্যা দিয়েছেন। তবে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির মূল যে শাঁস- সেই লালন-জীবনানন্দকে আমার অজ্ঞেয়বাদীই মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ তো আপাদমস্তক রোম্যান্টিক। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথ সেই সঙ্গে transcendentalistsও কি নন? রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ ছিলেন ব্রাহ্ম। ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলন তো এক অর্থে প্রতিষ্ঠিত ধর্মেরই অস্বীকার। আবারও স্মরণ করি- transcendentalists' core beliefs was an ideal spiritual state that 'transcends' the physical and empirical and is only realized through the individual's intuition, rather than through the doctrines of established religions. তা হলে? আর, রবীন্দ্রনাথের লেখায় বারবার অপসৃয়মান নক্ষত্রলোকের হাতছানি-যা অলীক, তুরীয় ও অতীন্দ্রিয়। একতারাটির একটি সুরে গানের বেদন বইতে নারে; তোমার সাথে বারেবারে হার মেনেছি এই খেলাতে। কাজেই, রবীন্দ্রনাথ যে transcendentalists - আমাদের তা বুঝতে বাকী থাকে না। লালনও তাই- বীণার নামাজ তাতে তারে, আমার নামাজ কন্ঠে গাই। জীবনানন্দও। হিজলের জানালায় আলো আর বুলবুলি করিয়াছে খেলা। এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিষয়ে নিস্পৃহ। মনে থাকার কথা- ১৮৩২ সালে এমারসন তাঁর জার্নালে লিখেছেন- "I have sometimes thought that, in order to be a good minister, it was necessary to leave the ministry. The profession is antiquated. In an altered age, we worship in the dead forms of our forefathers". বাংলার সর্বশ্রেষ্ট মনিষীরা প্রকৃতির রুপমাধুর্যের পরম উপাসক ছিলেন বলেই তাঁরা বিনাশের পক্ষে কোনওকালেই ছিলেন না, বরং ছিলেন সৃষ্টির পক্ষে, ছিলেন জীব ও জগতের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং পরম মায়ামততার পক্ষে। যেমন, বুদ্ধ। প্রকৃতির রুপমাধুর্যের পরম উপাসক বলেই এঁরা কেউই এঁদের forefathers দের dead formsগুলি worship করেননি। কেননা, ‘The religion of one age is the literary entertainment of the next’. বুদ্ধ, বৈদিক সাহিত্যকে অস্বীকার করেছিলেন। অস্বীকার করেছিলেন ব্রাহ্মিক স্বৈরাচার। বৈদিক শাস্ত্রীয় ধর্মকে পর্যবেশিত করেছিলেন কেবলই নীতিবাক্যে। আরও একটি কথা। বাংলার সংস্কৃতির মূল ভিত গান ও কবিতা। শ্রীচৈতন্যদেব থেকে আরম্ভ করে জীবনানন্দ দাশ -এই অনিবার্য সত্যকে ধারণ করে। বাংলায় আরেকটি দল আছে- যারা গান ও কবিতার মানে বোঝে না, যারা শিল্পবিরোধী, যারা বাউলের ভাস্কর্য ভাঙ্গে, যারা নদীর মানে বোঝে না। এরাই বাংলার কোমল মাটিতে কট্টর সেমেটিক মতাদর্শ প্রোথিত করার চেষ্টায় লিপ্ত। এই এক দ্বন্দ। এখন এদের নিয়ে কী করা যায়? ৬ প্রকৃতি যে প্রতিনিয়তই বিবর্তিত হচ্ছে-সামান্য কান্ডজ্ঞানেই তা বোঝা যায়। যদিও মানবগোষ্ঠীর একটি অংশ এই অবধারিত সত্যটি অস্বীকার করেই যাচ্ছে। অস্বীকারের কারণও আছে। এই গৃহটিতে বেঁচে থাকার জন্যই প্রয়োজন একজন অসীম ক্ষমতাশীলী করুণাময় ঈশ্বরের । যেন প্রাকৃতিক বিবর্তন স্বীকার করে নিলে সৃষ্টিকর্তার অসীম ক্ষমতা খানিকটা খর্ব হয়েই যায়। প্রশ্ন উঠতে পারে তিনিও বিবর্তনপ্রক্রিয়ার অর্ন্তগত কি না। বিশ্বজুড়ে বিবর্তনবাদের অ-জনপ্রিয়তার মূল কারণ এটিই বলে আমার কাছে মনে হয় । মানবগোষ্ঠীর অন্য অংশটি কিন্তু ভারি রোম্যান্টিক: তারা মা-প্রকৃতির একনিষ্ট প্রেমিক। তারা এক অচ্ছেদ্য ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে আছে মা-প্রকৃতির সঙ্গে; তারা মানবরচিত শাস্ত্রে নন-বরং প্রকৃতির নিগূঢ় রহস্যের ভিতরেরই টের পান বিবর্তনমান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব । আর যারা মানবরচিত শাস্ত্র আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে-তারা প্রকৃতির সৌন্দর্য তত মুগ্ধ হয় কি? এই প্রশ্নটিই একুশ শতকের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হতে পারে। রোম্যান্ট সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৩০
false
ij
গল্প_ ফাঁদ এই যাবি? উত্তর না-দিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয় রুমা । বুকটা ঢিপঢিপ করছে। কয়েকদিন হল কলেজ থেকে ফেরার পথে ছেলেটা ফলো করছে। কোঁকড়া চুল, ফরসা মুখ, চোখে সানগ্লাস, কালো প্যান্ট, হলুদ টি-শার্ট। ওয়ার্ড কমিশনারের অফিসটা ওদের গলিতেই, সেই অফিসের সামনে রুমা ছেলেটা কে দেখেছে । হাজারিবাগের মাস্তান হাজী ওসমান। লোকটা কি হাজারিবাগের মাস্তান হাজী ওসমানের ঘনিষ্ট? মোটরসাইকেল আরোহী এবার রুমার ঠিক পাশে চলে আসে। বলে, এই যাবি না? লোকটাকে এড়াতেই যেন রাগ রাগ কন্ঠে রুমা বলে, কই যাব আমি?বাগানবাড়ি?উত্তর না-দিয়ে রুমা দ্রুত হাঁটতে থাকে। কাছেই একজন ট্র্যাফিক পুলিশ। পুলিশটা দেখেও না-দেখার ভান করে। মোটর সাইকেল আরোহী আর এগোয় না। বরং হাসতে থাকে। পিছনের ছেলেটার হাসির শব্দ বাংলা ছবির খল নায়কের মতো ভেঙে ভেঙে পড়তে থাকে। রুমার বুকটা ঢিপঢিপ করছে। হাজারিবাগের মাস্তান হাজী ওসমান। ভীষণ অসভ্য একটা লোক। তার ইঙ্গিতেই ছেলেটা বিরক্ত করছে না তো? বাড়ির প্রায় কাছে এসে পড়েছে রুমা। গলির মুখটা দুপুরের রোদে ঝলমল করছে। এপ্রিল মাস। ভীষণ গরম আর তেতে থাকা রোদ ছড়িয়ে আছে। কলেজের শাদা ইউনিফর্মটি পিঠের কাছে অনেকটা ভিজে গেছে। পানির পিপাসা পেয়েছে বেশ, কতক্ষণ ঘরে যাবে, পানি খাবে। ঘর মানে সরু গলির ভিতরে ঢুকে খানিকটা হেঁটে ডানে মোড় নিয়ে আরও একটা সরু গলির ভিতরে হাতের বাঁয়ে আস্তরহীন রোঁয়া ওঠা কুকুরের মতন চারতলা বাড়ির দোতলা। তিন রুমের ঘরটা ছোট। তারই ভিতর মা-বাবা ভাইবোনের ভিড় করে থাকা গাদাগাদি সংসার। ছায়ায় এসে স্বস্তি পেল। সিঁড়ি টপকে ওপরে উঠছে। পচা একটা গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে আছে। পচা গন্ধটা অনেকটা শুঁটকি মাছের গন্ধের মতো। দরজা খোলাই ছিল। দেওয়ালে সাদা চুনকাম করা। জানালা দিয়ে রোদ ঢুকেছে ঘরে। পুরনো টিভি সেট, পুরনো বেতের সোফা, এক পাশে চাদর ছাড়া শুধু তোষক বিছানো বিছানা। মেঝেতে, বিছানায় আর সোফায় ভাইবোনেরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে। মা কই? বাবার এ সময় বাড়ি থাকার কথা না। মা মনে হয় পাশে বাড়ি গেছে। জোছনা খালাম্মার সঙ্গে গল্প করছে। নিজের ঘরে ঢোকে রুমা। ঘর আর কি। প্লাস্টার খসে পড়া দশফুট বাই দশফুট একটা কামড়া। জানালা আছে একটা। সে জানালায় আবার রোদও আছে । ওপাশে আস্তরহীন বাড়ি চোখে পড়ে। বুড়িগঙ্গা নদীটা খুব কাছে, তার আঁষটে গন্ধ ভেসে আসে। সেই আঁষটে গন্ধের সঙ্গে মেশে ট্যানারি কটূ গন্ধ। বিষাদ ও দারিদ্র ঘেরা এলাকা এই বরইখালী । রুমার বাপটাও মদ খায়। কালো মতন মুশকো চেহারার লোক হাতেম আলী। হাজারিবাগের ট্যানারি কাঁচা চামড়া যোগান দেয়। আয় রোজগার ভালো তবে মদের পিছনে টাকা চলে যায়। একটু পর গোছল খানায় ঢুকল রুমা। পানি নাই। বালতিতে অল্পখানি পানি। প্রতিদিনই এমন হচ্ছে। রাগ দেখিয়ে লাভ নেই। বরং খেতে বসল। আধ প্লেট ঠান্ডা ভাত, কোণে লাল রঙের শুঁটকি ভর্তা। নাকমুখ গুঁজে খেতে থাকে। ডাল খেতে ভালোবাসে রুমা। ডালের দাম বাড়ায় এ বাড়িতে ডাল বন্ধ। বিকেলে টিউশনি আছে। যাওয়া হবে না। আজ মঙ্গলবার। বসুন্ধরা মার্কেট বন্ধ। আজ শওকত ভাইয়ের আসার কথা। শওকত ভাইকে এড়ানো যাচ্ছে না। শওকত ওর দূর সর্ম্পকের খালাতো ভাই। বসুন্ধরা মার্কেটে মোবাইলের দোকান আছে। রুমার নরোম ফরসা আর সুন্দর শরীরটার লোভে ঘুরঘর করে। মঙ্গলবার সিনেমা দেখতে নিয়ে যায়। অন্ধকার হলে পাশে সিটে বসে বুকে পেটে হাত চালায়। রুমা বাধা দেয় না। ঠাটারি বাজারের স্টার হোটেলে নিয়ে গিয়ে বিরিয়ানি- শিক কাবাব খাওয়ায়, লাচ্ছি-ফালুদা খাওয়ায় । বাড়ি ফেরার পথে রিকশায় বসে গায়ে হাত দেয়। রুমা না করতে পারে না। তখন হয়তো বৃষ্টি ঝরে। হুড তো ফেলাই থাকে, প্লাস্টিকের কাভারের নিচে সব সুখ-শিহরণ ঢাকা পড়ে যায়। রুমা জানে শওকত ভাইয়ের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করলে জীবন অন্ধকার। ও তো মোবাইল মেকানিকের বউ হবে না। ওর পড়াশোনা করতে ভালো লাগে। তা ছাড়া আবিদের জন্য খারাপ লাগে। আবিদ কে ও মনে মনে ভালোবাসে । লম্বা ফরসা চশমা পরা ভালো ছাত্র আবিদ ওর ক্লাসমেট। আহাদ স্যারের প্রিয় ছাত্র। রুমা জানে ও কখনও আবিদকে পাবে না।খেয়ে এসে বিছানার ওপর আহাদ স্যারের নোট খুলে বসল। আহাদ স্যার মানুষটা ভালো। টকটকে চেহারার লম্বা মতন দেখতে, মাঝবয়েসী, সামান্য কোলকুঁজো । ‘আপনি’, ‘আপনি’ করে বলেন। ইংরেজি পড়ান আহাদ স্যার। রুমা ক্লাস টেনে থাকতে ‘টেনস’ খুব একটা ভালো বুঝত না। আহাদ স্যার ক্লিয়ার করেছেন। আহাদ স্যার প্রায়ই ওকে ‘স্পেশাল নোটস’ দেন। স্যারের বাড়ি কলেজের কাছেই। একবার জবা-শর্মীদের সঙ্গে স্যারের বাড়ি গিয়েছিল রুমা। পড়–য়া মানুষ স্যার। ঘরজুড়ে বই আর বই। জানালায় রোদ সরে যায়। বিকেল হয়ে আসে। পাশের বাড়ি থেকে শিশুর চিৎকার কানে এল। হঠাৎ কী কারণে আজকে ফলো করা মোটর সাইকেল আরোহীর কথা মনে পড়ল। বাগানবাড়িতে যেতে বলল। কেন? এ পাড়ার সবাই বাগানবাড়ির কথা জানে । বুড়িগঙ্গা নদীর ধার ঘেঁষে উঁচু প্রাচীর ঘেরা ভিতরে গাছপালা ঘেরা দোতলা একটি দালান । কবেকার বাড়ি কে জানে। বাগানবাড়ির ভিতরে কি আছে কেউ জানে না। লোকজন মাঝেমাঝে বিশাল ফটক দিকে ভিতরে গাড়ি ঢুকতে দেখে, বেরুতে দেখে। রুমা জানে বাগানবাড়িতে সুখি লোকজন থাকে। জানালা দিয়ে বিকেলের মলিন একটা আকাশ দেখে রুমার হঠাৎই মনে হল ও ঠিকই একদিন বাগানবাড়িতে যাবে ...২আজ কলেজে দুপুরের ঠিক আগে আগে আহাদ স্যার রুমাকে দেখে বললেন, ওহ হো ...কি ব্যাপার স্যার?আজ না আপনার জন্য নোট আনার কথা। দেখ দেখি, আমার মনেই ছিল না। রুমার মনে পড়ল আহাদ স্যারের প্রোজ-এর একটা নোট দেওয়ার কথা। রুকসানা?জ্বী স্যার।আপনার আর ক্লাস আছে আজ?না। স্যার। এখন কি তাহলে বাড়ি যাচ্ছেন?হ্যাঁ।আচ্ছা, তার আগে আমার বাড়ি চলেন। আমি নোটটা আপনাকে দিয়ে দিব। কলেজের গেটের সামনে আবিদকে দেখল রুমা। ইয়াসমীনের সঙ্গে কথা বলছে আবিদ। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল রুমার। ইয়াসমীন হেসে হেসে কথা বলছে। বাজে একটা মেয়ে। আবিদ কি ওর প্রতি ঝুঁকেছে। আবিদকে মনে মনে ভালোবাসে রুমা। সে কথা কখনোই বলা যাবে না। পাশাপাশি হাঁটতে- হাঁটতে কত কথা বলেন আহাদ স্যার। অধ্যাপক আহাদ আলী মজুমদার স্থানীয় লোক। তিনি এই এলাকার ইতিহাস জানেন। সেই সূত্রে বাগানবাড়ির কথাও উঠে আসে। বাগানবাড়িটি আসলে নবাবী আমলে কোন্ নবাবের প্রাসাদ ছিল। বাঈজী নাচত। আহাদ স্যার এমন ভাবে বলে যাচ্ছেন যেন তিনি ইতিহাসের ক্লাস নিচ্ছেন। ‘বাঈজী’ শব্দটা কানে ঠেকল রুমার। ওদের কোত্থেকে ‘ফাঁদ’ পেতে ধরে আনা হত? আহাদ স্যার সেসব কথা এড়িয়ে যান। পকেট থেকে চাবি বের করে স্যার বললেন, আজ সকালে আমার পরিবারকে বাসে তুলে দিলাম। আমার শ্বশুরবাড়ি নয়ার হাট। সপ্তাহ দুয়েক থাকবে সেখানে। পরে আমিই গিয়ে নিয়ে আসব। নয়ার হাট কোথায়? তার মানে স্যারের ফ্ল্যাট ফাঁকা । বুকটা ঢিপ ঢিপ করে উঠল রুমার। তবে তেমন টেনশন হল না। স্যার সৎ মানুষ, আত্মভোলা টাইপ... স্যারের বাড়ি এর আগে জবা-শর্মীরা এসেছে। একা। কখনও কোনও ধরনের অসংযত আচরনের কথা শোনেনি। ওহ হো, আপনার নোটটা যে কই রেখেছি। বলতে বলতে আহাদ স্যার পাশের ঘরে গেলেন। রুমাও পিছন পিছন যায়। এ ঘরেও বই আর বই। স্যারের স্ত্রী সহ্য করেন কী ভাবে। রুমা অবাক হয়ে যায়। একটা বুক সেলফের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, এখানে দেখেন তো। রুমা দেখে। একটা ক্ষীণ সন্দেহ জেঁকে বসে। হঠাৎ কি হল, রুমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন মাঝবয়েসী শিক্ষক।মুহূর্তেই মুখে আর কানের লতিতে আগুনে তাপ অনুভব করল রুমা। ছাড়িয়ে নিতে সময় লাগল না। নিরূপায় মানুষটা জোর করল না। মনে হয় নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। ‘ছিঃ’। দরজার কাছে চলে এসেছে। শরীর ভীষণ কাঁপছে। কখন যে দরজা খুলতে পারল। তারপর চোখে অন্ধকার দেখতে দেখতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল নিচে। বাইরে ঝলমলে রোদ ঝলমল নির্বিকার শহর। ধাক্কাটা কোনওমতে সামলে নেয়। এ ধরনের অভিজ্ঞতা ওর নতুন না। একবার পাশের বাড়ির শম্পার মামা প্রায় রেইপ করেই ফেলেছিল ওকে। ক্লাস নাইনে পড়ত তখন রুমা ...কোনওমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে। যা হোক। আহাদ স্যারের কাছ থেকে এরকম আচরণ আশা করেনি রুমা । কাল থেকে আর কলেজ যাবে না। গিয়ে কী লাভ। বরং বিয়ের জন্য শতকত ভাইকে ধরে বসবে ...বাড়ি যেতে যেতে রুমা খিদে টের পেল । বাড়ি ফিরে ভাত খাবে। ভাত আর কি -সেই আধ প্লেট ঠান্ডা ভাত আর লাল রঙের শুঁটকি ভর্তা।ওর শরীর ঘিন ঘিন করে ... আশ্চর্য! আমার পেটে ক্ষিধা, এ শহরের কারও মাথা ব্যথা নেই। ধ্বংস হোক এ শহর। এ শহরে আগুন লাগলে আমি কারও সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাব না। মধ্যরাতে ভূমিকম্প হলেও আমি কারও সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাব না ৩রুমার পাশে আজ একটি গাড়ি এসে থামল। কালো রঙের গাড়ি। বেশ বড়সরো। দরজা খুলে যায়। চোখ আপনাআপনি ভিতরে চলে যায়। পিছনের সিটে কালো সিল্কের শাড়ি পরা একজন মহিলা বসে। বেশ সুন্দরী। ফরসা। মুখটা চেনা চেনা ঠেকল। ভদ্রমহিলা কি সিনেমায় অভিনয় করেন? মহিলা বললেন, এসো।কই? রুমা থতমত খেল। তুমি এত সুন্দর।মানে!জান না, পৃথিবীর সব সুখি ও সুন্দর মানুষেরা এক জায়গায় জড়ো হচ্ছে। বলে মহিলা হেসে উঠলেন। রুমা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মহিলা বললেন, তুমি এত কিউট। তুমি এঁদো গলিতে পড়ে থাকবে কেন। আগে গাড়িতে উঠে এসো। পরে আমি সব তোমাকে খুলে বলব।কোথায় যাব আমি?মহিলা মিষ্টি করে হেসে বললেন, বাগানবাড়ি।রুমা আজ আর দ্বিধা করল না ...তারপর ও যখন কালো গাড়িটায় উঠে বসল তখন ওর মদ্যপ বাবা, সাদাসিদে মা, এক দঙ্গল ভাইবোন আর কল্পনার প্রেমিক আবিদের কথা মনে পড়ল না ...
false
rg
১৪ দলের সামনে ভয়ংকর ১৩ পিড়া।। রেজা ঘটক আসুন জানা যাক আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বধীন ১৪-দলীয় জোট সরকারের মাথা ব্যথার কারণগুলো। আওয়ামী লীগ যে বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সামনে দিন বদলের মূলা ঝুলিয়েছিল সেগুলোও একটু মনে করার চেষ্টা করি। ১. পদ্মা সেতু প্রকল্প। আওয়ামী লীগ এই সেতুর প্রকল্প থেকে দলের মন্ত্রী থেকে একেবারে গ্রামের পাড়ার পাতি নেতা পর্যন্ত কিছু মুনাফা লটুতে চেয়েছিল। পদ্মা সেতু নিয়ে কেলেংকারীতে একে একে অনেকের নাম বেড়িয়ে আসলেও সাধারণ জনগণ এখনো পদ্মা সেতু নিয়ে রাজনীতি দেখে অভ্যস্থ। যা আওয়ামী লীগের জন্য আগামী ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এখনো মন্ত্রী আছেন। প্রধানমন্ত্রী সাধারণ জনগণের মনের কথাটি পড়তে এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। বিতর্কিত ব্যক্তি হাজারো তুলশি পাতায় ধোয়া হলেও তাকে এতো প্রশ্রয় দিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সেই নেগেটিভ ইমপ‌্যাক্টে রসদ যুগিয়েছেন। পদ্মা সেতু এখনো হয়নি। যে পরিমাণ তালবাহানা আর রাজনীতি শুরু হয়েছে, তাতে আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগ বিদেশী প্রভুদের পদ্মা সেতু নিয়ে নেগেটিভ প্রচারণাই চালাবে। এখন যেটা বিএনপি জামায়াত জোট করে যাচ্ছে। ফলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের অন্যতম প্রধান স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে অনেক দূরের কোনো আবছা বিস্মৃতি হয়ে না যায়, সেদিকে সবার সজাগ থাকতে হবে। পদ্মা সেতু এখন রাজনীতি'র অন্যতম ট্রাম কার্ডে পরিণত হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এটাকে আরো নাস্তানুবুদ করবে। ২. যুদ্ধাধাপরাধীদের বিচার। গত নির্বাচনে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করবে সেই আশায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিষয়টা নিয়া তামাশার নাটক করল। মানুষের মনের বিট পড়তে পারে নি আওয়ামী লীগ। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীরা জেলা থেকে বেড়িযে মন্ত্রী হবেন আর দাঁত কেলিয়ে হাসবেন। আবারো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অমর্যদা করা হবে। সেই সুযোগ তৈরি করে দিল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ইস্যু নিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। তখনো সেই বিচারে ধীর গতি ছিল। পরবর্তী নির্বাচনে এটাকে মূলা বানানোর স্বপ্ন আওয়ামী লীগ ঘরে তুলতে পারে নি। বরং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরাজয়ে সারা দেশে সংখ্যালঘুদের উপর বিএনপি জামায়াত নির্মম অমানুষিক অত্যাচার করেছিল। আওয়ামী লীগ তখন গর্তে পালিয়েছিল। নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ায়নি। এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চালিয়ে আওয়ামী লীগ আরেকটি ২০০১ ঘটানোর সুস্পষ্ট পথ তৈরি করে দিল। সরকারের মেয়াদ শেষ হলে বিএনপি জামায়াত সেই বদলা নিয়ে আবারো দুর্ধর্ষ হয়ে উঠতে পারে। সেই আলামত প্রায় সবই এখন দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতাকে পুঁজি করেই বিএনপি হামায়াত জোট নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। আগামীতেও করবে। বাংলাদেশের মানুষ দূর অতীতের কথা ভুলে যায়। নিকট অতীতকে বেশি মনে রাখতে পারে। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তাদের কাছে দূর অতীত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দূর অতীত। ৯০'-এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন দূর অতীত। স্বাধীনতা পরবর্তী ২০ বছরের দুঃশাসনে মানুষের মনে আশার জোয়ার এসেছিল যে, মানুষ স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? পরবর্তী ২০ বছরে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি দুর্নীতি, লুটপাট, চাঁদাবাজি. টেন্ডারবাজি, খুন, গুম, দখল করে গণতন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করেছে। এখন প্রায় নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের সকল নেতারাই স্বীকার করেন, স্বৈরাচারের ধুয়া তুলে ছাত্রদের তখন মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কারণ, ৯০' পরবর্তী ২০ বছরে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলা প্রধান দুইটি দল তা প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নিজেদের আখের গোছানো আর নির্বাচনী খরচের দিকেই তাদের বেশি মনযোগ ছিল। সাধারণ জনগণের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এ ধরনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে মানুষ সহজে আমলে নেবে না। ৩. রেলওয়ে কেলেংকারী। সুরঞ্জিত বাবু এখনো বগাল তবিয়াতে মন্ত্রী রয়ে গেছেন। রেলওয়ের কেলেংকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে নেগেটিভ ইমপ‌্যাক্ট ফেললেও প্রধানমন্ত্রী একেবারে চুপ। কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামে সেই রেলওয়ের টেন্ডারবাজী নিয়ে ছাত্রলীগের গোলাগুলিতে দুইজন নিষ্পাপ শিশুকে প্রাণ দিতে হল। রেলওয়ের কালোবিড়াল এখনো ঘাপটি মেরে আছে। বিচারের নামে চলছে প্রহসন। সাধারণ মানুষ এগুলো পছন্দ করে না। যা আগামী নির্বাচনে ভোটের গতি প্রকৃতি বদলে দেবে। ৪. সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেংকারী। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা নাকি কোনো টাকাই না? তো নির্বাচনে সেই টাকার হিসাব সাধারণ জনগণ অংক কষে বের করবে। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি'র লটুপাটের বড় বড় টাকার অংকগুলো কোনো টাকাই না। ওগুলো সব ধোকা। আর কতো আপনারা সাধারণ মানুষকে ধোকা দেবেন? ৫. ডেসটিনি মাল্টি বিজনেস। একটি নির্বাচিত সরকারের শাসনামলে কিভাবে ডেসটিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা লোপাট করতে পারল? সরকার বাহাদুর কি বসে বসে তামুক খেয়েছে? ৯০ লাখ মানুষ ডেনটিনি'র ফাঁদে সর্বস্ব হারিয়েছে। এই ৯০ লাখ ভোটার কিন্তু নির্বাচনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এটা মনে রাইখেন ভাইজানেরা। ৬. গ্রামীণ ব্যাংক ও ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস। আওয়ামী লীগ সরকারের আসল কাজ ফেলে গ্রামীণ ব্যাংক আর ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস সাহেবের বিরুদ্ধে কেন লাগতে গেলেন? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এটা ভালো নজরে নেয়নি। মনে রাখবেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রায় ৮০ লাখ গ্রাহক ভোটার। এই ভোটাররা আগামী নির্বাচনে ফলাফল এদিক ওদিক করে দেবার ক্ষমতা রাখে। কারণ সারা দেশেই গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা প্রশাখা রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে কি গ্রামীণ ফোন ব্যবহার করেন কিনা আমার জানা নেই । কিন্তু ডক্টর ইউনুসকে ঘাটতে গিয়ে নিজের নাক কেটেছেন। ডক্টর ইউনুসের যাত্রা কিন্তু ভঙ্গ হয়নি। ৭. শেয়ার বাজার কেলেংকারী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই শেয়ার বাজারে জ্বর ওঠে। তারপর সেই বাজারে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বস্ব খোয়ায়। এটা এখন প্রবচনে রূপ নিতে চলেছে। আমাদের শেয়ার বাজারে প্রায় ৭০ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বস্ব হারিয়ে এখন পথে বসেছে। এই ৭০ লাখ ভোটার কিন্তু আগামী নির্বাচনে বিশাল একটা ফ্যাক্টর। আওয়ামী লীগের হাতে কোনো আলাদীনের চেরাগ নেই বা স্বর্ণকাঠী নেই যা দিয়ে এই ৭০ লাখ ভোটারকে নয় ছয় বুঝ দিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়াতে পারবে। ৮. ডিজিটাল বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সাড়ে চার বছর যা করেছে তা এক কথায় হাস্যকর। একজন জুনিয়র ব্লগার সরকারের এই প্রজেক্টের হাস্যকর ব্যাপার স্যাপারের চেয়ে ডিজিটাল সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখে। সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে গেলেই সেটা আরো স্পষ্ট হয়। অথচ কোটি কোটি টাকা কিন্তু লোপাট। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কি হল? উপজেলায় এখনো সার্ভার নেই কেন? একজন মানুষকে ন্যাশনাল আইডি কার্ড তুলতে ঢাকার আগারগাঁয়ের অফিসে এসে দিনের পর দিন ঘুরতে হবে কেন? এই নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশের নমুনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য ডিজিটাল কলংকে পরিনত হয়েছে সাড়ে চার বছরের দুঃশাসনে। যারা ন্যূনতম ডিজিটাল বিষয়ে খোঁজখবর রাখে তাদেরকে দয়া করে আর এই হাস্যকর বিষয়টা বলবেন না। তাতে ইয়েস নো ভেরিগুড-এর মত ইংরেজিতে পারদর্শীর সক্ষমতা ধরা পড়ে। সো, সাধু সাবধান। ৯. ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ছাত্রলীগ সকল কুকর্মের লাইসেন্স পেয়ে যায়। আওয়ামী লীগ দেখেও না দেখার ভান করে। বিশ্বজিতকে যেভাবে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ কুপিয়েছে তা আগামী ১০০ বছর বাংলাদেশের মানুষ মনে রাখবে। ডক্টর হুমায়ুন আজাদকে যেভাবে ধর্মীয় মৌলবাদীরা কুপিয়েছিল এটা তার চেয়েও নিষ্ঠুর। ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, দখল এটা যেনো তাদের আওয়ামী লীগ লাইসেন্স দিয়েই করাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এটা ভালো চোখে নেয়নি। পুলিশ আর ছাত্রলীগ একত্রে হামলা করে বিরোধী পক্ষের উপর। আহা কি চমৎকার প্রশাসনিক বোঝাপড়া!! বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই একই দৃশ্য ছাত্রদলের জন্য প্রযোজ্য। আর বিএনপি'র ছত্রছায়ায় জামায়াত-ছাত্র শিবির তো এখনো মধ্যযুগে বসবাস করে। তাদের কথা আর কি বলবো। ১০. ঢাকা সিটি কর্পোরেশান দুই ভাগ। ঢাকা সিটির যানজট দূর করার বদলে আওয়ামী লীগের মাথায় সিটি দুই ভাগ করার কুমতলবের হেতু কি? রাজধানী ঢাকায় কেবল যানজটের কারণে যে পরিমাণ শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয় তা দিয়ে আরো তিনটা ঢাকা সিটি গড়ে তোলা সম্ভব পাঁচ বছরে। আওয়ামী লীগ কি করেছে? ডেসা, ওয়াশা, টিএনটি, পিডিবি, ঢাকা সিটি কর্পোরেশান কারোর সঙ্গে কারো কোনো সমন্বয় নেই। রাস্তা ঘাট অজপাড়াগাঁয়ের মত। কেবল রাস্তা বাঁকাকরণ সোজাকরণ করে ছাত্রলীগ আর ছাত্রদলের পাণ্ডাদের পকেট ভারী হয়েছে। ঢাকার কোনো পরিবর্তন হয়নি। মানুষকে যে কতো রকম দুর্ভোগ দেওয়া যায় তার সবচেয়ে জলন্ত উদাহরণ ঢাকার যানজট। যানজট নিরসনে আওয়ামী লীগ সরকার ১০০ ভাগ ব্যর্থ হয়েছে। নামকা ওয়াস্থে যেসব ফ্লাইওভার করা হয়েছে পরিকল্পনার ত্রুটির কারণে তা কোনো কাজে আসেনি। ১১. গণ-জাগরণ মঞ্চ এবং হেফাজতে ইসলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচরের দাবিতে শাহবাগে গণ-জাগরণ মঞ্চ ছিল একটি স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন। আওয়ামী লীগ সেই আন্দোলন পকেটস্থ করতে গিয়ে আরেকটি এন্টি মুভমেন্টের জন্ম দেওয়ার সুযোগ করে দিল। বিএনপি ও জামায়াতে ছত্রছায়ায় সেই হেফাজতে ইসলাম ইতোমধ্যে ৫ সিটি কর্পোরেশানে আওয়ামী লীগকে ৫-০ গোলে হটিয়েছে। আগামী নির্বাচনে গণ-জাগরণ মঞ্চের ভোটের চেয়ে হেফাজতি ভোট জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে। সেই আলামত আমরা সাধারণ মানুষ টের পেলেও আওয়ামী লীগ এখনো টের পায়নি। ১২. দলীয় কোন্দল। কেন্দ্র থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কোন সীমা পরিসীমা নেই। এটা হয়েছে চুরি-চামারির ভাগ দখল নিয়ে। সাড়ে চার বছরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আর ধানমন্ডির কার্যালয়ের চৌহদ্দির ভেতরে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোনো সাংগঠনিক প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষের নজরে আসেনি। কারণ, তারা সবাই আখের গোছানোতে ব্যস্ত ছিল। দলীয় সাংগঠিনক কাজ করার সময় কোথায়? যা আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। নির্বাচনে প্রার্থী ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ঘটবে। আগেরবার ২০০১ সালে নির্বাচনের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল দখল করে নিয়েছিল ছাত্রলীগের কাছ থেকে। এবার মনে হচ্ছে নির্বাচনেরও আগে সেই দখলে যাচ্ছে ছাত্রদল। পুলিশ ছাড়া ছাত্রলীগের সাংগঠিনক শক্তি এখন সেই ইসারাই দেয়। ১৩. ইতিহাস। মানুষ আর ইতিহাস শুনতে চায় না। রোজ যা ঘটছে তাই চলমান ইতিহাস। এরচেয়ে দূর অতীতের ইতিহাস সাধারণ মানুষের কাছে তুচ্ছ। রামুতে বৌদ্শ মন্দিরে আগুন, বিশ্বজিৎ হত্যা, হেফাজতের জ্বালাও পোড়াও, ছাত্রলীগের মারপিট, হামলা, মন্ত্রীদের দুর্নীতি, দখল, সারা দেশের চুরি চামারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বিরোধী নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা এটাই চলমান বর্তমানের সবচেয়ে কঠিন ইতিহাস। সেই ইতিহাসের শক্তি দূর অতীতের সাফল্যমাখা ইতিহাসের চেয়ে ভোটের বাজারে অনেক বেশি কার্যকর ফ্যাক্টর। সো, সাধু সাবধান। মাত্র ১৩টি বললাম। আওয়ামী লীগকে এই ১৩ দফার বাইরে আরো অসংখ্য দফা মোকাবেলা করে আগামী নির্বাচনে আসতে হবে। যা, দলের জয়ের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে আরো বেশি উৎকণ্ঠায় ফেলে দিচ্ছে। আর আমরা সবাই দেখেছি এদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। সো, ভয় এবং আশংকা দিন দিন বাড়ছে সবার মাঝে।
false
rg
হিমালয় কন্যার দেশে সাত রজনী। পর্ব চার ।। রেজা ঘটক ২৩ ডিসেম্বর ২০০৭ সাল। নেপালের পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয় যে, এখন থেকে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান হবে এবং নেপাল একটি রিপাবলিক হিসেবে পরিচিত হবে। ৬০১ আসনের নেপালি অ্যাসেম্বলি'র মাত্র ৪ জন সাংসদ রাজতন্ত্রের পক্ষে ভোট দেন। ফেডারেল রিপাবলিক অব নেপালের নতুন শাসক নির্বাচনের জন্য ১০ এপ্রিল ২০০৮ সালে নেপালে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে। নির্বাচনে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ৬০১ আসনের নেপালি সংসদের ৫৭৫ টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) নির্বাচনে ২২০ টি আসনে জয়ী হয়। নেপালী কংগ্রেস পায় ১১০ টি আসন। নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন) পায় ১০৩ টি আসন। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) ও নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন) যৌথভাবে সরকার গঠন করে। ১৬ আগস্ট ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মাও নেতা পুষ্প কমল দহল (প্রচণ্ড)। ১৮ আগস্ট প্রচণ্ড শপথ নেন। নেপালি কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যায়।ফেডারেল রিপাবলিক অব নেপালের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ডক্টর রাম বরন যাদপ। নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী কমিউনিস্ট নেতা পুষ্প কমল দহল (প্রচণ্ড) নেপালের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল রু্কম্যানগুড কোতোয়াল-এর সঙ্গে এক অনাকাঙ্খিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রচণ্ড সেনাপ্রধান কোতোয়ালকে বরখাস্ত করলে রাষ্ট্রপতি রাম বরন যাদপ তার বিরোধিতা করেন এবং সেনাপ্রধানকে বহাল রাখেন। ফলে নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন) প্রচণ্ড সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০৯ সালের ৪ মে প্রচণ্ড পদত্যাগ করেন। ২৩ মে রাষ্ট্রপতি নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাধব কুমার নেপালকে নিযুক্ত করেন। ২৫ মে ২০০৯ মাধব কুমার নেপাল নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মাধব কুমার নেপাল হল নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন)-এর সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু মাধব বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন নি। প্রচণ্ডের নের্তৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) সমর্থন প্রত্যাহার করলে ৩০ জুন ২০১০ সালে তিনিও বিরোধীদলের চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। সুদীর্ঘ প্রায় সাত মাস রাজনৈতিক টানাপোড়নের পর ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন)-এর সভাপতি ঝালানাথ কানাল। কিন্তু আবারো রাজনৈতিক টানাপোড়নে প্রচণ্ডের কমিউনিস্ট পার্টি (মাও) সমর্থণ প্রত্যাহার করলে কানাল পদত্যাগে বাধ্য হন। ২৯ আগস্ট ২০১১ সালে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন কমিউনিস্ট পার্টি (মাও)-এর ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর বাবুরাম ভট্টরাই। ২০১২ সালের মার্চ মাসে চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে অন্তবর্তী সরকার হিসেবে নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতি খিল রাজ রেগমি অন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ তিনি নেপালের অন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। নেপাল রিপাবলিক হওয়ার প্রথম চার বছরে চারজন প্রধানমন্ত্রীকে শাসনভার নিতে হয়েছে। বর্তমানে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তী সরকার কাজ করছে। নেপালে রাজনৈতিক টানাপোড়নের শুরু ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হিমালয় জনপদ ছিল সত্যি সত্যিই অশান্ত। প্রচণ্ডের নের্তৃত্বে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাও) এবং নেপালের সেনাবাহিনী পিপল'স ওয়ারে জড়িয়ে যায়। সুদীর্ঘ ১০ বছরের সিভিল ওয়ারের ফলশ্রুতিতে নেপাল থেকে রাজতন্ত্র বিদায় নেয়। দীর্ঘ ১০ বছরের গৃহযুদ্ধে নেপালে প্রায় ১৫০০০ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে সরকারি বাহিনীর হাতে মারা যায় প্রায় ৮,২০০ জন এবং মাওবাদী কমিউনিস্টদের হাতে মারা যায় প্রায় ৪,৫০০ জন। এছাড়া প্রায় এক থেকে দেড় লাখ মানুষ তাদের জনবসতি হারিয়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয় নেয়। বামপন্থী মাওবাদীরা এবং মার্ক্স-লেনিনবাদীরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব স্বত্ত্বেও এর সঙ্গে নেপালি কংগ্রেস যুক্ত হয়ে একটি সংগঠিত এবং খাপছাড়া গৃহযুদ্ধ দীর্ঘ ১০ বছর হিমালয় জনপদে চলছিল। এরমধ্যে নেপালি কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন) হল ভারত পন্থী আর মাওবাদীরা হল চীনপন্থী। ১৯৯০ সালে নেপালের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো 'সংযুক্ত রাষ্ট্রীয় জন-আন্দোলন' বা 'ইউনাইটেড ন্যাশনাল পিপল'স মুভমেন্ট' বা সংক্ষেপে 'ইউএনপিএম' নামে একটি বাম মোর্চা গঠন করে। এই বামমোর্চার প্রধান করা হয় তখন ডক্টর বাবুরাম ভট্টরাইকে। কিন্তু রাজনৈতিক নের্তৃত্ব নিয়ে টানাপোড়নে ১৯৯৬ সালে এটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি ভাগে মাওবাদী কমিউনিস্টরা পুষ্প কমল মহল (প্রচণ্ড)-এর নের্তৃত্বে গঠন করে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী) এবং অন্যটি গঠিত হয় মার্ক্সবাদ লেলিনবাদ সমর্থক ঝালানাথ কানালের নের্তৃত্বে ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্স-লেনিন)। এরপর প্রচণ্ডের নের্তৃত্ব মাওবাদীরা সরাসরি নেপালি সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নেপালি রাজতন্ত্রের সরকার তখন মাওবাদীদের দমাতে নেপালি পুলিশকে মাঠে নামায়। মাওবাদীরা তখন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে নেপালী পুলিশকে সহায়তা করতে নেপালের সেনাবাহিনী মাঠে নামলে শুরু হয় মাওবাদীদের সঙ্গে নেপালি সেনাবাহিনীর যুদ্ধ। রাজা জ্ঞানেন্দ্র তখন ঘোষণা দেন ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে গোটা গৃহযুদ্ধ সেনাবাহিনী দিয়ে নির্মুল করবেন। মাওবাদীরা তখন আরো বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী নেপালের শহর এলাকার দখল নিলেও মাওবাদীরা পাহাড়ি গ্রাম ও জনপদে নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর দিল্লীতে এক কনফারেন্সে ইউনাইটেড পিপল'স ফ্রন্ট ১২ দাফা দাবী ঘোষণা করে। দীর্ঘ এই গুহযুদ্ধে নেপালের প্রধান বৈদেশিক আয়ের উৎস নেপালি পর্যটন থেকে আয় প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। শেষ পর্যন্ত রাজা জ্ঞানেন্দ্র'র বিদায়ের পর মাওবাদীরা নেপালের ক্ষমতায় আসলে মাওবাদী কমিউনিস্টদের আর্ম উয়িং 'পিপল'স লিবারেশান আর্মি বা সংক্ষেপে পিএলএ-কে সরাসরি নেপালি সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম পর্যায়ে নভেম্বর - ডিসেম্বর ২০১১ সালে ৯,৭০৫ জন পিএলএ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউনাইটেড ন্যাশন মিশন ইন নেপাল ২০০৭ সালের ২৬ মে অন্তঃত ১৯,৬০২ জন পিএলএ সদস্যের নাম রেজিঃস্ট্রেশান করে। সেখান থেকে একটি অংশ নেপালের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এবং একটি অংশকে রিহাবিলাইজেশান দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে যাওয়ার জন্য বাছাই করা হবে। ১৯ এপ্রিল ২০১২ সালে নেপালের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল যথা নেপালি কংগ্রেস, নেপালের মার্ক্সবাদ-লেলিনবাদ কমিউনিস্ট পার্টি ও ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক মাধেশি ফ্রন্ট জাতিসংঘ মিশনকে আর নেপালি সেনাবাহিনীকে এই কাজে সহায়তা করার জন্য একটি চুক্তি সই করে। কিন্তু নেপালের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা এবং টানাপোড়ন এখনো যে কোনো সময় মাওবাদীদের নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্যে ভারতীয় ও চীনা পন্থীরা তা উসকে দিলে দেশটির সদ্য রাজতন্ত্র থেকে বেড়িয়ে আসা শিশু গনতন্ত্র আবারো হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। ..........................চলবে..............
false
rn
আন্দামানের গল্প আন্দামান হচ্ছে এমন একটি স্থান, যেখানে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধাচরণকারী অভিযুক্ত অপরাধীদের নির্বাসনে পাঠনো হত। অষ্টদশ শতাব্দীতে, ব্রিটিশরা ভারতে আসার পর এই দ্বীপটি বিশ্বব্যাপী দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছে। নবম শতাব্দীতে আরব বেদুঈনদের কাছ থেকে সর্বপ্রথম এই দ্বীপপুঞ্জের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে পারা যায়, তারা সুমাত্রা যাত্রা করার সময় দ্বীপপুঞ্জের এই পথ ধরেই পাড়ি দিয়েছিল। সর্বপ্রথম পশ্চিমী পর্যটক মার্কো পোলো এটিকে ‘দ্য ল্যান্ড অফ হেড-হান্টারস’ রূপে আখ্যা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফ থেকে সরাসরি দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর আন্দামান সাগরের মিলনস্থলে, ভারত মহাসাগরের উত্তরপ্রান্তে। কলকাতা থেকে দুই ঘণ্টার বিমানের পথ এ দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী পোর্টব্লেয়ার। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব ১২৫৫ কিমি। আন্দামান অঞ্চলটি ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে অঞ্চলটিকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অংশ মনে করা হয়। এই জনপ্রিয় দ্বীপপুঞ্জটির লোকসংখ্যা হল ৬,৮০,৩৮১ জন এবং জনসংখ্যার ঘনত্বে এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৬৬ জন ব্যাক্তি বাস করে। এই দ্বীপপুঞ্জে ১০০০ জন পুরুষের অনুপাতে মহিলার সংখ্যা হল ৯৭৮ জন। এই দ্বীপপুঞ্জের প্রধান ভাষা হল নিকোবরী। তবে, আধিকারিক ভাষাগুলি যেমন হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু ও ইংরাজী ভাষারও এখানে ব্যাপকভাবে প্রচলন রয়েছে। আন্দামান-নিকোবার দ্বীপপুঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৩৭২টি দ্বীপ। এর বেশিরভাগ ছোট ছোট কোরাল দ্বীপ। প্রায় দ্বীপে জনবসিতও তেমন নেই। মার্কোপোলো পাশ্চাত্য পরিব্রাজকদের মধ্যে প্রথম যিনি দ্বীপগুলো ভ্রমণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চলাকালে ১৯৪২ সালের ২১ মার্চ জাপানিরা আন্দামান দখল করে নেয়। সমুদ্র পথে রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে পৌঁছতে প্রায় তিনদিন সময় লাগে। আন্দামানের প্রধান অর্থকরী ফসল হল ধান, অন্যদিকে নিকোবরে প্রধান অর্থকরী ফসল হিসাবে নরিকেল ও সুপারির ফলন হয়। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন, এই স্থান হল ভাসমান পান্না দ্বীপ ও পাথরের একটি সমষ্টি। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জটি নারকেল ও পাম গাছ দিয়ে ঘেরা সুন্দর সমুদ্র-সৈকত ও তার স্বচ্ছ নীল জল এবং তার জলের নীচে ডুবে থাকা কোরাল ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের অবস্থানের জন্য বিখ্যাত। অনেক বইতে পড়েছি- দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের হাত-পা বেঁধে জাহাজে করে নিয়ে যেয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। অনেককে দ্বীপগুলোর নির্জন স্থানে বা জঙ্গলে ফেলে আসা হতো। একে বলা হতো নির্বাসন বা দ্বীপান্তর। তারা হিংস্র প্রাণী বাঘ, শিয়াল, শকুন ইত্যাদির খাদ্যে পরিণত হতো। যাদের হত্যা ও নির্যাতন করা হয় তাদের অপরাধ তারা ভারতের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। শুনেছি সেখানে অসভ্য অধিবাসীরা বাস করে। তারা মানুষের মাংস খায়। আমার বহু দিনের ইচ্ছা সেই দ্বীপ দেখার। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ২শ জনকে দীপান্তর দেয়া হয় আন্দামানে। ওই সব বন্দীরা ছিলেন ওহাবী আন্দোলনের অগ্রসেনা। যাদের সংখ্যা গরিষ্ঠই ছিলেন বাঙালি। নেতাজী সুভাষ বোস ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে আন্দামান গমন করেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে ভারত সরকার ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে সেলুলার জেলকে জাতীয় স্মারক হিসেবে ঘোষণা করে তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সেখানে সুভাষ বোস এর একটি শ্বেত পাথরের মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। পাখি ও ফুল এই দ্বীপপুঞ্জের অন্য আরেক আকর্ষণ, যা বহু সংখ্যক পর্যটকদের প্রলুব্ধ করে। গ্রীষ্ম ও শীত এই উভয় ঋতুতেই এই স্থান পরিভ্রমণের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। এখানে প্রচুর রিসর্ট, রেস্তোঁরা ও ক্যাফে রয়েছে, যা ভ্রমণার্থীদের সমস্ত প্রকারের চাহিদা পূরণ করে। জনসংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ।আয়তন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বর্গ কি।মি। এই দীপে তাপমাত্রা সার বছর ২১-৩১ ডিগ্রী এর মধ্যে থাকে।তবে ভ্রমনের বেস্ট টাইম ডিসেম্বার টু এপ্রিল। পোর্টব্লেয়ার শহর শুধু পৌরসভা কেন্দ্রীক। অন্যান্য দ্বীপগুলি বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত-এর অন্তর্গত। আন্দামানে পরিদর্শনযোগ্য স্থান* লং আইল্যান্ড।* সেলুলার জেল।* আ্যনথ্রোপলোজিক্যাল মিউজিয়াম।* মহাত্মা গান্ধী মেরিন্ ন্যাশনাল পার্ক। এখানে খাওয়া নিয়ে কোনই ঝামেলা নেই। মাছ-মাংশ, সব্জ্বি সহ সব ধরনের আন্তর্জাতিক মানের খাবার পাওয়া যায়। একেবারে তাঁজা রুপচান্দা, সামুদ্রীক বিশাল সাইজের বিভিন্ন প্রকার চিংড়ি খুব সহজলভ্য। তবে, আন্দামান-নিকোবর হল মশার আড়ত। মশা ঠেকানোর সরঞ্জাম তাই আবশ্যিক। সেটা ধূপ বা ক্রিম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। উপজাতি, বিশেষত জারোয়া অধ্যুষিত এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ওষুধপত্র প্রয়োজন মতো সঙ্গে রাখবেন। এখানেও পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা জরুরি। আন্দামানে বেড়াতে গেলে- সাথে এই বই গুলো রাখা যেতে পারে। ভ্রমণকাহিনি - কাকাবাবু হেরে গেলেন?, জারোয়াদের দেশে কয়েকদিন, নীল দ্বীপান্তরে, অথবা আন্দামানের দিনলিপি। সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৪
false
rg
বন্ধুদের আমলনামা-১১ _ _ যুক্তিবাদী পীরসাহেব রিয়াজুল হক শিকদার ।। রেজা ঘটক মানুষের জীবন কতো না বিচিত্র! ছোটবেলায় যে ছেলেটি ছিল লাজুক, চুপচাপ, শান্তশিষ্ট বড় হয়ে সেই ছেলেই যুক্তিবাদী, চঞ্চল আর কিছুটা বেপড়োয়া। যার কথা বলছি সে রিয়াজুল জক শিকদার। বয়সে আমার চেয়ে মাত্র ১৫ দিনের ছোট। রিয়াজের মা আর আমার মা মামাতো ফুফাতো বোন। সেই হিসেবে রিয়াজ আমার খালোতো ভাই। আমার চাচাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাইদের মধ্যে কেবল রিয়াজের সঙ্গেই আমার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বে টক-ঝাল-মিষ্টি সবই আছে। টক-ঝালের কথা বলার সময় আমার নেই। তাই আমি মিষ্টি কথাগুলোই বলতে চাই। তাতে যদি পৃথিবীতে কারো উপকার হয় ক্ষতি তো নেই!!১৯৭০ সালের ৭ মে রিয়াজুল হক শিকদারের জন্ম। বাবার পুলিশের বদলির চাকরির কারণে রিয়াজকে ঘনঘন স্কুল বদল করতে হয়েছে। ১৯৮৪-৮৫ সালে রিয়াজ প্রায় এক বছর দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে নবম শ্রেণীতে সহপাঠী ছিল। ১৯৮৭ সালে চাঁপুরের শাহরাস্তি এনএম পাইলট হাই স্কুল থেকে রিয়াজ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করে। ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি (কমার্স) পাস করে। এইচএসসিতে রিয়াজ চট্টগ্রাম বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিল। পরে ঢাকায় ওসমানী মিলনায়তনে তৎকালীন ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদের কাছ থেকে গোল্ড মেডেল গ্রহণ করেছিল। এরপর রিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ (ম্যানেজমেন্ট) ভর্তি হয়। সেখান থেকেই পরে ম্যানেজমেন্টে এমবিএ শেষ করে। আরো পরে রিয়াজ চার্টার্ড সেক্রেটারি পাস করেছে। পড়াশুনায় বরাবরই রিয়াজ ছিল ভারী একনিষ্ঠ। পরীক্ষা এলে মেয়েদের মতো সারাক্ষণই বই নিয়ে থাকতে পারে রিয়াজ। আবার পরীক্ষা না থাকলে রিয়াজ সারা দেশ ঘুরে বেড়ায় ফড়িংয়ের মতো। রিয়াজের হাঁটার স্টাইল যোঙ্গা নাওয়ের মতো। ধাই ধাই করে এলে বেলে এগিয়ে যায়। আমাদের বন্ধু জাফর আহমদ রাশেদ রিয়াজের হাঁটার স্টাইলকে ডিঙ্গি নৌকার চলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। রিয়াজ মঞ্চ নাটকে গ্রামবাসীর চরিত্রে অভিনয়ও করেছে। ইংরেজিতে ভীষণ দক্ষ রিয়াজ ইংরেজি নিউজপেপার পড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে। নিউজপেপারের ইংরেজি বাক্য গঠনের নানান খুটি নাটি বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে মুগ্ধকর আলোচনা হতো। ইংরেজি শব্দ নিয়ে খেলতে রিয়াজ ভারী পছন্দ করে। আমার বড়ি খাওয়ায় হাতেখড়ি খালাতো ভাই রিয়াজের হাতেই। রিয়াজের মাধ্যমে রিয়াজের বন্ধু ও কলিগদের অনেকেই পরবর্তীতে আমারও বন্ধুতে পরিনত হয়েছে। যেমন আমিনুর রহমান মুকুল, মইনুল বিপ্লব, মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ নাহিদ, পুলক বিশ্বাস, উত্তম দে, বলরাম সেনগুপ্তা বাবু, দীপশর্মা, রেজাউল কবির মাহমুদ, রিজভী আহমেদ জনি, তুহিন, জায়েদউদ্দিন, শিবলী আহমেদ, মিজান, নেজাম, ছোট জনিসহ অনেকে। রিয়াজের সবচেয়ে বড় গুন হল সে খুব বন্ধু বৎসল। বন্ধুদের সাঙ্গপাঙ্গ রিয়াজের ভারী পছন্দ। রিয়াজ বিয়ে করেছে চট্টগ্রামে। রিয়াজ এক ছেলের বাবা। অটবি লিমিটেড-এ কর্মজীবন শুরু। দীর্ঘদিন নিতুন কুণ্ডু বাবু'র অডিট অ্যান্ড একাউন্টস দেখাশুনা করেছে রিয়াজ। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চার্টার্ড সেক্রটারি সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ফ্রি-ল্যান্স ট্যাক্স অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করে। রিয়াজ একজন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি কিন্তু নিজের প্রতি চরম উদাসীন। উড়ুনচণ্ডী ভাব রিয়াজের স্বভাবজাত। চরিত্রের নেগেটিভ জিনিসগুলো বাদদিলে রিয়াজ বেশ পরোপকারী এবং সহযোগিতামূলক। রিয়াজের আরেকটা বড় গুন হল চট করেই আসল পয়েন্টটা ধরতে পারার মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং মেধা আছে। কিন্তু সেই মেধা যখন কোনো নেগেটিভ ইস্যুতে সে ব্যবহার করে তার পরিণামও হয় ভয়াবহ। রিয়াজ বই পড়তে আর গান শুনতে ভারী পছন্দ করে। একবার ১৯৮৮ সালে রিয়াজ আর আমি চট্টগ্রামের চৌমুহনী থেকে আমাদের পছন্দের ক্যাসেট কিনেছিলাম। আরেকবার চট্টগ্রাম মুসলিম হলের বই মেলা থেকে আমরা একসঙ্গে অনেক পছন্দের বই কিনেছিলাম। রিয়াজের সঙ্গে চট্টগ্রামের নানান অলিতে গলিতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ঢাকার অনেক কানাগলিতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে আমার। রিয়াজের সঙ্গে যার বন্ধুত্ব হবে না কিংম্বা বিরোধীতা হবে, তার জন্য বড়ই দুর্ভাগ্য। আর যার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে এবং একই নায়ে পারাবে তার জন্য বড়ই আনন্দের। যা দেবী, সর্ব ভূতেষু, বিদ্যা রূপেনঃ সংস্থিতা...দুষ্টুনং ঘরনং পুড়া কায়স্থনং সংস্থিতা...নমোঃ তৈস্ব্যই, নমোঃ তৈস্ব্যই, নমোঃ তস্ব্যই...নমোঃ নমোঃ....
false
fe
বিপন্ন মানবতার উত্তরণ চাই বিপন্ন মানবতার উত্তরণ চাই ফকির ইলিয়াস=======================================দেখতে দেখতে আরেকটি বাংলা বছর চলে গেল। ১৪১৭-এর বৈশাখ স্বাগত জানাল বাঙালি মননকে। বাংলা নববর্ষ এই জাতিকে শাণিত হওয়ার প্রত্যয় দেখায়। জানিয়ে যায়, মানুষের জন্য মানুষ। মানবতাই পরম ধর্ম। কিন্তু এই জাতি কি সেই ঐতিহ্য ধরে রাখছে? এই প্রজন্ম কি পারছে সেই ধারাবাহিকতার পতাকা উড়িয়ে যেতে?ক'দিন আগে রংপুরে একটি সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র দেখলাম টিভি চ্যানেলগুলোতে। গাড়িটি উল্টে গেছে। নিহতও হয়েছেন ক'জন। তারপরও ওই বাস থেকে আহত-নিহত মানুষের জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে কারা! কী ভয়াবহ সংবাদ! মানবিক সাহায্য না করে লুটপাট চালিয়েছে পাষ-রা! কত ভয়াবহ মানসিকতা হলে এমনটি করা যায়।এই যে লুটপাট, এই যে চোখ রাঙানি তা কোথায় নেই? প্রধানমন্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যানদের সমাবেশে খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, 'আপনারা গুন্ডা পরিবেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করবেন না।' এই কথা কি প্রমাণ করে না দেশে পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। কেন বেড়েছে? কারণ মানবিক মূল্যবোধ লোপ পেয়েছে চরমভাবে। তা না হলে জনপ্রতিনিধিরা পেশিশক্তি পুষবেন কেন? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে 'ইভটিজিং'-এর হার বেড়েছে মারাত্মকভাবে। রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে শক্ত কোন আইন করতে পারছে না। মুখে অনেক কথা বললেও তারা আইনের প্রয়োগে সচেষ্ট হচ্ছে না। বখাটেদের উৎপাতে গেল এক মাসে বেশ ক'জন তরুণী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। কোথাও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কথিত প্রেমিক হত্যা করেছে 'প্রেমিকা'র মা-বাবাকে।সন্দেহ নেই দেশে ব্যতিক্রমী অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। অবৈধভাবে কারও ছবি সংগ্রহ করে তা বস্ন্যাকমেইল করার শাস্তি কী হওয়া উচিত তা নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না গেলে, এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাবে না। আর সেই সঙ্গে রাজনৈতিক মদদদান কর্মটিকেও সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।আমরা পত্র-পক্রিকায় দেখছি বাংলাদেশের 'সাইবার ক্রাইম' নিয়ে বিভিন্ন সিকিউরিটি ইউনিটের সদস্যরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু আইন প্রণেতারা কী করছেন?এক সময় ছিল কেউ ধর্ষণের শিকার হলে ভয়ে মুখ খুলত না। সেই সময় এখন আর নেই, ধর্ষণকারী কি আলামত রেখে গেছে তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ-সমাধান বিশ্বজুড়ে বেরিয়েছে অনেক আগেই। বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলেই এর প্রয়োগ, আইনি কার্যক্রম শক্ত হাতে কার্যকরী করা হয়নি কিংবা যায়নি। এ বিষয়ে মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার কোন বিকল্প নেই।দুইবাংলাদেশে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে বিভিন্নভাবে। মানবিক সাহায্যের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলে তা মেরে দেয়া হচ্ছে। টিভিতে ঘূর্ণিঝড়, আইলা উপদ্রুত এলাকার মানুষের ওপর একটি সচিত্র ধারাবাহিক প্রতিবেদন দেখছিলাম। সেখানে ওইসব অঞ্চলের মানুষ হাউমাউ করে কেদে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। তারা বলছিলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এসে দেখে যান আমরা কেমন আছি।'এটা আমরা সবাই জানি একজন রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে গোটা দেশ চষে বেড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা কি করছেন? তারা ওইসব এলাকার মানুষের এ ভোগান্তির নির্মমতা নিরসনে সামান্য উদ্যোগী হচ্ছেন না কেন?বর্তমান সরকারের বেশ ক'জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। তাদের ক্ষমতা এখনও জব্দ করা হয়নি। প্রকাশিত সংবাদে জানা যাচ্ছে, তাদের কেউ কেউকে অফিসে ডেকে নিয়ে শাসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী 'প্রধানমন্ত্রী কিছু কথা বলেছেন'। অথচ এমনটি কথা ছিল না। শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এসব কাজের মূল্যায়নের কোন নিদর্শন রাষ্ট্র এবং জনগণ দেখতে পারেনি। কোন মন্ত্রীর রদবদলও হয়নি উল্লেখযোগ্যভাবে। অথচ দেশে চলছে নানা ধরনের দখলের রাজনীতি। রাজনীতিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে সরকারদলীয় দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করা জরুরি। টেন্ডারের জন্য খুনোখুনি করলেও প্রকৃত দোষীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। সরকারি বাহিনী সরকারের আজ্ঞাবহ হয়েই থেকে যাচ্ছে। এভাবে 'অন্ধ' হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব কি না তা ভেবে দেখতে হবে সরকারের শীর্ষ নীতি-নির্ধারকদের।গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের যে তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে, এর জন্য অতীত কর্মকান্ডের সমালোচনা করাটা যথার্থ কাজ নয়। সমস্যাগুলোর সমাধান করতে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে এদেশে বিদেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা আসার সাহস হারিয়ে ফেলবে ক্রমেই। ১৫ কোটি মানুষের দেশে সমস্যাগুলোর সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। কিন্তু শুরু করার কাজটি করে দেখিয়ে দেয়া দরকার বর্তমান মহাজোট সরকার জনগণের আস্থার মূল্যায়ন করছে বিশ্বস্ততার সঙ্গে।বাংলাদেশে মানবতার উত্তরণের প্রয়োজন খুব জরুরিভাবে। যারা বখাটে, তাদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লার মানুষকে সোচ্চার হতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মানবতাবাদী কর্মকা-, গরিব-দুস্থ মানুষকে সাহায্য, মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা ইত্যাদি অনেক কাজ গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ায়, ইউনিয়নে সামাজিক উদ্যোগে গৃহীত হতে পারে। সমাজ বিনির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে সমাজের মানুষের পরিশুদ্ধ জাগরণ। এই কাজটি করতে তরুণ সমাজকে নেতৃত্বে নিতে হবে। আমরা ঘুণে ধরা সমাজ ভাঙার কথা মুখে বলি। এজন্য যে চেতনার দরকার, তার উন্মেষ ঘটাতে হবে ন্যায়পরায়ণ, সৎ মানুষদেরই। আমাদের উৎস ছিল সৌহার্দ্য ও সম্প্রতির। পহেলা বৈশাখ সেই ডাকই দিয়ে যায়। ১৪১৭ সালে এই নবজাগরণ ঘটাক। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। নিউইয়র্ক ,১৪ এপ্রিল, ২০১০ ----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ১৬ এপ্রিল ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- ইভ টিরাডো
false
hm
দৈনিকদা পাড়াতুতো চায়ের দোকানে অমন আড্ডা পেয়ে যাবো, ভাবিনি। গতকাল গলিতে ঢোকার মুখে ডালপুরির বাস্না এসে নাকে হাত বুলিয়ে গিয়েছিলো, তাই আজ গেলাম ডালপুরি চোখে দেখার পাশাপাশি চেখে দেখতে, ঘ্রাণেন অর্ধভোজনমের পাশাপাশি বাকি আধখানা একেবারে উপর্যুপরি চিবিয়ে গিলতে, সাথে দুধভাত হিসেবে এক কাপ খাটো চা, কে জানতো বোনাস হিসেবে ওরকম একখান আড্ডার সন্ধান পাবো? আমার মধ্যে সঙ্কোচের বিহ্বলতা বরাবরই কম। উঠে গিয়ে গলা খাঁকরে বললাম, "তা ভায়েরা, বেশ লাগছে আপনাদের কথাগুলো শুনতে। বসতে পারি?" ছোকরার দল সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে আমাকে দেখে কেবল, আর নিজেদের মাঝে আড়ে আড়ে চায়। কিছু বলে না। আমি ঠেলেঠুলে এক পাশে বসে পড়ি। বলি, "প্রেমেন্দ্র মিত্র নিয়ে কী যেন বলছিলেন?" যার পাশে বসি, সে ছটফট করে ওঠে। একজন গুরুগম্ভীর গলায় বলে, "লিটমাস! লিটমাস টেস্ট!" উল্টোদিকে বসা টিংটিঙে ছোঁড়াটা নড়েচড়ে বসে বলে, "কে গো আপনি?" আমি হাত বাড়িয়ে দিই। "আমার নাম কাদের। বজলুল কাদের।" ছোকরা অতি সন্তর্পণে হাত মেলায়। তারপর নিজের হাতখানা প্যান্টের পাছায় মুছতে মুছতে বলে, "তা কী নামে লেখেন?" আমি বিস্মিত হই। বলি, "কী নামে লিখি মানে?" ছোকরা হাসে কিটিকিটি। বলে, "কোবতে লেখেন কী নামে?" আমি বলি, "কোবতে?" সবার মুখে একটা আশঙ্কার ছাপ পড়ে। ছোকরা মুখ কালো করে বলে, "কবিতা লেখেন কী নামে?" আমি মহাকাশ থেকে আছড়ে পড়ি উল্কাপিণ্ডের মতো। বলি, "কবিতা? কবিতা লিখবো কেন?" ওভাবে উল্কাপাত ঘটাই বলেই হয়তো ডাইনোসরের মতো ছোকরাদের মুখের আশঙ্কার ভাবটা বিলুপ্ত হয়। লিটমাস লিটমাস বলে হেঁকে ওঠা ছোকরাটা বলে, "বাহ, লিটমাস তো নীলচেই আছে রে!" আমার উল্টোবাগে বসা ছোকরা বলে, "চুপ দে। একদম ঝেড়েপুঁছে টেস্টাই কাদের ভাইকে। তা কাদের ভাই, কী লেখেন তাহলে?" আমি সলজ্জ হেসে বলি, "আমি লিখতেটিখতে পারি না ভাই। শুধু পড়ি। প্রচুর পড়ি।" ছোকরা মধুর হাসে। বলে, "কার কবিতা পড়েন?" আমি কাঁচুমাচু হয়ে বলি, "ইয়ে ... মানে ... কবিতার প্রতি ওরকম আকর্ষণ আমার নেই। পড়ি মানে মাঝে মধ্যে এর ওর কবিতা পড়ি ... ।" এবার সেই লিটমাসঅলা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। সাশ্রুনয়নে বলে, "এ আমাদেরই লোক!" সেই থেকে ভাব তাদের সাথে। উল্টোবাগে বসা মাইগ্রেনরোগী হাবিব ওরফে হেবো, লিটমাসঅলা লিটন ওরফে লেটো, আমার পার্শ্ববর্তী বিশালদেহী নান্টি ওরফে নেন্টো, ফকরুল ওরফে ফুকো, সোলায়মান ওরফে সলু, মোশাররফ ওরফে মশা। আর আমি হয়ে যাই কেদো। সবাই সবাইকে দাদা আর ভাই বলে ডাকি। আমাদের চায়ের দোকানের সাহিত্যিক আড্ডায় এটাই রেওয়াজ। লেটোদা বলে কেদো ভাই, আর কেদো ভাই বলে লেটোদা। আর একটি মোক্ষম রেওয়াজ আছে বৈকি। কবিতা নিয়ে একদম স্পিক্টিনট। কবিতা প্রসঙ্গ এলেই জরিমানা, এক রাউন্ড করে চা। সেদিন যেমন কোবতে আর কবিতা উচ্চারণ করায় লেটোদাকে দুইবার আর আমাকে, এই সদ্য বাপ্তাইজ হওয়া কেদোভাইকে, একবার চায়ের বিল বহন করতে হয়েছিলো। কারণ জানতে চাওয়ায় লেটো শুধু বলেছিলো, "আমরা ক-লেখাবিদ্বেষী!" জানতে পারি, কবিতাকে ক-লেখা বলাই আড্ডার রেওয়াজ। এরপর বেশ জমে ওঠে। কবিতা এড়িয়ে প্রায়শই আড্ডা চলতে থাকে গড়গড়িয়ে। লেখক, লেখিকা, পাঠক, পাঠিকা, লেখা, পাঠ ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলোচনা চলে পুরি আর চায়ের সাথে। তবে ঘুরে ফিরে নারীকে ঘিরেই কথাবার্তা চলে বেশি। লেখিকার লেখা পাঠের পাশাপাশি লেখিকাকেও পাঠ নিয়ে মূল্যবান মতবিনিময় হয়। পাঠিকার জন্যে লেখার পাশাপাশি পাঠিকাকেই মাঝে মাঝে লিখে ফেলার নানা কায়দার সুলুকসন্ধান চলতে থাকে। কয়েকদিন বেশ চলছিলো, আচমকা একদিন সন্ধ্যেবেলা কী যেন কী হলো, লেটো মশা ফুকো সলু হেবো এক বিকট আর্তনাদ করে "ওরে পালা পালা পালা" বলে বেঞ্চ উল্টে দোকান ছেড়ে ভাগলো। নেন্টো একটু শ্লথগতির বলে ভ্যাবলার মতো বসে রইলো আমার পাশে। বাকিদের এই পালাৎকার বাতাসে মিলিয়ে যাবার আগেই দোকানে প্রবেশ করলেন তিনি। উচ্চতায় মেরেকেটে সাড়ে চার ফুট হবেন। বিগলিত হাসি মুখে, চোখে এক প্রবল চশমা। নেন্টোকে দেখে তার মুখের হাসিটা চেশায়ারমার্জারের কিসিম ধারণ করলো, গুটি গুটি পায়ে সন্তর্পণে এগিয়ে এসে বসলেন তিনি আমাদের সামনে। নেন্টো থরথর করে কাঁপতে লাগলো। তাঁর কান-থেকে-কানে বিস্তৃত হাসিটা এবার আমার দিকে তাগ করে তিনি বললেন, "আড্ডায় নতুন বুঝি আপনি?" নেন্টোর মুখ থেকে এবার এক রূদ্ধশ্বাস ঘড়ঘড় আওয়াজ বেরিয়ে এলো, "দৈনিকদা!" দৈনিক নাম হয় কি না কারো, জানি না, কিন্তু দৈনিকদা নামের লোকটি কিছু বলার আগেই নেন্টো এক হাইজাম্প দিয়ে আমাদের ডিঙিয়ে থপথপিয়ে অদৃশ্য হলো বাইরের অন্ধকারে! আমি এক বিকট বুক ধুকধুক নিয়ে বসে রইলাম দৈনিকদার সামনে, জবুথবু হয়ে। দৈনিকদা বললেন, "অধমের নাম দীনবন্ধু মোহাম্মদ। ফ্যাসিবাদী ছোকরাগুলি ইদানীং দৈনিকদা ডাকা শুরু করেছে। আপনার পরিচয়?" ভয়ে ভয়ে বললাম, "আমার নাম কাদের। বজলুল কাদের।" দীনবন্ধু মিটিমিটি হেসে বললেন, "নকল নাম। শুনেই বোঝা যায়।" মেজাজটা চড়ে যায়, বলি, "কেন, অমন ভাবলেন কেন?" দীনবন্ধু চোখ টিপে বললেন, "আরে আমাকেও তো বাজারে লোকে শুভাত্মা দয়াল নামে চেনে। আপনার আসল নামটা কী?" ভ্যালা মুসিবতে পড়া গেলো! আমি বলি, "আমার বাজারের জন্যে উলবোনা কোনো নাম নেই। বজলুল কাদের আমার পিতামহদত্ত নাম। এ দিয়েই আমার হাটেমাঠেঘাটে কাজ চলে যায়।" দীনবন্ধু কথা বাড়ান না আর, সট করে কাঁধের ঝোলা থেকে বার করেন এক তাড়া কাগজ। তারপর বলেন, "শুনুন!" তারপর তিনি পাঠ করে যান, কবিতা। কবিতাই বটে! দিন নাই, রাত নাই, আছে শুধু চুকচুকচুক ফিডারেই দিন কাটে, ফিডারেই রাত কাটা সুখ করাত ভেবেছো তাকে? সুখ কোনো শাঁখ নয় জেনো বাজারে জাম্বুরা পেলে গোটা দুই চুরি করে এনো এলো চুল নেড়েচেড়ে কেলো করে দোতালার ভাবী রিকশাওয়ালা ছোঁড়া, থাম দিকি, নীলক্ষেত যাবি? আষাঢ়ে পর্দা টেনে ছোঁড়াছুঁড়ি রিকশায় বসে আনমনে দেরিদা কি ফুকো পাঠ করে যায় ক'ষে নামে কী বা আসে যায়, নিকে তার যায় আসে বেশি সুন্দরী ললনা এসে জামা খুলে টিপে দ্যাখে পেশী মা-খালারা মার্কেটে কেন মিছে খুঁজে মরে খালু? ওরে মন চেটে দ্যাখ ডালপুরি সিঙারার আলু . . . Get this widget | Track details | eSnips Social DNA . . . এরপর তিনি দম ন্যান। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসেন। তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরে হাসপাতালের বেডে। এক ভীষণদর্শন নার্স, তারপাশে ততোধিক ভীষণদর্শন ডাক্তার, আর একসারি উদ্বিগ্ন মুখ। লেটো, হেবো, মশাকে শনাক্ত করতে পারি। রিলিজ পাওয়ার পর শুনি, অল্পের জন্যে জানে বেঁচে গেছি। দৈনিকদার পাল্লায় পড়ে নাকি অতীতে অগণিত সম্পাদক, সঞ্চালক, সংকলক, সংগঠন আর সংশপ্তকের অকালমৃত্যু ঘটেছে, কিম্বা তারা উন্মাদ হয়ে গাঁয়েগঞ্জে পাগলের চাকরি নিয়ে চলে গেছে। আমি দুর্বল হরলিক্সমাঙা গলায় বলি, "কিন্তু এই লোককে তোরা দৈনিকদা ডাকিস কেন?" হেবো ফিসফিস করে বলে, "রোজ একটা করে ক-লেখা লেখে! দৈনিক!" শিউরে উঠি। বুঝি কত বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। দৈনিক কবির চেয়ে প্রাণঘাতী আর কিছু নাই।
false
mk
২০১৫ হোক নিরাপদ বর্ষ ঘটনাবহুল ২০১৪ সালটা শেষ হয়ে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে অনেক মীমাংসিত সত্যকে অস্বীকার করার মাধ্যমে। এই অস্বীকার করার তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন না কেউ। তালিকায় আছেন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক সকলে। সাংবাদিক স্বদেশ রায়ের ভাষায়, নষ্টদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আগামী বছর শেষ হতে হতে এই তালিকা হয়ত আরও দীর্ঘ হবে এবং তাতে নতুন বিষয়সহ এই তালিকায় নতুন নতুন নামও সংযোজিত হবে। দেশে অবাধ কথা বলার স্বাধীনতা না থাকলে হয়ত সহজে এমনটা হতো না। স্বাধীনতা আছে বলেই এখন অনেকের মুখের লাগাম খুলে গেছে। অদূর ভবিষ্যতে তা আর লাগবে বলে মনে হয় না। কথা বলার স্বাধীনতাকে এই শ্রেণীর মানুষ অসত্য বলার লাইসেন্স হিসেবে ধরে নিয়েছেন। বেগম জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানও এদের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় সাত বছর চিকিৎসার নাম করে তিনি লন্ডনের এক বিলাসবহুল এলাকায় থাকেন। আইনের দৃষ্টিতে তিনি একজন ফেরারি আসামি। ওই এলাকায় থাকতে গেলে মাসে কমপক্ষে সবশুদ্ধ আট হতে নয় হাজার পাউন্ড খরচ হয়। কে যোগান দেন এত বিশাল অঙ্কের টাকা। তেমন প্রশ্ন তার দলের কেউ একজনকে করলে কোন উত্তর পাওয়া যায় না। কিছুদিন আগে দেশে থাকা তার মা’র আইনজীবী বলেছিলেন, সরকার বেগম জিয়ার ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রেখেছে বলে তিনি সময় মতো বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না। এই মর্মে আদালতে আর্জি পেশ করা হলো। আদালত সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ ছাড় করার নির্দেশ দিলেন। সেই বেগম জিয়ার পুত্রের লন্ডনে এমন বিলাসী জীবন, তা নিয়ে কথা তো উঠতেই পারে। তার এই বিশাল অর্থ কোথা হতে আসে তা হয়ত তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তিনি যখন স্বজ্ঞানে বাংলাদেশের স্বীকৃত ইতিহাসকে নিয়ে লন্ডনে বসে মিথ্যাচার করেন তখন আর এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার থাকতে পারে না। প্রথম চার সাড়ে চার বছর তিনি লন্ডনে চুপচাপই ছিলেন। তারপর দলীয় সভা-সমাবেশে আসতে শুরু করলেন। একেকটিতে আসেন আর একেকটি চরম অসত্য কথা বলে বোমা ফাটান। সেই বোমার আঘাতে আর কেউ না হলেও ঘায়েল হন তার নিজ দলের নেতা-কর্মীরাই। তার বক্তব্যকে রক্ষা করতে গিয়ে তার মা পর্যন্ত মাঝে মাঝে গলদঘর্ম হয়ে পড়েন, আবার মাঝে মাঝে নিজেরাও তার খপ্পরে পরেন। তারেক লন্ডনে বসে হঠাৎ আবিষ্কার করেন বঙ্গবন্ধু নন, তার পিতা জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। একেবারে বাংলাদেশের সংবিধানের গোড়া ধরে টান। দেশের মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারেক ছাড়লেন আর এক বোমা। বঙ্গবন্ধু নাকি দেশে ফিরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়াটা বেআইনী ছিল। বলতে বাকি রেখেছেন তার বাবার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির পদটি কেড়ে নিয়েছেন। তারেক বাবাজি ভুলে গিয়েছিলন তার আব্বাজান মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময় মুজিবনগর সরকারের চারশত টাকার একজন সামরিক অফিসার ছিলেন। এখানে টাকার অঙ্কটা বড় নয়। এটি একটি প্রতীকী বেতন। দেয়া হয় এটি বুঝানোর জন্য যিনি বেতনটা নিচ্ছেন তিনি প্রজাতন্ত্রের একজন বেতনভুক কর্মচারী। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপ্রাধন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাঁর অবর্তমানে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সরকার প্রধান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু আর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে এক রুপী প্রতীকী বেতন নিতেন। তারেক রহমানের এমন সব বালখিল্য সুলভ বক্তব্য শুনে দেশের শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা- কর্মীরাই নয়, ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও। তাতে সুদূর লন্ডনে থাকা তারেকের তেমন কিছু আসে যায় না। তার বক্তব্যকে তার মা আর দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বেশ চড়া গলায় সমর্থন জানালে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বলেন, আওয়ামী লীগ হলো একটি কুলাঙ্গারের দল এবং শেখ হাসিনা সেই দলের প্রধান। বেগম জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধার দল নয়, তারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি। ভুলে যান তাঁর প্রয়াত স্বামী জিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই একাত্তরে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বললেন, শেখ হাসিনা একটি অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। তবে কিভাবে তিনি অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তার কোন ব্যাখ্যা নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি একটি অবাস্তব অজুহাতে বর্জন করেছে ঠিক, তবে তাদের বর্জনে সেই নির্বাচন ব্যর্থ হয় কিভাবে তারও কোন ব্যাখ্যা নেই। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করেছিল। সেই নির্বাচনে অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশিদকে সেই সংসদের বিরোধী দলের নেতা বানিয়েছিলেন বেগম জিয়া। সেই নির্বাচনে গঠিত সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়েছিল। তা মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগ পরবর্তীকালে তিনটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই তত্তা¡বধায়ক সরকার বাতিল করে দিলে সংশোধনীটি অসাংবিধানিক হয়ে যায়। এর ফলে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পুরনো কাঠামোতেই করতে হয়েছে যেটি বিএনপি ও তার মিত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না বলে তারা নির্বাচন বর্জন করে। সেই ইস্যু নিয়ে তারা এখনও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। অথচ নির্বাচনে তাদেরও আনার জন্য শেখ হাসিনা যত রকমের ছাড় দেয়া সম্ভব তার সবটুকুই দিয়েছেন। এর আগে ১৯৭০ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল মওলানা ভাসানীর ন্যাপ বর্জন করে। তাতে সেই নির্বাচন অবৈধ হয়ে যায়নি। সদ্যসমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের নির্বাচনে ২৬জন সিনেটর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সিনেটের মোট সদস্য সংখ্যা একশ’ জন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটও অবৈধ হয়ে যায়নি। তারেক রহমান বললেন, মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব পরিবারের কোন অবদান নেই। তার পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আতিথেয়তায় ছিলেন এবং মাসোহারা পেতেন। নাদান তারেক রহমান জানেন না বেগম মুজিব ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ধানম-ির একটি বাড়িতে গৃহবন্দী করে রেখেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। প্রথমে শেখ কামাল ও পরবর্তিতে শেখ জামাল পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম যে ৫৮ জন অফিসার কমিশনপ্রাপ্ত হন তাঁদের একজন। তাঁর ক্রমিক নম্বর ছিল ২৪। তাঁর পদায়ন হয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে। শেখ জামাল কমিশন শেষ করার আগেই যুদ্ধ শেষ হয় এবং স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাকে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সান্ডহার্সট মিলিটারি স্কুলে পাঠান। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শেখ ফজলুল হক মণি মুজিব বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর মেজর তারা বেগম মুজিবকে ধানম-ির ওই বাড়ি হতে উদ্ধার করেন। সেখানে পাহারারত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রহরীরা জানত না পাকিস্তান মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেনা প্রহরায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জয়ের জন্ম হয়। সন্তানসম্ভবা শেখ হাসিনাকে বেগম মুজিবকে দেখতে যেতে দেয়া হতো না। মাঝে মাঝে দেখতে যেতেন বেগম সুফিয়া কামাল ও মিসেস নার্গিস জাফর (কবি সিকান্দর আবু জাফরের স্ত্রী)। বেগম জিয়াকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিকবার জিয়া লোক পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাদের সঙ্গে যেতে অস্বীকার করেন এবং কোন কোন সময় দুর্ব্যবাহারও করেন। বেগম জিয়াকে এপ্রিল মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় স্থানান্তর করে এবং পুরো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেনানিবাসে তাদের নিরাপদ হেফাজতে ছিলেন। তাঁর আরাম আয়েসের কোন ঘাটতি ছিল না। গত ১৫ আগস্ট তারেক রহমানের সর্বশেষ বাণী বঙ্গবন্ধু ‘রাজাকার’ ছিলেন। এতবড় বেয়াদবি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার চরম শত্রুও করেনি, তার বাবাও না। তা করলেন তারেক রহমান। তার উপরে বঙ্গবন্ধুকে তারেক রহমান সব সময় ‘সে’ ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে সকল শালীনতার লেভেল অতিক্রম করেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু হস্তক্ষেপ না করলে তার মার ভেঙ্গে যাওয়া ঘর-সংসার মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তিকালে জোড়া লাগত না। বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন, আমার দুই নয় তিন কন্যা। জিয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর উপ-প্রধানের একটি পদও সৃষ্টি করেছিলেন। এই সব কথা কি তারেক রহমান জানেন? লন্ডনে তারেক রহমান যা বলেন ঢাকায় নেতা-নেত্রীরা তার প্রতিধ্বনি করে পুরো বিষয়টাকে আরও হাস্যকর করে তুলেন। বিএনপি’র ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু আসলে যে কোথায় তা বোঝা মুস্কিল হয়ে পড়েছে। তারেক রহমানের এই সব চলমান বাচালতা মাঝখানে হঠাৎ করে আবার শুরু হলো একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কত মানুষ নিহত হয়েছেন সেই বিতর্ক। এবার সেই বিতর্কের মধ্যমণি আর কেউ নন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম সদস্য ড. কামাল হোসেনের জামাতা ব্যারিস্টার সারা হোসেনের স্বামী ঢাকায় একটি পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যান। জামায়াতের অর্থপুষ্ট আরও অনেক দেশী আর আন্তর্জাতিক লবিস্টের সঙ্গে তিনি সুর মিলিয়ে নানাভাবে বলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একাত্তরের যুদ্ধাপারীদের যে বিচার হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মানের নয় এবং তার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এই ব্যাপারে তিনি নিজের পত্রিকায় লেখালেখি করা ছাড়াও সামাজিক গণমাধ্যমে তার নিজস্ব ব্লগেও তার মতামত পোস্ট করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যালকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টিগোচরে আনেন। তা আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল তার উপর শুনানি করেন এবং বার্গম্যানকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ২০১১ সালে নেতাজি সুভাষ বোসের নাতনি অক্সফোর্ড শিক্ষিত শর্মিলা বোস ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত উইথড্র উইলসন সেন্টারের অর্থায়নে উবধফ জবপশড়হরহম শিরোনামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি বই লিখে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি তাঁর গ্রন্থে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এবং বলেন, যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ধর্ষণের প্রমাণ নেই। পরবর্তিকালে আমার একটি প্রতিক্রিয়ার সূত্র ধরে তাঁর সহকর্মী গবেষক পাকিস্তান বংশোদ্ভূত আয়শা সিদ্দিকা লিখেন, শর্মিলা যখন এই বইটি লিখছিলেন তখন তিনি পাকিস্তানী সামরিক অফিসারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতেন। তাঁর মতে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায় তার এই গ্রন্থ পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের খুব খুশি করবে। শর্মিলা প্রশ্ন করেছেনÑ বলা হয়, এই যুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা করেছে আর দুই লাখ মহিলা ধর্ষিত হয়েছেন। তাদের নাম ঠিকানা কই? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার বার্গম্যানের স্বজাতি ষাট লাখ ইহুদীকে হত্যা করেছিল বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা। শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন দেশে গিয়ে এই সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করলে নির্ঘাত জেল জরিমানা। সেখানে ঐড়ষড়পধঁংঃ উবহরধষ খধি আছে। ১৯৪৩-এর মন্বন্তরে বাংলায় ত্রিশ লাখ মানুষ খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাদের নাম ঠিকানা কি কোন জায়গায় লিপিবদ্ধ আছে? বার্গম্যানদের বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন আমাদের দেশেরই কিছু তথাকথিত গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা টিভিতে গিয়ে বলেন, যেহেতু তাঁরা সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষক সেহেতু প্রমাণ ছাড়া তারা এমন ঢালাও সংখ্যায় বিশ্বাস করতে নারাজ। বুঝা যায় জামায়াত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে ব্যবস্থা বাংলাদেশে চালু হয়েছে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে তা কতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছে। বার্গম্যানকে দেয়া আদালত অবমাননার সাজা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে দেশের ৫০জন বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, এই রায় স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের আইনে আদালত অবমাননার দায়ে কেউ সাজাপ্রাপ্ত হলে সে ব্যক্তি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারেন না। এতেও স্বাক্ষরদাতদের আপত্তি। স্বাক্ষরদাতাদের প্রায় সকলকেই এই দেশের মানুষ চেনেন। তাদের কেউ কেউ ইতোপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বার্গম্যানের ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেছেন। একদিন পর মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির স্বাক্ষরকারীদের তালিকা হতে তাঁর নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এই বলে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহতদের সংখ্যা নিয়ে কোন বিতর্কে জড়াতে চান না। ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি। ১৯ তারিখ পাকিস্তানের করাচী হতে প্রকাশিত ফ্রাইডে টাইমসে এক কালে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এক নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন লিখে বার্গম্যানকে সমর্থন জানান। ২৩ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের এডিটরিয়াল বোর্ড বার্গম্যানকে সমর্থন জানিয়ে আর একটি মন্তব্য প্রদিবেদন প্রকাশ করে। বুঝতে হবে বার্গম্যান তার কর্মকা-ের প্রতি সমর্থন আদায় করতে দেশের বাইরে হাতপাততে কুণ্ঠিত হবেন না। এই সব বিতর্কিত কর্মকা-ের মধ্যেই ২০১৪ সাল শেষ হচ্ছে। দেশের মানুষ আশা করতেই পারে আগামী বছরটা গেল বছর হতে কিছুটা ভাল কাটবে, ইতরামো মুক্ত হবে । সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই প্রত্যাশা প্রযোজ্য। সকলকে নব বর্ষের শুভেচ্ছা।
false
rg
উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকা, যাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের___ উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকা। মুজিকাকে বলা হয় দ্য ওয়ার্ল্ড পুয়োরেস্ট প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, জ্ঞান আর ফিলোসফি জানার পর মনে হল, তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ধনি প্রেসিডেন্ট। অন্তত মেধা, প্রজ্ঞা, মনন, জ্ঞান আর দূরদর্শীতায় মুজিকাকে সবচেয়ে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে হয়েছে আমার কাছে। তিনি যৌবনে ছিলেন একজন গেরিলা। একজন সত্যিকারের যোদ্ধা, একজন সমরনেতা এবং একজন আধুনিক রাষ্ট্রনেতা হলেন আজকের উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকা। জোসো মুজিকা বসবাস করেন তাঁর খামার বাড়িতে। দুইজন পুলিশ আর তাঁর তিন'পা ওয়ালা কুকুর মানুয়েলা থাকেন বাড়ির নিরাপত্তায়। মুজিকা থাকেন তাঁর স্ত্রী'র খামার বাড়িতে রাজধানী মন্টেভিডিও'র বাইরের এক পাহাড়ি কৃষি জনপদে। সেখানে তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে ফুলের চাষ করেন। পরিবার চলে স্ত্রী'র আয় থেকে। আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুজিকা যে বেতন পান, তার অন্তত শতকরা ৯০ ভাগ (যা প্রায় ১২ হাজার মার্কিন ডলারের সমান) তিনি বিভিন্ন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে ও গরিব মানুষের মধ্যে দান করেন। কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তিনি দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গেরিলা হিসেবে যুদ্ধ করেন। উরুগুয়ের টুপামারোস গেরিলা হিসেবে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যাদের সবাই চিনতো। মুজিকা নিজে সেই গেরিলা যুদ্ধে আহত হন। তাঁর শরীরে ছয়টি গুলি লাগে। ১৪ বছর তিনি উরুগুয়ের জেলে বন্দি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসলে জেল মুক্তি পান মুজিকা। মুজিকা বলেন, একজন আমেরিকান সারাদিন যা খায়, সেই পরিমাণ খাবার যদি পৃথিবীর সবাই ভোগ করতো তাহলে, পৃথিবীর মতো আরো তিনটি এক্সট্রা প্লানেট আমাদের দরকার হত। জার্মানিতে মানুষের যতো গাড়ি আছে, গোটা ভারতের সকল নাগরিকের যদি সে পরিমাণ গাড়ি থাকতো, তাহলে আমাদের নিঃশ্বাস নেবার জন্য আর কতোটুকু অক্সিজেন অবশিষ্ট থাকতো সেটাই আজ বড় প্রশ্ন? তিনি বলেন, ধনিদের অতিরিক্ত ভোগের কারণেই পৃথিবী সবচেয়ে বেশি পরিমাণ দূষিত হচ্ছে। উরুগুয়ের আইন অনুসারে, ৭৭ বছরের উর্ধ্ব বয়সি কেউ আর নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে না। তাই ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুজিকা আর প্রতিদ্বন্দিতা করবেন না। তিনি আগামী বছর রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেবেন। তাঁর বর্তমান বয়স ৭৮ বছর। ১৯৩৫ সালের ২০ মে জোসে মুজিকা জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা দিমিত্রিও মুজিকা ছিলেন একজন কৃষক। আর মা লুসি করডানো একজন ইতালিয় মাইগ্র্যান্ট। মুজিকা'র বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর, তখন তাঁর বাবা মারা যান। ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সে মুজিকা বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে সাইকেল চালিয়ে অনেক পুরস্কার জেতেন। কিউবান বিপ্লবের প্রতি সারা দিয়ে তিনি ১৯৬০ সালে উরুগুয়ের সরকারের বিরুদ্ধে টুপামারোস গেরিলা মুভমেন্টে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে মন্টেভিডিও'র কাছে পান্ডো শহরের দখল নিতে তিনি সফল গেরিলা অভিযান পরিচালনা করেন। পরে তাঁর জর্জ পাসেকো আরেকো'র সাংবিধানিক বিধিনিষেধের আওতায় জেল হয়। ১৯৭১ সালে তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে পুন্টা ক্যারেটাস জেলখানা থেকে পালিয়ে যান। কিন্তু ১৯৭২ সালে তিনি আবার পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। ১৯৭৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর তাঁকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে আর্মি জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮৫ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সাধারণ নির্বাচনে একজন ডেপুটি হিসেবে নির্বাচিত হন। আর ১৯৯৯ সালে তিনি নির্বাচিত হন সিনেটর হিসেবে। ২০০৪ সালে তিনি পুনরায় সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের ১ লা মার্চ মুজিকা উরুগুয়ের কৃষিমন্ত্রী নির্বাচিত হন। আর ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। উরুগুয়ের সবাই তাঁকে ডাকেন পেপে মুজিকা। মুজিকার স্ত্রী লুসিয়া টোপোলনাস্কিও একজন টুপামারো গেরিলা সদস্য। লুসিয়া বর্তমানে উরুগুয়ের একজন নির্বাচিত সিনেটর। প্রেসিডেন্ট মুজিকা সরকার প্রদত্ত লাক্সারি বাড়িতে না থেকে নিজের স্ত্রী'র খামার বাড়িতে খুব সাদাসিদে জীবনযাপন করেন। যাকে সবাই বলে গরিব প্রেসিডেন্ট। কিন্তু মুজিকা বলেন, এটা তাঁর সহজ সরল জীবনের মতোই সাধারণ। এটাই তাঁর জীবন। এভাবে থাকতেই তিনি পছন্দ করেন। সবাই যখন তাঁকে গরিব বলেন, জবাবে পেপে বলেন, তারাই আসলে গরিব যারা তাঁকে গরিব বলতে চান। তিনি বলেন, গরিব হল তারা, যাদের খুব বেশি বেশি সবকিছু দরকার। কারণ, যাদের সবকিছু খুব বেশি বেশি লাগে, তারা কখনোই জীবনের প্রতি স্যাটিসফাই হয় না। আই অ্যাম ফ্রুগাল, নট পুয়োর। আমি একজন ফ্রুগাল, আলোকিত সুইটকেসের মতোই আমি একজন ফ্রুগাল। যতোটুকু না হলেই জীবন চলে না, ঠিক ততোটুকু নিয়েই আমি সন্তুষ্ট। বিলাসি জীবনযাপন আমার একদমই পছন্দ না। আমার সাধারণ জীবনযাপনের সুবিধা হল, আমি কাজ করার জন্য প্রচুর সময় পাই। আমি যা যা পছন্দ করি, নিজে নিজেই তার সবকিছু করতে পারি। আমি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চাই আর আমি সেভাবেই বেঁচে আছি। লিভিং ফ্রুগালি ইজ এ ফিলোসফি অব লাইফ, বাট আই অ্যাম নট পুয়োর। আমার একটি নিজস্ব জীবনযাপন পদ্ধতি আছে। আর প্রেসিডেন্ট হলেও আমি সেই জীবন স্টাইলে কোনো পরিবর্তন করিনি। আমি যা আয় করি, তা দিয়ে আমার খুব ভালো মতোই চলে যায়। এইটুকু আয় দিয়ে অবশ্য অন্যরা তেমন চলতে পারবে না। আমার বউও একজন সিনেটর। সে তার আয় থেকেও দলকে সহয়তা করে। তার যা আয় তা দিয়ে আমাদের দু'জনের জীবন কাটানো যায় খুব সহজেই। এছাড়া আমরা আমাদের আয়ের একটা ক্ষুদ্র অংশ ব্যাংকে রাখি, যদি কোনো বিপদআপদ আসে তখন যাতে খরচ করা যায়। আমি আমার দলকে সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করি। এছাড়া আমার অবিবাহিত মেয়েরা যারা মা হয়েছে, তাদের জন্য একটি হাউজিং প্রকল্প আছে, সেখানে অনেক খরচ করি। যা আমার জন্য কোনো স্যাকরিফাইজ নয়, এটা আমার ডিউটি, তাই আমি এই কাজে সহায়তা করি। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে ড্রাগ আর সন্ত্রাস একযোগে বিস্তার লাভ করেছে। বিগত একশো বছর আমাদের পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযান পরিচালনা করে আসছে। মাদক আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আমাদের সমাজে নানাভাবে ক্ষতি করছে। আমরা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করে মাদককে রাষ্ট্রীয় ব্যবসার খাত হিসেবে চিন্থিত করতে চাই। তাই আমরা গোটা আমেরিকান দেশগুলোতে এখন ওপেন মাদক ব্যবসা করছি। কিন্তু সবাই যেটা চায় আমরা সেটা কিনতে দেই না। কিছু বাধ্যবাধকতা রেখেছি। সব মাদক দেশের সবাই ব্যবহার করতে পারবে না। আমাদের ফার্মেসিগুলোতে যেখানে ওষুধ বিক্রি হয়, সেখানে চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে মাদক কেনার সুযোগ রেখেছি। যদি কেউ ডাক্তারের প্রেসক্রিপসন নিয়ে সেই মাদক কেনে কোনো অসুবিধা নেই। যারা রেজিস্টার করেছে তারা ফার্মেসি থেকে মাসে একবার প্রয়োজনীয় ডোস কিনতে পারে। যদি কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাদক কিনতে চায়, আমরা ধরে নেই তার চিকিৎসা প্রয়োজন। তখন তাকে আমরা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দেই। আর এটাকে আমরা তখন স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবেই মনে করি। আর প্রথমেই আমরা সেই ব্যক্তিকে আইডেন্টিফাই করি আর তার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করি। আমাদের এখানে সবচেয়ে বেশি মাদক সেবিরা সাধারণত মারিজুয়ানা ব্যবহার করেন। আমরা মাদক ব্যবহারের প্রাথমিক সকল উপকরণ ট্যাকেল করার চেষ্টা করছি। সমাজে মাদকসেবিরা প্রথম যা যা দিয়ে মাদক ব্যবহার শুরু করে। আমরা কোকেন বা অন্যান্য স্ট্রং মাদক ব্যবহার অনুৎসাহিত করি। সেজন্য মারিজুয়ানাকে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ব্যবহার করার জন্য গোটা দেশে আইনগতভাবেই বৈধ করে দিয়েছি। মারিজুয়ানা ছাড়া আর সকল মাদককে আমরা নিষিদ্ধ করেছি। কিন্তু মাদক নিয়ে আমাদের আগে এক্সপারিমেন্ট করতে হবে। নইলে এর ভয়াবহতা আমরা বুঝতে পারবো না। তাই মারিজুয়ানা সামাজিকভাবে বৈধ করেছি। গোটা বিশ্ব যেখানে মাদকের কোনো সমাধান করতে পারেনি, তাই আমরা মারিজুয়ানাকে সামাজিকভাবেই স্বীকৃতি দিয়েছি। অন্যান্য মাদক থেকে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ নিয়ে আমাকে কেউ কোনো ধরনের প্রেসার দেয়নি। আর আমাদের এক্স প্রেসিডেন্টগণের সাপোর্ট আছে আমার এই উদ্যোগে পেছনে। এটা খুব কৌতুহলী একটা ব্যাপার, তারা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তারা কেউ এই উদ্যোগ নিতে এগিয়ে আসেননি। আর আমার এই উদ্যোগে তারা এটা অনুভব করেছেন যে, শুধু এনফোর্সমেন্ট করলে মাদক প্রতিরোধ করা যাবে না, কিছুটা ছাড়ও দিতে হবে। মাদকের সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হল ড্রাগ ট্রাফিকিং। এটা সমাজের জন্য রাষ্ট্রের জন্য খুব ভয়ংকর ক্ষতি আনতে পারে। আমি মনে করি মাদক হল একটি রোগের মত। তবে মারিজুয়ানা খুব ভালো জিনিস। সিগারেটও অনেক খারাপ। এমন কি অ্যালকোহলও খুব খারাপ জিনিস। কিন্তু মারিজুয়ানা খুব ভালো। দ্য অনলি গুড এডিগশান ইজ লাভ। ফরগেট এভরিথিং এলস। আমি জীবন নিয়ে অনেক পরীক্ষা করেছি। আমার মনে হয়েছে আমি রেসিস্ট রিফিউজ করতে পেরেছি। ম্যান ইজ এ স্ট্রং অ্যানিমল হোয়েন হি হ্যাজ কনভিকশানস। মে বি আই অ্যাম এ বিট প্রিমিটিভ। মে বি আই হ্যাভ এ প্রিমিটিভ স্ট্রেন্থ, এ প্রোডাক্ট অব মাই অ্যানচেস্টারস, অব মাই পিজেন্ট চাইল্ডহুড। আমার মাথায় যা আসে, যা আমার মন সাড়া দেয়, আমি তাই করি। এই ভাবনা আমাকে খুব আসক্ত করে রাখে। অনেকে আমাকে সাইকিয়াটিস্ট দেখাতে পরামর্শ দেন। কারণ আমার হ্যালুসিনেশান ছিল। যখন ডাক্তার দেখালাম, আমার মনে হল, তারা আমাকে পুরোপুরি পাগল মনে করছেন। তারা আমাকে অনেক ধরনের ওষুধ দিয়েছিল। আমি সেগুলো জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে মেরেছি। কিন্তু আমি তাদের আমাকে বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় এবং সুযোগ দিয়েছি। তারা আমাকে পরে পড়ার জন্য বই দিত। প্রায় সাত বছর তারা আমাকে জেলখানায় কোনো বই দেয় নাই। তারা আমার সাথে পুরোপুরি পাগলের মত আচরণ করেছে। পরে তারা আমাকে ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি'র বই পড়তে দেয়। আর তখন আমার মাথা আবার কাজ করতে শুরু করে। আর এখন আমার এই অবস্থা। মাদক আসলে গোটা বিশ্বের জন্য একটা কমোন যুদ্ধ। আর আমরা সেটাকে জয় করার জন্য কিছু নানামুখী এক্সপারিমেন্ট করছি এখন। আর একজন প্রেসিডেন্ট যখন দেশের শান্তির জন্য একটা সঠিক উপায় বের করেন, তখন সবাই সেটাকে সহায়তা করে। আমার দেশের জনগণ আমাকে সেই সহযোগিতা করছেন এখন। একটা দেশের অনেক ধরনের দুঃখ কষ্ট আছে। আমরা সেটাকে তীলে তীলে সারানোর চেষ্টা করছি। যদি আমরা ব্যর্থ হই, আমাদের এই যুদ্ধ কখনোই শেষ হবে না। আর আমরা এখন সেই সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আমি যদি জনগণকে সহায়তা না করি, আমার মনে হয় সবাই তখন আমাকে সেলফিস বলবেন। সহায়তা করার অর্থ মোটেও প্রতিরোধ করা নয়। আমি যদি সমঝোতার পথে না যেতাম কেউ আমাকে পছন্দ করতো না। আমি যদি আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে সবকিছু ব্যর্থ হবে। সেজন্য আমি আমার বিরোধী সকল রিবেল গ্রুপকে আমন্ত্রণ করেছি। আমরা একসাথে বসে আলাপ করেছি। সমাধানের উপায় বের করার একটা কমোন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও আমরা একটা উপায় বের করতে পেরেছি, সেটাই আসল কথা। আমি মনে করি, আমার এই উদ্যোগ, এটা ল্যাটিন আমেরিকায় খুব কাজে লাগবে। আমাদের মধ্যে এখন পারস্পরিক আস্থা আর সম্পর্ক আগের চেয়ে শক্তিশালী। এটাই বাধা কাটানোর পক্ষে সবচেয়ে ভালো কাজ করছে বলে আমি মনে করি। উরুগুয়েতে আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য টেবিলে আলোচনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আর এখন আমরা কলাম্বিয়া সরকারের সাথে এবং ইএলএন-এর সাথেও সংলাপের পথ উন্মুক্ত রেখেছি। আমরা যা করছি, এটা একটা ফলা দেবে নিশ্চিত। হিউম্যানিটি? আমার ধারণা, বর্তমান পোপ একজন অন্যরকম মানুষ। আমাদের রয়্যাল কোর্ট, চার্চে এখন অনেক কিছু আধুনিক হয়েছে। আমরা অ্যাবরসন পারমিট করছি। মারিজুয়ানা পারমিট করছি। বর্তমান পোপ বলছেন, তিনি মানবিকতা ফিরিয়ে দেবেন। সেজন্য আমি পোপকে খুব সম্মান করি। অন দ্য আদার হ্যান্ড, ইট ইজ ট্রু, আই অ্যাম এন অ্যাথিয়েস্ট। কিন্তু আমি ক্যাথলিক চার্চও পারমিট করি, কারণ আমি একই সঙ্গে একজন ল্যাটিন আমেরিকান। আমাদের ল্যাটিন আমেরিকানদের দুইটা জিনিস হল কমোন, ভাষা এবং এই মহাদেশে ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাস। যদিও আমার দেশের প্রায় সবাই স্যাকুলার, কিন্তু আমি এই ইতিহাসকে খুব গুরুত্ব দেই। কিন্তু ক্যারিবিয়ান, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, কলাম্বিয়ার মানুষ সত্যিই ক্যাথলিক। যে কারণে আমি আমার মানুষদের থেকে ডিভোর্স নিতে চাই না। ল্যাটিন আমেরিকান হিসেবেই আমি পরিচিতি পেতে চাই। আমি মানুষের প্রয়োজনীয় আসল ভোগের বিরোধীতা করি না। আমি বলতে চাই অপচয় কমাতে হবে। আমরা খাবারের জন্য কৃষকাজ করি। বসবাসের জন্য ঘরের ছাউনি দেই। আর যাদের স্কুল নেই, তাদের পড়াশুনার জন্য স্কুল নির্মাণ করি। আমাদের পানি সমস্যার সমাধান করতে হবে। পৃথিবীর প্রায় সকল শক্তিশালী ব্যক্তির বসবাসের জন্য ৪০০ বর্গমিটারের বাড়ি, তিন-চার-পাঁচটি করে গাড়ি আছে। সমুদ্রপাড়ে অবকাশ যাপনের জন্য বিলাসবহুল বাড়ি আছে। পৃথিবীর যেখানে সেখানে ঘুরতে যাবার জন্য স্পেশাল বিমান আছে। যা সবার নেই। সাধারণ মানুষের নেই। আমি সাধারণ মানুষের মত বাঁচতে চাই। বিলাসিতা আমি পছন্দ করি না। একদম করি না। আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের কি শিক্ষা দেয়? আমাদের ইনডিসপুটেবল ফ্যাক্টের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। একজন আমেরিকান যা ভোগ দখল করছে, অন্যরা তা করলে আরো তিনটা এক্সট্রা প্লানেট লাগবে আমাদের। আমরা ক্রমশ ভোগের পেছনে ছুটছি। এটা সংক্রামক রোগের মত। এটা অসুস্থতা। এটা পাগলামি। আমি এটা পছন্দ করি না। আমি প্রয়োজনীয় জিনিসেই তুষ্ট। আমি ১৯৮৭ সালের একটি ওল্ড মডেলের গাড়ি এখনো চালাই। আমার আর দরকার নেই। পুরানটায় আমার কাজ চলছে। আমি কেন নতুন গাড়ি কিনব?আমি নিজে জেল খেটেছি। মানুষের কতোটুকু প্রয়োজন তা আমি ভালো করে জানি। আমি মানুষের চাহিদা যেমন বুঝি, তেমনি অপচয় বা বিলাসিতাও বুঝি। আমি বলতে চাই, আমি এই পৃথিবীর একজন খাঁটি প্রিজনার। আমি এই পৃথিবীর জেলে আছি। সো, আমাকে অপচয় করলে চলবে না। তাই আমি নিজে এভাবে চলি। এটা আমি অন্যদেরকে চাপিয়ে দিতে পারি না। তাহলে তারা আমাকে খুন করবে। বাট এলাউ মি দ্য ফ্রিডম টু এক্সপ্রেস মাইসেলফ। আমরা একদিকে গ্লোবাল ওয়ার্নিংয়ের কথা বলছি, অন্যদিকে আমরাই এই প্রকৃতি ধ্বংস করছি। এটা লজ্বার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য পৃথিবীকে আমরা আসলে সবাই মিলে ধ্বংস করছি। আমি শুধু বলতে চাই, আমরা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে যেনো উন্নয়নের কথা ভাবি। নইলে আমরা কেবল নতুন প্রজন্মের জন্য মৃত্যু ক্রয় করছি।
false
fe
মুক্তিযুদ্ধের আলো, মৌলবাদের অন্ধকার মুক্তিযুদ্ধের আলো, মৌলবাদের অন্ধকার ফকির ইলিয়াস=========================================বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন শেষ হয়েছে। এ নির্বাচনে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হেলাল মোর্শেদ খান কমান্ডার নির্বাচিত হয়েছেন। এ সংসদে নেতৃত্বের পরিবর্তন খুব প্রয়োজনীয় ছিল। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের বীর সন্তানরা প্রত্যক্ষ ভোটে তাদের নেতা নির্বাচিত করেছেন। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। যারা ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এ সংবাদটি আমাকে বেশ আপ্লুত করেছে। এখনও এ বীর সেনানীরা রাষ্ট্রের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বাঙালি জাতির পাশে রয়েছেন।সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি বিষয় আমরা গভীর পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের অভাব-দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে একাত্তরের পরাজিত আলবদর, রাজাকার অপশক্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের নামে নানা মহড়া করছে। আলবদর, শান্তি কমিটির সেসব হায়েনা হোতারা নগদ টাকা-কড়ি ঢেলে 'মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা'র আয়োজন করছে। ভেবে খুব অবাক হই, দেশে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ রাষ্ট্রীয় পুনর্বাসন প্রকল্প থাকার পরও এসব পরাজিত রাজাকার শক্তি কীভাবে এমন ধৃষ্টতা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে।বাংলাদেশে এখন জনসংখ্যা ১৫ কোটিরও অধিক। সাড়ে ৭ কোটি মানুষ নিয়ে যে রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করেছিল, এর জনসংখ্যা এখন দ্বিগুণ। সে রাষ্ট্রে ১ লাখ ৬৩ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা নিবন্ধনকৃত। এ সংখ্যাটি কি খুব বেশি? না মোটেও নয়। আমরা জানি, বিশ্বের প্রতিটি দেশই তাদের যুদ্ধ-ফেরত ভেটার্নসদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এবং তা দেয়া হয় যোদ্ধার সারাজীবনের জন্যই। 'ভেটার্নস ডে' পালনের রেওয়াজও রয়েছে উন্নত বিশ্বে।বাংলাদেশেও এমন একটি দিবস পালন করা মোটেও কঠিন কাজ নয়। 'মুক্তিযোদ্ধা দিবস' পালনের মাধ্যমে জাতীয় এ বীরদের প্রতি সম্মাননা জানানো গোটা জাতির দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এতে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যেমন আগ্রহী হবে তেমনি জানতে পারবে সঠিক ইতিহাস।এটা ভাবার বিষয়, ১৫ কোটি মানুষের দেশে দেড় লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানানো, তাদের জীবনের সুব্যবস্থা করা মোটেও কঠিন কাজ নয়। এজন্য দরকার উদ্যম এবং সদিচ্ছা। দুইবাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল ইতিহাসের একটি বর্বরতম গণহত্যা। নিঃস্ব, নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর, শান্তিকামী বাংলাদেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একটি সশস্ত্র পাষন্ড বাহিনী। তারা শুরুতেই হত্যা করেছিল লাখো মানুষ। এ হত্যাকান্ডকে যারা আরও মর্মান্তিক করে তুলেছিল তারা হচ্ছে হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনী। যারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবেই আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে চিহ্নিত।বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল, এসব ঘাতক দালালের বিচার করা। সরকার এর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একাত্তরের অন্যতম তিন যুদ্ধাপরাধী নিজামী, সাঈদী এবং মুজাহিদ এখন কারাগারে অন্তরীণ। একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠনের এ তিন নেতাকে একটি মামলায় গ্রেফতার করা হলেও ক্রমে তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে চলে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম অভিযোগটি হচ্ছে, একাত্তরে গণহত্যার প্ররোচনা, বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা এবং অগ্নিসংযোগসহ যুদ্ধাপরাধের বিষয়।যে তিনজন এখন বারবার রিমান্ডের মুখোমুখি হচ্ছেন, তারা কী কী তথ্য দিচ্ছেন তা রাষ্ট্রের জনগণ প্রায় প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় পড়ছেন। অবৈধ অস্ত্র পাচার এবং সংরক্ষণ, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট, ধর্মীয় জঙ্গিবাদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন জঘন্যতম অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের গ্রেফতারের পরপরই কী দৃশ্য দেখল জাতি! দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সরাসরি ঘোষণা দিয়ে বলল, তারা এসব চিহ্নিত মৌলবাদী যুদ্ধাপরাধীর পাশে থাকবে। বিএনপি কথাটি বারবার বলছে। শুধু তাই নয়, তারা মৌলবাদী এ দলটির সঙ্গে প্যারালাল কর্মসূচিও শুরু করেছে। বিএনপি যে দেশের ডানপন্থি একটি কট্টরবাদী দল, তা কারও অজানা নয়। এ দলটিতে যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা কোন বিবেকে এ রাজাকার শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন- তা আমার কাছে বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। জে. মীর শওকত আলী (অব.) কিংবা কর্নেল অলি আহমদের (অব.) মতো বীর মুক্তিযোদ্ধারা শুধু এ রাজাকার ইস্যুতে বিএনপি থেকে সম্পূর্ণ সরে এলেও এখনও কিছু কৃতী মুক্তিযোদ্ধা দলটিতে থেকে গেছেন, যারা আত্মপ্রতারণার মাধ্যমে জাতিকে ধোঁকা দিয়েই যাচ্ছেন মাত্র।বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী শক্তির ভিত যে কত শক্ত, তা চট্টগ্রামে তা-বের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে এর অনুসারীরা। তারা ঠান্ডা মাথায় ভাঙচুর করেছে। আক্রমণাত্মক হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। গোটা দেশে তারা একটি সহিংসতা ছড়ানোর প্রয়াস নিচ্ছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে খবর বেরুচ্ছে।রিমান্ডে জামায়াতের আমির নিজামী বলেছেন, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে অনুতপ্ত হলে না-কি জামায়াতের রাজনীতিই থাকে না। প্রশ্ন হচ্ছে, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল? শুধু কী তারা পাকিস্তানের ইয়াহিয়া-টিক্কা-ফরমান আলীদের রাজনৈতিক সমর্থন করেছিল? না, শুধু তা করেনি। মনে রাখা দরকার, সে সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নেজামে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নামে আরও দুটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল। ওই দুটি দলের নেতারা ততটা ধ্বংসাত্মক ছিলেন না, যতটা ছিল জামায়াতের নেতারা। 'শান্তি কমিটি', রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গড়ে ওঠে এ জামায়াতিদের প্রত্যক্ষ মদদেই। চরম মৌলবাদের অন্ধকার ছড়াতে তারাই ছিল বেশি তৎপর।শঙ্কার কথা হচ্ছে, গেল চার দশকেও তাদের চরিত্র বদলায়নি। তারা একাত্তরে আলবদর, আলশামস বাহিনী তৈরি করেছিল। আর এখন জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরীর, বাংলাভাইসহ অনেকগুলো জঙ্গিবাদী সংগঠন ও ব্যক্তি তৈরি করেছে এবং করছে। জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ, পৃষ্ঠপোষকতার কথা তারা রিমান্ডে স্বীকার করা শুরু করেছে। দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী ড. হুমায়ুন আজাদকে হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিল সাঈদী। এসব তথ্য-প্রমাণ, তার ওয়াজের ভিডিও গোয়েন্দারা তাকে দেখালে তিনি নিজেই মুষড়ে পড়ছেন। এসব খবর পত্র-পত্রিকায় বেরুচ্ছে। ধর্মীয় তমুদ্দুন প্রতিষ্ঠার নামে রাষ্ট্রে দুঃশাসন, তালেবানি শাসন ইত্যাদির ধারণা থেকে জামায়াত মোটেই সরে আসেনি। এ কথাটি গোটা জাতির মনে রাখা দরকার। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বলেছিলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের রুখতে হবে। শহীদ জননীর এ বাণীটিই হোক প্রজন্মের প্রকৃত চেতনা।নিউইয়র্ক, ৭ জুলাই ২০১০ -----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৯ জুলাই ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
false
hm
কামড় ২. "না টুনি, আমি পারবো না!" টোনা ভাঙা গলায় বলে। মনোযোগী পাঠক লক্ষ্য করে থাকবেন, গল্প শুরু হয়েছে দ্বিতীয় চ্যাপ্টার থেকে। গল্পে পরিষ্কারভাবেই দু'টি চরিত্র দেখতে পাচ্ছি আমরা। ১. টোনা ২. টুনি টোনা টুনিকে জানাচ্ছে তার অক্ষমতার কথা। কিন্তু কী এমন কাজ, যা একজন টুনির জন্যে একজন টোনা করতে পারবে না? জানতে হলে, আসুন, আমরা প্রথম চ্যাপ্টারে যাই। ১. টুনি হাসিমুখে দরজা খুলে দিলো। টোনা কলিংবেলের ওপর থেকে আঙুল সরিয়ে নার্ভাস একটা হাসি ফুটিয়ে তুললো মুখে। "হাই ... টুনি! কেমন ... মানে ... কেমন আছো?" টুনি হাসে, ঝিক করে ওঠে তার ঝকঝকে সাদা দাঁত। টোনার বুক গুড়গুড় করে ওঠে। "কাম অন ইন টোনা!" টুনি দরজা মেলে ধরে। টোনা এবার দেখতে পায়, টুনি একটা ছোটো শর্টস পরে আছে কেবল। টিশার্টটা বড় আঁটো হয়ে চেপে বসে আছে টুনির শরীরে। টোনা বহুকষ্টে টুনির খোলা ঊরু থেকে চোখ সরিয়ে টুনির চোখের দিকে তাকায়। ঝকঝকে চোখ, তাতে কীসের যেন বন্য আমন্ত্রণ। টোনা ঢোঁক গিলে ভেতরে ঢোকে। টুনি দরজাটা ধীর গতিতে ভিজিয়ে দেয়, তারপর লীলা লাস্যে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে ওপরের ছিটকিনিটা লাগিয়ে দেয়। ব্রাসের ছিটকিনিটা মিহি হ্রেষাধ্বনি করে ওঠে, টোনা চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকায়। টুনির খোলা পা-ই তার দৃষ্টি কেড়ে নেয় প্রথমে। পায়ের আঙুলের ওপর তখনও ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে টুনি, তার মসৃণ গোড়ালি এসে মিশে গেছে ক্ষীণ দু'টি পায়ের সাথে, সামান্য স্ফীত হয়ে একজোড়া মসৃণ হাঁটু তারপর স্পর্শ করেছে ঊরুর নিম্নাংশ, নিটোল মসৃণ একজোড়া ঊরু মিশে গেছে টুনির সুপুষ্ট নিতম্বের সাথে, ছোট্ট শর্টস রহস্য আড়াল করার খাতিরে কিছু গোপন করেছে শুধু, কিন্তু টোনার চোখকে পুরোপুরি অতৃপ্তও রাখতে পারছে না সেটা। টুনির ক্ষীণ কটির ওপর থেকে সরে গেছে অবাধ্য টিশার্ট, মসৃণ মাখনরঙা চামড়া বেরিয়ে পড়েছে কিছুটা। টোনার চোখ টুনির পিঠ বেয়ে ঘাড়ের কাছে উঠতেই চমকে ওঠে। দরজায় বুক ঠেকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে টুনি, মুখে মিষ্টি বুনো হাসি। টোনার শরীরে কী যেন একটা পরিবর্তন ঘটতে থাকে। সে শরীরের ভর অন্য পায়ে নিয়ে আবার ঢোঁক গেলে। টুনি এবার ঘুরে দাঁড়ায়। হাত দু'টো কোমরের পেছনে বেঁধে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায় সে। টোনার চোখ নেমে আসে টুনির গলা বেয়ে। বুকের কাছে এসে আটকে যায় তার চোখ। টুনি ব্রা পরেনি। টুনি ইচ্ছে করেই আরেকটু হেলান দেয় পেছনে, তার সুডৌল বুক যেন টিশার্টের আবরণের আড়াল থেকে আরো উদ্ধত চোখে তাকায় টোনার দিকে। টোনা পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মোছে, তারপর বহু কষ্টে চোখ তোলে টুনির চোখের দিকে। টুনি আবারও হাসে। মিষ্টি, একটু হিংস্র হাসি। টোনা দেখে, টুনির দাঁতগুলো শুধু সাদাই নয়, বেশ তীক্ষ্ণও বটে। টুনির চোখে হাসি নেই। শিকারী যেমন করে শিকারকে লক্ষ্য করে, সতর্ক, ঠাণ্ডা চোখে, তেমনই এক আদিম মনোযোগ নিয়ে টুনি চেয়ে আছে টোনার দিকে। "ইয়ে ... আন্টি বাসায় নেই?" টোনা ভাঙা গলায় প্রশ্ন করে। টুনি ঠোঁট গোল করে বলে, "না!" টোনা এদিক সেদিকে তাকায়, হাত দু'টোকে কোথায় রাখবে, বুঝে উঠতে পারে না। "তা ... ইয়ে, মানে ... ।" "জুতো খোলো।" টুনি আদুরে গলায় বলে। টোনা চমকে উঠে নিজের জুতোজোড়ার দিকে তাকায়। খুব একটা উজ্জ্বল দেখাচ্ছে না ওগুলোকে। লজ্জায় টোনার গাল বেগুনি হয়ে ওঠে। "শিওর ... মানে, সরি ... খেয়াল হয়নি ...।" সে এক হাঁটু মেঝেতে রেখে অন্য পায়ের জুতোর ফিতেয় হাত রাখে। টুনি দরজা ছেড়ে এগিয়ে আসে টোনার দিকে। অন্য পায়ের জুতো খুলতে গিয়ে টোনা অনুভব করে, টুনি তার এক পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধের ওপর আলতো করে হাত রেখেছে। টোনার শরীর শক্ত হয়ে ওঠে। জুতো খোলার পর টোনা উঠে দাঁড়ায়। টুনি তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। টোনা শ্বাস নিতে গিয়ে টুনির চুলের মিষ্টি একটা গন্ধ পায় নাকে। সে পরবর্তী শ্বাসটা আরো গভীর করে নেয়। টুনি টোনার বুকের ওপর আলগোছে একটা হাত রেখে বলে, "মোজাও খোলো!" টোনার বুকটা ধ্বক করে ওঠে। টুনি বোধহয় সেই ধুকধুকানি টের পেয়েই হাতটা মন্থর, সর্পিল গতিতে সরিয়ে নেয়, তার মুখে একই লয়ে এক বিচিত্র হাসি ফুটে ওঠে। টোনা দেখে, টুনিকে যেন বড় বেশি ফর্সা লাগছে আজ। কিন্তু কেমন যেন প্রাণশূন্য এক ভাব তাতে, তার মুখের স্বাভাবিক রক্তিমাভা যেন আজ এই সন্ধ্যায় পুরোই অনুপস্থিত। টোনার মুখটা লালচে হয়ে ওঠে, সে আমতা আমতা করে বলে, "মোজা না খুললে হয় না?" টুনি ভুরু নাচিয়ে বলে, "কেন?" টোনা বিব্রত মুখে বলে, "মানে ... মোজা তো একটু ... মানে ...।" টুনি হাসিমুখে বলে, "শু র‌্যাকে দেখো একটা স্প্রে আছে।" টোনা একটা নিচু টুলে বসে এবার মোজা খুলে ফেলে, তারপর জুতো আর মোজা নিয়ে এগিয়ে যায় শু র‌্যাকের দিকে। স্প্রে করে নিজের পায়ে। টের পায়, তার কানের পেছনে এসে জমা হয়েছে শরীরের সব রক্ত। "স্লিপার আছে একজোড়া, কালো, পরে এসো।" টুনির কণ্ঠ টুংটাং বেজে ওঠে। টোনা বলে, "এগুলো পরবো?" একজোড়া কালো স্লিপার বার করে সে। টুনি খসখসে, মদির কণ্ঠে বলে, "ওগুলোই পরবে শুধু। বাকি সবই খুলতে হবে।" মনোযোগী পাঠককে উদ্দেশ করে কথা আগে বলেছি, মনোযোগের অভাবে মনোযোগী পাঠিকাদের কিছু বলা হয়নি। আপনারা দুই পক্ষই লক্ষ্য করে থাকবেন, গল্পটা কেমন যেন ইয়ে। তাই আসুন, দেরি না করে প্রথম চ্যাপ্টারের দ্বিতীয় অংশে যাই। ১.খ. টুনির হাসিটা তার চোখকে স্পর্শ করে না। সে শিকারীর ঠাণ্ডা চোখ মেলে টোনাকে দেখে। টোনা কুলকুল করে ঘামে। "ইয়ে ... মানে ... তোমাদের বুয়াকে বলো না একটু ঠাণ্ডা পানি দিতে ...।" টুনি মাথাটা পেছনে হেলিয়ে হাসে। "নেই! বুয়া নেই বাসায়। বুয়া নেই, আম্মু নেই, আব্বু নেই! বাসায় আমরা একা! শুধু তুমি আর আমি। টোনা আর টুনি। অ্যান্ড উইভ গট টু মোর আওয়ারস অন আওয়ার ট্যাব!" টোনা ঢোঁক গেলে, "কেন ... মানে, কেউ নেই কেন ...?" টুনি কাঁধ ঝাঁকায়, তার টিশার্টের নিচে শরীরের আরো খানিকটা নড়ে ওঠে ছটফটে বেড়ালের মতো। টোনা টের পায়, তার শরীরের সব রক্ত এখন শিরা-ধমনীর মহাসড়ক বেয়ে যাত্রা করছে এক দুর্গম গন্তব্যে। পৃথিবীর সব পথই যেমন রোমের দিকে ছোটে। টুনি কোমরে হাত রেখে একটা পা অন্যটার সাথে সমকোণে রেখে দাঁড়ায়। "ওয়েল, তুমিই না সেদিন ফোনে বলছিলে, আমাকে একা পেলে কী সব করবে?" টোনা গলা খাঁকারি দেয়। "হ্যাঁ .. কিন্তু ...।" টুনির কণ্ঠস্বর চাবুকের মতো আছড়ে পড়ে। "কোনো কিন্তু নাই। একা চেয়েছিলে, এখন একা পাচ্ছো। নাউ শো মি হোয়াট ইউভ গট!" টোনার মনে হয়, তার হাঁটুর কাছটা জেলি দিয়ে তৈরি। সে যেন ঠিক বল পায় না ওখানে। টুনি এবার এগিয়ে আসে নরম, মন্থর পায়ে। টোনা ঘামতে থাকে। টুনি টোনার হাত ধরে আলতো করে। "কাম অন! আসো আমার সাথে।" টোনা ধীর পায়ে এগিয়ে যায় টুনির হাতে বন্দী হয়ে। টুনির শোবার ঘর একটা করিডোরের শেষ মাথায়। দরজায় আতিফ আসলামের একটা পুরনো পোস্টার সাঁটা। সেটার ওপরে আবার সাইনপেন দিয়ে নানা আঁকিবুঁকি কাটা। করিডোরের বাল্বটা বাইরের ঘরের মতো উজ্জ্বল নয়, চল্লিশ ওয়াটের একটা ল্যাম্প জ্বলছে বৃদ্ধ আগুনের মতো। টুনি নিজের ঘরের দরজা খুলে একটু রুক্ষ হাতে টোনাকে টেনে আনে ভেতরে। টুনির ঘরে আলো আরো কম, নিবু নিবু একটা আলো জ্বলছে টুনির পড়ার টেবিলের পাশে। টুনির ঘরটা অগোছালো। টেবিলের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা বই, কাগজ, একটা ল্যাপটপ স্লিপ মোডে জ্বলছে আর নিভছে নিঃশব্দ অ্যামবুলেন্সের বীকনের মতো। একটা বড় উফার তার পাশে। আরো কয়েকটা ছোটো ছোটো স্পিকার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঘরে। টুনির ঘরের দেয়ালে আরো কিছু ছোটো ছোটো পোস্টার, সেই পুরুষদের মধ্যে রজার ফেদেরার বাদে বাকিদের চিনতে পারলো না টোনা। টুনির বিছানায় তিনটা শাঁসালো পুতুল, একটা শিম্পাঞ্জি, একটা পাণ্ডা আর একটা খরগোশ। ঘরের অন্য প্রান্তে একটা বড় আয়না ঝুলছে। টুনি নিজের ঘরের ছিটকিনিও তুলে দেয় অস্থির হাতে। তারপর টোনাকে ঠেলে ঘরের মাঝে নিয়ে আসে। "দাঁড়াও এখানে।" টুনি ল্যাপটপের কাছে এগিয়ে যায়। "একটা গান শোনাই তোমাকে।" টোনা ঘাম মোছে রুমাল দিয়ে। টুনির ঘরে এয়ার কুলার চলছে, হঠাৎ তার সারা শরীর যেন শীতে কেঁপে ওঠে। টুনি ল্যাপটপে খুটখাট করে। স্লিপ মোড থেকে জেগে উঠে ড্রাগনের মতো চোখ মেলে তাকায় মনিটরটা। টোনা ওয়ালপেপারটা অর্ধেকটা দেখতে পায়, কোনো একটা পোস্টারের ছবি, কীসের ছবি বোঝা দায়। হঠাৎ ঘর কাঁপিয়ে বেজে ওঠে একটা কণ্ঠস্বর, "টু থ্রি ফোর ... উ হু।" বেইজের ধাক্কায় টোনার শরীরে অ্যাড্রিনালিন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কেটি টানস্টলের বিগ ব্ল্যাক হর্স অ্যান্ড দ্য চেরি ট্রি ঝনঝন করতে থাকে সমস্ত ঘরে। Get this widget | Track details | eSnips Social DNA টুনি ড্রামের কিকের তালে তালে পা ফেলে এগিয়ে আসে টোনার দিকে। টোনা দম বন্ধ করে ফেলে নিজের অজান্তেই। টুনির ঘরের আলোটা ঠিক স্বাভাবিক নয়, কোনো একটা কারণে টুনির টিশার্ট অনেক স্বচ্ছ দেখাচ্ছে এই আলোয়। টুনি সর্পিল ভঙ্গিতে টোনাকে পাশ কাটিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে। পিঠে টুনির নরম শরীরের স্পর্শ পেয়ে টোনা চমকে ওঠে হঠাৎ। টুনির শরীরটা এমন ঠাণ্ডা কেন? ঠিক যেন মৃত মানুষের মতো! টুনি হয়তো আবারও টোনার হঠাৎ চমকে ওঠা হৃৎপিণ্ডের মোর্সকোড পড়ে ফ্যালে, টোনাকে ছেড়ে দিয়ে সে এবার দুই হাত ঘাড়ের কাছে নিয়ে ঘুরপাক খায়। টোনা ঘুরে টুনির মুখোমুখি হয়। "এইবার শোনো ... লাভার বয় ...," টুনি গানের তালে বলে, "তুমি হচ্ছো আমার বিগ ব্ল্যাক হর্স! আর আমি তোমার চেরিগাছ, ঠিকাছে?" টোনা সম্মোহিতের মতো টুনির শরীরের বাঁক দেখতে থাকে। টুনি হাসিমুখে পিছিয়ে যায়। "ফোনে তুমি রোজই কামড় দিতে চাও। এখন কামড়াও দেখি কতো পারো?" টোনা ঢোঁক গেলে। টুনি গানের তালে টিশার্টটা আস্তে আস্তে ওপরের দিকে তুলতে থাকে। টোনার মনোযোগ কেড়ে নেয় টুনির নাভি। ফ্যাকাসে সাদা দেখাচ্ছে টুনির পেটের চামড়া, হয়তো এই ঘরের আলোর জন্যেই, সমতল পেটে মৃদু একটা স্ফীতি আছে, তার মাঝে অগভীর নাভি সাইক্লপসের চোখের মতো নিষ্পলক তাকিয়ে আছে যেন টোনার দিকে। টোনা হঠাৎ শিউরে ওঠে, মনে হয়, টুনি যেন মানুষ নয়, অন্যকিছু! টুনি টোনার ওপর থেকে চোখ সরায়নি এক পলকের জন্যেও। গানের লয় ঠিক রেখে সে এক পাক ঘোরে এবার, তার ঝকঝকে কালো চোখ বিদ্ধ টোনার ওপর। টিশার্টের পাড় মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে টুনির শরীর অতিক্রম করে, তারপর ছিটকে পড়ে মেঝেতে। টোনা এক বিঘত হাঁ করে তাকিয়ে থাকে টুনির উন্মুক্ত বুকের দিকে। টুনির খয়েরি স্তনবৃন্ত জোড়া সেই মনোযোগ যেন ফিরিয়ে দেয়। "টোনা!" মিষ্টি গলায় ডাকে টুনি। টোনা চমকে উঠে টুনির মুখের দিকে তাকায়। "কোথায় কামড়াতে চাও?" টুনি ডান হাতের তর্জনী বোলায় নিজের নাভির চারপাশে। "এখানে?" টোনা দরদর ঘামে শুধু। টুনির আঙুল তার ফ্যাকাসে চামড়ার ওপর একটা অলস গোখরোর মতো ধীর, নিশ্চিত ভঙ্গিতে রয়েসয়ে ওপরে ওঠে। বাম স্তনবৃন্তের ওপর আঙুল রেখে টুনি আবার প্রশ্ন করে, "নাকি এখানে?" মনোযোগী পাঠকপাঠিকা বুঝতে পারবেন, গল্পের দ্বিতীয় চ্যাপ্টার শুরু হয় তখনই। তবে এখন পরিস্থিতি খুবই টানটান, বেশি বিরতি না নিয়ে পরের চ্যাপ্টারে যাওয়া মঙ্গল। শুভস্য শীঘ্রম। ৩. টুনির দাঁত ঝিক করে ওঠে ঘরের ম্লান আলোয়। সাদা, ধারালো দাঁতের পাটি। টুনির ঠোঁট জোড়াও টকটকে লাল দেখাচ্ছে এ ঘরে, অথচ বাইরের ঘরে স্নিগ্ধ হালকা একটা শেড বলে মনে হয়েছিলো টোনার কাছে। ব্যাপারটা কী? "কেন, বীরপুরুষ?" টুনি হাসে নিঃশব্দে। "পারবে না কেন?" টোনা কপালের ঘাম মোছে। গানটা আবার শুরু থেকে বেজে ওঠে। লুপ করে রেখেছে টুনি। ড্রামের কিকের লয়কে ছাড়িয়ে টোনা নিজের কানের কাছে রক্তস্রোতের তাল শুনতে পায়। তার হৃৎপিণ্ড বহুগুণিত লয়ে রক্ত পাম্প করে যাচ্ছে গোটা শরীরে। টুনির হাসিটা এবার তার দৃষ্টি থেকে কিছুটা হিংস্রতা ধার নেয় যেন। "কাপুরুষ!" টোনা মুখ খোলে, তারপর আবার চুপ করে যায়। টুনিকে বলা কি ঠিক হবে? "তোমাকে আমি বহুবার ডেকেছি আগে। বলেছি আসো। সকালে কেউ থাকে না বাসায়। আসোনি তুমি। তোমার বাহাদুরি সব ফোনে!" টোনার হঠাৎ খুব গরম লাগতে শুরু করে। সে অস্থির ভঙ্গিতে গেঞ্জিটা মাথার ওপর দিয়ে গলিয়ে বার করে আনে। "আচ্ছা!" টুনি কোমরে হাত রেখে একটু সামনে ঝুঁকে গা দুলিয়ে হাসে। "সাহস বাড়তে শুরু করেছে দেখি!" টোনা বলে, "না, টুনি, তুমি বুঝতে পারছো না ... ।" টুনি টোনার স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরা শরীরে চোখ বুলায়। "নট ব্যাড টোনা। আরেকটু এক্সারসাইজ করলেও তো পারো। ইউ ডু হ্যাভ সাম পোটেনশিয়াল, জানো সেটা?" টোনা অসহায় ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকায়। টুনি এগিয়ে এসে টোনার কাঁধে হাত রাখে। "এইবার বলো, ইউ ড্যাম উস! এতদিন যে বাসায় আসতে বললাম, আসোনি কেন?" টোনার শরীরটা আড়ষ্ট হয়ে যায় টুনির হাতের নিচে। "তোমাকে তো বলেছি টুনি, আমি দিনের বেলা ... দিনের বেলা একটু ব্যস্ত।" টুনি টোনার একটা হাত তুলে নিয়ে নিজের স্তনের ওপর চেপে ধরে। নরম একটা স্পর্শে টোনার করতল ভরে ওঠে। "তুমি এতোই ব্যস্ত যে এর জন্যেও তোমার সময় হয় না?" টুনি হাসে। টোনা নির্জীবের মতো টুনির শরীর স্পর্শ করে শুধু। "হ্যাঁ ... মানে, হ্যাঁ ...।" টুনি ফিসফিস করে বলো, "গো অন ... ফিল দেম!" টোনা কাঁপা হাত রাখে টুনির শরীরে। "কী কাজ তোমার সকালে? একটা দিনও তো সকালে দেখা করতে চাও না! লুকিয়ে অন্য মেয়ের সাথে ডেইট মারাও?" টুনি হিসহিস করে বলে। টোনা বিব্রত ভঙ্গিতে বলে, "না, আমি ... আমি সত্যিই ব্যস্ত ...।" টুনির ধারালো দাঁতের পাটি বার হয়ে আসে আবার। "ঠিকাছে! নো প্রোবলেমো! এখন তো সন্ধ্যা। সন্ধ্যাই ভালো। আই ফিল অ্যালাইভ আফটার সানসেট!" টোনা ঢোঁক গেলে। "কামড় দাও!" টুনির কণ্ঠস্বর আবার চাবুকের মতো আছড়ে পড়ে ঘরে। "দেখি তুমি কেমন কামড়ুজ্জামান!" টোনা চোখ বোঁজে, তারপর চোখ খুলে ঠাণ্ডা গলায় টুনিকে বলে, "দেখো টুনি ... আমি আসলেই কামড়াতে পারবো না। তারচে আসো আসল কাজ শুরু করি।" টুনি টোনাকে নিজের শরীরের সাথে চেপে ধরে। "উইইই ... থিংস আর গেটিং হার্ড ফর ইউ ডিয়ার! কেন, কামড়াতে সমস্যা কোথায়? এই যে রোজ রাতে কামড়ের লোভ দেখিয়ে গরম করো আমাকে ... আজকে কামড়াতে গিয়ে তোমার দাঁত কাঁপে কেন?" টোনা নিজেকে টুনির আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে আনে। "সরি টুনি ... আমি তোমাকে বলতে পারবো না।" হাত বাড়িয়ে টুনির শর্টসের ইলাস্টিকের ভেতর আঙুল ঢোকায় টোনা। "নট সো ফ্যাস্ট টোনা!" টুনির চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। "আই ওয়ান্ট সাম নিবলস!" টোনা মাথা নাড়ে। "না, টুনি ... পারবো না!" টুনি পিছিয়ে আসে এক পা, তারপর জ্বলন্ত চোখে টোনার দিকে তাকিয়ে বলে, "কেন? পারবা না কেন?" টোনা কিছু বলে না। টুনি হিসিয়ে ওঠে, "ফ্যাগট কোথাকার!" টোনার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, একটানে সে স্যাণ্ডো গেঞ্জি খুলে ফেলে। তারপর অস্বাভাবিক ক্ষিপ্রতায় খুলে ফেলে ট্রাউজার্স আর আন্ডি। নগ্ন শরীর সামনে ঝুঁকিয়ে সে শক্ত হাতে টুনির বাহু আঁকড়ে ধরে। "সত্যি শুনতে চাও, কেন তোমাকে কামড়াতে পারবো না?" টুনি ঢলে পড়ে টোনার হাতে। "হুঁ। চাই। টেল মি অল অ্যাবাউট ইট।" আদুরে গলায় বলে সে। টোনা ফিসফিস করে বলে, "আমি তোমাকে কামড়াতে পারবো না, কারণ আমি একজন ভ্যাম্পায়ার!" টুনি হেসে ফেলে, ঘরের ম্লান আলোয় ঝকঝক করে ওঠে তার চোখা দাঁতগুলি। "বটে? ভ্যাম্পায়ার? তুমি? হা হা হা! টোনা ... তুমি পারোও বটে!" টোনা হাসে না, তীব্র চোখে তাকায় টুনির দিকে। টুনির মুখের হাসিটা সামান্য ম্লান হয়। টোনার হাত এত ঠাণ্ডা কেন? "প্রমাণ চাও?" টোনা মৃদু গলায় বলে। টুনি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়ে। প্রমাণ চায় সে। টোনা পলকের মধ্যে টুনিকে এক হাতে শূন্যে তুলে এনে হাজির করে ঘরের এক প্রান্তে বড় আয়নাটার সামনে। ঝকঝকে কাঁচে সেখানে প্রতিফলন পড়েছে টুনির অর্ধনগ্ন শরীরের। টোনাকে সেখানে দেখা যাচ্ছে না, যদিও টুনির ঠিক পাশেই সে দাঁড়িয়ে। টোনা ভুদাই হতে পারে, মিথ্যুক নয়। সিকোয়েল পড়ুন এখানে।
false
fe
ক্ষমতাবানদের স্বপ্নচূড়া, গণমানুষের হাঁটার সড়ক ক্ষমতাবানদের স্বপ্নচূড়া , গণমানুষের হাঁটার সড়ক ফকির ইলিয়াস------------------------------------------------------------------ভোলা-৩ আসনে উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করছে। আর প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, বলছে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছিলেন। পরাজিত হয়েছিলেন, বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনের অনেকগুলো পরিচয় আছে। তিনি সামরিক বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা। অনেক বিতর্ক আছে তার কর্মকা- নিয়ে। তিনি বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন বিভিন্ন ক্যু তে। তার নেপথ্য মদদ জোগানোর বিভিন্ন কাহিনী পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সর্বশেষ, তিনি ডিগবাজি খান, ওয়ান-ইলেভেনের পরে। নিজ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে অন্য একটি কমিটির মহাসচিব হন তিনি। নিজেকে 'সংস্কারপন্থি' হিসেবে পরিচিত করেন।ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে হাফিজ উদ্দিনের বক্তব্য কী ছিল। তা এখনও পত্রপত্রিকা ঘাঁটলে পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, মান্নান ভূঁইয়া, আশরাফ হোসেনসহ দু-চার জনকে ক্ষমা না করলেও মেজর (অব.) হাফিজকে কাছে টেনে নেন। 'সাধারণ ক্ষমা' ঘোষণা করেন তার প্রতি।নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ঐতিহাসিক ভরাডুবির পর, বিএনপি উঠে দাঁড়ানোর জন্য এই তরিকা অবলম্বন করে বলে অনেকে মনে করেন। যদিও গেল দেড় বছরে বিএনপি এখনও ঘর গুছিয়ে উঠতে পারেনি।ভোলা-৩ আসনে উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল বিএনপি। তাদের ধারণা ছিল মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এবং বিএনপি প্রার্থী এই আসনে ব্যাপক ভোটে বিজয়ী হবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট বেড়েছে।আসনটি যে বিএনপির ছিল এমনও নয়। তারপরও খোন্দকার দেলোয়ার, ব্যারিস্টার মওদুদ, খন্দকার মোশাররফ প্রমুখ নেতারা কেন এই আসনটির জন্য এত লোভী হয়ে উঠেছিলেন? কারণ তারা মনে করেছিলেন, এসব ধানাই-পানাই বক্তব্য দিলেই জনগণ তাদের পক্ষে দাঁড়াবে। অথবা এটাও হতে পারে তারা এই আসনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে একটা আন্দোলনের পথ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আপাত দৃষ্টিতে দ্বিতীয় কারণটিই বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, কোন ক্ষমতাসীন দলের অধীনে উপনির্বাচনে বিরোধীদল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জিততে পারে না। এর কারণ হলো, জনগণ ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার জন্য সরকারি দলীয় এমপি চায়। অন্যদিকে প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোও সরকারের প্রতি এক ধরনের মৌন সমর্থন দিয়ে যায়।অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই সরকারি পেশিতন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার কি করেছে বিএনপি। এই সেই বেগম জিয়া যিনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি কোনদিনই বাংলাদেশে করতে দেয়া হবে না। 'শিশু' ও 'পাগল' ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ নয়। ইত্যাদি ইত্যাদি। তার প্ররোচণায় ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।২০০১-এ যখন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বিচারপতি লতিফুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও কোন ছলাকলার আশ্রয় নেয়নি। অষ্টম জাতীয় সংসদে চারদলীয় জোট জিতে।কিন্তু অষ্টম জাতীয় সংসদের শেষ দিনগুলোতে কী দেখল বাংলার মানুষ? হাওয়া ভবনের নেপথ্য নায়করা ক্রীড়নকের দায়িত্ব নিলেন। তারা অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করে শেষ পর্যন্ত 'সাংবিধানিক দোহাই' দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকেই তত্ত্বাবধায়কের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলেন। তারপর ঘটে গেল আরও অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা। এর নেপথ্য ইচ্ছেটি ছিল, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে স্থায়ী রূপলাভ দেয়া। বাংলাদেশে 'মিস্টার টেন পার্সেন্ট' খ্যাতি পেয়েছিল এই হাওয়া ভবনধারীরা।ছাত্রদলের একটি সমাবেশে এখনও বেগম জিয়া যেসব দুর্নীতিবাজদের পক্ষে কথা বলেছেন, তা একটি টিভি চ্যানেলে দেখলাম, সরকার দেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন খান মামুনের 'চ্যানেল ওয়ান' বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার বলেছে, চ্যানেল ওয়ান, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি বলেই তা বন্ধ করা হয়েছে। সরকারি ধারাবাহিকতায়, নিয়মানুযায়ী তা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ বেগম জিয়া সরাসরি বলেছেন, চ্যানেল ওয়ান চালু করতে হবে।বাংলাদেশে ভাল রাজনীতির চর্চার খুবই অভাব। তারপর আবার যদি রাজনীতিকরাই প্রকাশ্যে দুর্নীতিবাজদের সাফাই গাইতে থাকেন, তাহলে জনগণ দাঁড়াবে কোথায়? প্রতিহিংসার রাজনীতি সমাজকে শুধু ধ্বংসই করে না, সমাজের ভিত্তিও ক্রমশ নিঃশেষ করে দেয়। পত্রিকায় দেখলাম, খালেদা জিয়া ড. ফখরুদ্দীন আহমদ, জে. (অব.) মইন উ আহমেদের বিচার করার ঘোষণা দিয়েছেন। কেন তার এই ক্ষোভ? ওয়ান ইলেভেন তাদের 'স্বপ্নেরচূড়া' ধ্বংস করে দিয়েছিল বলে?বাংলাদেশের মজলুম মানুষের কোন স্বপ্নচূড়া নেই। তাদের রয়েছে বেঁচে থেকে হেঁটে যাওয়ার ছোট্ট সড়ক। তারা সেই সড়কের দু'ধারেই স্বপ্নের বাগান নির্মাণ করে যান। ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা যদি সেই বাগানটির সামান্য পরিচর্যা করতেন, তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্নরকম হতো।সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান সরকার সব দাবি পূরণ করতে পারছে না। এটা তাদের অপারগতা, ব্যর্থতা। আর বিরোধীদল আগুনে ঘি ঢালছে। তাদের মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। জনসেবা নয়। স্পিকার আবদুল হামিদ নিউইয়র্কে এক সমাবেশে বলে গেছেন, বাংলাদেশ দুর্বৃত্তদের টাকা বানানোর জন্য বিশ্বের প্রধানতম দেশ! স্বয়ং স্পিকারের মুখে এ কথা কি প্রমাণ করে না, দেশের প্রকৃত অবস্থা কী! এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। গণমানুষের হাঁটার সড়ক নির্মাণে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিকদের ভন্ডত্বের লেবাস খুলতে হবে প্রজন্মকেই।নিউইয়র্ক , ২৭ এপ্রিল ২০১০========================================দৈনিক সংবাদ / ঢাকা / ৩০ এপ্রিল ২০১০ শুক্রবারছবি- পিল লিয়েরো
false
rg
ছোটগল্প- চিঠি !! (পর্ব-২) হ্যা, আমার নাম চিঠি। সবাই আমাকে চিঠি নামেই চেনে। তবে আমি আসলে গৌরী'র লেখা চিঠি। দেবোজিতকে লেখা গৌরী'র চিঠি। ডুমুরিয়ার হাট বসে সোমবার আর শুক্রবার। ডুমুরিয়ার ডাক-হরকরা কদম আলী সাধারণত হাটের দিন সবাইকে চিঠি বিলি করেন। আর রবিবার ও বিষ্যুদবার সবার চিঠি নিয়ে কদম আলী থানা সদরে যান। সবার চিঠি ডাকে ধরিয়ে দেন আর নতুন আসা চিঠি নিয়ে ফেরেন। কেবল রেজিঃস্ট্রি চিঠি, টেলিগ্রাম, আর কোনো পার্সেল থাকলে কদম আলী প্রাপকের বাড়িতে গিয়ে তা হাতেহাতে পৌঁছে দেন। নতুবা সব চিঠি কদম আলী ডুমুরিয়া বাজারে অম্বরেশ বাবু'র দোকানে রাখেন। সবাই ইচ্ছে করলে যাতে অম্বরেশ বাবু'র দোকান থেকে চিঠি সংগ্রহ করতে পারে অথবা চিঠি পোস্ট করতে পারে। গৌরী'র বিধবা মাসীমা'র ছোট ছেলে সৌরভ এখন ক্লাস এইটে পড়ে। সৌরভের মাধ্যমেই গৌরী চিঠি পোস্ট করেছিল। খামের উপর ইংরেজিতে দেবোজিতের ঠিকানা দেখে কৌতুহল নিয়ে সৌরভ খাম খুলে আমাকে একবার পড়েছিল। তাড়াহুড়ায় খাম ঠিকমতো আটকাতেও ভুলে গেছে সৌরভ। সেটা ছিল সোমবার হাটের দিনের ঘটনা। তারপর মঙ্গল ও বুধবার আমি অম্বরেশ বাবু'র দোকানের ক্যাশবাক্সের পাশে অন্যান্য চিঠির সঙ্গে চুপচাপ বসে ছিলুম। বিষ্যুদবার সকালে কদম আলী আমাকে হাতে নিলেন। খাকি রঙের কাপড়ের থলের ভেতর আমাকে ও অন্য সবাইকে পুশ করে কদম আলী থানা সদরের দিকে হাঁটা ধরলেন। হরিপাগলার বটগাছ পর্যন্ত এসে কদম আলী একটু বসলেন। চারপাশে ফাঁকা। দূরে ধু ধু গ্রাম। হরিপাগলার বটগাছের তলায় কদম আলী একা। কদম আলী'র মনে কি কৌতুহল উদয় হল? বটগাছ তলায় খাকি থলে খুলে একে একে সব চিঠি একবার চেক করলেন। আমার খামের মুখ ঠিকমতো বন্ধ না দেখে আমাকে খুলে একবার পড়লেন। কদম আলী'র ঝোলায় একটা প্লাস্টিকের কৌটা থেকে গাম নিয়ে আমার খামের মুখ বন্ধ করলেন। তারপর অন্যান্য চিঠিপত্রগুলো একটু নেড়েচেড়ে দেখে কদম আলী ঝোলা গুছিয়ে আবার থানা সদরের দিকে হাঁটা ধরলেন। সাধারণত বিষ্যুদবারের ডাক থানা সদর থেকে জেলা সদরে পৌঁছায়। শুক্র আর শনিবার সরকারি ছুটি। তাই এই দুই দিন জেলা সদরের প্রধান ডাকঘরে সারা জেলা থেকে আসা চিঠি'র সঙ্গে আমাদের ঘুমিয়ে থাকার নিয়ম। রবিবার সকালে যখন আমাদের চিঠি মহলের ঘুম ভাঙলো, তখন জেলা সদরের প্রধান ডাকঘরে ভারী ব্যস্ততা। একটা পাটের বস্তায় গোটা জেলা থেকে আসা চিঠি'র সঙ্গে আমাকেও বস্তাবন্দি করলো তারা। তারপর রাজধানী ঢাকা-গামী একটা লঞ্চে আমাদের তুলে দেওয়া হল। রবিবার সারাদিন, সারারাত সেই লঞ্চে আমরা চুপচাপ ঘুমিয়ে কাটালাম। ঢাকা-গামী লঞ্চে অবশ্য ঘুমটা একটু আরামেই হল। নাসের মুন্সী'র নারকেলের ছোবড়া'র ব্যবসা। ওই লঞ্চের ডেকে সুন্দর ভাবে নাসের মুন্সী নারকেলের ছোবড়া দিয়ে বিশাল সাইজের ভারী উঁচু এক বিছানা বানালেন। সেই বিছানার উপরে একপাশে নাসের মুন্সী ঘুমানোর জন্য রাখলেন। আরেক পাশে আমাদের চিঠির বস্তা রাখা হল। নাসের মুন্সী'র নিজের ঘরে কোনো জাজিম নেই। কিন্তু তার নারকেলের ছোবড়া ঢাকায় পৌঁছানোর পর বড়লোকদের ঘরে তা জাজিম হয়ে পৌঁছে যায়। মাঝখানে লঞ্চ পথের সময়টুকু নাসের মুন্সী সেই প্রাগ-জাজিমের উপর শুয়ে প্রায় সারারাতই আল্লাহ-রাসুলের নামে ভারী গুনকীর্তন করলেন। কখনো কখনো `হায়-মাবুদ' বলে ভারী বড় বড় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন নাসের মুন্সী। নাসের মুন্সী কখনো সুরা-কালাম পড়েন আবার কখনো সুর করে গান করেন। লঞ্চের প্রচণ্ড শব্দে নাসের মুন্সী'র সেই সুরা-কালাম আর গান আলাদা করা যায় না। এভাবে কখনো ঘুম কখনো-বা বিরক্তকর জাগরণের মধ্যে সোমবার সকালে সেই লঞ্চ ঢাকার সদরঘাট পৌছালো। লঞ্চের যাত্রীরা নেমে যাবার পর আমাদের চিঠির বস্তা এনে রাখা হল সদরঘাটের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমে। সেখানে অন্যান্য লঞ্চে আসা আমাদের মতো আরো অনেক চিঠির বস্তা একে একে জমা হল। বেলা এগারোটার দিকে জিপিও থেকে একটা লাল রঙের গাড়ি এসে আমাদের সেখান থেকে তুলে নিল। জিপিও। জেনারেল পোস্ট অফিস। রাজধানী ঢাকা'র জিপিও হল দেশের সবচেয়ে বড় পোস্ট অফিস। সারা দেশ থেকে আসা কতো হাজার হাজার চিঠি'র সমাহার সেখানে। আমাদের বস্তা খুলে বাছাই করা হল। আমাকে রাখা হল আন্তর্জাতিক ডাকের কার্টুনে। সেখানে বিশ্বের নানান দেশে যেসব চিঠি যাবে তাদের সঙ্গে আমিও যুক্ত হলাম। সোমবার রাতে তাদের সঙ্গেই সেই কার্টুনে থাকলাম। মঙ্গলবার সকালে আমাকে আবার আলাদা করে কানাডা নামে এক কার্টুনে রাখা হল। সেখানে কানাডায় যে সব চিঠি যাবে তাদের সঙ্গেই আমি সেই কার্টুনে ঢুকলাম। এই কার্টুনের বৈশিষ্ট্য হল, এখানে খামের উপর সবার ঠিকানা ইংরেজিতে লেখা। এমন কি কার্টুনের নামও ইংরেজিতে লেখা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমাদের কার্টুন একটা লাল রঙের গাড়িতে করে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হল। মেশিনের উপর আমাদের কার্টুন ওজন করা হল। তারপর কি সব দাঁত-ভাঙা ইংরেজিতে যত্তোসব কোড লেখা ট্যাগ আমাদের কার্টুনের গায়ে সাঁটা হল। তারপর আরো কতো কতো পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটা বোয়িং ৭৭৭ বিমানের পেটের মধ্যে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল। ...........................চলবে..............................
false
mk
জঙ্গি দমনে সচেতনতা মানুষই শক্তি। যুগে যুগে একথা শুনিয়েছেন জ্ঞানী-গুণী ও সুধীজনে। তথ্য-প্রযুক্তির বিস্ময়কর বিপ্লবের যুগে আজও এই সত্য সব সত্যের চাইতে মহাসত্য হিসেবে দণ্ডায়মান। এ কারণেই আজ চীনের ১৩০ কোটি এবং ভারতের ১২০ কোটি মানুষ এখন আর বোঝা নয়, সম্পদ। শুভ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলে একাই একজন মানুষ দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য অনেক কিছু করতে পারে, যার অজস্র উদাহরণ আছে। তবে একজনের সঙ্গে পাঁচজন, দশজন একত্র হলে জ্যামিতিকহারে মানুষের শক্তি বাড়ে। জনমানুষ সচেতন হলে কি রকম অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় তার উদাহরণ ইতিহাসে ভুরি ভুরি, বাঙালিদের ইতিহাসেও তা রয়েছে। আর জনমানুষের উত্থান সবসময় শুভ মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে হয় এবং তার পক্ষে হয়। অমোঘ নিয়তি এবং আধুনিক যুগের যৌক্তিক দর্শনের শক্তিবলে সবসময় চূড়ান্ত বিচারে শুভ শক্তির জয় হয়েছে, জনমানুষ কখনো অশুভ শক্তির পক্ষে যায়নি। তত্ত্বকথার সূত্র ধরে এখন আসল কথায় আসি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটা টেকঅব পর্যায়ে আছে। চলমান ক্রান্তিকাল বা টার্নিং পয়েন্ট সফলভাবে অতিক্রান্ত করতে পারলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটা মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু কোনো যুগেই কোনো দেশের ক্রান্তিকাল কন্টকমুক্ত ছিল না। বাংলাদেশও আজ একই রকম কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন। তাই ভয়, শঙ্কা নয়, ভীতি ছড়ানো নয়, আবার শত্রুপক্ষকে খাটো করে দেখাও নয়। ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক শক্তিকে অবলম্বন করে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই কঠিন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে। শুভ মূল্যবোধের জয় চিরদিন হয়, হবে। ক্রান্তিকালের বড় চ্যালেঞ্জ ও সংকট চলমান উগ্র ধর্মান্ধতাপ্রসূত জঙ্গিবাদ ও মাঠপর্যায়ে জঙ্গিদের তত্পরতা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনমানুষ, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাঙ্গন ও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু সচেতন হলে এবং যথার্থ ভূমিকা রাখলে জঙ্গিরা পানিবিহীন মাছের অবস্থায় পড়বে। তাদের কোনো উদ্দেশ্যই সফল হবে না। একটা প্রধান দৈনিকের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন অনুসারে ১৯৯৯-২০১৬ পর্যন্ত, ১৭ বছরে জঙ্গি আক্রমণে নিহত হয়েছেন ২৭৬ জন এবং আহত ১৬৭৭ জন। উল্লিখিত আহত-নিহতদের পরিচয়ের ওপর একটু মোটাদাগে তাকালেই কারা এদেরকে হত্যা করতে পারেন, সেই জঙ্গি ও তাদের গডফাদার-মেন্টরদের সঠিক পরিচয় ও শেকড় চিনতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রথমত তারাই জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যারা রাষ্ট্র-সমাজের সকল অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শন অর্থাত্ অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করেন এবং মনে করেন রাষ্ট্র পরিচালনার মূল অবলম্বন হতে হবে বাঙালি সংস্কৃতি। দ্বিতীয়ত. গণজাগরণ মঞ্চের আবির্ভাবের পরপরই জঙ্গিরা নতুন ক্যাটাগরির টার্গেট নিধারণ করে। যার প্রথম শিকার হন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রাজীব হায়দার। পরবর্তীকালে আরো অনেকে। গণজাগরণ মঞ্চকেন্দ্রিক তরুণ ব্যক্তিবর্গও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কেন, কি কারণে আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন, তার কমপ্রিহেনসিভ বিশ্লেষণ জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ও পরিচয়কালে স্পষ্ট করে দিবে এবং এদের গডফাদার-মেন্টর ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাদের পূর্ণ পরিচয়ও দিবালোকের মতো সকলের কাছে স্পষ্ট হবে। ২০১৩ সালে এসে জঙ্গিরা তৃতীয় ক্যাটাগরির টার্গেট নির্ধারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ, ধর্মগুরু-যাজক ও বিদেশি নাগরিকদের বেছে নেয়।ভারতের মুর্শিদাবাদের খাগড়াগড়ে ধরা পড়া বাংলাদেশি জেএমবি সদস্য এবং সিঙ্গাপুরে আটক ও শাস্তি হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় এ পর্যায়ে জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য শেখ হাসিনাকে হত্যা করা এবং তাঁর সরকারকে উত্খাত করা। এ পর্যন্ত বর্ণিত তথ্য-উপাত্ত এবং যৌক্তিকতার অবস্থান থেকে মূল্যায়ন করলে, জঙ্গি, তাদের গডফাদার-মেন্টর ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতাদের পরিচয়ের আর কিছু বাকি থাকে না। একই সঙ্গে জঙ্গিরা জনগণের মধ্যে কিভাবে বিচরণ করছে, সেটাও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রথমত, তারা মূল স্রোতের রাজনীতির সকল স্তরের সঙ্গে ছদ্মবেশে বিচরণ করছে। দ্বিতীয়ত. মসজিদ থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ছদ্মবেশে আছে। তৃতীয়ত. রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তর ও সেক্টরে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছদ্মবেশে বহাল-তবিয়তে বসে আছে। তারপর শিক্ষাঙ্গনে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সর্বত্রই নিজ নিজ পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে অবস্থান করছে। এরাই যে যেখানে আছে, সেখান থেকেই সুযোগমতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় তরুণ প্রজন্মের মগজ ধোলাই করে জঙ্গিতে পরিণত করছে। চট্টগ্রামের সুমন হোসেন, উত্তরার মুহম্মদ ওমর এবং কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি জোবায়েরের জঙ্গি হওয়ার কাহিনী (ডেইলি স্টারে যথাক্রমে ২৪, ২৬ ও ২৮ জুলাই) পড়লে আমার উপরোক্ত কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়। পরিপূর্ণ মগজ ধোলাই সম্পূর্ণ হলে তারা জঙ্গিরূপে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নির্দেশিত মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য জনমানুষের ভেতরে অবস্থান করে ছদ্মবেশে আক্রমণের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়। তাই জনমানুষ সচেতন হলে, সাহস সঞ্চয় করলে কোনোভাবেই তারা জনমানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে জঙ্গি আক্রমণের প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে পারবে না। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এটা একেবারেই অসম্ভব। তাই প্রত্যেকটি মানুষ, যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই যতটুকু সম্ভব, আর কিছু না পারলে অন্তত জঙ্গিদের প্রতি প্রকাশ্যে মানুষের সামনে ঘৃণা প্রকাশ করাটাও বিশাল কাজ। ইতোমধ্যে এরকম কাজের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের মায়ের থেকে সংসারে কেউ আপন হয় না। লাশ সব পরিবার গ্রহণ করছেন না।সেই মাও জঙ্গি ছেলের লাশ দেখতে অস্বীকার করেছেন। মানসতন্ত্রের এমন জাগরণকে আরো বিস্তৃত করার জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিশেষ করে মিডিয়া বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যক্তির পরে আসে পরিবারের ভূমিকা। জঙ্গিয়ায়নে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে জঙ্গিরা ভার্চুয়াল মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। প্রতিনিয়ত শত শত নিবন্ধ, লিফেলট, স্লোগান ছেড়ে দিচ্ছে। তরুণদের একটা অংশ এসব পড়ার পর তার বিপরীতের কোনো পাল্টা বর্ণনা পেয়ে জঙ্গিয়ানার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সুতরাং পরিবারের পক্ষ থেকে ছেলেমেয়েদের ল্যাপটপের প্রতি আসক্তি সম্পর্কে সতর্ক হওয়া দরকার। ধর্মের মিথ্যাচার, অপব্যাখ্যা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার করে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে বহু রকম বিকৃতিমূলক তথ্য প্রচার করে। অনলাইনে এসব পড়ে রক্ত গরম তরুণ প্রজন্মের মাথা বিগড়ে যায়। তারা এতই একরোখা হয়ে যায় যে, ওসবের বিপরীতের বক্তব্যকে আর শুনতেই চায় না। মূল স্রোতের মিডিয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ কম। হতে পারে তাদের মনের ভেতরে উদ্রেক হওয়া প্রশ্নের উত্তর তারা কারো কাছ থেকে পাচ্ছে না। তাদের সঙ্গে এসব নিয়ে কেউ ইন্টার অ্যাকশন করছেন না। তাই পরিবারের সদস্যরা যদি ঘরোয়াভাবে খোলামনে দেশ, জাতি, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরবগাঁথা এবং চলমান বিশ্ব নিয়ে আলোচনা করেন, তাহলে তরুণ প্রজন্মের মনের ভেতরের অনেক বিভ্রান্তি সহজেই দূর হতে পারে। তার আগে সর্বাগ্রে দরকার পিতা-মাতার জ্ঞান আহরণ এবং সচেতন হওয়া। আশা করা যায় নিজ সন্তানের সঙ্গে কেউ মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নিবেন না। বর্ধিত ও বৃহত্তর পরিবারের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের নিবিড় সম্পর্ক থাকলে তখন কারো মধ্যে হঠাত্ কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটলে তা অন্য যে কারো চোখে ধরা পড়বে। পয়েন্ট অব নো রিটার্নে পৌঁছাবার পূর্বে ধরা পড়লে সহজে তাকে ফিরানো যাবে। একই সঙ্গে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকরা সচেতনভাবে ছাত্রদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখলে জঙ্গিয়ায়ন বহুলাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এভাবে ব্যক্তি থেকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে একদিকে যেমন মগজ ধোলাই রোধ হবে, তেমনি জঙ্গিরা মানুষের মধ্যে বিচরণ করে, সেই মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালাতে পারবে না। জনসচেতনতার উদ্রেক ও তা বিস্তারের ব্যক্তি ও পরিবারের চাইতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। দেশের সর্বত্র জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ ও গণপ্রতিরোধের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকলে মানুষের ভেতর সাহস ও আস্থা অটুট থাকবে, বৃদ্ধি পাবে। জঙ্গিদের অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষের ভেতর ভয়, ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করতে পারবে না। এখানে আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহালো—জঙ্গিরা যেহেতু সশস্ত্র অবস্থায় থাকে, তাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাহস সঞ্চয় করে মানুষের দাঁড়ানোর জন্য মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এলে ছদ্মবেশ কেন, কোনো বেশেই তারা কোথাও জায়গা পাবে না। জনগণ সচেতন, সাহসী ও জোটবদ্ধ হলে জঙ্গিরা গ্রামে-গঞ্জে নিভৃত পল্লিতে নিরীহ মানুষকে আর হত্যা করতে পারবে না, তার একটা উদাহরণ গত ৪ আগস্ট বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মানুষ সৃষ্টি করেছেন। জানা যায় ওইদিন জঙ্গিরা পূর্বের মতো বৌদ্ধ মন্দিরের ভিক্ষুকে হত্যা করতে এলে মন্দিরে রক্ষিত মাইকে ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত শত মানুষ জঙ্গিদের ধাওয়া করে। জঙ্গিরা পালিয়ে যায়। তাই জনসচেতনতাই জঙ্গিদেরকে রুখে দেওয়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২৮
false
hm
পানশালা ০০২ পানশালা শিরোনামের একটা সিরিজ লেখা শুরু করেছিলাম অনেক আগে। শিব্রাম চকরবরতি আমার অনেক মানসগুরুদের একজন, তাই পানপ্রেমিক কিছু চরিত্রের মুখে PUN গুঁজে দিয়ে গল্প বলানোর চেষ্টা করেছিলাম ( কিছুদিন আগে সচল মৃদুল আহমেদের "বুক বড়ো" করার গল্পটি যেমন একটি আদর্শ পানশালার গল্প)। অন্যান্য অনেক উদ্যোগের মতোই তা ব্যর্থ হয়েছে। গল্পের মহেঞ্জোদোড়ো থেকে একটা তুলে আনছি আবার সচলের পাঠকদের জন্যে। ফাকরুল ভাই সেদিন মাতাল হতে চাইছিলেন না বলে হাতি মার্কা বীয়ার নিয়ে বসেছিলেন। কাঁচা জনতা এ বিয়ারের একটা কৌটা শেষ করে টলে যায়, পাকা ফাকরুল তেষ্টা মেটাতে বীয়ার গেলেন। সেদিন ভুল করে মিনারেল ওয়াটার খেয়ে বেচারা আরেকটু হলেই খাবি খেয়ে মরে আর কি। শেষে মাথা চাপড়ে একটু রাম পিলানোর পর তিনি ধাতস্থ হয়ে ভূমিতে ফিরে আসেন। আমাদের পাশের টেবিলের পাশের টেবিলে, সেই পরশু-পড়শী টেবিলখানায় মুখে ব্যান্ডেজ বাঁধা এক কুচকুচে কালো আদম মনোযোগ দিয়ে পান করছিলেন, বোতলের ঢং আর তরলের রং দেখে মনে হয় পানীয়টি রাম। একনিষ্ঠ রামভক্ত ব্যক্তিটি রসিয়ে রসিয়ে এক একটি রামচুমুক মারছিলেন, আর বিড়বিড় করে কী কী যেন বলছিলেন। ফাকরুল ভাই আমাকে বলেন, ''আমি ঐ ব্যাটাকে চিনি, ঐ কালাটাকে। চিনি সেই ছোটবেলা থেকে।'' আমিও ফাকরুল ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাতি মার্কা বীয়ারই খাচ্ছিলাম, তবে সবকিছুই ভালো লাগতে শুরু করেছে দেখে বুঝি যে আমার তেষ্টা মিটে গিয়ে নেষ্টাও পেয়ে বসেছে। ফাকরুল ভাই বলেন, ''ওর জীবনটাই অভিশপ্ত। বেচারা।'' আমি বলি, ''কেন? ওর নাম কি আশফাক?'' ফাকরুল ভাই মাথা নাড়েন। আমি ভেবে বলি, ''তাহলে কি ইকবাল?'' ফাকরুল ভাই রাজি হন না। আমি আরো গবেষণা করে উজ্জ্বল মুখে বলি, ''তাহলে কি জনগণের নয়নমণি সুধীর ভাই?'' ফাকরুল ভাই ভেটো দ্যান। বলেন, ''আরে না, ওর নাম আবু লুলু।'' আমি একটু নিরাশ হই। আবু লুলু নামটা খারাপ কিছু নয়। সমস্যা কী এতে? ফাকরুল ভাই বলেন, ''আবু লুলুর মা আমাদের চট্টগ্রামের মেয়ে। কিন্তু বাপ এদেশী না। আফ্রিকান। সুদানের এক ব্যবসায়ীর ছেলে, আবু লুলু চট্টগ্রামে দারচিনির ব্যবসা করতে এসে প্রেমে পড়ে মরিয়ম বিবির। কিন্তু সে প্রেমে বাগড়া দ্যায় মরিয়ম বিবির বাপ গোলাম ছগীর আর আবুলুলুর বাপ আবু নামরূদ। গোলাম ছগীর বলে, একটা কালা কাফ্রির কাছে সে পরীর মতো মেয়েকে তুলে দিতে পারে না। আর আবু নামরূদ বলে, বেটা লুলু তুমি বিয়ে করতে চাইলে বারো বছরের কচি বালিকা বধূ বেছে নাও, বাইশ বছরের একটা বুড়ি ধুমসীকে বিয়ে করার কারণ কি, যে কি না কথায় কথায় শুধু মুখ খারাপ করে?'' আমি বীয়ারে চুমুক দেই। ''তারপর? তারপর কী হলো?'' আড়চোখে তাকিয়ে দেখি আবু লুলুর ছেলে আবু লুলু গেলাস ফেলে বোতলে মুখ লাগিয়ে চুকচুক করে রাম খাচ্ছে। ফাকরুল ভাই বলেন, ''তারপর ফাগুন ফুরিয়ে চৈত্র মাসের একদিন, হিসাব মতে বসন্ত থাকলেও চরম খাইষ্টা গরম পড়েছে, মরিয়ম বিবি ইয়া লম্বা কাফ্রি আবু লুলুর হাত ধরে পালিয়ে যায়। তারা একটা সাম্পানে চড়ে আশ্রয় নেয় কুতুবদিয়ায়। সেখানে তারা মৌলবীর কাছে কলমা পড়ে বিয়ে করে। ছ''মাস বাদেই মরিয়ম বিবির কোল কালো করে জন্মায় এক ছোকরা। আবু লুলু নিজের নামে তার নাম রাখে .. ..।'' নামটা ভুলে যান ফাকরুল ভাই। আমি খেই ধরিয়ে দেই, ''আবু লুলু?'' ফাকরুল ভাই হাসেন। ''ওফ, তোমাদের কি মেমরি! হবে না ক্যানো, ইয়াং ম্যান তোমরা, আমরা বুড়ো ভাম কিছু মনে থাকে না। .. .. তো আবু লুলু জন্মানোর কয়েকদিন পর আবু নামরূদ কিছু সাতকানিয়ার ডাকাত পাঠিয়ে আবু লুলুকে তুলে নিয়ে যায়, তারপর চট্টগ্রাম থেকে গোলমরিচের ব্যবসা গুটিয়ে ফিরে যায় নিজের দেশ সুদানের সেই আঁশটে গন্ধঅলা বন্দর, দার-এস-সুনামিতে, সেখানে আবু লুলুর সাথে বিয়ে হয় তারই এক মামাতো বোন, একাদশবষর্ীয়া উম্মে রাইসুর সাথে। আর মরিয়ম বিবি এদিকে আশায় আশায় দিন গোনে, একদিন আবু লুলু কুতুবদিয়ায় ফিরে আসবে তারচে কালো সাম্পানে চড়ে, সে আশায় আশায় গান বান্ধে, ও রে সাম্পানওয়ালা, তুই আমারে করলি দিওয়ানা ... ...। কিন্তু দিন যায়, আবু লুলু আর ফেরে না।'' আমার মনটাই খারাপ হয়ে যায়, দেখি আবু লুলুর বেটা আবু লুলু বোতলটাকে নিঃশেষ করে গেলাসে জিভ ঢুকিয়ে তলানি চাটছে। বলি. ''তারপর?'' ফাকরুল ভাই বলেন, ''তারপর ধীরে ধীরে মরিয়মের আশা ফিকে হয়ে আসে। তার বুকে জন্ম নেয় গভীর অভিমান। হারামজাদা আবু লুলু নিজের দেশে ফিরে গিয়ে আরেকটা শাদী করেছে, তার কোলে একটা কাফ্রি সন্তান গছিয়ে দিয়ে। শুয়ারের বাচ্চা। মনের দুঃখে সে সন্তান আবু লুলুকে নিয়ে বাপ গোলাম ছগীরের কাছে ফিরে আসে। এতদিন পর হারানো কন্যাকে ফিরে পেয়ে গোলাম ছগীর খুশি হন, কিন্তু কোলের কালাটাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেন। নানার আশ্রয়ে বাড়তে থাকে আমাদের আবু লুলু, কিন্তু সুখ তার কপালে সয় না, কয়েক মাস পরই নিদারুণ নিউমোনিয়ায় ভুগে মরিয়ম বিবি আল্লার পেয়ারা হন। নির্দয় নানার কাছে বাড়তে থাকে লুলু।'' আমি বলি, ''তারপর?'' ফাকরুল ভাই নাক মুছে বীয়ার টানেন খানিকক্ষণ। তারপর বলেন, ''তারপর আর কী? গোলাম ছগীর আবু লুলুর ভরণপোষণে ত্রুটি করেন না, কিন্তু তাকে অহর্নিশি সুদানীর পো বলে ডাকেন। আর চাটগাঁয়ের আলোবাতাসে বড় হওয়া কালো লুলুর বুকে সে ডাক শেলসম বিঁধে! গোলাম ছগীরের দেখাদেখি বাড়ির অন্যরাও লুলুকে সুদানীর পো ডাকা শুরু করে, তাদের দেখাদেখি পাড়াপ্রতিবেশী ও মহল্লার লোকজন, ইস্কুলের চাপরাশী থেকে হেডমাস্টার, কলেজের বান্ধবী থেকে শুরু করে কক্সবাজারের সৈকতপতিতা, সবাই আবু লুলুকে সুদানীর পো ডাকতে থাকে। আর কী এক যন্ত্রণা লুলুকে কুরে কুরে খায়। তাই তো ও এই যন্ত্রণা ভুলে থাকতে বারে পড়ে পড়ে মদ খায়।'' আমি ঠিক বিশ্বাস করতে চাই না কথাটা। বলি, ''তাই নাকি?'' অমনি ফাকরুল ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, ''প্রমাণ চাও, কাফের কোথাকার? যাও না, ওকে গিয়ে একবার সুদানীর পো বলে ডাকো, দ্যাখো ও তোমার কী হাল করে!'' আমি মাতাল আবু লুলুর বাইসেপের দিকে তাকিয়ে বলি, ''না না, অবিশ্বাসের কী আছে, আপনার কথা কি আমি ফেলতে পারি, বলেন?'' ফাকরুল ভাই জবাবে বাদামের চাট মুখে দিয়ে চিবাতে থাকেন। (মার্চ ১০, ২০০৬)
false
fe
ক্রান্তিকালের নির্বাচন ও গণবিচ্ছিন্ন রাষ্ট্ররক্ষকেরা ক্রান্তিকালের নির্বাচন ও গণবিচ্ছিন্ন রাষ্ট্ররক্ষকেরা ফকির ইলিয়াস---------------------------------------------------------------------------------একটি রাষ্ট্রের রক্ষক কিংবা ত্রাতা কখনই কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী হতে পারে না। একটি দেশে তার নিজস্ব প্রকল্পের পরিভ্রমণ থাকে। প্রজন্ম বেড়ে ওঠে। যোগ্য নেতৃত্ব সামনে এগিয়ে আসে। এক সময় তারা রাষ্ট্রের নেতৃত্বভার গ্রহণ করে। এটাই হচ্ছে স্বাভাবিক নিয়ম। এই নিয়ম থেকে ব্যত্যয় যে ঘটে না তা বলছি না। কিন্তু মানুষের অগ্রসরমাণ চেতনাকে দমিয়ে রাখা যায় না। উচিতও নয়। একটি দেশে দু’ চার শ’ দুর্নীতিবাজ নেতা নির্বাচন করতে না পারলে সে দেশের রাজনীতি থমকে থাকার কথা নয়। কারণ প্রতিটি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক বলয় থাকে। সামনের সারিটি ব্যর্থতার জন্য কুপোকাত হলে পেছনের সারি সামনে চলে আসে এবং দায়িত্ব নেয়। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তেমনি নানা মেরুকরণ হচ্ছে। দেড় দু’ শ’ নেতা এমপি পদে প্রতিদ্বëিদ্বতা করতে পারবেন না বলে সংবাদ বেরুচ্ছে পত্রপত্রিকায়। কেন তারা নির্বাচনের মাঠে খেলোয়াড় হতে পারবেন না তা কারও অজানা নয়। এরা হয়তো দণ্ডিত। না হয় মামলার সম্মুখীন। দেশের নির্বাচনী আচরণবিধিকে সম্মান করলে তাদের উচিত নিজে থেকেই সরে দাঁড়ানো; কিন্তু তারা তা হয়তো করবেন না। তাই বাধ্য হয়েই তাদের অকার্যকর করে দেয়ার কথাটি আসছে।কথা হচ্ছে যারা দুর্নীতিবাজ বলে প্রমাণিত তারা আবার জনপ্রতিনিধি হতে যাবেন কেন? তারা তা হতে চান নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। এ জন্য তারা মরিয়া। মারমুখো হয়ে নানা ধরনের জঘন্য আচরণ করছেন প্রকাশ্যে। টিভিতে একটি সচিত্র প্রতিবেদন দেখলাম। বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন পিন্টু একজন জেল পরিদর্শকের ওপর চড়াও হয়েছেন। নাছির আহমেদ নামক এই পুলিশ অফিসার প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পিন্টু তাকে ঘুষি মেরেছেন। কি বর্বর আচরণ। কি জঘন্য হীনম্মন্যতা। জেলে থেকে যে রাজনীতিক এমন আচরণ করতে পারছে বেরিয়ে এলে তার আচরণ কেমন হবে? এ রকম নেতাই আজ বিএনপি থেকে ভোটে দাঁড়াতে চায়। এরাই হতে চায় এই দেশ এই জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষক? এমন নানা কঠিন এবং জটিল প্রশ্নগুলো নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশের একটি প্রধান দল বিএনপি খাবি খাচ্ছে তাদের নিজেদের তৈরি জলাশয়ে। কারণ তারা এমন কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। যে দানবতন্ত্র বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিল সেসব দানব এখন দলছুট। কেউ বিদেশে, কেউ পলাতক, কেউ জেলে, কেউ গণবিচ্ছিন্ন। এসব রাষ্ট্ররক্ষক নামের দানবরা জেলে থেকেই যে কতটা ভয়ঙ্কর সেটাই প্রমাণ করেছে পিন্টু নামের সাবেক সাংসদ। বিএনপি আসলে কি চাইছে? তারা কি চাইছে তাদের সেই পরিকল্পিত নির্বাচন? যদি তা না হতো তবে তারা একের পর এক দাবি দিয়ে মাঠ ঘোলা করার চেষ্টা করছে কেন? তাদের দাবি মেনে মনোনয়নের মেয়াদ বাড়ানোর পরও খন্দকার দেলোয়ার ‘সাজানো’ পাতানো নির্বাচনের গ খুঁজে বেড়াচ্ছে কেন? বিএনপির সন্দেহকে পাকাপোক্ত করা হয়েছে শেখ হাসিনার ১৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনের জোর দাবির মাধ্যমে। শেখ হাসিনা কিছুটা বেশি আগে বেড়ে এমন দাবির সীলমোহরটি না মারলেও পারতেন। কেউ না এলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে কিংবা ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচন হতেই হবে এমন দৃঢ় দাবির মাধ্যমে শেখ হাসিনা অদরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন বলেই আমি মনে করি। কারণ এটা ধ্রুব সত্য, কেয়ারটেকার সরকার তাদের হিসেব না মিললে সহজে নির্বাচন দেবে না। আর বিএনপিবিহীন নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ হবে ক্ষণস্খায়ী। তাই বিএনপিকে নিয়েই নির্বাচন করতে আগ্রহী সরকার। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার উচিত ছিল, পরিস্খিতি গভীর পর্যবেক্ষণ করে বরং নিজের দলও জোটকে আরও সংগঠিত করা। তা না করে শেখ হাসিনা তদারকি সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কেন অগ্রণী হতে চাইলেন তা বোধগম্য নয় কোন মতেই। দুই. নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নতুন নতুন যোগ-বিয়োগ লক্ষ্য করছি আমরা। জামিন না দিয়ে নিজামী, মুজাহিদ সাইফুর রহমানকে জেলে পাঠানো হয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে এদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা। তারা আবার জামিনে বেরিয়ে আসবেন কিংবা সহজেই জামিন পাবেন ঘটনাবলীর চলমানতা আপাতত সে সাক্ষীই দিচ্ছে। এদিকে ড. কামাল, বি চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকীরা নতুন ফ্রন্ট গঠনের ডাক দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের প্রস্তাবিত ফ্রন্টের সব দল মিলিয়ে দেশে তাদের জনপ্রিয়তা কত শতাংশ? প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও এমন জেলা আছে যেসব জেলার মানুষ বিকল্প ধারা, গণফোরাম কিংবা কল্যাণ পার্টির নামও জানে না। তা হলে তো সংস্কারের নামে এসব ফন্সন্টবাদীরা বরং ডানপন্থী মোর্চার পারপাসটাই সার্ভ করছেন। যোগ্য প্রার্থী দেয়ার নামে কিছু ভোট কেটে নিয়ে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীদের বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছেন। তারা সমমনা বড় দলের মোর্চায় যোগ দিয়েই বরং এই ক্রান্তিকালের নির্বাচনটি পার হতে পারতেন। তারা তা করছেন না। যা জাতির জন্য মোটেই কল্যাণকর নয় এ মুহর্তে। দুদক চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী বলেছেন, জামিন পাওয়া আর মামলা থেকে অব্যাহতি এক কথা নয়। দুদক চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করে বলেছেন, তারা আসামিদের প্রমাণপত্র সাপেক্ষে সুবিচারের মুখোমুখি করতে পারবেন। কিন্তু আমরা দেখছি প্রধান দুই নেত্রীকে প্রায় সবক’টি মামলা থেকেই ক্রমশ অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। তাহলে বাকিদের ব্যাপারে কি হবে? তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে মাত্র। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত নিউইয়র্কে বলেছেন, ওয়ান ইলেভেন মূলত ছিল আমাদের কোমর ভেঙে দেয়ার একটি প্রচেষ্টা। হঠাৎ করে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে রাজনীতি স্খবির করে দেয়া মাত্র। কার্যত সেটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এবং এর রেশ ধরে নির্বাচন হবে কি না তা নিয়েও সংশয়ে ভুগছে দেশবাসী। মানুষ এটাও লক্ষ্য করছে, ব্যারাকঘেঁষা এক শ্রেণীর মুখপাত্র সাংবাদিক ইতোমধ্যে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার ‘খোলা সুপারিশ নামা’ও পেশ করতে শুরু করেছেন। তা হলে কি এই ক্রান্তিকাল দীর্ঘ করার কোন গোপন ইচ্ছে কোথাও লালিত হচ্ছে? দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য গণতন্ত্র প্রয়োজন। দেশের প্রজন্মকে বাড়িয়ে তোলার জন্য গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন। জরুরি আইন কখনই কোন রাষ্ট্রে স্খায়ী সমাধান দেয় না, দিতে পারে না। জরুরি আইন গণবিচ্ছিন্ন রাষ্ট্ররক্ষকদের মানুষের কাছে চিহ্নিত করে যায়। আর মানুষ তা থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে শেখে। নিউইয়র্ক ১১, নভেম্বর ২০০৮ ---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১৪ সেপ্টম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
mk
৫ বছরে দারিদ্র কমেছে বিস্ময়করভাবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুফল মিলছে। অর্জিত প্রবৃদ্ধির ফল পৌঁছাচ্ছে সারাদেশে। যার প্রতিফলন ঘটছে দারিদ্র্য হারে। চলতি বছরের (২০১৫ সাল) সর্বশেষ প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে কমেছে অতি দারিদ্র্যও। এ হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশে, যা ২০১০ সালে ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মূল্যায়নে দারিদ্র্য হ্রাসের এ চিত্র উঠে এসেছে। বলা হয়েছে প্রতিবছর দারিদ্র্য কমছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। দারিদ্র্য কমার কারণ পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম, বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচী যেমন, ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, ওএমএস কর্মসূচী, টেস্ট রিলিফ, কাবিখা এবং ফেয়ার প্রাইস কার্ড প্রভৃতির কার্যকর বাস্তবায়ন।এর আগে চলতি বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ্যানেট ডিক্সন বলেছিলেন, দারিদ্র্য নিরসন ও মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতা থেকে অন্য দেশগুলো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচ দিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করার আগে তিনি এসব কথা বলেছিলেন তিনি।সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, দারিদ্র্যবান্ধব উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের কারণেই দারিদ্র্য হার প্রত্যাশিত মাত্রায় কমে আসছে। চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য মেয়াদি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হাইজ হোল্ড ইনকাম এ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের (হায়েস) তথ্য অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১০ সাল সময়ে দারিদ্র্য গড়ে এক দশমিক চুয়াত্তর শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। এ প্রবণতা নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন।তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১) অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণের সংখ্যা ১৩ দশমিক পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে চলতি বছর বাইশ দশমিক পাঁচ শতাংশে দারিদ্র্য হার নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়। এই লক্ষ্যের বিপরীতে গত পাঁচ বছরে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসের হার হচ্ছে, ২০১১ সালে উনত্রিশ দশমিক ছয় শতাংশ, ২০১২ সালে সাতাশ দশমিক আট শতাংশ, ২০১৩ সালে ছাব্বিশ দশমিক চার শতাংশ এবং ২০১৪ সালে পঁচিশ শতাংশ। আর অতি দারিদ্র্যের হার গত পাঁচ বছরে কমেছে যথাক্রমে ষোল দশমিক তিন শতাংশ, পনের দশমিক দুই, চৌদ্দ দশমিক দুই এবং ২০১৪ সালে তের দশমিক দুই শতাংশ।জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের মাধ্যমে দারিদ্র্য পরিমাণ করা হয়। দেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে খানা আয়-ব্যয় জরিপ পরিচালিত হয় এবং পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি জরিপ পরিচালিত হয়। সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ পরিচালিত হয় ২০১০ সালে। ১৯৯১-৯২ অর্থবছর পর্যন্ত পরিচালিত খানা আয় ব্যয় জরিপে দেশেল দারিদ্র্য পরিমাণের জন্য খাদ্য শক্তি গ্রহণ এভং প্রত্যক্ষ ক্যালরি গ্রহণের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সেক্ষেত্রে দারিদ্র্য পরিমাপে জনপ্রতি প্রতিদিন দুই হাজার ১শ’ বাইশ কিলোক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণকে দারিদ্র্য এবং এক হাজার ৮০৫ কিলোক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণকে চরম দারিদ্র্য হিসেবে গণ্য করা হতো। পরবর্তীতে প্রথমবারের মতো ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপে মৌলিক চাহিদা ব্যয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অনুরূপভাবে পরবর্তীতে দুটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ২০১০ সালে এসে পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপে মৌলিক চাহিদা ব্যয় পদ্ধতিকে দারিদ্র্য পরিমাপে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ভোগ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ পদ্ধতিতে খাদ্যের ক্ষেত্রে দুই হাজার একশ বাইশ কিলোক্যালরির মাত্রা ঠিক রেখে এর ক্রয় ব্যয় ও খাদ্যবহির্ভূত ভোগ্যপণ্য ক্রয় ব্যয়কে একত্রিত করে মাসিক জনপ্রতি এক হাজার ছয়শ’ টাকার নিচে আয়কে দারিদ্র্য হিসাবে এবং মাসিক জনপ্রতি এক হাজার তিনশ টাকার নিচে আয়কে অতি দারিদ্র্য হিসেবে গণ্য করা হয়।পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে পরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তীকালীন উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে গত তত্ত্বাবধায় সরকার আমলে প্রণীত দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্রটি বাতিল না করে সংশোধন করা হয়। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের উন্নয়ন দর্শন ও লক্ষ্যের আলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র-২ (২০০৯-১১) দিন বদলের পদক্ষেপ প্রণয়ন করা হয়। ওই সময় সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ মনে করেছিল স্বল্প সময়ে পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রথমবারের মতো দীর্ঘ মেয়াদি রূপকল্প হিসেবে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১) শীর্ষক পরিকল্পনা দলিল প্রণয়ন করে। পরিকল্পনায় দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়নের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ উল্লেখ করে আপামর জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতির দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন দর্শন ও স্বপ্ন প্রতিফলিত করা হয়েছে। এই দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্পের মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, যেখানে দারিদ্র্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস পাবে।সরকার ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প ২০২১ এর আলোকে প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ দুটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ দুটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হচ্ছে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ মাত্র আঠার মাসের মধ্যে প্রণয়ন করে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-১৫), যা প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২০১১ সালের জুন মাসে অনুমোদন করা হয় এবং জুলাই মাস থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। চলতি জুন মাসে শেষ হচ্ছে এই ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। ফলে আগামী জুলাই মাস থেকে বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।এ পরিকল্পনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং দেশের অর্থনীতির নিজস্ব সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে আগামী পাঁচ বছরে দারিদ্র হার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্য হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য শুন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকৌশল গ্রহণের বিষয়টিও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের আর আগের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীতে সবসময় বরাদ্দ বাড়িয়ে চলছে। বলা হয়েছে সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব নীতি ও বিচক্ষণ কর্মসূচীর কারণে বাংলাদেশে খাদ্যভাব এখন নেই। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার সুলভ মূল্যে খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নানামুখী আয়বর্ধক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। তুলনামূলকভাবে অতিদরিদ্র এলাকাসহ (উত্তরাঞ্চল, উপকূলবর্তী এলাকা ও যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল ইত্যাদি) এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অতি-দরিদ্রের জন্য কর্মসস্থান কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এ কর্মসূচীর আওতায় প্রতিবছর গড়ে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ৮ লাখ লোকের ৮০ দিনের কর্মসংস্থান করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গার পদধ্বনি শোনা যায়নি।চালের মূল্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে গত চার বছরে শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। একদিনের মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিক প্রায় সাড়ে আট কোটি চাল কিনতে পারছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শ্রমিকের একদিনের মজুরি দিয়ে পাঁচ দশমিক সাত কোটি চাল কেনা যেত। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:১৫
false
rn
শেষ কথা- ১৯ একটু পন্ডিতি দিয়ে লেখাটা শুরু করি - ''' এক তরুন সক্রেটিসকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, সাফল্য লাভের রহস্য কি? সক্রেটিস তাকে পরের দিন নদীর ধারে দেখা করতে বললেন। দেখা হবার পর দুজনে পানির দিকে এগোতে লাগলেন এবং একগলা পানিতে যেয়ে দাঁড়ালেন। হঠাৎ কিছু না বলে সক্রেটিস ছেলেটির ঘাড় ধরে পানির মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন । ছেলেটি পানির উপর মাথা তুলবার যতই চেস্টা করে সক্রেটিস ততই তাকে শক্ত হাতে পানির নিচে ডুবিয়ে রাখলেন। বাতাসের অভাবে নীল হয়ে গেলো ছেলেটির মুখ। সক্রেটিস তখন তার মাথাটি পানির উপর তুললেন । ছেলেটি হাঁসফাঁস করে বুকভরে নিঃশ্বাস নিলো। এবার সক্রেটিস তাকে জিজ্ঞেস করলেন- ''যতক্ষণ পানির নীচে ছিলে ততক্ষণ তুমি সবচেয়ে আকুলভাবে কি চাইছিলে?? ছেলেটি জবাব দিলো- 'বাতাস'। সক্রেটিস বললেন, এটিই সাফল্যের রহস্য। তুমি যেভাবে বাতাস চাইছিলে সেইভাবে যখন সাফল্য চাইবে তখন তুমি সাফল্য পাবে। সাফল্যের কোনো গূঢ় রহস্য নেই।'' '' সাফল্যের চালিকাশক্তি আসে সিদ্ধিলাভের জলন্ত আকাঙ্খা থেকে । নেপোলিয়ান বলেছিলেন, '' মানুষের মন যা কল্পনা করে এবং বিশ্বাস করে, মানুষ তা অর্জন করতেও পারে।'মহাখালি ব্রিজের উপর থেকে একটা বাইক খুব দ্রুত গতিতে বনানীর দিকে নামছে । বাইকে চালাচ্ছে গুল্লু । গুল্লুকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে হিমি । হিমির চুল, শাড়ির আঁচল বাতাসে উড়ছে । বাইক চলছে ৮০ কিঃমিঃ স্প্রীডে। গুল্লুর বাম পাশে একটা প্রাইভেট কার । ঠিক এই সময়, লাল জামা পড়া একটা মেয়ে গুল্লুর বাইকের কাছে চলে আসে । মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল । হাঁটতে হাঁটতে লাল জামা পড়া মেয়েটি একটি ছেলের সাথে কথা বলছিল, মেয়েটি হঠাৎ ফুটপাতা ছেড়ে গুল্লুর বাইকের কাছে চলে আসে । মেয়েটি কথার মধ্যে ডুবে ছিল- তাই সে গুল্লুর বাইকটি খেয়াল করেনি । গুল্লু বাম পাশে চাপতে পারেনি প্রাইভেট কারের জন্য । লাল জামা পড়া মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়ে গুল্লু ছিটকে পড়ে ২৫ গজ দূরে । হিমি প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা খেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে । লাল জামা পড়া মেয়েটি হাঁটুতে সামান্য ব্যাথা পায় । গুল্লুর অনেক পেছনে একটা ভেসপাতে থাকা দুই ভদ্রলোক পুরো ঘটনা টা দেখেন ।বাইকটা বাতাসের সাথে উড়ে এসে পড়ে গুল্লুর পায়ের লাছে । সময় তখন বিকেল ৫ টা। হিমির একটা হাত ভেঙ্গে গেছে । মাথা ফেটে বৃষ্টির মত রক্ত পড়ছে । রক্তে ভিজে যাচ্ছে রাস্তা । তবুও হিমির চোখ গুল্লুকে খুঁজছে ।সে চিকৎ্কার করে বলতে চাচ্ছে- আমার বাবুই কই, আমার বাবুই । কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না । আর ২৫ গজ দূরে গুল্লুর হাত পা ছিলে ভয়ানক অবস্থা । তার সারা শরীর অবশ লাগছে । কথায় বলে, যার কেউ নাই- তার আল্লাহ আছে । এমন সময় এক লোক তার গাড়িতে করে গুল্লু এবং হিমিকে হাসপাতালে নিয়ে জান । চিকিৎসার জন্য হিমিকে ইন্ডিয়া যেতে হয়েছিল । দুই মাস গুল্লু হিমির কাছে হাসপাতালে ছিল । হিমিকে ছেড়ে কোথাও যায়নি । হিমি ঘুম ভেঙ্গেই দেখতে গুল্লু তার হাত ধরে বসে আছে । এক আকাশ আনন্দে হিমির চোখ ভিজে যেত। এবার একটা কৌতুক হবে -হাবলু কমোডে বসে তার নতুন আইফোন-৫ দিয়ে কথা বলছিল। হটাৎ তার ফোন নিচে কমোডে পড়ে গেলো। সে দুঃখে কষ্টে অনেক কান্নাকাটি করতে লাগলো। তখন হঠাৎ এক দেবতা আসলো পানি থেকে উঠে আর তাকে একটা সোনার আইফোন দিল। হাবলুর তখন কাঠুরের গল্প মনে পড়লো আর সে বলল “না এটা আমার না” । দেবতা তখন বলল, “আরে গাধা... এটা ধুয়ে তো দ্যাখ” ।প্রায় পাঁচ মাস পর আজ "শেষ কথা" ধারাবাহিকটি লিখছি । আজ হরতাল । বিরোধীদল তেলের দাম বৃদ্ধির কারনে হরতাল দিয়েছে । তারা আগেই বলে দিয়েছিল- যেদিন তেলের দাম বাড়বে তারপর দিন হরতাল হবে।দেশের রাজনৈ্তিক অবস্থা ভালো নয় । দেশের সমাজ ব্যবস্থা ভালো নয় । দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হচ্ছে, ধনী মানুষ আরো ধনী হচ্ছে । সন্ধ্যায় যাবো হাতির ঝিলে ছবি তুলতে । অনেকেই ছবি তুলে ফেসবুক ভরিয়ে ফেলেছেন। সব সময়ই সব কিছুতেই আমার দেরী হয়ে যায় । অবশ্য এজন্য আমি মোটেও দুঃখিত নই ।
false
mk
ওয়ান ইলেভেন ও মাহফুজ আনাম ওইতিহাসের কাঠগড়ায় সেই ওয়ান ইলেভেন। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বক্তব্য ঘিরে পেন্ডুলামের বাক্সটি ওপেন হয়েছে। সারা দেশেই সরকারি দলের কর্মীদের দায়ের করা মামলা সতর্কতায় যাচ্ছে। এখানেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হচ্ছে না। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার একুশের আলোচনা সভায় মাহফুজ আনামকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডেইলি স্টারসহ দেশের দু’টি পত্রিকা সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআইয়ের লিখে দেয়া মিথ্যে সংবাদ ছাপিয়ে রাজনীতি থেকে তাকে এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। ডেইলি স্টার সম্পাদক তাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর বহু চেষ্টা করেছেন যদিও তাদের পিতৃতুল্য বিশ্বব্যাংকও তা বানাতে পারেননি।সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে মাহফুজ আনাম নিজেই বলেছেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা দুর্নীতির খবর যাচাই-বাছাই না করে প্রকাশ করে নীতিগত দিক থেকে তিনি ভুল করেছেন।এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেইলি স্টার সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলেছেন, ডিজিএফআই তথ্য দিয়েছে আর আপনি সুবোধ বালকের মতো লিখে দিলেন, এটা কোনো পাগল বিশ্বাস করবে? তার জন্য আমাদেরসহ দেশের জনগণকে খেসারত দিতে হয়েছে। অথচ তিনি ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করার সাহস দেখাতে পারেননি। তাই শুধু ভুল স্বীকার নয়, এতটুকু আত্মমর্যাদা থাকলে নিশ্চয়ই তিনি পদত্যাগ করতেন। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা উদাহরণ টেনে বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে বিবিসিতে এক বৃটিশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটা নিউজ ছাপা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে নিউজটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় সংস্থাটি শুধু ক্ষমাই চাননি, মহাপরিচালক রিপোর্টারসহ ওই রিপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই পদত্যাগ করে চলে যান।প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমার মতো অনেকেই মনে করতে পারেন তিনি চাইছেন রহস্যময় ওয়ান ইলেভেনের আগমন, এর নেপথ্য কুশিলব, দেশি-বিদেশি শক্তি এবং সেই সময়কার ঘটনা প্রবাহ জাতির সামনে উন্মোচিত হোক। সেই কারণেই ইতিহাসের কাঠগড়ায় আজ ওয়ান ইলেভেনকে টেনে আনা হয়েছে। আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাই ২০০৬ সালে মেয়াদপূর্তি শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘিরে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়া বিএনপির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে রাখার একগুঁয়েমি দাম্ভিক আচরণ, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা ও তত্ত্ব্াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন যখন সহিংস রূপ নিয়ে গোটা বাংলাদেশকে অচল অবরুদ্ধ করে দেয় ঠিক সেই সময়ে ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন বাতিল করে বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে জরুরি অবস্থাই জারি হয়নি, সেনা সমর্থিত তত্ত্ব্াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। সেই পরিবর্তনকে আওয়ামী লীগসহ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ স্বাগত জানিয়েছিল। সেই সময় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্টিমরুলার রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ওপর কঠোরভাবে নেমে এলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ বিদ্রোহ করেননি, প্রতিবাদ করেননি। ওয়ান ইলেভেনের নেপথ্যে যেসব বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের জোর তত্পরতা ছিল বল তাদের কোর্ট থেকেও এক সময় সরে যায়। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, নির্বাচনী ও সাংবিধানিক ব্যাপক সংস্কারে স্বপ্ন দেখিয়ে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করলেও ওয়ান ইলেভেন সরকার পরবর্তীতে অপরিকল্পিতভাবে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী থেকে তৃণমূলকর্মী ও ব্যবসায়ীদের ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে ধরে ধরে কারাগারেই পুরেনি, দেশ ছাড়াই করেনি, তাদের সামাজিক মান-সম্মানই লুণ্ঠন করেনি, এমনকি স্ত্রী-সন্তানদেরকে নাজেহাল করে জনমত দূরে ঠেলে দেয়। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধাদান ও গ্রেফতারের দিন টেনে-হিঁচড়ে যেভাবে আদালতে নিয়ে গেছে টিভির পর্দায় সেই দৃশ্য দেখে মানুষের আবেগ সহানুভূতি তার দিকেই ঝুঁকেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া দেশের কোনো রাজনৈতিক নেতা, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, চিকিত্সক কেউ প্রতিবাদ করেননি। ওয়ান ইলেভেনের চ্যালেঞ্জটাকে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা সাহসিকতার সঙ্গে পাল্টা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে যে পথ নিয়েছিলেন সেই পথেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ঘিরে ক্যাম্পাস প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। ছাত্র সমাজ রুখে দাঁড়িয়েছিল। সেই দিনের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রতি তার দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মরহুম জিল্লুর রহমান অশীতিপর বৃদ্ধ হয়েও আনুগত্য দেখাতে ভুলেননি। অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি মরহুম খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছাড়া কেউ সাহসী ভূমিকা রাখেননি। দুর্নীতির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে কেউ জেলে, কেউ বিদেশে পলাতক জীবন নিয়েছিলেন। আর কেউ কেউ ভয়ে ওই সরকারের নেপথ্য শক্তির সঙ্গে আঁঁতাত করেছিলেন। আর অন্যদিকে দুই দলেরই ছোট-বড় অসংখ্য নেতা সংস্কারের দাবি তুলে শেখা হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের চেহারা উন্মোচিত করেছিলেন। সংস্কারবাদী হিসেবে চিহ্নিত সেইসব নেতাকর্মীর কেউ কেউ পরবর্তীতে দলে ঠাঁই না পেলেও অনেকেই পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনেকেই মন্ত্রী, এমপি, নেতা হয়েছেন। ওয়ান ইলেভেন সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিল স্বপ্ন দেখিয়ে। সেই স্বপ্ন ছিল দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন, সেটি প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রায়নের পথে রাজনীতিক ও নির্বাচনী সংস্কার। নির্বাচনী সংস্কারের দাবিটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও জানিয়ে এসেছিল। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের দিকে তাকিয়ে আমরা দেশের মানুষ অনেকেই স্বপ্ন দেখেছিলাম সংস্কারের পথেই একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার নির্বাচিত হয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দানই নয়, আইনের শাসন এক কথায় সুশাসন নিশ্চিত করে আদর্শিক রাজনীতির দুয়ার উন্মুক্ত করা। জনগণের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে আসা ওয়ান ইলেভেন সরকার নিজেদের স্বেচ্ছাচারী উন্ন্যাসিক আচরণের কারণে নিজেরাই পরাস্ত হয়নি, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা মানুষের বুক ভরা আশা ভেঙে দিয়ে সমাজে তাদের সততা ও দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। সেই সময় ওয়ান ইলেভেনের কোনো কোনো কুশীলবের বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দু হাতে লুটপাটের অভিযোগও উঠেছিল। এমনকি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামা লীগ ক্ষমতায় আসার পর মহান সংসদে দাঁড়িয়ে দলের অনেক নেতা মইনুদ্দিন, ফখরুদ্দিনগণের সীমাহীন বাড়াবাড়ির বিচার দাবি করলেও তা পাননি। উল্টো সরকারের আনুকূল্যে কেউ কেউ বহাল তবিয়তেই থাকেননি কেউ বা সরকারি কূটনৈতিক চাকরি নিয়ে সুখের জীবন-যাপন করেছেন।আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজের প্রজ্ঞা সাহস আর নেতৃত্বের দৃঢ়তায় ঘরে-বাইরের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করলেও দৃশ্যমান হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের কার্যকর বেনিফিসিয়ারি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রশক্তি। ওয়ান ইলেভেনের সময় ও তার পরে চড়া মাশুল দিতে হয়েছে বিএনপি ও তার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। তাই প্রধানমন্ত্রী যখন দুই নেত্রীকে মাইনাসের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দুই সম্পাদকের বিরুদ্ধে আনছেন তখন বিএনপি তার পাশে না দাঁড়িয়ে ওই দুই সম্পাদকের পক্ষেই সাফাই গাইছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ওয়ান ইলেভেন যেমন দুই নেত্রীকে মাইনাস করতে চেয়েছিল এই সরকার তেমনি খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে দিতে চাচ্ছেন। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াননি।ওয়ান ইলেভেনে যৌথবাহিনী ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে জোর করে যে শত শত কোটি টাকা আদায় করেছিল তাও সরকার ফিরিয়ে দেয়নি। ওয়ান ইলেভেনের দৃশ্যপট যদি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মাথায় নিয়ে চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যাবে মাহফুজ আনাম ভুল স্বীকার করলেও একটি কথা সত্য বলেছেন। সেদিন ডেইলি নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির ছাড়া সবাই তার পথ নিয়েছিলেন। নামের প্রথম অক্ষর ‘এস’ দিয়ে লেখা যায় এমন আট জনের সাংবাদিক গ্রুপ সেদিন নিয়মিত গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নৈশভোজ করতেন। সেইদিন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ শেরাটনেই সভা করুন আর ক্যান্টনমেন্টে চায়ের দাওয়াত করুন সম্পাদকরা কতটা দৃষ্টি কাড়বেন কতটা কাছে যাবেন সেই প্রতিযোগিতাই করেছেন। এমনকি জেনারেল মইন উ আহমেদ সেই সময় বিশ্বে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়ায় পর্যাপ্ত চাল আমদানি করতে না পারার কারণে আলু খাওয়ার ওপর চাপ বাড়িয়েছিলেন। সম্পাদকদের চা-চক্রে সব খাবার ছিল আলুর মেনুতে তৈরি। সেই আলুর প্রশংসায় সিনিয়র সাংবাদিকরা ধন্য ধন্য করেছেন। অনেক সম্পাদক জুনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে ছুটে যেতেন, তাদের অনেককেই সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীদের আশেপাশে পাওয়া যায়। মাহফুজ আনাম অনেক বিদ্যান, প্রধানমন্ত্রীর সমলোচনা করা শিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুন্দর করে কথা বলা রপ্ত করেছেন। কিন্তু কার সঙ্গে পর্দায় যেতে হয় সেটি শেখেননি বলে ভুল স্বীকার করে ধরাটা খেয়েছেন। ভুল করে থাকলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বীকার করবেন, তার পাঠক ও মানুষের কাছে বলবেন। ক্ষমা চাইলেও যার বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করেছেন কিংবা যাদেরকে খবর পরিবেশন করেছেন তাদের কাছেই চাইবেন। টকশোতে কেন চাইতে গেলেন? তার বিরুদ্ধে মামলার আইনি পদক্ষেপ আইনগতভাবেই তিনি নিবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মাহফুজ আনামসহ তার ঘরানার দুই সম্পাদকের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন সেই ব্যাপারে তার ব্যাখ্যা ও বক্তব্য আমরা চাইতেই পারি এবং সরকারের কাছে ষড়যন্ত্রের যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে সেগুলো প্রকাশের দাবি রাখতে পারি। ওয়ান ইলেভেনের সরকারকে সমর্থন ও তার কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা নিপীড়নের মুখে পড়ে কথিত আওয়ামী লীগ দিয়েছিল। এখন প্রশ্ন ওয়ান ইলেভেনের দেয়া সরকারের নির্বাচনে গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই সংসদে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ বিচারের দাবি তুলেছিলেন। সেদিন সংসদে বিরোধী দল বিএনপিও এই দাবি তুলেছিল কিন্তু বিচার হয়নি। আজ এত বছর পর একজন মাহফুজ আনামকে ঘিরে ইতিহাসের বহুল বিতর্কিত ওয়ান ইলেভেনকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসায় মানুষের কৌতূহল-সরকার আসলে কি চায়? মিথ্যে সংবাদ পরিবেশনের জন্য ভুল স্বীকার করায় শুধু মাহফুজ আনামের বিচার নাকি একই অপরাধে অভিযুক্ত সেই সময়ের অন্যসব সম্পাদক ও দায়িত্বশীলদেরও বিচার? যদি ওয়ান ইলেভেন ঘিরে সম্পাদকদেরই বিচার হয় তাহলে প্রশ্ন যদি সংবিধান লঙ্ঘনেরই হয় তাহলে মউনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনসহ সেই সময়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখা সামরিক-বেসামরিক এবং তাদের সঙ্গে রাতের অন্ধকারে বৈঠক করা রাজনৈতিক নেতাদের কি হবে? কি হবে ফখরুদ্দিন সরকারের উপদেষ্টাদের? কিইবা হবে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার আগেই ধানমন্ডির একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার বৈঠক করেছিলেন? যারা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এমনকি তত্কালীন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী সাংগঠনিক সম্পাদকের বাড়িতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে ২৩ নেতা বৈঠক করেছিলেন তাদের কি হবে? তাদের অনেকেই সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতা। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ক্ষমা করে দিলেও ভুলিনি। তার নিশ্চয়ই তথ্য-উপাত্তসহ সকল ঘটনা হাতের মুঠোয় রয়েছে। এমনকি মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ যে বিবৃতি দিয়েছেন তার জবাবে শেখ হাসিনা যুুক্তিনির্ভর জবাব দিয়ে জানতে চেয়েছেন তাকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন এরা কোথায় ছিলেন? এমনকি ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে যেসব সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী বিবৃতিতে সই দিতে চাননি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারাও অনেকে বেনিফিশিয়ারি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হূদয় রক্তাক্ত একাত্তর কেটেছে বন্দীদশায়। পঁচাত্তরে তার পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল নৃশংসভাবে। জীবনে ২১ বারের ওপর তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে। একুশের গ্রেনেড হামলায় প্রকাশ্য দিবালোকে জনতার মঞ্চ থেকে তাকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। হূদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন-ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো ২০ বছর ধরে তার বিরুদ্ধে কুত্সা রটিয়ে যাচ্ছে। যদি তাই সত্য হয় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরসঙ্গী যারা করেছেন তারা কারা? তারা নিশ্চয়ই বিএনপির কেউ নন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকেন। ওয়ান ইলেভেন নিয়ে একটি নির্মোহ গ্রহণযোগ্য জাতীয় কমিশন গঠন করে এর পোস্টমর্টেম হওয়া দরকার। হয় সবাইকে ক্ষমা, না হয় তদন্তের মাধ্যমে নেপথ্যে কুশীলব থেকে শুরু করে যারা সংবিধান আইন লঙ্ঘন করেছেন, জুলুম নির্যাতন করেছেন, দুর্নীতি করেছেন তাদের পুরস্কৃত নয়, তিরস্কৃত নয় আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখা দরকার ওয়ান ইলেভেনের ব্যর্থতা রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদেরই নাজেহাল কারেনি সমাজের শুভ চিন্তার মানুষ ও রাজনীতিবিদদেরও প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছে। কোনো কোনো রাজনীতিবিদের সারা জীবনের অর্জন কবর দিয়েছে। সামরিক-বেসামরিক দেশপ্রেমিক অনেককে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তেমনি দুই নেত্রীর রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জায়গাটিকেও নিরঙ্কুশ করেছে। সবচেয়ে দু:খজনক হলেও সত্য ওয়ান ইলেভেনে অনেকের সঙ্গে বাড়াবাড়ি আচরণ করা হলেও কাউকে কাউকে চিহ্নিত করতে ভুল করা হয়নি। কিন্তু একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আমলা ও ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান ইলেভেন কোনো শিক্ষাই নিয়ে আসেনি। তাদের উন্ন্যাসিকতাই বলে দেয় ওয়ান ইলেভেনে বড় শিক্ষাই হচ্ছে দেশের জনগণ দুই নেত্রীর সঙ্গে বাকি রাজনীতিবিদগণ তাদের করুণাশ্রিত মাত্র। এদেশে একদলীয় শাসন জনগণ মানেনি, সামরিক শাসন কল্যাণ বয়ে আনেনি, সেনা সমর্থিত সুশীলের শাসন গর্দভের শাসনে পরিণত হয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা উত্তম বলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।লেখক :প্রধান সম্পাদক,পূর্বপশ্চিমবিডি ডটকম সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৬
false
fe
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নিশ্চয়তা ও সংশয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নিশ্চয়তা ও সংশয় ফকির ইলিয়াস=======================================বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমি প্রথমেই শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করতে চাই শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে। যে মহীয়সী নারী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন।একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক দেশে যুদ্ধাপরাধী, খুনি, অগি্নসংযোগকারী, লুণ্ঠনকারী, ধর্ষণকারীদের বিচার হবে না-তা কোনমতেই কাম্য হতে পারে না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নাৎসিবাদের অপরাধে এখনও বিচার কার্য চলছে বিশ্বের বিভিন্ন সভ্য দেশে। খুবই বেদনার কথা, বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে স্থবির করে রাখার জন্য নানা অপচেষ্টা চলেছে, এখনও চলছে। এ প্রচেষ্টা কারা করেছে, কেন করেছে- তা দেশবাসী, বিশ্ববাসীর অজানা নয়।এ বিচার কার্যটি ১৯৯৬ সালেই শুরু হতে পারত। যেমনটি জাতির জনক হত্যাকা-ের বিচার শুরু হয়েছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে একই মঞ্চে বসে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেই ওয়াদাও করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ তাদের কথা রাখেনি। কথা রক্ষা না করার পক্ষে যতই যুক্তি দেখানো হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করলে ২০০১-এর নির্বাচনের ফলাফল অন্যরকম হতো বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগ সে সাহস করেনি, করতে পারেনি। কেন পারেনি সে কারণটি এখনও অজ্ঞাত।২০০৮-এর নির্বাচনে তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এজেন্ডাটি ছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী ওয়াদা। বাংলাদেশের মানুষ সে অঙ্গীকারের পক্ষে রায় দিয়েই মহাজোটকে ক্ষমতায় এনেছে। যে যাই বলুক না কেন, এ প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তা প্রমাণিত হয়েছে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।এর আলোকেই বর্তমান সরকার ২০১০-এর মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে বিচারক প্যানেল ও আইনজীবী প্যানেলের নাম ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সাহসিকতায় দেশের আপামর জনসাধারণও বেশ সুদৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ অবলোকন করছেন। সরকার এ বিচার কার্য পরিচালনার জন্য যে আইনজীবী প্যানেল ঘোষণা করেছে তাতে সরকারদলীয় এমপির নামও রয়েছে। নাম ঘোষণার পাঁচদিন পরে হঠাৎ করেই আইনমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, শুধু প্রধান আইনজীবী ছাড়া আর কারও নামই চূড়ান্ত নয়। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সরকার শুরুতেই খুব সাবধানতা অবলম্বন করেনি? করলে নিজ দলের এমপি আইনজীবীদের এ প্যানেলে রাখত না। বিপত্তি দেখা দেয়ার কারণ রয়েছে আরও। কারা যুদ্ধাপরাধী আর কারা যুদ্ধাপরাধী নয়,তা নিয়েও নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। পত্রপত্রিকায় কিছু মুখের ছবি ছাপা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে একাত্তরে তাদের বয়স ২ থেকে ১১ বছরের মধ্যে ছিল। ওই বয়সের কোন বালক তো আর যুদ্ধাপরাধী হতে পারে না!খুব স্পষ্ট মনে রাখা দরকার, এ সময় যারা শিবিরের নেতা তাদের কারও কারও জন্ম একাত্তরের পরে হয়েছে। তারা গো. আজম-নিজামী প্রমুখ আলবদরের অনুসারী হলেও তাদের যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না। এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা সরকারের পক্ষে খোলাসা করেই এগিয়ে যাওয়া উচিত।দুই.মীর কাশেম আলী বাংলাদেশের একজন চিহ্নিত রাজাকার। যদিও এই ধনাঢ্য ব্যক্তি লেবাস পাল্টে এখন প্রগতির কান্ডারি হওয়ার চেষ্টা করছেন। এই মীর কাশেম আলী ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে সৌদি আরব গেছেন। তার এ দেশত্যাগের সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছাপা হয়েছে। তারপরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, কোন যুদ্ধাপরাধীর দেশত্যাগের ঘটনা সরকারের জানা নেই। এর একদিন পর বলেছেন, যদি কেউ গিয়ে থাকে তবে তা তদন্ত করে দেখা হবে।সরকারের এত নিরাপত্তা সংস্থার চোখের ওপর দিয়ে মীর কাশেম আলীর দেশত্যাগ কি প্রমাণ করে না, সরকার কোথাও না কোথাও গাফিলতি করছে? একইভাবে অন্য যুদ্ধাপরাধীর বিষয়েও নানা কানাঘুষা চলছে দেশজুড়ে।আইন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, সুষ্ঠু বিচারের প্রয়োজনে, যুদ্ধাপরাধীদের সব সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। এ বিষয়ে কিছু কথা স্পষ্ট করা দরকার। গেল ২০ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগ-জামায়াত যৌথ উদ্যোগে অনেক ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, বড় বড় শপিং কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে।বিএনপির যৌথ মালিকানার কথা বাদই দিলাম। শুধু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের নেতারা, জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে পার্টনার হয়ে যেসব বড় বড় ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, এগুলো সম্পর্কে সরকারের বক্তব্য কি, তা আমার খুবই জানতে ইচ্ছে করছে।যারা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের ভাষ্য থেকে জানা যাচ্ছে, তারা ইতোমধ্যে প্রচুর প্রমাণাদি পেতে শুরু করেছেন। এদিকে বিএনপি বলেই যাচ্ছে, এ বিচার নিয়ে তারারসংশয়ে আছে। বিএনপির বক্তব্য, বিরোধীদলকে কোণঠাসা করার জন্যই সরকার কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের বিশাল জনসভায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিএনপি সভাপতি খালেদা জিয়া।আপাত দৃষ্টিতে বিএনপি, জামায়াতের প্যারালাল আন্দোলনকামী না হলেও শেষ পর্যন্ত তারা একই মোর্চায় আন্দোলনে যাবে তা অবধারিত সত্য। অতীত ইতিহাস সে প্রমাণই দেয়।আর এক্ষেত্রে প্রধান বিরোধীদল, জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে মুখ্য হিসেবে সামনে নিয়ে আসছে এবং আসবে।একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে মানুষ বিশুদ্ধ পানীয়জল পাবে না, রান্না করার গ্যাস পাবে না, বিদ্যুৎ পাবে না-তা মেনে নেয়া খুবই কষ্টদায়ক। এই একবিংশ শতাব্দীতে মানুষ যখন প্রযুক্তির সমুদ্রে ভাসছে তখন বাংলাদেশের মানুষের এ দুর্ভোগের প্রকৃত কারণ কি, তা খুঁজে দেখা দরকার। এসব ইস্যুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মিছিল, সমাবেশ, ঘেরাও শুরু হয়ে গেছে। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতিরাই। সরকারকে তাই দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে সিএনজির ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা প্রকারান্তরে জনগণের পকেট কাটার শামিল। বিশ্বসঙ্গতির কথা বললে, সর্বক্ষেত্রেই সরকারকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে এগিয়ে আসা উচিত। আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারে সরকারকে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করা উচিত।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে পন্ড করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, থাকবে। সরকারের শক্তিমত্তাই এ ন্যায়বিচার সুসম্পন্ন করতে পারবে।নিউইয়র্ক, ৩১ মার্চ, ২০১০ ----------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২ এপ্রিল ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - ক্রিস জোনস
false
mk
বিএনপি কী গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী_ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার আহ্বান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে জাতি উদযাপন করল স্বাধীনতার ৪৫তম বার্ষিকী। বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হলো পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার সশস্ত্র যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা মহান শহীদ, নির্যাতিতা নারী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উপজেলা পর্যায়েও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আধিক্যের কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা খুব কমই সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন। যেসব মুক্তিযোদ্ধার আত্মসম্মানবোধ আছে তারা সংবর্ধনায় যোগ দেয়া একেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রতিবছর দু'বার অধিকাংশ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাই সংবর্ধনা গ্রহণ করে থাকেন।বিএনপির পক্ষ থেকেও দিবসটি উদযাপন করা হয়। এ বছর বিএনপির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ নেয়া। ব্যারিস্টার মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী একটি দল। এবার তারা তাদের অনুগত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা না দিলেও গত ২১ ডিসেম্বর ২০১৫-এর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা তার কোন প্রতিবাদ করেননি।গত ২৭ মার্চ ২০১৬ জনকণ্ঠে এক বিস্ময়কর খবর ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে নাকি ছাত্রশিবির, প্রহরী ছিল জামায়াত নেতারা। এমন সেস্নাগান নিয়ে এবার প্রকাশ্যেই মহান স্বাধীনতা দিবসে র‌্যালি বের করে জামায়াত-শিবির। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের ডেকে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটি। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিনই দলীয় অনুগত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দিয়েছে বলে দাবি করেছে শিবিরের ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা। দেশের অনেক স্থানের মতো খুলনায়ও র‌্যালি করে শিবির। ব্যানারে লেখা ছিল, 'স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব, স্বপ্নীল স্বাধীনতা অন্তরে অাঁকব।' ছাত্র শিবিরের স্বাধীনতা র‌্যালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননার বিষয়টিকে ঔদ্ধত্য ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তামাশা ও বেয়াদবি হিসেবে দেখছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধারা।একই তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৬ কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় 'ভুয়াদের আগ্রাসী থাবা' শিরোনামে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে এক বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। জানা গেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি-রাজনৈতিক প্রভাব আর জালিয়াতি করে অনেক স্বাধীনতাবিরোধী মুক্তিযোদ্ধা সনদের মালিক বনে গেছে। তাদের অপতৎপরতায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও সম্মানহানি হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করে এই পদ্ধতিটি একটি একক কাঠামোয় এনে দুর্নীতির সব রাস্তা বন্ধ করার দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধারা আরও নাজেহাল হবেন। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন মতবাদে বিভক্ত ছিলেন না। শুধু মুক্তিযোদ্ধা কেন, অল্পসংখ্যক স্বাধীনতাবিরোধী বাদে পুরো জাতির মতবাদ একটাই ছিল। আজ জাতীয় চরিত্রের যখন অবক্ষয়ের কাল চলছে, তখন মুক্তিযোদ্ধারাও এ জাতিরই অংশ। সুতরাং তাদেরও যে অনেকের চরিত্রের অবক্ষয় ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার পর সুযোগ-সুবিধার গন্ধ পেয়ে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে। সুতরাং বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত সম্ভব নয়। এজন্য ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দেয়া সম্ভব হলে ভুয়া ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার ও শস্তি দেয়াও অসম্ভব নয়। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যাদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার প্রক্রিয়াও তাদের দ্বারাই বাধাগ্রস্ত হবে। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর রোড মার্চ শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, নিজামী, মুজাহিদ, সাকা চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী নয়, তাদের মুক্তি দিতে হবে। ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবি জানান। ব্যারিস্টার খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিচার হবে। ২০১৩ সালে সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞে বিএনপিও যোগ দিয়েছিল।জামায়াতে ইসলামী নামক দলটি ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিল। মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত করার জন্য রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন করেছিল। বাংলাদেশের পথঘাট ও মুক্তিকামী জনতার বাড়িঘর চেনাতে পাকিস্তানি বাহিনীর গাইড ছিল। ত্রিশ লাখ বাঙালি নিধনে, এক কোটির ওপর দেশ ছাড়া, আরও কয়েক কোটিকে ঘরবাড়ি ছাড়া, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হরণ, কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুণ্ঠন ও হাজার হাজার বাড়িঘর জ্বালানো-পোড়ানো তারা পাকিস্তানি বাহিনীর চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। গত ৫ অক্টোবর ২০১১ পাকিস্তানের ইংরেজি জাতীয় 'ডেইলি টাইমস'-এর সম্পাদকীয় মন্তব্যে উল্লেখিত বিষয়গুলোকে কবুল করে নিয়ে বলা হয়েছে, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনী যতটা না হিংস্র ছিল ওই উগ্র গোষ্ঠীটি গণহত্যায় তাদের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর ছিল।' দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ওই দলের নেতারা পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমেটি করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য মুসলিম দেশগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘোরে। খুন-ধর্ষণ-লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগকারী যুদ্ধাপরাধীরা সাধারণ ক্ষমার আওতাবহির্ভূত ছিল। প্রায় ১১ হাজার পাপিষ্ঠ নরাধম এসব অপরাধের দায়ে কারাগারে আটক ছিল। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জেলাখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা ও ক্ষমতা দখলের পর ১৯৭৫-এর ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি সায়েম ও জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার দালাল আইন বাতিল করে। ফলে অভিযুক্ত ও দ-িত ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী জেল থকে বেরিয়ে যায়। ১৯৭৬ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইসলামী জলসায় সেস্নাগান ওঠে, 'তাওয়াব ভাই, তাওয়াব ভাই; চাঁদ তারা পতাকা চাই।' (ইত্তেফাক ৮ মার্চ ১৯৭৬) সেদিনের উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এমজি তাওয়াবের বদান্যতায় ওই জলসায় জামায়াত-আলবদর, রাজাকারদের ছিল স্বাধীনতার পর প্রথম আত্মপ্রকাশ। ওই মজলিসে জামায়াতে ইসলামী ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- দেশের পতাকা বদলাতে হবে, নতুন জাতীয় সঙ্গীত চাই, দেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করতে হবে, '৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনার ভেঙে দিতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত রাজাকারদের স্মরণে মিনার নির্মাণ করতে হবে। জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাতিল করেন। ধর্মের নামে দল গঠনের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। জামায়াতে ইসলামীর মতো স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মব্যবসায়ীদের রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। সম্প্রতি এমপি মেহজাবিন খালেদের সংসদ বক্তব্যে উঠে এসেছে কিছু অজানা তথ্য। জানা গেছে, 'বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ক্ষমতায় আরোহণকারী জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তানে ফেরাতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়ে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।' মেহজাবিনের ভাষায়, 'ভুট্টো বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে গোপনে গোপনে পাকিস্তান ফেরত সৈনিকদের নিয়ে বৈঠক করে সরকারবিরোধী তৎপরতা চালান।' 'যদিও জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তার মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের সামান্যতম চিন্তাচেতনা, ধ্যানধারণা ও আদর্শের চিহ্ন ছিল না। জিয়া প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানি আইএসআইর চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী।' ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সহস্রাধিক বাঙালি সৈনিক হত্যাকা-ের জন্য জিয়াকে দায়ী করে মেহজাবিন বলেন, 'জিয়ার নির্দেশে ২৫ মার্চ রাতে বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১৮শ' সৈনিক অস্ত্র জমা দেন। এর কিছুক্ষণ পরই পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র সৈনিকদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে প্রায় ১২শ' বাঙালি সৈনিক নিহত হন। এ হত্যাকা-ের দায় থেকে কোন ভাবেই জিয়া রেহাই পেতে পারেন না।'গণতন্ত্রের মৌলভিত্তি ধ্বংস করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, মুক্তিযুদ্ধের সব উপাত্ত-উপাদান ও অর্জনকে অাঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে নির্বাসনে পাঠিয়ে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের পুনর্বাসন করে, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী দল বলে দাবি করা যায় না। অবৈধ পথে অথবা বোমা ও অগি্নসন্ত্রাস করে ক্ষমতা পুনঃদখলে ব্যর্থ হয়ে হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রামে নেমেছে বিএনপি। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চিহ্নিত শত্রুরাও স্বাধীনতা এনেছে বলে আজ দাবি করছে।গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হলো পরমতসহিষ্ণুতা। আর পরমতসহিষ্ণুতার পূর্বশর্ত হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা। যা মহান মুক্তিযুদ্ধেরও প্রধান উপাদান ছিল। তা কি জামায়াত-বিএনপির চরিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে? একদিকে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী বলে দাবি, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের শত্রু জামায়াতের সঙ্গে জোট এবং হেফাজতের মতো কঠোর সাম্প্রদায়িক ও নারী বিদ্বেষী মোল্লাদের ১৩ দফার সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিএনপি কিভাবে স্বাধীনতার পক্ষশক্তি বলে দাবি করে ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে।মুক্তিযুদ্ধের অনেক পূর্ব হতেই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি গণমানুষকে সংঘবদ্ধ করে। পাকিস্তান আমলের ধর্ম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে '৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী রাজনীতি ঐতিহাসিক রায় পায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই চেতনা মুক্তিকামী বাঙালি গণমানুষকে প্রচ-ভাবে অনুপ্রেরণা জোগায়। এই ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বিরুদ্ধে বিএনপি অবস্থান নেয় এবং '৪৭-এর দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক ধর্মসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী জাগরণই ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী। 'জাগো-জাগো বাঙালি জাগো, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।' 'জয়বাংলার' মতো সস্নোগানগুলোই ছিল মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই এই সেস্নাগানগুলো এড়িয়ে চলে। শুধু তাই নয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে রোখার জন্য পাকিস্তানের অনুকরণে বাংলাদেশি নামক একটি নতুন জাতির জন্ম দেয়। এরপরও কি বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলা যায়? মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাগো জাগো, বাংলাদেশি জাগো, বীর বাংলাদেশি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, কিংবা বাংলাদেশ জিন্দাবাদ এমন সস্নোগান কখনই শোনা যায়নি। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিএনপি দ্বারা বিভক্ত হয়ে দুই জাতির বাংলাদেশে পরিণত হয়। এভাবেই বিএনপি অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতাকে এবং বাঙালির বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জাতি নামের বিভক্তির দেয়াল তুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের মূলমন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করে।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, বিএনপির শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতা আর ভারতবিরোধিতার বাংলাদেশেও পরিণত হয়। ৮ জুন ২০১৫ সংবাদের উপসম্পাদকীয়তে শ্রদ্ধেয় মুনীরুজ্জামান লিখেছেন, বিএনপির যদি আদর্শিক অবস্থান থেকে ভারতবিরোধী রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হয় তবে দলটিকে জামায়াতে ইসলামী তথা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সঙ্গে যে গাঁটছড়া রয়েছে সেটা তাদের ছিন্ন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক আদর্শিক অবস্থান নিতে হবে। রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে এবং রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের বিরুদ্ধে থাকতে হবে। অর্থাৎ আদর্শ, রাজনীতি এবং চেতনায় বিশুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি করতে হবে বিএনপিকে। দলটির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কুখ্যাত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সংশ্লিষ্টতার বহু ঘটনা রয়েছে, আইএসআইকে ছাড়তে হবে ঘোষণা দিয়ে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-ধর্মভিত্তিক এবং ভারতবিরোধী রাজনীতি দিয়ে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাই হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধ অবস্থান থেকে। সবার আগে বিএনপিকে পাকিস্তানি রাজনীতির আদর্শ ছাড়তে হবে। বিএনপি তাদের পাকিস্তানি রাজনীতি পরিত্যাগ করেনি। আর বাংলাদেশ-ভারত এবং পাকিস্তানি রাজনীতির আদর্শ একবারেই বিপরীত। পাকিস্তানি রাজনীতি করে যেমন বাংলাদেশে রাজনীতি করা যায় না, তেমনি ভারতবিরোধিতার বাইরেও আসা যায় না। বিএনপি যদি বাস্তবেই বাংলাদেশের রাজনীতি করতে আগ্রহী হয়, ভারতবিরোধী রাজনীতির চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী হয় তবে সর্বাগ্রে পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদী রাজনীতি ছাড়তে হবে, ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে। তাহলেই তারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক দল হবে।[লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট] http://www.thedailysangbad.com/sub-editorial/2016/04/05/59555 সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
false
fe
প্রবাসে বাঙালির সংস্কৃতি চর্চা প্রবাসে বাঙালির সংস্কৃতি চর্চাফ কি র ই লি য়া স--------------------------------------------------------------নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় ‘এথেন্স পার্ক’টি এক সময় ছিল গ্রিক-আমেরিকানদের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। দু’দশক আগে কখনও ভাবাই যেত না, এই এথেন্স পার্ক একদিন বাঙালি অভিবাসীদের অনুষ্ঠানমালায় মুখরিত হয়ে উঠবে। অথচ আজ তাই হয়েছে। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে প্রবাসের একটি অত্যন্ত সুপরিচিত সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস’ (বিপা)। বিপা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা সংস্কৃতি চর্চায় একটি বিপ­ব ঘটিয়েছে তা বলা যায় আজ খুব দৃঢ়তার সঙ্গে। বিপা গেল ছ’বছর যাবৎ এথেন্স পার্কের মুক্তমঞ্চে আগস্ট মাসের প্রতি শুক্রবার বিকালে ৪ ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করছে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে। গান, নাচ, নাটক, মূকাভিনয়, কবিতা আবৃত্তি, পুঁথিপাঠসহ বিভিন্ন সূচি থাকছে এসব অনুষ্ঠানে।বিপা এ পর্যন্ত বেশ কিছু নবীন প্রজন্মেরর অভিবাসী বাঙালি শিল্পীও সৃজন করেছে। সেমন্তী ওয়াহেদ তাদেরই একজন। সেমন্তী গেল ক’মাস আগে ঢাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে কৃতিত্ব কুড়িয়েছেন। তার পারফরম্যান্স প্রশংসিত হচ্ছে দেশে-বিদেশে। বিপা’র ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা শতাধিক। প্রবাসে এভাবেই গড়ে উঠছে মিনি বাংলাদেশ। শক্ত হচ্ছে বাংলা ভাষা, বাঙালির সংস্কৃতির শিকড়।বিদেশে যে লাখ লাখ বাঙালি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে, তাদের ‘সুন্দরতম ভূমি বাংলাদেশ’কে বিশদভাবে জানাতে এগিয়ে এসেছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক কৃতী পুরুষ বিশিষ্ট সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক কবি ড. হুমায়ুন আজাদ। তিনি লিখেছিলেন একটি চমৎকার গ্রন্থ ‘মাই বিউটিফুল বাংলাদেশ’। শিশু কিশোর-কিশোরীদের পঠন উপযোগী এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছিল নিউইয়র্কভিত্তিক প্রকাশনা-বিপণন সংস্খা ‘মুক্তধারা’। গ্রন্থটি ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অনেক বাংলা স্কুলে পঠিত হচ্ছে। অনেক মাতা-পিতা তাদের সন্তানদের হাতে তুলে দিয়েছেন এই গ্রন্থটি।বাংলা শিক্ষানবিসদের উপযোগী আরেকটি বাংলা বই খুব সহজ ভাষায় লিখেছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী টিভি ব্যক্তিত্ব, প্রাবন্ধিক বেলাল বেগ। তার গ্রন্থটিও প্রশংসিত হয়েছে পাঠক মহলে। বিশেষ করে লন্ডন এবং নিউইয়র্ক নগরী এখন গড়ে উঠেছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ অভিবাস ভূমি হিসেবে।লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরা দাবি করছেন, ইংল্যান্ড এখন ‘তৃতীয় বাংলা’। একই দাবি নিউইয়র্কবাসীরও। চলছে পরিশুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলার পর ‘তৃতীয় বাংলা' নামক চারণভূমিটি কোথায় তৈরি হবে তা স্পষ্ট করে বলার সময় হয়তো এখনও আসেনি। কিন্তু অভিবাসী বাঙালির সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তার অব্যাহত ধারায় এক সময় ‘তৃতীয় বাংলা’ কিংবা ‘চতুর্থ বাংলা’র অস্তিত্ব যে বিকশিত হবেই তা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।দুই. প্রবাসে বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি চর্চার পথিকৃত হিসেবে অনেকের ভূমিকা স্মরণযোগ্য। একজন অগ্রজের কথা না বললেই নয়। তিনি ইংল্যান্ড প্রবাসী প্রয়াত তাসাদ্দুক আহমদ। ষাটের দশকে ব্রিটেনে এসে বিলেতে বাংলা সংস্কৃতি চর্চার যে ঝাণ্ডা তিনি উড়িয়েছিলেন তা আজও উড়ছে ইংল্যান্ডের আকাশে গৌরবের সঙ্গে। তাসাদ্দুক আহমদ তার কর্মের জন্য ব্রিটেনের রানীর দেয়া ‘এমবিই’ খেতাব পেয়েছিলেন।মনে পড়ছে, ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডে দেশ বিকাশ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে বাংলাদেশ মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ আমার হয়েছিল। সে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাসাদ্দুক আহমদ তার স্বপ্নের কথা আমাদের বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই প্রবাসী প্রজন্মের সুযোগ্য সন্তানরাই একদিন তাদের শিকড় ভূমি বাংলাদেশের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এরা জানবে তাদের মূল ধারার কথা। তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতির কথা। তারা তা ধারণ করবে মনেপ্রাণে।ব্রিটেনে এখন বেশক’টি প্রতিনিধিত্বশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন কাজ করছে মাঠ পর্যায়ে। ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র’ ইংল্যান্ড শাখা নিয়মিত কার্যক্রম চালু করেছে গেল পাঁচ বছর যাবৎ। ‘চারণ’ নামের একটি সাংস্কৃতিক চক্রও গড়ে তুলেছেন বেশ কিছু মননশীল তরুণ-তরুণী। লন্ডনের বাংলা টাউনে বাংলাদেশ মেলা, বৈশাখী মেলার আয়োজন হচ্ছে প্রতি বছর খুব জমকালো আঙ্গিকে। অংশ নিচ্ছেন দেশ ও প্রবাসের শিল্পীরা।একইভাবে কানাডার টরন্টো, মন্ট্রিয়েলেও বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবছর নাচ, গান, সেমিনার, নতুন প্রজন্মের জন্য মুক্ত ফোরামসহ ব্যাপক আয়োজন করছে। ১৯৮৭ সালে ফেডারেশন অব বাংলাদেশী অর্গানাইজেশন অব নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) নামে একটি ছাতা সংগঠন জন্ম নিয়েছিল উত্তর আমেরিকায়। কিন্তু দু:খের কথা নেতৃত্বের কোন্দলের শিকার হয়ে ফোবানা এখন বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। যে লক্ষ্য নিয়ে ফোবানার জন্ম হয়েছিল, সে লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণই সরে এসেছে উদ্যোগটি। পরিকল্পনা চলছে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে গোটা উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং কানাডা জুড়ে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ‘বাংলাদেশ সম্মেলন’ আয়োজন করার। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সংগঠনগুলো এ বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে ইতিমধ্যে।তিন. যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ, বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সিলেট সদর থানা এসোসিয়েশন গেল পাঁচ বছর যাবৎ সুবিশাল পরিসরে বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করছে নিউইয়র্কে। একই ধারায় এগিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম সমিতি, বিয়ানীবাজার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমিতি, জ্যামাইকা ফেন্সন্ডস সোসাইটি, ব্রঙ্কস্ বাংলাদেশ সোসাইটিসহ বেশ কিছু সংগঠন।বোস্টনে কিশলয় বাংলা স্কুল, ওয়াশিংটন বাংলা স্কুল, কিংবা নিউইয়র্কে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, তরঙ্গ শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যেসব প্রোগ্রাম করছে তা প্রবাসে সংস্কৃতি চর্চার পরিপূরক সর্বাংশে। তাছাড়া প্যারিসে পার্থ প্রতিম মজুমদার কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ায় কাজী মশহুরুল হুদার মতো কৃতী মূকাভিনেতা অথবা শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া, পণ্ডিত রামকানাই দাশ, শিল্পী কাবেরী দাশ, শিল্পী দুলাল ভৌমিক প্রমুখের উজ্জ্বল ভূমিকা কি অস্বীকার করা যাবে? কিংবা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদের কথা?অতিসম্প্রতি নিউইয়র্কে সিলেট সদর হাউসে আয়োজন হল প্রবাসী শিল্পী তাজুল ইমামের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘স্মৃতি-সত্তা-বোধ’। তার কর্মে প্রবাসের জীবনঘনিষ্ঠ চিত্রই ফুটে উঠেছে প্রাঞ্জলভাবে। তাজুল ইমাম একের ভেতরে অনেক। শিল্পী, সুরকার, চিত্রকর, গল্পকার, গীতিকার, গ্রাফিকস ডিজাইনার। প্রবাসে শিল্পী সত্তার ‘আইকন’ তৈরি হয়ে গোটা বিশ্বে বাংলা সংস্কৃতির দ্যুতি ছড়িয়ে দেবে এ প্রত্যাশা প্রবাসী সমাজের। পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের আয়োজন বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন উত্তর আমেরিকায় আয়োজিত হচ্ছে পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের বাঙালিদের অংশগ্রহণও বাড়ছে। বেশ ক’টি নাট্য সংগঠন নিউইয়র্কের ব্রডওয়ে শো’তে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছে। নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি বেশ ক’জন বাঙালি লেখক-পাঠককে তাদের সেশনে পাঠ করার সুযোগ দিয়েছে গেল পাঁচ বছরে। এর পরিসর ক্রমশ বাড়ছে। অভিবাসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বাঙালিরা ছড়িয়ে পড়বেই বিশ্বের দেশ-দেশান্তরে। বিশ্বায়ন তাদের ডেকে নেবে আরও কাছাকাছি। তারা বিদেশে যাওয়ার সময় নিজ সংস্কৃতি বহন করে নিয়ে যাবেন এবং তা তুলে ধরবেন যুগে যুগে কালে কালে।চার.বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা চলছে অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, সুইডেন ,জার্মানীসহ সৌদীআরব, কু্য়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, আরব আমীরাত - মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে। প্রবাসী-অভিবাসী বাঙালীরা জাগিয়ে রাখছেননিজ সভ্যতা। অনেক প্রবাসী কবি লেখকের বই বের হয় বইমেলায়।অনলাইন ম্যাগাজিন , ব্লগে লেখালেখি সহ প্রতিদিনের কর্মকান্ড নজর কাড়ার মতো। এর ব্যাপৃতি যতো এগিয়ে যাবে ততোই লাভবান হবেপ্রবাসী প্রজন্ম।---------------------------------------------------------------------------------( দৈনিক যুগান্তর -এ প্রকাশিত। সংযোজন ও পরিমার্জন ডিসেম্বর ২০০৭)ছবি- এক সাহিত্য আড্ডায় আলোচনা করছেন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল )
false
fe
এই মাইলফলক দীর্ঘস্থায়ী করতে চাইলে এই মাইলফলক দীর্ঘস্থায়ী করতে চাইলেফকির ইলিয়াস ================================== বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার অন্ত নেই। সিইসির কণ্ঠে দৃঢ় কথাবার্তা। নির্বাচন তারা করবেনই। তিনি দেখাচ্ছেন নানা যুক্তি। ‘যারা সংশয় প্রকাশ করছেন, তারা তাদের সংশয় নিয়ে থাকুন। আমরা নির্বাচন করবোই’। এমন প্রতিজ্ঞার বাণী দেশের মানুষকে আশান্বিত করছে। এর পাশ ঘেঁষেই ঘটছে নানা ঘটনা। বাংলাদেশে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিস প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস হঠাৎ করেই উড়ে গেলেন ঢাকায়। বিভিন্ন সমাবেশে দেখা গেছে তাকে। তারপর তৎপর হয়ে উঠেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য এফেয়ার্স গীতা পাসি।সেনাপ্রধান মি. মইন উ আহমেদ সফর করে এসেছেন ভারত। তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। তা নিয়েও বলা হচ্ছে নানা কথা। ভারত বাংলাদেশকে ছটি ঘোড়া উপহার দিয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্নভাবে বিতর্ক ছড়াবার চেষ্টা করা হচ্ছে লেখালেখির মাধ্যমে, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। কারা এসব নানা কথা ছড়াচ্ছে? এর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী তা সবার জানা। ভারতের নাম শুনলেই এদের জ্বালা ধরে। তারা নানা রকম কটাক্ষ তো বটেই, বিষবাষ্প ছড়াতেও পিছপা হয় না। অথচ ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী। আর যে কোনো সুহৃদ প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন। টিভিতে তার বক্তব্য শুনলাম। তিনি বিডিআরের সদস্যবৃন্দকে আগামীদিনে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানালেন। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে একটি গুর"ত্বপূর্ণ বিষয় আলোকপাত করেছেন। তা হলো, নির্বাচনকে সামনে রেখে, বর্তমানে গাঢাকা দেওয়া গডফাদাররা সরব হয়ে উঠতে পারে। এসব গডফাদারা সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি সে দিকে সজাগ দৃষ্টির আহ্বান জানান বিডিআর সদস্যদের প্রতি।অতীতে আমরা লক্ষ করেছি, নির্বাচন এলে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগী একটি চক্র সব সময়ই তৎপর হয়ে উঠতো। তারা নানা রকম পেশীবাজি করে দেশে একটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাদের উদ্দেশ্য সাধনে লিপ্ত হতো। যেহেতু বর্তমানে দেশে একটি প্রত্যয়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার রয়েছে, তাই এমন কিছু ঘটার আশঙ্কা জনগণ অবশ্যই করছেন না।প্রায় একই ধরনের অনুরণন আমরা শুনছি সেনাপ্রধানের বিভিন্ন বক্তব্যেও। তিনি বলছেন, আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগুচ্ছি।একটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে মত ও চিন্তার স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। এটা খুবই শুভ লক্ষণ দেশে জর"রি অবস্থা জারি থাকলেও দেশে লেখক- সাংবাদিকরা তাদের মত প্রকাশ করে যেতে পারছেন সৃষ্টির পক্ষে। কিš' মানবাধিকার বিষয়টি নানাভাবেই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। বিশেষ করে ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক উৎপীড়নের বিষয়টি অনেকটা একরোখাই থেকে গেছে। আমরা লক্ষ করছি সংস্কারের দোহাই দিয়ে গেলো জোট সরকারের বেশ কিছু শীর্ষ দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, নেতা থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি যারা হাওয়া ভবনের পদলেহন করে তাদের তথাকথিত ‘ভালোবাসা সড়কে’ জায়গা নামমাত্র মূল্যে লিজ নিয়ে প্রাসাদসম ভবন গড়ে তুলেছিলেন। এরা এখনো দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুক্ত হাওয়ায়। হাওয়া ভবনের শীর্ষ কর্ণধারদেরকে ‘লাল গোলাপ’ শুভেচ্ছা জানিয়ে যারা মিডিয়া মোগল হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, এদেরকে সম্পত্তির হিসাব দিতে কেন বলছে না দুদক? কেন রাজাকার মন্ত্রীদের দুর্নীতির খতিয়ান তল্লাশি করে দেখা হচ্ছে না?বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল গুর"তর অসুস্থ অবস্থায় প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন। তার মুক্তি পাওয়ার সংবাদটি প্রচার হওয়ার পরপরই একটি চক্র বলতে শুর" করেছে মি মইন উ আহমেদ ভারত সফর করে আসার পর পরই নমনীয় হয়ে পড়েছেন। অথচ প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তার প্রেস সচিব মি. ফাহিম মুনয়েম বলেছেন, মানবিক কারণেই আব্দুল জলিলকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আইন সমুন্নত রেখে অন্য যেকোনো ভিভিআইপি রাজবন্দীর ব্যাপারে প্রয়োজনমতো সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তাহলে এসব অবান্তর কথাবার্তা বলা হচ্ছে কেন? রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ কতোটা ফলপ্রসূ হয়েছে বা হবে তা সময়ই বলবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে এটাই মনে হচ্ছে, একটা জোড়াতালি মার্কা সংলাপ শেষ করে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় সরকার। এবং নির্বাচনের পরই একটি পছন্দ মতো সরকার গঠনেও বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাদের কারিগরি অব্যাহত রাখবেন কিংবা রাখতে পারেন।দেখা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ফ্রন্ট, জোট, মোর্চা গঠনের জন্য রাজনীতিক এবং নেপথ্য নীতি নির্ধারকরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। এ রকমটা আমরা অতীতেও দেখেছি। যুদ্ধাপরাধী, দালাল- রাজাকারদের পার্টি জামাত এ রকম জোটের অংশীদার হয়েই ক্ষমতায় গিয়েছিল। ২০০৮-এর নির্বাচনে কি তাহলে এ রকম অপশক্তিরা বিভিন্ন মোর্চার ছায়াতলে ভিড়ে স্থান করে নেবে? এ বিষয়টি সব রাজনৈতিক দলের খেয়াল রাখা অত্যন্ত জর"রি।নির্বাচন কমিশন বলছে জুলাই মাস নাগাদ ফাইনাল ভোটার লিস্ট তৈরি হয়ে যাবে। কথা দিয়েও, পূর্ণাঙ্গ প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার তালিকা করেনি কিংবা করছে না সরকার। অন্যদিকে আটকেপড়া বিহারিরা দেশে ভোটার হচ্ছে। প্রবাসীদের প্রতি প্রায় সব সরকারই বৈরী, তারা অবজ্ঞার নজরে দেখেছে প্রবাসীদের অধিকারের প্রতিটি ইস্যু। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বর্তমান কর্ণধারগণও এমনটি করবেন তা প্রত্যাশিত ছিল না। বাঙালির গৌরবের মাস মার্চ। স্বাধীনতার মাস। এই মাসে সবিনয়ে বর্তমান সরকারের সমীপে দুটি কথা বলতে চাই। আর তা হলো, কোনো সাময়িক সরকারই সব সমস্যা সমাধানে পারঙ্গম নয়। তা আমরা জানি। কিš' কিছু কাজের ভিত্তি স্থাপন করে যেতে পারেন বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, ঘাতক দালাল রাজাকারদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া, জঙ্গিবাদ দমনে কঠিন পদক্ষেপ, সন্ত্রাসী, গডফাদারদের বির"দ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কালোবাজারি-মুনাফাখোরদের বির"দ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়ে যেতে পারেন তারা।অর্থ উপদেষ্টা এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরমভাবে কলুষিত করেছে। ভেঙে দিয়েছে এর মের"দণ্ড। তার কথাগুলো খুবই যৌক্তিক। জাতিকে পরিশুদ্ধ করে গড়ে তুলতে হলে, প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। সব সংশয় দূর করতে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। যদি কাজগুলো অসমাপ্ত থেকে যায় তবে এই মাইলফলক হায়েনারা উপড়ে ফেলতে পারে।-----------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ।১৩মার্চ ২০০৮,বৃহস্পতিবার প্রকাশিত
false
rg
জামায়াতে ইসলামী নিয়ে বাংলাদেশে নতুন মেরুকরণ !! আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাসের পেছনে তাকাই, আসলে সেখানে কী দেখতে পাই? স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও এদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কি তেমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে? দেশের সাধারণ মানুষেরা ব্রিটিশ শাসন দেখেছে, পাকিস্তানি শাসন দেখেছে, আর এখন বাংলাদেশ শাসন কাল দেখছে। শাসকের চরিত্রের কী তেমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে? গুটিকয়েক মানুষের কেবল ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে। সেটা ব্রিটিশদের সময়েও হয়েছিল। পাকিস্তানের সময়ও হয়েছিল। আর এখন বাংলাদেশের আমলেও হচ্ছে। মাঝখানে যুক্ত হয়েছে কিছু চেতনা নামধারী সাইনবোর্ড। চেতনা বিক্রির মলম বিক্রি করে এরা কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। পার্থক্য শুধু আগে ইংরেজরা খেতো, পাকিস্তানিরা খেতো, আর এখন বাংলাদেশীরা খাচ্ছে। সোজা কথা শুনতে খারাপ শোনালেও ইতিহাস আমাদের সেই সাক্ষ্যই দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কয় ঘর রাজাকার ছিল? বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুুষ সেই সব কুলাঙ্গারদের ভালো মত চেনে। অথচ দেশ স্বাধীনের পর আমরা রাজাকারদের লিস্ট না করে করলাম, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা। আমার প্রয়াত বাবাও একজন মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ওই তালিকায় তার নাম নেই কেন? আমার প্রয়াত মা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাত রান্না করে খাইয়েছেন। ওই তালিকায় তার নাম নেই কেন? আমার প্রতিবেশী হাজার হাজার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময় নানাভাবে দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। তাদের কারো নাম ওই তথাকথিত তালিকায় নেই কেন? তাহলে আপনারা কারা? যারা নিজেদের পছন্দমত এই তালিকা করলেন? আমাদের গ্রামে তো দুই একজন চিন্থিত রাজাকার ছাড়া আর সবাই দেশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করেছেন। তাদের নাম আপনারা কোন অযুহাতে বাদ দিলেন? আপনারা তাদের নাম বাদ দেওয়ার কে? স্বাধীনতা যুদ্ধের গোটা নয় মাস বাংলার পথে ঘাটে হাজার হাজার মানুষ, লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করেছে। তারা কি লড়াই করেনি? হাতে গোনা দুই চারজন রাজাকার ছাড়া বাকি সবাই কেন মুক্তিযোদ্ধা হবেন না? রাজাকারদের তালিকা আপনারা কোন অযুহাতে করলেন না? আপনাদের এই অযুহাতের পেছনে কি কি খোড়া যুক্তি আছে শুনি? যুক্তি দিয়ে আপনারা কূল পাবেন না। কারণ, আপনাদের কাছে সত্যি সত্যিই কোনো যুক্তি নেই। যা আছে, তা সব খোড়া যুক্তি। শাসন করার জন্য কিছু বড় বড় কথাবার্তা বলতে হয়। তাই দিয়েই আপনারা দেশের সহজ সরল মানুষদের মগজ ধোলাই করেন। আসল ব্যাপার স্যাপার ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়। পাকিস্তানের স্বীকৃতি পাবার জন্য আপনারা ইসলামী দেশগুলোর সঙ্গে আতাঁত করলেন। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, এই যুক্তিতে সেদিন নরপিচাশ টিক্কা খানের সাথে হাত মেলালেন। তখন কি একবারও মনে পড়েছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পেছনে ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মাহুতি জড়িত। ত্রিশ লাখ তরতাজা প্রাণের শোক এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? তিন লাখ মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারালো। টিক্কা খানের সাথে হাত মেলানোর সময় কি একজন মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর কথাও আপনাদের মনে পড়েছিল? চুয়াত্তর সালে ইসলামী দেশগুলো যদি সত্যি সত্যিই বাংলাদেশের বন্ধু হয়, তাহলে চুয়াত্তরে দুর্ভিক্ষে আবার বিশ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যায় কিভাবে? মাত্র তিন বছর আগের ভয়াবহ যুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করল। আর ঠিক তিন বছরের মাথায় সেই দেশে না খেয়ে, খাবারের অভাবে বিশ লাখ মানুষ মারা গেল। এই পঞ্চাশ লাখ মানুষের শোক আপনারা কিভাবে বেমালুম ভুলে গেলেন? বিশ্বের অনেক দেশ তখন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু একটা দুর্ভিক্ষ মোকাবেলার জন্য কেন সেই বন্ধু রাষ্ট্রগুলো নিরব রইল? যুক্তরাষ্ট্র খাবার দিতে রাজি হল বটে, কিন্তু একটা কঠিন শর্ত জুড়ে দিল। কি সেই শর্ত? কিউবার কাছে বাংলাদেশ থেকে পাট রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। কিউবা কে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চির শত্রু। আমরা তখন কি করলাম? কিউবায় পাট রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাবার সাহায্যের আশায় বসে রইলাম। ততদিনে দেশে মৌসুমি ফসল উঠতে শুরু করেছে। আমার দেশের কৃষক নিজেরাই দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে আবারো জিতেছে। বন্ধ হয়ে যায় খাবার না খেয়ে মারা যাবার ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পি-৮০ খাদ্য সাহায্য পাঠিয়েছিল, তা না খাওয়া মানুষের কোনো কাজে লাগেনি। তা দিয়ে শাসকদের গোলা ভরেছে। এটাই আসল সত্য। আমাদের কৃষকই খালি পেটে লড়াই করে, মাটি চষে সেখানে ফসল ফলিয়ে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। কোনো ইসলামী দেশ কেন তখন দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ালো না? আমরা তো মুসলমান রাষ্ট্র হবার খুব খায়েস দেখালাম। জবাব পাওয়া যাবে না। কারণ, ইতিহাস নিজেই জবাব দিয়ে রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বীজের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু খুনের আসল রহস্য জড়িত। কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিডেল ক্যাস্ত্রো সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু উল্টো কিউবায় পাট রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে আমরা হেনরি কিসিঞ্জারের সাথে বৈঠক করলাম। উইলিয়াম ফোর্ডকে খুব পামপট্টি দিলাম। পাকিস্তানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি আদায় করলাম। আর নিজের কবর নিজে খুড়লাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পেছনে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সরাসরি হাত ছিল। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের এত বড় বড় বিপদের পর, সেই দেশটি আবার তখন নেতৃত্ব হারালো। তারপর থেকে যারাই বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ কখনো আর আস্থা পায়নি। বাংলাদেশের একজনই নেতা ছিলেন, তিনি শেখ মুজিব। নেতা মুজিব যখন শাসক হলেন, তখন তাঁর কিছু ভুল সিদ্ধান্তই নিজের জন্য কাল হল। দেশের জন্যও অমঙ্গল ডেকে আনলো। সবচেয়ে বিশ্বস্থ তাজউদ্দিনকে দূরে ঠেলে দিয়ে ঘাতক মোশতাককে কোলে টেনে নেওয়া হয়েছিল, মুজিবের সবচেয়ে বড় ভুল। আজকের আওয়ামী লীগ স্বীকার করুক আর না করুক, বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী পলিটিশয়ান ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন নেতা। কিন্তু নেতা কি সিদ্ধান্ত নিবেন, তা তৈরি করে দিতেন তাজউদ্দিন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হুট করেই সম্পর্ক স্থাপনেও তাজউদ্দিনের দ্বিধা ছিল। কিন্তু মোশতাক ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের চর। মুজিব তাজউদ্দিনের কথা শুনলেন না, তিনি শুনলেন মোশতাকের কথা। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। মোশতাকের বেঈমানী ইতিহাসে নতুন মীর জাফরের খেতাব পেয়েছে। এরপর সামরিক বাহিনী থেকে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা নিলেন। পাকিস্তানপন্থীদের বাংলাদেশে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর যোগ্য নেতৃত্ব দিলেন জিয়া। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শুরুটা করেছিলেন স্বয়ং আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যে শর্তে তিনি পাকিস্তানে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিলেন, এবং যে শর্তে জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করলেন, সেই শর্ত ভুট্টো একটাও পালন করেন নি। বরং ব্যক্তিগত বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের সঙ্গে, তিন লাখ মা-বোনের ইজ্জ্বতের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করা হল, সেই ভুল সিদ্ধান্তের ফলে। নইলে ৪৩ বছর পরেও কেন বাংলাদেশে চার লাখ অবাঙালি বিহারি জেনেভা ক্যাম্পে পড়ে থাকবে? আপনারা রাজাকারদের লিস্ট করলেন না, করলেন মুক্তিযুদ্ধার তালিকা। এটাও একটা মস্তবড় গোড়ায় গলদ। আপনারা ১৯৫ জন চিন্থিত যুদ্ধাপরাধীকে বিনা বাধায় তখন ছেড়ে দিলেন। ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়। হাজার হাজার রাজাকার-আলবদর-আলসামশদের জেল থেকে বেকসুর ছেড়ে দিলেন। বললেন, আমরা পেছনের ত্যাগের কথা ভুলে সামনে অগ্রসর হব। তাই এই সাধারণ ক্ষমা। কিন্তু পরবর্তীতে কি করলেন? হাজার হাজার আওয়ামী বিরোধী মানুষকে বেআইনিভাবে জেলে ঢুকালেন। বিনা বিচারে অসংখ্য বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শদের খুন করলেন। তখন রক্ষীবাহিনী যা বলে, তাই-ই দেশের আইনে পরিনত হয়েছিল। তারপর ঘটনা যখন হাতের মুঠো থেকে ফসকে যেতে থাকল, তখন বানালেন সোভিয়েত রাশিয়ার ভাবধারায় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। যা সংক্ষেপে বাকশাল নামেই একটা কালো অধ্যায়ের জন্ম দিল। মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য বাকশালের যে কর্মসূচি ছিল, সার্বিক বিচারে সেই কর্মসূচি অনেক সুন্দর। কিন্তু একটা যুদ্ধ বিধস্ত দেশে, যেখানে আবার দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ থাবা মারলো, সেখানের জন্য ওই কর্মসূচি কতোটা যুক্তিযুক্তি ও যুগোপযুগি ছিল, তা না খতিয়ে জোর করে বাকশাল চাপাতে গেলেন। জিয়া ক্ষমতায় আসার পর, দেশের মানুষ জিয়ার প্রপাগাণ্ডায় বাকশাল সম্পর্কে সত্যি সত্যিই কোনো আসল ধারণা নিতে সক্ষম হয়নি। এমন কি, বঙ্গবন্ধু'র সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, এই আওয়ামী লীগও বাকশালের কর্মসূচির ভালো দিকগুলো দেশের মানুষকে আজ পর্যন্ত ঠিকমত বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং দেশের মানুষ জিয়া ও তার পত্নী বেগম খালেদা জিয়ার বাকশাল নিয়ে যে প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়েছেন, সেই গুজব বিশ্বাস করে বসে আছে। রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে জিয়া যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন, সেই ঘটনা যেমন সত্য, তেমনি শাহ আজিজকে আওয়ামী লীগ জেল থেকে মুক্ত করেছিল, সেই ঘটনাও ইতিহাসের সাক্ষি। জিয়া মারা যাবার পর, সামরিক বাহিনীর আরেক ঘুঘু জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা নিলেন। এরশাদের বিরুদ্ধে তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, কমুনিস্ট সবাই যুগপথ আন্দোলন করলেন। ছাত্রদেরকে ভুল বুঝিয়ে সামরিক জান্তাকে উৎখাত করার ফন্দি করলেন। আন্দোলন সফল হল। স্বৈরাচার এরশাদের পতন হল। তারপর কি হল? নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে ছাত্র-শ্রমিক-মজুর যুক্ত না হলে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলো কয়েক শো হরতাল করে, সাতদল, আটদল, পাঁচদল, তিনদল, চৌদ্দদল, আঠারোদল, কুঁড়িদল গঠন করলেও এরশাদের কিছুই হতো না। আমাদের মত ছাত্রদের তখন আন্দোলনে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রাজপথে নামালেন। আন্দোলন সফল হল। এরশাদের পতন ঘটল। কিন্তু তারপর? তারপর তো আপনাদের মুখোশখানি ধীরে ধীরে খুলতে লাগল। জামায়াতকে কে আগে দলে টানবে এই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লেন শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া। স্বাভাবিকভাবেই জামায়াত আওয়ামী লীগকে রেখে পুরানো বন্ধুকেই মিত্র বানালেন। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় আসল। আওয়ামী লীগের তখন ক্ষমতায় যাবার জন্য মাথা খারাপ অবস্থা। ক্ষমতায় যাবার জন্য কারো মাথা খারাপ হবার দরকার নেই। যদি ক্ষমতাসীন শাসক খারাপ আচরণ করে, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, তার পতন হবেই। এটাই বাঙালির ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। যে বাহানায় বিএনপি'র সেদিন পতন হল, সেই বাহানাটি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ঠিক হয়েছে? নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক কি শেষ হয়েছে? নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ইচ্ছা কোনো ক্ষমতাসীন দলেরই মনের কথা নয়। শুধু লোক দেখানো আন্দোলনের নামে বারবার এদেশের বোকাসোকা হাবাগোবা মানুষগুলো কিছু না বুঝেই রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই দেয়। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ একুশ বছর পর ছিয়ানব্বই সালে আবার ক্ষমতার স্বাদ পেল। কিন্তু দেশ কি পেল? জনগণের সামনে নতুন আরেকটা মূলা ঝুলানো হল। কি সেই মূলা? এবার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলার বিচার করবেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হল। সবাই আশায় বুক বাঁধলেন। কিন্তু বিচার শুরু হল স্বাভাবিক আদালতে। কেন বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলা পরিচালনার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হল না? আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের ধারণা, বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলার মূলাকে সামনে ঝুলিয়ে আবার ক্ষমতায় আসা যাবে। কিন্তু সেই গুড়ে বালি। ততোদিনে জল অনেক গড়াল। তারপর কি হল? ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসল। এবার জামায়াত সরাসরি কেবিনেটে স্থান করে নিল। নির্বাচনের পরদিন সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত বিজয়ী পক্ষ হত্যা-ধর্ষণ, লুণ্ঠন, জ্বালাও-পোড়াও চালালো। আর আওয়ামী লীগের নেতারা অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে নিজেরা সুরক্ষা গর্তে গিয়ে ঢুকলেন। তাহলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এই পাঁচ বছর কি এমন করলেন যে নির্বাচনের ফুল রেজাল্ট সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের আগেই গর্তে লুকাতে হল? আওয়ামী লীগ এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলা কেন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হল না, এই ব্যাখ্যাও আওয়ামী লীগ জোড়ালোভাবে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি'র সাথে জামায়াতের সখ্যতা এই কথা তো মিথ্যে নয়। আরেকটি সত্য হল, জামায়াত যদি আওয়ামী লীগের বন্ধু হতো, তাহলে জামায়াতের হাজার হাজার লাখ লাখ অপরাধ স্রেফ মাফ। এটা কোন ধরনের যুক্তি? ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের নামে কিছুই করতে হয়নি। বরং বিএনপি নিজেদের দুর্নীতি, অপরাধ, হত্যা, গুম, বিনা বিচারে আটক, জ্বালাও-পোড়াও, ধর্ষণ, বোমা হামলা, ইত্যাদি ঘটিয়ে নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছে। আবারো সেই রাজনীতির পুরান চাল? নির্বাচন কমিশন। তার সঙ্গে যুক্ত হল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১৯৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা ছেড়ে যাবার সময় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রেখে গেল, আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে তার কেন পরিবর্তন করলো না? কারণ, হল রাজনীতির মওকা। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবার সর্বশেষ অপসান রাষ্ট্রপতিই ছিল, নাকি? সেই কথা ২০০৬ সালে কেন উত্থাপিত হল? কারণ, বিএনপি ১৯৯৬ সালে যে ভুল করেছিল, ২০০৬ সালে তা নিজেরাই সংশোধন করেছে। তাই তারা এবার সরাসরি ইয়াজউদ্দিনকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারোরই আজ পর্যন্ত সদিচ্ছা নেই। এটা হল আসল সত্য। নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা নিয়ে আন্দোলন পাকিয়ে ক্ষমতায় যাবার ওটা একটা রাস্তা। এই রাস্তা এই দুই প্রধান দলের কেউ-ই হাতছাড়া করতে রাজি নয়। তাই বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়নি। তারপর ফকরুদ্দিন-মঈনুদ্দীন দুই বছর খেলা দেখাল। সেই ভেলকিতে নতুন যোগ হল, দুই নেত্রীর রাজকীয় জেল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি'র এক যুবরাজ যা করেছেন, দেশের মানুষ কিন্তু সেই জ্বলন্ত দগদগে ইতিহাস তখনো ভোলেনি। তাই বিকল্প হিসেবে আবার ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিল। মাঝখানের এই সময়টায় বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলা স্থবির হয়ে ছিল। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকার্য শেষ করলেন। কিন্তু রায় কার্যকর এখনো অর্ধেকের চেয়ে বেশি বাকি আছে। সেই অবশিষ্ট রায় কখন কার্যকর হবে, তা দেশের মানুষ কেউ জানে না। এটি আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর একটা মূলা হিসেবে ঝুলে আছে। যদি আমরা পুনরায় ক্ষমতায় আসি, তখন বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামীদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করা হবে। এটা এখন ভবিষ্যৎ কাল। কখন কোন যুগে এটা পালিত হবে কেউ জানে না। কারণ, এই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। সত্যি কথা বলতে কি সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগই নেই। যেসব উদ্যোগ আছে, তা সব লোক দেখানো। এবার আওয়ামী লীগ টের পেল শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কথা বলে বারবার ক্ষমতায় আসা যাবে না। তাহলে নতুন কোনো টাটকা মূলা ঝুলাও। সেই টাটকা মূলার নাম একাত্তরে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। বাঙালি হুজুগে একটা জাতি। এই নতুন মূলায় সবাই ভারী খুশি। কিন্তু এটা যে ক্ষমতায় যাবার একটা সিড়ি, সেই কাণ্ডজ্ঞান দেশের অশিক্ষিত অবুঝ সাধারণ মানুষের নেই। বুঝলাম, আওয়ামী লীগ এবার সত্যি সত্যিই প্রাণ থেকে একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চায়। তাহলে এটা কেন আন্তর্জাতিক আদলতে তোলা হল না? তোলা হল না এই অযুহাতে যে, তাহলে দেশের মানুষের এই বিষয়ে তেমন আগ্রহ তৈরি হবে না। দেশের মানুষের আগ্রহ তৈরি হলেই কেবল তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা ঘরে তোলা সম্ভব। তাই নিজেরাই একটা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এটাকে আন্তর্জাতিক আদালত বলে ঘোষণা করলেন। এবার বিএনপি মিউমিউ কণ্ঠে বলতে শুরু করলো, এটা আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। মানে আওয়ামী লীগ যা চেয়েছিল, তাই হয়েছে। এই নিয়ে সময়ক্ষেপন করার একটা যুতসই অযুহাত পাওয়া গেল। যদি যুদ্ধাপরাধীদের সত্যি সত্যিই বিচার করার আওয়ামী লীগের সদিচ্ছা হয়, তাহলে এই সময়ক্ষেপনের পেছনে যুক্তি কি? যুক্তি হল, এই সময়ক্ষেপন করেই তো একটি নির্বাচনী বৈতরণি বিনাভোটে পার করা সম্ভব হল। যদি আওয়ামী লীগের আসল সদিচ্ছা থাকত, তাহলে এই মামলা নিয়ে বছরের পর বছর তালবাহানা চলত না। তারপর এই মামলা পরিচালনার জন্য যে আইন বানানো হল, খুব ঠাণ্ডা মাথায় সেখানে অসংখ্য ফাঁকফোকর রাখা হল কেন? কেন সেই আইন পরিবর্তনের জন্য গণজাগরণ মঞ্চের মত নতুন একটা বসন্ত বিপ্লবের প্রয়োজন হল? আবার যখনই দেখা গেল, গণজাগরণ মঞ্চের ভাষাই সারা দেশের সাধারণ মানুষের মনের কথা, সেটি টের পেয়েই এই মঞ্চকে ভেঙ্গে দেওয়া হল। সাধারণ মানুষ কিন্তু এইটুকু রাজনীতি বোঝার মত বুদ্ধি নব্বইয়ের পরের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন আর কিছু একটা বুঝিয়ে দিলেই মানুষ সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নামে না। একটা জিনিস খুবই সুস্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ যখন আন্দোলন করে, তখন দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে। কিন্তু যখন ক্ষমতায় যায়, তখন দেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া ভুলে গিয়ে শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজনের সরকারে পরিনত হয়। এই যুক্তির পেছনে হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালে ছাত্রদল যা করেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কি ছাত্রলীগ তার চেয়ে ভালো কিছু কি করছে? যুবদল যা করেছে, এখন যুবলীগ কি তার চেয়ে ভালো কিছু করছে? চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দখল, খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, জ্বালাও-পোড়াও বরং কে কার চেয়ে বেশি করেছে, তা বিচার করতে গেলে গবেষণা করা প্রয়োজন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় যায়, সঙ্গে করে ছাত্রদল-যুবদলকেও নিয়ে যায়। আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় যায়, সঙ্গে করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকেও নিয়ে যায়। ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এ নিয়ে দেশের দুই প্রধান দলের কারো কোনো বিকার নেই। যেনো এরা যা কিছু করছে, তা করা তাদের জন্য জায়েজ!!! নিজামীর মামলা অনেক দিন ঝুলে ছিল। কেন ঝুলে ছিল, সে বিষয়ে সরকার মহোদয় নিরব। মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী সর্বোচ্চ সাজা থেকে রেহাই পেল। কেন পেল? সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হবার পর সারা দেশে জামায়াত শিবির যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, সেই তাণ্ডব বন্ধ করার জন্য ওই আপোষের রায়। রাজাকার শিরোমনি গোলাম আজম সর্বোচ্চ সাজা পেল না। বয়সের অযুহাতে!!! ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর তিন লক্ষ মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিপরীতে গোলাম আজমের বয়স কেন বিবেচনায় আসবে? একাত্তরে গোলাম আজম কি কোনো মানবিক বিবেচনায় কাউকে ছেড়ে দিয়েছিল? তাহলে সে কেন সেই সুবিধা পাবে? তারপর ২১ প্রকারের খাবারের ধক্কল সামলাতে না পেরে বেচারা ৯২ বছর বয়সে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিতে নিতে পটল তুললো। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় গোলাম আজম এই খাবার ও চিকিৎসা পেয়েছেন। জনগণ দেশ স্বাধীন করেছিল একজন যুদ্ধাপরাধীকে আমৃত্যু রাজকীয় খাবার দাবার সাপ্লাই দেবার জন্য? এর নাম রাজনীতি? তারপর সুযোগ পেয়ে জামায়াত সেই গোলাম আজমের জানাজা পড়ল দেশের প্রধান মসজিদে। সরকারি প্রশ্রয়ে সরকারি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে দেশের সবচেয়ে বড় যুদ্ধাপরাধীর জানাজায় রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট পর্যন্ত লোকারন্য হল! সম্ভবত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পর গোলাম আজমের জানাজায় স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লোকারন্য হয়েছিল। এবার জনগণের মনের বিট টের পেয়ে হঠাৎ করেই আবার সাধারণ মানুষের অন্তর জয় করার অযুহাত হিসেবে তালবাহানা করে ঢিলেতালে চলতে থাকা নিজামীর মামলার আজ রায় হল। নিজামী'র সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে বটে। কিন্তু জনমনে আসল স্বস্তি নেই। কেন নেই? কারণ, এর আগে সাঈদী সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়েও আপিল বিভাগ থেকে ছাড় পেয়েছে। যদি নিজামী'র ব্যাপারেও একই ঘটনা ঘটে?? সেকারণে আজ সাধারণ মানুষ এই রায়ে স্বস্তি পাচ্ছে না। পুরোপুরি আস্থাও পাচ্ছে না। বুকের ভেতর গোপন ব্যথা ঠুকরে উঠছে। কারণ, এর পেছনে আবার কোন রাজনীতি আছে, মানুষ এখন তাই ঠাওর করার চেষ্টা করছে। এই যে ৪৩ বছর ধরে আমরা যে রাজনীতি দেখছি, এর শেষ কোথায়? বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি যে সাম্প্রদায়িক, তা আজ নিজামীর রায়ের সময়েও আদালত উল্লেখ করেছে। তাহলে এই জামায়াতের মত বিষ ফোঁড়া বাংলাদেশ কেন আরো বহন করবে? কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে না? জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এই যে তালবাহানা করছে, এতে সাধারণ মানুষ জামায়াতের উপর আগের মত ক্ষিপ্ত থাকলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের উপরও নাখোশ হচ্ছে। কেউ যদি উচিত কথা বলে, তাহলে তাকে আদালতের ভয় দেখানোর এই খেলায় বেশিদিন জেতা যায় না। নব্বইয়ের আন্দোলনে আমার শিক্ষা জীবনে যে সেশনজট গেল, তা তো আমি ফিরে পাইনি। কিন্তু সেই স্বৈরাচার এরশাদ কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রীর এখন বিশেষ দূত। তাহলে রাজনীতির কলকাঠি বোঝার মত বয়স, মেধা, বুদ্ধি সবই আছে ঘটে। কিন্তু কোনো দল করিনা বলে, আমরা সবাই অনেকটা নপুসংকের মত। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই সত্যটি উপলদ্ধি করেছে। মেধার কোনো দরকার নাই। যে তাদের দলের কথা বলবে সেই যোগ্য লোক!! আওয়ামী লীগ এখন যে ভুলটা করছে, তা সময় নিশ্চয়ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। ইতিহাস কখনো বেঈমানী করে না। যে দুধকলা দিয়ে এখন আওয়ামী লীগ জামায়াত শিবির পুষছে, এই কালসাপই একদিন আওয়ামী লীগকে দংশন করবে। এমনিতে দেশ শাসনের নামে সারা দেশে আওয়ামী লীগ এখন যা যা করছে, ছাত্রলীগ যা যা করছে, যুবলীগ যা যা করছে, এই প্রাকটিস কিন্তু এমনিতেই বলে দেয়, ক্ষমতার পালাবদল কিভাবে হবে। বাংলাদেশের মানুষের সামনে বিকল্প কোনো দল নাই বিধায় এরা দায়ে পরে কেবল ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে নামানোর জন্য বিএনপিকে ভোট দেয়। এছাড়া বিএনপিকে ভোট দেবার আর কোনো যুক্তি দেখি না। আওয়ামী লীগ নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। দেশে হাজারো সমস্যা। কিন্তু কোনো আওয়ামী লীগের কোনো বন্ধু'র কথা শুনলে মনে হয়, আমরা মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা স্বর্গে বসবাস করছি। একইরকম বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি'র বন্ধুরাও এই স্বর্গে বসবাসের কথা বলত। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিএনপি'র সেই স্বর্গ টেকেনি। হাওয়া ভবনের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। তেমনি ইতিহাস ধার করে আমরা বলতে পারি, আওয়ামী লীগের নিজেদের ভেতরে এই যে দম্ভ, ধরাকে সরা জ্ঞান করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে রাজনীতি, সারাধরণ মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, ভয় দেখানো, হুমকি, খুন, হত্যা, ধর্ষণের মত কুকর্মকে প্রশ্রয় দেওয়া, এগুলো কোনো সুফল বয়ে আনবে না। আচ্ছা বঙ্গবন্ধু'র হত্যা মামলার বাকী আসামীরা কবে নাগাদ দেশে ফেরত আসবে, এই সরকার কি তা নিশ্চিত করে বলতে পারে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শেষ হবে, তা কি আমরা কোনো কালে জানতে পারব? বাংলাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি কবে নাগাদ নিষিদ্ধ হবে, এই কথাটি কি আমরা জানতে পারি? কিছুই আমরা জানতে পারি না। সবখানে রাজনীতি। আর আমরা সেই রাজনৈতিক মূলার খপ্পরে হুদাই প‌্যাচাল পারি। এমনিতে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এমন কোনঠাসায় পড়েছে যে, অনেকটা মাজা ভেঙ্গে যাবার মত। সেখান থেকে মাঝে মাঝে হাই তুলছে, চোখ রাঙাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে তাদের কোনো আন্দোলন নাই। তাদের আন্দোলন কেবল কোন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে। মানুষ আর সেই তপোধ্বনিতে নাচে না। কিন্তু ৪৩ বছর পর জামায়াত যখন নিজামী'র রায়কে কেন্দ্র করে ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকার সাহস পায়, বুঝতে হবে জামায়াত সেই সক্ষমতা এতদিনে অর্জন করেছে। বাংলাদেশে জামায়াতের বা রাজাকার-আলবদর-আলসামশের একটি পরিবারেরও অর্থকষ্ট নেই। ৪৩ বছরে তারা সবাই ব্যবসা, সম্পত্তি, সবকিছু কামিয়েছেন। এখন জামায়াতের শুধু এককভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাওয়াটা বাকী আছে। আর সবকিছু আমাদের দুবৃত্তায়নের রাজনীতির খপ্পরের সুযোগ নিয়ে জামায়াত-রাজাকাররা করেছে। কিন্তু দুঃখ হয়, যখন দেখি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জাতীয় পতাকা বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মরে যায়। আর গোলাম আজম দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়ে মরার পর, আবার জাতীয় মসজিদে তার জানাজা হয়। দেশ স্বাধীনের পর যাদের ভালো থাকার কথা ছিল, সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের না খেয়ে, অনাহারে, অর্ধাহারে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়। আর রাজাকার-জামায়াত বেশ তেল-তেলে অবস্থায় আছে। সেই জামায়াতকে এখনো আওয়ামী লীগ যে সব ছাড় দিচ্ছে, ভাসুরের নাম মুখে আসলে নজ্বা নাগার মত অবস্থা আওয়ামী লীগের, এই যে রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন, এটাই এই দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক বিকাশের পথে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের সকল রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলো ধ্বংস করে, দলীয় লোকদের দিয়ে কেবল টার্ম অতিক্রম করা সম্ভব, ক্ষমতার পালাবদল হলে, এই লোকগুলো যে আবার চোখ উল্টাবে, নতুন দলে চলে যাবে, ভাগ বসাতে, সেই জায়গাটা আওয়ামী লীগ এখনো বুঝতে পারে না। ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মা কোনো দিন শান্তি পায়নি। ভবিষ্যতে এই ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণের ফলে পাবেও না। বাংলাদেশে শাসকদের ভাগ্যে সব সময় কেন মোটা বুদ্ধির লোকগুলো ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুর আশেপাশে জায়গা পায়, এ ভারী এক রহস্যময় ব্যাপার। এই মোটা বুদ্ধির লোকগুলোই নিজেদের স্বার্থে দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। আর সময় সুযোগ মত বাইরে ভীনদেশে নিরাপদ সেকেন্ড হোমে চলে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য সত্যিকার ভাবেই যারা অন্তর থেকে যুদ্ধ করেছে, তারা কেউ ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার সুযোগ পায়নি। আর ৪৩ বছর ধরে যারা দেশ শাসন করছে, তাদের এখন সেকেন্ড হোম বলে একটা নিচ্ছিদ্র দেশ আছে অন্তরে। এদের সত্যিকার দেশপ্রেম নেই। নইলে এরা দেশের কথা ভাবত। বিদেশে সেকেন্ড হোমের কথা ভাবত না। বাংলাদেশে এরা আছে লুটপাট আর সম্পত্তি বাড়ানোর জন্য। এদের দিয়ে বাংলাদেশের আসল উন্নয়ন কোনো দিন হবে না। রাজনৈতিক মূলা দিয়ে সময়ক্ষেপন করা সম্ভব, কিন্তু কাল উত্তীর্ণ সম্ভব না। সো, সাধু সাবধান। ৪৩ বছর পর, স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের ৭২ ঘণ্টা হরতাল জাতিকে বহন করতে হবে, এ ভারী কষ্টের ব্যাপার। ৪৩ বছরেও এরা নিঃশেষ তো হয়নি, বরং ক্ষমতায় যাবার মত সক্ষমতা অর্জন করেছে। ধিক এসব রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নদের। ধিক বস্তাপচা রাজনীতি। নিজামীর রায়ের পর আজ অনেকে দিল খুলে জয় বাংলা বলতে আস্থা পায়নি। কারণ যদি সাঈদীর মত এই ব্যাটায়ও ছাড় পায়। এই যে রাজনীতি চলছে, এটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বাংলাদেশের। এটা আমাদের নেতানেত্রীদের কি কোনোকালোও বোধোদয় হবে না? জামায়াত কেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে না? সেইে প্রশ্ন আবারো রেখে জয় বাংলা বলে চিৎকার করে বলতে চাই, আবার তোরা মানুষ হ।। ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:২২
false
ij
পাকিস্তান যে কারণে যুদ্ধ চায় বারবার পাকিস্থানের মসনদে বসেছে এ রকম আগ্রাসী জেনারেলগন । তাদের অন্যতম কাজই হচ্ছে পাকিস্থানে গনতন্ত্রকে হত্যা করা, জনগনের টুটি চেপে ধরে রাখা আর প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের ছুতো খোঁজা; যে কারণে কাশ্মির ইস্যুটির সমাধান না করে বরং জিইয়ে রেখেছে পাকিস্থান, কেননা, সব সময় একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখলে পাকিস্থানের মসনদে সামরিক জেনারেলদের টিকে থাকার অজুহাত আপনাআপনি তৈরি হয়ে যায়। গতকালও (১০/০১/২০০৯) পাকিস্থানের প্রাক্তন জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ভারতকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ভারতকে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকতে। কেন? ভারত কি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে? পাকিস্থানের বর্তমান সামরিক প্রধান জেনারেল কিয়ানি বলেছেন, ভারত কর্তৃক আক্রান্ত হলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই জবাব দেবেন। কেন? ভারত কি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে? ভারত অতবড় ঝুঁকি নেবে কেন-যখন দেশটি ধীরে ধীরে আর্থিক সম্বৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে? যুদ্ধ আসলে পাকিস্থানী সামরিক কর্তৃপক্ষই চান। কেন? সে বিশ্লেষনে পরে যাব। আপাতত বলি: পাকিস্থানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সে দেশের সামরিক নেতাদের মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। বাজেটে সেনাবাহিনীর জন্য যথেস্ট বরাদ্দ থাকলেই চলবে। এমনই এক ঘোর দুঃসহ অন্ধকারে ঢেকে আছে পাকিস্থানের সামগ্রিক পরিবেশ। কেননা, জন্মলগ্ন থেকেই আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে ভুগছে রাষ্ট্রটি। পাকিস্থান কি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে, নাকি এটি কট্টর ইসলামিক রাষ্ট্র পর্যবেশিত হবে, নাকি রাষ্ট্রটি মুগলদের সামরিক আউটপোস্টই রয়ে যাবে- এই প্রশ্নগুলির নিষ্পত্তি আজও হয় নাই। এমন সব দ্বিধাবিভক্তির কারণেই পাকিস্থানী সেনাবাহিনী পাকিস্থানী জনগনের ব্যাপক অজ্ঞতা ও দারিদ্রতার সুযোগে প্রকট ও দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রটির জন্মলগ্ন থেকেই। যে কারণে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জায়ামাত ই ইসলামীর প্রথিকৃৎ মওলানা মওদুদী পঞ্চাশের দশকে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীকে প্রভাবিত করে পাঞ্জাবে নিরীহ আহমদীয়দের হত্যা করতে পারলেন । পরে অবশ্য ভুল বুঝতে পেরে মওদুদীর ফাঁসির আদেশ দেয় পাকিস্থানের সামরিক প্রশাসন। ততদিনের ভয়ানক দেরি হয়ে গেছে। কেননা, মওদুদী ততদিনে বে-দ্বীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন! ২ পাকিস্থানে আজও মধ্যযুগীয় অন্ধকার বিরাজমান বলেই সে দেশে আজও গনতন্ত্র প্রতিষ্টিত হতে পারে নি। রাষ্ট্রটির জন্মের পর থেকেই সে দেশে একের পর এক সামরিক একনায়ক রাষ্ট্রটির মসনদ দখল করে বসেছে। ১৯৬৫ ভারত-পাক যুদ্ধ পরিচালনা করলেন জেনারেল আয়ুব খান । পাকিস্থানী জনগনকে তারা বোঝাল-হিন্দু রাষ্ট্রের আগ্রাসন ঠেকাতে পাকিস্থানের মসনদে কাদের বসা দরকার। আইয়ুবের পর পাকিস্থানের মসনদে বসলেন জে. ইহাইয়া খান। তিনিও যুদ্ধের পথে পা বাড়ালেন। কেননা, একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখলে পাকিস্থানের মসনদে সামরিক জেনারেলদের টিকে থাকার অজুহাত আপনাআপনি তৈরি হয়ে যায়। ৩ পাক জেনারেলদের অত্যধিক যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণেই ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্থান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্থানের নিরীহ বাঙালিদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্থানী সেনাবাহিনী ... আজ আমরা জানি বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্থানী আর্মির ততটা বিভৎস আর নির্মম হওয়ার দরকার ছিল না ... অথচ, তাই হয়েছিল। এর একটা কারণ তখন আমি মুগল সামরিক আউটপোস্টোর কথা বলছিলাম ...বিভৎসতা শব্দটির সঙ্গে তো মধ্যযুগীয় অনুষঙ্গ জড়িত। যুদ্ধকালীন সময়ে; অক্টোবর মাসে ... পাকিস্থানী সামরিক কর্তৃপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (লক্ষ করুন) থেকে দুটি ইলেকট্রিক চেয়ার এনেছিল। একটি তারা স্থাপন করেছিল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে। যুদ্ধশেষে ডিসেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনী সার্কিট হাউজ যাওয়ার পর ...নাঃ, মৃতদেহ পায়নি ... যে ঘরে ইলেকট্রিক চেয়ারটি ছিল সে ঘরের বাইরের বারান্দায় অসংখ্য সেন্ডেল পড়ে থাকতে দেখে । ছ’সাত বছর বয়েসী শিশুর স্যান্ডেলও ছিল ...পাকিস্থানী আর্মিরা ছ’সাত বছর বয়েসী বাঙালী শিশুকে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়েছিল! ...এর একটা কারণ তখন আমি মুগল সামরিক আউটপোস্টোর কথা বলছিলাম ...বিভৎসতা শব্দটির সঙ্গে তো মধ্যযুগীয় অনুষঙ্গ জড়িত। এখন নিজেকে প্রশ্ন করুন-বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার কারা চায় না? এবং বাংলাদেশে গনহত্যা পরিচালনার জন্য এখনও ক্ষমা চাইল না পাকিস্থান/ যেহেতু ওদেশে ব্যাপক মধ্যযুগীয় অন্ধকার বিরাজমান; এবং এখনও বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিল না পাকিস্থান/ যেহেতু ওদেশে ব্যাপক মধ্যযুগীয় অন্ধকার বিরাজমান। এবং, বাংলাদেশে জায়ামাতের প্রধান মওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মতে: “পাকিস্থান আল্লার ঘর!” আল্লার ঘরে কি হয় না হয় সে সম্বন্ধে লোকটাকে কেউ ধারনা দেয়নি কেন? দিনে দিনে পাকিস্থান যে মধ্যযুগীয় অন্ধকারের পাশাপাশি বড়ই গ্ল্যামারাস হয়ে উঠেছে-সে সম্বন্ধে লোকটা কেউ ধারণা দিক। ৪ যা হোক। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের পর রক্তভেজা পথে বাংলাদেশি পাকিস্থানপন্থিরা বাংলাদেশে ক্ষমতায় এল। তারা প্রথম প্রথম ১৯ দফা, সবুজ বিপ্লব ইত্যাদি আশার কথা শোনাল বটে-তবে তাদের মুখোশ খুলতে দেরি হয়নি। বাংলাদেশি পাকিস্থানপন্থিরা অসহিষ্ণু বলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখাল। অথচ আমরা জানি সেই বিরোধপূর্ন সমস্যাটি শান্তিপূর্ন সমাধান সম্ভব। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছিল- সেই গৌরবজ্জ্বল ভূমিকাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে কলঙ্কিত করল বাংলাদেশি পাকিস্থানপন্থিরা। বাংলাদেশি পাকিস্থানপন্থিদের ঘাড়ে আজও মধ্যযুগীয় পাকিস্থানপন্থিদের ভূত চেপে বসে আছে বলেই তারা ২০০৬ সালে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় মওদুদ আহমেদের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় নানান অগনতান্ত্রিক টালবাহানা শুরু করে। যার প্রেক্ষাপটই ওয়ান/ইলেভেন। আর একটা কথা। সম্ভবত, ৭৫-এর পরই বাংলাদেশি পাকিস্থানপন্থিদের মদদে বাংলাদেশে ঘাটি গেড়েছে পাকিস্থানী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে যে ভারতবিরোধী আন্দোলন চলছে তাতে উশস্কানী দিচ্ছে আইএসআই। যদি তাই হয়-তা হলে বাংলাদেশি পাকিস্থানপন্থিরা কি বাংলাদেশের জন্য একটি সংঘাতপূর্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি? ৫ যাক। আজ সবাই জেনে গেছে যে-পাকিস্থানে জারদারী-শরিফ-গিলানীরা হচ্ছে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর পুতুল; আসলে দেশটি পরিচালনা করে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। জেনারেল পারভেজ মুশাররফের আমলে যে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে গুমখুন করে হত্যা করা হল-তার জন্য মুশাররফকে এখনও কাঠগোড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না কেন? কারণ- জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে নির্বাচিত করেছে আইএসআই, এখন গদিচ্যূত লোকটাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। নিজেদের লোকের বিচার করে কে? গিলানী? জারদারী? তখন বললাম না যে-পাকিস্থানে জারদারী-শরিফ-গিলানীরা হচ্ছে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর পুতুল। আইএসআই নামে ঐ পাকিস্থানী গোয়েন্দা সংস্থাটি ডলারের লোভে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথায় ওঠে বসে। পাকিস্থানের সীমান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোমা বর্ষন করলেও আইএসআই-এর কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না। কেন? কেননা, বর্ডারে কোন্ তালেবানী জঙ্গি মরল না মরল তাতে কি আসে যায়।মাস শেষে রেশন-বেতন ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ভাতা পেলেই তো হল। আর তালেবানি জঙ্গিরা তো আইএসআই-এর শক্র। কাজেই, মার্কিন বোমায় বর্ডারে তালেবানী জঙ্গিরা মরুক না কেন। তবে অন্য ভেলকিও আছে। পাকিস্থানী গোয়েন্দা সংস্থার নাকের ডগায় (সম্ভবত প্রশয়ে) লাহোরের লাল মসজিদ হয়ে উঠেছিল তালেবানী জঙ্গিদের মূল ঘাঁটি। কেন? মুশাররফবিরোধী অভ্যূস্থানের সময় মুশাররফের জঙ্গিবিরোধী কারিশমা দেখানোর জন্যই লাল মসজিদকে টিকিয়ে রাখা হয়েছিল- আমরা জানি পাকিস্থানী সেনাবাহিনী লাহোরের লাল মসজিদটি কখন আক্রমন করল! এবং এ রকম ভেলকি আইএসআই কম দেখায়নি। মজার কথা হল- আইএসআই তালেবানি জঙ্গিদের বিরোধী হলেও কাশ্মীরে মুসলিম জঙ্গিদের প্রতি অত হস্টাইল না। তারা কাশ্মীরের জঙ্গিদের মদদ দেয়, ট্রেনিং দেয়। কেননা, সেই চল্লিশের দশক থেকেই যে কাশ্মীর পাকিস্থানী সেনাশাসকদের সৌভাগ্যের পরশমনি! যে কারণে ভারতের সঙ্গে বসে কাশ্মির ইস্যুটির সমাধান না করে বরং জিইয়ে রাখা হয়, কেননা, একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখলে পাকিস্থানের মসনদে সামরিক জেনারেলদের টিকে থাকার অজুহাত আপনাআপনি তৈরি হয়ে যায়। ৬ সম্প্রতিক মুম্বাই হত্যাকান্ডে আইএসআই-এর ভূমিকা স্পস্ট। এ ক্ষেত্রেও তালেবানি নয়-বরং পাঞ্জাবি জঙ্গিদের ব্যবহার করেছে আইএসআই। আইএসআই ভারতকে খোঁচাতে চায়। যদি ভারত যুদ্ধংদেহী হয়ে ওঠে। তাতে যে পাকিস্থানে সামরিক শ্রেণিরই লাভ! তাতে! সেনাবাহিনীর জন্য বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ বাড়বে দেশের মানুষ যতই দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যাক না কেন। পাকিস্থান যুদ্ধ চায়। কেননা, যুদ্ধ যুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখলে পাকিস্থানের মসনদে সামরিক জেনারেলদের টিকে থাকার অজুহাত তৈরি হয়ে যায়। কালও (১০/০১/২০০৯) পাকিস্থানের প্রাক্তন জেনারেল পারভেজ মুশাররফ বলেছেন, ভারতকে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকতে। কেন? ভারত কি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে? বর্তমান পাক সামরিক প্রধান জেনারেল কিয়ানি বলছেন, ভারত কর্তৃক আক্রান্ত হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই জবাব দেব। কেন? ভারত কি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে? তা কী করে সম্ভব? অর্থনৈতিক কারণেই তো ভারতকে যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে হবে। আসলে যুদ্ধ পাকিস্থানই চায়। যেহেতু সে ভারতের অর্থনৈতিক সাফল্যে ইর্ষান্বিত। পাকিস্থান বরাবরই যুদ্ধ চেয়ে এসেছে। যে কারণে আশির দশকের সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্থান আক্রমন করার সময় পাক সামরিক শাসকগন উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। কেন? মার্কিন ডলারের লোভে। ৭ সামরিক কর্তৃপক্ষের স্বার্থেই পাকিস্থান যুদ্ধ চায়। যেহেতু, দেশটি আজও মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বলে। সামরিক কর্তৃপক্ষের স্বার্থেই পাকিস্থান যুদ্ধ চায়। যে কারণে একাত্তরে আমরা কম মূল্য দিইনি! সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৪১
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৫১ ১. ভালো যাচ্ছে না দিনগুলি। আগামী পরশু একটা বড়সড় পরীক্ষা আছে। কয়েকটা জায়গা থেকে ঝাড়ি খাওয়ার আশঙ্কা বুকে নিয়ে হেলেদুলে পড়ে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ বন্ধের কারণে ঘুমের চক্র কিছুটা কেৎরে গিয়ে আবার আমাকে নিশাচর বানিয়ে ছেড়েছে। প্রায় ভোর পর্যন্ত জেগে থেকে দুপুরের দিকে উঠি, ওঠার পর বিশ্বজগৎ বিরস লাগে। এলাচ দিয়ে চা বানিয়ে খাই, মাঝে মাঝে বিস্কুট দিয়ে। সেইসব বিস্কুট, যেগুলি এক সেকেন্ডের চেয়ে এক মাইক্রোসেকেন্ড বেশি পরিমাণ সময় চায়ে চুবিয়ে রাখলে মনের দুঃখে গলে জল হয়ে যায়। সেটাকে তৎক্ষণাৎ আরেকটা বিস্কুট দিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে সেটার পরিণতিও আগেরটার মতোই হয়। এই রাহু সেই শৈশব থেকে পিছে লেগে আছে আমার। বিস্কুটনির্মাতাদের কাছে আকুল আবেদন, আপনাদের বিস্কুটগুলি আরেকটু শক্ত করে বানান। চায়ে চুবাইয়া চুবাইয়া খাইতে দ্যান এই গরীবকে। পিলিজ। ২. বিস্কুট শক্ত করার প্রসঙ্গেই আরেক কিচ্ছা মনে পড়লো। সেদিন আমার বিভিন্ন তড়িৎডাক ঠিকানায় জমে থাকা স্প্যামবার্তাগুলি খুঁটিয়ে দেখছিলাম। পৃথিবীতে বহু লোককে মনে হলো আমার পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য (এবং প্রস্থ) নিয়ে চিন্তিত। তারা অসংখ্য স্প্যাম মেইলে তাদের সেই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেইলের শিরোনামে তাদের বক্তব্যগুলো কয়েকটা ক্যাটেগরিতে পড়ে, অনেকটা এমন, আমার দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই, কারণ তাদের শরণাপন্ন হলেই আমি আমার বেচারা প্রত্যঙ্গকে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলের মতোই) দীর্ঘায়িত করতে পারবো। বিভিন্ন মেইলে বিভিন্ন বৃদ্ধির আশ্বাস, কেউ চার ইঞ্চি, কেউ তিন ইঞ্চি, কেউ দুই ইঞ্চি। আমার দুশ্চিন্তার অবশ্যই কারণ আছে, কারণ আমার বান্ধবীর সন্তুষ্টির কথা আমি মোটেও ভাবছি না, এবং এখনও পর্যন্ত তাদের শরণাপন্ন হইনি। আমি যেন অবিলম্বে তাদের শরণাপন্ন হই। এখনই, এই মূহুর্তেই আমার উচিত একটি প্রত্যঙ্গদীর্ঘায়ক যন্ত্র কিনে কাজে নেমে পড়া, এবং আমার স্ত্রীকে জন্মদিনে চমকে দেয়া (কার জন্মদিন তা স্পষ্ট নয়)। আমি যেন অনুগ্রহ করে একটি বিশেষ বড়ি সেবন করে আমার বিস্কুট দীর্ঘকালযাবৎ শক্ত রাখি। তা না হলে চরম পস্তান পস্তাবো। আমি কি জানি, মেয়েরা কী চায়? জানি না। জানলে প্রত্যঙ্গদীর্ঘায়ক কিনতে এতো দেরি করতাম না। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড়ে একটি বিশেষ প্যাকেজ অফার করা হচ্ছে। দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ, উভয়ই দরাজ হবে। আমি যেন জ্ঞানী হই, বান্ধবীর মুখে যেন তৃপ্তির হাসি ফোটাই। স্ত্রীদের ও বান্ধবীদের প্রতি এতদিন ধরে চর্চিত আমার এই অবহেলা ও অনীহার কারণে লজ্জাই লাগলো একটু। আমি কেমন আছি, কী খেয়ে কী পরে কী করে বেঁচে আছি, এই জিজ্ঞাসা নিয়ে সারা জীবনে মনে হয় সব মিলিয়ে অঙ্গুলিমেয়সংখ্যক মেইল পেয়েছি, আর অজানা অচেনা সব ঠিকানা থেকে এমন আহ্বান ভেসে আসছে, কেমন কেমন যেন লাগে। যদিও "নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা" টাইপ একটা ফুটানগিরির আভাস রয়েছে এই প্রস্তাবে, তারপরও স্প্যাম মেইল ট্র্যাশে পাঠাই। সবকিছুর সাথে মাস্তানি ভালো নয়। ৩. আমার নতুন পড়শী তাজিকিস্তানের ছেলে, নাম বাহুদুর। আসলেই বাহাদুর ছেলে, ফ্ল্যাটে আসার কয়েকদিনের মাথায় সে তার ঘরের দরজা লাথি মেরে ভেঙে ফেলেছে। বিষ্যুদবার রাতে বাসায় ফিরে দেখি তার দরজা ফ্রেম থেকে খোলা, সে লাপাত্তা। উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলাম খুনখারাবা হলো কি না, তারপর থতমত খেয়ে নিজের ঘরে ফিরে গেলাম। আজ সে এসে জানালো, সেদিন সে ঘরে ঢুকতে গিয়ে চাবি দিয়ে অনেক চেষ্টা করেছে, তালা খুলতে পারেনি। রাত হয়ে গেছে দেখে সে বাধ্য হয়ে অনেক কষ্টে দরজা ভেঙে ঢুকে নিজের জিনিসপত্র আর টাকাপয়সা নিয়ে চলে গেছে বোখুম। আগামীকাল কর্তৃপক্ষকে জানাবে ঘটনা কী। বাহাদুর মারবুর্গে ছিলো, তার দেশোয়ালি বন্ধুবান্ধবরাও থাকে নর্ডরাইন ভেস্টফালেনের দিকে। ওদিককার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে, কাসেলে এসে তার কিছুই ভাল্লাগছে না। আমি মনে মনে ভাবলাম, সর্বনাশ, কাসেলের লোকজনের কপালে দুঃখই আছে তাহলে। ৪. মূলত গরু আর ভেড়ার মাংসই খাই আমরা এখানে। মুরগি কদাচিৎ। আমি বরাহমাংস মাঝে মাঝে খাই, যখন রান্নার ইচ্ছা কম থাকে, তখন স্টেক ভেজে খেয়ে ফেলি চটপট। জিনিসটার স্বাদ খুব একটা সুবিধার না, কোনমতে চলে আর কি। বছরে দুয়েকদিন সুপারমার্কেটে হরিণের মাংস মেলে। খরগোশের মাংস ভুনা খাবার ইচ্ছে অনেকদিনের, কিন্তু শেষমেশ আর কেনা হয় না। এরইমাঝে কয়েকদিন আগে বলাই জানালেন, খাসির মাংস খাওয়া হবে। পরিচিত আরেক ভদ্রলোকের সহকর্মী একটা কসাইখানা থেকে ছাগল কাটিয়ে আনতে পারবে, আমরা শুধু তার কাছ থেকে জবাই করা ছাগলটা নিয়ে এলেই হবে। আমি আর হের চৌধুরী শহর থেকে একটু বাইরে সেই লোকের কর্মস্থল থেকে প্যাকেট করা ছাগল নিয়ে এলাম। আস্ত ছাগল ঘরে কাটার মতো যন্ত্রপাতি কারোই নেই, তাই সেটাকে ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে হলো আমাদের তুর্কি দোকানে। তুর্কি মাংসবিক্রেতার সাথে গত কয়েক মাসে হৃদ্যতা হয়ে গেছে মাংস কেনার সুবাদে, সে কোন চার্জ না রেখেই নিপুণভাবে ত্রিভুজটাকে কেটেকুটে সাইজ করে দিলো। মাংস কাটাও একটা শিল্প হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। দুই মিনিটের মধ্যে একটা আস্তছাগল কেটেকুটে ছোট একটা পোঁটলায় ভরে নিয়ে এলাম। সেদিন বলাই ও হের মুনশির সৌজন্যে প্রায় বছরখানেক পর আবার কাচ্চি বিরিয়ানি খেলাম। ৫. খই ভাজার ফাঁকে ফাঁকে সেদিন ইউটিউবে দেখলাম মাইকেল মুরের বাউলিং ফর কলাম্বাইন আর সিকো। লোকটাকে ফারেনহাইট ৯/১১ দেখার পর পরই খুব পছন্দ করি, তার মাত্রা আরো দুই পর্দা চড়ে গেলো এই দু'টো দেখে। অনবদ্য।
false
ij
চার্লস বুকোওয়স্কি _ ছন্নছাড়া এক মার্কিন কবি চার্লস বুকোওয়স্কি (১৯২০-১৯৯৪) ছিলেন একজন কবি। মার্কিন কবি। ছন্নছাড়া এক মার্কিন কবি। ছন্নছাড়া এই কারণে যে বুকোওয়স্কি একবার বলেছেন, সাম পিপল নেভার গো ক্রেজি, হোয়াট ট্রুলি হরিবল লাইভস দে মাস্ট লিভ। ছন্নছাড়া না হলে এভাবে কেউ বলে? বুকোওয়স্কির শহর মার্কিন দেশের লস এঞ্জেলেস। সে শহরের মানুষজনের জীবনস্পন্দন ফুঠে উঠেছে বুকোওয়স্কির লেখা গল্প, কবিতা ও উপন্যাসে; অবশ্য ধন্যাঢ্য ও সুখি মার্কিন জনগনের জীবন নয়, সমস্যাগ্রস্থ দরিদ্র মানুষের জীবনই বুকোওয়স্কির লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়। কোণঠাসা লোকজনের প্রতি কেমন এক কবিসুলভ সহৃদয় প্রীতি ছিল বুকোওয়াস্কির । আকর্ষন ছিল মদের প্রতি, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি । বিপরীত লিঙ্গের প্রতি নাকি কবিদের অদম্য আকর্ষন থাকে। গতবছরে এক সাক্ষাৎকারে কবি নির্মেলেন্দু গুন বলেছেন, আমার কামবোধ প্রবল। এ তো গেল শরীরের হিসেব। মনের হিসেব অন্য। মনের এক রহস্যময় দিক রয়েছে। সে রহস্যময় মনের বোঝাপোড়ায় বাংলার বাউল লালন ও মার্কিন মুলুকের কবি বুকোওয়স্কি অভিন্ন। লালন লিখেছেন-কে কথা কয় রে দেখা দেয় না।নড়েচড়ে হাতের কাছে খুঁজলে জনম-ভর মেলো না।আর, বুকোওয়স্কি ‘ব্লুবার্ড’ কবিতায় লিখেছেন,আমার হৃদয়ে আছে এক নীল রঙের পাখি আমায় ছেড়ে যে যেতে চায় চলেকিন্তু পাখিটিকে আমি কঠোর স্বরে বলি :আমার হৃদয়েই থাকতোমায় আমি দেখাব না কাউকে ।বুকোওয়স্কির মা জার্মান। বাবা অবশ্য আমেরিকান। বুকোওয়স্কির জন্ম জার্মানিতে। ৩ বছর বয়েসে অবশ্য পরিবারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে। প্রথমে বাল্টিমোর ম্যারিল্যান্ডে বাসবাস করতে থাকে; পরে চলে আসে লস এঞ্জেলেস । বুকোওয়স্কির বাবার প্রায়শ চাকরি থাকত না। খুব মেজাজি ছিলেন ভদ্রলোক, ভীষণ রাগারাগি করতেন। বুকোওয়স্কির লেখা উপন্যাসে এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে। বুকোওয়স্কির শৈশব সুখকর ছিল না। পাড়ার ছেলেপুলেরা ওকে ‘জার্মান’, ‘জার্মান’ বলে ক্ষেপাত। চর্মরোগ হয়েছিল হাইস্কুলে পড়ার সময়। ঘরে বন্দি থাকতে হত। এভাবেই স্কুল ও কলেজের গন্ডি পেরোয় কিশোর। তরুন বয়েসে (১৯৪০/১৯৪৫) ২য় মহাযুদ্ধে ডামাডোল। তখনকার দিনে মার্কিন তরুণদের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য সরকারি খাতায় নাম লেখাতে হত। বুকোওয়স্কি র ব্যাপারটা পাছন্দ হয়নি। কেননা, ‘বি কাইন্ড’ নামে একটি কবিতায় বুকোওয়স্কি র লিখেছিলেন:উই আর ওলয়েজ আস্কডটু আন্ডারস্ট্যান্ড দি আদার পারসনসভিউপয়েন্টনো ম্যাটার হাউ আউট-ডেটেডফুলিশ অরঅবনক্সাস।সম্ভবত এ কারণেই সরকারি খাতায় নাম না লিখিয়ে লুকিয়ে থাকল। এফ বি আই তাকে ধরল। জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দিল সতোর দিন পর। পরে, ‘আ চ্যালেঞ্জ টু দি ডার্ক’ কবিতায় লিখেছেন: shot in the eye shot in the brain shot in the ass shot like a flower in the dance এসব বিস্ময়কর বোধ ও ব্যাতিক্রমী উপলব্ধিই হয়তো যুদ্ধে না যাবার জন্য কারণ হিসেবে কাজ করেছে। কী এক অস্থির অসহ্য সময়! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। নিহত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ। আহ্, যদি সব ভুলে থাকা যেত! মদ চাই মদ। মদ ধরল তরুণ কবি। আমৃত্যু মদ হয়ে থাকল সঙ্গী। এবং একজন অসুখি তরুণ বেড়ে উঠছে লস এঞ্জেলেস শহরে । ৫০ এর দশক। অ্যান্ড দ্য মুন অ্যান্ড দ্য স্টারস অ্যান্ড দ্য ওয়াল্ড কবিতায় লিখেছেন:রাত্রিতে অনেকক্ষণ হাঁটা- আত্মার জন্য ভালো:জানালায় উঁকি দিয়ে দেখাক্লান্ত গৃহিনীদেরবিয়ারআসক্ত স্বামীদের বিরুদ্ধেযুদ্ধ করছে ...নীলাভ চোখ স্বর্ণকেশী জেন নামে একটি মেয়ের সঙ্গে হঠাৎ দেখা। দেখে চমকে ওঠা।কবিতা লিখেন শুনলাম।এই তো। বুকোওয়স্কি থতমত।শোনান না? প্লিজ।বুকোওয়স্কি টের পেল কপালের বাঁপাশের শিরা কাঁপছে। শোনান না? প্লিজ। জেন আদুরে গলায় বলে। যেন পৃথিবীতে কবিতা ছাড়া কিছু নেই। আসলে এসব পরিচয় করার ছল।বুকোওয়স্কি সদ্যলিখিত কবিতা পাঠ করতে থাকে।বাড়ির পাশে। নগ্ন। সকাল ৮টা। শরীরে মেখেতিলের তেল, ওহ যিশু, আমি কি এসেছি এখানে?একসময় আমি হাসব বলে অন্ধকার গলির সঙ্গেযুদ্ধ করতাম।আমি এখন হাসছি না ...কবিতা পাঠ শেষ হলে জেন বলল: ভারি সুন্দর হয়েছে। বুকোওয়স্কি জেন এর সুন্দর মুখের দিকে চেয়ে থাকে। সময়টা পঞ্চাশ দশক। লেখা ছাপাচ্ছে না। মন খারাপ। মন খারাপ। মন খারাপ। মন খারাপ। মন খারাপ। মন খারাপ। মন খারাপ। আর বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি ... তারপর মারাত্মক অসুখ হল। আলসার ধরনের। রক্ত যাচ্ছে। হাসপাতালে ভরতি হতে হল। জেন এর মুখ উদ্বিগ্ন । বিবর্ন। একসময় অসুখ সেরে যায়। জেন ও সরে যায়। ধরে রাখা গেল না। যেন ও এসেছির অসুখের সময় পাশে থাকতে, ভরাসা যোগাতে । এমনই হয়। এরপর জীবনে এল বারবারা নামে এক নারী। নারীটি কবি। দু-পক্ষের বিয়ে হল। তারপর যা হয়। ১৯৫৯ সালে ডিভোর্স হয়ে যায়। ১৯৬০। অর্থনৈতিক সঙ্কট। লস এঞ্জেলেস পোস্ট অফিসে চাকরি নিতে হল। এখানেই কেরানি হিসেবে কাজ করতে হয়েছে পরবর্তী ১২ বছর। বুকোওয়স্কির প্রথম উপন্যাসের নাম: ‘পোষ্ট অফিস।’ ১৯৬২ সাল। ভয়ানক এক সংবাদ এল। জেন মারা গেছে। হা, ঈশ্বর! কবিতায় ফুটে উঠল সে দুঃখ আর আক্ষেপ। ‘জেন এর জন্য’ কবিতায় লিখেছেন:২২৫ দিন তুমি ঘাসের তলায়তুমি আমার চেয়ে এসব ভালো করে জান।তারা অনেক ক্ষণ ধরে তোমার রক্ত নিয়েছে,তুমি ঝুড়িতে শুকনো কাঠি?এভাবেই কি সব হওয়ার কথা ছিল?এই ঘরেএখনও প্রেমের প্রহরেএখনও ছায়ার দেখা মেলে।যখন তুমি চলে গেছপ্রায় সব কিছুই নিয়ে গেছ তুমি ।আমি রাতে অবনত হইবাঘের সামনেআমাকে যা হতে দেবে না। ১৯৬৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় জন মার্টিন নামে একজন সাহিত্যপ্রেমিক ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেস নামে একটি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। সাহিত্য পত্রিকা ছেপে বের করত ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেস । বুকোওয়স্কি র কিছু লেখা চোখে পড়েছিল জন মার্টিন এর। ১৯৬৯। বুকোওয়স্কি কে ডেকে জন মার্টিন বললেন, আপনি চাকরি ছাড়–ন তো মশাই।সে কী মশাই! বুকোওয়স্কি অবাক। চাকরি ছাড়লে খাব কি? জিজ্ঞেস করলেন। সে সব আমি দেখছি। জন মার্টিন বললেন, আপনি কেবল লিখতে থাকুন। পরে বুকোওয়স্কি লিখেছেন, আমার সামনে দুটি পথ খোলা ছিল। এক পোষ্টঅফিসে চাকরি করতে করতে পাগল হয়ে যাওয়া। নয়তো লেখকের জীবন বেছে নিয়ে ক্ষুধার্ত থাকা। আমি ক্ষুধার্ত জীবনই মেনে নিয়েছিলাম। জন মার্টিন যে সময় বুকোওয়স্কির লেখা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেসময় বুকোওয়স্কির তেমন নামডাক হয়নি- কৃতজ্ঞাসরূপ ব্ল্যাক স্প্যারো প্রেসকে প্রচুর লেখা দিয়েছেন বুকোওয়স্কির । অন্য ছোট ছোট প্রকাশনীর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন, তাদেরও আমৃত্যু লেখা দিয়েছেন বুকোওয়স্কি। পোষ্টঅফিসের চাকরি ছেড়ে ডুবে রইলেন লেখায় । কবিতা আসলে ব্যতিক্রমী ভাষায় জীবনেরই ব্যাখ্যা। আমরা মৃত্যুর আগে কী বুঝিতে চাই আর? জানি না কি আহা,সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের মতো এসে জাগেধূসর মৃত্যুর মুখ- একদিন পৃথিবীতে স্বপ্ন ছিল- সোনা ছিল যাহানিরুত্তর শান্তি পায় - যেন কোন্ মায়াবীর প্রয়োজনে লাগে।কী বুঝিতে চাই আর? রৌদ্র নিভে গেলে পাখিপাখলির ডাকশুনি নি কি? প্রান্তরের কুয়াশায় দেখি নি কি উড়ে গেছে কাক।জীবন ব্যাখ্যা করছেন নিমগ্ন বুকোওয়স্কি। আর সেজন্যই জীবন হয়ে উঠল উদ্দাম- যেমন মহত্তম কোনও কিছুর খোঁজে নিরাপদ সোজা রাস্তা ছেড়ে অনিরাপদ অ-যায়গাতেও যেতে হয়, অনেকটা সেইরকমই । প্রিয় নেশা মদ তো ছিলই, এবার যুক্ত হল নারী। নিজস্ব উপলব্ধিকে পূর্ণতা দেওয়ার লক্ষেই নারীর সান্নিধ্য, ভঙ্গিমা, উষ্ণতা ও কান্না খুব কাছ থেকে লক্ষ করছেন কবি। নারীর অঙ্গে না নারীর চেতনায়- কোথায় নিহিত আছে মহাকালকে উপলব্ধি করবার সূত্র? এই প্রশ্নে কাতর কবি। যদি তাকে সাহিত্যে পূনঃনির্মান করি তো? এভাবে কবিতা ও গল্পের উপাদান যোগাত লাস্যময়ী রহস্যময়ী সব নারীরা। তেমনই একজন উঠতি অভিনেত্রী লিন্ডা লি। বুকোওয়স্কির ‘ওমেন’ ও ‘হলিউড’ নামক উপন্যাস দুটিতে লিন্ডা লি অন্যনামে আছেন।আসলে বুকোওয়স্কি ছিলেন তান্ত্রিক । মিস্টিক। মরমীবাদীদের নারীদের ঘনিষ্টভাবে জানতেই হয়। অনেক নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ট সংযোগ গড়ে উঠতে লাগল কবির। লাল নীল রঙের নমনীয় উষ্ণ নারীদের সঙ্গে চলল লস এঞ্জেলেসের জোছনায় অবগাহন । কিংবা, প্রশান্ত মহাসাগরের সৈকতটি অতি নিকটেই। সমুদ্রের লবনাক্ত ঢেউয়ের ভিতর স্বল্পবসনা নারীর সান্নিধ্য অন্যমাত্রা পায়। অভিনেত্রী লিন্ডা লি-র সঙ্গে পরিচয় ১৯৭৬ সালে।ভিন্নধর্মী একটি রেস্তোঁরার মালিক লিন্ডা লি যেহেতু অভিনেত্রীটি ছিল ভারতীয় গুরু মেহেরবাবার ভক্ত। বুকোওয়স্কির ভিতর কি পেল কে জানে। দীর্ঘদিন টিকে থাকল ঘনিষ্ট ও গভীর অবৈবাহিক সর্ম্পকটি । এরপর ১৯৮৫ সালে দুপক্ষের বিবাহপর্ব সম্পন্ন হল। ততদিনে সানপেড্রো ক্যালির্ফোনিয়ায় স্থায়ীভাবে বাস করছেন বুকোওয়স্কি। সমুদ্র তীর ঘেঁষে বাংলো। উত্তাল বাতাস। অফুরন্ত অবসর। লিখে যাচ্ছেন। কবিতা ছাড়াও ৬টি উপন্যাস ও অজস্র ছোট গল্প লিখেছেন। সে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু কবিতা লিখে কী পেলেন ছন্নছাড়া লোকটি? “অ্যাজ দি পোয়েমস গো” কবিতায় বুকোওয়স্কি লিখেছেন:হাজার কবিতা লেখা হয়ে গেলে পর পাওয়া যায় টের, হয়নি তেমন সৃজন ।জীবনভর কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা। দরিদ্র মা-বাবা, অপরুপ লস এঞ্জেলেস শহর। তার রোদ -শৈত্য-ভূমিকম্প- দাবানল। জেন নামে একটি তরুণি মেয়ে; তার নীল নীল চোখ; তার মৃত্যু ... কিন্তু কিন্তু বুকের ভিতরের যে নীলরঙা লুকোন পাখিটি রয়ে গেছে সে পাখিটিকে চেনা গেল না যে ... আমার হৃদয়ে আছে এক নীল রঙের পাখি আমায় ছেড়ে যে যেতে চায় চলেকিন্তু পাখিটিকে আমি কঠোর স্বরে বলি :আমার হৃদয়েই থাকতোমায় আমি দেখাব না কাউকে ।আমৃত্যু সেই নীলপাখিটি কাউকে দেখতে দেননি ছন্নছাড়া কবিটি। ১৯৯৪। এক ধরনের রক্তের অসুখ (লিউকেমিয়া) ধরা পড়ল। ৯ মার্চ । ৭৩ বছর বয়েসে নীলপাখিটি উড়ে গেল দেহখাঁচা ছেড়ে । অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিধবা স্ত্রী লিন্ডা লি ছাড়াও ক্যালির্ফোনিয়ায় বসবাসরত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সমবেত হয়েছিল। বৌদ্ধদর্শন বাংলার বাউলদের জীবনধারায় সুগভীর প্রভাব রেখেছিলেন। বাউলশ্রেষ্ট হিসেবে লালনকেই গন্য করা হয়। লালনের আখড়াবাড়িটি কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ায়-সেই আখড়াবাড়িটির আঙিনায় ২০০৩ সালের দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মার্কেট নির্মানের উদ্যেগ নিলে সংস্কৃতিকর্মীরা তুমুল আন্দোলন করে ব্যবসায়ীদের সেই উদ্যোগ ব্যর্থ করে দেয়। বুকোওয়স্কির ক্যালির্ফোনিয়াস্থ বাংলোটিও মার্কিন বহুতল নির্মানকারী ডেভেলাপারদের চোখে পড়েছিল। বহুতল নির্মানের উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে সেটি ভাঙার উদ্যোগ নিলে মার্কিন সংস্কৃতিকর্মীরা তুমুল আন্দোলন করে ব্যবসায়ীদের দুরভিসন্ধি রোধ করে। জীবদ্দশায় বুকোওয়স্কি তীব্র ধিক্কার উচ্চরণ করেছিলেন: Boring damned people. All over the earth. Propagating more boring damned people. What a horror show. The earth swarmed with them. জীবদ্দশায় লালন গেয়েছিলেন:এ দেশেতে এই সুখ হল আবার কোথায় যাই না জানি।পেয়েছি এক ভাঙা নৌকা জনম গেল ছেঁচতে পানি। সব শেষে বুকোওয়স্কির কয়েকটি বাণী পাঠ করা যাক: Genius might be the ability to say a profound thing in a simple way. It's possible to love a human being if you don't know them too well. You begin saving the world by saving one person at a time; all else is grandiose romanticism or politics. There is a time to stop reading, there is a time to STOP trying to WRITE, there is a time to kick the whole bloated sensation of ART out on its whore-ass. There are worse things than being alone. Sex is interesting, but it's not totally important. I mean it's not even as important (physically) as excretion. A man can go seventy years without a piece of ass, but he can die in a week without a bowel movement.Sometimes you just have to pee in the sink. এই হল আমৃত্যু হৃদয়ে নীলপাখি লুকোন ছন্নছাড়া এক মার্কিন কবি ...
false
rg
মাননীয় স্পিকার!!! নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমান অধিকার বাস্তবায়ন এবং নারীর মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু সেই কাজটি করতে গিয়ে আমরা কি বারবার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলবো? স্পিকার একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। যিনি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন, তাঁকে সংবিধান, পার্লামেন্ট, সংসদীয় রীতি-নীতি, সংসদের যাবতীয় কার্যক্রম, সংসদের দৈনন্দিন কার্যাবলী এবং সাংসদদের সকল নোটিশ সম্পর্কে দক্ষ ও অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। সাধারণত একজন দক্ষ পার্লামেন্ট সদস্য বারবার সংসদে নির্বাচিত হয়ে নানা প্রতিকূলতা থেকে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ধীরে ধীরে এটি অর্জন করতে পারে। ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী একজন নবীন সাংসদ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সংরক্ষিত মহিলা আসনে তিনি আওয়ামী লীগের ৩১ তম সংসদ সদস্য। পার্লামেন্টে যার সিরিয়াল নাম্বার ৩৩১। মানে নবীনদেরও নবীন। এতোদিন ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে তিনি কি কি অবদান রেখেছেন তা আমাদের জানা নেই। এমনকি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি বাংলাদেশে কি কি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন, তাও আমাদের জানা নেই। বলা যায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবেই তিনি ছিলেন একজন আনাঢ়ি প্রতিমন্ত্রী। তেমন একজন আনাঢ়ি ব্যক্তিকে স্পিকারের মত একটি সাংবিধানিক পদে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাঁকে স্পিকার নির্বাচন করাটা একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। স্পিকারের মত একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকেও আমরা খেলনা বানিয়ে ফেলতে চাই। একজন পুতুল স্পিকার দিয়ে কখনোই সংসদীয় গণতন্ত্রে তুমুল শক্তিশালী কার্যকর বিরোধীদল নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। যদিও আমাদের দেশে সংসদে বিরোধী দল অকার্যকর। কিন্তু ভবিষ্যতে সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে স্পিকার হওয়া উচিত একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান দিয়ে। যিনি সংসদকে তাঁর বলিষ্ঠ নের্তৃত্ব দিয়ে কার্যকর করে তুলতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী'র প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, স্পিকার পদ পাওয়ায় জন্যে আপনার বিবেচনায় ওনার দুটো যোগ্যতা সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে। প্রথমটি হল ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী হল জনাব রফিকুল্লাহ চৌধুরীর মেয়ে। রফিকুল্লাহ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের (প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন) একান্ত সচিব ছিলেন। আর দ্বিতীয় যোগ্যতা হল, ২০০৮-০৯ সালে আপনি যখন মঈন-ফকরুলদের প্রিজনে ছিলেন, তখন ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী আপনার পক্ষে একজন প‌্যানেল অ্যাডভোকেট ছিলেন। আদালতে আপনাকে জেল থেকে ছাড়ানোতে অভূতপূর্ণ সাফল্য হয়তো দেখিয়েছিলেন। আমরা জানি না, আপনি হয়তো জানেন। স্পিকার হবার মত বাকী সকল যোগ্যতা ওনার আছে। কিন্তু সেই যোগ্যতা দিয়ে তাঁকে পাশ করে আসতে হবে। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। ঝানু পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নিজেক পরিচয় করানোর পর কেবল সেই বিবেচনা আসতে পারে। কিন্তু তিনি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য নয়। তাই তাঁর সেই সুযোগ কোনো দিন আসবে কিনা আমরা জানি না। ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরীকে স্পিকার হিসেবে পেলে বাংলাদেশ নতুন সংকট আমদানি করবে বলে আমার ধারণা। স্পিকারের মত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও পুতুল আর আনুগত্যের দাসত্বে নিমজ্জিত হবে। শুধু তাই নয়, স্পিকার পদটি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রী'র পর তৃতীয় সর্য়োচ্চ পদমর্যদা। সেই স্পিকার পদটিকে এভাবে মর্যাদাহানী কোনো শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না বলে মনে করি। ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী-এর যথার্থ সম্মান রেখেই বলতে চাই, ভবিষ্যতে তিনি সংসদে নিজের দক্ষতা এবং কারিশমা দেখিয়ে স্পিকার হবার মত যোগ্যতা প্রদর্শন করে স্পিকার হলেই কেবল ওনাকে অন্তর থেকে স্বাগত জানাতে পারতাম। কারো দাক্ষিণ্য নিয়ে কিংম্বা আনুগত্য নিয়ে রাষ্ট্রীয় পদে শপথ পালন করার বিষয়টি শপথ না মেনে চলার মত অপরাধের সঙ্গে প্রচ্ছন্নভাবে যুক্ত। সংসদীয় গণতন্ত্রে বাংলাদেশ আরেকটি ভুল পথে হাঁটার রাস্তায় রওনা করল। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।
false
mk
আবার নাশকতার পরিকল্পনা জামাত শিবিরের!!! জামায়াত-শিবিরের দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মী আন্দোলনের নামে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা, পেট্রলবোমা, ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু নেতা-কর্মীর পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন তথ্যের উল্লেখ করে নাশকতা রোধে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি এবং প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে জামায়াত-শিবিরের পাশাপাশি বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামও রয়েছে। বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আগের মতো সারা দেশে আন্দোলন কর্মসূচির নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড শুরুর পরিকল্পনা করছে। ভবিষ্যতেও তারা সরকারি অফিস-আদালত, থানা, বিদ্যুৎ অফিস, কেপিআই, রেল যোগাযোগব্যবস্থাকে টার্গেট করবে। নাশকতার কৌশল হিসেবে তারা গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর, ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলা, গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং রাজনৈতিক নেতাদের ওপর ককটেল নিক্ষেপ, মহাজোটভুক্ত দলের নেতা-কর্মী ও তাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হতে পারে। কেবল রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় প্রদান এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হেরে গেলেও নাশকতার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সূত্র।সূত্র জানায়, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা ও সাতক্ষীরায় যাদের নেতৃত্বে হামলা হবে তাদের কয়েকজনের নাম জানা গেছে। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুল গণির নেতৃত্বে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা জেলার ভোগদাবুড়ী, ধরণীগঞ্জ, চিলাহাটি, বোড়াগাড়ী, কেতকীবাড়ী, চাঁদখানা, গোমনাতি, মীর্জাগঞ্জ, জোড়াবাড়ী, পাঙ্গামটকুপুর, বড় রাউতা, নাউতারা এবং হরিণচড়া এলাকায় নাশকতা ঘটাতে পারে। তারা সড়ক অবরোধ, ব্রিজের পাটাতন তুলে ফেলা, ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলা, যানবাহন ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাতে পারে। এসব সহিংসতায় দায়িত্ব পালন করবে জলঢাকার ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জামায়াতকর্মী মোসাদ্দেকসহ ১০-১২ জন।কুড়িগ্রাম জেলা জামায়াতের আমির আজিজুর রহমান স্বপন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকী, জেলা শাখার কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা নিজাম উদ্দিন ও মাওলানা হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে। তারা রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা, রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ বাজার এলাকা, নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ও ধাউরার কুড়ি, সদর উপজেলার ঘোগাদহ ও পাঁচগাছি এলাকায় নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। জয়পুরহাট জেলা শহর জামায়াতের আমির হাসিবুর রহমান লিটন, জামায়াত নেতা শামছুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম সবুজ ও ডা. ফজলুর রহমান সাইদের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডিসি অফিস, রেলস্টেশন, বিআরটিসি অফিস, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অফিসে হামলা হতে পারে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের বাসাবাড়িতেও তারা হামলার পরিকল্পনা করছে।গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম লেবুর নেতৃত্বে স্থানীয় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনসহ ওই এলাকার আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে হামলার টার্গেট করছে।সাতক্ষীরার জয়নগর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা কামরুজ্জামান ও কলারোয়া উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বুলবুল জেলায় নাশকতামূলক হামলায় নেতৃত্ব দিতে পারেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ছাড়াও সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পরিকল্পনা করছেন। কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর, খোর্দ্দবাটরা ও ক্ষেত্রপাড়া, যুগিখালী ইউনিয়নের ওফাপুর, দেয়াড়া ইউনিয়নের দেয়াড়া ও মাঠপাড়া এলাকায় হামলা হতে পারে। সম্ভাব্য হামলাকারীদের মধ্যে জয়নগর ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি রবিউল ইসলাম, ছদর উদ্দীন মোড়ল, ওজিয়ার মোড়ল, মালেক গাজী, গফ্‌ফার গাজী অন্যতম।প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কে কী করছে সে ব্যাপারে র‌্যাবের নজরদারি রয়েছে। কেউ নাশকতার চেষ্টা চালালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি যে দলের লোকই হোন না কেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে মর্মে আমরা খোঁজখবর পাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের তালিকা হচ্ছে।’- See more at: Click This Link
false
rn
আকাশভরা সূর্য-তারা অবন্তি রিকশায় উঠল। আজ তার জন্মদিন। কিন্তু তার মন ভালো নেই। সে এক ঘন্টা রিকশায় করে ঘুরবে। তার মন খারাপ হলেই সে একা একা রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বাইশ বছরের মেয়েরা একটু আধটু স্বেচ্ছাচারিতা করতেই পারে। তার বয়সী অনেক মেয়ে দুই বাচ্চার মা হয়ে যায়। বিশেষ বিশেষ দিন গুলতে অবন্তির বেশী কষ্ট হয়। অবন্তির জন্মের সময় তার মা মারা যায়। মা'র মৃত্যুর জন্য অবন্তি নিজেকে দায়ী মনে করে। অবন্তির বাবা- অবন্তিকে এক আকাশ ভালোবাসা দিয়ে বড় করে। অবন্তির চাচারা তার বাবাকে বিয়ের জন্য অনেক রকম চেষ্টা করে- ব্যর্থ হয়। রিকশা ধানমন্ডি আসতেই অবন্তি রিকশাওয়ালাকে বলল- চাচা থামুন। রাস্তার পাশের দোকান থেকে এক কাপ চা খাবো। অবন্তি খুব সহজ ভাবে রিকশা থেকে নেমে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেল। আশে পাশের সব মানুষ 'হা' করে এই দৃশ্য দেখল। অবন্তি মনে মনে বলল- দেখবি দেখ, কিন্তু এত কুৎসিত করে তাকানোর কি দরকার? অবন্তি চা শেষ করে দেখল- তার পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলেটা আজ দুই বছর ধরে অবন্তির পেছনে পেছনে ঘুর ঘুর করছে। ছেলেটি খুব হাসি খুশি- প্রাবন্ত। সারাক্ষন মজার মজার কথা বলে। ছেলেটির নাম শুভ্র। নামের সাথে চাল-চলন কথা বার্তার খুব মিল। শুভ্র বলল, অবন্তি আমাকে এক কাপ চা দিতে বলো। তারপর একটা সিগারেট। আজ আমার কাছে টাকা নেই। তুমি চালিয়ে নাও আমি পরে শোধ করে দিব। অবন্তি হেসে হেসে বলল- এর আগেও তো আরও অনেক টাকা পাই। সেগুলো কবে দিবে ? শুভ্র বলল- আহ অবন্তি, দিব দিব। এখন চুপ করো। চা দিতে বলো। চা খেয়ে এক ঘন্টা তোমার সাথে সারা ধানমন্ডি হাঁটব। শুভ্র বলল- তোমার পাশে পাশে হাঁটতে আমার অনেক ভালো লাগে। নিজেকে রাজা বাদশা মনে হয়। অবন্তি বলল- কিন্তু আমার নিজেকে রানী মনে হয় না। শুভ্র চিৎকার করে বলল- সারা বাংলাদেশে তোমার মত একটাও মেয়ে নেই। তোমাকে সাজতে হয় না, শুধু চোখে কাজল আর কপালে টিপ দিলেই দেবী দেবী মনে হয়। অবন্তি এবং অবন্তির বাবা ডিনার শেষ করে ব্যলকনিতে বসেছে। অবন্তি তার বাবার কাঁধে মাথা রেখে বাচ্চা মেয়েদের মতন ছোটবেলার গল্প শুনে। অবন্তির বাবা আজ অবন্তির মা'র গল্প করছে। প্রিয় পাঠক, আসুন অবন্তির বাবার জবানিতে অবন্তির মা'র গল্প শুনি। অবন্তি -বুঝলি মা, তোর মাকে প্রথম দেখি- নীলক্ষেত একটা বইয়ের দোকানে। দেখেই আমি অবাক, অবাক হওয়ার কারন হচ্ছে- গলকাল রাতে এই মেয়েটিকে আমি স্বপ্নে দেখেছি। চা খেয়েছি। অনেক গল্প করেছি। মেয়েটির নাম অলকা। আমি মেয়েটির সামনে গিয়ে বললাম- অলকা কেমন আছো ? আমার একটু ভয়ও করল না, একটু লজ্জা লাগল না। অলকা হাসি মুখে বলল- আমি ভালো আছি। তারপর আমি বললাম- তুমি কি এক কাপ চা খাবে আমার সাথে? অলকা ছোট করে বলল -আচ্ছা। তোর মা, চায়ের কাঁপে প্রথম চুমুক দেবার আগেই বললাম- তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে ? অলকা একদম চুপ। সে সময় আমার কোনো টাকা পয়সা ছিল না। তবে আমি দেখতে ছিলাম- রাজপুত্র। হয়তো, আমার রুপে মুগ্ধ হয়েই- তোর মা আমাকে বিয়ে করতে রাজী হলো। তবে, আমি দেখতে যেমন নায়ক রাজ্জাকের মতন ছিলাম- তোর মা ছিল নায়িকা ববিতা'র মতন । বিয়ের পর তো আমরা প্রতি সপ্তাহে একটা করে সিনেমা দেখতাম। শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে- অবন্তিদের বাসার সামনে। এখনও পাঁচ টা বাজেনি, পাঁচ মিনিট বাকি আছে। এই পাঁচ মিনিটে শুভ্র একটা সিগারেট শেষ করবে। সিগারেট শেষ করে অবন্তিদের ঘরের দরজায় টোকা দিতেই- অবন্তির বাবা দরজা খুললেন। শুভ্র বলল- চাচা কেমন আছেন ? অবন্তি কই ? অবন্তির বাবা বললেন- তুমি ঘরে এসে বসো। শুভ্র'র মধ্যে কোনো ভয় বা সংশয় নেই। শুভ্র আরাম করে সোফায় বসল। অবন্তি চা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। অবন্তি বাবার হাতে চায়ের কাপ দিতে দিতে বলল- বাবা, এই ছেলেটির কথা তোমাকে বলেছি গতকাল। অবন্তির বাবা বললেন- শুভ্র তুমি কি করো? শুভ্র বলল- চাচা, আমি কিছু করি না। কিন্তু আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। আমি বেঁচে থাকতে কোনো দুঃখ-কষ্ট অবন্তিকে স্পর্শ করতে পারবে না। অবন্তির বাবা শুভ্র'র সাহস দেখে- আনন্দিত হলেন। এই রকম সাহসী ছেলে তার খুব পছন্দ। তিনি শুভ্র'র চোখ মুখ দেখে- মনে মনে ভাবলেন- এই ছেলে সাহসী এবং সহজ সরল। কোনো জটিলতা এই ছেলের মধ্যে নেই। অবন্তি'র বাবা বাজারে গেলেন। আজ শুভ্র'র প্রিয় খাবার রান্না হবে। রান্না করবে শুভ্র এবং অবন্তি'র বাবা। অবন্তি তখন বই পড়বে। রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা' অবন্তির অনেক প্রিয় বই। যখন খুব আনন্দ হয়- তখন অবন্তি শেষের কবিতা বইটি পড়ে। "মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম/ আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়;/ রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়/ আমার পুরানো নাম।" শুভ্র অবন্তি'র পাশে বসতে বসতে বলল- "শুক্লপখক হতে আনি/ রজনী গন্ধার বৃন্তখানি/ যে পারে সাজাতে অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে/ সে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায়/ ভালমন্দ মিলায়ে সকলি,/ এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।" শুভ্র আবৃত্তি শেষ করে পকেট থেকে একটা আংটি বের করে অবন্তি'কে পরিয়ে দিল। তারপর অবন্তি'র কলাপে একটা ছোট্র চুমু দিয়ে বলল- অনেক ভালোবাসি তোমাকে। অবন্তি'র চোখ থেকে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। শুভ্র অবন্তি'র চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল- খবরদার আর কখনও যেন তোমার চোখে পানি না দেখি। এক বছর হয়ে গেল অবন্তি'র বিয়ে হয়েছে। অবন্তি'র পেটে বাচ্চা । সাত মাস চলছে। ডাক্তার বলেছে একটা ছেলে বাচ্চা হবে। পেটের মধ্যে বাচ্চা টা খুব বেশী নড়াচড়া করে, অবন্তি টের পায়। সুন্দর সুখের সংসার। অবন্তি মনে মনে ভাবে- জীবন অনেক সুন্দর। তারা বড় একটা বাসা নিয়েছে। শুভ্র, অবন্তি এবং অবন্তি'র বাবা এক সাথে থাকে। অবন্তি'র বাবা সারাক্ষন বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকেন। শুভ্র অফিস শেষ করে- বাসায় ফিরে শ্বশুরের সাথে দাবা খেলতে বসে। শুভ্র প্রতিদিন অবন্তিকে ডাবের পানি খাওয়ায়। রাতে ঘুমানোর আগে- অভন্তিকে ধরে ধরে কিছুক্ষন হাঁটায়। অবন্তি ঘুমানোর পর শুভ্র ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবে- জীবনটা মন্দ নয়। রাতে অবন্তি ভয়ের স্বপ্ন দেখে- স্বামীকে জড়িয়ে ধরে, সাথে সাথে তার সব ভয় চলে যায়। ভোরে অবন্তি'র বাবা ফযরের নামাজ পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবেন- অবন্তি'র মা বেঁচে থাকল জীবনটা আরও বেশী আনন্দময় হতো। এক শরত কালের শুক্রবার ছুটির দিনে শুভ্র অবন্তিকে নিয়ে যায় কাশবনে। অবন্তি নীল রঙের একটা জামদানী শাড়ি পরে। কাশফুলের মাঝে অবন্তিকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলল শুভ্র। অবন্তির বাবা অবন্তি আর শুভ্র'র ছবি তুলে দিল। কাশবন থেকে ফেরার পথে- পেছন থেকে অবন্তিদের গাড়িতে ধাক্কা দেয় একটা ট্রাক। সাথে সাথে অবন্তিদের গাড়ি বিশ গজ দূরে ছিটকে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পর শুভ্র এবং অবন্তির বাবা মারা যায়। অবন্তির বেঁচে যায় কিন্তু অবন্তির বাচ্চা টা পেটের মধ্যেই মরে যায়। সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
false
mk
তনু হত্যাকাণ্ড _কিছু কথা ঘটনার পর সতের দিন অতিবাহিত হয়েছে। অথচ তনু হত্যাকাণ্ডের কোনো কুল, কিনারা হয়নি। সকলের দাবি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করতে হবে। না হলে অনেকেই এই বিষয়টিকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করবে। ইতোমধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সেখানে তনুকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাহলে ফেসবুক ও অনলাইনে রক্তাক্ত নারীর ছবিটি কার? সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধী দ্রুত ধরা পড়ুক এবং শাস্তি পাক এই প্রত্যাশা আমাদের। তবে এই হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে নানা মাত্রায় এবং বিচিত্র ভঙ্গিতে অপপ্রচার চলছে। সেখানে সেনানিবাস এবং সেনাবাহিনীকেও জড়িত করা হয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী তাদের পেশাদারিত্বের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে। এজন্য সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য বা কর্মকর্তা তনু হত্যায় জড়িত থাকলে তার বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক।২০ মার্চ হত্যার পর ঢাকা সেনানিবাসে আইএসপিআর থেকে বিবৃতির মাধ্যমে তনুকে সেনা পরিবারের সন্তান দাবি করে এ ঘটনায় দোষীদের ধরতে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় ‘অসাধারণ’ কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বলেছে- তনুর বাবা মো. ইয়ার হোসেন বিগত ত্রিশ বছর যাবত্ কুমিল্লা সেনানিবাস ‘ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে’র একজন বেসামরিক কর্মচারী। তিনি সেনাপরিবারের সদস্য এবং তনু কুমিল্লা সেনানিবাসেই বড় হয়েছে। তাই তনুর নির্মম হত্যাকাণ্ডে সেনাসদস্যরা দারুণভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছেন। তাছাড়া সেনাবাহিনী জনসাধারণের অংশ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেদিন সেনাবাহিনী তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিল। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আকাঙ্ক্ষা তাদেরও। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রথম থেকেই সকল তদন্তকারী সংস্থাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী সম্পর্কে অনুমাননির্ভর ও মনগড়া বক্তব্য প্রদান ও প্রচার করছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে সেনাবাহিনী এবং তনু হত্যা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্যের উপস্থাপনা চোখে পড়ে। এ বিষয়ে তারা দায়িত্বশীল হওয়ার পরিবর্তে নির্বিচারে নানা মন্তব্য করে পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় লিপ্ত। হত্যার ঘটনায় সেনাবাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তার দায় কোনোভাবেই পুরো বাহিনীর নয়। সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী আমাদের অহংকার। অথচ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার জন্য তনুকে নিয়ে মিথ্যাচারে মেতে উঠেছে কুচক্রী ও ষড়যন্ত্রকারীরা। দেশ ও জাতির গৌরব এবং শক্তির প্রতীক আমাদের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে ক্ষমতালোভীদের হাতে দেশকে তুলে দেয়ার স্বপ্ন-জাল বুনছে অনিষ্টকারীরা। এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে।সেনাবাহিনী তনুকে নিজেদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিচার দাবি করেছে। এমনকি তাদের কেউ জড়িত থাকলে শাস্তি পেতে হবে সেটাও বলা হচ্ছে। তবু সুশীল সমাজ গলা ফাটাচ্ছে কেন সেটাই আমাদের বোধগম্য নহে। এমনকি হত্যার ঘটনায় তদন্তে সর্বপ্রকার সহায়তা দিচ্ছে সেনাবাহিনী। এজন্য প্রমাণ হওয়ার আগেই সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। সেনাবাহিনীকে হেয় করা বা আসল খুনিকে আড়াল করার চেষ্টা, সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা হিসেবেই বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে শান্তিরক্ষা মিশনে অনন্য ভূমিকা পালন করেও বিশ্বজুড়ে প্রশংসা অর্জন করেছে। গোটা বাঙালি জাতি এখন তাদের নিয়ে গর্ব বোধ করে। প্রকৃত খুনি কে তা প্রমাণ করার সুযোগ না দিয়ে দোষারোপ করলে তা হবে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তের অংশ। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করার দাবি তাদেরও। সেনাবাহিনীকে তদন্ত করার সময় ও সুযোগ না দিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে দোষী হিসেবে প্রচার করা হলে তা হবে আত্মঘাতী।অন্যদিকে তনুর ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত এবং বিবস্ত্র দেহের যে ছবি প্রচার করা হয়েছে তাও সত্য নয়। মাথার চুল কাটা ছবিটিও তনুর নয়। তনুর মৃতদেহ স্ট্রেচারে শায়িত, শান্ত, ছিন্ন-ভিন্ন নয়- এই ছবি কোনো মিডিয়া প্রচার করল না কেন? বরং একজন মৃত নারীকে ধর্ষণের অপবাদ দিয়ে ছোট করা হচ্ছে সারা দেশ জুড়ে।মূলত বর্তমান পরিস্থিতিতে এক শ্রেণির লোকের অতি উত্সাহ মানুষকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করতে পারে। প্রতিবাদ বা আন্দোলন হবে হত্যাকারীর বিরুদ্ধে, নিশ্চয় কোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দ্রুততম সময়ে বিচার করা গেলে সাধারণ মানুষের সংশয় দূর হবে।ড. মিল্টন বিশ্বাস লেখক :অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩
false
fe
আমেরিকানদের পশুপ্রেম ও তৃতীয় বিশ্বের মানুষের ভাগ্য আমেরিকানদের পশুপ্রেম ও তৃতীয় বিশ্বের মানুষের ভাগ্য ফকির ইলিয়াস ========================================= নিউইয়র্কের পাতাল রেল দিয়ে চলাচলের সময় ট্রেনের কামরায় একটি উদার আহ্বান প্রায়ই চোখে পড়ে। নিউইয়র্ক মহানগরীর মেয়র মাইক ব্লুমবার্গ নাগরিকদের প্রতি একটি অনুরোধ করছেন। তিনি বলছেন, যাদের গৃহপালিত কুকুর আছে, তারা যেন কুকুরগুলো সিটির সুনির্দিষ্ট দফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেন। এ জন্য একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি-ও পরিশোধ করতে হয়। দিনে দিনে কুকুরের রেজিস্ট্রেশন বিষয়টির গুরুত্ব বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ধনিকেরই পালিত কুকুরের উচ্চ অঙ্কের ইন্স্যুরেন্স করা থাকে। কয়েক বছর আগের ঘটনা। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলেন এক ধনকুরের। সঙ্গে ছিল তার প্রিয় কুকুর। কুকুরটি মানসিকভাবে ছিল অসুস্থ। ফলে কুকুরটি কামড়ে দিয়েছিল একজন পথচারীকে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়ে গিয়েছিল ওই পথচারীর। তিনি শিগগিরই ফোন করেছিলেন পুলিশে। পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালÑ সব কটি পর্ব সেরে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ওই পথচারী। ক্ষতি পূরণের মামলা করেছিলেন ওই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে। আদালতের রায়ে দেড় মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন তিনি। না, দেড় মিলিয়ন ডলার ওই ধনকুবেরের নিজ পকেট থেকে পরিশোধ করেননি। পরিশোধ করেছিল কুকুরের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। তারপরও ধনকুবের কুকুরটি নিয়ে ছিলেন মহাআনন্দিত। সংবাদটি ওই সময়ে নিউইয়র্কে সাড়া জাগিয়েছিল। মার্কিনীরা কুকুরপ্রিয় জাতি হিসেবে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছে বিশ্বব্যাপী। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নগরীতে কুকুর-বিড়ালের অভিজাত দোকানগুলো দেখলে চমকে উঠতে হয়। কুকুর-বিড়ালের খাবারের দোকান, পরিচর্যা কেন্দ্র, হাসপাতাল অত্যন্ত ব্যস্ততার সঙ্গে চলে যুক্তরাষ্ট্রে। অনেকের কাছে কুকুর-বিড়াল তাদের সন্তানতুল্য। অনেক মার্কিনী প্রকৃত পিতৃত্ব কিংবা মাতৃত্বের স্বাদ নিতে ভয় পান। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা দত্তক হিসেবে সন্তান গ্রহণ করে সে ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন। আর যারা তাও পারেন না, তারা প্রিয় কুকুর-বিড়ালটিকে বুকে আঁকড়ে ধরে কাটিয়ে দেন জীবনের বাকিটা সময়। অতিসম্প্রতি আবারো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কুকুর-বিড়াল। জাতিসংঘের একটি সমীক্ষা জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকানরা কুকুর-বিড়াল পোষার খাতে যে অর্থ ব্যয় করে তার অর্ধেক দিয়ে বিশ্বের ছয় বিলিয়ন মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা করা সম্ভব। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ পরিচালিত এই জরিপে আরো দেখা গেছে, ইউরোপিয়ানরা প্রতিবছর মদ্যপান বাবদ যে অর্থ ব্যয় করে এর দশ ভাগের এক ভাগ দিয়ে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। অথবা ইউরোপিয়ানরা এক বছর আইসক্রিম খাওয়া থেকে বিরত থাকলে ওই অর্থ বিশুদ্ধ পানীয়জলের সংকট মোকাবিলায় যথেষ্ট হতে পারে। জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাবে প্রতিবছর বাইশ লাখ মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়। জাতিসংঘ আরো জানিয়েছে, এশিয়া মহাদেশের ১.৭৭ বিলিয়ন লোক বিশুদ্ধ পানীয়জলের সরবরাহ কোনো কালেই পায়নি। বিশ্বে এই মহাদেশের অবস্থা ভয়াবহ। এখানকার পঁয়ত্রিশ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে দূষিত পানি ব্যবহার করে চলেছে। মানবাধিকার এবং গণহিতৈষীপূর্ণ যত বড় বড় বুলি আওড়ানোই হোক না কেন, বিশ্বের নিতান্ত গরিব মানুষগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কতটা উদার? একুশ শতকে এসেও এর সঠিক জবাব খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো। যায়নি কারণ যুক্তরাষ্ট্র কিছু কিছু ব্যাপারে এখনো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না। একথা আমরা সবাই কমবেশি জানি খাদ্যে অতিরিক্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ যুক্তরাষ্ট্র তাদের উদ্বৃত্ত খাদ্য বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দেয় না। অর্থনৈতিক বাজার সমতার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সব সময়ই বিবেচ্য হিসেবে ছিল এবং আছে। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য জাহাজ বোঝাই করে সমুদ্রে গিয়ে ফেলা দেয়া কিংবা ফলন্ত শস্যের মাঠের মালিক কৃষককে তার ফসলের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করে ফসল মাঠেই জ্বালিয়ে ফেলার মাঝে কি কৃতিত্ব থাকতে পারে? না কোনো কৃতিত্ব নেই। আছে বিশ্বে ধনী এবং দরিদ্রের বৈষম্যকে জিইয়ে রাখার অদম্য স্পৃহা। আছে অর্থনৈতিক বাজারদর চাঙ্গা রাখার নামে একটি শ্রেণীকে নিষ্পেষণ করা। একজন মানুষের কতটুকু স্বাধীনতা থাকলে তাকে ব্যক্তি স্বাধীনতার সংজ্ঞায় ফেলা যাবে তা দিয়ে বিতর্ক চলছে বিশ্বের অনেক দেশে। অতিসম্প্রতি এক মা তার এক সপ্তাহের জীবন্ত সন্তানকে আবর্জনার ব্যাগে পুরে ফেলে দিয়েছে রাস্তায়। নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের ঘটনা। পুলিশ নবজাতককে উদ্ধার করে ওই মাকে গ্রেফতার করেছে। মা পুলিশের কাছে বলেছে, ওই সন্তানটিকে পালনের সঙ্গতি ও সামর্থ্য তার ছিল না। আইনানুযায়ী ওই মায়ের সাজা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় সংস্থা, অনাথ আশ্রম, হাসপাতালগুলো বলছে যুক্তরাষ্ট্রে ভূমিষ্ট হওয়া কোনো সন্তানকেই রাস্তায় ফেলে দিতে পারবে না তার মা-বাবা। প্রয়োজনে সরকারের হাতে তুলে দিতে পারে। সরকার ওই নবজাতকের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে। কারণ কারো ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে- সদ্য জন্ম নেয়া একজন নাগরিকের ওপর এমন আচরণ কাম্য হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্ত স্বাধীনতা একজন মানুষকে বেপরোয়া করে তুলতে পারে এবং তা সমাজের জন্যও হতে পারে শঙ্কার কারণ। সেজন্য পরিমিত এবং পরিশীলিত আচার-আচরণের জন্য এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষভাবে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়েছে। অপচয়কেও এক ধরনের স্বাধীনতা, প্রাচুর্যের বড়াই বলে গণ্য করা হয় আমেরিকায়। অনেকে না বুঝেই অপচয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। ভাবতে কষ্ট হয়, এসব মানুষ যদি তাদের এই অপচয়কৃত অর্থটি বিশ্বের দরিদ্র মানুষের জন্য দান করে দিত! অনেক বাংলাদেশী আমেরিকানকে জানি, যারা হৃদয় দিয়ে এই বিষয়টিকে অনুধাবন করেন। বাংলাদেশী আমেরিকানদের নিজ মাতৃভূমির জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছাও আছে। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? শুধু নিউইয়র্ক নগরীতেই প্রায় দেড় শতাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতি, আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে বাঙালিদের। শীত মৌসুমে এসব সংগঠন স্বল্প ব্যবহৃত শীতের কাপড় সংগ্রহ করে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পাঠাতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পাঠাবেন কিভাবে? বাংলাদেশ বিমান যদি বিনা মূল্যে এসব কাপড় বাংলাদেশে বহন করে নিয়ে গিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বণ্টনের ব্যবস্থা করত তবে অনেক প্রবাসীই এমন মহতী কাজে এগিয়ে আসতেন। কিন্তু বিমান চলছে না এই রুটে। বাংলাদেশী আমেরিকান ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জানি-তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে বিভিন্ন দরকারি যন্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করছেন। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে আরো সহযোগিতা করতে চান। কিন্তু তাদের অভিযোগ দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। বলছিলাম আমেরিকানদের পশু প্রেমের কথা। পশু প্রেম থেকে হয়ত আমেরিকানদের দমানো যাবে না। কিন্তু মানবপ্রেমের প্রতি তাদের আরো ঘনিষ্ঠ করা যাবে। যদি তাদের হৃদয়ের মানবিক সমুদ্রকে আরো জাগানো যায়। আর সে উদ্যোগ নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তৃতীয় বিশ্বের মানুষদেরই। যারা পিছনে ফেলে এসেছেন, প্রিয় শৈশব, প্রিয় কৈশোর, প্রিয় যৌবনের স্মৃতি। তাদের প্রিয় স্বদেশ-স্বজন, শিকড়। তাদেরকেই হতে হবে ‘দ্য রুটস’ খ্যাত একেকজন অ্যালেক্স হ্যালী। -------------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি।ঢাকা। ১৮ এপ্রিল ২০০৯ শনিবার প্রকাশিত ছবি- ভিকি প্রিটসিনি সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ৯:২১
false
ij
রবীন্দ্রনাথের বাথটাব বাংলা ভাষার অপরিমেয় সাহিত্য সম্ভার দূরে ঠেলে রেখে আমরা যদি শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দিকটির কথাই বিবেচনা করি, তাহলেও দেখব যে- বাঙালির হৃদয়ে চিরকালীন শ্রদ্ধার আসনটি রবীন্দ্রনাথেরই। কুড়ি শতকের প্রারম্ভের পূর্ব বাংলার কৃষকের প্রতি বিশ্বকবির গভীর মমত্ববোধ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়, নোবেল পুরস্কারের একটি বড় অংশ তৎকালীন পূর্ব বাংলার কৃষকের কল্যাণে ব্যয় করেছেন কবি। ছিন্নপত্রের এক জায়গায় কবি লিখেছেন, ‘অন্তরের মধ্যে আমিও যে এদেরই মত দরিদ্র সুখদুঃখ কাতর মানুষ। এইসমস্ত ছেলেপিলে-গরুলাঙল-ঘরকন্না-ওয়ালা সরল হৃদয় মানুষ প্রথম থেকে আমাকে কি ভুল-ই না জানত! আমাকে এখানকার প্রজারা যদি ঠিক জানত, তাহলে আপনাদের একজন বলে চিনতে পারত।’ এই বিরাট হৃদয়ের মানুষটিই আবার ব্যাক্তিজীবনে ছিলেন বড় সৌখিন ...সেই উনিশ শতকের শেষের দিকে খোদ ইংল্যান্ড থেকে ফেনায়িত সুগন্ধী বুদ বুদ স্নানের অভিলাষে পতিসরের কাছাড়িবাড়িতে আনিয়েছিলেন ‘বাথটাব’... পতিসরের কাছারিবাড়ি । ছবি তুলেছেন সৈয়দ জাকির হোসেন। ৪ মে, ২০১০ ... কালের কন্ঠে প্রকাশিত । ১৮৯১ সালের পর থেকে কবি এখানে বহুবার এসেছেন। এই পতিসরে কবি রচনা করেছেন 'গোরা' ও 'ঘরে-বাইরে' উপন্যাসের অংশবিশেষ; ছোটগল্প 'প্রতিহিংসা', 'ঠাকুরদা'; 'পূর্ণিমা', 'সন্ধ্যা', 'দুই বিঘা জমি', 'তালগাছ'সহ অনেক কবিতা; 'তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা', 'বধূ মিছে রাগ করো না', 'তুমি নব রূপে এসো প্রাণে'সহ অনেক গান। দিন কয়েক আগের এক সন্ধ্যা; ঘরে বসে টিভি দেখছিলাম। টিভিতে আজকাল দেশিও পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক স্থান নিয়ে চমৎকার সব তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়। পতিসর রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়ি নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রটির উপস্থাপনা তেমনই আকর্ষনীয় মনে হল। মনোযোগী হয়ে উঠলাম। পতিসরের কাছারিবাড়িটি সংরক্ষণ করা হয়েছে কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ... আলমারি, ইজি চেয়ার, আয়না ইত্যাদি। বাড়ির সম্মুখভাগে সিংহ দুয়ার। দুয়ার পেরোলেই প্রশস্ত আঙিনা। বাড়িটি ১০ একর জায়গার ওপর। আমি যেসব দৃশ্য দেখছি, এককালে রবীন্দ্রনাথও দেখেছেন বলে শিহরণ বোধ করছি। ধারাবর্ননাকারী নারীকন্ঠ বলে যাচ্ছেন:... পুত্রের নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট। নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত ১ লাখ ৮ হাজার টাকা তিনি কৃষকদের উন্নয়নকল্পে প্রতিষ্ঠিত কৃষি ব্যাংকে জমা দেন। তো, পতিসর কোথায়? পতিসর গ্রামটি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নে। সেখানেই ছিল রবীন্দ্রনাথের আরেকটি কাছারিবাড়ি। এ প্রসঙ্গে আহমেদ রফিক লিখেছেন,‘শিলাইদহ ও শাহজাদপুর যদি রবীন্দ্রনাথের জন্য যথাক্রমে কবিতা এবং ছোটগল্প রচনার চারণভূমি হয়ে থাকে তাহলে কালিগ্রাম পরগনার সদর পতিসর কবিতা রচনার পাশাপাশি হয়ে উঠেছিল স্বনির্ভর সমাজ গঠনের পরীক্ষাকেন্দ্র। (পতিসর কৃষি ব্যাংক ও রবীন্দ্র সংগ্রহশালা। সমকাল। নভেম্বর, ২৪, ২০০৯) ...এমন তথ্য তথ্যচিত্রটির নির্মাতারা স্মরণে রেখেছেন দেখলাম। নওগাঁ জেলার মানচিত্র আত্রাই উপজেলার মানচিত্র। ডান পাশে মনিয়ারী ইউনিয়ন ও নাগর নদী। সেকালে পতিসরকে বলা হত রাজশাহীর কালিগ্রাম পরগনা ... কালিগ্রাম পরগনার সদর এই পতিসর। কবির মতে পূর্ববঙ্গের অন্য অঞ্চল থেকে এখানকার প্রকৃতি যেন বেশ খানিকটা আলাদা-ধূসর, উদাস। পতিসরে লেখা কবির কবিতা, গান, ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং স্বজনদের কাছে লেখা চিঠিপত্রে এই স্বতন্ত্র প্রকৃতির আভাস মেলে। কবির এই অনুভূতি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে ...কেন আত্রাই উপজেলার প্রকৃতি বেশ খানিকটা আলাদা-ধূসর, উদাস? রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য হয়ে পতিসরবাসী গর্বিত। স্বাভাবিক। এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোর প্রতিবেদক সাইফুদ্দীন চৌধুরী লিখেছেন,‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ববঙ্গের জমিদারি পতিসর থেকে পাওয়া থেকে স¤প্রতি পাওয়া কবির স্বহস্তে লিখিত পত্রখানি সেখানেই সংরক্ষণ করতে চায় এলাকাবাসী। পত্রখানি পাওয়া গেছে কবির পতিসরের মুসলমান পাচক মৃত কবেজ আলি মন্ডলের রক্ষিত পুরোনো কাগজপত্রের পুঁটুলি থেকে। এখন থেকে ১১৩ বছর আগে, ১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮ ভাদ্র তারিখে ছয় পৃষ্ঠাব্যাপী কবি এই দীর্ঘ চিঠিখানি লিখেছিলেন বোলপুর থেকে। কবির স্মৃতি রোমন্থনের নানা তথ্য আছে এতে। তবে কাকে কবি চিঠিখানি লিখেছিলেন তা ঠিক বোঝা যায় না। চিঠিখানি উদ্ধার করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমী যুবক মতিউর রহমান মামুন। মতিউর রহমান মামুন সন্ধান পেয়েছেন আরেক দুর্লভ সংগ্রহের-কবির পতিসর ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ ও পতিসর জমিদারির আয়-ব্যয়ের খরচের খাতা। শেষোক্তটি রক্ষিত আছে পতিসরের সন্নিকটবর্তী রানীনগর উপজেলার বিলকৃষ্ণপুর গ্রামের জনৈক কলেজশিক্ষকের কাছে। (প্রথম আলো। নভেম্বর, ৮, ২০০০৯) এই সেই চিঠি...না, পতিসরবাসীর আশা পূর্ণ হয়নি। রবীন্দ্রনাথের চিঠি আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ে গেছেন সরকারের প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা এসে-তাঁরা সেটি সংরক্ষণ করবেন তাঁদের জাদুঘরে। হিসাবের খাতাটিও চলে যাবে জাতীয় জাদুঘরে, ঢাকায়। সাধারন মানুষের ইচ্ছে ও রাষ্ট্রীয় বিধানের মধ্যে ফারাক বিস্তর ... ক্যামেরা ঘুরে যায়। ধারাবর্ননাকারী নারীকন্ঠটি একের পর এক তথ্য দিয়ে যেতে থাকে। আমি মনোযোগী হয়ে উঠি। পতিসর সম্বন্ধে বাড়তে থাকে আমার জ্ঞান । রবীন্দ্রনাথসহ পতিসরের পরিবেশ আমার করোটির কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পতিসরের কাছারিবাড়ির সীমানা ছুঁয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে কবির প্রিয় নদী নাগর । এখানে প্রতি বছর কবির জন্মজয়ন্তীতে মানুষের মেলা জমে নাকি। আমাদের ছেলেবেলায় পড়া ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’ -এই এই শিশুপাঠ্য কবিতাটি নাগর নদীকে নিয়েই লেখা জেনে শিহরিত হলাম । কেননা, দীর্ঘদিন ধরেই আমি ভাবছিলাম ঠিক কোন্ নদীকে দেখে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এই কবিতাখানি। কেননা, রবীন্দ্রনাথের জন্ম তো নদীবহুল গ্রামে নয়, ইঁট-পাথরের কলকাতায়। ... আর, ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে’ কবিতাটি পতিসরের কাচারিবাড়ির সামনের তালগাছ দেখেই লেখা ...এসব তথ্য পতিসরবাসীর জানা। কাজেই তারা পতিসরের কাচারিবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ‘রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘরে’ রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিজড়ানো জিনিসপত্র রাখতে চায়। নওগাঁর জেলা প্রশাসক ২০০৮ সালে এখানকার এই জাদুঘরের উদ্বোধন করেছেন । কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্থানীয় চাষিদের নিয়ে যে কলের লাঙল দিয়ে জমিচাষ করতেন, তাও এনে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এই জাদুঘরে। এই জাদুঘরে পতিসরে কবির স্মৃতিবিজড়িত অনেক নিদর্শনসামগ্রীই রয়েছে-পালঙ্ক, আলমারি, ঘড়ি, আরাম চেয়ার, বাথটাব, লোহার সিন্দুক, পতিসরে ব্যবহূত কবির নাগর বোটের দরজা, আয়না ইত্যাদি। বাথটাব এর ওপর চোখ আটকে গেল আমার, জিনিসটি খোদ ইংল্যান্ড থেকে আনিয়েছিলেন কবি ... উনিশ শতকের শেষের দিকে-ভাবা যায়? এমন সৌখিন, কবি বলেই সম্ভব হয়েছিল। পতিসরের কাছারিবাড়ি দর্শনে এসে যে কেউ বাথটাব টি দেখে ভাবতে পারে জমিদারের বিলাসব্যসনে খামতি ছিল না। প্রকৃত ইতিহাস কিন্তু অন্য কথা বলে। কবি গুরু বাথটাবে ফেনায়িত সুগন্ধী বুদ বুদ স্নান করেছেন ঠিকই কিন্তু নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ববোধ থেকে কদাপি সরে আসেননি। (১) পতিসর কাচারির পূর্ব পাশের খোলা জায়গায় রেশম কারখানা প্রতিষ্ঠা করে রেশম বস্ত্র বয়নের প্রকল্পও চালু করেন কবি । (২) প্রজাদের নিরক্ষতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে রাতোয়াল, কামতা ও পতিসরে মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় (১৯৩৭ সালের ২৬ জুলাই পতিসরে শেষ যাত্রার কবি শেষোক্ত মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়টি ‘রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন’ নাম দিয়ে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন) এবং বেশ কটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। (৩) পতিসর কামতা ও রাতোয়ালে তিনি দাতব্য চিকিৎসালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানকার প্রজাদের যে তিনি কত ভালোবাসতেন, তা পতিসরের জনৈক গ্রাম-কর্মীকে লেখা চিঠি থেকেই বোঝা যায়: ‘আমাদের গ্রামের জীবনযাত্রা বড়ই নিরানন্দ হইয়া পড়িয়াছে। প্রাণের শুষ্কতা দূর করা চাই। হিতানুষ্ঠানগুলোকে যথাসম্ভব উৎসবে পরিণত করিতে চেষ্টা করিয়ো।’ আমাদের এই সময়ে কৃষিবিদ শাইখ সিরাজ এই ঐতিহ্যকেই প্রানপন আঁকড়ে ধরে রাখছেন বলে মনে হয়। তাঁর প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। অন্তরঙ্গ রবীন্দ্রনাথ পতিসরের জমিদারি ও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ৪ মে, ২০১০ তারিখে প্রথম আলোয় সাইফুদ্দীন চৌধুরী লিখেছেন, ‘কবি-পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবদ্দশায়ই একান্নবর্তী পরিবারের ভাগ-বাটোয়ারা করে দেন। জমিদারি ভাগ হওয়ার আগে পূর্ববঙ্গের তিনটি জমিদারি-কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, পাবনার শাহজাদপুর এবং রাজশাহীর কালিগ্রাম পরগনা রবীন্দ্রনাথই দেখাশোনা করতেন। জমিদারি ভাগ হওয়ার পর কালিগ্রাম পরগনা হয় রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব জমিদারি। কালিগ্রাম পরগনার সদর এই পতিসর। ১৮৮৯ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কবির যোগাযোগ ছিল পতিসরের সঙ্গে। প্রজা হিতার্থে কবি এখানে গ্রামোন্নয়নমূলক বেশ কিছু উদ্যোগও গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল প্রজাদের দারিদ্র্য দূরীকরণ, চিকিৎসা বিধান, জলকষ্ট সমস্যার সমাধান, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, সুষ্ঠু বিচার-সালিসি-ব্যবস্থা প্রবর্তন ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ পতিসরে তাঁর গ্রামোন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন কয়েকজন দক্ষ সমাজকর্মীর দ্বারা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্য-কালিমোহন ঘোষ, অতুল সেন, ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’খ্যাত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, পুঠিয়ার রাজ-এস্টেটের দেওয়ান প্রসন্নকুমার মজুমদারের পুত্র শৈলেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ। এখানকার কৃষির উন্নতির জন্যই পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষ্টিতে স্নাতক করে এনেছিলেন। রথীন্দ্রনাথ পতিসরের চাষিদের সঙ্গে নিজেই যে কলের লাঙল চালিয়েছেন তা আগেই উল্লেখ করেছি। ১৯০৫ সালে কবি এখানে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পতিসর কৃষি ব্যাংক’। কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল অধিক মুনাফালোভী মহাজনদের হাত থেকে গরিব চাষিদের রক্ষা করা। চাষিদের অল্প সুদে ঋণ দিতেই বন্ধুদের আর্থিক সহায়তায় এই ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করেন। পরে অবশ্য কবি নোবেল পুরস্কারের অর্থের বড় একটি অংশ এই ব্যাংকে জমা রাখেন। প্রায় ২০ বছর ‘পতিসর কৃষি ব্যাংক’ কার্যকর ছিল। ’ (‘পতিসরের রবীন্দ্র স্মৃতি-নিদর্শন’।) তরুণ বয়েসে পতিসর কৃষি ব্যাংক সর্ম্পকে আহমেদ রফিক লিখেছেন,‘যতদূর জানা যায়, প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ ব্যাংকের জন্য শতকরা আট টাকা সুদে টাকা ধার করেন বন্ধুবান্ধব ও মহাজনের কাছ থেকে। ঋণগ্রহীতাদের সুদ দিতে হতো ১২ শতাংশ হারে। শেষ পর্যায়ে দেখা যায়, গৃহীত ঋণের টাকা সামান্যই ফেরত এসেছে। যে কারণে ১৯১৪ সালে নোবেল পুরস্কারের টাকা থেকে বেশ বড় একটি অংশ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে ১ লাখ ৮ হাজার, প্রভাত কুমারের মতে ১ লাখ ২০ হাজার এবং প্রশান্ত কুমার পালের মতে ৭৫ হাজার টাকা) পতিসর কৃষি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরও ব্যাংকের ভরাডুবি ঠেকানো যায়নি। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ 'পিতৃস্মৃতি'তে লিখেছেন, ''কৃষি ব্যাংকের কাজ বন্ধ হয়ে গেল 'রুরাল ইনডেটেডনেস আইন' প্রবর্তনের ফলে। প্রজাদের ধার দেওয়া টাকা আদায়ের উপায় রইল না।" কৃষি ব্যাংকের প্রসঙ্গে আহমেদ আরও রফিক লিখেছেন, ‘রবীন্দ্র ভবনের পূর্বোক্ত মাইক্রোফিল্ম থেকে জানা যায়, এক পর্যায়ে ঠাকুর পরিবারের কয়েকজন সদস্য-সদস্যা এবং সে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিকটজন হিসেবে পরিচিত প্রিয়ন্বদা দেবী, লাবণ্য প্রভা ঘোষ, নরেন্দ্র নন্দিনী দেবী, কামিনী সুন্দরী দেবী, নগেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী প্রমুখ ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। অমিতাভ চৌধুরীর মতে, ব্যাংক চলেছিল পুরো ২০ বছর। আর রবীন্দ্র ভবনের মাইক্রোফিল্মে জুলাই ১৯২৩ পর্যন্ত লেনদেনের শেষ ভুক্তি দেখা যায়। মনে হয়, অমিতাভ চৌধুরীর বক্তব্যই সঠিক।’ (“পতিসর কৃষি ব্যাংক ও রবীন্দ্র সংগ্রহশালা”।) আমরা মনে করি এমন মানবতাবাদী মানুষেরই পক্ষেই মানায় নির্জনে দীর্ঘক্ষণ বাথটাবের ফেনায়িত সুগন্ধী বুদবুদ সৌখিনতা! মাঝে-মাঝে মনে এই প্রশ্নের উদয় হয় ... আমাদের পক্ষে এই মানুষটিকে পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব কি না ... এ আলোচনার শুরুতে বলেছিলাম: কবির মতে পূর্ববঙ্গের অন্য অঞ্চল থেকে এখানকার প্রকৃতি যেন বেশ খানিকটা আলাদা-ধূসর, উদাস। পতিসরে লেখা কবির কবিতা, গান, ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং স্বজনদের কাছে লেখা চিঠিপত্রে এই স্বতন্ত্র প্রকৃতির আভাস মেলে। কবির এই অনুভূতি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে ...কেন আত্রাই উপজেলার প্রকৃতি বেশ খানিকটা আলাদা-ধূসর, উদাস? ...এরই সঙ্গে আহমেদ রফিক এর মন্তব্যটি স্মরণ করি,‘শিলাইদহ ও শাহজাদপুর যদি রবীন্দ্রনাথের জন্য যথাক্রমে কবিতা এবং ছোটগল্প রচনার চারণভূমি হয়ে থাকে তাহলে কালিগ্রাম পরগনার সদর পতিসর কবিতা রচনার পাশাপাশি হয়ে উঠেছিল স্বনির্ভর সমাজ গঠনের পরীক্ষাকেন্দ্র।’ এ দুয়ের মধ্যে কি কোনও সম্পর্ক রয়েছে? আত্রাই উপজেলার বেশ খানিকটা আলাদা-ধূসর, উদাস প্রকৃতি এবং রবীন্দ্রনাথের উন্নয়ন কর্মকান্ড। নতুন প্রজন্ম এ নিয়ে ভাববে আশা করি। রবীন্দ্রনাথেরই একটি গান দিয়ে শেষ করি: বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি। শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে ঊধর্বমুখে নরনারী । না থাকে অন্ধকার, না থাকে মোহপাপ, না থাকে শোকপরিতাপ। হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক, বিঘ্ন দাও অপসারি । কেন এ হিংসাদ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ, কেন এ মান-অভিমান। বিতর’ বিতর’ প্রেম পাষাণহৃদয়ে, জয় জয় হোক তোমারি । দ্রষ্টব্য: নওগাঁ শহর থেকে পতিসর ৩৮ কিলোমিটার। বাস ভাড়া ৩৫ টাকা। জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে থাকা যায়। আবারও মনে করিয়ে দিই-কাছারিবাড়ির সীমানা ছুঁয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে কবির প্রিয় নদী নাগর । ... আর এখানে প্রতি বছর কবির জন্মজয়ন্তীতে মানুষের মেলা জমে। এ ভূবনে এমন প্রাণের মেলা আর কোথায় বসে বলুন? আর এই কারণেই এই লেখাটি ৮ তারিখ কবির ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে পোষ্ট না করে অনেক আশা নিয়ে করলাম আজই ...যদি কেউ পতিসরের মেলায় গিয়ে একবার দাঁড়ায়... কেবল বাঙালিরই নয়, রবীন্দ্রনাথ যেন গোটা বিশ্বসভ্যতারই আদর্শ তথ্যসূত্র: ১. ৪ মে, ২০১০ প্রথম আলোয় প্রকাশিত সাইফুদ্দীন চৌধুরীর নিবন্ধ ‘পতিসরের রবীন্দ্র স্মৃতি-নিদর্শন’। ২. ২৪ নভেম্বর, ২০০৯; দৈনিক সমকাল-এ প্রকাশিত আহমদ রফিক এর নিবন্ধ “পতিসর কৃষি ব্যাংক ও রবীন্দ্র সংগ্রহশালা”। ৩. ৪ মে, ২০১০ কালের কন্ঠে প্রকাশিত ফরিদুল করিম এর নিবন্ধ: ‘কাছারিবাড়ি, পতিসর।’ ৪. জোহরা শিউলীর ব্লগ ‘গন্তব্য রবীন্দ্রনাথের ‘পতিসর’। নওগাঁ জেলা ও আত্রাই উপজেলার মানচিত্র বাংলাপিডিয়ার সৌজন্যে ... সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১০ সকাল ১১:০৪
false
hm
গল্প লেখা কী যেন একটা লিখতে চাইছিলাম, এমনই মনে হয় ভোরে ঘুম ভেঙে উঠে। নিজের ভেতরটাকে বাইরের অন্ধকারের মতোই নিকষ মনে হয়, কী যেন পড়তে চাই নিজের মনের মধ্যেই, কোন অক্ষর মেলে না। বুকের ভেতর চেপে বসা নিরক্ষর শূন্যতা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়ি কম্বলের নিচের গরমটুকু সম্বল করে। ছুটির দিন বলেই ঘড়িটাকে চড়িয়ে রেখেছিলাম বেলা দশটার দিকে। ঘড়িটা বোকাসোকা, ব্যাটারি পেয়ে খুশি, কখনো কাজে ফাঁকি দেয় না, দশটা বাজেই সে মুখ খোলে বিশ্বস্ত ঘোড়ার মতো। ওর চেয়ে উপকারী বন্ধু আমার ঘরে আর কিছু নেই, তবুও গিয়ে একটা থাবা বাড়িয়ে দিই ভালুকের মতো। চড় খেয়ে চুপ করে যায় ঘড়িটা, সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর মতোই। আমি বিছানায় বসে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। এখনও কি সময় হয়নি, এতো চড় খাবার পরও? আমারও কি চুপ করে যাবার সময় হয়নি? টয়লেটে ঠান্ডা পানির ঝাপটা চোখে দিতেই মনে পড়ে, কী লিখতে চাইছিলাম। একটা গল্প। বেশ ফাঁদালো করে। রসিয়ে রসিয়ে অনেক কথা বলতে চাই ঐ গল্পটাতে। আয়নায় তাকিয়ে দেখি একটা বেণী পাকানো ক্লান্তিকে। গল্পটা আমি চাইলেও এখন আর কাগজেকলমে লিখতে পারবো না। ওভাবে লিখি না বহুদিন ধরে। লিখতে চাইলে এখন কম্পিউটারের সামনে বসতে হবে। কম্পিউটার খুললে আর আমার গল্প লেখা হবে না। এক টুকরো রুটির ওপরে মধু মাখাতে মাখাতে মনে হলো, গল্পটা যেভাবে লিখতে চাইছি, সেভাবে না লিখলেও চলে। মনে মনেও লেখা যায়, ইচ্ছে করলেই। চরিত্রগুলো এক লাফে চলে আসে তখন দ্বিতীয় পাঁউরুটির টুকরোটার ওপরে। সবাই অনেক চেনা, কয়েকজনকে চিনি বলে জানতাম, কিন্তু তারা ঠিক চেনা নয়। দুয়েকজনকে চিনি না একদমই, ওরা আমার হাতের পুতুল। আমি ইচ্ছে মতো ওদের টুপির নিচে শিং আর পাৎলুনের নিচে লেজ বসিয়ে দিতে পারি, ওরা Zানতি পারবে না। আমি হাসিমুখে ওদের সরিয়ে দিয়ে পাঁউরুটির টুকরোটাকে বসিয়ে দিই প্রথম টুকরোটার ওপর। আজকে বাতাসে পরিষ্কার বসন্তের প্রতিশ্রুতি ভেসে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন রং আর আকারের পাখি নেচে বেড়াচ্ছে সামনের ন্যাড়া হয়ে যাওয়া গাছটায়। সেদিকে তাকিয়ে আমি স্যান্ডউইচ চিবাতে থাকি গরুর মতো করে। মনে পড়ে, গল্পটায় আমিও একজন চরিত্র। কিভাবে লিখি? শরীর থেকে বেরিয়ে একবার তাকাই নিজের দিকে। একটা লোক, হাফপ্যান্ট পরা, লাল একটা গেঞ্জি পরা, সে মন দিয়ে চোখ বুঁজে মধুর স্যান্ডউইচ খাচ্ছে। গল্পের লোকটা মোটেও এমন ছিলো না। হতাশ হয়ে ফিরে আসি শরীরে আবার। গল্পের আমিটা অন্যরকম, অনেক অন্যরকম। চায়ের পানি চড়িয়ে টেবিলের ওপর জমে থাকা পিৎজার বাক্সগুলোকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে বসি আলগোছে। রান্না করতে বড় আলসেমি লাগে মাঝে মাঝে, তখন পিৎজাই বিপদে বড় বন্ধু। দেয়ালে হেলান দিয়ে ভাবি, গল্পের আমিটার কথা কি আমার আসলেই মনে আছে? অন্যদিন পানি গরম করার কেটলিটা সময়মতো পানি ফোটার আগেই ফটাস করে বন্ধ হয়ে যায়, সস্তার তিন অবস্থা যাকে বলে। আজ দেখলাম সে-ও আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগে এই সহযোগিতাটুকু, স্নেহ নিয়ে তাকাই ওর দিকে। সে গ্যাস নেয় একটু, ফোঁস করে সাদা জলকণা বেরিয়ে আসে খানিকটা। নাকি ফোন করবো ঢাকায়? ফোন করে জিজ্ঞেস করি আমার স্মৃতিমান বন্ধুদের, গল্পের আমিটা আসলে কেমন ছিলো? আমি তো ভুলে গেছি, ওদের নিশ্চয়ই মনে আছে? নাকি ওদেরও এই মনে রাখার জায়গাটুকুতে টান পড়েছে? কিভাবে জানতে চাওয়া যায়? কেটলি এবার ভোঁসভোঁস করে ধোঁয়া ছাড়ে, আমি কথা গোছানোর চেষ্টা করি। বলতে চাই জ্যারেড ডায়মন্ডের হরাইজন অ্যামনেশিয়ার কথা। "দিগন্ত বিস্মৃতি বুঝিস? বুঝিস না? বোঝাই, শোন। ধর তুই তোর বাড়ির ছাদে উঠে রোজ হাঁটিস, গত দশ বছর ধরে। এই দশ বছর ধরে তোর সামনের দিগন্ত তো অনেক পাল্টেছে, নাকি?" কোন জবাব শুনতে পাই না। "পাল্টেছে। দশ বছর আগে কেমন ছিলো, তোর মনে আছে? কিংবা আট বছর আগে কোন এক দিনে? কিংবা, পাঁচ বছর আগে? শুয়োরের বাচ্চা, এক বছর আগে কেমন ছিলো বলতে পারবি?" আমি ক্ষেপে উঠি, ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যায় কেটলিটা, শব্দ হয়, খট করে। জবাব না পেয়ে আমার রাগটাও কেটলির মতোই পড়ে যায়। একটু গরম পানি ঢালি বিয়ার খাওয়ার মগটায়। ওতে আর বিয়ার খাই না, চা বানাই। বিয়ারের জন্য পেল্লায় দু'টো গ্লাস আছে। কেউ শুনতে চায় না দিগন্ত-বিস্মৃতির কথা। সবাই চায় নিজের দিগন্তুটুকু মুখস্থ করে বসে থাকতে। সবাই দাবি করে, প্রত্যেকটা দিনের দিগন্তই সে চেনে জানে। আঁকতে পারলে এখনই এঁকে দেখাতো। তবুও তর্ক করি। বলি, অত সহজ না। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি তাই ভুলে গেছি। আমার তোকে মনে আছে। নিজেকে ঠিক ঠাহর করতে পারছি না। কেমন, গল্পের আমিটা কেমন? চায়ের কাপে ঘুরতে থাকে গল্পের চরিত্রগুলো আবার। ওদের তো মনে আছে স্পষ্ট। যাদের চিনি না তাদেরও আন্দাজে আবছামতো আঁকতে পারবো। আমি, আমি কেমন? গল্পের আমিটা কেমন? উত্তর খুঁজে না পেয়ে অস্থির লাগে, গিলে ফেলি চা-টুকু ফড়াৎ করে। কেটলিটার দিকে তাকাই একবার, ও কিছু বলে না, চুপ করে থাকে বুদ্ধিমানের মতো। নাস্তা খেয়ে বসি কম্পিউটার খুলে। গল্পটা লিখতে পারলে বেশ হতো। গল্প লেখার জায়গা তো একটা আছে। গল্প শোনার মানুষও আছে কয়েকজন। এখন শুধু বলতে হবে গুছিয়ে। এ তো আর সত্যি নয়, গল্প। তা-ও ঠ্যাটামো করতে ছাড়ে না চরিত্রগুলো। একজন এমএসএন মেসেঞ্জারের উইন্ডো হয়ে আসে। চোখ টিপে বলে, "কতদূর?" বিরক্ত লাগে। অস্ফূটে বলি, "হবে, হবে। একদিন ঠিক লিখবো। লিখে ফেলবো সব কিছু। সব চুৎমারানিদের আমি চিনি। শুধু একটু সময় লাগবে।" উইন্ডোটা হাসে। বলে, "বটে?" ইচ্ছা করে ধরে একটা থাবড়া মারি। মারি না অবশ্য। লগ ইন করি ইন্টারনেটে। গল্প লেখার আগে মেইল চেক করা জরুরি। সুসংবাদ ... দুঃসংবাদ ... দুঃসংবাদ ... আমার কিছু যায় আসে না ... আররে কস কী? ... সুসংবাদ ... কেমন ছিলাম গল্পের আমিটা? মেইল করবো নাকি একটা? জবাব কি পাবো? সব শালা শুয়োরের বাচ্চা যদি সুশীল সেজে চুপ করে থাকে? যদি বলে, আমাদেরও হরাইজন অ্যামনেশিয়া আছে, তুই ফোট? নাকি সামনাসামনি ধরবো কাউকে? গিয়ে দরজায় ঘন্টা বাজাই, দরজা খোলা মাত্র, কোন সময় না দিয়েই অ্যাকশন, বলো, গল্পের আমিটা আসলে কেমন? অসহযোগ, অসহযোগ। গান্ধী স্ট্র্যাটেজি। সবাই গান্ধী হয়ে আমার গল্পটাকে চুদে দিতে চায়। বিরক্ত লাগে খুব। একটা মাত্র চরিত্রকে নিয়ে এতো ঝামেলা। বাকিরা তো তৈরিই আছে। এই বালের আমিটাকে একটা চিমটা দিয়ে ধরে দূর করে দিলে কেমন হয়? গল্পটা কি আদৌ গল্পের আমির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি না, টেবিলের নিচে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। বোঝা যায় না, বড্ড ঝাপসা, আর টেবিলের নিচে অনেক ধূলোবালি। একটা টান দিয়ে সরিয়ে দিই অচেনা লোকটাকে, কী এমন সমস্যা? বাকিদের দিয়েও গল্পটা হয়, অনেকখানিই। শুধু কী যেন হয় না, ধরতে পারি না। কম্পিউটার চলতে থাকে, আমি উঠে গিয়ে জানালা খুলে দিই। বাকিদের দিয়েও হয়। বাকিদের দিয়েই হয়। গল্পের আমিটা গল্পের জন্যে জরুরি নয়। কিন্তু কিছু কথা খুব লিখতে ইচ্ছে করছে আমার, সেগুলো লেখা হবে না ওকে বাদ দিলে। গল্পটা কম্পিউটারেই লিখি, আর মনে মনে, ঐ কথাগুলো লেখা বড় প্রয়োজন।
false
hm
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে রাষ্ট্রের উদ্যোগঃ ক্যালেন্ডার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে বাংলা ব্লগস্ফিয়ার মুখর হয়ে থেকেছে বরাবরই। সাম্প্রতিক নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এবং তাদের নির্বাচিত হবার পেছনে যুদ্ধাপরাধী জামাতে ইসলামি ও তাদের আশকারাদাতা বিএনপিকে জনগণের ঢালাও প্রত্যাখ্যান মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তাই নতুন সরকারের কাছে মানুষের অবিচল দাবী, ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের হোতাদের বিচার চাই। আশা ও নিরাশার দ্বন্দ্ব সততই এ প্রসঙ্গে দোদুল্যমান। কিন্তু আমরা নজরে রাখতে চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকারের আগ্রহকে। এই ক্যালেন্ডার পোস্টে তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অনুকূলে গৃহীত কার্যক্রম কালানুক্রমিকভাবে লিপিবদ্ধ হোক। নতুন কিছু ঘটলেই মন্তব্যে জানান, তা মূল পোস্টে সংযোজিত হবে। গ্ল্যাডিয়েটরের একটি সংলাপই প্রযোজ্য এখন আমাদের জন্যে। হোল্ড দ্য লাইন। সবাই ধন্যবাদ জানবেন। ৩১শে ডিসেম্বর, ২০০৮ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী মহাজোটের নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে জানান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র। ০১ জানুয়ারি ২০০৯ আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছেন শেখ হাসিনা । জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ইয়ান মার্টিন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ প্রধানের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে শেখ হাসিনা এই সহযোগিতা চান। সূত্র ০২ জানুয়ারি ২০০৯ ০৩ জানুয়ারি ২০০৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে উপযোগী আইনগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে অভিমত প্রকাশ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হতে কোন বাধা নেই। অপরদিকে বিবিসি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বিএনপির পক্ষ থেকে হান্নান শাহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে চারটি সুপারিশ পেশ করা হয়। ১৯৭৩ এর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ (বিচার) আইন পুনরুজ্জীবন প্রধান প্রসিকিউটরের দপ্তর স্থাপন বা কমিশন গঠন ১৯৭৫ এর ডিসেম্বরে রদ করা দালাল আইন পুনরুজ্জীবন বিচারকাজে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘে সহযোগিতা চেয়ে পত্রপ্রেরণ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সরকারের কাছে ১৯৭৩ এর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ (বিচার) আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। ০৬ জানুয়ারি ২০০৯ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে মার্চের মধ্যে কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান ও কিছু পদ্ধতিগত সুপারিশ করেন কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান। ০৮ জানুয়ারি ২০০৯ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গোলাম রাব্বানী বিশেষ ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ও তদসংক্রান্ত আইনের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা জানিয়েছেন। ১৫ জানুয়ারি ২০০৯ জাসদ নেতা ইনু বলেন, জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে চায়। ১৮ জানুয়ারি ২০০৯ শরীয়তপুরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নিশ্চয়তা নিয়ে জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আইনমন্ত্রী জানান, আইনের মাধ্যমেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব। ২৭ জানুয়ারি ২০০৯ ২৮ জানুয়ারি ২০০৯ ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি ২০০৯ জানুয়ারি ৩১, ২০০৯ বিডিনিউজ ২৪ ডট কম যুদ্ধাপরাধীরা যেন পালাতে না পারে সে জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা, জানুয়ারি ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)--যুদ্ধাপরাধীরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ আইন সমিতির বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি ছিল ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্র"তি। সংসদে গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, "তারা (যুদ্ধাপরাধীরা) যাতে বাংলাদেশ ছাড়তে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি।" তবে ওই ধরনের সন্দেহভাজনদের কোনো তালিকা প্রস্তুত হয়েছে কি-না সে সম্পর্কে মন্ত্রী কিছু জানাননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বাংলাদেশ আইন সমিতির এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এতে অন্যদের মধ্যে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। দলমত নির্বিশেষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও সভায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/জেডআর/এজে/এসকে/১৩৩১ঘ. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগে জামাতে ইসলামী চিন্তিত। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে।
false
hm
ভূরাজনীতি করছিলাম দরজাটা খুলে যাওয়ার পর ওপাশে আমার গোমড়ামুখো পড়শী ফদলুর রহমানকে দেখে আমার কেন যেন ভালো লাগে না। ঘণ্টাখানেক আগে যখন নিজের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম, তখন উল্টোদিকের বাড়ির কার্নিশে একটা মিশমিশে কালো দাঁড়কাককে উড়ে এসে বসতে দেখে বুকটা একটু দুরু দুরু করে উঠেছিলো। কুসংস্কারাচ্ছন্ন যাকে বলে, আমি তা নই। কিন্তু আমার দাদীর সব কথা তো আমি ফেলে দিতে পারি না, তাই না? দাঁড়কাক আর কালো বেড়াল, দুটোই অমঙ্গলের প্রতীক, দাদী পান খেতে খেতে আর উল বুনতে বুনতে হরদম এ কথাই বলতেন। আশেপাশে রোজই পাতিকাকের হল্লা শুনি, কিন্তু একটা জলজ্যান্ত ধেড়ে দাঁড়কাক যখন অন্য তিনশো ঊনষাটখানা ডিগ্রিকে কোনো পাত্তা না দিয়ে একেবারে কটমটিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে কার্নিশে বসে তাকিয়ে রইলো, তখন কেন যেন দাদীর সেই অমঙ্গলসঙ্কেতের কথাটাকে সিগারেটের পুটুর মতো ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারলাম না। কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ পদ্ধতিও দাদীরই শেখানো। দাঁড়কাক না দেখলে অমঙ্গলের আশঙ্কা কমে আসে। চোখ বুঁজে ভাবছিলাম, সম্ভাব্য কী কী অমঙ্গল হানা দিতে পারে আমার জীবনে। যারা আমার কাছ থেকে টাকা পায়, তারা বন্ধুবৎসল। হঠাৎ কয়েক লক্ষ টাকার জন্য হানা দিয়ে তারা আমার মতো সজ্জনকে ঠেঙিয়ে ভাংচুর করবে, সে সম্ভাবনা কম। কিন্তু এই অভিশপ্ত দাঁড়কাকের কারণে যদি সেই সদাহাস্যমুখ উত্তমর্ণের দল সব একসঙ্গে এসে আমাকে উত্তম-মধ্যম দেয়? কিংবা, অফিসে যে কিছুদিন ধরেই শুনছি, নতুন সিইও নাকি দুয়েকটা ডিপার্টমেন্টকেই গায়েব করে দেওয়ার কথা ভাবছে, সেটাই সত্যি হবে না তো? কাল সকালেই হয়তো অফিসে গিয়ে দুঃসংবাদটা পাবো। ডিজিয়েম অমায়িক ভাবে ডেকে নিয়ে কেক-কফি খিলিয়ে পিলিয়ে হয়তো মিষ্টি করে গলাধাক্কা দিয়ে আরামের চাকরিটা খেয়ে ফেলবে কপ করে। কিংবা হয়তো ফদলুর রহমানের সঙ্গে অকালসাক্ষাৎ ঘটতে পারে। একটা চোখ খুলে দেখি, কার্নিশের ওপর একটা মিশমিশে কালো মেনি বেড়াল এসে হাজির হয়েছে, আর দাঁড়কাকটা সেটাকে আদুরে ঠোকর দিচ্ছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে এবার দাঁড়কাক আর বেড়াল, দুজনই ঘাড় ঘুরিয়ে কটমট করে আমার চোখ বরাবর চাইলো। বুকটা তখন হতাশায় ছেয়ে গিয়েছিলো। দরজা খুলে যাওয়ার পর তাই ফদলুর রহমানের মুখোমুখি হয়ে আমি খুব একটা বিচলিত হই না। প্রথমে কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে থাকি দাদীর ফর্মুলায়। তারপর এক চোখে খুলে তাকিয়ে যখন দেখি, ফদলুর রহমান একই রকম গোমড়া মুখ করে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে, তখন মৃদু হেসে বলি, কেমন আছেন ফদল ভাই? ফদলুর রহমান সেই বিটকেল দাঁড়কাক আর বেয়াড়া মেনিটার মতোই কটমটিয়ে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। আমি জানি, ফদল ভাই ডাকটা লোকটা পছন্দ করে না। ভদ্রলোক রাজনীতি করেন, রাতের বেলা মাঝেমধ্যে টিভিতে চ্যানেল বদলানোর সময় দু'তিনটে চ্যানেলের টক শোতে তাকে দেখি, শুনেছি বাম রাজনীতির ময়দানে তিনি মোটামুটি কেষ্টুবিষ্টু লোক। এর আগেও তাকে ফদল ভাই ডেকে টক শোর লোকেরা বকা খেয়েছে। উচ্চারণটা নাকি ফিদেল হবে। ফিদেলুর রেহমান। যদিও ওনার বাড়ির দরজায় ফদলুর রহমানই লেখা। আমি দশ-বারোবার সংশোধিত হওয়ার পর একদিন বিনীতভাবেই নামফলকটার দিকে বিনয়ী আঙুল তাক করে বলেছিলাম, কিন্তু ওখানে যে ফদলুর ... ? সেদিন একটু রেগেই গিয়েছিলেন ফদলুর রহমান। দাদী যেভাবে পান চিবাতে চিবাতে দাঁড়কাক আর কালো বেড়ালের দোষকীর্তন করতেন, অনেকটা সে ঢঙেই চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছিলেন, বানানটা ফদলুর, কিন্তু উচ্চারণটা ফিদেলুর। আমাকে ফিদেল ভাই বলতে পারেন। তারপরও একদিন তাকে আনমনে 'স্লামালিকুম ফদল ভাই, ভালো আছেন' বলে ফেলেছিলাম। ভদ্রলোক বিষাক্ত চোখে আমাকে সেদিন প্রায় মিনিটখানেক দংশন করে হনহনিয়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু আজ কেন যেন আর কোনো কিছুর পরোয়া করতে ইচ্ছা করে না। ফদলুর রহমান সরু চোখে তাকিয়ে থাকেন আমার দিকে। আমি বুঝি, ভদ্রলোকের মাথায় চিন্তার ঝড় চলছে। আমি দরজার ফ্রেমে হাত রেখে ভর দিয়ে বলি, আপনি না নিউ ইয়র্ক গিয়েছিলেন? ফদলু সাহেব এবার চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, ফদল নয়, ফিদেল। ফিদেল। ফিদেল চেনেন না? আমি মিষ্টি করে হাসার চেষ্টা করি। ফদলু সাহেব আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বলেন, নিউ ইয়র্ক গিয়েছিলাম। ফিরে এসেছি। আমি গলা খাঁকরে বলি, আপনার না আগামী সপ্তাহে ফেরার কথা ছিলো? ফদলুর রহমান দাদীর মতো পান চিবিয়ে বিষাক্ত নিচু গলায় বলেন, ছিলো, কিন্তু আজই ফিরে এলাম। আমি হাতের উল্টোপিঠে কপালের ঘাম মুছে ফদলুর রহমানের হাতের দিকে হাত বাড়িয়ে বলি, এখনও বাসায় দৈনিক কচুবন রাখেন নাকি? দিন তো দেখি। ফদলুর রহমান দাঁড়কাকের দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমাকে অনিমেষ দেখে নিয়ে চুপচাপ পত্রিকাটা আমার হাতে তুলে দেন। আমি খবরের কাগজটা কিছুক্ষণ ওল্টাই পাল্টাই। দেশের মারপিট, খুনজখম, দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, পুনম পাণ্ডের পোপ ফ্রান্সিসের সামনে নগ্ন হওয়ার ঘোষণা, জাকা আশরাফ আর শহীদ আফ্রিদী আজ কী দিয়ে রুটি খেয়েছে, সব এক পলক করে দেখে যাই। আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখি ফদলুর রহমানের দিকে। ভদ্রলোক একই রকম শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দরজার ওপাশে। আমি দৈনিক কচুবনের অনেক প্রশংসা করি। বলি, দারুণ খবরের কাগজ ফদ ... মানে, ফিদেল ভাই। আপনি তো ওখানে লেখেন মাঝেমাঝে, তাই না? ফদলুর রহমানের অগ্নিদৃষ্টির উত্তাপ এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডও কমে না। তিনি গরগর করে বলেন, হ্যাঁ। কলাম লিখি। আমি প্রাণপণে মেমোরি হাতড়ে বলি, ঐ যে "রাক্ষুসী হাসিনা, তোকে ভালোবাসি না" ঐ কলামটা না? বুধবারে বেরোয় যে? ফদলুর রহমানের চাহনি যেন সামান্য মোলায়েম হয়ে আসে। কণ্ঠস্বরেও যেন বারুদের বদলে একটু মাখনের আভাস পাওয়া যায়। বলেন, হ্যাঁ, ওটাই। আমি সপ্রশংস চোখে তাকে দেখে নিয়ে আবার দৈনিক কচুবন হাঁটকাই কিছুক্ষণ। তারপর বলি, পত্রিকাটা ভালো। কাগজের মানটা দেখেছেন? বেশ ভালো নিউজপ্রিন্ট। মজবুত আছে। ফদলুর রহমান কিছু বলেন না। আমি দৈনিক কচুবনকে এবার একটা কাজের কাজে লাগাই। ফদলুর রহমান তাকিয়ে দেখেন শুধু, কিছু বলেন না। আমি কেশে গলা সাফ করে নিয়ে বলি, আর কী খবর, ফিদেল ভাই? ফদলুর রহমান বলেন, এই তো। চলে আর কী। আপনি কি এবার একটু পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করবেন? আমি দরজার ওপাশে দাঁড়ানো ফদলুর রহমানকে এপাশ থেকে দেখি। হঠাৎ মাথায় রক্ত চড়ে যায়। লোকটা নিজেকে ভেবেছে কী? সামান্য বাম রাজনীতি, টক শোর বকাবকি আর পত্রিকায় দুই কলম লেখার ফুটাঙ্গিতে ব্যাটার মাটিতে পা পড়ে না দেখছি। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে বলে আমাকে! আমি এবার একটু গরম হই। বলি, দেখেন ফিদেল ভাই, পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার দায়ভার আমার একার ঘাড়ে চাপালে তো হবে না। আপনি আগে বলেন আপনি নিউ ইয়র্ক থেকে এক সপ্তাহ আগে এসে হাজির হলেন কেন! একটা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা আপনার কাছ থেকে আমরা পেতেই পারি। ফদলুর রহমান এবার যেন একটু বিস্মিত হন। তার কণ্ঠের বারুদও যেন এক ছটাক কম পোড়ে। আমতা আমতা করে বলেন, বাম রাজনীতি নিয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গ্যালারিতে লোক হলো না। তাই একটু ঘোরাঘুরি করে ফিরে এলাম ...। আমি বলি, ফিরে এলেন? নিউ ইয়র্কে এতো জলদি ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গেলো আপনার? ফদলুর রহমান তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, নিউ ইয়র্কে আমি মাসে মাসেই যাই। আর কতো ঘুরবো? আমার মেজাজটা আরো খারাপ হয়। বলি, বাম রাজনীতি করেন, তারপরও মার্কিনিরা তাদের দেশে ঢুকতে দেয়? শাহরুখ খানকে তো এয়ারপোর্টে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রেখে ন্যাংটা করে তল্লাশি করে শুনেছি। ফদলুর রহমান অবাক হয়ে বলেন, দেবে না কেন? বাম রাজনীতি করি বলে কি আমি মার্কিনিদের পর? আমি কি শাহরুখ? আমি দৈনিক কচুবন সামলে ধরে বলি, তাহলে এই যে সাম্রাজ্যবাদ, বহুজাতিক কর্পোরেট, ইঙ্গ-ইন্দো-ইসরায়েলীয় ষড়যন্ত্র ...। ফদলুর রহমান এই প্রথম একটু হাসেন, নিস্তরঙ্গ দীঘির জলে যেন একটা করমচা খসে পড়ে। খুশি খুশি গলায় বলেন, সেসব তো আছেই। এরই মাঝে মাঝে আছে হাসি, খুশি, হর্ষ, বাম রাজনীতি নিয়ে বক্তৃতা। আমি দৈনিক কচুবনের একটা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে কপালের ঘাম মুছি। বলি, ওফফফফফ। ফদলুর রহমান আবার হাসি ভুলে গিয়ে চটে উঠতে থাকেন। বলেন, আপনি এরকম ঘামছেন কেন, আগে ব্যাখ্যা করুন তো। আমি বলি, ঘামবো না? একে তো এখানে এতো গরম, তার মধ্যে আবার কতো পরিশ্রম ...। ফদলুর রহমান সরু চোখে আবার আমাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলেন, কী পরিশ্রম? আমি গলা খাঁকরে বলি, একটা গোপন ব্যাপার। আপনার বিস্তারিত না শোনাই ভালো। ফদলুর রহমান এবার এক পা এগিয়ে আসেন। আমি চট করে একটা হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলি, ফদ ... মানে, কী যেন বলে, ফিদেল ভাই, ওখানেই থাকুন। দরজার ভেতরে আসার চেষ্টা করবেন না। ফদলুর রহমান মুঠো পাকিয়ে বলেন, বলুন শুনি কী গোপন পরিশ্রম। আপনাকে বলতে হবে। আমি দৈনিক কচুবনটাকে যুতমতো পাকড়ে ধরে বলি, দেখুন ফিদেল ভাই, জোর-জবরদস্তি করবেন না। আপনাকে কেন সব গোপন কথা খুলে বলতে হবে? আমার ঘাম আমি ঘামি। আপনি তা নিয়ে এতো উতলা কেন? ফদলুর রহমান দাঁতে দাঁত পিষে বলেন, আপনার ঘাম আপনি ঘামুন, যতো খুশি ততো ঘামুন। কিন্তু আমার ঘরে এসে আপনি ঘামছেন কেন? এর কী উত্তর দেবো, বলুন তো? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর কি আদৌ হয়? মানসচোখে সেই মঙ্গলনাশা দাঁড়কাক আর অমঙ্গলবাহ বেড়ালটাকে দেখতে পাই, তারা কুটিল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কয়েক মেগাওয়াট অমঙ্গল ছড়াচ্ছে। খুব রাগ হয় আমার। আমিও মুঠো পাকিয়ে বলি, নাহয় আপনার ঘরে এসে একটু ঘামছিই। তাই বলে এতো চোটপাট করবেন নাকি? ফদলুর রহমানের ধৈর্যের বাধটায় যেন একটু ফাটল ধরে। মাটিতে পা ঠুকে তিনি বলেন, আপনি আমার ঘরেই কেবল ঢোকেননি, আমার খাস অন্দরমহলের ভেতরে ঢুকে ঘামছেন। এর কী ব্যাখ্যা হতে পারে? আমি বিস্মিত হয়ে যাই লোকটার বুরবাকপনা দেখে। তারপর চটে গিয়ে বলি, আরে, আপনার বেডরুমের দেয়াল আলমারির মধ্যে আধঘণ্টা ধরে আটকা পড়ে আছি রে ভাই। এমনিতেই গরম পড়ে গেছে, আর তার মধ্যে না আছে জানালা, না আছে ঘুলঘুলি না আছে ফ্যান, না আছে এসি। এই গুমোট গরমের মধ্যে আধঘণ্টা থাকলে একটা সুস্থ সবল সুঠাম উদাম যুবক ঘামবে না? ফদলুর রহমান এবার দেয়াল আলমারির দরজার ওপাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠে বললেন, আপনি আমার ঘরের অন্দরমহলে দেয়াল আলমারির মধ্যে উদাম হয়ে ঢুকেছেন কেন? পৃথিবীটাকে বড় নিষ্ঠুর আর নিরর্থক মনে হয়। নিজেকে প্রশ্ন করি, সমাজটা এমন কেন? ফদলুর রহমান এমন কেন? ঐ দাঁড়কাক আর বেড়াল এমন কেন? কোমরে দৈনিক কচুবনটাকে ভালোমতো প্যাঁচ দিয়ে গুঁজে এবার বেরিয়ে আসি দেয়াল আলমারি ছেড়ে। ফদলুর রহমানের কাঁধে হাত রেখে নিচু গলায় বলি, বলছি বস। কিন্তু খুব গোপন কথা। প্লিজ, আর কাউকে বলবেন না। তারপর আমি সব বলি। 'চালান' শব্দটা শুনে ফদলুর রহমান ভুরু কোঁচকান। 'চীন' শোনার পর তাঁর মুখের মেঘ একটু কেটে যায়। 'আইএসআই' শুনে একটু যেন ভালো লাগার আলো ফুটে ওঠে তার গোমড়া অন্ধকার মুখে। শেষে 'উলফা' আর 'ভারতের পুটুমারা' শুনে আনন্দে হোহো করে হেসেই ওঠেন তিনি। তারপর আমার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেন, ভূরাজনীতি, তাই না? আমি আঁতকে উঠে এক হাতে কোমরে দৈনিক কচুবন সামলাই, অন্য হাত ঠোঁটে তুলে বলি, শশশশশ, আস্তে! এ কথা পাঁচকান করবেন না প্লিজ। ফদলুর রহমান তবুও হোহো করে খুশির হাসি হাসেন, তারপর বলেন, শুনলে স্বপ্না? উনি ভূরাজনীতি করছিলেন! বিছানায় চাদরের নিচে আধশোয়া হয়ে বিবস্ত্রা মিসেস ফিদেল সিগারেট খাচ্ছিলেন, তিনি হাসি হাসি মুখ করে সায় দেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে অভয় দিয়ে বলি, হ্যাঁ ভাবী, ভূরাজনীতি করছিলাম। ফদলুর রহমান বললেন, আসুন তাহলে একটু চা হয়ে যাক। স্বপ্না তুমি বিশ্রাম নাও, আমি নিজের হাতে ওনাকে চা বানিয়ে খাওয়াচ্ছি। আসুন আপনি। না না, দৈনিক কচুবন পাল্টে জামাকাপড় পরে নিন। দেখি স্বপ্না, পা-টা সরাও তো, ওনার প্যান্টের ওপর শুয়ে আছো কেন ... ? ঘামতে ঘামতে চা খেতে বেরিয়ে আসি প্যান্ট হাতে। ভূরাজনীতির অনেক কষ্ট।
false
rn
একটা ভূত জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে বারবার । কি করি _ চার্লস ডিকেন্স লোকটা অন্য রকম ছিলেন। পত্রিকায় তিনি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতেন। তাঁর উপন্যাসের কিস্তি পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে পাঠকেরা অপেক্ষা করতেন। মাস্টার হামফ্রেজ ক্লক নামের একটা সাপ্তাহিকে তাঁর উপন্যাস প্রকাশিত হতো। দি ওল্ড কিউরিসিটি শপ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে শুরু করে ১৮৪০ সালে। উপন্যাসটি ইংল্যান্ডের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমেরিকায়ও তুমুল জনপ্রিয় হতে শুরু করে।কাহিনি তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আর মাত্র একটি পর্ব বাকি। সবার আগ্রহ উপন্যাসের নায়িকা নেলের পরিণতি নিয়ে। সে কি বাঁচবে, নাকি মারা যাবে। তখন সাপ্তাহিকটি আমেরিকা যেত জাহাজে করে। জাহাজ যেদিন ভিড়বে, সেদিন ঘাটে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। পত্রিকা হাতে পেয়ে পড়ার জন্য সবাই অস্থির। আর সহ্য করতে না পেরে জনতা চিৎকার করে জাহাজের নাবিকদের কাছেই জানতে চাইল, ‘নেল কি মারা গেছে?’এ রকম এক গল্প জানার পর লেখক হতে কার না ইচ্ছা করে!একমাত্র তুমি ছাড়া কেউ ই জানে না তুমি কি... তোমার ক্ষমতা... তোমার মধ্যে কি আছে...। মানুষ তোমায় মাপে তোমাকে দেখতে কেমন, তোমার পোশাক, গেজেট, তোমার যা কিছু আছে তাই দিয়ে। কিচ্ছু যায় আসে না তাদের মাপায়। যুদ্ধ করো যোদ্ধার মতো। এ যুদ্ধ নিজেকে ইতিহাসের পাতায় ঠাই দেয়ার যুদ্ধ। হাল ছেড়ো না কোন কিছুতেই। এ লড়াই শুধু অস্তিত্তের না আরও বেশী কিছুর জন্য যেটা একমাত্র তুমি ই জানো। এমনকি যদি তোমার সব কাপর চোপড় বিক্রি করে রাস্তার কুকুরের সাথে শুয়ে থাকতে হয়, ভয় পেওনা। কোন সমস্যা না। যতক্ষণ তুমি বেঁচে আছ ততক্ষন তোমার গল্প শেষ হবে না... ’’ ।আমার দাদী মরে যাবার দশ মিনিট আগে আমাকে বলেছিলেন- '' শোন রাজীব, যে মেয়ের মাথার চুল অনেক লম্বা সেই মেয়েকে বিয়ে করবি। যে মেয়ের মাথার চুল যত লম্বা- সে মেয়ের তত বেশী ধৈর্য্য । আর ধৈর্য্যশীল মেয়েরা খুব সাংসারিক হয়। সে মেয়ের সাথে ঘর সংসার করে আরাম পাবি।এক খরগোশ প্রতিদিন এক মুদির দোকানে গিয়ে বলত... 'গাজর আছে' ?দোকানদার বারবার 'না নেই' বলার পরও সে প্রতিদিন গিয়ে বলত... 'গাজর আছে' ?এতে দোকানদার রেগে গিয়ে খরগোশ এর দাঁত ভেঙে দিলো...তারপর... তারপর খরগোশ গিয়ে পরের দিন মুদির দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো... 'গাজরের জুস আছে' ? সংলাপই নাটককে মানুষের দ্বারে নিয়ে যায়। অয়োময় নাটকে ‘ডাক্তার সাব শরীরডা ভালা’ রূপনগরের ‘ছিঃ ছিঃ তুই এতোই খারাপ’, কোথাও কেউ নেই নাটকের ‘মাইরের মধ্যেও ভাইটামিন আছে’, সবুজ সাথী’র ‘আগে মানুষ অনেক ভালো কাজ করতো, এখন মানুষ ভালো কাজ করেনা ক্যাকো ক্যাকো’ নাটকের সংলাপই আজও বলে দেয় তা কতটা জনপ্রিয়। বারো রকমের মানুষ নাটকে তারিক আনামের ‘থামলে ভালো লাগে’ শিরোনাম ডায়লগটিও দারুন জনপ্রিয় হয়। বহুব্রীহি নাটকে ‘বহিস্কার হও’ এবং পাখির গলায় যখন ভেসে উঠে ‘তুই রাজাকার’ কথা, তখন পাখির এই কণ্ঠস্বর ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশের মানুষের কণ্ঠে ও মনে। আজও কথায় কথায় বলে উঠে অনেকে ‘ওস্তাদ তুই না আমি’ সংলাপটি। আধুনিককালে ৫১বর্তী নাটকের ‘একা একা লাগে’ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো বেশ।নির্মম সত্য কথাটি হাসতে হাসতে বলতে পারাটাই হাসির নাটকের সার্থকতা।
false
ij
গল্প_ সাধক ও সম্রাট ১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দের আশ্বিন মাসের এক স্নিগ্ধ ভোর। নদী পাড় থেকে ভেসে আসা অচেনা কন্ঠের গান শুনে বাংলার শেষ নবাব মির্জা মুহম্মদ সিরাজউদ্দৌলা মুগ্ধ হয়ে যেতে থাকেন। গানের কথা বাংলা, লোকজ বাংলা, লোকজ বাংলায় তত অভ্যস্থ নন নবাব, তবে সুরটাই টানল বেশি। কেমন টানা-টানা উদাস করা সুর। ভোরবেলা বজরা নৌকার বিলাসবহুল প্রকোষ্ঠে আধো ঘুমে আধো জাগরনের ভিতর ছিলেন নবাব। নদী পাড় থেকে ভেসে আসা গানের সুরের রেষ চেতনায় মিশে যেতেই পরিপূর্ণ ভাবে সচেতন হয়ে উঠলেন। হাই তুললেন। সম্পূর্ন জাগ্রত হয়ে কিছু উদ্বেগও টের পেলেন মনের ভিতর। কলকাতার অবস্থা ঘোলাটে, ইংরেজরা স্থানীয় দালালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলার মসনদ দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। না, ইংরেজদের বাড়াবাড়ি আর মেনে নেয়া যায় না। একটি যুদ্ধ কি আসন্ন? দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে নবাব গবাক্ষর দিকে তাকালেন। গবাক্ষর বাইরে ভোরের নবদ্বীপের অমলিন একটি আকাশ ছড়িয়ে আছে, যে আকাশে ষড়যন্ত্রের লেশমাত্র নেই, যত ষড়যন্ত্র মানুষের মনের গভীরের থিকথিকে অন্ধকারে। নবাব গতকালই কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ রওনা হয়েছেন। বজরা নৌকাখানি যাত্রা বিরতিতে নবদ্বীপের কাছে গঙ্গার তীরে ভিড়ে আছে। নবাবেরর বাইশ বছর বয়েস। মাতামহ আলীবর্দী খানের মৃত্যুশয্যায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে মদ্যপান না করার শপথ করে সুরার আসক্তি ত্যাগ করলেও সুরের আসক্তি তার যায় নি- বিশেষ করে হিন্দুস্তানী রাগ সঙ্গীতের নবাবের আকর্ষন গভীর। নদী পাড় থেকে ভেসে আসা অচেনা কন্ঠের গানের সুর দেশিয় মনে হল। কেমন মন উদাস করে দেয়। এই কে আছিস? নবাব প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বললেন। অনতিবিলম্বে নাজির আমানুল্লা প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে। মাঝবয়েসি অভিজ্ঞ লোক সে, জাতে পাঠান। দীর্ঘ বলিষ্ট চেহারা, তবে এরই মধ্যে মাথার চুলে পাক ধরেছে। নবাবের অত্যন্ত বিশ্বস্ত লোক এই নাজির আমানুল্লা। নবাব বললেন, নদীপাড়ে বসে একজন কে গান গাইছে শুনতে পাচ্ছিস আমান? জ্বী। নবাব। যা, তাকে এখানে ডেকে নিয়ে আয়। সামনে বসে আমার এখন গান শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। নাজির আমানুল্লা ইতস্থত করে। সে অভিজ্ঞ লোক। তার অবস্থান শাসনক্ষমতার কেন্দ্রে বলেই বাংলার জনজীবনের খোঁজখবর তাকে রাখতে হয়। সে জানে নবাব যাকে ডেকে আনতে বলছেন সে লোকটা অত্যন্ত নির্ভীক আর স্বাধীনচেতা। সে নবাবের আমন্ত্রন উপেক্ষা করে নৌকায় নাও আসতে পারে। নবাব ঈষৎ রাগত স্বরে বললেন, কি হল? আমার কথা তোর কানে ঢোকেনি? এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছিস যে! অত্যন্ত মোলায়েম স্বরে নাজির আমানুল্লা বলে, হজুর, আপনি যার গান শুনতে পাচ্ছেন সে অতি ত্যাড়া লোক । ত্যাড়া লোক মানে! হজুর, লোকটা এই অঞ্চলের একজন বিখ্যাত গায়ক। হু, তো। নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাকে রাজসভায় যোগ দিতে বলেছিল। গায়ক রাজার প্রস্তাব আমলে নেয়নি। ও। তাই নাকি? নবাবের তরুণ সুন্দর মুখে কী সব ভাবনা উঁকি দিল। হ্যাঁ। নবাব কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, যা, ওকে গিয়ে আমার কথা বল। এলে আসবে, না এলে না আসবে। জোর করিস নে কিন্তু আমান, এ আমার হুকুম, লোকটাকে উচুঁ দড়ের সাধক বলে মনে হচ্ছে আমার। এখুনি যাচ্ছি হজুর। বলে নাজির আমানুল্লা প্রকোষ্ঠ ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যায়। নবাব হাত বাড়িয়ে একটি পারস্যনির্মিত রুপার পানপাত্র স্পর্শ করলেন; তিনি মদ্য পান না করলেও মাঝেমাঝে রুপার পানপাত্র স্পর্শ করেন, এতে এক ধরনের সুখ হয়। নবাব মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন অথচ এই মন্দ সময়টায় মদ খাওয়া জরুরি। ঢাকায়, মুর্শিদাবাদে, কলকাতায় নবাবের বিরুদ্ধে অসহযোগ আর ষড়যন্ত্র -এ সময় মদ পান করা প্রয়োজন ছিল- মদ পান করলে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি হয়, সাহসী সব পদক্ষেপ নেয়া যায়। কিন্তু তা সম্ভব নয়, মদ পান করলে মাতামহ আলীবর্দী খানের রুহ কষ্ট পাবে। সিরাজ ছিল মাতামহ আলীবর্দী খানের চোখের মনি, আলীবর্দী খান সিরাজকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। না, মদ ছাড়া যতই অস্বস্তি হোক, মাতামহ আলীবর্দী খানের রুহ কষ্ট দেওয়া যাবে না। একটু পর নাজির আমানুল্লা ফিরে এল। তার পাশে একটি গেঁয়ো ধরনের লোক । লোকটির বয়স বড় জোর পয়ত্রিশ কি ছত্রিশ হবে। কাঁধে ঝুলি, হাতে একটা কী যন্ত্র- একতারা বলে মনে হল। নবাব তাকিয়ায় হেলান দিয়ে ছিলেন, এবার সিদে হয়ে বসলেন; হাজার হলেও শিল্পী, এদের শ্রদ্ধা করতেই হয়। গায়ক লোকটি এসেছে দেখে নবাব কিছু অবাকও হলেন। নবদ্বীপের দোদন্ড প্রভাবশালী রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে...অথচ ...অথচ আমার ডাকে সাড়া দিল .. কেন? গায়কের গায়ের রং ময়লা, পরনে ধুতি-ফতুয়া, মাথার চুল উশকোখুশকো। একমুখ দাড়ি, তবে বড় বড় টলটলে দুটি চোখে গভীর ভাব খেলা করছে। নবাব ফারসি ভাষায় বললেন, বসুন, আপনি। নাজির আমানুল্লা লোকটাকে ফরাস দেখিয়ে দিল। লোকটা ফরাসের ওপর কাঁধে ঝুলি রেখে তার পাশে বসল। কেমন জড়োসরো ভাব, চারিদিকে তাকাচ্ছে, এর আগে সম্ভবত নবাবী বজরার বিলাসবহুল প্রকোষ্ঠ দেখেনি । নবাব মনে মনে হাসলেন। জগতের প্রকৃত সাধকদের কাছে রাজা-বাদশাদের রংমহলে জৌলুষ অধরাই থেকে যায়, তবে তারা আরও গভীরতরো মধুর রূপরসে আচ্ছন্ন হয়ে থাকেন ... নবাব ইঙ্গিতে নাজির আমানুল্লা কে প্রকোষ্ঠ ছেড়ে চলে যেতে বলেন। তারপর গায়কের দিকে মুখ ফিরিয়ে মৃদুকন্ঠে জিগ্যেস করলেন, আপনার নাম? রামপ্রসাদ, রামপ্রসাদ সেন। বসতভিটে? কুমারহট্ট গ্রাম । কুমারহট্ট? কোথায় সেটি? চব্বিশ পরগনা হৌজুর। ওহ্ । তা এ দিকে কোথায় এসেছিলেন? রামপ্রসাদ বললেন, মায়াপুর। শ্রীচৈতন্যের আখড়ায় সংগীতের উৎসব ছিল। আমায় তারা ডেকেছিল। আপনি কি বৈষ্ণব? না। তাহলে? আমি কালীসাধক, রাধাকৃষ্ণের গান আমি জানি নে । মহাপ্রভূর আখড়ায় মায়ের গানই গেয়ে এলাম। তেনারাও মন দিয়েই শুনল দেখলাম। আমি আর কি করতি পারি? ওহ্ । তা যাচ্ছেন কোথায়? একবার মুর্শিদাবাদ যাবার ইচ্ছে ছিল। শুনেছি সেখানে দিল্লি থেকে এক বড় ওস্তাদ এসেছেন, তার গান একবার নিজের কানে শুনতে ইচ্ছে হল আমার, আবার যদি কিছু শেখা যায়, সংগীত হল অকূল পাথারের মতন, কেউ বলতে পারবি নে আমি সব জানি। রামপ্রসাদ বললেন। নবাব উৎফুল্ল হয়ে বললেন, আরে, আপনি মুর্শিদাবাদ যাবেন। আমরা তো সেখানেই যাচ্ছি, একটু পর নৌকা ছাড়বে। আপনি আমাদের সঙ্গে যাবেন কি? সাধক চুপ করে থাকেন। নবাব টের পেলে সাধকের সান্নিধ্যে মনে বিষন্নতা কেটে যেতে শুরু করেছে। তিনি ছোট্ট করে শ্বাস টানলেন। তারপর বললেন, আপনি কিন্তু চমৎকার গান করেন। সাধক চুপ করে থাকেন। গান কি আপনারই লেখা? আজ্ঞে হ্যাঁ। বেশ। তা সাধারনত কি বিষয় নিয়ে লেখেন আপনি? আমার গানের বিষয়াদি হৈল গিয়ে মা। মা? হ্যাঁ, মা। হুম। নবাব কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে রইলেন। চকিতে তার মায়ের মুখটি ভেসে উঠল। মায়ের প্রতি সিরাজের অত্যন্ত ভক্তি। তার কারণ আছে। নবাবের মা আমিনা বেগম অত্যন্ত ধর্মনিষ্ঠ ও স্নেহপ্রবণ। হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ করেন না। আমিনা বেগমের একজন পরিচারিকা ছিল, মেয়েটি হিন্দু। সেই মেয়েটিকে আমিনা বেগম আপন কন্যার মতো স্নেহ করতেন, ডাকতেন রাজকুনোয়ার বলে । নবাবের প্রথম বিবাহ হয়েছিল ইরিজ খান নামে একজন অভিজাত ব্যক্তির কন্যার সঙ্গে, সেই মেয়ের নাম উমদাতুন্নিসা, অবশ্য তাকে সবাই বহু বেগম বলে ডাকে। উমদাতুন্নিসার কোনও সন্তানাদি হয়নি, তাছাড়া বহু বেগম আনন্দ-বিলাসে মগ্ন থাকে, নবাবের তেমন খোঁজখবর নেয় না ...এসব কথা আমিনা বেগম জানতেন ...তিনি কৌশলে পুত্রের সেবায় রাজকুনোয়ার কে নিয়োজিত করেন। মেয়েটির ব্যবহার অত্যন্ত মধুর, দেখতে রূপসী তো বটেই, যে কারণে নবাব মুগ্ধ হয়েছিলেন। নবাব রাজকুনোয়ার কে বিবাহ করতে চায়, আমিনা বেগম হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ করতেন না, তিনি এ বিবাহে সম্মত হন, নবাব রাজকুনোয়ার কে বিয়ে করেন, ভালোবেসে রাজকুনোয়ার-এর নাম রাখেন লুৎফুন্নেসা বেগম। লুৎফুন্নেসা বেগমের গর্ভে একটি মেয়ে হয়েছে, ফুটফুটে মেয়েটির নাম জোহরা। নবাব দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এরা সবাই মায়ের জাত ...রামপ্রসাদ মায়ের ভজনা করবে না তো কি ... নবাব বললেন, একখানা গান শোনাবেন কি? আমি ...আমি জোর করব না। যদি আপনার ইচ্ছে হয় তো ...। সাধক একতারা টেনে নিয়ে তারে একবার টং শব্দ করলেন। সেই অলীক তরঙ্গের স্পন্দনে নবাবী বজরার প্রকোষ্ঠের পারশিক আবহে বাংলা তার শ্যামলসবুজ ভাব সম্পদ নিয়ে উঠে আসে। সাধক তারপর গান ধরেন- মন রে কৃষিকাজ জান না এমন মানব জনম রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা। নবাব বুদ হয়ে গান শুনছেন। লোকজ বাংলায় তত অভ্যস্থ নন নবাব, তবে সুরটাই টানল বেশি। সাধকের সুরে কি যেন আছে, ব্যাখ্যা করা যায় না, কেমন বর্ষা মরশুমের নদীর বিস্তারের মতো ... সাধক চোখ বুজে গাইছে- কালীর নামে দাওরে বেড়া ফসলে তছরুপ হবে না সে যে মুক্তকেশী শক্ত বেড়া তার কাছে তো যম ঘেঁষে না ... তছরুপ শব্দটা যেন নবাব চিনতে পারলেন। তিনি চমৎকৃত হলেন। দেবী কালীর কথাও তিনি জানেন-সাধকের মা তাহলে কালী? বেশ বেশ ...নবাব শিহরণ বোধ করেন ...বাংলা-বিদ্বেষী শকুনেরা তাঁকে ঘিরে ধরেছে ...কালীর বিধ্বংসী রূপের কথা তিনি জানেন। হঠাৎ নবাবের মনে হল রামপ্রসাদ মায়াপুরে শ্রীচৈতন্যের আখড়ায় সংগীত উৎসব যোগ দিয়েছিল। শ্রীচৈতন্যের অনুসারীরা তো বৈষ্ণব। আর ইনি কালীসাধক। হুমম। রামপ্রসাদকে সব রকম ভেদাভেদের উর্ধে প্রকৃত সাধক বলেই মনে হচ্ছে। সাধক গেয়ে চলেছেন। গুরুদত্ত বীজ রোপন করে ভক্তি বারি সেচে দে না। একা যদি না-পারিস মন রামপ্রসাদকে সঙ্গে নে না ... মন রে কৃষিকাজ জান না এমন মানব জনম রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা। গান শেষ হলে নবাব গম্ভীর কন্ঠে বললেন, সাধক? বলুন হুজুর। এত ভালো ফারসি আপনি শিখলেন কোথায়? শিখেছি আমার বাবার ইচ্ছেয়। আপনার বাবা? হ্যাঁ। আমার বাবার নাম রামরাম সেন। তিনি ভেষজ দ্রব্যাদির ব্যবসা করতেন। ওহ্, তারপর? তারপর আর কি। বাবার মৃত্যু হলি পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দিল, বুঝলেন। তখন আমার নবীন বয়স। কি করি, কি করি, মহা চিন্তেয় পড়ি গেলাম । কাজের খোঁজে রওনা হয়ি পৌঁছলাম কইলকাতা। সেখানে জমিদার কৈলাস সেনমজুদারের সেরেস্তায় মহুরির কাজ জুটল। তিনি কিন্তু আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করেন হৌজুর। নবাব মাথা নেড়ে বললেন, জানি। কলকাতায় আমার যে ক’জন শুভাকাঙ্খী রয়েছেন মহেশতলার জমিদার কৈলাস সেনমজুদার তাদের একজন। যাক। এবার আপনার কথা বলুন শুনি। সেরেস্তায় মহুরির কাজ জুটল বটে তবে কাজে আমার মন বসে না, খালি মায়ের গায়ের ঘ্রান পাই, বুঝলেন হুজুর, খালি মায়ের গায়ের ঘ্রান পাই ...হিসাবের খাতায় মায়ের মুখ ফুটে ওঠে ... হিসাবের খাতায় মায়ের কথা লিখি। তা দেইখে একদিন কৈলাস সেনমজুমদার আমায় কলেন ... তোমার আর সেরেস্তায় মহুরির কাজ করতে হবে না রামপ্রসাদ। শুনে আমি আর্তনাদ করে উঠলাম। জমিনদাররে কলাম তা হলে আমি ...এখন কি আমি পথে বসপ? এখন আমি খাব কি! মা কি সর্গে থেইকে আহার ঢেকে দিবে? তখন জমিদার বাবু হেসে কলেন, শুন হে রামপ্রসাদ, তোমায় আমি মাসিক তিরিশ টাকা মাসোহারার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তুমি তোমার গ্রামের বাড়ি ফিরে যাও, সংগীতের সাধনা কর। তখন আমার কুড়ি বছর বয়স। কুমারহট্ট ফিরে এলাম। মাসোহারার টাকায় বেশ চলে যায়। ইদিকে নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় আমার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে শ’বিঘে নিস্কর জমি দান করলেন। নবাব জিজ্ঞেস করলেন, শুনেছি আপনি নবদ্বীপের দোদন্ড প্রভাবশালী রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের একটি প্রস্তাব উপেক্ষা করেছেন? সাধক চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, গানের ধাতই হল নির্জনের দিকে ঝোঁকা হৌজুর । গায়েনের সভাসমিতি করে কী লাভ কন। রাজসভায় যোগ দিলে কিছু লোক আমার পক্ষে থাকবে কিছু লোক আবার ষড় করবে -এই তো। এই করে করে মিছে কাজে দিন যাবে, তাতে কী লাভ হৌজুর । এখন এসব এড়িয়ে মুক্তপক্ষ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, এই জীবনই ভালো। মা আমায় যতই সংগীতের প্রতিভা দিক, প্রত্যহ ভোরবেলা নদীপাড়ে বসে কন্ঠের সাধনা করি। এই আমার কাজ। নবাব কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, সাধক। বলুন। আপনি যে গানটি গাইলেন ...দয়া করে সেটি ফারসি ভাষায় তর্জমা করবেন? বেশ। করছি। বলে সাধক বিখ্যাত বাংলা গানটি ফারসি ভাষায় তর্জমা করতে শুরু করেন। মন রে কৃষিকাজ জান না এমন মানব জনম রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা। গানের কথা শুনে বাইশ বছর বয়েসি নবাব কাঁদছেন। কেননা, নবাব আলীবর্দী নামে একজন ভালো মানুষের রক্ত নবাবের শরীরে বইছে- যে কারণে সাধকের গানের কথার মানে নবাব ঠিকই বুঝতে পারছেন। নবাব আবেগ মেশানো কন্ঠে বললেন, সাধক? বলুন। আপনি ... আপনি কি আমার ভবিতব্য জানেন সাধক? সাধক চুপ করে রইলেন। তরুণ নবাব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। গবাক্ষ পথে বাইরে তাকালেন। আশ্বিনের আকাশে রোদ ঝলমল করছে । একটি গাঙচিল ভয়ানক বাতাসের তোড়ে ডানা স্থির রাখার প্রাণপন চেস্টা করছে। নবাব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর আপন মনে বললেন, সাধক, সব কিছু ভাবলে ভীষণ আশ্চর্য লাগে আমার। এই জন্ম-জীবন-মৃত্যু, এই তাশের ঘর, অসার সংসার,ভালোবাসা-প্রেম-রক্তপাত আর ষড়যন্ত্র ...জীবন কেবল গন্ধেবর্ণই সার্থক ও সত্য বলে মনে হয় আমার, যেমন আপনার গান, আপনার গান সত্য, সত্য ও সুন্দর ...কিন্তু এ গান জীবনের অন্ধকার নোংরা দিকটা কি ঢেকে রাখতে পারে ...কিংবা গোলাপ ফুলের গন্ধ ... সাধক চুপ করে রইলেন। হঠাৎই নবাবের মনে পড়ল লুৎফুন্নেসা গোলাপ ফুলের গন্ধ ভারি ভালোবাসে। সুখে -দুঃখে লুৎফুন্নেসাই পাশে থাকে। মানুষ হিসেবে লুৎফুন্নেসা একেবারেই অন্যরকম। নবাবের প্রথমা স্ত্রী বহু বেগম আনন্দ-বিলাসে মগ্ন থাকে ...এ যাত্রায় লুৎফুন্নেসা সঙ্গী হয়নি, নইলে এই সাধকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যেত। সাধক কি মুর্শিদাবাদের প্রাসাদে যাবেন। মুর্শিদাবাদের প্রাসাদে নেওয়া ঠিক হবে কি ...যখন চতুর্দিকে এত ষড়যন্ত্রের জাল ... নবাব কি জানেন ...আর ২ বছর পর পলাশীর বিপর্যয়ের পর নবাব একাকী পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। লুৎফুন্নেসা তাঁকে সঙ্গে নেয়ার আকুল আবেদন করবেন। ১৭৫৭ সনের ২৪ জুন। রাত। একমাত্র কন্যা জোহরা, লুৎফুন্নেসা এবং একজন অনুগত খোজসহ মুর্শিদাবাদ শহর ত্যাগ করবেন। ধরা পড়ে যেতে দেরি হয়নি। সপরিবারে নবাবকে মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে আনা হবে। মীরজাফরের জামাতা মীরকাসিম লুকানো সোনা-দানার সন্ধান চেয়ে লুৎফুন্নেসা ওপর অত্যাচার করবে। মীরজাফর নবাবকে হত্যার আদেশ দেবে ... নবাব বললেন, আমি আল্লাহতালার ইচ্ছের কাছে নিজেকে সমর্পন করেছি সাধক। সেই ভালো। সাধক বললেন। বলে শ্বাস টানলেন। ততক্ষণে অস্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সেই স্নিগ্ধ সকালের ঝলমলে রোদের ভিতর গঙ্গার জলের ওপর দিয়ে উত্তরমূখি ভেসে চলেছে বজরা নৌকা ... তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়ায় রামপ্রসাদ সেন সংক্রান্ত একটি নিবন্ধে খান মোঃ সাঈদ লিখেছেন, “কথিত হয় যে, কোনও এক সময় মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নদীর পাড়ে রামপ্রসাদের গান মুগ্ধ হন এবং তাঁকে নৌকায় এনে আরও গান শোনেন।” ... ...এ গল্পের সূত্র এটুকুই। ...ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাবী আমলের বাংলার ইতিহাস পড়াতেন অধ্যাপক কে এম মসসিন। তিনি একবার ক্লাসে আমাদের লুৎফুন্নেসার ছবি দেখিয়েছিলেন । ফুটফুটে ...কী অদ্ভূত সুন্দর ...ফুলের মতো একটি মেয়ে রাজক্ষমতার জন্য ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছিলেন ভেবে কী রকম কষ্ট পেয়েছিলাম ...আজও মনে পড়ে ... সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৭
false
mk
হেফাজত ইসলাম নামক সংগঠনের উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশ প্রসংগ_ ১. বৃহত্তম কওমী মাদ্রাসা হেফাজত পরিষদ তথা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত সকল শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। কওমী ম্রাদাসা শিক্ষার উন্নয়ন এবং এ শিক্ষার বাস্তবভিত্তিক হেফাজতের লক্ষ্যে উক্ত সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে ্বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রায় ৩৫০০-৪০০০ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক প্রতিনিধি এ সংগঠনর সাথে জড়িত রয়েছেন বলে জানা যায়। ২. হেফাজতে ইসলাম নামক কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাদ্রাসা শিক্ষায় অভ্যন্তরীণ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকলেও প্রকাশ্যে কোন সভা-সমাবেশ করেনি। ইসলামী রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা সমালোচনা হলে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক প্রতিনিধিগণ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা বিভিন্ন সময়ে সভা/সেমিনিার শিক্ষানীতি এবং ইসলামী রাজনীতি বন্ধের প্রতিবাদে বক্তব্য/বিবৃতি প্রদান করে আসছিলেন। তারা প্রথমে ২৪ ফেব্র“য়ারি ২০১০ তারিখ বৃহত্তর কওমী মাদ্রাসার পক্ষে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু উক্ত তারিখে পুলিশ লালদীঘিতে সমাবেশের অনুমতি প্রদান না করলেও তারা সমাবেশ সফল করার জন্য হাটহাজারী থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে বালুচরা নামক জায়গায় আসলে পুলিশের সাথে হেফাজত কর্মীদের সংঘর্ষ বাাঁধে। মূলত: এখান থেকেই তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। ৩. গত ২৪ ফেব্র“য়ারি ২০১০ তারিখ লালদিঘী ময়দানে সমাবেশের অনুমতি প্রদান না করা এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে আহমদ শফির নেতৃত্বে হাটহাজারী গ্র“প ২৬ ফেব্র“য়ারি ২০১০ তারিখে মসজিদে মসজিদে দোয়া মহাফিল, ২৮ মার্চ ২০১০ তারিখে হাটহাজারীতের ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো: আব্দুল্লাহ অংশ গ্রহণ করেন। ৪. ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রামাস্থ ওয়াসার মোড়ে জমিয়াতুল ফালহ জামে মসজিদের সামনে ০২ দিন ব্যাপী একটি ইসলামী মহাসম্মেলন করে। উক্ত মহাসম্মেলনে ভারত, পাকিস্থান ও সৌদআরব সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার লোকের সমাগম হয়। ৫. ২০১০ সালে সংগঠনটি ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে। এ ছড়া চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আলাদা কমিটি গঠন করে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢাকা, বরিশাল, খূলনা, সিলেট ও কুমিল্লাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার কওমী মাদ্রাসার প্রতিনিধিগণ অন্তর্ভুক্ত হন। ৬. ২২ও ২৩ ডিসেম্বও ২০১০ তারিখ, ৬ ও ৭ ডিসেম্বও ২০১১ তারিখ ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখ চট্টগ্রাম ওয়াসার মোড়ে ০২ দিন ব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংগঠনের সাংগঠনিক তৎপরতার গতি বৃদ্ধি পায়। ৭. ০৪ অক্টোবর ২০১২ তারিখ হেফাজতে ইসলাম বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লালদিঘী ময়দানে সমাবেশ করে। ইস্যুগুলো হলো মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা) নিয়ে আমেরিকার জনৈক ইহুদী নাগরিক কর্তৃক চলচ্চিত্র নির্মাণ ও ফ্রান্সের একটি কার্টুনে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদ। ৮. ১৬ ফেব্র“য়ারি ২০১৩ তারিখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ব্যানারে হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত ওলামা মাশায়েখদের সভায় সভাপতিত্ব করেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মোহতামীম আল্লামা শফী। সভায় বাংলাদেশে অন লাইন এক্টিভিষ্ট নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগে শাহবাগ চত্বরে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলনের নামে কোরআন সুন্নাহ এবং ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড/প্রচারণা এবং ওলামা মাশায়েখদের করণীয় নিয়ে সমালোচনা করা হয়। মূলত: এখান থেকেই তারা কঠোর অবস্থানে চলে যায় এবং মতিঝিল শাপলা চত্বরে বৃহৎ সমাবেশের আয়োজন করে।
false
hm
রামপালে বামপাল: ০২ প্রথম পর্বের পর আবারো বামপালিদের গোড়ালিবন্দী প্যান্ট নিয়ে কথা বলতে ফিরে এলাম। প্রথম পর্ব লেখার পর আমার পর্যবেক্ষণ, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা যারা করছেন (এদের সবাই বামপাল নন), তারা তর্কে খুব সক্রিয় হলেও রেফারেন্স যোগাতে উদাসীন/অপারগ। কেউ কেউ একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে জরুরি কাজে বাইরে চলে যান, সেটার সপক্ষে কোনো তথ্যসূত্র হাজির করতে বললে সাড়া দেন না। কিংবা এমন কোনো তথ্যসূত্র দেন, যেটা তিনি নিজেও পড়ে দেখেন নি বলে টের পান না যে ভেতরে তার কথার সপক্ষে কোনো কিছু লেখা নেই, অথবা লেখা আছে তার কথার বিপক্ষে ব্যবহার করা যায়, এমন কিছু। আমার উপলব্ধি, বেশিরভাগ মানুষ এখন আর তথ্যসূত্র যাচাই করার জন্যে পড়ে না। বামপালও এ কথা জানে, তাই তারা নিজেদের যুক্তি এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন কেউ আর কষ্ট করে সেগুলো যাচাই করে দেখতে না যায়। যদিও যাচাইয়ের অবারিত দুয়ার হিসেবে গুগল খোলা আছে। কিন্তু লোকে যতো বেশি পড়ে, ততো বেশি জানে, ততো কম মানে। যারা কোনো কিছু না পড়ে "আমার খালু কৈছে" বলে তর্ক করতে চান, এই পোস্ট তাদের মুক্তোবনে উলুর মতো অপ্রাসঙ্গিক। আর মতলববাজদের জন্যে আগাম সতর্কবার্তা, রামপালে নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে কি করবে না, সে ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি রামপালের বামপালদের প্রচারণার কয়েকটি ভুল এবং/অথবা অসত্য পয়েন্ট ব্যবচ্ছেদ করতে চাই কেবল। কেউ যদি সুন্দরবনের ওপর রামপালের কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে চান, কষ্ট করে তথ্যসূত্রসহ পোস্ট দিন। ধন্যবাদ। রামপাল ঘোলাপানির প্রথম চাতুর্য হচ্ছে একে সুন্দরবনের মাঝখানে একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে চালিয়ে দেওয়া। সুন্দরবনের প্রান্ত থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে, এই অবিসংবাদিত ফ্যাক্টটা যাতে লোকচ্যাতানোর পথে কাঁটা হয়ে না দাঁড়ায়, সেজন্যে একে প্রথমেই হাপিস করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ভিনভাষী পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে, সবাই এখন জানে, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের মাঝে ফ্যাসিবাদী বনখোর সরকার এক গরানযজ্ঞের আয়োজন করছে। যারা এখনও জায়গা "ক" থেকে জায়গা "খ" এর দূরত্ব ঘরে বসে মাপতে জানেন না, তাদের সে কৌশলটি শেখাতে চাই। maps.google.com এ যান, গিয়ে প্রথম জায়গার ওপর মাউস রেখে ডান বাটনে ক্লিক করলে পপ-আপ মেনুতে একেবারে নিচে "Measure distance" অপশনটা পাবেন। এতে যে ফল পাবেন, সেটা এরিয়াল ডিসট্যান্স বা সরলরৈখিক দূরত্ব। যদি গাবতলি থেকে জাহাঙ্গীরনগরের দূরত্ব পরিমাপ করেন, দেখবেন সেটাও ১৪ কিলোমিটারের মতোই আসবে। জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় আনু মোহাম্মদকে যদি এখন কেউ "গাবতলির মাস্টার" বলে, সেটা কি ন্যায্য হবে? ১৪ কিলোমিটার দূরত্বের পার্থক্য আর গুরুত্বটা ধরতে না পারলে, প্রয়োগে অনীহা দেখালে এমন ভুল এবং/অথবা অন্যায় হতে পারে, যেটা কাম্য নয়। যারা যাচাই করে দেখতে ইচ্ছুক, তাদের জন্যে মাপটা ইমেজ আকারে জুড়ে দিলাম। ইদানীং অনেক রামপাল-সমর্থক বলছেন, সাভার এলাকায় শয়ে শয়ে ইটের ভাঁটা আছে, যেখানে কয়লা পোড়ানো হয়, কেন বামপালিরা ওগুলোর বিপক্ষে বিপ্লব করেন না? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ কিলোমিটারের আশেপাশে এমন ইটের ভাঁটার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, কিন্তু ওগুলোর হাত থেকে জাহাঙ্গীরনগরের অপূর্ব অমূল্য প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচানোর ব্যাপারে কারোই (বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগরনিবাসী বামপাল নেতৃত্বের) তেমন মাথাব্যথা নেই, এমন কথাও বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু আমি এসব ছেঁদো যুক্তি দেখাবো না, কারণ কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র আর ইটের ভাঁটাকে এক করে দেখানোও এক ধরনের বামপালিতা। তাছাড়া কে না জানে, বিপ্লব সব সময় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে করতে হয়? ইটের ভাঁটার মালিকের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে গেলে সে মাস্তান ডেকে প্রচণ্ড মার লাগাতে পারে, যে মারে রাজনৈতিক ডিভিডেন্ডের বদলে কেবলই ব্যথা মেলে। তাছাড়া ইটের ভাঁটার মালিক হয়তো কোনো বামপালি বিপ্লবীরই খালু (এ খালু সে খালু নয়")। মংলায় নির্বিঘ্নে কাজ করে যাওয়া বেসরকারি কারখানাগুলোর ব্যাপারেও বামপালিরা হয়তো এ কারণেই চুপ, কে জানে? কিন্তু এ নিয়ে পরের পর্বে নাহয় কথা বলা যাবে। রামপাল সুন্দরবন থেকে ১৪ কিমি দূরে আর গাবতলি জাহাঙ্গীরনগর থেকে ১৪ কিমি দূরে হওয়ার পরও আমি বামপালিদের প্রিয় ধমক, "দুনিয়ার আর কোথায় ম্যানগ্রোভ বনের মইদ্যে কয়লার প্ল্যান্ট হান্দাইছে, কন দেহি!" নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই। রামপাল তর্কে ম্যানগ্রোভ শব্দটা বামপালি ভাইরা এতো ভক্তি ভরে এস্তেমাল করেন, যে অডিয়েন্স প্রথমেই ঘাবড়ে চুপ করে যায়। ম্যানগ্রোভ, সে তো কিশোরীর ভরসার মতো নাজুক, একটু এদিক-সেদিক হলেই সব চুরমার। কিন্তু বাস্তবেও কি তা-ই? আমি আবারও শরণ নেবো গুগল ম্যাপের, কারণ রেফারেন্স দিলে তাতে দুর্গম ইংরেজি ভাষায় অনেক কথা লেখা থাকে, যা পড়ে বোঝার ধৈর্য বা সাধ্য অনেক রক্তগরম বিপ্লবীর না-ও থাকতে পারে। ছবি দিলে অনেকে সহজে বুঝতে পারেন, তাই ছবি-ই সই। প্রথম যে উদাহরণটা দিচ্ছি, সেটা ফ্লোরিডার সাইট্রাস কাউন্টির ক্রিস্টাল রিভার এনার্জি কমপ্লেক্সের। ফ্লোরিডার সাইট্রাস কাউন্টি এর ক্রিস্টাল নদীর মোহনার উত্তরে ও দক্ষিণে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বনের জন্যে বিখ্যাত। এই প্ল্যান্টটা একেবারে ম্যানগ্রোভ বনের মাঝখানে বানানো, এর চারপাশে ম্যানগ্রোভের বলয় আপনারা নিজেরাই দেখে নিতে পারবেন। এর উত্তরে রয়েছে ওয়াকাসাসা বে প্রিজার্ভ স্টেট পার্ক, দক্ষিণে সেন্ট মার্টিন মার্শ অ্যাকুয়াটিক প্রিজার্ভ আর ক্রিস্টাল রিভার প্রিজার্ভ স্টেট পার্ক। বামপালি ভাইয়েরা পার্ক নাম দেখে লাফিয়ে উঠে এটাকে শিশু পার্কের সমতুল্য কিছু বানিয়ে একটা মনকলা খেয়ে নিতে পারেন, কিন্তু প্রিজার্ভ স্টেট পার্ক মূলত সংরক্ষিত বন। উইকিপিডিয়া বলছে [সূত্র ১] এই এনার্জি কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়েছিলো ১৯৬৬ সালে, ৩৭৩ মেগাওয়াট কয়লা ইউনিট দিয়ে। ১৯৬৯ সালে ৪৬৯ মেগাওয়াটের আরেকটি কয়লা ইউনিট এতে যোগ করা হয়। ১৯৭৭ সালে এখানে যোগ করা হয় ৮৪২ মেগাওয়াটের একটি নিউক্লিয়ার ইউনিট (চিন্তা করেন, ম্যানগ্রোভ বনের মাঝে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র! আরো চিন্তা করেন, ঐ আমলে বামপালি ভাইরা ফ্লোরিডায় থাকলে কত্তো বিপ্লব করতে পারতেন?), যেটা ৩৬ বছর চলার পর ২০১৩ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় জনাব, ১৯৮২ আর ১৯৮৪তে এই পাষণ্ড বনখোরেরা ৭১৭ মেগাওয়াট করে আরো দুটো ইউনিট এতে যোগ করে। (সংযোজন: আজ অব্দি কয়লাচালিত ইউনিট চারটি চলছে।) এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৬৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৫০ বছর ধরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে দেড়গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা ইউনিট, আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো ৩৬ বছর ধরে ৮৪২ মেগাওয়াটের নিউক্লিয়ার ইউনিটের দুরমুজ সহ্য করে সাইট্রাস কাউন্টির এই ম্যানগ্রোভ বন, এই রিজার্ভ স্টেট পার্ক টিকে আছে কীভাবে? আর যেনতেন ভাবে আঙুলের ওপর ভর করেও এই বন টিকে নেই। এখানে ম্যানাটির অভয়ারণ্য আছে, পর্যটকদের জন্যে নিয়মিত ভ্রমণের বন্দোবস্ত আছে। বামপালি ভাইয়েরা সুন্দরবনের যে অ্যাপোক্যালিপ্সু ভবিষ্যৎ চিত্র আঁকেন, সেটা এই বনের বর্তমান চেহারার সাথে মেলে না কেন? যেসব রক্তগরম বামপালি ভাই, এবং তাদের চিৎকারে বিভ্রান্ত সাধারণ ভাইয়েরা রক্তচক্ষু করে ধমক দেন, "ম্যানগ্রোভ বনের মইদ্যে কয়লা কই আছে দ্যাহান", তারা এই প্রশ্নের সদুত্তর খুঁজলে সবাই উপকৃত হবেন। দ্বিতীয় যে উদাহরণটি দিতে চাই, সেটি মালয়েশিয়ার। স্থাপিত ক্ষমতার (installed capacity) বিচারে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমান বা বড় চারটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র মালয়েশিয়ায় রয়েছে: ১৪০০ মেগাওয়াটের জিমাহ পাওয়ার স্টেশন (ম্যাপ দেখুন), ২১০০ মেগাওয়াটের তানজুং বিন পাওয়ার স্টেশন (ম্যাপ দেখুন), ২৪২০ মেগাওয়াটের সুলতান সালাউদ্দিন আবদুল আজিজ শাহ পাওয়ার স্টেশন এবং ২২৯৫ মেগাওয়াটের মানজুং পাওয়ার স্টেশন। প্রথম তিনটি স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে ম্যানগ্রোভ বনের প্রান্তে। জিমাহ ও তানজুং বিন পাওয়ার স্টেশনের পাশেই ম্যানগ্রোভ বন দেখতে পাবেন। আমি পোস্টে এমবেড করছি সুলতান সালাউদ্দিন আবদুল আজিজ শাহ [সুসাআআশা] কেন্দ্রটির ম্যাপ। সুসাআআশা কেন্দ্রটি থেকে যথাক্রমে ৬, ৯, ১৩ ও ২০ কিমি দূরত্বে চারটি দ্বীপ রয়েছে, যেটি নিরবচ্ছিন্ন ম্যানগ্রোভে আচ্ছাদিত। ১৯৮৭ সাল থেকে এই কেন্দ্রটি চলছে। আগের প্রশ্নটি বামপালি ভাইদের কাছে আবারো উত্থাপন করছি, এই চারটি দ্বীপে ম্যানগ্রোভ টিকে আছে কীভাবে? "দুনিয়ার আর কোত্থাও ম্যানগ্রোভের মইদ্যে কয়লা দিয়া বিদ্যুৎ বানায়?" ধমকটা দিয়ে বামপালরা প্রথমেই অডিয়েন্সকে একটা হীনমন্যতার মাঝে ফেলে দেন। কারণ দুনিয়ার কোথায় কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র কীসের মাঝে কীভাবে চলে, তার বিস্তারিত আমাদের কারোই জানা নেই। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগ্রহ/সময়ও অনেকের নেই। তাই ধমকটাই কণ্ঠ থেকে কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হতে হতে এক সময় ফ্যাক্টয়েড হয়ে যায়। কয়েক দশক ধরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর পরও ক্রিস্টাল রিভারের ম্যানগ্রোভ বন আর মালয়েশিয়ার চারটি দ্বীপবর্তী ম্যানগ্রোভ বন আজ পর্যন্ত অক্ষত থাকলে, সুন্দরবন থেকে ১৪ কিমি দূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কীভাবে সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে, সে প্রশ্নের জবাব সন্ধান প্রয়োজন (বামপালি ভাইদের জন্যে টিপস: "উহা প্রকৃত ম্যানগ্রোভ নহে", "উহা প্রকৃত কয়লা নহে", "উহা প্রকৃত ইয়ে নহে")। সুন্দরবন ধ্বংস হওয়ার ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াটি জানতে চাইলে বামপালি ভাইয়েরা নতুন কোনো ধমক হাজির করেন। ফ্যাক্ট আর উদাহরণসহ একটা প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা তাদের কাছ থেকে কাম্য। সেটা না করে হয় তারা ভারতজুজুর ভয় দেখান, নয়তো তহবন খুলে সুন্দরবনের শিশু বানর আর মা হরিণের অশ্রু মোছাতে লেগে পড়েন। সুন্দরবন ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারটি যদি এতোই নিশ্চিত হয়, তাহলে তার ব্যাখ্যাটিও হওয়ার কথা স্পষ্ট ও যুক্তিসমর্থিত। ব্যাখ্যার বদলে যখন শিশু বানরের কান্নার আড়ালে দাঁড়াতে হয়, তখন তারা সুন্দরবনের ঢাল, নাকি সুন্দরবন তাদের ঢাল, সে সংশয় ক্রমশ জোরালো হতে থাকে। আজ এ পর্যন্তই। লেখায় কোনো ভুল করে থাকলে ধরিয়ে দিন তথ্যসূত্রসহ। দয়া করে এমন তথ্যসূত্র দিন, যে সূত্র আপনি নিজে আদ্যোপান্ত পড়েছেন এবং বুঝেছেন। ধন্যবাদ।
false
mk
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াস অক্টোবর (২০১৩) মাসের কয়েকটি কর্মদিবসে বিএনপি-জামাতের হরতাল ও নাশকতার পর নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টার হরতাল প্রমাণ করছে বিরোধী দলের সংকট তাদের নিজেদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। পক্ষান্তরে আগামী নির্বাচন নিয়ে সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ আপামর দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে মহাজোট সরকার গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। তবে প্রধান বিরোধীদের দাবির প্রতি আন্তরিক। কিন্তু অনেক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সত্ত্বেও বিএনপি-জামাতের অপতৎপরতা থেমে নেই। সরকার বাধ্য হয়েছে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। তার মধ্যে নাশকতার উস্কানিদাতা কিছু নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অভিনন্দিত হচ্ছে সারা বিশ্বজুড়ে। এমনকি বর্তমান সরকারের আমলে অর্জিত সকল সফল কর্মকা-ের প্রশংসা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে। গত ৮ নভেম্বর প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ‘বাংলাদেশ: মিউটিনি অ্যান্ড রিভেঞ্জ’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হলে কিংবা রাজপথে সহিংসতা দেখা গেলে সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত রাজনৈতিক ভূমিকাকে মেনে নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিডিআর সদস্যদের ফাঁসির আদেশ শেখ হাসিনার জন্য উপযুক্ত সময়েই হয়েছে। এতে তার জন্য অতি প্রয়োজনীয় সমর্থন মিলবে। রায়টি এমন সময় এলো যখন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের তুলনায় বিরোধী বিএনপি বহু ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে।’ দ্য ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদনে লিখিত ‘আওয়ামী লীগের তুলনায় বিরোধী বিএনপি বহু ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে’- এই জরিপ অবশ্য সঠিক নয়। কারণ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমর্থন এখন নৌকার দিকেই। মাঠে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণায় জোয়ার এসেছে। এর আগে থেকেই শেখ হাসিনার বক্তব্য ও বিবৃতি এবং উদ্যোগ আমাদের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে সকলের কাছে মান্যতা অর্জন করেছে।১৮ অক্টোবর (২০১৩) জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। তিনি বলেছেন- ‘আমরা সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫,৭৭৭টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। কোনো নির্বাচনেই সরকার হস্তক্ষেপ করে নাই। অনেক নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে ইনশাল্লাহ।…সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের সংবিধানের ৭২-এর ১ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে; ‘সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকিবে না’। এখানে আরও উল্লেখ আছে যে, ‘তবে শর্ত থাকে যে ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার ক উপধারায় উল্লেখিত ৯০ দিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে’।সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় উল্লেখ আছে। ৩-এর (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের হিসাব শুরু হবে। সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধানমন্ত্রীর দেয়া লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। ৯০ দিনের মধ্যে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য আমি সব দলের সাথে, বিশেষ করে মহাজোটের সাথে পরামর্শ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে যথাসময়ে লিখিত পরামর্শ দেব। এক্ষেত্রে আমি বিরোধী দলের কাছেও পরামর্শ আশা করি।…আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। বিরোধী দলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন, যাদেরকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি এবং নির্বাচনে যাতে কারও কোনো সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে। আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দেবেন।তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করি। যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি। সকল ভেদাভেদ ভুলে ২০২১ সালের মধ্যে গড়ে তুলি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা।’এই ভাষণে শেখ হাসিনার সদিচ্ছার কথা ব্যক্ত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ঐকান্তিক প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। আর আগামী প্রজন্মকে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখানোর কথা বলা হয়েছে। স্বপ্ন দেখানো মানুষের সংখ্যা কমে গেছে যে দেশে, সেখানে শেখ হাসিনার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এই দৃঢ় অঙ্গীকার তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলিত করবে এটাই স্বাভাবিক। শেখ হাসিনা সংবিধান অনুসরণ করেই তাঁর উদ্যোগের কথা বলেছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। তাই তিনি ২৭ অক্টোবর বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করে তাঁর বাসভবনে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ থেকে হরতাল প্রত্যাহারের বারংবার অনুরোধ পরদিন সারা দেশবাসী শুনেছে। কিন্তু হরতাল ছাড়া বিরোধী দল কোনো ফলাফল দিতে পারেনি বরং দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের সমাবেশে জামাত-শিবিরের ভয়ঙ্কর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতে ব্যর্থ।আসলে শেখ হাসিনার গৌরবান্বিত নেতৃত্বই স্মরণ করিয়ে দেয় আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হবে যেমনটি বর্তমান প্রজন্ম হাল ধরেছে এই সংগঠনটির। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয়ে জানিয়েছেন, ‘দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়বোই’। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে উপস্থিত নিউইয়র্কের প্রথম দিনটি অর্জন দিয়েই শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড। স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে সাউথ সাউথ নিউজ-এর প্রধান কার্যালয়ে এই অ্যাওয়ার্ড হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি আমার নয়, দেশবাসীর অর্জন। ১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫১ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে দেশবাসীর সার্বিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার গৌরবান্বিত নেতৃত্বের এটি একমাত্র স্বীকৃতি নয়। তিনি বর্তমান বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে মর্যাদাকর সনদে ভূষিত হয়েছেন। নিজের নিঃস্বার্থ, নির্লোভী মানসিকতার জন্য পৃথিবীর খ্যাতনামা শাসকদের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর(২০১৩) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘নেতৃত্বদানকারীদের সংলাপ : শীর্ষপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম-দূরদর্শিতার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণকালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের মাধ্যমে বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন বজায় রাখতে ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচি এবং ২০২০ সালের পরেও একটি আইনি কাঠামোর বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্যই দূরদর্র্শিতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আমাদের এই বিশ্বের স্থায়িত্বের জন্য সাধারণ লক্ষ্যসমূহ অর্জনে অবশ্যই এই দুটি বিষয়ের স্বীকৃতি এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রদর্শন ও আন্তরিক অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে।’শেখ হাসিনা নিজের দেশকে নিয়ে যেমন স্বপ্ন দেখেন তেমনি বিশ্ববাসীকে সঙ্গে নিয়ে সুখী জনজীবনের প্রত্যাশায় বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মিলেমিশে কাজ করতেও চান। মূলত দেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে বর্তমান মহাজোট সরকার কাজ করে যাচ্ছে। উপরন্তু বাংলাদেশ একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব দেখতে চায়, যেখানে প্রতিটি মানুষ সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে এখন রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো প্রণিধানযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে মানসম্মত কাজ নিশ্চিত করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষা খাত এই সবকটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংগ্রামের ফলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকারই আমরা দেখতে পাই। শেখ হাসিনা দেশের জনগণের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নেতৃত্বের এটি অন্যতম দিক। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন বলেই আমরা এই অর্জন নিশ্চিত করতে পেরেছি।’ মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপকভাবে কাজ করে আসছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার হার বাড়ানো ও মান উন্নত করাসহ বিভিন্নভাবে কাজ করা হয়েছে। আর তার ফলেই আজ বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৌরবান্বিত নেতৃত্বের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিটি অঙ্গীকার পূর্ণ হয়েছে বর্তমান শাসনামলেই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং অকার্যকর রাষ্ট্রের কলঙ্কমোচন করে বাংলাদেশকে আবার বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই তৃতীয় বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের অন্যতম এখন বাংলাদেশ। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসনের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে সুখী দেশের তালিকায়। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস এবং গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের লাগামহীন দ্রব্যমূল্য এখন নিয়ন্ত্রণে। চালসহ খাদ্যসামগ্রীর দাম কমেছে এবং স্থিতিশীল রয়েছে। বিশ্বমন্দা মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীতকরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের সমাধান, রফতানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বিশাল সাফল্য এবং নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতির ফলে প্রকৃতই বদলে গেছে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব ব্যবহারের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব।শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। সকলেরই মনে থাকার কথা যে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র ৪৯ দিনের মধ্যে সংঘটিত হয় ঢাকাস্থ পিলখানার বিডিআর কর্তৃক সেনা কর্মকর্তাদের রক্তাক্ত হত্যাকা-। মহলবিশেষ এই সুযোগে দেশে এক সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের মারাত্মক উস্কানি দিয়েছিল। চরম ধৈর্য্য, বিচক্ষণতা, অসীম সাহস এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের শান্তিপূর্ণ সমাধান করেন এবং সেনাবাহিনীতে আস্থা ফিরিয়ে আনেন। দেশ এক চরম অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা পায়। ৫ নভেম্বর (২০১৩) সেই নির্মম ঘটনার বিচারের রায় ঘোষিত হলো। ১৫২ জন অপরাধীকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানোসহ অন্যান্য সাজার রায় আমাদের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।বর্মমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরই সংসদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচনি অঙ্গীকার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে এবং অনেকেরই সাজার রায় ঘোষিত হয়েছে; আর সেসব অপরাধীদের রায় কার্যকর করার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। সুশাসনের অন্যতম স্তম্ভ দুর্নীতিহীন প্রশাসন। এজন্য স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতির তদন্ত, অনুসন্ধান, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুদক প্রয়োজনে মন্ত্রী, আমলাসহ যে কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সার্চ কমিটির সুপারিশে শক্তিশালী স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ক্ষমতা ও লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা তথা নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সরকারের অধীনে কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে চলেছে। পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনসহ বর্তমান সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ৬ সহস্রাধিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদের শূন্য আসনসমূহের নির্বাচন।বিদেশি মিডিয়াতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার বক্তব্যগুলোও দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়কের স্পষ্ট উচ্চারণ হিসেবে অনন্য। ২৮ জুলাই (২০১৩) কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নয়, রোহিঙ্গাদের সহায়তা করা মিয়ানমার সরকারেরই দায়িত্ব।’ জুন মাসে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল। ইতোমধ্যে সেখানে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।’ এর আগে ১৯ মে কানাডার সিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ষড়যন্ত্রে তাঁর পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ ডাহা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তারপর কমিশন তদন্ত শুরু করে।…বিশ্বব্যাংকের অন্য প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে চলছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কিংবা আমার মন্ত্রীরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। আমরা টাকা কামাতে ক্ষমতায় আসিনি। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। জনগণের ভাগ্য বদলাতে, দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বিবিসিকে জানান হেফাজতে ইসলামীর দাবির মুখে দেশে ব্লাসফেমি আইন করার কোনো পরিকল্পনা নেই। ৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএন টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে বলে যে বিতর্ক চলছে, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইন তার নিজের গতিতে চলবে। অপরাধী অপরাধীই। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি। এটি জনগণের প্রতি আমাদেরঅঙ্গীকার।’এভাবে অজস্র বিদেশি মিডিয়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার তুলে ধরে আমরা প্রমাণ করতে পারি এই জননেত্রীর বিচক্ষণতা এবং দেশের প্রতি তাঁর অপরিসীম মমত্বের দৃষ্টান্ত। বিশ্ববাসী তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় আস্থাবান বলেই ১৮ অক্টোবর দেওয়া প্রস্তাব সম্পর্কে বলেছেন ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব গঠনমূলক-ইতিবাচক’। তিনি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বিরোধীদলের সদস্যদের নাম চেয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধীদের কাছে পরামর্শও চেয়েছেন তিনি। ‘হানাহানি ও সন্ত্রাসের পথ’ পরিহার করে বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আলোচনার দরজা সব সময় খোলা।’ আমরা সাধারণ জনগণের অংশ হিসেবে বলতে চাই বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হবেন। কারণ জঙ্গিবাদ মুক্ত রাষ্ট্রের একটি সুশাসনভিত্তিক সমাজ নির্মাণে শেখ হাসিনার প্রত্যয় এখন সকলের কাছে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর সকল প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সফল হবে -এ বিশ্বাস আমাদের।
false
ij
None অতি আশ্চর্য এক দ্বৈততা লক্ষ করি কবি এইমি সিসাইর-এর জীবনে। জীবনভর তিনি ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও তাঁর শিল্পভাবনার মূলে ছিল ফরাসি পরাবাস্তববাদ। এ কারণেই আমরা তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতেই পারি ... মার্টিনিক দ্বীপটা ক্যারেবিয় সমুদ্রের পুব প্রান্তে। কবি এইমি ফার্দিনান্দ ডেভিড সিসাইয়ের এর জন্ম সেই মার্টিনিক দ্বীপেই -২৬ জুন ১৯১৩ সালে। মার্টিনিক দ্বীপটা আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম ওয়েস্ট ইন্ডিজের অঙ্গ হলেও কুড়ি শতকের প্রারম্ভে দ্বীপটি ছিল ফরাসি শাসনের অধীন। কাজেই, এইমি সিসাইর অন্য অনেকের মতোই তরুণ বয়েসে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান শহর প্যারিসে। প্যারিসজীবনে কলোনিয়াল বর্ণবাদী আচরণে ভীষন ক্ষুব্দ হন সিসাইর-তাঁর মনের ভিতরে এক বিক্ষুব্দ আন্দোলনের ভাবনা উদয় হয়। এ ব্যাপারে সমমনা কয়েকজনকে খুঁজেও পেলেন। এদের মধ্যে অন্যতম আফ্রিকান সাহিত্যিক লিওপোল্ড সেডার সেঙ্ঘর। তারা একত্রে ‘কৃষ্ণ ছাত্র’ নামে একটি সাহিত্যপত্রিকা বের করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এভাবেই- ‘নেগ্রিটিউড’ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল; আর ‘কৃষ্ণ ছাত্র’ সাহিত্য পত্রিকাটি সেই আন্দোলনের পুরোধা হয়ে উঠেছিল । নেগ্রিটিউড আন্দোলন ছিল ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনশোষন ও বর্ণবাদী আচরনের বিরুদ্ধে প্রবল এক রাজনৈতিক আন্দোলন। যা হোক। আন্দোলনের পাশাপাশি সিসাইর-এর কবিতা লেখাও চলছিল। সিসাইর-এর কবিতা অত্যন্ত দুবোর্ধ্য এবং সে কারণেই একরকম অনুবাদঅসম্ভব। তাঁর কবিতা পুরোপুরিই সুরিয়ালিস্ট ধারনায় আচ্ছন্ন; শুধু তাইই নয় - অত্যন্ত সচেতনভাবেই ফরাসি পরাবাস্তববাদী কবি গিয়োম অ্যাপোলিনিয়ার এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন সিসাইর। নীচের কবিতা দু’টি সেই পরাবাস্তব দুবোর্ধ্যতারই সাক্ষী হয়ে রয়েছে। নীলাভ সূর্য গনগনে আগ্নেয়গিরি পাদদেশে আমার জ্বরের তাপ থেকে উত্থিত হচ্ছিল বেগুনি কুয়াশা আমি প্রাঙ্গনের মাঝখানে বসে তিন শতাব্দীর পুরনো বালুঘড়িতে বাদূড়ের গু হাতুরে চিকিৎসকের ভ্রান্ত আশার নিচে নষ্ট রমনীর আত্মার আর্তনাদে এবং সত্যিকারের শিকল বয়ে বয়ে আমি আমার অজস্র হৃদয় করেছি বিনিময় আজকে দৃঢ়ভাবে আমাদের কন্ঠনালীতে উঠছে বিশাক্ত বিশুদ্ধ রাজ্যদ্বারা দলিত হয়ে আমি নীলাভ সূর্য অতল গহব্বর সে ভেবে দেখছিল জলাভূমির দাঁতের যৌক্তিকতা সে ভেবে দেখছিল বীভৎস জীবের কন্ঠনালী সে ভেবে দেখছিল প্রবাল ¯ত’পে মৃতদের ঠোঁটের লাশ কাটা ঘর সে ভেবে দেখছিল সীমানাহীন বিস্তারের শতাব্দী পুরনো কলহের সময়ের বেলাভূমির পাড়ে ( সময়ে এটি একটি আত্মাকে অদৃশ্য করে আমিও সেখানে ছিলাম প্রবল আবেগে) সে ভেবে দেখছিল আত্মার রাজকীয় প্রাসাদে ইঁদুরের কিচকিচ সে ভেবে দেখছিল সংগীতে বেঁধে রাখা জাহাজভর্তি দাসদের কন্ঠস্বরের বদলে আত্মাশূন্য দঙ্গলের স্থিরতা শামুকে ভর্তি বিচ্ছিন্ন সমুদ্রের বিশাক্ত কোঁকড়ার মতন শিরস্ত্রাণ এভাবে সব স্মৃতিকাতরতা গড়িয়ে যায় অতল গহব্বরে বিয়ে করলেন ১৯৩৭ সালে মার্টিনেট-এরই মেয়ে সুজান রোসিকে। ১৯৩৯ সালে এক পুত্র সন্তান নিয়ে মার্টিনেট ফিরে এলেন দু’জন। মার্টিনেট ফিরে পেশা হিসেবে সিসাইর বেছে নিলেন শিক্ষকতা। ফ্রানয ফানোন ছিলেন মার্টিনেট-এর প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও বিপ্লবী। সিসাইর ফ্রানয ফানোন -এর জীবন ও দর্শন পড়াতেন । ফানোন-এর উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্ব আজও সংশ্লিস্ট মহলে আলোচিত হয়। শিক্ষকতা ছেড়ে পরে অবশ্য রাজনীতিতে যোগ দেন সিসাইর। তাঁর নানান বক্তব্য ও পদক্ষেপের জন্য মার্টিনেটবাসীর বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। মার্টিনেটের বিমানবন্দরটি তার নামেই রাখা হয়েছে। গতবছর ১৭ এপ্রিল মারা গেছেন ক্যারিবিয় অঞ্চলের পরাবাস্তব ঐ কবি । সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:০৯
false
rg
পাকিস্তানের দ্য ন্যাশন পত্রিকার ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখের সম্পাদকীয়!!! বিষয় আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি!!! ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক 'দ্য ন্যাশন' পত্রিকায় 'রিসলুটলি সার্পোটিং রং' নামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল। সেটি'র অনুবাদ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমাদের রাজনীতিবিদের একটা বিশাল অংশ বর্তমান বাস্তবতায় কিছু কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে অবিবেচকের মত অপমানজনক অযৌত্তিক কথাবার্তা উচ্চারণ করেন। বরং তাদের উচিত ষাঁড়ের মত না চেঁচিয়ে আসল সত্যকে মনযোগ সহকারে উপলব্ধি করা। পূর্ব পাকিস্তানের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নাই। পূর্ব পাকিস্তান এখন সম্পূর্ণ অতীত, ইতিহাসের একটি ন্যাক্কারজনক অধ্যায়। সেখানে এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ। আর হ্যা, সেই দেশটির নাম বাংলাদেশ। এই দেশটি দুঃসাহসী বাঙালিরা প্রতিষ্ঠা করেছে। কোনো ভূতপূর্ব পাকিসস্তানী বা কোনো নতুন প্রজন্মের পাকিস্তানী ওটা প্রতিষ্ঠা করেনি। কেবল বাঙালিরাই তাঁদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে, জীবনমরণ বাজী রেখে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করে ওটা প্রতিষ্ঠা করেছে। যারা এখন সেই পচা গু ঘাঁটতে গিয়ে নতুন করে গন্ধ ছড়াচ্ছেন, তাদের এসব পুরানা ঘটনা খুব ভালো করেই জানা। বাংলাদেশ কিভাবে পাকিস্তান থেকে আলাদা হল এটা আমরা ভালো করেই জানি। পাকিস্তানকে নিশ্চিতভাবে পরাজিত করেই বাঙালিরা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই পরাজয়ের গ্লানি নতুন করে আবার ঘাটাঘাটি করা কতোটা শোভন বা রুচিকর তা আমাদের বিচক্ষণ রাজনীতিবিদগণ ভুলে গেলে চলবে কেন? অতীতের সেই ভুলের কথা নতুন করে নতুন মোড়কে সামনে এনে কেন আমরা আবার গোটা বিশ্বের সামনে নিজেদের অসভ্যতার দুঃখবিলাশ করছি? বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী'র নেতা আবদুল কাদের মোল্লা'র ফাঁসির ঘটনার প্রতিবাদে কেন আমাদের জাতীয় পরিষদে (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) আবার একটি নিন্দা ও শোক প্রস্তাব পাশ করতে হবে? যদিও অতোবড় একটি অপমানজনক পরাজয়ের গ্লানি ভোলার জন্য মাত্র ৪৪ বছর খুব একটা দীর্ঘ সময় নয়। তবুও সেই অপমানকর বিষয়ে জাতীয় পরিষদে প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে আমরা কি আবারো নিজেদেরকে একটি অসভ্য জাতি হিসেবে প্রমাণ করছি না? পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিস্টার নিসার আলী খান সাহেব অত্যন্ত কঠোর ভাষায় দাবী করলেন যে, একমাত্র পাকিস্তানের অখণ্ডতা চাওয়ার কারণেই মিস্টার মোল্লাকে ওঁরা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। মিস্টার মোল্লা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তানের একজন অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। গোটা পাকিস্তান মিস্টার মোল্লার ফাঁসির ঘটনায় বড়োই মর্মাহত, শোকার্ত ও দুঃখিত। যদিও মিস্টার নিসার আলী খানের এই আবেগতাড়িত বেদনামিশ্রিত প্রলাপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ওয়াজেদকে কোনো সাহায্য করবে না। বরং এটা এখন বাংলাদেশে দিবালোকের মত সত্য যে, পাকিস্তানী কোনো অন্ধ সমর্থকের জন্যেও বাংলাদেশের মাটিতে এক ইঞ্চি জায়গাও বাটি চালান দিয়ে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুতরাং পাগলের মত অযৌক্তিক বিষয়ে মিথ্যাচার করে কিংম্বা প্রলাপ বকে আমাদের বর্তমান কলুষিত রাজনীতিকে সুদূর অতীতের পাপের প্রলেপ থেকে মুক্ত করা যাবে না। যদিও মিস্টার মোল্লার বিরুদ্ধে মহামান্য আদালতে যেসব অভিযোগনামা হাজির করা হয়েছিল, সেখানে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থণদানকে কোনো ধরনের ক্রাইম বা অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়নি। বরং মিস্টার মোল্লার বিরুদ্ধে বেশ কিছু পুরুষ-মহিলা ও শিশুকে খুন, শিশু ও নারী ধর্ষণ, শিশু ও নারী ধর্ষণের পর তাদের খুন, অগ্নি সংযোগ, নির্যাতন, লুটপাটের মত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং জঘন্য সব অপরাধ উপস্থাপন করা হয়েছে। যা বিশ্বের যেকোনো দেশের আইনে জঘন্য অপরাধ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। আর বাংলাদেশের মহামান্য বিচারিক আদালতে মিস্টার মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত এসব জঘন্য অপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর বিচারিক রায়ের মাধ্যমে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। একজন বিদগ্ধ বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ হিসেবে মিস্টার নিসার আলী খান নিশ্চয়ই একথা মানবেন যে, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নি সংযোগ, লুটপাট ইত্যাদি জঘন্য সব অপরাধ না করেও, অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার আন্দোলনে একজন নিবেদিতপ্রাণ পাকিস্তানপ্রেমী কর্মী হিসেবে দেশপ্রেম প্রমাণের জন্য মিস্টার মোল্লার সামনে পাকিস্তান প্রেমের নজির প্রমাণে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর বিকল্প ভালো কাজের সুযোগ ছিল, তিনি সেগুলো করে পাকিস্তানের খাঁটি দেশপ্রেমিক সেটি প্রমাণ করতে পারতেন। মিস্টার নিসার আলী খান যদি একজন অসীম বিচক্ষণ প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি কিভাবে দাবী করেন যে, মিস্টার মোল্লার জন্য আমরা পাকিস্তানীরা আজ সত্যিই বড় গর্বিত যে, একজন বাংলাদেশী হয়েও তিনি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত অভণ্ড পাকিস্তানকে সমর্থণ করেছেন। এখন যদি একজন খাঁটি পাকিস্তানী নাগরিক অখণ্ড ভারতের দাবী নিয়ে মিস্টার নিসার আলী খানের দরবারে হাজির হন, তাকে তিনি কি জবাব দেবেন? অন্য একটি দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর কোনোই অধিকার নাই। চলমান মাবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি বড় নজির। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে, এই আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদাণের রায় বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। সেই রায় ঘোষিত হবার পর প্রতিবাদ স্বরূপ বাংলাদেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ঢাকার শাহবাগে এক অভাবনীয় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছে। তাদের সেই আন্দোলনে একটাই দাবী ছিল যে, আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবে না। এমন কি এসব ঘটনাও যদি মিস্টার নিসার আলী খানের নজরে না আসে, তবুও এটা পাকিস্তানের কোনো বিষয় নয় যে তা নিয়ে একেবারে জাতীয় পরিষদে ঘাম ঝড়িয়ে প্রস্তাব পাশ করতে হবে। ইট ইজ নান অব পাকিস্তান'স বিজিনেস। এটা তাঁদের আগ্রাসন, তাঁদের ভিকটিমস, তাঁদের সিদ্ধান্ত। আমরা আমাদের পাকিস্তানী সন্ত্রাসীদের প্রতি কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না। তাদের আইনের আওতায় আনছি না। আমরা পাকিস্তানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করছি না। তার মানে যে অবশিষ্ট বিশ্ব সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে উদাসীন থাকবে তা কি করে সম্ভব মিস্টার নিসার আলী খান? ইতোসধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানী হাই কমিশনারকে ডেকে বাংলাদেশ তীব্র ভাষায় এর প্রতিবাদ করেছে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে যে প্রস্তাব পাশ হয়েছে তা বাতিল করারও অনুরোধ করেছে। একজন চিন্থিত খুনী, একজন চিন্থিত ধর্ষক, একজন চিন্থিত মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীকে কোনো ভাবেই পাকিস্তান বীরের মর্যাদা দিতে পারে না। এটা অন্যায়। এটা লজ্জ্বার। এটা চরম অপমানের। দয়া করে আমাদেরকে এভাবে আর বিশ্ববাসীর সামনে অপমান করবেন না। দয়া করে এবার থামুন। স্টপ ইমবারেসিং আস। বি.দ্র. যারা সরাসরি ইংরেজি ভার্সান পড়তে চান, এই লিংকে যেতে পারেন: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৮
false
ij
শ্রীচৈতন্য দেব_ যাঁর অন্তরে রাধা, বহিরঙ্গে কৃষ্ণ প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগের একজন প্রধান দেবতা হলেন বিষ্ণু। কৃষ্ণ, অর্থাৎ মথুরা-বৃন্দাবনের কৃষ্ণ ছিলেন সেই বিষ্ণুদেবতার অবতার। অর্থাৎ, মথুরা-বৃন্দাবনের মানুষ কৃষ্ণর মাঝে পেয়েছিল বিষ্ণুদেবতাকে। নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্যদেব ছিলেন তেুি কৃষের অবতার। অর্থাৎ, নবদ্বীপের মানুষ শ্রীচৈতন্যদেব মাঝে পেয়েছিল বৃন্দাবনের কৃষ্ণকে পেয়েছিল। আর, কৃষ্ণ আর রাধার লীলার কথা কে না জানে। নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্যদেব যেহেতু কৃষ্ণের অবতার, তাই রাধা ছিল তাঁর আরাধ্য। শ্রীচৈতন্য দেব বলতেন আমার অন্তরে রাধা, বহিরঙ্গে কৃষ্ণ। এই উক্তির ব্যাখ্যা অতীব গভীর।শ্রীচৈতন্য দেব ছিলেন পুরুষ। আমার অন্তরে রাধা মানে আমার অন্তরে নারীর অনুভূতি। নারীর অনুভূতিই যাবতীয় শিল্পের ভিত। শিল্প-সঙ্গীত পাশাপাশি থাকে। বাংলা গানের ভিতটি শ্রীচৈতন্যদেবের হাতেই গড়ে উঠেছিল। আমরা যে কীর্তনের কথা জানি- সেই কীর্তনের সঙ্গে শ্রীচৈতন্যদেবের নাম জড়িত। লালন যে কীর্তন শুনতেন ছোটবেলায়। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে কাজী নজরুল সবাই কীর্তন অঙ্গে গান করেছিলেন। শ্রীচৈতন্যদেবের বাবা জগন্নাথ মিশ্রর জন্ম হয়েছিল সিলেটে। পূন্যভূমি সিলেট বলার এও এক কারণ। সিলেটের সঙ্গে শ্রীচৈতন্যদেবের মতন এক প্রেমময় মানুষের নাম জড়িত। তরুন বয়েসে নদীয়ায় পড়তে এলেন জগন্নাথ মিশ্র। সে কালে নদীয়াই ছিল অন্যতম জ্ঞানতীর্থ। নদীয়ায় এসে শচী দেবীকে দেখে মুগ্ধ হলেন জগন্নাথ। সম্ভবত কোনও পন্ডিতের মেয়ে ছিলেন শচী। বিয়ে হল। ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দ। ফেব্র“য়ারি মাস। ১৮ তারিখটি ছিল ফাল্গুন জ্যোøার রাত। শচী দেবীর ঘর আলো করে এক শিশু জন্মাল। শখ করে নাম রাখল নিমাই। নদের নিমাই। মানে নদীয়ার নিমাই। লালনের একটি গান আছে না- তিন পাগলের হল মেলা নদে এসে তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে। ওই তিন পাগলের একজন হলেন শচীপুত্র নিমাই, আমাদের শ্রীচৈতন্যদেব। তো পাগল কেন জানেন? তা হলে লালন কি বলেছেন শুনুন- একটা পাগলামী করে/ জাত দেয় অজাতেরে দৌড়ে আবার হরি বলে পড়ছে বলে পড়ছে ঢলে ধূলার মাঝে ... তার মানে যার জাত নেই, সমাজ যার জাত দেয়নি, তাকে কতগুলি শিল্পমনস্ক পাগল জাত দিচ্ছে ঈশ্বরের নাম স্মরণ করে ... এই তো বাংলা। যার প্রতিটি বাঁকে এমন উদার মানবিকতার কিরণ-দূত্যি ছড়িয়ে রয়েছে। যাক। শিশু নিমাই ক্রমে ক্রমে বালক হল। আর সে কী দূরন্ত বালক। গাছে চড়ে, পাখির বাসা ভাঙ্গে তো দুপুর বেলা ঢিল ছুঁড়ে বামুনের কলসি ফুটো করে দেয়। আরও কত কি যে করে। নবদ্বীপের লোকে অতিষ্ঠ। নবদ্বীপ নগরটি ঘেঁসে গঙ্গা নদীটি বইছে। গঙ্গার ঘাটে কিশোরীরা জল নিতে আসত, নাইতে আসত। নিমাই তখন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘাটে বসে আখ খেত আর ছড়া কাটত মেয়েদের উদ্দেশ্য করে। এমনই দুষ্ট ছিল নিমাই। কিন্তু, দুষ্ট হলে কি হবে- পড়াশোনা ঠিকই মন ছিল। মেধাবী বলে খ্যাতি ছড়ালো। তরুন বয়েসে এক পন্ডিতের ব্যকরণ ভুল ধরে আলোরণ তুললেন তরুন বয়েসেই একদিন গঙ্গার ঘাটে দেখলেন এক মেয়েকে। গোলপানা মুখ, শ্যামলা গড়ন, এক মাথা চুল, মায়াবী চোখ। কে এ? কেঁপে উঠল তরুন নিমাই। খোঁজখবর করে দেখলেন মেয়ের নাম লক্ষ্মী, লক্ষ্মী দেবী। বিয়ে করবেন ঠিক করলেন। মা শচী দেবী বেঁকে বসলেন। কী কারণ কে জানে। নিমাই জেদ ধরল। বিয়ে হল। বিয়ের পর বউকে রেখে পূর্ব বঙ্গে বেড়াতে বেরুলেন নিমাই। নৌকা করে। (নারীবাদীরা লক্ষ করুন-নিমাই কিন্তু লক্ষ্মীদেবীকে সঙ্গে নিলেন না!) নিমাইয়ের সঙ্গে ক’জন বন্ধুবান্ধব ছিল। আগেই বলেছি,তাঁর বাবা জগন্নাথ মিশ্র ছিলেন সিলেটের। সেই পিতৃভূমি যদি একবার ঘুরে দেখা যায়। নিমাই নাকি পূর্ববঙ্গের মানুষের উচ্চারণে আমোদ পেয়েছিলে। নবদ্বীপ ফিরে দুঃসংবাদ পেলেন। লক্ষ্মীদেবী বেঁচে নেই। সাপে কেটেছিল। নিমাইয়ের মাথায় বাজ পড়ল। তার সর্বাঙ্গ পুড়ে গেল। গভীর ভাবে ভালোবাসতেন লক্ষ্মীদেবীকে। সেই বেঁচে নেই। এখন বিরহ সম্বল। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। গঙ্গার ঘাটে বসে থাকেন। একা। শান্তি পান না। ছটফট করে মন। মায়ের মন। ছেলেকে দেখে উতলা হলেন। শচীদেবী ছেলের আবার দ্বিতীয়বার বিয়ের আয়োজন করলেন। কনের নাম বিষ্ণুপ্রিয়া। বিয়ে হল। নতুন নারীতে মন বসল না। কেননা, বিয়ের রাতে নিমাই লক্ষ্মীকে বলেছিলেন, তুমি আমার রাধা। রাধা দুজন হয় কি করে! নিমাই পথে নামবেন বলে ঠিক করলেন। তাই করলেন। পথে নামলেন। তীর্থে র্তীর্থে ঘুরলেন। নবদ্বীপ থেকে বৃন্দাবন। বৃন্দাবন থেকে নীলাচল। (এটি বর্তমান উড়িষ্যার পুরী) নিমাইয়ে সঙ্গে অজস্র ভক্তশিষ্য। নিমাই একে পন্ডিত তার ওপর সুগায়ক। তাঁর ভক্তশিষ্য জোটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া ক্রমিক বিরহ তাঁকে আরও রুপবান করেছিল। গম্ভীর এক মাধুর্য ঝরে ঝরে পড়ত। কীর্তন গাইতে গাইতে হাঁটছে নিমাই। তাকে ঘিরে ভক্ত শিষ্যরা; তারা খোল করতাল বাজাচ্ছে। মুখে রাধাকৃষ্ণ বোল।চলতে চলতে পথে কদম গাছ দেখে মূর্চ্ছা যায় নিমাই। বহুকাল আগে রাধাও অমন মূর্চ্ছা যেত কদম গাছ দেখে। এমনই ঘোর অবস্থা। নিমাইয়ের খুব নাম ছড়াল। লোকে তাঁকে ভক্তিভরে নাম দিল শ্রীচৈতন্যদেব। আলাউদ্দীন হোসেন শাহ তখন বাংলার সুলতান ।তাঁর কানেও শ্রীচৈতন্যদেব নামটা পৌঁছেছিল। তিনি খোঁজখবর নিলেন। সব শুনে সন্তুষ্ট হলেন। আলাউদ্দীন হোসেন শাহ ছিলেন উদার মনের মানুষ। বাংলায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারে তাঁর আপত্তি ছিল না। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ। শ্রীচৈতন্যদেব ঘন ঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। বারবার লক্ষ্মীদেবীকে দেখছেন। রাধার মাঝে লক্ষ্মীদেবীকে দেখছেন। আবার লক্ষ্মীদেবীকে মনে হচ্ছে রাধা। নীলাচলে সমুদ্রের পাড়। একদিন। সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মনে হল লক্ষ্মী যেন ঢেউয়ের ওপর ভেসে আছে। ডাকছে। তিনি সমুদ্রে নেমে যেতে লাগলেন। তথ্যসূত্র: দীনেশচন্দ্র সেন; বঙ্গভাষা ও সাহিত্য (প্রথম খন্ড।) বাংলাপিডিয়া বাংলা অভিধান: শব্দসঞ্চয়িতা সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৪২
false
rg
বাংলা একাডেমি'র লজ্বা নেই!!! আবারো বাংলা একাডেমিতে সেই কথিত হে উৎসব!!! আবারো বাংলা একাডেমি সেই কথিত হে উৎসবের ভ্যেনু। বাংলা একাডেমি'র লজ্বা নেই! গত বছর দ্য ডেইলি স্টার ও দৈনিক প্রথম আলো'র যৌথ প্রযোজনায় বাংলা একাডেমিতে বিতর্কিত হে উৎসব করেছিল। তখন বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক এটাকে আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব বলে গোটা জাতিকে ধোকা দেবার চেষ্টা করেছিলেন। এ বছর হে উৎসব তিন দিনের। বাংলা একাডেমি সারা বছর ঘুমিয়ে কাটায়। আর বছর শেষে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের মেয়েকে আর দৈনিক প্রথম আলো'র ভাড়াটে লেখক আনিসুল হককে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেবার জন্য কথিত হে উৎসবের নামে একটি বুর্জোয়া চুতিয়ার খপ্পরে আর কতো কাল ঘুম পাড়ানি গান শুনাবে? এ বছর আবার তালিকা আরেকটু দীর্ঘ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকের নামও যুক্ত হল। আগেও বলেছি হে উৎসব কোনো আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন নয়। এটা একটি ব্যবসায়ী চক্রের সাহিত্য নিয়ে মাতলামী। সেখানে কিছু বিদেশি লেখককে আনা হয় এর রঙ ছড়ানোর জন্য। ব্রিটিশ কাউন্সিলের মদদে ও ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো'র সহযোগিতায় এই কুকর্মটি'র সঙ্গে বাংলা একাডেমি কেন জড়ায় সেটি আমার বুঝে আসে না। গত বছর হে উৎসবের প্রতিবাদ করায় বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যারা হে উৎসবের প্রতিবাদ করছে, তারা সবাই জামাতের লোক। আমাদের সঙ্গে তখন বাংলা একাডেমি'র প্রাক্তন পরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা যোগ দিয়েছিলেন এবং হে উৎসবের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। এবারো দেশের অনেক বড় বড় কবি সাহিত্যিককে নানা আলোচনায় নাম রাখা হয়েছে। হে উৎসবের নামে আসলে বাংলা একাডেমি দখলের একটা পায়তারা করছে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গংরা। প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কিছু মূলধারার লেখকদের নানা ভাবে ফুসলিয়ে হে উৎসবে হাজির করছে। অনেকটা ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না এই প্রাচীন সূত্র প্রয়োগ করে। আর আমাদের মূলধারার সেই সব খ্যাতিমানরা মধু খাবার লোভে হে উৎসবে হৈ হৈ করে যোগ দেবেন! অথচ বাংলা একাডেমি'র উচিত ছিল গত বছর বিতর্কিত হে উৎসবের পরে নিজেকে সংশোধন করার। বাংলা একাডেমি উদ্যোগ নিয়ে নিজেই আয়োজক হয়ে বিদেশি লেখকদের আমন্ত্রণ করে একটি আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন আয়োজন করতে পারতো। তা না করে বাংলা একাডেমি'র সেই কীর্তিমান মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নের্তৃত্ব আবারো হে উৎসবের ভাড়াটে ভাগাড়ে পরিনত করছে বাংলা একাডেমিকে। আমি হে উৎসবের তীব্র প্রতিবাদ করছি। হে উৎসবের ভ্যেনু ব্রিটিশ কাউন্সিলে হলে আমার কোনো আপত্তি থাকতো না। ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো'র নিজস্ব ভ্যেনুতে হলে বা অন্য কোনো ভ্যেনুতে হলেও আমার কোনো আপত্তি ছিল না। বাংলা একাডেমিতে কেন ভ্যেনু সেখানেই আমার আপত্তি? পাশাপাশি বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক কেন এর জবাব দেবেন না, সে বিষয়ে সচেতন লেখক সমাজের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি। বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। কারো ভাড়া খাটার জন্য ভাষা শহীদরা প্রাণ দেয়নি। বাংলা একাডেমি'র কবে ঘুম ভাঙবে? লেখক সমাজের কবে ঘুম ভাঙবে? নাকি মধু খাবে? বিনা পয়সার মধু!! বাংলা একাডেমি'র বর্তমান মহাপরিচালক নীতিগত ভাবেই আর একাডেমি'র এই পদে থাকার যোগ্য নন। বিদেশি সংস্কৃতি'র হে উৎসব দিয়ে লেখক হওয়া যায় না। হয়তো দুই চারজন লেখক বানানোর প্রজেক্ট এতে চালানো যায়। বাংলাদেশে আমরা যারা সত্যি সত্যি সাহিত্য চর্চা করি, তারা রাজনীতি একটু কম বুঝি। অথবা রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখি। অথবা রাজনীতিকে মন থেকে ঘৃণা করি। রাজনীতি করা রাজনীতিবিদদের কাজ। সাহিত্য চর্চা করা আমাদের মতো রাজনীতিবিমুখ মানুষদের কাজ। কিন্তু কিছু মানুষ সাহিত্য চর্চাও করেন। তলে তলে রাজনীতিও করেন। সাহিত্য চর্চায় তাদের অবদান কতোটুকু তা হয়তো তারা নিজেরাও অনুধাবন করতে পারেন। তাই তাদের সাহিত্য চর্চাকে প্রচারের নামে তারা এই রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। শুদ্ধ বাক্য লিখতে পারেন না অথচ এমন অনেক লেখক বাংলা একাডেমী পুরস্কারও পেয়েছেন। সেখানেও কাজ করেছে তাদের সাহিত্যের শক্তির চেয়ে রাজনীতির সফলতাটুকু। প্রথম আলো গংদের উদ্দেশ্য খুব পরিস্কার। কিন্তু আমাদের বুঝতে একটু সময় লাগে বেশি। এটা আসলে আমাদের খামখেয়ালী অসচেতনতার কারণে। আমাদের অনেক লেখক আছেন যারা প্রথম আলো'র কল্যানে আজ লেখক। আমাদের অনেক কলাম লেখক আছেন যারা প্রথম আলো'র কারণে কলাম লেখক। আমাদের অনেক কবি আছেন যারা প্রথম আলো'র কারণে আজ কবি। প্রথম আলো কী বাংলা সাহিত্যের অঘোষিত তুঘলক? প্রথম আলোতে আপনার লেখা ছাপা হল না মানে আপনি লেখক-ই না। আমাদের অনেক লেখককে এমন হিনমন্যতায় ভুগতে দেখেছি। সেই সব হিনমন্যতায় ভুগতে থাকা লেখকদের কিন্তু চট করেই দলে ভিড়ানো সম্ভব। প্রথম আলো গং সেই সুযোগটি খুব কৌশলের সঙ্গেই নিয়েছে। আমার অনেক লেখক বন্ধু আছেন যারা হে ফেস্টিবলে নিজের কবিতা পড়বেন বা গল্প পড়বেন বা চেহারা দেখাবেন, এতেই মহা খুশি। কিন্তু তিনি জানেন না যে তার ওইটুকু উপস্থিতিই প্রথম আলো গংদের বদ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কতোটা মহিয়সী! কিন্তু অতোটা চিন্তা ভাবনা না করেই তিনি কিন্তু প্রথম আলো গংদের ঘি খেতে গেছেন। ঘি কতোটা নকল আর কতোটা আসল সেই বিচার বিশ্লষণ করেননি। ফ্রি ঘি পেয়েছেন লোলুপ জিহবা নিয়ে হাজির হয়েছেন। সেখানেও সমস্যা নেই। ফ্রি ঘি যে কেউ নিতে পারে। কিন্তু সেই ঘি'র সঙ্গে যদি আমাদের বাংলা ভাষার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মান সম্মানের অপমান হয় অথবা বাংলা ভাষার মূল ধারার লেখকদের নিয়ে মস্করা বা তিরস্কার করা হয়, তখন তা নিয়ে মন বিষিয়ে ওঠে। বাংলা একাডেমী বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে প্রচারের জন্যে এ পর্যন্ত কী কী করেছে? সেই উদ্যোগে তাদের তো তেমন কোনো বড় উৎসাহ দেখি না। বাংলা একাডেমী কেনো গত ৫৭ বছরে একটিও আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠান করতে পারলো না? কারণ, সরলভাবে বললে বলতে হয়, এতোদিন আমাদের রাজনৈতিক সরকারগুলো বাংলা একাডেমীতে একদল তোষামোদপ্রিয় লোকবল পুষেছেন। যারা নিজেদের যোগ্যতায় বা আগ্রহে বাংলা ভাষার সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেবার কাজে ব্যর্থ বা অযোগ্য। তাদের তোষামোদ যোগ্যতা ছাড়া সেই যোগ্যতা ছিল না। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কিছু কামাই করা ছাড়া তাদের আর কোনো যোগ্যতা কী আছে? হে ফেস্টিবলের নাম করে প্রথম আলো গং বর্তমান বাংলা একাডেমী পর্ষদকে এটা বুঝিয়েছেন যে, হে ফেস্টিবল করলেই একটা আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠানের খ্যাতি জুটবে বাংলা একাডেমীর ললাটে। আর সেটা করতে গিয়ে যে নিজের এতো কষ্টে অর্জিত বাংলা ভাষা. বাংলা ভাষার ঐতিহ্য, ইতিহাস, আর অর্জনে একটা কালো দাগ লাগবে, তা কে জানতো? হে কারা? আমাদের নীলক্ষেতের পুরাতন বইয়ের দোকানদারদের মতো ব্রিটিশদের ওয়ালসের একটি কর্পোরেট বইয়ের গোষ্ঠী। যারা চা খাবার নাম করে গান বাজনার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইংরেজি সাহিত্যের প্রচারে একটা ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে তাদের আগ্রহ কেন? কারণ, আমাদের প্রথম শ্রেণীর দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তনয়া একজন ইংরেজি সাহিত্যের লেখিকা। যার দুইখানা উপন্যাস-ই পুরস্কার পেয়েছে বা পুরস্কার অর্জনের তালিকায় রয়েছে। এটা তো জাতির জন্য বড়োই গৌরবের খবর। সেই খবরকে বাংলাদেশের মূলধারার লেখকদের একটু চা নাস্তা ঘি দিয়ে পাতার আসনে বসিয়ে হে ফেস্টিবলের নামে শোনাতে চান। ব্যাপারখানা ব্রিটিশ কাউন্সিলে গত বছর শোনানো হয়েছিল বটে। কিন্তু তাদের সারাদেশে চালানো জরীপের ফলাফল বলছে বাংলাদেশের মূলধারার লেখকরা এখনো জানেন না বা মানেন না তাহমিমা আনাম একজন মস্তবড় লেখিকা। বাংলা একাডেমীতে বসে সেই গল্প শোনালে সবাই তা ধেই ধেই করে মানতে বাধ্য হবেন এবং সারাদেশে একটা হৈ হৈ কাণ্ড রটে যাবে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার বাগধারাটি এতোদিন কেবল বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের পৃষ্ঠায় ছিল। প্রথম আলো গংরা এবার তা বাংলা একাডেমীর চত্বরে এনে প্রমাণ করলেন আসলে এটা কী! এবার বাংলা একাডেমী স্বয়ং নিজেই নিজের নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গ করার দায়ে অভিযুক্ত। বাংলা একাডেমীর এমন অসচেতন কর্মকাণ্ডের দুর্বিসহ জ্বালা অনেক দিন সত্যিকার বাংলা ভাষার লেখকদের তাড়িয়ে বেড়াবে। বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ধ্বংসের জন্য হে ফেস্টিবল সংশ্লিষ্ট প্রধম আলো গংদের একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। হে ফেস্টিবল কী এবং কারা? কী উদ্দেশ্যে? হে ফেস্টিবল সম্পর্কে আমার কোনো পূর্ব ধারণা ছিল না। কিছু বিদেশী ভাষার লেখকদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়েই দুই বছর আগে ২১ নভেম্বর ২০১১ তারিখে ব্রিটিশ কাউন্সিলে হে ফেস্টিবল-এর কারবার দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি মোটামুটি এলাহি কাণ্ড-কারবার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃটেন ও বাংলাদেশী লেখকদের চিন্তা-চেতনা বিনিময় সংক্রান্ত সেই অনুষ্ঠানে কোথাও অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ছিলেন না। সেখানে ছিল বরং ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তনয়া তাহমিমা আনাম-এর দ্বিতীয় উপন্যাস `'দ্য গুড মুসলিম'-এর একটি বড় ধরনের মার্কেটিং ব্যবস্থাপনা। হে ফেস্টিবল: ইংল্যান্ডের ওয়ালসের ছোট্ট একটি শহরের নাম হে। হে শহরে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হলো ছোট ছোট বইয়ের দোকানগুলো। ১৯৬০ সালের দিকে রিচার্ড বুথ নামের স্থানীয় একজন বইয়ের দোকানদার একটি পুরাতন বিখ্যাত সিনেমাকে বই আকারে কনভার্ট করে বিক্রির জন্যে তাঁর দোকানে রাখলেন। তখন ওই সিনেমার বইটি কেনার জন্যে খুব ভিড় লেগে যায়। রিচার্ড বুথ তখন অন্যান্য বই দোকানদারদের সেকেন্ড হ্যান্ড বই বিক্রির বিষয়ে উৎসাহ দিতে থাকলেন। এভাবে হে শহরে রিচার্ড বুথের নের্তৃত্বে ১৯৭০ সাল নাগাদ `হে-অন-উই'-এর উপর ভিত্তি করে একটি বইয়ের শহর বা বুক টাউন গড়ে ওঠে। সেই থেকে বুক টাউনের বিকাশ শুরু। অনেকটা আমাদের নীলক্ষেতের পুরাতন বইয়ের দোকানের মতো। ১৯৮৮ সালে বই প্রেমিকদের জন্য পিটার ফ্লোরেন্স হে শহরে একটি উৎসবের আয়োজন করেন। সেই উৎসবের নাম ছিল হে ফেস্টিবল। ওই উৎসবে লেখকরা প্রকাশকদের সঙ্গে চুক্তি করতেন। আর নিজেদের লেখা ভক্ত দর্শকদের পড়ে শোনাতেন। ধীরে ধীরে ওই উৎসবে যোগ হল গান বাজনা আর ফিল্ম প্রদর্শনী। তারপর এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হল। হে ফেস্টিবলের মূল ধারণা হল লেখক-লেখক চিন্তা বিনিময়, লেখক-প্রকাশক চুক্তি, লেখক-দর্শক ভাব বিনিময় আর একটু উৎসব। সেই থেকে বিশ্বের কয়েকটি শহরে হে ফেস্টিবল হচ্ছে। ইতোমধ্যে নাইরোবি, মালদ্বীপ, বৈরুত, কেরালা, বেলফাস্ট, কার্তাগেনায় হে ফেস্টিবল চালু হয়েছে। গত বছর থেকে চালু হল ঢাকায়। সে বছর ঢাকার হে ফেস্টিবলের আয়োজক ছিল হে ফেস্টিবল ওয়ার্লড ওয়াইড আর ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল। স্পন্সর ছিল ডেইলি স্টার আর কাতার এয়ারওয়েজ। আর সার্বিক সহযোগীতায় ছিল যাত্রিক প্রডাকশন্স। ওই ফেস্টিবলে ব্রিটিশ লেখক এন্ড্রু মিলারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এন্ড্রু মিলারের ফরাসী বিপ্লবের উপর লেখা উপন্যাস `পুড়ে (Pure)' নিয়ে আমার আগ্রহ সৃস্টি হয়েছিল। আর বইটি ওই ফেস্টিবলে তখন পাওয়াও যাচ্ছিল। ওই ফেস্টিবলে সবচেয়ে ভালো লেগেছিল ব্রিটিশ ওরাল স্টোরি টেলার জেন ব্লেক-এর তাৎক্ষণিক গল্পবলার অসাধারণ ক্ষমতা কাছ থেকে দেখে। আফ্রিকার কোনো এক আদিবাসী গোষ্ঠীর গল্প শুনিয়েছিলেন ব্লেক। ঢাকা হে ফেস্টিবল ২০১২: গত বছর ঢাকায় হে ফেস্টিবল হয়েছিল ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর বাংলা একাডেমী আর ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে। ১৫ তারিখের ওপেনিং প্রোগ্রাম শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্যে সংরক্ষিত। আর ১৬ ও ১৭ তারিখের প্রোগ্রাম আমাদের মতো আম জনতার জন্যে উন্মুক্ত। ১৫ তারিখে যা যা ঘটেছিল, তাই আসলে এবারের হে ফেস্টিবলের আসল চরিত্র। ইংরেজি ভাষায় যারা এখানে লেখালেখি করেন তাদের আসলে লেখক হিসেবে স্বীকৃতি মিলবে ওই অনুষ্ঠানে। আর যারা বাংলায় লেখেন অথচ কুলিনবংশে নাম উচ্চারিত হয়, অথবা কুলিনবংশের সঙ্গে দোস্তামী রয়েছে, অথবা কুলিনবংশের সঙ্গে বিনিময় চালুর দারপ্রান্তে রয়েছেন, অথবা যাদের লেখা ভবিষ্যতে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ হতে যাচ্ছে বা হবার পথে রয়েছে, অথবা যারা কুলিনবংশের সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছেন, তারাই ওই অনুষ্ঠানের জন্যে ইতোমধ্যে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন। ১৬ আর ১৭ তারিখের প্রোগ্রাম আম-জনতার জন্যে উন্মুক্ত, তবে যারা কেবল অন-লাইনে রেজিঃস্ট্রেশান করেছেন অথবা ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো'র কর্মী। গত বছর হে ফেস্টিবলে দেশি-বিদেশি ৩৭ টি প্রতিষ্ঠান জড়িত। গত বছর ঢাকা হে ফেস্টিবলের থিম হল `কল্পনায় বিশ্ব' বা `imagine the world'। এখন আপনি বিনা পয়সায় কল্পনায় বিশ্ব দেখার সুযোগ কী হাতছাড়া করবেন? বাংলা একাডেমীতে ১৬ আর ১৭ তারিখ সময় করে একবার ঢু মারলেই তো কম্ম ফতে। বাংলা একাডেমী জাতীর মননের প্রতীক: ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এক অবিস্মরণীয় স্মারকের মর্যাদা হিসেবে ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়।বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার ও বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ হতে সমৃদ্ধতর কবার দায়িত্ব বাংলা একাডেমীর। ভাষা আন্দোলন থেকেই পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতিসত্তার সূচনা এবং এদেশের মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতার পথে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গৌরবময় প্রতীক এবং সাংস্কৃতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার অবিচ্ছেদ্য প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা একাডেমী। বাংলা একাডেমীর অন্যান্য কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কথা নাইবা বাড়ালাম। চিত্তরঞ্জন সাহা'র শুরু করা বই মেলাটি কালের বির্বতনে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রূপ নিয়েছে। বাংলা একাডেমীর সারা বছরের এখন প্রধান কাজ হল একটি সফল অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজন করা। অমর একুশে গ্রন্থমেলাটি এখন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান নিদর্শনে পরিনত হয়েছে। অমর একুশে বইমেলা মানে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মাসব্যাপী এক বিশাল মিলনমেলা। কয়েক বছর ধরে সেই বইমেলায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের নামে নানা কৌশল এবং কারসাজী আমরা প্রত্যক্ষ করছি। অমর একুশে বইমেলা যেহেতু বাংলাদেশের একটি প্রধান সাংস্কৃতিক মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। তাই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সেখান থেকে ব্যবসা বের করার কৌশলটি এতোদিন ছিল অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। এ বছর হে ফেস্টিবলের নামে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যখন বাংলা একাডেমী চত্বরে প্রবেশ করলো, তখন তাদের কৌশল ও কারবারী নিয়ে দুঃশ্চিন্তার অবশ্যই কারণ আছে। বাংলা একাডেমী কেন হে ফেস্টিবলের প্রধান ভেনু? বাংলা একাডেমী'র অমর একুশে বইমেলায় সাধারণত বাংলা ভাষায় রচিত বই প্রকাশ করা হয়। অন্যান্য বিদেশী ভাষার বই যদিও এখন বইমেলায় যাওয়া যায়। কিন্তু বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি এতোদিন সেই মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে যথেষ্ঠ সচেতন ছিল। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় আর সেই সচেতনতা যেনো ধীরে ধীরে পলেস্তারের মতো ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়। হায় জাতীর মননের প্রতীক! একি তবে ঘোর অমাশয়!! অমর একুশে বইমেলা ছাড়া বাংলা নববর্ষ, বৈশাখী মেলা, পৌষ-ফাগুনের মেলা এবং কিছু বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কার্যকলাপে এতোদিন বাংলা একাডেমীকে ভেনু হতে দেখেছি। তাহলে কী হে ফেস্টিবল দিয়ে সেই বাঙালি সংস্কৃতির গোড়ায় এবার একটি কুঠার আঘাত করতে যাচ্ছ? আর সেই ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী এবার নিজেই সেই কুঠারে হাত লাগিয়েছে? কী আছে ওই কুঠারের গায়ে? বহুজাতিক কোম্পানির চরিত্র হল তীলে তীলে গড়ে তোলা কোনো ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি বা সম্পদকে কৌশলে নানা ধরনের মোড়কের আড়ালে নিজেদের কুক্ষিগত করা। প্রথমে এরা বাণিজ্য সুবিধা দেবার কথা বলে। পরে এরা বাণিজ্য সুবিধার পুরোটাই গ্রাস করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি'র চরিত্র কী আমরা সবাই ভুলে গেছি? দুইশো বছরের বৃটিশ শাসন কী আমরা ভুলতে পারি? কাবুল, বাগদাদ, কায়রোর জাদুঘর লুটের খবর কী আমরা বেমালুম ভুলে গেছি? প‌্যারিসে আমাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর নামে জাদুঘর থেকে চুরি হওয়া ভাস্কর্যের ঘটনাটি কী আমরা ভুলে গেলাম? প‌্যারিসে বাংলাদেশ রাষ্টদূতের আকস্মিক হার্ট ফেল করে মারা যাবার ঘটনাও কী আমরা এতো সহজে ভুলে গেলাম??? হে ফেস্টিবলের আড়ালে কী? ১. বহুজাতিক কোমাম্পানি'র ব্যবসা ২. কুলিনবংশের নতুন প্রজন্মের হাইব্রিড লেখকদের লেখক হিসেবে স্বীকৃতি আদায় ৩. কুলিনবংশের নতুন প্রজন্মের জন্যে পুরস্কার আনার পায়তারা ৪. বাংলা একাডেমী'র ঐতিহ্যকে নষ্ট ও খাটো করা ৫. একপাল কুলিন অনুসারী লেখক গোষ্ঠী সৃষ্টি করা ৬. আর তথাকথিত হাইব্রিড লেখকদের জন্যে একটা পরিচিতি আনা বাংলা একাডেমী কী পাবে? বাংলা একাডেমী এতোদিনের ঐতিহ্য হারানোর একরাশ বেদনা পাবে। আর সেই হারাধনের একটি মাত্র ছেলে হারিয়ে আগামীতে বাংলা একাডেমী হয়তো হে ডে পালনে আগ্রহী হবে। আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তখন হয়তো হে রান, হে মানববন্ধন, হে পরিবার, হে মাশালা'র মতো আরো অনেক সুযোগ সুবিধা করার পায়তারা করবে। হে বাংলাদেশ, আমরা কোথায় যাচ্ছি!!! সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫২
false
mk
বরাবরের মতো মিসগাইডেড বিএনপি___ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র শোকে কাতর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গেলে তাঁকে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়ার বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একই প্রশ্ন কেন বিএনপি এই শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজটি করল? খালেদা জিয়াকে কি কেউ ‘মিসগাইড’ করেছে? দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের পথ খুঁজতে সারাদেশের মানুষ যখন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিল ঠিক সেই সময়ে সুযোগ সৃষ্টির পরও দুই নেত্রীর মধ্যে দেখা ও কথা হলো না। এতে কার লাভ কার ক্ষতি হলো- এমন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অভিজ্ঞমহলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কৌশলের কাছে কি হেরে গেলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়েছেন।দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের বৈরী অবস্থানের কারণে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে যখন সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছিল ঠিক সেই মুহূর্তে সুযোগ সৃষ্টি হয়েও বিএনপির একঘেয়েমির কারণে তা হাতছাড়া হয়ে গেল বলে এখন দেশবাসী মনে করছেন। রবিবার ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে জোটের নেতারা বলেছেনÑ ‘লাথি মার সংলাপে’। আর অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিএনপিও ওপরে ওপরে সংলাপের কথা বললেও এখন আর সে পথে না গিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমেই বিজয়ের পথ আবিষ্কারের চেষ্টা করবেন। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়টি সুদূরপরাহত বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন।বিএনপি জোটের টানা অবরোধ কর্মসূচীর মধ্যে দেশব্যাপী যখন পেট্রোলবোমা নাশকতার কারণে দেশের হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে তখন সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদদের প্রতি ঘৃণার বিষবাষ্প ছাড়ছে। ঠিক এমন একটি মুহূর্তে খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পুত্রশোকে কাতর খালেদা জিয়া কথা বলতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে হয়ত পরিবেশ কিছুটা ভিন্ন রকম হতো। এ সুযোগে হয়ত স্বল্প সময়ের মধ্যে সংলাপের পরিবেশও সৃষ্টি হতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছেন বলে দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এখন বলাবলি করছেন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির এ আচরণে সারাদেশে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় ওঠেছে।জানা যায়, বিএনপির থিঙ্ক ট্যাংক বলে পরিচিত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এক সময় যারা চীনপন্থী কমিউনিস্ট ছিলেন তাঁদের কথাই এখন খালেদা জিয়া শোনেন। প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে গেলেও তাঁকে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘটনাটিও তাঁদের পরামর্শেই ঘটানো হয়েছে। আর এরাই অতীতে খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকটি ইস্যুতে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছিলেন। আর এ বিষয়টি বুঝতে পেরে উদারপন্থী বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছে।খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁকে সমবেদনা জানাতে যাওয়ার কথা শনিবার সন্ধ্যার আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেয়া হয়। রাত ৮টা ১৯ মিনিটে গণভবন থেকে রওনা দিয়ে ৮টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে নামেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার আগেই প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ‘সিএসএফ’ টিমের সদস্যরা সেখান থেকে সরে যান। খালেদা জিয়া তখন তাঁর কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় দরজা বন্ধ করে নির্বাক হয়ে বসে আছেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারসহ দলের অনেক নেতাকর্মী ও গুলশান অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তখন কার্যালয়ের ভেতরেই ছিলেন। ভেতরে-বাইরে মিলিয়ে শতাধিক মিডিয়াকর্মীও সেখানে ছিলেন। কিন্তু ফটক খুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভেতরে যাওয়ার সুযোগ দিতে কেউ এগিয়ে এলেন না। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের দুই প্রবীণ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রধান ফটক খুলে দেয়ার জন্য ভেতরে থাকা বিএনপি নেতাদের অনুরোধ জানান। কিন্তু খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ভেতর থেকে বিএনপির পক্ষে তাঁদের অনুরোধে সাড়া দেয়া হয়নি। তাই ৬ মিনিট সেখানে অবস্থান করে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ভেতরে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ফিরে গেলেন। আর সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দুই নেত্রীর সঙ্গে দেখা ও কথা হওয়ার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে পড়ল। এ খবরে সারাদেশের সর্বস্তরের আশাবাদী মানুষের মধ্যে হতাশার ছায়া নেমে এলো।প্রধানমন্ত্রী গুলশান কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে এসে সাংবাদিকদের খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে জানান, কোকোর মৃত্যুর কারণে আন্দোলন কর্মসূচীর হেরফের হবে না, আন্দোলন চলবে। তখন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজনরাও শোকার্ত খালেদা জিয়ার সামনে যেতে পেরেছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। একপর্যায়ে খালেদা জিয়া অসুস্থতাবোধ করলে দরজা বন্ধ করে একাকী সেখানে অবস্থান করেন এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বলেও জানা যায়। তবে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার আগে সেখানে কোন চিকিৎসক প্রবেশ করতে কেউ দেখেননি বলে তখন সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।প্রধানমন্ত্রীর আগমনের খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস জানান, পুত্র শোকে কাতর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এ মুহূর্তে তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। পুত্র শোকে কাতর খালেদা জিয়া অসুস্থ। সুস্থ হলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি জানানো হবে। তাঁর মুখে এ কথা শোনার পর থেকেই সাংবাদিকদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দেয়Ñ তাহলে কি দুই নেত্রীর দেখা হচ্ছে না? অবশেষে সে আশঙ্কাই সত্যি হয়।অপরদিকে খালেদা জিয়ার সাক্ষাত না পেয়ে শেখ হাসিনা গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে যাওয়ার পর রাত পৌনে ৯টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, কোকোর মৃত্যু সংবাদ শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন। এর মধ্যে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু খালেদা জিয়া দরজা না খোলায় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সমবেদনা জানাতে পারেননি। বিকেলেই বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আসার পরও এভাবে দরজা বন্ধ রাখা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।পরে রাত সাড়ে ৯টায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, আমরা আগেই জানিয়েছিলাম খালেদা জিয়াকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী চলে এলেন এবং আমি শোকবই নিয়ে প্রধান ফটকে আসতে না আসতেই তিনি চলে গেলেন। শিমুল বিশ্বাস বলেন, শোকের ঘটনা নিয়ে কেউ যাতে নোংরা রাজনীতি না করেন সে আহ্বান জানাচ্ছি।উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৯ সালের মে মাসে দুই নেত্রীর সরাসরি কথা হয়। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানম-ির বাসভবন সুধাসদনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানান এবং দুই নেত্রীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথাও হয়। এরপর সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে বেশ কয়েকবার দেখা হলেও তাঁরা কথা বলেননি। এছাড়া ২০১৩ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বঙ্গভবনে দেখা হলেও তাঁরা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেননি। তবে ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খালেদা জিয়াকে ফোন করে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু খালেদা জিয়া সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁদের মধ্যে আরও বেশি দূরত্ব সৃষ্টি হয়। খালেদা জিয়া ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর রোড ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচীর ডাক দিয়ে সারাদেশকে কার্যত ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বিএনপির সিনিয়র নেতারা গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যাওয়া এবং গুলশানের বাসা থেকে খালেদা জিয়া বের হতে না পারায় সে কর্মসূচী ব্যর্থ হয়। এর পর নির্বাচন প্রতিহত করতে সারাদেশে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করে দিলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি বিএনপি জোট।দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পর ৫ জানুয়ারিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করতে ওই দিন ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচী পালনের ডাক দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এ কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে রিপোর্ট পেয়ে সরকার বিএনপিকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যে কোন মূল্যে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। সমাবেশের প্রস্তুতি জোরদার করতে ৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করে খালেদা জিয়া ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তবে ৩ জানুয়ারি মধ্য রাত থেকেই খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।৫ জানুয়ারি বিকেলে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে পুলিশ খালেদা জিয়াকে বাধা দেয়। আগেই প্রধান ফটকে তালা মেরে দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার গাড়ি ফটকের সামনে গিয়ে হর্ন দিতে থাকে আর তার সঙ্গে থাকা মহিলা দলের নেতাকর্মীরা ফটকে লাথি মেরে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এ সময় পুলিশ পিপার স্প্রে মেরে মহিলা দলের নেতাকর্মীদের নিস্তেজ করে দেয়। পরে খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে টানা রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন। এই অবরোধ কর্মসূচীর সঙ্গে মাঝে মধ্যে হরতালও পালন করা হচ্ছে। কিন্তু এ কর্মসূচী পালনের নামে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বিশেষ করে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়ে শতাধিক মানুষ দ্বগ্ধ হওয়ায় সরাদেশে বিএনপি জোটের এ কর্মসূচী নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ পরিস্থিতিতে নানামহল থেকে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ কিংবা দেখা সাক্ষাতের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কিন্তু কে কার সঙ্গে কিভাবে দেখা করবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। অবশেষে কোকোর মৃত্যুর পর এ সুযোগটি সৃষ্টিও হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়ায় এ সুযোগটি নষ্ট হয়ে যায়।রবিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টন পিকিং গার্ডেনে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে নেতারা বলেছেনÑ ‘লাথি মার সংলাপে’। তাঁরা জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।১৪ দলের বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘লাথি মার সংলাপকে’। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সৌভাগ্যবান, আল্লাহ তাঁকে একটা সুযোগ করে দিয়েছেন। না হয়, পরিস্থিতি খারাপ হতো। ত্রাণমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যা করবেন আর আমরা আপনার সঙ্গে আলোচনা করবÑ এটা চিন্তা করাও আপনার মহাপাপ। আপনার সঙ্গে আলোচনা হবে না। আমরা বলেছি, পাপের শাস্তি আপনি পাবেনই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ হত্যাকারীদের কাছে মাথানত করবে না। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে সমবেদনা জানাতে গেলেও অফিসের গেটের তালা খোলেননি, এতেই প্রমাণ পেয়েছে বিএনপি শিষ্টাচারবহির্ভূত রাজনৈতিক দল। খাদ্যমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্রমান্বয়ে আরও ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের সঙ্গে কোন আপোস বা আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না, এদের প্রতিরোধ করতে হবে।সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের সরকারী তিতুমীর কলেজে এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দরজা থেকে ফিরিয়ে বিএনপি আবারও একটি সংলাপ ও সমঝোতার সুযোগ হারাল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুর পর কেউ ভাবেনি শেখ হাসিনা সেখানে যাবেন কিন্তু সেখানে তিনি গেলেন, কারণ তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ মা। ১৫ আগস্ট বিএনপির কেক কাটার অভিজ্ঞতা রয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দেখারও অভিজ্ঞতা আছে তবুও সব কিছু ভুলে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন মানবতার খাতিরে। কিন্তু বিএনপি যা করেছে তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। একই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দিনের পর দিন আপনি মানুষ পুড়িয়ে কত মায়ের বুক খালি করেছেন আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে আচরণ করেছেনÑ বাংলার ১৬ কোটি মানুষ তার জবাব দেবে।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এক অনুষ্ঠানে বলেন, খালেদা জিয়া নিজেই আলোচনা চান না। একদিকে তিনি আলোচনার কথা বলছেন, অন্যদিকে যখন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে শোক জানানোর জন্য তাঁর কার্যালয়ে গেলেন তিনি দেখাই করলেন না। এ থেকে প্রমাণিত হয় তিনি আলোচনা চান না, তাঁর মধ্যে কোন সৌজন্যতাবোধ নেই।মতিঝিলে এক দলীয় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, শিমুল বিশ্বাসদের মতো বেয়াদব ও মূর্খ লোকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত বলেই বিএনপি নেত্রী আজ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। তিনি বলেন, শোকে মুহ্যমান খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। এটা চরম বেয়াদবি। খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে শোক বই নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কী রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই শোক বইয়ে স্বাক্ষর করতেন?ধানম-ির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এ কেমন ইঞ্জেকশন ছিল, যার কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ঘুম ভাঙ্গেনি। আমরা জানি ঘুমের ইঞ্জেকশন দিলে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত এর কার্য়কারিতা থাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ফিরে আসার পর খালেদা জিয়া নাকি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শনিবার রাতে বিএনপি নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা দেশের রাজনীতি ও সামাজিক-সংস্কৃতিতে কালো দাগ হয়ে থাকবে।প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘটনায় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ কিছুটা হলেও ভাল হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই নেত্রীর মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ হয়েছে।বিএনপিসমর্থক বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, এটা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি কিন্তু আমার মনে হয় এর কারণ হলো ‘ল্যাক অফ কমিউনিকেশন।’ প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়া ঠিক হয়নি। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে যেভাবে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের জন্য প্লাস পয়েন্ট হয়েছে।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী গেট পর্যন্ত গেলেন এবং উনি গেট খুললেন নাÑ এটা জাতির জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা মর্মাহত। দেশের মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল, অন্তত দুই নেত্রীর পরস্পরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল। খালেদা জিয়া যদি অনুকূল সাড়া দিতেন, সারাদেশের মানুষ খুশি হতো। এ থেকে বোঝা গেল বিএনপি রাস্তার শক্তির ওপর তাদের কর্মকা- চালিয়ে যেতে চায়। বিএনপির এ আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো ছাড়া আর কিছু বলার নেই।
false
fe
সোয়াইন ফ্লু ও বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুর্বৃত্তপনা সোয়াইন ফ্লু ও বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুর্বৃত্তপনা ফকির ইলিয়াস ======================================== সোয়াইন ফ্লু নামের একট নতুন ভাইরাস হঠাৎ করেই কাঁপিয়ে তুলেছে গোটা বিশ্ব। মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা জুড়ে ব্যাপক এলার্ট। দফায় দফায় বৈঠক করছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিনির্ধারকরা। একে সার্বিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য তাৎক্ষণিক অর্থ বরাদ্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। টিভিতে দেখলাম, বাংলাদেশেও সোয়াইন ফ্লু নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বিমানবন্দরে ব্যাপকভাবে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। বেশ ভালো উদ্যোগ। তাৎক্ষণিক এই ব্যবস্থা নেয়ায় সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ এগিয়েছে। হ্যাঁ, এগুবারই কথা। কারণ বিশ্ব থেমে নেই। তবে কথা হচ্ছে কিছু কিছু সেক্টরে যেভাবে সততা নিয়ে বর্তমান দুনিয়া অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ সেভাবে পারছে না। আর পারছে না শুধুমাত্র দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রসরতা এ সময়ে একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। প্রাণের সন্ধানে দিনরাত গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর এর বিপরীতে বাংলাদেশে হচ্ছেটা কি? একটি টিভিতে বাংলাদেশের কিছু হাসপাতাল, ক্লিনিক নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন দেখলাম। সে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, হাসপাতালের সুইপার, ওয়ার্ডবয়রা অপারেশন করে ফেলে। ক্লিনিকে ডাক্তার সেজে বসে আছে ভুয়া চিকিৎসক। যার চিকিৎসা শাস্ত্রে আদৌ কোনো লেখাপড়া নেই। সবচেয়ে বেদনাদায়ক কথা হচ্ছে এইসব সামাজিক শত্র“রা প্রশাসনের সহযোগিতা পায়। ভাগবাটোয়ারা দেয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। সোয়াইন ফ্লুর মতো হঠাৎ হিড়িক পড়লে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশের প্রশাসন। অথচ ক্লিনিক, ওষুধ ব্যবসার নামে দেশে চলছে চরম নৈরাজ্য। হেকিমি, কবিরাজি প্রথার কিছু অসদুপায়কে অনুসরণ করে আধুনিক চিকিৎসার নামে লুটপাটকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ীরা। কিছু ডাক্তারদের সহযোগিতায় তারা চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অপকর্ম। অপকর্ম এ জন্য বলছি, ঢাকার বেশ কয়েকটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে কিডনি বেচাকেনার অভিযোগ ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাছাড়া বিদেশে শিশু এবং নারী পাচারেও কোনো কোনো ক্লিনিকের পরোক্ষ হাত আছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কতো জঘন্য মানসিকতা হলে সেবা প্রদানের নামে এমন কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব! সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর অধিকাংশই এখন দুর্বৃত্তদের দুর্গে পরিণত হয়েছে। গ্রামীণ জনপদ থেকে ছুটে আসা মানুষের কাছ থেকে এরা পদে পদে আদায় করছে টাকা। রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে দিতে একজন রোগী মানসিকভাবে চরম বিপন্ন হয়ে পড়েন। ভেঙে যায় তার মনোবল। সামান্যতম মানবিকতার দেখাও রোগীরা সেখানে পান না। এ প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার একটি খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে চাই। ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের ব্যবহারে তিক্ততার কারণে শেষ পর্যন্ত আমার প্রথম সন্তান সরকারি হাসপাতালেই জন্ম নেবে এ সিদ্ধান্ত নেই। সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯৯৪ সালের সেই দিনগুলোর কথা আমার মানসপটে জাগ্রত থাকবে সারা জীবন। বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে অনুকূলে নিয়ে আসতে মাথার ঘাম পায়ে ঝরেছিল আমার। আমার সন্তান জন্ম নেয়ার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পালা। আমার নবজাত সন্তানের জন্ম সনদ অর্থাৎ বার্থ সার্টিফিকেট দরকার। প্রসূতি বিভাগের ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম। তিনি বললেন, এর জন্য সময় লাগবে। রেজিস্ট্রেশন বিভাগে গিয়ে যোগাযোগ করতে বললেন। সেখানে গেলাম। এ জন্য নির্দিষ্ট কারো দায়িত্ব নেই। অমুক-তমুকের কাছে পাঠাতে থাকলেন আমাকে। হাসপাতালের বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে কয়েক ঘণ্টা ঘুরে ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়লাম আমি। কেউ হদিস দিতে পারছে না বার্থ সার্টিফিকেটটি আমি কিভাবে দ্রুত পেতে পারি। একজন মধ্যম শ্রেণীর কর্মচারী এগিয়ে এসে ৫ হাজার টাকা দাবি করলেন। বললেন সব ইনফরমেশন দিয়ে যান। একমাস পরে এসে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে যাবেন। আমি বললাম, না বার্থ সার্টিফিকেট আমার আজই দরকার। ডিসচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েই আমার স্ত্রী হাসপাতাল ত্যাগ করবেন। কর্মচারীরা একে একে মুখ ভেংচিয়ে আমার সামনে থেকে সরে গেলেন। আমি নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের মহাপরিচালকের দপ্তরে গিয়ে ঢুকলাম। কর্নেল ফাহিম আহমদ চৌধুরী। অত্যন্ত কর্মঠ, নিষ্ঠাবান এবং নীতিবান মানুষ। আমার পরিচয় পেয়ে আমাকে সম্ভাষণ জানালেন। তাকে আমার সমস্যার কথা বললাম। বললেন, ‘আমাদের তো ছাপা করা কোনো নির্দিষ্ট বার্থ সার্টিফিকেট নেই। এটা সিলেট অঞ্চল। প্রবাসীর সংখ্যা লাখ লাখ। প্রবাসীরা সকলেই তাদের সন্তানদের বার্থ সার্টিফিকেট চান। এ জন্য আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বার বার চিঠি লিখেছি। ‘বাট দে ডোন্ট কেয়ার এবাউট ইট। হোয়াট ‌ক্যান আই ডু এলোউন?’ বুঝলাম ব্যবস্থার প্রতি তিনিও খুব ক্ষিপ্ত। আমাকে বললেন, আপনি বাইরে থেকে গিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট কম্পোজ করিয়ে আনুন। আমি সব ব্যবস্থা করে দেবো। তিনি নমুনা লিখে দিলেন। আমি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা তৈরি করে এনে হাজির করলাম। তিনি প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর এবং সীল মোহরের ব্যবস্থা করলেন। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্ত্রী-সন্তান এবং বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েই বাড়িতে ফিরলাম। প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার এই যে চরম দুরবস্থা-তার সত্যতা, বার বার স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তনও প্রমাণ করে। কিন্তু কোনো উন্নয়ন নেই। শুধুই টাকার খেলা। ভালো চিকিৎসা নেই। বড় বড় নেতা, ব্যবসায়ী আর কোটিপতিরা সর্দি কাশি হলেই ছুটে যান সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, ভারতে। কখনো লন্ডন-নিউইয়র্কে। কিন্তু দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কোথায় যাবে? মানুষের আর্তনাদ কি সামান্যতমও কর্ন কুহরে পৌঁছবে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের?? নিউইয়র্ক , ২৮ এপ্রিল ২০০৯ ------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ।ঢাকা। ৩০ এপ্রিল ২০০৯ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০০৯ ভোর ৬:০৭
false
rg
পুতিন রহস্যের অবসান!!! গত দশদিন ধরে সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো একযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে একটি গুজব ছড়িয়েছিল। গুজবটি হল, 'পুতিন নেই'! কেউ বলেছে, পুতিন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পুতিন ক্ষমতাচ্যুত। কেউ বলেছে, পুতিন প্রসাদ ষড়যন্ত্রে নিহত। কেউ বলেছে, পুতিন আবার বাবা হয়েছেন এবং প্রেমিকার সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের একটি ক্লিনিকে আছেন। কেউ বলেছে, পুতিন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ বলেছে, পুতিন কসমেটিক সার্জারি করিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বের মার্কিনপন্থী মিডিয়াগুলোর ইত্যাদি নানান গুজবের আজ অবসান হল, যখন পুতিনকে আবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা গেল। আজ সোমবার কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট আলমাজবেক আতামবায়েভের সঙ্গে ৬২ বছর বয়সি রুশ নেতা পুতিন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তবে এ সময় শব্দতরঙ্গ বন্ধ করে রাখায় তাঁদের কথোপকথন টেলিভিশনে শোনা যায়নি। প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজের সম্পর্কে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব গুজবকে কটাক্ষ করে কিরগিজ প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ‘গুজবহীন জীবন বড় একঘেয়ে।’ সেন্ট পিটার্সবার্গের বাইরে একটি রাজকীয় প্যালেসে ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।এর আগে গত ৫ মার্চ পুতিনকে সর্বশেষ জনসম্মুখে দেখা গেছে। পরপর এতদিন ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে পুতিনকে আগে কখনো দেখা যায়নি। সেদিন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির সঙ্গে পুতিনকে সাক্ষাত করতে দেখা যায়। এরপর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে একটি নারী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাৎ করার যে ছবি প্রকাশ পেয়েছিল, রাশিয়ার গণমাধ্যমের একাংশ বলেছিল, সাক্ষাতের ওই ছবিটি আসলে ৫ মার্চেই তোলা। গত সপ্তাহে হঠাৎ করে কাজাখস্তান সফর বাতিল করেন পুতিন। তারপর ৫ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত পুতিনকে জনসম্মুখে কোথাও দেখা যায়নি। পশ্চিমা মার্কিনমদদপুষ্ট সংবাদ মাধ্যমগুলো সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুতিনকে নিয়ে গুজব ছড়িয়ে দিয়েছিল। আজ কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট আলমাজবেক আতামবায়েভের সঙ্গে পুতিনকে বৈঠক করার অনুষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করার পর পুতিন গুজবের অবসান হল। পাশাপাশি সারাবিশ্ব আরেকটি সুস্পষ্ট বার্তাও পেল যে, মার্কিন মদদপুষ্ট মিডিয়াগুলো এভাবেই গোটা বিশ্বে নানান বিষয়ে, নানান কিসিমের গুজব রটিয়ে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ উদ্ধারেই কেবল ব্যস্ত থাকে। ..............................১৭ মার্চ ২০১৫ঢাকা
false