label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
ij
None এনদ্রেস সেগোভিয়া। স্পেনের এই গিটারবাদক গিটারে ইউরোপীয় ক্ল্যাসিকাল শিল্পীদের সুর বাজিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন- গিটারেও আর্ট-মিউজিক সম্ভব। তার আগে গিটারে কেবলি স্প্যানিশ লোকগীতি গাওয়া হত। মনে রাখতে হবে ফ্লামেনকো নামে স্পেনের যে ঐতিহ্যবাহী নাচ আর গানের সমন্বয়ে সঙ্গীতের ষ্টাইলটি রয়েছে -তার সঙ্গে এনদ্রেস সেগোভিয়ার সম্পর্ক একেবারেই নেই। গিটারে কেবলি ফ্লামেনকো-ব্যাপারটা আদপে পছন্দ হত না অনেকের- তাদের মধ্যে সেগোভিয়া একজন। সবাই বলল-গিটারে কর্ড বাজাবে? পাগল নাকি? সেগোভিয়া পাগল ছিলেন না-ছিলেন প্রতিভাবান। আমরা যে আজকাল গিটারে কর্ড ধরি-এই পথটি যাঁরা যাঁরা দেখিয়েছিলেন- এনদ্রেস সেগোভিয়া তাঁদের অন্যতম। সেগোভিয়া পুরো নাম এনদ্রেস টোররেস সেগোভিয়া। জন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি; ১৮৯৩। স্পেনে। ছয় বছর বয়েসে গিটারে হাতেখড়ি। কৈশরে গ্রানাডা শহরে চলে আসে সেগোভিয়ার পরিবার। স্পেনের মানচিত্র। দক্ষিণে গ্রানাডা। গ্রানাডায় আলহামব্রায় মুসলিম আমলের একটি প্রাসাদ ছিল। ঐ প্রাসাদে বসে থাকত কিশোর সেগোভিয়া । একা একা। আর, গিটার বাজাত। আলহামব্রায় মুসলিম আমলের প্রাসাদ। সেগোভিয়া পরে বলেছিলেন - ঐ আলহামব্রায় প্রাসাদে একা একা বসে থাকার সময় আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। সেগোভিয়ার সময়ে গিটার ছিল লোকযন্ত্র-গিটারের তেমন সম্মান ছিল না। সেগোভিয়ার পরিবার কাজেই গিটারকে সিরিয়াসলি নিতে বারণ করত। তা হয় কি করে। এই নিয়ে কত বিরোধ। হইচই। ঝগড়া। মন খারাপ হলে আলহামব্রা প্রাসাদে বসে থাকত কিশোর সেগোভয়া। তখন তার কাছে আসত একটি পাখি। কারও কাছে শেখেননি সেগোভিয়া। এটাই বিস্ময়কর। আলহামব্রায় প্রাসাদে বসে থাকতে থাকতে আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। ষোল বছর বয়েসে প্রথম দর্শকের সামনে বাজানো। এর পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। স্পেনবাসী তাদের গিটারের জাদুকরটিকে দেখল। ১৯২৮ সালে প্রথম মার্কিন সফর করলেন সেগোভিয়া । অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও কনসার্ট লোকে লোকারণ্য। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর একটা ঘটনা ঘটালেন সেগোভিয়া । সে সময় গিটারের তার তৈরি হত ভেড়া কিংবা ছাগলের অগ্ন্যাশয় থেকে। সেগোভিয়া পদ্ধতিটা বদলে দিলেন। তিনি নাইলন স্ট্রিং ব্যবহার করা আরম্ভ করলেন। গিটারের মেজাজ মর্জি বদলে গেল। বাজানোর রীতি তো বদলে দিয়েছিলেন আগেই। অনেকেই শিখতে আসত সেগোভিয়ার কাছে। প্রতিভাবান শিষ্যদের প্রতি সদয় ছিলেন সেগোভিয়া । বেশ রসিক ছিলেন। শিষ্যদের বলতেন-ভুল বাজিও না। তোমার সামনে ঈশ্বর বসে আছে। ঈশ্বরের সামনে ভুল বাজানো কি ঠিক? এমনই মানুষ ছিলেন গিটারের পয়গম্বরটি। জুন; ১৯৮৭। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ। ৯৪ বছর বয়েসে হৃৎরোগে আক্রান্ত হয়ে সেগোভিয়ার মৃত্যুবরণ করেন । তাঁর মাজার স্পেনের আনদালুসিয়ায় । মাজারের ভিতরে কবর জায়গাটা এখন ক্লাসিকাল গিটারবাদকদের তীর্থ। একদিন আমারও যাব। গিটারের প্রেরিতপুরুষ সেগোভিয়ার বাজনা যেন প্রার্থনা ... সেগোভিয়ার আরও লিঙ্ক Click This Link সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৪৩
false
rn
রেবতি আগে আমার অবস্থানটা বর্ণনা করে নিই। সকাল সাড়ে এগারোটা। ঝকঝকে সুন্দর-পরিচ্ছন্ন একটি দিন। আমি দাঁড়িয়ে আছি- বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে। আমার ডান হাতের একটা আঙ্গুল শক্ত করে ধরে আছে একটি সাত আট বছরের একটি মেয়ে। মেয়েটি দেখতে একেবারে বারবি পুতুলের মতন সুন্দর। এই মেয়েটিকে আমি চিনি না। আজই প্রথম দেখলাম। হঠাত করে মেয়েটি কোথা থেকে এসে আমার হাত ধরে রেখেছে! কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না, কিন্তু হাসে। হাসলে মেয়েটিকে অনেক সুন্দর দেখায়। মায়াময় একটি মুখ। তাকিয়ে থাকলেও আনন্দ হয়। মেয়েটিকে আমি জিজ্ঞেস করলাম- তোমার বাসা কই ? তোমার বাবা-মা কোথায় ? তোমার নাম কি ? তুমি এখানে কেমন করে এলো ? মেয়েটি কোনো প্রশ্নের জবাব দিলো না তবে মিষ্টি করে হাসলো। মেয়েটির হাসি আজকের দিনটা যেন আরও বেশী সুন্দর করে দিল ! বুঝতে পারছি- আমি এক ভয়াবহ সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু যুক্তি দিয়ে ভাবলে এটা কোনো সমস্যা'ই নয়। লজিক বলে, মেয়েটি হারিয়ে গিয়েছে। হয়তো বাবা-মা'র সাথে বের হয়েছিল। এতক্ষণে বাবা-মা নিশ্চয়ই পাগল পাগল হয়ে গিয়েছে। কোনো কারনে মেয়েটি আমাকে পছন্দ করেছে। হয়তো আমি দেখতে মেয়েটির চাচা অথবা মামা'র মতন। এই যে জন্য সে আমার হাত ধরে রেখেছে। মেয়েটি'র হাত ধরার ভঙ্গি'ই বলে দিচ্ছে- সে আমার হাত ধরে এক আকাশ ভরসা পেয়েছে। যেন তার আর কোনো চিন্তা নেই। মেয়েটি যথেষ্ট বড়- সে ইচ্ছা করলেই তার বাসার ঠিকানা বা বাবা-মা'র নাম অথবা টেলিফোন নাম্বারও বলতে পারে। কিন্তু মেয়েটি কিছুই বলছে না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই মিষ্টি করে হেসে দেয়। মিসির আলি হলে এতক্ষনে- মেয়েটির বাবা-মা'র নাম, বাসা সব কিছু বের করে ফেলতেন। আমি কি পারব মেয়েটিকে তার বাবা-মা'র কাছে ফিরিয়ে দিতে ? অনেকদিন আগে একবার আমি মিসির আলির মতন করে একটা সমস্যার সমাধান করেছিলাম। সমস্যাটা ছিল এই রকম- একটা মাদ্রাসায় অনেক গুলো ছেলে মেয়ে থাকত। প্রতিটা ছেলে-মেয়েই ধনী পরিবার থেকে এসেছে। মাদ্রাসা মানেই কিন্তু এতিম ছেলে- মেয়ে- এই ধারনা ঠিক নয়। সেই মাদ্রসায় আমার পরিচিত মিশু নামে একটা ছেলে থাকত। একদিন মিশু বলল- তাদের মাদ্রসায় অদ্ভুত একটা ব্যাপার এক মাস ধরে ঘটছে। অদ্ভুত ব্যাপারটি হলো- মাদ্রসার প্রতিটা ছেলে-মেয়ের দাঁত ব্রাশ করার পেষ্ট টিউব থেকে নাই হয়ে যায়। দিনের পর দিন একই ব্যাপার টিউব থেকে পেষ্ট উধাও হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান আমি তিন মিনিটে করে ছিলাম। মাদ্রাসার এক হুজুর প্রতিদিন রাতে বেসিনে গিয়ে টিউব থেকে সব পেষ্ট বের করে ফেল দিত। আমি মাদ্রাসার হুজুর কে জিজ্ঞেস করলাম-আপনি এই কাজ কেন করেন? হুজুর লজ্জায় মাথা নত করে বললেন- পেষ্ট টিপ দিয়ে বের করতে অনেক ভালো লাগে। অনেক আনন্দ পাই। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে বাচ্চা মেয়েটি আমার সাথে আছে। মেয়েটিকে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে নিয়ে গিয়ে পিজা আর কোক কিনে দিলাম এবং আমার জন্য নিলাম কফি। কফি'তে চুমুক দেওয়ার আগে, আমি বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেলাম এবং আবিস্কার করলা- মেয়েটি অন্ধ এবং বোবা। ইচ্ছা করলো মেয়েটিকে কিছুক্ষন বুকে জড়িয়ে ধরি। আমার চোখ ভিজে উঠলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, যেভাবেই হোক মেয়েটির বাবা-মাকে খুঁজে বের করব'ই। আমি ইচ্ছা করলে মেয়েটিকে থানায় দিয়ে আসতে পারি- পুলিশ যা করার করবে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়- আমার মন বলছে- মেয়েটির বাবা-মাকে আমি অবশ্যই খুঁজে বের করতে পারব। বুদ্ধিমান একটা ছেলের জন্য এটা খুব কঠিন কিছু না। আরও সহজ হতো যদি মেয়েটা কথা বলতে পারত। ভাবতে কষ্ট লাগছে- বাচ্চা একটা মেয়ে চোখে দেখতে পায় না- কথা বলতে পারে না। যদি কোনো কারনে বাচ্চার বাবা-মাকে খুঁজে বা বের করতে পারি- তাহলে বাচ্চাটিকে হিমির কাছে দিয়ে আসব। কি মনে করে হঠাত চলে এলাম ধানমন্ডি লেক। সময় মধ্যদুপুর। আমি বাচ্চা মেয়েটিকে বললাম- তুমি ভেব না- সন্ধ্যার মধ্যে তোমার বাবা-মাকে পেয়ে যাবো। বাচ্চাটাকে খুশি করার জন্য মিথ্যা আশ্বাস দিতে হলো। বাচ্চাটা এখন আমার কোলে মাথা রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। গল্প বলছি- একটা রাজকন্যা ছিল। রাজকন্যার নাম ছিল- সুকন্যা। সুকন্যার মাথায় ছিল এক আকাশ চুল। চোখ দু'টা বড় বড়। সব সময় সুকন্যা চোখে মোটা করে কাজল দিত। আর হাতে পড়তো- কাঁচের চুড়ি। সুকন্যার একদিন অনেক জ্বর হয়। জ্বরের ঘোরে সুকন্যা স্বপ্ন দেখল- একটা কালো রঙের হিংস্র পশু তার বাবাকে তারা করেছে। চিৎকার দিয়ে সুকন্যার ঘুম ভাঙ্গল। এদিকে সুকন্যার বাবা গেছে শিকার করতে। আর মা গিয়েছে শপিং এ । ...সন্ধ্যা হবো হবো করছে। মেয়েটির ঘুম ভাঙ্গল। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো- এখন আমাদের বসুন্ধরা মার্কেটে যাওয়া উচিত।কেন জানি মন বলছে- বসুন্ধরা মার্কেটে গেলেই মেয়েটির বাবা-মাকে পাওয়া যাবে। একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম বসুন্ধরা মার্কেটে। বাচ্চা মেয়েটি আমার কোলে। ঘুম থেকে উঠার পরই মেয়েটি মুখ মলিন করে রেখেছে। বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে একটা জটলা। আমি মেয়েটিকে জটলার সামনে নিয়ে যেতেই শুনতে পাই- এক ভদ্রমহিলা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। তার বাচ্চা মেয়েটি এই মার্কেটের সামনে থেকে সকালবেলা হারিয়ে গেছে। ভিড় সরিয়ে সামনে গিয়ে দেখি- একটা ভদ্রলোকের কোলের উপর মাথা রেখে এক ভদ্রমহিলা খুব কাঁদছে। আমি তাদের দেখেই বুঝতে পারলাম- তাদের মেয়েটি সকাল থেকে আমার সাথেই আছে। আমি ভদ্র মহিলার কাছে গিয়ে বললাম- এই নিন আপনার মেয়েকে। ভদ্রমহিলা এবং লোকটি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল। তাদেরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি চলে এলাম রাস্তার এপারে চায়ের দোকানেসন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে। আমি চা শেষ করে সিগারেট ধরানোর আগেই দেখি- মেয়েটির বাবা-মা আমার সামনে । মেয়েটির বাবা বলল- আমার নাম শামছুর রহমান।আমি বাংলাদেশ বিমানের পাইলট। আমার মেয়ের নাম রেবতি। একটা একসিডেন্টের পর রেবতি কথা বলতে পারে না এবং চোখেও দেখতে পায় না। আগামীকাল আমরা সিঙ্গাপুর যাচ্ছি- রেবতির চিকিৎসার জন্য। সকালে কিভাবে যেন রেবতি হারিয়ে যায়। আপনি আমাদের ফেরেশতার মতন এসে আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিলেন। আমরা কি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি ? আমার অনুমতির অপেক্ষা না করে মেয়েটির বাবা মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। কেন জানি মানুষের স্বচ্ছ পবিত্র চোখের পানি দেখলে- আমার চোখ ভিজে উঠে। রেবতি আমাদের তিনজনের চোখের জল মুছে দিল। আমি রেবতির কপালে ছোট একটা চুমু দিলাম। রাতে বাসায় ফিরে- গোছল শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে ব্যলকনিতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই আমার মনে পড়ল- রেবতি হচ্ছে আকাশের একটা তারার নাম। যে তারাটা খুব বেশী জ্বল জ্বল করে জ্বলে। যখন খুব কষ্ট কষ্ট হয়- তখন হিমিকে ফোন দেই। কবিতা আবৃত্তি করে শুনাই, তাতে আমার কষ্ট কমতে থাকে। নাকি হিমি সব কষ্ট নিয়ে নেয় ?"তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিনআজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকেগেছে।আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলেআজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতেদিচ্ছে না।তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলেআজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছেসারাদিন।এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাওযে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজকত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরাআমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমিকী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি! "
false
mk
টাকায় কিনা হয় ! হিউম্যান রাইটসেরও বিবৃতি মেলে!!! মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারী নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ।এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, রোববার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে জানান তুরিন।হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে শনিবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি এ কথা জানান।সংস্থাটির এমন বিবৃতি কতটা যৌক্তিক জানতে চাইলে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ আরও বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এমন বিবৃতি ভিত্তিহীন, মনগড়া। এ বিবৃতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে সংস্থাটি আন্তর্জাতিক আইনের শিষ্টাচ‍ারও লঙ্ঘন করেছে। বিচারিক কোনো বিষয় তো নয়ই, রায় নিয়ে কোনো সংস্থা বা কারও প্রশ্ন তোলারই সুযোগ নেই।তাই এ বিষয়ে সংস্থাটির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।বিবৃতিতে যে পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তার ভিত্তি কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তুরিন আফরোজ বলেন, ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত করতেই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এসব প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এসব তথ্য সংস্থাটি কোথায় পেয়েছে? কার কাছ থেকে পেয়েছে? বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করেছে?তুরিন আফরোজ মনে করেন, আসামিপক্ষের লবিংয়ের সূত্র ধরেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এমন বিবৃতি প্রকাশ করেছে।একই বিষয়ে প্রসিকিউটর অ্যাডেভোকেট রানা দাশ গুপ্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোনো মামলা আইনসঙ্গত হয়েছে কি হয়নি, সে বিষয়টি বিবেচনার জন্য রায়ের পর মামলাটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।আর বিচারাধীন মামলার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপের শামিল।তিনি বলেন, বিবৃতিতে যে বক্তব্য বেরিয়ে এসেছে তাতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এ বিবৃতিটি কেবল পক্ষপাতদুষ্টই নয়, আমাদের বিচারিক নথিতে যা আছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত।তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর যাদের বিচার হয়েছে বা চলছে তাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছেন। এই লবিস্টরাই নানাজনকে দিয়ে কতগুলো বিভ্রান্তিকর বই প্রকাশ করিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বেশ কিছু সংবাদ প্রচার করেও বিচার ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।রানা দাশগুপ্ত মনে করেন, লবিস্টদের অর্থানুকূল্য হয়েই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও আদালত অবমাননাকর বিবৃতি দিয়েছে।গোলাম আযমের মামলার রায়ের পর উভয় পক্ষই যেহেতু আপিল করেছে, তাই এ বিষয়ে সম্ভবত ট্রাইব্যুনালের কিছু করার নেই বলে মনে করেন তিনি।তাই অবকাশকালীন ছুটির পর রাষ্ট্রপক্ষ বিষয়টি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলেও আশা করেন তিনি।তাছাড়া সাপ্তাহিক বন্ধের পর ট্রাইব্যুনালে নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সম্মিলিতভাবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও জানান এ আইনজীবী।রানা দাশগুপ্ত আরও জানান, নলেজ অব কমনসেন্সের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল স্বপ্রণোদিতভাবে কোনো মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারবে। আইনেই ট্রাইব্যুনালকে সে অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া গোলাম আযমের মামলা সংক্রান্ত এমন কিছু নেই, যা রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে প্রদান করেনি।উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক বিবৃতি প্রচার করে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।গত শুক্রবার এইচআরডব্লিউ’র বিবৃতিতে বিচার প্রক্রিয়ায় পাঁচটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়।এইচআরডব্লিউর দৃষ্টিতে বিচার প্রক্রিয়ায় পাঁচটি ত্রুটির মধ্যে রয়েছে, বিচারকরা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে তদন্ত করেছে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে গোপন সহযোগিতা ও পক্ষপাতিত্ব, আসামিপক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তায় ব্যর্থতা, বিচারক প্যানেলে পরিবর্তন এবং সন্দেহাতীতভাবে দোষ প্রমাণ করতে তথ্যপ্রমাণাদির অভাব এবং সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে বিচারকদের তদন্ত করা।বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক প্রধানের বিচারে গুরুতর ত্রুটি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মান রক্ষা করা হয়নি।
false
mk
মোশরেফা মিশুরা চক্রান্তকারী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে অনেকেই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন। সম্প্রতি তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের অনশন ও গার্মেন্টে অনির্দিষ্টকালে ধর্মঘট আহ্বান করায় ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আবার সামনে চলে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনই একটি নমুনা হলো জার্মান সাংবাদিক থমাসের সঙ্গে গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি মোশরেফা মিশুর ফোনালাপ।গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি মোশরেফা মিশু জার্মান সাংবাদিক থমাসকে বলেন, মানুষ ঐক্যবদ্ধ। গোটা জাতি সরকার ও বিজিএমইএকে ঘৃণা জানাচ্ছে। জার্মানি থেকে থমাস নামে একজন সাংবাদিক তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এমন মন্তব্য করেন। থমাসকে মিশু বলেন, ৯ দিন ধরে ১ হাজার ৬০০ শ্রমিক নিয়ে তারা অনশন করছেন এবং অনশন করতে তারা বাধ্য হয়েছেন কারণ মালিক তিন মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দেয়নি। শ্রমিকরা ক্ষুধার্ত। এই শ্রমিকরা বিশ্বকাপে জার্মানির জন্যও জার্সি বানিয়েছে_ এমন তথ্য দিয়ে মিশু থমাসকে অনুরোধ করেন যে শ্রমিকদের এই দুর্দশা তিনি যেন সংবাদপত্রের মাধ্যমে ইউরোপ ও আমেরিকার জনগণের কাছে তুলে ধরেন।বৃহস্পতিবার 'তৈরি পোশাক খাত ও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মোশরেফা মিশুর ষড়যন্ত্র' শীর্ষক একটি ফোনালাপ ইউটিউবে আপলোড করা হয়। আর থমাসের সঙ্গে মিশুর এই কথোপকথন আগের দিন বুধবারের। 'লাল সালাম' দিয়ে থমাস মিশুর সঙ্গে কথোপকথন শেষ করেন।ফোনালাপের শুরুতেই মিশু বলেন, আমরা অনশনে আছি। তখন থমাস জানতে চান, কতজন শ্রমিক অনশন করছেন? মিশু বলেন, ১ হাজার ৬০০ শ্রমিক। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ নারী শ্রমিক আর ৩০০ পুরুষ শ্রমিক। তারপর মিশু বলেন, বেতন-বোনাসের দাবিতে শ্রমিকরা অনশন করছে। আমাদের লেবার অর্গানাইজেশন তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের নাম তোবা গ্রুপ। তাজরীন ফ্যাশনসের মালিকও এরাই। সব বাম রাজনৈতিক দল, বাম ছাত্র সংগঠন, বাম ধারার প্রগতিশল সব মানুষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের অনশনে সংহতি জানিয়েছেন। তারা আসছেন এবং সংহতি জানিয়ে যাচ্ছেন। আমরা একটা জোট করেছি যার নাম দেয়া হয়েছে তোবা গ্রুপ ওয়ার্কার অ্যাকশন কমিটি। নারী সংগঠনগুলো, বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল এমনকি জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং খুশি কবিরও আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। মানুষ ঐক্যবদ্ধ এবং গোটা জাতি সরকার ও বিজিএমইএকে ঘৃণা জানাচ্ছে। আজ ঢাবি শিক্ষকরা প্রতীক অনশন করেছেন।মিশু থমাসকে আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি। কারণ বেশিরভাগ সময় আমার প্রেসার খুব হাই থাকছে_ ১৭০/১২০। ২০৫ শ্রমিক এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। প্রথম দিন থেকেই আমরা মেডিকেল টিম তৈরি করেছি। দ্বারে দ্বারে ঘুরে আমরা ফান্ড জোগাড় করছি শ্রমিকদের জন্য। এসময় থমাস জানতে চান, অনশন কোথায় করছেন আপনারা? মিশু বলেন, ফ্যাক্টরি বিল্ডিংয়েই। এটা উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেট। ১২ তলা ভনের সপ্তম তলায় আমরা অনশন করছি। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সঙ্গে আপনারা আলোচনা করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মিশু বলেন, অনশনে যাওয়ার আগে আমরা তোবা গ্রুপ ও বিজিএমইএকে বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথায় কান দেয়নি। তাই ঈদের আগের দিন আমরা অনশনে যেতে বাধ্য হলাম। আমরা তাদের সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। তারপরও তারা বেতন-বোনাস দেয়নি। শ্রম মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ'র সঙ্গে আলোচনা করেছি।শ্রমিকরা ক্ষুধার্ত থাকলেও মালিকরা বিলাসিতা করেন_ এমন অভিযোগ জানিয়ে থমাসকে মিশু বলেন, মালিকরা ঈদে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে নিজেদের জন্য; কিন্তু শ্রমিকরা থাকে ক্ষুধার্ত।বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এসব শ্রমিক জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের জার্সি বানিয়েছে_ এমন তথ্য জানিয়ে মোশরেফা মিশু বলেন, এসব শ্রমিক বিশ্বকাপে জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার জার্সি বানিয়েছে। আপনি এ বিষয়টি জার্মান জনগণ, ইউরোপের জনগণ এবং বিশ্ববাসীকে জানান যে বিশ্বকাপে কোটি কোটি মানুষ আনন্দ পেয়েছে; কিন্তু আমাদের শ্রমিকরা বেতন পায়নি। এটা খুবই হৃদয়বিদারক। খুবই মর্মান্তিক। খুবই বর্বর।থমাস এসময় তোবা গ্রুপের সঙ্গে ব্যবসা করা জার্মান কোম্পানির নাম জানতে চাইলে মিশু নোটবুক দেখে বলতে চান। তখন থমাস বলেন, ই-মেইল করে আমাকে জার্মান কোম্পানির নামটা দিও। এসময় মিশু বলেন, প্লিজ আপনার ই-মেইল আইডি সেন্ড করুন। আমি আপনাকে জার্মান কোম্পানিটির নাম দেব। আপনার সেলফোন নাম্বারটাও দেবেন। তারপর মিশু আবার অনুরোধ করে থমাসকে বলেন, প্লিজ ইউরোপে নিউজটা জানিয়ে দিন, আমেরিকাতেও। আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। তিনি থমাসকে বলেন, যতই বলা হোক শ্রমিকরা ভালো আছেন, এটা কিন্তু বোগাস কথা। আমাদের শ্রমিকরা খুবই কষ্টে আছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আমাদের সঙ্গে সংহতি জানাতে এলেও একজন শিল্প মালিকও আমাদের সঙ্গে সংহতি জানাতে আসেননি।সবশেষে থমাস মিশুকে বলেন, আমার ই-মেইল আইডি এবং সেলফোন নাম্বার আপনাকে এসএমস করব। লাল সালাম। প্রত্যুত্তরে মিশুও 'লাল সালাম' দিয়ে ফোন রেখে দেন।
false
rn
আসুন মিয়ানমার দেশটি সম্পর্কে জানি প্রাচীন নাম ব্রহ্মদেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র মিয়ানমার। মিয়ানমার নামটি এসেছে ম্রনমা নাম থেকে। রাজধানী ইয়াঙ্গুন। বার্মার গণতান্ত্রিক সরকারের উৎখাতের পর সেখানকার সামরিক সরকার বার্মার নতুন নামকরণ করে "মায়ানমার"। মিয়ানমারের মোট আয়তন ৬৭৬,৫৫২ বর্গকিলোমিটার। মায়ানমারের পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এবং ভারতের মিজোরাম, উত্তর-পশ্চিমে ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুর অবস্থিত। মিয়ানমার বাংলাদেশের এতো কাছের প্রতিবেশী হলেও বাংলাদেশ তাকে নিয়ে মাথা ঘামায়নি। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তা চোরাচালানের মধ্যেই স্থির ছিল ও বর্তমানেও আছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী বহুলভাবে টেকনাফে এবং বিচ্ছিন্নভাবে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রাপ্য। মিয়ানমারের লুঙ্গি, স্যান্ডেল, ফ্লাস্ক এবং অন্যান্য দ্রব্য দামে সস্তা ও টেকসই হওয়ার কারণে এ দেশে বেশ স্থায়িত্ব পেয়েছে, সঙ্গে জনপ্রিয়তাও।১৩ শতকের দিকে মায়ানমারে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন রাজ্য সৃস্টি হয়। এদরে মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: আভা, আরাকান, হানথাবতী প্রভৃতি। ১৮শ শতকে ব্রিটিশরা বার্মা দখল করে নেয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৬২ সালে দেশটিতে প্রথম সামরিক সরকার ক্ষমতায় অসীন হয়। বর্তমানে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অনুপ কুমার চাকমা। নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন(পুর্বের নাম আরাকান)রাজ্যের একটি জেলা শহরের নাম মংডু।পাঁচ লক্ষাধিক জনসংখ্যার মধ্যে ৭৫% মুসলিম, বাকিরা বৌদ্ধ ধর্মামবলী মগ জাতির বসবাস।মংডু প্রকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি নাহলেও শাল-শেগুন-চন্দন গাছের অত্যন্ত সুন্দর বাগান ঘেড়া শহর, অত্যন্য আকর্ষনীয় স্থান। মিয়ানমারের মানুষ মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। হাজার হাজার বুদ্ধ মূর্তির দেশ। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পাহাড়াঞ্চলে চাকমাসহ অনেক সংখ্যালঘু জাতির আদিবাস এ মিয়ানমার। মূল্যবান সেগুন ও বিষুবীয় গাছপালায় ভরা বন মায়ানমারের শতকরা ৪৯ ভাগের বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে। বর্মী ভাষা মিয়ানমারের সরকারী ভাষা। বর্মী ভাষাতে মিয়ানমারের প্রায় ৬০% লোক কথা বলেন। এছাড়াও মিয়ানমারে স্থানীয় আরও প্রায় ১০০টি ভাষা প্রচলিত। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের ফাটল ধরে ২০০৮ সালের নভেম্বরে| এ সময় মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধজাহাজের প্রহরায় বিতর্কিত সমুদ্রসীমায় তেল অনুসন্ধানের কাজ চালায় বিদেশি সংস্থা। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরও বিতর্কের সমাধান হয়নি। মিয়ানমারের দাবি ছিল, বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমা বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট হয়নি এবং বাংলাদেশ যে অঞ্চল দাবি করছে, মূলত তা বিতর্কিত সমুদ্র অঞ্চল। পরে বাংলাদেশ দুটি নেভি জাহাজ পাঠানোর পর মিয়ানমার যুদ্ধজাহাজ নিজেদের অঞ্চলে চলে যায়। সম্ভবত আলোচ্য সময়ে চীনের হস্তক্ষেপে মিয়ানমার পশ্চাৎপসরণ করে। এ ঘটনার পর ভারতের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের দাবিকৃত সমুদ্রসীমা বিতর্কিত বলে দাবি করা হয়। বাংলাদেশ দুদেশের সঙ্গে আলোচনা করার পরও মিয়ানমার ও ভারত নিজেদের দাবি থেকে সরে আসেনি। মিয়ানমার কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি লোক কৃষিকাজ করে। দেশটির উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে পাহাড় আর পাহাড়। দেশটির গড় তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মিয়ানমারে প্রায় ৫০ বছর ধরে সামরিক শাসন চলে। ২০০১ সালে প্রথম বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৮৯ সালে দেশটির জান্তা সরকার ‘বার্মা’ নামটি পরিবর্তন করে সরকারিভাবে ‘মিয়ানমার’ নামকরণ করে। পিউ নামের উপজাতিরা ১ম শতকে বার্মা এলাকাতে দক্ষিণ দিকের ইরবতী ভ্যালি দিয়ে প্রবেশ করে। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে পিউদের আগমন ঘটে। মিয়ানমারের অভ্যন্তর ভাগে কেন্দ্রীয় নিুভূমিগুলো মূলত সরু ও দীর্ঘ। সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম ভিক্টোরিয়া। ১৮২৮ সালে বার্মা ইংরেজদের শাসনে চলে যায়। তবে ১৯৩৭ সালে বার্মা স্বায়ত্তশাসন লাভের পর বৌদ্ধদের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং তারা প্রায় ৩০ লাখ মুসলিম হত্যা করে।চীন হলো মহাযান বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমে প্রভাবিত। কিন্তু মিয়ানমার হলো থেরাবাদী বা হীনযান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ধর্মের দিক থেকে একটি পুরনো হিসাব অনুসারে মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ হলেন থেরাবাদী বৌদ্ধ। পাঁচ শতাংশ হলেন প্রেতাত্মার পূজারি (Animists), চার শতাংশ হলেন মুসলমান, চার শতাংশ হিন্দু আর তিন শতাংশ হলেন খ্রিষ্টান। মিয়ানমারে যে কেবল ধর্ম নিয়ে বিরোধ আছে, তা নয় ; ভাষাগত জাতিসত্তা নিয়েও আছে বিশেষ বিরোধ। মিয়ানমারে কখনো ইসলাম প্রচার হয়নি, যেমন হতে পেরেছে ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের সাথে লাগোয়া দেশ মালয়েশিয়ায়। মিয়ানমারের মুসলমানেরা হলো ব্রিটিশ শাসনামলে ভারত থেকে যাওয়া। মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ হামলার কথা নিয়ে প্রচ্ছদ কাহিনী লেখা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক Time পত্রিকায় (১ জুলাই ২০১৩ সংখ্যায়)। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কোনো নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকি সব ধরনের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। আমাদের স্বার্থেই মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা প্রয়োজন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তা বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়ে নয়।
false
mk
আসল কাদের যখন নকল হতে চায়___রাজনীতি কারে কয়__ যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট অর্জন, বলাই বাহুল্য। এবারের বিজয় দিবস এবং সেই সঙ্গে নতুন বছরের আগমনটাই যেন ভিন্নমাত্রায় পৌঁছে গেছে এই অর্জনের ফলে। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের বিচারের যে আকাঙ্ক্ষা একটা সময় আমাদের রক্তে শিহরণ তুলত, একটা অপ্রাপ্তির বেদনা গ্রাস করে ফেলত বছর খানেক আগেও, সেটা থেকে যেন আমরা মুক্তি পেয়েছি।অন্তত একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি নানা ধরনের বিতর্ক, প্রতিবন্ধকতা, বিশ্বমোড়লদের তরফ থেকে দেওয়া আন্তর্জাতিক চাপ সবকিছু অগ্রাহ্য করে। এটা যে কত বড় অর্জন তা বোধহয় আমরা কেউ বুঝতে পারছি না। এই দিনটা দেখার স্বপ্ন আমরা বুকের মধ্যে লালন করেছিলাম বহুদিন ধরে।কিন্তু আমরা কী দেখলাম? কাদের মোল্লার ফাঁসির পর বাংলাদেশের আপামর জনগণ যখন আনন্দোচ্ছ্বাস করছে, ঠিক তখনই এক মুখচেনা মহল সারা দেশে শুরু করেছিল সহিংসতা আর নৈরাজ্যের বিস্তার। জ্বালাও-পোড়াও, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর আক্রমণ, বিচারকদের বাসায় বোমাবাজি সবই শুরু হল পুরোদমে। পাশাপাশি আরেকটা কাজও জামাতিদের তরফ থেকে করার প্রচেষ্টা চালানো হল– যেটা তারা সবসময়ই করে থাকে– বিভ্রান্তি ছড়ানো।সত্য যখন উন্মোচিত আর দিনের আলোর মতো উদ্ভাসিত, বিভ্রান্তি আর মিথ্যে প্রচারণা– এটাই বোধহয় একমাত্র অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় তখন। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর চাঁদে সাঈদীর মুখচ্ছবি দেখা নিয়ে কী প্রচারণাটাই না চালানো হয়েছিল। অথচ পুরোটাই ছিল ফটোশপে এডিট করা খুব কাঁচা হাতের কাজ। যারা নিজেদের ধর্মের একনিষ্ঠ সেবক মনে করেন, তাদের সাচ্চা সৈনিকেরা এভাবে ফটোশপে ছবি এডিট করে যাচ্ছেতাই প্রচারণা চালায়-– ভাবতেও হয়তো অনেকের অবাক লাগবে।কিন্তু যারা এই গোত্রটির কাজকর্মের নাড়ি-নক্ষত্রের হদিস জানেন, তারা অবাক হন না। শাহবাগ আন্দোলন শুরুর সময় একে কলঙ্কিত করতে নানা ধরনের রগরগে ছবি জোড়াতালি দিয়ে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল-– ‘প্রজন্ম চত্বর’ নাকি আসলে ‘প্রজনন চত্বর’। ওখানে নাকি রাত্রিবেলা গাঁজা খাওয়া হয়, ফ্রি সেক্স হয়, তরুণীরা সেখানে গেলেই ধর্ষিত হতে হয়, আরও কত কী।কী না করেছিল তারা! মুম্বাই মেডিকেলের স্ক্যান্ডালের ছবির সঙ্গে ইমরান এইচ সরকারের চেহারা জোড়া দেওয়া, শাহবাগের জমায়েতে নাইট ক্লাবের নগ্নবক্ষা নারীর ছবি কাট অ্যান্ড পেস্ট করে লাগিয়ে দিয়ে ফেসবুকে ছড়ানো, নামাজরত এক পাকিস্তানি পুলিশকে শিবিরের কর্মী হিসেবে চালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতীকী রশি নিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি সম্বলিত ছবির শিরোনাম বদলে ‘ফাঁসির অভিনয় করতে গিয়ে শাহবাগে যুবক প্রাণ হারাল’ টাইপ মিথ্যে নিউজ তৈরি করা-– কোনো কিছুই বাদ যায়নি।মুক্তমনা ব্লগে আমাদের সতীর্থ দিগন্ত বাহার ‘কথিত ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামীর মিথ্যাচার সমগ্র’ শিরোনামের পোস্টে খুলে দিয়েছিলেন তাদের মিথ্যের মুখোশ; লিঙ্কটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া গেল:http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=33825কাদের মোল্লার ফাঁসির পরেও নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হবে তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। ফাঁসির আগে থেকেই কাদেরের তথাকথিত ‘অ্যালিবাই’ উপজীব্য করে ছড়ানো হয়েছিল মিথ্যে। কাদের ট্রাইব্যুনালকে বলেছিল:“আজ এই কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালে মিরপুরে কসাই কাদের কর্তৃক যেইসব হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল তার একটি অপরাধের সঙ্গেও আমার দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। কাদের মোল্লা বলেন, আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমি ১৯৭৩ সালের আগে কোনোদিন মিরপুরেই যাইনি।”এই অ্যালিবাইকেই সত্য ধরে নিয়ে অনেকে জল ঘোলা করছেন। কিন্তু এটাই কি স্বাভাবিক নয় যে কাদের মোল্লার মতো এত বড় একটা পাষণ্ড এবং ঠাণ্ডা মাথার খুনি এ ধরনের অ্যালিবাই হাজির করেই নিজেকে আত্মরক্ষা করতে চাইবে? তার তো এটাই বলার কথা যে ঘটনার সময় সে ঘটনাস্থলে ছিল না।এ নিয়ে সম্প্রতি ব্লগার নিঝুম মজুমদার কিছু গবেষণা করেছেন। মুক্তমনায় প্রকাশিত তার দি কিউরিয়াস কেইস অব কাদের মোল্লা এবং সাক্ষী মোমেনা শিরোনামের লেখাটি থেকে জানা যায়, এই কাদের মোল্লার একসময়ের সবচাইতে বড় ইয়ার দোস্ত ‘আক্তার গুণ্ডা’ ছিল কাদের মোল্লার মতোই এক ভয়াবহ খুনি। কাদের মোল্লা এই আক্তার গুণ্ডার সঙ্গে মিলেই মূলত ১৯৭১ সালে মিরপুরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।১৯৭২ সালের দালাল আইনে এই আক্তার গুণ্ডার বিচার হয় এবং বিচারে তার ফাঁসিও হয়। মজার ব্যাপার হল, এই আক্তার গুণ্ডাও আজ থেকে ৪০ বছর আগে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে সেই একই ধরনের অ্যালিবাই হাজির করেছিল যে, সে ঘটনাস্থলে ছিল না, ছিল পাকিস্তানে। গণহত্যার সে কিছুই জানে না [‘আক্তার গুণ্ডা ভার্সেস বাংলাদেশ রায়’ দ্র:]। ( চলবে) [ বিডিনিউজ২৪.কম থেকে সংগৃহীত ]
false
ij
কম্বোডিয়ার গনহত্যা_ খেমার রুজ শাসনের এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। ছোট্ট এই মেয়েটিকেও খেমার রুজ গেরিলারা রেহাই দেয়নি। রুজ শব্দটা ফরাসী; অর্থ লাল। কাজেই খেমার রুজ শব্দের অর্থ: লাল খেমার। কম্বোডিয়ার ৯৫% লোকই খেমার জনগোষ্ঠীর। খেমার রুজ বলতে কম্বোডিয়ার কমিউনিষ্ট গেরিলাদের বোঝায়। কিন্তু, ফরাসী নামের কি কারণ? ১৮৬৩ থেকে ১৯৫৩ অবধি কম্বোডিয়া শাসন করেছিল ফ্রান্স । কাজেই, ফরাসী শাসনাধীন কম্বোডিয়ায় খেমার ভাষার পরই ফরাসী ভাষার স্থান। স্বাধীনতাউত্তর কম্বোডিয়ার প্রথম শাসক ছিলেন প্রিন্স নরোদম সিহানুক। তিনিই কম্বোডিয়ার কমিউনিষ্ট গেরিলাদের ঐ “লাল খেমার” নাম দিয়েছিলেন। ১৯৭৫। এপ্রিল মাস। সরকারী বাহিনীকে বিধস্ত করে লক্ষ লক্ষ খেমার রুজ গেরিলারা কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে প্রবেশ করে। সেই ষাটের দশক থেকেই কম্বোডিয়ার কমিউনিষ্ট গেরিলারা কম্বোডিয়ার শাসন ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে জোর তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল তারা সে লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়। খেমার রুজ গেরিলাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পলপট। খেমার রুজ গেরিলারা নমপেন দখল করার পলপট সরকার কম্বোডিয়ার নামকরণ করে “ডেমোক্রেটিক কাম্পূচিয়া”। তারপর নানাবিধ সংস্কারে নামে পলপট সরকার ভয়ঙ্কর এক হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়। যে গনহত্যা চলাকালীন সময়ে নমপেন শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মেকঙ নদীটার জল হয়ে উঠেছিল রক্তাক্ত। গনহত্যা কারণ? নমপেনবাসীর ওপর খেমার রুজ গেরিলাদের ছিল ভয়ঙ্কর ক্রোধ। খেমার রুজ গেরিলাদের চোখে নমপেনবাসী ছিল পাতি বুর্জোয়া: যারা সব সময় শস্তা ভোগ বিলাসে ডুবে থাকে, মদ খায়, নাইট ক্লাবে নাচে; যারা আমেরিকান কালচারে আসক্ত, খেতে পছন্দ করে বার্গার ও কোক; দেশের প্রতি যাদের বিন্দুমাত্র টান নাই, যারা বিপ্লবে যোগ দেয়নি, যারা সব সময় কেবল আমেরিকার যাওয়ার ধান্দায় থাকে, গ্রামে যেতে চায় না; গ্রামের মানুষের দারিদ্র নিয়ে ভাবে না, কোনওমতে পাশ করে একটা চাকরি পেলেই যারা খুশি। খেমার রুজ গেরিলারা নমপেনবাসীর নাম দিয়েছিল: “মেকঙ নদীর বেশ্যা।” কাজেই অস্ত্রের মুখে আমেরিকা-আসক্ত পাতি বুর্জোয়া নমপেনবাসীকে নিয়ে যাওয়া হল গ্রামের দিকে । হাঁটিয়ে। রাস্তার ওপর হাজার হাজার নারীপুরুষশিশুবৃদ্ধবৃদ্ধা হাঁটছে। এপ্রিল-মে মাসের কড়া রোদ। তৃষ্ণা। ক্ষুধা। বিলাসী জীবনযাপসের জন্য মুটিয়ে গিয়েছিল অনেকেই। হাঁপাতে-হাঁপাতে পথেই মরল অনেকেই । উৎকন্ঠিত তাদের চকচকে হলুদ মুখ। দু’পাশে কারবাইন উঁচিয়ে খেমার রুজ গেরিলারা। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই ঠা ঠা ঠা। মাঝে মাঝে একটা কালো ট্রাক এসে থামত রাস্তার পাশে। বেছে বেছে খেমার রুজ গেরিলার লোকজনকে তুলে দিত সেই ট্রাকে। তারপর ট্রাকটা চলে যেত কোনও নির্যাতন কেন্দ্র। হয়তো টুঅল স্লেঙ্গ-এ। টুঅল স্লেঙ্গ-এ বন্দিদের প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত । জিজ্ঞাসাবাদের সময় টর্চার। টুঅল স্লেঙ্গ থেকে মৃতপ্রায় বন্দিদের আবার ট্রাকে তোলা হত। ট্রাক একাব ছুটত চোয়েয়ুঙ্গ এক-এর দিকে। চোয়েয়ুঙ্গ এক ছিল খেমার রুজ গেরিলাদের অন্যতম বধ্যভূমি। ২ তখন বলছিলাম যে-খেমার রুজ গেরিলাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পলপট। পলপট ছদ্মনাম। ফ্রান্সে থাকাকালীন সময়ে নেওয়া। আসলে পলপট শব্দের কোনও নির্দিষ্ট মানে নেই। পলপটের আসল নাম- সালথ সার। জন্ম ১৯২৫ সালে কম্বোডিয়ার এক অভিজাত পরিবারে। পরিবারটি ছিল বৌদ্ধ। কাজেই সালথ সারের ছেলেবেলায় শিক্ষার অন্যতম ভিতটি ছিল অহিংস বৌদ্ধ দর্শন ছিল । বালক সালথ সার পাঠ করেছিল ধর্মপদ থেকে বুদ্ধের বানী। Let go of anger. Let go of pride. When you are bound by nothing You go beyond sorrow. Anger is like a chariot careering wildly. He who curbs his anger is the true charioteer. Others merely hold the reins. With gentleness overcome anger. With generosity overcome meanness. With truth overcome deceit. Speak the truth. Give whenever you can, Never be angry. ভাবলে অবাক হতে হয়-পরে এই পলপটেরই নির্দেশেই লক্ষাধিক নিরীহ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সাল। রেডিও ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়তে ফ্রান্সে যায় সালথ সার। সেই সময়টায় গোটা ইউরোপ ছিল মাকর্সবাদ নিয়ে উত্তেজিত। সেই সময়ককার অধিকাংশ বুদ্ধিজীবি মনে করতেন: মাকর্সবাদ সর্ব প্রকার সামাজিক রোগের একমাত্র প্রতিষেধক। এমন কী সার্ত্রর মতন নিরাসক্ত মানুষও মাকর্সবাদের আকর্ষন এড়াতে পারেন নি। প্যারিসেই মাকর্সবাদে দীক্ষা সালথসারের। সম্ভবত সার্ত্রর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। কম্বোডিয়ায় তখন ফরাসী শাসন। সার্ত্র উপনিবেশগুলোয় ফরাসী শাসনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। পলপট কম্বোডিয়ায় ফেরেন ১৯৫৩ সালে। ফিরেই স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভিয়েতনামও লড়ছিল ঔপনেবেশিক ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। ভিয়েত কংদের সঙ্গে যোগাযোগ হল পলপটের। ১৯৫৩ সালেই ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিল কম্বোডিয়ার স্বাধীনতাকামী জনগন। নরোদম সিহানুক হলেন রাজা। স্বাধীনতার পরপরই পলপটসহ অন্যদের তৎপরতায় কমিউনিষ্ট আন্দোলন দানা বাঁধছিল কম্বোডিয়ায়- যে আন্দোলনের পিছনে ভিয়েতনামের শ্রমজীবি শ্রেনির অগ্রনায়ক হো চি মিন-এর প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল। প্রিন্স নরোদম সিহানুক ছিলেন প্রাচীনপন্থি। তিনি মাকর্সবাদ বুঝতেন না। বুদ্ধের দানশীলতায় আস্থা ছিল। তিনি নির্মম উপায়ে কমিউনিষ্ট দমন করতে লাগলেন বটে - তবুও পলপটের নেতৃত্বে ষাটের দশকে কমিউনিষ্ট আন্দোলন আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে থাকে কম্বোডিয়ায়। ভিয়েতনামের ভিয়েত কংরা তাকে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছিল। দুটি প্রতিবেশি দেশের অবস্থা তখন ভয়ানক জটিল। থেকে থেকে মার্কিন বিমান হামলা চলছিল ভিয়েতনামে; সীমান্ত পেরিয়ে এমন কী কম্বোডিয়াতেও বোমা বর্ষন করছিল মার্কিন বোমারু বিমানগুলি । কেননা, মার্কিন প্রশাসন ইন্দোচিনে কমিউনিষ্ট তৎপরাতার মূল শিকড় উপড়ে ফেলতে চায়! অবস্থা এমনই ভয়ানক। ১৯৬৭ সাল। পলপটের নেতৃত্বাধীন কম্বোডিও কমিউনিস্টরা একের পর এক সিহানুক নিয়ন্ত্রিত সরকারী বাহিনীকে আক্রমন করে করে পযুদর্স্ত করতে থাকে । প্রিন্স নরোদম সিহানুক ঠিক ঐ সময়টায় কম্বোডিয়ার কমিউনিষ্টদের নাম দিয়েছিলেন খেমার রুজ । অর্থাৎ, লাল খেমার। ১৯৭৫। ৮ বছর গেরিলা যুদ্ধের পর ট্যাঙ্ক বহর নিয়ে লক্ষ লক্ষ খেমার রুজ গেরিলারা নমপেন শহরে প্রবেশ করে। তারপর ১৯৭৯ সাল অবধি প্রায় ৩০ লক্ষ কম্বোডিয় জনগনের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯। এই সময়টায় পলপট সরকার কম্বোডিয়ায় শুদ্ধি অভিযানের নামে নারকীয় এক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এককালের সুহৃদ ভিয়েতনামের সঙ্গে পলপটের সর্ম্পকে ফাটল ধরেছিল। খেমারুজরা ভিয়েতনাম সীমান্তও আক্রমন করছিল। ভিয়েনাম নাকি কম্বোডিয়ার পূর্বাঞ্চলের সীমানা গ্রাস করে নিয়েছিল-এই অজুহাতে। আসলে সেই সময়টায়, ঐতিহাসিকদের মতে, পলপট সরকার ভুগছিল উগ্র জাতীয়তাবোধে। ১৯৭৮ সাল। ভিয়েতনামী সৈন্যরা কম্বোডিয়ায় অনুপ্রবেশ করে। অনুপ্রবেশের অবশ্য অন্য কারণও ছিল। পলপট সরকার কর্তৃক পরিচালিত অমানবিক গনহত্যা । অপ্রতিরোধ্য ভিয়েতনামী সৈন্যরা দ্রুত নমপেনের দিকে এগিয়ে আসছিল। ১৯৭৯। পলপটসহ খেমার রুজরা গেরিলারা থাই সীমান্তের পালিয়ে যায়। ভিয়েতনাম ছিল আমেরিকার শক্র। কাজেই, গনহত্যার অভিযোগ সত্ত্বেও আমেরিকা খেমার রুজ গেরিলাদের বিচার না-করে বরং সাহায্যই করেছিল। ৩ নমপেন শহরের একটি হাই স্কুল। নাম: টুঅল সাভি প্রেই। স্বাধীনতা উত্তর কম্বোডিয়ার প্রথম শাসক প্রিন্স নরোদম সিহানুক-এর নামে নাম। সাদা রং করা ৫টি দালান মিলে তিন তলা স্কুল। সামনে খেলার মাঠ । মাঠের কিনারে কিনারে নারকেল গাছ। নারকেল গাছ গোড়ায় সাদা রং করা । রাস্তা থেকে দোতলার বারান্দা ও পিলার চোখে পড়ে। আজ ঐ স্কুলটাকে দেখে কে বলবে ঐ স্কুলেই চার বছর ধরে প্রায় ২০,০০০ মানুষকে বন্দি করে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিল। ১৯৭৫। আগস্ট মাস। পলপট সরকার সিদ্ধান্ত নিল টুঅল সাভি প্রেই স্কুলটাকে নির্যাতন কেন্দ্র করে তুলবে। স্কুলটার বাউন্ডারি কাঁটাতারে ঘিরে ফেলা হয়। প্রবাহিত করা হল বিদ্যুৎ। নাম দিল Security Prison 21 (S-21) Tuol Sleng ও বলা হল। Tuol Sleng শব্দটি খেমার। মানে, "বিষাক্ত বৃক্ষের পাহাড়।" স্কুলটার ক্লাসরুমগুলিই হয়ে ওঠে প্রিজন সেল আর টর্চার চেম্বার। কখনও ১০০০ থেকে ১৫০০ বন্দি থাকত টুঅল স্লেঙ্গ-এ। অনেকেই নির্যাতন সইতে পারত না। মরে যেত। যারা বেঁচে থাকত-তাদের পাঠানো হত চোয়েয়ুঙ্গ এক নামে বধ্যভূমিতে। নমপেনের ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে চোয়েয়ুঙ্গ এক। ১৯৭৫ সালের আগে চোয়েয়ুঙ্গ এক ছিল ফাঁকা মাঠ। মাঠে নানা রকম গাছ। একপাশে চিনেদের কবরখানা। ১৯৭৫ সালের পর ঐ চোয়েয়ুঙ্গ এক-ই হয়ে উঠেছিল খেমার রুজদের বধ্যভূমি। প্রায় ২০, ০০০ মানুষকে ওখানে মেরে ফেলা হয়েছিল। একটি ১৯৮০ সালের পর ওখানকার একটি গনকবরে প্রায় সাড়ে আট হাজার মৃতদেহ পাওয়া গেছিল। মৃত্যুর আগে প্রায় সবাই টুঅল স্লেঙ্গ এ ছিল। বন্দিরা প্রথমে মাঠের ওপর একটা গর্ত খুঁড়ত। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে বন্দিদের গর্তের পাশে দাঁড়াতে বলত খেমার রুজরা। হত্যাযজ্ঞের সময় পলপট সরকার বুলেট খরচ করত না। যে কারণে, খেমার রুজদের হাতে থাকত রড, কখনও - কখনও কোদাল নিড়ানির মতো ভোঁতাও ব্যবহার করত তারা । খেমার রুজরা বন্দিদের পিটিয়ে পিটিয়ে মারত। গাছের গুঁড়িতে আছড়ে মারত শিশুদের । আশির দশকে একটি বৌদ্ধ স্তুপ নির্মান করা হয়েছে চোয়েয়ুঙ্গ এক-এ। সাদা রঙের ছোট্ট একটা বাড়ি। চারিদিকে কাচে ঘেরা। বাইরে থেকে দেখা যায় ভিতরে কী আছে। ভিতরের পরপর কয়েকটা প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মের ওপর খুলির পাহাড়। সর্বমোট ৫০০০ খুলি রয়েছে! নানা বয়েসী মানুষের খুলি। নারীর, পুরুষের, শিশুর। বেশির ভাগ খুলিতেই ফাটল। আঘাতের চিহ্ণ ... মানুষের এমন অসহায় মৃত্যু! যে মৃত্যু খেমার রুজ পলপট সরকারের ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা। পলপট সরকার যে কোনও সন্দেহভাজনকে প্রথমে দু-বার সতর্কবানী পাঠাত । তারপর তাদের আসতে বলা হত কোনও গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলত- দোষ স্বীকার কর। তা হলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। বল তুমি বিদেশিদের চেন, তুমি কি আমেরিকানদের চেন?। বল। বল, নইলে তোমার স্লেট ক্লিন করে দেব। তার মানে এখন তুমি প্রথমে যাবে টুঅল স্লেঙ্গ। সেখানে তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সামান্য উত্তম মধ্যম দেওয়া হবে। পরে তোমাকে পাঠানো হবে চোয়েয়ুঙ্গ এক। মেরে ফেলার জন্য। তোমার মাথায় মোটা শক্ত কাঠ দিয়ে আঘাত করা হবে। ভবিষ্যতের মানুষ দেখবে তোমার মাথায় ফাটল, আঘাতের চিহ্ন ... মানুষের এমন অসহায় মৃত্যু! টুঅল স্লেঙ্গ-এ সন্দেহভাজন বন্দিদের ২ থেকে ৩ মাস রাখা হত। গভীর সন্দেজভাজনদের আরও বেশি। টুঅল স্লেঙ্গ এ প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারা হত, দেওয়া হত ইলেকট্রিক শক; লোহার তার গরম করে ঢোকানো হত শরীরের নানা জায়গায়। সিলিং থেকে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখত- নিচে ড্রাম ভরতি পানি, পানিতে বন্দির মুখ। একজন দড়ি ধরে টানছে। বন্দির মুখ ড্রামের পানিতে ডুবছে, ভাসছে। কখনও মাথায় প্লাস্টিকের ব্যাগ ভরে মানুষটার নিঃশ্বাস আটকে রাখা হত। কিংবা ধারালো ছোরা দিয়ে ফালি ফালি করে কাটা হত অঙ্গপ্রতঙ্গ; তুলে ফেলা হত নখ । নখের ক্ষতে ঢালা হত অ্যালকোলহল। বন্দির মাথা পানির তলে চুবিয়ে রাখা হত। অনেকক্ষণ। মেয়েদের করা হত ধর্ষন। সবশেষে মেরে ফেলার জন্য পাঠানো হত চোয়েয়ুঙ্গ এক। আগেই বলেছি- চোয়েয়ুঙ্গ এক রয়েছে খুলিতে ভরা একটি সাদা রঙের কাচের বাড়ি। বৌদ্ধ স্তুপ। নানাদেশ থেকে লোকে যায় ওই সাদা রঙের বাড়িতে । নানা বয়েসী মানুষের খুলি। নারীর, পুরুষের, শিশুর। বেশির ভাগ খুলিতেই ফাটল। আঘাতের চিহ্ণ ... খেমার রুজ দের বর্বরতা দেখে শিউরে ওঠে তারা। টুঅল স্লেঙ্গও এখন গনহত্যা যাদুঘর। নানাদেশ থেকে লোকে যায় ওখানে। খেমার রুজ দের বর্বরতা দেখে শিউরে ওঠে। ৪ ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯। অসংখ্য নির্যাতনকেন্দ্র ও বধ্যভূমি গড়ে উঠেছিল কম্বোডিয়া জুড়ে। প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার লোককে মেরে ফেলা হত। ১৯৭৫ সালে কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা ছিল ৭০ লক্ষ। যার মধ্যে ৩০ লক্ষই নিহত হয়েছিল খেমার রুজ গেরিলাদের পরিচালিত নির্মম গনহত্যায়। খেমারদের পরিবার সাধারনত বড় হয়। একেকটা পরিবারের লোকসংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ জনের কম না। ওদের অস্ত্রের মুখে কোনও নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হত। কাপড় দিয়ে চোখ বাধা হত, হাত বাধা হত। তারপর রড দিয়ে আঘাত করে করে ৭০ ৮০ জনকেই মেরে ফেলা হত। অনেক খুনিরাই ছিল কিশোর। খেমার রুজরা এদের ডাবের পানিতে রক্ত মিশিয়ে খাইয়ে খুনিতে পরিনত করেছিল কম্বোডিয়ায় ক্ষমতা দখলের পর। ৫ পলপট সরকার হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল কেন? কমিউনিষ্ট পলপট সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিল। নতুন এক সমাজ গড়তে চেয়েছিল খেমার রুজ গেরিলারা। গ্রামভিত্তিক, শ্রেণিহীন।ছেলেবেলায় কম্বোয়িায়ায় অপরিসীম দারিদ্র দেখেছিল পলপট। দেখেছিল ফরাসী শাসনশোষনের নির্মম ফল। বুদ্ধের মিঠে কথায় যে দারিদ্র দূর হয়নি টের পেয়েছিল। ইউরোপে গেলেন পলপট। মার্কসবাদ তখন নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দরিদ্র রাশিয়াকে বদলে দিচ্ছে সোভিয়েতরা । মাসর্কবাদী তত্ত্বমতে: সমাজের রুপ (form)আছে। একে সচেতন ভাবে বদলানো যায়। কাজেই পলপটের নির্দেশে অস্ত্রের মুখে পাতি বুর্জোয়া আমেরিকা-আসক্ত নমপেনবাসীকে নিয়ে গেল গ্রামের পথে। হাঁটিয়ে। দু’পাশে খেমার রুজ গেরিলারা কারবাইন উঁচিয়ে। সামান্য এদিক ওদিক হলেই ঠা ঠা ঠা। এপ্রিল-মে মাসের গরম। তৃষ্ণা। পথেই মরল অনেকে। মাঝে মাঝে একটা কালো ট্রাক এসে থামত। লোকজনকে তুলে নিত। তারপর ট্রাকটা থামত কোনও নির্যাতন কেন্দ্র। হয়তো টুঅল স্লেঙ্গ-এ। টুঅল স্লেঙ্গ থেকে চোয়েয়ুঙ্গ এক। ৬ অনেকের মতে বাংলাদেশেও সমাজকাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন। কথাটা অস্বীকার করব না। তবে সে উদ্যেগে একজন মানুষও যেন নিহত না হয়। সমাজকাঠামোর পরিবর্তন হতে হবে রক্তপাতহীন। আমাদের কম্বোডিয়ার স্বৈরাচারী পলপট শাসনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ষাট ও সত্তুরের দশকে মার্কিন আগ্রাসন ঠেকাতে ২০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিল ভিয়েতনাম । ভিয়েতনামী তরুনতরুণীরা সে ইতিহাস জানেই না।আজ তারা ঠিকই কোক খাচ্ছে, বার্গার খাচ্ছে, কিনছে আইপড ন্যানো। তাহলে কী লাভ হল ঐ ২০ লক্ষ মানুষের আত্মদানে? নেপালের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকেও আমাদের শেখার আছে অনেক কিছু । ৭ শেষমেশ কি হয়েছিল পলপটের? মনে থাকার কথা। ১৯৭৮ সাল। কম্বোডিয়ায় গনহত্যা ঠেকানোর জন্য ভিয়েতনামী কমিউনিস্টরা কম্বোডিয়ায় অনুপ্রবেশ করে। পলপটসহ খেমার রুজরা গেরিলারা থাই সীমান্তের দিকে পালিয়ে যায়। তবে, খেমার রুজ গেরিলাদের ওপর পলপট তার আধিপত্য দীর্ঘকাল বজায় রাখতে পারেনি। একদল খেমার রুজ গেরিলা বিদ্রোহ করে পলপটকে বন্দি করে। তার বিচার চলছিল। বিচার করছিল খেমার রুজরাই। বিচার চলাকালীন সময়ে থাইকম্বোডিয়া সীমান্তের কাছে গহীন অরণ্যে একটি কাঠের বাড়িতে। পলপট মারা যান ১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসে । পলপটের জীবনীকার লিখেছেন- মৃত্যুর সময় পলপটের নাকি তেমন মৃত্যুযন্ত্রনা হয়নি। ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছিলেন পলপট! পলপট প্রথম বিবাহ করেছিলেন ফ্রান্সে। ২য় একটি বিবাহ করেছিলেন নাকি মৃত্যুর ঠিক আগে । তথ্যসূত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Cambodia Chandler, David, and Rooney, Dawn F. "Cambodia." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. Tuol Sleng-এর বন্দিদের ছবি দেখতে চাইলে- http://www.tuolsleng.com/photographs.php সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:২৭
false
fe
ভাষার বিকিরণের দিকে তাকিয়ে ভাষার বিকিরণের দিকে তাকিয়েফকির ইলিয়াস=====================================বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যা এখন প্রায় পঁয়ত্রিশ কোটি। এই সংখ্যা বাড়ছে। আমার মনে পড়ছে, বাংলা ভাষার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেছিলেন- বাংলাদেশই এই বাংলা ভাষার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে। বাংলাদেশই বাংলা ভাষার প্রধান চারণভূমি। কথাগুলো বলছেন বাংলা ভাষাভাষী অনেক প্রাজ্ঞজন। অথচ এ বাংলাদেশেই এখন অনেকগুলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। অভিভাবকরা জানেন ও বোঝেন তাদের সন্তানদের বিশ্বমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে।ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখা যায় প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপির প্রচলন ছিল। এরও বহু পরে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ অব্দের প্রায় কাছাকাছি সময়ে সম্রাট অশোকের লিপি সৃষ্টি হয়েছিল। তারও পর কুনাল লিপি, গুপ্ত আমলে গুপ্ত লিপি, মৌর্য লিপি, আর্যলিপি, কুটিল লিপি ইত্যাদির সৃষ্টি হয়েছিল। এক হাজার খ্রিস্টাব্দের সময় নাগাদ প্রাচীন বাংলা লিপির সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক পরিবর্তনের পথ বেয়ে বাংলা লিপিরও সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাষার নিজস্ব বর্ণমালাও আছে। যেখানে বহু ভাষারই নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই, তারা অন্য ভাষার বর্ণমালা ব্যবহার করে লেখে- সেখানে বাংলা ভাষার নিজের বর্ণমালা থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে অবশ্যই গৌরবের বিষয়।ভাষাবিদ্যায় পারদর্শী হওয়ার কথা ভাবলে আমরা যে চিত্রটি প্রথমেই দেখি, তা হচ্ছে একটি অগ্রসরমান প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। তা নির্মাণে প্রয়োজন নিরলস অধ্যবসায়। একটি প্রজন্ম শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে দুটি বিষয়ের প্রয়োজন পড়ে খুব বেশি। প্রথমটি হচ্ছে সৎভাবে সমাজের অবকাঠামো নির্মাণ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সমকালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর্মপরিধির ব্যাপ্তি ঘটানো। কাজ করতে হলে একটি যোগ্য কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন পড়ে, যারা তাদের মেধা ও মনন দিয়ে কাজ করবে নিরন্তর। জ্ঞানার্জনে ভাষা একটি ফ্যাক্টর তো বটেই। কারণ মানুষ না জানলে, সেই তথ্য-তত্ত্ব এবং সূত্রগুলোকে নিজের জীবনে, সমাজ জীবনে প্রয়োগ করতে পারে না। সে জন্য প্রয়োজন পড়াশোনা। পড়াশোনা করতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন। প্রয়োজন সেই ভাষাটিও রপ্ত করা। বাংলাদেশের নিরক্ষর মানুষ প্রয়োজনীয় অক্ষরজ্ঞান পেলে নিজেদের জীবনমান যেমন বদলাতে পারবেন, তেমনি পারবেন সমাজের চিত্রও বদলে দিতে। একজন শিক্ষিত মা-ই পারেন একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে। আমরা সে কথাটি সবাই জানি এবং মানি। ভাষার যত রকম প্রয়োজনীয়তার সংজ্ঞা আমরা তুলি না কেন, প্রধান কথাটি হচ্ছে একটি জাতিকে শিক্ষিত করে তোলার গুরুত্ব। মানুষ সুশিক্ষিত হলেই তার জ্ঞান খুলবে- সে উদার হবে, সৎ কাজগুলো করবে। এটাই নিয়ম। পাশ্চাত্যে আমরা উচ্চশিক্ষিতের যে হার দেখি, ওই জনশক্তিই রাষ্ট্র গঠন, পরিচালনায় একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে- তা অস্বীকার করার উপায় নেই।আমার এক বন্ধু নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পোলিশ এ বন্ধুটির সঙ্গে আমার নানা বিষয়ে কথা হয়। সমাজবিদ্যার এ শিক্ষক আমাকে বারবার বলেন, শক্তিশালী ভাষাই বিশ্বে পুঁজির আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করছে। তার কথাটি মোটেই মিথ্যা নয়। নিউইয়র্ক তথা গোটা উত্তর আমেরিকার একটি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা নরটন অ্যান্ড কোম্পানির বেশ কয়েকজন কর্ণধারের সঙ্গে ‘ভাষা ও সাহিত্য’ বিষয়ে আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয়েছে। তারা এক বাক্যে বলতে চান, মুনাফার লোভেই তারা মহাকবি ওমর খৈয়াম, জালালুদ্দিন রুমি থেকে নাজিম হিকমত, রবীন্দ্রনাথ কিংবা মাহমুদ দারবিশের রচনাবলিকে ইংরেজিতে অনুবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, নিজস্ব আঙ্গিকে। তারা তা ইংরেজিতে ছাপিয়েছেন। বাজারজাত করেছেন। এতে বিশ্বসাহিত্যে ওসব মহৎ লেখক যেমন আদৃত হচ্ছেন কিংবা হয়েছেন, তেমনি তাদের বই বিক্রি করে আয় হয়েছে লাখ লাখ ডলারও। বাংলা ভাষার সন্তান বাঙালি জাতি। জাতিসত্তা থেকে এ চেতনা আমরা কোনো মতেই সরাতে পারব না। পারার কথাও নয়। কিন্তু এই বলে আমরা অন্যভাষা রপ্ত করব না বা করার আগ্রহ দেখাব না; তা তো হতে পারে না।এখানেও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির বিষয়টি আগে আসে খুব সঙ্গত কারণে। ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ু নামে দুটি অঙ্গরাজ্যের কথা আমরা জানি। কেরালা অঙ্গরাজ্যের মানুষ দুটি ভাষা জানেন বিশেষভাবে। একটি কেরালাদের নিজস্ব ভাষা মালে আলাম আর অন্যটি ইংরেজি। সেখানে হিন্দির তেমন দাপট নেই। একই অবস্থা তামিলনাড়ুতেও। তারা তামিল এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। বিদেশে চাকরি নিয়ে কেরালা-তামিল থেকে যারা আসেন, তাদের দেখলে মনে হয় ইংরেজি যেন তাদের মাতৃভাষাই। তাদের লক্ষ্যটি হচ্ছে, ভাষার আলো গ্রহণ করে একজন দক্ষ আইন প্রফেশনাল কিংবা টেকনোলজিস্ট হওয়া। আর সে জন্য তারা ইংরেজিকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন স্কুলজীবন থেকেই। আমরা জানি- বাংলা ভাষার এমন অনেক ঐতিহ্য আছে যা বৃহৎ এক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে আগলে রেখেছে নিজস্ব বনেদিয়ানায়। প্রধানত ভাষাকে সিঁড়ি করেই এক একটি অঞ্চল বিশেষে এক একটি জনজাতির সৃষ্টি হয়। নিজেদের প্রচলিত মাতৃভাষার গর্বেই একটা অঞ্চলের অধিবাসী নিজেদের মধ্যে একাত্মতা অনুভব করেন। এ ভাবেই ক্রমান্বয়ে একই অঞ্চলবাসী, যারা একই ভাষা ব্যবহার করেন, তারা নিজেদের এক জাতি এক প্রাণ বলে বিবেচনা করেন। মাতৃভাষাই সব গোষ্ঠীকে এক জাতিতে ঐক্যবদ্ধ করে।তুলনামূলকভাবে আমরা এখন কম্পিউটারে বাংলায় লেখালেখি, ওয়েবসাইট নির্মাণ, তথ্য ও ছবি অনুসন্ধান, ব্রাউজিং, ওপেন আফিস ব্যবহার, ই-মেইল আদান প্রদান, গবেষণা বেশি করে করছি। আমরা লক্ষ্য করছি গুগল মজিলার মতো জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন এবং জি-মেইল বাংলা ভাষাকে যুক্ত করেছে। এটা বাংলা ভাষার বিজয়। এছাড়াও বাংলা ভাষার অগ্রগতি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ফেসবুকেও। এখন বাংলা মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং কলেজে বাংলায় ক্লাস নেয়া হচ্ছে যার ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সহজে আয়ত্ত করতে পারে। এছাড়াও কোনো কোনো স্মার্ট ফোনে বাংলা লেখার সুযোগ শুরু হয়েছে। বাংলা ভাষার মাধ্যমে আমরা সহজে সংক্ষিপ্ত বার্তা আদান প্রদান করতে পারছি খুবই কম খরচে। ইতোমধ্যে সব মোবাইলে বাংলা কি প্যাড থাকা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন, এফএম রেডিও ছাড়াও বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে বাংলা সংযুক্ত করা হচ্ছে যাতে বাংলা ভাষাভাষীরা সহজে জনপ্রিয় ওয়েবসাইটসমূহের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে।আজ সময় এসেছে বাংলা ভাষাকে মানুষের জীবিকার ভাষা হিসেবে দাঁড় করানোর। এ প্রসঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাঙালির আশা ও নৈরাশ্য’ প্রবন্ধের কিছু অংশ এখানে পাঠকের জন্য তুলে দিতে চাই। কবিগুরু লিখেছেন- ‘উর্বর ভূমিই যদি সভ্যতার প্রথম কারণ হয়, তবে বঙ্গদেশ সে বিষয়ে সৌভাগ্যশালী, এই আশ্বাসে মুগ্ধ হইয়া আমরা মনে করিতে পারি যে, বঙ্গদেশ এককালে সভ্যতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করিতে পারিবে। ভারতবর্ষের ধ্বংসাবশিষ্ট সভ্যতার ভিত্তির উপর য়ুরোপীয় সভ্যতার গৃহ নির্মিত হইলে সে কী সর্বাঙ্গসুন্দর দৃশ্য হইবে! য়ুরোপের স্বাধীনতা-প্রধান ভাব ও ভারতবর্ষের মঙ্গল-প্রধান ভাব, পূর্বদেশীয় গম্ভীর ভাব ও পশ্চিমদেশীয় তৎপর ভাব, য়ুরোপের অর্জনশীলতা ও ভারতবর্ষের রক্ষণশীলতা, পূর্বদেশের কল্পনা ও পশ্চিমের কার্যকরী বুদ্ধি উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য হইয়া কী পূর্ণ চরিত্র গঠিত হইবে। য়ুরোপীয় ভাষার তেজ ও আমাদের ভাষার কোমলতা, য়ুরোপীয় ভাষার সংক্ষিপ্ততা ও আমাদের ভাষার গাম্ভীর্য, য়ুরোপীয় ভাষার প্রাঞ্জলতা ও আমাদের ভাষার অলংকার-প্রাচুর্য উভয়ে মিশ্রিত হইয়া আমাদের ভাষার কী উন্নতি হইবে! য়ুরোপীয় ইতিহাস ও আমাদের কাব্য উভয়ে মিশিয়া আমাদের সাহিত্যের কী উন্নতি হইবে! য়ুরোপের শিল্প বিজ্ঞান ও আমাদের দর্শন উভয়ে মিলিয়া আমাদের জ্ঞানের কী উন্নতি হইবে! এই সকল কল্পনা করিলে আমরা ভবিষ্যতের সুদূর সীমায় বঙ্গদেশীয় সভ্যতার অস্পষ্ট ছায়া দেখিতে পাই। মনে হয়, ওই সভ্যতার উচ্চ শিখরে থাকিয়া যখন পৃথিবীর কোনো অধীনতায় ক্লিষ্ট অত্যাচারে নিপীড়িত জাতির কাতর ক্রন্দন শুনিতে পাইব, তখন স্বাধীনতা ও সাম্যের বৈজয়ন্তী উড্ডীন করিয়া তাহাদের অধীনতার শৃঙ্খল ভাঙিয়া দিব। আমরা নিজে শতাব্দী হইতে শতাব্দী পর্যন্ত অধীনতার অন্ধকার-কারাগৃহে অশ্রæমোচন করিয়া আসিয়াছি, আমরা সেই কাতর জাতির মর্মের বেদনা যেমন বুঝিব তেমন কে বুঝিবে? অসভ্যতার অন্ধকারে পৃথিবীর যে সকল দেশ নিদ্রিত আছে, তাহাদের ঘুম ভাঙাইতে আমরা দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করিব। বিজ্ঞান দর্শন কাব্য পড়িবার জন্য দেশ-বিদেশের লোক আমাদের ভাষা শিক্ষা করিবে! আমাদের দেশ হইতে জ্ঞান উপার্জন করিতে এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় দেশ-বিদেশের লোকে পূর্ণ হইবে। বঙ্গের ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অলিখিত পৃষ্ঠায় এই সকল ঘটনা লিখিত হইবে, ইহা আমরা কল্পনা করিয়া লইতেছি সত্য, কিন্তু পাঠকেরা ইহা নিতান্ত অসম্ভব বোধ করিবেন না।’আজকের প্রজন্মকে কথাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করতে হবে। বিশ্বের একেক দেশের সংস্কৃতি, মানুষ, অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থা ও ভাষায় রয়েছে কত রকম বৈচিত্র্য! বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষা। এই বৈচিত্র্য থাকার কারণে মানুষের প্রয়োজন হতে পারে দেশের বাইরে যাওয়ার। বিদ্যাশিক্ষার জন্য, জীবিকার তাগিদে কিংবা অজানাকে জানার আগ্রহে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় ভাষার পরও অন্যান্য ভাষা শিখতে আগ্রহী হন। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আজ বাংলাদেশকে সামনে এগোতে হবে।জীবিকার জন্য ভাষা যে কত জরুরি তা আমরা বিদেশেও দেখছি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা বাংলা ভাষায় দেয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বাংলা ভাষা নিয়ে গর্ব করার সঙ্গে তৈরি হবে জীবন জীবিকার সংগ্রামে নিয়োজিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভাগ্যোন্নয়নের নতুন সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের পরীক্ষাতেও বয়স্ক বাংলাদেশিদের জন্য বাংলা ভাষা চালুর চেষ্টা চলছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বিবেচনায় নিউইয়র্ক অভিবাসীদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম। এখানে সব ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। নিউইয়র্কের মতো শহরে চাকরির প্রয়োজনে কিংবা লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স একটা বড় অবলম্বন হিসেবে পরিচিত। এই বিবেচনা থেকে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে গড়ে উঠেছে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ব্যবসা। নিউ ইয়র্কে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লার্নিং পারমিট পরীক্ষায় ইংরেজির বাইরে আরবি, স্প্যানিশ, চাইনিজ, কোরীয়, ফরাসি, ইতালীয়, গ্রিক, জাপানিজ, রুশ, আলবেনীয় ও বসনীয় ভাষায় পরীক্ষার সুযোগ আছে।ভাষা মানুষের প্রধান শক্তি। এই শক্তিকে জীবনের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর জন্য বিবেকের মুক্তি দরকার। দরকার রাষ্ট্র ও সরকারের সব সহযোগিতা।-----------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৫৭
false
rg
পরীক্ষার হল_ সেকাল একাল!!! এক. পরীক্ষার হল: সেকাল !!!আমি তখন খুব ছোট। কিন্তু এখনো সেই কান্নার দৃশ্য আমার স্পষ্ট মনে আছে। বিকালবেলায় আমাদের উঠানে বাতাবিলেবু দিয়ে বল বানিয়ে আমরা পিচ্চিরা খেলছিলাম। সেই খেলার মাঝখানেই হঠাৎ কে যেনো উঠানে একটা চেয়ার রাখলো। কয়েকজন হাতেহাতে ধরাধরি করে আমার বড় ভাইকে সেই চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। কেউ তার মাথায় জল ঢালছে। কেউ তালপাতার পাখায় বাতাস করছে। কেউ পিঠে হাত বুলিয়ে নানান কিসিমের শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই দাদার উচ্চস্বরের সেই কান্না থামছে না। আমরা খেলা বাদ দিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে চারপাশে গোল হয়ে খাঁড়িয়ে সেই উথালিপাথালি কান্না দেখতে লাগলাম। ঘটনা কিচ্ছু ঠাওর করতে পারলাম না। এভাবে প্রায় এক-দেড়ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন কান্নার ফলে দাদার কণ্ঠও তখন কিছুটা ভেঙ্গে গেছে। তবুও ফুঁফিয়ে ফুফিয়ে দাদার সেই কান্না চলছে। আর মাঝে মাঝে দুই হাত দিয়ে মাথা চাপড়াচ্ছেন। সূর্য তখন পাটে বসেছে। এই সময় বাবা বাজার থেকে ফিরলেন। দাদার কি হয়েছে জানতে চেয়ে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বাবা চুলার পাশে যেখানে মা রান্না করছিল, সেখানে গিয়ে বাজারসদাই রাখলেন। বাবার সঙ্গে বাজারের ধামা মাথায় পেছন পেছন জামির মামা। জামির মামার ধামার মধ্যে নিশ্চয়ই মিঠাই আছে। সেই লোভে দাদার সামনে থেকে আমরা ছোটদের কেউ কেউ তখন কান্না দেখার রণে ভঙ্গ দিয়ে চুলার পাশে ভিড় কড়লাম। মাকে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ও কান্দে ক্যা? কি হইছে? জবাবে মা ছোট্ট করে কী যেনো বললেন। আমরা কিছু বুঝতে পারলাম না। বাবা পাঞ্জাবি খুলে বড়বুজির হাতে দিতে দিতে বললেন, আমার বেতের লাঠি-হান কোই? বলেই ঘরে ঢুকলেন লাঠি খুঁজতে। বাবার লাঠি খুঁজতে যাবার ভঙ্গি দেখেই আমরা মিঠাই খাওয়ার লোভ ত্যাগ করে নিরাপদ দূরত্বে কেটে পরলাম। ইতোমধ্যে জামির মামা ধামা রেখে দাদার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে আন্দাজ করে আমরা পালানোর পথ ক্লিয়ার রেখে, লুকিয়ে লুকিয়ে দূর থেকে ঘটনা দেখার চেষ্টা করছি। বাবা লাঠি হাতে পেয়েই ঘর থেকে হাঁক ছাড়লেন, পরীক্ষায় ফেল মাইরা আবার কান্দোন! হারামজাদা গোলাম, দাঁড়া তোর কান্দোন দেখাচ্ছি। ততোক্ষণে জামির মামা দাদাকে উঠানে থেকে ধরে ছোটকাকাদের ঘরের দিকে দ্রুতপদে ছুটলেন। বাবার হাতের বেতের লাঠির নগদ নারায়ন থেকে যদিও সে যাত্রায় জামির মামার কল্যানে দাদা রক্ষা পেলেন। কিন্তু ঘটনার আগাগোড়া আমরা কিছু বুঝতে পারলাম না। পরবর্তী তিনচার দিনে আমরা বুঝে গেছি, দাদা ইন্টার পরীক্ষায় ডাব্বা খাইছে। পরের বছর প্রায় একই নাটকের আবারো পুনরাবৃত্তি। আবারো দাদার উথালি পাথালি কান্না। আবারো বাবার হুংকার। সে যাত্রায় আর লাঠি খুঁজতে সময় নষ্ট করেননি বাবা। হাত দিয়েই ধুপধাপ কিছু উত্তম মাধ্যম দিলেন। কি আশ্চার্য! চড় থাপ্পর খেয়ে দাদার কান্না মুহূর্তে হাওয়া। পিঠ বাঁচাতে কান্নাকান্ত তখন উদ্ভ্রান্তের মত রাস্তার দিকে উর্ধ্বশ্বাসে দৌঁড়ালেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এটা ১৯৭৩-৭৪ সালের ঘটনা। এর প্রায় ত্রিশ বত্রিশ বছর পরের ঘটনা। পরীক্ষা নিয়ে গল্পে গল্পে দাদা মুখ ফসকে সেদিনের সেই ঘটনার অন্তরালের কাহিনী বলে ফেললেন। দাদা পড়তো বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র সরকারি কলেজে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন দাদা। দাদার ক্লাসমেট ছিলেন বঙ্গবন্ধু'র ছোট ভাই শেখ নাসের সাহেবের ছেলে শেখ হেলাল। আমাদের ছোটবেলায় দাদার সঙ্গে হেলাল ভাই মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। তো গল্পের আসল কাহিনী জানার জন্য আমি দাদাকে প্রশ্ন করলাম, আসল কাহিনী কি, কও?জবাবে দাদা বললেন, পিসি কলেজের যে রুমে আমাদের ইন্টার পরীক্ষার সিট পড়েছিল, সেই রুমের আমাদের সবারই স্টার নম্বর পাবার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা স্টার না পেয়ে একযোগে সবাই ফেল করেছিলাম। - কেন? তোমরা ফেল করলা? - আমাদের এক টিচার বোর্ডে রিপোর্ট করেছিলেন। - কেন রিপোর্ট করলেন? তোমরা কি বই দেখে পরীক্ষার খাতায় লিখছিলা?- না, আমরা কেউ বই দেখে লিখিনি। - তাহলে ওই স্যার এটা কেন করলেন?- আমরা স্যারদের হলে আটকে রেখে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যেদিন যে পরীক্ষা সেদিন সেই স্যারকে আমরা হলে আটকাতাম। - তারপর?- আমরা যারা সায়েন্সের স্টুডেন্ট সবার পরীক্ষা এভাবে খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু ঝামেলা বাধালেন ম্যাথেমেটিক্স স্যার।- কেন? উনি কি করলেন?- সেদিন ছিল ম্যাথেমেটিক্স পরীক্ষা। যথারীতি ম্যাথেমেটিক্স স্যারকে আমরা হলে আটক করেছিলাম। স্যার ব্ল্যাকবোর্ডে অংক করলেন। আর আমরা তা খাতায় লিখলাম। সবার লেখা শেষ হলে স্যার আবার পরের অংকটি ব্ল্যাকবোর্ডে করেন। আমরা তাই দেখে সেই অংক খাতায় লিখি। এভাবে পরীক্ষা শেষ হয়েছিল।- তো, তোমরা ফেল করলা কিভাবে?- পরের দিন ম্যাথেমেটিক্স সেকেন্ড পেপারের পরীক্ষার দিন ম্যাথেমেটিক্স স্যার আর হলে আসলেন না। আমরা সায়েন্সের অন্য স্যারদের আটকে রেখে সেদিনের পরীক্ষা শেষ করেছিলাম। - তো ফেলের সাথে এর কি সম্পর্ক?- পরীক্ষা শেষে ছেলেরা ম্যাথেমেটিক্স স্যারকে শাসিয়েছিল। তাই স্যার পুরো পরীক্ষার ঘটনা বোর্ডে লিখিতভাবে রিপোর্ট করেছিলেন। যে কারণে ওই হলে আমরা যারাই ছিলাম, ফেল করেছিলাম। - ও গণফেল?দাদা আমার শেষ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বাটালি হাসি দিলেন। যা দেখে আমার তখন আবারো দাদার সেই ত্রিশ বত্রিশ বছরের উথালি পাথালি কান্নার দৃশ্য মনে পড়ে গেল। দুই. পরীক্ষার হল: একাল !!!বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পরীক্ষায় জিপিএ পাবার এখন হিরিক চলছে। শুধু কি জিপিএ, গোল্ডেন জিপিএ!!! সকল পরীক্ষায় যদি কোনো ছাত্র আশি নম্বরের উপরে পায়, তাহলে তাকে নাকি ধরা হয় গোল্ডেন জিপিএ। কেউ কেউ বলেন গোল্ডেন ফাইভ। এখন আর স্টার নম্বর বা স্ট্যান্ড করার চল নেই। এখন জিপিএ যুগ, গোল্ডেন জিপিএ জামানা। রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) গত ২৮ মে থেকে ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি বিভাগের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ সোমবার পরীক্ষার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল থেকে তাঁকে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীরা নকল করলে তিনি খাতা ধরে রেখে দেন এবং নকল করে যে উত্তর লেখা হচ্ছিল তা কেটে দেন। এই খবর ছাত্রলীগের আইএইচটি শাখার নেতাদের কাছে চলে যায়। পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়েই একবার পর্যবেক্ষককে বাইরে পেয়ে ছাত্রলীগের নেতারা কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি দ্রুত দোতলায় উঠে যান। তখন তারা জসীম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়নি।পরীক্ষা শেষে কক্ষের বাইরে আসলে সঙ্গে সঙ্গে করিডোরেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তুহিনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা-কর্মী অধ্যাপক জসীম উদ্দিনকে ঘিরে ধরেন। ছাত্রলীগ নেতারা জানতে চান কেন খাতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, কেন প্রশ্নের উত্তর কেটে দেওয়া হচ্ছে? এ সময় জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল তাঁকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি এর বাইরে কারও কাছে জবাবদিহি করবেন না। ছাত্রলীগের নেতারা তখন তাঁকে ঘেরাও করে রেখে নকলের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। পর্যবেক্ষককে ঘেরাও করার খবরে অধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে আসেন। অধ্যক্ষ এসে ছাত্রলীগ নেতাদের ঘেরাও থেকে অধ্যাপক জসীম উদ্দিনকে রক্ষা করে নিরাপদে প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ১ জুন ২০১৫, অনলাইন আপডেট: ২৩:১৫)। এবার আমার ছোট্ট একটা প্রশ্ন। স্বাধীনতার পর পেরিয়ে গেছে ৪৪ টি বছর। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এই ৪৪ বছরে কতদূর অগ্রসর হয়েছে? আমাদের শাসকবর্গ কি আদৌ মনেপ্রাণে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সত্যিকারের অগ্রগতি চান? যদি সত্যি সত্যিই চাইতেন, তাহলে চল্লিশ বছর আগের পিসি কলেজের সেই দৃশ্যের আবার কেন এভাবে পুনরাবৃত্তি? চল্লিশ বছর আগের পিসি কলেজের ম্যাথেমেটিক্স স্যারের জায়গায় রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে আজকের পরীক্ষার হলে যেনো জসীম উদ্দিন স্যারের উপস্থিতিই চোখে পড়ল। মাঝখানে বাংলাদেশের চল্লিশ বছর নাই। বাংলাদেশের এই চিত্র থেকে কি পরীক্ষা পদ্ধতি বা শিক্ষা ব্যবস্থার আসল দশা আমরা অনুমান করতে পারি?? যে ছাত্র কিনা ছাত্রলীগ বা ছাত্র দল করে, তার দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তার কি আর তখন পরীক্ষার হলে শান্তশিষ্ট থাকার কথা?? কেন যে জসীম উদ্দিন স্যারদের মত দু'একজন এসব বুঝতে চান না। জসীম উদ্দিন স্যারকে আমার অন্তরের লাল সালাম। হ্যাটস অফ স্যার। কিন্তু স্যার, এখন একটা নতুন টেনশন শুরু হল, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল কি এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত আপনার পাশে থাকবে? অধ্যক্ষ স্যার না হয় আজ আপনাকে নিরাপদে বের হয়ে যাবার সুযোগ করে দিলেন। কিন্তু স্যার, আপনি কি সত্যি সত্যিই এখন নিরাপদ? সকল দিক দিয়ে কি আদৌ নিরাপদ আছেন? বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে সরকার বাহাদুর আসলে কি করতে চায়? খোলাখুলি বলে দিক। একটি রাষ্ট্রে শিক্ষা কাঠামো কিছুতেই এভাবে চলতে পারে না। সত্যি সত্যিই পারে না। এমন শিক্ষা নিয়ে আমরা কী করব? এমন গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে আমরা কী করব? এভাবে পরীক্ষা দিয়া আমরা কোন গৌরবের প্রতিনিধিত্ব করব? 'শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড' এই বাক্যের ভাবসম্প্রসারণ আমরা এখন কেমন করে করব? হায় ঈশ্বর! আমাদের সুমতি দাও, সুমতি দাও, সুমতি দাও নতুবা কপালে অশিক্ষার অন্ধকারের রাজটিকা পড়িয়ে দাও। আমরা কেবল গণ্ডমুর্খ্য থাকতেই ভালোবাসি। শিক্ষার আলোর আমাদের কোনো প্রয়োজন নাই। .............................১ জুন ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ২:২৫
false
rg
হে উৎসব প্রমান করলো বাংলা একাডেমি'র নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে!! বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মত আর বাংলা একাডেমিতে দ্বিতীয়বারের মত তথাকথিত তুমুল বিতর্কিত হে উৎসব হচ্ছে। কারা এই হে উৎসবের আয়োজক? একটি ইংরেজি দৈনিক। সেটির নাম কি? দ্য ডেইলি স্টার। এদের সঙ্গে আর কে কে আছে? এ বছর ডেইলি স্টারে প্রকাশিত স্পেশাল ফিচার থেকে মোট ৪৭ টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। যার মধ্যে বাংলা একাডেমি নাকি হোস্ট, যাত্রিক নাকি প্রজেক্ট পার্টনার, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশান হল গ্লোবাল পার্টনার, এছাড়া প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার, ব্রোঞ্জ স্পন্সর আছে, আছে হসপিটালিটি পার্টনার, আর আছে কিছু ইনস্টিটিউট পার্টনার। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আছে, তেমনি আছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। আছে জাতীয় কবিতা পরিষদেরও নাম। এবার হয়তো আপনি ভাবতে পারেন, এরা সবাই তো জেনে শুনেই এই হে উৎসবে যোগ দিয়েছেন, তাহলে এর বিরোধীতা কেন? চলুন, আপনার সেই প্রশ্নের একটি বিশ্লেষণি জবাব দেওয়া যাক। ১. ডেইলি স্টার যে বিশেষ সাপ্লিমেন্টারি প্রকাশ করেছে সেখানে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের বক্তব্য আছে 'এডিটর'স নোট' আর 'ওয়েলকাম টু বাংলা একাডেমি' আকারে দুই কলামে। বাম কলামে এডিটর'স নোট আর ডান কলামে ওয়েলকাম টু বাংলা একাডেমি আকারে। কিন্তু মাঝখানের ছয় কলামকে চার কলাম বানিয়ে বিশাল আকারে 'থ্রি ইয়ারস অফ হে' নামে একটি বিষয় আছে। সেখানে দেখা যায় দুইজন প্রডিউসার আছেন, তারা হলেন সাদাফ সাজ সিদ্দিকি ও তাহমিমা আনাম। এবার হয়তো আপনার সন্দেহের প্রথম অংশের প্রমাণ পেয়ে গেলেন। যদি হে উৎসবের আয়োজক বাংলা একাডেমি হত, তাহলে একাডেমি'র সভাপতি প্রফেসর আনিসুজ্জামানের বক্তব্য থাকতো, এমন কি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতি সচিবের শুভেচ্ছা বক্তব্য থাকতো। তার মানে ঢাকায় হে উৎসবের আয়োজক ডেইলি স্টার আর তার দুইজন প্রধান কারিগর হলেন সাদাফ সাজ সিদ্দিকি ও তাহমিমা আনাম। সৌভাগ্যগুনে তাহমিমা আনাম হলেন মাহফুজ আনামের মেয়ে। মেয়ের সাহিত্যিক খ্যাতি ছড়িয়ে দেবার জন্যই এই হে যজ্ঞ। ২. হে উৎসবের প্রধান বিষয় কি? ইংরেজিতে যারা সাহিত্য চর্চা করেন তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তারা কারা? আমাদের দেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কলেজগুলোতে যেসব ছাত্রছাত্রী আছে, আর বাংলাদেশের বাইরে আমাদের ধনীর দুলাল-দুলালী যারা ইংরেজি ভাষায় পড়াশুনা করেন, তাদের মধ্যে যারা আবার সাহিত্য মনস্ক তারাই প্রধান। এছাড়া দেশে যারা ইংরেজিতে সাহিত্য কসরত করেন তারাও আছেন এই দলে। আর দেশের কিছু স্বনামধন্য সাহিত্যিককে এই দলে ভেড়ানোর অংশ হিসেবে নামমাত্র তাদের কিছু লেখার ইংরেজি অনুবাদ হাজির করা। ৩. হে উৎসব কাদের উৎসব? এক কথায় দেশের ধনীক শ্রেণীর মধ্যে যারা ইংরেজিতে সাহিত্য চর্চা করেন, তাদের উৎসব। তো সেখানে দেশের গরিব বা নিম্নবিত্তের যারা বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেন, তাদের টানাহেচড়া কেন? কারণ, তাদের উপস্থিতি ধনীদের সাহিত্যকে যেমন স্বীকৃতি দেবে, তেমনি তোমরা যে গরিব লেখক আর বাংলায় লেখালেখি কর, সেটা যে কত্তোবড় হীনরুচির কাজ, তা মেনে নিয়ে বাড়ি গিয়ে আলু সিদ্ধ খাও, এটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেওয়া। লেখকদের ধনী আর গরিব দুই শ্রেণীতে সুস্পষ্ট বিভাজন করে উপস্থাপন করা আর বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিকে অগ্রাধিকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা। তারপরও তারা কেন এই শ্রেণী বিভাজিত সাহিত্য উৎসবে যাবেন? কারণ, সেখানে অনেক বিদেশী লেখক আসবেন। বিনা পয়সায় তাদের সঙ্গে একটু আলাপ করা যাবে, ভাব-বিনিময় করা যাবে, একসঙ্গে বসে একটু র-টি খাওয়া যাবে, আর কিছু পরামর্শ যদি পাওয়া যায়, ক্ষতি কি? আর কি কি কারণ থাকতে পারে দেশীয় গরিব লেখকদের হাজির হবার? যদি কাউকে পটিয়ে-পাটিয়ে নিজের লেখার ইংরেজি অনুবাদ করিয়ে নেওয়া যায়, এই ফ্রি সুযোগ ব্যবহার করে। আর কি? আর হচ্ছে বিনা পয়সায় তথাকথিত আন্তর্জাতিক লেখক উৎসবে যোগ দেবার কীর্তি নিজের অভিজ্ঞতায় যোগ করানো। এই বা কম কিসে? ৪. বাংলা একাডেমি কেন একটি কর্পোরেট গোষ্টির বিতর্কিত এই হে উৎসবের ভ্যেনু? কারণ, বাংলা একাডেমি'র যিনি মহাপরিচালক, তিনি শামসুজ্জামান খান। কোট-টাই-প‌্যান্ট পড়ায় অভ্যস্থ এক আপাদমস্ক কলোনিয়াল ফোকলোর গবেষক। ইংরেজদের পচা গুও এই খান সাহেবের কাছে ঘি'র সমতুল্য। জনাব শামসুজ্জামান খান এই উৎসবকে বলছেন, আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন! বাংলা একাডেমি কেন নিজেই এরকম আন্তর্জাতিক লেখক উৎসবের আয়োজন করতে পারে না? প্রথমত জনাব শামসুজ্জামন খানের সেই যোগ্যতা নেই। দ্বিতীয়ত তিনি তেল মর্দনে এবং তেল গর্দনে ভারীই গদগদ হন। তাই দেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্নধার হয়েও তিনি এই তৈল নীতিতে এতোই আপ্লুত যে, তিনি বাংলা একাডেমি যে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, সেই কথাটি বেমালুম ভুলে গেছেন। তিনি আর কি কি ভুলে গেছেন? বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধন ও বর্ধনে যে একাডেমি'র ভূমিকা রাখার কথা, তিনি সেই মূল মন্ত্রটিও ভুলে গেছেন। আর কি কি ভুলে গেছেন তিনি? বাংলা একাডেমি'র উদ্যোগে দেশের প্রখ্যাত লেখকদের বিশেষ বিশেষ লেখার কোনো মানসম্মত অনুবাদ করানোর কাজটি যে করার কথা একাডেমি'র সেটিও ভুলে গেছেন। একাডেমি'র অনুবাদ বিভাগের যথাযথ দায়িত্বের কথাটি তো সবার আগেই ভুলে গেছেন। তিনি কেন এতো সব দায়িত্বের কথা বারবার ভুলে যান? কারণ, তিনি বাংলাদেশের লোক সাহিত্য নিয়ে এতোই ধ্যানমগ্ন যে, একাডেমি'র কোথায় কি কি কাজ সেগুলো সব সময়ই ভুলে যান। তাহলে এই লোকটি একাডেমি'র মহাপরিচালক পদে আছেন কি করে? কারণ, বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতি। রাজনৈতিক নিয়োগের শক্তিতে তিনি একাডেমি'র মহাপরিচালক হয়েছেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যে একাডেমি'র শুভ সূচনা করেছিলেন, সেখানে জনাব খানের মত অযোগ্য অথর্ব মহাপরিচালক কি করে সুযোগ পায়? কারণ, বাংলাদেশের দুবৃত্তায়নের রাজনীতি। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তাই জনাব খান সাহেব একাডেমি'র মহাপরিচালক আছেন। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তখন বিএনপি পন্থী আরেক বুদ্ধিজীবী একাডেমি'র মহাপরিচালক হবেন। এটাই বাংলাদেশের আইন। ৫. ডেইলি স্টারের কেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাদ দিয়ে বাংলা একাডেমিকে হে উৎসবের ভ্যেনু বানাতে হবে? কারণ, ২০১১ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলে প্রথম হে উৎসব করে তেমন সাড়া মেলেনি। দেশের লেখক সমাজ পর্যন্ত সেই উৎসবে কি ঘটেছিল জানতে পারেনি। তাই উৎসবের ভ্যেনু বাংলা একাডেমি হলে, আর এটাকে বাংলা একাডেমি'র নাম লাগিয়ে দিয়ে একটি চমক আনার পাশাপাশি দেশের সকল লেখকদের জানানো যে, এই দ্যাখো কত্তো বড় টিএ। টিএ মানে তাহমিমা আনাম। ইংরেজি সাহিত্যে বাংলাদেশের একমাত্র বুকার প্রত্যাশি লেখিকা। এই লাইনে আর কে কে আছেন? আছেন সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, আছেন শাহিন আকতার, আছেন কায়সার হক। কিন্তু সেখানে হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ শামসুল হক বা সেলিনা হোসেনদের কেন দেখা যায়? ওনাদের দাওয়াত করেছেন আয়োজকরা, তাই। তাছাড়া হাসান আজিজুল হকের 'থ্রি স্টোরিজ' নামে একটি অনুবাদ বই প্রকাশ পাবে হে উৎসবে। আর উৎসবে হাসান আজিজুল হক আর সৈয়দ শামসুল হকের একটি সাহিত্য আড্ডা হবে। সেই আড্ডার সঞ্চালক হলেন দেশের বিশিষ্ট তুঘলকি কবি সাজ্জাদ শরিফ। ভাই, এই আড্ডা কি বিদেশী লেখকরা বুঝবেন, যারা বাংলা জানেন না? তাতে কোনো অসুবিধা নাই। এই আড্ডায় দেশীয় লেখক যারা আসবেন, তারা সেখানে সদর্পে উপস্থিত থাকবেন। জমজমাট আড্ডা হবে। মুহূর্মুহু তালিয়া বাজবে। যা দেখে বিদেশী আগত লেখকরাও চোখ বড় বড় করে নেড়ে চেড়ে উঠবেন! ভাই, সব বুঝলাম, কিন্তু শিশুদের নিয়ে আর শর্ট স্টোরি ওয়ার্কশপের কথা তো কিছু বললেন না? ওইটা কিছু সুনির্বাচিত ধনীর শিশুপুত্রকন্যাদের জন্য সংরক্ষিত। হে উৎসবে আগত বাংলাদেশী গরিব লেখকদের বা তাদের পুত্রকন্যাদের সেখানে প্রবেশাধিকার রাখা হয়নি। কেন রাখা হয়নি? আপনারা একটা জিনিস বুঝতে চান না। গোটা হে উৎসবের খরচ যোগান দিচ্ছে মহামান্য কিছু কর্পোরেট স্পন্সরগণ। তারা একটি তালিকা করেছেন। সেই তালিকাই হে উৎসবের সংবিধিবদ্ধ নীতিমালা। নীতিমালার বাইরে তো কাউরে সেই ওয়ার্কশপে সুযোগ দেওয়ার উপায় নাই। ভাই, এই নীতিমালা কে করলো? এটা মাহফুজ আনাম তার কয়েকজন সুহৃদকে নিয়ে করেছেন। সেখানে বাংলা একাডেমি'র কি কোনো ভূমিকা আছে? পাগল নাকি আপনি? বাংলা একাডেমি স্পন্সরদের দেওয়া অর্থের একটা ভাগ পাবে। যার একটা বিশাল অংশ যাবে খান সাহেবের পকেটে। একাডেমি চত্বর ও দালানকোঠা ব্যবহার করার সুযোগ দিছে, এই তো বেশি। ক্যান ভাই, একাডেমি নাকি আয়োজক? একাডেমি আয়োজক হলে সেখানে তাহমিমা আনামের মতো লেখকরা হয়তো নিমন্ত্রণপত্রই পেতেন না। আর আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, এই হে উৎসবের প্রধান ব্যক্তিই হলেন তাহমিমা আনাম। ভাই উনি কত্তো বড় লেখিকা? ওনার ইতোমধ্যে দুই খান উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। 'গুড মুসলিম' আর 'দ্য গোল্ডেন এজ'। একখান অন্তত ২২টি ভাষায় টাকা খরচ করে অনুবাদ করা হয়েছে। ওনার ত্রিলজি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খুব শীঘ্রই তৃতীয় উপন্যাস বাজারে আসবে। ভাই উনি কি বাংলায় লেখেন? এতোক্ষণ আপনি কি রামায়ন শুনলেন? উনি মস্তবড় ইংরেজি সাহিত্যের লেখিকা। উনি ব্রিটিশদের মত উচ্চারণে অবশ্য কিছু কিছু বাংলা বলতে পারেন বটে। আর উনি যে কোনো সময় বুকার পুরস্কার পেতে পারেন, এই খবর রাখেন মিঞা? ভাই আরেকটা ছোট্ট প্রশ্ন ছিল, করব? করেন? এ বছর প্রথম আলো'র কোনো নাম হে উৎসবের কোথাও দেখি না কেন? ওনাগো কথা কি ডেইলি স্টার ভুলে গেছে? এটা একটি রাজনৈতিক কৌশল। আপনি হয়তো জানেন, প্রথম আলো'র প্রথমা নামে একটি প্রকাশনা আছে। সেখান থেকে বাংলা বই প্রকাশ পায়। প্রথম আলো'র নাম কৌশলগত কারণে এবার অ্যাভয়েড করা হয়েছে। কারণ, আমরা তো ইংরেজি ভাষায় যারা সাহিত্য চর্চা করে হে উৎসবে তাদেরই আলোকিত করতে চাই। কিন্তু প্রথম আলো'র এ টু জেড সবাই দেখবেন আমাদের সকল কাজে সব সময় সঙ্গে আছেন। ওনারা সঙ্গে না থাকলে তো আমরা বাংলা একাডেমিতে এই যজ্ঞ করার দুঃসাহসই পেতাম না। ভাই, আরেকটা জিনিস মুখে আসছিল, বলবো? বলেন, যা মুখে আসে কইয়া ফেলান? হে উৎসব কি অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ধীরে ধীরে চ্যালেঞ্জ করতাছে? হে হে হে, আপনি ভাই সকালে নাস্তা খাইছেন? অমর একুশে গ্রন্থমেলা হল বাংলাদেশের সর্বসাধারণের প্রাণের মেলা। হে উৎসব তো সর্বসাধারণের না। এটা ধনীর দুলাল দুলালীদের প্রমোদ সাহিত্য উৎসব। দেখেন নাই, জারী গান গাইবে, পিঠা খাবে, আরো কত্তো কিছু খাবে? তো ভাই, বাংলা একাডেমি কেন এই বিতর্কিত ধনী'র পুত্রকন্যাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে গেল? সব টাকার খেলা। আপনি জানেন তো, টাকার জোরে বাঘে-মহিষে একঘাটে জল খায়। আপনি জানেন তো, টাকায় কুমিরের চোখ মেলে। আপনি জানেন তো, টাকায় কিনা হয়? ভাই, টাকা দিয়ে কি লেখক হওয়া যায়? আরে ধুর মিঞা? আপনে থামেন তো! আগে নাস্তা খাইয়া লই। প‌্যাট চো চো করতাছে। একটা কথা মনে রাইখেন, আমাদের দেশে ধনীক শ্রেণী'র ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। তারা ইংরেজি মাধ্যমে দেশে বিদেশে পড়াশুনা করছে। তাদের কেউ কেউ সাহিত্য চর্চাও করছে। তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই কা। কিন্তু বাংলা একাডেমি দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। সেখানে কর্পোরেট বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে এবং ডেইলি স্টারকে হে উৎসবের মত জঘন্য ভিনদেশী একটি অপ্রচলিত লেখক উৎসবকে বারবার ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে আমরা ব্রিটিশ কলোনির সেই স্মৃতিকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই। ব্রিটিশদের গোলামি করলে যদি দু'চারখানা বুকার পুরস্কার জোটে তাতে আপনার তো কোনো ক্ষতি হবার কথা না। কিন্তু বাংলা একাডেমিকে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এভাবে ব্যবহার করার পায়তারাটি মোটেও শুভ নয়। বাংলাকে হেয় করার এই সুপ্ত চালাকিটা একদিন এদেশের গুড় খাওয়া মুখোশধারী লেখকদের একটি অংশ বুঝতে না চাইলেও, যারা বাংলাকে ধারণ করে জীবন উৎসর্গ করেছেন, যারা বাংলা ভাষায় লেখার জন্য গোটা জীবন ইনভেস্ট করেছেন, বাংলাকে যারা মনে-প্রাণে লালন করেন, ধ্যান-জ্ঞান করেন, সর্বপরি ভালোবাসেন, তারা এই সব অনুচর ও তাদের দালালীর একদিন উচিত শিক্ষা দেবে। বাংলা একাডেমিতে নানান ভাষার নানান দেশের লেখকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন হতে পারে, সেটির আয়োজক হতে হবে বাংলা একাডেমিকে। ভাড়া খাটা আর নিজে আয়োজক মোটেও এক জিনিস নয়। বাংলা ভাষাকে খাটো করার জন্য, বাংলা একাডেমিকে কর্পোরেট স্বার্থের কাছে বলি দেবার জন্য, খান সাহেবদের একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তখন সেই মিছিলের শক্তি কতো বড় হবে তা আপনারা সবাই জানেন। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত হে উৎসব নিপাত যাক। বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খানকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। বাংলা একাডেমি'র মান-সম্মান বাঁচাতে সচেতন লেখক-শিল্পী ও সর্বস্তরের বাংলা ভাষাবাসির সবাইকে দুর্বার আন্দোলন করতে হবে। বাংলা একাডেমি চত্বরের বাইরে হে উৎসব হতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু একাডেমিকে তালেব্বর বানিয়ে এমন ঠুটো জগন্নাথ মার্কা কোনো কর্পোরেট স্বার্থের ভেলকি আমরা দেখতে চাই না। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৭
false
fe
সম্প্রচার নীতিমালা ও মিডিয়ার স্বাধীনতা সম্প্রচার নীতিমালা ও মিডিয়ার স্বাধীনতাফকির ইলিয়াস_____________________________________________বাংলাদেশে সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। বিশ্বের অন্যান্য কিছু দেশেও এমন নীতিমালা রয়েছে। বলা দরকার, ‘লিমিটেশন অব নিউজ মিডিয়া’ মানুষের সৃজনশীল চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, মানুষ সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতিকে বিভ্রান্ত করবে। অথবা কলহ ছড়াবে। বাংলাদেশে এই নীতিমালা নিয়ে কথা ওঠার পর অনেকেই তাদের মত দেয়া শুরু করেছেন। সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক।বাংলাদেশের প্রাক্তন একজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিশ্বের সব উন্নত রাষ্ট্রে সম্প্রচারের জন্য নীতিমালা রয়েছে। বাংলাদেশের জন্যও এ নীতিমালা দরকার। তবে নীতিমালার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’‘সম্প্রচার নীতিমালা সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের জন্য করা হচ্ছে’ বিএনপির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘সম্প্রচার নীতিমালা সংবাদপত্রের জন্য নয়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য। মনে হয় সম্প্রচার নীতিমালা না পড়েই এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। আমি তাদেরকে সম্প্রচার নীতিমালা পড়ার জন্য অনুরোধ জানাবো।’জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতি-২০১৪’ সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এখানে একটি প্রশ্ন হলোÑ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে আলাদা করে দেখা হচ্ছে কেন? দেশের বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বলেছেন, ‘দেশে কোনো নীতিমালাই ছিল না। নীতিমালা আসার পর সংবাদপত্রে শৃঙ্খলা আসবে। তবে খসড়ার প্রথম দুটি অধ্যায় বাদে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম অধ্যায়ের বিশেষ কিছু জায়গা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায় : সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার, চতুর্থ অধ্যায় : বিজ্ঞাপন সম্প্রচার এবং পঞ্চম অধ্যায় : সম্প্রচারের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়কে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় করার বিষয়টিকে আমরা অগ্রহণযোগ্য মনে করি। শুধু আমরা নই, খসড়া প্রণয়নকারীরাও মনে করে। এছাড়া এই অধ্যায়গুলোতে কিছু কিছু বাহুল্য কথন রয়েছে। সংবিধান ও অন্য আইনের আওতায় গ্রহণযোগ্য মীমাংসিত বিষয়ও রয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে কোনো প্রকার অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু আমি বলি ‘সাংবাদিকতার যে কোনো পর্যায়েই বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত দেয়া হয়, তা সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে। কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সে ধরনের প্রচারণা চালাতে থাকে তাহলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান প্রচলিত আইনেই আছে।’মনজুরুল আহসান বুলবুল ষষ্ঠ অধ্যায়ের সম্প্রচার কমিশন নিয়ে বলেন, নীতিমালায় সম্প্রচার কমিশনের কর্মপরিধি বিস্তৃত করা হয়েছে কিন্তু কাঠামো বিন্যাস বিস্তৃত করা হয়নি। সম্পাদক নীতিমালাকে ভয়ঙ্কর এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন তিনি। যা দেশে-বিদেশে ভুল বার্তা দেবে এবং সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সুযোগ করে দেবে এই বলে যে, সরকার সম্প্রচার মাধ্যমের সম্পাদকীয় স্বাধীনতা ক্ষুণœ করতে চায়। কারণ সরকারি নির্দেশনায় কখনই কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় নীতিমালা তৈরি হয় না।মনজুরুল আহসান বুলবুল আরো বলেছেন, সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় সম্প্রচার এবং সম্প্রচার কমিশন সম্পর্কিত আইন, বিধিমালা এবং নীতিমালা প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। যেহেতু ষষ্ঠ অধ্যায়ে বর্ণিত সম্প্রচার কমিশন কতো দিনের মধ্যে গঠিত হবে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই, সেহেতু এই বলার সুযোগ থাকে, মন্ত্রণালয় বাড়তি ক্ষমতা প্রয়োগের জন্যই এই নীতিমালাটি প্রণয়ন করছে।মনজুরুল আহসান সরকারের কাছে কিছু আহ্বান তুলে ধরেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হোক। সেই সম্প্রচার কমিশনকে সময় বেঁধে দেয়া হোক, যে সময়ের মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিশন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের আগে এই নীতিমালার কোনো ধারা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া এই সম্প্রচার নীতিমালাকে তিনি আরো যুগোপযোগী করার আহ্বান জানান।এবার আমরা শুনবো সরকার পক্ষের কথা। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, এ নীতিমালা গণমাধ্যমের ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। সম্প্রচার নীতিমালা দিকনির্দেশক, আইন নয়। সম্প্রচারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতেই এই নীতিমালা। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত আলোচনায় উল্লিখিত যে কয়েকটি বিষয় আমাদের নজরে এসেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়Ñপ্রথমত, এই নীতিমালা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করবে কি না? সম্প্রচার নীতিমালা দিকনির্দেশনামূলক। এটি কোনো আইন নয়। এতে শাস্তির বিধান নেই। তাই কণ্ঠরোধের বিষয়টি সম্পূর্ণ অমূলক ও কল্পনাপ্রসূত। সম্প্রচার মাধ্যমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সমুন্নতকরণে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে এটি প্রণয়ন, এর প্রতিটি ধারাই গণমাধ্যমের জন্য কল্যাণকর।দ্বিতীয়ত, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রতি কটাক্ষ বা বিদ্রƒপ কিংবা পেশাগত ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। এক্ষেত্রে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। কারণ এ ধারা আমাদের সত্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে বলেনি। সম্প্রচার নীতিমালা বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে নৈতিক অবক্ষয় রোধে সম্প্রচার মাধ্যমের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত। অর্থাৎ কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন সেটির বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে কোনো বাধা নেই। কিন্তু কোনো কটাক্ষ বা বিদ্রƒপ বা সেই সংস্থার বিরুদ্ধে ঢালাও মন্তব্য করা অনৈতিক। যেমন, কয়েকজন সাংবাদিক নামধারীর হলুদ সাংবাদিকতার জন্য আপনি পুরো গণমাধ্যমকেই কটাক্ষ, বিদ্রƒপ বা ব্যঙ্গ করতে পারবেন না। সেটি অনৈতিক এবং অপরাধ।এ নীতিমালা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা? এর ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা কোনোভাবেই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। সংবিধানের ৩৯ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। সংবিধানের ৩৯ ধারাকে সমুন্নত রেখেই এবং দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতি বজায় রেখে এ নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। তিনি আরো জানান, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা তাড়াহুড়ো এবং কোনো লুকোচুরি করে প্রণীত হয়নি। ২০১২ সালের পহেলা নভেম্বর গণমাধ্যমকর্মী ও অংশীজনদের নিয়ে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করে দীর্ঘ আলোচনার পর ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর খসড়া সকলের মতামতের জন্য প্রকাশ করে। এসোসিয়েশন অব টেলিভিশন কোম্পানি ওনার্স (অ্যাটকো), আর্টিকল-১৯, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি), বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন্স (বিএনএনআরসি), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিসহ ব্যক্তিপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদে প্রেরণ করা হয় এবং অনুমোদনের পর ৬ আগস্ট ২০১৪ তারিখে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।তথ্যমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও একটি দেশ সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন-নীতি-বিধি-প্রবিধি প্রতিবেশীসহ অন্যান্য দেশের সম্প্রচার আইন পর্যালোচনা করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ডের সম্প্রচার আইন পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনায় পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার সম্প্রচার নীতি অনেক রক্ষণশীল বলে প্রতীয়মান হয়। ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ডের নীতিমালা তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে উদার ও গণতান্ত্রিক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় সেই আইন ও নীতিগুলোকেই বিবেচনায় নেয়া হয়।অন্যদিকে দেশের বুদ্ধিজীবী, সমাজ সংস্কারক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন- সমন্বয় না করেই সম্পন্ন করা হয়েছে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪। এতে খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি। কমিটির সভায় প্রস্তাবিত সংশোধনও সঠিকভাবে করা যায়নি। ভাষার জটিলতা রয়েই গেছে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনায় নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির কয়েকজন সদস্য এমন অভিযোগ করেছেন। ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ : উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ‘আর্টিকেল ১৯’। গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ নীতিমালাকে খসড়া ধরে সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি অভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন করার প্রস্তাব করেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ণের দাবি জানান। আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তফা জব্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া। আরো আলোচনা করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রহমান, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ম্যাস-লাইন মিডিয়া সেন্টারের (এমএমসি) পরিচালক কামরুল আহসান মঞ্জু, মাছরাঙা টিভির চিফ অব নিউজ প্রোডাকশন এন্ড ট্রেনিং সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম প্রমুখ। সভার শুরুতে মূল বক্তব্যে আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান বলেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রয়োজনের তাগিদে প্রণীত হয়েছে। তবে জনগণের বাক্-স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার সমুন্নত রেখে সম্প্রচারের দায়িত্বশীলতার জন্য স্বাধীন কমিশন গঠনের অগ্রাধিকার দিতে হবে। অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সম্প্রচার ও বিজ্ঞাপন বিধি তৈরি করবে কমিশন। কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজ করা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষমতা থাকতে হবে। লাইসেন্স প্রদানে কমিশন দিকনির্দেশনা দেবে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল অভিযোগ করে বলেন, আমরা যে মতামত দিয়েছে, এ নীতিমালায় সেগুলো সংযুক্ত করা হয়নি। সর্বশেষ যে কপি দেয়া হয়েছে, সেটা সরকারের কাছে (ক্যাবিনেট) দেয়া হয়নি। তিনি প্রস্তাব করেন, এ নীতিমালায় চাকরি ও বিনিয়োগের সুরক্ষা থাকতে হবে। একটি স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতি থাকতে হবে। লাইসেন্স প্রদানে রাজনৈতিক বিবেচনা করা যাবে না। সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির মোস্তফা জব্বার অভিযোগ করে বলেন, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ছয় পৃষ্ঠার মতামত দিয়েছেন। অথচ আমরা কমিটিতে ছয় লাইনের বেশি পাইনি। নীতিমালায় অনেকগুলো শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা নেই। আমরা কমিটিকে সুপারিশ করেছি, এ শব্দগুলো সংশোধন করতে। কমিটিতে যারা মূল কাজ করেছেন, তারা আমলা। এ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এগুলোর সংশোধন হয়নি। তারা (আমলা) নিজের মতো শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার জন্য আজকে বিতর্কের তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রচার কমিশন কতোটা নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হবে এটাই প্রশ্ন। এর সদুত্তর পেলে অনেক কথাই থাকবে না। তবে তিনি সম্প্রচার কমিশনের পরিবর্তে একটি অভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন ও নীতিমালা করার প্রস্তাব করেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, এ নীতিমালা তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বলা যাবে না। তাহলে তারা যথেচ্ছাচার করে যাবে? বন্ধুভাবাপন্ন দেশের বিরুদ্ধে বলা যাবে না। ফেলানীদের হত্যা হলে কি আমরা চুপ করে থাকবো? আর লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি সরকারের হাতে রাখা হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক বিবেচনা গ্রহণীয় হবে। তিনি এ নীতিমালাকে প্রাথমিক খসড়া ধরে কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। আলোচনায় বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন অভিযোগ করেন, এ নীতিমালায় এক ধরনের দাদাগিরি করা হয়েছে। এখানে ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারণা পোষণ করা হয়েছে। অনেকগুলো বিষয়ের সুনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই। এমএমসির পরিচালক কামরুল আহসান মঞ্জু বলেন, এ নীতিমালাকে আরো মিডিয়াবান্ধব করতে সরকারকে চাপ দিতে হবে এবং প্রয়োজনে স্মারকলিপি দেয়া যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, এ নীতিমালার ভাষার পরিমার্জন করা গেলে অনেকটা ফলপ্রসূ হবে।একটা কথা মনে রাখা দরকার, মিডিয়া এখন মানুষের হাতে হাতে। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, ওয়েবজিন এখন পরিচালিত হয় ব্যক্তি উদ্যোগে। এর নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ অথবা সৃজনশীল চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশের পরিপন্থী। তা সরকার রোধ করবে কেন? কিংবা করবে কিভাবে? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ চাইছি। অন্যদিকে আমরা রোধ করতে চাইছি ডিজিটাল আলোর জ্যোতি। এটা খুবই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। তা বিবেচনায় আনতে হবে। এই প্রজন্ম আলোর সন্ধানে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রকৃত আলো দেয়া ও মানুষকে বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত রাখাও মিডিয়ার দায়িত্ব। আমরা দেখছি অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলো যৌন উত্তেজনাকর ছবি, গসিপ দিয়ে লাখ লাখ হিট পাচ্ছে। এটা কতোটা যৌক্তিক কিংবা সমাজের জন্য কতোটা ক্ষতিকর তা ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে মানুষের বিবেক ও সত্য প্রকাশের শক্তি। মানুষ দায়িত্ববান না হলে কোনো সমাকই এগোতে পারে না। শুধু নীতিমালা করলেই চলবে না- মানুষের মনন ও চিন্তার স্বাধীনতাকে শাণিত করতে সামাজিক আন্দোলনের যে বিকল্প নেই- তা আমরা এখনো অনেক দেশের কাছ থেকে শিখতে পারি ।---------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ : ॥ ঢাকা ॥ ৩০/আগস্ট/২০১৪ শনিবার প্রকাশিত
false
mk
বিএনপি কি সঠিক পথে হাঁটছে_ ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর তারিখে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'কেমন ছিল ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকালীন সময়' শিরোনামে আমার একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম ২০১৩ সালের শেষ এবং '১৪ সালের শুরুর সময়টাতে বাংলাদেশের মানুষকে এক অস্থির সময় পার করতে হয়েছিল। সে সময়ের পত্রপত্রিকায় চোখ বুলালে দেখা যায় বিএনপি তথা বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলের রাজনৈতিক জোটের সহিংস কর্মকাণ্ডের ওপর ঢাকা থেকে প্রকাশিত আটটি জাতীয় দৈনিক (১৫ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি সময়ে) প্রায় ১১ হাজার কলাম-ইঞ্চি খবর ছেপেছিল। এ ছাড়াও ছিল এই জোটের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার ছবিসহ বিবরণ। সে সময়ে সম্মিলিতভাবে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় একশ্রেণির লোক দেশজুড়ে ব্লকেড তৈরি, ভায়োলেন্স, দশম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ভয়ভীতি প্রদর্শন, কোথাও কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ-নির্যাতন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিল। সারা দেশে সে সময় তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল করে দিয়েছিল, মাইলের পর মাইল রেললাইন উপড়ে ফেলেছিল, ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলেছিল। সে সময় বাসযাত্রী, রিকশাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা ও বাসের ড্রাইভার মেরে ফেলা; হাজার হাজার বৃক্ষ নিধন; গরুবাহী ট্রাকে আগুন লাগানো; আগুন লাগিয়ে ও পেট্রলবোমা ছুড়ে পথচারী মেরে ফেলা; ১০ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের রাতে এবং ভোটের দিন শত শত স্কুলগৃহে আগুন লাগিয়ে তা ভস্মীভূত করে দেওয়া প্রভৃতি সে সব ঘটনা এখনো এ দেশের মানুষকে ভয়ে শিহরিত করে তোলে।২০১৫ সালের শুরুতে আবারও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে এক অস্থির সময় এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। নতুন বছরের প্রথম দিনটি সারা দেশের স্কুলের শিশুরা বই দিবস হিসেবে পালন করবে বলে কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল একজন যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়কে গ্রহণ না করে বরং এই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির ৩১ ডিসেম্বর (২০১৪) এবং ১ জানুয়ারি (২০১৫) সারা দেশে হরতাল ডেকে বসল। দেশবাসীকে তারা একটি বছরের শেষ এবং নতুন বছরের শুরুর দিনটি নির্বিঘ্নভাবে উপযাপন কিংবা অতিবাহিত করতে দিল না। এর মধ্যে শিশুরা ১ তারিখ স্কুলে গিয়ে উৎসব করে নতুন বই নিয়ে এলো ঠিকই কিন্তু তারপর থেকে গোল বাঁধালো ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি তথা ২০-দলীয় জোটের ডাকা একটানা অবরোধ।এই অবরোধকালে ৪ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সহিংসতায় সারা দেশে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮৭ জন মানুষ। আমরা ১৯৯৬ সালেও ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আন্দোলন-সহিংসতা দেখেছিলাম। সে সময় ৮২ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল, যার মধ্যে ৩৬ জন ছিল রাজনৈতিক বা দলীয় কর্মী। তখন পেট্রলবোমায় কেউ মারা যায়নি। ২০০১ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অষ্টম সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মৃত্যু ঘটেছিল ৯৬ জন মানুষের- এর মধ্যে ৭৯ জন ছিলেন রাজনৈতিক বা দলীয় নেতা-কর্মী। একইভাবে ২০০৬ সালে অক্টোবর-ডিসেম্বরে নবম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও প্রাণ যায় ৩২ জন মানুষের- সেখানেও অন্তত ২৮ জন ছিলেন দলীয় নেতা-কর্মী। ২০১৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ৫৯ জন মানুষের প্রাণ গিয়েছিল; এদের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন দলীয় নেতা-কর্মী এবং ৪০ জন সাধারণ মানুষ। কিন্তু ২০১৫ সালের এ সময়ের সহিংসতায় কেবল সাধারণ মানুষকে যেন টার্গেট করে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মী কিংবা তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু কেন এ অবস্থা? আমরা বুঝতে পারি বিএনপি নেতৃত্ব বলতে চাচ্ছেন যে বর্তমান সরকার কোনো জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নয়। তাদের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ছিল 'অবৈধ'। কিন্তু আসলে কী তাই? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত দিক নিয়ে বহু সমালোচনা করা যায় কিন্তু এই নির্বাচনের সাংবিধানিক কিংবা আইনি ভিত্তি অস্বীকার করা কঠিন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি জোটসহ অনেকেই দাবি তুলেছিলেন যে দশম জাতীয় সংসদের এ নির্বাচনটি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। আওয়ামী লীগ তথা ওই সময়ের ১৪-দলীয় জোট সরকার ঘোষণা দিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণা সংবিধানে নেই- কাজেই তারা সংবিধানের বাইরে গিয়ে অন্য কোনোভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন না। উল্লেখ্য, দেশের সুপ্রিমকোর্টের এক রায়ের নির্দেশনার কারণে সে সময়ে শেখ হাসিনার সরকার সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণা উঠিয়ে দিয়েছিলেন। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার তৎকালীন সরকার বা আওয়ামী লীগকে অ্যাবসোলুটলি দায়ী করাও কতটা উচিত তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। আদালতের নির্দেশনা না মানলে অনেক সময় সরকারকেও বেকায়দায় পড়ে যেতে হয়, এমনকি একটি সরকার ক্ষমতাচ্যুতও হতে পারে। যাই হোক ওই সময়ে নির্বাচনকালে শেখ হাসিনা বিএনপি জোটকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়ে নির্বাচনের সময় প্রয়োজনে একটি অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির প্রতিনিধি রাখা, এমনকি সেই সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পর্যন্ত বিএনপিকে দিতে চেয়েছিলেন। বিএনপি সেদিন কোনোক্রমেই নির্বাচনে যেতে রাজি হয়নি। তাদের বক্তব্য ছিল শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। কারণ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপি করে যে কোনোভাবে বিএনপি জোটকে হারিয়ে দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসবে। আমার মনে হয় বিএনপির এ ধারণাটিই ছিল ভুল।১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু সামরিক শাসনের মধ্যেই নির্বাচন করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে ওই সময় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল; আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৯৮টি আসন। জনগণ সঙ্গে না থাকলে ক্ষমতায় থেকেও নির্বাচন করে যে জয়লাভ করা যায় না এর বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি এমনকি শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও অনেকেই ধারণা করেন যে ওই নির্বাচনে বিএনপি জোট সরকার গঠন করলেও করতে পারত; আজকের মতো সংসদে তাদের অন্তত অস্তিত্বহীন হতে হতো না।যাই হোক ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বিএনপি এক পর্যায়ে অবরোধ, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ের পথ থেকে সরে এসে ২০১৪ সালে ৮/১০ মাস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিয়েছিল বলে মনে হয়েছিল। এতে জনগণের সাড়াও মিলছিল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ওই সময়ে ঢাকার বাইরে যে কয়েকটি জনসভা করেছিলেন সেসব সভায় লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। হঠাৎ করে এ বছর ৫ জানুয়ারি অর্থাৎ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বা সরকারের এক বছর পূর্তির কিছুদিন আগে থেকে বিএনপির কিছু নেতা বলতে শুরু করলেন ৫ জানুয়ারি তারা ঢাকায় সমাবেশ করবেন এবং ওইদিনই হবে সরকারের সঙ্গে 'শেষ খেলা'। শেষ খেলা কী তা আমরা জানি না। তবে ১৩ জানুয়ারি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় সৈয়দ বোরহান কবীর 'একটি নীলনকশার অপমৃত্যু...' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এখানে লেখক কিছু তথ্য-বিশ্লেষণ দিয়েছেন। সৈয়দ বোরহানের বিশ্লেষণকে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন।বিএনপির এই জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির বিরুদ্ধে সরকার এখন যে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে তার বীজ বিএনপির ভুল রাজনীতির মধ্যেই নিহিত। আমার মনে হয় ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়া একটি বড় ভুল করেছিলেন, তিনি ক্ষমতার লঞ্চে চড়ার একটি সুযোগ হারিয়েছিলেন। এরপরও বিএনপি সংগঠন গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিয়ে জনসম্পৃক্তি বাড়িয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধাপে ধাপে আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে গেলে কিংবা প্রয়োজনে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা মাথায় রাখলে তারা ভালো করতেন। আওয়ামী লীগও কিন্তু একটানা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেছে। তারা তখন সংগঠন, আন্দোলন, জনসম্পৃক্তি, কৌশল- এগুলো নিয়েই মাঠে থেকেছে এবং এক পর্যায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে এসেছে। আমার ধারণা, বিএনপি চলছে উল্টা পথে। জনগণকে কষ্ট দিয়ে কিংবা জিম্মি করে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি আগের মতো এখন আর সহজ বলে মনে হয় না। এসব করলে জনগণ থেকে দলটি হয়তো আরও বিচ্ছিন্ন হয়েই পড়বে। ফলে তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার নিশানাটিও আরও দূরে সরে যাবে।একটি গল্প বলে লেখাটি শেষ করি। কয়েক দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুবর বিএনপির বর্তমান কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে একটি গল্প এভাবেই বলছিলেন যে, বরিশাল এলাকার এক যাত্রী একবার ঢাকায় আসার জন্য লঞ্চে চড়ার চেষ্টা করেও লঞ্চে উঠতে পারেননি। লঞ্চটি যখন অন্য যাত্রী উঠিয়ে নদীর তীর ছেড়ে যাত্রা করার জন্য দূরে সরে যাচ্ছে তখন ওই যাত্রী তাড়াহুড়া করে লঞ্চে ওঠার জন্য তার পায়ের স্যান্ডেল (পঞ্চ)সহ কাদায় নেমে পড়েছেন। ফলে একসময় কাদায় তার পঞ্চটি আলগাভাবে আটকে গেছে। লঞ্চটি ইতিমধ্যে মাঝনদীর দিকে সরে গিয়ে তার গন্তব্যে চলতে আরম্ভ করেছে। ভদ্রলোক সে সময় ফ্যাল ফ্যাল করে লঞ্চটির দিকে তাকিয়ে আছেন আর ভাবছেন লঞ্চটি একটুর জন্য ফেল করলাম। এর মধ্যে জোয়ারে পানি বেড়ে তার পায়ের পঞ্চটিও ভেসে উঠেছে এবং জোয়ারের পানি তা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভদ্রলোক এক পর্যায়ে সম্বিত ফিরে জোয়ারে ভেসে যাওয়া পঞ্চের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলছেন, হায়রে মোর লঞ্চও গেল পঞ্চও গেল।অনেকের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার বা ক্ষমতার একটি বড় অংশী বা অনুঘটক থাকার একটি বিশাল সুযোগ হারিয়েছে। আবারও বিএনপি যদি একইভাবে জনবিচ্ছিন্ন এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন সব সমন্বয়হীন, অপরিকল্পিত, জনঅতিষ্ঠ কর্মসূচি দিতে থাকে তাহলে দল হিসেবেও ভবিষ্যতে বিএনপির জনভিত্তি এবং জনপ্রিয়তা একসময় কমে আসবে; একসময় হয়তো তা একবারেই উবে যাবে। বিএনপিকে তখন যেন বলতে না হয়, হায়রে আমার 'লঞ্চও গেল সঙ্গে পঞ্চও গেল'। বিএনপির মতো এত বড় একটি দল তারা যেন ভুলে না যায় যে, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষকে পুুুড়িয়ে মেরে এবং কষ্ট দিয়ে মহৎ কোনো উদ্দেশ্য সাধন করা যায় না। (কলাম লেখক: ড. শেখ আবদুস সালাম, বাংলাদেশ প্রতিদিন)
false
ij
পৌষ বন্দনা_ ভোরে, কুয়াশায়___ বছরের শেষের এই শীত-শীত কুয়াশা-কুয়াশা সময়টার জন্য অপেক্ষা করি। যখন ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে ভোরগুলি, শহরের দালানকোঠা। আমার যদিও বাঙালি কবির স্বভাব: ভালো লাগে জুনের অঝোর বৃষ্টি, ব্যঙের ডাক, মেঘলা দিন- তবু কুয়াশার ভোরে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটার জন্য আজও অপেক্ষায় থাকি পৌষের। আমার স্বভাবে প্রখর কুঁড়োমি থাকলেও পৌষের খুব ভোরে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ি। শান্তিনগর মোড়ের কাছাকাছি বাড়ি। এও এক বিরল সৌভাগ্য। যেহেতু বেইলী রোডটা খুব কাছে। বেইলী রোড দিয়ে দিয়ে হেঁটে গেলেই রমনা পার্ক। অমন সুন্দর ঘাস ও গাছপালাময় নির্জন স্থান ঢাকায় ক’টি আছে বলুন? এখন তো ওই নিভৃত স্থানটিও ভিড়ের দখলে চলে গেছে! অথচ আমাদের ছেলেবেলায় অত ভিড়ভাট্টা ছিল না। ছেলেবেলায় রমনা পার্কে কত বার যে গিয়েছি। তখন তো এত কড়াকড়ি ছিল না। পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে রমনা পার্কে যেতাম।ভোরে কি বিকেলে। আমি ১৯৮০-৮১ সালের কথা বলছি। ফুটবল খেলতাম। কখনও ক্রিকেট। কাজেই পার্কটির ঘাস, গাছপালা ও কৃত্রিম হ্রদটি আমার শৈশবের স্মৃতিতে একাকার। পৌষের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে পার্কটিকে অন্যরুপে আবিস্কার করি অবশ্য আরও পরে। আমার তরুণ বয়েসে। লক্ষ্য করেছি-আমার স্পর্শকাতর মনে কবিতার উন্মেষের পর পৌষের ধোঁয়াটে কুয়াশার ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকা রমনা পার্কের গাছগুলি আমার কাছে হয়ে ওঠে গভীর ইঙ্গিতময়। আমার স্বভাবে প্রখর কুঁড়োমি থাকলেও তরুণ বয়েস থেকেই পৌষের ভোরে উঠে চলে যাই পার্কে। আজ ৮ পৌষ। ১৪১৫। বহুতল থেকে গুটিগুটি পায়ে যখন বেড়িয়েছি তখন ঠিক ছটা। বেরুতেই শীতেরা ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমার চল্লিশ বছর বয়েসী হাড়গুলি আর্তনাদ করে ওঠে। ভীষন অস্বস্তি আর যন্ত্রণা টের পাই। আমার আমি জানি, আর কিছুক্ষণ হাঁটার পর অত শীত লাগবে না। দ্রুত হাঁটতে থাকি। অন্ধকার অন্ধকার রাস্তা । কুয়াশা। শান্তিনগর মোড়টা নির্জন। ডাইনে বেইলী রোড। ফিরব বেইলী রোড দিয়ে। এখন আমি কাকরাইলের দিকে হাঁটছি। দ্রুত । পেট্রলের গন্ধ পাই। একটা বাস আসছে। তার মৃদু গুঞ্জন। হলুদ আলো। কুয়াশার ভিতরে। পকেটে হাত ঢোকই। ফাকা পকেট। মোবাইল ও এম পি থ্রি প্লেয়ারটা নিইনি। ইচ্ছে করেই। নাঃ, ভোরে হাঁটতে বেড়িয়ে গান শুনব না। বরং আশেপাশের কুয়াশায় চোখ রাখব; চোখ রাখব রাস্তায়, ফুটপাতে, ভিজে দেওয়ালে। রাস্তা পাড় হই। বাসটা চলে যায় মালিবাগে দিকে। বাতাসের ঝাপটা আর পেট্রলের গন্ধ পেলাম। আমার পায়ে বাটার কালো রঙের শস্তা কেডস। বঙ্গবাজারের জিন্স। নীলাভ পুলভার। চশমায় মিহিন বাষ্প। দৃষ্টিপথ তাই ঝাপসা। হোক। এই ভোরে সবটা দেখতে চাইনা। এই পথে স্কুলে যেতাম। ছেলেবেলায়। জলখাবার। শাহ্ আলমদের তিনতলা বাড়িটা। এক তলায় পপেল ভাইরা থাকত। লাল রঙের সাইকেল ছিল পপেল ভাইয়ের। আমি ওই সাইকেলটার লোভে প্রায়ই বিকেলে পপেল ভাইদের বাড়িতে চলে যেতাম। ডানে কর্নফুলি গার্ডেন সিটি। বিশাল বহুতল। কেমন নিথর। এই ভোরে সাদেক হোসেন খোকার এক নারীকর্মী ঝারু দিয়ে ঝার দিচ্ছে । নারীকর্মীর পরনে নীল ইউনিফর্ম। কখন এদের ভোর শুরু হয়? এরই মধ্যে চা খাওয়া শেষ? রাস্তার পাশে একটা পুলিশের ভ্যান থেমে আছে। একটা মেয়ে। শ্যামলা। একুশ/বাইশ বছর মনে হল। হাত নেড়ে কী যেন বোঝাচ্ছে। কান পাতলাম। “রামপুরা” শব্দটা কানে এল। যৌনকর্মী? আমি মুখ ফিরিয়ে নিই। কাকরাইর মোড়ে এক বাস থেমে আছে। পেট্রলের গন্ধটা ঘন। ইশা খাঁ হোটেলের কয়েকটা জ্বানালায় আলো। কোন্ মডেলের ঘুম ভাঙল কে জানে! এদের ভোরবেলা পুলিশের সঙ্গে বার্গিনিং করতে হয় না। এদের পয়সাওলা ক্লায়েন্টদের পুলিশেরা ঘাটে না। যত বিপত্তি রাস্তায় মেয়েদের। রাস্তা পাড় হই। ডানে উইলস লিটল ফ্লওয়ার স্কুল। কারা যেন পাতা পুড়িয়েছে। তার তীব্র গন্ধ। আমার কান্না পায়। মাধব । মাধব। আমি ওই স্কুলে পড়তাম। মাধবরা স্কুলের ভিতরে থাকত সেই পুরনো দোতলা বাড়িটায় । মাধবের সঙ্গে খেলতাম। চুরাশিতে পাস করে বেরিয়েছি। পুরনো স্কুলে অনেকেই যায় পুরনো স্মৃতির টানে। কায়েস স্যার সুইসাইড করার পর আমি আর যাইনি। স্কুলটার সামনে এলে অস্বস্তি লাগে। আমি দ্রুত হাঁটতে থাকি। বাঁয়ে কাকরাইল চার্চ। এই ভোরে ওখানে কী রহস্য লুকিয়ে কে জানে। যিশু কি সত্যি আসবেন? মোম জ্বালিয়ে কেউ ওখানে একখানা প্রাচীন পান্ডুলিপির ওপর ঝুঁকে আছে? আমি দ্রুত হাঁটছি। ঘড়িতে ছটা কুড়ি। আমার শরীরের রক্তে জন্মাবধি শর্করার আধিক্য। ইনফানটাইল ডায়াবেটিস। কুড়ি মিনিট ধরে হাঁটার ফলে তার কতটা সুরাহা হল কে জানে। টের পাচ্ছি ঘামছি। এবার বাঁয়ে মোড়। কাকরাইল মসজিদ। স্কুলে পড়ার সময় শুক্রবারের জুম্মার নামাজ পড়তে আসতাম ঐ মসজিদে। কাকরাইল মসজিদের ভিতরে ঢুকলে কেমন এক অনুভূতি হত। যেন সময় থমকে আছে। হাঁটছি। আমার সামনে একজন মাঝবয়েসী থলথলে মহিলা। কালো কেডস। সাদা সালোয়ার-কামিজ। নীল কার্ডিগেন।আমি কবি বলেই দূর্বল বোধ করি। চোখ চলে যায় মধ্যবয়েসী নিতম্বে। দ্রুত হাঁটছেন। ডায়াবেটিস? ফুটপাতে ভেজা পাতা। ডান পাশে পার্কের রেলিং। গাছ। ঘাসের গন্ধ পাই। অনেকেই এসেছে। হাঁটছে। নানা বয়েসি নারীপুরুষ। পার্কের ভিতরে একটা অতি সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। বৃদ্ধ দম্পতি। পাশাপাশি হাঁটছেন। বৃদ্ধের হাতে ছড়ি। বৃদ্ধার সাদা শাড়ি ইষৎ গোলাপী কার্ডিগেন। কী সুখ। কী সুখ। এমন জীবন ক’জনের হয়? এদের প্রণাম করব? থাক। আমি যে কবি এঁরা তো তা জানে না। আমি এদের দীর্ঘায়ূ প্রার্থনা করি। তবে কোনও নির্বিকার ঈশ্বরের কাছে নয়। পৌষের এই ভোরের কাছে। এই কুয়াশামাখা গাছগাছালির কাছে। সহসা পার্কের ভিতরে শিশিরমাখার ঘাসের গন্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। আর এরা আমায় ঘন করে ঘিরে ধরে। আমি সচেতন হয়ে উঠি। আমার মনে হয় ইউরোপের শীতার্ত পার্কগুলি কি ঠিক এই রকম? আমি কখনও ইউরোপ যাইনি। পৌষের এই ভোরের শীত-কুয়াশা আমায় ইউরোপ নিয়ে যায়। কেবল এদেশে তুষার ঝরে না। এও এক বিরল সৌভাগ্য। পৌষ তোমাকে প্রণাম। তুমি আমায় প্রতিবছর নতুন এক অনুভূতি দাও। পার্কের গেটের কাছে পৌঁছে যাই। গেটের ওপাশে গাড়ির ভিড়। অনেকগুলি পরিবার। শিশু, বালক-বালিকা। বুড়োবুড়ি। পার্ক থেকে বেরিয়ে রাস্তা পাড় হয়ে হাঁটতে থাকি। ৭টা বাজতে পনেরো মিনিট বাকি। বেইলী রোডের রাস্তায় এখন মোটামুটি ভিড়। অনেক পার্কে যাচ্ছে। ওদের ঘুম ভাঙ্গতে দেরী হয়ে গেছে। ওরা যখন পার্কে পৌঁছবে তখন সকাল ৭টা। ততক্ষণে আমি বাথরুমে। নগ্ন। গরম পানি ভরতি বালতি থেকে ধোঁওয়া উঠবে ... হাঁটছি। ফুটপাতে চা ওয়ালা। গামছা ঢাকা ভাপা পিঠে। চাদরমুড়ি লোকজন বসে যাচ্ছে। একটা দিনের শুরু। এখন আর অতটা অন্ধকার নেই। শীত আছে। ডান পাশে অনেকগুলি কুকুর। আমার শরীরে শিহরন বয়ে যায়। অনেকগুলি কুকুর মানেই আদিম হিঃস্রতা। বন্যতা।আমি নিরীশ্বরবাদী সেকুলার। তবে প্রার্থনায় বিশ্বাস করি। যে প্রার্থনা মানুষ গাছ ও পাখিদের জন্য। এই ভোরে এক প্রার্থনা উঠে আসে:পৃথিবীর সকল প্রাণি সুখি হোক। মঙ্গল লাভ করুক। অনেকটা এগিয়ে এসেছি। পিছনে তাকিয়ে দেখি কুকুরগুলি তখনও জটলা করে আছে। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৭
false
ij
ডাউনলোড করুন_ ইংরেজি Vocabulary-র ওপর দুটি ঝাক্কাস বই আজ ব্লগার সিউল রায়হান জানতে চাইলেন, আমার সংগ্রহে ইংরেজি ভোকাবুলারির ওপর ভালো বই আছে কি না। প্রায় প্রতিদিনই ইন্টারনেট থেকে নানাবিষয়ে বই ডাউনলোড করা আমার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে, বাছাই করে সেসব বই সহযোগী ব্লগারদের সুবিধার্থে আপলোডও করছি সামহোয়্যারে। সেসব বইয়ের মধ্যে ইংরেজি ভাষা চর্চার বইও রয়েছে।ইংরেজি ভাষার প্রতি আমার টান আশৈশব। তবে আজও ইংরেজি ভাষার সব শব্দ বা সব নিয়মকানুন যে জানি তাও না। এ যেন ক্রিকেট খেলার মতন, ১০০% নিয়মকানুন না জেনেও উপভোগ করা যায়। যা হোক। ইংরেজি ভাষার চর্চা এখনও চলছে। এখনও নেটে ইংরেজি ভাষার ওপর তেমন কোনও জম্পেশ বই পেলে ডাউনলোড করি। ব্লগার সিউল রায়হান এর কথায় হঠাৎই মনে পড়ল কিছুকাল আগে ইংরেজি ভোকাবুলারির ওপর দুটি ঝাক্কাস বই ডাউনলোড করেছিলাম।1 Guy Wellman The Heinemann English Wordbuilderএই বইটির বৈশিষ্ট্য -আমার মতে অতুলনীয়। লেখক জানেন শিক্ষার্থীদের কাছে কি করে ইংরেজি শব্দকে উপস্থাপন করতে হয়, বোঝার সুবিধার্থে কোথায় ছবি বা গ্রাফ তুলে দিতে হয়। বিষয় ভিত্তিক ইংরেজি ভোকাবুলারির ওপর বই যে এমন কার্যকরী হতে পারে জানা ছিল না। 2 Vocabulary 10000 ২য় বইটি ইংরেজি দশ হাজার শব্দ শেখার একটি বই! এটিও বেশ অভিনব। সম্ভবত কোনও চাইনিজ ছাত্র ইংরেজি শেখার জন্য দশ হাজার বাক্য লিখেছিল- এটি তারই নোট খাতা। সৌভাগ্যক্রমে সেটির ডাউনলোড লিঙ্ক পেয়ে গেছি। নেড়েচেড়ে দেখলাম বেশ কাজে লাগবে। তবে কয়েকটি বাক্যের নির্ভুলতা নিয়ে আমার সংশয় আছে। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। ভাবলাম বই দুটি আপলোড করে দিই। সঙ্গে ইংরেজি গ্রামারের একখানা বই ফ্রি দিলাম।Ruth Colman এর লেখা The Briefest English Grammar Ever! এই ইংরেজি গ্রামারের বইটি নাকি বিশ্বের সবচে ছোট গ্রামারের বই! সে কারণেই এই নাম। বেশ রঙচঙা বই। যারা ঢাউস সাদাকালো গ্রামারের বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত তারা এই ক্ষুদ্র বইখানায় চোখ বোলাতে পারেন। বই তিনটির ডাউনলোড লিঙ্ক The Heinemann English Wordbuilderhttp://www.mediafire.com/?1emzzuygho2 Vocabulary 10000 http://www.mediafire.com/?zkygjg42dez The Briefest English Grammar Ever!http://www.mediafire.com/?kzduakvozu2
false
rn
বাচঁতে হলে জানতে হবে -১৮ (আগের লেখা গুলোর লিংক দিলাম না।এখানে ১৯৪১থেকে১৯৬০সাল পর্যন্ত দেয়া হলো।বাকি গুলো পরে যথা সময়ে দেয়া হবে।এই তথ্য গুলো সংগ্রহ করতে আমার সাড়ে চার বছর সময় লেগেছে।অসংখ্য বই পড়তে হয়েছে।দিনের পর দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লাইব্রেরীতে থাকতে হয়েছে।কতদিন দুপুরে খাওয়া হয়নি।কিন্তু কেউ এই মূল্যবান তথ্য গুলো পড়তে চায় না।জানতে চায় না।খুব দুঃখ হয়!)১৯৪১সালবিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃ্ত্যু হয়।সর্বপ্রথম জীপ গাড়ি যুদ্ধ ক্ষেএে ব্যবহৃত হয়।১৯৪২সালগান্ধীর নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড় আন্দোলন শুরু হয়।এডিনবরায় প্রথম স্কেটিং ক্লাব পেতিষ্ঠিত করেন।বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান মুষ্টিযোদ্ধা মুহম্মদ আলী মার্কিন যুক্তরাষ্টে জন্ম গ্রহন করেন।১৯৪৩সালদুর্ভিক্ষে জয়নুল আবেদীন ধারাবাহিক ভাবে দুর্ভিক্ষের একাধিক চিএ স্কেচ করেন।হাওয়ার্ড ষ্টাউন্টন আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতা শুরু করেন।১৯৪৪সালএইকিন কম্পিউটার আবিষ্কার করেন।১৯৪৫সালকবি নির্মলেন্দু গুনের জন্ম।অবিভক্ত বাংলায় প্রথম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়।পটুয়াখালিতে রাখাইনদের জনসংখ্যা ছিল ২৫,০০০ জন।পারমানবিক বোমা আবিষ্কার হয়।হিটলার প্রচন্ড হতাশায় নিজের'ই গুলিতে আত্নহত্যা করেন।(৩০,এপ্রিল)ক্লার্ক ভবিষৎদ্বানী করেছিলেন- কৃএিম প্রান সৃষ্টি হবে ২০৬০ সালের মধ্যে,আরঅমরত্ব ঘটবে ২০৯০ সালে।১৯৪৬সালযুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে জার্মানির নুরেমবুর্গ শহরে গঠিত হয়, 'নুরেমবুর্গ ট্রাইবুনাল'।সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারনে বাংলাদেশের অনেক অবস্থাপন্ন হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যায়।UNESCO প্রতিষ্ঠিত হয়।(৪ নভেম্বর)১৯৪৭সালবাংলা দ্বিখন্ডিত হয়।পূর্ব পাকিস্তান নামে।ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।(১৫,আগষ্ট)ইংরেজরা বিদায় নেয়।ঢাকা মেডিকেল কলেজ নাসিং ইনষ্টিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।বাংলার প্রথম মহিলা পএিকা 'বেগম' কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।(২০জুলাই)১৯৪৮সালতাবলীগ জামাত বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হজরত মাওলানা ইউসূফ এর উপস্থিতিতে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে স্বল্প সংখ্যাক লোক নিয়ে যাএা শুরু করে।সেপ্টেম্বর মাসে জিন্নাহ মৃত্যুবরন করেন।দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ইংরেজরা প্যালেষ্টাইনকে ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়।ঢাকায় চারুকলা ইনষ্টিটিউট স্থাপিত হয়।বাংলাদেশে আনসার বাহিনী প্রতষ্ঠিত হয়।ধীরেন্দ্রনাথ দও বাংলাভাষা কে রাষ্টভাষা করার দাবী করেন।কিন্তু উর্দু কে পাকিস্তানের রাষ্টভাষা বলে ঘোষনা দেওয়া হয়।১৯৪৯সালবাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।(২৩ জুন)'বাংলাদেশ অবজার্ভার' ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত একটি ইংরেজী দৈনিক পএিকা।(১১ মার্চ)রাশিয়া পৃ্থিবীর দ্বিতীয় পারমানবিক অস্রধারী দেশ হয়ে উঠে।চীনে প্রথম কুংফু'র প্রতিযোগিতা মূলক খেলা অনুষ্ঠিত হয়।চীনে প্রজাতান্তিক বিপ্লব ঘটে।১৯৫০সালচিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর বিলোপ সাধনের পর পুন্যাহ উৎসব বিলুপ্ত হয়ে যায়।আদমজী জুটমিল স্থাপিত হয়।ঢাকা শহরে লোক সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ লক্ষ।মাদার তেরেসা মিশনারী অব চ্যারিটিজ প্রতিষ্ঠিত হয়।মংলা বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়।(১,ডিসেম্বর)তাইওয়ান জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে।অর্গন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরী বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করে।ইষ্ট বেঙ্গল ষ্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্ট- এর অধীনে জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটে।১৯৫১সালরাজীব গান্ধি নিহত হন।(২১ মে)মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা শুরু হয়।প্রথম বানজ্যিকভাবে সফল কম্পিউটারের আর্বিভাব হয়।বাংলাদেশ পাট গবেষনা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।জে.এল.পিয়ার্সন সর্বপ্রথম কার্যকর সৌরকষ উৎপাদন করে।পূর্ব পাকিস্তানে কার্পেট তৈরির কাজে ৬৭৪ টি এন্টার প্রাইজ ছিল।১৯৫২সালভিকারুননিসা নুন স্কুল ও কলেজ ঢাকার বেইলী রোডে প্রতিষ্ঠিত হয়।আশরাফ আলী থানবীর 'বেহেশতী জেওর' বাংলায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়।বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজবপন হয়।(২১ শে ফ্রেরুয়ারী মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে)ভারত সরকারের তও্বাবধানে পঞ্জিকার সর্বশেষ সংস্কার করা হয়।হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরন ঘটায় আমেরিকা।ওয়াক্সম্যান টেট্রাসাইক্লিন আবিষ্কার করেন।লিবিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।১৯৫৩সালরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।দৈনিক পঐিকা 'ইওেফাক' আন্তপ্রকাশ করে।নেপালি শেরপা তেনজিং প্রথম পা রাখেন হিমালয়ের পর্বত চূড়ায়।(২৯ মে)ঢাকায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি একটি কর্মসূচী চালু করে।প্রথম বিশ্ব শিশু দিবস উদযাপিত হয়।(৫ অক্টোবর)হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল আধুনিক চিকিৎসা ব্যাস্থার সুএপাত ঘটায়।১৯৫৪সালপ্রথম থাইল্যান্ড থেকে তেলাপিয়া মাছ প্রবর্তন করা হয়।মতিঝিল এলাকাকে বানিজ্যিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়।নিউ মাকেট নির্মান সম্পন্ন হয়।ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ চালু হয়।১৯৫৫সালবাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশে প্রথম গ্যাস ক্ষেএটি আবিষ্কৃত হয়।পথের প্যাঁচালি প্রথম পদর্শিত হয়।(সত্যজিৎ রায় পরিচালিত।)বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন মারা যান।চট্রগ্রামে বন গবেষনা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুক (এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম)প্রতি বছর বার্ষিকী হিসাবে সারা পৃ্থিবীর শ্রেষ্ঠ সংবাদ সংকলন প্রকাশ করে আসছে।ধানমন্ডি এলাকাটিকে একটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হয়।বুলবুল ললিতা কলা একাডেমী ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়।ডিজনি ল্যান্ড এর উদ্বোধন করা হয়।১৯৫৬সালপূর্ব বঙ্গের নাম পূর্ব পাকিস্তান করা হয়।মুখ ও মুখোশ বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচিএ।বাংলাভাষা কে মর্যাদা দেওয়া হয়।(২৩ মার্চ)একটি ছবি মুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে চলচিএের যাএা শুরু হয়।১৯৫৭সালওসামা বিন লাদেন এর জন্ম।(সৌদী আরব)বাংলাদেশে অরথম গ্যাস উওোলন করা হয়। রাশিয়ান স্পুটনিক মহাশুন্য নিক্ষিপ্ত হয়।রকেটের সাহায্যে কৃএিম উপগ্রহের মহাশুন্যে সম্ভব হয়েছে।১৯৫৮সালসামরিক আইন জারি হয় সমগ্র পাকিস্তানে।এফ.ডি.সি প্রতিষ্ঠিত হয়।NASA প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৫৯সালবিদুৎ উন্নয়ন বোর্ড পি ডি বি এর যাএা শুরু হয়।ঢাকায় একটি বৃহৎ মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বায়তুল মোকারম সোসাইটির নামে একটি সমিতি গঠন করা হয়।১৯৬০সালবাংলাদেশে নিউক্লিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়।দিদার সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।(কুমিল্লা)এিপুরার রাজার জমিদারি এলাকার নতুন নাম করন হয় কুমিল্লা।বাংলা একাডেমী পুরুস্কার প্রদান করা হয়।মেঘনা নদীর মোহনায় নোয়াখালির মাঝিরা 'নিঝুম দ্বীপ' আবিস্কার করেন।ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা এলাডেমীতে যোগদান করেন।ব্রাসিলিয়া নগর প্রতিষ্ঠিত হয়।ইন্দোনেশিয়ায় প্রশাসনিক পরিবর্তন শুরু হয়।
false
rn
শুভ বড় দিন মানে ঈসা মসীহের শুভ জন্মদিন শুভ বড় দিন মানে ঈসা মসীহের শুভ জন্মদিন। বেথলেহেমের গরীব কাঠুরের গোয়াল ঘরেই যীশু খ্রিস্টের জন্ম। কুমারী মেরির গর্ভে যীশু খ্রিস্টের জন্ম। ধর্মবিশ্বাস বলে, ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়’ মেরি কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ইসলাম ধর্মবিশ্বাসে তাকে হযরত ঈসা (আ.) বলা হয়। ইউসুফের সঙ্গে ঈসার মা মারিয়ামের বিয়ে ঠিক হয়েছিল।মারিয়ার স্বামী কাঠমিস্ত্রী যোসেফ ছিলেন যিশুর পালক পিতা মাত্র।রাতের বেলা বেথলেহেমের মাঠে ভেড়া চড়াচ্ছিল একদল রাখাল। যিশুর জন্মের পরপরই স্বর্গের দূতেরা এসে তাদের বলল, ওই গোয়ালঘরে তোমাদের উদ্ধারকর্তা জন্মেছেন, যাও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাও এবং ঈশ্বরের প্রশংসা করো। রাখালেরা তা-ই করল। যিশুর জন্মের পরপরই আকাশের বুকে ফুটে উঠেছিল একটি বিশেষ তারা। পূর্ব দেশের পণ্ডিতেরা সেই তারা দেখে বুঝতে পারলেন, পৃথিবীতে সেই মহান রাজার জন্ম হয়েছে, ঈশ্বর যাঁকে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মানবজাতির মুক্তির জন্য। পূর্ব দেশের তিন পণ্ডিত বহু দূর দেশ থেকে বেথলেহেমে রওনা হলেন তাঁদের রাজাধিরাজকে শ্রদ্ধা জানাতে।দেশের সব গির্জা ও অভিজাত হোটেল রঙিন বাতি আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বড়দিনের সাজে। মানবশান্তি ও মানবকল্যাণই এই দিনের মূল কথা।বড়দিন শুধু খ্রিস্টানদের উৎসব নয়, এ উৎসব সার্বজনীন, সবার। বাংলাদেশের মানুষ সহনশীল, অতিথিপরায়ণ। ঈদ-পূজা-বড়দিনে তারা সবাই একসঙ্গে আনন্দ করে। ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই আছে গির্জা। কক্সবাজরের প্রধান গির্জা বৈথনিয়া ব্যপস্টিস সহ জেলার প্রায় ১৫টি গির্জাতে রঙিন বাতি আর ফুল দিয়ে সাজানোর মধ্যো দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হবে বড়দিন। গির্জাগুলোতে সুন্দরভাবে লাল, নীল, সবুজ চিকচিকে স্টেইনসিল, সোনালি-রুপালী ছোট-বড় বল, তারা, চাঁদসহ বসানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। শহরের বিভিন্ন হোটেলগুলো সেজেছে আরও বর্ণময় সাজে।বড়দিন উৎসবের অন্যতম বিষয় হলো গৃহসজ্জা ও উপহার আদান-প্রদান। এদিনের উপহার হিসেবে কার্ড হলো এক প্রকারের চিত্রিত শুভেচ্ছাবার্তা। সাধারণত বড়দিনের পূবের্র সপ্তাহগুলোতে বন্ধুবান্ধব ও পারিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্রিসমাস কার্ড আদান-প্রদান চলে। চিরাচরিত শুভেচ্ছা বার্তার বাণীটি হলো ‘পবিত্র খ্রিস্টমাস ও শুভ নববষের্র শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন’।২৫ ডিসেম্বর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় যুক্তরাষ্ট্রেও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হবে ‘ক্রিসমাস ডে’। ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে হলেও ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকেই উৎসব শুরু হয়ে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রিসমাসের ছুটি শুরু হয় বেশ আগে থেকেই, অফিস ছুটি থাকে ২৪ থেকে নিউ ইয়ার পর্যন্ত। সারা আমেরিকা জুড়েই থাকে উৎসবের আমেজ।গীর্জায় ‘হলিমাস’-এর মাধ্যমে বড়দিনের অনুষ্ঠানমালার সূচনা ঘটেছে। বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি রেডিও এবং টিভি চ্যানেলসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকসমূহ বড়দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশ করবে। রাজধানীর পাঁচতারা হোটেল রূপসী বাংলা, সোনারগাঁও, রেডিসন, ওয়াটার গার্ডেন, ওয়েস্টিন ছাড়াও গুলশান-বনানীসহ অভিজাত এলাকার বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিশেষ লাঞ্চ, ডিনার ও শিশুদের ক্রিসমাস পার্টির আয়োজন করেছে।‘বড়দিন’ উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী। উত্সব উপলক্ষে উপাসনালয়, কবরস্থান ও বড়দিন উদযাপন অনুষ্ঠানের স্থানগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যীশু প্রায় ৩০ বছর অপরিচিতি ছিলেন কিন্তু ৩০ বছর বয়স থেকে মাত্র ৩ বছর তিনি প্রকাশ্যে কাজ করেছেন, শিক্ষা দিয়েছৈন, রোগী সুস্থ করেছেন, মৃতকে জীবন দিয়েছেন ফলে জগতে এমন প্রভাব রেখে গেছেন যা আর কারও পক্ষে কখনও সম্বব নয় এবং ছিলও না। তার শিক্ষা, সেবা ও জীবন যাপনের ধরণ সবই ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। খ্রিষ্টানদের প্রচারপত্রে মারিয়ামের যে স্বামীর কথা বলা হয়েছে, তা ডাহা মিথ্যা। কেননা কুরআনে ও হাদীছে সর্বত্র ঈসাকে ‘মারিয়ামপুত্র’ বলা হয়েছে। স্বামী থাকলে ঈসাকে তাঁর পিতার দিকেই সম্বন্ধ করা হ’ত।
false
rg
ইংলিশ ক্যাপ্টেন বাটলারের বাটপারি!!! লড়াই এবার মাঠে ও মাঠের বাইরে!!! ঘটনার শুরু ২৮তম ওভারের প্রথম বলে। বল করছিলেন তাসকিন আহমেদ। ওভারের প্রথম বলেই তাসকিন ইংলিশ ক্যাপ্টেন জোস বাটলারের বিপক্ষে এলবিডব্লিউ'র জোড়ালো আবেদন করেন। পাকিস্তানের আম্পায়ার আলিম ধর তাসকিনের আবেদনে সাড়া দেননি। টাইগার্স ক্যাপ্টেন মাশরাফি রিভিউ আবেদন করলেন। ঘটনা টিভি আম্পায়ার দক্ষিণ আফ্রিকার মারিয়াস ইরাসমাস বেশ কয়েকবার পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর বাটলারকে আউট ঘোষণা করলেন। ইংলিশদের স্কোর তখন ২৭.১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান। ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২২.৫ ওভারে আরো ১১৬ রান। আর বাংলাদেশের তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন আর মাত্র তিনটি উইকেট। ইংলিশ ক্যাপ্টেন জোস বাটলারকে টিভি আম্পায়ারের দেওয়া আউটের সিদ্ধান্তটি বাটলার মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। বাটলারের ধারণা ছিল, বলটি একটু হাইট বেশি ছিল। আর দলকে জেতানোর জন্য তাঁর ওই সময়ে খুব প্রয়োজনও ছিল। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭ রান (৫৭ বলে) বাটলারের ব্যাট থেকেই এসেছে। ইংলিশ ক্যাপ্টেনের মূল্যবান উইকেটটি পাওয়ার পর টাইগার্সদের উদযাপনকে হঠাৎ বাটলারের বাড়াবাড়ি রকমের মনে হয়েছে! তাই সে প‌্যাভেলিয়নের দিকে না হেঁটে পাগলা ষাড়ের মত রেগেমেগে উদযাপনরত টাইগার্সদের দিকেই হাঁটলেন। মাঠের দুই আম্পায়ার পাকিস্তানের আলিম ধর ও বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা বাটলারকে থামানোর চেষ্টা করলেন। টাইগার্স ক্যাপ্টেন মাশরাফি আর অপর ইংলিশ ব্যাটসম্যান ক্রিস ওকস ওই সময় উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে ঘটনা মিটমাট করে দিলেন। মাঠে বাটলারের নকরামির ঘটনা ওখানেই শেষ!কিন্তু খেলা শেষে বাংলাদেশের জয়ের পর ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমের সামনে দুই দলের খেলোয়াড়রা যখন হাত মেলাচ্ছিলেন, নতুন করে তখন আবার বেন স্টোকসের সঙ্গে লেগে গেল তামিম ইকবালের। সারি বেঁধে করমর্দন করে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই তামিম ইকবাল আর জনি বেয়ারস্টো'রের মধ্যে ঠোকাঠুকি লেগে গেল। কে কাকে কী বলেছিলেন তা টেলিভিশনে বা পরে ভিডিও দেখে ঠিক বোঝা যায়নি। কিন্তু ডেইলি মেইলসহ বেশ কিছু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, তামিম করমর্দন করার সময় জনি বেয়ারস্টোকে কিছু একটা বলেছেন। জনি বেয়ারস্টোরের পরেই ছিলেন বেন স্টোকস। তিনি হঠাৎ করেই কেন জানি ক্ষেপে গেলেন তামিমের ওপর। বেশ তেড়েফুঁড়ে গেলেন তামিমের দিকে। উক্তেজিত হয়ে কী যেন বললেন। পাল্টা জবাব দিলেন তামিম। ওই সময় সাকিব এসে দু'জনকেই আলাদা করে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলেন। এটা ছিল হারার পর ইংলিশদের দ্বিতীয়বার ফোঁসফোসানি! ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশ ক্যাপ্টেন জোস বাটলার মাঠের ঘটনাটি নিয়েই বেশি কথা বললেন। করমর্দনের সময়কার স্টোকস-তামিমের প্রসঙ্গটি কৌশলে এড়িয়ে গেলেন। কিন্তু আলাদাভাবে কয়েকটি ইংলিশ সংবাদমাধ্যমকে বাটলার মাঠৈর ওই ঘটনাটার জন্য বাংলাদেশের ‘সীমা ছাড়ানো’ উদ্‌যাপনকে দায়ী করেছেন! এছাড়া স্টোকস-তামিমের ঘটনা নিয়ে আলাদাভাবে বলেছেন, ‘বেন একটু আবেগপ্রবণ মানুষ। কিন্তু যদি ওখানে কিছু না হয়ে থাকে তাহলে সে ওইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাত না।’ কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি সংবাদ সম্মেলনে পুরো ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। মাশরাফি বলেন, "I was ahead in the line so I didn't see what happened. I can tell you after I find out." মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের পর নিজের টুইটারে বেন স্টোকস অবশ্য রীতিমতো হুংকার দিয়েছেন বাংলাদেশকে। টুইটারে স্টোকস লিখেছেন, "What I won't stand for is someone putting a shoulder to my teammate at handshakes," ‘জয়ের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন। ওরা আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে। কিন্তু আমার কোনো সতীর্থকে হাত মেলানোর সময় কঠিন কিছু বলা আমি একদমই মেনে নেব না।’ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফরে তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট খেলবে। ওয়ানডে-তে সিরিজে এখন সমতা। আগামী ১২ অক্টোবর বুধবার চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটি হবে। ওই ম্যাচটি এখন সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচ। এরপর চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট খেলে দুই দল আবার ঢাকায় ফিরবে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে হবে দ্বিতীয় টেস্ট। ইংলিশদের সঙ্গে টাইগার্সদের লড়াইটা যে এখন মাঠের বাইরেও গড়িয়েছে, এটাই এখন নতুন উক্তেজনা। লড়াই চলবে এখন মাঠে ও মাঠের বাইরেও। কাম অন গাইস, প্রীতি লতা-সূর্য সেনদের মাটিতে ইংলিশ বধের অপেক্ষায় আমরা। ......................................১০ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৪২
false
rg
বুক রিভিউ।। রেজা ঘটক বুক রিভিউ।। রেজা ঘটক আমার লেখালেখির বয়স প্রায় ২৫ বছর। এ পর্যন্ত শুধুমাত্র সৃজনশীল বই প্রকাশিত হয়েছে ৮/৯টি। মা, উপন্যাস, ২০১২ (আল-আমিন প্রকাশন, বইমেলায় স্টল নং ১৯৪, আমতলা) ছোটগল্প সংকলন ৪টি: বুনো বলেশ্বরী, পাঠসূত্র, ২০০৮ (বইমেলায় স্টল নং২২৫-২২৬) সোনার কঙ্কাল, বিবর্তন, ২০১০ (বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ১৯৪ নং স্টলে) সাধুসংঘ, আল-আমিন প্রকাশন, ২০১১ (বইমেলায় স্টল নং ১৯৪, আমতলা) ভূমিপুত্র, ২০১৩ (এ বছর মেলায় আসছে) শূন্য দশমিক শূন্য, সমালোচনা, ২০১১ (আল-আমিন প্রকাশন, বইমেলায় স্টল নং ১৯৪, আমতলা) গপ্পো টপ্পো না সত্যি, শিশুতোষ, ২০১১, জয়তী পাবলিকেশান, (বইমেলায় স্টল নং ২৮২) বয়োঃসন্ধিকাল, কিশোরগল্প, ২০০৫ ময়নার বয়স তেরো, শিশুতোষ, ২০০৩ বিগত ৯০ দশক ও শূন্য দশকের বাংলাদেশের যতো উদীয়মান লেখক, কবি, সাহিত্যিক, আর্টিস্ট, সমালোচক, গবেষক, সঙ্গীত শিল্পী এবং মিডিয়া ও কালচারাল পাড়ার মানুষজন, তাদের অনেকের সঙ্গেই আমার সখ্য, ভাব বিনিময়, আড্ডা, লেনদেন, খাট্টুস-খুট্টুস, পুটুস-পুটুস, এমনকি গলায় গলায় খাতির। নাম উল্লেখ না করেই একটি মনের কষ্ট না বলে আর পারছি না। আজ পর্যন্ত এরা কেউ আমার কোনো বইয়ের রিভিউ করলো না। আফসোস। মহা আফসোস। আমি নিজে অনেকের বইয়ের অনেক রিভিউ করেছি। এখনো কেউ বইয়ের রিভিউ করতে দিলে সানন্দে করে দেই। আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকের বইয়ের শুধুমাত্র বইমেলা চলাকালীন সময়েই একই বইয়ের অনেক রিভিউ বের হবে। মনের দুঃখ মনে রেখেই আমিও সেই রিভিউগুলো পড়ব। নিজের বোধবুদ্ধি দিয়ে নিজের পড়ার সঙ্গে সেই রিভিউ মেলানোর চেষ্টা করব। সেই রিভিউ-এর উদ্দেশ্য ও বিধেয় সম্পর্কে ভবিষ্যৎ ব্যাপার স্যাপার কী ঘটতে যাচ্ছে মনে মনে মিলিয়ে নেব। আর বায়বীয় মনের কষ্ট মনে পুষে আবারো নিজের লেখায় আরো মনযোগী হব। কারণ, মিডিয়া মুঘলদের কারবারীটা আমার পছন্দ নয়। কেউ কেউ বলেন, ওই মিঞা তোমার তো চোপার দোষ। কথা পেটে রাখতে পারো না। তেল মারতে পারো না। সম্পাদককে তোয়াজ করতে পারো না। সাহিত্যের রাজনীতির তুমি রোমাডাও জানো না। খাঁটি কথা। আমি সাহিত্য রচনা করতে চাই স্রেফ আমার নিজের মত করেই। সাহিত্যের রাজনীতি ওরাই করুক যাদের ওটা দরকারী। কিন্তু রেজা ঘটকের কোনো গল্প যে পাঠক একবার পড়বেন, তাকে আমার অন্য গল্প পড়ার প্রতি আগ্রহটা কোনো কুতুব আটকে দিতে পারবে না। এটা আমি খুব হলপ করেই বলতে পারি। কারণ, আমার গল্পগুলো একটু আলাদা। আমার গল্প বলার ভঙ্গি আলাদা। আমার বর্ণনা, গল্পকাঠামো, গল্পের পাত্র-পাত্রী আলাদা। গল্পের বিষয়-আশয় আলাদা। পাঠক আমার গল্পের নতুনত্বের প্রতিই আরো আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেখানে আমার কোনো বাহাদুরী নেই। আমার জীবদ্দশায় কোনো বইয়ের রিভিউ যে হবে না এটাও আমি জানি। এটা আরেকটা আফসোস। অথচ যাদের পেছনে আমি আমার ৪৩ বছরের হাজার হাজার মুহূর্ত ব্যয় করেছি, যাদের সঙ্গে শুধু সাহিত্য নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টার খরচ করেছি, যাদের সঙ্গে গল্প নিয়ে, গল্পের অনুসঙ্গ নিয়ে বছরের পর বছর আমার চিলেকোঠার ব্যাচেলর বাসায় সন্ধ্যার মাতাল হাওয়ায় বৈরাগী মনের কৈবর্তকাল কাটিয়েছি, এরা কেউ আমার গল্পের কোরো রিভিউ করলো না। অথচ এরা সবাই আমার বন্ধু। আমার গল্পের কেউ এরা বন্ধু নয়। হায়!!! এ বছর আমি ঠিক করেছি, নিজের বইয়ের নিজে রিভিউ করব। সমালোচনার তুরিতে আমার লেখালেখির বারোটা বাজিয়ে দেব। দেখি, কোন কোন বন্ধু আমার সেই দশা দেখে মুখ টিপে হাসে। তখন সেই হাসিতে আমি নতুন কোনো ট্যাক্স বসাব। এটা আমি ঘোষণা দিয়েই রাখলাম। আমার বই যারা কিনবেন, না পড়লে টাকা নষ্ট করবেন না ভাই, প্লিজ। শুধু পড়ার জন্যে যদি আমার বই কিনতে চান, তাহলে আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়া শোনার অধিকার জীবদ্দশায় এই অধমেরও থাকা উচিত বলে মনে করি। কতো অধিকার যে পৃথিবীতে আছে? আহা অধিকার। বন্ধুরা বইয়ের রিভিউ করবে না, সেই অধিকার কী সংবিধানে পাস হয়েছে? আপনারা কেউ জানেন নাকি? ভাই আওয়াজ দেন.... সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪৯
false
rg
গুলশানের জঙ্গী হামলার ঘটনায় মিডিয়া জঙ্গীদের সহযোগী হিসাবে কাজ করেছে!! গতকাল রাতে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সশস্ত্র জঙ্গী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের মিডিয়া আবারো নতুন করে যে সংশয় সৃষ্টি করলো, সেটি এখনই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার নেবার সময় হয়েছে। প্রকারন্তরে বাংলাদেশের মিডিয়া গতকালকের ঘটনায় জঙ্গীদের সরাসরি সহযোগিতায় মেতে উঠেছিল। সেই মেতে ওঠার পেছনে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও ছিল, আবার নিজেদের আরটিপি রেট বাড়ানোর উদ্দেশ্যের পাশাপাশি, বিদেশী বুর্জোয়া মিডিয়ার কাছে ফুটেজ বিক্রি'র ব্যবসাও লুকিয়ে ছিল। প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো জঙ্গীদের জন্য বাইরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোথায় কীভাবে অবস্থান তার একেবারে নিখুত বর্ণনা দিয়ে এমনভাবে সহযোগিতা করছিল যে, সাংবাদিকতার ন্যূনতম ইথিক্স এরা মোটেও পালন করেনি। হয় এরা আদৌ বুঝতেই পারেনি যে তাদের এই সরাসরি সম্প্রচার সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে জঙ্গীদের, অথবা এরা ইচ্ছাকৃতভাবেই বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে বাংলাদেশের জঙ্গীদের অবস্থা প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। সেই সুযোগ নিয়ে সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা মেতে উঠেছিল বাংলাদেশে জঙ্গী রয়েছে সেই ঘোষণায়। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিদেশী এসব সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়াগুলো'র কাছে ফুটেজ বিক্রি'র ব্যবসা করে, সেই ঘটনা মোটেও পুরনো নয়। গতকাল রাতেও কয়েকটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল ফুটেজ বিক্রি'র প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। ভালো করে খোঁজ নিলে তা বেরিয়ে আসবে!গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি একটি স্প‌্যানিশ রেস্তোরা। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশীদের খুবই প্রিয় একটি রেস্ট্রুরেন্ট এটি। সশস্ত্র জঙ্গীরা রাত পৌনে নয়টায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে রেস্তোরায় থাকা সবাইকে জিম্মি করে। গুলশান নর্থ এভিনিউ থেকে ৭৯ নম্বর সড়কের একেবারে মাথায় গুলশান লেকের পাড়ে হোলি আর্টিজান বেকারির অবস্থান। যার দক্ষিণ ও উত্তর পাশে নর্ডিক ক্লাব, ৭৯ নম্বর সড়কের শুরুতে রাশিয়ান অ্যাম্বাসি, তারপর কাতার অ্যাম্বাসি, কাতার অ্যাম্বাসির উল্টোপাশে ডাচ ক্লাব (নেদারল্যান্ড রিক্রিয়েশান সেন্টার), ডানপাশে ইরানি অ্যাম্বাসি, ঠিক পেছনের ৮৪ নম্বর সড়কের উত্তর পাশে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন ও দক্ষিণ পাশে জার্মান অ্যাম্বাসি, তারপর সৌদি অ্যাম্বাসি, তারপর পোল্যান্ড অ্যাম্বাসি। হোলি আর্টিজান বেকারির পূর্বপাশে গুলশান লেক। কিন্তু ৭৯ নম্বর সড়ক দিয়ে লেকের পাড়ে যাওয়া যায় না। ওটা অনেকটা কানা গলি। আবার উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৭৫ নম্বর সড়ক দিয়ে সোজা উত্তর দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে গেলে সেখান থেকে লেকের পাড়ে যাওয়া যায়। অর্থ্যাৎ গুলশানের ঠিক যে জায়গায় হোলি আর্টিজান বেকারির অবস্থান, সেখানে যাওয়ার অনেক উপায় আছে। ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছনে বারিধারা ডিওএইচএস যাবার মুখে পুলিশের চেক পয়েন্ট রয়েছে। আবার গুলশান লেকের ব্রিজের গোরায় বারিধারার জাতিসংঘ সড়কের সামনে পুলিশের চেক পয়েন্ট রয়েছে। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলশান লেকের পাড়ের রাস্তা দিয়ে অনায়াসে পুলিশের চেক পয়েন্ট এরিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে সক্ষম। আবার গুলশান মেইন রোড দিয়ে গুলশান নর্থ এভিনিউ ধরে ৭৯ নম্বর সড়ক দিয়েও পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া বিচিত্র কিছু না। কারণ ৯০ নম্বর সড়কের মুখ থেকে রিক্সায় করে পুলিশের নজরদারি এরিয়েও ওদিকে যাওয়া বিচিত্র কিছু না। প্রতিটি অ্যাম্বাসির সামনে যে সকল পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন, সাধারণত তারা কেউ পথচারীদের চেক করেন না। কেবলমাত্র টহল পুলিশ ও পুলিশের চেক পয়েন্ট এরিয়ে ওই ঘটনাস্থলে জঙ্গীদের পৌঁছানোটা একেবারে তাই মামুলি ব্যাপার। আর জঙ্গীরা সেই সুযোগটি নিয়েছে। সাধারণত জঙ্গীরা কোথাও কোনো অপারেশান করার আগে ঘটনাস্থল ভালো করে বেশ কয়েকবার রেকি করে নেয়। আর গতকালকের ঘটনায় জঙ্গীরা কোনো ধরনের বাধা না পেরিয়ে রেস্তোরায় পৌঁছানোর মানে হলো তারা সফলভাবে সশস্ত্র অবস্থায় সেখানে পৌঁছাতে পেরেছিল। যে চারজন জাপানিকে ওই রেস্তোরায় নামিয়ে দিয়ে বাইরে তাদের গাড়ির ড্রাইভার অপেক্ষা করছিলেন, তিনিই প্রথম জঙ্গীদের হামলার শিকারে পড়েন। কারণ জঙ্গীরা রেস্তোরায় ঢোকার মুহূর্তে গোলাগুলি করেছে। পাশের রাস্তার টহল পুলিশ ওই ড্রাইভারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সেদিকে গেলে তারাও জঙ্গীদের হামলার শিকার হন। তারপর ঘটনাস্থলে যায় থানা পুলিশ। ঘটনার শুরু রাত পৌনে নয়টায়। তারমানে ঘটনাস্থলে গুলশান থানার পুলিশের যেতে আরো পনের থেকে বিশ মিনিট লেগেছে। ততক্ষণে রেস্তোরার ভেতরে অবস্থিত সবাই জঙ্গীদের কাছে জিম্মি। প্রথম গোলাগুলির সময় রেস্তোরার বাইরে জাপানিদের ড্রাইভার গুলিবিদ্ধ হন। পরে পুলিশ যে ভুলটি করেছে, পুলিশ নরমাল ওয়েতে সেখানে গিয়ে অনেকটা নাটকে অভিনয় করার মত সবাইকে কাছে গিয়ে বলেছে যে, ভেতরে যারা আছেন বাইরে বেরিয়ে আসেন! জঙ্গীরা সেই সুযোগে বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করেছে। যে কারণে পুলিশের সেই দলের প্রায় সবাই আহত হয়েছেন। সেই দলের একেবারে সামনের দিকের সদস্য বনানী থানা'র ওসি সালাউদ্দিন ও ডিবি'র এসি রবিউল গুরুতর আহত হন। পরে ওনারা হাসাপাতালে মারা যান। পুলিশ আসলে ধারণাই করতে পারেনি যে জঙ্গীরা এতোটা সংগঠিত। শুরুতে পুলিশের ভুলটা সেখানেই হয়েছে। এরপর ঘটনাস্থলে যথারীতি মিডিয়া হাজির হয়েছে। কোনো কোনো প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল দেখানো শুরু করেছে বাইরে কোথায় কীভাবে পুলিশ র্যাব অবস্থান নিয়েছে, পুলিশের কতজন আহত হয়েছে, কতজন নিহত হয়েছে ইতাদি। এসব ঘটনা জঙ্গীরা রেস্তোরার টেলিভিশনে দেখেছে। অথবা তাদের মোবাইল ফোনে দেখেছে। কারণ জঙ্গীদের সঙ্গে ইন্টারনেট কানেকশান ছিল। তারা ভেতর থেকে ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট পর্যন্ত করেছে!র্যাবের মহাপরিচালক মিস্টার বেনজীর আহমেদ যখন মিডিয়ার কাছে অনুরোধ করলেন, তারপরেও কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল তা মানেনি। বরং তারা ঘটনাস্থলের নিখুত বর্ণনা দিচ্ছিল। কোথায় কীভাবে নিরাপত্তা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে, তারা কতোটা সাঁজোয়া, কতোটা সুসজ্জিত, এসব এরা বর্ণনা করেছে। যা একটি সফল অপারেশানের জন্য জঘন্য অপরাধ। কারণ এতে করে জঙ্গীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সব ধরনের কৌশল সম্পর্কে আগেই ধারণা পাচ্ছিল এসব মিডিয়ার কল্যাণে। পুলিশের এখন খতিয়ে দেখা উচিত গতকাল রাতে কোন কোন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন, বিবিসি ও আল-জাজিরার কাছে সরাসরি সম্প্রচারের ফুটেজ বিক্রি করেছে! মিডিয়া এই ঘটনায় এভাবে ইনভলভ না হলে সেনাবাহিনী'র পরিচালিত অপারেশান থান্ডার বোল্ট আরো আগেই পরিচালনা করা সম্ভব হতো। এমন কী অপারেশানের আগে যখন মিডিয়ার লোকজনকে আরো দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখনও এরা প্রচার করতে ছিল, গুলশান লেক দিয়ে নৌবাহিনী'র কমান্ডো টিম কীভাবে কোনদিকে যাচ্ছে! এসব মিডিয়ার কার্যকলাপ মূলত জঙ্গীদের আলটিমেটলি হেলপ করেছে। মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্যের কারণে জঙ্গীদের যে এসকেপ করার আর কোনো সুযোগ নেই, এটা যখন ওরা বুঝতে পেরেছে, তখন ওরা খুন করতে মেতে উঠেছে! যে কারণে গতকালকের জঙ্গী হামলার ঘটনায় আমাদের মিডিয়া পরোক্ষভাবে জঙ্গীদের ভয়ংকরভাবে সহযোগিতা করেছে। যা সাংবাদিকতার কোনো ইথিক্সে পড়ে না। সরকারের উচিত, যে সকল মিডিয়া নিরাপত্তা বাহিনীর অনুরোধ স্বত্ত্বেও এই অপকর্মটি কনটিনিউ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোন অনুষ্ঠান এরা লাইভ টেলিকাস্ট করতে পারবে, সেজন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন করা। গতকালকের ঘটনায় বাংলাদেশের মিডিয়া সুস্পষ্টভাবে জঙ্গীদের সহযোগিতা করেছে। যার সকল ফুটেজ এবং নিউজ পুলিশ ইচ্ছে করলেই এখনো উদ্ধার করতে পারবে! যে মিডিয়া আমাদের রাষ্ট্রের জন্য হুমকি, যে মিডিয়া রাষ্ট্রীয় অনুরোধ উপেক্ষা করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহযোগী হয়ে জঙ্গীদের সহযোগিতা করে, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু সুস্পষ্ট। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো যারা বাংলাদেশে আইএস আছে অযুহাতে সহযোগিতার নামে ঢাকায় তাদের সৈন্য পাঠাতে একপায়ে খাঁড়া, তাদের পার্পাস সার্প করেছে আমাদের এসব তথাকথিত অশিক্ষিত মিডিয়া। এদের এখনই বিচারের আওতায় আনা উচিত। নইলে এরাই বাংলাদেশের জন্য মরণ ফাঁদ তৈরি করার জন্য অপেক্ষা করছে। এরা জঙ্গীদের কীভাবে সহযোগিতা করছে, নিজেরাই হয় জানে না নতুবা টাকার বিনিময়ে এরা এই এজেন্ডা নিয়েছে। ধিক বাংলাদেশের অশিক্ষিত মিডিয়ার হলুদ সাংবাদিকতা। ধিক জঙ্গীদের সহযোগীদের, শতধিক!!..............................২ জুলাই ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩
false
hm
ইসলামাবাদে বোমা হামলা জেনারেল পারভেজ মুশাররফ গদি ছাড়তে না ছাড়তেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন গণতন্ত্রোদ্ধারী বাহিনী পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়েছে পাকিস্তানে। দু'দলে গোলাগুলিও বিনিময় হয়েছে কিছু, যদিও তা নিয়ে দু'পক্ষই পড়ে কিল চুরি করছে। রাজধানী ইসলামাবাদে বোমাবাহী ট্রাক পার্লামেন্টভবনে হামলা করতে না পেরে উড়িয়ে দিয়েছে পাশের হোটেল ম্যারিয়ট। এবিসি নিউজের মার্ক করকোরানের স্মৃতিচারণ অনুযায়ী, হোটেল ম্যারিয়ট হচ্ছে পাকিস্তানে তথ্য কেনাকাটার অন্যতম স্থান, যে তথ্য সেখানে ক্ষমতার খেলাকে প্রতিমূহুর্তে প্রভাবিত করছে। ৯/১১ এর পর ম্যারিয়ট হয়ে পড়েছিলো মিডিয়ার আস্তানা, তার প্রতিটি রুম নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার মধ্যে একটা কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিলো, আর ২০০৪ থেকেই ম্যারিয়টের ওপর শুরু হয়েছে বোমা হামলা। ম্যারিয়ট ছিলো রাজনীতিক, কূটনীতিক, ওয়ারলর্ড, মাদকমোগল আর আইএসআইয়ের এজেন্টদের সম্মিলনস্থল। শনিবারে এক ট্রাক এসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ম্যারিয়টকে প্রায় ধ্বসিয়ে ছেড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রধান রেহমান মালিক জানিয়েছে, আজ সকাল সাড়ে নয়টা অব্দি ৫৩ জন নিহত এবং ২৬৬ জন আহত হয়েছে। আহত ও নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত ইভো জ্দারেকও রয়েছেন, ডেনমার্কের একজন কূটনীতিক হামলার পর নিখোঁজ হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই নিরাপত্তারক্ষী ও স্থানীয় মানুষ। মালিক আরো দাবি করেছে, হামলাকারী আত্মঘাতী আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলের লোক এবং সেই ট্রাকে ৬০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ছিলো। এক কৌতূহলোদ্দীপক ফুটেজও দেখিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, হোটেলের সিসিটিভি থেকে পাওয়া। সেখানে দেখলাম, একটা ট্রাক এসে হোটেলের ব্যারিয়ার ভেঙে ঢুকে থেমে গেলো, তার কিছুক্ষণ পর তাতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। নিরাপত্তাকর্মীরা ইতস্তত ছোটাছুটি করছে, একজন অগ্নিনির্বাপক এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বিস্ফোরণের দৃশ্য এই মিনিটখানেকের ফুটেজে নেই। বিবিসির পক্ষ থেকে আত্মঘাতী প্রাথমিক বিস্ফোরণ এবং পরবর্তী ধ্বংসস্তুপের ফুটেজ পাবেন এখানে। আকাশ থেকে নেয়া ধ্বংসযজ্ঞের ফুটেজ পাবেন এখানে। পাকিস্তানের বড় বড় নেতাদের নাকি ম্যারিয়টে সেদিন নৈশ আহারের পরিকল্পনা ছিলো। তারা বহাল তবিয়তেই আছে, মারা গেছেন নিরীহ মানুষ। পাকিস্তানীরা যে বিষবৃক্ষের বীজ নিজেরা বপন করেছে, লালন করেছে, রক্ষা করেছে এতদিন, সেই বিষবৃক্ষের ফল তাদের এখন ভোগ করতে হচ্ছে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাবেন কি না জানি না, তাঁদের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা। আজ আপনারা যে কয়েকটি লাশ চোখের সামনে রেখে কাঁদছেন, তেমনি লক্ষ লক্ষ লাশ চোখের সামনে রেখে আমরা কেঁদেছি। আপনারা তখন হন্তারক ছিলেন, এখনও সে ইতিহাসকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। দুনিয়া গোল। যে মৃতদেহ আমাদের মাটিতে পঁচে গলে মিশে গেছে, তা আপনাদের মাটিতে আবার ভেসে উঠছে।
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪১ ১. প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর চুল বড় করার একটা খায়েশ হয়েছিলো আমার। অনেকে বাগান করেন, কেউ কেউ পাখি পালেন, অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ পালেন আমাদের মাছপাগল হের রেহমান, কুকুরবিড়ালখরগোশও পালেন অনেকে, আমি চুল (মাথার) পোষার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমার সহপাঠী বা বন্ধুরা সবাই একে স্বাগতম জানাননি। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন এসে জানালেন, মাইক্রোস্কোপের নিচে মশাকে যেমন দেখায়, আমাকেও নাকি সেরকম দেখাচ্ছে। আরেক বন্ধুর সাথে একই রিকশায় চড়ে বাড়ি ফিরি, তিনি একদিন অভিযোগ করলেন, তার এক বন্ধু নাকি ফোন করে ঝাড়ি দিয়েছে, "তুই এত লম্বা কাউলা একটা মাইয়ার লগে প্রেম করস, আমাগো লগে আলাপ করায়া দ্যাস নাই ক্যা?" সেই বন্ধুর বন্ধুর বোধহয় গ্লুকোমা ছিলো, তা না হলে আমার হাফকাস্ত্রো দাড়ি কিভাবে তার নজর এড়িয়ে গেলো, সেটাও প্রশ্ন। তবে মাস দশেকের চেষ্টায় আমি চুলকে পোষ মানিয়ে ফেললাম। দুর্জনেরা আমাকে "কেশবৎ" বলে ব্যঙ্গ করার চেষ্টা করলেও গর্বের সাথে বলতে পারি, তাদের অনেকেরই মাথায় টাকের আভাস দেখা যাচ্ছিলো সেই সময়েই। সেইসব হিংসুকদের মুখে ছাই দিয়ে আমার চুল দিনকে দিন শনৈঃ শনৈঃ বৃদ্ধি পাচ্ছিলো পূর্বপুরুষের পূণ্যগুণে। তবে চুলকে পোষ মানাতে গিয়ে টের পাই, এরচেয়ে মাছ কিংবা খরগোশই ভালো ছিলো। শহরের ধূলিবহুল এলাকায় বাস করি বলে প্রায় রোজই শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করতে হতো। এছাড়া আমার মা এবং বোন মাঝে মাঝেই নানারকম ভেষজ গবেষণার জন্যে আমাকে গিনিপিগ হিসেবে বেছে নিতেন। শুক্রবার সকালে তাঁদের আবিষ্কৃত কোন একটি বিকটগন্ধী আরক আমাকে মাথায় মেখে বসে থাকতে হতো ঘন্টাখানেক। এতে আমার চুলের গুণবৃদ্ধি হলেও সংখ্যা হ্রাস পেতো, সেটা টের পেতাম হাড়ে হাড়ে। তৎকালীন বান্ধবী চুল নিয়ে তেমন আপত্তি করেননি, তবে মাঝে মাঝে টান দেয়ার চেষ্টা করতেন। চুল এবং দাড়ির সাথে রাত্রি জাগরণের রক্তচক্ষু যোগ হওয়ায় বিভিন্ন বিল দিতে গিয়ে ব্যাঙ্কে আমি অন্যায় সুবিধা নিতাম। একেবারে শেষ বর্ষে এসে জনৈক সদ্যযোগদানকারী প্রভাষক ছাড়া প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন শিক্ষক আমার মতো একজন নগণ্য ছাত্রের চুলের দৈর্ঘ্য নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করেননি। আমার দীর্ঘ ছয় বছরের সাধনা ধূলিস্যাৎ হয় শেষ টার্মের পরীক্ষা দেয়ার পর পর বান্দরবান-লোয়ার রাঙামাটিতে এক রোমহর্ষক ট্রেকযাত্রার বোনাস হিসেবে পাওয়া তীব্র ম্যালেরিয়ার সময়। এভাবে মানুষের মাথার চুল গোছা গোছা উঠে আসতে পারে, তা-ও আবার নিজের মাথা, না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। একেবারেই ব্যাঙ্করাপ্ট হবার আগেই আমার চুল বাটিছাঁট দিয়ে ফেলা হয়। একশো তিন থেকে একশো সাত ডিগ্রী জ্বরের মধ্যে থাকতাম বলে এ ব্যাপারে অসম্মতির সুযোগও তেমন একটা ছিলো না। ষোল কেজি হারানো ওজনের মধ্যে অন্তত এক কেজি চুলে ছিলো বলে আমার ধারণা। চুল হারানোর পর নিজেকে ওল্ড টেস্টামেন্টের শিমশোনের মতো মনে হতে লাগলো, তবে হাতের কাছে কোন দেলাইলা ছিলো না বলে আয়নায় অচেনা আমিকে দেখে বিরক্ত হওয়া ছাড়া গতি ছিলো না। এ ছাড়া পরিচিত লোকজন দেখেও চেনে না, ভাইয়ের বিয়েতে গিয়ে তার তুতো-শালিদের প্রশ্নের মুখে পড়লাম, হিমু ভাই আসে নাই কেন? ইচ্ছা করছিলো ধরে ... যাই হোক। যাই হোক, চাকরিবাকরি করি বাটিছাঁটা চুল নিয়ে, একদিন বিকেলে এক মার্কেটে দেখা হলো আমার সেই পুরনো কেশবিদ্বেষী প্রভাষকের সাথে। আমার মাথা দেখে তিনি রীতিমতো উলু দিয়ে উঠলেন। জানতে চাইলেন বস ধরে কেটে দিয়েছে কি না চুল। বিনয়ের সাথে বললাম, আমার চুল নিয়ে সময় নষ্ট করার মতো নির্বোধ বসের অধীনে চাকরি করি না। তিনি অগ্নিদৃষ্টি হেনে চলে গেলেন গটগটিয়ে। আমি চুল কেটে ফেলার পর লম্বাচুলো ছেলেপিলেদের দেখলে অসহ্য লাগতো। মনে হতো, বাটিছাঁট রুলজ। আমার ধারণা সত্যি প্রমাণ করে বছর কয়েকের মাথায় দেশ বাটিছাঁটদের দখলে চলে যায়। এই প্রবাসে এসে চুল ছাঁটার কাজে ইস্তফা দিয়েছি আবার। আজ থেকে দশ বছর আগে আমার মাথার চুলের ডেনসিটি দুইতিনগুণ ছিলো বলেই আমার ধারণা, অন্তত পুরনো ছবি দেখলে সেরকমই মনে হয়। তবে আয়নায় নিজের লম্বা চুল দেখে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়লাম সেদিন। আমার কাছের এক বন্ধু চুল ছাঁটার পর একদিন পথে আমাকে দেখে চমকে গিয়ে এ কথাটাই বলেছিলো, আমার ছোট চুল দেখে নাকি তার ছয় বছর আগের কথা মনে পড়ে গিয়ে নস্টালজিক লাগছিলো। হেসেছিলাম সেদিন, চুলও স্মৃতির মাইলস্টোন হয়ে থাকে জেনে। অনুভব করছি আবারও, কথাটা সত্যি। কেশবৎ হয়ে যেটা লস, তা হচ্ছে নাপিতের অভিজ্ঞতা না হওয়া। আবারও পড়ালেখা ফুরোলে হয়তো চুল ছাঁটাবো, তার আগে জার্মানির নরসুন্দরীদের ওপর কিছু লিখতে পারছি না। ২. সবজান্তাকে ধন্যবাদ। রাত জেগে বসে এতক্ষণ দেখলাম "লিটল ম্যানহাটান"। অপূর্ব লেগেছে। বহু বছর আগে একই রকম আপ্লুত হয়েছিলাম "দন হুয়ান দি মার্কো" আর "অ্যাডিক্টেড টু লাভ" দেখে। অনুচ্চকিত, ছিমছাম, কিন্তু খুব ছাপ ফেলা সিনেমা। যাঁদের দেখার সুযোগ আছে, দেখে নিতে পারেন।
false
rn
বিকল্পহীন রবীন্দ্রনাথ এমন কোনো মানবিক অনুভূতি নেই যা রবীন্দ্রনাথের লেখায় পাওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথের সব সাহিত্যে এবং সংগীতের মূল যে একটি ভাবনা কাজ করত তা হলো মুক্তি। একেকজন একেকভাবে রবীন্দ্রনাথের লেখা পাঠ করেন। কারো কাছে 'শেষের কবিতা' ভালো মনে হবে, কাছো 'চতুরঙ্গ'। শেষের কবিতা পাঠে যিনি বিমগ্ন তিনি হয়ত চতুরঙ্গ উপন্যাস কিছু অংশ পড়ার পর আর পড়বেন না। কোনো জটিলতায় যেতে চাইবেন না। ঠাকুরবাড়ি থেকে ভারতী নামে একটা মাসিক কাগজ বের হতো। অনেক সময় রবীন্দ্রনাথ নিজের লেখার প্রুফ নিজেই দেখতেন। রবীন্দ্রনাথের দাম্পত্য জীবন মাত্র ১৭ বছরের। ২৯ বছরে মৃণালিনী মারা যান। মৃণালিনী বাংলাদেশের মেয়ে।রবীন্দ্রনাথের হাবভাব আদবকায়দা জীবন ও চরিত্র বুঝতে ঠাকুরবাড়ির নেপথ্য গল্পটা জানা জরুরি। দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন দার্শনিক ও সাধক, তিনি জমিদারি চালাতেন কঠোর হাতে, তাঁর শাসনকালেই প্রজাপীড়নের খবর জানা গেছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, দ্বারকানাথের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ ব্যবসার সব দলিলপত্র পুড়িয়ে ফেলেন। বেশির ভাগ জমিদার বাঈজী নাচাতেন কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কোনোদিন এ কাজটি করেননি। নোবেল প্রাইজের টাকা দিয়ে কৃষকের জন্য করেছিলেন ব্যাংক। রবীন্দ্রসাহিত্য বারবার পাঠ, উপভোগ ও উপলব্ধি ছাড়া বাংলা সাহিত্যের কারোর পক্ষে লেখক হওয়া সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ সব সময় তরুন লেখদের পছন্দ করতেন।রবীন্দ্রনাথের 'বিসর্জন' নাটকে একটি সংলাপ আছে যে, এইবার ফসল খুব বেশি হয়েছে। না জানি কৃষকের ভাগ্যে কি দুর্গতি আছে। আমার মনে হয়, ১০০ টি বাক্যে যা বলা যেত না, তিনি একটি মাত্র বাক্যে সংলাপে তা বলে দিয়েছেন। আমি মনে করি, যারা রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করেন- তারা আসলে না জেনেই করেন। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। শান্তিনিকেতনে এক নির্জন রাতে তাঁর বুক থেকে উৎসারিত হলো অন্য রকম গানের কলি- 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি'। বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন রবীন্দ্র-ভাবনার একনিষ্ঠ অনুসারী।রবীন্দ্রনাথকে যারা চিঠি লিখতেন, তিনি তাদের সবার চিঠির উত্তর দিতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায় ৪০৯৭ টি বাংলায় লেখা চিঠি পাওয়া গেছে। রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ বিয়ে করেন প্রতিমাকে ১৯০৮ সালে। তাদের কোনো সন্তান হয়নি বলে তারা একটি গুজরাতি শিশু কণ্যাকে দত্তক নেন। তাঁর নাম দেয়া হয় পুপে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পাঁচ বছর গবেষনা করে আমি একটি বই লিখেছি 'বিকল্পহীন রবীন্দ্রনাথ'। বইটি পড়লে রবীন্দ্রনাথকে সম্পর্কে সব জানা যাবে। প্রতিটা পৃষ্ঠায় নানা রকম তথ্যে ভরপুর। আমার বিশ্বাস পাঠক বইটি পাঠ করতে গিয়ে অনেক আনন্দ পাবেন। বইটি প্রকাশ করেছে রোদেলা প্রকাশনী। একুশে বইমেলাতে পাওয়া যাবে প্রথম দিন থেকেই। যদি বইটি আপনারা বইমেলা থেকে সংগ্রহ করে পড়েন- তাহলে আমার পাঁচ বছরের পরিশ্রম সার্থক হবে।আমার কাছে বইয়ের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না৷‌ আজ যে আমি সৎ হয়ে জীবনযাপন করছি এবং ধনী না হলেও বিপথগামী হইনি- সে তো বইয়েরই দান৷‌ ‌ আজ যে সভ্যতার মধ্যে আমারা সবাই বাস করছি, তা তো বই থেকেই সৃষ্টি হয়েছে৷‌ বই না থাকলে আমরা কি এই সভ্যতা পেতাম? বই আমাদের মানুষ করেছে, আমাদের সুসভ্য করেছে৷‌ তাই আজ যারা বই-বিমুখ, যারা শুধু কম্পিউটার, পানশালা আর টিভি সিরিয়ালে আনন্দ পায়, তাদের কি সভ্য বলা যাবে?
false
rg
আমিনুর রহমান মুকুলের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি 'অবরোধ' _ শতাব্দীর আশ্চর্য কুয়াশা বৃত্তের অনন্ত পরিধি ।। আজ থেকে ঠিক একশো এক বছর আগে ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্চ ফার্ডিন্যান্ড ও তার স্ত্রী প্রিন্সেস সোফিয়াকে সারায়োভোতে হত্যা করাকে কেন্দ্র করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছর যুদ্ধের পর ১৯১৯ সালের ২৮ জুন প‌্যারিসে এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তিকে কেন্দ্র করেই গঠিত হয়েছিল লিগ অব নেশান্স। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ গোটা বিশ্বের মানুষকেই জিম্মি করেছিল। যুদ্ধের ভয়ালগ্রাসে অবরুদ্ধ হয়েছিল গোটা পৃথিবীর মানুষ। যুদ্ধের পরিণাম যে কতোটা ভয়ংকর, গোটা পৃথিবীর মানুষ তখন এটা ভোগ করেছে। দ্বিতীয়বার ১৯৩৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা। দীর্ঘ সাত বছর যুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তিকে কেন্দ্র করেই গঠিত হয়েছিল ইউনাইটেট ন্যাশন্স বা জাতিসংঘ। কিন্তু লিগ অব ন্যাশন্স কিংম্বা ইউনাইটেড ন্যাশন্স কি পৃথিবী থেকে সেই ভয়ংকর যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছে? পৃথিবী থেকে যুদ্ধ যেমন চিরতরে বন্ধ হয়নি, তেমনি দেশে দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে মানুষকে জিম্মি করার সেই পুরানো খেলাও এখনো বন্ধ হয়নি। চিরকাল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কাছেই পৃথিবীবাসী বন্দি থেকেছে। মানুষকে জিম্মি করেই চিরকাল রাজনৈতিক খেলা, ক্ষমতার লড়াই, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ ও শান্তির এক মানুষ সৃষ্ট ভয়ংকর রাজনৈতিক খেলা চলেছে। এই খেলায় সবসময় জিম্মি হয় দেশের সাধারণ মানুষ। আবার মানুষই সেই জিম্মিদশাকে কাটিয়ে একদিন বিজয় ছিনিয়ে আনে। ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসের বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও এই রাজনৈতিক খেলার একটি পূর্বপরিকল্পিত লড়াই বা নীলনকশা। বিরোধীদল বিএনপি টানা তিন মাস সরকার উৎখাতের জন্য দেশব্যাপাী লাগাতার অবরোধ পালন করে। সরকার পক্ষও বিরোধীদলের ডাকা অবরোধকে পাত্তা না দিয়ে বা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে, দমন-পিড়নের নীতি অনুসরন করে। এক সময় বিরোধী দলের অবরোধ সহিংসতায় রূপ নেয়। চোরাগুপ্তা হামলা, যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চলতে থাকে সেই অবরোধ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মানুষের আর্ত-চিৎকারে একুশ শতকের সভ্যতা গড়াগড়ি যায়। একদিকে সরকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। অন্যদিকে বিরোধীদল সরকার পতনের আন্দোলন করতে গিয়ে জনগণকে জিম্মি করে এক সময় জনগণকেই প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলল। ক্ষমতার রাজনীতিকে কেন্দ্র করে একুশ শতকের বাংলাদেশে ২০১৫ সালে এসেও সরকার ও বিরোধীদলের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার এই যে বাস্তবতা, এই যে ক্ষমতার লড়াইয়ের একটি টাটকা স্মৃতি, এটাকেই উপজীব্য করে চলচ্চিত্র নির্মাতা আমিনুর রহমান মুকুল নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'অবরোধ'। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্ট ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার যে জঘন্য কৌশল, তাকেই যেন আমরা মাত্র ২৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের স্ন্যাপশটে প্রতীকি হিসেবে দেখতে পাই। এখানে মাত্র ২৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের স্ন্যাপশটে যে গল্পটি বা যে ঘটনাটি আমরা ঘটতে দেখি, দেশ-কাল-পাত্রের উর্ধ্বে পৃথিবী নামক গ্রহে হাজার বছর ধরে মানুষকে জিম্মি করে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব-লড়াইয়ের চিরায়ত ক্যানভাসই যেন 'অবরোধ' চলচ্চিত্রে আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে। মুকুলের 'অবরোধ' চলচ্চিত্রের গল্পটি খুবই সহজ, সরল ও সাধারণ। শীতকাল। একদিকে বিরোধীদলের ডাকা লাগাতার অবরোধ চলছে। অন্যদিকে জীবন বাজি রেখে সাধারণ মানুষ কাজের জন্য ঘর থেকে বের হয়। রাজধানী ঢাকা ও দক্ষিণে পদ্মার ওপারের মাদারীপুরের মধ্যে যাদের কাজের জন্য ঘরের বাহির যেতে হয়, নানান শ্রেণীপেশার সেসব মানুষকে কনকনে শীতের মধ্যেও বিশাল পদ্মা নদীর এপার-ওপার করতে হয়। এসব কর্মব্যস্ত মানুষের পদ্মা নদী পারাপারের উপায় মাত্র ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট বা ইঞ্জিননৌকা। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণীপেশার কয়েকজন যাত্রীকে নিয়ে একটি স্পিটবোট পদ্মা নদীতে সেই ঘন কুয়াশায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দেশব্যাপী রাজনৈতিক অবরোধের মধ্যে জীবন বাজি রেখে কাজে বের হওয়া এই মানুষগুলো আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরেক-দফা পদ্মায় কুয়াশা অবরোধের শিকার। ঢাকার মতিঝিলে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমার আক্রান্তের খবর এই বোটের একজন তরুণির মাধ্যমে অন্য যাত্রীদের মত দর্শক হিসেবে আমরাও অবগত হই। একজন যাত্রী তরুণির নোটবুক থেকে খবরটি বিস্তারিত পড়ার পর থেকে একটু চিন্তাগ্রস্থ হন। দর্শক হিসেবে আমাদেরও তখন সেই টেনশন ছোবল মারে। কারণ মতিঝিলেই ওই যাত্রীর স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাবার কথা। আর তারা পাবলিক বাসেই যাতায়াত করেন। এক সময় স্পিটবোটের সেই যাত্রীর মোবাইলে ঢাকা থেকে একটি ফোন আসে। তিনি খবর পান পেট্রোল বোমায় আক্রান্ত সেই বাসেই তার স্ত্রী ও মেয়ে যাত্রী ছিল। পেট্রোল বোমায় আহত হয়ে তারা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বোটের ওই যাত্রীর মত দর্শক হিসেবে তখন আমরাও কিংকর্তব্যবিমুঢ়। এই সময় সেই যাত্রী বোটচালককে যে করেই হোক বোট ছাড়ার অনুরোধ করেন। পদ্মার ওপারে তাকে নামিয়ে দিলেই তিনি ঢাকায় আহত স্ত্রী-কন্যার কাছে ছুটে যাবেন। কিন্তু বোটে মাত্র কয়েকজন যাত্রী থাকলেও তাদের মধ্যেই এই কুয়াশা দুর্যোগে ঝুঁকি নিয়ে বোট ছাড়াকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত বোটচালক বোট ছাড়ার সাহস পায় না। বোটের সবাইকে অনেকক্ষণ নিঃশ্চল, চুপচাপ নিরব দেখে একসময় অসহায় সেই যাত্রী সবার অজান্তেই হঠাৎ নদীতে ঝাঁপ দেয়। নদী সাঁতার কেটে হলেও তাকে যে তীরে পৌঁছাতে হবে। যেতে হবে ঢাকা মেডিকেলে আহত স্ত্রী-কন্যার কাছে। এরপর কিছুক্ষণ লোকটিকে বরফ-শীতল পদ্মায় সাঁতার কাটতে দেখা যায়। তারপর আর কুয়াশার ঘোরে কিছুই দেখা যায় না। এখানেই ছবিটি শেষ হয়। আর আমাদের হৃদপিণ্ডের ঢিবঢিবানি যেন সেখানে এসে একটা বিশাল ধাক্কা খায়!পদ্মায় আটকা পরা এই বোটটি যেন তখন এক টুকরো বাংলাদেশ। ঘটনাচক্রে বোটের মানুষগুলোই যেন রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ। বোটের অল্প কয়জন মানুষই যেন গোটা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। কুয়াশায় অবরুদ্ধ বোটটি যেন রাজনৈতিক অবরোধেরই এক জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রাকৃতিক অবরোধ আর মানুষ সৃষ্ট রাজনৈতিক অবরোধ এখানে একই সমান্তরাল রেখায় গিয়ে মিশেছে। মাত্র ২৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে যে গল্পটি ছবির ফ্রেমে ফ্রেমে নির্মাতা আমাদের দেখান, তা যেন চিরায়ত কালের মানুষের দ্বন্দ্ব সংগ্রামের, ক্ষমতার লড়াইয়ের, স্বার্থ ও ভোগের সামগ্রিক চিত্রকেই তুলে ধরে। নির্মাতা মুকুল এই ছবির মাধ্যমে আমাদের যে মেসেজটি দেন, সেটি হল- প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক কিংম্বা মানুষ সৃষ্ট স্বার্থদ্বন্দ্ব বা ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অবরোধ হোক না কেন, মানুষ জীবন বাজি রেখেই সেই অবরোধ বা শৃংখল থেকে মুক্তি নেবার চেষ্টা করে। মানুষ জীবন বাজি রেখেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাস করলেও মানুষ আসলে একটি মুক্ত প্রাণী। শৃংখল বা অবরোধ থেকে মুক্তিই তার জীবন। তাই মুকুলের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিটি ২৫ মিনিটের ফ্রেমেই কেবল বন্দি থাকে না। এটি হাজার বছরের সভ্যতায় চিরায়ত রাষ্ট্র-সমাজ-শাসক-শোষণ-শ্রেণীসংগ্রাম-যুদ্ধ-লড়াই-ক্ষমতার দ্বন্দ্বসহ গোটা পৃথিবীর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকেই মহাকাশের মত বিশাল ক্যানভাসে কালের টাইম-মেশিনকেই প্রতিস্থাপন করে। স্থান-কাল-পাত্র ছাড়িয়ে এটি মহাকালের মহাদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর বাস্তবতারই প্রতিনিধিত্ব করে।'অবরোধ' ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও মেদহীন অভিনয় করেছেন কাজী ফয়সল, মুনিরা রহমান অবনী, নূরী শাহ, লিয়াকত লিকু, মেহেদি জুয়েল, ইউসুফ শুভ, রনি খান, প্রণব দাস প্রমুখ। ছবিটির চিত্রগ্রহন করেছেন তাইজুল ইসলাম রোমান, গ্রাফিক্স ও সম্পাদনা করেছেন মনিরুজ্জামান শাহিন, শব্দগ্রহন করেছেন আতিক এবং আবহসঙ্গীত করেছেন সুমন কল্যান। এই ছবির দুই-তিনটি কম্পোজিশান খুবই শক্তিশালী, বিশেষ করে স্পিটবোটটি যখন কুয়াশা মাড়িয়ে ঘোরের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন এক ঝাঁক গাঙচিলের উড়ে যাওয়া, বাঁশ ও জালের ঘের দেওয়া মাছ ধরার ফ্রেমের কাছে গিয়ে বোটটির আটকে পড়া, কুয়াশার মধ্যে দূরে কয়েকটি বোট ও ইঞ্জিননৌকার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, সকালে পদ্মায় সূর্য ওঠার দৃশ্য ইত্যাদি। এরমধ্যে বাঁশ ও জালের ফ্রেমের কাছে বোটটির অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার দূরবর্তী কুয়াশামাখা ঘোরলাগা ফ্রেমটি খুবই ক্লাসিক্যাল। বিশ্ব চরাচরে একমাত্র কুয়াশা আর ফ্রেমেবন্দি ওই দৃশ্য ছাড়া আর কিছুরই যেন কোনো অস্তিত্ব নেই। 'অবরোধ' আমিনুর রহমান মুকুলের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সেই হিসেবে নির্মাণ কৌশলে ছোটখাটো কিছু ত্রুটি রয়েছে। বিশেষ করে ফ্রেম-টু-ফ্রেম চিত্রায়ন ও সম্পাদনায়। গল্পে কুয়াশা যতোটা শক্তিশালী চরিত্র, গোটা ছবিতে তেমন শক্তিশালী কুয়াশার উপস্থিতি নেই। এমন কি ক্লোজশর্টেও কুয়াশার বিভিন্ন সময়ের আকার ও অবয়ব ছবির প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারেনি। পাশাপাশি আবহসঙ্গীত ও শব্দ সংযোজনে মুকুল আরো যত্নবান হয়ে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে পারতেন। তবে ছবির ছোট্ট গল্পের বিপরীতে যে বিশাল শক্তিশালী ক্যানভাস, এসব ছোটখাটো ত্রুটিকে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত তা মানুষের সংগ্রামী প্রত্যয়কেই প্রতিষ্ঠিত করে। মানুষের স্বপ্নকে নতুন করে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অহর্নিশ আশা জাগায়। শেষপর্যন্ত এখানেই মুকুলের নির্মাণ স্বার্থক হয়ে ওঠে। 'অবরোধ' স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলেও এর মেসেজটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মতই দীগন্তবিস্তারি। বাংলা সিনেমায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'অবরোধ' একটি নতুন সংযোজন হিসেবে জায়গা করে নেবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। বাংলা সিনেমায় এমন একটি নতুন দিক উন্মোচনের জন্য মুকুলকে অভিনন্দন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। ২৮ জুন ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
false
mk
উগ্রপন্থা ও গণতন্ত্র একসাথে চলতে পারে না দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বসতবাড়ি, ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়। সহায়-সম্বল হারিয়ে তীব্র শীতের মধ্যে অসংখ্য নারী-পুরুষ-শিশু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আশ্রয় নিয়েছেন মন্দিরে। আক্রমণের সময় বনে-জঙ্গলে-আখক্ষেতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচনের আগের রাতে হিন্দুদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট দিলে বিপদ হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভয়ে-আতঙ্কে অনেক জায়গায় হিন্দুরা ভোটকেন্দ্রের ধারে-কাছেও যায়নি। তারপরও তারা আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পায়নি। দিনাজপুরের একজন আক্রান্ত ব্যক্তি- অনন্ত চন্দ্র রায় দুঃখ করে বলেছেন, ‘ভোট এলেই আমাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। কোনোদিন কি এর প্রতিকার হবে না? কেমন করে এদেশে থাকবো? এই জিজ্ঞাসা শুধু অনন্ত রায়ের নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের কম-বেশি সব সদস্যেরই। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন আমাদের দেশে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কারণে-অকারণেই তাদের ওপর হামলা হয়, আক্রমণ হয়। তাদের জীবন অনিরাপদ করে তোলা হয়। তাদের সম্পদ লুটপাট করা হয়। জায়গা-জমি জবরদখল হয়ে যায়। আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে বেঁচে থাকতে হয়। এটা কোনো মানুষের জীবন নয়। ভোটের সময় হামলা-আক্রমণের ঘটনা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। প্রতি নির্বাচনের পরেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার আগে-পরে এই হামলা-আক্রমণের ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছিলো। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এটাই যে, প্রতিটি হামলা-নির্যাতনের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির জড়িত থাকলেও কাউকেই তখন গ্রেপ্তার করা হয়নি, আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আশা করা হয়েছিলো ২০০১ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিটি ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির বিধান করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো মহাজোট সরকারের আমলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর, আরো স্পষ্ট করে বললে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। কোনো ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতকারীরা উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে এমন কোনো প্রমাণ দেওয়া যাবে না। ক্ষেত্রবিশেষে দু-একটি মামলা হয়েছে, দু-একজনকে গ্রেপ্তারও হয়তো করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকেছে। ফলে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা, তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলা, ত্রাসের মধ্যে তাদের বসবাসে বাধ্য করা যেনো তাদের ‘নিয়তি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে বলা হয়ে থাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না, অগণতান্ত্রিক-স্বৈরাচারী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না এটাই ছিলো প্রত্যাশিত। কিন্তু নানান রাজনৈতিক উত্থান-পতনের কারণে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি আমাদের দেশের রাজনীতিতে ঠাঁই করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সমাজে-রাজনীতিতে-অর্থনীতিতে-প্রশাসনে যতো শক্তি সঞ্চয় করেছে, দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতার উপাদান ততই বেড়েছে। উদারতা, সহনশীলতার পরিবর্তে উগ্রতা এবং অসহিষ্ণুতার বিস্তার ঘটেছে। ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি প্রকটভাবে দেশের ওপর চেপে বসার সুযোগ পেয়েছে। জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থে এই উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদের সাথে আপোস করেছে মধ্যপন্থার রাজনৈতিক শক্তি। এখন তার খেসারত গুনতে হচ্ছে গোটা দেশকে। উগ্রবাদ এবং গণতন্ত্র যে একসাথে চলতে পারে না এটা না বুঝতে পারার ব্যর্থতার কারণেই দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাজনীতির নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে সেটাও এই উগ্রপন্থার রাজনীতিরই পরিণতি। রাজনীতি থেকে সব ধরনের উগ্রবাদীদের হটাতে না পারলে আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যারা একদিনের ভোটের গণতন্ত্রের শুদ্ধতার জন্য বিলাপ করেন, তারা সাধারণ মানুষের জীবন সংহার করে যে উগ্রবাদী রাজনীতি করছে তার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটিও হচ্ছে না।মধ্য-ডান পন্থার রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে উগ্র-ডানের জামায়াতে ইসলামীর অতিমাত্রায় মাখামাখির কারণেই দেশের রাজনীতিতে যে উগ্র ধারার বিস্তার ঘটছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গত কয়েক মাসে আমাদের দেশের রাজনীতিতে আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা চলেছে তার জন্য দায়ী জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত যে একটি অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী দল সেটাআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণেই পরিষ্কার হয়েছে। এই দলটি গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে গোপনে নিজেদের সহিংস রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা না দেখেই তারা সশস্ত্র ক্যাডারবাহিনী গড়ে তুলেছে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা মাথায় রেখে। বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয় জামায়াতের জন্য সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি করেছে। জামায়াত যে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে গ্রাস করে ফেলছেÑএটা বিএনপি বুঝতে পারছে না। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক এজেন্ডা এক নয়। জামায়াতের আশু লক্ষ্য হলো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দ-িত দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি। অন্যদিকে বিএনপির আশু লক্ষ্য হলো ক্ষমতায় যাওয়া। দেশের মধ্যে অরাজকতা-নৈরাজ্য তৈরি হলে জামায়াতের লাভ, বিএনপির ক্ষতি। কিন্তু বিএনপি এখন অন্ধ আওয়ামী লীগ বিরোধিতার কারণে সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। অথচ জামায়াতের প্ররোচণায় বা ফাঁদে পড়ে বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো না। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উল্টো নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়ে বিএনপি নিজেদের গণতান্ত্রিক অবস্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। নির্বাচন প্রতিহত করা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিএনপি কেন নির্বাচন বর্জন করে ভোটারদের নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবর্তে নির্বাচন প্রতিহত করার সহিংস আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লো? এই প্রশ্নের উত্তর বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের জানতে চাইতে হবে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে গত কয়েক মাসে যেভাবে সন্ত্রাস-সহিংসতা চালানো হয়েছে, যেভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে, দেশের সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে, তাকে কোনোভাবেই গণতন্ত্রসম্মত বলা যায় না। গণতন্ত্রে বলপ্রয়োগের সুযোগ নেই। শক্তির জোর নয়, যুক্তির জোরই গণতন্ত্রের সার কথা। অথচ বিএনপি এবার জামায়াতের খপ্পরে পড়ে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে জড়িয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য কত বড় ক্ষতি করেছে সেটা তারা এখন বুঝতে না পারলেও একসময় এজন্য তাদের আফসোস করতে হবে।বলা হচ্ছে, দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলনের মূল কথা হলো নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হলো, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে দেশের বিশেষ জনগোষ্ঠীকে ভোটদান থেকে যারা বিরত রাখতে চায় তাদের কোন বিবেচনায় গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি বলে ধরা হবে? দুঃখজনক হলেও সত্য যে হিন্দু সম্প্রদায়সহ আরো কিছু জনগোষ্ঠীর মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখার জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তাদের মধ্যে বিএনপির নামও আছে। আগে এই কাজটি বিএনপি সমর্থকরা রেখে-ঢেকে করলেও জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার পর এখন এটা তারা নগ্নভাবেই করছে। জামায়াতি রাজনীতির উগ্রপন্থার প্রভাব বিএনপিকে এতটাই আচ্ছন্ন করেছে যে, তারা গণতন্ত্রের নাম করে এমন সব কর্মকা- করছে, যা কোনোভাবেই গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিএনপি নেতৃত্বকে এটা বুঝতে হবে যে, উগ্রপন্থা এবং গণতন্ত্র একসাথে চলে না। বল প্রয়োগ, ভয়-ভীতি দেখানো আর গণতন্ত্র সমান্তরাল পথে চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা যদি বিকশিত করতে হয় তাহলে হিংসার পথ পরিহার করে, সন্ত্রাস-নাশকতার ইতি টেনে বিএনপিকে শান্তির পথেই ফিরে আসতে হবে। বল প্রয়োগ করে দাবি আদায়ের কৌশল ত্যাগ করে যুক্তির জোরকে প্রাধান্য দিতে হবে। শান্তি ও সমঝোতার পথে না হাঁটলে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণ করা যাবে না। ক্রমাগত হামলা-নির্যাতনে টিকতে না পেরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যদি নিরূপায় হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয় তাহলে আপাতদৃষ্টিতে উগ্রপন্থার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিজয় হলেও শেষ বিচারে ক্ষতি হবে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির। বাংলাদেশকে যারা একটি উগ্র-জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন উদার গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষদের এক হয়ে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকেও বেছে নিতে হবে তারা উগ্রপন্থার সহায়ক হবে নাকি গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে অবস্থান নেবে।
false
ij
গল্প_ মধ্যযামিনীর সংক্ষিপ্ত সংলাপ স্তব্ধ মধ্যরাত্র। সমস্ত বাড়ি নীরব হইয়া সুনসান করিতেছিল। কোনও কক্ষে বাতি জ্বলিতে ছিল না। কোথাও একবিন্দু আলোকের দীপ্তি মাত্র নাই। নীচতলার প্রাঙ্গনটিও অন্ধকারে অস্পস্ট দেখায়। বাতাস বহিতেছিল না। জ্যৈষ্ঠরাত্রির আকাশে মেঘ জমিয়া ছিল। মেঘ ফুঁড়িয়া চাঁদের রশ্মি দৃষ্টিগোচর হইতে ছিল না। মোহনী দ্বিতল হইতে নামিয়া প্রাঙ্গনে আসিয়া দাঁড়াইল। প্রাঙ্গনের মধ্যিখানে একটি নিম গাছ। হঠাৎ বাতাস আসিয়া প্রাঙ্গনের উপর পড়িয়া থাকা শুকনা নিম পাতা উড়াইয়া নিল। তাহার খসখস শব্দ উঠিলে মোহনী ঈষৎ শীত অনুভব করিল। মোহনী চতুর্দিকে দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করিয়া অতি সন্তর্পনে সদর দরজার কাছে চলিয়া আসিল। সদর পার হইয়া আসিয়া মোহনী দেখিল সংকীর্ণ গলিপথ নির্জন হইয়া আছে। মোহনী পথে নামিল। কিছুকাল হইল সংসার অসহ্য ঠেকিতেছে তাহার। মোহিনী ভিক্ষুণী হইয়া যাইবে বলিয়া ভাবিতেছিল। আজ তাহার পথে নামিবার সাহস হইল। ঘাড় ফিরাইয়া সদর দরজার পানে শেষবারের মতন তাকাইয়া সে ভাবিল: আমি ভিক্ষুণী সাজিয়া সদরে আসিয়া দাঁড়াইলে আমাকে কী রুপ দেখাইবে? মোহনী হাসিল। বড় ম্লান সে হাসি। মধ্যযামিনীর শ্রাবস্তী নগর ঘুমাইয়া অচেতন হইয়াছিল। ঘুমন্ত নগর ও নগরপাড়ের রাপ্তী নদীর উপর মেঘ সরিয়া গিয়া একটি কৃশকায় চাঁদ দৃশ্যমান হয় ও বিষাদকরুণ রাত্রির আকাশে অসংখ্য তারকাপুঞ্জ ছড়াইয়া আছে দেখা যায়। বিশাল নগরে কেহই জাগিয়া নাই। কেবল মাতাল ও প্রহরীরা জাগিয়া আছে। কান পাতিলে দূর হইতে রথের চাকার ঘর্ষনের কর্কস শব্দ শোনা যায়। পথিপার্শ্বের দুই-একটি বাটিতে আলো জ্বলিয়া আছে। কান পাতিলে শোনা যায় বৃদ্ধকন্ঠের রামায়নগীত। মোহনী যে পথে হাঁটিতেছিল তাহার সন্নিকটে একটি ধর্মশালা। তাহার সম্মুখে এক যুবক হাঁটিতে ছিল। জ্যৈষ্ঠ রাত্রির তাপদাহে তাহার ঘুম আসিতেছিল না বলিয়া ধর্মশালার বাইরে চলিয়া আসিয়াছিল। যুবকের নাম শ্রেনিয় ; সে অযোধ্যা নগরের বণিক । পক্ষকাল হইল শ্রাবস্তী নগরে আসিয়াছে। কালই অযোধ্যা ফিরিয়া যাইবে। আবার নাও যাইতে পারে। ধর্মশালায় সে শুনিয়াছিল শ্রাবস্তী নগরে বুদ্ধ আসিয়াছেন। সম্ভব হইলে আগামীকাল বুদ্ধের সহিত শ্রেনিয় সাক্ষাৎ করিবে। তাহার পর অযোধ্যা ফিরিয়া যাইবে। কিংবা বুদ্ধের সংঘে যোগ দিতে পারে শ্রেণিয়। কিছুকাল হইল জীবন ও জীবিকা অসার ঠেকিতেছে । কী করিবে শ্রেণিয় এখনও ভাবিয়া উঠিতে পারে নাই। বাতাসের আঘাতে আকাশের মেঘপুঞ্জ সরিয়া যাওয়ায় চন্দ্রালোক দীপ্যমান হইয়া উঠিয়াছিল। শ্রেনিয় সেই আলোয় অতি নিকটে একটি নারীমূতি টের পাইয়া কিঞ্চিৎ বিস্মিত হইল। কয়েক পা আগাইয়া আসিয়া রমনীর পথ রোধ করিয়া দাঁড়ইল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের প্রাচীন ভারতের আলো তাহাদের উপরে আসিয়া পড়িল। মোহনী নরম শান্ত কন্ঠে বলিল, আপনি আমার পথ রোধ করিয়াছেন কেন? ছাড়িব। শ্রেণিয় বলিল। যদি বলেন কী কারণে মধ্য রাত্রিতে পথে নামিয়াছেন। আপনাকে দেখিয়া সম্পন্ন ঘরের রমনী বোধ হয়। মোহনী মৃদু ক্ষোভের স্বরে বলিল, আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করি নাই। তা বটে। শ্রেনিয় ভাবিল। ভাবিয়া বিমর্ষ বোধ করিল। সে ক্ষাণিক অস্থির হইয়া আশেপাশে দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করিল। নিকটেই একখানি হরীতকী গাছ। বাতাসের ঘর্ষনে সে গাছের পত্রালি সরসর শব্দ করিতেছিল। সে গাছ হইতে একটি তক্ষক ডাকিতেছে। শ্রেনিয় শঙ্কিত হইয়া উঠিল। ধর্মশালার ফিরিয়া যাইবে কিনা ভাবিল। সড়কপথে দ্রুত একখানি রথ ছুটিয়া গেল। ঘুমন্ত শ্রাবস্তী নগর থমথম করিতেছে। কিছুকাল হইল মগধের রাজপুত্র অজাতশক্র পিতা বিম্বিসার কে বন্দী করিয়া নিজেকে মগধের সম্রাট ঘোষনা করিয়াছে। শ্রেনিয় দীর্ঘশ্বাস ফেলিল। মহান বিম্বিসার উদার রাজন্য ছিলেন। তাঁহার এরূপ করুণ পরিনতি বিষাদ সৃষ্টি করে বৈ কী। জীবন ও জগৎ অসার ঠেকে। সহসা শ্রেণিয়ের বুদ্ধের একটি বাণী স্মরণ হইল। বুদ্ধ অপ্রমত্ত থাকিয়া কর্ম সম্পাদন করিতে বলেন। তাহা কি সম্ভব? শ্রেণিয় ভাবিল। আগামীকাল বুদ্ধের সহিত সাক্ষাৎ হইলে সে বুদ্ধসমীপে বিনীতভাবে এই প্রশ্নখানি রাখিবে। এখন রাপ্তী নদীর দিক হইতে শীতল বাতাস বহিয়া আসিল। শীত বোধ করায় শ্রেণিয় কাঁপিয়া উঠিল। হরীতকী গাছ হইতে তক্ষকের ডাক অসহ্য ঠেকিতেছে। সে রমনীর দিকে তাকাইল। কে এই নারী? মধ্যযামে সে কোথায় চলিয়াছে? এরুপ নানাবিধ প্রশ্নে শ্রেণিয় জর্জরিত হইল। মোহণী কি মনে করিয়া বলিল, আমি সংসার ত্যাগ করিয়াছি, আমি ভিক্ষুণী হইব, আমি বুদ্ধের কাছে যাইতেছি। মোহণীর কথা শুনিয়া শ্রেণিয় অত্যন্ত ব্যথিত ও বিস্মিত হইল। এই নারী ভিক্ষুণী হইবে? বুদ্ধের কাছে যাইবে? শ্রেনিয় জিজ্ঞাসা না করিয়া পারিল না, কি দুঃখ তোমার যে তুমি সংসার ত্যাগ করিবে? মোহনী চুপ করিয়া থাকিল। নাঃ, সে অপরিচিত পথিককে তাহার সুখ-দুঃখের কথা বলিবে না। শ্রেণিয় যাহা বুঝিবার বুঝিল। সেও আগামীকাল বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবে। কিছুকাল হইল তাহার কাছেও সংসার বিষবৎ ঠেকিতেছে। দীর্ঘশ্বাস চাপিয়া শ্রেণিয় একপাশে সরিয়া দাঁড়াইল । মোহনী তাহার পথে চলিয়া গেল। সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৯
false
mk
ফেঁসে যাচ্ছে হরতাল পিকটাররা! পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ভিডিও ক্যামেরার জালে বন্দী হয়ে আছে হরতালের সময়ে জ্বালাও পোড়াও, ভাংচুরকারী শতাধিক ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্রশিবির ও সন্ত্রাসীরা। বিগত হরতালের সময়ে তারা যখন রাজধানীর রাজপথে চলাচলকারী যানবাহনে এ ধরনের অপরাধে লিপ্ত হয়েছে তখন তাদের ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ভিডিও চিত্র সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে। মোবাইল ফোন অপারেটর নেটওয়ার্ক টাওয়ারের কললিস্ট চাওয়া হয়েছে। এ খবর পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের সময়ে সহিংসতার ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছে। এসব ভিডিওচিত্রে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদল, যুবদল, শিবির ও সন্ত্রাসীরা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে, ভাংচুর করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছে। ভিডিওচিত্রে ধারণ করা ছবি ও ফুটেজ অনুযায়ী অপরাধে লিপ্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী অভিযান চালানো হচ্ছে।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত ছয় মাস ধরে জামায়াত-শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলার পর একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটেছে। ছাত্রদল, যুবদল ও সন্ত্রাসীরা যানবাহনে আগুন ও ভাংচুর করার সময়ে তাদের ছবি সংরক্ষণ করার জন্য ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে সংগৃহীত ছবি পরবর্তীতে গোয়েন্দাদের জামায়াত-শিবির, ছাত্রদল, যুবদল কর্মী ও সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে সহায়তা করে।হরতাল চলাকালে সহিংস ঘটনা ঘটানোর জন্য ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্রশিবিরের কর্মী ও সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে। এজন্য গোয়েন্দারা মোবাইল অপারেটরের এলাকাভিত্তিক টাওয়ারের কললিস্ট সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক টাওয়ার থেকে যেসব কললিস্ট পাওয়া যাচ্ছে সেখানে যাচাইবাছাই করে হরতালের সময়ে সহিংস ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।গোয়েন্দা পুলিশ নিজেদের ধারণ করা ক্যামেরা, সংবাদপত্রের ছবি ও টিভি চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজ দেখে হরতালের সময়ে সহিংসতায় জড়িত শতাধিক জনের মতো ছাত্রদল, যুবদল, শিবির কর্মী ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করা সম্ভবপর হয়েছে। হরতালের সময়ে তাদের দেখা গেলে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হবে। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রধারীও আছে। তবে তাদের সংখ্যা প্রায় ডজনখানেক। বাদবাকিদের হাতে রাম দা, চাকু, চাপাতি, ছোরা, লাঠিসোটা দেখা যাচ্ছে।গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণ করা ক্যামেরা, সংবাদপত্রের ছবি ও টিভি চ্যানেলের ভিডিও ফুটেছে জ্বালাও, পোড়াও, ভাংচুর ও সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে এমন শতাধিক ছাত্রদল, যুবদল, শিবির ও সন্ত্রাসীদের ছবি শনাক্ত করা সম্ভবপর হয়েছে। হরতালের পরে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। হরতালের সময়ে তারা রাজপথে নামে। এ জন্য হরতালের সময়ে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হবে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিতভাবে আর কিছু বলতে চাননি গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
false
fe
কে বিজয়ী, কে পরাজিত কে বিজয়ী, কে পরাজিতফকির ইলিয়াস--------------------------------------------খালেদা জিয়া নিজের বাড়িতে ফিরেছেন। তিনি আদালতে গিয়ে হাজিরা দিয়েছেন। তারপর সেখান থেকে নিজের বাড়িতে। প্রায় তিন মাস সময় চলে গেল। নিজ অফিসেই ছিল তার অবস্থান। অবরোধ, হরতাল অনেক কিছুই হয়েছে এই সময়ে। কী পেলেন ম্যাডাম জিয়া? কিছু পেয়েছেন কি? তার বিজয় কি সুনিশ্চিত হয়েছে? এর মাঝে প্রাণহানি হয়েছে ১৫৬ জনের। আহত হয়েছেন প্রায় এগারোশ মানুষ। ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে ৭৩৮টিতে। ভাঙচুর হয়েছে ৬৬১টি যানবাহন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের জিডিপির দশমিক ৫৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি যা হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে তার চাইতে দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি হতে পারত। গত জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ১১টি খাতের মধ্যে কৃষি খাতে ৩৯৮ কোটি, পোল্ট্রি খাতে ৬০৬ কোটি, চিংড়ি খাতে ৭৪১ কোটি, গার্মেন্টস খাতে ১৩১৮ কোটি, প্লাস্টিক খাতে ২৪৪ কোটি, পরিবহন খাতে ৮২৯ কোটি, ট্যুরিজম খাতে ৮২৫ কোটি, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স খাতে ১৫৬ কোটি, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ে ৪৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। খালেদা জিয়া বাড়িতে ফেরায় দেশ কি শান্তির দিকে এগোচ্ছে? এমন প্রশ্ন আসছে।এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে। যে কোনো অজুহাতে স্বস্তি ফিরে এসেছে জনজীবনে। দীর্ঘদিনের অস্থিরতা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। আশা করি আরো ভালোর দিকে যাবে দেশ। মানুষ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক। সরকার সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে বিরোধসহ সবার সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করবে জনগণ তা আশা করে। টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, যেভাবেই হোক জাতি অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। … ওই আন্দোলনে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ জনবিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাদের একটা পথ দরকার ছিল। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তাদের ওই পথ খুলে দিয়েছে। তারা সুযোগ পেয়েছে দলকে আবারো সংগঠিত করার। আশা করি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে। যেহেতু বিএনপি দাবি করে তারা নির্বাচনমুখী দল, তারা নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করবে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে সরকারের ওপর। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার সুযোগ পেয়েছে সরকার। দুপক্ষের দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক আচরণের ওপর নির্ভর করছে দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ। এ বিষয়ে মতামত দিয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, খালেদা জিয়ার বাড়ি ফেরার মধ্য দিয়ে বিরাজমান সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধানের দিকে এগুচ্ছে। দীর্ঘ তিন মাসের অস্থিরতা ও সহিংসতা দূর হলো। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রাণ ঝরে গেছে পেট্রলবোমা ও ক্রসফায়ারে। দুপক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে হবে। তাদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিক সহিংসতায় আর যাতে কোনো প্রাণ না হারায় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। জাতিকে মুক্তি দিতে হলে সবাইকে সহনশীল আচরণ করতে হবে।এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ সাড়া দেয়নি। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে আন্দোলনের নামে টানা তিন মাস ধরে বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা চালিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। এই তিন মাসে সহিংসতার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ, দেশের সম্পদ ধ্বংস ও জনগণের ক্ষতি হয়েছে। খালেদা জিয়া বিজয়ী হয়ে বাড়ি ফিরবেন এই পণ করে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন মন্তব্য করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, বাড়ি ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বাড়ি ফিরবেন না, মামলার হাজিরা দিতে আদালতেও যাবেন না। এখন তিনি আদালতেও হাজির হলেন, বাড়িও ফিরলেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছেন।বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তিন মাস নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে পেট্রলবোমা মেরে হত্যা, অগ্নিদগ্ধ করা ছাড়া কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। তিনি যে জিদ ধরেছিলেন, আদালতে যাবেন না, শেষ পর্যন্ত আদালতে গেলেন, আত্মসমর্পণ করলেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবেন। কিন্তু তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নিলেন কেন। বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ করলেন কেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেছেন, খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়েছেন, জামিন পেয়ে বাসায় ফিরে গেছেন এটা ইতিবাচক দিক। তিনি তিন মাস ধরে অবরোধ-হরতাল দিয়েছেন। অবশ্য কর্মসূচি শুধু নামেই আছে মানুষ সাড়া দেয়নি। তবে দুঃখজনক হলো এখনো জঙ্গি সন্ত্রাস বন্ধ হয়নি। এখনো জ্বলছে বাসে আগুন। আমাদের প্রত্যাশা তারা এটা না করে নির্বাচনের পথে যাবে। আন্দোলনের নামে যে জীবনগুলো ঝরে গেছে তার পুনরাবৃত্তি হবে না।কথা হচ্ছে, রাজনীতি কার জন্য? মানুষ পুড়িয়ে কি রাজনীতি হয়? দেশের রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে- সে প্রশ্ন শেষ হয়ে যায়নি। কারণ হরতাল আছে। আছে চরম শঙ্কাও।এদিকে চলমান আন্দোলনের চেয়ে খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে খবর বেরিয়েছে। এ জন্য জোট সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে শিগগিরই ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঠে নামবেন তিনি। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পথসভা করবেন। সরকারের আচরণ ও মনোভাব গভীর পর্যবেক্ষণে রাখবেন খালেদা জিয়া। জনগণের সমর্থন নিয়ে তিন সিটিতে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে প্রতি ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ তৈরি করা হচ্ছে নানা কর্মপরিকল্পনা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনাও আছে। ইতোমধ্যেই হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুই সিটি থেকে অবরোধও তুলে নেয়ার সম্ভাবনা আছে।বিএনপি তাদের কৌশল পাল্টেছে। আওয়ামী লীগ কোন পথে এগোবে- সে হিসেব তাদেরও করতে হবে। আবারো বলি, রাজনীতি যদি গণমানুষের জন্য হয় তবে মানুষের মুখের দিকে তাকাতে হবে। গেল তিন মাসের আন্দোলনে যারা নিহত, আহত হয়েছে এরা খুবই গরিব মানুষ। বড় দুই দল কি ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে? না পারবে না। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে ওই ক্ষমতার জন্যই তারা নতুন পথ অবলম্বন করছে। বাংলাদেশের মজলুম মানুষের কোনো স্বপ্নচূড়া নেই। তাদের রয়েছে বেঁচে থেকে হেঁটে যাওয়ার ছোট্ট সড়ক। তারা সেই সড়কের দুধারেই স্বপ্নের বাগান নির্মাণ করে যান। ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা যদি সেই বাগানটির সামান্য পরিচর্যা করতেন, তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্নরকম হতো। সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান সরকার সব দাবি পূরণ করতে পারছে না। এটা তাদের অপারগতা, ব্যর্থতা। দেশে একটি বিরোধী দল থেকেও নেই। আর বিএনপির মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। জনসেবা নয়। এটা কে না জানে- বাংলাদেশ দুর্বৃত্তদের টাকা বানানোর জন্য বিশ্বের প্রধানতম দেশ! এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। গণমানুষের হাঁটার সড়ক নির্মাণে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিকদের ভণ্ডত্বের লেবাস খুলতে হবে প্রজন্মকেই। সমাজ বিনির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে সমাজের মানুষের পরিশুদ্ধ জাগরণ। এই কাজটি করতে তরুণ সমাজকে নেতৃত্বে নিতে হবে। আমরা ঘুণে ধরা সমাজ ভাঙার কথা মুখে বলি। কিন্তু সে চেতনাধারী মানুষেরা কোথায়! এ জন্য যে চেতনার দরকার, তার উন্মেষ ঘটাতে হবে ন্যায়পরায়ণ, সৎ মানুষদেরই।বাংলাদেশ এখনো বিনিয়োগের জন্য ভালো দেশ। এ কথা অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীরাই বলেন। এমনই একটি খবর আমরা পড়েছি সা¤প্রতিককালে। বাংলাদেশকে সম্ভাবনার ভূমি হিসেবে দেখছে বহুদিনের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান। কম খরচের এই দেশটিতে তাই তারা বিনিয়োগ ক্ষেত্র করতে চায়। এ দেশের বহুমাত্রিক শিল্পায়নে সহায়তা করতে চায় এশিয়ার অন্যতম এই অর্থনৈতিক শক্তি। বিনিয়োগ বোর্ড জানিয়েছে, জাপানের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বড় মাপের কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আসিয়ানসহ চীন, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে তাদের গার্মেন্টস কারখানাগুলোও তারা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আগ্রহ দেখিয়েছে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই তরুণ এবং অপেক্ষাকৃত সস্তায় জনশক্তি পাওয়া যায়। জাপানের আগ্রহকে বাস্তবে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার টোকিও সফরের সময় শুধু জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে ৫০০ একরের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা স্থাপনের প্রতিশ্রæতি দেন। সে সময় রপ্তানি প্রস্তুতকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (জেট্রো) একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। সে চুক্তি অনুসারে, জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য পাঁচটি ইপিজেডে ৪০টি প্লট ও দুটি ভবন জাপানের জন্য করা হয়েছে। এমন অনেকেই হয়তো এগিয়ে আসবে। কিন্তু গণমানুষকে বিজয়ী হতে হবে। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ এই রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাক। গণতন্ত্র যদি মানুষের জন্য হয়, তবে আইনি শাসন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়া হোক। এর চেয়ে বেশি চাওয়ার আর কিছুই নেই।----------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা॥ শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০১৫ প্রকাশিত
false
fe
বন্দী শিবিরে নিরীহ শামসুর রাহমান _ অনুপম হাসান আজ ২৩ অক্টোবর কবি শামসুর রাহমান এঁর জন্মদিনে অসীম শ্রদ্ধা বন্দী শিবিরে নিরীহ শামসুর রাহমান অনুপম হাসান ------------------------------------------------------------- (শ্রদ্ধাঞ্জলি : শামসুর রাহমানের ৮০তম জন্মদিন আজ) শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) সদ্যপ্রয়াত বাংলাদেশের তথা বাংলা সাহিত্যে জীবনানন্দ দশ-উত্তর সময়ে সবচেয়ে শক্তিমান কবি। কবির জীবনকথা থেকে জানা যায়, ছাত্রজীবন থেকেই তাঁকে কবিতা পেয়ে বসেছিল; এজন্য তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া সমাপ্ত করা হয় নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন বটে, কিন্তু পরীক্ষা দেওয়া হয়ে ওঠে নি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে দীর্ঘ বিরতির পর তিনি পুনরায় লেখাপড়া শেষ করার লক্ষ্যে মনস্খির করে বিএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেন। পরে তিনি এমএ শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং প্রথম পর্বের পরীক্ষায় অংশ নিলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় আর অংশগ্রহণ করেন নি। এতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কতটা ক্ষতি বা লাভ হয়েছিল তা অন্য বিষয়। কবি শামসুর রাহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে ভয়াবহ নয় মাস অতিবাহিত করেছিলেন, তার একটি ধারণা লাভ করার চেষ্টাই বক্ষ্যমান নিবরে লক্ষ্য। তবে গৌরচন্দ্রিকায় কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের বাংলা কবিতাঙ্গনে অভিষেকের বিষয়টি প্রাসঙ্গিকভাবে এসে যায়। পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৫০ সালে মূলত আশরাফ সিদ্দিকী এবং আবদুর রশীদের সম্পাদনায় আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলনে যে ১৩ জন নবীন কবির স্খান হয়েছিল, শামসুর রাহমান তাঁদের অন্যতম একজন। এ সংকলনে তাঁর ৬টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এসব কবিতায় শামসুর রাহমানের কণ্ঠে তিরিশের দশকের কবিদের থেকে স্বতন্ত্র সুর অঙ্কুরের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় তিরিশের দশকের কাব্য-সুর অতিক্রমী যে বৈশিষ্ট্যগুলো তা হচ্ছে ক. প্রতিবেশ-পৃথিবীর পরিচিত পরিমণ্ডল থেকে কবিতার বিষয়বস্তু আহরণ; খ. কবিতায় আত্মকেন্দ্রিক ও নি:সঙ্গ জাগতিক পরিক্রমায় ব্যক্তিগত যন্ত্রণার বহি:প্রকাশ; গ. কবিতায় ভাববাদী সৌন্দর্যানুভূতির অবিরল উৎসারণ; ঘ.বিষয়-বৈচিত্র্যের সাথে প্রকরণগত রূপান্তরে অভিনবত্ব; ১৯৪৭ সালে দেশ-ভাগের সাথে সাথে পূর্ব-বাংলার মানুষের ওপর ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী যে শাসনতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় পূর্ব-বাংলার মানুষ। সাতচল্লিশে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের ছয়-সাত মাসের মধ্যেই বাঙালি জাতিকে মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন করতে হয়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই পূর্ব-বাংলার মানুষের স্বাধীনতার প্রাথমিক স্বপ্ন ভেঙে যায়। কিন্তু বাঙালি জাতি হাল ছাড়ে নি; তারা শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়, ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনে। পৃথিবীর মানচিত্রে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এজন্য বাংলাদেশের কবিদের অন্তর্মানস অনেকটা বহির্মুখী; তাঁদের কবিতায় ক্ষোভ ও বিদ্রোহের সুর শোনা গেছে বার বার। শামসুর রাহমানের মতো বিশুদ্ধবাদী কবির পক্ষেও এই বিভীষিকাময় কালে চুপ থাকা সম্ভব হয়নি। শান্তিপ্রিয় কবি হওয়া সত্ত্বেও শামসুর রাহমানের বিবেক তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় ‘১৯৪৯’ শীর্ষক কবিতা। এ কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম বহির্মুখী হলেন এবং বন্দী শিবির থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফসল। তাঁর এ গ্রন্থের কবিতায় বাহ্যিক জীবনাচারণের প্রভাব এবং তা আত্তীকরণের সুস্পষ্ট প্রয়াস আছে। এ প্রসঙ্গে তাঁর সমসাময়িক কবি আবুল হোসেন বলেন, বন্দী শিবির থেকে শামসুর রাহমানকে শুধু তাঁর কণ্ঠই দেয়নি, পরবর্তীকালে তার কবিতার একটা বড় অংশ যে ক্রমান্বয়ে আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বহির্মুখী হয়, একান্ত ব্যক্তিক উচ্চারণ থেকে সামাজিক-রাজনৈতিক পথ ধরে, তার মূলেও এই বইটি। একাত্তরের অভিজ্ঞতা শামসুর রাহমানকে আগাগোড়া বদলে দেয়, যেমন বিগত শতাব্দীর ছত্রিশ সালের স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ পাবলো নেরুদাকে এক যন্ত্রণাবিদ্ধ আত্মাচ্ছন্ন কবি থেকে সামাজিক অঙ্গীকারের কবিতে পরিণত করেছিল। [আবুল হোসেন, ‘কিছু স্মৃতি অল্প কথা’, ‘কালি ও কলম’ (শামসুর রাহমান স্মরণ সংখ্যা), ৩য় বর্ষ : ৯ম সংখ্যা, অক্টোবর, ২০০৬; পৃ. ১১] সুতরাং আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাবলি ও বাস্তবতা শামসুর রাহমানকে কবিতার বিশুদ্ধ সৌন্দর্যের জগত থেকে পুঁতিগময় বাহ্যিক পরিবেশের মধ্যে টেনে এনেছে। এজন্য তাঁর কবিতার অন্যতম একটি প্রসঙ্গ হিসেবে সময়, সমকালীন ঘটনা এবং প্রতিবেশ-পৃথিবীর বাস্তবচিত্র উঠে এসেছে। কবি শামসুর রাহমানের এই সমকালীন বাস্তবধর্মিতা তাঁকে তিরিশের দশকের অন্তর্মুখী কবিদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। কেননা যেখানে তিরিশের কবিরা অন্তর্চেতনায় ডুবে ছিলেন, সেখানে তিনি সমকালীন বাস্তবতাকে শুষে নিয়ে হৃদয়াভ্যন্তরে ডুব দিলেন। অতএব তাঁর কবিতার বাচনিক প্রতিবেদন নির্মাণের সময় মনে রাখতে হয়, ক. শামসুর রাহমান কোনো দ্রোহী কবি নন; তিনি তিরিশের দশকের কবিদের মতো অভিনব কোনো ধারাও রচনা করেননি। তবে তিনি পরিশ্রমী কবি-প্রতিভা। বলা ভালো, তিরিশের কবিদের যেখানে শেষ; শামসুর রাহমানের পথ চলা সেখান থেকে শুরু। খ. সমকালীন প্রতিবেশ পৃথিবীর ঘটনাবলি দ্বারা ব্যক্তি-জীবন অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রভাবিত হয়, শামসুর রাহমানের জীবনে তা ঘটেছে অমোঘ নিয়তি স্বরূপ। গ. শামসুর রাহমান কবিতায় শুধুমাত্র ইঙ্গিত, সংকেত, প্রতীক নির্মাণ করেই সন্তুষ্ট হন না, একই সাথে তিনি কবিতাকে বিবরণধর্মী করে তোলেন, চমৎকার প্রাকরণিক প্রকৌশলে। ঘ. নগরজীবন কবিকে আকৃষ্ট করে, অসম্ভব মমতায়। ঙ. পাশ্চাত্য পুরাণ ব্যবহারে তিনি সিদ্ধহস্ত। চ. ক্রমাগত নিজস্ব চিন্তাচেতনার গণ্ডি অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা শামসুর রাহমানের কবিতায় আছে। তবে শেষের দিকে এসে তাঁর ক্রমাগ্রসরমান প্রক্রিয়া স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। একাত্তরের পঁচিশে মার্চের ভয়াল রাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী কবি পূর্ব-বাংলায় বন্দী অবস্খায় যে ব্যক্তি-অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন বা তাঁর অনুভবে-উপলব্ধিতে যা এসেছে তা অবশ্যই একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে একজন থেকে কবির ক্ষেত্রে ভিন্ন। উল্লেখ্য, শামসুর রাহমান তখন সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ফলে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁর অনেক বেশি প্রত্যক্ষীভূত। এই নয় মাসের অনুভব-উপলব্ধি তিনি বন্দী শিবির থেকের কবিতায় তুলে ধরেছেন। এ কারণে আমরা বন্দী শিবির থেকের কবিতায় যুদ্ধকালীন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি নিরীহ শামসুর রাহমানের উৎকৃষ্ট শিল্পের ছাপ লক্ষণীয়। যুদ্ধের সময় ঢাকা নগরীকে কবি হিটলারের ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’-এর সাথে তুলানা করেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত এই অনুভব-উপলব্ধির পাকিস্তানী সৈন্যদের বর্বরোচিত পৈশাচিকতায় নিহিত রয়েছে। অতএব সমকালীন বাস্তবতায় ‘কবি নৈ:সঙ্গ্যতার ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত থেকে বেরিয়ে এসে মহানুভবতা অর্জন করতে চান। বিষাদ ও নৈ:সঙ্গ্যচেতনার বহুল প্ররোচনার পরই অনুভূতিমগ্ন প্রেম, প্রবৃত্তিপরায়ণ কামবোধ ও শুভবাদী রাজনীতি-বিশ্বাসকে শামসুর রাহমানের কবিতার মুখ্য উপজীব্য হিসেবে শনাক্ত করা যায়।’ [সরকার আমিন, ‘শামসুর রাহমানের জীবনবোধ’, ‘ভোরের কাগজ ঈদ সাময়িকী ২০০৬’।] শামসুর রাহমান বন্দী শিবির থেকের কবিতাবলিতে একজন ভীত-সন্ত্রস্ত অক্ষম কবিসত্তার আর্ত-হাহাকার অভিব্যক্ত হয়েছে। এজন্যই সম্ভবত কবি সাংবাদিক পেশায় নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও এ কাব্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কোনো ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় না; তথাপি একথা সত্য যে, তিনি বন্দী শিবির থেকে কাব্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই ছেঁকে তোলার চেষ্টা করেছেন। ফলে শামসুর রাহমানের শুদ্ধাচারী কবিতার স্বাভাবিক পেলবতা-সৌন্দর্যচেতনা, শিল্পমগ্ন বিমূর্ত চেতনা ব্যাহত হলো। তিনি যাত্রা করলেন জন-সমাজের দিকে। কিন্তু তিনি কী বিদ্রোহী হয়েছেন? না তাঁর বন্দী শিবির থেকের কোথাও বিদ্রোহের সুর নেই। বরং এক নিরীহ-প্রাণ মানুষের অন্তক্ষরণের রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন বন্দী শিবির থেকের আয়তন। ড. সৌমিত্র শেখর-এর সঙ্গে এক দুপুরের আলাপচারিতায় তিনি বন্দী শিবির থেকের কবিতা প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন, আমি এ গ্রন্থের কবিতাগুলো যখন লিখি তখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের দু’মাস আমি আমার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর পাড়াতলীতে ছিলাম। সম্ভবত এপ্রিলের ৫ অথবা ৬ তারিখ পুকুরপাড়ে বসে হঠাৎ মাথায় কবিতার থিম এলো। বাড়িতে গিয়ে একটি পেন্সিল ও খাতা নিলাম। সেদিন দুপুরেই দুটি কবিতা লিখলাম। [সাক্ষাৎকার : ড. সৌমিত্র শেখর, ‘মনুষ্যত্ব না থাকলে বেঁচে থেকে কি লাভ’, ‘দৈনিক সমকাল’-এর সাহিত্য সাময়িকী ‘কালের খেয়া’, ২য় বর্ষ : সংখ্যা ৬৭, ২০ অক্টোবর, ২০০৬; পৃ. ৯] শামসুর রাহমানের জীবনকথা থেকে একথা আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, তিনি যুদ্ধ-বিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী শান্তিপ্রিয় মানুষ। তবে তিনি গাীবাদী অহিংসবাদেও বিশ্বাসী নন। এজন্যই একাত্তরের রক্তাক্ত সংগ্রামকে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধ’ হিসেবে সমর্থন করেন। পাক-বাহিনীর বর্বোরচিত হত্যাযজ্ঞের বিরোধিতার মাধ্যমে সংগ্রামের ইতিহাসে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। সেলিনা হোসেন যথার্থই বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে খুব কম কবিই আছেন যিনি নিজের দেশ, তার ইতিহাস, ইতিহাসের কালচক্রে ব্যক্তি সম্পৃক্ততাকে এমন শৈল্পিক ব্যঞ্জনায় গ্রন্থিত করতে পেরেছেন। তাঁর কবিতায় যেমন ইতিহাস আলোচিত হয়, মানুষের আবেগ রঙধনুর উদ্ভাসে সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়, তেমনি তাঁর কবিতা ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।’ [সেলিনা হোসেন, ‘রূপকথার কবি’, ‘দৈনিক সমকাল’-এর সাহিত্য সাময়িকী ‘কালের খেয়া’, ২য় বর্ষ : সংখ্যা ৬৭, ২০ অক্টোবর, ২০০৬; পৃ. ৭] ‘পৃথিবীর যেথা যত ধ্বনি ওঠে/আমার বাঁশির সুরে সাড়া তার জাগিবে তখনি’ রবীন্দ্রনাথের ‘ঐকতান’ কবিতায় যে বিশ্বাসবোধের কথা বলেন, সেই বিশ্বাসবোধকে ধারণ করে রবীন্দ্রনাথের কাব্যযাত্রা বিচিত্রগামী হয়ে ওঠে। তিনি তাঁর অনেক প্রবে মানুষের মঙ্গল কামনা করেছেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করেছেন সেসব মিলেমিশে রবীন্দ্র-রচনায় যেন অর্কেষ্ট্রা গড়ে ওঠে। এটাকে একজন সফল শিল্পীর শিল্প-প্রয়াস হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। কবি শুধু নিরালোকগামী নন, চাঁদের জ্যোৎস্না কিংবা ফুলের শোভা কবিতার বিষয়বস্তু নয়, তাঁর সচেতন সত্তা এসব কিছুর সঙ্গে মানুষের মনুষ্যত্বকেও উপাদান হিসেবে কবিতায় একীভূত করেন। আর একজন কবি তখনই দেশের মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন, যখন তাদের আশা-আকাáক্ষা-আর্তি, উৎফুল্লতা কিংবা যন্ত্রণা-বেদনা-হতাশা প্রভৃতি কবি সযত্নে ধারণ করেন কবিতায়। শামসুর রাহমান বাংলাদেশের কবিতায় এক ধরনের ব্যতিক্রমী যাত্রায় অগ্রজের ভূমিকা পালন করেছিলেন। এজন্য সম্ভবত কবি অকুণ্ঠ চিত্তে বলতে পারেন, ‘... সুদূর সৌরলোক, এই চরাচর, মানুষের মুখ, বাঁচার আনন্দ কিংবা যন্ত্রণা, সব সময় বন্দনীয় মনে হয় আমার কাছে।’ [বন্দী শিবির থেকে, পৃ. ভূমিকা] তাঁর কাব্যানুভূতি তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের পথে। শামসুর রাহমানের কবিতায় সমকালীন জীবন-কথার চেয়েও যেন অধিক কিছু পাঠক পায়। তাঁর কবিতায় আছে স্নেহময়তা এবং ভালোবাসা। এরই পাশাপাশি আছে তীব্র ঘৃণা-ক্রোধ, ভালোবাসা দেশের জন্য, মানুষের জন্য, প্রকৃতির জন্য সর্বোপরি কবির মানস-প্রতিমা কাব্যলক্ষ্মীর জন্য। তাঁর অবস্খান কপটতা, স্বার্থপরতা, ধর্মাতা, সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচারী মানসিকতার বিরুদ্ধে। তাঁর অনেক কবিতায় এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এজন্য সমালোচক মন্তব্য করেন, ‘... শামসুর রাহমানের অবিনাশী পঙ্ক্তিমালায় যেমন দেশ-ইতিহাস বিমূর্ত, তেমনি জীবনের যে বিচিত্র অনুষঙ্গ শিল্পের উপকরণ তাঁকে তিনি লিখেছেন বুকের ভেতরের শুভ্র কালিতে সোনার কলম চুবিয়ে পাথরের পৃষ্ঠায়। তাঁর বেঁচে থাকা হয়ে উঠেছে ইতিহাসের সব কালের পৃষ্ঠায়, যা মুছবার নয়।’ [সেলিনা হোসেন, ঐ] শামসুর রাহমান বিশুদ্ধবাদী আত্ম-নিয়ন্ত্রিত কবি; তারপরও ঊনসত্তরের উত্তপ্ত রাজনৈতিক প্রতিবেশ ও পরিস্খিতি তাঁকে দিয়ে বন্দী শিবির থেকের বিশেষ কিছু কবিতা রচনা করিয়ে নিয়েছেন। এ গ্রন্থের কবিতা রচনার পূর্বে কবির বিক্ষুব্ধ চিত্তের বহি:প্রকাশ নিজবাসভূমে (১৯৭০) কাব্যগ্রন্থে লক্ষ করা যায়। এ গ্রন্থের বিক্ষোভ বিদ্রোহ-দীপ্রতার পর দেখা দেয় সন্ত্রস্ত বন্দী কবির অসহায়, বিষণí এবং নৈ:সঙ্গতার মুখোমুখি বন্দী শিবির থেকের কবিতাগুচ্ছ রচনা করেছিলেন। নিজবাসভূমের বিক্ষোভ-বিদ্রোহের উজ্জ্বলতায় একাত্তরে বহিরঙ্গের কালো পর্দায় এবং জলপাই রঙের অকারে আবৃত হয়­ বাংলাদেশের গ্রাম-শহর। বন্দী হয় পাখি-মানুষ, সবুজপরা গ্রাম আর ধূসরপরা শহর। এই বন্দীদশার শিবির ভেঙে দু:সাহসী যুবকেরা যুদ্ধে যায়। বাংলাদেশে পাক্-বাহিনীর হঠাৎ আক্রমণে তিনি ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছেন। অবশ্য কবির এই মৃত্যুভয় নতুন কোনো বিষয় নয় বরং বলা ভালো ‘তরুণ বয়সে মৃত্যুচিন্তা দ্বারা তাড়িত হলেও ভয়ের অনুভূতি তাঁর মধ্যে শিশুকালেও দেখা গেছে। এই ভয় উৎপাদনের পেছনে স্বভাবগত অতিসংবেদনশীলতা ও সামাজিক ভূমিকাও যে জড়িত ছিলো সে-কথাও জানা যায় তাঁর স্মৃতিচারণে।’ [সরকার আমিন, ঐ] এজন্যই বন্দী শিবির থেকের কবিতাগুচ্ছে বিদ্রোহের স্বর নয় বরং তাঁর কণ্ঠে নরম-কাতর-নিম্নস্বর; কখনো কখনো চিৎকার থাকলেও তা চুপিচুপি বেরিয়ে আসা দীর্ঘ-নি:শ্বাসের মতো মনে হয়। তাঁর নিজবাসভূমের কোলাহল কলরোল হঠাৎ কোনো তর্জনী সংকেতে যেন থেমে পড়ে। একসময় অস্ত্রের ঝনঝনানি কমে আসে, শহরজুড়ে বিক্ষোভ হন্সাস পায়­ ক্ষোভের প্রকাশ তখন শামসুর রাহমানের অক্ষরবৃত্তের স্বগতোক্তিতে উঠে আসে শিল্পিত সৌকর্যে। হুমায়ুন আজাদ যথার্থই মন্তব্য করেন, বন্দী শিবির থেকের কবিতায় সন্ত্রস্ত-ব্যথিত এক কবির রক্তাক্ত অক্ষম বেদনার প্রকাশ ঘটেছে। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বন্দী শিবির থেকের কবিতাবলি বিশ্লেষণ করলে এর যৌক্তিকতা প্রতীয়মান হয়। এ গ্রন্থের কবিতাবলিতে বন্দীদশায় কবি শামসুর রাহমানের অক্ষমতার ক্যানভাস ফুটে উঠেছে। তাঁর সমকালে কবি স্বাধীন দেশে বসবাস করছিলেন, কবি শামসুর রাহমান তাঁদের ঈর্ষা করেছেন। বন্দী অবস্খায় স্বাধীন দেশের কবিদের মতো তিনি কবিতার জন্য স্বাধীনভাবে শব্দ নির্বাচন করতে পারেন নি। আর তাই কবির কণ্ঠে ফুটে ওঠে অক্ষম বেদনার সুর অথচ এদেশে আমি আজ দম ব এ বন্দী শিবিরে মাথা খুঁড়ে মরলেও পারি না করতে উচ্চারণ মনের মতন শব্দ কোন। [বন্দী শিবির থেকে] ব্যথিত কবি শামসুর রাহমানের ভাবাবেগ আরো সুস্পষ্টরূপ ‘কিছুই নেই’ কবিতায় চিত্রিত হয়েছে। এ কবিতায় বু-বাব বর্জিত কবির বেদনা তীব্র যন্ত্রণার বহির্প্রকাশ লক্ষণীয়। যেমন, ‘পথ প্রান্তে আছি প’ড়ে, পরিত্যক্ত একা;/প্রার্থিত জনের দেখা/মেলেনা কখানো।’ কবির নি:সঙ্গ করোটীতে তাই ‘বাতাস বড়োই জাঁহাবাজ’ আজ; তাঁকে সবসময় থাকতে হয় সন্ত্রস্ত-ভীত না-জানি কখন ঘাতক বুলেটের নির্মম আঘাতে কবির প্রিয় প্রাণবায়ু উড়ে যায়। কেননা বন্দী বাংলায় কবির অভিজ্ঞতা হয়েছে ঘাতক পাক্-বাহিনীর নিষ্ঠুর-নির্মম আচরণ কতটা ভয়ানক তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র। [তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা] কবি দেখেছেন, পাক্-বাহিনীর নরহত্যার নির্মমতা; গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে হয়েছে, পড়ে আছে লাশের আর লাশ এবং শূন্য ভিটাবাড়ি। সুতরাং কবির ভীত অথবা সন্ত্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ ছিল সে-বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। উপরন্তু তিনি নিতান্ত নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে কবির পরিচত প্রতিবেশ থেকে কখনো চেনা আর অচেনা ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে। প্রিয় বু-বাব যাঁরা নিখোঁজ হয়েছে তাঁরা ফিরে আসে নি আর। এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করারও উাপায় ছিল না। এজন্য বন্দী শিবির থেকের ভূমিকায় কবি লিখেছেন, ‘একটা নিদারুণ মোন বয়ে বেড়াতাম আমরা সবাই। শুধু ব ঘরে নিচুর স্বরে কথা বলতাম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতাম কানের কাছে, বুকে রেডিও লাগিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা।’ [বন্দী শিবির থেকে, পৃ. ভূমিকা] এ ধরনের নিদারুণ পরিস্খিতিতে কবির এক সহকর্মী রসিকতা করে মন্তব্য করেছিলেন, ‘রোজ বাইরে বেরুবার আগে আয়নার আমিকে সেলাম ঠুকে বলি, বিদায়। কারণ সেই আমির সঙ্গে কাল আবার দেখা নাও হতে পারে।’ শামসুর রাহমান বুর একথার পর আরো এক গোপন সত্য প্রকাশ করেন গ্রন্থের ভূমিকায়। তিনি লেখেন ‘আমাদের প্রত্যেকের পক্ষেই মারত্মক সত্য ছিল সেই উক্তি, আমরা যারা জীবন নিয়ে জুয়ো খেলেছিলাম, সেই বুলেটবিদ্ধ বিভীষিকাময় দিনগুলিতে।’ কবির এই নিজস্ব উক্তিতে সমালোচক হুমায়ুন আজাদের মন্তব্যের সত্যতা নিহিত রয়েছে। সন্ত্রস্ত শামসুর রাহমান বন্দী শিবির থেকের কবিতায় কিভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তা ‘প্রবেশাধিকার নেই’ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। সন্ত্রস্ত-ভীত হওয়ার বিষয়টি ‘পথের কুকুর’ শীর্ষক কবিতায় তিনি যেভাবে তুলে ধরেছেন তা একাত্তরের ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করে : ... সমস্ত শহরে সৈন্যরা টহল দিচ্ছে, যথেচ্ছ করছে গুলি, দাগছে কামান এখন চালাচ্ছে ট্যাঙ্ক যত্রতত্র। মারছে মানুষ পথে ঘাটে ঘরে, যেন প্লেগবিদ্ধ রক্তাক্ত ইঁদুর। [পথের কুকুর] এ কবিতায় ‘প্লেগবিদ্ধ রক্তাক্ত ইঁদুর’ উপমায় একাত্তরের ভয়াবহ যুদ্ধের একটি সার্থক ও শিল্পিত প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। তখন স্বাধীনতাকামী মুক্তি-পাগল নিরপরাধ মানুষ শত্রুর গুলির সামনে মহামারী আক্রান্ত ইঁদুরের মতো মৃত্যুমুখে পতিত হযেছে। সুতরাং শান্তিপ্রিয় কবি সন্ত্রস্ত-ভীত ও ব্যথিত জীবনোপলব্ধি বিধৃত হয়েছে। কবি তাঁর প্রিয় ঢাকা নগরীতে ঘাতক পরিবেষ্টিত বন্দী অবস্খায় বন্দী শিবির থেকের কবিতায় বন্দীত্বের ব্যথা ও অভিজ্ঞতার ছাপ লেগে আছে। তাঁর এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা কখনো ক্ষোভ হয়ে ফেটে পড়তে চাইলেও তা নি:শব্দে কখনো চরম নিরীহপ্রবণ মন-মানসিকতার বহির্প্রকাশ লক্ষণীয় ক্ষুধে সৈনিকেরা আজ যেন তিন ডাইনীর মন্ত্রে ভয়ানক দীর্ঘকায় হ’য়ে ট্রাকে জীপে শহরে টহল দিচ্ছে। যখন তখন তেড়ে আসে আমার দিকেই উঁচিয়ে মেশিনগান আর আমি পালিয়ে বেড়াই জাঁহাবাজ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে দূরে। [আমারও সৈনিক ছিল] সন্ত্রস্ত কবি দু’একবার বন্দী শিবির থেকের যে বিদ্রোহের সুরে কথা বলেন নি তা নয়; তিনি বিক্ষুব্ধ হয়েছেন ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে’ বন্দীত্বের হতাশ আর্তনাদে উচ্চারণ করেছেন, ‘কী আশ্চার্য এখন ওদের প্রত্যেকের ঘাড়/গাছের ডালের মতো মটমট ভাঙতে পারলে/ আমি ভারী আনন্দ পেতাম।’ [আমারও সৈনিক ছিল] আজীবন শান্তিপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও বন্দী বাংলায় নির্মম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যুদ্ধের বিপক্ষেও অবস্খান নিতে পারেন নি। তাই ‘উদ্ধার’ কবিতায় পাক্-বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধকেই শান্তি ভাবতে বাধ্য হয়েছেন এবং মনে করেছেন, ‘এখন যুদ্ধই উদ্ধার।’ কবি শামসুর রাহমান একাত্তর বিপন্ন জীবনযাপন করেছেন। কিন্তু যুদ্ধ ক্ষেত্রের সরাসরি হত্যা-নৃশংসতা কিংবা জিঘাংসার নারকীয় বাস্তব অভিজ্ঞতা। তাই বিভীষিকাময় বাস্তবতার চিত্র থাকলেও তার অনেকটাই কবি-কল্পিত। বেদনার্ত কবির হাহাকার ‘কাক’ কবিতায় পাওয়া যায়। এজন্য তিনি ঢাকা শহরের বন্দী থেকেও কল্পনার ভেলায় বেরিয়ে পড়েন গ্রামের পথে যুদ্ধকালীন নিষ্ঠুরতার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে। কবির মানসপটে ভেসে উঠেছে জনবসতিপূর্ণ বাংলার শূন্যতা; দেখেছেন হাজার হাজার মৃতদেহ পড়ে আছে গ্রামময় যত্রতত্র। কবির ‘কাক’ কবিতার ক্যানভাসে বিভীষিকা-ভীত বাংলার একাত্তরের অন্তর্লোক এবং বহির্লোকের স্খিরচিত্র ধরা পড়েছে। একাত্তরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে শামসুর রাহমান তাঁর প্রিয় স্বদেশে হানাদার-বাহিনী কর্তৃক বন্দী জীবনযাপন করেছেন। একজন সচেতন কবি বন্দী প্রতিবেশ পরিস্খিতিতে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো যেমন ভারতে পারেন না তেমনি তাঁর অভিজ্ঞতায় ভিন্নতা থাকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সংকটাপন্ন প্রতিবেশ-পৃথিবীর চিত্র বন্দী শিবির থেকে কাব্যগ্রন্থে ব্যক্ত করেছেন। বন্দী শিবির থেকে কাব্যের প্রায় সব কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের ভয়ানক বিপর্যস্ত দিনগুলোর প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। আত্ম-বিপন্ন এবং বিপন্ন পরিস্খিতে কবির যে নিরীহ প্রাণের নির্মম অভিজ্ঞতা হচ্ছে কবির প্রিয় দেশে তাঁর প্রিয় শব্দমালা নিষিদ্ধ হয়েছে। এই নির্মম নিষ্ঠুরতা বিরুদ্ধে কবির কণ্ঠ উচ্চকিত হলেও সেখানে দ্রোহের উত্তাপ নেই। যেমন, গ্রাম্য পথে পদচিহ্ন নেই। গোঠে গরু নেই কোনো, রাখাল উধাও, রুক্ষ সরু আল খাঁ খাঁ, পথপার্শ্বে বৃক্ষেরা নির্বাক নগ্ন রৌদ্র চতুর্দিকে, স্পন্দমান কাক, শুধু কাক। [কাক] কবির প্রিয় মাতৃভূমি জুড়ে এই ভয়াবহ শূন্যতা বিরাজ করছে। এখন নিজের ঘরে যেন নিজের ‘প্রবেশাধিকার নেই’। যাঁদের জীবনের মায়া আছে তাঁরা কথা বলে লুকিয়ে। শামসুর রাহমান জীবনকে বড্ড ভালবাসেন, সম্ভবত এ-জন্যই তিনি সরব হয়ে উঠতে পারেন নি কাজী নজরুল ইসলামের মতো কিংবা বন্দুক হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে পারেন নি। যুদ্ধজনিত ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে নিরীহ-প্রবণ শান্তিপ্রিয় শামসুর রাহমানও ক্ষুব্ধ হয়েছেন; কিন্তু তাঁর কণ্ঠে দ্রোহের বদলে অক্ষমের বেদনাতুর আর্ত-হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে ... ভাবি, যদি অন্তত হতাম আমি পথের কুকুর। [পথের কুকুর] শত্রুর খাণ্ডব-দাহন দেখে কবির চিত্ত যতই অস্খির-চঞ্চল হয়ে উঠুক না কেন, তিনি এর বিরুদ্ধে যেমন বলিষ্ঠ আওয়াজ করেন নি তেমনি নির্ভীক সৈনিকের দৃঢ়তায় অস্ত্রও হাতে তুলে নিতে পারেন নি। কবির প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে, পাক্-বাহিনীর বর্বর আক্রমণে চিরচেনা জনপদ-মানুষ, প্রতিবেশ-পরিবেশ ক্রমশ কবির কাছে অপরিচিত হয়ে উঠেছে; অথচ শামসুর রাহমান করতে পারেন নি কিছুই। কারণ তিনি নিরীহ এবং ভীরু; তাঁর নিজের স্বীকারোক্তি : ‘এখন আমার ক্রোধ দু:খ/ আনন্দ অথবা ভালোবাসা কবিতার ছদ্মবেশে/ কেবলি লুকায়।’ [প্রবেশাধিকার নেই] কবি শামসুর রাহমান মাতৃভূমির এমন তিমিরাচ্ছন্ন অবস্খায় বিশুদ্ধ কবিতাচর্চা ক্রমাগত বহির্মুখী হতে চেয়েছে, পাক্-বাহিনীর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ দৃষ্টে তিনি নিজেকে সামলে রাখতে পারেন নি। এতে কবির অন্তর্গত কাব্য-সৌন্দের্যের লীলাভূমি ভস্মীভূত হয়েছে বাহ্য-পৃথিবীর অনলে। কেননা ‘সৈন্যদল অদূরেই কামান’ দিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে জনপদ; সেখানে বসে কবি কেমন করে বিশুদ্ধ কাব্যচর্চা করবেন! কেননা এই পরিবেশে তাঁর প্রিয় শব্দ নির্বাচন নিষিদ্ধ হয়েছে, সেখানে কবি কিভাবেবিশুদ্ধ কাব্যচর্চা করবেন। অথচ নিরীহ-প্রবণ শামসুর রাহমানের পক্ষেও এই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়াও অসম্ভব। সমসাময়িক বাহ্য ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শামসুর রাহমান লিখেছেন রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার কথা; তারপরও বিশুদ্ধবাদী শামসুর রাহমান বন্দী শিবির থেকেই পাঠকদের জানিয়েছেন আমাদের ক্ষত সেরে গেলে কোন এক বিনম্র বিকেলে তোমার কাছেই যাবো হে আমার সব চেয়ে আপন গোলাপ। [প্রতিশ্রুতি] দেশ-জাতির দ্বারে মৃত্যু আর অত্যাচারের তীব্র নাকাড়া অবিরাম বেজে চলেছে। শুধুমাত্র স্বাধীনতা লাভের জন্য চলছে বাংলার মাটিতে মৃত্যু-ধ্বংসের ‘খাণ্ডব দাহন’। অথবা ছিন্নভিন্ন, ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে রূপসী বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য। এখানে মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মানুষ, কুমারীর সতীত্ব বিসর্জনের আর্ত-চিৎকারে বাংলার আকাশ-বাতাস তখন প্রকম্পিত ছিল। সুতরাং ভয়কাতুরে শামসুর রাহমানের পক্ষে বাংলাদেশের এই দু:সময়েও প্রতিশ্রুতি ছাড়া দেয়ার মতো আর কিছুই ছিল না, কিংবা তাঁর অন্যকোন উপায়ও ছিল না। ‘বিকয়েললেস রাইফেল’ আর মেশিন গানের গর্জনে বাংলাদেশের নিরীহ-মানুষ রাস্তা-ঘাটে প্রতিদিন শিয়াল-কুকুরের আহারে পরিণত হচ্ছে। এর বিবরণ শামসুর রাহমানের কবিতায় বিধৃত হয়েছে এভাবে তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের উপর। [তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা] আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি বন্দী শিবির থেকে কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় কবি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে বন্দী নগরী ঢাকাকে হিটলারের নাৎসী বাহিনীর ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’-এর সাথে তুলনা করেছেন। কবি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাংলার পরিবেশ ফন্সান্জ কাফ্কার ভয়াবহ জগতের চেয়েও অধিকতর ভয়ানক ছিল। বন্দী শিবির থেকের ভূমিকায় কবি এজন্য বলেন, ‘উৎপীড়ন, হত্যা এবং সন্ত্রাস আমাদের চারপাশে রচনা করেছিলো এক ভয়ংকার তমসাচ্ছন্ন ও বিভীষিকাময় পটভূমি। আমরা তৃষিত হয়ে পড়েছিলাম এক ঝলক আলোর জন্যে। নীরন্স শাসরোধকারী সেলের ভেতর বন্দী যেমন ব্যাকুল হয়ে থাকে এক ফোঁটা আলোর জন্যে, টিক তেমনি। ঘরের দরজা-জানালা ব, শিশুরা নিশ্চুপ, ফৌজীজীপের গর্জন, ট্রাকের ঘর্ঘর, বুটের শব্দ, আগুন, আর্তনাদ-আমরা এই নিয়েই ঢাকায় ছিলাম।’ [বন্দী শিবির থেকে, পৃ. ভূমিকা] এ বর্ণনায় বন্দী শিবির থেকের পটভূমি কতটা নির্মম-নিষ্ঠুর ছিল তা অনুমান করা সম্ভব! তবে একাত্তরের বাস্তব অবস্খা ছিল কবির বর্ণনার চেয়েও ভয়ানক ও নির্মম। হুমায়ুন আজাদের বক্তব্য অনুযায়ী একাত্তরের বাস্তবতা ছিল আরো মারাত্মক বিভীষিকায় ভরা এবং দু:সহ অকারে ঢাকা। হুমায়ুন আজাদ এই মন্তব্যের পর আরো উল্লেখ করেন, কবি শামসুর রাহমান মানবিক অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যান নি, পথ হেঁটেছেন কাব্যিক অভিজ্ঞতায়, তাই চমৎকার ও শিল্পিত কবিতার নির্মাণ করতে পেরেছেন তিনি। কবি নিজেকে মুক্তিসেনা হিসেবে নিজেকে উপস্খাপন করেন নি, তথাপি কবির অসাধারণ কল্পনা-শক্তি দ্বারা তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা রচনা করতে সচেষ্ট হয়েছেন। একাত্তরের তিমিরাচ্ছন্ন উন্মত্ত দিনে ঢাকায় বন্দী কবি যেসব কবিতা রচনা করেছিলেন তা যুদ্ধের ভয়াবহ নৃশংতার বহি:প্রকাশ ছাড়া অন্যকিছু নয়। ‘স্যা আইন’ কবিতায় কবি লিখেছেন, ‘এ শহরের আজ মৃতের নগরী না কি?/ মৃতেরা আর গোরখোদকের দল/একটি ভীষণ নকশায় নিষ্প্রাণ।’ এমন ‘নিষ্প্রাণ’ শহরে অবস্খান করে কোনো কবির সৃষ্টি সেই অকারের ফসল ছাড়া অন্যকিছু নয়। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, বন্দী শিবির থেকের কবিতাবলির প্রকৃত রচয়িতা একাত্তরের তিমিরাচ্ছন্ন সময় বা কাল। কবি শামসুর রাহমান নাগরিক; তাঁর কবিতায় নাগরিক মন-মানসিকতার পরিচয় ফুটে ওঠে কবিতার সর্বাঙ্গে। তাঁর অন্তর্গত চেতনায় প্রতিবেশ-পৃথিবী সমকাল ফল্গুধারার ন্যায় প্রবহমান। একাত্তর সালে পাক্-বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ বাংলায় তিনি যে কাব্যচর্চা করেছেন তার সবখানে লেগে আছে পরাধীনতার গ্লানিজনিত অক্ষম বেদনা। ‘আতংকময় শহরে অবিশ্রাম/মানুষ ঝরছে, যেন সব পঁচা ফল।’ এমন অনিশ্চয়তার মাঝে বাস করেও কবি-প্রাণের কাব্যরস একেবারে নি:শেষ হয়ে যায় নি। এ কারণেই ‘ধ্বস্ত দ্বারকায়’ শীর্ষক কবিতায় শামসুর রাহমানের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এখনো আঙুলের শীর্ষভূমি আর দীর্ণ হৃদয়ের গুপ্ত তটরেখা সুরের নন্দিত জোয়ারে যায় জেগে। ­[ধ্বস্ত দ্বারকায়] শামসুর রাহমানের বন্দী শিবির থেকে কাব্য ‘এক ভয়ানক তিমিরাচ্ছন্ন ঋতুর ফসল’ একথা বললে অত্যুক্তি হয় না। একাত্তরের পঁচিশে মার্চে সমগ্র বাংলায় যে কালো রাত্রির ঘনঘটা দেখা দিয়েছিল, তা যদি আদৌ না-আসতো তাহলে হয়তো শামসুর রাহমান তাঁর শুদ্ধচারী কবিতার খোলস ছেড়ে জনতার কাতারে দাঁড়াতেন না। অর্থাৎ সমকালের অকারাচ্ছন্ন পরিবেশ ও বাস্তবতা কবিকে দিয়ে বন্দী শিবির থেকের কবিতা লিখিয়ে নিয়েছে। শুদ্ধাচারী শামসুর রাহমান এ গ্রন্থে স্বাধীনতার জন্য তীব্র আকাংখার বল্গাহীন ঘোড়া ছুটিয়েছেন। ============================================ সংবাদ সাময়িকী/ ২৩ অক্টোবর ২০০৮ প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৮:৩২
false
rn
ইংরেজি সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (দশ) ৯১। 'থিংস ফল অ্যাপার্ট' লেখক- চিনুয়া আচেবে। এককথায়, 'থিংস ফল অ্যাপার্ট' পুরো আফ্রিকার একটি micro চিত্র। সামাজিক, নৃ-তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক—এ তিনটি দিক থেকে এ উপন্যাসটিকে বিবেচনা করা যায়। ওমোফিয়া গ্রামের ইবো জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবনধারাকে তুলে ধরেছে এ উপন্যাস। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আদিম এই সমাজ অপরিবর্তিত অবস্থায় চলে আসছে। ঐতিহ্যকে লালন করে অভ্যস্থ এই সমাজের সাথে বহির্বিশ্বের বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই। লেখক আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের 'দ্য সেকেন্ড কামিং' কবিতা থেকে ধার করে তাঁর উপন্যাসটির নাম দিয়েছিলেন 'থিংস ফল অ্যাপার্ট'। ৯২। 'ইউলিসিস' লেখক- জেমস জয়েস। ইউলিসিস-এর কাহিনী একটিমাত্র দিনকে ঘিরে। ১৯০৪ সালের ১৬ জুন। এই সাধারণ একটি দিনে এক সাধারণ নাগরিক লেওপোল্ড ব্লুম ডাবলিন শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান নানা কাজে। প্রাচীন গ্রিক কবি হোমার-এর রচিত মহাকাব্য ওডিসি-র সাথে উপন্যাসটির অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ৯৩। 'দ্যা প্রিন্স' লেখক- নিকোলো ম্যাকায়াভেলি। লেখকের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর বইটি প্রকাশ পায়। এই বইটির জন্য লেখকে অনেক বাজে কথা শুনতে হয়েছে। জারি করা হয় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা। রাজ-পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দায়ে তাকে বন্দি করা হয়, চলে অকথ্য অত্যাচার। শেষে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয় শহর থেকে দূরের এক বাড়িতে। এই সময়ই মেকিয়াভেলি রচনা করেন ‘দ্য প্রিন্স’ নামক এক রাজনৈতিক প্রবন্ধ, তাতে বলা ছিল ক্ষমতা লাভের জন্য কোনো পন্থাই সেই অর্থে অনৈতিক নয়। ৯৪। 'জিপসি ব্যালাডস' লেখক- ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা। ম্যাঙ্গুয়েল বলেছিলেন, হায় রে, যা-ই পড়ি তা-ই দেখি ভানে ভরা, শুধু বোর্হেসেই কোনো ভান নেই; আর যে-দেশের যত বড় লেখকের লেখাই পড়ি না কেন, দেখি শুধু ‘লোকাল কালার’-এর ছড়াছড়ি; সবাই কোনো না কোনো জাতির বা দেশের লেখক, একমাত্র বোর্হেসই দেখছি ‘পৃথিবীর’ লেখক।৯৫। 'অন্ধত্ব' লেখক- হোসে সারামাগো। সারা মাগো তার উপন্যাসে একটা অদ্ভুদ অন্ধত্বের কথা বলছেন সেটা হচ্ছে শ্বেত অন্ধত্ব। এটা হচ্ছে একটা ছোয়াচে রোগ। এমনিতে স্বাভাবিক অন্ধত্ব কোন সমস্যা নয়। কিন্তু সাদা অন্ধত্ব মারাত্মক এক রোগ। এরা যাকেই ছুয়ে দেয় সেই পরিণত হয় সাদা অন্ধে। সে সব কিছু শাদা দেখে। একটা শহরে সবাই এভাবে অন্ধ হতে থাকে। আর সেখানে সবাই মেতে উঠে লুটতরাজে, ধর্ষনে, হানাহানিতে। উপন্যাসের শুরুতে এরকম। রেড সিগনালে আটকা পড়া কয়েকটি গাড়ি। গ্রীন সিগনাল পড়ার সাথে না চলতে পারা এক চালক যে চিৎকার করে বলে আমি অন্ধ হয়ে গেছি। আমি সব শাদা দেখছি। তাকে বাড়ী পৌছে দেয় একজন লোক যে কিনা তার অন্ধত্বের সুযোগে গাড়ীটা চুরি করে নিয়ে যায় এবং সেও অন্ধ হয়ে যায় সবকিছু সাদা দেখতে থাকে। ৯৬। 'মসনবী' লেখক- জালালুদ্দিন রুমি। মসনবী শুধু ফার্সী সাহিত্য ভান্ডারে নয়। এটি বিশ্ব সাহিত্য ভান্ডারেরও একটি অমূল্য সম্পদ। মসনবী গ্রন্থে তিনি কাব্য আকারে বহু কাহিনী উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে। এগুলো প্রায় সবই মূল্যবান উপদেশাবলী। জালালুদ্দীন রূমীর মৌলিক দীক্ষা হল হৃদয় এবং মস্তিষ্কের একীকরণ। ৯৭। 'টারজানের গল্প' লেখক- এডগার রাইজ বারোজ। ১৯১৪ সালে এডগার রাইস বারোজের কলম থেকে টারজান সিরিজের প্রথম উপন্যাস 'টারজান অব দ্য এপস' প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এই চরিত্রটি।৯৮। 'দ্য ভয়েজ অব দ্য বিগল' লেখক- ডারউইন। ১৮৩১-১৮৩৬ সময় কালে দক্ষিণ আমেরিকা, গালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে বইটি লেখেন ডারউইন । বলা হয, এ ভ্রমনের পরই ডারউইন জীবজগৎ সম্পর্কে তার প্রচলিত ধারনা বদলে ফেলেন।৯৯। 'গুডবাই কলোম্বাস' লেখক- ফিলিপ মিল্টন রথ। রথ তার সময়ের সবচেয়ে প্রশংসিত আলোচিত লেখক। তিনি দু-দু'বার ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। তিনবার পেয়েছেন ফকনার অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৭ সালে লাভ করেন পুলিৎজার পুরস্কার। লেখক নিজের সম্পর্কে বলেন- আমি এমন একজন, যে কিনা সবসময় প্রাণরসে পূর্ণ হয়ে সে যা নয় তার দিকে নিজেকে পরিবর্তন করতে চায়। আমি ওই লোকের মতো যে সারা দিন শুধুই লেখালেখি করতে চায়। ১০০। 'আঙ্কেল টম’স কেবিন' লেখক- হ্যারিয়েট বিচার স্টো। এটি দাসপ্রথা নিয়ে বাস্তব ও ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। Josiah Henson নামক এক নিগ্রো দাসের রচিত The Life of Josiah Henson নামক আত্মজীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ও আংশিক অনুকরণেই মূলত হ্যারিয়েট বিচার স্টো এই বইটি রচনা করেন। এছাড়াও স্টো ম্যাডাম প্রচুর গবেষনা করে এই বইটি লিখেছিলেন। আবরাহাম লিংকন স্টোয়ের সাথে প্রথম সাক্ষাত করে সবার প্রথমে বলেন, তাহলে এই সে তরুনী যে যুদ্ধের সূত্রপাত করে! (দাসপ্রথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ)। এই বইটি পড়তে দুইটি চোখ অশ্রুর জন্য বড্ড কম হয়ে যায়।সাহিত্যিকদের সর্বশ্রেষ্ঠ দর্শন জমা থাকে একেকটি বইয়ে। যুগে যুগে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের বহু সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি হয়েছে। এসব সাহিত্যকর্মগুলোর ছোট কোনো তালিকা সঠিকভাবে করা আদৌ সম্ভব নয়। তবে কালজয়ী সাহিত্যকর্মের তালিকায় বারবার কয়েকটি বইয়ের নাম উঠে এসেছে। পাঠকপ্রিয়তার দিক থেকেও এই বইগুলোর আবেদন সময়কে জয় করেছে।
false
rg
মাইক মানে উৎপাত, চাই মাইকের উৎখাত!!! ছোটবেলায় কাউকে বিরক্ত করার জন্য আমরা কাগজ দিয়ে মাইক বানাতাম! আমাদের মত ছোকরাদের সেই কাগজের মাইকের উৎপাতে চরম বিরক্ত হয়ে একসময় মুরব্বিদের কানে নালিশ আসতো। নালিশ আসলে আমরা হাতেনাতে কিছু বালিশ পেতাম। সেই বালিশের পোড়ানিতে দীর্ঘদিন আমরা এই মাইক মাইক খেলা অটোমেটিক ভুলে যেতাম। কিন্তু চৈত্র সংক্রান্তির মেলার সময় মাইকের মত দেখতে প্লাস্টিকের বাঁশি দেখলেই আমরা আবার বালিশের কথা ভুলে সেই বাঁশি কিনতাম। নতুন বাংলা বছরের প্রথম কয়েক দিন সেই প্লাস্টিকের বাঁশি দিয়ে সবার জন্য চরম অশান্তি সৃষ্টি করার পর একসময় সেই বাঁশি বড়দের কেউ ভেঙ্গে দিতেন। আমাদের মাইক নিয়ে খেলার বাসনা তখন বছরের বাকি সময়ের জন্য আড়াল হতো। দক্ষিণ আফ্রিকার জনপ্রিয় বাঁশি'র নাম ভুভুজেলা বাঁশি। ছোটবেলায় আমরা বৈশাখী মেলা থেকে যেটা কিনতাম তারচেয়ে ভুভুজেলার নলটা অনেক বেশি লম্বা। শব্দও বেশি জোড়ালো। এই ভুভুজেলা বাঁশির সামনের দিকটা দেখতে ঠিক মাইকের মত। সম্প্রতি বাংলাদেশে এই ভুভুজেলা বাঁশির উৎপাত বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গ্রামের হাটবাজারে আমরা ছোটবেলায় দেখতাম একটা বিশেষ চোঙার সাহায্যে ফেরিওয়ালা চট করেই হাজার মানুষের ভিড়ে আমাদের মত ছোকরাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতেন। আমরা হাটে গেলে প্রায় পুরোটা সময় ওই ফেরিওয়ালার নানান কিসিমের লেকচার শুনে ব্যাপক বিনোদন নিয়ে তারপর বাড়ি ফিরতাম। ওই ফেরিওয়ালার হাতে যে চোঙাটা থাকতো, ওইটার সামনের দিকটাও দেখতে ঠিক মাইকের মত। শব্দ জোড়ালো আকারে বিচ্ছুরণের জন্য চোঙার পরিবর্তিত রূপ আসলে এখনকার মাইক। এখন অবশ্য ফেরিওয়ালারা পুলিশের মত হ্যান্ড-মাইক ব্যবহার করেন। এছাড়া ফিল্মের শ্যুটিংয়ের সময় মানুষ ঠেকাতে এই হ্যান্ড-মাইকের জনপ্রিয়তা রয়েছে।সুইডিশ নোবেল কমিটি প্রতিবছর পদার্থবিদ্যায় নতুন নতুন আবিস্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার দেয়। কিন্তু মাইক আবিস্কার করার জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে পুরস্কার না দিয়ে সুইডিশ নোবেল কমিটি মাইকের বহুব্যবহার ও প্রয়োজনের দিকটাকে কিছুটা হলেও অবমূল্যায়ন করেছে বটে!গ্রামের হাটবাজারগুলোতে হাটের দিন একটা বিশেষ শব্দ হয়। এটাকে হাটের শব্দ বলা হয়। হাটের শব্দ থেকে প্রতিটি শব্দের আলাদা অর্থ আজ পর্যন্ত কোনো নাদান আলাদা করতে পারেননি। তবে হাটে যদি একটা মাইক থাকে, তাহলে দূর থেকে সেই মাইকে ভেসে আসা শব্দকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। যেমন- ভাইসব, হাট করা শেষে বাড়ি যাবার সময় হাকিম শিকদারের আশ্চার্য মলম নিয়ে যেতে ভুলবেন না। হাকিম শিকদারের আশ্চার্য মলম একবার লাগালেই কাজ হয়। অর্থ্যাৎ দূরের মানুষকে বা একসঙ্গে অনেক মানুষ কিছু জানাতে চাইলে মাইকের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। ইদানিং অবশ্য সাউন্ড সিস্টেম আর বড় বড় সাউন্ড বক্স মাইকের বাজারে কিছুটা জায়গা দখল করেছে। কিন্তু সেটা বেশিরভাগ ইনডোরে। আউটডোরে এখনো মাইক অপ্রতিদ্বন্দ্বি। শব্দ দূষণের জন্য এই মাইক এখন শহরের সবচেয়ে দুষ্ট আইটেম। জনসভা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন মাইকের মাধ্যমে প্রচার করে মানুষের শ্রবণইন্দ্রিয়ের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে ২০০৬ সালে প্রণীত শব্দদূষণ নীতিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একই ভাবে, নীরব এলাকার জন্য এই শব্দসীমা যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর উপরে শব্দ সৃষ্টি করা দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আমাদের দেশে এই বিধিমালা একদমই মানা হচ্ছে না।একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি বেসরকারী সংগঠনের পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় শব্দদূষণ মাত্রা ১০২ ডেসিবেল, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় ৯৩ ডেসিবেল, বাংলামোটর এলাকায় ৯২ ডেসিবেল, সদরঘাট এলাকায় ৮৮ ডেসিবেল, ফার্মগেট এলাকায় ৯৩ ডেসিবেল, শাহবাগ এলাকায় ৮৬ ডেসিবেল, মহাখালী এলাকায় ৯৪ ডেসিবেল, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ১০১ ডেসিবেল, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৯৫ ডেসিবেল, গুলিস্তান এলাকায় ৯২ ডেসিবেল এবং স্কয়ার হাসপাতাল এলাকায় ১০৪ ডেসিবেল। যেখানে সবোর্চ্চ শব্দসীমা যত তার দ্বিগুণ শব্দ দূষণ করা হচ্ছে।শব্দ দূষণের কারণে উচ্চরক্ত চাপ, মাথাধরা, অজীর্ণ, পেপটিক আলসার, অনিদ্রা ও ফুসফুসে সহ নানা রকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত শব্দ দূষণে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা নষ্ট হয়, সন্তান সম্ভাবনা মায়েদের যে কোনো ধরনের উচ্চ শব্দ মারাত্মক ক্ষতিকর। যানবাহনের শব্দ দূষণে ষ্ট্রোকের ঝুঁকি বহুমাত্রায় বেড়েছে। এভাবে শহরে মাত্রারিক্ত শব্দদূষণের কারণে আগামী প্রজন্ম হারাচ্ছে শ্রবণশক্তি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যদি টানা ৮ ঘন্টা ৯০ থেকে ১০০ ডেসিবেল শব্দ প্রতিদিন শোনা হয়, তাহলে ২৫ বছরের মধ্যে শতকরা ৫০ জনের বধির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শহরে গাড়ির হর্ন, কলকারখানার শব্দ, ইঞ্জিনের শব্দ ইত্যাদিকে ছাড়িয়ে মাইক রয়েছে শব্দ দূষণের এক নম্বর স্থানে। ইদানিং শব্দ দূষণ ছাড়াও মাইকের ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা উসকানি। নানান কিসিমের মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়াতে মাইককে যত্রতত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। মাইকের এই যত্রতত্র ব্যবহারের সবচেয়ে ভয়ংকর দিকটি হলো মসজিদের মাইক এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১২ সালে মসজিদের মাইকে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালিয়ে রামু'র বৌদ্ধ পল্লী জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালে সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে বগুড়ায় তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। ফটিকছড়িতে 'বড় হুজুরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে' এমন গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের মিছিলে ভয়ঙ্কর তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের মাদানিনগর মাদ্রাসার মাইক ব্যবহার করে পুলিশের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে আলোড়ন তুলেছিল মসজিদের মাইক ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক নাজেহালের ঘটনা। আর গতকাল শুক্রবার মসজিদের মাইক ব্যবহার করে সিলেটের ইস্কর মন্দিরে হামলা করার ঘটনাটি ঘটে। সুতরাং মাইকের শব্দ দূষণের পাশাপাশি মাইকে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে সন্ত্রাসী হামলা বা দাঙ্গা লাগানোর মত প্রবণতা ইদানিং বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে মাইকের ব্যবহার নিয়ে কোনো আইন আছে কিনা আমি জানি না। যদি থেকেও থাকে সেই আইনের বাস্তবে কোনো ব্যবহার যে নাই, তা দিবালোকের মত সত্য। মাইকের এই যে অপব্যবহার করছে একটি গোষ্ঠী, তারা কাদের প্রশ্রয়ে এটা করার দুঃসাহস পাচ্ছে? আমাদের রাজনৈতিক নেতারা দীর্ঘদিন ধরে জনসভায় মাইকে চিৎকার করে ভাষণ দেবার যে প্রাকটিস করে আসছেন, সেখানে সেই চিৎকারের নানান কিসিমের অর্থ আছে। কোনো সুস্থ লোক অমন চিৎকার করতে গেলে তার পাছা দিয়ে জিনিস বের হয়ে যাবার কথা। মাইকের ব্যবহার জনপ্রিয় করতে আমাদের নেতারা ভূমিকা রাখছেন। আর এটাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য আরেকটি গোষ্ঠী দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করছে। মাইক নিয়ে প‌্যাচাল পাড়তে গিয়ে এখন আমার নিজেরই মাথা ধরে আসছে। মাইকের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। একুশ শতকের সভ্যতায় মাইকের ব্যবহার একটি বড় ধরনের অপরাধ। এটি রাষ্ট্র করুক, কোনো প্রতিষ্ঠান করুক, কোনো রাজনৈতিক দল করুক, কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় করুক, কোনো ব্যক্তি করুক বা যে কোনো ভাবেই করা হোক না কেন, মাইক ব্যবহার করা একটি প্রকাশ্যে অপরাধ করার মত ব্যাপার। আমি বাংলাদেশে মাইকের ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চাই। একজন রোগীর কাছে মাইক হলো ভয়ংকর একটা নরক। প্রতিদিন আমাদের শ্রবণইন্দ্রীয় নষ্ট হচ্ছে। আমরা ধীরে ধীরে একটি বধির জনগোষ্ঠীর স্বপ্নের রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন করছি যেন! মাইকের ব্যবহার বন্ধ না করলে সেই রাষ্ট্রই ধীরে ধীরে বধির হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। অতএব সাধু সাবধান। ....................................৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২
false
rn
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প পর্যটন হলো একটি বহুমাত্রিক শ্রমঘন শিল্প। এ শিল্পের বহুমাত্রিকতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা তৈরি হয়। অজানাকে জানা এবং অচেনাকে চিনতে চাওয়া মানুষের চিরায়ত স্বভাব। প্রতিনিয়তই নতুন কিছু দেখা ও জানার আকর্ষণই মানুষকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে। পর্যটন শিল্পের বিকাশের ওপর বাংলাদেশের অনেকখানি সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে কর্মসংস্থান ঘটবে ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সফল হবে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের অন্যতম একটি উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যটন শিল্প।সহজ কথায়, পার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করার উদ্দেশ্যে মানুষের দর্শনীয় স্থানে অবস্থান এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কর্মকা-কে পর্যটন বলে।নানা নান্দনিক সৌন্দর্যের কেন্দ্র হলো বাংলাদেশ। এদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো নানা বৈচিত্র্যের সমাহার। কোনোটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোনোটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত আবার কোনোটি ধর্মীয় ঐতিহ্যের নান্দনিক স্মারক হয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে দেশ, ঐতিহ্যগত, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং আত্মিক সকল সম্পদ দিয়েই সমৃদ্ধ। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার হিসেব মতে, প্রতি বছরই ৯০ কোটি পর্যটক তৈরি হচ্ছে বিশ্বে। পৃথিবীতে পর্যটন শিল্প আজ বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পর্যটন হলো একটি বহুমাত্রিক শ্রমঘন শিল্প। ‘পর্যটন’ অর্থনীতির একটি বিশেষ খাত- বাংলাদেশে এমন ধারণার বিকাশ ঘটে পঞ্চাশ-ষাটের দশকে। সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয়ের ৭৫ শতাংশই আসে পর্যটন খাত থেকে। ১৯৫০ সালে বাংলাদেশে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২৫ মিলিয়ন মাত্র, আয় ছিল ২ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি, ধরা হচ্ছে ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবেন এশিয়ার দেশগুলো। বাংলাদেশ যদি বিশাল এ বাজার ধরতে পারে তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি।বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের সমস্যাসমূহঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাই পর্যটন শিল্পের জন্য বড় হুমকি। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার মতো যেমন আরামদায়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব ঠিক তেমনি সেখানকার আবাসন ব্যবস্থাও ভালো নয়। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সৌন্দর্য নিয়ে আকর্ষণীয় প্রচারণা চালানো হয় না। বিদেশি পর্যটকদেরকে পথ দেখানো থেকে শুরু করে পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কিত ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য যে দক্ষ গাইডের প্রয়োজন বাংলাদেশে তার বড়ই অভাব। বাংলাদেশের সরকার পর্যটনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে সব সময়ই অবহেলা করে এসেছে। বাংলাদেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে খুব কমই আছেন যারা পর্যটন শিল্পের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প নিরাপত্তার অভাব পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশ সেরা পর্যটন স্থান কিছু নিম্নলিখিত :১। পতেঙ্গা- পতেঙ্গা সৈকত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। পতেঙ্গা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ২। ফয়েজ লেক- ফয়েজ লেক মানব সৃষ্ট একটি খাল যা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশে অবস্থিত।৩। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত- বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজার। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসছে। কক্সবাজার সৈকতে গেলে দেখা যায় অভাবনীয় দৃশ্য। হাজার হাজার নারী-পুরুষ শিশুর অপূর্ব মিলনমেলা। তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুখরিত সাগর তীর।৪। সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপ- সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে।৫। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা- চট্রগ্রাম পার্বত্য জেলার অন্তর্গত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। এখানে পর্যটক আকৃষ্ট অনেক কিছু দেখার আছে।৬। সুন্দরবন- বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ৭। ষাট গম্বুজ মসজিদ- বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। ৮। কুয়াকাটা- বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। কুয়াকাটা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত।৯। সোমপুর বৌদ্ধবিহার- পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। ১০। রামসাগর- রামসাগর দিনাজপুর জেলার তেজপুর গ্রামে অবস্থিত মানবসৃষ্ট দিঘি। এটি বাংলাদেশে মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় দিঘি।১১। জাফলং এবং মাধবকুন্ড জলপ্রপাত- জাফলং, বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি এলাকা। এছাড়া ঢাকায়- লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, শহীদ মিনার, জাতীয় সংসদ ভবন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রমনা পার্ক। নেপাল ছোট একটি দেশ হলেও সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। অথচ পর্যটন দেশ ও এলাকা হিসেবে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। কিন্তু আমাদের দেশে যে সব দর্শনীয় স্থান রয়েছে, সে সব স্থানের পরিচিতি যদি যথাযথ ভাবে প্রচার করা হয় না। গোটা বিশ্বে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, সিউল, সিঙ্গাপুর, হংকং, লন্ডন, প্যারিস, দুবাই, ই¯তাম্বুল ও নিউইয়র্ক এই ১০ টি রাজধানী শহর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নেয়া উচিত। প্রতিবছর বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন গড়ে মাত্র ৯ লাখ পর্যটক আর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ভ্রমণে যান ১৫ লাখ। একজন বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে ৬ দিন অবস্থান করেন। ওই ছয় দিনে ওই পর্যটক কমপক্ষে ৯১ হাজার ২১০ টাকা খরচ করেন। আরো ১০ লাখ পর্যটক আনতে পারলে এ খাত থেকে সম্ভাব্য আয় বাড়বে ৯ হাজার ১২১ কোটি টাকা। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন গন্তব্য-দেশের মানুষের এবং পর্যটকদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ও উন্নয়নে সাহায্য করে। মানুষ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবধান সত্ত্বেও পরস্পরের সাথে উঠা-বসা করলে একে-অপরকে জানতে পারে। এভাবে একজন অন্যজনের ভাল দিকগুলো গ্রহণ করে নিজ নিজ আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, রীতি-নীতি, জীবন-পদ্ধতি, মূল্যবোধ, মনোভাব ইত্যাদির ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন করে পরস্পর সমৃদ্ধ হতে পারে। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৭
false
ij
যা কিছু আককাদিয় অর্জন প্রাচীন সুমেরিয় সাহিত্য থেকে আমরা এক বিচিত্র কাহিনী জানতে পারি। আজ থেকে ৪০০০ বছর আগেকার কথা। প্রাচীন ইরাকের কিশ নগর। সে কালে নারীরাও পুরোহিত হতে পারত। উচ্চবর্ণের এক নারী পুরোহিত প্রেমে পড়েছিল কিশ নগরের এক হতদরিদ্র উদ্যান মালির । তাদের মিলনে একটি পুত্র সন্তান জন্মে । লোকলজ্জ্বার ভয়েই সম্ভবত সেই উচ্চবর্ণের নারী পুরোহিতটি নবজাতক শিশুটিকে একটি ঝুড়িতে রেখে ঝুড়িটি ডালপালা দিয়ে ঢেকে ইউফ্রেতিস (ফোরাত) নদীতে ভাসিয়ে দিল । কথায় বলে, রাখে আল্লা মারে কে। প্রাচীন ইরাকের প্রধানা দেবী ছিলেন ইশতার; তারই আর্শীবাদে নাকি নবজাতকটি রক্ষা পায়; কিশ নগরের উদ্যানের সেই হত দরিদ্র মালি -মানে, নবজাতকের বাবাই নাকি শিশুটিকে উদ্ধার করে লালনপালন করে। সেই মা পরিত্যক্ত শিশুটিই পরবর্তীকালে প্রাচীন ইরাককে ঐকবদ্ধ করে সম্রাটের সর্বময় ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বসভ্যতার প্রথম কেন্দ্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং ঐক্যবদ্ধ একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন-যে সাম্রাজ্যটি ইতিহাসের পাতায় আককাদিয় সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। সেই মা পরিত্যক্ত নবজাতকের নাম সারগন। সময়কাল? খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩৪-২২৭৯। কিশ নগরের রাজার নাম ছিল উর-যাবাবা। দেবী ইশতারের আর্শীবাদে রাজা উর-যাবাবা সারগন কে পেয়ালাবাহক (কাপবেয়ারার) নিযুক্ত করেন। কারও কারও মতে, রাজা তাকে খাল-পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত করেন। খাল পরিদর্শনকালে সারগন একদল একনিষ্ট পরিশ্রমী কৃষকের সান্নিধ্যে আসে। এরাই পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিল সারগনের অনুগত সৈন্য। যা হোক। রাজা উর-যাবাবাকে সিংহাসনচ্যূত করে সারগন কিশ নগরের রাজা হন। কিন্তু কী কারণে যেন কিশ নগরকে কেন্দ্র করে রাজ্যবিস্তার করেননি সারগন বরং কিশ নগরের উত্তরে আগাদে নামে এক নগর প্রতিষ্ঠিত করলেন । আগাদে নগরের নাম পরে হয়ে যায় আককাদ। সেকালে ইরাকের দজলা ও ফোরাত নদী দুটি যে জায়গায় খুব নিকটবর্তী ছিল আককাদ নগরটি ছিল ঠিক সেখানেই অর্থাৎ, এখনকার বাগদাদ-এর আশেপাশে। কালক্রমে আককাদ নগরটি হয়ে উঠেছিল প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন নগর। আককাদ নগরটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল সুবিশাল আককাদিয় সভ্যতা।সময়টা খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩০। নতুন নগর নির্মানের পর সামরিক অভিযানে বের হলেন সারগন। কিশ ও আককাদ বাদেও সে সময়কার প্রাচীন ইরাকে আরও কটি নগর ছিল। যেমন: নিপপুর সুসা লাগাশ উর এবং উরুক। সারগন একে একে এসব নগর পদানত করেন। চারবার সিরিয়া ও কেনান আক্রমন করে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। সারগন কেবল বিশাল সাম্রাজ্যই গড়ে তুলেননি, সাম্রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গ্রহন করেছিলেন অভিনব নানা পদক্ষেপ । যেমন: সেই সময়কার চন্দ্রদেবতার নাম ছিল নানা এবং আকাশ দেবতা ছিলেন আন। এনহেদুয়ানা নামে এক মেয়ে ছিল সারগন-এর । উর নগরের চন্দ্রদেবতা নানা-র উপাসনালয়ে এবং উরুক নগরের আকাশ দেবতা আন- এর উপাসনালয়ে এনহেদুয়ানা কে প্রধান (নারী) পুরোহিত নিযুক্ত করেন সারগন । এভাবেই সমগ্র অধিকৃত অঞ্চল সারগনের দখলে তো আসেই, সেই সঙ্গে শান্তিও প্রতিষ্ঠিত হয়।এবং এনহেদুয়ানাই মানবসভ্যতার প্রথম সাহিত্যিক যার নাম আমরা জানি। কেননা, এনহেদুয়ানা অসংখ্য প্রার্থনাসংগীত লিখেছেন। পিতার পক্ষে প্রোপাগান্ডা করে লিখেছেন: পিতার সাম্রাজ্যটি ঐক্যবদ্ধ থাকলে অত্র অঞ্চলের সকলের জন্যই মঙ্গলজনক। যা হোক। সূদীর্ঘ ৫৬ বছর আককাদ শাসন করেছিলেন সারগন। আককাদই ছিল প্রাচীন ইরাকের প্রথম সেমেটিক রাজবংশ । তো সেমেটিক কারা? নুহ নবীর তিন ছেলের এক ছেলের নাম ছিল শেম। সেমিটিক বলতে প্রাথমিক ভাবে বোঝানো হয় মধ্যপ্রাচ্যের শেমের বংশধর এবং পরবর্তীকালে মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা পরিবার। কেবল সেমেটিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাই নয়; প্রাচীন ইরাকের সামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সারগনই করেছিলেন। সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে মজবুত করার লক্ষ্যে নানা বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সারগন। যেমন, সারগন এর আগে শাসক নির্বাচিত করা হত ধনীক গোষ্ঠীর মধ্য থেকে । সারগনের সময় থেকেই প্রথম জ্যেষ্ঠ পুত্রকে সিংহাসনের বৈধ উত্তরাধিকার করার উদ্যেগ নেওয়া হয়। এতে সাম্রাজ্যের সংহতি দৃঢ় হয়।আককাদিয় সভ্যতায় কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত পরিকল্পিত অর্থনীতি প্রচলিত ছিল। রাজকর্মচারীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কৃষিকাজ সম্পন্ন করা হত। শষ্যের বন্টন করা হত। তবে, অধিকৃত রাজ্যের ওপর জুলুম করা হত। অধিকৃত রাজ্যের গ্রামসমূহ জ্বালিয়ে সমতল ভূমিতে করা হত কৃষিকাজ । পন্য বাজারে কিংবা অন্য এলাকায় পরিবহনের জন্য আককাদিয় সাম্রাজ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল উন্নতমানের। সেই সঙ্গে গতিশীল ডাকব্যবস্থাও প্রচলিত ছিল। সারগনআককাদিয় সাম্রাজ্যের রাজকীয় আয়ের অন্যতম খাত ছিল রাজস্ব, যে কারণে গড়ে উঠেছিল একটি শক্তিশালী ও দক্ষ রাজস্ব বিভাগ। সারগন-এর নামাঙ্কিত কাদার তৈরি সিলমোহর ব্যবহার করত রাজকর্মচারীরা । আককাদিয় সম্রাট নারাম সিন ছিলেন সারগনের দৌহিত্র; তার একটি সীসার তৈরি মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া আককাদিয় কারুশিল্পীরা ব্রোঞ্জ গলন পদ্ধতিও জানত; একসময় ভাবা হত পদ্ধতিটির উদ্ভাবক বুঝি গ্রিকরা, আসলে আককাদিয় শিল্পীরাই ব্রোঞ্জ গলনের পদ্ধতি গ্রিকদের বহু আগেই রপ্ত করেছিল। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও প্রাচীন ইরাকে আককাদিয় সভ্যতার অবদান অনেক। যেমন, আককাদিয় ভাষার প্রাচীন ইরাকের কথ্য ভাষা হয়ে উঠেছিল। যেমন সুমেরিয় ভাষাটি হয়ে উঠেছিল সাহিত্যের ভাষা। পরবর্তী ১০০০ বছরে ঐ অঞ্চলে সেমেটিক ভাষার ভিত গড়ে দিয়েছিল আককাদিয় ভাষা । এবং আমরা মনে করতে পারি সারগনের কন্যা এনহেদুয়ানা আককাদিয় ভাষায় লিখেছেন অসংখ্য প্রার্থনাসংগীত ।এক কন্যা ছাড়াও সারগনের দুই পুত্র ছিল। এদের নাম যথাক্রমে রিমুশ এবং মানিশটুসু। সারগনের মৃত্যুর পর তারা পর্যায়ক্রমে আককাদ সাম্রাজ্যের সম্রাট হন। প্রথমে রিমুশ পরে মানিশটুসু। দুভার্গ্যজনকভাবে এরা দুজনই আততায়ীর হাতে অত্যন্ত নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন। মানিশটুসু এর এক ছেলে ছিল; নাম: নারাম সিন। পিতার মৃত্যুর পর নারাম সিন আককাদের সম্রাট হন। একেক জনের ভাগ্য একেকরকম। নারাম সিন-এর ভাগ্যে অপঘাতে মৃত্যু লেখা ছিল না; তিনি সুদীর্ঘ ৫৬ বছর আককাদ শাসন করেছিলেন । নারাম সিন-এর শিলালিপিনারাম সিন-এর সময়ে আককাদ সাম্রাজ্যটি ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীরের লেবানন, উত্তরে তুরস্ক এবং দক্ষিণে পারস্য উপসাগর অবধি বিস্তার লাভ করেছিল । নারাম সিন-এর প্রাসাদনারাম সিন-এর মৃত্যুর পর আককাদের সম্রাট হলেন তার ছেলে শার কালি শাররি । তার সময়ে রাজ্যের নানা স্থানে বিদ্রোহ সংঘটিত হতে থাকে। যা হোক। ২১০০ খ্রিস্টপূর্বে আককাদ সাম্রাজ্যটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। পুবের জাগ্রস পাহাড় থেকে বুনো ট্রাইব এসে আক্রমনের পর আক্রমন করতে থাকে আককাদ। তারপর প্রতিবেশি সুমেরিয়রা যা কিছু আককাদিয় অর্জন গ্রাস করে নিতে থাকে। সারগন রিমুশ মানিশটুসু নারাম সিন এবং শার কালি শাররি সর্বমোট ১৪২ বছর আককাদ শাসন করেছিলেন। মনে রাখতে হবে আককাদিয় সভ্যতার উত্থান সারগন এর প্রতিভার স্পর্শে যেমন দ্রুত হয়েছিল তেমনি বিস্ময়কর ঐ সভ্যতাটির পতন ঘটতেও বিলম্ব হয়নি ... সারগন ও আককাদিয় সভ্যতা: ফটো গ্যালারি।সারগননারাম সিন-এর সামরিক অভিযান পাথরের দেওয়ালের কারুকাজমানচিত্রে আককাদ
false
rn
হে জ্ঞানী বঙ্গবাসীসকল এক বোকা লোক কুইজ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হল, তাকে জিজ্ঞেস করা হল, প্রশ্নটা কী ছিল। যে বললো, প্রশ্ন ছিল গরুর পা কয়টি, আর সে উত্তর করেছিল ৫ টি। বাকি প্রতিযোগীরা কেউ উত্তর দিয়েছিল ৬ টি, কেউ ৭ টি, তার টা কাছাকাছি হওয়াতে তাকেই চ্যাম্পিয়ন করা হল। যেমন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, এর থেকে আর ভালো আর কী আশা করেন আপনি? আমার ধারনা,ওখানে ১৩ জন ছাত্রদের মধ্যে যারা যে প্রশ্ন পারেনি,সেটাই প্রচার করেছে।যারা পেরেছে,তাদেরটা প্রচার করেনি। জিপিএ ৫ এর জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ দিবেন না। অপারেশন সার্চ লাইটের উত্তরটা আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। উত্তর যাই হোক বু্দ্ধি খাটাইছে। সুস্থ নীতিমালা এই ধরনের ভিডিও আলাউ করতে পারে না। শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করতে হবে, এটা ঠিক আছে , তাই বলে এভাবে- মানুষের জীবন বিপন্ন করে? শিক্ষা ব্যবস্থা খারাপ, কিন্তু এর দায়ভার তো নিশ্চয়ই তাদের না। যাদের চেহারা দেখালেন তাদেরকে ডেকে দীর্ঘমেয়াদি ওরিয়েন্টেশানের মাধ্যমে ‘জিনিয়াস’ করে তুলুন এবং আগামীতে বিজয় বা স্বাধীনতা দিবসে মাছরাঙাতেই তাদের তুলে ধরুন নতুন রুপে ভিন্ন আঙ্গিকে। দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার দিন দিন যে কতটা অবনতি হচ্ছে সেটা সরকারকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর জন্য অন্তত এমন একটা ভিডিওর দরকার ছিল! আসলে গুছিয়ে কিছু লিখতে পারছি না। গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। দুঃখ আর বেদনায় লীন হয়ে যাচ্ছি। স্মার্টফোন হাতে পেয়ে অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে কিন্তু জ্ঞানী হয়নি। তারা খুব সহজে আপ্লোড, ডাউনলোডের ব্যাপারগুলো বোঝে কিন্ত তাদের কাছে পিথাগোরাসের উপপাদ্য যেমন জটিল ছিল তেমন জটিলই রয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে যদি স্মার্টফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং সমস্ত টেকনলজি থেকে দূরে সরিয়ে আমাজন জঙ্গলে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে মনে হয়না তারা বানরের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্বার পরিচয় দেবে। অনেকের কাছ থেকে স্মার্টফোন কেড়ে নেওয়াটা যেন কোমায় যাওয়া রোগির শরীর থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার মত। আর্কিমিডিস বা পিথাগোরাসের সময় পৃথিবীটা ছিল অনুন্নত এবং বোকা, মানুষগুলো ছিল বুদ্ধিমান। এখন ইন্টারনেটের যুগে যা বেড়েছে তা হল কালেকশান অব ইনফরমেশান। এভাবে তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে পৃথিবিটা হয়ে গেছে মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান। মানুষগুলো এখন টেকনলোজির ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের সাগরে নিমজ্জিত আপাত স্মার্ট অথচ বোকা প্রানী। যখন ডাটা অনেক বেশি তখন প্রসেসর বেশি ইন্টেলিজেন্ট না হলেও চলে। স্মার্টফোন ছাড়া একজন মানুষ যেন এখন অসম্পুর্ন।একবার এক ছাত্রকে পড়া জিজ্ঞেস করা হলে সে পারলো না। শিক্ষক বললেন. ''গাধা, তোদের বয়সে আমরা এগুলো সব পারতাম!'' ছাত্র উত্তর করলো, ''পারবেনই তো, আপনাদের তো ভালো ভালো শিক্ষকরা পড়াত!'' I am GPA 5 নিয়ে হাসাহাসি করছেন তাদের বলি, আপনি কি ১০০% সঠিক ইংরেজি বলেন? আইনস্টাইন সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে আর সেটা হলো উনি নাকি নিজের ফোন নাম্বার, হোম এড্রেস কিছুই মনে রাখতে পারতেন না! কেন প্রশ্ন করলে তিনি সবসময়ই বলতেন যে জিনিসটা আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলেই সহজে জেনে নেওয়া জানা যায় সেটা মনে রাখার দরকার কি? আমার ভাগ্নে ঢাকার সবথেকে ভাল একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ পড়ে। কেও যদি তাকে গ্রাভিটি কি, E=mc² কি বোঝায়ঃ তাও সে খুব ভাল করে উত্তর দিতে পারবে। কিন্তু ক্যামেরার সামনে যদি তাকে বাংলাদেশের কয়টি জেলা/নিউটন কে তা জিজ্ঞেস করেনঃ তাহলে সে হয়ত দিতে নাও পারতে পারে। কারণ সে তখন ভয়ানক নার্ভাস। কারণ উত্তর দেবার চেয়ে আমি জানি না বলা তার জন্য অনেক সহজ।সৃজনশীল পদ্ধতিটি অত্যন্ত ভালো একটি পদক্ষেপ, কিন্তু সমস্যা হলো সর্বস্থরের শিক্ষকরাই এর যথাযথ ব্যবহার জানে না। সব ধরনের মানুষই এক রকমের মেধা নিয়ে জন্মায়নি, তাই কম মেধা সম্পন্ন ছাত্রের উপর কঠিন পদ্ধতি থাকাটা জুলুমের পর্যায়ে পরে। শুধু ছাত্রদের না, শিক্ষকদেরও এমন কিছু সহজ প্রশ্ন করা উচিত। তখন দেখা যেতো কে কতোটা ভালো শিক্ষক। আমার বিশ্বাস আজ ছাত্রদের যে অবস্থা, শিক্ষকদের সাক্ষাতকার নিলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ দেখা যাবে।ব্যাংক থেকে অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা ঋণখেলাপির নামে খেয়েছে, পুরো অংশটাই আগের 'অসাধারণ' লেখাপড়া করা মানুষ! আর হ্যাঁ, বন্ধুরা কালকে থেকে শুরু হচ্ছে 'জুন ক্লোজিং' - সবাই জানেন তো! ভুয়া ভাউচার দিয়ে শত শত কোটি টাকা হরিলুটের মাস।আজ নিন্দুকেরা যে যাই বলুক, জায়গা মতো হাত দিতে পারায় মাছরাঙা টেলিভিশনকে তাই আমজনতার উষ্ণ অভিনন্দন। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড নয়। সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। ভিডিওটিতে মোট ২২টির মত প্রশ্ন করা হয়েছিল- ১। GPA এর পূর্ণরুপ কি? উত্তরঃ Grade Point Average২। SSC এর পূর্ণরুপ কি? উত্তরঃ Secondary School Certificate৩। আমি জিপিএ পাঁচ পেয়েছি এর ইংরেজিতে কি হবে?উত্তরঃ I have achieved GPA 5।৪। শহীদ মিনার কোথায়?উত্তরঃ ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে (প্রশ্নটা ঠিক হয়নাই-শহীদ মিনার এখন সব স্কুলেই আছে। প্রশ্নটা হবে ‘জাতীয় শহীদ মিনার কোথায়?’) ৫। অপারেশন সার্চ লাইট কী?উত্তরঃ ১৯৭১সালে ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা। ৬। শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস কবে?উত্তরঃ ১৪ ডিসেম্বর৭। স্বাধীনতা দিবস কবে?উত্তরঃ ২৬ মার্চ৮। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে? উত্তরঃ ২১শে ফেব্রুয়ারী৯। স্বাধীণতা দিবস কত তারিখে?উত্তরঃ ২৬ মার্চ১০। বিজয় দিবস কত তারিখে?উত্তরঃ ১৬ ডিসেম্বর ১১। জাতীয় সৃতিসৌধ কোথায়?উত্তরঃ নবীনগর, সাভার, ঢাকা১২। রণ-সঙ্গীত কে রচনা করেছেন? উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম (চল্‌ চল্‌ চল্‌ উর্ধ গগণে বাজে মাদল) ১৩। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কে?উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৪। মাউন্ট এভারেস্ট কোথায়? উত্তরঃ নেপাল। বিস্তারিত উত্তরঃ সোলুখুম্বু জেলা, সগরমাথা অঞ্চল, নেপাল এবং টিংরি বিভাগ, জিগাজে, তিব্বত স্বয়ংশাসিত অঞ্চল, চীন। ১৫। পিথাগোরাস কে?উত্তরঃ পিথাগোরাস প্রধাণত গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী (পীথাগোরাস আসলেই ঔপন্যাসিক ছিলেন! তার অনেক গুণের একটি যদিও গণিতবিদ হিসেবেই শুধু আমরা জানি!! এটা মস্ত বড় ভুল, ছেলেটি আন্তাজে বলেও সঠিক বলেছে।)১৬। নিউটণ কোন তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত? উত্তরঃ মহাকর্ষ সূত্র ( গাছের উপর থেকে আপেল নিচের দিকে, নিউটনের মাথায়, পড়ার ঘটনা)। এছাড়াও ৩টি সুত্রের জন্য নিউটন বিখ্যাত যার মাঝে ৩য় সুত্র ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’ খুবই বিখ্যাত। ১৭। আইনস্টাইনের কোন তত্ত্ব কোনটি? উত্তরঃ আইস্টাইনের বিখ্যাত তত্ত্ব E = mc2. E=Energy (শক্তি), M=Mass (ভর) C= Celeritas (Latin word), which means speedof light (Energy was equal to mass times the speed of light squared)১৮। বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতির নাম কী?উত্তরঃ আব্দুল হামিদ খান (বাংলাদেশের ২০ তম রাষ্ট্রপতি) ১৯। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে? উত্তরঃ ১১টি সেক্টরে। ২০। নেপালের রাজধানী কোথায়? উত্তরঃ কাঠমুন্ডু।২১। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এটার মানে? উত্তরঃ একটি কম্পিউটার ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশ বা যন্ত্রাংশকে হার্ডওয়্যার বলে। যেমন- মনিটর, কি বোর্ড, মাউস, প্রিন্টার, স্ক্যানার, স্পিকার, জয় স্টিক ইত্যাদি। আর সফটওয়্যার বলতে সব প্রোগ্রামকেই বোঝায়। বস্তুত, একেকটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম কম্পিউটারকে নির্দেশ দেয়, কী করতে হবে, কিভাবে করতে হবে। যেমন-মাইক্রোসফট অফিস, নরটন এন্টি-ভাইরাস, ভিএলসি প্লেয়ার ইত্যাদি। ২২। রবীন্দ্রনাথের একটি গল্পের নাম বল? উত্তরঃ ছুটি, সমাপ্তি, হৈমন্তি, ইচ্ছাপূরণ (গল্পগুচ্ছের সবইতো গল্প) সন্ধ্যায় একজন বিসিএস কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চাঁদের ভৌগলিক অবস্থা কেমন? তিনি বললেন- বরফে ঢাকা। ফের জিজ্ঞেস করলাম- এভারেস্ট আবিষ্কার করেন কে? তিনি বিজ্ঞের হাসি হেসে বললেন, হিলারি ও তেনজিং। আমার অভ্যেস খারাপ, মজা নিতে ছাড়ি না। জিজ্ঞেস করলাম- গাছের প্রাণ আছে কে আবিষ্কার করেন? তিনি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন- জগদীশচন্দ্র বসু।হে জ্ঞানী বঙ্গবাসীসকল, উত্তর তিনটিই ভুল। সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:৪২
false
mk
ইতিহাসও ধর্ষণের শিকার গত জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনের নানা কর্মসূচিতে মাঠে নেমেছিল। মাঠে ঠিক নামতে পারেনি। মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের ভয়ে বিএনপি নেতারা অন্তরালেই থেকেছেন বেশি। আর তাণ্ডব চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন জামায়াত-শিবিরের হাতে। বিক্ষিপ্তভাবে ছাত্রদলের দু-একটি ঝটিকা মিছিল মাঝেমধ্যে দেখা গেছে। সে সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় অন্তরীণ দশা ছিল বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর। তখন তার একমাত্র কাজ ছিল প্রতি সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ডেকে বিবৃতি পাঠ করা। তখনই আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছিল এই বিএনপি নেতার প্রতি। তিনি বেশ কাব্যিক শব্দ চয়ন করতে পছন্দ করেন।৫ জানুয়ারি নির্বাচনে না যাওয়ার পরিণতি নিয়ে বিএনপির মধ্যেই নানা বিতর্ক রয়েছে। আমরা যারা কলাম লিখে আর টকশোতে অনেকের বিরক্তি উৎপাদন করে নিজের খেয়ে বুনো মোষ তাড়াই, তাদের অনেকেই বলেছিলাম, লিখেছিলাম- বিএনপিকে ছাড়াই আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে চাচ্ছে। সাংবিধানিক রীতি-পদ্ধতি আওয়ামী লীগের পক্ষে। তাই ফাঁদে পা না রেখে সংলাপে যাওয়া এবং নির্বাচনে যাওয়ার পথ কণ্টকমুক্ত করতে এগিয়ে আসতে হবে বিএনপিকেই। এ প্রসঙ্গে একটি লেখায় আমি লালনের গানের লাইন উদ্ধৃত করে বিএনপির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলাম। লাইনটি ছিল- সময় গেলে সাধন হবে না। এখন নজরুলের কবিতার লাইন থেকে বলব- ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর / তখনও জাগিনি যখন জোহর / হেলায় ও খেলায় কেটেছে আসর / মাগরিবের আজ শুনি আজান / জামাতে শামিল হও এশাতে / এখনও জামাতে আছে স্থান। সময় ধরতে না পারায় তখন সাধন হয়তো হয়নি, তবে বিভ্রান্তির পথে না হেঁটে সঠিক পথ চিনতে পারলেও এশার ওয়াক্ত হয়তো ধরে ফেলা সম্ভব হবে। ধোঁয়াচ্ছন্ন গণতন্ত্রকে ফিরে পেতে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোটা এখন জরুরি।কিন্তু লক্ষণ খুব সুবিধার নয়। যখন প্রত্যাশা করছিলাম বিএনপি নতুন করে নিজেকে প্রস্তুত করবে, তখন দেখা গেল বাস্তববোধ বর্জিত হয়ে বিদেশীদের অনুকম্পায় শক্তিমান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। পাশাপাশি দলের অসংগঠিত অবস্থায়ও আন্দোলনের নামে পথে নামতে চাইছেন। কর্মসূচির আওয়াজ দিয়ে যাত্রা শুরুর আগেই পিছু হঠা তেলতেলে বাঁশ থেকে এক ঝটকায় নিচে নেমে যাওয়ার শামিল। সুতরাং বিএনপির দূরদর্শী নেতাদের উচিত ছিল গৎবাঁধা ফাঁকা বুলিতে না গিয়ে ঘর গোছানোতে আত্মনিয়োগ করা। তার বদলে মাঠে প্রস্তুতি নেই তবু আন্দোলনের কামান দাগা শুরু করলেন। এতে কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করার বদলে হতাশা বাড়ানো হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা করার কোনো অবকাশ বিএনপি নেতৃত্ব রেখেছেন এমনটি বোঝা যাচ্ছে না। ঘটা করে বলা হতে লাগল- ঈদের পর তারা কঠোর আন্দোলনের পথে হেঁটে সরকারের পতন ঘটাবেন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করবেন। আর এসবে উৎসাহী হয়ে রুহুল কবির রিজভী তার কাব্যিক শব্দে বললেন, এবারের আন্দোলনে তুমুল যুদ্ধেরই পদধ্বনি শোনা যাবে। কথাটি তিনি অনেক আগে বলেছিলেন। সম্ভবত ২৭ জুলাই তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের পায়ের নিচের মাটি বিএনপি অনেকটা শক্ত করে দিয়েছে। তাই ঈদের পরের তুমুল আন্দোলনের চ্যালেঞ্জকে পরোয়া না করে আওয়ামী লীগ প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একই দিনে গণভবনে সাংবাদিকদের বলে দিয়েছিলেন, বিএনপি মাঠে নামুক না। মাঠে আওয়ামী লীগ আছে। জনগণ আছে। মাঠের দেখা মাঠেই হবে। পরোয়ারদিগারকে ধন্যবাদ। এক ঈদ গিয়ে আরেক ঈদ আসছে। তেমনভাবে মাঠে নামা হয়নি বিএনপির। তারা একটু-আধটু মহড়া দিয়ে বুঝেছেন, সুবিধা হবে না।বিএনপি নেতারা তো কথায় কথায় বলেন, শান্তিপূর্ণ হরতাল আর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। শান্তির লক্ষণ মানুষ দেখে না। দেখে পেট্রলবোমা ছুড়তে। গাড়ি ভাংচুর করতে আর আগুন দিতে। রেললাইন উপড়ে ফেলতে। আহত-নিহত মানুষের মিছিল বাড়াতে। বিএনপি নেতারা বুঝতে পেরেছেন, নিকট-অতীতে নিজেদের প্রযোজনায় এবং জামায়াতের পরিচালনায় যে সহিংস আন্দোলন চালিয়েছিলেন তারা, তা বুমেরাং হয়েছে। এই অন্ধকার পথে সরকার পতনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। লাভের বদলে রাজনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বেশি। তাই এখন বারবার অহিংস-শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলে যাচ্ছেন। বাস্তব অবস্থা দেখে আমরা বিশ্বাস করছি, কর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারার আগ পর্যন্ত সহিংস আন্দোলন করার সুযোগ নেই বিএনপির। এই যদি হয় সময়ের বাস্তবতা, তাহলে রিজভী সাহেবরা মিছিমিছি যুদ্ধের পদধ্বনি শোনাচ্ছেন কেন?আমরা বুঝে পাচ্ছি না বিএনপি নেতারা কেনই বা এত আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন। সারা দেশে তো তাদের কর্মী-সমর্থক কম নয়। বিএনপি আর আওয়ামী লীগ দুই দলের নেতৃত্বের ভেতরেই আত্মবিশ্বাসের অভাব প্রবল। এর বড় কারণ গণতন্ত্র চর্চা থেকে সরে যাওয়া। তাই আওয়ামী লীগ নিজের দুর্বল অবস্থানকে সামাল দিতে ৫ জানুয়ারিতে কুশলী নির্বাচন করে ফেলল। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করার সাহস পায়নি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করতে পারায় জনবিক্ষোভের সম্ভাবনা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। গণতন্ত্র চর্চা না করায় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে পারছে না। চাইলেও প্রশাসনিক দুর্নীতি ও সন্ত্রাস কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। গণতান্ত্রিক পরিবেশে জনমত ও সমালোচনাকে স্বাগত জানানোর কথা। অথচ সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করে ফেলার জন্য অসময়ে-অপ্রয়োজনে সম্প্রচার নীতিমালা চাপিয়ে দিতে চাইছে। সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের ওপর অর্পণ করা হচ্ছে। অথচ বর্তমান সময়ে বিরোধী রাজনীতির দুর্বল দশায় সরকার চাইলে দৃঢ়তার সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটতে পারত।গণতন্ত্রের পথ ধরে বিএনপির জন্ম হয়নি। জন্মের এই পাপ বিএনপি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। বক্তৃতার শব্দ ছাড়া গণতন্ত্রের পরিচর্যা কখনও হয়নি এ দলটির ভেতর। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা বন্ধুত্ব বিএনপির পাকিস্তানপন্থার অভিযোগটা বারবার দৃশ্যপটে নিয়ে আসছে। ভুল পথে হেঁটে আন্দোলনের ময়দানে বারবার হোঁচট খাচ্ছেন তারা। সরকার পক্ষের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিএনপি নেতারা যুক্তিহীনতার গর্তে পা রেখে দলকে সংকীর্ণ পরিচয়ে দুর্বল করতে চাইছেন। বারবার যুদ্ধের পদধ্বনি শুনিয়ে শরীর গরম রাখতে চাইছেন। এ কারণেই আমাদের ভাবনা, মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ সেক্টর কমান্ডার একে খন্দকারের বই নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এমন আগ বাড়িয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন কেন! তথ্যসূত্রবিহীন একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের সব বক্তব্য ইতিহাসে প্রামাণ্য বলে বিবেচিত হয় না। ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থেকে সিদ্ধান্তমূলক বক্তব্য দেয়া নিজেদের দুর্বলতার প্রকাশ এ কথা কেন তারা বুঝতে পারছেন না? আবার একইভাবে সংসদে দাঁড়িয়ে বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ এবং শেখ সেলিম যেভাবে প্রতিবাদ জানালেন, তার কোনো প্রয়োজন ছিল বলে আমাদের মনে হয়নি। এদিক থেকে মাননীয় অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, কোনো গ্রন্থের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে না পারলে বা অসারতা প্রমাণ করতে চাইলে আরেকটি বই লিখেই তা প্রামাণ্যভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সেই আহ্বানই থাকবে। বিনয়ের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বলব, মিছিমিছি বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। যুক্তির কারণে বলছি, বঙ্গবন্ধু যদি জয় বাংলা বলার পর জয় পাকিস্তান বলেও থাকেন, তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে? এতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিসংগ্রামে বাঙালিকে আহ্বান জানানো খাটো হয়ে যায় না। ৭ মার্চের বাস্তবতায় বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি। তাছাড়া রাজনৈতিক কৌশলের কথা আমরা ভুলে যাই কেন? তারপরও বলব, ইতিহাসের সত্য প্রকাশ্যেই আসে। বিকৃতির জায়গা হয় আবর্জনার স্তূপে। মির্জা ফখরুলরা তো এই মাটিরই সন্তান। বয়সের বিচারে বলা যায়, ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছেন। মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন। সত্যটা তাদের অজানা নয়। জয় পাকিস্তান বলে থাকলেও এর তাৎপর্য তার বোধের অগম্য নয় নিশ্চয়। রাজনীতি করতে গেলে কি এভাবেই বিবেক বন্ধক রাখতে হয়!মুক্তিযুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি ছিল না- এ কথায় আওয়ামী লীগ নেতাদের গায়ে ফোস্কা পড়বে কেন! পাকিস্তানি জান্তা ২৫ মার্চ রাতে যে গণহত্যার উদ্দেশ্যে রাজপথে নামবে, তেমনটা কি কেউ আগে থেকে ভাবতে পেরেছিল? বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ার আহ্বানে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় কি বাঁশের লাঠি নিয়ে তরুণরা মার্চপাস্ট শুরু করেনি? সুবিধামতো বন্দুক চালনা ও রাইফেল ট্রেনিং নেয়নি? এর চেয়ে বেশি প্রস্তুতির অবকাশ কি ছিল? এ সত্য মানতে হবে যে, বাঙালি পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেনি। ২৫ মার্চ রাতে বীভৎস গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানিরা বাঙালির ওপর মুক্তিযুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। বাঙালির মানসিক প্রস্তুতি ছিল বলেই তারা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। দেশকে শত্রমুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই বাস্তবতায় জনাব একে খন্দকার প্রৌঢ় বয়সে ৪৩ বছর আগের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তথ্যসূত্র ব্যবহার না করে কী বললেন, তা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণ নেই। এতে লেখক-প্রকাশকের ব্যবসা বৃদ্ধি করা ছাড়া অন্য কোনো প্রাপ্তি আছে বলে আমরা মনে করি না। ইতিহাসের সূত্র মেনে দুই প্রজন্ম পরে যখন তথ্যসূত্র বিচার করে নির্মোহ জায়গা থেকে ইতিহাস লেখা হবে, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে সব আবর্জনা।এতে কারও দ্বিমত নেই যে, দেশকে এগিয়ে নেবেন, দেশ পরিচালনা করবেন রাজনীতিকরা। এ কারণে বক্তব্যে, আচরণে, পরিকল্পনায় রাজনীতিকরা অনেক বেশি প্রজ্ঞার পরিচয় দেবেন এটিই কাম্য। অহেতুক যুদ্ধের পদধ্বনি শুনিয়ে জনগণকে আতংকিত করা কেন? কিন্তু এসব যুক্তির পথে না হেঁটে আমাদের বড় দুই দল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার আর টিকে থাকার জন্য যে পথে হাঁটছেন, তাতে আর যাই হোক গণতন্ত্র রক্ষা পাচ্ছে না। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের একসময় ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।
false
ij
শুভ জন্মদিন_এ আর রহমান। এ আর রহমান। সুরের এক বিস্ময়কর জাদুকর। সাধারণ স্রোতারা তাঁর সুরে যেমন মুগ্ধ, তেমনি মুগ্ধ যারা গানের ব্যকরণ জানেন-তারাও। গানের ব্যকরণ জানা সুধীজনের কাছে রহমান আজও এক ধাঁধা। তাঁর সুরে যেমন তামিল আমেজ থাকে, তেমনি হিন্দুস্থানী ঘরাণায় তাঁর দখল বিস্ময়কর। তাঁর কম্পোজিশনে পশ্চিমা সুর তো আছেই, সেই সঙ্গে জাপানি পেন্টাটনিক সুর উঁকি দেয়। পাঞ্জাবি সুফি পপ থেকে শুরু করে তাঁর কম্পোজিশনে বাংলার বাউল সুরের প্রয়োগে রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যেতে হয়। এ সব মিলিয়ে এ আর রহমান এক অতলান্ত সাঙ্গীতিক বিস্ময়। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেননাই (মাদ্রাজ) । সেখানেই ১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি এক শৈব হিন্দু পরিবারে এ আর রহমানের জন্ম হয়েছিল । এ আর রহমানের বাবা আর কে শেখর মুধালিয়ার। জন্মের পর ছেলের নাম রাখলেন দিলিপ কুমার। পরে একটি ঘটনায় অবশ্য দিলিপ কুমার ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিল। সঙ্গীত পরিবারেই জন্ম হয়েছিল রহমানের। কেননা, রহমানের বাবা মালায়াম ছবির সঙ্গীত কমপোজার ছিলেন। দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের ভাষাকে বলা হয় মালায়াম। ৬ বছর বয়েসে বাবার কাছেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি- কী বোর্ডে। পুত্রের প্রতিভার স্ফূরণ আর কে শেখর ঠিকই বুঝেছিলেন অনুমান করি। রহমানের যখন ৯ বছর বয়েস তখন আর কে শেখর মারা যান। সংসার চলত মিউজিকাল ইনসট্রুমেন্ট ভাড়া দিয়ে। সেই সময়, অর্থাৎ সত্তরের দশকে মাষ্টার ধনরাজ ছিলেন মাদ্রাজের বিশিষ্ট সঙ্গীতগুরু। বাবার বন্ধু বলেই তাঁর কাছে কিছুকাল গানের তালিম নিল রহমান। তখন কার দিনে ইলিয়ারাজা ছিলেন মাদ্রাজের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক। কী বোর্ডবাদক হিসেবে রহমান তাঁর অর্কেস্ট্রায় যোগ দেন। রহমানের তখন ১১ বছর বয়েস। রহমান আরও অনেক অর্কেষ্ট্রায় বাজিয়েছেন। এবং রহমানের বন্ধুরাও ছিল সব গান পাগল। শিবমনি, জন অ্যান্থনি ও রাজা। এদের নিয়ে ব্যান্ড করলেন রহমান। ব্যান্ডের নাম: রুটস। রহমান synthesizer- মানে কী বোর্ড বাজাতেন। His curiosity in the synthesizer in particular increased because, he says, it was the “ideal combination of music and technology". সে সময় রহমানের এক বোন জটিল অসুখে পড়ল। তখন রহমানের এক মুসলিম বন্ধু বলল: বিশেষ একটা মসজিদে নামাজ পড়লে বোনের অসুখ সেরে যাবে। তাই হল। এর পর রহমানের পরিবারটি ইসলাম ধর্মগ্রহন করে। দিলিপ কুমার নতুন নাম নিল: এ আর রহমান। এ আর মানে-আল্লা রাখা । এসব ঘটনার পাশাপাশি গানের ব্যাপারটাও চলছিল। Rahman is the founder of the Chennai based rock group, "Nemesis Avenue". He played the keyboard and piano, the synthesizer, the harmonium and the guitar. ২ জাকির হোসেন, এল শঙ্কর প্রমূখ বিদগ্ধ সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে বিদেশ সফর করেছেন রহমান। সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনার গভীর আগ্রহ ছিল। ট্রিনিটি কলেজ অভ লন্ডন থেকে রহমান পশ্চিমা ধ্রুপদী সঙ্গীতে স্নাতক হয়েছেন । ৩ ১৯৯১ সাল। চেননাইয়ে রহমান নিজের স্টুডিও স্থাপন করলেন। প্রথম প্রথম জিঙ্গেল করতেন। বিজ্ঞাপনের মিউজিককে জিঙ্গেল বলে। সেসময় প্রায় ৩০০র মত জিঙ্গেল করেছিলেন রহমান। তা ছাড়া টিভির জন্যও মিউজিক কম্পোজ করতেন। মনি রত্নম ছিলেন বিখ্যাত তামিল চিত্র পরিচালক। নতুন একটা ছবি করার কথা ভাবছিলেন রত্নম। নামও ঠিক করে ফেলেছিলেন: রোজা। ততদিনের রহমানের নামটা কানে পৌঁছেছিল রত্নমের। তিনি রহমানকে ডেকে বললেন, রহমান। আমি একটা ছবির কথা ভাবছি। রোজা। তুমি মিউজিকটা করে দাও। রহমান রাজী। রাজী ও খুশি। বুকের ভিতর ভীষন তোলপাড়। কেননা, ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার পর সেই মসজিদের ইমাম সাহেব বলেছিলেন-একদিন তুই খুব নাম করবি বেটা। দুনিয়ার লোকে তোকে চিনবে। রোজা ছবির কাজটা শেষ করে ২৫,০০০ রুপি পেয়েছিলেন রহমান। This movie turned out to be blockbuster hit and AR Rahman then there was no looking back for A.R. Rahman. ৪ ১৯৯২ সাল। আমি ঐ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। একদিন ঘরে বসে আছি। পাশের বাড়ি থেকে গান ভেসে এল। কান পাতি। অন্যরকম সুর। কৌতূহলী হয়ে উঠি। পরে জানতে পারলাম রোজা-র গান। কম্পোজার এ আর রহমান। তারপর অন্যদের মতো এ আর রহমানকে ঘিরে এক গভীর বিস্ময় আমাকেও গ্রাস করতে থাকে। দীর্ঘকাল আমি প্রাচ্য/পাশ্চাত্য সঙ্গীততত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তারই আলোকে বলতে পারি-এ আর রহমানের সঙ্গীত প্রতিভাকে পরিমাপ করা এক কথায় অসম্ভব। তাঁর সঙ্গীত চিন্তা নিয়ে ৭০০ পাতা লিখলেও ভূমিকা শেষ হবে না। রহমান সম্বন্ধে অষ্ট্রেলিয় চলচ্চিত্র পরিচালক Baz Luhrmann কী বলেছেন শুনুন-"I had come to the music of A. R. Rahman through the emotional and haunting score of Bombay and the wit and celebration of Lagaan. But the more of AR's music I encountered the more I was to be amazed at the sheer diversity of styles: from swinging brass bands to triumphant anthems; from joyous pop to West-End musicals. Whatever the style, A. R. Rahman's music always possesses a profound sense of humanity and spirit, qualities that inspire me the most. ৫ স্ত্রী সায়রা বানু। তিন সন্তান রহমানের। কাতিজা। রহিম ও আমান। ৬ রহমান কী কী পুরস্কার পেয়েছে-তা দেখতে ক্লিক করুন। Click This Link ৭ আজ ৬ জানুয়ারি। এ আর রহমানের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন এ আর রহমান। Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৪
false
mk
বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত স্বাধীনতার পরপরই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। বিপুল দারিদ্র্য আর ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা হয় একটি নতুন দেশের। এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল বিশ্ববাসী। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশ সেই সংশয়কে মিথ্যে প্রমাণ করেছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে পিছে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে দেশ। ফলশ্রুতিতে গত কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সামনের কাতারেই রেখেছে বিশ্ববাসী। ২০১২ সালের শেষভাগে 'আউট অব দ্য বাস্কেট' নিবন্ধে দ্য ইকোনমিস্ট দাবি করেছিল, 'কী করে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।' এ কথার সূত্র ধরেই বলা যেতে পারে, দারিদ্র্যজয়ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে রোল মডেল। বিশ্বনেতারাও বাংলাদেশকে এই সাফল্যের স্বীকৃতি দিচ্ছেন, গণ্য করছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, দুনিয়ার আর কোনো দেশ তা পারেনি। আর এ সাফল্য সত্যিই অভূতপূর্ব। অন্যদিকে দারিদ্র্যজয়ের সাফল্য দেখতে বাংলাদেশে সফরে এসে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যখন বলেন, 'এটি স্মরণ করার মতো সফলতা। বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে অনেক দেশের'- তখন দেশের এই সাফল্য আমাদের গৌরবান্বিত করে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলেছিল, বাংলাদেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা কমেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে যেখানে দুই কোটি ৮০ লাখ অর্থাৎ ১৮ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষ ছিল, সেখানে সাত বছরের ব্যবধানে প্রায় ৮০ লাখ হতদরিদ্র অতি দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। এছাড়া একাধিক পরিসংখ্যানেও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ আর ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে। বিশ্বব্যাংক ধারাবাহিকভাবে অতিদারিদ্র্যের হার কমার এই প্রবণতাকে 'অর্জন' হিসেবে মনে করে। অপরদিকে বিশেষজ্ঞরাও আশা করেছেন, দারিদ্র্যজয়ের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ২০৩০ সালে দারিদ্র্য হার কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন্য থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মকা- সে লক্ষ্যেরই ইঙ্গিতবাহী।অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের মহাসড়কে হাঁটছে। যার অন্যতম শর্ত হচ্ছে দারিদ্র্যবিমোচন। তবে সার্বিকভাবেই বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষা ও সচেতনতার হার। অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, ওএমএস, টেস্ট রিলিফ, কাবিখা ইত্যাদি), সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার, গ্রামীণ এলাকায় সড়ক ও জনপথের ব্যাপক উন্নয়ন এবং সংযুক্তি, গ্রামীণ অকৃষি কর্মসংস্থান, প্রবাসী আয় অব্যাহতভাবে বাড়া ও ব্যাপক বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণেই দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্য এসেছে। এসব উন্নয়নমুখী কর্মকা-ে শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম অবকাঠামো 'পদ্মা সেতু প্রকল্প' বাস্তবায়ন করছে দেশ। বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, সৃষ্টিশীল চেতনার মধ্যদিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আন্তরিকতার কারণে। ফলশ্রুতিতে বিশ্ববাসী বর্তমানে অবাক বিস্ময়ে অন্যরকম এক বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছে। যা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। সর্বোপরি বলতে চাই, দারিদ্র্যজয়ে বর্তমান সাফল্য সত্ত্বেও এসডিজি অর্জনে কিছু চ্যালেঞ্জ নির্দেশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এটি বেশ কঠিন হলেও যথাযথভাবে মোকাবেলা করা গেলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া মোটেই অসম্ভব নয় বলেও দাবি তাদের। সংশ্লিষ্টদের মতেই বলতে চাই, প্রতিবছর দারিদ্র্য হ্রাসের হার দশমিক ৯২ শতাংশ বজায় রেখে বছরে গড়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকেই এখন নজর দেয়া যুক্তিযুক্ত। অন্যদিকে দারিদ্র্যজয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটাও বহুল উচ্চারিত। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে এ ব্যাপারে সরকার তাদের আন্তরিকতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবে। সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০১
false
hm
পারুলবালার সন্তান পারুলবালা আমার কাছে সন্তান চায়নি। আমিই তাকে একটি শিশুর লোভ দেখিয়ে লোভী করে তুলেছিলাম। প্রথম সন্ধ্যাটির কথা মনে আছে স্পষ্ট। খালের দুই পাশে খাড়া পারে সটান ভুরু কুঁচকে দাঁড়িয়ে প্রকাণ্ড সব ঋজু নাম না জানা বৃক্ষ, তাদের পাতার আড়ালে লুকানোর নিরর্থক চেষ্টা করছিলো আমার পিছু নেয়া চেরা চাঁদ, তাই আমার ছোট্টো ডিঙিযাত্রার পুরোটাই ছিলো গাছের পাতার বীভৎস সব ছায়ায় রঞ্জিত। সরু খালে নিরুদ্বিগ্ন কুমীরের মতো লগির ঠেলায় ভেসে চলছিলো আমার ডিঙি, যতক্ষণ পর্যন্ত পারুলবালার ঘর বরাবর খালের পাশে একটা হিজল গাছের গোড়ায় লাল কাগজে মোড়ানো হারিকেনটা এসে না দাঁড়ালো। পারুলবালা রেখে গিয়েছিলো সেই লণ্ঠন, হয়তো সূর্য ডোবার পরপরই। ডিঙিটাকে টেনে ঢালু পাড় ধরে ডাঙায় টেনে আনতে গিয়ে দেখি, আরেকটা ছোটো ডিঙি উপুড় হয়ে ঘুমুচ্ছে পারুলবালার ভিটার পাশে। সেদিন অযৌক্তিক ঈর্ষায় নিশ্চয়ই কালো হয়ে গিয়েছিলো আমার মুখ, ভেবেছিলাম আমারই মতো কেউ পারুলবালার কাছে চলে এসেছে আমার আগেই। পারুলবালা বসেছিলো তার ভিটার বারান্দায়, অন্ধকারে, আমার আগমনী খসখস শব্দ শুনে সে মায়াবিনীর মতো শূন্য থেকে একটা প্রদীপ জ্বেলে এগিয়ে এলো। তার রেখে আসা লাল লণ্ঠন হাতে এগিয়ে এসে আমি দেখলাম, পারুলবালা কী এক প্রত্যাশায় অধীর হয়ে আছে, প্রদীপের আগুন তার ভেতরের কোনো এক মহাদাহ্য তরলতায় ঠিকরে ফিরে আসছে। আমি লণ্ঠনটা উঠোনে নামিয়ে রেখেই পারুলবালার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি, তারপর তার সাথে মিলিত হই। খোলা আকাশের নিচেই, তার খোলা উঠোনেই, তার বাড়ির পাশের প্রকাণ্ড কয়েকটি সুপারি গাছকে সাক্ষী রেখেই। উদ্দাম সঙ্গম করি পারুলবালার সাথে, তার তরুণী শরীরটি পিষ্ট হয় আমার প্রাবল্যে। সঙ্গম শেষে পারুলবালা সুখী হয়, হাসে, আমরা দুজনেই আমাদের পিঠ উপহার দিই মাটিকে, আর আকাশকে দিই দৃষ্টি। সেখানে কিছু তারা পারুলবালাকে প্রশ্ন করে মিটমিট করে, মূর্খ পারুলবালা তারার ভাষা বোঝে না। সে শুধু ভেতরের স্বপ্নের কথা শোনে, একটি শিশুর জন্যে লোভে কাতর হয়ে সে ভুলে যায় আর সব ভাষা, এমনকি আমার ভাষাও। তাকে একাধিকবার প্রশ্ন করি, কেমন লাগলো এই সঙ্গম, সে হাসে, অন্য কোনো ভাষায় অন্য কারো অন্য কোনো প্রশ্নের উত্তরে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক নক্ষত্রদের প্রশ্ন আমি পড়তে পারি, তারা পারুলবালাকে চিৎকার করে বলছে অন্য এক পৃথিবী থেকে, পারুলবালা, তোমার কি সন্তান হবে? পারুলবালার পাশে শুয়ে শুয়ে বাতাসের সাথে সুপারি গাছের পাতার বচসা শুনি, পারুলবালার ঊষ্ণ নরম দুটি স্তন তার নিঃশ্বাসের ছন্দে বারে বারে বোবা চোখে ফিরে দেখে আমাকে, অন্ধকার ভেদ করে। আর আমার হাঁটুর ওপর দিয়ে একটা ঘিনঘিনে পিচ্ছিল কী যেন মন্থর গতিতে চলতে থাকে। আমি ছিটকে উঠে বসি, কী ওটা? কী? পারুলবালা মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়েই হাসে রিনিঝিনি। সাপ, বাস্তুসাপ। ওর নাম বাসুকী। মাটিতে নামিয়ে রাখা লণ্ঠনটি যতদূর পারে, আলো ফেলে দেখায় বাসুকীকে। একটি বয়স্ক চন্দ্রবোড়া, ধীর আলস্যে পারুলবালাকে টপকে কোথায় যেন হারিয়ে যায় অন্ধকারে। আমার বুকটা কেঁপে ওঠে। বলি, কামড়াবে না? পারুলবালা হাসে, বলে, জানি না। পারুলবালা কাত হয়ে শুয়ে আমাকে আবার আহ্বান করে। তার জঙ্ঘা রঙিন হয়ে ওঠে লণ্ঠনের আলোয়, আমি আবার উত্থিত হই। কিন্তু এবার আর উঠোনে নয়, পারুলবালাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে যায় তার ঘরে, তার শূন্য ঘরে, যেখানে আর কেউ নেই, যেখানে পারুলবালা একটি শিশুকে চায়। পারুলবালার একলা বিছানায় তাকে শুইয়ে আমি আবার প্রবিষ্ট হই তার ভেতরে, আবার সঙ্গম করি, বারবার, অনেকবার। পারুলবালা তৃপ্ত হয়, সে শীৎকার করে, আর হাসে, আমার অজানা কোনো ভাষায়, অজানা কারো অজানা কোনো প্রশ্নের উত্তরে। রাতে বিদায় নিই পারুলবালার কাছ থেকে, সে বিছানায় শুয়ে থাকে হাসিমুখে, অন্ধকারে জেগে থাকে তার চোখের জমিন, দুসারি শুক্তিশুভ্র দাঁত। আমি উঠোনে নেমে লণ্ঠন উঁচিয়ে বাসুকীকে খুঁজি। তাকে না পেয়ে ফিরে যাই আমার ডিঙির কাছে। খালের জলে আবার আমার পিছু নিতে থাকে পঙ্গু চাঁদ। বার বার ফিরে আসি পারুলবালার কাছে, কয়েক দিন পর পর। পারুলবালার বাড়ির কাছে খালের ধারে রেখে যাওয়া লণ্ঠনটি পরিচিত হয়ে ওঠে ক্রমশ, ভোল পাল্টে আমার পেছন পেছন চলতে থাকে চাঁদ, একদিন একেবারে গায়েব হয়ে যায় সে। সেদিন উঠোনে পারুলবালাকেও দেখি বিমর্ষ মুখে। তার কামনা ছিলো, তার রজস্রাব থেমে যাবে, একটি বিশুষ্ক সপ্তাহ এসে তার কানে জানাবে তার সন্তানের সংবাদ। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি, পারুলবালার শরীর চলছে তার নিজ ছন্দে। কারণটা আমি জানি, কিন্তু কথা বলার জন্য তো আমি পারুলবালার কাছে আসিনি। আমি আমার শিশ্নটি উদ্যত করে পারুলবালাকে বিদ্ধ করি শুধু, বারে বারে। বলি, হবে। সময় লাগবে। সঙ্গমের পর আকাশের দিকে তাকিয়ে পারুলবালাকে স্বপ্ন দেখাই, বলি পারুল, তোমার শিশুটি যখন আসবে, তখন তুমি কীভাবে খবর দেবে আমাকে? পারুলবালা হাসে। আমি জানি, এ হাসি আমার প্রশ্নের উত্তরে নয়। পারুলবালার ভেতরে তার গোপন স্বপ্ন কথা বলছে তার সাথে, অবিরত। আমি বলি, পারুল, তোমার জন্য একটা কবুতর এনে দেবো? তার পায়ে একটা চিঠি বেঁধে আমাকে পাঠিও? পারুলবালা পাশ ফিরে আমার বুকের ওপর একটা হাত রাখে। বলে, আচ্ছা। তারপর আবার মৈথুনে ফিরে যাই আমরা। সেই রাতে পারুলবালার বাড়ি থেকে ফিরে সরকারকে চিঠি লিখি আমি। বলি, কবুতর লাগবে। প্রতিটি ঘরের পারুলবালার জন্যে কবুতর লাগবে। কবুতর ছাড়া পারুলবালা অচল, একাকী, দুর্বল। সরকার আমার কথায় রাজি হয়। রাজি না হয়ে তার উপায়ও নেই। কয়েক মাসের মধ্যে গ্রাম আর শহর ছেয়ে যায় কবুতরে। তারা উড়তে থাকে দিগ্বিদিক, প্রত্যেকেরই আছে নিজস্ব বার্তা আর গন্তব্য। আমি পারুলবালার কাছে ফিরি। দেখি উঠোনের অন্ধকারে সে বসে একাকী, উদ্বিগ্ন। আমি লণ্ঠন উঠোনে নামিয়ে রেখে পারুলবালাকে বুকে টেনে নিই। তার স্তনবৃন্ত যতটা না জাগে আমার পীড়নে, তারচেয়ে বেশি জেগে ওঠে কোনো শিশুর ঠোঁটের জন্য। আমি পারুলবালাকে শোষণ করি দীর্ঘক্ষণ, তারপর মিলিত হই। পারুলবালা কেবল সঙ্গমের ফাঁকে ফাঁকে কাতর স্বরে বলে, হলো না তো, হলো না। আমি অঢেল বীর্য দিয়ে যাই পারুলবালার জরায়ুতে, রাতের পর রাত, আর তাকে স্বপ্ন দেখাই। বাতাস আর বৃষ্টি এসে পারুলবালার সুপারি গাছে দূর সাগরের খবর জানিয়ে যায়, বাসুকী নিরুদ্বেগে বুকে হাঁটে আমার আর পারুলবালার শরীরের ওপর দিয়ে। একদিন কৌতূহল হয়, বলি, বাসুকী কি মাদী সাপ, না মদ্দা? পারুলবালা হেসে শুধু বলে, জানি না। আমি বলি, তুমি ওকে চেনো না? পারুলবালা ভাবে কিছুক্ষণ, তারপর বলে, জানি না। ও তো আছে, আমার জন্ম থেকেই। এই সুপারি গাছের মতো, এই খালের মতো, কেবল জানি আছে। সবসময় একই রকম। আমি বলি, তাহলে বাসুকী মদ্দা সাপ। পারুলবালা ফিসফিস করে বলে, কিংবা আমার মতো মাদী! আমি শিহরিত হই, উত্থিত হই আবার, তারপর আবার পারুলবালার ভেতরে ডুব দিই। পারুলবালা কাতর শীৎকারে রাতের পর রাত আমার কানে কানে বলে, হলো না তো! পারুলবালার শরীরের চক্র ভাঙে না। দিন যায়, বছর ঘোরে। কিন্তু পারুলবালার শরীর পুরনো হয় না। কী এক মাদক স্বপ্নের চাপে পারুলবালা তরুণীতর হয়, তার স্তন দু'টি দৃঢ়ই থাকে, তার নিতম্বও অটুট থাকে, তার মসৃণ ঊরু দুটি মসৃণতর হয়ে আমার জানুদেশ আলিঙ্গন করে। একদিন পারুলবালাকে বলি, তোমার শিশুটি ভূমিষ্ট হলে, তার মুখে মধু দেবে না পারুল? পারুলবালা হাসে, লণ্ঠনের কাঁচ যেন পড়ে খান খান হয় উঠোনে, বলে, হ্যাঁ, মধু দেবো, মধু! আমি বলি, হ্যাঁ, তোমার শিশুটির জন্যে মধু লাগবে। সে রাতে ফিরে আসি, সরকারকে চিঠি লিখি। বলি, মধু লাগবে পারুলবালাদের শিশুদের জন্যে। সরকার রাজি হয়। আমার লোকেরা মধুর চাষ শুরু করে সব সরষে ক্ষেত আর পদ্মদীঘির পাশে। নিযুত অর্বুদ মৌমাছি সারা দেশ চষে মধুসঞ্চয় করে। পারুলবালার কাছে ফিরি কয়েক মাস পর, মধুর আয়োজন শেষ করে। ঘাটে একটি ক্লান্ত লণ্ঠনের মুখ আমাকে দেখে একটু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তাকে বহন করে নিয়ে তার আলোয় পারুলবালার মলিন কালিমাক্লিষ্ট মুখটি দেখি। সে নিরুচ্চারে আমাকে জানায়, হলো না কিছু। উত্তর করি না, শুধু সঙ্গমে মেতে উঠি, পারুলবালার রসসিক্ত শরীরটিকে পিষ্ট করি, ভোগ করি, উপভোগ করি। সুপারি গাছের ওপর দিয়ে হিংস্র মুখ ব্যাদান করে একটি পরিচিত চাঁদ, বাসুকী মন্থর হয়ে অতিক্রম করে আমাদের। পারুলবালার হাসি জাগিয়ে রাখি। দিনের পর দিন। বছরের পর বছর। তার ভেতরের স্বপ্নও বৃদ্ধ হয় না, একই ভাষায় কথা বলে পারুলবালার সাথে। অন্ধকারে চিত হয়ে শুয়ে হাসে পারুলাবালা, আর আমার কথায় সায় দিয়ে যায়। তার অনাগত শিশুটির জন্যে আমি একে একে সরকারের সাথে বসে আয়োজন করি সুমিষ্ট পানি, স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিকর দধি, বেল কাঠের ঝুমঝুমি, রেশমের কাপড়। বন্দরে বন্দরে ভেড়ে আমার ময়ূরপঙ্খী নাও। পারুলবালা তরুণীই থেকে যায় চাঁদের মত, আর বাসুকীর মত, আর আমি ক্রমশ বৃদ্ধ হই। আমার বাণিজ্য বাড়ে, সাম্রাজ্য বাড়ে, বাড়ে বার্ধক্যও। একদিন তাই পারুলবালার তন্বী শরীরটিকে শেষবারের মতো সঙ্গমক্লান্ত করে উঠে ক্লান্ত, অপরাধী গলায় বলি, পারুল, আমি যাই। পারুলবালা মাটিতে শুয়ে বলে, হলো না তো! কপালের স্বেদ মুছে পারুলকে জানাই সত্য কথাটি, যা জানানো হয়নি এত বছরে। বলি, পারুল, হবে না। তোমার কোনো সন্তান হবে না। তুমি বন্ধ্যা। পারুল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়, আমার মুখোমুখি হয়। অবিশ্বাসে মাখা তার মুখটি আমাকে প্রশ্ন করে, কী বলছো তুমি বৃদ্ধ? আমি বলি, পারুলবালা, তুমি বন্ধ্যা। তোমার কোনো সন্তান হবে না। আমি চলে গেলে অন্য কোনো তরুণ বণিক এসে যদি তোমায় প্রলুব্ধ করে, প্রতিশ্রুতি দেয়, সে তোমাকে সন্তান দেবে, তুমি তাকে বিশ্বাস করো না। পারুলবালা স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। তার শূন্য গর্ভের শূন্যতা গর্ভ ছাড়িয়ে প্রবাহিত হয় তার চোখে, আর অনুরণিত হয় তার ঘরের শূন্যতায়। সেখানে হাহাকার করে যায় বাতাস, অনেক টুকরো প্রতিশ্রুতি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। আমি বলি, আজ আমি সত্য বলছি পারুল। বিদায়। আর আসবো না। যে স্বপ্ন এতদিন পারুলবালার শরীরে তার জরাকে ঠেকিয়ে রেখেছিলো, সে স্বপ্ন চূর্ণ হয়। একটি অজাত শিশু কেঁদে ওঠে পারুলবালার ভেতরে কোথাও, আর চাঁদের আলোয় দেখতে পাই, তার স্বপ্নভারাতুর রূপসী মুখটিতে সমুদ্রমগ্ন জঙ্গলের মতো এক অলীক ভাটার টানে জেগে উঠেছে জরার শেকড়। আমার চোখের সামনে বৃদ্ধা হতে থাকে পারুলবালা, মুহূর্তের পর মুহূর্ত জুড়ে। আমি ফিরে আসি। দেখি বাসুকীকে, কোনো এক অন্ধকার থেকে ব্যাকুল হয়ে পারুলবালার দিকে ছুটে চলছে সে তার সমস্ত দেহ দিয়ে। আমি ঘাটে এসে আমার ডিঙি ভাসাই জলে। প্রতিশ্রুতি সবাই দিতে পারে, কিন্তু প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসের অধিকার কেবল পারুলবালার। ধূর্ত চাঁদ আমার পিছু ছাড়ে না। ঘাটের পাশে ফেলে আসা পারুলবালার লণ্ঠন বিষণ্ণ নতমুখে নিভে যায়। পারুলবালার বাড়িতে আর ফেরা হয় না আমার। আমি ডুবে থাকি আমার কবুতর, আমার মধু, আমার দধি, আমার মিষ্টি পানি, আমার রেশমে। লোকমুখে শুনি, পারুলবালার শরীরটি জরার ভারে পরিণত হয়েছে একটি হাস্নুহানা ঝাড়ে, সেখানে তাকে সঙ্গ দেয়, কিংবা প্রহরা দেয় একটি নিঃসঙ্গ চন্দ্রবোড়া, আর পারুলবালার স্বপ্নের টুকরোগুলো রাতের পর রাত জেগে কাঁদে ফুল হয়ে। স্থির করি, একটা জাদুঘর বানিয়ে সেখানে রাখবো তাদের।
false
mk
কঠোর নির্দেশ আসছে, নাশকতাকারীদের দেখামাত্র গুলি বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও নাশকতা দমনে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। জনসমর্থনহীন শুধুমাত্র সন্ত্রাসনির্ভর বিরোধীপক্ষের আন্দোলন ঠেকাতে এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় রাজপথে অগ্নিসংযোগকারী, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারী কিংবা নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের প্রয়োজনে দেখামাত্র গুলি করার মতো নির্দেশও আসতে পারে। এমনকি আন্দোলনের নামে দেশবিরোধী সন্ত্রাস-নাশকতা ও জঙ্গীবাদী তৎপরতা অব্যাহত রাখলে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি শীঘ্রই দরকার হলে খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করবে সরকার। একইসঙ্গে সারাদেশেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়িয়ে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের তাৎক্ষণিক কঠিন বিচারের কথাও ভাবছে সরকার। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো থেকে সরকারের এমন কঠোর মনোভাবের কথা জানা গেছে। দশম জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় বিএনপির ৫ জানুয়ারির সমাবেশ করতে না দেয়া, সরকার উৎখাতের গোপন ষড়যন্ত্র শক্তহাতে মোকাবেলা, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে না দেয়া এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতাদের গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযানে ইতোমধ্যে সরকারের কঠোর মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫টি দিন দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচীতে রাজপথে দলের নেতাকর্মীদের দেখা না মিললেও চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতামূলক কর্মকা- সরকারের হাইকমান্ডকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।ইতোমধ্যে গণভবনে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের জানমাল রক্ষায় তাঁর আরও কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সূত্র জানায়, অবরোধের নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতাকে জঙ্গীবাদী তৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করে ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনে যত বড়ই নেতা হোন না কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হবে। একইসঙ্গে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নাশকতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দেখামাত্র যে কোন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন কঠোর মনোভাবের কথা ইতোমধ্যে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, জনসমর্থন নিয়ে নয়, শুধুমাত্র সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী স্টাইলে নাশকতা চালিয়ে দেশবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিয়ে নিজেদের নেতাকর্মীকেও পাশে না পেয়ে এখন স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের ঘাতকদের মদদদাতা জঙ্গীদের মাঠে নামিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকার অনেক সহ্য করেছে, কিন্তু আর নয়। আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই আর ছাড় দেয়া হবে না। কঠোরহস্তে এসব সন্ত্রাসীদের দমন করতে প্রয়োজনে যেকোন পদক্ষেপ নিতেও সরকার পিছু পা হবে না। কারণ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকার। তাই রাজধানীসহ দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা যা প্রয়োজন তার সবটুকুই প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হবে।সরকার ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থেকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিনে সরকারবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশাঁ আগে থেকেই গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারায় সরকার বড় ধরনের সঙ্কটের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনায় ছিল ৫ জানুয়ারি সমাবেশের নামে জাতীয় প্রেসক্লাব কিংবা পল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় গড়া ‘জনতার মঞ্চে’র আদলে আরেকটি মঞ্চ সৃষ্টি করবে। আর পুরো এই ষড়যন্ত্রের ছক এঁকেছিলেন লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান।সূত্র জানায়, দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে দীর্ঘসময় অবস্থান নিয়ে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা থেকেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে চেয়েছিলেন এবং গোপনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু হেফাজতী কায়দায় জনসভা এবং রাজপথে দীর্ঘসময় অবস্থান করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারের কাছে আগেই খবর ছিল। আর সেই গোপন খবর থেকেই ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ এবং খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয় থেকে পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। আর জাতীয় প্রেসক্লাবে গোপনে অবস্থান নিয়েও কোন নেতাকর্মীকে পাশে না পাওয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শেষ পর্যন্ত অনেকটা অসহায়ের মতোই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা দিতে বাধ্য হতে হয়।সরকারের সূত্র মতে, ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বিএনপির গোপন ষড়যন্ত্রে আরও বেশকিছু পরিকল্পনা ছিল বলেও গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের লেবাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজপথে টানা অবস্থান নিতে পারলে জামায়াতে ইসলামী সহায়তায় দেশব্যাপী নাশকতা এবং কিছু উগ্র ডানপন্থী সংগঠনের তৎপরতায় সরকারকে অস্থিতিশীল করার চিন্তা ছিল। পাশাপাশি কিছু পেশাজীবী সংগঠন এবং সরকারের মধ্যে থাকা বিএনপির সমর্থকদের দিয়ে ধর্মঘট ডাকা হতো। এক পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও রাজপথে বের করে আনারও পরিকল্পনা ছিল।সূত্রটি জানায়, এসব পরিকল্পনা থেকেই বিএনপির উগ্রপন্থী অংশটি নেতা-কর্মীদের ওইদিন লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জনসভায় আসতে বলা হয়েছিল। রাজপথে টানা অবস্থান নিয়ে সশস্ত্র মিছিল এবং হেফাজতী কায়দায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা বা দখলের পরিকল্পনাও ছিল বিএনপির। একইদিন সরকারী দল আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব থাকায় ৫ জানুয়ারি সরকারী দলের সঙ্গে ব্যাপক সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে লাশের ওপর দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিন্তা-ভাবনাও ছিল দলের। জনগণের আস্থা অর্জন নয়, সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত জোট।জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের এমন গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবেই খালেদা জিয়া নির্ধারিত কর্মসূচীর দুইদিন আগে অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। তার আগে গুলশান ও নয়াপল্টনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এনে রাখা হয়। যে কারণে তাঁকে বাসভবনে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানান। সেই থেকে শনিবার পর্যন্ত গুলশানের কার্যালয়ে স্বেচ্ছা বন্দী হয়েই রয়েছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির আগাম পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে খবর থাকায় দলটিকে জনসভার অনুমতি দেয়া বিপজ্জনক ছিল বলেই সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রটি মনে করেন।এদিকে, বিএনপির ডাকা গত ৫ দিনের অবরোধ কর্মসূচী পর্যালোচনা করে সরকারের সামনে একটি পরিষ্কার চিত্রও উঠে এসেছে। অবরোধ কর্মসূচী ডেকেই বিএনপি-জামায়াতের সিনিয়র ও মধ্যম সারির নেতারা চলে গেছেন আত্মগোপনে। খালেদা জিয়া স্বয়ং রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানালেও একজন নেতাও রাজপথে নামার হতাশা থেকেই দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশে শুধুমাত্র মানুষের মনে ভয়-ভীতি ছড়িয়ে দিতে জোটের সব ক্যাডার, সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী জঙ্গীদের মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় পুরো দেশেই জীবন-যাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও সড়ক-মহাসড়কে যাতে যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেজন্য চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজি করে মানুষের মধ্যে প্যানিক সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।সূত্র জানায়, এসব পর্যালোচনা থেকেই সরকার আরও হার্ডলাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজশাহীতে ২০১৩ সালের মতো অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যার প্রচেষ্টায় ক্ষুব্ধ করে তুলেছে পুলিশ প্রশাসনকেও। গুলি করার নির্দেশ না থাকায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা প্রকাশ্য নাশকতা করে চলে যেতে দেখলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিছুই করতে পারছে না। জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অসহায়ত্বের কথাও সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে কিছুদিনের জন্য গ্রেফতার করা হলে সার্বিক পরিস্থিতি দ্রুতই সরকারের অনুকূলে আসবে বলেও মতামত দেন তারা।তাদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হলে দেশের কোথাও বিএনপি-জামায়াতের নামধারী সন্ত্রাসী-জঙ্গীরা নাশকতা চালানোর সাহস দেখাতে পারবে না। আর যেহেতু বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নির্ভর এই আন্দোলনে দেশের জনগণের ন্যূনতম সমর্থন নেই, তাই গুলি করার নির্দেশ পাওয়া মাত্রই সন্ত্রাসী ক্যাডারা গর্তে লুকিয়ে যাবে। এতে দ্রুতই দেশ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে এমন বাস্তব অবস্থা থেকেই আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ প্রদানের কথা ভাবছে সরকারের হাইকমান্ড।এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আন্দোলনের নামে ‘চোরাগোপ্তা’ হামলা বন্ধ না করলে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে জনগণই তাদের প্রতিহত করবে। যারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নাশকতা চালায় তারা কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী হতে পারে না। এরা সবাই সন্ত্রাসী। আর সন্ত্রাসীদের দমনে সরকার যত কঠোর হতে হয়, তা হবে।
false
rg
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড_ একেএম শফিউল ইসলাম খুন !!! আবারো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক খুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলনকে (৪৯) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ (শনিবার) বেলা আড়াইটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিটিং শেষে তিনি মোটর সাইকেল টড়ে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটিসংলগ্ন চোদ্দপাই এলাকায় অবস্থিত বাসার সামনে পৌঁছালে, একদল দুর্বৃত্ত তাঁকে মোটরসাইকেলে থাকা অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পুলিশ জানায়, রাজশাহী শহরের উপকন্ঠে নিজের বাড়ি থেকে অল্প দূরে তার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে চাপাতি দিয়ে হামলা চালায় হত্যাকারীরা। মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, বিকেল ৩টার দিকে রাবি শিক্ষক শফিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসা চৌদ্দপায় এলাকায় ফিরছিলেন। পথে বিহাসের কাছাকাছি এলে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথ রোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে রামেক হাসপাতালে নেন। তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি। তাদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ওসি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও হাসপাতাল এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের নিবন্ধক ডা. মমতাজ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ওই শিক্ষকের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পরপরই তিনি মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ৩টার দিকে শফিউল ইসলাম বিহাসের সামনে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ কয়েকজন তাকে ঘিরে ফেলে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। মাথা ও ঘাড়ে রক্তক্ষরণের মধ্যেই তিনি একটি রিকশায় চেপে হাসপাতালের পথে রওনা হয়েছিলেন। ক্যাম্পাস লাগোয়া বিনোদপুরে এসে তিনি রিকশা থেকে পড়ে যান। যেখানে অধ্যাপক শফিউলের ওপর হামলা হয়েছিল, সেখান থেকে র‌্যাব একটি চাপাতি উদ্ধার করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যলায়ের শিক্ষক খুনের প্রতিবাদ এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। কারা কি উদ্দেশ্যে এই হত্যাকান্ড চালিয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশ এখনো স্পষ্ট কোন ধারণা দিতে পারছে না। অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম একজন লালন গবেষক ছিলেন এবং ব্যক্তিগত জীবনাচরনেও তিনি লালন দর্শন মেনে চলতেন। নিহতের সন্তান সৌমিন শাহরিদ জাবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। ছেলের বরাত দিয়ে সংবাদদাতারা বলছেন, প্রগতিশীল চিন্তার ধারক হবার কারণে তিন বছর আগেও তাঁকে হুমকিও দেয়া হয়েছিল। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে এসবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা সেটা এখনই স্পষ্ট করে বলতে পারছে না পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। হত্যাকান্ডের কারণও জানা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, তারা তদন্তের জন্য যেসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে, তার মধ্যে একটি হলো প্রফেসর ইসলামের লালন দর্শনের চর্চ্চা। তাঁর এক সহকর্মী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রফেসর ইসলাম ছিলেন একজন লালন গবেষক এবং একই সাথে ব্যক্তিগত জীবনেও লালনের দর্শন মেনে চলতেন তিনি। প্রফেসর ইসলাম শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আওয়ামী লীগ সমর্থক গোষ্ঠির একজন নেতা ছিলেন। এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আগামীকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০০৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক এস তাহেরকে হত্যা করা হয়। প্রফেসর তাহেরও প্রগতিশীল চিন্তার অনুসারী ছিলেন। এই নিয়ে আট বছরের মধ্যে দুইজন প্রগতিশীল চিন্তার অনুসারী শিক্ষককে হত্যা করল দুবৃত্তরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম লিলনের প্রথম জানাজা আজ শনিবার রাত নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। রাতেই তার লাশ গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হিয়াতপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। কাল সেখানে দাফন হবে। হঠাৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই শিক্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ্য, ভূতাত্ত্বিক ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহেরকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার ক্যাম্পাসের বাসায় হত্যা করা হয়। তার লাশ বাসার পাশের ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অধ্যাপক তাহেরের বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিন, বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমের পাশাপাশি আব্দুস সালাম ও নাজমুল নামে আরো দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাই কোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সালাম ও নাজমুলের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। অধ্যাপক শফিউলের বাসায় প্রতি সোমবার লালন ভক্তদের আড্ডা জমত। এক বছর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসা ছেড়ে চৌদ্দপাই এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। গত মঙ্গলবার তাঁর বাসায় সারা দেশের লালন ভক্তদের একটি মিলন মেলা বসেছিল। ভারত থেকেও লালন ভক্তরা সেই মেলায় এসেছিলেন। অধ্যাপক শফিউলের একজন সহকর্মী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি ছিলেন একজন লালন সাধক। লালন সঙ্গীতের মাধ্যমে ঈশ্বর দর্শন ছিল তাঁর চর্চার ক্ষেত্র। যে কারণে তিনি কোনো ধর্মীয় উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কোপানলের শিকাড় হতে পারেন। অধ্যাপক শফিউলের তিন বিয়ে। তাঁর প্রথম স্ত্রী অনেক আগে মারা যান। তাঁর দ্বিতীয় সংসার ভেঙ্গে যায়। আর বাউল চর্চার কারণে তাঁর তৃতীয় স্ত্রীও আলাদা বসবাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে। সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪২
false
fe
ভারতীয়রা এখনও মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করে, পাকিস্তানীরা করে না ভারতীয়রা এখনো বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করে। পাকিস্তানীরা করে না। বীর শ্রেষ্ট হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ কে ভারতীয় বাহিনী কিভাবে শেষ সম্মান দেখিয়েছে , এই রিপোর্ট তার প্রমান । অথচ পাকি রা বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানকে 'গাদ্দার' আখ্যায়িত করে অবমাননা করতে চেয়েছিল ! তার পরও কিছু বাঙালী ( পাকি বীজাক্ত),পাকিদের বন্দনায় ব্যস্ত ! ================================== দৈনিক ভোরের কাগজ ডিসেম্বর ১১, ২০০৭, মঙ্গলবার : অগ্রহায়ণ ২৮, ১৪১৪ আপডেট বাংলাদেশ সময় রাত ৩:০০ ------------------------------------- বীরশ্রেষ্ঠ ফিরলেন ------------------- এম ফিরোজ মিয়া, কুমিল্লা থেকে : স্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৬ বছর পর দেশের মাটি স্পর্শ করলো স্বাধীনতা সংগ্রামের অকুতোভয় সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ। গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ রাইফেলসের লে. কর্নেল নূরে আলম ও লে. কর্নেল আব্দুল মুকিম সরকার ভারতীয় বিএসএফ-এর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দেহাবশেষ গ্রহণ করেন। দেশের মাটিতে এই বীর সেনানীর দেহাবশেষকে শ্রদ্ধায় জানা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, ছাত্রছাত্রী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। গতকাল সোমবার ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় ভারতের ত্রিপুরা সার্কিট হাউজে ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করেন। এর আগে ত্রিপুরা রাজ্যের ধলাই জেলার হাতিমারা ছড়ার আম্বাশা গ্রামের আব্দুল আলীর পারিবারিক কবরস্থান থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সামনে বীরশ্রেষ্ঠের দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়। বেলা সোয়া ১টায় ত্রিপুরার সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার কমল চক্রবর্তী ও সোনামুড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে আশ্চার্যের নেতৃত্বে ত্রিপুরা সার্কিট হাউস থেকে কফিনে করে বীরশ্রেষ্ঠের দেহাবশেষ বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয় এবং দুপুর ২টা ১৪ মিনিটে ভারত সীমান্তের শ্রীমন্তপুরে এসে পৌঁছে। ভারতীয় বিএসএফ-এর ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি চৌকস দল যথাযোগ্য মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠের দেহাবশেষের কফিন গাড়ি থেকে নামিয়ে সুসজ্জিত মঞ্চে নেয়। এ সময় ১০ সদস্যের বিএসএফ দল স্বাধীনতা সংগ্রামের এই বীরযোদ্ধাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে। এরপর হামিদুর রহমানের দেহাবশেষে ভারত সরকারের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন ত্রিপুরার নগর চেয়ারপারসন শ্যামল চক্রবর্তী, বিএসএফ-এর সেকেন্ড কমান্ডিং অফিসার অবনী যোগী, সোনামুড়া পুলিশের এসডিএস অনিন্দ কুমার, কমল চক্রবর্তী, শ্রীমন্তপুরের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ভুবন জাকির, সোনামুড়ার পুলিশ ইন্সপেক্টর অশোক পাল প্রমুখ। ভারতীয় সীমান্তে প্রায় ৩০ মিনিটের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ২টা ৪০ মিনিটে বিএসএফ বিডিআর-এর কাছে বীরশ্রেষ্ঠের দেহাবশেষ হস্তান্তর করে। ২টা ৪৩ মিনিট স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ দেশের মাটি স্পর্শ করে। ২টা ৫৫ মিনিট কুমিল্লা বিবির বাজারের কটক বাজার সীমান্ত থেকে যথাযথ মর্যাদায় ধীরলয়ে বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি চৌকস দল বিবির বাজার স্থলবন্দর তৈরিকৃত মঞ্চে কফিনটি নিয়ে আসে। এ সময় ১৪ ইস্ট বেঙ্গলের মেজর মোঃ পারভেজের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল দেশের মাটিতে এই বীরশ্রেষ্ঠকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল আব্দুল হাফিজ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল কাশেম মাহবুব বীরপ্রতীক, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মনজুরুল রহমান, পুলিশ সুপার মীর শহীদুল ইসলাম পিপিএমসহ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বীরশ্রেষ্ঠের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে লে. কর্নেল মোঃ সফিউল আলম চৌধুরী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন। এ সময় বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ছোট ভাই ফজলুর রহমানসহ ৭ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিকাল পৌনে ৪টায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ বিবিরবাজার স্থলবন্দর থেকে কুমিল্লা সেনানিবাসে মোটর শোভাযাত্রাসহ নিয়ে যাওয়া হয়। বিবিরবাজার স্থলবন্দর থেকে কুমিল্লা শহর হয়ে কুমিল্লা সেনানিবাস পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিমি দীর্ঘ রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী, আবাল বৃদ্ধ বনিতা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে হাত নেড়ে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কুমিল্লা সেনানিবাসে রাতযাপনের পর আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় দেহাবশেষ নিয়ে সড়কপথেই ঢাকার পথে রওনা হবে প্রতিনিধিদল। সচিব জানান, ঢাকায় আনার পর বীরশ্রেষ্ঠের দেহাবশেষ সরাসরি জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে নিয়ে যাওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সকাল সাড়ে ১০টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের দেহাবশেষ গ্রহণ করবেন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ওই সময় সেখানে ২১ বার তোপধ্বনি করা হবে। রাষ্ট্রপতির পর প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে শোভাযাত্রাসহ হামিদুরের দেহাবশেষ মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে নিয়ে আরেক বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের সমাধির পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনঃসমাধিস্থ করা হবে বলে সচিব জানান। সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৫৮
false
mk
ফিরে দেখা কোকো___ বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কয়েক মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগকে জাতীয় সম্পদ চুরির একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের মাদক ওঅপরাধ বিষয়ক দপ্তরের সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের চোরাই সম্পদ উদ্ধার (স্টার)পদক্ষেপের অধীনে ‘অ্যাসেট রিকভারি হ্যান্ডবুক’ শীর্ষক পুস্তিকায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চোরাই অর্থ উদ্ধারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নির্দেশনামূলক এই হ্যান্ডবুক কয়েক দিন আগে ভিয়েনায় প্রকাশ করা হয়েছে। ঐ হ্যান্ডবুকের উদ্ধৃতি দিয়ে বাসস এই তথ্যপ্রকাশ করেছে। বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে : ‘২শ সত্তর পৃষ্ঠার এই হ্যান্ডবুকের ৫৩ ও ১শ ৯৬ পৃষ্ঠায় আরাফাত রহমান কোকোর দুর্নীতির বিষয় উল্লেখ রয়েছে এবং অভিযোগ সম্পর্কিত বিষয়াদি পর্যালোচনা করা হয়েছে। উভয় পৃষ্ঠায় সিমেন্স কোম্পানির কাছ থেকে কোকোর অবৈধ ভাবে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষ গ্রহণের বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এতে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে।হ্যান্ড বুকের ৫৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ ও ভেনিজুয়েলায় সিমেন্স ও এর শাখা কোম্পানি সরকারি কন্ট্রাক্ট পেতে জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের ঘুষপ্রদান করে। এতে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে কনসালটেন্টদের অর্থ প্রদানের কথা বলে ঘুষ চাওয়া হয়। এসব কনসালটেন্ট কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত যোগাযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে চ্যানেল হিসেবে কাজ করতো কোকো।’ হ্যান্ডবুকে আরো বলা হয়েছে, সিমেন্স এ অনিয়মের ঘটনায় দোষ স্বীকার করেছে এবং ইতিমধ্যে ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা দিয়েছে। বইয়ের ১৯৬ পৃষ্ঠায় মার্কিন বিচার বিভাগের পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘২০০৯ সালে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে একটি বিদেশি কোম্পানি কর্তৃক ঘুষ প্রদানের (সিঙ্গাপুরে মার্কিন মুদ্রায়)বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগ বাজেয়াপ্তকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করে।এর আগে গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি মার্কিন কর্তৃপক্ষ ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের অর্থ পুনরুদ্ধারে ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার একটি আদালতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হয়। কোকো এই অর্থ সিমেন্স থেকে গ্রহণ করে এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি ব্যাংকে জমা রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার একটি বিশেষ জজ কোর্টে ৩০ নভেম্বর কোকো ও সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী প্রয়াত আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সাইমনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলায় চার্জ গঠন করার দুই সপ্তাহ পর বিশ্বব্যাংকের এই পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (এসিসি) গত বছরের ১৭ মার্চ ঢাকার কাফরুল থানায় যুক্তরাষ্ট্রে ৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৭২ মার্কিন ডলার ও সিঙ্গাপুরে ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬০৪ ডলার পাচারের অভিযোগ এনে কোকো ও সাইমনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে। ২০০৭-২০০৮ সালের সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বাংলাদেশ থেকে অর্থ সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়। ওই সময় কর্মকর্তারা জানান, তাদের অনুমান প্রভাবশালী কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত লোকেরা বিদেশে কোটি কোটি ডলার পাচার করেছে। ওই সময় দুর্নীতি গ্রস্তরা ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেশে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। একই সময় বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল সি. প্যাটেল বলেছিলেন বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ সম্পদ দেশের বাইরে পাচার হয়েছে।
false
rn
রাস্তায় পাওয়া ডায়েরী থেকে- ২৬ ৭ই মার্চ ১৯৭১। আজ সকাল থেকেই গুল্লু অনেক অস্থির।আজ একটি বিশেষ দিন। শেখ মুজিবুর রহমান আজ ভাষণ দিবেন।এবং আজ বিকেলে হিমির সাথে গুল্লুর দেখা করার কথা শহীদ মিনারে।গুল্লু অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করেছে- হিমিকে নিয়ে রেসকোর্স ময়দানে যাবে। শেখ মুজিবর কি বলেন-মন দিয়ে শুনবে।দেশের অবস্থা ভালো না। আজকে শেখ সাহেবের ভাষণের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। ইয়াহিয়া কে বিশ্বাস নেই। ব্যাটা একটা হারামজাদা। সমস্যা হলো হিমি কি যাবে ভাষণ শুনতে? হিমি চেয়েছিল বলাকাতে সিনেমা দেখবে।হিমি সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করে। হিমি হাসি মুখে রাজি হয়েছে- সে অবশ্যই যাবে শেখ সাহেবের ভাষণ শুনতে । গুল্লু এবং হিমি রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে প্রচন্ড অবাক। তারা তাদের জীবনে এত মানুষ কোনো দিন দেখেনি। মনে হচ্ছে যেন সারা দেশের মানুষ এই ময়দানে এসে জড়ো হয়েছে। সব বয়সী মানুষ এখানে এসে জড়ো হয়েছে। অনেক ছোট ছোট বাচ্চা তাদের নানা দাদার কোলে পিঠে কাঁধে, বাচ্চারা অবাক হয়ে চেয়ে আছে এত মানুষ দেখে। গুল্লু হিমির হাত ধরে একেবারে মঞ্চের কাছে নিয়ে গেছে। গুল্লুর খুব শখ শেখ সাহেব কে কাছ থেকে দেখবে।হিমি বলল আমি কখনও ভাবতে পারিনি এত কাছ থেকে শেখ সাহেব কে দেখব! হিমি খুব সুন্দর করে সেজেছে। সাদা কালো একটি শাড়ি পড়েছে। কিন্তু হাত ভরতি লাল সবুজ কাঁচের চুড়ি। কপালে একটা বড় লাল টিপ।সিনেমা দেখতে পারেনি বলে হিমির একটুও মন খারাপ হয়নি। মুজিব মঞ্চে উঠলেন। হিমি শক্ত করে গুল্লুর হাত ধরে রাখলো। ব্রজ কন্ঠে তার ভাষণ শুরু করলেন। ময়দানের সবাই একসাথে চিৎকার করে বলে উঠলো- জয় বাংলা। শেখ মুজিব বললেন- "আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। ...১৯৬৬ সালে ৬দফা আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯ এর আন্দোলনে আয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গনতন্ত্র দেবেন - আমরা মেনে নিলাম। ... তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম জয় বাংলা।এটাই ছিল গুল্লুর সাথে হিমির শেষ দেখা। গুল্লু দেখেছে শেখ মুজিবরের ভাষণ শুনে সেদিন হিমির চোখ ভিজে উঠেছে। একটু পর পর হিমি তার শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছেছে।ভাষন শেষে গুল্লু হিমিকে বাসায় পৌছে দেয়। গুল্লুর সাথে হিমির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ১৬ই ডিসেম্বর।সত্তরের সাধারণ নির্বাচনের ঐতিহাসিক গণরায়কে নস্যাৎ করার জন্য একাত্তর সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বেতার ঘোষণার মাধ্যমে ৩ মার্চ ঢাকায় আহূত জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে। ২৫শে মার্চ এর পর হিমি এবং গুল্লুর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় রক্তপিপাসু হিংস্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষদের ওপর চালায় গণহত্যা ও পৈশাচিকতা। সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি ছাত্র, শিক্ষক, নারী, শিশু এমনকি রিকশাচালকও।২৫ শে মার্চ রাতে গুল্লু হিমির বাসার উদ্দেশে বের হয়- তারপর গুল্লুর খোঁজ পাওয়া যায়নি।২৫শে মার্চ রাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় হানাদার বাহিনীর অগ্নিসংযোগে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। চতুর্দিকে বিরামহীন গুলির শব্দে বিনিদ্র রাত কাটায় নগরবাসী। হঠাৎ করে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ ও রাস্তায় রাস্তায় তাদের সশস্ত্র টহলে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ ঘরের কোণে আশ্রয় নিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। ২৬শে মার্চ আসে স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর নয় মাস বাঙালির মরণপণ যুদ্ধে অর্জিত হয় রক্তের পতাকা।
false
fe
বিদেশে বাংলা ভাষা-সাহিত্যের প্রসারে সংগঠনগুলোর দায়িত্ব বিদেশে বাংলা ভাষা-সাহিত্যের প্রসারে সংগঠনগুলোর দায়িত্বফকির ইলিয়াস________________________________________________‘অভ্র’ একটি ভাষা বিপ্লব ঘটিয়েছে গোটা বিশ্বে। এর জনক মেহেদী হাসান খান। একজন তরুণ প্রফেশনাল। তিনি বিদেশে বাংলা ভাষাভাষী তরুণ প্রজন্মের আইকন। তার উদ্ভাবিত সফটওয়্যার দিয়েই ফেসবুক, অনলাইনে প্রতিদিন বাংলা লিখছে লাখ লাখ বাংলা ভাষাভাষী।বিদেশের বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যা বাড়ছে। যারা নতুন প্রজন্ম, তারা অন্যান্য ভাষায় দক্ষ হলেও নিজ মাতৃভাষা বাংলার প্রতি তাদের আগ্রহ, আমাদের আশান্বিত করে। তারা জানতে চায় বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতির কথা। তারা জানতে চায় বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। আমাদের মহান একুশে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ছাড়াও বৈশাখ বরণ, রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ জয়ন্তী, বসন্ত উৎসব, বইমেলাও বিদেশে বাঙালি প্রজন্মের কাছে ক্রমশ করণীয় হয়ে উঠছে। এটা খুবই আনন্দ সংবাদ।আমরা আরো একটি একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করলাম। একটি বিষয় এবার লক্ষ করেছি, বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের আয়োজনে মহান একুশের অনুষ্ঠানে এবার বিপুল সংখ্যক তরুণ প্রজন্ম অংশ নিয়েছে। এরা ছবি এঁকেছে। গান গেয়েছে। নাটকে অংশ নিয়েছে। গীতিনকশা করেছে। কবিতা পাঠ করেছে। কাজগুলো সম্ভব হয়েছে এখানের সংগঠন ও অভিভাবকদের আন্তরিকতার কারণে। এটাই একটি জাতিসত্তার শিকড়ের সন্ধান। এই সন্ধান অব্যাহত রাখতে না পারলে বহুজাতিক, বহুভাষিক মানুষের মাঝে নিজ সংস্কৃতির উজ্জ্বলতা তুলে ধরা যায় না।এরই আলোকে এখন বিশ্বে কাজ হচ্ছে। আমি বারবারই আমার বিভিন্ন লেখায় বলেছি, বর্তমান বিশ্বে একটি জাতির ভাষা ও সাহিত্যের স্থান নির্ণিত, নির্ধারিত হয় সে রাষ্ট্রটির অবস্থান কোন ইকোনমিক জোনে অর্থাৎ দেশটির অর্থনীতির সম্ভাবনা কতোটুকু উজ্জ্বল- তার ওপর। বিশ্বের সামন্তবাদীরা যদি দেখে ঐ দেশটি অর্থনীতির ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাচ্ছে, তখনই তারা ঐ ভাষার সাহিত্য নিয়ে মাতামাতি করতে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশের ইংরেজি ভাষার লেখক ও সাহিত্য নিয়ে কাজ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্লাটফর্মে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয় সাহিত্যপত্র ‘ওয়ার্ল্ড লিটারেচার টুডে’। বিশ্ববিশ্রুত সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক এ জার্নালটির বর্ষ ৮৭, সংখ্যা ৩, মে-জুন ২০১৩ সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনী ছিল ‘বাংলাদেশ অন দ্য ওয়ার্ল্ড স্টেজ’। এই সংখ্যাটিতে ইংরেজি ভাষায় লেখা ও অনূদিত বাংলাদেশের সমসময়ের সাহিত্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নরম্যানস্থ ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিমাসিক এ জার্নালটির প্রকাশক। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২৭ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়টির আধুনিক ভাষা বিভাগের তৎকালীন প্রধান রয় টেম্পেল হাউস এর সূচনা করেছিলেন। সমকালীন আন্তর্জাতিক সাহিত্যকে প্রাধান্য দিয়ে পাঠকদের বিশ্বসাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত করাই এর প্রধান লক্ষ্য। প্রথম পর্যায়ে এর নাম ছিল ‘বুকস অ্যাব্রড’। ১৯৭৭ সাল থেকে জার্নালটির নাম বদলে হয় ‘ওয়ার্ল্ড লিটারেচার টুডে’।এই সংখ্যাটিতে ‘এ গোল্ডেন এইজ’ খ্যাত তাহমিনা আনাম, ‘গুড নাইট মি. কিসিঞ্জার এন্ড আদার স্টোরিজ’ গল্পগ্রন্থের স্রষ্টা কাজী আনিস আহমেদ, ‘লাইফলাইনস : নিউ রাইটিং ফ্রম বাংলাদেশ’ সংকলনের সম্পাদিকা ফারাহ গজনভি ও ‘কিলিং দ্য ওয়াটার’ উপন্যাসের লেখক মাহমুদ রহমানÑ এই পাঁচজনের সাক্ষাৎকার ছিল। ছিল ‘তালাশ’ উপন্যাসখ্যাত লেখিকা শাহীন আখতারের ‘সখী রঙ্গমালা’ উপন্যাসের অংশবিশেষের তর্জমা, যা ইংরেজিতে রূপান্তর করেছেন মাহমুদ রহমান। মাহমুদ রহমান এর আগে মাহমুদুল হকের ‘কালো বরফ’ উপন্যাসটি ইংরেজিতে তর্জমা করেছেন ‘ব্ল্যাক আইস’ নামে। তার এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে এ রকম আরো সাহিত্যকর্ম তরুণ সব তর্জমাকারীর মাধ্যমে সার্থকভাবে ইংরেজিতে ভাষান্তরিত হবে এমন প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।এই সংখ্যায় লসঅ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা কবি, অনুবাদক, সম্পাদক ডেভিড শুক তার ছোট ভূমিকায় ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গটি টেনে বলার চেষ্টা করেছেন, কীভাবে বাংলা ভাষা আমাদের উন্মেষ ও বিকাশে আত্মার মতো জড়িয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল- এ দুই মহীরুহের উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেছেন উপমহাদেশে ইংরেজিতে লেখা সাহিত্যের ধারায় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি দেরিতে হলেও বাংলাদেশের যোগদান সম্ভব হয়েছে সমসময়ের কয়েকজন গদ্যশিল্পীর রচনার কল্যাণে। তাদের দু-তিনজন দেশেই থাকেন আর অন্যরা থাকেন বিদেশ-বিভুঁইয়ে। ছোটবেলায় বাংলা মাধ্যমে পড়ালেখা করেছেন কেউ কেউ। আবার কারো কারো পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমেই দেশে ও বিদেশে। রাঙ্গামাটির তরুণ কবি সুদীপ্ত চাকমা মিকাদোর দুটি কবিতা ‘আইডেনটিটি’ ও ‘আনস্পোকেন ওয়ার্ডস’ শিরোনামে তর্জমা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষাকে তুলে ধরার অঙ্গীকার থেকে ‘ওয়ার্ল্ড লিটারেচার টুডে’র এ সংখ্যায় চাকমা কবিতা সংকলিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শুক। দক্ষিণ এশিয়ার কল্পিত এক জনপদ, যার নাম পান্ডুয়া, সেখানটায় রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে কর্মরত এক সাংবাদিককে মুখ্য চরিত্র করে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন মাই হ্যান্ডস’ উপন্যাসটি লিখছেন কাজী আনিস আহমেদ। তার উপন্যাসটির সূচনাপর্বের অংশবিশেষও রয়েছে এ সংখ্যাটিতে। আর আছে হংকং নিবাসী মারিয়া চৌধুরীর স্মৃতিকথা ‘দ্য থ্রি স্টেজেস অব সেপারেশন’। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতিশিল্পকে যারা কাছে থেকে দেখেছেন, এমন ইংরেজি ভাষায় পারদর্শীদের সাহিত্য রচনায় বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ খুব সাবলীলভাবেই গ্রন্থিত হচ্ছে। ২০০৮ সালে তাহমিমা আনামের প্রথম উপন্যাস ‘এ গোল্ডেন এজ’ ‘সেরা প্রথম বই’ হিসেবে কমনওয়েলথ রাইটার্স পুরস্কার পায়। এ ছাড়া উপন্যাসটি গার্ডিয়ান ফার্স্ট বুক অ্যাওয়ার্ড ও কস্টা ফার্স্ট নভেল প্রাইজের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছিল। তার পরবর্তী উপন্যাস ‘দ্য গুড মুসলিম’ ২০১১ সালের ম্যান এশিয়ান লিটারারি প্রাইজের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল। তার লেখা বিভিন্ন কলাম বিভিন্ন সময় গ্রান্টা, নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ ছাপা হয়েছে।বাংলাদেশী লেখক কাজী আনিস আহমেদের রাজনৈতিক উপন্যাস ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন মাই হ্যান্ডস’- উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে ভারতীয় প্রকাশনা সংস্থা র‌্যান্ডম হাউস ইন্ডিয়া। আরেকজন বাংলাদেশী লেখিকা মারিয়া চৌধুরীর স্মৃতিকথন ‘বিলাভড স্ট্রেনজার্স : অ্যা মেমোয়ার’- প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা ব্লুমসবেরি। এরকম অনেক কাজই হচ্ছে। যা বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলা ভাষা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, উড়িষ্যা মিলে মোট ২৫ কোটিরও বেশি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। এর বাইরে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আরো এক কোটি লোক বাংলাদেশ আর ভারতের বাইরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন জীবিকা, ব্যবসা বা লেখাপড়ার প্রয়োজনে; যাদের মাতৃভাষা বাংলা। দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীতে এমন অনেক প্রধান ভাষা আছে, যে ভাষাতে কথা বলা লোকের সংখ্যা এক কোটিরও কম। সেদিক থেকে প্রবাসে এক কোটি বা তারও বেশি বাঙালি প্রবাসীর বাংলা ভাষাচর্চার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।আমরা ইতিহাস থেকে জানি, আঠারো, উনিশ আর বিশ শতকে ইংরেজ, জার্মান আর ফরাসি জাতি এশিয়া আর আফ্রিকার বহু দেশ দখল করে নিয়েছিল সামরিক শক্তির জোরে। এখন সেই দিন নেই। যা আছে তা হচ্ছেÑ ভাষিক কৌশল প্রয়োগ করে কূটনৈতিক শাসন। আর সে কারণেই মার্কিন সাম্রাজ্যের মতো আরো অনেক বৃহৎ শক্তি এখন মনে করছে, এই একবিংশ শতাব্দীতে সৈন্য-সামন্ত দিয়ে নয় বরং ভাষা আর সাংস্কৃতিক আধিপত্যের মধ্য দিয়ে সামরিক শক্তি প্রয়োগের চেয়েও অনেক সহজে একটি রাষ্ট্রের মননে দখল নেয়া সম্ভব। আর সে প্রয়োজনেই ইউরোপ-আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টিতে ঢাকা-ই হচ্ছে বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির রাজধানী। আর তাই পশ্চিমবঙ্গ নয় বরং বাংলাদেশকে বিবেচনায় রেখে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, ডয়েসে ভেলে, রেডিও ইরানসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তাদের নিজেদের দেশ থেকে বাংলা ভাষায় সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্যোলান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, চেকোশ্লোভাকিয়ার চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ এবং আমেরিকা ও কানাডার দুই-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগগুলো বাংলাদেশকে কেন্দ্রে রেখে বাংলা ভাষার চর্চা ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজেদের খরচেই।এগুলো নিঃসন্দেহে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী সংগঠনগুলোর জন্য আশার সংবাদ। এই যে সাফল্যের ঝিলিক- এটিকে আরো এগিয়ে নিতে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সংগঠনগুলোর দায়িত্ব কীÑ সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করতে চাই। বলতে দ্বিধা নেই, এসব দেশ অভিবাসী বাঙালিকে বিত্ত-বৈভব-সুনাম-ঐশ্বর্য অনেক কিছুই দিয়েছে। সময় এসেছে কিছু ফেরত দেবার। আর তা সম্ভব বিদেশের এই দেশগুলোতে নিজ সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে। এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা আমি এই নিবন্ধে তুলে ধরতে চাই।১. ইউরোপ-আমেরিকায় মূলধারার যে পাবলিক লাইব্রেরিগুলো রয়েছে, সেসব লাইব্রেরিতে প্রতি বছর কয়েকশ বই দান করতে পারে অভিবাসী সংগঠনগুলো। ক্রমশ এসব লাইব্রেরিতে গড়ে তোলা যেতে পারে ‘বাংলাদেশ বুক কর্নার’। এখানে থাকতে পারে বাংলাদেশ বিষয়ে বাংলা, ইংরেজি ভাষায় লিখিত গ্রন্থাবলী। থাকতে পারে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক বিষয়ের বিভিন্ন বই। থাকতে পারে বাংলা ভাষার কয়েক হাজার বই। যা পড়ে অভিবাসী বাঙালিরাই শুধু নয়, ভিন্ন ভাষাভাষীরাও জানতে পারবে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতিকে। করানো যেতে পারে অনুবাদের কাজটিও। বিদেশে যারা দক্ষ অনুবাদক আছেন, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে সংগঠনগুলো।২. বিদেশে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী রয়েছেন। অনেক নাট্যাভিনেতা রয়েছেন, চিত্রকর রয়েছেন। তাদের অংশগ্রহণে একক বা সম্মিলিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে সংগঠনগুলো। আয়োজন করা যেতে পারে কোনো চিত্রশিল্পীর সপ্তাহব্যাপী চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর। এজন্য অর্থিক সাপোর্ট দরকার। সংগঠনগুলো স্পনসরের দায়িত্ব, আয়োজনের দায়িত্ব পালন করতে পারে।৩. প্রবাসে অনেক প্রতিভাবান লেখক রয়েছেন, যারা সরাসরি ইংরেজি ভাষায় লিখেন। অনেক তরুণ লেখক-লেখিকা আছেন, যারা স্কুল-কলেজের বিভিন্ন আয়োজনে লেখালেখি করে সুনাম কুড়িয়েছেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের গ্রন্থ প্রকাশে এগিয়ে আসতে পারে। তাদের বই বিপণন করতে পারে। কাজটি মোটেই কঠিন নয়।৪. বাংলা ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বিষয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করতে পারে প্রবাসের সংগঠনগুলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক বিদেশী বুদ্ধিজীবী রয়েছেন যারা বাংলা সাহিত্য ও ভাষায় দক্ষতা দেখিয়েছে। ক্লিনটন বি. সিলি কিংবা উইলিয়াম র‌্যাদিচের মতো ব্যক্তিত্ব বিশ্বে আরো আছেন। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালিরা তাদের পাদপ্রদীপে নিয়ে আসতে পারেন। কাজগুলো খুব কঠিন নয়। প্রয়োজন সদিচ্ছার। বিদেশে সংগঠনগুলো তাদের সভাপতি-সম্পাদকের পদ নির্বাচনে লক্ষ ডলার ব্যয় করেন। যদি সেটা তারা পারেন তাহলে আমার এই প্রস্তাবনাগুলো সদয় বিবেচনা করতে পারবেন না কেন? আমার বিশ্বাস, প্রবাসী প্রজন্ম সঠিক দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিদেশে সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।======================================= দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ১ মার্চ ২০১৪
false
mk
এই সময়ে দেশ ও রাজনীতি বছরের শুরুর তিন মাস আমাদের কেমন কেটেছে- তা বোধহয় কাউকে মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। অবশ্য ২০১৫ সালের শেষের কয়েক মাস অনুরূপভাবে অবরোধ, হরতালের নামে যানবাহন পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে, ঘরবন্দি রেখে যে বিভীষিকা, আতঙ্ক এবং হতাশায় গোটা জাতিকে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল, তা আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে নজিরবিহীন পর্ব হিসেবেই যে কোনো সময়ে উল্লেখ করা হবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। যখন ২০১৩ বা ২০১৫-তে বিভীষিকার প্রায় অভিন্ন পর্বটি শুরু হয়েছিল- তখন কেউই ভাবতে পারেনি এটি কেমন হবে, কবে এর অবসান হবে। এক অজানা আতঙ্ক মানুষকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে, রুটি-রুজির জন্য বের হয়ে কেউ কেউ আর ঘরে ফিরতে পারেননি, কেউবা ফিরেছেন দগ্ধ আহত বা ক্ষতি-বিক্ষত দেহ ও মন নিয়ে। কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে এমন দুর্বিষহ সময় প্রলম্বিত হয় তা ভাবাই কষ্টের বিষয়। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দুইবার আমাদের প্রায় একই ধরনের বিভীষিকাময় সময় অতিক্রম করতে হয়েছে।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরেই ২০১৩ সালের হঠকারী, ধ্বংসাত্মক মানুষ পোড়াও এবং হত্যার তাণ্ডব সংঘটন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ঠেকানো যায়নি। অবরোধকারী এবং নির্বাচন প্রতিহতকারীরা তখন পরাজিত শক্তি হিসেবেই ‘আন্দোলনের মাঠ’ ছেড়ে আত্মগোপনে, কিংবা রণেভঙ্গ দিয়ে বসে পড়েছিল। নির্বাচনে অংশ না নেয়া, প্রতিহত করা, বানচাল করা, দেশে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করাই ছিল সেই ‘আন্দোলনের’ মূল লক্ষণ তেমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার পরিবেশ থাকে না। নির্বাচনটি যেনতেনভাবে হলেও শেষ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই জরুরি হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি-উত্তর পরিস্থিতি তেমনটিই বলে। সে কারণেই মানুষ ফিরেও তাকাতে চায়নি নির্বাচনটি কেমন হয়েছিল। কেননা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ দেশটাকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল তাতে মানুষের জন্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই ছিল জরুরি। শেষ পর্যন্ত সেটিই ঘটেছিল, তারপর গোটা ২০১৪ সাল মানুষ যার যার কাজ, জীবন, জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। কিন্তু ২০১৩ সালের শক্তি ২০১৫-এর জানুয়ারিতে আর একটা ধাক্কা দিতেই প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। তেমনটি শুরু থেকেই দেখা গেল। ২০১৩-এর পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে লাগাতার অবরোধ ও হরতালের যে রেকর্ড সৃষ্টি করা হয়েছিল তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় কোনোভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মসূচিরূপে আখ্যায়িত করা যায় কিনা সন্দেহ আছে। ২০ দলের যেহেতু যথেষ্ট কর্মী-সমর্থক রয়েছে- তাই গাড়ি পোড়ানোর মতো বেশ কিছু তাণ্ডব করা গেছে, মানুষ পোড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটানো গেছে। কিন্তু দেশে-বিদেশে এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ এবং ধিক্কার শুরু হলে এসব কর্মী-সমর্থকরাও যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী যানবাহন পুড়িয়ে তথাকথিত ‘আন্দোলন’ এগিয়ে নেয়ার মনোবল আর খুঁজে পাচ্ছিল না। তবে পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার উপায় ২০ দলও খুঁজে পাচ্ছিল না। কর্মসূচি আপনা আপনিই নিস্তেজ হয়ে পড়লেও মানুষের মধ্যে আতঙ্কগ্রস্ততা বিরাজ করছিল। সেই পরিস্থিতিতে ৩ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আয়োজন ছিল একটি উত্তরণের সুযোগ। সেই সুযোগ বিএনপি আপাততদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল গ্রহণও করেছিল। তবে প্রার্থী মনোনয়ন, নির্বাচনের দিন হঠাৎ করে প্রার্থীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নির্বাচন বর্জন করানোর ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিএনপি আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করাটিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে, নির্বাচনে বিএনপি জিতে আওয়ামী লীগের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন করার কৃতিত্ব দেয়ার কোনো অবস্থা তৈরিতে অবদান রাখতে চায়নি। কিন্তু তাতে বিএনপির লাভ কতটা হয়েছে- তা কেবল সময়ই বলে দেবে। তবে সাংগঠনিকভাবে বিএনপির অভ্যন্তরে সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে- এতে সন্দেহ নেই। বিএনপির রাজনীতিতে হঠকারিতা, চালাকির প্রবণতা কমবেশি ফুটে উঠেছে। এতে দেশে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৫-এর তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভাবমূর্তির সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে, রাজনীতিতে হতাশার পরিস্থিতি আরো বেড়েছে, দুর্বৃত্ত শক্তির কদর আন্দোলনকারী এবং আন্দোলন প্রতিহতকারীদের মাধ্যমে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার ক্ষেত্রে বেড়ে গেছে- যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের একটি কঠিন, জটিল এবং অবিমৃষ্যকারী পরিস্থিতি জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে- এর থেকেই উত্তরণের উপায় কি তা লক্ষ কোটি ডলার মূল্যের প্রশ্ন। এর গভীরতা আশা করি সব দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তিকে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।নির্বাচন-উত্তর বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ এবং রাজনীতিতে গত জানুয়ারি-মার্চ মাসের কালো মেঘের উপস্থিতি নেই। তবে রাজনীতির সংকট সহজে কাটার বিষয় নয়। বিএনপি এখন অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বিএনপির সব কৌশলই একে একে ব্যর্থ হয়েছে। এর বস্তুনিষ্ঠ কারণ বিএনপিকেই উদঘাটন করতে হবে। তবে দূর থেকে সাদামাটাভাবে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে বিএনপি ২০০৯ সালের পর থেকে ক্রমেই দক্ষিণপন্থায় তথা জামায়াত-হেফাজত নির্ভর হয়ে উঠেছে। ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের সরকার উচ্ছেদের উগ্র হঠকারী ধারায় আস্থাশীল হয়ে ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত করা, ২০১৫-এর ৩ জানুয়ারি থেকে সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধসহ চরমপন্থার কর্মসূচি নিয়ে আস্থাশীল হয়। মনে রাখতে হবে, কোনো চরমপন্থ আন্দোলন ব্যর্থ হলে সংঘটিত অপরাধের দায়ে নেতাকর্মীরা বিচার ও মামলার করুণ পরিণতি বহন করতে বাধ্য হয়। বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়, জামায়াত-হেফাজতের হঠকারী রণকৌশলে পা দিয়ে বিএনপির তরুণ নেতাকর্মীদের অনেকেই জ্বালাও-পোড়াওয়ের কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে এখন আন্দোলন বির্যয় পরিস্থিতিতে নানা মামলায় আসামি। এটি বিএনপির ক্ষেত্রেই ঘটেছে- অন্য কারো ক্ষেত্রে ঘটতো না- এমনটি নয়। বরং বলা যায় যে, উগ্রবাদী আন্দোলনে ঘটনা ঘটেছে তার করুণ পরিণতির ছিটেফোঁটা মাত্র ঘটেছে। ২০১৩-এ ২০১৫ সালে আন্দোলন ছিল একেবারেই হঠকারী, উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট। ফলে বিদেশি বিএনপির বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতে পারেনি দূরে সরে আছে। এখন অনেকেই বলছেন যে, সরকার বিএনপির ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়ে রাজনীতি থেকে বিএনপিকে বিতাড়িত করছে, তাতে বিএনপি ধ্বংস হতে পারে, সে ক্ষেত্রে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী লাভবান হবে। সে ধরনের ভয় দেখিয়ে দেশে এখন অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কথা হচ্ছে, বিএনপি কি ২০১৩- এবং ২০১৫ সালের আন্দোলনের গঠন, প্রকৃতি ও চরিত্রকে যথাযথ গুরুত্বে মূল্যায়ন করতে রাজি আছে? যারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির স্থান সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বলে শোরগোল করছে তারা বিএনপির অবস্থান যে বিএনপিই বিগত দিনগুলোতে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারা থেকে সরিয়ে নিয়েছে, কর্মী-সমর্থকদের জামায়াতি-জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঠেলে দিয়েছে সে কথা বলছেন না। এর ফলে গোটা দলটিই নানা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। সেখান থেকে সরে আসার দায়িত্ব বিএনপির মূল নেতৃত্বকেই নিতে হবে। তাহলেই কেবল গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিএনপির জায়গা ধীরে ধীরে পুনঃস্থাপিত হতে পারে। এটি বিএনপির সাংগঠনিক কাজ যার সঙ্গে এর নেতাকর্মী, সমর্থক এবং ভোটারদের রাজনীতি গভীরভাবে জড়িত।অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে বিগত দিনগুলোতে বিএনপির রাজনীতিকে অকার্যকর বা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে যতটা ভূমিকা রেখেছে তার চাইতে শেখ হাসিনা এককভাবে সরকার, প্রশাসন এবং রাষ্ট্রের সব প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রজ্ঞার সঙ্গে ব্যবহার করে সরকার উচ্ছেদে ২০ দলীয় জোটের হঠকারী ও চরমপন্থার কার্যক্রমকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন। এটি স্বীকার করতে হবে। এও স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের, আদর্শ ও ভিত্তিকে উপড়ে ফেলার নীলনকশা কার্যকর করার হাত থেকে বাংলাদেশকে আপাতত রক্ষা করা গেছে। সরকারের সাফল্য বিএনপির ব্যর্থতাকে প্রকটতর করেছে। এ মুহ‚র্তে বিএনপি অভ্যন্তরীণ সংকট, সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধান ইত্যাদি সংকটে রয়েছে। কিন্তু সৃষ্ট বাস্তবতায় জনগণের আস্থা অর্জন ও বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যেভাবে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা অপরিহার্য ছিল সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। তারা শেখ হাসিনার ভিশন মিশন বাস্তবায়নে যেভাবে কাজ করা দরকার ছিল- সেভাবে গোটা দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন- এমনটি লক্ষ করা যাচ্ছে না। বরং তাদের কারো কারো কর্মকাণ্ডে শেখ হাসিনা এবং দল বিব্রত হচ্ছে। অথচ শেখ হাসিনা গত ছয় বছরে বাংলাদেশকে উন্নয়নের যে স্তরে উন্নীত করেছেন- তা বিস্ময়কর। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা এবং দূরদর্শিতা এই সময়ে সবচাইতে আলোচিত বিষয়। তার নেতৃত্বের অপরিহার্যতা অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সুশাসনের বিষয়টি একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দিনে রাজনৈতিক সব সংকট মোকাবেলা করার মাধ্যমে শেখ হাসিনা যেভাবে সাফল্য নিয়ে এসেছেন তাকে অর্থবহ করা, ধরে রাখা বা চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য এ মুহ‚র্তে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা বাস্তবায়নে হাত দেয়া জরুরি। সেটি শেখ হাসিনার জন্য দ্বিতীয় বিপ্লব। সেই বিপ্লবে সহযাত্রী হতে হবে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সব শক্তিকে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা। সেটি বাস্তবায়নেও শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। এখন মানবপাচার সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদসহ যে সব ভয়াবহ সমস্যা আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতিকে চারদিক থেকে ছোবল মারছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে গ্রাস করার জন্য সব অপশক্তি বার বার আক্রমণ করছে। এই অবস্থায় সব অপশক্তিকে প্রতিহত করে এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব সহায়ক শক্তিকে সংহত করে, সব অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নেবেন, কোনো হঠকারী পদক্ষেপ কেউ নেবেন- তাও নয়। প্রশাসনসহ সব সচেতন মহলকে ২০১৫-এর বর্তমান বাস্তবতায় কাজ করতে হবে। আমাদের গণমাধ্যমকে যথাযথভাবে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের অবস্থানও হতে হবে বাস্তবোচিত। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত অনেক কঠিন ও জটিল, রাজনৈতিক সংকটকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অতিক্রম করেছে, আমার বিশ্বাস সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনা যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এখন তেমনই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রকৃত সময়। একে হাত ছাড়া করার কোনো সুযোগ নেই। লেখক: মমতাজ উদ্দীন পাটোয়ারী
false
mk
গোলাম মাওলা রনি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ভাইয়ের ছেলে, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী___ জানতাম নাতো! গোলাম মাওলা রনি বর্তমান সময়ে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি থেকে শুরু করে অনেক অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অল্প সময়ে প্রায় শূন্য দশা থেকে তিনি হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। শিল্প-কারখানাসহ রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, গাড়ি-বাড়ি। এমপি রনির বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং চাঁদাবাজি-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী মাসেই অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হবে এবং একই সঙ্গে সম্পদের হিসাব চেয়ে তাঁকে নোটিশ পাঠাতে পারে কমিশন।পটুয়াখালীর আওয়ামী লীগ নেতারা দলের ইমেজ নষ্ট করার জন্য দলের প্রধানের কাছ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশা করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর বলেছেন, 'গোলাম মাওলা রনি উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তিনি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ভাইয়ের ছেলে। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী।' তাঁর কথিত 'ভাইয়া বাহিনী'র বিরুদ্ধে তাঁর নির্বাচনী এলাকা গলাচিপায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানোরও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতিসহ এসব কারণেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। দুদকের অনুসন্ধান : দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমপি রনির সম্পদের ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। কাগজে-কলমে তাঁর সাতটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেলেও এবং একটি প্রতিষ্ঠানে ৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে তিনি হিসাব দিলেও অন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠানে কত টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেটা উল্লেখ করেননি। এমনকি যে প্রতিষ্ঠানে ৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন, সেই টাকা কোথা থেকে পেয়েছেন- দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি এমপি রনি। তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের হিসাব গোপন করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। বিস্তারিত জানতে আরো অধিকতর অনুসন্ধানের প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। দুদক সূত্র জানায়, রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় 'সেবোল্ট গার্মেন্ট লিমিটেডের' মালিক গোলাম মাওলা রনি। এই প্রতিষ্ঠানে ২০০৬-০৭ সালে ৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা তিনি আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করলেও মেসার্স সেবোল্ট এঙ্প্রেস, মেসার্স সেবোল্ট অ্যাডজাস্টস, নেট অ্যাকসেস, নন্দিতা এন্টারপ্রাইজ, ইন্টারন্যাশনাল মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড অ্যাডভারটাইজিং নামক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন সেটা আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি। ধানমণ্ডির ৬/বি, নাইম রোডে এবং তোপখানা রোডে রয়েছে তাঁর বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, পূর্বাচলে প্লটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট, বাড়ি এবং প্লট রয়েছে। ল্যান্ডক্রুজার প্রাডোসহ রয়েছে একাধিক গাড়ি। এমপি রনির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. তালেবুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, গোলাম মাওলা রনির দখলে থাকা সম্পদের তথ্য যাচাই করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ব্যাংক ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলা এলজিইডি, সওজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, বদলিসহ নানা ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগেরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে; আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। আগামী মাসের (আগস্ট) মাঝামাঝি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে পারব। পরবর্তী সময়ে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে এমপি গোলাম মাওলা রনিকে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠাব। তিনি বলেন, 'ওই নোটিশ অনুযায়ী এমপি রনির দখলে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদের হিসাব পেশ করতে হবে। পরে ওই হিসাব যাচাই করে তাঁর দখলে অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে, তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হবে। সূত্র জানায়, এমপি রনির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি প্রথমে অনুসন্ধান করেন দুদকের পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আহসান আলী। সেখানে রনি বা রনির লোকজন অনুসন্ধান কাজে প্রভাব খাটাতে পারে- এই সন্দেহে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক তালেবুর রহমানকে। 'হে এত টাহা বানাইছে কেমনে?' 'রনির বাবা শামসু মুন্সি কান্দে (কাঁধে) গামছা লইয়া গাওয়াল (ফেরি) করছে গ্রামে গ্রামে। হেইয়া বেইচ্চা সংসার চালাইছে। হেই গামছাওলার পোলা রনি এ্যাহন এমপি অইছে, কোটি কোট টাহার মালিক হইছে'- গোলাম মাওলা রনি প্রসঙ্গে এভাবেই মন্তব্য করেন তাঁর নির্বাচনী এলাকা গলাচিপা উপজেলার ডাউকা গ্রামের সাতাত্তর বছর বয়স্ক মো. এসমাইল সরদার। গলাচিপা পৌরমঞ্চ এলাকায় রিকশা গ্যারেজের মালিক মো. আবদুস সোবাহান বলেন, 'এমপি অওনের পর হুনি হ্যার টাহার কোনো অভাব নাই। এমপি অইয়া হে এত টাহা বানাইছে কেমনে?' গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার বলেন, 'তাঁর বাবা সামসুদ্দিন মুন্সি ১৯৭৪ সালে গলাচিপার উলানিয়া নামক এলাকায় সপরিবারে আসেন ব্যবসার খোঁজে। তখন তিনি গামছা ফেরি করে বিক্রি করতেন। ওই আয়েই চলত সংসার। এক পর্যায়ে ওখানে সরকারি খাসজমিতে ছোট্ট একটি কাপড়ের দোকান নিয়ে বসেন। তখন গোলাম মাওলা রনি ছোট। তিনি ওখান থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পাস করে এলাকা ছাড়েন। তাঁদের পরিবারের আর্থিক দৈন্য ছিল আগে থেকেই। অথচ তিনি এখন নিজেকে পটুয়াখালী জেলার সবচেয়ে বড় সম্পদশালী কিংবা ধনী মানুষ হিসেবে দাবি করেন। তার কোটি কোটি টাকা কিভাবে এসেছে তা অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর এমপি রনিকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী অভিহিত করে বলেন, দলকে বিতর্কিত করতে ও আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করতেই তিনি ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।' স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে দুর্নীতি শুরু করেন রনি। টেন্ডারবাজি আর লুটপাট করেছেন ইচ্ছা মতো। এমপির স্পেশাল বরাদ্দ, হতদরিদ্র কর্মসূচির জন্য দশমিনা ও গলাচিপা এ দুই উপজেলায় প্রতিবছর বরাদ্দের কিছুই স্থানীয় লোকজন পায়নি। লুটপাটের মাধ্যমে এমপি রনি ও তাঁর লোকজন হাতিয়ে নিয়েছে সেসব। আওয়ামী লীগের এমপি তিনি, অথচ সেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়ে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক নেতা আবু জাফর খান বলেন, 'এমপি রনি এখনো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা জিইয়ে রেখেছেন। আমরা মফস্বল সাংবাদিকরা তাঁর ছোবল থেকে রক্ষা না পেয়ে হতাশ ছিলাম এত দিন। আমরা চাই সাংবাদিক নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।' লাঞ্ছিত হয়েছেন শতাধিক নেতা : ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীতে অবস্থানকালে রনি ও তাঁর 'ভাইয়া বাহিনী'র হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ এবং পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পৌর মেয়র ওহাব খলিফা। তাঁরা দুজন কয়েকবার লাঞ্ছিত হন ভাইয়া বাহিনীর হাতে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় রনির ওই বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন গলাচিপা আওয়ামী লীগ সম্পাদক গোলাম মস্তফা টিটো, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান লিকন, সদস্য কাশিনাথ দত্ত, সহসভাপতি সন্তোষ কুমার দে, উপদেষ্টা কালাম মোহাম্মদ ইসা, সদস্য রামকৃষ্ণ পাল, পৌর আওয়ামী লীগ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রনো, ছাত্রলীগ সহসভাপতি শাকিল খান, সদস্য শওকত ফিরোজসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির নেতা-কর্মীরা। শুধু গলাচিপা উপজেলায় বিভিন্ন সময় রনি কিংবা তাঁর ভাইয়া বাহিনী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর প্রায় ১২৫টি হামলা কিংবা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ কারণে পাল্টাপাল্টি ৩২টি মামলা হয়েছে ওই থানায়। ভাইয়া বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাননি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদারও। পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-গলাচিপা উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান তালুকদার ২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সরকারি সফরে গলাচিপা যান। তাঁর আগমন উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গেট ও জনসভার মঞ্চ তৈরি করা হলে ভাইয়া বাহিনী তা আগুন দিয়ে পুড়িয় দেয়। দশমিনায় ভাইয়া বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আ. আজিজ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার ডলি, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন শওকত, ছাত্রলীগ সভাপতি কাজি শাকিল আহম্মেদ, রণগোপালদি ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ সভাপতি জাকির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আ. খালেক, দশমিনা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. শুভ, ওই ইউপি ছাত্রলীগ সম্পাদক সমীরণ কর্মকার, বাঁশবাড়িয়া ইউপি যুবলীগ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন, বহরমপুর ইউপি যুবলীগ সভাপতি রমিজ মলি্লক, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নার্গিস বেগম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সিকদার মো. আবু জাফর, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন তমাল, আলীপুর ইউপি যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন মুন্সি, বহরমপুর ইউপি যুবলীগ সভাপতি মো. জহির উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গৌতম রায়সহ অসংখ্য নেতা-কর্মী। তথ্যসূত্র: - See more at: Click This Link
false
mk
জামাত চেষ্টা করতেছে ঘুরে দাঁড়ানোর! অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে জামায়াত নেই; কোনো বক্তৃতা-বিবৃতি, মিছিল-সভা-সমাবেশ তাদের নেই। ২০১২-১৩ সালে ঠিক উল্টো অবস্থা ছিল। জামায়াত-শিবিরের আতঙ্ক তখন পুলিশ তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও ছিল, সাধারণ মানুষের মধ্যে তো ছিলই। তখন থানা-পুলিশ দেখলেই শিবিরকর্মীরা হামলা চালাত, সরকারি প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করত। পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হেন কোনো নৃশংস কাজ নেই যা তখন জামায়াত শিবিরের কর্মীরা করেনি। শিবিরকর্মীরা তখন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল- হয় ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করা হবে, নতুবা দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। সেই হুমকির বিষয়টি প্রকাশ্যেই ছিল। ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ে জামায়াত-শিবির দেশকে কিভাবে অচল করার কাজে লিপ্ত হয়েছিল সেটি সবারই জানা। নির্বাচনে কী ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল- তাও সবার মনে থাকার কথা। তবে নির্বাচন বানচাল করতে সফল হলে জামায়াত-শিবির-বিএনপির মিলিত শক্তিতে দেশে যে তাণ্ডব সৃষ্টি হতো সেটি সৌভাগ্যক্রমে আমাদের দেখতে হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি ধরে নিয়েছিল যে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সরকার ব্যর্থ হবে, জামায়াত-বিএনপি জোট সফল হবে। সফল হলে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী পরবর্তী সব কিছু হতো। কী হতো আমরা জানি না। তবে অনুমান করতে পারি, তখন জামায়াত-শিবির-বিএনপি সফল হলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যরকম হতো, তাদের তাণ্ডব ২০০১ সালকেও ছাড়িয়ে যেত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এসবই বঙ্গোপসাগরে চিরতরে ভাসিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হতো। ২০১৪ সালে তা করা সম্ভব না হলেও এটি বোধহয় এই জোটের রাজনীতির ঝুড়িতে জমা রয়েছে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারলে তারা কিছুতেই প্রতিশোধ নিতে ছাড়বে না, তাদের লক্ষ্য-আদর্শ থেকে এক চুলও তারা সরে দাঁড়াবে বা চ্যুত হবে না।যে বিষয়টি উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে জামায়াত-শিবির বন্ধ করতে পারেনি, তাদের শীর্ষ নেতাদের বেশ ক’জনের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। তাতে তাদের প্রতিক্রিয়া তেমন জোরালোভাবে শোনা যায়নি, দেখা যায়নি। অনেকেই মনে করছেন জামায়াত-শিবির দুর্বল হয়ে গেছে, তাদের সেই শক্তি এখন আর নেই। বাহ্যিকভাবে সেটি দেখা যাচ্ছে। তবে জামায়াত-শিবির ভয় পেয়ে থেমে গেছে, সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়েছে, না, মোটেও তা ঠিক নয়। জামায়াত-শিবির রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। হিসাব-নিকাশ মেলাতে পারছে না এটি সত্য। জামায়াত-শিবির তাদের রাজনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন এনেছে এটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ২০১২-১৫ সাল পর্যন্ত সরকার প্রতিহত করার যে কৌশল নিয়েছিল সেটি তাদের অতি আত্মবিশ্বাসী অবস্থানের ফসল হতে পারে। জামায়াত ভেবেছিল তাদের দুর্ধর্ষ ক্যাডার বাহিনীকে মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর নেই, অন্যদিকে জামায়াতের সীমাহীন বিত্ত ও অর্থও তাদের অতি আত্মবিশ্বাসী করেছিল। প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিল মামলাকে প্রতিহত করার জন্য, একইভাবে বিদেশি গণমাধ্যমকে ব্যবহার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে কাজে লাগানোর জন্যও বিপুল অর্থ ও বিত্ত খরচ করা হয়েছিল। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য এবং বড় কয়েকটি দেশের অবস্থান তাদেরকে তখন আশাবাদী হতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু সব কিছুই উল্টে যাওয়ায় জামায়াত নেতৃত্ব হতবাক হয়েছে, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছে। জামায়াতের অর্থবিত্ত ও ক্যাডারের আধিক্য জামায়াতের জন্য এ ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনেনি। বিষয়টি জামায়াত নেতৃত্ব বুঝতে কিছুটা দেরি করে ফেলেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে দলের শত শত প্রতিষ্ঠানকে বাজেয়াপ্ত করা, ব্যাংক-বিমাসহ সব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের হাতে নেয়া। এমন বাস্তবতায় দলের নেতৃত্ব কৌশল পরিবর্তন করেছেন এমনটি লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কী সেই পরিবর্তিত কৌশল?এর উত্তরে বলা যায়, জামায়াত এখন সরবে কিছু করছে না, নিজ নামেও কিছু করছে না। তাতে সবার কাছে মনে হবে জামায়াত তল্পিতল্পা গোটাচ্ছে হয়তো। হতে পারে, জামায়াতের নেতারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের সম্পদ কোথায় কী আছে, কিভাবে আছে সেগুলোকে কিভাবে রক্ষা করা সম্ভব হবে, কী নামে সেগুলোকে নেয়া গেলে রক্ষা করা যাবে- সেসব পরিকল্পনায় হয়তো দলটির নেতারা সচেষ্ট রয়েছেন। কিন্তু এরই মধ্যে শহরে, গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন সংগঠনের নামে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেই সব সংগঠনের নামের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের দূরবর্তী সম্পর্কও রাখা হয় না। কিছু নতুন নতুন ব্যক্তিকে সম্মুখে এনে বিজয় দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়, যেখানে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলা বা অন্য কোনো পেশার সম্মানিত ব্যক্তিদের অতিথি, বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ওইসব ব্যক্তি আদতে জানতেই পারেন না এর আসল উদ্যোক্তা কারা, কে এর অর্থদাতা। এ ধরনের বেশ কটি সংগঠনের আলোচনা সভায় আমার খুব পরিচিত কিছু ব্যক্তি আমন্ত্রিত হয়েছেন- যারা জানতেই পারেননি এর নেপথ্যে জামায়াত জড়িত ছিল। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকতা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণদানের নাম করেও এরা এখন বিভিন্ন সংগঠনের নামে সংগঠিত হচ্ছে। গ্রামগঞ্জে চলছে নতুন নতুন নামে নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণার কাজ। এ ধরনের আয়োজন চলছে ব্যাপকভাবে।ঈদের পরদিন। আমি জায়গার নামটি উল্লেখ করছি না। তবে এ ধরনের একটি উদ্যোগের কথা বলতে পারি। একটি কম্পিউটার হাউস গ্রামের একটি বাজারে ব্যবসা করছে। তারা ফ্রি-লেন্সিংয়ের ওপর দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে গ্রামের কয়েকটি স্কুল এবং মাদ্রাসায় পড়–য়া ছাত্রছাত্রীদের, কিছু উঠতি তরুণ ব্যবসায়ী, পেশাজীবীদের। আলোচক হিসেবে স্কুল, কলেজের শিক্ষক এবং অপরিচিত কিছু ব্যক্তি যাদের এই এলাকার তরুণরা চেনে না। অংশ নেয়া ছাত্রীদের প্রত্যেককে একটি করে কালো বোরখা উপহার দেয়া হলো। প্রশিক্ষণ হলেও বাস্তবে সেখানে দেশি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে তাদের মতো করে বক্তব্য দেয়া হয়। স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসার কিছু কিছু শিক্ষক এগুলোতে অংশ নিয়েছেন। ও্ই সব তরুণ-তরুণী ফ্রিলেন্সিং কী তাই কি জানে? অথচ তাদের এনে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের নামে মগজ ধোলায়ের কাজটি তো ভালোভাবে করা হলো।গ্রামগঞ্জে এই মুহ‚র্তে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুল হচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে জামায়াত জড়িত। একটু অবস্থাপন্ন বাবা-মা তাদের সন্তানকে নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নিয়ে ওইসব কেজি স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। সেই সব কেজি স্কুলের বই-পুস্তক, শিক্ষক, প্রতিষ্ঠাতা সবই জামায়াতের ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত। গ্রাম্য বাজার, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই সক্রিয় রয়েছে স্থানীয় জামায়াত, জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা- এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। বলতে দ্বিধা নেই গ্রামাঞ্চলে বা শহরাঞ্চলে খুব কম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই রয়েছে যেখানে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তি শিক্ষক বা কর্মচারী হয়নি। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুব স্বাভাবিকভাবেই জামায়াত-শিবিরের ভাবাদর্শ থেকে মুক্ত থাকতে পারছে না, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তাদের কার্যক্রম গোপনে চলছেই। এরাই নিকটবর্তী কোনো এলাকায় নানা সাংগঠনিক নামে এখন কাজ শুরু করেছে।দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠন ও ব্যক্তিদের তেমন কোনো কার্যক্রম সহজে চোখে পড়ে না। স্থানীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত আছেন, আয়-উপার্জন করছেন। তারা জামায়াত-শিবিরের এসব কার্যক্রম সম্পর্কে সামান্যই খোঁজখবর রাখেন। আওয়ামী লীগের অনেক স্থানীয় নেতার ছেলেমেয়েরা জামায়াত পরিচালিত কেজি স্কুল, ক্যাডেট মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা ইত্যাদিতে পড়াশোনা করছে, ওই সব ছেলেমেয়ের অনেকেই পিতার করা সংগঠন সম্পর্কে বিদ্বেষ পোষণ করে, সেভাবেই তারা বড় হচ্ছে। দেশে জঙ্গি নিয়ে এত তোলপাড় হচ্ছে। খোঁজখবর নিলে দেখা যাবে, অনেকেই এসব নিয়ে খুব বেশি কথা বলে না, নানা বিভ্রান্তিতে রয়েছে।এর কারণ হচ্ছে, দেশে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম গ্রামাঞ্চলে খুব একটা নেই। দেশে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি নিয়ে কোনো সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চোখে পড়ে না, নেতাকর্মীদের এ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেই, পড়াশোনা নেই। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে জঙ্গিবাদবিরোধী রাজনীতিকে যথাযথভাবে নিয়ে যাওয়ার ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেই, এমনকি শেখ হাসিনা দেশ এবং জনগণের জীবনে যে সব পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন এবং আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন- তা নিয়েও কোনো প্রচার-প্রচারণায় তৃণমূলের সংগঠন, নেতাকর্মীরা নেই। অধিকন্তু তাদের মধ্যে দলাদলি, গ্রুপিং, বিভাজন দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে কোথাও সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম কেউ নিতে পারছে না, করছেও না। এলাকায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ইত্যাদি পরিচয়ে নেতা যারা আছেন, তারা গ্রামগঞ্জে শোডাউনও করছেন। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের পরিবর্তিত তৎপরতা সম্পর্কে কমই খোঁজখবর রাখছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সুযোগ নিচ্ছে জামায়াত-শিবির যারা দলীয় নির্দেশ গোপনে পায়, সেভাবেই উদ্যোগ নেয়, গ্রামগঞ্জে কোথায় কী নামে, কী এজেন্ডা নিয়ে নামতে হবে- তা তারা যথাসময়ে যথাযথভাবে নিতে খুব একটা দেরি করছে না। এর ফলে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বিস্তৃত হচ্ছে বাড়ি থেকে বাড়ি হয়ে গ্রামগঞ্জে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে নেই আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহল কতটা ভাবছেন জানি না। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮
false
rn
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঙ্গল আমাজান পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বিশ্বাস করত, বিশাল এ বনের মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে আছে ‘এলডোরাডো’ নামক এক গুপ্ত শহর, যা পুরোপুরি সোনার তৈরি। এই ভ্রান্ত ধারণাটি এসেছে গ্রিক পৌরাণিক গল্প থেকে যেখানে বলা হয়েছে যে ‘এলডোরাডো’ নামক সোনায় মোড়ানো শহরটি পাহারা দেয় এক শ্রেণীর বিশেষ নারী যোদ্ধারা, যাদেরকে গল্পে ‘আমাজন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামে এই ‘এলডোরাডো’ শহর আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু কেউ এই কাল্পনিক শহরের খোঁজ পায়নি। শহরের সন্ধান না পেলেও স্থায়ী হয়ে যায় সেই নারী যোদ্ধাদের নাম। তাদের নামানুসারেই এই জঙ্গলের নাম হয় ‘আমাজান’ জঙ্গল।আমাজান জঙ্গল আমাজন নদীর অববাহিকায় অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরক্ষীয় বন, যা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগে অবস্থিত ৯টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। আমাজন অরণ্য ৬০% রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩% রয়েছে পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুএলা, ইকুয়েড়র, বলিভিয়া, গুয়ানা, সুরিনাম এবং ফ্রেঞ্ছ গুইআনাতে। এ বনে আছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট-পতঙ্গ ১,২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব-অণুজীব। এখানকার প্রাণীবৈচিত্র অতুলনীয়। আমাজান পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী হলেও পানির পরিমাণের দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছে। আমাজান নদ প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ পঁচাত্তর হাজার ঘনমিটার পানি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আটলান্টিকে। পৃথিবীর তাবৎ নদনদী হয়ে যত পানি সাগর-মহাসাগরে পতিত হচ্ছে এর এক-পঞ্চমাংশ পতিত হয় কেবল আমাজান হয়েই। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, আমাজান নদের যে পরিমাণ পানি আটলান্টিকে পৌঁছে তা নদটির মোট পানিপ্রবাহের মাত্র ৩৩ ভাগ।আমাজানের মোহনা পৃথিবীর অন্যসব নদনদীর চেয়ে চওড়া। এর প্রস্থ ৩২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এ মোহনার মধ্যেই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বাদু পানির দ্বীপ মারাকোর অবস্থান। সমুদ্রের কাছাকাছি কয়েকশ কিলোমিটারের মধ্যে আমাজানের কোথাও কোথাও গভীরতা এমন কি সমুদ্রতল থেকেও বেশি! আমাজান নদের প্রধান দুই সন্তান অর্থাৎ শাখা নদী কুরুয়া ও মাদিরা। পৃথিবীর মোট স্বাদু পানির এক পঞ্চমাংশ স্বাদু পানি আসে আমাজন নদী থেকে।একটি মজার তথ্য হলো, আমাজানের রয়েছে তিনটি নাম। পেরুর আন্দিজ পর্বতমালার উত্সস্থলে আমাজানের নাম রিও সুলিমোস। রিও নেগো হলো ম্যানারুসের কাছ পর্যন্ত অংশ। আর ম্যানারুস থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত চলে আসা অংশের নাম রিও আমাজোনাস। সভ্য জগতের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম আমাজান আবিষ্কার করেন ফ্রান্সিস দ্য অরিলেনা। তিনি ছিলেন স্পেনের রাজপুত্র। ১৫৪১ সোনার শহর নামে খ্যাত এল-ডোরাডো শহরের খোঁজে বেরিয়ে আমাজানের সন্ধান পান তিনি। আমাজান বনে মৌমাছির লক্ষ লক্ষ মধুর চাক দেখা যায়। একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী বলেন, 'আমাজান বনরাজ্য হচ্ছে জীববিজ্ঞানের এক বিরাট লাইব্রেরি, ভেষজ রসায়নের পৃথিবীর বৃহত্তম ল্যাবরেটরি, বিশ্ব আবহাওয়ার প্রাণকেন্দ্র।' একটি প্রাণীর শরীর কাচের মত স্বচ্ছ। সব কিছু বাহির থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তার শরীরের ভিতরের সব অঙ্গ প্রতঙ্গ এমনকি সে কি খেয়েছে সব খাবার। তার হৃদপিণ্ড যে পাম্প করছে সেই হৃতপিণ্ডের প্রতিটি কম্পন বাহির থেকে দেখা যাচ্ছে তখন ব্যাপারটা কেমন হয় বলুনতো! এমনই এক অদ্ভুদ ব্যাঙ পাওয়া আমাজান জঙ্গলে যাকে কাঁচ ব্যাঙ বা গ্লাস ফ্রগ বলা হয়। এই ব্যাঙের পেটের দিকের চামরা খুবই স্বচ্ছ হয়ে থাকে। এরা আমাদের দেশের গেছো ব্যাঙ এর মতো এবং এরা খুব ছোট হয়ে থাকে মাত্র এক থেকে তিন ইঞ্চি।এই বনের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাগুয়ার, গোলাপি ডলফিন, তামানডুয়া, তাপির, মানাতি, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি,বাদুড় ইত্যাদি। পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঈগল, টুকান, হোয়াটজিন, দ্রুতগামী হামিং বার্ড এবং আরও রঙ-বেরঙের অনেক পাখি। পৃথিবীর সকল পাখির এক পঞ্চমাংশ পাখি এই বনের অধিবাসী। সরিসৃপের মধ্যে আছে বিখ্যাত সাপ বোয়া যা তার শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। তাছাড়া রয়েছে কুমির, অ্যালিগেটর, কচ্ছপ প্রভৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়া, বড় তলাপোকা, রঙ-বেরঙের প্রজাপতি, শুঁয়োপোকা আর জানা অজানা হরেক রকমের পোকা-মাকড়ের বসতি এই আমাজনে।
false
ij
কারা কালী সাধক। (উৎসর্গ_ রাঙা মীয়া।) হিংস্রতা রুখতে যখন আমরা নিজেরাই হিংস্র হয়ে উঠি-তখন আমাদেরও বড় বিভৎস দেখায়। মহাদেবী কালীও এককালে হিংস্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে হিংস্র হয়ে উঠেছিলেন বলেই তাঁর অমন বিভৎস রুপ। মা কালীর বিভৎস রুপটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে দেয়: জগতের অন্য একটি রুপ বড়ই নির্মম। মা কালীর বিভৎস রুপ নিয়ত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে নিয়ত সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্টায় অবিচল থাকি। কালীর কন্ঠে নৃমুন্ডু, দেহ ব্যাঘ্রচর্মে আবৃত; চারটি হস্ত । দুটি দক্ষিণ হস্তে খটাঙ্গ ও চন্দ্রহ্রাস। দুই বাম হস্তে চর্ম ও পাশ। কালী দীর্ঘদন্তী, রক্তচক্ষু, বিস্তৃত মুখ, ও স্থূল কর্ণ। কালীর বাহন কবন্ধ অর্থাৎ মস্তকবিহীন শব। জগতে অকল্যাণ নেমে এলে কালী তার স্বমূর্তিতে আবিভূর্ত হবেন। অশুভ নাশ করবেন। ব্রিটিশ আমলে কালী তাই করেছিলেন! খ্রিস্টের জন্মের হাজার বছর আগে প্রাচীন বাংলার মানুষ কথা বলত অষ্ট্রিক ভাষায়। আর্যরা এ অঞ্চলে এসেছিল অনেক পরে। “পূজা” শব্দটা সে কারণেই অষ্ট্রিক, আর্য নয়, অর্থাৎ সংস্কৃত নয়। আর্যদের ধর্ম মানেই পশুবলি, যজ্ঞ। পূজা মানে সেই রকম কিছু নয়। কাজেই পূজার ধারণা প্রাকআর্য ও অবৈদিক। তন্ত্রের সঙ্গে পূজার যোগ নিবিড়। আর তন্ত্র মানেই বেদবিরোধী। পূজা মানে মা। মা আর পূজা অভিন্ন। পূজা মানে মায়ের পূজা। পরিশীলিত ভাষায়- মাতৃপূজা। যে কারণে স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ১৮৯৮ সালে কাশ্মীরে একটি সাত-আট বছরের মুসলমান বালিকাকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করেছিলেন। সেই নিষ্পাপ ও পবিত্র মেয়েটি ছিল এক মাঝির কন্যা। (দ্র: ড. আর এম দেবনাথ: সিন্ধু থেকে হিন্দু। (পৃষ্ঠা, ৮১-৯১) যা হোক। পূজা বলতে আমরা প্রধানত দূর্গা / পূজা কালী বুঝি। তার মানে কালী মায়ের পূজা, দূর্গা মায়ের পূজা। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালী মাতৃতান্ত্রিক। (যে কারণে তন্ত্র ও মাতৃপূজার উদ্ভব এ অঞ্চলেই।) দূর্গা ও কালী-এ দু’জন হলেন বাঙালির মাতৃদেবী। শরৎ থেকে বসন্ত -এ ৬ মাস বাঙালীর পূজার সময়। সে সময়টায় বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলায় দূর্গা ও কালী মন্দিরে মন্দিরে মন্ডপে মন্ডপে পূজা পান। দূর্গা ও কালী কি বিশেষ কোনও পার্থক্য রয়েছে? এক কথায়, দূর্গা অন্নদাত্রী উর্বরা শক্তির দেবী। আর কালী- ঘূর্ণি প্রলয়ের। দূর্গা পূজা যেখানে সম্মিলিত সামাজিক উৎসব-কালী পূজা সেখানে সাধকের একান্তই সাধনার বিষয়। এই সাধনা কথাটার সামান্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ২ তন্ত্র মানে ত্রাণ বা মুক্তি। যে শাস্ত্রানুযায়ী সাধনা করলে জীবের মোক্ষ বা মুক্তি লাভ হয়, তাকেই বলা হয় তন্ত্র। একপক্ষ অবশ্য মনে করেন কলিযুগে বেদের মন্ত্র হ্রাস পেলেই তবে তন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। তবে এটি শ্রৌতজ্ঞানভিত্তিক বলে তন্ত্রকে পঞ্চম বেদও বলে। যাক। তন্ত্র বাংলার সাধকদের চিন্তাপ্রসূত বিদ্যা। তন্ত্রের দুটি ভাগ। হিন্দুতন্ত্র ও বৌদ্ধ তন্ত্র। হিন্দু ও বৌদ্ধতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল বাংলায়। বাংলায় ৭ম ৮ম শতকের বৌদ্ধরা বৌদ্ধতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিল । বৌদ্ধতন্ত্রের মূল পীঠস্থান ছিল বিক্রমপুর ও সিলেট। হিন্দু তন্ত্রর উদ্ভব আরও পরে। মধ্যযুগে। এই চতুদর্শ-পঞ্চদশ শতকে। হিন্দু তন্ত্রকে বলা হয় শিবোক্ত শাস্ত্র। মানে হিন্দু তন্ত্রর সঙ্গে মহাদেব বা শিবের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। আর, মহাদেবী হিসেবে কালীর উত্থান তান্ত্রিক মত থেকেই। তন্ত্র যেহেতু শিবের সঙ্গে যুক্ত, তাই পুরো তান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কালীও জড়িত। কেননা, কালী হলেন শিবের স্ত্রী। প্রখ্যাত পন্ডিত শ্যামাচরণ ভট্টাচার্যের মতে, “কু” ধাতু থেকেই ‘কাল’ শব্দটির উৎপত্তি। ‘কালের’ অর্থ মহাকাল অথবা মৃত্যু অর্থাৎ মহাদেব (শিব)। এই কাল শব্দের পিছনে “ঈপ” প্রত্যয় যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে “কালী” পদটি। পন্ডিত শ্যামাচরণ ভট্টাচার্যের মতে মহাকাল বা শিবের বিশেষ শক্তিই হচ্ছেন কালী। হিন্দু পুরাণেও কালী ও শিবের সম্পর্ক ঘনিষ্ট দেখানো হয়েছে। ৩ ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে (সিন্ধু সভ্যতা/ পাঞ্জাব) শিবকে দিয়ে হিন্দু ধর্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল। যার সমাপ্তি ঘটেছে ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে (আসাম ত্রিপূরা বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গে) দূর্গা ও কালীর উত্থানের মাধ্যমে । এ দু’জন দেবীর ধারণার বিবর্তনের পিছনে যে ব্যাপক ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে - সে বিস্ময়কর ইতিহাসে বাঙালির জটিল সামাজিক ইতিহাসও জড়িত। বাঙালী সমাজে মা কালীর ধারণা একদিনে গড়ে ওঠেনি। বহু বছরের পরিক্রমায় বহু লোকায়ত দেবী কালীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের আত্মস্থ করতে গিয়ে কালীর রুপও বদলে গেছে। According to David Kinsley, Kali is first mentioned in Hinduism as a distinct goddess, related to war, around 600 CE. Scriptures like Agni Purana and Garuda Purana describe her terrible appearance and associate her with corpses and war. Bhagavata Purana calls her the patron deity of thieves. She was worshipped initially by tribals and low-caste Hindus, in "wild places". An architectural work dating between the sixth to eighth century prescribes her temples be built near cremation grounds or houses of low-caste people (Chndalas). Kali or goddesses with similar iconography like Chamunda, appear in different Sanskrit works, dating from seventh to twelfth century, as lovers of blood sacrifice, adorned with human skulls and corpses and residing near cremation grounds. Kali appears as the wrath of goddess Durga or Parvati, notably in the Devi Mahatmya and Linga Purana.[3] http://en.wikipedia.org/wiki/KÄ�lÄ« ৪ তখন বলেছি যে, তন্ত্রের দুটি ভাগ: হিন্দু তন্ত্র ও বৌদ্ধ তন্ত্র। এবং হিন্দু ও বৌদ্ধতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল বাংলায়। প্রখ্যাত পন্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ছিলেন চৈতন্যদেবের সমসাময়িক। (১৪৮৫-১৫৩৩) ‘তন্ত্রসার’ নামে একটি বই লিখেছিলেন তিনি। সে বইতে তিনি কালীপূজার বিভিন্ন পদ্ধতির বর্ননা দেন। বর্তমানে আসাম, ত্রিপূরা, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে যে পদ্ধতিকে কালীপূজা হয় তা মূলত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ-এরই পদ্ধতি। পঞ্চদশ শতক থেকেই কালীপূজা বাংলায় ব্যাপক প্রচার পেতে থাকে। নবদ্বীপ বা নদীয়ার মহারাজা ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। তার সময়কাল, ১৭১০-১৭৮২। তিনি বাংলায় কালীপূজার একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এ সময় বাংলার জমিদার ও সামন্ত শ্রেণিও কালী সাধনায় গভীর উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। এ ক্ষেত্রে বাঙালি কবি, গায়ক ও সাধকরাও পিছিয়ে থাকেননি। তারাও বাঙালী সমাজে কালীর প্রচলনে এগিয়ে আসেন। কালী মূলত শক্তির সাধনা বলেই কালীসাধনার অন্য নাম শাক্ত। শক্তি থেকে শাক্ত। শাক্ত সঙ্গীতের প্রথম কবি ছিলেন রামপ্রসাদ (১৭০২-১৭৮১)। তাঁর রচিত শাক্ত গানে জন্য বাঙালী সমাজে কালীর জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে গিয়েছিল। শাক্তদের পরে অবশ্য মুখোমুখি হয়েছিল গৌড় বাংলার ভক্তিবাদী বৈষ্ণবদের। তন্ত্রসাধনার পাশাপাশি দ্বাদশ শতক থেকেই বাঙালি বিষ্ণুীয় ভক্তিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। বাঙালি কবি জয়দেবই প্রথম ‘রাধা’ কল্পনা করলেন তাঁর সংস্কৃত ভাষায় লেখা "গীতগোবিন্দম" কাব্যে। এর প্রায় চারশ বছর পরে নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্যদেব প্রায় একক ভাবেই বাংলার বৈষ্ণব আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করলেন। সপ্তদশ শতাব্দী অবধি বৈষ্ণব আন্দোলন বাংলায় খুবই প্রভাবশালী ছিল। বাংলা তখন ভক্তিরসে প্লাবিত হয়েছিল। তখন মুসলিম আমল। মুসলিম অভিজাতরা বাংলা শাসন করলেও বাংলাকে কখনও পরবাস ভাবেননি, বরং তারা বাংলাকে মাতৃভূমিসমই মনে করতেন। সেই সময়কার ইতিহাস বিশ্লেষন করলে আমাদের মনে হয় যে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ পরোক্ষভাবে চৈতন্যদেবের ভক্তিবাদী আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতাই করেছিলেন, বাধা দেননি। সেই সময়টায় বাঙালির কাছে মুসলিম শাসন বিজাতীয় ছিল না বলেই বাঙালির সমাজে শক্তির ব্যাপক উত্থানের প্রয়োজন পড়েনি। এর পর অবস্থা গেল বদলে। অষ্টাদশ শতকে। সেই সময়টায় ইংরেজদের লোভী দৃষ্টি পড়ল সুজলাসুফলা বাংলার ওপর । বাংলায় তারা কেবল লুন্টন করতেই এসেছিল, বাংলাকে কখনোই তারা মাতৃভূমিসম মনে করেনি। মুসলিম শাসকদের সঙ্গে এখানেই ইংরেজদের পার্থক্য। ইংরেজ আমলের সূচনায় বাঙালী সমাজে বৈষ্ণববাদী ভক্তি আন্দোলনের বদলে শাক্তসাধনার উত্থান লক্ষ্য করি। সেই সময় বাঙালি কেবল ভক্তিতেই সন্তুষ্ট হয়ে থাকল না-বিদেশি শাসনের প্রেক্ষাপটে তার দরকার হয়ে পড়ল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তির। কজেই বৈষ্ণব ‘রাধাকৃষ্ণের’ বদলে কালী ও কালী সাধনা অসীম গ্রহনযোগ্যতা পেল বাংলার জনমানসে। কালী একাধারে মানবী, মঙ্গলময়ী ও আনন্দময়ী। আবার সকল শক্তির আধারও কালী। অশুভ ইংরেজ তাড়াতে বৈষ্ণব ভক্তি কিংবা মা দূর্গার শ্রীময়ী রুপ কোনও কাজে আসবে না। অশুভ ইংরেজ তাড়াতে উদগ্র শক্তির প্রয়োজন। বিভৎস ধ্বংসের তান্ডব প্রয়োজন। কাজেই ব্রিটিশবাংলায় মা কালীর প্রলয়নৃত্যের হন্যমান উত্থান হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। পলাশীর যুদ্ধ, বক্সারের যুদ্ধ ও ১৭৬৫ সালে দীউয়ানি লাভের মাধ্যমে সুবা বাংলা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দখলে চলে গেল বাংলা। সে সময়ই বিদ্যাপতি চন্ডীদাসের পরেই বাংলা শাক্তবাদী রামপ্রসাদকে পেল। মনে থাকার কথা- রামাপ্রসাদের সময়কাল, ১৭২০ ১৭৮১। পরবর্তীকালে বেশ কজন শাক্তপন্থি কালীসাধক বাংলায় কালী সাধনার ব্যপক প্রচার ঘটালেন। তাদের মধ্যে রামকৃষ্ণপরমহংসদেব (১৮৩৬-১৮৮৬) অন্যতম। বাংলা সাহিত্যেও কালী শক্তির উত্থান হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। বিশেষ করে বঙ্কিমএর লেখায় স্ফূরিত হতে লাগল কালীবাদ। 'আনন্দমঠের' রাজনৈতিক তত্ত্বটি আসলে ছিল কালীবাদ। কালীসাধকের মতন তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক নেতারা আন্দোলনসংগ্রামের প্রেরণা পেয়েছিলেন মহাদেবী কালীর কাছ থেকেই । "অনুশীলন" ও "যুগান্তর" এর মতন ব্রিটিশবিরোধী গুপ্ত সংগঠনের আত্মত্যাগের অফুরন্ত উৎস ও প্রেরণা ছিলেন মা কালী। এদের সবারই লক্ষ ছিল একটাই। ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশদের হটানো । তাইই কিন্তু হয়েছিল। আজ আমরা জানি, ফাঁসীর মঞ্চের দিকে যেতে যেতে কার নাম জপেছিলেন ক্ষুদিরাম? আজ আমরা জানি, জগতে আবার অন্ধকার ঘনালে কার বিভৎসরুপটি স্মরণ করতে হবে! ৫ দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। তবে কি কালীর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল? না। কালীর প্রয়োজন আজও রয়ে গেছে। তার কারণও আছে। বলছি। বাংলা আজও কৃষিভিত্তিক। কৃষকের জীবন, আমরা জানি, অনিশ্চয়তার জীবন। নিয়ত সে খরা আর জলপ্লাবনের মুখোমুখি হয়। কিংবা আর্সেনিক, নকল সার কিংবা ঋন শোধ করার তাগিদ তার জীবনকে করে তোলে দুর্বিসহ। সে দুৎসহ জীবনের মুখোমুখি হতে হলে চাই শক্তি, চাই সাহস। কাজেই আজও কৃষকসমাজের নিত্য সঙ্গী কালী। মা দূর্গার পূজা হয় বছরে একবার। কালীর পূজা তাই নিত্যদিনের। কালীর পীঠস্থানও আছে। সাধকের কাছ থেকে ঠিকানা জেনে কৃষক সে পীঠস্থানেও যায়। বড়ই চমকপ্রদ সে কালী মায়ের পীঠস্থানের ইতিহাস। ৬ পুরাণমতে এ জগতে জীবের স্রস্টা দশজন প্রজাপতি। তাদের মধ্যে একজন হলেন দক্ষ। দক্ষযজ্ঞ বলে একটা কথা শুনে থাকবেন আপনারা। সেই দক্ষ। তো, দক্ষের কন্যার নাম সতী। সতীর স্বামী শিব। শিব দরিদ্র। তো, দক্ষ একবার রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করলেন। সে যজ্ঞে ঋষি প্রজাপতি ও কিন্নরকে আমন্ত্রন করলেন। কেবল নিমন্ত্রণ পাননি সতী ও শিব। নারদের মুখে সতী কথাটা জানল। দারুন অপমানিত বোধ করলেন সতী। শিবের অনুমতি নিয়ে যজ্ঞে গেলেন সতী। সেখানে শিবের সমালোচনা হচ্ছিল। সতী সবার সামনে যোগবলে দেহত্যাগ করলেন। শিবের কানে দুঃসংবাদটি পৌঁছেছিল। তিনি ভীষন ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলেন। তারপর দক্ষের (শ্বশুরের) মাথা কেটে ফেলেন। প্রবল ক্রোধে দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দেন। মানে যজ্ঞস্থল তছনছ করলেন। তারপর সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্য আরম্ভ করলেন। জগৎ ধ্বংসের কিনারে পৌঁছে যায় আর কী। নারায়ণ তখন সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড খন্ড করেন। শিব তারপর শান্ত হন। পুরাণমতে সতীর দেহখন্ড ভারতের ৫১টি স্থানে ভূপাতিত হয়েছিল। এই ৫১টি স্থানই কালীসাধকের মহাপীঠস্থান বা মহাতীর্থ। ৭ বাংলাদেশে পীঠস্থান সব মিলিয়ে ৫টি। ১/ যশোর। খুলনা/ঈশ্বরপুরী। ২/ করতোয়া তট। বগুড়া /শেরপুর। ৩/শ্রীশৈল সিলেটের জৈন্তারপুর । এরপর গেলে পীঠস্থানটি খুঁজবেন আশা করি। ৪/ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। চন্দ্রনাথ পাহাড়। এখানে সতীর দক্ষিণ বাহু পড়েছিল। ৫/ সুগন্ধ। বরিশালের শিকারপুর। পশ্চিমবাংলায় চৌদ্দটি। তার মধ্যে কালীঘাটের নাম শুনে থাকবেন। ৮ কিন্তু, কালীর রং কেন কালো? যেহেতু কালো রং সব শুষে নেয়। ব্ল্যাক হোলের মতন। Kali is the feminine of kala "black, dark coloured" (per Panini 4.1.42). It appears as the name of a form of Durga in Mahabharata 4.195, and as the name of an evil female spirit in Harivamsa 11552.The homonymous kala "appointed time", which depending on context can mean "death", is distinct from kala "black", but became associated through folk etymology. The association is seen in a passage from the Mahabharata, depicting a female figure who carries away the spirits of slain warriors and animals. She is called kalaratri (which Thomas Coburn, a historian of Sanskrit Goddess literature, translates as "night of death") and also kali (which, as Coburn notes, can be read here either as a proper name or as a description "the black one").Kali's association with blackness stands in contrast to her consort, Shiva, whose body is covered by the white ashes of the cremation ground (Sanskrit: smasana) in which he meditates, and with which Kali is also associated, as smasana-kali. http://en.wikipedia.org/wiki/KÄ�lÄ« ৯ এ লেখার শিরোনাম: কারা কালী সাধক। তা হলে কালী সাধক কারা? এক অর্থে যারা মহাদেবী কালীর সাধানা করেন। এটি সংকীর্ণ অর্থ। বৃহত্তর অর্থে- পৃথিবীজুড়ে যারা অন্যায়অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, তারাই কালীসাধক। দূর্বলদের ওপর সমাজে নিয়ত অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে বলে শক্তির প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। ১০ এ লেখাটি আমি বিশিস্ট ব্লগার রাঙা মীয়া কে উৎসর্গ করেছি। তার দুটি কারণ। (১) তিনি আমাকে কালীসাধকদের নিয়ে লিখতে অনুরোধ করেছেন। (২) সম্প্রতি তিনি ধর্ষন সম্বন্ধে একটি মর্মস্পর্শী লেখা পোস্ট করে তিনি আমাদের ঘুমন্ত চেতনায় ঘা দিয়েছেন। আমার তখন মনে হল-মাতৃপূজা, শক্তির সাধনা ও ধর্ষনের প্রতিরোধের মধ্যে কোথাও যেন একটা যোগসূত্র রয়েছে। ১১ মনে থাকার কথা। স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ১৮৯৮ সালে কাশ্মীরে একটি সাত-আট বছরের মুসলমান বালিকাকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করেছিলেন। সেই নিষ্পাপ ও পবিত্র মেয়েটি ছিল মাঝির কন্যা। জানি, জীবনের কঠিন সমস্যাগুলির সমাধান অত সহজ নয়। তথাপি কল্পনা করি: কোনও নির্জন স্থানে দীর্ঘক্ষণ স্বামী বিবেকানন্দ এবং সেই মুসলিম বালিকাটি রয়েছে। তখন কী কী ঘটতে পারে পাঠিকা? সহৃদয় পাঠক? উৎস: ১/ ড. আর এম দেবনাথ: সিন্ধু থেকে হিন্দু। (পৃষ্ঠা, ৮১-৯১) ২/ বাংলাপিডিয়া। Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৯
false
rg
।। তথাকথিত হে উৎসবের নামে বাংলা একাডেমি চত্বরে আবারো দালালদের আগ্রাসন।। এখন পর্যন্ত কম্পিউটারে বাংলা লিখে পেন ড্রাইভে বাইরে কোথায় নিয়ে প্রিন্ট দিতে গেলেই যুক্ত অক্ষর ভেঙ্গে হযবরল হয়ে যায়। বাংলা সফটওয়ারের দৌরাত্ম যেখানে এখনো সীমাহীন ঝামেলায় বাঁধা। সেখানে ঢাকায় বাংলা একাডেমি চত্বর ও কক্ষ ভাড়া নিয়ে বিদেশি ভাষার লেখকদের জন্য আমাদের দুই সম্পাদক মোড়ল (দুই গে) হে ফেস্টিভালের নামে ধনি সাহিত্য প্রমোট করার দায়িত্ব নিয়েছেন। সব চেয়ে অবাক করার বিষয় হল, দেশের যে সব লেখকরা এই কর্পোরেট দানবের কাছে বিক্রি হয়েছে, তারাও দলে দলে হে ফেস্টিভালে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বোগল বাজাচ্ছেন। বাংলা সাহিত্যকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার খায়েসের পরিবর্তে বাংলাদেশে ইংরেজি সাহিত্যের বাজার সৃষ্টি করাই এই দালালদের যেনো এখন আসল উদ্দেশ্য। মাঝখান থেকে তাদের ছেলেমেয়েদের বড় লেখক বানানোর খায়েসকে কতোটা নির্লজ্বভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা হে ফেস্টিভালের আসল উদ্দেশ্য যারা জানে না, তাদের শত চেষ্টা করেও বোঝানো সম্ভব নয়। সাহিত্যকে এখন ধনি আর গরীব দুইভাগে ভাগ করার জন্য এসব দালালদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। ত্রিশটারও বেশি কর্পোরেট সংস্থার স্পন্সর নিয়ে এসব দালালরা বাইরের অনেক লেখককে যাওয়া আসার বিমান ভাড়া দিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসছেন। মজার ব্যাপার হল, বাংলা সাহিত্যকে বাইরে পৌঁছে দেবার জন্য এসব দালালরা একটা কানা কড়িও খরচ করতে রাজী নয়। আর এই বাজারি সাহিত্যের আগ্রাসনের সঙ্গে স্বয়ং যুক্ত বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান। দুই পয়সা টু পাইস কামানোর জন্য এই লোকটা বারবার বাংলা একাডেমিকে বিদেশি হায়নার কাছে বিক্রি করছেন। এটা দেখার জন্য যেনো বাংলাদেশের সকল আবালবৃদ্ধবনিতা অন্ধ হয়ে গেছেন। চোখে কালো চশমা লাগিয়ে না দেখার ভান করছেন। এই নিয়ে তিনবার জনাব খান সাহেব বাংলা একাডেমিকে এসব দালালদের কাছে বিক্রি করলেন। এর বিচার কে করবে?বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান যে দায়িত্বহীনতা কাজ বারবার করে চলেছেন, তাতে এই ব্যক্তি কোনোভাবেই আর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ ধরে রাখার মত যোগ্যতা বা অধিকার রাখেন না। এক পাল নামিদামি লেখকরা আবার এই তথাকথিত হে ফেস্টিভালে গিয়ে বিদেশি লেখকদের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে ছবি টানাচ্ছেন। হে ফেস্টিভালের নিজস্ব ওয়েব সাইটে ভিজিট করে দেখা গেল, সেখানে অ্যাবাউট পাতায় এখনো গত বছরের আয়োজনের খবরই শোভা পাচ্ছে। মানে আয়োজকদের কারো এই খবরটি আপডেট করার মতও সময় নাই। বিভিন্ন ফেস্টিভালের কিছু ছবি, কিছু পুরানো খবর, অনুষ্ঠান সূচি, টিকিটের খবর, ছবির গ্যালারি, স্পন্সর আর যোগাযোগের খবর আছে এই তথাকথিত হে আয়োজকদের মূল ওয়েব সাইটে। আপনারা ইচ্ছে করলে দেখতে পারেন। Click This Link । বোঝেন এবার এদের ঠ্যালা কত। সারা বছরে এই ওয়েব সাইটে আর কারো ঢু মারারই সময় হয় না। এ বছরের আয়োজন উপলক্ষে শুধু হোম পাতায় এ বছরের কয়েকজন লেখকদের নাম টানানো হয়েছে। আর তিনদিনের অনুষ্ঠান সূচি। এছাড়া এই সাইটের সকল খবর পুরাতন বছরের। মানে সারা বছর এই দালালরা শুধু মাত্র একটি ফেস্টিভাল করার জন্য বাংলাদেশের বাংলা একাডেমিকে বেছে নিয়েছেন। এরা বাংলা ভাষার শত্রু। মুখে এদের এখনো সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে লালন করার শকুনি স্বপ্ন। মুখোশ পড়া এসব দালালরা আবার কেউ কেউ ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারেও ফুল দিতে যান। আর অন্তরে লালন করেন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন। মতিউর-মাহফুজ গংরা বাংলা সাহিত্যকে কোনঠাসা করার যে ভয়ংকর খেলায় মেতেছেন, এই দানব রুখবে কে?এমনিতে বাংলা একাডেমি সারা বছর শীতনিদ্রা যায়। বছরে শুধু অমর একুশে বইমেলা করার প্রতিই তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। অথচ অমর একুশে বইমেলাটি আসলে স্রেফ প্রকাশকদের ব্যাপার। অবশিষ্ট সারা বছর বাংলা একাডেমির আর কোনো কাজ নাই। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় এভাবে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এখন দালালদের পৃষ্ঠপোষকতায় মেতেছে, এটা ভাবলে খুব কষ্ট লাগে। অথচ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবার জন্য কাজ করার কথা এই প্রতিষ্ঠানটির।জনাব মতিউর-মাহফুজ গং, আপনারা ত্রিশের বেশি স্পন্সর নিয়ে এই যে বছর বছর হে ফেস্টিভালের নামে বিদেশি লেখকদের কোটি কোটি টাকা খরচ করে তিনদিনের জন্য ঢাকায় আনছেন, একবার ভেবে দেখুন, এই টাকায় সারা বছর, বাংলাদেশের জেলায় জেলায় আমাদের নিজস্ব লেখকদের দিয়ে কতবার কতটি লেখক সম্মেলন করতে পারতেন। যা থেকে আমাদের নতুন প্রজন্ম লেখালেখিতে আগ্রহী হতে পারত। অনেক বেশি উৎসাহিত হতে পারত। যা নতুন প্রজন্মের লেখকদের বেশ উপকারে লাগতে পারত। আপনারা তা না করে, হায়ারে লেখক এনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে আগ্রাসন চালাচ্ছেন, এটা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য দিনদিন হুমকি হয়ে যাচ্ছে। যারা আপনাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাতা চাটতে যাচ্ছেন, তাদের কিছু লাভ হলেও বাংলাদেশের সাধারণ লেখকদের জন্য এটা দিনদিন গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত হয়ে যাচ্ছে। আপনারা সাহিত্যকে ধনি-গরীব সুস্পষ্ট ব্যবধান টানার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। আপনারা টাকার গরম দেখিয়ে নিজেরা যতখুশি গে গে খেলা খেলুন, কিন্তু তার সঙ্গে বারবার বাংলা একাডেমিকে কেন জড়াচ্ছেন? নাকি এটাকে জায়েজ করার জন্য আপনাদের বাংলা একাডেমিকে খুব প্রয়োজন? সমীকরণ কী বলে? আপনাদের ছেলেমেয়েদের জন্য বুকার পুরস্কার লাগবে? বাংলা একাডেমি প্রতি বছরই প্রতিশ্রুতি দেয়, দেশে তারা বিশ্বমানের লেখক সম্মেলন আয়োজন করবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের ভোটের সময়কার মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মত সারা বছর সেই কথাগুলো এখন অনেকটাই ফ্যাকাশে শোনায়। অথচ হে ফেস্টিভালের নামে আগ্রাসি এক তথাকথিত সম্মেলনে এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কিসের ভিত্তিতে প্রতি বছর হে আয়োজকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে, তা এখনই জানার সময়। খান সাহেবরা কখনো বাংলা ভাষার উন্নতি চায়নি। এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও শুনতে খারাপ লাগলেও শতভাগ সত্যই এটা। বাংলা একাডেমি তো সারা বছর জাবর কাটার জন্য কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, হে আয়োজকদের দুই প্রধান গুরুর একজন পশ্চিম বাংলার আনন্দ বাজারের দেশীয় চরের ভূমিকায় নেমেছেন। আরেকজন ইংরেজি সাহিত্যের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে নেতৃত্ব দিতে তথাকথিত ইংরেজি সাহিত্যের লেখকদের নামকাওয়াস্তে হাজির রেখে ইংরেজদের দালালি করছেন। এই দুই মোড়ল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে আর কি কি করছেন, তাকি আমরা ইতিহাস ঘাটলে জানতে পারি?বাংলা একাডেমির যারা আজীবন সদস্য, তারা কেন নিরবে এই আগ্রাসন হজম করছেন, এটা ভেবে আমার সত্যি সত্যিই কান্না পায়। তাহলে ভাষার জন্য যারা শহীদ হলেন, বাংলা ভাষার জন্য এতো যে আন্দোলন সংগ্রাম, তার কি ব্যাখ্যা এই দুই গে মোড়ল আমাদের দিতে পারবে?আমরা হে আয়োজকদের এই দালালিপনার তীব্র নিন্দা জানাই। ধিক্কার জানাই, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক দালালদের চামচা জনাব শামসুজ্জামান খানকে। আপনি নৈতিকভাবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকার সকল যোগত্য বিকিয়েছেন। আর যারা ঘি খাবার লোভ সংবরণ করতে পারেনি, সেইসব লেখকদের জন্য বড় মায়া হয়। আহারে, তিন দিনের আলোচনা, ক্লাস নিয়ে যদি কাউরে লেখক বানানো যেত, তাহলে উন্নত বিশ্বের ঘরে ঘরে লাখ লাখ লেখক পয়দা হতো। হে আয়োজকদের আবারো সবিনয়ভাবে বলতে চাই, আপনাদের এই আয়োজনটি দয়া করে বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে সরিয়ে অন্য কোনো ভেন্যুতে করেন, কোনো অসুবিধা নাই। ব্রিটিশ কাউন্সিলে করেন, কোনো আপত্তি নাই। ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রে করেন, কোনো আপত্তি নাই। মাগার বাংলা একাডেমি চত্বরে আপনাদের ন্যাকা ন্যাকা কণ্ঠের আজগুবি ইংরেজি উচ্চারণ, বড় পিড়া দেয় গো। দোহাই আপনাদের, যাদের আপনারা লেখক বানানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, তাদের পড়িয়ে শিখিয়ে ভালো কিছু লিখতে পারে এমনভাবে আগে তৈরি করুন, তারপর না হয় এক সাথে রঙবেরঙের পোষাক পড়ে ঢাক ঢোল বাজালেন। গায়ে উলকি আঁকলেন। কেউ বাঁধা দেবে না। আপনাদের নাচা গাওয়া তখন আমরা দলে দলে গিয়ে উঁকি মেরে দেখে আসব। কিন্তু বাংলা একাডেমি চত্বরে আপনাদের ধজভঙ্গ ইংরেজি উচ্চারণ ভাষা শহীদদের আত্মায় বর্ষাফলকের কোপের মত প্রতি মুহূর্তে বিধছে। দোহাই আপনাদের, আপনাদের গে উৎসব বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে সরিয়ে নিন। মজার ব্যাপার হল, দেশের অনেক প্রথিতযশা লেখকরা যখন হে উৎসবে গিয়ে নাকাল ইংরেজি বলা ধনির দুলালদের কাছে যথাযথ পরিচয় দিয়ে আইডি কার্ড গলায় ঝোলান, তখন এদের সত্যিই বড় কাঙ্গাল মনে হয়। আহারে টাকার কাঙ্গালগণ। আমাদের ধনির দুলালরা আমাদের অনেক বিখ্যাত লেখকদেরও সরাসরি চেনেন না। পরিচয় বোঝাতে তাদের গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে হয়। টাকার কাছে এরা এভাবে গোলামি করবে, এরা কিসের সাহিত্য করেন, ভেবে পাই না। আবার অনেকে আছেন, শুদ্ধ বাংলা বাক্য লিখতে পারেন না, অথচ পুরস্কার টুরস্কার পেয়ে নিজেকে বড় লেখক মনে করেন। তাদের আদিখ্যেতা দেখলে মনে হয়, হে ফেস্টিভালে গিয়ে এদের জীবন বড় সার্থক হয়ে গেল গো। আহারে তকমা মারা লেখকগণ। বাইরের কোন কোন ফেস্টিভালে আপনাদের নিমন্ত্রণ করে বিমান ভাড়া দিয়ে এমন দালালরা নিয়ে যায়? সেই হিসেব কি একবারও করেছেন?বাংলা একাডেমির আগামী নীতি নির্ধারনী সভায় বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যার কেন বাংলা একাডেমির এই অধপতনকে রোধ করার জন্য উদ্যোগী হবেন না, এখনো তিনি কেন এই মাতলামো বন্ধের জন্য উদ্যোগী হচ্ছেন না, তাই ভেবে বড় কষ্ট হয়। বাংলা একাডেমির সকল সম্মানিত সদস্য ও আজীবন সদস্যদের প্রতি বিনীত নিবেদন, আগামী সভায় আপনারা এই বিষয়টি উত্থাপন করুন। বাংলাকে তাড়িয়ে সেখানে ইংরেজি সাহিত্যের এই আগ্রাসন অন্তত বাংলা একাডেমি চত্বরে যাতে বন্ধ হয়, আপনারা সেই উদ্যোগটি অন্তত গ্রহন করুন। নইলে আমরা দাঁত থাকতে যেমন দাঁতের মর্যাদা দেই না, তেমনি আগ্রাসন চরম আকার ধারণ না করা পর্যন্ত আমাদের হয়তো ঘুমই ভাঙবে না। সো, সাধু সাবধান। পরিশেষে, বাংলা একাডেমি চত্বরে হে ফেস্টভালের গে গে খেলার সর্বোচ্চ ধিক্কার জানাই। মতিউর-মাহফুজ গংদের দালালিপনা রুখে দাও ভাষা সৈনিকরা।
false
rg
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর_ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন দিক উন্মোচন!!! এই প্রথম কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ভারতের রিপাবলিক ডে প‌্যারেটে যোগ দিলেন। তিন দিনের (২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ২০১৫) রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবারের ভারতীয় রিপাবলিক ডে প‌্যারেটে যোগ দিলেন। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দো মোদি গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তখন থেকেই দুই নেতা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন চাপ্টার খোলার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তখন মোদি ওবামার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেছিলেন প্রেসিডেন্টের গাড়িতে চড়ে। আর এবার দুই নেতা শীর্ষ বৈঠকটি করলেন পায়চারি করে। মিস্টার মোদি এবার ওবামাকে নিজ হাতে চা বানিয়ে আপ্পায়ন করেছেন। যা মিস্টার ওবামাকে অভিভূত করেছে। মূলত চীনকে টেক্কা দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একটি কমোন এজেন্ডায় একমত। চীন বর্তমানে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ইকোনোমিক শক্তিতে পরিনত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিশ্ববাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন, তেমনি ভারত চীনের সামরিক শক্তির উত্থানকে মোটেও সুনজরে দেখছে না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমানবিক ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার সহযোগিতা পেতে আগ্রহী। পাশাপাশি ভারত আমেরিকাকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, এই পারমানবিক সহযোগিতা কোনো ভাবেই প্রতিবেশি চিরবৈরি প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়িয়ে দেবে না। বরং দুই নেতা একমত হয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা আগ্রাসনকে মোকাবেলা করার মত সামরিক সক্ষমতা অর্জন করা উভয়ের জন্য জরুরী। মিস্টার মোদি ও মিস্টার ওবামা একটি যৌথ বিবৃতি সাক্ষর করেন। ৪৫ মিনিটের শীর্ষ বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল চীনকে মোকাবেলা করার কৌশল। আর সেখানে উভয় নেতাই পরস্পরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা সম্পর্ক স্থাপনকে চীন অবশ্য পজিটিভলি দেখছে। চীন বলছে, যদি চীনকে বিরক্ত না করে তারা কোনো যৌথ বাণিজ্য করে তা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছর মেয়াদি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি সংস্কার করতে একমত হয়েছে। এর ফলে রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয়ে এতোদিন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত হলেও, গত বছর নরেন্দ্র মোদি ভারতে সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়ার জায়গা দখল করতে যাচ্ছে। মোদি অবশ্য দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করার কথাই সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হাইডোফ্লোরোকার্বন উৎপন্ন করে বিশ্ব উষ্ণায়ন করছে যে তিনটি দেশ তারমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত সেক্ষেত্র যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। গত বছর নভেম্বর মাসে যেখানে মিস্টার ওবামার চীন সফরে বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যৌথ ঘোষণা দিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার দিল্লী থেকে সৌদি আরবে যাত্রার প্রাক্কালে মিস্টার ওবামা ভারতে মানবাধিকার বিষযে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, ধর্ষণ, মানবপাচার, দাসপ্রথা ও কট্টর ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি তরুণ প্রজন্মকে বেশি বেশি এমপাওয়ার করার পরামর্শ প্রদান করেন। মিস্টার ওবামা বলেন, রক্তারক্তি, খুনোখুনি ও ধর্মীয় উন্মাদনা কখনোই একটি দেশের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে না। এসব বন্ধ করে উভয় দেশ পরস্পর অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো মজবুত করতে আগ্রহী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।সিরি ফোর্ট অডিটরিয়ামে এক বক্তৃতা করার সময় মিস্টার ওবামা ‘নমস্তে’ দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন। আর বক্তৃতা শেষ করেন ‘জয় হিন্দ’ বলে। বারাক ওবামা তাঁর ব্কৃতায় বন্ধুত্বের মোড়কে সুকৌশলে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তার গুরুদায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, “ভারত তত ক্ষণই সফল, যত ক্ষণ না সে ধর্মের ভিত্তিতে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।”ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠতে পারা যে ভারত ও আমেরিকার ঐতিহ্য, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওবামা বলেন, “আমরা এমন দেশের বাসিন্দা হতে পেরে গর্বিত, যেখানে রাঁধুনির নাতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন, দলিতের ছেলে হন ভারতীয় সংবিধানের রূপকার, আর চা-বিক্রেতা হন প্রধানমন্ত্রী।” কথা প্রসঙ্গে নিজের জীবনের গল্প শুনিয়ে বলেন, 'সাদা চামড়া না-হওয়ায় অল্প বয়সে কী ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে তাঁকে। আমায় চিনতেন না, এমন অনেকে আমার ধর্মবিশ্বাস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। যেন অন্য কোনও ধর্মাবলম্বী হওয়াটা অপরাধ।'শান্তির নোবেলজয়ী মিস্টার ওবামার মতে, প্রত্যেক দেশেরই সরকারের দায়িত্ব এটা দেখা, যাতে প্রত্যেকটি নাগরিক স্বাধীন ভাবে নিজের ধর্মাচরণ করতে পারেন। এই সময়েই তিন বছর আগে উইসকনসিনের গুরুদ্বারের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলেছেন ওবামা। ভারতীয়-মার্কিন মিলিয়ে ছ’জন মারা গিয়েছিল ওই হামলায়। ওবামার মতে, ওই ঘটনা ধর্মাচরণের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল দু’দেশকে। এই সময়েই শাহরুখ খান, মেরি কম, মিলখা সিংহ, কৈলাস সত্যার্থীর নাম করে ওবামা বলেন, এঁদের প্রত্যেকের জন্যই ভারতবাসীর একই ভাবে গর্বিত হওয়া উচিত। তাঁরা কার উপাসনা করেন, তাঁদের চামড়ার রং কী, সে সব গৌণ বিষয়।ওবামা বলেন, ভারত ও আমেরিকা যৌথ ভাবে কী কী দায়িত্ব পালন করতে পারে। যেখানে দু’দেশেই নানা জাতি-নানা ধর্মের মানুষ বাস করে। এই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি বলেন, ভারতীয় সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারা এবং মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী, এই দুইয়েরই বক্তব্য এক ‘ধর্মাচরণের স্বাধীনতা’।ভারত সফরে এসে বিমান থেকে নেমেই আড়াই দিনের ঠাসা কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু তাঁর স্ত্রী মিশেলকে এবার তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি। প্রজাতন্ত্র দিবসেও বেশির ভাগ সময়টা তিনি বসেছিলেন মুখ গোমড়া করে। মিশেলের এই ‘মুখ গোমড়া’ হওয়া নিয়ে দিল্লির অলিন্দে এখন নানান গুজব শোনা যাচ্ছে। তবে কি কোনও কাজ না থাকায় বসে বসে বিরক্ত হলেন মার্কন ফার্স্টলেডি মিশেল? নাকি বারাক ওবামার সঙ্গে কোনও বচসা হয়েছে? না কি প্রেমের সৌধ তাজমহলে যেতে না পারায় ভারী আক্ষেপ হল? সৌদি আরবের রাজা আবদুল্লার জীবনাবসানের পর ওবামা দিল্লীর আগ্রার তাজমহল সফর কাটছাঁট করে সৌদিআরব গেছেন। সেখানে গিয়েও মিশেলের নাকি বিশেষ কিছু করার নেই!অথচ গতবার ভারতে এসে অনেক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন মিশেল। দিল্লির ক্রাফট ভিলেজে গিয়ে কেনাকাটা করেছিলেন। গানের তালে পা মিলিয়ে নেচেওছিলেন। আগ্রা সফর বহাল থাকলে এবারে তাজমহলে যেতে পারতেন ওবামা দম্পতি। অতীতে বিল ক্লিন্টন-হিলারি গিয়েছিলেন তাজমহলে। ২০০০ সালে মেয়ে চেলসিকে নিয়েও তাজে ঘুরে গেছেন ক্লিন্টন। প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি থেকে পারভেজ মুশারফ সকলেই তাজমহল গেছেন। কিন্তু বারাক ওবামা মিশেল ওবামার এবার ভারত সফরে সেটি হল না।তাজমহলে যেতে না পাওয়ার আক্ষেপ যে মিশেলের মনে থেকে গেছে, সেটি ভারত ছাড়ার আগে স্পষ্ট করলেন তিনি। যেতে যেতে তিনি মিনিস্টার-ইন-ওয়েটিং পীযূষ গয়ালকে বলেছেন, “তাজমহলে যেতে না পাওয়ার আক্ষেপ থেকে গেল। পরের বার ব্যক্তিগত সফরে ভারতে এসে তাজমহলে অবশ্যই যাব। সে বারে মেয়েদেরও নিয়ে আসব।”মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন দিক উন্মোচন করবে। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে উভয় দেশ সামরিক তৎপরতা বাড়িয়ে চীনের আগ্রাসনকে মোকাবেলা করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য সহযোগিতা ও পারমানবিক প্রকল্পে উভয় দেশ অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে পরস্পর সহযোগিতা করবে বলে সম্মত হয়।ওবামার ভারত সফরে একটি বিষয় কুবই সুস্পষ্ট যে, চীনকে মোকাবেলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে নতুন করে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশল নিয়েছে। যা নতুন করে এশিয়া প‌্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক অস্থিরতায় উন্মাদনা ছড়াবে। বিষয়টিকে চীন যে খুব গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে, তা বোঝা যায় চীন কিভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তাঁর আসন্ন বেইজিং সফরে আপ্পায়ন করবে, তার রকামারি ঘোষণা থেকেই। .....................................২৯ জানুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
ij
কৎবেল গাছের নিচে বসে থাকা শিলাইদহের সেই শিশুরা আজও আমার পরিস্কার মনে আছে। তখনও ধানকাটা হয়নি। শিলাইদহ যেতে পথের দু’ধারে দিগন্ত অবধি ছড়ানো ধানের ক্ষেত; সোনালি রঙের। সময়টা পূর্বাহ্ণ-মানে সাড়ে বারোটার মতন বাজে। হঠাৎ আমার কী হল- আমি ভ্যানালাকে চেঁচিয়ে বললাম: এই, থামো থামো। ভ্যানালা হকচকিয়ে গেল। তারপর ভ্যান থামাল। আমি এক লাফে পথে। (পথই বলছি। কেননা, এ পথেই এককালে পালকি করে যেতেন রবীন্দ্রনাথ) চারিদিকে রোদ ঝলমল করছিল। আজও আমার পরিস্কার মনে আছে-১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখের শীত মাখানো রোদ। ভ্যানে বসে সিগারেট টানছিলাম। আমার হাত থেকে কখন সিগারেট খসে পড়ল। শেষ-কার্তিকের এলোমেলো হাওয়া আমায় ছুঁয়ে জানান দিচ্ছিল ওদের শীতল উপস্থিতি । ধানের ছড়ানো সোনালি বিস্তার দেখে আমি খানিকট স্তম্ভিত । শহরের থাকি- ধান কাটার আগে সোনা রঙের এ ধরণের ব্যাপক শস্যক্ষেত্র জীবনে বেশি দেখা হয়নি। পথের দুপাশেই আদিগন্ত সোনালি ধান। দিগন্তে ধূসর কুয়াশা জমেছিল। আমার মনে হল ; (১) অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য দেখছি। (২) আর এত ধান! তারপরও এদেশের মানুষ খেতে পায় না। আশ্চর্য! রঞ্জু ভ্যানে বসে, নামেনি; চিৎকার করে বলল, এই ভ্যানে ওঠ, দেরি হয়ে যাবে। ওর চিৎকারে আমার সম্বিত ফিরল। সত্যিই দেরি হয়ে যাবে। আজই কুষ্ঠিয়া থেকে রাজবাড়ি ফিরতে হবে। এখনও লালনের মাজারে যাওয়া হয়নি। আমি ভ্যানের দিকে যেতে থাকি। কুঠিবাড়ি শিলাইদহের কুঠিবাড়ি সামনে দীঘল দীঘল কড়ই গাছ। দূর থেকেই চোখে পড়ল। রোদে ঝলমল করছিল সবুজ পাতায়। রবীন্দ্রনাথও একদা রোদলাগা সবুজ কড়ইপাতাগুলি দেখেছেন-কথটা মনে পড়তেই গা কী রকম ঝমঝম করে উঠল। বাঁ দিকে বাঁক নিতে লাল রঙের দেওয়াল চোখে পড়ল। ক’টা ভ্যান থেমে ছিল প্রবেশ পথে। স্থানীয় লোকজন আর দর্শনার্থীদের ভিড়। এই প্রথম শিলাইদহের কুঠিবাড়ি এলাম। কথাটা ভাবতেই কেমন যেন লাগল। ছেলেবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথে গান শুনে আসছি - ছিন্ন পাতাই সাজাই তরণী একা একা করি খেলা ... আজ গানের মানুষটির বসতভিটেয় সামান্য এক ভক্তের পা পড়ল। রঞ্জু গোছল করবে। কাজেই আমরা প্রথমেই কুঠিবাড়িতে না ঢুকে বাঁদিকে দীঘির দিকে যেতে থাকি। ব্যাগের ভিতরে লুঙ্গি-গামছা নিয়েই এসেছে রঞ্জু। ও খানিক সংসারীও আছে। আমরা হাঁটতে-হাঁটতে দীঘির ঘাটে চলে এলাম। বেশ পুরনো দীঘি। তার ইঁটে বাঁধানো পুরনো ঘাট । দীঘির চারধারে লিচু আর আমের গাছ। কালো রঙের পানি। রবীন্দ্রনাথও এ দীঘিটি দেখেছেন মনে পড়তেই গা ঝমঝম করে উঠল। চারিদিকে শেষ-কার্তিকের সোনালি রোদ ঝলমল করছিল। আকাশটা কী সুন্দর। ধূসর। তারপরও সুন্দর। কী একটা ফুলের মিষ্টি সুঘ্রান পাচ্ছিলাম। কী একটা পাখি ডাকল। ঘাটটা ফাঁকা। অনেক শুকনো পাতা পড়ে রয়েছে। আমি ঘাটের ওপর বসলাম। খিদে পেয়েছে। কুষ্টিয়া স্টেশনে নেমে পাউরুটি আর কলা কিনে নিয়েছি। ব্যাগের ভিতরে আছে ওগুলো। ততক্ষণে রঞ্জু সার্টটা খুলে লুঙ্গিটা মাথার ওপর দিয়ে নামিয়ে প্যান্ট খুলছে। রঞ্জর খালি গা। খালি গায়ে ওকে ফরসা নাদুসনুদুস ময়রার মতন লাগে। একটু পরই সে শরীর জলে ভিজবে। আমি গোছল করব না। কুঠিবাড়িতে এসে খালি গা হওয়া? ধ্যাত। চারিদিকে কবির মনন ভেসে বেড়াচ্ছে। যদি তারে না চিনি গো সে কি সে কি আমায় নেবে চিনে এই নব ফাল্গুনের দিনে ... ঘাটের কাছেই একটা কৎবেল গাছ। আসলে আমি কৎবেল গাছ চিনিনে। গাছের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে ফলগুলোন পড়ে ছিল-পাখিতে ঠুকরে ফেলেছে- সে টক টক মিষ্টি ফলটি আমার আজন্ম পরিচিত। ধনে পাতা দিয়ে বেশ করে মেখে খেলে পরম তৃপ্তি হয়। কত কত দুপুরে বিকেলে বোনেদের সঙ্গে খেয়েছি। গাছের নিচে কয়েকটা ছেলেমেয়ে বসে-আমাদের দেখছে। ৮-৯-১০-১১ বছর হবে। তিনটে ছেলে। একটি মেয়ে। হাফ প্যান্ট, খালি গা। শ্যামলা মিষ্টি মুখ। ভারি সরল চাউনি। বিশেষ করে শিশুমেয়েটির-কেমন কাজলমাখা -ড্যবডেবে। এরা কাছাকাছিই থাকে হয়তো। লালনের মতো জগতের শ্রেষ্ঠ একটি প্রজ্ঞা তো এদের মতো শিশু থেকেই জন্মেছে। আমি উঠে ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম। রঞ্জু ততক্ষণে ঘাটের শেষ পৈঠায়-রবীন্দ্রসরোবরে অবগান ওর এখুনি শুরু হবে। এদের মধ্য থেকেই জন্ম নেবে জগতের শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা-এদের দেখেই মুগ্ধ হবেন কবি কৎবেল গাছের নিচে অনেকটা ঘাস। ঘন। রোদের ইকড়ি-মিকড়ি। শিশুদের মুখোমুখি বসলাম। কেমন টক টক গন্ধ বাতাসে। বোধহয় পাখিতে ঠোকড়ানো পড়ে থাকা কৎবেলের গন্ধ। বললাম, তোমরা এখানেই থাক? ওদের একজন মাথা ঝাঁকাল। ওদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমার ভাষা কী রকম হবে। এরা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। আমি তো সে ভাষা জানি না। আমি ঢাকার ভাষা জানি, মানে, চাঁদপুরের ব্যাকগ্রাউন্ডের ঢাকার শান্তিনগরে বেড়ে ওঠা একটা পরিবারের ছেলে যে ভাষার কথা বলে। বললাম, আমি ঢাকায় থাকি। নীরবতা। কেবলি কৎবেল গাছের পাতার আড়ালে বসে থাকা কী পাখির ডাক শোনা গেল। তোমরা ঢাকার নাম শোনোনি? নীরবতা। মনে হয় শুনেনি। না শোনারই কথা। কী-ই বা বয়েস। শিশুমাত্র। ভাবলাম-এদের দেখেই রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তো শিলাইদহের জমিদারী তদারকি করার জন্য প্রথম প্রথম শিলাইদহ আসতেই সম্মত হননি। পরে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও এলেন। তারপর শিলাইদহের নির্সগচিত্র দেখে গাঁ-গ্রামের সহজসরল মানুষজন দেখে কবির মনে যে মনোরম ভাবের উদয় হয়েছিল-তা আজ কেবল বাঙালি না-বিশ্ববাসী জানে। আমি সেসব কথা ভেবে গভীর দৃষ্টিতে শিশুদের দিকে তাকালাম। মেয়ে শিশুটির পরনের গেঞ্জিটা ময়লা, ছেঁড়া। শ্যামলা মুখটি কী মিষ্টি। ভারি সরল চাউনি। আমার দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসছিল ... লালনের মতো জগতের শ্রেষ্ঠ একটি প্রজ্ঞা তো এর মতো কারও গর্ভেই জন্মেছিল। সহসা আমার বোধিলাভ হল। এক মুহূর্তমাত্র ... রঞ্জর গোছল শেষ। ডাক দিল-আয়। দেরি হয়ি যাবে। উঠলাম। অগত্যা। লালনের মাকে আর শিশু লালনদের ছেড়ে চলে যেতে ভারি কষ্ট হচ্ছিল। কী নির্মল এরা! ঢাকার নাম পর্যন্ত শোনেনি! সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:০৪
false
rn
সিংহ রাশির দিনকাল (২৩ জুলাই - ২৩ আগষ্ট) আপনি সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আপনাকে আকর্ষণ করে। সিংহ রাশিচক্রের পঞ্চম রাশি। সিংহ রবির শুধু স্বক্ষেত্রেই নয়, এটা তার মূল ত্রিকোণ বা আনন্দভবন। এখানে রবি থাকে প্রসন্ন। সিংহের জাতকের কিংবা জাতিকার মধ্যে থাকে একটা মহান আভিজাত্যের সঙ্গে সৃষ্টিধর্মী শক্তি ও অন্যদের চালিত করার অথবা আকর্ষণ করার বিশেষ ক্ষমতা। ভাদ্রের বা শরতের শুরু এই রাশিতে। চন্দ্র ও রবির মধ্যে ক্ষেত্র বিনিময় হলে জাতক জাতিকার মধ্যে থাকে মহতী সৃজনী শক্তি,অসাধারণ প্রতিভা ও অন্তর্দৃষ্টি।সিংহ, নামক পশুটি বনের অন্যান্য পশুগুলিকে শাসন করে, সিংহ ব্যক্তিটি আপনাকে এবং অন্যান্য সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে। আত্মসম্মানজ্ঞান প্রবল। ঈষৎ গর্বিত। সব ব্যাপারে আগ্রহী। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা একেবারেই ভালবাসেন না। আনন্দের নেশা হয় প্রবল। যাক-প্রাণ-থাক-মান এই হয় জাতকের মূলমন্ত্র। সকলের জন্য নিজের স্নেহ প্রীতি ভালবাসা উজাড় করে ঢেলে দেয়।অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ ও ভাবপ্রবণ। সকলের কাছ হতে প্রশংসা পেতে চাইবে জাতক। পরোপকারের দিকে ঝোঁক প্রবল। সবাইকে আপন করে নেবার দিকে একটা ঝোঁক থাকবে।সিংহরা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের বোধ কিংবা যখন তখন নাটকীয় আচার আচরণের প্রবণতাগুলোকে দমীয় রাখতে পারে না।শুভ রং: লাল, কালো ও আকাশি।শুভ সংখ্যা: ২, ৩ ও ৬। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই জাতকের ভাগ্য বেড়ে উঠে। অথবা জাতক নানা সুযোগ পেয়েও তা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পেরে কষ্ট পায়। চরম কষ্টের মধ্যেও জাতকের অর্থ আপনা হতেই এসে যায়। বুদ্ধিবৃত্তি ও অধ্যবসায় প্রবল বলে কৌশলে অবস্থার পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়।বন্ধুভাগ্য শুভ। সহজেই বন্ধুত্বলাভ করতে সমর্থ হয়। বন্ধুরা জাতকের উন্নতির জন্য সহজেই সচেষ্ট হয়।সিংহদের মধ্যে ভীষণ জ্বর, দূর্ঘটনা, হঠাৎ করে মারাত্মক কোন অসুখে পড়বার প্রবণতা দেখা যায়। তবে দীর্ঘস্খায়ী রোগে আক্রান্ত না হবার মতো যথেষ্ট প্রতিরোধ শক্তি তাদের আছে। যেহেতু এই মানুষগুলো কখনই কোন কাজ আধা-আধি করে ফেলে রাখে না, তাই এরা হয় তাদের প্রচন্ড প্রাণশক্তির বিচ্ছুরণ ঘটাতে থাকে, নতুবা এই মন্তব্যে উপণিত হয় যে, পৃথিবীটা তাদের উপযুক্ত জায়গা নয়। মনে রাখতে হবে জীবন ও ভাগ্যের পথ ক্ষুরধার ও দুর্গম। সময় থাকতে সতর্কভাবে অগ্রসর হলে জাতককে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত ও মহাধনবানে পরিণত হতে বেগ পেতে হয় না।টনসিল, ফুসফুসের দৌর্বল্য,শ্লেষ্মাপীড়া, শিরোরোগ, গলার অসুখ ও পাকস্থলীর বৈকল্যে বিশেষ কষ্ট পায়। অধিকরাত্রি জাগরণ জাতকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে দেখা দেয়।শুভবর্ণঃ সাদা, নীল, গোলাপী, খয়েরী, সোনালী এবং আকাশী রং।জাতকের মধ্যে একটা সহজাত আকর্ষণ থাকায় স্ত্রীলোকেরা সহজেই জাতকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। জাতকের মধ্যে একটি প্রেমের বিকাশ ঘটে। যাকে ভালবাসবে তার জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবে।রুচি ও শিল্পজ্ঞান সুক্ষ্ম। বিলাসিতাকে প্রশ্রয় না দেওয়াই শ্রেয়ঃ। অমিতব্যয়িতাও পরিণামে দুর্ভাগ্য ডেকে আনবে। প্রায় সব কাজেই যোগ্যতা দেখাতে সক্ষম হবে জাতক। সর্ব কাজ আধাখ্যাঁচড়া করে রাখার জন্য কোন কাজেই সফলতা আসবে না। মঘার ১৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট, পূর্ব ফাল্গুনীর ১৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট এবং উত্তর ফাল্গুনীর ১৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট নিয়ে সিংহ রাশি গঠিত। অধিপতি রবি।
false
mk
আ্ওয়ামীলীগের সম্মেলন উন্নয়ন ও গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। হবেই না বা কেন? অব্যাহত উন্নয়নের ধারায় রয়েছে দেশ। জিডিপি অর্জনে ধারাবাহিকতা, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক উন্নয়ন সূচকের বিস্ময়কর অগ্রগতি, গরিবী কমতে থাকা, বার্ষিক গড় আয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা প্রভৃতি জনগণকে আশার আলো দেখাচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরে এসে বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তার ঘোষণা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগদানের ভেতর দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সম্ভাবনা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি উন্মোচিত হয়েছে। সরকারের প্রতি ক্রিটিক্যাল পত্রিকাগুলো পর্যন্ত হেডিং করছে, ‘নতুন যুগের সূচনা করবে’, ‘স্বপ্ন ছোঁবে অর্থনীতি’ ইত্যাদি ইত্যাদি।এই অবস্থার মধ্যে দারিদ্র্য কমানোর সাফল্য দেখতে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিং ঢাকা এসেছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে তিক্ততার প্রেক্ষাপটে সুদীর্ঘ ৯ বছর পর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের এবারের ঢাকা সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। গত পরশু সোমবার ছিল ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’। দিবসটি এ বছর ঢাকায় পালন করছে বিশ্বব্যাংক। প্রসঙ্গত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাফল্যের জন্য যে সব দেশ বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে, সেসব দেশেই ওই বিশেষ দিনটি পালনের জন্য যান বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। দারিদ্র্য বিমোচনে ওই দেশের সাফল্য অর্জনের অভিজ্ঞতা ও পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরাই হয় সফরের মাধ্যমে দিবস পালনের উদ্দেশ্য। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উদাহরণ স্থানীয় হওয়ায় এবারে তিনি ঢাকা এসেছেন। গত বছর গিয়েছিলেন আফ্রিকার ঘানায়।ওই দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিশেষ অতিথি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, হতদরিদ্রের হার কমাতে বাংলাদেশ যে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে, তা পুরো বিশ্বকেই আশাবাদী করে তুলেছে। তিনি সাফল্যের ধারা পর্যবেক্ষণ করে আশাবাদ ব্যক্ত করে আরো বলেন, বাংলাদেশ এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি সারা বিশ্বও একই কাজ করবে। সমৃদ্ধ আগামীর জন্য আমরা বাংলাদেশের পাশেই থাকব। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক ২০১৭-১৮ সালের জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা (আইডিএ) ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করবে এবং অপুষ্টি নিরসনে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার দেবে বলে ঘোষণা করেছে।উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকা এবং আরো আরো সাফল্য অর্জনের বিপুল সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের বিষয়টি আলোচনায় সামনে এসেছে। আসাটাই স্বাভাবিক। কেননা সুদীর্ঘ বছরের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে দেশের মানুষ এটা সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, আমরা উন্নয়নও চাই গণতন্ত্রও চাই। ভঙ্গুর গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নয়, টেকসই চাই। একটাকে বাদ দিয়ে বা একটাকে আর একটার অধীনস্থ করে আমরা অগ্রসর হতে চাই না। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বর্তমান বিশ্বে উদাহরণ স্থানীয় হওয়ার মতো সাফল্য থাকলেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের যেমন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তেমনি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ বিরাজমান।এক্ষেত্রে বলতেই হয়, বর্তমান দিনগুলোতে জাতি হিসেবে অর্থনৈতিক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আমরা যতটা ভাবি বা চিন্তা করি, তার চাইতে গণতন্ত্রের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আমরা বেশি স্পর্শকাতর। এমনটা হওয়ার কারণ বহুবিধ এবং এই ক্ষুদ্র কলামে তা আলোচনার বিষয়ও নয়। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, মানুষ যখন দেখে দেশের দুই প্রধান দলের এক দল বিএনপি পার্লামেন্টের বাইরে এবং নেত্রী খালেদা জিয়ার কোনো পদ নেই, গাড়ি-বাড়িতে নেই জাতীয় পতাকা; তখন গণতন্ত্রের সমস্যার বিষয়টা বেশি সামনে আসাটাই স্বাভাবিক। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যে যাই ভাবুক কিংবা যার অবস্থান যাই থাকুক না কেন, এটাই বাস্তব যে মানুষ এখনো চায়, নির্বাচন ও পার্লামেন্ট এই দুই দলের অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলুক এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক।বলাই বাহুল্য, এই চাওয়ার বিষয়টা অন্যান্য সব ঐতিহাসিক ও চলমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণের সঙ্গে মিলেমিশে বাধাচ্ছে গোল। থাকছে জাতির মধ্যে বিভক্তি। প্রশ্নটা এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে, তাতে এক কথায় বলা যায়, পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র কার্যকর ও অগ্রসর হবে কিভাবে? এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত রীতিনীতি ও সংস্কৃতি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আমাদের সংবিধান। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বর্তমানে আমাদের নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সংবিধান যে রূপ নিয়েছে, তা যেমন হয়নি সামরিক ফরমানে এক কলমের খোঁচায়, তেমনি রাজনৈতিক আন্দোলনের তাৎক্ষণিক চাপের ভেতর দিয়েও।এক্ষেত্রে ছিল যেমন অভিজ্ঞতা, তেমনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ২০০৮ সালের সব দলের অংশগ্রহণ এবং ফলাফল মেনে নেয়ার ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত পার্লামেন্টে সংবিধানের নিয়মনীতির ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধিত হয়ে বর্তমানের রূপ নিয়েছে। আরো বিবেচ্য বিষয় হলো, এই রূপ ও পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত রীতিনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু এটা মেনে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রেই সৃষ্টি হয়েছে সমস্যা। বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট এটা মেনে নিতে চায়নি। আবার নিজেদের দাবি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট ফর্মুলাও উত্থাপন করতে পারেনি। বিএনপি চলে গেছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করে সম্পূর্ণ বয়কট আর বর্জনের লাইনে।এই বিচারে সমস্যটা সৃষ্টি করেছে বিএনপি। এই সমস্যাকে আরো জটিল করেছে উল্লিখিত বয়কট-বর্জনের সঙ্গে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যত বিরোধিতা করে আর জামায়াত ও পাকিস্তানি মদদে বারবার গৃহযুদ্ধ বাধানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়ে। উপরোন্তু অতীতে ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবনের অপতৎপরতাসহ বিভিন্ন কারণে উগ্রবাদী জঙ্গিদের মদদ ও উসকে দিয়ে দেশি-বিদেশিদের হত্যার ঘটনার অভিযোগ থেকেও বিএনপি নিজেকে পৃথক করতে পারছে না। এক্ষেত্রে আরো একটি কথা বলা প্রাসঙ্গিক হবে যে, আমাদের মতো দেশগুলো, এমনকি বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতের অভিজ্ঞতায়ও দেখা যায় যে, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে আগে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং এমনকি গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও অতীতে ক্ষমতা হারিয়ে সেই অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। অভিপ্রেত বা অনভিপ্রেত, সঠিক বা বেঠিক যাই হোক, এই ধরনের মামলা আমাদের মতো দেশগুলোতে যেন স্বাভাবিক।তাই বলা যায়, বিএনপি যদি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পর পর দুইবার যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে আগুন সন্ত্রাসের দিকে দেশকে ঠেলে না দিত, তবে কিন্তু বিএনপি নেতাদের এত সব মামলার মধ্যে পড়তে হতো না। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মামলা ইত্যাদি হলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়। উল্লিখিত সব কারণে বিএনপি একান্ত দোষী বলেই মানুষ বিএনপির পক্ষে মাঠে নামে না। আর বিদেশি শক্তিধর দেশগুলোর কাছে নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে ক্রমাগত সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে গেলেও বিএনপি কোনো ন্যূনতম সমর্থনও পাচ্ছে না। বরং বিএনপি ক্রমে নামে বড় দল হলেও কাজে ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে যাচ্ছে। আম ছালা সব যাচ্ছে বিএনপির। পর্যবেক্ষণে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, দলের এই বিপর্যয়ের জন্য বিএনপির তৃণমূল থেকে ওপরের পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বড় একটা অংশ এবং ব্যতিক্রম বাদে বিএনপির সুশীলরা এক নম্বর নেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিশেষভাবে দুই নম্বর নেতা মামলা মোকাবেলা করার সৎ সাহস না থাকা স্বেচ্ছাপ্রবাসী তারেক জিয়াকেই অভিযুক্ত করছে।বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপি যে চরম ও মারাত্মক ভুলগুলো করেছে এবং জামায়াতকে সঙ্গে রেখে এখনো করে চলেছে, দায় ভোগ করে তা থেকে নিজেদের নিজেদেরই উদ্ধার করতে হবে। যদি পারে তবে বিএনপির যেমন তেমনি গণতন্ত্রের বিদ্যমান সমস্যারও সমাধান হবে। সমস্যা সৃষ্টি করেছে বিএনপি, সমাধানও করতে হবে বিএনপিকেই। নতুবা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে গণতন্ত্র যাবে এগিয়ে, বিএনপি পড়ে থাকবে ঠিক পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির মতো ধ্বংসস্ত‚প হয়ে। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন যাবে এগিয়ে। প্রসঙ্গত একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে কমবেশি গণসমর্থন নিয়ে যেমন নতুন দলের আবির্ভাব হয়েছে, তেমনি দলের বিলুপ্তি বা প্রায় বিলুপ্তিও ঘটছে। তাই বিএনপি কি করবে, তা বিএনপির নেতৃত্বকেই ভাবতে হবে।এখানে বলতেই হয় যে, যখন নানা বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও উন্নয়ন এবং সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গণতন্ত্র এগিয়ে যাচ্ছে, তখন গণতন্ত্র ও উন্নয়নের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা দাঁড়াচ্ছে। কয়েক দিন আগে বরেণ্য কবি সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুর পর শেষ শ্রদ্ধা জানতে গিয়েছিলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। পথে দেখলাম, একটা বিশাল সরকারি ব্যানার। তাতে লেখা, ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র’। কয়েক দিন পর এমনি অন্তত আরো একটি ব্যানার চোখে পড়ল। এই ধরনের স্লোগান মিছিলেও তোলা হচ্ছে। এমন একটা ধারণাও কোনো কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠী বা মহল থেকে তোলা হচ্ছে যে, আমাদের মতো দেশে উন্নয়নের অবাধ অগ্রগতির জন্য গণতন্ত্রকে সংকুচিত করার প্রয়োজন পড়ে। ধারণা করা যায়, ওই চিন্তা থেকে উল্লিখিত স্লোগানটি উত্থাপিত হয়েছে।উল্লিখিত স্লোগান সংবলিত ব্যানারটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর আমলের শেষ দিকের স্লোগানটি। ‘বঙ্গবন্ধুর মূলমন্ত্র শোষিতের গণতন্ত্র’। এখানে বলতেই হয় গণতন্ত্রের সঙ্গে নানা বিশেষণ যুক্ত করার প্রবণতা কিন্তু কেবল আমাদের দেশে নয়, বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে রয়েছে। সেনাশাসক জিয়ার সময় ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ শব্দটি আমদানি করা হয়েছিল। তাছাড়া অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র, প্রলেতারিয়েত গণতন্ত্র, সাম্যভিত্তিক গণতন্ত্র প্রভৃতি শব্দগুলো হরহামেশা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো, এভাবে বিশেষণ যুক্ত করে গণতন্ত্রকে শর্তযুক্ত করা কিংবা কোনো কিছুর অধীন করা কি আদৌ যথাযথ ও সঠিক? একেবারেই সঠিক বলে মনে হয় না। তাতে গণতন্ত্রের ভুল ব্যাখা করা হয় এবং তা গণমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত তার ফলাফল হয় খারাপ। প্রসঙ্গত কেবল গণতন্ত্র নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত আমাদের জাতীয় চারনীতির কোনোটিই কোনোটির অধীনস্থ বা শর্তযুক্ত নয়। প্রতিটি মূলনীতি নিজ অবস্থান নিয়েই গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং এক ও অভিভাজ্য। একটু খেয়াল করে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা পড়লেই দেখা যাবে যে, বঙ্গবন্ধু তখনকার সমাজতন্ত্র-ধনতন্ত্র ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঠাণ্ডাযুদ্ধ যুগে জাতীয় বাস্তবতায় গণতন্ত্রকে শর্তাধীন করার জন্য নয়, গণতন্ত্রকে শত্রুদের অপব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নেমেছিলেন এবং তা থেকেই ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ শব্দটি সামনে এসেছিল। যার পরিণাম ভালো হয়নি। আর বর্তমান দিনগুলোতে পরাজিত শত্রুরা যখন গণতন্ত্রকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে অতিতৎপর, তখন কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্যই বিগত নির্বাচনের ভেতর দিয়ে বর্তমানে গণতন্ত্র এমন রূপ পেয়েছে। যদি ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’ স্লোগানটি তোলা হয়, তবে কিন্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিএনপির দোষের দায়টা গিয়ে পড়ে জাতীয় রাজনীতির মূলধারার প্রধান দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপরেই। কেননা মনে হয় নিজেদের ক্ষমতায় রেখে উন্নয়নের জন্য আওয়ামী এমন নির্বাচন করেছে।নিঃসন্দেহে বর্তমানে উন্নয়ন নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়েছে। এই উৎসাহ-উদ্দীপনাকে সর্বোতভাবে এগিয়ে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে জাতিকে অগ্রসর করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অতি উৎসাহ থেকে ভ্রান্তিমূলক স্লোগান উত্থাপন পরিহার করার প্রয়োজন রয়েছে। অতি সব সময়েই খারাপ ফল বয়ে আনে। সবশেষে ক্ষুদ্র এ কলামে বলতে হয়, যখন উন্নয়ন ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং সম্ভাবনার দিগন্ত ক্রমে প্রসারিত হচ্ছে আর সেই সঙ্গে গণতন্ত্রও অতীতের মতো অবৈধ হস্তক্ষেপকে পেছনে ফেলে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে; তখন জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন ও বিশ্বের বুকে জাতিকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য এ দুয়ের বাধাবিঘ্নগুলোকে দূর করা জাতীয় দেশপ্রেমিকের কর্তব্য। দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ আসন্ন সম্মেলনের ভেতর দিয়ে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বাধাবিঘ্নগুলো দূর করার কর্মসূচি নিয়ে যথাযথভাবে অগ্রসর হোক এবং জাতির জীবনে সাফল্যের দুয়ার অবারিত হোক, এটাই আজকের কামনা। সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:১৬
false
fe
হরতালের আগুন, পরাজিত খলনায়কেরা হরতালের আগুন, পরাজিত খলনায়কেরাফকির ইলিয়াস=======================================এরা পরাজিত খলনায়ক। রাজনীতিতে এরা উচ্ছিষ্ট। তা না হলে এভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলে পড়তো না। এভাবে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারতো না। হরতাল দেয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, রাস্তয় গাড়ি কিংবা রিকশা চালানোও গণতান্ত্রিক অধিকার। আমি এই দেশে থাকি। আমি এই দেশের নাগরিক। আমি রাস্তায় বেরিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে পারবো না কেন? কেন আমার পথরোধ করবে কতিপয় পিকেটার সন্ত্রাসী? হরতালের নামে বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তা খুবই অমানবিক। এর নেপথ্য নায়ক-নায়িকারা খুবই হীনমন্য। তা না হলে তারা গুলশান-বনানীতে আরামে ঘুমিয়ে, দাবা খেলে সময় কাটাবেন। আর সাধারণ মানুষকে নামাবেন রাস্তায়? এটা কোন রাজনৈতিক পাঠ?চারদিকে হঠাৎ আগুন। শুরু হয় ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে পেছনে থাকা যাত্রীদের আর্তচিৎকার। চালক দ্রুত গাড়ি থামান। এরই মধ্যে গাড়ির অনেকটা অংশ আগুন গ্রাস করে ফেলেছে। হুড়াহুড়ি করে অনেক যাত্রী নামতে পারলেও আগুনে দগ্ধ হন ১০ যাত্রী। দগ্ধ এসব যাত্রীর কান্না-আহাজারিতে ছুটে আসে আশপাশের মানুষ। কারো কারো শরীরের অনেক স্থানে চামড়া ঝলসে উঠে গেছে। অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন দগ্ধরা। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গান পাউডার দিয়ে বাসটিতে আগুন জ্বালিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এ বর্বরোচিত ঘটনা ছাড়াও বিএনপি নেতৃত্বধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা চার দিনের হরতালের তৃতীয় দিনে গেলো মঙ্গলবার হরতালের সমর্থনে রাজধানীজুড়ে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা চালিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এতে ককটেল বিস্ফোরণ, ঝটিকা মছিল ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর মাঝেও রাস্তায় যান চলাচল ছিল অন্য হরতালের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি। পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে দশজনকে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদ- দেয়া হয়েছে একজনের।পত্রপত্রিকায় যে রিপোর্ট বেরিয়েছে তা খুবই মর্মান্তিক। এমন দৃশ্য দেখতে চাইবে না কোনো মানুষ। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন গৃহবধূ শিল্পী বেগম। কারণ তার রাজমিস্ত্রি স্বামী আবুল কালাম আজাদ আগুনে গুরুতর দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। কি হবে তার স্বামীর। তাদের জীবন সংসার কিভাবে চলবে তা নিয়ে দিশেহারা শিল্পী। একই বাসে দগ্ধ ইডেনছাত্রী রাবেয়ার বড় ভাই দৈনিক ডেইলি স্টারের সাংবাদিক রেফায়েত উল্লাহ মৃধা বলেন, জেবুন্নেছা হল থেকে বেরিয়ে ডেমরাগামী বাসে উঠে সানারপাড়ের গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন রাবেয়া। রাবেয়া প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার তার যোগদানের দিন। এখন কী হবে তা বুঝতে পারছি না। একই সময়ে বার্ন ইউনিটের নিচতলায় দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে গগনবিদারী কান্না-আর্তনাদ করছিলেন মাফিয়া বেগম নামে এক বৃদ্ধ মা। কারণ তার বড় সন্তান ভ্রাম্যমাণ ফুল বিক্রেতা আবদুর রহিম একই আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। রহিম তার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার রোজগারেই চলে সংসারের খরচ ও ভাইবোনদের লেখাপড়া। রহিমের এ অবস্থায় তার গোটা পরিবারের স্বপ্ন-আশা নিভে যেতে বসেছে। এভাবেই হরতালের নামে প্রতিনিয়ত সহিংস আগুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা দামের গাড়ি। সেই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ সহিংস আগুনের শিকার হয়ে গত সপ্তাহে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে স্কুলছাত্র মনির ও অটোরিকশার যাত্রী মুকুলকে। এখনো দগ্ধ ক্ষত শরীর নিয়ে হাসপাতালে অন্তত অর্ধশত নিরীহ গরিব মানুষ অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তবু থামছে না এ তা-ব। গেলো মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আগুনে দগ্ধদের দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বললেন, ‘যারা মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে তারা মানুষের জাত নয়। সরকারের কর্মকা- খারাপ লাগতে পারে তাই বলে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে হবে? মানুষ মেরে এ কোন ধরনের রাজনীতি?’প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন- রাজনৈতিক দলতো দূরের কথা, বিএনপি মানুষের জাতই না। এটা একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। আমার তো এখন বিএনপির প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। জয় বলেন, বিএনপি হরতাল ঘোষণা করে আগুন দিয়ে ৮ বছরের শিশু সুমিকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমারও ৭ বছরের একটি মেয়ে আছে। একজন বাবা হিসেবে এটা আমি কল্পনা করতে পারি না। এদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। এছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই। সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ নয়। যারা হরতালে সহিংসতা সৃষ্টির করতে বোমা, ককটেল, গুলি ও আগুন দেয়ার সরঞ্জামের জোগান দেয়ার জন্য কাজ করছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো গ্রেপ্তার করা হবে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকও এসব নিরীহ দগ্ধ মানুষকে দেখে মন্তব্য করেছেন, নরপিশাচ ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো অসম্ভব। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আবারো স্মরণ করেছেন সেই একাত্তরের কথা। বলেছেনÑ আর সংঘর্ষ নয়, দিলে একটু রহম আনুন। বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। খালেদার উদ্দেশে তিনি বলেন, পোড়া রোগীদের হাসপাতালে আসার সুযোগ করে দিন। আসুন সংঘর্ষের রাজনীতি ছেড়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন করি। গেলো মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ইনু বলেন, ৮৪ ঘণ্টার হরতালে বিরোধীদলীয় নেতার সন্ত্রাসী বাহিনী আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। এটা কোনো আন্দোলন বা রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এটা খালেদা জিয়ার সন্ত্রাসী তা-বের তত্ত্ব। তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেখেছি রাজাকার-আলবদররা একই ব্যবস্থা নিয়েছিল। তারা তখন নির্যাতন, হত্যা, খুন, ধর্ষণের তত্ত্ব নিয়েছিল। আজ আবার তাদের প্রেতাত্মারা বিরোধীদলীয় নেতার ছাতার তলে বসে এগুলো করছে। দেশ কি এভাবে পুড়ে যাবে? এভাবে পুড়বে মানুষ?সহিংসতায় গত ৩ সপ্তাহে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। যাদের অধিকাংশই মারা গেছেন বোমা ও আগুনে পুড়ে। সংঘাত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে জেলা থানা পর্যায়েও। সংশ্লিষ্টরা বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারমুখী অবস্থান মোকাবেলায় বোমার বিকল্প নেই। হরতাল সফলে ভয়ভীতি আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বোমাই তাদের ভরসা। আর এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে গান পাউডার ও পেট্রল বোমা। চোখের পলকেই পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে গাড়ি। প্রতিদিন পুড়ে মরছে মানুষ। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় ছটফট করছে অনেকেই। এদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। পেটের টানে বাসাবাড়ি থেকে বের হয়ে সহিংসতার শিকার হয়েছে।প্রবীণ কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সিএম শফি সামি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, গান পাউডার ও পেট্রল ছুড়ে আগুন দিনে মানুষ পুড়িয়ে মারা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। আমরা হিংস্র জাতি হয়ে গেছি এটা বিশ্বাস করতে পারি না। আমাদের মধ্যে কোনো মানবতা বোধ আছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, আমরা মানুষের পর্যায়ে রয়েছি বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এমন জঘন্য কর্মকা-ের কেউ আপত্তিও করে না। যাদের নির্দেশে এসব হচ্ছে তাদের ভাবা উচিত, তোমার ছেলে পুড়ে মারা গেলে কেমন লাগবে। রাজনীতিকদের দেশপ্রেম সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, মানবিক মূল্যবোধ নির্বাসনে পাঠিয়ে জঘন্য খেলায় আমরা মেতে উঠেছি। সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দেশ আজ মহাসংকটের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যাপারে এর চেয়েও বহুগুণ কঠিন সমস্যার সমাধান হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে। আমাদের যে সমস্যা এটা বিরাট কিছু নয়। আমাদের রাজনীতিকরা কেন এটা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারছেন না তা বোধগম্য হয় না।এই যে কোনো নিয়মনীতিই মানছে না- এরা কারা? এরা কি আদৌ বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিল। যাদের পিতৃপুরুষেরা এখনো বলে- ‘পাকিস্তনই ভালো ছিল’ তাদের কাছ থেকে আর কি-ই বা আশা করা যায়? দেশের ভেতরে গড়ে উঠেছে হাতবোমা তৈরির কারখানা। হরতালকে কেন্দ্র করে বাসাবাড়িগুলোতে মজুদ করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। নগরীর কাঁঠালবাগান, লালবাগ, তিন নেতার মাজার ও আদাবর থেকে প্রায় ৪০০ বোমা ও বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই বিস্ফোরক মজুদের সঙ্গে শিবির ক্যাডাররা জড়িত বলে অভিযোগে রয়েছে।গেলো সোমবার সকাল ৯টায় রাজধানীর লালবাগ থানাধীন আজিমপুর ১৫২/১, নিউপল্টন লাইন ইরাকি মাঠের কাছে একটি টিনশেড বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৬৭টি তাজা বোমা। এখানেও পাওয়া যায় শতাধিক বোমা তৈরির সরঞ্জাম। লালবাগ থানার ওসি নুরুল মুত্তাকিন জানিয়েছেন, বাড়ির মালিক গুলজার মিয়া প্রবাসী। বাড়িটি মূলত দারোয়ান কামাল হোসেন দেখভাল করেন। গত এপ্রিলে ওই কক্ষটি মাসিক আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া নেয় কয়েকজন যুবক। পুলিশ বলেছে, বোমাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই মজুদকৃত অবস্থায় ছিল। অনেকদিনের মজুদ করা ছিল। বোমাগুলো সুদক্ষ হাতের তৈরি। অভিযান পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান ছানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়েছে। উদ্ধারকৃত বোমাগুলো প্রশিক্ষিত হাতের তৈরি। এছাড়া বাড়ি থেকে অন্তত শতাধিক বোমা তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার হয়েছে। কাঁচামালগুলো খুবই উন্নতমানের। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ভালো কাঁচামাল দিয়ে শক্তিশালী বোমা তৈরির পরিকল্পনা ছিল। দেশে এই যে তা-বনৃত্য চলছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত। যারা তা করছেÑ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘মুসলমান হয়ে কিভাবে আরেক মুসলমানকে পুড়িয়ে মারতে পারে। এসব হত্যার দায় তাকেই নিতে হবে। কোনো না কোনো দিন এ হত্যার বিচারও আমরা করবো।’এই বিচার এখনই শুরু করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে আরো বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। যারা এমন সহিংস জ্বালাও পোড়াও করবে তাদের দ- আরো বাড়াতে হবে। এসব কাজ কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না।আমরা এটা খুব ভালো করেই জানি, পরাজিত ঐ আলবদর-রাজাকার ও ডানপন্থী মৌলবাদীরা মানুষকে বাধা না দিলে এদেশে কেউই হরতাল মানবে না। জীবনযাত্রা স্বাভাবিকভাবে চলবে। তাই তারা পরিকল্পিতভাবে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। তিনি আন্দোলন করবেন। কারণ ক্ষমতা তার চাই। তার দুইপুত্রকে দেশে আনতে হবে। এর জন্য মসনদের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, অন্য মানুষের পুত্র-কন্যাকে কেন তার চেলাচামুন্ডারা হত্যা করবে আগুনে পুড়িয়ে? আবারো বলি, এরা ইতিহাসের পরাজিত খলনায়ক। গণতন্ত্রের নামে তারা যা করছে, তা আমাদের আফগানিস্তন, পাকিস্তনের কথা মনে করিয়ে দেয়। না, আমরা এমন জালেমদের হাতে বন্দী হতে পারি না। দেশে আইন আছে। আইনের আওতায় এদের বিচার করা হোক, মানুষ সেটাই চাইছেন।------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৩
false
rn
ফোটোগ্রাফী- ২০ ফ্রেমের ভেতর সুন্দর করে ছবি সাজানোই হচ্ছে কম্পোজিশন। হুম, আজ আলোচনা করবো কম্পোজিশন নিয়ে। আমি খুব চেষ্টা সহজ সরল ভাবে লিখতে, যেন কারো বুঝতে সমস্যা না হয়। কঠিন ভাবে লিখে, শুধু শুধু আমি পন্ডিত সাজতে চাই না। আমার লেখা যদি কেউওই বুঝতেই না পারলো- তাহলে লিখে লাভ কি? ফোটোগ্রাফী নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের অনেক আগ্রহ। আমার সস্তা লেখা গুলোও অনেকে আগেহ নিয়ে পড়েন। আমার কাছে এসে অনেকেই বলেন, ভালো ছবি কিভাবে তুলবো? আমি তাদের কে বলি- অস্থির হবেন না, অনেক বেশী ধৈয্যশীল হোন। কম্পোজিশন মজাদার করতে হলে আগে আপনাকে কম্পোজিশনের বেসিক কিছু রুল জানতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে আপনি যদি একটা ভালো ছবি তুলতে পারেন- তাহলে মানুষ আপনার তোলা ছবি মুগ্ধ হয়ে দেখবে, আলোচনা করবে। কাজেই ভালো ছবি তোলার জন্য আপনার ফোটোগ্রাফীর সব বিষয় জানতে হবে, বুঝতে হবে, শুধু বড় ভাইদের পেছনে ঘুরলে হবে না। কম্পোজিশন ভালো না হলে, আপনার তোলা ছবির মান অনেকখানি কমে যাবে। ফ্রেম থেকে ছবির সাথে সামঞ্জস্য নেই এমন কিছু বাদ দিলেই আপনার ছবির মান অনেকখানি বেড়ে যাবে। সহজ ভাবে বলা যায়- একটা সুন্দর ছবির প্রান হলো কম্পোজিশন। যদি ছবি তোলার সময় দেখেন ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না, তাহলে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে দিতে পারেন।ভালো ছবি বলতে কি বুঝায়? আপনি অনেক ছবি তুলেছেন, এর মধ্যে কিছু ছবি আপনার ভালো লেগে যাবে। আপনার ভালো লাগা ছবি গুলোই ভালো ছবি। একটা নিখুঁত ভালো ছবি তুলতে পারলে- সবার আগে তা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। কিছু নিয়ম মেনে চললেই- ভালো ছবি তোলা সম্ভব। দর্শকদের আপনি কি দেখাতে চান- সেটা মাথায় রেখেই ছবি তুলুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্যামেরায় বন্ধী না করাই ভালো। ফ্রেমের চারপাশে যদি অপ্রয়োজনীয় কিছু দেখা যায়- তাতে অবশ্যই আপনার ছবির সৌন্দর্য কমে যাবে। সব সময় একই ভঙ্গিতে ছবি না তুলে নানান এঙ্গেলে ছবি তোলা উচিত। নতুন কিছু সৃষ্টি করার মনোভাব গড়ে তুলুন এবং তা উপভোগ করুন।মানুষের চোখ দু'টা কিন্তু ক্যামেরার চোখ একটি। দুই চোখ দিয়ে আমরা যতটা দেখি, এক চোখ দিয়ে ততটা দেখা যাবে না। (যদিও আপনি মনের চোখ দিয়ে অনেক বেশী দেখতে পাবেন।) দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সবার এক রকম নয়। ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রাখার পর, যা দেখবেন সেটাই আপনার ছবিতে থেকে যাবে, কাজেই খুব ভালো করে দেখুন, মন দিয়ে দেখুন, খুটিয়ে খুটিয়ে দেখুন। ফ্রেমের চারপাশ ভালো করে দেখুন- সব ঠিক-ঠাক আছে কিনা। যদি ফোটোগ্রাফীর নিয়ম মানতে আপনার ভালো না লাগে, তাহলে আপনি আপনার মতন করে ছবি তুলুন, কারন শিল্প এবং শৈল্পিকতা কোনো নিয়মের ধার-ধারে না। আপনি সুন্দর ছবি তোলার জন্য নানান রকম গবেষনা করুন নিয়মিত। ছবি তোলা নির্ভর করে আপনার চিন্তা শক্তির গভীরতার ওপর।আপনার ছবির সাবজেক্টকে যে সবসময় ফ্রেমের মাঝখানেই রাখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভিউ ফাইন্ডারে চোখ লাগিয়ে সঠিক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, একটা ভালো ছবির জন্য। নো অস্থির। একটা ছবিতে যদি দুইটা বা তিনটা বিষয় থাকে তাহলে ছবিত গ্রহনযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। অ্যাঙ্গেল অব ভিউ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন। মাটিতে শুয়ে পড়ুন, গাছে উঠে পড়ুন। বুক পর্যন্ত পানিতে নেমে যান, টাকাপয়সা থাকলে হেলিকপ্টারে উঠে বার্ডস আই ভিউ ও তোলার চেষ্টা করুন! পরিশ্রম করুন, প্রচুর পরিশ্রম করুন। পরিশ্রম করলেই না আপনি ভাল ছবি পাবেন। রাস্তায় বেরোলেই দেখবেন, কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে ছবি তুলতে তুলতে হেঁটে বেড়াচ্ছে ছেলে-মেয়ের দল। লাইট, ফ্ল্যাশ, ফ্রেমিং, কম্পোজিশন কিছুই হয়তো তারা জানে না। ছবি তোলাতেই তাদের আনন্দ। কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে অনেকেই তো ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু বহু আকাক্সিক্ষত একটা মুহূর্তকে খুব অল্প কজনই পারে হাতের ক্যামেরায় বন্দি করতে। ক্যামেরার মুন্সিয়ানা দেখিয়ে কোনো মুহূর্তকে বন্দি করার নামই ফটোগ্রাফি।
false
fe
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রায় গণমানুষের সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রায় গণমানুষের সিদ্ধান্তফকির ইলিয়াস====================================একটি রাষ্ট্রে গণমানুষের রায়ই প্রধান শক্তি। তারা চাইলে দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারেন। এমন ধারাবাহিকতা আমরা বারবার দেখেছি। এই মানুষেরাই এদেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আবার এই স্বাধীন বাংলাদেশেই একদল হায়েনা শেখ মুজিবকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতি আবারো একটি জাতীয় শোক দিবস পালন করছে। পনেরই আগস্টের সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো উঁকি দেয় প্রজন্মের প্রাণে প্রাণে। পিতার রক্তাক্ত দেহস্মৃতি এখনো আক্রান্ত করছে আমাদের মনন। যে যন্ত্রণাটি আরো তীব্র পীড়ার কারণ হয়- তা হচ্ছে সেসব খুনিদের কেউ কেউ এখনো বিদেশে পালিয়ে আছে। নবম জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনের আগে দেশে ঘটে গিয়েছিল একটি স্নায়ুযুদ্ধ। সে যুদ্ধটি কী ছিল এবং কেন ছিলÑ তা অনুমান করা আজ আর কারো পক্ষেই কঠিন কিছু নয়। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে যারা রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাদের কিছু কিছু কর্ম নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর সেই সময়ের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের বক্তব্যগুলোতে আবারো নজর বুলালে দেখা যাবে, তিনি জাতির জনক মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাগিদটিই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজটি সম্পন্ন হতে হবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই শাণিত আঙুলটি একটি বাণী জানাতে চেয়েছিল গোটা বিশ্ববাসীকে। আর তা হচ্ছেÑ বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের সত্তা নিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির নাগরিক হতে চায় বাঙালিরা। এটাই ছিল তার অপরাধ। শেখ মুজিবের বিশিষ্টতা ছিল এই, তার অগ্রজপ্রতিম অথবা তার সমসাময়িক আরো বেশ কজন রাজনৈতিক নেতা বর্তমান থাকার পরও তারা কেউ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই চেতনা বাণীটুকু জাতিকে শোনাতে পারেননি। ‘স্বাধীন বাংলাদেশ চাই’Ñ এই দৃঢ়তা পোষণ করতে পারেননি। কোনো কোনো অপপ্রচারক বলে থাকেন, শেখ মুজিব নাকি নিজের প্রাণ বাঁচাতেই পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে ধরা দিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন গ্রেপ্তার হয়ে। আমি তাদের অবগতির জন্য বলি, সেদিন, সে সময়ে বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদগুলো আপনারা আর্কাইভে গিয়ে একটু খুঁজে দেখুন। শেখ মুজিব মহানায়কের মতোই নিজ মাতৃভূমির মাটি পায়ে চেপে রেখেছিলেন। তিনি গ্রেপ্তার হবেন তা জেনেও আত্মগোপন করেননি। এটাও জানতেন হানাদার বাহিনীর বুলেট তার বুক ঝাঁঝরা করে দিতে পারে যে কোনো সময়। তারপরও তিনি তার পদযুগল সামান্য বিচ্ছিন্ন করেননি বাংলার মাটি থেকে। সত্য উচ্চারণে কুণ্ঠিত হননি। এটা খুবই আশার কথা শেখ মুজিব প্রতিদিন পঠিত হচ্ছেন বাঙালি প্রজন্ম দ্বারা। অতিসম্প্রতি ইউটিউবে শেখ মুজিবের সাতই মার্চের ভাষণটি শুনছিলাম। দেখলাম, সেখানে নামে- বেনামে বেশ কিছু হানাদার-দোসর নানা রকম কটাক্ষ বাক্য লিখেছে মন্তব্য কলামে। বাঙালি প্রজন্মের শাণিত চেতনাধারী কেউ কেউ এসব হায়েনা পাকিস্তানি রাজাকারদের সঙ্গে তর্কেও লিপ্ত হয়েছেন। তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট বোঝা গেলো, জীবিত মুজিবের চেয়ে শহীদ মুজিবের বাণী তাদের আরো বেশি গাত্রদাহের কারণ। কেন? এই প্রশ্নটির জবাব খোঁজা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করি। কিছুদিন আগে পত্র-পত্রিকায় একটি ছোট্ট সংবাদ অনেকেরই হাসির খোরাক হয়েছিল। একাত্তরের ঘাতক চক্রের অন্যতম সহযোগী গোলাম আযম নাকি স্মৃতিশক্তি হারাতে বসেছেন। তিনি নাকি একাত্তরের কোনো স্মৃতিই আর মনে করতে পারছেন না। আচ্ছা, মানুষ তার জীবনের কোন স্মৃতিগুলো বেশি রোমন্থন করতে ভালোবাসে? মধুর স্মৃতিÑ না বেদনার স্মৃতি? অন্তিম বয়সে এসে গোলাম আযম হয়তো বুঝতে পারছেন, সেই হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিটি ছিল তার জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। কিন্তু প্রজন্ম, ইতিহাস, স্বদেশ, স্বকাল কি কোনো খুনি চক্রকে ক্ষমা করে? ক্ষমা করতে পারে? না- পারে না। আর পারে না বলেই এখনো নাৎসিদের সমাধিস্থলের দিকে তাকিয়ে থু থু ছুড়ে হাজার হাজার প্রজন্মের সন্তান। শেখ মুজিব সেই শক্তি আর সাহস দিয়ে এই প্রত্যয়ী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলার মজুর, বাংলার কৃষক, বাংলার অধ্যাপক, বাংলার বুদ্ধিজীবী তাদের মেধা এই বাংলার মাটির কল্যাণেই ব্যয় করবে। আমরা দেখি জাতির জনকের অনেক নীতির সস্তা সমালোচক এখনো গলা ঝেড়ে রাজপথ গরম করেন। তাদের সঠিক ইতিহাস চর্চার বিনীত অনুরোধ জানাই। কিছু চিহ্নিত রাজাকার বাদে, যারা শেখ মুজিবের সমালোচনার নামে মিথ্যার বেসাতি ছড়াতে চান তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী তা দেখা উচিত। মুজিব নিয়ে সব তর্কের শেষ সমাধান যদি হয়Ñ ‘আমরা পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিলাম’ তা হলে তো বুঝতে অসুবিধা হয় না তারা এখনো মননে পাকিবীজ বহন করছেন। তাদের সঙ্গে তর্ক করার তো কোনো মানেই হতে পারে না। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির ভৌগোলিক মর্যাদা এবং জাতিসত্তার উন্মেষ এখন পর্যন্ত কতোটা বিস্তৃত- তা কারো অজানা নয়। চরম মৌলবাদী আর হীনম্মন্যতার পসরা সাজিয়ে যে একটি চক্র পাকিস্তান দখল করে নিয়েছে তারা হয়তো এই ভূখ-কে আরো বিভক্ত করেই ক্ষান্ত হবে। বাংলাদেশ নামক ভূসীমাটি যদি সেই ১৯৪৭ সালেই ব্রিটিশের কাছ থেকে নিজস্বতায় মুক্তি পেতো তবে আজ বাংলাদেশের অবস্থান অন্যরকম হতো। তা সম্ভব হয়নি কারণ বাঙালির যোগ্য নেতৃত্ব ছিল না। সেই নেতৃত্ব সামনে এগিয়ে আসতে কিংবা গড়ে উঠতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাঙালি জাতি সামনে এগুতে চায়। এগিয়ে যেতে চায় জাতির জনক মুজিবের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে। আর তাই জাতির জনককে যারা সপরিবারে হত্যা করেছিল, তাদের বিচারের দাবিটি ছিল এই আপামর মানুষের। আমাদের মনে আছে এই সরকার বলেছিল, বিদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পাকড়াও করে আনা হবে। তারা তা পারেনি। সবকিছু ‘কূটনৈতিক’ ছায়াবন্দীই থেকে গেছে। এমন অনেক ব্যর্থতাই রয়েছে এই সরকারের। শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার বিচারটি পর্যন্ত করতে পারেনি। কেন পারলো নাÑ এর কোনো জবাব নেই। সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের মৌলাবাদী এজেন্টরা নানাভাবেই মাঠে নেমেছে। তারা ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’ চর্চার নামে একটি চিহ্নিত মহলের পারপাস সার্ভ করছে। যদি তা না হতো, তবে ‘অধিকার’ নামের সংগঠনটি ঐ রাতে ‘তথাকথিত নিহত’দের নামের তালিকা প্রকাশ করতে পারলো না কেন? রমজান ও ঈদ শেষ হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। এই কঠিন সময়ে মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশে এবং বিদেশে প্রধান বিরোধী দলের সমর্থকরা ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছেÑ আওয়ামী লীগ অনেক পেয়েছে। এবার আমাদের পাওয়ার পালা। এদেশের রাজনীতি কি তবে ময়লা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ? গণতন্ত্র বিষয়টি শুধু জানার বিষয় নয় বরং চর্চার বিষয়। চর্চার বিষয়টি যতো তৃণমূল থেকে হতে থাকবে, গণতন্ত্রের ভিত্তি ততো মজবুত হতে থাকবে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্যও প্রয়োজন এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা। এর জন্য প্রয়োজন সব দলের নির্বিঘœ অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে মডেল সৃষ্টি হয়েছে তা জনগণের শাসনের পরিবর্তে ক্ষমতাসীনদের শাসনে পরিণত করেছে। মূলত ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া এবং অসহিষ্ণু শাসনের কারণেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বারবার হোঁচট খাচ্ছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতি ক্ষমতাসীনদের অনাগ্রহই এর জন্য দায়ী। তুলনামূলক নবীন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির এই দেশে, জনমানুষের ঐকমত্যের পরও কেবল ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া মনোভাব এবং ক্ষমতার দুর্বিনীত মোহই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে ব্যাহত করছে। ঘুষ, দুর্নীতি, হামলা-মামলাসহ বিরোধী পক্ষের প্রতি অতি অসহিষ্ণুতা পরবর্তী নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় ক্ষমতাসীনরা জনসমর্থনের চেয়ে ভিন্ন উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টা করে। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য পূরণের বেপরোয়া মনোভাব বিরোধী পক্ষকেও অসহিষ্ণু ও বেপরোয়া করে তুলেছে, যা রাজনৈতিক সংঘাতের এক ভয়াবহ পরিণতির সৃষ্টি করেছে। অথচ এমনটি এই বাংলাদেশে কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। ঈদের পরের হরতাল ও জ্বালাও-পোড়াও প্রমাণ করেছে এদেশে কারা জঙ্গিবাদীদের হর্তাকর্তা। যারা এখনো অস্ত্রের মহড়া দেখিয়ে এই দেশে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, জঙ্গিদের বিস্তার ঘটাতে চায়। তাদের রুখে দেয়া দরকার। জাতির জনক ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নির্বিশেষে মানুষের বাংলাদেশ, মানবতার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। সেই মাটিই হোক প্রজন্মের সোনার বাংলা।-------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ১৭ আগস্ট ২০১৩
false
rn
আসুন ফিলিস্তিন দেশটি সম্পর্কে জানি ভূমধ্যসাগরের পূর্বে ১০,৪২৯ বর্গমাইলব্যাপী ফিলিস্তিন দেশটি ছিল অটোমান খেলাফতের অধীন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যারা ছিল বৃটেন বিরোধী জোটে৷ তখন যুদ্ধ জয়ে ফিলিস্তিনদের সহযোগিতা পাওয়ার আশায় ১৯১৭ সালে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর যুদ্ধে জয়ী হলে এই ভূমিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে বলে আশ্বাস দেন। প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবিচারের জন্য সারাবিশ্ববাসীই কোন না কোনভাবে কমবেশী দায়ী, যদিও মূল অপরাধী জায়নিস্টরা, ব্রিটিশ ওপনিবেশবাদীরা এবং আরব রাজারা। ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। কিন্তু ১৯১৪ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত বৃটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ২০ হাজারে উন্নীত হয়। এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এবং জনগন পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিদের অধিকার মনে করে, শুধু ইজরায়েল, যুক্তরাষ্ঠ্র এবং মাঝে মাঝে কিছু ইইউ ডিপ্লোমেটরা পূর্ব জেরুজালেমের উপর ফিলিস্তিনি সার্বভৌমত্ব মানতে রাজি না। ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসঙ্ঘে সদস্যপদের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছিলেন। সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে তিনি এ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তবে তখন তার আবেদনে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো কর্ণপাত করেনি। অতীতে ফিলিস্তিনি শহর রামাল্লায় নারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল একেবারেই হাতেগোনা। অথচ এখন নারীরা এ শহরে ফুলের দোকান, ফলের দোকান এবং খাবারের দোকান ছাড়াও ক্যাফেটেরিয়ার মতো সৃজনশীল ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। এ শহরে প্রত্যেক নারীই দক্ষতার সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।ফিলিস্তিনে অনেক পয়গম্বরের আগমন ঘটেছিল এবং অনেক বৃহৎ সভ্যতার জন্মস্থান। তিন মহাদেশের যোগাযোগ পথগুলোর মধ্যস্থলে এর অবস্থান। ফিলিস্তিন মিশর, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া ও এশিয়া মাইনরের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল। ফিলিস্তিনের অবস্থান এশিয়া মহাদেশের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে। উত্তরে লেবানন ও সিরিয়া, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে আকাবা উপসাগর ও মিশরীয় উপদ্বীপ এবং পূর্বে জর্ডান রাজ্য দ্বারা বেষ্টিত। গ্রীষ্ম শুষ্ক উষ্ণ। শীতকাল শীত ও বর্ষণ পবন। শীতকালে নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মকালে শুষ্ক গরম। ওয়েষ্ট ব্যাংক তথা পশ্চিম তীরে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও শীতকালে গড় ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ফিলিস্তিনি সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, ১৯৯৫ সালে কর্মক্ষেত্রে এখানকার নারীর অংশগ্রহণের হার ছিল ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু ১৭ বছরের ব্যবধানে বেড়ে বর্তমানে তা পৌঁছে গেছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশে। ফিলিস্তিনে তিন প্রকারের মুদ্রার প্রচলন আছে। জর্ডানের দিনার, যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ও সিরায়ীলি শেকেল।সরকারী ভাষা আরবী। তবে বেশীর ভাগ ইংরেজী বলে, বেশ কিছু হির্রু ও যৎ সামান্য ফরাসী এমনকি ল্যাটিন। ঐতিহাসিক ক্রমে জনগণ কে ফিলিস্তিনি বলা হয়। যদিও ধর্মগত ভাবে বিভিন্ন ধর্ম প্রচলিত। ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ শহর রামাল্লাহ ফিলিস্তিনের গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পর্যটনের সম্ভাবনা আর সব দেশের তুলনায় কম। যদিও ধর্মীয় কারণে এর যথেষ্ট গুরুত্ব আছে বৈকি। তথাপিও দেখা গেছে বার্ষিক গড়ে প্রায় ৫২০০০০ পর্যটক আনা গোনা করে থাকে। এর মধ্যে গাজা শহরে ৪১০০০ ও খান ইউনিস শহরে ১৮০০০। এখন ফিলিস্তিনি মন্ত্রিসভার এক-চতুর্থাংশই নারী নেতৃত্বে পরিচালিত।প্রচীনকালে কেনান নামে পরিচিত ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডের আয়তন ২৫০০ বর্গ কিলোমিটার। ফিলিস্তিন একটি উর্বর ও ভারসাম্যপূর্ণ আবহাওয়ার অধিকারী দেশ। এলাকাটি হযরত মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর মত মহান নবীদের আর্বিভাবের এবং হযরত ইবরাহীমের (আঃ) চলাচল ও বসবাসের স্থান ছিল। বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। শহরটি পূর্বদিক থেকে যায়ন নামক পাহাড় ও পশ্চিম দিক থেকে যয়তুন নামক পাহাড় দিয়ে ঘেরা। যায়ন তথা রৌদ্রোজ্জ্বল পাহাড়ের নাম তৌরাত ও ইঞ্জিলেও বর্ণিত হয়েছে।ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার বৃহৎ দেশ যে কিনা সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ব্রাজিলের পর আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি এভং উরুগুয়ে সরকারও ঘোষণা করেছিল স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট গঠনকে তারা সমর্থন দেবে।ল্যাটিন আমেরিকার এইসব দেশের সরকারগুলোর ঘোষণায় ভীষণ খুশির একটা নন্দিত তরঙ্গ বয়ে গিয়েছিল ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে। পক্ষান্তরে খুব স্বাভাবিকভাবেই ইহুদিবাদী ইসরাইলী কর্মকর্তাদের মাঝে দেখা দিয়েছিল মারাত্মক উদ্বেগ ও আশঙ্কা। ইহুদীবাদী ইসরাইল ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনকে দখল করে রেখেছে। তাদের এ অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ জানিয়েছে তাদেরকে হত্যা কিংবা কারাগারে বন্দী করা হয়েছে এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। বিষ্ময়কর হলেও সত্য যে, ইসরাইলী সেনাদের হামলা থেকে নিষ্পাপ শিশুরাও রেহাই পায় না।
false
ij
‘চারিদিকে মোর উড়িছে কেবল শুকানো পাতার মলিন ফুলদল।’ নজরুলের একটি গান কাজী নজরুল ইসলাম। কবির শেষ জীবনের ছবি। এত বয়সেও চোখের কৌতূহলজ্যোতি নিভে নাই। কিছু বোঝা গেল কি? হ্যাঁ, জীবনের কোনও অব্যস্থাতেও চোখের কৌতূহলের জ্যোতি যেন ম্লান না হয়ে আসে। আমাদিগের প্রতি কবির এই অনিবার্য নির্দেশ। এখন তো বাঙালির অনভিপ্রেত দুযোর্গের কাল চলছে। হিরণময় জ্যের্তিময় কাজী নজরুল ইসলাম এক্ষণে আমাদিগের সহায় হোন-ভরসাস্থল হোন। এই প্রার্থনা। রবীন্দ্রবলয়ে বেঁচে থেকেও বাংলা গানকে নিজস্ব শৈলী ও আঙ্গিকে এক লোকোত্তর স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। যে গানের তাৎপর্য এই একুশ শতকেও ম্লান তো নয়ই বরং নজরুলের গানের দিকে নতুন ভাবে আজও তাকানো যায়। ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে’ তেমনি একটি গান। মাত্র ৮ লাইনের গান। হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে কুড়াই ঝরা ফুল একলা আমি। তুমি কেন হায় আসিলে হেথায় সুখের সরগ (স্বর্গ) হইতে নামি? চারিদিকে মোর উড়িছে কেবল শুকানো পাতার মলিন ফুলদল। বৃথাই সেথা হায় তব আঁখিজল ছিটাও অবিরল দিবসযামী। এলে অবেলায় পথিক বেভুল বিঁধিছে কাঁটা নাহি যবে ফুল। কী দিয়ে বরণ করি ও চরণ নিভিছে জীবন জীবনস্বামী। বোঝা যায় বিরহের গান। কিন্তু, প্রথম লাইনেই হোঁটচ।‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে’-এই কথাটাই কেমন রহস্যময়। নিকুঞ্জপথে মানে বাগানের পথ। সেখানে কেউ ফুল কুড়াচ্ছে। হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে কুড়াই ঝরা ফুল একলা আমি। বোঝা গেল। কিন্তু, হারানো হিয়ার কেন? রহস্য এখানেই। তাই বলছিলাম:‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে’-এই কথাটাই কেমন রহস্যময়। ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে’-এই কথার ইংরেজি কী হবে? গারডেন পাথ অভ লস্ট হার্ট। লস্ট হার্ট? ছবিটা ঝাপসা এখানেই। যেন, বাস্তবে ঘটছে না কিছুই। সবই বিবর্ণ স্বপ্ন দৃশ্য। এই গানটি নজরুল কত সালে লিখেছিলেন? সঠিক বলতে পারি না। কিন্তু, সাহিত্য অলোচনায় ‘সুরিয়ালিজম’ নামক একটি শব্দ ততদিনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে বলাতে সবটাই পরাবাস্তব বলে ভ্রম হয়। গানটির দৃশ্যকল্পও কেমন স্বপ্নময়। চারিদিকে মোর উড়িছে কেবল শুকানো পাতার মলিন ফুলদল। বৃথাই সেথা হায় তব আঁখিজল ছিটাও অবিরল দিবসযামী। সম্ভবত কিছুই ঘটেনি। বিরহীনি কল্পনা করেছে। হারানো হিয়ার নিকুঞ্জপথে কুড়াই ঝরা ফুল একলা আমি। তুমি কেন হায় আসিলে হেথায় সুখের সরগ (স্বর্গ) হইতে নামি? সুখের সরগ (স্বর্গ) বলাতে রহস্য ঘনিভূত হয়েছে। মনে হয় কেউ উপর থেকে নেমে এসেছে। যে এল-তাকে আবার-অবেলার পথিক বেভুল বলা হচ্ছে। এলে অবেলায় পথিক বেভুল বিঁধিছে কাঁটা নাহি যবে ফুল। হারানো প্রেমিককে বরণ করতে চাচ্ছে; পারছে না। কেননা, জীবন নিভে যাচেছ। কী দিয়ে বরণ করি ও চরণ নিভিছে জীবন জীবনস্বামী। কথাও হচ্ছে। তারপরও সবই কেমন আবছা। ম্লান। এই সুরিয়ালিস্ট নজরুলের আপন বৈশিষ্ট্য। তখন তাই বলছিলাম। রবীন্দ্রবলয়ে বেঁচে থেকেও বাংলা গানকে নিজস্ব শৈলী ও আঙ্গিকে এক লোকোত্তর স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। যে গানের তাৎপর্য এই একুশ শতকেও ম্লান তো নয়ই বরং নজরুলের গানের দিকে নতুন ভাবে আজও তাকানো যায়। অনুরাধা পাডোয়ালের গাওয়া গানটির লিঙ্ক দিচ্ছি। মন খারাপ করে শুনুন। Click This Link) সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯
false
rg
অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে !!!! ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’ মানিক বন্দোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন। আজ পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ ১৪২২ মঙ্গল শোভাযাত্রায় কবিতার এই লাইনকেই প্রতিপাদ্য বিষয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। যার প্রেক্ষাপট ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলার মাটিতে উগ্রবাদী হামলায় লেখক অভিজিৎ রায় ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান খুন হওয়ার ঘটনা। মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান প্রতীকটি ছিল প্রায় ২০ ফুট লম্বা মুষ্টিবদ্ধ হাত, যার আঙুলে রয়েছে লাল রং। আর এই বিশাল হাত গলা টিপে ধরেছে সাধারণ মানুষের কণ্ঠকে।এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রধান প্রতীক ছাড়াও বড় আকারের অন্যান্য প্রতীকের মধ্যে ছিল কাকাতুয়া, ময়ূর, বাঘ, হাতি, ঘোড়া, ছাগল ও টেপা পুতুলসহ ১১টি কাঠামো। আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ছিল ছাগল ও দুটি ছানা। কলসিসহ বাঙালি গৃহবধূ সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এমন গ্রামীণ দৃশ্যের উপস্থাপনাও ছিল শোভাযাত্রায়। এছাড়া ছিল বিশাল আকারের মাছের পাশাপাশি কয়েকশ মাঝারি ও ছোট আকারের মুখোশ, পাখ-পাখালি। অশুভকে তাড়িয়ে মঙ্গলকে বরণ করে নিতে কেউবা মুখোশ পরে, কেউবা বাহারি বর্ণিল সাজে এই শোভাযাত্রায় শরিক হয়েছেন। এমন কি শোভাযাত্রায় সঙ্গী ছিলেন আমাদের হিজড়া সম্প্রদায়েরও অনেকে।বাংলাদেশে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কেন্দ্রীয় আয়োজনে মধ্যে রমনা বটমূলে (অশথ্ব তলায়) ছায়ানট কর্তৃক নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গানে গানে 'এসো হে বৈশাখ' বর্ষবরণ আর চারকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা সবচেয়ে বড় আয়োজন। ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে পহেলা বৈশাখ এখন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসবে পরিনত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ এখন বাঙালির প্রাণের উৎসব এবং সর্ববৃহত মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। বিগত বছরগুলোর সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে বাংলা নববর্ষ ১৪২২ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব আয়োজন ও সর্বস্তরের সকল শ্রেণীপেশার সাধারণ মানুষের মিলনমেলায় টইটম্বুর। বাঙালি যে একটা উৎসবপ্রেমী জাতি এটা আজ আবারো বিশ্ববাসী বাংলা নতুন বছরের শুভক্ষণে নতুন করে প্রত্যক্ষ করল। বাঙালির এই উৎসবপ্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে করপোরেট বেনিয়া কোম্পানিগুলো এখন উৎসবেও নানান কিসিমের মুনাফা বাণিজ্যের ছোবল মারছে। আজ পারটেক্স বেভারেজের কোমল পানীয় রয়েল ক্রাউন (আরসি) কোলা চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় চারুকলার ডিনের নিষেধ অমান্য করেই সম্পূর্ণ নীতি বহির্ভূতভাবে বাণিজ্যিক প্রচারণা চালিয়েছে। আরসি কোলার লোগো সম্বলিত টি-শার্ট, ক্যাপ ও ছাতা নিয়ে অন্তত শতাধিক কর্মচারী এই মঙ্গল শোভাযাত্রার পায়রা প্রতীকটির চারপাশ জোরপূর্বক দখল করে নেয়। এসময় আরসি কোলার নামে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগানও দিতে থাকে। মঙ্গল শোভাযাত্রার সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের নিষেধকে থোরাই কেয়ার না করে আরসি কোলা আজ এই ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। কোনো ধরনের বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীদের নিরলস পরিশ্রমের ফসল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা গত আড়াই দশক ধরে বাঙালির চিরাচরিত ঐতিহ্যের চেতনা বহন করে আসছে। যেখানে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক প্রচারণার কোনোই সুযোগ নেই। প্রতিবছর বর্ষবরণের উৎসবের মূল আকর্ষণ চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় স্বেচ্ছায় হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহন করেন। অথচ এবার আরসি কোলার মত একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান সেই শোভাযাত্রায় নিজেদেরকে ব্র্যান্ডিং করার এক অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। যা বিনা অনুমতিতে করপোরেট বল প্রয়োগের সামিল।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া আরসি কোলা কোন যুক্তিতে এভাবে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে নিজেদের বিজ্ঞাপন প্রচারে জোরজবরদস্তি করার মত দুঃসাহস দেখাল, সেটাই ছিল আজকের পহেলা বৈশাখের উৎসবের একমাত্র অস্বস্থির জায়গা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা চারুকলা অনুষদের উচিত এখন আরসি কোলার বিরুদ্ধে আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়া। চারকলার শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর একমাসেরও বেশি সময় নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে আয়োজন করে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার। পুরো আয়োজনটি করতে গড়ে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ হয়। যার প্রায় পুরোটাই ব্যবস্থা হয় শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম বিক্রি করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কিছু অনুদান দেয়। তবে তা বিরাট খরচের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এমন একটি পরিশ্রমের ফসলকে আরসি কোলা এভাবে হীন বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহার করার যে প্রচেষ্টা করেছে এটা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী। চারুকলা অনুষদের সম্পূর্ণ নিজস্ব এই আয়োজনে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জোরপূর্বক এভাবে ঢুকে পরা এক ধরনের বলপ্রয়োগের সামিল। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা চারুকলা অনুষদের উচিত পারটেক্স বেভারেজের কোমল পানীয় রয়েল ক্রাউন (আরসি) কোলার বিরুদ্ধে মামলা করা এবং দৃষ্টান্তমূলক ক্ষতিপূরণ আদায় করা। যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান সর্বসাধারণের এমন অনুষ্ঠানে আর কখনো ধৃষ্টতা দেখানোর দুঃসাহস না দেখায়। কেবল আর্থিকভাবে জরিমানা করলেই করপোরেট প্রতিষ্ঠানের এই মানসিকতার বদল হতে পারে। নইলে এই ধরনের করপোরেট বাণিজ্যের ছোবল আগামীতে আরো বেড়ে যাবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতিতে একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের এত বড় একটি জমায়েত কিভাবে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কলংকিত করল, সেই দায় এখন দায়িত্বরত বাহিনী এড়িয়ে যেতে পারে না। হয়তো আরসি কোলা এই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো ধরনের টোপ দিয়েই সবার চোখের সামনে এত বড় একটা অপরাধ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যেই এ নিয়ে জিজ্ঞাসা কাজ করেছে যে, চারুকলা অনুষদ কি এবার এই আয়োজনের খরচ আরসি কোলার থেকে স্পন্সর নিল নাকি? চারুকলার উচিত মঙ্গল শোভাযাত্রার মানহানীর জন্য এখন আরসি কোলার নামে বিশাল অংকের ক্ষতিপূরণ মামলা করা। নইলে ভবিষ্যতে এ ধরনের করপোরেট হামলা সর্বজনিন এমন উৎসবকে ঘিরে বাংলাদেশে চলতেই থাকবে। যা কারো কাছেই মোটেও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। মঙ্গল শোভাযাত্রার অর্থ যেখানে সকল অমঙ্গল ও অশুভকে জয় করে সকলের জন্য মঙ্গল ও কল্যানকর আগামীর প্রত্যাশা। সেখানে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় এভাবে আরসি কোলার বিনা অনুমতিতে জোরপূর্বক আগ্রাসনকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা অনুষদকে আরসি কোলার এই হীন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এখনই মামলা করার পাশাপাশি সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষন করার অনুরোধ জানাই। বাঙালির সর্ববৃহত প্রাণের উৎসবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কালো থাবাকে এখনই দমন করা না গেলে আমাদের ঐতিহ্য ও চেতনাকে এরা এক সময় গিলে ফেলার চেষ্টা করবে। বাঙালির উৎসবের ভেতরে অপসংস্কৃতি আমদানির জন্য এসব করপোরেট বেনিয়াশ্রেণীরাই দায়ী। এদের বিরুদ্ধে এখনই সজাগ না হলে বাঙালি এক সময় ঐতিহ্য সংকটের মুখোমুখি হবে। কারণ, এদের মত করপোরেট প্রতিষ্ঠানরাই আজকের এই ভুভুজেলা বিরক্তিকর শব্দ আমদানি করেছে। এটাকে কোনোভাবেই হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নাই। অতএব সাধু সাবধান। জয়তু পহেলা বৈশাখ। জয়তু বাংলা নববর্ষ। ....................................ঢাকাপহেলা বৈশাখ ১৪২২ [সূত্র: বিভিন্ন পত্রিকায় পড়া সংবাদ]
false
mk
Bigots demand death for top bloggers !!!!!!!!! A few hundred people staged a rally in Hathazari upazila headquarters in Chittagong Tuesday afternoon demanding death penalty for top bloggers of the ongoing Shahbagh movement.The bigots further threatened of tougher movement if the bloggers were not punished as they demanded.“They are active online for several years defaming Islam and Prophet Muhammad (pbuh) through their writings,” Maulana Jahangir Alam, upazila unit general secretary of Bangladesh Khelafat Andolon, told The Daily Star.Hefazate-e-Islam, meanwhile, announced it would hold a mass rally at Hathazari Parbati High School on February 25 to press home the same demand.During Tuesday's demonstration, the speakers specifically demanded deaths for Omi Rahman Pial, Ibrahim Khalil, Arif Jebtik and Asif Mohiuddin who are at the forefront of the Shahbagh movement that continued for the 15th straight day on Tuesday in demand of capital punishment to the war criminals.Jointly organised by Khelafat Andolon and Islami Oikkya Jote, the crowd of around 500 people, mostly from a local Darul Ulum Moinul Islam Madrasa, gathered at Dakbanglo intersection around 3:00pm.Speakers at the rally termed the bloggers as ‘atheists’ and demanded their capital punishment, our Chittagong correspondent reported quoting Nurul Hakim, a sub-inspector at Hathazari Police Station.Asked whether the organisation had taken permission for the rally, Liakat Ali, officer-in-charge of the police station, told The Daily Star that prior permission is not required for all types of programmes.“We are aware about the rally,” he said.According to a post on a Shahbagh movement Facebook page, the Hathazari agitators distributed leaflets carrying the photos of some frontline bloggers of the Shahbagh movement terming them as atheists."Banners hung there say the Shahbagh movement has been organised to insult Islam," the post reads. the daily star
false
fe
কবিতার চিত্রকল্প, কালিক চেতনার ধারা কবিতার চিত্রকল্প, কালিক চেতনার ধারা ফকির ইলিয়াস ------------------------------------------------------------ বর্তমান কবিতাগুলো কি আসলেই খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে? নাকি ঝাপসা চিত্রকল্প এবং উপমার সমুদ্রে খেই হারিয়ে ফেলছেন পাঠক? ঝাপসা কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের সুর্যোদয় যারা অবলোকন করেন তারা কি শুধুই স্বপ্নবিলাসী? এমন অনেকগুলো প্রশ্ন আজকাল প্রায়ই শোনা যায়| আবার কেউ কেউ আধুনিক অনেক গদ্য কবিতায় তাদের ছন্দের ব্যারোমিটার বসিয়ে দুরবীন দিয়ে দেখার চেষ্টাও করেন| কখনো তারা সফল হন| কখনো তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়| আবার কেউ কেউ নিজেকে ছান্দসিক কবি ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভে আটখানা হন| স্বপ্নবিলাস— তা যাই হোক না কেন, কবিতা যে এগিয়ে যাচ্ছে তাই হচ্ছে বর্তমানের প্রকৃত বাস্তবতা| কোন্ কবিতা কালোর প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে তা অতীতে যেমন বলা যায়নি, বর্তমানেও বলা যাবে না| উদাহারণ স্বরূপ জীবনানন্দকে আবারো প্রণাম করি| শতাব্দীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত তার বিচরণ আমাদেরকে আশান্বিত করেছে বৈকি! তার আধুনিক চেতনা এবং নান্দনিক প্রত্যয় কালের বাহক হয়েই থেকে যাচ্ছে— যাবে বহুবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত| তা এ মুহুর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে| কবিতা লেখাকে অনেক কবি মৌলতাত্বিক এবং সমসাময়িক আর্টিস্টিক বলে মনে করেন| তাদের এমন ধারণার পেছনে যুক্তিও আছে প্রচুর| কারণ অনুভবের অনুসৃতি এবং প্রার্থনার চেতনা তো হৃদয় থেকেই উৎসারিত হয়| একজন মানুষ চোখ খোলা রেখে অনেক কিছু দেখতে পায়| আবার চোখ বন্ধ করেও অনেক কিছু দেখতে পায়| একথা আমরা সবাই জানি এবং বুঝি| কিন্তু হৃদয়ের চোখের আয়নায় দাঁড়াতে পারি কজন? কবিতার কল্পচিত্র সব সময়ই বিশ্বজনীন এবং সার্বজনীন| এ প্রসঙ্গে আমি কয়েকজন মার্কিন কবির সমসাময়িক কবিতার বাংলা তর্জমার কিছু খন্ডচিত্র তুলে ধরতে চাই| এরা যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃত কবি| যারা কবিতার ব্যঞ্জনা এবং ঘূর্ণায়নের মাধ্যমে শৈল্পিক আবহকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন| ‘সোনালি মানুষ’ কবিতায় কবি ডানা লোভন সোনালি মানুষটিকে এভাবেই নির্মাণ করেন— ‘এবং এসিড এসে ধৌত করে দেয় তাকে,/ হ্যাঁ, আমি ছোট্ট মানুষটিকে নির্মাণ করছিলাম|’ একটি কবিতা তখনই প্রকৃত সার্থকতা পায়, যখন একটি একান্ত ব্যক্তিগত অনুভুতি সার্বজনীনতা লাভ করে| একটি হৃদয়ের আকাঙ্খা হয়ে ওঠে বহূ হৃদয়ের প্রভাষণ| কবি ক্যাথরিন লিডিরার তার ‘বেঁচে থাকার একটি নতুন পথ’ কবিতাটির মুখবন্ধ শুরু করেছেন এভাবে— ‘আমি ক্লান্ত এভাবে ক্ষমা করতে করতে/ একটি রাত, একটি গাম্ভীর্যপূর্ণ ফোরাম যেমন/ একটি মধ্যতর্জনী’। একটি কবিতায় বহুমাত্রিক অনুযোগ কিংবা অনুপ্রাস কবিতাটিকে সমৃদ্ধ করে নি:সন্দেহে| যেকথা অনেকে বলতে কিংবা লিখতে পারেন না,- তা কবি পারেন| সেক্ষেত্রে কবি তার উত্তর প্রজন্মের জন্য নির্মাণ করেন একটি বিশুদ্ধ নিবাস| কবি জন ইয়াউ-এর তেমনি কিছু কথা আমাদের কানে বাজে, বুকে লাগে| তার ‘রাশিয়ান চিঠি-৩’ কবিতার কয়েকটি পঙক্তি— ‘প্রিয় মেঘের চিত্রকর/ কি প্রমাণ থাকবে সেখানে/ যখন দোকানী/ আমাদের ধুলিচিহ্ন ঝেড়ে ফেলে দেবে ছোট্ট নালীতে’| একইভাবে কবি ডানা লোভন-এর আহ্বান জাগিয়ে তোলে তার সহযাত্রী অনুজদেরকে| ‘কাজ’ কবিতায় তার বাণীগূলো এরকম— ‘এই সেই আমেরিকা—/ তুমি পাত্রের মধ্যে পানি রাখো| এই সেই তোমার শতাব্দী—/ যে চুলোয় তুমি আগুন জ্বালো/ তুমি অনুভব করো, এই শহর, তোমার চারদিকের ধুসর, যেভাবে তুমি কালো চা রাখো কাপের মাঝে|’ যুক্তরাষ্ট্রের সমসাময়িক অন্যতম প্রধান কবি মি. জিরাল্ড স্টার্ন-এর স্বগতোক্তি থেকে কালিক কবিতা নির্মাণে চিত্রকল্পের ব্যবহার সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে| স্টার্ন বলেন, আমার কবিতায় আমি আমার সময়কেই ধরে রাখতে চেয়েছি| বর্তমানই ছিল আমার কাছে মূল বিবেচ্য বিষয়| জীবনের রঙ অনেকটাই তো ফ্যাকাশে| মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যে জন এগিয়ে আসতে পারে সেই হয় ভাগ্যবান জীবনের অধিকারী| কবিতায় সমসাময়িক বিষয় এবং চেতনার ব্যাপৃতি— বর্ণনা থাকা স্বাভাবিক| শত বছর আগে একজন কবি কম্পিউটার, ই-মেইল, ইন্টারনেট সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না| বর্তমানের কবিরা এই গ্লো­বাল ভিলেজে বসবাস করে এসব বিষয়গুলোকে রপ্ত করছেন মনে প্রাণে| তাদের চিন্তা চেতনায় এখন সিলিকন ভ্যালি| আলোর ঝলক| একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তাই তো,মাইকেল ও’ নীল বলে যান— ‘আমি ক্রমশ: শব্দগূলোকে বন্দী করছি একটি দুর্দান্ত বাক্সের ভেতর/ ফুলগুলো যেন ফুটছে আমার হাত দিয়ে সবুজ গোপনগুলো স্থির হয়ে দাঁড়াচ্ছে একটি কালো জমিনের বিপরীতে/ এভাবেই মধ্যরাতের আন্ত:জালে (ইন্টারনেটে) আমি খেলছি তোমার সাথে|’ আধুনিক চিত্রকল্পগুলো, আধুনিক মননের বুনন| এ বুনন তখনই আরো সমৃদ্ধ হয় যখন একটি কবিতার শিল্পায়ন ঘটে আন্তর্জাতিকতার নিরিখে| যারা পশ্চিমা সাহিত্যের বিবর্তনকে ধনবাদী আধুনিকায়ন বলে নাক সিটকান তাদের অবগতির জন্য বলতে হয়, যে প্রক্রিয়া পাশ্চাত্যে শুরু হয়েছে অর্ধশতাব্দী আগে, প্রাচ্যে এখন তার অনুকরণ চলছে| অতএব যদি চলমান সময়কে কবিতায় ধারণ করা না যায়, তবে হয়তো দু’ যুগ পরে আজকের কবি এবং কবিতা স্বকীয়তা নিয়ে আলোচনায় আসতে পারবেন না| বাংলা সাহিত্যের অনেক স্বনামধন্য কবি আছেন যারা বলেন, বর্তমানে কবিতার কিছুই হচ্ছে না| প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে— তারা কেন কিছু করছেন না| বা করার চেষ্টা করছেন না| একবিংশ শতাব্দীর শূরুতে দাঁড়িয়ে ক্ষণিক পিছন ফিরে তাকালে বেশ কিছু উত্থান চোখে পড়বে| বেশ কিছু আধুনিক কবি তাদের চিত্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে যে চিহ্নতত্ত্ব সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন তা নিয়ে হয়তো বিশদভাবে আলোচনা হবে সময়ে— ভবিষ্যতে| কবিতার চিত্রকল্প সব সময়ই গতিশীল| আর কবিরা সেই গতির শক্তি নিয়েই কালের দিকে ধাবমান| দুই. মনে পড়ছে একদিন টিএসসি তে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি , কবি মোহন রায়হান ও রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ । এ সময় আমার আরেক বন্ধু এগিয়ে আসেন । রুদ্র হাত বাড়িয়ে দেন। বলেন , ''আই এ্যাম রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ , দ্যা পোয়েট ।''' মোহন ভাই হেসে ফেলেন। রুদ্র তার হাসি মুখে বলেন, ইয়েস, আই এ্যাম দ্যা পোয়েট । তা বলবো না ? হাঁ, একজন প্রকৃত কবির আত্মপ্রত্যয় এভাবেই সুদৃঢ় । কারণ তিনি জানেন ,তিনি কি করছেন। এ প্রসংগে ময়মনসিংহের এক প্রখ্যাত বাউল মরমী কবি উকিল মুন্সীর কথা আমার সব সময় মনে পড়ে। তাঁর একটা নন্দিত গান আছে, '' আমি আগে না জানিয়া সখীরে কইরে পিরীতি / আমার দু:খে দু:খে জনম গেলো , সুখ হইলো না এক রতি।'' এই গানটি এখনো মুখে মুখে ফিরে । কেন ফিরে? কারন মানুষ এখনো বাউল উকিল মুন্সীর আত্মায়, প্রতিকৃতিতে নিজেকে খুঁজে পায়। একজন কবির সার্থকতা সেখানেই। কবিতার ভাষার প্রকাশভংগী বদলায় কালে কালে। বদলায় কবির বলার ধরন। কিন্তু চন্দ্র , সূর্য, গ্রহ , নক্ষত্র , সমুদ্র , পর্বত সহ প্রকৃতির সিংহ ভাগ যেমন ছিল , তেমনি থেকে যায়। কবিতা বার বার আসে কালের আবর্তনে। কবির নতুন ধ্যানে .. চিত্রনে । =========================================== ( লেখাটি দৈনিক আজকের কাগজে ' প্রকাশিত। পরে পরিমার্জিত ও সংযোজিত ) সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:৫৯
false
hm
বইপাগলঃ আনিসুল হকের "এতদিন কোথায় ছিলেন" বইটা হাতে পেয়েছি কনফুসিয়াসের সৌজন্যে। বইটির শুরুতে যে কথাগুলো লেখা আছে, পড়ে বেশ উৎসাহিত হয়েছিলাম। এক ঔপন্যাসিক লিখছেন তাঁর প্রিয় কবির জীবনকে নিয়ে, ওদিকে উপন্যাসের পৃষ্ঠাসংখ্যাও ১৩৩, কাজেই মনের মধ্যে প্রত্যাশার পাগমার্ক বেশ গভীর হয়েই ফোটে। বইয়ের শেষে দুই পৃষ্ঠা জুড়ে বিবলিওগ্রাফি দেয়া, আশাবাদ আরো গাঢ় হয়। কিন্তু বইটা যতই পড়ি, সেই আশার লণ্ঠনের চারপাশে কুয়াশা জমে। বই শুরু হয়েছে জীবনানন্দের বালকবেলার বর্ণনা দিয়ে। ঔপন্যাসিক আগাগোড়া রচনা করেছেন জীবনানন্দকে "আপনি" সম্বোধন করে ... আপনি করলেন, আপনি বললেন, আপনি হেসে উঠলেন ... জীবনানন্দকে মুখোমুখি বসিয়ে যেন তাঁকে পড়ে শোনানো হচ্ছে তাঁর জীবনকাহিনী, কবিতা, তাঁর ডায়রির পাতা। ভঙ্গিটি অভিনব, কিন্তু ঠিক যেন পুরোপুরি ফোটেনি সবকিছু, চিনি-লিকার-দুধ মেশেনি ঠিকমতো। কেন এমন মনে হলো, সে প্রসঙ্গে আসছি। এ কথা সত্য, প্রচুর তথ্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন গবেষণাগ্রন্থ থেকে, কিন্তু সে তথ্য সন্নিবেশনের কাজটি যেন ঔপন্যাসিক পটু হাতে করে উঠতে পারেননি। উপন্যাসটি দাঁড়িয়েছে একটি ড়্যানসমনোটের মতো, এক এক ফন্টে এক একটি অক্ষর দিয়ে তৈরি করা বাক্যসমারোহের মতো, একটি তথ্যের পরিবেশন মসৃণভাবে মিশতে পারেনি পরবর্তী তথ্যের সাথে। কোথাও দেখতে পাচ্ছি সরাসরি উদ্ধৃত করা হচ্ছে ড, আলী আকবর খানের বই থেকে, কোথাও জীবনানন্দের উপন্যাস থেকে, কোথাও তাঁর ডায়রি থেকে, কোথাও অপর কোনো গবেষণাগ্রন্থ থেকে, উদ্ধৃতির ভিড়ে উপন্যাসটি লজ্জাবনতা কিশোরীর মতো মুখ লুকিয়েছে কোথাও, গোটা বইতে তাকে খুঁজে পাওয়া ভার। কালানুক্রমে জীবনানন্দকে আঁকতে গিয়েও ছন্দপতন হয়েছে। প্রসঙ্গান্তরে চলে এসেছেন অন্য কোনো জীবনানন্দ, একটি দৃশ্য থেকে লেখক লাফিয়ে সরে যাচ্ছেন ভিন্নদৃশ্যে, এই কক্ষপথ পরিবর্তন পাঠকের মনে অস্বস্তি তৈরি করে বলে আমার মনে হয়েছে। বালক মিলুর চারপাশ আঁকতে গিয়েও যেন তুলি সরে আসছে কাগজের ওপর থেকে, তারপর অকস্মাৎ দেখতে পাই জোয়ান জীবনানন্দকে। সেই জীবনানন্দ কখনো সিটি কলেজের চাকরি খোয়াচ্ছেন, আবার কখনো সেখানেই চাকরি করছেন, স্পষ্ট নয়, ঔপন্যাসিক কি পাঠককে তেলমাখা বাঁশে তিনফুট চড়িয়ে আবার ফুট দেড়েক নামিয়ে আনছেন, নাকি স্বয়ং জীবনানন্দই পর্যায়কালীন চাকরি ধরা-ছাড়ার মধ্যে রয়েছেন। ব্যক্তির জীবনকে আঁকতে গেলে তাঁর জীবদ্দশায় যেসব ঘটনা তাঁর আশপাশের পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে, সেদিকেও ঔপন্যাসিকের মসীর স্পর্শ কামনা করে পাঠকের মন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো বড় বড় ঘটনার কোনো প্রভাবই কি জীবনানন্দের ওপর পড়েনি? ঢাকার তরুণেরা রাইটার্স বিল্ডিঙে ঢুকে পিস্তল হাতে যুদ্ধ করছে বৃটিশের গুর্খাবাহিনীর সাথে, জীবনানন্দের বয়স তখন ৩১, এ ঘটনার কোনো ছাপই কি পড়েনি তাঁর মনে? বৃটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের তুমুলতম সময়টিতে জীবনানন্দের যৌবনকাল, তিনি কি একেবারেই অস্পৃষ্ট ছিলেন সেই প্রতিবেশে? এর কোনো হদিশ মেলে না "এতদিন কোথায় ছিলেন"-এ, কারণ রহস্যে মোড়া। হয়তো বিবলিওগ্রাফিতে বর্ণিত বইগুলিতে ও নিয়ে কিছু লেখা ছিলো না, কে জানে? উপন্যাসটিতে শুধু মুগ্ধ হয়েছি "বনলতা সেন" কবিতাটির ঠিকুজি সন্ধানের কুশলতায়। বোধ করি এ নিয়ে গবেষকরা গান্ধার-মগধ-লঙ্কা-কামরূপ-বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে একশো আটটি আইডিয়া-গরু খুঁজে এনেছেন, কে এই নাটোরিকা, এবং ঔপন্যাসিক সেই হাইপোথিসিসগুলি সাজিয়েছেন সুবিন্যাসে। তাঁর পুস্তকটি পাঠ করিলে জানিতে পারা যায়, হয়তো বনলতা সেন ছিলেন জীবনানন্দের নাটোর হয়ে দার্জিলিংগামী ট্রেনে নাটোর স্টেশন থেকে ওঠা কোনো তরুণী, হয়তো বনলতা সেন ছিলেন রাণী ভবানীর বাড়িতে আতিথ্যমগ্ন কবির পরিবেশন নিয়োজিতা কোনো রূপসী পরিচারিকা, হয়তো বনলতা সেন ছিলেন রূপোপজীবিনীদের পসরার জৌলুসে খ্যাত নাটোরের কোন দেহপসারিণী, হয়তো বনলতা সেন কিছুই ছিলেন না কবির কবিত্বের জলছাপ ছাড়া ... কিন্তু এই কবিতাটির স্থানকালপাত্র গবেষকদের আতশ কাঁচের নিচে পড়ে পড়ে তার অন্ত্রের ভাঁজের রহস্যটুকুও হারিয়েছে, নানা প্রকল্পে জর্জরিত বনলতাসেনের যাবতীয় সম্ভাবনা সেই গবেষকদের গ্রন্থ থেকে উঠে এসেছে হকের উপন্যাসে। বনলতা সেনের পরিচয়হীনতার ক্ষমা নেই, তার রহস্য কবিতার পাঠক খঞ্জর হাতে মোচন করবেই। পাখির নীড়ের মতো চোখ থেকে শুরু করে থাকে শুধু অন্ধকার, সবই গবেষকের এক্সরে ভেদ করে দেখে ফেলে। মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন এমন অন্তহীন রিমান্ডে গবেষকের মুখোমুখি বসে, কে বলবে, আদৌ কোনো অন্ধকার থাকে শেষ পর্যন্ত? উপন্যাস এগিয়েছে জীবনানন্দের মানসপ্রিয়াদের সন্ধান করে করে। খুড়তুতো বোন শোভনা মজুমদারই কি বারে বারে জীবনানন্দের ফ্যান্টাসির উদ্দিষ্টা হয়ে তাঁর ডায়রি আর গল্পের চরিত্র হয়ে এসেছেন? নাকি অন্য কেউ ছিলেন? উপন্যাসে তাই এক কবির প্রেয়সীদের হারিকেন হাতে খুঁজতে থাকে পাঠক। সেই সন্ধানের ভুলভুলাইয়াতে চলতে চলতেই জীবনানন্দের বিয়ে হয় লাবণ্যপ্রভার সাথে, তাঁর কন্যা আসেন পৃথিবীতে, তাঁর বিবাদ-বিষাদের কাহিনীটুকু হুবহু উঠে আসে তাঁর ডায়রি আর তাঁর উপন্যাসের পেপারকাটিঙে চড়ে। ঔপন্যাসিকের নিজস্ব কল্পনাশক্তি তখন জরুরি অবস্থায় সংবিধানের মতোই যেন, অস্তিত্বশীল কিন্তু স্থগিত। তিনি কেবল সাজিয়ে নেন এই টুকরো টুকরো পৃষ্ঠাকে। এই প্রচেষ্টা চলে উপন্যাসের শেষ স্তবক দুটির আগ পর্যন্ত। যাঁরা বইটির সন্ধান আমাকে দিয়েছেন, তাঁদের কয়েকজনের কাছ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পেয়েছি জীবনানন্দের হস্তমৈথুনের বর্ণনার বিরুদ্ধে। ফেসবুক এবং ব্লগে হালের কতিপয় আজিজীয় কবির নিজের কলমে নিজেকে রমণের পুনরাবৃত্ত সব ঘটনায় তাদের স্বমেহনপারঙ্গমতা এবং স্বমেহনপ্রবণতার নিদর্শন দেখে আমি বিস্মিত নই, যে কবিরা বাস্তব জীবনেও স্বমেহন করতেই পারেন, এবং জীবনানন্দও স্বমেহন করে থাকতে পারেন, তাঁর যৌনজীবন আমার কাছে আগ্রহের বিষয় নয় বলে এই বর্ণনায় আমি উৎফুল্ল বা বিমর্ষ হবার মতো কিছু পাইনি। তবে বেশ কিছু ইংরেজি প্রতিশব্দ ঘুরে ফিরে ব্যবহৃত হয়েছে উপন্যাসে, হাত মারাকেও মাস্টারবেশন লিখে একটু আবছা করে দেয়ার কৌশল চোখে পড়েছে। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে ঔপন্যাসিকের চোখের জল দিয়ে, শেষও হয়েছে অশ্রু দিয়েই, জীবনানন্দের মৃত্যুর করুণাধারাসিক্ত বর্ণনার পর, তবে সে অশ্রু আবার সামষ্টিক, লেখক সচেতনভাবেই পাঠককেও অশ্রুপাতের সহযাত্রী হিসেবে ধরে নিয়েছেন। পাঠকের অশ্রু জীবনানন্দের নিরানন্দ, বিমর্ষ, বেদনাতুর, ভালোবাসাহীন জীবনের জন্যে যতটা গড়িয়ে নামে, তারচেয়ে বোধ করি বেগবান হয় জীবনানন্দের প্রতি মমত্বের যে অঙ্গীকার উপন্যাসের প্রাগকথনে মূর্ত, তা ভঙ্গ হওয়ায়। এই উপন্যাসটি আরো ব্যাপ্তি নিয়ে, আরো সময় নিয়ে রচিত হওয়া উচিত ছিলো, তাতে ঔপন্যাসিকের "জিগর কা খুন" আরো একটু রঞ্জিত থাকার কথা ছিলো, জীবনানন্দের জীবনটি আরো অধিক হয়ে ফোটার প্রয়োজন ছিলো, তার কিছুই ঘটেনি। শেষ বিচারে উপন্যাসটি কিছু গবেষণাগ্রন্থের কাটিংবুক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার মাঝে অল্প কিছু জায়গায় শুধু চোখে পড়ে, এক কবি আরেক কবিকে স্মরণ করে দুয়েকছত্র লিখেছেন প্রগাঢ় ভালোবাসায়, বাকি অংশগুলিতে সেই কবিকে আইপিসহ ব্যান করে একজন ব্যস্ত কলামিস্ট উপন্যাস লেখার অভিনয় করে যাচ্ছেন কেবল। আমি জানি না, ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসের মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "সেই সময়", "একা এবং কয়েকজন", "প্রথম আলো", কিংবা "মৈত্রেয় জাতক" (বাণী বসুর নয় কি?) অথবা ভার্গাস ইয়োসার "ফীস্ট অব দ্য গোট" পড়ে বিরাট ব্যাপ্তির মধ্যে ইতিহাসের ঘটনাগুলি দেখার আগ্রহ আমার মাঝে তৈরি হয়েছে কি না, কিন্তু স্বল্পায়তনের মধ্যে জীবনানন্দ দাশকে পড়তে গিয়ে এই বইটির কাছে আমার পাঠক মন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আমি ভবিষ্যতে আনিসুল হকের কাছ থেকে মহত্তর উপন্যাসের প্রত্যাশায় থাকবো।
false
ij
None সাইকি অর্থ ‘আত্মা’। এরস অর্থ ‘প্রেম।’ এ দুয়ে মিলে আত্মিক প্রেম। সাইকি ও এরস আবার গ্রিক ও রোমান উপকথার চরিত্রও বটে। এরা পরস্পর অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে, অনেক বিচ্ছেদ অনেক বিরহ সহ্য করে একে অন্যের কাছে এসেছিল। অনিন্দ্য সুন্দরী সাইকি প্রবল প্রতিরোধ অতিক্রম করে তার আরাধ্য এরসকে খুঁজে পেয়েছিল। এরস ও সাইকি উপাখ্যান আসলে শরীর ও মনের মিলনের এক আশ্চর্য ইউরোপীয় উপকথা। অবশ্য সাইকি ও এরস এর গল্পটি রোমান- গ্রিক নয়। যদিও আখ্যানটি গ্রিক উপকথার অর্ন্তগত হয়ে গিয়েছে। আখ্যানটি রোমান জগতে ‘সাইকি ও কিউপিড’ নামে পরিচিত। রূপকথার ওপর উপকথার রয়েছে গভীর প্রভাব। সে প্রভাবের এক উজ্জ্বল নিদর্শন ‘ এরস ও সাইকি’-র আখ্যান ... অনেক অনেক বছর আগের কথা। এক রাজার ছিল তিন কন্যা। ছোট মেয়েটির নাম সাইকি। সাইকি দেখতে ছিল খুবই সুন্দর। সাইকি সাইকির আরও একটি ছবি। কাজেই সুন্দরী মেয়ে বলতে ইউরোপে ঠিক কী বোঝায় তা বোঝা গেল ... সাইকি এতই সুন্দর যে রাজ্যের লোকে প্রার্থনা করত আফ্রোদিতি নয়, আমাদের সাইকি হোক সৌন্দর্যের দেবী । লোকের এই ইচ্ছেই হল বিপদের কারণ। কথাটা আফ্রোদিতির কানে গেল। খেপে উঠলেন প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী। নিষ্পাপ সাইকির মনে কাম জাগানো কথা ভাবলেন। তা হলেই নিস্পাপ সৌন্দর্য ছেয়ে যা কলঙ্কে। আফ্রোদিতির এর ছেলে ছিল। এরস। কামদেব। অত্যন্ত কুৎসিত দেখতে। এরস ই হল কিউপিড। ভারতীয় পুরাণের মদন দেব। প্রেম শর নিক্ষেপ করেন। এরসও । ছবি দেখুন। শর হাতে মদনদেব বা কামদেব বা এরস বা কিউপিড একালের তুমুল জনপ্রিয় একটি বাউল গান স্মরণ করি: করি মানা কাম ছাড়ে না মদনে ... মদনে আমি প্রেম রসিকা হব কেমনে। এই মদনই হল এরস বা কিউপিড। ইউরোপের প্রেমের দেবতা। বাংলার বাউল শুদ্ধ প্রেমের চর্চা করতে চায়। সেই শুদ্ধ প্রেমই হল সাইকি। বারবার এরস তীর ছুড়লে আমি প্রেম রসিকা হব কেমনে ...বাউলের এই আর্তনাদ ও প্রশ্ন আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও এসে আছড়ে পড়ে ..... যাক। ছেলেকে লেলিয়ে দিয়ে আফ্রোদিতি কুকর্ম আগেও করেছে। আফ্রোদিতি এরস কে সাইকির কাছে পাঠালেন। এরস সাইকির রূপে মুগ্ধ। সাইকির বুকে সোনালি তীর ছুড়বে কি -সেই বরং তীব্র প্রনয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। গভীর প্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে অদৃশ্য হল। আফ্রোদিতি বুঝতে পারল তার ছেলে ব্যর্থ হয়েছে। সাইকি কারও প্রেমে পড়েনি। এবার অন্য পথ ধরি। আফ্রোদিতি এবার নিজেই নিজের মায়াঘোর আরোপ করল সাইকির ওপর। সাইকির আর বিয়ের প্রস্তাব এল না। সাইকির মা-বাবা উদ্বিগ্ন হলেন। সাইকির মা-বাবা সাইকির স্বামী হিসেবে কোনও ধনী অভিজাতকে চায়। সাইকির মা গেল জ্যোতিষের কাছে । তা সে জ্যোতিষ বলল: ‘হায়। সাইকি কোনও মরণশীলকে বিয়ে করবে না। দূরের পাহাড়ে যে অপেক্ষা করে আছে সাইকিকে তাকেই দেওয়া হবে । যে অপেক্ষায় আছে সে দেবতা ও মানুষদের জয় করবে।’ রাজপ্রাসাদের হাহাকার পড়ে গেল। পাহাড়ে তো থাকে দৈত্য। বেচারা মা আর কি করেন। তিনি মনে করলেন সাইকির বিয়ে রাক্ষসের সঙ্গেই হবে। সবার মন খারাপ হল। সুন্দরী সাইকিকে ভালোবাসত সবাই। সাইকির মনটিও ছিল সুন্দর। সাইকি বুঝতে পারল ওর সুখের দিন শেষ। নিজের দোষে না-হলেও দেবী আফ্রোদিতি আমার ওপর দারুন রেগে আছেন। ও ওর মা-বাবাকে বলল, আমার কপালে যাইই থাকুক । তোমরা আমাকে নির্জন পাহাড়েই রেখে এসো। অনেক দ্বিধাদ্বন্দের পর সাইকির মা-বাবা রাজী হলেন। সাইকি পাহাড়ের যেতে লাগল। পিছন পিছন গেল রাজ্যের শোকার্ত অধিবাসীরা। সাইকির আসন্ন মৃত্যুর কল্পনায় তারা বিষন্ন। পাহাড়ের ঢালে সাইকিকে একাকী রেখে সবাই চলে গেল। সাইকি পাহাড় চূড়ায় উঠতে লাগল। একা। নির্জন পাহাড় চূড়ায় কত যে গাছপালা। পায়ের তলায় রুক্ষ পাথর। তবে সাইকি মন শক্ত করল। কান্না পেলেও কাঁদল না। এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল হতভাগ্য মেয়েটি। সাইকিদের আজও একা পথে দেখা যায় জেফার, দয়াশীল পশ্চিমা বায়ূ, সাইকির দুঃখ দেখে মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। তারপর ওকে উড়িয়ে নিয়ে গেল পাহাড়ের নিচের মনোরম এক উপত্যকায়, যেখানে পবর্তর্শীষের রুক্ষ পাথরের বদলে রয়েছে নম্র ঘাসের সবুজ বিস্তার। সাইকি জেগে উঠল। কই, কোনো দৈত্য কে তো দেখা যাচ্ছে না। বরং কাছেই রয়েছে সবুজ বনানী। কৌতূহলী হয়ে আশায় বনের দিকে যেতে লাগল সাইকি। ঝর ঝর পানির শব্দ শুনল। উৎসের খোঁজ নিতে লাগল। সবুজ অরণ্যের গভীরে আরও গভীরে যেতে লাগল। শেষে ঝর্নাসমেত টলটলে এক পানির আধার খুঁজে পেল। আরে ! ওদিকে একটি রাজপ্রাসাদও আছে দেখছি! কী অদ্ভূত! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো। ঠিক তক্ষুনি অদৃশ্য থেকে কে যেন বলল: প্রাণপ্রিয় সাইকি। প্রাসাদটি তোমার। কে! কে তুমি! এই প্রশ্নের উত্তর এল না। তবে বলা হল: প্রাসাদের অদৃশ্য ভৃত্যরা তোমার সব আদেশ মেনে চলবে। সাইকি চঞ্চল হয়ে ওঠে। প্রাসাদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। চারি দিকে অদ্ভূত অদ্ভূত সব জিনিস। তবে ক্লান্ত বোধ করল। সোনার আসনে ধপ করে বসে পড়ল। খিদেও টের পেল। ইস, এখন যদি রুটি আর ভেড়ার মাংস খেতে পারতাম। ভাবতেই রুপোর রেকাবিতে রুটি আর ভেড়ার মাংস এসে হাজির। ওমাঃ যাদুরাজ্যে এসে পড়লাম বুঝি! সাইকি পেটপুড়ে খেল। সন্ধ্যায় প্রাসাদ হয়ে উঠল অন্ধকার। আর সে অন্ধকারে কে যেন কথা বলে উঠল। সাইকি আর্তকন্ঠে বলল, দোহাই তোমার! আমার চোখের সামনে এসো। একটিবার আলোয় এসো। না। যে ছিল অন্ধকারে সে আর আলোয় এল না। এরস যে ছিল অন্ধকারে সে আসলে এরস। অবশ্য সে কথা সে বলল না। মে ন থাকার কথা: ... আফ্রোদিতি এরস কে সাইকির কাছে পাঠালেন। এরস সাইকির রূপে মুগ্ধ। সাইকির বুকে সোনালি তীর ছুড়বে কি -সেই বরং তীব্র প্রনয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। গভীর প্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে অদৃশ্য হল। যাক। এরস দেখা না দিলেও সাইকির সেবায় যত্নশীল থাকল। অদৃশ্য দাসদাসী দিয়েছে। সব ইচ্ছে পূরণ করছে। অবশ্য মুখ দেখাচ্ছে না। ওদিকে সাইকি ভাবল আমার দৈত্যর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। নইলে সে দেখাদিচ্ছে না কেন। ভেবেছে আমি তার ভয়াল মুখ দর্শন করে ভয় পাব। ভুল ভেবেছে। এক রাত্রে সাইকি বলল, আমার বোনদের কথা খুব মনে পড়ে। ওরা কি আসতে পারে এখানে? এরস সাইকির কন্ঠে নিঃসঙ্গতা টের পেয়ে রাজী হল। অবশ্য বুঝতে পাল এতে ক্ষতিই হবে। রাজপ্রাসাদে সাইকির বোনেরা আসল । তখন কত কথা হল। আমরা শুনিছি তোর ড্রাগনের সঙ্গে বেয়ে হয়েছে, তোকে বেঁধে রেখেছে, খেয়ে ফেলবে বলে। কই না তো। বলে সব খুলে বলল। তোর স্বামীকে এখনও দেখিস নি! না। হতভাগী। বলে বোনেরা পরমর্শ দিল। রাতে বেলায় প্রদীপ নিয়ে যাবি, বুঝলি। ছোরাও নিস। স্বামী যদি ড্রাগন হয় তাহলে কেটে ফেলিস। পরামর্শ সাইকির মনে ধরল। একরাতে ইরস ঘুমোতে গেল। সাইকি জেগে রইল। তেলের প্রদীপ জ্বালাল। তারপর ঘুমন্ত এরসের মুখের দিকে চাইল। চিনতে পারল। প্রেমে অভিভূত হল। হাত কাঁপল। তেল পড়ল এরসের মুখের ওপর। এরস জেগে উঠল। তারপর চিৎকার করে জানালা দিয়ে উড়ে চলে গেল। সাইক চেয়ে দেখল প্রাসাদ আর নেই। চারি দিকে কেবলই মধ্যরাতের ঝিঁঝি ডাকা জঙ্গল। সাইকি অবশ্য আশা ছাড়ল না। খুঁজে খুঁজে বোনদের বাড়ি গেল । বোনের স্বামীদের বোনদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলল। সেখান থেকে কত জায়গায় যে গেল । ওর স্বামীকে খুঁজতে লাগল। একদিন শেষ বিকেলে পৌঁছল এক বিরাট হলঘরে। হলঘরের মেঝের ওপর শস্যকণা, বার্লি আর গমের স্তূপ । সাইকি ওসব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল। দিমিতার (ফসল কাটা ও ঘরে তোলার দেবী ) আড়াল থেকে দেখতে লাগল। দেবী দিমিতার খুশি হলেন। সাইকির কাজ শেষ। মনে হল হলঘরটি আসলে দেবালয়। দিমিতার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন। অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন; সাইকি, সত্যি তুমি সুখের যোগ্য। সুখ তুমি পাবে। এখন তা হলে দেবী আফ্রোদিতির উপাসনালয়ে যাও। তার কাছে ক্ষমা চাও। সম্ভবত তিনি তোমার ধৈর্য্যরে পুরস্কার দেবেন। সাইকি অবাক হল। স্বয়ং দিমিতার আমার জন্য এক ভাবছেন! ও দেবীর আরও কাজ করে দিল। কাজ শেষ করে রওনা হল দেবী আফ্রোদিতির উপাসনালয়ের উদ্দেশে । সেখানে প্রার্থনা করল। দেবী আফ্রোদিতি হায়! ঈর্ষাকাতর আফ্রোদিতি সাইকির মুখের দিকে তাকালেন না। বললেন তুমি সত্যি অনুতপ্ত? হ্যাঁ দেবী। তা হলে আমার আরও কাজ করে দেবে? আচ্ছা, দেব। আফ্রোদিতি ঘরের মেঝের ওপর শস্যকণা, মটরশুঁটি ও মসুরের ডাল ছড়িয়ে ছিল । এসব আসলে ঘুঘু পাখির খাদ্য। দেবীর পবিত্র পাখি ঘুঘু। দেবী বললেন, সাইকি। জ্বী বলুন। রাত ফুরোবার আগেই এসব বেছে আলাদা করে রাখবে। শস্যকণার জায়গায় শস্যকণা, মটরশুঁটির জায়গায় মটরশুঁটি ও মসুরের ডালের জায়গায় মসুরের ডাল । সাইকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কাজ শুরু করে দেয়। (এখানে আমরা কি সাইকির ভিতর সিনড্রেলিনাকে পাচ্ছি? এ লেখার গোড়ায় আমি বলেছিলাম না রূপকথার ওপর উপকথার রয়েছে গভীর প্রভাব। সে প্রভাবের এক উজ্জ্বল নিদর্শন ‘এরস ও সাইকি’-র আখ্যান ...) যাক। ঘরের দেওয়ারের ফাটলে ছিল অসংখ্য পিঁপড়ের সারি। তারা এসে সাইকিকে সাহায্য করতে লাগল। কাজেই সকালের আগেই কাজ শেষ হল। সকালে আফ্রোদিতি এলেন। কাজ শেষ দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। এরস কি একে সাহায্য করল? হুমম। তবে দেবী সাইকিকে তাড়িয়ে না দিয়ে কালো রুটি খেতে দিলেন এবং বললেন, কাল সকালে আরও কাজ করতে হবে। আচ্ছা। সাইকি ঘুমিয়ে পড়ল। সাইকি পরের দিন সকালে উঠল। আফ্রোদিতি বললেন: Go now to yonder grove where the sheep with the golden fleece are wont to browse. Bring me a golden lock from every one of them, or you must go your ways and never come back again. (এখন দূরের কুঞ্জবনে যাও- যেখানে সোনালি পশমের ভেড়ারা চরে বেড়াচ্ছে। ওদের প্রত্যেকের থেকে আমার জন্য স্বর্ণালী গুচ্ছ আন,অথবা তোমার পথে চলে যাও। আর কখনও এসো না।) এই বলে আফ্রোদিতি চলে গেলেন। কুঞ্জবনের ভিতরে যেতে হলে ছোট একটি নদী পেরোতে হয়। সাইকি ছোট্ট নদীতে নামল। আর তখনই নলখাগড়া কেঁপে উঠল । আর জলদেবীরা (এদের একত্রে নিয়াডস বলে) বলল: ‘না, না, না। লক্ষ্মীসোনা। সতর্ক হও। ওসব সোনালি ভেড়ারা মোটেও শান্ত নয়। যতক্ষন সূর্যটা জ্বলছে। ততক্ষন ওরাও হয়ে থাকে প্রজ্জ্বলিত শিখার ন্যায় প্রখর। আর যখন ছায়ারা হয়ে ওঠে দীর্ঘ। ভেড়ার দল গাছের নীচে জিরাতে যায়, ঘুমায়। তখন তুমি নির্ভয়ে নদী পেরিয়ে চারণভূমির কাঁটাগাছ দিয়ে স্বর্ণালী রোমরাজী তুলে নিও ।’ ধন্যবাদ, নিয়াডস। তোমাকেও ধন্যবাদ, সোনা। নিয়াডসরা যা যা বলল, তাইই করল সাইকি। আফ্রোদিতি ফিরে এলেন। সাইকি দেবীকে ভক্তিভরে ভেড়ার সোনালি রোমগুচ্ছ দিল। এতে দেবী আরও ক্রোধান্বিত হয়ে উঠলেন। কোনও সন্দেহ-এসব হল এরসের কাজ। দেবী এরসকে অভিশাপ দিলেন। এই ছবিতে দেবী আফ্রোদিতির মনোভাব যেন ফুটে উঠেছে এরপর সাইকিকে ফাঁসিয়ের দেওয়ার জন্য ফন্দি আঁটলেন। দেবী সাইকিকে ছোট একটি বাক্স দিলেন। দিয়ে বললেন, এই মেয়ে শোন, এখন তুমি পাতালে নেমে যাও। ওখানে পার্সিফোনের (পাতালের রানী, বড্ড শীতল) সঙ্গে দেখা কর। ওর কিছু রূপ (বিউটি) এই বাক্সের ভরে এনে আমাকে দেবে। যাও। বেচারী সাইকি। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সবাই জানে মরণশীল কেউই একবার পাতালে গেলে আর কখনও ফেরেনা। কী আর করা। অবতরন করার প্রস্তুতি নিতে লাগল। অদৃশ্য কন্ঠস্বর শুনতে পেল। এরসের (অবশ্য সাইকি জানল না) ...কন্ঠস্বর বলল, পাতালে যেও তবে বিপদজনক পথে যেও না। আর পার্সিফোনের রূপ বাক্সে একবার ভরা হলে ওটা আর খুলো না কিন্তু। এরস যা যা বলল তাই করল সাইকি। তারপর পার্সিফোনের রূপ ভর্তি বাক্স নিয়ে সূর্যালোকে ফিরে এল। সাইকির কী কারণে মনে হল দেবী আফ্রোদিতির তো আর রূপের প্রয়োজন নেই ... ও বাক্সটা খুলল। সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়ল। ওদিকে এরস সাইকিকে খুঁজছিল । পেল। সাইকির জ্ঞান ফিরল। এরস সাইকিকে মায়ের দেবী আফ্রোদিতির) কাছে ফিরে যেতে বলল। এবং অপেক্ষায় থাকতে বলল। সাইকি তাই করল। এরস অলিম্পাসে ফিরে গেল। অলিম্পাস হল গ্রিক দেবতার থান। দেবতারা তখন ভোজনে বসেছিল। এরস সাইকির গল্প বলল। তারপর মাকে তুষ্ট করতে দেবতাদের অনুরোধ জানাল। দেবতারা সাইকির গল্পের মাধুর্যে তুষ্ট হলেন। তারা আফ্রোদিতি কে বকাঝকা করলেন। এরপর দেবতাদের নির্দেশে দূত হারমেস পৃথিবীতে নেমে এল। সাইকিকে অলিম্পাসে নিয়ে এল। লাজুক কুমারীকে দেবতারা বললেন: পেয়ালাপূর্ন অ্যাব্রোসিয়া (অমৃত) পান কর। যৌবনের দেবী হেবে (ইনিই রোমান দেবী জুভেন্টাস; এ নামে ইটালিতে ফুটবল টিম রয়েছে ...) তিনি তরল অমৃতপূর্ণ পেয়ালা সাইকির দিকে বাড়িয়ে দিলেন। সাইকি পান করল। এরপর ও আর অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ফুটল। এবং এরস ওর হাত ধরল। এর পর ওরা আর আলাদা হয়নি। আমরা তো Psychedelic art কি music এর কথা শুনেছি; এর মূলেও ওই Psyche ... সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:২৮
false
rg
নিশা দেশাই কি দিশা দেবেন বাংলাদেশকে!!! বাংলাদেশ কোন পথে হাঁটবে সেই দিশা ঠিক করার জন্যই নিশা দেশাই'র আগমন! নিশা দেশাই বিসওয়াল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নিযুত্ত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক নতুন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাপান থেকে গতকাল ঢাকায় এসেছেন তিন দিনের সফরে। তিন দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী'র সঙ্গে নিশা দেশাই বিসওয়াল আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলবেন। এছাড়া তিনি ঢাকা সফরের প্রথম দিনে গতকাল মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার বাসায় নাগরিক সমাজের ব্যানারে একটি প্রতিনিধিদল গতরাতে তার সঙ্গে ডিনার করেন। এই ছয় সদস্যের নাগরিক সমাজের তারা কারা? আদিলুর রহমান খান শুভ্র, ফারুক সোবহান, অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম, সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ, বদিউল আলম মজুমদার ও ব্যারিস্টার মঞ্জুর হাসান। তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় কি? মার্কিন মদদপুষ্ট বিতর্কিত মানবাধীকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি হলেন আদিলুর রহমান খান শুভ্র, যিনি গত ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতবিরোধী সরকারি অভিযান নিয়ে বিকৃত তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। যাকে মিথ্যা তথ্যের অভিযোগে গত ১০ অগাস্ট আটক করা হয়েছিল। হাইকোর্ট থেকে গত ১১ অক্টোবর তিনি ছয় মাসের জামিন পান। বিএনপি আমলের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হলেন ফারুক সোবহান। বিএনপি পন্থী সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স স্টাডিজের (আইজিএস) পরামর্শক ব্যারিস্টার মঞ্জুর হোসেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর বদিউল আলম মজুমদার। আর জাতীয়তাবাদী উকিল অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম। তাদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ড বর্তমানে যাই হোক না কেন তারা আসলে সবাই বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবী। নাগরিক সমাজের ব্যানারে আসলে বিএনপি'র অ্যাডভান্স টিম হিসেবে তারা নিশা দেশাই'র সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন।আজ সকালে নিশা দেশাই নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলবেন। দুপুরে তিনি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। বিকেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার বাসায় বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। রাতে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে দেখা করবেন। সফরের শেষ দিন অর্থাৎ আগামীকাল সোমবার সকালে নিশা দেশাই প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। আগামীকাল দুপুরে তিনি মধ্যাহ্নভোজসভায় শ্রমসচিব মিকাইল শিপার, বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দেখা করবেন। পরে তিনি পর্যায়ক্রমে বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রাতে তিনি ঢাকা ছেড়ে দিল্লি যাওয়ার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন। মোটামুটি এই হল নিশা দেশাই বিসওয়ালের তিন দিনের সফর সূচি।এবার আসা যাক আসল কথায়। নিশা দেশাই কে? ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন মার্কিন নাগরিক। ওবামা প্রশাসনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার কূটনীতি ঠিক করার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি। এটা দিবালোকের মত পরিস্কার, তিনি ভারত বা বাংলাদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বন্ধনে যুক্ত হলেও মার্কিন প্রশাসনের লাভক্ষতি দেখার দায়িত্ব ওনার। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে নিশা দেশাই'র ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে এ সপ্তাহের শুরুতে বিএনপি কোনো হরতাল বা অবরোধ দেয়নি। পাশাপাশি বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তারা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে এখন প্রস্তুত। সকল দাবী ত্যাগ করে হঠাৎ মির্জা সাহেবের এই ঘোষণা স্রেফ লোক দেখানো। সোমবার রাতে নিশা ম্যম ঢাকা ছাড়ার পরেই মির্জা সাহেবের গতিবিধি তা প্রমাণ করবে। যদি নিশা দেশাই'র উদ্যোগ বেহেস্থে যায়, তাহলে মঙ্গল-বুধ-বৃহস্পতিবার হরতাল বা অবরোধ ডাকতে পারে বিএনপি। আর যদি সত্যি সত্যি বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাহলে এই সপ্তাহেই সেই লক্ষণ আরো সুস্পষ্ট হবে। কথায় কথায় আমরা সবাই দাবী করি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। সত্যিই কি বাংলাদেশ স্বাধীন? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু যায় আসে না। বিদেশী ভূত পেত্নী কি কি পরামর্শ দেবেন, কিভাবে চলতে হবে, যা বাতলে দেবেন, তাই যেনো তাদের কাছে বেহেস্থি ওহি। ড্যান মজীনা কি বলবেন, পঙ্কজ শরণ কি বলবেন, তার দিকে সবাই তাকিয়ে আছেন। তার মানে ধরে নিতে হবে, নির্বাচন হল লোক দেখানো একটি নাটক। আমাদের প্রভুরা যাকে আগামীতে ক্ষমতায় দেখতে চান, তিনিই ক্ষমতায় আসবেন। সেই নিয়ে এখন দর-কষাকষি চলছে। কিসের দর-কষাকষি? সুযোগ সুবিধার। কি কি সুযোগ সুবিধা? তেল-গ্যাস-বন্দর-কয়লা-সস্তাশ্রম-বাজার-আর কিছু নতুন প্রজেক্ট। নব্বই দশকে গোটা ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতনের পর থেকে উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে সারা বিশ্বে চলছে পুঁজিবাদের একক প্রসার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই বাজারে নের্তৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশে যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তারা মার্কিন স্বার্থ কতোটা পূরণ করছে, তার লাভক্ষতির উপর বাংলাদেশে সরকার বদল হয়। জনগণ সাধারণ ভোটার নির্বাচন আন্দোলন এগুলো সব আসলে নাটক। আমরেকিা, ভারত, চীন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য বিদেশী প্রভুদের কে কতোটুকু স্বার্থ রক্ষা করতে পারলো, সেই যোগ্যতায় বাংলাদেশে সরকার বদল হয়। বাকী সময় জনগণকে ধোকা দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বছর বছর নাটক মঞ্চস্থ করতে থাকে। কিছু দিন আগে আমার এক রাশিয়ান বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা কওতো আমাদের প্রধান সমস্যা কি? সে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিল। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম তার ব্যাখ্যা শুনে। আমার ওই রাশিয়ান বন্ধু বললো, তোমাদের তেল-গ্যাস হল তোমাদের জন্য মরণ ফাঁদ। ওটা যখন ফুরিয়ে যাবে তোমাদের উপর আর কারো আগ্রহ থাকবে না। আকাশ থেকে বিশেষ বিমানের মাধ্যমে ওরা বাংলাদেশের মাটির নিচের প্রায় পাঁচ হাজার মিটার গভীর পর্যন্ত কি কি আছে সেই ছবি তুলতে সক্ষম। রাশিয়ার মতো আমেরিকা ফ্যান্সও এটা পারে। ওদের ছবিতে বাংলাদেশের মাটির নিচে প্রচুর পরিমাণে তেল-গ্যাস-কয়লা-সোনা ইত্যাদি আছে। আমাদের গোটা দেশই নাকি সোনার উপর ভাসতাছে। যা আমরা জানি না। কিন্তু ওরা জানে। আমি ওর কাছে একটা ব্যাখ্যা চাইলাম। ও বললো, হিমালয় থেকে যতো নদী বঙ্গোপসাগরে নেমেছে সবাই তোমাদের উপর দিয়ে বা পাশ দিয়ে গেছে। হাজার বছর ধরে হিমালয় থেকে এই জলধারা বঙ্গোপসাগরে মিলিত হতে হতে একটি বদ্বীপ হয়েছে, যেটি এখন বাংলাদেশ। এভাবে যেসব ভূখণ্ডের উৎপত্তি হয়, সেখানে নানা ধরণের খনিজ সম্পদ থাকে। তোমরাও তার ব্যতিক্রম নও। তোমাদের মাটির নিচে কি আছে আমরা জানি। তাই তোমাদের নানামুখি সাহায্য করার লোভ দেখিয়ে আমরা সেই খনিতে হাত দিতে চাই। সেটা নিউক্লিয়ার প্লান্ট হোক, কয়লা উত্তোলন হোক, গ্যাস উত্তোলন হোক, তোল উত্তোলন হোক। যাই হোক না কেন। পাইপ লাইন নির্মাণ হয়ে যাবার পর তোমরা আর টেরই পাবা না, তোমাদের গ্যাস বা তেল কিভাবে সেই পাইপ লাইন দিয়ে অন্যরা নিয়ে যাবে। হ্যা, তোমাদের কিছু লোক দালালীর মাধ্যমে কিছু টাকা পয়সা কামাই করবে। কিন্তু তোমরা এই সম্পদ রক্ষা করতে পারবা না। আমেরিকা চায় একা খাবে এই নীতিতে চলতে। কিন্তু ভারত বা অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেই তাকে খেতে হবে। নইলে তা হজম হবে না। তোমরা আছো মহা ফাঁফরে, বুঝলা?তোমাদের যতোদিন নিজস্ব টেকনোলজি শক্তিশালী না হবে, যতো দিন তোমাদের নিজস্ব এক্সপার্ট না হবে, যতো দিন তোমাদের রাজনৈতিক মেরুদণ্ড শক্তিশালী না হবে, ততো দিন তোমাদের রাজনৈতিক অচলাবস্থার নামে এই সম্পদ হাতছাড়া হতে থাকবে। তোমাদের দেশ দখল করার খায়েস কারো নাই। ষোলো কোটি মানুষের হাভাতের যোগান দেওয়ার দায়িত্ব কেউ নেবে না। বরং কৌশলে তোমাদের সম্পদগুলো কিভাবে নেওয়া যায়, সেই ফাঁদ পেতে সবাই বসে আছে। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাণ্ডজ্ঞানহীন রাজনৈতিক কর্মসূচি খতিয়ে দেখলে আমার ওই রাশিয়ান বন্ধু'র কথাগুলো হাড়ে হাড়ে মিলে যায়। তাইতো, আমরা তো স্রেফ আমজনতা। আমাদের সরকারে কে থাকবে তাতো বিদেশী প্রভুরাই ঠিক করে দিচ্ছেন। গণতন্ত্রের নামে এখানে চলছে ভেতরে ভেতরে অন্যান্য লেনদেন। সেই লেনদেনের ব্যাপার স্যাপার পাবলিক জানে না। পাবলিক খালি চোখে দেখতে পায় হরতাল-অবরোধ-আগুন-জ্বালাও-পোড়াও-লাশ-মানুষের হাহাকার। সম্পদ লুণ্ঠনের কলাকৌশল সাধারণ মানুষের চোখের সামনে হয় না। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ হরতাল অবরোধ না করার জন্য বিএনপি'র প্রতি হাজারো আহবান জানানোর পরেও কোনো কাজ হয়নি। আর কোথাকার কোন নিশা দেশাই'র আগমন উপলক্ষে এখানে রাতারাতি হরতাল অবরোধ বন্ধ হয়ে গেল! শুরু হল রশি টানাটানি। সেই রশি টানাটানিতে বিএনপি অনেকটা এগিয়ে। নিশা দেশাই'র পেছনে লেগে আছে একপাল বিএনপি পন্থী দালাল। সেই দালালরা বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ব্যানারে দেশেপ্রেম উছলে দিচ্ছেন। ভাগাভাগিটা কে কতো পারসেন্ট পাবে সেটা ফাইনাল হলেই একটা লোক দেখানো নির্বাচন হবে। আর আমরা হুররে হু-আক্কা-হু বলে সেই উৎসবে ঝাঁপিয়ে পড়বো। হায়রে স্বাধীনতা, হায়রে রাজনীতি!!
false
hm
নরকের দারোয়ান খালিদ টেবিলের ওপরে হাসিমুখ ধরে রেখে টেবিলের নিচে আমার পায়ে একটা লাথি মারলো। বিশ্বকাপের সিজনের কারণেই হয়তো লাথিটাতে প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি বিষ ছিলো। ভদ্রলোক ভুরু ওপরে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "কী হইলো?" আমি শার্টের হাতায় চোখের কোণ মুছলাম, খালিদ স্কুলে শেখা প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব শব্দটাকে আবার মনে করিয়ে দিয়ে বললো, "উফফ, মশা!" ভদ্রলোক আবার সোৎসাহে শুরু করলেন। তিনি অভিজ্ঞ মানুষ, দুনিয়ার হেন কোণাকাঞ্চি নাই যেখানে তিনি যান নাই, মশার কামড়ে দুনিয়াতে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ কেঁদে ফেলে। খালিদ আমাকে কথায় কথায় বলদ ডাকলেও আমি আসলে সরল মানুষ। অনেক কিছুই না বুঝে বলে ফেলি, কিংবা বলার আগে অগ্রপশ্চাৎ ভাবি কম। আমাদের টেবিলে বসা ভদ্রলোককে তাই আঙ্কেল ডেকে বসেছিলাম শুরুতে। তিনি যে সেটা ভালোভাবে নেননি, সেটা বুঝতে সময় লেগেছে একটু। হাত ধুতে যখন উঠেছিলেন তিনি, তখন খালিদ আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বলেছিলো, আঙ্কেল আবার কী? ভাইয়া বলতে পারিস না? আমি মিনমিন করে বলেছিলাম, চাচার বয়সী লোক ...। খালিদ বিরক্ত হয়ে ছ্যাক করে একটা শব্দ করে বলেছিলো, ওনার ওয়াইফকে ভাবী ডাকি আমরা। কাজেই উনি ভাইয়া। আবার আঙ্কেল ডাকলে লাত্থি খাবি। আর কথা না বলে চুপ থাক। বলদ কোথাকার। খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ভদ্রলোকের কথা শুনতে থাকি। পায়ের হাড়ে লাথির ব্যথাটা আস্তে আস্তে ফেসবুকের বাসি হুজুগের মতো স্তিমিত হয়ে আসে। "... বেলা শেষে সবই হইতেছে গিয়া সেতুর নিচে পানি, ওয়াটার আন্ডার দ্য ব্রিজ।" বোরহানির আগাম জগ থেকে গ্লাসে সামান্য একটু ঢেলে শুঁকতে শুঁকতে বললেন ভাবীস্বামী আঙ্কেল। "কী ব্যাপার, পুদিনা ছাড়াই কি বোরহানি বানাইয়া ফালাইছে নাকি? কোনো ধক নাই!" খালিদ সায় দেয়। ওর মতলবটা ধরতে পারি না। তবে বুঝতে পারি কোনো একটা মতলব তার আছে। লোকজনের কথায় সায় দিয়ে সে সহজে কিছু বলতে চায় না। আঙ্কেলমুখো ভাই বলেন, "কিন্তু বুঝলা তোমরা, সেদিন আমি বার্মা গেছিলাম একটা জরুরি কামে। ... না না, আমার এনজিওর কোনো অপারেশন নাই বার্মায়। এমনেই আরেকটা কামে গেছিলাম আর কি। ইয়ানগন এয়ারপোর্টে নামার পর কী হইলো শোনো। ইমিগ্রেশনের নাকচ্যাপ্টা এক হালায় আমারে জিগায়, ওহ, ইউ আর ফ্রম বদি'স কান্ট্রি?" আমি বোরহানির গ্লাসে বোরহানি ঢালতে ঢালতে বলে ফেলি, "বদি কে?" খালিদ আমাকে আবার মুখ খুলতে মিডফিল্ডারদের মতো আড়ে আড়ে তাকায়। ভাই অবশ্য অসন্তুষ্ট হন না। বলেন, "আরে আসতেছি সেই কথায়। ... তো আমার গেলো মেজাজ খারাপ হইয়া। আমি কইলাম, ইয়েস, ইউ মিন বাংলাদেশ। আই অ্যাম ফ্রম বাংলাদেশ। হালায় চিঙ্কু তখন মিটমিট কইরা আমার দিকে চায়, কাগজপাতি ঘাঁটে আর ফ্যাকফ্যাক কইরা হাসে। চিন্তা কইরা দেখো ব্যাপারটা, কী তামশা?" খালিদ বলে, "কঠিন তামশা।" আমি বদিকে চিনি না বলে তামাশাটা কোথায়, ধরতে পারি না। বেয়ারারা সারি বেঁধে সুরভিত পোলাওয়ের থালা নিয়ে হুড়মুড় করে টেবিলে টেবিলে ছুটতে থাকে। সেদিকে তাকিয়ে ভাই বলেন, "ঘটনা কিন্তু এইখানেই শেষ না। বরং এইখানে শুরু। এরপর মালয়েশিয়া গেলাম তোমাদের ভাবীরে নিয়া। বেড়াইতেই গেছিলাম, আবার একটু মেডিক্যাল চেকআপও করাইয়া আসলাম। মালয়েশিয়া, বুচ্ছো তো, অনেক উন্নত হইয়া গেছে। অনেক উন্নত। মাহাথির স্যারের মতো স্যার পাইলে আমাদের দেশটা যে কোনদিকে যাইতো ... কী আর কমু কও? সবই তো বুঝো, সবই তো জানো। এইসব গণতন্ত্র ফনতন্ত্র দিয়া আসলে দেশ সামনে আগাইতে পারে না। জবরদস্ত একজন ক্যাপ্টেন না থাকলে লঞ্চ চড়াতে ঠেকবোই ঠেকবো। আমার শালা খালি পাকনামি করে, কয় দ্যাহেন দুলাভাই, মাহাথির কিন্তু স্বৈরশাসক, তার আত্মীয়স্বজন ব্যাপক দুর্নীতি করছে। আমি তারে ঐদিন দিছি ধমক। কইলাম, চুদির ভাই তুই জানস কী। টাইটের উপর না রাখলে দেশ আউগায় নাকি? আর একলাই খাবি, ইষ্টিগো দিবি না?" খালিদ মাথা দুলিয়ে বলে, "ট্রু, ট্রু।" পোলাও চলে আসে, মুখ খুলতে সাহস না পেয়ে পাতে অল্প একটু পোলাও নিয়ে নাড়াচাড়া করি। ভদ্রলোক তখনই পাতের দিকে হাত বাড়ান না, অ্যাপল ফোনে কিছুক্ষণ আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করে আবার শুরু করেন, "মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনেও এক হালায় আমারে জিগায়, ওহ, ইউ আর ফ্রম বদি'স কান্ট্রি? ... কী বুঝলা?" আমি চিন্তা করতে যাই বলদের মতো, খালিদ চাল্লু মাল, সে এইসব ভাবনা চিন্তার দিকে না গিয়ে বোঝার কাজটা আবার ভাইয়ের পাতে ঠেলে দিয়ে বলে, "বুঝেন অবস্থা!" ভাই নড়েচড়ে বসে বলেন, "আমি তো থান্ডারড! কিন্তু শেষমেশ তারে কইলাম, ইয়েস, ইউ মিন বাংলাদেশ। হালায় কিটিপিটি চায় আমাগো দিকে, পাসপোর্ট ছানে, আর খ্যাক খ্যাক হাসে। কী আর কমু, কও?" রেজালার ঘ্রাণ ভেসে আসে নাকে। বেয়ারার দল সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট আর কালো বো টাইয়ের স্রোত হয়ে ভেসে আসে সাথে। কিন্তু ভাই রোস্টের জন্য অপেক্ষা করেন। "এনজিওর কাম আমার, বুঝোই তো, দেশে বেশিদিন একটানা থাকতে পারি না। ডাইনে বামে যাইতে হয়। টার্কিশ এয়ারে গেছো কোনোদিন? যাও নাই? ইস্তাম্বুল শহরটা ঘুইরা দেখার একটা সুযোগ পাইবা গেলে। দারুণ শহর। আমি তো কাবাব খাইতে খাইতে হয়রান। কিন্তু ইমিগ্রেশনের লোকজনগুলি ছাক্কা মাদার... সরি। মুখ খারাপ হইয়া যায়। কিন্তু তোমরা তো ইয়ংম্যান। আমার পাসপোর্ট আটকাইয়া চেহারার লগে ছবি মিলায় আর একটা আরেকটারে কী কী জানি কয়। শেষমেশ আরেক কুতুব আইসা আমারে কোনোমতে ইংলিশে জিগায়, ওহ, ইউ আর ফ্রম বদি'স কান্ট্রি?" খালিদ রোস্টের জন্য অপেক্ষা করে না, রেজালার বাটিতে চামচ চালাতে চালাতে বলে, "ভাই শুরু কইরা দিলাম, মনে কিছু নিয়েন না।" ভাই মনে কিছু করেন না, রোস্টের থালা নিয়ে বেয়ারার স্রোত অনুকূলে চলে আসে। আমি পোলাও দিয়ে গোগ্রাসে রেজালা সাঁটাতে থাকি। রোস্টের ওপর দিয়েই তুর্কি ইমিগ্রেশন অফিসারের জন্য বরাদ্দ ঝালটা ঝাড়েন ভাই। তারপর ধকল সামলে মিনিট পাঁচেক পর বলেন, "বুচ্ছো কী অবস্থা? আমি আর কী কমু। কইলাম, ইয়েস, ইউ মিন বাংলাদেশ। তিন মাদার... ঐ তো, বুচ্ছো তো, তিনজন একলগে খিলখিল কইরা হাসে। তাইলেই কও আমারে, দেশটা চলতেছে আসলে ক্যামনে?" খালিদ গভীর সমবেদনা নিয়ে খায়। ভদ্রলোক দ্রুত রোস্টের উল্লেখযোগ্য অংশ বিনাশ করে রেজালার বাটির দিকে অনিসন্ধিৎসু চোখ রাখেন, তারপর তুড়ি মেরে বেয়ারাকে ডাকেন। বাটিতে যা ছিলো তা আসলেই গুণীতোষ পরিমাণ নয়। রেজালা শেষ করে রোস্টের দিকে হাত বাড়াই। খালিদও সময়টাকে নষ্ট না করে রেজালার বাটির অবশিষ্টাংশ পাতে নিয়ে বলে, "ভাই শেষ কইরা দিলাম, মনে কিছু নিয়েন না।" একটা বেয়ারা রেজালার বাটি হাতে ভেসে আসে বন্ধু-বন্ধু-ভাব প্রেত ক্যাসপারের মতো। ভাই রেজালার বাটি থেকে দরাজ হাতে তিন ভাগ স্থল আর এক ভাগ জলে পাতের পোলাওকে ভারাক্রান্ত করে বলেন, "কিন্তু ঘটনা যদি এইখানেই শেষ হইতো, একটা কথা ছিলো। নাইজেরিয়া গেছিলাম সেদিন। আবুজাতে নামছি, সেই রকম কালা এক কালা আমারে ইমিগ্রেশনে আটকাইয়া কয়, ওহ, ইউ আর ফ্রম বদি'স কান্ট্রি?" খালিদ অপেক্ষা করে আরো কিছু শোনার জন্য, না শুনতে পেয়ে বলে, "ভাই, সেইরম অবস্থা!" তারপর অবশ্য ভাই চুপ করে যান। আরেকটু বোরহানি খান, আইসক্রিমের বাটিটাও যত্ন করে শেষ করেন। শেষমেশ আসা পানমশলার খিলিটা মুখে পুরে বলেন, "আমি হাত ধুইয়া আসি। তোমরা তো আমার বাসার ঐদিকেই যাইবা, নাকি? চলো আমার সাথে, আগাইয়া দিমুনি।" খালিদ স্বস্তির শ্বাসটাকে গোপনে চোরের মতো ছাড়ে। এবার বুঝতে পারি তার জ্বিহুজুরির রহস্য। এতো রাতে সিয়েনজি পাওয়া মুশকিল এখানে। ভাইয়ের আলিশান গাড়ির সামনের সিটে চড়ে বসে খালিদ, আমি চুপচাপ গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়ের মতো গাড়ির পেছনের সিটে জড়োসড়ো হয়ে বসি। ভাই পাকা হাতে গাড়ি বের করে রাস্তায় নেমে বলেন, "কিন্তু ঘটনা কিন্তু শেষ হয় নাই। ঐদিন ম্যানচেস্টার গেছিলাম, তোমাদের ভাবীর বড় বোন থাকেন ঐখানে। হিথ্রো হইয়া যাইতে হয়, বুচ্ছো তো? হিথ্রোতে ধবধবা ফর্সা এক লম্বা চওড়া ইংরাজ সাহেব আমারে ইমিগ্রেশনে থামাইয়া সুন্দর একটা হাসি দিয়া কইলেন, সো মাইট, ইউ আর ফ্রম বদি'স কান্ট্রি? আমিও হাইসা কইলাম, ইয়েস, রাইট ইউ আর! চিন্তা করছো অবস্থাটা? কোথায় কোন চিপায় পইড়া রইছে আমাগো বাংলাদেশ, কিন্তু সাহেবরা ঠিকই খোঁজ খবর রাখে! এখন তোমরাই কও, এই বদি না থাকলে কি সে আমাগোরে চিনতো?" আমি নিজেকে সময় মতো থামাতে পারি না, আবার বলে বসি, "বদি কে?" এবার অবশ্য খালিদ রাগ করে না, বাড়ির পথে গাড়িতে চড়েই বসেছে যখন। সে-ও মধুর গলায় বোল তোলে, "হ ভাই, কোন বদি এইটা কন তো?" ভাইয়ের চেহারা পেছনের আসন থেকে ঠিকমতো ঠাহর করতে পারি না অন্ধকারে, তিনি মধুমন্দ্র গলায় বলেন, "আরে দ্যাখো নাই, ঐ যে ঐদিন পুলিশ ধরছে ... পেপারে টিভিতে ফেসবুকে সবখানে নিউজ আসছে তো। সাংবাদিকরা, বুচ্ছো না, পাইছে এক চান্স, দিছে কোকেন সম্রাট বানাইয়া। কোকেন সম্রাট বদি।" আমি ভেতরের বলদটাকে থামাতে না পেরে বলে ফেলি, "কোকেন সম্রাট বদিরে এতো দেশের লোকে চিনে?" ভাই একটু যেন বিরক্ত হন, তিনি একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের সিটে বসা অন্ধকার আমাকে এক ঝলক দেখে নিয়ে বলেন, "একটা লোক, তারে সারা দুনিয়ার মানুষে চিনে, তারে দিয়া লোকে আমাদের দেশটারে চিনে, তারে তোমরা কোকেন সম্রাট বানাইয়া দিলা। আমারে যদি জিগাও, আমি কমু কামটা ঠিক হয় নাই। যেই দেশে গুণীর কদর নাই, সেই দেশে গুণী জন্মাইতে পারে না। আমাগো জাতিটাই খারাপ, বুচ্ছো?" আমি খুব একটা চিন্তিত হই না অবশ্য, সামনের সিটে বসে খালিদ আমাকে লাথি মারতে পারবে না। ভাই গাড়ি ঘুরিয়ে ভিআইপি সড়কে উল্টোবাগে চলতে চলতে বলেন, "আমার শালা একটা পাকনা, ইউনিভার্সিটিতে পড়ে তো, পাকনা কিছু ফাউলগো লগে ঘুরে, তারা যা কয় সে সেগুলিই সারা দিন শোনে, রাইতে বাসায় আইসা খাওনের টেবিলে সেইসব উগড়ায়। সে আমারে কয়, দুলাভাই গুণীর জন্য কি আইন আলাদা? লাইন আলাদা? সে কি নিয়ম কানুন মানবে না? আমি তো তোমাদের ভাবীর সামনে তারে বেশি কিছু কইতেও পারি না, সেইদিন বারিন্দায় বিড়ি খাইতে গিয়া তারে পাইয়া কইলাম, আব্বে শ্বশুরার পো, নিয়ম মাইনা কে কবে বড় হইছে রে? নিয়ম বানানোই হইছে তর মতো আবুলগোরে লাইনে রাখতে। ঐ লাইন টপকাইতে না পারলে সারাজীবন এক জায়গায় খাড়াইয়া বালটা ফালাবি? দিনদুনিয়ার সমঝদারি কবে হইব তর?" খালিদ কিছু বলে না। ভাই গজগজ করতেই থাকেন। বলেন, "বাঙ্গালি এক আচোদা নেশন, বুচ্ছো তো? বাঙ্গালির নরকে দারোয়ান লাগে না। একজন বাইর হইতে গেলে আরেকজন ঠ্যাং ধইরা টাইনা রাখে।" গাড়ির অন্ধকারে বসে টের পাই, নিয়ম মানেই নরক। সে নরক থেকে বেরোতে গেলে তো কিছু নিয়ম ভেঙে খানখান হবেই? গাড়িটা হঠাৎ হোঁচট খেয়ে থেমে যায়, ফটাশ করে শব্দ হয় বাইরে। ভাই ব্রেক কষে স্টিয়ারিঙে কিল মেরে চিৎকার করে উঠেন, "ধুর বাল! এই শাউয়ার লোহার কাঁটা বহাইয়া কি দেশটারে শেষ করবি? আরে এইটা কেমন গণতন্ত্র? দেখি খালি আর কয়দিন পাওয়ারে থাকতারস ...।" খালিদ একবার শুধু পেছনে তাকিয়ে আমাকে টপকে দেখে নেয় আর কোনো গাড়ি আসছে কি না, তারপর স্মার্ট ছেলের মতো গড়গড়িয়ে বলে, "ভাইরে তো মনে হয় গ্যারেজ থেকে লোক ডাকায়ে বাড়ি যাইতে হবে। আচ্ছা ভাই, আজকে আসি তাইলে, দেখা হবে আবার যদি দেশে থাকেন। ঐ, নাম বে!" ভাই হয়তো চাকা বদলানোর জন্য আমাদের দুজনকে ভরসা ধরে নিয়েছিলেন, খালিদ তাকে মুখ খোলার সুযোগ না দিয়ে আমার হাতে ধরে টানতে টানতে দ্রুত পায়ে রাস্তা টপকে উল্টোদিকে গিয়ে এক সিয়েনজি মামুকে মধুর গলায় বলে, "চলেন মামু, বাসায় যাই। মিটার ফালাইয়া রাখেন, মিটারের মায়রে বাপ।" বদির দেশের ভিআইপি রোডে চাকাফাটা একটা গাড়ি বুকভরা দিনদুনিয়ার সমঝদারি নিয়ে থমকে থাকে স্রোতের উল্টোদিকে। স্বর্গের দারোয়ানরা এ কথা কোনোদিন জানতে পারবে না, ভাগ্যিস!
false
rg
আহা আমজনতা বাজাও তালিয়া!! আজ দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পাতায় বেশ জোরালো ভাবে আট কলামে আট জন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যের আয় ব্যয়ের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে তারা আয় ব্যয়ের যে হিসাব দিয়েছিলেন, তারই একটি তুলনামূলক চিত্র। সেই চিত্রটি দেশের জন্য মোটেও সুখকর নয়। মাত্র পাঁচ বছরে এক এক জন সংসদ সদস্যের আয় যদি ডাবল থেকে শুরু একশো সাত গুন পর্যন্ত বাড়তে পারে, তাহলে বুঝতে হবে উন্নয়নের জোয়ার সত্যিকার অর্থে কোথায় কোথায় আসে। জাতীয় সংসদের নেতা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদের একবারে নবীন সাংসদ পর্যন্ত এই চিত্রটি যদি দেশবাসী'র কাছে নির্বাচন কমিশন ভোটের আগে প্রকাশ করতো, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হত। দেশের মানুষ বুঝতে পারতো কাদেরকে ভোট দিয়ে তারা আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে পাঠান। জনগণের উন্নয়নের কথা বলে নিজেরা যেভাবে আখের গুছিয়ে নেয়, এই সংস্কৃতি যে নতুন নয়, সেটি বোঝার জন্য বেশি পণ্ডিত হবার দরকার নেই। অবশ্য আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন যতোটুকু শক্তিশালী'র ভান করে সেইটুকু শক্তি দিয়ে আমাদের গণপ্রতিনিধিদের আয় ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করার মত দুঃসাহস রাখে না। আমাদের মহামান্য সাংসদের ভাষায় দুষ্টু সাংবাদিকদের শয়তানী কলমের খোঁচায় তাদের আয় ব্যয়ের যতোটুকু সাধারণ মানুষ জানতে পারে, তাতেই একটা বিষয় খুব পরিস্কার, আমাদের এখানে সাংসদদের প্রধান টার্গেট থাকে টাকা কামাই করা। জনসেবা করা একটা অযুহাত। জনসেবা বললে তার সঙ্গে অনেক মানবিক বিষয়, মহানুভবতার বিষয়, গরিব মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেবার বিষয়, জনকল্যানকর বিষয়, জনহিতকর বিষয়, কত হাজারো সেবার একটা সংমিশ্রণ একসঙ্গে ফুটে ওঠে। সেই মহৎ পেশা যারা বেছে নেন তারা তো সবাই ফেরেশতা। নইলে নিজের সংসার ধর্ম ফেলে, নিজের ঘরের কাজ ফেলে, নিজের সৌখিন শখ সাধ আহলাদ ফেলে কেউ কি স্বেচ্ছায় জনসেবা করতে নামে? আল্লাহ'র নবী ও রাসুলদের পর আর যদি কোনো প্রেরিত ব্যক্তি থাকে তারা হলেন জনসেবক। আমাদের মহান রাজনীতিবিদরা সেই দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সকল ধরনের সেবা করে যাচ্ছেন। সেই সেবায় গত ৪২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে!১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মিস্টার হেনরী কিসিঞ্জার সাহেব কইলেন, আমরা নাকি তলাবিহীন ঝুড়ি। একেবারে বোটমলেস বাসকেট! সেই কথার জবাব দেবার প্রস্তুতি নিতে নিতেই শুরু হল '৭৪ সালের অকাল দুর্ভিক্ষ। সেই দুর্ভিক্ষে মাত্র দশ লাখ গরিব মানুষ মরেছে। গরিব মানুষ দশ লাখ মরাও যা, এক কোটি মরাও তাই!! গরিব দেশের মানুষ মরবে, না খেয়ে মরবে, বিনা চিকিৎসায় মরবে, ধুকে ধুকে মরবে, দুঃখে শোকে মরবে, এটাই তাদের চরম নিয়তি!! কিন্তু ধনী মানুষ কিন্তু '৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে একজনও মরেনি। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশের একজন সংসদ সদস্যও '৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায়, ধুকে ধুকে মরেনি। যারা মরেছে, তারা গরিব মানুষ। গরিব মানুষের জীবনের দাম তখন ছিল দিনে আড়াই টাকা। আর মরলে চার আনা। আর সেই একই গরিব মানুষের জীবনের দাম ৪২ বছর পরের বাংলাদেশে দিনে পঞ্চাশ টাকা। আর মরার পর এককালীন পাঁচ হাজার টাকা!!১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তারা তখন কেবল টাকার মুখ দেখা শুরু করেছেন। টাকা চিনতে শুরু করেছেন। কোনটা কয় টাকার নোট তা চোখ বুজে বলার মত দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করেন। টাকার গন্ধই নাকি জীবনের সবচেয়ে পরম সুখ। অনেকে টাকায় চুম্মা খান। আহা টাকাই জীবন, টাকাই কিবলম। টাকাই সব। তখন আওয়ামী লীগের শাসনকাল। কেউ কেউ বলেন দুঃশাসন। সেই কথার কিছুটা সত্যতা তো আছে বটে! গোটা দেশের যেখানে চুরি-চামারি, লুটপাট, চর দখল, খাসজমি দখল, সব নাকি আওয়ামী লীগের লোকজন করেছে। মুরব্বীদের মুখে ছোটবেলায় এসব গল্প শুনতাম। বঙ্গবন্ধু বাঙালি'র নেতা। তিনি পরম দয়ালু ছিলেন। কাউকে নাকি নিষেধ করার তেমন চেষ্টা করতেন না। দু'একটা বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি হলে চড়-থাপ্পর দিয়ে ডাইরেট অ্যাকশান দেখিয়ে তাৎক্ষণিক বিচার করে দিতেন। তাতে চুরি লুটপাট বন্ধ হয়নি। বরং সেই সুযোগে চোরেরা সবাই আওয়ামী লীগের ঘাড়ে গিয়ে, আওয়ামী লীগের ঘরে গিয়ে উৎপাত শুরু করলো। সেই উৎপাতের কথা ইতিহাসে যতোটা আছে, তার চেয়ে মুরব্বীদের কথায় বেশি শুনেছি। তখন ডাট আর দাপট এই দুটো শব্দ বেশ পরিচিত ছিল। কেউ বেশি দেমাগ দেখালে সবাই বলতো, শালার চাঁন মিঞার পোলার ডাট কতো? পরণে ছেড়া লুঙ্গি, গায়ে চড়াইছে কোট, দেখো বান্দার চোট!! ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মম ভাবে নিহত হলেন। আওয়ামী লীগের সেই সব চোর, লুটপাটকারী, দখলকারী, দেমাগী ডাট দেখানো একজন লোকও সেদিন রাস্তায় নামেনি। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মা একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিলেন। ইতিহাসে ওই একটি প্রতিবাদ মিছিলের অস্তিত্ব খুঁজে পাই। অখচ, বঙ্গবন্ধু'র মত একজন অবিসংবাদিত নেতার অমন করুণ মৃত্যুতে দেশে কয়েক মিনিটের মধ্যেই রায়ট হবার কথা ছিল। যুদ্ধ লেগে যাবার কথা ছিল। সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনী-জনতা, আওয়ামী লীগ-বিরোধী পক্ষ তখনই যুদ্ধ লাগার কথা ছিল। অন্তত যুদ্ধ না লাগলেও একটা এসপার ওসপার হওয়া উচিত ছিল। কিছু জ্বালাও পোড়াও খুন জখম হবার কথা ছিল। কিন্তু গোটা দেশ একেবারে চুপ! ভাবা যায়? একো বড় একজন নেতাকে মেরে ফেলা হল, অথচ কোনো প্রতিবাদ হল না? দেশের সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিলাম, আওয়ামী লীগ তো একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, কিন্তু করেনি। অর্থ্যাৎ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর যারা এতোদিন কেবল খাই খাই করেছে, তারা সবাই আরামছে লাপাত্তা। দিন দুপুরে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠের আওয়ামী সাংসদরা কর্পূরের মত হাওয়া! সৌভাগ্য গুনে বঙ্গবন্ধু'র দুই কন্যা তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। নইলে আওয়ামী লীগ হয়তো আর বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবেই থাকতো না। অন্তত আওয়ামী লীগের তখনকার যারা রাতারাতি ভোল্ট পাল্টে খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলালেন, কেউ কেউ হাত মেলঅনোর চেষ্টা করে গেলেন। আর যারা খাস আওয়ামী লীগার, যারা মাথা চারা দিয়ে উঠতে পারে, তাদের ধরে ধরে জেলে পুরে দিলেন। আর একদল সুযোগ সন্ধানী আওয়ামী লীগ বিদেশে নিজের প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গেলেন। এবার মাঠ ফাঁকা। তাই বলে কি চুরি থেমে যাবে? দখল থেমে যাবে? ক্ষমতা উদযাপন থেমে যাবে? শুরু হল পাকিস্তানের পরাজিত অপশক্তি'র নানামুখি খেলা। সেই খেলায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করলেন জেনারেল জিয়া। এবার বাংলাদেশের মানুষকে বোঝাতে হবে, এই দ্যাখো আমি কত সৎ! আমি কত নিষ্ঠাবান! আমি কত দেশপ্রেমিক! প্রেসিডেন্ট জিয়ার একটা মাত্র ব্রিফকেস, তাও আবার ভাঙা! হতেই পারে, গরিব একটি দেশের প্রেসিডেন্টের ভাঙা ব্রিফকেস থাকল তো দোষ নেই। ব্রিফকেস যে আছে, সেইতো মহা আনন্দের খবর। সেই ভাঙা ব্রিফকেসে কি কি আছে? ছেড়া গেঞ্জি আর ছেড়া শার্ট! তাতো বটেই তাতো বটেই। ভাঙা ব্রিফকেসে কি আর নামি দামি প‌্যান্ট কোট টাই থাকবে মশাই?তখনো মুরব্বীদের মুখে শুনতাম, আমাদের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া নাকি রাতে আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ডিনার করেন। সকালে সবজিআর পরোটা খান। দুপুরে খান সবজি ভাত। তো রাতারাতি আমাদের প্রেসিডেন্ট জনপ্রিয় হয়ে গেলেন এই সব প্রচারের ফলে। তারপর তিনি খাল কাটা শুরু করলেন। নিজ হাতে খাল কাটা উদ্ভোধন করেন। হেলিকপ্টারে উড়ে উড়ে গোটা দেশে খাল কাটলেন। দেশের গরিব মানুষ কিছু নগদ গম পেল। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে খাল কাটলেন। মাভৈ মাভৈ। এই তো বাংলাদেশ! সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে আবার চিনতে শুরু করলো!!ওদিক ক্যান্টনমেন্টে মুখ ব্যাজার করে বসেছিলেন জেনারেল মঞ্জুর সাহেব। সিনিয়রিটি টপকে এরশাদকে করা হয়েছে সেনাপ্রধান। আর মঞ্জুর সাহেবকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। জ্যোতিষি পর্যন্ত জেনারেল জিয়াকে নাকি চট্টগ্রামে যেতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু সারা দেশে তিনি উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। তার আবার কে শত্রু? চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাত্রিযাপন করলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাতে নাকি প্রেসিডেন্ট জিয়ার খাটে বি চৌধুরী ঘুমালেন। আর বি চৌধুরী'র খাটে গিয়ে ঘুমালেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। সার্কিট হাউজের বাইরে অতন্ত্র প্রহরা সেনাবাহিনীর। কিন্তু মঞ্জুরের কমান্ডিং ফোর্সের কাছে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় রক্ষিত সেনাবাহিনী প্রথম ধাক্কায়ই কুপোকাত। হট্টগোল শুনে ঘুম ছেড়ে প্রেসিডেন্ট জিয়া নাকি বাইরে বেরিয়ে আসলেন! তারপর তাকেও নির্মম ভাবে হত্যা করা হল ৩১ মে ১৯৮১ সালের প্রথম প্রহরে। ঢাকায় প্রধান বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ মঞ্জুরকে দেখে নেবার হুমকি দিলেন। অনেক নাটকের পর জেনারেল মঞ্জুর ধরাও পড়লেন। কিন্তু বিচারের কাঠগড়ায় যাবার আগেই তাকেও হত্যা করা হল। তারপর ওস্তাদের দেখানো পথেই জেনারেল এরশাদ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসলেন ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ। কোথায় দেশপ্রেম? কোথায় গণতন্ত্র? কোথায় জনসেবা? প্রেসিডেন্ট জিয়ার ফেলে যাওয়া ভাঙা সুটকেস থেকে যেসব ছেড়া জামা কাপড় পাওয়া গেল, তাই টেইলরের দোকানে নিয়ে বেগম জিয়া দুই ছেলের জন্য জামা কাপড় বানালেন! এরশাদ সাহেব তার ওস্তাদের অমন করুণ মৃত্যুর পরে সেনানিবাসে সেনাপ্রধানের বাড়িটাই বেগম জিয়াকে বসবাসের জন্য দান করলেন। আহা দানবীর মহাত্মা মহসীনের পরে হয়তো এরশাদের নামই বিএনপি'র সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ করার কথা। দিনে দিনে জেনারেল এরশাদ হয়ে উঠলেন পল্লীবন্ধু। বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে একে একে গড়ে উঠতে লাগল গুচ্ছ গ্রাম। এবার আর দেশে গরিব থাকবে না। বন্যার হাঁটু জল ভেঙে জেনারেল এরশাদ গোটা দেশের মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করলেন। গরিব তুই কেমনে মরবি? মরার আগে ত্রাণ খাইয়া ল, তারপর যতোখুশি মরিস!ততোদিনে রাজ্জাক-তোফায়েল সাহেবরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আওয়ামী লীগ পুনঃগঠনে উঠে পড়ে লাগলেন। বেগম জিয়া সেনানিবাসের বাড়িতে বসে সরকারি খরচে খেয়ে পড়ে জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলনের হুমকি দিলেন! তারপর '৮৬ আর '৮৮ সালের নির্বাচন হল। দেশের মানুষ খেতে পাক না পাক বেশ উৎসবের সঙ্গেই ভোট দিল! মিজান চৌধুরী যেভাবে যা বলেন, এরশাদ সাহেব তাই করেন। কিন্তু এরশাদ সাহেবের চেহরা সুরত মাশাল্লা আল্লাহ'র দেওয়া এক্কেবারে রাজপুত্তুরের নেহান! মেয়েরা তাকে দেখলেই তার প্রেমে পড়ে যান। কাভি খুশি কাভি গাম! মুম্বাই থেকে জগজিৎ সিং উড়ে এসে এরশাদ সাহেবকে গজল শোনান। মিজান সাহেব বয়সের ভারে একটু কাবু জবু থবু হবার পর এরশাদ সাহেব সেই দায়িত্ব দেন কাজী জাফর সাহেবকে। উনি বেশ দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান করলেন। রামপুরা টেলিভিশন ভবনের সামনে বিশাল প‌্যান্ডেল বানানো হল। ভারত থেকে নামিদামী সঙ্গীত শিল্পী আসলেন। গান গাইলেন। এরশাদ সাহেব অনুষ্ঠান উদ্ভোধন করে দিয়ে জাফর সাহেবকে দায়িত্ব দিয়ে বঙ্গভবনে গেলেন। রাষ্ট্রের কত কাজ! রাস্তায় গান বসে বসে শুনলে হবে? ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদ কাজী জাফরের পাশে বসে গান শুনলেন। আহা এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি? গোটা দেশ আনন্দে নাচতে লাগলো।তার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এরশাদের উপর ক্ষেপে গেল। মিজান চৌধুরীকে ন্যাংটা করলো। মওদুদের হাতে গামছা ধরিয়ে দিল। পরিস্থিতি কাজী জাফর সাহেব সামাল দিতে না পারায় এরশাদ সাহেব তাকে বহিস্কার করে দায়িত্ব দিলেন ব্যারিস্টার মওদুদের উপর।মওদুদ সাহেব আইনের মানুষ। ইতোমধ্যে গুলশানে তিনি বিশাল একটা বাড়ি বাগিয়ে নিলেন!আর এরশাদ সাহেবকে সকল ধরনের বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালের বিকালে ছাত্রদের কাছে ধরাসাই হয়ে পলায়নের পথ খুঁজে নিলেন।তারপর নির্বাচন হল উৎসবমুখর। বেগম জিয়া হলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে স্বৈর শাসন পরবর্তী গণতন্ত্রের জোয়ার বইতে শুরু করলো। সেই জোয়ারে শেখ হাসিনা গা ভাসায় কি করে? তিনি মাঠে নামলেন। বেগম জিয়ার চূড়ান্ত পরাজয় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। তারপর একটি ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হল ১৯৯৬ সালে। তারপর বেগম জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হলেন। আবার নির্বাচন হল। এবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলেন। দেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আহা এইবার দেশ বাঁচলো। গণতন্ত্রও বাঁচবে বলে দেশের মানুষ আশায় বুক বাঁধলো। শেখের বেটি পাহাড় শান্ত করলেন। গঙ্গায় পানি আনলেন। বয়স্ক ভাতা চালু করলেন। গ্রামে গঞ্জে স্বাস্থ্য ক্লিনিক গড়ে উঠলো। এবার আর গরিব মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরবে না। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হল। কে বলেছে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি? কোথায় সেই হেনরী কিসিঞ্জার? এবার বাজাও ঢোল। প্রস্তুত হও শান্তি পদক দেবার জন্য!তারপর কি হল? ২০০১ সালৈ আবার নির্বাচন হল। এবার আবার বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসলেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। এবার আর ঠেকায় কে? এবার বনানীতে প্রিন্স তারেক সাহেব একটি হাওয়া ভবন গড়ে তুললেন। বন্ধু মামুনকে নিয়ে শুরু করলেন খাম্বা ব্যবসা। আর জামায়াতের দুই বীর সেনানীকে জাতীয় পতাকা দিয়ে জামাই আদর করে ঘরে তুলে নিলেন বেগম জিয়া। একাত্তরের পরাজিত জামায়াত রাজাকার আবার জাতীয় পতাকা লাগিয়ে সবার সামনে পত পত করে দাপিয়ে বেড়ান। পারলে ঠেকাও মনু? তারপর কি হল? একটি ওয়ান ইলেভেন!গোটা বিশ্ব দেখলো আমেরিকায় যদি নাইন ইলেভেন হতে পারে বাংলাদেশে কেন অন্তত একটা ওয়ান ইলেভেন হবে না? তারপর দুই নেত্রী জেলে গেলেন। নিজেদের রান্না করা খাবার পরম্পর বিনিময় করলেন। তারপর কি হল? আবার একটা নির্বাচন হল। এবার ক্ষমতায় আসলেন আবার শেখ হাসিনা। এবার সেই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা। এবার আর ঠেকায় কে? দেশে এবার সব কিছুই আইনের শাসন অনুযায়ী চলবে। সেই ফাঁকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হল। বঙ্গবন্ধু'র খুনিদের ফাঁসি দেওয়া হল। আর সুশাসনের বাতাসে গোটা বাংলাদেশ আবার সুফলা সুজলা শস্য শ্যামলায় ভরে উঠতে লাগলো। কেবল কিছু ছাত্রলীগের বেপরোয়ারা পোলাপাইন বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে মারলো। দৌড় প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হওয়া আবুল মন্ত্রী হয়েও পদ্মা সেতুর বারোটা বাজালো। কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে সুরঞ্জিত বাবু রেলের চাকায় পা ফসকে পড়ে গেলেন। আর সোনালী ব্যাংক থেকে সেই সুযোগে হলমার্ক নামধারীরা বেহিসাবী টাকা পয়সা লোন নিতে থাকলো। ওদিকে শেয়ারবাজারের মন্দ কপাল আবারো '৯৬ সালের মত পড়লো। আর কি হল? সংবিধান সংশোধন করা হল। ভোটের সময়ও সাংসদরা এমপি থাকতে পারবেন! শেষের এই কিচ্ছায় আবার বেগম জিয়া বেঁকে বসলেন। তিনি জামায়াত সহ ১৮ দলকে সাথে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে শুক্রবার বিরতি দিয়ে লাগাতার হরতাল অবরোধ দিতে লাগলেন। সেই ফাঁকে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হল। আর ওদিকে বিনা কনটেস্টে ১৫৪ জন এমপি হয়ে গেলেন। হে প্রিয় জনগণ, আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন। তোমরা উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যাকে খুশি ভোট দিবা। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। তবু এদেশের মানুষের ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার আদায় করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। গোটা দেশ যেখানে স্বল্পোন্নত তালিতা থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে, সেখানে দেশের মহান সাংসদদের আয় ব্যয় একটু বাড়বে, দুই চারটা গাড়ি ঘোড়া কিনবে, বিদেশে সেকেন্ড হোম বানাবে, আর বাকী সময় জনসেবা করে গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে, এটাই তো সবাই চাই আমরা। হে আমাদের মহান সাংসদরা, আপনারা আরো বেশি বেশি জনসেবা করেন। আল্লাহ আপনাদের মনের বাসনা পূরণ করবেন। গরিব মানুষের জীবনের আবার দাম আছে নাকি? গরিব গরিব-ই। তাদের যতো গরিব রাখতে পারবা, ততো বেশি বেশি জনসেবা করার সুযোগ তৈরি হবে। দেশে যদি একদম গরিব না থাকে, তাহলে আমাদের এতো মহান নেতারা কাদের সেবা দেবেন। অতএব, আমাদের মহান নেতাদের সেবা দানের সুযোগ অব্যাহত রাখার জন্য আসুন আমরা কিছু গরিব লালন করি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়িয়ে, ব্যবসাপাতি আমদানি রপ্তানি বাড়িয়ে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করি। ঘুম পাইতাছে। আর লিখুম না। 'বড় কষ্টে আছি আয়জদ্দি' এই শ্লোগান এখন আর বাংলার আনাচে কানাচে সোনা যায় না। কারণ, দেশ এখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। জনগণ তোমরা কাঁথা গায়ে দিয়া ঘুমাও। ঘুম থেকেউঠে আবার কাজে যাবা। যাবার পথে পেট্রোল বোমায় পুড়তে পারো। কারণ তোমরা এখনো গরিব। তোমাদের কাজে না গেলে খাবার জুটবে না। যাও, আল ডিঙ্গাইয়া ঘাস খাইতে চাইয়ো না। তোমরা জনগণ, তোমাদের সেবা করাই আমাদের ধর্ম। হক মাওলা।।
false
rg
বৃটেনবাসীর চোখ এখন ৭ মে'র সাধারণ নির্বাচনের দিকে। কে আসবে ক্ষমতায় লেবার পার্টি নাকি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি!! আগামী ৭ মে ২০১৫, বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের ৫৫তম সাধারণ নির্বাচন। এটি হবে বৃটেনের ৫৫তম জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে গোটা যুক্তরাজ্যে প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। মিডিয়ার ভাষ্যমতে এবার ব্রিটেনের নির্বাচনে অনেক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। জনমত জরিপের ফল বলছে, প্রধান দুই দল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কনসারভেটিভ পাটি এবং এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টি জনপ্রিয়তার দৌড়ে খুবই কাছাকাছি অবস্থান করছে। বৃটেনের পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ বা হাউজ অব কমন্সে মোট আসন সংখ্যা ৬৫০ টি। যার মধ্যে ইংল্যান্ডে ৫৩৩টি, স্কটল্যান্ডে ৫৯টি, ওয়েলসে ৪০টি আর উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১৮টি আসন। সাধারণত হাউজ অব কমন্সের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই বৃটেনে সরকার গঠন করে। ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ডেভিড ক্যামেরনের কনসারভেটিভ পার্টি পেয়েছিল ৩০৬ টি আসন। এবার দলটি উত্তর আয়ারল্যান্ডের দুইটি আর স্পিকারের আসনটি ছাড়া বাকি ৬৪৭টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এড মিলিব্যান্ডের নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি বিগত নির্বাচনে মোট ২৫৪টি আস জিতেছিল। এবার তারা গ্রেট বৃটেনের ৬৩২ টি আসনের একমাত্র স্পিকারের আসনটি ছাড়া বাকি ৬৩১টি আসনে লড়াই করছে। তৃতীয় বৃহত্তর দল নিক ক্লেগের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটস বিগত নির্বাচনে ৫৭টি আসন পেয়েছিল। কনসারভেটিভ পার্টির সঙ্গে কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিয়ে সরকার গঠনে সহায়তা করার জন্য মিস্টার নিক ক্লেগ ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হন। এবারের নির্বাচনে স্পিকারের আসন বাদে দলটি লেবার পার্টির মত ৬৩১ টি আসনে লড়াই করছে।ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টি ২০১০ সালের নির্বাচনে কোনো আসন না পেলেও বৃটেনের চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৪ সালের উপ-নির্বাচনে দলটি দুইটি আসনে বিজয়ী হয়। এবারের নির্বাচনে দলটি ৬২৪ আসনে লড়াই করছে। এরপর রয়েছে গ্রিন পার্টি। এটি দুইভাগে বিভক্ত। একটির নাম গ্রিন পার্টি অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস। অপরটি হল স্কটিশ গ্রিন পার্টি। প্রথমটির নেতৃত্বে আছেন নাতালিয়ে ব্যান্নেত্ত, যিনি আগেরবার পরাজিত হন। আর পরেরটির নেতৃত্বে আছেন ক্যারোলিন লুকাস, যিনি আগেরবার বিজয়ী হন। বৃটেনের সপ্তম বৃহত্তম দল হিসেবে যৌথভাবে এই দুটি দলের অবস্থান। এবারের নির্বাচনে দল দুটি মোট ৫৬৮ আসনে লড়াই করছে। এরপর রয়েছে নিকোলা স্টারজিয়নের নেতৃত্বাধীন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি বা এসএনপি। দলটি বিগত নির্বাচনে ৬ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। যা ছিল স্কটল্যান্ডে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বৃটেনে ষষ্ঠ বৃহত্তম দল। এবার দলটি স্কটল্যান্ডের ৫৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এরপর রয়েছে লিয়ান্নে উডের নেতৃত্বাধীন প্লায়িড চিমরু পার্টি। ওয়েলসে এটি বিগত নির্বাচনে চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এবার ওয়েলসের ৪০টি আসনেই এই দলটি লড়াই করছে। বামপন্থী সোস্যালিস্ট দলগুলো বিগত নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে ১২৮টি আসনে লড়াই করেছিল। এবারের নির্বাচনে তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায় তারা জোটবদ্ধ হয়ে মাত্র ৪০টি আসনে লড়াই করছে। এরপর রয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, যেটি বিগত নির্বাচনে ৩৩৮ টি আসনে লড়াই করে ১.৯% ভাগ ভোট পেয়ে পঞ্চম বৃহত্তর দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। দলটির জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামায় এবার তারা মাত্র ৮টি আসনে লড়াই করছে। এছাড়া উত্তর আয়ারল্যান্ড ও বৃটেনের অন্যান্য এলাকায় মোট ৭৫৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জনমত জরিপ:সর্বশেষ জনমত জরিপে এখনো ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ পাটি লেবার পার্টির চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে। কিন্তু প্রধান এই দল দুটির মধ্যে ব্যবধান খুব সামান্য। আসনের দিক থেকে মোট ৬৫০টি আসনের মধ্যে কনসারভেটিভরা ২৭৩টি এবং লেবার পাটি ২৬৯টির মতো আসন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। সরকার গঠন করতে হলে অন্য দলের সমর্থন লাগবে।এবারের নির্বাচনের প্রধান ইস্যুগুলো কি? কোন দল কি বলছে?বৃটেনের এবারের নির্বাচনে প্রধান বিষয়গুলো হল অর্থনীতির সংকট কাটানো, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বা এনএইচএসকে টিকিয়ে রাখা, বাজেট ঘাটতি কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অভিবাসন কমানো, ইউরোপের সাথে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কি হবে ইত্যাদি।ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ পার্টির বক্তব্য হল, তারা ব্রিটেনের অর্থনীতিকে সংকট থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। গত পাঁচ বছরে তারা সরকারের সেবাখাত ও কল্যাণভাতায় বিশাল ব্যয় কাটছাঁট করে বাজেট ঘাটতি কমিয়েছে। অন্তত ২০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। যা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে এখন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মূদ্রাস্ফীতি কমেছে। যদিও অভিবাসনের ক্ষেত্রে তারা ইউরোপ থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে পারে নি, তবে ইউরোপের বাইরে থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে পেরেছে। এবারের নির্বাচনে কনসারভেটিভরা দাবি করছে, তাদের গৃহীত পদক্ষেপে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই এগুলো অব্যাহত রাখতে এবং ব্রিটেনকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুরোপুরি বের করে আনতে হলে তাদেরকেই ভোট দেওয়া উচিত। অন্যদিকে এড মিলিব্যান্ডের নেতৃত্বে প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টির বক্তব্য হল, কনসারভেটিভ নীতির ফলে ধনী-দারিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে, জীবনযাত্রার মান নেমে গেছে। ব্রিটেনে এখন ১০ লাখের বেশি লোক ফুডব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। ধনীদের ওপর কর কমিয়ে এবং সেবা ও কল্যাণ ভাতা সংকুচিত করে কনজারভেটিভরা সাধারণ মানুষকে আর্থিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। কনসারভেটিভরা এবার জিতলে স্বাস্থ্যসেবায় আরো কাটছাঁট ও বেসরকারিকরণ হবে। সামাজিক কল্যাণভাতাও আরো কমানো হবে। তাই এসব খাতগুলোকে রক্ষা করতে এবং সাধারণ মানুয়ের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন করতে হলে লেবার পার্টিকেই ভোট দেওয়া উচিত। এবারের নির্বাচনে অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন কত বড় ইস্যু?এবারের নির্বাচনে ইমিগ্রেশন যথেষ্ট বড় ইস্যু। কারণ বড় সব দলই এবার এটা নিয়ে কথা বলছে। কনসারভেটিভ পার্টি এর আগের নির্বাচনের ইমিগ্রেশন লাখের কোঠা থেকে হাজারের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আগের তুলনায় ইমিগ্রেশন বেড়েছে। তবে এবার কনসারভেটিভ পাটি বলছে, তারা ইউরোপ থেকে ইমিগ্রেশন কমাতে না পারলেও ইউরোপের বাইরে থেকে ইমিগ্রেশন কমিয়েছে। এবার নির্বাচিত হলে তারা ইউরোপের সাথে থাকা না থাকা নিয়ে একটি গণভোট করবে।অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি বলছে, তারাও ব্রিটেনে ইমিগ্রেশন কমাবে এবং ইমিগ্র্যান্টরা যেন ব্রিটেনে ঢুকে প্রথম দু'বছর সামজিক কল্যাণভাতা নিতে না পারে এবং তাদের সস্তা শ্রমের জন্য যেন ব্রিটিশ নাগরিকদের কাজ থেকে বঞ্চিক হতে না হয়, ক্ষমতায় গেলে তার জন্য কড়া আইন করবে।তবে ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি বা ইউকিপ সম্পূর্ণ ইমিগ্রেশনবিরোধী দক্ষিণপন্থী দল। তারা বলছে, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মধ্যে অবাধ চলাচল বহাল রেখে এমন সব পদক্ষেপে কোন কাজ হবে না। ইমিগ্রেশন বন্ধ করতে হলে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং সেটাই তাদের প্রধান এজেন্ডা। লেবার পার্টি অবশ্য ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার বিরোধী। কারণ তারা বলছে এতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসবে।স্কটল্যান্ড ও এসএনপি ইস্যু:এবারের নির্বাচনে স্কটল্যান্ডের ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি যদি নিরর্বাচনে ৫৬টির মতো আসন পায়, তাহলে বড় দলগুলো তাদের সাথে কোয়ালিশন করতে পারে। এর ফলে তারা জাতীয় রাজনীতিতে কিংমেকার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে। অন্যদিকে এসএনপি স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা চায়। তবে এ দাবির ওপর গণভোটে হেরে যাবার পর আপাতত তারা স্বাধীনতার কথা আর বলছে না। কিন্তু নির্বাচনের পর এসএনপি কোন কোয়ালিশনে ঢুকলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, কোয়ালিশনের রাজনীতিতে এসএনপি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরাবে এবং ভবিষ্যতে আবারো স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য নতুন গণভোটের দাবি তুলতে পারে দলটি।ওদিকে কনসারভেটিভ পার্টি তাদের নির্বাচনী প্রচারে বারবার দাবি করছে, ক্ষমতায় যাবার জন্য লেবার পার্টিই এসএনপির সাথে কোয়ালিশন করতে পারে। যদিও লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড এসএনপির সাথে কোন চুক্তি বা কোয়ালিশনের কথা বার বার অস্বীকার করছেন। কনসারভেটিভ পার্টির সুস্পষ্ট বক্তব্য হল, এসএনপি যুক্তরাজ্য ভাঙতে চায়, তাই তার সাথে কোয়ালিশন করাটা বিপজ্জনক হবে।এসব কারণে এসএনপির নেত্রী নিকোলা স্টারজিওন এখন ব্রিটেনের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নারী নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের এবারের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোট ১১ জন প্রার্থী এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কনজারভেটিভ দলের মিনা রহমান, লেবার দল থেকে সাতজন এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল থেকে তিনজন। এদের মধ্যে লেবার পার্টির প্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হক বেশ আলোচিত নেত্রী। আগামী বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে এখন একক কোনো দলকে কি ব্রিটিশ ভোটাররা সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেবেন? নাকি শেষ পর্যন্ত ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনাই সত্যি হবে? এ প্রশ্নের জবাব মিলবে আগামী ৭ মে বৃহস্পতিবার নির্বাচনের পরপরই।.......................................৪ মে ২০১৫ঢাকাতথ্যসূত্র: বিভিন্ন পত্রিকা, ব্লগ, টেলিভিশন।
false
fe
প্রবাসে সংগঠন, সামাজিক সংকট ও আমাদের উত্তর প্রজন্ম প্রবাসে সংগঠন, সামাজিক সংকট ও আমাদের উত্তর প্রজন্ম ফকির ইলিয়াস ------------------------------------------------------------------ কেস স্টাডি- এক. প্রবাসের একটি পরিবারের টিন এজ মেয়ে। মা-বাবার সঙ্গে মেয়েটি বাঙালিদের কোনো অনুষ্ঠানে যায় না। স্কুল থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় দেরি করে ফিরে। বান্ধবীদের বাসায় যাচ্ছে বলে প্রায় সময়ই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে সে খোঁজ-খবর মা-বাবা রাখেন না। তারা জানেন না মেয়েটির বন্ধু-বান্ধবীই বা কে। একবার মেয়েটি হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। দুই সপ্তাহ তার কোনো খোঁজই পেলেন না মা-বাবা। পুলিশের খাতায় মেয়েটির লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার সংবাদ লিপিবদ্ধ করা হলো। পরে জানা গেল মেয়েটি তার এক বন্ধুর সঙ্গে অন্য একটি অঙ্গরাজ্যে অবস্থান করছে। কেস স্টাডি- দুই. টিন এজ ছেলেটির কোমরে দামি সেলুলার ফোন। বোহেমিয়ান বেশভূষা। স্কুল কামাই করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মধ্যরাতে বাসায় ফিরে। অন্ধকার সরু গলির কর্ণারে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায় তাকে। জটলা পাঁকিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নেশার পাইপে কড়া দম নিতে দেখা যায়। মা-বাবা বলেন তাদের আদরের ছেলেটি সিগারেট পর্যন্ত স্পর্শ করে না। অথচ তারা জানেন না, বা বোঝার চেষ্টা করেন না তাদের ছেলেটি সিগারেটের চেয়েও আত্মঘাতী মরণনেশায় দম নিচ্ছে প্রতিদিন। কেস স্টাডি তিন. মেয়েটির অবাধ আচরণ সামাল দিতে না পারায় পিতা একদিন তার গায়ে হাত তুললেন। মেয়েটি এখন আর ছোট নয়। তার বয়স চৌদ্দ বছর। সে পুলিশে ফোন করে। পুলিশ এসে পিতাকে গ্রেফতার করে আর মেয়েটিকে নিয়ে যায় সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে। এ তিনটি ঘটনা নিউইয়র্কে ঘটে যাওয়া বাস্তব চিত্র। অভিবাসী সংসারে অনেক ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে। যা পত্র-পত্রিকায় খবর হয়ে আসছে। আবার অনেক কিছু থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। অনেকে জানতেও পারছে না কি ঘটছে প্রবাসে বাঙালিদের সংসারে। একটি সমাজে যখন জনসংখ্যা বাড়ে তখন বেড়ে যায় সামাজিক সংকটও। এমনি অনেক সংকটের মুখোমুখি এখন প্রবাসে বাঙালিরা এবং তাদের উত্তর প্রজন্ম। তাই বলে যে আশার ধ্বনি নেই, তা বলা যাবে না। এ বছর ২০০৯ সালে স্কুল এবং কলেজগুলোতে প্রচুর ছাত্রছাত্রী বেশ ভালো ফলাফল করেছে। এদের কেউ কেউ মূলধারার পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হয়ে এসেছে। তাদের কৃতিত্ব আলোচিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। পিতা-মাতাই হচ্ছেন সন্তানের প্রথম এবং প্রধান বন্ধু। বাঙালি সমাজে লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে পিতা-মাতার সঙ্গে তার সন্তানের একটি দূরত্ব থেকে যায় সম্পর্কের। ফলে সামাজিক অথচ জরুরি অনেক বিষয় সন্তান জিজ্ঞাসা করতে পারে না মা-বাবাকে। আর এভাবে মা-বাবারা হয়ে যান সন্তানের প্রভু। ক্রমশ এ অবস্থাটি সন্তানদের অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে ঠেলে দেয়। এক সময় সন্তান শুধু অবাধ্য নয় বরং নাগালের বাইরে চলে যায়। চলে যেতে বাধ্য হয়। বিভিন্ন সামাজিক সংকট রোধে, প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করে শিকড়ের সন্ধান দিতে প্রবাসের সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এ ব্যাপারে ছোট-বড় প্রায় প্রতিটি সংগঠনই বেশি উদাসীন। তাদের এমন অনীহা খুব দুঃজনক। অথচ তারা চাইলে সম্মিলিতভাবে হলেও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে প্রবাসে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে পারেন। বাঙালি জাতির একটি নিজস্ব সামাজিক রীতিনীতি, সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং কৃষ্টি আছে। যেহেতু আমরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি, যেহেতু আমাদের প্রজন্ম এখানে বড় হচ্ছে- তাই আমাদের এ দেশের মূলধারার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেই বাঙালীত্বের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন মানসিকতা নিয়ে তা সম্ভব নয়। আবার অতি উগ্র সভ্যতায় গা ভাসিয়ে দেয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রবাসের বিভিন্ন সংগঠন সামাজিক উন্নয়নে, বাংলাদেশের জাতীয় প্রয়োজনে, বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে নিরন্তর। বিশেষ করে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর প্রশংসনীয় কর্মকা- আমাদের চমৎকৃত করছে বারবার। ‘যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ জেলা সমিতি’ সিলেট বিভাগ অঞ্চলের একটি সৃজনশীল সংগঠন। এ সংগঠনটিও হবিগঞ্জ অঞ্চলে বিভিন্ন কর্মকা- করে আসছে জন্মলগ্ন থেকে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বৃত্তি প্রদান, দুর্গত অঞ্চলে অর্থ এবং দ্রব্য সামগ্রী পাঠানের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ, দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান অন্যতম। অতি সম্প্রতি একজন কিডনি রোগীর প্রয়োজনে বড় অঙ্কের আর্থিক সাহায্য প্রদান করে এ সংগঠনটি আর্তমানবতার যে সেবা করেছে তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে। এই সংগঠনটির একঝাঁক তরুণ কর্মীর কর্ম-উদ্দীপনা প্রবাসে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যা গোটা সিলেট বিভাগবাসীর জন্য গৌরবের বিষয়। এরকম অনেক কাজ করছে চট্টগ্রাম সমিতি, যুক্তরাষ্ট্রও। বাংলাদেশের জন্য এবং প্রবাসে আমাদের উত্তর প্রজন্মের জন্য কাজ করতে যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। এই তাড়না আমরা বারবার অনুভব করছি। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে তারপরও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না। কেন পারছি না, এই প্রশ্নটি সবার নিজ বিবেককে জিজ্ঞাসা করা দরকার। বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন মত থাকবে। কিন্তু বৃহত্তর উন্নয়নের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মানসিকতা অবশ্যই থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিবাসী জীবনে প্রজন্মের সংকটের কিছু উদাহরণ নিবন্ধের শুরুতে উল্লেখ করেছি। এসব বিষয় আমাদের চেতনায় জাগ্রত হওয়া দরকার। যে পিতা-মাতা শুরু থেকে তার সন্তানকে আদরের নামে অপসভ্যতার প্রশ্রয় দিচ্ছেন তারা কি ভুল করছেন তা বুঝতে পারবেন কয়েক বছর পরেই। তখন মাথায় হাত দিলেও কোনো কাজ হবে না। তাই যত শিগগির সম্ভব সবার বোধোদয় প্রয়োজন। আর এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে সামাজিক, আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। গ্রীষ্মকালীন অবকাশে শিক্ষা সফরের আয়োজন, ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করে তাদের সঙ্গে মতবিনিময়, মত প্রকাশের ব্যবস্থা করলে এই দূরত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব। ------------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি । ঢাকা। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শনিবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ৮:৫৬
false
ij
প্রাচীন গ্রিক কবি; অ্যানাক্রিওন প্রাচীন গ্রিক কবি অ্যানাক্রিওন। জীবনে দুজন শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক পেয়েছিলেন বলে জীবনভর লিরা বাজিয়ে ও মদ্যপান করে সুখি ও আনন্দিতই ছিলেন প্রাচীন গ্রিক কবি অ্যানাক্রিওন; কবির কেবল ভয় ছিল বৃদ্ধ বয়েসের দুর্দশাকে ... সিগহাজিক জায়গাটি বর্তমান তুরস্কে। প্রাচীনকালে জায়গাটি পরিচিত ছিল এশিয়া মাইনর হিসেবে; এশিয়া মাইনরেই ছিল আইওনিয় গ্রিক বন্দর নগরী-তেয়স। এশিয়া মাইনর; লক্ষ করুন উত্তরে থ্রাস। ঐ বন্দর নগরী তেয়সেই খ্রিস্টপূর্ব ৫৬০ সালে জন্ম নেন আইওনিয় গীতিকবি অ্যানাক্রিওন- যদিও তাঁর জীবন সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু (মানে, ইনডিটেইলস) জানা যায়নি। ৫৪৫ খ্রিস্টপূর্বে পারস্যের সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট এশিয়ার গ্রিক নগরগুলো আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। তখন সেই উদ্বেগ বাতাসে ছড়িয়ে তিয়সে পৌঁছায়। দলে দলে তেয়সবাসী তেয়সের উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে থ্রাসের অ্যাবডেরা নামে একটি স্থানে পৌঁছে (উপরের মানচিত্র দেখুন) । কবি অ্যানাক্রিওনও সেই উদ্বাস্তু দলে ছিলেন সম্ভবত পরিবারসমেত। তেয়সবাসী অ্যাবডেরায় একটি উপনিবেশ তৈরি করে; পরে অ্যাবডেরায় দার্শনিক প্রোটাগোরাসের ( যিনি বাক্যের পাটর্স অভ স্পিচ আবিস্কার করেছিলেন আর বলেছিলেন, ম্যান ইজ দ্য মেজার অভ অল থিঙ্কস্) অ্যাবডেরা নগরে দার্শনিক প্রোটাগোরাসের জন্ম হওয়ায় স্থানটি ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। যা হোক। থ্রাস থেকে পরে অ্যানাক্রিওন চলে আসেন সামোস দ্বীপে (উপরের মানচিত্র দেখুন) । দ্বীপটি এজিয়ান সমুদ্রের পুবে-সেকালে ব্যবসা-বানিজ্যের মূলকেন্দ্র ছিল। যা হোক। সামোস দ্বীপের শাসক ছিলেন পলিক্রেটাস। গ্রিক ইতিহাসে পলিক্রেটাস আজও স্বৈরাচারী বলে চিহ্ণিত। কবি হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়েছিল অ্যানাক্রিওন-এর সে কারণেই কি না কে জানে পলিক্রেটাস-এর শিক্ষক নিযুক্ত হলেন অ্যানাক্রিওন...আসলে গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস তেমনই লিখেছেন। সামোস দ্বীপের রাজপ্রাসাদের তারপর লিরা বাজিয়ে ও মদ্যপান করে সুখি ও আনন্দিত জীবন শুরু হল কবির। কবির কেবল ভয় ছিল বৃদ্ধ বয়েসের দুর্দশাকে .. সেই উদ্বেগ এড়িয়ে ঘাসফড়িং-এর জীবন পর্যবেক্ষণ করা ও প্রাকৃতিক বসন্তের শুভাশুভ নির্নয়। যাক। এক মাঘে শীত যায় না। আশ্রয়দাতা স্বৈরাচারী পলিক্রেটাস- এর মৃত্যু হল। স্বৈরাচারের মৃত্যুর পর অ্যানাক্রিওন ফিরে যান জন্মনগর তেয়স-এ। তেয়সেই ৪৮৫ খ্রিস্টপূর্বে মারা যান তিনি। কবি হিসেবে গ্রিকবিশ্বে খ্যাতি ছড়িয়েছিল; বন্ধু ছিলেন গ্রিক রাজনীতিবিদ প্লেরিক্লিসের বাবার। কাজেই, এথেন্সে অ্যাক্রোপলিসে গড়া হয়েছিল কবির একটি ভাস্কর্য। এখন অ্যানাক্রিওন এর দুটি কবিতা পাঠ করা যাক। বসন্ত দেখ, বসন্ত মেলেছে তারে। আর, তার মাধুর্য যেন গোলাপসম। দেখ কী ভাবে অপার সমুদ্র তার স্ফীত ঢেউকে করে শান্ত। দেখ, হাঁসেদের অপরুপ সাঁতার; আবার এসেছে তারা শীতের ঘর থেকে। দেখ, কীভাবে টাইটানের আনন্দিত রশ্মি সরিয়ে দিচ্ছে কালো মেঘমালা। বসন্তের সবুজ পোশাকে এখন কৃষকের ঘামশ্রমও দেখি! কামুক পৃথিবী এখন হয়ে আছে ঘন প্রতি প্রহরে জন্ম দিচ্ছে নবীন শস্যের। এখন জলপাই ফলে -দ্রাক্ষাকুঞ্জ এখন উজ্জ্বল ঝুলন্ত ফলে। ফলন্ত পাতা আর প্রতিটি ডালে সজীব বেগুনি ফুল। মূল গ্রিক থেকে অনুবাদ: টমাস স্ট্যানলি (১৬৫১) ১৮৪৮ সালে শিল্পী জ্যাঁ লিও জেরোমের আঁকা কবি অ্যানাক্রিওন। ঘাস ফড়িং সুখি পতঙ্গ! তোর কি সুখের সীমা নেই রে? স্বর্গীয় পুষ্টি পেয়ে পেয়ে আর পান করে ভোরের শিশিরের শান্ত মদ? প্রকৃতি আজও শান্তভাবে ভরে তোর মেদুর পেয়ালা; যেখানেই যাস তুই-সুরার দেবতা তোর পিছু পিছু যায়। তুই পান করিস, নাচিস আর গাস গান সুখিতম রাজার চেয়েও সুখি তুই! সমস্ত প্রান্তর তোর সমস্ত উদ্ভিদও তোর; গ্রীষ্ম যা উৎপন্ন করে- সেসবও তোর; এমন কী উর্বরতার প্রাথমিক মদও তোর। তোর জন্য লোকে চাষবাস করে সবাই কৃষক আর তুইই ভূস্বামী! তোর এই নিরীহ সুখ তোর এই নিরন্তর বিলাস মেষপালকের সঙ্গী তুই আনন্দময় এক সামঞ্জস্য তোর এই প্রসন্নতা ভরা ঋতুর প্রতিবেদক তুই দেবদেবীর ভালোবাসা। তোর প্রতি জগতের আর্শীবাদ জীবন তোর সুখের চেয়ে দীর্ঘ নয়। সুখি পতঙ্গ! তোর কি সুখের সীমা নেই রে? শীত কি জরা চেনে না তোকে যখন তুই পান করিস নাচিস গাস ফুলেল পাতারা সব আনন্দে জাগে। হে, লোলুপ আনন্দপায়ী পতঙ্গ গ্রীষ্মের উৎসবে তৃপ্ত এখন তা হলে তুই বিশ্রামে যা! মূল গ্রিক থেকে অনুবাদ: আব্রাহাম কোওলি (১৬১৮-১৬৬৭) সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:৫১
false
fe
জাতিসংঘের তাস ও বাংলাদেশের ভাগ বাটোয়ারা জাতিসংঘের তাস ও বাংলাদেশের ভাগ বাটোয়ারাফকির ইলিয়াস=================================================বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা আবারো বেশ তুঙ্গে। পাকিস্তান বলছে, বাংলাদেশের মৌলবাদী রাজাকারদের বাঁচাতে জাতিসংঘের কাছে নালিশ করবে। কী নালিশ তাদের? কী বলতে চায় তারা? বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের এত মাথাব্যথা কেন? তারা কি মনে করে ‘পাকিস্তান’ তাদের প্রভু দেশ? তারা তো মোনাফেকের মতোই ২৪ বছর বাঙালিদের দাবিয়ে রেখেছিল। এখনো কি সেই মানসিকতা পোষণ করে তারা? পাকিস্তানি জামায়াতিরা, বাঙালি জামায়াতিদের এখনো খাস পেয়ারা। এটা গোটা বিশ্বের মানুষ জানেন। এই প্রেম থেকে তারা যদি জাতিসংঘে যায়, তাহলে বাংলাদেশের পাওনাগুলোই পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে।বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মিডিয়াকে বলেছেন, ‘এই বিষয়টি জাতিসংঘে তুললেই বিচার করার কথা বলে ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে দেশে নিয়ে গিয়ে বিচার করেছে কি না এবং না করে থাকলে কেন করেনি সে বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে জানতে চাইবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করে, পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের দায় পাকিস্তান এড়াতে পারে না। এ ধরনের অপরাধ তামাদি হয় না। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যার মতো অপরাধের দায়মুক্তি না দেয়ার বিষয়ে বৈশ্বিক ঐকমত্য আছে। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জুরিস্টে গিয়ে দাবি করেছিল, ১৯৫ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার একচ্ছত্র অধিকার পাকিস্তানেরই। কিন্তু সেই পাকিস্তান তাদের বিচার না করে কার্যত দায়মুক্তি দিয়েছে। পাকিস্তান নিজেই যখন নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার সম্মুখীন, তখন বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গটি জাতিসংঘে তুললে বাংলাদেশও এ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে।’আমরা দেখছি, ৪৫ বছর পরও এখনো আমাদের সম্পদের ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি পাকিস্তান। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তুললেও পাকিস্তান নানা কৌশলে তা এড়িয়ে গেছে। তারা এখনো ফিরিয়ে নেয়নি হাজার হাজার বিহারী শরণার্থীও। সম্প্রতি রাজাকারদের বিচারে পাকিস্তানের নাখোশ ভঙ্গি নতুন করে ভাবনায় এনেছে, পাকিস্তানের কাছে পাওনার বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা, সম্পদ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়ে বলছেন, আন্তর্জাতিক ক‚টনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে খুব সহজেই সমাধান করা যায় বিষয়টি। ২৪ বছরের অর্থনীতিক বঞ্চনা পেরিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা পেয়েছিল। তবে যুদ্ধ শেষ হলেও বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস শেষ হয়নি এখনো। পাকিস্তান বাংলাদেশের সম্পত্তির হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি আজও।১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা সফরে এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪০০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা দাবি করে। তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮ টাকা। চুয়াল্লিশ বছরে যা দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। এর মানে পাকিস্তানের কাছে আমাদের এখনকার পাওনা ১০ গুণ বেশি হয়ে ৪০০০ ঢ ১০= ৪০০০০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও দেশি-বিদেশি বেশ কিছু গবেষণাপত্রের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে তৎকালীন হিসাবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, পাকিস্তান দুর্বৃত্তদের দেশ। তাদের কাছে বাংলাদেশের সম্পদ পাওনা আছে সেটাই তারা স্বীকার করে না। এই অবস্থায় আমাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আদৌও হবে কিনা তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। সরকারদলীয় সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফজিলাতুননেসা ইন্দিরার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় একজন আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কোনো দেশের পক্ষেই কাজ করেননি। তখন অনেক সম্পদ বিভাজন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেভাবে বিভাজন হয়নি। তবে আমাদের সঙ্গে পাকিস্তানের যখন ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়, তখন থেকেই আমরা পাওনা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা স্বীকারই করে না, যে আমাদের সঙ্গে তাদের দেনা-পাওনার হিসাব রয়েছে।ধারাবাহিক ঘটনা সাক্ষী দিচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে অবিভাজিত সম্পদের ন্যায্য হিস্যা এবং একাত্তরে ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়া অর্থবাবদ পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনার পরিমাণ ২৩৬ কোটি মার্কিন ডলার (১৮,০০০ কোটি টাকা)। ২০১০ সালে পাকিস্তানের কাছে এই ২৩৬ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তান সে দাবিকে ‘স্পর্শকাতর’ অভিহিত করে কার্যত এড়িয়ে যায়। তবে তারা পুরনো যে ঋণ পাবে, সে ঋণের সুদের পরিমাণ অস্বাভাবিক বাড়িয়ে নির্ধারণ করে তা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলম তাদের পুরনো ঋণ পরিশোধ করতে গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ চিঠি পাঠান অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ওই চিঠির কড়া জবাব দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে আগত প্রায় ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) ডলার রক্ষিত ছিল ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা হয় ব্যাংকের লাহোর শাখায়। ওই অর্থ সরাসরি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের আগে অখণ্ড পাকিস্তানের প্রায় ৪৩২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ সম্পদে হিস্যার জন্য বাংলাদেশ দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ মনে করে, ১৯৭১ সালের আগে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ ওই সম্পদের ৫৬ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবদান বিবেচনায় ৫৪ শতাংশ এবং সমতার নীতি অনুসরণ করলে ৫০ শতাংশের দাবিদার। এ দুটি খাতে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের দাবি ২৩৬ কোটি ডলার। আর যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এখনো হিসাবই করা হয়নি।পাকিস্তানের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে তুরস্ক। এই দেশটিও এখন মৌলবাদের অন্যতম তোষক। রাজাকারদের ফাঁসিতে-পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী এখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশে যাদের বিচার হচ্ছে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে সাজা পাচ্ছে তাদের পাকিস্তানের জামায়াত ও সরকার নিজেদের নেতা ও প্রতিনিধি মনে করে। তারা তো নিজেদের লোকদের বিচার, সাজা ও ফাঁসির বিরোধিতা করবেই।’ তিনি বলেন, তুরস্কে ক্ষমতায় থাকা একে পার্টিও বৈশ্বিকভাবে জামায়াতের মিত্র। তারা এ বিচারকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিচার বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।এর মাঝেই খবর বেরিয়েছে বিএনপির ইসরায়েল কানেকশন। সরকার এটাকে কড়াভাবেই নিয়েছে। তাহলে কি সব রসুনের গোড়া একখানে?জাতিসংঘ মূলত একটি তাসের ঘর। সেখানে কার কী পাওয়ার আছে- তা আমরা প্রতিদিন দেখছি। জাতিসংঘ কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। সেখানে গিয়ে কেউ ‘চকোলেট আবদার’ করলেও তা কেউ শুনবে না। কেউ দাবি তুললে, নালিশ দিলে পাল্টা দাবি-নালিশ জানানো হবেই। তা পাকিস্তানের জানা ও বুঝা দরকার। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। তাই বিশ্বমাঠে যা যা করা দরকার বাংলাদেশ তা করবে। আমাদের রাজনীতিকদের এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যেতেই হবে।--------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২১ মে ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬
false
hm
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও অজ্ঞান পার্টি রহস্য এক গোয়েন্দা ঝাকানাকা চোখ গরম করে বললেন, "এবারও কি সেবারের মতো দুই লম্বরি কেস নিয়ে হাজির হলেন নাকি?" পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডাকসাইটে দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি আধ হাত জিভ কেটে বললেন, "আর লজ্জা দেবেন না স্যার! এবার একদম পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে তবে এসেছি। এই দেখুন আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্ট কেমিক্যাল আলির রিপোর্ট।" ঝাকানাকা একগাল মুড়িমাখা চিবাতে চিবাতে বললেন, "আপনাদের সেই বুড়ো ভাম কেমিক্যাল আলি? যে কি না পটাশ পারম্যাঙ্গানেট আর পানের পিকের মধ্যে তফাৎ করতে পারে না? তাকে দিয়ে রিপোর্ট লিখিয়ে এসেছেন আমাকে ভোলাতে? ওসব কাল্পনিক গপ্পো নিয়ে বরং সচলায়তনে লেখালেখি করতে বলুন আপনাদের ফরেনফেরত ফরেনসিক এক্সপার্টকে। আমি এসব নাটকনভেল পড়ি না! এর আগেও আপনারা কেমিক্যাল আলির রিপোর্টসহই হাজির হয়েছিলেন। কোথায় কেমিক্যাল টেস্ট করার কথা, তা না করে ব্যাটা প্যাথলজির টেস্ট রিপোর্ট গুঁজে দিয়েছিলো ফাইলে! তাতে লেখা, প্রেগন্যান্সি পজিটিভ!" কিংকু চৌধারি আবারও জিভ কেটে বললেন, "কিন্তু স্যার, অজ্ঞান পার্টির সেই মেয়েটা তো আসলেই প্রেগন্যান্ট ছিলো!" ঝাকানাকা কটমট করে তাকিয়ে বাঘা গলায় বললেন, "বটে? আবারও ওদের অজ্ঞান পার্টি বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন?" কিংকু চৌধারি লজ্জিত হেসে বললেন, "এই ইনফরমারগুলিকে নিয়ে আর পারি না স্যার। এরা সব কথা ভুলভাল করে এনে আমাদের কানে তোলে ... কী করবো বলুন, বড় কর্তারা রোজ ফোন করে ধমকায়। সেদিন নাকি নৌবাহিনীপ্রধানের তালুইকে কী একটা খাইয়ে বেহুঁশ করে তাঁর সিল্কের পায়জামা রুট করে নিয়ে গেছে! সেই পায়জামা নাকি আবার উজবেকিস্তান থেকে কেনা। এখন বলুন, এতো হাই প্রোফাইল লোকজনের লো প্রোফাইলের জিনিস যদি লুটপাট হয়, তাহলে তো আমরা একটু দৌড়ের ওপর থাকবোই, নাকি? একটু ভুলভাল তো হবেই, নাকি? এরারে হুমানুম এস্ট, নাকি?" ঝাকানাকা গরম কন্ঠে বলেন, "ল্যাটিন কপচাবেন না শুধুমুধু! একগাদা হাফ ন্যাংটো ছেলেমেয়ে এনে হাজির করলেন একতিরিশ তারিখ মাঝরাত্তিরে। বললেন এরা অজ্ঞান পার্টির লোক। একেবারে হাত খুলে পেঁদিয়েছি সব ক'টাকে। মানস সরোবরের এক চিপায় সেই ঝালাই লামার গুম্ফায় বসে হপ্তার পর হপ্তা গুহ্য সাধনা করে শেখা আমার আড়াই প্যাঁচের গাঁট্টা। জানেন, কোরবানির গরুও সে গাঁট্টা খেলে ঘুমিয়ে পড়ে? ... সব ক'টা পটাপট বেহুঁশ হয়ে গেলো। কেবল একটা মেয়ে সেই আড়ং ধোলাই খেয়েও টনকো রইলো ...।" কিংকু চৌধারি বললেন, "ঐ মেয়েটাই স্যার, প্রেগন্যান্ট টেস্টে পজিটিভ। ইয়াবা খেয়ে জেগেছিলো, তাই আপনার মার খেয়েও বেহুঁশ হয়নি ...।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! আর জেগে ছিলো বলেই তো জানতে পারলাম, যে তারা মোটেও অজ্ঞান পার্টি নয়, বরং পার্টি বলতে অজ্ঞান! একতিরিশ তারিখ রাতে একটু কাপড় জামা কম পরে নাচানাচি করছিলো একটা রেস্তোরাঁয়। আপনারা অকারণে বেরসিকের মতো হানা দিয়ে তাদের গেরেফতার করে হাজতে ঢুকিয়েছেন!" কিংকু চৌধারি হাসলেন একগাল। "আর বলবেন না স্যার, এই ইনফরমারগুলো ...। আর রেইড করার পর তো দেখি স্যার ফ্লোরে, সোফায়, টয়লেটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আরো অনেক ছোঁড়াছুঁড়ি। কনফিউশন হওয়া তো স্বাভাবিক ...।" ঝাকানাকা চোখ পাকিয়ে বললেন, "আর তাই সেইসব হিজল তমালের ছেলেমেয়েদের ধরে আনলেন আমার হাতে প্যাঁদানোর জন্যে? ওফ, পরদিন সকালে মন্ত্রীমিনিস্টার, বড় বড় চোর বাটপার, উকিল জেনারেলদের ফোনের পর ফোন! সবাই আবঝাপ ঝাড়ি দ্যায়, বলে দেখে নেবে। শেষমেশ ত্যক্ত হয়ে গুলিস্তানের সেই কানা ফকিরটার কাছে শেখা গালি কিছু বেছে দেবার পর ফোনের জ্বালা বন্ধ হলো!" কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার! এবারের কেস একদম সলিড। খেটে খাওয়া প্রোলেতারিয়েতমুখো কয়েকটা লোক। এদের আপনি প্রাণ ভরে প্যাঁদালেও কেউ ফোনটোন করবে না। বড়জোর পত্রিকায় আপনাকে গালাগালি করা হতে পারে।" ঝাকানাকা বললেন, "বটে? হুমমম ... বলুন কেসটা কী!" কিংকু চৌধারি এক মুঠো মুড়ি হাতে নিয়ে বলেন, "কেস অতি বিচিত্র স্যার, অতি বিচিত্র। বড়ই জটিল রহস্যের ঘোরপ্যাঁচ ...।" ঝাকানাকা বললেন, "আপনার মুড়ি আরো খেতে চাইলে বানিয়ে দেয়া হবে, কিন্তু অযথা মুড়ির লোভে কাহিনী ফেনিয়ে তুলবেন না। কাজের কথায় আসুন।" কিংকু চৌধারি একটু লজ্জিত হেঁ হেঁ করেন। বলেন, "হেঁ হেঁ হেঁ, আসলেই মুড়িমাখাটা খুব স্বাদু! মনে হয় পেট ভরে খাই ...। যাকগে, চট্টগ্রামে বদরু খাঁর ঘাঁটিতে রেইড করা হয়েছিলো, শুনেছিলেন বোধহয়। তো, ওখানে এক সাংঘাতিক জিনিস মিলেছে। ডলার ছাপানোর প্লেট!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম। বদরু খাঁ আন্তর্জাতিক ডাকু। মাঝে মাঝেই তার ডলারের প্রয়োজন পড়ে। এজন্যে সে বেশি দিগদারির মধ্যে দিয়ে যেতে চায় না, নিজের ডলার নিজেই ছাপিয়ে নেয়।" কিংকু চৌধারি বললেন, "আপনি জানেন দেখছি!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! জানি না মানে, এর আগে তো এমন একটা কেস আমিই সামাল দিলাম! সেবার বদরু জাল টাকার প্লেট নিয়ে ধরা পড়েছিলো ... [দ্রষ্টব্য ১]।" কিংকু চৌধারি বললেন, "হুমম, তাই তো! ভুলেই গিয়েছিলাম। তো, বদরু খাঁকে এবারও পাকড়াও করা যায়নি স্যার, সে চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়েছে। এই জাল ডলারের প্লেট বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে আসা হচ্ছিলো ঢাকায়। সাধারণ পুলিশের ওপর ভরসা নেই, তাই বিশেষ শাখার একজন চৌকস অফিসার ছদ্মবেশে নিজের শরীরে লুকিয়ে প্লেট দুটো নিয়ে ট্রেনে চড়ে ঢাকায় ফিরছিলেন।" ঝাকানাকা বললেন, "পথে কে বা কাহারা তাঁকে অজ্ঞান করে প্লেট দু'টো নিয়ে ভেগেছে?" কিংকু চৌধারি উজ্জ্বল মুখে বললেন, "এ-ই হলো স্যার আপনাকে কোন কিছু বলতে যাবার জ্বালা, মাঝপথেই সব আঁচ করে ফ্যালেন ...।" ঝাকানাকা মৃদু অট্টহাসি দ্যান। বলেন, "ঠা ঠা ঠা ..।" কিংকু চৌধারি বলেন, "আমাদের গোয়েন্দা শাখার রিপোর্ট বলছে, এ অতি উঁচু দরের অজ্ঞান পার্টির কাজ। সাধারণ অজ্ঞান পার্টি নয়, রীতিমতো ক্যাটেগরি ফোর অজ্ঞান পার্টি এই প্লেট সরিয়েছে। এরকম অজ্ঞান পার্টি আছে কেবল দুটো। দুটোই ওয়ান ম্যান পার্টি।" ঝাকানাকা বললেন, "কারা এরা?" কিংকু চৌধারি বললেন, "একজনের আসল নাম জানা যায়নি, লাইনের লোকেরা তাকে শ্রীচৈতন্য বলে ডাকে। এ নাকি বহুদিন ধরে লোকজনকে অচৈতন্য করে লুটপাট করেই চলেছে। আজ অবধি এর টিকিটিরও হদিশ পায়নি পুলিশ।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! আর দ্বিতীয় জন?" কিংকু চৌধারি বলেন, "দ্বিতীয় জন মহিলা। এর নাম জানা গেছে, ইসমত জঙ্গ বেহুঁশিয়া। রীতিমতো খানদানি ঘরের ডাকাত। এরা নাকি সেই মোগল আমল থেকে লোকজনকে বেহুঁশ করে ছিনতাই করে আসছে, তাই পারিবারিক উপাধি বেহুঁশিয়া।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! তো, কেন আপনাদের মনে হচ্ছে এটা এদেরই কারো কাজ?" কিংকু চৌধারি বললেন, "লুটের ধরন দেখে স্যার! হুঁশিয়ার খানের হাতে দামী ঘড়ি ছিলো, পকেটে দামী মোবাইল ছিলো, হাতে দামী আংটি ছিলো, চোখে দামী সানগ্লাস ছিলো, কিন্তু কিছুই খোয়া যায়নি। খোয়া গেছে শুধু প্লেট দুটো!" ঝাকানাকা বললেন, "হুঁশিয়ার খান? আপনাদের বিশেষ শাখার অফিসারের নাম নাকি? হুঁহ ... তা এটা ক্যামন ছদ্মবেশ নিয়েছিলো সেই ব্যাটাছেলে? অ্যাতো দামী জামাকাপড় পড়ে তার ট্রেনে ওঠার দরকার কী ছিলো? কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে বললেন, "ইয়ে ... মানে হয়েছে কী, পুলিশের লোক তো নিশ্চয়ই এমন দামী জামাকাপড় পড়ে সেজেগুজে ট্রেনে চড়বে না ... তাই সম্ভাব্য শত্রুকে একটা ভুল ধারণা দেয়ার চেষ্টা, যে ও আসলে পুলিশ নয় ...।" ঝাকানাকা বললেন, "তা ঐ ঘড়ি, মোবাইল, সানগ্লাস, আংটি, ওগুলি কি আপনাদের ছদ্মবেশ ডিপো থেকে রিকুইজিশন দিয়ে আনা, নাকি ওগুলি হুঁশিয়ার খানের নিজের জিনিস?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ছদ্মবেশের আবার ডিপো! না স্যার, আমাদের নিজেদের গাঁট থেকেই ছদ্মবেশ যোগাড় করতে হয়।" ঝাকানাকা বললেন, "তা হুঁশিয়ার খান অ্যাতো দামী জিনিসপাতি কেনার টাকা পেলো কোত্থেকে? ঘুষটুষ খায় নাকি?" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বলেন, "তা তো বলতে পারবো না স্যার ...।" ঝাকানাকা বললেন, "বুঝেছি। সম্ভাব্য আসামীর তালিকায় এক নাম্বারে তাহলে হুঁশিয়ার খান নিজে। তারপর? কখন কিভাবে কোথায় আপনারা তার বেহুঁশ বডি খুঁজে পেলেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ভোরবেলা স্যার কন্ট্রোল রুমে একটা ফোন আসে। এক লোক নাকি ফোন করে বলেছে, সাগরিকা ট্রেনের অমুক কামরায় ইন্সপেক্টর হুঁশিয়ার খান বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছেন।" ঝাকানাকা বললেন, "লোক? হুমম!" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি। আপনি কি স্যার শ্রীচৈতন্যকে সন্দেহ করছেন?" ঝাকানাকা বললেন, "আমি কি তা-ই বললাম? লোকটা কোন নাম্বার থেকে ফোন করেছিলো?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হুঁশিয়ার খানের মোবাইল দিয়েই স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "তারপর সে মোবাইল সে আবার ফেলে রেখে গেছে?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, তবে সিমটা খুলে নিয়ে গেছে।" ঝাকানাকা বললেন, "আপনারা সে ফোনের ওপর আঙুলের ছাপ খুঁজেছেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "খুঁজেছি স্যার, কিন্তু তাতে হুঁশিয়ার খান ছাড়া অন্য কারো হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! হুঁশিয়ার খানের চেয়ে বেশি হুঁশিয়ার তো দেখছি এই অজ্ঞান পার্টির লোকেরাই! এদের ধরে চাকরি দিন পুলিশে। আর হুঁশিয়ারকে ধরে আচ্ছা করে জুতিয়ে বার করে দিন পুলিশ থেকে। ব্যাটা ফুলবাবু।" কিংকু চৌধারি খুশির হাসি হাসেন। ঝাকানাকা বলেন, "তো, এ-ই আপনার কেস?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। ওহ, হ্যাঁ, আরো দু'জন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো হুঁশিয়ার খানের কামরায়!" ঝাকানাকা একমুঠো মুড়ি মুখে পুরতে গিয়েও থেমে গেলেন। একটি ভুরু উত্তোলন করে বললেন, "বলেন কী?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। তিন তিনজন অজ্ঞান ভিক্টিম!" ঝাকানাকা বললেন, "কারা এরা?" কিংকু চৌধারি বললেন, "বাকি দুইজন লোকের নাম এখনো জানা যাচ্ছে না স্যার। তিনজনই এখন পর্যন্ত অজ্ঞান। হাসপাতালে আছে। ডাক্তার বলেছেন আজ সন্ধ্যের দিকে জ্ঞান ফিরলেও ফিরতে পারে।" ঝাকানাকা বললেন, "ট্রেনের ঐ কামরা সার্চ করেছেন তো? যা যা আলামত পাওয়া গেছে সব জব্দ করেছেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। এই যে লিস্ট।" ঝাকানাকা লিস্টের ওপর চোখ বুলিয়ে মুড়ি চিবাতে চিবাতে বলেন, "উত্তম! অতি উত্তম! এবার কিছু টেস্ট করতে দিই, দাঁড়ান। আজ রাতেই টেস্টগুলি সেরে ফেলুন। যদি ব্যাটাদের কাল জ্ঞান ফেরে, তাহলে আমরা এক ফাঁকে গিয়ে তিনটেকেই আচ্ছা করে জেরা করে আসবো।" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার! দুই একগাদা দলিলপত্র ঝাকানাকার দিকে এগিয়ে দিয়ে কিংকু চৌধারি বললেন, "গতকাল সন্ধ্যের দিকে সবার হুঁশ ফিরেছে স্যার। টেস্টগুলি করা হয়ে গেছে গতকাল রাতের মধ্যেই।" ঝাকানাকা একটা হাই তুলে বললেন, "এক এক করে সবার জেরা করি তবে। একটা মোটা দেখে রুলার দিন আমাকে। বলা যায় না, প্যাঁদাতে হতে পারে।" কিংকু চৌধারি করুণ গলায় বললেন, "দুইদিন ধরে অজ্ঞান ছিলো স্যার। দুবলা শরীরে আপনার মার কি সইবে?" ঝাকানাকা কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, "তাহলে চিকন দেখে একটা রুলার নিয়ে আসুন। আর একটা ছালা। পিঠে ছালা রেখে প্যাঁদালে বোধহয় একটু কম লাগবে ধকলটা।" কিংকু চৌধারি হাঁক পেড়ে ডাকলেন কনস্টেবলকে। "প্রথমে কাকে ডাকবো স্যার? মকবুল মনসবদার নাকি মন্টু লিওনার্দোকে?" ঝাকানাকা বিরসমুখে বললেন, "এরা কারা?" কিংকু চৌধারি কনস্টেবলকে রুলার আর ছালা আনতে বলে ফিরলেন ঝাকানাকার দিকে। "এরা বাকি দুই বেহুঁশ আদমি স্যার। পরিচয় জানা গেছে গতকাল।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! সবার আগে হুঁশিয়ার খানকে ডাকুন।" হুঁশিয়ার খান একটু পরে টলতে টলতে এসে হাজির হলো ঘরের ভেতর। ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় বললেন, "আপনিই হুঁশিয়ার?" হুঁশিয়ার খান ছিপছিপে গড়নের লোক, ভ্যাবাচ্যাকা ভাবের সাথে দু'তিনদিনের না কামানো দাড়ি মুখে। সে ধরা গলায় বললো, "জ্বি স্যার।" ঝাকানাকা বললেন, "নামেই হুঁশিয়ার, কামে তো হুঁশ-না-ওয়ালা! কী হয়েছিলো বলুন দেখি। ঠিকমতো বলবেন। উল্টোপাল্টা তথ্য দিলে প্রথমে প্যাঁদাবো, পরে ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলের ঝোল খাওয়াবো। আপনার আগে অনেক বেয়াড়া বদমায়েশ পুলিশকে আমি টাইট দিয়েছি!" হুঁশিয়ার খান বিষন্ন মুখে বলে, "খুবই বিচিত্র কাহিনী স্যার। ট্রেনে চড়ে ফিরছিলাম। কামরায় আমার সাথে আরো তিনজন ছিলো।" ঝাকানাকা সোজা হয়ে বসে বললেন, "আরো তিনজন? দু'জন নয়? তিনজন?" হুঁশিয়ার খান বললো, "জ্বি স্যার, তিনজন। মকবুল মনসবদার, মন্টু লিওনার্দো আর মিল্টন টেকনাফি।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! তারপর?" হুঁশিয়ার খান বললো, "গল্পগুজব করতে করতে যাচ্ছিলাম স্যার চারজন মিলে। হঠাৎ কামরার বাতি নিভে গেলো। এরপর কে যেন আমার নাকের ওপর একটা ভেজা কাপড় চেপে ধরলো, তাতে একটা কড়া মিষ্টি গন্ধ। তারপর স্যার আর কিছু মনে নেই।" ঝাকানাকা সহৃদয় কণ্ঠে বললেন, "আপসোস! তা, অজ্ঞান হওয়ার আগ পর্যন্ত যা যা ঘটেছিলো সেসব মনে আছে নাকি ভুলে গেছেন?" আসনবিন্যাস: ট্রেনের কামরায় যেভাবে বসেছিলো চার পাজি হুঁশিয়ার খান মনমরা হয়ে বলে, "মনে আছে স্যার। ভুলি নাই।" ঝাকানাকা বলেন, "বেশ বেশ। তা কে কোথায় বসেছিলেন কামরার ভেতর?" হুঁশিয়ার খান একটা প্যাডে কলম দিয়ে এঁকে দেখায়। জানালার পাশে সে আর মন্টু লিওনার্দো। তার পাশে বসেছিলো মকবুল মনসবদার, আর মন্টুর পাশে মিল্টন টেকনাফি। ঝাকানাকা মনোযোগ দিয়ে দেখেন নকশাটা। "বটে? হুমমম! তা আপনাকে অন্ধকারের মধ্যে এ তিনজনের মধ্যে যে কোন একজনই নাকেমুখে ভেজা কাপড় গুঁজে দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলতে পারে। নাকি?" হুঁশিয়ার খান মাথা ঝাঁকায়। "এদের মধ্যে কাউকে সন্দেহ হয়?" ঝাকানাকা মোলায়েম কণ্ঠে জানতে চান। হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বলে, "তিনজনই যেন স্যার ... কেমন কেমন!" ঝাকানাকা বললেন, "তিনজন মিলেই অজ্ঞান করেছিলো আপনাকে, তা-ই বলছেন?" হুঁশিয়ার খান বললো, "না স্যার, মনে হয় ওটা একজনেরই কাজ ছিলো। আর এতো চট করে অজ্ঞান হয়ে গেলাম যে বেশি কিছু ঠাহর করতে পারিনি।" ঝাকানাকা বললেন, "বাকি তিনজনের সম্পর্কে বলুন। তারা কে কী করে, দেখতে কেমন, কী করছিলো?" হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বললো, "মন্টু লিওনার্দো হচ্ছে কবি। নিয়মিত কবিতা লেখে। গাঁজা খেলে নাকি কবিতা বেশ খেলে, বেশ খোলে মাথায়, বলছিলো সে। হ্যাংলা, মুখে মোচদাড়ি আছে, জিন্সের প্যান্ট, ফতুয়া আর লেজেহোমো শেরশাদের মতো স্কার্ফ পরা ছিলো গলায়।" কিংকু চৌধারি নোট করেন ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে। "আর মকবুল মনসবদার ব্যবসায়ী। আদার ব্যবসা করে বলছিলো। চট্টগ্রাম গিয়েছিলো কী একটা জাহাজের খবর নিতে। মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরা ছিলো। পান খেয়ে বার বার উঠে জানালা দিয়ে পিক ফেলছিলো।" কিংকু চৌধারি নোট করে যান। "আর এই মিল্টন টেকনাফি লোকটা স্যার বড়ই সন্দেহজনক। কী করে জিজ্ঞেস করলে বলে না, খালি হাসে। অনেক লম্বা, একটা জ্যাকেট আর খাকি প্যান্ট পরা ছিলো। বাদাম খাচ্ছিলো সমানে। আমাদেরকেও বাদাম সেধেছিলো, আমি নিইনি। আর একটা বিশ্রী গান গুনগুন করছিলো একটু পর পর।" ঝাকানাকা বলেন, "বিশ্রী গান? সে কীরকম?" হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বলে, "বিদঘুটে গান স্যার। সুরটা ঠিক মনে পড়ছে না, কথাগুলি এমন ... তুইইইইই ... মাল খা ... ইচ্ছেমতোওওও ... বোতলকে খুশি করে বাঁচ!" কিংকু চৌধারি সোজা হয়ে বসেন। ঝাকানাকা চোখ গরম করে বলেন, "বলেন কী? এমন আবার গান হয় নাকি?" হুঁশিয়ার খান বলে, "সেজন্যেই তো বললাম স্যার, বিদঘুটে গান!" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আমার কাছে গানটা চেনা চেনা লাগছে!" ঝাকানাকা ঝট করে ফিরে তাকিয়ে বললেন, "আপনি এসব আজেবাজে গান চিনলেন কী করে?" কিংকু চৌধারি লাজুক গলায় বললেন, "রেডিও ঝাঞ্জাইলে শুনি স্যার। এটা সম্ভবত ঝুনো-র গান, "পরমকল্যাণবরেষু" অ্যালবাম থেকে নেয়া।" ঝাকানাকা চটে গিয়ে বললেন, "থাক থাক থাক। ... এ গান গাইছিলো মিল্টন তেঁতুলিয়া?" হুঁশিয়ার খান বলে, "তেঁতুলিয়া নয় স্যার, টেকনাফি।" ঝাকানাকা বললেন, "ঐ হলো! তো, আপনি কিছু বললেন না তাকে?" হুঁশিয়ার খান বলে, "আমি কী বলবো স্যার? কিছু বলতে গেলেই বাদাম খাওয়ার জন্য পীড়াপিড়ি করে।" ঝাকানাকা বললেন, "তো বাদাম সাধলে বাদাম খেয়ে ফেলতেন! সমস্যা কী?" হুঁশিয়ার খান বললো, "না স্যার, ট্রেনে বাসে অপরিচিত কেউ কোন কিছু সাধলে খেতে নেই। আমার বাবা বলেছিলেন ছেলেবেলায়। বলেছিলেন, খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ঘুম পাড়িয়ে বাক্সপেঁটরা হাতিয়ে নেয় লোকজন। আমার সেজ মামাকে এমনি করে একবার সিঙ্গারা খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ওনার জামাজুতো সব খুলে নিয়ে গিয়েছিলো এক মহিলা!" ঝাকানাকা বললেন, "আপনারা বাবা অত্যন্ত দূরদর্শী মানুষ ছিলেন, দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু বাদামের সাথে ঘুমের ওষুধ মেশানো একটু শক্ত নয় কি? বাদাম তো আর আপেল নয় যে ইনজেকশন দিয়ে ঘুমের ওষুধ ভরে দেবে! শরবতও নয় যে ঘুমের ট্যাবলেট গুলিয়ে খাওয়াবে! শক্ত খোসাঅলা একটা জিনিস! তাছাড়া বাদাম স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো, ক্যালসিয়াম আছে, পটাশিয়াম আছে!" হুঁশিয়ার খান মুখ গোমড়া করে বললো, "না স্যার, সাবধানের মার নাই। আমার মেজো শালাকে একবার ছোলাভাজা খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটপাট করে নিয়েছিলো।" ঝাকানাকা গম্ভীর মুখে বললেন, "আপনার পরিবারে দেখি এই অজ্ঞান হয়ে সর্বস্ব খোয়ানোর জমজমাট রেওয়াজ আছে! এই সব পারিবারিক ইতিহাস থাকার পরও আপনি কোন সাহসে এই মূল্যবান জিনিস বহন করার দায়িত্ব নিলেন, য়্যাঁ?" হুঁশিয়ার খানের মুখটা কালো হয়ে যায়। কিংকু চৌধারি নোট করতে করতে বললেন, "স্যার, ছোলাভাজার সাথে যদি ঘুমের ওষুধ মেশানো যায়, তাহলে বাদাম তো তার কাছে নস্য!" ঝাকানাকা চিন্তিত হয়ে বললেন, "তাই তো দেখছি। আস্ত নারিকেল ছাড়া কিছুই নিরাপদ নয়!" হুঁশিয়ার খান বললো, "আমি বেশ সাবধানে ছিলাম স্যার। কিন্তু ঐ যে ফট করে ঘরের বাতি নিভে গেলো, আর তারপর কে যে ব্যাটা পাজি আমার মুখের মধ্যে কাপড় চেপে ধরলো ... এর জন্যে আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! ঠিক আছে। আপনি ঐ তিন পাজিকে দেখলে এখন চিনতে পারবেন?" হুঁশিয়ার খান হাত মুঠো পাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, "পারবো না মানে? শুধু চিনবোই না, কিলিয়ে কাঁঠালও পাকাবো ব্যাটাদের! অ্যাত্তোবড় সাহস, আমার নাকে কাপড় চেপে ধরে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "তিন পাজি? আপনি কি তিনটাকেই সন্দেহ করছেন নাকি স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "তদন্তের সময় আমি সবাইকেই পাজি ধরে নিই। এই যে হুঁশিয়ার খান, এ হচ্ছে পাজি নাম্বার ওয়ান।" হুঁশিয়ার খানের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, সে বলে, "এ কেমন ইনসাফ হলো স্যার? অজ্ঞান হলাম আমি, আর আমার ঘাড়েই পেজোমির দোষ চাপাচ্ছেন? ভিক্টিম হওয়া কি পাপ?" ঝাকানাকা ক্রুর হাসেন, বলেন, "দেখা যাবে কে পাজি আর কে পাজি নয়। আপাতত পাশের ঘরে গিয়ে বসুন, চা-টা খান।" হুঁশিয়ার খান গোমড়া মুখ করে উঠে চলে যায়। কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, বাকি দু'টোকে ডাকবো? রুলার আনাই মোটা দেখে একটা?" ঝাকানাকা বললেন, "পুলিশ হয়ে পুলিশকে বাঁচিয়ে জনগণকে প্যাঁদানোর একটা পুলিশি বদভ্যাস কাজ করে আপনার মধ্যে! কাউকে যদি প্যাঁদাতে হয় তাহলে সে আপনার সহকর্মী হুঁশিয়ার খান! পুলিশ নামের কলঙ্ক সে!" কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে পেন্সিল দিয়ে কান চুলকাতে থাকেন। ঝাকানাকা বলেন, "এই মিল্টন টেকনাফি লোকটাই কেবল এখন আমাদের কব্জায় নেই। সন্দেহজনক আচরণ ব্যাটার। তুই মাল খা ইচ্ছেমতো, বোতলকে খুশি করে বাঁচ ... এটা কোন গান হলো?" কিংকু চৌধারি বললেন, "হেঁ হেঁ হেঁ, আপনি স্যার আজকালকার গান দেখছি একদমই শোনেন না! লিমা-র ""বাইদানি নাচে মাজা ঝাকাইয়া"" শুনলে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হয় তা-ই ভাবছি!" ঝাকানাকা রক্তচক্ষু তাগ করে বললেন, "আপনি এসব গান শোনার সময় পান?" কিংকু চৌধারি বলেন, "গাড়িতে উঠলেই রেডিও ঝাঞ্জাইল ছেড়ে দিই স্যার! যা শোনায় সব শুনি!" ঝাকানাকা বললেন, "যত্তোসব! আপনার দোস্ত এই ব্যাটা হুঁশিয়ার খান কি মদ খায়? কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, তা খায় মাঝে মধ্যেই। শৌখিন মানুষ তো!" ঝাকানাকা বিমর্ষ মুখে বললেন, "মকবুল মনসবদারকে ডাকুন দেখি। হুঁশিয়ার খানের পাশে বসে ছিলো ব্যাটা, পাজি নাম্বার টু। দেখি আদার ব্যাপারী হয়ে সে কোন জাহাজের খবর নিতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলো!" "মকবুল মনসবদারকে ডাকো!" কিংকু চৌধারি হুঙ্কার দিয়ে সেপাইকে হুকুম ঝাড়েন। "আর মোটাসোটা একটা রুলার নিয়ে এসো!" রুলার হাতে মকবুল মনসবদারকে পাকড়াও করে এনে স্যালুট দ্যায় সেপাই। মকবুল মনসবদার মোটাসোটা মানুষ। চোখে এখনও ঢুলুঢুলু ভাব। পরনে পায়জামা আর পাঞ্জাবি। মুখে দাড়িগোঁপ নেই। ঝাকানাকা মনোযোগ দিয়ে কী একটা রিপোর্ট পড়ছিলেন, মকবুল মনসবদারকে দেখে সহৃদয় কণ্ঠে বললেন, "আসুন আসুন! খুব ধকল গেছে, তাই না? বসুন বসুন!" মকবুল মনসবদার ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়েন। "রুলার দিয়ে কী করবেন স্যার? মারবেন নাকি আমাকে?" কিংকু চৌধারি মুহাহাহা করে হাসেন। বলেন, "মুহাহাহাহা! দরকার পড়লে মারতেও পারি!" ঝাকানাকা শাসন করলেন তাকে। "আহ চৌধারি! ওসব পড়ে হবে। মনসবদার সাহেব ভালো লোক। ধরে পিটুনি দেয়ার আগেই সব খুলে বলবেন। ... তাই না?" মনসবদার ডুকরে উঠলেন, "এ আপনাদের কেমন বিচার? আমাকে ধরে অজ্ঞান করে সব কেড়েকুড়ে নিলো, আর আপনারা আমার হুঁশ আসতে না আসতেই ধরে প্যাঁদানোর চিন্তা করছেন?" ঝাকানাকা বললেন, "সব কেড়েকুড়ে নিলো? কী ছিলো আপনার সাথে?" মনসবদার চোখ মুছে বললেন, "মোবাইল, মানিব্যাগ, আতরের কৌটা! সব!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! কিন্তু পুলিশ রিপোর্টে তো বলছে, আপনার জিনিসিপত্র কিছুই খোয়া যায়নি। আপনার ছবিওয়ালা মানিব্যাগ, আপনার ছবিওয়ালা মোবাইল, আর একটা জঘন্য গন্ধঅলা আতরের কৌটা, সব পাওয়া গেছে কামরার মেঝেতে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "ওগুলোতে কেবল আপনারই হাতের ছাপ পাওয়া গেছে! আর কারো নয়! এখন বলুন, আপনি বেহুঁশ হলেন কিভাবে?" মকবুল মনসবদার বললেন, "সব বলবো স্যার! কিন্তু আমার জিনিসপত্র আমাকে ফেরত দেয়া হবে তো? নাকি রেখে দিবেন জোর করে, নজরানা হিসাবে?" ঝাকানাকা বললেন, "পাবেন, সব ফেরত পাবেন। আগে তদন্ত শেষ হোক। বলুন, কী হয়েছিলো?" মনসবদার বললেন, "কামরায় আমরা চারজন ছিলাম স্যার। আমি, হুঁশিয়ার খান নামে এক ছোকরা মডেল, মন্টু লিওনার্দো নামের এক হিপি, আর মিল্টন টেকনাফি নামের এক বদমায়েশ! গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম চারজনে মিলে ...।" "মডেল?" ঝাকানাকা বাধা দেন। "হুঁশিয়ার খান মডেল?" "তা-ই তো বললো স্যার। সে নাকি মডেলিং করে। জামার, জুতার, জাঙ্গিয়ার। যদিও দেখতে বান্দরের মতো।" "বটে?" ঝাকানাকা ভ্রুকুটি করেন। "তারপর?" "হঠাৎ ঘরের আলো স্যার ফট করে নিভে গেলো। একটা কেমন হুটোপুটির আওয়াজ পেলাম। আমি বললাম, "হায় হায়, চলন্ত ট্রেনেও লোডশেডিং হচ্ছে!" মিল্টন টেকনাফি বললো, "দিনকাল খুবই খারাপ!" মন্টু লিওনার্দো বললো, "কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়, ও ভাইরে ও ভাই ...!" হুঁশিয়ার খান কিছুই বললো না। তার পরপরই ফট করে আবার আলো জ্বলে উঠলো। তখন দেখি, সে সীটের ওপর হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বেচারাকে আর জাগালাম না। আমরা তিনজন মিলে গল্প করতে করতে যাচ্ছি। মন্টু লিওনার্দো কী কী সব আবোলতাবোল বকছে, মনে হয় গাঁজা খেয়ে উঠেছিলো ট্রেনে ... আর মিল্টন বদমায়েশটা আজেবাজে সব গান গাইছিলো ... এর মধ্যে আবার ফট করে ঘরের আলো নিবে গেলো। কে যেন আমার মুখে একটা ভেজা কাপড় চেপে ধরলো, তাতে কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ! তারপর স্যার আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম, জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি!" কিংকু চৌধারি নোট করতে করতে বললেন, "সত্যি তো? মিথ্যা কথা বললে কিন্তু রুলার দিয়ে অ্যায়সা প্যাঁদান প্যাঁদানো হবে যে ...।" ঝাকানাকা চোখ বুঁজে সব শুনছিলেন, তিনি হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, "এই যে আপনি দু'দিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলেন, আপনার আত্মীয়স্বজন আপনার খোঁজ করলো না কেন?" মনসবদার করুণ কণ্ঠে বললেন, "আত্মীয়স্বজন তো স্যার গাঁওগেরামে থাকে। তারা কি আর পদে পদে আমার খোঁজ নেয়? আমি ব্যবসার কাজে সারা দেশ ঘুরি ... কখন কোথায় থাকি তারা তো খবর রাখে না! আর খোঁজ যদি কেউ নেয় তো নেবে তারা, যাদের সাথে আমি ব্যবসা করি। আমার মোবাইল ফোনটাও তো আপনারা কোথায় ঝেড়ে দিয়েছেন! কে আমাকে এই কয়দিন ফোন করে পাত্তা পায়নি, সে খোঁজ যে নেবো, তার উপায়ও তো কিছু রাখেন নি!" ঝাকানাকা বললেন, "পাবেন পাবেন, সব খোঁজ পাবেন। ... এবার বলুন, কী গান গাইছিলো মিল্টন?" মকবুল মনসবদার ভুরু কুঁচকে খানিক ভেবে বললেন, "বিশ্রী একটা গান স্যার! কোন আগামাথা নাই। গলাটাও বেসুরা! গানের কথাগুলি হচ্ছে এমন ... তুই ভাত খা, ইচ্ছেমতোওওওও ... পাতিলকে খুশি করে বাঁচ!" ঝাকানাকা সোজা হয়ে বসলেন চেয়ারে। "ঠিক শুনেছেন তো?" মকবুল মনসবদার মাথা নাড়লেন। "হ্যাঁ ... এরকমই ছিলো গানের কথাগুলি।" ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে কিংকু চৌধারিকে বললেন, "নোট করে নিন বরং। বেশ জটিল পরিস্থিতি। ... তা মকবুল সাহেব, আপনারা কাকে সন্দেহ হয়? কে আপনার মুখে কাপড় চেপে ধরলো?" মকবুল মনসবদার গম্ভীর হয়ে বললেন, "আমার তো স্যার ঐ মিল্টন ব্যাটার ওপরই সন্দেহ হয়। লোকটা স্যার সুবিধার না। একটু পর পর শুধু বাদাম খেতে সাধছিলো আমাদের। আর শালা বাদাম খেতেও পারে ভাতের মতো! একটার পর একটা বাদাম ভেঙে খেয়েই চলেছে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "হুমম! মেঝেতে প্রচুর বাদামের খোসা পাওয়া গেছে বটে!" ঝাকানাকা বললেন, "ওগুলোর ওপর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করার জন্যে একটা নোট পাঠিয়েছিলাম কেমিক্যাল আলিকে। ব্যাটা তো এখনও কোন রিপোর্ট দিলো না।" মকবুল মনসবদার বললেন, "স্যার, আমার জিনিসগুলি দিয়ে দ্যান, আমি বাড়ি যাই। পেট ভরে ভাত খেতে হবে, শরীরটা বড় দুর্বল হয়ে পড়েছে!" ঝাকানাকা বললেন, "নিশ্চয়ই যাবেন! পেট ভরে খাওয়ার বন্দোবস্তও হবে। তবে আগে তদন্ত শেষ করি আজকের মতো, তারপর দেখা যাবে। এখন বলুন, মিল্টন আর মন্টুকে দেখলে চিনতে পারবেন?" মকবুল মনসবদার বললেন, "পারবো স্যার! বিশেষ করে মিল্টন হতচ্ছাড়াটাকে তো পারবোই! শুধুশুধু আমার তিনটা দিন বরবাদ করলো ব্যাটা বদমায়েশ!" ঝাকানাকা তীর্যক হেসে বললেন, "আপনি এতো নিশ্চিত হচ্ছেন কিভাবে যে মিল্টন টেকনাফিই আপনাকে অজ্ঞান করেছে? কাজটা তো মন্টু লিওনার্দোরও হতে পারে! এমনকি, হুঁশিয়ার খান নামের সেই মডেল ব্যাটারও হতে পারে! তাই না?" মকবুল মনসবদার চমকে উঠে বললেন, "তাই তো! কিন্তু মন্টুকে দেখে ঠিক ওরকম মনে হয়নি স্যার! আর হুঁশিয়ার খান তো চিৎপাত হয়ে ঘুমাচ্ছিলো। বরং মিল্টন টেকনাফিই কেমন যেন আড়ে আড়ে বারবার তাকাচ্ছিলো স্যার, কেমন একটা মতলববাজ হাসি ছিলো ব্যাটার চোয়ালে! ... আপনারা যা-ই বলুন স্যার, আমার ধারণা মিল্টনই আমাকে অজ্ঞান করে আমার জিনিসপত্র কেড়েকুড়ে নিয়েছে!" ঝাকানাকা বললেন, "আপনার জিনিসপত্র তো সব রেলের কামরার মেঝেতেই পাওয়া গেছে। মিল্টন আপনাকে লুট করলে সে সব ফেলে গেলো কেন?" মকবুল মনসবদার মুষড়ে পড়লেন। "তা তো জানি না স্যার! শালার ব্যাটা কেন আমাকে শুধু শুধু এই বিপদে ফেললো, কে জানে?" কিংকু চৌধারি ক্রুর হেসে বললেন, "আর কোন কিছু ছিলো না কি আপনার সাথে? বেআইনী কোন বস্তু? যেটা খোয়া গেছে কিন্তু স্বীকার করছেন না? য়্যাঁ? দেখছেন তো এই রুলারখানা?" মকবুল মনসবদার খেপে উঠলেন, "এ কেমন ব্যাভার স্যার? আমি অসুস্থ একটা লোক, পদে পদে আমাকে রুলার দেখাচ্ছেন? আমি সাংবাদিকদের কাছে বিচার দেবো যে আপনারা আমাকে কীরকম নির্যাতন করার হুমকি দিয়েছেন!" কিংকু চৌধারি হাসেন, বলেন, "মুহাহাহাহাহা!" ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বলে, "থামুন, হাসবেন না পুলিশের মতো। ... মকবুল সাহেব, সত্যি কথা বলুন! আর কী ছিলো আপনার সাথে? টাকাপয়সা? সোনাদানা? হীরাজহরত? হেরোইন? কোকেন? একে৪৭?" মকবুল মনসবদার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। "আদার ব্যবসা করি স্যার গত পনেরো বছর ধরে! মকবুল ট্রেডার্স, খোঁজ নিয়ে দেখেন হয়রানবাজারে! মাঝে মাঝে আদার দাম সুযোগ বুঝে কেজি পিছু পাঁচদশটাকা বাড়াই, কিন্তু চোরাচালানি করি না! আপনারা আমাকে বাগে পেয়ে এইভাবে বেইজ্জতি করছেন! এইভাবে আমাকে উল্টাপাল্টা কেসে ফাঁসিয়ে পয়সা খেতে চাচ্ছেন! রুলার দিয়ে প্যাঁদাচ্ছেন! আমি অ্যামনেস্টির কাছে যাবো! আমি জাতিসংঘের কাছে যাবো!" ঝাকানাকা বললেন, "আহহাহাহা, কাঁদে না, কাঁদে না। শরীরের এই অবস্থা নিয়ে এতো দৌড়ঝাঁপ আপনার পোষাবে না। তা বেশ তো, আমরা না হয় খোঁজ করে দেখবো হয়রানবাজারে। আপনার গদির ঠিকানা দিয়ে যান আমাদের। এই যে ... কাগজ আর কলম।" মকবুল মনসবদার হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে ফোঁৎ ফোঁৎ করে নাক টানতে টানতে কাগজে নিজের গদির ঠিকানা লিখে দেন। কিংকু চৌধারি বললেন, "ওসব অ্যামনেস্টি-জাতিসংঘ দেখিয়ে কূল পাবেন না! যদি সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় তো ঠেঙিয়ে আপনার বিষ ঝেড়ে দেয়া হবে! চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন কেন?" মকবুল মনসবদার বলেন, "ব্যবসার কাজে স্যার। আদা আমদানি করতে হবে অচিরেই, তাই একটু পোর্টে কাজ ছিলো।" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম, জাহাজের খোঁজখবর করছিলেন, তাই তো? বেশ বেশ! তা মকবুল সাহেব, আপনি এখন তাহলে ঐ ঘরটায় গিয়ে বসুন, চা-নাস্তা খান।" মকবুল মনসবদার গোঁ গোঁ করে বললেন, "খিদা লেগে গেছে স্যার। ভাতের ব্যবস্থা নাই?" কিংকু চৌধারি দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, "আপাতত চা খান। ভাতের ব্যবস্থা পরে হবে!" মনসবদার চলে যাবার পর কিংকু চৌধারি ঝাকানাকার দিকে ফিরে বললেন, "স্যার, যতদূর মনে হচ্ছে এই মিল্টন টেকনাফিই শ্রীচৈতন্য। এক এক করে তিনটাকেই অজ্ঞান করে প্লেট লুট করে পালিয়েছে!" ঝাকানাকা বললেন, "জনাব চৌধারি, আপনাকে আরো সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করতে হবে। ফট করে এর ওর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিলে চলবে না। কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাকে খুঁজতে হবে।" চৌধারি মনক্ষুণ্ন হয়ে বললেন, "কী প্রশ্ন স্যার?" ঝাকানাকা চেয়ারে নড়েচড়ে বসে বললেন, "প্রথম প্রশ্ন, প্লেট লুট করাই যদি মিল্টনের উদ্দেশ্য হবে, তাহলে কামরার বাকি দু'জনকে সে অজ্ঞান করলো কেন?" কিংকু চৌধারি বললেন, "সে কী কথা স্যার! তিন তিনজনকে বাগে পেয়েছে, যা কিছু পেয়েছে লুট করে নিয়েছে!" ঝাকানাকা বললেন, "উঁহুহু! অত সহজ নয়। ব্যাপারটা মোটেও কাকতালীয় নয়। হুঁশিয়ার খানের কাছে যে ডলারের প্লেটদু'টো আছে, এটা মিল্টন নিশ্চয়ই জানতো। হুঁশিয়ার খানকে অজ্ঞান করে চুপচাপ বসে থাকলেই পারতো সে। কেন আবার মকবুল মনসবদারকে অজ্ঞান করতে গেলো? মন্টু লিওনার্দোকেই বা কেন অজ্ঞান করতে গেলো?" কিংকু চৌধারি বললো, "স্যার, আপনি কি বলতে চাইছেন, মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দোর কাছেও ডলারের প্লেট ছিলো?" ঝাকানাকা বললেন, "থাকতেও পারে, অসম্ভব কিছু নয়!" কিংকু চৌধারি দাঁতে দাঁত পিষে বললেন, "বটে! দাঁড়ান স্যার, ঐ ব্যাটা মকবুলকে যদি আমি পিটিয়ে লম্বা না করছি তো আমার নাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারিই নয়!" ঝাকানাকা বললেন, "আবার না-ও থাকতে পারে। হয়তো মকবুল মনসবদার কিছু দেখে ফেলেছিলো। বা সন্দেহ করেছিলো। তাই তাকে সময়মতো অজ্ঞান করে চুপ করিয়ে রাখা।" কিংকু চৌধারি বললেন, "দেখলে আমাদের বললো না কেন স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "সেটাই তো প্রশ্ন! মিল্টনের হাতে হাতকড়া পরানোর আগে মকবুল আর মন্টুকে ভালোমতো জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে হবে, ঘটনাটা কী!" কিংকু চৌধারি বললেন, "মন্টু লিওনার্দোকে তলব করবো স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "করুন। তার আগে বলুন, এই মকবুল ব্যাটা কি খুব পেটুক নাকি?" কিংকু চৌধারি বললেন, "ভয়ানক ভাতখোর লোক স্যার। হাসপাতালের খাবার তার পছন্দ হয় না। এক প্লেট খেয়ে আরো দুই প্লেটের ফরমায়েশ দ্যায়!" ঝাকানাকা বললেন, "মন্টু আর মকবুলকে আলাদা ওয়ার্ডে রেখেছিলেন না?" কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, আপনার কথামতো আলাদা জায়গায় রেখেছি তিনজনকেই। হুঁশিয়ার, মকবুল, মন্টু ... কেউ জানে না যে তারা তিনজনই এখন একই ছাদের নিচে আছে।" ঝাকানাকা বললেন, "গুড গুড! ডাকুন মন্টুকে।" তিন মন্টু লিওনার্দো টিঙটিঙে রোগা। পরনে ঢোলা কুর্তা আর জিন্স। মুখভর্তি দাড়িগোফঁ। চোখদু'টো লাল। ভাবভঙ্গি কবিসুলভ। "আপনিই মন্টু লিওনার্দো?" "জ্বি স্যার। আমিই কবি মন্টু লিওনার্দো।" ভাঙা গলায় বলে মন্টু। "বেশ বেশ। তা কেমন বোধ করছেন এখন?" মধুর গলায় বলেন ঝাকানাকা। "ভালো না স্যার। এইখানকার গাঁজা ভালো না।" মন্টু বিষণ্ন মুখে বলে। "এইখানকার গাঁজা মানে?" কিংকু চৌধারি গর্জে ওঠেন। "হাসপাতালের গাঁজা স্যার। ভালো না।" মন্টু অনুযোগ করে। "হাসপাতালের গাঁজা মানে?" ঝাকানাকা ভুরু কোঁচকান। "এখানে স্যার চাইলে গাঁজা যোগাড় করে দ্যায় দালারেরা। আমার আবার গাঁজা পান না করলে একটু সমস্যা হয় স্যার।" "বলেন কী!" কিংকু চৌধারি হাঁক পাড়েন। "রুলারটা নিয়ায় কেউ!" মন্টু লিওনার্দো বলে, "রুলার লাগবে না স্যার। আমি পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা। এই সেদিন মাপিয়েছি। তবে ওজনটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে স্যার! নিউমার্কেটে মাপালে দেখায় বাহান্ন কেজি, কিন্তু সংসদে মাপালে দেখায় তেপ্পান্ন। একটু কনফিউশনে আছি স্যার এটা নিয়ে। ওজন মাপার মেশিন থাকলে আনতে বলুন, মেপে দেখি আসলে কত ...।" ঝাকানাকা মধুর গলায় বলেন, "যাহা বাহান্ন তাহা তেপ্পান্ন। এটা নিয়ে টেনশন করবেন না একদম।" কিংকু চৌধারি হুঙ্কার দ্যান, "রুলার দিয়ে তোমাকে মাপা হবে না, ব্যাটা বদমায়েশ, পিটিয়ে পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি করে দেয়া হবে! হাসপাতালে এসে গাঁজা খাওয়া হচ্ছে?" মন্টু লিওনার্দো কাঁচুমাচু মুখে বললো, "গাঁজা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো স্যার। মনটাও ভালো থাকে। ... তবে গাঁজা খাওয়ার পর দুধ খেতে হয় স্যার, এখানে দুধটাও খারাপ। গাঁজার অবস্থা তা-ও তো চলে, দুধের অবস্থা ভয়ঙ্কর খারাপ!" কিংকু চৌধারি বলেন, "চোপরাও! স্যার যা বলেন তার উত্তর দাও!" ঝাকানাকা বলেন, "আপনি কী ধরনের কবি?" মন্টু নড়েচড়ে বসে, "খুবই উন্নতমানের কবি স্যার! বাদশাবাগের ইয়াজুজ মার্কেটে যে কোন লিটুল ম্যাগাজিনে আমার কবিতা পাবেন। আমাকে ছাড়া বাংলা কবিতার জগৎ স্যার, অচল!" ঝাকানাকা বলেন, "আপনার নিজের বই বেরোয়নি?" মন্টু লিওনার্দো বলে, "বেরোয়নি আবার? চারখানা বেরিয়েছে স্যার! আমার ঝোলাটা সাথে থাকলে দেখাতে পারতাম, কিন্তু হুঁশ ফিরে আসার পর থেকে আমার ঝোলাটা আর পাচ্ছি না। ঝোলাটা পেলে স্যার হাসপাতালের এই নিম্নমানের গাঁজা আর বাজে দুধ খেতে হতো না!" ঝাকানাকা বললেন, "ট্রেনের কামরায় আপনার ঝোলা পাওয়া গেছে। ওতে অবশ্য কয়েকটা চটিবই ছিলো। গাঁজা আর এক বোতল দুধও পাওয়া গেছে তাতে।" মন্টুর মুক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, "আহ! বাঁচালেন স্যার। ওগুলো কি আমি ফেরত পাবো না?" ঝাকানাকা বললেন, "পেতেও পারেন। আগে তদন্ত শেষ হোক।" মন্টু বললো, "ওকে স্যার, তাহলেই হবে।" ঝাকানাকা বললেন, "চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন কেন?" মন্টু বলে, "সাতকানিয়া কবিতা পরিষদের আমন্ত্রণে স্যার। কবিতা পাঠের আসর বসেছিলো।" ঝাকানাকা বললেন, "বলেন কী? তা কোন কবিতা পাঠ করলেন সেখানে?" মন্টু লিওনার্দো সগর্বে বলে, "স্বরচিত কবিতা স্যার। নাম ""আমার জাঙ্গিয়া ও আশ্চর্য ডাইনোসরগুলি!"" শুনবেন?" কিংকু চৌধারি তেড়ে আসেন, "খবরদার!" ঝাকানাকা তাকে নিবৃত্ত করেন। "আহ, থামুন তো! ... না, কবিতা শুনবো না। তারচেয়ে বলুন, সেদিন কী ঘটেছিলো ট্রেনে? আর কে কে ছিলো আপনার সাথে?" মন্টু লিওনার্দো চিন্তিত হয়ে পড়ে। "ছিলো স্যার কয়েকজন। ... একজনের নাম স্যার ... উমম, হুঁশিয়ার। সে আবার মডেলিং করে। বিশ্রী চেহারা, কীভাবে এই চেহারা নিয়ে মডেল হলো কে জানে? আর একজন ছিলো, তার নাম মকবুল পোদ্দার ...।" "পোদ্দার?" জানতে চান ঝাকানাকা। "উমম, এমনই কিছু স্যার। পোদ্দার বা ফৌজদার, একটা কিছু হবে, খেয়াল নাই। ... আর একটা লোক, খুব বিশ্রী বাজে একটা লোক স্যার ... মিল্টন বেনাপোলি ... ছিলো আমার পাশে।" "বেনাপোলি?" ক্ষেপে ওঠেন কিংকু চৌধারি? "বেনাপোলি না টেকনাফি?" মন্টুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। "ঠিক স্যার, বেনাপোলি নয়, টেকনাফি? চেনেন নাকি ব্যাটাকে?" ঝাকানাকা বলেন, "এখনও চিনি না, তবে অচিরেই চিনতে পারবো। ... তা ওকে বিশ্রী বাজে বলছেন কেন?" মন্টু ক্ষেপে ওঠে, "বলবো না? ওর দেয়া বাদাম খেয়েই তো স্যার ঘুমিয়ে পড়লাম। এমন মরণ ঘুম, বাপরে!" ঝাকানাকা বলেন, "ইন্টারেস্টিং! তা কী কী ঘটেছিলো একদম প্রথম থেকে বলুন।" মন্টু চোখ মিটমিট করে। "একদম প্রথম থেকে? ... ইয়ে, আমরা স্যার গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। হুঁশিয়ার লোকটা স্যার, একটা গর্দভ। খালি মডেলিঙের গল্প করছিলো। কোথায় কোন হোসিয়ারীর মডেলিং করেছিলো, আন্ডারওয়্যার পরে নাকি তিনতলা থেকে লাফ দিতে হয়েছিলো, এইসব বাজে গল্প করছিলো। আমি স্যার গাঁজা খেয়ে একবার দিগম্বর হয়ে পানির পাইপ বেয়ে চারতলায় উঠেছিলাম, একবার ভাবলাম ওকে সেটা বলি, কিন্তু খামাকা লজ্জা দিয়ে কী লাভ ব্যাটাকে? ... আর মকবুল পোদ্দার, নাকি তালুকদার, যা-ই হোক ... সেই মকবুল ব্যাটা স্যার সমানে পান খাচ্ছিলো, আর একটু পর পর এসে জানালার কাঁচ তুলে পিক ফেলছিলো থু থু করে। ... আর মিল্টন হারামজাদাটা স্যার, কী বলবো, সমানে বাদাম খেয়ে যাচ্ছিলো ... আর গুনগুন করে খালি মজার মজার সব গান গাইছিলো ... গান শুনে মনে হয়েছিলো লোকটা খারাপ না, কিন্তু ও যে একটা বদের হাড্ডি, সেটা তো স্যার ঠেকে শিখলাম!" "মজার গান?" কিংকু চৌধারি ভুরু কুঁচকান। "কী মজার গান?" "উমমম ... দাঁড়ান স্যার, মনে করে নিই। এক ছিলিম গাঁজা টানলে স্যার সবই মনে পড়তো ... এখন মাথাটা এমন টিপটিপ করছে ... গানটা ছিলো স্যার এমন ...," এই বলে সে গেয়ে শোনায়, "তুউউউই, দুধ খা ... ইচ্ছে মতোওওওওও ... নিপলকে খুশি করে বাঁচ!" কিংকু চৌধারি মুঠো পাকিয়ে সটান উঠে পড়েন চেয়ার থেকে। "এটা মজার গান হলো?" হুঙ্কার দেন তিনি। ঝাকানাকা বিড়বিড় করে বলে, "ইন্টারেস্টিং! খুবই ইন্টারেস্টিং! ... চৌধারি, নোট করুন।" কিংকু চৌধারি বসে পড়ে গজগজ করতে থাকেন, "যত্তোসব বাজে গান!" ঝাকানাকা বললেন, "আপনার রেডিও ঝাঞ্জাইলে ঝুনো সাহেব এসব গানই গায় নাকি, ঐ পরমকল্যাণবরেষু অ্যালবাম থেকে?" কিংকু চৌধারি বলেন, "মোটেও সেটা দুধ খাবার গান নয় স্যার! আর ... আর ... কীসের নিপলের কথা হচ্ছে এখানে?" ঝাকানাকা বললেন, "ফিডারের নিপল, নয়তো কীসের? নিপল তো ফিডারেরই হয়!" কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আমার ধারণা এই গানটা বড়দের। ইট'স ড়্যাদার ফিশি স্যার! এই গল্পে স্যার এই গানের স্থান হতে পারে না!" ঝাকানাকা বললেন, "গল্পটার রেটিং দেখেছেন? ১৮ বছর বয়স তদুর্ধ্ব!" কিংকু চৌধারি বললেন, "এ কেমন কথা স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "বাদ দিন! ... তা লিওনার্দো সাহেব, তারপর কী হলো?" মন্টু লিওনার্দো হাই তুলে বলে, "হঠাৎ স্যার বাতি চলে গেলো ঠুস করে। হুঁশিয়ার গাধাটা বকবক করছিলো, সে হঠাৎ চুপ করে গেলো। মকবুল পোদ্দার ... নাকি চাকলাদার ... সে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করতে লাগলো মিল্টন টেকনাফির সাথে। এই দু'জন স্যার খুব জ্বালিয়েছে আমাকে, একজন খালি পান খাচ্ছে, আরেকজন বাদাম ... যা-ই হোক। একটু পর বাতি ফিরে আসার পর দেখি হুঁশিয়ার মডেলকুমার বেশ আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে। মকবুল আর মিল্টন তারপর শুরু করলো কী এক বাংলা সিনেমা নিয়ে আলাপ। কিছুক্ষণ পর আবার বাতি চলে গেলো, মিল্টন টেকনাফি বললো, এরপর নাকি সে ট্রেনে হারিকেন নিয়ে উঠবে। একটু পর যখন আবার বাতি ফিরে এলো, তখন দেখি মকবুল সাহেবও হুঁশিয়ারের কাঁধে মাথা রেখে হেভি ঘুম দিয়েছে স্যার। ... আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম, যাক, এবার অন্তত শান্তিমতো ঘুমানো যাবে। কিন্তু এই মিল্টন, এই বদমায়েশটা স্যার গল্প জুড়ে দিলো। বাদামের গল্প। বাদামে নাকি স্যার ক্যালসিয়াম আছে, পটাশিয়াম আছে। আমি উল্টে ওকে গাঁজার গুণাগুণ নিয়ে কিছু তথ্য দিলাম স্যার। বললাম, গাঁজা কত ভালো। মিল্টন তখন স্যার এক ছিলিম টেনে দেখতে চাইলো। তো, দিলাম সাজিয়ে এক ছিলিম। কল্কি নেয়ার সময় সে বলে কী, আমার বাদামগুলো একটু ধরুন দেখি। তো একটা বাদাম কী মনে করে ভেঙে মুখে দিতেই স্যার এমন ঘুম পেলো ... তারপর আর কিছু মনে নেই!" ঝাকানাকা বললেন, "তা, মেঝেতে কিছু পড়ে থাকতে দেখেছিলেন কি?" মন্টু কিছুক্ষণ ভেবে বললো, "বাদামের খোসা স্যার, আর কিছুর কথা তো মনে পড়ছে না!" ঝাকানাকা মিষ্টি করে হাসলেন। বললেন, "বেশ বেশ। তা জনাব লিওনার্দো ... আপনি তাহলে সেপাইয়ের সাথে ফিরে যান, যে ঘরে ছিলেন এতক্ষণ। আপনাকে একটু পর আবার ডাকবো, কেমন?" মন্টু লিওনার্দো মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে পড়ে। কিংকু চৌধারি গোঁ গোঁ করে ওঠেন। "মন্টু ব্যাটা স্যার একটা লম্পট! হেড নার্স ওর নামে কমপ্লেইন করেছে স্যার। সে নাকি জ্ঞান ফিরে পাবার পর কয়েকজন নার্সকে বিরক্ত করেছে নানাভাবে!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! আপনি দেখছি এখনও গানটা নিয়ে বিরক্ত!" কিংকু চৌধারি বললেন, "রুলার দিয়ে এক দফা ডলা দিয়ে দিলে ভালো হয় স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "বাদ দিন। কবি মানুষ। ... এককাপ চা দিতে বলুন। রহস্য মনে হচ্ছে মোটামুটি সমাধান করা গেছে। এখন শুধু কেমিক্যাল আলির ফাইন্যাল রিপোর্টের অপেক্ষা।" কিংকু চৌধারি বলেন, "বলছেন কী স্যার?" ঝাকানাকা বলেন, "হুমমম!" চার পরদিন সকাল। হাসপাতাল নয়, থানায় উপস্থিত হুঁশিয়ার খান, মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দো। কিংকু চৌধারি একটা মজবুত বেত হাতে একপাশে দাঁড়িয়ে। ঝাকানাকা বললেন, "আপনাদের তিনজনই আজ এখানে উপস্থিত। রহস্য মোটামুটি সমাধান হয়েছে। আপনাদের আর কিছু বলার আছে?" হুঁশিয়ার খান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দোর দিকে। মকবুল পান চিবাচ্ছে একটা। মন্টু লিওনার্দো ঘাড় চুলকায় ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে। ঝাকানাকা বলেন, "গুড। জনাব মন্টু লিওনার্দো, মিল্টন টেকনাফিই অজ্ঞান করেছিলো আপনাকে, বাদাম খাইয়ে। মেঝেতে পড়ে থাকা কয়েকটা আস্তবাদামের মধ্যে সাংঘাতিক এক ঘুমের ওষুধের রিপোর্ট এসেছে আজ সকালে।" মন্টু লিওনার্দো বললো, "স্যার, এতে আর রহস্যের কী আছে? আমিই তো আপনাকে বললাম, মিল্টন শালা আমাকে বাদাম খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে গেছে!" ঝাকানাকা বললেন, "কথার মাঝখানে কথা বলবেন না। ... বাদামের খোসায় মিল্টন টেকনাফির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। পুরনোর রেকর্ড থেকে মিলিয়ে দেখা গেছে, সে আর কেউ নয়, বদমায়েশ পাজি হতচ্ছাড়া বদরু খাঁ!" মকবুল মনসবদার বলে, "লোকটার হাবভাব দেখেই স্যার আমার সন্দেহ হয়েছিলো, এই লোক ভদ্রলোক হতে পারে না!" ঝাকানাকা বলেন, "কিন্তু রহস্য হচ্ছে, কেন মিল্টন টেকনাফি, ওরফে বদরু খাঁ আপনাকে অজ্ঞান করলো, জনাব লিওনার্দো? আপনার ঝোলা, মোবাইল, মানিব্যাগ, সবই তো কামরার মেঝেতে পাওয়া গেছে! এমনকি টাকাপয়সাও অক্ষত অবস্থায় আছে, কেউ মেরে দেয়নি! আপনি কি বলতে পারেন?" মন্টু লিওনার্দো আমতা আমতা করে বলে, "আমি কিভাবে বলবো স্যার? হয়তো তাড়াহুড়ো করে ভেগেছে!" ঝাকানাকা ক্রুর হেসে বললেন, "বটে? তা জনাব লিওনার্দো, আপনার স্কার্ফখানা কোথায়?" মন্টু লিওনার্দোর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে বলে, "স্কার্ফ? কোন স্কার্ফ?" ঝাকানাকা বলেন, "আপনার গলায় জড়ানো স্কার্ফ। যেটির কথা হুঁশিয়ার খান আর মকবুল মনসবদার, দু'জনেই আমাকে জানিয়েছে। রেলের কামরায় কোন স্কার্ফ পাওয়া যায়নি। আপনার গলায়ও কোন স্কার্ফ দেখতে পাইনি হাসপাতালে। স্কার্ফটা কোথায় গেলো?" মন্টু বলে, "স্কার্ফটা মনে হয় এই মিল্টন খাঁ মেরে দিয়েছে স্যার ... বান্দরবান থেকে কেনা আমার শখের স্কার্ফ ...!" ঝাকানাকা হাসেন। "ঠা ঠা ঠা ঠা ঠা! বটে? আপনার মোবাইল, আপনার মানিব্যাগ, এসব ফেলে সে নিয়ে গেলো আপনার স্কার্ফ? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা?" মন্টু বলে, "তাহলে মনে হয় স্যার পরে এটা কোনভাবে খোয়া গেছে!" ঝাকানাকা বলেন, "খোয়া যায়নি জনাব লিওনার্দো। ওটা আপনি নিজেই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন, প্রমাণ হাপিস করার জন্য। কারণ ঐ স্কার্ফে ক্লোরোফর্ম ঢেলেই আপনি জনাব মকবুলের নাকে মুখে ঠেসে ধরে অজ্ঞান করেছিলেন!" মকবুল মনসবদার চমকে উঠে মন্টু লিওনার্দোর দিকে ফেরেন! "বটে?" গর্জে ওঠেন তিনি। "মিল্টন নয়, এই ব্যাটা লিওনার্দোই আমাকে বেহুঁশ করে চারটা দিন নষ্ট করলো? আমার ব্যবসা ...!" ঝাকানাকা গর্জে ওঠেন। "চোপ! কোন কথা নয়! ... আপনি বলুন, জনাব মনসবদার, আপনার টুপিটা কোথায়?" মকবুল মনসবদারের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, তিনি বলেন, "টুপি? আমার আবার কীসের টুপি?" ঝাকানাকা ভুরু নাচিয়ে হাসেন। "যে টুপির কথা হুঁশিয়ার খান আমাকে জানিয়েছে! আপনার মাথায় টুপি ছিলো! কিন্তু রেলের কামরায় সেটা মেলেনি, হাসপাতালেও আপনার মাথায় টুপি দেখেনি কেউ! টুপিটা কোথায় মকবুল?" মকবুল মনসবদার হাউমাউ করে ওঠেন, "জানি না স্যার, এই মন্টু সেটা কোথায় গাপ করেছে, আমি কিভাবে বলবো?" ঝাকানাকা বললেন, "মন্টু সেটা গাপ করেনি। টুপিটা আপনি নিজেই জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, প্রমাণ গায়েব করার জন্য! কারণ ওতেই ক্লোরোফর্ম ঢেলে হুঁশিয়ার খানের মুখে ঠেসে ধরেছিলেন আপনি!" মকবুল মনসবদার চেয়ারে এলিয়ে পড়েন একদম, আর হুঁশিয়ার খান লাফিয়ে ওঠে, "ব্যাটা উল্লুক, আজ যদি তোকে পেঁদিয়ে ...!" "চোপরাও!" গর্জে ওঠেন ঝাকানাকা। "কথা শেষ হয়নি আমার। ... মকবুল মনসবদার, আপনার দাড়ি কই?" মকবুল মনসবদার ফ্যাকাসে মুখে বললেন, "কীসের দাড়ি?" ঝাকানাকা বললেন, "অজ্ঞান হয়ে দু'দিন পড়েছিলেন হাসপাতালে। হুঁশিয়ার খানের মুখে দাড়ি গজিয়েছে একগাদা, আর মন্টুর মুখে তো দাড়ি আছেই। আপনার মুখে দাড়ি নেই কেন?" মকবুল মনসবদার আমতা আমতা করে বললেন, "হাতের পাঁচ আঙুল কি সমান স্যার? সবার মুখে কি আর দাড়ি গজায় এতো জলদি?" ঝাকানাকা ক্রুর হেসে বললেন, "তা ঠিক। সবার মুখে এতো জলদি দাড়ি গজায় না। মেয়েদের মুখে তো আরও গজায় না!" কিংকু চৌধারি বললেন, "মেয়ে? কী বলছেন স্যার? মকবুল মনসবদার মেয়ে?" ঝাকানাকা বললেন, "শুধু মেয়েই নয়, রীতিমতো প্রেগন্যান্ট মহিলা! কেমিক্যাল আলির টেস্টে এবারও প্রেগন্যান্সি পজিটিভ এসেছে!" কিংকু চৌধারি আর মন্টু লিওনার্দো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মকবুল মনসবদারের দিকে, আর হুঁশিয়ার খান মুঠো পাকায়, "বেটি উল্লুক, পেঁদিয়ে তোর ছাল যদি না ছাড়াই ...!" ঝাকানাকা বললেন, "খবরদার হুঁশিয়ার, গর্ভবতী মহিলার গায়ে হাত তুললে তোমার হাত ভেঙে দেয়া হবে! আর মকবুল মনসবদার ... নাকি ইসমৎ জঙ্গ বেহুঁশিয়াই বলবো? তোমার মোবাইলে যেসব খাইষ্টা খাইষ্টা এসএমএস এসে জমা হয়েছে গত তিনদিনে, সেগুলোই তোমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে! গতরাতে তোমার মোবাইল ঘাঁটতে গিয়ে দেখি বাহান্নটা এসএমএস জমা হয়েছে! মোট একুশ জন এসএমএস পাঠিয়েছে, তার মধ্যে বারোজন নিশ্চিত যে বাচ্চাটা আসলে তার! তুমি শুধু অজ্ঞান পার্টির চাঁই-ই নও, বেশ দুষ্টু মহিলাও বটে!" মকবুল মনসবদার দু'হাতে মুখ ঢাকে, মন্টু লিওনার্দো মনোযোগ দিয়ে তাকে এপাশ ওপাশ থেকে দেখে। "আর মন্টু লিওনার্দো, ওরফে শ্রীচৈতন্য!" হাঁক দেন ঝাকানাকা। "তুমিও ধরা পড়েছো একেবারে হাতে নাতে। গাঁজার কল্কিতে আর দুধের বোতল তোমার হাতের ছাপ মিলে গেছে আগের নমুনার সাথে!" কিংকু চৌধারি দাঁত কিড়মিড় করলেন, "বটে?" ঝাকানাকা বললেন, "হ্যাঁ! হুঁশিয়ার খানের কাছে যে ডলারের প্লেট আছে, এ খবর জানাজানি হয়ে যায় কোনভাবে। ইসমৎ জঙ্গ বেহুঁশিয়া আর শ্রীচৈতন্য, দু'জনেই ছদ্মবেশে অনুসরণ করে তাকে। রেলের কামরায় সেদিন আলো চলে যায়নি, সীটের হাতলে একটা সুইচ থাকে, সেটা টিপে বন্ধ করে দেয়া যায়। কথাবার্তার এক ফাঁকে আলো নিবিয়ে টুপিতে ক্লোরোফর্ম ঢেলে হুঁশিয়ার খানকে বেহুঁশ করে ইসমৎ। তারপর তার পকেট থেকে প্লেটদু'টো বার করে নিয়ে নিজের পকেটে পোরে। তারপর ক্লোরোফর্মের বোতল আর টুপিটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। কিন্তু ইসমৎ জানে না যে মন্টু লিওনার্দো ওরফে শ্রীচৈতন্যও একই মতলবে ছিলো, ক্লোরোফর্মের গন্ধে পেয়ে সে ঠিকই আঁচ করে ফেলে কী হচ্ছে। আলো ফিরে আসার পর সে দেখে হুঁশিয়ার খান বেহুঁশ। মন্টুর পাশে বসা মিল্টন ওরফে বদরু, সে যে এ কাজ করেনি, তা মন্টু টের পায়। কাজেই একটু পর সে নিজে আলো নিবিয়ে স্কার্ফে ক্লোরোফর্ম ঢেলে চেপে ধরে মকবুল ওরফে ইসমৎ জঙ্গের নাকে। তারপর প্লেট দু'টো হাতড়ে বার করে নিয়ে নিজের পকেটে পোরে, ক্লোরোফর্মের বোতল আর স্কার্ফটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় জানালার বাইরে। কিন্তু শ্রীচৈতন্য জানে না যা খোদ বদরু খাঁ তার ডলারের প্লেট উদ্ধার করার জন্য মিল্টন টেকনাফি সেজে এসে বসে আছে। আর বাদামও সন্দেহ করেনি মন্টু, কারণ বাদামগুলো বদরু খাঁ নিজেই চিবিয়ে খাচ্ছে একের পর এক। তাই নিশ্চিন্ত মনে একটা হাত সাফাই করা বাদাম মুখ দিতেই শ্রীচৈতন্য একেবারে অচৈতন্য হয়ে পড়ে! বদরু খাঁ প্লেট দু'টো নিজের পকেটে পোরে, তারপর একে একে বাকিদের পকেট সার্চ করে, ওরকম দামী কিছু না পেয়ে জিনিসগুলো হাঁটকে মাটকে মেঝেতে ফেলে যায়। যাবার সময় শুধু মশকরা করার জন্য হুঁশিয়ার খানের মোবাইলের সিম কার্ড খুলে নিয়ে যায়!" কিংকু চৌধারি বলেন, "কিন্তু ... তাহলে বাকি জিনিসগুলিতে বদরু খাঁ-র হাতের ছাপ পাওয়া গেলো না কেন স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "ওগুলো ধরার আগে সে নিশ্চয়ই দস্তানা এঁটে নিয়েছিলো! শুধু সন্দেহ জাগাতে চায়নি বলে একমাত্র বাদামের খোসাতেই তার হাতের ছাপ আছে।" কিংকু চৌধারি বিগলিত হয়ে বলেন, "স্যার, আপনি বদরুকে সন্দেহ করলেন কখন?" ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বললেন, "শুরু থেকেই! তার ডলারের প্লেট পুলিশের কাছ থেকে ওভাবে লুট করা তো তাকেই মানায়, নাকি? এই ইসমৎ জঙ্গ আর শ্রীচৈতন্য হচ্ছে পরিস্থিতির শিকার মাত্র! বদরু খাঁর কাছে তো এরা সেদিনের শিশু!" হুঁশিয়ার খান একটা কিছু বলতে যাবে, ঝাকানাকা তাকে সোজা দরজা দেখিয়ে দেন। "যাও, বেরোও! ব্যাটা অপদার্থ, কাজের সময় ঢুঁঢুঁ, এখন আবার কথা বলে!" হুঁশিয়ার খান মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। সেপাই এসে মকবুল আর মন্টুকে লকাপে পোরে। কিংকু চৌধারি বিষণ্ন গলায় বলেন, "কিন্তু ডলারের প্লেট দু'টো তো স্যার আর ফেরত পাওয়া যাবে না!" ঝাকানাকা হাসিমুখে নিচু গলায় বললেন, "ওগুলো ফেরত না পেলেও সমস্যা নেই। ওগুলো আসল নকল প্লেট নয়!" কিংকু চৌধারি চমকে ওঠেন, "এ কী বলছেন স্যার? ওগুলো নকল নকল প্লেট? আসল নকল প্লেট তবে কোথায়?" ঝাকানাকা বললেন, "আসল নকল প্লেট তৎক্ষণাৎ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। বদরু খাঁকে ফাঁদে ফেলার জন্যে এক জোড়া নকল প্লেট পাঠানো হয়েছিলো হুঁশিয়ার খানের কাছে, সুপার সাহেবকে এই পরার্শ আমিই দিয়েছিলাম। বদরুর কাছে এখন যে প্লেট আছে, তাতে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের বদলে ইদি আমীনের ছবি আছে!" কিংকু চৌধারি হেসে ওঠেন, "মুহাহাহাহাহাহা! দারুণ হয়েছে স্যার! বদরু সময়মতো আচ্ছা ধরা খাবে! ... এখন আপনি যদি আপত্তি না করেন স্যার, আমি ঔ মন্টু লিওনার্দো ওরফে শ্রীচৈতন্যের পাছায় কয়েক ঘা বেত লাগাতে চাই। বহুত ভুগিয়েছে দু'জনে! মহিলাকে তো আর পেটানো যাবে না, মন্টুকেই একটু রগড়ে দিই!" ঝাকানাকা উদাস গলায় বলেন, "দিন, আমার কী?" কিংকু চৌধারি হাঁক পাড়েন, "অ্যাই কে আছিস, ঐ টিঙটিঙেটাকে নিয়ায় দেখি! ওর দুধ খাওয়ার ব্যামো সারিয়ে দিচ্ছি!" ঝাকানাকা চেয়ারে হেলান দিয়ে গুনগুনিয়ে গান ধরেন চায়ের কাপ হাতে। "তুউউউউই মার খা ... ইচ্ছেমতোওওও পুলিশকে খুশি করে বাঁচ! ঝাকানাকা তখন অন্য কোথাও চায়ের কাপেএএএএ নিজের সাম্রাজ্য নিজে গড়ুউউউক ...!" দ্রষ্টব্য ১ এ নিয়েও গল্প আসবে সামনে। রয়েসয়ে। . . . গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too (সমাপ্ত) [/justify]
false
ij
আনন্দশঙ্কর_ তাঁর সঙ্গীতের জগৎ যে ক’জন বাঙালি কম্পোজার এ জগতে সুরের মায়া ছড়িয়েছেন আনন্দশঙ্কর তাদের মধ্যে অন্যতম। বাঙালি কম্পোজার হিসেবে তাঁর খ্যাতিই বিশ্বে সর্বাধিক। ফিউশন মিউজিকের গুরু হিসেবে আজও আনন্দশঙ্করকে গন্য করা হয়। ১৯৪২ সালের ১১ ডিসেম্বর। ভারতের উত্তর প্রদেশের আলমোরায় আনন্দশঙ্করের জন্ম। বাবা প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর; আমরা জানি, উদয়শঙ্কর ভারতীয় নৃত্যকে পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন । মা অমলা শঙ্কর। বোন মমতা শঙ্কর প্রখ্যাত অভিনেত্রী। স্ত্রী তনুশ্রী শঙ্কর প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী। আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ এই যে- শঙ্কর পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল বাংলাদেশের যশোর জেলায়। প্রখ্যাত সেতারবাদক রবিশঙ্কর এই শঙ্কর পরিবারেরই অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। মজার কথা হল, সম্পর্কে জ্যাঠামশাই হলেও আনন্দ কিন্তু রবীশঙ্কশরের কাছে সেতারে হাতেখড়ি হয়নি; আনন্দর সেতারে হাতেখড়ি হয়েছিল বারানাসীর প্রখ্যাত সেতারবাদক ড. লালমনি মিশ্রের কাছে। যা হোক। ষাটের দশকের শেষে আনন্দ পৌঁছলেন লস এ্যাঞ্জেলেস । গুণী শিল্পী ছিলেন, ওখানে অনেকেরই দৃষ্টি কারেন; ওখানে অনেকের সঙ্গেই “জ্যাম” করেন; মানে একসঙ্গে বাজান। যেমন, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট গিটারিস্ট জিমি হেনড্রিক্স। আনন্দর জনপ্রিয় হওয়ার বিশেষ কারণ ছিল। সেই সময়টায় সেতারকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন রবীশঙ্কর। কাজেই সেতার নিয়ে এক ধরনের উন্মাদনা ছিল মার্কিন মুলুকে। ভারতীয় সঙ্গীত-দর্শন নিয়ে বোদ্ধা মহলে আগ্রহ বাড়ছিল। বিট জেনারেশনের কবি জ্যাক ক্যারুয়াক ততদিনে ঘোষনা করে ফেলেছেন যে- ভারতবর্ষই হল জগতের হৃদয়। কবি গ্যারি স্নাইডার প্রমূখ ঝুঁকছিলেন বৌদ্ধধর্মের ওপর। মাছমাংস ছেড়ে নিরামিষ খাচ্ছেন, ধ্যান করছেন। রবীশঙ্করের সেতার শুনছেন। কাজেই সেতার বাজিয়ে হিসেবে আনন্দর নাম ক্রমেই ছড়াচ্ছিল। আর আনন্দের কী হাত। Jumpin' Jack Flash শুনলেই টের পাওয়া যায়। যা হোক। ১৯৭০ এ প্রথম রেকর্ড বার করলেন আনন্দ। The Rolling Stones' Jumpin' Jack Flash and The Doors' Light My Fire. রাতারাতি বিশ্বময় শ্রোতাদের প্রিয় হয়ে উঠলে। বলা হল: আনন্দশঙ্কর ফিউশন মিউজিকের গুরু। বলা হল আনন্দর মিউজিক কাল্ট ক্লাসিক। ১৯৭৫ সালে কোলকাতায় ফিরে এলেন আনন্দ। বিয়ে করলেন। বার করলেন তুমুল জনপ্রিয় অ্যালবাম "আনন্দশঙ্কর অ্যান্ড হিজ মিউজিক"। সারা ভারত এক নবতর যন্ত্রসঙ্গীতের মূর্চ্ছনায় মুগ্ধ হয়ে গেল। বাংলাদেশেও সেই ঢেউ ছড়িয়েছিল তখন; ঢাকায় তখন এমন একটিও অভিজাত পরিবার খুঁজে পাওয়া যেত কি না সন্দেহ যাদের সংগ্রহে আনন্দশঙ্করের এল পি অর্থাৎ লং প্লে রেকর্ড ছিল না। এক কথায় আনন্দশঙ্করের মিউজিক পারফেক্ট ফিউশন মিউজিক। আমৃত্যু সঙ্গীত সাধনায় ডুবে ছিলেন ডুবেছিলেন। একদিন থেমে গেল সব সুর। ২৬ মার্চ; ১৯৯৯। বিশ্বের মুগ্ধ শ্রোতাদের বিষন্ন করে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন আনন্দশঙ্কর। নৃত্যরত ময়ূর Click This Link অন্যান্য লিঙ্ক http://www.last.fm/music/Ananda+Shankar http://www.rhapsody.com/anandashankar সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৪০
false
rg
।। আমার হাইস্কুল।। পর্ব-৩।। আমাদের দীঘিরজান হাইস্কুলের জমিতেই দীঘিরজান বাজার। বাজার থেকে স্কুলের একটা বাৎসরিক আয় হয়। আমাদের হেডস্যার বাবু মনীন্দ্রনাথ মজুমদার ও অনন্ত কুমার মজুমদার স্যারের পূর্ব পুরুষরা এই স্কুলের জন্য জমি দান করেছিলেন। সেই হিসেবে আমাদের স্কুলের প্রায় সকল কিছুতেই হেডস্যার আর অনন্ত স্যারের একটু বেশি মায়া। স্কুলকে স্যাররা নিজের সন্তান মনে করতেন। শনিবার আর মঙ্গলবার বসতো দীঘিরজানের হাট। এখনো বসে সপ্তাহে দুই দিন। সেই হাটের দিনে বাজার থেকে যে খাজনা ওঠে, তার একটা অংশ বছর শেষে স্কুল ফান্ডে জমা হয়। যা দিয়ে স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজ হয়। আমরা যখন পড়তাম তখন সায়েন্স বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু হল। আমরা যখন ক্লাশ নাইনে উঠলাম, তখন আমরা সেই সায়েন্স বিল্ডিংয়ে সায়েন্সের সকল ক্লাশ করতাম। প্রাকটিক্যাল করতাম। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের এই স্কুল কিন্তু বেশ পুরাতন। ১৯২১ সালের জুলাই মাসে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা, আমাদের স্কুল তারও চার মাসে সূচনা করেছিল। গোটা পিরোজপুর মহাকুমায় আমাদের স্কুল পুরাতন স্কুলের একটি। নাজিরপুর থানায় তো আমাদের স্কুল সবচেয়ে পুরাতন। ২০২১ সালে আমার স্কুল শতবর্ষে পদার্পন করবে। তখন একটা জাঁকজমক অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে আমার আছে। অনন্ত স্যারের বয়স এখন ৯৬ বছর। হেডস্যারে প্রায় ৮৫ বছর। আমার স্যারদের সবাই রিটায়ার্ড করেছেন। কিন্তু এই স্কুলের জন্য তাঁদের মায়া এখনো ঠিক আগের মতো অটুট। আমরা যে বছর এসএসসি পরীক্ষা দেই সে বছর রেজাল্টে আমাদের স্কুল নতুন রেকর্ড করেছিল। পরে সেই ভেঙেছে কিনা আমার জানা নেই। তখন ২ টা স্টার, ১২ টা ফার্স্ট ডিভিশান, ৬৬ টা সেকেন্ড ডিভিশান আর ৮ টা থার্ড ডিভিশান পেয়েছিল। পাসের হার শতকরা ১০০ ভাগ। আমরা তখন ৮৮ জন পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমাদের স্কুলে দশম শ্রেণী'র টেস্ট পরীক্ষায় কেউ ফেল করলে সে বোর্ডের পরীক্ষা দেবার জন্য আনফিট ছিল। হেডস্যার এটা খুব শক্তভাবে মনিটর করতেন। কখনো কখনো সন্দেহ হলে দুইবার খাতা দেখাতেন হেডস্যার। আর আমাদের বাংলা খাতা প্রথমে নির্মল স্যার দেখলেও পরে হেডস্যার আবার দেখতেন। তখন হিসেব টা ছিল এমন। যদি কেউ হেডস্যারের দেখা বাংলায় ৪০ মার্ক পায়, সে বোর্ডের ফাইনালে একই রকম ভালো পরীক্ষা দিলে নিশ্চিত ৬০ পাবে। হেডস্যার যাদের ২৫ দিতেন তারা মিনিমাম ৪০ পাবার যোগ্য। নির্মল স্যারের কাছে টেস্টে আমি বাংলায় পেয়েছিলাম প্রথম পত্রে ৭৭ আর দ্বিতীয় পত্রে ৮৪। হেডস্যার যখন দেখলেন তখন প্রথম পত্রে পেলাম সাড়ে ৫৮ আর দ্বিতীয় পত্রে ৬৩। আর এসএসসি'র ফাইনালে প্রথম পত্রে পেলাম ৭৬ আর দ্বিতীয় পত্রে পেলাম ৮৩। ১ নম্বরের জন্য আমি দুটো লেটার পাইনি। বাংলায় হেডস্যার যাদের ২৫ এর উপরে দিতেন তারা হেডস্যারের বিশেষ বিবেচনায় ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারতো। অবশ্য সেই খাতাগুলো স্যার বার বার দেখতেন। তখন সিদ্ধান্ত নিতেন কে কে পরীক্ষা দিতে পারবে। এরপরেই শুরু হতো আমাদের নিবিঢ় ক্লাশ। সেই ক্লাশ শুধু পরীক্ষার্থদের জন্য। কে কি ভুল করেছি, সেই ভুল কিভাবে ঠিক হবে, তা আমাদের টেস্ট খাতা দেখিয়ে ক্লাশে আলোচনা করা হতো। আমার ধারণা, দশম শ্রেণীর সেই টেস্ট পরবর্তী তিন মাসের বিশেষ ক্লাশগুলো'র কারণেই আমাদের স্কুল সব সময় ভালো রেজাল্ট করতো। আমাদের স্কুলের আরেকটা নিয়ম ছিল খুব সুন্দর। ছাত্রছাত্রীরা কি করছে তা প্রতি শনিবার আর মঙ্গলবার গার্ডিয়ানদের অবহিত করতেন হেডস্যার। যারা হাটের দিন সময় করতে পারতেন না তারা শুক্রবার ছুটির দিনে স্যারের বাড়িতে যেতেন। হেডস্যার যা পরামর্শ দিতেন গার্ডিয়ানরা তাই মেনে নিতেন। অর্থ্যাৎ আমাদের স্কুলের সাথে আমাদের সবার গার্ডিয়ানদের একটা সুসম্পর্ক সব সময়ই ছিল। কেউ দেখা করতে না আসলে নারায়ন দা'কে হেডস্যার চিঠি লিখে তার বাড়িতে পাঠাতেন। তখন অনেককে হাতের কাজ ফেলে হেডস্যারের সঙ্গে দেখা করা লাগতো। অর্থ্যাৎ স্কুলের এ টু জেড সবাই হেডস্যারের কড়া নজরের মধ্যে ছিল। সেই সুযোগে হেডস্যারের জঙ্গলে যখন যে ফল হতো, আম-জাম-লিচু-পেঁপে-আনারস-কাঁঠাল-জামরুল (আমরা বলতাম লকোট) সব আমাদের দুষ্টু ছেলেদের পেতে যেতো। এ নিয়ে হেডস্যার অবশ্য তেমন মাথা ঘামাতেন না। সময়ও পেতেন না। হেডস্যারের বাবাকে আমরা ডাকতাম দাদু। দাদু'র বয়স তখন ১১৭ বছর। কিন্তু দিব্যি হালচাষ করতেন। হেডস্যার আর হেডস্যারের দুই ছেলে বাপী আর জয় ছিল দাদু'র হেলপার। স্কুলের দক্ষিণ পাশেই হেডস্যারদের জমি। সেখানে মরিচ, আলু, ধনিয়া, কফি, মূলা, লালশাক ইত্যাদি আবাদ করতেন দাদু। কখনো কখনো হেডস্যার ক্লাশের ফাঁকে দেখতাম দাদুকে সহযোগিতা করছেন। দাদু'র একজন পার্মানেন্ট হেলপার অবশ্য ছিল। জগদিশ। আমরা ডাকতাম জগাই। দাদু'র কাজকর্ম দেখে অনেকে হেডস্যারকে ভুল বুঝতো। আর হেডস্যার বলতেন, বাবা কাজ না করলে বাঁচবে না। তো সে বছর স্বৈর শাসক এরশাদ একটা হ্যা না ভোটের আয়োজন করলো। প্রাইমারি স্কুলগুলো হল ভোটকেন্দ্র। দাদু তো দুপুর পর্যন্ত নিজের মাঠে আবাদ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তারপর বাড়িতে গিয়ে গা গোছল দিয়ে একটু খেয়ে উত্তর বানিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসলেন দাদু। সেদিন আমাদের স্কুল ছিল বন্ধ। আমরা ওই স্কুলের পাশেই একটা দোকানের সামনে বসে দাবা খেলছিলুম। তো প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার সেকেন্দার মিঞা আমাদের কাছে আসলেন। আমার দূর সম্পর্কের মামা হন তিনি। বললেন, তোমাদের দাবা'র এই দান শেষ হলে স্কুলে এসে কিছু ভোট দিয়ে যাও। সেই প্রথম ভোটার না হয়েও ভোট দেবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেকেন্দার মাস্টার আমাদের বুঝিয়ে দিলেন, দশটা মারবা হ্যা সিল আর একটা মারবা না'তে। আমরা চার-পাঁচ জন দাবারু ও দাবা খেলা দেখতে থাকা লিলিপুট কেউ কেউ সেকেন্দার মাস্টারের অনুরোধ ফলো করলাম। আর খুব মজা পেলাম যে ভোট দিতে পারছি। আমি সিল মারি আর এক লিলিপুট ভাঁজ করে। আমরা ঘণ্টা খানেক এই কাজে বেগার দিলাম। ওই সময় আমাদের হেডস্যারের বাবা, মানে আমাদের সবার খুব প্রিয় দাদু ভোটকেন্দ্র । ভোট দিতে আসলেন। সেকেন্ড মাস্টার হল হাসান। তার বাড়ি ভাইজোড়া। মরা বলেশ্বরের ওপারে। তিনি হেডস্যারের বাবাকে ভালো করে খেয়াল করেন নি। দাদু ভাই ভোট দিতে চাইলেন। হাসান মাস্টার হাতের লিস্ট দেখে বললেন, আপনার ভোট তো দেওয়া হয়ে গেছে। আপনি বাড়ি চলে যান। ভোটকেন্দ্র তখন একদম ফাঁকা। আসলে সারা দিনই ফাঁকা ছিল। দাদু'র মতো অতি উৎসাহী দু'একজন বুড়ো রেডিও'র খবর শুনে ভোট দিতে এসেছিলেন। তারা সকালেই ভোট দিয়েছেন। দাদু কাজ শেষে পরন্ত বেলায় আসলেন। শুনলেন তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে! পরন্ত বেলায় ভোটকেন্দ্রে তখন কয়েকজন বেকার পুলিশ, কয়েকজন আনসার, আমরা কয়েক ছোকরা, কয়েকজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আর একমাত্র আগন্তুক ভোটার হেডস্যারের বাবা আমাদের দাদুভাই। হাসান মাস্টার যখনই বললেন, আপনার ভোট তে দেওয়া হয়ে গেছে। অমনি দাদুভাই চিৎকার করে উঠলেন। মুই মনীন্দ্র'র বাপ। মুই আইলাম না। সারা দিন কাম করছি। মোর ভোট ক্যাডা দেবে? মোরে চেনো না? দাদুভাই'র চিৎকারে পাশের রুম থেকে সেকেন্দার মাস্টার দৌড়ে আসলেন। কি হয়েছে দাদু? সেকেন্দার, মোর ভোট নাকি কোন হালার পো দিয়া গ্যাছে? তুমি থাকতে মোর ভোট কেমনে দিলো? মোরে তুমি চেনো না? মোর ভোট জাল হয় কি করে? সেকেন্দার মাস্টার দাদুকে আরেকটা ব্যালট পেপার দিয়ে ভোট দেবার চেষ্টা করেছিলেন। দাদুভাই তা প্রত্যখ্যান করে ভোটের লিস্ট দেখতে চাইলেন। ভোটার লিস্টে দাদুভাই'র নামের পাশে কালো কালী'র দাগ। মানে ভোট কেউ দিয়েছে। তারপর দাদুভাই গালাগালি করতে করতে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন। সেকন্দার মাস্টার দাদু'র পেছন পেছন গেল। আর অন্য মাস্টাররা আমাদের নিয়ে ভোট বাক্স ঢেলে ভোট গণণা শুরু করলো। মোট কাস্টিং ভোট ১৭৬৪। এর মধ্যে হ্যা ভোট পেয়েছিল ১৫৯১ টা। ১৬২ টা না ভোট। আর ১১ টা পচা ভোট। মানে নষ্ট হয়েছে। সিল ঠিক মতো পড়েনি। আমার ধারণা, সারা দেশে সে বছর ওভাবেই হ্যা-না ভোট হয়েছিল। কিন্তু দাদু যে ভোট দিতে পারেন নি, সেই দুঃখে সেদিন প্রথম আমরা দাদুকে গালাগাল করতে দেখেছিলুম। ....................চলবে.......................... পর্ব ১ ও ২ এই লিংকে Click This Link Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৩৮
false
hm
সুখের রূপকথা সত্তরের কোঠায় পা দিয়েও বেশ টনকোই আছে বুড়োটা, আমার মুখোমুখি বসে, এই ধোঁয়ায় ঢাকা পানশালায়। তার চুলগুলোতে যেন তুষার জমেছে, আর চোখগুলো ঝকঝক করছে বরফ ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করা পথের মতো। 'ওহ, লোকগুলো আহাম্মক বটে!' বললো সে মাথা ঝাঁকিয়ে, আর আমার মনে হলো, এই বুঝি তার চুল থেকে তুষারকণা ঝরে পড়বে। 'সুখ তো কোন যাদুসসেজ নয়, যে রোজ ওর থেকে লোকে এক এক টুকরো কেটে নেবে!' 'ঠিক!' বলি আমি। 'সুখ অত সস্তা মাল না। যদিও .. ..।' 'যদিও?' '.. .. যদিও এখন আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, ঘরে আগুনের ওপর আপনার কয়েক চিলতে সুখ শুকোতে দেয়া আছে?' 'আমার কথা আলাদা,' বললো বুড়ো, আর এক ঢোঁক গিলেও নিলো, 'আমি আলাদাই। আমি হচ্ছি সেই লোক, যার একটা ইচ্ছে এখনও পূরণের জন্যে পড়ে আছে!' আমার মুখটা আগে খুঁটিয়ে দেখে নিলো বুড়ো। 'অনেক আগের কথা,' নিজের দু'হাতে মাথাটাকে সঁপে দিয়ে শুরু করলো সে, 'অনেক আগের। চল্লিশ বছর। তখন আরো চ্যাংড়া ছিলাম, আর ভুগছিলাম জীবনটাকে নিয়ে, যেভাবে লোকে ফোলা গাল নিয়ে ভোগে। বসে ছিলাম সেদিন, এক দুপুরে, তিতিবিরক্ত হয়ে একটা পার্কের বেঞ্চে বসে ছিলাম, এমন সময় পাশে বসে থাকা বুড়োটা বললো, যেন ওর সাথে আমার অনেকক্ষণের আলাপ, তা বেশ তো, আমরাও ব্যাপারটা ভেবে দেখেছি। তোর তিনটে ইচ্ছে পূরণ করা হবে। আমি আমার খবরের কাগজের দিকেই চেয়ে রইলাম, যেন কিছুই শুনিনি। কিন্তু বুড়োটা বকে চললো, ভেবে নে, কী চাই তোর। সবচে' সুন্দরী মেয়েটা, নাকি সবচে' বেশি টাকা, নাকি সবচে' বড় গোঁপ .. .. যা তোর খুশি। কিন্তু শেষতক খুশি হওয়া চাই, বুঝলি? তোর এই ভাল্লাগেনা-ভাব আমাদের আর ভাল্লাগে না। বুড়োটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো, সাদা পোশাকে সান্তা ক্লজ বুঝি। একমুখ সাদা দাড়ি, আপেলের মতো টুকটুকে দু'টো গাল, শিমুলতুলোর মতো ভুরু। পাগলছাগল নয়। বোধহয় বেশ খানিকটা খোশমেজাজি। ব্যাটাকে আগাপাস্তলা খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে আমি আবারও আমার কাগজে মন দিলাম। বুড়োটা বললো, তোর তিনটে খায়েশ নিয়ে তুই কী করবি, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তবে যদি এ ব্যাপারে আগে থেকে একটু ভেবে রাখিস, তাহলেও কোন ভুল হবে না। দেখিস, তিনটে ইচ্ছে কিন্তু চারটা বা পাঁচটা নয়, ঠিক তিনটে। আর এর পরও যদি তুই অমন ব্যাজার হয়ে থাকিস আর হিংসুটেপনা করিস, তাহলে কিন্তু আমরা তোকে আর সাহায্য করতে পারবো না বাপ। আমি জানি না, আপনি নিজেকে আমার জায়গায় কল্পনা করতে পারছেন কি না। ভাবুন একবার, আমি একটা বেঞ্চে বসে, এই দুনিয়া আর খোদাতালার ওপর চরম বিরক্ত .. .. দূরে ট্রাম যাচ্ছে টিং টিং করে, প্যারেডের পোলাপান হাত পা ছুঁড়ছে আর ট্রাম্পেট ফুঁকছে, আর আমার পাশে বসে বাকোয়াজ করে যাচ্ছে কেবল ঐ ব্যাটা হতচ্ছাড়া!' 'আপনি চটে গেলেন খুব?' বলি আমি। 'চটলাম। আমার মনে হচ্ছিলো, আমি একটা ফাটো ফাটো বয়লার। আর যখন বুড়োটা তার অমন তুলোটে দাদু দাদু মুখটা খুললো, নতুন কিছু বকবার জন্যে, আমি গর্জে উঠলাম, রীতিমতো কাঁপছিলাম রাগে, বেশ তবে, আমি আমার একমাত্র ইচ্ছা, আমার অন্তরের অন্তস্থলের ইচ্ছাটি মুখে বলছি, যাতে করে আপনি, ব্যাটা বুড়ো গাধা, আমাকে আর তুইতোকারি করতে না পারেন .. .. আপনি জাহান্নামে যান! জানি, ওভাবে বলাটা ভদ্র বা মার্জিত নয়, কিন্তু আমি একেবারেই নিরুপায় ছিলাম, ওভাবে না বললে আমি ঠিক রাগে কাবু হয়ে পড়তাম।' 'তারপর?' 'কী তারপর?' 'সে চলে গেলো?' 'ওহ্! .. .. গেলো তো বটেই! উধাও হয়ে গেলো যেন। তখনই। বাতাসে মিলিয়ে গেলো যেন। আমি এমনকি বেঞ্চের নিচেও উঁকি মেরে দেখলাম। সেখানেও ছিলো না ব্যাটা। আর আমি ভ্ভীষণ ভয় পেলাম। এই ইচ্ছে পূরণের ব্যাপারটা তাহলে সত্যি! আর প্রথম ইচ্ছেটা পূরণ করা হয়ে গেছে! বাপ রে! আর যদি সত্যিই ইচ্ছেটা পূরণ করা হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই সেই শান্ত, শিষ্ট, ভদ্র দাদুটা, যার দাদুই হওয়ার কথা, এখন কেবল চলেই যায়নি, কেবল আমার বেঞ্চ থেকেই উধাও হয়ে যায়নি, গেছে তো গেছে, একেবারে জাহান্নামে! খোদ শয়তানের কাছে! আমি নিজেকে বোঝালাম, গাধামি করো না। জাহান্নাম বলে কিছু নেই, আর শয়তান বলেও নেই অমন কিছু। কিন্তু, এই তিনটে ইচ্ছে কি তবে পূরণের জন্যে রয়েছে? আর, সেই বুড়োটা তো উবে গেছে, যদিও ওভাবে যাক, তেমনটা আমি চাই নি .. .. আমার কালঘাম ছুটে গেলো। হাঁটু কাঁপতে লাগলো আমার ঠকঠকিয়ে। কী করা উচিত আমার? সেই বুড়োটাকে এখুনি আবার এখানে ফিরতে হবে, চাই জাহান্নাম থাকুক আর না থাকুক। আমারই দোষে সে এখন উধাও। এখন আমাকে আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে কাজে লাগাতে হবে, তিনটের মধ্যে দু' নম্বরটা, হায় রে, এমনই বলদ আমি! নাকি ব্যাটা যেখানে আছে, সেখানেই থাকবে, সেখানেই তাকে রয়ে যেতে দেবো, সেই টুকটুকে আপেলের মতো গাল দুটো নিয়ে? আপেলের কাবাব, ভাবলাম আমি, আর কেঁপে উঠলাম। আমার আর কোন গতি ছিলো না। আমি চোখ বন্ধ করলাম, আর ভয়ে ভয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম, আমার ইচ্ছে, সেই বুড়োটা আবার আমার পাশে এসে বসুক! ভাবতে পারেন, আমি বছরের পর বছর ধরে, এমনকি এখনো মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে নিজেকে গালমন্দ করি, কেন ওভাবে আমার দ্বিতীয় ইচ্ছেটাকে নষ্ট করলাম, তবে তখন আমি অন্য কোন উপায় দেখিনি, আসলে অন্য কোন উপায় ছিলোও না .. ..।' 'তারপর?' 'কী তারপর?' 'বুড়ো ফিরে এলো?' 'ওহ্! .. .. এলো তো বটেই! তৎক্ষণাৎ। সে আবারও আমার পাশে বসলো, যেন সে অমনই বসে ছিলো। তবে তাকে দেখে বোঝা গেলো, যে সে এমন কোথাও ছিলো, যেখানে কি না খুব ভুগেছে বেচারা, মানে .. .. খুব গরম কোনও জায়গায়। হ্যাঁ, ঠিক তাই। তার সেই ঝোপালো সাদা ভুরু দুটো একটু ঝলসে গেছে, দাড়িটাও কুঁকড়ে আছে একটু, কিনারার দিকে বিশেষ করে। আর তার গা থেকেও সেঁকা হাঁসের মতো গন্ধ বেরোচ্ছিলো। আমার দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে ছিলো বেচারা। তারপর বুকপকেট থেকে একটা চিরুনি বার করে নিজের দাড়ি আর ভুরু আঁচড়ালো সে, আর খোনা গলায় বললো, শুনুন ভাই, কাজটা কিন্তু আপনি ভালো করলেন না। আমি আমতা আমতা করে মাপ চাইলাম, বললাম যে তিনটে ইচ্ছের কথা আমি মোটেও ভেবে দেখিনি, আর নিজের ভুল বুঝতে পেরে তো যথাসম্ভব ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করেছি। তা অবশ্য ঠিক, বললো বুড়ো। এতো অমায়িক মুচকি হাসলো সে, যে আমার চোখে পানি চলে আসার জোগাড়। তবে হয়েছে কি, এখন আপনার কেবল একটি মাত্র ইচ্ছে বাকি, বললো সে, তৃতীয়টা। আশা করি এটার ব্যাপারে আপনি আরেকটু সাবধানে থাকবেন। আমায় কথা দিন, সাবধানে থাকবেন? আমি ঢোঁক গিলে মাথা নাড়লাম, নিশ্চয়ই, কিন্তু আপনি আমাকে তুমি তুমি করে বলুন। এবার বুড়ো হেসে ফেললো। বেশ তো, বাছা, আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো সে, ভালো থাকো। মনমরা হয়ে থেকো না। আর তোমার শেষ ইচ্ছের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। আমি এবার খুশি হয়ে বললাম, আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি। আর এরপর বুড়ো চলে গেলো, যেন হাওয়ায় মিশে গেলো একেবারে।' 'তারপর?' 'কী তারপর?' 'সেদিন থেকেই আপনি সুখী?' 'ওহ্! .. .. সুখী?' আমার পার্শ্ববর্তী উঠে দাঁড়ালো, হুক থেকে নিজের টুপি আর কোট খুলে নিলো, ঝকঝকে চোখে আমাকে তাকিয়ে দেখলো কিছুক্ষণ, তারপর বললো, 'আমার শেষ ইচ্ছেটাকে আমি গত চল্লিশ বছরে আর ঘাঁটাইনি। মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয়েছে, চাই কিছু একটা। কিন্তু না। ইচ্ছেগুলো ততক্ষণই সুন্দর, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের কিছু একটা চাইবার রয়ে যায়। ভালো থাকবেন।' আমি জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলাম, রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছে সে। তাকে ঘিরে চারপাশে তুষারকণাগুলো যেন নাচছে। আর আমাকে বলতে একদম ভুলে গেছে সে, বাস্তবিক সে একটু হলেও সুখী কি না। নাকি সে ইচ্ছে করেই আমাকে উত্তরটা দিলো না? স্বাভাবিক, অমনও তো হতে পারে। মূল জার্মান, এরিখ কেস্টনার-এর ডাস মেয়ারশেন ফম গ্লুয়ক থেকে অনূদিত। প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর ২৬, ২০০৪। পুরনো পোস্ট।
false
fe
চারপাশে যখন রাষ্ট্রতন্ত্রের সম্মিলিত পাপ চারপাশে যখন রাষ্ট্রতন্ত্রের সম্মিলিত পাপ ফকির ইলিয়াস ======================================= ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার আশরাফ কোরেশী বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে পাকিস্তানের কোনো আপত্তি নেই। রাষ্ট্রদূত আরো বলেছেন, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাতে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ পাকিস্তানের বাধা দেয়ার কোনো কারণ নেই। সংবাদটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য বেশ স্বস্তির। কারণ বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ। এই দেশের মানুষ এবং সরকারের অবশ্যই ক্ষমতা এবং অধিকার রয়েছে রাষ্ট্রের দাগি ব্যক্তিদের বিচার করার। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীও একটি প্রেস ব্রিফিং দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান তার পূর্বের অবস্থান থেকে ফিরে এসেছে বলেই মনে হচ্ছে। যা একটি শুভ লক্ষণ। পাকিস্তান এই বিচারকাজে কোনো বাধা হবে না বলেই মনে করে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে প্রায় চার দশক সময় পর যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, তা অবশ্যই শুভ লক্ষণ। ‘ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটি’ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগনামা দাখিল করেছে। পত্রপত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী সরকারের ‘তদন্ত সেল’ এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যুদ্ধাপরাধীদের অতীত ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের বর্ণনা অনুযায়ী দেশের এই প্রজন্ম আবারো জানতে পারছে, সেইসব নরঘাতকদের লোমহর্ষক অতীত। জামাতের কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামী, গোলাম আযম, আলী আহসান মুজাহিদ, বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জাতীয় পার্টির আব্দুল জব্বার ইন্জিনিয়ার , আওয়ামী লীগের এম পি মোসলেম ‌উদ্দিন প্রমুখের ঘটনাবলী এই প্রজন্মের বাঙালি জানিয়ে দিচ্ছে, স্বজাতির প্রতি কতোটা নিষ্ঠুরতম হয়ে এরা দাঁড়িয়েছিল পাক হানাদারদের পক্ষে। একটি বিষয় এ প্রসঙ্গে আলোচিত হচ্ছে বেশ জোরালোভাবে। আর তা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের ছত্রছায়ায় কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধী লুকাচ্ছে না তো? আমরা জানি সময়ের আবর্তনে অনেক সুবিধাবাদী রাজনীতিক বাংলাদেশে ‘ভোল’ পাল্টেছে। এরা অনেকেই নিজেদের অতীত ঢেকে দিয়ে বিশেষ করে ‘ডানপন্থী’ মোর্চার হাতে হাত মিলিয়েছে। ‘যোগদানের’ রাজনীতির নামে এদের কেউ কেউ যে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি, তাও কিন্তু নয়। তাই লেবাস বদল করে কোনো যুদ্ধাপরাধী, একাত্তরের পাক বাহিনীর দোসররা ‘দিনবদলের রাজনৈতিক ধারা’র সঙ্গে ঘাপটি মেরে বসে আছে কি না, তাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। আমরা প্রায় সকলেই স্বীকার করি, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি যে বৈষম্যহীনতার চেতনায় স্বাধীন হয়েছিল, সেই চেতনা রাষ্ট্রতন্ত্রে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়নি। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার যে লালিত স্বপ্ন ছিল তা বারবার খান খান হয়ে গিয়েছে নানা কারণে। রাষ্ট্রের কাঠামো-অবকাঠামোতে মানবতা, সততার প্রখর চেতনা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। অপ্রয়োজনীয় অনেক খাতে রাষ্ট্রীয় বাজেট অনেক বেশি থাকলেও শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ হয়নি। ফলে এই প্রজন্ম আশানুরূপ সুশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারেনি। এই ব্যবসায়িক প্রসারমান সুযোগের সুবাদে দেশে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো। রাষ্ট্রের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে তারা চরিতার্থ করছে তাদের বাণিজ্যিক মনোবৃত্তি। এই চর্চার সুবিধা নিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তিও দেশে গড়ে তুলেছে তাদের মন মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যারা প্রকারান্তরে সেই ‘মওদুদীবাদী’ চেতনার বিকাশ ঘটাতে চেয়েছে এই প্রজন্মের মননে। দুই দেশের রান্নার গ্যাস, পানীয় জলের সংকট তীব্রতর অবস্থা ধারণ করেছে। এই সংকট নিরসনে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, গ্যাস ও পানি সংকট ‘আমাদের সম্মিলিত পাপের ফসল।’ রাষ্ট্রের কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তি যখন ‘রাষ্ট্রীয় সম্মিলিত পাপ’ আখ্যায়িত করেন, তখন নানা ধরনের প্রশ্ন সামনে চলে আসে। কে বা কারা পাপ করেছে? কেন করেছে? প্রজন্ম সেইসব পাপের কুফল ভোগ করবে কেন? ‘সম্মিলিত পাপ’ কথাটি রাষ্ট্রের সকল মানুষের ওপর বর্তায়। অথচ খুঁজলে দেখা যাবে, এই পাপ জনগণের নয়। পাপটি রাষ্ট্র শাসকদের। কারণ রাষ্ট্রীয় গাফিলতির কারণে রাষ্ট্রে যে সব নৈতিক ক্ষত তৈরি হয়, এর দায় জনগণ নেবে না। নেয়ার কথাও নয়। আর রাষ্ট্রীয় চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ যদি অপরাধজনিত কাজ করে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিভিন্ন সময়ের রাষ্ট্র শাসকরা সেই দায়িত্বটি পালন করেননি। তাই এই দায়ভার জনগণেরও তা বলা বোধহয় ঠিক নয়। বর্তমান সরকারের শীর্ষ স্থানীয়রা প্রায়ই নানা কথায় পূর্ববর্তী জামাত-বিএনপি জোটের ওপর দোষ বর্তাচ্ছেন। দোষ ওরা করেছিল বলেই তারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তাই বিপুল ভোটে জিতে যে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদেরকে কাজের মাধ্যমে স্থবিরতার আগল ভেঙে ফেলতে প্রত্যয়ী হতে হবে। জঞ্জাল সাফ করা সহজ কাজ নয়। তারপরও শুরুটা করতেই হবে কোথাও না কোথাও। তা না হলে পূঁতিগন্ধযুক্ত অতীত ঘেঁটে লাভ কিছুই হবে না। বরং প্রজন্ম ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়বে বর্তমান সরকারের প্রতিও। বর্তমান মহাজোট সরকার প্রায় দেড় বছর সময়ের কাছাকাছি পার করছে। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রায় কার্যকরসহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজই হয়েছে। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। মহাজোটকে নির্বাচনী ওয়াদাগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে খুব মনোযোগের সঙ্গে। যুদ্ধাপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের ভেতরে যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতাবিরোধীদের ছায়া আবিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা ব্যস্ত হতেই পারেন। কারণ এসব অপশক্তি রঙ পাল্টে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে তা হতে পারে না। হতে দেয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা উচিত, খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুরের মতো মীরজাফররা সেসময় আওয়ামী লীগেই ছিল। অথচ জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে এদের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। ইতিহাস সে সব ঘটনার আজো সাক্ষী হয়ে আছে। এভাবেই বিশ্বাসঘাতকদের একটি মহল এখনো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে একটি বলয়ের মাঝে রেখেছে। যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রকৃত অবস্থা জানাতে চায় না কিংবা চাইছে না। রাষ্ট্রের চারপাশে যখন সম্মিলিত পাপ দানা বাঁধে তখন তা প্রতিহত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই ক্ষণে এসব হায়েনাচক্র নীরব থাকবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা মরণ কামড় মারতেই পারে। তাই সবদিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রে যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে পরিশুদ্ধ হাতে। --------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ । ঢাকা । ১০ এপ্রিল ২০১০ শনিবার প্রকাশিত ছবি- সনজা গার্টনার সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:০৭
false
ij
আল রাজী_ মধ্যযুগের এক সুচিকিৎসক আল রাজী (৮৬৫-৯২৫) মধ্যযুগের বিশিষ্ট মুসলিম চিকিৎসাবিদ। শেষ জীবনে চোখে ছানি পড়েছিল, তো ছানি অপসারণের কথা উঠলে আল রাজী বললেন: “না, থাক। জীবনে অনেক দেখেছি।” এমন মানুষ ছিলেন আল রাজী। গ্যালেনসহ প্রাচীন গ্রিকদের রচিত হাজার পৃষ্ঠার চিকিৎসাশাস্ত্র সংকলন করেছিলেন; শরীর ও মনের সম্বন্ধ তথা সাইকোফিজিক্যাল আসপেক্ট সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন রাজী; শুধু তাই নয়- স্বাস্থের সঙ্গে পুষ্টির সর্ম্পকটিও আঁচ করতে পেরেছিলেন। অনুভূতিনাশক পদার্থ হিসেবে আফিমের ব্যবহার এবং ক্ষতস্থানের সেলাইয়ে পশুর পেটের নাড়িভুঁড়ির ব্যবহার প্রথম তিনিই করেছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন, “চিকিৎসাশাস্ত্র সহস্র বর্ষের উপলব্দির ফলশ্রুতি । ক্ষুদ্র এই জীবনে কতিপয় ব্যক্তির নিকট থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান অপেক্ষা সহস্র বর্ষের অভিজ্ঞতার দ্বারা সঞ্চিত জ্ঞানই আমার নিকট অধিক মূল্যবান।” চিকিৎসাবিদ ছাড়াও দর্শনে রাজীর গভীর আগ্রহ ছিল। ঈশ্বর, আত্মা ও বিশ্বের উপাদান সম্বন্ধে তাঁর ধারণা বেশ কৌতূহল উদ্দীপক। এ বিষয়ে এই নিবন্ধের শেষে সংক্ষেপে আলোচনা করব। সে এক দারুন সময় ছিল। খ্রিষ্টীয় নবম শতক। সময়টাকে ইসলামী রেনেসাঁর কাল বলা যায় কি? বাগদাদে আব্বাসীয় বংশের শাসন। খলিফা আবু জাফর আবদুল্লাহ আল মামুন ইবনে হারুন (১৩ সেপ্টেম্বর ৭৮৬-অগাস্ট ৮৩৩) তিনি কাকে স্বপ্নে দেখতেন জানেন? আরিষ্টটলকে! কেন? একটু পরে বলছি। ততদিনে বাগদাদে বায়েত আল হাকিম বা প্রজ্ঞার ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এটি আসলে অনুবাদ কেন্দ্র ও গ্রন্থাগার- প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খলিফা আল মামুন-এর বাবা খলিফা হারুনুর রশীদ। পিতার ঐতিহ্য অনুসরণ করে খলিফা আল মামুন গ্রহসমূহের দূরত্ব নিরুপন করার জন্য বাগদাদের উপকন্ঠে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। যে কারণে পরবর্তীকালে চাঁদের জ্বালামুখের নাম তাঁর নামেই (আলমানন) করা হয়। এ কারণেই প্রশ্ন রেখেছিলাম খ্রিষ্টীয় নবম শতককে ইসলামী রেনেসাঁর কাল বলা যায় কি? যদিও খলিফা আল মামুন-এর শাসনামলেই মিহনা (ইসলামী ইনকুইজিশন) কার্যকর করা হয়েছিল, প্রবল প্রতিবাদের মুখে সেটি অবলুপ্ত করে উলেমরা ইসলামভিত্তিক সমাজচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যান। নবম শতকে ধর্মীয় সম্প্রদায়গত বিরোধ ছিল। নবম শতকই ইসলামের অন্যতম মাজহাব এর প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইবনে হানবল এর সময়কাল। তিনি ইসলামী ইনকুইজিশন মিহনা-র প্রবল বিরোধীতা করেছিলেন। ঐশিজ্ঞানের তুলনায় মানবীয় জ্ঞানবুদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উত্থান হয়েছিল ঐ নবম শতকেই। মুতাজিলা সম্প্রদায়ের ওপর খলিফা আল মামুনের সহানুভূতি ছিল। এরা ছিল গ্রিক যৌক্তিক তথা অ্যারিষ্টটটলপন্থি; পক্ষান্তরে আহমেদ ইবনে হানবল নির্ভর করতেন কেবলমাত্র কোরাণ এবং হাদিস এর ওপর। মুতাজিলাদের কোরাণকে শাশ্বত ভাবতে পারেনি, তাদের মতে কোরাণ নির্দিষ্ট সময়কালে সৃষ্ট -আল্লাহ্র মত অনন্ত নয়! এই রকম সাহসী ধারণার পিছনে অ্যারিষ্টটটল এর প্রভাব ছিল সক্রিয়। এতসব বলার কারণ? খলিফা আল মামুনের দরবারে জ্ঞানীগুণিরা আরিষ্টটলের দর্শন নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতেন। খলিফা তো আরিষ্টটল-এর স্বপ্ন দেখবেনই! এমনই এক জ্ঞানদীপ্ত পরিমন্ডলে ৮৬৫ খিষ্টাব্দেরর ২৬ আগষ্ট পারস্যের রে নগরে নবম শতকের বিশিষ্ট চিকিৎসক আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে জাকারিয়া আল রাজীর জন্ম । রে নগরটি ছিল পারস্যের উত্তর পুবে। শৈশব কেমন ছিল এই জ্ঞানী মানুষটির? সংগীতময়। শৈশব থেকে শেষ বয়স অবধি সংগীত চর্চা করেছেন আল রাজী। লুট (এক ধরণের তারযন্ত্র) বাজাতেন আল রাজী, গানও নাকি গাইতেন। পরিনত বয়েসে রচনা করেছেন সংগীতকোষ। দর্শন চর্চাও করতেন। তবে প্রথম জীবনে অধিবিদ্যা নাকি তেমন টানেনি। (অধিবিদ্যা কে বলা হয় মেটাফিজিক্স। বাস্তবতাকে জানা সম্ভব কি না অধিবিদ্যা সে বিষয়ে আলোচনা করে।) তরুণ বয়েসে বাগদাদ আসেন রাজী। সেখানকার চিকিৎসালয়, গ্রন্থাগার তাঁকে জ্ঞানচর্চার সুযোগ করে দেয়। কিছুকাল পরে জন্মনগরে ফিরে এলেন। নগরের চিকিৎসালয়ের প্রধান প্রশাসক নিযুক্ত করা হল তাঁকে। তবে বাগদাদ থেকে আবার ডাক আসল। বাগদাদের চিকিৎসালয়ের প্রধান চিকিৎসক নিযুক্ত হলেন । সে সময়ে খলিফা আল মুকতাফির সময়। এঁর শাসনকাল ৯০২-৯০৭ খ্রিস্টাব্দ। প্রধান চিকিৎসক হিসেবে অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেন রাজী। আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের নগরে থেকে নগরে পরিভ্রমন করে অভিজাত শাসকশ্রেণির চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। দরিদ্ররাও তাঁর চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হত না । প্রায়শ গরীব রোগীদের কাছ থেকে ফি নিতেন না। উপরোন্ত নিয়মিত দান করতেন রাজী। চিকিৎসাকালীন সময়ে অষুধ ছাড়াও পথ্যের ওপর জোর দিতেন রাজী। সেরে ওঠার সময়ে রোগীর কি কি খেতে ইচ্ছে করত মন দিয়ে শুনতেন। তবে সবচে বেশি গুরুত্ব দিতেন চিকিৎসক ও রোগীর সর্ম্পকের ওপর। তাঁর বিশ্বাস ছিল চিকিৎসকের হাস্যজ্জ্বল মুখ রোগীর দ্রুত আরগ্যের অন্যতম কারণ। চিকিৎসাশাস্ত্র, শল্যবিদ্যা, গণিত, দাবা ও সংগীত বিষয়ে প্রায় সারা জীবনই লিখেছেন রাজী। রাজীর সর্বমোট গ্রন্থের সংখ্যা ২৩০। তাঁর চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থগুলি ইউরোপীয় ভাষায় যথাসময়ে অনূদিত হয়েছে। ১৬ শতক অবধি সেসব ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত হত। তাঁর লেখা সবচে গুরুত্বপূর্ন গ্রন্থের নাম “কিতাব আল হাউয়ি” (সিসটেম অভ মেডিসিন) । হাজার পৃষ্ঠার বিশাল গ্রন্থ, চিকিৎসক-জীবনে রাজী কী ভেবেছেন, কী দেখেছেন সেসবের সারৎসারই কিতাব আল হাউয়ি। এটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশ্বকোষও বলা যায় । “কিতাব আল হাউয়ি” সবচে উল্লেখযোগ্য দিক- গ্রিক ও ভারতীয় চিকিৎসাপদ্ধতির ওপর রাজী বিস্তারিত আলোচনা, যার প্রতিটি ছত্রে গভীর প্রজ্ঞার ছাপ সুস্পস্ট। ইহুদি পন্ডিতেরা এটি অনুবাদ করে ইউরোপে পরিচিত করে তোলেন। (আমরা আগেও দেখেছি নবম শতক ও তারও পরে জ্ঞানের সূত্র ধরে ইহুদি ও মুসলিম পন্ডিতরা একে অন্যের কাছাকাছি এসেছিলেন। ইবনে রুশদকে পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন স্পেনের ইহুদি দার্শনিক মাইমোনাইদেস বা ইবনে মৈমুন) যা হোক আজ অবধি বিশ্বজুড়ে আল রাজীর গৌরব ও সম্মান এই গ্রন্থটির কারণেই। গুটিবসন্ত (স্মল পক্স) ও হাম এর ওপর লেখা তাঁর একটি গ্রন্থও বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিল । গুটিবসন্ত অনেক আগেই চিহ্নিত করা হলেও সে বিষয়ে রাজীর পর্যবেক্ষণ ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর ও প্রায় আধুনিক। নানা ভাষায় অনুদিত হয়েছিল বইটি। কেবল চিকিৎসাগ্রন্থই নয়-তাঁর লেখা দর্শনগ্রন্থও ইউরোপের বিদগ্ধ মানুষ পাঠ করেছিল আগ্রহভরে। শরীরের চেয়ে আত্মার প্রাধান্যই মেনে নিয়েছিলেন রাজী, সে যুগে এমনটা ভাবাই ছিল স্বাভাবিক, আজও অনেকেই এমনই ভূল করে থাকেন! রাজী মনে করতেন, প্রথমে একটি শুদ্ধ আধ্যাত্মিক জ্যোতি আবিভূত হয়েছিল। এই জ্যোতিই আত্মার (জীবের) উপাদান-কারণ। (এই ভাবনা আসলে কবির ভাবনা। আমার তেমনই মনে হয়। কেননা, প্রত্যেকেই তো সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ভাবতে উদ্দীপনা বোধ করেন; সৃষ্টিরহস্য নিয়ে কিছু বললে বিজ্ঞান প্রায়শ হয়ে ওঠে কাব্যিক) ... অতএব আত্মা এক প্রকাশ উন্মুখ আধাত্মিক উপাদান। (এও কাব্য) আত্মার ভালোমন্দ শরীরেও প্রভাব বিস্তার করে। (এই কথার মানে কিন্তু বোঝা গেল না!) প্রাণি যেহেতু জড় পদার্থের চেয়ে আলাদা-কাজেই আত্মাও একপ্রকার পদার্থ! (ভাবনাটি আসলে অ্যারিস্টটলের) কোনও কোনও আত্মা বুদ্ধি এবং শিল্পের চর্চা করে। কাজেই বোঝা যায় বুদ্ধির স্রোত কোনও বুদ্ধিমান কর্তা। (আধুনিক সময়ে অবশ্য এর ব্যাখ্যা অনেক বদলে গেছে। শ্রম এর প্রসঙ্গটি এসেছে।) যা হোক। ৫টি উপাদানকে রাজী নিত্য ও সদা সহাবস্থিত বলে মেনেছেন। ১ কর্তা (ঈশ্বর) ২ বিশ্বাত্মা (৩) মূল ভৌতিক উপাদান (৪) পরমার্থ দিশা ও ৫ পরমার্থ কাল। (তখন বললাম না, প্রত্যেকেই তো সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ভাবতে কিংবা ব্যাখ্যা করতে উদ্দীপনা বোধ করেন!) ...এসব অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ছাড়া বিশ্ব সৃষ্টি হতে পারত না। বস্তু সদা পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীলতাই কালের (সময়ের) অস্তিত্ব ঘোষনা করে। এই কারণেই রসায়নশাস্ত্রের প্রতি আস্থাবান ছিলেন রাজী। তিনি লক্ষ করেছিলেন, বস্তুজগতের বিভিন্ন মূল উপাদানের মিশ্রণ ধাতুতে পরিবর্তিত হতে পারে। রসায়নের বিভিন্ন মিশ্রণ থেকে বিচিত্র গুণের উদ্ভাবন হতে পারে। এ থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে- দেহের মধ্যেও স্বতঃস্ফূর্ত গতি সৃষ্টি করার মতো যথেস্ট শক্তি রয়েছে। ...এসব ভাবনাই দ্বাদশ শতক থেকে ইউরোপীয় গীর্জেশাসিত সংকীর্ণ বদ্ধ সমাজে নবজাগরণের সঞ্চার করেছিল। রাজীর সময়কালে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দুটি চরম পথ বিরাজ করছিল। একদল ছিল সংশয়বাদী অন্যদলটি ছিল ধর্মান্ধ। মধ্যম পথটিই বেছে নিয়েছিলেন রাজী । ৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসের ২৬ তারিখে রে নগরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মধ্যযুগের এই মহান জ্ঞানসাধক। (উৎসর্গ: ডা. শাহাদাত) সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:০৪
false
fe
অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বরূপ অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বরূপ ফকির ইলিয়াস=========================================গোটা বিশ্বে বহুল আলোচিত সোস্যাল নেটওয়ার্ক 'ফেসবুক' বাংলাদেশে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে চলছে এখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা। এর আগে পাকিস্তানেও ফেসবুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফেসবুকের বিভিন্ন ফিচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও চলছে নানা বিতর্ক। বিশেষ করে ব্যবহারকারীর 'ব্যক্তিগত নিরাপত্তা' নিয়ে মার্কিন মিডিয়ায় ক'সপ্তাহজুড়ে চলেছে নানা তর্ক-বিতর্ক। ফেসবুকের শীর্ষস্থানীয়রা বলেছেন, তারা 'ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা' আরও নিশ্চিত এবং কঠোর করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।বাংলাদেশেও ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছে প্রায় একই কারণে। রাষ্ট্রের শীর্ষ রাজনীতিকদের নামে ফেসবুকে একাউন্ট খোলা, তাদের ছবির অবৈধ ব্যবহার, নানা কটূক্তি রাষ্ট্রের প্রশাসনকে বিব্রত করে তুলেছিল। ফলে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা তা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন বলে পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। বিশ্বে একটি সোস্যাল নেটওয়ার্ক সব সময় সামাজিক কল্যাণের লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়। সমাজের বিবর্তনের পাশাপাশি, সমাজের উন্নয়নে মানুষের মতবিনিময়ের জন্যই এমন গোষ্ঠীবদ্ধ কর্মকান্ড চালানো হয়। প্রথমত, এতে কোন অশুভ উদ্দেশ্য থাকার কথা নয়। এখানে মনে রাখা দরকার কারও বিনা অনুমতিতে তার নামে একাউন্ট খোলা, তার ছবি, তার ব্যক্তিগত ডাটা ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে গর্হিত কাজ। আর তা উন্নয়নে অন্তরায় তো বটেই বরং সমাজকে ক্রমেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক কিংবা সামাজিকভাবে হীনউদ্দেশ্য নিয়ে বেশ কিছু দিন থেকেই এমন কিছু অপচেষ্টা চলে আসছে। যা গোটা জাতি ও দেশের জন্যই অশনি সঙ্কেত। তারা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী, প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত কটাক্ষ করতে কসুর করেনি। এ বিষয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর গোয়েন্দা বিভাগ একজনকে গ্রেফতারও করেছে। এর নেপথ্যে সংঘবদ্ধ কোন চক্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবরে বেরিয়েছে। একটি কথা সবারই জানা, সাইবার ক্রাইম বিশ্বজুড়ে একটি নতুন উপদ্রব। এ উপদ্রপকে মোকাবেলা করার জন্য আধুনিক দেশগুলো বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে এবং করা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ সে তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বহুগুণ। আমরা আরও জানি, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে বিশ্বে যেমন আগ্রাসন চলছে, তেমনি সত্য কথা বলা থামিয়ে দেয়ার জন্যও পরাক্রমশালীরা তৎপর রয়েছে। এর কিছু উদাহরণ আমি এ নিবন্ধে দিতে চাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয় অন্যের তথ্য, যত্রতত্র এবং যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা। কিংবা কোন ব্লগ, ওয়েবম্যাগ, ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা টুইটার-এ কাউকে নগ্নভাবে আক্রমণ করা। ভিন্নমত পোষণের নামে এমন হঠকারী আক্রমণ আমরা এখন প্রায়ই লক্ষ্য করি। আর এর উল্টো চিত্রটি একটু ভিন্ন। বিশেষ করে বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের তত্ত্বাবধানে, মালিকানায় গড়ে উঠেছে মিডিয়া সংস্থা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে কোন বিবেকবান লেখককেও একটি নিবন্ধ লেখার আগে জেনে নিতে হচ্ছে, যে মিডিয়ায় তিনি লেখাটি পাঠাবেন, তার মালিক পক্ষের কোন অপকর্ম তিনি ফাঁস করে দিচ্ছেন কি না! এমনকি ওই মিডিয়ার নেপথ্য মালিক কে কে, ম্যানেজিং বোর্ডে ক্ষমতাবান কারা কারা আছেন-তা জানাও এখন যেন নিত্তনৈমিত্তিক বিষয়! বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে বিভিন্ন মিডিয়া এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষমতাবানদের অপকর্ম ঢাকার ঢাল হিসেবে। তার ওপর আবার ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর মল্লযুদ্ধের কারণে দুই পক্ষের মিডিয়াকে মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্যও আমরা দেখছি প্রায় প্রতি সপ্তাহে। আরও লজ্জাজনক হচ্ছে যারা রাষ্ট্রশাসনের ধারে কাছে নীতিনির্ধারক হিসেবে থাকেন, তারাও চোখ রাখেন মিডিয়ায় আসা তাদের বিরুদ্ধে কোন বিরূপ সমালোচনা প্রকাশের আগেই থামিয়ে দেয়া যা কি না। আর এই যে ক্ষমতাবানদের অপচেষ্টা তা দেখে-জেনে-বুঝেই একটি চক্র আরও এগ্রেসিভ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তারা ক্ষমতাবানদের চরিত্র হননে জঘন্য হীন পথ অবলম্বন করছে। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। দুই. গোটা বিশ্ব এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশের তীব্র প্রতিযোগিতা করছে। 'পেপারলেস' দফতর চালানোর প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে। রয়েছে এ বিষয়ে দ্বিমতও। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষক রেডিন রজার্সের মতে, 'তাহলে কি বিচার বিভাগের ভারী ভারী ফাইল বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে একজন নিরপরাধ মানুষের দোষ-নির্দোষ নির্ভর করবে কম্পিউটারের ডাটার ওপর?' এ প্রসঙ্গে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, যদি কোন প্রযুক্তির সিস্টেমটা পুরো ক্র্যাশ করে আর সেই ঘটনাবলির কাগজি দলিল-দস্তাবেজ না থাকে তবে মাননীয় বিচারক রায় দেবেন কি দেখে? অর্থাৎ রেডিন রজার্সের মতে, পেপারলেস জীবনপ্রবাহ চলানোর সময় এখনও এই মানব সমাজের জন্য আসেনি। হাঁ, হয়তো আসেনি। কিন্তু আজ থেকে দুশ' বছর পরে কি হবে, তা তো এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বলা যাচ্ছে, তথ্যপ্রবাহের মুক্ত পরিবেশনা যেমন এগোচ্ছে, তার অপব্যবহার রোধে সতর্কাবস্থা খুবই জরুরি। আর তা থেকে পিছিয়ে পড়লে ভর্ৎসনা পেতে হবে প্রজন্মের কাছ থেকেই। বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করা কি আদৌ সম্ভব হয়েছে? না হয়নি। যেদিন ঘোষণা দেয়া হয়, সেদিনই বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইটে দেখেছি অনেকেই জানিয়েছেন 'প্রক্সিসাইট ' দিয়ে কিভাবে ফেসবুকে ঢোকা যাবে। তা অনেকে করেছেনও। অন্যদিকে ফেসবুক আবার চালুর দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে তরুণ সমাজ। তারা বলেছে, লাখ লাখ তরুণ প্রজন্ম দিনবদলের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মহাজোট সরকারকে ভোট দিয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় এনেছে। প্রজন্ম, সরকারকে তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। তারা আরও বলেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কথা বলবেন, আর অবাধ তথ্যপ্রবাহ বন্ধ করে দেবেন, তা তো হতে পারে না। এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। অবাধ তথ্যপ্রবাহের সংজ্ঞা কি? আর অন্যটি হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমারেখা কতটুকু? মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে মানুষের মৌলিক চেতনা, বর্ণ, গোত্র, ধর্ম, সৃজনশীল জাতিসত্তার প্রান্তরে আঘাত করা কোন সিদ্ধ আইনই গ্রাহ্য করে না। তেমনি অবাধ তথ্যপ্রবাহের নামে কারও ব্যক্তিগত ডাটায় হস্তক্ষেপ করা, হ্যাকিং করাও চরম অনৈতিক, দন্ডনীয় অপরাধ। একটা বিষয় খুবই সহজ। একজন অপ্রাপ্ত বয়স্কের হাতে কম্পিউটার ধরিয়ে দেয়ার আগে তার অভিভাবককে ভাল করে কম্পিউটার রপ্ত করা দরকার। শিখে নেয়া দরকার, কিভাবে 'প্যারান্টাল কন্ট্রোল' বটনটি চালাতে হয়। তা না হলে তো অবুঝের হাতে বন্দুকই তুলে দেয়া হচ্ছে। যা দিয়ে সে যে কাউকে গুলি করতে পারে। বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করা কোন বুদ্ধিমান সরকারের কাজ হতে পারে না। তা উচিতও নয়। বরং সাইবার ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রাইম বন্ধে আইন প্রণয়ন দরকার খুব জরুরি ভিত্তিতে। দরকার প্রতিটি ল্যান্ড ফোনে কলার আইডি প্রথা চালু করা। ট্রাকিং সিস্টেম চালু করা, যা দিয়ে সহজে সাইবার ক্রাইম চিহ্নিত করা যায়। ইরান, চীন প্রভৃতি দেশে অবাধ তথ্যপ্রবাহের ওপর কঠোরতা আরোপের খবর আমরা দেখছি। তারাও প্রজন্মের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশকে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এগোতে হবে। নিউইয়র্ক ১ জুন ২০১০ =========================================দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৪ জুন ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- আরফা মিক্স
false
rn
আমার মন মানে না "পথে যেতে যেতে তোমার সাথে মিলন হলো দিনের শেষে।দেখতে গিয়ে সাঁঝের আলোমিলিয়ে গেলো এক নিমিষে।"হিমির সাথে আমার প্রথম দেখা হয় রোজার ঈদের পরের দিন বেলী রোডে গার্লস গাইডের সামনে।আমি সন্ধ্যার একটু আগে গার্লস গাইডের সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার মানুষের হাসি আর আনন্দ দেখছি।রাস্তার ঐ পাশে ফুচকার দোকানে আমি ইশারায় আমাকে ফুচকা দিতে বলে দাঁড়িয়ে আছি।সন্ধ্যা তখনও হয়নি,চারপাশে মায়াবি এক আলো।এই পাশটায় মানুষ ও অনেক কম।ফুচকা দিতে দেরী হবে,অনেক ভিড়।আমি একটা সিগারেট ধরালাম।হঠাৎ দেখি আমার সামনে রিকশা থেকে একটি মেয়ে নামলো।আমার বুকের ভেতর ধাক্ করে উঠলো।সিগারেট কখন হাত থেকে পড়ে গেছে আমি নিজেও জানি না।এতো সুন্দর!!! এতো সুন্দর!!! এতো সুন্দর!!!আমার এখনো মনে আছে হিমি সেদিন সাদা রঙের একটা শাড়ি পড়েছিল।সাদা শাড়িটার মধ্যে সাদা সুতার কাজ করা।মাথায় এক আকাশ খোলা চুল সারা পিঠময় ছড়িয়ে আছে।দুই হাত ভরতি কাঁচের চুড়ি।এতো সুন্দর!!! ইচ্ছা হলো এখনি জড়িয়ে ধরে দু'টা চুমু দেই।যে যা খুশি ভাবুক।হিমি রিকশা ভাড়া দিয়ে আমার দুই হাত দূরে দাড়ালো।হিমি আমার দিকে একবার ও তাকায়নি।আর আমি পাগলের মতো তার দিকে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ দেখি হিমি কাঁদছে।আমার কি যে কষ্ট হলো।কতক্ষন চলে যায় আমি জানি না।আমি দেখি হিমির চোখ দিয়ে জল পড়ছে।তখন সন্ধ্যা।রাস্তার সব বাতি এক সাথে জ্বলে উঠলো।রাস্তার নিয়ন বাতির আলো হিমির চোখে পড়ে ঝক মক করছে।কান্না ভেজা মুখ এতো সুন্দর হয়!অনেক সময় চলে যায়।আমার ফুচকা খাওয়া হয়নি।হিমি কাঁদছে আমি কি করে ফুচকা খাই।এক সময় আমি হিমির অনেক কাছে দাঁড়িয়ে বলি- তুমি কাঁদছো কেন?এই মেয়ে তুমি কাঁদছো কেন?বোকা মেয়ে!হিমি ভেজা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকায়।আহ্ এতো সুন্দর!মনে হলো এই মেয়েটার জন্য আমি সবকিছু করতে পারব।এই মেয়েটা আমার।আমি হিমির দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট করে এক নিঃশ্বাসে বললাম- শোন,আমি কোনো ভনিতা করবো না।আমার ভাবতে ভালো লাগে মানুষ হবে সহজ সরল।যা ভাববে তাই বলবে। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে।আমি সব সময় তোমার পাশে থাকতে চাই।আমি তোমার চোখের জল মুছে দিতে চাই।তুমি কাঁদছিলে,তোমার চোখ ভিজা দেখে তুমি জানো না আমার কি যে কষ্ট লাগছিল।আমি আর কোনো দিন তোমার চোখে জল আসতে দিব না।এরপর রাত ১১ টায় আমি হিমি কে আমার বাইকে করে হিমির বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।তার আগে আমরা সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াই।আমি উনিশ টা সিগারেট শেষ করি।হিমি দুই প্যাকেট চিপস্ আর দুই প্যাকেট জুস শেষ করে।হিমির মন খারাপ ভাব আমি আকাশের সাথে মিশিয়ে দেই।হিমি আমার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠে।হিমি হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলে তখন তার দুই হাত ভরতি চুড়ি ঝনঝন কর বেজে উঠে,আমার কি যে ভালো লাগে।সেদিন রাতে হিমি আমাকে ফোন করে কবিতা শুনায়।আমি কবির নাম বলতে পারি না বলে সে খুব রাগ করে।পরের দিন আমি- ইয়েটস,ফার্নান্দো পাসোয়া,মার্সেল প্রুস্ত,উইলিয়াম ফকনার,দান্তে,গ্যেটে,টলস্টয়,ভার্জিনিয়া,রবীন্দ্রনাথ,টমাস মান,শেক্সপিয়ার এদের সব বই কিনে এনে পড়া শুর করি।হিমি আমার কাছে কিছু জানতে চাইবে আর আমি বলতে পারবো না তা তো হতে পারে না।হিমি আমাকে প্রথম এই কবিতা টা শুনিয়ে ছিল-"Love storng as death is dead Come let us make his bed Among the dying flowers; A green turf at his head; And a stone at his feet, Where on we may sit In the quiet evening hours."ওই দিন রাতেই ফোন রাখার আগে হিমি একটা গানও শুনিয়েছিল।সুরটা এতো সুন্দর লাগছিল হিমির গলায়।গান টাতে ফুলের কথা,মানব মানবীর ভালোবাসার কথা আছে,বিরহের কথা,গান টা শুনে বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠে।কোনো একজন একাকী নারীর মিষ্টি কন্ঠে,এক'ই সাথে বেদনা এবং ভালোবাসা,আনন্দ এবং যন্তনা!"Where have all the flowers gone? Young girls pick them every one, Where have all the young girls gone? Gone to youngman every one. Where have all the youngman gone? Gone for soldiers every one Where have all the soldiers gone? Gone to graveyard every one. When will they ever learn? When will they ever learn...."হিমি কে এড়িয়ে চলার কোনো শক্তি'ই আমার নেই।হিমি আমাকে খুব বুজায়।মেয়েটা আমাকে দারুন ভালোবাসে।হিমি কে না পেলে আমার কি যে হতো!আজ কালকার কিছু মেয়েদের হাব ভাব দেখলে অসহ্য রাগ হয়।এরা কোনো দিন'ই প্রকৃ্ত গৃহীনি বা মা হতে পারবে না।বড়ো জোর কম্প্যানিয়ন বা ব্রেড ফ্রেন্ড হতে পারে।হিমি কে প্রথম দিন দেখেই মনে হয়েছিল এই মেয়েটা আমার।তাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি।আগে কোথাও দেখেছি।বার বার দেখেছি।কিন্তু কবে?মনে হয় যেন আগের জন্মে।আবছা রহস্যময়।ঘুরে ফিরে বারবার হিমির মুখটা মনে পড়ে।বুকের ভেতর একটু একটু যেন কেমন কেমন করে।একটু একটু ভালোও লাগে।আমার হিমির কাছে মোনালিসা কিছুই না।এতো সুন্দর করে হাসতে আমি আর কাউকে দেখিনি।এই রকম সুন্দর মুখ আর হাসি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের আর কেউ নেই।তার হাসিতে আদর আর গভীর ভালোবাসা আছে।লোভ -হিংসা কি জিনিস সে বুঝে না।তার ভুবন আদর ভালোবাসা আর আনন্দে ভরা।হিমির সবচেয়ে ভালো দিক হলো,সে আমার সিগারেট খাওয়া নিয়ে কিছুই বলে না।বরং বলে তুমি এতো সুন্দর করে সিগারেট খাও দেখতে এতো ভালো লাগে।সিগারেটেরে ছাইটা ও এতো সুন্দর করে ফেলে।তোমার মতো করে আর কেউ পারবে না কোনোদিন।তুমি তুমি'ই।হিমিকে নিয়ে আমার কিছু চিন্তা ভাবনা আছে।চিন্তা ভাবনা গুলো এই রুপঃহিমির সাথে ভর দুপুর বেলা পুকুর ঘাটে বসে-আমি অনেক গল্প করব।নীলগিরি পাহাড়ে বিষ্টিতে ভিজব।সেদিন হিমি নীল শাড়ি পড়া থাকবে।দুই হাত ভরতি থাকবে কাচের চুড়ি।মাথার চুল থাকবে খোলা।জ্যোস্না রাতে সারারাত চায়ের কাপ হাতে নিয়ে গল্প করব।এইখানে একটু সমস্যা আছে।হিমি চা খায় না।আমার একাই খেতে হবে।কিন্তু আমার একা চা খেতে ভালো লাগে না।হিমি চায় ঘর ভরতি থাকবে বাচ্চা কাচ্চা।সে বাচ্চাদের খাওয়াবে গোসল করাবে।আদর করবে।সুন্দর বিকেল গুলোতে সারা ঢাকা শহর রিকশায় করে ঘুরে বেড়াব।আমি অনেক গল্প জানি।হিমি কে রাতে ঘুমাতে দিব না।আমার গল্প শুনতে হবে।আবার রাত ৩ টায় যদি আমার চা খেতে ইচ্ছা করে তাহলে আমাকে চা করে দিতে হবে।(ইস্ কেউ যদি এখন এক কাপ গরম চা হাতে ধরিয়ে দিত!আর একটা সিগারেট।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কত কি ভাবতে পারতাম!হিমি যদি একটু সেজেসুজে আসতো আমার কাছে!এই মূর্হু্তে হিমি কে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।আমি জানি এক সময় জীবনে আমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।ইচ্ছা করলেই হিমি কে দেখতে পারব,হিমির সুন্দর হাত ধরতে পারব।যখন তখন হিমি কে চুমু দিতে পারব।)একজন মানুষের সাথে থাকা,এক সাথে খাওয়া,এক সাথে শোয়া,এক ছাদের নীচে বসবাস।হাত ধরা ধরি করে বিষ্টিতে ভেজা কিংবা বা তার বুকে মাথা রেখে জ্যোন্সা দেখা- এসবে যদি ভালোবাসা না থাকে,তবে কতটা দুঃসহ সে জীবন! হিমির স্নেহময় হাতের স্পর্শের বড্ড প্রয়োজন আমার।যে স্পর্শ চোখের জল মুছে দিবে,যে স্পর্শের কোমল পরশে মন শান্ত হবে।আমি খুব'ই সাধারন একজন।চোখ ধাঁধানো রুপবতী আমার প্রয়োজন নেই।প্রয়োজন অনুভূতি সম্পন্ন কোমল কঠিন মিশানো একটি মেয়ে,যে আমার স্বপ্ন গুলোর সাথে একাত্ন হতে পারবে।আমার স্বপ্ন গুলো খুব বড় নয়।গোছানো একটি সংসার।ভালোবাসা ভরা সে ঘরে রোজ ফিরতে ইচ্ছা করবে।ঘর ছেড়ে মন উদাসী হতে চাইবে না।সে ঘরের ঘরনীর কোনো এক ভোরে সদ্য স্নান করা স্নিগ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হবে -এই জীবনে চাইবার মতো আর কিছু বাকি নাই।"আমার মনে অনেক জন্ম ধরে ছিল ব্যাথাবুঝে তুমি এই জন্মে হয়েছ পদ্মপাতা,হয়েছ তুমি রাতের শিশির -শিশির ঝরার স্বরসারাটি রাত পদ্মপাতার পর।"
false
ij
None আমি কি বেঁচে আছি শওকত ভাই? না, আমি বেঁচে নেই। আমি মরে গেছি। কণা বলল। বলে চুপ করে থাকল। ওর কন্ঠস্বরে দুঃখ ঝরে ঝরে পড়ে। শওকত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সিগারেটে টান দিয়ে দূরের গাছপালার দিকে তাকালো। এখন মাঠজুড়ে শেষ বসন্তের ঝলমলে রোদ; গাছের পাতায় রোদ, ডালে রোদ, ঘাসের ওপর রোদ। ওপারের আকাশটা ফ্যাকাশে নীল। সাদা মেঘ, চিল আর দু-তিনটে ঘুড়ি উড়ছিল কেবল। লাটাই হাতে বালকেরা সম্ভবত মাঠের শেষে বাড়িগুলোর ছাদে। মাঠটা যে-কারণে শান্ত হয়ে আছে। মাঠে বালকদের হল্লা নেই। কিন্তু, কণাকে কে কষ্ঠ দিল? ও কাকে ভালোবেসেছিল? ইস্, ওর কত কষ্ট! শওকত দিশেহারা বোধ করে। সিগারেটে টান দেয়। কণার শরীর থেকে বেলী ফুলের গন্ধ পায়। আজই প্রথম কণার সঙ্গে বেরুল সে। আজিম ভাইয়ের দিলু রোডের বাড়িতে কণাকে প্রথম দেখেছিল শওকত- রুমি ভাবী দুজনকে চোখে চোখে রাখছিল। তার কারণ হয় তো এই- কণা সুন্দরী, ফরসা, লম্বা; অবিকল উপবনের দেবীর মতন দেখতে ... রুমী ভাবী কিছুতেই শওকতকে কণার সৌন্দর্যে জগতে অনায়াসে প্রবেশ করতে দেবে না। ইর্ষা? তা সত্ত্বেও কণা কী এক গূঢ় কারণে শওকতের প্রতি ঝুঁকছিল। ওমা, ‘হৃদয়হীনা’ নাটকটি আপনিই লিখেছেন? কবি হলেও টিভি নাটক লিখে ইদানিং নাম করেছে শওকত। সুতরাং, অতি ভদ্রভাবে ফোন নম্বর বিনিময়। কৌশলে। রুমা ভাবী তখন কিচেনে ... শওকতের প্রতি কণার আগ্রহের আরও কিছু কারণ ছিল । শওকত লম্বা, ফরসা; ধানমন্ডিতে থাকে- একটা গাড়িও আছে; কালো ভক্সওয়াগান। কণার গাড়ি নেই-ওর বাবার ছিল। তো, কণার বাবার গাড়িটা কণার তিন ভাইয়ের ভাগে পড়েছে; তারা গাড়িটা বেচে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। কণা লালমাটিয়ায় একটা মেয়েদের কলেজে পড়ায় । ছাত্রীদের মধ্যে খুবই পপুলার কণা হক । ঈষৎ শ্যামলা হলেও সুন্দরী, গম্ভীর, চশমা-পরা কণা ম্যাডাম অনেক ছাত্রীর আইডল । এই কথাটা কণার কানে পৌঁছেছিল। না, না! তোমরা আমার মত হয়ো না প্লিজ! আমার মত হয়ো না; আমার আমার অনেক দুঃখ! কিন্তু, কে কণাকে কষ্ট দিল? ও কাকে ভালোবেসেছিল? ইস্, ওর কত কষ্ট! শওকত দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধোঁওয়া ছেড়ে দূরে তাকাল। মাঠের শেষে একটা পিচ রাস্তা। এই মুহূর্তে একটা হলুদ ভোক্সাওয়াগান চলে যাচ্ছে । ওপাশে দূতাবাসের সাদা দেওয়াল। দেওয়ালে প্রতিফলিত রোদ; তার আলোয় একটা রিক্সা, বস্তা কাঁধে দুটো বালক; হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে, হাত নাড়ছে। একটা সাদা কুকুর। ছড়ি হাতে একজন বৃদ্ধ। জামরুল গাছের নিচে সঙ্গীহীন গ্যাসবেলুনওয়ালা। কণা নাক টানল। সাদা একটা রুমাল দিয়ে মুছল। হলুদ শাড়ি পড়েছে আজ। কপালে লাল টিপ। উপবনের দেবীর মতন লাগছে কণাকে। আমি কি বেঁচে আছি শওকত ভাই? না আমি বেঁচে নেই। আমি মরে আছি। মাহাবুব আমাকে যথেস্ট দুঃখ দিয়েছে। ও আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। বেলী ফুলের তীব্র গন্ধ পায় শওকত; এবং সে কবি বলেই সে আরেকটা বসন্তের বিকেল দেখতে পায়। যে বিকেলে এই মাঠেই বসে আছে কণা ... পরনে হলুদ শাড়ি ... ওর সামনে একজন পুরুষ বসে ... সিগারেট টানছে ... কণা বলছে, আমি কি বেঁচে আছি জামিল ভাই? না, আমি বেঁচে নেই। আমি মরে গেছি। শওকত আমাকে যথেস্ট দুঃখ দিয়েছে। ও আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। বলে চুপ করে থাকল কণা। ওর কন্ঠস্বরে দুঃখ ঝরে ঝরে পড়বে।...তখন মাঠের পাশের পিচ রাস্তা দিয়ে একটা হলুদ ভক্সওয়াগান চলে যাবে শেষ বসন্তের ধূলা উড়িয়ে। ওপাশে দূতাবাসের সাদা দেওয়ালে প্রতিফলিত হতে থাকবে একটা দিনের শেষ রশ্মি; একটা রিক্সা চলে যাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে; বস্তা কাঁধে দুটো বালক হেঁটে যাবে কথা বলতে বলতে, হাসতে হাসতে। একটা সাদা কুকুর। ছড়ি হাতে একজন বৃদ্ধ। জামরুল গাছের নিচে গ্যাসবেলুনওয়ালা দাঁড়িয়ে থাকবে। একা। কণার শরীরের বেলী ফুলের তীব্র গন্ধ পায় শওকত । আজ হলুদ শাড়ি পড়েছে কণা। কপালে লাল টিপ। অবিকল উপবনের দেবীর মতন লাগছে কণাকে । এর আগে কে বসেছিল এখানে? এই ঠিক আমার জায়গায়? কণার মুখোমুখি? মাহাবুব? সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৪৭
false
fe
কুয়াশার ধুম্রজাল কেটে সূর্য উঠবেই কুয়াশার ধুম্রজাল কেটে সূর্য উঠবেই ফকির ইলিয়াস ===================================== ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যগুলো কেমন যেন পরস্পরবিরোধী। একেকজন একেক কথা বলছেন। সংশয় বাড়ছে জনগণের মনেও। নির্বাচন সময় মতো হবে তো? রোডম্যাপ ঠিকঠাক মতো এগিয়ে যাবে তো? একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, যদি সংলাপ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হয় তবে নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে। অন্যদিকে সরকারের অন্য মুখপাত্ররা বলছেন ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা নির্বাচনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ! প্রধান উপদেষ্টা, যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করারও উদার আহ্বান জানিয়েছেন। একজন উপদেষ্টা বলেছেন, জরুরি অবস্খার মধ্যেও নির্বাচন হতে পারে! একটি বিষয় শুনে আমার খুব হাসি পেয়েছে। সরকারের নীতি-নির্ধারক কেউ কেউ বিভিন্ন সংশয় সৃষ্টির জন্য দেশের টিভি মাধ্যমের টকশো, কলামিস্টদের লেখাকেও দায়ী করে অঙুলি নির্দেশ করেছেন। মনে রাখা দরকার একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রথম এবং প্রধান শর্ত হচ্ছে সৃজনশীল মত প্রকাশের স্বাধীনতা। একজন রাজনীতিক, কলামিস্ট, লেখক, রাষ্ট্র ও জাতির পক্ষে তার মত প্রকাশ করবেনই। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন ইতিহাস থেকে দেখছি, ক্ষমতাসীন শাসকশ্রেণী যখন নিজের পায়ের তলে মাটির শূন্যতা অনুভব করেন তখন, বৃক্ষ ছায়াকেও দৈবদৈত্য বলে মনে করেন। অথচ কোন ছায়াদৈত্য তো মনুষ্য জাতির কোন ক্ষতি করতে পারে না। পারার কথাও নয়। সম্প্রতি পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই অর্থবহ। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ গেল ৬ মাস আগেও কি বক্তব্য দিচ্ছিলেন তা পত্রপত্রিকায় এখনও খুঁজলে পাওয়া যাবে। তার সেই বাহাদুরি আজ কোথায়? বেনজির ভুট্টো আজ নেই। কিন্তু যে কোনভাবেই হোক পাকিস্তানের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগুচ্ছেন। বেনজিরের দলও আজ ক্ষমতার দোরগোড়ায়। মুসলিম লীগ-পিপিপি জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে আজ একই সমান্তরাল ঐক্য প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছে। উপমহাদেশে তা স্মরণকালের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আর তা সম্ভব হয়েছে শুধু বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কারণে। ফিরে আসি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। গেল ক’দিনে বেশ ক’টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা আলোচিত হয়েছে দেশ-বিদেশে। একজন বিদেশী আইনজীবী মি. পোনকে কথা বলতে দেয়া হয়নি ঢাকায়। পত্রপত্রিকার রিপার্ট অনুযায়ী তাকে প্রায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। কানাডিয়ান এই আইনজীবী বলেছেন, বহির্বিশ্বে এসে তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে মুখ খুলবেন। আরও বিস্তারিত জানাবেন বিশ্ববাসীকে। বর্তমান সরকার হয়তো বলবে­ ‘সো হোয়াট!’ ‘তাতে আমাদের কি আসে যায়!’ সরকারের কিছু আসবে যাবে কি না তা সময়ই প্রমাণ করবে। তবে কথা হচ্ছে বিদেশী সাহায্যনির্ভর একটি উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র-মানবাধিকার ক্ষুণí হলে দাতা দেশগুলো নাক গলাবেই। এমনকি নাক গলাবে শান্তিকামী প্রতিবেশীও। কারণ পাশাপাশি কোন ভখণ্ডে জঙ্গিতন্ত্র, দানবতন্ত্র বিষফোঁড়ার মতো বেড়ে উঠলে তা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য ভয়ের কারণ অবশ্যই। আফগানিস্তানে জঙ্গিতন্ত্রের একচ্ছন্ন দাপট, পাকিস্তানে এর প্রভাব তার প্রমাণ। সেই পাকিস্তান আজ হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। বাংলাদেশে চলছে সুপ্তভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা। দুই আরেকটি ঘটনা খুবই উল্লেখযোগ্য। শেখ হাসিনা খুব অসুস্খ হয়ে পড়েন। তাকে মাত্র কয়েক ঘন্টা চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্খা করা হয়। ডাক্তারা বলছেন শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রয়োজনে তাকে নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসা, বিদেশ থেকে করানোর পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অথচ সরকার তা নিয়ে খেলছে ভানুতির খেল। একজন অসুস্খ রাজবন্দি তার যথার্থ চিকিৎসা পাবেন, আন্তর্জাতিক বন্দি আইন সে নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছে। তারপরও ডাক্তারদের পরামর্শ কেন উপেক্ষা করা হচ্ছে তা নিয়ে নানা জল্পনা ক্রমেই বাড়ছে। অন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। তিনিও বিদেশে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী বলে জানাচ্ছে তার দল। ডাক্তারের পরামর্শ মতো তারও সুচিকিৎসা পাওয়ার কথা। বাংলাদেশ ডিভাইড অ্যান্ড রুলের আড়ালে প্রকৃত পক্ষে কি ঘটছে, তা সাধারণ জনগণের জানার কথা নয়। তবে বিশেষ করে বিএনপির একটি অংশের প্রতি বর্তমান সরকারের পক্ষপাতমলক আচরণ চোখে পড়ছে গোটা দেশবাসীর। আমি আমার লেখায় বার বার বলেছি, জনগণ কোন বিএনপি গ্রহণ করবে, কোন গ্রুপকে ভোট দেবে তা জনগণকেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। চাপিয়ে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বড়জোর বহু ক্ষুদ্র দলের সম্মিলনে জাতীয় সরকার ধাঁচের দুর্বল সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। বিএনপির মান্নান ভঁইয়া গ্রুপের প্রতি নির্বাচন কমিশন কেন পক্ষপাত দেখাচ্ছে সে প্রশ্ন দেশের কৃতী রাজনীতিবিদদেরও। সম্প্রতি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন চ্যানেল আইয়ের এক টকশোতে স্পষ্ট বলেছেন, কমিশন নিরপেক্ষা থেকে দু’গ্রুপকেই বলতে পারতো­ তারা ঐক্যবদ্ধ না হলে তাদের সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না। আমরা দেখছি, বেগম জিয়া, খন্দকার দেলোয়ারের নেতৃত্বের গ্রুপকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। জিয়া পরিবারের অবস্খান এ ব্যাপারে খুব স্পষ্ট। প্রশ্ন উঠছে তাহলে সরকারের এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী সংলাপের নামে কুয়াশা ছাড়িয়ে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও দরে ঠেলে দিচ্ছে না তো? তিন এদিকে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশন সংলাপ আরও বাড়াবে, তা অনুমান করা খুব সহজ। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্খা তো নেয়া হয়নি বরং দায়েরকৃত মামলাগুলোও ঝুলে আছে। এসব অপশক্তি বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট বাঁধার স্বপ্নও দেখছে। স্বপ্ন দেখছে ক্ষমতার ভাগীদার হওয়ার। আসল কথা হচ্ছে; নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব স্বপ্ন এবং চাওয়া-পাওয়ার স্রোতকে আবার জাগ্রত করতে হবে। যদি সেটাই সবার প্রকৃত লক্ষ্য হয় তবে রাষ্ট্র, জনগণ এবং নীতি নির্ধারকরা সে পথে এগুচ্ছেন কি? এ প্রশ্নটি আসছে বার বার। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বর্তমান সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ভারত সফর প্রসঙ্গ। এ কথাটি কারও অজানা নয় বাংলাদেশে ভারতবিরোধী একটি চক্র সবসময়ই কারণে-অকারণে তৎপর। এটা আমরা অনেকেই জানি যে কোন আগ্রাসন আর আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করা আর নীতিহীনভাবে ঢালাও উদ্ভট মন্তব্য করা এক নয়। জেনারেল মইনের ভারত সফরকে উপলক্ষ করে সেই রাজাকার, নব্য রাজাকার এবং গলিত বামপন্থি কিছু রাজনীতিক, লেখক আবারও মুখ বের করতে শুরু করছে কচ্ছপের মতো। এটা কে না জানে, এসব কচ্ছপ প্রজাতি সুযোগ পেলেই গর্ত থেকে মাথা বের করে। সার্বিক পরিস্খিতি নিজ অনুকূলে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। প্রতিবেশী দেশের সেনাপ্রধান একটি দেশ সফর করতেই পারেন। তা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ বটে। কিন্তু যারা এল কে আদভানির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জাল বিস্তার করে তাদের মুখে কি সমালোচনা শোভা পায়? বাংলাদেশে ঘোলাজলে মাছ শিকারির সংখ্যা খুব বেশি। এদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। একাত্তরে লাশের ওপর দিয়ে হেঁটে যারা তাদের পাকিস্তানি-প্রভুদের মন রক্ষা করতে চেয়েছিল, এই চক্রটি এখনও দেশে সক্রিয়। তারা গোপনে বিভিন্ন ষড়ন্ত্রের জাল বুনেই চলেছে। ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’ বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং জনগণকে সংগঠন করার কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। ২০০৮-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই শাণিত চেতনায় জাতিকে আবারও উদ্বুদ্ধ হতে হবে। একটি জাতিসত্তা কখনোই পরাজিত হতে পারে না। আমরা অতীতেও দেখেছি যখনই মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গর্জে উঠতে চেয়েছে তখনই একটি মহল ‘ইন্ডিয়ার’ দোহাই দিয়ে মাঠে নেমেছে চিহ্নিত লেবাসে। আজও এদেরই একটি অংশ মহান মুক্তিযুদ্ধকে পর্যন্ত কটাক্ষ করে চলেছে। আমরা জানি ভোর যতই কুয়াশাচ্ছন্ন হোক সূর্য উঠবেই। বাঙালি জাতি কখনও বিবেকের সঙ্গে প্রতারণা করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। -----দৈণিক সংবাদ ।ঢাকা। ২৯ফেব্রুয়ারি ২০০৮ শুক্রবার, প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৩২
false
rn
বাঁচতে হলে জানতে হবে-৪ ৬০০সাল৬০০সালহযরত আলী(রাঃ) এর জন্ম।তিনি ছিলেন মুহাম্মদের আত্নীয় ও জামাতা।৬০২সালহিউএন-সাঙ জন্ম গ্রহন করেন।(চৈনিক পর্যটক ও পন্ডিত)৬০৩সালবেবিলনের শূন্য উদ্যান নির্মিত হয়।(এটি তৈরী করেন ক্যানডীয় রাজা লেবু চাদঁ লেজার)৬০৫সালফাতিমা(রাঃ) এর জন্ম।(মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ) এর কন্যা)৬০৬সালগৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।হর্ষধন দিল্লীর নিকটবর্তী এক রাজ্যের শাসক হিসেবে অবিভুত হন।৬১০সালকোরআন অবর্তীন শুরু হয়।(১৭আগষ্ট,রমজান মাসে)হযরত মুহাম্মদ নবুওয়াত প্রাপ্ত হন।৬১২সালহামজা(রাঃ) ইসলাম ধর্মে দীক্ষীত হন।৬১৩সালাআয়েশা সিদ্দিকা(রাঃ) এর জন্ম।৬২২সালহিজরী সন গননা শুরু হয়।(হযরত ওমার(রাঃ) এর সময়,১৬ জুলাই,শুক্রবার)কোরায়েশ সম্প্রদায়ের লোকেরা রাসূলকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করার জন্য মেতে উঠেছিল।৬২৪সালবদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।৬২৫সালউহুদ যুদ্ধে হযরত হামজা(রাঃ) শহীদ হন।(হিজরী তৃতীয় সালে)হযরত ইমাম হাছান মদিনায় জন্ম গ্রহন করেন।(হযরত আলীর পুএ।)৬২৭সালমুসলমান ও কুরাইশদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়।৬২৮সালওমর ইবনে আব্দুল আজিজ ইসলামী বিষয়ে প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।হযরত মুহাম্মদ(সঃ)উমরা হজ্ব পালনের জন্য যাত্রা করেন।৬২৯সালহিউএন-সাঙ চীন থেকে যাত্রা শুরু করে ভারতে পৌছান।৬৩২সালহযরত মুহাম্মদ(সঃ)জীবনের শেষ হজ্ব সম্পন্ন করেন।হযরত আবুবকর খলিফা হন।৬৩৩সালহযরত ওমর কুরআনের সংরক্ষন বিষয়ে উব্দিগ্ন হয়ে পড়েন।হযরত আবুবকর(রাঃ) কুরআনের বিচ্ছিন্ন অংশগুলি একত্র করে গ্রন্থকারে লিপিবব্দ করার ব্যবস্থা করেন।ফাতিমা(রাঃ)ইন্তেকাল করেন।৬৩৪সালচীনা পরিব্রাজক হিউএন-সাঙ বাংলায় আগমন করেন।যিশু খিষ্টের জন্মভুমি জেরুজালেম-ক্রুসেড বা ধর্ম যুদ্ধ হয়।আইহোলি শিলালিপিতে কালিদাসের খ্যাতির উল্লেখ আছে।৬৩৭সালপর্যন্ত শশাঙ্ক সাধীন ভাবে গৌড় রাজ্য শাসন করেন।৬৪১সালজেরুজালেমে খলিফা হযরত ওমর(রাঃ)আল-আকসা্ মসজিদ নির্মান করেন।(এক সাথে ৩২ হাজার মানুষ এখানে নামাজ আদায় করতে পারতো।হযরত বিলাল ইন্তেকাল করেন।৬৪৫সালহিউএন-সাঙ চীনে প্রত্যাবতর্ন করলে তাকে বিপুল সংবধর্না প্রদান করা হয়।৬৪৭সালশাষক হর্ষবধন মৃত্যুবরন করেন।৬৫০সালবাংলা ভাষার প্রথম লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায়।(ডঃ মুহাম্মদ শ হী দুল্লার মতে।)৬৫২সালআবুজর গিফারী(রাঃ) ইন্তেকাল করেন।(সাহাবী)৬৬১সালহযরত আলী(রাঃ) গুপ্ত ঘাতকের ছুরিকাঘাতে শহীদ হন।ঊমাইয়া বংশ মুসলিম বিশের ক্ষমতায় আসে।৬৬২সালহযরত মুহাম্মদ(সঃ) হিযরত করেন।(২৪শে সেপ্টেম্বর)।৬৬৪সালপন্ডিত হিউএন-সাঙ চীনে মৃত্যুবরন করেন।৬৬৮সালপর্যন্ত দক্ষিন কোরিয়া রাজ বংশের অধীনে ছিল।৬৭০সালহযরত আলীর ছেলে হাসানকে বিষপানে হত্যা করা হয়েছিল মদীনায়।৬৭৮সালহযরত আয়েশাসিদ্দিকা(রাঃ)ইন্তেকাল করেন।৬৮০সালহযরত আলীর ছেলে হুসাইন কারবালায় যুব্ধে শহীদ হন।(দিনটি ছিল ১০ মহরম)।
false
mk
শান্তি ও বাংলাদেশ শান্তি, সম্প্রীতি ও অগ্রগতির সার্বিক ধারা অব্যাহত রাখা একটি দেশের জন্য সর্বাংশেই জরুরি। আর তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জারি রাখারও বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, শান্তির নিরিখে ভারতের থেকে অনেকটাই এগিয়ে বাংলাদেশ। এ ছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলংকা, মিয়ানমার কিংবা ভুটানেও ভারতের চেয়ে অনেক বেশি শান্তি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল পিস ইনডেক্স। প্রসঙ্গত আমরা উল্লেখ করতে চাই, প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক সংস্থা 'ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস' নিয়মিতভাবে গবেষণা, সমীক্ষা বা চর্চা চালায় সারাবিশ্বেই। আর শুধু জাতিসংঘই নয়, অনেক সামনের সারির বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এই সংস্থাটি। তারা নিয়মিত প্রকাশ করে গ্লোবাল পিস ইনেডেক্স বা বিশ্ব শান্তি সূচক। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিকেন্দ্রিক এই সংস্থার গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০১৬-তে দেখা যায়, ১৬২টি দেশের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী 'বিশ্ব শান্তি সূচক' ভারত কম শান্তির দেশের তালিকায় আছে। আর তার থেকে আরও পিছিয়ে পাকিস্তান। পাকিস্তান অতি বিপজ্জনক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বলেও সূচকে বলা হয়েছে। এমন অবস্থায় যখন জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ রয়েছে মোটামুটি বা মাঝারি রকমের শান্ত দেশের তালিকায়, তখন এই চিত্র সামগ্রিক প্রেক্ষাপটেই ইতিবাচক বলে আমরা মনে করি। আমরা বলতে চাই, এটা মনে রাখা সমীচীন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শান্তির সূচকে অনেক দূর পর্যন্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। আর সেই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই। তথ্য মতে জানা যায়, ২০১৬-র বিশ্বশান্তি সূচকে ১৬৩টি বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম। যেখানে ভারতের অবস্থান ১৪৩-এ রয়েছে। তবে এটিও উল্লেখ্য, সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ নেপাল ও ভুটান এগিয়ে রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আফগানিস্তানে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অবস্থান ১৬০তম। যার পরেই রয়েছে সূচক অনুযায়ী সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির দেশ ইরাক।আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সরকার-সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেয়া জরুরি, হিংসা, হত্যা, অসামরিক নাগরিকের হাতে অস্ত্র, দেশের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ ২১টি বিষয় মূল্যায়ন করে এই র্যাং কিং এবং সূচক তৈরি করা হয়। ফলে এই বিষয়গুলোকে বিচার বিবেচনা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক পরিস্থিতি উন্নয়নে সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প থাকা উচিত নয়। যখন ১৬২ দেশকে নিয়ে সূচক তৈরি করার ক্ষেত্রে শান্তি ও নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দ্বন্দ্বের সঙ্গে সন্ত্রাসী তৎপরতাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তখন এই বিষয়গুলোতে আরও বাংলাদেশের অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলেই আমরা বিবেচনা করতে চাই। মনে রাখা সঙ্গত, এই পরিস্থিগুলোকে খতিয়ে দেখে যত বেশি অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ততই তা দেশ ও মানুষের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যা বসবাস থেকে শুরু করে সবকিছুর ক্ষেত্রেই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা মনে করি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি যদি উলি্লখিত ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন এবং দেশের যে কোনো ধরনের অস্থিরতা বা সহিংস পরিস্থিতি কিংবা সন্ত্রাসবাদ রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে সুফল পাওয়া সম্ভব। যে দেশে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে এমনকি একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাসের সংস্কৃতি বিদ্যমান, সেই দেশে শান্তির সূচকে আরও অগ্রগতি অর্জন করবে এমনটি আশা করা অযৌক্তিক নয়। ফলে বিভিন্ন সময়ের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে এ ধরনের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধে আরও কঠোর হতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আরও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে পরিচিত হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৫
false
fe
যদি অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সুবিচার না হয় যদি অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সুবিচার না হয়ফকির ইলিয়াস==========================================নিউইয়র্ক আমার খুব প্রিয় নগরী। এই নগরে তিরিশ বছরের কাছাকাছি সময়, আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। এই নগরেই আমি যখন বাকরুদ্ধ হয়ে যাই, তখন বুঝতে পারি আমি আর ঠিক নেই। আমার বুদ্ধি-ধ্যান কাজ করছে না। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড আমাকে স্তম্ভিত করেছে। অভিজিৎ আমার অনুজের মতো। তার সব কথার সঙ্গে আমার মতের মিল ছিল না। কিন্তু আমি তার মতের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতাম। তাকে সম্মান করতাম। তিনি এই আমেরিকা থেকেই পিএইচডি করেছিলেন। ড. অভিজিৎ রায় পরিচয় দিতেন না নিজেকে। বলতেন নিজেকে- শব্দচাষি।২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ শনিবার রাতে নিউইয়র্কে একুশের বইমেলায় ‘মুক্তধারা’ যে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল, সেখানে আমার কবিতা পড়ার কথা ছিল। আমি কবিতা পড়তে পারিনি। বলেছি- আমার বোন বন্যা যখন রক্তাক্ত হয়ে ঢাকার রাজপথে হাঁক দিয়েও কোনো সাহায্য পায় না- আমার কবিতা পড়ে কী হবে! আমার অনুজ অভিজিৎ-এর লাশ যখন রাস্তায় পড়ে থাকে- তখন আমার কবিতা পড়ে কী হবে! কথা বলেছি। খুব কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করেছি। বলেছি- অভিজিৎ রায় মার্কিন নাগরিক ছিলেন। আমাদের ট্যাক্সের ডলারে পরিচালিত মার্কিনি গোয়েন্দাদের বাংলাদেশে তদন্তের সুযোগ দিতে হবে। দাবি এই একটাই। যারা এই প্রবাসে বসেও আমাদের নমস্য বুদ্ধিজীবী ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে স্ট্যাটস দেয়- তাদের চিহ্নিত করতে হবে।অভিজিৎ রায় আটলান্টায় থাকতেন। নিউইয়র্কে মুক্তধারার বইমেলায় তিনি স্বস্ত্রীক আসতেন প্রায় প্রতি বছর। আড্ডা হতো। কথা হতো। তিনি লিখতেন তার মতো করে। তার লেখার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল, তিনি ছিলেন প্রখর ধীশক্তি সম্পন্ন লেখক। তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী লেখক। তিনি তার যুক্তির সপক্ষে প্রচুর তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারতেন। লেখা নিয়ে খাটাখাটি করতেন অনেক। ধর্ম-বিজ্ঞান-যুক্তি-বিশ্বাস-অবিশ্বাস ছিল তার লেখার মূল উপপাদ্য বিষয়। একজন লেখকের লেখার একটি মূল থিম থাকে। থাকতেই পারে। বিশ্বসাহিত্য পড়ে আমরা সেই অভিজ্ঞতাই পাই। তাই আমি তাকে সেই নজরেই দেখতাম। তিনি তার অবস্থান থেকে কাজ করবেন। আমার স্থান থেকে আমি।বাংলাদেশে এর আগেও এমন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। শাহ এ এম এস কিবরিয়া, হুমায়ুন আজাদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ব্লুগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলা ভাষার একজন লেখক হিসেবে নিজেকে ছি দিতে ইচ্ছে করে খুব। এই বাংলাদেশ শাহ কিবরিয়া হত্যার বিচার শেষ করতে পারেনি। পারেনি হুমায়ুন আজাদ হত্যার বিচার করতে। মৌলবাদীরা দেখাচ্ছে তাদের ফণা। আর প্রগতিবাদীরা লেজ গুটিয়ে মার খাচ্ছে! আমরা অনেকবার বলেছি, এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? কাজ হয়নি। আমরা কি প্রতিরোধ করতে ভুলে গেলাম? আমরা কি একাত্তর ভুলে গেলাম? ভুলে গেলে তো বাঁচতে পারবো না। বড় মর্মান্তিক ছিল সেই দৃশ্য। ঢাকার রাস্তায় ওই রাতে দাঁড়িয়ে লোকজন রক্তাক্ত বন্যাকে দেখছে। পাশে পড়ে আছে অভিজিতের দেহ। কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। মানবতা, সাহায্যের হাত কি এতোই খাটো হয়ে গেল? আমরা কি এতোই অমানুষ হয়ে যাচ্ছি দিনে দিনে? অভিজিৎ প্রাণের টানে বইমেলায় গিয়েছিলেন। সেটা তার জন্মমাটি। বন্যা আহমেদ যে দেশে জন্মেছিলেন- সেখানেই বেড়াতে গিয়েছিলেন। তারা এভাবে আক্রান্ত হওয়ার জন্য তাদের মেধা ও মনন উজাড় করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে?প্রতিবাদের ভাষা আমরা ভুলে গেছি। কথা বলার আর কি আছে। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু সংবাদের খবর শুনে স্তম্ভিত হয়েছে গোটা বিশ্ব। তিনি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন- সেই আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট (বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়) বিবৃতি দিয়েছে। নিন্দা জানিয়েছে খুব কঠোর ভাষায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ চাইলে এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে সহায়তা দিতে প্রস্তুত দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র জেন সাকি এ সব কথা বলেছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতেই অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র। এই হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও কাপুরুষোচিত অভিহিত করে জেন সাকি বলেন, অভিজিৎ রায়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডে তীব্র নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।অভিজিৎকে একজন সাংবাদিক, মানবতাবাদী, স্বামী ও বন্ধু অভিহিত করে তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানান জেন সাকি। তিনি বলেন, জঘন্য সহিংসতার মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে তাকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এটা কেবল একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, বাংলাদেশের সংবিধানে সংরক্ষিত সর্বজনীন আদর্শ এবং বুদ্ধি ও ধর্মীয় আলোচনার স্বাধীনতার বিষয়ে দেশটির গর্ব করার মতো ঐতিহ্যের প্রতি এটা কাপুরুষোচিত আঘাত। এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ চাইলে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহায়তা দিতে তারা প্রস্তুত। মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের খবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।বাংলাদেশে লেখক-সাংবাদিক আক্রান্ত হলেও সময়মতো সে সব ঘটনার বিচার না হওয়াই অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পথ করে দিয়েছে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’-সিপিজে। মুক্ত সাংবাদিকতার পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে আসা সংগঠনটির পক্ষ থেকে দ্রুত অভিজিতের হত্যাকারীদের ধরে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত এবং বিচারের আওতায় আনতে সরকারের জোরদার তদন্ত করা উচিত, এ কথা বিবৃতিতে বলা হয়েছে। অভিজিৎ হত্যায় উদ্বেগ জানিয়ে সিপিজের এশিয়া বিষয়ক প্রোগ্রাম সমন্বয়ক বব ডায়েটজ বলেছেন, বাংলাদেশে হামলাকারীদের বিচার না হওয়ার যে নজির রয়েছে তারই ফলে অভিজিতের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণের ঘটনায় কারোর বিচার না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যম কর্মীদের হত্যার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। সিপিজের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যারা ব্লুগে বা অন্য কোনো মাধ্যমে লিখেছেন তারা হুমকির মুখে রয়েছেন। ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের সময় ব্লুগারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এতে বলা হয়, সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্লুগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যা করে ধর্মের নামে সন্ত্রাসকারীরা। ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য এখনো কেউ শাস্তি পায়নি। বইমেলা থেকে ফেরার পথে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক অভিজিৎ ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর যেভাবে হামলা হয়, সেভাবেই ১১ বছর আগে হামলা হয়েছিল লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বাংলা একাডেমি ও টিএসসির মাঝামাঝি এলাকায় হামলার শিকার হন হুমায়ুন আজাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। ওই হত্যাকাণ্ডের পর ১১ বছর পার হলেও এখনো বিচার শেষ হয়নি।অভিজিৎ রায়কে হত্যার মধ্য দিয়ে খুনিরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছে, তা তারা পারবে না। কারণ এই চলমান সময়ে লাখ লাখ তরুণ-তরুণী একেকজন অভিজিৎ হয়ে নিজেকে গড়ে তুলছে। এটা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন ভাষায়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। বিশেষ করে মুঠোফোন, ফেসবুক, টুইটার, ব্লুগ, অনলাইন মিডিয়া, ওয়েব ম্যাগাজিন ইত্যাকার দ্রুত শক্তিসম্পন্ন মিডিয়াগুলো মানুষকে সচেতন, বিবেকবান করে তুলছে।আগেই বলেছি, অভিজিৎ রায় আমেরিকার নাগরিক ছিলেন। তাই তার হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায় মার্কিন সরকারের ওপরও বর্তায়। আমরা জানি, আমেরিকা এমন শক্তি, যারা পানামার প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল নরিয়েগাকে ধরে নিয়ে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারা চাইলে সবই পারে। একজন আমেরিকার নাগরিককে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তাই আমেরিকার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। আমেরিকা ইতোমধ্যেই তাদের গোয়েন্দা পাঠানোর কথা বলেছে। বাংলাদেশও রাজি হয়েছে। আমরা এর প্রয়োগ চাই। আমরা চাই- দ্রুত অপরাধীদের ধরা হোক।আজ যদি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা না যায়, তাহলে দেশে বিদেশে অবস্থানরত কোনো মুক্তচিন্তার লেখক-বুদ্ধিজীবীই এদের হাত থেকে রেহাই পাবে না। যারা যুক্তি দিয়ে পারে না তারাই রক্ত নিয়ে খেলে। আজকের বাংলাদেশে যে হোলিখেলা মৌলবাদীরা শুরু করেছে তা থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজেও যে নিরাপদ নন- তাতো তিনি বারবার নিজেই বলেছেন। তাহলে এর সুরাহা কী?রাফিদা আহমেদ বন্যা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছেন। জখম বন্যা আহমেদকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে আমেরিকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। না, অভিজিৎ আর ফিরতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্রে। ঘাতকরা অভিজিৎকে হুমকি দিয়েই যাচ্ছিল। তিনি তা পরোয়া করেননি। তিনি লিখেছেন তার চিন্তা-চেতনা নিয়ে। তার মতের সঙ্গে অমিল হলে তাকে মেরে ফেলতে হবে? এটা কোনো ধর্ম গ্রাহ্য করে?আমরা অভিজিৎ হত্যার সুবিচার চাই। আমরা সব নির্মম হত্যাকাণ্ডের অশুভ পরিকল্পনার মূলোৎপাটন চাই। এ জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এত নিরাপত্তা বলয়ের দোহাইয়ের পরও কীভাবে অভিজিৎকে খুন করা হলো এই বিষয় জাতির সামনে তুলে ধরা হোক। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০১৫ প্রকাশিত
false
mk
মধ্যরাতের কাজকারবার জহির সাহেব আমার নিকট প্রতিবেশী, দেখা হয় কম। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। তবে সপ্তাহের এক দিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদের গেটে দেখা হয়। বেশ অনেকক্ষণ ধরে কথা হয়, যার বেশির ভাগই রাজনীতি। জহির সাহেব বঙ্গবন্ধুর একজন বড় ভক্ত। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে সব সময় টেনশনে থাকেন। তাঁর ধারণা, শেখ হাসিনার জীবন ও ক্ষমতা কোনোটাই নিরাপদ নয়। প্রথমটা বুঝি, পরেরটা নিয়ে তাঁর সঙ্গে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তিতর্ক হয়। গত শুক্রবার যথারীতি জহির সাহেব নামাজ শেষে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, 'বলছিলাম না, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এখন তো আন্ধার রাইতের কাজকারবার শুরু হয়ে গেছে।' জহির সাহেবের বাড়ি কুমিল্লায়। মাঝেমধ্যে তাঁর কথায় আঞ্চলিক টান আর শব্দ চলে আসে। না বোঝার ভান করে বলি, 'আন্ধার রাইতের কাজকারবার মানে?' বলেন, 'কেন, দেখেননি গত রাতে একদল সাবেক ও বর্তমানে কর্মরত আমলা বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে গোপনে দেখা করতে গিয়েছিলেন?' বলি, এতক্ষণে বুঝলাম। তাঁকে বলি, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তো তাঁর ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার দিন থেকে চলে আসছে। এটি নতুন কিছু নয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তাঁকে তো শেষই করে দিতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা এত দিন এসব ষড়যন্ত্র সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। সামনে কী হয় তা আল্লাহ জানেন। জহির সাহেব চিন্তামুক্ত হলেন বলে মনে হলো না।এবারের ষড়যন্ত্রটা বাংলাদেশে নয়, সুদূর বিলাতেই শুরু হয়েছে বলে ধারণা করি। এমনিতে বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি তারেক রহমান লন্ডনে একটি বিকল্প কাশিমবাজার কুঠি খুলেছেন। সেখান থেকে নিয়মিত বিরতি দিয়ে তিনি জাতির উদ্দেশে নানা ফতোয়া জারি করেন। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে উড়ে গিয়ে তাঁর দলের সিনিয়র নেতারা তাঁর কাছ থেকে নির্দেশ নিয়ে আসেন। গত মঙ্গলবার ২ ডিসেম্বর লন্ডনে তাঁর সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। এর আগে খোকা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে তারেক রহমানের সঙ্গে শেষ বৈঠক করেন। খোকা নিজে বেশ কিছু দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। নিয়মিত লন্ডন-নিউ ইয়র্ক করে বেড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৫ ডিসেম্বর)। অনেক সুশীলও তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেন। সুশীলদের সম্পর্কে জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব অঞ্জন রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'দুই শতক আগে যখন সুতানটি ঘাটে সাহেবদের নৌকা ভিড়ত, তখন কিছু মানুষ মোসাহেবি করার জন্য নৌকার সামনে করজোড়ে গিয়ে দাঁড়াত। আর এখন যখন উড়োজাহাজে বিদেশি কম বেতনের চাকরবাকর আসেন, তখনো কিছু মানুষ দুহাত ডেটল সাবান দিয়ে ধুয়ে বাড়ির আয়নায় করজোড় করা প্র্যাকটিস করে সেই বিদেশিদের সামনে যান। আগে যাদের বলা হতো মোসাহেব, এখন তাদের বলা হয় সুশীল সমাজ।' এ রকম সুশীল সমাজের বেশ কিছু বাংলাদেশি সদস্য সম্প্রতি লন্ডনে গিয়েছিলেন হাউস অব লর্ডসের কিছু ক্ষমতাহীন সদস্যের কাছে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরতে। এই দলে সরকারি দলের এবং বিএনপির কিছু নেতা ও তাঁদের ভাবাদর্শে দীক্ষিত কিছু সুশীলও ছিলেন। বাঙালির সমস্যা হচ্ছে, সাবেক প্রভুরা ডাক দিলে আর ঘরে থাকতে পারে না। সেই সুশীলদের মধ্যে দুজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির একজন ছিলেন ব্যারিস্টার, যাঁকে টিভিতে প্রায়ই দেখা যায়। দ্বিতীয়জন একজন স্বঘোষিত নাস্তিক। হাউস অব লর্ডসের বাছাই করা কয়েকজন সদস্যের সামনে নিজেদের দলের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরার পর তাঁরা বেশ কয়েকটি জাতীয়তাবাদী সেমিনারে বক্তব্য দেন। ব্যারিস্টার মহোদয় শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে বলেন, 'বাম পচলে লীগ হয় আর লীগ পচলে নাস্তিক।' তাঁর মতে, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বাংলাদেশে ক্রুসেড চলছে; ধর্মযুদ্ধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে লেগেছে, ছদ্মবেশে তারা ধর্মযুদ্ধ চালাচ্ছে। বাংলাদেশের চারদিকে ভারত আর কাফেররা; আর মাঝখানে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। নাস্তিক ও ইসলামের বিরোধীদের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।...জাতীয়তাবাদী শক্তির বাংলাদেশের একমাত্র মানুষটিকে (বেগম জিয়া) হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে, ঘরছাড়া করেছে। সংবিধান বাতিল করে জাতির পিতা ও এসব চেতনা (মুক্তিযুদ্ধের) বাতিল করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।' ব্যারিস্টার মহোদয় আরো বলেন, 'বারুদ না থাকলে আন্দোলন কোনো কাজে আসবে না। (বেগম জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত?) একজন কীর্তিমান নেতা আসবেন, যিনি জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির কথা বলবেন। যেকোনো দিন জাতীয়তাবাদী ও ইসলামের শক্তির বিজয় ঘটবে তাঁর নেতৃত্বে।' (তারেক রহমান)।স্বঘোষিত নাস্তিক সুশীল একই অনুষ্ঠানে বলেন, 'ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়তে না পারলে ১৭৫৭ সালের (পলাশীর যুদ্ধ) মতো ২০০ বছরের গোলামির মধ্যে পড়তে হবে বাংলাদেশের জনগণকে।' তিনি ইসলামের রাজনৈতিক, সামাজিক ও দার্শনিক দিক তুলে ধরেন। বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে বর্তমান সংবিধান বাতিল করতে হবে। তাঁর মতে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছিল এ কারণেই যে দলের ভেতরে কিছু মীরজাফর ঢুকেছে। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির আহ্বানও জানান। এ বিষয়ে তাঁর এককালের একজন সুহৃদের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি অকপটে বলেন, এই লোক তো বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধেও বিশ্বাস করেন না। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলাটা তাঁর স্বভাবজাত ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।এসবের রেশ না ফুরাতেই গত বৃহস্পতিবার রাতে গোপনে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে দেখা করতে গেলেন প্রায় ৩০ জন আমলা, যাঁদের মধ্যে ছিলেন ৯ জনের মতো কর্মরত কর্মকর্তা। কমবেশিও হতে পারে। তাঁরা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ঢোকেন রাত ৭টা ৩৫ মিনিটে। আর একদল ধানমণ্ডির একটি বাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন পরে যাবেন বলে। তবে নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে তাঁদের সেই রাতে আর নেত্রীদর্শন হয়নি। খালেদা জিয়া তাঁর কার্যালয়ে আসেন রাত ৯টার পর। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই আমলাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথা হয়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের সূত্র মতে, খালেদা জিয়া বলেন, তিনি যখন সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেবেন, তাঁরা যেন সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। এর আগে বুধবারও নাকি এমন একটা বৈঠক হয়েছে (কালের কণ্ঠ, ৩ ডিসেম্বর)। খালেদা জিয়া সম্ভবত মনে করছেন, তাঁর সময় ফুরিয়ে আসছে, কারণ আদালতে চলমান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও দুর্নীতির মামলায় তিনি ও তাঁর পুত্র তারেক রহমান দণ্ডিত হয়ে যেতে পারেন এবং তা যদি হয় তাহলে দল হিসেবে বিএনপির অস্তিত্বও জামায়াতের মতো হুমকির সম্মুখীন হবে। সুতরাং তার আগে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হোক আর অন্য কোনো উপায়ে হোক, শেখ হাসিনা সরকারকে বিদায় করতে হবে। ঠিক এমন একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৬ সালে উত্তরায় খালেদা জিয়ার সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের ব্যবসায়িক দপ্তরে, যা উত্তরা ষড়যন্ত্র হিসেবে পরিচিত। গণমাধ্যমের কল্যাণে সেই ষড়যন্ত্রও ভেস্তে গিয়েছিল। এবার খালেদা জিয়ার টার্গেট জানুয়ারি থেকে দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করে মার্চ মাসে সরকারকে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য করা। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল অবশ্য এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়েছে তা দুর্বল কণ্ঠে অস্বীকার করে আসছেন, যদিও দলের অন্য নেতারা স্বীকার করছেন, এ রকম একটা বৈঠক হয়েছে।বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেছি, বৃহস্পতিবারের বৈঠকের প্রসঙ্গ এলেই জাতীয়তাবাদী সুশীলরা ১৯৯৬ সালের 'জনতার মঞ্চের' কথা তুলে আনছেন। ১৯৯৬ সালের পরিস্থিতি আর ২০১৪ সালের পরিস্থিতি এক নয়। ১৯৯৬ সালে দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে একটি গণবিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে দেশে তেমন কোনো পরিস্থিতি নেই। মানুষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জামায়াত-বিএনপির আন্দোলনের নামে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংস যুদ্ধের রূপ দেখেছে। সাধারণ মানুষ আন্দোলনের নামে সেই ভয়াবহ অবস্থায় আর ফিরে যেতে চায় না। প্রজাতন্ত্রের বেতনভুক কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে গোপন বৈঠক করে সার্ভিস রুল ভঙ্গ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, তদন্তে যাঁদের এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খালেদা জিয়া তো ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে 'জনতার মঞ্চের' সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করাসহ অনেককে জেলে পুরেছিলেন।বৃহস্পতিবারের ঘটনার পূর্বে কাঠমাণ্ডুতে সার্ক সম্মেলন শেষে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাননি। রওশন এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। যাওয়ার দিন কিছু পরিচিত জাতীয়তাবাদী ঘরানার সুশীলের সঙ্গে খানাপিনা করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ নিশাকে দুই আনার মন্ত্রী আখ্যায়িত করায় অনেকেই বেশ কষ্ট পেয়েছেন। এটা ঠিক, সৈয়দ আশরাফ মিস দেশাইকে আরো একটু সম্মানের সঙ্গে সম্বোধন করতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবে নিশা ২৩ জন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন। পদটি আমাদের ডেপুটি সেক্রেটারি পর্যায়ের একটু ওপরে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারকে হেদায়েত করার জন্য তিনি একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁর এবারের আসা-যাওয়া ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের আট ঘণ্টার বাংলাদেশে যাত্রাবিরতির কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। অথচ এর আগে বঙ্গবন্ধু যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দেখা করতে গেলে তিনি সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে অস্বীকৃতি জানান। কিসিঞ্জার আট ঘণ্টা সফর শেষে তিন মিনিটের একটি সংবাদ ব্রিফিং করেন। সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বিমানবন্দরের দিকে রওনা হন। তাঁর ফিরে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের একটি অংশ গোপনে সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন বলে প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক ক্রিস্টোফার হিচেন্স তাঁর সাড়াজাগানো গ্রন্থ 'দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার'-এ উল্লেখ করেছেন। নিশা সংক্ষিপ্ত সফর (নাকি যাত্রাবিরতি) শেষে ফিরে যাওয়ার পরপরই সরকারি কর্মকর্তাদের খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ, মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়ে এরশাদের হম্বিতম্বি, এর আগে সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির লাগামহীন বক্তব্য চিন্তার বিষয় হতেই পারে। হিচেন্স আরো বলেছেন, ১৯৭১ সালে নিক্সন-কিসিঞ্জার জুটি 'সিক্রেট জেনোসাইড ডিপ্লোম্যাসি' হাতে নিয়েছিলেন। '৭১-পরবর্তী সময়ে এটি রূপান্তরিত হয়েছিল 'সিক্রেট ডিস্ট্যাবিলাইজ ডিপ্লোম্যাসি'তে। ১৯৭৫ সালে তা সফলও হয়। নিশা দেশাই বা যুক্তরাষ্ট্র কি কিসিঞ্জারের সেই 'সিক্রেট ডিস্ট্যাবিলাইজ ডিপ্লোম্যাসি' প্র্যাকটিস করছেন? তা যদি হয় তাহলে 'আন্ধার রাইতের কাজকারবার' নিয়ে সরকারের বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন আছে।
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৫৭ ১. বহুদিন ধরে লিখি না আমার প্রবাসজীবনের এই একঘেয়ে অণূপাখ্যান [অণু + উপাখ্যান]। লেখার মতো অনেক কিছু ঘটলেও হয়তো সেগুলো সব লেখার মতো নয়, কিংবা খুব দৌড়ের উপর ছিলাম, কিংবা ভেবেছি, লিখে কী হবে। সবকিছুই শেষ পর্যন্ত জলের ওপর দাগ কাটার মতো অর্থহীন, একটা অন্তহীন রসিকতার মাঝপর্যায়ে থাকা, যার পাঞ্চ লাইন মাঝে মাঝে বেল্টের নিচে হিট করে জানান দেয়, সে আছে আশেপাশেই। ২. আমার ফ্ল্যাটমেট পাঠান সৈয়দকে নিয়ে ভালোই মুসিবতে আছি। ছোকরার সবকিছুই ভালো, কেবল সে অতিশয় অপরিছন্ন। আমার ছিমছাম রান্নাঘরটাকে সে সাফল্যের সাথে গ্রাউন্ড জিরো বানিয়ে রেখেছে। প্রথমে মিষ্টি করে বুঝিয়ে দেখেছি, কাজ হয় না। অতিষ্ঠ হয়ে একদিন তাকে ঝাড়ি দিলাম। মুখ কালো করে সেদিনের মতো রান্নাঘরটা পাকসাফ করলেও দু'দিন বাদে আবার সেই আগের মতোই। কারো যদি সম্ভাবনা থাকে, কোন পাঠানের সাথে এক ফ্ল্যাটে বসবাস করার, তাহলে খুব খিয়াল কইরা। প্রশ্ন করতে পারেন, কেন অভিযোগ করি না কর্তৃপক্ষের কাছে। এর উত্তর হচ্ছে, এক, এখানে এক কালা আদমীর নামে আরেক কালা আদমীর অভিযোগ ততটা গুরুত্বের সাথে নেয়া হয় না, দুই, আমি চেষ্টা করি নিজের সমস্যা যতদূর সম্ভব নিজেই সমাধান করতে, তিন, ওকে খেদালে ওর চেয়ে খতরনাক আরেকটা এসে জোটার সম্ভাবনা প্রবল। ৩. সৈয়দের সাথে আমার সাংস্কৃতিক তফাৎ বোধহয় ওখানেই, আমাকে কেউ মিষ্টি করে কিছু বললে আমি সাধারণত তা মেনে নিই বা মেনে চলি। কিছু ব্যতিক্রম সবসময়ই থাকবে, সেগুলো ধর্তব্যে রাখছি না। একদিন দুই পিচ্চিনি এসে হাজির, বারো তেরো বছর বয়স হবে। তারা একটা জরিপ করছে, আমি তাতে অংশগ্রহণ করলে ভালো হয়। ঘরে তাদের বসাতে গিয়ে দেখি সৈয়দ রান্নাঘরটাকে লঞ্চের ইঞ্জিনরুমের মতো বানিয়ে রেখেছে। প্যাসেজে দাঁড় করিয়েই তাদের জরিপের উত্তর দিলাম। মাদকাসক্তদের নিয়ে আমার ধ্যানধারণার ওপর জরিপ। জরিপ শেষে তারা জানালো, তারা অনাথ এবং প্রাক্তন মাদকাসক্ত। তারা আর অনাথাশ্রমে থাকতে চায় না, কিন্তু স্টেইট তাদের যা আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য (মাসে ৯০ ইউরো)। আমি তাদের সাহায্য করতে পারি, যদি একটা ম্যাগাজিনের সাবস্ক্রাইবার হই। আমি নিজেই মোটামুটি ফকির, গীটার হাতে শনিবারে ফ্রিডরিশপ্লাৎসে নেমে দীনের নবী মোস্তফা বলে হুঙ্কার দিতে পারি যে কোন এক সপ্তাহান্তে, কিন্তু বাচ্চা দুইটা আমাকে মিষ্টি কথা বলে ভজিয়ে ফেললো। যাবার আগে দুইজনকে চকলেট খেতে দিলাম, বললাম আমাদের দেশে ঘরে কেউ এলে মিষ্টি কিছু খেতে দেয়া হয়, তারা মোটামুটি অভিভূত হয়ে হাজারো ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলো। মনে মনে বললাম, তুফানে বেঁধেছি লুঙ্গি, বাতাসে কী ভয়? ফোন কোম্পানি থেকে এক সন্ধ্যায় এক ছেমরি ফোন করে লোভ দেখানো শুরু করলো, মহাশয়, আপনি কি জানেন কী অভূতপূর্ব এক সুযোগ আপনার জন্যে অপেক্ষা করে আছে? আপনি আমাদের ঐ প্যাকেজটা গ্রহণ করলে এক্স সংখ্যক এসমএমএস মাসে ফ্রি করতে পারবেন। আমি টের পেলাম, ফোন কোম্পানি আমার প্যান্ট খোলার চেষ্টা করছে। বললাম, খুবই জোস সংবাদ, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার এসএমএস করতে বিরক্ত লাগে। সে তারপরও ফোনে কোম্পানির হয়ে আমার জিপার খুলতে লাগলো, এসএমএস ভালো না লাগলে ওটা বাদ দিয়ে দিন। এই প্যাকেজে আপনি তাহলে মাসে ওয়াই ইউরো না দিয়ে জেড ইউরো দেবেন, আর যে কোন নেটওয়ার্কে মাসে ডাব্লিউ সংখ্যক মিনিট ফ্রি কথা বলতে পারবেন। মনে মনে বললাম, ফ্রি হইলো ক্যাম্নে, জেড ইউরো কি তোর বাপ দিচ্ছে? আমি যতই না না করি, সে ততই আমার প্যান্ট আন্ডু খুলে আমাকে নাঙ্গা করে। অবশেষে দেখলাম আমি হতাশ হয়ে রাজি হয়ে যাচ্ছি। ফোন কোম্পানিও প্যাকেজখানা আমাকে গছিয়ে পেছন মেরে শুভসন্ধ্যা বলে বিদায় নিচ্ছে। ঠিক করলাম, এরপর ফোন কোম্পানির কোন মেয়ে বাড়ি বয়ে এসে খাটে না উঠলে কোন প্যাকেজেই রাজি হবো না, সে যতই সুবিধাজনক হোক না কেন। চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন। এরপর একদিন দুপুরে ভোনহাইমের দরজায় বোতাম টিপছে কেউ। ইন্টারকম তুলে শুনি এক মহিলা জানতে চাইছেন, মহাশয় কি আরবদেশের লোক? মেজাজটা বিলা হয়ে গেলো, বললাম, না, আমি বাংলাদেশের লোক। তিনি আরো খুশি হয়ে বললেন, একটা জরুরি ব্যাপারে আলোচনা করা দরকার, আসতে পারি ওপরে? উচিত ছিলো জরুরি ব্যাপারের মায়রে বাপ বলে তাঁকে নিরুৎসাহিত করা, কিন্তু ভদ্রতার অবতার হয়ে তাঁদের ওপরে আসতে দিলাম। দুই মাঝবয়েসী মহিলা এসেছেন কোথায় যেন যীশুর মহিমাকীর্তন হচ্ছে, তা নিয়ে আমাকে ভজাতে। আমি সবিনয়ে জানালাম, আমি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি বটে, কিন্তু পরবর্তীতে আমার কাছে মনে হয়েছে ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করা আমার পক্ষে আর উচিত হবে না, তাই তাঁরা যদি আমাকে ক্ষমা করেন ... মহিলা দুইজনও ঘাগু, তাঁরাও তৎক্ষণাৎ অন্য সব প্রলোভন দেখাতে শুরু করলেন, ধর্ম ভুল হতে পারে, ঈশ্বর তো আর ভুল নয় ... ইত্যাদি। আমি বললাম, ঈশ্বরের সাথে আমার সম্পর্ক ঠিক ভালো নয়, আমরা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি, শুনে তাঁরা আরো খুশি, বাহ, এই অভিমানের নিরসনের জন্য সেই ভ্যাজরভ্যাজর অনুষ্ঠানই নাকি হতে পারে প্রথম ধাপ। আমি মনে মনে বললাম, আন্টি, আপনার ডাগর মেয়েটাকে যদি পাঠাতেন এই দাওয়াতে, এত কথা খরচ করা লাগতো? দুইজন একসাথে ঈশ্বরের নাম ধরে ডাক পাড়তাম। তা না ... যা-ই হোক, ভদ্রতার যুদ্ধে আমাকে হারাতে না পেরে তাঁরা শেষমেশ বিদায় নিলেন। আমি ম্যাগাজিনের সাবস্ক্রাইবার হয়েছি, বেহুদা ফোন প্যাকেজের সাবস্ক্রাইবার হয়েছি, ঈশ্বরের সাবস্ক্রাইবার হতে সমস্যা ছিলো না, কিন্তু সব কিছুরই তো একটা সীমা আছে, তাই না?
false
fe
আমাদের সংবিধান, আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা আমাদের সংবিধান, আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতাফকির ইলিয়াস==========================================একই কথা বেগম খালেদা জিয়াও বলেছিলেন। সেটা ছিল ২০০৬ সাল। বেগম জিয়া বারবার বলা শুরু করলেন, সংবিধান থেকে একচুলও নড়বেন না। এমনটি এর আগেও করেছিলেন তিনি। সেই ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা কেউ ভুলে যায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাগলের প্রলাপ। এটা ছিল তার কথা। এই সংবিধানের দোহাই দিয়েই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকেই তত্ত্বাবধায়ক প্রধান করেছিলেন বেগম জিয়া। তারপর কি হয়েছিল? সে কথা দেশবাসীর মনে আছে। বাংলাদেশের কোন প্রধানমন্ত্রী জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করেছিলেন, এই প্রশ্নটির উত্তর বাংলাদেশের মানুষের অজানা নয়। তিনি বেগম খালেদা জিয়া। বলেছিলেন ‘শিশু এবং পাগল’ ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ হতে পারে না। অথচ গ্রামবাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘নিজের বুঝ, পাগলেও বোঝে’। খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এভাবেই কটাক্ষ করেছিলেন। কারণ বাংলার মানুষকে তিনি অবিশ্বাস করেছিলেন। বিশ্বাস করতে পারেননি। তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন দিয়েছিলেন সেই অবিশ্বাস থেকেই। বিএনপি বাংলাদেশে এমন একটি রাজনৈতিক দল, অবিশ্বাসই যাদের আজন্ম পাপ। এই অবিশ্বাসের ওপর ভর করেই মধ্যস্বত্বভোগী জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। তারই প্রধান রাজনৈতিক রক্ষক কর্নেল তাহেরকে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে ফাঁসি দিয়েছিলেন। কারণ জিয়া জানতেন তিনি তার নিজ সতীর্থদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেই বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন। জিয়া বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেছিলেন বলেই চিহ্নিত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। খান এ সবুর আলীম খান রাজী, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মতো চিহ্নিত দালাল, রাজাকার চক্রকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করেছিলেন। জিয়া বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেছিলেন বলেই নিজে ধার্মিক না হয়েও ধর্মের তবক এবং মোহর লাগিয়ে দেশে ধর্মীয় তমদ্দুন প্রতিষ্ঠার নামে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়িয়েছিলেন। জিয়া বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেছিলেন বলেই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের লেবাস পরে সরাসরি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। সেই চেতনা ও আদর্শের ১৯ দফা বাস্তবায়নের উত্তরাধিকারী খালেদা জিয়ার বিএনপি। কোনো প্রধানমন্ত্রীর কালোটাকা সাদা করার পর নৈতিকভাবেই আর তার পার্টির প্রধান হওয়ার অধিকার থাকার কথা নয়। তারপরও তিনি দলের চেয়ারপারসন। একজন প্রধানমন্ত্রীর কালোটাকা সাদা করার দরকার পড়লো কেন? এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে বারবার করা উচিত। বিএনপির তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি তারেক রহমান। সেই তারেক রহমানও বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেন। তার প্রমাণ হচ্ছে ২০০৬-২০০৭-এর শাসনকাল। তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের ছায়া শাসনের কারণেই বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেন জন্ম নেয়। খালেদা-তারেক ২০০১-২০০৫ শাসনামলে সরাসরি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তার তথ্য, ছবি, সংবাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই এটা ছিল তাদের মুখ্য সেøাগান। খালেদা-তারেক চক্র কয়েকটি বলয় তৈরি করেছিলেন যাতে তারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিততে পারেন। এই আলোকেই নানা টালবাহানা করে সংবিধান রক্ষার দোহাই দিয়ে যিনি রাষ্ট্রপতি তিনিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান এই ফরমান তারা জারি করেন। এবং তাদের একান্ত অনুগত ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে রাষ্ট্রপতি রাখার পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানান। তাদের ইচ্ছে ছিল বাংলাকে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মতো তালেবানি চক্রের হাতে তুলে দেয়া। কেন তারা এটি করেছিলেন, কারণ তারা বাংলার মানুষের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস রাখেন না। তারা চান, যে কোনোভাবে রাজাকার ও অশুভ চক্রকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন ভেঙে খান খান করে দেয় ওয়ান-ইলেভেন। আমরা প্রায়ই শুনি, খালেদা জিয়া ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন বলে নানা ভর্ৎসনা করেন। কিন্তু ইয়াজউদ্দিন যে তার নিজের ইয়েসউদ্দিন ছিলেন সেই বিষয়ে খালেদা কিছুই বলেন না। কেন বলেন না? তার কারণ তিনি ইয়াজউদ্দিনকে বিশ্বাস করেছিলেন। বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতে হিংসাত্মক, নগ্ন উল্লাসে মেতেছিলেন এসব অবিশ্বাসী নেতাকর্মী। তা বাংলাদেশের মানুষের খুব ভালো মনে আছে। পূর্ণিমা রানীর মতো শত নারী তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল। সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের এই অবিচার, নির্যাতন হার মানিয়েছিল মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ছাব্বিশ হাজার এমন পাষ- নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এর মধ্যে নাটের গুরু যেসব মন্ত্রী, এমপি ছিল তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার বলেই গোটা রাষ্ট্রের মানুষ মনে করেছিলেন। খুবই হতাশার কথা এই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়েই গেলো। আমরা ঐ পাষ-দের বিচারকাজ শেষ হতে দেখলাম না। তাছাড়া সরাসরি জঙ্গি নেটওয়ার্ককে যারা ম“ দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়নি সে জিজ্ঞাসাও দেশবাসীর। বেগম জিয়া এবং তার দল যে এই দেশ ও জাতিকে চরমভাবে অবিশ্বাস করেন তার সর্বশেষ প্রমাণ যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি তাদের পক্ষপাত। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কণ্ঠ দিয়ে বেগম জিয়া বলিয়েছেন, এই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বাতিল করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। বাহ! কী চমৎকার নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছে বিএনপি। কথা হচ্ছে বিএনপিও তো নিজেদের মুক্তিযোদ্ধাদের দল দাবি করে। তারা ঘাতক রাজাকার দালালদেরও বিচার করেনি কেন? কেন শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় জড়ানো হয়েছিল। মনে পড়ছে, শহীদ জননী বলেছিলেন, বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নগ্ন বিষফোঁড়া। সে কথাটি আবারো প্রমাণ করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের নামে তারা এই প্রজন্মের চেতনার সঙ্গে আগুন নিয়ে খেলতে শুরু করেছেন। কারণ এই প্রজন্মের ৮০ ভাগই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তা বিভিন্ন জরিপ ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। অবিশ্বাসের ঘোর নানা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে খালেদা জিয়া তার পেটোয়া বাহিনীকে লেলিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্লাটফর্মে। আমাদের মনে আছে, অবিশ্বাসের কারণেই বারবার বাংলাদেশে সামরিক অফিসারদের হত্যা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তারপরও তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী হয়নি। কারণ অবিশ্বাস করে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প- করার নামে বিএনপি গোটা দেশবাসীর ইচ্ছের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এর জবাব তাদের দিতে হবে নীতিগতভাবেই। কথা হচ্ছে, সেই একই কায়দা অনুসরণ করছেন কি শেখ হাসিনা? বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন বর্তমান সংবিধান মোতাবেকই হবে এবং এ থেকে এক চুলও ব্যত্যয় ঘটবে না বলে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেনÑ ‘জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। সংবিধান সংশোধন করেছি। যা হবে সংবিধান মোতাবেক হবে। তা থেকে একচুলও নড়া হবে না, ব্যাস। যথাসময়ে সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ দেশবাসী জানেনÑ এই সংবিধান মেনে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের পর এই প্রথম একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেটি হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই। উচ্চ আদালতের একটি রায়ের পর বাংলাদেশের সংবিধানে সর্বশেষ যে সংশোধনী আনা হয় সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বিলোপ করা হয়। কথা হচ্ছে, সংবিধান পরিবর্তন তো এই মহাজোটই করেছে। এটা তো দৈব কোনো নীতিমালা নয়। অন্যদিকে আমরা দেখছি যে এরশাদ বারবার সংবিধান কাটছাঁট করেছিলেন তিনিও দাঁড়াচ্ছেন কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে। উগ্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ একাধিক ইসলামপন্থী দল ও ইসলামী চিন্তাবিদদের নিয়ে পৃথক রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই জোটের নেতৃত্বে থাকবে এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। এ ছাড়াও নতুন এই রাজনৈতিক জোটে বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জেএসডি) আরো কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই পৃথক জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই পৃথক জোট গঠনের তোড়জোড় এখন জাপায়। এরশাদের তত্ত্বাবধানে দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জোট গঠনে উল্লিখিত দলগুলোর সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। এরশাদ ধর্মীয় মৌলবাদ পছন্দ করেন। তার মন্ত্রী ছিল রাজাকার মওলানা মান্নান। একই কারণে হেফাজতের প্রতি জাপার দুর্বলতা। এরশাদ মনে করছেন, হেফাজতে ইসলামের সারা দেশে বিশাল জনসমর্থন রয়েছে। হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্ররা এলাকাবাসীর কাছে সুপরিচিত। নানা কারণে তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তারা যদি ভোটের প্রচারে মাঠে নামেন, তা হলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে বাদ দিয়ে জাপাকে ভোট দেবেন ভোটাররা। তাই ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে হেফাজতকে প্রধান মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে জাতীয় পার্টি। এই হলো বাংলাদেশে সংবিধানের প্রতি দলগুলোর বিবেচনা। তারা এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি, পারবেও না। কাটছাঁট যাই হোক না কেনÑ তা নিজেদের পক্ষে না গেলে দলগুলো খুশি হয় না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবেÑ তেমন আশা আমি এ মুহূর্তে করতে পারছি না। বিদেশী মুরব্বিদের ছায়া তো থাকছেই, নিজেদের পক্ষে না গেলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না তা খুব স্পষ্ট। আর বিএনপি নির্বাচন না করলে দেশে আরেকটি ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন হবে। যা কোনো কাজে আসবে না। কথাটি মনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী সামনে এগোবেন বলে আশা করবো।---------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৩
false
hm
রসময় রেসিপি ০১ ভূমিকা প্রবাসে একাকী বাস করলে যা হয়, মাথায় শুধু পচা কথা ঘোরে। আবার সকালে নাস্তা করি মধু দিয়ে। অতএব সারাদিন সারারাত চায়ে গরম অবস্থা। ক্লাস করি, কামলা খাটি, সচলায়তনে গুঁতাগুঁতি করি কিছু একটা লিখে ফেলার আশায়, হয় না, হয় না রে ভাই হয় না। এত কাজের পর খিদা লেগে যায়। বাজার করতে ভালোই লাগে, কিন্তু ফ্রিজ খুলে দেখি কিছু নাই, এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হই প্রায়ই। আমার আবার ডিপ ফ্রিজ নাই, তাই দিন আনি দিন খাই জীবন নিয়ে বেঁচে আছি। এইসব অত্যাচারের ফলে মাঝে মাঝেই সৃজনশীল হতে হয়। চাকরি যখন করতাম, ইমিডিয়েট বসের সাথে শলা করে সৃজনশীলতা করতাম উচ্চতর বসকে চাপের মুখে ম্যানেজ করার জন্য, এখন পেট চালানোর জন্যই সৃজনশীলতা জরুরি। আমি যা রাঁধি তা পেটে পড়ার আগে জিভে চাবুক মেরে যায়। লবণ ব্যাপারটার আন্দাজ আমার ভালো ছিলো না কোন কালেই, ভাবছি একটা মাইক্রোপাল্লা কিনবো কিনা, যেটাতে মিলিগ্রাম মেপে লবণের "আন্দাজ" ঠিক করা যাবে। একই সমস্যা হয় মশলা নিয়েও। বিভিন্ন মশলার আবার নানারকম প্রিট্রিটমেন্ট বা প্রাগপ্রস্তুতি থাকে, যেমন মৌরি আর জিরা খালি তাওয়ায় "আন্দাজমতো" সময় ধরে ভেজে নিতে হয়, ইত্যাদি। রীতিমতো পূর্বরাগ। ফোরপ্লেয়ার হিসাবে একটা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি। আজকে সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কামলা খাটতে খাটতে সন্ধ্যার দিকে মেজাজটা বিষিয়ে গেলো। দীর্ঘদিন ধরে স্যান্ডউইচ খেয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি। দুই টুকরা ব্রেডের মাঝে চিজ আর শিঙ্কেন (বরাহমাংসের পাতলা ফালি), শিঙ্কেনের ওপর সরিষার পেস্ট দিয়ে সেটাকে ইলেকট্রিক তন্দুরে গলাই। রুটির ওপর চিজ বেশ গলো গলো হয়ে আসলে বার করে খাই। জিনিসটা বেশ সুস্বাদু, কিন্তু ভ্যারিয়েশন নাই। মাঝে মাঝে টমাটো বা শসা ঢোকানো যায়, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। এরচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য চাইলেই খাটনি। মাঝে মাঝে সুমন চৌধুরীর বাড়ি হামলা করি, তখন ভালোমন্দ রান্না হয়। বলাই মাঝে মাঝে সবার দুরবস্থা আন্দাজ করে নিজের বাড়িতে রান্নার দাওয়াত দ্যান, তখন ঢেঁকুরে একটু তৃপ্তি থাকে। ভ্যারিয়েশনবিহীন স্যান্ডউইচ খেতে খেতে মনে হলো মধ্যবয়স্কের বিবাহিত জীবন যাপন করছি। আঁৎকে উঠলাম রীতিমতো। আমি নিজে মধ্যবয়স্ক হলেও বিবাহিত তো নই। পণ করলাম, আজকে শালা রান্না করবো একটা কিছু। ফ্রিজ খুলে পনির আর শিঙ্কেনের প্যাকেটের মুখের ওপর মুহাহাহাহা করে হাসলাম। থাকো পড়ে সোনা, আ'ম গনা সুইং দ্য হেল আউট অফ মি। কিন্তু মুখের হাসি বাসি হতে সময় লাগে না। ফ্রিজে কিছু নাই। আজকে রবিবার, তার ওপর রাত আটটা বাজে। চারদিক সুনসান। আজকে কাসেলে শুধু সৃজনশীলতার দরজা খোলা আমার জন্য। প্রথমে ভাবলাম টয়লেটে যাই, ভাবনঘরে বসে ভাবি। কিন্তু আজকে নতুন কিছু করার একটা জেহাদি জোশ চেপেছে মাথায়, পায়চারি করতে করতে শুরু করলাম ভাবনা। নিজের আর্সেনাল খতিয়ে দেখলাম, চাল আছে, ডাল আছে। চারখানা পেঁয়াজের পাশাপাশি একটি রুগ্ন রসুন আর একটি গলাকাটা আদাকেও চোখে পড়লো। ফ্রিজের ভেতরে একটি বিষণ্ণ বাঁধাকপি, কতগুলি ডিম, ধনেপাতা আর কাঁচামরিচ। প্যানের ওপর আমার গতকালের ভাজা টুনামাছের আদ্ধেকটা। বিয়ার নাই ঘরে, পানি খেতে খেতেই নেশা ধরে যাওয়ার যোগাড়। অনেক চিন্তে অনেক ভেবে বার করলাম রেসিপি। ঠিক করলাম, এই রেসিপি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়া অতীব জরুরি। তাই একটা পোস্টই ছেড়ে দিচ্ছি। ডিশের নামঃ "বালিকা, তোমায় চুমু" উপকরণঃ আন্দাজ ষোল আনা। এটাই সবচেয়ে বড় উপকরণ। পদে পদে এটাকে পকেট থেকে বার করতে হবে। একদিন আগে এক ক্যান টুনামাছ ভাজুন। একটা কৌটায় দু'শো গ্রাম টুনামাছ থাকে। আন্দাজমতো পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচামরিচ, জিরা আর সামান্য হলুদের গুঁড়ো দিয়ে ভেষজ তেলে ভাজুন শালাকে। সয়াবিন পেলে সয়াবিন, সরিষা পেলে সরিষা, সূর্যমুখী পেলে সূর্যমুখী, বাদাম পেলে বাদাম। তেলের জাত বাছবেন না অত। তারপর আদ্ধেকটা খেয়ে বাকি আদ্ধেকটা ঢেকে রাখুন। তারপর আজকে ফ্রিজ খুলে প্রথমে মাথায় হাত দিয়ে বসুন। কিচ্ছু রাখা চলবে না ফ্রিজে। অনেক ভেবেচিন্তে তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ান। তারপর একটা হাঁড়ি টেনে নিয়ে আনমনে তাতে আন্দাজমতো মাখন কেটে নিয়ে ফেলে চুলায় মাঝারি আঁচে বসান। মাখন গলে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। তার মধ্যে একটা এলাচ দানা, এক চোকলা দারচিনি আর দুতিন কণা লবঙ্গ দিন। তারপর একটা পেঁয়াজকে যত্ন করে কুচি করুন। রসুন নিন দুই কোয়া। রদ্দা মেরে ন্যাংটা করা বোঝেন? বোঝেন না? বলেন কী? তাহলে তো আর রান্না হলো না আপনাকে দিয়ে। এখনও রসুন ন্যাংটা করতে পারেন না আবার রেসিপি পড়েন। যান মিয়া ভাগেন! যারা বোঝেন তারা রসুন কুচি করুন। আদাও নিন আন্দাজমিটারে মেপে। আগে পেঁয়াজকে ঢালুন গলা মাখনের ওপর। কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে রসুন আর আদাও দিন উমরাও জানের কথা ভাবতে ভাবতে। এরপর ঘুঁটা দিন সাবধানে। সাবধান! এই ঘুঁটার ওপরই স্বাদ নির্ভর করছে‌! উল্টাপাল্টা ঘুঁটা দিয়ে রান্না নষ্ট করবেন না! এরপর কুঁচকি চুলকাতে চুলকাতে কেবিনেট খুলে উল্লেখযোগ্য কী আছে দেখুন। জিরা পেলে খানিকটা দিয়ে দিন। তারপর আন্দাজমতো হলুদ আর ধনিয়ার গুঁড়াও দিন। তারপর আন্দাজমতো চাল, চালের বহিরাস্তর ঢেকে মসুর ডাল আর মসুর ডালের বহিরাস্তর ঢেকে মুগ ডাল দিন। কম বেশি হলে সমস্যা নাই। এরপর গোটা চারেক কাঁচামরিচকে চুলচেরা করে চিরে দিন এরওপর। কিছু ধনেপাতাকে নির্মমভাবে কুঁচিয়ে একশা করে ফেলুন ডেগচিতে। তারপর কিছুক্ষণ আন্দাজমতো ঘুঁটে যান। চালডালের মিশ্রণ ডেগচির সাথে সেঁটে যাচ্ছে মনে হলে পানি দিন আন্দাজমতো। উঁহু, কম হয়ে গেলো। আরেকটু বেশি দিন। তারপর কম আঁচে চুলা রেখে ডেগচি ঢেকে মিনিট পনেরো কিছু কুচিন্তা করুন। ভাবুন এই হিম ঠান্ডায় রান্নাঘরে আপনার সাথে আপনার উজবেক প্রতিবেশিনী থাকলে কী একটা পরিস্থিতির দিকে মোড় নিতে পারতো ঘটনা। মোড় যখন নিচ্ছে না তখন আবার রান্নায় ফিরে আসুন। আজেবাজে চিন্তা করে তো ডেগচির পানি আদ্ধেকটা শুকিয়ে ফেলেছেন, সময় থাকতে কিছু লবণ দিন। মাখন কিন্তু লবণনাশক। কাজেই এ কথা মনে রেখে আন্দাজমিটার রিক্যালিব্রেট করুন। আরো কিছুক্ষণ খাইষ্টা চিন্তাভাবনা করুন। আপনার সৌরতাপ কোর্সের পূর্ব ইয়োরোপিয়ান সহপাঠিনীর কথা ভাববেন না এই রাতের বেলা, রান্না পুড়ে ঝামা হয়ে যেতে পারে। বরঞ্চ মনে মনে ৩৪৫, ২৩ আর ২ এর ল.সা.গু. কষুন। উত্তরটাকে ভেরিফাই করতে করতে গতকালের ঢেকে রাখা টুনাভাজাটাকে প্রায় ভুনা খিচুড়ির ওপর ঢেলে দিয়ে আবার একটা ফ্রিস্টাইল ঘুঁটা দিন। তারপর চুলার আঁচ নিভিয়ে দিয়ে কী নিয়ে কুচিন্তা করা উচিত ছিলো ভাবতে ভাবতে বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে ডেগচি চুলা থেকে নামিয়ে এনে খাবার পাতে বেড়ে গরমাগরম খাওয়া শুরু করুন। ঠান্ডা হলে এই খাবারের স্বাদ রীতিমতো অতিথিতাড়ানিয়া, কিন্তু গরম খেতে পারলে বেশ লাগে। এই ডিশের নাম হওয়া উচিত ছিলো টুনা দিয়া ভুনা খিচুড়ি। কিন্তু "বালিকা, তোমাকে চুমু" রাখার গূঢ় কারণ হচ্ছে, কোন দূরবর্তিনী বালিকার সাথে ফোনে নখড়া করার সময় "কী করো" জাতীয় ফালতু প্রশ্নের জবাবে গাঢ় স্বরে বলতে পারবেন, বালিকা, তোমাকে চুমু খাই। আপাতত এইটা খান। পরে দেখি আরো কিছু রেসিপি ছাড়া হবে। আগামী পর্বে থাকতে পারে "ভ্যানগগ" এবং "গুয়ামা"। খুব খিয়াল কইরা।
false
rn
আসুন লিবিয়া দেশটি সম্পর্কে জানি উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। লিবিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম রাষ্ট্রগুলির একটি। আকারে বিশাল হলেও লিবিয়াতে জনবসতি খুবই লঘু। দেশের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে সাহারা মরুভূমি। লিবিয়ার তিনটি প্রধান অঞ্চল হল ত্রিপোলিতানিয়া, ফেজ, ও সিরেনাইকা। ইসলাম এখানকার রাষ্ট্রধর্ম এবং আরবি ভাষা সরকারি ভাষা। পেট্রোলিয়ামের বিরাট মজুদ আবিষ্কারের পর থেকে লিবিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি। লিবিয়ায় বিদ্যমান ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কীর্তিগুলো খ্রিস্টপূর্ব ত্রয়োদশ শতকের প্রাচীন। লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় গাদামিস নামক প্রাচীন শহরটি-যা মরুরত্ন নামে বিখ্যাত-আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলীয় ঐতিহ্যবাহী নগরীর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একইভাবে শুহাত নামক প্রাচীন এলাকাটিও প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ হিসেবে ইতিহাসে বেশ পরিচিত। এই অঞ্চলটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতাব্দিতে এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক বহু ঘটনা ঘটেছে। সে সময়কার ঐতিহাসিক বহু স্থাপনা এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। রাজধানী ত্রিপলী এয়ারপোর্ট লিবিয়ার সবচেয়ে বড় এয়ারপোর্ট। ত্রিপলী থেকে ৩৪ কিলোমিটার দক্ষিনে বেন ঘাসির নামক জায়গায় এটি অবস্থিত। বেনগাজী লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে!বাংলাদেশি শ্রমিকেরা লিবিয়ায় কাজ করতে আসেন। কিন্তু এরপর তাঁরা অবৈধভাবে নৌযানে চড়ে ইউরোপে পাড়ি জমান। একসময় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার ছিল লিবিয়া। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে একটা বড় অংশই আছেন রাজধানী ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে। লিবিয়ার ইতিহাস যদি পর্যবেক্ষন করি তাহলে আমরা দেখতে পাবো, তা ছিল বরাবরই ইসলামের বিরুদ্ধে। হাজারো মানুষকে জেলের ভিতর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়, ব্যাপক গণহত্যা চালানো হয় শুধুমাত্রই ইসলামের প্রতি ঝোঁকের কারণে কিংবা গাদ্দাফীর বিরুদ্ধচারণ করার কারণে। যার মধ্যে একটি বহুল আলোচিত হল ১৯৯৫ এর আবু সালিম কারাগারের গণহত্যা। গাদ্দাফি প্রশাসনের পতনের পর লিবিয়ায় একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের দূতাবাস গুছিয়ে নিয়েছে। দেশের দক্ষিণ অঞ্চল পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে। আর উত্তরাঞ্চল হয়েছে মানবপাচারের সিল্করুট। গাদ্দাফির শাসনামলে তার নাগরিকরা শুধু বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবাই পাননি, পেয়েছেন বিনামূল্যে শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও বিনা সুদে ঋণ।ন্যাটোর চোখে গাদ্দাফির হয়তো বড় অপরাধ ছিল- তিনি বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে দেশীয় স্বার্থটা বেশি দেখতেন এবং একটি সত্যিকারের শক্তিশালী ইউনাইটেড আফ্রিকার স্বপ্ন দেখতেন। আর সেজন্যেই হয়তো ২০১১ সালে লিবিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থ জব্দ করেছিলেন বারাক ওবামা।ক্ষমতা মানুষকে দুর্বিনীত, দুর্নীতিগ্রস্ত, শেষ পর্যন্ত ক্ষমতান্ধ করে দেয়। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষ তার বিশ্বাসকে শেষ পর্যন্ত কিভাবে কুরবাণী করতে পারে গাদ্দাফী হয়তবা তার একটা বড় উদাহরণ হ’তে পারেন। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এভাবে ‘বিপ্লবী’ গাদ্দাফীর নৈতিক মৃত্যু ঘটে।বেদুইন পরিবারের সন্তান গাদ্দাফী ৪২ বছর কঠোর হাতে লিবিয়া শাসন করেছেন। তিনি নিজেকে আব্রাহাম লিংকনের সাথেও তুলনা করতেন। গাদ্দাফী আফ্রিকার ওপর একটা কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিলেন। তিনি আফ্রিকানদের পশ্চিমা বিরোধী করে তুলতে বিশেষ প্রচেষ্টাও চালিয়ে গেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তিনি লিবিয়াকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে অত্যাচার ও অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছিলেন। গাদ্দাফী তার প্রতিরক্ষা বা নিরাপত্তার জন্য লিবিয়ার লোক না নিয়ে আফ্রিকার আন্যান্য দেশ থেকে ভাড়া করে মহিলা সৈনিক নিয়ে এসেছিল। এই ‘আমাজন’ এর বাহিনী তার ত্রিপলির প্রাসাদ রক্ষা করতো। সে রাশিয়া বা ইউক্রেন হতে এক মাঝ বয়সী সুন্দরী নার্স জোগাড় করেছিল তার নিজের জন্য। আর বেদুইনদের মত একাধিক বিয়ে করেছিল। তার পাশে যে বউকে দেখা যেত সেটি ছিল তার ছোট বউ।তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, দীর্ঘ ৪২ বছরের শাসনামলে গাদ্দাফি কী লিবিয়ার জন্য কিছুই করেননি? লিবিয়ার সম্পদ তেলকে ব্যবহার করে তিনি লিবিয়াকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন; কিন্তু মানুষের মাঝে অসন্তোষ, অসমতা দূর করতে পারেননি তিনি।গাদ্দাফি পরবর্তী লিবিয়ায় যে এখন কঠিন সময় যাচ্ছে কিংবা সামনে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে তা বোধ হয় বলা নিষ্প্রয়োজন। তারপরও দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশটিতে শান্তির পতাকা উড়ুক, এটাই সকলের কাম্য।লিবিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম রাষ্ট্রগুলির একটি। আকারে বিশাল হলেও লিবিয়াতে জনবসতি খুবই লঘু। দেশের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে সাহারা মরুভূমি। লিবিয়ার তিনটি প্রধান অঞ্চল হল ত্রিপোলিতানিয়া, ফেজ, ও সিরেনাইকা। ইসলাম এখানকার রাষ্ট্রধর্ম এবং আরবি ভাষা সরকারি ভাষা। পেট্রোলিয়ামের বিরাট মজুদ আবিষ্কারের পর থেকে লিবিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি। সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২
false
rg
পং পং চু ।। েরজা ঘটক পং পং চু ।। রজো ঘটকহঠাৎ এক দবৈর্ দুঘটনায় পৃথবীির সাতজন মানুষ একবোরে জীবনমরণ সমস্যার মুখোমুখ।ি জীবন বাঁচাতে তারা দবৈ অশুভ শক্তরি সাথে প্রাণপণ লড়াই করছন।ে কন্তুি কছুিতইে তারা ওই দবৈ অশুভ শক্তরি সাথে লড়াইয়ে পরেে উঠছনে না। ঠকি সইে সময় ঘটনাস্থলে হাজরি হলনে এক আকাশ দবীে। তনিি দবৈ অশুভ শক্তরি বরুিদ্ধে লড়াই করে ওই সাতজন মানুষরে জীবন বাঁচালন।ে বপদি থকেে সদ্য উদ্ধার পাওয়া ওই সাতজন মানুষকে এরপর তনিি এক কঠনি প্রস্তাব করলন।ে আকাশ দবীে বললন,ে তোমাদরে কাছে আমি এমন একটা জনসিি চাই, আর তোমরা যদি তা না দাও, তাহলে এখন থকেে ঠকি ১০৫ বছর পরে তোমরা আবারো একই ধরনরে জীবনমরণ সমস্যার মুখোমুখি হব।ে তখন আর তোমাদরে বাঁচানোর জন্য কউে এগয়েি আসবে না। প্রয়ি পাঠক, বলতে হবে আকাশ দবীে ওই সাতজন মানুষরে জীবন বাঁচয়েি তাদরে কাছে তখন কি অমোন মূল্যবান বস্তু দাবী করছলেনি?ে আর কনইেবা ওই সাতজন মানুষ জীবন বাঁচানোর পরওে অমন একজন পরোপকারী আকাশ দবীের প্রস্তাবে তা দতেি রাজী হয়ন?ি প্রশ্নরে জবাবগুলো আপনারা মনে মনে ঠকি করতে পারলইে তা ঈশ্বররে একান্ত সচবি মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবুর মাধ্যমে আয়োজকদরে দপ্তরে পৗঁেছে যাব।ে আর সঠকি জবাব দানকারীদরে মধ্যে লটারি করে শ্রষ্ঠে একজনরে জন্য রয়ছেে অত্যন্ত লোভনীয় একটা পুরস্কার। পুরস্কার বজয়িী আগামী ২০১১ সালরে ২১ শে জুলাইর্ মাকনি মহাকাশ কন্দ্রে নাসা চন্দ্রপৃষ্ঠে যে নভোযান পাঠাতে যাচ্ছে সইে নভোযানরে বনাি খরচইে একজন সৌভাগ্যবান নভোচারী হতে পারবন।ে আপনাদরে শুধু বলতে হবÑে আকাশদবীে আসলে ওই সাতজন মানুষরে কাছে কি চয়ছেলেনি?ে আর তারা-ইবা কনে তা দতেি রাজী হয়ন?ি নাসা আয়োজতি ওই ধাধার অনুষ্ঠানটি বশ্ববিাসীর জন্য উন্মুক্ত। আর আপনাদরে যে কোন ধরনরে সহায়তা করার জন্য ঈশ্বররে একান্ত সচবি এবং ওনার সব কাজরে একমাত্র পর্রামশক মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবু ওই ঘটনার কছুি ক্লু ধরয়েি দতেি সদা প্রতশ্র“িতবদ্ধি। আর অনুষ্ঠানটি যহতেুের্ মাকনি স্যাটলোইট টলভেশিনি ক্যাবল নউজি নটর্ওেয়াক বা সএনিএন সরাসরি সম্পোচার করছ।ে তাই আপনাদরে হয়তো কোন অসুবধাি হবার কথা নয়। তবু আপনার যদি কোন বষয়িে জানার থাকে আপনি মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবুকে প্রশ্ন করতে পারন।ে আমরা এবার মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবুর মুখোমুখি হবো, পাঠকদরে জন্য উনি যদি বষয়িটরি আরো কোন ক্লু দতেি চান। হ্যা, মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবু এবার আপনি বলুন।ঘটনা যা ঘটছেে আপনারা এতোক্ষণে তা হয়তো অবগত হয়ছনে।ে প্রথম বষয়িটি হল, ঘটনাটা ঘটছেে ২২ জুলাই ২০০৯ সালে পৃথবীিত।ে আর যহতেুে ওই সাতজন মানুষ আকাশ দবীের প্রস্তাবে রাজী হনন,ি তাই আকাশ দবীের কথানুযায়ী ওই সাতজন মানুষ ঠকি ১০৫ বছর পরে আবারো একই ধরনরে সমস্যার মুখোমুখি হবন।ে আপনাদরে বুঝতে যদি সমস্যা হয়, তাহলে আরো একটা ক্লু আপনাদরে আমি দতেি পার।ি আজকরে ওই দবৈ ঘটনার সাথের্ পূণগ্রাসর্ সূয গ্রহণরে একটা কঠনি র্সম্পক রয়ছ।েে মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবু মুচকি মুচকি হসেে একটু থামলন।ে ঠকি তখন নাম প্রকাশ না করারর্ শতে টলফেোিনে কাউয়ার চর থকেে আমাদরে এক শ্রোতা জানতে চাইলনে য,ে মানুষ সাতজন কি পুরুষ নাকি মহলাি ছলনি?ে তার আগে আপনাদরে জানয়েি রাখ,ি এই অনুষ্ঠানটি হচ্ছলি আমরকোির মহাকাশ গবষণো কন্দ্রে নাসা থক।েে আর ওই অনুষ্ঠানটি বশ্ববিাসীর জন্য সরাসরি প্রচার করছলি আমরকোিন স্যাটলোইট টলভেশিণি চ্যানলে ক্যাবল নউজি নটর্ওেয়াক বা সএনিএন। আর অনুষ্ঠানটি ছলি বশ্ববিাসীর জন্য উন্মুক্ত। অনুষ্ঠানরে উপস্থাপকাি মসি ক্যারাবান মাফয়াি বারবার বশ্ববিাসীকে নাসা প্রদত্ত একটা লোভনীয় পুরস্কাররে প্রস্তাব করছলনি।ে অনুষ্ঠানটি চলবে তনি ঘণ্টা আর ওই তনি ঘণ্টার মধ্যে যের্ দশক বা শ্রোতা প্রশ্নগুলোর সঠকি জবাব পাঠাতে পারবনে তাদরে মধ্যে লটারি করে যনিি সরো উত্তরদাতা র্নবািচতি হবন,ে তনিি আগামী ২১ শে জুলাই ২০১১ সালে নাসা থকেে চন্দ্রে পাঠানো মহাকাশ খয়োয় বনাি খরচে যাওয়ার জন্য মনোনীত হবন।ে কন্তুি অনুষ্ঠান উপাস্থপকিাি মসি মাফয়াির দাবী, আপনি যদি চাঁদে যাওয়ার জন্য নাসার অমোনর্ দুলভ প্রস্তাবরে একজন সৌভাগ্যবান হতে চান, আপনার মনে মনে ভাবা প্রশ্ন বা উত্তরগুলো মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবুর কাছে অটোমটকেি জমা হতে থাকব।ে কন্তুি আপনাকে বলতে হবÑে ওই সাতজন মানুষকে বাঁচাতে আকাশ দবীে কনে এসছলেনি?ে তনিি তাদরে কাছে কি চয়ছেলেনি?ে এবং ওঁরা তা দতেি কনে অস্বীকার করছলেনি?ের্দুভাগ্যক্রমে যারা টলভেশিণিে অনুষ্ঠানটি দখোর সুযোগ পানন,ি তারাও যদি সঠকি প্রশ্নরে উত্তর দতেি পারন,ে তাহলে তাদরে জন্যও পুরস্কাররে ব্যাপারটি বচনিোয় নয়ো যায় কনাি, এমন একটি প্রশ্ন করছলেনিে ওই সময়ে সএনিএন টলভেশিনিে অনুষ্ঠানটি দখতেে থাকা স্বয়ং আমরকোির প্রসডেন্টিে বারাক ওবামাক,ে তারর্ সব কনষ্ঠাি একান্ত সচবি মসি আলফা ক্যাথরনে।ি প্রসডেন্টিে বারাক ওবামা মসি আলফার প্রশ্নে একটু নড়চড়েে বসলন।ে এবং একটু ভবেে বললন-ে হ্যা, অনুষ্ঠানটি যদি সারা বশ্ববিাসীর জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাক,ে তাহলে এই র্মুহূতে যারা টলভেশিনি সটরেে সামনে নইে তাদরকেওে বঞ্চতি করাটা নাসার উচতি হবে না। তাই মস্টাির ওবামা সক্রটেোরি অব স্টটসে মসসিে হলািরি ক্লনটিনকে টলফেোিনে এই বষয়িে নাসারর্ কর্মকতাদরে সাথে এক জরুরী বঠকৈ করার জন্য র্নদশিে দলনি।ে ভারতরে দল্লীি সফররত মসসিে ক্লনটিন তখন কংগ্রসে নত্রীে সোনয়াি গান্ধরি বাসায় একান্ত আড্ডায় ব্যস্ত।র্ মাকনি প্রসডেন্টিসেয়ািল র্নবািচনি লড়াইয়ে খোদ ডমোেক্রাটকির্ পাটি থকেে শুধুমাত্র নারী হবার কারণে কভািবে তাকে বাদ দয়েি বারাক ওবামাকে প্রসডেন্টিের্ প্রাথী করা হয়ছলেি মসসিে গান্ধকেি সইে ব্যাখ্যা করছলনিে হলািরী। আর বলছলনি,ে নারীরা এখনো অনকে পছয়িেি আছ।ে সইে তুলনায় ভারতে আপনার নতৃেত্বর্ গব করার মতো। এইর্ পযায়ে স্বয়ং প্রসডেন্টিরেে অমন একটা ছোটখাটো বষয়িে এতোদূরে অবস্থানরত হলািরকেি টলফেোিনে র্নদশিটো না পাঠালওে চলত। কন্তুি, ওই যে নারীদরে পুরুষ সব সময় হাতরে পুতুল বানাতে চায়, তাই ওবামার র্নদশিকেে হলািরি নালশরিে সুরে মসসিে সোনয়ািকে বলতে বলতে চোখ মুছলন।ে দখনে,ে এই সামান্য বষয়িওে যদি এতোদূরে বসে আমাকে নাক গলাতে হয়, গোটা আমরকোিয় নাসার সাথে বঠকৈ করার মতো কি আর একটা লোকও ছলি না? আমার আর এই চাকরি ভালো লাগছে না। শুনে মসসিে গান্ধি একটু ঠাঁেট টপেি হাসলন।ে আর বললন,ে নারীরা পৃথবীির সবখানইে পুরুষর্ কতৃক শাসতি আর লাঞ্চত।ি এটা মস্টাির ওবামার বলোয়ও ঠক।িইতোমধ্যে উগান্ডার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থকেে সএনিএন টলভেশিণিে ওই অনুষ্ঠান দখতেে থাকা ওলুসান্দা কাবলাি নামে একর্ দশক শ্রোতার কৌতুহলরে জবাবে মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবু আবারো বষয়িটি ব্যাখ্যা করলনে যভোবÑে আপনারা সন্ধবিাদরে গল্প জানন।ে অনকে রূপকথার গল্পও আপনাদরে জানা। ওই সাতজন মানুষ ঠকি পুরুষ বা নারী না হয়ে পাহাড়র্ পবত সমুদ্র বা অন্য কোনো রূপক কছুিও হতে পার।ে আপনারা খুব চন্তাি করে সঠকি উত্তর দবোর চষ্টো করন।ে নইলে নাসা কন্তুি সঠকি উত্তরদাতা খুঁজে না পলেে লোভনীয় পুরস্কারটি বাতলি করার এখতয়ািরও রাখন।েওদকেি চন্দ্রগ্রহণ বার্ সূযগ্রহণ র্সম্পকে আমাদরে ইকতারুলরে দাদীর ধারণা কন্তুি বশে চমকপ্রদ। পদ্মাপাড়রে লোকজনদরে মত,ে চন্দ্রর্-সূযরে মা-বাবা খুব ছোটবলোয় অভাবে পরে একবার রাউয়ার মা-বাবার কাছ থকেে আধা পয়সা ধার করছলেনি।ে চন্দ্রর্-সূযরে মা-বাবা ধাররে সইে পয়সা না মটয়িেি মারা যাওয়ার পরে ওই ঘটনা রাউয়ার মা-বাবাও ভুলে গয়ছিলেনি।ে কন্তুি রাউয়ার মা-বাবাও মারা যাবার পরে বষয়িটি নয়েি রাউয়া ভতরিে ভতরিে ভীষণ ক্ষুব্ধ। চন্দ্র আরর্ সূযরে দাপটে পৃথবীিতে থাকতে না পরেে রাউয়া এখন সপ্ত আসমানে বসবাস করন।ে আর ছোটবলোকার ওই অ-পরশোিধতি ঋণরে কথা যখনই রাউয়ার মনে পর,ে তখনই তনিি চন্দ্র বার্ সূযরে উপর ক্ষপ্তি হয়ে তাদরে আক্রমন করতে উদ্বত হন। কখনো কখনো চন্দ্র বার্ সূযকে সরাসরি গলেি খাবারও চষ্টো করনে রাঊয়া। জনশ্র“তি রয়ছেে য,ে রাউয়া যদনেি চন্দ্র বার্ সূযকে পুরোপুরি গলেি ফলবে,ে সদনেইি নাকি দনি দুনয়াি ধ্বংস হয়ে যাব।ে আর রাইয়া বছরে অন্তত দু’বার সইে প্রচষ্টো চালয়েি থাকন।েওদকেি ওই সময় জাপানরে নাগাসাকতেি ইদতাি মরসি ফাউন্ডশোনরে সামনে একদল জাপানি তরুণ-তরুণি খোলা উদ্যানে জড়ো হয়ে বশািল প্রজক্টরেে সএনিএন টলভেশিনিরে ওই অনুষ্ঠান দখোর পাশাপাশির্ পূনগ্রাসর্ সূযগ্রহণ উপভোগ করছল।ি আর ভতরিে ভতরিে কোনো কোনো জাপানি ইয়াং তখন ২০১১ সালে নাসার চাঁদরে উদ্দশ্যেে পাঠানো নভোযানরে নভোচারী ভবেে একজন আরকজেনরে শরীরে আনন্দে গড়াগড়ি খাচ্ছল।ির্ পূণগ্রাসর্ সূযগ্রহণ উপলক্ষে জাপানি তরুণ-তরুণদরিে অতরক্তিি অমোন আগ্রহরে ব্যাপারটি আগে থকেে জানা ছলি অস্ট্রলয়োির এক্স টলভেশিনির।ে ফলে এক্স টলভেশিনি জাপানদরিে ওই অনুষ্ঠানটি আবার সরাসরি স¤প্র্রচার করছল।ি তাছাড়া অনুষ্ঠানটকেি ভন্নমিাত্রা যোগ করতে এক্স টলভেশিনি আবার নাসার প্রচারতি বশষিে পুরস্কারটরি বপরিীতে মজার মজার আরো নগদ পুরস্কাররে ব্যবস্থাও রখছেলে।ি যা জাপানি তরুণ-তরুণদরিকেওে বশে উৎসাহতি করছলে।ি পুরস্কারগুলোও ছলি বশে অদ্ভুত। প্রত্যকে জুটি তরুণ-তরুণি প্রত্যকেে তাদরে ভালোবাসার মানুষটকেি কে কতো নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে কতো কম সময়ে উদোম করতে পার,ে তার উপরে নানামাত্রার বাহারি পুরস্কার। যমনে জাপানি ময়টেিে তার বয় ফ্রন্ডকেে উদোম করতে ৭ মনটিি ১২ সকন্ডেে সময় নয়েি পুরস্কার হসবিেে জতলি একটা সুইস ভোদকার বোতল। পাল্টা জাপানি ছলটেিে তারর্ গাল ফ্রন্ডকেে আরো কম সময় নয়েি মাত্র ৫ মনটিি ৪৩ সকন্ডেেে উদোম করে পুরস্কার হসবিেে জতলি মোটে এক প্যাকটে নতুন মডলরেে কনডম। পুরস্কাররে এই বচত্রৈি অন্যদরকেে তখন আরো বশিে উৎসাহতি করছল।ি আর তারা সমানে বশে উৎসাহরে সাথে অংশ নচ্ছলিি এক্স টলভেশিনিরে ওই অনুষ্ঠান।ে আবার হংকংয়ে যারা সাগর পাড়ে জড়ো হয়ের্ পূণগ্রাসর্ সূযগ্রহণ দখোর পাশাপাশি সএনিএন টলভেশিনিরে অনুষ্ঠানটি দখছেল,ি সখোনে দখো গলে অন্ততর্ অধকে লোক বুক সমান জলরে মধ্যে বশষিে ভঙ্গতেির্ প্রাথণার মতো করছল।ি আর মাঝে মাঝে সমস্বরে সবাই পং পং চু, পং পং চু বলে চৎকিার করে উঠছল।ি তাদরে অবশ্য নাসার অমোনর্ দুলভ পুরস্কাররে অফারটি কতোটুকু আগ্রহরে বষয়িে পরনতি হয়ছলেি তা বোঝা গলে না। বরং সখোনে উপস্থতি দু’চারজন বয়সি ইয়াংকদরিে বক্তব্য এমন ছলি যে যারার্ সূযগ্রহণরে সময় জলরে মধ্যের্ অধকে শরীর ডুবায় ন,ি আর পং পং চু, পং পং চু বলে চৎকিার করন,েি তারা কউে নাকি জীবদ্দশায় আর কোনোর্ সূযগ্রহণ দখেে যতেে পারবে না।র্ সূযগ্রহণরে সময় নাকি পৃথবীির জলরে বয়স যমনে বাড়ে তমনেি যারা জলে নামে তাদরওে বয়স বাড়।ে না নামলে নাকি বয়স খাটো হয়। ফলে হংকংয়ে নাসার ওই অফারটি নাকি পুরোপুরি মার খয়ছেেে বলে কুয়তে ভত্তকিি আল জাজরাি টলভেশিনিরে মন্তব্য। আল জাজরাি টলভেশিনি দাবি করে নাসার উচতি বশ্ববিাসী গ্রহণ করতে পারে এমন সব বাস্তবভত্তকিি গবষণোয় মনোযোগ দয়ো। আর অনুষ্ঠানটি স¤প্রচার করে সএনিএন টলভেশিনি আবারো প্রমান করলো তারা কতোটা প্রপাগাণ্ডায় আর কারসাজতেি পারঙ্গম। সে তুলনায় বাংলাদশেে বরং এই শতাব্দরি বহুল আলোচতি ওইর্ পূণগ্রাসর্ সূযগ্রহণকে ঘরেি দুই ধরণরে উৎসব জমছলে।ি একবোরে উত্তররে জলো শহর পঞ্চগড়রে স্টডয়োিম ছলি কানায় কানায় পরর্পূিণ। দশরেে বভন্নিি স্থান থকেে উৎসাহী নানা বয়সি লোকজন জড়ো হয়ছলেি পঞ্চগড়।ে শতাব্দির্ দুলভ অমোনর্ পূণগ্রাসর্ সূযগ্রহণ ভালোভাবে দখোর জন্য। অন্যদকেি দনািজপুররে রামসাগররে পাড়ে ঠকি ওই সময়ে জড়ো হয়ছলেি ভন্নি উদ্দশ্যে নয়েি একদল গ্রামীণ মহলাি। তারার্ সূযদবরেে কাছে বৃষ্টরি আশায় সাত জোড়া ব্যাঙরে বয়রিে অনুষ্ঠানরে আয়োজন করলো বশে উৎসাহ নয়।িে বাংলাদশে এ্যাটোমকি র্এ্যানাজি কমশনিরে গবষকেরা বলনে য,ে নাসার প্রোগ্রামটি যদওি বজ্ঞািনরে উন্নতি সাধনে বশে উৎসাহব্যঞ্জক, তবু ওই সময়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নম্নচিাপরে কারণে দুপুররে পরপর বৃষ্টি নামায় ব্যাঙরে বয়রিে সাথে বৃষ্টি নামার কাকতলীয় যোগসূত্রটি শষের্ পযন্ত সংস্কারটরইি বজয়ি চন্থতিি করছ।েে যা পরদনি প্রায় সবগুলো দনকৈি পত্রকািয় ও টলভেশিনি চ্যানলওেে খবর হসবিেে স্থান করে নয়।েওদকেি ভারতে আশ্রয় নয়ো তব্বতিরে শর্রনাথীরার্ সূযগ্রহণ পালন করছেে একটু অন্যভাব।ের্ সূযাদেয়রে সাথে সাথে তারা তাদরের্ ধমীয় নতো দালাইলামার র্নতৃেত্বে জড়ো হয় বৌদ্ধ মন্দররিে সামনে খোলা আকাশরে নচ।িে প্রত্যকরেে সাথে ছলি একটা করে জলরে পাত্র। জলরে পাত্রটি আবার তুলসি পাতা দয়েি মোড়া। অন্য সময়রে মতোর্ প্রথণার ভঙ্গি বৌদ্ধাসনে হলওে প্রত্যকরেে ডান হাতটা ওই জলরে পাত্ররে মধ্যে ডুবানো। আর কছুি সময় পরপর তারা সমোস্বরে একটা শব্দ উচ্চারণ করছলÑি ওঁম। এমনতেি তব্বতিরাির্ প্রথণার সময় নরবি থাকন।ে কন্তুির্ সূয গ্রহণরে সময় তাদরে অমোন শব্দ করাকে আশপোশরে ভারতীয় লোকজন বশে কৌতুহল নয়েি দখছেল।ি খবরটি শষের্ পযন্ত ভারতরে টলভেশিনি চ্যানলে জ-টিভরিি দপ্তরে পৗঁেছালে তাদরে ক্যামরো তা ধারন করতে গলওেে তব্বতিি বৌদ্ধভক্ষুিদরে হস্তক্ষপেে জ-টিভরিি প্রচস্টো সফল হয়ন।ি জ-টিভরিি কল্যানে নাসার পুরস্কাররে খবরটি সখোনে জানানো হলে কছুি কছুি তব্বতিি বৌদ্ধভক্ষুির মধ্যে এক ধরনরে হতাশা দখো গছ।েে কউে কউে তো জ-টিভরিি কাছে এমন মন্তব্য করছনেে যে কবলে তাদরে নতো দালাইলামা-র আমরকোি ভ্রমণরে সুযোগ থাকায় ইচ্ছা থাকলওে তারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দতেি পারবনে না। কউে কউে অবশ্য অনুষ্ঠানে যোগদানরে চয়েের্ মাকনি ভসাি সহজ করার পর্রামশ দয়ছিনে।ে কারণ তাদরে ধারণা পুরষ্কার জতলিওে ভসাি সংক্রান্ত জটলতিায় শষের্ পযন্ত তব্বতিরাি আমরকোিয় যতেে পারবনে না। বরং চাঁদে যাবার চয়েে তাদরে নজি দশেে যাবার ইচ্ছাই বশ।েি আর তারা লাসায় যাওয়াই বশিে কামনা করন।ে শষের্ পযন্ত তনদিনরিে মাথায় নাসার ধাধার অনুষ্ঠানটরি একটি ব্যাখ্যা অবশ্য সএনিএন টলভেশিনি যভোবে চত্তগিুপ্ত বাবুর কল্যানে দাঁড় করয়ছিলে,ি সটওেি বশে চমৎকার। পৃথবীিতে সাতজন মানুষরে বপদিরে যে বষয়িটি ছল,ি যমনে ওই সাতজন মানুষ আসলে পৃথবীির সাতটি মহাদশ।ে আর আকাশ দবীের চরত্রেি স্বয়ং চাঁদ। সাতটি মহাদশরেে জীবন রক্ষা করে চাঁদ কি তবে কোনো একটি মহাদশরেে জীবন চয়ছেলে?ি আর মহাদশগেুলোর কউে সে প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় অভমািনী চাঁদ তখন বলছলেি য,ে তোমরা আগামী ১০৫ বছর পরে আবারো এমন জীবনমরণ সমস্যার মুখোমুখি হব,ে তখন আর কউে তোমাদরে সাহায্যে এগয়েি আসবে না। প্রয়ি পাঠক, নাসার ধাধার উত্তরটি আপনওি পাঠাতে পারনে আগামী ছয় মাসরে মধ্য।ে প্রশ্ন অথবা উত্তর মনে মনে যা-ই আপনার ভাবনায় আসুক, তা ঠকঠিাক নাসার দ্প্তরে পাঠয়েি দওয়োর দায়ত্বেি যখন স্বয়ং ঈশ্বররে একান্ত সচবি মস্টাির চত্তগিুপ্ত বাবু। তখন আর দরিে করে লাভ ক?ি বলা তো যায় না আপনওি হতে পারনে ২০১১ সালরে ২১শে জুলাই চাঁদে যাবার জন্য মনোনতি একজন সৌভাগ্যবান নভোচারী। একবোরে বীনা খরচে কস্তিি মাত।
false
rg
নপুংসক জাতিসংঘ!!! জাতিসংঘ কি ?প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সকল জাতিসত্ত্বার সমন্বয়ে যে লীগ অব নেশান্স গঠিত হয়েছিল যেটি পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে অকার্যকর একটি বিশ্বসংস্থায় পরিনত হয়েছিল, সেই অকার্যকর সংস্থাটি আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাম পাল্টে রাতারাতি হয়ে গেল জাতিসংঘ। আগে ছিল জাতিপুঞ্জ আর এখন সেটি জাতিসংঘ। উদ্দেশ্য দুই সংস্থার প্রায় একই। বিশ্ববাসীকে যেনো আরেকটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মোকাবেলা করতে না হয়, সেজন্য শুরুতে ৫১টি দেশ এই সংস্থার সদস্য হলেও এখন এটির সদস্য সংখ্যা ১৯৩টি। বিগত ৬৮ বছরে এই সংস্থাটি ফুলে ফেঁপে আরো ১৭টি অঙ্গ সংস্থা বানিয়েছে। যাদের একমাত্র কাজ হল বিশ্বের গরিব দেশগুলোতে নানা কাজে খবরদারী করা। এই সংস্থাটি বিগত ৬৮ বছরে বিশ্বের নানা দেশে যুদ্ধ বন্ধে কোনো দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারেনি। বরং তলে তলে যুদ্ধ যাতে বাধে সেই বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে। যুদ্ধ বাধলেই এই সংস্থার তখন কিছু কাজকাম বাড়ে। সদস্য দেশগুলোর চাঁদার টাকায় এই সংস্থাটি মূলত আমেরিকার ছদ্মবেশী দালালের ভূমিকা পালনে সারা বিশ্বে কাজ করে।জাতিসংঘ গঠনের পর ১৯৪৫-৪৬ সালে বৃটেন, ফ্রান্স ও জাপানের সঙ্গে ভিয়েতনামের যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৫ -৪৯ সালে ইন্দোনেশিয়ায় বৃটেন ও হল্যান্ডের বিরুদ্ধে জাতীয় বিপ্লব হয়েছে। ১৯৪৬ সালে কুর্দি ও আজারবাইজানের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় প্রথম যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত গ্রিসে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৭ সালে প‌্যারগুয়েতে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প‌্যালেস্টাইনে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় যুদ্ধের দামামা বেজেছে। ১৯৪৮-৪৯ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৮ সালে বার্মায় জাতিগত দাঙ্গা হয়েছে। ১৯৪৮ সালে কোস্টারিকায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মালয়ে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদে অপারেশান পোলো সংঘটিত হয়েছে। ১৯৫০ সালে কোরিয়ায় যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চীনে ইসলামী গোষ্ঠীদের সঙ্গে চীনাদের যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইসরাইলের সঙ্গে মিশর, জর্দান, সিরিয়া ও প‌্যালেস্টাইনের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বৃটেনে মাউ মাউদের নিয়ে যুদ্ধের দামামা বেজেছে। ১৯৫৩ সালে ইরানে মার্কিন সিআইডি ও ইসরাইলী মোসাদের সঙ্গে ২৮ মোরাদ কোপ হয়েছে। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত কিউবান বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত লাওসে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ওমানে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আলজেরিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সুদানে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৬ সালে হাঙ্গরীতে সোভিয়েতদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৬ সালে ইসরাইল, বৃটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে মিশরের সুয়োজখাল নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৭-৫৮ সালে স্পেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে মরক্কো'র যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৮-৫৯ সালে লাওস ও ভিয়েতনামের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৯ সালে চীনের সঙ্গে তিব্বতের যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত স্পেনে বাস্কি কনফ্লিক্ট হয়েছে। ১৯৬০-৬১ সালে চীন ও বর্মার মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬০-৬৬ কঙ্গোতে গুহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গুয়েতেমালায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নিকারাগুয়াতে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ১৯৬১ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ইরাক ও কুর্দিদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬১ সালে আমেরিকা ও কিউবার মধ্যে সমুদ্র যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬১ সালে ফ্রান্স ও তিউনিশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬১ সালে ভারত ও পর্তুগালের মধ্যে যুদ্ধের মাধ্যমে গোয়া ভারতের দখলে এসেছে। ১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এ্যাঙ্গোলায় কলোনিয়াল যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মালি আর টুয়ারেগ গ্যারিলাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত উত্তর ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬২ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত গোটা মধ্যপ্রাচ্যে দোফার বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কেনিয়া ও সোমালিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৩ সালে মরক্কো ও আলজেরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত গিনি বিসাউ তে কলোনিয়াল যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে রোডেশিয়ায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কলাম্বিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত মোজাম্বিক ও পর্তুগালের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের উত্তর প্রদেশে গৃহযুদ্ধ চলছে। ১৯৬৪ সালে সংঘটিত হয়েছে জানজিবার বিপ্লব। ১৯৬৫ সালে ডোমিনিকে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার দেশ চাঁদে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কোরিয়ায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিনণ আফ্রিকায় জাতিগত যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নামিবিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৬ সালে ইসরাইলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ৬ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নাইজেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ইসরাইল ও মিশর যুদ্ধ করেছে। ১৯৬৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নেপালে মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় কমিউনিস্ট উত্থান নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৮ সালে চেকোশ্লোভাকিয়ায় যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিপাইন্সে মোরোদের সঙ্গে সরকার দলের যুদ্ধ চলছে। ১৯৬৯ সালে হন্ডুরাস ও এল সালভেদরের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৯ সালে চীন ও রাশিয়া সীমানা নিয়ে যুদ্ধ করেছে। ১৯৬৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পপুয়াতে গৃহযুদ্ধ চলছে। ১৯৭০-৭১ সালে জর্দান ও সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭১ সালে ভারত ও পাকিন্তান যুদ্ধ করেছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ইরিত্রিয়ায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৩ সালে ইসরইলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের ও কয়েকটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৪ সালে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ইথিয়ুপিয়ায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৪-৭৫ সালে ইরাক ও কুর্দিদের মধ্যে আবার যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এ্যাঙ্গোলায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পশ্চিম সাহারায় যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত লেবাননে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত লাওসে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব তিমুরের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় ডার্টি ওয়ার হয়েছে। ১৯৭৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া ও আচে মুভমেন্টের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত মোজাম্বিকে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৭ সালে লিবিয়া ও মিশর যুদ্ধ করেছে। ১৯৭৭-৭৮ সালে সোমালিয়া ও কয়েকটি আফ্রিকান দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৮ সালে লেবানন ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৭-৭৮ সালে দুইটি সাবাহ যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ লেবাননে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৮-৭৯ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত লিবিয়া ও চাঁদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কুর্দি ও তুরস্কের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৯ সালে চীন ও ভিয়েতনাসের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সিনো ও ভিয়েতনামের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কুর্দি ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ও আফগান মুজাহিদদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সালভাডোরে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পেরুতে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরাক ও ইরান যুদ্ধ করেছে। ১৯৮০-৮১ সালে ইরিত্রিয়ায় দ্বিতীয়বার গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮১ সালে পেরু ও ইকুয়েডরের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত উগান্ডায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড দ্বীপ নিয়ে বৃটেন ও আর্জেন্টিনা যুদ্ধ করেছে। ১৯৮২ সালে সিয়েরা লিওনে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত লেবানন ও ইসরাইল যুদ্ধ করেছে। ১৯৮২ সালে ইথিয়ুপিয়া ও সোমালিয়া যুদ্ধ করেছে। ১৯৮৩ সালে গ্রানাডায় যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শ্রীলংকায় তামিল টাইগারদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সুদানে দ্বিতীয়বারের মত গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরাক ও কৃর্দিদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সিয়াচেন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ করেছে। ১৯৮৫ সালে মালি ও বুরকিনা ফাসোর মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ইসরাইল ও প‌্যালেস্টাইন যুদ্ধ করেছে। ১৯৮৭-৮৮ সালে লাওস-ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে সীমান্ত নিয়ে। ১৯৮৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৯ -৯১ সালে মৌরিতানিয়া ও সেনেগালের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৯-৯০ সালে আমেরিকা ও পানামার মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৯ সালে রুমানিয়ায় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত লাইবেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জস্মু ও কাস্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ করছে। তারপর মোটা দাগে বসনিয়া যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, বলকান যুদ্ধ, আফগানিস্তানের যুদ্ধ, তিউনিশিয়া যুদ্ধ, মিশরের যুদ্ধ, লিবিয়ার যুদ্ধ, সিরিয়ার যুদ্ধ, মেক্সিকোর যুদ্ধ, কঙ্গো'র যুদ্ধ, সুদানের যুদ্ধ, সোমালিয়ার যুদ্ধ, সহ আরো হাজারো যুদ্ধের নাম উল্লেখ করা যাবে। এতো হাজার হাজার যুদ্ধ বিশ্বের নানা দেশে হয়েছে এবং হচ্ছে। অথচ জাতিসংঘ এখনো বহাল তবিয়তেই টিকে আছে। আবার সেই জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো এখন ঢাকায় আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র মধ্যে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে একটা দূতিয়ালীর কাজে। আহারে আমার জাতিসংঘ!!! পৃথিবীর এতো যুদ্ধের কোনো কিছু করতে পারলো না। বরং যুদ্ধের কারণে ঘি খেয়ে এখনো জাতিসংঘ বেঁচে আছে। এই নপুংসক জাতিসংঘের বাংলাদেশের সদস্য থাকার কোনো মানে আছে? আবার তারা দূত পাঠিয়ে আমাদের সদস্যা সমাধানে দূতিয়ালী করছেন। ওরে জাতিসংঘ, তোরা কার খেয়ে বনের মোষ তাড়াস? তোদের নিজেদের তো ইজ্জ্বতের ঠিক নাই রে...
false
fe
শহীদ কাদরী ও আমাদের সময় _ ওবায়েদ আকাশ সময়ের আলোচিত কবি শহীদ কাদরী। তাঁর কবিতা ক্রমশ:ই নন্দিত হচ্ছেপ্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তাঁকে নিয়ে, তাঁর কবিতা নিয়ে লিখেছেন নব্বই দশকের একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি , শালুক লিটল ম্যাগ সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ । কবিতাপ্রেমী দের উদ্দেশে আমার ব্লগে লেখাটি তুলে রাখলাম। ---------------------------------------------------------------------------------- শহীদ কাদরী ও আমাদের সময় ওবায়েদ আকাশ ========================================== ‘বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা/মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,/কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা/ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ/প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই/কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না.../একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে/শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত/শাদাভাত ঠিকই উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,/পুরনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে/...কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...’ এই হচ্ছে কবি শহীদ কাদরীর দৃষ্টিতে আধুনিকতার মূল অভীষ্ট অন্বেষা এবং এভাবেই শহীদ কাদরী তার সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ কোথাও কোনো ক্রন্দন নেইতেও এক স্বতন্ত্র চিন্তার আধুনিক কবি হয়ে বাংলা কবিতাকে মহিমান্বিত করেন। সকল প্রাপ্তির ভেতরেও যে একজন আধুনিক মানুষ অতৃপ্তই থেকে যায়, এই যে আধুনিক ও নাগরিক মানব মনের অপূর্ণতা-জটিলতা, সব প্রাপ্তির পরেও যে নাগরিক মন শেষ পর্যন্ত তার শান্তির শ্বেত কপোতটি ওড়াতে বারবার ব্যর্থ হয়ে যায়­ এ কাব্যগ্রন্থের ‘সঙ্গতি’ কবিতায় কবি তাকে এভাবে সফল ভাষা দেন। ১৯৭৮ সালে স্বেচ্ছানির্বাসিত কবি শহীদ কাদরী বর্তমানে বসবাস করছেন আমেরিকার বোস্টন সিটির কাছাকাছি লীন নামের একটি শহরে। আজ থেকে তিরিশ বছর আগে তিনি ছেড়ে যান তার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। পরবর্তীতে এক আমেরিকানকে বিয়ে করে ওখানেই থেকে যাওয়ায় আমরা আজকের প্রজন্ম প্রায় কেউই শহীদ কাদরীকে দেখিনি। সে সৌভাগ্য হয়নি আমাদের। তবে আমরা জেনেছি, পঞ্চাশের তিন আলোচিত কবির একজন ছিলেন শহীদ কাদরী। কিন্তু শহীদ কাদরী যে পঞ্চাশের কবি নন, তা ধীরে ধীরে আমাদের কাছে স্পষ্ট হতে থাকে। শহীদ কাদরী গত শতকের ষাটের দশকের প্রথম পর্বের একজন শক্তিমান কবি হলেও তাকে সাধারণ হিসেবে ষাটের তালিকায়ও রাখা হয় না। শামসুর রাহমান এবং আল মাহমুদের সঙ্গে অতিঘনিষ্ঠতার কারণে তাকে হিশেব করা হয় পঞ্চাশের কবি হিসেবে। মূলত শামসুর রাহমানের সঙ্গে শহীদ কাদরীর সম্পর্ক ছিল বড়ভাই আর ছোটভাইয়ের। শহীদ কাদরী ছিলেন শামসুর রাহমানের ছোটভাইয়ের ক্লাসমেট। ‘কাউন্টার পয়েন্ট’ নামে একটি ইংরেজি লিটারারি পত্রিকা প্রকাশনার সুবাদে শহীদ কাদরীর বড়ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে শামসুর রাহমানের। বাট হি [শামসুর রাহমান] লাইকড মি ভেরি মাচ, বলেছেন শহীদ কাদরী। রাহমান (১৯২৯) ও কাদরীর (১৯৪২) মধ্যে বয়সের ফারাক ১৩ বছরের। বলা যায় শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ শহীদ কাদরীর কবিতা লেখার গাইড লাইন হিসেবে কাজ করেছেন। কাদরীর কবিতা তারা কাটাকাটি করে ঠিক করে দিয়েছেন, ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। ছোটভাইয়ের মতো করে গড়ে তুলেছেন তারা শহীদ কাদরীকে। মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থের কবি হলেও আজকের বাংলা কবিতায় শহীদ কাদরী এক অনন্য উজ্জ্বল নাম। কবিতায় অতিমাত্রায় নগর কেন্দ্রিকতার কারণে, কিংবা সহজে নাগরিক চেতনাধারায় প্লাবিত হয়ে শহীদ কাদরী এককথায় ‘নাগরিক কবি’ বলে বিবেচিত। কিন্তু কাদরীর কবিতার গভীর তল-অন্বেষণে দেখা যায়, তিনি শুধু একজন নাগরিক কবিই নন, তার কবিতা বহুবিচিত্র। সুদূরসানী। কিন্তু তার রচনার পরিমাণ সে তুলনায় যথেষ্টই কম। শহীদ কাদরীও স্বীকার করেন তা। এই অভিযোগের জবাবে শহীদ কারদী নিজের আড্ডাপ্রিয়তাকে দায়ী করেছেন। আড্ডা তার প্রাণের নেশা হওয়ায় যেমন তিনি যখন তখন প্রিয় মানুষদের সঙ্গে আড্ডায় জড়িয়ে পড়েন, তেমনি সময় অসময়ে প্রচণ্ড আলসেমি তাকে জাপটে ধরায়, লেখালেখিতে যে সময় দিয়েছেন তা ভয়াবহভাবেই কম। এক্ষেত্রে তিনি শার্ল বোদলেয়ার, যাকে বলা হয় প্রফেট অব মডার্নিজম এবং জাঁ আর্তুর র‌্যাবোঁর মতো বিশ্বসাহিত্যের দুই পথিকৃৎ কবির কথা উল্লেখ করে বলেন, এরাও খুব কম লিখেছেন। শহীদ কাদরী লেখালেখি শুরু করেন নিতান্তই ছোট্ট বয়সে, যখন তিনি মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। শুরু করেছিলেন নাটক দিয়ে। তারপর প্রবেশ কবিতায়। শহীদ কাদরীর লেখা পঞ্চম কবিতা ‘এই শীতে’ ছাপা হয় বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায়। সেখান থেকেই অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে তিনি লিখতে শুরু করেন। এরপর বাংলা কবিতায় মাইকেল ও তিরিশের আধুনিকতাকে মনেপ্রাণে ধারণ করে শহীদ কাদরী তার কাব্যযাত্রা শুরু করলেও, বিশ্বপ্রেক্ষাপটে তার কাব্যদর্শনকে মিলিয়ে নিতে অভিলাষী হন। টিএস এলিয়ট, এজরা পাউন্ড, ডব্লিউ এইচ অডেন, শার্ল বোদলেয়ার, ব্রায়ান প্যাটেন, আড্রিয়ান হেনরি, এ্যালেন গিনসবার্গ তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। গিনসবার্গ সম্পর্কে শহীদ কাদরী বলেন, ‘গিনসবার্গ কবিতার এমন এক প্রদেশে ঢুকেছিলেন যা আগে কেউ পারেননি। আমাদের সময়ের আর্তনাদ গিনসবার্গের কবিতায় পাওয়া যায়।’ শহীদ কাদরীকে প্রভাবিত করেছিল ফন্সয়েড, হিউম, এরিক ফন্সমের মতো জগতখ্যাত দার্শনিকেরা। দর্শন, নৃতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব­ এগুলোর পাশাপাশি শহীদ কাদরী বিজ্ঞান ও ইতিহাসচর্চায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন। ২০০১ সালের ২৯ আগস্ট হাসানআল আব্দুল্লাহকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যেমন ধরো ইতিহাস পড়তে গেলে তুমি হেরোডাটাসের বই অবশ্যই পড়বে। পৃথিবীর প্রথম চিন্তাবিদ যিনি ইতিহাস লেখেন। সর্বকালের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ ইতিহাস গিবনের ‘দ্য ডিকলাইন এন্ড ফল অব রোমান এম্পায়ার’। রোমান এম্পায়ারের ডিকলাইন সম্পর্কে যখন গিবন লিখছেন, তিনি এমন আবেগ তাড়িত হয়ে গেছেন যে, গোটা প্যাসেজকে কবিতায় স্ক্যান করলে পারফেক্ট কবিতা হয়ে যায়। আবার আর্নল্ড টুয়েনবির ‘দ্য স্টাডি অব হিস্ট্রি’ বারো ভলিউমের এগুলো সব আমরা পড়েছি। এগুলো হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্ভার। কিংবা স্পিংলারের ‘ডিকলাইন অব দ্য ওয়েস্ট’। আবার আমাদের দেশের আর সি মজুমদারের ভারতের ইতিহাস, ড. নিহাররঞ্জন রায়ের বাংলার ইতিহাস... এরা হলো গ্রেট রাইটারস।... তারপর ইজমগুলোও পড়তে হবে, যেমন ফ্যাকচুয়ালিজম, সিন্ডিক্যালিজম, এনারকিজম, সোশ্যালিজম এসব।” তবে সব ইজমকেই আবার পাত্তা দেন না শহীদ কাদরী। যেমন পোস্টমডার্নিজম সম্পর্কে তার ধারণ মোটেও ইতিবাচক নয়। তিনি মনে করেন, পোস্টমডার্নিজম মডার্নিজমের আর একটি মাত্রা। কারণ মডার্নিজম কোন সীমা মানে না। পূর্বাপর মার্কসিজমে বিশ্বাসী কবি শহীদ কাদরীর ব্যক্তি ও কবিজীবন বলতে গেলে অনেক বেশিই ঘটনাবহুল। প্রবাস জীবন, বিদেশী স্ত্রী, বিরামহীন অসুস্খতা বারবার তাকে লেখালেখি থেকে বিচ্যুত করতে চাইলেও প্রকৃত কবি কখনো লেখার কলম ফেলে অন্য কিছুতে পুরোটা মগ্ন হতে পারেন না। পারেননি শহীদ কাদরী। তবে দেশ ছেড়ে যাবার পর তার লেখালেখি যে অবিস্মরণীয়ভাবেই কমে গেছে, তার প্রমাণ গত তিরিশ বছরে তার একটিও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। এবং একটি বই করার মতো লেখাও তিনি সংগ্রহ করতে পারেননি। এর অন্যতম কারণ তার মারাত্মক অসুস্খতা। অনেকেই জানেন যে, শহীদ কাদরীর দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে, সপ্তাহে তিনবার রক্ত পরিশোধনের মাধ্যমে বেঁচে আছেন তিনি। গত দুমাস আগে গুরুতর অসুস্খ হয়ে তিনি আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। দীর্ঘদিন তাকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এরপর কিছুটা সুস্খ হয়ে উঠলেও এখন তিনি কিছুই করতে পারছেন না। তবে প্রবাস জীবনে লেখা ৪০/৫০টি কবিতা তার হারিয়ে গেছে, যেটি দিয়ে তিনি একটি বই করতে চেয়েছিলেন। শহীদ কাদরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার’, প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে; দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে; এবং তৃতীয় বা সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই’, প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। এই তিনটিমাত্র কাব্যগ্রন্থ দিয়েই শহীদ কাদরী বাংলা কবিতার গভীরে তার শেকড় প্রথিত করেছেন। শহীদ কাদরীর কবিতা গভীর অনুসানী দৃষ্টির দূর দিকনির্দেশনা। সবসময় সময়কে ধারণ করে স্বাদেশিকতা, আন্তর্জাতিকতা এবং আন্তর-ভূগোলের চৌকস উপস্খাপনে শহীদ কাদরী নির্মাণ করেছেন তার কবিতার নিজের এলাকা। গভীর শিল্পবোধ ও বিশিষ্ট কাব্যভঙ্গি তার অপার কাব্যপ্রতিভাকে অনন্য করে তুলেছে। শহীদ কাদরী তার কবিতার শব্দ নির্বাচন থেকে শুরু করে ভাষাভঙ্গি, উপস্খাপনা, বিন্যাস কৌশলে সবসময় নিজেকেই অতিক্রম করতে চেয়েছেন। নতুন নতুন চিত্রকল্পের নির্মাণ, নব নব উপমা উৎপ্রেক্ষার প্রয়োগে শুরু থেকেই তিনি দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। দৃষ্টিভঙ্গির সুদূরতা, গভীর দর্শনবোধ, সময় ও প্রবৃত্তি চেতনা তার কবিতায় সাবলীলভাবে রেখাপাত করে। অভাবনীয়ভাবে শহীদ কাদরীর কবিতা রাজনীতি ও পরাধীন জাতির শোষণ ও বঞ্চনা তাড়িত হয়ে পাঠকের কাছে উপস্খাপিত হয়। নগর যান্ত্রিকতার গভীর ধোঁয়াশার মধ্যেও তিনি নান্দনিক নৈসর্গিক বর্ণনায় সিদ্ধহস্ত কুশীলব। শহীদ কাদরী তুমুল বৃষ্টিতে নগরে বসে এইভাবে আলোড়িত হন : উৎফুল্ল আঁধার প্রেক্ষাগৃহ আর দেয়ালের মাতাল প্ল্যাকার্ড, বাঁকা-চোরা টেলিফোন-পোল, দোল খাচ্ছে ওই উঁচু শিখরে আসীন, উড়ে আসা বুড়োসুড়ো পুরনো সাইনবোর্ড তাল দিচ্ছে শহরের বেশুমার খড়খড়ি কেননা সিপাই, সান্ত্রী আর রাজস্ব আদায়কারী ছিল যারা, পালিয়েছে ভয়ে। [বৃষ্টি, বৃষ্টি] রাজপথ, রাজত্ব, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, শহর, এভিনিউ, মাতাল, জুয়াড়ি, ভিখারি, লম্পট, বেশ্যা, সিপাই, সান্ত্রী, বুলেট, বেয়নেট, মিছিল, পার্ক, ফুটপাত, মার্চপাস্ট, সেনাবাহিনী ইত্যাদি শব্দ বারবার ঘুরেফিরে আসায় তার গভীরতর নগর ও রাজনীতি চেতনা ভাস্বরিত হয়। পরক্ষণেই আবার তিনি উচ্চারণ করেন : রয়ে যাই ঐ গুল্মলতায়, পরিত্যক্ত হাওয়ায় ওড়ানো কোন হলুদ পাতায়, পুকুর পারের গুগ্গুলে, একফোঁটা হন্তারক বিষে, যদি কেউ তাকে পান করে ভুলে, [মৃত্যুর পরে] এ রকম আরো অসংখ্য আবহমান বাংলার নিসর্গবর্ণনা শহীদ কাদরীর কবিতায় সার্বজনীনতা এনে দেয়। ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেই শহীদ কাদরী প্রত্যক্ষ করেন ’৪৭-এর দেশভাগ। তারপর বাঙালি জাতির একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধও সংঘটিত হয়েছে তারই চোখের সামনে। তিনি প্রত্যক্ষ করেন একটি পরাধীন জাতির নির্মম শোষণ-বঞ্চনার কত করুণ নির্মম কাহিনী। শৃঙ্খলিত, বিদেশী পতাকার নীচে আমরা শীতে জড়োসড় নি:শব্দে দেখেছি প্রেমিকের দীপ্ত মুখ থেকে জ্যোতি ঝরে গেছে ম্লানমুখো ফিরেছে বালক সমকামী নাবিকের মরিয়া উল্লাস ধ্বনি আর অশ্লীল গানের কলি নীর পালকের মত কানে গুঁজে, একা সাঁঝবেলা। যীশুখৃষ্টের মতন মুখে সৌম্য বুড়ো সয়ে গেছে ল্যান্টর্নের ম্লান রাত্রে সৈনিকের সিগারেট, রুটি, উপহার এবং সঙ্গম-পিষ্ট সপ্তদশী অসতর্ক চিৎকার কন্যার। [উত্তরাধিকার] শহীদ কাদরীর কবিতার উচ্চারণ যে কতটা তীব্র ও দ্ব্যর্থহীন­ রাজনীতি বিষয়ক কবিতাগুলোতে তা যথার্থ ফুটে উঠেছে। প্রকৃত কবি যেমন প্রতিটি শব্দকে অস্বাভাবিক গতি এনে দিতে পারেন, তেমনি শহীদ কাদরী উচ্চারণ করেন : রাষ্ট্র বললেই মনে পড়ে রেসকোর্সের কাঁটাতার, কারফিউ, ১৪৪ ধারা,... রাষ্ট্র মানেই স্ট্রাইক, মহিলা বুর সঙ্গে এনগেজমেন্ট বাতিল, রাষ্ট্র মানেই পররাষ্ট্র নীতি সংক্রান্ত ব্যর্থ সেমিনার রাষ্ট্র মানেই নিহত সৈনিকের স্ত্রী রাষ্ট্র মানেই ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে যাওয়া [রাষ্ট্র মানেই লেফ্ট রাইট লেফ্ট] শহীদ কাদরীর কবিতার শব্দবাণ কতটা মারাত্মক, কতটা প্রচণ্ড, কতটা আক্রমণাত্ম তার জাজ্বল্য প্রমাণ এ প্রকার বাক্য ও শব্দ নির্বাচন। বলা হয়ে থাকে শামসুর রাহমানের কবিতা প্রাচুর্যে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা উথান-পতনে এবং শহীদ কাদরীর কবিতা গাম্ভীর্যে বিশিষ্ট। ওপরের উদ্ধৃত পঙ্ক্তিগুলো সে প্রমাণ দিয়েছে নি:সন্দেহে। এত কঠোরতা, এতটা গাম্ভীর্য, এতটা অহাস্য-বদনে যে কবির বেড়ে ওঠা, সে কবিও যে প্রেমের কাছে তার নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে কার্পণ্য করেন না, তা তার কবিতার ভেতর দিয়েই আমরা অনুধাবন করি : একবার শানানো ছুরির মতো তোমাকে দেখেছি হিরন্ময় রৌদ্রে জ্বলজ্বলে যেখানে মাংসের লালে শিউরে উঠেছে আমার সত্তার সখ্যতা­ সেইখানে, সোনালি কিচেনে তুমি বসন্তের প্রথম দিনেই হত্যা করেছিলে আমাকে তোমার নিপুণ নিরিখে [একবার শানানো ছুরির মতো] কখনো গম্ভীর কখনো প্রেমিক শহীদ কাদরী স্পর্শ করেছেন জীবনের বিচিত্র এলাকা। অত্যাচারী শাসকের দম্ভের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যেমন দ্ব্যর্থহীন সত্যোচ্চারণে দ্বিধা করেননি, পরাধীন জাতির শৃঙ্খল ছেঁড়ার সাধনা করেছেন কবিতায়, তেমনি তিনি দাঁড়িয়েছেন অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে। শহরের অসহায় গণিকাদের নিয়ে তার অন্তর্বেদনাকে তিনি সাবলীলভাবে তুলে আনেন তার কবিতায়। তিনি তাদের ভূষিত করেন ‘রুগ্ণ গোলাপ’ অভিধায়। এখানে তিনি না-নাগরিক, না-আধুনিক হয়ে, হয়ে ওঠেন এক মানবিক কবি শহীদ কাদরী : শহরের ভেতরে কোথাও হে রুগ্ণ গোলাপদল শীতল, কালো, ময়লা সৌরভের প্রিয়তমা, অস্পৃশ্য বাগানের ভাঙাচোরা অনিদ্র চোখের অïসরা, দিকভ্রান্তের ঝলক তোমরা, নিশীথসূর্য আমার! যখন রুদ্ধ হয় সব রাস্তা, রেস্তোরাঁ, সুহৃদের দ্বার, দিগন্ত রাঙিয়ে ওড়ে একমাত্র কেতন,­ তোমাদেরই উন্মুক্ত অন্তর্বাস, ... ... ... আলিঙ্গনে, চুম্বনে ফেরাও শৈশবের অষ্ট আহ্লাদ! বিকলাঙ্গ, পঙ্গু যারা, নষ্টভাগ্য পিতৃমাতৃহীন,­ কাদায়, জলে, ঝড়ে নড়ে কেবল একসার অসুস্খ স্পন্দন তাদের শুশ্রূষা তোমরা, তোমাদের মুমূর্ষু স্তন! ... ... ... কানাকড়ির মূল্যে যা দিলে জীবনের ত্রিকূলে তা নেই [আলোকিত গণিকাবৃন্দ] শহীদ কাদরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার’-এ নি:সঙ্গতা, অসহায়ত্ব, জুলুম, নির্যাতন তথা নগর জীবনের বিধ্বস্ত পরাধীনতা ঈর্ষণীয়ভাবে ভাষা পেয়েছে। ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ কাব্যগ্রন্থে তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের ঘটনাপ্রবাহে অনেক বেশি বর্ণনাত্মক হয়ে ওঠেন। ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’তে তিনি সমসাময়িকতা ও অতিমাত্রায় আধুনিকতাকে ধারণ করেন। আজকের একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আজকের প্রজন্ম কবি শহীদ কাদরীকে কে কতটুকু স্মরণ করছেন, তার কবিতা এ প্রজন্মের কাছে কীভাবে গ্রহণীয় বা বাতিল হয়ে যাচ্ছে­ তা নি:সন্দেহে গুরুত্বের সঙ্গেই ভেবে দেখার বিষয়। শহীদ কাদরী যিনি পোস্টমডার্ন ধারণা সম্পর্কে এমন শানানো মন্তব্য করেছেন এবং উত্তর-আধুনিক ধারণাকেই বাতিল করে দেন, এবং নিজেকে যিনি বাংলা সাহিত্য তথা বিশ্বসাহিত্যের প্রায় সর্বশেষ গতি প্রকরণের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত রাখতে চান, সে-নিরিখে আজকের একজন তরুণ সাহিত্যকর্মীর সঙ্গে তাকে বিভাজন করে খুব দূরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। বরং শহীদ কাদরী তার কবিতার তারুণ্যেই প্রায় আজকের নতুন কবিতাকর্মীর সমসাময়িক হয়ে ওঠেন। অনেক অগ্রজকেই তো আগামী দিনের পাঠক মুহূর্তে ভুলে যাবেন সময়ের প্রবাহধারায়, আবার অনেককেই রেখে দেবেন তার সার্বক্ষণিক পাঠের তালিকায়। তেমনি আমার বিশ্বাস, আরো দীর্ঘদিনই কবি শহীদ কাদরী আলোকিত করে যাবেন আগামী দিনের পাঠক তথা তরুণ কবির পাঠের তালিকা। তার কবিতার তারুণ্য আরো দীর্ঘদিন বাংলা কবিতাকে অদম্য শক্তি এনে দেবে, সাহস দেবে, সন্দেহ নেই। আমরা কবি শহীদ কাদরীর দীর্ঘায়ু ও সুস্খ জীবন কামনা করি। ---------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ।সাময়িকী।১০ জুলাই২০০৮ প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০০৮ ভোর ৬:১৮
false
mk
নারীদের নিয়ে আহমেদ শফির ভাবনা___খালেদা কি এর মধ্যে আছে _ মেয়েদেরকে প্রাথমিক শিক্ষার পর স্কুলে না দিতে, নারীদের চাকরি করতে না দিতে অভিভাবকদের মধ্যে প্রচার চালাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। নারীদেরকে তেঁতুলের সঙ্গে সংগঠনের আমির আহমেদ শাহ শফি বলেছেন, মেয়েদের দেখলে পুরুষের লালা ঝড়া উচিত। কোনো পুরুষের লালা না ঝড়লে তিনি পুরুষত্বহীন বলেও মন্তব্য করেছেন শফি।হেফাজতে ইসলামীর নেতা আল্লামা শফী’র একটি বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। একটি ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া বক্তৃতায় হেফাজত নেতা শফী কেবল অশ্লীল কথাবার্তাই বলেননি, তিনি গার্মেন্টস এ কাজ করা মেয়েদের, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারেও নোংরা, রুচিহীন মন্তব্য করেছেন। প্রায় আধা ঘন্টার বক্তব্যে আল্লামা শফীর দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন সম্পর্কেও ধারনা পাওয়া যাবে।এই ভিডিওর বক্তব্য বিশ্লেষনের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম এবং তার নেতা আল্লামা শফীর মনন ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারনা পাওয়া যাবে বিবেচনা করে পাঠকদের জন্য ভিডিও তার বক্তব্য হুবহু উপস্থাপন করা হলো।“এই মহিলারা, ঘরের চার দিউয়ারির মধ্যে তোমরা থাকো। ঘরের বাহিরে ঘুরাফেরা করিও না। কে বলছে, আল্লাহপাক বলছে। হুজুরের আগের জামানায় মহিলারা বেপর্দায় চলাফেরা করতো। ঘর থেকে বাইর হইয়ো না তোমরা। উলঙ্গ অবস্থায় ঘুরাফেরা করিও না রাস্তা-ঘাটে, হাটে-মাঠে। সাবধান, মার্কেটিং করতে যাবেন না। ছেলে আছে, স্বামী আছে এদেরকে বলবা মার্কেটিং করার জন্য, তোমরা কেন যাইবা? তোমরা শুধু স্বামীকে অর্ডার করবে, এই জিনিস আনো, ওই জিনিস আনো, এই জিনিস নিয়া আসো। অর্ডার করবেন ছেলেকে অর্ডার করবেন বইসা বইসা আপনি কেন কষ্ট করবেন? আপনি স্বামীর ঘরের মধ্যে থাইকা স্বামীর আসবাবপত্র এগুলা হেফাজত কইরবেন। ছেলে-মেয়ে, ছেলে সন্তানকে লালন পালন করবেন। এগুলা আপনার কাজ। আপনে বাহিরে কেন যাবেন?আপনার মেয়েকে কেন দিচ্ছেন গার্মেন্টসে চাকরী করার জন্য? চাকরি তো অনেক করতেসেন। আপনার বিধিও কথায় ইশকুলে লেখাপড়া করায় ডাক্তার হইসেন। আপনেও ডাক্তার, আপনার মেয়েরাও ইশকুলে চাকুরী করে গার্মেন্টসে চাকুরী করে। সবাই টাকা-পয়সা অর্জন করতেসেন, তবুই শিকায়াত কুলাইতেসে না, কুলাইতেসে না। অভাব-অভাব-অভাব-অভাব। আগের যুগে একজনে কামাই রোজগার করসে, স্বামী। ছেলে, সন্তান, বউ, বেটি সবাইকে নিয়া ফরাগতের সাথে খাইসে। এখন বরকত নাই। এতো টাকা পয়সা রোজগার করতেসেন, তবু কুলাইতেসে না, অভাব-অভাব-অভাব, বরকত নাই।গার্মেন্টসে কেন দিসেন আপনার মেয়েকে? ফজরে ৭/৮ টা বাজে চলে যায়, রাত ৮/১০/১২ টায়ও আসেনা। কোন পুরুষের সাথে ঘোরাফেরা করতেসে তুমি তো জানো না। কতজনের মধ্যে মত্তলা হচ্ছে আপনার মেয়ে, আপনে তো জানেন না। জেনা কইরা কইরা টাকা রোজগার করতেসে, কি বরকত হবে?আপনারই মহিলা মেয়েদের স্কুলে, কলেজে, ভার্সিটিতে লেখাপড়া করছে। আরেহ, ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করান। বিবাহ শাদী দিলে স্বামীর টাকা পয়সার হিসাব কইরতে পারে মত, অতটুকু দরকার। বেশি বেশি আপনার মেয়েকে আইজকে স্কুলে কলেজে ভার্সিটিতে লেখাপড়া করাইতেসেন, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতেসেন। কিছুদিন পরে আপনার মেয়ে স্বামী একটা নিজে নিজে ধরি নিবে, লাভ ম্যারেজ/কোর্ট ম্যারেজ করি চলি যাবে। আপনার কথা স্মরণ করবে না। কয়জন আছে আপনেরা বলেন মহিলা?এখন আরও মোবাইলের জামানা, কিসের জামানা আরে বলেন না ভাই? আমার কথা বুঝে আসছে নি? এই ভুলগুলা কেউ বলে না ওয়াজে শুধু রঙ তামাশার ওয়াজ করে চলে যায়। মোবাইলের জামানা মহিলার কাছে, সবার কাছে। মহিলার কাসে মোবাইল, পুরুষের কাছে মোবাইল। ছাত্র ছাত্রীর কাছে মোবাইল-মোবাইল-মোবাইল। ছাত্র-ছাত্রীর থেকে নাম্বার নিয়ে নিছে, ছাত্রী ইশকুল কলেজের ছাত্রের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে নিছে, বাস লেখাপড়া যা করলেন।মহিলাদেরকে ক্লাসের সামনে বসানো হয় কলেজে ভার্সিটিতে, পুরুষরা কি লেখাপড়া কইরতেছে? মহিলা তেঁতুলের মত-তেঁতুলের মত-তেঁতুলের মত। ছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেসে, আপনে দেখতেছেন, আপনার মুখ দিয়া লালা বাইর হবে। সত্য না মিথ্যা বলেন তো? তেঁতুল বৃক্ষের নিচ দিকে আপনে হাইটা যান, আপনার মুখ থেকে লালা বাইর হয়। মার্কেটে যেখানে তেঁতুল বিক্রি করে ওদিকে যদি আপনে যান, আপনার মুখ থেকে লালা বাইর হয়। মহিলা তাঁর থেকেও বেশি খারাপ! মহিলাদেরকে দেখলে দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়, বিবাহ করতে ইচ্ছা হয়। লাভ ম্যারেজ/ কোর্ট ম্যারেজ করতে ইচ্ছা হয়। হয় কিনা বলেন? এই মহিলারা তেঁতুলের মত। দিনেরাত্র মহিলাদের সাথে পড়ালেখা করতেসেন, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। রাস্তাঘাটে হাঁটাহুটা করতেসেন, হ্যান্ডশেক কইরা কইরা, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। যতই বুজুর্গ হোক না কেন, এই মহিলাকে দেখলে, মহিলার সাথে হ্যান্ডশেক করলে আপনার দিলের মধ্যে কুখেয়াল আইসা যাবে, খারাপ খেয়াল। এইটা মনের জেনা, দিলের জেনা হইতে হইতে আসল জেনায় পরিণত হবে। এটা সত্য না মিথ্যা? কেউ যদি বলে একজনবুড়া মানুষ হুজুর মহিলাকে দেখলে আমার দিল খারাপ হয় না, কুখেয়াল দিলের মধ্যে আসে না। তাহলে আমি বলব ভাই, হে বুড়া তোমার ধ্বজভঙ্গ বীমার আছে। তোমার পুরুষত্ব নস্ট হয়া গেসে। সেজন্য মহিলাদের দেখলে তোমার মনে কুভাব আসে না। একটা বুড়া আরেকটা ধ্বজভঙ্গ বীমারওয়ালা ওই বুড়ার দিলের মধ্যে মহিলা দেখলে কুভাব না আসতে পারে।মেয়েদেরকে প্রাথমিক শিক্ষার পর স্কুলে না দিতে, নারীদের চাকরি করতে না দিতে অভিভাবকদের মধ্যে প্রচার চালাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। নারীদেরকে তেঁতুলের সঙ্গে সংগঠনের আমির আহমেদ শাহ শফি বলেছেন, মেয়েদের দেখলে পুরুষের লালা ঝড়া উচিত। কোনো পুরুষের লালা না ঝড়লে তিনি পুরুষত্বহীন বলেও মন্তব্য করেছেন শফি।হেফাজতে ইসলামীর নেতা আল্লামা শফী’র একটি বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। একটি ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া বক্তৃতায় হেফাজত নেতা শফী কেবল অশ্লীল কথাবার্তাই বলেননি, তিনি গার্মেন্টস এ কাজ করা মেয়েদের, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারেও নোংরা, রুচিহীন মন্তব্য করেছেন। প্রায় আধা ঘন্টার বক্তব্যে আল্লামা শফীর দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন সম্পর্কেও ধারনা পাওয়া যাবে।এই ভিডিওর বক্তব্য বিশ্লেষনের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম এবং তার নেতা আল্লামা শফীর মনন ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারনা পাওয়া যাবে বিবেচনা করে পাঠকদের জন্য ভিডিও তার বক্তব্য হুবহু উপস্থাপন করা হলো।“এই মহিলারা, ঘরের চার দিউয়ারির মধ্যে তোমরা থাকো। ঘরের বাহিরে ঘুরাফেরা করিও না। কে বলছে, আল্লাহপাক বলছে। হুজুরের আগের জামানায় মহিলারা বেপর্দায় চলাফেরা করতো। ঘর থেকে বাইর হইয়ো না তোমরা। উলঙ্গ অবস্থায় ঘুরাফেরা করিও না রাস্তা-ঘাটে, হাটে-মাঠে। সাবধান, মার্কেটিং করতে যাবেন না। ছেলে আছে, স্বামী আছে এদেরকে বলবা মার্কেটিং করার জন্য, তোমরা কেন যাইবা? তোমরা শুধু স্বামীকে অর্ডার করবে, এই জিনিস আনো, ওই জিনিস আনো, এই জিনিস নিয়া আসো। অর্ডার করবেন ছেলেকে অর্ডার করবেন বইসা বইসা আপনি কেন কষ্ট করবেন? আপনি স্বামীর ঘরের মধ্যে থাইকা স্বামীর আসবাবপত্র এগুলা হেফাজত কইরবেন। ছেলে-মেয়ে, ছেলে সন্তানকে লালন পালন করবেন। এগুলা আপনার কাজ। আপনে বাহিরে কেন যাবেন?আপনার মেয়েকে কেন দিচ্ছেন গার্মেন্টসে চাকরী করার জন্য? চাকরি তো অনেক করতেসেন। আপনার বিধিও কথায় ইশকুলে লেখাপড়া করায় ডাক্তার হইসেন। আপনেও ডাক্তার, আপনার মেয়েরাও ইশকুলে চাকুরী করে গার্মেন্টসে চাকুরী করে। সবাই টাকা-পয়সা অর্জন করতেসেন, তবুই শিকায়াত কুলাইতেসে না, কুলাইতেসে না। অভাব-অভাব-অভাব-অভাব। আগের যুগে একজনে কামাই রোজগার করসে, স্বামী। ছেলে, সন্তান, বউ, বেটি সবাইকে নিয়া ফরাগতের সাথে খাইসে। এখন বরকত নাই। এতো টাকা পয়সা রোজগার করতেসেন, তবু কুলাইতেসে না, অভাব-অভাব-অভাব, বরকত নাই।গার্মেন্টসে কেন দিসেন আপনার মেয়েকে? ফজরে ৭/৮ টা বাজে চলে যায়, রাত ৮/১০/১২ টায়ও আসেনা। কোন পুরুষের সাথে ঘোরাফেরা করতেসে তুমি তো জানো না। কতজনের মধ্যে মত্তলা হচ্ছে আপনার মেয়ে, আপনে তো জানেন না। জেনা কইরা কইরা টাকা রোজগার করতেসে, কি বরকত হবে?আপনারই মহিলা মেয়েদের স্কুলে, কলেজে, ভার্সিটিতে লেখাপড়া করছে। আরেহ, ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করান। বিবাহ শাদী দিলে স্বামীর টাকা পয়সার হিসাব কইরতে পারে মত, অতটুকু দরকার। বেশি বেশি আপনার মেয়েকে আইজকে স্কুলে কলেজে ভার্সিটিতে লেখাপড়া করাইতেসেন, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতেসেন। কিছুদিন পরে আপনার মেয়ে স্বামী একটা নিজে নিজে ধরি নিবে, লাভ ম্যারেজ/কোর্ট ম্যারেজ করি চলি যাবে। আপনার কথা স্মরণ করবে না। কয়জন আছে আপনেরা বলেন মহিলা?এখন আরও মোবাইলের জামানা, কিসের জামানা আরে বলেন না ভাই? আমার কথা বুঝে আসছে নি? এই ভুলগুলা কেউ বলে না ওয়াজে শুধু রঙ তামাশার ওয়াজ করে চলে যায়। মোবাইলের জামানা মহিলার কাছে, সবার কাছে। মহিলার কাসে মোবাইল, পুরুষের কাছে মোবাইল। ছাত্র ছাত্রীর কাছে মোবাইল-মোবাইল-মোবাইল। ছাত্র-ছাত্রীর থেকে নাম্বার নিয়ে নিছে, ছাত্রী ইশকুল কলেজের ছাত্রের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে নিছে, বাস লেখাপড়া যা করলেন।মহিলাদেরকে ক্লাসের সামনে বসানো হয় কলেজে ভার্সিটিতে, পুরুষরা কি লেখাপড়া কইরতেছে? মহিলা তেঁতুলের মত-তেঁতুলের মত-তেঁতুলের মত। ছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেসে, আপনে দেখতেছেন, আপনার মুখ দিয়া লালা বাইর হবে। সত্য না মিথ্যা বলেন তো? তেঁতুল বৃক্ষের নিচ দিকে আপনে হাইটা যান, আপনার মুখ থেকে লালা বাইর হয়। মার্কেটে যেখানে তেঁতুল বিক্রি করে ওদিকে যদি আপনে যান, আপনার মুখ থেকে লালা বাইর হয়। মহিলা তাঁর থেকেও বেশি খারাপ! মহিলাদেরকে দেখলে দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়, বিবাহ করতে ইচ্ছা হয়। লাভ ম্যারেজ/ কোর্ট ম্যারেজ করতে ইচ্ছা হয়। হয় কিনা বলেন? এই মহিলারা তেঁতুলের মত। দিনেরাত্র মহিলাদের সাথে পড়ালেখা করতেসেন, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। রাস্তাঘাটে হাঁটাহুটা করতেসেন, হ্যান্ডশেক কইরা কইরা, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। যতই বুজুর্গ হোক না কেন, এই মহিলাকে দেখলে, মহিলার সাথে হ্যান্ডশেক করলে আপনার দিলের মধ্যে কুখেয়াল আইসা যাবে, খারাপ খেয়াল। এইটা মনের জেনা, দিলের জেনা হইতে হইতে আসল জেনায় পরিণত হবে। এটা সত্য না মিথ্যা? কেউ যদি বলে একজনবুড়া মানুষ হুজুর মহিলাকে দেখলে আমার দিল খারাপ হয় না, কুখেয়াল দিলের মধ্যে আসে না। তাহলে আমি বলব ভাই, হে বুড়া তোমার ধ্বজভঙ্গ বীমার আছে। তোমার পুরুষত্ব নস্ট হয়া গেসে। সেজন্য মহিলাদের দেখলে তোমার মনে কুভাব আসে না। একটা বুড়া আরেকটা ধ্বজভঙ্গ বীমারওয়ালা ওই বুড়ার দিলের মধ্যে মহিলা দেখলে কুভাব না আসতে পারে।
false
ij
তসলিমা নাসরীন প্যারিসে স্থায়ী হলেন_ এ লজ্জা আমাদের । তসলিমা নাসরীন। মূলত কবি। তবে নারীস্বাধীনতা বিষয়ক বক্তব্য রাখায় একাধারে তিনি বিশ্বজুড়ে নন্দিত ও নিন্দিত। এবং নির্বাসিত। আশ্চর্য এই- তসলিমা যা বিশ্বাস করেন সে বিশ্বাস এখন এদেশের অনেককের কাছেই অস্বাভাবিক মনে হয় না, বরং তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যেহেতু আমরা অন্ধকার থেকে ক্রমেই আলোয় যাচ্ছি। যেহেতু অন্ধকার পিছনে হটছে ... নিচের এই খবরটা হয়তো এরই মধ্যে অনেকেই জেনে গেছেন। Taslima Nasreen:Menaced Bangladeshi writer to settle in Paris; city hall. PARIS (AFP) — Bangladeshi writer Taslima Nasreen, under threat of death from Islamist extremists who accuse her of blasphemy in her writings, is to take up residence in Paris, the city hall said Saturday. Municipal authorities will provide her with a large studio in an artists' residence in the 10th arrondissement, in the east of the French capital, and initially pay her rent. Nasreen, who was made an honorary citizen of Paris in July 2008, put in an application for housing six weeks ago. "You are at home here, in the city where it was proclaimed that men are born and remain free and equal and nobody can be condemned for their beliefs," Paris Mayor Bertrand Delanoe said when she was given honorary citizenship. Nasreen was forced to flee her native country in 1994 after her novel "Lajja" (Shame) about the persecution of a Hindu family by Muslims in Bangladesh drew accusations of blasphemy. A gynaecologist by training, she spent several years moving between Europe and the United States before settling in India in 2004. Renewed threats drove her to Sweden in March 2008. সংবাদটা পড়তে পড়তে আমার Nietzsche -এর একটি উক্তি মনে পড়ে গেল- An artist has no home in Europe except in Paris. তসলিমা নাসরীন প্রবাসে স্থায়ী হলেন: এ লজ্জা আমাদের। কেন? কেননা, আমরা মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি না। -মত প্রকাশের স্বাধীনতা? তসলিমা ধর্মবিশ্বাসীদের আহত করেছেন? -তা হলেও অনেক ধর্মীয় বক্তব্যও যে আমাদের আহত করে। সে ক্ষেত্রে? সেসব নির্বাসিত করা হয় না কেন? কতগুলি অন্ধ অন্ধকার নিম্নকায় রুচিহীন খাটো বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জন্য তসলিমা নির্বাসিত হলেন। নির্বাসিত হয়ে এখন প্রবাসে কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা তাঁকে বঞ্চিত করলাম ব্রহ্মপুত্রের নির্মল বাতাস থেকে, শাহবাগের মোড়ের আড্ডা থেকে। তসলিমা এখন প্রবাসে কষ্ট পাচ্ছেন; তবে থেমে নেই নাসরীনের কলম। ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক নইপলকে তুলোধুনো করেছেন তসলিমা নইপালের সংকীর্ণতা নিয়ে। পড়ুন- Click This Link তসলিমা তাঁর দায়িত্ব ও ভূমিকা ঠিকই পালন করে যাচ্ছেন। কবি বলেই। তসলিমা আমার কাছে কবি। বৃদ্ধ বয়েসে হলেও কবিকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আলোর মুখে দাঁড়িয়ে আজ আমাদের এই অঙ্গীকার। তসলিমাকে ফিরিয়ে আনুন। এক্ষুনি বলে রাখছি-তসলিমাকে নির্বাসিত করার কারণে ভবিষ্যতের সেক্যুলার প্রজন্ম আমাদের দুষবে! সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৮
false
fe
প্রথম আলো -র নামছাটা প্রকল্প ( বদলে যাও , বদলে দাও ) হাঁ , বিশ্বাস করুন আর নাই করুন , দৈনিক প্রথম আলো লেখকদের নামছাটা প্রকল্প চালু করেছে। তারা দেশের খ্যাতিমান লেখকদের নাম থেকে শেষাংশ ছেটে ফেলছে। এর প্রাথমিক পর্যায়ে ছাটার শিকার হয়েছেন আমাদেরই পরিচিত কয়েকজন লেখক। প্রথম আলো র অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র রিপোর্টার ও ব্লগার শওকত হোসেন মাসুম এর নাম কেটে শওকত হোসেন করা হয়েছে। আরেক ব্লগার ও প্রথম আলোর নিয়মিত লেখক মাহমুদুল হক ফয়েজ এর নাম কেটে মাহমুদুল হক করা হয়েছে ।http://www.prothom-alo.com/mcat.news.details.php?nid=MTQ3MzY0&mid=Mw== দেশের সুপরিচিত ছড়াকার ও টিভি কর্মী ওবায়দুল গনি চন্দন এর নাম কেটে ওবায়দুল গনি করা হয়েছে। এ নিয়ে চন্দন একটা লেখাও লিখেছেন ২৪ মার্চ ২০০৯ মংগলবারের দৈনিক আমার দেশ - এ । Click This Link জানা যাচ্ছে , প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার কাগজে সব লেখকের ডাকনাম ছেটে ফেলা হবে । এ বিষয়ে আমার কিছু প্রশ্ন আছে ......... ১। আমরা জানি শওকত হোসেন নামে দেশে আরেকজন লেখক-কবি আছেন। শওকত হোসেন মাসুম কে আমরা পৃথক করবো কিভাবে ? সদ্য প্রয়াত হয়েছেন , কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হক। তাই ঐ নাম নিয়েই কি বেঁচে থাকবেন মাহমুদুল হক ফয়েজ ? ওবায়দুল গনি চন্দন নামটি বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্টিত । তাকে আবার কি তবে পুনর্জন্ম নিয়ে লেখা শুরু করতে হবে ? ২। হঠাৎ করে সম্পাদক ( একতা 'র সাবেক সম্পাদক) মতিউর রহমানের এই খায়েশ হলো কেন ? এটাও কি সুশীল বানাবার, বদলানোর ধাপ ? ৩। তারা কি তাদের আলোকচিত্র সম্পাদক নাসির আলী মামুন এর নাম ও বদলে দেবেন ? দিতে পারবেন ? সুপ্রিয় ব্লগার , আপনাদের মতামত আশা করছি । ======================================= এটা আমার জন্য বিস্ময় ও বা য় দু ল গ ণি চ ন্দ ন ------------------------------------------------- আমি ওবায়দুল গনি চন্দন। বেসরকারি স্যাটেলাইন টিভি ‌চ্যানেল বাংলাভিশনে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছি সাড়ে তিন বছর ধরে। রিপোর্টার ছাড়াও ছড়াকার হিসেবে আমার একটি পরিচয় আছে। দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে আমি ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছড়া লিখে আসছি। আমার ছড়ার বইয়ের সংখ্যা ‌ ২২। ২০০০ সালে শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ছড়াসাহিত্যে জাতীয় পুরস্কারর (অগ্রণী ‌‌ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার) অর্জন রয়েছে। ছড়া লেখা ছাড়াও আমি ওবায়দুল গনি চন্দন নামেই টিভি নাটক, টিভির অসংখ্য ‌ম্যাগাজিন অনুষ্টানে গান রচনা করে আসছি। চলচ্চিত্রেরর গানও লিখেছি। বাংলা একাডেমীর লেখক অভিধানেও আমার নাম রয়েছে। গত ১৬ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোর ফান ‌ম্যাগাজিন রস+আলো-তে ''টিভি চ্যানেলের ময়না তদন্ত'' নামে আমার একটি দীর্ঘ ছড়া প্রকাশিত হয়। তবে লেখাটি ছাপা হয় আমার নামের অংশ ''চন্দন '' বাদ দিয়ে। প্রথম আলোর নয় বছরে আমার অসংখ্য ছড়া ছাপা হয়েছে পুরো নামেই । এবারে এমনটি ঘটার কারণ রসালোর বিভাগীয় সম্পাদকের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে জানান, তাদের সম্পাদক মতিউর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারো ডাক নাম প্রথম আলোতে ছাপানো হবে না । অনৈতিক এমন সিদ্ধান্ত তারা নতুন, যশপ্রার্থী , উঠতি কোনো লেখকের বেলায় কার্যকর করতে পারেন। আমার মতো দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সংগে জড়িত একজনের ছড়া ছাপার সময় এ কাজটি করতে তারা দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার প্রয়োজনও মনে করলেন না! এটা আমার জন্য বিস্ময়! ছড়াটি পড়ে আমার অনেক বন্ধু , শুভাকাংখী, পাঠক প্রশ্ন রেখেছেন, কীভাবে এমন হলো? অসহায়ের মতো আমি এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারিনি। কেউ কেউ বলেছেন উকিল নোটিশ কিংবা মামলা করার কথা। আমি ব্যস্ত এবং নিরীহ মানুষ। এসব কাজ করার জন্য আলোচনা এবং সময়ের প্রয়োজন। তবে এটুকু অনুভব করেছি আমার সাধ্য অনুযায়ী জোরালো প্রতিবাদ করা উচিত ।আমি মনে করি যেসব পত্রিকা আমার লেখা প্রকাশ করে আমাকে ছড়াকার বানিয়েছে সেসব পত্রিকার মাধ্যমেই এর প্রতিবাদ করা উচিত । দেশের স্বনামধন্য কবি, সাহিতিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, চিত্রকর, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, সম্পাদক, খেলোয়াড়সহ সব শ্রেণীর পেশাজীবী মানুষ আমার কম-বেশি পরিচিত। একটি পত্রিকা একজন প্রতিষ্টিত ছড়াকারের সাথে কীভাবে এরকম গর্হিত আচরণ এবং ধৃষ্টতা দেখাতে পারে তা নিয়ে কেউ না কেউ প্রতিবাদ করবেন বলে আমার বিশ্বাস । সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০০৯ ভোর ৫:২৬
false
mk
রোহিঙ্গা ও মানবতা যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই প্রশ্ন করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ওআইসি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ বিশ্ববিবেক আজ কোথায়? ইউএনএইচসিআর, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ কয়েকটি সংস্থা মৃদুকণ্ঠে মিয়ানমারের নিষ্ঠুর নিপীড়নের ব্যাপারে উদ্বেগ জানালেও তাতে সাড়া মিলছে না। এসব সংস্থা বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিতেও বলছে। কিন্তু বাংলাদেশে থাকা কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর কোনো চাপ দিচ্ছে না তারা। বাংলাদেশ বিগত সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে দাবি তুললেও বিশ্বমহল ছিল নিশ্চুপ। এ কারণে আশির দশকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিসহ নানা অপরাধ অপকর্মে জড়িয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এমনকি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেসব দেশেও সমস্যা সৃষ্টি করেছে মর্মে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে মারাত্মকভাবে। এমনি অবস্থায় নতুন করে যদি এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে, তাহলে জনবহুল এই দেশে নতুন করে বহুবিধ সমস্যায় পড়তে হবে। কাজেই যে কোনোভাবেই হোক, দেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্বের মোড়ল সব রাষ্ট্র ও সরকার নীরবতা পালন করে আসছে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলা, তাদের হত্যা, জোর করে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ, বাড়িঘরে অগি্নসংযোগের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের লোমহর্ষক ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটলেও বিশ্ববিবেক কিছুই বলছে না। এমনি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়েও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোও বলতে গেলে নিশ্চুপ। তাদের কেউ কেউ দায়সারা গোছের প্রতিবাদ জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। তবে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক মহল অবশ্য মিয়ানমারের চলমান সেনা অভিযানে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ তুলেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের দমন-পীড়নের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশও। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিয়ো মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। এ ব্যাপারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট রয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। যুগযুগ ধরে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কাঠখড় পোহাতে হয়েছে সামরিক সরকারের শাসনামলে। ২০১৫ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি সরকার গঠন করে। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দেশটির মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দেশটিতে। এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার। সুচির সরকার এখনো দেশটিতে মুসলিম রোহিঙ্গাদের নির্যাতন রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ হামলায় প্রায় ৩০ হাজার গ্রামবাসীর ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিগত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে যত রোহিঙ্গা মুসলমান আশ্রয়ের জন্য প্রবেশ করেছে, তাদের বেশির ভাগই টেকনাফের দুটি এবং কুতুপালংয়ের একটি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে এসে উঠেছে। বাকি অনেকেই উঠছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আগে থেকেই অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের কাছে। সরকার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবে এমন একটি বক্তব্য দিলেও কিভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো হবে, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বাংলাদেশ সরকার চায় না, রোহিঙ্গারা এখানে এসে নিজেদের আবাস গড়ে তুলুক। এর পক্ষে-বিপক্ষেও যুক্তি আছে। প্রথমত, বাংলাদেশ অন্য দেশের নাগরিকদের গ্রহণ করবে কেন? কারণ বাংলাদেশ এখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে মিয়ানমার সরকার সেখানকার সব রোহিঙ্গাকে এখানে পুশ করে দেয়ার একটা সহজ সুযোগ পেয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের যে একটা নৈতিক দায়িত্ব নেই, তা নয়। শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়াও দেশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশও মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার মতো যুদ্ধগ্রস্ত দেশের অসহায় শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে শুধু মানবিক কারণে। এমনকি ১৯৭১ সালে শরণার্থী হিসেবে এক কোটি মানুষকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। ওই সহযোগিতাকে এখনো আমরা মানবিক ও কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে দেখে থাকি। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে, তা আগেই উল্লেখ করেছি।মিয়ানমার সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের ভেতর আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘ এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছে। এখনো জাতিসংঘের তৎপরতা থেকে স্বীকৃত শরণার্থীদের কিছু কিছু সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। বাকি যাদের সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখ, তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এ দেশের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিছু রোহিঙ্গা দেশে ফিরে গেলেও বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা শরণার্থীর দায়ভার বহন করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখন মিয়ানমারের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক গড়ে তোলার বিশেষ চেষ্টা চালিয়ে বেশ কিছুটা সফল হয়েছেন, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটা সত্য সত্যই উদ্বেগজনক। এ অঞ্চলে বাংলাদেশ যে শান্তির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে মিয়ানমারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই ভুল বোঝাবোঝির এ সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ চায় জাতিসংঘসহ বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো এ ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর হোক। রোহিঙ্গারা যাতে তাদের স্বদেশে নাগরিকত্ব পেয়ে বসবাস করতে পারে এবং বিদেশে আশ্রিতরা দেশে ফিরে যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে আশ্রিতরা যাতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে জাতিসংঘ এ ব্যাপারে তৎপর হয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। এখন সময় এসেছে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে অগ্রসর হওয়ার। বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সহায়তায় জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করতে পারে অথবা নিজেরাও মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ আলোচনায় সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় অগ্রসর হতে পারে। আমরা আশা করব মিয়ানমারের নেত্রী সু চি জাতিসংঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চল বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করবেন। যাতে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন। মিয়ানমারের কারণে বাংলাদেশে যেন অশান্তির সৃষ্টি না হয়। রোহিঙ্গারা যেন তাদের অধিকার ফিরে পায়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, ঐতিহাসিক এ সত্য মেনে নিয়ে মিয়ানমার সরকারের উচিত, রোহিঙ্গা হত্যা, নির্যাতন ও বিতাড়ন বন্ধ করে তাদের নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার বিষয়ে যত্নবান হওয়া। নিপীড়নের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে, এই পরিস্থিতি মোটেও সুখকর নয়। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশের পাহাড়, জঙ্গল ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। যা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত গঠনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। মানবিক সমস্যা মানবিক দৃষ্টিতেই দেখা উচিত। পৃথিবীর যেখানেই মানবিক বিপর্যয় ঘটুক না কেন, পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করাই বিবেক ও মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষের কাজ। তবে ব্যক্তির দাঁড়ানো আর রাষ্ট্রের দাঁড়ানো এক কথা নয়। কোনো রাষ্ট্র যদি মনে করে, মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে বৃহত্তর স্বার্থে এগিয়ে নাও আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। যৌক্তিক কারণেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি এমন আচরণ করছে। কারণ তারা বাংলাদেশে ঢুকে নানা ধরনের অপরাধে ও অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে, অতীত তাই বলে। রোহিঙ্গাদের ভাষা কিছুটা চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে মিল হওয়ায়, তারা বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে মিলে মাদক চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা, জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকা- এমনকি বাংলাদেশের গলাকাটা পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।মনে রাখতে হবে, বিশ্বের দেশে দেশে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, নীপিড়ন, তাদের সম্পদ দখল, গ্রাস, সম্পদে-বাড়িঘরে হামলা, অগি্নসংযোগের ঘটনা নতুন নয়। পৃথিবীর সভ্য দেশ, উন্নত রাষ্ট্র থেকে শুরু করে, অনুন্নত, গরিব দেশেও ঘটে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। কিন্তু সম্প্রতি মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা নাড়া দিয়েছে বিশ্ববিবেককে। সংখ্যালঘু মুসলিম নারী, শিশু ও বৃদ্ধ কেউই বর্বরোচিত হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না। দেশি-বিদেশি প্রচার মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিদিন লোকহর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়, কাদায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ১০ মাসের ছোট্ট শিশু। এ যেন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মানবতা। প্রাণে বাঁচতে সীমান্ত পার হতে চেয়েছিল রোহিঙ্গা শিশুটি। কিন্তু তাকে একেবারে না ফেরার দেশেই পাঠিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশ-বিজিপি। মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদীর তীরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ওই রোহিঙ্গা শিশুর পরিচয় মিলেছে। মাত্র ১০ মাসের ছোট্ট শিশুটির নাম তোহাইত। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের ১৫ জনের একটি দল বাংলাদেশের দিকে আসার চেষ্টা করছিল। মংডুর এই রোহিঙ্গারা একটি নৌকায় চেপে বসতেই নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে মিয়ানমার বিজিপি। রোববার রাতের এই ঘটনায় দুই শিশুসহ এক ডজনেরও বেশি রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটে। এর চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে?এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে বাঁচার আশায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোট্ট নৌকায় চেপে বসেছিল তিন বছর বয়সী শিশু আয়লান কুর্দি। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয়ের আশায় যেতে চেয়েছিল গ্রিসে। কিন্তু সাগরের উত্তাল ঢেউ কেড়ে নেয় আয়লান কুর্দিকে। সাগর তীরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল আয়লান কুর্দির নিথর দেহ। সাগর তীরে শিশু আয়লানের পড়ে থাকা মরদেহ হয়ে ওঠে বিপন্ন মানবতার প্রতীক। এনিয়ে সেসময় বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে। এবার একই চিত্র আবারও ভেসে উঠলো মিয়ানমারের নাফ নদীর তীরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'জাতিগত নিধনের' নিষ্ঠুর শিকার রোহিঙ্গাদের প্রতীক তোহাইতকে বলা হচ্ছে 'আয়লান রোহিঙ্গা'।ভেবে কষ্ট লাগে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির দল। যিনি সারা জীবন অধিকারহারা, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এজন্য তাকে জীবনের বেশির ভাগ সময় ধরে রাখা হয়েছে অন্তরীণ। ভোগ করতে হয়েছে নির্যাতন, নিপীড়ন। আর তিনি এবং তার দল ক্ষমতায় এসে এখন কাজ করছেন পুরো শান্তি এবং মানবতাবিরোধী কর্মকা-। আর যাই হোক, এটা মেনে নেয়া যায় না। এর সুষ্ঠু ও মানবিক সমাধান জরুরি এবং এর কোনো বিকল্প নেই। সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
false
rn
_মুছে যাক আমার নাম, তবু বেঁচে থাক বাংলাদেশ_ মা বলছে ছেলেকে : স্কুলে যা,ছেলে : না যাবো না, আমি জব করবো। মা : ফাজিল, ক্লাস টু তে পড়িস তুই কি জব করবি? ছেলে: ক্লাস ওয়ান এর মেয়ে কে পড়াব ।মেয়েদের মাথার ঝরে যাওয়া চুল বিক্রি হচ্ছে লাখ টাকায়, যাচ্ছে বিদেশে। এই চুল বিক্রি করে সংসার চলছে শত শত মানুষের। এক কেজি চুলের দাম ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। চুল সংগ্রহ এবং বেচাকেনা এবং পরচুলা তৈরিকে কেন্দ্র করে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড, সৈয়দপুর প্লাজাসহ ১২টি কারখানায় ১০ হাজার পুরুষ আর ৫ হাজার নারী কাজ করছেন। চীনসহ বিভিন্ন দেশে এ চুলের রয়েছে অনেক কদর। যা থেকে সরকারও পাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। অভাবী নারীরা চুলের কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।পোশাক কেনার পর বাহারি ডিজাইনের যে জিনিসটি বিনামূল্যে পাওয়া যায় তা হচ্ছে দোকানের নাম-ধাম সংবলিত একখানি কাগুজে ব্যাগ। প্রতিদিন হাজারো নারী শ্রমিকের হাতে প্রতি মাসে উৎপন্ন হচ্ছে কোটি টাকার কাগুজে ব্যাগ। এ ব্যাগ দিয়ে দারিদ্র্য জয় করেছেন রংপুর মহানগরীর বাসিন্দারা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সারা দেশ এবং বিদেশে পাঠিয়েও এ কাগুজে ব্যাগ বদলে দিতে পারে রংপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভাগ্য।সারা বছর এ খাতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এর মধ্যে রোজার ঈদের বাজারেই প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়।এক ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিল। ঈশ্বর তার সামনে এলো। লোকটি জিজ্ঞেস করল, “হে ঈশ্বর, আমি কি আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে পারি?” ঈশ্বর বললেন “বলো হে বৎস”। লোকটি বলল “ঈশ্বর, আমাদের এক মিলিয়ন বছর আপনার কাছে কত?” জবাবে ঈশ্বর বলল “মাত্র এক সেকেন্ড।” লোকটি অভিভূত হলো। সে বলল “তাহলে এক মিলিয়ন ডলার আপনার কাছে কত?” ঈশ্বর বলল “মাত্র এক পয়সা।” লোকটি তখন বলল “ঈশ্বর, আমি কি এক পয়সা পেতে পারি?” ঈশ্বর এবার বলল “অবশ্যই, এক সেকেন্ড…”১৭ই রমজান, ২রা হিজরির এই দিনে ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয় যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ। কুরাইশদের আক্রমণ ঠেকাতে যেয়েই এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম বড় ধরণের যুদ্ধ। যুদ্ধে মুসলমানদের পক্ষে মাত্র ৩১৩ জন অংশ গ্রহন করেন অপরদিকে কুরাইশদের পক্ষে ১০০০ জন পেশাদার সৈন্য অংশ নেন। মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আর কুরাইশদের পক্ষে নেতৃত্ব ছিলেন আবু জাহেল। এই অসম যুদ্ধে মহান আল্লাহপাকের প্রত্যক্ষ সহয়তায় কুরাইশরা শোচনীয়ভাবে মুসলমানদের নিকট পরাজিত হয়। যুদ্ধে ১৪ জন মুসলমান শাহাদাৎ বরন করেন আর ৭০ জন কাফের মুসালমানদের কাছে নিহত হয় ও আরও ৭০ জন বন্দী হন। এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে রাসূলে পাক (সাঃ) এর একটি দাঁত শহীদ হয়। যুদ্ধে মুসলমানরা প্রত্যেকেই রোজাদার ছিলেন এবং কেউই বলতে গেলে পেশাদার যোদ্ধা ছিলেন না, কিন্তু তাদের মূল অস্ত্র বা হাতিয়ার ছিল “ঈমান” মহান আল্লাহ তা’লার উপর অগাধ বিশ্বাস। বদর যুদ্ধ যুগের পর যুগ মুসলমানদের শক্তি জুগিয়ে গিয়েছে এবং যাচ্ছে। এই যুদ্ধ অনুপ্রেরণা দেয় অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে।আমরা একটি সুন্দর বাসযোগ্য সমাজ চাই, যেখানে কোনো মানুষকে আর নির্যাতিত হতে হবে না, আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমাদের সবাইকে ন্যায় নীতির ভিত্তিতে এক সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে, সব অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
false
hm
হারাইয়া ফেলি চকিতে প্রথম আলোতে পড়লাম, স্কুলে প্রাক নির্বাচনী আর নির্বাচনী পরীক্ষার মূল্যায়ন অভিন্ন করার লক্ষ্যে একই দিনে সারা দেশে একই প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হবে। সাথে সাথে মাথায় খেললো প্রশ্নটা, টেস্ট পেপারের ব্যবসা কি তাহলে শেষ? মনটা উদাস হয়ে গেলো। চৌদ্দ বছর আগে এক একটা সুন্দর সকাল আর দুপুর পণ্ড করেছি সেই জগদ্দল নিউজপ্রিন্টে ছাপা খুদি খুদি হরফশোভিত ভয়াবহ পুস্তকের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে। সারা দেশে এত এত স্কুল, আর তাদের বিখাউজ সব টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নের গাদা, কোন দুঃখে আমাকে সেগুলি সমাধান করতে হবে, সেই ফরিয়াদ মুখ ফুটে জানাতে না পেরে বুকের ভেতর পুষে কলম চালিয়ে গেছি। বিধাতার মৃত্যু হয়েছিলো তার বছরখানেক আগেই, তিনি কফিনে শুয়েই হাসছিলেন নিশ্চয়ই। মেসেঞ্জারে পেয়ে টোকা দিলাম আনোয়ার সাদাত শিমুলকে। দেখলাম সে-ও স্মৃতির ঘায়ে মূর্ছা গেলো। সারা দেশের কত কত স্কুলের নাম জানা যেতো টেস্ট পেপার পড়ে। নোয়াখালি জেলার স্কুলগুলি যে হুদাই বেশি কঠিন প্রশ্ন করতো, এ ব্যাপারে একমত হলাম আমরা এতদিন পরও। টেস্ট পেপারের ঘ্রাণও শিমুল ভোলেনি। হায় সেই সোনালী সময়, কী যে দাগ কেটে গেছে বুকের ভেতর, এতগুলি বছরের অভিজ্ঞতার পলি-আবর্জনা দিয়েও তাকে ভরাট করা যায় না, বেহায়া হলরেখার মতো সে দাঁত বের হাসে শুধু। এরপর আলোচনা হচ্ছিলো কী কী জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে এভাবে, তার একটা তালিকা করা নিয়ে। যা পেলাম, সেগুলো হচ্ছে এমনঃ টেলিগ্রাম এ জিনিস আমি কখনো আসতে দেখিনি। পরিচিত কাউকে পেতেও দেখিনি। কিন্তু এককালে সে ছিলো, আজ আর নেই। টেলিগ্রামের স্মৃতি নিয়ে কারো কিছু বলার থাকলে, বলুন প্লিজ। পরের মুখেই ঝাল খাই। রোটারি ডায়াল এখন তো হাতে হাতে মোবাইল। ঘরের ফোনের সেটও বাটনপ্রেস ডায়াল। পুরনো সেই আদিম রোটারি ডায়ালে চার ডিজিটের নাম্বারে ফোন করার স্মৃতি ভেসে উঠলো চোখের সামনে। কত মধুর, কত বেদনার স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার সাথে! মনে পড়ে, বহু বছর আগে একবার আব্বা দুপুরে বাড়ি ফিরে আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন অফিসে। তখন আমাদের সেই ছোট্ট পাহাড়ি শহরে রাতে মাঝে মাঝে কারেন্ট থাকে না, দি এ-টিম দেখতে পারি না। ঠিক রাত দশটার খবরের সময় ফিরে আসে কারেন্ট। এই পাশবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর নির্বাচিত হয়েছে আমার, বাবার এক সহকর্মী এই বুদ্ধি দিয়েছেন, পিচ্চিকে দিয়ে একটা ফোন করান। আব্বা নাম্বার লিখে দিলেন, ফোন ডায়াল করার দারুণ শখ আমার, নিজেই ডায়াল করলাম পাওয়ার সাপ্লাইয়ের কোন এক প্রকৌশলীকে। তিনি ফোন ধরলেন গম্ভীর গলায়, হ্যালো! আমিও গম্ভীর হয়ে বললাম, হ্যালো, আমি হিমু বলছি! আমাদের বাসায় রাতে কারেন্ট থাকে না! আমরা দি এ-টীম দেখতে পারি না! ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে খুকখুক করে হাসলেন, তারপর বললেন, কোথায় তোমাদের বাসা? বাসার ঠিকানাই দিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, ঠিক আছে। আজ আর কারেন্ট যাবে না। আমি ফোন নামিয়ে রাখতে যাচ্ছি, আব্বা বললেন, থ্যাঙ্কিউ বলো! আমি আবার পাড়া কাঁপিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দিলাম। আব্বার কয়েক সহকর্মী বসে বসে ঘটনা দেখছিলেন, তারা একচোট পিঠ চাপড়ে দিলেন এসে। এবং সত্যি, সেদিন কারেন্ট যায়নি! লিখতে লিখতে মনে হলো, সেই শিশুর কাছে প্রতিজ্ঞা করার মতো প্রকৌশলীও বুঝি আজ হারিয়ে গেছেন। পত্রমিতালি শিমুল যোগালো পরের এন্ট্রি। পত্রমিতালি! আমার শৈশবে আমার বড় দুই ভাই ছুটিতে ফিরে অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে সবসময় আমাদের ছোট্ট বাসাটা মাতিয়ে রাখতেন, তারা পত্রমিতালি নিয়ে দীর্ঘ সময় হইহই করেছেন। দুই ভাই-ই পত্রমিতালির পার্টনার যোগাড় করেছিলেন জার্মানীতে। এখনও মনে আছে সেই দুই মিষ্টি চেহারার তরুণীর নাম, বড় ভাইয়ার পত্রমিতা রেবেকা, ছোট ভাইয়ার পত্রমিতা নাতাশা। তারা মাঝে মাঝেই নিজেদের ছবি পাঠাতো, ভাইয়ারাও সেজেগুজে ছবি তুলে তাদের পাঠিয়েছে, দেখেছি। সাইবারক্যাফে শিমুলের এন্ট্রি। না, পুরোপুরি উঠে যায়নি। তবে শহর থেকে হয়তো হারিয়ে যাবে। দুয়েকটা টিকে থাকবে এখানে ওখানে। টু-স্ট্রোক অটোরিকশার মতো বাকিগুলো একদিন মুখ লুকিয়ে ক্লান্ত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যাবে বড় শহর থেকে, অধোমুখে পৌঁছুবে দূরের মফস্বলে, তারপর জায়গা করে নেবে। সিঁদ কেটে চুরি গ্রাম থেকে নাকি হারিয়ে যাচ্ছে এ জিনিস, শিমুল জানালো। সিঁদেল চোরের হাতেও এখন শটগান, সে এখন তেল আর গায়ে মাখে না, থানার ওসিকে দেয়। গ্রামেও সিঁদ দেয়ার মতো বাড়ি কমে যাচ্ছে। ফাউন্টেন পেন কেউ কি আর ফাউন্টেন পেন ব্যবহার করে এখন? কালির দোয়াত কেনে? টিপে টিপে টিউবে কালি ভরে লেখে? পেনম্যানশিপ চর্চার জন্যে ফাউন্টেন পেনে রোমান হরফ গুঁতিয়েছি কত! কলেজে পার হবার আগেই হাতে লেখার খাটনিকে বিদায় জানিয়ে কীবোর্ডকে আপন করে নিয়েছি কয়েক মাসের মধ্যে। জানি না ফাউন্টেন পেন এখনও আগের গাম্ভীর্য নিয়ে স্কুলের শিশুদের জ্যামিতি বক্সে থাকে কি না। স্ট্যাম্প অ্যালবাম স্ট্যাম্প জমাতাম পাগলের মতো। এই স্ট্যাম্প জমানো নিয়ে বন্ধুদের সাথে মারপিট করেছি, দোকানে নতুন স্ট্যাম্প আসার খবর পেয়ে রেসিং সাইকেলের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুট লাগিয়েছি স্কুল ছুটি হবার পর, প্রবল যত্নে আদ্যাক্ষর ধরে ধরে অ্যালবামে স্ট্যাম্প সাজিয়েছি। আমি যখন স্ট্যাম্প জমানো ছেড়ে দিই, তখন জমানো স্ট্যাম্প দিয়ে যাবার মতো কাউকে পাইনি। মনে আছে, একবার স্কুলে এক ফেল্টুশ সিনিয়র সহপাঠীকে ইংরেজি পরীক্ষায় প্রায় পুরোটা সময় খাতা দেখিয়েছিলাম। পরীক্ষার যেদিন ফল বেরোলো, সেদিন সে সুন্দর বাদামি খামে ভরে নিয়ে এসেছিলো তার পুরো স্ট্যাম্প অ্যালবাম, ইংরেজিতে উৎরে যাওয়া উপলক্ষে ... ঘুষ নয়, উপহার। আজও নিশ্চয়ই অনেকে স্ট্যাম্প জমায়, অ্যালবামেই তারা সেগুলো গুঁজে রাখে। কিন্তু, আগের মতো কি? এক পাতার হলুদ সরকারী ক্যালেন্ডার সরকার হয়তো থামেনি, ছাপিয়েই চলছে, কিন্তু বাসায় তো আর আসতে দেখি না। পরিবারগুলোও পড়েছে বেসরকারীকরণের মুখে। কিন্তু অনেক কিছুই হারায়নি। মশার কয়েল টিকে গেছে, টিকে গেছে হারিকেন আর হাতপাখা। শহর থেকে মশা বা লোডশেডিং দূর হয়নি, আর আজও আইপিএস আর জেনারেটর সবটুকু অন্ধকার আর গরম দূর করতে পারে না, মনে হয় না আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেও পারবে। টিকে গেছে মাসিক মদিনা, ইউনিকোডেড অনলাইন সংস্করণেও আছে সে। পুরনো প্রেমের তিক্ত স্মৃতির মতো টিকে গেছে আরো অনেক কিছু। Get this widget | Track details | eSnips Social DNA
false
hm
বনবাসের স্মৃতি ধূসর গোধূলির বড় ভাই শ্রদ্ধেয় গম্ভীর গোধূলি সেদিন ফোন করেছিলেন এক দূরদেশ থেকে। অভিযোগ, ধূসর দিনকেদিন বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে। আমরা যারা তার নিকটতম গার্জিয়ান ও গুরুজন, তারা যেন তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার লাইনে আনি। মিষ্টি কথায় কাজ না হলে পোঁদে লাথি মারার অনুরোধ জানালেন। গোধূলি বংশের মুখে নাকি ধূসর কালিমা লেপন করে চলছে প্রতি পলে পলে। এর একটা আশু বিহিত করা জরুরি। মুসিবতেই পড়লাম। হাজার হোক গোধূলি বন্ধু মানুষ, হোক অর্বাচীন, তাকে কি কথা না শুনলেই পোঁদে লাথি মারা উচিত? কিন্তু গম্ভীরদা কোন সুযোগ দিলেন না প্রতিবাদের, আমাদের গার্জেনগিরির ওপর গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করে ফোন রেখে দিলেন। চৌধুরীকে এরপর জানালাম, জানালাম বলাইকেও। কী করা যায় গোধূলির জন্যে। বলাই রমজানে রোজা রেখে কিছুটা কাহিল, তিনি দুটার বেশি লাথি মারতে পারবেন না জানালেন। চৌধুরীর প্যান্টে নাজুক জায়গায় সেলাইগুলি আরো নাজুক, লাথি মারতে গেলে ছিঁড়ে যেতে পারে। কিসমতকে গালি দিতে দিতে ফোন্দিলাম ধূসরকে। কেন আমাকেই বার বার এগিয়ে যেতে হবে গোধূলিকে প্যাঁদানোর জন্যে? আসল কথা জানলে গোধূলি পিছলে যেতে পারে জেনেই প্রস্তাব দিলাম, বন শহরে আমাদের প্রিয় বড়ভাই লিটন ভায়ের ওখান থেকে একটা চক্কর মেরে আসার। রমজান উপলক্ষে বলাই আর যাচ্ছেন না, আমি চৌধুরী গোধূলিই শেষমেশ গেলাম বনে। যাত্রা করলাম ভোরবেলা। এদিক থেকে আমি আর চৌধুরী, আর ওদিক থেকে গোধূলি। জার্মানিতে মোটামুটি শস্তায় রেলযাত্রা সম্ভব সপ্তাহান্তে, আগেই বলেছি, সেই সপ্তাহান্তের টিকেট আবার শহরের ট্রামেবাসেও খাটে। তাই ওরকম একটা টিকেট কেটে চড়ে বসেছি আমরা। গিসেনে নেমে ট্রেন বদলাতে হয় একবার, তারপর কোয়ল্নে আরেকবার। খুব বেশি অপেক্ষার হ্যাপাও তাই নেই। বেশ আরামসেই সীট দখল করে ঝিমাতে ঝিমাতে একসময় বনে এসে পৌঁছুলাম আমরা। গোধূলি আরো আগেই এসে পৌঁছে গেছে বনে, স্টেশনে নেমেই দেখি সে গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে, চোরের মতো হাবভাব। বুঝলাম, গম্ভীর ভাইয়ের উদ্বেগের পেছনে যথাযথ কারণ আছে। চৌধুরীকে বললাম, আগে মিষ্টি কথা শুরু করবো, নাকি কড়াটা দিয়েই শুরু করবো? চৌধুরী বললেন, কথাবার্তাই উত্তম। কিছু মিষ্টি কথা আর হালকা চড়চাপড়ে কাজ হয়ে গেলে আর মাইর না-ও দেয়া লাগতে পারে। তিনজনে স্টেশন থেকে বার হয়ে হাল্টেষ্টেলেতে যাবার পথে যার দেখা পেলাম, তাকে দেখতে পাবো এমনটা আশা করিনি। তিনি এক মহাজন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ও ব্লগিঙের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, যাঁর পরিচয় জানলে লোকে মূত্রত্যাগেরও অবসর পায় না, এমনই কাবিল তিনি। হাতে একটি ঝুড়ি নিয়ে অলস স্মার্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে, গেঞ্জিতে লেখা, হাবিব'স। মহাজনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা নিয়ে গুজুর গুজুর আলাপ করছিলাম, আলাপ শেষে দেখি সিনেমার মতোই বাস চলে যাবার পর তিনিও অদৃশ্য। কী আর করা, এমন মহারথীর সাথে আলাপ না হওয়ার বেদনাকে বুকে পুষেই বাসে চড়ে চললাম লিটন ভায়ের বাসায়। লিটন ভাই বেশ খাতিরযত্ন করলেন আমাদের। খিচুড়ি খেয়ে তিনজনে বেরোলাম শহরে এক চক্কর হাঁটতে, লিটন ভাই কী একটা কাজে বেরিয়ে গেলেন। ব্যস্ত মানুষ, একটা না একটা কাজ লেগেই আছে তাঁর। রাইন নদীর পার ধরে হাঁটতে হাঁটতে গোধূলিকে কিছু সবক দিলাম। আচারব্যবহার, ন্যায়নীতি, ধর্মাধর্ম প্রভৃতি নিয়ে কয়েক পশলা লেকচারের পর মনে হলো, এ যাত্রা আর লাথি না মারলেও চলবে। সে তার অনেক ভুল বুঝতে পেরেছে। প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে এক দফা কফিও খাওয়ালো ব্যাটা। কফিপানের পর জানা গেলো, রাইনাউতে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক মেলা বসেছে, বিভিন্ন দেশের লোক সেখানে স্টল খুলে বসেছে। পুরো পার্কটাই অপূর্ব সুন্দর ও ছিমছাম, হাঁটা বা সাইকেল চালানোর জন্যে আদর্শ, হাঁটতে হাঁটতেই মেলায় গিয়ে হাজির হলাম আমরা। মেক্সিকোর স্টলে মায়া আর আজটেক নাচ দেখে অন্যদিকে পা বাড়াতেই দেখি পোলিশ স্টল থেকে এক হৃষ্টপুষ্ট যুবতী হাতছানি দিয়ে গোধূলিকে ডাকছে। গোধূলি সবিনয়ে হাত নেড়ে জানালো, সে পোলিশ নয়, বাংলাদেশের যুবক, পোল্যান্ডের তরুণীরা যেন তার গুলাবি গায়ের রং দেখে বিভ্রান্তা না হয়। ওদিকে কিনিয়ার স্টলের বাইরে কয়েকজন আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গ কাঠের ড্রাম বাজাচ্ছিলো মন দিয়ে, আমরা কাছাকাছি যেতেই একজন ড্রাম বাড়িয়ে ধরলো আমার দিকে, দেশোয়ালি ভাই ভেবে। আমিও কম বিনয়ী নই, জানালাম, আমার পূর্বপুরুষ আফ্রিকা ত্যাগ করেছেন বহুবছর হলো, সেই লক্ষাধিক বছর আগের গ্রেট মাইগ্রেশনের সময়, তাই ড্রাম বাজানোর অভ্যাস প্রায় বিস্মৃত হয়েছি। মিশরের কুক্ষিনৃত্যের স্টল দেখে গোধূলিকে আর আটকে রাখা গেলো না। যত বলি চল বাড়ি ফিরি ক্ষুধা লাগসে, সে ততই তেড়েফুঁড়ে যায় ওদিকে। কী আর করা, ভুঁড়ি কাঁপানো মিশরী নাচ আর বলিভিয়ার কিছু বিদঘুটে নাচ দেখে আমরা আবার উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলাম। বেশিরভাগ স্টলেই শুধু খাবারদাবারের ব্যবস্থা। বাংলাদেশের কোন স্টল চোখে পড়েনি, ভারত আর শ্রীলঙ্কার স্টলে ভাজাভুজি বিক্রি চলছে সমানে। ফিলিপাইন্সের স্টলে অনেক ফিলিপিনো মহিলা ব্রাজিলীয় গানের সুরে নেচে চলছেন, কিরগিজিস্তানের স্টলটা একটা কিরগিজ তাঁবু, বুলগেরিয়ার স্টলের সামনে কিছু বুলগেরিয় ওয়াইনের বোতল আর গ্লাস রাখা, এমনকি একুয়াডর আর বেনিনের স্টল পর্যন্ত চোখে পড়লো, কিন্তু বাংলাদেশের স্টল নেই। গোধূলি প্রস্তাব দিলো, তিনজন মিলে একটা টাওয়েল নিয়ে বসে পড়ি। এর আগে ফ্রাঙ্কফুর্টে গোধূলির সঙ্গীতপ্রতিভার সাথে পরিচয় হয়েছে, তাই টেনেহিঁচড়ে তাকে বার করে নিয়ে এলাম মেলা এলাকা থেকে। এরপরের ঘটনা সামান্যই। বনের পথে চলতে গিয়ে পথ হারিয়ে একটা তুর্কি দোকান থেকে খানিক মাংস আর আলদি থেকে টুকিটাকি কেনাকাটা করে আবার লিটন ভায়ের ডেরায় হামলা করলাম আমরা। চৌধুরীর তেহারি খেয়ে লিটন ভাই বাকরুদ্ধ। আমি বাকরুদ্ধ লিটন ভাইয়ের ভোনগেমাইনশাফটের জনৈকা চৈনিকা তরুণীকে দেখে। ধূসর বাকরুদ্ধ আমরা মোটে একটি ভোদকার বোতল সঙ্গে নিয়ে এসেছি বলে। আর চৌধুরী কথা বলার ফুরসৎ পাচ্ছিলেন না তেহারি খাওয়ার ব্যস্ততায়। খাওয়াদাওয়ার আগে ও পরে তিনজনের উদ্যোগের মস্কোভস্কায়ার ক্ষুদে বোতলটা শেষ হবার পর আমাদের মনে কিছুটা ফূর্তির উর্দ্রেক হলো। গোধূলি জড়ানো গলায় ভূপেন হাজারিকার গানের প্যারোডি ধরলো, "পকেট যেন মেরো না আমার, পোঁদ মেরে দাও বরং পোঁদ মেরে দাও, হো মালিক, সারাজীবন কাঁদালে যখন ...।" বহুকষ্টে তাকে শান্ত করে লিটন ভায়ের ঘরে গিয়ে এদিকে সেদিকে ভূমিশয্যায় আশ্রয় নিলাম আমরা। পরদিন আবার বনে এক চক্কর মেরে কোয়ল্ন হয়ে ঘরের ছেলেদের ঘরে ফিরতে হবে। ঘুমানোর আগে সচল খুলে দেখি কার্ল মার্ক্স আলুথালু বেশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন হাপুশ নয়নে, তাঁর লুঙ্গির একদিক ধরে আছেন অভিজিৎদা আর সুবিনয়, অন্যদিক চেপে আছেন ফারুক ওয়াসিফ আর জনৈক অতিথি মুনশি। মার্ক্সের জন্যে গভীর উদ্বেগ আর সমবেদনা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম সবাই। দুনিয়াটা দিনকেদিন বড় কঠিন হয়ে যাচ্ছে, মুখ খুললেই বিপদ। মেক্সিকোর সেই নাচের অনুষ্ঠানের মোবাইলধৃত ভিডিওটা আছে। থ্রিজিপি থেকে অন্য কোন চলেবল ফরম্যাটে নেবার কায়দাটা শিখতে পাল্লেই সচলদের জন্যে তুলে দেবো।
false
mk
এশিয়ার নতুন এনার্জি পাওয়ার বাংলাদেশ!!! আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের সঙ্গে মামলায় সমুদ্রে প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে করে বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে এশিয়ার নতুন শক্তিতে পরিণত হতে পারে। সেই সঙ্গে সমুদ্রে থাকা সম্ভাব্য ১০০ থেকে ২০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হলে বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদক দেশগুলোর অন্যতম হতে পারে বাংলাদেশ।জাপানভিত্তিক অনলাইন সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক নিবন্ধে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ : এশিয়া’স নিউ এনার্জি সুপার পাওয়ার?’ শিরনামে প্রকাশিত নিবন্ধটি লিখেছেন সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরীয় এলাকার গবেষক জ্যাক ডেচ। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ২০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট বলে ধারণা করা হয়। এ বছরের মধ্যে পেট্রোবাংলা নতুন ১৮টি তেল-গ্যাস ব্লক ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের অনেকে ধারণা করছেন, সম্ভাব্য মজুদ গ্যাসের উত্তোলন সম্ভব হলে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম সেরা গ্যাস উত্তোলনকারী দেশে পরিণত হবে।প্রসঙ্গত, জাপানভিত্তিক সাময়িকীটিতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ পায়।বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ বিষয়ে নিউইয়র্কের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের নীতিনির্ধারণ সহযোগী নিল ভাটিয়া বলেন, বঙ্গোপসাগরের জ্বালানি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা খুবই আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকবে। তবে কেউ কেউ প্রকৃত মজুদ সম্পর্কে জানার আগে এতটা উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্য করতে রাজি নন।প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে কাজ করা মান্নার এনার্জির পরামর্শক রবিন মিলস বলেন, বাংলাদেশে ১০০ থেকে ২০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আছে কিনা সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন। বাংলাদেশে মজুদের বিষয়টি প্রমাণিত কিছু নয়। এটি কেবল ধারণার ওপর বলা হচ্ছে। তাই গ্যাসের মজুদ থাকার বিষয়ে ফিফটি ফিফটি চান্স রয়েছে।এদিকে গ্যাস উত্তোলনে বেশ কয়েকটি সমস্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়, সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো উঁচু ঝুঁকি বিদ্যমান। বাংলাদেশের চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্র্য এবং ভর্তুকিনির্ভর অর্থনীতি জ্বালানি অবকাঠামো নির্মাণ-ব্যয় সীমিত করে দেয়। তবে নিবন্ধে এও বলা হয়েছে, দারিদ্র্য ও সংঘাতের মহামারী ছড়িয়ে পড়লেও নাইজেরিয়া, শাদ এবং ভেনিজুয়েলার মতো দেশগুলো তেলের বাজারে ভালো উন্নতি করেছে।
false
ij
পুরনো ঢাকার পোগোজ স্কুল_ একজন অবাঙালি আর্মেনিয়র ভালোবাসা। পোগোজ স্কুল। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট স্কুল। প্রতিষ্ঠাতা আর্মেনিয় ব্যবসায়ী জে জি নিকোলাস পোগেজ। নিকোলাস পোগেজ অবশ্য নিকি পোগোজ নামেই ঢাকাবাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন। নিকি পোগোজ প্রতিষ্ঠিত পোগোজ স্কুলটি ব্রিটিশ বাংলায় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছিল । এর আগে আমি অন্য একটা লেখায় দেখিয়েছি যে অষ্টাদশ-উনিশ শতকের ঢাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পিছনে আর্মেনিয়দের অবদান ছিল অসামান্য । এমন কী ঢাকার অভিজাত নবাবদের আর্থিক পতিপত্তির কারণও আর্মেনিয়দের সঙ্গে বানিজ্যিক সম্পর্ক। আর্মেনিয় সম্প্রদায়ের অনেকেই ধনাঢ্য ব্যাক্তি ছিলেন। বঙ্গভবনের জমি, শাহবাগের কিছু অংশের মালিক ছিলেন ঢাকার আর্মেনিয় জমিদারগন। ঢাকার উন্নয়নের জন্য বিশেষ করে আর্মেনিয় আগাসি, মাইকেল, স্তেফান, জোয়াকিম, আরাতুন, কোজা, মানুক ও পগোজ পরিবারের ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মত। বঙ্গভবনের ভিতরে আজও মানুক হাউজ রয়েছে- যা আদি আর্মেনিয় মালিকের নাম স্মরণ করিয়ে দেয়। বুড়িগঙ্গার তীরে বাকল্যান্ড বাঁধটির নির্মানের সময় ঢাকার আর্মেনিয় সম্প্রদায় অর্থ সাহায্য করেছিল। যা হোক। পোগোজ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস পোগোজ ছিলেন আর্মেনিয় সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা। বিশাল জমিদারী ছিল পোগোজের, ব্যবসাও করতেন তিনি। ঢাকার প্রথম ব্যাঙ্কের নাম: ঢাকা ব্যাঙ্ক। সেই ব্যাঙ্কের একজন প্রধান অংশীদার ছিলেন নিকি পোগোজ। শুধু তাই নয়-ঢাকা মিউনিসিপালিটির ৯ জন কমিশনারের একজন ছিলেন তিনি। তাঁর কার্যকাল: ১৮৭৪-১৮৭৫। সবচে বড় কথা-বাংলার জনগনের জন্য তাঁর ভালোবাসা ছিল অটুট। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে পোগোজ প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ছিল তাঁরই বাড়ির নিচতলায়। বাড়িটি ঢাকার আর্মানিটোলায় কোথাও ছিল সম্ভবত। পোগোজ স্কুলের নাম দিয়েছিলেন “পোগোজ অ্যাংলো ভার্নাকুলার স্কুল।” সেখান থেকে ১৮৫৫ সালে স্কুলটি সরিয়ে নেওয়া হয় আর্মানিটোলার জে.পি পানিওতির মালিকানাধীন ভাড়া বাড়িতে । এবং আরও পাঁচবছর পর সদরঘাটের শাবিস্থান সিনেমা হলের পাশে একটি দোতলা বাড়িতে স্কুলটি স্থানাস্তরিত হয়। তারপর স্কুলটি আবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে সরিয়ে নেওয়া হয়। পোগোজ স্কুলের প্রথম হেড মাষ্টার ছিলেন পোগেজ নিজেই। পড়াশোনা ভালোবাসতেন। অনেকগুলি ভাষা জানতেন পোগোজ। ১৮৬৭ সালে পোগোজ স্কুলের ছাত্রসংখ্যা ছিল ৫০০। স্কুলটি সে সময় বাংলার সবচে বড় স্কুলের অভিধা পেয়েছিল। কাজেই স্কুলটির পিছনে নিকি পোগোজের শ্রম ও ভালোবাসার কথা সহজেই অনুমান করা যায়। ১৮৭৮ সাল। নিকোলাস পোগেজ কী কারণে লন্ডন চলে গেলেন। তারপর স্কুলটির মালিকানা পেলেন তৎকালীন ঢাকার বিশিষ্ট ব্যাঙ্কার ও জমিদার মোহিনিমোহন দাস । উদার মানুষ বলেই স্কুলটির সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করেননি মোহিনিমোহন। কাজেই, বেঁচে রইলেন নিকোলাস পোগোজ। ছেলেবেলায় ঐ ঐতিহাসিক স্কুলটিতে যারা পড়েছেন তাদের মধ্যে আমাদের প্রিয়তম কবি শামসুর রাহমান অন্যতম। দারুণ নাম ছড়িয়েছিল ঢাকার নিকি পোগোজের স্কুলের। যে কারণে স্বামী বিবেকানন্দ, মাইকেল মধূসুধন দত্তর মতন মানুষ স্কুলটি দেখতে এসেছিলেন। আগেকার সেই গৌরব অনেকটা অস্তমিত হয়ে এলেও আজও পোগোজ স্কুলটি পুরনো ঢাকায় টিকে আছে একজন অবাঙালি আর্মেনিয়র ভালোবাসার চিহ্ন হয়ে । তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১২
false