label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
fe
বাঙালির চেতনার সঙ্কট ও একুশের প্রেরণা বাঙালির চেতনার সঙ্কট ও একুশের প্রেরণা ফকির ইলিয়াস======================================তবে কি আবার আরেকটি রক্তক্ষয়ী অর্জনের মুখোমুখি বাংলাদেশ? এ প্রশ্নটি গোটা বাঙালি জাতিকেই একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশে একটি হায়েনাচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ পরিকল্পিতভাবে। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের খুন করা হয়েছে। ঢাকায় এবিএম ফারুক হোসেন নামে আরেক ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। জাতিকে তীব্র সঙ্কটের মুখোমুখি ঠেলে দেয়ার এই যে প্রক্রিয়া এর নেপথ্যে কারা? কি তাদের উদ্দেশ্য? এর উত্তর খোঁজার আগে একটি সংবাদের দিকে চোখ ফেরানো যাক। যুক্তরাষ্ট্রের এন্টি টোরোরিজম বিভাগ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। খবরটির একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। এ সংবাদটি প্রচারিত হওয়ার পর এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। যারা শিবির-জামায়াতকে সমর্থন করে তারা বলছে, আমেরিকা নিষিদ্ধ করার কে? তারা তা করলেই কি আর না করলেই কি? আমরা কি থোড়াই কেয়ার করি। আর সংবাদটিকে যারা সমর্থন করেছে তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিবিরের স্বরূপ দেখিয়েছে। তারা যে জঙ্গিবাদের সহচর, তা বলছে যুক্তরাষ্ট্র। কথাটি ঠিক, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গিয়ে শিবির-জামায়াতের সহিংসতা, রগকাটার রাজনীতি বন্ধ করতে পারবে না। তা করতে এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। এগিয়ে আসতে হবে গোটা বাঙালি জাতিকে। বিষয়টি নিয়ে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ব্লগ, আলোচনা গ্রুপে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। লক্ষ্য করছি, শিবিরের রগকাটার রাজনীতির পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে তুলোধুনো করছেন বেশ কিছু বুদ্ধির ঢেঁকি বুদ্ধিজীবী। তারা বলছেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাকি শিবিরের হাতেই বেশি নিরাপদ ! প্রকারান্তরে তারা সেই পরাজিত রাজাকার শক্তির পক্ষেই সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছেন। যেহেতু সন্ত্রাসী শিবিরকে সরাসরি সমর্থন দিতে পারছে না, তাই তারা ছাত্রলীগের অপকর্মের চিত্রগুলোকে খুব বড় ক্যানভাসে এনে, তা দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঘায়েল করার চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছেন। কথা হলো, ছাত্রলীগের কেউ দোষ করলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে। শাস্তি দেবে। এর সঙ্গে তুলনা করে সন্ত্রাসী শিবিরকে কি ধোয়া তুলসিপাতা বানানো উচিত? রগকাটার রাজনীতিকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত? না উচিত নয়। কোনভাবেই উচিত নয়। তারপরও এটার মধ্যপন্থি সুবিধাভোগী পরাজিত শক্তিরা মওকা নেয়ার জন্য মাঠে নেমেছে। 'সাংবাদিক নির্যাতন করা হচ্ছে' বলে লাউড স্পিকার হাতে নিয়ে কিছু ডানপন্থি সাংবাদিক 'আন্দোলনের' হুমকি দিচ্ছে। অথচ শিবিরের সশস্ত্র আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা একটি শব্দও উচ্চারণ করছে না। দুই. একটি বিষয় খুব গভীরভাবে লক্ষণীয়। গেল দু'সপ্তাহে দেশজুড়ে পরাজিত রাজাকার-আলবদর শক্তি যেভাবে সভা-সমাবেশ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির তেমন কোন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি। অথচ এখন চলছে মহান একুশের মাস। যে একুশ এ জাতিসত্তাকে জাগরণের পথ দেখিয়েছিল। বাঙালি জাতির যে একটি স্বাধীন দেশের প্রয়োজন, মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সেই জানানই দিয়েছিল বাঙালি বায়ান্ন সালে। প্রতিরোধ-প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল। রক্ত দিয়েছিল। এবং অর্জন করেছিল সেই স্বাধিকার। যার পথ ধরে এগিয়ে গিয়েছিল এ জাতির স্বাধীনতার পথ। এর বাস্তবায়নে ৪০ বছর সময় লাগলেও একাত্তর সালে এসেছিল মহান বিজয়। সেই বিজয় কি সহজ ছিল? না ছিল না। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এসেছিল সেই বিজয়। খুব সত্য কথা হচ্ছে, সেই যুদ্ধের সময়েও এই রাজাকার-আলবদরচক্র বলেছিল পাকিস্তানি হানাদারদের হাতেই নাকি বাঙালি নারী-পুরুষ বেশি নিরাপদ! যে কথাটি এখনও তারা বলে বেড়াচ্ছে, এই রগকাটা সন্ত্রাসীদের হাতেই নাকি জাতি সুরক্ষিত। তার অর্থ কি দাঁড়ায়? অর্থটি হচ্ছে এই তারা সেই একই সমানুপাতে জাতিকে পাকিস্তানি তমুদ্দনপন্থি বানাতে চাইছে। তারা সেটাই বলতে চাইছে আমরা পাকি আমলেই ভাল ছিলাম। ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের তল্লাশিতে বেরিয়ে এসেছে, আইএসআই নামক পাক-গোয়েন্দা সংস্থাটি বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা চালাতে বিশাল পরিমাণের অর্থ ঢেলে আসছে। জামায়াত-শিবিরের বেশ কিছু প্রাক্তন কর্মী যারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান করছে, তারা নানাভাবে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পন্ড করা। এদের দেশী-বিদেশী এজেন্টরা এতই সক্রিয় যে তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা মুখে বলে হলেও মানুষকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করছে। 'দেশ বাঁচাও'-এর দোহাই দিয়ে তারা স্বরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। গেল ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বুধবার দুটি জাতীয় দৈনিকে দুটি খবর ছাপা হয়েছে। যা সত্যিই ভয়াবহ। 'যমুনার চরে চলছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ' (কালের কণ্ঠ)। 'ঢাকায় জামায়াত-শিবির চক্রের ৪১ স্থায়ী আস্তানা শনাক্ত' (সংবাদ)। সংবাদ দুটি এই সাক্ষ্য বহন করছে, এরা বসে নেই। তারা তাদের কাজ করেই যাচ্ছে। এই যে অশনি সঙ্কেত তাতে কি প্রধান বিরোধীদল বসে আছে? না তারাও বসে নেই। তারা আন্দোলনের নামে বিভিন্নভাবে রাজাকারদের সঙ্গে আবার ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। ঢাকা বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন ইস্যুকে কেন্দ্র করে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে। স্মারকলিপি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। টিভিতে সেই দৃশ্যটি দেখলাম। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বিএনপির নেতাদের বলেছেন, 'আপনারা বসুন। সামনে আপনাদের অনেক দৌড়াতে হবে। বসে বিশ্রাম নিন।' বাংলাদেশে কে দৌড়ে আর কে কারে দৌড়ায় তা বলা বড় কঠিন। তবে খুব পরিকল্পিতভাবে রাজাকারচক্র দেশে যে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করতে চাইছে তাদের জনগণ সায়েস্তা করতে পারবে কি? একুশ আমাদের একটি প্রেরণা দিয়েছিল, আর তা হচ্ছে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর। বাঙালি জাতি সেই পথ ধরেই এগিয়েছে। সেই চেতনাও ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছে। কুখ্যাত রাজাকারকে 'ভাষাসৈনিক' বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে এ বাংলাদেশেই। কিন্তু জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে বার বার। একটি কথা মনে রাখা দরকার ১৫ আগস্টের পরাজিতরা হাত মিলাবে একাত্তরের পরাজিতদের সঙ্গেই। কারণ ১৫ আগস্টের বেনিফিসিয়ারিরা জানে গণতান্ত্রিক উপায়ে এই শহীদদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশে তাদের সিংহভাগ রায় নেই। আর সেজন্যই তাদের একমাত্র পথ 'শর্টকার্ট', যা তারা বারবার করে এসেছে।বাংলাদেশে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার বিষয়টিই এখন আর প্রধান নয়। কারণ চারপাশের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে যত বেশি ভাষা রপ্ত করতে পারবে তার জন্য তত বেশি খুলে যাবে বিশ্ব দরজা। একথা আজকের প্রজন্ম জেনে যাচ্ছে প্রতি পদে পদে। দেশের আধুনিক বিদ্যানিকেতন এবং এর প্রসারতা সেই প্রমাণ করছে। আজ যা বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে ভাষার চেতনা। বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষি, আদর্শের উৎস সন্ধান করে সত্যের পক্ষে প্রজন্মের মনন বিনির্মাণ। এদেশে যারা তরুণ প্রজন্মকে চাকরি, চিকিৎসা সুবিধাসহ অন্য সুবিধাদি দিয়ে বিপথগামী করছে, তাদের প্যারালাল শক্তি গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাদী শক্তির এ বিষয়টি সিরিয়াসলি ভাবা দরকার। যারা বিত্তবান, তারা নিজ নিজ এলাকায় মেধাবী প্রজন্মকে সাহায্যের মাধ্যমে হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। কারণ মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে অপশক্তি যতটা তাদের অনুসারীদের সাহায্য করছে, যুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি তা করছে না। কেন করছে না? আমাদের গাফিলতি কোথায়? এ কারণগুলো সবাইকে খুঁজে দেখতে হবে। সরকার ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন গণমানুষের ঐক্যই পারে একুশের চেতনা ধরে রাখতে। নিউইয়র্ক, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ---------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ ।ঢাকা । ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
false
mk
পদ্মা সেতু, বিশ্বব্যাংক ও শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তব রূপ পেতে দৃশ্যমান দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে চল্লিশ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মার অথই বুক চিড়ে একদিন সেথায় চলবে গাড়ি, চলবে রেল। আর এই বৃহৎ তটিনীর জলতরঙ্গে আপন সঙ্গী হয়ে পদ্মাবক্ষে সুসজ্জিতরূপে দাঁড়িয়ে থাকবে স্বপ্নের সেতু। যার সুফল ভোগ করবে বাংলাদেশ এবং দেশের মানুষ। নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এ সেতুর ব্যবহার বিস্ময় চোখে তাকিয়ে দেখবে বিশ্ববাসী। কিন্তু একটা সময় বর্তমান সরকারের এই ভারী প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। তখন স্বপ্নের সেতু স্বপ্ন সীমায় ঘুরপাক খেতে থাকে অবিরাম। যে চক্রান্ত শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারকে খাদের কিনারে নিয়ে দাঁড় করায়। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থঋণ বাতিল করে দেয়।আচমকা আশার পালে বইতে থাকে ধমকা হাওয়া। সমালোচনার হুলুস্থূল বয়ে যায় সর্বত্র। কার আগে কে হাসিনা সরকারের বারোটা বাজানোর ঘণ্টা বাজাবে সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। গভীর রাতের টক শোর টেবিল, সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় পাতা, সভা-সেমিনার সবখানেই ‘গেলরে গেল সব গেল’ বলে নিন্দার ঝড় তোলা কথিত সুশীলবাদী সমাজ ও হাসিনাবিরোধী বলয় যেন স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা পেয়ে বসল। যে যেভাবে পারল সে সেভাবেই মহাজোট সরকারের মু-ুপাত করে গেল। শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলো, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়নি; এমনও বলা হলো, যে প্রকল্পে কোনো ধরনের অর্থছাড় হয়নি সেখানে দুর্নীতি কীভাবে হবে। কার কথা কে শোনে। বাস্তবতা যখন ‘ইউনূস হিলারি সখ্য’ তখন একতরফা নীতিতে এগিয়ে যায় বিশ্বব্যাংক।মহাজোট সরকারের ভেতর ও বাইরে এক ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে সরকার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিশ্বব্যাংক যেন শেখ হাসিনা সরকারকে পদাঘাতের কাঁঠাল পেয়ে বসল। এখন এইটা করতে হবে তো তখন সেইটা করতে হবে, এ যেন গ্রামীণ প্রবাদ ‘গরিবের বউ সবার ভাবি’র মতন অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের অসম্মানজনক বাঁদরামি আর সহ্য করতে পারেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের প্রতি উচ্চারিত হলো ‘না’সূচক বার্তা।প্রতিকূল পরিবেশে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। যেই কথা সেই কাজ। শুরু হয় এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তুতি। সমালোচক গোষ্ঠীর চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। ঠোঁট বাঁকিয়ে কপাল কুঁচকে অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাবটা নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালান। যে যত অবজ্ঞা-অবহেলা করুক না কেন, শেখ হাসিনা সরকার ঠিকই দেখিয়েছে বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের মহাযজ্ঞ ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার গিরি সাহস। যদি বিশ্বাস করো হে অধম!পদ্মা সেতুবিষয়ক খবর নিয়ে সংবাদপত্রের পাতা এখন সরগরম। প্রতিদিনকার প্রতিবেদনে উঠে আসছে বিশ্বব্যাংকের মারপ্যাঁচে বিপর্যস্ত পদ্মা সেতুর নানাকথা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার পরিবারকে হেয় করার চেষ্টা হয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জড়িত। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটন তাকে ফোন করেছিলেন। এ ছাড়া ১২ ফেব্রুয়ারি রোববার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত দরবারে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা, গালগল্প; কানাডার আদালতের এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সততার শক্তি ছিল বলেই বিশ্বব্যাংকের ওই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতকাল পরে আজকে তারা স্বীকার করেছে, কোর্ট বলে দিয়েছে; এখানে তো কোনো দুর্নীতি হয়ই নাই, বরং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যে অভিযোগ করেছে, তা ভুয়া, মিথ্যা ও আষাঢ়ে গল্প।’ এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মানুষের ‘মানমর্যাদা’ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।পদ্মা বিতর্কের জন্ম ২০১১ সালে। ওই বছরের এপ্রিলে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি হয়। সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দরপত্রে অংশ নেওয়া এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের ২৯ জুন পদ্মা সেতুতে ঋণচুক্তি বাতিল করে। সরকারের অনুরোধে একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পে পুনরায় সম্পৃক্ত হতে রাজি হলেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থায়ন করতে অসম্মতি জানায় সংস্থাটি। তবে এর আগে বিশ্বব্যাংকের শর্তের কারণে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়। সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁঁইয়াকে ওএসডি করা হয় এবং যেতে হয়েছে জেলে। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নামও দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। নানা টানাপড়েনের পর ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শেষ পর্যন্ত সরকারই বিশ্বব্যাংককে ‘না’ বলে দেয় এবং নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সেতুর নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালের ৪ জুলাই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর পর অর্থের জোগান না হওয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে নতুন করে আশা জাগে; কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। আবারও ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়ে সেতুর ভবিষ্যৎ। এরই মধ্যে বিশ্বকে অবাক করে বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। অসাধ্য সাধনের দুরন্ত সাহসে সব অনিশ্চয়তা দূর হয়। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।স্বাপ্নিক মনে জন্ম নেওয়া আশীর্বাদস্বরূপ পদ্মা সেতু অঙ্কুরেই বিশ্ব ব্যাংক সৃষ্ট দুর্নীতি নামক বিষাক্ত পোকার সংক্রমণে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সংক্রমিত এ রেশ কাটিয়ে বাংলাদেশ এখন স্বপ্নের পূর্ণ রূপ দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এমন এক সময়ে সততা ও সাহসিকতার আসল স্বরূপ উন্মোচিত হলো দেশবাসীর সামনে। কানাডিয়ান আদালত সেই সত্যের পক্ষেই অবস্থান নিল। বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করে দিয়েছিল তার প্রমাণ পায়নি কানাডার আদালত। ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার কানাডিয়ান পত্রিকা দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল জানায়, ফোনে আড়ি পেতে সংগ্রহ করা যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রসিকিউশন মামলা সাজিয়েছিল তাকে গালগল্প ও গুজব বলে ছুড়ে ফেলেছেন বিচারক। আদালত পদ্মা প্রকল্পে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পায়নি।তাহলে সঠিক কোনটা? বিশ্বব্যাংক, শেখ হাসিনার সরকার না ষড়যন্ত্রকারী দল। কানাডিয়ান আদালতের বিচারিক নিক্তি বলছে, আপাতত শেখ হাসিনা এবং তার সরকারই পুরোদস্তুর সঠিক। আর বিশ্বব্যাংক, ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের পক্ষাবলম্ব করে চাপাবাজির গালগল্পে জড়ানো কুশীলবরা পতিত হলো সততা ও নিষ্ঠার নির্মোহ পদতলে। এখন কী বলবে তথাকথিত ওই জ্ঞানী-গুণী সুশীলবাদী সমাজ। তারা ভ্রান্ত আঁচলে মুখ লুকিয়ে বসে থাকলেও তাদের মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছে কানাডার আদালত।দেশ এবং ব্যক্তিত্বের ক্ষতি যা হওয়ার তো হয়েছেই। এখন প্রশ্ন হলো, নির্দোষ মানুষগুলোকে যারা দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে একটা দেশ ও তার সরকারকে বিশ্ব ময়দানে বিতর্কিত করল তাদের কী হবে? যে প্রকল্পে অর্থঋণ না দিয়ে সেই প্রকল্পের কাজ আরও কয়েক বছর পিছিয়ে দিল এবং যারা ষড়যন্ত্রের গালগল্পে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত কিংবা চক্রান্তকারীদের সুরে সুর মিলিয়ে যারা আস্ফালন দেখিয়েছে তাদের কী হবে? রাষ্ট্রের একটি উন্নয়নমূলক বৃহৎ কর্মে শুধু বিরোধিতাই নয়, রীতিমতো তালগোল পাকানো এসব দেশদ্রোহীসহ এদের পক্ষে সাফাই গাওয়া কথিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও পিছিয়ে পড়া রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা পদ্মা ও দেশের জন্য আশীর্বাদ বলেই বিবেচিত হবে। এটা সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট দাবি।এই দেশদুশমন ও অন্যায়ী জল্পকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে হয়তো অতি উৎসাহী চাটুকাররা হিসাব করে কথা বলবে। আর বিশ্বব্যাংক! তাদের জন্য কানাডিয়ান আদালতের চপেটাঘাতই যথেষ্ট। এর আগে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন। তারা বাঙালি দুষ্টু লোকদের কাছে বসিয়ে শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপকর্ম সাধনের যে অপতৎপরতা চালিয়েছিল তা আজ সবার সামনে নিন্দনীয়রূপে উপস্থাপিত হলো। এখন বিশ্বব্যাংক নামের সঙ্গে বিশ্ব শব্দটি যুক্ত করার বিষয়টিও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।বিশ্বের উন্নয়নশীল ও দরিদ্র রাষ্ট্রের কল্যাণকামী আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক যদি কোনো ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব শব্দ প্রয়োগের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। পদ্মা সেতু প্রকল্পবিষয়ক অঘটনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক নিশ্চয়ই শিক্ষা পেয়ে গেছে যে, এই বাংলাদেশ শুধু পলি মাটির নরম স্তরে আবৃত্ত বঙ্গীয় ভূমিই নয়, এই বাংলাদেশ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিরল বিনিময়তায় অর্জিত বঙ্গবন্ধুর হার না মানা বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দুর্বার গতিসম্পন্ন দুরন্ত বাংলাদেশ। এই বাঙালি ও বাংলাদেশের তেজোদ্দীপ্ত তরঙ্গের তপ্ত ঝাঁজ কতটুকু যন্ত্রণাময় তা একাত্তরেই টের পেয়েছে বিশ্বব্যাংকসহ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রথী-মহারথীজন।সে দিনের তলাবিহীন ঝুড়ি অপবাদ পাওয়া বাংলাদেশ কিংবা আজকের শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। বাঙালি বীরের জাতি। আর বাংলাদেশ সেই জাতির পরিচয় বহন করে চলা দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল। যে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বৃহৎ ভার বহন করে বিশ্বব্যাংক ও বিশ্বের ভাবঅলা রাষ্ট্রগুলোকে বুঝিয়ে দিল নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার ইতিবাচক অহংবোধ, যা সত্যিই গর্ব করার মতো বিষয়।সর্বশেষ সত্য ও ন্যায়ের জয় হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারী ও ষড়যন্ত্রের জালবোনা নিপুণ কারিগর বিশ্বব্যাংকের গায়ে কলঙ্কিত কালো মার্কা সাঁটিয়ে দিল কানাডিয়ান আদালত। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি আরও দায়িত্বশীল আচরণ করবে বিশ্বব্যাংক এমনটি প্রত্যাশা। শুধু নিজেদের অনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ করতে থাকলে বিশ্বব্যাংকের প্রতি সবার আস্থা ও বিশ্বাস অনেক ক্ষীণ হয়ে আসবে। আর বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব শব্দটি পদ্মার ঢেউয়ে বারবার তলিয়ে গিয়ে বিশ্ববিহীন ব্যঙ্গ ব্যাংকে পরিণত হবে। সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫২
false
rn
আপনার বুদ্ধি কতটুকু _ (পর্ব- দুই) অধিকাংশ মানুষের মতে সমস্যার সঠিক সমাধান করাই বুদ্ধিমত্তার আসল পরিচয়।তবে বারট্রান্ড রাসেলের মতে সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিও বুদ্ধি যাচাই করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ – বারবার প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান করা আর সমস্যার গভীরে গিয়ে মৌলিক সমাধান করার মধ্যে পার্থক্য অনেক। বুদ্ধিমত্তার আরেকটা নিদর্শন পাওয়া যায় দূরদর্শিতার মধ্যে।যেকোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হল সে একাধারে একাধিক মতামত নিয়ে চিন্তা করতে পারে, এবং সে দ্রুত প্রত্যেকটি মতামতে অনেকগুলো দিক ভাবতে পারে। বহুমুখী প্রতিভাও বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন। আমাদের এই বুদ্ধির রহস্য কি? বিজ্ঞানীদের মতে – আমাদের মস্তিষ্ক। আরো সঠিক ভাবে বলতে গেলে – আমাদের সেরিব্রাল করটেক্স। ভাঁজ হয়ে থাকা আমাদের সেরিব্রাল করটেক্স চারটে A4 সাইজের পেপারের সমান আকার নিতে পারে।১/ রাস্তার ধারে এক লোক বসে ডিম বিক্রি করছে। এক ভদ্রলোক এলো তার কাছে ডিম কেনার জন্য। ডিম বিক্রেতা ভদ্রলোককে বল্‌লো, আমার নিকট থেকে ডিম কিন্‌তে হলে আপনাকে কিছু শর্ত মানতে হবে। যেমনঃ আমার কাছে যতগুলো ডিম আছে তার অর্ধেক ডিম আপনাকে কিন্‌তে হবে তাহলে, আপনি একটা ডিমের অর্ধেক ফ্রি পাবেন। ভদ্রলোক শর্তে রাজি হলো এবং ডিম কিনে চলে গেলো। এরপর, ২য় ভদ্রলোক এলো ডিম বিক্রেতার কাছে ডিম কিন্‌তে। ডিম বিক্রেতা অনুরুপ শর্ত আরোপ করলো তার উপর। ২য় ভদ্রলোক ডিম কিনে নিয়ে যাওয়ার পর এলো ৩য় ক্রেতা। একই শর্তে ৩য় ক্রেতার কাছে ডিম বিক্রি করার পর ডিম বিক্রেতার কাছে আর কোন ডিম অবশিষ্ট রইল না। এখন বলতে হবে, ডিম বিক্রেতা মোট কতগুলো ডিম নিয়ে বসেছিল ডিম বিক্রি করার জন্য। বি.দ্রঃ অর্ধেক ডিম ফ্রি দেওয়ার জন্য ডিম বিক্রেতাকে কোন ডিম ভাংতে হয়নি। ২/ ২টি বাড়ির ছাদে কিছু কবুতর আছে।একটি বাড়ির কবুতর অন্য একটি বাড়ির কবুতরদের বলছে, তোদের থেকে একটি কবুতর আমাদের সাথে যোগ দে। আমরা সমান সমান হই।এ কথার পৃষ্ঠে অন্য বাড়ির কবুতর বলছে, না আমরা যাব না। তোদের মাঝ থেক একটা আমাদের এখানে পাঠা। আমরা তোদের দ্বি-গুণ হই।এখন বলেন দেখি কোন বাড়িতে কয়াটা কবুতর এবং মোট কবুতরের সংখ্যা কত ? ৩/ একটি ছেলে একটা বাক্সের মধ্যে আটটি মাকড়সা আর গুবরে পোকা সংগ্রহ করে রেখেছে।সেগুলোর পা গুনে ছেলেটি দেখলো মোট ৫৪ টি পা।তাহলে বলুন তো সে কতগুলো মাকড়সা আর কতগুলো গুবরে পোকা সংগ্রহ করেছিল? ৪/ একজন ডিম বিক্রেতার ঝুড়িগুলোর কয়েকটাতে আছে মুরগীর ডিম আর বাকীগুলোয় হাঁসের ডিম।ডিমের সংখ্যা গুলি যথাক্রমে ৫,৬,১২,১৪,২৩ এবং ২৯।বিক্রেতা বলল,”এই ঝুড়িটা যদি বিক্রি করি তাহলে আমার কাছে থেকে যাবে -হাঁসের ডিমের দ্বিগুণ সংখ্যক মুরগীর ডিম।”কোন ঝুড়িটার কথা বলল সে?একটি হাদীস- এক ব্যক্তি নবীজীকে অভিযোগ করল হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা বদ মেজাজের মানুষ,কী করব?নবীজী সা. বললেনঃ ৯ মাস পর্যন্ত যখন তোমার মা তোমাকে পেটে ধারণ করে ঘুরে বেরিয়েছে তখন তো সে খারাপ মেজাজের ছিলেন না...!!লোকটি আবার বললঃ আমি সত্যি বলছি।রাসুল সা. বললেনঃ তোমার জন্য যখন সে রাতের পর রাত জাগ্রত থাকত এবং তোমাকে নিজের দুধ পান করাত তখন তো সে খারাপ মেজাজের ছিলেন না...!!লোকটি বললঃ আমি আমার মায়ের সে সব কাজের প্রতিদান দিয়ে দিয়েছি, আমি তাকেকাধে চড়িয়ে হজ্জ করিয়েছি।রাসুল সা. বললেনঃ তুমি কি তার সেই কষ্টের প্রতিদান দিতে পারবে?? যা সে তোমাকে জন্ম দেয়ার সময় স্বীকার করেছে???
false
ij
None “বৃষ্টির ভিতর একদিন জেগে উঠবে ইরাক!” সেই ১৯৫০ সালেই চিৎকার করে উঠেছিলেন ইরাকি কবি বদর শাকির আল-সাঈয়াব (১৯২৬-১৯৬৪); যাকে আধুনিক আরবি কবিতার জীবনানন্দ হিসেবে গন্য করা যায়। তাঁর নিরীক্ষাধর্মী কবিতাসমূহ আধুনিক আরবি কাব্যের ধারা আমূল পালটে দিয়েছিল। ছন্দের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার নিমিত্তে চল্লিশের দশকের শেষের দিকে সাঈয়াব তাঁর কাব্যসতীর্থদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ফ্রি ভার্স আন্দোলন । কবিতায় নিপুন কৌশলে ব্যবহার করেছেন মিথ - ‘বৃষ্টির গান’ সেই বিস্ময়কর সাক্ষ্য বহন করছে । সাঈয়াব এর আরেকটি অনিবার্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সমাজবাস্তবতা। দারিদ্রক্লিস্ট ইরাকের জরাজীর্ণ প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতায়-যা তাকে উন্নীত করেছে একজন সৎ ও প্রত্যক্ষদর্শী এশিয় কবি হিসেবে। ‘বৃষ্টির গান’তোমার ও দুটি চোখ যেন ঊষার আলোয় পামের দুটি বনকিংবা জোছনায় ঝলমলে দুটি ব্যালকনি;যখন তারা হাসে, তোমার দুটি চোখ, কুঞ্জেবনে দুলে ওঠে পত্রালি,এবং নদীতে চাঁদের মতন নৃত্যরত হয়ে ওঠে আলোরা প্রভাতের বৈঠার মৃদু আঘাত তরঙ্গেরযেনবা নক্ষত্ররা নিজস্ব গভীরতায় স্পন্দনশীল।তোমার ও দুটি চোখ যেন আলোক-ভেদ্য দুঃখার্ত কুয়াশায় নিমজ্জ্বিত; যেনবা রাত্রির কষাঘাতে পড়েছে সমুদ্র;এখানে রয়েছে বসন্তের কাঁপুনি আর শীতের উষ্ণতা এবং জন্ম ও মৃত্যু, আলো ও অন্ধকার;চিরকালীন কান্না কাঁপে আমার আত্বায়আর চাঁদ দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠা শিশুর মতনসমস্ত আকাশজুড়ে বন্য অনুপ্রেরণা ।যেন কুয়াশার তোরণ পান করছে মেঘেরাতারপর বিন্দু বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টিতে...যেন উদ্যানে কলতানরত শিশু সব ।বৃষ্টির গান।গাছের পাখিদের নীরবতার মৃদু খসখসানি।টিপ টিপ টিপ টিপ বৃষ্টিফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টিবৃষ্টি পড়ে।সব কিছু হাই তুলছে, নিচের মেঘ থেকেভারী কান্নার অবিরাম পতন।যেমন ঘুমের আগে শিশুর কান্নাওর মা সর্ম্পকে ( এক বছর আগে সে তার মাকে জাগাতে গিয়েছিল, পায়নি মাকে,ওকে বলা হয়েছিল, কেননা সে জিজ্ঞেস করছিল,আগামী পরশু তোমার মা ফিরে আসবেতোমার মাকে যে ফিরে আসতেই হবে,যদিও ওর খেলার সাথীরা ফিসফিস করত ঐ যে মাপাহাড়ের দিকে, চিরদিনের জন্য শায়িত,চারপাশের মাটি খাচ্ছে, পান করছে বৃষ্টিজল; যেন নিঃসহায় জেলে গুটিয়ে নিচ্ছে তার জালদুষছে জল ও ভাগ্যকে আর অস্তগামী চাঁদের আলোয় গাইছে গান।টিপ টিপ টিপ টিপ বৃষ্টিফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টিতুমি কি জান বৃষ্টিরা কী দুঃখ বয়ে আনতে পারে?তুমি কি জান কীভাবে নদীনালা কাঁদে যখন ঝরে অবিরল জল?তুমি কি জান বৃষ্টির ভিতর দাঁড়িয়ে একজন নিঃসঙ্গ মানুষের কীরকম অনুভূতি হয়?অশেষ, ভাঙা রক্তের মতো, ক্ষুধার্ত জনগন, প্রেমের মতন,শিশুদের মতন, মৃতের মতন, অশেষ বৃষ্টি,তোমার ও দুটি চোখ আমাকে নিয়ে যায় অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ভিতর ঝিনুক ও নক্ষত্রসহ পারস্য উপসাগরের বজ্রপাত আছড়ে পড়ে ইরাকের উপকূলে। যেনবা ওসব থেকে খুলে যাবে একটি ভোর, অথচ রাত্রি ওসবের ওপরবিছিয়ে দিয়েছে তার রক্তভেজা চাদর । উপসাগরের প্রতি আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠি: ‘ওহ্, উপসাগরমুক্তা, ঝিনুক ও মৃত্যুর দূত!’আর প্রতিধ্বনি উত্তর দিলযেনবা হাহাকার:‘ওহ্, উপসাগর,ঝিনুক ও মৃত্যুর দূত’।আমি যেন শুনতে পাচ্ছি ইরাক কর্ষন করছে বজ্র মজুদ করছে বিদ্যুৎ পাহাড়ে সমতলে,যদি সীলমোহর ভেঙ্গে ফেলে লোকেলুপ্ত সামুদ জাতির মতো বাতাস উপত্যকা করে ত্যাগ ।আমি যেন শুনতে পাচ্ছি পাম গাছেরা পান করছে বৃষ্টি,শোনো, একটি শোকার্ত গ্রাম আর তার অধিবাসীদের হাহাকারউপসাগরে দাঁড় ও পালের সংগ্রামেঝড়ো বাতাস আর বজ্রপাত,,,গাইছেবৃষ্টি বৃষ্টি টিপ টিপ টিপ টিপ বৃষ্টিফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টিআর ইরাকে ক্ষুধা ...এখানে ফসল কাটার মরশুমে সমস্ত শষ্যাদি পড়ে ছড়িয়ে গোগ্রাসে সেসব গেলে কাক ও পঙ্গপালের দল শস্যভান্ডার ও পাথরের যাঁতা ঘোরে বারবার মানুষসহ গমের কল ফসলের মাঠে হয় রুপান্তরিতটিপ টিপ টিপ টিপ বৃষ্টিবৃষ্টি পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায় চলে যাওয়ার সময় কত কান্না আমরা কেঁদেছি রাতেবৃষ্টির দোহাই দিই আমরা, দোষ না পড়ার কথা ভাবি টিপ টিপ টিপ টিপ বৃষ্টিফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টিশিশুকাল থেকেই, আকাশশীতকালে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে থাকতআর বৃষ্টি ঝরত,আর প্রতি বছর পৃথিবী সবুজ হয়ে উঠলে আমরা ক্ষুধা বোধ করতামক্ষুধা ছাড়া ইরাকের একটি বছরও কাটত না।টিপ টিপ টিপ টিপ বৃষ্টিফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টিফুলের বীজ থেকে হলুদ কিংবা লাল রঙের কুঁড়ি বেরোত।ক্ষুধার্ত আর নগ্ন মানুষেরা কাঁদতআর রক্ত ঝরত দাসের হাসত নতুন ভোরের প্রতি চেয়ে ।নবজাতকের ঠোঁটে গোলাপি স্তনবৃন্তআগামী নতুন বিশ্বের, নতুন জীবনের যাত্রী ...টিপ টিপ টিপ টিপ বৃষ্টিফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টিবৃষ্টির ভিতর একদিন জেগে উঠবে ইরাক!আমি উপসাগরের প্রতি চিৎকার করে কেঁদে উঠি: ‘ওহ্, উপসাগরমুক্তা, ঝিনুক ও মৃত্যুর দূত’আর প্রতিধ্বনিত হলযেনবা হাহাকার:‘ওহ্, উপসাগর,ঝিনুক ও মৃত্যুর দূত’।এবং উপসাগরের পর্যাপ্ত উপহার উপকূলের বালির ওপরছড়ায় ফেনা ও ঝিনুক আর ডুবে যাওয়া অভিবাসীর কঙ্কাল যারা চিরদিনের জন্য মৃত্যু পান করেছিল উপসাগরের অতল হতে, এর স্তব্দতা থেকে,আর অজস্র সরীসৃপ ইরাকে পান করে নির্যাসএকটি ফুল থেকে ফোরাত নদী লাভ করে শিশিরের পুষ্টি ...আমি প্রতিধ্বনি শুনিউপসাগর থেকে ভেসে আসছে :বৃষ্টি টিপ টিপ টিপ টিপ বৃষ্টিফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টিবৃষ্টির প্রতি ফোঁটায়ফুলের বীজ থেকে বেরোত হলুদ কিংবা লাল রঙের কুঁড়ি ।আর নগ্ন ক্ষুধার্ত মানুষেরা সব কাঁদতআর রক্ত ঝরত দাসের নতুন ভোরের প্রতি চেয়ে হাসত ।নবজাতকের ঠোঁটে গোলাপি স্তনবৃন্তআগামী নতুন বিশ্ব, জীবনের যাত্রী!আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ: লেনা জাঈয়ূসি এবং খ্রিস্টফার মিডলটন।
false
ij
মিলিন্দ পহনো মুদ্রায় অঙ্কিত ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজা মিলান্ডার। ইনি একজন বৌদ্ধ পন্ডিতকে কয়েকটি প্রশ্ন করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। প্রাচীন ভারতে মৌর্যবংশের পতনের যুগে ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজারা পশ্চিম ভারতের গুজরাটের ভৃগকচ্ছ অবধি তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে। এদের সর্বশেষ নৃপতি মিলান্ডার (বা মিলিন্দ) বৌদ্ধধর্মে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং ঐ ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পূর্বে বৌদ্ধ পন্ডিত নাগসেনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। পালি সাহিত্যে এই আলোচনা ‘মিলিন্দ পহনো’ বা মিলিন্দ প্রশ্ন আখ্যায় লিপিবদ্ধ আছে। ব্যাকট্রিয়ার মানচিত্র ব্যাকট্রিয়া বা বাখট্রিস রাজ্যটির অবস্থান ছিল বর্তমান আফগানিস্তানের উত্তরে। অতি প্রাচীনকালেই দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ও জরথুশত্র প্রচারিত ধর্মের কারণে অঞ্চলটি বিখ্যাত ছিল। ব্যাকট্রিয়ার উত্তরে অক্সাস নদী (আমু দরিয়া) এবং দক্ষিণে হিন্দুকুশ পর্বতমালা। এর মাঝখানে উর্বর পলল সমতল, উষ্ণ মরুভূমি ও ঠান্ডা পবর্তমালা সমন্বিত ভৌগোলিক বৈচিত্র্য অতি বিচিত্র । রোমান লেখক কুইনটাস কার্টিয়াস রুফুস এই বৈপরীত্যের কথা উল্লেখ করেছেন। মানচিত্রে ব্যাকট্রিয়া গ্রিক সম্রাট আলেকজান্দারের পারস্য আক্রমনের সময় গ্রিকরা ব্যাকট্রিয়ায় নতুন নগর গড়ে বসবাস করতে শুরু করে । ব্যাকট্রিয়ার স্থানীয় লোকজনও বাস করত সে নগরে। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫ সালে একটি ভারতীয় নগর অবরোধ সময় আলেকজান্দার আহত হলেন । ঠিক ঐ সময়ই ব্যাকট্রিয়ায় বসবাসকারী গ্রিকরা গ্রিসে ফিরে যেতে চাইল । উপরোন্ত ব্যাকট্রিয়ার স্থানীয়রাও চাইছিল না যে ব্যাকট্রিয়ায় গ্রিকরা থাকুক। তারা আন্দোলন শুরু করে। প্রাচীন ব্যাকট্রিয়ার চিহ্ন যা হোক। গ্রিক সৈন্যরা কঠোর হাতে অরাজকতা দূর করে। এরপর ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে আলেকজান্দার মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর একজন উত্তাধিকারীর নাম পারডিকাস। তিনি সেনাপতি পেইথনকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য ব্যাকট্রিয়ায় পাঠালেন। পেইথন চাইলেন গ্রিকরা ব্যাকট্রিয়ায় থাকুক। কিন্তু তারা বিদ্রোহ করে। পেইথন এর অনুগত গ্রিক সৈন্যরা তাদের হত্যা করে। এভাবে ব্যাকট্রিয়ায় বসবাসকারী গ্রিকদের সংখ্যা কমে এল। অর্থাৎ গ্রিকদের আর ব্যাকট্রিয়ায় ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য থাকল না। ব্যাকট্রিয়ায় গ্রিক নগরের মডেল এর মধ্যে একচ্ছত্র ক্ষমতার লক্ষ্যে আলেকজান্দার এর সেনাপতিদের মধ্যে ব্যাবিলনে সংঘাত বাধল। ৩০৮ খ্রিস্টপূর্বে ১ম সেলুকাস নিকেতর ব্যবিলনীয় যুদ্ধে জয়লাভ করেন। এরপর ব্যাকট্রিয়ায় নতুন সৈন্য অনুপ্রবেশ করল। ব্যাকট্রিয়া সেলুসিদ বংশের অধীন হয়ে পড়ে। সম্রাট ১ম সেলুকাস নিকেতর এর ছেলে অ্যান্টিওকাস ১ম সোটার ব্যাকট্রিয়া শাসন করতে থাকে। তাঁর শাসনের ধরন ছিল পারশিক। পার্থিয়ার মানচিত্র ব্যাকট্রিয়ার পশ্চিমে পার্থিয়া। ২৪৫ খ্রিস্টপূর্বে পার্থিয়ার প্রাদেশিক শাসনকর্তা (সাটরাপ) অ্যান্ড্রাগোরাস সেলুসিদ কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে; এই গোলযোগের সুযোগে মধ্য এশিয়ার তৃণভূমির পার্ণি গোত্র পার্থিয়া আক্রমন করে। সেলুসিদ সৈন্যরা পার্নিদের প্রতিরোধ ব্যর্থ হয়। পার্নিরা পার্থিয়া ধ্বংস করে। মানচিত্র। গান্ধার। বর্তমান পকিস্তান। ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজারা যখন গান্ধার ও পাঞ্জাব দখল করে সে সময় মৌর্য শাসন ক্ষয়ে যাচ্ছিল। গ্রিক ও মেসিডোনিয়রা এরপর ইউরোপ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ডিওডোটাস ব্যাকট্রিয়ায় স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলেন। ইনি পার্নিদের সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও সেলুসিদ সম্রাট ৩য় অ্যান্টিওকাস ২০৬ খ্রিস্টপূর্বে পার্থিয়া ও ব্যাকট্রিয়া আক্রমন করে তা সত্ত্বেও এতদ্বঞ্চলের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখেন। ব্যাকট্রিয়ার রাজা ইউদিদেমাস ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। ১৮৪ খ্রিস্টপূর্বে ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজারা গান্ধার ও পাঞ্জাব দখল করেন। দেমেট্রিয়াস ইউদিদেমাস এর পুত্র দেমেট্রিয়াস তক্ষশিলায় তাঁর শাসনের কেন্দ্র করে তোলেন। তক্ষশিলাকে গ্রিক নগরীর আদলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। তক্ষশিলা হয়ে ওঠে শিক্ষাদীক্ষার কেন্দ্র । বিশেষ করে বৌদ্ধসংস্কৃতির বিকাশ লাভ করে। ভারতীয় শিল্পের সঙ্গে গ্রিক শিল্প মিলে গান্ধার শিল্প গড়ে উঠে। বৌদ্ধ মূর্তি। মুখায়ব ভারতীয়; কাজের ছাঁচটি গ্রিক। এইই গান্ধার শিল্পে মূল বৈশিষ্ট্য। নাগসেন রচিত মিলিন্দ পহনো গ্রন্থের প্রচ্ছদ। আমাদের এই লেখার বিষয় মিলিন্দ পহনো। ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজা মিলিন্দ এর পরিপ্রেক্ষিত বোঝার জন্যই সংক্ষেপে ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজাদের ইতিবৃত্তটি বলতে হল। এবার নাগসেন সম্বন্ধে কিছু কথা বলা দরকার। নাগসেন প্রথম জীবনে ব্রাহ্মণ ছিলেন, সম্ভবত গান্ধারে বাস করতেন। পরে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ তাঁর সময়কাল বলে চিহ্নিত করা গেছে। সর্বশেষ ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজা মিলান্ডার (বা মিলিন্দ) বৌদ্ধধর্মে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং ঐ ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পূর্বে বৌদ্ধ পন্ডিত নাগসেনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। আগেই বলেছি -পালি সাহিত্যে এই আলোচনা মিলিন্দ পহনো বা মিলিন্দ প্রশ্ন আখ্যায় লিপিবদ্ধ আছে। বিশ্বের পড়ুয়া মহলে বইটি আদৃত। মিলান্ডার শাসন করেন ১৫৫ থেকে ১৩০ খ্রিস্টপূর্ব। ইনি ছিলেন ২য় অ্যান্টিমাকাস এর উত্তরাধিকারী। মিলান্ডার ১ম দেমেট্রিয়াস এর কন্যা আগাথোক্লেইয়াকে বিবাহ করেছিলেন। এর রাজত্বকালেই ব্যাকট্রিয় গ্রিক সাম্রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তক্ষশিলা ছিল কেন্দ্র এবং পশ্চিম পাঞ্জাব ও গান্ধারের রাজধানী। মিলান্ডার আমলের রুপার দ্রাকমা (গ্রিক মুদ্রা) রাজা মিলান্ডার এর ২৫০ টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন নাগসেন। তারপর মিলান্ডার ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। মিলিন্দ পহনো সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত। ১ পটভূমি ইতিহাস ২ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রশ্ন ৩ দুবোধ্যতা দূর করবার জন্য প্রশ্ন ৪ দ্বন্দ বিষয়ক প্রশ্ন ৫ উদাহরণ দিয়ে প্রশ্নের উত্তর ৬ সংযমের বিশেষ গুণ ৭ তুলনামূলক প্রশ্ন ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজা মিলান্ডার এর প্রশ্নের ধরনে গ্রিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন প্রজ্ঞান বৈশিষ্ট সম্পর্কে মিলান্ডার বলছেন: মাননীয় নাগসেন, প্রজ্ঞার স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য কি? নাগসেন বললেন, আমি আগেই আপনাকে বলেছি মহারাজ কঠোরতা প্রজ্ঞার স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। এখন আবার বলছি আলোকময়তা প্রজ্ঞার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, মাননীয় নাগসেন, কী ভাবে আলোকময়তা প্রজ্ঞার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য? নাগসেন বললেন, মহারাজ উদীয়মান প্রজ্ঞা অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে। অর্ন্তদৃষ্টির উজ্জ্বলতা উৎপন্ন করে। জ্ঞানের আলোক আনে। আর্যসত্যকে প্রকাশ করে। উপরোন্ত আধ্যাত্মিক সাধক পূর্নজ্ঞানে দেখতে পায় অনিত্য, অতৃপ্তি ও অন্তসারশূন্যতা। উদাহরণ দিন। রাজা বললেন। নাগসেন বললেন, ধরুন এক ব্যক্তি অন্ধকার ঘরে প্রদীপ নিয়ে এল। প্রদীপ জ্বালাতেই আলো হল, আর আঁধার দূর হল। এভাবে উৎপন্ন হল উদ্ভাসন। আলোক প্রকাশিত হল, সেই সঙ্গে রুপও গোচরীভূত হল। এভাবে প্রজ্ঞার উত্থানে বিদূরিত হল অজ্ঞতার অন্ধকার। জ্ঞানের আলো এল। আর্যসত্য প্রকাশিত হল। উপরোন্ত আধ্যাত্মিক সাধক পূর্নজ্ঞানে দেখতে পেল অনিত্য, অতৃপ্তি ও অন্তসারশূন্যতা। রাজা বললেন, মাননীয় আপনি সত্যিই জ্ঞানী। তারপর রাজা বললেন, এবার বলুন চেতনার স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য কি? নাগসেন বললেন, চেতনার স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অবধারণ করা। উদাহরণ দিন। রাজা বললেন। নাগসেন বললেন, ধরুন একজন নগরপরিদর্শক নগরের মধ্যিখানে চৌরাস্তায় বসে আছে। সে পূর্বদিক থেকে আসা একজন ব্যাক্তিকে দেখতে পাবে, দক্ষিণ দিক থেকে আসা একজন ব্যাক্তিকে দেখতে পাবে, পশ্চিম দিক থেকে আসা একজন ব্যাক্তিকে দেখতে পাবে এবং উত্তর দিক থেকে আসা একজন ব্যাক্তিকে দেখতে পাবে । এভাবে সচেতন ব্যাক্তি চোখ দিয়ে রুপ দেখতে পারে, কান দিয়ে শব্দ শুনতে পারে, নাক দিয়ে গন্ধ নিতে পারে, জিভ দিয়ে স্বাদ নিতে পারে, স্পর্শ দ্বারা সচেতন হতে পারে, মন দ্বারা উপলব্দি করতে পারে। এ হল চেতনার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। আপনি জ্ঞানী মাননীয় নাগসেন। রাজা বললেন। ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজা মিলান্ডার এর এরকম ২৫০টি প্রশ্নই বৌদ্ধধর্মে মিলিন্দ পহনো বা The Milindapañha নামে পরিচিত। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১০ রাত ৮:৫৯
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৯২ মধ্যরাত্রে একটা লেখা শেষ করে রবীন্দ্রনাথ শোবার ঘরে ঢুকে দেখতে পান- মৃণালিনী জেগে বসে আছেন। রবীন্দ্রনাথ জিজ্ঞেস করলেন- ঘুমাওনি ছোটবউ ? মৃণালিনী বললেন- আজ আমরা দু'জন কেউই ঘুমাবো না। সারারাত জেগে থাকব, অনেক গল্প করবো। রবীন্দ্রনাথ, মৃণালিনীর কাঁধে হাত রেখে বললেন- তাহলে তোমাকে একটা গান গেয়ে শোনাই। রবীন্দ্রনাথ দুই লাইন গাইলেন- "তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা..." । গান শুনতে শুনতে মৃণালিনী রবীন্দ্রনাথের কোলে মাথা রাখলেন। গান শেষ হতেই মৃণালিনী আদুরে গলায় বললেন- একটা কথা জিজ্ঞেস করি প্লীজ রাগ করো না, তুমি কি আনা নামের মেয়েটিকে চুমু খেয়েছিলে ? ওটাই কি তোমার জীবনের প্রথম চুমু ছিল ? রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট গলায় বললেন- হ্যাঁ চুমু খেয়েছিলাম, কিন্তু ওটাই জীবনের প্রথম চুমু ছিল না। এই কথা শুনেই মৃণালিনী স্বামীর কোল থেকে উঠে বালিশে মাথা রেখে- বললেন, খুব ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো। মৃণালিনী স্বামীর দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে আছেন, রবীন্দ্রনাথ কপালের উপর একটা হাত রেখে শুয়ে আছেন। একটু পরই আকাশ ফরসা হতে শুরু করল। দুইজন মানুষ না ঘুমিয়ে-চুপ করে থেকে সময় পার করে দিল-এক আকাশ কষ্ট বুকে নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ মনে মনে ভাবলেন- আসলে জীবন এই রকমই, কোথাও না কোথাও গিট্টু লাগবেই। আকাশ পুরো ফরসা হতেই মৃণালিনী বিছানা থেকে নামতে নামতে ভাবলেন- গর্তের ঢাকনা সব সময় খুলতে হয় না। ঢাকনা না খুললে- হয়তো আদর-ভালোবাসায় রাত পার হতো। ঠিক এমন সময় বাড়িতে এসে উপস্থিত হোন- বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক। এক-দুই দিনের জন্য আসেন এই পরিবারের কাছে। মৃণালিনীর কাছে নানা রকম খাবারের আবদার করেন।জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রিয় খাবার হচ্ছে- কচ্ছপের মাংস আর ডিম। এবং রবীন্দ্রনাথের সাথে আড্ডা- কবির মুখে নতুন গল্প শোনা-গান। জগদীশ চন্দ্র বসু খুব মন দিয়ে রবীন্দ্রনাথের গল্প শুনেন। মাঝে মাঝে গল্প নিয়ে দুই একটা প্রশ্ন করেন।মৃণালিনী কে জগদীশ বলেন- বৌদি দেশ-বিদেশ অনেক ঘুরেছি কিন্তু পদ্মা নদীর মত সুন্দর নদী আর কোথাও দেখতে পাইনি । এবার শীতে কিন্তু আমি এসে অনেকদিন থাকব। শীতের সময় নদীতে কি সুন্দর চর জাগে। পদ্মার চর যে দেখেনি, তার মানব জনম বৃথা । আহ ! জোছনা রাতে কি যে সুন্দর লাগে পদ্মার চর! জগদীশের কথা শুনে- মৃণালিনী মুখে আঁচল দিয়ে হাসতে থাকেন ।জগদীশ আবার বলেন- এই জন্য তো আমার কবি বন্ধু এখানে পড়ে আছেন। এই নদী কবিকে অনেক দিয়েছেন।মৃণালিনী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসতে থাকেন। বৌদি, এখন চা খাবো। তাড়াতাড়ি চা করেন। সাথে মুড়ি। চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে মৃণালিনী ভাবেন- আট বছর বয়ে বিয়ে হয়। চৌদ্দ বছয় বয়সে মৃত সন্তান জন্ম দিলাম।...... দৃষ্টিদান নামে এই গল্পটি সকালে রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানীকে শুনান। রবীন্দ্রনাথের বাচ্চা রথীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র পদ্মার চরে যান কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করতে। বাচ্চা রথী কচ্ছপের ডিম খুজতে অনেক আনন্দ পায়। রবীন্দ্রনাথের বাচ্চা গুলো তার এই পাগলা বিজ্ঞানী কাকু কে অনেক ভালোবাসে। সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ নিজের লেখা, নিজের সুর করা গান গেয়ে শোনান। গান শুনে মৃণালিনীর চোখ বার বার ভিজে উঠে। এই মৃণালিনী মারা যাবার পর দিন রবীন্দ্রনাথ সারারাত ছাদে পায়চারী করেছেন। মৃণালিনী মৃত্যু ছিল অপ্রত্যাশিত। মেয়ে রেণুকা বেঁচে ছিল তেরো বছর। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যান ছিয়াশি বছর বয়সে ১৯০৫ সালে। নিমতলা শ্মশ্মান ঘাটে তার দাহ সম্পন্ন হয়। এগারো বছর বয়সে আদরের সন্তান শমীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের চোখের সামনে মারা যায়। এখানে একটা কথা বলে রাখি- শোক সহ্য করার অসাধারন ক্ষমতা ছিল রবীন্দ্রনাথের। রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্রকে চিঠিতে লিখেনঃ "আমাদের চারিদিকেই এত দুঃখ, এত অভাব, এত অপমান পড়িয়া আছে নিজের শোক লইয়া অভিভূত হইয়া এবং নিজেকেই বিশেষরুপ দুর্ভাগ্য কল্পনা করিয়া থাকিতে আমার লজ্জা বোধ হয়। আমি যখনই আমাদের দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়া দেখি, তখনই আমাকে আমার নিজের দুঃখতাপ হইতে টানিয়া বাহির করিয়া আনে।আমাদের অসহ্য দুর্দশা মূর্তি ঘরে ও বাহিরে আজকাল এমন সুপরিস্ফুট হইয়া দেখা দিয়াছে যে নিজের ব্যাক্তিগত ক্ষতি লইয়া পড়িয়া থাকিবার সময় আমাদের নেই।" প্রমথলাল রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন- ইংল্যান্ড যাওয়ার জন্য। সব ঠিকঠাক। 'সিটি অব প্যারিস' জাহাজে মালামালও ওঠানো হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু সকালবেলা হঠাত রবীন্দ্রনাথ মাথা ঘুরিয়ে মাটিতে পড়ে যান। ডাক্তার কঠিন ভাবে বললেন- আপনার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। বিছানা থেকে নামা নিষেধ। রবীন্দ্রনাথ বললেন- ডাক্তারের কথা মেনে মরার চেয়ে, ডাক্তারের কথা না মেনে মরা অনেক ভালো। বিছানায় শুয়ে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ, পতিশর,শাজাদপুর কালিগ্রাম এর কথা ভাবেন।বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠে প্রজাদের মুখ। প্রিয় পদ্মা নদী। এখানে বলা আরেকটা কথা বলা দরকার- প্রজারা সব সময় বলতেন- বাবুমশায় ( জমিদার রবীন্দ্রনাথ ) আমাদের অন্নদাতা, বাবু মশায় আমাদের কখনও অবজ্ঞা করেন নি, বাবু মশায় আমাদের খুব ভালোবাসতেন, সুখে দুঃখে সব সময় তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারতাম, এই বাংলায় এমন জমিদার আর পাবো না। বাবু মশায় দাতব্য চিকিৎসালয় করে ওষুধ দিতেন, বাবু মশায় হাসপাতালের খরচ দিতেন, বাবু মশায়, আমাদের জলকষ্ট দেখে পুকুর আর কূপ খনন করে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ অনেকগুলো ছদ্মনামে লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মনামঃ ১) অকপট চন্দ্র ভাস্কর, ২) আন্নাকালী পাকড়াশী, ৩)দিকশূন্য ভট্টাচার্য, ৪)নবীন কিশোর শর্মন, ৫)ষষ্ঠীচরন দেবশর্মা, ৬)বানীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ, ৭)শ্রীমতী কনিষ্ঠা, ৮)শ্রীমতী মধ্যমা, ৯)ভানুসিংহ ঠাকুর । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:০৫
false
rg
লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আগামীকাল শোক র‌্যালি ২০০৮ লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক র‌্যালি ২০০৮ ঘনঘন নৌ-দুর্ঘটনার জবাব দেবে কে ? প্রতি বছর ঘটছে ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। তদন্ত কমিটি হয়, প্রতিবেদন পেশ করা হয়, দুর্ঘটনা বন্ধের সুপারিশ তৈরি করা হয়। কিন্তু নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেই চলে। প্রতিবছর-ই বর্ষা মৌসুমে লঞ্চ দুর্ঘটনার পরপরই এইসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয় ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের রিপোর্ট মতে, লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ডি ক্যটাগরির অযোগ্য নৌ-চলাচল এবং অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বোঝাই। বর্ষা মৌসুম এলেই আমাদের দণি বাংলার মানুষের নৌ-দুর্ঘটনা নিয়ে আতংকে দিন কাটানোর দিন। নদী পথে যাতায়াতের একটি অন্যতম সহজ পথ হল দণি বাংলার মানুষের। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে কর্তব্যে অবহেলা, অযোগ্য নৌযান চলাচলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে দুর্নীর্তির মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদান এবং নজরদারী না রাখা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। লঞ্চ মালিক ও চালকদের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে নিয়ম-কানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শণ এবং সর্বপরি নিরাপদ নৌ-চলাচল বিষয়টিকে সরকারের আমলে না নেওয়ার ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। এর যেন কোনো প্রতিকার নেই। মানুষের জীবনের মূল্যকে এরা থোরাই কেয়ার করেন। দুর্ঘটনার পর শত শত পরিবারের ক্রন্দনধ্বনি ওঠার পরেই কেবল কর্তৃপ কয়েক দিন এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়, তদন্ত কমিটি হয় এবং একটি দায়সারা গোছের তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। আবারও যথারীতি আগের মতোই নৌ-মালিক ও চালক দস্যুদের রাজত্ব চলতে থাকে নৌ-রুটে। এটা যেন একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। যে লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, নৌ-পরিবহন কর্তৃপরে সেখানে কাজটা কি ? তাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই ? এতোগুলো মানুষের মৃত্যুর জন্য শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দায়ী করে কি দায় এড়ানো সম্ভব ? লঞ্চ চলাচলের অযোগ্য হওয়ার পর কিভাবে উপযুক্ততার সাটির্ফিকেট পায় ? কাদের মাধ্যমে পায়? রাষ্ট্র কি করে? রাষ্ট্রের কাজ কি শুধু বদমায়েশদের রাজত্ব করার সুযোগ করে দেওয়া ? রাষ্ট্রের কাজ কি শুধু খারাপ মানুয়ের পে কাজ করা ? জনগণের টাকায় যে রাষ্ট্র চলে, সেই রাষ্ট্রের যারা কর্মকর্তা, কর্মচারী, তাদের তাহলে দায়িত্বটা কি? আমরা ট্যাক্স দিয়ে রাষ্ট্রের এতোসব বাহিনী পালছি, তাদের কর্তব্যটা আসলে কি? নিরাপদ নৌ-চলাচলে নৌ-পুলিশের ব্যর্থতার দায়ে তো কারো কখনো দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি। কোনো লঞ্চ মালিকের সাজা হয়নি। কোনো নৌ-চালকের সাজা হয়নি? নৌ-পুলিশ ব্যর্থ হলে নৌ-বাহিনী কি করছে? সেনা-বাহিনী কি করছে? রাষ্ট্র কি করছে? আমরা কি শুধুই দুর্ঘটনার শিকার হতে থাকবো? তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্রের দরকারটা কি? আমরা কি তাহলে এখনো মগের মুল্লুকে বাস করছি না? আমরা কি এখনো কতিপয় দস্যুর রাজত্বে বসবাস করছি না? এতোসব বিষয়ের জবাব কে দেবে? আমরা চাই যান্ত্রিক ত্র“টি বা নৌ-চালকের খামখেয়ালীতে বা নৌ-রুটের নিয়ম কানুন উপো করে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহনের জন্য আর যেন কোনো নৌ-দুর্ঘটনা না ঘটে। সরকারকেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এ যাবৎ সংগঠিত সকল নৌ-দুর্ঘটনার যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রে কেউই যে আইনের উর্ধ্বে নয় সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বর্তমান সেনা-বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ঘন ঘন লঞ্চ দুর্ঘটনার বিষয়গুলি আরো কঠোরভাবে দমন করা সম্ভব। আমরা চাই প্রত্যেক বছর ঘন ঘন লঞ্চ দুর্ঘটনা এড়াতে উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন নৌযান ও আধুনিক নৌ-ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন। মানুষের জীবনের মূল্যের চেয়ে অন্য কোনো অযৌক্তিক যুক্তিকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নিরাপদ নৌ-চলাচল বাস্তবায়ন মুভমেন্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য প্রতি বছর ২৩ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শোক র‌্যালি ও মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বল করে জনগণকে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। এ বছরও নিরাপদ নৌ-চলাচল বাস্তবায়ন মুভমেন্ট ২৩ মে ২০০৮ শুক্রবার বিকাল ৪.৩০টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শোক র‌্যালি বের করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে নিরাপদ নৌ-চলাচল নিশ্চিত করতে যথাযথ সহযোগিতা করতে আহবান জানাবে। নিরাপদ নৌ-চলাচল বাস্তবায়ন মুভমেন্ট কর্তৃক আয়োজিত শোক র‌্যালি ও মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে আপনি স্ব-বান্ধব উপস্থিত হয়ে আপনার মূল্যবান মতামত তুলে ধরবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অনুষ্ঠানের সময়: ২৩ মে ২০০৮, রোজ শুক্রবার, বিকেল ৪.৩০ মিনিট স্থান: জাতীয় জাদুঘর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ আয়োজন: নিরাপদ নৌ-চলাচল বাস্তবায়ন মুভমেন্ট ধন্যবাদন্তে সুমন শামস ও রেজা ঘটক নিরাপদ নৌ-চলাচল বাস্তবায়ন মুভমেন্ট প্রয়োজনে:০১৭১১-১৬৫৮৬৩, ০১১৯৯৫২১৭৫৯। Email: shumanshams@yahoo.com or rezaghatok@gmail.com সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮
false
rg
মুন্নী সাহা, দয়া করে সংবাদ প্রচারে আরেকটু যত্নবান হোন!!! গতাকাল দুই চারটি জামায়াত-বিএনপি প্রীতি চ্যানেল আর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি ছাড়া প্রায় সবগুলো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির খবর লাইভ কাস্ট করেছে। কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সবচেয়ে সঠিক খবরটি প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিল দেশ টিভি। আর এই খবরটি গোটা দেশবাসীকে প্রথম শোনাতে সক্ষম হয়েছিলেন দেশ টিভি'র বিশেষ প্রতিনিধি নজরুল কবির। নজরুল কবিরের কাছ থেকে গোটা দেশবাসী যেখানে বাংলাদেশের কলংক মোচনের মাইলফলক সূচনাকারী সেই খবরটি সবার আগে শুনতে পেরেছিল, সেই সময় অন্যান্য চ্যানেলগুলো অনেকটা আন্দাজের উপর নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল। আর দেশ টিভি'র সংবাদ পাঠক মিস্টার আনোয়ার সেই খবরটি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে যখন প্রচার করেছিলেন যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। রাত ১০টা ১ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে এই ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ঠিক তখনও অন্যান্য চ্যানেলগুলো আন্দাজ নির্ভর খবর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ অন্য চ্যানেলগুলোওপ্রচার করতে শুরু করলো যে, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তারপর কি ঘটলো?মিডিয়া কর্মীরা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কাদের মোল্লার মরদেহ বাহী গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন। কাদের মোল্লার মরদেহ বাহী অ্যাম্বুলেন্স কারাগার থেকে এক সময় কঠোর নিরাপত্তার সঙ্গে বের হল। তারপর কি হল? মিডিয়া কর্মীরা অনেকে সেই গাড়ির পেছন পেছন ক্যামেরা হাতে ছুটলেন! তারপর কি হল? তারপর এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একটি খবর প্রচার করলেন যে, আমাদেরকে একজন শুভাকাঙ্খী ফোন করে জানিয়েছেন, এই মাত্র কাদের মোল্লার মরদেহ নিয়ে গাড়ি বহর ঢাকা'র কেরানিগঞ্জ ক্রোস করলো। মাওয়া পথেই লাশ নিয়ে ফরিদপুর যাচ্ছে তারা। মুন্নী সাহা, আপনি অনেক বড় সাংবাদিক। অনেক খবরেই আপনার অতিমাত্রার আগ্রহ। কিন্তু কোন খবরটি প্রচার করতে হয়, কোন খবরটি এডিট করার প্রয়োজন, সেই জ্ঞানটুকু ঠিক সময় প্রয়োগ করতে না পারলে, সেই খবরে কিন্তু সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। কাদের মোল্লার মরদেহ ঢাকা থেকে কোন পথে ফরিদপুর নেওয়া হবে, সেটি আমাদের কাছে কোনো খবর নয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাদের মোল্লার মরদেহ নির্বিঘ্নে ফরিদপুরে তার গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলো কিনা, সেটিই খবর। মাঝখানে আপনি কাদের মোল্লাকে কোন পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে ধরনের একটি খবর প্রচার করে যে বাহাবা নিতে চাইলেন, সেটি ছিল আপনার সাংবাদিকতার এথিক্সের বাইরে একটি অতি উৎসাহী উক্তেজনা। এ ধরনের থবর প্রচার কোনো মতেই কারো কাম্য হতে পারে না। আপনি বিতর্কে আসার জন্যেই এটা করেন কিনা আমরা জানি না। কিন্তু কাদের মোল্লার মরদেহ নিয়ে ফরিদপুরে যাবার পথে জামায়াত-শিবির চক্রের হাতে হামলার শিকার হবার বা কাদের মোল্লার মরদেহ তারা যদি ছিনিয়ে নিতে চায়, সেই অপশক্তিকে সুযোগ করে দেবার জন্যে আপনি একটি খবর প্রচার করলেন। যদিও কাদের মোল্লার মরদেহ ফরিদপুরে নেওয়ার জন্য আরো বিকল্প উপায় ছিল। কিন্তু যে উপায়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রহন করেছে, আপনি সেটি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ প্রচার করে সেই পথটিকে আরো নিরাপত্তাহীন করে তুললেন। এই খবরটি যারা কাদের মোল্লা মরদেহ নিয়ে কোনো চক্রান্ত করার মতলব যদি করে, তাদের পক্ষেএকটি সহায়ক খবর ছিল। যা মোটেও সাংবাদিকতার এথিক্সের মধ্যে পড়ে না। হ্যা, কাদের মোল্লার মরদেহ ফরিদপুরে নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর পর আপনি এই খবরটি প্রচার করতে পারতেন যে, মাওয়া পথেই তাকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতি উৎসাহী হয়ে আপনি যে খবরটি প্রচার করলেন, এটি থেকে ওই নাশকতাকারীদের যে কেউ সুযোগ গ্রহন করতে পারতো। আপনি অপশক্তিদের সেই সুযোগটি করে দিয়েছিলেন এই খবরটি প্রচার করে। তাই বলি কি, আপনি সংবাদ প্রচারে আরেকটু যত্নবান হোন। অতি উৎসাহী খবর কেবল বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে, আর তা থেকে সুযোগসন্ধানীরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। এটা আপনি যদি ভুলে গিয়ে সবার আগে খবর প্রচারে উৎসাহী হয়ে এমন ধরনের খবর দেন, যা অনেক বিপদের আশংকা তৈরি করতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে সাংবাদিকতায় আপনি এখনো প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর যদি জেনে বুঝে কাজটি করে থাকেন, তাহলে সেই করার পেছনে একটি কিন্তু আছে। সেই কিন্তু, কিন্তু হলুদ সাংবাদিকতা। সেই কিন্তু, কিন্তু অন্য খবরের সন্ধান দেয়। সেই বিশ্লেষণে নাইবা গেলাম।খবর প্রচারে এবং খবর সংগ্রহে আরেকটু যত্নবান হলেই সবার মঙ্গল। অপ-সাংবাদিকতায় হয়তো আলোচনায় থাকা যায়, কিন্তু সেখানে দায়িত্বহীনতারও একটি সুস্পষ্ট আভাষ লুকিয়ে থাকে। সাংবাদিক হিসেবে যা শুনলাম, তাই-ই প্রচার করে দিলাম, এটা কোনো সুস্থ সাংবাদিকতার লক্ষণ নয়। মুন্নী সাহা, আপনার এই ঘটনাটির আমি তীব্র ভাষায় নিন্দা করছি।
false
rg
নিজের ঢোল নিজে পেটাই ।। রেজা ঘটক আমি পড়াশুনা করেছিলাম অর্থনীতি বিষয়ে। মাস্টার্স পাসের পর বহু আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিষয়ে গবেষণা করেছি। সুদীর্ঘ তেরো বছর বাউলিপনার মধ্যেও আমি যেসব বিষয়ে গবেষণা করেছিলাম, তার একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান দেবার চেষ্টা করলাম। ছোট খাটো গবেষণাগুলো এখনে উল্লেখ করছি না। ১. ভূমি অধিগ্রহন ও দাম পরিশোধ সংক্রান্ত জাতীয় নীতি নির্ধারণ ২০০৮ সালে তৎকালীন ফখরুদ্দিন আহমদ সরকারের সময়, বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে কিভাবে জমি অধিগ্রহন করা হয় এবং উচ্ছেদ হওয়া জমির মালিক কিভাবে দাম পায়, এই সংক্রান্ত জাতীয় নীতি নির্ধারণে আমার গবেষণা করার সৌভাগ্য হয়েছিল। অভিজ্ঞতা হল প্রায় ক্ষেত্রেই জমির মালিক প্রকৃত বাজার মূল্য পায় না। সরকারি উচ্ছেদে তবু কিছু দু'আনা জোটে, কিন্তু বেসরকারি উচ্ছেদে হুমকি ধামকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, খুন, গুম, ইত্যাদি ব্যাপার এখনো বিদ্যমান। ঢাকা রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, কুমিল্লা এয়ারপোর্ট, পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহন এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এ সংক্রান্ত অনিয়ম গুলো দেখার আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে। ২. ঘূর্ণিঝড় সিডর ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর আক্রান্ত সবচেয়ে বিধ্বস্ত এলাকা ছিল বরগুনা। ঝড়ের দুই দিন পরে সেখানে আমি গবেষণা'র জন্য গিয়েছিলুম। ইউএনহ্যাবিট্যাড-এর জেনেভা প্রতিনিধি মারিকো্ সাতো'র সঙ্গে ঢাকা থেকে বরিশাল যাই। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নের্তৃত্বে কর্মপন্থা সমন্বয় সংক্রান্ত দিনব্যাপি সেমিনার হয়। পরদিন আমরা বড়গুনা যাই। পুরো দুই সপ্তাহ আমরা সেখানে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা লাভ করি। পরবর্তীতে সিডরের উপর ব্যাপক গবেষণার জন্য আমি প্রায় ছয় মাস সিডর বিধ্বস্ত এলাকায় গবেষণা করি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এক দলের মাথায় হাত উঠে সর্বহারা আরেক দলের পোয়া বারো হয়ে কোটিপতি হওয়া এসবই খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা পাই। ৩. পতেঙ্গা জলদাশ সম্প্রদায়ের আবাসন ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের রেললাইনে বসবাসরত জলদাশ সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য আবাসনের উপর ঢাকার নগর গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে আমি আরেকটি মজার গবেষণা করেছিলাম। ১৯৯২ সালে জলদাশ সম্পদায়ের সঙ্গে আমাদের নৌবাহিনীর একটা সংঘর্ষ হয়েছিল। আওয়ামী লীগের এবিএম মহিউদ্দিন আহমেদ ও বিএনপি'র অলি আহমেদ (বীর উত্তম)-এর দুতিয়ালীতে সেই সংঘর্ষ থেমেছিল। পতেঙ্গার জলদাশ সম্প্রদায় চট্টগ্রামের পরিত্যক্ত রেললাইনে বসবাস করছে ১৯৭৪ সাল থেকে। নানা সময়ে তাদের সরকারি ও ব্যক্তি উদ্দ্যোগে উচ্ছেদের চেষ্টা হয়েছে। তাদের একটি পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা করার সেই গবেষণায় আমি জলদাশ সম্প্রদায়ের পতেঙ্গা এলাকার সেই পরিত্যক্ত রেললাইন ভিসিট করেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ডক্টর নূরুল ইসলাম নাজেম স্যারের সঙ্গে । পরিত্যক্ত ওই রেললাইন নিয়ে মহামান্য আদালতে একটি মামলা রয়েছে। জলদাশ সম্প্রদায়ের পক্ষে আইনি সহায়তা দিচ্ছিলেন ডক্টর কামাল হোসেন। কিন্তু সেই মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন। জলদাশ সম্প্রদায় অনেক আতংক নিয়েই সেই পরিত্যক্ত রেলালাইনে বসবাস করছেন। অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন। ৪. ওয়াস্ট ম্যানেজমেন্ট ইন ঢাকা সিটি সম্ভবতঃ ২০০৭ সালে ঢাকার আবর্জনা ব্যবস্থপনার উপর জাপানের জাইকার সহায়তায় এবং ঢাকার নগর গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে আমি আরেকটি মজার গবেষণা করেছিলাম। ঢাকার বাসা বাড়িতে যেসব ময়লা আবর্জনা স্তূপ হয় তা সংগ্রহ করে পাওয়ার প্লাট করা যায় কিনা সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে গবেষণাটি হয়েছিল ঢাকার ৯০টি ওয়ার্ডে। আমরা পাইলট প্রজেক্টের অংশ হিসেবে পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে গবেষণা করেছিলাম। জাপানের টোকিও শহর বাসা বাড়ির ময়লা আবর্জনা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সাহায়্যে আলোকিত হয়। ঢাকায় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা সেই সম্ভাবনা যাছাই করেছিল। ৫. ছয়টি বিভাগীয় শহরে বস্তি ম্যাপ বানানো ২০০৫ সালে বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরে অবস্থিত বস্তিগুলোর ম্যাপ করা সংক্রান্ত একটি গবেষণায় আমি জড়িত ছিলাম। ঢাকার নগর গবেষণা কেন্দ্র এবং আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সেই গবেষণায় বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরে বস্তির ম্যাপ তৈরি করা হয়। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। পুরা বাংলাদেশ মনে হয় একদিন বস্তি হয়ে যাবে। ৬. বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন এনজিও গুলোর তালিকা প্রণয়ন ২০০৪ সালে সারা বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন এনজিও গুলোর তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত গবেষণায় আমি বাংলাদেশের গোটা উত্তরবঙ্গ চষে বেরিয়েছি। ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশান-এর তত্ত্বাবধানে সেই গবেষণায় এনজিও প্রধানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা ছিল আমার কাজ। শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়টি গল্পের সেই কাজীর গরুর মতো সকল এনজিও-র কাগজে আছে মাগার বাস্তবে...নাই বা কইলাম। সরম লাগে.... ৭. বাউলদের নিয়ে রেসিডেন্টসিয়াল সেমিনার ও গান সংগ্রহ ২০০৫ সালে বরিশালে দক্ষিণ অঞ্চলের বাউলদের নিয়ে একটি ঘরোয়া সেমিনারে অংশগ্রহন করেছিলাম। গান বাজনার মাধ্যমে আমরা গান সংগ্রহ করেছিলাম। আর বাউলদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম কিভাবে নিজেদের গানগুলো তারা সংগ্রহ করে রাখবে। ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশান-এর তত্ত্বাবধানে সেই বাউল সেমিনারে খুব মজার মজার ঘটনা ঘটেছিল। সেই অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশের ইচ্ছে আছে। বাউলদের থেকে সংগ্রহ করা সেসব গান আমরা বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশের উদ্দ্যোগ নিয়েছিলাম। সেটাও আরেকটা ভয়াবহ বাজে অভিজ্ঞতা.... ৮. এসআরএনডিপি প্রজেক্ট (রাজধানী ঢাকা থেকে মংলা বন্দর মহাসড়ক) ২০০৪ সালে আমি বিসিএল লিমিটেড-এর তত্ত্বাবধানে ও এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-র সহায়তায় এসআরএনডিবি প্রজেক্টে গবেষণা করেছিলাম। তখন দীর্ঘ ছয় মাস আমরা ঢাকা মংলা বন্দর মহাসড়কের কাজে জমি অধিগ্রহণে কি কি অনিয়ম সংঘটিত হয়েছিল তা যাছাই বাছাই করেছিলাম। ঢাকা মংলা মহাসড়কের মধ্যে যতোগুলো জেলা ও উপজেলা পড়েছে সবগুলোর ডিসি, এসপি, দারোগা, উকিল, মুহুরী, লস্কর, এমপি এবং এক শ্রেণীর দালালরা জমির জাল দলিল দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিল। তখন সে সব অনিয়ম আমার চোখে ধরা পড়েছিল। মূল রিপোর্টে অবশ্য তা রহস্যময় কারণে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আহা উন্নয়ন!!! ৯. ফ্ল্যাড প্রুভিং প্রজেক্ট ২০০৩ সালে বন্যার হাত থেকে চর অঞ্চলের মানুষের বাড়িঘর উচু করা সংক্রান্ত এক মজার গবেষণা কাজ করেছিলাম কেয়ার বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে। সিরাজগঞ্জের যমুনার চরের এপার ওপারের মানুষ বর্ষা মৌসুমে যে দুর্ভোগের শিকার হয় মিডিয়া বা রাষ্ট্র তার খুব কম খবরই রাখে। সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে আমি ছয় মাস যমুনার এপার ওপার চরে ঘুরে বেরিয়েছি। আমার 'সোনার কংকাল' গল্প সংকলনে 'নির্বাচনে রূপালীরা' গল্পটি সেই সময় লেখা। এই একটি গবেষণায় কেয়ারকে আমি স্যালুট করি। ১০. বয়োঃসন্ধিকাল ২০০২ সালে আইসিডিডিআরবি'র তত্ত্বাবধানে এক বছর আমি বয়োঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীর শারিরীক পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি মজার গবেষণা করেছিলাম। ঢাকায় ছয় মাস আর চট্টগ্রামের মিরেরশরাই তিন মাস এবং তিন মাস মহাখালীর অফিসে সেই গবেষণায় অনেক সাইকোলজিক্যাল বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছিল। 'বয়োঃসন্ধিকাল' নামে আমার একটি কিশোর গল্পের বই প্রকাশ করেছিল ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশান। বইটি এনজিও স্কুলগুলোতে পড়ানো হয়। ১১. পুষ্টি ও গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ২০০১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ-এর তত্ত্বাবধানে পুষ্টি ও গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি গবেষণা করেছিলাম। অভিজ্ঞতা হল আমাদের মায়েরা অপুষ্টিতে ভুগে একটি অপরিপক্ক শিশুর জন্ম দেয়। সেই অপরিপক্ক শিশুরাই আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। ভাবতে খুব খারাপ লাগে। আমরা গবেষণায় মা ও শিশুর ওজন পরিমাপ করে বলে দিতাম কি পরিমাণ পুষ্টি ঘাটতি তাদের রয়েছে। ১২. ১৯৯৮ সালে রাজধানী ঢাকার বন্যা ১৯৯৮ সালে রাজধানী ঢাকা চরম ভাবে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল। গোটা ঢাকার বন্যা আক্রান্ত এলাকায় তখন আমি চষে বেরিয়েছি। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ-এর তত্ত্বাবধানে তখন আমার গবেষণা ছিল বন্যায় আক্রান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করা। প্রকৃতিক দুর্যোগে মানুষের চরম ভোগান্তির বিপরীতে একশ্রেণীর মানুষ কিভাবে ব্যবসা করে সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ১৩. গ্রোথ সেন্টার ও ফিডার রোড ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম জেলাগুলোর গ্রোথ সেন্টার ও ফিডার রোড উন্নয়ন প্রজেক্টে আমি কাজ করেছিলাম। তখন গোটা খুলনা জেলা, যশোর জেলা, নড়াইল জেলা ও সাতক্ষীরা জেলায় যতো রাস্তা ও বাজার পাকা হয়েছিল সবগুলো আমি ভিজিট করেছিলাম। তখন সুন্দরবনে দীর্ঘ এক মাস কাটিয়েছিলাম। আহা কি মজার গবেষণা ছিল সেটি। ১৪. ইনজুরি কেস ১৯৯৭ সালে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে ইনজুরি কেসের উপর একটি গবেষণা করেছিল বারপার্থ। সেই গবেষণায় আমি দায়িত্ব পালন করেছিলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দীর্ঘ তিন মাস আমরা হাসপাতালে আসা সব ইনজুরি কেসের উপর স্ট্যাডি করি। ইনজুরি কেস ছাড়াও সাপের কামড়, বিষ খাওয়া, ধুতরা কেস এবং মদ্যপ কেসের উপর আমাদের স্ট্যাডি করতে হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ছোট কুমিরার টিটেনাস সেন্টার থেকে সপ্তাহে একদিন আমরা টিটেনাসের উপর স্ট্যাডি করতাম। হাসপাতালের বাস্তবতা এতো কাছ থেকে দীর্ঘ তিন মাস পর্যবেক্ষণ করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা হল ডাক্তার, রোগী. নার্স সম্পর্কেও বাংলাদেশের চিত্র আমি হারে হারে দেখতে পেয়েছি। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, সহ তেরোটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেসব তথ্য উপাত্ত নিয়ে আমরা ঢাকায় পরে আরো ছয় মাস ইন হাউজ গবেষণা করেছি। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের এক ভয়াবহ চিত্র আমার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। সেই চিত্র এখনো বদল হয়নি। ১৫. বাংলাদেশের সোনালী ফসল তামাক ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সোনালী ফসল তামাকের উপর বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ-এর তত্ত্বাবধানে আমি একটি গবেষণা করেছিলাম। বাংলাদেশের যে সকল অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তামাক উৎপাদন হয় সেসব এলাকায় এই গবেষণাটি হয়েছিল। কিভাবে তামাক চাষ হয়, তামাক পাতা কিভাবে প্রক্রিয়া করে বিড়ি ও সিগারেট বানানো হয়, তামাক চাষীদের অবস্থা, তামাক শিল্পের অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের উপর তখন গবেষণা করেছিলাম। আমার গবেষণা এলাকা ছিল বৃহত্তর যশোর ও কুস্টিয়া অঞ্চল। তামাক নিয়ে তাই অনেক নারী নক্ষত্র আমার জানা। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪
false
mk
ইতিহাসের এই দিনে_ স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ে ২৩ মার্চ, ১৯৭১। আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের সামরিক কায়দায় অভিবাদন গ্রহণের মধ্য দিয়ে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়।পাকিস্তান দিবসে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনাবাহিনীর সদর দফতর ছাড়া বাংলাদেশে আর কোথাও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ওড়েনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজকের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী আজ তিনি সারা বাংলায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন।অসহযোগ আন্দোলনের ২২তম দিবসে মুক্তিপাগল মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিয়ে এগিয়ে যায়। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েট ভবন, হাইকোর্ট ভবন, পরিষদ ভবন, ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা বেতার ভবন, ঢাকা টেলিভিশন ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিফোন ভবন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, প্রধান বিচারপতি ও মূখ্য সচিবের বাসভবনসহ সমস্ত সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা তোলা হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে ছাত্র-জনতা তা উপেক্ষা করে পতাকা তোলেন।স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ আজ ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে। রাজপথে লাঠি-বর্শা-বন্দুকের মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে সারাদিন রাজধানী প্রকম্পিত করে। জনতা ভুট্টো ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কুশপুতুল দাহ করে।এদিন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনীর’ আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ ও মহড়া আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। জয় বাংলা বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য প্যারেড করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তারা অভিবাদন জানান। বঙ্গবন্ধু সালাম গ্রহণ শেষে জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, বাংলার মানুষ কারো করুণার পাত্র নয়। আপন শক্তির দুর্জয় ক্ষমতা বলেই আপনারা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবেন। বাংলা জয় অনিবার্য।বিকালে জাতীয় পশ্চিম পাকিস্তানী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার বাসভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান, জমিয়তে ওলামায়ে প্রধান, পাঞ্জাব কাউন্সিল লীগ প্রধান ও বেলুচিস্তান ন্যাপের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে পশ্চিম পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই দেশের মঙ্গলের জন্য সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হয়ে যাক। এ সময় বঙ্গবন্ধু বলেন, আপনারা ভালো কামনা করুন, কিন্তু খারাপের জন্যও প্রস্তুত থাকুন।এদিন রংপুরের সৈয়দপুরে সেনাবাহিনী ও গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী জোরপূর্বক সৈয়দপুর শহরে কারফিউ জারি করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সেনানিবাসে গিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন ও সৈনিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইন
false
mk
সর্বনাশ ! ছাত্রদল কমিটিতে প্রবাসী, ড্রাইভার, কাজের ছেলে, ভাঙ্গাড়ির দোকানদার !!! যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক পদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনের পদবঞ্চিত নেতারা। তাঁরা দাবি করেন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের লোক হওয়ার কারণে অনেককে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও অর্থবাণিজ্যের মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছে প্রবাসী, গাড়ির ড্রাইভার এবং সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও। বাদ যায়নি বাড়ির কাজের ছেলে, ভাঙ্গাড়ির দোকানদারও। এমনকি বিসিএস ক্যাডারভুক্তরাও ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পেয়েছে বলে তাঁরা জানান।শনিবার ঢাকা ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনে কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও অবমূল্যায়িতরা এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পদ-পদবি পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য ছাত্র নেতারা বাদ পড়লেও অর্থের বিনিময়ে পদ পেয়েছেন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস ও শ্রমিক দলের নেতারা। অন্য অঙ্গ সংগঠনের এসব নেতা সভাপতির আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রদলের ২নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের সঙ্গে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করে গুরুত্বপূর্ণ পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন। অর্থের বিনিময়ে সাভার পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদিকে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া আশুলিয়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আয়ুব খানকে এবং স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপক কুমার বর্মণ প্রিন্সকেসহ সাংগঠনিক পদ দেয়া হয়েছে।গত কমিটির অনেক নেতারা লবিংয়ের মাধ্যমে সদস্য থেকে পুনরায় বর্তমান কমিটির সদস্যপদে থাকলেও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতিকে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিরসহ নাট্য সম্পাদক পদ। সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব আহসানের গাড়ির ড্রাইভার মোঃ জসিম উদ্দিনকে করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রদলের সহসভাপতি এবিএম পারভেজ রেজার বাসার কাজের ছেলে খন্দকার মুজাহিদুল ইসলামকে করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিরসহ সাংগঠনিক সম্পাদক।সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয় ঘোষিত ছাত্রদলের ২৯১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৭০ জনকে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। ৩১তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার আদনান আলম বাবুকে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির স্কুল বিষয়ক সম্পাদক। মাই টিভির ব্যুরো চীফ সোয়েব খন্দকারকে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিরসহ সাধারণ সম্পাদক। কাঁচপুর সিনহা গার্মেন্টসে কর্মরত আব্দুল হান্নান মিয়াকে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা ব্যাংকে কর্মরত ওমর ফারুক ডালিমকেও দেয়া হয়েছে সহ-সাধারণ সম্পাদক। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহবুবুর রহমানকে দেয়া হয়েছে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক পদে কর্মরত জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীরকেও দেয়া হয়েছে সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদ। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বায়োজিদ আরেফিনকে দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। শিশির গ্রুপে কর্মরত মিজানুর রহমান সোহাগকে দেয়া হয়েছে যোগাযোগ সম্পাদক। রাজধানীর নবাবপুর রোডের ভাঙ্গাড়ি দোকানদার খোরশেদ আলমকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ করা হয় বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক এগারোর বেঈমানদের পদ পদবি দেয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। ওই সময়ে বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা জিয়ারউর রহমান হলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ভাংচুর করেছিল এমন কয়েকজনকে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। তারেক রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর যার নেতৃত্বে মধুর কেন্টিনে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল তাকেও দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ। অথচ এক এগারোর সময় যারা দলের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল তাদের বর্তমান কমিটিতে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, ১৫ এপ্রিল ছাত্রদলের ২৯১ সদস্যবিশিষ্ট ঢাউস সাইজের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের অবমূল্যায়ন ও পদবঞ্চিত করার মাধ্যমে ছাত্রদলকে একটি দেউলিয়া সংগঠনে পরিণত করা হয়েছে। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের চিত্র দেখে ছাত্রদলের অন্য নেতাকর্মীদের মতো তাঁরাও হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, এ কমিটিতে মারাত্মকভাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত করা হয়েছে শিক্ষা সভ্যতা ও ছাত্ররাজনীতির সুতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ২৯১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাখা হয়েছে মাত্র ১২৩ জনকে। যা ছাত্রদলের গর্বিত ইতিহাস ও অর্জিত সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে।
false
ij
গল্প_ অন্ধজনে দেহো আলো গত বছর বর্ষায় আমার এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এক দুপুরে লালমাটিয়ার দিকে একটা চা স্টলে বসে আছি। সকালের দিকটায় এদিকে ভালো বৃষ্টি হয়ে গেছে। আকাশ তখনও মেঘলা, তবে ঠিক বৃষ্টি পড়ছিল না। কেমন সেঁতসেঁতে শহর। ভেপসা গরমে ঘামছিলাম। তবে এসব তেমন স্পর্শ করছিল না। মনে বিষম উদ্বেগ। সদ্য চাকরি খুইয়েছি। সারাদিন চাকরির সন্ধানে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে হন্যে হয়ে ঘুরছি। (আজ লালমাটিয়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ ছিল) ... হতাশা কখনও বেশি চেপে ধরলে চা স্টলে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। অপরিচিত ভিড়ের মধ্যে স্বস্তি পাই। দিনকাল এমন বিশ্রি কাটছে। রুনুকে এখনও বলিনি যে আমার চাকরি নেই। চা শেষ করে সিগারেট ধরিয়েছি। হঠাৎই স্টলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বুড়ো ভিখিরির ওপর আমার চোখ আটকে গেল। বেশ লম্বা বুড়ো। মাথায় তালের টুপি, পাকা চুল টের পাওয়া যায়: শুকনো চেহারা। পরনে খয়েরি পাঞ্জাবি। সাদা লুঙ্গিটা উঁচু করে পরা। পায়ে কালো রঙের রবারের পাম্প শূ। কাঁধে ঝুলি; হাতে লাঠি। বুড়ো ফুটপাতের ভিড়ে মিলিয়ে যেতেই দ্রুত বিল মিটিয়ে স্টল থেকে বার হয়ে বুড়োকে খুঁজলাম; পেয়ে গেলাম, পিছু নিই বুড়োর। কোনও কারণ ছিল না। হয়তো সেদিন আমার কাঁধে দস্তয়ভস্কির ভূত ভর করেছিল । মেঘলা আলোয় বুড়ো হাঁটছে। আমি বুড়োর পিছু পিছু হাঁটছি। আমার মাথায় কয়েকটি প্রশ্ন উঁিক দিচ্ছে। বুড়োর কি নাম? (কখনও কোনও ভিখিরির নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি) ... এ শহরে সে কি একা? কোথায় থাকে সে? এরকম ভাবনায় আমি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। এ ধরনের নিঃসঙ্গ চরিত্র সাধারনত কিংবা লোভী মহাজনের নিষ্ঠুর প্যাঁচের মধ্যে পড়ে সর্বশ্রান্ত হয়ে বাপদাদার ভিটেমাটি ছেড়ে বড় শহরে চলে আসে। কিংবা নদী ভাঙ্গনের শিকার। বড় শহরের আসার পথে পরিবার-পরিজন খুইয়ে একা একা ভাসে। নিজেকে প্রতারিত ভাবে। অবশ্য আমিও তার চেয়ে কম প্রতারিত নই; মাস তিনেক ধরে বেকার হয়ে আছি। একটা পত্রিকা অফিসে কাজ করতাম; কাগজের দাম বাড়ায় ওখানে কর্মী ছাঁটাই হল। সম্পাদকের প্রিয়জনেরা অবশ্য বাদ পড়ল না। আমি কারু প্রিয় হতে পারি নি কখনও। আমি কারু প্রিয় হতে পারি নি কারণ নিজস্ব সময়টুকু অন্যকে দিইনি কখনও; একা একা ভেবেছি জীবন ও জগৎ সম্পর্কে। সেই সময়টা সম্পাদকের দপ্তরে বসে তৈলমর্দন করাটা রুচিতে ঠেছেছে। এখন অবশ্যি আমার অবস্থা বেগতিক। কোথাও যে এখন ভদ্রভাবে শ্রম বেচব সে উপায় দেখছি না। লালমাটিয়ার ইন্টারভিউর রেজাল্ট কাল দেবে। কি হবে কে জানে। আমার বিয়েটা লাভ ম্যারেজ নয়; চাকরিটা ছিল বলেই আমার আর রুনুর বিয়ে হয়েছে; নইলে আরও কিছুকাল ব্যাচেলারই থাকতাম। এখন সহসা চাকরি হারিয়ে রীতিমতো বেকুব বনে গেছি।বুড়ো হাঁটছে। কখনও থামছে, ভিক্ষের জন্য। আবার হাঁটছে। ভিক্ষে কেউ দিচ্ছে কেউ-বা দিচ্ছে না। বৃদ্ধ নির্বিকার। নির্বিকার কেন? বয়েস হয়েছে বলে? বয়স হলে মানুষের ওপরে কেমন এক নির্বিকার ভাব ভর করে। কেন? তখন সে কি জানতে পায় জীবন ও জগৎ ঠিক একেবারেই অর্থহীন নয়? বেঁচে থাকার গূঢ় অর্থ রয়েছে। যে কারণে কখনও-বা আমার মনে হয়: পথের ভিখিরির নিঃস্ব জীবন একেবারেই হয়তো অর্থহীন নয়; বরং সে জীবনের কিছু অর্থ থাকলেও থাকতে পারে। কখনও আমাকে ডাক দেয় অনির্দিষ্ট পথ-জীবনের রোদজল ঝঞ্ছাবিক্ষুব্দ বিশাল অনিশ্চিত জীবন। ডাক দেয় ঠিকই- কিন্তু সাহস পাইনা। অফিস থেকে ঘর অভিমূখি মাপা পথের বাইরে পা বাড়াতে গা কেমন ছমছম করে। তবুও পথের ইশারা টের পাই ভিতরে; ইচ্ছে করে পথে নেমে যেতে। ইশারা শব্দে জীবনানন্দর কথা মনে এল। জীবনানন্দপ্রেমী মাত্রই জানে: জীবনানন্দ কলকাতার পথে পথে হাঁটতেন। বিশেষ করে রাতের বেলা। অনেক রাতে। সেই ১৯৪৩/৪৪ সালের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। কবি কি নির্দিষ্ট কাউকে অনুসরণ করতেন ? (যেমন আজ আমি করছি) না, অনির্দিষ্টভাবে হাঁটতেন? তাঁর একটি কবিতায় আছে:বানরী ছাগল নিয়ে যে ভিক্ষুক প্রতারিত রাজপথে ফেরে-আঁজলায় স্থির শান্ত সলিলের অন্ধকারে-খুঁজে পায় জিজ্ঞাসার মানে।এতে করে বোঝা যায় কেবল দস্তয়ভস্কি নন- মাঝেমধ্যে জীবনানন্দ ভিখিরিদেরও অনুসরণ করতেন। এবং সে ভিখিরিজীবন কেবলি দিনগত পাপ ক্ষয় নয়; কেবলি শূন্যতার স্মরক নয়; বরং সে ভিখিরিজীবন আশালতার কম্পনময় উর্ধ্বগতি। জীবনানন্দের এ কবিতার অনুষঙ্গে আমার রবীন্দ্রনাথের একটি প্রজ্জ্বলিত গানের কথাও মনে পড়ে: আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।এ জীবন পুণ্য কর দহন-দানে।দহন-দান? রবীন্দ্রনাথও তাহলে উপলব্দি করেছিলেন জীবনে দহনযন্ত্রণার ভূমিকাও নিছক গৌন নয় ? উপরোন্ত জীবনানন্দের ভিক্ষুক আঁজলায় স্থির শান্ত সলিলের অন্ধকারে-খুঁজে পায় জিজ্ঞাসার মানে। তার মানে জীবন একেবারেই আকস্মিক কিংবা অর্থহীন নয়? ক’দিন ধরে আমার মাথার ভিতরে একটা লাইন ঘুরঘুর করছিল। পদার্থ বিজ্ঞানের মৌল একটি ধারণা।Time is the motion of particles relative to each other.সৃষ্টির আগে সময় বলে কিছু ছিল না। থাকা সম্ভব ছিল না। এখন আমরা বেঁচে থেকে রাতদিন ‘সময়’, ‘সময়’ করি। অথচ দেখে মনে হয় ভিখেরি বুড়োটি সময়হীন একটা জগতে বেঁচে আছে। আজই মরে গেলে কি! মন্থর গতিতে সে হাঁটছে। কখনও দাঁড়িয়ে থেকে ‘প্রতারিত’ রাস্তার আশাহীন মানুষজন আর নির্বোধ যানবাহন দেখছে। তবে সে যে পূর্ণমাত্রায় স্বাধীন তা বোঝা যায়। এ শহরের কোনও নষ্টরুচির লোকের অধীন সে নয়- সে কেবল মহাকালের অধীন। আমারও আরও মনে হল: বুদ্ধ> বৌদ্ধ ভিক্ষু> ভিক্ষুক> ভিখেরি। এই অনুষঙ্গে বৃদ্ধটি মহান। ফকির। আর কে না জানে- স্বয়ং বুদ্ধ ও মুসলিম সুফিগন ছিলেন মানুষের অনর্থক উদ্যমের বিরোধী। কেননা তারা সম্যক জানতেন সমাজে প্রভূত ধনসঞ্চয়ের পিছনে সতত ক্রিয়াশীল মানুষের অনর্থক উদ্যম । এ শহরে অনর্থক উদ্যমের পরিনতিতে প্রভূত ধনের সঞ্চয় ঘটেছে; কাজেই আদর্শবাদীরা কয়েক শতাব্দী পর ‘ভিখেরি’ হয়ে গেছে। এখন ভিখেরি বুড়োটি একটি চায়ের দোকানের সামনে থেমে আছে। কলা কিনছে। দরদাম করে একটা পাউরুটিও কিনল দেখলাম। দুপুরে কিছু খায়নি নাকি লোকটা? অবেলায় কলা-পাউরুটি কিনছে কেন? আমার দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে। আমি সিগারেট ধরালাম। শহরের ওপর কী রকম অদ্ভুত সোনা রং আলো এসে পড়েছে - যা চেনাজানা এ গ্রহেই শুধু সম্ভব। বেলা পড়ে আসছে। রুনু আমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে। সদ্য বিয়ে হয়েছে আমাদের। সাগরপাড়ে মধুচন্দ্রিমার অপার আনন্দ শেষে শহরে ফিরে এসে শুনলাম যে চাকরিটা আর নেই। দুঃসংবাদটা আজও রুনুকে জানাইনি। ও নিজেকে অপয়া ভাববে। ভাববে আমার সঙ্গে জড়িয়ে ও আমার সর্বনাশ করল। দুঃখজনক তথ্যটি আমি লুকিয়ে রেখেছি। যে কারণে মাস তিনেক ধরে আমার ভীষণ দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে। একান্তে রুনুর শ্যামল নরম উষ্ণ শরীরটা ছুঁয়ে ছেনে অনুভব করি ক্লেদ। মন আমার বিষিয়ে উঠেছে। ঠিক তৃপ্তি হয় না। যেমন সুখ বিয়ের পর হত। রুনুকে কি আমি অন্ধকারে রাখব? নাকি ওর চোখে নিদারুন সত্যের আলোক ছটা ঢেলে দেব?উত্তর পেয়েছিলাম সেদিন সন্ধ্যার মুখে।কলা আর পাউরুটি ঝুলিতে ভরে বুড়ো ভিখিরি আবার হাঁটতে শুরু করেছে। চারিদিকে শেষ বেলার রোদ উঠছে । একটু আগেও মেঘলা ছিল। এই ঝলমলে রোদ কিংবা মেঘের শ্যামল ছায়া একদিন মুছে যাবে হায়। সে অসীম অমা রজনীর কথা ভেবে মন বিষন্ন হয়ে উঠছে; হায়, ঈশ্বর আবার একা হয়ে যাবেন। তারপর? তারপর কোন্ পরিকল্পনা নেবেন তিনি? কী রুপে প্রকাশিত হবেন তিনি? মহা প্রসারণের পর মহা সঙ্কোচন অনিবার্য। তার পর কোন্ সে জগৎ সৃষ্টি করবেন ঈশ্বর? নিদারুন দুঃখকষ্ট সহ্য করে সে জগতের ছবি আঁকবেন কোন্ সে কবি? কোন্ সে জগতের প্রতারিত রাজপথে হেঁটে যাবে কোন্ নির্বিকার ভিক্ষুক?তখনও দিন শেষের আলো ছিল । মোহাম্মদপুরের কাটাসুরের এক নির্জন গলিতে প্রবেশ করে বৃদ্ধ। থামে দেওয়াল ঘেঁষে ছৈয়ের আকারের একটি ছাপরা ঘরের সামনে । নীল পলিথিনের ঘের দেওয়া সে ছাপরা ঘর। দেওয়ালের ওপাশে সরকারি গুদাম আছে বলে মনে হল। দেওয়াল ঘেঁষে দীর্ঘ একটা কড়–ই গাছ। তারই ডালপাতা চুঁইয়ে সোনালি রঙের রোদ এসে পড়েছে ছাপরা ঘরের সামনে বসে থাকা এক কিশোরীর ওপর। কিশোরীর গায়ের রং কালো। বাদামি জট ধরা চুল, শরীরটি শীর্ণ, ময়লা সাদা ওরনা; নীল রঙের ময়লা জামা পরা । এবং কিশোরীকে দেখে অন্ধ বলেই মনে হল। কে এ? বুড়োর কিছু হয়? আমি বিস্ময়বোধে আক্রান্ত হই। কিশোরীরর সামনে ধীরেসুস্থ্যে বসে বুড়ো ভিখিরি । তারপর মেয়েটির মুখে খাবার তুলে দেয়। অন্ধ কিশোরী খায়; মুখচোখে গভীর পরিতৃপ্তি। আমি দেখতে থাকি ... আমি দেখতে থাকি ...আর রুনুর কাছে যত শিগগির সম্ভব পৌঁছব বলে পায়ে পায়ে পিছিয়ে যেতে থাকি ...
false
fe
নৈরাজ্যের রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তহীনতা নৈরাজ্যের রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তহীনতা ফকির ইলিয়াস=======================================বেশ কিছু নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে আরেকটি হরতাল হয়ে গেল। হরতালের পূর্বরাতে ঢাকায় বেশ কিছু গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হরতাল তখনও শুরু হয়নি। তারপরও এ সময়ে গাড়ি পোড়ানোর কারণ কি? কারণটি হচ্ছে নৈরাজ্য তৈরি করা। গণমানুষের মনে তীব্র ভীতির সঞ্চার করা। তথাকথিত হরতালকে যদি গণতান্ত্রিক অধিকার বলা হয়, তবে যারা হরতাল ডাকবে তাদের উচিত হরতাল ডেকে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করা। তারা রাজপথ দখলে নামবে কেন? অন্যের প্রাত্যহিক জীবনে বাধা দেবে কেন? বাংলাদেশে হরতাল মানেই চরম ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা। এবারের হরতালের পরদিন সংবাদ সম্মেলনে একটি মারাত্মক তথ্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, হরতালকারী বিএনপি-জামায়াত জোট নাকি ঢাকার বস্তিতে বস্তিতে গিয়ে ভাড়াটে পিকেটার সংগ্রহ করেছে। চুক্তি হয়েছে, একটি রিকশা ভাঙলে এক হাজার টাকা, মোটরসাইকেল পোড়ালে দুই হাজার টাকা, সিএনজি পোড়ালো তিন হাজার টাকা, বাসে অগ্নিসংযোগ করলে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হবে! এই তথ্যটি যদি সত্যি হয় তবে তা গোটা জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভাড়া করে ভাঙচুরকারী, দাঙ্গাবাজ এনে কার ক্ষতির চেষ্টা করা হচ্ছে? এ ক্ষতি কি রাষ্ট্রের নয়?হরতালের পূর্বরাতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতার হাত ছিল বলে পুলিশ বলছে। এই ঘটনায় কিছু গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।হরতালকারীদের মারমুখী কিছু মিছিলে পাল্টা হামলা হয়েছে। বিএনপির ছাত্রদলের মতে এরা নাকি ছাত্রলীগের কর্মী। এরা প্রকৃতপক্ষে ছাত্রলীগের কর্মী, নাকি বিএনপির উঠতি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর ব্যক্তিগত প্রতিপক্ষ-তাও খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ হঠাৎ করে এ্যানীর ওপরই হামলা কেন? তা কেবল ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতেই কেউ করতে পারে। এ ছাড়া বিএনপির উঠতি নেতাদের এমন অতীত ইতিহাস রয়েছে, তারা প্রায়ই নিজেদের 'কৃতিত্ব জাহির' করার জন্য মাঝে মধ্যে সিনক্রিয়েট করেন। যেমনটি মাত্র কিছুদিন আগে বিএনপির মহাসচিবের আদরের তনয় নাজমুল পবন করেছিলেন। তিনিও ভাড়াটে বোমাবাজ আমদানি করেছিলেন 'নেতা' সাজার জন্য।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্রলীগের নাম বিক্রি করে কেউ নৈরাজ্য করলে এর দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। কারণ গঠনতন্ত্র মোতাবেক ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন নয়।ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন কিনা সেটা বড় কথা নয়। তবে মনে রাখা দরকার দেশের অন্য দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলকে এবং জামায়াত, তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরকে পোষ্য হিসেবেই রেখেছে এবং নিয়মিত পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এখন সরকারে আছে। তাই হয়তো ছাত্রলীগের খুব বেশি প্রয়োজন মনে করছে না। কিন্তু তারা তো চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে না। বিরোধীদলে গেলে তাদের ছাত্রলীগের সমর্থন পাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা, তা এখনই ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। সেই আলোকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ঢেলে সাজানো দরকার। এটা গোটা দেশবাসী জানেন, কিছু লোভী, সুবিধাবাদী অছাত্রদের কারণেই সারাদেশে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া মোটেই কঠিন কোন কাজ নয়।কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তা না করে দায় এড়াতে চাইছেন। কোন লিখিত বিধান স্বীকার করুক আর নাই করুক, ছাত্রলীগ যে আওয়ামী লীগের পরিপূরক সংগঠন তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। পারার কোন উপায়ও নেই। তাই কেন যে ছাত্রলীগের ঘাড়ে চাপা ভূত তাড়াতে সরকার তৎপর নয়, তা মোটেই বোধগম্য নয়।দুই.আগামী বছরটিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে খুব স্থিতিশীল যাবে তা বলার কোন সুযোগ নেই। তার কারণ, যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে ঘাতক-দালাল-রাজাকাররা যেমন একটি বড় রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের মওকা খুঁজছে তেমনি লুটপাটকারীরাও তাদের মসনদ ফিরে পেতে যে কোন মূল্যে সরকার হটাবার ফন্দিফিকির করছে। ২৭ জুনের হরতালের পর, বিএনপির কিছু শীর্ষ নেতা বলেছেন, এই হরতাল তাদের শক্তিকে সুসংহত করেছে। তার অর্থ হলো, জামায়াত এবং সমমনারা তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশে পরাজিত রাজাকার শক্তি একটি রাহুর মতো। এটি বিএনপি কখনোই স্বীকার করবে না। তার কারণ হলো বিএনপির জন্মই হয়েছে, এই আলবদর-রাজাকার শক্তির মদদ নিয়ে।হতাশাজনক কথা হচ্ছে এই, যারা মুক্তিযুদ্ধের শানিত চেতনায় বিশ্বাসী, তারা গণমানুষের মুখের ভাষা পড়তে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। জনগণ তাদেরকে ম্যান্ডেট দেয়ার পরও তারা তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে না।এই লেখাটি যখন লিখছি তখনই টিভিতে ব্রেকিং নিউজে দেখলাম, হজরত মুহম্মদ (সা.)-কে কটাক্ষ করার অপরাধে জামায়াতের আমির নিজামী, সেক্রেটারি মুজাহিদ এবং আরেকজন নেতা সাঈদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামায়াতিরা এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রায়ই দেয়। তাদের এসব কথাবার্তা নতুন নয়। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী তার জীবদ্দশায় নানারকম বিতর্কিত কথাবার্তা বলে গেছেন। যা উপমহাদেশের হাক্কানি আলেমসমাজ বরাবরই প্রত্যাখ্যান, প্রতিবাদ করে এসেছেন। বাংলাদেশে গ্রেফতার এবং জামিনের সরকারি কূটচাল মানুষ অনেক দেখেছে। এসব আলো-আঁধারি খেলাই বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে বহুলাংশে। আর সেই সুবাদেই আজ দেশে মির্জা আব্বাস কিংবা শমসের মুবিন চৌধুরীর মতো নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা জ্বালাও পোড়াও-এর মদদ দিয়েছেন। শমসের মুবিন চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি জাতির জনকের ঘাতকদেরকে বিদেশে পালিয়ে যেতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিলেন। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মদদপুষ্ট হয়ে খুনিদেরকে বিদেশেও সাহায্য করেছিলেন। এই শমসের মুবিন চৌধুরী, সিলেট বিভাগে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছেন। যদিও বিএনপির সম্ভাব্য কর্ণধার তারেক রহমান চাইছেন, সিলেটে বিএনপির হাল ধরবেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কমরউদ্দিন। উল্লেখ্য, তারেক রহমান বিলাতে বর্তমানে এই কমরউদ্দিনের তত্ত্বাবধানেই পরবাস জীবন কাটাচ্ছেন। তাই ফ্রন্ট লাইনে আসার জন্য শমসের মুবিন চৌধুরী যে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু নৈরাজ্যের রাজনীতি কি গ্রহণ করে জনগণ? নিউইয়র্ক, ২৯ জুন ২০১০ ---------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ। ঢাকা। ২ জুলাই ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
false
mk
৫ জানুয়ারি আজ ৫ জানুয়ারি। তিন বছর আগে ২০১৪ সালে এই দিনে জাতিকে চরম এক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছিল। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল জাতি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট। এই জোট একদিকে আলোচনা বয়কট, নির্বাচন বয়কট আর অন্যদিকে গৃহযুদ্ধ বাধানোর হীন উদ্দেশ্যে পেট্রলবোমা আর আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ মারা ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করার রাজনীতি সামনে এনে দেশকে চরম অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। গণতন্ত্রবিরোধী অবৈধ শক্তি কবে কখন ক্ষমতায় আসবে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এটাই সত্য, একদিকে ১২৩ জন নিরীহ মানুষের জীবনের মূল্য আর অন্যদিকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখা সত্ত্বেও জাতি গণতন্ত্র ও সংবিধানবিরোধী ওই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছিল।বাস্তবে ওই চ্যালেঞ্জটা চরম মূল্য দিয়ে মোকাবেলা করতে জাতি সক্ষম হয়েছিল বলেই ২০১৬ সালে জাতিকে রাজনৈতিক অরাজকতা, অনিশ্চয়তা, হানাহানি, রক্তারক্তির মধ্যে পড়তে হয় নাই। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সেই পাকিস্তানি আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো ক্যালেন্ডার ইয়ার গেছে, তার মধ্যে বিগত বছরটা ছিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সবদিক থেকে অন্য রকম। এমন বছর আমাদের হয়তো পাওয়া যাবে সেখানে রাজনৈতিক হানাহানি রক্তারক্তি হয়নি, কিন্তু তখন ছিল সামরিক শাসন। রাজনীতি ছিল ক্যান্টনম্যন্টে বন্দি। সামরিক শাসনের ফরমান দিয়ে চলত দেশ। কিন্তু ফেলে আসা বছরটির মূল্যায়ন করে নতুন বছরে এমনটাই বলতে হয় যে, এই প্রথম একটি বছর গেল, যা দেখিয়ে দিয়ে গেল অনিশ্চয়তা অরাজকতা বাংলাদেশের বিধিলিপি নয়। সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্র বজায় রেখে বাংলাদেশ সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে।বিগত বছর সম্পর্কে এমন এক মূল্যায়ন সামনে নিয়ে ইংরেজি বছরের প্রথম কলামে কী লেখব যখন ভাবছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দৈনিক পত্রিকা খুলে ধরতে হলো। লক্ষ করলাম, নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশের প্রধান তিনটি (যদিও তিন নম্বর দলটি জনসমর্থন বিচারে ছোট) দলের প্রধান নেতা ভাষণ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন ২২তম আন্তর্জাতিক মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ভাষণ দিয়েছেন যথাক্রমে ছাত্রদল এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। বছরের শুরুর দিনে পাশাপাশি তিন দলের প্রধান তিন নেতার বক্তব্য পড়তে পারা দেশবাসী বিশেষত যে কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকের জন্য ইন্টারেস্টিং হতে বাধ্য।প্রভাতই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে- প্রবাদটির বিন্দুমাত্র যদি সত্য হয়, তবে বর্ষ শুরুর দিনের ওই তিন ভাষণের ভেতর দিয়ে অনুমান করা সম্ভব হবে আগামী বছরটা এই তিন দলের জন্য কেমন যাবে? আর এই তিন দলের কর্মকাণ্ডই যেহেতু দেশের রাজনীতির গতিনির্ধারক, তাই রাজনীতির গতিপ্রকৃতির আগাম সঙ্কেতও উল্লিখিত তিন ভাষণ থেকে পাওয়া সম্ভব। তবে রাজনীতির গতিধারা তো কখনও গৎবাঁধা পথে চলে না। এখানে থাকে পূর্বে-অনির্ধারিত আকস্মিক ছোট-বড় সব ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত। সেই দিকটি বিবেচনায় রেখেই তিন দলের তিন প্রধান নেতার ভাষণ নিয়ে আলোচনায় যাওয়া হলো। এখানে প্রথমেই বলে রাখি, আলোচনার সুবিধার জন্য তিন নম্বর দল থেকে এক নম্বর দলে যাওয়া হবে। প্রথমে থাকবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ভাষণ নিয়ে আলোচনা, মাঝে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আর সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ভাষণে বলেন যে, গত তিনটি সংসদ নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে করার কারণে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচন জাতীয় পার্টি এককভাবে করবে। আগামী সংসদ নির্বাচন হচ্ছে হয়তো তার শেষ নির্বাচন। ‘আমাকে বাঁচতে হলে জাতীয় পার্টিকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে।’ প্রথমেই তিনি বলেছেন ভুল। যদি নির্বাচন না করতেন এবং ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে না থাকতেন, তবে নির্ঘাত এখন থাকতেন জেলে। তাই এই ভাষণের সঙ্গে মিলিয়ে এটা বিবেচনায় নিতে হবে যে, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসেন। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বক্তৃতা দিতে উঠলে তারা দুজন তোপের মুখে পড়েন। এরশাদের মামলা প্রত্যাহার করার বিষয়টি নিয়ে তখন হট্টগোল শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এরশাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে রওশন এরশাদ বলেন, আপনারা চিন্তা করবেন না। মামলা প্রত্যাহার হবে।প্রকৃত বিচারে মামলার বিষয়টি বিবেচনার মধ্যে রেখেই সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ভাষণকে বিবেচনায় নিতে হবে। আলাদা নির্বাচন করে যে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে না, এটা পরিষ্কার। আর ক্ষমতার সঙ্গে না থাকলে এরশাদ যে মামলার বিচারে শাস্তির মধ্যে পড়বে, এটাও দিবালোকের মতোই সুস্পষ্ট। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের অঙ্ক আর সেই সঙ্গে মামলা এলে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঐক্যের রাজনীতির ঘেরাটোপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঐক্যে থাকা আগামী দিনেও জাতীয় পার্টির জন্য কপালের লিখন। যার থেকে দলটির কোনো রক্ষা নেই। এরশাদকে তাই রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একদিকে সরকারে থাকা আর অন্যদিকে বিরোধী দলের পতাকা নিয়ে দ্বিমুখী রাজনীতির মধ্যেই থাকতে হবে। এরশাদের রাজনৈতিক ডেমাগোগী ভাষণ তাই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আসা আর বিরোধীদলীয় নেতাকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেয়ার মধ্যে শূন্যে মিলিয়ে গেছে। বছরের প্রথম দিন এই ইঙ্গিত বেশ ভালোভাবেই দিয়ে গেছে যে, মামলা আর সেই সঙ্গে সুকৌশলী দলীয় বিভেদের (পাতানো কি!) মধ্য দিয়েই আগামী দিনগুলোতে জাতীয় পার্টিকে থাকতে হবে।বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যা বলেছেন, তাও খুবই চিত্তাকর্ষক। ফাটা বাঁশের চিপা বলে যে প্রবাদটি আছে এটা বিএনপির জন্যও যে প্রযোজ্য, তা নেত্রীর ভাষণ থেকে সহজেই বোধগম্য। তিনি ‘সংঘাত চাই না’ মন্তব্য করে বলেছেন, ‘আমরা অহেতুক কিছু বলব না। আন্দোলন হবে সময় মতো।’ দিনক্ষণ বা সময় না জানালেও আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের ‘ঘুমিয়ে না থেকে’ তিনি ‘জাগতে হবে’ বলেছেন। এদিকে তিনি দলীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বিগত আন্দোলনে নেতাদের রাজপথে থাকার কথা ছিল, কিন্তু তারা রাজপথে থাকে নাই। দেশের পরিস্থিতির প্রশ্ন তুলে তিনি আরো বলেছেন, ‘এ জন্যই কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। এত শহীদ রক্ত দিল কেন? তাদের রক্ত কি বৃথা যাবে?’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই নয়, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার প্রয়োজন।’ভাষণের মধ্যে তিনি যে প্রশ্ন রেখেছেন, সেই প্রশ্নবাণে আসলে তিনিই হবেন জর্জরিত। কেননা মুক্তিযুদ্ধ কি তিনি করেছিলেন? তিনি তো ছিলেন বহাল তবিয়তে ছেলেদের নিয়ে জিয়ার ভারত যাওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী কবলিত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসী যখন মরণপণ সশস্ত্র সংগ্রাম করছে, তখন তিনি শত্রু জেনারেলের বাসায় থেকেছেন। আর তাই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মানসিক অবস্থানের কারণে এত কিছুর পর এখনো মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে রেখেছেন সঙ্গে। আবারো তাদের গাড়ি-বাড়িতে পতাকা তুলে দিতে চান তিনি। কাচের ঘরে বসে তিনি মুক্তিযুদ্ধের কথা তোলেন কীভাবে আর কীভাবে বিএনপির ভেতরে মুক্তিযোদ্ধারা তা শোনেন, তা বুঝতে কষ্ট হয় বৈকি!সর্বোপরি আন্দোলন হবে সময়মতো কথাটির অর্থ কী? যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পর নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৪ সালে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে যে চোরাগোপ্তা হিট এন্ড রান ধরনের আগুন-সন্ত্রাস শুরু করা হয়েছিল, তা কি আদৌ আন্দোলন ছিল? এক বছর পর ২০১৫ সালে যুদ্ধাপরাধী নিজামী গংদের বিচার সামনে রেখে একই ধরনের যে তথাকথিত আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল, সেটাও কি আদৌ তা ছিল? ওসব কি ছিল সময়মতো বা সময়যোগ্য? সংঘাত চাই না কথাটি কি তখন স্মরণে ছিল? তখন পকিস্তানের কথাবার্তা ও আচরণ প্রত্যক্ষ করে সহজেই বোঝা যায়, তথাকথিত আন্দোলনের ওই সময়টা ঠিক করতে মদদ দিয়েছিল পরাজিত ওই বিদেশি শত্রুরা। আর সঙ্গে যে জামায়াত ছিল এটা তো সহজেই অনুমান করা চলে। প্রশ্ন হলো এখন সময়টা ঠিক করে দেবে কে? একই ওই দেশি আর এক বিদেশি পরাজিত শক্তি কী? ওই দুই সময়ে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তথাকথিত আন্দোলন করে তিনি মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংস করতে মাঠে নেমেছিলেন কেন, এই প্রশ্নের যথার্থ জবাব না দিলে আন্দোলনের যথাযোগ্য সময় যে তিনি ঢাকায় আর ‘সুযোগ্য পুত্র’ লন্ডনে বসে বহু চিন্তা করেও খুঁজে পাবেন না, এটা বিগত বছরে বিএনপি-জামায়াত জোটের কার্যকলাপ প্রমাণ করে দিয়েছে। আর পরিহাস ছলে বলি, ওই দুই সময়ে গোপন স্থান থেকে আহূত লাগাতার হরতাল ও অবরোধ আন্দোলন কি তিনি আদৌ প্রত্যাহার করেছিলেন! দেশবাসী তো জানে, প্রত্যাহার করেন নাই। আন্দোলনের মধ্যেই আছেন তিনি। তাতে আর সময় গুনতে হবে কেন?এসব প্রশ্নবাণে তিনি ও তার সুযোগ্য পুত্র যখন জর্জরিত, তখন নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা বা গালি দেয়া কিংবা কর্মীদের না ঘুমিয়ে থাকার কথা বলা আসলে রাজনৈতিক কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সংগঠনের মূল বিষয়ই হলো দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি দলীয় নেতার আস্থা-বিশ্বাস। অবস্থাদৃষ্টে এটা প্রমাণিত, উদোর পিণ্ডি আসলে তিনি বরাবরই ভুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে ওস্তাদ। তাই স্মরণে আনলে দেখা যাবে, ক্ষমতার হারানোর পরপরই তিনি নেতাদের গালি দিয়েছিলেন ‘অঙুলচোষা’ বলে। ক্ষমতা হারানোর পর ‘পাগল বা শিশু’ হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়তবা তিনি নিজের ভুল বুঝতে না পেরে শুধু আঙুল আর মুখ দেখছেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের নেত্রীর এমন হওয়াটা শুধু দলের জন্য নয়, দেশের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক।দুর্ভাগ্যটা যে কত বড় তা অনুধাবন করা যাবে, নেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দাবির প্রশ্নে পেন্ডুলামের মতো দোল খাওয়ার ধরনটা বিবেচনায় নিলে। তিনি ছিলেন নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এই সরকারের রূপরেখা সরকারকেই দিতে হবে বলে তিনি জেদ ধরেছিলেন। পরে চাপে পড়ে রূপরেখা দিয়ে হয়েছিলেন হাস্যাস্পদ। আর এখন! বিগত কয়েক দিন আগে তিনি ঘোষণা করলেন এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেও বললেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার তিনি চান। এই ঘোষণায় বিএনপিপন্থী মহল অতি উৎসাহী হয়ে নানা প্রশংসা বাক্য খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলতে থাকলেন। তখন এই কলামে বলা হয়েছিল, তিনি আবারো আগের পজিশনে চলে যেতে পারেন। আসলে অনেকটাই তা-ই হলো। নতুন বছরের ভাষণে তিনি সহায়ক সরকারের আগে ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটি যুক্ত করছেন। এটা আসলেই ডিগবাজি! একই ধরনের ডিগবাজি মুক্তিযোদ্ধার দল বলা আর জামায়াতকে সঙ্গে রাখার বিষয়টি। প্রকৃত বিচারে দুই বড় দলের একটির এই ধরনের দুই মুখোশ পড়া অবস্থানই জাতিকে আজো গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বিপদের মধ্যে ফেলে রেখেছে। আগামী দিনে এই বিপদ থেকে উদ্ধারই হবে জাতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।এই চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন বছরের প্রথম দিনের ভাষণকে বিবেচনায় নিতে হবে। ওই দিনের বক্তৃতায় সঙ্গত কারণেই তিনি কোনো রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের মধ্যে যাননি। এটা খুবই পরিকল্পিত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দেশের উন্নতি সমৃদ্ধি কীভাবে একবিংশ শতকের উপযোগী করা যায়- এটাই ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মর্মকথা। তিনি ‘বিদেশি স্যারদের পেছনে না ঘুরে’ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘জিএসপি সুবিধার পেছনে না ছুটে নতুন বাজার খুঁজুন।’ এছাড়াও গতানুগতিকতার ওপর একান্তভাবে নির্ভর না করে পণ্যের বহুমুখীকরণ, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং বাড়ানো, কৃষকদের উন্নতি, গবেষণা সেল স্থাপন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের যথাযথ ব্যবহার, শিল্পায়নের সঙ্গে পরিবেশে রক্ষা প্রভৃতি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এক নীতি-কৌশল তিনি তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়েছেন।দেশের প্রবৃদ্ধি যখন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা সাত পার হয়ে যাচ্ছে, মানবিক উন্নয়ন সূচকে যখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের দেশ অগ্রগামী, আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ দিচ্ছি, জনপ্রতি বার্ষিক আয় যখন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে; তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভাষণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়ের উপযোগী। প্রকৃতপক্ষে সঠিকভাবেই তিনি জাতির আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহ-উদ্দীপনার উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এত যোগ্য, মেধা এত ভালো, একটু সুযোগ পেলেই তারা যে কোনো পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। সে ধরনের সক্ষমতা মানুষের আছে।’ দেশবাসীকে সাহস দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেখবেন ওরাই আপনাদের পেছনে দৌড়াবে।’ পেছনে দৌড়ানোর সময়টাতে এসে গেছে, এটা নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু গড়ে তোলাই প্রমাণ করে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি পারছে পারবেও- এই আত্মপ্রত্যয় ধরে রেখে আরো উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করাটাই আজকের এই ক্রান্তিলগ্নে সরকার প্রধানের প্রধান কাজ। এই কাজটাই রাষ্ট্রনায়কোচিতভাবে করলেন ২০১৭ সালকে বরণ করার দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সবশেষে তিন দলের তিন প্রধান নেতার ভাষণের উল্লিখিত পর্যালোচনা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, এই বছরের আগামী দিনগুলোতে জাতীয় পার্টি থাকবে মামলা জন্য ক্ষমতার সঙ্গে ঐক্যে থাকার বাধ্যবাধকতা নিয়ে, ‘আঙুলচোষা’ ঘুমন্তÍদের জাগ্রত করার চিন্তা নিয়ে বিএনপি চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকবে আন্দোলনের যথাযোগ্য সময় বের করা নিয়ে আর আওয়ামী লীগ থাকবে নানা সীমাবদ্ধতা ও বাধাবিঘ্নের মধ্যেও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সমৃদ্ধি তথা জনগণের জীবন ও জীবিকার মান বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে কর্মযজ্ঞে। এই কর্মযজ্ঞকে যদি শত লাখ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর করতে হয়, তবে নিঃসন্দেহে প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার। এই স্থিতিশীলতা কীভাবে রক্ষিত হতে পারে, তার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাও রেখে গেছে বিগত ২০১৬ সাল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বছরের শেষে নাসিক নির্বাচনে আইভীর মনোনয়ন ও জয়লাভ করার ভেতর দিয়ে অনেক কিছুই দিয়ে গেছে বিগত বছরটি। ওই সব অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাকে সামনে নিয়েই বর্তমান বছরটা যেমন কাটাতে হবে, তেমনি আগামী নির্বাচনের ভেতর দিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক ক্রমে কমিয়ে এনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ শত লাখ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২০
false
rn
বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (পাঁচ) ৪১। 'সংশপ্তক' লেখক- শহীদুল্লাহ কায়সার। সংশপ্তক শব্দের অর্থটি চমৎকার- হয় জয় না হয় মৃত্যু। ১৯৬৪ সালে রচিত এই উপন্যাসটি ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। সংশপ্তক উপন্যাসের কাহিনির শুরু ইংরেজ আমলের অন্তিমকালে, শেষ পাকিস্তান আমলের সূচনাপর্বে ।কাহিনির অনেকখানি স্থাপিত পূর্ববঙ্গের গ্রামাঞ্চলে,খানিকটা কলকাতা ও ঢাকায়। এর বৃহত্তর পটভূমিতে আছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ,মন্বন্তর ,পাকিস্তান আন্দোলন , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঘটনা। এতে প্রধান্য ভাল করেছে শাখা প্রশাখাসমেত এক সৈয়দ পরিবারের কথা। তার এক সৈয়দ প্রাচীন পন্থী নান সংস্কারের সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষা ও ইংরেজের চাকরি সমন্বিত করেছেন। আরেক সৈয়দ স্ত্রী-কন্যা ফেলে নিরুদ্দেশযাত্রা করে দরবেশ হয়েছেন। প্রথমোক্তজনের পুত্র জাহেদ আধুনিক শিক্ষা জীবন বোধ আয়ত্ত করে প্রথমে পাকিস্তান-আন্দোলন এবং বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রাচীনতার সঙ্গে তার ভয়াবহ দ্বন্দ্ব। কাহিনির শেষ হয় বাম রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার কারণে জাহেদের গ্রেফতারে এবং তার প্রতি রাবুর দেহাতীত প্রেমের স্থিতিতে। ৪২। 'জীবন আমার বোন' লেখক- মাহমুদুল হক। জীবন আমার বোন গ্রন্থের পেছনের প্রচ্ছদে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন-‘খুব বেশি নয় তার রচনার পরিমাণ কিন্তু মাহমুদুল হক যখনই লেখেন, লেখেন স্থায়ীভাবে, বারবার পড়তে হয় তার প্রতিটি বই, অসামান্য ভাষা শিল্পী তিনি। উপন্যাসে তিনি একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোর ছবি এঁকেছেন কাব্যের ভাষায়। ভিন্ন চোখে দেখে ঘটনার বর্ণনা করেছেন একান্তই নিজস্ব শৈল্পিক ভাষায়। অশরীরী উপন্যাসেও একাত্তরের কথা, পাক হানাদার ক্যাম্পে অম্বিয়ার করুণ যন্ত্রণা-পরিণতি পাঠকের কাছে দাঁড় করিয়েছেন। ৪৩। 'উপনিবেশ' লেখক- নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়। উপন্যাসটি তিন খন্ড। ৪৪। 'অলীক মানুষ' লেখক- সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ। এই উপন্যাস সম্পর্কে লেখক নিজেই বলেছেন- 'অলীক মানুষ উপন্যাসটা লেখার পেছনে ছিল অগ্রজ গৌরকিশোর ঘোষের প্রণোদনা। মুসলিম জীবন নিয়ে এতকাল যা কিছু লিখেছি তার নির্যাস বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। নিরন্তর সংবাদ লিখতে লিখতে যখন আমার হাত বসে যাওয়ার দশা, ঠিক সে অবস্থায় আর কোনো কিছু না ভেবে আমার মাওলানা দাদা সম্পর্কে লিখতে শুরু করলাম। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবক্তা এই মানুষটি, গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল যাঁর কাজ, 'আংরেজ হঠাও' স্লোগান দেওয়া কট্টর মৌলবাদী এই পিতামহটি যে রসকষহীন ছিলেন তা নয়, নানা বৈপরীত্যে গড়া আশ্চর্য এক আকর্ষণীয় চরিত্র।৪৫। 'আমরা হেঁটেছি যারা' লেখক- ইমতিয়ার শামীম। ইমতিয়ার শামীম স্পষ্টতই একই সঙ্গে গল্প ও উপন্যাস-লেখক, তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ডানকাটা হিমের ভেতর ও গল্পগ্রন্থ শীতঘুমে একজীবন একই বৎসর প্রকাশিত হয়েছিল। এই শীতঘুমে…-র গদ্যে যে-কাব্যময়তা ছিল তার থেকেও তিনি সরে এসেছেন অনেক। তার লেখায় আগের মতোই রাজনীতি উপস্থিত কিন্তু তা কোনওভাবেই কাহিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং অনেক বেশি অন্তঃস্রোতে এই আবহ ধরা পড়ে। তাঁর উপন্যাস আমার হেঁটেছি যারা এবং গল্পগ্রন্থ গ্রামায়নের ইতিকথা তার পূর্বেকার রচনা থেকে আলাদা করে তুলেছে। বিষয় ও আঙ্গিকের দিক দিয়ে এটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগ্রন্থ। ৪৬। 'আমি তপু', 'আকাশ বাড়িয়ে দাও' এবং 'আমার বন্ধু রাশেদ' লেখক- মুহম্মদ গাফর ইকবাল। “আমি তপু” মুহাম্মদ জাফর ইকবালের এক অনন্য কিশোর উপন্যাস। এই উপন্যাসে লেখক মানুষের এমন বয়সের এমন এক পরিস্থিতির করেছেন যেই বয়সে যেই পরিস্থিতিতে আমরা কেউ পড়লে কি ঘটবে আমাদের জীবনে তা এই বই পড়লে সহজেই উপলব্ধি করা যায়। জাফর ইকবালের সেরা কিশোর উপন্যাসের মধ্যে এই উপন্যাস নিঃসন্দেহে অন্যতম। একজন মানুষ সে বড় হোক কিংবা ছোট, তার জন্য একটা পরিবার যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা এই গল্প পড়লে অনুধাবন করা যায়। সেই সাথে বোঝা যায়, প্রতিভার বীজ লুকিয়ে থাকে সবার মাঝে, প্রয়োজন অঙ্কুরোদ্গমের পরিবেশ।আর প্রত্যেক খারাপ মানুষের জীবনে থাকে এক ভয়ংকর খারাপ ইতিহাস। কেউ খারাপ হয়ে জন্মায় না। 'আকাশ বাড়িয়ে দাও' শুধু বলব, বইটা পড়ুন। তারপর আপনি বলুন।'আমার বন্ধু রাশেদ' সম্পর্কে লেখক বলেছেন- ‘আসলে আমার বন্ধু রাশেদের ঘটনাগুলো ১৯৭১-এ দেশের সবখানেই ঘটেছে। আমাদের দেশের কিশোরেরাও কিন্তু অসম্ভব সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। সেদিক থেকে বলতে গেলে ঘটনাগুলো সবই সত্যি। কিন্তু যে চরিত্রগুলোর কথা আমি বইয়ে লিখেছি, তারা সবাই কাল্পনিক।’৪৭। 'ক্রাচের কর্নেল' লেখক- শাহাদুত জামান। লেখক শাহাদুজ্জামান'র টান টান উত্তেজনায় ভরা 'ক্র্যাচের কর্নেল' বইটিকে শুধুমাত্র একটি উপন্যাস বললে কম বলা হবে। কারন, এই অসাধারণ বইটি পড়লেই বুঝা যায় লেখক অনেক সময় নিয়ে, অনেক গবেষণার পর এই বইটি লিখেছেন। তার লেখনি ক্ষমতার গুণে এই বইটি একটি সাধারণ উপন্যাস থেকে কর্নেল তাহের-এর অসাধারণ জীবনী হয়ে উঠে। যারাই এই বইটি পড়বেন, তাদের কেউই যে বইটি শেষ না করে উঠতে পারবেন না এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়।৪৮। 'ফুল বউ' লেখক- আবুল বাশার। সম্পর্ক, সমাজ এবং ধর্ম নিয়ে চমৎকার উপন্যাস।৪৯। 'কৃতদাসের হাসি' লেখক- শওকত ওসমান। সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন এবং রাজনীতির অন্ধকার দিক লেখক সহজ সরল সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।৫০। 'নিশি কুটুম্ব' লেখক মনোজ বসু। মনোজ বসুর বই গুলর মধ্যে একটা আলাদা বন, জঙ্গলএর গান্ধ পাওয়া যায়।(৬ষ্ঠ পর্ব আগামীকাল দেয়া হবে।)
false
ij
মহাবংশ থেকে পাঠ আমার তো মনে হয় শ্রীলঙ্কানকানদের একটা ভীষন আক্ষেপ রয়েছে। কেননা, তারা প্রায় প্রত্যেকেই জানে যে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রাচীন বাংলা থেকে বিজয় নামে এক রাজপুত্র সিংহল দ্বীপ জয় করেছিল। আজকের শ্রীলঙ্কানরা তারই বংশধর। বাঙালিরা এই তথ্যটি তেমন জানে না বললেই হয়। শ্রীলঙ্কানদের আক্ষেপ এখানেই। “মহাবংশ” নামক প্রাচীন শ্রীলঙ্কার ইতিহাসগ্রন্থে বাঙালি রাজপুত্র বিজয়ের সিংহল দ্বীপ অভিযানের কথা লেখা রয়েছে। ওই ইতিহাসগ্রন্থটি লিখেছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।বুদ্ধের জীবদ্দশাতেই বৌদ্ধভিক্ষুরা সিংহল দ্বীপে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিল। তারপর সম্রাট অশোকের সময় সিংহলের রাজা তিস্য বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষনা করেন। শ্রীলঙ্কা আজও বৌদ্ধরাষ্ট্র। আশ্চর্য এই-বাংলার রাজপুত্র বিজয় যে বছর সিংহল দ্বীপে অবতরন করেছিল ঠিক সে বছরই বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। অর্থাৎ, বিজয় ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব। শ্রীলঙ্কানদের আদি পুরুষ বিজয়ের পুরো নাম ছিল বিজয় সিংহ। আর তার নাম থেকেই সিংহল দ্বীপ। সিংহ> সিংহল। বিজয়ের নাম কেন সিংহ-তার মজার ব্যাখ্যাও রয়েছে মহাবংশে।এখন মহাবংশ থেকে ষষ্ট অধ্যায়ট পাঠ করা যাক। সেই চমকপ্রদ কাহিনীটি ওখানেই রয়েছে। CHAPTER VI THE COMING OF VIJAYA IN the country of the Vangas in the Vanga capital there lived once a king of the Vangas. The daughter of the king of the Kalingas was that king's consort. By his spouse the king had a daughter, the soothsayers prophesied her union with the king of beasts. Very fair was she and very amorous and for shame the king and queen could not suffer her. Alone she went forth from the house, desiring the joy of independent life; unrecognized she joined a caravan travelling to the Magadha country. In the Lala country a lion attacked the caravan in the forest, the other folk fled this way and that, but she fled along the way by which the lion had come. When the lion had taken his prey and was leaving the spot he beheld her from afar, love (for her) laid hold on him, and he came towards her with waving tail and ears laid back. Seeing him she bethought her of that prophecy of the soothsayers which she bad heard, and without fear she caressed him stroking his limbs. The lion, roused to fiercest passion by her touch, took her upon his back and bore her with all speed to his cave, and there he was united with her, and from this union with him the princess in time bore twin-children, a son and a daughter. The son's bands and feet were formed like a lion's and therefore she named him Sihabahu, but the daughter (she named) Sihasivali. When he was sixteen years old the son questioned his mother on the doubt (that had arisen in him): `Wherefore are you and our father so different, dear mother?' She told him all. Then he asked: `Why do we not go forth (from here)?' And she answered: `Thy father has closed the cave up with a rock.' Then he took that barrier before the great cave upon his shoulder and went (a distance of) fifty yojanas going andcoming in one day. Then (once), when the lion had, gone forth in search of prey, (Sihabahu) took his mother on his right shoulder and his young sister on his left, and went away with speed. They clothed themselves with branches of trees, and so came to a border-village and there, even at that time, was a son of the princess's uncle, a commander in the army of the Yanga king, to whom was given the rule over the border-country; and he was just then sitting under a banyan-tree overseeing the work that was done. When he saw them he asked them (who they were) and they said; `We are forest-folk'; the commander bade (his people) give them clothing; and this turned into splendid (garments). He had food offered to them on leaves and by reason of their merit these were turned into dishes of gold. Then, amazed, the commander asked them, `Who are you?' The princess told him her family and clan. Then the commander took his uncle's daughter with him and went to the capital of the Vangas and married her. When the lion, returning in haste to his cave, missed those three (persons), he was sorrowful, and grieving after his son he neither ate nor drank. Seeking for his children he went to the border-village, and every village where he came was deserted by the dwellers therein. And the border-folk came to the king and told him this: `A lion ravages thy country; ward off (this danger) 0 king!' Sinée he found none who could ward off (this danger) he bad a thousand (pieces of money) led about the city on an elephant's back and this proclamation made: `Let him who brings the lion receive these!' And in like manner the monarch (offered) two thousand and three thousand. Twice did Sibabahu's mother restrain him. The third time without asking his mother's leave, Sihabähu took the three thousand gold-pieces (as reward) for slaying his own father. They presented the `youth to the king, and the king spoke thus to him: `If thou shalt take the lion I will give thee at once the kingdom.' And he went to the opening of the cave, and as soon as he saw from afar the lion who came forward, for love toward his son, he shot an arrow to slay him. The arrow struck the lion's forehead but because of his tenderness (toward his son) it rebounded and fell on the earth at the youth's feet. And so it fell out three times, then did the king of beasts grow wrathful and the arrow sent at him struck him and pierced his body. (Sihabahu) took the head of the lion with the mane and returned to his city. And just seven days had passed then since the death of the king of the Vangas. Since the king had no son the ministers, who rejoiced over his deed on hearing that he was the kings grandson and on recognizing his mother, met all together and said of one accord to the prince Sihabahu `Be thou (our) king'. And he accepted the kingship but handed it over then to his mother's husband and he himself went with Sihasivali to the land of his birth. There he built a city, and they called it Sihapura, and in the forest stretching a hundred yojanas around he founded villages. In the kingdom of Lala, in that city did Sihabähu, ruler of men, hold sway when he had made Sihasivali his queen. As time passed on his consort bore twin sons sixteen times, the eldest was named Vijaya, the second Sumitta; together there were thirty-two sons. In time the king consecrated Vijaya as prince-regent. Vijaya was of evil conduct and his followers were even (like himself), and many intolerable deeds of violence were done by them. Angered by this the people told the matter to the king; the king, speaking persuasively to them, severely blamed. his son. But all fell out again as before, the second and yet the third time; and the angered people said to the king: `Kill thy son.' Then did the king cause Vijaya and his followers, seven hundred men, to be shaven over half the head and put them on a ship and sent them forth upon the sea, and their wives and children also. The men, women, and children sent forth separately landed separately, each (company) upon an island, and they dwelt even there. The island where the children landed was called Naggadipa and the island where the women landed Mahiladipaka. But Vijaya landed at the haven called Suppäraka, but being there in danger by reason of the violence of his followers be embarked again. The prince named VIJAYA, the valiant, landed in Lanka, in the region called Tambapanni on the day that the Tathagata lay down between the two twinlike sala-trees to pass into nibbana. Here ends the sixth chapter, called `The Coming of Vijaya', in the Mahavamsa, compiled for the serene joy and emotion of the pious. তথ্যসূত্র: http://lakdiva.org/mahavamsa/ http://en.wikipedia.org/wiki/Sri_Lanka সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৫৮
false
hm
ব্যাটাছেলেদের রেসিপি উপকরণঃ ১ কেজি গরুর মাংস ১ কেজি মুরগির মাংস ১ কেজি খাসির মাংস ১ কেজি আলু ১ কেজি পেঁয়াজ ১ কেজি রসুন ১ কেজি আদা ১ কেজি গুঁড়া হলুদ ১ কেজি গুঁড়া মরিচ ১ কেজি গুঁড়া ধনিয়া ১ কেজি গুঁড়া জিরা ১ কেজি কাঁচামরিচ ১ কেজি নাম-না-জানা-বিখাউজ-মশল্লা ১ কেজি সূর্যমুখীর তেল ১ কেজি পোলাওয়ের চাল ১ কেজি মটরশুঁটি ১ কেজি ডাল ১ কেজি পটেটো চিপস ১ কেজি চাপাতা ১ কেজি চিনি ১ কেজি গুঁড়ো দুধ ১ কেজি লেবু ১ কেজি লবণ অনুর্ধ্ব ৫২ কেজি ওজনের দু'জন স্ত্রী সব ১ কেজি করে কিনতে হবে। এতে করে ফালতু ওজনের ঝামেলা থাকবে না। কোথাও ২০০ গ্রাম, কোথাও আড়াইশো মিলিলিটার, কোথাও আন্দাজমতোর ঝামেলা আপনাকে পোহাতে হবে না। স্ত্রী দু'জনকেই মাঝে মাঝে এক এক করে কোলে নিয়ে মেপে দেখে নেবেন ওজন ঠিকাছে কি না। প্রস্তুতপ্রণালীঃ ঘামতে ঘামতে এসব জিনিস নিয়ে রিকশা থেকে নামুন। তারপর চোখ গরম করে রিকশাঅলাকে ভাড়া মিটিয়ে বিদায় করুন। কটকটা রোদ বাইরে, কাজেই কয়েক টাকা অতিরিক্ত ভাড়ার জন্যে বেচারাকে বেশি ঝাড়ি না দেয়াই ভালো। ইন্টারকমে অথবা খালি গলায় হাঁক ছেড়ে কাজের ছেলেটাকে ডাকুন। সব বোঝা ওর ঘাড়ে চাপাবেন না। বারো কেজি নিজে বহন করুন। এগারো কেজি ওকে দিন। তারপর লিফট অথবা সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলুন। কপাল ভালো বউ দু'জন ওপরে নিজের ঘরে আছে। ওদের বহন করতে হলে খবরই ছিলো। ঘরে ঢুকেই এলিয়ে পড়ুন। জিভ বার করে এমন ভঙ্গি করুন যে হিট স্ট্রোকে মারা পড়ছেন। আলগোছে বাম বা ডান চোখের পাতা খুলে দেখুন, স্ত্রীদের ওপর আপনার অ্যাক্টিঙের কী আসর পড়ছে। উল্লেখ্য যে, আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসার মিটার রিডিং নেয়ার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। তারা যদি যথোচিত উৎকণ্ঠা না দেখায় তাহলে অ্যাকটিঙের ভলিউম বাড়িয়ে দিন। এক ফাঁকে চিঁ চিঁ করে জানান যে বাজারের ব্যাগে লেবু, চিনি আর লবণ আছে। ফ্রিজে বরফ আছে। অতঃপর ঠান্ডা এক গ্লাস লেবুর শরবৎ ধীরে সুস্থে পান করতে করতে টিভি ছেড়ে চ্যানেল টু-তে টারজানা খানের টানটান খবর পরিবেশনা উপভোগ করতে থাকুন। কী রান্না হবে, এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে বিপদে পড়বেন না। আপনার দুই স্ত্রী, যথাক্রমে বড় বউ ও ছোট বউকে এ নিয়ে বিবাদ করার সুযোগ দিন। এসব ঝগড়া আপনার দাম্পত্য জীবনে কোলেস্টেরোল ঠিক রাখবে। পকেট থেকে এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি বার করে কানে গুঁজে শুনতে থাকুন শিরীনের "না জেনে বুল বুজ্জো না" কিংবা লোকজ "আমার দিল খাড়িয়া নিলো রে ভাবা বান্ডারি"। এমপিথ্রি প্লেয়ার না থাকলে কানে ছিপি বা তুলা গুঁজে চেহারায় একটি শ্রান্তিক্লিষ্ট, বিপন্ন, মুমূর্ষু অভিব্যক্তি ফুটিয়ে দেখে চলুন টারজানা খানকে। আপনার বড় বউ ভাজাকাঠি হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে উত্তেজিত ভঙ্গিতে আপনাকে একটা কিছু বলছে। তার পরনে আলুথালু অ্যাপ্রন । চোখের পলকে চ্যানেল পাল্টে ডিসকভারি চ্যানেল ধরুন। তারপর মুগ্ধ, ভীতচকিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আপনার মাথা ওপরে নিচে নাড়ুন কিছুক্ষণ। এতে করে তার উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও হতে পারে। সে আবার রান্নাঘরে ঢুকে পড়লে আবার চ্যানেল টু-তে টারজানা খানের খবর দেখতে থাকুন। অচিরেই আপনার ছোটবউ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসবে। কপাল ভালো এখন কমার্শিয়াল চলছে টিভিতে। বড় বউয়ের সাথে আচরণ পুনরাবৃত্ত করুন। প্রয়োজনে গাল টিপে তাকে আদর করে দিন। ড্যাম, কমার্শিয়াল শেষ, জলদি চ্যানেল পাল্টান! আধঘন্টা পর কান থেকে এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি/ছিপি/তুলা বার করে হাই তুলে একটা টাওয়েল নিয়ে গোসল করতে ঢুকে পড়ুন। গান গাইতে গাইতে সহীহ পদ্ধতিতে পাকসাফ হোন। তারপর বেরিয়ে এসে এক কাপ চায়ের জন্যে মিহি আবদার ধরুন। আবদার জানানোর আগে কানে আবারও এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি/ছিপি/তুলা ঢোকাতে ভুলবেন না। মিনিট পাঁচেক গালমন্দ শোনার পর গোমড়া মুখে বড় বউ এক কাপ চা নিজের হাতে করে নিয়ে এলে তাকে জড়িয়ে ধরে নষ্টামো করার হালকা উদ্যোগ নিন। তারপর কিল হজম করে বাগস অ্যান্ড ড্যাফি শো দেখতে বসে পড়ুন। লুনি টুনস শেষ হয়ে গেলে ঘরে ঢুকে ব্রাউজার খুলে সচলায়তনে লগ ইন করুন। নতুন কী কী লেখা এসেছে দেখুন এক নজরে। সংসারে এক সন্ন্যাসীর নতুন কোন কামরাঙা ছড়া এলে পড়ে ফেলুন। নিজের মনে কোন খাইষ্টা ছড়ার আভাস এলে ড্রাফট করে রাখুন। নিরীহ কয়েকটি পোস্টে কিছু দুষ্টু মন্তব্য দিয়ে ব্যাপারগুলোকে ভিন্ন, বদ খাতে চালিয়ে দেয়ার একটা অপচেষ্টা করুন। এর মধ্যে আবারও আবছা শোরগোল এমপিথ্রি প্লেয়ারের বিচি/ছিপি/তুলা ছাপিয়ে কানে এলে তাড়াতাড়ি মেইল খুলুন। বিড়বিড় করে অফিসের কাজ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে থাকুন। ছোট বউ এসে থমথমে মুখে খাবার তৈরির বার্তা জানালে তাকেও জড়িয়ে ধরে নষ্টামোর উদ্যোগ নিন। আবারও কিল হজম করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলে বসে পড়ুন। খাবার যা রান্না হয়েছে গরমাগরম খেয়ে নিন। কোন অনুযোগ, অভিযোগের চিন্তা মাথায় আনবেন না। কান তো বন্ধই আছে, চোখও বন্ধ করে খেয়ে যান। বোবার শত্রু নাই।
false
fe
যেসব বিবেচনাকে প্রাধান্য দিতে হবে যেসব বিবেচনাকে প্রাধান্য দিতে হবে ফকির ইলিয়াস-------------------------------------------------------------একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথ সুগম হোক এটাই সাধারণ মানুষের কামনা। কিন্তু বড় দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে চার দল। বিশেষ করে বিএনপি। তাদের অনেক দাবি। ক্রমেই দাবি কমতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন তাদের কথায় ফিরে গিয়েছিল। তারা বলেছিল, ১৮ ডিসেম্বরই নির্বাচন হবে। তখন ‘আক্কেল গুড়ুম’ হলো খোন্দকার দেলোয়ারের। আবার তার কণ্ঠের সুর নরম হয়ে এলো। আবার তারা বৈঠক করলেন। কিছু দাবি কমালেন। এখন ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন হবে। ২২ জানুয়ারি হবে উপজেলা নির্বাচন।তারপরও দাবি তারা করেই যাচ্ছেন আরপিও ৯১(ই) ধারা বাতিল করতে হবে। জরুরি অবস্খা তুলে নেয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা তারা চান। এটা বিএনপির রাজনীতিকরা খুব ভাল করেই জানেন, জরুরি অবস্খা তুলে নিলেও অলিখিত জরুরি অবস্খা থেকেই যাবে। নির্বাচন উপলক্ষে বহুজাতিক বাহিনী মাঠে থাকবে সর্বোচ্চ পাওয়ার নিয়ে। কারণ দেশে অবাধ নির্বাচন করতে তারা বদ্ধপরিকর। সেটা সাধারণ মানুষও চায়।নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমছে নতুন খেলা। দল বদলের পাখিরা নতুন তরণী ভাসাচ্ছে। শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, তার দলের কিছু নেতাকেও টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে কেউ কেউ। সুযোগ সানীরা দলবদল করে। জনগণ তাদের চিনে খুব ভাল করেই। এরা জনগণের কাছে চিহ্নিত। কিন্তু যারা কখনও এলাকায় যায়নি, যারা নিজ অঞ্চলের মানুষের সুখে-দু:খে কখনই পাশে দাঁড়ায়নি­ এরা মনোনয়ন পাচ্ছে কিভাবে? বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এর আগেও বিদেশে ‘আবাসন’ গ্রহণকারীরা এমপি হয়েছেন। বিদেশের পাসপোর্টও নাকি কারও কারও কাছে ছিল। এবারও তেমন ব্যক্তিরা নমিনেশন পাচ্ছেন। আবার তদবির করছেন। যারা বিদেশের ইমিগ্রেশনের কাছে ডান হাত তুলে শপথ করে বিদেশের বশ্যতা স্বীকার করে নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তারা দেশে গিয়ে এমপি হওয়ার দাবি রাখেন কি? দলইবা এদের মনোনয়ন দেয় কিভাবে? মৌসুমি পাখি সেজে দরদি সাজতে চাইছে তারা।নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তথ্যানুসান করলে আরও অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। জানা যাবে তাদের অতীত কর্মকাণ্ডও। ‘তারুণ্যের নেতৃত্ব’ তৈরির নামে কোন অশুভ শক্তিকে প্রমোট করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না তা ভেবে দেখতে হবে। এটা দেশবাসীর অজানা নয়, বড় দুটি দল থেকে যারা মনোনয়ন পাবেন তারা দুই নেত্রীর কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরই ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন। কিন্তু দুই নেত্রী কি সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করবেন কিংবা করতে পারবেন? এমনটি আশা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে সতর্ক এবং জাগ্রত থাকতে হবে। যাতে নবম জাতীয় সংসদে কোন অশুভ শক্তি এবং এর প্রেতাত্মাদের স্খান না হয়। যাতে তস্কর চক্র রাজনীতিতে এসে পরিবেশ কলুষিত না করতে পারে।একটি বিষয় দিনে দিনে খুব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রধান দলগুলো তাদের পুরনো বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সেই সব রাঘব বোয়ালরা যারা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল তারাও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছে। জঙ্গি সংগঠনগুলো নতুন নামে, নতুন মোর্চা তৈরি করে সামনে আসার চেষ্টা করছে। এদের অশুভ খায়েশ প্রতিহত করার দায়িত্ববোধটুকু নিয়েই নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে। যে সব জঙ্গি ঢাকা দখলের মহড়া আজ দিচ্ছে এরাই তো দেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছিল। যাদের সুষ্ঠু বিচার আজও বাংলার মাটিতে করা সম্ভব হয়নি।দুই.রাষ্ট্রক্ষমতা পারিবারিককরণের প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন বঞ্চিত শীর্ষ নেতাদের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীদের মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় বড় দলগুলো আগেও করেছে, এখনও করছে। একটি কথা মনে রাখা দরকার। বাংলাদেশ কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। যে আবদুল জলিল চারদলীয় জোটের আমলে জ্যোতিষির মতো পতনের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তিনিই লিখিতভাবে বলেছিলেন আর রাজনীতি করবেন না। রাজনীতির মাঠ সবাইকে ছাড়তেই হয়। এটা কারও স্খায়ী সম্পতি নয়। অথচ আবদুল জলিল এখন আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইছেন। যে সাইফুর রহমান বলছিলেন, আর রাজনীতি করবেন না। ভাল করে দাঁড়াতে পারেন না তিনি কারও সাহায্য ছাড়া, সেই তিনিই এখন জনগণের ইচ্ছায় প্রার্থী হওয়ার খায়েশ প্রকাশ করেছেন। এরই নাম রাজনীতি! বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠ কেউ ছাড়তেই চায় না। দুর্নীতিবাজদের পোষ্যদের মনোনয়ন দেয়া আর দুর্নীতিবাজ-গডফাদারকে স্বয়ং মনোনয়ন দেয়া তো সমান কথাই হলো। বড় দলগুলো এভাবে জনগণের মুখের সামনে মুলো ঝুলিয়ে দিয়ে সেই পুরনো স্ট্রাটেজি বজায় রাখতে চাইছে। তারা প্রকারন্তরে দুর্নীতিবাজদেরই বাঁচাতে চাইছে।বাংলাদেশে আরেকটি প্রথা চালু আছে, একই পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন দল করেন। তা তারা গণতান্ত্রিকভাবে করতেই পারেন। কিন্তু দেখা যায় দরকার মতো এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বী হলেও নিজ সহোদর/সহোদরাদের ব্যাপক সাহায্য করেন রাজনৈতিক মুনাফা পাইয়ে দেয়ার লক্ষ্যে। তাহলে তো বোঝা যায়, এরা বিভিন্ন উৎস থেকে ফায়দা লাভের আশায়ই বিভিন্ন দল করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এসব স্বার্থপর পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধেও জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। এসব বিবেচনাকে প্রাধান্য দিতে হবে।মনোনয়ন দাখিল, বাছাই এবং চূড়ান্ত হওয়ার পর বোঝা যাবে কারা কোন দলের প্রার্থী হলেন। কতটা আসন কোন জোটের, কোন দলের মধ্যে বন্টন হলো। তবে আমার মতে, রাষ্ট্রের জনগণের একটা প্রধান ভূমিকা এসব বিষয়ে থাকা উচিত। আর তা হচ্ছে কোন চাপিয়ে দেয়া প্রার্থীকে গ্রহণ না করা। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে, জঙ্গি-মৌলবাদী-পরাজিত রাজাকারদের বিরুদ্ধে নিজ নিজ এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করা।যে সুশীল সমাজ এতদিন সৎ এবং যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের বিভিন্ন বুলি আওড়িয়েছেন তাদেরও আমি সক্রিয় হতে বিনীত অনুরোধ করি। শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়া সনদ দিলেই এদেশে কেউ সৎ হবে না। হতে পারবে না। শেষ হাসিনার দেয়া মনোনয়নে আওয়ামী লীগের তিনশত প্রার্থীর মধ্যে বেশ কিছু ‘সুবিধাবাদী’ আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। একই প্রথা অনুসরণ করবেন বেগম জিয়াও­ এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই নিজ নিজ এলাকায় মানুষের প্রত্যয়কে সঙ্গে নিয়ে সুশীল সমাজকে দাঁড়াবার এটাই উপযুক্ত সময়।বাংলাদেশের মানুষের এখন প্রধান শত্রু দুটি। একটি পরিবারতন্ত্র আর অন্যটি রাজাকার মদদপুষ্ট জঙ্গিতন্ত্র। জঙ্গিরা সহিংস দখল চাইছে। আর পরিবারতন্ত্রের বলয় তৈরি করে পিতার পর পুত্র-কন্যাকে নেতৃত্ব এনে দখল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই দুই রাহুর কবল থেকেই মানুষকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসার কথা ভাবতে হবে। ওয়ান-ইলেভেন একটি দানবশক্তির পাঁজরে আঘাত করে তা সাময়িকভাবে থামিয়েছে। কিন্তু এর শিকড় উৎপাটন করতে হবে গণমানুষকেই। আর সেজন্য বিবেক সজাগ রেখে নেতৃত্ব নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।নিউইয়র্ক, ২৫ নভেম্বর ২০০৮--------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ২৮ নভেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
mk
বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ কনভেনশনে জামায়াত নিষিদ্ধ করার দাবি দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ডাকে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ কনভেনশন থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। কনভেনশনে ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানোকে দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানানো হয়েছে।সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, ‘এ দেশের রাজনীতিবিদরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, যার কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমরা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি।’জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় কার্যকর করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিহত করা ও আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো, তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করা ও নারীর অধিকার সমুন্নত রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখাÑ এই পাঁচ দফা দাবিতে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। গত ৫ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভের লেকের পাড়ে অস্থায়ী মঞ্চে আয়োজিত কনভেনশনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সারাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।সুলতানা কামাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী রাজনৈতিক দলও সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম রেখে দিয়েছে। এর দায় নাগরিক হিসেবে আমাদেরও নিতে হবে। আমরা ভোটের যুদ্ধে জবাবদিহিতা আদায় করতে পারছি না।’সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি এ কে খন্দকার বীরউত্তম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছে। এখন তালেবানি আতঙ্ক লক্ষ্য করছি।’এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দেশের বাইরে থাকায় তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। এতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন ছিল তাতে সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্য ছিল না। এখন সাম্প্রদায়িকতা রুখতে দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে।সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সকল নষ্টের শেকড়। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে সবাইকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের অপতৎপরতা দেখে আমরা শুধু বেদনাহত হচ্ছি। অন্যায় ও পশুশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গণমানুষের ঐক্য অপরিহার্য।’সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, একাত্তরে যারা অপরাধ করেছে আর ২০১৩ সালে এসে তাদেরকে যারা সমর্থন দিচ্ছে তারা সমান অপরাধী, তাদের সবাইকেই প্রতিহত করতে হবে।কনভেনশনে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বিচারপতি গোলাম রব্বানী, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের সভাপতি অজয় রায়, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহাসচিব রানা দাশগুপ্ত, গার্মেন্ট শ্রমিক নেত্রী নাজমা আখতার, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালক ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২০ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় সম্মেলন এবং এরপর বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের কনভেনশনের মাধ্যমে নাগরিকদের এই উদ্যোগকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে জাতীয় পরিষদ। পরিষদের সভাপতি হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। আহ্বায়ক করা হয়েছে সুলতানা কামালকে। নির্বাহী কমিটির সদস্যরা হলেন সৈয়দ শামসুল হক, কামাল লোহানী, ড. আকবর আলি খান, ডা. সারওয়ার আলী, জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, আবেদ খান, রামেন্দু মজুমদার, রানা দাশগুপ্ত ও এম এম আকাশ। পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে প্রতি জেলায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।কনভেনশনের ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘দেশ এক দুঃসময় অতিক্রম করছে। পবিত্র ধর্মের নামে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মহান মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন ও চেতনা নস্যাৎ করতে উদ্যত হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তায় দেশে সংকট ঘনীভূত হয়েছে এবং রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি চক্র আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের তত্ত্ব আমদানি করে ধর্মের উগ্রবাদী ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে প্রভাবিত করতে চাইছে। এই ধর্মান্ধ শক্তি বাংলাদেশের বিস্ময়কর অর্জনের অংশীদার নারী সমাজের শিক্ষা ও কর্মজীবনকে কলঙ্কিত করে তাদের অবরোধবাসিনী করতে উদ্যত হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে কখনো ধর্মানুভূতিকে আহত করার মতো কোনো বক্তব্য প্রচার না হওয়া সত্ত্বেও তারা নাস্তিকতার অপবাদ দিয়ে কয়েকজন কর্মীকে হত্যা করেছে।’ঘোষণাপত্রে বিরোধীদলের সমালোচনা করে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ও তার প্রয়োগে কোনো সংশোধনী সুপারিশ না করে বিরোধীদল এবং কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এ বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। তাদের লক্ষ্য এ বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল করা।’ ঘোষণাপত্রে প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলা হয়, ‘দেশের মানুষ আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি অগ্রসর হলে রাজনৈতিক দোদুল্যমানতা দূর করা যাবে এবং দেশ ঘুরে দাঁড়াবে। একাত্তরের মতো বাংলাদেশ আবার এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’
false
fe
আওয়ামী লীগের এম পি মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আওয়ামী লীগের এম পি মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। দল বলছে প্রমানিত হলে তারও বিচার হবে ।রিপোর্ট টি ভোরের কাগজ / ৮ এপ্রিল ২০১০মোসলেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখবে আওয়ামী লীগ :যুদ্ধাপরাধী প্রমাণ হলেই বিচার॥ইখতিয়ার উদ্দিন ।। দলীয় সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা হওয়ায় বিব্রত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখা হবে এবং তদন্তে যুদ্ধাপরাধী প্রমাণিত হলে তাকেও বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে বলে দলে সিদ্ধান্তহয়েছে। তবে মোসলেম উদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই তার বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।মোসলেম উদ্দিনের নির্বাচনী এলাকার পার্শ¦বর্তী এলাকায় বাড়ি এমন একজন শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই মোসলেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি ১৯৭০ সালে, ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতেও একাধিকবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব উল আলম হানিফ জানান, মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি যুদ্ধাপরাধী হলে অবশ্যই তারও বিচার হবে। সেই সঙ্গে কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করা হয়েছে কিনা এটাও খতিয়ে দেখবেন তারা। কেননা ’৭৫ পরবর্তী সময়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পথভ্রষ্ট হয়ে বিএনপির সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে জামাতের সঙ্গে বিএনপি জোট করলে সে সব মুক্তিযোদ্ধা জামাতের সঙ্গেও মাঠে-ময়দানে রাজনীতি করেছেন। তাই খতিয়ে দেখতে হবে কেউ কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে মোসলেমকে ফাঁসানের চেষ্টা করেছে কিনা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্যও হানিফের সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ যার বিরুদ্ধেই উঠুক তিনি নিজ দলের হলেও তা খতিয়ে দেখা হবে। সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধী হলে কেউই ছাড় পাবে না। তবে, অভিযুক্ত মোসলেম উদ্দিন সম্পর্কে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে তিনি একজন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাপরাধী নন। আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, পাশাপাশি এলাকায় বাড়ি হওয়ায় তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ভালোভাবে চেনেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি যুদ্ধাপরাধী নন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল সরকারি দলের এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা প্রসঙ্গে বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা যে দলেরই হোক না কেন তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। কোনো রাজনৈতিক দলের বিচার চাই না। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয় দলটি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় সংসদ সদস্য মোসলেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা হওয়ায় বিব্রতবোধ করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। তাই মোসলেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে কোনো ধরনের ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর তিনি যদি কোনো স্বার্থান্বেষী চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে থাকেন তা হলে দল তার পাশে দাঁড়াবে।উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ-৬ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিনসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ৭ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যাসহ কয়েকটি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (ফুলবাড়িয়া) মামলাটি করেন ওই উপজেলার জোরবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জালাল উদ্দিন। সংসদ সদস্য মোসলেমসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, লুট ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করা হয়। মামলায় সাক্ষী করা হয় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মোঃ জুবেদ আলী, আ ন ম নজরুল ইসলাম ও খন্দকার আব্দুল মালেক শহিদুল্লাহসহ ১৪ জনকে।
false
ij
গল্প_ সংশয় বাইরে থেকে শামসুল ইসলামকে দেখলে সাদাসিদেই মনে হয়, তার চেহারায় কিংবা আচার-আচরণে তেমন বিশেষত্ব নেই। লম্বা ঢ্যাঙ্গা আর কালো রঙের চোয়াল ভাঙ্গা লোক সে, কোনও পোষাকেই তাকে ঠিক মানায় না । শাদা শার্ট আর কালো ফ্রেমের চশমা-পরা সরকারি অফিসের ছাপোষা কেরানি যেমন হয়- শামসুল ইসলামও দেখতে ঠিক তেমনি। কিন্তু, শামসুল ইসলামের মনোজগৎ একেবারেই অন্যরকম: ভীষণ ভাবুক লোক তিনি; সারাক্ষনই বিশ্বপ্রকৃতির রহস্য, জীবনের মানে-এসব নিয়ে গভীর ভাবে ভেবে যাচ্ছেন। এসব দার্শনিক বিষয় নিয়ে ভেবে ভেবে কোনও কূল কিনারা তিনি করতে পারেন কি না তা তিনিই জানেন। জগতের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বপ্রকৃতির রহস্য নিয়ে ভাবে না বা ভাবার সময় পায় না। তবে শামসুল ইসলাম ভাবেন। শামসুল ইসলাম কেবল ভাবেন না-তিনি বিস্তর পড়েনও -তার শোওয়ার ঘরটি প্রায় হাজার দুয়েক বইয়ে ঠাসা। ভাবুক লোকদের যা হয়;-স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে তাদের মনে গভীর সংশয় থাকেই। স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে শামসুল ইসলামের মনেও সেরকম গভীর সংশয় আছে বৈকী এবং শৈশবেই তার মনে এই সংশয় তৈরি হয়েছে; শৈশব থেকেই শামসুল ইসলাম জীবন ও সৃষ্টির রহস্য নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। শৈশবে অন্যরা যখন চোখ বুজে ধর্ম পালন করে যেত, তিনি তখন তার মনের ভিতরে নানা প্রশ্নের উপস্থিতি টের পেতেন। কেন যে তার মনে অস্বস্তিকর সব প্রশ্ন উঁকি দিত! ছেলেবেলায় শামসুল ইসলাম বিষ্ণুপুর স্কুলে পড়েছেন। সে স্কুলে বাংলা পড়াতেন আবদুল মতিন মোল্লা। তিনিও কট্টর সংশয়বাদী ছিলেন এবং নানা তথ্য ও তত্ত্ব যুগিয়ে কিশোর শামসুলের চিন্তাকে উশকে দিয়েছিলেন; পড়ার জন্য শামসুলকে বইও দিতেন । তার মধ্যে অন্যতম ছিল অধ্যাপক আবুল ফজল-এর ‘মানবতন্ত্র’ এবং দেবীপ্রসাদ চট্টপাধ্যায়ের লেখা ‘যে গল্পের শেষ নেই’। মোল্লা স্যার প্রায়ই বলতেন, পৃথিবীতে ক্ষুধার্ত ও দুঃখী মানুষের সংখ্যাই বেশি- স্রষ্টা থাকলে এমনটা হত না। তাই তো। অনেকে বলে স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকলেও সৃষ্টা মানুষের সুখ-দুঃখে উদাসীন। তা হলে স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকার দরকারটাই কি? তাই তো। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের চেয়ে বিজ্ঞানচর্চা বেশি জরুরি। তাই তো। কাজেই, শৈশব থেকেই শামসুল ইসলাম ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে গভীর সংশয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করে আসছেন। তবে ইদানিং তার সংশয়ী ভাবনায় চির ধরেছে। কিছুদিন আগে লাঞ্চ টাইমে অফিসের ক্যান্টিনে বসে কলিগ আজিজুর রহমান ভূঁইয়া একটা অদ্ভুত গল্প বলেছিলেন। সে গল্পটা শোনার পর থেকেই শামসুল ইসলাম-এর সংশয়ী ভাবনায় চির ধরতে শুরু করেছে। ছেলেবেলা থেকে এ রকম কাকতালীয় বা অলৌকিক কাহিনী শামসুল ইসলাম অনেক শুনেছেন। সে সব অলীক কাহিনীর অসার যুক্তি মনে মনে খন্ডনও করেছেন। তবে আজিজুর রহমান ভূঁইয়ার মুখে শোনা ঘটনাটি অন্যরকম হওয়ায় তাকে অত্যন্ত নাড়া দিল। ১৯৭১ সালের ঘটনা। সোনাচান নামে বাগেরহাটের এক তরুণ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল সে। কাজেই ছেলের চিন্তায় যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মা আম্বিয়া খাতুন অত্যন্ত আকূল হয়ে ছিলেন। ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হল। সোনাচান আর মায়ের বুকে ফিরে এল না। দিন যায়, মাস যায়। সবাই বলল: সোনাচান মারা গেছে। আম্বিয়া খাতুন লোকের কথা বিশ্বাস করে না, তার বিশ্বাস: সোনাচান মরেনি, বেঁচে আছে, একদিন সে ঠিকই ফিরে আসবে। ছেলের জন্য আম্বিয়া খাতুন অপেক্ষা করতে থাকে। রাত জেগে নামাজ পড়েন, দোয়াদরুদ পড়েন। এভাবে কুড়ি বছর কেটে গেল। একরাতে আম্বিয়া খাতুন স্বপ্ন দেখল । হলুদ পাগড়ী পরা অল্পবয়েসি একজন দরবেশ বলছেন, তুই আজমীর শরিফ যা; তোর ছেলেকে তুই ফিরে পাবি। তারপর মেয়ে জামাইকে নিয়ে আম্বিয়া খাতুন ইন্ডিয়া যায় । আজমীর শরীফের মাজারের গলিতে মাঝবয়েসি এক ফকির বসেছিল। সেই মাঝবয়েসি ফকিরকেই আম্বিয়া খাতুন সোনাচান বলে শনাক্ত করে। ক্যান্টিনে গুঞ্জন উঠল। অডিট ডিপার্টমেন্টের আবদুর রশীদ পাটোয়ারি দাড়িতে আঙুল বুলিয়ে বললেন, সবই আল্লার কুদরত। শামসুল ইসলাম মনে মনে ফুঁসে ওঠেন। আল্লার কুদরত না ছাই! একাত্তরে আল্লার নাকে ডগায় অত লোক মরল,তখন আল্লার কুদরত কই ছিল! শামসুল ইসলাম সতর্কভাবে আজিজুর রহমান ভূঁইয়া কে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি আম্বিয়া খাতুনকে চিনেন? আজিজুর রহমান ভূঁইয়া উৎফুল্ল হয়ে বললেন, আরে আপনি এইটা কি কইলেন? চিনব না কেন? আম্বিয়া খাতুনের মেয়ে জামাই হইল আমার বন্ধু পিরোজপুরের হারুনুর রশীদ চিশতির মেজ ছেলে। অ। ২ শামসুল ইসলামের মনের ভিতরে আম্বিয়া খাতুনের ঘটনাটা ঘুরপাক খেতে থাকে। আম্বিয়া খাতুন তার ছেলেকে ফিরে পেল। নিছক প্রার্থনার জোরে? না কি অন্যকিছু। আম্বিয়া খাতুনের ভুল হয়নি তো? নাঃ, সেরকম সম্ভাবনা কম। মায়েরা সন্তানকে চিনতে ভুল করে না। তা হলে? কাকতালীয়? কোইন্সিডেন্স? নাঃ, সেরকম সম্ভাবনাও কম। সোনাচানের কাহিনী ছাড়াও আরও একটি কারণে শামসুল ইসলামের সংশয়ী চিন্তাভাবনায় চির ধরেছে। আজকাল মনের ভিতরে কেমন যেন করে । হঠাৎ হঠাৎ অন্যরকম একটা অনুভূতি হয় মনে। মাঝরাতে কি শেষরাতের দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় । তখন পরিচিত শব্দ শোনেন, পরিচিত গন্ধ পান: তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়। মনে হয়, এসব কিছু অর্থহীন নয়-এই বেঁচে থাকা। কখনও রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে বাস-ট্রাক-প্রাইভেট কার-রিকশা; ...এসব কি অর্থহীন ...মন মানতে চায় না। আমি জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি-এখন কি হয় ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে? স্রষ্টার ওপরে শামসুল ইসলামের কিছু হলেও বিশ্বাস আসে এবং তার আচরণেরও কিছু পরিবর্তন হয়। শামসুল ইসলাম স্ত্রী সুফিয়া খাতুন: নিয়মিত নামাজ-কালাম পড়েন। শামসুল ইসলামের ছেলে নেই, তিন মেয়ে: মমতা, ফিরোজা আর আফরোজা । মেয়েরাও মায়ের প্রভাবে নামাজ পড়ে। সুফিয়া খাতুন যখন জায়নামাজ পেতে ফজরের নামাজ পড়তে বসেন তখন আজকাল জায়নামাজের পাশে বসে থাকতে ভালো লাগে তার। আগে আগরবাতি, গোলাপজল ও আতরের গন্ধ ইত্যাদি তার ভালো লাগত না, এখন অতটা খারাপ লাগে না। কয়েকদিন আগে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে বায়তুল মোকাররম থেকে এক শিশি আতর কিনলেন। শিশিটা ছোট মেয়েকে দিলেন। আফরোজা কি খুশি। তিন মেয়ের মধ্যে আফরোজাই সবচে ছোট; ক্লাস এইটে পড়ে। তার বড় আদরের মেয়ে আফরোজা। শামসুল ইসলামের মায়ের নামও ছিল আফরোজা ... হঠাৎই শামসুল ইসলামের মনে পড়ে গেল: আফরোজার জন্মের আগে আফরোজার মা হলুদ পাগড়ী পরা অল্পবয়েসি এক দরবেশকে স্বপ্ন দেখেছিল। সেই হলুদ পাগড়ী পরা অল্পবয়েসি দরবেশ বলেছিলেন, তোর একটি কন্যা সন্তান হবে। কন্যা সন্তান জন্মাবার পর তুই কন্যা সন্তান নিয়ে আজমির শরীফ যাবি। সে কথা মনে পড়তেই শামসুল ইসলাম ভীষণ চমকে উঠলেন। আফরোজার মা বারবার বলা সত্ত্বেও শামসুল ইসলাম রাজী হননি আজমীর শরীফ যেতে । হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এখন সেসব কথা মনে পড়তেই শামসুল ইসলাম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। এখন আজমীর শরীফ যাওয়ার কথা না-ভাবলেও নামাজ ধরবেন কিনা ভাবলেন। পরক্ষণেই ভাবনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন: আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেও ধর্মটর্ম পালন করব না। পৃথিবীতে অনেক ধর্ম। নিজের ধর্মটাই সবাই সত্য মনে করে। কাজেই সব ধর্মই সত্য কিংবা সব ধর্মই মিথ্যা! সে যাই হোক। দীর্ঘদিন পর, জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে ঈশ্বরের ওপর শামসুল ইসলামের বিশ্বাস এল। এর কিছুদিন পরই একটা বেপরোয়া ট্রাক বড় রাস্তায় আফরোজাকে পিষে পালিয়ে যায়। কোচিং করে ফিরছিল আফরোজা। স্পট ডেড। আফরোজাকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হল। ৩ মেয়ের মৃত্যুর পর শামসুল ইসলাম কেমন যেন অপ্রকৃতস্থ হয়ে গেলেন। তার জীবন কেমন যেন অস্বাভাবিক হয়ে যায়। সারাদিনই ভীষণ ছটফট করেন তিনি । তাকে উদভ্রান্তের মতো দেখায়: ঠিক মতো খান না, ঘুমান না, অফিসেও যান না। ভোরে ঘর থেকে বেরিয়ে প্রায় মধ্যরাতে বাড়ি ফিরে আসেন। শহরের রাস্তায় রাস্তায় উদ্ভ্রান্তের মতন হাঁটেন- বিয়ের পর স্ত্রীর অনুরোধে সিগারেট ছেড়েছিলেন। এখন দিনে দু-চার প্যাকেট উড়ে যায়। সিগারেট টানতে টানতে রাস্তায় হাঁটেন । রাস্তায় বাস-ট্রাক-প্রাইভেট কার-রিকশার ভিড়; সব ...সব অর্থহীন ...হাঁটতে হাঁটতে তিনি ভাবেন: আমার অবিশ্বাস-এর জন্য আফরোজা মরল না তো? সৃষ্টা যদি থাকে তো তার বশ্যতা মানতেই হয়। আমি স্রষ্টার বশ্যতা অস্বীকার করেছিলাম। তিনি যত এসব ভাবেন তত অস্থির হয়ে ওঠেন। ঈশ্বর থাকলে আফরোজার মতন মেয়ে ওভাবে মারা যায় কীভাবে। নাঃ, ঈশ্বর নেই এবং কোনওকালে ছিলও না। তিনি যত এসব ভাবেন তত অস্থির হয়ে ওঠেন। একদিন তার মনে হল তিনি বেশি দিন বাঁচবেন না । ছোটবেলার গ্রামের ছবিখানি ভেসে উঠল তার মনে-মন উচাটন হল। শামসুল ইসলাম তার স্ত্রীকে বললেন, কদিনের জন্য আমি গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। অনেক দিন যাই না। সুফিয়া খাতুন চুপ করে থাকেন। স্বামী ঠিক মতো অফিস করছেন না; কাজে মন বসে না তার । চাকরিরও বেশি দিন নাই। গ্রামের জমিজিরাত যা আছে সেসব এখনি বিক্রি করা দরকার, নইলে বেহাত হয়ে যাবে। বড় মেয়ে মমতার বিয়ের বয়স হল। শামসুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি মেঘনা নদীর পাড়ের বিষ্ণুপুর: লঞ্চঘাট থেকে মাইল খানে পুবে। বাড়ির সামনে ক্ষিরা ক্ষেত, কচুর ঝোপ, পুকুর, বাঁশঝাড়, চালতা ও গাব গাছের জঙ্গল, খাল, ধানী জমি, বাধ ও মেঘনা নদী। অনেক দিন পরে তিনি বিষ্ণুপুর এলেন। অনেক দিন পর নির্মল বাতাস, নদীর গন্ধ, খড়-কাদা ও গোবরের গন্ধ পেলেন। তবে মনে শান্তি পেলেন না। পুকুরপাড়ে বাঁশঝাড়ের ভিতরে মায়ের কবর: মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আফরোজার কথা মনে করে বাঁশঝাড়ের অন্ধকারে হু হু করে কাঁদলেন। মনের যন্ত্রণা চেপে রেখে শামসুল ইসলাম গ্রামের পুরনো লোকজনের খোঁজ খবর করা শুরু করলেন। ভিটেমাটির একটা বন্দোবস্ত করতে হবে, এভাবে ফেলে রাখা ঠিক না। বিষ্ণুপুর স্কুলের শিক্ষক আবদুল মতিন মোল্লাও আজও বেঁচে আছেন। এককালের সংশয়বাদী এখন নাকি পাকা মৌলবী হয়েছেন । বিষ্ণুপুরের তাবলীগ জামাতের মুরুব্বী হয়েছেন আবদুল মতিন মোল্লা । শামসুল ইসলাম অবাক হলেন না। পূবপাড়ায় মোল্লা স্যারের বাড়ি। বর্ষাকাল। যেতে যেতে শামসুল ইসলাম কিঞ্চিৎ ভিজে গেলেন। ছেলেবেলায় এই পথ দিয়েই কত হেঁটেছেন। তার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস পড়ে। আশেপাশের পরিবর্তনও লক্ষ করলেন। গ্রামের রাস্তায় রিকশা চলে। ছেলেবেলায় পূবপাড়ায় যেতে হত নৌকায়। মোল্লা স্যার বাড়িতেই ছিলেন। সত্তরের মতো বয়স। রবীন্দ্রনাথের মতন পাকা চুল-দাড়ি। শামসুল ইসলাম কে দেখে বৃদ্ধ খুশি হলেন। শামসুল ইসলামের মুখে দাড়ি দেখেও সন্তুষ্ট হলেন। খনখনে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, টুপি কই মিঞা? শামসুল ইসলাম চুপ করে রইলেন। মোল্লা স্যার বললেন, শুনলাম, তুমি নাকি বাপদাদার ভিটামাটি বিক্রি করতে দেশে আইছ? হ। বাপদাদার ভিটামাটি বিক্রি কইরা দিবা? তাগো আত্মায় কষ্ট পাইব না? বৃদ্ধর কন্ঠস্বরে আক্ষেপ। যারা মইরা গেছে তাগো আবার দুঃখকষ্ট কি? বলে শামসুল ইসলাম সিগারেট ধরাবেন কিনা ভাবলেন। আসতাগফিরুল্লা। বলে বৃদ্ধ ‘সোনাচান’, ‘সোনাচান’ বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। শামসুল ইসলাম চমকে উঠলেন। আম্বিয়া খাতুনের হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ছেলের নামও তো সোনাচান । গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরা একটি দশ-এগারো বছরের শ্যামলামতন ছেলে এল। বৃদ্ধ বললেন, আমার মেয়ের ঘরের নাতিন। চাঁদপুরে থাকে। বেড়াইতে আইছে। তোমার ইসলাম মামারে সালাম কর সোনাচান । কর, সালাম কর। ছেলেটি লজ্জ্বা পেয়ে সরে যায়। শামসুল ইসলাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলেন সোনাচানের বয়েসে তিনি এ গ্রামেই ছিলেন: সংশয়বাদী হয়ে বেড়ে উঠছিলেন। এই ছেলেও কি সংশয়বাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে? নাহ্, বৃদ্ধের কাছে বেশিক্ষণ বসা গেল না। খালি নামাজ-কালামের কথা বলে। তবে তিনি উপযুক্ত দামেই শামসুল ইসলামের বাপদাদার ভিটেমাটি কিনে নেবেন বলে জানালেন। ছেলেরা সব মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করে। শেষ বয়েসে জমি কেনার নেশায় পেয়ে বসেছে বুড়োর। শ্রাবণ দুপুরের কড়া রোদ মাথায় নিয়ে শামসুল ইসলাম বাড়ি ফিরে এলেন। ফেরার পথে খাল পাড়ের ঘাটে কতগুলি নৌকা দেখলেন। তখনই ভয়ঙ্কর চিন্তাটা মাথায় এল। তিনি কেঁপে উঠলেন। ভীষণ অস্থির বোধ করছেন। মোল্লা স্যারের মানসিক পরিবর্তন তাকে আরও বেশি নিঃসঙ্গ করে দেয়। মোল্লা স্যার সংশয়ী ছিলেন, এখন কেমন বিশ্বাসী বনে গেছেন। তা ছাড়া স্যারের অর্থনৈতিক অবস্থা ফিরেছে। পুবপাড়ার মোল্লাবাড়িই তো এখন বিষ্ণুপুরের সবচে ধন্যাঢ্য পরিবার। ৪ রাতে ঘুম আসছিল না । ঘর থেকে বেরিয়ে আবছা অন্ধকারে তিনি খাল পাড়ের ঘাটের কাছে চলে এলেন। আবছা অন্ধকারে নৌকাগুলি স্থির হয়ে আছে। একটায় নৌকায় উঠে দাঁড়িয়ে লগি তুলে নিলেন। ছেলেবেলায় নৌকা বেয়ে কই কই চলে যেতেন ... তখনও বিষ্ণুপুরের বাধটা তৈরি হয়নি ...গ্রামগুলি সব পানির ভিতর দ্বীপের মতন জেগে থাকত। না, এই বয়েসেও তিনি নৌকা বাওয়াও ভুলে যাননি। বাতাসে পচা পাট আর কচুরিপানার গন্ধ। শ্রাবণের রাতের আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। বাতাস শীতল। দূরে শিয়াল ডাকছিল। খালের পাড়ের গাবগাছে রাতচরা পাখির ডানা ঝাপটানি। এসবই অর্থহীন? আর, খালপাড়ের অন্ধকারে ভেসে ওঠে আফরোজার মুখ । খালের শেষে বড় নদীর মুখ: লগি আর ঠাই পায় না। লগিটা রেখে গলুয়ে বসে পড়লেন তিনি। হাতে বৈঠা তুলে নিলেন । আকাশে মেঘ থাকায় নদীর চারপাশ অন্ধকার হয়েছিল: কেবলি আঁষটে গন্ধ আর উথালপাতাল ঠান্ডা বাতাস । অল্প অল্প করে বৃষ্টিও পড়তে শুরু করেছে। তখন থেকে মাথাটা অল্প অল্প টলছিল তার । বৈঠা ফেলে উঠে দাঁড়ালেন। নৌকা টলে উঠল। নৌকার কিনারে দাঁড়িয়ে নৌকাটি উলটিয়ে দিলেন ... ৫ তারপর চোখ খুলে শামসুল ইসলাম দেখেন রাতের আকাশের বিশাল বিস্তার। আকাশে অনেক তারা, অনেক অনেক ঝিকমিকে তারা। নদীর উথালপাথাল বাতাস। আঁষটে গন্ধ। শরীর ভেজা। নদীর পাড়ের কাদায় পড়ে আছেন। আবছা আলোয় দেখেন উঁচু পাড়। মনে পড়ল তার-তখন অল্প অল্প করে বৃষ্টি পড়ছিল। এখন আর বৃষ্টি নেই। শ্রাবণের রাতের আকশটি মেঘশূন্য ।শামসুল ইসলাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার আকাশের দিকে তাকালেন। আকাশে ঝিকমিকে তারা। অজস্র ঝিকমিকে তারা। আর, সেসব তারাদের মাঝখানে আফরোজার মুখ ... সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৫০
false
ij
গল্প_ ও যখন মৃত্যুকে ছোঁবে ___ তখন খুব সিগারেট খেত রঞ্জু । দিনে এই দু-চার প্যাকেট। সিগারেট কেনার পয়সা যোগায় ভূতে; রঞ্জুর বেলাতেও তাই। তাছাড়া ইন্টারটা শেষ করেই ও একটা টিউশ্যনি করত। উকিলপাড়ায় সন্দীপের ছোট বোন সন্ধ্যাকে পড়াত রঞ্জু। মাস গেলে মাসিমা ওর হাতে যা গুঁজে দিতেন, তাতেই জুটে যেত গোল্ড লিফ কেনার পয়সা। সেই সন্ধ্যার ইচ্ছেতেই সিগারেট ছেড়েছিল রঞ্জু। সন্ধ্যা আবার ছিল রঞ্জুর মেজ বোন মাধুরীর বান্ধবী। মাঝেমাঝে বাড়িতে আসত, তখন কথাবার্তা হত। সন্ধ্যা কী ভাবে যেন তখন জেনে গিয়েছিল ধনে পাতা দিয়ে পাবদা মাছ রঞ্জুর বড় প্রিয়। তাই একদিন বাড়ি থেকে রেঁধে এনেছিল । সন্ধ্যার সঙ্গে আড়ালে কথা বলার ছুঁতো খুঁজত রঞ্জু। মাধুরীর জন্য পারত না, কেননা, সন্ধ্যা ছিল ফুটফুটে; ফরসা; মাধুরী ওকে চোখে চোখে রাখত। পড়ানোর সময় চোখে চোখে রাখতেন সরমা মাসিমা। অসহ্য লাগত রঞ্জুর । অথচ, তখন ছিল সুরম্য দিন আর সুরম্য রাত । রবীন্দ্রসংগীতময়। বৃষ্টির দিনে জানালার ফাঁক গলে মেঘনা আর ধলেশ্বরী নদী থেকে ভিজে হাওয়া আসত। ঘরে বসে চোখ বুজে থেকে আমোদ বোধ করত রঞ্জু; কিংবা ভোর-ভোর সময়ে মেঘনা নদীটি পেরিয়ে গজারিয়ায় চলে যেত বন্ধু তপনের বাড়ি। দিনভর সাহাবাড়িতে চলত হুল্লোড়। রানী বউদির হাতে রান্না অমৃতের মতো লাগত। সন্ধ্যার মুখে খালপাড়ের ডুমুর গাছের নিচে বসে কিঞ্চিৎ তরল আগুন সেবন। তারপর রাত করে নদী পেরিয়ে বাড়ি ফেরা। হয়তো তখন নদীর বুকে ও চরাচরে ধবধবে জ্যোস্না ফুটে আছে। তখন শরীর কী অসম্ভব হালকা-হালকা লাগত। মনে হয় নদীর ওপর দিয়ে একটা সাদা সারস পাখির মতন উড়ে যাচ্ছে সে ... তো, দুম করে একদিন বিয়ে ঠিক হয়ে গেল সন্ধ্যার। সন্দীপের মুখে সেই দুঃসংবাদ শোনার পর গভীর এক শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল রঞ্জু। ভিতরে ভিতরে ভীষন ফুঁসছিল ও। তা হলে কেন ধনেপাতা দিয়ে পাবদা মাছ রেঁধে এনেছিল ও? এই প্রশ্নের উত্তরটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিদারুন শোকের ভিতরে আবার সিগারেট ধরল সে। সমস্ত শুভবোধ নষ্ট করার জন্য নারায়নগঞ্জের টান বাজারে গেল এক সন্ধ্যায় । শিউলীর মুখটি দেখতে অবিকল সন্ধ্যার মতন ছিল বলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত ছিটকে বেরিয়ে এল সেই চারতলা দালানের শুধুমাত্র আস্তর-করা ঘর থেকে। তখন শীতকাল। একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে অনেক রাত অবধি গায়ে শীতের কামড় খেয়ে-খেয়ে নিঝুম আর খড়িকাঠ পোড়ানোর গন্ধে ভরা ধোঁওয়াময় অলিগলি ঘুরে বেড়াল সে শেষ রাত অবধি। তারপর ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে এসেছিল। কিছুই ভালো লাগত না সেই সময়- এমনকী তপনের কাছে গজারিয়ায় যেতেও। তপন। ঠিক সেই সময়টায় মেঘনায় ডুবে মরল । গজারিয়ার ওরা পিকনিকের আয়োজন করেছিল। রঞ্জু যেতে চায়নি, ও তখন শোকার্ত পাথর, দিনরাত ঘরে বসে থাকত; বেরুত না, আর খুব সিগারেট খেত। তপনই ওকে জোর করে নিয়ে গিয়ে নৌকায় তুলেছিল। বলেছিল, চল, ভালো লাগবে। ফরিদা থাকবে। ফরিদা? আরে, মাকসুদের বোন। তুলারামে পড়ে, ইন্টার। এখন চল তো। মধ্য-মাঘের সেই দিনটি ছিল রোদে ভরা। সবাই ছৈয়ের ওপর, পাটাতনের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছিল। সবাই হাসিখুশিই ছিল, চোখমুখগুলি ঝলমল করছিল। জোরে জোরে গান বাজছিল: কোন্ বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই ... নৌকায় কী কারণে ফরিদা বিষন্ন হয়ে ছিল। মেয়েটি বিষন্ন চোখে নদী দেখছিল। আকাশ দেখছিল। ওকে অদ্ভূত সুন্দর দেখাচ্ছিল। ও কারও দিকে তাকাচ্ছিল না। রঞ্জু হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল। তারপর নৌকা যখন অকস্মাৎ বাতাসের টানে উলটে গেল-তখন রঞ্জুর সমস্ত শরীরে নিমিষেই মেঘনার অথৈ পানিতে ধুয়ে গিয়েছিল। তবে ও তেমন আতংকগ্রস্থ হয়ে ওঠেনি। ও তপনকে খুঁজছিল। তপনকে কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। খুব কাছ থেকে নদীর গায়ের আঁষটে গন্ধ পাচ্ছিল রঞ্জু । সেই সঙ্গে অজস্র জলের কলকল ধ্বনি ... ও খাবি খাচ্ছিল। এত পানি! যেন মেঘনা-ধলেশ্বরীতে অকালে ঢল নেমেছে। তারপর কীভাবে যেন রঞ্জু পাড়ে উঠতে পারল। পিছল পা, আর খাড়া, বালি-বালি; আর নির্জন আর তীব্র বাতাসের গোঙানি; কিন্তু তার আগেই শক্ত ছৈয়ের আঘাত ওর মাথার তালুতে লেগেছিল বলেই এখন সে ব্যথা টের পেয়ে কঁকিয়ে উঠল... সেই দূর্ঘটনার পর থেকেই এসব অসহায় ছবি বারবার ফিরে ফিরে আসছিল বলেই ঘন ঘন সিগারেট টানতে থাকে সে। আজকাল খুব কাশি হয় তার, তাতে অল্প রক্তের মিশেল; জ্বরজ্বর ভাব। বিশেষ করে সন্ধ্যারাতের পর থেকে। তপনের মৃত্যুর পর তপন ও সন্ধ্যার ভূত দুটো প্রায়ই একসঙ্গে ওর ওপর হানা দিতে থাকে। প্রিয় শহরটি দিনদিন হয়ে উঠছিল বিষময়। ভূত দুটির জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে শেষমেশ ঢাকা শহরে পালিয়ে চলে এল রঞ্জু। অথচ ও একদিন সন্ধ্যাকে বলেছিল: বৃষ্টির দিনে মেঘনা আর ধলেশ্বরী নদীর বাতাস আমার ভালো লাগে সন্ধ্যা। আমি এ শহর ছেড়ে কোথাও যাব না। এমনকী ঢাকা শহরেও না। প্রথম-প্রথম শহরটার ভিড়ের মধ্যে মিশে রইল গুম হয়ে। তারপর শোকটোক সামলে পড়াশোনা শেষ করল সে। তারপর চাকরিতে ঢুকে পড়ল এক সময়। রঞ্জুকে যে জায়গাটায় কাজ করতে হয় সেটি একটি সরকারী গুদাম। মতিঝিলে। সরকারী ব্যাঙ্কের ঠিক পিছনের গলিতে। মনে হয় মাটি খুদে ঘরগুলি তোলা হয়েছে পাকিস্তানি আমলে। অন্ধকার-অন্ধকার ঘর। চারদিকে ধূলিমলিন তাক আর তাক। তাতে রাজ্যের উইয়ে-ধরা পুরনো দিনের নথিপত্র। বিকেল অবধি বসে থেকে সে সব নথি ঘাটতে হয় রঞ্জুকে। এই অফিসের অন্যদেরও তাই করতে হয়। হাবিবুর রহমান খান মজলিস, উত্তমকুমার সাহা, মোখলেসুর রহমান মানিক ও গীতারানী পুরকায়স্থ বিকেল অবধি বসে থেকে ঘন ঘন চা খেতে খেতে পুরনো নথিপত্র ঘাঁটে। ওপাশের টেবিলের বিকাশকেও তাই করতে হয়। এই ডিপার্টমেন্টে সদ্য জয়েন করেছ সে । ফরসা হাসিখুশি আর আলাপি স্মার্ট যুবক। বেশ লম্বা। ঘন কোঁকড়া চুল। এরই মধ্যে সবার সঙ্গে বেশ খাতির হয়ে গেছে তার। রঞ্জুর সঙ্গেও। আরে আপনারা মুন্সিগঞ্জের? আগে বলবেন তো। আমার স্ত্রীও তো ওখানকারই মেয়ে। তাই? বলে ম্লান হেসেছিল রঞ্জু। রঞ্জু জানে বিকাশ সন্ধ্যার বর। নতুন বউয়ের ছবি এনে অফিসের সবাইকে দেখিয়েছিল বিকাশ । সন্ধ্যা সুন্দরী, হয়তো এই কারণেই। তখন সে ছবি দেখে ভিতরে ভিতরে চমকে উঠলেও ম্লান হেসেছিল রঞ্জু। বিকাশ-এর জানার কথা না যে তার বউয়ের সঙ্গে রঞ্জুর এক সময়ে রিলেশন ছিল। সন্ধ্যার সঙ্গে সর্ম্পকটা অবশ্য তেমন জোর ভিতের ওপর সেভাবে কখনোই দাঁড়ায়ানি, তবে সন্ধ্যার বিয়ের খবর শুনে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিল রঞ্জু। তার আগেই অবশ্য আভাসে-ইঙ্গিতে বলেছিল সন্ধ্যা- ছেলেদের সিগারেট খাওয়া ওর পছন্দ না। তারপর থেকেই (খুব খারাপ লাগলেও) সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিল রঞ্জু। সেই সময়ে সন্ধ্যা একদিন বলেছিল, আপনি বিদেশে যাওয়ার জন্য ট্রাই করেন না কেন রঞ্জু ভাই? রঞ্জু ম্লান হেসে বলেছিল, এমনি। ও বলতে পারেনি: বৃষ্টির দিনে মেঘনা আর ধলেশ্বরী নদীর বাতাস আমার ভালো লাগে সন্ধ্যা। আমি এ শহর ছেড়ে কোথাও যাব না। এমনকী ঢাকা শহরেও না। সন্ধ্যার মুখচোখে বিদেশ সর্ম্পকে কেমন এক ধরনের মায়াঘোর মিশে ছিল। ওর কেমন এক বোন দুবাই থাকত। তার কথা খুব বলত সন্ধ্যা। সন্ধ্যার সেই ঘোর মাধুরীতেও সংক্রামিত হয়েছিল। মাধুরী এখন কানাডায়। তপনও সে সময়টায় সাইপ্রাস যাওয়ার খুব জোর চেষ্টা করছিল। তপনের সঙ্গে ঢাকায় এসে পাসপোর্ট অফিসের দালালদের হাতে নিদারুন হয়রান হতে হয়েছিল রঞ্জুকে ... বিকাশরা থাকে টিপু সুলতান রোডে । ওখানে ওদের ঠাকুর্দার আমলের পৈত্রিক বাড়ি। বিকাশের ঠাকুর্দার ছিল স্বর্নালঙ্কারের ব্যবসায় । বাড়িটি তিনিই নাকি তুলেছিলেন। এসবই রঞ্জুকে বলেছে বিকাশ। রঞ্জু জানে; বিকাশ একদিন ওকে সেই বাড়িতে নিয়ে যাবে। কিন্তু, রঞ্জু কি যাবে?। যাবে। কারণ, আজকাল তার খুব কাশি হয়, তাতে অল্পস্বল্প রক্তের মিশেল থাকে; সেই সঙ্গে জ্বরজ্বর ভাব; বিশেষ করে সন্ধ্যারাতের পর। সন্ধ্যার একটি শিশু সন্তান হয়েছে । সন্ধ্যার মুখটি না-হোক; রঞ্জু ওই শিশুর মুখখানাই না-হয় দেখতে যাবে। বিকাশদের গোপীবাগের হলুদ রঙের দোতলা বাড়ি, পুরনো গেইট, ভিতরে সামান্য বাগান, একটা কালো রঙের নষ্ট ভক্সওয়াগেন গাড়ি, একতলায় চওড়া বারান্দা, তারপর চওড়া সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়? বেল বাজানোর পর দরজা কি সন্ধ্যা খুলে দেবে? না খুলুক। রঞ্জু ড্রইংরুমে বসবে। ড্রইংরুমটি বেশ বড়। তখন সন্ধ্যা বলে টিউব লাইট জ্বলে থাকবে। দেওয়ালটি হলুদ রঙের, তাতে হরিণের একটি স্টাফ-করা কাটা মাথা ও ঠাকুর শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের একটি পুরনো সাদাকালো ছবি ঝুলে থাকবে। সিলিং-এ সবুজ রং-করা কড়িকাঠ। কালো রঙের সোফাগুলি ঢাউস । ওপাশে একটা ২৯ ইঞ্চি সিঙ্গার টিভি থাকবে। টিভিটা অন্ করা। তবে সাউন্ড কমানো। টিভির ঠিক ওপরে দেওয়ালের সঙ্গে সাঁটা আইফেল টাওয়ারের বিশাল একটি পোষ্টার । রঞ্জুকে বসিয়ে ভিতরে চলে যাবে বিকাশ । রঞ্জু একা বসার ঘরে বসে থাকবে। টিভির ওপর চোখ রাখবে। এটিএন বাংলার খবর। ইংরেজি। বেগম খালেদা জিয়াকে কোন্ এক সৌদি প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাবে। কান পেতে ও ঘরে শিশুর কান্না শোনার চেষ্টা করবে রঞ্জু। অথচ শিশুর কান্নার শব্দ শোনা যাবে না। মুহূতেই ঘরটায় কেমন আতরের গন্ধ ছড়াবে। মরা বাড়ির মত। মনে হচ্ছে কাকে যেন কবরে শুইয়ে দিয়ে এইমাত্র সবাই ফিরেছে গোরস্থান থেকে। সেদিন সন্ধ্যায় আর জ্বরটর আসবে না রঞ্জুর। তেমন দূর্বলও লাগবে না। তেমন কাশিও হবে না। খানিক বাদে পোশাক বদলে বিকাশ আবার আসবে। সোফার ওপর বসবে, ওর মুখোমুখি, বসে সিগারেট ধরাবে, তারপর সরকারের সা¤প্রতিক ব্যর্থতার প্রমানগুলি দিতে থাকবে। আশ্চর্য! বিকাশ বাড়িতে সিগারেট খায়! রঞ্জুর সিগারেট খাওয়া পছন্দ করত না সন্ধ্যা। মাধুরীর মুখে শুনেছিল রঞ্জু; সন্ধ্যা ওর হবু বরের জন্য দুটি শর্ত স্থির করেছিল। এক. সিগারেট খাওয়া চলবে না। দুই. বিদেশ যেতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকা না-হোক, মালয়েশিয়ায় হলেও চলবে। রঞ্জু আইফেল টাওয়ারের পোষ্টারের দিকে তাকিয়ে ভাববে: বিকাশ কি কখনও বিদেশ গিয়েছে? একজন অল্পবয়েসী ঝি এসে এক ট্রে চানাচুর আর পিরিচ-ঢাকা দুকাপ চা রেখে যাবে। রঞ্জু তখন ভাববে: সন্ধ্যা কি তাহলে বাড়ি নেই? মুন্সিগঞ্জ গেছে? বাড়িতে বউ নেই বলেই রঞ্জুকে ডেকে এনেছে। অদ্ভুত লোক তো এই বিকাশ! না। রঞ্জুর অনুমান মিথ্যে প্রমান করে সন্ধ্যা আসবে। সন্ধ্যার ভরাট ফরসা শরীর; তাতেমধুর আলস্য আর গভীর ক্লান্তির ছাপ। দীঘল কালো চুল আর পান পাতার মতন মিষ্টি মুখ; তাতে আয়ত দুটি চোখ। সন্ধ্যা ঘরে ঢুকতেই আতরের গন্ধটা আর পাবে না রঞ্জু। তার বদলে বেলি ফুলের এক ধরনের তীব্র গন্ধ ভরে উঠবে সারা ঘর। না, রঞ্জুকে দেখে চমকে উঠবে না সন্ধ্যা। ওকে চেনার চেষ্টা করবে না। রঞ্জুও না। চোখমুখে ব্যথার ছাপ ফুটে উঠলেও সন্ধ্যা ঠিকই সামলে নেবে। ধীরেসুস্থ্যে বসবে, সোফায়, মুখোমুখি, কথা বলবে। আপনারা কি ঢাকাতেই থাকেন? এই ভয়ঙ্কর প্রশ্নটি করবে না সন্ধ্যা। তার চে বরং বলবে- আপনার কথা ওর মুখে অনেক শুনেছি। আপনি নাকি এখনও বিয়ে করেননি! কেন? রঞ্জু ম্লান হাসবে। সন্ধ্যাকে দুঃখ দিতেই ফস করে সিগারেট ধরাবে। তারপর সন্ধ্যার দুটি চোখের ওপর ওর দুটি শীতল চোখ রাখবে। সন্ধ্যার মুখটি কেমন ফ্যাকাশে হয়ে উঠবে। নার্ভাস ভাবটা কাটাতেই সন্ধ্যা চিৎকার করে ঝিকে ডাকবে। দরজার চৌকাঠে ঝি এলে বলবে, যা, শ্রমণাকে নিয়ে আয় বেলি। ঝি চলে গেলে রঞ্জুর দিকে তাকিয়ে সন্ধ্যা বলবে, শ্রমণা আমার মেয়ে। বিয়ের পাঁচ বছর পরে হলো। কত পিরফকির করলাম;একবার তো ইন্ডিয়া গেলাম। চেন্নাই। ওহ্। একটু পর টিউব লাইটের আলোয় দেখা যাবে কাথা মুড়নো এক শিশু, ন্যাড়া, ছোট্ট ফরসা মুখ, চোখে কাজল, কপালে কাজলের টিপ। পিটপিট করে চেয়ে থাকবে রঞ্জুর দিকে। তা হলে এই মুখটি দেখার জন্য আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম? কথাটা ভাবতেই রঞ্জুর সমস্ত শরীরে নিমিষেই কোত্থেকে মেঘনার ঘোলা পানির ছিটে লাগবে। যেমন এক শীতে ওর সমস্ত শরীর মুহূর্তেই মেঘনার ঘোলা পানিতে ধুয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে ও অজস্র জলের কলকল ধ্বনি শুনতে পাচ্ছিল। আর খাবি খাচ্ছিল। এত পানি! তবে ও তেমন আতংকগ্রস্থ হয়ে ওঠেনি। ও তপনকে খুঁজছিল। ওকে কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। খুব কাছ থেকে নদীর গায়ের আঁষটে গন্ধ পাচ্ছিল রঞ্জু । তারপর কীভাবে যেন রঞ্জু পাড়ে উঠতে পারল। পিছল পা, আর খাড়া, বালি-বালি; আর নির্জন আর তীব্র বাতাসের গোঙানি; কিন্তু তার আগেই শক্ত ছৈয়ের আঘাত ওর মাথার তালুতে লেগেছিল বলেই এখন সে ব্যথা টের পেয়ে ককিঁয়ে উঠল... শিশুটিকে নিয়ে ঝি চলে যেতেই সন্ধ্যা বলবে, ভাই কিন্তু আজ রাতে আমাদের সঙ্গে খেয়ে যাবেন। আজ না, আরেক দিন। রঞ্জু কোনওমতে বলতে পারবে। সন্ধ্যা কেমন আদুরে গলায় বলবে, আমি কিন্তু রাঁধব। তাতে কী। না, না। অন্যদিন। রঞ্জু হাত নেড়ে বলবে। সন্ধ্যা ওর স্বামীর দিকে চেয়ে বলবে, ও আজ পাবদা মাছ এনেছে। ধনে পাতা দিয়ে রাঁধব। না। রঞ্জু ও বাড়িতে কিছুতেই খাবে না। ও বড় অভিমানী। ও আরও কিছুক্ষন থেকে -এটা-ওটা নিয়ে আলোচনা সেরে- বিদায় নিয়ে নিচে নেমে আসবে। রঞ্জু যখন দরজার কাছে, ঠিক তক্ষুনি, পাশের ঘর থেকে সন্ধ্যার শিশুটির চিৎকার শুনতে পাবে। তারপর ও দ্রুত পায়ে গলিমুখে এসে থামবে। সিগারেট ধরাবে। এখন কোথায় যাওয়া যায়? হঠাৎই ওর মনে পড়ল: দৈনিকবাংলার মোড়ে একটা হোটেলে পাবদা মাছ রাধে ভালো। ও নিশ্চিন্ত হয়ে সেদিকে হাঁটতে থাকবে। আজকাল রাতে কিছু খেলে বমি হয়ে যায়। হয় হোক। বমি তো কুকুরের খাদ্য। ভাতের হোটেলের সামনে এসে বিভ্রান্ত বোধ করবে রঞ্জু। আমি এখানে কেন এসেছি? আমি এখানে কেন এসেছি? আমি এখানে কেন এসেছি? ও ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারে না। তারপর মতিঝিল-গুলিস্থান-পুরানা পল্টন ইত্যাদির গলি নিঝুম গলি ধরে বহুক্ষণ হাঁটবে; কী এক ঘোরের মধ্যে; সিগারেট টানতে টানতে। পেট্রোলের গন্ধের ভিতর রিকশার টুংটাং শব্দ শুনতে শুনতে, ট্রাকের হর্ণের আওয়াজের ভিতর, ভিখিরি শিশুর কান্না দেখেশুনে। ওর মনে হবে শিশুটি সন্ধ্যার ...একবার মনে হলো পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রিক্সায় তপন বসেছিল। একটা মেয়ের পাশে। মনে হলো মাধুরী। তপন কি মাধুরীকে ভালোবাসত? মাধুরী এখন কোথায়? শেষমেশ ও যখন রামপুরার মেসে এসে পৌঁছবে-তখন রাত প্রায় ১টা। ছোট্ট এক টুকরো মাটির উঠান ঘিরে টিনসেডের ঘুমন্ত ঘরবাড়ি; ছায়াছায়া, নিশ্চুপ কলাগাছ, নিথর টিউবওয়েল; ম্লান জ্যোস্না পড়ে থাকবে উঠানের ওপর, ওপাশের দেওয়ালের ওপর। সে উবু হয়ে বসে হরহর শব্দে বমি করতে থাকবে। সেই কুচ্ছিৎ শব্দে যদিও কারও ঘুম ভাঙ্গবে না। ছড়ানো বমির ওপর জ্যোস্নার আলো প্রতিফলিত হয়ে উঠবে হলুদ। সে চেয়ে চেয়ে হলুদ দেখবে। ম্লান হাসবে। তারপর একটা কুকুর আসবে উঠানে। তার মনে হবে কুকুরটা কুষ্টরোগগ্রস্থ; কারণ, সে এই সময়ে বমি খেতে আসে। ও এই সময়ে ফেরে, উবু হয়ে উঠানে বসে, তারপর হরহর করে বমি করে। কখনও-বা তপন এসে ওর হাত ধরে টান দেয়; নদীর আর্বতে তীব্র টেনে নিয়ে যেতে চায় ...ও বাধ দেয় না ...তখন ওর কুকুরটিকে বড় আপন মনে হয় ... দিন কয়েক বাদে অফিসে গেলে বিকাশ ওর সামনে এসে দাঁড়াবে। কী ব্যাপার? এই কদিন ছিলেন কই? আর ...আর এ কী চেহারা হয়েছে আপনার? সে ম্লান হাসবে। এই নিন। আপনাকে দেব বলে তিনদিন ধরে পকেটে নিয়ে ঘুরছি। বলে ওর দিকে এক প্যাকেট বেনসন এগিয়ে দেবে বিকাশ। রঞ্জু খানিক বিস্মিত। সিগারেট ... কেন? বিকাশ হেসে বলবে, এই প্যাকেটটা আমার বউ আপনাকে দিতে বলেছে। রঞ্জু কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে মৃত্যুকে স্পর্শ করবে। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৪১
false
mk
কূটনৈতিক চাপে বিএনপি! বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ নতুন নয়। তারা সময় সুযোগ বুঝে প্রায়ই আমাদের রাজনৈতিক বিষয়ে পরামর্শের ছলে নানা কথা বলে থাকেন। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও কম যায় না। তারাও সুযোগ পেলে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তাদের স্বার্থ নিয়ে ধর্ণা দেন। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসে, এ প্রবণতা ততই বাড়ে। বর্তমানে বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিশেষ করে বিরোধী দলের হরতালের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সহিংসতা, চলন্ত গাড়িতে বোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ নানা কর্মকা-ে বেশ নাখোশ মনোভাব প্রকাশ করেছেন।কিছু দিন আগেও বিএনপির প্রতি ঢাকাস্থ একাধিক বিদেশি মিশনের দুর্বলতা ছিল। বিএনপিও মনে করেছিল, বিদেশি কূটনীতিকরাই তাদের ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে আসবে। কিন্তু জোট সঙ্গীদের নিয়ে অগোছাল কর্মসূচি দলটির প্রতি কূটনীতিকদের সে মনোভাব বদলে দিয়েছে। ক্রমেই দলটির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন তারা।বিদেশি দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট নিরসনে রাজনীতিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা চান কূটনীতিকরা। মতবিরোধ থাকলেও কোনোভাবেই তা সংঘাতে রূপ নেবে নাÑএমনটাই প্রত্যাশা তাদের। সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও করে বিদেশি মিশনগুলো। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। হরতালের মতো সহিংস কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এ কর্মসূচির কারণে কূটনৈতিক মহলে এক রকম কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তারা।এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, জাপান, জার্মানিসহ বিদেশি মিশনগুলো ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছে। হরতালের নামে অরাজকতা ও নিরীহ মানুষের প্রাণহানিতে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে তারা।এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বলেন, ‘আমরা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের পরিবর্তে সংঘাতময় কর্মকা- দেখছি। আমি এতে হতাশ।’ তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা পূরণের পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে কেবলমাত্র একটি কার্যকর সংলাপের মধ্য দিয়ে।দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুন। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের জনগণের মতো আমিও উদ্বিগ্ন। আশা করি, প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বাস্তবধর্মী উদ্যোগ নেবে। একই সঙ্গে তারা আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করে জনগণের আস্থাঅর্জন করবে।’হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার বলে মনে করেন পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর একাধিক কূটনীতিক। তবে হরতালের নামে নৈরাজ্য কোনোভাবেই সমর্থন করেন না তারা। তাদের মতে, জনগণের অধিকার রক্ষার কথা বলে রাজনীতিবিদরা দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছেন। প্রধান বিরোধী দলকে সংঘাত পরিহার করে আলোচনায় বসতে একাধিকবার আহ্বান জানানো হলেও সহিংসহরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে তারা। এ ধরনের কর্মসূচিতে রীতিমতো হতাশ কূটনীতিকরা। এ কর্মসূচির কারণেই বিএনপির পক্ষ নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারছেন না তারা। সব মিলিয়ে দলটির প্রতি কূটনীতিকদের এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।ঢাকায় কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন বলেন, ‘কানাডা বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলা, গাড়িতে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। সহিংসতা বন্ধ ও চলমান সংকট শান্তিপূর্ণভাবে নিরসনে আমরা সব রাজনৈতিক দলের প্রতি অব্যাহতভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছি।’সূত্রমতে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে স্থিতিশীল পরিবেশ দেখতে চাইছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় অংশীদারও হতে চান তারা। বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ রক্ষাও একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক মহলে অনাস্থা কুড়াচ্ছে প্রধান বিরোধী দল। ফলে বিদেশি মিশনগুলো দলটির বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গন ও চলমান ঘটনাপ্রবাহের দিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখছেন তারা। একটি বিষয় কূটনীতিকরা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন। আর তা হলো সমস্যার সমাধান বাংলাদেশকেই করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ সমাধান চাপিয়ে দেবে না। ফলে বিদেশি কূটনীতিকদের পরবর্তী করণীয় কী হবে তা নির্ভর করছে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনো দিকে মোড় নেয় তার ওপর।সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, শান্তিপূর্ণ হরতালের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকা- ও নিরীহ মানুষ মারার যে সহিংস কর্মসূচি ইদানীং চলছে তাতে বিরোধী দল বিএনপি’র প্রতি কূটনীতিকদের আস্থা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সে কারণে বিএনপি এখন গভীর কূটনৈতিক চাপে আক্রান্ত বলে স্বীকারও করেছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের উদারপন্থি এক নেতা।
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০২৯ চোখেমুখে মাঝে মাঝে অন্ধকার দেখি। আজকে ভোরে বাথরুমে গিয়ে যেমন দেখলাম। ঘোর কেটে যাবার পর বুঝলাম, ঐ পুঞ্জীভূত আঁধার আর কিছু নয়, আমারই কেলোবদন, আয়নায়। আয়না ছাড়াও অন্ধকার দেখছি বাকিটা সময়। ব্যবস্থাকৌশল নামের এক কোর্স নিয়ে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছিলাম গত কয়েক হপ্তা ধরে। প্রফেসর দুর্ধর্ষ স্মার্ট লোক, দারুণ গুছিয়ে কথা বলেন, আর অল্প কথা বলে লোকজনকে ফ্যাসাদে ফেলে দেন। গত হপ্তায় এক মেইল পেয়ে রীতিমতো খাবি খাওয়ার দশা। গ্রুপের বাকি দুইজন পারলে গলাগলি করে কাঁদে। এদিকে ইন্টারনেটের সংযোগের ছিন্নমূল অবস্থা, প্রফেসর সাহেবকে মেইল লিখে সেন্ড করতে গিয়ে দেখি নেট গায়েব। ছোটো আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার পুলে। সেখানে বসে ওলাফকে ফোন করে জানালাম, আমাদের স্ট্র্যাটেজি এখন মারমুখো হওয়া উচিত। ওলাফেরও ঘরে নেট নাই, বউ থাকে ড্যুসেলডর্ফ, সে-ও মুখ গোমড়া করে থাকে আমার মতো, সব শুনে সে বললো, উঁহু, আমাদের একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতে হবে। এভাবে ... বলে সে শুরু করলো গড়গড়িয়ে। ওলাফের ড্রাফট শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, শালা বাংলায় লিখতে পারলে সচলে অতিথি লেখক হিসেবে পোস্ট দিতে বলতাম। ঝটপট টাইপ করে সেটা পাঠিয়ে দিলাম প্রিসের কাছে, যদিও ততক্ষণে ব্যাটা অফিস ছেড়ে বেরিয়ে গেছে নিঃসন্দেহে। আমাদের খসড়া করা সিস্টেম ঠিক সুবোধ আচরণ করছিলো না, ভুলটা কোথায় সেটাও বার করতে পারছিলাম না, তিনজন মিলে মাথা খাটিয়েও না। শেষমেশ গত হপ্তায় প্রবল সর্দি আর মাথাব্যথা নিয়েও আবার নতুন করে ডিজাইন করলাম সবকিছু। দু'টো গুরুতর ভুল করেছিলাম, নতুন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে গিয়ে সেগুলো চিহ্নিত করা গেলো অবশেষে। এবার সিস্টেম রান করে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। শেষমেশ মিলেছে! পরদিন ক্লাসে গিয়ে শুনি ফতোয়া, প্রিস তাঁর এক সহকর্মীর কাছে আমাদের সিস্টেম দেখানোর হুকুম করেছেন। সেই ব্যাটাও হুবহু প্রিসের মতোই, ঠান্ডা, গুছিয়ে কথা বলে, আর একই রকম চালু। আমাদের ঈস্টার দ্বীপের সিস্টেম মনোযোগ দিয়ে দেখে আর শুনে নতুন এক গলদ বার করে বসলো ব্যাটা। কপাল আর কাকে বলে! তবে আজ একদম শেষ দেখে ছাড়া হয়েছে ব্যাপারটার, একটু পরই কাজ শুরু করবো প্রেজেন্টেশন নিয়ে। শুক্কুরবার ছিলো আমার আরেক সেমিনারের চরম-উপস্থাপনা, সেটার জন্যেও দৌড়ুতে হয়েছে প্রচুর। প্রফেসর শ্মিডের ডকটোরান্ড জন জিভার্স রীতিমতো মাটির মানুষ, সে মাঝখানে একদিন অন্য এক কোর্সের মাঝে এসে আমাকে জানিয়ে গেলো, এই শুক্রবার প্রেজেন্টেশনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে, আমি যেন প্রস্তুত থাকি। বিনামেঘে বজ্রপাত খেয়ে খেয়ে এখন মনে হচ্ছে নিয়তি আমাকে প্লাগ-অ্যান্ড-প্লে পদ্ধতিতে মেরে চলছে অনবরত। বহুকষ্টে বললাম, ঠিক আছে, কোন ব্যাপারই না। বৃহস্পতিবার ধুঁকতে ধুঁকতে কোনমতে জিনিসপত্র নিয়ে গেলাম জনের কাছে। সে দারুণ খুঁতখুঁতে লোক, অনেকগুলি খুঁত বার করে শুধরে দিলো অনেক কিছু। ওদিকে বাংলাদেশের বায়ুশক্তি সম্ভাবনা নিয়ে একটা উপস্থাপনা করতে হবে আরেক কোর্সে। সেটার খসড়া গত হপ্তায় জমা দেয়ার কথা ছিলো, দেয়া হয়নি। কী যে গেরো! গতকাল বাড়িতে নেটের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনমতে করলাম কিছু, এদিকে আজ সকালে একটা পরীক্ষা আর তার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবার পালা, সেগুলোও জমে আছে ... সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিলো ... মনে হচ্ছিলো ... খারাপ খারাপ কথা মনে হচ্ছিলো আর কী। যাই হোক, সকালে পরীক্ষা দিতে গেছি দশমিনিট দেরি করে। ভোরে উঠে অ্যাসাইনমেন্টের বাকি অংশ শেষ করতে করতে হঠাৎ দেখি সাতটা সাতান্ন বাজে। আবারও বজ্রপাত। কোনমতে প্যান্ট পরে চোঁচাঁ করে দৌড় মারলাম। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে দেখি ষ্টেফি রাস্তার ওপর, হেলতে দুলতে যাচ্ছে। ওকে বললাম, সময় থাকতে দৌড়াও! অন্য লোকের বাড়ির পেছনে ছুটতে ছুটতে শর্টকাট দিচ্ছি, কোত্থেকে এক মহিলা দুইটা বাঘের মতো কুকুর নিয়ে হাজির। কুকুর অপরিচিত ছুটন্ত মানুষ পছন্দ করে না, দুই দুইটা আদমসন্তানকে দৌড়াতে দেখে তারা পাড়া কাঁপিয়ে হুঙ্কার ছেড়ে তেড়ে এলো। কপাল ভালো মহিলার গায়ে জোর ছিলো, বেল্ট টেনে ধরে রেখে আমাদের জান বাঁচিয়ে দিলো শেষ পর্যন্ত। পরীক্ষা দিতে গিয়েও আরেক মুশকিল, ব্রেন্ট দারুণ রসিক লোক, সে একটু পর পর এক একটা রসিকতা করে আর সবাই হেসে কুটিপাটি। আমার কাছে এসে সে খাতা খুঁটিয়ে দেখে এক জায়গায় হাত রেখে সে বললো, এটা কী লিখেছো? আমি থতমত খেয়ে বললাম, আকুমুলিয়ের্ট! সে হুমহাম শব্দ করে বললো, অঙ্কটা নিয়ে সমস্যা নাকি, সাহায্য করবো? আমি সানন্দে বললাম, হ্যাঁ করেন! তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র ও তরঙ্গ কুইজে প্রফেসর মতিনের আগে বা পরে কোন শিক্ষক আমাকে পরীক্ষায় সাহায্য করেনি, আজকে ব্রেন্ট সেই তালিকায় নাম লেখালো। একটু পরে দেখলাম, সবারই ঐ একই জায়গায় সমস্যা, মারিয়েনকেও গিয়ে অঙ্ক কষে দিয়ে আসছে ব্রেন্ট। মারিয়েন অবশ্য হিন্ট পেয়েও খুশি না, সে দাঁত কেলিয়ে সেক্সি হাসি দিয়ে বললো, ভাস ডান? তারপর কী? ব্রেন্ট দাঁত খিঁচিয়ে বললো, ভাস ডান? আজকালকার ছেরিগুলি চায় কী? ভাস ডান! মারিয়েনের পাশে বসা আরেক ছেমরি, সে দাবি জানালো, যেহেতু এক্সপেরিমেন্ট গ্রুপে করা হয়েছে, পরীক্ষাও গ্রুপে দেয়ার সুযোগ দেয়া হোক! ব্রেন্ট বললো, জেগে ওঠো! দুই ছোকরা খুব আলোচনা করে পরীক্ষা দিচ্ছিলো, ব্রেন্ট গিয়ে হানা দিয়ে বললো, হাতের লেখা ভালো হলে চলবে না! হাতের লেখা খারাপ হতে হবে, যাতে তোমার পড়শী তোমারটা পড়তে না পারে! পরীক্ষা শেষ করে এসে প্রেজেন্টেশনের বাকি কাজ শেষ করলাম, ভাগ্য ভালো নেট সংযোগ ছিলো। যে কথা না বললেই নয়, তা হচ্ছে, এই উপস্থাপনায় দুই সচল সদস্য দ্রোহী আর তানভীর অপরিমেয় উপকার করেছেন কিছু জিনিস যুগিয়ে দিয়ে। প্রেজেন্টেশন বেশ ভালো হয়েছে, এর জন্যে তাঁরাই ধন্যবাদার্হ। পাশাপাশি সুখের খবর হচ্ছে, ঝড় নিয়ে তানভীর শুরু করতে যাচ্ছেন তাঁর জমজমাট সিরিজ "তানভীর-তুফান ভাই ভাই!" এর আংরেজি সংস্করণ আমি মোটামুটি আঁতিপাঁতি করেই পড়েছি, বাংলাটাও আশা করি দমকা ও ঝোড়ো ধরনের সুখপাঠ্য হবে। বিষ্যুদবারে ঈস্টার দ্বীপের ওপর বক্তৃতা শেষ হলে আপাতত বাঁচি। কয়েকটা উপস্থাপনার অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে সবসময় প্রোবেফোরত্রাগ বা পরীক্ষামূলক বক্তৃতা সেরে নেবো কাউকে মুরগি বানিয়ে। সেদিন যেমন স্যামুয়েল বা ষ্টেফি কাউকেই হাতের কাছে না পেয়ে একটু হিমসিম খেয়ে গিয়েছিলাম। আজ সুমন চৌধুরী আর ষ্টেফান ব্রাককে মুরগি বানানোর সুফল একদম হাতে নাতে পেয়েছি।
false
rg
একিট জাতীয় ননে-েনরিাপদ দবিসরে ভাবনা একটি জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবসের ভাবনারেজা ঘটকবাংলাদেশ একটি নদীমার্তৃক দেশ। আর নৌ-যান যেমন লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার, ইঞ্জিন নৌকা, নৌকা ইত্যাদি দেশের অন্যতম প্রধান নৌ-যানবাহন। বিশেষ করে দেশের গোটা দণিাঞ্চল যেমন বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, বাগেরহাট, খুলনা, পটুয়াখালী, ভোলা ইত্যাদি জেলার মানুষজনকে নৌ-যানেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করতে হয়। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের দণিাঞ্চলের মানুষজনকে নৌ-পথে যোগাযোগ করেই জীবনযাপন অতিবাহিত করতে হয়। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি অন্যতম প্রধান বাধা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকা সত্ত্বেও নৌ-পথে যোগাযোগ না করে এই অঞ্চলের মানুষের বিকল্প কোনো উপায়ও নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে যেমন আছে ঘুর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস, কাল বৈশাখী, প্লাবন, ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি রয়েছে ত্র“টিপূর্ণ নৌ-যান, ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্রফেশনাল নৌ-চালকের অভাব, নৌ-যানে প্রকুতিক দুর্যোগ বা কোন ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলা করার মতো প্রয়োজনীয় লাইফ জ্যাকেট, ছোট নৌকা, বায়া, বা সরঞ্জামের অভাব, নৌ-চালকদের খামখেয়ালীপনা, নৌ-মালিকদের অশুভ এবং অমানবিক দৌরাত্ম ও চক্রান্ত, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বোঝাই, নৌ-চালক ও নৌ-যাত্রীদের প্রাকুতিক দুর্যোগ বা বড় থরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলা করার মতো ধৈর্য এবং প্রশিণের অভাব, ঘাট ও রুট দখলের রাজনৈতিক খেলা ও প্রচলিত দখল কালচার, সর্বপরি সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ নৌ-চলাচল দেশের দণিাঞ্চলের মানুষের নিত্য সঙ্গী। আর নৌ-যান নৌ-যাত্রী, নৌ-চালক ও নৌ-মালিক কেন্দ্রীক জটিল এই চক্রটি বারংবার নৌ-দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে কেবলমাত্র একটি কেন্দ্র্রীয় মনিটরিং সেলের উপযুক্ত কাযৃক্রমের অভাব থেকেই। দেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে, প্রায় প্রত্যেকটির জন্যই প্রথমেই জবাবদিহিতা থাকার কথা নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের। কোন রাষ্ট্রের একটি নির্বচিত সরকার কাঠামো নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা অমন উদাসীনতাকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। নৌ-মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্ধারিত বাজেটের টাকা তাহলে বছরের পর বছর কোথায় খরচ হয়? আর তারা কেন প্রচলিত আইন ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দিয়ে বারবার দায় এড়ানোরই কেবল চেষ্টা করবে? নৌ-মালিকদের দৌরাত্ম, নৌ-চালকদের খামখেয়ালীপনা, ত্র“টিপূর্ণ নৌ-চলাচলের সুযোগ এবং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ব্যাপারটি নৌ-মন্ত্রণালয়ের বাইরে কেন? তাহলে কি রাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী মন্ত্রণালয়ের চেয়েও গুটিকয় নৌ-মালিকদের লিঁয়াজো বা কনসোর্টিয়াম অনেক বেশি শক্তিশালী? আর সে কারণে তারা আইনকে বুদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে বা অবজ্ঞা করার দুঃসাহস দেখাতে সম হয়?আলটিমেটলি দেশের নৌ-দুর্ঘটনার কারণে জীবনহানী ও মৃত্যৃর জন্য শেষ পর্যন্ত জনসাধারণকে জবাবদিহিতার প্রশ্নে সরকারকেই এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করতে হবে। আমরা ভবিষ্যতে আর কোন ব্যর্থতা থেকে নৌ-দুর্ঘটনায় হাজার হাজার প্রণহানী দেখতে চাই না। সর্বপরি এই জটিল চক্রান্তের কারসাজিতে সৃষ্ট নৌ-দুর্ঘটনায় আমরা আমাদের আত্মীয় বা স্বজনদের চিরকালের জন্য হারাতে চাই না।প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে, বিশেষ করে চৈত্র, বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য মাসের কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বড় বড় নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে। আর এতে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ অকালে প্রাণ হারায়। ২০০৪ সালের ২৩ মে চাঁদপুরের নিকট মেঘনা নদীতে সংঘটিত জোড়ালঞ্চ ডুবির ঘটনায় প্রাণহানীর সংখ্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনা। ওই দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের একটি অংশ হিসেবে আমরা প্রতি বছর ২৩ মে কে সামনে রেখে নিহত স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনা করি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে। তার আগে আমরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হই। আর শোক র‌্যালি করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত যাই। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের পর আমরা নিহত স্বজনদের জন্য প্রতি বছরই ১ মিনিট নিরবতা পালন করে থাকি। নিহতদেও আত্মার চিরশান্তি কামনা করে থাকি। এ বছরও আমরা নিহতদেও স্বজনরা ২৩ মে অন্তত এই কর্মসূচি টুকু পালন করব। প্রতি বছর ২৩ মে দিনটিকে আমরা এভাবে পালন করার প্রধান উদ্দেশ্য হলÑ নৌ-যাত্রী, নৌ-চালক, নৌ-মালিক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহকে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা। দেশের সংবাদত মাধ্যমগুলো এই প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন কওে আসছে।সারাবিশ্বে প্রতি বছর বিশ্ব নৌ-নিরাপত্তা দিবস পালন করা হয়। ওই দিবসেরও প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সর্বসাধারণকে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। বাংলাদেশ নদীমার্তৃক ও নৌ-যান নির্ভও দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে কোনো জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস পালিত হয় না। সরকারিভাবে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কোনো গণসচেতনতা কার্যক্রমও পালন করা হয় না। কেবল বড় কোনো নৌ-দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন মিডিয়া ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও নৌ-মালিক-পালকদেও নিয়ে এক ধরনের লোক দেখানো ব্যস্ততা জাহির করা হয়। এরপর আবারও দেশে নৌ-দুর্ঘটনা একই কারণে ঘটে এবং সরকার সর্বোচ্চ তদন্ত কমিটি গঠন পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে। আসল কাজের কাজ কিছুই হয় না। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবারো শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে সরকার গঠন করে। এবারের সরকারের কাছে জনসাধারণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির তালিকা নিঃসন্দেহে অনেক। আমাদের বিশ্বাস সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। একটি দেশের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার কেবল সদিচ্ছা থাকলেই রাষ্ট্রের জন্য অনেক বড় বড় কাজ যেমন করতে পারে, তেমনি অনেক বড় বড় পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের জন্য এই সরকারকে অনেক বেশি দায়িত্ববান হতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি বর্তমান সরকার এ বছর নৌ-সপ্তাহ পালন করবে। আমরা চাই উদ্দেশ্যহীন নৌ-সপ্তাহ পালনের চেয়ে সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালন করাই হবে অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত। নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালনের জন্য সপ্তাহ ব্যাপী নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় যে পরিমাণ অর্থ সারা দেশে খরচ করবে, তা যদি নৌ-যাত্রী, নৌ-চালক, নৌ-মালিক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর কার্যকর কোনো দিক নির্দেশনা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালন সার্থক হবে। নইলে কতিপয় আওয়ামী দুস্কৃতদের ও নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেট ভারী করার জন্য বিশাল সরকারি অর্থের অপচয় কোনো শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না। সরকারিভাবে নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালনের এই উদ্দ্যোগে দেশের দণিাঞ্চলের মানুষজন নিশ্চয়ই অনেক প্রাপ্তি পত্যাশা করছে। আমরা নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের একটি অংশ সকল নৌ-দুর্ঘটনায় নিহতদের জাতীয়ভাবে স্বরণ করার জন্য সরকারের কাছে একটি ছোট্ট দাবী পেশ করতে চাই। ২৩মে কে জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবস ঘোষণা করা হোক। সেেেত্র ২৩ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত প্রতি বছর নিরাপদ নৌ-সপ্তাহ পালন করা যেতে পারে। জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবসে সারা বাংলাদেশের মানুষকে আমরা যদি নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর কৌশল সম্পর্কে গণসচেতনতা সুষ্টি করা সম্ভব হয়, তাহলে ভবিষ্যতে নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানো যেমন অনেকাংশে সহজ হবে, তেমনি নৌ-আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন তথা নৌ-মালিক, নৌ-চালকদেও স্বেচ্ছাচারিতা ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের মতো আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার প্রচলিত অভ্যাসকে ভেঙে অনেক নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে এবং নিরীহ অনেক মানুষের জীবন রার কাজটিও পালিত হবে।আমরা দণিবঙ্গের মানুষজন যখন লঞ্চে উঠি, জীবনটাকে হাতে নিয়েই উঠি। বাঁচা মরা সবকিছু তখন লঞ্চ-চালক ও লঞ্চ-মালিকদের ইচ্ছার উপরে বর্তায়। অথচ, সরকারিভাবে এই দুঃসাধ্য বিষয়টির আজ পর্যন্ত কোনো সুরাহা করা হল না। আমরা নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনরা সরকারের কাছে ২৩ মে কে জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবস ঘোষণার দাবী জানাচ্ছি। ২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবস হিসেবে পালিত হলে ওই দিনে নিহত নিরীহ মানুষগুলোর অত্মা অন্ত শান্তি পাবে। প্রতি বছর ২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপদ দিবস পালন করতে হবেÑ এটাই বর্তমান সরকারের কাছে দণিাঞ্চলের মানুষের এই সময়ের প্রাণের দাবী। পাশাপাশি, নৌ-মন্ত্রণালয়ের নের্তৃত্বে দেশে একটি সুষ্টু, নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও ঝুঁকিমুক্ত নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ উদ্দ্যোগ ও তার বাস্তবায়ন করা হোক। প্রয়োজনে একটি আধুনিক নৌ-চলাচল আইন কওে সে অনুযায়ী কার্যকরী পদপে নেওয়া হোক। নৌ-দুর্ঘটনা থেকে কোনো অনাকাঙ্খত মৃত্যু আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা একটি নৌ-বান্ধব নৌ-চলাচল আইনের সরকারি বাস্তবায়ন দেখতে চাই। যা থেকে পৃথিবীর অন্য অনেক নৌ-প্রধান দেশ যাতে আমাদেও অনুকরণ করতে পাওে সেই লে আমাদেও এগিয়ে যেতে হবে।
false
ij
অড্রে টোটু_ এবং জা পিয়ারে জুওনেট-এর আ ভেরি লং এ্যানগেইজমেন্ট। অড্রে টোটু। এই মুখটি সম্ভবত আর এদেশেও অপরিচিত নয় । ফরাসী অভিনেত্রী অড্রে টোটু এদেশেও পরিচিত এবং জনপ্রিয়। ড্যান ব্রাউনের ‘দা ভিঞ্চি কোড’ বইটি নিয়ে বেশ হইচই এদেশেও হয়েছিল ২০০৬-৭ সালে। অড্রে টোটু ‘দা ভিঞ্চি কোড’ ছবিতে অভিনয় করাতে অনেকেই তাঁকে চিনল। অবশ্য তার আগেই অনেকেই অড্রে টোটু-কে দেখে থাকবেন জা পিয়ারে জুওনেট পরিচালিত ভুবনবিখ্যাত ছবি: ‘অ্যামিলি’-তে। ফ্রান্সের ২৬টি প্রশাসনিক অঞ্চল রয়েছে। তার মধ্যে আউভার্নহি একটি। অড্রে টোটু আউভার্নহি তে ১৯৭৬ সালের ৯ আগষ্ট জন্মগ্রহন করেন। মা স্কুলে পড়াতেন। বাবা দাঁতের ডাক্তার। কিশোরী বয়স থেকেই অভিনয় প্রতিযোগীতায় অংশ নিতেন টোটু। ২০০১ সালে জা পিয়ারে জুওনেট পরিচালিত ‘অ্যামিলি’ ছবিতে অভিনয় করে অড্রে টোটু সবার দৃষ্টি কাড়েন । ছবিটি এদেশেও জনপ্রিয় হয়েছে। অড্রে টোটু অভিনীত অ্যামিলি এবং দা ভিঞ্চি কোড ছবি দুটি আমি আগেই দেখেছি। সম্প্রতি, অড্রে টোট অভিনীত বেশ কটি ছবি দেখলাম। হাটিং অ্যান্ড গেদারিং; প্রাইসলেস; ডার্টি প্রিটি থিঙ্কস; হি লাভস মি হি লাভস মি নট। তবে সবচে ভালো লেগেছে- আ ভেরি লং এ্যানগেইজমেন্ট। সেবাসটিয়েন জাপরিসটের উপন্যাস অবলম্বনে ‘আ ভেরি লং এ্যানগেইজমেন্ট’ ছবিটি নির্মান করেন প্রখ্যাত ফরাসী চলচ্চিত্র পরিচালক জা পিয়ারে জুওনেট। ছবিটির প্রেক্ষাপট প্রথম মহাযুদ্ধ। জা পিয়ারে জুওনেট নির্মোহ থেকে যুদ্ধের বিভীষিকা ফুটিয়ে তুলেন । ছবিটির রঙের ব্যবহার আপনাকে মুগ্ধ করবে। অনেকটা পুরনো পেইনটিংস-এর মতন। হলুদাভ। চলচ্চিত্র বিষয়ে আমার জ্ঞান সামান্যই। তবে এটুকু বলতে পারি-যারা (যে কোনও ধরনের) ছবি নির্মান করতে চান-তারা যেন অন্যদের পাশাপাশি জা পিয়ারে জুওনেটও পাঠ করে, পাঠ করে- গভীর মনোযোগের সঙ্গে। এবার জা পিয়ারে জুওনেট সম্বন্ধে কিছু কথা বলি। জা পিয়ারের জন্ম ফ্রান্সে। ১৯৫৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। ১৭ বছর বয়েসে প্রথম ক্যামেরা পান জুওনেট । প্রথম প্রথম অ্যানিমেশন করতেন। করেছেন বিজ্ঞাপনচিত্র ও মিউজিক ভিডিও। তারপর তো ২০০১- এ ‘অ্যামিলি’ করলেন। আ ভেরি লং এ্যানগেইজমেন্ট ও অড্রে টোটু এক তরুন যুদ্ধে গেছে। যুদ্ধশেষে সে আর ফিরল না। সবই বলে মরে গেছে। তরুণের দয়িতা (অড্রে টোটু) বিশ্বাস করে না সে বেঁচে নেই। মেয়েটি (অড্রে টোটু) খুঁজতে থাকে ... সবশেষে একটা বাগান। তারপর বোঝা যায় -প্রেম আজও এক অব্যাখ্যাত এক বিষয়। আমার মতে ‘আ ভেরি লং এ্যানগেইজমেন্ট’ ছবিটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবিগুলির অন্যতম। বলাবাহুল, অড্রে টোটু অভিনয় করেছেন দূর্দান্ত। কিংবা, জা পিয়ারে জুওনেট টোটুকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে নিয়েছেন। যতটুকু বিষন্নতা দরকার ততটুকু বিষন্নতা অড্রে টোটুর মুখে, অবয়বে ছিল। আ ভেরি লং এ্যানগেইজমেন্ট ছবিটি দেখে আমার মনে হয়েছে চলচ্চিত্র তার উৎকর্ষে পৌঁছে গেছে। এর চে ভালো করে কোনওকিছু আর দেখানো সম্ভব না। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪
false
rn
একজন গুন্টার গ্রাস ১৯৮৬ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন গুন্টার গ্রাস। ছিলেন এক সপ্তাহ। সঙ্গে স্ত্রী উটে গ্রাস। পশ্চিম বাংলা ঘুরে তারপর বাংলাদেশ। শাঁখারিবাজার থেকে জেনেভা ক্যাম্প, পুরান ঢাকার অলিগলি, সদরঘাটের ভাসমান রেস্তোরাঁ সবখানেই ছিল গুন্টার গ্রাসের পদচারণা। সোনারগাঁর পানাম নগরীতেও গেছেন। দ্বিতীয়বার ঢাকায় আসেন ২০০১ সালে।‘টিনড্রাম’ উপন্যাসের জন্য ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। জন্মেছেন পোল্যান্ডের বাল্টিকে। জন্মসূত্রে জার্মানি এই লেখক লিখেছেন দশটি উপন্যাস, বেশ ক’টি নাটক ও কয়খানা ভ্রমণকাহিনী। সাতদিনের এই বর্ণাঢ্য ভ্রমণে সঙ্গী করেছিলেন কখনও কবি বেলাল চৌধুরী, কখনও শিল্পী এসএম সুলতান। ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন আলোকচিত্র সাংবাদিক নাসির আলী মামুন। ১৯৫৪ সালে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু দুই যুগ পর এই সংসার ভেঙ্গে যায় তার। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে আবার বিয়ে করেন তিনি।তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে_ দ্য টিন ড্রাম (১৯৫৯), ক্যাট অ্যান্ড মাউস (১৯৬১), ডগ ইয়ার্স (১৯৬৩), দ্য ফ্লাউন্ডার (১৯৭৩), ক্র্যাবওয়াক (২০০২), দ্য র‌্যাট (১৯৮৬), দ্য বক্স (২০০৮), শো ইউর টাং (১৯৮৬), টু স্টেটস ওয়ান নেশন (১৯৯০)। তিন ছেলে ও তিন মেয়ের জনক গুন্টার গ্রাস সাহিত্যে নোবেল ছাড়াও গেওর্গ ব্যুশনার পুরস্কার, অনারারি ফেলো অব দ্য রয়েল সোসাইটি অব লিটারেচার এবং প্রিন্স অব অস্ট্রিয়াস পুরস্কার লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মার্কিন সেনাদের হাতে ধরা পড়ে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছর তিনি বন্দী ছিলেন। পরে মুক্তি পেয়ে তিনি খামার শ্রমিকের কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন ডুসেলডর্ফ ও বার্লিনে। ‘যতই বছর যাচ্ছে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, দিন কে দিন আমাদের স্বয়ং বিনাশের সম্ভাবনা প্রকটরূপ ধারণ করছে, এমন অবস্থা কিন্তু পূর্বে বিরাজমান ছিল না : এটা বলা হচ্ছে যে প্রকৃতি দুর্ভিক্ষ, খরা সৃষ্টিকারী অথচ দায় রয়েছে অন্যত্র, দায়ী মানুষ, এই আমরাই। তিনি বলেন, এখন আর প্রকৃতি নয় প্রথমবারের মতো আমরাই দায়ী, মানুষের অপার সম্ভাবনা এবং ক্ষমতাও রয়েছে এই আমাদের নিজেদের স্বয়ং ধ্বংস বা বিনাশকরণে এবং আমরা এখনো কিছুই করছি না এই বিপদ এড়াতে। এ সবকিছু একসঙ্গে আমাকে উপলব্ধি করিয়েছে যে আমাদের সব কিছু সসীম অথচ আমাদের হাতে অফুরন্ত সময় নেই।' কথাগুলো যিনি বলেছেন তিনি গুন্টার গ্রাস। শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথাগুলো জানিয়েছেন মিডিয়াকে। তার প্রথম ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস টিন ড্রামে তিনি কৌতুক, বিস্ময়, প্রতিবাদ ও হিউমারের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন জার্মানির যুদ্ধ অভিজ্ঞতাকে। গ্রাসের প্রায় প্রতিটি উপন্যাসে মাছ কিংবা প্রাণিজগতের সদস্যরা বিশেষ ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে। মূলত শিল্পী ও স্থপতি আবার একই সঙ্গে কবি ও নাট্যকার; যার অতীত স্মৃতিময়, নাৎসিদের ব্যাখ্যাতীত নিষ্ঠুরতায় বিপর্যস্ত যে ছেলেবেলা। বাবা ছিলেন ছোট মাপের মানুষ, স্বল্প আয়ের সামান্য এক মুদি দোকানের মালিক; মা ভিন্ন সম্প্রদায়ের এক গৃহবধূ; প্রিয় শহর ডানজিগে জন্ম ও বেড়ে ওঠা; 'টিন ড্রাম' ও 'ক্যাট অ্যান্ড মাউস' উপন্যাসে গভীর বেদনা ও গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ শহরটি। গুন্টার গ্রাস তার একটি উপন্যাসে সভ্যতার বিবর্তন দেখিয়েছেন যুগ যুগ ধরে মানুষের খাদ্য স্বভাবের মধ্য দিয়ে। মানুষ প্রথমে কাঁচা মাংস খেত, পরে আগুন আবিষ্কারের পর পুড়িয়ে খেতে শিখল, তারপর লবণের স্বাদ পেল। এভাবে স্বভাবের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সভ্যতার বিবর্তন ঘটেছে। রোমক সভ্যতার সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিল তার অহমিকা। খাদ্য স্বভাবের মধ্য দিয়ে তার এই অহমিকা প্রকাশ পেত। গুন্টার গ্রাসের বক্তব্য হচ্ছে সভ্যতাকে ধরে রাখা যায় না, সে সামনের দিকে এগোতে থাকে এবং কখনও কখনও সে পুরানো ধারায় প্রত্যাবর্তন করে।
false
rn
ইংরেজি সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (আট) ৭১। 'কোমা' লেখক- রবিন কুক। বোস্টন মেমোরিয়াল হাসপাতালে রহস্যজনক এক ঘটনার তদন্তে নামে মেডিকেল কলেজের ছাত্রি সুজান হুইলার। কিন্তু মাঠে নামতেই অজ্ঞাত একদল লোক তাকে বিরত রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠে। হুমকি আর মৃত্যুকে উপেক্ষা করা সুজান যখন সেই চক্রের নাগাল পেয়ে যায়, তখনই ঘটে যায় অভাবনীয় এক ঘটনা। রবিন কুক তার কোন এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, “আমি এমন লেখক নই যে ডাক্তার, বরঞ্চ আমি এমন ডাক্তার যে লেখালেখিও করে।” আসলেই তাই। এমন সব ব্যাখ্যা আর এমন সব কথোপকথন লেখক এখানে এনেছেন যা পুরাপুরি বুঝতে হলে হাসপাতালের সাথে আপনার কিছু না কিছু সম্পর্ক থাকতেই হবে।৭২। 'বয়েজ ফ্রম ব্রাজিল' লেখক– ইরা লেভিন। লেখক জীবনে ইরা লেভিন লিখেছেন অসংখ্য সিনেমার স্ক্রিপ্ট, নাটক,গান, আর উপন্যাস, যার মধ্যে বেশিরভাগই পেয়েছে পাঠক এবং দর্শকপ্রিয়তা। নাজি হন্টার ইয়াকভ লিভারম্যান হঠাৎ মাঝরাতে একটা ফোন কল পায়। ব্রাজিল থেকে এক যুবক তাকে ফোনে জানায়, এইমাত্র সে প্রাক্তন নাজিদের এক গোপন মিটিঙে আড়ি পেতে জানতে পেরেছে “এনজেল অফ ডেথ নামে” দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়কার কুখ্যাত এক প্রাক্তন নাজি নেতা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চুরানব্বইটি হত্যাকান্ড ঘটানোর প্ল্যান করেছে। লিবারম্যান প্রথমে অবিশ্বাস করলেও তার সাথে কথা বলার মাঝখানে যুবক খুন হয়ে গেলে তদন্তে নামে সে। তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে এমন এক লোহমর্ষক সত্যা যা বদলে দিবে ইতিহাসের গতি ধারাকে, পৃথিবীর বুকে আবারো ফিরিয়ে আনবে নারকীয় হিটলার যুগ। লিবারম্যান তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে একসময় আক্ষরিক অর্থেই মুখোমুখি হয় স্বয়ং হিটলারের। ৭৩। 'দ্য শার্লোকিয়ান' লেখক- গ্রাহাম মুর। শার্লোক হোমসকে খুন করা হলো, আর কাজটি করলেন তার স্রষ্টা আর্থার কোনান ডয়েল! তারপর নিজেই অবতীর্ণ হলেন একটা হত্যারহস্যের কুলকিণারা করতে। ওদিকে হ্যারল্ড হোয়াইট অভিজাত শার্লোক হোমস সোসাইটি বেকার স্টৃট ইরেগুর্লাসে অভিষিক্ত হতেই খুন হলো এক ডয়েল-বিশেষজ্ঞ। হোমস ভক্তদের কাছে হলিগ্রেইল হিসেবে পরিচিত ডয়েলের হারানো ডায়রির মিশনে জড়িয়ে পড়লো হ্যারল্ডসহ আরো কয়েকজন শার্লোকিয়ান। অসংখ্য বই পড়ার জ্ঞান আর নিজের অভিনব একটি দক্ষতা কাজে লাগিয়ে হ্যারল্ড ডায়রি আর খুনির সন্ধানে নামলো। ৭৪। 'দান্তে ক্লাব' লেখক- ম্যাথিউ পার্ল। ঘটনা শুরু হয় শান্তশিষ্ট বোস্টন শহর থেকে। সেখানে বছরে ২-১ খুন সাধারন ঘটনা। কোন কোন সময় সারাবছরই রক্তপাতহীনভাবে কেটে যায়।খুন হলে নিতান্তই নিম্নশ্রেণীর মানুষদের হয়। সুতরাং সেগুলো ধাতে না ধরলেও হয়। কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই খুন হয়ে গেল ম্যাসাচুসেটস্‌ আদালতের সর্বোচ্চ পদস্থ ব্যক্তি!খুন হওয়ার ৪দিন পর উদ্ধার হয় তার পোকায় খাওয়া বীভৎস লাশ। নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হল শান্ত শহরটি। গৃহযুদ্ধের বিভীষিকায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর পর শোক শেষ হতে না হতেই বোস্টন শহরে এ কি ধরনের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড শুরু হল? হত্যাগুলো যেমন অভিনব তেমনি বীভৎস।আর লক্ষ্যবস্তুগুলো সব শহরের গন্যমান্য ব্যক্তিরা। ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে সবগুলো হত্যাকাণ্ডই মহাকবি দান্তের ইনফার্নো’র অনুপ্রেরণায় করা হয়েছে। মারাত্মক এক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায় দান্তের সাহিত্যকর্ম। অদৃশ্য সেই সিরিয়াল খুনিটা কে আর কেনই বা সে এসব করছে সেই রহস্যের সমাধান করতে এগিয়ে এলেন হারভার্ড কেন্দ্রিক দান্তে ক্লাবের কয়েকজন পণ্ডিত ব্যক্তি এবং বিখ্যাত কবি লংফেলো ।এই রহস্যের জট খুলতে নেমে তারা নেমে পড়েন এক অভিযানে। ৭৫। 'আততায়ী' লেখক- কেন ফলেট। তার নাম ফেলিক্স। রাশিয়া থেকে লন্ডনে এসেছে একজন রুশ কূটনীতিককে খুন করতে, সে খুন দুনিয়ার ইতিহাস বদলে দেবে। কারিগরি ফলাতে ওস্তাদ, আস্তিনে হরেক অস্ত্র, কিন্তু তার বিরুদ্ধে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়েছে পুরো ইংলিশ পুলিশ, মেধাবী ও প্রতাপশালী একজন লর্ড এবং তরুণ উইনস্টন চার্চিল নিজে। ৭৬। ;ম্যাক্সিমাম রাইড' লেখক- জেম প্যাটারসন। অদ্ভুত কিছু চরিত্র। মানুষ আর পাখির সংমিশ্রণের এইসব চরিত্র বিপদে পড়ে যায় একদল পাগলাটে বিজ্ঞানীর কারণে। দলের কনিষ্ঠ সদস্য অ্যাঞ্জেলকে অপহরণ করে তারা। স্কুল নামের জেলখানায় নিয়ে যায় তাকে। দলনেতা ম্যাক্সিমাম নামে তার দলবল নিয়ে। মুখোমুখি হয় আরেকটি ভয়ংকর মানুষরুপি নেকড়ে দলের। শুরু হয় দু দলের লড়াই। বিশেষ করে ফ্যান্টাসী কাহিনী যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য বেস্টসেলার লেখক জেমস প্যাটারসনের এই বইটি ভাল লাগবে।৭৭। 'কট' লেখক– হারলান কোবেন। নিজের বাড়ি থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে গেলো কিশোরী হেইলি ম্যাকওয়েইড। যৌন অপরাধের বিষাক্ত চক্রান্তে ফেঁসে গেলো ড্যান মার্সার। প্রতিশোধের জন্যে ঠাণ্ডা মাথায় খুনের পরিকল্পনা করলো এড গ্রেসন। আর এ সবকিছুর সাথে জড়িয়ে পড়লো সাংবাদিক ওয়েন্ডি টাইনস। ওর তদন্তে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করলো হিংসা, বিদ্বেষ আর খুনের এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র। ৭৮। 'দ্য হবিট' লেখক- জে আর আর টোলকিন। দ্য হবিট প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৭ সালের সেপ্টেম্বরে। দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর গল্পের সঙ্গে রয়েছে এর যোগসূত্র। উপন্যাসটি ঘরকুনে হবিট বিলবো ব্যাগিনসের রোমাঞ্চকর অভিযান নিয়ে। হলিউডের রূপালি পর্দাতেও সফল টোলকিনের উপন্যাস দুটি।৭৯। 'দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই' লেখক- জে ডি সালিংগার। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে। ‘দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই’ শুরুতে ছিল কেবলই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। অনেকের মতেই বিতর্কিত এক উপন্যাস এটি। বিশ্বের প্রায় সবগুলো প্রচলিত ভাষাতেই মুদ্রিত হয়েছে উপন্যাস, প্রতি বছর বিক্রি হয় প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি কপি। ৮০। 'দ্য ন্যারো রোড টু দ্য ডিপ নর্থ' লেখক- রিচার্ড ফ্লানাগান। উপন্যাসে আখ্যান নির্মিত হয়েছে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, আর প্রেক্ষাপটে এসেছে ভালোবাসা ও মৃত্যুর যুদ্ধ আর সত্যের নানা ও বিচিত্র রকমফের যা ঔপন্যাসিকের মুন্সিয়ানা ও এক অভাবিতময় জীবনবেদ ও জীবনদর্শন প্রকাশ করে। লেখকের প্রথম উপন্যাস 'আ টেরিবল বিউটি' (A TERRIBLE BEAUTY), ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়।
false
mk
বিএনপির আপত্তি কি শুধু সরকার প্রধান নিয়ে_ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। একদিকে রয়েছে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। অন্যদিকে, বিরোধী দলের একটানা হরতাল-অবরোধে প্রাণহানি থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক বিপর্যয় আমাদের অতিষ্ঠ করার বিষয়টি রয়েছে। আমরা চাইছি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ। সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ওগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোকÑএ প্রত্যাশা আমারও। এ উদ্দেশ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু বিরোধ বেধেছে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে। আমার মতে, এ মুহূর্তে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেও সমস্যার সমাধান হবে না। তখন সরকারপ্রধান কে হবেন, এটা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেবে। তবে সর্বদলীয় সরকারপ্রধান হিসেবে নির্বাচনকালে শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস করে এ বিরোধের মীমাংসা করা যায়। এতে উভয় পক্ষেরই উইন-উইন অবস্থা হবে। এ ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের মতামত উপেক্ষা করে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। তাকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর এককভাবে একচ্ছত্র নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করার প্রক্রিয়া রহিত হবে। এতে যারা বিভিন্ন দলের সদস্য থাকবেন, বিশেষ করে বিরোধীদলীয় মন্ত্রীদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এভাবেই প্রকৃত গ্রহণযোগ্য সমাধানে এগিয়ে যাওয়া যায়।নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনকালীন সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করতে হবে। নির্বাচনের স্বার্থেলেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হবে নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে সর্বদলীয় সরকারকে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে নির্বাচিত এমপি-মন্ত্রীরা পদে থেকে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতাও ইসিরথাকতে হবে।এতে দেশে চলমান সহিংসতার অবসান হবে কি-না, সেটাই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বিচারের রায় কার্যকর করার প্রসঙ্গটি বিবেচনায় না নিয়ে এ প্রশ্নের মীমাংসা খোঁজা বৃথা।আমরা জানি, লিখিত পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া গেলে যে কোনো সময় যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে। তখন দেশে পুনরায় লংকাকাণ্ড ঘটতে পারে। দেশে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তার নমুনা আমরা বিরোধীদলীয় জোট আহূত হরতাল-অবরোধ চলাকালে প্রত্যক্ষ করেছি।রেললাইন উপড়ে ফেলা, বোমা মেরে মানুষ মারা, গুলি করে বিজিবি সদস্য হত্যা, সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন গাড়িচালকের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হাত-পায়ের রগ ও কব্জি কর্তন ইত্যাদি সহিংস ঘটনা যে কোনো সুস্থ মানুষের বোধের বাইরে। এভাবে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবেই। এতে জামায়াত-শিবিরই যে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে, সে ব্যাপারে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। কাজেই শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতাঅনেকাংশে বা সম্পূর্ণ ত্যাগ করলেই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে কি-না, সে ব্যাপারে কিন্তু সন্দেহ থেকে যাবে।আমার মতে, এসব করলেও বর্তমান সহিংসতা থেকে মুক্ত হতে পারবে না দেশবাসী। কারণ, বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় যাকÑএটা জামায়াত ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীরা চায় না। একটি গণতান্ত্রিক দল ক্ষমতায় গেলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বাতিল করতে পারবে না। যেমন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে পারেনি। তবে বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করেছিল তারা। মূলত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দোষীদের বিচার বানচাল করতে হলে একটি অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করে অগণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারস্থ হতে হবে জামায়াতকে। এ জন্যই দেশের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী সশস্ত্র তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।আমার অভিমত হলো, দৃঢ়হস্তে এই অপরাধীদের দমন করতে হবে। বর্তমান সরকারকে একটি সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হলে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের কঠোরহস্তে দমন করা ছাড়া উপায় নেই। আর জনগণের জানমালের নিশ্চয়তা বিধান করা শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপরই বর্তাবে। তাই এব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করে থাকলে চলবে না। কারণ, এই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ ভয়ানক অস্থিরতার দিকে ধাবিত হতে পারে। তখন সন্ত্রাসের রাজত্ব দীর্ঘকালের জন্য আমাদের বুকের ওপর চেপে বসতে পারে। তাই সন্ত্রাস দমনে সরকারের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকর্তৃক দৃঢ় পদক্ষেপ আশা করছি
false
rg
বাংলাদেশের এডগার এলান পো ধ্রুব এষ।। রেজা ঘটক এডগার এলান পো আমারও প্রিয় লেখক। রুদ্ধশ্বাস রহস্য, থ্রিল, সাসপেন্স, ঘটনার পর ঘটনার মধ্যে খুঁজে পাই অ্যাডভেঞ্চার। ওয়েস্টার্ন গল্পের এই নির্ভরতা থেকে আমাকে এবার বোকা বানালেন ধ্রুব'দা। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সম্পূর্ণ টাটকা এবং রহস্যে ভরা মৌলিক সাসপেন্স ধ্রুব এষ-এর রহস্য উপন্যাস `বাম হাতে ছয় আঙুল'। কাফি আল হাসান আর রাফি আল হাসান যমজ ভাই। রাফি আল হাসানের বাম হাতে ছয়টা আঙুল। অভিনয় করতেন সিনেমায়। জিএম রসুল ছদ্মনামে সে একজন দুর্ধর্ষ খুনি। কাফি আল হাসানের বাম হাতে স্বাভাবিক মানুষের মত পাঁচ আঙুল। কিন্তু প্রয়োজনে কাফি আল হাসানও বাম হাতে নকল একটি আঙুল লাগিয়ে খুন করেন। সবগুলো খুনের মোটিভ একই ধরনের। একটার পর একটা সিরিয়াল কিলিং। আবার কাফি আল হাসানের ছেলে পাগলা কবি র.আ.হ, মুস্তফি। মুস্তফি'র বাম হাতেও চাচার মত ছয় আঙুল। এদের মধ্যে আসল খুনি কে? সেই রহস্য উদ্ধারের ভার পাঠকের। আইরা একজন টপ র্যাম্প মডেল। নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন আইরা। একষট্টি বছর বয়সি অবিনাশ মণ্ডল একজন বাংলা সিনেমার মেকাপম্যান। খুন হন একই রাতে নারিন্দার ভাড়া বাসায়। আইরার ইন্টারভিউ করতে যাওয়া তরুণ রিপোর্টার দারিয়ুস। দারিয়ুসকে কিডন্যাপ করে জিএম রসুলরা। বেবি আক্তার মডেল আইরার ফ্ল্যাটের কাজের বুয়া। বেবি আক্তারও খুন হয় ঘটনার কয়েক দিন পর। অপহৃত হন জনপ্রতিনিধি কমরেড ওহাব উদ্দিন সিকদার। তসাদ্দুক এম হাসান, বামন। সফটওয়্যার এনজিনিয়ার। `হার্ব এন বার্ব'-এ কাজ করেন `মসিয়ো তাতকু' ছদ্মনামে। হার্ব এন বার্ব-এর কর্নধর হলেন আরডি মানে রেড ডেভিল। যিনি হলেন আসলে কাফি আল হাসান, মিডিয়ার আইকন। কয়েকদিন পর খুন হন তরুণ রিপোর্টার দারিয়ুস। তারপর কুন হন তসাদ্দুক এম হাসান। তার আগে কমরেড ওহাব উদ্দিন সিকদারকে জীবিত উদ্ধার করে এলিট ফোর্স। তখন খুন হয় তিনজন। ধারণা করা হয় আসল জিএম রসুল তখন এলিট ফোর্সের গুলিতে নিহত হয়। জিএম রসুল তার সঙ্গীদের নিয়ে গ্রেনেড চার্জ করেছিল। তার বাম হাত উড়ে যায়। বাম হাতে তার কয়টা আঙুল তার কোনো প্রমাণ আর মেলানোর সুযোগ থাকে না। উলিপাড়ার ইয়াসিন পরদেশী খুন হন। সকল খুনের মোটিভ একই ধরনের। গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর এনটি কাটার দিয়ে জবাই। এলাহি বিল্লা পড়াশুনা করেছেন ফিলোসফিতে। পত্রিকায় চাকরি করেন। প্রচুর সাইকোলজির বই পড়েন। অফিসের সবাই বিল্লাকে পণ্ডিত বলে ডাকে। চাঞ্চল্যকর এই সব খুনের একটা কুল কিনারা করার চেষ্টা করেন এই পণ্ডিত। সকল রহস্য যখন উন্মোচিত হবার পথে তখনই নারিন্দার মেইন রোডের পাশ থেকে মেঘলা সন্ধ্যায় অপহৃত হন এলাহি বিল্লা। টানটান উক্তেজনা আর রহস্যে ভরপুর এক চলমান বাস্তবতার ক্যানভাস ধ্রুব এষ-এর রহস্য উপন্যাস `বাম হাতে ছয় আঙুল'। এডগার এলান পো জীবিত থাকলে তিনিও এটি এক বসাতেই পড়তেন। শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ঐতিহাসিক আন্দোলনের কারণে আমি এক বসাতে বইটি পড়ি নি। ছয় বসাতে পড়েছি। খুটিয়ে খুটিয়ে পড়েছি। পুরোপুরি রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চারটা নেয়ার জন্য একটু একটু করে পড়েছি। আর বারবার এলাহি বিল্লা'র পত্রিকা অফিসের আলীকে বলেছি, আলি, চা দাও। জবাবে আলী বলেছে, জে সার। এই আলী `স্যার'কে বলে সার। এই আলী'র হাতে চা খেতে ওই পত্রিকা অফিসে প্রায়ই আড্ডা দিতে যান দুই বন্ধু। তানভির হাসান জুয়েল ওই পত্রিকা অফিসের চিফ আর্টিস্ট। তিনজনই আর্টিস্ট। মাসুক হেলাল, উত্তম সেন আর তানভির হাসান জুয়েল। প্রতি বছর বন্ধু দিবসে এই তিন আর্টিস্ট বন্ধু আলী'র হাতে চা খান আর আড্ডা মারেন। কিন্তু খুনের রহস্য নিয়ে যতোসব ইন্টিকুলুস। সেই সব ইন্টিকুলুসের আসল রহস্য উন্মোচন করতে পাঠককে আগে `বাম হাতে ছয় আঙুল' এই রহস্য উপন্যাসটা পড়তে হবে। ১৯৭৩ সালে আন্দ্রেই তারকোভস্কি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন, `কাল মাকে দেখতে গিয়েছিলাম। রিগার উপকূলে গেছে মেরিনা। তার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছে। লারিসাকে নিয়ে। সিরিয়াস এবং কঠিন ঝগড়া।'ধ্রুব এষের ভাষা নির্মেদ, ঝরঝরে, সহজ এবং অলংকারে ভরপুর। শব্দের বাহারি ব্যবহার আর মুন্সিয়ানা অন্ধ সেই বেহালা বাদকের মায়াবি সুরের মত পরিপাটি। হেমিলনের বাঁশি শুনে ছোকরারা যেমন দলবেঁধে তার পেছনে চলে যায়, ধ্রুব এষের গল্প বলার ঢং পাঠককে তেমন এক জাদু দেখিয়ে পৃথিবীর অন্যসব কর্ম থেকে হেয়ালী করে তোলে। খেয়ালী পাঠক তখন ধ্রুব এষের রহস্যে ভরা সাসপেন্সে হাই হুতোষ তুলতে আপোষ করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের এযুগের এডগার এলান পো-কে পড়ার জন্যে পাঠক তখন খেই হারিয়ে কেবল রহস্যে ডুব মারতে বাধ্য হবেন। `বাম হাতে ছয় আঙুল'-এর প্রচ্ছদ করেছনে ভারতের কলকাতার আনন্দবাজারের বিখ্যাত আর্টিস্ট শিল্পী সুব্রত চৌধুরী। বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাপ্রকাশ। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে একশত পঞ্চাশ টাকা। পৃষ্ঠা একশো বারো। গাঢ় ভারমিলিয়ন রেডে বইটির পরিচ্ছন্ন বাধাই এর চেয়েও আসল রহস্য ওৎ পেতে আছে বইটির ভেতরের প্রতিটি লাইনে। চলমান বাস্তবতায় সম্পূর্ণ নতুন ঘরানার রহস্য গল্পে ধ্রুব এষ পাঠকের হৃদয়ে এযুগের এডগার এলান পো হিসেবে ভবিঘ্যতে আরও আলো ছড়াবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
false
hm
সুখী গণ্ডারনামা ০৩ পুরাকালে বাঁশখোর নামের এক পৌরাণিক চরিত্রকে ধাওয়া দিতে দুখী গণ্ডারনামা শিরোনামে একটা সিরিজ লিখেছিলাম। পৌরাণিক বাঁশখোরদা তার গণ্ডারপনায় ইতি টানার কারণে সিরিজটি তার গুটিকয় পাঠকের বহু তাগাদা সত্ত্বেও তেজগাঁও বিমানবন্দরের মত পরিত্যক্ত হয়। খোদাবি ইশারায় তেজগাঁও বিমানবন্দর যেমন বিমানবন্দর হিসেবে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, সেভাবে এই সিরিজটিরও পুনরুজ্জীবন আবশ্যক বলে মনে করছেন দুয়েকজন বন্ধু। পৌরাণিক বাঁশখোরদা দুখী ছিলেন, কিন্তু এই সিরিজের গণ্ডারটি সুখী প্রকৃতির, তাই সিরিজের নামে শল্যোপচার করণ ঘটন হওনটা জরুরি ছিলো। তবে অতীতে আমি প্রতিদিনই নতুন একটা গণ্ডারনামা লেখার মতো তাগদ আর তাগিদ ধারণ করন হওন ঘটাতাম, এখন অসুখের কারণে দুবলা মেরে গেছি, তাই এই সিরিজ অনিয়মিতভাবে এগোবে। খোকা গণ্ডারের ঘুম আসছে না। আকাশে মিটিমিটি জ্বলছে তারা, দূরে কোথাও খিখি করে হাসছে একদল হায়েনা, একটা প্যাঁচা বসে আছে আকাশিয়া গাছের ডালে। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়ায় কেঁপে উঠছে ঘাসবন। বাবা গণ্ডার চুপচাপ ঝিমুচ্ছে, তাই খোকা গণ্ডার গেলো মা গণ্ডারের কাছে। একটু ঢুঁস দিয়ে বললো, "মা মা মা, একটা গল্প বলো!" মা গণ্ডার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, "কোন গল্পটা?" খোকা গণ্ডার বললো, "ঐ যে জেনেসিসের গল্পটা, জেনেসিসের গল্পটা, জেনেসিসের গল্পটা ...!" মা গণ্ডার বললো, "আচ্ছা শোন। ঈশ্বর স্বর্গে একা একা থেকে খুব বোরড হয়ে গিয়েছিলেন। তখন তিনি ঠিক করলেন, তিনি গণ্ডার তৈরি করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, কাদামাটি দিয়ে একটা ছেলে গণ্ডার তৈরি করলেন তিনি। আর তার নাম রাখলেন আবুল।" খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?" মা গণ্ডার বললো, "তারপর আর কী? আবুল ঘোরে ফেরে ঘাস খায়, একে গুঁতো দেয় তাকে গুঁতো দেয়। কোনো কাজেই তার বাধা নেই। ঈশ্বর তাকে বড় স্নেহ করেন। কিন্তু, একটা কাজ আবুলের করা নিষেধ। জ্ঞান ঘাসের শীষ তার জন্যে নিষিদ্ধ।" খোকা গণ্ডার বলে, "কেন মা, নিষিদ্ধ কেন?" মা গণ্ডার বলে, "ঈশ্বরের নিষেধ রে খোকা। মানা করেছে তাই নিষিদ্ধ।" খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?" মা গণ্ডার বলে, "আবুল একা একা থাকে, তার কেমন কেমন লাগে, তো সে ঈশ্বরকে গিয়ে বললো, মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী ও আজকে যারা শুনছেন! আমাকে একটা মেয়ে গণ্ডার বানিয়ে দিন, একটু খেলিধুলি।" খোকা গণ্ডার বলে, "কী খেলবে মা?" মা গণ্ডার বলে, "সেটা তোমাকে আরো কয়েক বছর পর বলবো খোকা, তুমি এখনও ছুডো। তো ঈশ্বর তখন আবুলের বেয়াল্লিশ নম্বর দাঁত উপড়ে সেটা থেকে একটা মেয়ে গণ্ডার বানালেন। তার নাম দিলেন শর্মিলা।" খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?" মা গণ্ডার বলে, "শর্মিলা আর আবুল স্বর্গে ঘোরেফেরে, একে গুঁতো দেয় তাকে গুঁতো দেয়, ঘাস লতাপাতা জড়িবুটি খায়। তো একদিন শর্মিলা আবুলকে বললো, চলো আবুল আমরা জ্ঞান ঘাসের শীষ খাই। আবুল বললো, ঈশ্বর তো মানা করেছেন এই জিনিস খেতে, উনি যদি রাগ করেন? শর্মিলা বললো, এহ বললেই হলো মানা করেছেন। ঈশ্বরের মায়রে বাপ। চলো এক কামড় খেয়ে আসি।" খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?" মা গণ্ডার বলে, "আবুল আর শর্মিলা জ্ঞান ঘাসের শীষ খেয়েদেয়ে বাড়ি ফিরলো। কিছুক্ষণ পর ঈশ্বরের এক দূত এসে বললো, শর্মিলা, তুমি আবুলকে নিষিদ্ধ জ্ঞান ঘাসের শীষ খেতে প্ররোচিত করেছো! স্বর্গে আর তোমার জায়গা হবে না, তুমি কেটে পড়ো। তখন শর্মিলা স্যুটকেস গুছিয়ে, লাল জুতো পরে, বগলে সুগন্ধী মেখে গটমটিয়ে স্বর্গ ছেড়ে সাভানায় চলে এলো।" খোকা গণ্ডার বলে, "আর আবুল?" মা গণ্ডার বলে, "ঈশ্বর নিজেই এলেন আবুলের বাড়িতে, তাকে স্বর্গ থেকে পোঁদে লাথি মেরে দূর করে দিতে। কিন্তু এসে দেখলেন, আবুল একটা গদিতে বসে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। ঈশ্বর তখন তার নাক ধরে খুব টানাটানি করতে লাগলেন, কিন্তু আবুল আর গদি ছেড়ে ওঠে না, এমনই জুত করে বসেছে সে! টানাটানির চোটে তার নাক থেকে একটা শিং পর্যন্ত গজিয়ে গেলো, কিন্তু তাকে গদি ছেড়ে আর ওঠানো গেলো না। ঈশ্বর তখন খুব চটেমটে গদিসুদ্ধু তাকে পৃথিবীতে ছুঁড়ে ফেললেন।" খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?" মা গণ্ডার বলে, "তারপর আর কি? আবুল আর শর্মিলার অনেক ছানা হলো, সেই ছানাদের অনেক ছানা হলো, সেই ছানাদের অনেক ছানা হলো, সেই ছানাদের অনেক ছানা হলো ... এমনি করে সারা দুনিয়া একসময় গণ্ডারে ভরে গেলো।" খোকা গণ্ডার বলে, "গদিটার কী হলো মা?" মা গণ্ডার বলে, "গদিটার আর কী হবে রে খোকা, সেটা আবুলের পেছনেই সেঁটে রইলো?" খোকা গণ্ডার বলে, "তাহলে আমার পেছনে গদি নেই কেন?" মা গণ্ডার খোকার মাথা জিভ দিয়ে চেটে আদর করে বলে, "সব গণ্ডারের কি গদি হয় রে পাগল? গণ্ডারের মতো গণ্ডার না হলে পেছনে গদি জোটে না।"
false
rn
এই যুগে বই-ই আমাদের প্রকৃত এবং শ্রেষ্ঠ বন্ধু যে বইগুলো কেউই ছাপাতে রাজি ছিলেন না এ রকমই কয়েকটি বিশ্বখ্যাত বই-১। অ্যান্ড টু থিংক দ্যাট আই স ইট অন মালবেরি স্ট্রিট (এখন পর্যন্ত বইটির বিশটির বেশি সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে। ২৩জন প্রকাশক পান্ডুলিপি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।)২। হ্যাভেন নোজ মি. এলিসন (দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে এক মার্কিন নাবিকের কাহিনী। এই অসাধারণ বইটি ছাপাতে অস্বীকৃতি জানায় প্রায় সব প্রকাশক এবং প্রায় ২০টি ব্রিটিশ প্রকাশনা।)৩। কনটিকি (ভেলায় চেপে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়ার দুর্দান্ত কাহিনী। প্রকাশের পর পর দুই বছর শীর্ষ দশ মননশীল বইয়ের তালিকায় ঠাঁই পায় এই বইটি। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় এর মুদ্রণ সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেছে।)৪। লর্না ডুন (সতের শতকের ইংল্যান্ডের চিত্র তুলে ধরা হয় এই উপন্যাস। ১৮৭৪ সালে আমেরিকায় এটি ছিল সর্বাধিক বিক্রীত বই।)৫। লাস্ট ফর লাইফ (ভিনসেন্ট ভ্যান গগকে নিয়ে লেখা। এ পর্যন্ত ৭০টি ভাষায় ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।)৬। জোনাথন লিভিংস্টোন সিগাল (দ্রুতগতিতে উড়ে চলা একটি গাঙচিলকে নিয়ে লেখা। রিচার্ড বাখের ১০ হাজার শব্দের এই কাহিনী প্রকাশকের কাছে এতটাই অলাভজনক মনে হয়েছে যে ১৮ জন প্রকাশক এটি ছাপার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।) ৭। ডাবলিনার্স (১৫টি ছোট গল্পের সংকলন। বইটি প্রত্যাখ্যাত হয় ২২ জন প্রকাশকের কাছ থেকে।)৮। ম্যাশ (বইটির কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি টিভি সিরিয়ালের প্রচার শুরু হয় ১৯৭২ সালে। অসাধারণ ব্যবসাসফল একটি চলচ্চিত্র হু হু করে বাড়িয়ে দেয় বইয়ের কাটতি।)৯। ডিউন (দুর্দান্ত বিজ্ঞান কল্পকাহিনী। বইটি শুধু এক কোটির বেশি বিক্রি হয়েছে শুধু তাই নয়, এ বইটির জন্য বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর শ্রেষ্ঠ দুটো পুরস্কার পান ফ্রাঙ্ক হার্বার্ট।) সবার'ই একটাই কথা, বই পড়ার সময় নেই। জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়, তা ঠিক । সত্যি কথা বলতে, যে সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি সেখানে আমাদের অনেকেরই মনে হয়, বই পড়ে কী লাভ? ভোগবাদি জীবনের হাতছানি মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই বই পড়ার জন্য কেউ সময় নিতে চাইছেন না।বই না পড়ার ফলে অসংস্কৃত, অমার্জিত মানুষজনের সংখ্যা বাড়ছে। ভদ্র, রুচিশীল, সংবেদনশীল, হৃদয়বান মানুষের সংখ্যা দিনদিন কমে আসছে। মানুষের জীবনের গভীরে আত্মসঙ্কট দেখা দিয়েছে।কে যেন বলেছিলেন, ‘ভুখা মানুষ হাতে নাও বই, এই তোমার হাতিয়ার।’ সত্যজিতের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিটির কথা ভাবুন সেখানে পাঠশালার পন্ডিতমশাইয়ের বাড়ি থেকে সব বই বের করে হীরকরাজার অনুচরেরা পুড়িয়ে দিচ্ছে।সবচেয়ে সহজ সরল সত্য কথা হলো- এই যুগে বই-ই আমাদের প্রকৃত এবং শ্রেষ্ঠ বন্ধু। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:২৭
false
hm
... ভালোবাসা কারে কয়? এ গল্পটি আজিমভের ‘হোয়াট ইজ দ্যাট থিং কল্ড লাভ?’ গল্পের ছায়াবলম্বনে লেখা, ২রা মার্চ, ২০০৩। ১. ‘কিন্তু এগুলো তো দু'টো ভিন্ন প্রজাতি।’ অধিনায়ক জিগলু নিচের গ্রহ থেকে ধরে আনা প্রাণী দু’টোকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললেন। তাঁর আলোকসংবেদী প্রত্যঙ্গগুলো মাথা ছেড়ে বেরিয়ে এলো, সেগুলোর ওপরে বিভিন্ন রঙের ছোপ জ্বলজ্বল করতে লাগলো। অর্থাৎ তাঁর মনোযোগ এখন অনেক বেশি। ভোন্দলের খুবই আরাম রাগছে আবার পুরনো অভ্যাসে ফিরে যেতে। মাসের পর মাস এই গ্রহে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে, গ্রহের বাসিন্দাদের বিদঘুটে শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে গিয়ে খবর হয়ে গেছে তার। এখন আবার সেই আলোর ঝলকানির মাধ্যমে আলাপচারিতায় ফিরে যেতে পেরে চরম স্বস্তি বোধ করছে ভোন্দল। যদিও এখন সে অনেক দূরের গ্যালাক্সিতে, তবুও যেন মনে হচ্ছে, সে বাড়ি ফিরে এসেছে। ‘না স্যার, দু'টো প্রজাতি নয়। একই প্রজাতির দু’টি ভিন্ন রূপ।’ বললো সে। ‘কী যে বলো! দু’টো জীব দেখতে দু’রকম। কেমন যেন, চ্যাপ্টা বাক্সের মতো .. .. তবে উনাকে হাজার শোকর, অন্যান্য প্রাণীগুলোর মতো অত বিদঘুটে নয়। মোটামুটি চলে, হাতপাগুলো আলাদা করে চেনা যায়। অবশ্য কোন রঙের ছোপ নেই .. .. আচ্ছা, এরা কি কথা বলতে পারে?’ ‘জ্বি, মহামান্য অধিনায়ক।’ ভোন্দল পর পর সাত রঙের বিচ্ছুরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, ব্যাপারটা তার পছন্দ নয়। ‘আমার রিপোর্টে সব খুঁটিনাটি লেখা আছে। এরা গলা আর মুখের সাহায্যে শব্দ উৎপাদন করে, অনেকটা কাশির মতো। আমি নিজেও সেরকম করতে শিখেছি।’ বেশ গর্বিত মনে হলো তাকে। ‘কাজটি অত্যন্ত জটিল।’ ‘বলো কী? আমার তো গা গুলাচ্ছে। আচ্ছা, এর জন্যেই তাহলে এদের চোখ এমন চেপ্টা, গর্তে বসানো, হ্যাঁ? অবশ্য আলো দিয়ে কথা বলতে না পারলে চোখেরই বা কাজ কি থাকে, দেখা ছাড়া? যাই হোক, তুমি কেন বলছো এরা দু’টি একই প্রজাতি? বাম দিকের প্রাণীটার আকার ছোট, রোঁয়ার মতো জিনিসগুলো বড় বড়, আর শরীরটাও ভিন্ন অনুপাতে গড়া। দেখো, এর যেখানটা উঁচু, অন্য জীবটার সেখানটা সমতল। এরা কি জ্যান্ত?’ ‘জীবিত, তবে এই মূহুর্তে অচেতন, মহামান্য অধিনায়ক। ভয় দমন করে রাখার জন্যে তাদেরকে বিশেষ মনোচিকিৎসা দেয়া হয়েছে, যাতে তাদের সুষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।’ ‘কিন্তু এদেরকে অত সুষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করাটা কি অত জরুরি? আমরা কিন্ত পিছিয়ে পড়েছি .. .. এদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরো অন্তত পাঁচটা প্রাণীজগৎ আছে আশেপাশে, আমাদের সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সময়স্থাণুতা বজায় রাখা খুব খরচের ব্যাপার, জানো তো। এদেরকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দিয়ে আমি সামনে বাড়তে চাই।’ কিন্তু ভোন্দলের ভেজা ভেজা থলথলে শরীরটা কেঁপে উঠলো, খুবই উৎকন্ঠার মধ্যে আছে সে। তার মোটা জিভটা বেরিয়ে এসে চ্যাপ্টা নাকের ওপর কুন্ডলী পাকিয়ে রইলো, আর চোখগুলো ফিরে গেলো কোটরের ভেতরে। সে তার তিন আঙুল ওয়ালা হাত নেড়ে মানা করতে লাগলো, আর আলোর সঙ্কেতে কথা বলতে বলতে তার চোখের ওপরের ছোপগুলো হয়ে গেলো গাঢ় লাল। ‘উনি আমাদের রক্ষা করুন, মহামান্য অধিনায়ক, কিন্তু এই প্রাণীজগতের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু আশেপাশে এখন নেই! আমাদের সামনে চরম দুঃসময় আসতে পারে। এই প্রাণীগুলো এই গ্যালাক্সির সবচেয়ে বিপদজনক প্রাণী হতে পারে, স্যার .. .. শুধুমাত্র এই কারণে যে এদের দু’টি ভিন্ন রূপ রয়েছে।’ ‘তোমার কথা ধরতে পারছি না।’ ‘মহামান্য অধিনায়ক, আমার কাজ ছিলো এই গ্রহটির ওপরে গবেষণা করা। খুবই ঝামেলার একটা কাজ, কারণ এই গ্রহের রকমসকমই আলাদা। এমনই আলাদা যে আমি এর কাজকারবার ঠিকমতো বুঝতেই পারিনি। যেমন ধরেন, এই গ্রহের প্রায় প্রতিটি প্রাণীরই দু’টি ভিন্ন রূপ রয়েছে। ব্যাপারটা বোঝানোর জন্যে আমি কোন শব্দই খুঁজে পাচ্ছি না। ধরা যাক, এরা হচ্ছে প্রথম রূপ আর দ্বিতীয় রূপ। আর যদি এদের শব্দে শুনতে চান, তাহলে ঐ ছোট প্রাণীটিকে বলা হয় ‘নারী’, আর বড়টিকে বলা হয় ‘পুরুষ।’ বুঝতেই পারছেন স্যার, এই প্রাণীগুলো নিজেদের এই তফাৎ সম্পর্কে ওয়াকেবহাল।’ জিগলু শরীর কুঁচকালেন। ‘কী জঘন্য!’ ‘শুধু তাই না, মহামান্য অধিনায়ক, নূতনের সৃষ্টির জন্যে এই দু’টি রূপকে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে হয়।’ অধিনায়ক জিগলু সামনে ঝুঁকে চেহারায় একই সাথে আগ্রহ এবং বিতৃষ্ণা নিয়ে জীব দু’টিকে খুঁটিয়ে দেখছিলেন, এই কথা শুনে তিনি ঝটিতে সোজা হলেন। ‘পারস্পরিক সহযোগিতা? কী আবোলতাবোল বকছো তুমি? প্রত্যেক প্রাণীই তার নূতনের জন্ম দেয় নিজের সাথে সবচেয়ে অন্তরঙ্গ যোগাযোগের মাধ্যমে, এর চেয়ে বড় কোন গুণ প্রাণের থাকতে পারে না! যদি তা না-ই হয়, প্রাণের তবে মূল্য কী?’ ‘এদের একটি রূপ সে কাজটিই করে, তবে অন্য রূপটিকে এ ব্যাপারে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হয়।’ ‘সেটা আবার কেমন করে?’ ‘সেটা বোঝা বেশ ঝামেলার ব্যাপার। বেশ ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার। আর আমি যেসব তথ্য বা প্রমাণ খুঁজে পেয়েছি, সেগুলোর কোথাও সঠিক বর্ণণাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে আমি ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করে বের করে ফেলেছি।’ জিগলু মাথা নাড়লেন। ‘কী সব ফালতু কথা! কুঁড়ির জন্ম দেয়াই এ বিশ্বে সবচেয়ে পবিত্র, সবচেয়ে ব্যক্তিগত ক্রিয়া। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ গ্রহে সেটাই ঘটে থাকে। আমাদের আলোককবি কুঝিকঝিক কী বলেছেন দেখোনি? “কুঁড়ি ফোটার সময়, ওরে কুঁড়ি ফোটার সময়, ওরে, মিষ্টি লক্ষ্মী কুঁড়ি ফোটার সময় যখন আসে ..”।’ ‘অধিনায়ক, আপনি বুঝতে পারছেন না। এই প্রাণী দু’টির সহযোগিতার ফলে এদের একটি মিশ্রণ উৎপন্ন হয়, যদিও আমি জানি না সেটা ঠিক কিভাবে ঘটে। এভাবেই এদের জগতে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রাণীগুলো জন্মায়। আমাদের কুঁড়ি ফোটার ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন ঘটতে হাজার বছর লেগে যায়, আর এদের এখানে এই পরিবর্তন ঘটে প্রতিটি নূতনের জন্মের সময়। এর ফলে এদের বৈচিত্র্য অনেক বেশি।’ ‘তুমি কি বলতে চাও এই প্রাণীগুলোর একটি রূপের অংশ আরেকটি রূপের অংশের সাথে মিশ্রিত হয়? তুমি কি জানো এটা কত বড় একটা ফালতু কথা? এটা কি আদৌ সম্ভব? আমাদের শরীরবিজ্ঞান কি বলে?’ ‘কিন্তু সেটাই ঘটে।’ ভোন্দল জিগলুর কটমটে দৃষ্টির সামনে সংকুচিত হয়ে দাঁড়ালো। ‘এদের বিবর্তন ঘটে খুব দ্রুত। এই গ্রহে তো জাতি প্রজাতি গিজগিজ করছে। বারো লাখেরও বেশি প্রজাতি এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেছে।’ ‘বারোটার বেশি হবে না। এখানকার গাঁইয়া প্রাণীগুলোর নিজস্ব তথ্য নিয়ে নাচলে তো চলবে না, নিজেদেরও চোখ কান খোলা রাখতে হবে।’ ‘আমি এরকম ছোট জায়গার মধ্যেই কয়েকশো প্রজাতি দেখেছি, মহামান্য অধিনায়ক। এদেরকে অল্প একটু জায়গা আর অল্প একটু সময় দিলে এরা আরো নতুন নতুন প্রজাতির জন্ম দিতে থাকবে। একদিন দেখা যাবে এরা আমাদের মেরেধরে ভাগিয়ে দিয়ে এই গ্যালাক্সি শাসন করছে।’ ‘তাহলে এই “সহযোগিতার” ব্যাপারটা তুমি প্রমাণ করো, পরিদর্শক। তাহলে হয়তো আমি তোমার কথায় পাত্তা দেবো। আর যদি সেটা করতে না পারো, আমি ধরে নেবো তুমি চাপা মারছো। সেক্ষেত্রে আমরা সাথে সাথে অন্য গ্রহের দিকে রওনা দেবো।’ ‘আমি প্রমাণ দিতে পারবো!’ ভোন্দলের আলোর ঝলক হলদে সবুজ রঙ ধারণ করলো। ‘এই প্রাণীরা আরো একটি দিক দিয়ে স্বতন্ত্র। এরা ভবিষ্যতের অনেককিছু অনুমান করে নিতে পারে, খুব সম্ভবত তাদের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের পরিণাম হিসেবে। এরা এমন সব মহাকাশ যাত্রা নিয়ে সাহিত্য রচনা করে, যা তারা এখনো তৈরি করতে পারে নি। এই ধরনের সাহিত্যকে তারা বলে “সায়েন্স ফিকশন”। আমি এই ধরনের রচনা নিয়ে বিশেষ গবেষণা করেছি। আমার বিশ্বাস, তারা তাদের বিপদজনক দিকটা এই ধরনের সাহিত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করে ফেলবে। আর এই সায়েন্স ফিকশন থেকেই আমি তাদের এই পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারটি জেনেছি।’ ‘কিভাবে?’ ‘এই গ্রহে একটি সাময়িকী রয়েছে, যেটি এমন কিছু সায়েন্স ফিকশন প্রকাশ করে, যেটি মূলত এই সহযোগিতার নানা ভঙ্গির ওপর জোর দিয়ে থাকে। অবশ্য বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে, এতে পুরোপুরি খোলাসা করে কিছু বলে না, কেবল আকার ইঙ্গিতে কাজ সারে। আমাদের আলোকভাষায় এই পত্রিকার নামটিকে অনুবাদ করা যেতে পারে “ক্রীড়াবালক” হিসেবে। যে জীবটি এই সাময়িকীর দায়িত্বে রয়েছে, সে কেবল এই সহযোগিতার ব্যাপারটিতেই আগ্রহী, আর এ ব্যাপারে সে এমন বিজ্ঞানসম্মত ও নিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে যে আমি অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছি। তার সায়েন্স ফিকশনগুলোতে এই সহযোগিতার কিছু উদাহরণ আমি খুঁজে পেয়েছি এবং সেটি অনুসরণ করে সামনে এগিয়েছি। .. .. আর মহামান্য অধিনায়ক, আপনার দোহাই লাগে, এই সহযোগিতার ব্যাপারটি আপনার চোখের সামনে ঘটে যাবার পর যখন প্রাণী দু’টি তাদের নূতনের জন্ম দেবে, এই গ্রহটির একটি কণার অস্তিত্বও যেন আর না থাকে।’ ‘আচ্ছা ঠিক আছে,’ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন জিগলু, ‘আগে এদের হুঁশ ফিরিয়ে আনো, তারপর যা করার জলদি করো।’ ২. শারমিন সিদ্দিকি হঠাৎ নিজের চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠলো। তার স্পষ্ট মনে আছে বিকেলবেলা স্টেশনটার কথা। প্রায় ফাঁকা, একজন লোক অপেক্ষা করছিলো কাছে দাঁড়িয়ে, আর বহুদূরে আরেকজন। ট্রেনের গুমগুম শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। তারপর হঠাৎ আলোর ঝলকানি, গা গুলানো একটা অনুভূতি, আবছাভাবে দেখা একটা ঘিনঘিনে সরীসৃপের মতো প্রাণীর চেহারা, তার লালা গড়াচ্ছে, ওপরের দিকে খুব দ্রুত ছুটে চলা, আর এই এখন .. .. ‘ওহ খোদা,’ কেঁপে উঠলো শারমিন, ‘এটা এখনো আছে। সাথে আবার আরেকটা!’ শারমিনের অসুস্থ লাগছিলো, কিন্তু ভয় সে পাচ্ছিলো না। আর এ ব্যাপারে তার প্রায় গর্বই হচ্ছিলো। তার পাশে যে লোকটি চুপচাপ মলিন একটা পাঞ্জাবী গায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সে হচ্ছে প্ল্যাটফর্মের সেই লোকটা। ‘এরা আপনাকেও ধরে এনেছে?’ জিজ্ঞেস করলো শারমিন। ‘আর কাকে?’ স্বাধীন মিত্র নিজের হাত তুলে মাথার পাতলা চুল সমান করার চেষ্টা করলো, কিন্তু টের পেলো, মহাকাশযানের ভেতরে কোন একটা শক্তি তার এই কাজে বিরোধিতা করছে। হাল ছেড়ে দিয়ে সে বিষণ্ণ চোখে তার পাশের সরু চেহারার মহিলার দিকে তাকালো। মধ্যযৌবনা, চমৎকার ভাবে ছাঁটা চুল, দামী পোশাক, কিন্তু এই মূহুর্তে স্বাধীনের ইচ্ছে করছে অন্য কোথাও থাকবার। কারো সঙ্গ পেয়েও তার ভালো লাগছে না, হোক না নারীসঙ্গ। সে মুখ খুললো, ‘আমি জানি না ম্যাডাম। আমি শুধু স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’ ‘আমিও তো।’ ‘তারপরে একটা আলো দেখলাম, কিছু শুনিনি। এখন দেখি আমি এইখানে। মনে হয় মঙ্গল গ্রহ কিংবা এরকম কোন জায়গার প্রাণী এরা।’ ‘আমারও তাই মনে হচ্ছে।’ শারমিন সজোরে মাথা ঝাঁকালো। ‘ফ্লাইং সসার। আপনার ভয় করছে না?’ ‘না। ব্যাপারটা কেমন যেন, জানেন? আমার মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। নইলে ভয় পাবো না কেন?’ ‘হ্যাঁ, ব্যাপারটা অদ্ভূত। আমারো ভয় করছে না। ও খোদা, এই যে আসছে একটা! এইটা আমাকে ধরলে কিন্তু আমি একটা চিৎকার দেবো! দ্যাখেন এর লিকলিকে হাতগুলো। ঝুলে পড়া ঘিনঘিনে চামড়া, মা গো, আমার বমি পাচ্ছে!’ ভোন্দল খুব সাবধানে এগিয়ে এসে খসখসে তীক্ষ্ণ স্বরে, এতটুকুই সে অনুকরণ করতে পেরেছে, বললো, ‘প্রাণীগণ! আমরা আপনাদের ক্ষতিসাধন করবো না। কিন্তু আপনাদেরকে দয়া করে একটু সহযোগিতা করতে হবে।’ ‘আয়হায়, এটা দেখি কথা বলে!’ বলে উঠলো স্বাধীন। ‘কীসের সহযোগিতা?’ ‘আপনারা উভয়েই। একজন আরেকজনের সাথে।’ বললো ভোন্দল। ‘হ্যাঁ?’ স্বাধীন শারমিনের দিকে ঘুরলো। ‘দিদি, এ কী বলছে কিছু বুঝতে পারছেন?’ ভোন্দল বললো, ‘আমি বলতে চাইছি .. ..,’ এই বলে সে প্রচলিত একটি সংক্ষিপ্ত শব্দ, যেটি সে ব্যবহৃত হতে শুনেছে, উচ্চারণ করলো। শারমিনের চেহারা লালচে হয়ে উঠলো। ‘কী?’ খনখনে গলায় চেঁচিয়ে উঠলো সে। ভোন্দলের সাথে অধিনায়ক জিগলুও পেট চেপে ধরলেন, যেখানে তাঁর শ্রবণযন্ত্র ব্যথায় কেঁপে উঠেছে। শারমিন একনাগাড়ে বকে চললো, ‘আমি একজন বিবাহিত মহিলা, বুঝলেন? আমার স্বামী এখানে থাকলে বুঝতেন মজাটা। আর আপনি ভদ্রলোক,’ মহাকাশযানের ভেতরে সেই পিচ্ছিল বাধা উপেক্ষা করে শরীর মুচড়ে স্বাধীনের দিকে ঘুরলো সে, ‘.. .. আপনি যে-ই হোন না কেন, যদি ভেবে থাকেন .. ..।’ ‘দিদি, দিদি .. ..’, স্বাধীন অস্বস্তিভরে মরিয়া হয়ে বললো, ‘আমি তো আর এ ধরনের কিছু বলিনি। মানে, আমি কোন মহিলাকে অপমান করতে চাই না, বুঝতেই পারছেন, কিন্তু আমি, আমি নিজেও বিবাহিত, তিনটা বাচ্চা আছে আমার .. ..। শোনেন .. ..।’ ৩. অধিনায়ক জিগলু বললেন, ‘ঘটনাটা কী হে পরিদর্শক ভোন্দল? এদের হাউকাউ ভারি বিচ্ছিরি।’ ‘ইয়ে .. ..’, বিব্রত হয়ে ছোট্ট একটা বেগুনি ঝলক দেখালো ভোন্দল। ‘এখানে আবার খানিকটা জটিল রীতিনীতি আছে। প্রথমে এরা দু’জনেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবে। এতে করে নাকি পরবর্তী কার্যকলাপের তীব্রতা বাড়ে। এই প্রাথমিক পর্যায়ের পর এদের ত্বক অপসারিত করতে হবে।’ ‘মানে? এদের ছাল ছাড়াতে হবে?’ ‘ঠিক তা না। এদের কৃত্রিম ত্বক রয়েছে, যেটা কোন রকম যন্ত্রণা ছাড়াই অপসারণ করা যায়, এবং করতে হয়। ক্ষুদ্রাকৃতির রূপটির ব্যাপারে এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।’ ‘ঠিক আছে তাহলে। ওদেরকে চামড়া ছাড়াতে বলো। কিন্তু ভোন্দল, আমার কাছে কিন্তু গোটা ব্যাপারটাই খুব ইয়ে মনে হচ্ছে।’ ‘আমার কিন্তু মনে হয়, ক্ষুদ্র রূপটিকে এ কাজটি করতে বলা আমার উচিত হবে না। বরং আমরা গোটা রীতিটিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। এই যে, আমার কাছে এখানে সেই ক্রীড়াবালকের কিছু মহাকাশযাত্রার গল্প রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, জোর খাটিয়ে ত্বক অপসারণ করা হয়। এটার কথাই ধরুন, এখানে এই দুর্ঘটনাটির একটি বর্ণণা রয়েছে, এই যে, “সে তরুণীর তন্বী শরীর থেকে এক লহমায় সমস্ত পোশাক প্রায় ছিন্ন করে ফেললো। এক মূহুর্তের জন্যে সে নিজের শরীরের সাথে অনুভব করলো মেয়েটির বক্ষের উষ্ণ কাঠিন্য .. ..”, এভাবেই নাকি চলতে থাকে। এই যে ছিঁড়ে ফেলা, এই বলপূর্বক ত্বকের অপসারণ, এটি একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।’ ‘বক্ষ?’ প্রশ্ন করলেন জিগলু। ‘আমি তোমার ঝলকের অর্থ ধরতে পারলাম না।’ ‘এরা এই শব্দটির মাধ্যমে ক্ষুদ্র রূপটির দেহের সম্মুখভাগের ঊর্ধ্বাংশের স্ফীতিকে বোঝায়, মহামান্য অধিনায়ক।’ ‘আচ্ছা। তাহলে এই বৃহৎ রূপটিকে বলো ক্ষুদ্র রূপটির ত্বক ছিঁড়ে ফেলতে। ওহ্, কী বীভৎস ব্যাপার!’ ভোন্দল স্বাধীনের দিকে ঘুরলো। ‘মহাশয়,’ বললো সে, ‘আপনি এক লহমায় এই তরুণীর তন্বী শরীর থেকে সমস্ত পোশাক প্রায় ছিন্ন করুন। এ কাজের জন্য আমি আপনার বাঁধন খুলে দিচ্ছি।’ শারমিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, রাগের চোটে স্বাধীনের দিকে মুচড়ে ঘুরলো সে। ‘খবরদার বলছি! খবরদার, আমাকে যদি ছুঁয়েছেন তো .. ..! লম্পট, জানোয়ার কোথাকার!’ ‘আমি?’ স্বাধীন অভিযোগের সুরে বললো। ‘আমার তো এই ধরনের কোন মতলব নেই। আপনার কি ধারণা, আমি যেখানে সেখানে জামাকাপড় ছিঁড়ে বেড়াই? দেখেন দাদা,’ ভোন্দলের দিকে ঘুরলো সে, ‘আমার ঘরে বউবাচ্চা আছে। আমার বউ যদি টের পায় আমি এই সব কিছু করেছি, আমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। আপনি জানেন আমি কোন মেয়ের দিকে তাকালেই আমার বউ কেমন ব্যাভার করে? শোনেন তাহলে .. ..।’ ‘এই প্রাণীটি কি এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে?’ জিগলু অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করলেন। ‘আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হচ্ছে।’ বললো ভোন্দল। ‘অন্যরকম পরিবেশে, বুঝতেই পারছেন, এদের সহযোগিতার পর্বটি বিলম্বিত হওয়া স্বাভাবিক। তবে যেহেতু আমি জানি যে আপনার কাছে এ ব্যাপারটি অপ্রীতিকর, তাই আমি এই রীতিটি নিজেই সমাধা করবো। ক্রীড়াবালকের কিছু গল্পে প্রায়ই বলা হয় যে একটি অন্য গ্রহের প্রাণী এসে ক্ষুদ্র রূপটির ত্বক উন্মোচন করে। এই যে দেখুন এখানে .. ..,’ নোটবইয়ের পাতা উল্টাতে লাগলো সে। ‘তারা একটি বিচিত্র জীবের বর্ণণা দিয়েছে। এই গ্রহের প্রাণীদের বিচারবুদ্ধির বিশেষ অভাব আছে, বুঝতেই পারছেন। তারা আমাদের মতো রূপবান লালা-আবৃত ব্যক্তির বর্ণণা দিতে অক্ষম।’ ‘আরে জলদি করো। সারা দিন লাগিয়ে দিচ্ছো যে!’ খেঁকিয়ে উঠলেন জিগলু। ‘জ্বি, অধিনায়ক। এখানে বলছে যে, বহিরাগত প্রাণীটি “মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো। সে প্রাণপণে চিৎকার করতে করতে সেই দানবের আলিঙ্গনে হারিয়ে গেলো। এলোমেলো নখরাঘাতে তার ছোট্ট জামাটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।” আপনি বুঝতেই পারছেন, এদের ত্বক যখন অপসারিত হয়, তখন এরা উত্তেজিত হয়ে উচ্চমাত্রার শব্দ উৎপন্ন করে।’ ‘যাও তাহলে ভোন্দল, এটার ত্বক অপসারণ করো। কিন্তু দোহাই লাগে, শব্দ করতে দিও না। আমার সারা শরীর কাঁপছে।’ ভোন্দল ভারি বিনয়ের সাথে শারমিনকে বললো, ‘যদি কিছু মনে না করেন .. ..।’ তার একটি চামচসদৃশ আঙুল শারমিনের শাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। শারমিন প্রাণপণে মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। ‘ছোঁবে না, ছোঁবে না বলছি! তুমি এই শাড়িতে ময়লা মাখিয়ে দেবে! দ্যাখো, এটার দাম সাড়ে চার হাজার টাকা, গুলতামিরা থেকে কেনা! দূরে সরো, রাক্ষস কোথাকার! এর চোখগুলো দ্যাখেন!’ হাঁপাতে হাঁপাতে ভোন্দলকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রাণপণ প্রচেষ্টা করছে শারমিন। ‘একটা চটচটে, মাছির মতো চোখওয়ালা রাক্ষস এইটা! এই শোন, আমি নিজেই খুলছি। খবরদার তুমি এটা ছোঁবে না!’ শাড়িটা খুলতে খুলতে শারমিন চোখ গরম করে স্বাধীনের দিকে তাকালো, ‘খবরদার আপনি এদিকে তাকাবেন না!’ স্বাধীন কাঁধ ঝাঁকিয়ে চোখ বুঁজলো। শারমিন শাড়িটা খুলে দাঁড়ালো। ‘এইবার? ঠিক আছে?’ অধিনায়ক জিগলু অসন্তুষ্ট ভঙ্গিতে আঙুল নাড়লেন। ‘এটাই কি বক্ষ? তাহলে অন্য প্রাণীটি আরেক দিকে মাথা ঘুরিয়ে রেখেছে কেন?’ ‘দ্বিধা, দ্বিধা।’ জবাব দিলো ভোন্দল। ‘আর তাছাড়া, বক্ষ এখনো আবৃত। অন্যান্য ত্বকও অপসারিত করতে হবে। পুরোপুরি প্রকাশিত অবস্থায় বক্ষ অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। এদের সাহিত্যে একে সবসময় আইভরি প্রাসাদ, কিংবা শুভ্র গোলক, কিংবা এমন আরো ভঙ্গিতে বর্ণণা করা হয়ে থাকে। আমার কাছে এর রৈখিক চিত্র রয়েছে, ক্রীড়াবালকের সম্মুখ অংশ থেকে সংগৃহীত। আপনি পরীক্ষা করলে দেখতে পাবেন, প্রায় প্রতিটি উদাহরণেই একটি প্রাণী তার বক্ষ আংশিক কিংবা পূর্ণ উন্মোচিত করে উপস্থিত।’ অধিনায়ক চিন্তিত ভঙ্গিতে ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে শারমিনের দিকে ঘুরলেন। ‘আইভরি কী বস্তু?’ ‘জ্বি, এই ঝলকটিও আমার আবিষ্কৃত। এদের গ্রহের একটি আংশিক বুদ্ধিমাণ প্রাণীর দেহের একটি কঠিন অংশকে এরা এই নামে ডাকে।’ ‘আহ।’ জিগলু সন্তুষ্টির একটি গাঢ় সবুজ ঝলক দেখালেন। ‘এবার বোঝা যাচ্ছে। এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি এই গ্রহের যোদ্ধা গোষ্ঠীর একজন, আর এই কঠিন অংশ দিয়ে সে তার শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে পারে।’ ‘না না না। আমার জানামতে, এর এই অংশটি যথেষ্ঠ পেলব।’ ভোন্দল কথা বলতে বলতে তাদের মূল আলোচ্য বিষয়ের দিকে একটি হাত বাড়িয়ে দিলো, শারমিন চিৎকার করে পিছিয়ে গেলো। ‘তাহলে এর আর কী কাজ থাকতে পারে?’ ‘আমার ধারণা,’ ভোন্দল খানিকটা ইতস্তত করে বললো, ‘এদের নূতনের পুষ্টিসাধনের উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহৃত হয়।’ ‘এদের নূতনেরা এসে এগুলোকে খেয়ে ফেলে?’ জিগলু একেবারে মুষড়ে পড়লেন। ‘ঠিক তা না। এই বস্তু একটি বিশেষ পদার্থ উৎপন্ন করে যা নূতনেরা গ্রহণ করে থাকে।’ ‘একটি জীবিত দেহ থেকে পদার্থ গ্রহণ? ছিহহহ।’ অধিনায়ক তিন হাতে তাঁর মাথা ঢাকলেন, তাঁর তৃতীয় হাতটি শরীরের ভেতর থেকে এতো দ্রুত বেরিয়ে এলো যে ভোন্দল আরেকটু হলেই ছিটকে পড়ছিলো। ‘একটা ঘিনঘিনে তিনহাতওয়ালা রাক্ষস!’ বললো শারমিন। ‘ঠিক।’ সমর্থন যোগালো স্বাধীন। ‘শোনেন ভদ্রলোক, চোখগুলোকে সামলে রাখেন!’ ‘আমি কিছু দেখছি না দিদি।’ ভোন্দল আবার এগিয়ে এলো। ‘মহাশয়া! আপনি কি বাকি অংশগুলো অপসারণ করবেন?’ শারমিন মহাকাশযানের ভেতরে যতটুকু সম্ভব শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলো, ‘কক্ষনো না!’ ‘তাহলে আপনি যদি চান, আমি এ কাজটি সম্পন্ন করতে পারি।’ বললো ভোন্দল। ‘খবরদার ছোঁবে না! খোদার দোহাই, না! ছি, কি লালা মাখানো সারা শরীরে! আচ্ছা ঠিক আছে, খুলছি।’ শারমিন বিড়বিড় করতে করতে চোখ গরম করে স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে অবশিষ্ট যা কিছু আছে খুলতে লাগলো। ৪. ‘কিছুই তো হচ্ছে না।’ গভীর অসন্তোষ নিয়ে বললেন জিগলু। ‘আমার তো মনে হচ্ছে নমুনা হিসেবে প্রাণী দু'টো একেবারেই খুঁতিয়াল।’ ভোন্দলের মনে হলো, অধিনায়ক তার কাজের বদনাম করছেন। ‘আমি আপনাকে একেবারেই নিখুঁত দু’টি প্রাণী এনে দিয়েছি। এদের মধ্যে আপনি কি সমস্যা খুঁজে পেলেন?’ ‘কই, এই বক্ষ জিনিসটা তো কোন প্রাসাদ বা গোলকের মতো মনে হচ্ছে না। তুমি নিজেই আমাকে এই জিনিসগুলোর ছবি দেখিয়েছো, কাজেই আমি জানি তারা দেখতে কেমন। ছবি দেখে মনে হচ্ছে এই গোলক বেশ বৃহদাকৃতির। আর চেয়ে দেখো এর দিকে, গোলক তো দূরের কথা, কিছু শুষ্ক কোষের সমন্বয় মাত্র। আবার খানিকটা রঙচটাও বটে।’ ‘কী যে বলেন!’ বললো ভোন্দল। ‘একটু এদিক ওদিক তো হবেই। হাতের তিন আঙুল কি কখনো সমান হয়? দাঁড়ান, আমি বরং প্রাণীটিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি।’ ভোন্দল শারমিনের দিকে ঘুরে প্রশ্ন করলো, ‘মহাশয়া, আপনার বক্ষ কি ত্রুটিযুক্ত?’ শারমিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, মুখ হাঁ করে কিছুক্ষণ শ্বাস নেয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারলো না সে। অবশেষে সে কোনমতে বললো, ‘আচ্ছা! .. .. আমি মাধুরী দীক্ষিত কিংবা এলিজাবেথ টেইলর নই, সত্যি কথা, কিন্তু আমার সবকিছু ঠিকঠাক আছে! ও খোদা, আমার স্বামী যদি এখন এখানে থাকতো!’ সে স্বাধীনের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার শুরু করলো, ‘শুনুন আপনি! এই সর্দিমাখা রাক্ষসটাকে বুঝিয়ে বলুন তো, যে আমার কোন ... কোন সমস্যা নেই!’ ‘ইয়ে, দিদি,’ স্বাধীন কোমল গলায় বললো, ‘আমি কিন্তু কিছু দেখছি না।’ ‘নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই, আপনি তো কিছুই দেখছেন না। সেই তখন থেকে আড়চোখে তাকিয়ে আছেন! আর ঢং করতে হবে না, চোখ খুলে একজন ভদ্রমহিলাকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন, যদি আপনি নিজে একজন ভদ্রলোক হয়ে থাকেন .. .. যা আপনি নন!’ ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।’ স্বাধীন আড়চোখে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শারমিনের দিকে তাকালো। ‘আমি আসলে এমন নাজুক পরিস্থিতির সাথে নিজেকে জড়াতে চাই না, তবে আমার মনে হচ্ছে আপনার কোন সমস্যা নেই।’ ‘মনে হচ্ছে? আপনি কি কানা নাকি? জানেন, আমি একসময় মিস রাজশাহী প্রতিযোগিতায় রানার আপ হয়েছিলাম? আর জানেন কেন রানার আপ হয়েছিলাম? কারণ আমার কোমরে একটু সমস্যা ছিলো, অন্য কোথাও নয় .. ..।’ স্বাধীন তাড়াতাড়ি বললো, ‘আচ্ছা, আচ্ছা .. .. আপনার কোন সমস্যাই নেই। সত্যি, আপনি .. .. বেশ ভালো।’ স্বাধীন ভোন্দলের দিকে তাকিয়ে জোরেসোরে মাথা ঝাঁকালো। ‘ঠিক আছে, এনার সবকিছু ঠিক আছে। আমি অবশ্য এ ব্যাপারে এমন কোন বিশেষজ্ঞ নই, তবে এনার কোন কিছু নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।’ শারমিন শ্বাস ফেলে ঢিল দিয়ে দাঁড়ালো। ভোন্দল হাঁপ ছেঁড়ে বাঁচলো। সে জিগলুর দিকে ফিরে বললো, ‘বৃহৎ রূপটি আগ্রহ প্রকাশ করেছে, মহামান্য অধিনায়ক। আমার মনে হয় প্রেরণাশক্তি কাজ শুরু করেছে। এখন শুধু শেষ পর্বটি বাকি।’ ‘সেটা আবার কী?’ ‘আমি এটার জন্যে কোন ঝলক খুঁজে পাচ্ছি না, অধিনায়ক। এদের একজনের কথা বলা আর খাদ্যগ্রহণের অঙ্গটিকে অপরজনের একই অঙ্গের ওপর স্থাপিত করা হয়। আমাদের ঝলকে একে বলা যেতে পারে : চুম্বন।’ ‘আমি কি বমি করেই ফেলবো?’ গজগজ করতে লাগলেন জিগলু। ‘এটাই হচ্ছে সহযোগিতার চরম পর্যায়। এদের সাহিত্যের সব গল্পে, ত্বক অপসারণের পর দেখা যায় এরা একে অপরকে তাদের হাত পা দিয়ে জাপটে ধরে, এবং আমাদের ভাষায় বলতে গেলে “জ্বলন্ত চুম্বন” করতে থাকে। এই যে দেখুন, এখানে উদাহরণ রয়েছে, “সে মেয়েটিকে জাপটে ধরলো, তার ঠোঁট মিশে গেলো মেয়েটির ঠোঁটের সাথে।’ ‘কে জানে, হয়তো একটা প্রাণী আরেকটাকে ধরে খেয়ে ফেলছিলো।’ বললেন অধিনায়ক। ‘মোটেও না।’ ভোন্দল খানিকটা অধৈর্য হয়ে বললো। ‘ওটা ছিলো জ্বলন্ত চুম্বন।’ ‘জ্বলন্ত? কী বলতে চাও তুমি? দহন প্রক্রিয়া ঘটতে থাকে নাকি?’ ‘আমার তা মনে হয় না। আমার মনে হয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যাপারটিকে তারা এভাবে প্রকাশ করে। আমার ধারণা, তাপমাত্রা এভাবে যত বৃদ্ধি পায়, নূতনের উৎপাদনও তত উৎকর্ষ হয়। এখন যখন বৃহৎ রূপটি ঠিকমতো প্রেরণা পেয়েছে, সে ক্ষুদ্র রূপটির মুখে মুখ রাখলেই নূতনের উৎপাদন করতে পারবে। এই প্রক্রিয়াটি ছাড়া নূতনের জন্ম দেয়া সম্ভব নয়। এটাই সেই সহযোগিতা যেটার কথা আমি এতক্ষণ বলছি।’ ‘ব্যস, এটাই? কেবল এটুকুই ...?’ জিগলু হাতের ইশারায় ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু ঝলকে কথাটা প্রকাশ করতে তাঁর রুচিতে বাধলো। ‘এটুকুই।’ বললো ভোন্দল। ‘আমি কোন গল্পেই, এমনকি “ক্রীড়াবালক”-এও আমি এর পর নূতনের জন্ম সংক্রান্ত অন্য কোন শারীরিক ক্রিয়ার উল্লেখ পাইনি। তবে কখনো কখনো গল্পে চুম্বনের পর তারা কিছু কিছু চিহ্ন ব্যবহার করে, যেমন ছোট ছোট কয়েকটা বিন্দু .. .. তবে আমার ধারণা এই বিন্দুগুলো আরো চুম্বনের প্রতীক। প্রতিটি চুম্বনের জন্যে একটি করে বিন্দু, যখন তারা একাধিক নূতনের জন্ম দিতে চায়।’ ‘আপাতত দয়া করে একটার ব্যবস্থা করো। এখনি।’ ‘নিশ্চয়ই, মহামান্য অধিনায়ক।’ ৫. ভোন্দল যথেষ্ঠ গাম্ভীর্য নিয়ে বললো, ‘মহাশয়, আপনি কি দয়া করে এনাকে চুম্বন করবেন?’ স্বাধীন বললো, ‘দ্যাখেন, আমি নড়তে পারছি না।’ ‘অবশ্যই, আমি আপনাকে মুক্ত করে দিচ্ছি।’ ‘ইনি এই ব্যাপারটা পছন্দ না-ও করতে পারেন।’ শারমিন ফুঁসে উঠলো, ‘আপনি আপনার জান বাজি ধরতে পারেন, আমি ব্যাপারটা পছন্দ করবো না। আপনি খবরদার কাছে আসবেন না।’ ‘ঠিক আছে। কিন্তু আমি এদের কথা না শুনলে এরা কী করবে? দ্যাখেন, আমি এদেরকে চটাতে চাই না। আমরা এমনিই .. .. মানে, বুঝলেন তো .. .. লোক দেখানো পাপ্পি দিতে পারি।’ শারমিন ইতস্তত করলো, সাবধানতার কারণটা বুঝতে পারছে সে। ‘ঠিক আছে। কিন্তু খবরদার, কোন ফাজলামি করবেন না। আমার কিন্তু এসব করার অভ্যেস একদম নেই।’ ‘আমি জানি। কিন্তু এসব তো আর আমার মাথা থেকে বেরোয় নি। আপনি নিশ্চয়ই তা মানবেন।’ শারমিন চটে গিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো, ‘রাক্ষসের গুষ্টি যত! এরা নিজেদের কী মনে করে আল্লাই জানে। কেমন লোকজনকে হুকুম দিয়ে বেড়াচ্ছে।’ স্বাধীন একটু কাছে এগিয়ে গেলো। ‘ইয়ে, যদি কোন সমস্যা না থাকে, তো .. ..।’ সে আনাড়ির মতো শারমিনের খোলা কাঁধে হাত রেখে খুব সাবধানে মুখ বাড়ালো। শারমিনের কাঁধ আড়ষ্ট হয়ে উঠলো। স্বাধীনের ঠোঁট তার ঠোঁট স্পর্শ করলো। অধিনায়ক জিগলু চটে উঠে ঝলকাতে থাকলেন। ‘কই, আমি তো তাপমাত্রার কোন বৃদ্ধি টের পাচ্ছি না।’ তাঁর তাপসংবেদী শুঁড় মাথার ওপর সটান খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপতে লাগলো। ‘আমিও না।’ খানিকটা মুষড়ে পড়ে বললো ভোন্দল। ‘কিন্তু সায়েন্স ফিকশনগুলোতে যা লেখা আছে, তা-ই তো ঘটছে। আমার মনে হয়, এর হাত আরো প্রসারিত হতে হবে .. .. আহ, এই তো। দেখছেন, ব্যাপারটা কাজ শুরু করে দিয়েছে।’ নিজের অজান্তেই স্বাধীনের হাত শারমিনের কোমল শরীরের দিকে নেমে এলো। শারমিন কিছুক্ষণের জন্যে তার সাথে মিশে থেকে হঠাৎ মহাকাশযানের সেই অদৃশ্য বাধা থেকে ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। ‘ছাড়ুন বলছি।’ স্বাধীনের ঠোঁটের চাপে শারমিনের কথা জড়িয়ে গেলো। সে হঠাৎ কামড় বসালো, স্বাধীন জোরে কাতরে উঠে নিজেকে সরিয়ে নিলো। নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো সে, তারপর আঙুলে লেগে যাওয়া রক্তের দিকে তাকালো। ‘এটা কী করলেন বলেন তো?’ অভিযোগের সুরে বললো সে। শারমিন বললো, ‘আপনি তো আমাকে পাপ্পির কথা বলেছিলেন, তার জায়গায় কি শুরু করেছিলেন এটা? কেমন লম্পট আপনি? ওহ, কেমন জায়গায় এসে পড়েছি আমি? চারদিকে শুধু লুচ্চা আর রাক্ষস!’ অধিনায়ক জিগলু হলুদ আর নীল ঝলকাতে লাগলেন। ‘হয়ে গেছে? আমাদের আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?’ ‘আমার তো মনে হয় এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হয়ে গেছে। সারা বিশ্বেই তো, যখন আপনার কুঁড়ি ফোটানোর দরকার হয়, তখন আপনি কুঁড়ি ফোটান। অপেক্ষার কিছু নেই এতে।’ ‘তাই নাকি? তুমি এতক্ষণ যেসব জঘন্য ধ্যাষ্টামোর কথা আমাকে ব্যাখ্যা করে শোনালে, আমি আর ইহজীবনে কুঁড়ি ফোটাচ্ছি না। এখন জলদি কাজ শেষ করো।’ ‘জ্বি অধিনায়ক, এখনি করছি।’ কিন্তু সময় বয়ে চললো। অধিনায়কের ঝলক আস্তে আস্তে গাঢ় কমলার দিকে চলে গেলো, আর ভোন্দলের ঝলক প্রায় নিবু নিবু হয়ে এলো। একসময় ইতস্তত করে ভোন্দল প্রশ্ন করলো, ‘মাফ করবেন, মহাশয়া, আপনি কুঁড়ি ফোটাবেন কখন?’ ‘আমি কী ফোটাবো?’ ‘নূতনের জন্ম দেবেন কখন?’ ‘আমার একটা বাচ্চা আছে।’ ‘আমি বলতে চাইছি, এখানে নূতনের জন্ম দেবেন কখন?’ ‘আমি বলতে পারি না। আরেকটা বাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে আমি চিন্তা ভাবনা করিনি।’ ‘কী বলছে, কী বলছে?’ জানতে চাইলেন জিগলু। ‘বলছে কী প্রাণীটা?’ ‘মনে হচ্ছে,’ জবাব দিলো ভোন্দল, ‘প্রাণীটি এখন নূতনের জন্ম দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয়।’ অধিনায়কের ঝলকের রঙ উজ্জ্বল হয়ে ঝলসে উঠলো। ‘তুমি কি জানো, পরিদর্শক, আমার কী মনে হচ্ছে? আমার মনে হচ্ছে, তোমার মনটা অসুস্থ এবং নোংরা। এই প্রাণী দু’টির কিছুই হয়নি। এদের মধ্যে কোন সহযোগিতাও হচ্ছে না। কোন নূতনের জন্মও এরা দিচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে, এরা দু'টো ভিন্ন প্রাণী, এবং তুমি আমার সাথে বাজে একটা মশকরা করার চেষ্টা করছো।’ ‘কিন্তু, অধিনায়ক .. ..।’ বলে উঠলো ভোন্দল। ‘আর কিন্তু অধিনায়ক কপচাতে যেও না!’ বললেন জিগলু। ‘অনেক হয়েছে, আর না। তুমি আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছো, আরেকটু হলে গা গুলিয়ে আমার বমি এসে যাচ্ছিলো, কুঁড়ি ফোটানোর ব্যাপারে আমার মনটাকেই বিষিয়ে দিয়েছো তুমি, আর আমার সময় নষ্ট করেছো। তুমি আসলে চেষ্টা করছো খবরের কাগজে নাম তুলে বাহবা কুড়োতে, সেটা তুমি যাতে না পাও তার জন্যে যা করতে হয় আমি করবো। এখনি এই প্রাণীগুলোকে আমার চোখের সামনে থেকে দূর করো। এগুলোর ত্বক ফিরিয়ে দাও, আর যেখানে তাদেরকে পেয়েছো সেখানে রেখে এসো। আমার উচিত এতক্ষণ এসবের পেছনে অভিযানের যতখানি পয়সা নষ্ট হয়েছে সেটা তোমার বেতন থেকে কেটে রাখা।’ ‘কিন্তু, অধিনায়ক .. ..।’ ‘যাও বলছি। এদেরকে ঠিক আগের জায়গায়, আগের সময়ে ফিরিয়ে দিয়ে এসো। এই গ্রহে এর পর কেউ পা ফেলুক, তা-ও আমি চাই না। আর এ ব্যাপারে আমি ব্যবস্থা নেবো, যাতে কেউ পা ফেলতে না আসে।’ জিগলু কড়া চোখে আবার চাইলেন ভোন্দলের দিকে। ‘একই প্রাণী, দু’টি রূপ, বক্ষ, চুম্বন, সহযোগিতা .. .. বাহ্! তুমি একটি আকাট মূর্খ, পরিদর্শক, একটা মহা বেকুব .. .. আর সবচেয়ে বড় কথা, একটা মহা খাচ্চর, খাচ্চর, খাচ্চর লোক।’ আর কোন তর্ক চললো না। ভোন্দল কাঁপা হাতে প্রাণীগুলোকে ফিরিয়ে দিয়ে আসার কাজ শুরু করলো। ৬. তারা দু’জন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে চারদিকে বিহ্বলের মতো তাকাতে লাগলো। প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, দূরে ট্রেনের গুমগুম শোনা যাচ্ছে। শারমিন দ্বিধা নিয়ে বললো, ‘আচ্ছা, এগুলো কি সত্যি সত্যি ঘটলো?’ স্বাধীন মাথা নাড়লো, ‘আমার মনে আছে।’ শারমিন বললো, ‘আমরা কাউকে কিছু বলতে পারবো না।’ ‘অবশ্যই না। কেউ শুনলে আমাদের পাগল বলবে। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই?’ ‘হুম। ঠিক আছে তাহলে।’ শারমিন একটু সরে দাঁড়ালো। স্বাধীন বললো, ‘শোনেন। আমি খুবই দুঃখিত, আপনাকে এভাবে বিব্রত করার জন্য। আসলে আমার কিছু করার ছিলো না।’ ‘না না, ঠিক আছে, আমি জানি।’ শারমিন মাটির দিকে চোখ নামালো। ট্রেনের শব্দ আরো বেড়ে গেছে। ‘মানে, আমি বলতে চাইছি, আপনার কোন সমস্যা ছিলো না। .. .. মানে, আপনাকে বেশ ভালোই লাগছিলো আর কি, কিন্তু ওভাবে বলতে লজ্জা লাগছিলো আমার।’ শারমিন হঠাৎ হাসলো একটু, ‘না না, ঠিক আছে।’ ‘তাহলে চলেন, আমি আপনাকে অন্তত এক কাপ কফি খাওয়াই, তাতে যদি আপনি একটু স্বস্তি বোধ করেন। আমার বউ জানে বাড়ি ফিরতে আমার আরো অনেক দেরি হবে, কাজেই .. ..।’ ‘তাই? এদিকে আমার স্বামী একটু বাইরে গেছেন অফিসের কাজে। আমা ছেলেটাও বেড়াতে গেছে আমার মায়ের কাছে। আমারও বাসায় কেউ নেই .. ..।’ ‘তাহলে তো ঠিকই আছে। আমরা তো একরকম পরিচিত হয়েই গেলাম।’ ট্রেনটা এসে পৌঁছালো, কিন্তু তারা উল্টোদিকে ঘুরলো, সরু সিঁড়ি বেয়ে আবার রাস্তার দিকে এগোলো দু’জন। অবশ্য কফি নয়, তারা দু’জন দু’টো ককটেল নিয়ে বসলো। তারপর এই ভর সন্ধ্যেয় স্বাধীন কিছুতেই একা একা শারমিনকে বাসায় ফিরতে দিলো না, নিজে এগিয়ে দিতে শারমিনের দরজা পর্যন্ত গেলো। আর ভদ্রতাবশত শারমিন স্বাধীনকে কিছুক্ষণের জন্যে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালো। ৭. এদিকে, মহাকাশযানের ভেতরে, হতাশ ভোন্দল তার বক্তব্য প্রমাণের জন্যে একটা শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। অধিনায়ক জিগলু যখন মহাকাশযানের যাত্রার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন ভোন্দল তারা দূরদর্শন যন্ত্রের পর্দার সামনে বসে তার নমুনা দু’টির ওপর নজর রাখছিলো। শারমিনের অ্যাপার্টমেন্টে সে শারমিন আর স্বাধীনের ওপর ফোকাস করা মাত্রই তার শুঁড় সটান দাঁড়িয়ে গেলো। রঙধনুর সাত রঙে সে ঝলকাতে লাগলো, ‘অধিনায়ক! মহামান্য অধিনায়ক! দেখুন এরা এখন কী করছে!’ কিন্তু ঠিক তখনই মহাকাশযান সময়স্থাণুতা ভেঙে নক্ষত্রবেগে যাত্রা শুরু করলো।
false
rn
হুমায়ূন আহমেদ এর শেষ উপন্যাসঃ দেয়াল ১/ মুক্তিযুদ্ধের সময় সবচেয়ে যে জিনিসটার অভাব অনুভব করেছি তা হলো একটা ভালো ক্যামেরা।ছবি তোলার মতো অপূর্ব সব সাবজেক্ট পেয়েছি। সমস্যা হচ্ছে, সৈ্নিকের হাতে রাইফেল মানায়। ক্যামেরা মানায় না। এখন অবশ্যি আমার সঙ্গে ক্যামেরা আছে। লাইকা নাম। জার্মানির ক্যামেরা। কিন্তু ছবি তোলার সাবজেক্ট পাচ্ছি না। দেয়াল, পৃঃ ৫৬, হুমায়ূন আহমেদ। ২/ বঙ্গবন্ধু মন খারাপ করে ৩২ নম্বর বাড়ির উঠানে এসে দাড়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে তার মন ভালো হয়ে গেল। উঠান ভরতি মানুষ। ভুখা মিসিলের মানুষ না। সাধারণ মানুষ, যারা বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখতে এসেছে।স্লোগান শুরু হলো, 'জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু'। বঙ্গবন্ধু হাসি মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন।ধব ধবেসাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা অতি সুপুরুষ এক যুবক দামি ক্যামেরায় মিছিলের ছবি তুলছে। যুবক একপর্যায়ে ইশারায় বঙ্গবন্ধুর ছবি তোলার অনুমতি প্রার্থনা করল।বঙ্গবন্ধু উচ্চ স্বরে বললেন, ছবি তুলতে চাইলে তুলবি। অনুমতির ধার ধারবি না। যুবককে বঙ্গবন্ধুর পরিচিত মনে হচ্ছে। তবে তিনি তারনাম মনে করতে পারছেন না।হঠাৎ হঠাৎ তার এ রকম হয়, নাম মনে আসে না। যুবক এসে বঙ্গবন্ধুকে কদমবুসি করল।বঙ্গবন্ধু বললেন, কই মাছ খেয়ে যাবি।কই মাছ ভাজা হচ্ছে। দেয়াল, পৃঃ ৯০,৯১, হুমায়ূন আহমেদ। #### #### #### #### সাভার ট্যাডেজিঃস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা, এইটা কি কইলো !!!! হরতালকারীরা ভবনটির ফাটল অংশে ও ফাটলকৃত পিলারে ঝাকানাকা করার কারনে ভবন ধ্বস। মাইরালা আমারে মাইরালা..."তদন্ত কমিটি" কথাটা শুনলেই এখন রাগ লাগে। সাভার হত্যা ঘটনার কোন বিচার হবে না।আগেও কোন সরকার এরকম ঘটনার বিচার করে নি। এবারও বিচার হবে না।মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি-ঠ্যালা দিলে অবশ্যই ভবন ধসে পড়তে পারে!রানা প্লাজা থেকে শত লাশ উদ্ধারের পরেও প্রধানমন্ত্রী সেই দুর্ঘটনার পূর্বেই বিল্ডিং থেকে মানুষদেরকে সরিয়ে নেওয়া হয়ছে বলে দাবী করেন।ভবনটি ধ্বসে যাওয়ার পর উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার সরঞ্জামের খুবই অভাববোধ করছেন। প্রয়োজনীয় অনেক সরঞ্জামই সেখানেই নেই। সাধারন মানুষের কাছ থেকে চাদা তোলে এগুলো ব্যবস্থা করা হচ্ছে।রাষ্ট্রীয় কোষাগার কি শুন্য? শ্রদ্ধা জানাই আপনাদের সবাইকে যারা যেভাবে পেরেছেন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই হৃদয় বিদারক ট্রাজ্যেডিতে। আটকে থাকা ছেলে তার মাকে ফোন করে বলছে, "মা আমি ভিতরে আটকে আছি, নি:শ্বাস নিতে পারছিনা। মা, আমার সামনে একটা মেশিন, মেশিনটা যেকোন সময় সরে এসে আমার উপর পরতে পারে। মা আমার গলা প্রচন্ডশুকিয়ে গেছে আমি পানি খাবো। মা আমাকে বাঁচাও।" ফোন পেয়ে উদ্ধারের জন্য প্রাণপনে ছোটাছুটি করছে মা। #ফেসবুক এবং ব্লগে অসংখ্য মানুষ নানান ঢঙ্গে রঙ্গে কবিতা লিখেন।কারো কারো কবিতার সংখ্যা চার শো, পাঁচ শো কেউ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অনেকে তো বেশ কয়েকটা বই বের করে ফেলেছেন।কিন্তু তাদের কবিতা পড়লে শরীর টা মরিচের মতো জ্বলে।তাদের কবিতা পড়া মানেই সময় নষ্ট করা। বেশির ভাগ কবি'ই বুঝেই না যে ছন্দ বলে একটা ব্যাপার আছে।একশো জন কবির মধ্যে নব্বই জন কবি'ই জানেন না- ছন্দ কি জিনিস।এই সব কবিদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা ছন্দ বিষয়টা পুরোপুরি জেনে তারপর কবিতা লিখবেন। অবশ্য কবি'রা খুব আবেগ প্রবণ হন- কাজেই তারা সব লিখতে পারেন-কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং...আপনাদের কবিতা অত্যাচারের পর্যায়ে পড়ে যায়।অত্যাচার বন্ধ করুন।
false
mk
দেশ এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ সাক্ষাৎকারবরোনহিলডে ফুকস ও এরনসট গ্রাফটবরোনহিলডে ফুকস ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রিয়া ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য ছিলেন। ফেডারেল পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষেরও সদস্য ছিলেন তিনি। জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৭ মার্চ, ভিয়েনায়। লেখাপড়া শেষ করে ১৯৬৩ সালে অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুব ও ক্রীড়া বিভাগে যোগ দেন। এরপর অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন শীর্ষ নেতা। এরনসট গ্রাফট গত ৫০ বছর অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জন্ম ১৯৪৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, ভিয়েনায়। ভিয়েনা চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ভিয়েনিজ কমার্স পার্লামেন্টের সদস্য এরনসট গ্রাফট অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির অর্থনৈতিক বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন অস্ট্রিয়ার এই দুই রাজনৈতিক নেতা। ঢাকা থেকে ভিয়েনায় ফিরে তাঁরা বলেছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। উভয়েই জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ধারণা নিয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন, অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ অচিরেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে,বাংলাদেশ সফরের পর তাঁদের এ ধারণা এখন বদ্ধমূল। কালের কণ্ঠ’র পক্ষে ভিয়েনায় বরোনহিলডে ফুকস ও এরনসট গ্রাফটের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন তাঁদের সফরসঙ্গী অস্ট্রিয়াপ্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক এম নজরুল ইসলামকালের কণ্ঠ : আপনারা দুজনই এই প্রথম বাংলাদেশ সফর করলেন। বাংলাদেশে পা রাখার অনুভূতি কী আপনাদের?বরোনহিলডে ফুকস : আমি বিশ্বের বহু দেশে গেছি। বাংলাদেশের পাশের দেশ চীন ও ভারতের অবস্থাও নিজের চোখে দেখেছি। ভারতে ঘরবাড়ি, কাপড়, খাবার নেই এমন অসংখ্য মানুষ দেখেছি। অনেক মানুষ রাস্তায় ঘুমায়। বাংলাদেশের ব্যাপারে আমার দীর্ঘদিনের আগ্রহ ছিল। ১৯৭১ সালে দেশটি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে তখন অস্ট্রিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছে। আমাদের তৎকালীন চ্যান্সেলর ব্রুনো ক্রিয়েস্কি এ জন্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। যুদ্ধ করে নিজের দেশ স্বাধীন করেছে যে দেশটি, সেই দেশ দেখার ও দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ ছিল আমার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সে সুযোগটি করে দিয়েছে তাদের জাতীয় সম্মেলনে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি চার দিন সেখানে ছিলাম। দিনগুলো ভালো কেটেছে। জাতীয় সম্মেলনস্থলে গেছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার অভিজ্ঞতা ভালো। আর আতিথেয়তা? কী বলব! আজীবন মনে থাকবে বাংলাদেশের আতিথেয়তা। আমার মনে হচ্ছে, এরনসট গ্রাফট কিছু বলতে চান। তাঁকে একটু সুযোগ দেওয়া যাক।এরনসট গ্রাফট : আমিও আগ্রহী ছিলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধই আমাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। বিশেষ করে আমাদের তৎকালীন চ্যান্সেলর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। আমি এ দেশের মানুষ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলাম। আপনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়ে আমিও ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। বিমানে আমাদের দীর্ঘ যাত্রায় আলোচনার বিষয় ছিল বাংলাদেশ। আমরা কল্পনা করতে চেষ্টা করেছি বাংলাদেশ কেমন দেশ। কেমন সে দেশের মানুষ। আরো অনেক বিষয় নিয়ে আমরা বিমানে কথা বলেছি। আমাদের আগ্রহ ছিল আওয়ামী লীগ নিয়েও। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে, শুনেছি। সেই দলের জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়া তো সৌভাগ্যের বিষয়। আমি এই সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতে চাইনি। আতিথেয়তার কথা তো না বললেই নয়। এক কথায় অসাধারণ। মনে রাখার মতো। কালের কণ্ঠ : প্রথম দর্শনে কেমন লাগল বাংলাদেশ?বরোনহিলডে ফুকস : বাংলাদেশের উদ্দেশে ভিয়েনা থেকে আমরা যাত্রা করি ২০ অক্টোবর সকালে। সত্যিকথা বলতে কি, বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু হয়। অন্তত আমার। আমাদের দুজনেরই ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে। বিমানে আসন গ্রহণ করে আমি এরনসট গ্রাফটকে বলেছি বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে গরিব মানুষ অনেক বেশি দেখতে হবে। কে জানে, হয়তো এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পথে ভিখিরিরা হাত পাতবে। আমার ধারণা ছিল বাংলাদেশে এসে দেখব, ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি, এবড়োখেবড়ো রাস্তাঘাট। কিন্তু এয়ারপোর্টে নামার পর আমার ধারণা পাল্টে গেল। যে ধারণা নিয়ে রওনা হয়েছিলাম, তা একেবারেই ভুল প্রমাণিত হলো। বলতে গেলে প্রথম দর্শনেই আমি মুগ্ধ। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে তেমন কোনো দৃশ্য দেখিনি, যা আমাকে বিব্রত করে। রাস্তায় যানজট আছে। এতে তো প্রমাণিত হয়, মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য আছে। মানুষ বের হচ্ছে। কাজ করছে। অবকাঠামো ভালো লেগেছে। মানুষের ভিড় আমার খারাপ লাগে না। কিন্তু বাংলাদেশে গিয়ে ঘরবাড়ি, কাপড়, খাবার নেই এমন মানুষ চোখে পড়েনি।কালের কণ্ঠ : এরনসট গ্রাফট, এবার আপনার অভিজ্ঞতার কথা শুনি।এরনসট গ্রাফট : আমার অভিজ্ঞতাও ঠিক একই। আমিও তো নেতিবাচক ধারণা নিয়েই বিমানে উঠেছিলাম। প্রথম দর্শনেই ধারণা পাল্টে যেতে পারে, এ ছিল আমার কাছে অবাক করার মতো ঘটনা। আমি সত্যি অভিভূত। আমি আরো যা কিছু বলতে পারতাম তা বরোনহিলডে ফুকস বলে দিয়েছেন। নতুন করে কিছু যোগ করার নেই। বাংলাদেশে না এলে এ দেশ সম্পর্কে আমার ভুল ধারণা থেকে যেত। আমার ভুল ভেঙেছে। এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে কেউ নেতিবাচক কথা বললে আমি তার প্রতিবাদ করতে পারব। বাংলাদেশে যেতে পেরে আমি সত্যি খুব আনন্দিত। আমার এখানকার বন্ধুদের কাছে আমি বাংলাদেশ সফরের গল্প বলেছি। বাংলাদেশের কথা শুনে তারাও রোমাঞ্চিত। বাংলাদেশে না এলে অনেক কিছুই আমার অজানা থেকে যেত।কালের কণ্ঠ : আপনারা ঢাকায় গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিতে। সম্মেলন সম্পর্কে আপনাদের অভিজ্ঞতা নিশ্চয় আমরা শেয়ার করতে পারি?বরোনহিলডে ফুকস : অবশ্যই। এ এক অন্য অভিজ্ঞতা। সত্যি বলতে কি, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সম্পর্কেও আমার খুব বেশি কিছু ধারণা ছিল না। দলটি পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী। স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে জানি। দলটি ক্ষমতায় আছে। কাজেই দলটির নেতাকর্মী-সমর্থক অনেক বেশি থাকবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু এ সম্মেলন ঘিরে তাদের যে আবেগ আমি দেখেছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এমন অভিজ্ঞতা আমার নেই। এত বড় একটি জায়গায় একটি দলের জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে, সেখানে তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতাকর্মী-সমর্থকরা আসবেন। কারা ডেলিগেট হবেন, কারা কাউন্সিলর হবেন, এটা তো আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু বাইরেও উত্সুক অনেক মুখ আমি দেখেছি। অনেকের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। আমি তাদের আবেগ বুঝতে চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়েছে, নেতাকর্মী-সমর্থকদের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দলটি।কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর আপনার অনুভূতি কী, এরনসট গ্রাফট? এরনসট গ্রাফট : আমারও তেমনই মনে হয়েছে। যে দল মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, সেই দলের পক্ষেই মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। আমিও অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সম্মেলনস্থলের বাইরে অনেক মানুষ ছিল। ভেতরে কী হচ্ছে, তা জানার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল তারা। আর সম্মেলনের কথা কী বলব, লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে এমন সুশৃঙ্খল একটি সম্মেলন যে করা যায়, তা-ও দুই দিন ধরে, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলে তা আমি উপলব্ধি করতে পারতাম না। এটা আমার ধারণার অতীত। আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমি তো মনে করি, আমাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়েছে। কালের কণ্ঠ : আপনারা ক্ষমতাসীন দলের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। অনেক কিছুই হয়তো আপনাদের চোখ এড়িয়ে গেছে। এমন তো হতেই পারে?বরোনহিলডে ফুকস : স্বাভাবিক। খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরাও তো রাজনীতি করি। একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট আমরা। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যে আমাদের থাকার কথা। কিন্তু জানার চেষ্টা করলে জানা যাবে না, তা নয়। কিছু বিষয় উল্লেখ করি। বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদীরা প্রগতিশীল লেখক, ব্লগার, বুদ্ধিজীবীদের ওপর আক্রমণ করেছে, অনেককে হত্যাও করেছে। ধর্মান্ধদের এই যে হিংস্রতা, সত্যি খুব দুঃখজনক। এসব খবর যে আমাদের অজানা, তা নয়। সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা নিচ্ছে, তা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি। যত দূর জেনেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে, সরকার জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে যথাযথ পদক্ষেপই নিয়েছে। প্রশ্ন করা যেতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশকে আজ কারা এমন অসহিষ্ণু করে তুলছে? প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে গেছি আমি। থেকেছি অল্প দিন। তার পরও আমার মনে হয়েছে, সেখানে প্রতিক্রিয়াশীল একটি গোষ্ঠী আছে। উদারনৈতিক বাংলাদেশ তারা চায় না। বিরুদ্ধবাদীরা সুযোগটি নিচ্ছে কি না, তা আমি বলতে পারব না। নিলেও তো নিতে পারে। কালের কণ্ঠ : বরোনহিলডে ফুকসের এই বক্তব্য আপনি কিভাবে দেখছেন?এরনসট গ্রাফট : এ বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। স্বাধীনতার পর থেকেই তো বিরুদ্ধবাদীরা তত্পর। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের মহান স্থপতিকে হত্যা করা হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। একটি পক্ষের স্বার্থে তো আঘাত লেগেছে। তারা অস্থিরতা সৃষ্টি করবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তৃতীয় বিশ্বের দেশে এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কী করছে? সরকার কি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছে? সরকার কি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে পারছে? সরকারের পদক্ষেপ কি সাহসী? এসব প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বলতে হবে আশান্বিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। সরকার যদি জনগণের আবেগ বুঝতে পারে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে, তাহলে যেকোনো দেশের অগ্রগতি হবে। কোনো অপশক্তিই তা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। আমি তো মনে করি, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা যথাযথ।কালের কণ্ঠ : ইতিবাচক আর কোন দিক আপনাদের চোখে পড়েছে? বরোনহিলডে ফুকস : আমার কাছে মনে হয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণে এ সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিশ্বমন্দার সময়ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি থেমে ছিল না। দারিদ্র্য দূর করতে নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের মডেল হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় বলে আমি মনে করি। একটি দেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদে নারীর অবস্থান—বিশ্বে এটা বড় উদাহরণ বলে আমার ধারণা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে শুধু সক্রিয় রাজনীতিতে নন, নানা পেশায় নারীদের যুক্ত করার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য তিনি নিজেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন।কালের কণ্ঠ : এরনসট গ্রাফট কি কিছু যোগ করতে চান? এরনসট গ্রাফট : আমার কাছে মনে হয়েছে, তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আমি মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন দেখেছি। মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা পথ চলতে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে না এলে আমি তো এ দৃশ্য দেখতে পেতাম না। এ দেশ সম্পর্কে অনেক কিছুই আমার অজানা থেকে যেত।কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশ আগামী দিনে আরো এগিয়ে যাবে। আপনারা দুজনই উন্নত দেশের রাজনৈতিক নেতা। সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়ন করতে আমাদের আর কী করা উচিত?বরোনহিলডে ফুকস : আমি আমার ধারণার কথা বলি। এরনসট গ্রাফট নিশ্চয় তাঁর মূল্যায়ন করবেন। আমি মনে করি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এ দেশের আরো অনেক কিছু করার আছে। আমার দেশ অস্ট্রিয়ার কথা যদি ধরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অস্ট্রিয়া আজ যে অবস্থানে আছে, সে অবস্থানে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েও কাজ করা যেতে পারে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হচ্ছে যেকোনো জাতির বুনিয়াদ। এই ভিত্তি শক্ত করতে না পারলে সব উন্নয়ন ব্যর্থ হয়ে যাবে। ধরে রাখা যাবে না। সরকারের উচিত হবে, এই দুই সেবা খাতে আরো বেশি করে দৃষ্টি দেওয়া। এরনসট গ্রাফট : অর্থনীতি ও বাণিজ্যের মানুষ হিসেবে আমি এদিকে দৃষ্টি দিতে পারি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের সমপর্যায়ে পৌঁছবে। আমি উন্নয়নের যে গতি দেখলাম, তাতে আমার মনে হয়েছে, ২০৪১ সাল নয়, অনেক আগেই উন্নত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ স্থান করে নিতে পারবে। শর্ত হচ্ছে এই গতি আরো ত্বরান্বিত করতে হবে, বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। তার সঙ্গে শিক্ষার বিষয়টি তো থাকছেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সামাজিক গঠন যেন ভেঙে না যায়। সমাজ ভেঙে গেলে অনেক বড় উন্নয়নও মুখ থুবড়ে পড়ে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। এ ধারা ধরে রাখতে হলে নিজস্ব সম্পদের বেশি বেশি ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তো দেখা হয়েছে আপনাদের। কথাও হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে কি কিছু বলতে চান? বরোনহিলডে ফুকস : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ প্রগতিশীল নেতৃত্বের কথা আগে শুনেছি। ঢাকায় যাওয়ার আগে আপনিও তাঁর সম্পর্কে বলেছেন। এবার ঢাকায় গিয়ে সামনাসামনি তাঁকে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে আমার। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আগামী দিনে তাঁর সরকার কী করবে সেসব পরিকল্পনা তিনি আমাদের জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অগাধ। দেশের মানুষকে তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে থাকেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে গর্ব করেন।কালের কণ্ঠ : এরনসট গ্রাফট, আপনার কী মনে হয়? এরনসট গ্রাফট : আমি তো মনে করি, শেখ হাসিনার মতো বিজ্ঞ, দৃঢ়চেতা, দূরদর্শী নেতা পেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গর্বিত হওয়া উচিত। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। এখন দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষের।কালের কণ্ঠ : আপনারা দুজনই ব্যস্ত মানুষ। এর পরও আমাদের সময় দিয়েছেন। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।বরোনহিলডে ফুকস : আপনি আমাদের বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চেয়েছেন। এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আবারও বলি, বাংলাদেশের আতিথেয়তার কথা আমাদের অনেক দিন মনে থাকবে।এরনসট গ্রাফট : চমৎকার কয়েকটি দিন কেটেছে আমাদের। এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগছে। বরোনহিলডে ফুকস ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রিয়া ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য ছিলেন। ফেডারেল পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষেরও সদস্য ছিলেন তিনি। জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৭ মার্চ, ভিয়েনায়। লেখাপড়া শেষ করে ১৯৬৩ সালে অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুব ও ক্রীড়া বিভাগে যোগ দেন। এরপর অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন শীর্ষ নেতা। এরনসট গ্রাফট গত ৫০ বছর অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জন্ম ১৯৪৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, ভিয়েনায়। ভিয়েনা চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ভিয়েনিজ কমার্স পার্লামেন্টের সদস্য এরনসট গ্রাফট অস্ট্রিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির অর্থনৈতিক বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন অস্ট্রিয়ার এই দুই রাজনৈতিক নেতা। ঢাকা থেকে ভিয়েনায় ফিরে তাঁরা বলেছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। উভয়েই জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ধারণা নিয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন, অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ অচিরেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে,বাংলাদেশ সফরের পর তাঁদের এ ধারণা এখন বদ্ধমূল। কালের কণ্ঠ’র পক্ষে ভিয়েনায় বরোনহিলডে ফুকস ও এরনসট গ্রাফটের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন তাঁদের সফরসঙ্গী অস্ট্রিয়াপ্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক এম নজরুল ইসলামকালের কণ্ঠ : আপনারা দুজনই এই প্রথম বাংলাদেশ সফর করলেন। বাংলাদেশে পা রাখার অনুভূতি কী আপনাদের?বরোনহিলডে ফুকস : আমি বিশ্বের বহু দেশে গেছি। বাংলাদেশের পাশের দেশ চীন ও ভারতের অবস্থাও নিজের চোখে দেখেছি। ভারতে ঘরবাড়ি, কাপড়, খাবার নেই এমন অসংখ্য মানুষ দেখেছি। অনেক মানুষ রাস্তায় ঘুমায়। বাংলাদেশের ব্যাপারে আমার দীর্ঘদিনের আগ্রহ ছিল। ১৯৭১ সালে দেশটি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে তখন অস্ট্রিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছে। আমাদের তৎকালীন চ্যান্সেলর ব্রুনো ক্রিয়েস্কি এ জন্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। যুদ্ধ করে নিজের দেশ স্বাধীন করেছে যে দেশটি, সেই দেশ দেখার ও দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ ছিল আমার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সে সুযোগটি করে দিয়েছে তাদের জাতীয় সম্মেলনে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি চার দিন সেখানে ছিলাম। দিনগুলো ভালো কেটেছে। জাতীয় সম্মেলনস্থলে গেছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার অভিজ্ঞতা ভালো। আর আতিথেয়তা? কী বলব! আজীবন মনে থাকবে বাংলাদেশের আতিথেয়তা। আমার মনে হচ্ছে, এরনসট গ্রাফট কিছু বলতে চান। তাঁকে একটু সুযোগ দেওয়া যাক।এরনসট গ্রাফট : আমিও আগ্রহী ছিলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধই আমাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। বিশেষ করে আমাদের তৎকালীন চ্যান্সেলর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন। আমি এ দেশের মানুষ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলাম। আপনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়ে আমিও ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। বিমানে আমাদের দীর্ঘ যাত্রায় আলোচনার বিষয় ছিল বাংলাদেশ। আমরা কল্পনা করতে চেষ্টা করেছি বাংলাদেশ কেমন দেশ। কেমন সে দেশের মানুষ। আরো অনেক বিষয় নিয়ে আমরা বিমানে কথা বলেছি। আমাদের আগ্রহ ছিল আওয়ামী লীগ নিয়েও। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে, শুনেছি। সেই দলের জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়া তো সৌভাগ্যের বিষয়। আমি এই সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতে চাইনি। আতিথেয়তার কথা তো না বললেই নয়। এক কথায় অসাধারণ। মনে রাখার মতো। কালের কণ্ঠ : প্রথম দর্শনে কেমন লাগল বাংলাদেশ?বরোনহিলডে ফুকস : বাংলাদেশের উদ্দেশে ভিয়েনা থেকে আমরা যাত্রা করি ২০ অক্টোবর সকালে। সত্যিকথা বলতে কি, বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু হয়। অন্তত আমার। আমাদের দুজনেরই ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে। বিমানে আসন গ্রহণ করে আমি এরনসট গ্রাফটকে বলেছি বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে গরিব মানুষ অনেক বেশি দেখতে হবে। কে জানে, হয়তো এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পথে ভিখিরিরা হাত পাতবে। আমার ধারণা ছিল বাংলাদেশে এসে দেখব, ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি, এবড়োখেবড়ো রাস্তাঘাট। কিন্তু এয়ারপোর্টে নামার পর আমার ধারণা পাল্টে গেল। যে ধারণা নিয়ে রওনা হয়েছিলাম, তা একেবারেই ভুল প্রমাণিত হলো। বলতে গেলে প্রথম দর্শনেই আমি মুগ্ধ। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে তেমন কোনো দৃশ্য দেখিনি, যা আমাকে বিব্রত করে। রাস্তায় যানজট আছে। এতে তো প্রমাণিত হয়, মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য আছে। মানুষ বের হচ্ছে। কাজ করছে। অবকাঠামো ভালো লেগেছে। মানুষের ভিড় আমার খারাপ লাগে না। কিন্তু বাংলাদেশে গিয়ে ঘরবাড়ি, কাপড়, খাবার নেই এমন মানুষ চোখে পড়েনি।কালের কণ্ঠ : এরনসট গ্রাফট, এবার আপনার অভিজ্ঞতার কথা শুনি।এরনসট গ্রাফট : আমার অভিজ্ঞতাও ঠিক একই। আমিও তো নেতিবাচক ধারণা নিয়েই বিমানে উঠেছিলাম। প্রথম দর্শনেই ধারণা পাল্টে যেতে পারে, এ ছিল আমার কাছে অবাক করার মতো ঘটনা। আমি সত্যি অভিভূত। আমি আরো যা কিছু বলতে পারতাম তা বরোনহিলডে ফুকস বলে দিয়েছেন। নতুন করে কিছু যোগ করার নেই। বাংলাদেশে না এলে এ দেশ সম্পর্কে আমার ভুল ধারণা থেকে যেত। আমার ভুল ভেঙেছে। এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে কেউ নেতিবাচক কথা বললে আমি তার প্রতিবাদ করতে পারব। বাংলাদেশে যেতে পেরে আমি সত্যি খুব আনন্দিত। আমার এখানকার বন্ধুদের কাছে আমি বাংলাদেশ সফরের গল্প বলেছি। বাংলাদেশের কথা শুনে তারাও রোমাঞ্চিত। বাংলাদেশে না এলে অনেক কিছুই আমার অজানা থেকে যেত।কালের কণ্ঠ : আপনারা ঢাকায় গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিতে। সম্মেলন সম্পর্কে আপনাদের অভিজ্ঞতা নিশ্চয় আমরা শেয়ার করতে পারি?বরোনহিলডে ফুকস : অবশ্যই। এ এক অন্য অভিজ্ঞতা। সত্যি বলতে কি, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সম্পর্কেও আমার খুব বেশি কিছু ধারণা ছিল না। দলটি পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী। স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে জানি। দলটি ক্ষমতায় আছে। কাজেই দলটির নেতাকর্মী-সমর্থক অনেক বেশি থাকবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু এ সম্মেলন ঘিরে তাদের যে আবেগ আমি দেখেছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এমন অভিজ্ঞতা আমার নেই। এত বড় একটি জায়গায় একটি দলের জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে, সেখানে তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতাকর্মী-সমর্থকরা আসবেন। কারা ডেলিগেট হবেন, কারা কাউন্সিলর হবেন, এটা তো আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু বাইরেও উত্সুক অনেক মুখ আমি দেখেছি। অনেকের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। আমি তাদের আবেগ বুঝতে চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়েছে, নেতাকর্মী-সমর্থকদের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দলটি।কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর আপনার অনুভূতি কী, এরনসট গ্রাফট? এরনসট গ্রাফট : আমারও তেমনই মনে হয়েছে। যে দল মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, সেই দলের পক্ষেই মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। আমিও অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সম্মেলনস্থলের বাইরে অনেক মানুষ ছিল। ভেতরে কী হচ্ছে, তা জানার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল তারা। আর সম্মেলনের কথা কী বলব, লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে এমন সুশৃঙ্খল একটি সম্মেলন যে করা যায়, তা-ও দুই দিন ধরে, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলে তা আমি উপলব্ধি করতে পারতাম না। এটা আমার ধারণার অতীত। আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমি তো মনে করি, আমাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়েছে। কালের কণ্ঠ : আপনারা ক্ষমতাসীন দলের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। অনেক কিছুই হয়তো আপনাদের চোখ এড়িয়ে গেছে। এমন তো হতেই পারে?বরোনহিলডে ফুকস : স্বাভাবিক। খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরাও তো রাজনীতি করি। একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট আমরা। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যে আমাদের থাকার কথা। কিন্তু জানার চেষ্টা করলে জানা যাবে না, তা নয়। কিছু বিষয় উল্লেখ করি। বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদীরা প্রগতিশীল লেখক, ব্লগার, বুদ্ধিজীবীদের ওপর আক্রমণ করেছে, অনেককে হত্যাও করেছে। ধর্মান্ধদের এই যে হিংস্রতা, সত্যি খুব দুঃখজনক। এসব খবর যে আমাদের অজানা, তা নয়। সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা নিচ্ছে, তা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি। যত দূর জেনেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে, সরকার জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে যথাযথ পদক্ষেপই নিয়েছে। প্রশ্ন করা যেতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশকে আজ কারা এমন অসহিষ্ণু করে তুলছে? প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে গেছি আমি। থেকেছি অল্প দিন। তার পরও আমার মনে হয়েছে, সেখানে প্রতিক্রিয়াশীল একটি গোষ্ঠী আছে। উদারনৈতিক বাংলাদেশ তারা চায় না। বিরুদ্ধবাদীরা সুযোগটি নিচ্ছে কি না, তা আমি বলতে পারব না। নিলেও তো নিতে পারে। কালের কণ্ঠ : বরোনহিলডে ফুকসের এই বক্তব্য আপনি কিভাবে দেখছেন?এরনসট গ্রাফট : এ বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। স্বাধীনতার পর থেকেই তো বিরুদ্ধবাদীরা তত্পর। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের মহান স্থপতিকে হত্যা করা হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। একটি পক্ষের স্বার্থে তো আঘাত লেগেছে। তারা অস্থিরতা সৃষ্টি করবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তৃতীয় বিশ্বের দেশে এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কী করছে? সরকার কি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছে? সরকার কি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে পারছে? সরকারের পদক্ষেপ কি সাহসী? এসব প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বলতে হবে আশান্বিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। সরকার যদি জনগণের আবেগ বুঝতে পারে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে, তাহলে যেকোনো দেশের অগ্রগতি হবে। কোনো অপশক্তিই তা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। আমি তো মনে করি, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা যথাযথ।কালের কণ্ঠ : ইতিবাচক আর কোন দিক আপনাদের চোখে পড়েছে? বরোনহিলডে ফুকস : আমার কাছে মনে হয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণে এ সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিশ্বমন্দার সময়ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি থেমে ছিল না। দারিদ্র্য দূর করতে নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের মডেল হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় বলে আমি মনে করি। একটি দেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদে নারীর অবস্থান—বিশ্বে এটা বড় উদাহরণ বলে আমার ধারণা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে শুধু সক্রিয় রাজনীতিতে নন, নানা পেশায় নারীদের যুক্ত করার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য তিনি নিজেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন।কালের কণ্ঠ : এরনসট গ্রাফট কি কিছু যোগ করতে চান? এরনসট গ্রাফট : আমার কাছে মনে হয়েছে, তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আমি মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন দেখেছি। মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা পথ চলতে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে না এলে আমি তো এ দৃশ্য দেখতে পেতাম না। এ দেশ সম্পর্কে অনেক কিছুই আমার অজানা থেকে যেত।কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশ আগামী দিনে আরো এগিয়ে যাবে। আপনারা দুজনই উন্নত দেশের রাজনৈতিক নেতা। সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়ন করতে আমাদের আর কী করা উচিত?বরোনহিলডে ফুকস : আমি আমার ধারণার কথা বলি। এরনসট গ্রাফট নিশ্চয় তাঁর মূল্যায়ন করবেন। আমি মনে করি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এ দেশের আরো অনেক কিছু করার আছে। আমার দেশ অস্ট্রিয়ার কথা যদি ধরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অস্ট্রিয়া আজ যে অবস্থানে আছে, সে অবস্থানে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েও কাজ করা যেতে পারে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হচ্ছে যেকোনো জাতির বুনিয়াদ। এই ভিত্তি শক্ত করতে না পারলে সব উন্নয়ন ব্যর্থ হয়ে যাবে। ধরে রাখা যাবে না। সরকারের উচিত হবে, এই দুই সেবা খাতে আরো বেশি করে দৃষ্টি দেওয়া। এরনসট গ্রাফট : অর্থনীতি ও বাণিজ্যের মানুষ হিসেবে আমি এদিকে দৃষ্টি দিতে পারি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের সমপর্যায়ে পৌঁছবে। আমি উন্নয়নের যে গতি দেখলাম, তাতে আমার মনে হয়েছে, ২০৪১ সাল নয়, অনেক আগেই উন্নত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ স্থান করে নিতে পারবে। শর্ত হচ্ছে এই গতি আরো ত্বরান্বিত করতে হবে, বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। তার সঙ্গে শিক্ষার বিষয়টি তো থাকছেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সামাজিক গঠন যেন ভেঙে না যায়। সমাজ ভেঙে গেলে অনেক বড় উন্নয়নও মুখ থুবড়ে পড়ে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। এ ধারা ধরে রাখতে হলে নিজস্ব সম্পদের বেশি বেশি ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তো দেখা হয়েছে আপনাদের। কথাও হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে কি কিছু বলতে চান? বরোনহিলডে ফুকস : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ প্রগতিশীল নেতৃত্বের কথা আগে শুনেছি। ঢাকায় যাওয়ার আগে আপনিও তাঁর সম্পর্কে বলেছেন। এবার ঢাকায় গিয়ে সামনাসামনি তাঁকে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে আমার। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আগামী দিনে তাঁর সরকার কী করবে সেসব পরিকল্পনা তিনি আমাদের জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অগাধ। দেশের মানুষকে তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে থাকেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে গর্ব করেন।কালের কণ্ঠ : এরনসট গ্রাফট, আপনার কী মনে হয়? এরনসট গ্রাফট : আমি তো মনে করি, শেখ হাসিনার মতো বিজ্ঞ, দৃঢ়চেতা, দূরদর্শী নেতা পেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গর্বিত হওয়া উচিত। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। এখন দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষের।কালের কণ্ঠ : আপনারা দুজনই ব্যস্ত মানুষ। এর পরও আমাদের সময় দিয়েছেন। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।বরোনহিলডে ফুকস : আপনি আমাদের বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চেয়েছেন। এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আবারও বলি, বাংলাদেশের আতিথেয়তার কথা আমাদের অনেক দিন মনে থাকবে।এরনসট গ্রাফট : চমৎকার কয়েকটি দিন কেটেছে আমাদের। এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগছে। সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
false
rn
আমরা শান্তি চাই শুনলাম, আমাদের প্রিয় ম্যাজিশিয়ান ইমরান ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা ? কোন হারামজাদা মামলা করছে ? যে ইমরান ভাই আজ শত কোটি মুক্তিকামি মানুষের কথা বলছে তার বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে সে নিশ্চয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নয় ! ইমরান ভাই কোনো ভয় নেই । কিছু বদমাশ সব জাগায়ই থাকে । এগুলো হলো কুকুর, দূর থেকে ঘেউ ঘেউ করবেই । কিন্তু কোনো দিন কামড়াতে সাহস পাবে না । দুঃখের বিষয় হলো এরকম কুকুরের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে । রাজনীতিতে সারা দেশ জ্বলছে আর দেশের মানুষ ভূগছে । রাজনীতিবিদ আপনারা কেন আমাদের শান্তি নষ্ট করছেন । আমরা কি সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবো না ? আপনাদের যদি এত খেলার শখ থাকে স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলুন । খেলায় যারা জিতবে তারা ক্ষমতায় থাকবে । শুধু শুধু আমাদের কেন কষ্ট দিচ্ছেন ? আমাদের কি দোষ ? আমরা আপনাদের ভোট দেই বলে ? সত্য কথা বলতে কি এখন কোনো দলেরই আদর্শ নেই ।আপনাদের কাছে অনুরোধ- দয়া করে আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দেন ।ককটেল ফুটানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জামাত শিবির কে, আর মির্জা ফখরুল পেয়েছেন হরতাল ঘোষণার দায়িত্ব । আল্লাহ আমাদের কে তুলে নাও- ওরা মারামারি কাটাকাটি করুক।দেশের যা অবস্থা লাইফ জ্যাকেট আর হেলমেট শুধু সংবাদকর্মীদের পড়লে হবে না । আমাদেরও পড়তে হবে ।ঘরে বসে সরাসরি টিভিতে তান্ডব দেখি।চলতি মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিনেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ২০ টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।সারা দেশে অস্থিরতা এখন তুঙ্গে- এর প্রধান কারণ রাজনীতি। অভিশপ্ত রাজনীতির মধ্যে আমরা বন্ধী। ও আচ্ছা ভালো কথা- আগামী কাল ১২ মার্চ সারা দেশে ১ থেকে ৫ বছরের শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল।দুর্নীতির মাধ্যমে এই ক্যাপসুল আমদানীর করা হয়েছে। হাইকোর্টে রীট হয়েছে গত ১১ জুলাই।"আশরাফুল, মুশফিক এবং নাসিরের সেঞ্চুরী উদযাপন উপলক্ষে কিছু আতশবাজি বিএনপি অফিসে আনা হয়েছিল।বোকা পুলিশ এগুলোকে বোমা ককটেল মনে করেছে এবং টেলিভিশন চ্যানেল গুলি এগুলো আমাদের দেখিয়েছে ।যদিও তল্লাশির সময় বিএনপি কার্যালয়ে ১০টি বোমাও পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানায়। দেশের চিন্তায় ঘুম আসেনা একলা জেগে রই। যে কোনো জায়গায় যে কোনো পরিবেশে বেশীর ভাগ পুলিশের আচরণ খুব ভয়াবহ এবং হিংস্র।পুলিশ যেকোন ব্যক্তি কে কোন চার্জশিট ছাড়াই ধরে।আবার ধৃত ব্যক্তি নিরপরাধ হওয়ার পর ও তাকে টাকা ছাড়া ছাড়ে না।আজ কাল পুলিশ শিবির সন্দেহে অনেক সাধারণ মানুষ কে ধরছে।নির্বিচারে তাদের উপর অত্যাচার করছে।আজ পুলিশ অনেক ধার্মিক লোককে শিবির মনে করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।স্বাধীন দেশে দেশপ্রেমিককে সইতে হয় অপমান! গত তিন বছরে ২০১০ থেকে শুরু করে ২০১২ পর্যন্ত প্রায় ১২০০০ হাজার হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে লাশের এই মিছিলে সাধারণ জনতা, রাজনৈতিক কর্মী, নেতা, কিশোর-কিশোরী, শিশু, বৃদ্ধ গৃহবধূ কে নেই। জামাত এবং শিবিরের কর্মীদের সাথে দেশজুড়ে সরকার ও পুলিশের কামড়াকামড়ির পর ভেবেছিলাম এ সপ্তাহ একটু স্বস্তিতে থাকতে দিবে সরকার। নবীজী সা বলেন সমাজ একটা আয়না , শিশুরা তা থেকে যা দেখবে তাই শিক্ষা নেবে হে মানব তোমাদের সন্তানদের উত্তম আদর্শ শিক্ষা দাও ।
false
ij
None এদুয়ার্দ মানে। কয়েকটি নগ্ন ছবি এঁকে সমকালে ভীষন বিতর্কিত হয়ে ছিলেন মানে। অথচ, ক্যানাভাসের ওপর জীবনের বহুধা বিস্তার তিনিই উনিশ শতকে প্রথম ঘটিয়ে ছিলেন । নীতিবাগীশরা সব তাঁর ছবি দেখে হা, হা করে উঠেছিল। অথচ, আজ আমরা জানি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আধুনিক চিত্রকলার পথটি কে খুলে দিয়েছিলেন । ১৮৩২ সালের ২৩ জানুয়ারি প্যারিসে এদুয়ার্দ মানের জন্ম । বাবা ছিলেন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা। কাজেই রাশভারী বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে আইন নিয়ে পড়–ক। তো, ছেলের ছবি আঁকার ঝোঁক-সে কিছুতেই আইন পড়বে না। ওর এক চাচা- চালর্স ফুরনিয়ের- ওকে ল্যুভরে নিয়ে বরেণ্য শিল্পীদের ছবি দেখাতেন। যা হোক আইন না পড়লেও বাবার নির্দেশে মানে নৌবিদ্যা শিখতে সমুদ্রে পথে ব্রাজিল অবধি গেল; তারপরও নৌবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা অকৃতকার্য হলেন। বাবা শেষমেশ ছেলের আঁকাআঁকি মেনে নেন। তারপর প্যারিসে এক ফরাসি চিত্রকরের কাছে ছবি আঁকার তালিম শুরু । শিল্পগুরুদের ছবি দেখার জন্য জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডও গেলেন মানে। তাঁর ছবি ওপর স্পেনিশ দিয়েগো ভেলাজক্যুয়েজ, ফ্রানসিসকো হোসে দ গোইয়ার প্রভাব রয়েছে। মানের ছবির বিষয় হিসেবে মানে বেছে নিয়েছিলেন চারপাশের জীবন। ভিক্ষুক পথশিশু ক্যাফের লোকজন নিসর্গচিত্র বাঁশীওলা, স্বল্পবসনা নারী-এরাই উঠে এসেছিল মানের ক্যানভাসে। বিষয়নিষ্টতার জন্য ব্রাশের সরাসরি স্থূল প্রয়োগ ঘটাতেন। এভাবে উনিশ শতকে বাস করেও আধুনিক হিসেবে গন্য। তিনি ফরাসি চিত্রকলাকে বাস্তববাদ বা রিয়ালিজম থেকে ইমপ্রেশনিজমে উন্নীত করেন। ‘ঘাসের ওপর দুপুরের ভোজন’ আর ‘অলেম্পিয়ার’ নগ্নতার জন্য দারুণ সমালোচিত হয়েছিলেন জীবদ্দশায়। অথচ ঐ ছবিগুলিই উদ্দীপ্ত করেছিল পরের প্রজন্মকে ক্যানভাসকে আরও জীবনমূখি করে তোলার জন্য। রুয়েলির বাগানের পথ রুয়েলির বাড়ি স্পেনের গায়ক বাঁশীওয়ালা ক্যাফেতে মানের মৃত্যু হয়েছিল সিফিলিস ও রিউমাটিক জ্বরে। চল্লিশের পর, শরীরে মারাত্মক ব্যথা হত। মৃত্যুর আগে শরীরের কতক অংশ প্যারালাইসিস হয়ে গিয়েছিল। বাঁ পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়েছিল। ওটা কেটে ফেলতে হয়েছিল। ১৮৮৩ সালে ৪১ বছর বয়েসে প্যারিসে মারা যান। সমাধি প্যারিসেই। আত্মপ্রতিকৃতি এক মেয়ে বন্ধু সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:১৯
false
rn
আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ছবিতে আমি আর আমার মেয়ে। মা অসুস্থ। মাকে এম্বুলেন্সে করে ঢাকা নিয়ে এসে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট এ ভর্তি করিয়েছি। ডাক্তার জানালেন মার হার্ট ফেইলর ও ডায়াবেটিস প্রচন্ড বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে পৃথিবীতে আমার চেয়ে অসহায় আর কেউ নেই। চোখে অন্ধকার দেখছি। আমার নাম মারুফ হাছান। জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার পোনা গ্রামে। মা আমাকে অনেক কষ্ট করে ডিগ্রি পাশ করিয়েছেন। যখন আমার তিন বছর তখন আমার বাবা নিখোঁজ হোন। হয়তো তাকে কেউ মেরে মধুমতি নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। আমার মা অন্যের বাসায় কাজ করে আমাকে বড় করেন, লেখা পড়া শেখান। আমার মনে আছে, ছোট বেলায় আমি সারাক্ষন মার শাড়ির আঁচল ধরে থাকতাম। মা যখন অন্যের বাসায় থালা-বাসন ধুয়ে দিতেন, তখনও আমি মার শাড়ির আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। পত্রিকাতে সরকারি হাসপাতালের নানান রকম খবর পড়তাম। এখন, এখানে এসে দেখি অবস্থা তার চেয়ে বেশি খারাপ। আমার কাছে মনে হলো যেন, হাসপাতালের চেয়ার টেবিল, বেড, দেয়াল এবং ঝুলে থাকা দুর্বল ফ্যানও যেন টাকার জন্য হা করে আছে। আমার টিউশনি করে জমানো সব টাকা আর প্রতিবেশির কাছ যে যা দিয়েছে হাত পেতে সব নিয়ে এসেছি। মাকে বাঁচাতে হবে। এই পৃথিবীতে মা ছাড়া তো আমার আর কেউ নেই। আমার খুব শখ মা আর আমি একসাথে হজে যাব। আমি গ্রামের ছেলে হলেও অসাধ্য সাধন করেছি। সরকারি হাসপাতালে মার জন্য কেবিন এর ব্যবস্থা করেছি। প্রথম দুই দিন মাকে বারান্দায় পাটি বিছিয়ে থাকতে হয়েছে। আমি দেখলাম মহিলা ওয়ার্ডে তিনটা সিট ফাঁকা পড়ে আছে। হাসপাতালের লোকদের বললাম, সিট খালি আছে তাহলে আমার মা'কে ফ্লোরে থাকতে হবে কেন? হাসপাতালের লোক গুলো বিচ্ছিরি হলুদ দাঁত গুলো বের করে বলল, টাকা দেন পাঁচ শ। আমি বললাম, এটা তো সরকারি হাসপাতাল। হলুদ দাঁত ওয়ালা চোখ মুখ খিঁচিয়ে বলল, চান্দু আর একটা কথা বললে কানটা ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেল দিব তিন তলা থেকে। রাত আট টার পর মহিলা ওয়ার্ডে কোনো পুরুষ লোককে থাকতে দেয়া হয় না। মা বুকের ব্যথায় ছটফট করলেও আমি জানালা দিয়ে দেখব কিন্তু কিছু করতে পারব না। আমি হাসপাতালের বারান্দায় সারা রাত বসে থাকি। চারপাশ নোংরা, পচা গন্ধ। প্রচুর মশা মৌ মাছির মতো আমাকে ঘিরে ধরে। সাহসী ইঁদুর গুলো সারারাত সারা হাসপাতাল ছুটে বেড়ায়। বিড়াল গুলো একে অন্যের সাথে উচ্ছ স্বরে ঝগড়া করে। সহবাস করে। সবচেয়ে আশ্চয্য হয়েছি কুকুর দেখে। আমি ভেবে পাই না হাসপাতালের তিন তলায় কুকুর আসে কি করে? আমার খাওয়া নেই, ঘুম নেই, গোছল নেই। খুব ক্ষুধা পেলে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা বিস্কুট খেয়ে নেয়। মাকে একা হাসপাতালে রেখে হোটেলে ভাত খেতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। হিস্টিরিয়া রোগির মতো আমি ছটফট করি। চতুর্থ দিন আমি হাসপাতালে মার জন্য কেবিন নিতে সক্ষম হই। গত কয়েকদিনে হাসপাতালের লাশ ঘরের দাড়োয়ান সোলেমান এর সাথে আমার বেশ সখ্যতা হয়। এই লোক আমাকে হাসপাতালে কিভাবে নানান সুবিধা পাওয়া যাবে, তা জানান। সোলেমানের কথার সারমর্ম হলো পানির মতো টাকা খরচ করতে হবে। যেখানে দুইটাকা লাগবে সেখানে পাঁচ টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু আমার অল্প টাকা। এই টাকা দিয়ে মার চিকিৎসা করে আবার গ্রামে ফিরে যেতে হবে। বিদেশে থাকা বন্ধুর কাছে হাত পাতলাম। সে আমাকে এক ঘন্টার মধ্যে বেশ কিছু টাকা পাঠিয়ে দিল। রাত বারোটায় একদিন দেখি, লাশ ঘরের সামনে খুব চিৎকার-চেচামেচি হচ্ছে। আমি সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখি- লাশ ঘরের দায়িত্বে থাকা লোকজন বলছে, দুই হাজার টাকা না দিলে লাশ নিতে দেব না। লোকটি কাঁদতে কাঁদতে বলছে, আমি সারা দিন রিকশা চালাই এত টাকা কোথায় পাবো? তিন শ টাকা রাখেন। আমার বোনের লাশ টা দিয়ে দেন। আমারে দয়া করেন। কিন্তু তারা দয়া করলো না। এই ঘটনা দেখে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল, নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। হাসপাতাল ভর্তি দালাল। রোগীর চেয়ে দালালের সংখ্যা কম নয়। দালালদের টাকায় অনেক ডাক্তারও ভাগ পায়। প্রতিটা কাইকে কাইকে (পায়ে পায়ে) টাকা লাগে। কোনো টেস্ট করাতে গেলেই বলে মেশিন নষ্ট। আর টাকা দিলে সাথে সাথে মেশিন ভালো হয়ে যায়। টেস্ট করার পর বলে টেস্টের রিপোর্ট দুই দিন পর পাবেন। আর টাকা দিলে দুই ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যায়। ওয়ার্ড বয় এবং নার্সদের ব্যবহার ভয়ঙ্কর খারাপ। নামেই শুধু সরকারি হাসপাতাল। সরকার কি কোনো খোঁজ খবর রাখে না? টিভিতে দেখি স্বাস্থ্যমন্ত্রী কত বড়-বড় কথা বলেন। নিজের চোখে দেখলাম বাস্তব তো সম্পূর্ণ অন্যরকম। আসলে টিভিতে মন্ত্রীরা মিথ্যা কথা বলেন। এখন, আমি আমার 'আমি অতিথি তোমারি দ্বারে' মুল গল্পে প্রবেশ করবো। এবং গল্পটি খুব দ্রুত শেষ করবো। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা আপনারা প্রস্তুত তো? আসলে, সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই গল্পটির জন্ম। আমার সককর্মীর বিশেষ অনুরোধে আমি গল্পটি লিখতে বসেছি। রাত তখন তিনটা। মারুফ হাছান হাসপাতালের কেবিনে মার পাশে বসে আছে। একটু পরপর মার মুখে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। মারুফ চোখ মুছতে মুছতে ব্যলকনিতে এসে দাঁড়ায়, তখন হঠাৎ তার মনে হয়- এই ঘরে মা ছাড়া অন্য কেউ আছে। কিন্তু তাকে দেখা যাচ্ছে না। মারুফ তার অনুভূতি টের পাচ্ছে। হঠাত এক আকাশ ভয় মারুফকে ঘিরে ধরল। তার হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। সে এখন কি করবে? দিনের বেলা মারুফের রাতের ঘটনা কিছুই মনে থাকল না। কারন দিনের বেলা তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। এই ওষুধ আনতে যাচ্ছে। এই নার্সকে ডেকে আনতে যাচ্ছে। মায়ের হাত পা মুছে দিচ্ছে। মাকে খাইয়ে দিচ্ছে। ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। কেবিনে দ্বিতীয় দিন রাতেও মারুফের মনে হলো- এই ঘরে অন্য কেউ আছে। মারুফ খুব টের পায়, এমনকি অনুভব পর্যন্ত করতে পারছে। তখন মারুফ ভয় পেতে শুরু করে এক আকাশ অজানা ভয়। তার হাত পা শক্ত হয়ে আসে তার। সে তখন তার মায়ের পায়ের কাছে কুন্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে থাকে। এবং মুহূর্তেই ঘুমিয়ে পড়ে। একজন ঘুমন্ত মানুষকে ভয় স্পর্শ করতে পারে না। এখন, আমি গল্পের শেষ প্রান্তে। তৃতীয় দিন রাত তিনটা। মারুফ তার মায়ের মাথার কাছে অনেকক্ষন বসে থেকে ব্যলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। মেঘ মুক্ত স্বচ্ছ আকাশের দিকে তাকিয়ে নানান কথা ভাবল। তার বাবার কথা ভাবল, বাবা যদি হঠাৎ করে এসে এখন উপস্থিত হয়- তাহলে কেমন হবে? রুপা'র কথা ভাবল। রুপা মারুফ এর সাথে একই কলেজে লেখা পড়া করত। মারুফ রুপাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু তার পায়ের নিচের মাটিটা নরম থাকায় কোনো সে তার ভালোবাসার কথা রুপাকে বলতে পারেনি। রুপার বিয়ে হয়ে গেল তার চোখের সামনে। রুপার কথা মনে পড়লেই তার নিজেকে বড় নিঃসঙ্গ মনে হয়। ব্যলকনি থেকে ফিরে ঘরে ঢুকে মারুফ একটা অদ্ভুত দৃশ দেখল। এই দৃশ দেখার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে করতে সে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। ভয়ে তার সারা শরীর ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেল। সে থরথর করে কাঁপতে লাগল। মারুফ দেখলে- তার মার মাথার কাছে একটি তরুনী মেয়ে বসে আছে। মেয়েটি খুব সুন্দর! সুন্দর একটি শাড়ি পরা। মাথা ভর্তি চুল ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটির চোখ। চোখে আবার মোটা করে কাজল দেয়া। মেয়েটি মারুফের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। পৃথিবীর কোনো মেয়ে এত সুন্দর করে হাসতে পারবে না। যেন হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিল- আমাকে ভয় পেও না। আমি তোমার বন্ধু। মারুফ কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু মেয়েটি ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলল। আর বুঝিয়ে দিল ব্যলকনিতে যাও, আমি আসছি। এখানে কথা বললে মার ঘুমের অসুবিধা হবে। তারা দুই ভুবনের দুইজন চুপচাপ ব্যলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে মেয়েটি স্পস্ট করে বলল, তোমাকে কিছু বলতে হবে না। তুমি কি জানতে চাও, তা আমি জানি। একটু হেসে মেয়েটি বলল- আমার নাম রুপা। কাকতালিয়ভাবে তোমার বান্ধবীর নামের সাথে মিলে গেল। আমি এই হাসপাতালেই, এই কেবিনেই মারা যাই। জন্মের সময় আমি হার্ট এ তিনটা ছিদ্র নিয়ে পৃথিবীতে আসি। আর এই ছিদ্র হার্ট নিয়ে উনিশ বছর বেঁচে ছিলাম। আমার মৃত্যু শোক বাবা মা সহ্য করতে না পেরে দুইজনই একই সাথে মারা গেলেন। কাকতালিয়ভাবে তারা দুইজনও এ ঘরেই মারা যান। এখন আমরা তিনজন এই ঘরেই থাকি। বাবা-মা কখনও কারো সামনে আসেন না। আমিও আসি না, কিন্তু তোমাকে দেখে সামনে না এসে পারলাম না। তুমি এত সহজ সরল একজন ভালো মানুষ। মারুফ কাঁদতে কাঁদতে রুপার হাত ধরল। রুপার হাত কি ঠান্ডা! কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি থাকো আমার কাছে। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো। কোনোদিনও দুঃখ দিব না। মেয়েটি বলল, তা কি সম্ভব? আমি অন্য ভূবনের একজন। তুমি যদি আমার কথা কাউকে বলো, কেউ বিশ্বাস করবে? করবে না। সবাই তোমাকে পাগল ভাববে। তবে আমি যদি বেঁচে থাকতাম তাহলে অবশ্যই তোমাকে বিয়ে করতাম। এবং আমাদের সংসার জীবন হতো আনন্দময়। ঘটনা বা গল্পটি এখানেই শেষ হলে ভালো হতো। কিন্তু তা হলো না। মারুফের মা আজ সুস্থ। তারা আজ গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। বাসে মারুফ মার কাঁধে মাথা রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। মা ছেলের মাথায় এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ঠিক এই সময় মারুফদের বাসের ড্রাইভার নিয়ন্তন হারিয়ে বাস ভর্তি যাত্রী নিয়ে ব্রিজের উপর থেকে নিচে পড়ে যায়। মারুফ এবং তার মা সাথে সাথে নিহত হোন। লেখকরা খুব কল্পনাবিলাসী হোন। তাদের ভাবতে ভালো লাগে- মৃত্যুর পর মারুফ এবং তার মা, রুপা এবং তার বাবা-মা একসাথে অদৃশ্য হয়ে হাসপাতালের কেবিনে থাকেন। রুপা এবং মারুফ অন্য ভূবনে সংসার পাতেন। সেই সংসারে কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই। গভীর রাতে মারুফ আর রুপা ব্যলকনিতে বসে গল্প করে। চা খায়। বাতাসে রুপার চুল আর শাড়ির আঁচল উড়ে এসে পড়ে মারুফের চোখে মুখে। রুপার গল্প শুনতে শুনতে মারুফ ব্যলকনিতেই রুপার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে। এই সময় অজানা এক আকাশ আনন্দে রুপার চোখে আনন্দ অশ্রু পড়ে। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১
false
rn
মৃত্যুর পরে মৃত্যুর পরে কি পরিণতি হয় তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বন্দ্ব আছে৷ মৃত্যুর পরে, একজন মানুষ বাস করে একটি “অস্থায়ী” স্বর্গ বা নরকে৷ মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কিত প্রশ্নটা নিছক খেয়ালী দার্শনিক প্রশ্ন নয় ; বরং বাস্তব জীবনেরই প্রশ্ন। যারা যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে, বাইবেলে বলা আছে যে মৃত্যুর পরে বিশ্বাসীদের আত্মা স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হয়, কারন তারা প্রভূ যীশুকে নিজেদের মুক্তিদাতা হিসেবে স্বীকার করেছে বলে তাদের পাপ ক্ষমা করা হয় ।মানুষ মারা গেলে তার যতগুলো দরজা পৃথিবীতে জীবিত থাকা অবস্থায় খোলা ছিল, তার প্রতিটি দরজাই বন্ধ হয়ে যায়। বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়ে কোনো একটা জিনিস সন্বন্ধে অবগত হওয়ার যাবতীয় উপকরণ হস্তগত না হওয়া পর্যন্ত ‘না’ অথবা ‘হাঁ’ সূচক কোনো সিদ্ধান্ত থেকে দূরে থাকা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু কোনো জিনিসের সাথে যখন আমাদের কার্যপদ্ধতি স্থির করা ছাড়া কোনোই উপায় থাকে না, তখন তা অবশ্যই করতে হয়। ডাকাতি করা ভাল না মন্দ কাজ? ভারসাম্যপূর্ণ সাধারন একজন মানুষও বলবেন, এটা জঘন্য কাজ্‌ পরকালের ভালো-মন্দ যে বিশ্বাস করে না সে কেমন করে একজন শক্তিশালী ও প্রভাবশালী অপরাধীকে বোঝাবে যে, ডাকাতি একটি জঘন্য অপরাধ?"আজিকে হয়েছে শান্তি, জীবনের ভুলভ্রান্তি সব গেছে চুকে।রাত্রিদিন ধুক্‌ধুক্‌ তরঙ্গিত দুঃখসুখ থামিয়াছে বুকে।যত কিছু ভালোমন্দ যত কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব কিছু আর নাই।বলো শান্তি, বলো শান্তি, দেহসাথে সব ক্লান্তি হয়ে যাক ছাই।" ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জোড়াসাঁকো, ৫ বৈশাখ, ১৩০১ ) মানুষ যখন মারা যায়, তখন সংসারে একজন লোকের অনুপস্থিতি নিশ্চয়ই শুধুমাত্র শুন্যতারই সৃষ্টি করেনা, বরং পুরো সংসারে একটা শোকের ছায়া ফেলে দেয়।মৃত্য এমন একটি অবধারিত সত্য যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া কোন প্রাণীর পক্ষেই সম্ভব নয়।আল্লাহ তাআলা বলেন: “প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫) মৃত্যু বরণের পর শুরু হবে আরেক জীবন। যে জীবনের কোন শেষ নেই।মানুষের জীবনে ইহকালে সব চেয়ে বড় সম্পদ হল তার সময় । ইমাম মুসলিম (রহঃ)-এর উস্তাদ রিবয়ী ইবনে হিরাশ (রহঃ) একদিন প্রতিজ্ঞা করে বললেন, “যতক্ষন পর্যন্ত আমি বেহেশতের সুসংবাদ পাব না, ততক্ষন পর্যন্ত হাসব না”। তারপর থেকে তিনি জীবনে কখনও হাসেন নি।যখন তিনি মৃত্যূবরণ করেন, মৃত্যূর পর হাসতে লাগলেন। উপস্থিত লোকজন তার হাসি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তাঁরা বলাবলি শুরু করলেন, জীবনে যিনি কখনও হাসেননি, মৃত্যূর পর তিনি হাসছেন! তার কারণ কি? তাঁরা রিবয়ী ইবনে হিরাশ (রহঃ)-এর স্ত্রীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তার স্ত্রী বললেন, আমার স্বামী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যতক্ষন পর্যন্ত তিনি বেহেশতের সুসংবাদ পাবেন না, ততক্ষন পর্যন্ত হাসবেন না। মৃত্যূর পর নিশ্চয়ই তিনি সেই সুসংবাদ পেয়েছেন। তাই আজ তার মুখে এ হাসি দেখা যাচ্ছে।তাই আসুন, আমরাও হযরত রিবয়ী ইবিনে হিরাশ (রহ-এর মতো মৃত্যূর পরে হাসার প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
false
ij
পার্শ্বনাথ The prophet says: `People are wicked who kill beings for the sake of their own pleasure.’ Jaina Sutras (Sutrakritanga) (c.300 B.C) translated by H. JACOBI প্রাচীন ভারতবর্ষে যে ক’টি অহিংস ধর্ম গড়ে উঠেছিল, জৈন ধর্মটি তার মধ্যে অন্যতম। এই ধর্মের প্রবক্তা বর্ধমান মহাবীর, তবে জৈন ধর্মসম্প্রদায়ের ইতিহাস অনুযায়ী, মহাবীর ছাড়াও আরও অনেক সাধুসন্ত জৈনধর্মকে সম্বৃদ্ধ করেছিলেন। অর্থাৎ, জৈনধর্মের সঙ্গে মহাবীরের নামটি ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেলেও তিনি কিন্তু একক ভাবে এই জৈনধর্মের প্রতিষ্ঠাতা নন। জৈনধর্ম কে বরং জৈনদের ২৩তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের চিন্তাধারা বলা যায়। মহাবীর বোধি লাভ করার পর জৈন মতবাদ গ্রহন করে জৈনধর্মের সর্বশেষ তীর্থঙ্কর হয়েছিলেন। এই কারণে বুদ্ধের মতো মহাবীরকে একক ভাবে জৈন স¤প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় না। কট্টরপন্থি জৈনরা বিশ্বাস করেন, জৈন ধর্মটি শ্বাশত; একজন মানুষ এই ধর্মটিকে গড়ে দেননি; বরং অসংখ্য তীর্থঙ্কর বা গনধর এই মতটিকে কল্পান্তরে উপস্থাপন করেছেন। (Kendall W. Folkert, Scripture and Community.) জৈনদের বিশ্বাস অনুযায়ী-প্রাচীন ভারতে বর্ধমান মহাবীরের আগে তেইশ (২৩) জন জৈন গনধর বা তীর্থঙ্কর জৈনধর্ম প্রচার করে গিয়েছেন। (Johann George Bühler, On the Indian Sect of the Jainas.) সর্বপ্রথম তীর্থঙ্করের নাম ঋষভ বা আদিনাথ। অন্যদের নাম যথাক্রমে - অজিত, সম্ভব, অভিনন্দন, সুমতি, পদ্মপ্রভ বা সুপ্রভ, সুপার্শ্ব, চন্দ্রপ্রভ, সুবিধি বা পুষ্পদন্ত, শীতল, শ্রেয়াংশ, বাসুপূজ্য, বিমল, অনন্ত, ধর্ম, শান্তি, কুন্থু, অব, মল্লি, মুনি, সুব্রত, নমি, অরিষ্টনেমি ও পার্শ্বনাথ। অবশ্য নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মনে করেন, একমাত্র পার্শ্বনাথ ছাড়া আর কেউই ঐতিহাসিক ব্যাক্তি নয়। অন্যান্যদের অবস্থান মনে হয় পরবর্তীকালের জৈনসাধুদের কল্পনায়। মহাবীরের পূর্বসূরি পার্শ্বনাথ মহাপরিনির্বান লাভ করেছিলেন মহাবীরের ২৫০ বছর আগে। জৈন ঐতিহ্য অনুসারে পার্শ্বনাথের পূর্বসূরি অরিষ্টনেমি মহাবীরের মহাপরিনির্বানের ৮৪,০০০ বছর আগে মহাপরিনির্বান লাভ করেছিলেন! এঁদেরই জৈনতীর্থঙ্কর বা গনধর বলা হয় । কাজেই মহাবীর নিজস্ব কোনও মতবাদ প্রতিষ্ঠা করে যান নি। তিনি জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত ধর্মই মেনে নিয়েছিলেন। “মহাবীরের সাংগঠনিক শক্তির কথা জানা যায়; পরবর্তীকালে তিনি পার্শ্বনাথের মতবাদকে তথা জৈনধর্মকে আরও সংগঠিত করেছিলেন।” (নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য; ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট) জৈন সাধুদের নিয়ে লেখা পাওয়া যায় উত্তরাধ্যয়ন সূত্রে। সেখানে উল্লেখিত হয়েছে: পার্শ্বনাথের এক শিষ্য ও মহাবীরের এক শিষ্যর মধ্যে দেখা হলে তারা উভয়ে পুরনো জৈনধর্মের ও মহাবীরের মতবাদকে একত্রিত করেন। এই সব কারণেও পার্শ্বনাথকে ঐতিহাসিক ব্যাক্তিই মনে করেন একালের ঐতিহাসিকেরা। পূর্বা সেনগুপ্ত লিখেছেন, ''জৈনধর্মে চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে জ্ঞান প্রজ্ঞায় ও আধ্যাত্মিক অনুভূতিতে খুব একটা পার্থক্য না-থাকলেও তীর্থঙ্করুপে পার্শ্বনাথের খ্যাতি অত্যধিক। আনুমানিক ৮১৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বারাণসী নগরে পার্শ্বনাথের জন্ম হয়েছিল। মায়ের নাম বামাদেবী; বাবার, অশ্বসেন। “রাজকুমারী প্রভাবতীর (অযোধ্যা অঞ্চলের) সঙ্গে তাঁর বিবাহ হলেও ত্রিশ বছর বয়েসে তিনি সংসার ত্যাগ করেন এবং দীক্ষা গ্রহনের চুরাশি দিন পরে কেবলজ্ঞান প্রাপ্ত হন। ত্রিশ বছর বয়েসের পর সত্তর বছর পর্যন্ত ধর্ম প্রচার করেন এবং একশ বছর বয়েসে তাঁর নির্বান লাভ হয়। তিনি যে পর্বতে দেহরক্ষা করেন সে পর্বত পার্শ্বনাথ পর্বত নামে বিখ্যাত। জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই স্থান অতি পবিত্র ও তীর্থসরুপ।” ( জৈন তীর্থঙ্কর ও সাধুসন্ত ; পৃষ্ঠা ৪৬ ) অপরদিকে, নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখেছেন, 'পার্শ্বনাথের ঐতিহাসিকতা সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। বৌদ্ধ গ্রন্থ দীঘ নিকায়ে ভুল করে মহাবীরের মত বলে পার্শ্বের মত উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া জৈন গ্রন্থে পার্শ্বের শিষ্যদের সঙ্গে মহাবীরের শিষ্যদের বিতন্ডার কথা উল্লিখিত হয়েছে। এমনও ইঙ্গিত সেখানে আছে যা থেকে মনে হয় মহাবীরের পিতামাতা পার্শ্বের ধর্মমতের অনুগামী ছিলেন। জৈন বিবরণ অনুযায়ী পার্শ্ব (নাথ) আনুমানিক ৮১৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা অশ্বসেন সম্ভববত একজন গোষ্ঠীপতি ছিলেন। তাঁর মাতার নাম ছিল বামা, পত্নী প্রভাবতী অযোধ্যা অঞ্চলের কোন গোষ্ঠীপতির কন্যা ছিলেন। তিরিশ বছর বয়েসে তিনি (পার্শ্বনাথ) সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন। এবং তিরাশি দিন (পূর্বা সেনগুপ্ত লিখেছেন, চুরাশি দিন ) একনাগাড়ে সাধনার পর পরম জ্ঞানলাভ করেন। তিনি শত বৎসর জীবিত ছিলেন এবং সত্তর বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ধর্ম প্রচার করেন। সমেত-শিখর পবর্তে তিনি দেহত্যাগ করেন। তিনি নগ্ন থাকতেন না শ্বেতবস্ত্র পরিধান করতেন।' (ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট; পৃষ্ঠা, ৭৬-৭৭) চতুর্যাম: মানবসভ্যতার অন্যতম এক মৌলিক শ্রেয়নীতি আগেই বলা হয়েছে, পার্শ্বনাথ ছিলেন মহাবীরের অব্যবহিত পূর্ব ত্রয়োবিংশতিতম জৈন তীর্থঙ্কর । যিনি বোধিলাভ করেই উচ্চারণ করেছিলেন, প্রাণি হত্যা করো না। পূর্বা সেনগুপ্ত, তাঁর জৈন তীর্থঙ্কর ও সাধুসন্ত নামে বইতে লিখেছেন: কমঠ নামে এক সন্ন্যাসী পঞ্চাগ্নি তপস্যা আরম্ভ করলেন। বহুলোক সমবেত হলো। তরুন পার্শ্বনাথও। আগুন জ্বালিয়ে পঞ্চাগ্নি তপস্যা করতে হয়। সন্ন্যাসী কমঠ জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে সাপসহ ইতর (জীবন্ত) প্রাণি ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছিল। তরুন পার্শ্বনাথ (ইতর) প্রাণির হত্যার প্রতিবাদ করল। সন্ন্যাসী কমঠ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে, পার্শ্বনাথ, জলন্ত কাঠের সঙ্গে লেগে থাকা মৃত পোড়া সাপ দেখিয়েছিল। এই গল্পটির সঙ্গে বাল্মীকির পাখিপ্রেম সংক্রান্ত গল্পটির আশ্চর্য সাদৃশ্য লক্ষ করি না কি? গোপাল কৃষ্ণ দাস লিখেছেন, The teaching of Parsvanatha is called Chaturayama. It outlines a four-fold path to salvation, i.e., kindness to all living beings, avoidance of telling lies, abjuration of theft and the possession of belongings. In the next step Mahavira added another. It was not to wear any dress.[Banglapedia] নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখেছেন, তিনি(পার্শ্বনাথ) চারটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করতেন। কারো জীবননাশ না করা (অহিংসা),মিথ্যা ভাষণ ও মিথ্যাচরণ পরিহার করা (অনৃত), অপহরণ না করা (অস্তেয়) এবং ব্যাক্তিগত সম্পত্তির অধিকারী না হওয়া (অপরিগ্রহ)। এগুলিকে চতুর্যাম ব্রত বলা হয়। এগুলির সঙ্গে মহাবীর আরও একটি ব্রত যোগ করেছিলেন যা হচ্ছে ব্রহ্মচর্য। (ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট;পৃষ্ঠা ৭৭) গোপাল কৃষ্ণ দাস অবশ্য লিখেছেন, In the next step Mahavira added another. It was not to wear any dress.[Banglapedia] পার্শ্বনাথের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী। অর্থাৎ, নারীবাদী সাংখ্য দর্শনের প্রনেতা কপিলেরও একশ বছর আগে পার্শ্বনাথ মানবতাবাদী বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এই কারণেই তিনি আমাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেন। অধিকন্তু, অনুমান করি, তৎকালে পার্শ্বনাথকে এক বিপদজনক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে নিয়ত সংগ্রাম করতে হয়েছিল। পার্শ্বনাথের সময়ে ভারতবর্ষসহ প্রাচীন বিশ্বের ইতিহাস অত্যন্ত নির্মম, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও রক্তপাতে ভরা। যে সময়টায় পার্শ্বনাথ অহিংসবাণী প্রচার করতেন সেই সময়ে ভারতবর্ষসহ প্রাচীনবিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের দিকে তাকালে শিউড়ে উঠতেই হয়। # ভারতবর্ষে তখন উচ্চ বর্ণের শাসকশ্রেনি কর্তৃক নিুবর্গের (শূদ্র-দাস) ওপর চলছিল অপরিমেয় শোষন; যাদের শ্রমেরর ওপর (আরও দুশ বছর পর গড়ে উঠবে) গোত্র ভিত্তিক ট্রাইবাল রাজ্যগুলি (ষোড়শ জনপদ)। ওই সময়টায়, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী নাগাদ ভারতবর্ষে লোহার আবিস্কার হয়েছিল, আর তাতে বনজঙ্গল কেটে পরিস্কার করে আর্যদের পক্ষে পুবের গাঙ্গেয় অববাহিকার দিকে অগ্রসর হওয়া সহজ হয়েছিল। এই সময়কার, অর্থাৎ বৈদিক যুগের দাসদের অবস্থা সম্বন্ধে বিশিষ্ট গবেষক দেব রাজ চানানা লিখেছেন, “আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে ‘দাস’ ছিলেন পুরোপুরি প্রভুর অধীন এবং বেদের কয়েকটি সূক্ত (দানস্তুতি-সূক্তগুলি) বিচার করলে দেখা যায়,‘দাস’ দানসমগ্রীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। দাসের কোনো অধিকার ছিল না। তাঁর যে সব সম্পত্তি থাকত তাঁর অধিকর্তা বা প্রভু তা দখল করে নিতে পারতেন। দাসীদের কখনও কখনও রক্ষিতা হিসেবে রাখা হতো কিন্তুু স্ত্রী হিসেবে নয়।”(প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথা ;পৃষ্ঠা, ১৪৬) # চিনে চলছিল দাসভিত্তিক চৌ (Zhou) রাজবংশের শাসন। চৌ অভিজাত কতৃর্ক নিুবর্গের ওপর অমানবিক শাসন ও শোষন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পাঠ করুন, “... In these inscriptions, gifts of slaves are often mentioned along with gifts of all kinds of utensils, money, cattle, horses and land. This shows that slaves were treated in the same way as utensils or animals. (Bai Shouyi সম্পাদিত An Outline History of China.p.84) # মিশরে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে চলছিল শাসকশ্রেনি ফারাওদের মধ্যেকার অভ্যন্তরীণ বিরোধ। মাঝেমধ্যে পুরোহিত শ্রেণির সঙ্গে তাদের (ফারাওদের) সংঘটিত হচ্ছিল রক্তক্ষয়ী তীব্র সংঘাত। Smendes, the first king of the 21st Dynasty, ruled only in the north near Memphis, while a line of high priests at Thebes controlled the south. The 22nd Dynasty (945-712 bc), centered at Bubastis in the western delta, clearly reflected an earlier Libyan presence in Egypt. (David Peter Silverman. Ancient Egypt.) # মিকেনাই যুগ অবসানের পর এক নিদারুন অন্ধকার যুগে নিমজ্জিত হয়ে ছিল গ্রিস । নতুন ধাতুর আবিস্কারের অপেক্ষায় ছিল গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলি। George Forrest লিখেছেন, By 800 some Greeks had begun to wander abroad, in the main, we suppose, in search of metal, and some even settled where they could find it, on the north-Syrian coast.( Greece; The History of Archaic period) হেলেনিয় সভ্যতা সে নতুন ধাতুর সন্ধান পায় খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতকের দিকে। # রোম তখনও গড়ে ওঠেনি। এমনই এক ঘোর দুঃসহ সময়ে প্রাচীন ভারতের পথে প্রান্তরে প্রাণিহত্যা না করার জন্য উপদেশ দিতেন পার্শ্বনাথ । সেই সময়কার সমসাময়িক সভ্যতার সঙ্গে প্রতি তুলনা তাঁকে অতি অবশ্যই অন্যন্য করে তোলে; অথচ, তাঁর সম্বন্ধে সমকালীন বিশ্ব একেবারেই সচেতন নয়। তবে বর্তমান কালের মানুষ তাঁর সম্বন্ধে যতই বিস্মৃত হই না কেন পার্শ্বনাথের সাহসী বক্তব্য মানব সভ্যতার ইতিহাসে পার্শ্বনাথকে অতি অবশ্যই একটি বিশিষ্টতা দান করে, শুধু তাই নয়, প্রাচ্যবাদের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে পার্শ্বনাথকে অতি অবশ্যই চিহ্ণিত করা যায়। কয়েকটি প্রাচীন ধর্মমতের সঙ্গে চতুর্যামের তুলনা করা যাক। খ্রিস্টধর্ম গ্রহনের পূর্বে রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম ধর্ম ছিল মিথ্রাবাদ( Mithraism) বা the cult of Mithra । আদতে মিথ্রা ছিল প্রাচীন পারস্যের প্রজ্ঞা ও আলোর প্রভূ। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে আসিরিয়া এবং খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ব্যাবিলন জয় করেছিল পারস্য; তার পর পরই মিথ্রা সূর্যদেবতায় পরিনত হয়। মিথ্রাকে এশিয়া মাইনর অঞ্চলের গ্রিকগন গ্রিক সূর্যদেবতা হেলিওস (Helios) সঙ্গে অভিন্ন মনে করত; সুতরাং, মিথ্রাবাদ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুত বিস্তার লাভ করতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৬৮। রোমান সেনাপতি পমম্পেই কয়েকজন সিসিলিয় জলদস্যুদের আটক করলেন। সেইসব সিসিলিয় জলদস্যুরা ছিল মিথ্রার উপাসক। সুতরাং, রোম মিথ্রাবাদ দ্বারা সংক্রামিত হলো । সংক্রামিত হলো এই কারণে যে, মিথ্রাবাদ ছিল নারীদ্বেষী; মিথ্রাবাদী উৎসবে নারীরা যোগ দিতে পারত না! আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আদতে মিথ্রা ছিল প্রাচীন পারস্যের প্রজ্ঞা ও আলোর প্রভূ। জরথুশত্রীয় পাঠ্য আবেস্তায় মিথ্রাকে বলা হয়েছে প্রধান বা yazata (আবেস্তান ভাষায়, beneficent one) yazata- র অর্থ শুভ আত্মা এবং জগতের পালক। মিথ্রাকে মনে করা হত স্বর্গীয় ষাঁড়ের হত্যাকারী, যার মৃত শরীর থেকে মানুষের জন্য কল্যানকর যাবতীয় উদ্ভিদ ও প্রাণির সৃষ্টি হয়েছে। মিথ্রাবাদের কয়েকটি মূলকৃত্য হলো: ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পবিত্র পানির ব্যবহার; ২৫ ডিসেম্বর মিথ্রার জন্মদিন পালন, শুধু তাই নয়, মিথ্রার জন্মদিনে মেষপালকদের বিশেষ সম্মান দেখানো, রোববার পবিত্র দিবস পালন, আত্মার অমরত্মে বিশ্বাস, শেষ বিচার ও পুনুরুত্থান দিবসে বিশ্বাস। ইত্যাদি। পার্শ্বনাথের একান্ত মানবীয় আদর্শের সঙ্গে এই সব ভূমধ্যসাগরীয় অলীক উপকথার তুলনা করলে বিস্ময়কর ঠেকতেই পারে। ৩১২ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট Constantine the Great ( 274-337) এক স্বপ্নে যিশুকে দেখলেন। এর পরপরই ইউরোপের ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ন ঘটনাটি ঘটল; Constantine খ্রিস্টধর্মকে রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ঘোষনা করলেন। এরপর পর থেকে রোমান সাম্রাজ্যে মিথ্রাবাদ ক্রমেই অবসৃত হয়ে যেতে থাকে। রোমান সাম্রাজ্য প্রথমে মিথ্রাবাদ ও পরে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পূর্বেও অবশ্য ইউরোপে ধর্ম ছিল। যেমন পৌত্তলিক কেল্টদের (Celts) ধর্ম। কেল্টদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এই রকম: ... a people who dominated much of western and central Europe in the 1st millennium bc, giving their language, customs, and religion to the other peoples of that area. কেল্টদের ধর্মকে বলা হয় Druidism.Three classes of Druids existed: prophets, bards, and priests. They were assisted by female prophets or sorcerers,বলাবাহুল্য, who did not enjoy the powers and privileges of the Druids. The Druids were well versed in astrology, magic, and the mysterious powers of plants and animals; they held the oak tree and the mistletoe, especially when the latter grew on oak trees, in great reverence, and they customarily conducted their rituals in oak forests.(Druidism সম্বন্ধে বিস্তারিত দেখুন Catherine Bernard রচিত Celtic Mythology; Enslow Publishers, Inc.) পার্শ্বনাথের মহৎ মানবিক উপলব্দির পাশাপাশি Druidদের এই ধরনের সীমিত চিন্তাধারার সীমাবদ্ধতা সহজে বোধগম্য হয়। এবং পার্শ্বনাথ আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন। বলাবাহুল্য, পার্শ্বনাথ প্রচারিত চতুর্যাম অপার মানবিক। এই কারণেই কি, পার্শ্বনাথের মতবাদ অপার মানবিক, বলেই মহাবীর কোনওরুপ দ্বিধা না-করেই পার্শ্বনাথের ধর্মমত মেনে নিয়েছিলে? তাইই। চতুর্যামব্রতেই তা হলে সব কথাই বলা হয়ে গিয়েছিল? তাইই। মহাবীর তাই আর নবধর্মের উদ্ভাবন বা প্রচারের প্রয়োজন বোধ করেননি। মহাবীর ঠিকই জানতেন যে টিকে থাকার জন্য মানবসমাজে অহরহ প্রানি হত্যার প্রয়োজন হয় । এ কারণে প্রানি হত্যা না-করা প্রায় একটি অসম্ভব কাজ। তেমনি এক অসম্ভব কথা উচ্চারন করেছিলেন মহাত্মা পার্শ্বনাথ। যেমন, বহুকাল পরে, ইউরোপে, ডেনিস দার্শনিক কিয়ার্কেগাদ উচ্চারণ করেছিলেনÑ যা অসম্ভব, তাইই বিশ্বাসযোগ্য। প্রাণিহত্যা করে না-থাকা অসম্ভব বলেই তা বিশ্বাসযোগ্য। এইরকম বৈপরীত্য বা paradox খ্রিষ্টান দার্শনিক কিয়ার্কেগাদের দর্শনে দেখা মেলে । মুসা নবীর দশটি (ঐশ্বরিক) আজ্ঞার একটি হলো “দাউ শ্যাল নট কিল”। অথচ দেখা যায় ঈশ্বরের নির্দেশে ইব্রাহীমকে ঈশ্বরের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে তার পুত্রকে বলি দিতে। এমনই paradox এর দেখা মেলে পার্শ্বনাথের ধর্মচেতনায়। পরম জ্ঞানলাভ করেই কতগুলি অসম্ভব কথা (অহিংসা+অনৃত+অস্তেয়+অপরিগ্রহ) উচ্চারণ করেই তবে জৈন ধর্মের ভিতটি তৈরি করেছিলেন পার্শ্বনাথ। মহাবীর তাই অহিংসবাদী ধর্মকে গ্রহন করেছিলেন। মহাবীরের সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল। জৈনভাবনাকে তিনি ভারতবর্ষের নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বারো বছর। * আমার পূর্ব প্রকাশিত একটি লেখা থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ... সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:০৮
false
hm
ফুটোস্কোপিক গল্প ০০৯ ফুটোস্কোপিক গল্প হচ্ছে ফুটোস্কোপ দিয়ে দেখা গল্প। সামান্যই দেখা যায়। : ... তারপর কী হোলো? : তারপর নায়িকা দৌড়াতে লাগলো। : নায়িকা দৌড়াতে লাগলো কেন? : ভিলেন যে ছুটছে পেছন পেছন? :ভিলেন পেছন পেছন ছুটছে কেন? :ভিলেন নায়িকাকে বিয়ে করতে চায়। : ভিলেন নায়িকাকে বিয়ে করতে চায় কেন? : নায়িকা দেখতে বেশ সুন্দর তো, তাই। :নায়িকা দেখতে কেমন সুন্দর? : মমমম, কেমন সুন্দর? পাশের বাড়ির কচি আন্টির মতো সুন্দর। পাতলি কমরিয়া, তিরছি নজরিয়া। ইয়াম ইয়াম। : তাহলে নায়িকা ছুটছে কেন? : সে তো ভিলেনকে বিয়ে করতে চায় না। : সে ভিলেনকে বিয়ে করতে চায় না কেন? : ভিলেনের গোঁফ আছে, তাই। : ভিলেনের গোঁফ আছে কেন? : মাথায় টাক যে? মাথায় চুল নেই বলে গোঁফ রেখেছে। : মাথায় টাক কেন? : ভিলেন যখন ছেলেবেলায় গোসল করতো, তখন ভিলেনের আম্মু ভিলেনের মাথায় শ্যাম্পু দিতে গেলে ভিলেন চেঁচাতো। মাথায় ঠিকমতো শ্যাম্পু করতে দিতো না। তাই টাক। : চেঁচাতো কেন? : ভিলেন যে! কোন ভালো কাজ তার পছন্দ নয়। : তাহলে ভিলেন নায়িকার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে কেন? : ভুঁড়ি আছে যে? : ভুঁড়ি আছে কেন? : ভিলেনদের ভুঁড়ি থাকতে হয়। : ভুঁড়ি থাকতে হয় কেন? : খাওয়াদাওয়া করে তো অনেক, তাই। : খাওয়াদাওয়া করে কেন? : না হলে নায়কের মার সহ্য করবে কিভাবে? : নায়ক ভিলেনকে মারবে কেন? : বা রে, নায়কের নায়িকার পেছনে ভিলেন দৌড়ালে নায়ক তাকে পেটাবে না? : নায়ক তাহলে ভিলেনকে মারে না কেন? : নায়ক তো বাড়িতে, ঘুমুচ্ছে। : নায়ক ঘুমায় কেন? : বা রে, নায়কের খাটনি আছে না? নায়িকার সাথে নাচতে হয়, ভিলেনের সাথে মারপিট করতে হয়, নায়িকার বাবার সাথে ঝগড়া করতে হয়। অনেক কাজ বেচারার। এতসব শেষ করে যদি একটু ঘুমাতে না পারে, তাহলে কিভাবে হবে? : নায়িকার বাবার সাথে ঝগড়া করতে হয় কেন? : নায়িকার বাবা চায় না নায়ক নায়িকার সাথে নাচুক। : চায় না কেন? : হিংসুটে একটা লোক তো, তাই। : হিংসুটে কেন? : নায়িকার বাবারা একটু হিংসুটেই হয়। : তারপর কী হলো? : নায়িকা ছুটতে লাগলো। ভিলেনও ছুটতে লাগলো পেছন পেছন। : তারপর কী হলো? : তারপর নায়িকা একটা পাহাড়ের কিনারায় গিয়ে পৌঁছালো। আর তার পেছনে ভিলেন। সামনে বিরাট খাদ। : তারপর? : ভিলেন বললো, মুহাহাহাহাহা! বলো সুন্দরী, কোন কমিউনিটি সেন্টারে তোমার বৌভাত হবে? : নায়িকা কী বললো তখন? : নায়িকা বললো, বাঁচাও, বাঁচাও! : তারপর কী হলো? : ভিলেন বললো, কেউ তোমাকে বাঁচাতে আসবে না নায়িকা! এখানে শুধু তুমি আর আমি! আর একটু পর আসবেন কাজী সাহেব আর আমার দুই সাক্ষী লালু আর ভুলু। : কাজী সাহেব কে? : কাজী সাহেব বিয়ে দেন। : লালু আর ভুলু কে? : ওরা দু'জন ভিলেনের সাগরেদ। : ওরা আসবে কেন? : ওরা সাক্ষী দিতে আসবে। : সাক্ষী কী? : মমমম। বিয়ে তো একা একা করা যায় না। লোকজনকে দেখিয়ে করতে হয়। যাদেরকে দেখিয়ে বিয়ে করতে হয়, তারাই সাক্ষী? : তারপর কী হলো? : নায়িকা পা হড়কে পড়ে গেলো। : তারপর? : ভিলেন লাফিয়ে গিয়ে নায়িকার হাত ধরে ফেললো। : নায়িকা পড়ে গেলো নিচে? : উঁহু। ভিলেন তো তার হাত ধরে আছে। আর নায়িকা ঝুলছে ভিলেনের হাত থেকে। নিচে খাদ। অনেক নিচে। : পড়ে গেলে মরে যাবে? : একদম। : তারপর কী হলো? : তারপর? নায়িকা আবার বললো, বাঁচাও বাঁচাও। : ভিলেন কী বললো? : ভিলেন বললো, মুহাহাহাহাহা! : তারপর? : তারপর নায়িকা বললো, ছেড়ে দে শয়তান! ... [সমাপ্ত]
false
mk
খালেদা জিয়া ৪২তম স্বাধীনতা দিবসেও স্বাধীনতা বিরোধীদের ত্যাগ করতে পারলেন না দেশের প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী ক্রমশ দায়িত্বহীন উক্তি করে এবং সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করেও দু’বছরে সফল না হওয়ায় অনেকটা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি না করে বিতর্কিত হয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়া ও যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয়ার দাবিতে ডাকা হরতালে সমর্থন দিয়ে বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়া চরমভাবে বিতর্কিত হয়েছে। দুই বছরাধিক সময়জুড়ে সরকার পতনের নামে জনগণের বিরুদ্ধে চালিত ধ্বংসাত্মক বিক্ষোভ, অবরোধ, হরতাল দিয়ে নিজেকে এবং তার দল বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করে তুলেছেন। জামায়াত-শিবিরের তা-ব ও পরিকল্পিত সহিংসতামূলক কর্মসূচির পরও জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেননি এবং ১৮ দল থেকে বহিস্কার করেননি বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়া। দেশবাসীর আহ্বান সত্ত্বেও তিনি তা করেননি। এমনকি তিনি ও তার দলীয় নেতারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার প্রতি নিন্দা জানাননি। কথায় কথায় কঠোর কর্মসূচি আর সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলেও তিনি তার অবশিষ্ট ভাবমূর্তি ধ্বংস করছেন। বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরে সহিংস হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রায় দু’মাস পরে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থান পরিদর্শনে গিয়েছেন। সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর সংখ্যালঘু, মুক্তিযোদ্ধা, গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থক ও সংগঠকের উপর সহিংস আক্রমণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরও ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী জামায়াত-শিবিরকে ত্যাগ করেননি। অথবা তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হননি। গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে প্রথমে তিনি সমর্থন দিলেও পরে তাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ ও নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষে দাবি জমা দিয়েছেন জাতীয় সংসদের তৎসময়ের স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের নিকট। তরুণ প্রজন্মের নির্দলীয় ও অহিংস আন্দোলনের লক্ষ্য হলো যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা। সারাদেশে এ আন্দোলন সাড়া জাগিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় শক্তি, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতা, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, ছাত্র-শিক্ষক এবং সাধারণ জনতা সমর্থন জানিয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের মুক্তিযুদ্ধ চলছে দেশে। গণজাগরণ মঞ্চের অহিংস আন্দোলনকে বিতর্কিত ও বিভ্রান্ত করার আয়োজন চলেছে পরিকল্পিত তৎপরতার মাধ্যমে। খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর সুরে সুর মিলিয়েছেন। বিএনপির মুক্তিযোদ্ধারা চুপ করে আছেন। বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক আত্মহত্যা হয়েছে। দলীয় পদ হারানোর ভয়ে তারা দেশের সঙ্গে বেঈমানি করছেন। গণজাগরণ মঞ্চকে দলীয়করণ, সরকারিকরণ করার চেষ্টাও বিফলে গেছে। কারণ তাদের দাবি দেশের মানুষের মূল দাবিকে ধারণ করে। এমনকি জামায়াতি প্রচার মাধ্যমগুলোও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে। পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সহিংসতাকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির। খালেদা জিয়া সংখ্যালঘুদের আক্রমণের নিন্দা করলেও এ আক্রমণ ভবিষ্যতেও হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার ভাষ্যমতে, এখন মন্দিরে হামলা হয়েছে; ভবিষ্যতে মসজিদেও হামলা হবে। তার এ বক্তব্যে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি আছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন অনেকে। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি এক দিনের হরতাল স্থগিত রেখে প্রশংসিত হয়েছে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হয়েছেন স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ। স্থায়ী রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করা হবে পাঁচ বছরের জন্য। বিএনপির এ ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব থাকলে সংসদে উপস্থিত হয়ে তা পেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হাইকোর্টের রায়ে জাতীয় সংসদে বাতিল হওয়ার আগে বিএনপি সংসদে গিয়ে আপত্তি না জানিয়ে ভুল করেছিল। এবারও রাষ্ট্রপতির পদটির গুরুত্ব বিবেচনা করে তাদের প্রস্তাবিত ‘অবিতর্কিত’ ও ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা না রাখলে ভুল করবে বিএনপি। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে হরতাল-অবরোধ চলাকালে সহিংস ঘটনার বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। মামলা খারিজ ও নেতাদের মুক্তি দাবি করেও বিএনপি আল্টিমেটাম দিয়েছে সরকারের প্রতি। এসব অযৌক্তিক দাবি করে বিএনপি অবলুপ্ত মুসলিম লীগের পরিণতি লাভ করতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের অনেকেই হরতালের বিপক্ষে। হরতালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও তা-বের পর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হরতালের বিকল্প সন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন। বিএনপি সহিংস হরতাল ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করে এবং মানুষের জানমালের ক্ষতির বিনিময়ে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে চান। এ মনোভাব জনগণ আর গ্রহণ করবে না। এমনকি খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের সপক্ষে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বগুড়া ও জয়পুরহাটে ২৪ মার্চের জনসভায়। সরকার হঠাতে তিনি অসাংবিধানিক আন্দোলনকে আশ্রয় করে আছেন। ২৬ মার্চের পর আরো কঠোর কর্মসূচি উপলক্ষ্যে ২৭ ও ২৮ মার্চ অযৌক্তিক হরতাল করেছে খালেদা জিয়া। তার এ হরতালের উদ্দেশ্য দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করা এবং রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করা। জামায়াত-শিবিরের সহিংস তৎপরতার ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ। তিনি ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় চালু করলেও ১৬১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চাকুরিচ্যুত করেছেন। বিএনপি ক্ষমতাসীন অবস্থায় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকা- চালিয়েছেন তার প্রামাণ্য তথ্যচিত্র দেশে-বিদেশে প্রকাশ করা প্রয়োজন। জামায়াত-শিবিরের প্রামাণ্য চিত্রও দেশে-বিদেশে তুলে ধরা দরকার। বেগম খালেদা জিয়ার উক্তি, উস্কানি ও অপতৎপরতার রেকর্ড সরকারের নিকট থাকা সত্ত্বেও কেন তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে না তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে সুশীল সমাজের। ধ্বংসাত্মক তৎপরতার উস্কানি, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর বিরুদ্ধে তৎপর হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। ২৬ মার্চ, ২০১৩ সালে জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আকাঙ্খায় তীব্রভাবে জাগ্রত। অথচ বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট অকেজো হরতাল দিয়ে জনগণকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধা আরোপ করলেন। ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে বুদ্ধিজীবী নিধনের দিবসে তিনি দু’দিনের হরতাল ডাকলেন। দুবছরের বেশি কঠোর আন্দোলন করার পরও তার আন্দোলন শেষ হয় না, কঠোরতার কমতি হয় না। যারা জনগণের ক্ষতির মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হতে চান জনগণ তাদের অন্যায় আশা পূরণ করবে না। নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার বেসামাল আন্দোলন ও জনসমর্থনহীন কর্মকা- ততো বাড়ছে। সরকার ধৈর্য ধরে অবস্থা মোকাবেলা করছে। মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুদের সম্মাননা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ। অন্যদিকে খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে উস্কানি দিলেন, কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন। অসাংবিধানিক দাবির জন্য তার আন্দোলন সাড়া পায়নি বলে বিএনপি সংলাপে ভীত ও অনীহা প্রকাশ করছে। সংলাপের মাধ্যমে সহিংসতার যুক্তি থাকবে না বলে তারা সংলাপে বিমুখ। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের তৎপরতা হলো রাজনৈতিক অস্থিতি, জরুরি অবস্থার দিকে সরকারকে ঠেলে দেওয়া, নাশকতার মাধ্যমে গণতন্ত্র নস্যাত করা এবং অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সরকার উৎখাতের আন্দোলন করা। বেগম খালেদা জিয়া ৪২তম স্বাধীনতা দিবসে এসেও ত্যাগ করতে পারলেন না স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে। জামায়াত-শিবিরের সহিংস তা-বের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে পুলিশকে বলেছেন গুলি না চালাতে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে কর্মীদের উস্কানি দিয়ে তিনি মূলত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করে যারা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করলো তিনি তাদের পক্ষ নিয়ে আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল করলেন। এভাবেই একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া, বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়া এবং অসাংবিধানিক তৎপরতায় ব্যস্ত হয়ে খালেদা জিয়া দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছেন, জনগণকে অতীষ্ঠ করছেন এবং স্বাধীনতার বিপক্ষশক্তির সহায়ক হচ্ছেন। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী থেকেও ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করতে পারলেন না। তরুণপ্রজন্ম নতুন ধরনের রাজনীতিতে উৎসাহী। প্রজন্মের চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি তাদের সমর্থন হারিয়েছেন। ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচি বাতিল করে বিতর্কিত হয়েছেন। তার বিতর্কিত ভূমিকা ও ভুলগুলো আর সংশোধন হবে বলে মনে হয় না। জনগণও তাকে ত্যাগ করবেন। ভোটের মাধ্যমে তার জবাব দেবে জনগণ। দায়িত্বহীন উস্কানি দিলেও সেনাবাহিনীর মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান তার কথায় গুরুত্ব দেবে না বলেই মনে হয়।লেখক : ॥ রতনতনু ঘোষ ॥প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
false
rn
দুপুর বারোটা পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইল নেই ১। আজ সারাদিন যে বইটি পড়ে শেষ করলাম-ঈশ্বরপুত্র। লেখক- প্রফুল্ল রায়। বইটির ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হয়েছে মাইকেল সমরেশ দত্ত নামের এক বিপত্নীক মানুষকে ঘিরে। মাইকেল সমরেশ দত্ত আদর্শহীন মানুষদের মধ্যে বিরলতম চরিত্র। নারী পাচার চক্রের কবল থেকে একটি সরল গ্রাম্য যুবতীকে বাচাতে গিয়ে কোন মূল্য দিতে হয় তাকে তাই নিয়ে এই আশ্চর্য আখ্যান ঈশ্বরপুত্র।২। রবীন্দ্রনাথ ও গৌতম বুদ্ধ আমার সবচেয়ে প্রিয় দুজন ব্যক্তিত্ব। 'জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক' এমন একটি মাত্র মন্ত্রের জন্যই বুদ্ধ অবিস্মরণীয় এবং ধর্ম প্রবর্তকদের মধ্যে অনন্য, যেহেতু জগতের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠিত ধর্মই অন্য প্রাণী তো দূরের কথা, অন্য ধর্মের মানুষদের সুখ কামনা করতে দ্বিধা বোধ করে। বিশ্বাস হচ্ছে বিশ্বাস, সত্য হচ্ছে সত্য! ৩। সবকালের একটাই শপথ—কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার। এর মধ্য দিয়েই সবদেশ মাথা উঁচু করে বিশ্ব মানচিত্রে দাঁড়িয়েছে। এই মূলমন্ত্র দিয়েই সব স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। একটি দরিদ্র দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যেহেতু এই পৃথিবী আমাদের, তাই নিজেদের'ই গড়ে নিতে হবে।৪। আমি খুব ভালো হাঁটতে পারি। নোংরা, ভাংগা এবং সরু ফুটপাত- তাতে আমার কোনো সমস্যা হয় না। হোন্ডা ওয়ালারা মনে করে ফুটপাত তাদের বাবার সম্পত্তি। ফুটপাতে চায়ের দোকান। সেখানে আবার ৪/৫ জন মিলে গোল হয়ে আড্ডা দেয়। পথচারীরা যে যেতে পারছে না- সেদিকে তাদের কোনো লক্ষ্য নেই। তবুও আমার হাঁটার গতি কমে না। আমেরিকা ও জাপানি মুভি গুলোতে দেখা যায়- তারা হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছে। ঢাকা শহর থেকে রিকশা উঠিয়ে দিলে যানজট অনেকখানি কমে যাবে। আর ফুটপাত প্রশস্ত করলে আমার মতো সাধারণ মানুষ'রা আনন্দে হেঁটে গন্তব্যে যেতে পারবে।৫। দুপুর বারোটা পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইল নেই। বাসায় কি রেখে আসছি? তা কি করে হয়- দশ টার দিকে তো রফিকের সাথে কথা বললাম। বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে বের হলাম সকাল সাড়ে আট টায়। কেন বার বার মনে হচ্ছে রফিকের সাথে কথা বলেছি, রফিক নামে তো আমার কোনো বন্ধু নেই। বাসে করে গুলশান যাওয়ার পথে কেউ কি মোবাইলটা নিয়ে গেল? কিন্তু আমি তো মহাখালি'র জ্যামে অনেকক্ষন গেমস খেললাম। না, গেমস খেলিনি। গেমস খেলেছিলাম গতকাল। তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে ভুলে বাসায়'ই রেখে আসছি। বাসায় ফোন দিয়ে কি দেখব, ভুলে বাসায় রেখেছি কিনা? মনে পড়লো- সুরভি তো বাসায় নেই। সুরভি'কে তো ভাইবারে ম্যাসেজ দিলাম।না বাসায় রেখে আসিনি। বাসা থেকে বের হয়ে তো কয়েক জনের সাথে কথা বললাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। দামী মোবাইল। একটু পর দেখি মোবাইল বাজছে। পরিচিত রিংটোন। সাথে কাঁপছে। পকেটে হাত দেখি- মোবাইল পকেটে। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৬
false
hm
সেতু সঙ্কট দেশটির নাম মনে পড়ছে না, তবে তাকে চিরে যে নদীটি বয়ে চলছে, তার নাম ঝিনুক। মস্ত সেই নদী। বর্ষায় প্রমত্তা, শীতে স্নিগ্ধা। সে নদীতে জাহাজ চলে, চলে ছোট ছোট ডিঙিও। সেদিনও দেখলাম দু'টি শিশু আদুল গায়ে একটা ডিঙি বাইতে বাইতে চলছে তীর ঘেঁষে, আর হাঁ করে দেখছে দূরে বড় ইস্টিমারের ডেকে লোকজনের কান্ডবান্ড। ইস্টিমারটাও বুঝি তাদের ভয় দেখানোর জন্যে একবার ভোঁ করে হাঁক দেয়। ঝিনুক চিরে রেখে গেছে দেশটার অনেকখানি। তাকে পার হতে না পারলে ব্যবসাবাণিজ্য চলে না, আমদানিরপ্তানি সব মাটিতে গড়াগড়ি খায়। লোকজন একদিন কথা বলাবলি শুরু করলো, ঝিনুক নদীর ওপর দিয়ে সেতু বানাতে হবে। বাজারে, দোকানে, খেলার মাঠে, বর্ষার দিনে ছাতা মাথায় করে ছিপ ফেলে মাছ ধরার নিস্তব্ধ নিষ্ঠুর খেলা ভেঙে সব জায়গায় লোকের মুখে কেবল সেতুর আলাপ। ঝিনুকের ওপর সেতু হবে? তা-ও কি সম্ভব? এ তো সেই নদী, যাতে জাহাজ ডুবলে তার হদিশ মেলে না, মিললেও তাকে টেনে তোলার সাধ্যি নেই কারো! মানুষের কি এমনই আস্পদ্ধা, যে ঝিনুকের ওপর সেতু বানিয়ে পেরিয়ে যাবে? এ কি মাদারটুলির খালের ওপর সাঁকো বানানো? এ কি ছেলেখেলা? তারপরেও লোকে চায়ের কাপ থেকে ঠোঁট তুলে ঝিনুক আর সেতু শব্দদু'টো দুর্বিনীত আগ্রহ নিয়ে একই দমে একই বাক্যে ব'কে যায়। কতবড় আস্পদ্ধা ঐ নাম-ভুলে-যাওয়া দেশের লোকের, অ্যাঁ! এই গুঞ্জন চলতে থাকে আকাশে বাতাসে। মৌমাছি ফুলের ওপর বসে বিরক্ত মুখে সেই গুঞ্জন শুনতে শুনতে মধু খায়, অলস গ্রীষ্মের রাতে একটা ঝিঁঝিঁ আচমকা চুপ করে যায় তার বাড়ির পাশে পঁচার মায়ের কুটিরে পঁচাকে শোনানো পঁচার মা-র ঝিনুকের বুকে সেতুর গল্প শুনে। ঝিনুকের এপারে দাঁড়িয়ে ঢেউ গোণে বেকার যুবকেরা, অন্য পার তো চোখে দেখা যায় না। ঝিনুকের এ পারে ও পারে দুইপারেই যখন সবার মুখে একই গুঞ্জন, ছিপনৌকার মাঝি থেকে ইস্টিমারের সারেং সবাই যখন চিন্তিত সেতুর আকার, আকৃতি ও প্রকৃতি নিয়ে, তখন রাজনীতিকরা তাঁদের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ড্রয়িংরূমে বসে নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করে ঠিক করলেন, এখন একটা কিছু করা দরকার। কিন্তু সেই দেশের যা দস্তুর, টুনিসচিবের কাঁধে দায়িত্ব পড়লো এই ঝিনুক সেতু নির্মাণের উপযোগিতা মাপার দায়। টুনিসচিব যখন হন্তদন্ত হয়ে সেই মাপামাপিতে ব্যস্ত, তখন উল্টোদলের রাজনীতিকরা ময়দানে গলা খাঁকরে বললেন, সেতু হচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু এর নাম সোজাদলের নেতা মরহুম মধু ঢালির নামে কিছুতেই রাখা যাবে না। রাখলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে। টুনিসচিব সবকিছু মেপে জানালেন, ঠিকাছে। সেতু না বানালে সামনে কঠিন দুর্দিন আছে। বানাতে হবে যত জলদি সম্ভব। লোকজনের গুঞ্জন মিথ্যে নয়। সোজাদলের মন্ত্রী বললেন, মরহুম মধু ঢালি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সোজাদল। দেশ এতে অশেষ উপকৃত হবে। টুনিসচিবের কাজকর্মের দোষগুণ মাপার দায় চাপলো পাতিসচিবের কাঁধে। তিনিও হন্তদন্ত হয়ে কাজে নেমে গেলেন। উল্টোদলের নেতারা বললেন, সেতুর নাম মধু ঢালির নামে রেখে জাতির ঘাড়ে একটা কলঙ্কই চাপানো হচ্ছে। মধু ঢালি ছিলো একটি দুষ্টলোক। সে পাশের বাড়ির জামগাছ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলো। কেন সে জামগাছে চড়েছিলো? পাতিসচিব জানালেন, টুনিসচিবের কাজ ঘ্যাম ভালো হয়েছে। এমন টুনিসচিব গত কুড়িবছরে একটাই ছিলো, যখন তিনি নিজে টুনিসচিব ছিলেন। সোজাদলের নেতারা বললেন, আসছেবার আমরা ক্ষমতায় এলে মরহুম মধু ঢালি সেতু বানিয়ে আমরা ঝিনুককে বশ করবো। পাতিসচিবের কাজের দোষগুণ মাপার দায় চাপলো পুরোসচিবের কাঁধে। তিনিও হন্তদন্ত হয়ে কাজে নামলেন। উল্টোদলের নেতারা বললেন, জাতি মধু ঢালির নামে সেতু মেনে নেবে না। সেতুর নাম রাখতে হবে অত্র অঞ্চলের বিখ্যাত রসগোল্লা নির্মাতা আবুল ময়রার নামে। নাহলে আমরণ হরতাল চলবে। পুরোসচিব জানালেন, পাতিসচিব বেড়ে খেটে কাজ করেছে। লোকটা ভালো। সোজাদলের নেতারা বললেন, প্রিয় জনগণ, মধু ঢালি সেতু আপনাদের জন্যে আমাদের উপহার। এবার পুরোসচিবের পরামর্শ নিয়ে মন্ত্রীসভায় প্রকল্পের প্রস্তাব উঠলো। কেউ বললো দাতাদের পয়সায় সেতু হোক, কেউ বললো জনতার পকেট থেকে ট্যাক্স খসানো হোক, কেউ বললেন দুটোই হোক। সেতুর ইনজিনিয়াররা ক্যালকুলেটর বার করে হিসেব করতে লাগলেন, কোন কনট্র্যাকটরের কাছ থেকে কত খাবেন। উল্টোদলের নেতারা মানববন্ধন করলেন। আবুল ময়রার ছেলে টিভির সামনে কেঁদে বললো, সব লোকে আব্বার রসগোল্লা খাইছে মাগার নাম লইবার চায়না। পত্রিকায় কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আবুলচরিত লিখলেন। সোজাদলের কয়েকজন বুদ্ধিজীবী লিখলেন মধু ঢালির খাবনামা। লিস্টির দুই নম্বরেই ঝিনুকের ওপর সেতুর কথা। এক নম্বরে জামগাছের স্বপ্ন। দাতারা এসে নানা কাঠি দিতে লাগলো। কেউ বললো সেতু চারগলির হোক। কেউ বললো ছয় গলির হোক। কেউ বললো সেতুর ওপর রেল চড়াও, কেউ বললো সেতুর পাশে ছাপড়া ঘরে দোকান দাও। তুমুল হট্টগোল বাঁধলো সারা দেশ জুড়ে। কিন্তু সব বুড়োখোকাছেলেমেয়ে, ময়দানের মোমাছি আর রাতের ঝিঁঝিঁদের তাক লাগিয়ে একদিন ঝিনুকের ওপর সেতুর খাম্বা বসে গেলো। পেল্লায় সে খাম্বা। প্রধান এসে দেখে গেলেন। তিনি আবার সেনা সমর্থিত, তাই সেনাপতিও এলেন সাথে। সকলেই খুশি। হঠাৎ ঘটলো বজ্রপাত। সেতুর সেই খাম্বার চারদিকে একদিন উঠলো অনেক ফিসফাস। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে লোকজন ফিসফিসিয়ে উঠলো, "আবুল লেইছ", "আবুল লেইছ", "আবুল লেইছ" ...। মাদ্রাসার কামিল পাশ ছাত্র আবুল লেইছ এসে চিৎকার করে উঠলো, "এইখানে খাম্বা গাড়ছে কে?" সবাই চুপ। চুপ জনতা, চুপ ফুলের ওপর মৌমাছি, চুপ গর্তের ঝিঁঝিঁ, চুপ উল্টোদল, চুপ সোজাদল, চুপ টুনিসচিব-পাতিসচিব-পুরোসচিব। চুপ প্রধান আর তার সমর্থক সেনা। আবুল লেইছ একটা দড়ি বেঁধে খাম্বা টেনে শুইয়ে ফেললো। তারপর ঝিনুকের পানি তুলে সহিহ কায়দায় কিছুটা খেয়ে বাকিটা কুলকুচি করে ফেললো ঝিনুকের ওপরেই। ঝিনুক সবকিছু আগের মতোই ভাসিয়ে নিয়ে বইতে লাগলো চুপচাপ, কিছু বললো না। . . এ গল্পটি ২০১০ এ প্রকাশিত গল্প সংকলন ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প"-তে অন্তর্ভুক্ত
false
rg
একটি কোরবানী বিষয়ক ছোটোগল্প_ একটি গল্পের খসড়া সেদিন ছিল বুধবার। যেমন পরিস্কার আকাশ তেমনি ফকফকা চাঁদনি রাত। অযুত লক্ষ নিযুত কোটি তারা রাতের আকাশে দূর সন্যাসীর মতো মিটমিট করছিল। ফুরফুরে কামিনী হাওয়া আপন মনে বসন্তের আগমনী গান গাচ্ছিল 'আহা আজি এ বসন্তে, কতো ফুল ফোটে, কতো পাখি গায়...। সারা দেশেই তখন কোরবানির ঈদের ছুটির আমেজ। টানা দু’দিন অনেক খাটুনির পর কোনোমতে দোতলা লঞ্চের কেবিনের সামনে গোশতের বাকশোটা রেখে পাশেই শোবার মতো করে শরীরটা এলিয়ে দিলেন খোরশেদ মিঞা। এই বয়সে এমুন মহাখাটুনি কী আর শরীরে সহে? কিন্তু উপায় নেই যে মহাকাল। কোরবানীর গোশতো তো আর হেঁটে হেঁটে আসবে না। পাঁচকুলে খোরশেদ মিঞার আর কে এমন আছে শুনি যে, বাড়িতে কোরবানীর গোশতো দিয়ে যাবে? তাই মন্টুর মা’র সাথে পরামর্শ করে কোরবানীর ঈদের একদিন আগেই খোরশেদ মিঞা ঢাকায় এসেছিলেন। ফুলির মায় গ্যাছেবার দুই পাতিল গোশতো পাইলো, মাইয়া মাইনষের এ্যাততো ঠ্যালা! মন্টুর মা, তুমি মাইয়াগো খবর দেও; মুই আইজ-ই ঢাকায় রওনা হইলাম।এবার বেশ মনের জোর নিয়েই খোরশেদ মিঞা ঢাকায় এসেছিলেন। আর গোশতে যাতে পচন না লাগে সেজন্য মন্টুর মা যেভাবে যতো ফরমাস দিয়েছিলেন সবই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন খোরশেদ মিঞা। আল্লাহর ইচ্ছায় গোশতোও ভালোই কুড়ানো হয়েছে। দেড় হাত বাই দুই হাত কাঠের বাকশো’র পুরোটাই এখন গোশতে ভরতি। বাকশোটা আরেকটু বড় বানালে আরো গোশতো ধরতো। কিঞ্চিত আফসোস তবু লেগে থাকে খোরশেদ মিঞার চোখেমুখে। ঢাকার মানুষে যে এভাবে সবাইরে গোশতো দেয় খোরশেদ মিঞা এখনো বিশ্বাস করতে পারেন না। গোশতের বাকশোর দিকে মাথা দিয়ে ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়ে নির্বাক চাঁদের অথৈ হাসি দেখতে থাকেন খোরশেদ মিঞা। এতোক্ষণে মন্টুর মায়ের নিশ্চয়ই মশলা-টশলা বাটাবাটি শেষ। কতো দিন যে মাইয়াগুলারে বাড়িতে আইনা একটু ভালোমন্দ খাওয়ানো হয় না। এইবার মাইজা জামাইরে একটা উচিত শিক্ষা দেওন যাইবো। হালার পোয় সুযোগ পাইলে খালি খাওয়ার খোটা মারে। মোর মাইয়াডা ঘরে তুইলা কয়দিন গোশতো খাইচস হারামির পো? জানি না বুঝি! চাচার ধনে পোদ্দারি মারোস? নিজের পোন্দের লুঙ্গি কোই, হারামজাদা? ব্যাটা চামার কোথাকার? এমন অনেক কথাই একসাথে উজানের মতো মনে পড়ল খোরশেদ মিঞার। লঞ্চ গলাচিপা পৌঁছালেই এসবের এবার একটা যুতসই জবাব দেওয়া যাবে বলে কিছুটা স্বস্থি তখন খোরশেদ মিঞার অন্তরে।অথচ সাত পুরুষ ধরে খোরশেদ মিঞারা সবাই মোসলমান। আগে বাড়িতেই কতো উৎসব করেই না গোয়ালের সবচেয়ে বড় দামড়াটাকে কোরবানী দেওয়া হতো। সারা গ্রামের মানুষ কোরবানীর দিন খোরশেদ মিঞাদের বাড়িতে দাওয়াত খেতো। গোলখালী ইউনিয়নের শুধু পারডাকুয়া গ্রাম ছাড়াও গোটা গলাচিপায় তখন যে কয় ঘর ধনী গৃহস্থ বাড়ি ছিল, তাদের মধ্যে খোরশেদ মিঞার বাপ-দাদাদের নাম আসতো সবার আগে। কিন্তু সংসারে যখন মরা কাটালের আকাল লাগে তখন এভাবেই বুঝি ভাটির মতো সব শেষ হয়ে যায়। সেই যে ভাটার শুরু তা আর গত পঞ্চাশ বছরে থামেনি। আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছরের আগের কথা এখনো দিব্যি মনে আছে খোরশেদ মিঞার। তখন খোরশেদ মিঞার কতোই বা বয়স? তেরো, চৌদ্দ কী পনেরো। দাদীজান কইতো- এইবার কোরবানীর লগে মোগো রাঙাভাইরেও শোবাইয়া দিমু। ওটাই ছিল পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় খোরশেদ মিঞাদের বাড়িতে সর্বশেষ কোরবানীর উৎসব।দাদীর পছন্দের মেয়ে সালেহা বেগমই সেই ঈদে বউ হয়ে আসলো খোরশেদ মিঞার ঘরে। দু’বছর পর খোরশেদ মিঞা আমেনা’র বাবা হলেন। আর সালেহা বেগম হলেন আমেনার মা। তারপর পিঠাপিঠি মর্জিনা, মোমেনা, কুলসুম আর জরিনা হওয়ার পর যখন বংশে বাতি দেওনের আর কেই নেই, তখন মায় একদিন কইলোÑ জাত দেইখা একটা কালা মাইয়া অইলেও আন, বাপ। এই কুল পুড়ানি মাগীর প্যাটে পোলাপাইন নাই। বছর ঘুরলে দ্যাহিস আবার মাইয়া ফুটাইব। কিন্তু সালেহা যে আমার কে, এই কথা মায়রে কেমনে বুঝাই? চুপিচুপি সালেহারে নিয়া হাজির হইলাম চরমোনাইর বড় হুজুরের কাছে। আল্লাহর অসীম দয়া আর বড় হুজুরের সহি দোয়ায় পরের বছর সালেহা আবার পোয়াতি হইলো। সেই বছর চৈতমাসের কড়া গরমের সর্বনাশা কলেরায় দিন দুপুরে সবার সামনেই মা আমার ছটফট করতে করতে মরলো। আর বছর ঘুইরা কার্তিক মাসে গিয়া সালেহার কোলে আইলো মন্টু। পোড়া কপাল আমার। মায় আমার মন্টুরে দেইখা যাইতে পারলো না। হঠাৎ একমাত্র ছেলে মন্টুর কথা মনে পড়ায় খোরশেদ মিঞার মেজাজ কী কিছুটা খারাপ তখন? নইলে শোয়া থেকে উঠে বসে চারদিকে রহস্যময় চোখে কী খোঁজেন খোরশেদ মিঞা?রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে বস্তির মতো এক খুপরিতে দ্বিতীয় বউ নিয়ে বেশ আরাম আয়াসেই আছে খোরশেদ মিঞার একমাত্র ছেলে সালেহার নাড়ি ছেড়া গৌরব পারডাকুয়ার দামড়া নাদান মন্টু। তিন বছর ধরে সে গলাচিপা যায় না। বেশি আয় রোজগার আর সংসারের উন্নতির আশায় দুই মেয়ে আর পোয়াতি বউটা বৃদ্ধ বাপ খোরশেদ মিঞার ঘাড়ে ফেলে মন্টু তখন ঢাকায় এসেছিল। পরের তিন মাসেও বাড়িতে আর কোনো খবর নেয় নাই। ছয় মাস না যেতেই গলাচিপায় কারা যেন খবর রটালো হারামজাদা মন্টু আরেকটা বিয়া করছে। এইডা গার্মেন্টসের মাইয়া। মন্টু রিকশা চালায়। দ্বিতীয় বউ বিউটি ভারি পরিপাটি। মন্টুর আগের বউয়ের খবর সে কিছুই জানে না। গার্মেন্টসের চাকরি থেকে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয় বিউটির। সকালে আবার অফিস। দুপুরে মন্টু কোনো দিন বাসায় ফিরলে নিজে রান্না করে। না ফিরলে সারাদিনই এক খোপের বারো বাই নয় ফুটের বাসায় ঝোলে আড়াই ইঞ্চি চাইনিজ তালা। খোরশেদ মিঞা সোর্স মারফত তখন একবার ঢাকায় এসেছিলেন বটে। সরাসরি তখন রামপুরায় মন্টুর বাসায়ও গিয়েছিলেন। সকাল বেলায় মন্টুর বউ বিউটির তখন অফিসে যাবার ভারী ব্যস্ততা। খোরশেদ মিঞাকে ছালাম করে পুত্রবউ বিউটি গার্মেন্টসে চলে গেল। তারপর মন্টু বৃদ্ধ বাপকে যেভাবে পারলো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করলো। মন্টুর অমন অবজ্ঞা খোরশেদ মিঞা হজম করতে পারলেন না। সোজা এসে আশ্রয় নিলেন কাকরাইল মসজিদে। কতো কথা যে আজ একসাথে মনে পরছে খোরশেদ মিঞার। মনে মনে আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন খোরশেদ মিঞা। দামড়া পোলার কামাই খামু, সেই কপাল নাই আমার।কাকরাইল মসজিদে খোরশেদ মিঞার আগে আরো দু’বার আসার অভিজ্ঞতা রয়েছে। খোরশেদ মিঞার তখন যৌবনকাল। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা ট্রলারের তিনি তখন নামকরা সুদক্ষ সারেং। কুয়াকাটা থেকে রোজ সারেং খোরশেদ মিঞা মাছ ধরা ট্রলার চালিয়ে বঙ্গোপসাগরের উথাল পাথাল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গগণ বিদারী গান ধরেনÑ কে যাস রে ভাটির গান গাইয়া, আমার ভাইজানরে বলিস নাইয়র নিতন ....। এছাড়া তৈয়াব, জয়নুদ্দিন, হাশেম, আমির আলীদের জাল তোলা আর মাছ ধরার কাজে স্বেচ্ছায় বাড়তি সাহায্য করে তখন যুবক খোরশেদ মিঞা। দরিয়ার মর্জি নাকি আকাশের গায়ে লেখা থাকে। সেদিনের আকাশের সেই দুর্বোদ্ধ ভাষা খোরশেদ মিঞারা যতোটুকু আন্দাজ করেছিল, দরিয়া সেদিন তার চেয়েও অনেক বেশি মাতাল হলো। এক একটি ঢেউ যেনো আসমান কাঁপিয়ে জমিনে আছরে পরলো। কয়েক মুহূর্ত মাত্র খোরশেদরা ট্রলারে থাকতে পেরেছিল। তারপর কে কোথায় ভেসে গেল জানার কোনো উপায়ই ছিল না।দু’দিন পরের ঘটনা। সুন্দরবনের চরদুবলার চরে অজ্ঞান অবস্থায় খোরশেদ মিঞাকে আবিস্কার করলো অচেনা অজানা অন্য মাছধরা জেলেরা। জ্ঞান ফিরলে খোরশেদ মিঞা শুধু পারডাকুয়া গ্রামের কথা কইতে পারলো। আর কিছু তার মনে নেই। দীর্ঘ এক মাস হারান মাঝির বাড়িতে কাটানোর পর খোরশেদ মিঞা পারডাকুয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সেই দিনও পারডাকুয়া গ্রামে খোরশেদ মিঞার বাড়িতে উজানের মতো মানুষ ভীড় করেছিল। সেদিন সবাই শুধু খোরশেদ মিঞাকে এক নজর দেখতে এসেছিল। আর সারা ঘরে তখন খোরশেদ মিঞার বয়োবৃদ্ধা মায়ের আহাজারিÑ ওরে আমার বাজানরে, তুই জ্যান্দা আছোস! কতো হানে যে তোর লাশ বিছরাইছি। হেয়া মুই কারে কমু, আমার খসু, আয় আমার বুকে আয়...। সে বছর অন্য কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে খোরশেদ মিঞাও খোদার নামে চেল্লায় বের হয়েছিল। কাকরাইল মসজিদে সে বছর সতের দিন ছিল খোরশেদ মিঞারা। কাকরাইল মসজিদ তখন একতলার উপরে ঢেউটিনের ছাউনি।রাত যতো গভীর হচ্ছে খোরশেদ মিঞা যেনো ততোই আজ চাঁদের মায়ায় পরতে থাকেন। রাত, চাঁদ আর পানি এই তিন মিলে খোরশেদ মিঞার গোটা জীবন। টানা দু’দিনের গোশতো কুড়ানির খাটুনির পরে বৃদ্ধ খোরশেদ মিঞার ক্লান্ত শরীর জুরে যেখানে লঞ্চে ওঠার পরপরই ঘুম নামার কথা, সেখানে মায়াবি চাঁদের রহস্যময় নির্বাক জোসনার দুর্বোদ্ধ খপ্পরে কেমন অলৌকিক সব ঘটনা ঘটতে লাগলো। কোথায় গেল আজ খোরশেদ মিঞার ঘুম? দক্ষিণ-পশ্চিম দুর্বোদ্ধ আকাশের একখণ্ড কালো মেঘের আড়ালে কী খোরশেদ মিঞার ঘুম তখন পালিয়ে গেল? আজ কেন পুরো জীবনের সকল ঘটনা একে একে সব মনে পড়ছে খোরশেদ মিঞার? জীবনের সকল পাওয়া না পাওয়ার হিসাব বুঝি আজ এই দোতলা লঞ্চের কেবিনের সামনে শুয়ে শুয়ে চিরুনী চালানোর মতো হিসাব কষে কষে মিলানোর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত? আকাশকে কেনো আজ আবার ভারী দুর্বোদ্ধ লাগছে খোরশেদ মিঞার? খোদার কুদরত বোঝার সাধ্য কী আর কারো আছে?জীবনটা নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে খোরশেদ মিঞার। দরিয়াই তাকে যেনো বারবার ডাকে। যৌবন বয়সে ট্রলার ডুবির সেই ঘটনার পর পেশা বদল করে কিছু দিন কাঁচা তরকারীর খুচরা কারবারি করেছিল খোরশেদ মিঞা। সংসারে তখন পাঁচ পাঁচটি খাবারের মুখ। তিন মেয়ে আমেনা, মর্জিনা ও মোমেনা। আর নিজেরা স্বামী-স্ত্রী দু’জন, সালেহা আর খোরশেদ মিঞা। কাঁচামালের ব্যবসায় কী আর এমন লাভ থাকে? কিছু দিন পরে আমেনা আর মর্জিনার স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। মোমেনার জন্য একটু দুধ কিনবে সেই পয়সাও থাকে না হাতে। তাই জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতার গ্যারাকলে অনেকটা বাধ্য হয়েই খোরশেদ মিঞা আবারো পেশা বদল করলো। সুন্দরবনের চোরাইকাঠ পাচারকারীদের দলে নাম লেখালো খোরশেদ মিঞা। ট্রলার চালানোর অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার বাহাদুরি দেখে দলের সবাই তখন খোরশেদ মিঞাকে মাস্টার ডাকতে শুরু করলো। সারেং খোরশেদ মাস্টার। সুন্দরবন থেকে আমতলী পর্যন্ত এক ভরা চোরাইকাঠ আনতে পারলেই পুরো মাসের খোরাক হয়ে যায়। যাওয়া আসা তিন-তিন মিলে ছয় দিন। মাঝখানে এক দুই বা তিন দিন। ব্যাস, তারপর আর কোনো ঝামেলা নেই। রুস্তুম তালুকদারের আড়তে মাল নামলেই কাম খালাস। সুন্দরবনের অবাধ কাঠ এভাবে চোরাই করাটা যে ভারী অবৈধ সেটা খোরশেদ মিঞার দলের সবাই জানতো। রুস্তুম তালুকদার টাকা দিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষী, পুলিশ, আনসার সবাইকে হাত করেন। ফরেস্ট অফিসার টাকা খেয়েছে মানে হলো খোরশেদ মিঞা দিনের বেলায় হাই স্পিডে ট্রলার ছেড়ে মনের সুখে তখন গান ধরে। কখনো কখনো রুস্তুম তালুকদার ফরেস্ট বিভাগের কাউকে টাকা দিতে চাইতো না। বলতো- কাঠের দাম নাই। চালানই টিকবো না। তখন খোরশেদ মিঞাকে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও সাগর পথে রাতের অন্ধকারে চোরাইকাঠ বোঝাই ট্রলার নিয়ে পাড়ি দিতে হতো।এমুনি এক দুর্ভাগ্যের অমাবশ্যার রাতে ট্রলার বোঝাই চোরাইকাঠ নিয়ে খোরশেদরা ঝড়ের কবলে পরলো পায়রা নদী যেখানে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে ঠিক সেই মোহনায় এসে। তোফাজ্জেল, মানিক, সাত্তার, আউয়াল, কামালদের তখন একটাই ভরসা। উপরে আল্লাহ আর নিচে খোরশেদ মিঞা হিল্লা। দোহাই আল্লাহ। বাঁইচা থাকলে মোরা আর কাঠ চোরাই করমু না। তোমার কাছে শুধু প্রাণ ভিক্ষা চাই, খোদা। উত্তাল সেই দরিয়ার ঝড়ে কে কোথায় গেল কেউ জানে না। সেবারও কোনো এক অলৌকিক কারণে খোরশেদ মিঞা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল।সূর্য তখন মধ্য গগণে। চোখ মেলে দেখলো কেওড়া গাছের ডগায় পরনের লুঙ্গি জড়িয়ে কলাগাছের মতো ভেসে আছে খোরশেদ মিঞা। পাথরঘাটার চর মহিষপুর গ্রাম সেটা। পরে বাড়িতে এসে খোরশেদ মিঞা তওবা করলো দরিয়ায় আর কোনো কাজ করবে না সে। খোদার নামে সেই বছরও একবার চেল্লায় বের হয়েছিল খোরশেদ মিঞা। কাকরাইল মসজিদে সেই বছর এক মাসেরও বেশি অবস্থান করেছিল খোরশেদ মিঞা। কী বিচিত্র জীবন মানুষের! ঘুম আজ কিছুতেই আসছে না খোরশেদ মিঞার। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জীবনের নানা ঘটনাকে যেনো এফোর ওফোর করার সময় এখন খোরশেদ মিঞার। ঘুরে ফিরেই আবার মনে পড়ে একমাত্র ছেলে মন্টুর কথা। বিয়া কইরা তুই বউ পোলা মাইয়ার কথা এইভাবে ভুইল্লা গেলি, হারামীর পো? এই দামড়া পয়দা দিছি মুই? আল্লাহ তুমি আমারে আর কী কী দেখাইবা কও? অথচ কোরবানীর গোশতো টোকানোর জন্য পরসু যখন ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমেছিলেন খোরশেদ মিঞা তখনো মনের মধ্যে বারবার খচখচ করছিল সালেহার একটা কথাÑ পারলে একবার মন্টুরে দেইখা আইসেন।কিন্তু ঠিকানা ছাড়া এত্তো বড় ঢাকা শহরে মন্টুরে খুঁজে পাওয়া কী চাট্টিখানি কথা? সদরঘাট থেকে নানান কথা চিন্তা করতে করতে হাঁটতে হাঁটেতে এক সময় এসে ওই কাকরাইল মসজিদে ওঠেন খোরশেদ মিঞা। তাছাড়া সালেহার ফরমায়েস অনুযায়ী, হাতেও তখন অনেক কাজ। কোনটা কখন করবে খেই হারানোর মতো দশা। গোশতো যাতে পচন না ধরে সে ব্যবস্থার জন্যে লবন, চা পাতা, রশি, কাঠের বাকশো ইত্যাদি যোগাড় করতেই যোহরের আজান পরলো। যারা কোরবানীর গোশতো টোকাতে ঢাকায় এসেছে তাদের অনেককেই খোরশেদ মিঞা পেলেন কাকরাইল মসজিদে। যোহরের নামাজ পড়ার পর রমনা পার্কে একা একা কিছুক্ষণ পায়চারী করলেন খোরশেদ মিঞা। সালেহার কোনো ইনস্ট্রাকশান যাতে ভুল না হয় সেই দিক সব যাচাই বাছাই করলেন। ঠিক তখন খোরশেদ মিঞার মনে পড়লো বড় হুজুরের সেই অলৌকিক গাছের কথা। এত্তো গাছের মধ্যে হেই গাছ মুই কেমনে পামু? বড় হুজুরে তো কইছিলÑ কাকরাইল মসজিদ রাইখা সোজা পশ্চিমে আগাইলে একটা পুরানা কালবার্ট। কালবার্ট না পারাইয়া উত্তর দিকের খালপাড় লইয়া আগাইলে পরে একটা লাল ইটের দালান। লাল দালান ফেলাইয়া পশ্চিম-উত্তর কোনাকুনি আগাইলে ইটের রাস্তা যেখানে শেষ, ঠিক তার ডানদিকে সেরাটন হোটেলের দেওয়াল। বামদিকে আগাইলে শাহবাগ মেইন রাস্তায় যাওয়ার পথ। ঠিক পশ্চিমে ছোট দেওয়ালের ওপাশে টেনিস কোর্ট। শতবর্ষী বটগাছ রাইখা দেওয়াল বরাবর পশ্চিমে ঠিক কুঁড়ি পা আগাইলেই যে গাছটা দেখবা, তার থেইকা ছাল-বাকল-পাতা যা যা পারো সব লইবা। মাইনষে যেনো না দ্যাখে। খুউব সাবধান।দোতলা লঞ্চের কেবিনের সামনের খোলা জায়গায় তখন ঠাণ্ডা বাতাসের হিমেল পরশ। খোরশেদ মিঞার কী একটু শীত শীত লাগছে? নাকী বড় হুজুরের গাছের কথা মনে পড়ায় একটু গা ছম ছম করছে? বড় হুজুরে এই গাছের সন্ধান পাইলেন কেমনে? কাইল বড় হুজুররে ডাইকা গোশতো দিয়া খাওয়ামু। আর সুযোগ পাইলে একবার জিগামুÑ হুজুর ওই গাছের তো ছাল-বাকল-পাতা পোতা হক্কল মাইনষে শ্যাষ কইরা ফেলাইছে। আপনে কন তো গাছটা আসলে কীসের? কারা নিল ছাল-বাকল-পাতা-পোতা শিকড় শুদ্দা? ওই গাছ দিয়া কী করে, হুজুর?রূপালী নির্বাক চাঁদের বুক জুড়ে তখন দু’এক টুকরো মেঘ। বাইরে হু হু শীতল ঠাণ্ডা হাওয়া। আকাশ কেনো জানি ধীরে ধীরে ভয়ংকর রূপ নিতে লাগলো। খোরশেদ মিঞার চোখে তখন আবারো আতঙ্ক। নড়ে চড়ে শোয়া থেকে উঠে বসেন খোরশেদ মিঞা। ভালো করে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। আকাশের এই ভয়ংকর রূপ খোরশেদ মিঞা ঠাওর করতে পারেন। যৌবনকালে প্রথম যেদিন বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবি হয়েছিল সেদিনও চাঁদের গায়ে অমুন উড়ো মেঘ ছিল। আকাশ ছিল অমুন ভয়ংকর দুর্বোদ্ধ নির্বাক। সময় গড়িয়ে হঠাৎ দরিয়া সেদিন ফুঁসে উঠেছিল। কিন্তু আজ আর খোরশেদ মিঞার ভয়টা অমন পিলে চমকানোর মতো নয়। সঙ্গে বড় হুজুরের নির্দেশ মতো রহস্যময় সেই দুর্লভ গাছের ছাল-বাকল কিছুটা তো আছে! আর সঙ্গে আছে কোরবানীর গোশতো। পবিত্র জিনিস। কতো বছর পর যে পেট ভইরা গোশতো খামু। আল্লাহ তো মানুষের সব আশাই পূর্ণ করেন। আইজ আর ভয়ের কিছু নাই। জীবনে এইবার-ই প্রথম বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামায পড়ছি। এক্কেবারে প্রথম জামাত।তারপর সে কী ব্যস্ত দিন গেল। যে দিকে যাই শুধু গোশতো আর গোশতো। কে কতো খাবে? দুপুর, সন্ধ্যা, রাত, পরদিন সকাল আর দুপুর মোট পাঁচবার শুধু গোশতো টুহাইলাম। যে বাড়িতে যাই খালি গোশতো আর গোশতো। কেউ কেউ আবার রানধা গোশতো দিবার চায়। ঢাকার মাইনষে যে এইভাবে গোশতো দেয় ফুলির মা না কইলে কেমনে জানতাম? মনে মনে ফুলির মাকে একটা ধন্যবাদ দেয় খোরশেদ মিঞা। আবার নিজেকে এই বলে প্রবোদ দেয়Ñ আমার পোলা মন্টু ঢাকায় থাকবো না তো কোই থাকবো? পারডাকুয়ায় কী জন্য যাবে মন্টু? না খাইয়া মরতে? আমাগো খোঁজ না করুক, পোলা মোর খাইয়া পইরা তো ভালো আছে। থাকুক, মন্টু ঢাকায়ই থাকুক।কোরবানীর ঈদের পরদিন দুপুর পর্যন্ত গোশতো সংগ্রহের অভিযান শেষে খোরশেদ মিঞা যখন দেখলেনÑ এত্তো গোশতো সে কোথায় রাখে! তখন মন্টুর কথা তার বারবার মনে পড়েছিল। এমন কি আজ সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে গলাচিপার লঞ্চে ওঠার সময়ও খোরশেদ মিঞার বুকটা মন্টুর জন্যে বারবার ঢিবঢিব করেছিল। ‘এমভি আসা-যাওয়া’র দোতলায় কেবিনের সামনের খোলা জায়গায় গোশতোর বাকশো রাখার পর লঞ্চ যতোক্ষণ না বুড়িগঙ্গার চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ছাড়ালো ততোক্ষণ খোরশেদ মিঞার বারবার শুধু মন্টুর কথাই মনে পড়েছিল। মন্টু তুইও আমারে ভুইলা গ্যালি, এইভাবে... হারাম খোর। সালেহার প্যাট পোছা অতি আদরের ধন, আমার কলিজার টুকরা। হারামীর পো, তুই আমারেও ভুইলা গেলি...ধীরে ধীরে চাঁদের বুকে কুয়াশার মতো খণ্ড খণ্ড মেঘ জমে জমে যেনো পাহাড় বানাচ্ছিল। বাতাসের ঝাপটাও একটু বাড়ছিল। কেমন থেমে থেমে ঠাণ্ডা শীতল বাতাস বারবার হামলা করছিল। খোরশেদ মিঞার আবার তখন বাড়ির কথা মনে পড়লো। আমেনারা ঈদের দিনেই আসার কথা। মোমেনা খবর পাইলে আইজ আইবো। মর্জিনারে নিজে গিয়া গোশতো দিয়া আসমু। খোদা এইবার মর্জিনার যেনো একটা পোলা হয়। আল্লাহ তোমার কাছে হাজার শুকুর। ওর কপালডা সালেহার মতোন। পরপর পাঁচ মাইয়া মর্জিনার। আল্লাহ মর্জিনারে এইবার একটা ছাওয়াল দিও। কুলসুমরা আসবে না। ওগো আল্লাহ ভালো রাখছে। জরিনাগো কেমনে পাঠামু গোশতো? সালেহারে যেভাবে সব কইছি ঠিকমতো সব জোগাড় করতে পারছে তো? কতো দিন পরে সক্কলে মিল্লা গোশতো খামু। আল্লাহরে অনেক শুকরিয়া। মন্টু, তুই মানুষ অইলি না। পোলা মাইয়ার মুখ দেহোনেরও তোর সময় হয় না। পাণ্ডার পো গুণ্ডা কোথাকার?এমনি দুনিয়ার সকল কথাই মনে পড়তে থাকে খোরশেদ মিঞার। ছোট্ট জীবনের অনেক ঘটনা। অনেক ঘটনার সঙ্গেই ছোট্ট এই জীবন জড়িত। খোরশেদ মিঞার কাছে কোনোটাই ফেলনা না। সকল ঘটনাই আজ আবার নতুন করে মনে পড়ছে তাঁর। খোলা আকাশের মিটমিট তারার মতো জীবনের ফেলে আসা সকল টুকরো টুকরো ঘটনাই আবার নতুন করে জ্বল জ্বল করছে খোরশেদ মিঞার সামনে। কতো দরিয়ার পানি যে এতোদিনে কোথায় কোথায় গড়ালো। অথচ খোরশেদ মিঞার জীবনে সেই কঠিন দুঃখের সাগর কখনোই ফুরালো না। আকাশের দিকে তাকিয়ে খোরশেদ মিঞা আল্লাহর কাছে নালিশ দেয়। খোরশেদ মিঞা কী সত্যি সত্যিই আজ বড় ক্লান্ত? খোরশেদ মিঞা কী ঘুমিয়ে পড়েছেন? খোরশেদ মিঞা কী জেগে আছেন? খোরশেদ মিঞা কী এখনো নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছেন?‘এমভি আসা-যাওয়া’ তখন চাঁদপুর থেকে ফুল স্পিডে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছিল। খোরশেদ মিঞার মাথার পাশে বাকশো ভরতি কোরবানীর গোশতো। লঞ্চে যাত্রী মাত্র গুটিকয়েক। ঢাকা থেকে ঈদের পরে এই সময়টায় যাত্রী হয় না। সবাই ফিরতি পথে বেশি যাত্রী পায়। ফুল স্পিডে ‘এমভি আসা-যাওয়া’। কোনো মতে গলাচিপা পৌঁছাতে পারলে ফিরতি পথে লঞ্চ বোঝাই যাত্রী মিলবে। ঢাকা থেকে যারা বাড়িতে গিয়েছিল কোরবানীর ঈদ করতে তারা আবার ঢাকায় ফিরবে। কেবিনগুলো প্রায় সবই ফাঁকা আর তালাবন্ধ। কয়েকটায় কয়েকজন মাত্র যাত্রী। যারা ঈদের আগে যেতে পারেননি তাঁরা এখন যাচ্ছেন। গোটা লঞ্চের ডেক মোটামুটি বোঝাই। যাত্রীরা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। কোরবানীর ঈদের গোশতো সংগ্রহ করতে এরাই ঈদের আগে ঢাকায় এসেছিল। এখন ঈদ শেষ। এরাই গোশতো সংগ্রহ শেষ করে আপনজনদের জন্যে কোরবানীর গোশতো নিয়ে এখন বাড়ি যাচ্ছে। বড় আশা নিয়ে এরা সবাই গোশতো নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে। সবার মধ্যেই আত্মীয়স্বজন আপনজনদের নিয়ে একসঙ্গে গোশতো খাবার ভারী আকাঙ্খা। সবার মধ্যেই অনেক দিন পরে গোশতো খাবার অনেক স্বপ্ন। মানুষগুলো স্বপ্ন দেখতে দেখতে কী এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো? ডেক, মেঝে, পাতাটন সবখানেই যে যেভাবে পেরেছে গোশতোর বাকশো রেখে তার পাশেই ঘুমিয়েছে।এসময় ঢাকামুখী লঞ্চগুলো আবার অনেকটাই যাত্রী বোঝাই। দু’একটা লঞ্চ ‘এমভি আসা-যাওয়া’কে অতিক্রমের সময় বোঝা যায় ঢাকাগামী লঞ্চ পুরোপুরি যাত্রী বোঝাই। সবাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ শেষে আবার কর্মস্থল ঢাকায় ফেরত যাচ্ছেন। সবাই ঈদের আনন্দের তাজা স্মৃতি নিয়ে ফিরছেন। এইতো জীবন। আসা আর যাওয়া। কখনো ঢাকা থেকে বাড়ি। কখনো বাড়ি থেকে ঢাকা। কোথায় এই ছোট্ট জীবনের অবসর?তখন মধ্যরাত্রি। তখন দুর্বোদ্ধ আকাশ। তখন নির্বাক বোবা জোসনায় ঢাকা রাতের মেঘনা নদী। তখন রহস্যময় কুয়াশায় ঘেরা মেঘনার তীর। তখন নিশ্চিন্তে ঘুমের রাজ্যে শান্ত প্রকৃতি। দুঃখ জরা ক্লান্তিতে অভুক্ত মানুষগুলো তখনো ‘এমভি আসা-যাওয়ায়’ ঘুমিয়ে। পাশে ছড়ানো ছিটানো গোশতোর বাকশো। কোরবানীর পবিত্র গোশতো। বরিশালের হিজলা উপজেলার কাইছমা চর এলাকায় মেঘনা নদীতে তখন পৃথিবীর অসুখ। বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিলাসবহুল লঞ্চ ‘এমভি সাত্তার খান’ তখন ঢাকা থেকে গলাচিপামুখী লঞ্চ ‘এমভি আসা-যাওয়া’র মুখোমুখী। শুধু কী মুখোমুখী? কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ সেই গগণ বিদারী সংঘর্ষ। তারপর পৃথিবী জেগে উঠলো। মেঘনা নদী জেগে উঠলো। ঘুমন্ত স্বপ্ন দেখা মানুষগুলো কেউ কেউ জেগে উঠলো। কেউ কেউ কী জাগতে পেরেছিল আর? আকাশ ফেঁটে তখন জীবনের চিৎকার। নদীতে তখন মৃত্যুর উথাল পাতাল ঢেউ। চাঁদ তখন নির্বাক মুখ লুকালো ধেয়ে আসা দক্ষিণা কালিয়া মেঘের ভাসানো ডালার আড়ালে। তারপর চারদিকে শুধু খবর আর খবর। লাশের খবর।মাঝরাতের ওই লঞ্চ সংঘর্ষের ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর সংবাদ মিডিয়ায় প্রচার পায় পরদিন। ‘এমভি সাত্তার খান’ আর ‘এমভি আসা-যাওয়া’র সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৩৫ জন। ৮৯ জন লঞ্চযাত্রী চরমভাবে আহত। অনেক যাত্রী নিখোঁজ বলে ধারণা করা হয়। নিহতের মধ্যে ১২ জন মহিলা ও ৪ জন শিশু। শুধু খোরশেদ মিঞার খবর কেউ বলতে পারলো না।ওদিকে সালেহা বেগমের মশলা বাটা শেষ। আমেনা আর মোমেনা আগেই বাবার বাড়িতে এসেছিল। কারা যেনো টেলিভিশনের খবরে লঞ্চ দুর্ঘটনার খবর শুনলো। টেলিভিশনের খবর শুনে কে বা কারা যেনো সালেহা বেগমকেও খবরটা পৌঁছালো। পারডাকুয়া গ্রামের যে যেখানে ছিল, যেভাবে ছিল, যে ড্রেসে ছিল সেই অবস্থা থেকেই সবাই গলাচিপা লঞ্চঘাটের দিকে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটলো। মন্টুর মা সালেহা বেগমও লঞ্চ দুর্ঘটনার খবর শোনামাত্র যেভাবে পারলো গলাচিপা লঞ্চঘাটে ছুটলো। পিছন পিছন আমেনা, মোমেনা, তাদের ছেলেমেয়েরা ছুটলো। পারডাকুয়া গ্রামের অনেকেই এবছর কোরবানীর গোশতো সংগ্রহ করতে ঢাকায় গিয়েছিল। টেলিভেশনের খবর শোনার পর মুহূর্তে গোটা পারডাকুয়া গ্রাম গলাচিপা লঞ্চঘাটে যেনো আছড়ে পরলো। পারডাকুয়া গ্রামের স্বজনদের আহাজারীতে তখন গলাচিপা লঞ্চঘাটে শোকের বন্যা। কেউ কারো খবর জানে না। কার ভাগ্যে কী ঘটেছে কেউ জানে না। কোরবানীর গোশতো খাবার ইচ্ছে তাদের তখন কোথায় উড়ে গেছে কেউ বলতে পারে না। অন্য অনেক আগন্তুকের সাথে তখন মন্টুর মা সালেহা বেগম, মন্টুর বড় বোন আমেনা, সেজো বোন মোমেনারা অসহায় অপেক্ষা করতে থাকে। বুকে তাদের মন্টুর বাবা খোরশেদ মিঞার জন্যে গভীর উৎকণ্ঠা।ওই দিন রাতেই খোরশেদ মিঞার মেজো মেয়ে মর্জিনার হঠাৎ প্রসব ব্যথা ওঠে। জরুরী অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় গলাচিপা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ডাক্তাররা রোগীর সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলো না। শেষ রাতে ডাক্তাররা রোগীকে বাঁচাতে অপারেশান করতে বাধ্য হলেন। মর্জিনার পেট কেটে ডাক্তাররা যা বের করেলো তা দেখতে অনেকটা কাঁচা লাল লাল থোঁক থোঁক মাংস। নাকী খোরশেদ মিঞার ঢাকায় কুড়ানো সেই কোরবানীর গোশতো? যা সে চা-পাতা মিশিয়ে অর্ধসিদ্ধ করে বাকশো বন্দি করে ‘এমভি আসা-যাওয়া’ লঞ্চের দোতলা কেবিনের খোলা জায়গায় রেখে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন? সেই কুড়ানো গোশতের সঙ্গে মর্জিনার পেট কেটে বের করা মাংসের মধ্যে কী কোনোই তফাৎ আছে? সেই দুর্বোদ্ধ লাল লাল মাংস দেখার জন্যে তখন গলাচিপা হাসপাতালে উৎসুক জনতার আরেকটা ঢল নামে। কোরবানীর গোশতো খাবার কথা কেউ আর মনে করে না।.........................২৭ জুন ২০০৪কাঁঠালবাগান, ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
false
rg
প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মুখতার আহমেদ মৃধার উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই!!! ঝিনাইদহের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষানুরাগী মুখতার আহমেদ মৃধার উপর যে নির্মম হামলা হয়েছে তা একুশ শতকের বাংলাদেশের আরো একটি বর্বরতার দৃষ্টান্ত। মুখতার আহমেদ মৃধার উপর কেন এই নৃশংস হামলা? কী অপরাধ করেছেন মুখতার আহমদ মৃধা? সম্প্রতি শৈলকুপা উপজেলার রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে ছয় কোটি টাকার চারটি দরপত্র আহ্বান করেছিল এলজিইডি। প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মুখতার আহমেদ মৃধা ১৭ অক্টোবর অনলাইনে দরপত্র জমা দেন। দরপত্র যাচাই ও বাছাই শেষে ১৮ অক্টোবর বিভিন্ন শর্ত পূরণ করায় ও সর্বনিম্ন দরপত্র হওয়ায় তিনি ছয় কোটি টাকার কাজটি পান। কাজটি না পেয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ ক্ষুব্ধ হয়ে মুখতার আহমেদ মৃধাকে প্রথমে মুঠোফোনে মারধর ও হত্যা করার হুমকি দেয়। পরে ওই একই দিন (১৮ অক্টোবর ২০১৬) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে মুখতার আহমেদ মৃধার উপর তারা ওই বর্বর হামলা চালায়। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটের সামনে জাকির মেডিকেল নামে একটি ওষুধের দোকানে প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মুখতার আহমেদ মৃধার উপর নিজ দলের প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপের একদল সন্ত্রাসী লোহার রড, হাতুড়ি, চাপাতি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই বর্বর হামলা চালায়। পাশে বসা তাঁর ছেলে গোলাম মুর্শিদ এগিয়ে গেলে তাঁকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। পুরো ঘটনা জাকির মেডিকেল ওষুধের দোকানের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। মুখতার আহমেদ মৃধার আরেক ছেলে সুমন মৃধা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তারপর সেই ভিডিওটি স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।মুখতার আহমেদ মৃধার ছেলে সুমন মৃধা ওই ঘটনায় বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে শৈলকুপা থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। কিন্তু মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও মামলার বাদীকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। অথচ শুরুতে এজাহারভুক্ত আসামি আশরাফুলকে গ্রেফতার করলেও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে তেমন তৎপর নয় পুলিশ। মুখতার আহমেদ মৃধা'র উপর হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের এত অনীহা কেন? নাকি হামলাকারীরাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে পুলিশ এত খাতির করছে? হামলার ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ থাকা স্বত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আসামী ধরতে সক্রিয় নয় কেন? এমন নৃশংস হামলার ঘটনার সুস্পষ্ট প্রমাণপত্র থাকা স্বত্ত্বেও হামলাকারীরা আদালত থেকে জামিন পায় কীভাবে? শৈলকুপার এই ঘটনায় গোটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে কী বার্তা গেল? বাংলাদেশের সংবিধানে আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মুখতার আহমেদ মৃধা'র উপর হামলাকারীদের পেছনে শক্তিশালী কারোর রাজনৈতিক সমর্থন থাকায় হামলাকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে! তাহলে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষ আস্থা রাখবে কীভাবে? মুখতার আহমেদ মৃধার প্রথম অপরাধ- ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরে মঞ্জুরের নেতৃত্বে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন! মুখতার আহমেদ মৃধার দ্বিতীয় অপরাধ- একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যুদ্ধের ৪৫ বছর পরেও এখনো তিনি এই অসভ্য দেশে বেঁচে আছেন! মুখতার আহমেদ মৃধার তৃতীয় অপরাধ- মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের তিনি দীর্ঘদিনের একজন পরীক্ষিত সৈনিক। মুখতার আহমেদ মৃধার চতুর্থ অপরাধ- তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শৈলকুপা উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক। মুখতার আহমেদ মৃধার পঞ্চম অপরাধ- তিনি শৈলকুপার একজন শিক্ষানুরাগী ও যমুনা শিকাদার কলেজসহ ওই এলাকার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। মুখতার আহমেদ মৃধার ষষ্ঠ অপরাধ- তিনি শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। মুখতার আহমেদ মৃধার সপ্তম অপরাধ- শৈলকুপা উপজেলার রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে অনলাইনে দরপত্র জমা দিয়ে এলজিইডি'র বিভিন্ন শর্ত পূরণ ও সর্বনিম্ন দরপত্র জমা দেওয়ার কারণে তিনি ছয় কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন। এই সপ্তম দোষে দুষ্টতার কারণে প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মুখতার আহমেদ মৃধাকে তাঁর নিজের দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ ওই নির্মম নৃশংস ও বর্বর হামলা করেছে। কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ? আমরা কী এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? মুখতার আহমেদ মৃধা কী এই বাংলাদেশের জন্য একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলেন? এ কোন অসভ্য বর্বর দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ? বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে মুখতার আহমেদ মৃধার এক ছেলে গোলাম মুর্শিদ ওই বর্বর হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। মুখতার আহমেদ মৃধার অপর ছেলে এবং ওই হামলায় করা মামলার বাদী সুমন মৃধাকে হামলাকারীরা এখন বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। হামলাকারীরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাহলে কী এই বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য মুখতার আহমেদ মৃধারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন?মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষানুরাগী মুখতার আহমেদ মৃধার উপর এই হামলা প্রকৃতপক্ষে একাত্তরে যুদ্ধ করা প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার উপর হামলার সমান। এই হামলাকারীরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কেউ নয়, বরং এই হামলাকারীরা বিগত ৪৫ বছরে দেশে দুর্বৃত্ত ও নষ্ট রাজনীতির চর্চা ও অনুশীলনের সুযোগে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আশ্রয় ও প্রশ্রয় পাওয়া নব্য সন্ত্রাসীদের স্বার্থ সংক্রান্ত হামলা। যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ লুটপাট, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দখল, জ্বালাও-পোড়াও করে আওয়ামী লীগার সেজে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। এই হামলাকারীরা যদি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও কেউ হয়, আইনের দৃষ্টিতে তারা এই বর্বর হামলার জন্য দায়ী!মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, আপনি বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যা কন্যা। বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষেরই আপনি প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে সংঘটিত যে কোনো আইন বহির্ভুত ঘটনায় দোষীদের দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে তাদের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি দেওয়ার দায়িত্বও আপনার। হামলাকারীরা যদি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকও হয়, এই দায় আপনি কিছুতেই এড়াতে পারেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, হয় আপনি ঝিনাইদহের শৈলকুপার ওই নৃশংস ঘটনায় হামলাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা করেন। নতুবা বাংলাদেশে জীবিত ও মৃত সকল মুক্তিযোদ্ধার সম্মান, ভাতা ও সুযোগসুবিধা বাতিল করুন। সকল মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট বাতিল করুন। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ও বাংলাদেশের সবচেয়ে গর্বিত ও সম্মানিত নাগরিক। তাঁদের উপর যে কোনো ধরনের হামলা, অসম্মান, অসৌজন্যতা, কটাক্ষ, টিটকারী কার্যত বাংলাদেশের পতাকার উপর হামলার সমান। যা আমাদের মত দেশের সাধারণ নাগরিকরা যেমন মেনে নিতে পারছে না, আপনার পক্ষেও মেনে নেবার প্রশ্নই ওঠে না। সন্ত্রাসীদের প্রকৃতপক্ষে কোনো দল নেই। তারা ক্ষমতাসীন দলের উপর ভর করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মুখতার আহমেদ মৃধার উপর হামলাকারীদের আপনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। জয়তু মুক্তিযোদ্ধা, জয়তু বাংলাদেশ।.................................৯ নভেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৪০
false
rn
আমার জুম চাষ করা হলো না 'হিলেল্লা মিলেবো জুমত যায় দে, জুমত যায় দে, যাদে যাদে পধত্তুন পিছ্যা ফিরি রিনি চায়, শস্য ফুলুন দেঘিনে বুক্কো তার জুড়ায়...' এটি চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় একটি গান। এ গানের বাংলা অর্থ হল, 'পাহাড়ি মেয়েটি জুমে যায় রে, জুমে যায় রে, যেতে যেতে পথে পিছন ফিরে চায়, পাকা শস্য দেখে তার বুকটা জুড়ায়।' জুম ক্ষেতেভরা সবুজ পাহাড় দেখে জুম ঘরের মাচায় বসে গানের সুর সুরে মেতে ওঠে তরুণ-তরুণীরা। দীর্ঘদিন ধরে- বেকার, চাকরী-বাকরী নাই। এদিকে, সুরভি'র বাবা তার মেয়েকে বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিবে না। নো, নেভার। সুরভি'র সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল, তিন মাস। মন মেজাজ চরম বিক্ষিপ্ত অবস্থায় সিদ্দান্ত নিলাম। ঢাকা শহরে আর থাকব না। ঢাকা শহরের প্রতিটা মানুষ বদমাইশ। আমি পাহাড়ে চলে যাব, জুমচাষ করব। জুম চাষ নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা শুরু করে দিলাম। ২০ অথবা ৩০ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে সুন্দর দেখে একটা পাহাড় লিজ নিব। তারপর মনের আনন্দে চাষাবাদ শুরু করব। আমি বান্দারবান গিয়ে খুব সুন্দর বড় একটা পাহাড় বেছে নিলাম। পাহাড়ে উপর একটা সুন্দর কাঠের দোতলা বাড়ি বানাবো। বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকব। ব্যস। আমার পক্ষ থেকে সব ঠিকঠাক। কিন্তু সরকার আমাকে পাহাড় দেয়নি বরং সন্দেহ করলো। নানান রকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো। আমি দৌড়ে পালালাম। জুম চাষ আমাদের দেশে পাহাড়ি আদিবাসীদের এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্য । যারা জুম চাষ করেন তাদের বলা হয়- জুমিয়া । পাহাড়ের কোনো মালিকানা নেই কিন্তু প্রত্যেক জুমচাষিকে কারবারির মাধ্যমে খাজনা দিতে হয় । জুম চাষে কোনো সেচের প্রয়োজন হয় না । জুমে ধান, সবজি, ফল, আদা, হলুদ ইত্যাদি চাষ করা যায় । ১০ সের বীজ বুনতে এক একর জমি লাগে । ১৮৭০ সালের আগে পার্বত্য চট্রগ্রামে প্রায় ৭ হাজার বর্গমাইল জমিতে জুম করা হতো । জুমিয়ারা অনেক পরিশ্রমী । জুমিয়ারা ভোরে জুমে কাজ করতে চলে যায় । পাহাড়ি আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- তারা কুসংস্কার, ভূতপ্রেত ও জাদুটোনা খুব বিশ্বাস করে । আগে জুমে কোনো সার দিতে হতো না । এখন মাটির শক্তি বেশ কমে গেছে । জুম চাষে মারাত্নক সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে ভূমি সমস্যা। প্রথাভিত্তিক ভূমি মালিকানার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না থাকায় শত শত বছর জুম চাষ করলেও জুমভূমির মালিকানা স্বত্ব আদিবাসীরা পাচ্ছে না। ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমির দেশে কোন অবস্থাতেই জুম চাষ বন্ধ করা সমীচীন নয়। দেশের স্বার্থে জুম চাষ রক্ষা ও এর আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এজন্য দরকার সরকারি প্রণোদনা। জুম চাষ অবশ্যই একটি সম্ভাবনাময় কৃষি খাত। এ পর্যন্ত জুম চাষ অবহেলিতই থেকে গেল। সরকারি সহায়তা পাওয়া গেলে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের জুমে উৎপাদিত মশলাপণ্য বিশেষ করে আদা, হলুদ, মরিচ সারাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। কিন্তু এ সম্ভাবনাকে কাজে না লাগিয়ে বিদেশ থেকেই এসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে কার স্বার্থে? ছবিঃ সংগ্রহ। আমার তোলা অনেক জুম চাষের ছবি আছে। কিন্তু সেসব ছবি অন্য একটা কম্পিউটারে। সেই কম্পিউটার আজ ছয় মাস ধরে নষ্ট হয়ে পরে আছে। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:৩৯
false
rn
মৃত্যুর আগে যে ১০০ টি মুভি আপনাকে দেখতে হবে (পাঁচ) ৪১। মাইন্ডহান্টারস (MindHunters) জন এজেন্টকে ট্রেনিং এর জন্য এফ.বি.আই একটি জনমানব শুন্য দ্বিপ এ পাঠায় । তবে সেখানে একটি নির্দিস্ট সময় পর পর একজন করে এজেন্ট খুন হতে থাকে। খুনি কে? তাদের মধ্যে কেউ নাকি এখানে কেউ আগে থেকেই আছে। মুভিতে আপনার যাকে খুনি মনে হবে দেখা যাবে একটু পর সেই খুন হয়ে গেছে। মুভি টা তাই শেষ করেও আরো একবার দেখতে হতে পারে। অসাধারন একটা ক্রাইম থ্রিলার।৪২। এলিয়েন (Alien) ‘এলিয়েন’ মূলত সায়েন্স ফিকশনধর্মী হলেও কাহিনীর জন্য এটিকে ‘সায়েন্স ফিকশন হরর ফিল্ম’ বলা হয়। সর্বকালের সেরা সায়েন্স ফিকশনের তালিকায় স্থান করে নেওয়া সিনেমা ‘এলিয়েন’ নির্মিত হয়েছে সুদূর ভবিষ্যতের কল্পকাহিনী নিয়ে ; একটি বাণিজ্যিক স্পেসশিপ ‘থিডাস’ গ্রহ থেকে কয়েক টন খনিজ পদার্থ নিয়ে রওনা দেয় পৃথিবীর উদ্দেশ্যে। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী একটি সৌরমণ্ডল থেকে তাদের রাডারে অপরিচিত অদ্ভুত বার্তা ধরা পড়ে। তখন স্পেসশিপটিকে পৃথিবী থেকে নির্দেশ পাঠানো হয় ঐ সৌরমণ্ডলে অবতরণ করার জন্য। আর ওখানে অবতরণ করার পর থেকে শুরু হয় একের পর এক ঘটনা। ‘এলিয়েন’ ছিল সত্তর দশকের অন্যতম সেরা ‘স্পেশাল ইফেক্ট’ সম্বলিত সিনেমা। ৪৩। দি রিডার (The Reader) কেন উইনস্লেট একজন মধ্যবয়সী নারী। জার্মানিতে ট্রাম কন্ডাক্টার। ১৬ বছরের মাইকেল তার প্রেমে পড়ে। শারিরীক প্রেম। ছবির প্রথম আধাঘণ্টা খালি দুইজনের প্রেম। মানে খালি কাপড় খোলাখুলি। কেট এই ব্যাপারে বেশ দ অনেকদিন ধরেই। কিন্তু মন খারাপ করার উপাদানও রয়েছে। বাঙ্গালীর প্রথম কেট দর্শন টাইটানিকের মাধ্যমে। দি রিডার মুভিটির কাহিনী নেয়া হয়েছে জনপ্রিয় উপন্যাস দি রিডার থেকে। এ উপন্যাসটির লেখক জার্মান আইন বিষয়ক অধ্যাপক এবং বিচারক বেনহার্ড শলিঙ্ক। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। মুভিটির কাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও এর পরবর্তী সময়কে ঘিরে। ১৯৫৮ সালে পনের বছরের এক স্কুল বালক মাইকেল বার্গ। ঘটনাক্রমে মাইকেল প্রেমে পড়ে যায় ৩৬ বছর বয়সী এক ট্রাম কন্ডাক্টর হান্নার। মাইকেল প্রায় প্রতিদিনই হান্নার কাছে যায় । অক্ষরজ্ঞানহীন হান্নাকে বিভিন্ন উপন্যাস পড়ে শোনায় সে। এর মধ্যে আছে দি ওডেসি, দি লেডি উইথ দি লিটল ডগ, দি হাকলবেরি ফিন ইত্যাদি। কিন্তু হঠাৎ একদিন হারিয়ে যায় হান্না।সিনেমাটিতে যৌনতার ব্যবহার গল্পের উদ্দেশ্য ব্যহত করেছে। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্কের সাথে মিলনের দৃশ্যগুলো বিস্তারিত দেখাবার খুব প্রয়োজন ছিল না।৪৪। লিভিং লাস ভেগাস (Leaving Las Vegas) এই ছবি বার বার দেখা যায় কেবলমাত্র নিকোলাস কেজের জন্য। অসাধারণ অভিনয়। মুভিতেও নায়ক সারাক্ষন মদ খেতে থাকে। কেন? এর উত্তর কখনোই পাওয়া যায়না। এবং সবচে বড় সার্থকতা হোল, পুরো সিনেমায় এই প্রশ্নটাই কখনো উঠেনি। যেন নায়কের মদ খাওয়াটাই স্বাভাবিক। ৪৫। দ্য গার্ল নেক্সট ডোর (The girl next door) মুভির কাহিনী গড়ে উঠেছে ম্যাথু কিডম্যান নামের এক তরুনকে নিয়ে।হাইস্কুলের এই মেধাবী তরুনের স্বপ্ন পলিটিশিয়ান হওয়া।স্কলারশিপ নিয়ে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।কিন্তু এরই মধ্যে তার পাশের বাসায় এক সুন্দরী মেয়ের আগমন হয়।তারপর যাকে বলে প্রথম দেখাতেই প্রেম।স্কুল বাদ দিয়ে তাকে নিয়েই ডেটিং।কিন্তু এরই মাঝে পাল্টে যায় সব কিছু যখন সে জানতে পারে তার প্রেমিকা আসলে একজন পর্নস্টার ছিল।কিন্তু পরবর্তীতে ম্যাথু বুঝতে পারে আসলে দানিয়েলকে (তরুণীর নাম) সে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসে।তার পর্নস্টার পরিচয় এর জন্য কোনো বাধা নয়।কিন্তু দানিয়েল এখন আর ম্যাথুর সাথে থাকতে চায় না।তার কাছে মনে হয় ম্যাথু তার এই পরিচয় জানার পর শুধুই তাকে দৈহিক ভাবে কামনা করে।৪৬। ওল্ডবয় (Oldboy) ১৫ বছর একজন মানুষকে অকারনে বন্দী ও নির্যাতন করার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয় একটি মাত্র শর্তে যে ৫ দিনের মধ্যে তাকে তার বন্দীকর্তাকে খুঁজে বের করতে হবে।প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে মানুষ কতটা নির্মম হয়ে অমানবিক কাজ করতে পারে এই ছবিটি তারই একটি উদাহরণ।৪৭। প্রিজনারস (Prisoners) গল্পের শুরুটা কেলার ডোভের এবং ফ্রাঙ্কলিন বার্চ পরিবারকে নিয়ে। থ্যাংকস গিভিংডেতে প্রতিবেশী ফ্রাঙ্কলিন বার্চ এর বাসাতে দাওয়াত খেতে যান ডোভের পরিবার। পরিবার বলতে তার কিশোর ছেলে আর ছোট মেয়ে এবং তার পত্নী। ফ্রাঙ্কলিন পরিবার ও বেশী বড় নয় তার মেয়ে দুটি কেলারের ছেলে মেয়ের প্রায় সমবয়সী। খাওয়া শেষে দুই পরিবারের বড় সদস্যরা গল্প গুজবে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন তখন কেলারের ছোট মেয়েটি তার সমবয়সী মেয়েটিকে নিয়ে তাদের বাসায় যেতে চান। আড্ডায় ব্যাস্ত থাকা কেলার, মেয়েকে তার ভাইকে সাথে করে নিয়ে যেতে বলেন। ১৫৩ মিনিটের এই ছবিটিতে সবচেয়ে যেটির প্রশংসা করতে হবে তাহলো ক্যামেরার অসাধারণ কাজ। ৪৮। এল এ কনফিডেনশিয়াল (L. A. Confidential) মুভির কাহিনী লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে ঘিরে আবর্তিত হলেও বার বার ঘুরে ফিরে সামনে এসেছে তিনজন পুলিশ চরিত্র। মুভির কাহিনী গড়াতে থাকে “নাইট আউল” কফিশপের ম্যাস মার্ডারকে কেন্দ্র করে। রসহ্য উন্মোচনে তদন্ত শুরু হলে কাহিনী মোড় নেয় নানা দিকে। কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসে, মনে হয় লস অ্যাঞ্জেলেসের খুন, মাদকব্যবসা, প্রতিতাবৃত্তি সহ অপরাধগুলো একে অপরের সাথে মাকড়শার জালে আবদ্ধ, এবং কেউ একজন বিরাট মাকড়শা হয়ে সুতায় টান দিচ্ছে একটা একটা করে। কে সে?৪৯। দ্যা ইনটোক্রেব্লেস (The Intouchables) ফ্লিপ একজন Tetraplegic পেসেন্ট। বেশ ধনী ব্যক্তি। স্ত্রী ছিল মারা গেছেন। তার কোনো সন্তান নেই। তাই সে একটি মেয়েকে দত্তক নেন। Tetraplegic কে বলতে গেলে পেরালাইসিস-ই বলা চলে। হাত পা নারাতে পারেন না। শুধু মাত্র মাথার অংশে তাঁর সেন্সেসন আছে। পুরো শরীর অচল। ব্রেন কন্ট্রোল্ড একটা হুইল চেয়ারই তাঁর চলা ফেরার এক মাত্র ব্যবস্থা। তো তাঁকে দেখা শুনা করার জন্য একজন লোককে তিনি ঠিক করতে চান।। তাঁর ঠিক করা লোকটি হয়ে যান Driss. Driss এর জীবনটাও বেশ কমপ্লিকেটেড। তাঁর মা-বাবা নেই। আংকেল আর আন্টির কাছে বড় হয় সে। তাঁর আরও বেশ কয়েকটি ভাই বোন আছে। তাঁর আন্টি তাঁকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালবাসে। কিন্তু Driss ঘর থেকে না বলে চলে যেত। সত্য কাহিনী অবলম্বনে মুভি তৈরি করা হয়। ৫০। সিক্স সেভেন এইট (678) মিশরীয় মুভি। পরিচালক Mohamed Diab মুভিটিতে মিশরের রাস্তাঘাট, বাসে মেয়েদের যৌনহয়রানিকে তুলে ধরেছেন। ২০১০সালের এই মুভি অনেক বিতর্কের শিকার হলেও Dubai International Film Festivalএ সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছিল। সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত- এই তিন শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনটি প্রধান নারীচরিত্র। ফায়জা নিম্নবিত্ত রক্ষণশীল গৃহিণী ও অল্পবেতনের চাকরী করে। প্রতিদিন বাসে করে যায় অফিসে। বাসে নিয়মিত হয়রানির শিকার সে। কিন্তু বাস ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। প্রতিদিন বের হবার আগে সবচেয়ে কম আকর্ষণীয় ঢিলেঢালা পোশাক খোঁজে, হিজাব পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নিজেকে। তার এই পোশাক-আশাক কাউকে প্রলুব্ধ করবে কি গতদিনের মত? লাভ হয় না। দিন দিন আতংক বাড়ে মনে। স্বামী কাছে আসলেও আতংকে কুঁকড়ে যেত ফায়জা। নারীদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সেমিনারে যায়, টিভিতে প্রোগ্রাম দেখে। আবার একদিন নির্জন রাস্তায় একজন ফলো করে। ফায়জা পিছে ঘুরেই স্কার্ফের সেফটি পিন ঢুকিয়ে দেয় পুরুষাঙ্গ বরাবর এবং পালিয়ে যায়। ফায়জা ধরা না পড়লেও ঘটনা পুলিশের কানে যায়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে ফায়জাকে খুঁজে বের করার জন্য। মুভিটি দেখুন। মুভিটিতে অনেকগুলো দিক তুলে ধরা হয়েছে।হ্যাপি মুভি ওয়াচিং। ডেভিড লিনের মতো বলতে ইচ্ছা করে, আই স্পেন্ড মাই চাইল্ডহুড ইন এ মুভি হাউস।
false
ij
জলবায়ূর পরিবর্তনের ফলেই মাত্র ২০০ জনের ক্ষুদ্র একটি মানবগোষ্ঠী আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে বাঁয়ে আফ্রিকা। লোহিত সাগর। মাঝখানে আরব-উপদ্বীপ। এ পথেই আজ থেকে ৭০,০০০ বছর আগে আধুনিক মানুষ বা হোমো-সাপিয়ান্স ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। সম্প্রতি বি বি সি-র একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখিয়েছে যে-আজ থেকে ৭০,০০০ বছর আগে মাত্র ২০০ জনের আফ্রিকার ছোট একটি দল লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে আফ্রিকার বাইরে চলে গিয়েছিল। ঐ সময়টায় জলবায়ূর পরিবর্তনের ফলে লোহিত সমুদ্রে পানি নীচে নেমে গিয়েছিল-যার কারণে আফ্রিকার ঐ ক্ষুদ্র মানবগোষ্ঠীটি আরব উপদ্বীপে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল ; তারপর তাদের বংশধরই ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে । প্রামাণ্যচিত্রের উপস্থাপিকা ড. অ্যালিস রবার্টস ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশিষ্ট অ্যানাটমিষ্ট; তিনি বললেন, আধুনিক মানুষ জলবায়ূর পরির্বনের মুখোমুখি হয়েছিল আর সেই সঙ্গে ভাগ্য তাকে সহায়তা করেছিল বলেই এইরকম একটা উন্নতি সম্ভবপর হয়েছিল। তিনি বললেন, মানুষ প্রায়ই জিজ্ঞেস করে; ঠিক ঐ সময়েই কেন মানুষকে আফ্রিকা ছাড়তে পেরেছিল? তারা কি নতুন ধরনের জীবনপদ্ধতির বিকাশ ঘটিয়েছিল কিংবা নতুন কোনও গুন বা ক্ষমতা তারা অর্জন করেছিল? হ্যাঁ, কিছু যোগ্যতা তো ছিলই-যা ওদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু ঠিক ঐ সময়েই মানুষের আফ্রিকা ছাড়ার কারণ হল জলবায়ূর পরিবর্তন; আর ... ভাগ্য। আর্কেওলজিকাল ও জেনেটিক গবেষনা করেই তবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে আজকের দিনের ইউরোপ এশিয়া অষ্ট্রেলিয়া উত্তরামেরিকার এবং দক্ষিণ আমেরিকার মানুষের ডি এন এ আফ্রিকার একটি মাত্র গোত্র থেকেই উদ্ভূত! তিনি আরও বলেন-আজ থেকে ১৯৫,০০০ বছর আগে পূর্বআফ্রিকায় আধুনিক মানুষ বির্বতিত হয়েছে এবং ৫০ হাজার বছরের মধ্যে তারা আফ্রিকা মহাদেশের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এখন ধারনা করা হচ্ছে আজ থেকে ৭০,০০০ বছর আগে শুস্কতার জন্য লোহিত সাগরের পানি অনেক নীচে নেমে যায়; যার ফলে লোহিত সাগরের মোহনার দূরত্ব ১৮ মাইলের বদলে হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ মাইল। ২০০ জনের একটি ছোট গোত্র ঐ ৮ মাইল পেরিয়ে আরব-উপদ্বীপে ঢোকে। ড. রবার্টস বললেন, 'We all know about and face climate change at the moment but there have been massive climate changes in the past.' সংবাদসূত্র: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:৪৮
false
ij
ঢাকার আর্মেনিয়রা, তাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ___ আর্মানিটোলার গির্জা। ১৭৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত চার্চ অভ হোলি রেজারেকশন। যদ্দুর জানি, টোলা শব্দটি হিন্দি । আর্মানিটোলা মানে আর্মেনিয়রা যেখানে বাস করে। এককালে ধনাঢ্য ক্ষমতাশালী আর্মেনিয়রা বাস করত আর্মানিটোলায়। এখনও সেখানে নাকি ক'ঘর আর্মেনিয় বাস করে। তবে তারা এখন ক্ষমতাশূন্য। অথচ এককালে এদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতার ফলেই বাংলায় ইংরেজরা পাকাপোক্ত আসন পেয়েছিল। এককালে এরাই বাংলার অঢেল সম্পদ নিয়ে চলে গিয়েছিল ইরানে, মধ্য এশিয়ায়। গতকাল আর্মেনিয় গনহত্যা নিয়ে লিখেছি। লিখেছি তুর্কি সাহিত্যিক ওরহার পামুক সম্বন্ধে। লিখতে লিখতে বঙ্গদেশের সঙ্গে আর্মেনিয়দের যোগসূত্রের কথা ভাবছিলাম। ভাবছিলাম ঢাকার আর্মানিটোলার গির্জেটার কথা, র্গিজেটার ভিতরে অর্মেনিয়দের কবরখানাটার কথা ... ১ বিশ্বের মানচিত্রটা দেখলে দেখবেন-তুরস্কের ঠিক পুবের দেশটাই আর্মেনিয়া। আর্মেনিয়ার উত্তরে জর্জিয়া, পুবে আজারবাইজান এবং দক্ষিণে ইরান। ভৌগোলিক ভাবে অবশ্য আর্মেনিয়ার অবস্থান দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে। আর কখনও আর্মেনিয়ার মানচিত্রটা দেখলে দেখবেন মাঝখানে একটা হ্রদ। হ্রদ সেভান। কী সুন্দর নাম-সেভান। আর্মেনিয়ার রাজধানীর নামটও চমৎকার। ইরেভান। সচরাচর রাজধানী শহরের পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে যায়। ইরেভানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সে নদীর নাম? হরাজদান। (তত ভালো লাগল না হয়তো!) তো ইরেভান শহরটা সে দেশের পশ্চিমে। তুরস্কের সীমান্তের এত কাছে যে মাত্র ২৫ মাইল দূরে তুরস্কের পূর্বসীমান্ত।। এক সময় তো তুরস্কের অটোমানদের অধীন ছিল আর্মেনিয়া। যা হোক। ইরেভান শহর থেকে একটা পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়। সে পাহাড়ের নাম আরারাত। আরারাত পাহাড়ের কথা কেন তুললাম? মহাপ্লাবন শেষে নুহ নবীর আর্কটি নাকি ওই আরারাত পাহাড়েই ঠেকেছিল। এবার আর্মেনিয় শেকড়ের খোঁজখবর নিই। ঐতিহাসিকরা খুঁজেপেতে বার করেছেন যে-খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর আগে নাকি আর্মেনিয়দের পূর্বপুরুষরা বাস করত ঐ আরারাত পাহাড়েই। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে আর্মেনিয়দের প্রথম রাজাকে পাওয়া গেল। রাজার নাম টিগরানেস। তার সাম্রাজ্য নাকি ভূমধ্যসাগর অবধি ছড়িয়ে ছিল। তারপর এক সময়ে রোমান দখলে চলে যায় আর্মেনিয়া। এরপর আর্মেনিয়া শাসন করে পার্থিয়রা। পার্থিয়রা পারস্যও শাসন করত। এরপর পারস্যে সাসানিদরা ক্ষমতায় আসে। ফলত আর্মেনিয়াও সাসানিদদের অধীন হয়ে পড়ে। সে সময় আর্মেনিয়ার রাজা ছিলেন ৩য় টিরাইদেস। ইনি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন; হয়ে, খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ঘোষনা করেন। মনে রাখা দরকার, রোম নয়, বিশ্বের ইতিহাসে আর্মেনিয়াই প্রথম খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়েছিল। ৭ম শতকে আর্মেনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাইজানটান শাসন। এরপর আরবী অশ্বারোহীরা ঢুকে পড়ে আর্মেনিয়ায়। আর্মেনিয় অভিজাতদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করে আর্মেনিয় শাসক। তারপর থেকে আর্মেনিয় বাগরাতুনি রাজবংশ শাসন করে আর্মেনিয়া। তারা আরবদের কর দিত। এভাবে কার্যত স্বাধীনই ছিল আর্মেনিয়া। এর পর আবার কিছু সময়ের জন্য বাইজানটান শাসনের অধীন হয়ে পড়ে আর্মেনিয়া। একাদশ শতক। সেলজুক তুর্করা দখল করে দেশটা। ১৩ শতকে মঙ্গোলরা আক্রমন করে আর্মেনিয়া। ১৫ শতক অবধি অঞ্চলটা ওরাই শাসন করে। এর পর তুরস্কের অটোমানরা আর্মেনিয়া গ্রাস করে। পারস্যও আর্মেনিয়ার কিয়দংশ শাসন করত। পারস্যের সাফাভি বংশ ষোড়শ শতকে আর্মেনিয়া আক্রমন করলে অনেক আর্মেনিয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তাদেরই একদল নানাদেশ ঘুরে বাংলায় এসেছিল। ২ ষোড়শ শতকের শেষের দিকে কথা। বানিজ্যের সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে পারস্যে সরকারী ভাবে কিছু উদ্যেগ নেওয়া হয়। পারস্যের ইস্পাহানে গড়ে ওঠে বানিজ্যিকেন্দ্র। সেখানে ভাগ্যান্বেষী কিছু আর্মেনিয় পারসিক বানিজ্যিক সংস্থায় চাকরি নেয়। পারসিক ব্যবসায়ীরা বাংলায়ও এসেছিল। আর্মেনিয়া তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করেছিল। প্রথম প্রথম তারা পারসিক ব্যবসায়ীদের অধীন চাকরি করত। কালক্রমে, আর্মেনিয়রা বাংলায় তাদের নিজস্ব সম্প্রদায় গড়ে তোলে। বাংলার বানিজ্য-অর্থনীতিতে গভীর অবদান রাখে। ৩ সপ্তদশ শতকের প্রথম ভাগ থেকেই আর্মেনিয়রা বাংলায় ব্যবসা করত। সে সময়টায় বাংলার নগরে বন্দরে সবর্ত্রই আর্মেনিয়দের দেখা যেত। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যেত-লাভের আশা থাকলে, যেখানে অন্যরা যেত না। Through their commercial acumen, their knowledge of markets and products, their chain of connections with the producing and consuming centres maintained through their own agents who were more often than not their own family members or kinsmen, their low overhead cost and capacity to thrive on low profit margin, the Armenians could compete successfully with not only the Indian and other Asian merchants but also with the European East India Companies trading in Bengal. সে সময়টায় আর্মেনিয়রা যেমন ঢাকায় বাস করত। বাস করত কোলকাতায়ও। যেখানেই যেত র্গীজে তৈরি করত তারা। আজও কোলকাতায় গঙ্গার ধারে রয়েছে আর্মানিঘাট। এককালে ওই ঘাটেই আর্মেনিয়দের জাহাজ থেকে পন্য ওঠানাম করত। ৪ সপ্তদশ শতক। বাংলার নদী-উপকূলে তখন ইংরেজ বেনিয়াদের জাহাজ ভিড়ে আছে। বাংলায় তারা ব্যবসা করবে। সে জন্য স্থানীয় অংশীদার খুঁজছিল। ইংরেজদের ছিল পুঁজি ও ব্যবসায়িক দক্ষতা । এখন তাদের দরকার স্থানীয় ধনিক শ্রেণির সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ। আর্মেনিয়রা মধ্যস্থাকারীর ভূমিকায় এগিয়ে আসে। আর্মেনিয়দের ভাকিল (প্রতিনিধি? উকিল? অ্যাডভোকেট?) নিয়োগ করে ইংরেজরা। আর্মেনিয়রা ফারসি জানত। যথাযথ পারিশ্রমিক পেয়ে আর্মেনিয় ভাকিলরা মুগলদের দরবারে যায়। এবং সেখানে গিয়ে বলে যে কী উদ্দেশে ইংরেজরা হিন্দুস্থানে এসেছে। হ্যাঁ। ইংরেজদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা। কেননা, ইংল্যান্ডে তখন বুর্জোয়া বিপ্লব সম্পন্ন হচ্ছিল। তাদের বিশাল বাজার চাই, পন্যের জন্য বেশুমার কাঁচামাল চাই। সেজন্য চাই কলোনি । চাই কলোনিয়াল দালাল । ভাকিল আর্মেনিয়রা ছিল কলোনিয়াল দালাল। ৫ খোজাহ ফানোস কালানদার। ছিলেন প্রথমদিককার ঢাকার ধানাঢ্য আর্মেনিয় ব্যবসায়ী। ইনি ইউরোপীয়দের সঙ্গে ব্যবসা করতেন। ১৬৮৮। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি করেন কালানদার। চুক্তি অনুযায়ী কালানদার ও তার লোকেরা ইংরেজদের জাহাজ ব্যবহার করতে পারত। কালানদার-এর ভাতিজার নাম ছিল খোজাহ ইসরাইল সারহান্দ। ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দ । বাংলার সুবেদার তখন আজিম উস শান। খোজাহ ইসরাইল সারহান্দ বড় ঝানু লোক ছিল। কোলকাতার সে ইংরেজদের জমিদারি পাইয়ে দিয়েছিলেন । ইংরেজরা বাংলার জমির জন্য হন্যে হয়ে উঠেছিল। কেননা, আগেই বলেছি আমি, ইংল্যান্ডে তখন বুর্জোয়া বিপ্লব সম্পন্ন হচ্ছে। বাজার চাই, পন্যের জন্য কাঁচামাল চাই। সেজন্য কলোনি চাই। কলোনিয়াল দালাল চাই। আর্মেনিয়রা ছিল কলোনিয়াল দালাল। আজ আমরা কলোনিয়াল দালালদের চিনে নিতে চাই। খোজাহ ইসরাইল সারহান্দ ছিল অন্যতম কলোনিয়াল দালাল। বাংলা এই সব আর্মেনিয়দের মাতৃভূমি নয়। এদের বিবেকে বাঁধেনি ইংরেজদের হাতে বাংলার জমিদারি তুলে দিতে। বাংলার সুবেদার তখন আজিম উস শান কী কারণে রাজী হলেন? উপরোন্ত খোজাহ ইসরাইল সারহান্দ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভাকিল। সে চলে গিয়েছিল মুগল সম্রাট ফররুখশিয়ারের দরবারে। ১৭১৭ সালে রাজকীয় ফরমান ঘোষনা করল মুগল কর্তৃপক্ষভ তাতে বিস্তর সুযোগ সুবিধে ছিল ব্রিটিশ বেনিয়াদের। সে ফরমান ঘোষনায় সারহান্দ- এর অবদান ছিল বিস্তর। আর্মেনিয়রা ছিল কলোনিয়াল দালাল। আজ আমরা কলোনিয়াল দালালদের চিনে নিতে চাই। খোজাহ ইসরাইল সারহান্দ ছিল অন্যতম কলোনিয়াল দালাল। All the negotiations with the East India Company during the stormy days of Sirajuddaulah's regime were conducted by this Armenian merchant who was a monopolist in the most profitable saltpetre trade. Wajid was one of the three merchant princes (the others being the jagat sheth and Umichand) who collectively dominated the commercial life and hence, to a great extent, the economy of Bengal in the last three decades of the first half of the eighteenth century. He operated his extensive business empire from Hughli, the then commercial capital of Bengal. ৬ From the late seventeenth century the Mughal government had begun to treat the Armenians as a distinct community trading in Bengal. They were mostly engaged in export trade for which they were required to pay a duty of 3.5% to the government. All the nawabs are known to have engaged Armenian merchants to transact their personal businesses openly or clandestinely. Khojah Petrus Nicholas, the leader of the Armenian community, was a financier and court advisor to alivardi khan. অস্টাদশ শতক এর মাঝামাঝি। তখনকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন খোজাহ ওয়াজিদ। এই লোকের অবদান বাংলার অর্থনীতির ক্ষেত্রে নাকি বিপুল। সে সব বিপুলতার খোঁজ খবর করার আবশ্যক বোধ করি না। কেননা, সিরাজ যে বাংলার ক্ষমতা হারালেন, তার বিরোধী যারা যারা ছিল-তাদের সঙ্গে খোজাহ ওয়াজিদ কে পান করতে দেখা যেত। ৭ উনিশ শতক থেকে আর্মেনিয়রা বাংলা থেকে চলে যেতে থাকে। কোথায়? পারস্যে। মধ্য এশিয়ায়। সঙ্গে বিশাল সম্পদ। বাংলার সম্পদ। (বাংলা কেন দরিদ্র? এর প্রশ্নের ঐতিহাসিক উত্তর খুঁজতে এ দিকটি উল্লেখিত হতে পারে।) আর্মেনিয়দের অনেকেই ইউরোপীয় অংশীদারের সঙ্গে বিশ্বের নানা স্থানে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এ প্রত্যক্ষ ফল- পূর্ব বাংলার পাট ও চামড়া শিল্পে ধ্বস ।The Armenian families who entered land control gradually shifted their interest to other businesses, such as, banking, export trade and agencies to exporters and importers. ৮ আলোর সঙ্গে মিলেমিশে থাকে অন্ধকার। সবাই দালাল না। সবাই শোষক না। সবাই বাংলার সম্পদ নিয়ে দেশত্যাগ করেনি। শোষক-দালালদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন মানুষ। যেমন-নিকোলাস পোগোস। চেয়েছিলেন পূর্ববাংলার মানুষ শিক্ষিত হোক। ইংরেজ বেনিয়াদের মুখোমুখি হতে চাই ইংরেজদের জ্ঞানবিজ্ঞান। এই মানসে মহামান্য নিকোলাস পোগোস গড়লেন একটি স্কুল। আজ কে না জানে- ঢাকার পোগোস স্কুলটি কত কত নস্টালজিক স্মৃতি জড়ানো। বলেছি, আলোর সঙ্গে মিলেমিশে থাকে অন্ধকার। সবাই দালাল না। সবাই শোষক না। কাজেই শহর ঢাকার স্থাপনার দিক থেকেও আর্মেনিয়রা পিছিয়ে ছিল না। শুনেছি, ঢাকার বাকল্যান্ড বাধের অর্থায়নও নাকি ওদের। কয়েকটি আর্মেনিয় পরিবারের নামogoses, Agacys, Michaels, Stephens, Joakims, Sarkiess, Manooks. কয়েকজন উল্লেখযোগ আর্মেনিয়র নাম: P Arathon, Margar David, Mackertich Abraham George, Michael Sarkies, Abraham Lucas, M Highcazony, A S Mackertich, Tigran Nahapiet Thaddeus Nahapiet, M.J. Catchhatoor, Joseph Lazarus. ১৮৩৭ সালে আর্মেনিয়রা ঢাকায় একটি ক্লক টাওয়ার প্রতিষ্ঠিত করেছিল। অবশ্য ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ঘড়িস্তম্ভটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। আগেই বলেছি যে যেখানেই যেত অর্মেনিয়রা গির্জে তৈরি করত । আর্মেনিয়রা ১৭৮১ সালে নির্মান করেছিল চার্চ অভ হোলি রেজারেকশন। লোকে বলে আর্মানিটোলার গীর্জা। গির্জার ভিতরে রয়েছে আর্মেনিয়দের কবর আছে। কখনও ওখানে দাঁড়ালে কেমন অনুভূতি হয়। এককালে এরা বেঁচে ছিল। এখন বেঁচে নেই। আমরা বেঁচে রয়েছি। একদিন থাকব না। তখন আমাদের কবরের সামনে কে দাঁড়াবে ... ৯ ওই চার্চ অভ হোলি রেজারেকশন নিমির্ত হওয়ার আগে আর্মেনিয়রা প্রার্থনা করত কোথায়? তেজগাঁওতে। তেজগাঁওয়ের রোমান ক্যাথলিক চার্চে। ধর্মটা ওদের জীবনে অতীব গুরুত্ব পূর্ন। মনে থাকার কথা- এক সময়ে রোমান দখলে চলে যায় আর্মেনিয়া। এরপর আর্মেনিয়া শাসন করে পার্থিয়রা। পার্থিয়রা পারস্যও শাসন করত। এরপর পারস্যে সাসানিদরা ক্ষমতায় আসে। ফলত আর্মেনিয়াও সাসানিদদের অধীন হয়ে পড়ে। সে সময় আর্মেনিয়ার রাজা ছিলেন ৩য় টিরাইদেস।ইনি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। হয়ে খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ঘোষনা করেন। মনে রাখা দরকার, রোম নয়। বিশ্বে আর্মেনিয়াই প্রথম খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করেছিল। তথ্যসূত্র: সুশীল চৌধুরী লিখিত বাংলাপিডিয়ার নিবন্ধ এবং Suny, Ronald Grigor. "Armenia (country)." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৬
false
rg
মাঝ রাতের মাস্তানি!! ১৯৯৭ সালের নভেম্বর মাস। হেমন্তের বাতাসে তখন একটু একটু শীতের আমেজ। রোদ ভালা লাগা শুরু হয়েছে। আমি আর আমার বন্ধুবর মহাত্মা মামুন-আর-রশীদ সেপ্টেম্বর মাস থেকে কলাবাগান মরম চাঁদের গলিতে এক বিশাল ব্যাচেলর বাড়ির বাসিন্দা। ধানমন্ডি শংকর আমাদের রুমমেট ছিল আইউব নেওয়াজ খান। তো নেওয়াজ বললো, আমি যেখানে থাকি সেখানে প্রতি মাসেই দুই-চার-পাঁচটা সিট খালি থাকে। আপনারাও উঠতে পারেন। বিশাল এপার্টমেন্ট। কোনো এক রহস্যময় কারণে সেই এপার্টমেন্ট গোটাটাই ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে। নেওয়াজের পরামর্শ অনুযায়ী, আমরা গিয়ে দেখে মাথা গোজার জন্য নেওয়াজের পাশের রুমেই উঠে গেলাম। আমাদের রুমে আমি আর মামুন ছাড়াও আরো তিন আদমি। একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, একজন মার্কেটিং অফিসার আর একজন এইচএসসি কোচিং করতে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছে।আমি তখন এলিফ্যান্ট রোডে একটি নোটবই ও গাইড বই প্রকাশনায় তিন হাজার টাকার পার্টটাইম চাকরি ধরেছি। দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আমার লিখতে হয়। আমার বিষয় ইকোনমিক্স হলেও আমি তখন ফিলোসফি, ইসলামের ইতিহাস, বাংলাদেশের রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও গণিতের উপর লেখালেখি করি। ত্রিশ দিনই আমার অফিস। কোনো ছুটি নেই। যেদিন চারঘণ্টার চাকরিতে না যাই, সেদিন বেতন থেকে ৬৭ টাকা কাটা যায়। মালিক শাহজাহান সাহেব খুব সুন্দর করে কথা বলেন। আমাদের ছুটি'র আগে আগে আমাদের জন্য পার হেট দুইটা করে গরম পুড়ি'র নাস্তা আসে। আমরা গরম গরম পুড়ি খেয়ে বাড়তি দশ পনেরো বা আধাঘণ্টা, যার হাতে যেমন কাজ অবশিষ্ট থাকে, তা শেষ করে মহা আনন্দে যার যার আস্তানায় বা আড্ডায় চলে যাই। সন্ধ্যার পর আমরা তখন আড্ডা মারতাম সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে। অথবা সংসদের ঠিক পূর্বপাশে মনিপুরীপাড়ার মেইন রাস্তায় আমাদের তিন বন্ধুবর মহাত্মা ইফতেখার ডন, মোহাম্মদ রফিক ও শাহেদের যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাউন্ড এন্ড ভিশনে। সাউন্ড এন্ড ভিশনে তখন ঢাকার নানা ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠানের ভিডিও এডিটিং হত। আমরা আড্ডা দিতে দিতে ডনের ভিডিও দেখতাম আর বিনা পয়সায় অন্য মানুষের সুন্দরী বউ দেখে অনেক রাত করে কলাবাগানের ব্যাচেলর বাসায় ফিরতাম। বন্ধুবর মহাত্মা মামুন তখন এমআরসি মোড নামে একটি স্যোসিও ইকোনমিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। আমিও কিছু দিন সেখানে কাজ করেছিলাম। কিন্তু লেখালেখি'র কাজটা পাওয়ায় আর আমার বিসিএস পরীক্ষা থাকায় আমি আর মামুনের সঙ্গে নতুন প্রজেক্টে গেলাম না। তো মামুন রংপুরে প্রায় একুশ দিন গবেষণার কাজ শেষে ঢাকায় আসলো। পরদিন মামুন বেতন পাবে। আমরা কোথাও একটা ভুড়িভোজ দেব এই হল পরিকল্পনা। সন্ধ্যায় আমি, মামুন আর বন্ধুবর মহাত্মা শ্যামল মিত্র আর বন্ধুবর মহাত্মা প্রকাশ মন্ডল সংসদের ঠিক দক্ষিণ-পূর্ব কোনে ঘরোয়ায় বিশাল এক ভুড়িভোজ দিলাম নানরুটি আর গরম গরম মাংস দিয়ে। মিষ্টিও খেয়েছিলাম হয়তো। মামুনের সঙ্গে কোন কোন মেয়ে সেবার রিসার্সে গিয়েছিল, তাদের সম্পর্কে মামুনের কাছ থেকে খোঁজখবর নিলাম আমরা। শুনলাম, মামুনের সঙ্গে নতুন একটা মেয়ের বেশ খাতির হয়েছে। মেয়ের বাবা জাপান থাকে। মামুনকে খুব পছন্দ করে সেই মেয়ে। মামুন নাকি রাত জেগে জেগে সেই মেয়ের কোশ্চেন পেপার চেক করে দিয়েছে। তো আমরা মামুনের কাছে আবদার করলাম, ওই মেয়েকে একদিন আমাদের দ্যাখা? আমরা সায় দিলে মামুন প্রেম চালিয়ে যাবে। সেদিন আমরা প্রায় রাত এগারোটা পর্যন্ত সংসদ চত্বরে আড্ডা দিলাম। শ্যামল ভূতের গলি'র বাসায় গেল। প্রকাশ ইন্দিরা রোডের বাসায় গেল। মামুন আর আমি কলাবাগান ব্যাচেলর হাউজে ফিরে আসলাম। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে আমাকে আড্ডার বাইরে দেশ বিদেশের নানান খবরেও নাক গলাতে হয়। টুকটাক নোট টুকতে হয়। নেওয়াজের ছিল একটি পকেট রেডিও। বাসায় ফিরে নেওয়াজ আর আমি ছাদে গিয়ে রেডিও শুনতাম। নেওয়াজেরও আন্তর্জাতিক খবরের প্রতি খুব নেশা ছিল। পরে আমরা সেসব সংবাদ ডিটেইল আলোচনা করতাম। তো ছাদ থেকে নামতে নামতে আমাদের রাত একটা দুইটা বাজতো। ছাদে বেশি সময় ধরে থাকার আরেকটা কারণ ছিল। নেওয়াজ একদিন আবিস্কার করলো যে, বিপরীত পাশের একটা বাসায় নব দম্পতি ভালোবাসা বিনিময় করে। আর তা করার সময় তাদের জানালার পর্দা ঠিক ঠাক থাকে না। ফলে বিনে পয়সায় গরম মুভি দেখার মত একটা ব্যাপার আরকি!!তো সেদিন আমরা রাত দেড়টা নাগাদ রুমে ফিরলাম। দেখি, মামুন কি যেনো লেখালেখি করছে। বললো, অফিসে ফিল্ড রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তাই লিখছি। তোর ঘুম আসলে ঘুমা। আমি বিছানা ঠিকঠাক করছি, এমন সময় একটা ছেলে আমাদের জানালায় নক করলো। জানতে চাইলো, এখানে মামুন থাকে কিনা? মামুন সেদিকে তাকিয়ে বললো, আমি-ই মামুন? কে খুঁজছে আমাকে? ছেলেটি বললো, এক বড় ভাই আপনার সঙ্গে কথা বলবে, একটু বাইরে আসেন। আমরা সাত তলা বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলার বাসিন্দা। তো মামুন দরজা খুলে বাইরে গেল। মামুনের আসতে একটু দেরি দেখে আমিও বের হলাম। গিয়ে দেখি, বিশ বাঁইশ জনের একটা জটলা। কিসের জটলা?মহল্লার পোলাপাইন এসে আবদার করেছে, মামুনের ব্যাগের মধ্যে নাকি আমাদের রুমের যে মার্কেটিং অফিসার ছেলেটি থাকে, তার গার্ল ফ্রেইন্ডের ছবি লুকানো আছে। ওই ছেলেটি সেরাতে আসেনি। সন্ধ্যায় নাকি তারা একবার মামুনকে খুঁজতে এসেছিল। না পেয়ে আরো কয়েকবার এসেছিল। এখন মামুনের ব্যাগ তারা চেক করবে। মার্কেটিং অফিসার আর মামুন সেদিন সকালে একসঙ্গে বের হয়ে মরম চাঁদে নাস্তা খেয়েছিল। সঙ্গে ছেলেটির কথিত একজন গার্ল ফ্রেইন্ডও ছিল। সে উপরে এসে ছেলেটিকে নিয়ে নেমেছিল। মামুন বেশি খাতির দেখিয়ে তাদের নাস্তা অফার করেছিল। রুমমেটের গার্লফ্রেইন্ড বলে কথা!!তো পোলাপানদের দাবী, ওই ছেলেটি খুব খারাপ। এরকম অনেক মেয়ের সঙ্গেই তার খাতির হয়। চেহারা সুরত ভালো। সেটাই খাতিরের প্রধান কারণ। কিন্তু এবার যে মেয়েটির সঙ্গে ছেলেটি প্রতারণা করেছে, সে নাকি মহল্লার মেয়ে। ছেলেটি কি সে কারণে সেদিন লুকিয়ে ছিল?মামুন পোলাপাইনদের সরাসরি বললো, তার ব্যাগে ওই ছেলের কোনো গার্ল ফ্রেইন্ডের ছবি থাকার প্রশ্নই ওঠে না। মামুনের একটা পারসোনাল অ্যালব্যাম আছে ব্যাগে। সেখানে মামুনের খালাতো বোনের ছবি আছে। তবুও পোলাপাইন গুলো মামুনের ব্যাগ চেক করতে চাইলো। মামুন রাজী না। এক পর্যায়ে সেই বড় ভাই হুমকি দিলেন, ব্যাগ তাদের দেখাতেই হবে। অগত্যা মামুন তাদের নিয়ে রুমে ঢুকলো। মামুনের ব্যাগ তালা মারা ছিল। মামুন বললো, আপনারা বসেন, আমি আমার অ্যালবাম দেখাচ্ছি। মামুন তালা খুলে অ্যালবাম বের করলো। ছবি দেখালো। পোলাপাইন গুলো মামুনের খালাতো বোনের ছবি খুব ভালো করে দেখলো। একজন বললো, অ্যালবামের বাইরে হয়তো সেই ছবি লুকিয়ে রাখা আছে। আমরা গোটা ব্যাগই চেক করতে চাই। তখন পরিস্থিতি মামুনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একজন ব্যাগ ছিনিয়ে নিল। ভেতরে মামুনের জামাকাপড়। জামাকাপড়ের ভেতরে একটা খাম। খামের ভেতরে মামুনের সদ্য বেতন পাওয়া চৌদ্দ হাজার টাকা। একটা ছেলে সেই খামটি পকেটে ঢুকালো। আমি বাধা দিলাম। আরেকটি ছেলে আমাকে জাপটে ধরলো। আরেকটি ছেলে ঘোষণা দিল, ছবি পাওয়া গেছে। মামুন বললো, ওই খামে আমার বেতনের পুরো টাকা। আমি এখনো বাসা ভাড়া দেই নি। মেসে খাবারের টাকা দেইনি। ওটা নিয়ে আমাকে বিপদে ফেলবেন না। আমি বললাম, ওই খাম চেক করেন? যদি ওখানে টাকার বাইরে কোনো ছবি থাকে তো ছবি নিয়ে যান। ওরা খাম খুললো। সব পাঁচশো টাকার নোট। মামুনের দিকে তখন তাকানো যায় না। আমি বললাম, এই টাকা আপনারা নিতে পারেন না। ইতোমধ্যে আশে পাশের রুম থেকে সবাই বের হয়েছে। তাদের আমি বললাম, ওরা মামুনের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আমার সঙ্গে ওদের বাধা দিতে তখন প্রায় প্রস্তুত। একটা ছেলে খপ করে আমার গেঞ্জি'র কলার ধরলো। আমার মাথায় পিস্তল ঠিকিয়ে বললো, এক্কেরে পচা পুশকুন্নিতে পাঠাই দিমু। আমি কইলাম, কলাবাগান কোনো পচা পুশকুন্নি নাই। ছেলেটি জবাবে বললো, তোর টাকা? তুই কেন মরতে আইছোস?মামুন আমাকে টেনে ছাড়ালো। তখন কথিত সেই বড় ভাই নেওয়াজকে ডেকে বললো, তোমার কাছে সাদা কাগজ আছে? নেওয়াজ বললো, আছে, ক্যান? বড় ভাই বললো, তোমার রুম কোনটা? চল তোমার রুমে?মামুন, নেওয়াজ, বড় ভাই আর তার চ্যালাচামচা নেওয়াজের রুমে ঢুকলো। আমি বললাম, আমাকে একটু বাথরুমে যেতে হবে। একটা ছেলে আমার সঙ্গে বাথরুমে আসলো। সে দরজার বাইরে পিস্তল উচিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো। আমার আসলে তখন কোনো হিসি পায় নাই। আমি একটা ফাঁক খুঁজতেছিলাম। বাথরুমে গিয়ে চোখেমুখে জল ছিটালাম। কি করা যায় ভাবছি। আয়নায় নিজের চেহারা বারবার দেখলাম। ছেলেটি বাথরুমের লাইট বাহির থেকে অফ করে দিয়ে একটা সংকেত পাঠালো। আর কইলো, হারামির পোলা, মুততে এতোক্ষণ লাগে? বাইর হ?আমি হাফপ‌্যান্টের চেইন আটকানোর ভান করতে করতে দরজা খুলে বাইরে আসলাম। আমাকে নিয়ে ছেলেটি নেওয়াজের রুমে ঢুকলো। সাদা কাগজে লেখা হয়েছে- কথিত আক্কাস ভাই মামুনের কাছে দশ হাজার টাকা পেত। সেই পাওনা টাকা আক্কাসের প্রেরিত লোকের কাছে বুঝিয়ে দিলাম। নিচে মামুনকে তখন স্বাক্ষর করতে বললো। মামুন নেওয়াজের হাত থেকে কলম নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে স্বাক্ষর করলো। বড় ভাই খাম খুলে টাকা গুনলেন। পাঁচশো টাকার কুঁড়িটি নোট নিজের কাছে রেখে বাকি টাকা না গুনেই মামুনের হাতে দিল। তারপর যেতে যেতে বললো, মামুন ভাই, আপনার কোনো সমস্যা হলে, আমাকে গলিতে পাবেন। আপনার কোনো সমস্যা হলে আমরা দেখবো। আমরা সিড়িতে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ছেলেগুলো পিস্তল উচিয়ে নেমে যাচ্ছে। একেবারে নিচতলার গেইট থেকে একে একে বের হল ঊনিশ জন। উল্টোপাশের একটা নির্মাণাধীন ভবে ঢুকতে ঢুকতে তারা বেশ খোশ মেজাজ দেখালো। সে রাতেই আমরা ওই বাসা ছেড়ে দেবার নোটিশ করলাম...
false
hm
এক্সপ্লোরার ২০০২ সালের শেষ দিকে একদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখলাম, সূর্যোৎসব হবে কেওকারাডঙে। সূর্যোৎসব মানে বছরের নতুন দিনের সূর্যকে বরণ করে নেয়ার উৎসব। আগ্রহীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান সভার কর্ণধার মশহুরুল আমিনের সাথে। ছাত্রদের জন্যে তিনহাজার টাকা, অছাত্রদের জন্যে পাঁচহাজার টাকা ফি। অংশগ্রহণকারীকে অবশ্যই শারীরিকভাবে ফিট হতে হবে। আসনসংখ্যা সীমিত। নিজেকে শারীরিকভাবে আনফিট মনে করতে খুব বাধছিলো বলে দিনকতক পরে ফোন করলাম জনাব মশহুরুল আমিনকে। তিনি জানালেন, সত্তর বছর বয়স্ক জনৈক বৃদ্ধ কিছুক্ষণ আগে জানিয়েছেন, তিনি যেতে পারবেন না, কী যেন একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে। তাঁর বদলে আমাকে নেয়া যেতে পারে, যদি পরদিনই টাকাসহ যোগাযোগ করি। লালমাটিয়ায় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে পরদিন সকালেই গেলাম। উন্মাদের অফিসের সাথে ভাগাভাগি করে তখন চলতো এই সভা। মশহুরুল আমিন ইন্টারভিউ নিলেন আমার, শারীরিক ফিটনেসসহ আর নানারকম ব্যাপারস্যাপারের ওপর খোঁজখবর করলেন, যদিও তাঁকে দেখেই জিন্দালাশের মতো মনে হচ্ছিলো। পরে দেখেছি, মশহুরুল আমিন ওরফে মিলন ভাই ওরফে মহাকাশ মিলন দুর্দান্ত ফিট লোক। সূর্যোৎসবে নাম লেখানোর পর কয়েকদিন বাড়িতে বসে তুমুল ব্যায়াম করলাম। আমি বেঈমান ও নাফরমান বলে রোজার সিজনে সেহরি থেকে ইফতারের মাঝে চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় সাঁটাই বলে রোজার পর আমার রীতিমতো স্বাস্থ্য খুলে যায়, এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। সূর্যোৎসবে সেবার দলনেতা ছিলেন প্রসিদ্ধ পক্ষীপ্রেমিক ও ট্রেকার ইনাম আল হক। একটা ছোট ব্রিফিং মতো হয়েছিলো তাঁর বাসায়, সেটা আমি মিস করেছিলাম। ফলে অনেক উপদেশ অজানা থেকে গিয়েছিলো ব্যাকপ্যাক গোছানোর সময়। মিলন ভাইয়ের অতীত পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে শাহবাগ থেকে রুকস্যাক, কাকরাইলের তাবলীগী মার্কেট থেকে স্লিপিং ব্যাগ আর নানা টুকিটাকি কিনেছিলাম। আমার সেই রুকস্যাক আমার প্রাণ রক্ষা করেছিলো পরবর্তীতে, এখনও লেখার সময় কৃতজ্ঞ চোখে তাকিয়ে আছি বেচারার দিকে। অনেক ধকল গেছে তার ওপর দিয়ে। পাহাড় থেকে পড়া, সাঙ্গু নদীতে ডোবা, সাগরের পানিতে চুবানি খাওয়া থেকে শুরু করে আমার সাথে দুই দুইবার জার্মানীযাত্রার ধকল সহ্য করতে হয়েছে বেচারাকে। স্লিপিং ব্যাগের কপালে অত কিছু জোটেনি, আমার সাথে পুকুড়পাড়া যাত্রার সময় অনবধানতাবশত বিশ্রীভাবে একটা অংশ পুড়ে গিয়েছিলো বেচারার। এখন সে হয়তো ঢাকায় আমার কেবিনেটে পড়ে পড়ে ধূলো খাচ্ছে। স্লিপিংব্যাগ আর রুকস্যাক সহ টালমাটাল হয়ে যখন কলাবাগানে পৌঁছলাম শীতের ভোর পাঁচটার সময়, মেজাজটা কিছুটা খারাপই ছিলো। একটু পর দেখি অচেনা সব মানুষের ভিড়। হরেক রকম তাঁদের চেহারা, কণ্ঠস্বর, আকারআকৃতি, কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই। বাঙালির স্বভাবসুলভ সময়াধিবর্তিতার (সময়ানুবর্তিতার বিপরীত হয় না এটা?) কারণে আমাদের সেবার যাত্রা শুরু করতে করতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো। যাত্রাপথে আর বান্দরবানে রিগ্রিক্ষ্যং রিসোর্টে পৌঁছে মোটামুটি সবার সাথে পরিচয় হয়ে গেলো। কয়েকজনের সাথে আগেও সামান্য পরিচয় ছিলো, তা-ও পরিষ্কার হয়ে গেলো। সে-ই আমার প্রথম পাহাড়ে হাঁটা (পাহাড়ে চড়া ঠিক বলবো না, ঐ কাজটা একেবারেই ভিন্নরকম)। আর সেই হাঁটার সূত্রেই পরিচয় হয়েছিলো অনেক ভ্রমণপিপাসুর সাথে, যাঁদের সাথে একযোগে ঢাকায় ফিরে এসেই পত্তনি ঘটে এক্সপ্লোরারস ক্লাব অব বাংলাদেশের। এরপরের কাহিনী অনেক। প্রতিমাসে কোথাও ট্রেকিং বা হাইকিঙে যাবার পরিকল্পনা ছিলো আমাদের। সেই সূত্র ধরে আমরা ফেব্রুয়ারিতে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত হাঁটি, তো মার্চে আবার যাই মৌলভীবাজারের আদমপুরের জঙ্গলে ঘুরতে। কয়েকবার বান্দরবান-রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে অভিযান চলে আমাদের। গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে শেরপুর থেকে নেত্রকোণা পর্যন্ত এক দুর্দান্ত হাইকিং (যা আমি মিস করেছিলাম মিউনিখযাত্রার কারণে) আর সোমেশ্বরী নদীর তীর ধরে হাঁটার ট্রিপগুলিও স্মরণ করার মতো। তবে সময়ের সাথে মানুষের জীবনের মোড়গুলো আসে খুব আকস্মিকভাবে। কেমন হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেলো ছাত্রজীবন, আগের মতো আর সময় দেয়া গেলো না প্রিয় ক্লাবকে। প্রেসিডেন্ট বরুণ বকশী হুট করে একদিন পাড়ি জমালেন প্রবাসে (বরুণদা, আপনাকে আজও ক্ষমা করতে পারি না এজন্যে ...), অন্য দেশে তাঁরই পন্থার অনুগামী হলেন প্রিয় সদস্য বখতিয়ার রানা, শান্ত ভাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন টিভির চাকরি নিয়ে, উচ্ছল ভাই আর ইকবাল ভাইও নতুন চাকরির চাপে কাবু, শিলা আপা চলে গেলেন কঙ্গো, বদমেজাজি পারভিন আপাও একদিন রাগ করে নিজের মতো ঘোরা শুরু করলেন। নাজমুল ভাই, চঞ্চল আর শামীম খান নিখোঁজ, সালেহিন আর ওয়াহিদ ভাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নিজেদের কাজে, অতএব সামিয়াও গায়েব, অজর অটল শাহেদ ভাই-ই কেবল সবসময় "আছি" বলে আওয়াজ দিতেন। অভিমানী পুতুল আপাও আমাদের লুথামি দেখে তিতিবিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলেন একদিন। খুব মনে পড়ছে শেষ দু'টি এক্সকারশনের কথা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাগান দেখতে যাওয়া, আর বিডিআরের বাধা পেয়ে থানচি হয়ে রুমায় ট্রেক করতে না পেরে সাঙ্গু নদী ধরে অপূর্ব শ্বাসরুদ্ধকর এক নৌযাত্রার কথা। আমার ক্যামেরাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো সেই ট্রিপে, বেশ কিছু ভালো ছবি তাই মিস করেছিলাম, এতো দুঃখ পেয়েছিলাম যে অবশিষ্ট ছবিগুলিও আর প্রিন্ট করিনি শেষ পর্যন্ত। সঙ্গীদের ক্যামেরায় তোলা ছবি নিয়েই শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সেদিন সাল্লুর সাথে এমএসএনে আলাপ হচ্ছিলো এ নিয়ে। খুব খুব নস্টালজিক লাগে সেই দিনগুলির কথা মনে পড়লে। ক্লাবের সদস্যদের নিজের স্বজন বলেই ভাবি, তাঁদেরও খুব মিস করি। ইসিবি-র সদস্যরা, যে যেখানে আছেন, যদি এই পোস্ট পড়ার সুযোগ হয়ে থাকে, জানবেন, আপনাদের খুব ভালোবাসতাম বরাবরের মতো, এখনও বাসি। আমার জীবনের অন্যতম আনন্দময় সময়গুলি আপনাদের সাথে কেটেছে, এ জন্যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বহুদূরে চলে এসেছি, তবে ইসিবির কার্যক্রম থেমে যায়নি বলেই জানি। আজকে মেইল পেলাম আমাদের কনিষ্ঠতম সদস্য মামুনের, এভারেস্টের বেইস ক্যাম্পে পৌঁছেছে সে। মামুনকে অভিনন্দন জানাই, যদি সম্ভব হয়, তার কাহিনী সচলায়তনে তুলে ধরার ব্যবস্থা করবো।
false
hm
হায়, বিটিভি ... ইউটিউবের কাছে কৃতজ্ঞ হতে হবে অজস্র কারণে। গতকাল ফেসবুকে এক ফেসবুকবন্ধুর দেয়া লিঙ্ক দেখে চমকে উঠলাম। শাহনাজ রহমতুল্লাহর একটি গান, বহু বছর আগে রেকর্ড করা। সাদাকালো সেই গানটা দেখে কুড়ি বছর আগের সবকিছুর ভেতরে যেন ফিরে গেলাম। এই লেখাটা প্রায় দু'বছরের পুরনো। প্রাসঙ্গিক মনে হলো বলে পোস্ট করলাম আবার। সেইসাথে যোগ করছি প্রিয় শিল্পী শাহনাজের গানটি। মালেনা দেখেছেন অনেকেই৷ যুদ্ধে গিয়ে মালেনার স্বামী আর ফিরে আসে না, বাতাসে গুঞ্জরিত হয় তার মৃত্যুসংবাদ, সুতন্বী মালেনাকে নিয়ে ভেবে ভেবে বিনিদ্র স্বপ্নময় রাত কাটায় এক কিশোর, আর তার চোখের সামনে গোটা নগরের পুরুষরা হামলে পড়ে একা, অরক্ষিত মালেনার ওপর, তাকে সমাজচ্যুত করা হয় অক্লেশে, সে সংসাররীতির বাইরে পা বাড়ায় মামলায় উকিলের প্রাপ্য দেহ দিয়ে শোধ করতে, এক পর্যায়ে দিনের খাবারটুকুও তাকে কিনতে হয় চোরাচালানির কাছে নিজেকে মেলে ধরে৷ সেই কিশোরের চোখের সামনে দিয়ে এক সময় মালেনা পরিণত হয় বেশ্যায়, শহরে যখন জার্মান সৈন্যরা পা রাখে, তাদের অফিসারদের কন্ঠলগ্নাদের মধ্যে মালেনাও ছিলো এক সুন্দরী৷ সেই কিশোরের কাছে তবু মালেনার রূপ নষ্ট হয় না, সে তবুও ভেবে যায় নিজের মতো করে, তার কল্পনায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দেয় মালেনা৷ বিটিভির প্রসঙ্গ উঠলে আমারও মনে হয় মালেনার কথা৷ বিটিভি আমার শৈশবের প্রেম৷ সেই রাত ন'টায় নাইট রাইডার, ফল গাই, দ্য এ টীম, ম্যাক গাইভার, রাতের খবরের পর থর্ন বার্ডস, অল দ্য রিভারস রান, টুইন পীকস ... সন্ধ্যাবেলা টেলস অব দ্য গোল্ডেন মাংকি, শুক্রবার দুপুরে থান্ডারক্যাটস৷ আকৈশোর আমার ভালোবাসা ছিলো বিটিভি৷ তখন নাটক আরো সীমিত, আরো পরিমিত ছিলো, হুমায়ূন আহমেদের নাটক তখন ছিলো প্রতিশ্রুত আনন্দের সমার্থক৷ আখতার ফেরদৌস রানাও বিটিভির জন্য চমৎ‍কার কিছু নাটক লিখেছিলেন, কয়েকটার টুকরো টুকরো সংলাপ মনে আছে এখনও৷ বিটিভির এই আকর্ষণের পাশাপাশি কালো দিকটাও ছিলো৷ খবর মানে এরশাদ সাহেবের ঘোড়ার মতো চেহারা, আর তার চেলাচামুন্ডাদের ভগরভগর৷ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর শুধু নাম পাল্টালো, খালেদা জিয়াই বিটিভির প্রিয়দর্শিনী হয়ে দাঁড়ালেন৷ তখন খবর দেখতাম না, বিটিভি ছিলো ম্যাকগাইভারখানা৷ এগুলো বাদ দিলেও বিটিভিতে হঠাৎ হঠাৎ‍ চমৎ‍কার সব প্রামাণ্য অনুষ্ঠান দেখানো হতো, বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাঁকে দেখানো হতো টুকরো টুকরো চলচ্চিত্র, আরো অনেক কিছু৷ আমার ইংরেজি শেখার একটা সহায়ক মাধ্যম ছিলো বিটিভির সিরিয়ালগুলো৷ বৃহস্পতিবার মুভি অব দ্য উইকে দেখেছি খুব ভালো বাছাই করা কিছু মুভি, নির্বাচক কে বা কারা ছিলেন জানি না, আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই৷ বিটিভিও মালেনার মতোই চোখের সামনে ক্ষমতাসীনের রক্ষিতায় পরিণত হয়েছে৷ বেশ্যার শরীরে যেমন কামুক আর মাতালেরা চিহ্ন রেখে যায়, বিটিভির শরীরেও এখন সেরকম ক্ষত৷ ইংরেজি সিরিয়ালগুলো বাংলায় কুৎ‍সিত ডাব করে দেখানো হয়, অনুষ্ঠানের মান আগের তুলনায় অনেক খারাপ হয়েছে, বেসরকারী টেলিভিশনগুলোর বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশনের অনুকরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয় চরম অদক্ষ ক্রু নিয়ে, যেখানে রিপোর্টার বা সংবাদ পরিবেশকেরা জড়িয়ে জড়িয়ে ভুল বাংলায় কথাবার্তা বলেন, আর প্রায় সারাটা সময় দেশে যে কী দারুণ উন্নয়নের মড়ক লেগেছে সেটা প্রমাণের গাজোয়ারী চেষ্টা৷ প্রথমে বিএনপি, পরে আওয়ামী লীগ, তারপর এখন জোট সরকারের রক্ষিতাগিরি করে চলছে প্রৌঢ়া বিটিভি৷ আমি নিজের প্রাককৈশোর আর কৈশোরকে স্মরণ করে মাঝে মাঝে বিটিভি ধরে দেখি, মনে হয় কোন নাৎ‍সির কোলে ছেনালিতে রত এক বেশ্যাকে চুরি করে দেখছি৷ আজকে যাদের নাগালে আর কোন টেলিভিশন নেই, তাদের ইংরেজি চর্চার উপায়টা পর্যন্ত রাখেনি সদাশয় কর্মকর্তাগণ৷ সব চলচ্চিত্র আর সিরিয়াল আড়ষ্ট বাংলায় ডাব করা, সেটার রসাস্বাদন করা কোন সুস্থ পাকস্থলীর মানুষের পক্ষে বোধহয় সম্ভব নয়৷ সোর্ড অব টিপু সুলতান আর আলিফ লায়লা গোছের নিম্নমানের ভারতীয় অনুষ্ঠানের বাংলা সংস্করণের ঔপনিবেশিকতা শুরু হয়েছিলো আমার কৈশোরেই, আজো তার নখদাঁত থেকে বিটিভি মুক্তি পায়নি৷ শিশুদের অনুষ্ঠানে দেখি দেশের সবচেয়ে দাগী মাস্তানগুলোকে নিয়ে আসা হয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে, যারা গুছিয়ে নিজের শিশুকাল নিয়ে একটা সত্য কথাও বলতে পারেন না৷ বিটিভির উদ্দেশ্য কী? সুস্থ, শিক্ষামূলক বিনোদনের মাধ্যমে দেশের অপেক্ষাকৃত স্বল্পবিত্ত মানুষের রুচির কাঠামো নির্দেশনা? নাকি সরকারের ঢোল বাজানোর ফাঁকে ফাঁকে জঘন্য বমনউদ্রেককারী সব "অনুষ্ঠান" দেখিয়ে লোকজনকে চ্যানেল পাল্টাতে উৎ‍সাহ দেয়া? যাঁরা ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক, তাঁরা হয়তো বিটিভির এই পতনের পেছনে বেসরকারী টেলিভিশনের ভূমিকাও আবিষ্কার করে বসবেন৷ যাঁরা মালেনা দেখেছেন, শেষটাও হয়তো দেখেছেন৷ মালেনার পঙ্গু স্বামী ফিরে আসে, মালেনাকে খুঁজে বার করে, তার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে একদিন বাজারে আসে, যে ঈর্ষাণ্বিতা মহিলারা মালেনাকে পিটিয়ে আঁচড়ে খামচে উলঙ্গ করে বার করে দিয়েছিলো শহর থেকে, তাদেরই একজন সুপ্রভাত জানায় এই দম্পতিকে৷ সব কিছু প্রায় আবার আগের মতোই যেন হয়ে আসতে চায়৷ বিটিভিকে কেউ উদ্ধার করবে এই অপমানের হাত থেকে? এই গ্লানি থেকে? আবারও কি কখনো বিটিভি দেখে চমকে উঠে নিজের শৈশবকে স্মরণ করতে পারবো? কেউ কি আছেন ত্রাণের জন্য?
false
rg
ওয়েলকাম ব্যাক টিম টাইগার্স আওয়ার্স হিরোস!!! একাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট মিশন শেষ করে আজ রাত পৌনে আটটায় দেশে ফিরেছে টিম টাইগার্স। হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টাইগার্সদের বরণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা ও দেশের সর্বস্তরের ক্রিকেটপ্রেমী সাধারণ মানুষ। বাংলার বীরদের বরণ করার জন্য আজ বিমানবন্দর হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের এক লাল-সবুজের বাংলাদেশ। যেখানে কোনো বিরোধীপক্ষ ছিল না। সবার কণ্ঠেই ছিল 'সাবাশ বাংলাদেশ', 'গো টাইগার্স গো', 'রাইজ অব দ্য টাইগার্স’, ‘আমরা তোমাদের নিয়ে গর্বিত’ ইত্যাদি নানান শ্লোগান। এবারের অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত একাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথম বারের মত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে সক্ষম হয়। গত ১৯ মার্চ মেলবোর্নে ভারতের বিরুদ্ধে খেলায় আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ১০৯ রানে হারলেও টিম টাইগার্সদের নিয়ে গোটা বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অর্জনগুলোর দিকে আবার একপলক চোখ ঘোরানো যাক। ১. এই প্রথম বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।২. বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদ বিশ্বকাপের পরপর দুটি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। ৩. বিশ্বকাপে এক নম্বর টেস্ট প্লেয়িং দল ইল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে হেরে ইল্যাংন্ড বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে।৪. অধিনায়ক মাশরাফির ক্যাপ্টেনসির প্রশংসা করেছেন বিশ্বের গ্রেট সব ক্রিকেটারগণ। সামনে থেকে টিম টাইগার্সকে নেতৃত্ব দেওয়া মাশরাফি একজন সফল কাপ্টেন। ৫. এবারের বিশ্বকাপ আসরের নতুন সেনশেসন বোলার এবং বাংলাদেশের হার্টথ্রুব হিরো রুবেল হোসেন।৬. বাংলাদেশ দলের ওয়ানডাইনে নতুন আবিস্কার সৌম্য সরকার। ৭. বাংলাদেশ দলের নতুন মহাজুটি মোহাম্মদউল্লাহ-মুশফিক= ভায়রাভাই জুটি। ৮. বাংলাদেশের নতুন আবিস্কার অলরাউন্ডার সাব্বির রহমান। ৯. বাংলাদেশের নয়া মাশরাফি তরুণ ড্যাসিং তারকা তাসকিন আহমেদ। ১০. ব্রিজবেনে অস্ট্রেলিয়া বনাম বাংলাদেশ ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে, গ্রুপের অপর পাঁচটি খেলার মধ্যে বাংলাদেশ তিনটিতে জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি সহ মোট ছয়টি ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ মোট ১৫৮৫ রান তুলতে সক্ষম হয়। যার গড় ২৬৪.১৭। যা ২০০৭ বিশ্বকাপের মোট ১২৭২ রান ও গড় ১৪১.৩৩ এবং ২০১১ বিশ্বকাপের মোট রান ১০১৭ ও গড় ১৬৯.৫০ থেকে বেশি। ১১. এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ৬ ম্যাচের মধ্যে মোট দুইবার বিপক্ষ দলকে অলআউট করে এবং মোট ৪২টি উইকেট লাভ করতে সক্ষম হয়। ১২. বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদ। রিয়াদের মোট রান ৩৬৫ রান। ১৩. বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের উইকেট সংখ্যা ৯টি।১৪. বিশ্বকাপে এই প্রথম বাংলাদেশ তিনশোর উপর রান চেস করতে সক্ষম হয়।১৫. বাংলাদেশ দলে মিডল অর্ডারে সেরা পারফর্ম করেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ দলের শ্রীলংকান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহ টিম টাইগার্সকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে যেভাবে বিশ্বকাপের জন্য গড়ে তুলেছেন, সেজন্য বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। সেই টিম টাইগার্সদের সকল ফিজিও, গ্রাউন্ডসম্যান, দলের সঙ্গে থাকা সকল সদস্য, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সকল সদস্য ও কর্মকর্তা সবাইকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। মনে রাখতে হবে, এবারের বিশ্বকাপে আমরা যা কিছু অর্জন করলাম, তা যেন সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকে। আমাদের অর্জিত ফুলগুলোর রূপ-রস-গন্ধ যেন আমরা কখনো ভুলে না যাই। আর বিশ্বকাপের মত বড় আসরেে ছোটখাট যেসব ভুলগুলো আমরা করেছি, তা থেকে যেন আমরা শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি, আজ থেকে তাই হোক টিম টাইগার্সের একমাত্র লক্ষ্য। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট। ................................ঢাকা২২ মার্চ ২০১৫
false
fe
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর জন্মদিন আজ আজ ৫ মে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯৮তম জন্মদিন। মাষ্টারদা সূর্যসেনের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন তিনি। ১৯৩২ সালে পাহাড়তলী ক্লাব আক্রমণ করার প্রস্তুতি নেন মাস্টারদা। এই বীরকন্যা ছিলেন ওই দলের নেতৃত্বে। হঠাৎ আক্রমণের সংকেত পেয়ে তিনি দলীয় সঙ্গীদের নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ========================================= প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার : একটি বিপ্লবের নাম আলী হাসান ----------------------------------------------------------------- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। একটি বিপ্লব, একটি সংগ্রামের নাম। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে এক দ্রোহ। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার ও প্রতিভা ওয়াদ্দেদারের ঘরে প্রীতিলতার জন্ম ১৯১১ সালের ৫ মে। প্রীতিলতার ডাক নাম রানী। এই ‘রানী’ নামটি যে পরবর্তীতে তার নিজের ও সমগ্র ভারতবাসীর ওপর এমন প্রভাব বিস্তার করবে তা কি সে সময় কেউ জেনেছিল। তার স্মৃতিশক্তি অসাধারণ। বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করেছেন, তাও আবার সরাসরি তৃতীয় শ্রেণীতে। ডা. খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয় তখনকার সময়ে থেকেই উন্নতমানের নারী শিক্ষালয়। চট্টগ্রামের সেই নামকরা স্কুলে রানী তখন ক্লাসে প্রথম কিংবা দ্বিতীয়। ১৯২৪ সালের কথা। প্রীতিলতা তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। বড়দা মধুসূদনের কাছে প্রীতিলতা শুনলো এক দুর্ধর্ষ ডাকাতির কথা। রেল শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দেয়ার জন্য বিপুল অংকের টাকা ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গাড়িতে দুজন পুলিশও ছিল। কিন্তু হঠাৎ দিনের বেলায় বড় রাস্তায় চারজন লোক পিস্তল হাতে সামনে দাঁড়ালো। তারা সবাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে টাকাসহ গাড়ি নিয়ে চম্পট। পরে জানা গেলো ঐ লোকগুলো ডাকাত নয় স্বদেশী আন্দোলনের লোক। তারা কখনো মৃত্যুকে পরোয়া করে না বলে, কাউকে ভয়ও করে না। বিষয়টি প্রীতিলতাকে দারুণভাবে নাড়া দিলো। ততোদিনে প্রীতিলতা উমাতা স্কুলের শিক্ষক বিপ্লবী সূর্যসেনের কথা জেনে গেছেন। এ সময় সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিশাল বিপ্লবী দলও গঠন হয়ে গেছে। যার মধ্যে আছেন নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, ধীরেন চক্রবর্তী, উপেন চক্রবর্তী, নগেন সেন, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, বিনয় সেন, মধু দত্ত, রাজেন দে, লোকনাথ বল প্রমুখ। তখনো পর্যন্ত দলে কোনো মেয়ে সদস্য ছিল না। সচ্চরিত্র, স্বাস্থ্যবান, সাহসী যুবক ও স্কুল-কলেজের ছাত্রদেরই নেয়া হতো দলে। ১৯২৮ সালে প্রীতিলতা প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করার পর ভর্তি হলেন ঢাকায় ইডেন কলেজে। থাকেন কলেজের ছাত্রীনিবাসে। কিছুদিন পর পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসলে প্রীতিলতা তা কঠোরভাবে ফিরিয়ে দিলেন। কারণ পড়ালেখা শেষ না করে বিয়ে নয়। ইতিমধ্যে প্রখ্যাত লীলা নাগের সংগঠন ‘দীপালী সংঘ’-এ নাম লিখিয়েছেন প্রীতিলতা। এর মধ্যে আইএ পরীক্ষা শেষ করে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে এলেন। চট্টগ্রামের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে তখন নতুন রূপ। মাষ্টারদা সূর্যসেন চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক। প্রীতিলতা এ সময়ের মধ্যেই বুঝে ফেলেছেন যে, সশস্ত্র অভ্যুত্থান ছাড়া স্বদেশের স্বাধীনতা সুদূর পরাহত। এরই মধ্যে প্রীতিলতার আইএ পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। মেয়েদের মধ্যে সেই প্রথম স্থান অধিকার করেছে। মাসিক ২০ টাকা বৃত্তি পাবে সে তখন থেকে। এরপর কলকাতার বেথুন কলেজে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স ক্লাসে ভর্তি হলেন প্রীতিলতা। থাকেন ছাত্রীনিবাসে। এখানে মাষ্টারদার নির্দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করলেন প্রীতিলতা। গড়ে তুললেন এক বিপ্লবী চক্র। এই বিপ্লবী চক্রে অনেক মেয়ে সদস্য যোগ দিলেন। তাদের মূল কাজই হলো অর্থ সংগ্রহ। অর্থ সংগ্রহ করে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে পাঠাতে লাগলেন। কলকাতার এক গোপন কারখানায় তখন তৈরি হয় বোমার খোল। মাষ্টারদার নির্দেশ অনুযায়ী সে বোমার খোল সংগ্রহ করে প্রীতিলতা। ১৯২৯ সালে পূজার ছুটিতে প্রীতিলতাÑ কল্পনা দত্ত, সরোজিনি পাল, নলিনী পাল, কুমুদিনী রক্ষিতকে নিয়ে চট্টগ্রাম আসেন। বোমার খোলগুলো পৌঁছে দেন বিপ্লবীদের হাতে। মাষ্টারদার নির্দেশ অনুযায়ী প্রীতিলতা এরপর থেকে প্রকাশ্য বিপ্লবী কাজেও যুক্ত হয়ে পড়েন। অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভারও তাকে তখন নিতে হয়। কলকাতায় যে বিপ্লবী চক্র গঠন করা হয়েছে, তাদের সকল প্রকার প্রশিক্ষণও প্রীতিলতাকে দিতে হয়। এর মধ্যে পত্রিকায় খবর বেড়োয় যে, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করে নিয়েছে বিপ্লবীরা। বিপ্লবীরা মরণ কামড় দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের লৌহকঠিন প্রশাসনে। দুঃশাসনের পাঁজর গুড়িয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের স্বাধীনতাকামীরা। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ঘটলো ভয়াবহ এক ঘটনা। মহানায়ক সূর্যসেনের নেতৃত্বে ঘটলো চট্টগ্রামে বিশাল এক অভিযান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসন অচল হয়ে গেলো। টেলিগ্রাফ-টেলিফোন বিকল, সরকারি অস্ত্রাগার দখল, রিজার্ভ পুলিশ ছত্রভঙ্গ, রেললাইন উৎপাটিত, ইংরেজ শাসকের আকাশছোঁয়া দর্পচূর্ণ। এ সময় কলকাতায় অবস্থিত প্রীতিলতা চট্টগ্রামে আসার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকেন। সশস্ত্র বিপ্লবে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে আছেন। কিন্তু তখনো পর্যন্ত মাষ্টারদার অনুমতি মেলেনি। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার তখনো অনেক দেরি, তাই টেস্ট পরীক্ষা শেষ করেই তিনি চট্টগ্রাম চলে এলেন। চট্টগ্রামে তখন বিপ্লবীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ ও মিলিটারির তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনি অবস্থায় প্রীতিলতা চট্টগ্রামে কিছুদিন অবস্থান করে আবার কলকাতায় ফিরে গেলেন। কিছু পড়াশুনা করে পরীক্ষা শেষ করলেন প্রীতিলতা। এরপর আবার চট্টগ্রামে ফিরে এলেন। এই সময়ে চট্টগ্রামে অপর্ণাচরণ নামে একটি ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা পদে নিযুক্ত হলেন প্রীতিলতা। এ সময় প্রীতিলতা মাষ্টারদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত শহরের বাইরে এক গ্রামে সাবিত্রি দেবীর বাড়িতে রাতের বেলা প্রীতিলতা মাষ্টারদার সঙ্গে দেখা করলেন। তখন মাষ্টারদা সঙ্গে আছেন নির্মল সেন। মাষ্টারদাকে অনেকদিন পর দেখে তাকে প্রণাম করতে উদ্যত হতেই মাষ্টারদা বললেনÑ পায়ে ছুঁয়ে প্রণাম নয়। বিপ্লবীরা প্রণাম করবে শুধু মা-মাতৃভূমিকেই। এমন সময় কে যেন হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলোÑ পুলিশ। মুহূর্তে লাফিয়ে উঠলেন মাষ্টারদা ও নির্মল সেন। এরই মধ্যে রিভলবার হাতে এক সাহেব প্রায় সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত চলে এসেছে। মাষ্টারদা ও নির্মল গুলি ছুড়তে ছুড়তে দ্রুত পালিয়ে যেতে থাকলেন। এক সময় কচুরিপানার এক পুকুরে গিয়ে পড়লেন দুজন। নির্মল সেন ততোক্ষণে গুলিতে মারা গেছেন। পুকুরের প্রায় পাড় ঘেঁষে পুলিশের দল যাচ্ছে। এ সময় দুজন কচুরিপানা মাথায় দিয়ে শুধু নাকটুকু ভাসিয়ে রেখেছেন। একটু পরে পুলিশ চলে গেলে দেখা গেলো, যে বাড়িতে তারা সাক্ষাৎ করেছিলেন সেই সাবিত্রি দেবীর বাড়িটি দাউ দাউ করে জ্বলছে। ১৯৩২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাষ্টারদার সঙ্গে প্রীতিলতার আবার দেখা করার সুযোগ এলো। মাষ্টারদা প্রীতিলতার উদ্দেশে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেনÑ ‘আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর তোমার নেতৃত্বে তুমি পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করবে।’ এ সময় মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে চট্টলার রানী হিসেবে উল্লেখ করলেন। প্রীতিলতা আগেই অস্ত্র শিক্ষা নিয়েছিলেন। মাষ্টারদার এই অমোঘ নির্দেশ পাওয়ার পর সাগরের বেলাভূমিতে আরো কঠোরভাবে অস্ত্র চালনার শিক্ষা নিতে লাগলেন প্রীতিলতা। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মাষ্টারদা প্রীতিলতার সহযোদ্ধাদের নাম ঘোষণা করলেন। তারা হলেনÑ শান্তি চক্রবর্তী, কালী দে, প্রফুল্ল দাস, সুশীল দে ও মহেন্দ্র চৌধুরী। সকলেই তখন প্রীতিলতার নেতৃত্বে মরণযুদ্ধের সংকল্পে দৃঢ়। সকলের মধ্যেই যুদ্ধের উন্মাদনা প্রবল। হঠাৎ আক্রমণ করার সংকেত পাওয়া গেলো। লাফ দিয়ে প্রীতিলতা সহযোগীদের নিয়ে পৌঁছে গেলেন শত্র“র সম্মুখে। শত্র“রা তখন নাচ আর গানে মশুগুল ছিল। উন্মত্ত বল নাচের পরিবেশকে থমকে দিয়ে চললো গুলি আর বোমা নিক্ষেপ। প্রায় সকলকে খতম করে দিয়ে ক্লাব থেকে বেরিয়ে রেলের বড় পথ ধরে হাঁটছেন বিপ্লবীরা। জয়ের আনন্দ সবার চোখেমুখে। হঠাৎ একটা গুলির শব্দ। সবাই মিলে দৌড়াতে লাগালো। গুলিটি লেগেছে প্রীতিলতার বুকের ডান দিকে। বুকে হাত চেপে তবু দৌড়াতে লাগলেন। কে কোথায় দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গেলো অন্ধকারে তার কিছুই দেখা গেলো না। প্রীতিলতা এক সময় রাস্তায় পড়ে গেলেন। প্রবল রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে বুকে, যন্ত্রণার ঝড় বইছে সমস্ত শরীরে। হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। তারপর জ্ঞান ফিরে এলে বুঝতে পারলেন তার চারপাশে অনেকগুলো টর্চ লাইটের আলো। বুঝতে বাকি রইলো না চারপাশে পুলিশের লোকেরা তাকে ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু তার তো পুলিশের হাতে বন্দী হলে চলবে না, ফাঁসির দড়িতে ঝুলে তাকে তো মরলে হবে না। চিরমুক্তির পাথেয় যে তার কাছেই গচ্ছিত রয়েছে। প্রীতিলতা আস্তে আস্তে তার কাছে গচ্ছিত পটাশিয়াম সায়ানাইড বের করে জননী ও জন্মভূমির নামে তা মুখে পুরে দিলেন। এরপর ঘুমিয়ে গেলেন অনন্ত মাটির কোলে। পুলিশ প্রীতিলতার দেহকে ঘিরে হরেক রকমের তদন্ত শেষে শেষ পর্যন্ত তার মরদেহ তার পিতার কাছে সমর্পণ করলো। সেদিন প্রীতিলতার সৎকার হয়েছিল খুবই সাদামাটাভাবে। ইচ্ছে থাকলেও ভয়ে কেউ তার উদ্দেশে শ্রদ্ধা পর্যন্ত জানাতে আসেনি। কিন্তু আজ ভারতবর্ষের স্বাধীকার আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ বিপ্লবী অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা শুধু চট্টলার রানী নয় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহীয়সী নারীরূপে সমস্ত ভারতবর্ষেরই রানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। আলী হাসান : সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী। ----------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ / ৫ মে ২০০৯ প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ৯:১১
false
rg
জন কেরির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষ্যে আমাদের এজেন্ডা কী !!! ওবামা প্রশাসনের দীর্ঘ আট বছরের শাসনামলে কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেননি। আগামী নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এখন কেবল রুটিন ওয়ার্ক করছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারির ২০ তারিখে তিনি নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। যতদূর জানা যায় আগামী ৩০শে আগস্ট ‘ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডায়ালগ’-এ মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন জন কেরি। মানে ভারতের সঙ্গে জন কেরির সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়েই আলোচনা হবে। দিল্লী যাবার আগে জন কেরি ২৯ আগস্ট ঢাকা হয়ে যাবার আগ্রহ দেখিয়েছেন! কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো জানে না বা প্রস্তুত নয় মিস্টার কেরির সঙ্গে তারা কী নিয়ে আলোচনা করবেন! এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার কথা বলতে পারেনি। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক অমিমাংসিত বিষয় রয়েছে। আমাদের তৈরি পোষাক খাতের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিয়ে একটি জটিলতা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি-সুবিধা চুক্তি, অন্যান্য অশুল্ক বাধা দূর করার মত অনেক প্রসঙ্গ আছে। বঙ্গবন্ধু'র খুনীদের যারা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে আছে। অর্থ্যাৎ দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির কার্যকারিতার বিষয়টি আছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার উপায় নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের যেটা মনে রাখতে হবে মিস্টার জন কেরি এর আগে একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বেশ কয়েকবার যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ঠেকাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের আপিল শুনানি আগামী রোববার শুরু হচ্ছে। এমন সময়ে মিস্টার কেরি মীর কাসেমকে বাঁচাতে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশ সফর করছেন কিনা, এটা খুব গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। শোনা যায় মীর কাসেম দেশের বাইরে মিলিয়ন ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে জন কেরির কোনো বিশেষ উদ্যোগের খবর বিগত চার বছরে ছিল না। হঠাৎ করেই দিল্লী যাবার আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকা সফরকে তাই সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত আগ্রহের আড়ালে বরং তাদের নেতৃত্বেই সারাবিশ্বে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি বিস্তারের ঘটনা ঘটছে। মিস্টার কেরির ঢাকা সফরের আসল উদ্দেশ্য যদি হয় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক ইস্যুতে এখনো এক বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। সিরিয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিস্তারের নতুন ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে তুরস্ক। এতোদিন তুরস্ক মার্কিন নেতৃ্ত্বাধীন ন্যাটোর সদস্য হিসেবে তাদের সহায়ক বন্ধু ছিল। তুরস্কে এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক ক্যু'র পরের তুরস্ক এখন মার্কিন জুজু ছেড়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিস্তারের জন্য মার্কিন প্রশাসনের সবসময় পছন্দের তালিকায় মুসলিম দেশগুলো। তাই বাংলাদেশকে খুব হিসাব কষেই মিস্টার কেরির সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। হিসাবে চুল পরিমাণ ভুলের জন্য কিন্তু বিশাল অংকের মাসুল দেওয়া লাগতে পারে বাংলাদেশের। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে স্বাগতম জানানোর আগে নিজেদের এজেন্ডা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি কোনো ধরনের চাপিয়ে দেওয়া কৌশলের কাছে নতি স্বীকার না করার ব্যাপারে দৃঢ় থাকাই হতে হবে বাংলাদেশের কৌশল। মনে রাখতে হবে আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর এবং তেল ও গ্যাস সেক্টরের উপর মার্কিনীদের দীর্ঘদিনের নজরদারি ও আগ্রহ রয়েছে। ভারত ও চীনকে বাগে আনতে বঙ্গোপসাগরে একটা স্থায়ী মার্কিন নৌঘাঁটি গড়ে তোলার স্বপ্ন তাদের দীর্ঘদিনের। যে কোনো ধরনের টোপ বা কৌশলের বিনিময়ে ওরা এগুলো বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে পারে। তাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কয়েক ঘণ্টার বাংলাদেশ সফর নিয়ে অতিরিক্ত উৎসাহ বুমেরাং ফল দিতে পারে, এটা আমাদের যেন ঠিক সময়ে মনে থাকে। আলোচনায় কোনো ছাড় না দিয়ে বরং বাংলাদেশের অপরচুনিটি কী হবে তা নিয়েই জন কেরির সঙ্গে কূটনৈতিক যুদ্ধ করতে হবে। খামাখা জন কেরিকে পরম বন্ধু ভাবার কোনো সুযোগ নাই। ১৯৭৪ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশ সফরকে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটু সময় নিয়ে যেন ভালোভাবে খতিয়ে দেখে, সেই অনুরোধ রইলো। ...............................২৪ আগস্ট ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮
false
rg
তাসকিন-সানি আইসিসি'র চূড়ান্ত রাজনীতির শিকার!!! ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি বাংলাদেশের ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানি'র বোলিং অ্যাকশান অবৈধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের অবৈধ ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি এখন নতুন একটি নীল নকশার অংশ। আলোচনায় যাবার আগে শুরুতে আমরা একটু সেই ম্যাচের দিকে যাই, যে ম্যাচে তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশান নিয়ে কথা উঠেছে। ৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়িং রাউন্ডের তৃতীয় ম্যাচ, যেটি 'এ-গ্রুপ'-তে বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডের মধ্যেকার প্রথম ম্যাচ। ওই খেলায় নেদারল্যান্ড টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায়। নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান করে। ম্যাচ সেরা ৫৮ বলে অপরাজিত ৮৩ রান করেন তামিম ইকবাল। তামিম সেদিন ৩টি ছক্কা ও ৬টি চারের সাহায্যে ৫৮ বলে ৮৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। জবাবে নেদারল্যান্ড নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রান করতে সক্ষম হয়। ফলে বাংলাদেশ ৮ রানে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে টি২০ বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করে। তামিম ইকবাল হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেই খেলায় মাঠ আম্পায়ার ছিলেন ভারতের সুন্দরম রবি ও অস্ট্রেলিয়ার রড জেমস টাকার। টিভি আম্পায়ার ছিলেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিস গাফ্ফানি। ম্যাচ রেফারি ছিলেন জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি পাইক্রফট। আর অতিরিক্ত বা রিজার্ভ আম্পায়ার ছিলেন ইংল্যান্ডের নাইজল লিয়ং। ওই খেলায় বাংলাদেশের মোট সাত জন বোলার বল করেন। তাসকিন ৪ ওভার বল করে ২১ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। আল-আমিন ৩ ওভার বল করে ২৪ রান দিয়ে পান ২টি উইকেট। আরাফাত সানি ২ ওভার বল করে ১০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। নাসির হোসেন ২ ওভার বল করে ২৪ রান দিয়ে পান ১টি উইকেট। মাহমুদুল্লাহ ১ ওভার বল করে ৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। মাশরাফি মুর্তাজা ৪ ওভার বল করে ১৪ রান দিয়ে পান ১টি উইকেট। আর শাকিব আল হাসান ৪ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে পান ২টি উইকেট। এস রবি ও রড টাকার যেহেতু তাসকিন আর সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কথা বলেছেন। এবার চলুন তাসকিন আর সানির সেই ৬ (৪+২) ওভার বলের বিশ্লেষণ দেখি। নেদারল্যান্ডের ইনিংসের প্রথম ওভার বল করেন তাসকিন। তাসকিন প্রথশ দুটি ডট বল দেন। দ্বিতীয় বলটি কিছুটা বাউন্স ছিল। তৃতীয় বলে ব্যাটসম্যান স্টিফেন মাইবার্গ একটি চার মারেন। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বল ছিল ডট। তার মধ্যে পঞ্চ বলটি ছিল গুডলেন্থ ডেলিভারি, যার গতি ছিল ১৪০ কিমি/ঘণ্টা। আর ষষ্ঠ বলটিও ছিল গুডলেন্থ ডেলিভারি, যার গতি ছিল ১৩৬ কিমি/ঘণ্টা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারটি আবার তাসকিন করেন। প্রথম বলে মাইবার্গ একটি রান নেন। দ্বিতীয় বলে ওয়েসলি বারেসি একটা চার মারেন। তৃতীয় বলে বারেসি এক রান নেন। চতুর্থ বলটি ছিল গুডলেন্থ মিডল স্টাম ও লেগ স্টাম বরাবর। সেই বলে মাইবার্গের বিরুদ্ধে জোরালো এলবিডাব্লিউ'র আবেদন ছিল। আম্পায়ার বলটি লেগ স্টাম মিস করতো এই অযুহাতে আউট দেননি। এটি একটি ডট বল। পঞ্চম বলটিও গুডলেন্থ ডেলিভারি ছিল। আরো একটি ডট বল। ষষ্ঠ বলটিও গুডলেন্থ ডেলিভারি ছিল। এটিও ডট বল। চতুর্থ ওভারটি করেন আরাফাত সানি। প্রথম বলটি ছিল অফ-স্পিন। বারেসি ঠিকমত খেলতে পারেনি। ডট বল। দ্বিতীয় বলটি তেমন স্পিন হয়নি। বারেসি লেগ স্কয়ারে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। তৃতীয় বলটি ছিল একটু হাফভলি টাইপের। মাইবার্গ সেটিকে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারি মারেন। চার হয় সেটি। চতুর্থ বলটি খুব বাজে ডেলিভারি ছিল। লেগস্টাম্পের বাইরে ফুলটস বলটি সরাসরি মাইবার্গের প‌্যাডে লেগে ফাইন লেগে যায়। এটি একটি লেগ বাই অতিরিক্ত রান। পঞ্চম বলটি ছিল মিডল স্টাম বরাবর কিছুটা ফ্লাট। বারেসি সেটিকে লং অফে ঠেলে দিয়ে এক রান নেন। ষষ্ঠ বলটি ছিল পঞ্চম বলের মত মিডল স্টাম বরাবর কিছুটা ফ্লাট। মাইবার্গ স্কয়ার লেগে ঠেলে দেন। এটি ছিল একটি ডট বল।এরপর ইনিংসের তেরোতম ওভারটি করেন আবার আরাফাত সানি। প্রথম বলটি রিভার্স সুইপ করেছিল। ব্যাটসম্যান পিটার বোরেন থার্ডমানে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। দ্বিতীয় বলটি ছিল কিছুটা ফ্লাট তারপর নিচু হয়ে যায়। ব্যাটসম্যান টম কুপার এটি খেলতে পারেননি। এটি ছিল একটি ডট বল। তৃতীয় বলটি ছিল মিডল স্টাম্পে কিছুটা ফ্লাট। কুপার লং অনে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। চতুর্থ বলটি গুড লেন্থ ডেলিভারি ছিল। ব্যাটসম্যান বোরেন কিছুটা সামরে এসে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলটি তার প‌্যাডে লেগে কভারে চলে যায়। ব্যাটসম্যানরা দ্রুত একটি রান নেন। পঞ্চম বলটি ছিল মিডল স্পাম্প বরাবরা কিছুটা ফ্লাট। কুপার লং অফে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। ষষ্ঠ বলটি বোরেন সুইপ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলটি ব্যাটে না লেগে প‌্যাডে লাগে। একটি ডট বল। এরপর ইনিংসের অষ্টাদশ ওভারটি করেন তাসকিন। প্রথম বলটি গুড লেন্থ ডেলিভারি। ব্যাটসম্যান ঠিকমত খেলতে পারেননি। ব্যাটসম্যান পিটার সিলার পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। দ্বিতীয় বলটি ছিল ইয়র্কর। কিছুটা লেগ সাইড। বলটি কুপারের বুটে লেগে গড়িয়ে যায়। ততক্ষণে একটি রান। তৃতীয় বলটি ছিল চমৎকার ইয়র্কর। এটিও ব্যাটসম্যান সিলারের প‌্যাডে লাগে। লেগ বাই একটি রান। চতুর্থ বলটি কুপার শর্ট ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। পঞ্চম বলটি ছিল আবারো চমৎকার ইয়র্কর। ব্যাটসম্যান সিলার কোনোমতে এটাকে ঠেকান। বল চলে যায় পয়েন্টে। একটি রান। ষষ্ঠ বলটিও ছিল পারফেক্ট ইয়র্কর। কুপার এটাকে কভারে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। এই সময় ধারা ভাষ্যকাররা বলছিলেন যে, এই ওভারটি ম্যাচ উইনিং ওভার। কারণ তখন নেদারল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৮ বলে ৩৯ রান। কিন্তু ব্যাটসম্যান সিলার আর কুপার মাত্র ছয়টি রান নিতে পেরেছিলেন। ইনিংসের ঊনিশতম ওভারটি করেছিলেন আল-আমিন। কুপারের উইকেটটি নিয়েছিলেন। কিন্তু দিয়েছিলেন ১৬টি রান। ইনিংসের শেষ ওভারে নেদারল্যান্ডের ৬ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। বল করতে আসেন তাসকিন। প্রথম বলে মুদাসসর বুখারি দুই রান নেন। পরের বলটি ছিল ইয়র্কর। বুখারি বলটি লং অনে পাঠিয়েছিলেন। একটি রান নেবার পর অপর ব্যাটসম্যান সিলার কল করায় দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে বুখারি রানআউট হন। তৃতীয় বলটি নতুন ব্যাটসম্যান লগন ভন বিক লং অনে ঠেলে দিয়ে দুই রান নেন। চতুর্থ বলটি বিক মিউ-উইকেটে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। পঞ্চম বলটি সিলার হিট করতে গিয়ে মিস করেন। বল লাগে সিলারের প‌্যাডে। লেগ বাই একটি রান। ষষ্ঠ ও ইনিংসের শেষ বলটি বিক কভারে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। নেদারল্যান্ড ৭ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৪৫ রান তুলতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী হয়। তাসকিন ৪ ওভার আর সানি ২ ওভার বল করেছেন। ম্যাচ শেষে ভারতের আম্পায়ার সুন্দরম রবি আর অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার রড টাকার অফিসিয়ালি তাসকিন আর সানির বোলিং অ্যাকশান নিয়ে রিপোর্ট করেন। নিয়ম অনুযায়ী একটি ওভারে একজন বোলার একটির বেশি বাউন্স দিতে পারবে না। তাসকিন ৪ ওভার বল করে একটি মাত্র বাউন্স দিয়েছিলেন। আর সানি'র দুই ওভার বোলিংয়ের একটি মাত্র ব্যাড ডেলিভারি ছিল। পুরো ম্যাচ রিভিউ করে দেখা যায় দুই মাঠ আম্পায়ার অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশানকে অবৈধ করার জন্য এই নালিশ দেন। কারণ তাসকিন ও সানি উইকেট না পেলেও নেদারল্যান্ড হেরেছে আসলে এই দুই বোলারের ভালো বোলিং করার কারণে। আসল রাজনীতিটা এখানেই। টি২০ খেলায় ইউকেটের চেয়ে ইকোনোমিক বোলারই সেরা। কারণ রানটা এই ইকোনোমিক বোলাররা আটকে দেন। তাই তাসকিন আর সানিকে টার্গেট করেন টি২০ বিশ্বকাপ থেকে বের দিতে। আর কে না জানে দুই জন ইকোনোমিক বোলারকে হারিয়ে বাংলাদেশের বোলিং শক্তির ধারটা অনেকটা কমে যাবে। ফলে কোয়ালিফাইয়িং রাউন্ড থেকেই এবারের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভয়ংকর দল বাংলাদেশকে হটিয়ে দিতে পারলেই সুপার ১০ গ্রুপে আর বাংলাদেশ থাকবে না। তখন সুপার ১০ গ্রুপের ভারত বা অস্ট্রেলিয়াকে আর বাংলাদেশের সাথে খেলতে হবে না। কিন্তু বিধি বাম। তামিম ইকবাল সুপারমানব হিসাবে আর্বিভূত হন। ৮ মার্চ ধর্মশালায় আয়ারল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পণ্ড হয়। যদিও কার্টেল ম্যাচের ১২ ওভারের মধ্যে ৮ ওভারে তামিম ঝড়ে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ৯৪ রান। পরে আবার বৃষ্টি হানা দিয়ে আয়ারল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যজনক পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ছিল ১২ মার্চ ধর্মশালায়। ওমান ও বাংলাদেশ উভয় দলের ছিল সমান ৩ পয়েন্ট। কিন্তু রান রেটে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। সেই ম্যাচে ওমান টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায়। তামিম ঝড়ে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৮০ রান। তামিম ইকবাল করেন ৬৩ বলে দৃষ্টিনন্দন অপরাজিত ১০৩ রান। তারপর সেই বৃষ্টির ছোবল। তারপর কার্টেল ম্যাচে ম্যাচ নির্ধারণ হয় ১৬ ওভার। ১৬ ওভারে ওমানের জয়ের টার্গেট হয় ১৫২ রান। খেয়াল করুন ৪ ওভার বল কাটা হয়েছিল। আর বাংলাদেশের রান কাটা হয়েছিল ২৮ রান। এখানেও ডাকওয়ার্স লুইস মেথডে এক ধরনের কেলেংকারি। ভাগ্যিস বাংলাদেশ ১৮০ রান তুলেছিল। নইলে তো পুরোটাই কাটা পরতো। ১৬ ওভারে জয়ের জন্য ওমানকে করতে হবে ১৫২ রান। কিন্তু ৭ ওভার খেলা শেষে ওমান ২ উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছিল মাত্র ৪১ রান। আবারো বৃষ্টির ছোবল। এবার একটু খেয়াল করুন, এবার ওমানের জন্য নতুন টার্গেট ঠিক করা হলো ১২ ওভারে ১২০ রান। মাত্র ৪ ওভারের জন্য এবার বাংলাদেশের রান কাটা হয়েছে ৩২টি। শেষ পর্যন্ত ৬৫ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ওমানের ১২ ওভারের নতুন টার্গেট শেষ হয়। বাংলাদেশ ৫৪ রানে বিজয়ী হয়। এখানে খেয়াল করুন, ওমানকে জেতানোর জন্য ডাকওয়ার্স লুইস মেথডে দুইবার চার ওভার করে বাংলাদেশের ৮ ওভার থেকে মোট ৬১ রান কাটা হয়েছিল। যে ওমান দলটি ৯ উইকেট হারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল মাত্র ৬৫ রান, তাদের জেতানোর জন্য আইসিসি কি প্রাণান্ত চেষ্টাই না করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টায় কোনো লাভ হয় নাই। এ-গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যোগ্যতম দল হিসাবেই বাংলাদেশ সুপার ১০ মূল রাউন্ডে চলে আসে। বাংলাদেশের এই সুপার ১০ রাউন্ডে আসাটা সোজা কথায় পছন্দ হয়নি আইসিসি'র। এখন কিছু সোজা ও সরাসরি কথা বলে আমার এই লেখা শেষ করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যদি ওমানের কাছে বাংলাদেশ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতো, তাহলে আইসিসি তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশানকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বৈধ ঘোষণা করতো। যেহেতু বাংলাদেশ সুপার ১০ পর্বে চলে এসেছে। যেখানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এবার আসুন প্রথম ম্যাচে ভারত নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় তাসকিন আর সানির কপাল আরো পুড়লো। কারণ, ভারতের পরের ম্যাচটি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানের সাথে। যদিও পাকিস্তানের সাথে সুপার ১০ পর্বে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হারে। কিন্তু আয়োজক ভারতে অন্তত সেমি-ফাইনাল বা ফাইনাল পর্যন্ত না ওঠাতে পারলে ভারতের মাটিতে অন্য খেলাগুলো দর্শক হারাবে। আইসিসি'র লাভের মউ পিপড়ায় খাবে। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত খেলতে নামার আগেই পথের কাঁটা বাংলাদেশকে এক ঘা দেখিয়ে নিল। টুর্নামেন্ট থেকে অবৈধ বোলিং অ্যাকশানের জন্য খগড় তুলে ধরলো তাসকিন আর সানির উপর। এখানে আইসিসি'র আরেক মাতুব্বর অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ রানে হেরেছে। তারমানে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ানে লাইনে এখনো নিউজিল্যান্ড এগিয়ে। দ্বিতীয় স্থান নিয়ে টানাটানি করবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশ। তো আর কী বাংলাদেশকে ছাড় দেওয়া যায়? তাই বাংলাদেশ দলের মনবল ভেঙ্গে দিতেই আইসিসি ভারত পাকিস্তান খেলা শুরু হবার আগেই আর কোনো রিস্ক নিতে চায়নি। কারণ ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের রেকর্ড ভালো। কোনো কারণে যদি ভারত পাকিস্তানের বিপক্ষে ধরা খায়, তাহলে সুপার ১০ পর্বে গ্রুপ-২ থেকে প্রথমে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা ছিল এবারের টি২০ বিশ্ববাপ আয়োজকের ভারতের। তাই পথের কাঁটা বাংলাদেশকে আগেই ঘায়েল করে ভারতীয় শিবিরে কিছুটা মনবল চাঙ্গা করেছে আইসিসি।ভারত আইসিসি'র সেই চাওয়াকে খানিকটা মিটিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ৬ উইকেটে জিতে এখনো বেশ ভালো ভাবেই টুর্নামেন্টে টিকে আছে। ভারতের খেলা বাকি দুইটি। একটি ২৫ মার্চ ব্যাঙ্গালোরে বাংলাদেশের সাথে। অপরটি ৩১ মার্চ মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার সাথে। ভারতের এই দুই ম্যাচেই জয় চাই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার? ২৫ মার্চ বাংলাদেশের সাথে ভারত আইসিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নীলনকশার পাতানো ম্যাচ খেলবে। এদিন বাংলাদেশের জন্য ভাগ্য সহায়তা না করলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার দিন। তখন ভারতের সামনে বাকি থাকবে কেবল অস্ট্রেলিয়া। তার আগে আসি অস্ট্রেলিয়ার আর ম্যাচ বাকি ৩টা। ২২ মার্চ ব্যাঙ্গালোরে বাংলাদেশের সাথে। ২৬ মার্চ মোহালিতে পাকিস্তানের সাথে। আর ৩১ মার্চ মোহালিতে ভারতের সাথে। আইসিসি'র চোখ থাকবে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের ম্যাচের দিকে। যে ম্যাচটি ২৩ মার্চ মোহালিতে। এটি যদি নিউজিল্যান্ড জিতে যায়। তখন নিউজিল্যান্ড গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান। আর যদি পাকিস্তান জেতে তখন নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের পয়েন্ট থাকবে সমান। আইসিসি আসলে সেটিই চায়। কারণ তখন অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সামনে তখনো টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াই থাকবে। কারণ বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি হবে ২৮ মার্চ ইডেন গার্ডেনে। কারণ ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলে পয়েন্ট হবে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের সমান। আর যদি নিউজিল্যান্ড পাকিস্তানের সঙ্গে জেতে, তাহলে ভারত হয়ে যাবে গ্রুপে রানার-আপ। তখন অস্ট্রেলিয়াকে আর পাত্তা দেবে না। তখন এক মাতুব্বর চিৎপটাং। কিন্তু যদি পাকিস্তান যদি জেতে তখনো দুই মোড়লের সম্ভাবনা থাকবে বাকি দুই ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার। তাই এখন সবচেয়ে আতংক এখনো বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট থেকে এখনো যদি বাকি তিন ম্যাচ জিতে যায়, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান কিন্তু বাংলাদেশ হবে। তখন মোড়লদের আর খাওয়া নাই। বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ড গ্রুপ-২ থেকে সেমিফাইনালে যাবে। আর যদি বাংলাদেশ বাকি ৩টা ম্যাচের কোনো টা হারে তাহলে মোড়লরা আবার ঘুটি পাকাতে থাকবে। মোদ্দাকথা, ভারতকে টুর্নামেন্টে সেমি-ফাইনালের আগে বিদায় করে আইসিসি মুনাফা হারাতে চায় না। তাই বাংলাদেশের মনবল ভেঙ্গে দিতেই তাসকিন ও সানিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় একুট ক্লিয়ার করি। তাসকিনের ৪ ওভার বোলিং আর আরাফাত সানির ২ ওভার বোলিং নিয়ে তো দুই আম্পায়ারের সন্দেহ। সেখানে চেন্নাইয়ে তাসকিনকে দিয়ে ৯টা বাউন্স করানো হয়েছে পরপর। যেখানে একজন বোলার এক ওভারে একটির বেশি বাউন্স দিতে পারে না। সেখানে পরপর ৯টি বাউন্স দিয়ে আইসিসি যে পরীক্ষাটি নিয়েছে, সেটি আইসিসি নিজেই তাদের নিজেদের বানানো আইন ভেঙ্গে করেছে। আর সানি একটি মাত্র বাজে ডেলিভারি দিয়েছিল। সেটির জন্য তাকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে। আচ্ছা, ভারতের অশ্বিন, জাদেজা, বুমরা, পান্ডিয়া এদের বোলিং অ্যাকশন পুরাই ঠিক আছে তো? আমার কাছে কিন্তু এই চার বোলারের কিছু বল সন্দেহ লেগেছে। আইসিসির আম্পায়ারদের নজরে আসলো না কেন?এবারের টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যদি অপর তিনটি ম্যাচের সবগুলোও হারে আমি অন্তত অবাক হব না। কারণ এবারের এই টি২০ বিশ্বকাপ হচ্ছে আইসিসি'র মুনাফা লোটার পাতানো খেলা। সেই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভয়ংকর দলকেই তারা টার্গেট করেছে। তাই বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট থেকে সবার আগে বিদায় নিলে আমি অন্তত অবাক হব না। কারণ, বাংলাদেশকে হারানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে সেই নেদারল্যান্ডের সাথে প্রথম ম্যাচ খেলা থেকেই। এখনো বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে আছে, এটাই বরং বড় বিস্ময়। আশার কথা যে আমাদের মুস্তাফিজ ভারতের বিপক্ষে আগামী ম্যাচে খেলতে পারবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর যদি মুস্তাফিজ একবার ফিট হয়ে যায়। তখন অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ডকে কী পরোয়া করার কিছু আছে? প্রয়োজনে রুবেলকে উড়িয়ে নেওয়া হোক। সামনে আমি মুস্তাফিজ কার্টার আর রুবেলের বোলিং দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। আইসিসি আমাদের কয়জন তাসকিন আর সানিকে বাদ দিকে। বাংলার ঘরে ঘরে হাজারো মুস্তাফিজ-রুবেলরা তৈরি হয়ে আছে। আসো আইসিসি। আমাদের লড়াইটা ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের সাথে আর নেই। আমাদের মূল লড়াইটা এখন কার্যত আইসিসির সাথে। আরেকটা বিষয় আমার কিছু সন্দেহ হয়, ফেসবুকে তাসকিনের হাতে এমএস ধোনি'র যে ছবিটা ভাইরাল হয়েছিল, সেটি হতে পারে ভারতের দৃষ্টিতে তাসকিনকে শিকাড় করার একটা জঘন্য নির্মম চক্রান্ত। কারণ আইসিসি'র মোড়ল তো ওরাই। অতএব সাধু সাবধান!!.......................................২০ মার্চ ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:১১
false
rg
অমর একুশে বইমেলা নিয়ে আমার কিছু প্রস্তাব!!! বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৬ বছর হয়ে গেছে। আমাদের অমর একুশে বইমেলার বয়সও প্রায় ৪৫ বছর। অথচ আমরা এখনো একটি গুছানো বইমেলা করতে সামর্থ্য দেখাতে পারিনি। অমর একুশে বইমেলা নিয়ে আমি এখানে কিছু যৌক্তিক প্রস্তাব পেশ করছি। আশা করি আগামীতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও বাংলা একাডেমি এবং অংশগ্রহণকারী প্রকাশকগণ বিষয়গুলো যথাযথভাবে আমলে নেবেন।১. অমর একুশে বইমেলাকে দুইভাগ করা চলবে না। বইমেলা হবে একভাগে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে স্টল বরাদ্দ দোওয়ার পাশাপাশি, একাডেমি'র ভেতরের পুরো অংশটা রাখা হোক বইমেলার জন্য। এতে জায়গা সংকটের দোহাই আর চলবে না।২. বাংলা একাডেমি ও শিশু একাডেমি ছাড়া অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও বা এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া চলবে না।৩. একাডেমি'র মাঠে যেখানে বছরের পর বছর প্রবন্ধ পাঠের মস্করার ব্যর্থ আয়োজন করা হয়, ওটা বইমেলার মাঠ থেকে দয়া করে একাডেমির ভেতরে কোনো হলে নিয়ে যাওয়া হোক। বইমেলার সময় সকল অনুষ্ঠান সেই হল থেকে প্রচার করা হোক।৪. প্রবন্ধ পাঠের ওই মাঠটিসহ নজরুল মঞ্চের সামনের জায়গাটি কেবল শিশু কর্নার করা হোক। পাশাপাশি লিটল ম্যাগ কর্নারে বহেড়াতলায় যাবার জন্য চারপাশ খোলা রাখা হোক।৫. একাডেমি'র ভেতরে কোনো খাবারের স্টল বরাদ্দ দেওয়া চিরতরে বন্ধ করা হোক। খাবারের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হোক উদ্যানে। আর বইমেলা চলাকালীন উদ্যানে প্রবেশ ও বাহির হবার জন্য কয়েকটি অস্থায়ী গেট করা হোক।৬. বইমেলায় প্রবেশ ও বাহির হবার জন্য টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের পাশাপাশি, উদ্যান থেকে কয়েকটি আলাদা আলাদা অস্থায়ী প্রবেশ ও বাহির গেট করা হোক।৭. মান উত্তীর্ণ ও বাছাইকৃত মোট চারশো জন প্রকাশকের জন্য অমর একুশে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হোক। যারা একুশে বইমেলায় নোট বই বা পাইরেসি বই বিক্রি করার জন্য স্টল বরাদ্দ পায়, তাদের বরাদ্দ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।৮. টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশে কেবল দুই সারি স্টল বরাদ্দ করা হোক।৯. বইমেলার সকল প্রবেশ পথে স্টল নম্বরসহ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মানচিত্র স্থাপন করা হোক।১০. বইমেলায় কোনো গাড়ি প্রবেশ করার ব্যাপারে মেলা চলাকালীন সময়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।১১. বইমেলায় যাবার জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করা হোক। যে বাসগুলো চারুকলার সামনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি'র বাসভবনের সামনে, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিউটিট এবং কার্জন হলের সামনে বইমেলায় আগতদেরকে ড্রপ করবে এবং বইমেলা শেষে তুলে নেবে।১২. সকল প্রাইভেট কারের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুপার্কের পাশের খোলা রাস্তায় পার্কিং ব্যবস্থা করা হোক। বাকি পথুটুকু গাড়িওয়ালারা পায়ে হেঁটে যাবেন। যে কারণে উদ্যান থেকে বইমেলায় বেশ কয়েকটি প্রবেশ পথ ও বাহির পথ রাখতে হবে।১৩. বইমেলার সময় করা হোক চারটা থেকে রাত দশটা। ছুটির দিন সকাল দশটা থেকে রাত দশটা।১৪. বইমেলার জন্য পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হোক উদ্যান অংশে।১৫. বইপ্রেমী, প্রকাশক, লেখকসহ বইমেলায় আগত সবার জন্য ফ্রি পানি খাবার যথেষ্ঠ ব্যবস্থা রাখা হোক প্রবেশ ও বাহির পথের মুখে মুখে বা সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন কর্নারে। বিভিন্ন কর্নারে কফি নয় কেবল চায়ের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হোক।১৬. একটি স্থাপতি প‌্যানেল দিয়ে পুরো এলাকার মানচিত্র করে সুনির্দিষ্ট নকশায় বইমেলার অস্থায়ী স্টল নির্মাণ করা হোক।১৭. পুরো অমর একুশে বইমেলাটি একটি দক্ষ স্থাপতি প‌্যানেল দিয়ে নকশা করা হোক। আর সেই নকশা অনুযায়ী প‌্যাভেলিয়ান ও অন্যান্য ছোট বড় স্টল বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। যাতে কোথাও কোনো অনাকাঙ্খিত জটলা তৈরি হতে না পারে। বিশেষ করে বড় বড় প্রকাশনার স্টলগুলো সেভাবে বিন্যস্ত করা হোক।১৮. বইমেলার পুরো অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইট থাকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হোক।১৯. অমর একুশে বইমেলায় স্টল বরাদ্ধের ব্যাপারটি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হোক। যাতে প্রকাশকরা সময় নিয়ে ঠিক ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই তাদের নতুন প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে পুরোদমে বইমেলায় যোগদান করার সুযোগ পায়।২০. বইমেলায় সব ধরনের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের বিষয়টি একাডেমির নির্ধারিত হলে নির্দিষ্ট ফি'র বিনিময়ে করা হোক। আর প্রত্যেক বইয়ের জন্য সময় বরাদ্দ করা হোক পাঁচ বা দশ মিনিট। যদি কেউ এই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারটি লংঘন করে, তাকে পাঁচগুণ জরিমানা করা হোক। সোজা কথায় কেউ যদি এক হাজার টাকা অ্যাডভান্স জমা দেন, তাহলে একাডেমির নির্দিষ্ট হলে তার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে। কিন্তু সময় (টাইম-বার) লংঘন করলে তাকে পাঁচগুণ মানে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হোক।২১. যে সকল মিডিয়া বইমেলা সরাসরি সম্প্রচার করতে চায়, তাদের উপর বড় অংকের ফি ধার্য করা হোক। আর তাদের নকশা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট জায়গায় বরাদ্দ দেওয়া হোক।২২. বইমেলার প্রবেশপথ ব্যতিত বইমেলার ভেতরে কোথাও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বন্ধ করা হোক। প্রয়োজনে প্রবেশপথে আরো কঠোর চেকিং ব্যবস্থা চালু করা হোক। কিন্তু বইমেলার ভেতরে পুলিশের উপস্থিতি বন্ধ করা হোক!২৩. বইমেলার ভেতরে লেখকদের ও বইপ্রেমীদের জন্য আলাদা আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হোক। লেখকদের আড্ডার স্থলে কোনোভাবেই দর্শকদের বসার ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।২৪. প্রকাশকদের স্টলে লেখকদের স্থায়ীভাবে বসার ব্যাপারটি কঠোরভাবে বন্ধ করা হোক। পাঠকদের দায়িত্ব দেওয়া হোক, তাদের নিজেদের পছন্দের বইটি কেনার। আর যদি কেউ লেখকের অটোগ্রাফ নিতে চায়, সে বই হাতে লেখকদের আড্ডা স্থলে লাইনে দাঁড়াক।২৫. বইমেলার সময় বইমেলার ভেতরে কোনো মন্ত্রী বা ছাত্রনেতা যাতে মিছিলের মত ডিসটার্বিং জিনিস আমদানি করতে না পারে, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।বাংলা একাডেমি চাইলে এ বিষয়ে আমি আরো বিস্তারিত বক্তব্য পয়েন্ট আকারে যুক্তিসহকারে ব্যাখ্যা করতে রাজি আছি। এভাবে আগামী ২০১৮ সালের অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করে দেখুন, বিষয়টি কত সহজে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে। এলোমেলা হ-য-ব-র-ল অবস্থায় আমরা আর কোনো বইমেলা দেখতে চাই না। অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। তাই এটিকে সুন্দর ও গুছানো একটি বইমেলায় রূপদানের জন্য সকল মহল আন্তরিক হলেই কেবল সম্ভব। 'শ্যাম রাখি না কূল রাখি' দিয়ে অমর একুশে বইমেলার মত একটি মাসব্যাপী বইমেলা আয়োজন করা সত্যি সত্যিই কঠিন। আমার প্রত্যাশা থাকবে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকগণ উপরে উল্লেখিত আমার পয়েন্টগুলো যথাযথভাবে বুঝবেন এবং সে অনুযায়ী আগামী বইমেলা আয়োজনের প্রতি সদয় আন্তরিকতা দেখাবেন।বন্ধুরাও আমার পয়েন্টের সঙ্গে আরো ভালো পয়েন্ট যোগ করুন। যাতে আগামী অমর একুশে বইমেলাটি আরো সুসজ্জিত, নিয়ন্ত্রিত এবং সুন্দর হতে পারে। অমর একুশে বইমেলা অমর রহে। বই পড়ুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন।বিনীতরেজা ঘটক১ মার্চ ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১
false
hm
ওয়াহে গুরুজি কা খালসা গত কয়েক মাস ধরেই ডকুমেন্টারি দেখছি কাজের ফাঁকে বের করা সময়টুকুতে। নানা বিচিত্র সব বিষয়ের ওপর বিচিত্রতর তথ্যচিত্র তৈরি হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে, দুষ্টমতি লোকেরা কপিরাইটের তোয়াক্কা না করে সেগুলো ইন্টারনেটের নানা অন্দরেকন্দরে আপলোড করে রেখেছে। এই পোস্টটিও তেমনি কয়েকটি ডকুমেন্টারির প্রতিক্রিয়া। ইন্দিরা গান্ধী আর মার্গারেট থ্যাচার সম্পর্কে আমার বাবা কিছুটা বিদ্বেষমিশ্রিত শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু সংবাদ যেদিন টিভিতে প্রচারিত হয়, সেদিন তাঁর হতচকিত চেহারাটা আমার স্মরণে আছে, যদিও আমি তখন শিশু ছিলাম। ইন্দিরা গান্ধী, এরশাদ, থ্যাচার ... এই নামগুলো টিভির অন্যান্য চরিত্রের মতোই ছিলো, আমার বোধে তখনও তারা বাস্তব আকার পায়নি। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর কয়েকদিন খুব তোলপাড় চললো আশেপাশে, প্রবল ইন্দিরাবিদ্বেষী প্রতিবেশীরা হাসিমুখে তার শিখ দেহরক্ষীর প্রশংসা করতে লাগলেন, এবং নানা গুরুত্বপূর্ণ খেলাধূলার ভিড়ে ইন্দিরা গান্ধীর নামটা কিছুদিনের মধ্যে আমার চেতনায় আবার ফিকে হয়ে গেলো। এর সাত বছর পর রাজীব গান্ধীর মৃত্যুসংবাদ যখন টিভিতে প্রচারিত হলো, তখন আবার ইন্দিরা ফিরে এলেন আলোচনায়। ইন্দিরাবিদ্বেষী প্রতিবেশীরা এবার লিবারেশন টাইগার্সের প্রশংসায় আত্মহারা হলেন, যাক, পোলাটারেও ছাড়ে নাই। কেন ইন্দিরা গান্ধীর ওপর আশপাশের লোকে ক্ষ্যাপা, সেটা বুঝতে আমার আরো সময় লেগেছে। কিন্তু ইন্দিরা হত্যার পটভূমি নিয়ে কেন যেন আমি কখনোই উৎসাহ নিয়ে পড়াশোনা করিনি। ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে সচেতন হওয়ার বয়সটায় আরো আগ্রহকাড়া বিষয় ছিলো, সেগুলোর পেছনে সময় দিয়েছি। এ কারণেই গত এক সপ্তাহ ধরে অবসরটা ব্যয় করলাম ইন্টারনেটে শিখ পরিস্থিতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। ভারতে খাদ্যশস্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনৈতিক চাল ছিলো। ইন্দিরা গান্ধী ব্যাপারটা পছন্দ করতেন না। ষাটের দশকের শেষ থেকেই পাঞ্জাবে তাই সবুজ বিপ্লব শুরু হয়। সিন্ধু নদীর পাঁচটি শাখাই পাঞ্জাবের ওপর দিয়ে প্রবাহিত, আর এই শাখাগুলো উৎপত্তিস্থল যে কাশ্মীরে, সে কাশ্মীরও বহুলাংশে ভারতের দখলে, তাই পাঞ্জাবের চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটানোর মতো ফ্যাক্টরও খুব বেশি ছিলো না। সার আর সেচের কল্যাণে আর নরমান বোরলগের তত্ত্বাবধানে ষাটের দশকের শেষে ভারতের সবুজ বিপ্লব ভারতকে খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়। আশির দশকের শুরুতেই ভারত এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে, আর ভারতের শস্যভাণ্ডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পাঞ্জাব। ১৯৪৭ এ রক্তক্ষয়ী বিভাজনে পাঞ্জাব আর বাংলা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো, রাষ্ট্রবিভাজনের কারণে পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চল বোধহয় এতোটা রক্তপাতের ভেতর দিয়ে যায়নি। বাংলার চেয়েও বহুগুণে বীভৎস ছিলো পাঞ্জাববাসীর এক্সোডাস। মুসলমান, হিন্দু আর শিখ, এই তিন ধর্মের মানুষই পাঞ্জাবে মোটামুটি সমসত্ত্ব মিশ্রণে বাস করতো; নেহরু আর জিন্নাহর দর কষাকষি নিয়ে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ১৯৪৭ সালের শুরুতেই পাঞ্জাবে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। নেহরু ছিলেন অবিভক্ত ভারতের পক্ষে, আর জিন্নাহ চাইছিলেন মুসলমানের দেশ পাকিস্তান, লর্ড ওয়েভেলের পর যখন রাজার তুতো ভাই লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভাইসরয় হয়ে এলেন, তিনি জানালেন, ১৯৪৮ এর জুনের মধ্যেই ভারত থেকে হাত ধুয়ে চলে যাবে ইংরেজ। ভারত আর পাকিস্তানের বিভাজন প্রশ্ন যখন চূড়ান্ত, তখন আলোচনার টেবিলে উঠে এলো পাঞ্জাব আর বাংলা। কী হবে এই দুই প্রদেশের? ব্রিটেন থেকে এলেন এক গম্ভীর আইনজীবী, তার নাম সিরিল র‍্যাডক্লিফ। মাউন্টব্যাটেনের ভাইসরয় তালুকের এক বাংলোতে উঠে সোজা ম্যাপের ওপর পেনসিল টানতে শুরু করলেন তিনি। মাউন্টব্যাটেন এরপর দুটো খারাপ কাজ করেন। তিনি নেহরু আর জিন্নাহকে চমকে দিয়ে ঘোষণা করেন, ১৯৪৮ নয়, ১৯৪৭ এর অগাস্টেই ব্রিটিশ ভারতকে দুই ভাগ করে তাদের হিস্যাদারদের হাতে তুলে দিয়ে চলে যাবে ইংরেজ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তা না হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায় তাকে নিতে হবে। দ্বিতীয় যে খারাপ কাজটা তিনি করেন, দেশ দু'টির সীমান্ত দেশবিভাগের পর প্রকাশ করা হবে বলে জানান। অর্থাৎ, দেশ ভাগ হবে, কিন্তু কোন অংশ কোথায় পড়বে, তা জানা যাবে দুই দেশের পতাকা ওড়ানোর পর। বাংলার ক্ষেত্রে যা মোটামুটি আন্দাজযোগ্য ছিলো, পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে তা ছিলো না। প্রতি গ্রামেই হিন্দু, শিখ, মুসলিম রয়েছে, এক গ্রামে কম হলে পাশের গ্রামে বেশি। ফলে মার্চ ১৯৪৭ নাগাদ পুরো পাঞ্জাবেই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়লো। আবহমান কাল ধরে পাশাপাশি ঘরে বেড়ে ওঠা প্রতিবেশীরা একে অন্যকে দেখিয়েই ছুরিতে শান আর বন্দুকে তেল দেয়া শুরু করলো। মুসলিম, হিন্দু, শিখ, সবাই তখন সম্ভাব্য ভিনদেশী। শিখরা মুসলিম বা হিন্দুর তুলনায় কিছুটা ভিন্ন, ধর্মমতেই তারা প্রত্যেকে যোদ্ধা, এক একজন "সন্ত-সিপাহি", স্পার্টা বা সুইৎজারল্যাণ্ডের মতো প্রত্যেকেই সশস্ত্র। কৃপাণ বহন করা তাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। দেশবিভাগের সময় পাঞ্জাবে শিখরা পশ্চিম প্রান্তে আক্রান্ত হয়েও যেমন লড়াই করেছে, তেমনি পূর্ব প্রান্তে আক্রমণও করেছে। ইতিহাসের এক দুঃখজনক অধ্যায় পাঞ্জাবের এক্সোডাস। ১৯৭১ এ বাংলার এক্সোডাসকে সংখ্যার দিক দিয়ে অতিক্রম করতে না পারলেও, সহিংসতার দিক দিয়ে এই এক্সোডাস অন্যতম। এক মিলিয়ন মানুষ শুধু দেশ পার হতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলো। কেউ ক্ষুৎপিপাসায়, কেউ রোগশোকে, কেউ আক্রান্ত হয়ে। উদ্বাস্তুদের দেশছাড়া হওয়ার পথের কূপগুলিতে বিষ মিশিয়ে রেখেছিলো হিন্দু-মুসলমান-শিখেরা, উদ্বাস্তুদের মিছিলে হামলা করেছে তাদেরই এককালের প্রতিবেশীরা, ভিনদেশগামী ট্রেনের ওপর আক্রমণ করে হত্যা করেছে মানুষকে। দেশভাগের বিরাট ক্ষয়ক্ষতি সয়ে ভারতীয় পাঞ্জাবে কেন্দ্রীভূত শিখরা এরপর প্রতিবেশী হিসেবে পায় হিন্দুদের। পাঞ্জাবে কৃষক সমাজের প্রায় সমস্তটাই ছিলো শিখ, হিন্দুরা কৃষি বাদে বাকি পেশাতে মনোযোগী ছিলো। সবুজ বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি ছিলো শিখ কৃষক। কৃষিতে অর্থনৈতিক সাফল্য শিখ সমাজকে এরপর কিছু জটিল সামাজিক রাজনৈতিক প্রশ্নের সম্মুখীন করে। শিখ ধর্মের পাঁচ নিদর্শন হচ্ছে কেশ, কাঙ্গা (চিরুনি), কাচেরা (শর্টস), কারা (লোহার বালা) আর কিরপান (কৃপাণ)। তার ওপর শিখ ধর্মে ধূমপান বা মদ্যপান নিষিদ্ধ। এদিকে কৃষিকাজে লম্বা দাড়ি আর পাগড়ি খুব একটা এর্গোনমিক নয়। শিখ কৃষকরা সবুজ বিপ্লবের সময় আস্তে আস্তে দাড়ি আর চুল কাটা শুরু করে।সচ্ছল শিখ তরুণ কৃষক যখন চুল ছোটো করে, দাড়ি কেটে বা ছেঁটে বিড়ি বা মদ খাওয়া শুরু করে, তখন শিখ প্রবীণরা অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন। শিখদের কাছে চুলদাড়ি কেবল প্রতীকই নয়, বাহনও। তাই শিখ ধর্মগুরুদের চোখে চুলদাড়ি কেটেছেঁটে যে ছোকরা শিখ বিড়ি খাচ্ছে, তাকে আর শিখ বিবেচনার কোনো কারণ থাকে না। সবুজ বিপ্লবের সময় পাঞ্জাবে তামাক কোম্পানিগুলোও বিরাট ব্যবসা শুরু করে। বিড়ি পিও পাম্প দা তে পানি পিও লাম্প দা (পাম্পের পানি আর ল্যাম্পের বিড়ি খা) শিরোনামে রেড ল্যাম্প ব্র্যাণ্ডের সিগারেটের বিজ্ঞাপনে পাঞ্জাব ছেয়ে যায়, যেখানে কৌশলে কৃষিতে সাচ্ছল্যের সাথে ধূমপানকে এক করে দেখানো হয়। ওদিকে পাঞ্জাবের আদি রাজধানী শিমলা ছেড়ে পাঞ্জাবের রাজকার্য চলে আসে চণ্ডীগড়, যে শহর আবার হরিয়ানার সাথে রাজধানী হিসেবে ভাগাভাগি করতে হয়। পাঞ্জাবের শিখপ্রধান পার্টি অকালি দল কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে টেক্কা দেয়ার জন্যে নতুন সচ্ছল শিখসমাজের সামনে শিখদের অপ্রাপ্তিগুলো প্রচার করা শুরু করে। এককালে যে শিখ সাম্রাজ্য সিন্ধু থেকে শুরু করে দিল্লীর উপকণ্ঠ পর্যন্ত দোর্দণ্ডপ্রতাপে শাসন করেছে, আজ সে নিজের প্রদেশ পাঞ্জাবের একটি টুকরোর ওপর নিজভূমে পরবাসীর মতো বাস করবে কেন, যেখানে সারা ভারতকে সে খাদ্য যোগাচ্ছে? অকালি দল পাঞ্জাবকে নতুন করে সীমায়িত করার দাবি তোলে, যে সীমায় শিখদের সংখ্যাগুরুত্ব বজায় থাকবে। অকালি দলের তৎপরতা সত্তরের দশকের শেষদিকে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসকে নতুন চাল চালতে বাধ্য করে। শিখদের কাছে অকালি দলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র সঞ্জয় গান্ধী কাছে টেনে নেন এক যুবক শিখ ধর্মগুরুকে। তার নাম জার্নাইল সিং ব্রার, কিন্তু লোকের কাছে সে পরিচিত জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে নামে। উদ্দেশ্য, শিখদের মাঝে ডিভাইড অ্যাণ্ড রুল। ভিন্দ্রানওয়ালে নিজেও ধর্মকাতর পরিবারের ছেলে, পড়াশোনা করেছে দমদমি তাক্সালে (তাক্সালকে শিখ কওমী মাদ্রাসা বলা যেতে পারে), মাত্র তিরিশ বছর বয়সেই তাক্সালের প্রধান হিসেবে মনোনীত হয়েছে, যত্রতত্র অনলবর্ষী ওয়াজ করে বেড়ায়। পথভ্রষ্ট শিখ সমাজ যখন চুল ছোটো করছে, দাড়ি ছেঁটে ফেলছে, বিড়ি পান করছে, তখন পাঞ্জাবের গ্রামে গ্রামে ওয়াজ করছে এক তরুণ গুরু, যাকে সবাই সন্ত জ্ঞান করছে। শিখ ধর্মে জীবের কল্যাণে সহিংস হওয়া বাধ্যতামূলক, তাই শিখদের এই অধপতন ঠেকাতে সহিংস মূর্তিতেই বিরাজ করছিলো ভিন্দ্রানওয়ালে। তার চেহারাটিও মনে সম্ভ্রম বা ভয় জাগিয়ে তোলে, সটান লম্বা আবক্ষ দাড়িওয়ালা তলোয়ার হাতে এক যুবক, রক্তচক্ষু মেলে যে মন্দ্রস্বরে সবাইকে লাইনে আসতে বলে। গান্ধী পরিবারের কূট চাল ফল দেয়া শুরু করে, গ্রাম আর শহরের ধর্মভীরু শিখেরা অকালি দল নয়, ভিন্দ্রানওয়ালের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। সমস্যা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে এসে, যখন শিখ ধর্মের একটি শাখা, নিরঙ্কারীদের বিরুদ্ধে মিছিলে হামলায় তেরো জন শিখ মারা যায়। হরিয়ানা প্রদেশে নিরঙ্কারী নেতা গুরবচন সিংকে বেকসুর খালাস দেয়া হলে পাঞ্জাবের ক্ষমতাসীন অকালি দলের মুখ্যমন্ত্রী এর বিরুদ্ধে আপিল থেকে বিরত থাকেন। নিরঙ্কারীদের নেতাদের পুলিশি নিরাপত্তায় আইনী সুরক্ষা দেয়া হলে এ নিয়ে শিখ সমাজে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে তখনই অকালি দলের বিপরীতে শিখদের ভরসার জায়গা হিসেবে রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত হয়। গুরবচন সিং এর রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের পর ভিন্দ্রানওয়ালে প্রকাশ্যেই তা উদযাপন করে। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পুলিশের মনে সন্দেহ বাড়ে। এরপর লালা জগত নারায়ণ নামে এক সংবাদপত্র মালিক গুপ্তহত্যার শিকার হয়। জগত নারায়ণ হিন্দু স্কুলে পাঞ্জাবি ভাষায় শিক্ষার বিরুদ্ধে সরব ছিলো। হিন্দু কমিউনিটিকে হিন্দিতে শিক্ষালাভের অধিকার আদায়ে জগত নারায়ণের কাগজ সক্রিয় থাকায় ভিন্দ্রানওয়ালে জগত নারায়ণকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে আসছিলো অনেকদিন ধরেই। এই হত্যাকাণ্ডের পর ভিন্দ্রানওয়ালেকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে ক্রমাগত সহিংসতা চলতে থাকলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্ঞানী জৈল সিং লোকসভায় বলেন, ভিন্দ্রানওয়ালের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বেকসুর খালাস পেয়ে ভিন্দ্রানওয়ালে বেরিয়ে আসে। কিন্তু এখানে একটা ছোটো গণ্ডগোল করে রাখে পুলিশ। মার্ক টালির মতে, পুলিশ ভিন্দ্রানওয়ালেকে গ্রেফতারের সময় তার সারা জীবনে দেয়া যাবতীয় ওয়াজের স্ক্রিপ্ট, যেগুলো তার সেক্রেটারি স্টেনোগ্রাফ করে রাখতো, পুড়িয়ে ফেলে। ভিন্দ্রানওয়ালের কাছে তার ওয়াজ ছিলো তার সন্তানের মতো। জেল থেকে বেরিয়ে ভিন্দ্রানওয়ালে সরাসরি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করে। সব বক্তৃতায় ভিন্দ্রানওয়ালে বলতো, কী আশা করো এই দেশের কাছ থেকে, যারা তোমার সন্তানকে হত্যা করে? ফলাফল দাঁড়ায় এমন, অকালি দল অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে, আর ভিন্দ্রানওয়ালে হয়ে ওঠে সেই আন্দোলনের সহিংস সহযোগী। গোটা পাঞ্জাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে চলে যেতে থাকে। গান্ধী সরকারের নিযুক্ত গুপ্তচরেরাও শিখদের মধ্যে ডিভাইড অ্যাণ্ড রুলের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। ভিন্দ্রানওয়ালে এ সময় হয়ে ওঠে অবিসংবাদিত গুরু, যারা কাছে সব ধরনের সমস্যার সমাধান চেয়ে জড়ো হতে থাকে শিখরা। এমনই এক পরিস্থিতিতে ভিন্দ্রানওয়ালে আস্তানা গাড়ে শিখদের প্রধান ধর্মকেন্দ্র স্বর্ণমন্দিরে। স্বর্ণমন্দিরের অকাল তখত, যেখানে শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থ সাহিবকে দিবাভাগে আনা হয়, সেখানে ধর্মগুরু জ্ঞানী কিরপাল সিঙের আপত্তি উপেক্ষা করেই অস্ত্রশস্ত্র সমেত দুর্গ গড়ে তোলে ভিন্দ্রানওয়ালে। শুধু আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রই নয়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিখ তরুণরা ভিন্দ্রানওয়ালের সাথে যোগ দেয়। তাদের লক্ষ্য তখন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান, শুদ্ধদেশ। রাজীব গান্ধী ভিন্দ্রানওয়ালেকে অকাল তখত থেকে বেরিয়ে আসার ঝাড়ি দিলে ভিন্দ্রানওয়ালে উত্তর পাঠিয়েছিলো, পারলে এসে আমাকে বের করো। পরিস্থিতি তখন অনেকখানি পাল্টে গিয়েছিলো, কারণ ভিন্দ্রানওয়ালের সাথে যোগ দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল সাবেগ সিং। দীর্ঘ সৈনিক জীবনে বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে নানা সম্মানে ভূষিত হলেও এই শিখ অফিসারকে অবসরের একদিন আগে দুর্নীতির অভিযোগ চাকরিচ্যুত করা হয়। শিখরা দাবি করে, সাবেগ সিং ভারতের সেনাপ্রধান টি. এন. রায়নার এক আর্থিক নয়ছয় ধরে তাকে সেই অর্থ ফিরিয়ে দিতে বলায় রায়নার নেতৃত্বে সামরিক হাইকমাণ্ড সাবেগ সিংকে হয়রানি করে। চাকরিচ্যুতির পর রাজনীতিতে নামেন সাবেগ সিং, কেন্দ্রীয় সরকার তখন তার পিছনে লাগে। সাবেগ সিঙের তত্ত্বাবধানেই ভিন্দ্রানওয়ালের অনুসারীরা সামরিক প্রশিক্ষণ পায় বলে ধরে নেয়া হয়। তাই বহু সশস্ত্র শিখ যখন প্রধান শিখ উপাসনালয়কে কেন্দ্র করে সহিংস রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, ইন্দিরা গান্ধী এই পরিস্থিতির সামরিক সমাধানের আদেশ দেন। অপারেশন ব্লুস্টার নামে এই অভিযান পরিচিত। ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে স্বায়ত্বশাসনকামী বিপ্লব দমনে অভিজ্ঞ একজন শিখ অফিসারকেই এই দায়িত্ব দেয়া হয়। নাগাল্যাণ্ড আর মিজোরামে বিদ্রোহীদের পিটিয়ে ঠাণ্ডা করা মেজর জেনারেল কুলদীপ সিং ব্রারকে তার ছুটি বাতিল করে ১৯৮৪ সালের জুনের শুরুতে ডেকে নেয়া হয় চণ্ডীগড়ে। তিনিও ভিন্দ্রানওয়ালের মতোই জাতিতে ব্রার, জন্মও ভিন্দ্রানওয়ালের মতোই ফরিদকোটে। কুলদীপ সিং ভিন্দ্রানওয়ালের অ্যান্টিথিসিস, তার দাড়ি নেই, চুল ছাঁটা, বিড়ি-মদ সবই চলে, বিয়েও করেছেন এক অ্যাংলো মহিলাকে। কুলদীপ সিং ব্রার মীরাটে ৯ ডিভিশনের কমাণ্ডার ছিলেন, তার অধীনের তিন ব্রিগেডের দুটিই ছিলো শিখ সৈনিকদের নিয়ে গঠিত। ৫ জুন তিনি তার সৈনিকদের নিয়ে স্বর্ণমন্দির ঘেরাও করেন। তখন গুরু অর্জন সিঙের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রচুর তীর্থযাত্রী মন্দিরের ভেতরে ছিলো। ভিন্দ্রানওয়ালের অনুসারীরা সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের আদেশের উত্তর দেয়। ব্রারের সৈনিকরা প্রথম দফায় নিহত হয়, ব্রার জবাবে ট্যাঙ্ক ঢুকিয়ে দেন স্বর্ণমন্দিরে। এরপর যা ঘটে তা হৃদয় বিদারক। প্রচুর নিরীহ তীর্থযাত্রী, শিখ বিদ্রোহী ও ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর ভিন্দ্রানওয়ালেকে বুলেটবিদ্ধ ও মৃত অবস্থায় সরানো হয় স্বর্ণমন্দির থেকে। অকাল তখতকে পাওয়া যায় অর্ধ বিধ্বস্ত চেহারায়। এ নিয়ে জেনারেল ব্রার আর তীর্থযাত্রীদের বয়ান দু'রকমের। জেনারেল ব্রারের মতে, তিনি স্বর্ণমন্দিরকে কিছু উপদ্রবের হাত থেকে রক্ষা করে কলঙ্কমুক্ত করেছেন, আর শিখরা তাকে একজন স্বজাতহন্তা হিসেবে দেখে। খুশওয়ন্ত সিং তার পদ্মভূষণ ফিরিয়ে দেন এই অভিযানের প্রতিবাদে। সাবেগ সিং আর কুলদীপ সিং ব্রার, দু'জনেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যুদ্ধ করেছেন। সাবেগ সিং ছিলেন ডেল্টা সেক্টরের প্রধান, আগরতলায় তার সহযোগিতা নিয়েই খালেদ মোশাররফ ও রফিকুল ইসলাম যুদ্ধ করেছেন। কুলদীপ সিং ব্রার মুক্তিবাহিনীকে সাথে নিয়ে জামালপুর-ঢাকা করিডোর দখল করেন ১ মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রির হয়ে। ৫ জুন এর অপারেশনের আগে এই দুই শিখ যোদ্ধা পরস্পরের মুখোমুখিও হয়েছিলেন, যখন ব্রার সাদা পোশাকে মন্দিরের ভেতরে রেকি করতে ঢুকেছিলেন। শিখ ধর্মকেন্দ্রিক খালিস্তান আন্দোলনকে পাকিস্তান সহযোগিতা করেছিলো, হয়তো স্বীকৃতিও দিতো, কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী নির্মমভাবে সেই উঠতি আন্দোলনকে দমন করেন। তার মূল্যও তাকে দিতে হয় নির্মমতার কারেন্সিতেই। দেহরক্ষী বিয়ন্ত সিং অপারশেন ব্লুস্টারের পর অকাল তখতের পরিণতি আর লাশের গন্ধে উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলো, সে বছরই অক্টোবরের শেষদিকে এক সকালে ইন্দিরার স্নিগ্ধ হাসির জবাবে স্যালুটের পর বিয়ন্ত সিং নিজের রিভলভার বের করে পাঁচবার গুলি করেন ইন্দিরা গান্ধীকে। সহকর্মী সতওয়ন্ত সিং ইন্দিরার ওপর সাব মেশিনগানের ম্যাগাজিন খালি করেন। অন্যান্য দেহরক্ষীরা বিয়ন্ত সিংকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করে, আর সতওয়ন্ত সিং আহত হয়। পরে বিচার শেষে সতওয়ন্তের ফাঁসি কার্যকর করা হয় কয়েক বছর পর। কথিত আছে, মহাত্মা গান্ধীর হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দিল্লিতে মুসলমান নিধনযজ্ঞের একটা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলো অহিংস মহাত্মার সহিংস অনুসারীরা, নেহরু এক প্রচণ্ড ধমক দিয়ে হত্যাকারীর পরিচয় জানিয়ে বলেছিলেন, হি ওয়াজ আ ড্যাম হিন্দু! ইন্দিরার হত্যাকারীরা নিজেদের পরিচয় প্রকটই রেখেছে। ইন্দিরার হত্যার পর দিল্লি জুড়ে সংঘটিত হয় ১৯৪৭ এর পর সবচেয়ে বড় সংগঠিত শিখ হত্যাকাণ্ড। কয়েক হাজার নিরীহ নিরস্ত্র শিখকে হত্যা করে দিল্লিবাসীরা। তাদের সহযোগিতা করে পুলিশ। এসব হত্যার মামলা নথিবদ্ধ করেনি পুলিশ, আজও এ নিয়ে সোচ্চার বহু শিখ। কিছুদিন আগে এ নিয়ে প্রশ্নোত্তরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে চিদাম্বরমকে জুতো ছুড়ে মেরেছিলেন এক শিখ সাংবাদিক। দিল্লীতে শিখ হত্যাকাণ্ডে নিহতদের বিধবাদের জন্য এক বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সও রয়েছে। ভিন্দ্রানওয়ালের মৃত্যুর পর খালিস্তান আন্দোলন থামেনি। এর পরও সারা পাঞ্জাব জুড়ে হিন্দু ও নরমপন্থী শিখদের হত্যা করেছে চরমপন্থী শিখরা। আরেক শিখ পুলিশ অফিসার, কাওঁয়ার পাল সিং গিল, পাঞ্জাবের তৎকালীন পুলিশের ডিজি এই আন্দোলনকে কঠোর হাতে প্রশমিত করেন। ১৯৯৩ নাগাদ খালিস্তান আন্দোলনের শরীর থেকে দাঁত নখ খসে পড়ে। রাজনীতির ছকে নানা শত্রুমিত্র তৈরি হয় সময়ের সাথে। যে পাকিস্তানের পাঞ্জাবী মুসলমানের হাত থেকে নিজের কন্যার সম্ভ্রম রক্ষা করতে শিখ পিতা কৃপাণ দিয়ে তার মুণ্ডচ্ছেদ করেছেন ১৯৪৭ সালে, ১৯৮৪তে সেই শিখ পিতার সন্তানরাই আবার অস্ত্র এনেছে সেই পাঞ্জাবীর কাছ থেকে, হিন্দুর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। যে ইন্দিরার নামে হর্ষধ্বনি করেছি আমরা ১৯৭১এ, সেই ইন্দিরার মৃত্যুতেই দাঁত বের করে ১৯৮৪তে হাসতে দেখেছি আমাদের মানুষকে। যে পাঞ্জাবী মুসলমান নিজের ভিটা হারিয়ে শিখ-হিন্দুর হাতে আক্রান্ত হয়ে দেশ ছেড়েছে, সেই পাঞ্জাবী মুসলমান দশ গুণ মুসলমান হত্যা করে ৪৭ এর দাঙ্গার শোধ তুলেছে বাঙালির ওপর। রাজনীতির ছক পাল্টায়, পাল্টায় না শুধু মানুষের অশ্রু আর রক্ত। দিল্লির বিধবা-ভবনে যে শিখ বিধবা তার চার পুত্রের জীবন্ত দগ্ধ হবার দৃশ্যের বর্ণনা করেন, তার অশ্রু আর আর্তনাদের সাথে মিলে যায় সতীশ গুজরালের দেখা অমৃতসরের মুসলমান স্কুলের গণধর্ষিতা মেয়েদের অশ্রু আর কান্না, লাহোরে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ছাড়া হিন্দুর বুকফাটা আর্তনাদ, দুই ভাগ করে টেনে ছিঁড়ে ফেলা শিশুর মৃতদেহের সামনে উন্মাদিনী বাঙালি মায়ের হাহাকার। সবই ঈশ্বরের নামে। ডকুমেন্টারি ১: ১৯৮৪: আ শিখ স্টোরি ডকুমেন্টারি ২: পার্টিশন: দ্য ডে ইন্ডিয়া বার্ণ্ড
false
ij
ঝরে গেল আরও একটা বছর___ একটি সূর্যাস্তের ঠিক কী মানে? যখন নিস্তেজ মৌন রোদ ছড়ায় শহরের গাছগুলির ওপর; যখন কাকের কোলাহল সেই মৌনতাকে খানখান করে ভাঙ্গতে থাকে; যখন দিগন্তের আলো দ্রুত নিভতে থাকে আর ব্যাপক কুয়াশার ভিতর জড়ানো থাকে একটি রাত্রির ইঙ্গিত; যখন একটি শীত শীত দিনের শেষ বেলাকে কেউ ফিসফিস করে বলে:বিদায়। আজ সূর্যাস্তের সময় মনে হবে ঝরে গেল আরও একটা বছর। ঝরে গেল আরও একটা বছর। এই অনুভূতি আমাকে কেমন অবশ করে দেয়। কেননা, জীবন আরও গভীরে গড়াল কিংবা হারাল মহাকালের কিছু মুহূর্তসমষ্টি-যে মুহূর্তসমষ্টি আমি লাভ করেছিলাম জন্মমুহূর্ত থেকেই। সেই মুহূর্তসমষ্টি কি আমার? মহাকালের তরফ থেকে আমাকে সচেতনভাবে দেওয়া হয়েছিল? এই প্রশ্নটিই আমাকে বিব্রত করে দেয়। কেননা, আমি দেখেছি অভাবী নারী ফুটপাথে তার শিশুটিকে নিয়ে অনাহারে কাটাচ্ছে অর্থহীন মুহূর্তসমষ্টি; তবে আমি কেন আমার মুহূর্তসমষ্টিকে সুখি ও শিল্পায়িত করার জন্য অহরহ চেষ্টা করব? আমি কেন নিজেকে নির্বাচিত ও বিশেষ ভেবে উৎফুল্ল হয়ে উঠব? এই বোধ আমার স্নায়ূতন্ত্রকে বিকল করে দিতে যথেস্ট। এবং এই মুহূর্তে গাজায় ইজরেলি বিমান হামলায় নিহত হচ্ছে নিষ্পাপ শিশু, এবং এই মুহূর্তে আমরা ওদের বাঁচানোর উপায় জানি না; এবং এই মুহূর্তে পশ্চিমা বিশ্ব ইজরেলি গনহত্যায় রয়েছে নির্বিকার, এবং এই মুহূর্তে ভারত তার অহিংস মতাদর্শ পরিত্যাগ করে পাকিস্থানে সামরিক অভিযানের কথা ভাবছে, এবং এই মুহূর্তে নির্বাচনের ফলাফল অস্বীকার করে মিসেস খালেদা জিয়া তাঁর ব্যাপক অনুসারীদের অগনতান্ত্রিকতার পাঠ দান করছেন। তা সত্ত্বেও আমি আজ মধ্যরাত্রে প্রবেশ করব ২০০৯-এ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে নতুন এক অধ্যায়ে। আশা করা যায়-যা হবে পূর্বের তুলনায় অধিকতরো গনতান্ত্রিক এবং সত্যিকার অর্থেই ধর্মান্ধতাশূন্য সেকুলার। এমত ভাবনায় আজ সারাদিন আমার গা শিরশির করতেই পারে। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৫
false
ij
লালনের এথিকস শীল হচ্ছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পালনীয় আচরণ। এক কথায় শীল হচ্ছে নৈতিক বিধান। বৌদ্ধদের পঞ্চশীল ও অষ্টশীল নৈতিক বিধান হিসেবে অনন্য। যে কারণে, বৌদ্ধ শীলসমুহ অনেক দিন আগেই জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহিত হয়েছে। বৌদ্ধধর্মেরই অনেক ধ্যানধারনার উপর বাংলার বাউল দর্শন গড়ে উঠেছে । কাজেই বাউলদর্শন নৈতিক বিধান সম্বন্ধে একেবারেই মৌন থাকতে পারে না। উপরোন্ত নীতিবিদ্যা বা Ethics হলো দর্শনশাস্ত্রের এমন এক শাখা-যা নৈতিকতা বিষয়ে আলোচনা করে। এই কারণেই, নীতিবিদ্যা আলোচনা ব্যতীত দর্শনশাস্ত্র চর্চা সম্ভব না। বাউল তথা লালনের একটি গানে বাউলদের নৈতিকতার সরুপটি ফুটে উঠেছে। গান সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন। সত্য সুপথ না চিনিলে পাবিনে মানুষের দরশন। খরিদদার দোকানদার মহাজন বাটখারাতে কম তাদের কসুর করবে যে যম। গদিয়াল মহাজন যেজন বসে কেনে প্রেমরতন। পরের দ্রব্য পরের নারী হরণ করো না পারে যেতে পারবে না। যতোবার করিবে হরণ ততোবার হবে জনম। লালন ফকির আসলে মিথ্যে ঘুরে বেড়ায় তীর্থে তীর্থে সই হলো না একমন দিতে আসলে তার প’লো কম। বয়ান সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন। সত্য সুপথ না চিনিলে পাবিনে মানুষের দরশন। গানের প্রথম চরণেই লালন যা বলা বলে দিয়েছেন। সত্য বলতে হবে আর সুপথে চলতে হবে। কাকে বলছেন লালন? মনকে। মনকে কেন ? কেননা, বুদ্ধ ”ধর্মপদে” মানে, বৌদ্ধদের পবিত্র গ্রন্থ বলেছেন: All that we are is the result of what we have thought: it is founded on our thoughts, it is made up of our thoughts. If a man speaks or acts with an evil thought, pain follows him, as the wheel follows the foot of the ox that draws the carriage. আমি তখন বলছিলাম না: বৌদ্ধধর্মেরই অনেক ধ্যানধারনার ওপর বাংলার বাউল দর্শন গড়ে উঠেছে । সত্য সুপথ না চিনিলে পাবিনে মানুষের দরশন। বাউলেরা জীবনভর দেহের ভিতরের বসবাসরত লোকোত্তর মানুষেরে খোঁজে । এইই বাউলের সাধনা। সেই মানুষকে পেতে হলে সত্য ও সুপথ চিনতে হবে। কাজেই নীতিশাস্ত্র যে বাউলদর্শনের ভিত -কথাটা প্রমাণ করা গেল। অগ্রসর হই। খরিদদার দোকানদার মহাজন বাটখারাতে কম তাদের কসুর করবে যে যম। কথাটা সহজেই বোঝা যায়। সবাইকেই যখন যম (মৃত্যুর) মুখে পড়তে হবে-তখন দুনীর্তি করে কার কী লাভ হে! গদিয়াল মহাজন যেজন বসে কেনে প্রেমরতন। গানটির সবচে রহস্যময় চরণ এটি। এই কথার মানে খাঁটি মানুষকে বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না। প্রেমরতন বা অনাবিল প্রেমের অনুভূতি তার হৃদয়ে জাগ্রহ হয়। চরণটির দ্বিতীয় মানে- গদিয়াল মহাজন হচ্ছে ঈশ্বর-যিনি বসে প্রেমরতন কেনেন। এর অর্থ হল: প্রেমের প্রতিষ্ঠার জন্যই ঈশ্বর বিশ্বজগৎ নির্মান করেছেন ...আর তোমরা প্রেমহীন কর্ম কর! পরের দ্রব্য পরের নারী হরণ করো না পারে যেতে পারবে না। এই চরণটির মানে বোঝা যায় সহজেই। ‘পার’ বলতে লালন সম্ভবত সুখময় অনন্তকে বুঝিয়েছেন। পারে যাওয়াই জীবাত্মার মোক্ষ-মানে মানুষের লক্ষ। যতোবার করিবে হরণ ততোবার হবে জনম। এই চরণে বেদান্ত দর্শনের প্রভাব স্পস্ট। মানবজীবনকে ভালো চোখে দেখা হয় নাই উপনিষদের দর্শনে। কাজেই পূণ্য অর্জন করে যত শীঘ্রি সম্ভব পারে যাওয়া যায় তত ভালো। তালে আর এ ধরায় জন্মিতে হবে না। বাউল দর্শন কি বেদান্ত দর্শন ? না। তাহলে? বেদান্ত দর্শন জগতের শ্রেষ্ঠ অধ্যাত্মবাদী দর্শনের অন্যতম। ইউরোপের দার্শনিক সোপেনহাওয়ার, নিৎসে-এঁদের অবধি প্রভাবিত করেছে বেদান্তদর্শন। বাউলদর্শনে তার কিছু ভাবনার ছায়া পড়াই স্বাভাবিক। লালন ফকির আসলে মিথ্যে ঘুরে বেড়ায় তীর্থে তীর্থে অসাধারণ বাক্য। এই চরণে নিজের সমালোচনা করেছেন লালন। তীর্থে তীর্থে ঘুরে কী লাভ যদি না অন্তরের ময়লা পরিস্কার না হয়। সবশেষে লালন বলেছেন- সই হলো না একমন দিতে আসলে তার প’লো কম। এই এক মন দেওয়াই আসল। মানে? প্রথম চরণ দুটোয় ফিরে যাই- সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন। সত্য সুপথ না চিনিলে পাবিনে মানুষের দরশন। সত্য বলে সুপথে থেকে ভিতরের মানুষের খোঁজ করা-এই হচ্ছে লালনের এথিক্স। ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ গানটি আবদেল মাননাম সম্পাদিত অখন্ড লালনসঙ্গীত থেকে নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৭
false
fe
সামাজিক উন্নয়নে পেশার সৃজনশীলতা সামাজিক উন্নয়নে পেশার সৃজনশীলতাফকির ইলিয়াস========================একটি ছোট্ট সংবাদ।সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীর গ্রেফতার হয়েছেন। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ শুক্রবারের বিশেষ খবর। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা এবং একবছর সাজা প্রাপ্ত বলে ও জানিয়েছেন রমনা থানার উপ-পরিদর্শক মি.জাফর।বোরহান যখন "আজকের কাগজ" এর প্রতিবেদক ছিলেন , আমি তখন আজকের কাগজের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি। একদিন আলাপকালে বোরহান আমাকে বলেছিলেন , ইলিয়াস ভাই পার্মানেন্টলি দেশে আইসা পড়েন ।বলেছিলাম , না ভাই তা হয়তো নানা কারণে হবে না। আজ ভাবছি আবারো, যে দেশে বন্ধু সাংবাদিকরা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হন , সে দেশে আমার মতো ক্ষুদে সাংবাদিকেরগিয়ে মুখ দেখিয়ে লাভ কি ? হা যশ !! হা সাংবাদিকতা !!!!!আমাদের সমাজে আমরা দেখি কিছু কিছু পেশা এবং তা থেকে পেশাজীবীর পদবীটিও একটি বিশেষ ভাবমুর্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তা শুধু একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কাজ হিসেবে নয়, ঐ কাজের সঙ্গে কিছু বিশিষ্ট গুণাবলীর ধারক হিসেবেও। যেমন ‘শিক্ষক’ শব্দটির সঙ্গে সততা, সামাজিক নেতৃত্ব, একইভাবে ‘চিকিৎসক’ শব্দটির সঙ্গে সেবা, মহত্ব এসব গুণাবলী যুক্ত হয়েই ঐসব শব্দ ও পেশায় একএকটি বিশেষ ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল। বাঙালির সমাজ ব্যবস্খায় এক সময় ‘শিক্ষক’ পেশাটি ছিল অত্যন্ত সম্মানীয়। ‘চিকিৎসক’ পেশাটির কথা উঠলেই একজন সেবকের মুখ আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠতো খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে। বর্তমানে সেই ধ্যান ধারণার বিয়োগাত্মক পরিবর্তন হয়েছে।মানুষ এই চলমান সময়ে ‘শিক্ষক’ কিংবা ‘চিকিৎসক’ পেশাজীবিদেরকে আর আগের মতো শ্রদ্ধার চোখে দেখতে দ্বিধাবোধ করেন। এর কারণ কী? কারণ হচ্ছে, এই পেশা দুটিকে কিছু মানুষ খুবই ঘৃণ্য পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। শিক্ষকের যে জ্ঞান-গরিমা থাকার কথা ছিল, তা ধারণ না করে এক-একজন শিক্ষক পরিচিত হচ্ছেন এক-একজন বিদ্যাবিক্রেতা হিসেবে।পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছিল, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার কোচিং সেন্টারগুলোর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্খা নিতে যাচ্ছে। যে সব কোচিং সেন্টার প্রতারণা করে ছাত্রছাত্রী, অভিবাবকদেরকে ঠকিয়েছে কিংবা এখনো ঠকাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্খা নেবে সরকার। প্রাইভেট চিকিৎসা ক্লিনিকগুলোর ব্যাপারেও বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধাত্ম নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছিল।এপর্যন্ত তেমন কোনো ব্যবস্থানেয়নি বর্তমান সরকার।ইউরোপ-আমেরিকাসহ সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এই রেওয়াজ চালু আছে, রোগী যেই হোক তাকে জরুরি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতেই হবে। চিকিৎসার বিল কে দেবে তা প্রাথমিকভাবে বিবেচ্য বিষয় কখনোই হয়নি। অথচ বাংলাদেশে আমরা দেখি মুমূর্ষু রোগী সামনে রেখে দরদাম হাঁকছেন চিকিৎসক।মানুষ স্বপ্ন পূরণের সিঁড়ি হিসেবে বিভিন্ন সৃজনশীল পেশাকে বেছে নেয়। সমাজ লজ্জা পায়, যখন দেখা যায় তেমনি সৃজনশীল কোনো পেশাকে ব্যক্তিগত হীনস্বার্থ হাসিলে কেউ ব্যবহার করছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে ‘সাংবাদিকতা’ পেশাটিকে একটি মননশীল ধারায় রূপ দিতে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু অন্যদিকে এই পেশাকে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার কাজেও ব্যবহার করেছেন কেউ কেউ। সামরিক জান্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাড়ি-গাড়িসহ নানা সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি রাজনীতিকদের খাস আনুকূল্যও নিয়েছেন কেউ কেউ।ভাবতে অবাক লাগে বর্তমানে ধ্বস নামা রাজনীতিকদের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত সাংবাদিক, সম্পাদকরা এখন দুর্নীতিবিরোধী সেজে নানা নসিহত শুনাচ্ছেন বাংলা দেশের মানুষকে। এখন তাদের লেখালেখি, রিপোর্ট দেখলে বুঝার কোনো উপায় নেই এক সময় তারা রাজ সম্পাদক (রাজ্যের পোষ্য সম্পাদক) ছিলেন। এরা আওয়ামী লীগের শাসনামলে যে তরিকা, বিএনপির আমলে জাতীয়তাবাদী তরিকা গ্রহণ করে ‘রাষ্ট্রের কল্যাণে’ নিজেদেরকে ব্রত রেখেছেন। এখন তারা বর্তমান তদারকি সরকারের মুখপাত্র সাজতেও ব্যস্ত।মহামহিম এডওয়ার্ড সাঈদ তার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন,'' পেশাজীবীদের সৃজনশীল এবং সৎ ধ্যান-ধারণাই পারে সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটাতে। সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ববান মানুষ হচ্ছেন সমাজের আইকন। এদেরকে সমাজের ভিতও বলা হয়। যে সমাজে এই ভিত যতো বেশি গভীরে, সে সমাজই ততো শক্তিশালী।''বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা এবং জনগণের আশা-আকান্ঙখা বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায়ে সৎ মানুষের বেষ্টনী নির্মাণ সে জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। মনে রাখতে হবে, যে ছাত্র বিদ্যা বিক্রেতা শিক্ষকের সাহচর্য পায়, সে কখনোই নিজেকে মহানুভবতার আলোয় আলোকিত করতে পারে না। কারণ তার জ্ঞানসীমা হয়ে পড়ে খুবই সীমিত।এখানে ভারতের একটি উদাহরণ টানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের আইটি, প্রযুক্তি, কারিগরি ফিল্ডে ভারতীয় তরুণদের পদচারণা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থলিংক, ডেল কম্পিউটার, এটি এন্ড টি, ক্যাপিটাল ওয়ানসহ অনেক বহুজাতিক কোম্পানি শোরুম, অফিস খুলেছে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে। টল ফ্রি নম্বরে নিউইয়র্কে বসে ফোন করলে, অপারেটর জবাব দিচ্ছে ভারত, ফিলিপিন কিংবা থাইল্যান্ড থেকে। এই যে ব্যবসায়িক মননের বিবর্তন তা সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছার কারণে। গড়ে উঠেছে সৎ পেশাজীবী কর্মশক্তি। একটি প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সততার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের অতি নিকট-প্রতিবেশী ভারত যা পারছে, বাংলাদেশ তা পারবে না কেন? তবে প্রথম কাজটি হচ্ছে সুবিধাবাদী পেশাদারদেরকে দমন করা।-----------------------------------------------
false
fe
গণপ্রত্যাশা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক শক্তির ভূমিকা গণপ্রত্যাশা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক শক্তির ভূমিকাফকির ইলিয়াস======================================= বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল একটি রাজনৈতিক চেতনায়। সেই চেতনার দূরদর্শিতা ছিল। গোটা জাতির মানুষের সমন্বয় ছিল। কিছু রাজাকার বিরোধিতা করেছিল ঠিকই, কিন্তু ওরা টিকে থাকতে পারেনি। জয়ী হয়েছিল বাংলার মানুষ। সেই জয়ের পথ ধরে আজকের এই বাংলাদেশ। মহান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আদিবাসী সকলের অবদান ছিল। রক্তে দিতে হয়েছে সবাইকে। সেই বাংলাদেশে আজো সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের নানাভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারা করছে এসব? ওদের পরিচয় কী? ওরা কি আজো বাংলাদেশের অস্তিত্ব মেনে নিতে পারছে? না পারছে না। আর পারছে না বলেই গেলো কয়েকদিনে গোটা দেশে শতাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কী সেসব মানুষের অপরাধ? আমরা পূর্ণিমা রানীর ইতিহাস ভুলে যাইনি। যারা একাত্তরে এদেশে নারী সমাজকে ‘গনিমতের মাল’ বলে আখ্যা দিয়েছিল- ২০১৩ সালে এই প্রজন্ম আবারো ওদের মুখে থু থু ছুড়ে দিচ্ছে। তারপরও বে-শরম ওসব নালায়েকদের বোধোদয় হচ্ছে না। গুজব ছড়ানো হয়েছে, চাঁদে নাকি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি সাঈদীর ছবি দেখা গেছে! কী আজব প্রচার! এই আধুনিক যুগেও তা মানুষ বিশ্বাস করেছে এবং কেউ কেউ আত্মাহুতিও দিয়েছে- তা বিশ্বাস করা যায়? অথচ তাই হয়েছে। ওরা কিভাবে হামলে পড়েছে, তা দেশের মানুষ দেখেছেন। বাংলাদেশকে বিশ্বাস করলে এদেশের আইন মানতে হবে। বিচার ব্যবস্থার রায় মেনে আইনি প্রক্রিয়ায় তা মোকাবেলা করতে হবে। আপিল তো করা যায়। তা করার আগেই হায়েনারা এভাবে হামলে পড়লো কেন? এই কয়েকদিনে অসংখ্য অমানবিক, পাশবিক কাজ করেছে একাত্তরের হয়েনারা। তা-ব ও লুটপাটের বর্ণনা দিতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (পবিবো) চেয়ারম্যানের ছলছল চোখের ভাষা বলে দিচ্ছিল কী তা-ব চালানো হয়েছে কানসাটের পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দপ্তরে। যারা শুনছিলেন তাদের চোখও ছলছল করে ওঠে। পবিবোর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দীন বলেন- এমন নারকীয় তা-ব জীবনে কখনো দেখেননি। তিনি বলেন, ‘ধ্বংসযজ্ঞে গিয়ে আমি যা দেখেছি তা দেখে কোনো মানুষ কান্না থামাতে পারবে না। ওইসব পরিবার কিভাবে যে দিন কাটাচ্ছে, তা চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না।’ তিনি জানান, কানসাটে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দপ্তর অবরুদ্ধ করে রেখে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে জামাত-শিবির। নিঃস্ব হয়েছেন সেখানে কর্মরত ৪৩টি পরিবার। প্রায় সমস্ত মেশিনপত্র ও মালামাল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তরে এই তা-ব চালায় জামাতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দাবি, তা-বে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার মঈন বলেন, ‘ধ্বংসযজ্ঞের পর বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে ওই অঞ্চলের ৪৫ হাজার গ্রাহক ও ২৩০০ কৃষি সেচ পাম্প। বিদ্যুতের অভাবে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির সেচ বিঘিœত হচ্ছে।’ ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে মঈন বলেন, ‘দুপুর দেড়টার দিকে কিছু হরতাল সমর্থক সেখানে গিয়ে ইট ছোড়ে, ভাঙচুর করে এবং আগুন লাগিয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ সমিতি কার্যালয়ে একসঙ্গে ঢুকে পড়ে। তারা সমিতির কর্মকর্তাদের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বাইরে বের করে দিয়ে লুটপাট শুরু করে। এরপর শুরু হয় অগ্নিকা-।’ ‘যানবাহন, সরঞ্জাম, খুচরা যন্ত্রাংশ, সাবস্টেশন, আবাসিক ও অফিস ভবন, স্টোর ইয়ার্ড, সব দলিল দস্তাবেজ এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে আগুন দেয়া হয়। এভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা একটানা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চলে। জানান তিনি। এ থেকে প্রমাণিত হয়, একজন রাজাকার ওদের কাছে একটি রাষ্ট্রের মানুষের চেয়েও বড়। তা না হলে ওরা রাষ্ট্রের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এভাবে রাষ্ট্রের, গণমানুষের জানমালের ক্ষতি করবে কেন? আমরা দেখছি, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্য একটি মিশন নিয়ে নেমেছে বিদেশেরও কিছু মৌলবাদী মিডিয়া। ‘আল জাজিরা’ নামের মিডিয়াটি যারা এর আগেও ‘আল কায়েদা’কে নানাভাবে সমর্থন করেছে ওরাও মেতেছে বাংলাদেশের আলবদরদের বঁাঁচাতে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামাতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের পক্ষে সাফাই গেয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে আল জাজিরা টেলিভিশন। টিভি চ্যানেলটির অনলাইনেও এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সাবেক রাজনীতিবিদ গোলাম আযম ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি। ৮৯ বছর বয়সী গোলাম আযম হাঁটতে পারেন না, দেখতে পান না, এমনকি শুনতেও পান না। তা সত্ত্বেও ১০ জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক তাকে পাহারা দিচ্ছেন।’ এতে বুঝা যাচ্ছে, রাজাকাররা কতো টাকা ছড়াচ্ছে মিডিয়া কিনে নিতে। মনে রাখা দরকার কেউ ব্যক্তিগত ধর্মকর্ম করলেই তো তার অপরাধ মাফ হয়ে যেতে পারে না। এটা জানার পরও একশ্রেণীর মতলববাজরা বলছেÑ ‘জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত’ করা হচ্ছে। অপরাধী শাস্তি পাবে না- তা তো কোনো জাতিরই কাম্য হতে পারে না। অসভ্যতারও একটা সীমারেখা আছে। একাত্তরে বর্বরতার সেই সীমারেখাও ওরা মানেনি। আর এরপরেও তারা থেমে থাকেনি। একাত্তরের ধর্ষক, লম্পট, খুনি দেইল্লা রাজাকার ওরফে সাঈদী শুধু দেশেই অপরাধ করে ক্ষান্ত হয়নি। এই লোকটি ইংল্যান্ডে গিয়েও দেশের জন্য চরম বদনাম হাসিল করে এসেছিল ২০০৬ সালে। ইসলাম ধর্মের কথা বলে সেখানে এই ধর্মকেই সবার সামনে হেয় করেছিল সাঈদী। সে সময় সাঈদী বলেছিল ‘ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় বোমা মারা একদম সঠিক। ইংল্যান্ড বোমা খাওয়া ডিজার্ভ করে’ তখন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ট্যাবলয়েড ঞযব ঝঁহ সাঈদীকে নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ১৫ জুলাই ২০০৬ সালে। লেখাটির শিরোনাম ছিল- ইধহ ঃযরং নবধংঃ ধহফ করষষ ইৎরঃং ঐধঃব ঈষবৎরপ ষবঃ রহঃড় টক, এখানে সাঈদীকে ‘জানোয়ার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল। এসব তথ্য আর্কাইভে আছে। আমেরিকায়ও সাঈদীর তাফসির মাহফিলে নজরদারিতে ছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিবাদীদের তোপের মুখে সাঈদীর মাহফিল প- হয় অনেক জায়গায়। পরে আমেরিকা সাঈদীকে ভিসা দেয়াই বন্ধ করে দেয়। এসব লিখলে অনেক লেখা যাবে। আজ সময় এসেছে এদের মুখোশ উন্মোচন করে দেশবাসীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসার। আর রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে নিয়ামকের ভূমিকা নিতে হবে। কারণ আইন প্রয়োগ করার মালিক রাষ্ট্র। দেশের জনগণ দাবি জানাবেন। দাবি ন্যায্য হলে তা মেনে, প্রয়োগ রাষ্ট্রকেই করতে হবে। আমরা দেখছি, হরতাল ডেকেছে বিএনপি। আর পিকেটিং করছে আলবদররা। খালেদা জিয়া যেভাবে রাজাকারদের নিজের দল ইজারা দিয়েছেন, তাতে তার দলের ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। একদিকে অহিংস শাহবাগ। অন্য দিকে পরাজিত হায়েনাদের জ্বালাও পোড়াও। যেকোনো দাঙ্গা এড়াতে মুসলমানদের মসজিদে নামাজ পড়ে মন্দির এবং হিন্দুদের মসজিদের নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। তার এই আহ্বান মানবতার বাণীই উচ্চারণ করছে। তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা যখনই বিপদে পড়েছে, তখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করেছে। আমরা মুসলমান ভাইদের বলছি, আপনারা মসজিদে নামাজ পড়ে মন্দির পাহারা দেবেন। হিন্দু ভাইয়েরা মসজিদের নিরাপত্তা দেবেন। যাতে কেউ ধর্মীয় দাঙ্গা বাধাতে না পারে।’ তিনি বলেন, ‘জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারবো। যেখানে ‘সংখ্যালঘু’ নামে কোনো শব্দ থাকবে না, হারিয়ে যাবে জঙ্গিবাদ।’ ডা. ইমরান বলেছেন, ‘গণতন্ত্র মানে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, উপাসনালয়-বসতবাড়িতে আগুন দেয়া নয়। গত কয়েক দিনে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। তারা আমাদের আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলেছিল। কিন্তু সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ তা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। পরে তারা এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক লেবেল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখানে অনেক ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন অংশ নেয়ায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় নেতাদের এটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’ আমি নিজেও মনে করি, বিএনপি যদি ঘাতক দালালদের বিচারের উদ্যোগ নিতো, এ দেশের কোটি মানুষ তা সমর্থন করতেন। কিন্তু তারা তা করেনি, করবেও না। কারণ তারা জানে ডানপন্থী মৌলবাদীদের তোয়াজ না করলে বিএনপি নামে কোনো দলই থাকবে না। তাই জামাত-বিএনপি অনেক আগে থেকেই একীভূত হয়ে আছে একই অঙ্গে। বাংলাদেশের বড় দুই দল এই ইস্যুতে এক হতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। তাই যে কোনো সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ। অন্যদিকে স্বৈরাচারী এরশাদের দল জাতীয় পার্টি সুস্পষ্ট কোনো অবস্থানে যেতে পারছে না। কারণ এরশাদের সেই দূরদর্শিতা নেই, কেমন হতে পারে আগামী দিনগুলো। তাই একাত্তরের মতো প্রজন্মের পক্ষে সকল দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। এ বিষয়ে আমি দুটি প্রস্তাব রাখতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমীপে। ১। দেশের হাক্কানি আলেম সমাজকে একত্রিত করে মওদুদীপন্থী ফেতনাবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কারণ আমরা জেনেছি ওরা চট্টগ্রামে আলেমদেরও হত্যার নীলনকশা করেছিল। এজন্য সরকারি জোরালো উদ্যোগ দরকার। যাতে দেশের সকল মাদ্রাসায় মওদুদীবাদের বিরুদ্ধে প্রজন্ম জেগে ওঠে। একই সঙ্গে কেউ যাতে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে, রিভার্স খেলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে- সে বিষয়েও সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। ২। রাষ্ট্রের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যারা করছে ওদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইন, সন্ত্রাস দমন আইনে বিচার করা হোক । মামলা রুজু করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পুলিশি তৎপরতা জোরদার হলেই অনেক গ্রামই পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। ওরা দাঁড়াবার মাটিই খুঁজে পায় না পায়ের নিচে। বিদ্যুৎকেন্দ্র, ট্রেন, থানা, সরকারি স্থাপনা যারা পোড়াচ্ছে এরা রাষ্ট্রের শত্রু। এদের দমনে সরকারকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। ধর্ম যার যার। রাষ্ট্র সকলের। তাই খুনখারাবি করে যারা দেশে উন্মাদনা সৃষ্টি করছে, ওদের ছাড় দেয়া যায় না। আজ সবাইকে দাঁড়াতে হবে মানবতার পক্ষে। মানুষের পক্ষে। নিজ ভূমি রক্ষার পক্ষে।-------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ৯ মার্চ ২০১৩
false
mk
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী-বিএনপি-জামায়াত আঁতাত উন্মোচিত বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় গত ৩০ জানুয়ারি ঘোষিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমান সাড়া জাগানো এই মামলার রায়টি প্রদান করেন। রায়ে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সাজার আদেশ দেয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে কয়েকজন ইসলামী উগ্রবাদীও রয়েছে। সার্বিকভাবে যারা অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামী প্রধান ও তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এমডি আবদুল রহিম। এরা দু'জনেই জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সাবেক কর্ণধার ছিলেন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপ উলফার সশস্ত্র ইউনিট প্রধান পরেশ বড়ুয়া। এদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ প্রচুর পরিমাণ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ও বিস্ফোরকের অবৈধ আমদানি করা। মামলার এই রায়ের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র জঙ্গিদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের অশুভ আঁতাতের কথাই প্রকাশ পেল।ষড়যন্ত্রের ইতিবৃত্তি : ১০ বছর আগে ২০০৪-এর ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার জেটিতে অবৈধ আমদানি করা বিপুল পরিমাণের এই সমস্ত অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র, গোলা বারুদ ও অন্যান্য বিস্ফোরক দ্রব্য ১০টি ট্রাকে তোলা হয়। এই সার কারখানাটি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। কারখানার জেটিটি ছিল চট্টগ্রাম বন্দর সনি্নকটে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে। পুলিশের দু'জন সাব-ইন্সপেক্টর এই অস্ত্র ধরে ফেলেন এবং ওই স্থান থেকেই সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে গ্রেফতার করেন।যদিও এ সময়ে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা কোন ধরনের মামলা না করার জন্য উল্লেখিত সেই দুজন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরকে চাপ দিতে থাকেন। তাদের মন্তব্য ছিল বিপুল অস্ত্রের এই চালান দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের জ্ঞাতসারেই হয়েছে। কিন্তু তাদের এই চাপের কাছে পুলিশ মাথা নোয়ায়নি। বাংলাদেশের মিডিয়া ব্যাপকভাবে বিষয়টি সচিত্র প্রকাশ করে। মিডিয়ার মন্তব্য বিপুল পরিমাণ এই অস্ত্রের চালান বাইরের কোন দেশ থেকে আনা হয়েছে এবং এই অস্ত্র উলফাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন জঙ্গি গ্রুপের ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই আনা হয়েছে।কিন্তু বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার সরকার ভারতের বিরুদ্ধে এ জাতীয় ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার গোটা বিষয়টিকেই ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। যে দুজন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর বিপুল অস্ত্রের এই চালান আটক করেন ওপর মহলের নির্দেশে তাদের গ্রেফতার করা হয়।২০০৯-এ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র জোটের সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি আবার নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। জেলা ও সেশন জজ কোর্টের অনুমতি নিয়েই সিআইডি ব্যাপক তদন্তের কাজ চালায় এবং সামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। এই গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকেই জানা যায়, তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াত প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক পরিচালক রেজ্জাকুুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক আবদুল রহিমসহ সরকারের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিপুল এই অস্ত্র চালানের গোটা ষড়যন্ত্রে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তৎকালীন শিল্প সচিব নিজে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার জেটি পরিদর্শন করে সেখানে কর্মকর্তাদের অস্ত্র চালানের বিষয়টি অবহিত করেন। গ্রেফতারকৃতরা আরও জানিয়েছেন, আমদানিকৃত অস্ত্র একটি বিদেশি জাহাজে করে এনে বাংলাদেশ সীমানার গভীর সমুদ্রে দুটি মাছ ধরার ট্রলারে নামানো হয়। সেখান থেকে তা উল্লেখিত জেটিতে আনা হয়। এই আনার কাজে কোস্টগার্ডরা যাতে বাধা না দেয় সে ব্যাপারে তাদের ওপর সামরিক ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছিল। সার কারখানার জেটিতে অস্ত্র নামানোর সময় উলফার সশস্ত্র ইউনিট প্রধান পরেশ বড়ুয়াসহ তার জ্যেষ্ঠ কয়েকজন সহকর্মীও উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেল থেকে সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ও উলফার ক্যাডাররা চালানকৃত অস্ত্র সম্ভার ট্রাক ভর্তি করার কাজ যে পরিচালনা করেছেন গ্রেফতারকৃতরা তাও জানিয়ে দেন। এদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে মতিউর রহমান নিজামী ও বাবরকে গ্রেফতার করা হয়।তুলনাহীন এই অপরাধচাঞ্চল্যকর এই মামলাটি যখন চট্টগ্রাম বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তোলা হয়, অভিযুক্তরা এবং তাদের পক্ষের উকিলরা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে বাধা দিতে থাকেন। এমনকি বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রলম্বিত করার উদ্দেশ্যে তারা হাইকোর্টের আশ্রয় পর্যন্ত গ্রহণ করেন। এরই মধ্যে আবার বিচারককে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে তার বাসভবনে বোমা পর্যন্ত নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু সব অপচেষ্টাই ব্যর্থ হয়।মামলার রায় ঘোষণাকালে জনাকীর্ণ আদালতে বিচারক বলেন, যে পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে তা দিয়ে একটি ছোট ক্যান্টনমেন্ট চালানো যায়। অপরাধীদের অপরাধ তুলনাহীন। অস্ত্র আইন এবং চোরাচালান প্রতিরোধ আইনের অধীনে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা হওয়া দরকার। উদ্ধারকৃত অস্ত্র বহরে ছিল ১৭৯০টি সাব মেশিন গান, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, টমি গান, রকেট নিক্ষেপক, ২৭০২০টি গ্রেনেড, ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২০টি বুলেট এবং জাপানে তৈরি একটি অত্যাধুনিক ওয়াকিটকি।রায় ঘোষণার পরপরই আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং সবার ওপরে আইনকে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর। ঘোষিত এই রায় তারই প্রমাণ। এই ষড়যন্ত্রে বিএনপি-জামায়াতের তৎকালীন সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। পক্ষান্তরে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্ব বিশেষ ট্রাইব্যুনালের এই বায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের দলকে নিশ্চিহ্ন করার অপকৌশল হিসেবে উল্লেখ করেন।একজন প্রবীণ সাংবাদিকের মন্তব্য হচ্ছে, বিপুল অস্ত্রের এই উদ্ধার ঘটনাটি হলো শুধুমাত্র 'টিপ অফ দি আইসবাগ' গোটা আশি ও নব্বই দশকজুড়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের কাছে এমন ধরনের অস্ত্রের চালান বিনাবাধায় পৌঁছে গেছে। এই ষড়যন্ত্রে জড়িতরা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একের পর এক সরকারের সহযোগিতায় অস্ত্রের চালান অব্যাহত রেখেছে।একমাত্র শেখ হাসিনার সরকারই তার দেশ ও ভারতের জনগণের কাছে এই মর্মে কথা দিয়েছে, বাংলাদেশের মাটি কখনই ভারতীয় জঙ্গিদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।কক্সবাজারের অধিবাসী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ বশির জানিয়েছেন, তিনি নিজে ভারতে জঙ্গি তৎপরতায় নিয়োজিতদের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক ট্রাক অস্ত্র আটকে দিয়েছিলেন। এর সঙ্গে জড়িতদের তখন গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু মামলা আর চলেনি। সবটাই ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।রায়ে জামায়াত প্রধান নিজামীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী জামায়াত হরতালের ডাক দেয়। অন্যদিকে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলাম এবং মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় মুসলিম দেশে তাদের সমর্থকরা এই রায় কার্যকর যাতে না করা হয় তার জন্য শেখ হাসিনার ওপর চাপ দিয়েই চলেছে।এরমধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশাল এই অস্ত্র চালানের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সুতরাং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার নতুন করে তদন্ত চলবে। সংসদে এক বিতর্কে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। কতিপয় সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার কথা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল জজও ইঙ্গিত করেছেন।রায় ঘোষণাকালে ট্রাইব্যুনাল জজ উল্লেখ করেন, সাক্ষ্য প্রদানকালে তৎকালীন সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক সাদিক হোসেন রুমী জানান, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে তিনি অবহিত করেছিলেন। কিন্তু গোটা বিষয়টিই বেগম জিয়া চেপে যান। শেখ হাসিনা সংসদে আরও অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে প্রতিবেশী ভারতে জঙ্গি তৎপরতা চালাতে অস্ত্রের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
false
mk
তনু মৃত্যুর পর এত আন্দোলন কেন, অন্যদের সময় নয় কেন_ কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কোনো রাসায়নিক ক্রিয়ায় তনুর মৃত্যু হয়নি। গতকাল সোমবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা সাংবাদিকদের প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানিয়ে এসব কথা বলেন।সেনানিবাস এলাকার বাইরে হ্ত্যা স্থানের নিকটবর্তি আবাসিক এলাকা আছে। ঐ স্থানের কাটা তারেত্র বেড়া নির্মাণাধীন থাকায় এলাকাটি অরক্ষিত ও অবাধে যাতায়তের সুযোগ রয়েছে।কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর হত্যা মামলা তদন্তে ঢাকা ও কুমিল্লার সিআইডির একটি দল শনিবার ফের কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ...খুনীরা ঐ এলাকারই। আশেপাশেই তাদের অবস্থান। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি খুনীরা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ৩০ মার্চ, ২০১৬ কালের কণ্ঠ পত্রিকা "তদন্ত নিয়ে র‌্যাব-পুলিশ টানাটানি!" - রিপোর্টে লিখেছে "গতকাল সকালে ঢাকা থেকে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি টিম কুমিল্লা সেনানিবাসের পাহাড় হাউস এলাকায় এসে পৌঁছে। এই পাহাড় হাউস এলাকার একটি কালভার্টের পাশে ঝোপের মধ্যে তনুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। র‌্যাবের দলটি সেই স্থানটির প্রায় ছয় ফুট মাটি ও ঘাস কেটে নিয়ে যায়।"তনুর লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেই জায়গার ছয় ফুট মাটি ও ঘাস কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। ইমরান এইচ সরকার, প্রথম আলো, ডয়েচে ভেলে, বিবিসি, বাংলা ট্রিবিউন সহ সহ আরও কিছু মিডিয়া উঠে পরে লেগেছে তনুকে ধর্ষিতা প্রমানের জন্য। মুতদারকে এভাবে মিথ্যা অপমান কি ধর্ষণের নামান্তর নয়? তাহলে ধর্ষণকারি তালিকায় থাকছে, ইমরান এইচ সরকার, প্রথম আলোর টিপু সুলতান, বিবিসি'র কাদির কল্লোল, ডয়েচে ভেলে ও বাংলা ট্রিবিউন এর হারুনুর রশিদ সহ, যারা মৃত তনুর নামে গিবত করেছে সকলেই ধর্ষক।যারা মুতদারের অমর্যাদা করেছে... তারা নরাধম মিথ্যাবাদী। আল্লাহ্‌র গজব তাদের উপর পরুক। মনে রাখবেন মুনাফেকের মুনাফেকি আল্লাহ্‌ প্রকাশ করে দেবেনই। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯
false
ij
শামিসেন_ একটি জাপানি বাদ্যযন্ত্র তিন তারের এই জাপানি বাদ্যযন্ত্রের নাম শামিসেন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই তারের বাদ্যযন্ত্র আবিস্কার করেছে, সেই অনিবার্য ধারায় জাপানে সৃষ্টি হয়েছে শামিসেন। তবে জাপান বলেই হয়তো শামিসেন এর মানে ‘তিনটি স্বাদগন্ধ যুক্ত তার।” এই ‘স্বাদগন্ধ’ শব্দটির প্রয়োগই জাপানের মনোরম সভ্যতার অনিবার্য বৈশিষ্ট্য বলেই মনে হয়। মনোরম জাপানের বাদ্যযন্ত্র সংগীতও যে নান্দনিক হবে তাতে আর বিস্ময়ে কী ... একটি শামিসেন-এর আয়তন গিটারেরই সমান । বাজাতে হয় ‘বাচি’ দিয়ে। আগেই বলেছি, শামিসেন এর তার তিনটি। বাংলাদেশি ঢংয়ে শামিসেন কে “তিনতারা” বলা যায়! প্রাকৃতিক রেশম কাপড় দিয়ে শামিসেন এর তার (ষ্ট্রিং) তৈরি হয় । জাপানি ভাষায় শামিসেন এর তারকে ‘ইটো’ বলে। শামিসেন এর ঘাড় (নেক) কে বলে ‘সাও’। নেক তৈরি হয় রোজউড, ঔক গাছ কিংবা কোকি গাছের কাঠ দিয়ে। কোকি গাছের হিমালয় অঞ্চল থেকে জাপানে আমাদানি করা হয়। শামিসেন এর চারকোণা ‘শরীরটি’ কে বলে ডউ; এটি তৈরি হয় কাঠের চারটি টুকরো দিয়ে। বাংলায় একে ধ্বনিকুম্ভ বলা যায়। ইংরেজিতে সাউন্ডবক্স। যা হোক। ধ্বনিকুম্ভ তৈরি করার বেড়াল কিংবা কুকুরের চামড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়; কেননা, বেড়াল-কুকুরের চামড়া অতি সংবেদশীল ভাবে স্বরের কম্পন ছড়ায় । তবে কুকুর-বেড়ালের চামড়া অতিমাত্রায় ভঙ্গুর বলে আজকাল ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাসটিক। জাপানের মানচিত্র। মাঝে-মাঝে আমার মনে হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধ বাদে জাপানের অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই সুন্দর ...জাপানের জুডো-কারাটেও সুন্দর; একটি জাপানি শিশুর পুতুল- পুতুল ভরাট গোলাকার মুখও সুন্দর রাউকইউ দ্বীপের মানচিত্র । এককালে এখানেই উদ্ভব হয়েছিল ‘শামিসেন’ এর। এই দ্বীপরাজ্যটি এখন জাপানের একটি জেলা। ষোড়শ শতাব্দীতে এখানেই সানশিন নামে একটি বাদ্যযন্ত্র প্রচলন ছিল। সানশিন আবার সানঝিয়ান নামের একটি চিনা বাদ্যযন্ত্র থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। আমাদের আলোচ্য শামিসেন বাদ্যযন্ত্রটি ওই সানশিন বাদ্যযন্ত্র থেকে রূপান্তরিত হয়েছে। আজও আধুনিক জাপানের সাধারন মানুষ শামিসেন এর বাজনা শুনতে টিকেট কেটেই অডিটোরিয়ামে যায় । এখানেই ওদের শ্রেষ্ঠত্ব। একজন তন্ময় শামিসেন বাদকের শামিসেন বাদন শামিসেন বাদন শামিসেন এ ‘স্টার ওয়রস’ ছবির থিম সং শামিসেন বাদন উৎসর্গ: আবারও নতুন রাজা। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১০ বিকাল ৪:২২
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৪ ১. পরীক্ষা ছিলো গতকাল। বায়ুটারবাইনের নিয়ন্ত্রণ ও নেটসংযোগের ওপর। পরীক্ষার পরপরই কলোকুইয়ুম, সাথে সাথেই গ্রেড পেয়ে যায় পোলাপান। প্রফেসর হায়ার এর এই ব্যবস্থাটা খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে। ৪৫ মিনিট বা ১ ঘন্টার পরীক্ষা, তার পরপরই খাতা দেখতে দেখতে আলোচনা, ভুলভাল কিছু থাকলে তৎক্ষণাৎ শুধরে দেয়া, যাতে ছেলেপিলে কোন সংশয় নিয়ে পরীক্ষার হল ছেড়ে না বেরোয়। হায়ার সুযোগ পেলেই এই সুব্যবস্থার কথা লোকজনকে জানিয়ে দেন, "ভিয়ার হান্ডেল্ন ডি নোটে ৎসুজামেন মিট ডেন ষ্টুডেন্টেন আউস, হে হে হে!" আজ পরীক্ষা দিয়েছি সবশুদ্ধু আটজন। ক্লাসের অর্ধেকেরও বেশি ছেলেপিলে শেষ পর্যন্ত আর পরীক্ষা দেয়নি। এক্সট্রা ক্রেডিটের এটাই মজা, ক্লাস করতে চাইলে করো, পরীক্ষা দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। তবে পরীক্ষার জন্যে একবার নিবন্ধন করে পরীক্ষা দিতে বসলে তা পাশ করতেই হবে, নইলে ভ্যাজাল। ২.০ পেয়ে মনটা একটু খারাপই ছিলো। ওপেন-বুক পরীক্ষা, প্রায় চারশো পৃষ্ঠার মতো ব্লক ডায়াগ্রাম আর গ্রাফ, তারপরও মনে একটা দুরাশা ছিলো এবার পরীক্ষা ভালো হবে। অদৃষ্টের মন্দপ্রেম ভেবে হেলেদুলে বার হলাম। পরে অবশ্য বাসায় ফিরে আবার নানা ভ্যাজালে পড়ে মন কিছুটা ভালো হলো। ২. সেদিন এক্সকারশন ছিলো মেয়ারহোফ বলে এক জায়গায়, ১০০ মেগাওয়াটের একটা উইন্ড টারবাইন প্ল্যান্ট সেখানে। ভোরবেলা উঠে সময়মতো হাল্টেষ্টেলে (বাসস্ট্যান্ড) গিয়ে দেখি খাপ্পা চেহারার এক বুড়ি সেখানে বসে গজগজ করছে, সকালে যেমন ভিড় থাকার কথা, তেমনটা নেই। সন্দেহ হচ্ছিলো বলে বুড়িকে জিজ্ঞেস করতেই বুড়ি মহা ক্ষেপে গেলো। "দেখুন এদের কান্ডটা একবার! সময়ের আগেই এসে চলে গেছে! গত বিশ বছর ধরে গরম পড়লেই ব্যাটারা এমনটা করে, সময়ের আগে এসে চলে যায়! বলুন দেখি কেমনটা লাগে! আমি তো বলি এটা কাসেলারফেরকেয়ার্সগেজেলশাফট (KVG, কাসেলের পরিবহন সংস্থার নাম) নয়, কাসেলারফেরষ্পেটুংসগেজেলশাফট (কাসেলের দেরি করিয়ে দেয়া সংস্থা)!" বুড়ির কথায় সায় দিলাম বিমর্ষ মুখে। "আমার আজকে একটা এক্সকারশন আছে, এখন তো মনে হচ্ছে সময়মতো আর যাওয়া হবে না।" বুড়ি ঢোলের বাড়ি পেয়ে আরো নাচতে লাগলো। গত বিশ বছরে KVG আরো কী কী কুকর্ম করেছে, তার একটা ফিরিস্তি শুরু হলো। জার্মান বুড়োবুড়িরা মদ না খেলে সাধারণত খুব স্পষ্ট জার্মান বলে, বুঝতে তেমন একটা সমস্যা হয় না, নওজোয়ানরা এক নিঃশ্বাসে অনেক কিছু বলে, তখন প্রায়ই আরেকবার দম নিয়ে বলার অনুরোধ জানাতে হয়। ফোন করলাম ওলাফ আর ক্রিস্তফকে, দু'জনের কেউই যাচ্ছে না এক্সকারশনে। এদিকে কাউকে না জানালে ঘড়ির কাঁটা ধরে চলে যাবে সবাই। মুসিবত। ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল ক্যাম্পাসের সামনে পরে ট্রাম থেকে নামতেই উলরিখের ফোন পেলাম, ঊর্ধ্বশ্বাসে বাকিটা পথ ছুটে গিয়ে দেখি বাকিরা তিব্বতী লামাদের মতো গম্ভীর মুখে করে সার বেঁধে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে, লেট লতিফের অপেক্ষায়। লজ্জায় মাথা কাটা পড়লো আমার। বাকিটা সময় অবশ্য ভালোই কাটলো এক্সকারশনে। বিএমডব্লিউতে আগে চড়িনি কখনো, প্রফেসর হায়ার খুব উৎসাহ নিয়ে আমাদের তাঁর গাড়ির নানা কীর্তি শোনাতে লাগলেন। হায়ারের বয়স ষাটের ওপর, কিন্তু দারুণ ড্রাইভ করেন। হাইওয়েতে উঠেই সাঁ করে একশো আশিতে তুলে ফেললেন গাড়ি। উলরিখ আর কায়েস গুজগুজ করে গল্প জুড়ে দিলো। ভিজবাডেন আর কোয়ল্নের বাসাভাড়া নিয়েই আধ ঘন্টা আলাপ শুনতে শুনতে ঘুম দিলাম। মেয়ারহোফ জায়গাটা পাহাড়ি মালভূমির মতো, যেদিকে চোখ যায় শুধু সরষে ক্ষেত। ফাঁকে ফাঁকে দৈত্যাকৃতি সব টারবাইন, গুণে শেষ করা যায় না। উইন্ড টারবাইনের জন্যে আশেপাশের সব জমি কিনে ফেলার কোন দরকার হয় না, অল্প একটু জায়গা লিজ নেয়া হয় চুক্তির মাধ্যমে, টারবাইন আর কেবল ট্রেঞ্চের জন্যে যতটুকু জায়গা লাগে ততটুকু হলেই বেশ চলে যায়। গ্যালোবার নয়ডর্ফে গিয়ে দেখেছি, মোট ১১ মেগাওয়াটের ৫টা মাত্র টারবাইনের জন্য ২৬টা চুক্তি করতে হয়েছে, মেয়ারহোফে পঞ্চাশটারও বেশি টারবাইন, কয়টা ফেরপেখটুং করতে হয়েছে কে জানে। এবার আর ওপরে চড়িনি, বাম হাত জখম, নিচে বসে গল্পগুজব করে সময় কাটালাম। কিছু ছবি তুলেছি, সেগুলোও ওয়াশ করা হয়নি। ডিজিটাল ক্যামেরার জন্যে হাহুতাশ করেই দিন কেটে যাবে মনে হচ্ছে। দেখি, ওয়াশ করলে স্ক্যান করে তুলে দেবো। উলরিখ নিচে নেমে এসে পাকড়াও করলো আমাকে, "ব্যাপার কী? খেলা দেখো নাই ফাইন্যাল? কা নয়েনৎসেন এ তোমাকে দেখলাম না তো।" ইউনিভার্সিটির পার্টি বিল্ডিং হচ্ছে কা নয়েনৎসেন, সেখানে কোন টুর্নামেন্ট হলে সবাই বোতলের কেস নিয়ে জড়ো হয়। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, "আমি স্পেনের সাপোর্টার ছিলাম। ধোলাই খেয়ে মরি আর কি।" উলরিখ হেসে ফেললো, "আরে ধুর, ভয়ের কী আছে? স্পেনের পোলাপানও তো সেদিন খেলা দেখতে গেছে।" আমি মনে মনে বললাম, স্পেনের পোলাপানের কিছু হবে না রে, কপালে মাইর থাকলে আমারেই খাইতে হবে। সারাটা জীবনই ফাও গোয়ামারা খেয়ে যাচ্ছি, মাতাল জার্মান সাপোর্টারের হাতে মাইর নাহয় আপাতত না-ই খাইলাম। মুখে বললাম, "জার্মানি খুব বাজে খেলসে। খেলোয়াড়দের ধরে স্পেনে পাঠায় দেয়া দরকার।" উলরিখ আর সহ্য করতে পারলো না, খেলার আলাপ পাল্টে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলো। ৩. গতকাল পরীক্ষা দিয়ে এসে প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিলো, কিন্তু ঘুমানোর উপায় নাই, আজও পরীক্ষা ছিলো, তার ৯০%ও পড়া বাকি। ঢুলতে ঢুলতে কিছুক্ষণ পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ভোরবেলা ঘুম ভাঙার পর পড়তে বসে দেখি, বহুত জিনিস বাকি, কিছুতেই পুরোটা শেষ করা যাবে না। জোলারটেখনিক, মানে সৌরকৌশল, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সৌরতাপ, সৌরবিদ্যুৎ মিলিয়ে একটা খিচুড়ি জিনিস, পড়তে পড়তে সূর্য জিনিসটার উপর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এর মধ্যে আমার ফ্ল্যাটমেট উগো ফেরনান্দেজ আবার রান্নাঘরে গিয়ে শুরু করেছে বিদঘুটে পর্তুগীজ গান। উগো বেশ ভালো হারমোনাইজ করতে পারে, কিন্তু যখন আমি অঙ্ক করছি তখন এই আপদ আর কতক্ষণ ভালো লাগে? একবার ভাবলাম বের হয়ে একটা কড়া ঝাড়ি মারি, পরে ভাবলাম, মানুষ নীরবে সহো। ভাবছি ওকে জরিমানা করবো, রান্নাঘর সামনের শনিবারে ওকে দিয়ে সাফ করাতে হবে। চুদির ভাই এখানে আসার পর থেকে একবারও রান্নাঘরের মেঝে ঝাঁট দেয়নি। তারপরও মন্দের ভালো হয়েছে পরীক্ষা। পোলাপাইন কেউই পরীক্ষা দিয়ে খুশি না, কিন্তু সবারই এক বক্তব্য, আরো খারাপ হতে পারতো। এতো অসংখ্য তথ্য আছে চিপাচাপায়, যে চাইলেই কঠিন প্রশ্ন করে সবাইকে ফেল করিয়ে দেয়া যায়। সেই তুলনায় বেশ ফেয়ার পরীক্ষা হয়েছে। মোটে দেড় ঘন্টার পরীক্ষা, কিন্তু ক্লান্তিতে নুয়ে পড়েছে সবাই, প্রশ্নগুলি ছোট ছোট হলেও অনেক চিন্তা করতে হয়। আজকে আবার ডিপার্টমেন্টে খাটুনি আছে। বসে বসে পোস্টাচ্ছি, ফোনের অপেক্ষায়। আজকে ঠিক করেছি সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে পূর্ণমাত্রায় টাল হবো। কী আছে দুনিয়ায়?
false
rg
কার্যত মন্ত্রীদের সকল বাহাদুরী শেষ!! গতকাল মন্ত্রীসভার সদস্যরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র কাছে তারিখবিহীন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বর্তমান সংবিধানের আর্টিকেল ৫৮-এর ১-এ বলা আছে- ''৫৮। (১) প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো মন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে যদি- (ক) তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন;'' অর্থ্যাৎ মন্ত্রীদের পদত্যাগ সংবিধান অনুযায়ী, পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কখন সেগুলো রাষ্ট্রপতি'র কাছে পাঠাবেন, রাষ্ট্রপতি কখন স্বাক্ষর করবেন, এগুলো পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। পদত্যাগ এখনো কার্যকর নয়, এই কথাটি সংবিধানের কোথাও বলা নেই। মন্ত্রীসভার পদত্যাগ নিয়েও পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন একটি নাটক মঞ্চস্থ হল গতকাল। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোটেও মন্ত্রীদের নিয়োগদাতা নন। তিনি রাষ্ট্রপতি'র কাছে কিছু ব্যক্তির নাম সুপারিশ করেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতি তাদের প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। তেমনি, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। সংবিধানের আর্টিকেল ৫৮-এর (২)-এ বলা হয়েছে- ''৫৮। (২) প্রধানমন্ত্রী যে কোন সময়ে কোন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিতে অনুরোধ করিতে পারিবেন এবং উক্ত মন্ত্রী অনুরূপ অনুরোধ পালনে অসমর্থ হইলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে উক্ত মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান ঘটাইবার পরামর্শ দান করিতে পারিবেন।'' মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র এখনো কার্যকর হয়নি বলে যা চাউর করা হচ্ছে তা মোটেও সংবিধানের কোথাও নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, মানে হল তারা এখন আর মন্ত্রী নেই। এখন তারা কোনো মন্ত্রীর সুযোগ সুবিধা ভোগ করতেও পারার কথা নয়। তাদের গাড়িতে এখন জাতীয় পতাকা ওড়ার কথাও নয়। আর যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন, তাহলে সকল মন্ত্রীর পদত্যাগ অটোমেটিক হয়ে যাবার কথা। এবার একটু গোরায় গলদের কথা আলোচনা করা যাক। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রের সকল নির্বাহী ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রীরা সবাই ঠুটো জগন্নাথ। মন্ত্রীদের আলাদাভাবে কোনোই ক্ষমতা নেই। মন্ত্রীরা কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তাতে যদি প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর না করেন, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কোনো ক্ষমতা মন্ত্রীদের নেই। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রীসভা সংসদের নিকট দায়বদ্ধ। আর সংসদ জনগণের নিকট দায়বদ্ধ। কিন্তু কার্যত বাংলাদেশে দেখি তার উল্টো। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে মন্ত্রীসভায় নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত সংসদে বাতিল হবার কোনো উদাহরণ নেই। অর্থ্যাৎ মন্ত্রীসভা যা সিদ্ধান্ত নেয়, তাই সংসদে কণ্ঠভোটে হ্যা হয়ে যায়। কখনোই আমরা না হতে দেখিনি। এর পেছনের কারণ কি? পেছনের কারণ একব্যক্তি'র উপর সকল ক্ষমতা অর্পণ। আমাদের দেশে মন্ত্রীসভায় যিনি প্রধানমন্ত্রী, তিনিই সংসদের নেতা, তিনিই আবার দলীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত। ফলে সেই ব্যক্তি যিনি হবেন, তিনিই এই চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ করেন। এটা আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার বেলায় যেমন সত্য, বিএনপি'র প্রধান খালেদা জিয়ার বেলায়ও সত্য। তাই সংসদীয় গণতন্ত্রের এই গোরার গলদের ফাঁফরটি কোনো দলই জনগণের কাছে খোলাসা করেন না। এখানে দুই দলেরই একই নীতি। দুই দলের দুই প্রধানই এই চূড়ান্ত নির্বাহী ক্ষমতাটি ভোগ করার পক্ষে মুখিয়ে থাকেন। আর সেই সূত্রে মন্ত্রীসভা, সংসদ, দলের সকল মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতাকর্মীরা তা মানতে বাধ্য। কারণ সংবিধান সেই ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে। ওই চূড়ান্ত পদের ব্যক্তি যদি কোনো আবুল বা আবদুল বা রাম বা শ্যাম বা যদু বা মধু বা রহিম বা করিম যিনিই হবেন, তিনিই এই ক্ষমতা ভোগ করবেন। অন্যান্য সবাই শুধু তার নির্দেশ মান্য করবেন। এটা হল গণতন্ত্র!!! এ কারণেই বলা হয় গণতন্ত্র হল মুর্খদের কারখানা। কথাটা একশোভাগ সত্যি। সবাই মুখে বলবেন, জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। বাস্তবে ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। আইনের চোখে সবাই সমান। বাস্তবে আইন ব্যক্তির ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। ভুল করবেন একজন ব্যক্তি, আর ওটা গণতন্ত্রের নামে চালিয়ে দেওয়া হবে জনগণের উপর। সংবিধান যদি সকল আইন কানুনের উৎস হয়, তাহলে সংবিধান হতে হবে স্বচ্ছ, পরিস্কার, সবার বোধগম্য একটা সহজ, সরল পাঠের বিষয়। প‌্যাচ ঘোছ কেন থাকবে সংবিধানে। যে কারণে সংসদীয় গণতন্ত্রের যারা মাতা, সেই খোদ বৃটেনের সংবিধান কিন্তু অলিখিত সংবিধান। সেখানে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই যে, তুমি এই করবা, সেই করবা, এটা করতে বাধ্য, ওটা করতে মানা। বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও বলঅ নেই যে আপনি বাংলা একাডেমি'র প্রমিত বাংলা বানান অনুসরণ করতে বাধ্য। আপনার ইচ্ছে হলে লিখতে পারেন 'কাক'। আবার লিখতে পারেন 'কাউয়া'। আবার লিখতে পারেন- উহা একটি কাইল্লা পখ্খী, যাহা কা-কা করিয়া ডাকে। আপনারে কেউ নিষেধ করে নাই। আপনি কাউয়া, কাকা, কালা পাখি যাই কন সব ঠিক আছে। মোট কথা আপনি পাখিটারে ঠিক মত চিনতে পারলেই হল। কিন্তু গণতন্ত্রে সবকিছু চিনে ফেলার কোনো নিয়ম নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যা কিছু ঘটবে তাই আইন। আপনি তা মানতে বাধ্য। আর ক্ষমতার উৎস নাকি জনগণ, আর সেই জনগণ প্রধানমন্ত্রী'র নির্দেশিত আইন মানতে সারাক্ষণ হায় হায় করে বেড়ায়। খালি চোখে মন্ত্রীদের বিশাল ক্ষমতা। তারা দিনকে রাত বানাতে পারেন। রাতকে দিন বানাতে পারেন। সূর্যকে পশ্চিম আকাশে ওঠাতে পারেন। কোটি কোটি টাকা চুরি করতে পারেন। রাষ্ট্রের সম্পত্তি চুরিচামারি করতে পারেন। মানুষকে ধরে নিয়ে জেলে পুরতে পারেন। অন্য মানুষের জমি সম্পত্তি দখল করতে পারেন। ব্যবসা দখল করতে পারেন। কালোবাজারি করতে পারেন। শেয়ার বাজার লোপাট করতে পারেন। সরকারি গাড়ি যত খুশি যতোগুলি খুশি নিয়ে বেজায় ঘুরতে পারেন। কোনো অসুবিধা নেইকা। কিন্তু মাগার একবার যদি প্রধানমন্ত্রী ওই মন্ত্রী'র উপর গোস্যা করেন, তাইলেই ওই মন্ত্রী মুহূর্তে ফেউ হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী শুধু মুখ ফুটে বলবেন, আমনে এখন আইতে পারেন অনেক হয়েছে। ব্যাস, আপনার ক্ষমতার বাহাদুরী তখন মুহূর্তে ভ্যানিস। আমরা ওস্তাদ শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে এখন গাইতে পারি সেই গানটা- ''আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? চলিতে চরণ চলেনা দিনে দিনে অবশ হই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই?...'' আমাদের মন্ত্রীদের এতো এতো ক্ষমতা, সেই বাহাদুরী এখন গেল কই? সংবিধান অনুযায়ী আপনারা এখন আর মোটেও মন্ত্রী নন। আপনাদের আর কোনো বাহাদুরী এখন কার্যকর নয়। যতোই মিডিয়ার কাছে বলুন, রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর না করা পর্যন্ত আপনারা মন্ত্রী আছেন, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ব্যাখ্যা। সংবিধান অনুযায়ী, এখন আর আপনাদের সেই বাহাদুরী নেই। এখন সরকারি গাড়ি, পতাকা, অফিস এগুলো ব্যবহার করার কোনো বাহাদুরী আপনাদের নেই। তার চেয়ে চলেন আমরা গানটা পুরাই গাই- ''আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? চলিতে চরণ চলেনা দিনে দিনে অবশ হই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? মাথায় চুল পাকিতেছে মুখের দাঁত নড়ে গেছে চোখের জ্যোতি কমেছে মনে ভাবি চশমা লই মন চলেনা রং-তামাশায় আলস্য এসেছে দেহায় কথা বলতে ভুল করে যাই মধ্যে-মধ্যে আটক হই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? কমিতেছি তিলেতিলে ছেলেরা মুরব্বী বলে ভবের জনম গেল বিফলে এখন সেই ভাবনায় রই আগের মত খাওয়া যায়না বেশি খাইলে হজম হয়না আগের মত কথা কয়না নাচেনা রঙ্গের বারই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? ছেলেবেলা ভালই ছিলাম বড় হয়ে দায় ঠেকিলাম সময়ের মুল্য না দিলাম তাইতো জবাবদিহি হই যা হইবার তা হয়ে গেছে আব্দুল করিম ভাবিতেছে এমন একদিন সামনে আসে একেবারে দরবেশ হই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই?'' সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৭
false
mk
সংবাদকর্মীদের সহযোগিতায় নাশকতার পরিকল্পনা জামায়াতের! জামায়াত ও হেফাজতের দুই নেতার গোপন ফোন আলাপের তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। তাদের আলাপের মধ্যে বেশির ভাগ কথা ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করা। ধর্মের নামে গ্রামগঞ্জে তাদের কথা পৌঁছে দেয়া।এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থাটি জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের দুই নেতার ফোনালাপ ‘ট্র্যাকিং’ করে এমন তথ্য পেয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ডিফারেন্ট নিউজ।প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম আমার দেশ পত্রিকার বিকল্প হিসেবে নতুন একটি পত্রিকা বের করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের ফোনালাপ থেকে এই তথ্য ফাঁস হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের কন্ট্রোল রুম থেকে মাওলানা সাখাওয়াত ও জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলামের মোবাইল কথোপকথন পুরোটাই রেকর্ড করে ওই গোয়েন্দা সংস্থা।গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান-তারা ফোনে আরও অনেক কথাই বলেছেন। জামায়াত, বিএনপি ও হেফাজতে ইসলাম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রচার কাজ করার জন্য আমার দেশকে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছিল।এতদিন এই কাজটি করত আমার দেশ। এখন পত্রিকাটি বন্ধ রয়েছে। তাই বলে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। যত টাকাই লাগুক একটি পত্রিকা বের করতে হবে। একই সঙ্গে একটি ওয়েবসাইট খুলতে হবে। তা না হলে আমরা পেছনে পড়ে যাব।আমার দেশ পত্রিকা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার কারণে এবার জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম বিকল্প প্রচার মাধ্যম ‘হেফাজতবার্তা’ নামে একটি পত্রিকা বাজারে নিয়ে আসছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমার দেশ পত্রিকার মাধ্যমে তারা সারাদেশে ধর্মীয় উম্মাদনা এবং নানা মিথ্যাচার করে দেশজুড়ে সম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের পর থেকে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেকৃতভাবে এর প্রকাশনা বন্ধ রেখেছে। ফলে জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম নামের উগ্রবাদী সংগঠন তাদের মিথ্যা এবং ধর্মীয় উম্মাদনা ছড়াতে পারছে না।গোয়েন্দা সংস্থাটি ইতোমধ্যে তথ্য পেয়েছে, জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের বেশ কিছু লোক সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঢুকে পড়ছে। কোথায় কোথায় নাশকতা চালাতে হবে তার জন্য কয়েক শ’ সংবাদ সংগ্রহকারীকে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা আগাম তথ্য দিয়ে নাশকতায় সাহায্য করছে। মিডিয়ার যত রকম অপব্যবহার আছে মূলত সেগুলোর মাধ্যমেই দেশব্যাপী হামলা তা-বের জন্য গণমাধ্যমকেই সহায়ক হিসেবে দেখছে জামায়াত ও হেফাজত নেতাকর্মীরা।ফেসবুকের ফ্যান পেজ, ওয়ার্ডপ্রেসে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, অনলাইন পত্রিকা, ভুয়া ব্লগ এ্যাকাউন্ট, স্কাইপি, ইয়াহু মেসেঞ্জার, ভুয়া মোবাইল নাম্বার, বাঁশের কেল্লা ফ্যান পেজ, মিডিয়া ওয়াচ বাংলাদেশ, দিগন্ত টিভি, আমার দেশ পত্রিকার মাধ্যমে জামায়াত তাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা ও কর্মোদ্দীপনা দিয়ে আসছে।এসব নির্দেশনার আদলেই তারা বিভিন্ন রকম নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঝটিকা মিছিল, মসজিদের মাইক ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আক্রমণ, ফটিকছড়িতে হামলামসহ নানা রকম অপকর্ম করছে জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম ও শিবির। Link
false
ij
কারা ছিল Goths_ গথরা ইউরোপের একটি নৃগোষ্ঠী হলেও গথ থেকে উদ্ভুত গথিক শব্দটি প্রধানত শিল্পকলার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়; যা দ্বারা মধ্যযুগীয় স্থূল, বেঢপ কাঠামো বোঝায়; কখনও-বা বোঝায় হলদে হয়ে যাওয়া প্রাচীন পান্ডুলিপি। কখনও কখনও গথিক বলতে ভৌতিক অনুসঙ্গও বোঝায়। যেমন গথিক দূর্গ। Originally the word Gothic was used by Italian Renaissance writers as a derogatory term for all art and architecture of the Middle Ages, which they regarded as comparable to the works of barbarian Goths. The Gothic Age is now considered one of Europe’s outstanding artistic eras. ইউরোপীয় ইতিহাসে Germanic Peoples দের ভূমিকা অত্যন্ত গভীর। তো কারা ছিল Germanic Peoples? অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির অধীন পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের গোষ্ঠীগুলিই ছিল Germanic Peoples । সময়কাল? খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে খিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দী। টিউটনস-রা ছিল তেমনি এক জার্মানিক ট্রাইব। এদের আদিবাসভূমি ছিল জুটল্যান্ড। জুটল্যান্ড কোথায়? ডেনমার্কের উত্তরে। পরে টিউটনরা দক্ষিণমূখী অগ্রসর হয়। গথরা এই টিউটনদেরই গোত্রের। তাইই ওদের বলা হয় টিউটনিক। গথরা ৩য় থেকে ৫ম শতকে রোমানদের মুখোমুখি হয়েছিল। ষষ্ট শতকে একজন গথিক ঐতিহাসিক ছিলেন। জর্দানেস। তাঁর মতে, গথরা সুইডেন থেকে বের হয়েবাল্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে ভিসতুলা নদীর উপত্যকা অবধি পৌঁছেছিল । ৩য় শতকে তারা আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে দানিয়ুব নদীর পাড় অব্দি পৌঁছায়। কৃষ্ণসাগরের আশে পাশেও চলে যায় তারা। ঐ শতকেই গথ সৈন্যরা পূর্ব গ্রিসের থ্রাস ও দাসিয়া অঞ্চল তছনছ করে। তারা এজিয়ান সমুদ্রের পাড়ের এশিয়া মাইনরের অনেক নগরও ধ্বংস করে। ২৬৭ থেকে ২৬৮ এথেন্স আক্রমন করে নগরটি ধ্বংস করে। তারপর তারা ইতালির দিকে চোখ দেয়। প্রায় এক শতক ধরে রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধ চলে। বলকান অঞ্চল ও ভূমধ্যসাগরের উত্তরপূর্ব অঞ্চল রক্তে সয়লাব হয়ে যায়। সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অন্যান্য গোত্রগুলি গথদের সাহায্য করে। ৪র্থ শতকে গথদের রাজা ছিল আরমানারিক। তাঁর রাজ্যটি বালটিক থেকে কৃষ্ণসাগর অবধি ছড়ানো ছিল। ৩৭০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গথরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ১/ অসট্রোগথ। ২/ভিসি গথ। অসট্রোগথ। মানে পুবদিকে গথ। এদের রাজ্য ছিল কৃষ্ণসাগরের উপকূল অবধি। বর্তমানকালের ইউক্রেইন, বেলেরুশ অবধি। ভিসি গথ। মানে অভিজাত গথস। এরা ছিল ইউরোপের পশ্চিমে। দানিয়ুব নদীর আশেপাশে। প্রথমে ভিসিগথদের কথা বলি। হুনরা ছিল যাযাবর এশিয় তুর্কি। তবে অনেকেই এদের উগরিয়ান মনে করেন। কাস্পিয়ান স্তেপ থেকে যাদের উত্থান। তো, ভিসি গথদের নিশ্চিহ্ন করার হুমকী দিচ্ছিল দুধর্ষ হুনরা। তখন রোমান সম্রাট ছিলেন ভালেনস। ভিসি গথরা সম্রাটের কাছে নিরাপত্তা চায়। দানিয়ূব নদীর দক্ষিণে ছিল ময়েসিয়া প্রদেশ। সেখানে ভিসি গথরা বসবাসের অনুমতি দিলেন সম্রাট। জগতে মনে হয় লোকের উপকার করতে নেই। রোমান সম্রাট ভালেনস ভিসিগথদের হাতেই নিহত হয়েছিলেন। কী ভাবে? বলি। রোমান সৈন্যরা ভিসি গথদের সঙ্গে দুব্যবর্হার করে। ভিসি গথরা স্বাধীনচেতা বলেই বিদ্রোহ করে। অ্যাড্রিয়ানপোল ছিল বর্তমান তুরস্ক। সেখানে ভিসিগথ ও রোমান সৈন্যদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সম্রাট ভালেনস নিহত হন। বিজয়ী গথরা কনসস্টানটাইন শহর, মানে ইস্তানবুল আক্রমনের হুমকি দেয়। সম্রাট ভালেনস-এর পর মৃত্যুর পর রোমান সম্রাট হলেন থিওডোসিয়াস। সম্রাট থিওডোসিয়াস ভিসিগথদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেন। ভিসি গথ সৈন্যদের রোমান সৈন্যদলে অর্ন্তভূক্ত করে নেন। তারপর থেকে ভিসি গথরা রোমান সাম্রাজে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। যারা ময়েসিয়া প্রদেশ বাস করছিল তারা কৃষিজীবন বেছে নেয়। জার্মানিক জাতির মধ্যে এরাই প্রথম খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহন করেছিল। গথদের শ্রদ্ধেয় যাজক ছিলেন উলফিলাস । তিনি গথিক ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন। এককভাবেই উলফিলাসই গথদের খ্রিস্টধর্মে কনভার্ট করেন। তবে কথা আছে ... খ্রিস্টানধর্মের একটা রুপ হচ্ছে Arianism। উলফিলাস বিশ্বাস করতেন Arianism-এ। কাজেই তিনি গথদের আরিয়াবাদে দীক্ষিত করে তোলেন। Arianism, a Christian heresy of the 4th century that denied the full divinity of Jesus Christ. It was named for its author, Arius. A native of Libya, Arius studied at the theological school of Lucian of Antioch, where other supporters of the Arian heresy were also trained. After he was ordained a priest in Alexandria, in 319, Arius became involved in a controversy with his bishop concerning the divinity of Christ. In 325 Arius finally was exiled to Illyria because of his beliefs, but debate over his doctrine soon engulfed the whole church and agitated it for more than half a century. Although his doctrine was eventually outlawed throughout the Roman Empire by Emperor Theodosius I in 379, it survived for two centuries longer among the barbarian tribes that had been converted to Christianity by Arian bishops. (Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved.) সম্রাট থিওডোসিয়াস মারা গেলেন। ভিসিগথরা রোমের প্রতি আনুগত্য আর দেখায় না। তারা তাদের নিজস্ব শাসক নির্বাচন করতে উদ্যত হয়ে ওঠে। প্রথম আলারিক। প্রথম আলারিক গ্রিস ও ইতালি আক্রমন করে বসে। ৪১০ খ্রিস্টাব্দে তছনছ করে রোম। ঠিক ওই সময়ে সেনাপতি আতাউলফ এর নেতৃত্বে ভিসিগথরা স্পেন আক্রমন করার জন্য পিরানিজ পবর্তশ্রেণি পাড়ি দিচ্ছিল। তাদের নেতৃত্বের ভারও প্রথম আলারিক-এর ওপর এসে পড়ে। প্রথম আলারিক এর পর ভিসিগথদের রাজা হন ওয়ালিয়া। তার নেতৃত্বে বেশির ভাগ স্পেন ও দক্ষিণ গল (বর্তমান ফ্রান্স) ভিসিগথদের দখলে আসে । তুলো নগর (বর্তমান ফ্রান্স) হয়ে ওঠে ভিসিগথদের রাজধানী। প্রথম থিওডোরিক ছিলেন আলারিক-এর ছেলে। ওয়ালিয়ার পরে প্রথম থিওডোরিক ভিসিগথদের শাসক হলেন। তখন ভিসিগথরা রোমানদের পক্ষে হুনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। প্রথম থিওডোরিক সে যুদ্ধে মারা যান। সবচেয়ে বিখ্যাত ভিসিগথ রাজা হলেন প্রথম থিওডোরিক-এর ছেলে ইউরিক। সময়কাল ৪২০ থেকে ৪৮৪ খ্রিস্টাব্দ। ইউরিক ছিলেন স্পেনীয়। তিনি রোমের কতৃর্ত্বের ধার ধারতেন না। বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করেছেন ইউরিক। রোমান আইন ও জার্মানিক আইনের সংমিশ্রন করেছেন। তার রাজ্যে রাজা নির্বাচিত হত। তবে প্রায়শ অভিজাতরা বিদ্রোহ করত। ওদিকে ফ্রাঙ্করা ও বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ছিল ভিসিগথদের জন্য হুমকি। শেষমেষ ফ্রাঙ্করা ভিসিগথদের নিশ্চিহ্ন করে। (পড়–ন, শার্লিমেন কে ছিলেন) কেবলমাত্র স্পেনে ভিসিগথরা টিকে ছিল। মুসলিমরা ৭১১ সালে শেষ ভিসিগথ রাজা রডোরিককে হত্যা করে। ৭১৩ খ্রিস্টাব্দে। মুররা আংশিক স্পেন দখল করে। ২ এবার বলি অসট্রগথদের কী হল। মনে থাকার কথা। অসট্রোগথ মানে পুবদিকে গথ। এদের রাজ্য ছিল কৃষ্ণসাগরের উপকূল অবধি। বর্তমানকালের ইউক্রেইন, বেলেরুশ অবধি ... ৩৭০ খ্রিস্টাব্দ। হুন-রা ইউরোপ তছনছ করে। হুনদের বশ্যতা অসট্রগথরা স্বীকার করে নেয়। আটিল ছিল হুনদের রাজা। ৪৫১ খ্রিস্টাব্দ। আটিলা গল অভিযানে বেরুলেন। অসট্রগথরা আটিলবাহিনীকে সাহায্য করে। গল তখন ভিসিগথদের দখলে। চালনে ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। বহুসংখ্যক অসট্রগথকে হত্যা করে ভিসিগথরা। হুনরা চলে গেলে অসট্রগথরা আবার স্বাধীন হয়। রোমান সাম্রাজ্যে প্যানোনিয়া নামে একটি অঞ্চল ছিল। অঞ্চলটি দানিয়ুব নদীর পাড়ে। বর্তমান পশ্চিম হাঙ্গেরি, উত্তর ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া এবং পুর্ব অস্ট্রিয়া। রোমের অনুমতি নিয়ে অসট্রগথরা প্যানোনিয়ায় বাস করতে থাকে। তাদের সঙ্গে অন্য অসট্রগথরাও যোগ দেয়। হুন আক্রমনের প্রাক্কালে এরা রোমে আশ্রয় নিয়েছিল। শ্রেষ্ট অসট্রগথ শাসক ছিলেন থিওডোরিক । ৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিংহাসনে বসেন। সেসময় বাইজানটিয়াম সম্রাট ছিলেন জেনো। তার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন থিওডোরিক। রোমের উপর রুষ্ট ছিলেন জেনো। তিনি থিওডোরিক কে ইতালির দিকে লেলিয়ে দিলেন। তখন রোমের শাসক ছিলেন ওডায়েসার। ওডায়েসার ঠিক অভিজাত ছিল না, ছিল বর্বরউদ্ভূত। থিওডোরিক ওডায়েসারকে হত্যা করে। রোমের শাসক হয়। পশ্চিম রোমান সম্রাটের উপাধি গ্রহন করেছিলেন থিওডোরিক। তারপর থেকে রোমান ও টিউটনরা পাশাপাশি বাস করতে থাকে ইটালিতে। একে অন্যকে প্রভাবিত করে। রোমান কাউন্সিল শাসন করতে ইতালি। থিওডোরিক পেরেছিলেন রোম ও গথদের মধ্যে মিলনসেতু গড়তে। ৫২৬ খ্রিস্টাব্দ। মারা যান থিওডোরিক। বাইজানটিয়াম সম্রাট তখন প্রথম জাস্টিনাইন। তিনি রোম আক্রমনের নির্দেশ দেন। ৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে গথিক শক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। রোমের শাসনভার গ্রহন করে বাইজেনটাইন গর্ভনর। অসট্রগথরা অন্য গোত্রে বিলীন হয়ে যেতে থাকে। যেমন, ভ্যান্ডালস, ফ্রাঙ্ক, বুরগান্ডিয়ানস। তথ্যসূত্র: "Goths." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৬
false
ij
নিউজিল্যান্ডের মাওরি-সংস্কৃতি মাওরিরা নিউজিল্যান্ডের আদি অধিবাসী। ত্রয়োদশ থেকে চতুর্দশ শতকে এরা পলিনেশিয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে নিউজিল্যান্ডে এসেছিল। মাওরি ভাষায় ‘মাওরি’ অর্থ - ‘স্বাভাবিক’ বা ‘প্রাকৃতিক’ বা ‘সাদাসিদে’। আসলেই তাই। নিউজিল্যান্ডের আদি অধিবাসী মাওরিরা যেন প্রকৃতির সন্তান। যা হোক। মাওরিরা নিউজিল্যান্ড কে বলে Aotearoa. মজার কথা হল শব্দটি মাওরি ও অ-মাওরিরাও ব্যবহার করে । কি অর্থ এর? মাওরি ভাষায় এর অর্থ: দীর্ঘ শ্বেতমেঘের দেশ। কী রোমান্টিক! বোঝা গেল মাওরিরা কেবল সাদাসিদেই নয়-তারা ভারি রোমান্টিকও ছিল! নিউজিল্যান্ডের মানচিত্র। অন্তত ক্রিকেটের জন্য হলেও অষ্ট্রেলিয়ার পাশের এই দ্বীপদেশটা আমাদের পরিচিত। কিন্তু মাওরিরা নিউজিল্যান্ডে এল কোত্থেকে ? পলিনেশিয়ার মানচিত্র। পলিনেশিয়া হল মধ্য ও দক্ষিণ প্রশান্ত সাগরের দ্বীপসমূহের একটি সাবরিজন বা উপঅঞ্চল। এখানে সব মিলিয়ে ১০০০ দ্বীপ রয়েছে। পলিনেশিয়া। পলিনেশিয়া শব্দটির উদ্ভব দুটি গ্রিক শব্দ থেকে। পোলাস=অনেক; এবং নেসোস=দ্বীপ। দ্বীপের বসবাসকারী জনগনের ভাষা সংস্কৃতি ও ধর্মবিশ্বাসের সাদৃশ্য রয়েছে। আশ্চর্য এই এদের উদ্ভব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এরা তাইওয়ান হয়ে পলিনেশিয়ায় এসেছে। সময়কাল? প্রতœতাত্ত্বিদের অনুমান: ৫,২০০ বছর আগে। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডি এন এ পরীক্ষা এ তথ্যের সত্যতা প্রমান করেছে। ‘আউট অভ আফ্রিকা’ তত্ত্ব মতে আধুনিক মানুষ বা হোমোসাপিয়ান্স ১০০০০০ বছর পূর্বে পূর্ব আফ্রিকা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষই নানা বর্ণে, ভাষায় ও গোত্রে বিভক্ত হয়ে পলিনেশিয়ায় এসেছিল। মাওরিদের মৌখিক ইতিহাস বলে যে কোনও এককালে তাদের পূর্বপুরুষেরা হাওয়াইকি থেকে বড় সমুদ্রগামী কেনোতে করে নিউজিল্যান্ড এসেছে। হাওয়াইকি জায়গাটা নাকি পলিনেসিয়া এক মিথিয় ভূমি। মাওরি কেনো । এতে চড়েই ১২৫০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ দলে দলে মাওরিরা পলিনেশিয়ার কুক আইল্যান্ড, সোসাইটি আইল্যান্ড ও মারক্যোয়েস আইল্যান্ড থেকে নিউজিল্যান্ডে এসেছিল। তারা নিউজিল্যান্ডে পরিকল্পনামাফিক এসেছিল না দৈবাৎ এসেছিল-তা জানা যায়নি। নিউজিল্যান্ডের বেলাভূমি; মাওরিরা প্রথমে উপকূলে অবতরণ করে সেখানে বসবাস করতে থাকে। উপকূলে সীলমাছ, ডলফিন ও পাইলট তিমি শিকার করত। সম্ভবত তারা মৎস শিকারে নিজস্ব কৃৎকৌশল উদ্ভাবন করেছিল। মোয়া পাখি। মাওরিরা নিউজিল্যান্ডের পাখিপূর্ণ দ্বীপে প্রথম প্রথম পাখি শিকারও করত। বিশেষ করে অধুনা বিলুপ্ত মোয়া পাখি। নিউজিল্যান্ড দ্বীপটি অরণ্যময়। তারা অরণ্য কেটে পরিস্কার করে পায় কাঠ ও চাষযোগ্য জমি। কাজেই কৃষিকাজের দিকে ঝোঁকে তারা। কালক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সম্পদের ওপর অধিকার আরোপে বাধে যুদ্ধ। বাংলাদেশে যেমন জাটকা (নয় ইঞ্চির কম দৈর্ঘের ইলিশ মাছ) নিধনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করছে সরকার। তেমনি পুরোহিরা বিশেষ বিশেষ খাদ্যের ওপর টাপু বা ট্যাবু আরোপ করত। মাওরিদের ধর্ম ছিল মূলত পলিনেশিয় ধর্মের অনুরুপ। তারা মনে করত বিশ্বের সমূদয় প্রকৃতিক উপাদান ও জীবন্ত প্রাণীসমূহ ‘ওয়াহাকাপাপা’ হতে উদ্ভূত। ওয়াহাকাপাপা হল জেনিয়লজি বা বংশবৃত্তান্ত । এই ওয়াহাকাপাপা-র ধারণাই মাওরিদের ধর্মসংস্কৃতির মূল ভিত্তি। তারা বিশ্বাস করত সবার আছে জীবনীশক্তি বা মাওরি। আর সবই বংশবৃত্তান্ত বা ‘ওয়াহাকাপাপা’ -র অর্ন্তগত । এর কোনও কোনটি আবার উদ্ভূত সময়ের সৃষ্টির পূর্বে। সমুদ্র ও সকল মাছের অবতার (পারসনিফিকেশন) হল ‘টাঙ্গগারোয়া’। পাখি ও অরণ্যের অবতার হল ‘তানে’। রোপিত উদ্ভিদ, কৃষিকাজ ও শান্তপ্রিয় কর্মকান্ডের অবতার হল ‘রোনগো’। কারও কারও মতে মাওরিদের পরম অবতার হলেন ‘লো’। টাট্টু। এটি মাওরিসংস্কৃতির অন্যতম ভিজুয়াল বৈশিষ্ট্য। মুখভরা টাট্টুকে বলা হয় মোকো। মেয়েরা অবশ্য মোকো করতে পারে না। তাদের অনুমতি নাক থুতনি আর ওপরের ঠোঁট অবধি। মাওরিসমাজে শিকার আর চাষবাস করত পুরুষাভ । আর বীজ বুনত মেয়েরা, মেয়েরা রান্নাবান্নাও করত, সেই সঙ্গে করত সেলাইয়ের কাজ । মাওরিরা একত্রে করত চাষ, খাদ্য সংগ্রহ ও যুদ্ধ। মাটির কাজ, টাট্টু, এবং কাঠ খোদায়ের কাজ করত নির্বাচিত দক্ষ শিল্পীরা। কাঠ ছাড়াও পাথর ও হাড়ের ওপর খোদাই করা হত। মাওরিরা বাস করত কাঠের বাড়িঘরে, আর সে বাড়িঘরের নানা স্থানে খোদাই করা হত। তারা অলংকৃত পোষাক পড়ত। কাঠখোদাইয়ের কাজ মাওরি গ্রামগুলি থাকত দূর্গ। প্রহরীরা গ্রাম পাহারা দিত। মাওরিরা নানা গোত্রে ছিল বিভক্ত । তবে প্রত্যেক গোত্রই অভিন্ন পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত। ‘ওয়াকা’ হল গোত্রীয় কনফেডারেশন। গোত্রের সদস্যদের বলা হত ‘হাপু’। বড় ছেলেই হত সম্পদের উত্তরাধিকারী। মাওরি গোত্র প্রধানকে বলা হত আরিকি। ইউরোপীয় সভ্যতার স্পর্শে পরিবর্তিত মাওরি নারী মাওরি ভাষায় শ্বেতাঙ্গদের বলা হয় পাকেহা। মাওরিরা অষ্টাদশ শতক থেকে ইউরোপীয় পাকেহাদের সংসর্গে আসে। প্রথম প্রথম সংঘর্ষ বাধাই স্বাভাবিক । এক ইউরোপীয় নাবিক মাওরি প্রধানের ছেলেকে চাবুক দিয়ে মারার পর মাওরিরা ৬৬ জন ইউরোপীয় কে অপহরণ করে জিম্মি করে পরে হত্য করে । বেঁচে যাওয়া অনেকেই মাওরিদের নরখাদক (ক্যানিবাল) বলে উল্লেখ করে। মাওরি পরিবার মাওরিরা মানুষের মাংস খেত কি না তা বলতে পারছি না তবে তারা ভেড়া, শূকর এবং মুরগীর মাংস খেত। তারা পাখি ও ইঁদুরের মাংসও খেত; আর খেত আলু আর মিষ্টি আলু। মাটিতে গর্ত করে পাথর ফেলে সে পাথর আগুনে তাতিয়ে নিয়ে রান্না করা হত। বাঁধাকপির পাতা দিয়ে গর্তের মুখ ঢেকে দিত যাতে খাবার পুড়ে না যায়। খাবার ঢেকে রাখার হত ভেড়ার চামড়ার তৈরি ঢাকনিতে। এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী মাওরি রান্নাকে হ্যাঙ্গি বলে। বর্তমানকালের ছবি ১৮৪০ থেকে ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মাওরিরা ইউরোপীয় সমাজে মিশে যেতে থাকে। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তারা খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন করে। চার্চ অভ ইংল্যান্ড এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চ-এই দুই গির্জেরই সদস্য হত তারা। বর্তমানে মাওরিরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে। এ সংখ্যা ২০০১ সালে ৯৯ জন থেকে ৭০৮ জনে উন্নীত হয়েছে। হাকা। বা যুদ্ধনৃত্য। আগে যুদ্ধের পূর্বে হাকা নাচা হত। এখন নিউজিল্যান্ড রাগবি টিম খেলার আগে হাকা নাচে। আর এভাবেই ... বর্তমানকালের নিউজিল্যান্ডবাসীর মাওরি-সংস্কৃতির চর্চা। ২০০০ সালে মাওরিদের সংখ্যা ছিল ৫৯৯,০০০- যা নিউজিল্যান্ডের জনসংখ্যার মোট ১৫.৭। এদের বেশির ভাগই বাস করে নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডে। অনেকেই অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন প্রভৃতি বড় শহরে বাস করে। এরা ইংরেজি ও মাওরি ভাষায় কথা বলে। ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেট ও মাইক্রোসফট এনকার্টা। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:৪৭
false
rn
একজন ভালো মানুষ কখনও অন্যকে অপমান করে না এক জীবনে একজন মানুষ কত বার অপমানিত হয়? আমি তো রোজ অপমানিত হচ্ছি। ঘরে বাইরে, অফিসে। সবচেয়ে বড় কথা বিনা কারণেই অপমানিত হচ্ছি। অফিসে কর্তা ব্যাক্তিরা অপমান কছে। কটু কথা বলছে, ঝাড়ি দিচ্ছে। কটাক্ষ করছে। মানবতা কি শুধু অভিধানেই থাকবে? তারা যদি সামান্য শুদ্ধ মানুষ হতো- তাহলে আমি সব মেনে নিতাম। আমার শিক্ষক বলতেন, একজন ভালো মানুষ কখনও অন্যকে অপমান করে না। অপমান শুধু তারাই করে যাদের মন ছোট। কেউ খারাপ ব্যবহার করলেই কি, পাল্টা খারাপ ব্যবহার করতে হবে? কোন বইতে যেন পড়েছিলাম- 'একজন আহত ব্যক্তি তার যন্ত্রনা যত সহজে ভুলে যায়, একজন অপমানিত ব্যক্তি তত সহজে অপমান ভোলে না'। ধর্মীয় কোনো বইতে পরেছিলাম- ' যে ব্যাক্তি বিনা কারনে ক্ষমতার দাপটে তোমাকে অপমান করবে, আল্লাহ তাকে অপমান করবে। সারারাদিন অফিসের কাজে আমাকে বাইরে-বাইরে থাকতে হয়। চারপাশে তাকিয়ে আমার শুধু মনে হয়- না। আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকই তো ইডিয়েট আর ছাগল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলীতে বলেছে- 'হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,/ অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!/ মানুষের অধিকারে/ বঞ্চিত করেছ যারে,/ সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,/ অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।' আমি ছোট্র একটা চাকরি করি, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে চাকরি ছেড়ে দেই। পর মুহূর্তেই ভাবি, চাকরি ছেড়ে দিলে সংসার চলবে কেমন করে! তখন আমি অনেক ছোট, মৃত্যু বুঝতাম, যুদ্ধ বুঝতাম না। এখন আমি অনেক বড়, যুদ্ধ বুঝি, মৃত্যু বুঝি না। আমি জানি এবং বুঝি- মিথ্যাবাদী ও দুর্বল মানুষ অন্যদের ছোট করাতে একটা বিকৃত আনন্দ পায়, নিজেদের শক্তিশালী ভাবে কিছুক্ষণের জন্য । যারা আমাকে অপমান করে, অপহেলা করে- তাদের প্রতি প্রতিশোধ নিবে প্রকৃতির। কারণ প্রকৃতি সবচেয়ে নির্মম প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আমি ঠিক করেছি, কারো পমানেই আর রাগ করবো না, বরং মাথা ঠান্ডা রাখব। কারণ রাগ এমন এক বিধ্বংসী আবেগ যা সুনামির মতো সবকিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাই কেউ খারাপ ব্যবহার করলে বা অন্যায় সুযোগ নিতে চাইলে প্রথমত শান্ত থাকতে হবে এবং ঠান্ডা মাথায় কৌশল ভাবতে হবে। মহামতি বুদ্ধ, যীশুখ্রিষ্ট বা নবীজী (স) কখনো বিরুদ্ধবাদীদের অন্যায় আচরণে ক্ষুব্ধ হন নি। নবীজী (স) যখন তায়েফে ধর্মপ্রচার করতে গিয়েছিলেন, তখন তায়েফবাসীরা পাথরের পর পাথর মেরে তাঁকে রক্তাক্ত করেছিলো। কিন্তু তারপরও তিনি তাদের ক্ষমা করেছেন, তাদের কল্যাণের জন্যে প্রার্থনা করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, রেগে যাওয়াটা পৌরুষ না, শক্তিমত্তা না। এটা হলো আহাম্মকি। যে অপমান বোধ করে, তার আসলে কোনো আত্মসম্মানবোধ নেই। আরেকজন গালি দিলেই আপনি অপমানিত হলেন না। গালি দিয়েছে সে, মুখ খারাপ করেছে সে। এটা তার সমস্যা। আপনার নয়। একটা কুকুর এসে ঘেউ ঘেউ করলে আপনি কি অপমানিত হন? তাহলে আরেকজন চিল্লাচিল্লি করলে আপনি কেন অপমানিত হবেন এখন বাইরের বাস্তবতার আঁচ বড় বেশী টের পাচ্ছি। মানুষের হিংস্রতা, লোভ, কুটিলতা-জটিলতা। এ যুগের মানুষরা ইচ্ছা করে মানুষ কে কষ্ট দেয়, অপমান করে এবং অন্যের সুখ কেড়ে নিয়ে আনন্দ পায়। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৩২
false
fe
সামনে নির্বাচন, সাবধানে পথ চলুন সামনে নির্বাচন, সাবধানে পথ চলুনফকির ইলিয়াস=========================================এই লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে তখন গোটা বাংলাদেশ ব্যস্ত থাকবে সিটি মেয়র নির্বাচনের ফাইনাল রেসে। সিলেট, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল নির্বাচনের ফলাফল জানিয়ে দেবে- কেমন হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখানে একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট। আর তা হচ্ছে, কিছু কিছু ইস্যু নিয়ে তাৎক্ষণিক বড় বড় কথা বললেও ‘মেয়র’ প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে তা ভুলে যান। অথবা তাদের কাজ ফলপ্রসূ করার উপায় থাকে না। যেমন ধরা যাক, সিলেটে জলাবদ্ধতার কথা। মেয়র কামরান এই ইস্যুতে ভালো ফল দেখাতে পারেননি। কেন পারেননি? তিনি প্রায় দুই দশক এই নগরের ‘নগরপিতা’ ছিলেন। অনেক কিছুই পারেননি। এখন আরিফুল হক চৌধুরী বলছেন, তিনি জলাবদ্ধতার মুশকিল আসান করবেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের দোসর ছিলেন। অনেক উন্নয়ন কাজের দাবিদার নিজেও। তিনিও পারেননি অনেক কিছুই। দেশ নির্বাচনমুখী। কিন্তু কিভাবে হবে সেই নির্বাচন? তা নিয়ে অনেক জল্পনা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা লাগামহীন কথা বলে বেড়াচ্ছেন। যা মূলত আওয়ামী লীগের পায়েই কুড়াল মারা হচ্ছে। দপ্তরবিহীন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি বলেছেন, জামাত-বিএনপি-হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্বরে ৫ মে সরকার উৎখাতের যে ষড়যন্ত্র করেছিল, মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিটুনি খেয়ে ‘সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ’ বলে পালিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এটা কেমন কথা হলো? একটি মানবগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে তিনি এমন কথাবার্তা বলবেন কেন? আমরা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে একজন মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক নেতা হিসেবে জানি। ‘কালো বিড়াল’ ধরতে গিয়ে তার নৈতিক স্খলন ঘটেছে, কিংবা তিনি ‘পরিবর্তনবাদী’ হিসেবে শেখ হাসিনার গুডবুক থেকে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছেন, এমন অনেক কথাই বাতাসে ভেসে বেড়ায়। কিন্তু তিনি একটি ধর্মের শব্দাবলী উচ্চারণ করে ফাউল কথা বলবেন কেন? বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং প্রতিবাদযোগ্য। তার এমন কথা প্রত্যাহার করে দুঃখপ্রকাশ সময়ের দাবি। যে প্রশ্নটি আসে, তা হচ্ছে শাল্লা-দিরাই এলাকার ভোটাররা, যারা মুসলমান তারা যদি এই প্রশ্ন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে করেন, তবে তিনি কী জবাব দেবেন? আরেকটি খবর আমাদের নজর কেড়েছে। আইন প্রতিমন্ত্রী ‘অসাবধানতাবশত কিছু কথা উচ্চারণ করেছেন’ উল্লেখ করে এর একটি সংশোধনী দিয়েছে পিআইডি। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এড. কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অসাবধানতাবশত কিছু কথা উচ্চারণ করেছেন। ‘অসাবধানতাবশত তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামাতের তিন নেতাকে জরিমানা এবং এর মধ্যে দুজনকে কারাদ- দেয়ার আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে তারা অযোগ্য হবেন এবং যারা সংসদ সদস্য তাদের সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।’ ‘তার একথা সঠিক নয়’ উল্লেখ করে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে তার বক্তব্য হলো- তাদের দ- বাতিল করতে হলে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে হবে।’ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করায় এর আগে কয়েকজন মন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তিকে নিয়ে নালিশ সামলাতে হয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে। মন্ত্রীরা এমন গাফিলতি কেন করছেন? তারা কি জানেন না, কথা বলার আগে সরকার-রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থটি রক্ষা করে এগোতে হয়। দেশের মন্ত্রীরা যতোই উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলছেন, ততোই বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীচক্র। রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বাড়ি লক্ষ করে পর পর কয়েকটি হাতবোমা ফাটানো হয়েছে। এর আগে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের আগের দিন গত ২৮ মে রমনা এলাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির বাড়ির ভেতরে দুটি হাতবোমা বিস্ফোরিত হয়। এসব কিসের আলামত? সরকারের মন্ত্রীরা উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে সচেষ্ট হতে পারতেন। তা না করে তারা বিভিন্ন আত্মঘাতী কথা বলে বেড়াচ্ছেন। যা মূলত নির্বাচন থেকে তাদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে। দেশ এখন নির্বাচনমুখী। এই নির্বাচনে কাদের জেতা উচিত? কারা জিতলে জনগণ জিতবে? এই প্রশ্নটি খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ একটি জাতি এমন পরিকল্পিত আঁধারে নিমজ্জিত থাকতে পারে না। এর থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। বেরিয়ে আসতেই হবে। আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি তৃতীয় মোর্চা তৈরির প্রয়াস চলছে। এদের অনেকেই সৎ এবং নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক বলেও পরিচিত। যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের কথা যদি বলা হয়, তবে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে, সৎ ব্যক্তিত্বদের নির্বাচিত করা উচিত। কিন্তু মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. কামাল হোসেন এমন নেতারা সেই চাহিদা পূরণে কতোটা সক্ষম? বাংলাদেশ গেলো ৪১ বছরে ইজমের রাজনীতি কম দেখেনি। এই ইজমের প্রতিপত্তি বিস্তারের লক্ষ্যেই দেশে বিভিন্ন ‘ভবন রাজনীতির’ তালুক সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেসব লুটেরা তালুকদার চক্র সাময়িকভাবে এখন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও তারা সময়মতো এসে রাজনীতিতে জেঁকে বসতে পারে। তাই এসব লুটেরা ফড়িয়া শ্রেণী সম্পর্কে জনগণের সব সময় সতর্ক থাকা দরকার। যে রাজনৈতিক নিষ্পেষণ সাড়ে পনেরো কোটি মানুষের ভাগ্যকে নির্মমভাবে বিড়ম্বিত করেছে, তা থেকে মুক্তি খুঁজতে হবে মানুষকেই। এ জন্য ঐক্য এবং সাহসের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষ জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তির বাংলাদেশ চান। তারা চান ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলার মাটিতে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনার চিরঅবসান হবে। আর সে জন্যই গুণী, ত্যাগী, নিঃস্বার্থ এবং সৎ সাংসদ নির্বাচিত করতে হবে। যে কথাটি না বললেই নয়, তা হচ্ছে বাংলাদেশের মেরুদ-ের প্রধান শক্তি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাই যুদ্ধাপরাধীমুক্ত, রাজাকার-হায়েনামুক্ত, একটি সংসদ গঠনে জনতাকে প্রত্যয়ী হতে হবে। গণতন্ত্রের যেমন বিকল্প নেই, তেমনি সুশিক্ষিত ভোটারেরও বিকল্প নেই। প্রতিবেশীকে সচেতন করে তোলা অন্য প্রতিবেশীরই নৈতিক এবং জরুরি দায়িত্ব। আগামী নির্বাচনে এরশাদ একটা ফ্যাক্টর, তা অনেকে মনে করেন। মহাজোটের থিওরি ছিল রাজাকারের চেয়ে স্বৈরাচার ভালো। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাবেক স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের জাতীয় পার্টির ঐক্য আদৌ হওয়া উচিত ছিল কিনা তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। কারণ এই এরশাদশাহীর অবৈধ ক্ষমতায় থাকার নয় বছরে দেশে গণতন্ত্রকে হত্যার ব্যাপক তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য আদালতে মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে। সেলিম, দেলওয়ার, ডা. মিলন, বসুনিয়া, নূর হোসেন প্রমুখ শহীদদের বুক ঝাঁঝরা করা হয়েছিল এই স্বৈরশাসকের মসনদ বাঁচাবার জন্যই। ব্যাপক রক্তপাতের মাধ্যমে সৃষ্ট নব্বইয়ের গণআন্দোলন এরশাদের পতনের সূত্রপাত করে। তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। এটা জানা বিষয়, শেখ হাসিনা, এরশাদকে মহাজোটে না নিলে বিএনপি তাকে কাছে টানতো। আওয়ামী লীগ ব্রুট মেজরিটি পাওয়ায় জাতীয় পার্টির গুরুত্ব কমে যায়। এই অবস্থার মাশুল আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে দিতে হতে পারে। সব মিলিয়ে যে কথাটি জরুরি তা হলো বর্তমান সরকারের সাবধানতা। একটা কথা আছে- ‘সামনে খাদ, সাবধানে চলুন’। একথা ঘুরিয়ে বললে, বলতে হবে- সামনে নির্বাচন, সাবধানে পথ অতিক্রম করুন। দেশে রক্তপাত ঘটিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা যায় না। যাবেও না। তবে আবার যদি দেশে বাংলাভাই-শায়খ রহমানের মুনিবরা রাষ্ট্রক্ষমতা পায় তাহলে কী গতি হবে, তা ভাবতে হবে। মহাজোট সরকারের ব্যর্থতা আছে। আছে সাফল্যও। এই সাফল্যের ইশতেহার নিয়ে গণমানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। ব্যর্থ এমপিদের সরিয়ে দিতে হবে প্রার্থিতা থেকে। কাজগুলো সহজ নয়। কিন্তু এই কাজটি করতে হবে আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনাকেই।------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ১৫ জুন ২০১৩
false
rg
বাংলাদেশের কলা সমাচার!! কাঁচা কলা এক রাতে পাকা হয় কেমনে?আজকেই গাছ থেকে কাঁচা কলা কাঁটা হলো। কোনো মতে রাত পারালেই সেই কলা পেকে একেবারে টুকটুকে হলুদ হয়ে যায়। যাকে বলে সোনাই চাচার বিচিত্র কেরামতি! খাওয়ার সময় আপনি টেরই পাবেন না যে, এই কলা গতকালও গাছে একেবারে কাঁচা ছিল, সঙ্গে প্রচুর কসও ছিল। একবার ভাবুন তো কী জাদুতে এই কাঁচা কলা এক রাতে পেকে অমন পাকা কলার মত খাবার উপযোগী হলো?ঢাকায় যারা কলা বিক্রি করেন, তাদের প্রত্যেকের কাছে আছে কাঁচা কলার আরোতদারদের মোবাইল ফোন। কাঁচা কলার আরোতদার সারাদিন কাঁচা কলা কিনে একটা ঘরে সেই কলা জড়ো করেন। যে ঘরে এই কলা জড়ো করা হয় ওটাকে বলতে পারেন কলার গুদাম। তো সোনাই চাচার মত কেউ কলার গুদামে নিজের শরীর ঘুরানো যায় মাঝখানে এমন একটু বৃত্তাকার জায়গা রেখে চারপাশে কাঁচা কলা থরে থরে এমনভাবে সাজান, যেন নিজের মাথা সমান উঁচু হয় সেই কলার গোল চাকতি। এবার সোনাই চাচা মাথার উপরে ঝুলানো আংটা ধরে খুব কৌশলে কলার চাকতি থেকে নিজেকে টেনে বের করেন। এবার কলার চাকতিতে ঘুরে ঘুরে খুব ভালো করে বিষাক্ত কীটনাশক ওষুধ চারপাশ থেকে স্প্রে করেন। সোনাই চাচা এই স্প্রে যত মন দিয়ে করবেন, কলা পাকবে ঠিক সেই তালে। স্প্রে করা শেষ হলে ট্যাংকি ভরতি কেরোসিনের হেরিকেন ফুল ভলিউমে জ্বালিয়ে ওই কলার চাকতির ভেতরে উপর থেকে কায়দা করে বসিয়ে দেন সোনাই চাচা। এবার প্রথমে মোটা পলিথিন দিয়ে ওই কলার চাকতিকে এয়ারটাইট করে আটকানো হয়। এই মোটা পলিথিনকে সোনাই চাচা বলেন ত্রিপল। ত্রিপল খুব সুন্দরভাবে বাঁধার পর সোনাই চাচা পরবর্তী কলার চাকতি বানাতে কাজে ব্যস্ত হয়ে যান। স্প্রে করা এই কাঁচা কলা এয়ারটাইট পলিথিনের ভেতরে হেরিকেনের তীব্র তাপে নেয়ে-ঘেমে একেবারে একাকার হয়ে যায়। আর এভাবে কয়েক ঘণ্টা কাঁচা কলা চাকতির ভেতরে দমবন্ধ হয়ে আটকা থাকলেই পেকে একাকার হয়ে যায়। এবার সেই ফকফকা পাকা কলা পরদিন ঢাকার বাজারে বা সারা দেশের হাটেঘাটে বন্দরে ভোক্তার জন্য সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। এখন কেউ যদি কলা খেয়ে ভেতরে চাকা পায় এবং বিক্রেতাকে কোনো ধরনের কমপ্লেইন করে, তাহলে ওই বিক্রেতা মোবাইল ফোনে সোনাই চাচারে একটা ধমক লাগায়। ওই মিঞা কলা এমন জিঙ্গা হইলো কেমনে? যে কলা ঠিকমত পাকে না, ওটাকে ওরা বলে জিঙ্গা। কোন কলা জিঙ্গা হবে, তা নির্ভর করে সোনাই চাচারা কী পরিমাণ বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করেছিলেন, তার উপর। চাচা যদি কম স্প্রে করেন, তাহলে সেই কলা জিঙ্গা হবে। বিক্রেতা আগেভাগে টের পেলে দামও কম হবে সেই কলার। কলায় যদি ভালোমত স্প্রে হয়, তাহলে সেই কলা খুব সুন্দরভাবে পাকবে। সেক্ষেত্রে সোনাই চাচা খুব মনযোগ দিয়ে যদি স্প্রে করেন, তাহলে কলার ভেতরে কোনো ধরনের চাকা পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নাই। আপনি খেয়ে বলবেন, আহা কী সুস্বাদু কলারে ভাই। চাচা আরেকটা খাই। এইডা কী নরসিংদীর কলা? কিন্তু মিস্টার কলা খাওনেওয়ালা ও মিস কলা খাওনেওয়ালী, আপনি কিন্তু একদম জানেন না যে, এই কলা গতকালও গাছে একেবারে কসযুক্ত কাঁচা কলা হিসেবেই ছিল। আর তা এক রাতেই সোনাই চাচার কেরামতিতে পেকে একেবারে আপনার জিহবার জন্য সুস্বাদু আকারে পরিনত হয়েছে। আর তা পেকেছে সোনাই চাচার ওই জাদুতে। সোনাই চাচা কাজে একটু ফাঁকি দিলে সেই কলা আপনি চোখে ঠিকই পাকা দেখবেন, কিন্তু ভেতরে চাকা চাকা পাবেন। একটু বিরক্তও হবেন। কিন্তু কলার দাম কিন্তু ভাই এক টাকাও কমবে না। সোনাই চাচাদের কলা পাকানোর এই অভিনব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এখন গোটা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু কলা খাওয়ার নামে আপনি যে বিষ খাচ্ছেন, সেজন্য আপনার শরীরে খুব নিরবে মারাত্মক সব জটিল রোগেরও বাসা তৈরি হচ্ছে। সেই খবরটি আপনি ভুলেও টের পাচ্ছেন না। আর গোটা বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষ এই কৃত্তিম উপায়ে বিষ দিয়ে পাকানো কলা কেবল সারা বছর আরামে খেয়ে যাচ্ছেন। আহা মিঠাই কলা। কত রঙের কলা রে ভাই!বাংলাদেশে এখন প্রায় সকল খাবারেই এমন নানান কিসিমের ভেজাল মিশ্রিত থাকে। আপনি বাজার থেকে যে কোনো ফল কেনেন না কেন, তা যাতে না পচে সেজন্য এমন বিষাক্ত প্রিজারবেটিভ ব্যবহার করা হয়। আপনি যে মাছ কিনছেন, তা আসলে এক বিষের খনি। আপনি যে ফল খাচ্ছেন, তা আসলে বিষাক্ত খনির আব্বাহুজুর। এমনকি এসব বিষ খেয়ে আপনি যখন ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে যে ওষুধ খাচ্ছেন, সেই ওষুধেও আবার ভেজাল। এবার বলেন, আপনি কোথায় যাবেন?এভাবেই বাংলাদেশের উন্নয়ন শনৈ শনৈ গতিতে জোড় কদমে এগিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে আমাদের রাজনীতিবিদরা একটু অসুস্থ হলেই দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে যান। আমাদের পয়সাওয়ালারা একটু অসুস্থ হলেই দেশের বাইরে ছোটেন। কারণ, এই ভেজাল খাবারের গোটা চক্রের আসল ঘি ঘুরে ফিরে ওনাদের ঘরে যায়। কখনো কখনো নিজেদের ভুলে সেই বিষ নিজেদের পেটেও কিছুটা যায় বটে। তাই সুস্থ হবার জন্য আর ভেজাল চিকিৎসার উপর নির্ভর না করে ওনারা দেশের বাইরে গিয়ে ভালো চিকিৎসা নিয়ে আসেন। বুদ্ধি আছে ওনাদের বটে!এই যে কাঁচা কলা রোজ আপনার চোখের সামনে পাকিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে, এটা কিন্তু প্রশাসন জানে। আমাদের পুলিশ জানে। আমাদের রাজনীতিবিদরা জানে। এমনকি আমাদের ভেজালমুক্ত বিএসটিআই-ও জানে। কিন্তু মাগার আপনার এর জন্য দেশে কোনো ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নাই। আপনি বাজার থেকে সামান্য লাল শাক কিনবেন। বাড়িতে নিয়ে লাল শাক ধুইতে গিয়ে দেখবেন তা দিয়ে রঙ বের হচ্ছে। মানে রঙ দিয়ে আপনাকে টাটকা লাল শাক বলে ওটা বিক্রি করেছে ওই অসাধু বিক্রেতা চক্র। কোথায় যাবেন আপনি? আপনার ভেজাল না খেয়ে কোনো উপায় নাই। যতদিন বাঁবেন ভেজালের উপর বাঁচবেন! শালা ভেজালখোর জাতি একটা! কলা খাবেন, খান। বুঝে শুনে টিপে টিপে পাকা কলা খান। দেশে এভাবে উন্নয়নের বিশাল জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আপনি খালি চোখে একদম টেরও পাচ্ছেন না, এত উন্নয়ন রাতারাতি কেমনে কেমনে হচ্ছে! কি বিচিত্র দেশরে ভাই! পৃথিবীর আর কোথাও এমন দেশ দ্বিতীয়টি নেই। যান বাড়িতে গিয়ে বেশি বেশি পাকা কলা খান। শরীর ভালো থাকবে। .........................২ নভেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৬
false
fe
প্রতিক্রিয়াশীলদের ঢাল ও কতিপয় প্রগতিবাদীর মুখোশ প্রতিক্রিয়াশীলদের ঢাল ও কতিপয় প্রগতিবাদীর মুখোশ ফকির ইলিয়াস ========================================== মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের কথা আপনারা শুনেছেন? অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তিনি যা বলেছেন, তা খুবই ভয়ানক। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্টরাই লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে। সিপিবি সভাপতি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অভিজিৎ হত্যার বিরুদ্ধে থাকলে এফবিআইয়ের টিম পাঠানোর দরকার নেই। তারা এ দেশে জামায়াত-শিবির পোষণ বাদ দিলেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ তারা অভিজিৎকে হত্যা করতে জামায়াত-শিবিরকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে, আবার তদন্ত করতে টিমও পাঠাচ্ছে।’ অভিজিৎ হত্যার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই সদস্যের পাঠানোর সমালোচনা করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ঢাকার বুকে এফবিআইয়ের পার্মানেন্ট অফিস আছে। তাদের বাইরে থেকে টিম পাঠানোর প্রয়োজন ছিল না। আসলে তারা আরেকটু শক্ত করে কামড় দিতে চায়।’ সেলিম এই যে কথাগুলো বলছেন, তা কার স্বার্থ রক্ষা করছে? পক্ষান্তরে কি মৌলবাদী শক্তিই আস্কারা পাচ্ছে না? ঢালাও করে ওরাও বলতে শুরু করেছে, আমেরিকা কেন আসবে এখানে নাক গলাতে? বাংলাদেশের প্রগতিবাদী দাবিদার এমন কতিপয় নেতাদের আমরা চিনি, জানি তাদের সন্তানরা কোথায় পড়ে। তারা কোথায় চিকিৎসা করান। তাদের স্ত্রী-কন্যারা শপিং করতে কোথায় মাঝে মাঝে উড়াল দেন। বাংলাদেশে কতিপয় প্রগতিবাদী, চরম প্রতিক্রিয়াশীলদের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। তারা কার পারপাস সার্ভ করছেন, তা এখন আমাদের আর বুঝতে বাকি নেই। আরেকটা চরম দুঃসংবাদ এখানে শেয়ার করা খুবই জরুরি মনে করছি। এই চরম শঙ্কাজনক সংবাদ ইতোমধ্যে মিডিয়ার কল্যাণে জেনে গেছেন বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষ ব্যক্তির সর্বনাশ করার প্লট তৈরি করা হচ্ছিল। এটা মার্কিনি গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে যায়। এবং ষড়যন্ত্রটি ফাঁস হয়ে যায়। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে, প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ৮ মার্চ ২০১৫ লেখা এই স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ যা বলেছেন, তা হুবহু এখানে তুলে ধরতে চাই। তিনি লিখেছেন- ‘৪ মার্চ, বুধবার আমি মার্কিন আদালতে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে একটি বক্তব্য পেশ করেছি, যে আদালতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের সাজা ঘোষণা করা হয়। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব সিজারকে মাসে ৪০,০০০ মার্কিন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে প্রথম দফায় ৩০,০০০ মার্কিন ডলার ক্যাশ প্রদান করে। তদন্ত চলছে তাই আমি তাদের নাম প্রকাশ করতে পারছি না। বিএনপি আমাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আবারো বলছি, এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের আচরণ হতে পারে না। এগুলো জঙ্গিদের আচরণ। যে দল নিরীহ মানুষ ও শিশুকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে, তাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়? লক্ষ করে দেখুন, যেসব পত্রিকা ও ‘সুশীল সমাজ’ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে কখনো পিছপা হয় না, তারা এ বিষয়ে একেবারে নিশ্চুপ। বিএনপি অপহরণ ও হত্যা করতে পারে, তারপরও তারা কখনই বিএনপিকে সরাসরি দায়ী করে কিছু বলবে না। তারা সবসময় দুই দলকে দোষী করবে। আমাকে হত্যা করার জন্য বিএনপির এই প্রচেষ্টার সপক্ষে তারা কোন যুক্তি তুলে ধরবে এখন? এই একই ‘সুশীল সমাজ’ দাবি করে যে ব্যক্তিগত রেষারেষির জের ধরেই নাকি বিএনপি নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারে। আমাকে যখন কেউ হত্যার চেষ্টা করছে, সেটিও তখন আমি খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে নিচ্ছি। যারা এর জন্য দায়ী, তারা বিএনপির যত উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বই হোক না কেন, আমি তাদের হদিস বের করে বিচারের মুখোমুখি করব।’ যে বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ বলছেন তার আগের ঘটনা কি? তা দেশ-বিদেশের প্রায় সবাই জানেন। আমেরিকান আদালতে এফবিআই ঘুষ কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতার ছেলের ৪২ মাস সাজা হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতির ষড়যন্ত্র হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ৫ লাখ ডলার ঘুষের প্রতিশ্রæতি দিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এই কাজটি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার (৩৬)। এ ঘটনায় তাকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। প্রায় দুই বছর আগে এই যড়যন্ত্রটি ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে জয়কে অপহরণের বিষয়টি জানা না গেলেও তার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা জানাজানি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এফবিআইয়ের দায়ের করা মামলায় গত ৪ মার্চ ২০১৫ বুধবার সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে রিজভীকে। এ ঘটনায় অপর অভিযুক্ত ঘুষ লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোহানেস থালেরকেও আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন ফেডারেল আদালতের বিচারক ভিনসেন্ট এল ব্রিকেটি এই দণ্ডাদেশ দেন। মামলার প্রধান আসামি এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সাজার বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে আগামী ৩০ এপ্রিল ২০১৫। এই লাস্টিকই সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পর্কে এফবিআইয়ের কাছে থাকা তথ্য পাচার করে তাকে ও পরিবারের সদস্যদের অপহরণ ও ক্ষতিসাধনের লক্ষ্যে ৫ লাখ ডলারে চুক্তিবদ্ধ হন। এই যে ঘটনা, এ বিষয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজ কি বলছেন? তারা কিছু বলেছেন কি? না এখনো আমরা শুনিনি। এটা খুবই লজ্জার কথা, কিছু মুখোশধারী বাংলাদেশে নিজেদের মতো করে তত্ত্ব বিতরণ করছেন। যা মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পায়ে কুড়াল মারছে। এ মার্ডার ইন বাংলাদেশ- শিরোনামে প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস যা বলেছে, তা পড়েননি বাংলাদেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবী? ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে- লেখকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। একই সঙ্গে একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যে, হত্যা করার মাধ্যমে বাক-স্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে ব্লুগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক মেরুকরণ এ সংকটের নেপথ্যে অবদান রাখছে। এ মার্ডার ইন বাংলাদেশ শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এটা ছিল একের ভেতরে দুইয়ের মতো। অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার পর চরমপন্থী গ্রুপ আনসারুল্লাহ বাংলা-৭ টুইটারে লিখেছিল- টার্গেট ছিল এক মার্কিন নাগরিক। একের ভেতর দুই। একের ভেতর দুই- কারণ, ব্লুগার অভিজিৎ রায় ছিলেন একাধারে স্বীকৃত নাস্তিক ও মার্কিন নাগরিক। ওই টুইটে আরো লেখা ছিল রিভেঞ্জ প্লাস পানিশমেন্ট (প্রতিশোধ ও শাস্তি)। সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে, অভিজিৎ রায় দৃশ্যত খুন হয়েছেন শুধু একজন মার্কিন নাগরিক হওয়ার কারণে। কথা হলো, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড বিষয়ে বাংলাদেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী-লেখকরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন না কেন? কেন তারা একটি জোরালো বিবৃতি পর্যন্ত দিলেন না? মনে রাখতে হবে যে বিষধর সাপ আজ বাংলাদেশে ফণা দেখাচ্ছে, তার বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে না পারলে কেউই রক্ষা পাবেন না। এরা আবার সুযোগ পেলে আরেকটি ১৪ ডিসেম্বর ঘটাতে মোটেও দেরি করবে না। বিষয়গুলো আজ সরকার, রাষ্ট্র, জনগণ সবারই ভাবা দরকার। বাংলাদেশের রাজনীতি আজ একটি ষড়যন্ত্রের কাছে জিম্মি। যারা আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারছে, তাদের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ এই কাজে প্রাণের তাগিদ অনুভব করছেন না। তারপরও শুধুমাত্র শীর্ষ নেত্রীর ছেলে ও নিজেকে বাঁচানোর জন্য গুহা থেকে এমন আদেশ দেয়া হচ্ছে। ‘মানুষের অধিকার’ প্রতিষ্ঠার নামে কায়েমি স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার পতনের মতো রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধে মদদ দেয়া হচ্ছে। এটা কোনো সভ্য রাজনীতির লক্ষণ হতে পারে না। বিশ্ব ইজতেমা হয়েছে, অবরোধ বাতিল করা হয়নি। পরীক্ষায় হরতাল-অবরোধ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতেও অবরোধ বাদ দেয়া হয়নি। ক্রিকেট জয়ের পর বারো ঘণ্টা হরতাল তুলে নেয়ায় মানুষজন ঠিকই রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস করেছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে এ হরতাল-অবরোধে সাধারণ মানুষের সায় নেই। আন্দোলনটা তবে কার জন্য করছেন খালেদা জিয়া? এ ছাড়া বিদেশে-স্বদেশে তারা যে ষড়যন্ত্র করছেন, তা ক্রমশ বের হয়ে আসছে থলের বেড়ালের মতো। সময় এসেছে, এসব বিষয়ে সরকারের জবাবদিহিতার। সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এই ‘অসময়’ কিভাবে মোকাবেলা করবে। দেশে যে আইন আছে, তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হোক। লেবাসধারী সুশীলদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে গর্ত থেকে বের হয়ে যে নীতিবাক্য শোনাচ্ছেন- তাদের পরিচয় আমরা ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেখেছি। দেখেছি এর আগেও। তাই তাদের বাণী থেকে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত না হলেই উপকৃত হবেন। --------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৪ মার্চ ২০১৫ প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:১৮
false
hm
বংশলতিকা ১. ভোরবেলা কুকুরের গম্ভীর হিংস্র ডাকে ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো, আবছাভাবে মনে করতে পারলেন চৌধুরী মেহমুদউল্লাহ সিকান্দার। সম্ভবত তখনই চিঠিটা রেখে গেছে কোনো শালা শুয়ারের বাচ্চা, মনে মনে ভাবলেন তিনি। কালু ডাকাতের কাজ, কোনো সন্দেহ নেই। বড় তুলোট কাগজে গোটা গোটা হরফে ফারসীতে লেখা চিঠি। কালু ডাকাতের দলে শিক্ষিত মুনশি আছে একজন, শুনেছিলেন তিনি রায়পাহাড়ের জমিদার অনিন্দ্য রায়চৌধুরীর কাছে ... ১. ভোরবেলা কুকুরের গম্ভীর হিংস্র ডাকে ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো, আবছাভাবে মনে করতে পারলেন চৌধুরী মেহমুদউল্লাহ সিকান্দার। সম্ভবত তখনই চিঠিটা রেখে গেছে কোনো শালা শুয়ারের বাচ্চা, মনে মনে ভাবলেন তিনি। কালু ডাকাতের কাজ, কোনো সন্দেহ নেই। বড় তুলোট কাগজে গোটা গোটা হরফে ফারসীতে লেখা চিঠি। কালু ডাকাতের দলে শিক্ষিত মুনশি আছে একজন, শুনেছিলেন তিনি রায়পাহাড়ের জমিদার অনিন্দ্য রায়চৌধুরীর কাছে। তবে হাতের লেখা দেখে নয়, কালু ডাকাতকে সনাক্ত করার সহজ উপায় হচ্ছে মরা হাঁস। হুমকি চিঠির সাথে একটা হাঁসের গলা কেটে পাঠায় সে। নায়েব যতীনবাবু গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন পাশে। চৌধুরী সাহেব গলা খাঁকরে বললেন, "ফারসী পড়া আসে না আমার। চিঠিটা পড়ো সরকার।" যতীন সরকার মুখের গাম্ভীর্য অটুট রেখে চিঠিটা পড়তে শুরু করলেন। সামান্য সুর করে একটি একটি ফারসী বাক্য পড়ে শেষ করে তার পর বাংলায় তর্জমা করে বলে যেতে লাগলেন, "জমিদার সাহেব, কুশল জানবেন। ... খোদার ইশারায় আমার বাইশ হাজার টাকার প্রয়োজন হইয়াছে। ... কার্তিক মাসের মধ্যেই টাকাটি সংগ্রহ করিব। ... অযথা বাধা প্রদান করিয়া গরীবকে কষ্ট দিবেন না। ... আপনার স্নেহধন্য, কালু শেখ।" চৌধুরী সিকান্দারের মুখ অন্ধকার হয়ে এলো রাগে। কার্তিকের শেষ সপ্তাহে কোম্পানির খাজনা পরিশোধ করতে যাচ্ছেন তিনি। গুণে গুণে বাইশ হাজার টাকা। ক্রোধান্ধ চৌধুরী হুঁকার নল মাটিতে আছড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ালেন। "চার নৌকা লাঠিয়াল সঙ্গে নাও সরকার! বন্দুক যা আছে সব সাথে যাবে!" যতীন সরকার গম্ভীর মুখে মাথা ঝোঁকালেন শুধু। নদীপথে কালু ডাকাত কালবৈশাখীর মতোই তীব্র আর পূর্বাভাসের অযোগ্য। "রায়পাহাড়, সরিষাবন, মহুয়াকাঠি আর বারুদগাছার জমিদার সাহেবদের কাছে লোক পাঠাও। খবর পাঠাও, ধলিয়াদির জমিদার, সিকান্দার পরিবারের বড় ছেলে মেহমুদউল্লাহ কালু শেখের শির উপহার চান। যিনি দিতে পারবেন, তার আগামী বছরের খাজনা সিকান্দাররা শোধ করবে!" যতীন সরকার অস্ফূটে বললেন, "কিন্তু ... সে যে অনেক খরচান্ত পড়বে রাজামশাই ...!" চৌধুরী মেহমুদউল্লাহ বাঘের গর্জনে বললেন, "খরচকে সিকান্দাররা ভয় করে নাকি? কালু শেখের কল্লা তশতরিতে করে কাছারি ঘরে সাজানো দেখতে চাই আমি!" যতীন সরকার ম্লান মুখে বললেন, "লোক পাঠাচ্ছি।" ২. কার্তিকের এক কৃপণ চাঁদের ভোরে চৌধুরী সিকান্দারের বজরার সাথে চারটি বড় নৌকা বোঝাই পেশীবহুল লাঠিয়াল বাহিনী ভেসে পড়লো যমুনায়। চৌধুরী সাহেব তার গুলিভর্তি ফরাসী রাইফেলটি বজরার শয়নকক্ষে তৈরি রেখেছেন। ৩. কালু ডাকাতের নাম অকারণেই কালু রাখা হয়েছে, দলের অন্য যে কোনো ডাকাতের চেয়ে তার গায়ের বর্ণ উজ্জ্বল। এ কারণেই ডাকাতি করার সময় কালু গায়ে কাঠকয়লার গুঁড়ো মেখে যায়। সেদিন সন্ধ্যায় কালু কোনো অঙ্গারপ্রসাধন ছাড়াই বল্লম হাতে সংক্ষিপ্ত হুকুম দিলো শুধু, "চল!" কুড়িজন ভয়ঙ্করদর্শন ডাকাত ক্ষয়াটে চাঁদের নিচে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো ধলিয়াদীর জমিদারের কাঁঠালবাগান ছেড়ে। গত তিনদিন ধরে তারা এই বিরাট বাগানের ভেতরে লুকিয়ে আছে মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে। চারদিক অন্ধকার, বহু দূরে রাক্ষসপুরীর মতো জেগে চোখ মিটমিট করছে জমিদারবাড়ি। কালুর সাগরেদদের মধ্যে চাঁই খগা ফিসফিস করে বললো, "ওস্তাদ, টাকাপয়সা তো সব নিয়ে বেরিয়ে গেছে জমিদার। খালি বাড়িতে কী ডাকাতি করবেন?" আরেক সাগরেদ আলি মিয়া হিসহিস করে বাতাসের স্বরে বললো, "সোনাদানা আছে না? যতো সোনার গহনা আছে সব লুটে আনবো!" কালু হাসে নিঃশব্দে। অন্ধকার রাতের বুকে ফুটে ওঠে একসারি ঝকঝকে দাঁত। ৪. জমিদারবাড়ির নিজস্ব প্রহরীরা কালু শেখের ডাকাতদলের মুখোমুখি হবার যোগ্য নয়। তাদের একজন পেটে বর্শা নিয়ে লুটিয়ে পড়লো, একজনের মস্তক প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো হাঁসুয়ার কোপে, বাকিরা ঊর্ধ্বশ্বাসে পালালো। বিনা শোরগোলো। কালু বল্লম হাতে মস্ত কয়েক লাফে সিঁড়ি ভেঙে উঠে গেলো দোতলায়। জমিদারের ছোটো বউ রুখসানার ঘর সেখানেই, সে জানে। ছোটো একটা বিষের শিশি আঁচলে রাখা দস্তুর জমিদারগৃহিণীদের, রুখসানা নিতান্ত নবীনা বলে চর্চাটা আত্মস্থ করে উঠতে পারেনি। কালুর প্রচণ্ড লাথিতে দরজার শিথিল খিল ভাঙার শব্দে বিছানায় জেগে উঠে সে অনুভব করলো, ভুল হয়ে গেছে। ঘরের ভেতর একটা প্রদীপ টিমটিম করে জ্বলছে, মাটিয়ে শুয়ে থাকা বুড়ি দাসী রুখসানাকে জড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে। কালু বুড়িকে দরজার বাহিরে বেরিয়ে যেতে ইশারা করলো হাত দিয়ে। বুড়ি নড়লো না। কালু গমগমে স্বরে শুধু বললো, "যা!" বুড়ি দাসী খোঁড়াতে খোঁড়াতে চোখের জল মুছতে মুছতে ছুটে বেরিয়ে গেলো। কালু হাতের বল্লমটা খিলের ঘাটে বসিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়ালো। কালুর সঙ্গীরা যখন চৌধুরী মেহমুদউল্লাহর প্রথমা স্ত্রীর ঘরে ঢুকে সিন্দুক খোলার জন্য হুমকিধামকি দিচ্ছে, কালু তখন অন্যকিছু লুণ্ঠনে ব্যস্ত। সোনা লুট করতে সে আসেনি আজ। ৫. রুখসানার শিশুপুত্রটির গায়ের বর্ণ উজ্জ্বল বলে আর তেমন শোরগোল হলো না। সাত বছরে পা দেয়ার পর মস্ত হাতিতে চড়ে তাজ মাথায় ধলিয়াদীর সীমানা ধরে এক চক্কর মেরে এসে পিতার পা ছুঁয়ে কদমবুসি করলো চৌধুরী মেহরাবউদ্দিন সিকান্দার। ৬. সিকান্দার পরিবারের সন্তানেরা আজ যখন সংসদ নির্বাচনে নামেন, তখন যুগের ধারা অনুসরণ করতে ভোলেন না। ওয়েবসাইটে বিরাট বংশলতিকা ঝোলান, সম্রাট বাবরের বংশধর তারা। বাবর থেকে শুরু করে চৌধুরী মাশরুফ মোহসিন সিকান্দার পর্যন্ত একের পর এক দেদীপ্যমান গুম্ফবান সিংহপুরুষের নাম আর তৈলচিত্র শোভা পায় সেই ওয়েবপেজে। দেশের লোকজনের বোঝা উচিত, চাকরবাকরদের ছানাপোনাদের দিয়ে রাজনীতি চলে না। দেশ চালাতে হলে আওকাৎ থাকতে হয়, রক্তে বহমান থাকতে হয় যথাযোগ্য খানদানের কণা। ধলিয়াদীর সিকান্দাররা এমনই এক পরিবার। দলে দলে ভোট দিন।
false
rg
অতপর তাঁহারা দণ্ডিত অথবা দম্ভিত হলেন ।। রেজা ঘটক জীবনানন্দ পুরস্কার ২০০৮ পেলেন কথা সাহিত্যে সুশান্ত মজুমদার এবং কবিতায় কামাল চৌধুরী। শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জীবনানন্দ পুরস্কার ২০০৮ প্রদান অনুষ্ঠাণে সভাপতিত্ব করেন ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান কবি বেলাল চৌধুরী। অনুষ্ঠাণে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট প্রাবান্ধিক প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। এছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি রফিক আজাদ, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি নূরুল হুদা ও কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই লেখক অনুষ্ঠাণে তাঁদের অভিজ্ঞতা বর্নণা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন নব্বই দশকের তরুণ কবি শামীম রেজা। ধানসিঁড়ি সাহিত্য সৈকত ও শিল্প সাহিত্যের কাগজ ও দূর্বা যৌথভাবে এই পুরস্কারের উদ্দ্যোক্তা। অনুষ্ঠাণে নানা বয়সি কবি সাহিত্যিক লেখিয়েদের উপস্থিতি শেষ পর্যন্ত একটা প্রাণবন্ত সাহিত্য আড্ডায় রূপ নেয়। দেশের প্রচলিত সাহিত্য পুরস্কারগুলো থেকে এই পুরস্কারের বিশেষত্ব হল এর আগে কোন জাতীয় পদকে ভূষিত হননি এমন ব্যক্তিদের জন্যই কেবল এটি প্রযোজ্য। যদিও নোবেল পুরস্কার থেকে শুরু করে যে কোন ধরনের পুরস্কারের সাথেই আজকাল রাজনীতির ব্যাপারটি জড়িত। কিন্তু আয়োজক ও আলোচকদের নিরহঙ্কার দাবী ছিল যে জীবনানন্দ পুরস্কারটি সে তুলনায় অনেকটাই অরাজনৈতিক পুরস্কার। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৭ সাল থেকে ধানসিঁড়ি ও দূর্বা যৌথ উদ্দ্যোগে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। সে বছর জীবনানন্দ পুরস্কার পান কবিতায় আসাদ মান্নান এবং কথা সাহিত্যে সালমা বাণী। অনুষ্ঠানের শুরুটা ধরতে দেয়নি ঢাকার যানজট। তাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর আলোচনা শোনার সৌভাগ্য হয়নি। প্রফেসর সিদ্দিকীর বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে গিয়ে শুনলাম করতালিতে মুখরিত হলঘর। অনুমান করি স্বয়ং কবি জীবনানন্দ দাশ এই অনুষ্ঠাণে সশরীরে হাজির থাকলে উনিও খানিকটা পুলকিত হতেন। কারণ কথায় কথায় তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছিল নানা বিশেষণে নানা ভঙ্গিমায়। কবি বেলাল চৌধুরী জানালেন একবার নাকি কলকাতায় এরকম একটা অনুষ্ঠাণে কবি জীবনানন্দকে একটা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছিল। পুরস্কারের মূল্য ছিল নগদ একশো টাকা, একটা সম্মাননা পত্র আর অনেকগুলো ফুলের মালা। কবি তনয়া মঞ্জুশ্রী দাশ বাবার স্বৃতিচারণে শুনিয়েছিলেন যে, অনুষ্ঠাণ থেকে ফেরার পর বাবাকে দেখলুম ফুলগুলো খাটের নিচে রেখে চুপচাপ লেখার ঘরে হেঁটে যাচ্ছেন। অনুষ্ঠাণ কেমন হল জিজ্ঞাসা করলে উনি তখনো আগের মতোই নির্লিপ্ত ছিলেন। অর্থ্যাৎ পুরস্কারের প্রতি স্বয়ং জীবনানন্দই তেমন একটা আগ্রহ দেখাননি। পুরস্কার বরং শিল্পীর সৃষ্টিকে আরো শানিত করার জন্য উৎসাহ যোগাতে সাহায্য করতে পারে বলে তিনি অভিমত রাখেন। কবি রফিক আজাদ বলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে শক্তিমান কবি জীবনানন্দ দাশ-এর নামে প্রবর্তিত এই পুরস্কার যথার্থভাবেই দু’জন সঠিক লোককে দেওয়া হচ্ছে দেখে তিনি খুশি। তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই লেখককে আরো সৃষ্টিশীল লেখায় ধ্যানস্থ হবার পরামর্শ দেন। কবি আসাদ চৌধুরী আক্ষেপ করেন আজকাল যেন সাহিত্য চর্চায় সাধু ভাষার ব্যবহার একেবারে উঠে যাচ্ছে। লেখকদের তিনি সাধু ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার অনুরোধ করেন। কবি নুরুল হুদা পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি কামাল চৌধুরী ও কথা সাহিত্যিক সুশান্ত মজুমদারের সৃষ্টিশীল কাজের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। তিনি বলেন আমরা যদি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি তাহলে বলতে হয় যে পুরস্কার দিতে পারে কেবল দুইজন। স্বয়ং ঈশ্বর বা খোদা বা গড বা ভগবান। আর পারেন তাঁর প্রতিদ্বন্দী শ্রীমান শয়তান। আজকের এই পুরস্কারকে পরুস্কারপ্রাপ্তরা কিভাবে গ্রহণ করবেন এটা ওনাদের বেছে নিতে হবে। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক কথা সাহিত্যিক সুশান্ত মজুমদার জানালেন এটাই তাঁর জীবনে প্রথম কোন পুরস্কার প্রাপ্তি। অপর পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি কামাল চৌধুরী শোনান পুরস্কার নিয়ে অক্টাভিও পজ, ভিএস নাইপল আর নাগিব মাহফুজের খেদোক্তি। অনুষ্ঠাণে দর্শক সারিতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি আজিজুর রহমান, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, কথা সাহিত্যিক সালমা বাণী, কথা সাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, গল্পকার দম্পত্তি আনিস রহমান ও নাসিমা আনিস, কবি আমমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি শান্তা মারিয়া, কবি চন্দন চৌধুরী, কবি মাসুদ হাসান, মুহম্মদ মুহসিন প্রমুখ। কথা সাহিত্যিক সুশান্ত মজুমদারের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১১ নভেম্বর বাগেরহাটে। দীর্ঘদিন তিনি প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যে এমএ করেছেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯নং সেক্টরের একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সাংবাদিকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। এক সময় সচিত্র সন্ধানী’র সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের সংখ্যা সাতটি। সেগুলো হল ছেঁড়াখোঁড়া জমি, রাজা আসেনি বাদ্য বাজাও, জন্মসাঁতার, শরীরে শীত ও টেবিলে গুণ্ডাপাণ্ডা, সুশান্ত মজুমদারের মুক্তিযুদ্ধের গল্প, চরমৈহদ্দির মনুষ্যি, ছোঁয়াছুঁয়ি। এছাড়া তাঁর প্রকাশিত উপন্যাস দুটো হল গরম হাত ও আমি আর আসব না। কবি কামাল চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৮ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিজয়করা গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি। সেগুলো হল মিছিলের সমান বয়সি (১৯৮১), টানাপোড়েনের দিন (১৯৯১), এই পথ এই কোলাহল (১৯৯৩), এসেছি নিজের ভোরে (১৯৯৫), এই মেঘ বিদ্যুতে ভরা (১৯৯৭), নির্বাচিত কবিতা (১৯৯৮), ধূলি ও সাগর দৃশ্য (২০০০), রোদ বৃষ্টি অন্ত্যমিল (২০০৩), হে মাটি পৃথিবীপুত্র (২০০৬) ও প্রেমের কবিতা (২০০৮)। এছাড়া তিনি য. আলী রীয়াজ-এর সাথে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন সত্তর দশকের কবিদের কবিতা (১৯৯৫)। এর আগে তিনি রুদ্র পদক ২০০০ ও কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার ২০০৮ লাভ করেন। অনুষ্ঠানটি শেষ পর্যন্ত গরম চা আর সাহিত্য আড্ডার মাধ্যমে শেষ হয়।
false
hm
স্পেলবাউণ্ড ভেতরে ঢোকার পর ফেরদৌস বুঝতে পারে, এটা একটা গুদামঘর। ভেতরে সিলিং থেকে সাহসী মাকড়সার মতো নেমে এসেছে কয়েকটি ঝুলন্ত নগ্ন বাল্ব, তাদের দাক্ষিণ্যে ক্রমশ পরিধির দিকে পিছু হটেছে ধুলোগন্ধী অন্ধকার। অন্ধকার আর আলোর মাঝে একটি উঁচু চেয়ারের ওপর বসেছিলেন মিসেস হোসেন, ফেরদৌসকে দেখে তাঁর মুখে হাসি ফোটে। "আসুন, আসুন হাসান সাহেব। অ্যাই পপি, হাসান সাহেবকে কাগজটা দে তো ভাই!" সহকারী নির্দেশক মারজানা পপি প্রেতের মতো নিঃশব্দে এগিয়ে আসে অন্ধকার ফুঁড়ে, তার হাতে এক শিট সাদা অফসেট কাগজ। "লিখুন, চটপট লিখে কোণায় বসে পড়ুন।" উৎফুল্ল স্বরে বলেন মিসেস হোসেন। ফেরদৌস চুপচাপ কাগজটা টেনে নিয়ে খসখস করে লেখে একটা শব্দ, সপ্রশ্ন চোখে মারজানা পপির দিকে তাকায় তারপর। পপি ঘড়ঘড়ে গলায় বলে, "আপনার কাছেই রাখেন।" কাগজটা হাতে নিয়ে এদিক সেদিক তাকায় ফেরদৌস। চারদিকেই প্রায় একই দৃশ্য, গুদামঘর মিলিয়ে গেছে অন্ধকারে, শুধু পেছনে সামান্য খোলা প্রবেশপথের ওপাশে সরু সুতোর মতো উঁকি দিচ্ছে বাইরের আলো। "কোথায় বসবো?" ফেরদৌস গলা খাঁকরে জিজ্ঞেস করে মিসেস হোসেনকে। মিসেস হোসেন অবহেলাভরে তাকান ফেরদৌসের দিকে, তারপর থলথলে একটা হাত তুলে নির্দেশ করেন এক কোণার অন্ধকারের দিকে। "ঐ যে ঐখানে একটা সিট আছে। বসে পড়ুন।" ফেরদৌস এগিয়ে যায় অন্ধের মতো, সেই অন্ধকারের দিকে। গুদামঘরের মাঝখানটা একটা আলোর দ্বীপ হয়ে জেগে থাকে যেন এক পাতাল অন্ধকার সমুদ্রের মাঝে। হাতড়ে হাতড়ে সিটটা খুঁজে নিয়ে বসে ফেরদৌস। মারজানা পপি বলে, "আপু, শুরু করবো?" মিসেস হোসেন গা দুলিয়ে হাসেন, বলেন, "হ্যাঁ, শুরু হোক শিল্প!" মারজানা পপি কর্কশ স্বরে বলে, "ক্যামেরা!" অন্ধকার থেকে মন্থর শূকরের মতো এগিয়ে আসে একটা ক্যামেরা, তাতে একটি চোখ ঠেকিয়ে বসে আছে ক্যামেরাম্যান। পপি কফবদ্ধ গলায় বলে, "পাত্রপাত্রী গেল কই?" এবার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে এক বৃষস্কন্ধ পুরুষ, তার পরনে স্যাণ্ডো গেঞ্জি আর খাকি হাফপ্যান্ট। তার হাতের মুঠোয় ধরা এক তরুণীর হাত। তরুণীর পরনে কেবল ব্লাউজ আর পেটিকোট, তার চোখে ভয়ের ছাপ, তার ঠোঁটের কষে রক্তের ক্ষীণ ধারা। ফেরদৌস চিনতে পারে তরুণীকে। ঐ তরুণী ফেরদৌসের মা। অতীতের মা। চল্লিশ বছর আগে মা। এখানে তার বয়স কত? কুড়ি? একুশ? মারজানা পপি চিৎকার করে ওঠে, "অ্যাকশন!" বিশালদেহী পুরুষটি এবার এক ঝটকায় শূন্যে তুলে ফেরদৌসের মাকে ছুঁড়ে মারে মেঝের ওপর। ফেরদৌসের মা মাটিতে আছড়ে পড়ে বিনা প্রতিবাদে, তার হালকা শরীর মেঝে থেকে সরিয়ে দেয় ধূলোর স্তর। পুরুষটি হাফপ্যান্ট খুলে মাটিতে ফেলে দেয়, তারপর এক হাতে নিজের শিশ্নটি মর্দন করতে থাকে, তার মুখে কুৎসিত হাসি বিস্তৃত হয় আস্তে আস্তে। মিসেস হোসেন সামনে একটু ঝুঁকে পড়ে গিলতে থাকেন দৃশ্যটা, তার মুখ হাঁ হয়ে আসে একটু। ফেরদৌসের মা ফুঁপিয়ে ওঠেন, অস্ফূট স্বরে কী যেন বলেন, কেউ বুঝতে পারে না। লোকটা এগিয়ে গিয়ে এক হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে ফেলে তার ব্লাউজ, তারপর ফড়ফড় করে ফেড়ে ফেলে তার শায়াটা। সরীসৃপের দাঁতে বিদ্ধ পতঙ্গের মতো ছটফট করতে থাকে ফেরদৌসের মা। এবার অন্ধকার থেকে এগিয়ে আসে আরেকটি উলঙ্গ পুরুষ, হাতে উদ্যত শিশ্ন। প্রথম পুরুষটি ফেরদৌসের মায়ের দুই পা টেনে পৃথক করে, তারপর সজোরে নিজেকে প্রবিষ্ট করে তার যোনিতে। এক তীব্র আর্তনাদে ভরে যায় গুদামঘর, মিসেস হোসেন জোরে জোরে শ্বাস নেন, মারজানা পপি কুঁতকুঁতে দুই চোখ মেলে দেখতে থাকে দৃশ্যটা, ক্যামেরা ঘুরতে থাকে আপন আহ্নিক গতিতে। দ্বিতীয় পুরুষটিও এগিয়ে আসে, দুই হাতে চেপে ধরে ফেরদৌসের মায়ের স্তন দুটি, তারপর দাঁত বসিয়ে দেয়। তার কামড়ে ফেরদৌসের মায়ের একটি স্তনবৃন্ত ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে রক্ত। পুরুষটি জিভ দিয়ে চেটে খায় সেই রক্ত। ফেরদৌস বুঝতে পারে, শৈশবে যে স্তনবৃন্ত তাকে পুষ্টি দিয়েছে, তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, আজ যে শুধু রক্তস্রোতের উৎস। চিৎকারে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় গুদামঘরের ভেতরের বাতাস। ফেরদৌসের মা হাহাকার করে ওঠেন, "বাজান ... বাজান ... বাজান ...!" ফেরদৌস হাতে ধরা কাগজটার দিকে তাকায়, সেখানে সে বড় বড় করে নিজেই লিখেছে, "মনুষ্যত্ব"। কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে পাশের ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দেয় সে। তারপর চোখ ভরে দেখতে থাকে শিল্প। তার মাকে ধর্ষণ করছে দুটি পুরুষ বরাহ। ক্যামেরা ঘুরছে। ক্যামেরার ফিল্মে বন্দী হচ্ছে ফেরদৌসের মায়ের সেক্সুয়ালিটি, ফেরদৌসের মায়ের কামজ প্রয়োজন। আর বাতাসে একবার, দুইবার, আড়াই লক্ষবার আত্মহত্যা করছে বাজান শব্দটা। চার জোড়া চকচকে চোখ আর একটা লজ্জিত ক্যামেরা দেখে চলে দৃশ্যটা। সবাই স্পেলবাউণ্ড।
false
rn
তেঁতুল একটা সময় ছিল তেঁতুল কেবলমাত্র মেয়েদের খাবার হিসেবে গণ্য হতো। অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং রক্ত পানি হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ।নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীরে সহজে মেদ জমতে পারে না। এতে টারটারিক এসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে। পেটের বায়ু, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী।তেঁতুল এমনই এক ভেষজ, যার সব অংশই কাজে লাগে।কয়েক হাজার বছর আগে এই গাছ বণিকদের সূত্রে এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান প্রায় সকল মহাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এই গাছ কমবেশি দেখা যায়। তেঁতলের আদি নিবাস আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়া। ধারণা করা হয় সুদান থেকেই তেঁতুল বাংলাদেশের মাটিতে এসেছে। তেঁতুল,ইংরেজি নামঃ Tamarind tree.আয়ুর্বেদিক নাম যমদূতিকা। ভেষজবিদগণ একে অভিহিত করেছেন প্রাণদায়িনী ও শক্তিধারিনী হিসাবে।তেঁতুল সুবৃহৎ ও সুদৃশ্য চিরসবুজ বৃক্ষ। গাছ প্রায় ২৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে মোট খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, খাদ্য-শক্তি ২৮৩ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম।সাধারণভাবে তেঁতুলকে একটি উৎকৃষ্ট ফল হিসাবে গন্য করা যায় না, তবে ব্যবহার, বৈচিত্র ও জনপ্রিয়তার বিচারে ইহা বাংলাদেশের একটি অতি সমাদৃত ফল।তেঁতুলের কাঠ খুবই শক্ত, ভারী, দৃঢ় টেকসই ও সহসা ঘুন ধরে না। কাঠ দেখতে রক্তাক্ত বাদামী বর্ণের। গরুর গাড়ীর চাকা, ঢেঁকি, ঘানি, আসবাবপত্র বানাতে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুলের পাতা থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়।তেঁতুলের কচিপাতার মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে এমাইনো এসিড। তেঁতুল চর্বি কমানোয় বেশ বড় ভূমিকা রাখে। তবে তা দেহের কোষে নয়, রক্তে।পুরোনো তেঁতুলের কার্যকারিতা বেশি। যদি পেট ফাঁপার সমস্যা থাকে এবং বদহজম হয়, তাহলে পুরোনো তেঁতুল এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে সামান্য লবণ, চিনি বা গুড় দিয়ে খেলে অসুবিধা দূর হয়। আবার হাত-পা জ্বালা করলেও এই শরবতে উপকার পাওয়া যায়।হাঁপানি ও দাঁত ব্যথায় তেঁতুলগাছের ছাল চুর্ণের রস খেলে উপশম পাওয়া যায়।তেঁতুলের প্রধানত দুরকমের জাত দেখা যায়। টক জাত ও মিষ্টি জাত।আমারদের দেশে বিভিন্ন ধরনের তেতুল আছে। তেতুলের চাটনী, তেতুলের আচার, তেতুল ভর্তা, তেতুলের ডাল, তেতুলের টক এই শব্দগুলো আমাদের কাছে খুবই পরিচিত।আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের একটা বইয়ের নাম- তেঁতুল বনে জোছনা । এই বইটি আমি দশ বার পড়েছি । অনেক ভালো লেগেছে ।"তেঁতুল বনে জোছনা" বইটা উৎসর্গ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হায়াৎ মাহমুদ সম্পর্কে লেখক বলেছেন, "কিছু মানুষ আছেন যাদের দেখামাত্র মন আনন্দে পূর্ণ হয়, কিন্তু তারা যখন কাছে থাকেন না তখন তাদের কথা তেমন মনে পড়ে না। হায়াৎ ভাই সেই দলের আমার দেখা নিখুঁত ভালো মানুষদের একজন"।চিরল চিরল তেতুল পাতা, তেতুল বড় টকতোমার সঙ্গে ভাব করিতে আমার বড় শখপেটে গ্যাস হলে তেঁতুলের শরবত খেলে ভালো হয়। পাকা তেঁতুল কফ ও বায়ুনাশক, খিদে বাড়ায় ও উষ্ণবীর্য হয়। কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাত পাওয়া স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সারে।তেঁতুল গাছের শুকনো বাকলের প্রলেপ ক্ষত স্থানে লাগালে ক্ষত সারে। পুরনো তেঁতুল খেলে আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা ও পেট গরমে উপকার পাওয়া যায়। পটাশিয়াম ও অক্সালিক এসিডের আধিক্যের জন্য কিডনি রোগীদের তেঁতুল খাওয়া নিষেধ। জন্ডিসের ক্ষেত্রেও তেঁতুল নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে। প্রতি ১-২ কাপ তেঁতুল থেকে ১৪০ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়, যার মধ্যে থাকে ৩৪ গ্রাম শর্করা, ৩ গ্রাম খাদ্যআঁশ ও ২ গ্রাম আমিষ। তেঁতুলে ফ্যাট নেই একেবারেই। এ ছাড়া এটি ভিটামিন সি এবং আয়রনের ভালো উৎস।এক সময় এ দেশ তেঁতুলের চাহিদা মেটাতে স্বয়ং সম্পূর্ণ ছিল কিন্তু ইটের ভাটায় তেঁতুলের কাঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় এবং বাড়ির আশে-পাশে ও জঙ্গলে তেঁতুলের গাছ থাকায় এবং তেঁতুলের গাছে ভুত থাকা নিয়ে কুসংস্কারের কারণেও অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ কারণে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার তেঁতুল আমদানি করতে হয়।কেউ কেউ মনে করেন তেঁতুল বুদ্ধি কমিয়ে দেয়। এগুলো সব ভূল ধারণা। এ ছাড়া হারবাল মেডিসিনে তেঁতুলকে রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।এ বছরের জানুয়ারী মাসে ফরিদপুরে তেঁতুল গাছে উঠার অপরাধে সাব্বির (১১)নামে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছেন গাছের মালিক সজল কান্তি ভৌমিক নামে এক কলেজ শিক্ষক।
false
hm
পর্নস্টার ভদ্রলোককে দেখেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের মানুষ। বোধহয় বোঝা যায় আমাকে দেখেও। তিনি বেশ একগাল হাসি নিয়ে সোজা আমার টেবিলে চলে এলেন ট্রে হাতে। "আপনি বাংলাদেশের লোক।" প্রশ্ন নয়, একেবারে রায় দিয়ে দিলেন তিনি। আমি আড়চোখে তাকালাম তার হাতের ট্রের দিকে। মাছ আর সব্জি, আর অবধারিতভাবেই ফরাসী কায়দায় ভাজা আলু। আমি আমার প্লেটে আধখাওয়া শুয়োরের পরিপাটা ভাজা মাংসে ছুরি চালানো বন্ধ করে বলি, "হুমম, একেবারে ঠিক ধরেছেন।" ভদ্রলোক দুম করে বসে পড়েন আমার উল্টোদিকে। "শুয়োর যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল।" আবারও রায় দ্যান তিনি। "বড় বেশি চর্বি।" আমি রাজি হয়ে যাই। বলি, "ঠিক বলেছেন।" তিনি কাঁটা চামচ উঁচিয়ে বলেন, "গুটেন আপেটিট১!" আমি মুখে ততক্ষণে এক টুকরো পমেস, মানে সেই ফরাসী ছাঁটে ভাজা আলু মুখে পুরে দিয়েছি। মুখে খাবার নিয়েই বলি, "এবেনফালস২!" ভদ্রলোক মাছের একটি সূক্ষ্ম কুচি মুখে দিয়ে বলেন, "আপনি ছাত্র।" কী মুশকিল, ইনি দেখি শুধু সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান। কোন প্রশ্ন নেই, কোন জিজ্ঞাসা নেই, কেবল রায়। আমি বলি, "হ্যাঁ, এখনও। আপনি?" ভদ্রলোক হাসেন। বলেন, "আমি একজন পর্নস্টার।" আমি একটু গম্ভীর হয়ে যাই কেন যেন। বিশ্ববিদ্যারয়ের মেনজায় বসে একজন পর্নস্টারের সাথে এক টেবিলে বসে লাঞ্চ করা অন্যায় নয় নিশ্চয়ই, কিন্তু তবুও কেন যেন মনটা ভারি হয়ে যায়। তিনি বলেন, "গুম মেরে গেলেন একটু। কিন্তু পর্নস্টাররাও মানুষ।" আমি বলি, "বেশ সৌভাগ্যবান মানুষ।" তিনি এবার হেসে ওঠেন খলখল করে। বলেন, "আর সৌভাগ্য!" আমি এবার বেশ নির্মমভাবে ছুরি চালাই শূকরের মাংসে। আমার চোয়ালের পেশী নিশ্চয়ই ফুলে ওঠে, মানসচোখে দেখতে পাই। "তা, আপনি কী ধরনের পর্নস্টার?" ভদ্রলোক একটুকরো আলু চিবাতে থাকেন চোখ বুঁজে। বলেন, "প্রচলিত ঘরানারই। অর্থাৎ, শুধু নারীদের সাথেই কাজ করি।" বচনের ব্যবহারে আমার মনের মধ্যে গুমোট ভাবটা আরো বেড়ে ওঠে। নারী, আবার দের! অযথাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জোরে চিবাতে থাকি মাংসের টুকরোটাকে। বলি, "কতদিন হলো?" ভদ্রলোক বললেন, "মাস চারেক। এর আগে আপনার মতোই নিরীহ লোক ছিলাম।" আমি নিরীহ শুনে নিজের ওপর রাগ হয়। ঝালটা ঝাড়ি এক টুকরো আলু ভাজার ওপর। বলি, "বটে?" তিনি বলেন, "হুম।" বললাম, "আপনার আত্মীয়স্বজন আপত্তি করেননি?" তিনি বললেন, "সবাই করেছে। রীতিমতো হইচই।" আমি বললাম, "এত ঢাকঢোল পেটালেন কেন? এই কাজে নেমে তো লোকে শুনেছি ছদ্মনাম নেয়।" তিনি বললেন, "আমিও নিয়েছি। আমার ছদ্মনাম কার্লো শ্নেললয়ফার৩। তাতে বিশেষ একটা লাভ হয়নি।" বললাম, "কেন?" তিনি বললেন, "দেশ ছেড়ে আসার পর থেকেই আছি বিপদে। কাজকাম জোটাতে পারি না। লেখাপড়া করতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখি। ওদিকে দেশ থেকে পাড়াতুতো কাকাদের খবরদারি। এক একজন ফোন করেন, মেইল করেন। বলেন, হালাল হারাম বেছে খাবি। আমি বলি, ঠিক আছে তাহের কাকু, খাবো। আরেকজন বলেন, মদ খাবি না। আমি বলি, ঠিক আছে মোতালেব চাচা, খাবো না। আরেকজন বলেন, তোর বাবা কতো সজ্জন লোক, তার ছেলে হয় তুই কখনোই বেশ্যাপাড়ায় যেতে পারিস না, এ ভরসা আমার আছে। আমি বলি, কী যে বলেন হানিফ চাচা, তা-ই কী হয়?" আমি বলি, "তারপর?" তিনি বলেন, "বহুকষ্টে একা একা এই বিশ্রী দেশে দিন কাটাচ্ছিলাম। কাজ যা পাই, বেশিদিন থাকে না। একেবারে আধপেটা অবস্থা। একদিন দেখি এক ন্যাংটো ক্লাবের বাইরে ঘটা করে বিজ্ঞাপন, এক ঘন্টার অভিনয়ের জন্য একশো মুদ্রা। আর কিছু ভাবলাম না। দুম করে ঢুকে পড়লাম।" আমি বলি, "বলেন কী?" তিনি বললেন, "হ্যাঁ। ওরাও আমার অভিনয় দেখে হতবাক। এমন লায়েক লোক নাকি এই লাইনে কমই জোটে। আমিও লজ্জা পেয়ে গেলাম।" আমি বলি, "বলেন কী এসব?" তিনি বললেন, "হুঁ। সেই থেকে শুরু। মাসখানেকের মধ্যেই বড় বড় চুক্তি করলাম কয়েকটা স্টুডিওর সাথে। আপনি যদি ইন্টারনেটে এই বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র দেখে থাকেন তাহলে হয়তো শিগগীরই আমাকে দেখতে পাবেন পাইকারি হারে।" কেন যেন ভালো লাগে না কথাটা। তিনি মাছ খান আর বকে চলেন, "মাস দুয়েকের মধ্যেই দেশ থেকে তাহের কাকুর ফোন এলো। বললেন, হারামজাদা, শেষ পর্যন্ত ন্যাংটা সিনেমায় নামলি? মোতালেব চাচা বললেন, একটুও লজ্জা লাগলো না? হানিফ চাচা বললেন, তুই নিজেই একটা বেশ্যা হয়ে গেলি?" আমি খাবি খাই। বলি, "ওরা ...?" ভদ্রলোক বললেন, "হুমম। মনে হচ্ছে ওদের কাছে সব লেটেস্ট সিডি-ডিভিডি পৌঁছে যায়। তো, আমার পরিবারের লোকজনও ওদের যন্ত্রণায় জেনে গেলো সব। সে কী এক বিড়ম্বনা।" আমি বলি, "কিন্তু ...।" তিনি বললেন, "হুমম। কেউ আপনাকে বেছে খাবার উপদেশ দিলে সাবধান, কখনো ন্যাংটো ছবিতে অভিনয় করবেন না। জানাজানি হয়ে যাবে।" ১ শুভ ক্ষুধা। ২ আপনাকেও। ৩ হাইস্পিড মোটর। মন্তব্য গল্প কাল্পনিক। ঈমানে কইতাছি হালায়।
false
ij
গল্প_ জাগ মাহজাবীন বলে, পুকুরের পানি বেশি সবুজ হওয়া মাছের জন্য খারাপ। সার দিতে হবে কিনা তা আপনি সহজেই পরীক্ষা করতে পারেন। পানিতে হাত ডুবিয়ে দেখুন যে পানির ওপর থেকে নখ দেখা যাচ্ছে কিনা। কনুই পর্যন্ত হাত ডোবানোর পরও যদি নখ দেখা না যায় তবে বুঝবেন যে সার দেবার দরকার আছে। গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলায় রাতৈল গ্রাম । রাতৈল এক্সপেরিমেন্টাল প্রণ হ্যাচারী প্রজেক্ট এর কো-অর্ডিনেটর মাহজাবীন আমিন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে পড়াশো শেষ করে থিসিসের জন্য এখন রাতৈল গ্রামে ফিল্ড ওয়ার্ক করছে। ছবির মতন সুন্দর গ্রাম রাতৈল । দক্ষিণে সুন্দর ও মনোরম মধুমতি নদী। সে নদীর পাড়ে থরে থরে সাজানো সবুজ। সেই সঙ্গে উপড়ি পাওনা অটুট নির্জনতা আর দূষন মুক্ত বাতাস। মাহজাবীন এর মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। আজ দুপুরে মাঠ থেকে ফিরতেই মোবাইল বাজল। মাহমুদ। নার্ভাস বোধ করল মাহজাবীন । ধরবে কিনা বুঝতে পারল না। তারপর সমস্ত দ্বিধাদ্বন্ধ কাটিয়ে বলল, হ্যালো।কী ব্যাপার ফোন বন্ধ কেন?মাত্র ফিল্ড থেকে ফিরলাম । মোবাইল ব্যাগের ভিতরে ছিল। তুমি আর ক’দিন ওসব অজ পাড়াগাঁয়ে ঘুরে ফিরে বেড়াবে? ঘর সংসার কি করবে না?আমি আমার থিসিস-এর কাজে এখানে এসেছি মাহমুদ। ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছি না তো। থিসিস-টিসিস আমার দরকার নাই ইডিয়েট মেয়ে! আমার দরকার ঘরের বউ। মাহজাবীন চুপ করে থাকে। মার শরীর ভালো না। তুমি থিসিস-টিসিস বাদ দিয়ে আজই ফিরে এসো। আমার ফিরতে দেরি হবে। কথাটা বলার সময় মাহজাবীনের কন্ঠস্বর কাঁপছিল। মাহমুদ অশোভন ভাষার একটা গালি দিল।মোবাইল অফ করে দেয় মাহজাবীন। থরথর করে কাঁপছে। এভাবেই রাতৈল গ্রামের মনোরম পরিবেশে প্রচন্ড মানসিক উদ্বেগের ভিতর গ্রামের গলদা চিংড়ি চাষীদের শিখিয়ে পড়িয়ে মাহজাবীন-এর দিনগুলি কাটছিল । মাহজাবীন যে ঘরটিতে থাকে তার ঠিক পিছনেই একটি উঠান। পরিচ্ছন্ন ভাবে লেপা মাটির উঠানটি নারকেল গাছে ঘেরা। উঠান ঘিরে কয়েকটি মাটির ঘর। ওসব ঘরে মতুয়ারা বাস করে। এরা লোক স¤প্রদায়। এদের ধর্মগুরুর নাম হরিচাঁদ ঠাকুর; হরিচাঁদ ঠাকুর এর জন্ম ওরাকান্দি। ওরাকান্দি জায়গটা রাতৈল থেকে কয়েক মাইল উত্তর-পুবে। মতুয়ারা প্রতি বুধবার উঠানে জড়ো হয়ে জয়ডঙ্কা কাঁসর ঝাঁঝর শঙ্খ ও শিঙ্গা বাজিয়ে নামকীর্তন করে। এভাবে ওরা হরিস্মরণ করে। একে ওরা হরিসভা বলে। মতুয়াদের গান-বাজনায় মাহজাবীন বিরক্তই বোধ করে। এমনিতেই ও চশমা পরা গম্ভীর মুখের কম কথা বলা চিন্তায় আচ্ছন্ন একজন মানুষ। নির্বাচিত রবীন্দ্রসংগীত ছাড়া গান তেমন শোনে না। ওরা ভাবনার অনেকটা জুড়ে থাকে থিসিস-এর বিষয়বস্তু। এম এস সিতে মাহজাবীন এন্টমোলজি (কীটতত্ত্ব) নিয়েছিল যদিও তবে ওর গবেষনার বিষয়বস্তু ফ্রেশওয়াটার বায়োলজি। ওর থিসিস এর শিরোনাম: ‘ফিসারীজ রিসোর্সেস অ্যান্ড অপরটিউনিটিস ইন ফ্রেশওয়াটার ফিশ কালচার ইন বাংলাদেশ।’ যে কারণে ওর এই ঘরটাই ক্ষুদে একটি ল্যাবরেটরি হয়ে উঠেছে। মাহজাবীন-এর সুপারভাইজার অধ্যাপক আহমেদ কবীর। প্রায়ই তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে নতুন ভাবনার কথা জানায়। অনেক রাত অবধি মাঠ পর্যায়ের পাওয়া তথ্য/উপাত্তগুলি পর্যালোচনা করতে হয়। অধ্যাপক আহমেদ কবীর আগেই লক্ষ করেছেন যে পুকুরে রুই কাতলা মাছের সঙ্গে চিংড়ি চাষ করা যায়। তবে রাতৈল গ্রামে অনেক গলদা চিংড়ি চাষীই যে পুকুরে অন্য কোনও মাছ না-রেখে কেবল চিংড়ি চাষ করে; মাহজাবীন এটা লক্ষ করেছে। পুকুরে কিছু কাতলা ও সিলভার কার্প রাখতেই হবে। না হলে পুকুরের পানি দূষনের সম্ভাবনা থাকে। কেন? এই বিষয়টি নিয়েই এ মাহজাবীন গবেষনা করছে। এই সব ভাবনার সময় মতুয়াদের নাচগান অস্বস্তিকরই বটে। গানের সঙ্গে জয়ডঙ্কা, কাঁসর-ঝাঁঝর শঙ্খ ও শিঙ্গার তীব্র ধ্বনি- মাহজাবীনের ভুরু তো কুঞ্চিত হয়ে উঠবেই। মাহজাবীন ভাবে ... আসলে এরা কারা? এই মতুয়ারা? এদের নাম গোপালগঞ্জ আসার আগে কখনও শোনেনি। মাহজাবীনের জন্ম ঢাকা শহরে। সে শহরেই বেড়ে ওঠা। গ্রামীণ লোকস¤প্রদায় নিয়ে ঢাকা শহরে কেউ মাথা ঘামায় কি? লোকস¤প্রদায় নিয়ে বইপত্র ছাপা হয় বটে, তবে মুষ্টিমেয় মানুষই তা পড়ে। আসলে গ্রামীণ লোকস¤প্রদায় শহরের মানুষের আলোচনার বিষয়ই নয়। ঢাকা শহরে হরিচাঁদ ঠাকুর এর নাম ক’জন শুনেছে? টিভিতে মতুয়াদের নিয়ে কোনও প্রতিবেদন দেখেছে বলেও মনে হয় না। তাহলে কারা এরা? এই মতুয়ারা? ইসলামে শিয়া ও সুন্নির প্রভেদ আছে। এরা কি তেমনই? মতুয়ারা কি হিন্দুধর্মের কোনও শাখা?এভাবে প্রশ্নে প্রশ্নে, বিরক্তিতে, দিনভর রাতৈল গ্রামের মাঠে মাঠে, নিবিড় গবেষনায়, বিবাহ সংক্রান্ত উৎকন্ঠায় মাহজাবীনের দিনগুলি কেটে যাচ্ছে।রাতৈল গ্রামের একজন সম্পন্ন কৃষক আমিন শেখ । ষাট বিঘা ধানী জমি ছাড়াও তার গোটা কয়েক পুকুরও আছে তার । লাভের আশায় পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । মাহজাবীন আজ আমিন শেখকে বলছিল, আপনি সব সময় মনে রাখবেন চিংড়ি খাবার খায় রাতে, আর দিনে বিশ্রাম করে। এদের বৃদ্ধির জন্য এরা মাঝে মাঝে খোলসা ছাড়ে। এ সময় তারা বেশ অসহায় হয়ে থাকে, কোনও আশ্রয় না পেলে পুকুরের ধারে গিয়ে বসে। তাছাড়া গভীর রাতেও পানির ওপরের দিকে বা পুকুর পাড়ে চলে আসে। পুকুরের ধারে থাকলে ব্যাঙ, পাখি ইত্যাদি এদের সহজেই খেয়ে ফেলতে পারে। এ ছাড়া দূর্বল চিংড়িদের সবল চিংড়িরা আক্রমন করে খেয়ে ফেলতে পারে। তাই চিংড়ির আশ্রয় ও বিশ্রামের জন্য পুকুরে প্রচুর পরিমান ‘জাগ’ বা ‘ঝাঁকি’ দিতে হয়।আমিন শেখ মাথা নাড়ে। রাতৈলসহ আশেপাশের আরও কিছু গ্রামে এক্সপেরিমেন্টাল প্রণ হ্যাচারী প্রজেক্ট রয়েছে। কাশিয়ানী তে মাসে একবার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর দের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয় । সভায় প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর দের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়। আজ সকালে কাশিয়ানী গিয়েছিল মাহজাবীন। সভায় আজ ‘জেনেটিক অ্যান্ড সাব-সেলুলার ডাইভারসিটি’ প্রসঙ্গে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করল মাহজাবীন । আসলে এই নিবন্ধটি ওর থিসিস পেপারের ভূমিকা। অন্যান্য কো-অর্ডিনেটরা নিবন্ধের প্রশংসা করল। এবার কেবল সুপারভাইজার অধ্যাপক আহমেদ কবীর এর অনুমোদনের অপেক্ষা। রাতৈল ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়াল। কাশিয়ানী থেকেই খেয়ে এসেছে। বিছানায় শুয়ে সামান্য বিশ্রাম নিল। কখন ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙার পর টের পেল ঘর অন্ধকার। কেবল জানালার কাছে এক ফালি শুভ্র আলো। তার মানে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চাঁদও উঠেছে। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছিল । ঝিঁঝিও ডাকছিল।কীর্তনা এসে ঘরে ঢুকল। ওর হাতে চায়ের কাপ। চমৎকার লেবু চা তৈরি করে কীর্তনা। এই ছাব্বিশ/সাতাশ বছরের মেয়েটিই ওর রান্নাবান্না করে দেয়। কীর্তনা মতুয়া। বছর খানেক হল বিধবা হয়েছে। ওর স্বামী পেশায় ছিল ধীবর- মাছ ধরত মধুমতি নদীতে । একবার ঝড় উঠল ...যা হোক। মতুয়া স¤প্রদায়ে নাকি বিধবা বিবাহ হয়। কীর্তনার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। মাহজাবীন লক্ষ করেছে, কীর্তনা গরীব বিধবা হলেও সব সময় হাসিখুশিই থাকে। যেন কারও বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই ওর। ওদিকে নারী বলেই মাহজাবীন এর মানসিক সঙ্কট টের পায় কীর্তনা । নতুন কিছু রান্না করে খুশি করতে চেষ্টা করে। দিন কয়েক আগে কীর্তনা মাহজাবীন কে বেলে মাছের পাতুরি রেঁখে খাওয়াল। অপূর্ব স্বাদ। মাহজাবীনের মা মাঝে মধ্যে কই মাছের পাতুরি রাঁধলেও কখনও বেলে মাছের পাতুরি রাঁধেন নি- যদিও বেলে মাছ থেকে শুরু করে নারকেল বাটা, সরিষা বাটা, কলাপাতা –প্রায় সব উপকরণই পাওয়া যায় ঢাকায়। মাহজাবীনের অনুসন্ধানী মন কীর্তনাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করে জেনে নিল বেলে মাছের পাতুরি রন্ধনপ্রক্রিয়া। প্রথমে উপকরণ সম্বন্ধে বলল কীর্তনা । অবশ্য ওর মতো করে। মাহজাবীনও ওর মতো করে টুকে নিল সব। ও যা বুঝল তা এই: বেলে মাছ লাগবে ৫০০ গ্রামের মত, নারকেল বাটা ২ টেবিল চামচ, সরিষা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ (মোটা করে কাটা) ১ কাপ, হলুদ গুঁড়ো আধা চা চামচ, মরিচ গুঁড়ো আধা চা চামচ, সরিষার তেল ৪ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, পানি সামান্য। এবার রন্ধনপ্রক্রিয়া। সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে আধা ঘন্টার মতো মেরিনেট করে রাখতে হবে । (এই আধা ঘন্টা হয়তো কীর্তনার পর্যবেক্ষনের ফল। কাজেই সময়টা ইম্পরটেন্ট।) বড় এক টুকরো কলাপাতার মাঝখানে তেল মেখে তাতে সব মাছ সাজিয়ে রাখতে হবে। তার পর তাওয়ায় কলাপাতাসহ মাছ দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে ১০-১৫ মিনিট রান্না করে নিতে হেেব । এক পিঠ ভাজা হলে অন্য একটি নতুন কলাপাতায় তেল মাখতে হবে। একটি প্লেটে মাছগুলো রেখে নতুন কলাপাতা দিয়ে ঢেকে উল্টে দিয়ে তাওয়ায় দিতে হবে । আরও পাঁচ মিনিট মৃদু আঁচে রান্না করে নিতে হবে।ব্যস। মাছ ভাজা হলেই পাতুরি রান্না শেষ। মাহজাবীন রান্না শিখেই মাকে ফোন করেছিল ঢাকায়। মা হেসে বলল, আরে শোন। বেলে মাছের পাতুরি আমিও রাঁধতে জানি।জান!হ্যাঁ। যদিও আগে কখনও রান্না করা হয় নি । কিন্তু, এ বার তুই ঢাকায় এলে তোকে রেঁধে খাওয়াব। তুমি আবার কবে বেলে মাছের পাতুরি রাঁধতে শিখলে মা?শিখেছি বিয়ের পর। আমার শ্বাশুড়ির কাছে । তোরা তখনও হোস নি। ওরা বরগুনার মানুষ। ওদের মতো পাতুরি কেউ করতে পারে না। মাহজাবীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শ্বাশুড়ির সঙ্গে মায়ের কী সুন্দর অ্যাডজাস্ট হয়েছিল। আমার হল না। কথা সত্য। বিয়ের পর থেকেই মাহমুদের মা উঠতে-বসতে মাহজাবীন এর খুঁত ধরে। মাহজাবীনই-বা ছাড়বে কেন? ও ভিকারুন্নেছা নুন স্কুলে পড়ার সময় বির্তকে আগুন ছড়াত। কাজেই কথা সেও শোনায়। মাতৃভক্ত মাহমুদ মহা বিরক্ত হয়ে বলে, তোমার মতন শিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করাই আমার ঠিক হয়নি। কেন ! অশিক্ষত মেয়ে হলে তোমাদের পিষতে সুবিধা হত না?মাহমুদ সেদিনই প্রথম মাহজাবীনের গালে থাপ্পড় মেরেছিল ; সম্ভবত মাকে খুশি করতেই । সেই অভিমান আর ক্ষোভ আর দূর হল না। যে কোনও মেয়ে মাহজাবীনের মুখের দিকে একবার তাকালেই বুঝতে পারে। আজ সকালেও কাশিয়ানী বাস্টস্ট্যান্ডে বোরখা পরা একজন মাঝবয়েসি মহিলা ওর মুখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল। এই কীর্তনাও মাহজাবীনের মানসিক সঙ্কট টের পায়। এবং মাহজাবীন কে খুশি রাখতে অদ্ভুত অদ্ভুত সব কান্ড করে। একদিন দুপুরে আলু ভাজা করেছিল কীর্তনা। খেতে অপূর্ব লাগছিল। খাওয়ার পর কীর্তনা জিগ্যেস করল, ও দিদি, ভাতে লগে কি খাইলেন কন ত? কেন আলু ভাজি?কীর্তনা তো হাসতে হাসতে শেষ। পরে হাসি থামিয়ে বলল, কাঁকড়া খাইলেন গো দিদি কাঁকড়া । মালো পাড়ার বলরামের পুকুরের কাঁকড়া। কি! কাঁকড়া ! মাহজাবীন তো থ। হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। কীর্তনার কাছে মতুয়াদের সম্পর্কে অল্প অল্প করে জানছে মাহজাবীন; মতুয়া শব্দের অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা হওয়া। হরিনামে যে মেতে থাকে সেই মতুয়া। মতুয়া স¤প্রদায়ে নারী-পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত। বাল্যবিবাহের তীব্র বিরোধীতা করা হয়। নারীপুরুষ নির্বিশেষে ধর্মের প্রচার করতে পারে। ধর্মপ্রচারককে বলা হয় : ‘গোঁসাই।’ মতুয়াদের প্রতি ওদের ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের বারোটি আদেশ আছে। একে দ্বাদশ আজ্ঞা বলা হয়-যা মতুয়ারা নিত্যদিনের জীবনযাপনে পালন করার চেস্টা করে। হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞার ৩ নং আদেশটি হল : নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। কথাটা শুনে সেদিন মাহজাবীনের শরীর কেঁপে উঠেছিল। ধীরে সুস্থে চা শেষ করল মাহজাবীন। চা খেতে খেতে জেনেটিক অ্যান্ড সাব-সেলুলার ডাইভারসিটি নিয়ে ভাবছিল। ভাবছিল জেনেটিক ডাইভারসিটি তো হতেই পারে, উপরোন্ত জীব বা উদ্ভিদ কোষেরও ডাইভারসিটি হতে পারে যাকে বলা হয় মেটাবলিক পাথওয়েজ কিংবা সেল ফাংশনিং উইদিন আ সেল ... মাহজাবীনের হঠাৎই মনে পড়ল মোবাইল অফ । মায়ের কথা মনে হতেই অন করল। কিছুক্ষন কথা হল মায়ের সঙ্গে। মা আজ কাঁদল। মাহজাবীনের বড় ভাই পারভেজ মিনোসোটায় থাকে। সদ্য বিধবা মাকে মিনোসোটায় নিয়ে যেতে চায়। মাহজাবীন ওর আসন্ন নিঃসঙ্গতার কথা ভেবে কেঁপে উঠল। ওর জীবনের সঙ্কট, যা কেউ-ই বোঝে না, একমাত্র মা-ই বোঝে। মাহমুদের আচরণে মা বিস্মিত, ক্ষুব্দ। প্রায়ই মা বলেন, তোর বাবা তো এমন ছিল না। আমাদের বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর। তখন আমাদের নতুন সংসার। অভাব ছিল তবে অশান্তি ছিল না। এখন তোদের এত অঢেল আছে, শান্তি নাই কেন রে? তোর বাবাও তো তোর দাদীকে গভীর শ্রদ্ধা করত। কই, তাতে তো কোনও সমস্যা হয়নি।মাহজাবীন আর কি বলবে। কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মায়ের সঙ্গে কথা বলে ফোনটা অফ করতেই মাহমুদের ফোন এল। এই সব মুহূর্তে বড় নার্ভাস বোধ করে মাহজাবীন । কোনওমতে বলতে পারল, হ্যালো।এই তোর ফোন বন্ধ ক্যান! কতক্ষণ ধরে ট্রাই করতেছি!বাইরে থেকে ফিরে ফোন অন করতে মনে ছিল না। আর ...আর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তুই ইচ্ছে করে মোবাইল অফ রাখছিস । আমার সঙ্গে তোর কথা বলতে ঘেন্না লাগে? না?না! বিশ্বাস কর।তোকে আমি বিশ্বাস করব। গ্রামের কোন লাঙের সঙ্গে মিশতেছিস তুই? ঘুমায়া ছিলি ক্যান? সত্যি কথা ক ।আমি তো সত্যি কথাই বললাম।খানকি মাগী!ইউ শাট আপ! চেঁচিয়ে বলে মাহজাবীন ফোন অফ করে দেয়। সারা থরথর করে শরীর কাঁপছে। বিয়ে হয়েছে দু’বছর। মাহমুদ এর আগেও গালাগাল করেছে। আজও দিল। আজ সব শেষ করে দিল। মাহজাবীন টের পেল ওর কাঁধের নীচে ঘামে ভিজে গেছে। রাগে শরীর কাঁপছে।মাহমুদের ইচ্ছে মাহজাবীন থিসিস না করে ওর মায়ের বাঁদিগিরি করুক। কিন্তু, তা কি করে সম্ভব! মেয়ে থিসিস করবে-এটা তো মাহজাবীনের বাবার স্বপ্ন। এ কারণেই থিসিস শেষ করার আগে বিয়ের ইচ্ছে ছিল না মাহজাবীন এর। বাবার ডান কিডনিতে ম্যাস (টিউমার) হয়েছিল। ডায়ালেসিস চলছিল ব্যাংককের বামরুমগ্রাদ হসপিটালে। তখনই একদিন কেবিনে শুয়ে থাকা বিপর্যস্ত বাবাকে কথা দিয়েছিল। তাছাড়া তখন মাহমুদ সদ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে এমবিএ শেষ করে একটি বিখ্যাত মালটি-ন্যাশনালে ঢুকেছে। স্মার্ট, সুদর্শন। নাম করা এক সংসদ সদস্যের বোনের ছেলে। বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তা করার জন্য এদেশে সবাই উদগ্রীব হয়ে থাকে। বাবাও ফাঁদে পা দিলেন। তাছাড়া মাহমুদের ব্যাপারে পারভেজ ভাইয়ের সম্মতি ছিল। একসঙ্গে নটরডেমে পড়ত।মাহজাবীন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। তারপর উঠে দাঁড়াল। ওর চিৎকার শুনে কীর্তনা একবার উকিঁ দিয়ে গেল। ঘর থেকে বেরিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। উঠান ভর্তি জোছনা। কারা যেন ধূপ জ্বেলেছে। সেই গন্ধ। মধুমতি নদীটিও খুব কাছেই। ওখান থেকে লোনা বাতাস ভেসে এসে উঠানে আছড়ে পড়ছে। উঠন ঘেরা নারকেল পাতায় সরসর শব্দ ওঠে। উঠানে মতুয়ারা জড়ো হচ্ছে। আজ কি বুধবার? ও জানে একটু পরেই বেজে উঠবে জয়ডঙ্কা, কাঁসর-ঝাঁঝর শঙ্খ ও শিঙ্গা ধ্বনি । সেই সঙ্গে গান ।এই পূর্ণিমার সন্ধ্যায় মাহজাবীন অবশ বোধ করে। এবং অপরিচিত আঙিনায় পা রাখে । উঠানে মতুয়ারা গাইছে:হরি ধ্যান হরি জ্ঞান হরি নাম সার।প্রেমেতে মাতোয়ারা মতুয়া নাম যার। গানের সঙ্গে বাজছে জয়ডঙ্কা, কাঁসর-ঝাঁঝর; কেউ আবার শঙ্খ বাজাচ্ছে, কেউ-বা ফুঁক দিচ্ছে শিঙ্গায় ।কেউ কেউ ভাবের আবেশে লুটিয়ে পড়ছে।কীর্তনা কখন যেন উঠানে নেমে এল। মাহজাবীন-এর হাত ধরল। সুরে সুরে গেয়ে উঠল: জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা/ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা। মাহজাবীন এর কেমন ঘোর লাগে। ও কীর্তনার মতো সুখি হতে চায়। গানের চাদরে নিজেকে ঢেকে ফেলতে চায়। কীর্তনা ওকে এক পাক ঘুরিয়ে দেয়। তারপর খিলখিল হাসিতে ভেঙে পড়ে। কানামাছি খেলার মতো টলতে টলতে উঠানের মাঝখানে চলে আসে মাহজাবীন । ওকে ঘিরে মত্ত মতুয়ারা নাচছে। জয়ডঙ্কা, কাঁসর-ঝাঁঝর এর আওয়াজ মাহজাবীনের করোটির দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে। আর কীর্তনা যেন ওর অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে থাকা আদিম নৃত্যবোধটিকে ধীরে ধীরে জাগিয়ে দিতে চায়। শহরের ইটপাথরের ভিতর জন্ম নিয়ে ও যতটা জড়, যতটা নিষ্ক্রয় হয়ে উঠেছে আজ রাতে মধুমতী নদীর পাড়ের এই উঠানে তার চেয়েও বেশি উদ্দাম আর মৃত্তিকালগ্ন হয়ে উঠবে যেন। মাহজাবীন এর মনে হয় কে যেন ওকে ‘জাগ’ দিচ্ছে । কে যেন ওকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। মাহজাবীন ঘুরে ঘুরে এক অদ্ভূত ভঙ্গিমায় নাচতে থাকে ...যেন সে শরবিদ্ধ এবং জয়ডঙ্কা, কাঁসর-ঝাঁঝর এর তীব্র নিনাদে মুছে যেতে থাকে শহুরে সব মুখোশ-মুখ। রাত্রির আকাশে মস্ত এক চাঁদ। উথালপাথাল হাওয়ার ভিতরে সে চাঁদ তার সমস্ত ধবল তরল কিরণ ঢেলে দিচ্ছে দক্ষিণ বাংলার এক অলৌকিক দৃশ্যের ওপর। তথ্য নির্দেশ:চিংড়ি চাষ সম্পর্কে তথ্যের উৎস: ড: মাহমুদুল আমীন এর নিবন্ধ ‘সংক্ষেপে গলদা চিংড়ি চাষের নিয়ম।’ ( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত প্রফেসর মাহমুদুল আমীন স্মারক গ্রন্থ। )মতুয়াদের সম্পর্কে তথ্যের উৎস: বাংলাপিডিয়া এবং আমার লেখা একটি পোস্ট: হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা।
false
ij
গল্প_ ভারি মজার একটা যুদ্ধ আগের পর্ব ঘুমিয়ে ছিল সালমা। কাল ভোর ভোর সময়ে উঠে পড়তে হবে। অনেক রাত ওব্দি অঙ্ক কষেছে। সামনে পরীক্ষা। ভোর ভোর সময়ে উঠবে বলে ঘুমিয়ে পড়ল। ভোরে আবার পড়া শুরু করবে। সালমা বরাবরই ক্লাসে ফাস্ট হয়। আর ফাস্ট হতে হলে একটু বেশিই খাটতে হয়। সালমার খাটতে অবশ্য আপত্তি নেই। রেজাল্প বেরোলে সব খাটুর ওরর ঘরের জানালায় খুট করে শব্দ হল। সালমার ঘুম পাতলা। ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানালাটা মাথার কাছেই। জানালা খুলেই ও ঘুমায়। ও উঠে উঁিক দিয়ে দেখল দেখল কুটুস দাঁড়িয়ে। কী রে কুটুস এত রাতে? কুটুস বলল, আঁকা না হারিয়ে গেছে। সালমা হাই তুলে জিগ্যেস করল, কে আঁকা? আঁকা একটা নীল পরি। কুটুস বলল। সালমা আড়মোড়া ভেঙ্গে জিগ্যেস করল, নীল পরি আঁকা তোমার বন্ধু? কুটুস মাথা নেড়ে বলল, না। পিদিমের বন্ধু। সালমা অবাক হয়ে জিগ্যেস করল, পিদিম আবার কে? কুটুস বলল, একটা সাদা ভুত। পিদিম তোমার বন্ধু? হ্যাঁ। কুটুস বলল। সালমা বলল, তা হলে তো আঁকাকে খুঁজতে যেতেই হয়। তুই দাঁড়া কুটুস, আমি মুখচোখে একটু পানি দিয়েই আসছি। আচ্ছা। একটু পর সালমা বাড়ির পিছনে আমবাগাটায় চলে এসে বলল, চল। চল। সালমা চিন্তিত হয়ে বলল, কিন্তু আঁকাকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে বল্ তো? আমি কী জানি। কুটুস একটা ছোট্ট লাফ দিয়ে বলল। ওদের ভাগ্য ভাল। কারণ এই সময় গড়ানকে উড়ে আসতে দেখা গেল । গড়ানও ওদের দেখে একটা আমগাছের ডালে এসে বসল। বসে বলল, তোমরা আঁকাকে খুঁজতে বেরিয়েছ তো? হ্যাঁ। হ্যাঁ। কুটুস বলল। গড়ান বলল, তা হলে বিলাইমারির জঙ্গলের দিকে যাও, ওখানেই আঁকাকে পাবে। বলে ও উড়ে চিরিদের গেল। সালমাবলল, চল কুটুস। আমি বিলাইমারি জঙ্গলটা ভালোই চিনি। আঁকা কোথায় আছে আশা করি খুঁজে বার করতে পারব। চল, তা হলে। কুটুস বলল। ওদিকে চিরির সঙ্গে উড়ে উড়ে পরির দলটা যাচ্ছিল। হলুদ পরি আফসানার হঠাৎ খুব পানির পিপাসা পেল। সে কথা বলতেই চিরি বলল, ওই তো একটা উঠান আর টিউবওয়েল। ওখানেই পানি খেয়ে নিও। চল। চিরি উঠানে টিউবওয়েলের ওপর বসল। পরির দলটা লাউয়ের মাচার ওপর বসল। ওদিকে মনোয়ারেরও পানি পিপাসা লেগেছিল। ওর ঘুম তাই ভেঙ্গে গেল। অন্ধকার হাতড়ে জগটা ধরে বুঝল পানি নেই। কী আর করা। টিউবওয়েলটা উঠানে। উঠতেই হল। গলা শুকিয়ে কাঠ। ও জগটা নিয়ে সাবধানে দরজা খুলল, মা আর ফরিদা ঘুমিয়ে আছে, ওদের যাতে ঘুম না ভাঙ্গে তাই। মনোয়ার উঠানে এসে দেখল উথালপাথাল বাতাস আর জোছনা। ও উঠানে পা দিয়েই অবাক হয়ে দেখল এত রাতে টিউবওয়েলের ওপর একটা ফিঙ্গে পাখি বসে। ও অবশ্য পরির দল দেখল না পরির দলটা লাউয়ের মাচার ওপরে বসেছিল বলে। মনোয়ার জানতে চাইল, তুমি কে ভাই? চিরি বলল, আমার নাম চিরি। আমি হলাম একটা ফিঙ্গে পাখি। এত রাতে এখানে কী করছ? হলুদ পরি আফসানা উড়ে এসে বলল, আমার পিপাসা পেয়ে ছে যে। আমারও। আইরিন বলল। মনোয়ার অবাক হয়ে পরিদের দেখল। তারপর চিরিকে জিগ্যেস করল, এরা কারা চিরি? এরা হল পরির দল। আমার বন্ধু। এ হল আনিলা, আর এ হল সাবা, আর এ হল রাকা, এ হল আইরিন, আর এ হল আফসানা। মনোয়ার জিগ্যেস করল, ও তোমারা পানি খেতে চাও? হ্যাঁ ভাই। আইরিন বলল। আচ্ছা একটু অপেক্ষা কর। আমি দিচ্ছি। বলে মনোয়ার আবার ঘরে ফিরে গেল। সাবধানে কুপি জ্বালিয়ে খুঁজেপেতে শিকে থেকে একটা রুপার বাসন বার করল। ওটা ভালো করে মুছে উঠানে এসে টিউবওয়েলের হাতল চেপে পানি ভরে সেই রুপার বাসনটা দাওয়ার ওপর রেখে বলল, নাও, এবার তোমরা যত ইচ্ছে পানি খাও। আফসানা আর আইরিন পানি খেল। মনোয়ার জিগ্যেস করল, তোমরা কি বেড়াতে বেড়িয়েছ? চিরি বলল, ঠিক তা না। আঁকা নামে একটা পরি হারিয়ে গেছে। তাকে খুঁজছি। মনোয়ার জানে জোছনা রাতে ঝিলিমিলি নদীর কিনারে পরিরা নামে। ও ভাবল, ইস, আমাদের গ্রামে বেড়াতে এসে একটা পরি হারিয়ে গেল। এখন পরির দেশের পরিরা কী ভাববে। আহা, পরি হারিয়ে গেলে তো বিপদ। মনোয়ার বলল, আমিও যাব। তাহলে তো ভালোই হয়। ওদিকে উঠানে কথাবার্তা শুনে মনোয়ারের ছোট বোন ফরিদার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল । ও উঠে এসে পরিদের দেখে আর ফিঙে পাখি দেখে ভারি অবাক হয়ে গেল। ফরিদা কাঁদতে কাঁদতে বলল, এ এ আমিও যাব। আমিও যাব। মনোয়ার মৃদু ধমক দিয়ে বলল, যাবি তো চল। এত কাঁদছিস কেন? ওরা উঠান নেমে রাস্তায় নেমে আসতেই গড়ানকে দেখল উড়ে আসতে। গড়ান হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, চিরি, চিরি আমি না আঁকাকে খুঁজে পেয়েছি। চিরি চমকে উঠে বলল, কোথায়? গড়ান বলল, বিলাইমারির জঙ্গলে একটা কাঠের ঘরের ভিতরে। আমি এখন যাই ভুতুম আর লালসারিকে খবর দিয়ে আসি। বলে গড়ান উড়ে গেল। মনোয়ার বলল, জায়গাটা আমি ভালোই চিনি। সবাই আমার পিছন-পিছন এসো। সবাই জোছনাকে অনুসরণ করল। ওদিকে একটা ঝাঁকড়া গাছের তলায় কাঠের বাড়িটা খুঁজে পেল পিদিম। ঘরের পিছনে এসে দেখল একটা জানালায় আলো জ্বলছে। পিদিম মুহূর্তে জানালায় একে উঁিক দিল। ভিতরে একটা হ্যাজাক বাতি জ্বলে আছে। তারি আলোয় দেখল আঁকা একটা টেবিলের ওপাশে হাতলভাঙ্গা চেয়ারে বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। ঘরের ভিতরে চারজন। এর মধ্যে তিনজন হল গরুচোর। অন্যজন একটা লম্বা মোটাসোটা লোক। সে টেবিরের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে চুরুট টানছে। পিদিম ওদের কথাবার্তা শুনতে লাগল। গাবু বলল, তোমরা পরির বিনিময়ে একটা সাদা ঘোড়া চেয়েছিলে, ঠিক? ঠিক? কটূ বলল। গাবু বলল, এখন তা হলে তার সঙ্গে হাতির বাচ্চা চাচ্ছ কেন? একটা হাতীর বাচ্চার দাম লাখ টাকা জান? কটূ বলল, ভেবে দেখ গাবু। এই পরি দেখিয়ে তোমরা কত টাকা আয় করবে। একটা বাচ্চা হাতির জন্য এত কিপ্টেমি করছ কেন? কটূর কথা শুনে খ্যাকখ্যাক করে হাসতে লাগল রাব্বানী । জানালার পাল্লায় খস করে শব্দ হল। পিদিম চেয়ে দেখল গড়ান। ফিসফিস করে বলল, সবাইকে খবর দিয়েছি পিদিম। ধন্যবাদ গড়ান। ফিসফিস করে বলল পিদিম। পিদিম আবার ঘরের ভিতরে উকিঁ দিল। গাবু বলছে, ভালোয় ভালোয় রাজী হয়ে যাও নয়তো ... নয়তো কী। বলে তিতা বুক ফুলিয়ে দাঁড়াল আমাদের এলাকায় মাস্তানী, না? জান আমরা কার ছেলে?। কটূও ছেড়ে কথা কওয়ার ছেলে না। ঘরের ভিতরে প্রায় মারামারির উপক্রম হল। হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় আর কী। পিছনে খুট শব্দ হল। পিদিম চেয়ে দেখল কুটুস আর তার সঙ্গে একটা দারুন সুন্দর দেখতে একটা। পিদিম ভাবল: এর নামই মনে হয় সালমা, আমবাগনে থাকে। পিদিম একটু সরে গেল। সালমা ঘরের ভিতরে উঁকি দিয়ে তিতা-কটূকে দেখে ভীষন অবাক হয়ে গেল। ওরা, মানে তিটা আর কটূ সালমার সঙ্গেই গড়পাড়া ইশকুলে একই ক্লাসে পড়ে। তিতা-কটূ যদিও রেগুলার ক্লাস করে না, ক্লাস ফাঁকি দেয়। তিতা-কটূ একবার সালমার বইখাতা খালের পানিতে ফেলে দিয়েছিল। এমনি-এমনি কোনও কারণ ছিল না। সালমা অপেক্ষা করছিল তিতা-কটূকে জব্দ করার জন্য। আজই যে ওর ইচ্ছে পূরণ হবে ও জানত না। একটু পর চিরি, পরির দল ও মনোয়ার এসে পড়ল কাঠের বাড়ির পিছনে। মনোয়ারকে দেখে খুব অবাক হল পিদিম। ও যে আসবে ভাবতে পারেনি। চিরি পাল্লার ওপর বসল গড়ানের পাশে। পরিরা জানালার ওপরে ভেসে রইল শুন্যে। মনোয়ার এসে বসল পিদিম আর সালমার পাশে। একটু পর ভুতুমরাও এল একটু পর। ওর পিঠে লালসারি। লালসারিদের উত্তেজিত দেখাল। সবাই এসে গেছে দেখে পিদিম নিশ্চিন্ত হল। ও ঘরের ভিতরে উকিঁ দিল। ঘরের ভিতরে গাবু ততক্ষনে পিস্তল বার করে কর্কস স্বরে বলছে, বেশি তেড়িবেড়ি করলে তোদের মাথার খুলি উড়ায়ে দিব। গড়পাড়ার মাস্তান। না? পিস্তল দেখে তিটা-কটূ ভ্যবাচেকা খেয়ে গেল। ওরা ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। ওরা যতই দুষ্টুমি করুক জীবনে কখনও সত্যিকারের পিস্তল দেখেনি। ওদের বাপের একটা বন্দুক আছে বটে কিন্ত সেটা কখনও ছুঁয়ে দেখার সাহস হয়নি। গাবুর হাতের ওটা সত্যিকারের বলেই তো মনে হচ্ছে। কটূ তোতলাতে তোতলাতে বলল, আপনি ...আপনি জানেন না গাবু ভাই, আমরা ... আমরা ঠিক করেছিলাম পরিটাকে ...পরিটাকে এমনি এমনি ...এমনি আপনাকে উপহার দেব। তাই? হ্যাঁ। বেশ ভালো। উস্তাদ আপনে এখন এই দুইটারে ভালো করে বান্ধেন। আমি এইটা ধরছি। দড়ি দে। বলে রাব্বানী চুরুট ফেলে দিল, টেবিল থেকে লাফ দিয়ে নামল। । ওই কোণায় দেখেন। রাব্বানী দড়ি খুঁজে বার করল। কটূ বলল, ঠিক আছে বাঁধেন, কিন্তু গুলি করেন না। চুউউপ। বলে রাব্বানী গর্জে উঠল। সেই গর্জন শুনে ওদের আত্মার পানি শুকিয়ে গেল। বাঁধা শেষ হলে রাব্বানী উঠে দাঁড়াল। গাবু বলল, উস্তাদ আপনি পরিটারে নিয়া ঘরের বাইরে যান। আমি শেষবার চেক করে আসছি। রাব্বানী মাথা ঝাঁকাল। আঁকাকে কাঁধের ওপর তুলে বসিয়ে দিল। তারপর বাইরে বেরোবে বলে দরজার কাছে এগিয়ে যেতে লাগল। পিদিম একটা কিছু কর। রাকা পিদিমের পাশে এসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল। করছি। বলে চোখের পলকে ও কাঠের বাড়িটা ঘুরে দরজার সামনে চলে এল। রাব্বানী তখনও দরজা খোলেনি। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যায় দরজার সামনে পাকা মেঝে আর শুকনো পাতার স্তুপ। সবাই সাবধানে পিদিমকে ফলো করে দরজার একপাশে এসে দাঁড়াল। করকর শব্দে দরজাটা খুলল। রাব্বানী তারাপর বাইরে এসে দাঁড়াল। এদিক-ওদিক দেখে নিচ্ছে। শিস দিচ্ছিল। দারুন ফুর্তিতে আছে লোকটা। ততক্ষনে পিদিম একটা শক্ত দড়ির রুপ ধরে রাব্বানীর পা দুটো বাঁধতে শুরু করেছে। তাই একটা পা ফেলতেই “একী!, একী!” বলে চেঁিচয়ে উঠল সে। কারণ রাব্বানী ধপাস করে পড়ল শক্ত শানের ওপর। আঁকা পরেই যাচ্ছিল। গড়ানই ওকে শূন্যে ধরে ফেলে নিরাপদে মাটিয়ে নামিয়ে আনল। সালমা চটপট দরজার ভারী খিলটা তুলে দিল। ওপাশ থেকে গাবু দুমদুম করে দরজায় কিল ঘুঁষি মারতে শুরু করেছে। এই দরজা বন্ধ করেছে কে? এই দরজা খোল। সালমা ঘুরে মনোয়ারকে বলল, চল মনো, এবার থানায় যাই। পুলিশকে সব বলে আসি। চল। কুটুসও ওদের পিছনে ছুটল। পিদিম ততক্ষনে রাব্বানীকে আগাগোড়া বেঁধে ফেলল। বেঁধে ফেলে তারপর গড়াতে লাগল ঝিলিমিলি নদীর পাড়ের দিকে। বিলাইমারির জঙ্গলের ধার দিয়ে ঝিলিমিলি নদীটা বেঁকে গেছে। পাড়টা এখানে অনেকই উঁচু। গড়াতে গড়াতে ধপাস করে নদীতে পড়ল পিদিম। ওদের পিছন পিছন সবাই এসে দাঁড়াল পাড়ের কাছে। চিরি হাততালি দিয়ে বলল, বেশ হয়েছে। যেমন কর্ম তেমন ফল। হ্যাঁ। শয়তানটার উচিত শাস্তিই হল। আইরিন বলল। কটুস কয়েকবার লাফিয়ে নিল খুশিতে। লালসারিও খুশির চোটে চিনচিন করে উঠল। ভুতুমও ঘোৎ মতন একটা শব্দ করল আনন্দে। রাব্বানী খাবি খাচ্ছিল ঝিলিমিলি নদীর জলে। আর চিৎকার করে বারবার বলছিল, আমায় ছেড়ে দে বাপ, আর বাপের জন্মেও এমুখো হব না ...ছেড়ে দে ... কথা দিচ্ছি ... পিদিমের মায়া হল। সে বলল, সত্যি বলছ তো? আর এদিকে আসবে না? না না বাপ। মরে গেলেও না। একটা পরির জন্য কেউ জান খোয়ায়? আচ্ছা তোমায় তাহলে ছেড়ে দিচ্চি। বলে ও রাব্বানীকে ছেড়ে দিয়ে নদীর পাড়ে উঠল। ফরিদা ওর ওড়নাটা দিয়ে বলল, এটা দিয়ে মাথা মুছে নাও পিদিম ভাই, নইলে সর্দি লেগে যাবে। দে। বলে পিদিম ফরিদার কাছ থেকে ওড়না নিল। এখন ভালো করে মাথা মোছাই ভালো। নইলে আবার যদি সর্দি বেধেঁ যায়। রাকা জড়িয়ে ধরল পিদিমকে। পিদিম ওর নীল রঙের চুলের হাত বুলিয়ে দিল। কী রে রাকা, চুলে আজ শ্যাম্পু করিস নি কেমন চটচট করছে। রাকা বলল, না। আজ সময় পায়নি । কাল করব। তাই করিস। আঁকা কাছে এসে বলল, আমায় তুমি বাঁচালে। তোমায় ধন্যবাদ পিদিম। পিদিম হেসে বলল, বাহ্, আমায় একা ধন্যবাদ দিলে চলবে? সবাই মিলে যে তোমায় বাঁচাল, সবাইকে ধন্যবাদ দাও। সবাইকে ধন্যবাদ। চিরি হাততালি দিয়ে উঠল গড়ানও দুবার মাথা নাড়ল। একটু পর সালমা আর মনোয়ারদের আসতে দেখা গেল। সঙ্গে কুটুস। পিদিম বলল, তোমরা কোথায় গিয়েছিলে? থানায়। থানায় কেন? পুলিশকে খবর দিতে। পুলিশকে খবর দিতে কেন? আহা, তিতা আর কটূকে ধরতে, ওরা অন্যায় করল। ওদের ধরে শাস্তি দিতে হবে না? ও। পিদিম এবার যেন বুঝল। পুলিশ এসেছে? আফসানা জিগ্যেস করল। সালমা বলল, না। দারোগা থানায় নেই। কোথায় গেছে কোন্ ডাকাত ধরতে। অন্য পুলিশরা সব এত রাতে ঘুমাচ্ছে। আমরা থানায় সব বলে এসেছি। পুলিশ বলেছে পরে মনে থাকলে এসে ধরবে। রাকা বলল, আমাদের যাওয়ার সময় হল ভাই। আমাদের এখন যেতে হবে। ফরিদা জিগ্যেস করল, তাহলে, আবার কবে আসবে? আনিলা বলল, ভরা পূর্নিমায়। কাল থেকে কয়েকদিন আসা যাবে না। দেখছ না চাঁদের আলোয় টান পড়েছে কেমন। সবাই আকাশে তাকিয়ে দেখল সত্যিই তাই। সালমা কী ভেবে বলল, তাহলে তোমরা আবার এলে আমরা সবাই মিলে অশথ তলায় একটা পার্টি করব। পার্টি! কী মজা! চিরি হাততালি দিয়ে উঠল। পিদিম তিনবার শূন্যে ডিগবাজী খেল। সবাই হেসে উঠল। পরিরা আকাশে উড়ে গেল। শেষ সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:১৩
false
rg
মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনালে টস জিতলেই ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ!!! আগামী ১৯ মার্চ ২০১৫, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে। এই মাঠেই ঠিক দশদিন পর ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসরের ফাইনাল। হিসাবটা একটু খেয়াল করুন, এই মাঠে যারা জিতবে, তাদের জন্যই কিন্তু একপ্রকার ফাইনাল খেলার হাতছানি। কারণ সেমি-ফাইনালের খেলা দু্টি হবে অকল্যান্ডে আর সিডনিতে। ফাইনালের আগেই সেই একই ভেন্যুতে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার সুযোগ পেল বলেই বাংলাদেশ ও ভারত, দুটি দলই কিন্তু কাকতলীয়ভাবে ভাগ্যবান। বাংলাদেশের এখন প্রধান টার্গেট মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত-বধ মিশন। এবারের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ডের পর দ্বিতীয় অপরাজিত দল এখন পর্যন্ত ভারত। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ বিশ্বের যে কোনো দলের চেয়ে নিঃসন্দেহে সেরা। ভারতের ফিল্ডিং আগের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী। রবীশাস্ত্রী বর্তমানে ভারতীয় দলটির ডিরেক্টর। ভারতীয় দলে ডানকান ফ্লেচার কোচ হিসেবে থাকলেও দলের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিন্তু রবীশাস্ত্রী নেন। রবীশাস্ত্রী ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেবার পর ভারতের বোলিং সাইড অনেক উন্নতি করেছে। ভারতের বিশ্বকাপ মিশনে এখন পর্যন্ত মোহাম্মদ সামি, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, উমেশ যাদব, মোহিত শর্মা এই পাঁচজনই কার্যকর ভাবে দক্ষতা দেখাচ্ছেন। এর সঙ্গে দলে রয়েছে ইশান্ত শর্মা। ইশান্ত শর্মা এই মুহূর্তে ফর্মে না থাকায় বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থেকেও সাইডলাইনে বসে আছেন। কিন্তু মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নতুন বলে ফাস্ট বোলাররা কিন্তু দারুণভাবে কার্যকরী। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ইশান্ত শর্মাকে রবীশাস্ত্রী বেস্ট এলেভেনে রাখতে পারেন। কারণ, ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে তারা বেশ সন্তুষ্ট। দুর্বলতা যা আছে, তা ওই বোলিংয়ে। তাই ভারতের এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিপক্ষে বোলিং নিয়েই ওদের সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তা। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ইতোমধ্যে প্রধান দুর্বলতা যেটা ধরা পড়েছে সেটা হল ফাস্ট বলের বিপক্ষে আমাদের ওপেনারদ্বয় এখন পর্যন্ত ব্যর্থ। বাংলাদেশের মিডল-অর্ডার ফাস্টবলের ধকল যাবার পর স্পিনের বিপক্ষে মোটামুটি শক্তিশালী। আমাদের সৌম্য সরকার, মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদ, শাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, নাসির হোসেনরা কিন্তু নতুন ফাস্টবলের পরের স্টেজটা বেশ ভালো মতোই সামাল দিতে দক্ষতা দেখিয়েছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পাওয়ার ব্যাটিংয়ে এখন পর্যন্ত প্রথম স্পেলের দশ ওভার এবং দ্বিতীয় স্পেলের পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তেমন রান সংগ্রহ করতে পারেনি। সোজা কথায় মানে হল, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ফাস্ট বলের বিপক্ষে এক ধরনের পাল্টা আক্রমণাত্মক অবস্থা এখন পর্যন্ত পাওয়ার ব্যাটিংয়ে গোটা টুর্নামেন্টেই দেখাতে পারেনি। আমাদের প্রধান দুর্বলতা সম্ভবত এখানটায়। পাওয়ার ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ১৫ ওভারে তেমন কার্যকর আশা জাগানিয়া রান তুলতে পারেনি বরং উইকেট খোয়াচ্ছে। আমাদের দ্বিতীয় দুর্বলতা আমাদের ওপেনারদের আস্থাহীনতা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপেনাররা ধারাবাহিকভাবেই ব্যর্থ। মূলত বাংলাদেশের ওপেনারদ্বয় বিদায় নেবার পর থেকেই খেলায় ফেরার নমুনা দেখা গেছে। আমাদের তৃতীয় দুর্বলতা বোলিং। আল-আমিন দল থেকে বাদ পরার পর আমরা এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচে পাঁচজন বোলার নিয়ে খেলতে পারিনি। এছাড়া আমাদের ফিল্ডিংয়েও কিছু কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এবারের বিশ্বকাপে ভারতের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহক শিখর ধাওয়ান। যার সংগ্রহ ৫ ম্যাচে ৩৩৩ রান। আজ মোহাম্মদউল্লাহ ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করে ধাওয়ানকে ধাওয়া করে টপকেছেন। কিন্তু ধাওয়ান আগামীকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কত রান পায় সেটাই দেখার বিষয়। নতুবা মোহাম্মউল্লাহ রিয়াদ ৩৪৪ রান নিয়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ভিরাত কোহলি। যার রান ৫ ম্যাচে ২৬৩। কিন্তু কোহলির চেয়ে এই মুহূর্তে একধাপ এগিয়ে আমাদের লিটল মাস্টার মুশফিকুর রহিম। মুশফিকুর রহিমের রান এখন পর্যন্ত ২৭১। ব্যাটিংয়ে আমরা এখন পর্যন্ত ভারতকে টক্কর দেওয়ার মত অবস্থানে আছি। বোলিংয়ে ভারতের মোহাম্মদ সামি ৪ ম্যাচে ১২ উইকেট, রবীচন্দ্রন অশ্বিন ৫ ম্যাচে ১১ উইকেট, রবীন্দ্র জাদেজা ৫ ম্যাচে ৭ উইকেট, উমেশ যাদব ৭ উইকেট, মোহিত শর্মা ৭ উইকেট। বোলিংয়ে বাংলাদেশের সেরা উইকেট টেকার এখন পর্যন্ত যৌথভাবে শাকিব ও রুবেল প্রত্যেকে ৫ ম্যাচে ৭টি, মাশরাফি ৪ ম্যাচে ৬ টি, তাসকিন ৫ ম্যাচে ৬টি, নাসির ২ ম্যাচে ৪টি এবং সাব্বির ৫ ম্যাচে মাত্র ১ টি উইকেট। অর্থ্যাৎ বোলিংয়ে ভারত বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে টাই হওয়ায় এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভারতের ম্যাচটি এখন পর্যন্ত না হওয়ায়, উভয় দল মোট ৫টি করে ম্যাচ খেলেছে। সেই ৫ ম্যাচের পরিসংখ্যান হল এরকম- বাংলাদেশ মোট ১৩৯২ রান করেছে, যার মধ্যে দুইবার অলআউট হয়েছে, মোট উইকেট হারিয়েছে ৩২টি। অন্যদিকে ভারত ৫ ম্যাচে রান তুলেছে ১১৫৩, একবারও অলআউট হয়নি, উইকেট হারিয়েছে ২৩টি। হোক ভিন্ন ভিন্ন দলের বিপক্ষে খেলা। কিন্তু ৫ ম্যাচের পরিসংখ্যানে কিন্তু ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু উইকেট হারানোর দশায় আমরা কিন্তু একটু পিছিয়ে।আগামী ১৯ মার্চ মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা একাদশ কী হবে এটাই এখন চিন্তার বিষয়। যদি মাশরাফি এর মধ্যেই চোট থেকে মাঠে ফিরে আসেন, তাহলে বাংলাদেশের জন্য সেটি হবে সবচেয়ে বিশাল পাওয়া। কারণ, মাঠে দলের ক্যাপ্টেন উপস্থিত থাকা একটা ব্যাপার। মাশরাফি যেভাবে বাংলাদেশ দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছে, সেই বিবেচনায় এখন পর্যন্ত ক্যাপ্টেনসিতে মাশরাফির বিকল্প টাইগার্সদের কেউ নেই। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ থাকলেও কিন্তু ২৮৮ রানের পাহাড় গড়েও শাকিব ক্যাপ্টেনসিতে কোনোচমক দেখাতে পারেনি। তাই মাশরাফি দলে ফিরবে এবং টাইগার্সদের প্রধান চাওয়াও এখন এটি। এবার আসা যাক ওপেনিংয়ে। বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ওপেনার সমস্যায় ধুকছে। তামিম ভারতের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াবে এমনটাই ষোলকোটি বাংলাদেশীদের প্রধান চাওয়া। বাকি রইল ইমরুল কায়েস। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে আমি নাসির হোসেনকে দিয়ে তামিমের সঙ্গে ওপেন করানোর পক্ষে। কারণ, নাসির ওপেনিংয়ে যা করার ঝড়ো একটা ইনিংস খেলুক। তারপর বোলিংয়ে কিছু সুবিধা দিতে পারবে। তাছাড়া ইমরুল কায়েসের চেয়ে নাসির অনেক অ্যাটাকিং ফাইটার। ইমরুল কায়েস শুরুতে দলে জায়গা না পেলেও বিশ্বকাপের মাঝখানে উড়ে গিয়ে এখন পর্যন্ত দলকে হতাশই করেছে। দুই ম্যাচে রান করেছে ২ +২ = ৪ রান। যা কোয়ার্টার ফাইনালের মত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভরসা করার মত নয়। তাই আমি কোয়ার্টার ফাইনালে তামিমের পক্ষেই বাজি ধরতে রাজি। যেহেতু বাংলাদেশের স্বীকৃত ওপেনার আমাদের এই ভাতিজা। তাই তার উপরই শেষ ভরসা রাখতে চাই। সঙ্গে নাসিরকে দিয়ে ওপেন করিয়ে একটা বাজি ধরতে চাই। নতুবা তামিমের সঙ্গে স্বয়ং মাশরাফিকে দিয়েই ওপেন করানোর পক্ষে আমি। ওপেনিংয়ে মাশরাফি যদি ১০ ওভার টিকে যায় তো ভারত কুপোতাত হবার রাস্তায় একধাপ আগাবে। ওপেনিংয়েই আমি টাইগার্সদের পক্ষে এই বাজিটা ধরতে চাই। যা হবার এখানেই হোক। নইলে ওপেনার ছাড়া গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচগুলো তো মিডলঅর্ডার বেশ ভালো ভাবেই সামাল দিল। তাদের উপরই পূর্ণ আস্থা রাখতে চাই।এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বেস্ট ইলেভেনে আমার পছন্দের এগারোজন হল-১. মাশরাফি বিন মুর্তাজা, ২. তামিম ইকবাল, ৩. সৌম্য সরকার, ৪. মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদ, ৫. শাকিব আল হাসান, ৬. মুশফিকুর রহিম, ৭. নাসির হোসেন, ৮. সাব্বির রহমান, ৯. তাইজুল ইসলাম, ১০. তাসকিন আহমেদ, ১১. রুবেল হোসাইন।আমাদের হাতে আছে এখন গুরুত্বপূর্ণ ৬টি দিন। এই সময়ের মধ্যে যদি ইমরুল কায়েস ব্যাটিং প্রাকটিস করে নিজেকে প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে আমি ওপেনিংয়ে ইমরুল কায়েসকে ভাবতে রাজি। সেক্ষেত্রে নাসির হোসেনকে রেখে তাইজুলকে বেস্ট ইলেভেনের বাইরে রাখতে চাই। কারণ, তাইজুল বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এক ম্যাচ খেলে কোনো উইকেট পায়নি। কিন্তু ৪ উইকেট পেয়েছে। তাছাড়া নাসির ব্যাট হাতে টাইগার্সদের জন্য অনেক বেশি ভরসার। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলাটি যেহেতু ভারতের বিপক্ষে, তাই টস জিতে আমি ব্যাটিং নেবারই পক্ষে। কারণ, ভারতের ওপেনিং যদি মুর্তাজা-রুবেল-শাকিব-সাব্বির ঝড়ে নড়বড়ে হয়ে যায়, তো ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ওদের আসা যাওয়ার চিত্র সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, ভিরাট কোহলি আর সুরেশ রায়ানা হবে ভারতের প্রধান কি-উইকেট। এরপর মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রবীন্দ্র জাদেজা বা রবীচন্দ্রন অশ্বিনও ওদের শেষের দিকে ঝড় মোকাবেলায় অনেক সময় কার্যকরী হয়ে ওঠে। যদি রোহিত-ধাওয়ান-কোহলি-রায়ানা এই চার উইকেট আমরা পেয়ে যাই, তখন ধোনি বেশ চাপে থাকবে। আর সেই সুযোগটা আমাদের পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। সবচেয়ে আসল কথা যেটা, তা হল ম্যাচের আগেই ভারতীয় শিবিরে একটা আতংক কিন্তু বাসা বেধেছে। সেই আতংকটাকে একটু বাতাস দিয়ে উসকে দিতে পারলেই এবারের বিশ্বকপের মিশনে ভারত-বধ কোনো ব্যাপার না। মেলবোর্নে এবার কিন্তু একটু ফ্ল্যাড উইকেট। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত খেলাগুলোতে দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে তুলেছিল ৩৪২ রান। পরে ইংল্যান্ড ৪১.৫ ওভারে ২৩১ রানে অলআউট হয়েছিল। ভারত দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তুলেছিল ৩০৭ রান। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০.২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয়েছিল। শ্রীলংকা বাংলাদেশের বিপক্ষে তুলেছিল ৩৩২ রান। পরে বাংলাদেশ ৪৭ ওভারে ২৪০ রানে অলআউট হয়েছিল। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যারাই প্রথমে ব্যাট করেছে তারাই তিনশো'র বেশি রান তুলতে সক্ষম হয়েছে। আর বিপক্ষ দল একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া অন্যরা ৮/৯ ওভার বাকি থাকতেই অলআউট হয়েছে। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে হারলেও ৪৭ ওভার পর্যন্ত খেলেছে এবং রান তুলেছে অন্যদের চেয়ে বেশি। তাই মেলবোর্নে টসে যে দলই জিতবে, সে দলের ব্যাটিং নেবার সম্ভাবনা প্রায় হান্ড্রেড পারসেন্ট। বাংলাদেশ টসে জিতলে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা একধাপ এগিয়ে যাবে। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দেশ এই মাছে চেস করতে পারেনি। যারা এবারের বিশ্বকাপে দুইবার চারশো'র উপরে রান করেছে। তাই মেলবোর্নে প্রথম বাজি হবে আসলে টস নিয়ে। টস যে জিতবে, সে ব্যাটিং করবে। আর প্রথমে ব্যাটিং করে ভারতের বিপক্ষে আমরা ২৭০ বা ২৮০ তুলতে পারলেই ভারত কিন্তু পালানোর রাস্তা খুঁজবে। আর যদি আমরা টস জিতে তিনশো পেরোতে পারি, তাহলে ভারত-বধ তো কোনো ব্যাপারই না। মেলবোর্নে টাইগার বাহিনী টস জিতুক, সবাই এই আশির্বাদ করেন। কারণ, ১৯ মার্চ টস হবে দল জেতার প্রথম প্রধান ফ্যাক্টর। জয়তু টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট।................................ঢাকা ১৩ মার্চ ২০১৫
false
ij
কবি লাওৎ-সে উবাচ লাওৎ-সে ছিলেন প্রাচীন চিনের আধুনিক কবি। লিখেছিলেন-Work is done, then forgotten. Therefore it lasts forever. যে কাজ করে ভুলে যেতে হয়-তা কীভাবে চিরকাল টিকে থাকে? আধুনিক কবিতা সম্বন্ধে টি এস এলিয়ট একবার বলেছিলেন, “জীবন যেহেতু জটিল। কবিতাকেও জটিল হতে হবে।” এলিয়টের এই আপ্তবাক্যটি লাওৎ-সে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছিলেন। একটাই কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। ছোট। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বেঁচে থেকে আমাদের জন্য সে গ্রন্থে জটিল জটিল সব বাক্য রেখে গেছেন। আমরা এখন সেই সব জটিল জটিল বাক্যের মানে বুঝতে হিমশিম খাচ্ছি। ‘তাও তে চিং’ পড়তে পড়তে ভাবছি লাওৎ-সে কেন এত জটিল জটিল কথা ভাবতেন। যে কথার মানে সহজে বোঝা যাচ্ছে না। আজ আমরা ‘তাও তে চিং’ গ্রন্থের ২ সংখ্যক কবিতাখানি পড়ে দেখি লাওৎ-সে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন। Under heaven all can see beauty as beauty only because there is ugliness. All can know good as good only because there is evil. Therefore having and not having arise together. Difficult and easy complement each other. Long and short contrast each other: High and low rest upon each other; Voice and sound harmonize each other; Front and back follow one another. Therefore the sage goes about doing nothing, teaching no-talking. The ten thousand things rise and fall without cease, Creating, yet not. Working, yet not taking credit. Work is done, then forgotten. Therefore it lasts forever. তো কী এর মানে? Under heaven all can see beauty as beauty only because there is ugliness. All can know good as good only because there is evil. মোটামুটি বোঝা গেল। অন্ধকার রয়েছে বলেই আলোকে পাই টের। তারপর? Therefore having and not having arise together. Difficult and easy complement each other. Long and short contrast each other: High and low rest upon each other; Voice and sound harmonize each other; Front and back follow one another. এখানেই আধুনিক চৈনিক কবিতার শুরু। Therefore having and not having arise together. অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই লাইনটি অনুবাদ করেছেন এভাবে- "থাকা, না থাকা, একে অন্যের উৎপত্তি কারণ।" (অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনুদিত 'তাও-তে-চিং' লাও-ৎস কথিত জীবনবাদ।) "থাকা, না থাকা, একে অন্যের উৎপত্তি কারণ।" কী এর মানে? সেই জন্যই তখন বলছিলাম-লাওৎ-সে ছিলেন প্রাচীন চিনের আধুনিক কবি। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বেঁচে থেকে আমাদের জন্য সে গ্রন্থে জটিল জটিল সব বাক্য রেখে গেছেন। আমরা এখন সেই সব জটিল জটিল বাক্যের মানে বুঝতে হিমশিম খাচ্ছি। ‘তাও তে চিং’ পড়তে পড়তে ভাবছি লাওৎ-সে কেন এত জটিল জটিল কথা ভাবতেন। যে কথার মানে সহজে বোঝা যাচ্ছে না। Therefore the sage goes about doing nothing, teaching no-talking. The ten thousand things rise and fall without cease, Creating, yet not. Working, yet not taking credit. Work is done, then forgotten. Therefore it lasts forever. কী এর মানে? মূল চৈনিক থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন Gia Fu Fen সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৬
false
rg
প্রিমেনেস্ট্রুয়াল সিনড্রম বা পিএমএস Premenstrual syndrome (PMS) !!! প্রিমেনেস্ট্রুয়াল সিনড্রম বা পিএমএস বিষয়টি নারীঘটিত। সাধারণত মেয়েদের ঋতুস্রাবের দুই বা এক সপ্তাহ আগে থেকে এই শারিরীক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো দেখা দেয়। তবে এটি সিরিয়াস আকার ধারণ করে ঋতস্রাবের ছয় দিন আগে থেকে। এই সময়ে মেয়েদের আচরণে অদ্ভুত কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এই সময়ে মেয়েরা রিয়েল ওয়ার্ল্ডের চেয়ে ইমাজিনারি ওয়ার্ল্ডে বেশি বসত করে। বাস্তবতার চেয়ে কল্পনায় তাদের বেশি ঘোরাঘুরি থাকে। মেজাজের কোনো মা-বাপ থাকে না। এই খুব স্বাভাবিক আবার একটু পরেই কোনো কারণ ছাড়াই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। যে কোনো ইস্যুতে জোরপূর্বক ঝগড়া করতে চায়। হাসবে কাঁদবে রাগ হবে, অভিমান দেখাবে, যুক্তির কোনো ধার ধারবে না। সোজা কথায় এই সময়ে মেয়েরা অনেকটা আউলা থাকে। স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে হয়তো নেশা জাতীয় কিছু খেয়েছে! আচরণে এমন বিদঘুটে ব্যাপারস্যাপার দেখায় যে, এই সময়ে মেয়েদের পৃথিবীর কোনো পুরুষের পক্ষে বোঝা মুশকিল। এমনিতে মেয়েদের মধ্যে ডেভিল আর অ্যাঞ্জেল দুটো বিষয়ের সংমিশ্রণ রয়েছে। কিন্তু পিএমএস কালে মেয়েদের শতকরা ৯৯ ভাগ ডেভিল আচরণ করতে দেখা যায়। এই সময়ে মেয়েরা সুস্থচিন্তা করতে পারে না। অর্থ্যাৎ এই সময়ে মেয়েরা মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে। তবে এই মানসিক অসুস্থতা ব্যক্তি বিশেষ বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। এই সময়ে মেয়েরা কফি, আইসক্রিম, কোক, ড্রিংকস, মিস্টি ইত্যাদিতে আসক্তি দেখায়। এই সময়ে পুরুষ সঙ্গীটিকে দিনের মধ্যে অন্তত দুইশোবার নানান কিসিমের অছিলায় জ্বালায়। এই সময়ে স্বয়ং ইশ্বরও মেয়েদের আচরণ ঠিকঠাক বুঝতে পারেন কিনা সন্দেহ! পুরুষদের তো এই সময়ে মেয়েদের ঠিকঠাক বুঝতে পারার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এই সময়ে মেয়েরা কী কি চায় তা তারা নিজেরাও জানে না। এই সময়ে মেয়েরা অন্যদের ভুল ধরে, অন্যদের সমালোচনা করে, অন্যদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে, খিস্তিখেউর করে, পারলে দুনিয়া উল্টায়ে ফেলতে চায়! কারণ এই সময়ে মেয়েরা যা কিছু চিন্তাভাবনা করে তার প্রায় পুরোটাই কল্পনার জগত, বাস্তবের সঙ্গে সেইসব কল্পনার খুব একটা অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। পিএমএস সময়ে মেয়েদের এই আচরণ কেন হয়? চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, এই সময়ে মেয়েদের শরীরে কিছু হরমোনাল ব্যাপার স্যাপারের উল্টাপাল্টা আচরণের কারণে তাদের আচরণেও সেটি ফুটে ওঠে। এই সময়ে মেয়েরা খুব ইমোশনাল হয়ে যায়। কার সঙ্গে যে কী ধরনের আচরণ করবে আগে থেকে ঠাওর করা কঠিন। কারো কারো এই সময়ে মারাত্মক ইমোশনাল হবার লক্ষণ দেখা যায়। আবার কারো কারো নিজস্ব সংযমের কারণে মাইল্ড ইমোশনাল হবার লক্ষণ দেখা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞান এই সময়ে মেয়েদের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পর্যবেক্ষণ করে পিএমএস সময়ে মেয়েদের বেশি বেশি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সেবনের পরামর্শ দেয়। যে সকল খাবারে বেশি বেশি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি রয়েছে, পিএমএস কালে মেয়েদের সেসব খাবার ডেইলি খাবার রুটিনে যুক্ত করা উচিত। যে সব মেয়েরা হাই-সল্ট, অ্যালকোহল বা ক্যাফিনে আসক্ত, তাদের জন্য পিএমএস সময়টা খুবই ঝুঁকির সময়। এই সময়ে এরা এসব খাবারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের জন্য আরো ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলেন। এই সময়ে তাদের হাই-সল্ট, অ্যালকোহল ও ক্যাফিন ব্যবহার কমিয়ে বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ করা উচিত। মানসিক চাপ কমাতে পছন্দের গান শোনা, পছন্দের জায়গায় বেড়ানো, পছন্দের কেনাকাটা করা ভালো। এই সময়ে মানসিক চাপ কমানোর দিকেই সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া উচিত। আর যদি আচরণ একদম কন্ট্রোল করা না যায় বরং সেই বিরূপ আচরণ কেউ আরো বাড়ানোর বা বেশি বেশি প্রাকটিস করার দিকে যেতে চায়, তাদের কারো কারো কিন্তু পাগল হয়ে যাবারও সম্ভাবনা থাকে! মেয়েদের উচিত তাদের পুরুষ সঙ্গীটিকে পিএমএস সময়ে তার কী কী বিরূপ আচরণ হতে পারে, সে সম্পর্কে আগে ভাগেই একটা ধারণা দেওয়া। নইলে প্রতি মাসের পিএমএস সময়ে মেয়েদের এধরনের বিরূপ আচরণ থেকে অনেকের ঘর ভাঙারও কারণ হতে পারে। পুরুষ সঙ্গীটিকে পিএমএস সম্পর্কে মেয়েরাই তাদের নিজের শারিরীক ও মানসিক আচরণের এই বিরূপ প্রক্রিয়াগুলো আগে ভাগে বুঝিয়ে দিলে সঙ্গী পুরুষটি বিষয়টি তখন হুট করেই বুঝতে পেরে সে অনুযায়ী ব্যাপারগুলো সামাল দেবার চেষ্টা করতে পারবে। নইলে পিএমএস সময়ে মেয়েদের বিরূপ আচরণ থেকে অনেক ভুল বোঝাবুঝি ঘটতে পারে। সংসার ভাঙতে পারে। বন্ধুত্ব নষ্ট হতে পারে। অতএব পিএমএস সম্পর্কে মেয়েদের পাশাপাশি পূর্ণবয়স্ক পুরুষদেরও সঠিক ধারণঅ থাকা উচিত। আমার এই লেখার সঙ্গে বন্ধুরা যদি কিছু পজিটিভ বিষয় যুক্ত করতে চান, করতে পারেন। কিন্তু কোনোভাবেই এটাকে নেগেটিভ ভাবে দেখলে পিএমএস বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হবে। একটি পূর্ণবয়স্ক মেয়ের যেহেতু প্রতি মাসেই একবার ঋতুস্রাব হয়। তার মানে প্রতি মাসেই সেই মেয়ের প্রিমেনেস্ট্রুয়াল সিনড্রম বা পিএমএস-জনিত বিরূপ আচরণও থাকবে। এটি একটি চক্র। যা মেনোপজ শুরু হলে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। ..................................................১১ এপ্রিল ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৩
false
rn
গল্প উপন্যাস লেখায় ফকনারের ৭টি টিপস যে তরুণ লেখক কোন মতবাদ অনুসরণ করে সে একটা আস্ত বোকা।’ কথাটি বলেছিলেন নোবেল বিজয়ী লেখক উইলিয়াম ফকনার প্যারিস রিভিউর একটি সাক্ষাৎকারে। ফকনার ১৯৫৭-৫৮ সালের দিকে তরুণ লেখকদের মাঝে প্রচুর উপদেশ বিলি করেছেন। ১. অন্য লেখক থেকে যা নেওয়ার নিয়ে নাও। অন্য লেখক থেকে কাজের জিনিস চুরি করা ফকনারের মতে দোষের কিছু নয়।২. স্টাইল নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়। একজন খাঁটি লেখক তার লেখা নিয়েই চরম ব্যস্ত। স্টাইল নিয়ে মাথা ঘামানোর এত সময় কই! ৩. অভিজ্ঞতা থেকে লিখ আর অভিজ্ঞতার দরজা খোলা রেখো। তুমি যা-ই অনুধাবন করতে পারে তা-ই অভিজ্ঞতা। এটা বই থেকেও আসতে পারে। এটা এমন বই, এমন গল্প এবং এতই জীবন্ত যে, যা তোমাকে নাড়িয়ে দেয়। আমার মতে এটা তোমার অভিজ্ঞতাসমূহের একটি। এটা এমন নয় যে ঐ বইয়ের চরিত্রগুলো যা করে তা নিজে করে অভিজ্ঞতা নিতে হবে। চরিত্রগুলোর কাজ যদি বাস্তবসম্মত মনে হয় এবং মনে হয় মানুষ এমনটিই করে তাহলে এটা একটা অভিজ্ঞতা। তাই আমার অভিজ্ঞতার সংজ্ঞা হচ্ছে এই যে অভিজ্ঞতার বাহিরে লেখা অসম্ভব। কারণ যা তুমি পড়, শুন, অনুভব কর, কল্পনা কর— এ সবই অভিজ্ঞতার অংশ। ৪. তোমার চরিত্রগুলোকে ভাল করে জানো— তাহলে গল্পটা নিজেই নিজেকে লিখবে। যখন কোন একটা চরিত্র সম্পর্কে তোমার স্পষ্ট ধারণা থাকবে, গল্পের ঘটনা পরিক্রমা প্রয়োজনের তাগিদেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রবাহিত হবে। তোমাকে অবশ্যই চরিত্রকে জানতে হবে। তাকে বিশ্বাস করতে হবে। তোমাকে অনুভব করতে হবে যে জীবন্ত। তারপর অবশ্যই তুমি তার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করবে, সাজাবে। তোমার ইচ্ছে মতো। এরপর তো গল্পটা দাঁড়ানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। কাগজ নাও, লিখে ফেলো, ব্যাস।” ৫. আঞ্চলিক শব্দ এড়িয়ে চলো। লেখকরা যেন স্রোতে ভেসে না যান এবং নিজের হাতে যেন হাল ধরে রাখেন। তিনি বলেন— “আমি মনে করি যত অল্প সংখ্যক আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করা যায় ততই মঙ্গল। আঞ্চলিক শব্দ পাঠককে বিভ্রান্ত করে। কারণ ওগুলো তার কাছে পরিচিত নাও হতে পারে। এজন্য কোন চরিত্রকে সম্পূর্ণভাবে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে দেয়া উচিত নয়। দুয়েকটা সহজ ও পরিচিত শব্দ ব্যবহার করা যেতেই পারে।” ৬. তোমার কল্পনা শক্তি ফুরিয়ে ফেল না। ১৯৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লেখালেখির ক্লাসে ফকনার বলেন— “আমি বলব, গরম থাকতে থাকতেই ছেড়ে দাও। শেষটা লিখে ফেল না। ভাল থাকতে থাকতেই ছেড়ে দাও। এরপর নতুন করে ধরা সহজতর। যদি তোমাকে ফুরিয়ে ফেল, তোমার লেখা বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক সমস্যায় পড়বে।” ৭. কোনো অজুহাত নয়। “আমার রাগ ওঠে যায় ওইসব অকর্মা ‘প্রতিভাধর লেখক-কবিদের’ প্রতি যারা চিৎকার করে বলে বেড়ায় তার এই নেই, সেই নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। এদের অনেকে বলে— আমি যদি এই কাজ না করতাম, তাইলে লেখক হতাম। কেউ বলে— আমি যদি বিয়ে না করতাম, বাচ্চা-কাচ্চা না থাকত, তাইলে লেখক হতাম। আমি মনে করি— তুমি যদি লিখতে চাও, তুমি লিখবে। আর কোনো কিছুই তোমাকে থামাতে পারবে না।”
false
rg
!!! বছরে বাংলা একাডেমি'র শীতনিদ্রা মাত্র এগারো মাস!!! ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলা একাডেমি'র বয়স চলতি বছর ২রা ডিসেম্বর ৫৮ বছর পূর্ণ হবে। এই ৫৮ বছরে বাংলা একাডেমি কি কি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে? চলুন একটু জেনে নেই বাংলা ভাষা'র সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি সারা বছর কি করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিতে সবার আগে ডিজিটাল হওয়া উচিত ছিল বাংলা একাডেমি'র। বাংলা একাডেমি'র একটি নিজস্ব ওয়েব সাইট আছে বটে। সেটি হল: http://www.banglaacademy.org.bd । প্রমিত বাংলা বানান নিয়ে কাজ করে যে প্রতিষ্ঠান, সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট ভিজিট করলে আপনার বানান প্রমিত হবার বদলে মাথা ঘুরে পাগল হবার দশা হতে পারে। অথবা আপনার ইতোমধ্যে জ্ঞানার্জিত বানান সম্পর্কে সন্দেহ জাগতে পারে। বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইটে কেবল 'একাডেমি' বানান-ই দুইভাবে উল্লেখ আছে। কোথাও আছে 'একাডেমী', কোথাও আছে 'একাডেমি'। অবশ্য 'একাডেমী'র সুস্পষ্ট আধিক্য রয়েছে। এখন আপনি কি শিখবেন? কোন বানানটাকে আপনি সঠিক মনে করবেন? 'প্রস্তাবিত বাংলা একাডেমি আইন, ২০১১-এর খসড়া' টিও ওই ওয়েব সাইটে দেখা যায়। সেটি পড়ার জন্য আপনাকে বানান সম্পর্কে নিশ্চিত নতুন একজন পণ্ডিৎ হতে হবে। নইলে সব কথার অর্থ উদ্ধার করতে পারবেন না। আমার একটি ছোট্ট প্রশ্ন- বাঙালি জাতি সত্ত্বার মহান এই প্রতিষ্ঠানের যাকে আমরা বলে থাকি জাতির মননের প্রতীক, সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটের এই করুণ দশা দেখার কি কেউ নেই? কয়েক হাজার বানান ভুলে জর্জরিত ওয়েব সাইটে বর্ণিত ওই লেখাগুলো পড়লে আপনি মনে মনে নিশ্চিত লজ্জ্বিত হবেন। বাংলা একাডেমি'র কাজ এখন শুধু বছরে একটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজন। অন্যান্য কাজ সারা বছরে কারো চোখে পড়ে না। বাংলা একাডেমি'র ওয়েব সাইট থেকেও কোনো কাজের সন্ধান পাওয়া যায় না। তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান বাকি এগারো মাস কি নাকে তেল দিয়ে শীতনিদ্রা করে কাটায়? বাংলাদেশে কি একজন মানুষও নেই, যার চোখে বাংলা একাডেমি'র এই করুণ দশা নজরে আসে না? তাহলে ৫৮ বছরে বাংলা ভাষা'র কি পরিমাণ উন্নয়ন ঘটেছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। বাংলা একাডেমিতে যারা চাকরি করেন, তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি প্রাণী। প্রাণী বললাম, এই কারণে যে, এদের মাস শেষে বেতন হয়, বেতনের টাকায় সংসার চলে, কিন্তু মাগার বাংলা একাডেমিতে এরা সারা বছর খোশগল্প করে কাটায়। আর সেই গল্পে বছরে অন্তঃত এক মাস, ফেব্রুয়ারি মাসে আমরাও গিয়ে যোগ দেই। খুব কষ্ট লাগে দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ একটি একাডেমি'র এমন বেহাল দশা দেখলে। বাংলা একাডেমি'র নতুন ভবন হয়েছে। এখন সেখানে অনেক নতুন নতুন প্রকল্প অনায়াসে শুরু করা সম্ভব। অন্তঃত নিজেদের ওয়েব সাইটি তো সাবেক দশা থেকে একুশ শতকের দশায় আনা যায়! নাকি সেখানেও তেল মারা লোক না পাওয়া পর্যন্ত ঠুটো জগন্নাথের ঘুম ভাঙবে না!! বাংলা একাডেমি'র কার্যক্রমের বাহার দেখলে আপনার মনের বাহারি রঙটি ফিকে হতে বেশি সময় লাগবে না। মাত্র ৫৮ বছরে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান কেমন জীবন্ত জাদুঘরে পরিনত হয়েছে। অথচ অন্তঃত এই একটি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সজাগ ও সরব থাকার কথা ছিল। মনের দুঃখের কথা আমি কারে যে সুধাই। ওহে বাংলা ভাষার কবি, লেখক, গবেষক, কথা সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, অনুবাদক, নাট্যকার, শিশু সাহিত্যক, সাংস্কৃতিকগণ, আপনারা একটু বাংলা একাডেমি'র দিকে নজর দিন। নইলে এই রাষ্ট্রীয় মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি জবাবদিহিতার অভাবে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে গেলে নিরবে আপনাদেরও অনেক খারাপ লাগবে বলে আমি একশো'ভাগ নিশ্চিত। বাংলা একাডেমি'র এগারো মাসের শীতনিদ্রা ভাঙার জন্য আপনারা অন্তঃত কিছু একটা করুন, প্লিজ।
false
ij
ইড্ডিশ ভাষা শিখুন আইজাক বাশেভিস সিঙ্গার। ইনি ইড্ডিশ ভাষায় একজন শ্রেষ্ট লেখক। বন্ধুর সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে গল্প করাকে ইড্ডিশ ভাষায় বলে "শমুজ"। কী খবর? এই কথাটা ইড্ডিশ ভাষায় বলতে হলে আপনাকে বলতে হবে-নু। আবার, ভালো শব্দের অর্থও নু। সুতরাং ইড্ডিশ ভাষায় আপনাকে ভালো বলতেও ওই একই শব্দ ব্যবহার করতে হবে-নু। আর, "চুটজপাহ্" শব্দের অর্থহচ্ছে সাহস। এই তো গেল শব্দের কথা। এবার ইড্ডিশ অক্ষরের কথা বলি। ইড্ডিশ বর্ণমালা আদতে হিব্রুর মতোই। তবে অক্ষরের প্রয়োগে রয়েছে স্বাতন্ত্র্য। The biggest difference between the Hebrew alefbet and the Yiddish alef-beyz is in the use of vowels: in Hebrew, vowels and other pronunciation aids are ordinarily not written, and when they are written, they are dots and dashes added to the text in ways that do not affect the physical length of the text. In Yiddish, however, many of the Hebrew letters have been adapted to serve as vowels and the pronunciation aids in Hebrew are reflected in the consonants. Vowels and other pronunciation aids are always written unless the Yiddish word comes from Hebrew, in which case the Yiddish word is written as it is in Hebrew, without the vowel points but with the dagesh (dot in the middle). যাক। আর ধন্দ না বাড়িয়ে আসল কথায় আসছি। আমরা কমবেশি জানি যে- ইহুদিরা ফিলিস্তিন থেকে উৎখাত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে। তার পর তারা পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইহুদিদের একটা বড় দল গেছিল ইউরোপে। ইউরোপে তারা কালক্রমেদুটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। ১/Ashkenazic Jews. এবং ২/Sephardic Jewish. মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ইহুদিরা হচ্ছে Ashkenazic Jews. আর, স্পেন, পর্তুগাল, বলকান উত্তর আফ্রিকা মধ্য প্রাচ্য হচ্ছে Sephardic Jewish. (এদের ভাষা ছিল লাদিনো । সে ইতিবৃত্ত পরে লিখব।) ইড্ডিশ ভাষায় কথা বলত মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের Ashkenazic ইহুদিরা। এবং ভাষাটির অধিকাংশ শব্দই জার্মান ভাষা থেকে নেওয়া। এ কারণেই অনেকেই এটিকে জার্মানিক ভাষা বলে থাকেন। কথাটি অবশ্য প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা ইড্ডিশ হিব্রু ও অন্য ভাষারও শব্দ গ্রহন করেছিল। ভাষাটির উদ্ভব নবম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে। প্রথম দিকে এটি ছিল মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ইহুদিদের মুখের ভাষা; পরে এটি লিখিত ভাষার রুপ লাভ করে। কালক্রমে জার্মান থেকে সরে আসে ইড্ডিশ। যেমন বাংলা; সংস্কৃত থেকে। স্বতন্ত্র হয়ে গঠন করে নিজস্ব উচচারণরীতি। গড়ে ওঠে ভাষাটির শব্দকোষ। হয়ে ওঠে মানবিক আবেগ অনুভূতির অনিবার্য মাধ্যম। একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্বচ্ছ হবে। ইড্ডিশ ভাষায় shlemiel মানে: যে নিজের দোষে দুর্ভোগ পোহায়। আর shlimazl মানে যে কোনও কারণ ছাড়াই দুর্ভোগ পোহায়। এবং nebech হচ্ছে- যে অন্যের সমস্যা কাঁধে তুলে নেয়। সব মিলিয়ে কৌতূকটা এমন- a shlemiel spills his soup, it falls on the shlimazl, and the nebech cleans it up! এমন একটা ভাষায় লিখেছিলেন কুড়ি শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পকার আইজাক বাশেভিস সিঙ্গার। কাজেই ইড্ডিশ সাহিত্য যে গোড়া থেকেই অতুলীয়ন-তেমন অনুমান অস্বাভাবিক নয়। গোড়াতে ভাষাটির সাহিত্য ছিল আদতে নারীদের জন্য লেখা প্রার্থনা ছিল। সময়টা ষোড়শ শতক। তখনই প্রথম ইড্ডিশ সাহিত্যের নমুনা পাই। নাম: “এসো এবং দেখ।” মূলক লোকগাথা। কাজেই লেখকের নাম জানা যায় নাই। “এসো এবং দেখ।” ছিল নারীদের জন্য লেখা। কেননা, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের Ashkenazic ইহুদি সমাজের মেয়েরা হিব্রু নাকি পড়ত না। তাই। আঠারো শতক থেকেই ইউরোপের ইহুদি সমাজে ধর্মনিরেপেক্ষ সাহিত্যে লেখা হচ্ছিল। ধর্মগুরুরা যদিও পছন্দ করেননি সেসব রাবিশ! ছাপাখানায় কর্মীরা নাকি এতই রেগে গিয়েছিল ধর্মনিরেপেক্ষ সাহিত্যিকদের ওপর যে তারা নাকি টাইপ করতে শ্রেফ অস্বীকার করেছিল। অবশ্য ইউরোপজুড়ে ইহুদিরা ভারি পছন্দ করেছিল সেকুলার লেখকদের লেখাগুলি। ইড্ডিশ ভাষায় প্রথম সেরা লেখক হলেন শোলেম আনকেভ আব্রামোভিচেক। (শেষ শব্দটা মনে হয় হল না!) শোলেম-এর লেখার বিষয় আধুনিক মানুষ হলেও প্রেক্ষিক ছিল লোকগাথা। "বেঞ্জানিন দ্য থার্ড" হচ্ছে তাঁর লেখা সেরা রচনা। অনেকটা ডন কুইকঝট ধরনের। শোলেম আনকেভ আব্রামোভিচেক-এর সময় থেকেই ইড্ডিশ ভাষাটি প্রথম সাহিত্যর ভাষায় মর্যাদা পেল। ইহুদিরা ভারি কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে। জেরুজালেমে তাঁর নামে একটি সড়ক রয়েছে নাকি শুনেছি। শোলেম আনকেভ আব্রামোভিচেক-এর পর আরেকজন গুরুত্বপূর্ন লেখক হলেন ইটজহাক লেই পেরেটজ। তাঁরও লেখার বিষয় আধুনিক মানুষ হলেও প্রেক্ষিক ছিল লোকগাথা। তবে আমেরিকায় ইড্ডিশ ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হলেন সলোমন রবিনোভিচ। শোলেম এ্যালেইচেম-এই ছদ্মনামে লিখতেন। রবিনোভিচ ছিলেন মার্ক টোয়েনের সমসাময়িক। আমেরিকার লোকে ওঁকে ইহুদি মার্ক টোয়েন বলত। although legend has it that Mark Twain, upon meeting Sholem Aleichem, described himself as "the American Sholem Aleichem"! মার্কিনীরা ওঁকে চেনে "দুধওয়ালা টেবএ ও তার কন্যারা"-এই লেখাটির জন্য। আইজাক বাশেভিস সিঙ্গার ছিলেন ইড্ডিশ ভাষায় আরেক জন সেরা লেখক। ১৯৭৮ সালে পেয়েছেন নেবেল সিঙ্গার। নোবেল পুরস্কার গ্রহনের সময় ভাষন দিয়েছেন ইড্ডিশ ভাষায়। সিঙ্গারের জন্ম পোল্যান্ডে। বাবা ছিলেন রাব্বী। সিঙ্গার ছোট গল্প লিখতেন। অবশ্য কটা উপন্যাস ও কটা শিশুতোষ লেখাও লিখেছেন। আধুনিক সময় ও ঐতিহ্যের বিরোধই তাঁর লেখার মূল বিষয়। ২ এবার ইড্ডিশ ভাষাটির অপমৃত্যু কীভাবে হল তাই বলি। ১৭০০ ও ১৮০০ শতকে ইহুদিরা জার্মান সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসে। ইড্ডিশ কে তখন জার্মানীতে বলা হল ইতরজনের ভাষা; বস্তির ভাষা, ঘেটোর ভাষা। তখন ইহুদিরা ভাবল: এই ভাষাকে বিসর্জন দিলেই আমাদের সম্মান বাড়বে। কাজেই ইহুদিদের মধ্যে ইড্ডিশ-এর ব্যবহার ক্রমেই কমে যেতে লাগল। কাজেই, মনে করা হয়- ইড্ডিশ ভাষাটির বিরোধীতা যতটা না অ্যান্টিসেমিটিক- তার চেয়েও বেশি ইহুদিদের নিজস্ব স্বার্থপরতা, ওদের হীনমন্যতা। কাজেই আজ থেকে এই ১০০ বছর আগেও যে ভাষায় প্রায় দেড়শ কোটি মানুষ কথা বলত-সেটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে গেল কমে । তার একটা কারণ-আগেই বলেছি: অ্যাসিমিলেশন। অন্যটি হলোকাস্ট। আজ আমেরিকায় ইহুদি সমাজে ২৫ লক্ষ লোকও ইড্ডিশ ভাষায় কথা বলে কিনা সন্দেহ। ইয়ং জেনারেশন তো ইড্ডিশের নামে তোতলায়। আমাদের ইয়ং জেনারেশ যেমন বঙ্কিমের ভাষা শুনে বুঝতে পারে না! তবে ভাষাটি আজও লুপ্ত হয়ে যায়নি। ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি প্রকাশ পেয়েছিল ইড্ডিশ ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র। সে সবের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক পত্রিকাও ছিল। যেমন-"ইডিশহের আরবেটার।" মানে, “ইহুদি শ্রমিক।” ১৯৯৭ খ্রিস্টাবে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল “ফরভার্টস” পত্রিকা। অর্থ-দ্য ইড্ডিশ ফরওয়ার্ড। পত্রিকাটি নাকি আজও প্রকাশিত হচ্ছে। আরও জানার জন্য দেখুন- http://www.jewfaq.org/yiddish.htm সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৬
false
mk
যে কারণে তাবিথকে না সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অন্তত তিনটি কারণে তাবিথ-আব্বাসকে আপনি ভোট দিবেন না এবং অন্যকে নিরুৎসাহী করবেন। সম্প্রতি এক জনমত জরিপে অন্তত এই তিনটি কারণে ঢাকাবাসী তাবিথ-আব্বাসকে ভোট দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে।প্রথম কারণ হলো, তারা দু'জনই দুর্নীতিবাজ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি সুবিধাভোগী। এদের একজনের বিরুদ্ধে রয়েছে ১২৮ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলা। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মির্জা আব্বাস তেজগাঁও শিল্প এলাকার প্লট বরাদ্দে গুরুতর অনিয়ম ও রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় সরকারের অধিনে থাকা ১৮টি বাড়ি পাতানো দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়। বর্তমান বাজার দরে যাতে রাষ্ট্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। অন্যজন কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিলেন ঋণ খেলাপি। এছাড়া তাবিথ কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, সে মূলত তার বাবা আব্দুল আউয়াল মিন্টুরই ডামি ক্যান্ডিডেট। শুধু তাই নয় তার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল মালিক তার বাবা। ১৭ টি কোম্পানির মাঝে ১৪ টির মালিক তার বাবা, বাকি তিনটি বাবার মালিকানাধীন অফিস বিল্ডিংয়েই অবস্থিত এবং কাগুজে কোম্পানী। এদের প্রদর্শিত সম্পদের চেয়ে ব্যাংক ঋণ কয়েকগুণ বেশি, এছাড়া ঋণ খেলাপী হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, যেকোন সময় এরা দেউলিয়াও হয়ে যেতে পারে। মূলত, একজন সরকারের সম্পত্তি অবৈধপন্থায় আত্মসাৎ করতে সহায়তা করে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়েছেন অন্যজন ঋণ খেলাপীর মাধ্যমে জনগণের টাকা যেকোন সময়ে মেরে দেয়ার ধান্দায় আছেন। এমন ধরণের দুর্নীতিবাজ প্রার্থীদের বিএনপি নেত্রী স্বৈরতান্ত্রিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছেন ঢাকাকে লুট করার জন্য। তাই জনগণ এদের ভোট দিতে পারে না। দ্বিতীয়ত কারণ হলো, দুইজন এবং তাদের পরিবার নিকট অতীত সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জরিত ছিলো। তাবিথ আউয়ালের পিতার নামে রয়েছে হাফ ডজনেরও বেশি বিস্ফোরক আইনে মামলা। তিন মাসের উপর দেশব্যাপি যে ব্যাপক নাশকতা, সহিংসতা ও অগ্নীসংযোগের ঘটনাগুলো তার পিছনে রয়েছে তাবিথের পিতার অপরাজনীতি। একই ঘটনা আরেক মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ক্ষেত্রে। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে মামলা আছে ৩৭টি। যারা কিছুদিন আগেও পেট্রোল বোমা মেরে জীবন্ত মানুষ জ্বালিয়েছে তারা কী করে ঢাকাকে মানুষের বসবাস উপযোগী নগর করতে পারে? কোন মানুষ তাদের ভোট দিয়ে জ্বালাও পোড়াও ফিরিয়ে আনতে চাইবে? তৃতীয় কারণটি হলো, তাবিথের শ্বশুর বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতপন্থী ব্যবসায়ী নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইস্কান্দার আলী। তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসীর দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মীর কাশেম আলীর পত্রিকা দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দিগন্ত টেলিভিশনের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান। এছাড়া মীর্জা আব্বাসের ঢাকা টেলিকম অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জরিত ছিলো। ২৪ ডিসেম্বর, ২০০৯ অবৈধভাবে বৈদেশিক কল আদানপ্রদানের অভিযোগে বাড্ডা থানায় ঢাকা ফোনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ঢাকা ফোনের লাইন ব্যবহার করে জমির টেলিকম বাংলাদেশে কল টার্মিনেট করতো। যাতে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে কয়েকশত কোটি টাকা। বলা বাহুল্য, জনগণের ট্যাক্সে টাকাতেই দেশে উন্নয়ন হয়। সাধারণ জনগণ ট্যাক্স দেয় আর মির্জা আব্বাস মার্কা নেতারা শত কোটি টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দেয়। এর ব্যতিক্রম নয় খোদ বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াও। যিনি নিজেই কর ফাঁকি দিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন। এই তিনটি কারণ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে আপনি কি আপনার মূল্যবান ভোটটি দিয়ে লুটেরা, দু্র্নীতিবাজ, স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত শক্তিশালী করতে সরাসরি অবদান রাখবেন?মনে আছে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়া ভোটারদের খালেদা জিয়া কী বলেছিলেন? হ্যাঁ কুকুর বলেছিলেন। শুধু তাই নয় এখন যেই সেনাবাহিনীকে তারা নির্বাচনে চাইছেন সেই সেনাবাহিনী যখন খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টে রাজনীতি করা বন্ধ করলেন তখন তাদের বলেছিলেন অকৃতজ্ঞ কুকুর। আন্দোলনের নামে করে শত শত মানুষ পুড়িয়ে জামিন নিয়ে বাড়ি চলে গেলে খালেদা জিয়া। তাইলে এই রাজনীতি তো দেখা যায় সব তাদের ব্যক্তিস্বার্থ। তারা ভোটারদের কুকুর আর সেনাবাহিনীকে বলে অকৃতজ্ঞ কুকুর। এরপরও জনগণ তাদের ভোট দিবে?জনগণ সিদ্ধান্ত নিক তারা জয়ী হবে না পরাজিত হবে। জনগণকে জয়ী হতে হলে অবশ্যই খালেদা জিয়া মনোনিত প্রার্থীদের বর্জন করতেই হবে।
false
fe
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্পফকির ইলিয়াস==========================================বিশ্ব-বাণিজ্যে নতুন দরজা খুলতে চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আমরা ব্যবসা করতে চাই। মানুষের ভাগ্য ফিরাতে চাই। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই ‘ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) ট্রেড ডিল’ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে তার শ্রমমন্ত্রী হিসেবে ফাস্ট ফুড ফ্যাঙ্কাইজি হার্ডিজ অ্যান্ড কার্লসের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু এফ পুজডারের নাম ঘোষণা করেছেন। ‘ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) ট্রেড ডিল’ বাতিলের ঘোষণা দেয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও মেক্সিকোসহ ১২টি দেশ ২০১৫ সালে টিপিপি ট্রেড ডিল করেছিল। যদিও ওই চুক্তি এখনো সব দেশের অনুসমর্থন পায়নি। এই চুক্তির ফলে বিশ্ববাণিজ্যের ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রক এই দেশগুলো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনাশুল্ক সুবিধা পাবে। এর ফলে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিনা শুল্কে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারবে, যেখানে বাংলাদেশকে একই পণ্যের জন্য প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি বাতিলের মধ্যে থাকা বাংলাদেশ এই টিপিপি চুক্তির ফলে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বাজার হারানোর শঙ্কায় গত বছর ওয়াশিংটনে টিকফা বৈঠকে চুক্তিটির ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগ জানায়। আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ খুব শিগগিরই জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে পারে। ট্রাম্প তার নির্বাচনী ওয়াদায় এমনটি বলেছিলেনও। যদি তাই হয়, তবে এই খাতটিকে জোরদার করতে বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে গার্মেন্টস শিল্পকে।আমার মনে আছে, ২০১১ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস একটি রিপোর্ট করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে অশান্তির মূল কারণ শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত না দেয়া। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সে সময় ১৮ জন শ্রমিক গ্রেফতার, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়াসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি নিউইয়র্ক টাইমসে বিজনেস সেকশনে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও ন্যূনতম মাসিক মজুরি ৩ হাজার টাকা (৪৩ ডলার) করা হয়েছে। কিন্তু কিছু শ্রমিক সংগঠন ঘোষিত এই মজুরি মেনে নিলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের কিছু সংগঠন ৫ হাজার টাকা (৭২ মার্কিন ডলার) ন্যূনতম মাসিক মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত। সরকার শ্রমিকদের এ আন্দোলনকে অনিয়মতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে বল প্রয়োগ এবং শ্রমিকদের গ্রেফতার করছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের গ্রেফতারের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে শ্রমিক সংগঠনগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ৩ হাজার টাকা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ প্রসঙ্গে মালিকপক্ষ বলেছেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে এর চেয়ে বেশি মজুরি সম্ভব নয়। মালিকপক্ষ বলেছেন, আর্থিক কারণে ভিয়েতনামের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।প্রতিবেদনে তুলনামূলক বিশ্লেষণে বলা হয়, ওয়াল মার্ট এবং এইচ অ্যান্ড এম-এর মতো পাশ্চাত্যের বড় বড় স্টোরের কাপড় প্রস্তুতকারী এসব গার্মেন্টস শ্রমিক প্রতিদ্ব›দ্বী দেশের তুলনায় অনেক কম মজুরি পাচ্ছে। টাইমসে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা হয়েছিল চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হচ্ছে মাসিক ১১৭ ডলার। সেই তুলনায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা পাচ্ছে মাত্র ৪৩ ডলার। প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং শ্রমিক সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন এবং গ্রেফতারের বিষয়টি হাইলাইট করা হলেও আন্দোলনের নামে ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ সে সময় করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইন্টারন্যাশনাল লেবার এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আন্দোলন দমনে সরকারের প্রতি নির্যাতন অভিযোগ করেছেন এবং তারা গ্রেফতারকৃতদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।এর পরে আসা যাক আন্দোলনের বিষয়ে। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড দেশে বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছে দেশের গার্মেন্টস শিল্প। সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গোটা গার্মেন্টস শিল্পকে হুমকির মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে সামনে রেখে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির নামে গার্মেন্টস সে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকে দেয়া হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পে অশান্ত, উত্তপ্ত ও অস্থিরতা সৃষ্টির নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী নিজে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও গার্মেন্টস শিল্পের সংঘর্ষ, সংঘাত, অবরোধ, ভাঙচুর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা জানায়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি তো দূরের কথা, সময় মতো পরিশোধও করা হয় না। বেশিরভাগ গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের ছুটি, কর্মঘণ্টা, পিসরেট, শ্রমিক ছাঁটাই, মানবিক আচরণ পালিত হয় না। শ্রমিকদের সঙ্গে অসদাচরণ, এমন কি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব কারণে গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের মধ্যে এমনিতেই অসন্তোষ, ক্ষোভ বিরাজমান। এসব ক্ষোভ ও অসন্তোষকে পুঁজি করে এখন গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে শ্রমিকদের কৌশলে উসকে দেয়া হচ্ছে এই অভিযোগের পাশাপাশি আরো অভিযোগ ছিল। বলা হচ্ছিল, গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকে দেয়ার নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন।নিকট অতীতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গার্মেন্টস শিল্পে সহিংসতা ও সংঘাত ছড়িয়ে দেয়ার নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম নিহত হওয়ার আগে যে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই শ্রমিক সংগঠনটি। আরো অভিযোগ আছে, গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের বেশ কিছু নেতার সঙ্গে বিদেশি প্রভাবশালী মহলের যোগাযোগ আছে। এটাই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে-কোথায় চলেছে বাংলাদেশ? আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল তা যদি পরিকল্পিত হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, তীব্র শঙ্কার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। এসব ঘটনার বিচার হয়েছে কি? কেন হয়নি সুষ্ঠু বিচার?এটা খুবই স্বীকৃত বিষয়, আমেরিকার মেসি’স, জে সি পেনি, সিয়ারস, ওয়ালমার্টসহ অনেক বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এখন বাংলাদেশের পোশাকে সয়লাব। যা গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়। জাতিগতভাবে আমরা কি এ গৌরব ধরে রাখতে পারব না? এই যে এত আহ্বান, তার কি কোনো সুরাহা হয়েছে? না হয়নি। কেন হয়নি? নিশ্চিন্তপুর ট্র্যাজেডি নিয়ে জাতীয় শোক পালিত হয়েছে। কিন্তু এই যে অশনি সংকেত, তার যদি স্থায়ী সমাধান হয়েছে কি? না হলে- এতে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যেতে পারে, তা কেন আমরা ভুলে যাচ্ছি।আসল কথা হচ্ছে, যে কোনো অপশক্তিই এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে জড়িত থাক না কেন, ওদের চিহ্নিত করা হোক; বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। গার্মেন্টস শিল্প রক্ষায় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, তাদের এই গোয়েন্দারা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। উদ্যোগটি খুবই ভালো ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা তৈরির একটি প্রবণতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এটা কারা করছে, কেন করছে- তা ব্যবসায়ী নেতারা হয়তো জানেন। হয়ােতা জানে রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। তা জানারই কথা। কারণ রাষ্ট্রে এমন কোনো অশুভ তৎপরতা চলতে পারে না, যা রাষ্ট্রের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও রপ্তানিকে ব্যাহত করে। অধুনা বিশ্বে গার্মেন্টস শিল্প একটি লাভজনক ব্যবসা। বিশেষ করে শ্রমের মূল্য যেসব দেশে তুলনামূলক কম সেসব দেশে পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের প্রস্তুতকারক এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরো বাজার দখল করে নিয়েছে চীন। ‘মেড ইন চায়না’ তা এখন একটি কমন দ্রষ্টব্য বিষয়। তা ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও মেক্সিকো প্রভৃতি দেশেও ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বিক্রেতারা। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- মূল্যের সাশ্রয়। বিশেষ করে কম শ্রমমূল্যে ভালো কোয়ালিটির তৈরি পোশাক বাজারজাত করা।যুক্তরাষ্ট্রে সিয়ার্স, জেসি পেনি কিংবা মেসিজের মতো বৃহৎ স্টোরগুলোতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক যে পাওয়া যায় না, তা নয়। পাওয়া যায়। তবে তা তুলনামূলক হারে কম। চীনই এখন দখল রেখেছে প্রথম স্থান। এই প্রথম স্থানটির রেকর্ড ভাঙার একটি প্রচেষ্টা চলছে বেশ জোরালোভাবে। সে চেষ্টা করছেন খোদ তৈরি পোশাক বিক্রেতারাই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে বাংলাদেশ একটি ভালো ম্যানুফ্যাকচারিং জোন হতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা গড়ে তুলতে স্বাগতিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে তো? এই প্রশ্নটি আসছে বিভিন্ন কারণে। এ কথাটি আমরা সবাই জানি বাংলাদেশে শ্রমের মূল্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের তুলনায় অত্যন্ত কম। যারা গার্মেন্টসে কাজ করে তারা গেল দেড় দশক আগে অন্য পেশায় ছিল। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এই পেশায় যোগ দেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই শিল্পের বিকাশের তুলনায় গার্মেন্টস কর্মীদের ভাগ্য ফিরেছে কি? না, ফিরেনি। বরং তুলনামূলক চাকরির বাজারে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। তাদের জীবন ধারণের চাহিদার তুলনায় প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিতান্তই অপ্রতুল। এটা খুবই দুঃখের কথা বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে ‘ওভারটাইম’ পদ্ধতি এখনো শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি। অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করিয়েও ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হয় না। এই ব্যবস্থার অবসান দরকার।বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। শ্রমিকদের ইউনিয়ন বিদেশেও আছে। কিন্তু সেসব ইউনিয়ন এতই শক্তিশালী এবং সুসংহত যে, তারা সব সময় শ্রমিকের অধিকারকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। অথচ বাংলাদেশের শ্রমিক ইউনিয়নগুলো সব সময়ই আপসকামী। তারা সরকার কিংবা বিরোধীদলের সঙ্গে আঁতাত করে সব সময়ই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে ব্যস্ত থকে। সরকারি শ্রমিক ইউনিয়ন বনাম বিরোধীদলীয় শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিযোগিতায় পিষ্ট হয় সব সময় সাধারণ শ্রমিক। আর নেতারা ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয় রাতারাতি।একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সব সময়ই অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাজনৈতিকভাবে শান্তি না থাকলে সমাজও এগোতে পারে না। বিশেষ করে গেল দুই দশকের এই রাজনৈতিক অস্থিরতাই বাংলাদেশে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হয়েছে। সেই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দুষ্ট দুর্নীতিবাজ চক্র। তারা সরকার এবং বিরোধী দল উভয়ের ছত্রছায়ায় কায়েম করেছে নিজ নিজ রাজত্ব। এই রাজত্বের দীর্ঘসূত্রতা এবং সঞ্চিত অপশক্তিই আজ দেশে সব উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ করছে। যা একটি দেশের জন্য চরম বিপজ্জনক সংকেত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনে শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানো খুবই দরকারি কাজ। গার্মেন্টস শিল্প এবং শ্রমিকের মূল্যায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী এক্সপোর্ট জোন গড়ে তোলা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে আরো লাভজনক করতে হলে তুলনামূলক মূল্য নির্ণয়ের মাধ্যমে বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। ক্রেতাদের বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের গুণগত মানের বিশেষত্ব দেখাতে হবে। বাইরের শক্তির সব ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে এই শিল্পের ক্ষতি হলে গোটা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিকভাবে। শিল্পের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ভ্যালু বাড়াতে হবে। এই তদারকির কোনোভাবেই যেন গাফিলতি না হয়। শ্রমিককে যথার্থ পারিশ্রমিক দিতে হবে। শিশুশ্রম বিষয়টিকে কোনোভাবেই পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত নয়। ন্যায্য ওভারটাইম মানি যাতে সবাই পায় সেদিকে ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। গার্মেন্টস শিল্পে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সব প্রবণতাকে রুখতে হবে। মালিকদের মনে রাখতে হবে, ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিলে সুনাম পুনরুদ্ধার বেশ কঠিন কাজ। তাই রাজনৈতিক মারমুখী নীতি কোনোভাবেই যেন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।গোয়েন্দা সংস্থা পুষে ভেতরের আগুন নেভানো যাবে না যদি শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা না পায়। এ ছাড়া আমরা দেখছি অত্যন্ত অপরিসর, অস্বাস্থ্যকর ছোট চিলেকোঠায়ও গড়ে উঠছে অনেক গার্মেন্টস কারখানা। এর অবসান হওয়া দরকার। কারণ এমন ছোট পরিসর স্থানে আগুন লেগে বেশ কিছু গার্মেন্টসে কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তা ছাপাও হয়েছে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায়, যা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বিদেশে। এই অবস্থার দ্রুত অবসান প্রয়োজন।প্রতিটি গার্মেন্টস স্থাপনায় কর্মীদের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। ফায়ার এলার্ম, ফায়ার এক্সিট, নিয়মিত চেক করা হোক। সরু কিংবা গলির মাঝে যারা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হোক অথবা অন্য বড় স্থানে স্থানান্তরের তাগিদ দেয়া হোক।কেউ ব্যাংকের লোন, বায়ারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাতের মতলবে ব্যবসা ফাঁদছে কিনা তা নিয়মিত মনিটর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি ব্যুরোর সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ঋণখেলাপিদের ব্যবসা সরকারি হেফাজতে নিয়ে নিলাম অথবা জব্দ করতে হবে- এরা যতই শক্তিশালী হোক।দেশি-বিদেশি যে কোনো চক্রই এই সেক্টরকে ধ্বংস করার চেষ্টা করুক না কেন, তা দমন করতে হবে কঠোর হাতে। শুধু শিল্প পুলিশই নয়, প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটি নিয়োগ করতে হবে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, শ্রমিকরা যদি তাদের ন্যায্য পাওনা পায় তবে অনেকাংশেই কমে যাবে সব প্রকার অনিশ্চয়তা। কেউ বিলিয়ন ডলার কামাবে, আর কেউ তার ন্যায্য কানাকড়িও পাবে না- তা হতে পারে না। যে শোক বহন করেছে জাতি, তার অবসান দরকার। তাজরীন ফ্যাশনের এই মর্মান্তিক ঘটনা কিন্তু বাংলাদেশ ভুলে যায়নি। জাতির অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে ঐক্যের বিকল্প নেই। নাশকতা যারা করতে চাইবে এরা জাতির শত্রু। আর যদি কোনো রাজনৈতিক দল এদের পৃষ্ঠপোষক হয় তবে এরা জাতীয় শত্রু। অন্যদিকে যারা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে দুর্নীতিবাজদের সহচর হবে, নজর রাখতে হবে তাদের প্রতিও।-----------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৫
false
fe
বিদেশে কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি বিদেশে কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি ফকির ইলিয়াস ======================================= তীব্রতর মন্দাবস্থা কাঁপিয়ে তুলেছে বিশ্ব অর্থনীতির ভিত। এই ঢেউ লেগেছে প্রবাসে বাংলাদেশের জনশক্তির ওপরও। মালয়েশিয়া থেকে পঞ্চান্ন হাজার বাংলাদেশী শ্রমশক্তি ফেরৎ পাঠানোর ঘোষণা এসেছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। সিঙ্গাপুর থেকেও শ্রমশক্তি ফেরৎ পাঠানোর কথা জানা গেছে। এর আগে গত বছর কুয়েত, সৌদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক ফেরৎ পাঠানো হয়েছিল। মালয়েশিয়া ইতিমধ্যে তাদের বরাদ্দকৃত বেশ কিছু ভিসাও বাতিল করেছে। ফলে যারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে সে দেশের কর্ম ভিসা জোগাড় করেছিলেন তারা মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন। এ বিষয়ে একটি কথা খোলাসা হওয়া দরকার মনে করি। যে নতুন ভিসাগুলো বরাদ্দ করা হয়েছিল তা কেন বাতিল করা হবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের একটি ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। এই ভিসা গ্রহণ করে যারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তা কিভাবে পূরণ করা হবে তাও নিষ্পত্তি হওয়া দরকার মনে করি। মালয়েশিয়া ভিসা বাতিল করবে, কিংবা এত বেশি পরিমাণ শ্রমিক যে ফেরৎ পাঠাবে, তা ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রদূতের না জানার কথা নয়। তিনি তা অগ্রিম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলেন কি? তা জেনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র কিংবা শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কি? এসব বিষয় খোলাসা হওয়া দরকার। ভুক্তভোগীদের জানানো দরকার। মনে রাখতে হবে, ৫৫ হাজার শ্রমিক ফেরৎ আসা মানে ৫৫ হাজার পরিবারে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির একটি প্রতিক্রিয়া টিভিতে দেখলাম। তিনি বলেছেন, এতে ‘প্যানিক’-এর কিছু নেই। কথাটি আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। প্যানিকের কিছু নেই- সেটা বললেই যে কেউ প্যানিক আক্রান্ত হবে না, তেমনটি কিন্তু নয়। কারণ আক্রান্ত ৫৫ হাজার পরিবার এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছে। যে সব তরুণ ফিরে এসেছে তাদের কয়েকজন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যে বক্তব্য দিয়েছে, তা জাতীয় লজ্জার বিষয়। কেউ কেউ বলেছে ‘আত্মহত্যা ছাড়া আমাদের কোনো পথ নেই’ কিংবা ‘এখন সন্ত্রাসী হওয়া ছাড়া আর কিইবা করার আছে!’ যারা ভিটেমাটি বিক্রি করে, শেষ সম্বল হারিয়ে তিন-চার লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে শ্রম দিতে যায় তারা জানে খালি হাতে ফিরে আসার যাতনা কেমন! কি জবাব দেবে তারা স্ত্রী-সন্তানদের? কিভাবে বাঁচবে সামাজিক মান-সম্মান নিয়ে? এই দহন সহজে সহ্য করা যায় না- যাবে না। বাংলাদেশে জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো রয়েছে। রয়েছে একটি মন্ত্রণালয়ও। বিদেশে লোক পাঠাতে তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কি না সে প্রশ্নটি আসছে আবারো। কারণ আমরা দীর্ঘদিন থেকেই দেখছি সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী একটি ভিসা আনতে খরচ লাখ-সোয়া লাখ টাকা কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো কম হওয়ার পরও বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি, দালাল, মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের হাত পেরিয়ে সেই ভিসার মূল্য দাঁড়াচ্ছে তিন-চার লাখ টাকা। এটা কেন হচ্ছে? সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে কেন? এই জটিলতা এবং মুনাফাখোরির অবসান হওয়া দরকার মনে করি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, লোক ফেরৎ আসছে, আমরা নতুন শ্রম বাজারে লোক পাঠাবার আপ্রাণ চেষ্টাও করছি। এই প্রসঙ্গেও যে কথাটি বলতে হয়, এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বিষয়টি কিছুটা হয়ত পুষিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার পরিণতি কি? দু’বছরের এগ্রিমেন্টে বিদেশে চাকরিতে গিয়ে মাত্র ছয় মাস পর যারা ফেরৎ আসছে তাদের ক্ষতি পোষাবে কে? কিভাবে পোষাবে? এটা অস্বীকার করার উপায় নেই বিদেশে সাধারণ শ্রমিকের চাহিদা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। ‘ট্রেড এন্ড টেকনেশিয়ান’ নির্ভর বর্তমান আধুনিক বিশ্বে নাপিত, ধোপা থেকে শুরু করে প্রকৌশলী-পরিকল্পক সবাইকেই একাডেমিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। ‘দ্য বারবার ইনস্টিটিউট অব নিউইয়র্ক, কিংবা ‘রোজমেরী মেনিকিউর একাডেমী ইন নিউইয়র্ক’-নামের দুটি প্রশিক্ষণ সংস্থার নাম এখানে উল্লেখ করতে চাই। এগুলোতে অত্যাধুনিক নাপিতের কাজ কিংবা হাতের নখ, পায়ের নখের যত্ন করার কাজগুলো খুবই যত্নের সঙ্গে শিখানো হয়। আর ফ্যাশন ডিজাইনারদের জন্য ‘দ্য ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অব নিউইয়র্কের (এফআইটি) নাম তো বিশ্বনন্দিত। সুনাম রয়েছে-‘দ্য বিউটিশিয়ান পার্লার অব নিউইয়র্ক’-এরও। বাংলাদেশের শ্রম শক্তিকে বিশ্বমানের সঙ্গে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি সম্ভব খুব দ্রুতই। এজন্য সরকারি কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। রাজমিন্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লামবার, ফিটার, ওয়েল্ডার, হাউসকিপার, গার্ডেনার, সার্ভেয়ার, অটো রিপেয়ার মেকানিক ,সহ বিভিন্ন পেশার স্বল্পমেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলা যেতে পারে। এর সঙ্গে ভাষা শিক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া দরকার। মনে রাখতে হবে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির জন্য আরবী ভাষা শেখা যতটা প্রয়োজন নয়, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ইংরেজি ভাষার দক্ষতা। কারণ সে সব দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যেসব সুপারভাইজার, প্রকৌশলী, ম্যনেজাররা কাজ করেন এরা সবাই ইংরেজিতে পারদর্শী। ফলে ইংরেজি ভাষায় সহজেই তাদের সঙ্গে কম্যুনিকেট করা সম্ভব। পূর্ব ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, রাশিয়া অঞ্চলের বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশে নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ সরকারকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখতে হবে। আর এসব দেশে প্রশিক্ষিত, দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদাই থাকবে বেশি। বর্তমান চলমান বিশ্বে ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি টেকনিশিয়ান, গার্মেন্টস অপারেটর, ফ্যাশন ডিজাইনার, বিউটিশিয়ান, নার্স, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, আইটি টেকনিশিয়ান বাবুর্চি, এরকম আরো বহু পদের চাকরির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট বছরে প্রায় লাখ ডলার, একজন দক্ষ নার্স বছরে প্রায় সত্তর-আশি হাজার ডলার আয় করতে পারেন। এসব বিষয় ভাবার অবকাশ রয়েছে বৈকি! বিদেশে চাকরির প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে- দক্ষ, স্মার্ট এবং অধ্যবসায়ী শ্রমশক্তি। আর সেজন্য বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের গুরুত্বও রয়েছে সমানভাবে। বিদেশে চাকরিপ্রার্থী হওয়ার আগে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে কর্মঠ, আধুনিক মানুষ হিসেবে। বাংলাদেশের জনশক্তির সততা, কর্মনিষ্ঠা এবং একাগ্রতা সবসময়ই প্রশংসিত হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি দেশের উন্নয়নে, জাতির উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবেন, সন্দেহ নেই। ------------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি।ঢাকা । ১৭ মার্চ ২০০৯ মংগলবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০০৯ ভোর ৬:৫৫
false
fe
রোডম্যাপের গতি পরিবর্তন ও রাজনীতির ছাড়পত্র রোডম্যাপের গতি পরিবর্তন ও রাজনীতির ছাড়পত্র ফকির ইলিয়াস=====================================হঠাৎ করেই ঘুরতে শুরু করেছে বাংলাদেশের রাজনীতির চাকা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অতীতে যেমন কাজ করেছে, ভবিষ্যতেও তেমনি কাজ করে যাবে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে আসার আগে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন। সরকার বলেছে, তার এই মুক্তি দুই মাসের জন্য। তবে প্রয়োজনে তা বাড়তে পারে। প্রায় একইভাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। শেখ হাসিনার মুক্তির মেয়াদও চিকিৎসার প্রয়োজনে বাড়তে পারে।শেখ হাসিনার মুক্তির পর বেশ কিছু অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করেছে জামায়াত-বিএনপি জোট। ভেবে অবাক হয়েছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার বলেছেন, কি গোপন চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা মুক্তি পেয়েছেন তা রাষ্ট্রের জনগণ একদিন জানবে­ জানতে পারবে। এই খোন্দকার দেলোয়ারই কয়েক সপ্তাহ আগে হাসিনার মুক্তি দাবি করেছিলেন। এখন হঠাৎ করেই বুলি পাল্টেছেন তিনি। বিএনপি মনে করেছিল শেখ হাসিনা মুক্তি পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই খালেদাকে মুক্তি দিয়ে দেবে বর্তমান সরকার। তবে সরকার বলেছে, খালেদাকে মুক্তির জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর তা বিবেচনা করবে সরকার। খালেদা জিয়া নিজের মুক্তি না চাইলেও তার দুই ছেলের মুক্তি দাবি করেছেন আর বিএনপির নেতারা বলছেন, যে প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনা মুক্তি পেয়েছেন, ঠিক একইভাবে খালেদা-তারেক ও কোকোকে মুক্তি দিতে হবে।বিএনপি-জামায়াত ইতোমধ্যে একান্ত বৈঠকও করেছে কয়েক দফা। জামায়াতের স্বার্থ অন্যখানে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, খালেদার পর পর নিজামীকেও মুক্ত করে আনা।সব মিলিয়ে অবস্খা বেশ জটিলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বর্তমান সরকারের সমালোচনায় মাঠে নেমেছেন ড. কামাল হোসেন, ফেরদৌস কোরেশীর মতো নেতারা। তারা বলছেন, বর্তমান সরকার তাদের নীতি থেকে সরে এসেছে। দেশ আবার ওয়ান-ইলেভেনের পূর্ববর্তী পরিস্খিতিতে ফিরে যেতে পারে। ফেরদৌস কোরেশীর সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা গেছে, শেখ হাসিনার মুক্তিকে তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। প্রায় একই কথা ব্যক্ত করেছেন ড. কামাল হোসেনও।যে যাই বলুক না কেন, কয়েকজন উপদেষ্টার প্রচেষ্টায় বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাদের রোডম্যাপের একটি ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করতে চাইছেন তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। উপদেষ্টা এমএ মতিন বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ও বিবেচনা করছে। কিন্তু তাকে আবেদন করতে হবে। এ বিষয়ে ‘গোঁ’ ধরে বসেছেন ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া। তার কথা হচ্ছে, তিনি আবেদন করবেন না। তাকে মুক্তি সরকারকে দিতে হবে এমনিতেই।সরকার ইতিমধ্যেই জরুরি বিধিমালার বেশ কিছু আইনের সংশোধনী করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংশোধনীর প্রকৃত বেনিফিসিয়ারি কারা হবেন তা স্পষ্ট হবে আরও কিছু দিনের মধ্যে। তবে এই সংশোধনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার যে কাউকে কাউকে ছাড়পত্র দেব তা অনুমান করছেন দেশের জনগণ।দুই.তারেক রহমানের মুক্তির জন্য আবেদন করেছেন তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান ও কন্যা জায়েমা রহমান। তারা তারেককে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর অনুরোধও জানিয়েছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান মুক্তি পেলেই চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন খুব দ্রুত। সেখানে দলীয় শাখার নেতাকর্মীদের ব্যবস্খাপনায় তার চিকিৎসাও শুরু হতে পারে। তারেক রহমানের একটি ঘনিষ্ঠ মহল নিউইয়র্কে সে ব্যবস্খা নিয়ে রেখেছেন।অন্যদিকে আরাফাত রহমান কোকোর চিকিৎসার সব ব্যবস্খা দেশেই সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তবে অবস্খাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সেটাই শেষ কথা নয়। যে কোন সিদ্ধান্ত যে কোন সময়ই পরিবর্তিত হতে পারে।লন্ডন, নিউইয়র্কভিত্তিক প্রবাসীদের কয়েকজনের উদ্যোগে বিদেশে একটি সমন্বিত প্লাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসী কিছু প্রবাসীর মতে, শেখ হাসিনা বিদেশে থেকে দল চালাতে পারলে, তারেক রহমান তা পারবেন না কেন? তারা চান তারেক রহমানও প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদে বিদেশে থেকে দল পরিচালনা করুন আগের মতো। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া তো দেশেই থাকছেন।যেহেতু শেখ হাসিনা আগে মুক্তি পেয়েছেন, তাই এখন রাজনীতির চাকা ঘুরছে তাকে ঘিরেই। বিএনপি-জামায়াতের বক্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যে যে সুবিধা পেয়ে এগিয়ে যাবে, চারদলীয় জোট তা অনুসরণ করেই এগুবে ক্রমশ।কথা হচ্ছে, নাইকো, গ্যাটকো মামলায় যদি শেখ হাসিনা-বেগম জিয়া ক্রমশ ছাড়পত্র পেয়ে যান তবে তো জামায়াতের নিজামীসহ অন্য মন্ত্রীরাও মুক্তির পথ খুঁজবে। আর এভাবে পর্যায়ক্রমে ওয়ান-ইলেভেন পূর্ববর্তী একটি পরিস্খিতির দিকে দেশ ক্রমশ ধাবিত হতে বাধ্য হবে।তিন সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে দুদকে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন দুদক চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, দুদক তার নিজস্ব গতি নিয়ে কাজ করে যাবে। অন্য কোন সরকারি এজেন্সি দুদকের কাজকে প্রভাবিত কিংবা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। এখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দুদক কারও বিরুদ্ধে মামলা করে সাক্ষী প্রমাণ, দলিলপত্র হাজির করার পরও বিচার বিভাগের আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কেউ মুক্তি পেয়ে যায় তবে কি করতে পারবে দুদক? বর্তমান ছাড়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়াগুলো তো সেদিকেই এগুচ্ছে। একের পর এক সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আড়ালে থাকা উদ্দেশ্যগুলো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে উঠছে জনগণের কাছে।তিন.বাংলাদেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের শিকড় তৃণমল পর্যায়ে গভীরভাবেই বিস্তৃত এবং সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, তাদের প্রয়োজনে প্রধান দুটি দল একে অপরকে সাহায্য করে, আওয়ামী লীগের যেসব মন্ত্রী চরম দুর্নীতি করেছিল বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দুই একটা ‘আই ওয়াশ’ মার্কা মামলা ছাড়া বিশেষ কিছুই করেনি। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বিএনপির কাছ থেকে ক্ষমতা পাওয়ার পর। মোটামুটি একটা সমান্তরাল সম্পর্ক দুটি দল সব সময়ই বজায় রেখে এসেছে। ধর্মীয় মৌলবাদী দল ও মোর্চার সঙ্গে দুটি দলই নানা চুক্তি, আঁতাত করেছে নিজেদের সুবিধা মতো। আবার দরকার মতো তারা একে অন্যকে গালিও দিয়েছে লোক দেখাবার জন্য। যেমনটি খোন্দকার দেলোয়ার হাসিনার মুক্তির পরই বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়েও খালেদা-হাসিনার বাকযুদ্ধ লক্ষ্য করেছে দেশবাসী। আক্রমণে শেখ হাসিনা সব সময় এগিয়েই থেকেছেন তা কোন দুর্মুখ ও স্বীকার করবেন অকপটে। ওয়ান-ইলেভেনের পটপরিবর্তনের সরকারের সব কাজের বৈধতা দেয়ার কথা বলে শেখ হাসিনা সমালোচিত হয়েছিলেন পটপরিবর্তনের পর পরই।খুবই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, জামায়াত নামের অজগরটি এই দেশে তার বিষ দাঁত বাড়িয়েছে এই প্রধান দুটি দলের ছত্রছায়ায়। এখনও তারা স্রোতে ভেসে সুবিধা নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে।গেল কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কে এসেছিলেন জামায়াত নেতা কামরুজ্জামান। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জামায়াত নেতা গোলাম আযম বলেছেন, জামায়াতের কোন মন্ত্রী-এমপি দুর্নীতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্খা নেবে।’আমার প্রশ্ন হচ্ছে, গোলাম আযম বর্তমানে জামায়াতের কোন পদে আছেন? নেপথ্য তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রক তিনি? না হলে গোলাম আযমের নাম ধরে কেন দোহাই দিলেন কামরুজ্জামান? জামায়াত যে এখনও কুখ্যাত রাজাকারদের দখলে এ সাক্ষাৎকার তারই প্রমাণ করছে।এটা প্রায় নিশ্চিত যে কোন সময় মুক্তি পারেন খালেদা, তারেক, কোকো। তাদের পথ ধরে আরও কেউ কেউ কি মুক্তির তালিকায় আছেন? তা বোঝা যাবে ক্রমশ। ওয়ান-ইলেভেনের রোডম্যাপ তার গতি পরিবর্তন করেছে। এখন তা চলছে অনেকটা টর্নেডোর মতো। বাঁক কোন দিকে ফিরাবে, কোথায় আঘাত হানবে তা বোঝা যাচ্ছে না কিছুই। ছাড়পত্র দেয়ার নামে এই গতি পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য এখনও অস্পষ্টই থেকে যাচ্ছে।নিউইয়র্ক, ১৭ জুন ২০০৮----------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ২০ জুন ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
rn
মন ভালো করে দেয়া একটি গল্প অনেক কাল আগের কথা। একজন দরিদ্র লোক একটি দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় পানি বহনের কাজ করত। তার দুইটি পাত্র ছিল, একটি লাঠির দুই প্রান্তে পাত্র দুটি ঝুলিয়ে কাঁধে নিয়ে সে পানি বহন করত। রোজ অনেকটা পথ তাকে হেঁটে পাড়ি দিতে হত।দুটি পাত্রের একটি কিছুটা ভাঙ্গা, আরেকটি ত্রুটিহীন। পানি নিয়ে যেতে যেতে ভাঙ্গা পাত্রটি প্রায় অর্ধেক খালি হয়ে যেত। অপরদিকে ত্রুটিহীন পাত্রটি প্রতিদিন সুন্দরভাবে কানায় কানায় ভরে পানি পৌছে দিত। এভাবে দরিদ্র লোকটি রোজ তার মনিবের বাড়িতে এক পাত্র আর অর্ধেক অর্থাৎ দেড় পাত্র পানি পৌছে দিত।স্বাভাবিকভাবেই, ভালো পাত্রটি তার এ কাজের জন্য খুব গর্বিত ও আনন্দিত থাকত। অপরদিকে ভাঙ্গা পাত্রটির মন খুব খারাপ থাকত। সে খুব লজ্জিত আর বিমর্ষ থাকত। কেননা তাকে যে কাজের জন্য বানানো হয়েছিল সে তার সেই কাজ পুরোপুরিভাবে করতে পারছিল না।ত্রুটিপুর্ণ পাত্রটি এভাবে অনেকদিন পানি বহনের কাজ করার পর একদিন আর সইতে না পেরে লোকটির কাছে তার ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাইলো। সে বলে উঠলো, “আমি আমাকে নিয়ে লজ্জিত ও হতাশ, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই”। দরিদ্র লোকটি জানতে চাইলো “কেন তুমি লজ্জা পাচ্ছো” ?“তুমি কত কষ্ট করে রোজ আমাকে বয়ে নিয়ে যাও, নদী থেকে আমাকে পানি দিয়ে পূর্ণ করে নাও, অথচ আমি তোমার মনিবের কাছে যেতে যেতে অর্ধেক পানি ফেলে দিই, আমার এক পাশে ফাটল, ঐ ফাটল দিয়ে অর্ধেক পানি ঝরে পরে যায়”। লোকটি তার পাত্রটির প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করলো, বলল, “মন খারাপ করো না। হয়তো এর মাঝেও ভাল কিছু আছে যা তুমি এখন বুঝতে পারছো না”।ভাঙ্গা পাত্রটি তবু তার অপরাধবোধ আর লজ্জা থেকে মুক্তি পেল না যদিও স্বান্তনার বাণী শুনে কিছুটা শান্তি পেল। মন খারাপ করে সে প্রতিদিনের মতো আজকেও লোকটির কাঁধে চড়ে পানি বয়ে নিয়ে যেতে লাগলো, আর পথ চলতে চলতে ফাটল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পরতে লাগলো, কান্নার সাথে মিলে মিশে এক হয়ে ঝরতে লাগলো। পাত্রটি পথে যেতে যেতে আশেপাশে দেখতে লাগলো, সবাই কত ভালো আছে সুখে আছে, কি চমৎকার রৌদ্রজ্জ্বল সকাল, পাহাড়ি পথের পাশে নাম না জানা কত শত ফুল ফুটে রয়েছে। সকালের রোদে, মন ভোলানো কোমল হাওয়ায় তারা হেলছে, দুলছে, খেলছে। “অথচ আমার মাঝে এত কষ্ট কেন” । পাত্রটি ভাবতে ভাবতে রোজকার মত আজও ধনী লোকটির বাড়িতে অর্ধেক পানি পৌছে দিল।ফিরতি পথে আবারও তার ব্যর্থতার জন্য দরিদ্র লোকটির কাছে সে ক্ষমা চাইলো। তার মন খারাপ দেখে লোকটি একটু থেমে পথের পাশে ফুটে থাকা কিছু পাহাড়ি ফুল ছিঁড়ে এনে দিল তাকে। “দুঃখ করো না। আমি আগে থেকেই তোমার এ ত্রুটির কথা জানতাম, তাই যাবার বেলা প্রতিদিন তোমাকে আমার কাঁধের একই দিকে বয়ে নিয়ে যেতাম। আর যেতে যেতে তুমি তোমার ফাটল দিয়ে পানি ঝরিয়ে ঝরিয়ে যেতে, কখনো কাঁদতেও। এভাবে পথের এক পাশে তুমি প্রতিদিন পানি দিতে, দেখো পথের ঐ দিকে চেয়ে ! কত শত সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে ! তুমিই তো তাদেরকে পানি দিয়েছো, অথচ পথের অপর পাশে চেয়ে দেখো! ধূলো পাথর ছাড়া কিচ্ছু নেই, কোনো ফুলও ফোটেনি”।
false
rg
কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার!! পর্ব-১ !!! গোটা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীদের চোখ আগামী সপ্তাহের সুইডিশ নোবেল কমিটির দিকে। কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার? এ বছর চিকিৎসা শাস্ত্র দিয়ে অক্টোবর মাসের ৩ তারিখ নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয়। এ বছর চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পেয়েছেন জাপানের ইউশিনোরি ওসুমি। ৪ অক্টোবর ঘোষিত হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন তিন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। এঁরা হলেন ডেভিড জে. থাওলেস, এফ. ডানকান এম. হ্যালডেন এবং জে. মাইকেল কোস্টারলিৎজ। ডেভিড জে. থাওলেস পাবেন পুরস্কারের অর্ধেক আর বাকিটা সমান ভাগ হবে এফ. ডানকান এম. হ্যালডেন এবং জে. মাইকেল কোস্টারলিৎজের মধ্যে। আজ ৫ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে রসায়ন বিজ্ঞানে এ বছরের নোবেল বিজয়ীদের নাম। আগামী ৭ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম। ১০ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতি শাস্ত্রে চলতি বছর বিজয়ীর নাম। কিন্তু সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম জানা যাবে সবার শেষে। সুইডিশ নোবেল কমিটি এখনো সেই তারিখ ঘোষণা করেনি। হয়তো ১১ বা ১২ বা ১৩ অক্টোবর সেই নামটি জানবে বিশ্ববাসী। সুইডিশ নোবেল কমিটির স্থায়ী সেক্রেটারি সারা ডানিউস সেই নামটি ঘোষণা করবেন। তো চলুন এবার সম্ভাব্য সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের নাম ও একটু পরিচিতি খুটিয়ে দেখি। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান একজন। সেটি যে কোনো মহাদেশ থেকে হতে পারে। তো আমি আলোচনায় মহাদেশ ভিত্তিক একটা তালিকা তুলে ধরার চেষ্টা করব। শুরুতেই আমি বলতে চাই আফ্রিকা মহাদেশের সম্ভাব্য নামগুলি। আফ্রিকা মহাদেশ:আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আমার প্রিয় লেখক চিনুয়া আচেবে নোবেল পুরস্কার না পেয়েই মারা গেলেন। এটা নোবেল কমিটির জন্য একটা চরম ব্যর্থতা। তারপরেও আফ্রিকা মহাদেশে এবার সম্ভাব্য লেখকদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন কেনিয়ার ঔপন্যাসিক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ'ও। একদিকে তিনি আফ্রিকান লেখক। অন্যদিকে তিনি লেখেন ট্রাইবাল জিকুইউ ভাষায়। নগুগি একজন ঔপন্যাসিক, উত্তর-ঔপনেবেশিক তাত্ত্বিক এবং সামজিক আন্দোলনকারী। ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি নগুগি কেনিয়ার কিয়াম্বু জেলার লিমুরু শহরের কাছে কামিরিথু পল্লীতে জন্মগ্রহন করেন। জন্মের পর পরিবার থেকে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল জেমস নগুগি। কিন্তু ১৯৭৬ সালে নগুগি নাম পরিবর্তন করে রাখেন নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ'ও। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। নগুগির উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সমালোচনা, ছোটগল্প এবং শিশুতোষ রচনাবলী সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিত, আলোচিত এবং নন্দিত। শুরুর দিকে নগুগি প্রথমে ইংরেজিতে লিখতেন। কিন্তু ১৯৭৭ সালে 'আই উইল ম্যারি হোয়েন আই ওয়ান্ট' (আমার যখন মন চায় বিয়ে করবো) নাটকের গ্রন্থটির কারণে কেনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আরাপ মোই তাঁকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিলে তাঁকে কারাবন্দী করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই নগুগি নিজের মাতৃভাষায় লেখার সিদ্ধান্ত নেন। কারাগারে বসেই তিনি লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'ডেভিল অন দ্য ক্রোস' (ক্রুশকাঠের শয়তান)। পুরো উপন্যাসটি নগুগি কারাগারের বন্দীদশায় থেকে টয়লেট পেপারের উপর লিখেছিলেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'উইপ নট, চাইল্ড' (কেঁদো না, সোনামণি) প্রকাশিত হয় ১৯৬৪সালে। এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন শক্তিশালী ও রাজনৈতিক কথাসাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করেছিলেন। কেনিয়ার মানুষ ও ব্রিটিশ উপনিবেশের সম্পর্ককে বিষয়বস্তু করে তিনি এ উপন্যাস রচনা করেছেন। ব্রিটেনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি এটি রচনা করেন। নগুগির দ্বিতীয় উপন্যাসের নাম 'দ্য রিভার বিটউইন' (নদীর এপার-ওপার) প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। এ উপন্যাসে তিনি মাউ মাউ বিপ্লবকে উপজীব্য করে এক খ্রিষ্টান ও নন-খ্রিষ্টান জুটির ভালোবাসার সম্পর্কের রোমান্সগুলো কতটা অসুখী তা বিশ্লেষণ করেছেন। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় উপন্যাস 'এ গ্রেইন অব হুইট' (গম গাছের বেড়ে ওঠা)। এই উপন্যাসে নগুগি মার্ক্সের সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুকে পড়েন। এরপর নগুগি নিজের নাম বদল করে রাখেন নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ'ও। আর তখন থেকেই ইংরেজির পরিবর্তে নিজের ট্রাইবাল জিকুইউ ও শ্বাহিলি ভাষায় লিখতে থাকেন। নগুগি উগান্ডার কামপালা'র ম্যাকারিরি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক পাস করেন। ওই সময় 'দ্য ব্ল্যাক হারমিট' নামে তাঁর প্রথম নাটকের বই প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এ উচ্চতর শিক্ষা লাভ করার সময় ১৯৬৪ সালে প্রথম কোনো পূর্ব আফ্রিকান লেখক হিসেবে নগুগির প্রথম উপন্যাস 'উইপ নট, চাইল্ড' (কেঁদো না, সোনামণি) ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (আর্ভিং) ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসাবে অধ্যাপনা করছেন। সেখানে বর্তমানে তিনি এরিক মারিয়া রিমার্ক চেয়ার হোল্ডার। তিনি মূলত তুলনামূলক সাহিত্যতত্ত্ব পড়ান। ২০১০ সালে সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রথম শর্টলিস্টেড হয়েছিলেন নগুগি। তাঁর স্মৃতিচরণ মূলক আত্মজীবনী 'ড্রিমস ইন এ টাইম অব ওয়ার: এ চাইল্ডহুড মেমোইর' (যুদ্ধে কালের স্বপ্ন) মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের একটি শিল্পীত দলিল। এছাড়া নগুগির 'উইজার্ড অব দ্য ক্রো' ( কাকের জাদু) উপন্যাসটি আফ্রিকার আঞ্চলিক ভাষার সবচেয়ে ক্লাসিক্যাল উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর সাহিত্যকীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে তিনি নোনিনো ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটেরেচার লাভ করেন। এ ছাড়া বিশ।বের অন্তত ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করেছে। চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সম্ভাব্যদের তালিকায় কেনিয়ার ঔপন্যাসিক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ'ও অন্যতম। ...................................... চলবে.............................................................৫ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:০৮
false
mk
আত্মঘাতী নারী জঙ্গি ঢাকার পূর্ব আশকোনার সূর্যভিলায় মাঝরাতে বর্তমানের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ও আলোচিত জঙ্গিদল নব্য জেএমবি’র একটি আস্তানা পুলিশি অভিযানের মুখে পড়ে। গত ১লা জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নৃশংস হামলা করে ২২ জনকে হত্যা করার দায়ে অভিযুক্ত সংগঠনটির মূলহোতারা কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, আজিমপুর, রূপনগর, গাজীপুরসহ সম্প্রতি চালানো সাতটি পুলিশি অভিযানে নিহত হলে ভেঙে পড়া সংগঠনটির হাল ধরেন মইনুল ইসলাম মুসা নামের একজন প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক। সূর্যভিলার জঙ্গি ডেরায় অনেক বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতাদের স্ত্রী ও সন্তানদের অবস্থান জঙ্গিদলটির সাংগঠনিক অবয়ব, অপারেশনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের চিত্রকে কিছুটা হলেও স্বচ্ছ করেছে। পুলিশি অভিযানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে শীর্ষ দুই জঙ্গি নেতার স্ত্রী ও সন্তান নিজেদেরকে পুলিশের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে ধরা দেয়। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে পুলিশের সুচারু কৌশল বেশ ফলপ্রসূ হলেও এক জঙ্গির স্ত্রী নিজের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আত্মসমর্পণের ভান করে বাড়ির বাইরে এসে কোমরে বাঁধা আত্মঘাতী বেল্টে লুকানো গ্রেনেড বিস্ফোরণ করে স্বর্গ জয়ের প্রত্যাশায় মৃত্যুকে অবলীলায় আলিঙ্গন করে। বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে তার পাঁচ বছরের ছোট শিশুটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। অভিযান শেষে ১৪ বছরের এক কিশোরের মৃতদেহ পাওয়া যায়। নিহত কিশোর আজিমপুর অভিযানে আত্মহত্যাকারী জঙ্গি নেতা তানভির কাদরির ছেলে আফিফ কাদরি হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। ঘরে ছিটিয়ে থাকা দুইটি পিস্থল, গুলি ও ১৯টি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া যায়। আত্মসমর্পণকারীরা হলেন রূপনগরে পুলিশি অভিযানে নিহত জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ও তার সন্তান এবং বর্তমানের কর্ণধার হিসেবে পরিচিত মইনুল ইসলাম মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তার কোলের সন্তান। আত্মঘাতী হয়েছে অপরিচিত জঙ্গি সুমন সাগরের স্ত্রী এবং আহত হয় তার সন্তান।গত অক্টোবরে আজিমপুর জঙ্গি ডেরায় পুলিশি অভিযানকালে তানভির কাদরি নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করে। সঙ্গে আরো তিন জঙ্গির পরিবার ধরা পড়ে। সেখানে জঙ্গিদের স্ত্রীরা পুলিশের উপর ছুরি ও মরিচের গুঁড়া নিয়ে হামলা করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়। হলি আর্টিজানের হামলা থেকে এ পর্যন্ত পুলিশি অভিযানের তোপে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ইহলোক ত্যাগের পর সংগঠনটি ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে। নতুন নেতৃত্ব তাকে জোড়া লাগানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালালেও পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারেনি। নেতৃত্ব ও নেটওয়ার্ক পুলিশের গোয়েন্দা রাডারে থাকায় জঙ্গি চলাচল, আস্তানাগুলো আগের মত গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারছে না। ফলে পুলিশের সফল অভিযানগুলো তাদের কর্ম তত্পরতার স্বাধীনতা হরণ করেছে এবং সহজেই ধরা পড়ছে। ফলে জননিরাপত্তার শঙ্কা কমেছে। মাঝে মাঝে জঙ্গি বিরোধী অভিযানগুলো জনমনে স্বস্তির মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। পুরনো ক্ষতি পুষিয়ে সক্ষমতা বাড়াতে নতুন রিক্রুটিং অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। জঙ্গিরা নিজেদের পরিবারকে কেন্দ্র করে কর্ম তত্পরতা চালু রাখার চেষ্টা করছে। পরিবারকে আস্তানা করার গুটি হিসেবে ব্যবহার কিছুটা হতবাক করার মতো।প্রশ্ন জাগে নারী জঙ্গি বাহিনী তৈরি করে হামলার নতুন কৌশলের পাঁয়তারা করছে জঙ্গিরা নাকি নিজেদের পরিবারকে সহযোগী বানিয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আস্তানাকে গোপন রাখার সহজ উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে। আশকোনার সূর্য ভিলায় জঙ্গি সুমনের স্ত্রী শাকিরা এবং আজিমপুর ডেরায় নিহত তানভীর কাদরির ১৪ বছরের কিশোর ছেলে আফিফ কাদরি জঙ্গি দর্শনে আসক্ত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ায় আগামী দিনের জঙ্গি হামলায় নারী ও কিশোরদের অংশগ্রহণের নতুন ঝুঁকির শঙ্কা তৈরি হলো বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।বিশ্বের অনেক দেশে আত্মঘাতী হামলায় নারী ও কিশোরদের অংশগ্রহণ নতুন নয়। আফ্রিকার জঙ্গিদল বোকোহারাম সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে নারী ও কিশোরদের। এমনকি অবুঝ শিশুদের গায়ে সুইসাইডাল বেল্ট জড়িয়ে দিয়ে জনাকীর্ণ এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদের নারী আত্মঘাতী বা যোদ্ধার অস্তিত্ব অনেক বেশি ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীকে হত্যায় নারী আত্মঘাতীর অংশগ্রহণ বিশেষ উদাহরণ হিসেবেই রয়ে গেছে। বিশ্বের মোট জঙ্গি হামলার শতকরা ১৫ ভাগে নারীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেলেও বাংলাদেশে জঙ্গি সুমনের স্ত্রী শাকিরা প্রথম নারী জঙ্গি আত্মঘাতী হওয়াই জনমনে শঙ্কা তৈরি করেছে। জঙ্গিবাদে নারীদের সম্পৃক্ততার গভীরতা ও মাত্রা এবং কারণ উদঘাটনে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন। হাল্কা ধারণার উপর ভিত্তি করে নারী জঙ্গিদের বিপদ নিয়ে বিশারদদের ছড়ানো শঙ্কা জনমনে অহেতুক ভীতির সৃষ্টি করেছে এবং বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশি জঙ্গিবাদের চিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জিহাদি আফিমে আসক্ত মা ও বাবারা নিজ সন্তানদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রতি যত্নবান নয় এবং প্রয়োজনে বলি দিতেও পিছপা হবে না আশকোনার ঘটনা থেকে এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।ইসলামিক স্টেট বা আই এসের শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগাদাদির মতাদর্শে আকৃষ্ট হয়ে অনেক নারী ও কিশোরিকে সিরিয়ায় হিজরত করতে দেখা গেলেও মাঠের যুদ্ধে নারীদের উপস্থিতি খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে কিছু নারীদের উপস্থিতি দেখা গেলেও মূলত মেয়েদের ব্যবহার করা হয়েছে জঙ্গিদের যৌনসুখ ও সন্তান জন্মের যন্ত্র হিসেবে। নতুন যোদ্ধা আকৃষ্ট করার মাধ্যম হিসেবেও নারীদের ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। আই এস অধিকৃত সিরিয়ায় আল খানসা নামে একটি মহিলা ইউনিটের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও তাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছিল নারীদের শরিয়া শৃঙ্খলা রক্ষার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে। অপরদিকে আইএসের বিরোধী লড়াইয়ে ব্যাপকভাবে কুর্দি নারীরা যুদ্ধের ময়দানে সাহসীযোদ্ধা হিসেবে অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে। ধর্মীয় জঙ্গিবাদে নারীদের যোদ্ধা হিসেবে জায়গা নেই বললে অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নারীদের যোদ্ধা বানানোর খুব একটা প্রয়াস নিতে দেখা যায়নি। জঙ্গিরা জীবনসঙ্গীকে মতাদর্শে অনুরক্ত করে নিজেদের নিরাপদ করতে চেয়েছে। জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশ্যে পরিবারকে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে রেখেছে। তানভীর বা জাহিদের মত শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হবার পরে নিজ স্ত্রীকেও সাথী করে নিতে চেয়েছে। জিহাদি মতাদর্শের চেয়ে পারিবারিক বন্ধনের টান জঙ্গিবাদে নারীদের বেঁধে রাখতে বেশি ভূমিকা রেখেছে। জীবনের মায়া ও সন্তানদের মমতা আত্মসমর্পণে অনুঘটক হলেও সবার ক্ষেত্রে একই প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। প্রথম প্রজন্মের হরকাত আল জিহাদ আল বাংলাদেশ (হুজি)’র সংগঠনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারী জঙ্গিদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরিবারকে দূরে রেখে জঙ্গিত্ব করেছে। আদালতের রায়ে ফাঁসি হওয়া জেএমবি নেতা শায়ক আব্দুর রহমান তার স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন তাদের কোনো নারী জঙ্গি ইউনিট নেই। ৫০ থেকে ৬০ জন জঙ্গি নারী আছে যারা মূলত তাদের পরিবার। বাংলাদেশে ধরা পড়া নারী জঙ্গিদের প্রায় সকলে জঙ্গির স্ত্রী অথবা নিকট আত্মীয় হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছেন। বগুড়ায় আটক হয়েছে চট্টগ্রামে নিহত জেএমবি নেতা রাইসুল ইসলাম ফারদিন-এর স্ত্রী মাসুমা আখতার। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে আটক হওয়া নারী জঙ্গিদের পরিচিতি জঙ্গির স্বামী বা নিকটজন কেন্দ্রিক। আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে ধরা পড়া নারী জঙ্গিদের সবাই ছিলেন পরিবারের সদস্য। ঢাকা থেকে র্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন মানারাত বিশ্ব বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক ইন্টারনি ডাক্তার। এখানে জঙ্গি মতাদর্শের বাহক হিসেবে তাদের পরিচিতি পাওয়া গেছে। নব্য জেএমবির পরিবার জড়ানো জঙ্গি কৌশল সংগঠনের জনবিচ্ছিন্নতাকেই তীব্রভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। মতাদর্শিক অভিযাত্রী হিসেবেই তাদের চরিত্রকেও তুলে ধরেছে।বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে নারী জঙ্গি হামলার ঝুঁকির মাত্রা নিঃসন্দেহে খুবই কম। তবে মৌলবাদ বিস্তারে নারীদের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না। হিজবুত তাহরির ও ইসলামি ছাত্রী সংস্থা মেয়েদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় রয়েছে যেখান থেকে ভবিষ্যত্ ঝুঁকি উত্থিত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পরিবারের মধ্যমনি হিসেবে বিরাজমান মাতা অথবা ভবিষ্যত্ মাতাদের লক্ষ্য করে মৌলবাদকে গ্রোথিত করার প্রয়াস চোখে পড়ার মত। মৌলবাদের আফিমে পরিবারকে আসক্ত করতে মাতার ভূমিকা ক্রিয়াশীল করতেই এটাকে সুদূরপ্রসারী জঙ্গিবাদি কৌশলের অংশ হিসেবেই দেখতে হবে। মৌলবাদী সমাজ জঙ্গি সংগ্রহের মূলক্ষেত্র। মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে জঙ্গিবাদ রোখা যাবে না। নিরীহ মানুষের জীবনের হুমকি সৃষ্টিকারী কতিপয় জঙ্গি নির্মূলে পুলিশ বাহিনী সক্ষমভাবে অবদান রেখে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে চলেছে। বড় দিন ও খ্রিষ্ট্রীয় নতুন বছরের উত্সবে জঙ্গি হামলার বিষয়টি সর্বজনবিদিত। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আশকোনা জঙ্গি ডেরায় গ্রেনেডের মজুদ থেকে হামলার প্রস্তুতির বিষয়টিই উন্মুক্ত হলো।বাংলাদেশ জঙ্গি নিধন হলেই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ভিন্নভাবে প্রবাহিত হয়। জঙ্গিবাদের প্রতি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে। জঙ্গিবাদ বিষয়ে রাজনীতির মতপার্থক্য প্রকারান্তরে জঙ্গিবাদকে সুরক্ষা দেয় এবং উত্সাহিত করে। নারী জঙ্গি বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে তেমন ঝুঁকি সৃষ্টি করবে বলে মনে হয় না। মৌলবাদই জঙ্গিবাদের বীজতলা। মৌলবাদ প্রসার রোধে রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্যোগ এবং সক্রিয়তাই জঙ্গিবাদের বীজতলা ধ্বংস করতে পারবে। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৫
false
mk
নির্বাচন ও নাশকতা পাশাপাশি যায় না সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের অর্থ এই নয় যে, নাশকতা ও সহিংস কর্মসূচীর পথ ছেড়ে স্বাভাবিক রাজনীতির পথে ফিরে এসেছে। বরং তা বহাল রেখেই নির্বাচনকে নেতিবাচক কর্মসূচীর অংশ হিসেবেই নিয়েছে। নির্বাচন অনুকূল বা প্রতিকূল যাই হোক, জ্বালাও পোড়াওর পথ খোলা রেখেই মাঠে নেমেছে। জঙ্গীবাদী ফর্মুলার যে ধারায় দলটি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশ ও জনগণবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে আপাত বেরিয়ে আসার লক্ষণ দেখা গেলেও এটা মনে করার কারণ নেই যে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ ধরে হাঁটবে। বরং সশস্ত্র জঙ্গীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিএনপি যে অবস্থান ধরে রেখেছে, তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোন কার্যকারণ নেই। নির্বাচনে হেরে গেলে সরকারের বিরুদ্ধে শুধু নয়, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে একতরফা সর্বাত্মক যুদ্ধ পুনরায় জোরসে চালু করবে। পেট্রোলবোমা, কিরিচের পাশে আরও মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে চোরাগোপ্তা হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। আর জয়লাভ করলে তো আরও পোয়াবারো। সরকারকে গদি থেকে তাদের ভাষায় টেনে হিঁচড়ে নামাতে সহিংসতার পথকেই বেছে নেবে এই যুক্তিতে যে, সরকারের কোন জনসমর্থন নেই। সুতরাং পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য নৃশংসতার ধারাকে আরও গতিশীল করবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলেই যে বিএনপি হরতাল-অবরোধ নামক নাশকতামূলক কর্মসূচীর অবসান ঘটাবে এমন আভাস ইঙ্গিত তারা দেয়নি। আর হেরে গেলে আরও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাবে। তারা বলছেও, তাদের কথিত আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের ঘটনাটিকে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে এখনও ২০ দলীয় জোট হরতাল-অবরোধ থেকে সরে না যাওয়ার সমালোচনা করেন তারা। এমনটাই তারা মনে করেন যে, বিএনপির গণবিরোধী রাজনীতির শিকার হয়ে বহু মানুষ পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারানোর ঘটনা দেশবাসী কখনও ভুলে যাবে না। বিএনপি আন্দোলনের নামে এখনও মানুষ মারার যে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তারা জনকল্যাণের কোন্ কথা বলে ভোট চাইবে?সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মী-সমর্থকরা মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছে। তারা সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারায় এগুবে বলে যতই ভাবা হোক বাস্তবে তা হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। মাঠে নামার সুযোগ পেয়েও মানুষ মারার রাজনীতি করবে না, তার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। বিএনপির নেতাদের কথা বলার ধরনে পরিবর্তন দেখা গেলেও তারা তাদের চলমান কথিত ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’ স্তিমিত করে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার কৌশল হিসেবে সরকার এই নির্বাচনের আয়োজন করেছে বলে মনে করছে। আবার বলছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারলে ব্যালটের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে চরম অনাস্থা প্রকাশ করবে। তখন তারা নাশকতাকে বাড়িয়ে দেবে সরকারকে গদিচ্যুত করতে। বিএনপির টানা ৯০ দিনের অবরোধ ও তার সহযোগী হরতাল নামক নাশকতামূলক জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচীতে সারাদেশে ব্যাপক জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সে সব উহ্য রেখে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো বিএনপির জন্য কতটা সহজ হবে তা দেখার বিষয়। বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা পেট্রোল বোমা দিয়ে বিভিন্নভাবে নাশকতা চালিয়ে প্রায় দেড় শ’ মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে শুধু পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে প্রায় ৭৪ জন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন আরও অনেক দগ্ধজন। সহস্রাধিক পুড়িয়েছে যানবাহন, ভাংচুর করেছে আরও কয়েক হাজার। স্কুল, কলেজ, সরকারী দফতর ও স্থাপনায়ও বোমা হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। এমনকি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল ও অবরোধ প্রত্যাহার না করে পরীক্ষায় বিঘœ ঘটিয়ে যাচ্ছে। এই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে বিএনপি তাদের ঘৃণিত কর্মকা-ের জন্য ক্ষমা চাইবে তা নয়। টানা নব্বই দিন ধরে ‘অফিস কাম রেসিডেন্সে’ অবস্থানরত বেগম জিয়া জনসমক্ষে আসেননি বা তাঁকে আসতে দেয়নি দলের জঙ্গীবাদের সমর্থকরা। তিনি অবরোধবাসিনী হয়ে নানা নির্দেশ প্রদান করছেন সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতামূলক কর্মসূচী দিয়ে ও নেতিবাচক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি যখন দিশেহারা, পিছু হটার পথও খুঁজে না পেয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম, তখন সিটি নির্বাচন ‘শাপে বর’ হয়ে দেখা দিয়েছে। সহিংস কর্মসূচী হতে সরে আসার পথ অবশেষে সামনে পেয়ে গেছে অনেকটা মুফতে। তবে বোমা ফাটিয়ে মানুষ হত্যা, যানবাহন পোড়ানো, সম্পদহানির মতো ঘৃণ্য কাজ থেকে পুরোপুরি সরে এসেছে, তা বলা যাবে না। কারণ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে দেশবাসীর বিরুদ্ধে একতরফা যুদ্ধ চালিয়ে বহু মানুষকে হতাহত করেছে। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষ ও স্বজনদের আহাজারি এখনও আকাশ-বাতাস কম্পিত করে। যদিও বিএনপি তার স্বভাবসুলভ ‘মিথ্যাচারের ভঙ্গি ও ভাষায়’ অস্বীকার করে আসছে, কোন প্রকার নাশকতায় তারা জড়িত নয়। সরকারই সব করাচ্ছে। তারা ভাবে, বুঝি দেশবাসী কিছুই জানে না, বোঝে না। দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডার ও তাদের ছত্রছায়ায় লালিত জঙ্গীদের নাশকতা নিঃশেষ হয়নি। এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের সহিংস তৎপরতা চলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা ও চট্টগ্রামকে হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করলেও অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। এবং দেশের বাকি সর্বত্র হরতাল ও অবরোধ বহাল রেখেছে। তাদের হিসেব এই যে, সন্ত্রাসী কর্মসূচী থেকে সরে এলে নিজস্ব দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। কথিত আন্দোলন ব্যর্থ বলে সবার কাছে প্রতীয়মান হবে। তাতে দলীয় নেতা কর্মীরা যেমন হতাশ হবে, তেমনি দলের অস্তিত্বজুড়ে টান দেবে ব্যর্থতার গ্লানিতে। এতে সরকারকে টলানো যাবে না কোনভাবেই। বরং নাশকতা অব্যাহত থাকলে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ সহজ হবে। চাপে রেখে সরকারের কাছ হতে অনেক দাবি আদায় করে নেয়া যাবে। যদিও সরকার পতন বা উৎখাতের জন্য তাদের একরোখা মনোভাব তারা পরিহার করেনি, করবেও না। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে চায় নাশকতার দায়ে আটক দলের নেতাকর্মীসহ জঙ্গীদের মুক্তি। সহিংসতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কাউকে হয়রানি না করা। নির্বাচনী প্রচারণাকালে কাউকে গ্রেফতার না নকরার জন্য শর্ত দিয়েছে। কিন্তু বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে যারা, তাদের গ্রেফতারের বিরোধী বিএনপি। অথচ তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য সামান্য অনুতপ্ত নয়। এমনকি ক্ষমাও চায়নি। বরং আস্ফালন করছে যে, সরকারী দলই নাশকতা করছে। এসব মিথ্যাচারে জনগণ বিভ্রান্ত হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। জনগণ নিজেরাই ভুক্তভোগী। তারা দেখেছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে তিন মাস ধরে বেগম জিয়া গুলশানের অফিসকে বাড়ি বানিয়ে সরকারকে গদি হতে ফেলে দেয়ার জন্য নাশকতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে গেছেন। তাঁর এই কর্মসূচীর প্রতি দলের সিনিয়র নেতা ও মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মী সমর্থন জানিয়েছে তা নয়। কোথাও কোন হরতাল বা অবরোধ পালনে নেতাকর্মীরা রাজনীতির ধারানুযায়ী মাঠে নামেনি। গায়েবি ঘোষণা দিয়ে মিডিয়ানির্ভর ‘আন্দোলন’ করে বেগম জিয়া ক্লান্ত প্রায়, তাই আপাত রণে ভঙ্গ দিয়েছেন।নাশকতা ও সহিংসতার টানা কর্মসূচী হতে সরে এসে বিএনপি জোট নির্বাচন করছেÑ এমনটা হওয়াই ছিল সুস্থ রাজনীতির জন্য অপরিহার্য। গণরোষেও যেখানে বিএনপি সহিংসতা বন্ধের দিকে যায়নি, সেখানে নির্বাচনে ভোট পাওয়ার জন্য তিন সিটিকে বোমামুক্ত রেখেছেÑ এটা একটা উল্লেখযোগ্য দিক বৈকি। এভাবে সরতে সরতে একদিন পুরো সরে আসবে হয়ত। তবে যে আন্তর্জাতিক জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়েছে দলটি, সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেও তা হতে কলুষমুক্ত হতে পারবে কিনা, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার আড়ালে জঙ্গীরা মাঠে নামছে। এই জঙ্গীদের যাতে আটক করা না হয়, তার জন্য বিএনপি বেশ জোর দিয়ে গলা ফাটাচ্ছে।নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা দিলে নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি দেশব্যাপী নাশকতার পরিমাণ বাড়াতে সচেষ্ট হবে। ভোট না পেলে সাধারণ মানুষ হত্যার ব্রত অব্যাহত রাখবে নতুন মাত্রায়। সে লক্ষ্যেই হরতাল-অবরোধ নামক নিষ্ঠুরতার প্রকাশ ঘটানো কর্মসূচী পরিহার না করে তা অব্যাহত রেখেছে হাতের পাঁচ হিসেবেই হয়ত বা। আর বিজয়ী হলেও সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য সহিংসতার ধারাকে আরও পুষ্ট করবেই বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতায়। তখন যুক্তি দেখানও হবে যে, সরকারের জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন নেই। সুতরাং পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে এবং তা খালেদা জিয়ার শর্তানুযায়ী হতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) সৃষ্টির যে দাবি করছে বিএনপি, তা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা বেগম জিয়া। কারণ তাঁর দল নির্বাচনে অংশ নিয়েও হরতাল-অবরোধ নামক জঙ্গীপনা বহাল রেখে জনগণকে সন্ত্রস্ত রেখেছে। যে কোন সময় যে কারও প্রাণ কেড়ে নিতে পারে তাঁর বাহিনী। সমতল মাঠ সব প্রার্থীর জন্য বলতে বোঝায় একজন ভোটার নিজের ইচ্ছেমতো, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। একজন প্রার্থী যাতে নির্বিঘেœ ভোটারদের কাছে যেতে পারেন, সভা-সমাবেশ করতে পারেন, সেটাই হবে নির্বাচনের সমতল মাঠ। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কমিশনার প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন মামলার আসামি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কারাগারে, কেউ পলাতক, কেউ আত্মগোপনে। বোমা হামলায় এদের অনেকে সংশ্লিষ্ট ছিল। হাতে-নাতে ধরা পড়াদের মধ্যে কেউ প্রার্থী না হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় বোমাবাজরা যাতে নির্বিঘেœ প্রচারণায় অংশ নিতে পারে বিএনপি তাই দাবিও করছে। বর্তমানে রাজনৈতিক নেতৃত্বহীন বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে দৃশ্যপটে আছেন একদা জাসদের পৃষ্ঠপোষক শিক্ষাবিদ ড. এমাজউদ্দিন আহমদ। তিনিই শত নাগরিক কমিটি নামের একটি ঝাঁপিহীন দোকান খুলে বেশকিছু রাজনীতিককে নানান কসরতে তুলে ধরছেন। সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করতে বেগম জিয়ার মতোই পারদর্শী হয়ে উঠছেন। বেগম জিয়ার ভাষ্য তুলে ধরে বলেছেন তিনি, সিটি নির্বাচনকে বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিন সিটি কর্পোরেশন নিজের দখলে আনতে হবে। বিজয় নিশ্চিত করা না গেলে সামনে আরও ভুগতে হবে। জঙ্গীদের নেত্রী বেগম জিয়া এক ‘চরম দুঃসময়ে’ও সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে সায় দিয়েছেন বলে তাঁর মুখপাত্র এমাজউদ্দিন মন্তব্য করেছেন। সঠিক মতের প্রতিফলন বটে। দুঃসময় বেগম জিয়ার চরম পর্যায়ে অবশ্যই। রাজনীতির মূলধারার পথ হারিয়ে জঙ্গী, সন্ত্রাসের পথ ধরে তিনি জোর কদমে পা ফেলে যাচ্ছেন। বিনিময়ে কেবল লাশের পর লাশের বহর মিলছে কেবলি। পেট্রোলবোমা মেরে ১৩৭ জন মানুষ হত্যাসহ যানবাহন পুড়িয়ে, সম্পদের হানি ঘটিয়ে হরতাল-অবরোধ নামক বায়বীয় কর্মসূচী দিয়ে দেশকে বিপর্যস্ত করার মাধ্যমে নিজেকে এবং যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার যে কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন, তা লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হয়নি। বরং জঙ্গীদের নেত্রী হিসেবে, সাধারণ মানুষ, অন্তঃসত্ত্বা নারী-শিশুসহ বহুজনের হত্যাকারী হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই টানা তিনমাস ধরে তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে অফিসকে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করতে থাকেন। আর অভিযোগ করতে থাকেন, সরকার তাঁকে গৃহবন্দী করে রেখেছে অথচ সেখানে অবস্থান করে পিকনিক পিকনিক ভাব নিয়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদীদের উস্কে দিয়েছেন বোমাবাজি ও নাশকতা চালিয়ে সরকারকে উৎখাতের পরিস্থিতি তৈরি করতে। তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর অনেকে ধরা পড়েছে অস্ত্রশস্ত্রসহ। আবিষ্কার হয়েছে অস্ত্র তৈরি ও মজুদের ঘাঁটি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোরবিরোধী বেগম জিয়া ও তাঁর বুদ্ধিজীবীদের বহর। তাঁরা তাঁদের আন্দোলনকারী হিসেবে অভিহিত করে মুক্তির দাবিও তুলছেন। লন্ডনে পলাতক দুর্নীতির মামলার আসামি খালেদাপুত্র নির্বাচনে অংশ নেয়ার নির্দেশ দিলেও বর্জনের পথ খোলা রাখতেও বলেছে। সেখান হতে প্রার্থী নির্ধারণ করছে। পুত্রটি দল চালাতে গিয়ে বেগম জিয়ার অবস্থান শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। জামায়াতনির্ভর হয়ে তিনি দলকে যেখানে নিয়ে গিয়েছেন, দলের নেতাকর্মীরা আর তাঁর ঘোষিত কর্মসূচী পালনে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। সে কারণেই তিনি জঙ্গী ও সন্ত্রাসের পথ ধরে অতীতের মতোই হেঁটে চলছেন।নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়টি খুলে দেয়া হয়েছে। এই অফিসটিকে বাসাবাড়ি বানিয়ে দলের যুগ্মসম্পাদক রিজভী আহমেদ বাস পোড়ানো, যাত্রী হত্যা ও সম্পদহানির নির্দেশ দিয়ে আসছিল। গত তিন জানুয়ারি হতে অফিসটি তালাবদ্ধ ছিল। কর্মীরাও রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। তালাবদ্ধ রেখে রিজভী পালিয়ে যায়। তিনমাস পর অফিস খুললেও বিএনপির প্রথম সারির কোন নেতা অফিসে যাননি। সিটি নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করবেই বিএনপি। অন্যথায় জ্বালাও-পোড়াও নীতিতে নেমে পড়বে দেশ। জেতা-হারা যাই হোক বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার যে দায়িত্ব নিয়েছে, তা পালন করা দুরূহ। তা করতে গিয়ে নিজের দলের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। সিটি নির্বাচন তার মূলধারায় ফেরার পথ দেখাতে পারে কেবলমাত্র। বেগম জিয়া সে পথে যাবেন কিনা তা দ্রুতই স্পষ্ট হবে। জাফর ওয়াজেদ এর কলাম, দৈনিক জনকণ্ঠ
false
fe
দায়িত্ব পালনে কেউ কি ব্যর্থ হচ্ছেন_ দায়িত্ব পালনে কেউ কি ব্যর্থ হচ্ছেন?ফকির ইলিয়াস================================সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার সুরাহা এখনো হয়নি। আসামিও ধরা পড়েনি। এমন একটা পরিস্থিতি গোটা দেশবাসীকে কাঁপিয়ে তুলেছে। প্রশ্ন অনেক। সাগর-রুনি হত্যা মামলার কোনো সুরাহা হয়েছে কি? না হয় নি। যদি হতো তাহলে এমন অবস্থা হতো না। সে কথা কেউ শুনছে না। বরং খুনিদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।প্রিয় পাঠক, একটি প্রতিবেদন আপনাদের পড়তে বিনীত অনুরোধ করি। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সিলেটটুডে২৪ ডট কম। প্রতিবেদনটির শিরোনাম- ‘বিপ্লব হত্যা : খুনিরা ধরা পড়েনি, ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ ভাতিজির’। ২৯ মার্চ ২০১৬ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, পলি রায় কিশোরী মোহন গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে ভালো চাকরির। ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে অভাব-অনটনের সংসারের হাল ধরার। কিন্তু বখাটেরা সেই স্বপ্ন নিমিষেই ধ্বংস করে দিয়েছে। কয়েক মাস আগে পলিদের বসবাস ছিল নগরীর মীরাবাজার এলাকায়। সেখান থেকেই প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়া। এরই মাঝে তার দিকে চোখ পড়ে স্থানীয় বখাটে সুমন দাশের।পলি রায় সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে নগরীর মীরাবাজারে সানফেস্ট ফার্নিচারের কর্মচারী সুমন প্রায়ই তার পথ আটকে দিত। অশালীন আচরণের পাশাপাশি নানা ধরনের কু-প্রস্তাব দিত তাকে। সুমনের অত্যাচার সইতে না পেরে পলি একদিন কাকা বিপ্লব রায় বিকলকে সব ঘটনা খুলে বলে। পরে বিপ্লব রায় একাধিকবার সুমনের এই আচরণের প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ করেন সানফেস্ট ফার্নিচারের মালিকের কাছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। বখাটেদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে প্রায় দু’মাস আগে মীরাবাজার থেকে পলির বাবা সপরিবারে চলে যান মেজরটিলা এলাকার নাথপাড়ায়। পলি জানান, একদিন তাকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নেয়ারও চেষ্টা করে সুমন। তার বান্ধবীরা বাধা দেয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে যায় সে। ঘটনা জানার পর গত বছরের ১৫ অক্টোবর সিলেটে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ জিডিভুক্ত করেন পলির বাবা বিশ্বজিৎ রায়। কিন্তু পুলিশ বখাটেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।সর্বশেষ, গত ১৫ মার্চ বিপ্লবকে মোবাইল ফোনে মীরাবাজার এলাকায় ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আসামিরা অনেকটা প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করলেও রাজনৈতিক চাপে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ করেছেন পলির বাবা। এমতাবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইছেন তিনি।এদিকে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্তাধীন ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে তারা জানান, খুনিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। কত অমানবিক আজকের বাংলাদেশের চিত্র! কী এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ এই দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম মানবসমাজের জন্য শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল। চলুন আমরা পেছন ফিরে আরো কিছু সংবাদ পড়ি।১। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়িতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সবিতা চাকমা নামে এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামিদের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকার জনমনে চরম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেব রতন চাকমা তার স্ত্রী সবিতা চাকমাকে হত্যার ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামিদের নাম উল্লেখ না করে ‘অজ্ঞাত কে বা কারা’ লেখা হয়।এলাকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামলা দায়ের করার জন্য সন্দেহভাজন বাঙালি শ্রমিকদের নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় নিহতের স্বামী দেব রতন চাকমা, বালুমহলের মালিক বীর কুমার চাকমার ছেলে বঙ্গমিত্র চাকমা, কমলছড়ি ইউনিয়নের সদস্য বিনয় বাহু চাকমা, গ্রামের বাসিন্দা বীর বাহু চাকমাসহ কয়েকজন গ্রামবাসী খাগড়াছড়ি থানায় যান। কিন্তু সেদিন বিদ্যুৎ না থাকায় কম্পিউটারে এজাহারটি কম্পোজ করা সম্ভব হয়নি। পরে তারা সন্দেহভাজন বাঙালি শ্রমিকদের নামসহ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পুলিশের হাতে দিয়ে পরদিন (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪) সকালে থানায় এসে মামলাটি দায়ের করা হবে বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে থানা থেকে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু রাতের মধ্যে থানা কর্তৃপক্ষ মামলার এজাহারটি লিখে রাখে এবং সকালে দেব রতন চাকমা থানায় গেলে তার থেকে দস্তখত নিয়ে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।ওই এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘১৫/২/২০১৪ খ্রি. সকাল হইতে একটি ট্রাক্টর ওই এলাকা দিয়ে জমির মালিক বীর কুমার চাকমার তত্ত্বাবধানে বালি বহন করিতেছিল এবং ঘটনাস্থলের পার্শ্বেই বেলা অনুমান ১২টার দিকে ওই ট্রাক্টরটি নষ্ট হইলে ওই ট্রাক্টরের চালক মো. নিজাম (৩০), পিতা-অজ্ঞাত, সাং গঞ্জপাড়া, থানা সদর- জেলা-খাগড়াছড়ি ট্রাক্টরটি মেরামত শেষে বিকাল অনুমান ৪টার সময় ট্রাক্টরটি চলিয়া যায়। ওই ট্রাক্টর চালক, বালুমহলের মালিক তথা তত্ত্বাবধানকারী বীর কুমার চাকমা এবং ট্রাক্টরে থাকা শ্রমিকগণ ওই মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকিলেও থাকিতে পারে বলিয়া আমার সন্দেহ হয়।’ এভাবে দেব রতন চাকমার সরলতা ও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সুকৌশলে বালুমহলের মালিক বীর কুমার চাকমাকে জড়িত করে পুলিশ দুর্বল ও বিকৃতভাবে মামলার এজাহারটি তৈরি করে দেয়।’২। চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর মামলা পাঠায় না সাত জেলা। অথচ ১৩৫ দিনে ৬৫ শতাংশ চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তির নজির থাকলেও এসব জেলা থেকে মামলা আসে না। এর মধ্যে ৪১ শতাংশ মামলায় সাজা পেয়েছে আসামিরা। রাষ্ট্রপক্ষ তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় খালাস পেয়েছে ২৪ শতাংশ আসামি। আর নির্দিষ্ট ১৩৫ দিনে নিষ্পত্তি করতে না পারায় আগের দায়রা জজ আদালতে ফেরত যাওয়া ৩৫ শতাংশ মামলার অধিকাংশই রায় ঘোষণার পর্যায়ে রয়েছে। গত ১২ বছরে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলা থেকে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো ৩৬৬টি চাঞ্চল্যকর হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং অস্ত্র মামলার রেকর্ড বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯৫টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ফেরত গেছে ১৩৭টি মামলা। নিষ্পত্তির মধ্যে ১২৩টি মামলায় দণ্ডিত হয়েছে আসামিরা। খালাস পেয়েছে ৭২ মামলার আসামি। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির নজির থাকলেও গত ১২ বছরে রাঙামাটি জেলা থেকে চাঞ্চল্যকর কোনো মামলা পাঠানো হয়নি ট্রাইব্যুনালে। ২০০৬ সালে ফেনী জেলা থেকে সর্বশেষ মাত্র একবার পাঠানো হয়েছিল চারটি মামলা। ২০১১ সালে নোয়াখালী জেলা থেকে মাত্র একবার আটটি মামলা পাঠানো হয়েছিল। টানা সাত বছর চাঞ্চল্যকর কোনো মামলা পাঠায়নি লক্ষীপুর জেলা। সংখ্যায় কম হলেও নিয়মিত মামলা পাঠাচ্ছে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা। চট্টগ্রামের অধিক মামলা থাকায় সচল থাকছে ট্রাইব্যুনালটি। অথচ ১৩৫ দিনের মধ্যে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ থাকলেও এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাত জেলার ভিকটিম পরিবারের স্বজনরা। উল্টো জেলাগুলোর দায়রা জজ আদালতে বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়া। সমকালের অনুসন্ধানে সাত জেলা থেকে ট্রাইব্যুনালে মামলা না আসার পেছনে খুঁজে পাওয়া গেছে প্রধানত চারটি কারণ। এগুলো হচ্ছে, জেলার চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দিলে জেলা পিপিদের কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যায়। সে সঙ্গে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, মামলার শুনানিতে পেশাগত দক্ষতা দেখানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং মিডিয়ায় প্রচার না পাওয়া। চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি আইয়ুব খান বলেন, ‘বিভাগের ১১ জেলার মধ্যে দু-তিনটি ছাড়া অন্য জেলাগুলো থেকে ট্রাইব্যুনালে কালেভদ্রে মামলা পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট জেলার পিপিরা তাদের কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাওয়া, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানা কারণে জেলার চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে আগ্রহ দেখান না।’বিভাগীয় মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান বলেন, ট্রাইব্যুনালে যেসব জেলা থেকে মামলা পাঠানো হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভিকটিমদের স্বজনদের ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, এক যুগ ধরে ট্রাইব্যুনালে মামলা পাঠানো হচ্ছে না- এ বিষয়টি জানা নেই। ৭ জেলায় ঝুলে আছে ৬৭টি মামলা। মামলা না পাঠালেও বিভাগের সাত জেলায় ঝুলে আছে চাঞ্চল্যকর ৬৭টি হত্যা, ধর্ষণ ও বিস্ফোরক মামলা। এর মধ্যে রয়েছে ২০১১ সালে রাঙামাটির স্কুল শিক্ষার্থী বিশাকা চাকমা হত্যা ও ধর্ষণ মামলা, শিক্ষার্থী সুজাতা চাকমা ধর্ষণ ও হত্যা মামলা, রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের ঘটনায় বিচারাধীন আটটি মামলা, খাগড়াছড়ির মহালছড়ির রূপন মহাজন হত্যা মামলা, বান্দরবানের লামায় চাঞ্চল্যকর ত্রিপল মার্ডার হত্যা মামলাসহ কক্সবাজারের ১৩টি, চাঁদপুরে ১৩টি, নোয়াখালীতে ১২টি, লক্ষীপুরে ১০টি, রাঙামাটিতে ৬টি, বান্দরবানে ৭টি ও খাগড়াছড়ির ৫টি চাঞ্চল্যকর মামলা।৩। টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় দুলাল (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। বুধবার (৩০ মার্চ ২০১৬) দুপুরে শহরের শহীদনগর আলআমিন রোড ডিয়ারা সুকুমপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুলাল হোসেন ওই এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে। ভুক্তভোগী শিশুটির মা জানান, বেলা পৌনে ১২টার দিকে পাশের বাড়ির এক মেয়ের সঙ্গে খেলছিল শিশুটি। এক ঘণ্টা পরেও বাসায় ফিরে না আসায় মেয়েকে খুঁজতে বের হন তিনি। শিশুটির বান্ধবী জানায়, সে দুলালের ঘরে আছে। দুলালের ঘরের বাসায় গিয়ে তিনি তার মেয়েকে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পান। দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির বাবা জানান, টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দুলাল তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে যায় বলেছে শিশুটি। এসব কি হচ্ছে। দেশের ভেতরে আজ গড়ে উঠেছে এক একটি সিন্ডিকেট। এরা যা ইচ্ছে তাই করছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আজ এগিয়ে যাচ্ছে অসহায়ত্বের দিকে। অনেক প্রশ্ন গোটা দেশজুড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের সুরাহা হয়নি। এখন খুব নগ্নভাবে দেশে ধর্ষণ খুন বেড়েছে। এর দায় কার? কেউ কি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন? আমরা দেখছি মন্ত্রী ও সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা স্ববিরোধী কথা বলছেন। সরকার পক্ষের নেতাদের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মীরা খুন হচ্ছে। বড় দুঃখ ও বেদনাদায়ক এসব ঘটনা।রাজনীতি বলে, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোই শ্রেয়। যারা ক্ষমতায় আছেন তারা জানেন তাদের প্রতিপক্ষ কে? তাই সেটা জেনেই তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে। এমনভাবে কোনো রাষ্ট্র চলতে পারে না।মানুষ দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়লে রুখে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে যদি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এর দায় নেবে কে?-------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২ এপ্রিল ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:১৯
false
hm
ফাঁস নেহারুল শুধু সমুদ্রের গর্জন শুনতে পান যেন। আর সেই মত্ত কল্লোল চিরে যেন বহুদূর থেকে সার্সির গানে মীড় হয়ে ভেসে আসে অ্যামবুলেন্সের হুঁশিয়ারি সঙ্কেত। শহরের পথে নীরন্ধ্র যানজট বসন্তের ভোরে তন্দ্রাতুর সাপের মতো বিরক্ত আলস্যভরে নড়েচড়ে রোগীবাহী যানটিকে গন্তব্যের দিকে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। চাকা লাগানো খাটিয়ার ওপরে শুয়ে নিহাদ ইসলাম নেহারুল অর্ধচৈতন্যের ঘোরে সাগরের ডাক শোনেন কেবল। খাটিয়ার চাকা যাতে গড়ানোর সুযোগ না পায়, তার জন্যে বিশেষ ছিটকিনের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ব্যবহারবাহুল্যে তাদের বজ্র আঁটুনি ক্রমশ শিথিল হয়ে এসেছে। সেই ফস্কা গেরোর কল্যাণে অ্যামবুলেন্সের চলার তালে খাটিয়ায় শুয়ে ঈষৎ দুলছেন নেহারুল, তাঁর কেবলই মনে হচ্ছে তিনি একটি জীর্ণ ভেলায় চড়ে সাগরে ভাসছেন, আর দূর থেকে ভেসে আসছে কান্নার সুর মেশানো গুনগুন। গ্রাম সম্পর্কের ভাগনে শহীদুল খাটিয়ার পাশে অ্যামবুলেন্সের আসনে বসে আছে। বুকের জমাট ব্যথাটা নেহারুলের দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দিয়েছে, তিনি তবু ভাবেন, শহীদুল বড় উদ্বিগ্ন এখন। সে হয়তো সজল চোখে নির্ণিমেষ চেয়ে আছে তাঁর দিকে, তার ঠোঁট নিঃসাড়ে নড়ছে, অবোধ্য সব আরবি দোয়া হয়তো সে পাঠ করে যাচ্ছে সমানে। ডালিয়া বড় অসময়ে মেয়েকে দেখতে চলে গেলো আমেরিকা। এখন ডালিয়ার থাকার কথা তাঁর পাশে। বেশি সময় তো হাতে নেই আর। শুধু দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের সাক্ষী হিসেবেই নয়, টাকাপয়সা অনেকখানিই ডালিয়ার আর ডালিয়ার বোনের অ্যাকাউন্টে আছে। কোনো ক্রমে যদি বেঁচে যান তিনি, বিলের অঙ্ক মেটানোর মতো টাকা তার হাতে এই মুহূর্তে নেই। হয়তো জটিল সব শল্যোপচার করতে হবে, হয়তো তাঁর হৃৎপিণ্ডটি খুলে নিয়ে একটি যন্ত্র দিয়ে বাকি দেহে রক্ত সঞ্চালন করতে হবে, হয়তো কৃত্রিম কোন অঙ্গ গুঁজে দিতে হবে ধুকপুক করতে থাকা জটিল প্রত্যঙ্গটির কোনো প্রকোষ্ঠে। আবারও সাগরের গর্জন মন্দ্রতর হয়ে ওঠে। শুয়োরের বাচ্চা এপিএস টাকাগুলো মেরে না পালালে আজ ডালিয়ার অ্যাকাউন্টে হাত না দিলেও চলতো। তিনি গদি হারানোর পর একটা মুহূর্তও নষ্ট করেনি হারামজাদা, সটকে পড়েছে। নেহারুল মনে মনে এপিএসের কমিশন বাদে মোট টাকার অঙ্ক স্মরণ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সে জটিল হিসাবে মস্তিষ্ক তাকে একটুও সহযোগিতা করে না। সে শুধু শোনায় সাগরের গর্জন, দূরাগত সাইরেনের আর্তনাদ আর এপিএসের অতীত আশ্বাস, "স্যার আপনি কিচ্ছু চিন্তা কইরেন না। জান থাকতে কোনো সমেস্যা হইতো না।" কিন্তু সমেস্যা হয়ে গেছে। পদচ্যুত মন্ত্রীর মতো উত্তপ্ত জিনিস এই দেশে দ্বিতীয়টি নেই। কেউ তাকে স্পর্শ করতে সাহস পায় না, পাছে সে-ও দগ্ধ হয়। দুদকের ঝামেলা এড়াতে ডালিয়া বদলির খ্যাপের টাকাগুলো নিজের বোন, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের ননদের অ্যাকাউন্টে ভাগ করে ছড়িয়ে রেখেছিলো। বিকেলে টেলিভিশনে খবরটা আছড়ে পড়ার পরই তারা সবাই গলা শুকানো শুরু করে দিলো। হাঁটুর বয়সী মেয়েগুলোও এখন শেয়ালের মতো চালাক হয়ে গেছে। মালয়েশিয়ায় মাসের পর মাস প্রমোদ ভ্রমণের স্মৃতি গা থেকে কচুপাতার পানির মতো ঝেড়ে ফেলে অবলীলায় বলে ফেলে, আঙ্কেল, এখন তো একটু সমস্যা হবে, রাইট? অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে নিয়ে যান প্লিজ, আই থিঙ্ক উই মাইট গেট ফ্রিস্কড বাই দিস ব্লাডি দুদক। তখনও দুদকের ঝামেলা শুরু হয়নি। নেত্রীর কাছ থেকে এইটুকু সুবিধা অন্তত তিনি আশা করতেই পারেন। একটু গুছিয়ে নেওয়ার সময় পেয়েছিলেন নেহারুল। কিন্তু এপিএস আলামিনের গোপন ফোনে তখন রিং বাজলেও কেউ ধরে না। স্মার্ট ফোনের হালখাতায় "তালুকদার" নামটার ওপর টোকা দিতে দিতে আঙুল ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। ডালিয়ার মুখ তখন পাথরের মতো শক্ত, বিরোধী দলের মতো গোমড়া। আলামিন তালুকদার এভাবে পালাবে, নেহারুল ভাবেননি। ডালিয়া বহুবার তাঁকে বলেছিলো, এই এপিএসের জাতকে বিশ্বাস কোরো না, সময় থাকতে টাকাগুলো দিয়ে যেতে বলো। "সময় থাকতে" কথাটা পছন্দ করেননি নেহারুল। সময় থাকতে মানে কী? তাঁর সময় থাকবে না-ই বা কেন? ওপরমহল তো বরাবরই তাঁর ওপর সন্তুষ্ট ছিলো। "পাকা" হিসাবে আগের দলের প্রথম সারির নেতৃত্ব ছেড়ে তিনি চলে এসেছিলেন, কাঁচাদের মতো সময়ের অভাব তাঁর হবে কেন? কিন্তু রাজনীতির বালিঘড়ি হাতির দাঁতের মতোই, দুই কিসিমের। প্রকাশ্য বালিঘড়িটির রন্ধ্রে বালি জমাট বেঁধে অচল হয়ে থাকে, আর গোপন বালিঘড়িটি চুপচাপ নিভৃতে শেষ কণাটিকেও নিচের কুঠুরিতে ঠেলে পাঠায়। এপিএস হয়তো সেই ঘড়ি দেখেই হাতঘড়িতে সময় মেলাতো। মাদারচোদ আলামিন। শহীদুল একটু ঝুঁকে আসে, তার হাত ধরে বলে, "হুরু মামু, হুনরায়নি? হাসপাতাল যাইরাম অখন।" নেহারুল শহীদুলকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন, কী বলবেন, ভেবে পান না, কিন্তু তাঁর ঠোঁট শুধু কেঁপে ওঠে, কোনো শব্দ বেরোয় না। আলামিনের পেছনে দুদক লাগবে, তাতে সন্দেহ নেই, সে জাহান্নামে যাক। কিন্তু টাকাগুলো মার যাবে তাঁর। এক কোটি দুই কোটি নয়, কোটি কোটি টাকা। ডালিয়া বহুদিন ধরে ঘ্যানর ঘ্যানর করে আসছে, টরন্টোয় একটা বাড়ি কিনতে হবে, ছোটো মেয়ের জামাই নাকি ইদানীং খুব ছটফট করছে সান দিয়েগোতে একটা বড় বাড়ি কেনার জন্যে, তাকেও সামাল দিতে হবে। একটা পরিবারের স্বপ্নকে পকেটে নিয়ে পালিয়ে গেলো খানকির ছেলে এপিএস। সমুদ্র গর্জন প্রবলতর হয়, কিন্তু সার্সির এক লয়ের কান্না থেমে যায় হঠাৎ। অ্যামবুলেন্সের দরজা খুলে দুই অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মী দক্ষ হাতে নামিয়ে আনে তাঁকে। আজ গদিটা কোমরের নিচে থাকলে তিনি ইবনে কালবুন হাসপাতালে আসতেন না। হয়তো নিরালা দিনে তাঁর হৃৎযন্ত্র এভাবে হেঁচকিও তুলতো না। সিঙ্গাপুরে চেকআপ করে আসতেন একবার, কিংবা এসএসএফের পাহারায় রাস্তা ফাঁকা করে অ্যামবুলেন্স তাঁকে নিয়ে যেতো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ঝকঝকে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে। ডালিয়া অবশ্য অনেকবার বলেছিলো, মিন্টো রোডের বাড়িটায় আরো কয়েক মাস বলে কয়ে থেকে যেতে। তাঁর মন সায় দেয়নি। উত্তরার বাড়িটায় বিশাল ফ্ল্যাটটা ফাঁকা ফেলে রেখে কী লাভ? মেয়েরা বেড়াতে এলে ওখানে থাকে কেবল। কিন্তু ঐ বাড়িটার ধারে কাছে ভালো হাসপাতাল নেই। মিন্টো রোডে থাকলে এসব ঝামেলা হতো না। খাটিয়ার চাকার খিল খুলে যায়, ইমার্জেন্সিতে নিয়ন্ত্রিত দ্রুত বেগে ঢুকে পড়েন নেহারুল। হাসপাতালের নিচতলার সাদা প্লাস্টার করা ছাদ অনেকখানি উঁচুতে, নেহারুলের হঠাৎ মনে হয়, তিনি আবার শিশু হয়ে গেছেন, ছেলেবেলায় গ্রীষ্মে মেঝেতে শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। ইমার্জেন্সির মেডিক্যাল অফিসার দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে খাটিয়ার পাশে। গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানো যুবক, বয়স বেশি নয়, মুখে ক্লান্তির হলরেখা। শহীদুল হড়বড় করে কী যেন বকে যায়। নেহারুল আবার সাগরের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পান কেবল। বুকের ব্যথাটাকে তাঁর ক্রমশ অলঙ্ঘ্য মনে হয়। অপটু ঘটকের কারণে জুটে যাওয়া মুখরা স্ত্রীর মতো ব্যথাটা জীবনের বাকিটা সময়ের জন্যে তাঁর দখল নিয়ে নেয়। নেহারুল প্রাণপণে চেষ্টা করেন জেগে থাকতে, কিন্তু একটা নিশ্চিন্ত তন্দ্রা তাঁর পেশীকে গ্রাস করে একটু একটু করে চোখের পাতার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। শহীদুলকে ইমার্জেন্সি থেকে চলে যাওয়ার ইশারা করে ছোকরা ডাক্তার, সে দ্বিধাভরা চোখে নেহারুলের স্তিমিত চোখের দিকে তাকায়। নেহারুল দেখতে পান, মাঝবয়সী এক ডাক্তার হনহন করে এগিয়ে আসছেন খাটিয়ার দিকে। শহীদুলকে হাঁকিয়ে দিয়ে অন কলে থাকা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার লাহাব বলেন, "পেশেন্টের কী অবস্থা বজলু?" মেডিক্যাল অফিসার বজলু আড়চোখে নেহারুলের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে ডাক্তার লাহাবকে বলে, "স্যার, বুঝতে পারছি না।" নেহারুল শরীর ও মনের সকল শক্তিকে দুই কানে জড়ো করে এনে শুনতে পান, ডাক্তার লাহাব বলছেন, "ক্যান কী হইছে?" বজলু নিম্নস্বরে কথা বলে, কিন্তু সব কথা যেন এক বিশাল চোঙের ভেতর দিয়ে বিবর্ধিত হয়ে নেহারুলের কানে প্রতিধ্বনিসহ আছড়ে পড়ে, "অসুখটা কমন পড়তেছে না স্যার। আপনি একটু দেখেন।" নেহারুলের বিবশ শরীরে দুই ডাক্তারের স্টেথোস্কোপ পায়চারি করে কিছুক্ষণ। তারপর একটু কেশে ডাক্তার লাহাব বলেন, "আমারও কমন পড়তেছে না। একটু ফেসবুকে দ্যাখো দেখি, কোনো সাজেশন পাওয়া যায় কি না?" বজলু অ্যাপ্রনের পকেট থেকে একটা বড়সড় স্মার্ট ফোন বের করে এনে ব্যস্ত হাতে ফেসবুক ঘাঁটতে থাকে। "কোন পেজে দেখমু স্যার? "ঐ ডাক্তার ছেড়ি স্টেথো গলায় না দিয়া বুকে দে কামে দিবো", এইটাতে কি পামু?" ডাক্তার লাহাব বিরক্ত হয়ে বলেন, "এইসব বালছাল পেজে কি অসুখের সাজেশন পাইবা নাকি? একটা গ্রুপ আছে না, "বুক থাকলে ব্যথা থাকবে", যেইখানে সব কার্ডিও সাজেশন পাওয়া যায়? ঐটাতে দেখো।" বজলু লজ্জিত মুখে ফোনে আঙুল চালিয়ে বলে, "সরি স্যার, আমি মনে হয় ঐ গ্রুপটায় মেম্বার না। মেম্বার ছাড়া আর কাউরে সাজেশন দেখতে দেয় না।" লাহাব বজলুর গাধামোতে বিরক্ত হয়ে নেহারুলের দিকে তাকান। নেহারুল কিছু একটা বলতে চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর সব কথা আটকে থাকে বুকের ভেতর। বুকের ভেতরের ব্যথাটা এবার যেন বুক চিরে বেরিয়ে এসে তাঁর বুকের ওপর বসে হাসতে হাসতে বলে, এই ছেলেগুলো বছর দশেক আগে ফেসবুক থেকে, ফোটোকপির দোকান থেকে, নোটবইয়ের দোকান থেকে খামের ভেতরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্ন আগাম পেয়ে পরীক্ষায় বসেছে, জিপিএ ফাইভ পেয়ে পরীক্ষায় পাশ করে ডাক্তারি পড়তে ঢুকেছে। প্রশ্ন ফাঁসের চারাগাছ তারপর আস্তে আস্তে শিক্ষাবোর্ডের দেয়াল টপকে ঢুকে পড়েছে প্রকৌশলীর ষান্মাসিকের চূড়ান্ত পরীক্ষায়, ডাক্তারের আইটেম আর কার্ডে, আইনজীবীর বার প্রবেশের মৌখিকে। ওরাই এখন পাশ করে এসে দেশটার হাল ধরেছে। "সাজেশন" ডাকনামে সমাদৃত ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র ছাড়া ওরা কোনো সমাধান করতে শেখেনি। গোড়ার দিকটায় অনেকে হাউকাউ করেছিলো বটে, নেহারুল সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনে বুক টানটান করে মিষ্টি হেসে বলেছেন, সবই অপপ্রচার। সরকারের বিরুদ্ধে একটি মহল চক্রান্ত করছে। গুজবে কান দেবেন না। প্রশ্ন ফাঁসের সব অভিযোগকে নেহারুল নিপুণ হাতে ঝাড়ু দিয়ে পাপোষের নিচে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সারা দেশে সবাই তাঁকে ভদ্রলোক হিসাবে চেনে বলে তেমন শোরগোল ওঠেনি। আহা, তখন তাঁর গদি ছিলো। ছিলো এপিএস, এসএসএফ আর সিঙ্গাপুর। নেহারুলের বুকের ভেতরে ঘড়ঘড় শব্দ হয়, যেন পাপোষের নিচ থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বাতাসকে নিজের নাম শোনাতে চায় ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্রের স্তুপ। লাহাব বজলুর দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেন, "মনে হয় বাঁচাইতে পারলাম না। দোয়া ইউনূস পড়তে কই, খাড়াও।" নেহারুল চিৎকার করে বলতে চান, আমাকে খাকি হাসপাতালে নিয়ে যাও, সিঙ্গাপুরের টিকেট কাটতে বলো শহীদুলকে, ডালিয়াকে দেশে ফিরে আসতে বলো। কিন্তু কোনো কথা বেরোয় না তাঁর মুখ দিয়ে। ব্যথাটা শুধু মিটিমিটি হেসে তাঁর গলা টিপে ধরে চোখে চোখ রেখে বলে, সব অপপ্রচার। ডাক্তার লাহাব আলামিন তালুকদারের মতো বিনীত হেসে বলে, "কিচ্ছু চিন্তা কইরেন না। কোনো সমেস্যা হইতো না। দোয়া ইউনূস পড়েন।" শ্বাসনালীতে ব্যথার মুঠি শক্ত হয়ে আসে, নেহারুলের কানে সমুদ্রের ডাক আরো ঘনীভূত হয়। দোয়া ইউনূস মনে নেই তাঁর। হয়তো ফেসবুকের কোনো পেজে দোয়া ইউনূসের সাজেশন পাওয়া যাবে? আইপ্যাডটা হাতের কাছে থাকলে তিনি খুঁজে দেখতে পারতেন। তাঁর ছোটো মেয়ে গত জন্মদিনে কিনে পাঠিয়েছিলো, অবসরে ফেসবুকে নাতনির ছবি দেখার জন্যে। সাথে ছোট্টো একটা চিরকুটে লিখে দিয়েছিলো, বাবা, এখন আর বাবুর ছবি দেখার জন্য তোমাকে সেক্রেটারি ডেকে ল্যাপটপ খোলাতে হবে না। ট্যাবলেট পাঠালাম, পকেটে রাখবা। আল্লাহ হাফেজ। নেহারুল শক্তির শেষ সঞ্চিতি ভেঙে ডাক্তার লাহাবকে বলেন, "ট্যাবলেট, আমার ট্যাবলেট ...?" ডাক্তার লাহাব নিথর নেহারুলের গলায় আঙুল ঠেসে ধরে পালস পরখ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে দার্শনিকের বিষণ্ণতা নিয়ে মেডিক্যাল অফিসার বজলুকে বলেন, "ট্যাবলেট দিয়া কি আর সব রোগের চিকিৎসা হয়?"
false
rg
গল্পপাঠের কাছে আমার গল্প বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার ১. আপনার লেখা কোন গল্পটি সেরা বলে মনে হয়? নিজের লেখা কোন গল্পটি সেরা সেটা নিজের পক্ষে বলা খুব কঠিন। আমার সব গল্পই আমার সন্তানের মত। সেই গল্পগুলো'র মধ্যে কারো হয়তো চেহারা সুরত ভালো। কারো হয়তো গায়ের রঙ কালো। কারো হয়তো ক্যানভাস সুদৃঢ়। কারো হয়তো বুনট ভারী যুতসই। কারো হয়তো কাঠামো ভারী টেকসই। কারো হয়তো স্থান-কাল-পাত্র আবেগঘন। কারো হয়তো ভাষার ঢং আঞ্চলিক। কারো হয়তো খেয়ানৌকায় ওঠার তাড়া। কারো হয়তো পকেটে নেই ভাড়া। এমন অসংখ্য মিশেলে আমার গল্পগুলো সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে নিজের সেরা গল্পটি বেছে নেওয়া আমার জন্য বেশ দুরুহ। তবে আমার গল্পগুলো যখন আমি পাঠ করি, কিছু কিছু গল্পের মধ্যে আমার এখনো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। কিছু কিছু গল্পের মধ্যে এখনো আমি নিজেই ডুবে যাই। কিছু কিছু গল্পের মধ্যে এখনো আমি অতল গাঙের ঠাই খুঁজে পাই। সেভাবে বললে বলতে পারি, আমার নিজের লেখা বেশকিছু গল্পই আমার বেশ পছন্দের। সেই তালিকাও বেশ লম্বা। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং সময়ের বিচারে আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে 'শিখা অনির্বাণ' গল্পটির কথা।'শিখা অনির্বাণ' গল্পটি আমার দ্বিতীয় গল্প সংকলন 'সোনার কংকাল' বইয়ে আছে। ২. গল্পটির বীজ কিভাবে পেয়েছিলেন? ২০০০ সালে আমার সার্টিফিকেট অনুযায়ী সরকারি চাকরির বয়স সীমা শেষ হয়। সপ্তদশ, অষ্টাদশ ও বিশতম বিসিএস পরীক্ষায় পর পর তিনবার আমি ভাইভা দেবার পরেও বিসিএস হল না। তখন মন মেজাজ ভারী খারাপ। সরকারি চাকরিতে আর কোনো আবেদন করারও সুযোগ নেই। ওই সময় পরিবারের সঙ্গেও সম্পর্কে ভারী টানাপোড়ন। একটা প্রেম করতাম, সেই যুবতীও চলে গেল। চাকরি নাই। কাজকর্ম নাই। ফুলটাইম বেকার। কোথাও চাকরির আবেদন করতেও মন থেকে সারা পাই না। নানান টাইপের নেশা করি। হরেক রকম নেশা। নেশার মধ্যেই ডুবে থাকি সেই সময়। তো একরাতে আমার সকল সার্টিফিকেট-মার্কসিটগুলো নিয়ে সন্ধ্যা থেকে নানান গবেষণা করলাম। আমি তখন থাকি কাঁঠালবাগানের এক চিলেকোঠায়। আমরা থাকি চারজন। ঈদের ছুটির সময় ওটা। অন্যরা যার যার বাড়িতে গেছে। আমি একা একা ঘোরলাগা নেশা করছি। তো ঠিক রাত বারোটা এক মিনিটে আমার সকল সার্টিফিকেট-মার্কসিট গুলো আগুন দিয়ে পোড়ালাম। সেই আগুন যতোক্ষণ ছিল, ততোক্ষণ সেই আগুন দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে টেনেছি। তারপর আমার এক গল্পকার বন্ধু রাজীব নূরকে ফোন করলাম। বললাম, আমি এখন সুইসাইড করব। কিন্তু সুইসাইডাল নোটে কি লিখতে হয় বুঝতে পারছি না। কি লেখা উচিত? ওপাশ থেকে রাজীব নূর বললো, রেজা আপনি কোথায়? বললাম, বাসায়। - আপনি কি একা?- হ্যা- আমার ফকিরাপুল থেকে আসতে একটু লেট হবে। আপনি অন্তত সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। আমি আসি। আপনার সুইসাইড করার কারণ শুনি। তারপর আমার সামনে যা করার কইরেন।তারপর ফোনে অনেকক্ষণ চিৎকার করে কাঁদলাম। রাজীব নূর যেভাবে পারলো শান্তনা দেবার চেষ্টা করলো।তারপর কাগজ কলম নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। কিন্তু কি লিখব বুঝতে পারছি না। আমি সুইসাইড করব এটা তখনো শতভাগ নিশ্চিত। হঠাৎ মনে হল, জাপানি লেখক ওসামু দোজাই'র 'দ্য সেটিং সান' উপন্যাসে সেই লোকটি কিভাবে সুইসাইড করেছিল, সেটি একটু চেক করি। তো ওটা চেক করতে করতে রাজীব নূর এসে হাজির। তারপর কি হল? আমার সুইসাইড করা হল না।তখন একটি গল্পের বীজ আমার মাথার মধ্যে দানা বেঁধেছিল। কিন্তু গল্পটি আর লেখা হয় না। কারণ গল্পের চরিত্র কারা, গল্পটি কি নিয়ে, গল্পের স্থান কাল কেমন, গল্পের বিষয়-আশয় কি এসব আর মাথায় ঠিক কাজ করে না।কিন্তু 'ঠিক রাত বারোটা এক মিনিটে ফাঁসি হবে' এই লাইনটা ঘুরে ফিরে মাথায় ঘুরতে থাকলো। গল্পটি আর আমার কাছে ধরা দেয় না। আমি আর গল্পটি লিখতেও পারি না। গল্পটি দূর আকাশে উড়ে বেড়ায়, ডানা মেলে নিজের মত ঘুরে বেড়ায়। আমি যখনই তাকে নিয়ে ভাবতে বসি, সে আরো সুদূরতম দূরে অবস্থান করে। ধরা দেয় না। কথা কয় না। সে ভারী তাল বাহানা করতে লাগলো। আমিও সময় সুযোগ খুঁজতে লাগলাম। ফাঁদ পাতার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনো কাজ হল না। গল্পটি কেবলই সাঁই সাঁই করে আমার মাথায় ঘা মেরে দূরে মিলিয়ে যেতে থাকলো। হয়তো সেই রাতের ওই ঘটনা থেকেই আমার 'শিখা অনির্বাণ' গল্পটির বীজ রোপিত হয়েছিল। আমি ঠিক জানি না। তবে এটা আমার একটা আন্দাজও হতে পারে। ৩. গল্পের বীজটির বিস্তার কিভাবে ঘটল? শুরুতে কি থিম বা বিষয়বস্তু নিয়ে ভেবেছেন? না, কাহিনীকাঠামো বা প্লট নিয়ে ভেবেছেন? 'শিখা অনির্বাণ' গল্পটির কথাই যদি বলি, এই গল্পের বীজ ঠিক কিভাবে বিস্তার ঘটলো আমি নিজেও বুঝতে পারি না। প্রথমে মনে হচ্ছিল, লোকটার যে ফাঁসি হবে, কি কারণে হবে, কি তার অপরাধ? তো সেই অপরাধ গুলো বিশ্লেষন করতে করতে পেলাম যে, লোকটার ফাঁসি হবার মত তেমন কোনো অপরাধ নেই। তবে লোকটা খুব গোঁয়ার টাইপের। লোকটা নাস্তিক। তখণই আবিস্তার করলাম, হ্যা, নাস্তিকতার দায়ে লোকটাকে ফাঁসি দেওয়া হতে পারে। তারপর আবার লোকটার কারা প্রতিপক্ষ সেই ভাবনায় পেয়ে বসলো। সেই ভাবনার কোনো কিনার পাই না। পরে ঠিক করলাম, হয়তো রাষ্ট্রপক্ষই লোকটাকে ফাঁসি দিতে চাইছে। তারপর আসলো, লোকটার আর কি কি পরিচয় থাকতে পারে সেই ভাবনা? সেই ভাবনা থেকে অটোমেটিক পাওয়া গেল যে, লোকটা স্বাধীনতা গানের নতুন সুরকার। এছাড়া আর কি কি পরিচয় আছে লোকটার? সেই ভাবনায় আর দিশা পাই না। এক সময় আকাশ বাণী'র মত সেই খবর আমার মাথায় উড়ে এলো যে, লোকটা হাঁটা শেখার আগেই সাঁতার শিখেছিল। লোকটা খুব পাতলা গড়নের ছিল। আর লোকটা ভারী একঘুয়েমি টাইপের। এক সময় সেই লোকটার একটা অবয়ব আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কিন্তু গল্পটি কিভাবে হবে সেই ভাবনায় আর কোনো কাঠামো তখনো পাই না। এভাবে কেটে গেল নয়টি বছর।না শুরুতে কেবল লোকটার কথাই ভেবেছি। গল্পের থিম বা বিষয়বস্তু নিয়ে একদম ভাবিনি। লোকটাকে চেনার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি শুরু থেকে। লোকটা যখন ধীরে ধীরে আমার কাছে পরিচিত হতে শুরু করলো, তখন থিমটা নিয়ে একটু ভাবা শুরু করলাম। কিন্তু সেই ভাবনাও ছিল এলোমেলো অগোছালো। তো এর মাঝেই একবার আমি গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। ঢাকা থেকে নাইট কোচে। টুঙ্গিপাড়া পৌঁছালাম রাত দুইটা আড়াইটার দিকে। পাটগাতী খেয়া পার হয়ে ওপারে গিয়ে আবার আমাকে হাঁটতে হবে নতুবা রিক্সা ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মধুমতী পার হয়ে ওপারে গেলাম। একটা রিক্সভ্রানও পেলাম। কিন্তু ভ্যানওয়ালা শৈলদহ বাজার পর্যন্ত যেতে রাজী। এখানেই তার বাড়ি। আমার সঙ্গে আরো দুইজন যাত্রী। সেই ভ্যানে উঠলাম। একটা পলিথিনে মুড়ি কিনে নিয়ে ভ্যানের সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসলাম। আমরা মোট চারজন। একজন বয়স্ক হুজুর। একটা দশ বারো বছরের বাচ্চা ছেলে আর ভ্যানওয়ালা। তিনজনের গন্তব্য শৈলদহ পর্যন্ত। তারপর আমি একা। শৈলদহ যাবার পর আমি হেঁটে রওনা দিলাম। পশ্চিম আকাশে চাঁদ তখন ডুবতে বসেছে। ঘোরলাগা সময়। একটু সামনে একটা জায়গা আছে যেখানে দুই জেলার মিলনস্থান। বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার সঙ্গম স্থান। আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, দুই থানার সঙ্গম স্থান। চিতলমারী ও নাজিরপুর থানার মিলনস্থল। তো ওখানে বড় রাস্তায় একটা দোকান আছে। সেই দোকানের বাইরে লাইটপোস্টে একটা বিশাল লাইট। গোটা গ্রাম ঘুমিয়ে। কেবল একলা আমি ওই ত্রিমোহনায় বসে আছি। লাইটপোস্টের নিচে বসে থাকতেই মাথায় 'শিখা অনির্বাণ' গল্পটির থিমটি বিদ্যুৎ গতিতে চলে আসলো। ঝোলা থেকে ডায়েরি বের করে আমি গল্পের থিমটি তখনই লিখে রাখি।পরবর্তী সময়ে ওই রাতের ঘটনা নিয়ে আরেকটি গল্প লিখেছিলাম। 'দ্রাঘিমা'। ওই গল্পটিও আমার প্রিয় গল্পের একটি।৪. গল্পটির চরিত্রগুলো কিভাবে এসেছে? শুরুতে কতটি চরিত্র এসেছিল? তারা কি শেষ পর্যন্ত থেকেছে? আপনি কি বিশেষ কোনো চরিত্রকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে লিখেছেন? তাদের মধ্যে কি আপনার নিজের চেনা জানা কোনো চরিত্র এসেছে? অথবা নিজে কি কোনো চরিত্রের মধ্যে চলে এসেছেন? এই গল্পে ফাঁসি হওয়া লোকটির চরিত্রই প্রথম এসেছে। লোকটার কোনো নাম দেওয়া হয়নি। গল্পে কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গার নামও বলা হয়নি। কোনো সুনির্দিষ্টি নগর বা গ্রামের কথা বলা হয় নি। হতে পারে ওটা পৃথিবীর আদি বা শেষ কোনো নগর। হতে পারে ওটা পৃথিবীর শেষ কোনো গ্রাম। যেখানে সেই দেশের স্বাধীনতা চত্বর অবস্থিত। আবার এরকম কোনো নগর বা গ্রাম পৃথিবীতে ঠিক নাও থাকতে পারে। এটা আমার কল্পনাপ্রসূত। শুরুতে একটি চরিত্রই এসেছে। দীর্ঘদিন সেই একটি চরিত্রই আমার সঙ্গে দূর থেকে ভাব বিনিময় করেছে। আমার সঙ্গে বোঝাপড়া করেছে। আমাকে সুইসাইড করতে উদ্ভূদ্ধ করেছে। কিন্তু আমি গল্পটি না লিখে তো আর সুইসাইড করতে পারি না! পরবর্তী সময়ে আরো অনেক চরিত্র গল্পে এসেছে। কারো চরিত্রই সুস্পষ্ট নয়। তবে অনুমান করা যায়, সেই চরিত্রগুলো কি কি করেছে, কিভাবে কিভাবে করেছে, কখন কখন করেছে, কেন করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই চরিত্রগুলো দল বেঁধে এসেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে এসেছে। গুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে এসেছে। নানান দাবী নিয়ে এসেছে। নানান যুক্তি নিয়ে এসেছে। সেই চরিত্রগুলোও এই গল্পে নামহীন। আসলে গোটা গল্পেই সব চরিত্রগুলো নামহীন, কালহীন। কিন্তু গল্পের খাতিরে খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই তারা গল্পে এসেছে বলেই আমার মনে হয়। এই চরিত্রগুলো হয়তো আমার চেনা। হয়তো আমার খুব পরিচিত তারা সবাই। কিন্তু কারো সাথেই আমার সখ্যতা নেই। বন্ধুত্ব নেই। কিন্তু তাদের জন্য আমার মায়া আছে। তাদের জন্য আমার উৎকণ্ঠা আছে। তাদের জন্য আমার নির্ঘুম রাত আছে। তাদের জন্য আমার মনের মধ্যে সপ্তনদীর উজানের মত টান আছে। হয়তো তাদের সঙ্গে আমার জীবনের ভাগাভাগি। হয়তো তাদের সঙ্গে আমার কল্পনার উঠোনবাড়িতে ঘোরাঘুরি। হয়তো তাদের সঙ্গে আমার হাজার বছরের বন্ধুত্ব ছিল, আগামী হাজার বছর পরেও সেই সখ্যতা রয়ে যাবে। ব্যাপারটা ঠিক কথায় বোঝানো যাবে না। হয়তো দূর আকাশের উড়ে যাওয়া মেঘের গায়ে সেই সখ্যতার বার্তা কেউ লিখে রাখছে। হয়তো ভূবনডাঙ্গার কোনো ভাঙা সেতুর ওপারে দাঁড়িয়ে কেউ তাদের জন্য আমার মত অপেক্ষা করছে। অথবা তারা সবাই আমার চারপাশে ভারী লুটোপুটি খাচ্ছে। খিস্তিখেউর করছে। হয়তো তাদের সবাইকে আমি খুব চিনি। অথবা কাউকে একদম চিনিই না। গল্পে আমি কখনো কোনো চরিত্রের মধ্যে চলে আসি কিনা সেটা বলা খুব মুশকিল। হয়তো যে লোকাটার ফাঁসি হয়েছে, সে আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিল। সেই কথাটি শোনার জন্য হয়তো আমি সেই মধ্যরাতের গগণবিদারী জাগরণের মধ্যে লোকটার ফাঁসির সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। হয়তো লোকটাকে ফাঁসি দেবার জন্য আমিই লাল রুমাল ছুড়ে ছিলাম। হয়তো আমিই সেই ফাঁসি'র জল্লাদ ছিলাম। হয়তো আমি সেখানে স্রেফ একজন মাতাল দর্শক হিসেবেই উপস্থিত ছিলাম। নতুবা এতো বড় ঘটনা যে আমার চোখের সামনে ঘটলো, সেটা তো আমি দিব্যি দেখেছিলাম। নতুবা আমার কল্পনায় সেরকম একটি অনুরণন ঘটেছিল। অথবা ঠিক ওরকম একটি ফাঁসির মঞ্চের আশেপাশে আমি হয়তো বেড়ে উঠেছি। কোনটা যে ঠিক বলা আসলে মুশকিল! ৫. এই গল্পগুলোর দ্বন্দ্ব-সংঘাত কিভাবে নির্মাণ করেছেন? যে গল্পটির কথা বলছি, মানে 'শিখা অনির্বাণ' গল্পের দ্বন্দ্ব-সংঘাত কিভাবে নির্মিত হল, কিভাবে তা চিত্রিত হল, কিংম্বা আদৌ সেখানে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে কিনা, কিংম্বা আদৌ এটা কোনো গল্পের ক্যানভাস হয়েছে কিনা, আমি আজও জানি না। তবে আমার গল্পটি যেভাবে আমি নির্মাণ করেছি, এটাই আমি করতে চেয়েছিলাম। সেখানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত যতোটুকু অনিবার্য প্রয়োজনবোধ করেছি, হয়তো ততোটাই আমি বর্ণনা করেছি। যতোটা অপ্রয়োজনীয় মনে করেছি, ততোটা হয়তো ইচ্ছে করেই দেইনি। ৬. গল্পের পরিণতিটা নিয়ে কি আগেই ভেবে রেখেছিলেন? না, আমি গল্পের পরিনতি লেখা শেষ হবার আগেও জানতাম না। নয় বছর গল্পটি আমার মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। অনেকবার এটা লিখতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গেছি। ২০০৯ সালের ২৭ শে জানুয়ারি আমার মা মারা গেল। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কাউকে বোঝাতে পারছিলাম না। ৩০শে জানুয়ারি আমি ঢাকা ফেরত আসলাম। মনের মধ্যে উচাটন ঢেউ। কেউ বাহির থেকে সেই ঢেউয়ের নাগাল পায় না। কেউ সেই কষ্টের ক্ষরণ টের পায় না। আমি সেই ক্ষরণ দূর করতেই কাগজ কলম টেনে নিয়ে বসি। সেই বসাতেই 'শিখা অনির্বাণ' গল্পটি লিখে ফেলি। গল্পটি যখন আমার 'সোনার কংকাল' বইয়ের জন্য সিলেক্ট করি, তখন আবার একটু রিরাইট করেছিলাম। এমনিতে আমি অনেক রিরাইট করি। অনেক কিছু কাটছাট করি। অনেক কিছু নতুন করে যুক্ত করি। ঠিক তখন এই গল্পের পরিনতিটা লিখেছিলাম। আর তখনই মনে হয়েছিল, এটাই এই গল্পের পরিনতি। ৭. গল্পটি কদিন ধরে লিখেছেন? এক এর ভাষা ভঙ্গিতে কি ধরনের শৈলী ব্যবহার করেছেন? আগেই বলেছি, গল্পটি প্রায় নয় বছর আমার মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। এক রাতে নির্ঘুম গ্রামের রাস্তার লাইটপোস্টের নিচে এই গল্পের থিম লিখেছিলাম। আর আমার মায়ের মৃত্যুর পর আরেক রাতে এটি একটানা লিখেছিলাম। আর পরিনতি'র শেষ কয়েক লাইন কয়েক দিন পরে লিখেছিলাম। সেই হিসেবে এটি তিন বসায় লেখা। কিন্তু এই গল্পের বাস্তবরূপে আসতে সময় লেগেছে প্রায় নয় বছর। ৮. গল্পটিতে কি কিছু বলতে চেয়েছিলেন? সুস্পষ্ট করে বললে বলতে হয় না কিছুই বলতে চাই নি। আর ঝাপসা করে বললে বলতে চাই যে, আমার সুইসাইডাল নোট লেখার প্রক্ষাপটেই এই গল্পটির আগমন। কিন্তু যেহেতু আমি এখনো সুইসাইড করিনি। তাই সত্যি করে কিছু বলতে চেয়েছি কিনা এখনো আমার কাছেও বিষয়টি অস্পষ্ট। নতুবা লোকটি হয়তো নিজেই স্বেচ্ছায় ফাঁসি নিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল। হা হা হা...৯. গল্পটি লেখার পরে কি আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন? আপনি কি মনে করেন--আপনি যা লিখতে চেয়েছিলেন, তা লিখতে পেরেছেন এই গল্পটিতে? হ্যা, এই গল্পটি লেখার পর আমার শরীর থেকে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও ঘাম ঝড়েছিল। শরীর খুব হালকাবোধ করেছিলাম। গল্পটি লেখা শেষ করে আমি ঠাণ্ডা জলে স্নান করেছিলাম। মাস্টারবেশন করেছিলাম। স্নান শেষে শীতের জামা পড়ে সিগারেট ধরিয়ে গল্পটি যখন আবার পড়ছিলাম, তখন সত্যিই আমি খুব স্বস্থি পেয়েছিলাম। আমি যা লিখতে চেয়েছিলাম, এই গল্পে হয়তো ওই লোকটি আমাকে দিয়ে তাই লেখিয়ে নিয়েছে। নতুবা ওই লোকটি'র এভাবে ফাঁসি হল, আর কেউ সেই খবর নিয়ে কেন উতলা হল না, সেটি রটিয়ে দেবার জন্য হয়তো লোকটি আমাকে তার মুখপাত্র বানিয়েছিল। নতুবা আমি কেন লিখতে গেলাম? অথবা এমনও হতে পারে যে, বদমায়েশ লোকটা আমাকে স্রেফ পাগল ঠাওরে এভাবে বিনা পয়সায় কিছু সময় ঘুরিয়েছে। আর আমি তার পরিনতি'র খুটিনাটি কেবল নোট আকারে লিখে গেছি। অথবা এটা স্রেফ একটা নস্টালজিয়া, সেই ঘোরের মধ্যে আমি কি লিখেছি, বা কতোটা লিখতে পেরেছি, তা নিজেও জানি না। ১০. এই গল্পটি পাঠক কেনো পছন্দ করে বলে আপনার মনে হয়? এটা তো আমি জানি না। 'শিখা অনির্বাণ' গল্পটি আদৌ কোনো পাঠকের পছন্দ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এটি আদৌ গল্প হয়েছে কিনা তাও আমি জানি না। আর এই গল্প কোনো পাঠক কেন পছন্দ করবে, সেই যুক্তিও আমার জানা নেই। যদি কোনো পাঠক এটি পছন্দ করেন, তাহলে সেই মহান পাঠকই সেই সুনির্দিষ্ট যুক্তিগুলো বলতে পারবেন। আমার পক্ষে এটা বলা মুশকিল। সত্যি এই প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই। ধন্যবাদ।
false
hm
বিলুপ্তি ১. "আপা, রেডি হন।" ক্যামেরাম্যান সাইফুল কাঁধে ক্যামেরা তুলে নেয়। নাজনীন মাইক্রোফোন হাতে ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ায়। "চুলটা ঠিক আছে, সাইফুল ভাই?" সাইফুল বুড়ো আঙুল দেখায়। "ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু ...," ওয়ান পর্যন্ত আসতে আসতে তার কণ্ঠস্বর স্তিমিত হয়ে আসে, গো-টা শোনাই যায় না। "আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান হেলিবন্দরের অদূরে। একটু পরেই এখানে এসে ল্যান্ড করবে একটি বিশেষ হেলিকপ্টার। বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন হেলিকপ্টার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বেল হেলিকপ্টার টেক্সট্রন ও রসুন্ধরা এভিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত অনন্য মেডিক্যাল হেলিশিপ বেল-রসুন্ধরা এস এ এইট মডেলের এই হেলিকপ্টারে চড়ে আজ গাইবান্ধার প্রত্যন্ত সাঘাটা থেকে রাজধানীতে চিকিৎসার জন্যে এসে নামছেন একজন অত্যন্ত বিশেষ ব্যক্তিত্ব।" নাজনীন একটু থামে, সে জানে, টিভির পর্দায় এখন ভাসছে বেল-রসুন্ধরার হেলিকপ্টারের একটি পনেরো সেকেন্ডের নিঃশব্দ বিজ্ঞাপন। "আজ যিনি এই হেলিশিপ থেকে নামবেন, তাঁকে বিশেষ রাষ্ট্রীয় প্রহরায় নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানীর বুকে স্থাপিত অনন্যসাধারণ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র আল কাহিরা হাসপাতালে।" নাজনীনের গলার স্বর টুংটাং করে বেজে ওঠে। "রাস আল খাইমার আমিরের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এ হাসপাতাল দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধুনিক হাসপাতালগুলির মধ্যে একটি। পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার এক অনন্য নজির, এক বিস্ময়ের অপর নাম আল কাহিরা।" নাজনীন মিষ্টি করে হাসে। "স্টুডিওতে আবার দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি সামিরা সুহার কাছে।" সাইফুল তর্জনী আর বুড়ো আঙুল গোল করে দেখায়। কাজ শেষ। ক্যামেরা নিয়ে ভ্যানের ভেতরে ঢোকে সে, নাজনীন একটা সিগারেট ধরায়। দর্শকরা এখন সুহার লো-কাট ব্লাউজের বিষুবরেখায় চোখ রেখে তার আধো আধো যৌনাবেদনে ভরা কণ্ঠে শুনবে খবরের বাকিটা। নাজনীন সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ডানে তাকায়। এখনো এসে পৌঁছায়নি সব ভ্যান। মোটে চারটা দেখা যাচ্ছে। একত্রিশটা টিভি চ্যানেল, আজ এ খবর কি সবাই কাভার করবে না? দ্বীন টিভি আর নিশান নিউজ নেটওয়ার্কস আসবে না হয়তো, কিংবা কে জানে, হয়তো ওরাও আজ সবার আগে ছুটে আসবে, ব্যাকগ্রাউন্ডে দোয়া মাহফিল চলতে থাকবে সাঘাটার আঘাটা থেকে উঠে আসা ঘাটমড়া লোকটার জন্য। নাজনীন পেছনে তাকায়, হেলিপ্যাডের চারদিকে প্রাচীন বৃক্ষের মতো নিষ্কম্প অটল সব ছায়ামূর্তি দাঁড়ানো, হাতে অস্ত্র। হেলিপ্যাডের ভেতরে কেউ ঢোকার চেষ্টা করলে গুলি করা হবে। তবে সবার হাতে হয়তো রাবার বুলেট ভর্তি রায়টগান নেই, দুয়েকজন হয়তো খাঁটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েই দাঁড়িয়ে। সাইফুল ভেতর থেকে বলে, "আপা, চা খাইবেন?" নাজনীন হেঁকে বলে, "বিড়িটা শেষ কইরা লই, সাইফুল ভাই।" সাইফুল ফ্লাস্ক খুলে এক কাপ চা নিয়ে বাইরে আসে। তার মুখ শুকনো। "আমার কিন্তু একটু টেনশনই লাগতাসে, আপা।" নাজনীন নিষ্ঠুরভাবে হাসে। "টেনশনের কিচ্ছু নাই, সাইফুল ভাই।" সাইফুল বলে, "কিন্তু কামটা তো বেআইনী!" নাজনীন সিগারেটে টান দেয় বুক ভরে, "আইনের ব্যাপারটা বিগ বস দেখবে।" সাইফুল বলে, "যদি কোনো সমস্যা হয়?" নাজনীন বলে, "সমস্যা হবে না।" সাইফুল চায়ের কাপে চুমুক দেয়, তার বিব্রত চোখ দু'টি মাটির দিকে। নাজনীন ধোঁয়া ছেড়ে সাইফুলকে দেখে আড়চোখে। লোকটা বড় ভালোমানুষ। কিভাবে সে এই নির্মম শহরে করে-কর্মে খাচ্ছে কে জানে! চোখের কোণে আলো দেখতে পেয়ে নাজনীন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। আহ! আসছে শেষ পর্যন্ত। নিশ্চিত নিষ্ঠুর হায়েনার বাহিনীর মতো মাঠের অন্য প্রান্তে এসে থামছে এক একটা দীর্ঘ নিউজ ভ্যান, তাদের শরীরের বিভিন্ন প্রান্তের আলোয় লাল হয়ে উঠছে উঁচু ঘাস। নাজনীন চোখ কুঁচকে দেখার চেষ্টা করে, দ্বীন টিভির লোগোটা দেখা যায় কি না। সাইফুল এক চুমুকে চায়ের কাপটা খালি করে আবার ভেতরে ঢোকে। "সাইফুল ভাই, বাইনোকুলারটা লন দেখি একটু।" নাজনীন তাড়া দেয়। সাইফুল ড়্যাক থেকে বাইনোকুলারটা নামিয়ে খাপ খুলে এগিয়ে দেয় নাজনীনের দিকে। মিনিট তিনেক পর নাজনীন চোখ থেকে হতাশ হয়ে নামায় বাইনোকুলারটা। আসেনি দ্বীন টিভি। নিশান নিউজও না। "বাদ পড়লো কারা?" সাইফুল নিস্পৃহ গলায় জিজ্ঞেস করে। "কইতারি না, সাইফুল ভাই। দ্বীন আসে নাই। নিশানও না। ইভাটিভিও দেখলাম না।" নাজনীন বাইনোকুলারটা ফিরিয়ে দেয় সাইফুলের কাছে। "রাইখা দ্যান।" সাইফুল বাইনোকুলারটা খাপে ঢোকাতে ঢোকাতে কান পেতে কী যেন শোনে। তারপর লাফিয়ে ক্যামেরা তৈরি করে। "আপা আপনে রেডি হন। নিউজরুমে ফোন লাগাই। আইসা পড়ছে।" নাজনীন কানের পেছনে হাত রেখে শোনার চেষ্টা করে। একটা ক্ষীণ শুপশুপশুপ শব্দ আসছে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। সাঘাটা তো ওদিকেই হবে। একেবারে কাকের মতো সোজা উড়ে আসছে যান্ত্রিক পাখিটা। সাইফুল একটা জ্যাকেট গায়ে বেরিয়ে আসে, নাজনীন তার জ্যাকেটটা হুড়োহুড়ি করে চড়িয়ে নেয় গায়ে। মাউথপিসটা কানের সাথে ঠিকমতো ফিট করে নিয়ে দাঁড়ায় নাজনীন, "সাইফুল ভাই, টেস্ট, মাইক্রোফোন টেস্টিং, রেডি, ওয়ান টু থ্রি ...।" সাইফুল বুড়ো আঙুল দেখায়, সেইসাথে চারপাশ আস্তে আস্তে উজ্জ্বল আর সশব্দ হয়ে ওঠে আগুয়ান হেলিশিপের উপস্থিতিতে। নাজনীন সাইফুলের মুখের নিঃশব্দ গো অনুসরণ করে বলতে থাকে, "এই মুহূর্তে আমাদের ওপরে ভাসছে সেই হেলিশিপটি, যাতে শায়িত রয়েছেন একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। সমগ্র বাংলাদেশ উৎকণ্ঠা আর শঙ্কা নিয়ে চেয়ে আছে এই বিশেষ হেলিশিপটির দিকে। নিরাপত্তার কারণে আমরা হেলিপ্যাডের ভেতরে ঢুকতে পারবো না, কিন্তু আমরা অপেক্ষা করছি আল কাহিরার বিশেষ অ্যামবুলেন্সটির জন্য ... এবং সেটি এখন পূর্ণবেগে হেলিপ্যাডের দিকে ছুটে আসছে।" সাইফুলের ক্যামেরা ঘুরে যায়, চাঁদ-তারা আঁকা বিরাট সাদা অ্যামবুলেন্সটি হেলিগ্রাউন্ডে প্রবেশ করে মেরুভল্লুকের মতো, পেছন পেছন ছুটে আসে তিনটি জলপাই রঙের এপিসি। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে হলে নাজনীনের মতো বাকি সাংবাদিকরাও ছুটে গিয়ে অ্যামবুলেন্সের ডাক্তারকে ঘিরে ধরতো, তার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করতো, কিন্তু গতকাল বিশেষ টেলিকনফারেন্সে ব্রিফ করার সময় এই অপারেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কর্নেল টিক্কা আলম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, অ্যামবুলেন্সের গতিরোধের চেষ্টা কেউ করলে বা কর্ডন ভেঙে কেউ ঢুকতে চাইলে তাকে গুলি করা হবে। রং টিভির ঝুমকা কামাল মধুর হেসে জিজ্ঞেস করেছিলো, বুলেটটা রাবারের নাকি আসল, কিন্তু কর্নেল টিক্কার রসবোধ নেই, সে কর্কশ গলায় বলেছিলো, ম্যাডাম, পাছায় রাবারের গুলি লাগলেও ভয়ানক ব্যথা লাগে বলে শুনেছি। কেউ আর কিছু বলেনি, ঝুমকার বিব্রত হাসিটা ফ্যাকাশে না হওয়া পর্যন্ত অসভ্য কর্নেল চোখ লাল করে তাকিয়েই ছিলো তার দিকে। এপিসি থেকে ক্ষিপ্র গতিতে বেরিয়ে আসে কয়েকজন কমব্যাট পোশাক পরা সেনা, চোখের পলকে একটা হলুদ কালো স্ট্রাইপের কর্ডন তৈরি করে ফেলে তারা। দ্বিতীয় ক্যারিয়ারটা থেকে যারা বেরোয় তাদের হাতে অস্ত্র চকচক করে ওঠে সাংবাদিকদের ফ্লাডগানের আলোয়। চারদিক কাঁপিয়ে প্রকাণ্ড হেলিশিপটা নামে হেলিপ্যাডে, আশপাশে কিছু শুকনো খড়কুটো নাচতে থাকে ভীরু চড়াইয়ের মতো। মাউথপিসটা মুখের কাছে রেখে নাজনীন বলে চলে, "এইমাত্র হেলিশিপ মাটি স্পর্শ করলো। আল কাহিরার অ্যামবুলেন্স টিম এখন হেলিকপ্টার থেকে অ্যামবুলেন্সে নিয়ে যাবেন সেই মহান ব্যক্তিকে, যাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ আজ সমগ্র বাংলাদেশকে স্পর্শ করেছে।" সাইফুলের ক্যামেরা সশস্ত্র সেনাদের কাঁধ অতিক্রম করে জুম করে হেলিপ্যাডের দিকে কিন্তু ভেতরে অ্যামবুলেন্সের দরজা পর্যন্ত এক বিশেষ ক্যানভাসের টানেল টাঙিয়ে ফেলেছে প্যারামেডিকরা। "দর্শকমন্ডলী, কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যামবুলেন্স তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে, আমরা তাঁদের অনুসরণ করবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আবার ফিরে আসবো মাঠে, এখন আমরা আবার স্টুডিওতে ফিরে যাচ্ছি নাসিফ নিয়াজের কাছে।" সাইফুল দু'আঙুল গোল করে দেখায়, নাজনীন ক্ষিপ্র গতিতে জ্যাকেট খুলতে থাকে। তার মূল কাজ সবে শুরু। "মিথিলাকে ফোন করসিলেন, সাইফুল ভাই?" তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে সে। "জ্বি, আপা। তারা রেডি।" সাইফুল ক্যামেরা গোটাতে গোটাতে ভ্যানের ভেতরে ঢোকে। "আমরা কি এখন যাবো?" "হ্যাঁ, চলেন। এরা অ্যামবুলেন্স না যাওয়া পর্যন্ত থাকবে মাঠে। আমাদের এই সুযোগটাই নিতে হবে।" নাজনীন শুকনো গলায় বলে। "আমাদের জিনিসপত্র সব ঠিক আছে তো?" সাইফুল বলে, "জ্বি, আপা। চেক করসি আমি নিজে।" নাজনীন গাড়ি স্টার্ট দেয়। রিয়ার ভিউ মিররে অ্যামবুলেন্সটাকে দেখতে দেখতে ভাবে, কেন রিপোর্টার নিজেই ড্রাইভ করছে, এই দেখে কেউ সন্দেহ না করলেই হয়। হেলিগ্রাউন্ড থেকে বেরিয়ে তীব্র গতিতে গাড়ি ছোটায় নাজনীন। বিজয় সরণীর পার্কিং প্লটে অপেক্ষা করছিলো মিথিলার টিম, তারা চুপচাপ এসে গাড়িতে ঢোকে। নাজনীন হাসে মিথিলার দিকে তাকিয়ে। "সব ঠিক আছে না, ডার্লিং?" মিথিলা বাবলগাম চিবুতে চিবুতে বলে, "সব ঠিক।" নাজনীন ড্রাইভার বশিরের হাত থেকে ছোট্ট গাড়িটার চাবি নিয়ে লাফিয়ে নামে। মিথিলার ক্যামেরাম্যান আনিস সাইফুলের কাছ থেকে সবকিছু বুঝে নেয়। সাইফুল গম্ভীর মুখে তার ক্যামেরা নিয়ে নাজনীনের পাশে গিয়ে বসে। নাজনীন অলস চোখে আশপাশটা দেখে নিয়ে উল্কাগতিতে বেরিয়ে আসে পার্কিং প্লট থেকে। মিথিলা নিউজভ্যান নিয়ে অনুসরণ করবে হাসপাতালের অ্যামবুলেন্সকে। নাজনীনকে তার আগেই আল কাহিরায় পৌঁছতে হবে। ২. সাইফুল নির্লিপ্ত মুখে নামে গাড়ি থেকে। তার ক্যামেরা একটা স্কুলব্যাগের ভেতরে রাখা। নাজনীন গাড়ির দরজা লক করে দিয়ে অলস পায়ে হাঁটতে থাকে লিফটের দিকে। লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে দু'জন সশস্ত্র সেনা, লিফটের সামনে দাঁড় করানো একটি মেটাল ডিটেকটর। নাজনীনের কানে মোবাইলের ইয়ারপিস, মাউথপিসটা গলার কাছে ঝুলছে। সে মৃদু হেসে ফিসফিস করে বলে, "এখন!" দরজার ওপরে ইন্ডিকেটর জ্বলে ওঠে, তিনতলা থেকে বেসমেন্টের দ্বিতীয় লেভেলে নামছে লিফট। নাজনীন অলস মৃদু পায়ে কোমর দুলিয়ে এগোতে থাকে লিফটের দিকে। সেনা দু'জন পাথুরে চোখে তার হাঁটার ছন্দ অনুসরণ করছে। নাজনীন একজন সেনার সামনে দাঁড়িয়ে মধুর হেসে বলে, "আপনারা কি নতুন সিকিউরিটি?" সৈনিকের পাথরে খোদাই করা চেহারা লালচে হয়ে ওঠে। "আমরা ন্যাশনাল গার্ড! দেখতে পান না?" লিফটের দরজা খুলে যায়, অ্যাটেন্ড্যান্টের পোশাক পরা একটি মেয়ে বেজার মুখে একটা স্ট্রেচার ঠেলতে ঠেলতে বের হয়। "কোথায় নামলো এইটা? ধুর!" মেয়েটা স্পষ্ট বিরক্তি নিয়ে বলে। নাজনীন ব্যাগ থেকে নিজের পরিচয়পত্র বার করে চটে ওঠা সৈনিকের নাকের সামনে ধরে। সাইফুলের হাত থেকে ব্যাগটা মাটিতে পড়ে যায়, সে ঝুঁকে পড়ে সেটা তোলে আবার। মেয়েটা স্ট্রেচার টানতে টানতে আবার ঢুকে পড়ে ভেতরে। "আপনি সাংবাদিক?" সৈনিক চোয়াল শক্ত করে বলে। "জ্বি।" নাজনীন মিষ্টি হাসে। "এইখানে কেন এসেছেন?" "আমার এক আত্মীয় অসুস্থ।" নাজনীন শরীরের ভর বাম পা থেকে ডান পায়ে নেয়, অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সৈনিক নিবিষ্ট মনে তাকে পাশ থেকে দেখতে থাকে। "কী নাম?" কর্কশ গলায় বলে সৈনিক। "নাজনীন কামরান।" সৈনিকের গলার স্বর আরো রুক্ষ হয়ে ওঠে। "আপনার আত্মীয়র নাম বলেন।" "ওহ! সরি ... রফিকুল হক। কেবিন ৪০১-এ আছেন।" সৈনিক ওয়্যারলেস তুলে নেয় কোমর থেকে। "রোমিও এগারো। রোমিও এগারো। চারশো একে রফিকুল হকের গেস্ট। নাজনীন কামরান। অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেক করা প্রয়োজন। ওভার।" ঘড়ঘড়ে জবাব ভেসে আসে, "কপি। এক মিনিট।" সৈনিক সাইফুলকে দেখে রক্তচক্ষু মেলে। "আপনি?" সাইফুল ঢোঁক গিলে পরিচয়পত্র বাড়িয়ে দেয়। "আমিও আপার সাথেই।" সৈনিক পরিচয়পত্র দেখে নীরবে। ওয়্যারলেস আবার খড়খড় করে ওঠে। "চার্লি ওয়ান। সব সঠিক, রোমিও এগারো। পরীক্ষা চালাও। ওভার।" নাজনীন লাস্যময়ী ভঙ্গিতে মেটাল ডিটেকটরের ভেতর দিয়ে যায়, অন্য সৈনিক সেটি অন করে। ভেতর দিয়ে নাজনীন হেঁটে আসার পর মেটাল ডিটেক্টরের পাশে মনিটরে এক এক করে ফুটে ওঠে নাজনীনের সাথে যাবতীয় ধাতব বস্তুর ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি ও অবস্থান। চুলের ক্লিপ, সেফটি পিন, মোবাইল ফোন, কোমরের বেল্টের হুক, মানিব্যাগে মুদ্রা। সৈনিক হাঁক দেয়, "ক্লিয়ার!" একইভাবে পেরিয়ে আসে সাইফুলও। প্রায় একই জিনিসপত্রের ছবি ভেসে ওঠে মনিটরে। একই রকম ক্লিয়ার হুঙ্কার শুনে নাজনীনের মুখে একটা আলতো স্বস্তির হাসি ফুটে ওঠে। সাইফুলের নির্লিপ্ত চেহারার ওপর বন্ধ হয়ে যায় লিফটের দরজা। ক্যামেরাটা সাইফুল ত্বরিতগতিতে সেই অ্যাটেন্ড্যান্টের গার্নির নিচে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। গত পাঁচদিন ধরে এই চর্চাটাই সাইফুল করেছে, খোলা ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বার করে কীভাবে স্ট্রেচারের নিচের পাটাতনের ওপর রাখা যায়। নাজনীন জানে, লিফটে একটা ক্যামেরা থাকে, তাই সে মুখে একটা পাতলা হাসি নিয়ে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে। হাসপাতালের ভেতরে এখন একটা শক্তিশালী ভিডিও ক্যামেরা আছে, যা বহুদূর পর্যন্ত রিলে করতে পারে। একটু পরই নিউজভ্যানটা এসে দাঁড়াবে হাসপাতালের চত্বরে। ওখানে বসে মিথিলারা রিসিভ করবে তাদের পাঠানো ভিডিওচিত্র। বাকি তিরিশটা টিভি চ্যানেল যখন অ্যামবুলেন্স থেকে গাইবান্ধার সাঘাটা থেকে আগত বাংলাদেশের শেষ জীবিত মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানকে নামিয়ে আনার দৃশ্য ভিডিও করার জন্য কনুই চালাবে, তখন নাজনীন আর সাইফুল হাসপাতালের ভেতর থাকবে একটা ক্যামেরা হাতে। নাজনীন একটা শ্বাস ফেলে লিফটের খুলে যাওয়া দরজা দিয়ে বেরিয়ে পা রাখে হাসপাতালের বারান্দায়। আগে ৪০১-এ রফিক মামাকে দেখে আসা যাক। তাঁর ঘরেই থাকবে গার্নিটা। অ্যাটেন্ড্যান্ট মাকসুদা এই কাজটুকুর জন্যে পাবে ক্যাশ দুই লক্ষ টাকা। নাজনীন মুখটাকে উদ্বিগ্ন করে তুলে ৪০১-এ দিকে এগিয়ে যায়। ৩. রফিকুল হক বিছানায় শুয়ে শুয়ে ক্লান্ত চোখে দেখেন নাজনীনকে। "কেমন আছো?" নাজনীন তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। "ভালোই আছি গো মামা।" রফিক বিরক্ত হয়ে বলেন, "তোমরা শুধু শুধুই ফাল পাড়তেসো। কোন লাভ নাই।" নাজনীন হাসে। "লসও তো নাই।" রফিক মনমরা হয়ে বলেন, "সময় থাকতে যদি খোঁজখবর লাগাইতা, তাহইলে কি আর এত ঢাকঢাকগুড়গুড় করা লাগতো?" নাজনীন চোখ বোঁজে। সময় থাকতে কেউ জানেনি আবদুর রহমানের কথা। সাঘাটার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক স্থানীয় সাংবাদিক আবেগঘন একটা ভিডিও বার্তা পাঠায়, অন্তিম শয্যায় শুয়ে বাংলাদেশের শেষ জীবিত মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান শুধু একটু সুচিকিৎসা কামনা করেন, আর কিছু নয়। খবরটা বিপুল দামে কিনে নেয় কয়েকটা চ্যানেল। নাজনীন তখন ছিলো বগুড়ায়, ফিরছিলো ঢাকার দিকে, বসের নির্দেশে শেরপুর থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে গাইবান্ধার দিকে রওনা হয়। চ্যানেল এফের ইউসুফ মালিথা আর সে প্রায় মরণপণ গাড়ির দৌড়ে কেউ কাউকে হারাতে না পেরে প্রায় সমান সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেমে থমকে দাঁড়িয়েছিলো। জলপাই উর্দি পরা এক অফিসার বেরিয়ে এসে কঠোর মুখে বলেছিলেন, "আবদুর রহমান এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয়ে আছেন।" নাজনীন চোখ খুলে তাকায়। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয় ভাঙতে পারেনি কোনো সাংবাদিক। সেদিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আবদুর রহমানের ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি কেউ। সাংবাদিকরা দেশ চষে ফেলে এসে জানিয়েছেন, আসলেই এই দাবি সত্য, আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা জীবিত নেই, আবদুর রহমানই শেষ জন। আজ থেকে বাষট্টি বছর আগে, কুড়ি বছর বয়সে তিনি ৬ নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করেন। গত চারদিন ধরে অবিশ্রান্ত চলছে এই খবর। প্রায় সব ক'টি টিভি চ্যানেল জুড়ে। কেবল দ্বীন টিভি আর নিশান নিউজ চুপচাপ এ ব্যাপারে। আবদুর রহমানের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটার পর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয়ে রেখেই তাঁকে রাজধানীতে আনা হয়েছে সুচিকিৎসা দেয়ার জন্যে। নাজনীন চারপাশে তাকায়। নিখুঁত মসৃণ দেয়াল, তাপমাত্রা-আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া, নিশ্চয়ই এখানে খুব ভালো চিকিৎসা মেলে। আবদুর রহমান কি শেষজন না হলে কখনো পারতেন এখানে চিকিৎসা নিতে? গাইবান্ধার সাঘাটা থেকে বাসে চেপে গাবতলি, তারপর আবারও বাসে চেপে খানিকটা পথ, তারপর হয়তো খানিকটা মোনোরেলে চড়ে এসে কি নামতে পারতেন বিরাশি বছর বয়সের আবদুর রহমান? এই হাসপাতাল কি হজম করতে পারতো এই ভূমিহীন কৃষককে, তার ছেঁড়া জামাকে, তার মলিন অনভ্যস্ত ফাটা পায়ে বেমানান স্পঞ্জের চপ্পলকে, ছয় দশক আগের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে? আবদুর রহমানকে তো নেয়নি এই হাসপাতাল, নিয়েছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বলয়কে। আবদুর রহমানের সহযোদ্ধারা কে কোথায় কীভাবে মারা গেছেন, খোঁজও জানে না কেউ, কেউ খোঁজ রাখেও না। আবদুর রহমান এখন মহাবিপন্ন প্রজাতির শেষজন, এখন মিডিয়ার অশেষ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু শুধু, কোনো মানুষ আর নন। নাজনীন উঠে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকানোর প্রয়োজন অনুভব করে না সে, নিচ থেকে ভেসে আসে অ্যামবুলেন্সের প্রাচীন নিনাদ। আবদুর রহমানকে নিয়ে তাঁর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয় এসে উপস্থিত হয়েছে আল কাহিরায়। নাজনীন জানে, আবদুর রহমানকে রাখা হবে চারতলার বিশেষ কেয়ার ইউনিটে। সেখানে কোনো সশস্ত্র প্রহরী থাকবে না রাত নয়টার পর। বিগ বস জায়গামতো পয়সা ঢেলে এই তথ্য বার করে এনেছেন। ৪. ন'টা বাজার পর নাজনীন গার্নির নিচ থেকে দু'টো সাদা অ্যাপ্রন টেনে বার করে। একটা সাইফুলের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে আরেকটা সে নিজে গায়ে চড়িয়ে নেয়। করিডোরে বুটের খট খট আওয়াজ মিলিয়ে গেছে কয়েক মিনিট আগেই। সৈনিকরা বোধহয় শুধু নিচে পাহারা দেবে। রাত আটটায় ভিজিটিং আওয়ার শেষ। যে অ্যাটেন্ড্যান্ট শেষ ভিজিটরটিকেও ঝেঁটিয়ে বার করে দেয়, সে আসেনি এই ঘরে। বিগ বস অনেক আয়োজন করেছেন আজকের এই বিশেষ রিপোর্টিঙের জন্যে। লাইভ নয়, এটি প্রচার করা হবে কিছুক্ষণ পর, যাতে সাথে সাথে কেউ চুকলি কেটে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে। অ্যাপ্রন পরা সাইফুল গার্নিটা ঠেলতে ঠেলতে করিডোরে বেরিয়ে এলো। নাজনীন মাথায় একটা মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানদের টুপি চড়িয়ে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয় বোধহয় শুধু বাইরেই মজবুত, মনে মনে ভাবে নাজনীন। এর ভেতরটা একেবারেই নিঝুম আর দুর্বল। গার্নি ঠেলতে ঠেলতে বিশেষ কেয়ার ইউনিটের দরজা ঠেলে ঢুকে পরে তারা দু'জন, ভেতরে বিছানায় শুয়ে আছেন আবদুর রহমান। নাজনীন দরজা বন্ধ করার উপায় খোঁজে, তারপর অস্বস্তি নিয়ে দেখে, এই দরজা বন্ধ করার কোন উপায় নেই। কাঁধ ঝাঁকিয়ে সে সাইফুলকে বলে, "সাইফুল ভাই, সমস্যা আছে। সময় কম পাবো আমরা। আগেই ক্যামেরা বাইর কইরেন না।" আবদুর রহমান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকান। দুর্বল, অশক্ত, বৃদ্ধ একজন মানুষ। তার চেহারায় ক্ষুধা আর অভাবের ছাপ শুধু, ওখানে কোথাও লেখা নেই, এই মানুষটি কত সামান্যতাকে অবলম্বন করে কত বড় একটি বাহিনীকে যুদ্ধ করে পরাজিত করেছেন। নাজনীন এগিয়ে গিয়ে তাঁর কপালে হাত রাখে। "স্লামালিকুম, দাদাজান! আমরা আপনার সাথে কথা বলতে আসছি। আপনি কি কথা বলতে পারবেন?" আবদুর রহমান কিছু বলেন না, রুগ্ন চোখে চেয়ে থাকেন শুধু। সাইফুল ক্যামেরা ঠিক করে, রিলে যোগাযোগ স্থাপিত হবার পর সে কাঁপা হাতে কাঁধে তুলে নেয় ক্যামেরাটা। "আপা, রেডি হন। ফাইভ, ফোর ...।" নাজনীন মাইক নিয়ে বলতে থাকে, "অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর থেকে আমি নাজনীন কামরান বলছি। আমার পাশে শুয়ে আছেন আমাদের দেশের শেষ মুক্তিযোদ্ধা, আবদুর রহমান। এখানে আর কেউ নেই। আজ সারা দেশের সামনে আবদুর রহমান কিছু কথা বলবেন আমাদের সাথে।" মাইকটা আবদুর রহমানের সামনে এগিয়ে দেয় নাজনীন। "দাদাজান! আপনি আমাদের বলেন, কী চান আপনি এই দেশের কাছে?" আবদুর রহমান কিছুই বলেন না, ঘাড়টা সামান্য নড়িয়ে শুধু সাইফুলকে একবার দেখেন, তারপর নাজনীনকে দেখেন আবার। নাজনীন বৃদ্ধের কপালে হাত বুলিয়ে দেন। "বলেন, দাদাজান! সারা দেশের লোক আপনাকে দেখতেসে এখন। আপনার কথা শুনতেসে। আপনি বলেন, কী চান আপনি এই দেশের কাছে?" আবদুর রহমান একটা কাঁপা হাত তুলে নাজনীনের হাত স্পর্শ করেন। তারপর স্তিমিত গলায় বলেন, "মুই কিচ্ছু চাউ না।" নাজনীন মুখ শক্ত করে বলে, "না, দাদাজান! বলেন, আপনি কী চান? কী চান এই দেশের কাছে? আপনারা যুদ্ধ করেন নাই? গুলি খেয়ে মরেন নাই? যুদ্ধের পর না খেয়ে মরেন নাই? বলেন, কী চান এখন! দেশের কাছে কী চান, জোর গলায় বলেন!" আবদুর রহমান মাথা নাড়েন। "মোর কিচ্ছুর আশ নাই! কিছু চাউ না মুই!" নাজনীন ক্যামেরার দিকে ফিরে তাকিয়ে তীব্র গলায় বলে, "বাংলাদেশের শেষ জীবিত মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান কিছু চান না। কারণ তিনি সারাটা জীবন চেয়ে কিছু পাননি। তিনি একটা নিরাপদ দেশ চেয়েছিলেন, মানুষের ভাতকাপড়ের নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলেন, কিছুই মেলেনি। জীবনের অন্তিম সময়ে এই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে থেকে আবদুর রহমানের কিছুই চাওয়ার নেই। কারণ এই চাওয়ার কোনো অর্থ হয় না!" বাইরে থেকে দরজাটা হাট করে খুলে যায়, ভেতরে ব্যস্ত পায়ে প্রবেশ করেন অ্যাপ্রন পরা ডাক্তার। ঘরের ভেতর পরিস্থিতি দেখে কয়েক সেকেন্ড হতভম্ব হয়ে থেকে চাপা গলায় চিৎকার করেন তিনি, "হচ্ছে কী? এসব কী? জানেন না এটা স্পেশ্যাল সিকিউরিটি এরিয়া? বেরিয়ে যান! স্টপ ইট!" সাইফুলের তাক করা ক্যামেরার সামনে হাত বাড়িয়ে মুখ ঢাকেন তিনি। "সিকিউরিটি!" ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গিয়ে ঘরের দেয়ালে একটা লাল বোতামে চাপ দেন তিনি। নাজনীন মাইক নামিয়ে আবদুর রহমানের পাশে বসে। নিচ থেকে সশস্ত্র সৈনিকদের ওপরে আসতে কতক্ষণ সময় লাগবে? এক মিনিট? দুই মিনিট? দেশের শেষ মুক্তিযোদ্ধার করস্পর্শ করে দুই মিনিট চুপচাপ বসে থাকাই যায়। ৫. নাজনীন আর সাইফুলকে যখন জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তখন দেশে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হলো। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আবদুর রহমানের মরদেহ দাফন করা হলো শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা মাথায় জিন্নাহ টুপি চড়িয়ে একত্রিশটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে আবেগঘন গলায় বললেন, "তিনি ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ...।" আকাশে গুলির শব্দ মিলিয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, যেভাবে এর আগে অনেকগুলি বছরে মিলিয়ে গেছে অনেক প্রতিশ্রুতির ধ্বনি, প্রতিধ্বনি। . . এ গল্পটি ২০১০ এ প্রকাশিত গল্প সংকলন ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প"-তে অন্তর্ভুক্ত
false