|
1005,কমেছে দুর্ভোগ বেড়েছে স্বচ্ছতা,2021-08-21,ইত্তেফাক রিপোর্ট,আগে ভাতা আনতে সকালে গিয়ে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়াতাম। টাকা পেতে বিকেল হয়ে যেত অনেক সময় ওইদিন পাওয়া যেত না। আরেকদিন যেতে হত। আবার বাড়ি থেকে ব্যাংকে যেতে ৪০৫০ টাকা খরচ হতো। আর এখন এই ভাতা আনতে কোথাও যেতে হয় না। আমার মোবাইল ফোনেই চলে আসে। সুবিধামতো এজেন্টের কাছে গিয়ে টাকা তুলে নিয়ে আসি। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই বলছিলেন ধামরাইয়ের যাদুরচরের বয়োবৃদ্ধ রেখা রানী পাল। গত ৬ মাস ধরে এমএফএসের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এই নারী।বর্তমানে বয়স্ক প্রতিবন্ধী বিধবা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভাতা বিতরণ করা করা হচ্ছে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এমএফএসের মাধ্যমে। সরকারের তালিকায় থাকা ৮৮ লাখ মানুষ এই সেবার আওতায় এসেছেন। এর মধ্যে ৭৬ লাখ মানুষের কাছে সরাসরি এবং ১২ লাখ মানুষের কাছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই ভাতা যাচ্ছে। এর ৭৫ ভাগই যাচ্ছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদের মাধ্যমে।গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কিভাবে ডিজিটাল সেবার আওতায় এসেছে তা দেখতে সরেজমিনে গত মঙ্গলবার ধামরাইয়ের যাদুরচর ইউনিয়নে গেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন খান ইত্তেফাককে বলেন এমএফএসে এখন ভাতা বিতরণ করায় আমাদের কষ্টও অনেক কমে গেছে। আগে ব্যাংকে ভাতা আসলে আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর দিতে হতো। পরদিন সবাই ধারমরাইয়ে গিয়ে সোনালী ব্যাংকে লাইনে দাঁড়াতো। গরমে ঘেমে তাদের এই টাকা তুলতে অনেক কষ্ট করতে হতো। ব্যাংকের লোকজনও এদের সামাল দিতে হিমশিম খেতেন। আর এখন যার টাকা তার মোবাইলে চলে যাচ্ছে। ফলে অপব্যবহারও অনেক কমে গেছে। কমেছে দুর্ভোগ বেড়েছে স্বচ্ছতা ....শুধু যে মানুষের কষ্ট কমেছে তা নয় বেড়েছে স্বচ্ছতাও। এমএফএসের মাধ্যমে টাকা যাওয়া শুরু হওয়ার পর ৮৭ হাজার মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। অর্থাৎ এই টাকাগুলো অপব্যবহার হতো। বর্তমানে বয়স্ক ও বিধবারা মাসে ৫০০ টাকা করে প্রতিবন্ধীরা ৭৫০ টাকা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা সাড়ে ৭শ টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন। বর্তমানে এমএফএসে যে ভাতা বিতরণ করা হচ্ছে তার ৭৫ ভাগই নগদের মাধ্যমে আর ২৫ ভাগ যাচ্ছে বিকাশে। বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা এই টাকা সরাসরি গ্রাহকের কাছে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি এই টাকা তুলতে যে খরচ হচ্ছে সেটাই টাকার সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন আমরা যখনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছি তখনই তিনি বলেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা যেন গ্রামের মানুষও পান। একেবারে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকেও এই সরকার ডিজিটাল সেবার আওতায় এনেছে। এতে কিছু দুর্নীতিও অনেকটাই কমে গেছে। কারণ কারও মাধ্যমে হাত দিয়ে টাকা বিতরণ করলে নয়ছয় হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যার টাকা যদি তার মোবাইলে চলে যায় তাহলে সেখানে দুর্নীতির কোন সুযোগ থাকে না। আমরা শুধু ডিজিটাল সেবা না সরকারী এই ভাতার স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করেছি।সরেজমিনে ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে কথা হয় এক হাত না থাকা হাসান খন্দকারের সঙ্গে। ইত্তেফাককে তিনি জানালেন আমার একটি হাত নেই। ঠিকমতো কোন কাজ করতে পারি না। এর জন্য সরকার যে প্রতিমাসে সাড়ে ৭শ টাকা দেয় তাতে আমি খুবই সন্তুষ্ট। তবে ভাতার এই টাকা একটু বাড়ানোর অনুরোধও তার। তিনি বলেন আগে এই ভাতার টাকা পেতে সাভারে যেতে হতো। ইজিবাইকেও গেলে আসাযাওয়া মিলে ৬০ টাকা খরচ হয়ে যেত। ব্যাংকে সকালে গিয়ে লাইলে দাঁড়ালেও টাকা পেতে বিকেল হয়ে যেত। এখন আমার নিজের মোবাইলে এই টাকা আসে। কষ্টও অনেক কমে গেছে।সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন ৮৮ লাখ মানুষকে ডিজিটাল সেবার মধ্যে আনতে আমাদের প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে। গত জানুয়ারিতে এই সেবা শুরু হলেও তার আগের ৬ মাস আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়েছে। কেউ ফোন নম্বর ভুল দিয়েছেন কারও ফোনই নেই কেউ ব্যবহার জানে না কেউ পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারে না এমন অসংখ্য সমস্যা ছিল এই সেবা চালু করতে। শেষ পর্যন্ত আমাদের কর্মীরা সফলভাবে এটা করতে পেরেছে। অবশ্য নগদের যারা আমাদের সঙ্গে এই সেবা চালু করতে কাজ করেছেন তারাও নিরলসভাবে পরিশ্রম করে গেছেন।ইত্তেফাকএসআই |