|
1041,নামমাত্র সুদে অলস টাকার গতি করছে ব্যাংকগুলো,2021-08-10,রেজাউল হক কৌশিক,করোনায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। ফলে আমানত হিসেবে যা নিয়ে রেখেছে তা অলস পড়ে আছে। আর এর সঙ্গে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্সের অর্থ যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া সরকারঘোষিত প্রণোদনার অর্থও ব্যাংকের টাকা বাড়িয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় জমে গেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা জমা আছে। আর একেবারেই অলস পড়ে আছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।এত অলস টাকা ব্যাংকগুলোর জন্য কোনো কাজে আসছে না। এ কারণে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যাংক বিনিয়োগ করছে যা ব্যাংকগুলোর জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। এসব টাকার অপব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন আছে। ফলে নামমাত্র সুদে ব্যাংকগুলো অলস টাকার একটা গতি করতে চায়। অন্যদিকে বাজারে বেশি টাকা চলে যাওয়ায় তা মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে টাকা তুলে নিতে চায়।এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ বিলএর নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে ব্যাংকগুলো ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। তবে পদ্ধতিগত কারণে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার গতি করতে পেরেছে। এসব টাকার বিপরীতে ব্যাংকগুলো বাত্সরিক সুদ পাবে মাত্র ৫৪ পয়সা বা ৭৫ পয়সা হারে। টাকা যাচ্ছে ব্যাংকের পরিচালকদের পকেটে ....ছবি সংগৃহীত।এত কম সুদে ব্যাংকগুলো কেন এই বিলের নিলামে অংশ নিচ্ছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত ইত্তেফাককে বলেন করোনার সময়ে ব্যাংকগুলো তো বিনিয়োগ করতে পারছে না। এতে ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে থাকলে তো কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য এই বিলের মাধ্যমে যা পাওয়া যায় তাই তো লাভ। এ কারণে ব্যাংকগুলো এই নিলামের প্রতি এত আগ্রহী।বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে গতকাল ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের প্রথম নিলামে ১৮ ব্যাংক প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার আবেদন করে। এর বিপরীতে বার্ষিক ১ শতাংশের কম সুদে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথম নিলামে সাত দিন মেয়াদি বিলের মাধ্যমে বার্ষিক মাত্র শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ তথা ৫৪ পয়সা সুদে তোলা হয়েছে ১ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। আর ১৪ দিন মেয়াদি বিলে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ তথা ৭৫ পয়সা সুদে।ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন বর্তমানে আন্তঃব্যাংক কলমানিতে সর্বনিম্ন সুদ ১ শতাংশ এবং আন্তঃব্যাংক রেপোতে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বার্ষিক সুদহার নির্ধারিত আছে। সর্বনিম্ন এই সুদে টাকা খাটানোর পরও অধিকাংশ ব্যাংকের কাছে অলস টাকা থাকছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো আর এই টাকা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করবে না। ফলে যেটুকু সুদ পাওয়া যাচ্ছে তাতেই ব্যাংকগুলো খুশি। বুধবার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাংকিং ....ফাইল ছবি।সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ঐ দিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ তথা ২ পয়সা সুদে সাত দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ ছিল। বাজারে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে নিলামের বিষয়টি অবহিত করা হয়।এর আগে ২৯ জুলাই চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে বুদ্বুুদ তৈরি করলে তা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে একবারে অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অলস এই অর্থের বিপরীতে কোনো সুদ পায় না ব্যাংক। এতে করে অধিকাংশ ব্যাংক এখন আমানত নিতে অনীহা দেখাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর বাজারে তারল্য বাড়াতে নানা নীতিসহায়তা দিলেও ঋণের চাহিদা বাড়েনি। যে কারণে অলস অর্থ বাড়ছে।সাধারণভাবে নগদ জমার হার সিআরআর সংরক্ষণের পর ব্যাংকগুলোর ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা অলস থাকে। তবে করোনা শুরুর পর ২০২০ সালের জুন শেষে এর পরিমাণ ২৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। করোনায় ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় ....ছবি সংগৃহীতসম্প্রতি ঘোষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে সিআরআরের অতিরিক্ত রিজার্ভ গত এক বছরে প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ গত বছরের জুনের তুলনায় প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংকের মোট দায়ের একটি অংশ বিধিবদ্ধ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এর মধ্যে বর্তমানে নগদে রাখতে হয় সাড়ে ৪ শতাংশ যা সিআরআর হিসেবে বিবেচিত। করোনা শুরুর আগে গত বছরও সাড়ে ৫ শতাংশ সিআরআর রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে বিভিন্ন বিল ও বন্ডের বিপরীতে বিধিবদ্ধ তারল্য বা এসএলআর রাখতে হচ্ছে আগের মতোই ১৩ শতাংশ।উদ্বৃত্ত তারল্যের মধ্যে সিআরআরে থাকা অলস অংশ বাদে বাকি অর্থ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ হিসেবে থাকে। এই টাকা সরকারকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অর্থ থাকায় সুদের হার অনেক কমেছে। আমানতের গড় সুদহার নেমেছে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশে। ঋণের গড় সুদহার ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশে নেমেছে।ইত্তেফাকএএএম |