label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
rg
একুশ মানে মাথা নত না করা! প্রাচীন গ্রিসে একটি প্রবাদ আছে- যদি কোনো জাতিকে পরাজিত করতে চাও, তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দাও। বাকি কাজটুকু ওরা নিজেরাই করে নেবে। আজ মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে। এখানে গ্রুপিংয়ের কোনো আগা মাথা নাই! ১. পুলিশের বই সেন্সর নিয়ে বাংলা একাডেমি'র মহাপরিচালক ও সচিবের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে আলাদা!২. পুলিশের বই সেন্সর নিয়ে প্রকাশকদের বক্তব্য বিভিন্ন ধরনের। ৩. পুলিশের বই সেন্সর নিয়ে দেশের প্রধান ও প্রথম সারির কবি-লেখকদের কোনো বক্তব্য নজরে পড়লো না। নিরবতা মানে কী সমর্থন?৪. এবারের অমর একুশে বইমেলায় সবচেয়ে ক্ষমতাবান বাংলাদেশ পুলিশ। অথচ বইমেলার ভেতরে তাদের কোনো দায়িত্ব থাকারই কথা ছিল না। ৫. অমর একুশে বইমেলাকে দুই খণ্ড করে বইমেলার আসল সৌন্দর্যকেই ধ্বংস করা হয়েছে। ৬. অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে স্টল বরাদ্দে কোনো শৃঙ্খলা নাই। গোটা জাতির চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য কেবল এই মাঠে ঢু মারাই যথেষ্ট!৭. প্রতি বছর আমরা অমর একুশে বইমেলার সময় টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করার দাবি করলেও এখন পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করার কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি! যা খুব দুঃখজনক। এই রাস্তাটি খোলা রেখে বইমেলা আয়োজন কী আদৌ সম্ভব?৮. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অমর একুশে বইমেলা'র শুভ উদ্ভোধন করবেন। সেজন্য দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তায় নিরাপত্তাজনিত কারণে সব ধরনের হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ত্যাগ করা মাত্রই পুরো এলাকা জুড়ে আবার হকারদের পশরা বসবে। যা বইমেলার জন্য চরম ক্ষতিকর। আর হকারদের এই বসার সঙ্গে পুলিশের টুপাইস কামানোর একটি ধান্দা জড়িত। এটা নিয়ে লিখেও কখনও কাজ হয় না। আশা করি পুশিল এবার এই ব্যাপারে শুরু থেকেই কঠোর থাকবে!৯. বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে এবার লিটলম্যাগ চত্বরে স্টল সাজ সজ্জার দায়িত্ব একাডেমি নেয়নি। ফলে বিপত্তি যা ঘটেছে, একেক লিটলম্যাগ একেক সাইজের লোগা লাগাচ্ছেন। যা সত্যি সত্যিই খুব দৃষ্টিকটু। সৌন্দর্যবোধটাই এখানে ১০০% মার খাচ্ছে!১০. অমর একুশে বইমেলা'র এবারের আয়োজন দেখে মনে হয়েছে, একাডেমি স্পন্সরের টাকা একদম খরচ করতে চায়নি। প্রতিবছর দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত যেভাবে সাজানো হয়, গতকাল পর্যন্ত তার ছিটেফোটাও নজরে পড়েনি। ১১. ডক্টর হুমায়ুন আজাদকে বাংলা একাডেমি যাবার রাস্তায় যেখানে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল, সেখানকার কোনো চিহ্ণ নজরে পড়েনি। এমনকি জায়গাটি চিহ্ণিত করার কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে টিএসএসি'র যেখানে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে, সেখানে দেখলাম ময়লার ভাগাড়! যা সত্যি সত্যিই খুব দুঃখজনক।১২. ৬৫ বছর আগে ১৯৫২ সালে যেখানে মাতৃভাষার দাবিতে আমার ভাইয়েরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, সেখানে ৬৫ বছর পর এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর, লেখকের স্বাধীনতার উপর চোখ রাঙাচ্ছে মৌলবাদী জানোয়ার। রাষ্ট্র এখন মৌলবাদের চোখ রাঙানোকে একে একে মেনে নিচ্ছে। যার সহজ সরল অর্থ হলো- আগামীতে অমর একুশে বইমেলা বন্ধ করার জন্য ওরা দাবি তুলবে। ১৩. একদিকে পাঠ্যপুস্তকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে মৌলবাদের চাষবাস হচ্ছে, অন্যদিকে লেখকদের স্বাধীনতাকে দিনদিন গুটিয়ে আনার রাষ্ট্রীয় এই চক্রান্ত দেশকে ভবিষ্যতে এক অন্ধকারের দিকেই কেবল নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতা হারাবে তখন বাংলাদেশের ক্ষমতা সরাসরি স্বাধীনতা বিরোধী ওই মৌলবাদী শক্তিগোষ্ঠী গ্রহণ করবে! যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেই সেদিন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাবে!১৪. ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, আগামীতে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সেদিকেই যাচ্ছে। কারো জীবন এখানে এখন আর নিরাপদ নয়। এক চরম অনিরাপদ যুগে আমরা এখন বসবাস করছি। যারা এখন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল আটছেন, তারাও কতটা নিরাপদ তা ভবিষ্যৎ-ই বলে দেবে!১৫. অমর একুশে বইমেলায় বই সেন্সর করবে পুলিশ। বিগত কয়েক বছরের পর্যবেক্ষণ সাক্ষ্য দিচ্ছে, আসলে বইমেলার মাঠে মৌলবাদী গোষ্ঠী মূলত বইয়ের এই ধর্মীয় অনুভূতি খুঁজে বের করার কাজে নিরলস পরিশ্রম করেছে। প্রতিদিন তারা দলে দলে বইমেলায় ঢুকে বইয়ের কনটেন্ট খুঁজে দেখছে- কোথায় কী আছে! আর এটাকে পরোক্ষভাবে লাই দিয়েছে বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি। সন্দেহ নেই- এই পরিস্থিতি আগামীতে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে। ১৬. আগামীতে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রকাশকদের বই ছাপানোর পারমিশন মিলবে- যা আমাদের সচেতন লেখক-প্রকাশক-বুদ্ধিজীবীগোষ্ঠী এখনও টের পাচ্ছে না। ১৭. অমর একুশে বইমেলাকে কতিপয় স্বার্থন্বেসী প্রকাশক নেতৃত্ব বাংলা একাডেমি'র সহযোগিতায় নিজেদের একটি ব্যবসায়িক প্লাটফরম হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তারা নিজেদের ভাগ বুঝে নেবার পর অপর প্রকাশকদের জন্য তাদের কারো কোনো সহযোগিতা নেই। নইলে জায়গা সংকুলানের অযুহাতে মেলাকে উদ্যান অংশে নেবার পরেও মেলায় কোনো শৃঙ্খলা নেই কেন? ১৮. ঢাকার বাইরে থেকে এমন কি ঢাকার একজন পাঠক বা বইপ্রেমী, তার পছন্দের বইটি খুব সহজে কীভাবে খুঁজে পাবেন, কোন প্রকাশনী'র স্টল কোথায়, সেটিকে কীভাবে খুঁজে পাবেন, তেমন কোনো দিকচিহ্ণ বইমেলা প্রাঙ্গনে চোখে পড়েনি। যা বইমেলা শুরু হবার পরে আরো জটিল আকার ধারণ করবে। ১৯. বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে যে পুকুরটি এখনো তার অস্তিত্ব জানান দেয়, সেটির রুগ্নদশা দেখলে যে কোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষের হৃদয় কেঁপে ওঠার কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী এই পুকুরটি নিয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেবেন? একাডেমি'র কেবল ভবন উঁচু হলেই উন্নয়ন হয় না। চোখের সামনে বাংলা একাডেমি'র পুকুরটি মারা যাচ্ছে, আর তার চারপাশে আমাদের কবি-লেখক-প্রকাশক-বইপ্রেমীরা গোটা ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে আনন্দ করবে! এ বড় দৃষ্টিকটু! ওই পুকুরের রাজহাঁসগুলো'র সাঁতার কাঁটার সুযোগটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব কষ্ট অনুভব করছি। বাংলা একাডেমিকে আমি পুকুরটি নিয়ে নতুন করে ভাবার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।২০. গোটা ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে একাডেমি প্রাঙ্গনে যে অচল প্রবন্ধ/কবিতা পাঠ এখনো সচল রাখা হয়েছে, বাংলা একাডেমি কী একবারও ভাববে না যে, ওটা শোনার জন্য বইমেলার মাঠে কেউ যায় না। খামাখা প্রতি বছর প্রবন্ধ/কবিতা পাঠের এই অপচেষ্টা দেখেই বোঝা যায়- কী পরিমাণ উৎকৃষ্ট গবেষণা একাডেমিতে হচ্ছে! চোখের সামনে ঘটা ঘটনা থেকে যাদের চোখ খোলে না, তারা কী গবেষণা করববে? একাডেমি থেকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রকাশ পায় না কেন? বস্তাপচা প্রবন্ধ ছাপলেই একাডেমির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ২১. নিরাপত্তা জনিত কারণে অমর একুশে বইমেলায় পুলিশের সঙ্গে রোজ দেখা হবে। আশা করি, পুলিশ কবি-লেখক-প্রকাশক-বইপ্রেমীদের রুচি-পছন্দ বুঝে নিজেদের আচরণে সংযমী থাকবে। আমরা একটি নিরাপদ ও সফল অমর একুশে বইমেলা দেখতে চাই। মৌলবাদের যত চোখ রাঙানি থাকুক না কেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, লেখকের স্বাধীনতা, বই প্রকাশের স্বাধীনতা যদি রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয়, সেই রাষ্ট্র বরং ধীরে ধীরে অন্ধকারকেই বরণ করবে। আর সেই দায় সরকার কিছুতেই এড়াতে পারবে না!সবাইকে অমর একুশে বইমেলায় স্বাগতম। বাঙালির সবচেয়ে বড় মিলনমেলায় আপনিও সঙ্গী হন প্রিয়জনদের নিয়ে। নিজে বই কিনুন, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। কারণ একমাত্র বই-ই পারে আপনাকে জ্ঞানের আলো দিতে। কোনো জুজুর ভয় আপনাকে জ্ঞান আরোহনে বাধা হতে পারে না। সবাইকে ভাষার মাসের শুভেচ্ছা। একুশ মানে মাথা নত না করা। ................................১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩৮
false
fe
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় জুরিদের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় জুরিদের দায়িত্ব ফকির ইলিয়াস --------------------------------------- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেওয়ার পর এটা ছিল আমার তৃতীয়বারের মতো জুরি ডিউটি। জুলাই ’০৭ মাসে চিঠি পেয়েছিলাম জুরি ডিউটি করার। ব্যক্তিগত অসুবিধা থাকায় সে সময়টাতে তা গ্রহণ করতে পারিনি। ফলে পুনরায় আমাকে চিঠি পাঠাতে হবে, তা প্রায় নিশ্চিত ছিলাম। আবার এলো সেই দায়িত্ব পালনের পালা। অক্টোবর ’০৭ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। আমাকে এবার দায়িত্ব পালনে নির্দিষ্ট আদালতে গিয়ে হাজির হতেই হবে। নাগরিক দায়িত্বের এটি একটি অন্যতম কর্মশর্ত। নির্দিষ্ট দিনে সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আদালতে। গ্র্যান্ড জুরি রুমে বসে অপেক্ষার পালা। কখন ডাক পড়বে। এর মধ্যে শুরু হলো আমাদের ওরিয়েন্টেশন। প্রায় পাঁচ শতাধিক জুরি বসে আছেন। যাচাই-বাছাই করে এর মধ্য থেকে জুরি নির্বাচন করা হবে, বিভিন্ন মামলার শুনানির জন্য। অবশেষে ২০ জনের একটি গ্রুপের সঙ্গে আমার ডাক পড়লো। মাননীয় জজের আদালতে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো নিরাপত্তা সহকারে। এজলাসে মাননীয় বিচারক বসে আছেন। তাঁর সামনে বসা তিনজন আইনজীবী। একজন বাদী পক্ষের। দুজন বিবাদী পক্ষের। মাননীয় বিচারক মামলার সামান্য ভূমিকা বললেন। মামলাটি একটি হাসপাতাল এবং একজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে। বাদী তার আর্জিতে বলেছেন, তিনি ঐ হাসপাতালের একজন রোগী ছিলেন। ঐ নির্দিষ্ট ডাক্তার তার চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু ডাক্তারের অবহেলার কারণে রোগীকে প্রয়োজনীয় সময়ের আগেই ডিসচার্জ করা হয়। হাসপাতাল এবং ডাক্তারের গাফিলতির কারণে রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এরপর মাননীয় বিচারক জুরিদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাদী, ডাক্তার কিংবা ঐ হাসপাতালটি কারো পরিচিত কিনা। কিংবা কেউ এসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত কিনা। সবাই ‘না’ সূচক জবাব দেওয়ার পর, মাননীয় বিচারক বললেন, মামলাটির শুনানি তিন-চার সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। এ সময় পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে কারো অসুবিধা আছে কিনা। এ পর্যায়ে পাঁচজন জুরি বাদ পড়ে গেলেন। বাকি থাকলাম আমরা পনেরো জন। বেলা তখন প্রায় সোয়া একটা। মাননীয় বিচারক জানালেন, মধ্যাহ্নভোজের জন্য আদালত এক ঘণ্টা মুলতবি থাকবে। তারপর আবার শুরু হবে কার্যক্রম। বিচারক স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, জুরিরা যেন এই মামলা বিষয়ে কারো সঙ্গে কিংবা পরস্পরের মধ্যে কোনো আলাপ, মতবিনিময় না করে। লাঞ্চ সেরে আমরা আবার আদালত কক্ষে হাজির হলাম। পনেরো জনের সবাই একে একে বায়োডাটা তথ্যমূল ‘কোশ্চেন পেপার’টি জমা দিলেন। এর মধ্য থেকে বারোজনকে লটারির মাধ্যমে নাম ডেকে জুরি বক্সের চেয়ারে নিয়ে বসানো হলো। এর মধ্য থেকে তিনজন প্রথমেই বাদ পড়ে গেলেন ভাষাগত সমস্যার কারণে। তারা মাননীয় বিচারকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবই দিতে পারছিলেন না। একে একে আমরা বাকি তিনজন আসন গ্রহণ করলাম। সর্বশেষ ব্যক্তিটি ছিলাম আমি। তাই মাননীয় বিচারক খুব তীক্ষèদৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো আমাকে। বিচারক বললেন, এখন তিনজন আইনজীবী তাদের পরিচয় দিয়ে মামলার পক্ষে-বিপক্ষে বলবেন। তারা একে একে তাদের বক্তব্য দিলেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মামলার মানবিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরলেন। তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর তিনি বললেন, কোনো প্রশ্ন আছে কিনা! আমি একটি প্রশ্ন করার অনুমতি প্রার্থনা করলাম। জিজ্ঞাসা করলাম ‘বাদী এখন কেমন আছেন?’ আমার প্রশ্নটি শুনেই তাৎক্ষণিক রুলিং দিলেন মাননীয় বিচারক। বললেন, তা শোনার সময় এখনো তোমার আসেনি ইয়াংম্যান। আমি সবিনয়ে বললাম, আমাকে ক্ষমা করবেন জনাব। বুঝতে পারলাম, বিষয়টি আমাকে মানবিকভাবে আক্রান্ত করেছে তা ভেবেই বিচারক রুলিং দিয়েছেন। আমি খামোশ হয়ে গেলাম। কিন্তু বুঝলাম বিবাদী পক্ষের দুজন আইনজীবী আমার ওপর খুব খুশি নয়। একে একে বারোজন জুরি বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হলো। তারপর বিচারক বললেন, আপনারা রুমের বাইরে গিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। আমরা ইতিমধ্যে জুরি নির্বাচন করবো। এবং তারপরই আপনাদেরকে রুমে ডাকবো। তিনজন আইনজীবী এবং মাননীয় বিচারক ১০ মিনিট পরই আমাদেরকে আবার ডাকলেন আদালত কক্ষে। বলা হলো যাদের নাম ডাকা হবে, তারা নির্বাচিত হয়েছেন। আর যাদের নাম ডাকা হবে না তারা এই জুরি দায়িত্ব থেকেই (এই মামলার জন্য) বাদ পড়েছেন। না, আমার নাম ডাকা হলো না। বুঝলাম বাদ পড়ে গেছি। আইনজীবীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে, বিচারক মহোদয়কে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বললাম, ‘থ্যাংক ইউ ইওর অনার’। জজ মুচকি হেসে বিদায় জানালেন আমাকে। আবার সেন্ট্রাল জুরি অফিস কক্ষে এসে রিপোর্ট করলাম। বসে আবারো অপেক্ষার পালা। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আমাকে জানানো হলো আমাকে এবারের মতো জুরি ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী ছয় বছর আমাকে আর ডাকা হবে না। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে এলাম আদালত প্রাঙ্গন থেকে। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আমি আইনজীবীগণ কর্তৃক মনোনয়নে বাদ পড়লাম জুরির দায়িত্ব পালন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা ‘জুরি’ হচ্ছেন জনগণের বিবেকের প্রতীক। আমাদের ওরিয়েন্টেশনের সময় একজন প্রবীণ বিচারক তার ভাষণে সে কথাটি আবারো স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। বিচারক বলেছিলেন আপনারা বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থেকে সত্য কথা বলবেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। আদালত কক্ষে ঢুকেই আমাদেরকে ডান হাত উঁচিয়ে বলতে হয়েছিল- ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’। প্রত্যেক জুরির বায়োডাটামূলক যে প্রশ্নপত্র থাকে তাতে কয়েকটি জর"রি প্রশ্ন থাকে। এর অন্যতম প্রশ্ন হচ্ছে ‘আপনার ঘনিষ্ঠজন কেউ ডাক্তার, আইনজীবী কিংবা ইন্স্যুরেন্স কর্মকর্তা কিনা? এ ধরনের মামলার সঙ্গে আপনি পরিচিত কিনা?’ যেভাবেই হোক এসব প্রশ্নগুলোর ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব আমাকে দিতে হয়েছিল। ফলে আমাকে জুরি হিসেবে নির্বাচন না করার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। জুরিদেরকে প্রতিদিনের জন্য ৪০ ডলার সম্মানী দেওয়া হয়। যদি কেউ ১০ জনের অধিক চাকরিজীবী আছেন, এমন কোনো কোম্পানিতে কাজ করেন তবে ঐ কোম্পানিকেই সে ব্যক্তির বেতন ভাতা প্রদান করার আইন রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক। রাষ্ট্রীয় আইনে জনগণ যে সরাসরি তাদের মত প্রকাশ এবং ভূমিকা রাখছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র তা নিশ্চিত করেছে। সে কারণে জুরি ডিউটি পালনে অবহেলাকে অপরাধমূলক বলে বিবেচনা করা হয়। এবারের একদিন জুরি ডিউটি করে আসার পর নানা ভাবনাই আমাকে আচ্ছন্ন করেছে গভীরভাবে। আভ্যন্তরীণ অপরাধ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন যেভাবে জুরিদের মতামত নিয়ে থাকে, ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রেও যদি সেভাবে জনগণের মতামত গ্রহণ করা হতো তবে বিশ্বের যুদ্ধবাজি হয়তো অনেকটাই কমে যেতো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। ভেবে অবাক হই। যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি মানুষ সমস্বরে বলছেন, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাই। কিন্তু বুশ প্রশাসন তা শুনছে না কেন ? -------------------------------------------------- ( দৈনিক ভোরের কাগজ । ঢাকা । ১৩ নভেম্বর ২০০৭ মংগলবার) সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ৯:৪০
false
mk
অস্তিত্বের লড়াই নিয়ে বিএনপির অপেক্ষা আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনকে ‘অস্তিত্বের লড়াই’ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। এ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। তবে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সঠিকভাবে প্রচারণা চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয়ে বিএনপি। রাজধানীতে গতকাল পর্যন্ত দল সমর্থিত কোনো প্রার্থীই প্রকাশ্যে নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেননি। এমনকি নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীর সমর্থক বা স্বজনরা। সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়েও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিএনপিতে। সমান সুযোগ পেলেই ভোটে অংশ নেবেন বিএনপি জোটের প্রার্থীরা। অন্যথায় নির্বাচন বয়কটের চিন্তাভাবনাও রয়েছে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিএনপি সমর্থিত অধিকাংশ ওয়ার্ড কাউন্সিলরই এখনো আত্মগোপনে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থীরও একই অবস্থা। তবে ভিন্ন পরিবেশ চট্টগ্রামে। সেখানে বিএনপি জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলম প্রকাশ্যেই নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মহানগর সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন তিনি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেউ কেউ পলাতক থাকলেও অনেকেই প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন।এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি সব সময় গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দল। এ কারণেই আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি আমরা। কিন্তু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হলে বিএনপির প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় বাধাগ্রস্ত হবেন। আর এটা হলে বিএনপি যে কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারে। সরকারের উচিত হবে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’ জানা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামি বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা আদালতে অবকাশকালীন ছুটি শেষ হলে জামিন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবেন। এর আগে আপাতত আত্মগোপনে থাকারই কৌশল নিয়েছেন। তবে সরকার ও আদালতের ভূমিকা কী হয় তার অপেক্ষায়ও থাকবেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সরকার নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না করলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভোট বয়কট করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলে। সূত্রমতে, এ কারণেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে আপাতত হরতাল কর্মসূচি শিথিল করা হয়েছে। সারা দেশে অবশ্য অবরোধের পাশাপাশি হরতালও বহাল রাখা হয়েছে। সরকারকে চাপে রাখতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপি নেতাদেরও চাপ ছিল, হরতাল বহাল রাখার ব্যাপারে। হরতাল না থাকলে তৃণমূলে গুম, খুনসহ গ্রেফতার হয়রানি বাড়বে বলে আশঙ্কা মাঠ পর্যায়ের বিএনপি নেতা-কর্মীদের। এসব বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে হরতাল বাদ দিয়ে সারা দেশে ফের ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়।লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অপেক্ষা : আসন্ন তিন সিটিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অপেক্ষায় বিএনপি জোট। প্রার্থীদের সমান প্রচারণার সুযোগ, ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটদানের নিশ্চয়তার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক চলাফেরার সুযোগ চায় বিএনপি। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী দলের কারাবন্দী সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে মুক্তি, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সব অফিস খুলে দেওয়া, প্রার্থীদের জামিনে বাধা সৃষ্টি না করাসহ কিছু দাবিও দলটির। এ নিয়ে দুই-এক দিনের মধ্যে খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে জোটের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হতে পারে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে কথাও বলবে দলের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। দুই সিটিতে ৯৩টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে গড়ে অন্তত চারজন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী পদেও একই অবস্থা। প্রার্থী সংখ্যার আধিক্যে একক প্রার্র্থী বাছাই করতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। বহু ওয়ার্ডে ছয়-সাত নেতাও নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। যদিও তারা এখনো আত্মগোপনে। এদিকে পলাতক থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা কে কাকে রেখে কার জন্য সুপারিশ করবেন, কাকে বাদ দেবেন- তা নিয়েও নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। রাজধানীর প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের মতো করে কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। এ জন্য আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে বলে কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন।ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী নিয়ে জটিলতা : ঢাকা সিটি উত্তরের প্রার্থিতা চূড়ান্ত থাকলেও দক্ষিণের প্রার্থিতা নিয়ে দলের দুই প্রভাবশালী নেতার দ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহের একদিন পরই নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন বর্তমান আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। সালাম সমর্থকরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুমতি নিয়েই সালামের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। অবশ্য একই বক্তব্য আব্বাস সমর্থকদেরও। জানা গেছে, আবদুস সালামের জন্য ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত নিয়েছেন। মির্জা আব্বাস প্রথমে রাজি না হওয়ায় সালামের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। তবে ঢাকা মহানগরে প্রভাব বিস্তার করতেই সাদেক হোসেন খোকা এ উদ্যোগ নেন বলে আব্বাস সমর্থকদের অভিযোগ। এদিকে খালেদা জিয়ার প্রথম পছন্দে থাকা মির্জা আব্বাস প্রথমে রাজি না থাকলেও পরে তিনি অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া ওই সিটিতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক কাজী আবুল বাশারও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ নিয়ে এখনো কোনো হিসাব-নিকাশ মিলাতে পারেনি বিএনপির হাইকমান্ড। জানা যায়, জাতীয় শত নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে গত শুক্রবারের বৈঠকেও ঢাকার প্রার্থিতা নিয়ে সংকটের এ বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। তবে বেগম জিয়া ওই বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে শত নাগরিকের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি বলে বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের জানিয়েছেন। দলীয় নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান ড. এমাজউদ্দীন।এখনো মাঠছাড়া বিএনপি : ঢাকার ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরের প্রায় সব নেতা এখনো মাঠে নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার ও লিফলেটে নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে গেলেও এখনো নীরব বিএনপি জোটের প্রার্থীরা। তারা ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর আটঘাট বেঁধে মাঠে নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এর আগে গোপনে গোপনে মাঠের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জানা যায়, ৯৩টি ওয়ার্ডের প্রায় সব কাউন্সিলর প্রার্থীই এখনো আÍগোপনে। দুই ঢাকার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদেরও একই অবস্থা। প্রার্থীদের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, এখনো তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। সরকার মোটামুটিভাবে সমতল মাঠ সৃষ্টি করলেই মাঠে নামবেন তারা। প্রার্থীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের ভূমিকার প্রতিও দৃষ্টি রাখছেন।মনোনয়ন ছিনতাইয়ের অভিযোগ : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭ নং ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী মনির হোসেন নিজের মনোনয়নপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদুল মাতবর ও তার ক্যাডাররা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জানা যায়, রবিবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সভাপতি হাজী মনির হোসেনের পক্ষে সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার আবুল কালাম আযাদ গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় খন্দকার আবুল কালাম আজাদকে সাঈদুল মাতবরের লোকজন মারধর করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। মাহমুদ আজহার। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ৩০ মার্চ ২০১৫
false
rn
আকাশ ভরা মেঘ এযুগের প্রেমের কাহিনী বলল আজ। একটি মেয়ের প্রেমিক আছে । সে তার প্রেমিক কে অনেক ভালোবাসে। সব সময় ফোনে সব রকম খোঁজ খবর রাখে। প্রেমিকের আনন্দে আনন্দ পায়। প্রেমিকের কষ্টে কষ্ট পায়।প্রেমিককে সুন্দর পথ দেখায়। প্রেমিক হতাশায় পড়লে আশ্বাসের বানী দেয়। প্রেমিক ভালো কাজ করলে এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে। একটু একটু করে প্রেমিক প্রেমিকা দু'জনে মিলে তাদের ভবিষ্যৎ সাজায়। তারা বিয়ে করবে, তাদের বাচ্চা হবে, সংসারে আনন্দ আর আনন্দ থাকবে। দু'জনের প্রতি দু'জনের এক আকাশ ভালোবাসা।হয়তো এই ভালোবাসা আছে বলেই- প্রেমিকটির চোখে মুখে ভবিষ্যতের আনন্দ ঝলমল করে ওঠে। আমার আজকের কাহিনীর- প্রেমিক প্রেমিকা ঢাকা শহরের থাকে । কিন্তু তাদের রোজ দেখা হয় না । মাসে দুই একবার দেখা হয়। প্রেমিক থাকে ঢাকা শহরের এক প্রান্তে, প্রেমিকা থাকে আর এক প্রান্তে। কিন্তু দূরত্ব যতই হোক তাদের আছে মোবাইল ফোন ।সারাক্ষন তারা টুকটাক কথা বলতেই থাকে । তাদের প্রেম কিভাবে শুরু হলো- সেটা আগে বলে নিই। অন্য দশটা প্রেম যেভাবে শুরু হয়- তাদেরটা সেভাবে শুরু। প্রেম ভালোবাসা মানুষের সমস্ত দূরত্ব মুছে দেয়। তাই দেখা হলে শুধু হাত ধরলে পোষায় না, জড়িয়ে ধরতে হয় চুমু দিতে হয়। প্রেমিকা বিদায় নেওয়ার সময় বুকের মধ্যে এক ধরনের ব্যাথাও হয়। ছোট ছোট দুঃখ কষ্ট এবং টুকরো টুকরো আনন্দ নিয়ে দুই তিন বছর কেটে যায়। মোবাইল বিজি থাকলেই প্রেমিকা ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। তার মানে কি? তাদের মধ্যে এক আকাশ ভালোবাসা আছে কিন্তু বিশ্বাস নেই? এযুগের প্রেমিক প্রেমাকিদের মধ্যে ভালোবাসা আছে কিন্তু বিশ্বাস নেই। যদি বিশ্বাস থাকে তাহলে প্রেমিক অথবা প্রেমিকা মোবাইল বিজি থাকার কারণে ঘেউ ঘেউ করে উঠতো না। সাধারনত প্রেমিক প্রেমিকা'রাই মোবাইলে বেশী কথা বলে থাকে। তাছাড়া মোবাইলে কথা বলতে মেয়েরা খুব বেশী পছন্দ করে। অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে গেলে মেয়েদের গলা দিয়ে দারুন সুন্দর মিষ্টি কথা বের হয়। অতীত ইতিহাস ঘাটলে বুঝা যায়- ছল-চাতুরী'তে মেয়েরা খুব পাকা। যে কোনো মেয়ে ইচ্ছা করলে একটা ছেলেকে দশ বার কিনে বিশ বার বিক্রি করতে পারে।অনেক সময় মেয়েদের ওড়না অথবা শাড়ির আঁচল সরে যায়। এটা কিন্তু অজান্তে নয় তারা চায় বলেই সরে যায়।( বয়স্ক দাদী, নানী, চাচী, ফুপু ছাড়া ) এটা কি তারা পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ওড়না অথবা শাড়ির আঁচল সরিয়ে রাখে ? এই ব্যাপার টা অবশ্যই নোংরামির মধ্যে পড়ে। বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ? এই প্রশ্ননের জবাবটা কে আমায় দিবে ? আমার পরিচিত এমন একজন মানুষ থাকতো- যে সব প্রশ্নের উত্তর জানে । ছুটে যেতাম তার কাছে । বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক মানে কি, এটা দেখানো যে তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে ভালোবাসা আছে । সত্যিকার অর্থে প্রেম ভালোবাসা কাঁচের মত। যে কোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।আমি মনে করি, যে সমস্ত ছেলে মেয়ে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক করে তারা বোকা । একটা কথা সবার মনে রাখা দরকার শারীরিক সম্পর্ক দিয়ে কাউকে ধরে রাখা যায় না । বিশ্বাস এবং ভালোবাসা দিয়ে ধরে রাখা যায়। ইদানিং অনেক ছেলে মেয়ে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কটাকে আধুনিকতা মনে করে। তবে এটা সত্য যে দু'জন মানুষ অনেকদিন পাশাপাশি থাকলে- তীব্র একটা আকর্ষণ তৈরী হয়ে যায় মনের অজান্তে। এযুগের নারী পুরুষ মানেই এক আকাশ রহস্য। আমার সব রকম রহস্য জানতে ইচ্ছা করে। রহস্য গুলোকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে। সারা জীবন একটাই আফসোস থেকে যাবে- রহস্য গুলো উন্মোচন করতে পারলাম না। ঘুম আসছিল না। তাই এলোমেলো নিজের সাথে নিজে কথা বললাম ।এই লেখা কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়। রাস্তা ঘাটে চলার পথে অনেক কিছু চোখে পড়ে। সেসব বিষয় নিয়ে ভাবি। আসলে কথায় বলে না, কাজ নেই তো খই ভাঁজ। গ্রহ, নক্ষত্র তারার চেয়ে- মানুষ নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে । কিন্তু সমস্যা একটাই, মানুষ নিয়ে ভাবতে গেলে আগেই তার নোংরামি গুলো চোখের সামনে ভেসে আসে। যাই হোক, ঘুমাতে যাই। কাল অনেক কাজ আছে। সারা দিন ব্যস্ত থাকতে হবে।পৃথিবীর সবাই ভালো থাকুক। মানুষের জীবন থেকে সকল নোংরামী মুছে যাক । সকল মানূষ শান্তিতে থাক । সকল নারী পুরুষের মধ্যে এক আকাশ বিশ্বাস আর ভালোবাসা জেগে উঠুক-এই মধ্যে রাত্রে ঈশ্বরের কাছে এটাই চাই।
false
fe
আধুনিক কবিতার দ্বন্দ্বযাত্রা ও পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা _ আহমেদ ফিরোজ আহমেদ ফিরোজ শূণ্য দশকের কবি। তার এই লেখাটি ২০ জুন ২০০৮ শুক্রবার দৈনিক ভোরের কাগজে ছাপা হয়েছে। কবিতা বিষয়ে তার ভাবনা সবার সাথে শেয়ার করার জন্য এখানে তুলে দিলাম। বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে এ লেখায়। --------------------------------------------------------------------------------- আধুনিক কবিতার দ্বন্দ্বযাত্রা ও পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা আহমেদ ফিরোজ ========================================= কবিতায় আধুনিকতা প্রসঙ্গটিকে পুনর্মূল্যায়ন করবার সময় এসেছে। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে আধুনিকতা শব্দটি উচ্চারণের সাথে সাথে দীক্ষিত পাঠকের চেতনায় যে অনুষঙ্গগুলি ফুটে ওঠে, সেগুলোকে তিনটি পর্বে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত, আধুনিক কবিতা রবীন্দ্রোত্তর বা রবীন্দ্র-রচনার প্রাতিষ্ঠানিকতা, দাপট ও সর্বব্যাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় একধরনের পাল্টা কাব্যভাষা। ভাষাকেই বদলানো বা ভাষার স্বাস্থ্যোদ্ধার সেখানে খুব বড় একটা জায়গা নিয়ে আছে। ভাষাকে পাল্টানো : আঙ্গিকের দিক থেকে , কবিতার ভাষাকে মুখের ভাষার কাছাকাছি নিয়ে আসা। দ্বিতীয়ত, আধুনিক কবিতা বলতে বাঙালি পাঠক যা বোঝেন, তা মোটামুটি সজনীকান্ত দাস-এর শ্লেষার্থে ব্যবহৃত আধুনিক। অর্থাৎ রবীন্দ্রানুসারীদের প্রচারিত ত্রিশের নব্য, রবীন্দ্র-বিরোধী কবিদের ক্যাম্পের সম্বন্ধে এক নঞর্থক ধারণাÑ যা চলে এসেছে সাম্প্রতিক কাল-পর্যায়ে ষাট বা সত্তর পর্যন্ত। এখানে, আধুনিক কবিতা মানে দুর্বোধ্য, ধোঁয়াটে, কখনো কখনো বেপরোয়া অশ্লীলও। আধুনিক কবিতার তৃতীয় ব্যাখ্যা হলো সেই কবিতাÑ যা বিশের দশকের পর থেকে অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে মূলত ইংরেজি এবং সাথে সাথে ফরাসি কবিতা ইত্যাদির প্রভাবে নিজেকে পাল্টে নেয়। অর্থাৎ এই ধারণায় আধুনিকতার সাথে পাশ্চাত্য প্রভাবের একটি সংযোগ আছে। পাশ্চাত্য-অর্থ মূলত ইউরোপ। বোদলেয়ার, ইয়েটস, পাউন্ড, এলিয়ট প্রমুখ কবিদের আধুনিক ধারণাকে দ্রুত আত্তীকরণ করা ও বাংলা কবিতায় তার অনুপ্রবেশ ঘটানোই আধুনিক কবিতার প্রগতির সূচক, আধুনিকতার দ্যোতকÑ এই ধারণা বা উপপাদ্যটি মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক বিবেচনা থেকে এসেছে। এটার সত্যতা অনেকটাই নিরূপিত হয় আর্থ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অন্যান্য ঘটনার যথার্থতা থেকেÑ সমাজের অবক্ষয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সংকটÑ ইত্যাদির প্রতিফলনে। রবীন্দ্রোত্তর কবিতায় বাংলা ভাষার স্বাস্থ্যোদ্ধারের যে উল্লেখ আছে, তার ভেতরে আরো একটু প্রবেশ করলে আমরা এই প্রশ্নগুলির মুখামুখি হবো : ভাষার স্বাস্থ্যসম্বন্ধে একটা বিশেষ ধারণার বশবর্তী হয়ে ভাষার স্বাস্থ্যোদ্ধারে এগোনোর কোনো বিশেষ লগ্ন কীভাবে নির্ধারিত হবে, সেই লগ্নটি কি সত্যি নির্ধারিত হয় কবিতার ভাষার দ্বারা, নাকি ভাষা-বহির্ভূত, অন্য কোনো আর্থ-সামাজিক/রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলশ্র“তি তা? এই সিদ্ধান্তের কথাটিও কি একধরনের ভাষাবিশ্ব বা চিন্তাপ্রক্রিয়ার ফসল? নাকি বাস্তবতাকে আমি যেভাবে দেখতে চাইছিÑ তারই প্রতিফলন? অর্থাৎ আমি যেভাবে বাস্তবতাকে আমার ভাষাবিশ্বের প্রিজমের ভেতর দিয়ে প্রসারিত ও প্রতিফলিত এবং পরিবর্তিত অবস্থায় পাচ্ছি, সেটাই আমার আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে; অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আমারই সিদ্ধান্ত বলে আমি আমার বাস্তবতাকে নির্মাণ করছি এবং আমার কবিতা সেই নির্মাণেরই অন্তর্গত হয়ে যাচ্ছে। দুই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও আমাদের সমালোচনাসাহিত্য-সমর্থিত ত্রিশের আলোচিত পাঁচ কবি এবং জসীমউদ্দীন-এর পরে বাংলা কবিতার যে কালযাত্রা, এ-যেন ধারাবাহিক উত্তরাধিকারেরই নামান্তর; অর্থাৎ বিশেষ কোনো দিক পরিবর্তন, চেতনা ও ভাষায় অথবা উপস্থাপনাগত উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ চোখে পড়ে নাÑ যা হয়েছে তা কোনো-না-কোনো ভাবে রবীন্দ্রনাথ থেকে জীবনানন্দ কিংবা নজরুল-এর দ্রোহ থেকে জসীমউদ্দীন-এর পল্লীগানের প্রভাব মুক্ত নয়। লালন-এর সর্বরাগ সর্বসুরের অন্তর্যাত্রা, প্রেমবার্তা, ভক্তিমাত্রাÑ নশ্বর, অবিনশ্বর, অধিনশ্বরে শতরঙে বিচ্ছুরিত ও সমর্পিত। আর রবীন্দ্রনাথ-এ জল-বারি-বরিষণ এনে দিলো ষড়ঋতু আবাহনঃ। তাঁদের দেখানো পথেই ঘুরে-ফিরে পথচলাÑ যা নতুন পথের সন্ধান দিতে না-পারলেও এবং ধারাক্রম ভেঙে অন্যদিনের আলোয় আলোকিত করতে এগিয়ে না-আসলেও কুয়াশাচ্ছন্ন পথকে রুদ্ধ করেছে। তারপরেও আশাহীন পথচলা, ভিন্নতা চারদিকে। এই পরিপ্রেক্ষিত গতি-অন্বেষার কালে বাংলাদেশে মধ্যাশির কিছু আগে ও পরে একটি নতুন সুর বাজতে চাইল লিটল ম্যাগাজিনের আন্দোলনের সূত্র ধরে। আবার দেখা যায়, এ-সময়েই তারুণ্যদীপ্ত মুখগুলো জ্বলে উঠতে শুরু করল একটা পৃথকাবস্থান নির্দেশনায় স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এবং এ-কালে এসেই আগের ধারাবাহিকতা ভেঙে দেবার প্রত্যয় দেখা গেল। কিš' দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঊষালোকিত ভোরকে স্বাগত জানাতে বারবার ব্যর্থ হলো। উদগ্র নেশা, নীতিহীন প্রেম, ধর্মের জেল্লাই এবং রাজনীতির খড়্গ চেপে বসল শিল্পের ওপর। যখন অবৈজ্ঞানিক নেশার কড়চায় অন্ধপ্রেম মোহমুগ্ধ হয়ে উঠল ধর্মের জিল্লতি পসারে, তখন স্বৈরশাসন কিংবা বিক্রি হয়ে যাওয়া আশ্রয় খুঁজে ফিরল আশির মেধা ও মনন। এভাবে মিথ্যে হয়ে গেল সাংস্কৃতিক মোল্লাদের নানাপ্রকার ফতোয়া বয়ান, পাশাপাশি ধর্মীয় মৌলবাদচক্র নানা ভাব-বেশে দানা বাঁধতে শুরু করলÑ রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও। নব্বইয়ে এসে আর-এক ঝাঁক নতুন যাত্রীর দেখা মিললেওÑ তারাও মোহভঙ্গের মতোই হতাশ করেছে। কোনো সামষ্টিক উদ্যোগ (লেখা ও কর্মে) চোখে পড়েনি, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও স্বাহঙ্কার ভেঙে দিয়েছে শিল্পগুণ কাঠামোকেও। এবার মিডিয়া কিনে ফেলল মাথা, সবাই দল বেঁধে ছুটল মধ্যবর্তী কাল থেকে প্রিন্টিং মিডিয়ার ভাগাড়েজ্জদালালিতে কিংবা অন্নপ্রাসনে; কেননা প্রতিটি পত্রিকা ও চ্যানেল কোনো-না-কোনো মুখপত্রÑ ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের। পুঁজি হাভাতেÑ গিলছে ছোট-বড় সব স্বপ্ন কিংবা সম্ভাবনাকে। পরবর্তী পাঁচ বছরে জেঁকে বসল ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ফলে পণ্য হলো ধন্য দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়, আর আটকে গেল অথবা বাক্যশূন্য হয়ে পড়ল এইসব উত্থিত তরুণদল। এই সময়ে দু’একটি লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্য পত্রিকা বেঁচে থাকলেও এবং নতুন নতুন সংকলন-পত্রিকার জন্ম হলেওÑ এসব ঘিরে গড়ে উঠেছে নীতিহীন দল, গোষ্ঠী; মূর্খতা ও গোপন আঁতাত। সুসংবাদ এখনো নেই, দূরের ইশারা ভাঙছে প্রতি পলে পলে : সামুদ্রিক চোখ আঁষ্টে গন্ধে দিক-নির্দেশনা খুঁজে ফেরে যান্ত্রিক নগরে। আমরা ধর্মীয় মৌলবাদকে গালাগাল দিয়ে পরিত্যাগ করে বুর্জোয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরেছি। মৌলবাদ একচোখে পতিত, বুর্জোয়া দশচোখে জারজাত। দু’য়ের পার্থক্য কম, মিল অনেক। ফলে সর্বত্রই সত্য মিলল পশ্চাৎপদতায়, কমিটমেন্ট হলো স্বার্থনত। আর, এমন-এক সময় আমরা পার করছিÑ যখন নিজের গা থেকে রক্ত না-ঝরলে বুঝতেই পারি না যে কতটা পতিত আছি! তাছাড়া এই দুই দশকে, যখন লিটলম্যাগের আন্দোলনসূত্রে এন্টি-এস্টাবলিশমেন্টের কথা জোরেসোরে বলা হচ্ছে, তখন ব্যক্তিগত পর্যায়ে এস্টাবলিশমেন্টের পিছনে ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করেছে সেইসব বয়ানকারী কবি-সম্পাদক ও লেখকেরা। পাশাপাশি বিদেশে পাড়ি দেওয়ার ঘটনাও বেড়েছে। কখনো ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে, কখনো অর্থোপার্জনের মাধ্যম-নির্বাচনে; আবার কখনো-বা দুর্নীতির বেড়াজাল টপকে নিজের কবি-স্বভাবকে রক্ষা করতে। এক্ষেত্রে আশির একজন কবির বিদেশযাত্রা বিশেষভাবে সমালোচিত। এর সঙ্গে বেড়েছে আমলা ও অধ্যাপকদের কচলানি, লিটলম্যাগের নাম ভাঙিয়ে নানা আইটেম ও সাইজে সাহিত্যপত্রিকা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংকলন প্রকাশ এবং ইতিহাসে নাম লেখানোর প্রেরণায় নানামুখী চটকদার ও চাটুকারী আয়োজন ও উৎসব উৎযাপনে। আয়ের বাড়তিতে মেধা বিকিয়ে এরাই কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ-প্রজন্মকে নানাভাবে বিভ্রান্ত ও ভোজং-আড়ংয়ে নিজ কিংবা অন্যের দলমুখী করার চেষ্টায় লিপ্তÑ যা কখনো কখনো রহস্যজনক ও আক্রমণাত্মক। এদের রুখতে না-পারলে ভেড়ার পালে বাছুর প্রামাণিক সাহিত্যযাত্রা ও অবদমিত জীবনযাপন কখনোই মেরুদণ্ড সোজা করে উঠে দাঁড়াতে পারবে নাÑ এ-আশঙ্কা আজ আর রূপকথারূপ গল্প নয়, ধর্মের বেসাতি নিয়ে দাঁড়িয়েছে; সে-কারণে সময়ের করণীয় প্রজন্মকেই গ্রহণ করতে হবেÑ আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর নামই দ্রোহ, অহংকার, ব্যক্তিগত কমিটমেন্ট। এখন সিদ্ধান্ত শর্তযুক্ত : ডান নাকি বাম, সামনে নাকি পশ্চাতে, ঊর্ধ্বে নাকি অধেঃ, নাকি আরো চারদিকে; নাকি দিক-পথ একটিইÑ কবির পক্ষে, স্রষ্টার পক্ষে, লালনের পক্ষে, ইচ্ছা-শ্রম ও সাধনার শৌর্যে সর্বমঙ্গলের দিকেÑ সর্বশূন্যতাবাদের পথ। যে পথে নির্বাণ ও নির্মিতি। জাতীয় ও ভারতবর্ষীয় অলস ও কর্মবিমুখ মন-মানসিকতা তিলে তিলে গিলতে শুরু করেছে আমাদের স্বতন্ত্র সত্তা ও উদ্ভাসকে। ‘শ্রম’ ও ‘সাধনা’ শব্দ দুটি আমরা যেন ভুলতে বসেছি, সৎ ‘ইচ্ছা’র জায়গাও কম। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত আলস্যতা আর জাতীয়ভাবে প্রাপ্ত কর্মবিমুখতা ক্রমে অতল-অন্ধকার-গহ্বরে তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছেজ্জস্বাহঙ্কার ও আপসের চরম উৎকর্ষতায়। স্ববিরোধিতা প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে লিটল ম্যাগাজিন কর্মীদের হাতেই। কেউ ফতোয়া দিয়ে বড় কাগজে গিয়েছে, কেউ বড় কাগজ থেকে ছোট কাগজে, কেউ-বা প্রকাশনা দিয়ে ফাঁদ পেতেছেন ‘মহান কারিগর’। অনাগ্রহ, উদাসীনতা, ভণ্ডামি ও আঁতলামি যেন এদের স্বভাবে জেঁকে বসেছে দিনে দিনে। কবিতা এখন তো আর গীত নয়, মূর্খ সভায় পাঠান্তরও নয়, কবিতা এখন শিক্ষিত মানুষের আরাধ্য ও সাধনায় পরিণত হয়েছে, পাঠকও এ-শ্রেণিভুক্ত। পাঠককে মূর্খ, গেয়ো, অসচেতন, বোকা ভাববার কোনো কারণ নাই। বিজ্ঞানের উন্নয়ন বা বিকাশের পাশাপাশি তার বিস্তারও ঘটে গেছে সমাজে নানাভাবেÑ নানা পর্যায়েÑ নানা দিক দিয়ে। সেক্ষেত্রে আঁতলামি বা ছেঁচড়ামি করবার কোনো সুযোগ নাই। এই সবুজাভ যাত্রায় লেখক-পাঠক উভয়কেই সৎ (মননশীল) হয়ে উঠতে হয়। ব্যক্তিগত কমিটমেন্টই আজ সমাজে ও কবিতায় সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে, এবং তার ব্যবহার আবশ্যকতাও সমানভাবে প্রযোজ্য। আর, একজন প্রতিশ্র“তিশীল কবি বা সাহিত্যিক সে-সাধনাই করেন দ্বন্দ্বচর্চার প্রক্ষেপণে। তিন ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’Ñ সেই রবীন্দ্রনাথ-এ এসেই কবিতা খুঁজে পেল সহজ ভাষা এবং এই ধারা অব্যাহত রইল ত্রিশের দশক পর্যন্ত। কিš' চল্লিশের দশকের পর থেকে সহজ ভাষা আরো সহসা রূপ পেল মুখের ভাষায় এবং উত্তরাধিকার বয়ে চলল পঞ্চাশ ও ষাটের দশকেও। এরপর সত্তর দশকে এসে রাজনৈতিক ভাষা শ্লোগান প্রধান করে কথা ক’য়ে উঠলেও কোথাও কোথাও সহজতা হয়ে পড়ল তরলতা যোগ গদ্য-পদ্য প্রধান। যেখানে ভাবের সন্ধান মিললেও শিল্পের গান ব্যাহত হলো। আর এ-প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো এ-দশকার্থে শুধুমাত্র সেই দশকের যাত্রা শুরুর লেখকেরাই শুধু নন, পাশাপাশি ঐ দশকে ধারাবাহিক চর্চায় অংশগ্রহণকারী তরুণ-প্রবীণ কবির অনতিক্রম্য যাত্রাও বিবেচ্য। আশি এবং নব্বই দশকে সেই যাত্রার ধ্বনিই হয়ে পড়ল জটিল-কুটিল, কখনো কখনো অতি তরলীকরণ, হাস্যকর ও গা-ছাড়া। ব্যতিক্রম ব্যতিক্রমই এবং ব্যতিক্রম কখনোই উদাহরণ হতে পারে না। জটিল-কুটিল অর্থে দুর্বোধ্যতার প্রচারণা মুখ্য। কেননা চর্যাপদ থেকে মধ্যযুগের উজ্জ্বলতর সৃষ্টি বৈষ্ণব পদাবলী, শেষের দিকে গদ্য ও উপন্যাসমুখর যাত্রাÑ সবই ছিল একালের বিবেচনায় ভাষার বুঝে না-ওঠার ব্যর্থতা বা প্রচলিত ভাষার সঙ্গে এগুতে না-পারা। কিš' আশি ও নব্বইয়ে শব্দের বাড়াবাড়িরকম ব্যবহার চোখে পড়বার মতোÑ যা দুর্বোধ্যতায় পরিগণিত। সবাই রান্নার কাঠ-খড় নিয়েই মেতেছেন বেশি, খাবারের স্বাদ নিয়ে চিন্তা করেননি। ভেবেছেন খাবেন পাড়া-প্রতিবেশী, তার জন্য তো ফ্রিজে রবীন্দ্রনাথ, বোদলেয়ার, চেকভ, শেক্সপিয়র, ওমর খৈয়াম তোলা আছে। এভাবে একদল কাঠ-খড় সংগ্রহ ও সাইজ কাঠামো তৈরিতে ব্যস্ত রইলেন; অন্যদল আগে তেল না পানি, পিয়াজ না মরিচÑ এই করে সারা দুপুর; তৃতীয় দল কি রান্না হবে তার কোনো খোঁজ-খবর না-জেনেই স্বাদ-আলোচনায় উত্তরাধুনিক হয়ে উঠলেন; কিš' বিষয়, ভাব ও হাতযশ নিয়ে ভাবলোই না এবং খাবার যারা গ্রহণ করলেন, তাদের জিহ্বা ও দাঁতের খোঁজ না নিয়েই লেগে পড়লেন পাতিল-খুন্তি চর্চায়। যা অশোভন, অমানবিক ও উচ্ছৃঙ্খলতার শামিল। আবার এরাই দলবেঁধে ন্যাংটো উৎসব করে, মেয়ে-বউয়ের শরীরী মাপ-জোক শ্লীল শব্দে বস্তাবন্দি করে। কারণ শ্লীল-অশ্লীল শব্দের দ্বন্দ্বে এদের হাত-পা কাঁপে, সঠিক জায়গায় সঠিক উচ্চারণটি করতে দ্বিধান্বিত ও মূক হয়ে পড়ে, আবার সময়ে সময়ে তথাকথিত বিদ্রোহীর মুখে পান চিবোয়, চুন-সুপারি-খয়েরএরও যে একটা মূল্য আছে তা তাদের চর্মজীবনে কে বিশ্বাস করাবে? এ-পর্যায়ে আঞ্চলিক শব্দ ও ধ্বনি ব্যবহার এবং লোকজ ও ঐতিহ্যের দোহায় দিয়ে কবিতায় ঢুকে পড়ল অশুদ্ধ, অপ্রচলিত ও পুরনো সব শব্দÑ যা আধুনিকতার নামে কলঙ্ক ছড়াল। কোথাও কোথাও অশিক্ষিত গোবেচারা ভাব ফুটে উঠল। যা কারো কারো হাতে অতি তরলিকরণ রূপ পেল। এবং এই সময়েই সমাজ ও পারিবারিক জীবনে ব্যর্থ, হতাশাগস্ত ও কোথাও ঠাঁয় না-পাওয়া দুর্বৃত্তেরা এসে জুটল সাংস্কৃতিক বলয়ে : কবি, সাংবাদিক, নাট্যকর্মী, শিল্পী, সমালোচকের ভূমিকায়Ñ এরা পথ আগলে দখল করল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং ছড়িয়ে পড়ল ঢাকাসহ দেশজুড়ে; নিজের ও অন্যের অঞ্চল এক করে ফেলল। তোষামোদকারী, আপসকামী কিংবা সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ বলা যায় এসব সংস্কৃতিকর্মীদের। যাদের লোভ ও মোহের লোল ঠোঁট গড়িয়ে বুকের সরুপথ বেয়ে নাভিমূল হয়ে নিম্নদেশমুখী। ফলে কোনোকিছুই আর কমিটমেন্টের আওতায় থাকল না, চলে গেল অতি-গণতন্ত্রায়নের ফিল্মি নায়িকার স্থূল গতরে। সংস্কৃতিসেবীর মুখোশ পরিচয়ে বেড়ে গেল আমলা, অধ্যাপক ও সাংবাদিক। যা গড়চর্চারও নিচে গিয়ে দাঁড়াল। এর উদাহরণ প্রতিবছর একুশে বইমেলা ও অন্য সময়ে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে কতগুলো পাঠযোগ্যজ্জসে বিবেচনা থেকে চিহ্নিত ও পরিষ্কার। ফলে হাস্যকর ও গা-ছাড়া হয়ে পড়ল সাহিত্যচর্চা ও সংস্কৃতিকর্মীর আসন। মানুষের কথাজ্জদেশপ্রেম যেন চিরকালের জন্য দেশান্তরিত হলো অতি-আধুনিকতা বা উত্তরাধুনিকতার নামে। চোর, ছেচ্চড়, বদমাশে পরিণত হলো অধিকাংশ সংস্কৃতিকর্মী। ফলে নিম্নবৃত্তের মানুষের কথা স্থান পেল না, মধ্যবিত্তের কচকচানি থাকল, পাশাপাশি উচ্চবিত্তের জৌলুস ও বেহায়াপনা স্থান পেল সাহিত্য ও মিডিয়ায়। পজেটিভ ধ্যান-ধারণা জলাঞ্জলি দিয়ে নেগেটিভ আক্রোশ ফুটে উঠল সর্বত্র। কবিদের স্থান এর থেকে খুব দূরে হলো না। ভূমি দখলের মতো পাতা দখল ও পতিতচরিত্র ফুটে উঠল জীবনযাপনে। সংস্কৃতিকর্মীর একটা বড় অংশ মিথ্যাবাদী, কমিটমেন্টহীনতায় পতিত হয়ে পড়ল ধর্মে-কর্মে ও শরমে। দ্রোহ লুকাল ইঁদুরের গর্তে, আর জীবনের সবচেয়ে ব্যর্থ মানুষগুলো হয়ে উঠল সাহিত্য-সংস্কৃতির কেশরবিহীন সেবক-সিংহতে। এ আমাদের একধরনের জাতিগত দুর্ভাগ্য এবং নীতিহীন বেড়ে ওঠা শরীর ও মনের দীর্ঘকালের ভীরুতার ফলাফল; দাসনীতি তাই এখনো প্রকট সমাজে ও রাষ্ট্রে। এই পরিপ্রেক্ষিতে স্বপ্ন-সম্ভব সম্ভাবনার সাহসী বাস্তবায়ন ও কার্যকরণ যেমন জরুরি, তেমনি ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন সাংস্কৃতিক ধ্বনি-যাত্রার অন্দরে-বাইরে। তবেই উত্তরণের গান আলোর মুখ দেখবে। ভালো মানুষ, সৎ মানুষ এখনো আছে। তাদের একত্রিত হতে হবেÑ ঘরে-বাইরে, ধর্ম, রাষ্ট্র ও সমাজে। এগিয়ে আসতে হবে বিপ্লবের অগ্রনায়কদের শ্রেণি-বৈষম্য ভুলে সত্যিকার সাহিত্যসেবায়, সংস্কৃতিচর্চায়। সেইদিন পরাভূত নয় নিশ্চয়? তাছাড়া আঠারো ও উনিশ শতকের শিক্ষা আমরা ভুলতে বসলাম বিশ শতকের শেষ ত্রিশ বছরে। আমাদের ভূখণ্ডগত স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামÑ অহংকার ও আনন্দের একই সঙ্গে, আবার আমাদের পরাজয়Ñ ধর্মীয় মৌলবাদ, দেশদ্রোহ ও একান্ত একার ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থের কাছে জিম্মি। সাহিত্যেও এর প্রভাব পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি, সাথে সাথে বিকাশ লাভ করেনি দেহ, মন ও আত্মার বেড়ে ওঠা ও প্রকাশ। কি রীতিতে, কি ইঙ্গিতে? ধর্ম, রাজনীতি, নেশা ও শরীর ভোগগত প্রেম অন্ধকারে ঢেকে ফেলল সম্ভাবনা-উত্তর স্বপ্নযাত্রা ও শিকড়ের রূপ-রস-গন্ধের অস্থি ত্বকে। ব্যর্থতার কাল একুশ শতকের শুরুর দশকেও প্রযোজ্য, তবে আশার কথা : গত শতাব্দির ক্লেদ দূর হচ্ছেÑ নতুনের জয়গানে, দেশপ্রেম ও কমিটমেন্টের ডকুমেন্টারি থেকে মাটিতে, বাতাসে, প্রচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বে। ‘অহংকার’ ব্যক্তিত্বের মূল হয়ে উঠছে ব্রিটিশ ভাব-সম্প্রসারণ ভুলে। এসব সৃষ্টিপর্বের আনন্দ-বেদনার জয়ধ্বনিই। আমার বিশ্বাস মানুষ শুধুই টিকে থাকবে না, সে সফলতা পাবে। সে অমর, কিš' সেটা এই কারণে নয়Ñ প্রাণীদের মধ্যে শুধু তারই এক অফুরান কণ্ঠস্বর আছে; বরং এই কারণে যে, তার আত্মা আছে, সেটা এমন-এক সত্তাÑ যেটা মায়া-মমতা, আত্মত্যাগ ও ধৈর্যসহিষ্ণুতায় ভরপুর। কোনো কবির, কোনো লেখকের কর্তব্য শুধু এই নিয়েই লেখা। তার যে বিশেষ অধিকার আছে, মানুষের হৃদয়কে উন্নীত করে তিনি যে ধৈর্যসহিষ্ণুতায় বাঁচতে সাহায্য করতে পারেন, তাকে তিনিই মনে করিয়ে দিতে পারেন স্পর্ধা আর সাহস আর সম্মান আর আশা আর অহমিকা আর মায়া-মমতা আর আত্মত্যাগÑ যা ছিল তার অতীত মহিমা। নিছক মানবস্বরের প্রতিলিপি হয়ে থাকার তো দরকার নেই কবির স্বরের, সেটা নানা কৃৎকৌশলের একটা হতে পারে, বরং আসল খুঁটিকৌশল একাই হতে পারেÑ যা অসীম সহিষ্ণুতায় টিকিয়ে রেখে সাফল্য অর্জন করতে তাকে সাহায্য করবে। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০০৮ সকাল ৮:৪৮
false
fe
রাজনীতির রাজপুত্রের প্রতি রাজনীতির রাজপুত্রের প্রতিফকির ইলিয়াস===============================তিনি চলে গেলেন। সংসদীয় রাজনীতির রাজপুত্র ছিলেন তিনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। আমাদের খুব প্রিয় সেন দা। মানুষের কাছাকাছি ছিল তাঁর রাজনীতি। জমিনের আইলে বসে পড়তেন তিনি। বলতেন, ‘চাচা এক দম তামুক খাইতে আইছি’। এতই মাটিবর্তী ছিলেন তিনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রাজনীতি ছিল সমাজবাদের পক্ষে। সাম্যবাদ ছিল তাঁর ধ্যান-ধারণা। আমার মনে পড়ছে, তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৭৮ সালে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী।সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেই নির্বাচনে ওসমানীর পক্ষে প্রচারণা করতে আমাদের এলাকায় আসেন। আজকের সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজারে বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করেন সেনগুপ্ত। আমি তখন কিশোর। সদ্য কলেজ ছাত্র। তন্ময় হয়ে তাঁর বক্তব্য শুনি। সেনগুপ্ত তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু হত্যার পুরো ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, কীভাবে সেই খুনি সৈনিকরা জাতির জনককে হত্যা করেছে। তিনি জানিয়ে দেন এই দেশে সামরিক শাসনের ভবিষ্যৎ কী!আমার কাছে তাঁকে রাজনীতির বরপুত্র মনে হয়। অপলক তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। কথায়, সাহসে, তেজে তাঁকে আমার মনে হয় ইনিই এই দেশের গণমানুষের সূর্যের প্রতীক। প্রত্যন্ত জনপদ থেকে উঠে আসা এক শক্তিমান পুরুষ।ছাত্রজীবনেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। হাওরাঞ্চলের ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলনে দীর্ঘদিন তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পিকিং ও মস্কো ধারায় দুই টুকরা হলে মওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে সুরঞ্জিত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশে যোগ দেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। পরে ন্যাপের ভাঙনের পর গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ ও ১৯৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে জয়ী হন। পঞ্চম সংসদের সদস্য থাকাকালেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রথমে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে সুরঞ্জিত ভোটে হেরে গেলেও পরে হবিগঞ্জের একটি আসনে উপনির্বাচন করে তিনি বিজয়ী হন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন তিনি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন। দলীয় মনোনয়নে এমপি হলেও ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অন্য চারজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে সুরঞ্জিতও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পদটি হারান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর সুরঞ্জিতকে আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুরঞ্জিত।মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তার একজন এপিএসের অর্থ কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আঙুল ওঠে। তিনি স্বেচ্ছায় ব্যক্তিগত সহকারীর দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে পরের বছর ২০১২-এর ১৬ এপ্রিল মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে দপ্তরবিহীনমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মন্ত্রিসভায় রেখে দেন। এ সময় নির্দোষ প্রমাণিত না হলে সক্রিয় রাজনীতি করবেন না বলে সুরঞ্জিত ঘোষণা দেন। এপিএসের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুরঞ্জিত সেনকে নির্দোষ ঘোষণা করলে আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলন তিনি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন।তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তিনি আবারো আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।ব্যক্তিগত জীবনে সেনগুপ্ত ছিলেন একজন সাদাসিধে মানুষ। ১৯৩৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের আনোয়ারপুর গ্রামে জন্ম সুরঞ্জিতের। তার বাবা চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও মা সুমতি বালা সেনগুপ্ত। তিনি দিরাই উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।কিন্তু তাঁর জীবনের শুরুটা ছিল খুবই প্রতিক‚ল। ছোটবেলায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাবা-মা মারা যান। তখন থেকে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েন তিনি। অভিভাবকবিহীন মুক্তচিন্তায় সবার সঙ্গে গল্প-আড্ডায় ঘুরে বেড়াতেন। ছাত্ররাজনীতিতে ছিলেন সক্রীয়, বক্তৃতায় ছিলেন পটু। পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী ছিলেন না তিনি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নাটক, যাত্রাপালা করে দাপিয়ে বেড়াতেন। তিন তিনবারে ম্যাট্রিক পাস করেন, গার্ডিয়ান ছাড়া যা হয় তেমনটাই হয়েছে। কলেজে যাওয়ার পর তাঁর প্রতিভা বিকশিত হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর বেশ সুনাম ছিল। এরপর ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তিনি।হাওরের কাদাজল মেখে হাওর জনপদে যাত্রা-নাটক মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ানো দুখু সেন থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্ণিল রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী হয়ে ওঠেন। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়লাভ করার মধ্য দিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রাজনৈতিক উত্থান হয়। এই নির্বাচনে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ন্যাপের একমাত্র প্রার্থী হয়ে ‘কুঁড়েঘর’ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অক্ষয় কুমার দাসকে (অক্ষয় মিনিস্টার) হারিয়ে জয়লাভ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ১৯৭০-এর প্রাদেশিক নির্বাচনে ন্যাপ থেকে এমএলএ প্রার্থী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সেন্ট্রালে গুলজার আহমদ চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ থেকে এমএলএ প্রার্থী ছিলেন অক্ষয় কুমার দাস ও সেন্ট্রালে আবদুস সামাদ আজাদ। উপজেলার হাতিয়া গ্রামের কেন্দ্রীয় ন্যাপ নেতা গুলজার আহমেদ চৌধুরী, কমরেড বরুণ রায় ও দিরাই পৌর সদরের দোওজ গ্রামের ক্ষিতিশ নাগের হাত ধরে বাম রাজনীতিতে অভিষেক হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। তাদের হাত ধরেই তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে সুরঞ্জিত সেনের রাজনীতির শুরু বামপন্থী সংগঠনে। সাম্যবাদী দর্শনে দীক্ষা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করা এই নেতা তাঁর রাজনীতির দীর্ঘ ৫৯ বছর দাপটের সঙ্গেই চলেছেন।মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সক্রিয় যোদ্ধা ছিলেন সুরঞ্জিত। তিনি ৫ নম্বর সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। আইয়ুব-মোনায়েমবিরোধী উত্তাল আন্দোলনে ছিলেন সামনের সারিতে। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয় তার। এগারো দফা, ছয় দফা আন্দোলন, সত্তরে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য, সাবসেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন তিনি। ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটি, এরপর একতা পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি হয়ে পরে নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ। আপাদমস্তক রাজনীতিক হিসেবে সেক্যুলার কিংবা অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা ধারণ করেছেন সবসময়ই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি দেখেছেন খুব কাছে থেকে। তাঁর রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে লালন করেছেন আজীবন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক প্রভাব ছিল তার মধ্যে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সবসময় বলতেন, ‘পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ধারণাই করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু কী ছিলেন, আর কী করতে পারেন। ১৯৬৬-এর ছয়দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাই তার প্রমাণ।’ জাতীয় সংসদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন বাংলার আপামর মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব।আরেকটু পেছনে ফিরে যাই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি ছিল একটি গৌরবময় অধ্যায়। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্পিকার। আবদুস সামাদ আজাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। একই সময়ে এই তিনজন কৃতী মানুষকে নিয়ে সিলেট বিভাগবাসীর ছিল গর্ব। আজ তিনিও চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সঙ্গে নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। তিনি আজীবন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আজ একটা পর্যায়ে আমরা আনতে পেরেছি। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সংসদ নেতা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে অনেক জেলজুলুম সহ্য করতে হয়েছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়েই আমাদের চলতে হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ বর্তমানে এখানে থাকা অনেক মন্ত্রী-নেতাও আহত হন। কিন্তু হামলার পর সংসদে আমাদের একটি কথাও বলতে দেয়া হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংসদে খালেদা জিয়া যখন বলেন আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে হামলা করেছি, তখন বিএনপির নেতারা হাততালিও দিয়েছেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচাররা বারবার সঙ্গিনের খোঁচায় পবিত্র সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি-আদর্শ বাদ দেয়া হয়েছিল। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করেছি। সেই সংগ্রাম ও কর্মকাণ্ডেও আমাদের অন্যতম সাথী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।২০০৪ সালের ২১ জুন দিরাইয়ের একটি জনসভায় তাকে লক্ষ করে গ্রেনেড হামলা করে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্পিøন্টার শরীরে নিয়েই তার জীবনাবসান হয়।আমি তাঁকে ডাকতাম সেন দা। দেশে এবং বিদেশে অনেকবার তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গ আড্ডা দেয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। তিনি আমাদের কাছে ছিলেন স্বপ্নের রাজনীতিক। মনে পড়ছে- নিউইয়র্কে ইফতার মাহফিলে আমাদের সঙ্গে শরিক হয়ে বলেছেন, ‘কিতা বা ইতা ছিলটি মিঠাই নি’। না জাত-পাত তার কাছে কোনো বিষয় ছিল না। তিনি ছিলেন মানবতার বন্ধু। শেষ জীবন পর্যন্ত সেই ঝাণ্ডা সমুন্নত রেখে গেছেন।জাতীয় সংসদে জীবনের শেষ বক্তৃতায় অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ান বলেছেন, ‘সাংবিধানিক পথ ছাড়া অন্যভাবে এই জাতিকে বিব্রত করা ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এখন যেটি অবশিষ্ট আছে। সুযোগ এখনো যায় নাই। রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটি করে দিয়েছেন। বিএনপির যদি কোনো কথা থাকে, তারা অনুসন্ধান কমিটিতে বলতে পারেন। তারা বলতে পারেন, এই লোক না নিয়ে ওই লোক নিন। এটা সংবিধান প্রণিধানযোগ্য হতে পারে। অন্য কোনো উপায় নেই। তিনি আরো বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এসেছে বলে দাবি করছে। তাহলে তাদের সংবিধান সম্পর্কে আরো ওয়াকিবহাল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’ হ্যাঁ, আজীবন রাষ্ট্রের সংবিধানের পক্ষে কাজ করেছেন এই সংবিধান প্রণেতা। তিনি ছিলেন রাজনীতির রাজপুত্র। এই বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তাঁর নাম চির অম্লান থাকবে তত দিন। থাকবে তাঁর চেতনা। আপনাকে আমার পরম শ্রদ্ধা, প্রিয় নেতা, প্রিয় রাজনীতিক।------------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:২৯
false
rg
ঋতুপর্ণ ষোষের 'অন্তরমহল' প্রাচীন জমিদার প্রথার বিরুদ্ধে এক সত্যকথন!! ২০০৫ সালে কলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মাণ করেন 'অন্তরমহল' ছবিটি। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প 'প্রতীমা' অবলম্বনে নির্মাণ করা 'অন্তরমহল' ছবিটি ২০০৫ সালের ২৮ অক্টোবর মুক্তি পায়। ব্রিটিশ আমলের এক জমিদার পরিবারের গল্প এটি। ছবিতে জমিদার ভূবনেশ্বর চৌধুরী'র চরিত্রে অভিনয় করেন জ্যাকি শ্রফ। আর তাঁর দুই স্ত্রী 'মহামায়া' চরিত্রে অভিনয় করেন রূপা গাঙ্গুলী (বড় বৌ) আর 'যসবতী' চরিত্রে অভিনয় করেন সোহা আলি খান (ছোট বৌ)।অন্তরমহলের গল্পটা এমন- প্রতি বছর জমিদারের বাড়িতে ভাস্কর (প্রতীমা গড়ার কারিগর পালমশাই) ডেকে দুর্গাপূজার প্রতীমা গড়া হয়। কিন্তু জমিদারের মাথায় ঢুকেছে ব্রিটিশ রাজদরবার থেকে যে করেই হোক রায় বাহাদুর উপাধী তাঁর চাই-ই চাই। ব্রিটিশ রাজকে খুশি করতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন নতুন বছরের দুর্গাপূজায় স্বয়ং দেবীর মুখের চেহারা করা হবে রানী ভিক্টোরিয়ার চেহারার গড়নে। দুর্গা দেবীকে যেন রানী ভিক্টোরিয়ার মত দেখতে হয়। সেজন্য পুরাতন ভাস্করকে বাদ দিয়ে হিন্দুস্তান থেকে নতুন একজন ভাস্কর আনা হলো। ছবিতে নতুন ভাস্করের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিষেক বচ্চন।এদিকে জমিদার বাবু পুত্র সন্তানের আশায় প্রথম বিবাহের বারো বছর পর দ্বিতীয় বিবাহ করলেন। ব্রাহ্মণ শাস্ত্র মতে যাবতীয় প্রচেষ্টা করেও কিছুতেই জমিদার বাবু'র পুত্র সন্তান হয় না। বিজ্ঞ ব্রাহ্মণের পরামর্শে এবার জমিদার বাবু ছোট বৌয়ের সঙ্গে সহবাসের সময় একই ঘরে ব্রাহ্মণকে ডাকলেন মন্ত্র পাঠের জন্য। স্ত্রী সহবাসের সময় ব্রাহ্মণ কর্তৃক মন্ত্রপাঠের শব্দ কানে গেলে নাকি পুত্র সন্তান হয়, এমন বিশ্বাসে জমিদার তাই করতে লাগলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণের উপস্থিতিতে সহবাসে ছোট বৌয়ের ভীষণ ঘেন্না লাগল। ছোট বৌ ছুটে বাড়ি থেকে পালাতে চাইলেন। জমিদার ছোট বৌকে ধরার জন্য কড়া নির্দেশ দিলেন। কিন্তু ছোট বৌকে ধরার সাহস পায় না কেউ। শেষ পর্যন্ত জমিদার বাড়িতে নতুন নিয়োগ পাওয়া ভাস্কর অভিষেক বচ্চন ছোট বৌকে জাপটে ধরলেন।সেই থেকে ভাস্করের মাথার ভেতরে রহস্যময় কিছু একটা ঘটতে লাগল। নিজের বৌয়ের সঙ্গের স্মৃতি আর এই জমিদার বাড়ির ছোট বৌয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দুই মিলে এক ঘোরলাগা ব্যাপার। ওদিকে বড় বৌ নতুন পটুয়াকে নানাভাবে পটানোর ধান্ধা করেন। কিন্তু নতুন পটুয়ার মনে সাহস হয় না! ওদিকে বড় বৌয়ের পরামর্শে পরের রাত থেকে শোবার ঘরের বাইরে বসে ব্রাহ্মণ মন্ত্রপাঠ করা শুরু করলেন। কিন্তু সেখানে বড় বৌ ব্রাহ্মণের সামনে গিয়ে যেভাবে শরীর প্রদর্শন করতে লাগলেন, তা দেখে স্বয়ং ব্রাহ্মণের ক্ষণে ক্ষণে মন্ত্রপাঠ থেমে যাচ্ছিল। পরে অবশ্য বড় বৌ ছোট বৌকে বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, ঢোরাসাপে বিষ নেই। ও আমি জানি। তোর দরকার পুত্রসন্তান। তুই নতুন ভাস্করকে ঘরে ডেকে পুত্রসন্তান নিয়ে নে। কিন্তু ছোট বৌয়ের মন চাইলেও সেই দুঃসাহস হয় না তাঁর।এমনিতে ছোট বৌয়ের খুব বিড়ালের ভয়। জমিদারের পোষা বিড়াল আদরের নীলকান্তকে যসবতী খুব ভয় পান। এক দুপুরে যসবতীর ঘরে ঢুকেছিল নীলকান্ত। নীলকান্তকে বের করার জন্য যসবতীর ঘরে ডাক পড়ে নতুন ভাস্কর অভিষেকের। সেই খবর জমিদার ভূবনেশ্বর বাবু'র কানে যায়। বাড়িতে ফিরে তিনি ছোট বৌকে জিজ্ঞেস করেন, দুপুরে নাকি ঘরে হুলো ঢুকেছিল। জমিদার বাবু যে ভারী কড়া জমিদার তা বুঝিয়ে দিতে তিনি সেই অতি আদরের বিড়ালকে মেড়ে, জোর করে যসবতীকে সেই মরা নীলকান্তকে দেখিয়ে যা বোঝানোর ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিলেন।ওদিকে পূজার সময় যতোই নিকটে আসছে ব্রাহ্মণসমাজ মিলে জমিদার বাবুকে বোঝাতে চাইলেন, দেবী দুর্গার মুখ যদি রানী ভিক্টোরিয়ার মুখের আদলে হয়, তাহলে ইংরেজরা হয়তো খুশি হবেন কিন্তু হাজার বছরের সনাতন সমাজ, বিশেষ করে প্রতিবেশী হিন্দুরা কিন্তু তা মানবে না। অন্তত পূজার সময় রানী ভিক্টোরিয়ার গড়নে যে প্রতীমা গড়া হচ্ছে তা যেন ঢেকে রাখা হয়। পূজার পর যেদিন ভাইসরয় আসবেন, সেদিন যেন সেই প্রতীমা উন্মোচন করা হয়। তার আগে কেউ তা দেখলে অমঙ্গল হবে, দুর্নামও হবে!এই নিয়ে ব্রাহ্মণ সমাজের সঙ্গে জমিদার বাবু'র মন কষাকষি শুরু হলো। শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণরা মিলে একটা পরামর্শ দিলেন, যদি এই পাপ মোচন করতে হয় তো বড় বৌকে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে এক রাত কাটাতে হবে।ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! পূজা আরম্ভ হলো। দেবী দুর্গার মুখ উন্মোচন করা হলো। সেই মুখ মোটেও রানী ভিক্টোরিয়ার নয় একেবারে সাক্ষাৎ ছোট বৌ যসবতী'র মুখ যেন। কোথাও নতুন ভাস্করকে খুঁজে পাওয়া গেল না। ওদিকে বড় বৌ মহামায়াকে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে রাত কাটাতে যেতে হবে। কিন্তু সেই সন্ধ্যায় তার ঋতুস্রাব শুরু হলো। বাড়ির সেবিকা তা জানলেও মহামায়া তাকে ধমকে দিলেন। আর বললেন, না আমি এই অবস্থায়ই ব্রাহ্মণদের সঙ্গে রাত কাটাবো। আমি যাবো। আমি যাবো।ওদিকে দেবী দুর্গার মুখের কায়া স্বয়ং ছোট বৌ যসবতী'র মতো হওয়ায় বন্দুকে গুলি ভরে জমিদার ছোট বউকে খুন করতে তৈরি হলেন। বড় বৌ মহামায়া দরজায় বাধা দেবার চেষ্টা করেও ক্ষ্যাপা জমিদার বাবুকে পারলেন না আটকাতে। দরজা ভেঙ্গে তিনি গুলি করতে উদ্যত হয়ে হঠাৎ হাতের বন্দুক মাটিতে ফেলে দিলেন! কারণ যসবতী অনেক আগেই গলায় ফাঁস নিয়েছেন।সে বছর দেবীমুর্তির পরিবর্তে ঘট পূজো হলো। বিসর্জনের পরদিন গ্রামের শ্মশানে চন্দনকাঠের চিতায় অকালপ্রয়াত ছোট বৌকে মহাসমারোহে দাহ করা হলো। শোনা গেল তিনি এক কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কেবল নতুন পটুয়ার খবর কেউ জানতে গেল না।ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতে চমৎকার সব ডায়লগ। জমিদার বাবু ছোট বৌকে আদর করার এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করেন, এ মাসে কী হলো নাকি? জবাবে ছোট বৌ বলেন, না আর দুই দিন যাক। গত মাসে তো ৬ তারিখে হয়েছিল। জবাবে জমিদার বাবু বলেন, দেখি, হাতপাখাটা দাও। তখন হাতপাখা জমিদার বাবু'র হাতে দিয়ে ছোট বৌ যসবতী'র জমিদার বাবু'র গায়ের ঘ্রাণ শুকে সন্দেহ হয়। জিজ্ঞেস করেন, এটা বুঝি নতুন আতর! জবাবে জমিদার বাবু বলেন, বাইরে যেতে হয় এক আতরে, আর বাইরে থেকে ফিরতে হয় নতুন আতরের ঘ্রাণ নিয়ে। নইলে কী আর এ বাড়ির বড় বাবু!ব্রাহ্মণের পরামর্শে যখন ব্রাহ্মণের সামনে স্ত্রী সহবাস করতে উদ্যত জমিদার বাবু, তখন ছোট বৌকে বলেন, নাও দাঁড়িয়ে থেকো না, ওঠো তাড়াতাড়ি। জবাবে ছোট বৌ বলেন, বিছানায় বসে বসে পূজো দেখব, পাপ হবে না? তখন জবাবে ব্রাহ্মণ বলেন, এ পূজা নয় মা, যজ্ঞ বলতে পারেন। এ যজ্ঞে প্রধান পাত্রপাত্রী আপনি এবং আপনার স্বামী। আমি কেবল পুরোহিত মাত্র! তখন জমিদার বাবু বলেন, উনি যা পড়বেন শুনবে। মানে না বুঝলেও মন দিয়ে শুনবে। কানে যাওয়াটাই আসল কথা। অন্য কোনো দিকে যেন মন না যায়। এই পর্যায়ে মুখে পান দিতে দিতে আবার বলেন, বুইছো?আগের দিনে জমিদার বাবুরা স্ত্রী সঙ্গমের আগে মুখে পান দিতেন!! স্ত্রী সহবাসের আগে পান খাওয়ার এই বিষয়টি আমি বুঝিনি। ছবিতে প্রাচীন জমিদার আমলে বাঙলার জুয়েলারীর একটা বিশাল সম্ভার প্রদর্শিত হয়েছে। যেখানে দেখা যায় গালা, বালা, হাতের কাঁকন, পায়ের মল, সীতা হাড়, গুইনি হাড়, মটর মালা, গোলাপ বালা, কোমরের বিছি, মণিকুন্তলা, খোপা সাজাবার হাড়, নাকের নোলক, বাজু বন্ধন, শিলনো নূপুর, কানপাশা, সোনার চুলের চিরুণী, বুইসা হাড়, হাতের বালতি, রতন চৌদ, বাঙলার চৌদ, পাথর জোড়া সেট, কোমরের ঝাপটা ইত্যাদি জুয়েলারির দৃষ্টিনন্দন ব্যবহার। যা ওই সময়ের জমিদারদের বাড়িতে সচারচর ব্যবহৃত হতো।প্রায় প্রত্যেক জমিদারের একজন খাস চামচা থাকত। সবাই তাকে বলত সরকার। এক্ষেত্রেও একজন সরকারের উপস্থিতি দেখা যায়। জমিদার বাড়ির যত রকমের পাইক পেয়াদা দাসি থাকার কথা সেরকম এলাহি কারবারের প্রদর্শনীও ছিল এ ছবিতে। বৃটিশদের থেকে রায় বাহাদুর উপাধী পাবার পর যাতে জমিদার বাবু'র একখানা আঁকানো ছবি প্রদর্শন করা যায়, সেজন্য বাড়িতে রাখা হয়েছিল এক ফিরিঙ্গি আর্টিস্টকে। জমিদার বাবু মহলে বসতেন আর সেই বুড়ো আর্টিস্ট তাঁকে দেখে দেখে ছবি আঁকেতন।দুর্গা পূজার আগেই তার ছবি আঁকার কাজ শেষ হয়। যাবার আগে তিনি নতুন পটুয়ার কাছে থেকে রানী ভিক্টোরিয়ার মুখের আদলে তৈরি করা প্রতীমা কেমন হলো দেখতে চাইলে অভিষেক কাপড়ে দিয়ে মুখ আটকানো প্রতীমা থেকে কাপড় খুলে আর্টিস্টকে দেখিয়েছিলেন। তিনি খুব খুশি হন নতুন প্রতীমা দেখে। বিদায়বেলায় অভিষেক আর্টিস্টকে কিছু উপহার দিয়ে বলেন, আমি পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছি, আর্শিবাদ চাই। ছবিতে অভিষেকের স্ত্রী'র চরিত্রে অতিথি শিল্পী হিসাবে অভিনয় করেন রাইমা সেন।নির্মাতা ঋতুপর্ণ ষোষের ছবি দেখে সেই ছবি আমার আবারো দেখার ইচ্ছে জাগে। এর আগে হিরের আংটি, ঊনিশে এপ্রিল, দহন, অসুখ, বাড়িওয়ালী ও চোখের বালী দেখেও আমার একই অনুভূতি হয়েছিল। তাঁর রেইনকোট তো অসাধারণ এক ছবি। দ্য লাস্ট লিয়ার, খেলা, আবহমান আর শেষ ছবি সত্যান্বেষী দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। মাঝখানে অন্য কারো ছবি দেখব।বাঙলার জমিদারগণ যে কত ভাবে প্রজা শোষণের পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজ দরবারকে খুশী করায় মত্ত থাকতো, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত 'অন্তরমহল' ছবিতে নতুন করে দেখিয়েছেন নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ। ব্রাহ্মণ সমাজের যে শ্রেণীভেদাভেদ, কৃষ্টি, কালচার, আর তার আড়ালে যে এক লোভী পুরুষের লালা ঝড়ার দৃষ্টান্ত ঋতুপর্ণ দেখান, তা যেন সমাজে প্রচলিত এই ব্যবস্থাকেই কুঠার আঘাত করে।ব্রাহ্মণদের আদেশে মহামায়াকে যে একবার লোকসমাজে ন্যাংটো হতে হয়েছিল, সেই জ্বালা মহামায়া সারা জীবন বয়ে বেড়ান। নপুসংক জমিদার পুত্র সন্তানের আশায় আবারো বিয়ে করেন। কিন্তু রোজ রাতে যসবতী'র উপর জোরপূর্বক সঙ্গমেও মাস শেষে কোনো ফল ধরে না। যসবতী'র ঠিকই মাস শেষে ঋতুস্রাব হয়। আর জমিদার তখন রাগে ক্ষোভে পাড়ায় বেড়াতে যান। তখন যে তিনি পররানীর সঙ্গে ঘুমান, তা ছবিতে দেখানো না হলেও নানা অনুসঙ্গ তা সুস্পষ্ট করে। নইলে ছবিতে যসবতী গলায় ফাঁস নিয়ে মারা গেলেও কোটেশান আকারে তার দুরারোগ্য ব্যাধির যে কারণ উল্লেখ করা হয় না, তা আসলে সেক্সচুয়াল ডিজিজ এইডস-এর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। যসবতী গলায় ফাঁস না নিলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর এইডস-এ মরণ হতো, এ কথা বোঝাতেই নির্মাতা এই কোটেশানের আশ্রয় নিয়েছেন।একটি সমাজের কৌলিন্যের আড়ালে যে নষ্ট ভ্রষ্ট পাপাচার অনাচার আর কুসংস্কার কত ভাবে সমাজকে ধ্বংস করে, তার জলন্ত উদাহরণ ঋতুপর্ণার 'অন্তরমহল'। যতদিন বাংলা সিনেমা বাঁচবে, ততদিন ঋতুপর্ণের সিনেমাগুলি মানুষ মনে রাখবে। জয়তু ঋতুপর্ণ ষোষ। জয়তু বাংলা সিনেমা।........................................১৯ এপ্রিল ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১০
false
hm
ঈস্টার দ্বীপ ০৪ ঈস্টারবাসীদের মূর্তি নির্মাণ, পরিবহন এবং স্থাপন নিয়ে এখনো গবেষণা এবং উত্তপ্ত বিতর্ক চালু আছে। তবে এরিখ ফন দানিকেনের মতো এর কৃতিত্ব কেউ ভিনগ্রহীদের কাঁধে চাপিয়ে দেননি। কোন ইয়োরোপীয় অভিযাত্রীও ঈস্টারের কোন মূর্তি পরিবহন বা উত্তোলনের কাজ নিজের চোখে দেখে বর্ণনা দিয়ে যাননি, এ ব্যাপারে গবেষকরা তথ্য সংগ্রহ করেছেন দ্বীপের লোকায়ত কাহিনী এবং পরোক্ষ নিদর্শন থেকে। এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দাঁড় করানো তত্ত্বগুলির ওপর পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষাও করা হয়েছে হাতেকলমে। রানো রারাকু খনিতে এখনও অনেক অসমাপ্ত মূর্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ব্যাসল্টের বাটালিগুলিও ছড়িয়ে আছে তার পাশে। একেবারেই অসমাপ্ত মূর্তিগুলি আর কিছু নয়, কেবল পাথর থেকে খোদাই করা একটা পাথরের টুকরো, মুখ আকাশের দিকে, পিঠ তখনো সরু একটা পাথরের দাঁড়ার মাধ্যমে যুক্ত আছে মূল পাথরের সাথে। এর পর মাথা, নাক, কান, হাত, নেংটি ইত্যাদি খোদাই করার কথা। এর পর পাথরের দাঁড়াটা ঠুকে ঠুকে ভেঙে মূর্তিটাকে পাহাড়ের গা থেকে আলগা করা হতো। অসমাপ্ত কোন মূর্তিরই চোখ নেই, এ থেকে ধারণা করা হয়, পরিবহন শেষে অথবা আহুর ওপর তুলে মূর্তিগুলির চোখ তৈরি করা হতোমন্তব্য ১। ১৯৭৯ সালে সোনিয়া হাওয়া এবং সের্খিও রাপু হাওয়া এক দারুণ আবিষ্কার করেছিলেন, একটি আহুর কাছে মাটি খুঁড়ে তারা পেয়েছিলেন সাদা প্রবালে তৈরি একজোড়া চোখ, যার মণিদু'টি লাল স্কোরিয়া পাথরের। এরকম আরো অনেক আহুর কাছে পরবর্তীতে খুঁড়ে আরো চোখ পাওয়া গিয়েছে। এই চোখগুলি মোয়াইয়ের চক্ষুগহ্বরে স্থাপন করলে এক দর্শনীয় চেহারা দাঁড়ায় মূর্তির। তবে খুব বেশি চোখ খুঁজে পাওয়া যায়নি, ধারণা করা হয়, অল্পই তৈরি করা হয়েছিলো, যা পুরোহিতদের পাহারায় থাকতো সারা বছর, আর বিশেষ অনুষ্ঠানে মূর্তির চোখে স্থাপন করা হতো। রানো রারাকু থেকে পথ বেরিয়ে গেছে দ্বীপের সব দিকে, উঁচু নিচু টিলা এড়িয়ে যা সমতল ধরে গেছে। রানো রারাকু থেকে পশ্চিমসৈকতে অবস্থিত আহুগুলির দূরত্ব ৯ মাইল। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গাতেও প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলি পাথরের তৈরি, এবং সেখানে বেশিরভাগ সময়েই কেবল মানুষের পেশীশক্তি দিয়ে ভারি পাথর পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা ঈস্টার দ্বীপে মূর্তি পরিবহন নিয়ে নানা পরীক্ষা করেছেন, যার শুরু হয়েছিলো থর হেয়ারডালকে দিয়ে, যিনি মূর্তি পরিবহন করতে গিয়ে একটা মূর্তির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলেন। আন্দাজ করা যায়, তাঁর পদ্ধতিটি সঠিক ছিলো না। অন্যান্য পদ্ধতি যা চেষ্টা করা হয়েছে, তা হচ্ছে দাঁড়ানো বা শোয়ানো মূর্তি টেনে নিয়ে যাওয়া, কাঠের স্লেডে রেখে টেনে নেয়া, কাঠের রোলারের ওপর রেখে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, ইত্যাদি। জ্যারেড ডায়মন্ডের কাছে সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়েছে জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গের পরামর্শ, যিনি বলেছেন, ঈস্টারবাসীরা পলিনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী কাঠের মই, যা সাধারণত ব্যবহৃত হয় জঙ্গলে গাছ কেটে সেটা খোদাই করে ক্যানো বানিয়ে সৈকত পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে, সেরকম মইয়ের ওপর দিয়ে মূর্তিগুলি টেনে নিয়ে গেছে। ডায়মন্ড নিজেও পাপুয়া নিউগিনিতে এমন মাইলখানেক লম্বা মই দেখেছেন, উঁচু এলাকা থেকে সৈকত পর্যন্ত ক্যানো বানাবার গাছ বয়ে নিয়ে যাবার জন্যে। হাওয়াই দ্বীপে কিছু কিছু ক্যানোর ওজন ঈস্টারের সাধারণ মূর্তির চেয়ে বেশি, যা কি না এই কাঠের ওপর দিয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক গবেষণার আলোকে কিছু যোগ করবো আমি, পরে। জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গ তত্ত্ব দিয়েই বসে থাকেননি, হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখেছেন। কাঠের স্লেডে শোয়ানো ১২ টন ওজনের একটা মূর্তিকে কাঠের মইয়েরও ওপর চড়িয়ে দড়ি বেঁধে তিনি ঈস্টারবাসীদের কয়েকজনকে দিয়েই টানিয়েছেন। তাঁর পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৫০ থেকে ৭০ জন লোক যদি দিনে ৫ ঘন্টা করে মূর্তি টানে, আর টান পিছু যদি ৫ গজ করে এগোয়, তাহলে ৯ মাইল রাস্তা পেরোতে সময় লাগে হপ্তাখানেক। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে, মূর্তি পরিবহনের কাজটা অনেক সহজ হয়, যদি সবাই একসাথে, সমলয়ে টানে, যেভাবে বাইচের নৌকাতে সমলয়ে দাঁড় টানে সবাই। এই পরীক্ষা থেকে তথ্য নিয়ে হিসেব করে দেখা গেছে, পারো-র মতো ভারি মূর্তি পরিবহন করতে একই সময়ে ৫০০ লোক লাগবে, যা ঈস্টার দ্বীপের এক একটি গোত্রের পক্ষে (গোত্রের আকার এক থেকে দু'হাজার মানুষ পর্যন্ত) যোগান দেয়া সম্ভব। ঈস্টারবাসীরা থর হেয়ারডালকে দেখিয়েছিলো, কিভাবে এমন একটা মূর্তি আহুর ওপর খাড়া করা হয়। এ নিয়ে তারা রীতিমতো ক্ষেপেও ছিলো, যে প্রত্নতাত্ত্বিকরা তাদের একবার জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন পর্যন্ত বোধ করেনি। পরবর্তীতে উইলিয়াম মালয়, জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গ, ক্লাউদিও ক্রিস্তিনো এবং আরো অনেকের গবেষণায় আরো তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ঈস্টারবাসীরা প্রথম পাথরের টুকরো দিয়ে হালকা ঢালু একটা ড়্যাম্প তৈরি করে নেয়, তারপর মূর্তির নিচের দিকটা ওপরে রেখে টেনে সেটাকে আহু পর্যন্ত তোলে। এরপর মূর্তির মাথাকে কাঠের লিভার দিয়ে চাঁড় দিয়ে একটু একটু করে তোলা হয়, ইঞ্চি দুয়েক তোলার পর মূর্তির মাথার নিচে পাথর গুঁজে দেয়। এভাবে পুরো মূর্তিটাকে খাড়া করা হয়। মূর্তির পুকাও একই সময়ে একই ঠেস কাঠামো দিয়ে সম্ভবত তোলা হতো। পাথরের ঢাল পরে সরিয়ে ফেলা হয়। সবচেয়ে বিপদজনক মূহুর্ত হচ্ছে খুব খাড়া কোণ থেকে একেবারে খাড়া করার সময়টুকু। মূর্তির ভরবেগ একটু এদিক সেদিক হলেই সেটা টাল খেয়ে পেছনে পড়ে যেতে পারে। এ কারণেই মূর্তির কারিগররা একে পুরোপুরি সমকোণে তৈরি করতো না, মূর্তির পাদদেশ থেকে হয়তো ৮৬-৮৭ ডিগ্রী কোণ করে মূর্তিটিকে তৈরি করা হতো। ফলে মূর্তিকে যখন খাড়া করা হতো, সেটা সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকে থাকতো, ফলে টাল খেয়ে পেছনে পড়ে যাবার ঝুঁকি কমতো অনেকখানি। এরকম একটা মূর্তি খাড়া করার প্রকল্পই নিঃসন্দেহে প্রচন্ড খরুচে ছিলো। জনা বিশেক খোদাইকারীকে এক মাস ধরে নিশ্চয়ই খাওয়াতে হতো, কিংবা খাবার দিয়ে মজুরি শোধ করা হতো। এরপর বয়ে আনার জন্য ৫০ থেকে ৫০০ জন লোকের খাওয়া-মজুরি, তারপর মূর্তি খাড়া করার জন্যও একই পরিমাণ মানুষের খাওয়া-মজুরি, তারপর মূর্তি খাড়া হয়ে গেলে নিশ্চয়ই উৎসবে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতে হতো, তাতে হয়তো যে গোত্রের এলাকা দিয়ে মূর্তি বয়ে আনা হয়েছে, তাদেরও আমন্ত্রণ জানাতে হতো। যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেব করতে বসেছিলেন, কী পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয় এ কাজে, এবং তার সূত্র ধরে খোরাকির পরিমাণ নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন যে মূর্তির ব্যাপারটা গোটা প্রকল্পের ছোট একটা দিক, একটা আহুর ওজন মূর্তির চেয়ে কমসে কম ২০ গুণ বেশি, এবং সেই আহুর পাথরও বয়ে আনতে হতো। জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গ এবং তাঁর স্থপতি স্বামী ইয়ান, যিনি লস অ্যাঞ্জেলসে নির্মাণ পেশার সাথে জড়িত, হিসেব কষে বার করেছেন, ঈস্টারের আহু এবং মোয়াইয়ের জন্য মূর্ত নির্মাণের ৩০০ বছরে ২৫% অতিরিক্ত খাবার প্রয়োজন হয়েছে। ক্রিস স্টিভেনসনের গবেষণার সাথে এ ফল মিলে যায়, যিনি ঈস্টারের কেন্দ্রসংলগ্ন উঁচু ভূমিতে পাথুরে ক্ষেতে চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই ৩০০ বছর দ্বীপের মানুষকে অতিরিক্ত খাবার যোগাতে ঈস্টারবাসীকে বেছে নিতে হয়েছে অতিরিক্ত কৃষিকার্যক্রমের পথ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রগেভেন এবং অন্যান্য ইয়োরোপীয়রা ঈস্টারকে ন্যাড়া একটা দ্বীপ বলে বর্ণনা করেছিলেন, যেখানে ১০ ফিটের উঁচু কোন গাছই নেই। তাহলে ঈস্টারবাসীরা মূর্তি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করার জন্য কাঠ আর দড়ি পেলো কোত্থেকে? ঈস্টারদ্বীপে বর্তমানে মোটে ৪৮ প্রজাতির স্থানীয় উদ্ভিদ রয়েছে, এদের মধ্যে সবচে বড়টি, তোরোমিরো, গড়ে ৭ ফিট লম্বা হয়; বাকি সব হচ্ছে ঘাস, গুল্ম আর ঝোপ। তবে গত কয়েক দশকে অতীতের ফ্লোরার অস্তিত্ব ও প্রকৃতি যাচাইয়ের বেশ কিছু কৌশল উদ্ভাবিত হয়েছে, এবং এসব কৌশল প্রয়োগ করে দেখা গেছে, ঈস্টারে মনুষ্যবসতির আগে রীতিমতো উপক্রান্তীয় বনাঞ্চল ছিলো। এসব কৌশলের মধ্যে প্রথমেই আসে প্যালিনোলজি, উদ্ভিদের পরাগরেণু বিশ্লেষণ বিজ্ঞান। এ ধরনের বিশ্লেষণে সাধারণত কোন জলাশয়ের তলা থেকে মাটির স্তম্ভ খুঁড়ে আনা হয়। যদি জলাশয়ের তলদেশ কোন কারণে ব্যাপক ওলটপালট না হয়, তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে, মাটির স্তম্ভের ওপরের দিকটা সবচেয়ে নতুন পলি, নিচের দিকটা আরো প্রাচীন পলি। এভাবে যতো নিচে খোঁড়া যাবে, তত প্রাচীন পলি পাওয়া যাবে। রেডিওকার্বন পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন স্তরের পলির বয়স নির্ধারণ করা যায়। এরপর শুরু হয় এক অবিশ্বাস্য খাটনির কাজ, সেই পলির স্তরে জমা হওয়া লক্ষ লক্ষ উদ্ভিদের পরাগরেণু মাইক্রোস্কোপের নিচে ধরে চলে বিশ্লেষণ। সাধারণত বর্তমান উদ্ভিদের পরাগরেণুর সাথে তুলনা করে নমুনা রেণুগুলিকে শ্রেণীবিন্যস্ত করা হয়। ঈস্টারে প্রথম এ ধরনের গবেষণা শুরু করে সুইডিশ পরাগবিজ্ঞানী ওলফ সেলিং, যিনি হেয়ারডালের ১৯৫৫ সালের অভিযানে রানো রারাকু আর রানো কাউ জ্বালামুখের জলাগুলি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি এসব নমুনায় প্রচুর পরিমাণে পেয়েছিলেন এক জাতীয় পাম গাছের পরাগ, যে ধরনের পাম গাছ ঈস্টারে এখন আর নেই। ১৯৭৭ এবং ১৯৮৩ সালে জন ফ্লেনলি আরো কিছু পলির নমুনা সংগ্রহ করেন। তবে ফ্লেনলির কাছে তখন ছিলো সের্খিও রাপু হাওয়া-র কাছ থেকে পাওয়া কিছু অশ্মীভূত পাম ফল, সে বছরই একটি লাভা গুহায় ফরাসী অভিযাত্রীদের হাতে আবিষ্কৃত। ফলগুলি দেখতে অনেকটা চিলিয়ান ওয়াইন পামের মতো, তবে আকারে আরেকটু বড়। চিলিয়ান ওয়াইন পাম পৃথিবীর বৃহত্তম পাম প্রজাতির গাছ, যেগুলি লম্বায় ৬৫ ফিট পর্যন্ত উঁচু আর ৩ ফিট পুরু হয়। পরবর্তী অভিযাত্রীরা তেরেভাকা পাহাড়ের লাভা স্রোতে এমন কয়েক লক্ষ বছরের পুরনো পাম গাছের কাস্ট দেখেছেন। এই লাভাস্রোতে মমিকৃত পামের মূলের আকার দেখে ধারণা করা হয়, ঈস্টারের পামগাছগুলির ব্যাস ৭ ফিটেরও বেশি ছিলো, অর্থাৎ চিলিয়ান ওয়াইন পামও ওগুলোর তুলনায় শিশু। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, পৃথিবীর বৃহত্তম পামগাছ এক কালে ঈস্টারে ছিলো। চিলিতে এই ওয়াইন পামের কদর খুব। এই গাছ থেকে মিষ্টি সাদা কষ বেরোয়, যা থেকে মদ বানানো হয়, আবার ফুটালে গুড়ের মতো মিষ্টি পাওয়া যায়। ফলগুলির আঁটিও খেতে বেশ। এই পাম গাছের পাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি দেয়া যায়, মাদুর, ঝুড়ি, নৌকার পাল তৈরি করা যায়। আর এর গুঁড়ি দিয়ে নিঃসন্দেহে মোয়াই পরিবহন আর ভেলা তৈরির কাজও করা হয়েছে। জন ফ্লেনলি আর সারা কিংসেই কাদার নমুনা থেকে আরো পাঁচটি বর্তমানে-বিলুপ্ত গাছের পরাগ খুঁজে পেয়েছেন। ফরাসী প্রত্নতাত্ত্বিক ক্যাথরিন ওরলিয়াক ঈস্টারের বিভিন্ন চুলো আর ময়লার গাদা খুঁড়ে ৩০,০০০ অঙ্গারের টুকরো ছেঁকে বার করেছেন। এর মধ্যে থেকে ২,৩০০ নমুনা তিনি তুলনা করেছেন পলিনেশিয়ায় বর্তমানে পাওয়া যায় এমন অন্যান্য কাঠের সাথে। আরো ১৬টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ তিনি শনাক্ত করেছেন, যেগুলি এখন পলিনেশিয়াতে আছে এবং এককালে ঈস্টারে ছিলো। অর্থাৎ, ঈস্টারে এককালে বেশ ফাঁদালো অরণ্য ছিলো। বিলুপ্ত এই ২১টি গাছ এখন হাতে পেলে ঈস্টারবাসীরা বর্তে যেতো। দু'টি গাছ, আলফিটোনিয়া জিজিফয়ডেস (১০০ ফিট) আর এলাইওকার্পাস রারোটোঙ্গেনসিস (৫০ ফিট) পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপে ক্যানো বানানোর কাজে অত্যন্ত জনপ্রিয়। পলিনেশিয়ার অন্যান্য জায়গায় ট্রিয়ামফেটা সেমিট্রিলোবা-র ছাল দিয়ে দড়ি বানানো হয়, সম্ভবত ঈস্টারেও তা দিয়েই মোয়াইগুলি টানা হয়েছিলো। ব্রুসোনেশিয়া পাপিরিফেরা, অর্থাৎ কাগুজে মালবেরির ছাল পিটিয়ে তাপা নামের এক কাপড় বানানো হয়, সিডরাক্স ওডোরাটা দিয়ে বানানো হয় হারপুন আর ডিঙি, সিজিগিয়াম মালাক্কেনসে (মালয় আপেল) ছিলো খাবার ফলের গাছ, থেসপেজিয়া পপুলানেয়া থেকে পাওয়া যেতো নির্মাণকাজের জন্যে শক্ত কাঠ, তোরোমিরো থেকে পাওয়া যায় জ্বালানি কাঠ, আর যেহেতু অরলিয়াক এদের পোড়া অঙ্গার খুঁজে পেয়েছেন, তা-ই পরিষ্কার বোঝা যায়, এদের জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করা হতো বা হয়েছিলো। আনাকেনা সৈকত, যেটি সম্ভবত ঈস্টারের বসতিদারদের নাও ভিড়ানোর কূল, এবং প্রথম বসতি, সেখানে খুঁজে পাওয়া ৬,৪৩৩টি হাড়ের সবক'টি যিনি পরীক্ষা করে দেখেছেন, তিনি প্রাণীপ্রত্নতাত্ত্বিক ডেভিড স্টেডম্যান। স্টেডম্যান তাঁর কাজে, বিশেষ করে পাখির হাড় বিশ্লেষণে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন, হাড় দেখে তিনি বলে দিতে পারেন সেটি কোন প্রজাতির পাখির। আনাকেনায় পাওয়া হাড় পরীক্ষা করে স্টেডম্যান জানিয়েছেন, ঈস্টার, যেখানে আজ একটিও স্থানীয় ডাঙার পাখি নেই, অতীতে কমপক্ষে ছয় প্রজাতির ডাঙার পাখির আবাসস্থল ছিলো, এগুলোর মধ্যে রয়েছে এক প্রজাতির বক, মুর্গির মতো দু'টি প্রজাতির পাখি, দু'টি প্রজাতির টিয়া এবং একটি প্রজাতির প্যাঁচা। এরচেয়েও চটকদার ছিলো ঈস্টারের কমপক্ষে ২৫ প্রজাতির বাসাবাঁধা সামুদ্রিক পাখি, এবং সম্ভবত ঈস্টার ছিলো এককালে গোটা প্রশান্ত মহাসাগরে সামুদ্রিক পাখির সবচেয়ে বড় আবাস। এদের মধ্যে ছিলো অ্যালবাট্রস, বুবি, ফ্রিগেট, ফুলমার, পেট্রেল, প্রিয়ন, ঝোড়ো-পেট্রেল, টার্ন আর ক্রান্তীয়পাখি, যারা মানুষের আগমনের আগ পর্যন্ত ঈস্টারের খাদকশূন্য পরিবেশে সমানে বংশবিস্তার করেছিলো। স্টেডম্যান কতগুলি সীলের হাড়গোড়ও পেয়েছিলেন, যেগুলি ঈস্টারের পূবদিকে গালাপাগোস আর হুয়ান ফেরনান্দেজ দ্বীপপুঞ্জে বংশবিস্তার করে, তবে এগুলি কি স্থানীয় সীল নাকি বেড়াতে এসে ধনেপ্রাণে মারা পড়া সীল, তা বলা দুষ্কর। আনাকেনার উৎখনন থেকে ঈস্টারের আদিবাসীদের খাদ্যাভাস সম্পর্কে জানা যায় অনেক কিছুই। ৬,৪৩৩টি হাড্ডিগুড্ডির মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় এক তৃতীয়াংশ, হচ্ছে দ্বীপের আশপাশে সবচেয়ে বড় প্রাণীটির, ডলফিন, ওজনে যা প্রায় ১৬৫ পাউন্ড পর্যন্ত হয়। পলিনেশিয়ার আর কোথাও এত বেশি পরিমাণে ডলফিন পাওয়া যায়নি খাবারের গাদায়। ডলফিন থাকে গভীর সাগরে, তীরবর্তী এলাকায় তারা আসেনা, কাজেই তীর থেকে জাল ফেলে বা ট্যাঁটা দিয়ে তাদের মারা সম্ভব না। ডলফিনের হাড় প্রমাণ করে, বড় সাগরগামী ক্যানোতে চড়ে গভীর সমুদ্রে শিকার করা এসব ডলফিন, হয়তো অরলিয়াকের খুঁজে পাওয়া সেই বিশাল গাছ দিয়েই তৈরি সেসব ক্যানো। আনাকেনায়া পাওয়া হাড়গুলোর মধ্যে মাছের হাড় মোটে ২৩%, পলিনেশিয়ার অন্যান্য জায়গায় যেখানে খাবারের ৯০%ই মাছ। ঈস্টারে তেমন মাছ নেই, কারণ ঈস্টারের চারপাশে অগভীর সমুদ্র কম, বেশির ভাগ জায়গায় সাগর খাড়া নেমে গেছে নিচে। এ কারণে ঈস্টারবাসীর খাবারের টেবিলে ঝিনুকজাতীয় মাছ বা সাগরের অমেরুদন্ডী প্রাণীও কম। এই অভাব পূরণ করেছে পাখি। পাখির স্যুপের সাথে হয়তো যোগ হয়েছিলো ইঁদুরের কাবাব, যেসব ইঁদুর বসতিদারদের নৌকোতে করেই হয়তো ঈস্টারে বাসা বেঁধেছিলো। ঈস্টার পলিনেশিয়ার একমাত্র দ্বীপ, যেখানে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননকেন্দ্রে মাছের হাড়ের চেয়ে বেশি ইঁদুরের হাড় পাওয়া গেছে। অন্যান্য আরো হাড় থেকে দেখা গেছে, ঈস্টারবাসীরা মাঝে মাঝে সামুদ্রিক কাছিম, বড়সড় গিরগিটি। এ সব খাবারই আগুনে সেদ্ধ বা পুড়িয়ে খাওয়া। তবে সময়ের সাথে ঈস্টারের খাদ্যতালিকা পাল্টেছে মারাত্মকভাবে। গোয়ালভরা গরু আর পুকুরভরা মাছ রূপকথার গল্প হয়ে গেছে পরবর্তীতে। গভীর সমুদ্রের শিকার, যেমন ডলফিন বা টুনা সম্পূর্ণ বাদ পড়েছে খাবারের তালিকা থেকে। যেসব মাছ ধরা হতো পরের দিকে, সেগুলি তীরবর্তী মাছ। ডাঙার পাখি সব ক'টাই একে একে বাদ পড়েছে, কারণ প্রতিটি প্রজাতিই অতিশিকার, বননিধন আর ইঁদুরের আক্রমণে লুপ্ত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে ঈস্টারের পাখিদের কপালেই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ লেখা ছিলো, যা ছাড়িয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড আর হাওয়াইতে পাখির প্রজাতিবিনাশকেও। ২৫টি সামুদ্রিক পাখির মধ্যে ২৪টি এখন আর ঈস্টারে আসে না, ৯টি মাঝেমধ্যে আসে, তা-ও মূলদ্বীপ থেকে দূরে কিছু টুকরো দ্বীপে। এমনকি খোলসমাছও (শেলফিশের বাংলা পরিভাষা আর কী হতে পারে?) অতিশিকারের কারণে আস্তে আস্তে কমেছে, সময়ের সাথে খাবারের গাদায় যোগ হয়েছে তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের খোলস, যেগুলি স্বাদে ও পরিমাণে কম, অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত বড় প্রজাতিগুলি হারিয়ে গেছে ঈস্টারবাসীর নোলার উৎপাতে। হারিয়ে যাওয়া ২১টি গাছের অপমৃত্যু নিয়েও অনেক অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়। অরলিয়াকের অঙ্গারের নমুনা যেমন প্রমাণ করে, গাছগুলি পোড়ানো হতো। মৃতদেহ পোড়ানোর জন্যেও এ কাঠ ব্যবহার করা হতো, ঈস্টারের দেহভস্মাগারে হাজার হাজার মানুষের দগ্ধাবশেষ আর অস্থিভস্ম পাওয়া গেছে। বন "পরিষ্কার" করে ক্ষেত গড়ে তোলা হয়েছে সারা ঈস্টার জুড়েই, শুধু সর্বোচ্চ পাহাড়ি এলাকা বাদে। গভীর সমুদ্রের মাছ দেখে আঁচ করা যায়, ঈস্টারবাসী গাছ কেটে ক্যানো বানাতো, রগেভেন যেসব পলকা ফুটো হয়ে যাওয়া নৌকো ব্যবহার করতে দেখেছিলেন ঈস্টারের অধিবাসীদের, সেসবে চড়ে ডলফিন শিকার সম্ভব নয়। ঈস্টারের ইঁদুরগুলিও গাছগুলিকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করতো, ঈস্টারে পাওয়া প্রতিটি পাম ফলের বীজে ইঁদুরের দাঁতের দাগ আছে। বোঝা যায়, এসব বীজ থেকে আর গাছ গজানোর আশা ছিলো না। বননিধন নিশ্চয়ই মানুষের আগমনের পর, অর্থাৎ ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পর শুরু হয়েছে, আর শেষ হয়েছে রগেভেন দ্বীপে পা ফেলার আগেই, অর্থাৎ ১৭২২ এর আগে। কিন্তু ঠিক কবে ঈস্টারে বন ধ্বংস হলো, জানা যায় কি? মন্তব্য ১ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পূজাতেও কিন্তু মূর্তির চক্ষুদান হয় একেবারে শেষদিকে।
false
fe
জনমানসে আতঙ্ক ও সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনী হাওয়া জনমানসে আতঙ্ক ও সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনী হাওয়াফকির ইলিয়াস-----------------------------------------ঢাকায় আরেকজন ব্লুগারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার নাম ওয়াশিকুর রহমান বাবু। না আমি তার লেখার সঙ্গে পরিচিত নই। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে লেখালেখির অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিশ্বে এমন লেখকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে অনলাইন প্রকাশনার এই যুগে যে কেউ যা ইচ্ছে তাই লিখে বেড়াচ্ছে। তাই বলে তাকে হত্যা করতে হবে? ‘হত্যা’ কোন ধর্ম গ্রাহ্য করে? এই ব্লুগারের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কেউ? তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করেছিলেন? না হয়নি।বাবুকে হত্যার পরপরই দুজনকে পাকড়াও করেছে জনতা। এরা জানিয়েছে, তারা বাবুকে চিনতো না। ওর লেখাও পড়েনি। এমন কি খুনি যে তিনজন ছিল এরাও একে অপরকে চিনতো না। একজন খুনি এসেছিল চট্টগ্রাম থেকে। কেউ কাউকে না জেনে না চিনেই হত্যা করছে। কী ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের হোতাদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশ বলছে, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের গাফিলতি পায়নি পুলিশ। তবে একুশের বইমেলার মধ্যে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সময়টাতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কাজে সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল- তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন। লেখালেখির জন্য জঙ্গিবাদীদের হুমকির মধ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর দুই মাস পেরোলেও এখনো কোনো খুনিকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।জনমানসে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে এখন বাংলাদেশে। এর মাঝেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী হাওয়া বইছে। ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে নির্বাচন হবে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তারা বলেছিল, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তাদের বোধোদয় হয়েছে। এটি একটি ভালো লক্ষণ। কারণ নির্বাচনের ফল তাদের অনুক‚লেও যেতে পারে। এতে দেশে বিএনপির শক্তি পরীক্ষা ভালো অবস্থান পাবে। এই বোধোদয় তাদের আগেই হওয়া দরকার ছিল। কারণ জ্বালাও-পোড়াও করে যে মানুষের মন জয় করা যাবে না, তা বেগম খালেদা জিয়ার আগেই জানা উচিত ছিল। বলা দরকার এটি একটি ভালো লক্ষণ। বিএনপির উচিত ছিল এই সুযোগে হরতাল, অবরোধ তুলে নেয়া। তারা তা করছে না।এদিকে এই নির্বাচনকে ঘিরে বড় দুই দলই মাঠে নেমেছে। নির্বাচনকে দুই দলই মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিচ্ছে। নির্বাচনের আগে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে কিছু শর্ত দেবে বলে জানা গেছে। তারা চাইবে সবার জন্য সমান সুযোগ। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান বলেছেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের গত তিন মাসে গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে মামলা। যারা মেয়র থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হবেন তাদের বড় একটি অংশ কারাগারে।’ এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘আমরাও চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে, সেটা আমাদেরও দাবি। তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে আর বিএনপিকে নাশকতা বন্ধ করতে হবে। নাশকতা করলে পুলিশ ধরবে, মামলা হবে এটাই তো স্বাভাবিক।’ নির্বাচন কেমন হবে, নীতিমালা মানা হবে কিনা- তা নিয়ে অনেক কথা ভেসে বেড়াচ্ছে।বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চালাতে হচ্ছে অবরোধ-হরতালের মধ্যেই। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, পরীক্ষা চলাকালে ঘটা নাশকতায় কোনো পরীক্ষার্থীর ক্ষতি হলে তার দায় নিতে হবে বিএনপি জোটকে। পরীক্ষা শুরুর আগের দিন এক বিবৃতিতে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি হরতাল-অবরোধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনাকারী জোটের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, পরীক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দিতে দিন। দয়া করে কোনো হটকারী ঘটনা ঘটাবেন না। আমি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, দেশের যে কোনো স্থানে আমাদের একজন পরীক্ষার্থীরও যদি কোনো ক্ষতি হয়, তার দায়দায়িত্ব আপনাদেরই বহন করতে হবে। মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।’ একটি রাজনৈতিক জোটের বিবেকবর্জিত অব্যাহত হরতাল-অবরোধের কারণে এসএসসির রুটিন অনুযায়ী একটি পরীক্ষাও নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে যে এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হবে না তা আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।এমন একটি দেশে বসবাস করছে মানুষ যে দেশের ভূমি অফিসে আগুন দেয়া হচ্ছে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ভূমি অফিসগুলোতে অগ্নিসংযোগের কয়েকটি ঘটনায় স্থানীয় ভূমিদস্যুদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সারা দেশের প্রায় ২০টি ভূমি অফিসে দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সংরক্ষিত রেজিস্টার-১ বাঁধাই করে সংরক্ষণ করতে সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে যারা ভূমি অফিসে আগুন দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে বাপ-দাদার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। কোনো জমিতে তাদের অধিকার থাকবে না। তাদের এলাকা ছাড়া করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির পর থেকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা কমে যায়।এমন আতঙ্কের মধ্য দিয়ে কি একটি দেশ চলতে পারে? কেউ যদি অপরাধ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক। এমন কি ধর্মের নামে কিংবা ধর্মের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে কেউ যদি ফায়দা লুটতে চায়, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। হত্যা কোনো শান্তির বার্তা আনে না। ওয়াশিকুর বাবুকে হত্যার হুকুমদাতা কারা, তা খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ আইনে এমন হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। না হলে সমাজে গোত্রগত কোন্দল, ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে কলহ কেবলই বাড়বে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা- জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সমাজ ও মানবতার জন্য হুমকি হতে পারে না। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের দ্ব›েদ্বর মাধ্যমে সমাজ রক্তাক্ত হবে তা কেউই মানতে পারেন না।বাংলাদেশ এগিয়েছে এ কথা অনেকেই বলছেন। কোথায় এগিয়েছে? যদি এগোতে তাহলে কি এভাবে বর্বরতম হত্যাকাণ্ড ঘটতো বাংলাদেশে? না, এই তরবারির নিচ থেকে কেউই নিরাপদ নয়। তাই রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। না হয় কেউই রক্ষা পাবেন না। খুনিরা একে একে অনেককেই তাদের কিরিচের নিচে ফেলবে। আমি আবারো এই প্রজন্মকে জাগ্রত হতে বলি সত্যের পক্ষে। যে সত্য অসা¤প্রদায়িকতার। যে সত্য মানবতার। যে সত্য একাত্তরের মহান চেতনার। যে ঋণ শহীদদের প্রতি- এই আগুয়ান গণমানুষের।--------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৫ প্রকাশিত
false
ij
আবহমান বাংলা নিরন্তর শব্দটি আমার প্রিয়। ভাবছিলাম শব্দটি খাঁটি বাংলা শব্দ কি না। নাকি শব্দটি সংস্কৃত শব্দভান্ডার থেকে এসেছে। সেই রকমের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তা হলে কত পুরনো শব্দ নিরন্তর? কী ভাবে এমন কাব্যিক শব্দের সৃষ্টি হল? তো, এই রকম ভাবতে ভাবতে চর্যার একটি পদে নিরন্তর শব্দটি পেয়ে অবাক হয়ে যাই। চর্যার পদ আমরা জানি, সেই সপ্তম/অস্টম শতকের বাঙালি কবিদের দ্বারা রচিত কবিতা। সেই কবিদের অবশ্য একটি জীবনদর্শন ছিল। সহজিয়া বৌদ্ধমত। সহজিয়া বৌদ্ধমত হল বৌদ্ধদর্শনেরই একটি শাখা। জানেনই তো কালে কালে মূল বিশ্বাসটা কেমন বদলে যায়। তো সেই কবিরা কবিতা লিখে তাদের বিশ্বাসের কথা লোকসমাজে প্রচার করত। আমি যে পদে নিরন্তর শব্দটি পাই সেই চর্যার পদটি এই রকম- তো বিনু তরুণি নিরন্তর ণেহে বোধি কি লব্ ভই প্রণ বি দেহেঁ। বাংলা অর্থ: তোর নিরন্তর স্নেহ বিনা, হে তরুণি, এই দেহে কি বোধিলাভ হয়? তার মানে বাঙালি যুবক তার প্রেমিকার কাছে নিরন্তর স্নেহ চাইছে। যে নিরন্তর স্নেহ বিনা বোধি বা enlightenment সম্ভব না। কেবলি কাম চাইছে না পশুদের মত? কী আশ্চর্য! কী পবিত্র চিন্তা। আর নারীর কি মর্যাদা! স্নেহ, কাম নয়। আর কেবলি নিছক দৈহিক আনন্দ নয়, বোধি মানে enlightenment ...মানে আলো চাইছে আলো ... কী আশ্চর্য! কী সুন্দর ... যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে -তোমাদের দেশের তরুণদের প্রেমদর্শন কি? তা হলে আমি বলব, আমাদের দেশের তরুণেরা মেয়েদের আলোর উৎস ভাবে, স্নেহ চায় ...কেবলি নিছক কাম নয়... স্নেহ পেয়ে আলোকিত হয়ে উঠতে চায়। এখন যেন মুক্তিযুদ্ধের মানে বুঝতে পারছি। ভাবলে অবাক হতে হয়, সপ্তম/অস্টম শতকের বাঙালি কবির কবিতা। অথচ আজও কী সত্য। আজও অধিকাংশ বাঙালি তরুণ (কতিপয় পাষন্ড বাদে) এই স্নেহই চায় তার প্রেমিকার কাছে । প্রায় দুহাজার বছর আগেও তাই চাইত। এই আবহমান বাংলা তথ্যসূত্র: নীহাররঞ্জন রায়। বাঙালির ইতিহাস। পৃষ্ঠা: ৫২৮ সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১২
false
hm
কৃৎ-প্রত্যয় তারেক মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখে কাপগুলোকে। চীনামাটির পেয়ালা, ধবধবে সাদা, তার ওপর নীলের সরু কারুকাজ। ফ্যাকাসে, মলিন, মৃত সাদা রং নয়, কাপটি যেন তার ধবল রঙেই প্রাণ পেয়েছে একটি বলাকার মতো, আর নীল নকশী বলয়টি যেন তার কণ্ঠহার। চারপাশে ঘুরঘুর করছে অন্যান্য ক্রেতারা। বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা বিক্রয়কেন্দ্র, ইকেয়া। ঘরের সব প্রয়োজনীয় জিনিস মেলে এখানে, ময়লা ফেলার টুকরি থেকে শুরু করে পুরো রান্নাঘর বা আস্ত শোবার ঘরের সরঞ্জাম। বিরাট সব শেলফে থরে থরে সাজানো এক একটা আইটেম। দামগুলো দেখে তারেক একটু দমে যায় শুধু, পৃথিবীর সব সুন্দর জিনিসগুলোর দাম এত বেশি কেন হবে? হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতেও মন সায় দেয় না তারেকের। কী লাভ? এ তো অন্যের রয়ে যাবে, তার নিজের হবে না! তারেকের বউ মুনিরা চড়ুই পাখির মতো লাফিয়ে বেড়াচ্ছে এক একটা জিনিসের সামনে। সে মোটে পরশুদিন পা ফেলেছে এই দানবদের দেশে। তারেক আর মুনিরার বিয়ে হয়েছে প্রায় বছরখানেক আগে, ভিসার নানা শর্ত পূরণ করতে গিয়ে জার্মানীতে আসার আগে মুনিরা এক বছরের বিরহ উপহার দিয়েছে তারেককে। মুনিরার অবশ্য বক্তব্য উল্টোরকম, তারেক কেন এরকম পচা দেশে থাকে, যেখানে সে চাইলেই চলে আসতে পারেনি এক বছর আগে, এ নিয়ে তার অভিযোগের অন্ত ছিলো না এই একটা বছরে। একটা দিন বেচারীকে বিশ্রাম করতে দিয়েই বেরিয়ে পড়েছে তারেক। ইকেয়া থেকে হাত বোঝাই করে কেনাকাটা করে নিয়ে যাবে সে আজ। তাদের নতুন সংসার, হাত খুলে তারা দু'জন মিলে সাজাবে। তারেক ডাক দেয়, "মুনিরা! দেখে যাও কাপগুলো।" মুনিরা ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ছুটে এলো। "কোনটা, কোনটা?" তারেক আঙুল তুলে দেখায়। "এটা কেমন হয়?" মুনিরা কাপটা হাতে নিয়ে দেখে। "এটা? এত বড় কাপ? না না না। আরো ছোট দরকার। এটা তো পুরো গোসল করার মগের মতো বড়ো! ... ঐ যে আরো ওপরে, ঐ যে হালকা সবুজের ওপর সাদার বর্ডার, ওটা দ্যাখো না!" তারেক হাত বাড়িয়ে মুনিরার নাগালের বাইরে সাজানো কাপটা নামিয়ে আনে। "কী লেখা এখানে?" মুনিরা পড়ার চেষ্টা করে। "পড়ো দেখি, কেমন জার্মান শিখেছো এতদিন ধরে!" তারেক কপট গাম্ভীর্য নিয়ে প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারদের ভঙ্গিতে বুকে হাত বাঁধে। মুনিরা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "পারবো না! বিশ্রী একটা ভাষা!" তারেক হাত বাড়িয়ে কাপের মধ্যে গোঁজা কার্ডটা পড়ে। "বারো পিস কাপ আর পিরিচ, ঊনিশ ইউরো পঁয়তাল্লিশ সেন্ট।" মুনিরা মনমরা হয়ে বলে, "এত?" তারেক হাসে। "মনে মনে আটানব্বই দিয়ে গুণ করছো নাকি? তাহলে কিন্তু চলতে ফিরতে বিপদে পড়বে।" মুনিরা হাসে না। শুকনো মুখে বলে, "এই নীলটার দাম কতো দ্যাখো তো?" তারেক নীল কাপটার শেলফের দিকে তাকায়। "এটাও বারো পিস, একুশ ইউরো।" মুনিরা বলে, "তাহলে কি এই লাল সেটটা নিয়ে যাবো? এটা একটু সস্তা, ষোল ইউরো সত্তর সেন্ট, বারোটা।" তারেক বলে, "বাহ, এই তো বেশ পড়তে পারছো ! যাক, তুমি কিছুটা শিক্ষিৎ তাহলে!" মুনিরা কোন দ্বিধা না করেই কিল মারে তারেকের বাহুতে। "লাল রঙের কাপে চা দিলে খাবে কেউ?" তারেক ছোট সাইজের আরেকটা নীল সেট উল্টেপাল্টে দ্যাখে। হালকা সবুজ রঙের কাপটা তার পছন্দ হয়নি। নীল কাপটার মধ্যে নকশাটা তার খুব মনে ধরেছে। মুনিরাও জানে, নীল রং তারেকের খুব পছন্দ। তাদের শোবার ঘরের পর্দাগুলো নীল, বিছানার চাদর, বালিশের ওয়াড়, কম্বলের খোল, সব নীল। "অনেক দাম পড়ে যাবে না?" মুনিরা কিন্তু-কিন্তু মুখ করে বলে। "উঁহু। ঠিকই আছে।" তারেক আশ্বস্ত করে মুনিরাকে। "চলো, ভাগেনে রাখি সেটটা।" কাগজের শক্ত মোড়কে রাখা কাপ আর পিরিচগুলোকে যত্ন করে ট্রলিতে সাজাতে শুরু করে মুনিরা। ট্রলিতে আরো দেখা যাচ্ছে একটা সসপ্যান, বড় দুটো ডেগচি, একটা কাঁচের জগ, একটা কাঠের খুন্তির সেট। "কেমন লাগছে এখানটা?" তারেক হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে মুনিরাকে। "দারুণ!" উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে মুনিরা। "ইচ্ছা করছে সবকিছু কিনে নিয়ে যাই!" তারেক হাসে। ইকেয়ার ভেতরটা এত সুন্দর করে সাজানো, কোন কিছুর দরকার না থাকলেও কিনে ফেলতে ইচ্ছা করে। মাঝে মাঝে বাড়িতে ইকেয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে যায় ওদের লোকজন, ঝকঝকে মসৃণ কাগজে দামী ছাপা একেকটা ছবির বই, তাতে সুন্দর সুন্দর জিনিসের ছবি আর দাম। সেই বইয়ের ঘরগুলো দেখলে তারেকের মন খারাপ হয়। তাকে আরো অনেক পথ পেরোতে হবে ওরকম একটা ঘরের জন্য। মুনিরা আবারও তুরতুর করতে থাকে বিভিন্ন শেলফের সামনে গিয়ে। কোন কিছু পছন্দ হলে সেটা উল্টেপাল্টে দেখে সে ঝুঁকে পড়ে শেলফের গায়ে লেখা দাম পড়ার চেষ্টা করে। তারেক নিজে যেদিন প্রথম ইকেয়াতে এসেছিলো, সেদিনের কথা মনে করার চেষ্টা করে। মুনিরার মতোই ভালো লেগেছিলো তার। অবশ্য তখন তার একার প্রয়োজনটুকু মেটানোর জন্যেই যা কিছু কেনাকাটা করার ছিলো, তখনও তার কোন আয় নেই, অনিশ্চিত একটা জীবন সামনে, দেশ থেকে সঙ্গে করে আনা সামান্য টাকার একটা অংশ দিয়ে রান্নাবান্নার জিনিস কিনেছিলো তারেক। বেছে বেছে সবচেয়ে সস্তা জিনিসটা কিনেছিলো তখন। ঢাউস খাবার প্লেট, ঠনঠনে সসপ্যান, সবচেয়ে সস্তা কম্বলের খোল। তারেকের হঠাৎ খুব ভালো লাগে আজকের এই দিনটা। তার নতুন করে সাজানোর সময় এসেছে সবকিছু, সেই সঙ্গতিও এখন তার আছে। সেই প্রথমবারের মতো ইকেয়ার শেলফগুলোর সামনে মনমরা হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না তাকে আর মুনিরাকে, সবচেয়ে সস্তা জিনিসটা কিনে নিজেকে অকারণ প্রবোধ দিতে হবে না। তারেক টের পায়, সে খুব হাসছে, সুখী একজন মানুষের মতো। তার ইচ্ছা করে এখনই, এই মূহুর্তে কিছুদূরে দাঁড়িয়ে ডালের চামচের দাম পড়তে থাকা মুনিরাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে। মুনিরা ডালের চামচটা রাখে ট্রলিতে। "এটার দাম ভালো, নব্বই সেন্ট!" তারেক বলে, "নিউ মার্কেটে কতো হবে, বলো দেখি?" মুনিরা কিছুক্ষণ ভাবে। "উমমমম, কতো আর, চল্লিশ টাকা, খুব বেশি হলে?" তারেক হাসে মিটিমিটি। "তুমি কখনো নিউ মার্কেট থেকে ডালের চামচ কিনেছো?" মুনিরা মাথা নেড়ে হাসে। "না তো! যা লাগে আব্বা নাহলে আম্মা গিয়ে কিনে এনেছে সব সময়। আমি নিউ মার্কেট থেকে শুধু চুড়ি কিনি!" তারেক হাসে। নিউ মার্কেটে মেয়েদের সাথে গিয়ে কোন কিছু কেনাকাটা করার বড় হ্যাপা। মেয়েরা যেমন সবকিছু খুঁটিয়ে দেখে একটা কিছু পছন্দ করে প্রচুর দরদাম করে কিনতে পারে, সেটা ছেলেরা পারে না বলেই তার বিশ্বাস। "তোমার উচিত ছিলো আম্মাকে নিয়ে একবার নিউ মার্কেটে গিয়ে ডালের চামচ কেনা।" তারেক হাসে নিজের মায়ের কথা মনে করে। কেনাকাটা করতে তারেকের মা বেশ ভালোবাসেন। তাঁর পছন্দ সংসারের টুকিটাকি জিনিস। সবচেয়ে ভালো জিনিসটা সম্ভাব্য সবচেয়ে কম দামে কিনে আনবেন, এটাই তাঁর কেনাকাটার লক্ষ্য। তারেক যখন কলেজে পড়ে, তখন একবার মায়ের সাথে নিউ মার্কেটে গিয়েছিলো, দশ মিনিট দরাদরি করে একটা ডাল ঘুঁটুনির দাম কুড়ি টাকা থেকে পনেরো টাকায় নামিয়ে তারেকের মা খুব খুশি হয়েছিলেন। তারেক অবশ্য মোচড়ামুচড়ি করছিলো, তারেকের মা সাফ বকে দিয়েছিলেন তাকে সবার সামনে, "তর তাড়াহুড়া থাকলে তুই যাগা। জিনিসপত্র কিনার সময় প্যাটপ্যাট করবি না!" তারেক অনেক পরে ধরতে পেরেছে, এই দামাদামিটা করতেই তার মা ভালোবাসেন। "কেন?" মুনিরা দ্বিতীয়বারের মতো প্রশ্ন করে। তারেক স্মৃতিচারণে ডুবে ছিলো বলে খেয়াল করেনি, বাহুতে খোঁচা খেয়ে সে আবার ফিরে আসে ইকেয়ার রান্নাবান্নার সরঞ্জামের বিভাগে। "কী কেন?" "মায়ের সাথে নিউ মার্কেটে গিয়ে কিনলে কী হতো?" মুনিরা প্রশ্ন করে বিশদভাবে। "ওহ ... নাহ, তাহলে ডালের চামচ তিরিশ টাকায় কিনতে পারতে। আম্মাকে ঠকায় এমন দোকানী ভূভারতে নেই।" "এখানে আসলে মা তাহলে মজা পাবেন না একদম।" মুনিরা হাসে। "এখানে সব কিছুর ফিক্সড প্রাইস।" তারেক ভাবে, তার মা কখনো জার্মানীতে এলে ইকেয়াতে ঘুরিয়ে দেখাতে হবে। এতো চমৎকার একটা কেনাকাটার জায়গা দেখলে তিনি মুগ্ধ হবেন নিশ্চয়ই। ঢাকায় নিশ্চয়ই এমন একটা জায়গা আজও খোলেনি, যেখানে বিশাল ছাদের নিচে ঘরভর্তি শুধু বিভিন্ন জিনিস শেলফে বোঝাই করা, কোন দোকানী নেই, দামাদামি হাঁকাহাঁকির প্রয়োজন নেই, শুধু তুলে ট্রলিতে রাখো আর দাম মিটিয়ে বেরিয়ে পড়ো। "তুমি নাকি কেনাকাটার সময় মা-কে খুব জ্বালাতন করো?" মুনিরা প্রশ্ন করলো। "আমি? আমি কিভাবে জ্বালাতন করবো?" তারেক ন্যাকা সাজে। "তুমি নাকি শুধু হুড়োহুড়ি করো। খালি নাকি জলদি জলদি করতে বলো?" তারেক হাসে। দেশে থাকতে কেনাকাটার কাজটায় সে বরাবরই ফাঁকি দিয়ে এসেছে। ওটা তার ভাই বা বোন বা মা বরাবর করেন। কখনোসখনো মায়ের সাথে তারেককে যেতে হয়েছে, দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করতে তার হাঁসফাঁস লাগতো। আর কেনাকাটা হতোও সব মেয়েলি জিনিস, এর বিয়েতে শাড়ি, ওর বিয়েতে ডিনার সেট, ওর জন্মদিনে বাচ্চার জন্য জামা। তারেক নিজের কেনাকাটা সব দুমদাম করে মিটিয়ে ফেলেছে সারাজীবন। এলিফ্যান্ট রোডে বাঁধা দোকান, তেত্রিশ ইঞ্চি কোমরের জিন্সের প্যান্ট, দাম কতো বললেন ... আটশো? ধুর ভাই, খামাকা সময় নষ্ট করেন। পাঁচশো। এই দুটা নিচ্ছি। এক হাজার। না, আর দিবো না। তারেক কৈফিয়ত দ্যায়, "আমার আসলে ঐ রসিয়ে রসিয়ে কেনাকাটার রসটা ঠিক ... কী বলে এটাকে ... বোঝার সুযোগ আসেনি। আম্মা তো খুব দেখেশুনে দরদাম করে কেনেন, আমার ধৈর্যে কুলায় না। ... কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে?" মুনিরা বলে, "আবার কিভাবে? মা-ই বলছিলেন একদিন বিরক্ত হয়ে। বললেন জার্মানী গিয়ে দেখেশুনে সবকিছু কিনতে, তুমি ধমকাধমকি করলে উল্টে তোমাকে ধমক দিতে।" তারেক গম্ভীর মুখে বলে, "বেশ। দেখেশুনেই কেনো। কিচ্ছু বলছি না।" মুনিরা এগিয়ে যায় একগাদা পাপোষের দিকে। তারেক হঠাৎ একটু অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। একটু আগে নিজের ভালো লাগার কথা ভেবে সে হঠাৎ বুঝতে পারে, এই যে কেনাকাটা করতে আসা, খুব বেছে বেছে কেনা, দরদাম করা, এর পেছনের আনন্দটুকু অন্যরকম, শুধু খরচ করায় নয়, খরচ বাঁচানোতেও নয়। নিজের সংসারটা তিল তিল করে সাজানোর তৃপ্তিটুকু আজ কাজ করছে তার মধ্যে, তার মায়ের মনেও নিশ্চয়ই এই একই ভালোলাগাটুকু কাজ করেছে এতটা দিন। নিউ মার্কেটে পনেরো টাকা দিয়ে সেই ডাল ঘুঁটুনিটা কেনা কি শুধু দরদাম করে পাঁচটা টাকা কমানোর জন্যেই? আম্মা নিশ্চয়ই সেই সময়টুকু উপভোগ করছিলেন খুব, রোদের নিচে দাঁড়িয়ে, রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে তারেকের চোখে একইরকম বিশপঁচিশটা ডাল ঘুঁটুনির মধ্যে তাঁর চোখে সেরাটা বেছে কেনার প্রত্যেকটা মূহুর্ত নিশ্চয়ই উপভোগ করছিলেন তিনি। একই রকম ভাবে তারেকের খালাতো ভাইয়ের বিয়েতে কেনা শাড়ি, চাচাতো বোনের বিয়েতে কেনা ঘড়ি ... প্রত্যেকটা জিনিস কেনার সময়ই এই যত্নটুকু, এই আনন্দটুকু কাজ করেছে তাঁর মধ্যে। তারেক প্রত্যেকবারই বিরক্ত মুখে তাগাদা দিয়েছে তাঁকে। আজ যদি কেউ তারেককে হুড়ো দিয়ে বার করে নিয়ে আসে ইকেয়া থেকে, তার কি আদৌ ভালো লাগবে? মুনিরা একটা পাপোষ নিয়ে দৌড়ে আসে। "দ্যাখো, এটাতে ভিলকমেন লেখা। দাম লেখা আট ইউরো! এটা কি ঠিক আছে?" তারেক মাথা দোলায়। "ঠিক আছে।" মুনিরা ট্রলিতে পাপোষটা রেখে আবার ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে যায় অন্যদিকে। তারেক এগিয়ে গিয়ে পাপোষটা ভাঁজ করে রাখে ট্রলির নিচের দিকে। একটা কাপ বেরিয়ে পড়েছে প্যাকেটের ভেতর থেকে, সেটাকে আবার ভেতরে গুঁজে দেয় সে। সুন্দর সেটটা। তার সংসারের প্রথম কাপ সেট। কাপ নিয়ে একটা স্মৃতি খচ করে ওঠে তারেকের ভেতর। তার মুখের ভেতরটা নিমিষে তিক্ত হয়ে যায়। বাবা মারা যাবার কিছুদিন পর একটা কাপ তারেক ভেঙে ফেলেছিলো। মা তখন খুব মানসিক বিপর্যয়ের মুখে ছিলেন, তিনি হাঁ হাঁ করে ছুটে এসেছিলেন, "করলি কি এইটা? ভাইঙ্গা ফালাইলি? তর আব্বার হাতের কাপটা!" তারেক সেদিন খুব তীব্রভাবে বকেছিলো মা-কে। কেন, কে জানে? হয়তো বাবার স্মৃতির সাথে জড়িত প্রত্যেকটা জিনিস নিয়ে মায়ের এই খুঁতখুঁতুমি দেখেই। তারেকের মা অসহায় মুখে বলেছিলেন, "এইটা একটা স্মৃতি, আমরা পয়লা পরথম কিনলাম, আমাগো সংসারের প্রথম কাপ সেট, ভাইঙ্গা ফালাইলি, আর আমি রাগ করুম না? মানুষটা নাই, জিনিসটা তো আছে!" তারেক আরো চেঁচামেচি করেছিলো সেদিন মায়ের সাথে। তারেকের মা কিছুক্ষণ গুম মেরে থেকে রান্নাঘরে চলে গিয়েছিলেন। একটু পর কাপ ভাঙার ঝন ঝন আওয়াজ শুনে তারেক দৌড়ে গিয়ে দ্যাখে, সেই সেটের বাকি কাপ আর পিরিচ মা আছড়ে আছড়ে ভাঙছেন। তারেক কিছু বলেনি আর। মা-ও কিছু বলেননি। তারেকের বুকটা ধ্বকধ্বক করতে থাকে। মা-কে সেদিন সে যা বোঝাতে চেয়েছিলো, বোঝাতে পারেনি। তারেক শুধু বলতে চেয়েছিলো, একটা কাপের চেয়ে তারেকের নিজের মূল্য কি স্মৃতি হিসেবে বড় নয়? কাপটা ভেঙে গেছে, কিন্তু তারেক আছে, তার ভাই আর বোন আছে, তারও তো সবাই তাদের বাবার স্মৃতিই। একটা সামান্য কাপ নিয়ে কেন মা এতো রাগ করবেন? তারেকের চোখে আচমকা জল চলে আসে। সে বুঝতে পারে, সেদিন সেই ভেঙে ফেলা কাপটা আর কাপগুলোর কাছে সে কিছুই না। তার, তার ভাইয়ের, তার বোনের চেয়ে অনেক উঁচুতে বসে আছে সেই কাপটা, সেই কাপগুলো। সেই কাপগুলো যখন কিনতে বেরিয়েছিলো তার বাবা, মা-ও কি ছিলেন না সাথে? নিউ মার্কেটের কোন দোকান থেকে হয়তো বিস্তর দরদাম করে কিনেছিলেন সেই সেটটা, তাঁদের সংসারের প্রথম কাপ সেট, কত আনন্দ তার সাথে জড়ানো। তখন তারেক ছিলো না, ছিলো না তার ভাই, তার বোন, শুধু বাবা ছিলেন, মা ছিলেন, আর সেই কাপ সেটটা ছিলো। নতুন সংসার গোছানোর আনন্দটা ছিলো। আজ যেমন তারেক মুনিরাকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছে ভিন দেশের দোকানে, যে গভীর আনন্দ তাকে গ্রাস করেছিলো কিছুক্ষণ আগে, সেই একই আনন্দ জড়ানো সেই ভেঙে ফেলা কাপগুলোর সাথে। তারেক মুনিরাকে এগিয়ে আসতে দেখে দ্রুত মুখ ফেরায়। মুনিরা ঝলমলে মুখে একটা ফ্লাওয়ার ভাস হাতে নিয়ে বলে, "তেরো ইউরো! সুন্দর না?" তারেক মাথা দোলায়। সুন্দর। মুনিরা সন্তর্পণে ট্রলিতে ভাসটা রেখে আবার ফিরে যায় অন্যদিকে। তারেক পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বার করে। খুব কি দেরি হয়ে গেলো? প্রায় তেরো বছর। মাপ চাওয়ার জন্য খুব কি দেরি হয়ে গেলো? তার তো সংসার ছিলো না এতদিন, সে কিভাবে বুঝবে এই ভালোবাসার কথা? মা বুঝবেন নিশ্চয়ই। তারেক কাঁপা হাতে ডায়াল ঘোরায়। দূরে মুনিরা ঝুঁকে পড়ে কী যেন দেখছে। তারেকের সংসার একটু একটু করে সেজে উঠছে ইকেয়ার রঙিন আলোয় ভরা ছাদের নিচে। [সমাপ্ত]
false
mk
জঙ্গি দমন বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের যারা বিস্তার ঘটিয়েছে, তারা তাদের সেই পথ থেকে সরে আসেনি। তাই দেড় বছর আগে তাদের ঘোষিত দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহার করেনি। যে কর্মসূচী পালনে তারা যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। দগ্ধ করেছে বহুশত সাধারণ নিরীহ মানুষকে। টানা তিন মাস প্রকাশ্যে এই তৎপরতা চালিয়ে গণপ্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। তবে প্রকাশ্য হত্যা থেকে সরে এসে তারা এখন গুপ্তহত্যায় নেমেছে। এই হত্যাকা- যারা যে নামেই ঘটিয়ে আসুক না কেন, স্বার্থ তাদের একটাই বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন। তাদের সেই এজেন্ডা তো সবারই জানা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি বানচাল, খালেদা ও তার পুত্রের দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার এবং ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় যাওয়া। এ জন্য প্রয়োজনে তারা ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিতেও কসুর করছে না। এমনিতেই তারা পাকিস্তান তথা পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে। লক্ষ্যপূরণে তারা জঙ্গী সংগঠন সৃষ্টি ও তাদের রাজনৈতিক মদদদানের কাজটিও করে আসছে। আর এ কারণেই সম্ভবত খুনীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী যে অবরোধের ঘোষণা দেন অনির্দিষ্টকালের জন্য, সে ঘোষণা তথা অবরোধ আজও প্রত্যাহার করেনি। অবরোধ ঘোষণার পাশাপাশি হরতাল কর্মসূচীও দিয়েছিলেন বিভিন্ন সময়ে। যে দেশের মানুষ পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে, আবার পাখির ডাকে জাগে, সেই দেশের মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত হত্যা কিংবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে যারা খুন করছে, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর গণদাবি পূরণের গতি খুবই শ্লথ। বিচার না হবার সেই সুযোগ নিয়ে নৃশংসতায় ভর করে চালানো হচ্ছে গুপ্তহত্যা। ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের মাধ্যমে যারা মানুষকে জীবন্ত হত্যা করেছে, যারা হত্যার হুকুমদাতা, অর্থ যোগানদাতা, পরিকল্পনাকারী তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হলে আইনের শাসন যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়, তেমনি মানুষ হত্যার এই নারকীয় তৎপরতাও বন্ধ হতে বাধ্য। মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে, তাদের শক্ত হাতে দমন করা শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবেও এর প্রয়োগ জরুরী। ঘাতকরা ঘোষণা দিয়ে, হুকুম দিয়ে অবরোধ, হরতাল ডেকে মারণঘাতী আঘাত হেনেছিল। চোরাগোপ্তা হামলায় তারা গত বছরের প্রথম তিন মাসে দেড় শতাধিক মানুষকে জীবন্ত হত্যা করেছে। আগুন জ্বেলে, বোমা মেরে মানুষ হত্যা যে কত সহজ তা বিএনপি-জামায়াত জোট প্রমাণ করেছে। খালেদার ডাকা সেই অবরোধ আজও বহাল রয়েছে। আর এই অদৃশ্য অবরোধ বজায় রেখেই চলছে টার্গেট কিলিং, যা থেকে বিএনপি-জামায়াত ফায়দা ওঠাতে সচেষ্ট। বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র প্রমাণ ও সরকার যে এসব দমনে ব্যর্থ তা প্রমাণে এখনও সক্রিয়। তারা ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নাশকতা-সহিংসতাসহ গণহত্যা চালিয়েছে এবং এর জন্য অনুতপ্তও নয়। বরং সদর্পে রাজনৈতিক মঞ্চ দাবড়ে বেড়াচ্ছে। গলা হাঁকিয়ে বলছে এসব ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯৩ দিনে মহাসড়ক, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বোমা হামলা ও যাত্রীবাহী যানবাহনে পেট্রোলবোমা মেরে পুড়িয়ে দিয়েছে। এই নাশকতাকারীরা একদিকে ধরা পড়ে; অন্যদিকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায়। এই তা-ব থেকে মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের, তারা কাজে তত পারদর্শিতা প্রমাণ করতে পারেননি। তাই দিনের পর দিন তারা প্রকাশ্যে নাশকতা চালিয়েছিল, আর অসহায় মানুষ ভয়ের সংস্কৃতির ভেতরে সেঁধিয়ে আটকে ছিল। রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি তাই সেই যে ২০১৩ সাল থেকে লাশনীতিতে নেমে পড়েছে, সেখান থেকে আজও সরে আসেনি। জ্বালাও পোড়াওয়ের মহাব্রতে পথে-প্রান্তরে, গ্রামে-গঞ্জে অরাজকতা, নৈরাজ্য, নৃশংসতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু জনগণের ঘৃণা ও প্রতিরোধের মুখে সে পথ ছেড়ে গুপ্তহত্যার পথ ধরেছে। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যার নৃশংসতায় যেভাবে মেতে উঠত, তাদের অনুসারী ও চেতনাধারীরা আগুনসন্ত্রাস চালিয়ে সেইভাবে মেতে উঠেছিল, কিন্তু পাকিস্তানী হানাদারদের মতো তাদেরও এক্ষেত্রে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এই পথে বিদেশী শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। বরং নিন্দিত হয়েছে। তাই সেখান থেকে সরে এসে তারা ‘টার্গেট কিলিং’ তথা গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। দেশীদের পাশাপাশি বিদেশী হত্যায় নেমেছে। আর এক্ষেত্রে তারা এক ধরনের সফলই বলা যায়। তারা বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার কাজে বেশ কিছুদূর এগোতে পেরেছে। তাই বিদেশীরা অবলীলায় বলছে, বাংলাদেশে আইএস আছে। কিন্তু বাস্তবে আইএস নয়, বরং রয়েছে আইএসআই। আর এই সত্যকে চাপা দেয়ার জন্য আইএস নামক জুজুর ভয় দেখাচ্ছে যারা, তাদের যে এক ধরনের হীন স্বার্থ রয়েছে তা সর্বজনবিদিত। কারণ বিভিন্ন দেশে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানো শুধু নয়, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও উগ্রপন্থার স্রষ্টাও তারা। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তারা ইরাক ও লিবিয়ায় যা ঘটিয়েছে, তার মাসুল বিশ্ববাসীকে দিতে হচ্ছে। মনে হয়, আরও দিয়ে যেতে হবে। সেই তারাই ‘আইএস আছে, আইএস আছে বাংলাদেশে’ বলে একটা মিথ্যা আরোপ করে অন্যরকম উদ্দেশ্য যে হাসিল করতে চায়, সচেতন জনগণ তা উপলব্ধি করতে পারেন।মূলত বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের অনুপ্রবেশ ঘটতে হলে তা যে বিএনপি-জামায়াত জোটের হাত ধরেই হবে সেটা বলাই বাহুল্য। এদের হাত ধরেই এদেশে আইএসআই নামক পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালাচ্ছে। ভারতের ৭টি রাজ্যে বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সশস্ত্র হামলার জন্য আইএসআই তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে খালেদা-নিজামী শাসনামলে। অবৈধ অস্ত্র আমদানির সঙ্গেও এরা জড়িত। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা আজও ঝুলছে। কিন্তু এই অস্ত্র আমদানি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িতরা ভারতে জঙ্গী হামলা চালানোর জন্য তৎপর ছিল। সেই তারা বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা, আগুন সন্ত্রাস চালাতে জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে জঙ্গীদের সৃষ্টি, উত্থান ও বিস্তার ঘটেছে। জেনারেল জিয়ার সময় যাদের লিবিয়ায়, আফগানিস্তানে পাঠানো হয়েছিল, সেই প্রশিক্ষিতরা দেশে ফিরে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গী তৈরির কাজ চালিয়ে আসছিল। শায়খ আবদুর রহমান আফগান প্রশিক্ষিত এবং জেএমবি প্রধান ছিল। বিএনপির মন্ত্রী ও নেতাদের ছত্রছায়ায় তারা রাজশাহী অঞ্চলে জঙ্গী শাসন চালু করেছিল। তাদের ক’জনের বিচার ও শাস্তি হলেও প্রশিক্ষিত অনুসারীরা এখনও তৎপর। খালেদা-নিজামীর আমলেই পল্টন ময়দানে ধ্বনিত হয়েছিল তাদের জোটের শরিক দল জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের লালনকারী নেতাদের কণ্ঠে ‘আমরা হব তালেবান/ বাংলা হবে আফগান।’ এরাই আদি অকৃত্রিম জঙ্গীবাদের ধারক-বাহক, খালেদা জোটের অপর শরিক দল প্রধান মুফতি ইজহারুদ্দিনের চট্টগ্রামের বাড়িতে অস্ত্রের কারখানা পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেফতার করা হলেও আজও বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। খালেদার শাসনামলে বোমা হামলা সম্পর্কে কথা উঠলেই জামায়াতীরা বোমাবাজি ও জঙ্গী তৎপরতাকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে উড়িয়ে দিত। বাংলা ভাইয়ের জঙ্গী তৎপরতাকেও এরা অস্বীকার করে আসছিল। কিন্তু মিথ্যাচার দিয়ে তা ঢেকে রাখা যায়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল যারা, তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা চায় নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও পাকিস্তানীমনাদের উত্থান ঘটিয়ে দেশটাকে তাদের কব্জায় নিতে। এই শক্তি তাদের বশংবাদদের বিচার ও শান্তিতে উদ্বিগ্ন এবং এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘেও যেতে চায়। আর হেগে নালিশ জানিয়েও যুদ্ধাপরাধী রক্ষায় কোন লাভ হয়নি। বরং এরা যে অপরাধী তা আবারও প্রমাণিত হলো। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ঠেকাতে বিশ্বের প্রায় সবশক্তি, এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে ধরনা দিয়েও কোন অর্জন হয়নি। তবে অপপ্রচারে সফলতা পেয়েছে। তাদের নিয়োজিত লবিষ্টরা বিদেশে বাংলাদেশবিরোধী এমনকি যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মিথ্যাচার চালিয়ে বিদেশীদের মনে সন্দেহ প্রবেশ করিয়েছে। ব্রিটিশ এমপিকে দিয়ে পার্লামেন্টে প্রশ্নও তুলেছে। সবই জামায়াতের অর্থের মাজেজা।২০১৫ সালের এপ্রিলে সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কিন্তু কি সেই আন্দোলন কি তার লক্ষ্য? দেশবাসীর জীবনে যে সব দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন নেই, প্রয়োজন নেই, সে সব দাবি-দাওয়া নিয়ে সহিংস অরাজকতার নাম যদি হয় আন্দোলন, তবে তার বিজয় আসবে কোথা থেকে। মূলত নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধভাবে শাসক পরিবর্তনের পথ বেছে না নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বানচালের পথ বেছে নিয়েছিল। সহিংসতাকে আশ্রয় করে দেশব্যাপী অরাজক অবস্থা তৈরির তাদের সেই প্রচেষ্টাও মাঠে মারা যায়। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার মাত্রা তারা আরও তীব্র করে। আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাসে যা করেছে, তা দেশবাসী ভুলে যায়নি। সেই পথে ব্যর্থ হয়ে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য গুপ্তহত্যাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আন্দোলন হচ্ছে সরকার উৎখাত করার জন্য। আর তা সম্ভব করা গেলে দুর্নীতি ও যুদ্ধাপরাধের মামলা থেকে রেহাই পেতে পারে বিএনপি-জামায়াত নেতারা। অন্ধকারের শক্তি বহুবার শুভকে গ্রাস করার চেষ্টা করেছে, ক্ষতি করেছে কিন্তু নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। গুপ্তহত্যা করে সরকারের পতন যে ঘটানো যায় না, তার নজির অতীতে রয়েছে। গুপ্তহত্যা যারা করছে তারা হয়ত দেশবাসীর মনে ভয়ভীতি ছড়াতে পারছে। কিন্তু তা খুব বেশি দিন সম্ভব হবে না। যেমন হয়নি আগুন সন্ত্রাস চালানো। এই যে দেশজুড়ে নৃশংস টার্গেট কিলিং চলছে, তাতে বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের মতাদর্শের কেউ শিকার হচ্ছেন না। যদি হতো তবে স্পষ্ট হতো যে, আইএস জঙ্গীরা এসব চালাচ্ছে। কিন্তু খালেদা-জামায়াত পরিচালিত বলেই জঙ্গীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, মুক্তমনাসহ বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীদের হত্যা করছে। যেভাবে নিজামী মুজাহিদের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী একাত্তর সালে হত্যাযজ্ঞ চালাত। তারা বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করত বেয়নেটে খুঁচিয়ে আর তাদের উত্তরসূরিরা এখন বাড়িতে-রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করছে। এসব হত্যাকা- কোনটাই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন আইএস-এর পদ্ধতির নয়। শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বকে উস্কে দিয়ে আইএসকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের ধর্মীয় বিভেদ নেই। এখানকার হত্যাকা-ের পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে রাজনৈতিক মতাদর্শ। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যাদের জনসমর্থন নেই, তারা বাস্তবতাবিবর্জিত পথ ধরবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই তারা জঙ্গীবাদের দিকে ধাবিত হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মের ন্যূনতম সংযোগ নেই। অপরাধ বিজ্ঞানীরাও মনে করছেন, সরকার বা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় একের পর এক হত্যাকা- ঘটানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে পরিচালিত হত্যাকা-ের নেপথ্যে অর্থনৈতিক যোগসাজশ রয়েছে। সরকার জামায়াত-শিবিরের প্রকাশ্য সন্ত্রাস দমন করায় তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আরও ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় নেমে মানুষ হত্যা করছে। জঙ্গীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে নিয়ে জোট করার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। জনগণ এটা বোঝেন, সুশীল সমাজের বোধে কাজ না করলেও যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে কাদের লাভ। ঘোলা পানিতে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির ফাঁকে একের পর এক হত্যাকা- সংঘটিত করে কোন্ পক্ষ লাভ হচ্ছে, তা সুশীল সমাজের বিবেচনায় নেয়া উচিত।জঙ্গীবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর খালেদা শিবিরে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠার মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয় যে, জঙ্গীরা আটক হয়ে গেলে খালেদার ‘চূড়ান্ত বিজয়’ অর্জন পথ ক্ষীণ ও সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। বিএনপির মহাসচিব এই অভিযান বিএনপি-জামায়াত জোটের ওপর ‘দমন-পীড়ন’ বলে যে আশঙ্কা করছেন, তা অমূলক নয়, তখনই বলা যাবে, যদি জঙ্গী ধরা না পড়ে। গুপ্ত হত্যাকারীরা ধরা পড়া মানেই তাদের দেশকে অস্থিতিশীল করার আন্দোলনের (!) তিরোধান ঘটবে। মহাসচিব তো স্বীকারই করেছেন এই সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে তাদের সেই কৌশল, যে কৌশলের মাধ্যমে জনগণের আন্দোলন তথা আগুন সন্ত্রাস দমিয়ে দিয়েছিল, সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে তাদের সর্বশেষ অপচেষ্টা গুপ্তহত্যাও দমিত হয়ে যাবে। তখন আর তাদের আন্দোলন বা বিজয় ঠিকই দমিত হয়ে যাবে। এই জঙ্গীদের তারা ২০০৪, ২০০৫ সালে ব্যবহার করেছিল। বোমা ও গ্রেনেড হামলার সে সব ঘটনার মামলাগুলোর অধিকাংশ ঝুলে আছে। তাদের সৃষ্ট জঙ্গীরা আজও সক্রিয়। সুতরাং তারা ধরা পড়ে গেলে সব পরিকল্পনাই যে মাঠে মারা যাবে। ‘বাংলাদেশে জঙ্গী আছে এবং তারা আইএস’এমন ধারণা তারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। এর মাধ্যমে নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করার একটা পথও পেয়ে যাচ্ছে তারা। গুপ্তহত্যাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করার জন্য মার্কিন ওয়েবসাইট থেকে দাবি করা হয়, আইএস ঘটিয়েছে। বিতর্কিত এই সাইটটির নেপথ্যে কারা এবং কারা এর অর্থ যোগান দেয় তা জনগণকে জানানো সরকারের দায়িত্ব। এমনিতেই বেগম জিয়া এই হত্যাকা- সরকার ঘটাচ্ছে বলে নিজের অপরাধ আড়াল করতে চান। তার শাসনামলে ২১ আগস্ট ও ১৭ আগস্টের ঘটনা সরকারে থেকে তিনি ও তার অনুগতরা যে ঘটিয়েছেন, সেই আলোকে তিনি হয়ত এভাবে বলছেন। কিন্তু গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার দক্ষতা তার একান্ত নিজের। খালেদা জিয়া যদি অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন, আশা করি সেই সঙ্গে তার গুপ্তহত্যার জঙ্গনামাও প্রত্যাহৃত হবে।দেশজুড়ে যে সাঁড়াশি অভিযান চলছে, তাতে জঙ্গী নির্মূল হবে এমনটা নয়। তবে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সরকার যে প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জনমনে এক ধরনের স্বস্তি এনে দেবে। সরকারের উচিত গণমাধ্যমের সহায়তায় জঙ্গীবিরোধী জনমত গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া। একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে দক্ষ করে গড়ে তোলা জরুরী। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩
false
rn
একটি শিক্ষণীয় গল্প অনেক অনেক দিন আগে, চীন দেশে লিউ নামে এক মেয়ে বিয়ে করে বাস করতে লাগল তার স্বামী এবং শ্বাশুড়ীর সাথে।খুব অল্পসময়েই লিউ দেখল যে তার শ্বাশুড়ীর সাথে বাস করাটা প্রায় অসম্ভব। ক্রমশ তাদের মধ্যে মতনক্য আর ঝগড়া শুরু হয়। শাশুরি প্রায়শ লিউকে কটাক্ষ করতো বিভিন্ন কাজে।পরিস্থিতি সবচাইতে খারাপ করল যে দিকটা সেটা হল, চাইনিজ পরম্পরা অনুয়ায়ী লিউ তার শ্বাশুড়ীকে সবসময়েই মাথা নুইয়ে সন্মান জানাতে হতো এবং শ্বাশুড়ীর সমস্ত আদেশ মেনে নিতে হতো।অনেক দিন এবং সপ্তাহ পার হয়ে গেল কিন্তু তাদের বিবাদ না কমে দিন দিন বাড়তেই থাকল।এ সমস্ত ঘটনা ক্রমেই লিউর স্বামীকেকে হতাশাগ্রস্থ করে তুলল।লিউ কোনভাবেই তার শ্বাশুড়ীর এই খারাপ আচরন বরদাস্ত করতে পারছিলনা, এবং সে সিদ্ধান্ত নিল যে কিছু একটা করতেই হবে।একদিন লিউ তার বাবার এক বন্ধু মি: হং এর কাছে গেল যার একটা ফার্মেসি রয়েছে। লিউ তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো এবং তার কাছে কিছু বিষ চাইল যা দিয়ে তার শ্বাশুড়ীকে মেরে ফেলে এ সমস্ত সমস্যার সমাধান করা যায়।মি: হং কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন," লিউ, আমি তোমাকে সাহায্য করবো তোমার সমস্যার সমাধান করবার জন্য, কিন্তু আমি তোমাকে যা যা বলবো তাই তোমাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।"লিউ খুশিমনে তার কথায় রাজী হয়ে গেলো।মি: হং পেছনের রুমে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন একটা ঔষধের প্যাকেট নিয়ে।তিনি লিউকে বললেন," তোমার শ্বাশুড়ীকে মেরে ফেলবার জন্য এমন কোন বিষ দেয়া উচিৎ হবেনা যা তাৎনিক ভাবে তাকে মেরে ফেলবে। এতে লোকের সন্দেহ তোমার উপর পরবে।তাই আমি তোমাকে এমন একটা ঔষধ দিচ্ছি যা তোমার শ্বাশুড়ীর শরীরে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া করবে। প্রতিদিন তার খাবারের সাথে এটা অল্প করে মিশিয়ে দিবে। এটার কার্যকারীতা শুরু হতে কয়েকমাস লেগে যেতে পারে, আর তাই তুমি তোমার শ্বাশুড়ীর সাথে এ কদিন ভাল ব্যবহার করতে থাক যাতে লোকের সন্দেহ কোনক্রমেই তোমার উপর না পরে।কখনই তার সাথে তর্ক করবেনা, তার প্রতিটি ইচ্ছা পুরণ করবে এবং তার সাথে রানীর মতো আচরণ করবে।"লিউ খুবই খুশী হল।সে মি: হংকে ধন্যবাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এল তার শ্বাশুরীকে হত্যা করবার কাজ শুরু করবার জন্য।সপ্তাহ পার হয়ে মাস পার হয়ে গেল, লিউ তার ঔষধটা শ্বাশুড়ীকে নিয়ম করে খাওয়াতে লাগল।সে সবার সন্দেহের উর্দ্ধে থাকবার জন্য মি: হং এর উপদেশও অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে লাগলো। সে তার বাজে রাগকে প্রশমিত করলো, তার শ্বাশুড়ীর সমস্ত আদেশ মাথা পেতে পালন করতো এবং তার সাথে আচরণ করত তার নিজের মায়ের মতই।ছয়মাস পর পুরো ঘরের দৃশ্যপট পাল্টে গেল।লিউ তার রাগকে এতটাই দমন করা শিখে গেল যে, সে আর তেমন করে উত্তেজিতই হতে পারত না।তার সাথে তার শ্বাশুড়ীর এই ছয়মাসে কোন তর্কই বাধল না, আর এখন লিলি তার শ্বাশুড়ীর সাথে অনেক বেশী ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠল।লিউর প্রতি তার শ্বাশুড়ীর আচরণেরও পরিবর্তন হল, এবং তিনি লিউকে তার মেয়ের মতই ভালবাসতে শুরু করলেন।তিনি তার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদেরকে বলতে লাগলেন যে, পৃথিবীতে যত বৌমা আছে তার মধ্যে লিউ হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট।লিউ এবং তার শ্বাশুড়ী, মেয়ে এবং মা এর মতই বাস করতে লাগল।সবকিছু দেখে লিউর হাসবেন্ডও খুব খুশি হয়ে উঠল।একদিন লিউ আবারও মি: হং এর কাছে সাহায্যের জন্য আসল। সে মি: হংকে বলল, " প্রিয় মি: হং, আপনার বাকি ঔষধ আপনি ফিরিয়ে নিন এবং যতটুকু ক্ষতি আমার শ্বাশুড়ীর হয়েছে তা কাটাবার কোন ঔষধ দিন। তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং এখন তাকে আমি আমার মায়ের মতই ভালবাসি।"মি: হং হেসে সামান্য মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, " লিউ, ভয় পাবার কোন কারন নেই, আমি তোমাকে কোন বিষ দেইনি। যেটা দিয়েছিলাম সেটা ছিল একপ্রকার ভিটামিন। যা তোমার শ্বাশুড়ীর স্বাস্থ্য ভাল হতে সাহায্য করেছে।একমাত্র বিষ ছিল তোমার মনে এবং তার প্রতি তোমার আচরণে, যেটা তুমি পুরোপুরি ধুয়ে ফেলেছ তাকে ভালবেসে।"মনে রাখবেন," যে যাকে যতটা ভালবাসা দেবে, প্রতিদানে ততটা ভালবাসাই পাবে। আপনি যেমন ব্যাবহার করবেন, তার থেকে ভালো ব্যাবহার আপনি আশা করতে পারেন কি?? ভালো ব্যাবহারই মানুষকে সুন্দর ও সুখী পথের নির্দেশনা দেয়"
false
hm
প্রতিভুভুজেলা পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নববর্ষ উদযাপন করতে আগতা নারীদের ওপর কিছু মাদারচোদ চড়াও হয়ে তাদের বস্ত্রহরণ করেছে। কাজটা যে হঠাৎ সুযোগ নিয়ে করা হয়েছে, এমনও নয়। কিছু লোক ওঁত পেতে থেকে আচমকা শেয়ালের পালের মতো চড়াও হয়েছে সন্তানবাহিনী মায়ের ওপর, উপস্থিত যুগলের ওপর। কয়েকজন ঘিরে রেখেছে শিকারকে, কয়েকজন তাদের জামা টেনে ধরেছে। সাহায্যের জন্য করা আর্তচিৎকার শুনে যাতে কেউ এগিয়ে না আসে, সেজন্য ভুভুজেলা বাজিয়ে আর্তনাদ চাপা দেওয়া হয়েছে। এই কাজগুলোর জন্য পরিকল্পনা ও অনুশীলনের প্রয়োজন। ভিড়ের ভেতরে সুযোগসন্ধানী বখাটের হাতে মেয়েদের নাজেহাল হওয়ার বিচ্ছিন্ন ঘটনা অন্তত এটি নয়। যারা এ কাজ করেছে, তারা পহেলা বৈশাখের উদযাপনটিকেই দীর্ঘ মেয়াদে আক্রমণ করতে চায়। সে দীর্ঘমেয়াদী আক্রমণের প্রথম ধাপ নারীর ওপর করে শুরু করা বাংলাদেশে সহজ, আরো কিছু মাদারচোদ তাদের সহমাদারচোদদের সমর্থন করে আক্রান্তা নারীটির ওপর যাবতীয় দোষ চাপিয়ে দিতে অনলাইনে এবং অফলাইনে সবসময়ই হাজির থাকে। তাই বলে কি আমাদের নববর্ষ উদযাপন থেমে থাকবে? কখনোই না। এ অবস্থায় আমাদের কর্তব্য হতে পারে, নতুন বছর উদযাপনের পাশাপাশি প্রতিটি ঋতুকে আলাদা করে বরণ করার জন্য আরো উৎসব প্রণয়ন করা। পহেলা ফাল্গুনে বসন্তবরণ উৎসব অনেকদিন ধরেই পালিত হচ্ছে, এটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই দিনটিকে নববর্ষের মতোই আনন্দ উদ্দীপনা নিয়ে সবাই উষ্ণবর্ণের জামা পরে উদযাপন করেন, তবে কী করে দিনটিকে আরো আনন্দমুখর করা যায়, তা নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের আরো ভাবতে হবে। পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি আষাঢ়ের প্রথম দিনে বর্ষাবরণ উৎসব পালন করতে হবে, সমবেত হয়ে নারী পুরুষ সকলে গান, নৃত্য, পথনাটক ও সমাবেশের মধ্যে দিয়ে বাংলার প্রাণদায়িনী বর্ষাকে বরণ করে নিতে পারেন। কদম ফুল হতে পারে এই উৎসবের প্রতীক, রংধনুর সাত রং হতে পারে এই উৎসবের মুখ্যবর্ণ। শেষ গ্রীষ্মের ফল আর বর্ষার ফুল নিয়ে হতে পারে চমৎকার সব আয়োজন আর প্রদর্শনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সেজে উঠতে পারে চারুকলার শিল্পীদের তৈরি করা ব্যাঙের ছাতায়। যদিও শরৎকে এখন আলাদা করে চেনা দুঃসাধ্য, কিন্তু শরৎবরণের জন্য ভাদ্রের প্রথম দিনটিতে বিদ্যায়তনগুলো ছেয়ে যেতে পারে নীল আর সাদার বিভিন্ন শেডে। কাশের একটি করে শীষ নিয়ে তরুণ-যুবা-বৃদ্ধরা সাদা কুর্তা আর পায়জামায় সজ্জিত হয়ে সাদা-নীল শাড়িতে সেজে আসা সঙ্গিনীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন একই রঙে সাজানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। চারুকলার শিল্পীরা এ দিন ক্যাম্পাসকে সাজিয়ে তুলবেন কাগজের সারস আর শরতের ফুলের সজ্জায়। হেমন্ত আর শীতকেও একই ভাবে বরণ করে নেওয়া যেতে পারে আলাদা দুটি উৎসব করে। কার্তিক আর পৌষের প্রথম দুটি দিনে সোনালি আর ধূসর রঙের পোশাকের মানুষ আরা নানা পিঠার আয়োজনে ভরে উঠবে উৎসবের চত্বরগুলো। হাসিমুখে নারী আর পুরুষের সমাগমে ভরে উঠবে রমনা, সোহরাওয়ার্দি, টিএসসি, চারুকলা, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, উদযাপনের এলাকাগুলো। পহেলা বৈশাখকে আক্রমণ যারা করে, তাদের শায়েস্তা করার জন্য প্রথম উদ্যোগ হোক এটিই, উৎসবের আয়োজন বহুগুণিত হোক। উদযাপনের দিক ছয়গুণ বাড়ানো হোক। হয়তো শুরুতে অনুষ্ঠানগুলো জমবে একটু কম, কিন্তু তার পরের বছর আরেকটু সরগরম হবে, আরেকটু জমজমাট হবে, তরুণ-তরুণীরা আরো নানা আগ্রহোদ্দীপক আয়োজনে ঋতুবরণের উৎসবগুলোকে আরো বর্ণিল করে তুলবেন। কাজটা খুবই সহজ, বন্ধুকে নিয়ে উপস্থিত হলেই দেখবেন উৎসবকে শূন্য থেকে গড়ে তুলছেন আপনি নিজেই। বাপের গোয়া দিয়ে পয়দা হওয়া যেসব শুয়োরের বাচ্চা ভুভুজেলা বাজিয়ে মেয়েদের ঘিরে ধরে তাদের কাপড় ধরে টানাটানি করে, তাদের মোকাবেলার দ্বিতীয় পন্থাটি আরেকটু কম অহিংস। ওরা যদি ৪০-৫০ জন মিলে দল বেঁধে ওঁত পেতে থেকে আপনার সমাজের একজন নারীর ওপর আক্রমণ চালায়, তাহলে আপনিও পারবেন ১০০-২০০ জনের একটি দল বেঁধে এদের প্রতিহত করতে। যে পহেলা বৈশাখকে পণ্ড করার জন্য মেয়েদের জামা ধরে টানে, আর যে মেয়েটিকে ঘিরে ধরে আত্মরক্ষায় বাধা দেয়, দু'জনই সমান বাপের গোয়া দিয়ে পয়দা হওয়া শুয়োরের বাচ্চা। সামনের উৎসবে একা যাবেন না, বড়সড় দলের সঙ্গে কোঅর্ডিনেট করে যাবেন। যদি হাত-পা চালাতে না পারেন, মোবাইলের ক্যামেরা চালাবেন। স্পষ্ট ছবি তুলে নিয়ে আসবেন এই মাদারচোদদের। সেই ছবি কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ ও প্রচার করে এই মাদারচোদদের এক এক করে খুঁজে বের করা হবে, দশ বছর পরে হলেও। এরা যে প্রতিষ্ঠানে পড়ে বা চাকরি করে, সে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। পুলিশ যদি এদের জেলে না ঢোকায়, মামলা না দেয়, আদালত যদি এদের শাস্তি না দেয়, তাহলে এদের সামাজিকভাবে একঘরে করা হবে। দেশটা আপনার, উৎসব আপনার, মানুষও আপনার। আসুন ঘুরে দাঁড়াই। কয়েকটা খানকির পোলা মিলে আমাদের হাত থেকে যেন এই দেশ-মানুষ-উৎসবকে ছিনিয়ে নিতে না পারে। ভুভুজেলা যখন আমরা বাজাবো, তখন মাইরও হবে, সাউণ্ডও হবে।
false
hm
প্রতিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া বাচ্চু রাজাকার, যে একাত্তরে নানা অপরাধ ঘটানোর পর পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে মাওলানা আযাদ নাম ভাঁড়িয়ে যত্রতত্র ধর্মীয় ব্যাখ্যা বয়ান দিয়ে বেড়াচ্ছিলো, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারার্থে গঠিত ট্রাইব্যুনালে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর চারটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জার্মানি ও ফ্রান্স, ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দুই দেশ এই রায় ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিরুদ্বেগ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রথম আলোর [১] বর্ণনায়, জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের বিষয়টিতে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে আপনাদের অতীতের অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা কীভাবে হবে, সেটি ঠিক করার দায়িত্ব আপনাদের। একজন জার্মান নাগরিক হিসেবে শুধু এটুকুই বলতে পারি, যন্ত্রণাকর অতীত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তির জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হয়। আর আপনারা সেটাই করতে চলেছেন।’ আলব্রেখট কনিয়ে আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল বিশেষ করে যুক্তরাজ্য বিচারের প্রক্রিয়াগত বিষয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, ট্রাইব্যুনাল সেটিকে আমলে নিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের কাজে প্রক্রিয়াগতভাবে বড় কোনো বিচ্যুতি ব্যক্তিগতভাবে আমার চোখে পড়েনি। আর আইনমন্ত্রী আমাদের (ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূত) ট্রাইব্যুনালের আইন সম্পর্কে জানিয়েছেন, তিন দশকেরও বেশি সময় আগে ফৌজদারি দণ্ডবিধি বিষয়ে অভিজ্ঞ দুই জার্মান অধ্যাপক এ আইন প্রণয়নে যুক্ত ছিলেন। কাজেই এ আইন নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই।’ এবং, একই বিষয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিশেল ট্রিনকুইয়ে বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট ফলপ্রসূ মতবিনিময় হয়েছে। আমরা তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তাই এ বিচার নিয়ে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। অতীতের সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, সেটি ঠিক করার দায়িত্ব প্রত্যেক দেশেরই নিজেদের বিষয়। কোনো কোনো দেশ ক্ষমা প্রদর্শনের নীতি অনুসরণ করেছে। আবার কোনো কোনো দেশ যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ট্রাইব্যুনাল চালু করেছে।’ বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে কি না—জানতে চাইলে মিশেল ট্রিনকুইয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। সম্প্রতি একটি জনমত জরিপে দেখেছি, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়ায় তাদের সমর্থন জানিয়েছে।’ যে প্রতিবেদক ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন, বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে কি না, তাকে শৈশবে আয়োডিনযুক্ত লবণ না খাওয়ানোর জন্য তার পিতামাতার প্রতি ধিক্কার জানাই। ভাগ্যিস প্রথম আলো ছিলো, না হলে এই ব্যক্তি জীবনে নির্বুদ্ধিতার কারণে পদে পদে বিপন্ন হতেন। প্রথম আলো এই জড়বুদ্ধিসম্পন্নদের ওপর বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দিচ্ছে, তাদের ধন্যবাদ। নিজের দেশ ঠিকমতো চলছে কি না, এ প্রশ্ন ভবিষ্যতে ভিনরাষ্ট্রের দূতকে না করে দেশের চিন্তাবিদদের কাছে করুন। আজ ফ্রান্সে কোনো অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত হলে একজন ফরাসী সাংবাদিক কখনো কি তাঁকে জিজ্ঞাসা করবেন, ফ্রান্স ঠিক পথে এগোচ্ছে কি না? হে প্রথম আলোর প্রতিবেদক, আপনি আকাট কাঠবলদ হয়ে করে খান, কোনো সমস্যা নেই, শুধু বাংলাদেশকে এভাবে ভিনদেশী রাষ্ট্রদূতদের কাছে 'কাঠবলদ সাংবাদিক উৎপাদনকারী দেশ' হিসেবে উপস্থাপন করবেন না। যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া এসেছে তার পররাষ্ট্র দফতর থেকে। পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্যারনেস সাঈদা হোসেন ওয়ারসির তরফ থেকে আসা বিবৃতিতে বলা হয়েছে [১], বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের কনিষ্ঠ মন্ত্রী ব্যারনেস ভার্সি এক বিবৃতিতে বলেন, তাঁর সরকার এই রায় পর্যবেক্ষণ করছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার যে উদ্যোগ বাংলাদেশ নিয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকার তা সমর্থন করে। তবে যুক্তরাজ্য সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। যুক্তরাজ্য মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী হলেও, বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। বাংলাদেশে নিয়মিত সে বিধান পালিতও হচ্ছে। বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর যারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিলো, সেই বাংলা ভাইদেরও ফাঁসি হয়েছে বাংলাদেশে। যুক্তরাজ্যের ফরেন অফিস তখন বাংলা ভাইদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে কিছু বলেছিলো কি? গুগল ঢুঁড়ে পেলাম না। সারা দুনিয়ার মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে [২], যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এ ধরনের অপরাধ (মানবতাবিরোধী অপরাধ) যারা করে তাদের বিচার যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, এই বিচার অবশ্যই অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হতে হবে। এবং এই বিচার হতে হবে বাংলাদেশের নিজস্ব আইন ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে।” পররাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের মুখপাত্র ভিক্টরিয়া নুল্যান্ড এই বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চালানো গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই আন্তর্জ্যাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরো কয়েকটি মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব মামলার বিচারেও আন্তর্জাতিক সনদ অনুসরণ ও আইনের শাসনের নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রিয় যুক্তরাষ্ট্র, ওসামা বিন লাদেনের বিচার কি অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হয়েছিলো? কোনো মার্কিন আদালত কি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আইন ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তার বিচার করেছিলো? তার বিচার করার এখতিয়ার কি মার্কিন আদালতের ছিলো? কোনো আন্তর্জাতিক সনদ কি যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করেছিলো তখন? আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইনে সাধিত বিচারকে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে হতে হবে কেন? আর এই আন্তর্জাতিক মান কোন আন্তর্জাতিক মান? আমরা তো উঠতে বসতে যুক্তরাষ্ট্রের সবকিছু অন্ধভাবে অনুসরণ করার রাস্তায় চলি, আমরা কি তবে বাচ্চু রাজাকারকে পাকিস্তানে সেনা পাঠিয়ে রাতের অন্ধকারে বিন লাদেনের মতো হত্যা করলে আন্তর্জাতিক মান অনুসৃত হবে? নিজামী-গোআ-সাঈদী-কামারু-মুজারাজাকার এগুলিরে আদালতে দাঁড় না করিয়ে লাদেন স্টাইলে বডি ঝাঁঝরা করে সমুদ্রে ফেলে দিলে আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকবে গো স্যারেরা? প্রিয় ব্যারনেস ওয়ারসি, যুক্তরাষ্ট্র যখন ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করলো, মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের আপত্তি আপনি জোর গলায় উত্থাপনের সুযোগ পেয়েছিলেন কি না জানি না। বেটার লেট দ্যান নেভার, মি'লেডি। এখন বলেন। বলেন না, প্লিজ? [ক্রমশ যোগ হবে] সংযোজন ২৭ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে ইরাকের অভ্যন্তরীণ আইনে ইরাকি আদালতে স্বৈরশাসক সাদ্দাম হুসেইনের মৃত্যদণ্ড ঘোষণার পর বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ও প্রভাবশালী সংগঠনের প্রতিক্রিয়ার এক সংক্ষিপ্ত সারমর্মের তালিকায় [৩] দেখা যায়, হোয়াইট হাউস মুখপাত্র স্কট স্ট্যানজেল বলছেন, Today marks an important milestone in the Iraqi people's efforts to replace the rule of a tyrant with the rule of law. Saddam has received due process and the legal rights that he denied the Iraqi people. The Iraqis deserve praise for continuing to utilise the institutions of democracy to pursue justice. স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও সমার্থক গোলগোল শব্দের খরায় পীড়িত এ প্রতিক্রিয়ায় সাদ্দামের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উত্থাপিত আপত্তিগুলো নিয়ে কোনো বক্তব্য ছিলো না। তথ্যসূত্র: [১] "যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়া", দৈনিক প্রথম আলো, ২৩.০১.২০১৩ [২] বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন, মান নিশ্চিতের আহ্বান, বিডিনিউজ২৪.কম, ২৩.০১.২০১৩ [৩] In quotes: Reaction to Saddam sentence, বিবিসি, ২৭.১২.২০০৬
false
ij
মৃরিডা নাইট আতিক_ মরক্কোর এক নারী_ তাঁর কবিতা ___ মৃরিডা নাইট আতিক। কাল্পনিক ছবি। মৃরিডা ছিলেন মরক্কোর আজিলাল প্রদেশের এক গণিকা। তা সত্ত্বেও গান করতেন। সেই গান কেউ শুনত-কেউ শুনত না। গণিকার গান কে শোনে! তবুও গান গাইতেন মৃরিডা -গান নিজেই লিখতেন। ‌'মৃরিডা' তাঁর ছদ্ম নাম। আসল নাম জানা যায়নি। গণিকার আসল নাম কে জানতে চায়! এই হল মরক্কোর মানচিত্র। ১৯১৯ সালে মৃরিডার জন্ম এই দেশেই হয়েছিল। মরক্কো দেশটা আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমে; আটলানটিক সমুদ্রের পূর্ব তীরে। আজিলাল প্রদেশটি মরক্কোর মধ্যিখানে অবস্থিত । কাছেই বিখ্যাত অ্যাটলাস পাহাড়। আজিলাল প্রদেশ যতদূর জানা যায়- এই আজিলাল প্রদেশেরই এক বাজারে পুরুষদের মনোরঞ্জনকারী ছিলেন মৃরিডা নাইট আতিক। মরক্কোয় এখন আরবি ভাষা প্রচলিত থাকলেও এক সময় ওখানে বারবার ভাষার প্রাধান্য ছিল। তো সেই বারবার ভাষারই এক কথ্যরুপ হল: তাচেলহাইট। মৃরিডা এই তাচেলহাইট ভাষাতেই তাঁর গান গেয়ে গেছেন। হ্যাঁ,মরক্কোর উপরেও চোখ পড়েছিল ইউরোপীয় হায়েনাদের। ১৯০৪ সাল থেকে মরক্কোর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে ফরসীরা । রাবাত (মরক্কোর রাজধানী) আজিলাল-প্রভৃতি স্থানে গিসগিস করত ফরাসী সৈন্যরা । রেনে ইউলোর্জ ছিলেন তেমনি এক ফরাসী সৈনিক। সম্ভবত তার পোষ্টিং ছিল আজিলাল-এ। আজিলাল এর বাজারে ছিল মৃরিডার ঘর। ইউলোর্জ কামতাড়িত হয়ে গিয়েছিল মৃরিডার ঘরে। মৃরিডা সম্ভবত রতিক্লান্ত ইউলোর্জকে শুনিয়েছিলেন তাঁর তাচেলহাইট ভাষায় লেখা গান। রেনে ইউলোর্জ সৈন্য হলেও ছিলেন স্পর্শকাতর হৃদয়ের অধিকারী। তিনি মৃরিডার গান শুনে মুগ্ধ হলেন। ইউলোর্জ , সম্ভবত, তাচেলহাইট ভাষা জানতেন। তিনি মৃরিডার কবিতা (বা গান) ফরাসী ভাষায় অনুবাদ করেন-প্রকাশও করেন। যে কারণে আমরা আজ মৃরিডার কবিতা পেলাম। নৈলে- কবি মৃরিডা হারিয়ে যেতেন- কেবল আজিলালের গণিকা পরিচয়েই তিনি বেঁচে থাকতেন। রেনে ইউলোর্জ কে শ্রদ্ধা। এবং সঙ্গত কারণেই বেশ্যাসক্ত সাম্রাজ্যবাদী সেই সৈন্যকে এই লেখাটি উৎসর্গ করছি। তো, কারা ছিল মৃরিডার খদ্দের? ফরাসী সৈন্য, স্থানীয় ট্রাক ড্রাইভার ও ব্যবসায়ীরা। এরা মৃরিডার গান বোঝেনি। বোঝার কথাও না। এরা শুধু মৃরিডার কালো শরীরটির জন্যই মৃরিডার ঘরে গিয়েছিল। কেমন ছিল কবির জীবন? যেমন হয়- খুব কষ্ঠের, অপমানের ... খদ্দেররা প্রায়ই মারধোর করত ... নিচের কবিতায় সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। বদ প্রেমিক নিষ্ঠুর সৈন্য, এখান থেকে চলে যাও । তোমার মুখে ঘৃনার ছাপ ফুটে উঠেছে । এখন তোমার হাত উঠছে আমাকে গালাগাল করছ তুমি আমার কাছে তুমি যা চেয়েছিলে সেসবই তো তুমি পেয়েছ আর এখন তুমি আমাকে কুকুর বলছ! আমার শরীর ছুঁয়ে ছেনে তুমি তৃপ্ত তুমি আমাকে ছিন্নভিন্ন করেছ লজ্জ্বা করেনি তোমার তখন আমার ঘরে বুনো ষাঁড়েরর মতো আসতে? আমার এখানে তুমি কি তাশ খেলতে এসেছিলে? তখন তুমি ছিলে বিনয়ী, তোমার ব্যবহার ছিল ভদ্র। আমি চেয়েছিলাম বলে তুমি অগ্রিম অর্থ প্রদান করেছিলে তারপর তোমার চোখ ধীরে ধীরে দেখেছে আমার নগ্নতা তোমার বন্য আকাঙ্খা ততক্ষণে আমার মুঠোয় যখন আমি সম্পূর্ন নগ্ন তখন আমার ইচ্ছে করছিল তোমার আত্মাকে জিজ্ঞেস করতে আমি তোমার মাকে অভিশাপ দিতে পারতাম অভিশাপ দিতে পারতাম তোমার বাবা- তোমার পূর্বপুরুষদের তুমি যে স্বর্গে ভেসে যাবে সেই স্বর্গকেও ... এখন তুমি শান্ত হয়েছ তোমার হুঁশ ফিরেছে উদ্ধত! নিষ্ঠুর! কর্কস! প্রথমে তুমি আমার অতিথি ছিলে-তারপর হয়েছে দাস! তুমি কি আমার ঘৃনা টের পাচ্ছ না? আজ রাতের স্মৃতি আমাকে মনে করিয়ে দেবে তোমায় আবারও বিজিত হব আমি -তুমিও সমর্পিত হবে দরজার কাছে রাখবে তোমার অহঙ্কার তোমাকে দেখে আমি হাসব-হাসব তোমার আকাঙ্খার কথা শুনে তবে পরের বার তোমাকে দ্বিগুন অর্থ গুনতে হবে তোমার অহংকার আর আমার অপমানের মূল্য হিসেবে! এর পর- তোমার নিষ্ঠুর আলিঙ্গনকে আমি লক্ষ করব না। নদী যেমন বৃষ্টির ফোঁটাকে লক্ষ করে না। তখন আমি বলছিলাম যে -কেমন ছিল কেমন ছিল মরক্কোর আজিলাল এর বাজারে মৃরিডা নাইট আতিক-মানে আমাদের আলোচ্য কবির জীবন? ওপরের কবিতায় খানিক আভাস পাওয়া গেল। কিন্তু, কবি মৃরিডা নাইট আতিক-এর মনের আরও গভীরে প্রবেশ করা যায় কিনা। নিচের কবিতায় মৃরিডার ভিতরের অভিমান আর কষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। কবিতার নাম 'মৃরিডা।' মৃরিডা তারা আমার ছদ্মনাম দিয়েছে মৃরিডা। মৃরিডা হল-প্রান্তরের চঞ্চল গেছো ব্যাং আমার তো ওর মতো সোনালি চোখ নেই নেই সাদা কন্ঠ সবুজ জামাও নেই ... কিন্তু, মৃরিডার মতো আমার আছে:‘ডাক’। যা ভেড়াদের খোঁয়াড় অবধি পৌঁছে যায় ছড়িয়ে যায় পুরো উপত্যকায়। পাহাড়ের ওপার থেকেও শোনা যায়। আমার ডাক- বিস্ময় ও ইর্ষার উদ্রেক করে। তারা আমার নাম দিয়েছে: ‘মৃরিডা।’ কারণ, প্রথবার প্রান্তরে যাওয়ার পর আমি একটি গেছো ব্যাং কোলে নিয়েছিলাম। ভয়ে আমার হাতে ভীষন ছটফট করছিল ওটা ওর সাদা গলা ছোঁওয়ালো আমার শিশু ঠোঁটে তারপর বালিকা-ঠোঁটে এভাবেই আমি আর্শীবাদপুষ্ঠ হলাম পেলাম যাদুময় গান যে গান গ্রীষ্মের রাতকে দেয় পূর্ণতা । কাচের মতন স্বচ্ছ সে গান কামারের হাপরের মতন তীক্ষ্ম বৃষ্টির আগে কম্পমান বাতাসের মতন এই গানের জন্যই তারা আমাকে বলল মৃরিডা: এবং যে আমার কাছে আসে তার হাতের মুঠোয় টের পেয়ে যায় আমার হৃৎপিন্ড আমি যেমন আমার আঙুলের ডগার নিচে পাই টের ছুটন্ত ব্যাংয়ের হৃৎপিন্ড পূর্ণিমার রাতে সে আমাকে ডাকবে: ‘মৃরিডা’, ‘মৃরিডা’। মিষ্টি ছদ্মনাম- আমি যা ভালোবাসি তার জন্য আমি তীক্ষ্ম স্বরে ডাকব তীক্ষ্ম আর ক্লান্ত পুরুষের জন্য যা বিস্ময়ের নারীদের জন্য যা ইর্ষার এই উপত্যকায় যা পূর্বে শ্রুত হয়নি। ভাবছিলাম মৃরিডা দেখতে ঠিক কেমন ছিলেন। ইন্টারনেটে শিল্পীর আঁকা মরক্কোর এক নারীর ছবি পেয়ে মনে হল-মৃরিডা নয় তো? অভিমানী কবি মৃরিডা কি দেখতে এমনই ছিলেন? ফরাসী থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ: দানিয়েল হালপেরর্ন এবং পলা পালেই। (এঁরা দুজনই বিদগ্ধ মার্কিন কবি) কবিতাসূত্র: Willis Barnstone এবং Tony Barnstone সম্পাদিত Literatures of Asia, Africa, and Latin America. (From Antiquity to the Present) সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:২৪
false
rg
জাত গেল জাত গেল বলে ।। রেজা ঘটক ''এক টানে তে যেমন তেমন, দুই টানে তে প্রজা, তিন টানে তে উজির-নাজির, চার টানে তে রাজা;'' কহেন সেই সাধুজন, যাহার সত্যিকার পরিচয় এখনো জানা যায় নাই। ধারণা করা হয় লুই পাস্তুর মহাশয় গাঁঞ্জা টানিতেন। প্রাচীন ভারতীয় সাধু-সন্যাসীরা গাঁঞ্জা সেবন করিতেন। হিমালয়ের মহামুতী বৌদ্ধ যাজকরা গাঁঞ্জা সেবন করিতেন বলিয়াও ইতিহাস রহিয়াছে। আপনারে জানিবার জন্য হয়তো সক্রেটিস মহাশয় গাঁঞ্জা সেবন করিতেন। তাহা না হইলে কি করিয়া তিনি উচ্চারণ করিলেন "know thyself"। স্বামীজি বীবেকানন্দ মহাশয় বলিয়াছেন, মানুষের আত্মা অনেকটা ক্রিস্টালের মত। আশে পাশে যাহা কিছু তাহারা দেখিতে পায়, তাহা হইতে কেবল রঙ আস্বাদন করিবার চায়। আত্মা যাহা কিছু স্পর্শ করিবে বস্তুঃত সে তাহার কেবল রঙই ধারণ করিবে মাত্র। কারণ, রঙ বড়ই শক্তিশালী, আর ক্রিস্টাল কেবল সেই রঙটাই আন্দাজ করিতে সক্ষম হয়। রঙের আসল মাজেজা উদ্ধার করিতে পারে না। লালের নিকটবর্তী হইলে সে লালের প্রেমে পড়িবে, আর নিজেকে ভুলিয়া যাইবে। আমরা কেবল আমাদের শরীরের রঙ ধারণ করিয়াছি মাত্র, আর আমাদের আত্মার অস্তিত্বের কথা বেজায় ভুলিয়া গিয়াছি। কেবল মৃতদেহ হইতে আত্মার উধাও হইবার পরে আমরা স্বীকার করিয়া লই, তাহা হইলে আত্মা'র অস্তিত্ব ছিল বলিয়া শরীরে এতো সংশয়, ভয়, তাড়না, রাগ, ক্ষোভ, হাসি-খুশি, ক্লেদ, প্রেম, প্রেরণা, উৎসাহ, আনন্দ দুলিয়া বেড়াইয়াছে। তাই আত্মা'র অস্তিত্বের কথা স্বীকার করিয়া আমাদের একটাই প্রার্থণা হইতে পারে- 'জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'।'' প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে ঋষি-মুনিদের গাঁজা সেবনের কথা জানিতে পাওয়া যায়। 'গাঁজা' একটি সংস্কৃত শব্দ। বাংলায় এটিকে বলা হয় গঞ্জিকা। কেউ বা বলেন সিদ্ধি। গাঁজার বৈজ্ঞানিক নাম হইল Cannabis sativa (ক্যানাবিস স্যাটিভা )।পশ্চিমা দেশ গুলোতে ইহা মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামেও পরিচিত। আমেরিকার রাস্তায় গাঁজা বিভিন্ন নামেই বিক্রয় হয়। গাঁজার অন্যান্য নামগুলোও বেশ মজার- পট, হার্ব, উইড, গ্রাস, উইডো, বুম, গাঁঞ্জা, হাস, মেরি-জেন, ক্যানাবিস, ব্যাবল-গাম, নরদার্ন-লাইটস, ফ্রুটি-জুইস, গ্যাং-স্টার, আফগানি, স্কাংক, ক্রোনি ইত্যাদি। নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিলে গাঁজা সাইকোসিস (Ganja-psychosis) নামে একধরনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। গাঁজা সেবনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেবনকারী ব্যক্তির হৃত্‍কম্পন বাড়িয়া যায়৷ কোমনালীগুলি(Bronchial Passages) শিথিল হইয়া বাড়িয়া যায়। চোখের রক্ত প্রবাহের শিরাগুলি স্ফিত হইবার কারণে চোখ লাল হইয়া যায়৷ হৃত্‍স্পন্দন স্বাভাবিকের (মিনিটে ৭০-৮০বার) চাইতে বাড়িয়া যায়। তখন গাঁজা সেবনকারীর শরীরে এক ধরনের পুলক অনুভূত হয়। বর্তমানে অবশ্য গাঁজার তান্ত্রিক ব্যবহারের চাইতে মাদক হিসেবে ব্যবহারই বেশি জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বৃদ্ধি করিয়াছে। গোটা আমেরিকার প্রায় এক তৃতীয়াশ মানুষ গাঁজা সেবন করিয়া থাকে। যদিও আমেরিকায় গাঁজা একটি অবৈধ মাদকদ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আমেরিকার মানুষ এই নিষিদ্ধ জিনিসটির প্রেম হইতে কখনো দূরে সরিয়া যায় নাই। প্রতি বছর আমেরিকার কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় গাঁজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁজা উৎসবে প্রায় ১০, ০০০ লোক জমা হইয়াছিল। আর ২০১১ সালে প্রায় ১৫,০০০ লোক ওই উৎসবে গাঁজা সেবন করিয়াছেন। যদিও আমেরিকায় গাঁজা আইনগতভাবেই নিষিদ্ধ। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করিয়া আমেরিকায় বাৎসরিক গাঁজা উৎসব পালিত হইয়া আসিতেছে। আমাদের বাংলাদেশেও সারা বছর বিভিন্ন মাজার বা সাধু-সন্তদের আখড়ায় গাঁজা উৎসব পালিত হয়। যদিও আইনগত ভাবে বাংলাদেশেও গাঁজা একটি নিষিদ্ধ মাদক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আইনের উর্ধ্বে উঠিয়া মাজার-আখড়ায় গাঁজা উৎসব পালিত হইতেছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শেষ শুক্রবার বাৎসরিক গাঁজা উৎসব পালিত হয় বগুড়ার মহাস্থানগড়ে। ওই উৎসবে ৪০ মন পর্যন্ত গাঁজা খাওয়া হয় বলিয়া খবর রহিয়াছে। সিলেটের শাহ জালালের মাজারের বাৎসরিক ওরসে ভক্তদের প্রচুর গাঁজা সেবনের প্রচলন রহিয়াছে। কুস্টিয়ার লালন মেলায় বিশেষ করিয়া মহামুনি লালনের জন্ম ও মৃত্যু দিবস উপলক্ষে সাধুসন্ত ও ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনায় গাঁজা মেলা অনুষ্ঠানের রেওয়াজ রহিয়াছে। রাজশাহী শহরের অদুরে খেতুরের মেলাও গাঁজা সেবনের জন্য বিখ্যাত মেলা বসে। জামালপুরের ইসলামপুরের কামালের মাজারে প্রতি বছর এক মাস ব্যাপী গাঁজা মেলা অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে। সারা দেশ থেকে তখন সাধুসন্ত ও ভক্তরা গাঁজা সেবন করিতে কামালের মাজারে হাজির হয়। আমার বন্ধু মুকুল আর আমি একবার কামালের মেলায় অংশগ্রহন করিবার সুযোগ করিয়াছিলাম। সেখানে হাজার হাজার মানুষ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হইয়া গোল হইয়া বসিয়া ব্যাপক আমুদের সহিত গাঁজা সেবন করিয়া থাকে। আপনি যতো গাঁজা সেবন করিতে চান সবই বিনামূল্যে করিতে পারিবেন। শুধু সঙ্গে করিয়া আনিতে চাহিলে খরিদ করিবার নিয়ম। কামালের মাজারের একপাশে কেহ সিজদা করিতেছে, কেহ গান গাহিতেছে, কেহ বা নাচিতেছে, পুরুষ-মহিলার কোনো বালাই নাই। কেবল কেহ যদি ছবি তুলিতে উদ্দত হয় তাহা হইলে সামান্য ব্যাঘাত ঘটিবার আশংকা থাকিবে। সেখানে একপাশে মহা ধুমধামের সঙ্গে রন্ধন প্রক্রিয়া চলিতেছে। খিচুরি রান্না হইতেছে। যাহার ক্ষুধা লাগিতেছে সে উহা ভক্ষণ করিয়া লইতেছে। টাকা পয়সার কোনো ব্যাপার নাই। নাচা-গানা-গাঁজা সেবন-খিচুরি ভক্ষণ সবই বিনামূল্যে ঘটিতেছে। কেবল ভক্তরা যে যতোটুকু পারিতেছে মাজারের দানবক্সে উদার হস্তে দান করিতেছে। কামালের মাজারে মাস ব্যাপী গাঁজা মেলায় অন্তঃত কয়েক শো মণ গাঁজা সেবন করা হইয়া থাকে। অথচ বাংলাদেশে আইন মহাশয় বলিতেছে, গাঁজা সেবন করা অবৈধ আর ইহা একটি নিষিদ্ধ মাদক। যত্তোসব গাঁজাখুরি নিয়ম কানুন। গাঁজার মূল নেশা উদ্রেককারী উপাদান হচ্ছে ডেল্টা-৯-ট্রেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (delta-9-tetrahydro cannabinol), যাহা সংক্ষেপে THC নামে পরিচিত৷ এই টিএইচসি'র পরিমাণই ব্যবহারকারীর নেশার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করিয়া থাকে। গাঁজা গাছের পাতা শুকাইয়া তৈরি করা হয় সিদ্ধি। সিদ্ধি হইতে অন্যান্য উপাদান মিশাইয়া ঔষধ তৈরি করা হয়। এছাড়া সিদ্ধি মুখে পুরিয়া চিবাইয়া অনেকে নেশা করিয়া থাকেন। গাছের আঠা থেকে চরস তৈরি হইয়া থাকে। অনেক সময় গাঁজার ফুল শুকানোর সময় যে গুঁড়া উৎপন্ন হয়, তাহা আঠার সঙ্গে যুক্ত করিয়া চরস তৈরি করা হয়। অনেক সময় এই আঠা পাওয়ার জন্য গাঁজার গাছ কাটিয়া দেওয়া হয়। গাঁজা শরীরের বিষ-ব্যথা সারায়। ভারতবর্ষের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চিকিৎসাশাস্ত্রেও এই কথার বর্ণনা রহিয়াছে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখাইয়াছেন যে, ভাং ও গঞ্জিকা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি তামাক পাতায় প্রস্তুত সিগারেট পানের চাইতে কম। প্রাচীন কাল থেকে গাঁজা সারা দুনিয়ায় একটি বহুল ব্যবহৃত মাদক হিসেবে পরিচিত। কম মুল্য এবং সহজলভ্যতার কারণে নিম্ন আয়ের নেশাখোরদের মাঝে ইহা অত্যন্ত আদরনীয় হইয়া উঠিয়াছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মাদক হিসেবে গাঁজা নিষিদ্ধ৷ সম্প্রতি কানাডা, নেদারল্যান্ডস এবং ইসরায়েলসহ কিছু দেশে ওষুধ হিসেবে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হইয়াছে৷ এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যেও ওষুধ হিসেবে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হইয়াছে৷ মদ-নারী-গাঁঞ্জা, একসঙ্গে নিয়া কোনো প্রজা, করেন যদি স্ফূতি মজা, আইনের চোখে সে, ধরা পড়িলে খাইবেন ভারী সাজা। অপরাধের সঙ্গে নেশার একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রহিয়াছে। সে কারণে, অনেকে গাঁঞ্জাখোরদের সরাসরি অপরাধীদের দোষর হিসেবে একই কাতারে হিসেব করিয়া থাকেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হইল, গাঁঞ্জার ব্যবসায়ীক নিয়ন্ত্রণ অপরাধীদের হাতে চলিয়া যাইবার পর হইতেই সমাজের চোখে ইহা একটি খারাপ মাদক হিসেবে পরিচিতি পাইয়াছে। সমস্যা কিন্তু গাঁজায় নহে, সমস্যা হইল আইন শৃঙ্খলায়। অপরাধী গাঁজার ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণভার কব্জা করিয়া সমাজের চোখে আইনের কাছে গাঁজাকে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য হিসেবে বিবেচনার সুযোগ করিয়া দিয়াছে। অপরাধী'র সঙ্গে গাঁজার একটি সরাসরি সম্পর্ক থেকেই এই ধারণার উৎপত্তি। কিন্তু সাধুসন্ত-সন্যাসীরা কি কেউ অপরাধী? তাঁহারা কি গাঁজা সেবন করেন না? তাহা হইলে গাঁজার সঙ্গে অপরাধ এবং নিষিদ্ধ ব্যবহার আসিল কেমন করিয়া? আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করিতে ব্যর্থ হইয়া রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের শাসককূল সম্মিলিত ভাবে যাহারা ওইসব অপরাধীদের প্রশ্রয় বা আশ্রয় দিয়া থাকে, তাহারা আবার সুযোগ মত অপরাধী হইতে সুযোগ সুবিধা আদায় করিয়া থাকে বা আড়ালে আবডালে অপরাধীকে লালান-পালন করিয়া থাকে, ভোট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, চুরি-ডাকাতি, খুন, গুম, রাহাজানি, ইত্যাদি অপকর্ম করিবার জন্য অপরাধী চক্র কোনো না কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তির আশ্রয়ে লালিত-পালিত হইয়া থাকে। সেই সব অপরাধীরা গাঁজাকে মাদক হিসেবে অপব্যবহার করিয়া সমাজের চোখে ইহাকে নিষিদ্ধ মাদক হিসেবে পরিচয় করাইয়াছে। সমস্যা গাঁজায় নহে, সমস্যা অপরাধী, তার আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের অপকর্মের ফসলে। সেই দোষ খামাখা গিয়া গাঁজায় আশ্রিত হইয়াছে। ইহা যেনো যিনি পাপ করিলেন, তাহার কোনো অপরাধ নাই, যিনি পাপের সঙ্গে গাঁজাকে জড়াইলেন, তাহার নহে, সকল দোষ ওই গাঁজার। কি গাঁজখুরি যুক্তিরে বাবা। তাই গাঁজা একটি নিষিদ্ধ মাদক হইলেও বাংলাদেশের তথা বিশ্বের সর্বত্র ইহা অত্যন্ত সুলভে বা দুর্লভে পাওয়া যাইতেছে। টাকা হইলে সকল দুর্লভ সুলভ হইবার নিয়ম সমাজে। আহা সমাজ আমার, সব কিছু হজম করিবার শক্তি রহিয়াছে এই সো কলড সমাজের। বড়োই বিচিত্র এই সমাজ। বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় সমবায় সমিতির মাধ্যমে সরকারি নিয়ন্ত্রণেই এক সময় গাঁজার চাষ হইত। বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ওখান থেকে গাঁজা সংগ্রহ করিয়া পৌঁছে দিতেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গঞ্জিকাসেবীদের কাছে ৷ বাংলাদেশের কুস্টিয়া, যশোর, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁ, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষিরা, নরসিংদি, কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী ও তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক গাঁজার চাষ করা হয়। যদিও বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে গাঁজার উত্‍পাদন ও বিপণনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হইয়াছে৷ কিন্তু দেশে গাঁজার চাষ বন্ধ হইয়াছে এবং বিপণনও বন্ধ রহিয়াছে এমন খবর সরকারি ভাবে কেহ অস্বীকার করিতে পারিবে না। তাছাড়া ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যাণ্ড, হংকং, সিঙ্গাপুর, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, কলাম্বিয়া, ব্রাজিল, ম্যাক্সিকো, চিলি, আর্জেন্টিনা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, পানামা, তুরস্ক, দুবাই ও মিডলিস্টের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে অবাধে গাঁজা প্রবেশ করিতেছে। বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স, পুলিশ এবং আনসারের শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে ফাঁকি দিয়া সীমান্ত ক্রোস করিয়া নৌপথে, স্থলপথে অথবা আকাশপথে বাংলাদেশে গাঁজা প্রবেশ করিতেছে। কেহ কেহ বলিয়া থাকেন বাংলাদেশ নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্যের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বাংলাদেশের বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা এবং অপরাধীরা এইসব চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যাহারা নিয়োজিত তাহাদের খুশি করিয়া বা ভাগ দিয়াই তাহারা এই অপরাধ ব্যবসা করিতেছেন। আর সকল দোষ গিয়ে নিক্ষিপ্ত হয় বেচারা নিরিহ গাঁজা সেবীর উপর। প্রকাশ্যে গাঁজা খাইলে আইনের চোখে কেবল সে-ই অপরাধী। এখন দেশে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের দায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেবার বিধান রহিয়াছে। যে কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত কোনো গাঁজা সেবনকারীকে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের দায়ে এই দণ্ড প্রদান করিতে পারেন। অতএব সাধু সাবধান। গাঁজা সাধুসন্তদের জিনিস। গুরু-সন্যাসীদের আহার। তাহার সঙ্গে অপরাধ জগতের সম্পর্ক গড়িয়া উঠয়াছে রাষ্ট্রের সকল আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়াই। আর সেই সুযোগে সুশীল সমাজ বলিয়া উঠিয়াছে গাঁজা একটি নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্য! তাহা হইলে বাংলাদেশে প্রতি বছর কয়েক শো মণ গাঁজা কিভাবে সবার চোখের সামনে সেবন হইয়া থাকে। গাঁঞ্জা উৎসব তো বন্ধ হয় নাই। গাঁঞ্জা সেবন তো বন্ধ হয় নাই। আইন শৃঙ্খলা তো দমন হয় নাই। তাহা হইলে সকল দোষ গাঁজার উপর দেওয়া কি ঠিক হইতেছে, গুরু মহাশয়? একথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, বাংলাদেশের তরুণ সমাজের একটি বিশাল অংশ নিষিদ্ধ মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকিয়া পরিয়াছে। কিন্তু তাহার জন্যে গাঁজাই একমাত্র দায়ী নহে। দায়ী আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতা, সমাজের চাহিদা পূরণে শাসকের ব্যর্থতা, কর্মসংস্থানের অভাব, সংরক্ষিত জোনে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদনের ঘাটতি, সর্বপরি আইনের শাসনের অভাব। আমার ধারণা, সিগারেটের মত গাঁজা উন্মুক্ত করিয়া দিলে আমাদের দেশে অপরাধ আরো কমিয়া যাইবে। শুধু সংরক্ষিত জোনে গাঁজা সেবন করা যাইবে, রাষ্ট্র এমুন আইন করিয়া দিলে অন্তঃত সাধুসন্ত-সন্যাসীরা এই দায় থেকে মুক্তি পাইতে পারেন। অপরাধী আর গাঁজা সেবী মোটেও একই ব্যক্তি নহে। এই কথা সবার আগে ভাবিয়া দেখার প্রয়োজন রহিয়াছে। নতুবা হুমকির মুখে নিপতিত হওয়া আমাদের তরুন সমাজকে বাঁচানো ভবিষ্যতে আরো কঠিন হইয়া যাইবে। তাই যতোই দিন যাইতেছে ততোই দুঃচিন্তায় ভূগিতেছেন আমাদের মহামান্য অভিভাবকগণ। মাদকের কারণে নষ্ঠ হইতেছে ছাত্র সমাজ। নষ্ট হইতেছে রাষ্ট্র। মাদক আর গাঁজাকে, সাধুসন্ত-সন্যাসী আর অপরাধীকে এক করিয়া ফেলিবার মানসিকতা হইতে আমরা যতোদিন মুক্ত হইতে না পারিব ততোদিন সমাজে, রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপরাধীরা নিরাপদে অপরাধ করিয়া অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাইয়া আরমসে ছড়ি ঘুরাইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবেন। তাহাতে গাঁজা সেবন বন্ধ হইবে না। অপরাধও বন্ধ হইবে না। তরুণ সমাজকেও রক্ষা করা যাইবে না। দিনে দিনে দেশ কেবল এক মহা অমানিশার ঘোর অন্ধকারে হুবডুবু খাইবে। আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে অপাত্রে যত্রতত্র দণ্ড বর্ষিত হইবে। সাধুসন্তদের গাঁজা সেবনের অমূল্য আত্মশুদ্ধি'র পথ তাহাতে কেবল বিঘ্নিতই হইবে বরং সমাজের কোনো উপকার হইবে না। অত্রএব সাধু সাবধান। গাঁঞ্জানং স্মরনং গুচ্ছতি... অপরাধনং ঘরনং পুচ্ছতি... দেশমার্তৃকানং সেবানং তুচ্ছতি...উষাতি সূর্য সন্ধ্যামি অস্তাগামি উচ্ছাদি ইচ্ছাদি..নমোঃ নমোঃ !!! সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৪৩
false
fe
কবিতা হোক সৃষ্টির প্রথম ধারণকৃত সংখ্যা _ হাবীবুল্লাহ সিরাজী যারা কবিতা ভালোবাসেন, তাদের ভালো লাগতে পারে লেখাটি। কবিতা সম্পর্কে একটি বিবেচনা। কবিতা হোক সৃষ্টির প্রথম ধারণকৃত সংখ্যা হাবীবুল্লাহ সিরাজী ===================================== শ্রাবণধারায় দূর্বাদলের সিক্ততা থেকে শুরু করে নদীর তীর ভেঙে জনপদ বিচ্ছিন্ন হওয়া, নিরন্ন কিশোরীর অসহায়ত্ব থেকে জেরুজালেমের আকাশ উজ্জ্বল হওয়া, পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মাটি-পাথর-আগুন-বেদনা-হাসি কী কবিতা নয়! সবকিছুই কবিতা। প্রেক্ষিত ও পরিবেশে কবি তার মৌলরূপটিকে কবিতা করে তোলেন! মৌলরূপটি কী? বড়ো দুরূহ ও অমীমাংসিত প্রশ্ন। কবিতা হয়তোবা মর্ম স্পর্শ করে যাওয়া সুষম শব্দের বিস্তার, বাণী যার মূলে জল সিঞ্চন করে। কবিতা নানা প্রকরণে, মোহনীয় শৈলীতে, বিচিত্র বিষয়ে উপস্থাপিত হয়ে আসছে। বোধ ও গতি উপচিয়ে গ্রহণে ও বর্জনে এই স্রোতে অবগাহন করে চলেছে পাঠক। সময়ের সংবেদনশীলতা তাকে প্রবহমান যাত্রায় মগ্নরূপ দিয়েছে। আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ভাষা ও কৌশলে, অভিব্যক্তি ও রহস্যময়তায় কবিতার শুধু উত্তরণই ঘটেনি পেয়েছে মাত্রা। কবিতা কী কিংবা কবিতা অস্পষ্ট কেন, যেমন সহজ-সরল-জিজ্ঞাসা; তেমনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কাছে কবিতা কি বিপন্ন একটি সাধারণ প্রশ্ন। শিল্পের এই সূক্ষ্মতম অঙ্গটি মানুষের জন্য মানুষেরই সৃষ্টি। প্রকৃতি ও পরিবেশ যেমন আদ্যন্তে স্থাপিত হয়ে আছে, তেমনি শূন্য ছড়িয়ে আছে মাত্রাহীন মাত্রায়। প্রকৃতির সঙ্গে বিজ্ঞানের সখ্যসীমা যদি অসহনীয় অবস্থায় না থাকতো তবে ব¯'-ধর্মের অবস্থান নিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়তে হতো! মানুষ ক্ষমতাবান, আবার দুর্বলও। মানুষের সংকটে তাই ব¯'-ধর্ম যেমন অতিমাত্রিক আশ্রয় তেমনি কবিতাও রক্তক্ষরণে অন্তহীন সঙ্গী কৌশলগত অবস্থানই মানুষকে সময়ের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার উপাদান জোগায়। তাই সুসময় বা দুঃসময় বলে কিছু নেই। বিজ্ঞানের এতো অগ্রগতি সত্ত্বেও মহাশূন্যের কতোটুকু মানুষ জানে! অতি ক্ষুদ্র যে পৃথিবী তার রহস্যই আজ অব্দি ভেদ হলো না। গহীনে, গভীরে মানুষ তার বেদনার ভাষাটুকু কি আজো সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে? আর সেখানেই সবকিছু ছাপিয়ে বুঝি কবিতার জয়। কবিতা মানুষকে মর্মে-বিজ্ঞানে এমন এক স্থানে স্থাপন করেছে, যেখান থেকে সে তার ভবিষ্যৎ নির্মাণের সূত্র পাবে। দুই. অঙ্ক করে সবকিছু হয় না, এ যেমন সত্য তেমনি অঙ্ক থাকে সবকিছুতেই। সামান্য তুষের ছাই থেকে গমের দানায়, ইস্পাতের ধার থেকে ছাপার কালিতেকোথায় অঙ্ক নেই? সৃষ্টির আদি থেকেই অংক আর কবিতা সেখানে সমূলে অবস্থান করছে। মানুষের জন্মসূত্র যদি প্রকৃতিগত হয়, তবে যাপনের অনুষঙ্গে নিহিত থাকে অঙ্ক। কবিতার স্নায়ু-স্নিগ্ধতা, রূপ-কৌশল ও তেজ-গরিমা বিজ্ঞানাশ্রয়ী হয়ে কনিষ্ঠ থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। দেহের কাঠামো, কেশের ঔজ্জ্বল্য ও ত্বকের চারুতা নম্রভাবে শায়িত রয়েছে কবির ধারাপাতে। কাব্যাংকে ন্যস্ত শব্দরাজির উৎস মহাবিশ্বের তথ্যব্যাংক। অন্তহীন লেনদেনের এই কেন্দ্রে ক্ষমতা ও প্রাপ্তি অঙ্কের অঙ্কাতীত। ভ্রান্তিবিলাসের কালে গ্রাহ্য যুক্তিই কেবলমাত্র উত্তরণ ঘটাতে পারে ‘নারী ও পুরুষ যেন ভাদ্রমাসে পদ্মার ইলিশ/ঝাল-ঝোল উপচে পড়া আমিষ ও সব্জির মিলমিশ। সীমা ও পরিধি তাই সৃষ্টি ও যাপনের সুসমঞ্জস্যতার মধ্যেই লীন। ভৌগোলিক পরিধি বলে আরো একটি মাত্রা কবি বা বিজ্ঞানী প্রয়োজন ও সুবিধানুসারে আপন আবর্তে রাখতে পছন্দ করেন। শিল্পের সায়াহ্নে তার ব্যঞ্জনা ও বিকাশ কেবল নতুন সীমানাই নির্ধারণ করে না, দেয় অন্য এক জ্ঞাতি-পরিচয়। সমাজধারার শাখা-প্রশাখাগুলোও যে মানদণ্ডে বিবেচিত হয় তা অতল-আপেক্ষিক। শক্তির জন্য শক্তিরই প্রয়োজন। রূপান্তরের মাধ্যমে তা কেবল স্তরগুলো অতিক্রম করে। শক্তিরূপ কৌতূহল থেকে কলঙ্ক পর্যন্ত বিস্তারিত হয়ে এর অণু-পরমাণুতে সংঘটিত হচ্ছে তৃতীয় মাত্রার বিস্ফোরণ। সেই বিস্ফোরণের নামই কবিতা, বিশুদ্ধ গণিত: চূড়ান্ত মিলন-পরবর্তী সৌন্দর্য ও জীবন। তিন. বিষয়-ভাবনায় কবিতার আবেদন কতোটুকু বা শিল্পিত ভূমিকা কী? সংশয় ও সংকটের এই কালে কবিতার কোনো সুনির্দিষ্ট আবর্ত কি নেই? সভ্যতার সঙ্গে-সঙ্গে ভাষার যে বিকাশ, তার স্পর্শসীমার ঊর্ধ্বে কবিতা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সঙ্গীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নৃত্য, অভিনয় থেকে খাদ্যান্বেষণ কী প্রজনন পর্যন্ত সবকিছুর মূলে কবিতার শিকড় চারিত। অস্তিত্বের সঙ্গে বিলুপ্তি মিলিয়ে কবিতা তার লেখ্যরূপ, কথ্যরূপ, ভাবরূপ, চিত্ররূপ এবং শ্রবণরূপে বর্তমান। বণিক-কৃষক কিংবা বারবালা-সৈনিক কোনো না কোনো ক্ষেত্ররেখায় কবিতাসীমানা প্রদক্ষিণ করেন। মানুষের বিচিত্র চিন্তা ও বহুমুখীনতাই তার চরিত্রকে দ্বন্দ্বময় করেছে। অর্থ, কীর্তির বাইরেও এক ‘বিপন্ন বিস্ময়’ সর্বদা ওঁৎ পেতে থাকে। এই ‘বিপন্ন বিস্ময়’ কি কবিতা নয়? লাঙলের ফলায়, আগুন-লোহায়, বিষের শিশিতে,কালে, সময়ে, আলো, অন্ধকারে, শূন্যে, পাতালে, মালিন্যে, প্রফুল্লতায় মৃত্যু ও জন্মে কবিতার মার্বেলগুলো গড়াগড়ি খাচ্ছে। কবি হচ্ছেন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের পাহারাদার; নির্মম ও অনুরাগী চার. খুঁটিনাটি, এলোমেলো, বর্জ্য কী বাহুল্যও একসময় প্রকৃতিলীলায় শিকড়ের চিহ্ন দেখয়! সে শিকড় গভীরে যাওয়ার অবকাশ না পেলেও কাণ্ড ও পাতার উন্মীলন দেখে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ফলে চাহিদার তুলনায় মূল্যের টান হয় ক্ষীণ, অন্যদিকে চাহিদারও চতুর্নেত্র থাকে অস্বচ্ছ। পরিণাম মৃত্যু, এবং অন্য এক ক্ষত-বর্জ্যরে সৃষ্টি। যেভাবেই ভাবা যাক, নেতিবাচক ক্রিয়াকৌশল থেকে ধনাত্মক কিছুর প্রাপ্তিই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেইরূপ, স্থিতিহীন মেধা কেবল চাতুর্যের আশ্রয়ে ক্ষণিকের জন্য দৃষ্টিগোচর হয়, তারপর মিলিয়ে যায় ক্ষতিকর বিষয় বিন্দুতে! কবিতার অনির্ণেয় সংজ্ঞারূপের আশ্রয়ে তাই কদাচিৎ বিভ্রান্তি বা চমক-বিলাসের প্রাদুর্ভাব ঘটা খুবই স্বাভাবিক। সেই বিন্যাসহীন, সারশূন্য শব্দক্ষেপণ তো আর কবিতার রূপ নিতে পারে না! কবিতার বিষয়টি এমন; বিবেচনা করি, ছলনা বা প্রতারণা, লোভ বা প্রাপ্তি, কৌটিল্য বা কৌশল থেকে বিযুক্ত। দুরূহ হলেও সত্য: শ্রমের সঙ্গে মেধা, নিষ্ঠার সঙ্গে নিমগ্নতা এবং বোধের সঙ্গে বুদ্ধির চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তই কাব্যরূপ। সেখানে ধারাবাহিকতা, ঐতিহ্য ও দেশ-কাল সহচর হিসেবে ইন্ধন জোগায়। সময় ও প্রেক্ষিতে তাই ছিন্ন হয় ফলহীন শুষ্ক মঞ্জরী। কী কবিতা নয় আবার কী কবিতা হয়! কবিতার আকৃতি ও প্রকৃতি নিয়ে, ছন্দ ও বি¯তৃতি নিয়ে, বিষয় ও প্রবহমানতা নিয়ে এবং সেইসঙ্গে ক্ষমতা ও অক্ষমতা নিয়ে পক্ষের ও বিপক্ষের মতো ও অবলম্বন নিঃসন্দেহে সুদূরপ্রসারী! তবু এমনো হতে পারে, একটি প্রথাগত অবয়বে কবি তাঁর ক্ষেত্র প্র¯'ত করে তাকে উত্তীর্ণ করেন শিল্পসীমায়। আবার প্রকরণগত সীমাবদ্ধতা এড়িয়ে কেউ কেউ হঠাৎই এসে পড়েন এবং নিজস্ব বারুদে প্রজ্জ্বলিত করেন তৃণখণ্ড! তাই তো দেখা যায় সময়ের সঙ্গে কেউ সাঁতার কেটে বেশ এগিয়ে থাকেন; আবার কেউ সম্মুখকে আত্মস্থ করে বর্তমানকে অতিক্রম করেন ধীরে-সুস্থে! জড় ও জীবনের চারু মেলবন্ধনই কবিতা। পাঁচ. সংজ্ঞা নির্ধারণ করে কবিতা লেখা যায় না, কবিতা লেখার পর তাকে সংজ্ঞায়িত করার প্রচেষ্টা চালানো হয় এবং এতে যে সকল উপাত্ত বিবেচনায় আনা হয়েছে, যেমন ছন্দ, উপমা, শব্দ, বাণী, চিত্রকল্প, কাঠামো, ধ্বনি, তত্ত্ব, তথ্য ইত্যাদি ইত্যাদি; সবই এক ধরনের আপেক্ষিকতা। এ তো সত্য, জড় ও জীবনের যা কিছু গ্রহণীয় তাই আপেক্ষিক সূত্রে আবদ্ধ। এমনকি সত্যের প্রচলিত রূপও আপেক্ষিক। তাই, সংশয়ের মাত্রা না বাড়িয়ে একটি আপাতত গ্রহণযোগ্য পরিসীমায় কবিতা স্থাপন করলে এমন দাঁড়ায়: শূন্য+কবিতা=কবিতা। এটা গাণিতিক সত্য। আবার যেমন: শূন্য কী কবিতা= কবিতা; এটার গাণিতিক সত্য হওয়া উচিত ছিল শূন্য। কিন্তু তা না হয়ে পূর্ণ হয়ে উঠেছে কবিতারূপে। এই রূপভেদই কবিতার সত্য, অঙ্কর ভেতরে অঙ্কাতীত। কূটকৌশল যতোই হোক, এখনো যখন ব¯'র একই সময়ে একই অবস্থান গ্রহণীয়, তাই কবিতার একাধিক অবস্থান কল্পনাতীত না হলেও সময়ের এককের কারণে আত্মস্থ করা কষ্টকর বৈ কি! যতো এভাবে সরে যাওয়া যাবে, ততো ধাঁধা হবে; আর গোলকধাঁধায় একবার পড়ে গেলে বেরুনো মুশকিল। ‘তাহাকে দেখার মধ্যে কি কবিতা ছিল?’ এই তাকে দেখার ভেতর চোখ ছিলো, মন ছিল, দেহ ছিল, প্রকৃতি ছিল, প্রাণ ছিল। হয়তো প্রতিমাও ছিল, আকারে ও অবয়বেÑতাকে দেখা গেলেও স্পর্শ করা গেলো না। আর এই দর্শন ও স্পর্শের অন্তরালে যে প্রতিমা, যে সৃষ্টিরূপ তাই আপেক্ষিক সত্য, তাই কবিতা। কবিতার দরোজায় খিল থাকলেও (যদি থাকে), সে খিল তোলা বড়ো দুরূহ। তাই কবিতা খোলামেলা আকাশের ভেতর, নক্ষত্রমণ্ডলের ভেতর, বায়ুস্তরের ভেতর, তরল ও কঠিনের ভেতর, প্রাণ ও প্রকৃতির ভেতর একাকী পড়ে থাকে। পড়ে থাকে পূর্ণ ও শূন্য শর্তে, বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের সময়চক্রে। একযোগে কবিতা হোক, একগুণ এক কবিতা হোক। কবিতা হোক সৃষ্টির প্রথম ধারণকৃত সংখ্যা। ছয়. বেসামাল অবস্থায় কোনোকিছুর স্থিতি বোধের সীমায় পুরোপুরি পৌঁছানোর আশা করা যায় না। সেক্ষেত্রে কবিতা তো নিজেই ঘোরে। ঘোর কী বেঘোর, জাগরণের এই অন্যমাত্রায় কবিতা কেবল ঘুরে ঘুরে মরে। ‘তারে জাগিও না, সে তার মানে বোঝে না’। এ যেন বিপক্ষে কাউকে দাঁড় করিয়ে তার ভেতরই নিজেকে খোঁজা। মর্মে হোক, দর্শনে হোক, সমাজশাস্ত্রে বা নৃতত্ত্বে হোক কবিতার গতি রোধ করে সে সাধ্য কার? সবকিছু একসঙ্গে, সুন্দরভাবে, গ্রাহ্যভাবে উপস্থাপনের নাম যদি কবিতা হয়; তবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলোমেলো করে দেওয়াও কি কবিতা নয়? এই যে দ্বন্দ্ব, এই যে বৈপরীত্য তার কি কোনো সূত্র আছে? বোধকরি থাকতে নেই। ধ্বনির কোনো বাঁধনই বাঁধন নয়। যেমন, শব্দের মাত্রা বেড়ে গেলে তার প্রভাবে জড় পদার্থও এলোমেলো হয়। যেমন, বায়ুপ্রবাহে শান্ত তরলও উন্মাদ হতে পারে। এই শব্দ ও বায়ু এখানে প্রাণহীন, কিন্তু শক্তি। বলতে চাই, কবিতা তেমন শক্তিÑ যা বর্ণভেদে সুর ও সুষমায় একক এবং অভিন্ন। তাই, কবিতার শক্তিরূপটি অন্তর্গত হওয়া চাই। চাই মৌলিক অবস্থান, অটটু ও নির্মল। এখন মৌলিক অবস্থানে ধাতুরূপ কি? সেই তো মিলনে-মিলনে, গহনে-গভীরে আত্মস্থ হয়ে যৌগিক পরিণতি। এটা স্পষ্ট করা দরকার, কবিতার ক্ষেত্রে শংকর বা যৌগিকের কোনো স্থান নেই। মৌল যোগ মৌল, সমান সমান মৌল। আর এখানেই রসায়নের সঙ্গে পদার্থের মনকষাকষি, স্রষ্টার সঙ্গে নির্মানতার প্রভেদ। অভিন্ন সৃষ্টিতে স্রষ্টা ও নির্মাতা তাই প্রাণ ও প্রতিমায় ভিন্নভিন্নভাবে চিহ্নিত। প্রাণরূপই মৌল; আর যা কিছু মৌলিক তাই কবিতা। সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ৯:৫৫
false
mk
বিদ্যুত্ খাতে ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন দেশের বিদ্যুত্ খাতে দুই হাজার চারশ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম।গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সেলের উদ্যোগে ‘আলোকিত বাংলাদেশ: বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে অর্জন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। উপদেষ্টারা আরও বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে বিদ্যুত্ খাতে যেসব প্রকল্প শেষ হয়েছে তাতে পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। যেসব প্রকল্প নির্মাণাধীন সেগুলোতে আট দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে। আর প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলোতে ২৪ বিলিয়ন ডলারের (এক লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা) বিনিয়োগ হবে।’ তৌফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সময় অনেকেই অর্থের জোগান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু আমরা পাঁচ বছরে বিদ্যুতের উত্পাদন দ্বিগুণেরও বেশি করেছি। বিদ্যুত্ খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষের কর্ম দিয়ে তার পরিচয়। আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনাও আমরা বাস্তবায়ন করব এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে নিয়ে যাব।অনুষ্ঠানে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে বিদ্যুত্ খাতে বিপুল অঙ্কের এই বিনিয়োগের মধ্যে অর্ধেকের মতো বিদেশি বিনিয়োগ হবে। তিনি আরও বলেন, আগে দেশে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকত না। কিন্তু এখন দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুত্ থাকে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বিদ্যুতের হাব হবে। সেখানে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন হবে। ইকোনমিক জোন হবে, বন্দর হবে। ২০২১ সালের মধ্যে মহেশখালী ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েন্ড ফিজিক্স অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার আদিত্য। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের আগে দেশের ২৭টি বিদ্যুত্ কেন্দ্রের উত্পাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। ২০১৪ সালের জুনে বিদ্যুত্ কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪টিতে এবং উত্পাদন ক্ষমতা বেড়ে হয় ১০ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।আগামী পাঁচ বছরে আরও প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অধ্যাপক সুব্রত বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশে বিদ্যুত্ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৪ শতাংশ হয়েছে, যা ২০১৯ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু বিদ্যুত্ ব্যবহার ২২০ ইউনিট থেকে ৩৪৮ ইউনিটে পৌঁছেছে। আবার একই সময়ে সিস্টেম লস ১৬ শতাংশ থেকে কমে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে জ্বালানি খাতে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্পাদন বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুত্ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এমপি, বুয়েটের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান।
false
fe
ঘটনা মুছে যাচ্ছে, শঙ্কা কাটছে না ঘটনা মুছে যাচ্ছে, শঙ্কা কাটছে নাফকির ইলিয়াস=================================অনেক ঘটনা মুছে যাচ্ছে। মিতু-তনু হত্যা মামলা ভুলে যাচ্ছি আমরা! চাপা পড়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। সামনে এখন হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া। কী ভয়াবহ দৃশ্য। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। তারপরও ঘটে গেল। ঘাতকরা মর্মান্তিক কাণ্ড করতে চেয়েছিল। সেটাই তারা করেছে। বিদেশিদের হত্যা করে বিশ্বব্যাপী হই-চই ফেলতে চেয়েছিল। সেক্ষেত্রে তারা আংশিক সফল হয়েছে। বিদেশি হত্যা কি ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার কাজের অংশ? না কি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অংশ? প্রশ্নটি সেখানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।জঙ্গিদের যে পরিচয় আমরা পাচ্ছি- এরা ধনীদের সন্তান কেউ কেউ। গরিবও আছে। তবে এরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। ভালো লেখাপড়ার প্রত্যয় নিয়ে তাদের পিতামাতা তাদের বিদ্যাপীঠে পাঠিয়েছিলেন। কেউ তাদের ব্রেন ওয়াশ করেছে। এরা কারা? কীভাবে এরা এসব ছাত্রছাত্রীদের জীবনের দখল নিয়ে নিল? এই মুহ‚র্তে এটা নিয়ে অনেক কথা। কেউ কেউ বলছেন সামাজিক বৈষম্য, নিপীড়ন প্রজন্মকে এমন হতে ঠেলে দিচ্ছে। বৈষম্য কোথায় নেই? ইউরোপ-আমেরিকা-মধ্যপ্রাচ্য-এশিয়া কোথায় নেই? রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে মানুষ আত্মঘাতী হবে? এটা কি কোনো বৈশ্বিক নীতিমালায় পড়ে? বাংলাদেশের রাজনীতির সর্বাংশ মানুষের কল্যাণের জন্য হচ্ছে- তা বলা যাবে না। বিশ্বের সব রাজনীতিই একই দোষে দুষ্ট। কিন্তু তা প্রতিরোধে-প্রতিবাদে গুপ্তহত্যা করে সমস্যার সমাধান করা যাবে? গিয়েছে কখনো?বাংলাদেশে আরো জঙ্গি হামলা হতে পারে। এমন সংশয় প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও নিজ নিজ এলাকায় আরো সচেতন থাকতে হবে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আরো সচেতন রাখতে হবে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও আমি বলব, তথ্য সংগ্রহ করা, নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করা এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’ জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীরা দেশে আরো হামলার পরিকল্পনা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘২০১৫ সালের তিনটি মাস যেভাবে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগীরা মিলে সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য কার্যক্রম করতে পেরেছিল তারা কিন্তু থেমে থাকবে না। তারা জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েই কাজ করবে। কাজেই এ ব্যাপারে আরো সচেতন থাকতে হবে।’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন- ‘আমি মনে করি, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে। বাংলাদেশকে এই সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত করতে হবে। মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলা গোটা বিশ্বের অনেক দরজায় কড়া নেড়েছে। কারা জঙ্গিদের প্রভাবিত করছে- তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে ভারতের একজন বক্তা ডা. জাকির নায়েকের নাম এসেছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কে এই জাকির নায়েক, তার উদ্দেশ্য কি? তা নিয়ে কথা বলছেন নতুন করে উপমহাদেশের হাক্কানি আলেমরা। কি বলছেন এই জাকির নায়েক? তার কিছু বর্ণনা এখানে দেয়া যাক।১। ডা. জাকির নায়েক বলেন, আল্লাহতায়ালাকে ব্রাহ্ম, বিষ্ণু নামে ডাকা যাবে তবে তা সুন্দর হতে হবে। (দ্রষ্টব্য : ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র, ভলিয়ম নং-২, পৃষ্ঠা : ৩৮০)২। ডা. জাকির নায়েক বলেন, ‘উল্লিখিত দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামে চারজন মহিলা নবী এসেছেন। তারা হলেন- বিবি মরিয়ম আ., বিবি আছিয়া আ., বিবি ফাতিমা রা. এবং বিবি খাদিজা রা.।’ (লেকচার সমগ্র ভলিয়ম নং-১ পৃষ্ঠা : ৩৫৫)৩। ‘আল্লাহর ক্ষমতা’ সম্পর্কে ডাক্তার জাকির নায়েকের মতবাদ হলো- ‘আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন না। আল্লাহ একজন চিকন-মোটা বা লম্বা-বেটে লোক তৈরি করতে পারেন না। এ রকম হাজার হাজার জিনিস আছে, আমি তালিকা দিতে পারি- যা সর্বশক্তিমান খোদা করতে পারেন না।’এরকম অনেক কথাই বলেছেন এই জাকির নায়েক। অথচ দেখা গেছে, এসব পালিত জঙ্গিরা তাকে কিছুই বলেনি? কেন বলেনি? ইসলামের প্রতি তাদের প্রকৃত দরদ থাকলে তাদের তো এর তীব্র প্রতিবাদ করার কথা ছিল? তাহলে জাকির কাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন?ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে বাংলাদেশের আলেমরা একমত নন বলে জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এর অন্যতম কারণ হলো, আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মাযহাব মানেন। যেমন ঈমাম আবু হানিফার অনুসারীরা আমাদের দেশে অনেক বেশি। আর জাকির নায়েক, উনি মাযহাব মানেন না এবং উনার যে ফিলোসফি, উনার যে দর্শন, সেই দর্শনটা হলো জামায়াতি দর্শনের খুব কাছাকাছি।’তিনি বলেছেন- ‘জিহাদ একটি পবিত্র শব্দ ইসলামে কিন্তু জিহাদ আর সন্ত্রাসকে একাকার করার পেছনে মওদুদীর সাহিত্যের প্রভাব অনেক বেশি। নামাজ পড়লে সওয়াব হবে, রোজা রাখলে সওয়াব হবে- এই মনে করে আমরা ইবাদত করি। কিন্তু মওদুদী বলেন, নামাজ হলো একটা ট্রেইনিং। এটা সৈনিক হওয়ার জন্য একটা ট্রেইনিং। মওদুদী আজানকে বলেছেন সেনাপতি যদি বিউগল বাজায় সৈনিকরা মসজিদের যায়।’ডা. জাকির নায়েকের টিভি, সেলফোন এমন অনেক ব্যবসা আছে। বাংলাদেশে তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। এরা কারা? আজ সময় এসেছে প্রতিটি সেক্টরে ভ্রান্ত মতবাদীদের চিহ্নিত করার। আশার কথা- দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপথগামী তরুণ শিক্ষার্থীদের নৈরাজ্য, নৈরাশ্য, অন্ধত্ব ও বিপথগামিতার পথ থেকে সুস্থ চিন্তা ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমে প্রকাশার্থে এক বক্তব্যে তিনি এসব নির্দেশনা দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি উপাচার্যের ৮টি বিষয়ের ওই নির্দেশনায় ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে ও আবাসিক হোস্টেলে নিয়মিত হাজিরা গ্রহণ নিশ্চিতকরণ, গরহাজির শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রেরণ, প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নজরদারি বৃদ্ধি করা, সহপাঠ কার্যক্রম (ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড) নিয়মিত অনুষ্ঠিত করে সেসব বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোকে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক অবহিত করা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো কর্তৃক এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন মনিটরিং করা, অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এ বিষয়টির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিম প্রেরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারা প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসরণ করা দরকার।খবর বেরিয়েছে- এসব জঙ্গি তৎপরতা রোধ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় জঙ্গি প্রতিরোধ সেল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এই সেল শিক্ষার্থীদের আচরণ মনিটরিংয়ের পাশাপাশি সচেতনতা তৈরি করবে। কোনো শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক আচরণ বা সন্দেহভাজন গতিবিধি দেখলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে মোটিভেশন করা হবে। এতে কাজ না হলে অভিভাবকদের জানানো হবে। এতেও কাজ না হলে সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাকে সোপর্দ করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা ও সচেতন করতে আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শিগগির এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।দেখা যাচ্ছে, সরকার যা যা করা দরকার সব দিক থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে গণমানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ যারা এই দেশ জঙ্গিবাদীদের হাতে তুলে দিতে চাইছে তারা বসে নেই। তাদের মোকাবেলা করার সাহস প্রজন্মকে জোগাড় করতে হবে। তা না করতে পারলে নিজেদের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। কারণ মনে রাখা দরকার খুনির কোনো স্বজন নেই। থাকতে পারে না।------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৬ জুলাই ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২২
false
rn
বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (দুই) ১১। 'দৃষ্টিপাত' লেখক-যাযাবর। বইটি প্রকাশিত হওয়া মাত্রই বাঙালী শিক্ষিত সমাজে যে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল তাহা যেমন বিস্ময়কর তেমনি অভূতপূর্ব । 'দৃষ্টিপাত'-এ রাজনৈতিক আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে ইতিহাস, স্থাপত্য, সঙ্গীত, মনুষ্যচরিত্র নিয়ে নানান আলোচনা । নিরস ভাবে নয়, গল্প ও ঘটনার সহজ প্রবাহের সঙ্গেই সেগুলি এসেছে; করেছে বইটিকে তথ্য-সম্বৃদ্ধ । ১৯৫০ সালে সমকালীন বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ বই হিসেবে 'দৃষ্টিপাত' নরসিংহ দাস পুরস্কারে সন্মানিত হয় । ১২। 'তেইশ নম্বর তৈলচিত্র' লেখক- আলাউদ্দিন আল আজাদ। ১৯৬০ সালে পদক্ষেপ নামক এক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় উপন্যাসটি প্রথম ছাপা হয় । শিল্পীর অপূর্ণতাবোধ, বেদনা এবং অশেষ সৌন্দর্যতৃষ্ণা এ উপন্যাসের প্রধানতম থিম । শিল্পীর মনের টানাপড়েন এবং নতুন ধরনের মূল্যবোধের কারণে ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ প্রসিদ্ধ হলেও এ উপন্যাসের অন্য উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর নায়ক পরিকল্পনা । ১৩। 'কাবিলের বোন' ও 'উপমহাদেশ' লেখক- আল মাহমুদ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বর্তমানে ভূরি ভূরি বই প্রকাশিত হতে দেখছি আমরা । বাজার থেকে এরকম দশটি বই তুলে নিয়ে পাঠ করলে দেখা যাবে, ইতিহাস ও বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে একরৈখিকভাবে আরোপ করা হচ্ছে লেখকের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত কোনো ধারণা । প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা কবি ও কথাশিল্পী আল মাহমুদ তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় জারিত হয়ে লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস—‘কাবিলের বোন’ ও ‘উপমহাদেশ’। মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উত্সারিত আল মাহমুদের এ দু’টি উপন্যাস বহুল আলোচিত, পঠিত ও নন্দিত হওয়ার পরও এগুলোর মর্যাদা এখনও চিহ্নিত হয়নি । ১৯৯৪ সালে আল মাহমুদের ‘কাবিলের বোন’ উপন্যাস প্রকাশ করার কারণে বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলায় বাংলা সাহিত্য পরিষদের স্টলে ভাংচুর করা হয় এবং বইতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় । ১৪। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' লেখক- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার চেতনার অনেকটা জুড়ে আছেন তিনি। দুঃখের মাঝে ধৈর্য, কষ্টের মাঝে হাসি, বিপদের মাঝে কঠিন মনোবল আর নীতির প্রশ্নে মাথা নিচু না করার মানসিকতা আমি তার জীবনীর মধ্যে পেয়েছি। তাকে জীবনের অন্যতম মহামানব ভাবতে পেরে আত্মতৃপ্তিটুকু পেয়েছি। ১৫। 'লোটা কম্বল' লেখক- সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। আমার পড়া একটি অম্ল-মধুর, হাস্য-রস মিশ্রিত মধ্যবিত্ত ঘরের বর্ণনা সম্বলিত চমৎকার উপন্যাস। দুই খন্ডের বই। প্রায় আটশ' পৃষ্ঠা জুড়ে এর কাহিনীর বিস্তার। বইয়ের নিজের ভাষায়, "ভেঙে যাওয়া যৌথ পরিবারের পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে নিঃসঙ্গ এক পৌঢ়, হিমালয়ের মত যাঁর ব্যক্তিত্ব, অসম্ভব যাঁর আদর্শনিষ্ঠা, আপাত কঠোর যেন প্রুশীয়ান জেনারেল অথচ ভেতরে ভেতরে কুসুম কোমল। আর সেই মানুষটির একমাত্র মাতৃহারা যুবক সন্তান, মাঝে দুই পুরুষের ব্যবধান। পূর্বপুরুষ উত্তর পুরুষে সঞ্চারিত করতে চায় জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ আর মূল্যবোধ। মানুষের মত মানুষ করে তুলতে চায়।....দুই পুরুষের মূল্যবোধ আর দৃষ্টিভঙ্গির ঠোকাঠুকির মধ্যে আর এক পুরুষ। তিনি বৃদ্ধ মাতামহ। আধ্যাত্মিকতার বাতিটি তুলে যিনি খুঁজে পেতে চান সেই চির-চাওয়া পরমপুরুষটিকে..."১৬। 'কড়ি দিয়ে কিনলাম' লেখক- বিমল মিত্র। অসাধারণ একটি বই। প্রাক স্বাধীন ভারতের প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাসের কাহিনী। দুই খন্ডের বিশাল উপন্যাসটি দেখে আমার মত অনেকেই ভয় পেতে পারে। তবে এই বইটি না পড়লে আমার বই পড়া জীবনটি অসম্পূর্ন থেকে যেত। কিছু বই আছে যা পড়লে কখনও ভুলা যায় না। কড়ি দিয়ে কিনলাম বইটি সে ধরনের একটি বই। এত বড় উপন্যাসটি পড়ার সময় একবারও আমার মনোযোগ ছুটে যায়নি। বিমল মিত্রের অসাধারন লেখনি পাঠকদের নিয়ে যাবে কাহিনীর গভীর থেকে গভীরে। ১৭। 'ন হন্যতে' লেখক- মৈত্রেয়ী দেবী। আমাকে অনেক কাঁদিয়েছেন মৈত্রেয়ী দেবী, আর বোধ করি আমার মতো অনেককেই অতি অনায়াসে সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে আপনমনে নিজেকে বিশ্লেষণ করতে শিখিয়েছেন। এ উপন্যাসটি আমি লাইনকে লাইন মুখস্থ বলতে পারি। বাংলা ভাষায় এক তুলনাহীন উপন্যাস এটি।১৮। 'তিতাস একটি নদীর নাম' লেখক- অদ্বৈত মল্লবর্মণ। এই একটি উপন্যাস লিখে লেখক খ্যাতি অর্জন করেন। এই উপন্যাসে গ্রামের দরিদ্র মালো শ্রেণীর লোকজনের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। পরবর্তীকালে এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯। 'ওদের জানিয়ে দাও' লেখক- শাহরিয়ার কবির। এই বই সম্পর্কে লেখক বলেছেন, এটি কাল্পনিক উপন্যাস নয়। তার ভাষায়, ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে লেখা। কেবল ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। উপন্যাসটি ছোট আকারে ১৯৭৪ সালে বিচিত্রায় ছাপা হয়েছিল। পড়ে এটিকে খানিকটা বড় করা হয়েছে। শাহরিয়ার কবির এটি লিখেছিলেন ১৯৭৪ সালে। ২০। ‘পার্থিব’ ও 'দূরবীন' লেখক- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। অজস্র চরিত্র, নানান ঘটনাবলী, মানুষের জীবনের নানা টানাপোড়েন, উত্থানপতন, ঘাত-প্রতিঘাত ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি এখানে, এবং যেভাবে সবাইকে একজায়গায় জড়ো করে এক স্রোতে মিলিয়েছেন, সেটা এককথায় অতুলনীয়। পার্থিব উপন্যাসের প্রথম লাইন হচ্ছে- "বাদামতলায় রামজীবনের পাকা ঘর উঠছে ওই ।" আর শেষ লাইন হচ্ছে- "এসো আমার সঙ্গে তুমিও কাঁদো, এসো কান্নায় একাকার হয়ে যাই। একাকার হয়ে যাই ।" এই উপন্যাসে শহর গ্রাম মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে- কখনও লন্ডন-আমেরিকা । বুড়ো বিষ্ণুপদর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে । এক মেয়ে নিখোঁজ। বড়ো ছেলে কৃষ্ণজীবন একজন বিজ্ঞানী । মেজ ছেলে রামজীবন- একজন ডাকাত । আর কন্যা বীনাপানি-যাত্রাপালা অভিনয় করে এবং তার সাধু স্বামী নিমাই । অ্ন্য দিকে হেমাঙ্গ - হেমাঙ্গ খুব সৌ্খিন এক যুবক। রশ্মি রায় ।হেমাঙ্গর চাচাতো বোন চারুশীলা । চয়ন- মৃগী রোগী । কিন্তু ছাত্রদের পড়ায় ভালো । ঝুমকি-, ঝুমকির বোন অনু- মনীশ, রিয়া এবং আরও অনেক চরিত্র । দূরবীন উপন্যাসে তিনটি প্রজন্মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমজন পুর্ববঙ্গের জমিদার হেমকান্ত চৌধুরী, দ্বিতীয়জন ব্রিটিশ ভারতের বিপ্লবী এবং স্বাধীন ভারতের ডাকসাঁইটে রাজনীতিবিদ ও হেমকান্তর নয়নের মণি কৃষ্ণকান্ত চৌধুরী ও কৃষ্ণকান্তের বখে যাওয়া ছেলে ধ্রুব চৌধুরী; লোফার, হৃদয়হীন থেকে শুরু করে অনেক বিশেষনই তার সাথে যুক্ত করা যায়। উপন্যাসের ব্যাপ্তি অনেক বিশাল। তিনটি প্রজন্মের তিন ধরণের মানুষের কাহিনী বা জীবনাচরণ এখানে বিধৃত করা হয়েছে। এটি শুধু সাড়ে পাঁচশো পৃষ্ঠার একটি উপন্যাস নয়; মানুষের ভাব, প্রেম, পদস্খলন, সংগ্রাম, বিরহ, জীবন-জীবিকা, আনন্দ-বেদনার- সব কিছুর এক প্রতিচ্ছবি। বই পড়া আমার প্রিয় শখ। যদি আমাকে কেউ প্রশ্ন করে তুমি কি করতে বেশি পছন্দ কর? তাহলে আমি এক কথায় উত্তর দেব বই পড়তে। সত্যিই কেন জানি বই পড়তে আমার বেশি ভালো লাগে। প্রত্যেক রাতেই আমি বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ি। এমন কিছু বই আছে, যেগুলো পড়লে মনের মধ্যে ‘দোল’-এর অনুভূতি একটু বেশি অনুভূত হয়। আর সেটা দোলায়মান থাকে বহুদিনের জন্য। পড়ার ক্ষেত্রে আমি সর্বভুক শ্রেণির পাঠক। যা পাই তাই পড়ি। ( ৩য় পর্ব আগামীকাল পোষ্ট করা হবে।)
false
mk
খালেদা পলিটিক্যালি ডেড- মাহমুদুর রহমান ওয়াশিংটন টাইমসে বাংলাদেশবিরোধী নিবন্ধ লেখার কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি তারই সাবেক উপদেষ্টা ও আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহমুদুর রহমানের টেলিফোনে তীব্র বিষোদগার নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জনরোষের ভয়ে বিএনপি নেতারা লেখা আড়াল করার অপচেষ্টা করলেও ফাঁস হয়ে গেছে নিবন্ধ নিয়ে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির প্রতি মাহমুদুর রহমানের ক্ষোভের আসল চেহারা। খালেদা জিয়ার লেখায় স্বাধীনতা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে তথ্য বিকৃতি, দেশের বিরুদ্ধে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ চাওয়া নিয়ে মাহমুদুর রহমানের তীব্র সমালোচনামূলক টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়ে গেছে। বিএনপির এক নেতাকে টেলিফোন করে মাহমুদুর রহমান তাদের নেত্রীর নিবন্ধ লেখার বিষয়ে আসল তথ্য জানতে চান। ওই নেতাকে তিনি প্রশ্ন করেন ম্যাডামের কথিত চিঠির বুদ্ধিটা কার? বিদেশীদের কাছে এভাবে দেশের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ চাওয়ার তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির ওই নেতাকে তিনি বলেন, ‘মানুষ অনেকভাবে সুইসাইড করে। কিন্তু এভাবে বারেবারে সুইসাইড করার নজির নাই। ওই লেখার ইংরেজীগুলা কার? এত জ্ঞানী কে? আর যেসব তথ্য দিয়ে উনি (খালেদা জিয়া) শুরু করেছেন তাঁর প্রথম লাইনেই বলেছেন যে, আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারে না কি আমেরিকা সাপোর্ট দিয়েছে। ম্যাডাম এভাবে তাঁর লেখা শুরু করেছেন। এভাবে তথ্য বিকৃতিতে হতাশা প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এভাবে তথ্য বিকৃতি হতাশাজনক। আমরা দূর থেকে দেখে যাচ্ছি তাছাড়া আর উপায় নাই। বুঝলেন?’ এরপর ওই নেতাকে বলেন, ‘খোঁজ নেন তো। কষ্ট লাগে হাজার হলেও আপনাদের ওয়েল উইশার আমি। কষ্ট লাগে আর কি। আপনারা যা করতেছেন দেখতেছি আরকি। শুভ্র নামে এক সাংবাদিকের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ করেন মাহমুদুর রহমান। মাহমুদুর রহমান তাকে বলেন, ‘শুভ্র, ম্যাডাম একটি চিঠি লিখেছেন। কোথাকার কোন ওয়াশিংটন টাইমসে, ওয়াশিংটন পোস্ট না কিন্তু, যেখানে ম্যাডামের একটা চিঠি ছাপা হইছে। সে (খালেদা জিয়া) চিঠিতে কাকুতিমিনতি করেছেন বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের জন্য। আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের কাছে কাকুতিমিনতি করেছেন। আজকে সম্ভবত আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করবে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ তো আজ ম্যাডাম ও বিএনপিকে শোওয়াইয়া ফেলবে। আওয়ামী লীগ তো কমই করতাছে। আজ যদি শেখ হাসিনা এভাবে নিবন্ধ লিখত তাহলে আমার পত্রিকায় সাত কলামের হেডলাইন করতাম।’ ম্যাডামের ইংরেজী লেখার দক্ষতার বিষয়ে ওই সাংবাদিকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এ থেকে আমাদের বলত, আমি ইংরেজীতে অত ভাল না। বাংলা লিখতে পারি। তার পরেও যতটুকু ইংরেজী জানি ওর থেকে ভালো লিখতে পারতাম।’ দ্বিতীয়ত তিনি বলেছেন, ‘ম্যাডাম তার ফার্স্ট ত্রি লাইনেই পলিটিক্যালি ডেড হয়ে গেছেন। শি ইজ ডেড। তিনি তো পলিটিক্যালি ডেড হয়ে গেছেন। নিবন্ধের সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান শুভ্রকে আরও বলেন, মতামত পাতায় চিঠিপত্র কলামে লেখার জন্য উনাকে কে বলেছে? এটা করলে আমেরিকা খুশি হবে ভেবেছে। উনার জনগণের প্রতি আর আস্থা নাই। শুভ্র জামায়াত বিএনপি জোট প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, বিএনপি তো মাঠ ছেড়ে দিয়েছে জামায়াতকে। জামায়াতের এখন জয় জয়কার। পাবলিক বলে, ‘দল আছে দুইটা- আওয়ামী লীগ আর জামায়াত।’ শুভ্র প্রশ্ন করেন, ম্যাডামের কথিত চিঠি কেন বলছেন? উত্তরে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘কথিত চিঠি কারণ ওই ইংরেজীতো উনি লিখেন নাই। কেউ লিখে দিয়েছে। এসব করে কি পারবেন আমেরিকার সাপোর্ট পেতে? বিএনপির গলায় দড়ি দেয়ার সময় আসছে। একজন গৃহবধূকে (খালেদা) তিন তিনবার জনগণ প্রধানমন্ত্রী বানাইসে। ভুলে যাওয়া ঠিক না, এখন বিদেশীদের উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন তিনি। এটা ঠিক না। জনগণের কাছেই আসতে হবে। বিদেশীদের কাছে যাওয়ার বুদ্ধিটা কে দিয়েছে তাকে? ‘আন্দোলনে বিএনপি নেতাদের মাঠে না নামার কথা উল্লেখ করে গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতাকারী বিতর্কিত এই সম্পাদক বলেন, মানুষের কী ঠেকা পড়েছে যে এক চোরকে নামাইয়া আর এক চোরকে ক্ষমতায় আনবে? কী কারণে আনবে?
false
ij
গল্প_ জোকার সকালের মিষ্টি রোদে কাবুল শহরটি ঝলমল করছিল । যদিও বাতাসে ভাসছিল বারুদের গন্ধ । রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের বুক কাঁপানো কর্কস আর্তনাদ। দূরে ভয়ানক বিস্ফোরনের পর কালো ধোঁওয়ার কুন্ডলি উড়ছিল। শীতের নীল আকাশটা ক্রমশ ঢেকে যাচ্ছিল কালচে ধোঁওয়ায়। কারণ, ১৭৪৭ সালে আহমেদ শাহ দুররানী যে আধুনিক আফগান রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, সেই রাষ্ট্রটি এখন ইঙ্গ-মার্কিন দংশনে জর্জরিত। আজ সকাল থেকে বিস্ফোরনের শব্দে বেশ ক’বার কেঁপে উঠেছে কাবুল শহর। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়েছে; চেক পোস্ট বসিয়ে ন্যাটোর সৈন্যরা তল্লাশী চালাচ্ছে । তল্লাশীর শিকার নিরীহ আফগান জনগন শীতে থরথর করে কাঁপে। শীতকালের দিকে সাধারনত আফগানিস্তানের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পায় । দেশটির অধিকাংশ অঞ্চলই পর্বতময়। শীতের সংক্রমনে নিঃস্তব্ধ অরণ্যপাহাড় জমে সাদা হয়ে থাকে। সেই নিঃস্তব্ধ অরণ্যপাহাড়ে জমে কাঠ হয়ে থাকে লুকিয়ে থাকা একরোখা তালিবান গেরিলারা । তবু তালিবানদের সর্তক থাকতেই হয়-মাথার ওপর ন্যাটো হেলিকপ্টার চক্কর দেয়। পশ্চিমা সভ্যতার ত্রাস কট্টরপন্থী তালিবান মুজাহেদিন দমনের ছুতায় ২০০১ সালের মাঝামাঝি থেকে ন্যাটোবাহিনী আফগানিস্তানে অনুপ্রবেশ করতে থাকে; মূল উদ্দেশ্য আফগানিস্তানের প্রকৃতিক সম্পদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সেই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় ইঙ্গ-মার্কিন প্রভাববলয় সংহত করা এবং আফগান জনগনের ওপর কৃত্রিম যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসা চাঙা রাখা। এদিকে যত দিন যাচ্ছে তালিবান প্রতিরোধ তত তীব্র হয়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জেনারেল ম্যাকক্রিষ্টাল। তিনি গত অক্টোবরে (২০০৯) আফগানিস্তানে সৈন্য বাড়ানোর অনুরোধ জানান। ওবামা প্রশাসন ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত জানায় । জেনারেল ম্যাকক্রিষ্টাল ৩ বছর মেয়াদে ৪০,০০০ মার্কিন সৈন্য পাঠানোর কথা বলেন; ওবামা প্রশাসন ১৮ মাস মেয়াদে ৩০,০০০ সৈন্য পাঠানো হবে বলে তাদের সিদ্ধান্ত জানায় । আফগানিস্তানে তালিবানদের শক্তি বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। তবে পশতুনরা এখনও প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের বিরোধীতা করেনি। পশতুনরা তীব্র গ্লানিতে ভুগছে । কারণ তালিবানদের ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করেছিল তারা। তালিবানদের চরম দুঃশাসন তারা ভোলেনি। (তথ্যসূত্র: রাজকূট। কালের কন্ঠ। ১০ ফেব্রুয়ারি। ২০১০) হাকিম ফারিদুন। পাতলা বাদামি চুল,চৌকো মুখ আর ঈষৎ নীলাভ চোখের ২২ বছর বয়েসি এক লম্বা ফরসা পশতুন যুবক; সকালের মিষ্টি রোদে বারুদের গন্ধের ভিতর কাবুলের রাস্তায় ফুটপাত ঘেঁষে দ্রুত পায়ে হাঁটছিল । হঠাৎই দূর থেকে ন্যাটোর সশস্ত্র সৈন্যদের দেখতে পেয়ে থমকে যায় সে। ওর বুকটা ধক করে ওঠে। ব্যারিকেডের ওপাশে ইউরোপীয় সৈন্যরা সতর্ক পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে । ফারিদুন জানে ওদিকে না যাওয়াই ভালো। সে উপায় নেই । ও পথ ধরেই এখন যেতে হবে। অজানা আশঙ্কায় এই শীতের সকালে ফারিদুন ঘেমে ওঠে। পশতুন যুবক ফারিদুন হকিম বয়েসে তরুণ। এ বয়েসি ছেলেরা তালিবানদের সঙ্গে যোগ দেয়। তবে যতটা না তালিবানি আদর্শের জন্য তার চেয়েও বেশি জন্মভূমির স্বাধীনতা পুনুরুদ্ধারে। আফগান তরুণ-যুবকদের ইঙ্গ-মার্কিন কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে। প্রায়ই ইঙ্গ-মার্কিন সৈন্যরা আফগান তরুণ-যুবকদের মিলিটারি ট্রাকে তুলে নিয়ে যায় । এরা কেউই ফিরে আসে না। তাদের কারও কারও লাশ হয়তো কাবুল নদীতে ভাসে ...কাক-শকুনে ঠুকরে খায় সে লাশ ... ফারিদুন চলার গতি শ্লথ হয়ে আসে। সে উদ্বেগ বোধ করে। আনোশের মুখটা ভেসে ওঠে। ফারিদুনের বড় বোন আনোশে ক’দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রয়েছে। ফারিদুন-এর হাতে নীল রঙের একটি ফ্লাক্স। তাতে শোরওয়া (স্যূপ) । ফারিদুন-এর মা তৈরি করে দিয়েছে। ফারিদুন-এর মা বিকেলে হাসপাতালে যাবে। ততক্ষণে যদি ফারিদুন-এর বাবা সেরে ওঠেন। আজ সকালে বিস্ফোরনের বিকট শব্দে ফারিদুনের বাবা বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। হার্টের সমস্যা আছে বৃদ্ধ রাজাব নাজজির। সকালে আফিজা আর আফিজার বিধবা মা এসেছে। আফিজারা ফারিদুনদের বাড়ির উলটো দিকের বাড়িতে থাকে। তারাই এখন রাজাব নাজজির মাথায় পানি ঢালছে। ২০০১ সালের পর থেকে কাবুল শহরে পানির সঙ্কট। কাবুল বিমান বন্দর এবং কাবুলের ন্যাটোবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে ও বিদেশি সৈন্যদের ব্যারাকে পানির লাইন বসানোর পর থেকে শহরে পানির সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। তাছাড়া তালিবান মুজাহেদিনরা প্রায়ই পানির পাইপ উপড়ে ফেলছে। হাসপাতালের দিক থেকে আসা বিস্ফোরনের ভোঁতা শব্দে ভেসে আসে। ফারিদুন চমকে ওঠে। তার মনে আনোশের মুখটা ভেসে ওঠে । পিঠেপিঠি ভাইবোন তারা। আনোশে অবশ্য এক বছরের বড়। তিন বছর হল বিয়ে হয়েছে আনোশের । ওর শ্বশুরের কাবুল বাজারে ফলের ব্যবসা আছে। আনোশের স্বামী বদরউদ্দীন গত বছর কাবুল শহরের খাজা বুঘরার কাছে তালিবানদের আত্মঘাতী হামলার সময়ে বিস্ফোরনে মারা যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরপরই বিধবা গর্ভবতী শোকগ্রস্থ বোনকে নিয়ে এসেছিল ফারিদুন । তিনদিন আগে আনোশের প্রসব বেদনা ওঠার পর ওয়াজির আকবর খান হাসপাতালে ভর্তি করেছে। রোজই একবার হাসপালে যায় ফারিদুন । কখনও কখনও ফারিদুনের মা-বাবা; কখনও-বা আফিজা আর আফিজার বিধবা মা আফসুন আরা ফল নিয়ে যায় । শোরওয়া নিয়ে ফারিদুন একাই যাচ্ছে হাসপাতালে। সে একটা স্থানীয় একটা খবরে কাগজের অফিসে চাকরি করে। সাংবাদিক নয়। অত পড়ালেখা তার ভাগ্যে জোটেনি। ফারিদুন ‘পায়াম এ মোজাহেদ’ পত্রিকা অফিসের পিয়ন । আজও অফিস ছিল। হাসপাতালে যাবে বলে অফিস যায়নি। ‘পায়াম এ মোজাহেদ’ পত্রিকার সম্পাদক মীর আমীর আব্বাস। তাকে যথেস্ট স্নেহ করেন বৃদ্ধ। জরুরি ছুটিছাঁটা মঞ্জুর করেন। একটা শ্বাস টেনে ফারিদুন চেক পোস্ট এর দিকে এগিয়ে যায়। ন্যাটোর একজন সশস্ত্র সদস্য হাত তুলে থামতে বলে। এরা আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। ৯ বছর ধরে আছে এদেশে। পশতু ভাষা শিখেছে। সৈন্যটি পশতু ভাষায় জিজ্ঞেস করে, অ্যাই, থাম! এদিকে কোথায় যাও? হাসপাতালে স্যার। দুর্বল কন্ঠে ফারিদুন বলে। হাসপাতালে? হাসপাতালে কেন? তোমার পরিচিত কেউ কি উনডেড? অটোমেটিক কারবাইন হাতে আরেক সৈন্য এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে। না। ফারিদুন মাথা নাড়ে। ভীষন টেনশন হচ্ছে তার। জিভ শুকিয়ে এসেছে। সৈন্যদের পিছনে মৃত্যুদূতের মতন থেমে থাকা কালো সবুজ রঙের একটা ট্যাঙ্কের ওপর চোখ আটকে যায়। সৈন্যটি চেঁচিয়ে উঠল। তাহলে? আমার বোন হাসপাতালে । ওহ্ ; ফ্লাক্স-এর ভিতর কি? শোরওয়া। ফারিদুন বলল। আমার বোনের জন্য। দেখি। বলে একজন লালচে শুয়োমুখো ন্যাটো সৈন্য হাত বাড়ায়। কাঁপা কাঁপা হাতে ফারিদুন ফ্লাক্সটা এগিয়ে দেয়। একজন ন্যাটো সৈন্য জিনিশটা নেয়। তারপর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। প্যাঁচ ঘুরিয়ে মুখ খোলে। উঁকি দিয়ে দেখে। তারপর তরলটুকু ফারিদুনের মাথায় ঢেলে দিতে থাকে। ফারিদুন অনঢ় দাঁড়িয়ে থাকে। গরম শোরওয়া ওর মাথায় চুলে কপালে চোখে ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে সে। থরথর করে কেঁপে ওঠে। উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার লোকজন হা হা হি সি করে হাসে। একজন ন্যাটো সৈন্য বলে, অ্যাই, তুমি তালিবান-এর চর নও তো? না। সত্যি করে বল! ফারিদুন হকিম মাথা নাড়ে। উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার একজন সৈন্য আদেশ দেয়: অ্যাই, জ্যাকেট খোল্ তুই । দেখি ভিতরে কি আছে। সময়টা শীতকাল। নীল কাবুলি পোশাকের ওপর নীল জিনের জ্যাকেট পরেছিল ফারিদুন। ন্যাটো সৈন্যদের আদেশে সে ধীরে ধীরে জ্যাকেট খুলতে থাকে। জ্যাকেট খোলার পর আবার আদেশ হয়, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? পাজামা খোল্। ফারিদুন কেঁপে ওঠে। এমনি তল্লাশী করলেই পারে। পাজামা খুলতে হবে কেন। খোল্! কখন গুলি করে- এই ভয়ে ফারিদুন পাজামার ফিতেয় হাত দেয়। লালচে শুয়োরমুখো উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার সশস্ত্র লোকজন হা হা হি হি করে হাসে। এদেরই পূর্বপুরুষ যুদ্ধবাজ আলেকজান্দার। যিনি এই অঞ্চলে সেকান্দার নামে পরিচিত। আজ থেকে ২,২০০ বছর আগে পশতুনদের প্রাচীন জনপদটি তছনছ করেছিল সেকান্দার ...তখনও আফগানিস্তানের নাম আফগানিস্তান হয়ে ওঠেনি। আফগানিস্তান শব্দটির মানে: ‘আফগানদের ভূমি’। দেশটির অধিকাংশ অধিবাসীই পশতুন; পশতুন শব্দটি আফগান শব্দেরই সমার্থক। বাঙালিরা যেমন বাংলাদেশি। তালিবান শব্দটি পশতু; অর্থ ছাত্ররা। বহুবচন তালিব ... ঐতিহাসিকগনের অনুমান: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল-এর প্রাচীন নাম ‘কম্বোজ’। ঐতিহাসিকগন আরও অনুমান করেন যে বর্তমান আফগানিস্তানেই অবস্থিত ছিল প্রাচীন ভারতের অস্মক রাজ্য। প্রাচীন ভারতের ষোড়শ জনপদের একটি অন্যতম সমৃদ্ধশালী রাজ্য ছিল অস্মক। অস্মক শব্দটি সংস্কৃত ‘অশ্ব’ থেকে উদ্ভূত বলে অনুমিত। বলাবাহুল্য, পর্বতময় অস্মক রাজ্যের অধিবাসীরা ছিল দুর্ধর্ষ ঘোরসওয়ার। ঘোড়া বা অশ্ব এদের প্রাত্যহিক জীবনে জড়িয়ে আছে। ভারতবর্ষে মুগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর। তাঁর লেখা স্মৃতিকথায় ‘আফগান’ শব্দটি পাওয়া যায়। এরও আগে ষষ্ট শতকের প্রসিদ্ধ ভারতীয় জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির প্রণীত বৃহৎসংহিতা গ্রন্থে ‘আভাগানা’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। বিখ্যাত আরব পন্ডিত আলবিরুনীও ‘আফগান’ গোত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। দূরের পাহাড় থেকে শীতার্ত বাতাস ধেয়ে আসে। খালি গায়ে ফারিদুন এসব ভাবে কিনা বোঝা যায় না। তবে তার শীত করে। পায়জামার ফিতে খুলতে খুলতে তার হাত-পা কাঁপে। কানের কাছে উষ্ণতা টের পায়। কপালের দুপাশের শিরা দপদপ করে লাফাচ্ছে। কন্ঠনালী শুকনো ঠেকে। শীতেও ঘেমে যাচ্ছে। হায় রে মোলআতন্ত্র। তোদের জন্য আজ আমার এই অপমান। তোরা জঙ্গি হয়ে উঠলি বলেই এ দেশে বিদেশি সৈন্যরা ঢোকার অজুহাত পেল। আজ আমি নগ্ন হচ্ছি তোদের জন্য। ফারিদুন এভাবে ভাবল বটে - তবে সে জানে তালিবানরা আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য হটাতে যুদ্ধ করছে। ওদের অবশ্যই সমর্থন দেওয়া উচিত। তবে তালিবানরা অতিরিক্ত কট্টরপন্থী। তারা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এলে সাধারন মানুষের সর্বনাশ হয়ে যাবে। তালিবানরা মানবীয় প্রেম-ভালোবাসায় বোঝে না। পাশের বাড়ির ষোড়শী আফিজাকে ভালোবাসে ফারিদুন । অবশ্য মনে মনে। কেননা, কথাটা তালিবানদের কানে পৌঁছলেই সর্বনাশ। সর্বত্র ওদের চর ঘুরঘুর করছে। তালিবানরা কখনও বিদেশি সৈন্যদের পরাস্ত করে কাবুল দখল করে নিতে সমর্থ হলে ওদের ভালোবাসার কথা জানাজানি হয়ে গেলে ওকে আর আফিজাকে পাথর মেরে ফেলবে নির্ঘাৎ। তবে সে সব পরের কথা। আফিজাকে যে ফারিদুন বিয়ে করবে সে উপায় কী। গত বছর ঠিক এই সময়ে খাজা বুঘরার কাছে এক বিস্ফোরনে আনোশের স্বামী বদরউদ্দীন মারা গেলে তার ঠিক একমাস পর গর্ভবতী শোকগ্রস্থ বিধবা বোনকে নিয়ে এসেছিল ফারিদুন । তারপর থেকে বিধবা বোনের দায়িত্ব কাঁধে। আফিজাকে যে ফারিদুন বিয়ে করবে সে উপায় কী। ফুটফুটে শিশুর মা হয়েছে গতকাল। শিশুটির ভবিষ্যৎও যে তার ওপরই নির্ভর করছে। আনোশে আর তার মেয়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করবে ফারিদুন। এ জন্য আফিজাকে বিয়ে কথা সম্ভব নাও হতে পারে। অসহায় নিকট আত্মীয়ের দেখভাল করা পশতুন ঐতিহ্য। ফারিদুন সহজে দেশিও ঐতিহ্য সহজে লঙ্ঘন করে না। তবে ফারিদুন জানে, দেশিয় ঐতিহ্য সবই যে ভালো তা কিন্ত নয়। ‘পায়াম এ মোজাহেদ’ পত্রিকার বয়স্ক সাংবাদিক ফারাজ কাশেম-তিনি উদার মনের মুক্তচিন্তার এক মানুষ। চা নিয়ে তাঁর ডেস্কে গেলে নিজে থেকেই কত কথা বলেন প্রবীণ ওই সাংবাদিকটি। ফারাজ কাশেম প্রায়ই বলেন, দেশিয় ঐতিহ্য সবই যে গ্রহনীয় তা কিন্তু নয়, তাকে বুদ্ধিবিবেচনা দিয়ে পরখ করতে হয় রে ফারিদুন । যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, নইলে জগতে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়তে হয়। এই দেখ না, দিনেদিনে উত্তর কোরিয়া কত এগিয়ে গেল; ইঙ্গমার্কিন যুদ্ধবাজদের তাদের দেশ আক্রমনের সাহস নেই, যদিও উত্তর কোরিয়ার মাটির তলায় আফগানিস্তানের মতোই প্রচুর সম্পদ রয়েছে । উত্তর কোরিয়রা পারমানবিক শক্তিবলে বলীয়ান বলেই ইঙ্গমার্কিন যুদ্ধবাজদের সে দেশ আক্রমনের সাহস নেই । আর আমরা? আজও আমরা মধ্যযুগীয় ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে আছি; কই আমরা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে পারমানবিক শক্তি অর্জন করে এগিয়ে যাব, না আমরা মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক জীবনধারায় আবদ্ধ হয়ে আছি । আর মুসলিম বিশ্বের দিকে চেয়ে দেখ না,-ইরাক-ইরান নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে শক্তি ক্ষয় করল। ওই মুসলিম দেশ দুটি একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে পারলে ইসরাইল অত থ্রেট দেওয়ার সাহস পেত কি? আমার মনে হয় কি জানিস, মুসলমানের ভরাডুবির কারণ সময়ের দাবী অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে না যাওয়া। অস্টম-নবম শতকে বাগদাদ অন্যদের তুলনায় অনেক উন্নত ছিল । কিন্তু বারবার সে কথা বলে আজ আর কী লাভ! অবশ্য সে সংস্কৃতি ছিল ধারকবাহক ছিল পারশিক ভূস্বামীরা, জনগন নয়। আর সেই বাগদাদী সংস্কৃতির ওপর ভর করেছিল মোল্লাতন্ত্রের আছড়। আব্বাসীয়দের সময় ইসলামিক ইনকুইজিশন অবধি ইমপোজ করা হয়েছিল। মোল্লাতন্ত্র আমাদের দেশে ইসলামিক ইনকুইজিশন ইমপোজ করার পাশাপাশি ভূস্বামীদের স্বার্থও রক্ষা করল। ভূস্বামীরা পশতুন জনগনকে শিক্ষিত করে তুলল না। কেন? জনগনকে শিক্ষিত বিজ্ঞানমনস্ক করে তুললে তারা যে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। ভূস্বামীদের নিরাপদ গদিটি খানখান হয়ে ধ্বসে পড়বে। অথচ কেবলমাত্র অভিজাত ভূস্বামীদের স্বার্থ রক্ষা ইসলাম অনুমোদন করে না। সপ্তম শতকের আরব উপদ্বীপের আরব বেদুইনরা ছিল বঞ্চিত হতদরিদ্র; অপরদিকে সম্পদশালী বণিক কুরাইশরা ছিল অতিরিক্তমাত্রায় ভোগী; ইসলামের নবী অত্যন্ত ব্যথিত চিত্তে এ অনাকাঙ্খিত বৈষম্য লক্ষ করেছিলেন। আরব সমাজে আল্লাহর অনুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পার্থিব বৈষম্য দূর করাও ছিল ইসলামের নবীর অন্যতম লক্ষ। তিনি মানুষকে বারবার ‘মধ্যপন্থা’ অবলম্বনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সুরা ফাতিহার ‘সিরাতুল মোস্তাকীম’ শব্দটা মানে জানিস তো? ‘সিরাতুল মোস্তাকীম’ অর্থ হল সরল পথ। ইসলামের নবীর দিব্যদৃষ্টি ছিল। হায়, নবীর কথা কেউ মানল না রে ফারিদুন। আফগানিস্তানে মোল্লাতন্ত্র নবীর আদেশ বিস্মৃত হয়ে ভূস্বামীদের স্বার্থই রক্ষা করল। পশতুন জনগনকে সূদীর্ঘকাল কুসংস্কারে আচ্ছন্ন করে রাখল। আফসোস। তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যেও তাইই হয়েছিল রে ফারিদুন। অটোমানদের চালচলন ছিল মধ্যযুগীয়; তাদের অধীন ছিল ফিলিস্তিন। শাসন শোষনের কারণে অটোমান সুলতানরা ফিলিস্তিনকে অনাধুনিক পশ্চাৎপদ ও শিক্ষাবঞ্চিত করে রেখেছিল। যে কারণে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অনুপ্রবেশ করাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বেগ পেতে হয়নি। ভারতবর্ষের অধিকাংশ মুসলমান আজও মুগল ঐতিহ্যকেই শ্রেয়তর আর্দশ মনে করে। মুগল ও অটোমানরা আসলে একই মুদ্রার এপিঠওপিঠ। তখন বললাম না যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। নইলে জগতে পিছিয়ে পড়তে হয়। ইউরোপের মত অটোমান সাম্রাজ্যেও পুর্নজাগরন প্রয়োজন ছিল। গোঁড়া মোল্লাতন্ত্রের কারণে সে রকম কিছু হল না। এখন চিন্তাচেতনায় পিছিয়ে পরা মুসলিম বিশ্ব পশ্চিমের চোখে হাস্যকর ভাঁড় হয়ে আছে। ভাঁড় মানে জোকার, বুঝলি, জোকার। ... ততক্ষণে ফারিদুন পাজামা খুলে ফেলেছে। তার শরীরের রং ফরসা। তার পূর্ব পুরুষ এককালে কাস্পিয়ান সাগরের ছিল। তারা ফরসাই ছিল। ফারিদুন-এর পরনে কালো লাল রঙের আন্ডারওয়ার। ফরসা শরীরে তাকে জোকার এর মতোই দেখায়। লালচে শুয়োরমুখো উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার সশস্ত্র লোকজন হা হা হি হি করে হাসে। বাইশ বছর বয়েসি পশতুন যুবক ফারিদুন হাকিম এই মুহূর্তে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চায়। সে পারে না। একটি পরাধীন দেশের পরাধীন নাগরিক সে। মাটির সঙ্গে মিশে যেতেও বিদেশি কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। তাছাড়া সে তো জোকার। অন্যদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যেই জোকারদের বেঁচে থাকতে হয়। সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:২৬
false
fe
বিনয় মজুমদারের কবিতা _ প্রকৃতি ও মানবদর্শন _ আহমেদ বাসার কবিতা নিয়ে কে কি বলেন , সেটা তার ব্যক্তিগত পরিচিন্তন। তবে কবিতা মানুষের চেতনার নির্যাস । কবিতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করার লোক অতীতে ছিল । এখনো আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। এর অর্থ এই নয় , কবিরা কবিতা লিখবেন না। বিনয় মজুমদার কবিতা লিখেছেন অনেক প্রতিকূল সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তার কবিতা নিয়ে আলোচনা টি এখানে তুলে দিলাম , কবিতা প্রিয় মানুষদের জন্য । বিনয় মজুমদারের কবিতা : প্রকৃতি ও মানবদর্শন আহমেদ বাসার ------------------------------------------------------------- সৃস্টির মূল যে সূত্রগুলি তা জড়ের মধ্যে প্রকাশিত, উদ্ভিদের মধ্যে প্রকাশিত, মানুষে মধ্যে প্রকাশিত। এদের ভিতরে সূত্রগুলি পৃথক নয়। একই সূত্র তিনের ভিতরে বিদ্যামন। এই সার সত্য সম্বল করে ভেবে দেখলাম জড়ের জীবনে যা সত্য, মানুষের জীবনেও তাই সত্য, উদ্ভিদের জীবনে যা সত্য মানুষের জীবনেও তাই সত্য। অতএব জড় এবং উদ্ভিদের জীবন অত্যন্ত- মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতে লাগলাম আমি। এবং শুরু হলো কবিতার জগতে আমার পথযাত্রা, আমার নিজস্বতা। [ আত্মপরিচয় : বিনয় মজুমদার] ‘আত্মপরিচয়’ প্রবন্ধের উপর্যুক্ত বিবৃতির মধ্যেই লুকিয়ে আছে বিনয় মজুমদারের (১৯৩৪-২০০৭) কাব্যদর্শন। প্রকৃতিকে তিনি মানবজীবন থেকে বিছিন্ন করে দেখনেনি। প্রকৃতির মধ্য দিয়ে তিনি জীবনকে দেখেছেন এবং জীবনের মধ্যে দেখেছেন প্রকৃতির সত্যকে। তাঁর এই বোধ শুধু দার্শনিক চেতনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কবিতার আশ্চর্য শ্লোকে তা দুলে উঠেছে। আমরা দেখেছি, প্রাকৃতিক সত্য কবিতায় নিত্যতায় কীভাবে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে: কীভাবে অতি তুচ্ছ বিষয়ও কবিতা-সাম্রাজ্যে স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া ছড়ায়। বাংলাদেশের আরেক কবি-সম্রাট শামসুর রাহমানের (১৯২৯-২০০৬) মতো বিনয় মজুমদারের ও কাব্য-যাত্রার সূচনা ঘটেছিল জীবনানন্দীয় সীমারেখা থেকে। দুজন কবিই অতি অল্প সময়ের মধ্যে আবিষ্কার করেন পথ-চলার নিজস্ব ভঙ্গির এবং বিষয়গত দিক থেকে ও তাঁরা সরে আসেন জীবনানন্দ থেকে বহু দূরে এক অনাবিষ্কৃত উর্বর ভূখণ্ডে, যেখানে লুকিয়ে ছিল অফুরন্ত- সম্ভাবনা। সেই পলিময় ভুখন্ডে বীজ বুনে শামসুর রাহমান যেমন অত্যুজ্জ্বল কাব্য-শস্য ঘরে তুলেছেন, তেমনি বিনয় মজুমদারও ফলিয়েছেন হীরন্ময় শস্যদানা। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নক্ষত্রের আলোয়’ জীবনানন্দের উপস্থিতি বেশ প্রবল। জীবনানন্দ সুলভ আত্মমগ্ন সুদূর অনুভূতীর রূপায়নের পাশাপাশি এখানে এসেছে জীবনানন্দীর অজস্র শব্দ-সম্ভার ‘চিরদিন একা একা অবরোধে থেকে বুঝিনি কথারা থাকে অতি দূর নক্ষত্রের দেশে। কতোদিন দুরাগতা, কতোদিন গেছো তুমি ডেকে, কতোদিন প্রাণপণে কথা খুঁজে-খুঁজে নত মুখে তাকিয়েছি শেষে।’ [চিরদিন একা একা : নক্ষত্রের আলোয়] মনে পড়ে ‘বনলতা সেন’ কবিতার সেই প্রেমিক পুরুষকে, যে হাজার বছর ধরে পথ হেঁটে ক্লান্ত--শ্রান্ত হয়ে অবশেষে ‘বনলতা সেনে’র চোখে দু’দণ্ড শান্তি খুঁজে পায়। এছাড়া শব্দে ব্যবহারেও জীবনানন্দের ঢঙ এখানে বেশ অস্পষ্ট। জীবনানন্দের বেশ কিছু রূপকথার নায়িকার সাক্ষাতও আমরা এখানে পাই-‘রূপকথা শুনেছি সে-কঙ্কাবর্তী, পদ্মমালা, শঙ্খিনী মালার মনে হয় সব ব্যথা-সব সুখ পেয়ে গেছি-পেয়েছি সকলি, কখনো চাই না যেতে সেই দেশে মাঠ বন নদী হয়ে পার ভিজে অন্ধকারে বসে পরস্পর সেইসব রূপকথা বলি।’ [কতো রূপকথা] তবে এই গ্রন্থের কিছু কিছু পঙক্তিতে তাঁর পরবর্তীকালের স্বকীয় কাব্য সম্ভাবনার চিহ্ন ও দুর্লক্ষ নয়। গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও মানবদর্শন এখানে স্পষ্ট না হলেও একেবারে অনুপস্থিত নয়- ‘স্মরণে আসে অনেক কাল পড়েছি বিজ্ঞান গণিত দিয়ে বেঁধেছে নব বিপুল বিশ্বের সকল কিছু, অথচ আজও অধরা তার প্রাণ, অবুঝ তার শরীরে কাঁদে অজ্ঞতার জের!’ [তোমার দিকে] বিনয় মজুমদারের প্রকৃতি ও মানবদর্শন আশ্চর্য-পূর্ণতা লাভ করে ১৯৬১ সালে প্রকাশিত ‘গায়ত্রীকে’ কাব্যগ্রন্থে, যা ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ‘ফিরে এসো, চাকা’ নামে আরো বৃহৎ কলেবরে প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থে প্রকৃতি ও মানবের এক অদ্ভুত আত্ম সম্পর্ক আমরা লক্ষ করি, যা কাব্যিক বিবেচনায় ও অসামান্য- ‘শিশুকালে শুনেছি যে কবিপয় ঃ. ফুল আছে। অথচ তাদের আমি এত অনুসন্ধানেও এখনো দেখিনি। তাঁবুর ভিতরে দিয়ে অন্ধকার আকাশের বি¯-ার দেখেছি, জেনেছি নিকটবর্তী এবং উজ্জ্বলতম তারাগুলি প্রকৃত প্র¯-াবে সব গ্রহ নয়, তারা নয়, তাপহীন আলোহীন গ্রহ। আমিও হতাশা বোধে, অবক্ষয়ে, ক্ষোভে ক্লান্ত- হয়ে মাটিতে শুয়েছি একা-কীটদষ্ট নষ্ট খোশা, শাঁস’। বিষয় ও শৈলীগত দিক থেকে এই পঙ্ক্তিগুলোর স্বকীয়তা অনস্বীকার্য। বিষয়ব¯'র ভাবনায় বিনয় অনেক সময় মগ্ন থেকেছেন, কখনো থমকে দাঁড়িয়েছেন। প্রথম দিকে তাঁর ধারণা ছিল, সব বিষয়ব¯' কাব্যের উপযোগী নয়, নির্দিষ্ট কিছু কিছু বিষয় কাব্যিক-সম্ভাবনাময়। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর এই ধারণার পরিবর্তন হয়। এবং তিনি এই সিদ্ধান্তে- উপনীত হন যে-‘সব বিষয়বস্তুই কাব্যিক এবং যাঁর দৃষ্টিতে এই কাব্যিকতা ধরা পড়ে তিনিই কবি। এমনকি, চিন্তা করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে, যে পদ্ধতিতে ভাবলে কাব্যিকতা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। বিষয়বস্তুর মধ্যে কাব্যিকতা লুকিয়ে থাকে, তাকে বের করার জন্য চিন্তার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে।’ [আত্মপরিচয়] কাব্যিকতা বের করে আনার জন্য বিনয়ের এই অভিনব চিন্তা-পদ্ধতির আবিষ্কার এক কথায় অভূতপূর্ব। এই চিন্তা-পদ্ধতির বিকৃত ব্যাখ্যা না দিলেও তাঁর কবিতা পড়ে আমরা সে সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পেতে পারি। তবে এটি নিশ্চয়ই এমন কোনো পদ্ধতি নয় যা ব্যবহার করে নিছক অকবিও রাতারাতি কবি হয়ে উঠতে পারে বরং সৃষ্টিশীল প্রজ্ঞাকে একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলায় চালিত করার পদ্ধতি হিসেবে একে ব্যাখ্যা করা যায়। নিজের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করেই বিনয় স্বকীয়তায় ভাস্বর হয়ে উঠেছেন- ‘সুস্থ মৃত্তিকার চেয়ে সমুদ্রেরা কতো বেশি বিপদসংকুল / তারো বেশি বিপদের নীলিমায় প্রক্ষালিত বিভিন্ন আকাশ, এ সত্য জেনেও তবু আমরা তো সাগরে আকাশে সঞ্চারিত হতে চাই, চিরকাল হতে অভিলাষী সকল প্রকার জ্বরে মাথা ধোয়া ভালো লাগে চলে। তবু ও কেন যে আজো, হায় হাসি, হায় দেবদার"। মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়।’ এই পঙক্তিগুলোতে আবিষ্কারের উল্লাস, ও কাব্যিক উদ্ভাস যুগতাৎ দানা বেঁধে আছে। মানবজীবন ও প্রকৃতির সম্পর্ব্যসূত্রকে তিনি কতোটা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন তা আমরা বুঝতে পারি, যখন তিনি বলেন- ‘আলোকসম্পাতহেতু বিদ্যুৎ সঞ্চার হয়, বিশেষ ধাতুতে হয়ে থাকে। অথচ পায়রা ছাড়া অন্য কোনো ওড়ার ক্ষমতাবর্তী পাখি বর্তমান যুগে আর মানুষের নিকটে আসে না। সপ্রতিভভাবে এসে দানা খেয়ে ফের উড়ে যায়, তবুও সফল জ্যোৎস্না চিরকাল মানুষের প্রেরণা স্বরূপ।’ তাঁর এই পর্বের কবিতাগুলো থেকে এই ধারণায় উপনীত হওয়া স্বাভাবিক যে, তিনি প্রফেটিক ঢঙে কথা বলতেই পছন্দ করেন। প্রকৃতির মধ্য দিয়ে মানব-জীবনের স্বরূপকে প্রকাশ করতে আগ্রহী বলেই তিনি আশ্রয় নেন রূপক ও প্রতীকী উপস্থাপন কৌশলের- ‘ব্যর্থতার সীমা আছে; নিরাশ্রয় রক্তাপ্লুত হাতে বলো, আর কতকাল পাথরে আঘাত করে যাবো? এখনো ভাঙেনি কেউ; ফুরিয়েছে পাথেয় সম্বল। অথবা বিলীয়মান শবকে জাগাতে কোনো শিশু সেই সন্ধ্যাকাল থেকে সচেষ্ট রয়েছে, তবু যেন পৃথিবী নিয়মবশে নির্বিকার ধূসরতাধৃত।’ সরলভাবে বলতে গেলে, বিনয় মুজমদারের কবিতার অন্যতম প্রধান বিষয় প্রেম; বিশেষত প্রেমের অচরিতার্থ রূপ ও বিরহের ব্যাপ্তি। এক্ষেত্রে তাঁর ব্যক্তি-জীবনের অনির্দেশ্য প্রেম ও ব্যর্থতার ভূমিকাও কম নয়। তাঁর সম¯- ভালোবাসা পুঞ্জীভূত ছিল গায়ত্রীর জন্য, যাকে তিনি ‘চাকা’ সংকেতে আহ্বান করেছেন। তাঁর কবিতার সমস্ত আর্তির মূলেও আছে এই দূরতমা চাকার রহস্যময়ী ভূমিকা- ‘তুমি যেন ফিরে এসে পুনরায় কুণ্ঠিত শিশুকে করাঘাত করে করে ঘুম পাড়াবার সাধ করে আড়ালে যেও না; আমি এতদিনে চিনেছি কেবল অপর ক্ষমতাময়ী হাত দুটি ক্ষিপ্র হাত দুটি ক্ষণিক নিস্তারলাভে একা একা ব্যর্থ বারিপাত,’ পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ ‘অধিক" (১৯৬৭), ‘অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’ (১৯৭৪) প্রভৃতিতেও তাঁর স্বকীয় দর্শন, নৈঃসঙ্গ, হতাশা, ব্যর্থতার রূপায়ণ লক্ষণীয়। আধুনিক কবিতা সম্পর্কে তাঁর ধারণাও এই দার্শনিক বোধজাত ‘চারিপাশে যে সকল দৃশ্য দেখি, আমরা সকলেই দেখি, তার হুবহু বর্ণনা লিখলে কবিতা হয় না। সেই দৃশ্য আদৌ কেন আছে, কী কারণে বিশ্বে তার থাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, বিশ্বের নিয়মাবলী ও গঠন প্রকৃতি ঐ দৃশ্যে কতটুকু প্রকাশিত হয়েছে- এইসব বর্ণনার সঙ্গে যুক্ত করে না দিলে আধুনিক কবিতা হয় না।’ তাঁর কবিতায়ও এই ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে- ‘ভালো লাগা যেন আলো, সেই হেতু আজ রাতে আলো পেতে থাকে আঁধারে জড়ানো থেকে গাঁদা ফুল, ঢিপি দুটি, মানকচু পাতা, খেজুর গাছেই গাঁথা হাঁড়ি আর হাঁড়িটির তৃষিত শরীর। এরা সবচেয়ে বেশি-সবচেয়ে বেশি বাড়ে রাতের আঁধারে, আঁধার রয়েছে বলে সকল। কিছুতে আজও বেড়ে যাওয়া আছেঃ.’ [অঘ্রাণের অনুভূতিমালা] বিনয় মজুমদারের কবিতার প্রসন্ন পাষানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আর্তনাদ করে আবেগের তীব্রতা, অথচ তরল জল যেমন হিমাঙ্কে নেমে এসে বরফে রূপ নেয়, তাঁর কবিতায় আবেগও তেমনি স্ফটিকধর্মী হয়ে ওঠে অনায়াসে। বিনয়ের কবিতার স্বতন্ত্র জগতও গড়ে ওঠে এই প্রক্রিয়ায়। -------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ সাময়িকী। ৭ নভেম্বর ২০০৮ সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:১৫
false
mk
ষড়যন্ত্রে কারা_ নিশা দেশাই বিসওয়াল অনামন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশ সফর করে যাওয়ার পর বাংলাদেশ-ওয়াশিংটন সম্পর্ক খুব খারাপ হতে পারে বলে দেশের একটি বিশেষ পত্রিকা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্কের বিশেষ প্রতিনিধির বরাত দিয়ে যে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে সারবস্তু কিছু নেই কারণ প্রতিনিধি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে যোগাযোগ করলে তারা তাকে পরামর্শ দেন বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলতে। সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের কারণ কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখা না হওয়ার কারণে যদি সম্পর্ক খারাপ হয়ই তাহলে সেটি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের কী বলার থাকতে পারে তা নিয়ে বিতর্ক তুলে লাভ নেই কিন্তু বাংলাদেশে যে একটি পক্ষ এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ দেখতে চাইছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।সৈয়দ আশরাফ নিশা দেশাইকে ‘দেড় আনা, দু’আনার’ মন্ত্রী বলেছেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নাম নিয়ে হাস্যকর উক্তি করেছেন, যা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। এই বক্তব্যের সমালোচনা করতে হলে প্রথমেই বলতে হয় যে, সৈয়দ আশরাফ একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর পশ্চিমা গণতন্ত্রের সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘ পরিচয়ের ইতিহাস। তাঁর কাছ থেকে কেউই কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কোন মন্তব্য আশা করে না। কিন্তু কথা হলো, সৈয়দ আশরাফ এরকমটি কেন বলেছেন, তারও সুলুক সন্ধান করা উচিত আমাদের। আগের লেখাতেই উল্লেখ করেছি যে, নিশা দেশাই এদেশে এসেছিলেন স্ব-উদ্যোগে বা তার দেশের হয়ে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি কোন কাজে। বিশেষ করে এদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে কোন প্রকার কথা বলা বা প্রশ্ন করার এখতিয়ার তাঁকে দেয়া হয়নি। কিন্তু তিনি এসেই দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং কথা বলেছেন আরও কিছু ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যাঁদের সম্পর্কে দেশের ভেতরেই রয়েছে নানা রকম সন্দেহ ও বিতর্ক। বেগম জিয়া এখন আর বিরোধীদলীয় নেতা নন, তিনি একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা। তাঁর সঙ্গে দেখা করলে তিনি বাংলাদেশের সবকিছুই বিতর্কিতভাবে নিশা দেশাইয়ের কাছে উপস্থাপন করবেন সেটাই স্বাভাবিক এবং হয়েছেও তাই। বাকি যাঁরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁরাও কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন ভাল কথা বলেছেন বলে শোনা যায় না। কেউই কিন্তু বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কথা বলেননি, কথা বলেননি বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক কোন ফর্মুলা নিয়ে। শুধু কথা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের খারাপ দিকগুলো নিয়ে। এক অনামন্ত্রিত বিদেশী অতিথির সঙ্গে কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের এই বিদগ্ধ ব্যক্তিগণ নিজেদের দৈন্য প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ওপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ করে দিতেই পারেন কিন্তু সৈয়দ আশরাফ কিংবা শেখ হাসিনার পক্ষে সেটা কি ঘটতে দেয়া সম্ভব? যখন দেশে দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অযাচিত ছড়ি ঘোরানো নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক দেশ থেকেই মুখ ঘুরিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে এবং মূলত এই ছড়ি ঘোরানোর কারণেই বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ধর্মীয় জঙ্গীবাদের উত্থানও ঘটেছে। বাংলাদেশ যখন একটি উঠতি অর্থনীতির দেশ হিসেবে ক্রমশ মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনাকে সূচিত করেছে এবং অনেক সূচকেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরুতে শুরু করেছে তখন বাংলাদেশের আত্মসম্মান বোধটিও যে জাগ্রত হওয়া কিছুটা হলেও প্রয়োজন সে বিষয়টি আমাদের এই বিশিষ্ট জনেরা বোধকরি ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার হিসেবে শেখ হাসিনার সরকারের যে বিষয়টি মোটেও ভোলা উচিত নয় এবং সরকার সেটা ভোলেনি সে জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দেয়াটাও জরুরী।আসুন প্রশ্ন করা যাক, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক খারাপ হলে কী হতে পারে? এর উত্তরে আমরা প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়া মানে দু’দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়া। আর তার জের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশকেই বা শেখ হাসিনার সরকারকেই সবচেয়ে বেশি ভোগ করতে হবে তাতেও কোন সন্দেহ নেই। আমরা দেখেছি যে, দেশে দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা কিংবা দক্ষিণ আমেরিকাতে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের সম্পর্ক খারাপ হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে ওই দেশটির সাধারণ জনগণের ওপর। সাদ্দাম হোসেন, গাদ্দাফী কিংবা সিরিয়ার বাসার সরকারের পরিণতি দেখে আমাদের বুঝতে হবে যে, মার্কিন সরকারের ছায়া যদি মাথার ওপর থেকে সরে যায় তাহলে পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এশিয়াতে এই চিত্র আরও করুণ। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার কথা যদি বাদও দিই তাহলে কেবল বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর বিয়োগান্তক পরিণতির কথা আমরা উদাহরণ হিসেবে স্মরণ করতে পারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের বিষয়ে। ২০০১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরকালে তেল-গ্যাসবিষয়ক অনৈক্যের কারণে শেখ হাসিনার সরকারকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। আজকেও যারা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন দেখতে চাইছেন, তাঁরা মূলত চাইছেন এর ফলে শেখ হাসিনার সরকারকে পতন ঘটাতে এবং সেটা যে প্রকারেই সম্ভব হোক না কেন।আমরা গত বছর দেখেছি, এদেশে যাতে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন অবস্থায় কোন নির্বাচন না হতে পারে সে জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই প্রকাশ্যে বিএনপি-জামায়াত সংঘটিত তা-বের পক্ষে কাজ করেছে। কোন রকম বিদেশী মদদ ছাড়া এদেশে হেফাজতে ইসলামীর মতো একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করতে পারে সেটি পাগলেও বিশ্বাস করবে কিনা সন্দেহ। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণের নামে এদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার ভেতরে কী কা-কারখানা ঘটছে সে বিষয়ে প্রামাণ্য কোন গবেষণা এখনও হয়নি সত্য কিন্তু পত্রপত্রিকার খবর থেকেই জানা যায় যে, সেদিকে চোখ পড়েছে সন্ত্রাসবাদে উস্কানিদাতাদের। ভারত ও চীনের মতো অর্থনৈতিক দৈত্যির এত কাছাকাছি বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান আর এখানেও যদি তার প্রভাব পড়ে তাহলে বাংলাদেশ যে এই বিশ্ব মোড়লদের প্রভাব ছাড়া হয়ে যাবে। তার ওপর শেখ হাসিনার সরকার যদি এদেশে একাধিক মেয়াদে ক্ষমতাসীন থাকে তাহলে এখানেও অর্থনৈতিক বিপ্লব না হলেও উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটবে এবং সর্বার্থেই। এমতাবস্থায় দেশের ভেতরকার ও বিদেশী উভয়পক্ষই মিলিত হয়ে একটি শেখ হাসিনাবিরোধী ব্রিগেড গড়ে তুলে রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে পারলে অনেক পক্ষের নানাবিধ লাভ। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সে পথে আপাতত কাঁটা দিয়েছে, যদিও নির্বাচন নিয়ে বহুবিধ প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। তো সে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তো বাংলাদেশে অতীতেও ছিল, জিয়াউর রহমান কিংবা এরশাদের সরকার, এমনকি ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে নিয়ে কি প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল না? তখন যদি কেউ প্রশ্ন না তুলে সেসব সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে পারেন তাহলে এখন কোন্ মুখে শেখ হাসিনার তৃতীয় মেয়াদের সরকারকে নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন? আর সে কারণেই আপাততভাবে হলেও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারকে তেতোমুখে মেনে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু ভেতরে ভেতরে কেউই স্বস্তিতে নেই। তাই বিনা নিমন্ত্রণে এসে দেশের ভেতরে বসেই দেশের সমালোচনা করে যাচ্ছেন কোন রকম বাধা ছাড়াই। আগেই বলেছি সামান্য আত্মসম্মানবোধ অবশিষ্ট থাকলে নিশ্চয়ই এমনটি হতো না। এক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রটোকল অনুযায়ী যাঁর যাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল নিশা দেশাই তাঁদের কারও সঙ্গেই দেখা করেননি। দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এমনদের বাছাই করে যাঁদের কথা গত সপ্তাহেই বলেছি। তিনি অনিমন্ত্রিত হয়ে এরকম রাজনৈতিক সফর যে করতে পারেন না সে প্রশ্ন তোলার তো সময় এসেছে, তাই না? সরকার সেই কাজটিই করেছে বলে অনেকের কপট দুঃখ হয়েছে এবং তাঁরা দুই দেশের সম্পর্কের অবনতিতে বগল বাজাতে শুরু করেছেন। নিজেদের আত্মা তো বিক্রি হয়েই গেছে এখন গোটা দেশের সম্মান না বিকানো পর্যন্ত তাদের শান্তি নেই।দেশের রাজনীতি ও পরিস্থিতি নিয়ে ভাবেন এমন অনেকেই মনে করছেন যে, বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যত খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যের হবে না। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজে থেকে কী করবে না করবে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এদেশে যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার নিঃস্বার্থ অথবা স্বার্থবাদী ঠিকাদার তাঁরা এদেশের পরিস্থিতিকে ক্রমশ উত্তাল করে তুলবেন। আগের বছর যেহেতু তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন তাই এবার তাঁরা বড় ধরনের কর্মসূচী নিয়েই হাজির হবেন। সে জন্য এরই মধ্যে নিশ্চয়ই নানাবিধ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আমি একটি প্রকল্পের একটু আভাস পেয়েছি, সেটি একটু শেয়ার করি। আপাতভাবে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠজনদের দ্বারা ভেতর থেকে সরকারকে বিতর্কিত করার ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। পত্রিকার নিয়মিত পাঠকগণ ইতোমধ্যেই তার কিছু প্রমাণ পেয়েছেন বোধ করি। রাজনৈতিক চাপ/তাপ বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক ইস্যুর বাইরে ধর্মীয় ইস্যু তৈরি করার কাজও চলছে সমানতালে। আর বড় ষড়যন্ত্রের অনেক খবরই তো এখন উন্মুক্ত বর্ধমান কা-ের পর। শেখ হাসিনাকে হত্যার ভেতর দিয়ে দেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তন যে তাদের উদ্দেশ্য ছিল তাও কারও আর অজানা নয়। উচ্চক্ষমতাধর কোন শক্তির প্রত্যক্ষ মদদ এবং দেশের ভেতরকার বিরুদ্ধ শক্তির মিলিত প্রয়াস ছাড়া বাংলাদেশে এত বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর সাহস চুনো পুঁটিদের হয় না, তা বলাইবাহুল্য। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকতেই পারে, সেটি দেশের ভেতর করলেই উপকার কিন্তু একটি সরকারকে রক্তকা-ের ভেতর দিয়ে উৎখাতের কোন দেশী-বিদেশী মিলিত ষড়যন্ত্রকে যাঁরা সমর্থন ও সহযোগিতা দিচ্ছেন তাদের ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। এক ১৫ আগস্ট এ জাতির ভাগ্য থেকে বিশাল অর্জনকে কেড়ে নিয়েছে, দেশ পিছিয়েছে অন্তত ৫০ বছর, আবার কোন রক্তকা- ঘটলে বাংলাদেশ সে ভার নিতে পারবে না। ব্যর্থ রাষ্ট্র শব্দদ্বয় নিয়ে আজকে যাঁরা লাফান তাঁরা তখন সত্যি সত্যিই বুঝতে পারবেন ব্যর্থ রাষ্ট্র কাকে বলে। ২০০৬ সালেই আমরা ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় প্রায় চলেই গিয়েছিলাম, ২০০৮-এ কোনমতে সে বিপর্যয় ঠেকানো গেছে। এরপর কোন বিপর্যয় ঘটলে বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। কিন্তু আমরা তো বাংলাদেশে খুঁজে পেতে চাই, একটি সুখী, সমৃদ্ধ, সৃষ্টিশীল বাংলাদেশকে, কি চাই না?
false
hm
স্মুদ অপারেটর ১. আমাদের জীবনটাই হিমশৈলের চূড়ায় কাটে। সব ঘটনা, দুর্ঘটনা, সিদ্ধান্ত, তর্কবিতর্ক সেই হিমশৈলের চূড়াতেই নিষ্পন্ন হয়। বাকিটা জলের কত গভীরে নেমে গেছে, তা নিয়ে আমাদের অনেকেরই মাথাব্যথা নেই। কারণ আমাদের অনেকের মাথাই নেই। যাদের আছে, তাদের অনেকে সেটা খামোকা ব্যথা করাতে চায় না। এ কারণেই যখন পত্রিকায় শিরোনাম দেখি, হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন প্রবীণ সত্যাগ্রহী, আহাউহু করি। তারপর পৃষ্ঠা উল্টে বিনোদন পাতায় গিয়ে নায়িকাদের বুক দেখার চেষ্টা করি। কিছু তার দেখি আভাস, কিছু পাই অনুমানে। ২. কিন্তু চায়ের আড্ডায় উপস্থিত অনেকেই পেঙ্গুইনপন্থী। তারা হিমশৈলের চূড়ায় রোদ পোহায় যেমন, তেমনি জলের নিচেও জীবনের অন্ধিসন্ধির খোঁজ করে। তারপর চা আর ডালপুরিসহ সেসব খবর রাষ্ট্র করে। তেমনি একজন চায়ের কাপ খালি করে বললেন, "এ সবই আসলে পুঁজিবাদের খাদেমগিরি নিয়ে ঢুঁশাঢুঁশি।" আমরা যারা চা কম খাই, কথা কম বলি আর বিল বেশি দিই, তারা একটু নড়েচড়ে বসি। প্রবীণ সত্যাগ্রহী মৃত্যুর সাথে হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছেন, তার সাথে পুঁজিবাদের সম্পর্কটা শুরুতেই ঠাহর করতে পারি না। জ্ঞানী পেঙ্গুইনটি তখন সব খোলাসা করে বলেন। ৩. সব গিয়ানজামের মূলে রয়েছে আন্না হাজারে। চিমসে এই লোকটা অনশনকে আবার লাইমলাইটে তুলে এনেছে। পথসভা, লংমার্চ, টক শো, সব এক চড়ে ম্লান করে দিয়েছে ব্যাটা। সেইসাথে লুপ্তপ্রায় গান্ধীবাদ আবার ব্যাঙের ছাতার মতো পাথর সরিয়ে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়েছে। অনশনের ফর্মুলা সহজ নয় অবশ্য। কিছু ড্রেস কোড রয়েছে, কিছু কোড অব কনডাক্টও রয়েছে। টিশার্ট আর জিন্স পরে অনশন করতে গেলে কোনো লাভ নেই। পরতে হবে একটি খাদি চাদর। নিম্নাঙ্গে একটি কৌপীন ধারণ করতে পারলে আরও চোস্ত হয়। অনশনের জন্যে একটি মঞ্চ তৈরি করতে হবে, যেখানে সূর্যের আলো ফোটোগ্রাফারের ক্যামেরাকে বিব্রত না করে মুখের ওপর সঠিক ঔজ্জ্বল্য নিয়ে পড়ে। সূর্য ডুবে গেলে ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা করতে হবে। পানি খাওয়া চলবে, তবে গ্লুকোজ খাওয়া বারণ। হাজারের নাম যারা আগে শোনেনি, হয়তো তারা তাকে জয়নাল হাজারে বলেই ভুল করতো, তারাও পত্রিকায় এই হাজারেপনার ফাঁপানো খবর শুনে নড়েচড়ে বসলো। অনশন। হুঁ, এটাই একবিংশ শতাব্দীর ব্রহ্মাস্ত্র। বাপমা থেকে শুরু করে সরকার, সবার টনক ধরে একেবারে টান মেরে ছাড়ে। যদিও দেশে লাখে লাখে লোক কয়েক বেলা না খেয়ে কাটিয়ে দেয়, কিন্তু ভদ্দরলোকের সন্তান খদ্দর গায়ে মাঠেময়দানে উপোস শুরু করলে তাতে শাসকের তহবনে ব্যাপক টান পড়ে। এরপর শুরু হয়ে গেলো অনশন হাইপ। উঠতে বসতে এ অনশন করে, সে অনশন করে। শহীদ মিনারে আগে নেশাখোরেরা ভিড় করতো, অনশনীদের দাপটে তারা আস্তানা গুটিয়ে দমকল অফিসের দিকে চলে গেলো। প্রত্যেক মিডিয়া হাউসে একজন অনশনম্যান ফিট করা হলো, আর কোনো নিউজ না পেলে সে শহীদ মিনার থেকে একটা চক্কর মেরে আসে, সেখানে সবসময়ই কেউ না কেউ অনশনে লিপ্ত। পত্রপত্রিকা আর টকশোতে এ নিয়ে ধুন্ধুমার লেগে গেলো। রোজই সরকারকে কেউ না কেউ ধুয়ে সাদা করে ফেলে। পরিস্থিতি যখন ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, ভুখা এবং সিলেকটিভ নাঙ্গা লোকে ছেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন চত্বর, তখন সরকারের উপরমহল ঠিক করলো, এইসব প্রতিবাদী অনশনীদের একটা টাইট দিতে হবে। তারা তখন যোগাযোগ করলো প্রবীণ সত্যাগ্রহী, বাংলার গান্ধী আবুলদার সঙ্গে। এই লাইনে তিনি স্মুদ অপারেটর নামেই পরিচিত। তাঁর তপস্বীসুলভ জীবনাচরণের জন্যে লোকে তাকে ডাকে তাপস পাল, আদালত তাঁকে ডাকে হরিদাস পাল। সেই যে সেন রাজারা পাল বংশের নাম ডোবালো, তারপর তাঁর মতো করে কেউ আর পাল বংশের নামে পাল তুলতে পারেনি। ৪. হিমশৈলের এইটুকু রাষ্ট্র হওয়ার পর আবার চা বলতে হয়। কিছু পুরিও। সাথে শসা। ৫. আবুল গান্ধীর সাথে সরকারের ওপরমহলের কী চুক্তি হয়, তা পরিষ্কার জানা যায় না। জানতে হলে কয়েক বছর পর উইকিলিক্স ঘেঁটে দেখতে হবে। কিন্তু তিনি দেরি করেন না একটুও, মাঠে নেমে পড়েন। আবুলদা জানেন, কোনো সিস্টেম পণ্ড করতে হলে সেই সিস্টেমের একটা অংশ হতে হয় আগে। তাই তিনি অ্যাসাইনমেন্ট হাতে পেয়েই প্রথমে সোবহানবাগ থেকে দুই ফুল তেহারি আনিয়ে খেলেন, তারপর হাফহাতা গেঞ্জির ওপরে একটা খদ্দরের চাদর আর ধুতি পরে চলে এলেন শহীদ মিনারে। কিছুক্ষণ পর সেখানে হাজির এক পত্রিকার সাংবাদিক। আবুলদা ছলোছলো চোখে ব্যানার দেখে নিয়ে সাংবাদিকের কাছে ঘোষণা দিলেন, ছায়াগাছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সংহতি প্রকাশ করে অনশনে যোগ দিলেন। সরকার তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তিনি বাদামটাও খাবেন না। উপস্থিত অনশনীরা প্রবল হাততালি দিলো। তাদের মনে আশা, একদিন গোটা বাংলাদেশই এভাবে ভুখ হরতাল করতে শহীদ মিনারে চলে আসবে। এক অনশনীর হাতে একটা ছাতা খুলে ধরিয়ে দিয়ে আবুলদা বললেন, "একটু ধরো তো বাবা। একটু ছায়ায় বসি। বয়স হয়েছে তো, রোদ সহ্য হয় না।" অনশনী ছাত্র কষ্টেসৃষ্টে প্রবীণ কমরেডের মাথায় ছাতা ধরে। কিছুক্ষণ নিরিবিলি ঝিমিয়ে আবুলদা বলেন, "ত্যাগ। তিতিক্ষা। এসব ছাড়া কোনো মহৎ কর্ম সাধন হয় না। গান্ধীজিকে দেখো। আহা। জীবনে বিলাস কী, আয়েশ কী, জানতেই পারলেন না। তিতা শাক দিয়ে রুটি খেয়ে আর হাফনেংটো থেকে কাটিয়ে দিলেন জীবনযৌবন। আর ছাগলের দুধ দুইয়ে দুইয়ে চারটি খেতেন, মুড়ি ভিজিয়ে। বাজানেরা কেউ ছাগলের দুধ দুইয়েছো কখনো?" এক অনশনী বহু কষ্টে বলে, "ছাগলের দুধ হয় নাকি?" আবুলদা স্নেহভরে হাসেন। "শহুরে ছেলে তোমরা বাবা। কতকিছু জানো না। ছাগলের দুধ না হলে ছাগলের বাচ্চাগুলি কীসের জন্য লাফায়?" আরেক অনশনী সন্দেহভরে বলে, "ছাগলের বাচ্চা হয় নাকি?" আবুলদা আবার হাসেন, সস্নেহে, বোঝেন, কাজ কঠিন হবে না এখানে। নিতান্ত আবেগী হুজুগে সব পোলাপান, আলমারির সবচেয়ে টাইট গেঞ্জি আর জিন্স পরে চলে এসেছে অনশন করতে, সবার মুখে সানস্ক্রিন, হাতে মোবাইল, সেখানে ফেসবুক খোলা। তিনি বলেন, "হয়। ছাগল তো প্লাটিপাস না যে ডিম দেবে। ছাগলের বাচ্চাও হয়, দুধও হয়।" আরেক অনশনী বলে, "না আঙ্কেল, ছাগলের দুধ দোয়াই নাই কখনো্।" আবুলদা বলেন, "বড় কঠিন কাজ রে বাবা, বড় কঠিন কাজ। প্রথমে ছাগলটাকে বেঁধে নিতে হয়, তারপর অতি সন্তর্পণে, আঙুলে হাফছটাক সরিষার তেল মাখিয়ে তারপর ছাগলের ওলানে হাত দিতে হয়। সে বড় কঠিন কাজ। শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। গান্ধীজি ছাগলের দুধ দোয়ানো শিল্পের আচার্য ছিলেন।" এক অনশনী বলে, "আঙ্কেল কি কখনও ছাগলের দুধ দোয়াইছেন?" আবুলদা উদাস হাসেন। সে হাসির নানার্থ হয়। তারপর বলেন, "গান্ধীজি নিজের হাতে ছাগলের পরিচর্যা করতেন। কাঁঠাল পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়াতেন। যে সিজনে ছাগলের তনুমনে বাসন্তী হাওয়া লাগে, সে সিজনে মদ্দা ছাগল যোগাড় করে দিতে হয় ছাগলকে। ছাগলপালন বড় কঠিন কাজ রে বাবারা।" অনশনী যুবকেরা চুপ করে যায়। একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, "আমাদের সংগ্রামে পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি। উই শ্যাল নট ফ্ল্যাগ নর ফ্লেইল।" গলা খাঁকরে আবুলদা বলেন, "কিন্তু ছাগলের মাংস মোটামুটি স্বর্গীয় একটা বস্তু। যদি ছাগলটাকে বাল্যকালেই খাসি করে নিতে পারো, ভালো। খাসি না করলে ছাগলের মাংসে একটা বোঁটকা গন্ধ হয়। সেই বদবু দূর করতে আবার গোলাপজল দিতে হয়, জাফরান দিতে হয়, মৌরি দিতে হয়, আদা দিতে হয়, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে দোয়া করতে হয়।" কে যেন কেশে ওঠে। আবুলদা আড়চোখে বাকি অনশনীদের হাবভাব কয়েক পলক দেখে নিয়ে বলেন, "কচি ছাগলের মাংস বুটের ডাল দিয়ে রান্না করি কোরবানির সময়। ভালোই হয়। পরোটা দিয়ে খেতে সেইরকম লাগে।" ছত্রধারী অনশনী ছাতা হাতবদল করে। আবুলদা বলে চলেন, পাকিস্তানে যখন গবেষণার কাজে গিয়েছিলেন, তখন পেশোয়ারের এক পাঠান বন্ধু কীভাবে ছাগল কেটে ছাল ছাড়িয়ে লাঠিতে বেঁধে আগুনের আঁচে দিনমান কাবাব করে হাতে গড়া গমের ধোঁয়া ওঠা রুটি সহকারে পরিবেশন করেছিলেন। কীভাবে নারকেল পেড়ে দু'টুকরো করে তার ভেতরে ছাগলের চাক চাক মাংস মশলাসহ ভরে আটার লেই দিয়ে নারকেল জোড়া লাগিয়ে কাঠকয়লার আগুনে ফেলে দিলে নারকেল গলে তেল বেরিয়ে সেই তেলে ছাগলের মাংস রান্না হয়, কী করে আগুন থেকে সেই পোড়া নারকেল তুলে এনে একটা ঠুক্কি দিলে নারকেলের খোলের ভেতর থেকে অপূর্ব সুবাসিত ভুনা মাংস বেরিয়ে আসে। মটরশুঁটি, গাজর, বাসমতী চাল, মুগ-মুসুর-বুটের ডাল আর ছাগলের মাংস দিয়ে কীভাবে হুলুস্থুলু খিচুড়ি তৈরি করা যায়। প্রচুর জিরা আর পেঁয়াজ দিয়ে কীভাবে উজবেক কায়দায় ছাগলভুনা রান্না করে যবের রুটি দিয়ে হামলে খেতে হয়। যৌবনকালে বান্দরবানে এক পাহাড়ি উৎসবে যোগ দিয়ে হেড কারবারির বাড়িতে কীভাবে কেবল আদা, লবণ, কাঁচামরিচ দিয়ে ডলে আস্ত ছাগল বারবিকিউ করেছিলেন, সে স্মৃতিও খানিক রোমন্থন করেন। গ্রিকরা কীভাবে ছাগল আর আলু দুইটার স্বাদই একরকম করে তোলে, সে বর্ণনা অর্ধেক দিতে না দিতেই দূরে সাইরেন শোনা যায় প্যাঁ পোঁ। মন্ত্রী চলে এসেছেন। সঙ্গে পাইকবরকন্দাজ। আবুলদা বলেন, "আরে, তোমাদের সংগ্রাম তো সফল হলো বাজানেরা। মন্ত্রীসাহেব উপস্থিত।" অনশনীরা কিছু বলে না, কেউ কেউ জিভের জল সুড়ুৎ করে গিলে ফেলে। ভারিক্কি মন্ত্রী এসে দাঁড়ান, পেছনে সিকিউরিটি মিডিয়া উৎসুক জনতা সবাই হাজির। মন্ত্রীর এপিএস একটা ঝকঝকে বোতলে পানি এগিয়ে দেন, আর একটা আমড়া। মন্ত্রী সবচে সামনে যে অনশনী, তাকে পাকড়ে ধরে কোলাকুলি করে বলেন, "তোমাদের সংগ্রাম সফল হয়েছে বাজানেরা। আমি এসে গেছি। নাও, পানিটুকু খেয়ে নাও। হাইড্রোজেন আছে, অক্সিজেন আছে। শরীরে কাজে লাগবে।" এপিএস বলে, "আমড়াতে ভিটামিনও আছে।" অনশনী যুবক দ্বিধাভরে আবুলদার দিকে তাকায়। আবুলদা মাথা দুলিয়ে ইশারা করেন, খেয়ে নাও। এরপর বাকিরাও একে একে পানি খায়। আমড়া একটাই আনা হয়েছিলো, তাই তারা আর আমড়া পায় না ভাগে। সাংবাদিকেরা ফটাফট ছবি খিঁচে নেয়। টিভি সাংবাদিকেরা আবুলদার নাকের সামনে বুম ধরে। আবুলদা অনশনক্লান্ত গলায় বলেন, "আমাদের দাবি মানতে হবে।" অনশনী যুবকেরা এরপর ফেসবুকে বিজয় ঘোষণা করে স্ট্যাটাস দিয়ে আবুলদাকে ঘিরে ধরে, "চলেন আঙ্কেল, স্টারে যাই।" আবুলদা উদাস গলায় বলেন, "কাচ্চি?" সবাই সম্মতি দেয়। ৬. আবার চা বলতে হয়। ৭. এভাবেই চলতে থাকে স্মুদ অপারেশন। তেলগ্যাস আন্দোলন, পদ্মাসেতু আন্দোলন, মেট্রো রেল আন্দোলন, অকুপাই ভুরুঙ্গামারি, ধর্ষক শিক্ষকের ফাঁসি, খুনী দুলাভাইয়ের জামিন কেন কর্তৃপক্ষ জবাব চাই, সীমান্তে ফেলানির লাশ, শহরতলিতে ডাস্টবিনে মৃত শিশু, সব আন্দোলনেই অনশনীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন আবুলদা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অকুস্থলে হাজির হয়ে সংগ্রাম সফল করিয়ে দ্যান। শহীদ মিনারের নেশাখোর সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি তাঁর বাড়িতে মিষ্টি আর বুটের হালুয়া নিয়ে দেখা করে আসে। তিনি তার সাথে কিছুক্ষণ আলাপসালাপ করেন। নওগাঁর জেলা প্রশাসকের সাথে তিনি গাঁজার চাষ নিয়ে আলাপ করবেন বলে কথা দেন। পুরান ঢাকার বিরিয়ানি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকও একদিন একটা মাঝারি হাঁড়ি পাঠিয়ে দেন লাল শালু দিয়ে জড়িয়ে। আবুলদা উদাস মনে একটা চীনামাটির বাসনে বিরিয়ানি নিয়ে বারান্দায় বসে খেতে খেতে মহাত্মা গান্ধীর কথা ভাবেন। আহারে লোকটা, একটা টক শো করতে পারলো না আরাম করে। ৮. আমরা এবার উসখুস করি। এত এত চা, এত এত পুরি, এত এত বিল। ঘটনা শেষ হয় না কেন? ৯. পেঙ্গুইনদা অবশেষে একটা ঢেঁকুর তোলেন। তারপর একটা সিগারেট ধরান। পুঁজিবাদী খাদেমগিরি নিয়ে লড়াই। একেবারে গোড়ায় ফিরে যান তিনি। বাংলাদেশে লোকজন সৃজনশীল না। চিনির পাহাড়ে পিঁপড়ার মতো আচরণ করে তারা, একজনের পিছে বাকি সবাই লাইন ধরে। আবুলদার মার্কেটে ভাগ বসাতে নেমে পড়লো এক তরুণ সত্যাগ্রহী। খদ্দরের চাদর, নিম্নাঙ্গে কৌপীন, কৌপীনের নিচে লুক্কায়িত ইউনাইটেড কালারস অব বেনেটনের অন্তর্বাস, ফ্লাস্কে ছাগলের দুধ আর বগলে গান্ধীর জীবনী নিয়ে একদিন সেও হাজির শহীদ মিনারে। আবুলদা তখন নিখিল বাংলাদেশ বাসযাত্রী মোর্চার অনশনে বসে ছাগলের মাংসে কাঁচামরিচ আর আদার ভূমিকার তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব আলোচনায় মশগুল ছিলেন। অদূরে অনশনে ব্যস্ত নিরাপদ ফুটপাত চাই আন্দোলনের কর্মীরা। চোখের কোণ দিয়ে তিনি আরেক খদ্দরধারীকে দেখে বক্তৃতা ভুলে গেলেন। নবাগত সত্যাগ্রহী একেবারে টিভি সাংবাদিক ধরে এনেছে সাথে, ক্যামেরার সামনে সে সাশ্রুনয়নে ঘোষণা করলো, "নিরাপদ ফুটপাথ চাই আন্দোলনের সাথে আমি সংহতি প্রকাশ করছি। আমাদের দাবি যতক্ষণ মেনে না নেয়া হচ্ছে, আমরা দানাপানি ছোঁবো না। শুধু গান্ধীজির স্মরণে এই ফ্লাস্কে কিছু ছাগদুগ্ধ নিয়ে এসেছি, মাঝেমধ্যে দুই চুমুক খাবো। গান্ধীজির স্মরণে, নিজের জন্যে নয়। আমি উপবাসী যোদ্ধা, আমি অনশনের সাধক, ক্ষুধাতৃষ্ণা সকলই মায়া, সকলই গরল ভেল। কা তব কান্তা কস্তে পুত্র, মরণরে তুহুঁ মম শ্যাম সমান, আই জাস্ট কল্ড টু সে আই লাভ ইউ।" আবুলদা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে এগিয়ে গেলেন পাশের অনশনমঞ্চের দিকে। নবাগত সত্যাগ্রহী বয়সে নবীন, তাই সে সময় নষ্টে রাজি নয়। মোবাইলে ঘড়ি দেখে সে মন্দ্রস্বরে শুরু করে, "আহা, গান্ধীজি। জীবনপাত করলেন ছাগলের দুধ দোয়াতে গিয়ে।" আবুলদা খদ্দরের চাদরটা উত্তমরূপে উত্তমাঙ্গে জড়িয়ে নেন। নবাগত সত্যাগ্রহী নিমীলিত নয়নে বলে চলেন, "আহা ছাগল। শুধু কি দুধই দেয় ও? ডিম দেয়, মাংস দেয়, শাকসব্জিও দেয়। বড় উপকারী জীব। তবে ছাগলের ডিম আর ছাগলের শাকসব্জি যেমনই হোক না কেন, ছাগলের মাংস মানবজাতির জন্যে ঈশ্বরের উপহার। সেই ব্যবিলন আমল থেকে লোকে ছাগল মেরে ছাল ছাড়িয়ে খাচ্ছে। কাবাব খাচ্ছে, রোস্ট খাচ্ছে, রেজালা খাচ্ছে, ভুনা খাচ্ছে, বুটের ডাল দিয়ে খাচ্ছে, আলু দিয়ে খাচ্ছে, পরোটা দিয়ে রুটি দিয়ে পোলাও দিয়ে খাচ্ছে। মুগের ডাল আর কুচি কুচি করে ফাড়া মুলা দিয়ে ছাগলের ঝাল-ঝোল খেয়ে দেখেছেন কেউ?" আবুলদা ভালো করে ঠাহর করে দেখেন, নবাগত এই সত্যাগ্রহীকে চেনা চেনা লাগছে। ছায়াগাছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছত্রধারী অনশনী যুবকটিই নয় কি? এ যে তাঁর লেকচারটিকেই মিউটেশন মেরে বাজারে চালিয়ে দিচ্ছে! গুরুমারা বিদ্যা বুঝি একেই বলে? এক ঘরমে দো পীর কি টিকতে পারে কখনও? কিংবা এক বনে দুই বাঘ? এক শহীদ মিনারে দুই সত্যাগ্রহী? নিশ্চয়ই সরকারের ভেতরে কোনো সরকার একে নিয়োগ করেছে। আবুলদা যৌবনে কুস্তির আখড়ায় মুগুর ভেঁজেছেন অনেক, গেণ্ডারি দাঁত দিয়ে এখনও ছুলে খান, সভাসেমিনারে লারমিন শাকির পাশের চেয়ারে বসেন, তাই তিনি তিলেকমাত্র দ্বিধা না করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এই অনুপ্রবেশকারীর ওপর। গান্ধীচর্চায় ক্যু করার শাস্তি যে কবরের আযাবের চেয়েও ভয়ানক, সেটা ব্যাটাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। পেঁদিয়ে ছাল ছালিয়ে নিতে হবে একেবারে। ১০. আমরা বুঝি, গল্প শেষ। চায়ের দোকানের ছোকরাকে ডেকে বিল দিতে বলি। একজন পেঙ্গুইনদাকে জিজ্ঞেস করে, "ঐ নতুন পীরের কী হৈল?" পেঙ্গুইনদা বলেন, "ওর বেশি একটা জখম হয়নি। দুয়েকটা স্টিচ পড়েছে। কিন্তু আবুলদার অবস্থা ভালো নয়। গান্ধীর জীবনী আর ছাগলের দুধের ফ্লাস্ক দিয়ে একেবারে হাত খুলে পিটিয়েছে চ্যাংড়া হতভাগা। অহিংস কুংফু একেবারে।" কে যেন বলে, "নাম কী নতুনটার?" পেঙ্গুইনদা বলেন, "সৈয়দ নাত্থু।"
false
rn
কখন কে হয়েছিল,দিশেহারা এমন করে আমি একা অন্ধকারে কেউ স্রোতা নেই যেনও আপন মনে গান গেয়ে যাই, আমার উপর পৃথিবীর সব মানুষের রাগ -শুধু তুমি ছাড়া। সবাই যে রবীন্দ্রনাথের মতো উদার হবেন তা আমি আশা করি না, রবীন্দ্রনাথের একটা গান আছে -'ফুল তুলিতে ভুল করেছি প্রেমের সাধনে' তুমি অপেক্ষা করো,দিগন্তবেলা আর বসন্তের দিন আমাদের হবে। মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ভালোবাসা,আমার ইচ্ছা করে এই ভালোবাসা'র জন্য একবার নয় হাজার বার জন্মাতে। তুমি যতবার আমার হাতে হাত রাখো,মনে হয় যেন হেঁটে ছুঁয়ে দেব আকাশ। নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে তোমার- পথ চিনে আমি আসব কি তোমার কাছে? মাঝে মাঝে আমাকে শুধু একটু মনে করো আর কিছু চাই না কাছে আসতে পারলাম না সে আমার'ই ব্যর্থতা যিশু'র জীবন এবং কথার মধ্যে ভালোবাসার যা ব্যাখ্যা তা কি তোমাকে শান্ত করে? জানো আমি কবিতা কেন লিখি?কবিতা লিখলেই মনে হয় যেন, তোমাকে স্পর্শ করতে পারছি।আর তখন অদ্ভুত এক আঁধার আমাকে টেনে নিয়ে যায় গভীর অতলে,- তখন আমার বুকে তোমার হাতের স্পর্শ পাই। আমি জানি,তুমি আর সবার মতো কোনো দিন'ই আমার ওপর রাগ করবে না, ঘৃনা করবে না-শুধু ভালোবেসে সিম প্যাথিটিক্যালি গাইড করবে। তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখতে গেলেই আমি নিজের উপর নিয়ন্তন হারিয়ে ফেলি, মনে হয় যেন শব্দ গুলো,মনে আসার আগে কলমে এসে যায়। গভীর রাতে কারন ছাড়াই তোমার জন্য চোখ ভিজে যায় বুক ভরে উঠে হাহাকারে।তাই এখন শুধু প্রতিনিয়ত নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ। কিন্তু অদৃশ্য হাতের ইশারায় আমার কলম চলে দ্রুত। আমার আজন্ম ভীতু মনটা আমাকে আমার যাবতীয় সুখ,ঐশ্বর্য চাহিদার কোষাগার থেকে দূরে রাখে। অস্থির মনটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। আমি ভীষন দুর্বল,শূন্য,অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনাহীন আমি একলা বোধ করি এবং তোমাকে মনে পড়ে। তোমার পাশাপাশি থাকার বিনিময়ে আমি আমার সমস্ত পৃথিবী ছেড়ে দিতে পারি, ইচ্ছা করে মন্দির মসজিদ গীর্জা সব ভেঙ্গে চুরমার করে দেই। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার ইশ্বরকে কে দিল? কেউ বুঝতে পারবে না এতো বড় একটা বিয়োগান্ত নাটকের আমি হিরো। আমার জীবনে যে তোমার ভুমিকা কতখানি তা আর কেহ জানে না তোমার হাতের ছোঁয়া পেলে হয়তো একদিন আমিও হতে পারতাম দ্বিতীয় জীবনানন্দ দাস! আচ্ছা,তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? ফুসফুস ভরে বাতাস টেনেও তৃপ্তি মিলে না তুমি যে আমার অন্তযার্মী তা কিন্তু এমনি এমনি নয়। এই মাঝরাতে মনে হয়,পৃ্থিবীটা কি নির্জন! আমি তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি তা তুমি কোনো দিনও জানবে না, তোমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তুমি আমার দিকে একবার তাকাও - চোখ রাখো চোখে আর, একবার বলো- আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত'ই তো আনন্দের। তাহলে আমার সব পাপের অবসান হবে সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৬
false
ij
হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা ইটকাঠের শহরের বাইরে যে বাংলা -বিশাল বাংলা- সেই নদী বিধৌত সবুজে আজও পবিত্র প্রাণ অনন্তের স্বর্গীয় দূতের আবির্ভাব হয়। তাঁরা গানে গানে মূখর করে তোলেন বাংলার পথ ও প্রান্তর- মনে করিয়ে দেন আবহমান বাংলার প্রেম ও ভক্তিমূলক শ্বাশত বাণী। যুগ যুগ ধরে লোকজ বাংলার জনমানুষ অপেক্ষা করে থাকে কখন তেমনি এক স্বর্গীয় দূতের আবির্ভাব হয়। তেমন হলে শাঁখ বাজিয়ে বরণ করে নেবে। তারপর সে অলীক জন্মের পর পবিত্র প্রাণটি মুঠো মুঠো সাদা খই ছড়ায়ে হেঁটে বেড়ান গ্রাম্য প্রান্তরের পথে। গান গান। তাঁর গানে কাতর হয় পাখি। এক সময় দূরের নক্ষত্রের ইশারায় দূর নক্ষত্রের দেশে তিনি হারিয়ে যান। তারপর তিনি হয়ে ওঠেন কিংবদন্তী। তারপর মানুষের মুখে মুখে ফেরে তাঁর অলৈকিক বৃত্তান্ত। দক্ষিণ বাংলার হরিচাঁদ ঠাকুর সেরকমই একজন। দক্ষিন বাংলায় পৃথিবীখ্যাত একজন রাজনৈতিক নেতার জন্ম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু। দক্ষিন বাংলায় পৃথিবীর শুদ্ধতম একজন কবির জন্ম হয়েছে। জীবনানন্দ। দক্ষিন বাংলায় বিশ্বমানের একজন আধ্যাত্মিক নেতার জন্ম হয়েছে। যার নাম বাংলাদেশের মূলস্রোতে আলোচ্য নয় । এই আক্ষেপ। আজ এই আক্ষেপ খানিক দূর করি। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম দক্ষিণ বাংলার গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি গ্রামে। পিতা যশোমন্ত ঠাকুর ছিলেন মৈথিলী ব্রাহ্মণ এবং নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব। ১৮১১ সনের ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষীয় ত্রয়োদশীতে তাঁর ঘর আলো করে একপুত্র সন্তান জন্মাল। যশোমন্ত ঠাকুর পুত্রের নাম রাখলেন হরি। ফুটফুটে শিশু। দিনে দিনে বড় হতে লাগল শিশু হরি। বালকবয়েসে সম্ভবত বালক হরির ওড়াকান্দির পাঠশালায় যেতে ভালো লাগত না। না লাগারই কথা। যিনি সমস্তই জানেন পাঠশালায় তিনি কী শিখবেন! মধুমতি নদীটি বাড়ির কাছেই । বালক ধূলোমলিন পথে হাঁটে। একা। হাঁটে আর তার ভিতরে এই বোধ জন্ম লয়: আমরা দেখেছি যারা নিবিড় বটের নিচে লাল লাল ফল পড়ে আছে; নির্জন মাঠের ভিড় মুখ দেখে নদীর ভিতরে; যত নীল আকাশেরা রয়ে গেছে খুঁজে ফেরে আরো নীল আকাশের তল ... (মৃত্যুর আগে। জীবনানন্দ দাশ) বালক হাঁটে। হাঁটে আর তার ভিতরে এইসব বোধ জন্ম লয়। নদীর ধারে প্রান্তর। প্রান্তরের ওপর আশ্বিনের ফিরোজা রঙের আকাশ। প্রান্তর ঘিরে নীল সবুজ গাছপালা। বুনো কেতকীর ঘ্রান। ঘুঘুর ডাক। বালক দ্রুত হাঁটে। মাধব অপেক্ষা করছে। মাধব রাখাল। রাখাল মাধব হরির বন্ধু। হরির রাখাল বন্ধু। হরি গোরু প্রান্তর আর রাখাল বালকেরে ভালোবাসে। ভালোবাসে তালতমালের বন, রোদ, গাছের ছায়া, পূর্বাহ্নের প্রান্তরের নীরবতা, উদাস দুপুর, ডাহুকের ডাক, হাম্বাধ্বনি। হরি বাংলার মাঠপ্রান্তর ভালোবাসে। মাঝিপাড়ার শ্যামলও তার বন্ধু। সে আর শ্যামল গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে । বালক হরির চোখে বিস্ময়। মানুষের ঘরবাড়ি রোদ কলাগাছ। মৈথিলী ব্রাহ্মণ ঘরের সন্তান বালক হরি। তাতে কী। সমাজে যে কত রকমের ভেদ। হরি উচুঁ নীচু সকল দলের সঙ্গেই মিশে যে! ফুটফুটে বালক। অন্যরকম। মধুর ব্যবহার ! লোকে আকৃষ্ট হয়। পরোপকারী । এক দিন ... লোকে ভাবে: ‘বামুনের ঘরে জন্ম-চন্ডালের হাতে জল খায়। এ সাক্ষাৎ ভগবান।’ হরি গান ভালোবাসে। রাত জেগে নামকীর্তন শোনে। গানের ব্যপারটা বোঝে সে। বিশেষ করে ভজন। বয়স বাড়ছে হরির। সঙ্গে সঙ্গে ভাবুকতাও বাড়ছে। এক বর্ষায় বাবার সঙ্গে নদীয়ার মায়াপুর থেকে ঘুরে এল। এক ফুটফুটে জোছনারাতের চাতালে শুয়ে আছে। ঘুমের ভিতরের স্বপ্নে দেখা দিলেন স্বয়ং চৈতন্যদেব! তরুণ হরির ঘুম ভেঙ্গে গেল। যা বোঝার ছিল বুঝল। ঠিক করল:ওড়াকান্দি ফিরে শ্রীচৈতন্য যা যা প্রচার করে গেছেন সেও তাই প্রচার করবে। তারপর ওড়াকান্দি ফিরে চৈতন্যদেবের প্রেমভক্তির কথা সহজসরলভাবে প্রচার করতে লাগল হরি। কখন যে সেসব তার নিজের কথা হয়ে যায়! ২ চৈতন্যদেবের কথা বলতে বলতে হরিচাঁদ মাতোয়ারা হয়ে যেতেন। তারপর তিনি যা যা বললেন সে সবই কালক্রমে হয়ে গেল মতুয়াবাদ। যিনি হরির কথায় মাতোয়ারা হন তিনিই মতুয়া। মতুয়া শব্দের অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা হওয়া হরিনামে যিনি মেতে থাকেন বা মাতোয়ারা হন তিনিই মতুয়া। লোকে তাঁর অনুসারীদের বলল মতুয়া। স্থানীয় ভাষায়: মউত্তা। কত যে শিষ্যশিষ্যা ভিড় করল ওড়াকান্দি গ্রামে। তারা প্রায় প্রত্যেকেই নিম্নবর্গীয় শ্রেণির। ভক্তরা হরিচাঁদকে বিষ্ণুর অবতার মনে করল। তাঁরা নেচে নেচে গাইল- রাম হরি কৃষ্ণ হরি হরি গোরাচাঁদ সর্ব হরি মিলে এই পূর্ণ হরিচাঁদ। হরিচাঁদের নাম কখন যে হয়ে গেল হরিচাঁদ ঠাকুর। দূরদূরান্ত থেকে তাঁর কাছে শিষ্যরা আসে। শিষ্যারাও। শিষ্যরা বলে-জ্ঞান দেন প্রভূ। হরিচাঁদ ঠাকুর বলেন, বৈদিক ক্রিয়াকর্মে আস্থাশীল হওয়া ঠিক না। একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হওয়াই যুক্তিসম্মত। জীবনের লক্ষ হইল প্রেম ও ভক্তি দ্বারা হরির সাধন । আর সাধনমার্গে নারীপুরুষের অধিকার সমান । এই কথায় সমবেত ভক্তবৃন্দের মাঝে গুঞ্জন উঠল। হ্যাঁ, নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রেমধর্মের প্রচার করতে পারে। হরিচাঁদ ঠাকুরের কন্ঠস্বরে দৃঢ়তা। তিনি আরও বললেন, মতুয়া ধর্মের প্রচারককে বলবা গোঁসাই। মাধবী নামে এক সদ্য বিধবা তরুণী উঠে বলল-আমি গোঁসাই হব ঠাকুর। তুমি গোঁসাই হবে? -সে তো ভালো কথা মা। হরিচাঁদ ঠাকুরের কন্ঠে আনন্দধ্বনি। মতুয়া সম্প্রদায়ের নারীরা হরিচাঁদ ঠাকুরকে যা বলার বলেছিল। কাজেই, হরিচাঁদ ঠাকুর বিবাহকে উৎসাহিত করলেও বাল্যবিবাহের কঠোর বিরোধীতা করলেন। ১৮৭৭ সালে হরিচাঁদ ঠাকুরের মৃত্যু। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যু ১৮৯১। বিধবা বিবাহের বিষয়ে হরিচাঁদ ঠাকুরের বক্তব্য কী ছিল -সে বিষয়ে জানা না গেলেও বাল্যবিবাহের কঠোর বিরোধীতা তাঁর সমাজচেতনার প্রমান। যাক। হরিচাঁদ ঠাকুর ভক্তদের বললেন, মতুয়া ধর্মের ভিত হইল প্রেম সত্য ও পবিত্রতা। আর, সকল মানুষ সমান। আমরা হইলাম জাতিভেদ বিরোধী। বোসছো। আমরা সক্কলে নিুবর্গীয়। তাই থাকমু। যাক, অনেক কথা হইল। এখন গান ধরো কেউ। হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রর্থনাসভায় অনিবার্য ছিল গান। গান ভক্তরাই রচনা করত। সেই গানকে এখন বলা হয় মতুয়া সঙ্গীত। সে গানে থাকত হরিনামের মাহাত্ম । কখনও কখনও হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রশংসাও থাকত। ভক্তরা হরিচাঁদকে বিষ্ণুর অবতার মনে করে। সে রকম একটি গানের চরণ এইরকম: হরি তোমার নামের মধু পান করল না মন-ভ্রমরা গানে প্রেম ও ভক্তিরসের প্রাধান্য। প্রতিটি গানের শেষে ভনিতায় রচয়িতার নাম আছে। ভক্তরা নেচে নেচে গান পরিবেশন করে। গানের সঙ্গে সঙ্গে বাজে ঢাক, শিঙ্গা ও ঝাঁঝর। গাইতে গাইতে নাচতে নাচতে অনেকেই মূর্চ্ছা যায় ... কী সুখ কী সুখ -এই সম্মিলিত জীবনের। এদের রাত নির্ঘূম কাটে না। এরা শাকভাতেই সুখি। এদের ঘুমের অষুধ খেতে হয় না। এরা ঘুমের সুখ পায়। যে কারণে এরা বিচ্ছিন্ন ও ধনী হতে চায় না। এরা দীঘির অতল রহস্য বোঝে ও দীঘির অতল রহস্য ভালোবাসে। এরা জানে: সুইমিংপুলে রহস্য নাই। যে কারণে এরা সুইমিংপুল চায় না। (সুইমিংপুল চিনেও না)। এরাই বাংলা- বাংলাদেশ ... কাজেই বাংলা কখনও ধনী হবে না। এখানে গানওয়ালা স্বর্গীয় দূতের জন্ম হয়। যারা দান করেন গান (ধন নয়) ও সম্মিলিত জীবনের সুখ। এদের আগমন সম্ভব করার জন্য বাংলার অবারিত প্রান্তর রাখাল আর দীঘি থাকবে। চিরকাল। বাংলা কাজেই কখনও ধনী হবে না। বিচ্ছিন্ন অসুখি ও ধনী হবে না। ৩ ১৮৪৭ সালের নভেম্বর মাসে কবিয়াল তারকচন্দ্র সরকার জন্ম নড়াইল জেলার জয়পুর গ্রামে । কবিয়াল তারকচন্দ্র সরকার ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুরের একজন ভক্ত। হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবন ও আদর্শ নিয়ে কবিয়াল শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত গ্রন্থ রচনা করেন। এটিই মতুয়াদের পবিত্র গ্রন্থ। এই গ্রন্থ পাঠ ছাড়াও মতুয়ারা হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা মেনে চলে। হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা: ১/ সদা সত্য কথা বলবে। ২/ পিতা-মাতাকে দেবজ্ঞানে ভক্তি করবে। ৩/ নারীকে মাতৃজ্ঞান করবে। ৪/ জগৎকে ভালোবাসবে। ৫/ সকল ধর্মের প্রতি উদার থাকবে। ৬/ জাতিভেদ করবে না। ৭/ হরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে। ৮/ প্রত্যহ প্রার্থনা করবে। ৯/ ঈশ্বরে আত্মদান করবে। ১০/ বহিরঙ্গে সাধু সাজবে না। ১১/ ষড়রিপু বশে রাখবে। এবং ১২/ হাতে কাম ও মুখে নাম করবে। হরিচাঁদ ঠাকুর সন্ন্যাস-জীবনে বিশ্বাসী ছিলেন না; তিনি সংসার করেছেন। ১২ সংখ্যক আজ্ঞাটি লক্ষ করুন। সংসারধর্ম পালন করেই ঈশ্বরপেমের বাণী প্রচার করেছেন হরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি বলতেন- গৃহেতে থাকিয়া যার হয় ভাবোদয় সেই যে পরম সাধু জানিও নিশ্চয়। ১৮৭৭ সালের ২৩ ফাল্গুন। বুধবার। হরিচাঁদ ঠাকুর ইহলীলা সংবরণ করেন। ৪ মতুয়ারা বাংলাদেশের সব জায়গায় বাস করে। এমন কী পশ্চিমবঙ্গেও। মতুয়াদের প্রধান মন্দিরটি ওড়াকান্দি গ্রামে। জন্মতিথিতে প্রতিবছর ওড়াকান্দিতে দেশবিদেশের মতুয়ারা সম্মিলিত হন এবং হরিচাঁদ প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পশ্চিমবাংলার মতুয়ারা সীমান্ত পার হয়ে আসে। আসলে সীমান্ত পার হয়ে আসে না। বাংলা বরাবরই একই রকম রয়ে গেছে। মতুয়াদের সম্বন্ধে একজন ঐতিহাসিক লিখেছেন: : The community observes Wednesday as the day of communal worship. The gathering, which is called 'Hari Sabha' (the meeting of Hari), is an occasion for the Matuya to sing kirtan in praise of Hari till they almost fall senseless. musical instruments such as jaydanka, kansa, conch, shinga, accompany the kirtan. The gonsai, garlanded with karanga (coconut shell) and carrying chhota, sticks about twenty inches long, and red flags with white patches, lead the singing. (বাংলাপিডিয়া) ৫ এবং আমরাও ফেব্রুয়ারি মাসে কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে যেতে পারি। আমরা ওখানে গেলে আমাদের মনের নিরানন্দভাব কাটতে পারে। আমরা যদি ওড়াকান্দিতে না যাই তো মতুয়াদের কী ক্ষতি হবে? ক্ষতি যা হবার আমাদেরই হবে। আমাদের মনের ক্ষতি হবে। বাংলার এখন এক মহাবিপর্যয় চলছে। বাংলা তার একান্ত ভাবদর্শন হারাতে বসেছে! যখন পশ্চিমের অনেকেই বাংলার আধ্যাত্মিক দর্শনের দিকে ঝুঁকছে-আমরা তখন ওদের দিকেই ঝুঁকছি। ঔপনিবেশিক শোষনে বাংলা তার 'ধন' হারিয়ে আর্তনাদ করেনি-এখন নয়া ঔপনিবেশিক শোষনে ‘ভাব’ হারিয়ে আর্তনাদ করছে। আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শন এখন ‘নিউ এজ’ দর্শনে এসে ঠেকেছে। নিউ এজ দর্শন যেমন আধুনিক পদার্থবিদ্যার সাম্প্রতি গবেষনায় কৌতূহলী- তেমনি এটি গভীর আধাত্ব্যবাদী। নিউ এজ দর্শন যুক্তির ভারে আচ্ছন্ন মানুষের মনের নিরানন্দ ভাব কাটাতে সাহায্য করছে। বলে রাখি, পৃথিবীর নিরানন্দ মানুষের জন্য যা যা দরকার- তার সবই আছে ওড়াকান্দি গ্রামের হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনসাধনায়। সূত্র: বাংলাপিডিয়া। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৪৮
false
hm
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও জন্মদিন রহস্য কিংকু দারোগা বললেন, "স্যার, এ নির্ঘাত বদরু খাঁর কাজ!" গোয়েন্দা ঝাকানাকা একটু চিন্তিত মুখে বললেন, "না মনে হয়!" কিংকু চৌধারি বললেন, "দেখুন না স্যার, কী নৃশংস কারবার! নির্ঘাত বদরুর কাজ!" মেঝেতে চিৎপাত হয়ে পড়ে আছে ভিকটিম (নাম বলা বারণ)। মাথার পেছনটা থেঁতলে গেছে একেবারে। পাশেই পড়ে আছে অস্ত্রটা। ঝাকানাকা সাবধানে তুলে নিলেন সেটা। একটা বাংলা অভিধান। কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, ডেডব...[justify] কিংকু দারোগা বললেন, "স্যার, এ নির্ঘাত বদরু খাঁর কাজ!" গোয়েন্দা ঝাকানাকা একটু চিন্তিত মুখে বললেন, "না মনে হয়!" কিংকু চৌধারি বললেন, "দেখুন না স্যার, কী নৃশংস কারবার! নির্ঘাত বদরুর কাজ!" মেঝেতে চিৎপাত হয়ে পড়ে আছে ভিকটিম (নাম বলা বারণ)। মাথার পেছনটা থেঁতলে গেছে একেবারে। পাশেই পড়ে আছে অস্ত্রটা। ঝাকানাকা সাবধানে তুলে নিলেন সেটা। একটা বাংলা অভিধান। কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, ডেডবডির পাশে একটা চিরকুট পড়ে আছে!" ঝাকানাকা চিরকুটটা তুলে নিয়ে ভুরু কোঁচকালেন। কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, কিছু বুঝলেন?" ঝাকানাকা এগিয়ে গিয়ে একটা ডায়রি তুলে নিলেন টেবিল থেকে। ভিকটিমের নিজের ডায়রি। একটা ড়্যাণ্ডম পাতা খুলে পড়তে শুরু করলেন তিনি। ১৫ মে, ২০০৯। আজ কলিগ মিস চম্পা চামেলিকে জোরজার করে কষে চুমু খেয়েছি নির্জন লিফটে। প্রথমটায় খুব বাধা দিচ্ছিলো, পরে পোষ মেনে গেলো ...। কিংকু চৌধারি উত্তেজিত হয়ে বললেন, "স্যার! নারীঘটিত কেস মনে হচ্ছে!" ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে পৃষ্ঠা উল্টে আরো পড়তে লাগলেন। ১৭ জুন, ২০০৯। আজ বাড়িওয়ালার মেয়ে বুবলিকে জোরজার করে কষে চুমু খেয়েছি নির্জন লিফটে। প্রথমটায় খুব বাধা দিচ্ছিলো, পরে পোষ মেনে গেলো ...। কিংকু চৌধারি আরো উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। "স্যার, এ তো দেখছি নাম্বার ওয়ান লুল্পুরুষ!" মেঝেতে পড়ে থাকা দেহটার দিকে কটমটিয়ে তাকান তিনি। ঝাকানাকা বললেন, "আবার জিগস!" তারপর ডায়রিটা খটাশ করে বন্ধ করে তিনি বললেন, "হাতের লেখা মিলিয়ে দেখলাম। চিরকুটটা ওরই লেখা।" কিংকু চৌধারি বললেন, "চিরকুটে কী লেখা আছে স্যার?" ঝাকানাকা পড়তে লাগলেন, "পাশের ফ্লাটের অরুনা ভাবীকে জোরজার করে কষে চুমু খাওয়া প্রতিবেশি হিসাবে আমার দ্বায়িত্ব। কারন অরুনা ভাবী সারাক্ষন গোমরা মুখে ঘুরাফিরা করেন ...।" কিংকু চৌধারি মহা উত্তেজিত হয়ে বলেন, "স্যার! এ নির্ঘাত অরুণা ভাবীর স্বামীর কাজ!" ঝাকানাকা বললেন, "এত জলদি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক নয়!" চিরকুটটা ওল্টান তিনি। সেখানে গুটি গুটি হাতে লালকালিতে লেখা, অরুনা নয়, অরুণা। প্রতিবেশি নয়, প্রতিবেশী। দ্বায়িত্ব নয়, দায়িত্ব। কারন নয়, কারণ। সারাক্ষন নয়, সারাক্ষণ। গোমরা নয়, গোমড়া। ঘুরাফিরা নয়, ঘোরাফেরা। লাম্পট্য দোষের কিছু নয়, কিন্তু বানানের প্রতি যত্নবান না হওয়া ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ! Die Bad Boy, Die! ঝাকানাকার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। চিরকুটটা তিনি কিংকু দারোগার হাতে দিয়ে বলেন, "মূলত পাঠকের কাজ!" নানা গুণে গুণী সচল, মূলত পাঠক ওরফে রাজর্ষি দেবনাথের জন্মদিন আজ। তাঁকে জানাই শুক্না অভিধানের শুভেচ্ছা।
false
mk
হরতাল কোন গণতান্ত্রিক পন্থা নয়___ হরতাল পালনের নামে বিরোধী দল দেশব্যাপী চালায় ভাঙচুর আর জ্বালাও-পোড়াও’র রাজনীতি। দু’দশক ধরে সব হরতালই হয় শক্তি প্রদর্শনের মহড়া হিসাবে। আমাদের দেশে হরতাল কালচার আমদানি করেছিলেন জননেতা মওলানা ভাসানী। তখন স্বতঃস্ফূর্ত এবং জনমুখী ছিল হরতাল। তখনকার হরতাল ছিল পাক শাসকদের (শোষক) মোকাবিলার লক্ষ্যে। তখন আমজনতা নিজেরাই হরতাল পালন করত, হরতাল পালনের জন্য কাউকে বাধ্য করা হতো না। সে হিসাবেই, হরতালকে বলা হয় গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু হরতালের নামে এখন চলছে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর আর লুটতরাজ এটাও কি গণতান্ত্রিক অধিকার? যারা যখন সরকারে থাকেন তখন হরতালের বিরুদ্ধে থাকেন। তখন তারা বুঝতে পারেন, হরতালে দেশের ক্ষতি হয়, প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। বিরোধীদলকে এসব বিষয়ে জ্ঞান দান করতে থাকেন। প্রকৃত অর্থে হরতালের ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে থাকে। হরতালে দেশের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির একটা হিসাব পাওয়া যায় ইউএনডিপির স্থানীয় গবেষণা থেকে। ২০০৫ সালে প্রকাশিত ইউএনডিপির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯০-১৯৯১ অর্থবছর থেকে ১৯৯৯-২০০৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়কালে বাস্তবায়িত হরতালের কারণে প্রতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গড়ে ক্ষতি হয়েছে ৮৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা! কেন হরতাল সফল হয়, কীভাবে হয় তা আর সাধারণ মানুষের জানতে বাকি নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেটা জানে না তা হলো, কর্মনাশা হরতাল আদৌ কি তাদের কোনো স্বার্থ রক্ষা করতে পারে? সমস্যা সমস্যার জায়গাতেই থাকে। বরং হরতাল সমস্যাটাকে আরও ঘণীভূত করে; আরও প্রকট করে। নিছক ক্ষমতার লড়াইয়ের অংশ হিসেবে, এক দলকে হটিয়ে আরেক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশব্যাপী হরতাল ডেকে জনগণকে তাদের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা সংবিধানে প্রদত্ত ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’-এর পর্যায়ে পড়ে না। এতে হরতাল আহ্বানকারীদের কথিত ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’-এর নামে বাদবাকি জনগণের ‘গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার’ হরণ করা হয়। বস্তুত আমাদের দেশে এখন যে ধরনের হরতাল হয় তা রাজনৈতিক সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছুই নয়। হরতাল সাংবিধানিক অধিকার নয়, এমনকি ‘গণতান্ত্রিক’ বা ‘নাগরিক’ অধিকারও নয়। হরতাল হচ্ছে প্রকৃত অর্থে ‘আইন অমান্য করার আন্দোলন’। সংবিধান কোনো নেতা-নেত্রী বা কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে এভাবে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত করার, কিংবা রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করার অধিকার কখনই দেয়নি। সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার কোথাও হরতালকে ‘সাংবিধানিক অধিকার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়নি। সাংবিধানিক অধিকার, নাগরিক অধিকার যে কোনো অর্থে হরতাল নামের এ ভয়াল আতঙ্ক কোনো অধিকারের মধ্যেই পড়ে না। এমতাবস্থায় হরতাল নামক তথাকথিত গণতান্ত্রিক অধিকারের সংস্কার-আধুনিকায়ন করে বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে। এতে জনভোগান্তি দূর হবে, কল্যাণ-স্বস্তি ফিরে আসবে জনগণের মাঝে।
false
fe
সরকারের নমনীয়তা কি কোনো দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ! সরকারের নমনীয়তা কি কোনো দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ!ফকির ইলিয়াস==========================================আর কতো রক্ত চায় একাত্তরের পরাজিত সেই হায়েনারা? তারা পুলিশ হত্যা করছে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীকে জিম্মি করে লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। দেশের রেললাইন বারবার উপড়ে ফেলছে। বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দিচ্ছে। বাসে যারা যাত্রী হয়, এরা সাধারণ মানুষ। তাদের কী অপরাধ? এসব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। হ্যাঁ, জবাব জানেন বেগম খালেদা জিয়া। তার ক্ষমতা দরকার। তার তনয় তারেক রহমান ওমরাহ করতে গিয়েছেন। তার সাথী কারা হয়েছেন, তা আমরা পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। তারেক রহমানের সৌদি আরবে সাথী হয়েছেন, ওমরাহ পালনে তার সঙ্গীদের তালিকায় রয়েছেন এক সময়ের হাওয়া ভবন খ্যাত বিতর্কিত ব্যক্তিরা। এ বিতর্কিতরা হলেন- তৎকালীন হাওয়া ভবনের মুখপাত্র আশিক ইসলাম, তারেকের পিএস মিয়া নুরুদ্দীন অপু, হাওয়া ভবনের কর্মকর্তা আখতার আহমেদ বেলায়েত, সাজ্জাদুল সিরাজ তালুকদার ওরফে জয়, ডা. আমানসহ আরো অনেকে। ওই সময়ের বিতর্কিত সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্যও ওই তালিকায় রয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য তৈরি হচ্ছেন। তা বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়। এই যে প্রস্তুতি চলছে, এর বিপরীতে বর্তমান সরকার কী করছেÑ তা মানুষ জানতে চাইছে। মানুষ জানতে চাইছে, আর কতো প্রাণ গেলে এদেশে সেই একাত্তরের হায়েনাদের প্রেতাত্মারা ক্ষান্ত হবে! বিএনপির গুলশানের কার্যালয়ে গুলি করা হয়েছে। এটা কে করেছে? তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার বলতে পারবে না, এটা বিরোধী দলের ক্যাডাররাই করেছে। যদি করেই থাকে, ওদের পাকড়াও করা হচ্ছে না কেন? বিএনপি, একাত্তরের পরাজিত রাজাকারদের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তা কারো অজানা নয়। রাজাকার কাদের মোল্লার আপিলের শুনানি যখন শুরু হয়েছে, তখন বিএনপির আইনজীবীরা কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তা দেশবাসী দেখেছে। তারা একাত্তরের সকল যুদ্ধাপরাধীর মুক্তি চান বিনা শর্তে। এটাই তাদের মুখ্য চাওয়া। এর সঙ্গে কোনো আপোস তারা করবেন না। বেগম জিয়ার এই যে ‘আপোসহীন’ মনোভাব তার বিপরীতে সরকার কী করছেÑ তা জানতে চান দেশের মানুষ। গণজাগরণ মঞ্চের আয়োজকরা এক কোটিরও বেশি মানুষের স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি দিয়েছেন স্পিকারকে। এই যে মানুষের আকাক্সক্ষা, তার কী মূল্যায়ন করছে মহাজোট সরকার তা জানতে চান দেশের মানুষ। বছর যতোই গড়িয়ে যাক না কেন, নাৎসিদের বিচার হতে পারলে বাংলাদেশের রাজাকারদেরও বিচার হওয়া দরকার। যা এই সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারও বটে। তাই আর কতো রক্ত দিয়ে এই দাবি পূরণ করতে হবে তা জানতে চাইছে এদেশের মানুষ। হরতাল এই দেশে একটি মারাত্মক রাজনৈতিক-সামাজিক ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। কোনো দেশের সত্যিকার উন্নয়ন চাইলে সে দেশে হরতাল চলতে, চালাতে দেয়া যায় না। ৪২ বছর বয়সী বাংলাদেশে হরতাল আদৌ প্রয়োজন কিনা তা নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে। আমরা জানি, আওয়ামী লীগ মনে করে তারা যদি ক্ষমতা হারায়, তবে এই হরতালকে তাদেরও হাতিয়ার হিসেবে দরকার। কিন্তু দেশের সত্যিকার উন্নয়ন চাইলে আইন করে হরতাল বন্ধ করা যাবে কিনা তা ভেবে দেখা উচিত। এই দেশে যারা জঙ্গি মতবাদী, তারা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এমন কী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে ঘায়েল করার জন্য হরকাতুল জিহাদ নামের সংগঠন তৎপর রয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃত হুজিরা গোয়েন্দাদের বলেছে। তারপরও সরকার কেন সাঁড়াশি অভিযানে নামছে না, তা দেশের মানুষ অনুধাবন করতে পারছেন না। মনে রাখতে হবে, বিদেশী অনেক সংস্থা আগেই জানিয়েছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশকে মৌলবাদী জঙ্গিরা উর্বর ভূমি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতার সুযোগে ওরা এই কাজটিই সম্পন্ন করতে চাইছে। তাদের জঙ্গিবাদী পেশি দেখাতে চাইছে। জঙ্গিবাদের ধারা একটাইÑ রাষ্ট্রক্ষমতা চাই। না হয় কাউকেই শান্তিতে থাকতে দেবো না। আজ ডানপন্থী যারা এই জঙ্গিবাদীদের মাথায় তুলেছেন, একদিন জঙ্গিরা তাদেরই টাই-স্যুট খুলে নেবে। কিংবা মাথায় ঘোমটা পরিয়ে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করবে। বিশ্ব ইতিহাস সে সাক্ষ্যই দেয়। আমরা জানি এসব জানার পরও বাংলাদেশের ডানপন্থীরা বলবেন, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। যে মহলটি আজ বারবার সেনাবাহিনীকে এগিয়ে এসে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে নেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে, তাদের দলের জন্ম ব্যারাকে। এই সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যই পনেরো আগস্টের নির্মম হত্যাকা- ঘটিয়েছিল। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সরাসরি সামরিক শক্তির উৎস থেকেই রাজনৈতিক পরিচয় পেয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষ সামরিক শাসনকে মেনে নেননি। তারা মেনে নেননি, ওয়ান-ইলেভেনও। তাই বাধ্য হয়েই দেশকে গণতন্ত্রের পথে চালিত করতে হয়েছে। দেশের মানুষের বিজয় হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না, বিশ্ব প্রেক্ষাপটের পরিক্রমা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে মাথা ঘামাবে। কারণ রাজনীতির উদ্ভূত সমস্যা, রাজনীতিকদেরই সমাধান করতে হবে। কিন্তু তারা যদি ব্যর্থ হন, তারা যদি আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করতে না পারেন, তাহলে অবস্থা কেমন হবে তা দেখতে আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। না, মহাজোট তার মেয়াদের আগে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে এমন কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আমি মনে করি না। বিএনপি-জামাত ছাড়েনি। বরং ইয়াজউদ্দিন সরকার গঠন করে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া ছিল হাওয়া ভবন। তাহলে আজ মহজোটকে হটানোর কথা বলা হচ্ছে কেন? দেশ তো ‘বাংলাভাই-শায়খ রহমানের’ দাপটের সময়ের কথা ভুলে যায়নি। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে বলেই একাত্তরের হায়েনারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিক্ষা ক্ষেত্রের ব্যাপক উন্নতি, চিকিৎসার অগ্রগতি, সর্বোপরি মানুষের হাতে কিছু না কিছু টাকা এসে সচ্ছলতা দিয়েছে। এই উন্নতি তো খাটো করে দেখার নয়। হ্যাঁ, যারা এই দেশে লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথা বলছেন তারা মূলত রাজাকার-আলবদরদের মুক্তি চেয়ে, ওদের নিয়েই নির্বাচন করতে চাইছেন। তা বাংলাদেশের মানুষ কতোটা মেনে নেবেÑ আদৌ মেনে নেবে কিনা তা দেখার বিষয়। এদিকে সরকার আসলে কতোটা সাহস ও শক্তি নিয়ে এগোচ্ছে, তা ও হতাশ করছে দেশের মানুষকে। খবর বেরিয়েছে, দেশের ৮৪ জন ব্লগারের নামের তালিকা নাকি প্রকাশ করেছে সরকার পক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নাস্তিকতাবাদী লেখালেখি করেন কিংবা করেছেন। কোনো ধর্মকে আঘাত করে লেখা, কোনো প্রকৃত লেখকের কাজ বলে আমি মনে করি না। কারণ প্রত্যেক ধর্মই মীমাংসিত দলিল। তা সংযোজন-বিয়োজনের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাহলে ধর্ম নিয়ে লিখে মানুষকে ক্ষ্যাপানো হবে কেন? অন্যদিকে এরকম কিছু ব্লগারের নাম পরিচয় প্রকাশ করে সরকার তাদেরকে জঙ্গিবাদীদের টার্গেট ও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর কারণ কী? একটি রাষ্ট্রে আস্তিক-নাস্তিককের সহবাস আগেও ছিল, এখনো আছে। তাহলে ব্লগারদের কাউকে এমন টার্গেটে পরিণত করা হচ্ছে কেন? ব্লগ এখন মুক্ত লেখালেখির মিডিয়ার নাম। আমেরিকার ব্লগস্পট, ওয়ার্ডপ্রেস, গুগল এখন ফ্রি ব্লগিংয়ের দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এই স্রোত থামাবে কে? কিভাবে থামানো যাবে? বাংলাদেশে অনলাইনের ওপর নিষেধাদেশ দিলেও প্রক্সি দিয়ে যারা বিভিন্ন ছদ্মনামে ব্লগিং করবে ওদের ঠেকানো যাবে কিভাবে? খবর বেরিয়েছে, কয়েকজন ব্লগারকে আটক করা হয়েছে। তাদের পরিবার-পরিজনকে শঙ্কার মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কেন? দেশে যে রক্তবন্যা বইয়ে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে, তা ঠেকাতে সরকারের নমনীয় মনোভাব কোনো দুর্বলতার অংশ কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। হিন্দুদের ওপর প্রকাশ্যে আক্রমণ, শহীদ মিনার ভাঙচুর, পুলিশের ওপর আক্রমণ, রেললাইন উপড়ে ফেলা, যাত্রীবাহী বাসে যাত্রীসহ আগুন, হরতালের আগেই প্রকাশ্যে ভাঙচুরÑ এমন জঘন্য ঘটনাবলীর পরও সরকার অনেকটা নির্বিকার ভূমিকা নিয়েছে। এ রহস্য মানুষের মোটেই বোধগম্য হচ্ছে না। অথচ দেশে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে। মনে রাখা দরকার সাপের লেজে পা দিলে সাপ ছোবল দিতে ফণা মেলবেই। সেই ফণার নিচে এখন বাংলাদেশ। দেশকে জঙ্গিবাদীদের খপ্পর থেকে বাঁচাতে মহাজোট পারবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবে মহাজোটের অন্যতম শরিক প্রাক্তন স্বৈরশাসক এরশাদ গণজাগরণের বিরুদ্ধে যেসব কথাবার্তা বলেছেনÑ তাতে প্রমাণিত হয় এই সেনাশাসক গণমানুষের জাগরণের স্মৃতি এখনো ভুলে যানননি। ভুলে যাননি, নব্বইয়ের গণআন্দোলনের স্মৃতি। এরশাদকে আমরা না হয় ‘স্খলিত’ বলেই ধরে নিলাম। কিন্তু গণজাগরণের পুরোধা দল ২০১৩-এর গণজাগরণকে কতোটা সম্মান দিতে পেরেছে? নাকি ভোটের রাজনীতির মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে গণজাগরণের এই চেতনাকে? এ দেশের মানুষ দেখতে চায়Ñ মহাজোট সরকার দেশের স্বার্থরক্ষায় বদ্ধপরিকর কিনা। যদি তাই হয়, তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে হরতাল পুরোপুরি বাতিলের কথা ভাবা হোক। যারা সহিংসতা করছে ওদের দ্রুত বিচার আইনে বিচার করা হোক। দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী, রাষ্ট্রের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যকলাপকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার আওতায় এনে মামলা ও বিচার করা হোক। তা না করা গেলে, আর কোনো কথার মালা সাজিয়েই জঙ্গিবাদী- মৌলাবাদী গোষ্ঠীর আঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে না। সামনে সময় মাত্র কয়েক মাস। এ সময়ের মাঝে বর্তমান সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে অনেক অর্জনই বিপন্ন হয়ে যেতে পারে।------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ// ঢাকা //: শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০১৩
false
ij
কারা ছিল বর্গী_ ছেলেবেলায় ছড়া শুনেছি- খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছেখাজনা দেব কীসে?আশৈশব মাথার ভিতরে ঘুরেছে ছড়ার কথাগুলি। ছড়ার কথায়, শব্দের অর্ন্তগত ধ্বনিগত দুলুনিতে কেমন এক ধরনের মনোরম বিষন্নতা লুকিয়ে আছে; যে মনোরম বিষন্নতা, যাকে আমি বলি, sublime sadness, বাংলা কাব্যের একটি অনিবার্য বৈশিষ্ট্য। যেমনটা আল মাহমুদ লিখেছেনস্মরণে যার বুকে আমার জলবিছুটিআমার ঘরে রাখল না সে চরণ দুটি। (যার স্মরণে, সোনালি কাবিন) এ মনোরম বিষন্নতা ছাড়া আর কি। যা হোক। জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার পর বিষন্ন মনোরম ছড়ার সূত্র ধরে কৌতূহলী হলাম বর্গীদের নিয়ে। কারা ছিল বর্গী? বুলবুলিতে ধান খেয়েছে বুঝলাম, কিন্তু, কেনই-বা বর্গী নামে অদ্ভূত জন্তু বা জাতিকে খাজনা দেওয়ার কথা আসছে? ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে জানতে পারলাম, বর্গীরা আসলে মারাঠা জাতি এবং তারা কথা বলে মারাঠী ভাষায় । মারাঠী ভাষায় খাজনা শব্দটিকে বলা হয়: ‘চৌথ’। ক্রমশ আরও জানতে পারলাম লতা মুঙ্গেশকর মারাঠী। ঐ কিন্নরকন্ঠী গায়িকার পূর্বপুরুষগন বাংলায় চৌথ নিতে আসত? বা ঐ কিন্নরকন্ঠী গায়িকার পূর্বপুরুষকে চৌথ দিতে হত? রিয়েলি ইন্টারেষ্টিং! কাজেই মারাঠাদের সম্বন্ধে আরও কৌতূহলী হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। ভারতবর্ষের মানচিত্র, সবুজ চিহ্নিত অংশ মহারাষ্ট্র প্রথমেই বলে রাখছি মারাঠারা প্রধানত ভারতের মহারাষ্ট্রের অধিবাসী হলেও তারা ভারতবর্ষের গোয়া গুজরাট কর্নাটক অন্ধ্রপ্রদেশ তামিলনাড়– ও মধ্য প্রদেশেও বাস করে। সনাতন ধর্মের অনুসারী মারাঠারা মুগল আমলে ছিল ক্ষত্রিয় যোদ্ধা। ছত্রপতি শিবাজী। মারাঠাদের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন ছত্রপতি শিবাজী (১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৬২৭-এপ্রিল ৩, ১৬৮০); তিনিই ১৬৭৪ সালে মহারাষ্ট্রের মারাঠী সাম্রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । মারাঠী সাম্রাজ্য রাজধানী ছিল মহারাষ্ট্রের রাইগাড। ১৮১৮ অবধি মারাঠী সাম্রাজ্যটি টিকে ছিল। পতনের কারণ? ভারতবর্ষে নতুন শক্তির আগ্রাসন। ইনি মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেব (নভেম্বর ৪, ১৬১৮-মার্চ ৩, ১৭০৭) সম্রাটের দক্ষিণ ভারতের সামরিক অভিযানের সময় মারাঠা সাম্রাজ্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, যার ফলে মারাঠারা মুগল শাসনের প্রতি বিক্ষুব্দ হয়ে উঠতে থাকে। আমি আগেই একবার বলেছি যে, মুগল আমলে মারাঠারা ছিল হিন্দু ক্ষত্রিয় যোদ্ধা। সম্রাটদের মাথা গরম করলে চলবে কেন- সম্রাট আওরঙ্গজেব মনসব পদ দিয়ে মারাঠা সৈন্যদের মুগল সেনাবাহিনীতে অর্ন্তভূক্ত করে মারাঠাদের রোষ প্রশমিত করার চেষ্টা করেন। লাভ হয়নি। অস্টাদশ শতকের ভারতবর্ষ কিছু কিছু মারাঠা সেনাপতি যদিও সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর অনুগত থাকলেও (ধরা যাক সমকালীন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-এর মতন) বেশির ভাগ মারাঠা সৈন্যই রোষবশত ভারতবর্ষে মুগল শাসিত প্রদেশগুলিতে লুঠপাঠ আরম্ভ করে। রোষের শিকার মুগল শাসিত প্রদেশগুলিতে সুবা বাংলা ছিল অন্যতম। মারাঠা সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈন্যরা বরগির নামে পরিচিত ছিল। মারাঠা নেতা ছত্রপতি শিভাজী মারাঠী প্রশাসন কর্তৃক এদের ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ করা হত। এই ‘বরগির’ শব্দ থেকেই বর্গী; এবং বাংলায় মারাঠা আক্রমনকারীরাই বর্গী নামে পরিচিত।অস্টাদশ শতকের বাংলাবাংলা মুগলশাসিত প্রদেশ বলেই ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত বার বার বাংলায় বর্গীদের আক্রমন সংঘটিত হতে থাকে। নওয়াব আলীবর্দী খান ১৭৪০ সালে বাংলার নওয়াব নিযুক্ত হন। ১৭৪২ সালের ১৫ এপ্রিল বর্গীরা বর্ধমান (বর্তমান পশ্চিম বাংলা) আক্রমন করে। জরুরি সংবাদ পেয়ে নওয়াব আলীবর্দী খান সসৈন্য বর্ধমানের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। বর্গীদের নেতা ছিল ভাস্কর পন্ডিত, তার নির্দেশে বর্গীরা নওয়াব-এর রসদ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ২৬ এপ্রিল বর্গী বেষ্টনী ছিন্ন করে কোনওমতে প্রাণে বাঁচেন নওয়াব । মুর্শিদাবাদের মানচিত্র । বর্গী আক্রমনকালে বাংলার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদ-এর অবস্থান ছিল কলকাতার ৩৪৭ কিলোমিটার উত্তরে এখনকার পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় । মুগল প্রাদেশিক শাসনের দুটি প্রধান শাখা ছিল নিজামত ও দীউয়ানি: নিজামত সাধারণ প্রশাসন এবং দীউয়ানি রাজস্ব প্রশাসন। বাংলার দীউয়ান মুর্শিদকুলী খান ১৭০৪ সালে দীউয়ানি প্রশাসনের কেন্দ্র ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। মুর্শিদাবাদের নওয়াব-এর প্রাসাদ। ঢাকার আহসান মঞ্জিলের সঙ্গে মিল থাকা স্বাভাবিক। ঢাকার অবস্থান যেমন ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে, মুর্শিদাবাদ নগরটি ছিল ভাগীরথী নদীর তীরে। নাঃ, ভাগীরথী কোনও নতুন নদী নয়, গঙ্গার আরেক নামই ভাগীরথী। ৬ মে, ১৭৪২। মুর্শিদাবাদের দ্বারপ্রান্তে সশস্ত্র বর্গীরা এসে উপনীত হল। নওয়াব আলীবর্দী খান সে সময় মুর্শিদাবাদে ছিলেন না। নির্মম বর্গীরা মুর্শিদাবাদ নগরের বড় একটি বাজার পুড়িয়ে দেয়। এবং এভাবে বর্গীদের নির্বিকার ধ্বংসযজ্ঞ বাংলার মানসে চিরতরে প্রোথিত হতে থাকে: যে রুদ্ধশ্বাস অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছিল মনোরম বিষন্ন একটি ছড়ার আকারে ... খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছেখাজনা দেব কীসে?মুর্শিদাবাদ নগরে বাস করত জগৎ শেঠ নামে এক ধনী সওদাগর । বর্গীরা তার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা আদায় করে নেয়। পরের দিনই, অর্থাৎ ৭ মে নওয়াব আলীবর্দী খান মুর্শিদাবাদ উপস্থিত হন। ততক্ষণে মুর্শিদাবাদের অনেকটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে বর্গীরা পালিয়ে গেছে আরও দক্ষিণে।পশ্চিমবাংলার হুগলি ও বর্ধমান। হুগলি জায়গাটি মুর্শিদাবাদের দক্ষিণে। ১৭৪২ সালের জুলাই মাসে, অর্থাৎ মুর্শিদাবাদ আক্রমনের ২ মাস পর হুগলি জেলায় বর্গীরা একটি সৈন্য শিবির স্থাপন করে এবং খাজনা আদায় করতে লাগল।(‘বুলবুলিতে ধান খেয়েছে’-এই লাইনটি একটি বিশেষ সময়ের প্রতীক। বাঙালির রসিক মনের গূঢ়তম অভিব্যাক্তি ...) বর্গীদের অমানুষিক অত্যাচারে তাঁতিরা বীরভূম থেকে পালিয়ে যায় । আমলে বর্গীদের স্বেচ্ছাচারিতার নমুনা দেখুন! তখন আমি বলেছি যে, দীউয়ানি ছিল রাজস্ব প্রশাসন। বাংলার দীউয়ানরা ঠিকমতো খাজনা কেন্দ্রে (দিল্লিতে) পাঠাতে পারলেই তো হল, বর্গীরা রাজ্যে আর্মি ক্যাম্প বসাক না কেন! নওয়াব আলীবর্দী খান(আড়ং শব্দটা ফারসি। আড়ং বলতে বড় আকারের বাজারকে বোঝায়) সপ্তদশ ও অস্টাদশ শতকে বাংলার রেশমি কাপড়ের আড়ংগুলি ছিল জমজমাট। বর্গী আক্রমনে আড়ংগুলি লোকশূন্য হয়ে পড়ে, আড়ংগুলি খাঁ খাঁ করতে থাকে। বাংলার অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়তে থাকে। বাংলাজুড়ে খাদ্যশস্যের অভাব দেখা দেয়, ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। যা হোক। বর্গীরা চৌথ আদায় করতে থাকে এবং পুবের যশোর জেলা অবধি বর্গীদের খাজনা আদায় ক্রমেই স¤প্রসারিত হতে থাকে। বর্গীদের নির্মম অত্যাচারে বহু লোক ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে গঙ্গার পূর্বাঞ্চলে ( বর্তমান বাংলাদেশে) চলে আসে। পূর্বাঞ্চলের বাঙালিরাও বর্গী লুন্ঠনের শিকার হয়। কেন? সম্রাট আওরঙ্গজেব দক্ষিণ ভারতের সামরিক অভিযানের সময় মারাঠা রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে মারাঠা সৈন্যরা রোষবশত ভারতবর্ষে মুগল শাসিত প্রদেশ গুলিতে লুঠপাঠ আরম্ভ করে। সুবা বাংলা ছিল যার অন্যতম। বাংলাপিডিয়ায় মোহাম্মদ শাহ লিখেছেন, ‘ঘন ঘন মারাঠা হামলা বাংলাকে মহাবিপর্যয়ে নিপতিত করে। বাংলার জনগনের জন্য এটা এতটাই ধ্বংস আর দুঃখ বয়ে আনে যে, মারাঠা বর্গীদের হামলার ভীতিকর গল্প বাংলার শিশুদের ঘুমপাড়ানি গানে বিশেষ স্থান অধিকার করে। এর সাথে অজন্মা ও খরা মিলে বাংলার অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মারাঠা হানাদাররা লুন্ঠন, অগ্নি সংযোগ ও হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বাংলার জনগনের মনে এমনি ত্রাসের সঞ্চার করেছিল যে, বহুলোক তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে গঙ্গার পূর্বদিকের জেলাগুলিতে পালিয়ে যায়। এতে উক্ত এলাকার জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। মূল এই অর্থনৈতিক সংকটই পরবর্তী সময়ে বাংলার নওয়াবকে বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত করে।’ বাংলা ও ভারতবর্ষএবার বাংলার ইতিহাসের এক বিচিত্র প্রসঙ্গে আসি। মীর জাফরের আগেও বাংলায় আরও একজন বিশ্বাসঘাতক ছিল! বিশ্বাসঘাতক সেই পাষন্ড লোকটার নাম মীর হাবিব। পারস্য সেই অভিজাতটি এক সময় নওয়াব আলীবর্দী খানের ঘনিষ্ট ছিল ; অথচ, এই লোকটিই লোকাল এজেন্ট হিসেবে বর্গীদের সাহায্য করত! আসলে মীর হাবিব ছিল রাজাকার; বাংলা সম্বন্ধে খুঁটিনাটি জ্ঞান ছিল তার। বর্গীরা সে জ্ঞান প্রয়োগ করে সহজেই বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত!১৭৪২ সালের মাঝামাঝি বাংলা থেকে বর্গীদের নিমূর্ল করার কঠিন সিদ্ধান্ত নেন নওয়াব আলীবর্দী । নাঃ, নওয়াবের এ সিদ্ধান্ত বাঙালিদের ভালোবেসে নয়, দিল্লির প্রাপ্য খাজনায় বর্গীরা ভাগ বসাচ্ছিল বলেই। যা হোক। ১৭৪৩ সালে বর্গীরা মেদিনীপুর আক্রমন করে। নওয়াব আলীবর্দীর নেতৃত্বে মুগল সৈন্যরা মেদিনীপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৯ ফেব্রুয়ারি দুপক্ষের তুমুল সংর্ঘষ হয়। নওয়াব আলীবর্দীর উন্নততর রণকৌশলের ফলে মেদিনীপুর থেকে বর্গীরা উৎখাত হয়ে যায়। তবে লাভ হয়নি। ১৭৪৪ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে বর্গী নেতা ভাস্কর পন্ডিত আবার বাংলা আক্রমন করে বসে। নওয়াব আলীবর্দী খান বাধ্য হয়ে এবার ষড়যন্ত্রের পথ ধরেন। বর্গী নেতা ভাস্কর পন্ডিত কে বৈঠকের আহবান জানান নওয়াব । বৈঠকে ২১ জন বর্গীসহ ভাস্কর পন্ডিত এলে তাঁবুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুগল সৈন্যদের আক্রমনে বর্গীরা নিহত হয়। তবে লাভ হয়নি। ১৭৫০ সালের বর্গীরা আবার বাংলায় হানা দেয়। ১৭৫১ সালে বর্গী আক্রমনের তীব্রতা এতই বেড়ে যায় যে আলীবর্দী খানকে মারাঠা-বর্গীদের হাতে উড়িষ্যা ছেড়ে দিতে হয়। তারপর? তারপর বর্গীদের কি হল?আর মাত্র ৬ বছর পর ইংরেজদের করতলগত হয়ে যায় বাংলা । ওদিকে মারাঠা-বর্গীরা মুগলদের পরির্বতে নতুন এই শক্তির মুখোমুখি হতে হয়- যে শক্তিটি মুগলদের চেয়ে সহস্রগুণ চতুর খল ও শক্তিশালী। এই সময়ের ছবি। কিন্তু যেন বাংলার সমস্ত দুর্যোগের প্রতীক। সমগ্র অস্টাদশ শতক জুড়ে বাংলায় বর্গী আক্রমন অব্যাহত ছিল। সেই কালবেলায় বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ছিল সীমাহীন; গানপ্রিয় শান্তিবাদী বাঙালির জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার। বাংলা বরাবরই তার গান, ধান ও মান নিয়ে তার নিভৃত শ্যামল কোণটিতে দু-বেলা দু-মুঠো শাক-ভাত খেয়ে সুখেশান্তিতে এই কুহকী জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছে। পশ্চিমা লুঠেরারা বারংবার নির্জনতা প্রিয় বাঙালির শান্তি কেড়ে নিয়েছে, যুদ্ধের আগুনে পুড়ে গেছে তার সোনারবরণ শষ্যক্ষেত্রটি । আমরা দেখেছি অস্টাদশ শতকের বর্গীরাই বাংলার ইতিহাসে নির্মমতম শেষ অধ্যায় নয়-পশ্চিম থেকে আগত ব্রিটিশ ও পশ্চিম পাকিস্তানি শোষন ও গনহত্যা তখনও বাকি । ইতিহাসের এই অমোঘ ধারা এই ইঙ্গিতই দেয় যে- বাঙালির নিজস্ব একটি রাষ্ট্রের বড়ই প্রয়োজন ছিল ...
false
fe
একাত্তরের গণহত্যায় বয়স কি কোনো ফ্যাক্টর ছিল_ একাত্তরের গণহত্যায় বয়স কি কোনো ফ্যাক্টর ছিল?ফকির ইলিয়াস============================================আমার এলাকায় কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার এলাকার অনেক মুরুব্বি ছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তাদেরই একজন ইয়াকুব আলী। যাকে আমি ‘ইয়াকুব দাদা’ বলেই ডাকতাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল সত্তরেরও বেশি। সেই ‘ইয়াকুব দাদা’কে রাজাকার আলবদররা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তার ওপর চালিয়েছিল অমানুষিক নির্যাতন। ভাগ্যিস বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। বাকি জীবন কাটিয়েছিলেন পঙ্গুত্ব বরণ করে। এটা একটা ঘটনা। এরকম লাখো ঘটনা ঘটেছে একাত্তরে বাংলাদেশে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, তরুণ, প্রৌঢ়- কোনো ভেদবিচার ছিল না গণহত্যায়। এসব কথা বাংলাদেশের মানুষ জানেন। একাত্তরের গণহত্যার অন্যতম বড়কর্তা গোলাম আযমের ৯০ বছরের জেল দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। তার নাকি বয়স বেশি, তাই এই সাজা! আমার মনে পড়ছে, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণআদালতের কথা। সেই আদালত গোলাম আযমকে ফাঁসি দিয়েছিল প্রতীকী বিচারে। সে কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অজানা নয়। সেই শেখ হাসিনা-ই কিনা রায় ঘোষণার পর জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে বলেছেন- ‘একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল সাজা দিয়েছে এতেই আমরা সন্তুষ্ট। সাজা কী হতে পারে, এটা আদালতের বিষয়। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। যে সাজা দিয়েছে, যে শাস্তি দিয়েছে- তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’ প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘আজ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যারা সাজা পেয়েছেÑ এটা দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ফসল বাস্তবায়ন হয়েছে। আমাদের দল ক্ষমতায় থাকতে এই রায় কার্যকর শুরু করবো। কার্যকর হবে ইনশাল্লাহ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে আওয়ামী লীগকে দোষী করতে চাচ্ছেন। কিন্তু জিয়া এই যুদ্ধাপরাধীদের যখন ফিরিয়ে এনেছিল- তখন তা প্রত্যখ্যান করলে আজ ৪২ বছর অপেক্ষা করতে হতো না।’ প্রধানমন্ত্রী যা ই বলুন না কেন- আমরা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছি, গওহর রিজভী-সালমান রহমান ও জামাতের প্রধান আইনজীবী ব্যাঃ আবদুর রাজ্জাক মার্কিনি দূতের সহায়তায় ঢাকায় রুদ্ধদ্বার মিটিং করেছেন। সেই বৈঠকের এজেন্ডা কী ছিল? এর পরপরই গোলাম আযমের রায় লঘু হয়ে গেলো! এর মাজেজা কী? একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে আমার এক সপ্তাহ আগেই জানা হয়ে গিয়েছিল, একাত্তরের নরঘাতক গো আযমের ফাঁসির রায় হচ্ছে না। যাবজ্জীবন কারাদ- হচ্ছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা গওহর রিজভী- সালমান রহমান-ও জামাতের ব্যাঃ রাজ্জাকের গোপন বৈঠকের পর তা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল! এখানে যে বিষয় অনুমান করা যায়, তা হলো জামাতকে টোপে ফেলে আগামী নির্বাচনে আনার মতলবও করতে পারে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কথা হচ্ছে, জামাত কি বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া ত্যাগ করবে? না, করবে না। এর প্রমাণ কওমি মাদ্রাসাপন্থী হেফাজতিদেরও নগর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা। বলা দরকার এখন জামাত ও হেফাজত একই বৃন্তে দুটি সাপ। যারা একে অন্যের পরিপূরক হয়েই রাজনীতির মাঠে হাঁটছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি হবে। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে হারবে। বিএনপি-জামাত জিতে এসেই গোলাম আযমকে ছেড়ে দেবে। তেমনি একটি ক্ষেত্র তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে স্বয়ং বর্তমান সরকার পক্ষ। সরকারের অনেক নীতিনির্ধারক বলছেন, এই সরকারের মেয়াদেই কিছু রায় কার্যকর করা হবে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, এই পাঁচ মাসে কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ই কার্যকর হবে না। যৌথভাবে জামাত-বিএনপি ক্ষমতায় এসেই এই ট্রাইব্যুনালের সকল কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করবে। নতুনভাবে ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে। এবং বিচারের মহড়া করবে আরো পাঁচবছর। ঐ মহড়ায় আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতাকেও কারাগারে নিক্ষেপ করা হতে পারে। যে বিষয়টি আমাকে চরমভাবে হতাশ করছে তা হলো, আমার মনে হচ্ছে, এই দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ই কার্যকর হবে না। কারণ এটা ১৫ আগস্টের খুনিদের মতো বিষয় নয়। সরকার পরিবর্তন হলেই যুদ্ধাপরাধীরা বীরদর্পে বেরিয়ে আসবে। আর আওয়ামী লীগ বলবে- আমরা বিচার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জনগণ আমাদেরকে ভোট দেয়নি। আমাদের কিছুই করার ছিল না। আমি চাই, আমার ধারণাগুলো ভুল প্রমাণিত হোক। আমি চাই এই দেশে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। এটা জাতিকে দ্বিখন্ডিত করার কোনো বিষয় নয়। এটা হচ্ছে- একজন জঘন্য অপরাধীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া। পবিত্র রমজান মাস চলছে। জামাত নিজেকে ধর্মীয় আদর্শবান দল বলে দাবি করে। সেই রমজান মাসেই তারা লাগাতার হরতাল দিয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় আদর্শের চেয়ে কতিপয় যুদ্ধাপরাধী দালালÑ আলবদর-রাজাকার-আলশামসই যে তাদের কাছে বড়, সেই প্রমাণই দিচ্ছে দলটি। তা দেশের মানুষের অনুধাবনের ব্যাপার। বলে রাখা দরকার, জামাত যদি সত্যিই নেতানির্ভর না হয়ে আদর্শনির্ভর হতো তবে অনেক আগেই এসব চিহ্নিত রাজাকারদের দল থেকে অবসর দিয়ে কলঙ্কমুক্ত দল গঠন করতে পারতো। তারা সেটা করেনি। কেন করেনি? আমরা দেখেছি- গোলাম আযমের বিচারের রায় প্রকাশের পর পরই পাকিস্তান জামাতে ইসলামী, পাকিস্তানে গোলাম আযমের পক্ষে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ মিছিলের সামনে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল- ‘টু সেভ পাকিস্তান ইন নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান ইজ নট ওয়ার ক্রাইম’। এ ছাড়া আরেকটি মিছিলের অগ্রভাগে থাকা ব্যানারে ‘উই কনডেম দ্য নাইনটি ইয়ার সেনটেন্স অব নাইনটি টু ইয়ার্স প্রফেসর গোলাম আযম’ লেখা ছিল। পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশে তাদের প্রেতাত্মা চায়। এই মিছিল সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। পাশাপাশি আরেকটি ঘটনা বাংলাদেশের গণমানুষকে কিছুটা স্বস্থি দিয়েছে। আলবদর প্রধান আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির রায় হয়েছে। মুজাহিদ একাত্তরে কী করেছিলেন, তা বাংলাদেশের মানুষ আজো ভুলে যায়নি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগিতা, বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামাতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে বাঙালি হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ-নির্যাতন, রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দানসহ নানা মানবতাবিরোধী অপকর্ম চালানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজাহিদের স্বাধীনতাবিরোধী এসব ভূমিকার কথা বহু দলিলে উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ করে এসব যুদ্ধাপরাধের জ্বলন্ত প্রমাণ রয়েছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন দলিলে। এসব দলিল বলছে, ১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত করতে জামাতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি আলী আহসান মুজাহিদ কুখ্যাত আলবদর বাহিনী গড়ে তোলার নির্দেশ দেন তার দলের নেতাকর্মীদের। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিভাগ ১৯৭১ সালে এখানকার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ) পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াাহিয়ার সরকারকে মাসে দুবার গোপন প্রতিবেদন পাঠাতো। প্রতিবেদনের অফিসিয়াল শিরোনাম ছিল ‘ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান’ (পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে পাক্ষিক গোপন রিপোর্ট)। এসব গোপন প্রতিবেদনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামাতের শীর্ষ নেতা ও কর্মীদের মতোই মুজাহিদের ন্যক্কারজনক ভূমিকা বারবার উঠে এসেছে। তৎকালীন সরকারের গোপন প্রতিবেদনে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি আলী আহসান মুজাহিদ কিভাবে তখন পাকিস্তানকে রক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের শায়েস্তা করতে তৎপর ছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। অক্টোবর দ্বিতীয় ভাগের সরকারি এক গোপন প্রতিবেদনে (১৩ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে স্বরাষ্ট্র সচিব স্বাক্ষরিত) বলা হয়েছে, ১৭ অক্টোবর রংপুরে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের এক সভায় আলী আহসান মুজাহিদ আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেছিলেন, ইসলামবিরোধী শক্তি প্রতিহত করতে হবে। এ জন্য যুবকদের সংগঠিত করে আলবদর বাহিনীতে যোগ দেয়ার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম, যিনি বর্তমানে জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং যুদ্ধাপরাধ মামলায় আটক রয়েছেন। গোপন রিপোর্টে আরো বলা হয়, ৭ নভেম্বর জামাতে ইসলামী ‘আলবদর দিবস’ পালন করে। দলের নেতারা দিবসটি পালনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলবদর বাহিনীতে জনগণকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা পাকিস্তান চায় না তারা আমাদের শত্রু। পাকিস্তানের অখ-তা রুখতে হবে ও শত্রুদের প্রতিহত করতে হবে। এসব কর্মসূচিতে মুজাহিদের সক্রিয় ভূমিকার উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। এসব অনেক তথ্যই এখন মিডিয়ায় আসছে। মুজাহিদের রায় প্রকাশের পর, সন্তেষ প্রকাশ করেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে শাহীন রেজা নূর। শাহীন রেজা নূর মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার অন্যতম সাক্ষী। রায়ে মুজাহিদের বিরুদ্ধে ইত্তেফাকের তৎকালীন নির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে ধরে নিয়ে হত্যার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সিরাজুদ্দীন হোসেনের বড় ছেলে ও ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন রেজা নূর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। ১০ ডিসেম্বর রাতের কথা খুব মনে পড়ছে এখন। আরো মনে পড়ছে আমার মায়ের কথা। উনি এ বিচার দেখে যেতে পারলেন না বলে খুব মনোকষ্টও হচ্ছে।’ শাহীন রেজা নূর বলেন, ‘মুজাহিদ যে বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল এ রায়ের মধ্য দিয়ে তার বিচার হলো। আর এতোদিন মুজাহিদরা যে বলে বেড়াতো একাত্তরে কিছুই হয়নি, সেই অপপ্রচারকারীদের মুখেও চপেটাঘাত হলো।’ বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এসব রায় নিয়ে কোনো প্রশ্ন না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী। এর কারণ কী? বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানাতে অসুবিধা কোথায়? তারা রাজাকারদের পক্ষ নিতে পারছে না প্রকাশ্যে, আবার তা মানতেও পারছে না। এই হলো বিএনপির আসল চরিত্র। বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন ঘাতকদের বিচারের দ- নির্ধারণে বয়স কোনো ব্যাপার নয়। ফেসবুকে একজন মশকরা করে লিখেছেনÑ ‘ব্যাটা মুজাহিদের উকিল বেকুব! মুজাহিদের বয়স বাড়িয়ে লিখে দিলেই তার দ- একেবারে তরল হয়ে যেতো!’ এই হলো মানুষের প্রতিক্রিয়া। আইনের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, বাংলাদেশের মাটি থেকে শহীদের পাঁজর এখনো নিঃশেষ হয়ে যায়নি। কবর খুঁড়লে খুলি পাওয়া যাবে আরো শত বছর। তাই আমরা সেসব শহীদের সঙ্গে বেইমানি করতে পারি না। আবারো বলি, ঘাতকদের বিচারের ধারাবাহিকতা সম্পন্ন করে তা কার্যকর করা হোক। এটা প্রামাণিত হোকÑ এই দেশ মুক্তিযোদ্ধার। এই দেশ রাজাকারদের তালুক নয়।------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৩
false
fe
তৃণমূলে জামায়াতের নতুন কৌশল _ শেখ গোলাম মোস্তফা তৃণমূলে জামায়াতের নতুন কৌশল শেখ গোলাম মোস্তফা ========================= জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক দলটি দলের ধর্মপ্রাণ হাজিদের মধ্যে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ শুরু করেছে। মংলা বন্দর ও তার পার্শ্ববর্তী থানা রামপালে সম্প্রতি হাজিদের নিয়ে কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে-সমাবেশগুলোর আয়োজন করেছে হাজিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। যাদের মধ্যে আছে গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডা এবং সংগতভাবেই তারা জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় এজেন্ট। রামপাল ও মংলার সমাবেশগুলোতে খুলনা এবং বাগেরহাট জেলার শীর্ষ জামায়াত নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন এবং তাদের বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবেই দেশে ইসলামি শরিয়াভিত্তিক আইন চালু ও বাংলাদেশকে কিভাবে ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করা যায় সে বিষয়ে হাজিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে বলে তথ্যনির্ভর সূত্রে প্রকাশ। মুসলমান ধর্মীয় সম্প্রদায়সহ যেকোনো ধর্মাবলম্বী মানুষ যখন তীর্থে যাওয়ার মনস্থির করে, তখন তারা আর পেছনে ফিরে তাকায় না। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য তীর্থে গমন এবং পুণ্য সঞ্চয় করা। সে জন্য অধিকাংশ তীর্থযাত্রীরই মনের মধ্যে বাসনা থাকে, তীর্থস্থান বা পুণ্যভূমিতে যেন তার জীবনাবসান ঘটে এবং সেখানেই তার মরদেহের সৎকার হয়। উদ্দেশ্য একটাই এবং তাহলো পরলোকে শান্তিতে থাকা। হাজিদের প্রসঙ্গেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে পবিত্র হজের সময় প্রতিবছর সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় সারা পৃথিবী থেকে যে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর সমাবেশ ঘটে, অন্য কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে একত্রে এত লোকের সমাগম হয় না। হজব্রত পালনের আগেকার মানসিক প্রস্তুতি, সৌদি আরবে অবস্থান, হজশেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরও তাদের মনোলোকে একধরনের প্রশান্তি বিরাজ করে এবং তাঁরা শুদ্ধ জীবনাচরণ ও পারলৌকিক জগৎ সম্পর্কে শুধু নিজস্ব পরিবারগুলোর ওপরই প্রভাব বিস্তার করেন না, পারিপাশ্বর্িক পরিচিত পরিমণ্ডলের মধ্যেও তাঁদের মনের স্নিগ্ধতা ও শুদ্ধতার ব্যাপ্তি ছড়িয়ে দেন। এতে যুগ যুগ ধরে সমাজকে তাঁরা উপকারই করছেন। এর মধ্যে থাকে না কোনো রাজনৈতিক দর্শন বা পারস্পরিক বিদ্বেষ অথবা অন্য ধর্মকে খাটো করার কোনো প্রবণতা, যার মধ্যে থাকে না সমাজকে কলুষিত করারও কোনো উপাদান। তাঁদের স্মৃতিতে সর্বদা জাগ্রত থাকে মক্কা, মদিনা, আরাফাতের ময়দান, সাফা-মারওয়া, হাজরে আসওয়াদ, কাবা শরিফ, মহানবী (সা.) তাঁর রওজা মোবারক এবং মহানবী (সা.)-এর ক্লেশময় জীবন উপেক্ষা করে কিভাবে ইসলামের শাশ্বত বাণী তিনি এবং তাঁর সাহাবিদের নিয়ে প্রচার করেছেন, দেড় হাজার বছর আগের সেসব কথা হজ প্রত্যাগত একজন নতুন হাজির সঙ্গে দেখা হতেই দুজনে শুরু করেন মিষ্টিমধুর আলাপন এবং স্মৃতি তর্পণ। সেই হাজিদের নিয়ে যারা সমাবেশের আয়োজন করেন বিভিন্ন স্থানে, তার মধ্যে আয়োজকদের হিডেন এজেন্ডা বা গোপন কর্মসূচি বাস্তবায়নের একটা দুরভিসন্ধিমূলক অভীপ্সা যে কাজ করে চলেছে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের অংশগ্রহণ এবং সেখানে তাদের কথাবার্তায় তা প্রকাশিত হচ্ছে, যা শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সমাজের জন্য ক্ষতিকর। জামায়াতে ইসলামী নেতারা ভালোভাবেই জানেন যে আমাদের সমাজে দুই শ্রেণীর লোক আছে, যাদের রয়েছে সমাজে সুস্পষ্ট প্রভাব। এক. মসজিদের ইমাম এবং দুই. হাজি সাহেবরা। বাংলাদেশের মসজিদগুলোর ইমামদের ওপর উগ্র মৌলবাদী এ দলটির এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে রাজনৈতিক প্রভাব। তার বলয়ের মধ্যে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ইমাম ঘুরপাক খাচ্ছেন এবং স্পষ্ট করে বলতে গেলে তাদের অনেকেই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক দলটির হয় সদস্য নতুবা গোঁড়া সমর্থক। তাই দেখা যায়, প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবার আগে ইমামরা যে বয়ান করেন, সেখানে তাঁরা বাংলাদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েমের জন্য সরাসরি বক্তব্য দেন এবং মোনাজাতের সময়ও একই কাজ করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, ইমাম সাহেবের ওই সরাসরি রাজনৈতিক বক্তব্যদানের সময় উপস্থিত মুসলি্লরা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন না বা প্রতিবাদও করেন না_যদিও অনেকেই ধর্মীয় স্থানে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া সমর্থন করেন না। এসব ইমামের অধিকাংশই স্বল্প ধর্মীয় শিক্ষার কারণে ধর্ম বিশেষত ইসলামের অপব্যাখ্যা করেন এবং আজগুবি কথাবার্তা বলে থাকেন। সচেতন মুসলি্লরা মসজিদের বাইরে এসে এসব নিয়ে হাসি-তামাশা করলেও মসজিদের মধ্যে তারা নিশ্চুপ থাকেন। তবে সাধারণ মুসলি্লদের তাঁরা তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য বিশেষত জামায়াতের কর্মসূচি দ্বারা প্রভাবান্বিত করে চলেছেন। এভাবে জামায়াত সারা বাংলাদেশের অগণিত মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে অপ্রতিহতভাবে। সরকার বিশেষত তার দলীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি কোনোই আমল দিচ্ছেন না। আগেও তাঁরা দেননি, এখনো দিচ্ছেন না। সরকারদলীয় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের এদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সবাই ভুলে বসে আছেন ২০০১ থেকে ২০০৬-এর অক্টোবর পর্যন্ত চারদলীয় জোটের অত্যাচার-নিপীড়নের দুঃসহ ইতিহাস। একটিবারও তাঁরা ভেবে দেখছেন না যে জামায়াত এবং বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন ও বক্তব্য একই। মসজিদে জামায়াত বিএনপিরই প্রতিনিধিত্ব করছে। বিএনপি এখানে দ্বিতীয় সারিতে। জামায়াত ইমামদের পরে এখন হাজিদের ওপর দৃষ্টি ফেলেছে। তারা হাজি সমাবেশ ঘটিয়ে সেখানে প্রথমে ইসলামের কথা বলছে এবং ধীরে ধীরে তারা তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করার পথ অনুসরণ করছে। গ্রামগঞ্জের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জীবনের একটা পর্যায়ে তীর্থগমনের জন্য মক্কা-মদিনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন; কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হজে যাচ্ছেন মৌলবাদী সংগঠনের সদস্যরাও, বিশেষত সরকার যেসব তথাকথিত ইসলামি মৌলবাদী সংগঠন এরই মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তাদের সদস্যরা ওই হাজি সমাবেশের আড়ালে সমাজদেহে নিজেদের অবস্থান সংহত যে করছে না, তারইবা নিশ্চয়তা কী? আমরা তো তথাকথিত ইসলামি বিপ্লবের উদ্ভব হতে দেখেছি আধুনিক ইরানে। ইসলামি মৌলবাদীরা সত্তরের দশকে দেশটির কর্তৃত্ব আপন মুঠোয় নেয়ার পর আজও ইরান সেই আগের অবস্থানে প্রত্যাবর্তন করতে পারেনি। কবে ফিরবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওই সময় ইরান থেকে হাজিদের ছদ্মাবরণে কিভাবে ইসলামি মৌলবাদীরা মক্কা নগরীর পবিত্র হেরেম শরিফে দাঙ্গা করেছিল, সে-স্মৃতি আমরা এখনো ভুলিনি। সৌদি সরকারকে উগ্রবাদীদের দমন ও তাদের সম্প্রসারণরোধে প্রচুর ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। হজব্রত পালনশেষে প্রত্যেক হাজিকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর আপন পরিবার এবং পরিমণ্ডলে সুফিস্নিগ্ধ অনুকরণীয় ধর্মাচরণ করতে দেখেছি এবং আমৃত্যু তাঁরা সমাজদেহে যে ধর্মীয় পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন, তা জীবিতদের মধ্যে চমৎকার স্বর্গীয় স্মৃতিচারণার বিষয় ছিল। কিন্তু বাগেরহাটের রামপাল এবং মংলায় হাজি সমাবেশের নামে জামায়াতে ইসলামী যে-কর্মকাণ্ড শুরু করেছে, তার পরিণাম নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের কোনো মাথাব্যথা আছে,_তেমন কোনো আলামত তাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের সময় খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং খবর পেয়েছি একই মঞ্চে জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান উভয়েই আওয়ামী লীগ দলীয়_তাঁরা বক্তৃতা করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা হয়তো মনে করেছেন, একসঙ্গে এতজন হাজিকে পেয়ে তাঁরা তাদের আগামী নির্বাচনের মাটিতে চাষ করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা একবারও ভেবে দেখছেন না যে তাঁদের গতানুগতিক বক্তব্য আর জামায়াতের নেতাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন বক্তব্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। কারণ জামায়াত নেতাদের বক্তব্যে অবধারিতভাবে এসে যাচ্ছে, রাসুলে করিমের জীবনাচরণ ও ইসলামি হুকুমতের কথা এবং এগুলো তারা অত্যন্ত ধীরে ধীরে হাজিদের মনোজগতে প্রবিষ্ট করার কাজটি সম্পন্ন করছে, যা হাজিদের অনেকেরই চিন্তাচেতনাকে প্রভাবিত করবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর এজেন্টরাও এখানে কাজ করছে, তা কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের বিবেচনায় আসছে না। রামপাল ও মংলার মতো দেশের আরো না জানি কত জায়গায় এভাবে হাজি সমাবেশের আড়ালে জামায়াতি ও উগ্র জঙ্গিরা তাদের তৎপরতা শুরু করেছে, সে-খবর তো সরকারেরই রাখা প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সম্প্রতি খোদ রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকা যেখানে আমি নিজে বসবাস করি, সেখানে একটি কল্যাণ সমিতির নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জামায়াতে ইসলামীর প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে একত্রে প্রগতিশীল প্রার্থীদের পরাজিত করার কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের তাঁরা কাছের মানুষ। তিনি এ খবর নিজে জানেন কি না জানি না। তবে এলাকাটি থেকে এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচন করেছেন। জামায়াত নেতাদের কোনো সমর্থনই তিনি পাননি। এই হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দু-একটি খণ্ডচিত্র। দেশব্যাপী এমন চিত্র অনেক পাওয়া যাবে। সুতরাং সাধু সাবধান! সামনে সময় মাত্র চার বছর। ------------------------------------------------------------ দৈনিক কালের কন্ঠ / ২০ জানুয়ারি ২০১০ বুধবার সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১০ ভোর ৬:৩৩
false
fe
মানবিক অবহেলা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না মানবিক অবহেলা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না ফকির ইলিয়াস---------------------------------------------------------------------------বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ হঠাৎ করে ঝলসে উঠেছে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দি এফেয়ার্স গীতা পাসি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একই দিনে বিএনপির সাইফুর রহমান গ্রুপের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেছেন। গীতা পাসির বক্তব্য থেকে জানা গেছে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও কথা বলবেন। বিএনপির খালেদা গ্রুপের দেলোয়ার-মান্নানসহ গ্রুপের সঙ্গেও গীতা পাসি বৈঠক করবেন­ এটাও প্রায় নিশ্চিত।একটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেশ ýপষ্ট হয়ে উঠেছে। তা হচ্ছে, দুই নেত্রীর সুবিচার নিশ্চিতকরণ, তাদের মানবাধিকার সুনিশ্চিত করা এবং সুচিকিৎসার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্খ্য বিষয়ে দেশে সাতজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা একটি বোর্ড গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। তারা সবাই একমত যে, শেখ হাসিনার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তা না হলে তিনি মারাত্মক শারীরিক অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন। এমনকি শ্রবণ প্রতিবী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল খুবই পরিকল্পিতভাবে। কারা এ হামলা করেছিল, কতটা গ্রেনেড আনা হয়েছিল, পরিকল্পনার নেপথ্যে কে ছিল­ এসব অনেক কথা দেশবাসী ইতোমধ্যেই জেনেছেন। সে ভয়াবহ হামলা সóáূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ অনেক বেশি নেতৃত্বশন্য হয়ে পড়তো। বলতে খুবই বেদনাদায়ক শোনালেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে শেখ হাসিনাকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার জন্য, বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক শন্যতা সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগকে সর্বস্বান্ত করার জন্যই এ ভয়াবহ হামলা করা হয়েছিল।আওয়ামী লীগকে সশস্ত্র আক্রমণের মাধ্যমে, ভয়াবহ হামলা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তাতে জাতির জনক বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের প্রায় সদস্যই নিহত হন, দুই কন্যা ব্যতীত। বাদ যাননি তার নিকটাত্মীরাও। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখে যে মহান নেতা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন­ এটাই ছিল তার প্রতিদান। আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে হয়েছিল খুব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। চেষ্টা করা হয়েছিল দলটিকে ভেঙে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলারও। এমনি এক ক্রান্তিলগ্নে দলের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। তারপর এগিয়ে যায় আওয়ামী লীগ নতুন চেতনা এবং সাহস নিয়ে।তারপরও আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করা হয় নানাভাবে। নানা লেভেল লাগিয়ে ধস নামানোর চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায়। এর মধ্যে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এবং ‘ভারত অনুগত’­ এই দুটি অভিধা নামিয়ে আওয়ামী লীগকে বিভিন্নভাবে অচল করে দেয়ার পাঁয়তারা করে একটি গোষ্ঠী। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে কোন অপশক্তির সঙ্গেই হাত মিলানো হয়­ এই তত্ত্বটিতে নতুনভাবে শান দিয়ে তা পোক্ত করেন সামরিক শাসকরা। পরে পালাক্রমে ধ্বংস করে দেয়া দেশের গণতন্ত্র।দুই.জেনারেল জিয়া পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে বিএনপির হাল ধরেছিল­ তা কি পরিশুদ্ধ ছিল? না ছিল না। আর ছিল না বলেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ প্রতিষ্ঠার মদদ জোগাতে বিএনপির মতো ডানপন্থি দলটি আধুনিক লেবাসে সব প্রচেষ্টাই করে। দেশে বাংলাভাই, শায়খ রহমানের মতো প্রকাশ্যে ঘোষিত জঙ্গিরা বেড়ে উঠেছিল বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ছত্রছায়ায়। আমার ভাবতে অবাক লাগে সেই ভয়াবহ জঙ্গিবাদকে সে সময়ে মদদ দানের জন্য কেন বিগত জোট সরকারের বিরুদ্ধে একটি সরকারি মামলাও এ পর্যন্ত রুজু করা হলো না? কেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার সেসব মদদদাতাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগগুলো দাঁড় করালো না?যারা ২১ আগস্টের বোমা হামলা করেছিল­ এরা তো সেই অপশক্তি, যারা বাংলাভাইকে সরকারি মদদ দিয়েছিল। যারা সরকারের ভেতরে গড়ে তুলেছিল মিনি সরকার। ভবনের আদলে ভবন। আজ আমরা অবাক হয়ে দেখছি ২১ আগস্টের বোমা হামলার শিকার সেই শেখ হাসিনা এবং তার দলকেই সেই ধকল সইতে হচ্ছে অধিকভাবে। তাহলে কি সব ষড়যন্ত্রের যোগসত্র একই বলয়ে নির্মিত? সব কিছু একই সুতোয় গাঁথা?বর্তমান সরকার খুব দৃঢ়ভাবে বলে যাচ্ছে তারা কোন পক্ষপাত করছে না এবং করবে না। কিন্তু তারপরও বর্তমান সিইসি ড. শামসুল হুদা বিএনপির একপক্ষকে মৌন সমর্থন দিচ্ছেন তা ইতোমধ্যে ýপষ্ট হয়ে উঠেছে। বিএনপির হান্নান শাহ গ্রুপ সিইসির পদত্যাগও দাবি করেছে। সিইসি বেশ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন বলে মনে করছে গোটা দেশবাসী।সরকার এগুচ্ছে নিজস্ব রোডম্যাপ নিয়ে। আর বর্তমানে বিভিন্নভাবে শঙ্কিত-আক্রান্ত রাজনৈতিক দলগুলো অগ্রসর হচ্ছে তাদের নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী দলগুলোকে নিষিদ্ধ না করলে কিছু দল নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে। বিএনপির ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে একপক্ষ নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে পারে। এমন বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’-এর দেশব্যাপী গণসংযোগ বেশ সাড়া জাগিয়েছে জনমনে। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে দাতা সংস্খা, কূটনীতিকদের উদ্বেগ বাড়ছে। সব মিলিয়ে দেশের জনগণ ভোটার তালিকা, ভোটার লিস্ট তৈরি এবং নির্বাচন নিয়ে বেশ সংশয়ে আছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সাধারণ মানুষের ‘পাবলিক রিএকশন’ দেখে আমার সে ধারণাটি খুবই ýপষ্ট হচ্ছে ক্রমেই।তিন.স্বাস্খ্যসেবা বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক নীতি সর্বত্রই সমানভাবে প্রচলিত। বিদেশে আমরা লক্ষ্য করি, একজন রোগী যদি একজন চিকিৎসক কর্তৃক অসুস্খ নির্ণীত হন তবে তিনি ‘সেকেন্ড ওপিনিয়ন’-এর জন্য অন্য চিকিৎসকের দ্বারস্খ হতেই পারেন। বিষয়টি যদি কোন ল’ স্যুটের (ক্ষতিপরণ মামলা) আওতায় থাকে তবে বিবাদি পক্ষের ডাক্তারও এ বিষয়ে কোন চ্যালেঞ্জ করেন না। কারণ কারও কোনও ইনজুরি থাকলে তা তো লুকানো বা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হয়ে যায়। বিবাদি-বাদি পক্ষের চিকিৎসকের তর্কযুদ্ধ কোন মতেই প্রাধান্য পায় না।কিন্তু আমরা খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, শেখ হাসিনার চিকিৎসা বিষয়টি নিয়ে বর্তমান সরকার নানা দীর্ঘসত্রতা তৈরি করতে চাইছে। এই মানবিক কারণের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবহেলা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। হতে পারে না।কৌশল যতই বদল করার চেষ্টা করা হোক না কেন, কাউকে প্রতিবী জীবনের প্রতি ঠেলে দেয়ার দায়িত্বব কি নিতে পারে কোন রাষ্ট্র? কোন সরকার?খালেদা জিয়া তার দু’ছেলেকে রেখে বিদেশে যাবেন না­ তা তিনি বারবারই জানিয়েছেন আকারে-ইঙ্গিতে, বক্তব্যে, ঘোষণায়। তারপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, চিকিৎসার প্রয়োজন তারও দরকার হলে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত। চিকিৎসার বিষয়ে কোন শর্তই যুক্ত হতে পারে না। সময়, জনগণ এবং ইতিহাস তা মেনে নেবে না।কিন্তু বেগম জিয়া যাবেন না­ তাই শেখ হাসিনাকেও যেতে দেয়া হবে না­ এমন মানসিকতা কোন মতেই কাম্য নয়।দুর্নীতিগ্রস্তরা হাইকোর্ট থেকে জামিন পাবেন না। স্খানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচনের আগেই। এমন বেশকিছু কৌশল নিয়ে বর্তমান সরকার তাদের অবস্খান সুসংহত করতে চাইছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে নির্বাচন রেখে নেপথ্যে একটি অনুকূল ছায়া সরকার গঠন করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। সরকার তার কৌশল বদলে নতুন পথ অবলম্বন করতেই পারে।কিন্তু কোন মতেই কোন নাগরিকের মানবিক দিকগুলো যেন আক্রান্ত না হয়। আমার মনে হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই গীতা পাসি নতুনভাবে তৎপর হয়েছেন। আমরা জানি জেমস এফ মরিয়ার্টি নতুন রাষ্ট্রদত হিসেবে খুব শিগগিরই ঢাকার দায়িত্ব নেবেন। ২০০৮-এর নির্বাচন বাঙালির বাঁচামরার লড়াই। নতুন করে অস্তিত্ব খোঁজার প্রশ্ন জড়িত এ নির্বাচনের সঙ্গে। কারণ তা নির্ধারণ করে দেবে, কেমন হবে আগামীর বাংলাদেশ। কেমন হবে প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।সে পরিবর্তনের সড়কে সবাইকে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। আবারও বলি কোন মানবিক অবহেলা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা একটি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্খা রাষ্ট্রেরই করা উচিত। কোন আইনি অভিযোগ যেন সুচিকিৎসার পথ ব না করে।নিইইয়র্ক, ১১ মার্চ ২০০৮------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১৫ মার্চ ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
rg
আজ শ্বেত ভাল্লুকের জন্মদিন !!! কবি সমুদ্র গুপ্ত আমাকে দেখলেই ভাল্লুকের মত ভয় দেখাতেন। আর সুউচ্চ অট্টহাসিতে হৃদয় নিড়ানো ভালোবাসায় বলতেন, তুই একটা কালা ভাল্লুক। যে কারণে আমি কবিকে ডাকতাম শাদা ভাল্লুক। একদিন আজিজে গল্পে গল্পে বললেন, তুই তো আমার মামুর দেশের ভাল্লুক রে। আজ থেকে তুই আমার মামু। সেই থেকে কবি সমুদ্র গুপ্ত আমার ভাগ্নে! সমুদ্র গুপ্ত তাঁর ছদ্ম নাম। আসল নাম আব্দুল মান্নান বাদশা। আজ কবি সমুদ্র গুপ্ত'র ৭০তম জন্মদিন। ২০০৮ সালের ১৯ জুলাই কবি ভারতের ব্যাঙ্গালুরু'র নারায়ণী হৃদয়লয়া হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবি সমুদ্র গুপ্ত'র কোনো সুনির্দিষ্ট পেশা ছিল না। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি কখনো ছিলেন প্রেসের কমর্চারী, কখনো ছিলেন করাতকলের ম্যানেজার, কখনো ছিলেন জুটমিলের বদলি শ্রমিক, কখনো বা উন্নয়ন সংগঠনের নির্বাহী, কখনো বা ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবসা করেছেন, কখনো ছিলেন প্রুফ রিডার, কখনো সাংবাদিকতা করেছেন। আর ষাটের দশক থেকেই তিনি ছিলেন কবি ও একজন পেশাদার লেখক। পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন। সারা জীবনে তাঁর ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ১টি গদ্যগ্রন্থ, একাধিক সম্পাদিত ও অনুবাদগ্রন্থ ছাড়াও অনেক সৃজনশীল লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি কবি সমুদ্র গুপ্তের কবিতা বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, উর্দু, অসমীয়া, নেপালি, সিংহলি, ফরাসি, ইংরেজি, নরওয়েজীয়, চিনা ও জাপানি ভাষায় বহু কবিতা অনুদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। কবি সমুদ্র গুপ্তের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো-১). রোদ ঝলসানো মুখ, ২). স্বপ্নমঙ্গল কাব্য, ৩) এখনো উত্থান আছে, ৪). চোখে চোখ রেখে, ৫). একাকী রৌদ্রের দিকে, ৬). সাত সমুদ্র নদীও বাড়িতে ফেরে, ৭). শেকড়ের শোকে, ৮). ঘাসপাতার ছুরি, ৯). খালি হয়ে গেছে মাথা শুধু ওড়ে, ১০). ছড়িয়ে ছিনিয়ে সেই পথ, ১১). চলো এবার গাছে উঠি, ১২). হাতে হাতে তুলে নিলে এই বাংলার মাটি রক্তে ভিজে যায়, ১৩). তাহলে উঠে দাঁড়াবো না কেন। নিবন্ধ গ্রন্থ: ডিসেম্বরের রচনা (শত্রুতা চিহ্নিতকরণ ও শত্রুতা বিকাশ প্রকল্প)। সম্পাদনা গ্রন্থ: বাংলাদেশে বঙ্কিম। কবি সমুদ্র গুপ্ত সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার হাসিল গ্রামে ১৯৪৬ সালের ২৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে দেয়া কবির নাম ছিল আব্দুল মান্নান। বাল্যকালে তিনি অবশ্য বাদশা নামেও পরিচিত ছিলেন। কমিউনিজম চিন্তাচেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে নষ্টভ্রষ্ট ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনে বিশ্বাসী কবি এক সময় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন এবং ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সাহিত্যচর্চা করতে এসে সমুদ্র গুপ্ত ছদ্মনাম ধারণ করেন। তারপর থেকে এই নামেই তিনি সাহিত্য অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে কবি সমুদ্র গুপ্ত ছিলেন একজন সক্রিয় কর্মী। আর একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি সরাসরি রণাঙ্গনে সশস্ত্র নির্ভীক যোদ্ধার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জাতীয় সংকটকালে একেবারে সামনে থেকে তিনি একজন নিষ্ঠাবান কর্মীর মতো সর্বদা দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী তীব্র আন্দোলনে গণতন্ত্রের জন্য তিনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নব্বইয়ের আন্দোলনকালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবিতা পরিষদের তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সত্তর দশকের শুরুর দিকে কবি সমুদ্র গুপ্ত লেখক শিবিরের হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিষ্ণু দে পুরস্কার ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকার প্রদত্ত ভাষা দিবস পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু আমাদের বাংলা একাডেমি এই কবিকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়নি। অত্যন্ত নির্লোভ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কবি সমুদ্র গুপ্ত জীবনে কারো কাছে কখনো হাত পাতেননি। অথচ দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শুধু কবিতা লিখে এক চরম জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তায় কাটিয়েছেন। আর ভেতরে ভেতরে শরীরে লালন করেছেন কঠিন দুরারোগ্য ব্যধি। বাংলা ভাষা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাবান কবি সমুদ্র গুপ্ত ২০০৮ সালের ১০ মে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাঁকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে তাঁর রোগের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা না হওয়ায় পরে কবিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্কয়ার হাসপাতালে কবির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসা দিয়েও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়, ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’-এর সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনায় কবি সমুদ্র গুপ্তকে ৩ জুলাই ভারতের ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার পরেও ২০০৮ সালের ১৯ জুলাই, শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ব্যাঙ্গালুরু'র নারায়ণী হৃদয়লয়া হাসপাতালে কবি সমুদ্র গুপ্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সোহানা হ্যাপী ও দুই মেয়ে নীল সমুদ্র ও স্বপ্ন সমুদ্র সহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। ২০১৪ সালের ২০ জুন কবিপত্নী সোহানা হ্যাপী (৫৪) মারা যান। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ব্রেইন টিউমারে ভুগছিলেন।বাংলা একাডেমি কবি সমুদ্র গুপ্তকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়নি। এমনকি কবি'র রচনাবলী প্রকাশেরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ কবি আট বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন। আমাদের প্রকাশকরা ভবিষ্যতে কবি সমুদ্র গুপ্ত রচনাবলী প্রকাশে উদ্যোগী হবেন বলেই আমি এখনো বিশ্বাস করি। এই লেখা শেষ করতে চাই কবি'র লেখা 'মানুষের নিয়ম' কবিতা দিয়ে। ''স্বাধীনতা জিনিসটা অন্যরকমএকেক পরিপ্রেক্ষিতে একেক বিষয়কেন্দ্রেএকেক পরিস্থিতিতে একেক চাহিদাক্ষেত্রেস্বাধীনতার একেক চেহারাআজ যা তোমার স্বাধীনতাএকই সাথে অন্যের ক্ষেত্রে বিপরীতআবারসহসাই এটির চিত্র ও ভঙ্গি পাল্টে যায়''.........................................২৩ জুন ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪৩
false
ij
আল ফারাবির দর্শন ও বাংলার বাউলের গান আপনি কয়টি ভাষা জানেন? দশম শতকের মুসলিম দার্শনিক আল ফারাবি সত্তরটি ভাষা জানতেন! যে কারণে আরবরা আল ফারাবি কে বলত: ‘হাকিম সিনা।’ অর্থাৎ দ্বিতীয় আচার্য। প্রথম আচার্য কে? অ্যারিস্টটল। ঐশীজ্ঞানের পরিবর্তে মানবীয় বুদ্ধিবিবেচনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন বলেই মুসলিম রক্ষণশীলেরা আল ফারাবিকে বলত কাফের, যদিও আল ফারাবি ছিলেন মধ্যযুগের জ্ঞানের সুবিশাল বটবৃক্ষ সরূপ। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এমন প্রতিভাবান জ্ঞানী পরবর্তী যুগের ইসলামী পন্ডিতদের খ্যাতির আলোয় ম্লান হয়ে আছেন। ফারাবির লেখায় গ্রিক দর্শনের প্রভাব থাকলেও চিন্তার দিক থেকে অত্যন্ত মৌলিক। আল ফারাবি । (৮৭৩-৯৫০ ) দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংগীতজ্ঞ। আল ফারাবির আসল নাম-আবু নসর আল ফারাবি। পরিবার প্রদত্ত নাম অবশ্যি মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে তারখান ইবনে উজালাঘ আল ফারাবি। ইউরোপ অবশ্যি আল ফারাবি কে চেনে ‘আলফারাবিয়াস’ নামে। মোল্লাদের দেখানো পথে না হেঁটে ফারাবি স্বর্গলাভের বিকল্প পথ অনুসন্ধান করেছিলেন বলেই আল ফারাবির দর্শনের সঙ্গে আবহমান বাংলার ভাবের প্রচ্ছন্ন হলেও সম্পর্ক রয়েছে। ৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ট্রান্সঅক্সিআনার ফারাব প্রদেশে একটি তুর্কি পরিবারে ফারাবির জন্ম । ফারাব প্রদেশটি ছিল এখনকার উজবেকস্তান। আল ফারাবির বাবা মুহাম্মদ ছিলেন ফারাব প্রদেশের ছোটখাট একটি কেল্লার সেনাপতি। তরুণ বয়েসে ইরানের খোরাসানে পড়াশোনা করেন ফারাবি; এরপর বাগদাদ যান। ট্রান্সঅক্সিআনা বাগদাদ ছিল সে আমলের অন্যতম জ্ঞানতীর্থ। বাগদাদে ফারাবির শিক্ষকরা ছিলেন গ্রিক দর্শনে পন্ডিত, তাদের সান্নিধ্যে ফারাবি খ্রিস্টীয় ভক্তিবাদ ও যুক্তিবাদী গ্রিকদর্শন সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। ফারাবির এক শিক্ষক যোহন্না ইবনে হৈলান ছিলেন সিরিয় খ্রিস্টান । এ সব কারণে সংকীর্ণতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তাছাড়া ফারাবির জন্মস্থান ট্রান্সঅক্সিআনা ইসলাম প্রচারের পূর্বে ছিল বৌদ্ধঅধ্যুষিত, বৌদ্ধ মঠগুলি তখনও টিকে ছিল; ফারাবির পরিবার ছিল সদ্য ধর্মান্তরিত মুসলিম। বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ছিল ফারাবির। যে কারণে পরবর্তীকালে ফারাবির লেখায় সার্বজনীন এক ধর্মের কথা পাই। তিনি বিশ্বাস করতেন বিশ্বের ধর্মসমূহ সেই সার্বজনীন ধর্মেরই রুপকার্থ প্রকাশ। এই রকম উদারতা দার্শনিক বলেই সম্ভবপর হয়েছে। দশম শতকে প্রারম্ভে বাগদাদের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হচ্ছিল। বাগদাদ থেকে সিরিয়ার আলেপ্পো যাওয়ার কথা ভাবলেন ফারাবি। আলেপ্পোর সামন্তপ্রভূ সাইফ আল দৌলা দর্শনের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন; তিনি ফারাবির পৃষ্ঠপোষক হতে সম্মত হন। পড়াশোনা ও লেখালেখি চলছিল। ফারাবির অন্যতম কৃতিত্ব হল, গ্রিক দর্শনের সঙ্গে আরব বিশ্বের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অ্যারিস্টটল-এর রচনার টীকাভাষ্য লিখেছিলেন। অবশ্য সেই বইটা সহ ফারাবির আরও প্রায় ১০০ টি বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে সৌভাগ্যক্রমে কিছু গ্রন্থ মধ্যযুগে লাতিন অনুবাদে সংরক্ষিত আছে। বিজ্ঞানের ক্যাটাগরি করেছিলেন ফারাবি। তিনিই প্রথম মুসলিম হিসেবে সমগ্র মানবীয় জ্ঞানের ইতিহাস রচনা করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন। ‘কিতাব আল মুসিকা’ নামে সংগীত বিষয়ক গ্রন্থও লিখেছেন ফারাবি। বইটি যদিও পারস্যসংগীতের বিচারবিশ্লেষন- ‘কিতাব আল মুসিকা’ ইউরোপে আরব সংগীতের আলোচনা বলে পরিচিত। তাছাড়া আজ আমরা যে ‘মিউজিক থেরাপির’ কথা শুনি - ফারাবি সে বিষয়েও ভেবেছিলেন। ইউরোপীয় নবজাগরণের পিছনে যে কটি মুসলিম মন সক্রিয় ছিল-ফারাবি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। ফারাবি বিশ্বাস করতেন যে, ঐশি প্রত্যাদেশের (Revelation) চেয়ে মানবীয় যৌক্তিকতাই শ্রেয়। আর এখানেই তিনি দার্শনিক এবং কাফের! ফারাবির মতে, বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা একজন প্রধানতম সত্তা বা সুপ্রিম বিয়িং-আর সৃষ্টি হচ্ছে এই সুপ্রিম বিয়িংয়ের বৌদ্ধিক কার্যক্রম, মানে বুদ্ধিমত্তা দ্বারা প্রধানতম সত্তা সৃষ্টিকার্য পরিচালনা করেন। (আমাদের মধ্যে যারা যারা লালনদর্শন নিয়ে আগ্রহী তারা লক্ষ করুন) ফারাবি বলছেন, মানুষের অর্ন্তজগতেও এই বৌদ্ধিক দিকটি (আয়নামহল?) রয়েছে, যা অমর ও অবিনশ্বর। এই অর্ন্তলোকের উন্নতি সাধনই মানবজীবনের একমাত্র লক্ষ। দেখুন ফারাবির দর্শনে সুফিবাদের মূলতত্ত্ব কী ভাবে প্রতিফলিত হয়ে উঠছে । ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শতকেই অর্থাৎ সপ্তম শতকেই সুফিবাদের উত্থানকাল হিসেবে অনেকে চিহ্নিত করে থাকেন। সোফি শব্দটি গ্রিক । সোফি বলতে গ্রিসের পরিব্রাজক দার্শনিকদের বোঝায়। অস্টম শতকে আরবি ভাষায় গ্রিক দর্শনের অনুবাদের সময় সোফি শব্দটি আরবি ভাষায় অর্ন্তভূক্ত হয় । তবে সুফি শব্দটি নবম শতকে প্রথম আরব বিশ্বে শোনা যায়। অমসৃণ উলের পোশাক কে আরবিতে বলে সুফু। যে মরমীবাদীরা সাদাসিদে উলের পোশাক পড়ে তারাই সুফি। সুফি বলতে আরবিতে বোঝায়- উলের মানুষ। তবে সুফি বলতে মূলত বোঝায়, যারা অর্ন্তজগতের উন্নতির জন্য নিরন্তর সাধনা করেন। ফারাবি যেমন বলছেন, মানুষের অর্ন্তজগতেও এই বৌদ্ধিক দিকটি (আয়নামহল?) রয়েছে, যা অমর ও অবিনশ্বর। এই অর্ন্তলোকের উন্নতি সাধনই মানবজীবনের একমাত্র লক্ষ এবং ফারাবির দর্শন বহু বছর পরে ধ্বনিত হয়েছে বাংলার একটি মুর্শিদি গানে- দয়াল বাবা কেবলাকাবা আয়নার কারিগর আয়না বসায়ে দে মোর কলবের ভিতর। লালনের মনের মানুষের সন্ধান আসলে ফারাবি-কথিত সেই অর্ন্তলোকেরই সন্ধান। কি সন্ধানে যাই সেখানে আমি মনের মানুষ যেখানে, আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি দিবারাত্রি নাই সেখানে ...(লালন) আর এখানেই বাংলার বাউলধর্ম ও নব্যপ্লেটোবাদ (Neoplatonism) লীন হয়ে গেছে। আরেকবার স্মরণ করি। ফারাবি সংগীতপ্রিয় ছিলেন ... যা হোক। কিন্তু, নব্যপ্লেটোবাদ কি? নব্যপ্লেটোবাদ হচ্ছে খিষ্টিয় তৃতীয় শতকের একটি দার্শনিক মতবাদ। যে মতবাদটির প্রবক্তা রোমান দার্শনিক প্লটিনাস (২০৫-৭০)। প্রাচ্যের মরমীবাদ ও প্লোটোর ভাববাদের মিশ্রনেই গড়ে উঠেছিল নব্যপ্লেটোবাদ- যে দর্শনটির মূলতত্ত্ব হল: এক থেকে বহু প্রবাহিত। এই এক হল প্রধানতম সত্তা, আল্লাহ বা সাঁই। বহু গঠিত আত্মা দ্বারা। স্বর্গীয় তাড়নায় আত্মা সেই এক-এর সঙ্গে পূর্নমিলিত হতে চায়। মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষেরও সনে? (লালন) ফারাবি যাকে অবহিত করেছেন প্রধানতম সত্তা বা সুপ্রিম বিয়িং-বাংলার বাউলের কাছে তিনিই সাঁই নামে পরিচিত। নৌকা বাইতে বাইতে বাংলার মাঝির কন্ঠে ভাটিয়ালি গানে আজও ধ্বনিত হয় সেই সাঁইয়ের নাম - দুঃখ-সুখের দুইটি ধারায় বইছে নদীর জল সুখে বাইব তোমার ডিঙা করিয়া কোন্ ছল? তাই তো বলি ওরে ও মন, এ যে কঠিন ঠাঁই কোন খানে পাঠাইয়া দিল মওলা মালিক সাঁই রে ... ফারাবির নির্বিকার নিরাসক্ত প্রধানতম সত্তা বা সুপ্রিম বিয়িং বাংলায় প্রেমময় রুপ নিয়েছেন। সম্প্রতি চন্দনা মজুমদারের গাওয়া একটি গানে পাই- আমার বন্ধু দয়াময়, তোমারে দেখিবার মনে লয় ... (গানটির গীতিকার ও সুরকারের নাম এখনও জানতে পারিনি বলে আমি আন্তরিক দুঃখিত। ) বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেব প্রচারিত গৌড়িয় বৈষ্ণবধর্মটিতে নব্যপ্লেটোবাদী বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। সনাতন বৈদিক ধর্মের প্রধানতম দেবতা বিষ্ণু । দেবতার বিষ্ণুর ভজনাই বৈষ্ণবধর্ম। উত্তর ভারতের মথুরাবৃন্দাবনের একজন পরম পূজনীয় পুরুষ হলেন কৃষ্ণ বা শ্রীকৃষ্ণ। তিনি দীর্ঘকাল ধরেই দেবতা বিষ্ণুর অবতার বলে বৈদিক সমাজে শ্রদ্ধাভরে স্বীকৃত। দীর্ঘকাল পর বাংলার ভক্তেরা নদীয়ার শ্রীচৈতন্যদেবকে কৃষ্ণর অবতার বলে সাব্যস্ত করে । শ্রীচৈতন্যদেবের চিন্তাভাবনা ও দর্শনই গৌড়িয় বৈষ্ণব ধর্ম নামে পরিচিত। একাদশ ও দ্বাদশ শতকে সেনদের শাসনামলেল দুশো বছর বাংলায় বৈষ্ণবধর্মটি ছিল স্টেট রিলিজিয়ন বা রাষ্ট্রীয় ধর্ম। রাষ্ট্রীয় ধর্ম হলে যা হয়-দুশো বছর ধরে বৌদ্ধদের ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে পীড়ন করা হয়েছে। শ্রীচৈতন্যদেব। (১৪৮৬-১৫৩৩) প্রেমের শক্তিতে বৈষ্ণব ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম থেকে অন্তরের ধর্মতে রুপান্তরিত করেছেন। শ্রীচৈতন্যদেব ছিলেন অসম্ভব প্রতিভাবান একজন সংগীতজ্ঞ ও প্রখর প্রজ্ঞাসম্পন্ন কবি । উল্লেখ্য, শ্রীচৈতন্যদেব-এর পিতা জগন্নাথ মিশ্রর জন্মভূমি বাংলাদেশের সিলেট বলেই সিলেটকে পুণ্যভূমি বলা হয়ে থাকে; বিশিষ্ট সুফিসাধক হযরত শাহ জালালের পবিত্র স্মৃতির কারণেও সিলেট পূন্যভূমি হয়ে উঠেছে। শ্রীচৈতন্যদেব ছিলেন ষোড়শ শতকের মানুষ। তিনি জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের ধারনাটি লাভ করেছিলেন বাংলার সুফি-সাধকদের কাছ থেকে। দীর্ঘকাল ধরে সুফি-সাধকগন বাংলায় ‘ইশক’ এর মাধ্যমে বান্দার আল্লায় লীন হয়ে যাওয়ার ধারনাটি প্রচার করছিলেন । সুফি-সাধকরা বলতেন,‘ হক্ এর সঙ্গে জীবের মিলনের একটিই পথ, তা হল প্রেম বা ইশক,’ (দ্র: রাহুল সাংকৃত্যায়ন, দর্শন দিক্দর্শন; পৃষ্ঠা ৫৫) । ফারাবির সঙ্গে সুফিবাদের প্রত্যক্ষ সম্পর্কের ইঙ্গিত আগেই দিয়েছি। শ্রীচৈতন্যদেব জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনতত্ত্বকে এক অভাবনীয় উচ্চ স্তরে নিয়ে গিয়ে উচ্চারণ করলেন, ‘আমার অন্তরে রাধা, বহিরঙ্গে কৃষ্ণ। ’ রাধা। রাধা কল্পনাটি বাংলার। দ্বাদশ শতকের বাঙালি কবি জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যে রাধা নামটি প্রথম উল্লেখিত হয়। এর পরপরই রাধার কনসেপশনটি ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। কেননা, কবি হিসেবে জয়দেবের ছিলেন ভারতবর্ষজুড়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় । এখনও দক্ষিণ ভারতের মানুষ বাংলা বলতে জয়দেবকেই বোঝে! নদীয়ার শ্রীচৈতন্যদেবই সনাতন বৈষ্ণবধর্মের নব্যব্যাখ্যাকার। যে ধর্মে রাধা হলেন জীবাত্মার প্রতীক এবং কৃষ্ণ হলেন সাঁই বা ফারাবির প্রধানতম সত্তা বা সুপ্রিম বিয়িং। শ্রীচৈতন্যদেব বাঙালি বলেই নব্যপ্লেটোবাদী নিরাসক্ত দর্শনটিকে আবেগময় রাধাকৃষ্ণের লীলায় ও গানে ভরিয়ে দিলেন। এখানেই বাংলার আত্মিক স্বাতন্ত্র। যে অপূর্ব অপার্থিব স্বর্গীয় প্রেম প্রকাশিত হল কীর্তন গানে। কীর্তন থেকেই বাংলা গানের যাত্রা শুরু। যে গানের মর্মবাণীকে পরবর্তীকালে লালন ও রবীন্দ্রনাথ অনেক গভীরে নিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ গেয়েছেন, আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে তাই হেরি তাই সকলখানে ... লালন গেয়েছেন, কে কথা কয় রে দেখা দেয় না নড়েচড়ে হাতের কাছে খুঁজলে জনম-ভর মেলে না। ভারতীয় উপমহাদের এইসব বিস্ময়কর ঘটনাবলীর সঙ্গে নব্যপ্লেটোবাদ সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও ঘনিষ্ট। এবং ফারাবির দর্শন মূলত নব্যপ্লেটোবাদী দর্শন। এবং এই মহাত্মা লিখেছেন, অ-দার্শনিকদের কাছে ধর্ম রূপকের মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরে; ধর্মের শুদ্ধ সরূপটি অবোধগম্যই থেকে যায়; কেবল দার্শনিকগনই প্রধানতম সত্তার প্রকৃত সরুপটি উপলব্দি করতে পারে। প্রধানতম সত্তা যেমন বৌদ্ধিক শক্তির সাহায্যে মহাবিশ্ব শাসন করেন, রাষ্ট্রও অনুরুপ দার্শনিকগনের দ্বারা শাসিত হওয়া উচিত এবং সেকারণেই রাষ্ট্রের নিরন্তর সংস্কারের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। সে সংস্কার নিয়ে ফারাবি লিখেছেন: “আল মাদিনা আর ফাদিলা” (পূন্য নগর বা বিশুদ্ধ নগর ) । অবশ্যই সে লেখায় প্লেটোর প্রভাব লক্ষণীয় এবং সেটিই স্বাভাবিক। ফারাবি আক্ষেপ করে লিখেছেন, দার্শনিকরা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন না। এ কারণেই কি অভিমানবশত বাগদাদ পরিত্যাগ করে নির্জন আলেপ্পোয় চলে গিয়েছিলেন? নির্জনতাপ্রিয় ফারাবি বৌদ্ধভিক্ষুদের মতন অত্যন্ত সাদাসিদে জীবনযাপন করতেন। পরিধান করতেন সুফি পোশাক । (আমরা রবীন্দ্রনাথের বাউল পোশাকটির কথা ভাবতে পারি) সহজেই অনুমান করা যায়, পার্থিব ধনসম্পদ না-থাকলেও ফারাবির আন্তরিক ঐশ্বর্য কোনও সম্রাটের চেয়ে কম ছিল না; প্লেটো-অ্যারিস্টটল পাঠ করে গভীর তৃপ্তি পেতেন, অবসর কাটাতেন উদ্যানে ফুলেদের শোভা দেখে ও পাখিদের কাকলী শুনে। কে কথা কয় রে দেখা দেয় না নড়েচড়ে হাতের কাছে খুঁজলে জনম-ভর মেলে না। ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ। ফারবির বয়েস প্রায় ৮০ । কী কাজে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস পৌঁছলেন আল ফারবি। সে নগরেই দেহত্যাগ করেন। শোনা যায়, আলেপ্পোর সামন্ত সাইফ আল দৌলা তাঁর কবর সুফি পোশাকেই আচ্ছাদিত করে দিয়েছিলেন। তারপর? গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ইসলামি বিশ্বে অত্যন্ত সমাদৃত ও শ্রদ্ধেয়। ইসলামি বিশ্বে প্লেটো ‘আফলাতুন’ নামে পরিচিত। তা সত্ত্বেও মুসলিম দর্শনে গ্রিক প্রভাব মুসলিম রক্ষণশীলদের মর্মপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছিল। যে কারণে একাদশ শতকে ইমাম আল গাজ্জালি দর্শনের ধ্বংস কামনা করে লিখলেন, ‘তাহাফাতুল ফালাসিফা।’ এই শব্দ দুটির মানে দর্শনের ধ্বংস। সমকালীন দর্শন বিচারবিশ্লেষ করে গাজ্জালি বললেন, জ্ঞানের ভিত্তি ঐশি প্রত্যাদেশ । গ্রিক দর্শনের হাত থেকে ইসলাম বাঁচাতে গাজ্জালি আরও লিখলেন, সৌভাগ্যের পরশমনি বা ‘কিমিয়ায়ে সাদাত।’ সে মহামূল্যবান বইয়ে বিশুদ্ধ করে ওজু করার ১৯ প্রকার নিয়ম পাবেন! অথচ, আল ফারাবির মতো স্বাধীন চিন্তার মুসলিম দার্শনিকদের লেখনিই সূত্রপাত করেছিল ইউরোপীয় নবজাগরনের । তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য আর ইউরোপ ষোড়শ শতাব্দী অবধি আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে সমমানের ছিল; এরপর ইউরোপীয় নবজাগরনের সূত্রপাত হল অথচ অটোমান সাম্রাজ্য তথা ইসলামি বিশ্বে বিরাজ করল মধ্যযুগীয় তমসা, চিন্তাচেতনার যে ঘোর অন্ধকার একুশ শতকেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমানের ইসলামি রক্ষণশীলদের কার্যকলাপে মনে হচ্ছে তাদের ফারাবি প্রদর্শিত স্বর্গলাভের বিকল্প সাংগীতিক পথে আস্থা নেই! যে কারণে রমনা বটমূলে বোমা হামলার কারণটি বোঝা যায়। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে মঞ্চের ওপর লালন ও রবীন্দ্রনাথের পাশে বসে থাকেন মহাত্মা আল ফারাবি। তাঁকে হত্যা করাও তো জরুরি ... (উৎসর্গ: শয়তান।) সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৪
false
fe
বিবর্তন, বৈষম্য ও সৃজনশীলতার পূর্বশর্ত বিবর্তন, বৈষম্য ও সৃজনশীলতার পূর্বশর্ত ফকির ইলিয়াস==================================রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের সব দেশেই আছে। একটি সমাজ নির্মাণে সে সমাজের মানুষের পরিশুদ্ধ অংশগ্রহণই নিশ্চিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর দিন। আর সে অংশগ্রহণ কিন্তু নারী এবং পুরুষের সমান ভাবেই হতে হয়। এমন এক সময় ছিল, যখন নারীশিশু জন্ম নিলে তাকে জীবন্ত পুঁতে রাখার আদিমতা ছিল সামজে। অথচ মানুষ সে সময়ও ছিল বিবর্তনবাদী। প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ যদি সভ্যতা সুন্দর এবং সত্যের স্বপক্ষে বিবর্তনবাদীই হবে, তবে মাঝেমাঝে এখনো আদিমতা গ্রহণ করবে কেন?আমরা কতগুলো উদাহরণ দেখি এখনো প্রাচ্যের সমাজে। পুরুষতান্ত্রিক শক্তির ব্যবহার কখনো কখনো আমাদের ভুলিয়ে দেয়, এ সমাজে নারী নামের আরেকটি লিঙ্গের মানুষ আছে। শাসনের বিভিন্ন জাঁতাকলে আছে। এগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয়, তত্ত্বীয়, ধর্মীয় এবং সামাজিক শাসনগুলোই প্রধান। আমরা দেখব যারা ফতোয়া দিয়ে বেড়ান, তারা কিন্তু ফতোয়াগুলোর নিরানব্বই ভাগই জারি করেন নারীদের বিরুদ্ধে। পুরুষের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে তাকে বড়জোর একঘরে করে রাখা যায় কয়েকমাস। তারপর সে আবার সমাজে উঠে আসে। কোনো পুরুষকে দোররা মারার ঘটনা আমরা কখনো শুনিনি। অথচ নারীকে দোররা মেরে মাটিতে পুঁতে হত্যা করার মর্মান্তিক ঘটনাও আমরা দেখেছি। ধর্ম এবং সমাজের মিশ্রণে এই যে পেশিশক্তির দাপট তা একটি শুদ্ধ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণে হুমকি বৈকি!যেসব নারী গণিকাবৃত্তি করে তাদের সমাজ পতিতা বলে আখ্যায়িত করে খুব সহজে। প্রাচ্যে এবং পাশ্চাত্যে এই আখ্যায়ন চলছে এখনো। কিন্তু যে পুরুষ গণিকালয়ে যায় তাকে ‘পতিত বলে’ সমাজ আখ্যা দেয় না। দিতে পারে না। কেন পারে না? এতে বাধা কোথায়?আজ থেকে তিন দশক আগেও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর নারীদের কর্মসংস্থান বিষয়ে নানা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। তা এখন ক্রমশ সরতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সরকারি দফতর, ব্যাংক বীমা, হাসপাতাল, ডাকঘরসহ অনেক সরকারি বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানে এখন নারীদের কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে সামাজিক ধ্যানি-চেতনার কারণেই। সামাজিক লিঙ্গ বৈষম্যের বিভিন্ন ধাপ আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লক্ষ্য করি। ইসলাম ধর্মে এক ছেলে সন্তানের সমান পরিমাণ মালামাল দু’মেয়ে সন্তান পাবে এমন একটি রেওয়াজ ছিল। তা বিভিন্ন দেশে এখন সংস্কার করা হয়েছে। একটি মেয়ের যদি একটি ভোট হয়, একটি ছেলেরও তেমনি একটি ভোট। তাহলে রাষ্ট্রে পৈতৃক মালামাল, সম্পত্তি পেতে বৈষম্য হবে কেন? বলা যায় বিয়ের প্রথার কথাও। একজন পুরুষ একসঙ্গে চারজন স্ত্রী রাখতে পারবে। কিন্তু একজন নারী একসঙ্গে একাধিক স্বামী রাখতে পারবে না। এই যে স্বীকৃত প্রথা ইসলাম ধর্মে রয়েছে, এর সহজ কোনো সমাধান আপাত দৃষ্টিতে নেই। যদি সামাজিকভাবে মানুষ তা গ্রহণ কিংবা বর্জনে রাজি না হয়।দুই. বিতর্কিত অনেক প্রথা অনেক ধর্মেই আছে। হিন্দু ধর্মে সতীদাহ, অকাল বৈধব্যের পর আর বিয়ে না করা প্রভৃতি কার্যক্রম কোনো সভ্য সমাজেই গৃহীত হতে পারে না। যারা কট্টরপন্থী জুইশ (ইহুদি) ধর্মাবলম্বী, সে সমাজের নারীদের বিয়ের পরই তাদের চুল কেটে ফেলতে হয়। তারপর তাদের পরচুলা ব্যবহার করতে হয়। স্বামীর মনোরঞ্জন ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের যাতে দৃষ্টি কাড়তে না পারে সেজন্য হাইহিল জুতা, টাইট ফিটিংস কাপড়চোপড় তারা পরতে পারে না। এমনকি প্রচলিত আছে, জুইশ ধর্মাবলম্বী কট্টরপন্থী পুরুষরা তাদের স্ত্রীকে সন্তান ধারণে বাধ্য করে অনেকটা বলপূর্বক। অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই।ইউরোপ-আমেরিকার জুইশ ধর্মাবলম্বী কট্টরপন্থীরা তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে শাদীর ব্যাপারেও পরিবারের অগ্রজদের মতামতকে চাপিয়ে দেয়। অ্যারেঞ্জড কিংবা সেটেলম্যারেজ প্রথা শুধু বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় নয়, আইরিশ, ইতালিয়ান, গ্রিক, জুইশ, রাশিয়ান সমাজেও আমরা প্রত্যক্ষ করি। আর এসব সমাজের দাম্পত্য জীবনে শান্তি এবং অশান্তি দুটোই কিন্তু থেকে যাচ্ছে সমানভাবে। এসব দায় থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে সমঝোতাপূর্ণ জীবনযাপন। তা যে কোনো দেশে যে কোনো সমাজেই হোক।লিঙ্গের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনের শাসন। গেল কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। এক দম্পতি ডিভোর্স চেয়ে পারিবারিক আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল। এ সময়ে স্বামী স্টেট লটারিতে পাঁচ মিলিয়ন ডলার জিতে যায়। স্ত্রী আইনানুযায়ী তার অর্ধেক দাবি করে। স্বামী বলে আমরা ডিভোর্স ফাইল যেহেতু করেছি, তাই স্ত্রী অর্ধেক অর্থমূল্য পাবে না। কিন্তু আইনি মারপ্যাঁচে হেরে যায় স্বামী। মাননীয় আদালত রায় দেন যেহেতু ডিভোর্স প্রক্রিয়াটি এখনো সম্পন্ন হয়নি তাই স্ত্রী লটারির অর্ধেক অর্থমূল্যের ভাগীদার। একটি রাষ্ট্রে সুষ্ঠু আইনি বিচার এবং সততা থাকলেই সমঅধিকারের বিষয়টি পূর্ণতায় রূপ নেয়া সহজ হতে পারে।আবারও ধরা যাক বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামের কথা। এই স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের যে স্বর্ণোজ্জ্বল অবদান, তা কি সরকারিভাবে ব্যাপক স্বীকৃত হয়েছে? না, হয়নি। এমনকি যারা বীরাঙ্গনা, যারা তাদের মহামূল্যবান সম্ভ্রম হারিয়ে ছিলেন আমাদের বিজয়ের জন্য তাদের কিন্তু প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা যথার্থ সম্মান দেয়নি। কেন দেয়া হয়নি? কেন এই দীনতা!ব্যক্তিস্বাধীনতা কিংবা আধুনিকতা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু আধুনিকতার লেবাসে উগ্রতা, বেহিসেবীপনা কোনো সমাজই গ্রহণ করে না। যেসব কর্ম সমাজ কিংবা প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিতে পারে তাকে তো আর ব্যক্তিস্বাধীনতা বলা যায় না। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ইউরোপের কিছু কিছু দেশে যৌন উগ্রতার নামে মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে। যেমন অবৈধ মাদক দ্রব্যের বিক্রি লাইসেন্স নিয়ে ইউরোপের কোনো কোনো দেশে আইনি দেনদরবার চলছে। মাদক দ্রব্য গোটা মানব জাতির জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। সে নারী কিংবা পুরুষ হোক।সমান অধিকারকামী সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত হচ্ছে একটি রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, যা নারী-পুরুষের অধিকারের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা দেবে। মানুষ মানুষের হাতে নিগৃহীত হবে না। মানুষ মানুষের কাছে প্রতারিত হবে না। তারপরের শর্তটি হচ্ছে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। মনে রাখতে হবে সৃজনশীল বিবর্তনই মানুষকে এ জন্য সাহায্য করেছে। এর পাশাপাশি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতাই হতে পারে সমাজ নির্মাণের মূলমন্ত্র।---*************-------------------দৈনিক ডেসটিনি।ঢাকা।৯মার্চ ২০০৮ রোববার প্রকাশিত
false
rn
আজকের দিনটা এত সুন্দর কেন !! সকাল নয়টা। গুল্লু গভীর ঘুমে। গুল্লুর বড় ভাইয়ের মেয়ে- পরী, যার বয়স ১৪ মাস, সে গুল্লুকে ডাকছে। চাচুই...চাচুই চাচুই, চাচুই মানে চাচা। পরী চাচুই বলে ডাকে, চাচা বলতে পারে না। গুল্লু ঘুম থেকে উঠে পরীকে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিল। ঠিক তখনই গুল্লুর মনে হলো- আরে...আজকের দিনটা এত সুন্দর কেন ? আজ কি কোনো বিশেষ দিন ? গুল্লু ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল- কী সুন্দর স্বচ্ছ রোদ, গাঢ় নীল আকাশ। শান্ত নরম বাতাস। গুল্লু ভাবলো- এই রকম দিনে ঘরে বসে থাকার কোনো মানে হয় না। সে গোছল সেরে ঝট-পট বের হয়ে গেল। কোথায় যাবে সে জানে না।আজ তার ম্যানিব্যাগে দু'টা পাঁচ শো টাকার নোট আছে। অনেক টাকা। খুব কম দিনই তার সাথে এত টাকা থাকে। রাস্তায় বের হয়ে গুল্লুর মনে পড়লো- আজ হরতাল ।যারা হরতাল দেয় গুল্লু তাদের ঘৃনা করে।ইদানিং হরতালের দিনে পুলিশ রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকান বসতে দেয় না। এজন্য গুল্লুকে অনেকটা দূর হেঁটে যেতে হয়। পনের মিনিট হাঁটার পর গুল্লু একটা চায়ের দোকান পায়। কিন্তু সে আরাম করে চা খেতে পারেনি। চায়ের দোকানের সামনে এক লোক একটা রিকশাওয়ালাকে খুব মারছে। বাংলা সিনেমার গুন্ডাদের মতন খুব মারছে। দূরে গিয়ে দৌড়ে এসে বারবার রিকশাওয়ালার বুকে লাথথি মারছে। রিকশাওয়ালার ঠোট কেটে রক্ত পড়ছে। কেউ রিকশাওয়ালাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না বরং সবাই দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। আজকে একটি সুন্দর দিন- তাই গুল্লু গিয়ে লোকটিকে বলল- ভাই আসুন চা খান। আর মারার দরকার নেই। রিকশাওয়ালার শিক্ষ হয়ে গেছে। গুল্লু লোকটিকে হাত ধরে টেনে চায়ের দোকানে নিয়ে আসে। তারপর গুল্লু রিকশাওয়ালাকে ম্যানিব্যাগ বের করে একটা পাঁচ শো টাকার একটা নোট দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তারপর ওই লোককে বলল- আজকের দিনটা অনেক সুন্দর, তাই আপনাকে কিছু বললাম না। তা-না হলে আজ আপনার খবর ছিল! লোকটি হা করে তাকিয়ে থাকল গুল্লুর দিকে। লোকটি গুল্লুর চোখ দেখে হয়তো ভয় পেয়েছে।দুপুর বারোটায় গুল্লু পল্টন মোড়ে এসে দাঁড়ায়। হরতালের দিন এই এলাকায় খুব গেঞ্জাম হয়। গুল্লু রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবছে- হরতাল দিলে কি লাভ হয় বিরোধী দলের ? দরিদ্র দেশে হরতাল হলো অভিশাপ। ঠিক এই সময় গুল্লুর পায়ের কাছে দুই টা কোকটেল বিস্ফোরন হয়। চারিদিক ধোয়ায় ভরে যায়। মানুষজন এলোমেলো ছুটছে। গুল্লু ভেবে পাচ্ছে না সে এখন কি করবে ? কোন দিকে ছুটবে ! গুল্লু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই পুলিশ এসে গুল্লুকে ধরে ফেলে। তারপর টেনে হেচড়ে গাড়িতে তোলে। গুল্লু মনে মনে ভাবে টেনে হেঁচড়ে নেওয়ার কি দরকার- আমাকে বললেই তো আমি খুব সুন্দর করে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ি। গুল্লুকে টেনে হেচড়ে নেওয়ার দৃশ্য টা দু'টা টিভি চ্যানেল ভিডিও করে নিল- হয়তো লাইভ দেখিয়ে থাকতে পারে । গুল্লুকে নিয়ে যাওয়া হল পল্টন থানায়। আগে এখানে ছিল মতিঝিল থানা। এই থানায় আগে গুল্লু একবার এসেছিল। সেকেন্ড অফিসার গুল্লুকে বললেন- কোনো ধানাই-পানাই করবি না। যা জিজ্ঞেস করবো- ঠিক ঠিক জবাব দিবি। বল- কোকটেল কবে থেকে তৈরি করিস ? গুল্লু চুপ । অফিসার আবার বললেন- আজ কয়টা কোকটেল ডেলিভারী করলি ? তুই কি দলের লোক না বাইরের ? গুল্লুকে চুপ থাকতে দেখে পুলিশ অফিসার বললেন- রুলের ডলা খাওয়ার আগে সব স্বীকার কর। নইলে আজ তুই প্যান্ট নষ্ট করে ফেলবি। গুল্লু শান্ত গলায় বলল- আমাকে এক গ্লাস পানি দেন, পানি খাবো। অফিসার গুল্লুর দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। গুল্লু পুলিশের কঠিন চোখকে অগ্রাহ্য করল। এই পুলিশ অফিসার গুল্লুর বাবাকে খুব ভালো করে চিনে। কিন্তু গুল্লুকে চিনে না। গুল্লু যদি একবার তার বাবার নাম বলে তাহলে পুলিশ অফিসার গুল্লুকে চা আর কেক খাইয়ে আদর করে বাসায় নামিয়ে দিতে আসবে। কিন্তু গুল্লু তার বাবার নাম বলতে চাচ্ছে না। গুল্লুর বারবার মনে হচ্ছে- আজকের দিনটা এত সুন্দর কেন ? ইদানিং গুল্লুর সময় ভালো যাচ্ছে না। রাস্তায় বের হলেই পুলিশ ধরে।সন্ধ্যা সাত টায় গুল্লু পল্টন থানা থেকে ছাড়া পায়। তার অনেক ক্ষুধা পায়।সারাদিনে কিছুই খাওয়া হয়নি। সে ঠিক করলো- উত্তরা যাবে হিমির বাসায় । অনেকদিন হিমির সাথে দেখা হয় না। সারা দুনিয়াতে শুধু হিমিই গুল্লুকে অনেক ভালোবাসে। একদম খাটি স্বচ্ছ ভালোবাসা। গুল্লুকে দেখে হিমি অনেক খুশি হয়। হিমি বলে- আমি জানতাম আজ তুমি আসবে। এজন্য আজ আমি নিজের হাতে রান্না করেছি। ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে করলা ভাজি, ডাল চচ্চরি, মুরগী ভূনা আর কলমি শাক ভাজি। গুল্লু খুব আরাম করে খায় । হঠাত লোডশেডিং হয়- তখন হিমি গুল্লু কে হাত পাখা দিয়ে বাতাস দিয়ে দেয়। খাওয়া শেষ করে গুল্লু- দুই হাত তুলে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল- " হে আল্লাহ, এই অভাগাকে যে এত আদর যত্ন করে খাওয়ালো, তাকে খুশি করো, তার মনের তিনটা ইচ্ছা পূরণ করে দাও। তারপর হিমি দুই মগ চা বানিয়ে, গুল্লুকে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে। রাত এগারোটায় গুল্লু হিমির বাসা থেকে বের হয়। হিমি ছাদে দাঁড়িয়ে গুল্লুর চলে যাওয়া দেখে। হিমির চোখ থেকে দু'ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। গুল্লু একবার হিমিকে বলেছিল- তুমি সব সময় চোখে কাজল দিবে, কপালে টিপ পড়বে আর দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ী পড়বে। এরপর সারা ঢাকা শহরের মেয়ে গুলো- এই কথা কিভাবে যেন জেনে যায়- তারা শুরু করল- কপালে টিপ দেওয়া, চোখে কাজল দেওয়া এবং কাঁচের চুড়ী পরা। কিন্তু বোকা মেয়ে গুলো চোখে হিমির মত কাজল দিতে পারে না । তারা দু'চোখে সমান করে কাজল দিতে পারে না। এক চোখের টা চিকন হয় আরেক চোখের টা মোটা হয়। গুল্লু বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে- এই সময় হঠাত করে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। গুল্লু বাসের জন্য আর অপেক্ষা না করে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটতে শুরু করলো। গুন গুন করে গান গাইছে- "জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর/ লোকলোকান্তরে যুগযুগান্তর/ তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই/ কোনো বাধা নাই ভুবনে... সে রাতে গুল্লু আর বাসায় ফিরতে পারেনি। একটা ট্রাক গুল্লুকে ধাক্কা মেরে ফেলে চলে যায়। ঝুম বৃষ্টির পানিতে সব রক্ত ধুয়ে মুছে যায়। রাস্তার মধ্যে পরে থাকে গুল্লুর লাশ। ঠিক এই সময় হিমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবে- আজকের দিনটা এত সুন্দর কেন ? ঝুম বৃষ্টির পানি আর হিমির চোখের পানি মিশে একাকার ।
false
ij
লালনের সমাজভাবনা বাউলের প্রজ্ঞায় ব্যাখ্যাত হয়েছে জীবন ও জগৎ । আত্মগত মন যেমন- তেমনি জগৎ সংসারও তার ভাবনা থেকে বাদ পড়েনি। বাউলের সে ভাবনায় সমাজও স্থান পেয়েছে। আরও অনেক আগে সমাজবিজ্ঞান শব্দটি প্রয়োগ করা হলেও ১৮৩৮ সালেই ফরাসী চিন্তাবিদ অগাস্ট কোতে প্রথম শব্দটি তাৎপর্যপূর্নভাবে ব্যবহার করেন। এর পরপরই ইউরোপীয় চিন্তাবিদেরা সমাজসংক্রান্ত তত্ত্ব উপস্থাপন করতে থাকেন। ক্রমশ গড়ে উঠতে থাকে সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রটি। ইউরোপে সামাজিক বিজ্ঞানের বিকাশে কার্ল মার্কস, ম্যাক্স ভেবার ও এমিল ডুরখেইম -এর অবদান স্মরণীয়। সমাজকে এঁরা নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন। কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩) বললেন, সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো মানুষের চিন্তাকে ও সামাজিক সংগঠনকে নিয়ন্ত্রন করে। ম্যাক্সিমিলিয়ান কার্ল এমিল ভেবার (১৮৬৪-১৯২০) মার্কসের বক্তব্যকে অস্বীকার করে বললেন, মানুষের সাংস্কৃতিক বিশ্বাস অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। তিনি আরও মনে করতেন, পুঁজিবাদের বিকাশের কারণ প্রোটেষ্টান্টদের কাজের নীতিমালা। ফরাসী চিন্তাবিদ এমিল ডুরখেইম (১৮৫৮-১৯১৭) বললেন, মনোদৈহিক আবেগ ও অর্থনৈতিক শক্তি ছাড়াই সংস্কৃতির নিয়মে সংস্কৃতিকে পাঠ করা যায় । এবং, সংস্কৃতির নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। উনিশ শতকের বাংলায় সমাজ নিয়ে এমন ভাবনা সম্ভব হয়নি ঠিকই -তবে বাউলের গানে সমাজভাবনা উঠে এসেছে ঠিকই। বিশেষ করে লালনের গানে। ২ লালন যে শুধুই গান করতেন তা নয়- লালন ব্যবসাও করতেন। (দ্র: ফরহাদ মাযহার; ভাবান্দোলন।) উপরোন্ত, লালনের লাঠিয়াল বাহিনীও ছিল। কৃষকের ওপর অন্যায় হলে দলবল নিয়ে ছুটে যেতেন। এসবই লালনের সমাজমনস্কতার ফল। লালনের সমাজভাবনা চমৎকারভাবে বিধৃত হয়েছে এই গানটিতে। এমন মানবসমাজ কবে গো সৃজন হবে। যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান জাতিগোত্র নাহি রবে। শোনায়ে লোভের বুলি নেবে না কেউ কাঁধের ঝুলি। ইতর আতরাফ বলি দূরে ঠেলে নাহি দেবে। আমির ফকির করে এক ঠাঁই সবার পাওনা পাবে সবাই। আশরাফ বলিয়া রেহাই ভবে কেহ নাহি পাবে। ধর্ম কুল গোত্র জাতি তুলবে নাকো কেহ জিকির। কেঁদে বলে লালন ফকির কে মোরে দেখায়ে দেবে। লালনের সমাজবিচার ও দৃষ্টিভঙ্গি কার্ল মার্কস, ম্যাক্স ভেবার ও এমিল ডুরখেইম সঙ্গে তুলনীয় নিশ্চয়ই নয়-তবে এর মূল্যও কম নয়। কল্যানরাষ্ট্রের ধারনা রয়েছে লালনের সমাজভাবনায়। শোনায়ে লোভের বুলি নেবে না কেউ কাঁধের ঝুলি। ইতর আতরাফ বলি দূরে ঠেলে নাহি দেবে। সবচে বিস্ময়কর, লালন ধর্মহীন মানবসমাজ কামনা করেছেন। ভাবলে সত্যই অবাক হতে হয়! ‘এমন মানবসমাজ কবে গো সৃজন হবে’ গানটি আবদেল মাননান সম্পাদিত ‘অখন্ড লালনসঙ্গীত’ থেকে নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৪৫
false
rn
আত্ন কথন মানুষ বড়ো অদ্ভুত প্রানী।মানুষ কোনো দিন দেখেনি এমন দৃশ্যও কল্পনা করলে স্পষ্ট দেখতে পায়।যেমন আমার কথাই ধরা যাক-হিমি,হিমি কে আমি কোনো দিনও দেখিনি।কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই হিমি কে আমি দেখতে পাই।আহ্ কি মায়াময় একটি মুখ।তার কপোলের বিন্দু বিন্দু ঘাম ও যেন দেখতে পাই।মেয়েটার আবার খুব রাগ কিন্তু হাসিটা দারুন।মন ভরে যায়।আমি ঠিক করেছি এই মেয়েটাকেই বিয়ে করবো।আমি আজ দুপুরে স্বপ্নে দেখলাম-হিমি আর আমি পাহাড়ের কাছে একটা জায়গায় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসে আছি।হিমি পড়েছে নীল শাড়ি।ছোট ছোট সাদা ফুলে ভরা।পাহাড়টা কি সবুজ।আর আকাশ গাঁঢ়ো নীল।আমাদের সামনে চানাচুর।চায়ের সঙ্গে চানাচুর খাচ্ছি।স্বপ্নে এই সব ব্যাপার কত সহজ ভাবেই না ঘটে যায়।এখন অনেক রাত।আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি।আমি এই সব আবোল তাবোল কেন লিখছি?যা যা লিখি,আমি নিজেই তা প্রত্যক্ষ করি।মাঝে মাঝে সব কিছুই আমার অবিশ্বাস্য মনে হয়।মনে হয় আমার মাথায় দোষ আছে।জরের ঘোরে এই সব ঘটছে।কিন্তু আমি ভালো করেই জানি আমার মস্তিস্ক বিকৃ্তি ঘটেনি।তবে মনের মধ্যে বারবার হতাশা বোধ জাগে।ইচ্ছা করে মরে যাই।ঘুমোতে পারি না,খেতে পারি না,প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলতে পারি না।এই জাতীয় অস্থিরতা ও হতাশা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমি লিখতে পছন্দ করি,এই আশায় যে, কেউ একদিন আমার লেখা পড়ে সব কিছুই ব্যাখা করবে।এমন অনেক হয়েছে,আজ যা রহস্য,কাল তা সহজ স্বাভাবিক সত্য।আমার রাতে ঘুম আসে না।ব্যালকনিতে চেয়ার পেতে,হাতে বই নিয়ে বসে থাকি।আমি খুব বুজতে পারি হিমি'র জন্য বিষন্ন লাগে।মাথা দপদপ করতে থাকে।আমার নিজের উপর'ই খুব রাগ হয়।জানুয়ারী মাসের রাত।কনকন করে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগছে।আজ কি সুন্দর জ্যোস্না হয়েছে।এতো পরিস্কার আলো যে মনে হয়-অনায়াসে এই আলোতেই বই পড়া যাবে।হঠাৎ হালকা মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে আসে।মনে হচ্ছে হাজার হাজার ঝিঁ ঝিঁ পোকা কানের কাছে মিষ্টি একটা সুর গুন গুন করছে।আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?ইদানিং এই জাতীয় চিন্তা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।হয়তো আর কিছু দিন এরকম থাকলে সত্যিই পাগল হয়ে যাব।ঠিক এরকম অবস্থায় কে যেন মিষ্টি করে বলে-একটু ধৈর্য্য ধরো,সব ঠিক হয়ে যাবে,আর অল্প সময় বাকি।স্পষ্ট গলার স্বর,নিঁখুত উচ্চারন।আমার শুনতে এবং বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় না।আমার মনের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করি-তুমি কে?গলা দিয়ে আমার কোনো শব্দ বের হয় না।তবুও আমি বুঝতে পারি,কেউ একজন আমাকে স্বান্তনা দেয়,সেই নরম মিষ্টি গলায়।আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে।সমস্ত চিন্তা বাদ দিয়ে এখন আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ক্ষুধা।ইদানিং মনে হচ্ছে আমার মস্তিস্কে কোনও অংশ ঠিক মতো কাজ করছেনা।অকেজো হয়ে গেছে।অবাস্তব সব কাহিনী ঘটছে।হঠাৎ তাকিয়ে দেখি হিমি,আমার প্রেমিকা।হাতে চায়ের কাপ নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।বাইরে কখন থেকে বৃষ্টি পড়ছে।আমি শুয়ে আছি আমার পরিচিত বিছানায়।আমার ঘর অগোছালো পড়ে আছে।ছোট বেলা থেকেই আমার ঘর অগোছালো।ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বই পএের জন্যই আরো বেশীই গোছালো লাগে।আগে মা মাঝে মাঝে গুছিয়ে দিতেন।হিমি চায়ের কাপ হাতে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে,আমার দিকে।এই মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে হাজার বছর পার করে দেয়া যাবে। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই মনে হলো- এই মেয়েটি অন্য কেউ,এ হিমি নয়।যদিও সেই চোখ,সেই ঢেউ খেলানো বাদামী চুল,সেই তাকানো।আমি ভয়ে কাতর গলায় বললাম-তুমি কে? এই তুমি কে?দেখতে হিমি'র মতো হলেও তুমি হিমি নও।ভয় পেয়ে আমি মেয়েটির হাত ধরলাম।আর কি আশ্চর্য-মেয়েটি কে আমার খুব আপনজন বলে মনে হলো।হিমি'র মতো দেখতে মেয়েটি বললো- আমাকে তুমি হিমি বলেই ডাকবে।আমার ইচ্ছা করে আমি যা বুঝি না হিমি'র কাছ থেকে বুঝে নিই।আমি চায়ে চুমুক দেই আর আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখি হিমি অল্প অল্প হাসছে।আমার এই মুহূর্তে মেয়েটিকে সত্যি সত্যি হিমি বলেই ভাবতে ইচ্ছা করছে।আমার সবসময়ের সঙ্গী এই মেয়েটি,যার নাম হিমি।দীর্ঘ দিনের পরিচয়ে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়েছে।মাঝে মাঝে আমার মনে হয়-হিমি আমার কল্পনা নয়;সত্যি সত্যি বাস্তব।এক দিন খুব সাহস করে চুমু দিলাম হিমি'র গালে।সে খুবই অবাক হয়ে গেলো।আমি খুব বুজতে পারি হিমি কতটা আন্তরিক!হিমি আমার পাশে নেই একথা আমি ভাবতেই পারি না।আমার সব ভালোবাসা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছি হিমি'র দিকে।হিমি'র উপর আমার খুব ভরসা করতে ইচ্ছা করে।আমি কি সব হাবি-জাবি লিখছি,নিজেই বিন্দু মাএ বুজতে পারছি না।এই রকম মুহুর্তেই হিমিকে আমার বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়ে।সে সব কিছু আমাকে বুজিয়ে বলবে।আমার মাথায় তার মায়াময় হাত রাখবে।এখনো প্রতিদিন উদভ্রান্তের মতো রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একসময় পথ হারিয়ে ফেলি।আমার কিছু ভালো লাগে না।সব কিছুই রহস্যময় মনে হয়।আমি হিমিকে চাই।এখন নিজেকে ছেড়ে দিয়েছি ভাগ্যের হাতে।খুব ক্লান্তি লাগে।শেষ বিকেলের লালচে আলো গাছের পাতায় চিকচিক করে।আমি ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকি।সন্ধ্যায় আমার বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠে।অচেনা অজানা এক গ্রহের সব শূন্যতা আমার বুকে ভর করে।
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (১লা ফেব্রুয়ারি ২০১৫) শুরু হল বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০১৫। এবারো বইমেলাকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে মেলার প্রধান অংশ। আর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে থাকছে শিশু কর্নার, কিছু সরকারি প্রকাশনা সংস্থা, বিভিন্ন মিডিয়া এবং যথারীতি বহেড়াতলায় থাকছে লিটলম্যাগাজিন। এবারের অমর একুশে বইমেলায় মোট ৩৫১টি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহন করছে। এছাড়া ৮০টি লিটল ম্যাগাজিন বইমেলায় অংশ নিচ্ছে। এবার প্রথম বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ মোট ১১টি প্রকাশনা সংস্থা প‌্যাভেলিয়ন পেয়েছে। বিকাল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুভ উদ্ধোধন করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি'র ৬০ বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত চারদিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মলেনেরও উদ্ধোধন করেন। সাহিত্য সম্মেলনে প্রতিদিন থাকবে দুটি করে অধিবেশন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রথম অধিবেশন এবং বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দ্বিতীয় অধিবেশন। প্রতিটি অধিবেশনই অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। এছাড়া আজ বইমেলার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪-এর পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন। বিদেশে অবস্থানের কারণে ভ্রমণসাহিত্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক মঈনুস সুলতান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার চত্বরে শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব। আজ আর কবিতা উৎসবে যাওয়া হয়নি। কারণ প্রথম দিনের বইমেলায় গেছি সন্ধ্যায়। বইমেলায় গিয়ে আমার ছয়জন প্রকাশকের মধ্যে চারজনের সঙ্গেই আজ দেখা হয়েছে। মাজহারুল ইসলাম (মাজহার ভাই), আল-আমিন ভাই, জাহাঙ্গীর আলম সূজন ভাই, ও মাকসুদ হোসেন ভাইয়ের সঙ্গে। আমার অন্য দুজন প্রকাশক রাজীব নূর (রাজীবদা) ও পায়েল হাওলাদারের সঙ্গে আজ দেখা হয়নি। অমর একুশে বইমেলায় এবার নতুন এসেছে প্রকাশনা সংস্থা চন্দ্রদীপ। সেখানে দেখা হল কবি অসিম সাহা'র সঙ্গে। অসিম দা জানালেন, এবার তার মেলায় আসছে গল্পের বই 'শ্বশানঘাটের মাটি'। কিন্তু প্রকাশক দুঃখপ্রকাশ করলেন, বইটি মেলায় আসতে আরো দু-একদিন লাগবে। নতুন প্রকাশনা চন্দ্রদীপের প্রডাকশান এবার অনেক ভালো হয়েছে। অন্যপ্রকাশের সামনে পেলাম আমার প্রকাশক মাজহারুল ইসলামকে। কিছুক্ষণ আড্ডা দিচ্ছিলাম মাজহার ভাইয়ের সঙ্গে। মাজহার ভাই কথাপ্রসঙ্গে বললেন, এটা ঠিক প‌্যাভেলিয়ন না, বলতে পারেন চারদিক খোলা বইয়ের স্টল। আসলেই এবার বইমেলায় জায়গা অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাংলা একাডেমি জায়গাটা ঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজাতে পারেনি। অনেকটা কেমন খাপছাড়া। এলোমেলো স্টলের সারি। প‌্যাভেলিয়নগুলো গোটা মেলার মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলেই ভালো হতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মেলার মাঠে বইয়ের স্টলগুলো যেনো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো। এবারো বইমেলার মাঠে অস্থায়ী টয়লেট করা হয়েছে শুধুমাত্র পূর্বদিকে। অনেকে আক্ষেপ করলেন, প‌্যাভেলিয়নগুলো মেলার মাঠে গেটের দিকে থাকায় পেছনের দিকে বইপ্রেমীদের ভিড় একটু কম হতে পারে। অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনেই দেখা হল লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত আর লেখিকা পূরবী বসু'র সঙ্গে। খানিক আড্ডা হল। ওই সময় পূরবী দি'র ইন্টারভিউ করছিল সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সাহেবের টিভি চ্যানেল দেশটিভি। একটা বিষয় আমার কাছে খুব খটকা লাগলো, অন্তত বইমেলা কভার করার জন্য আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বা সংবাদ মিডিয়ার উচিত শিক্ষিত রিপোর্টার দিয়ে বইমেলা কভার করানো। ইন্টারভিউ শেষে পূরবী দি যখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন, তখন দেশ টিভি'র রিপোর্টার দিদি'র কাছে নাম জানতে চাইলেন। দিদি নাম বললেন। ছেলেটি আবার নামের বানান জিজ্ঞেস করলেন। দিদি তখন কিছুটা বিরক্তই হচ্ছিলেন হয়তো! আমি বললাম, অন্যপ্রকাশ থেকে দিদি'র কোনো একটা বই হাতে নিয়ে বানানটা দেখে নিন। পূরবী দি জানালেন, কলকাতা বইমেলায় অংশ নিতে ৫ তারিখ কলকাতা চলে যাবেন। সেখানেও দিদি'র কয়েকটা বই প্রকাশ পেয়েছে এবার।আমাদের সেই আড্ডা আর জমেনি। ঠিক তখনই পেয়ে গেলাম লেখক মাহবুব লীলেনকে। লীলেন ভাই জানালেন, এবার মহাভারত নিয়ে তাঁর একটি ব্যতিক্রমী বই আসবে মেলায়। খুব খুশির খবর এটা। বাংলাদেশে এখনো গুটি কয়েক যাদের মহাভারত রামায়ন নিয়ে চর্চা আছে, লীলেন ভাই সেই গোত্রের অন্যতম তুর্যপাঠক। প্রায় কুঁড়ি বছর লীলেন বাই মহাভারত রামায়ন চর্চা করছেন। লীলেন ভাই রামায়ন ও মহাভারতের বিভিন্ন পর্বের অনেক ইতিহাসের সুলুক সন্ধানী বিষয়াদি নিয়ে কথা বলছিলেন। আমি লীলেন ভাইয়ের বইটার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। তারপর লীলেন ভাই আর আমি মেলায় ঘুরতে ঘুরতে শুদ্ধস্বর এর স্টলের সামনে এসে পাই প্রকাশক কবি আহমেদুর রশীদ টুটুল ভাইকে। সেখানে আরেক পশলা আড্ডা। টুটুল ভাই আক্ষেপ করে বললেন, এবারো মেলায় একটা গেট থাকায় ছুটির দিনগুলোতে বইপ্রেমীদের অনেক ঝামেলা হবে। মেলার মাঠে (উদ্যানে) একেবারে উত্তর পশ্চিম কোনায় একটা অস্থায়ী গেট অবশ্য দেখা গেছে। ওটা আদৌ চালু হবে কিনা এখনো জানা যায়নি। মেলার মাঠে অন্তত ভীড় এড়াতে উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম কোনের গেট এবং উত্তর-পূর্ব কোনে আরেকটি বিকল্প গেট চালু করা উচিত। নইলে ছুটির দিনে বিশেষ করে ১লা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি আর ২১ শে ফেব্রুয়ারি মেলায় যে পরিমাণ ভীড় হয়, তা থেকে এবারো বইপ্রেমীদের মুক্তি নেই। আড্ডার ওই পর্যায়ে দেখা পাই আমার প্রকাশক মাকসুদ ভাইয়ের। মাকসুদ ভাইয়ের সাথে গল্প করতে করতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে আসি। তখন ফোন পাই কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুরের। বাংলা একাডেমি'র লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের বহেড়াতলায় গিয়ে দেখা হল শিল্পী চারু পিন্টু, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি সাফি সমুদ্র, কবি মারুফ রায়হানসহ অনেকের সাথে। ওই সময় ফোন করল বন্ধু শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার। মোবাশ্বির বলল, উদ্যানে আছে। আবার উদ্যানে ঢুকতে গিয়ে পেলাম টোকন ঠাকুরকে। তখন দেখা হল কবি জুয়েল মোস্তাফিজের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত মোবাশ্বিরের সাথে আর দেখা হয়নি। মেলা দুইভাগে ভাগ হওয়ায় এই সমস্যা এবারো বইপ্রেমীরা মোকাবেলা করবে। গত বছর অমর একুশে বইমেলা উদ্ধোধন করার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মেলার সময় একাডেমি থেকে উদ্যানে আন্ডারগ্রাউন্ড বাইপাস করার। তা শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে খুশির খবর হল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের বইমেলায় এগারোটি বই প্রকাশ পাচ্ছে। বইগুলো প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। যার মধ্যে একটি আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিচারণ।বইমেলা থেকে টোকন ঠাকুর আর আমি বেরোনোর পথে বকুল ভাই আমাদের চা খাওয়ালেন। তারপর টোকন ঠাকুর আর আমি যথারীতি ধ্রুবদা'র (শিল্পী ধ্রুব এষ) বাসায় গেলাম। সেখানে গিয়ে আড্ডা হল। পেলাম শিল্পী মামুন হোসাইন আর বাপ্পাকে। কিছুক্ষণ পর উত্তমদা (শিল্পী উত্তম সেন) আসলেন। ধ্রুবদা'র ইন্টারভিউ নিতে এসেছিলেন কবি চন্দন চৌধুরী। চন্দনের সঙ্গে আরেকজন ছিল। নাম ভুলে গেছি। ওরা ধ্রুবদা'র ম্যারাথন ইন্টারভিউ নিল। আড্ডা শেষে আবার শাহবাগ আসলাম। তারপর বাসায়। এবারের অমর একুশে বইমেলার সময় সূচি হল- প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।.................................২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
mk
প্রধানমন্ত্রী সৃষ্টি করেন, খালেদা জিয়া ধ্বংস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা-ধ্বংসাত্মক ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা সৃষ্টি করছি, আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ধ্বংস করছেন। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আর উনি জঙ্গি ও সন্ত্রাসের নেত্রী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন। যারা এসব নাশকতা-সহিংসতার মাধ্যমে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, তাদের কাউকেই ক্ষমা করা হবে না। সারাবিশ্বে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের যেভাবে বিচার হয়, বাংলাদেশেও একইভাবেই বিচার করা হবে।বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখতে যখন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তখন কিন্তু সেসব উনি সহ্য করতে পারেন না। জনগণের ওপর তার যেন অনেক ক্ষোভ। তার এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কার স্বার্থে? আসলে উনি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না বলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন তার সহ্য হয় না। তার দিলেতো আছে পেয়ারে পাকিস্তান। তার দেহ এদেশে থাকলেও হৃদয় তো ওই দেশে! এ কারণেই বাংলাদেশের উন্নয়ন ঠেকাতে তিনি জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা ও ধ্বংসের রাজনীতি করে যাচ্ছেন। একটানা তিনি কার্যালয়ে বসে থেকে এসব করছেন। কে আছে যে নিজের বাড়ি ঘর রেখে অফিসে এতো দিন বসে থাকেন? আর ওই অফিসে বসে তিনি মানুষ হত্যার হুকুম দিয়ে যাচ্ছেন। একাত্তরের কায়দায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও জঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া দেশে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের নতুন বই দিই, আর উনি সেই বই পুড়িয়ে ফেলেন। তবে এসব আর সহ্য করা হবে না। কেউ দেশের ক্ষতি করলে তার কোনো ক্ষমা নেই। জঙ্গিবাদের শাস্তি অবশ্যই হবে।দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদের স্থান হতে পারে না। এজন্য দরকার জনমত সৃষ্টি করা। দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের এসব নাশকতা-সহিংসতা ও জঙ্গীবাদী কর্মকান্ডের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এ জন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী মহিলা লীগসহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে হবে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। এক্ষেত্রে যারা বোমা মারবে, আগুন দেবে, তাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করুন।তিনি বলেন, আমরা দেশে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমিয়েছি, আর বিএনপি নেত্রী বোমা মেরে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মাকে পর্যন্ত হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা রেলের উন্নয়ন করলাম, আর উনি ৩৬ বার রেলের ওপর আক্রমণ করেছেন। যারা বাস-ট্রাকের ব্যবসা করে এমনকি ড্রাইভার-হেলপার তাদেরও পুড়িয়ে মারছেন তিনি। কোনো মানুষ যেন শান্তিতে না থাকতে পারে সেটা নিশ্চিত করাই যেন তার কাজ। উনি মনে হয় পুরো দেশের মানুষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন!প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রমুখ। ড. হাছান মাহমুদের পরিচালনায় সভার শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরাবতা পালন করা হয়। দৈনিক ইত্তেফাক
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৩৩ নানা কারণে মন মেজাজ খারাপ থাকার কথা হলেও ততটা খারাপ নেই। প্রথমত, কমলার খোসা ছাড়িয়ে মুখে একটা কোয়া দিয়ে দেখি সেটার স্বাদ অবিকল কাঁঠালের মতো! হাসতে হাসতে বিষম খাচ্ছিলাম আরেকটু হলেই। জার্মানীতে এসে অবধি নপুংসক কমলা খাচ্ছি, আজকের কমলায় দেখলাম শয়ে শয়ে বিচি। কাঁঠাল আমার প্রিয় ফল নয়, কাঁঠাল বা কাঁঠালপাতার অনুরাগীদেরও আমি সন্দেহের চোখে দেখি, তবু কমলায় কাঁঠালের স্বাদ পেয়ে একে কোন আসমানী মোজেজা বলেই মনে হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে এলাম একটা। পরীক্ষক দু'জনেই বড় অমায়িক, নিচু গলায় খুব স্নেহের সাথে কথা বলেন, শেষ প্রশ্নটা বাদে বাকি সবগুলোর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলাম। গতকাল থেকে এই পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিতে বসেছি, প্রায় হাজারখানেক পৃষ্ঠা বসে বসে পড়তে হয়েছে (এর মধ্যে নয়শোর ওপর হয়তো শুধু চোখ বুলিয়ে গিয়েছি) কাল থেকে। এই কোর্স পরিচালিত হচ্ছে একটি বিশেষ প্রোগ্রামের আওতায়, সেটার ওয়েবসাইট থেকে যাবতীয় নোটস নামিয়ে নিয়ে পড়ার কথা সবার। ডাউনলোড করতে গিয়ে ঘেমে গেলাম কাল সারাটা দিন আর রাত। শেষ কয়েক কিলোবাইট আর ডাউনলোড হয় না, আটকে বসে থাকে। শেষে আজ সকালে সুমন চৌধুরীর বাড়ি গিয়ে সেখানে বসে বাকি ফাইলগুলি নামিয়ে এনে পড়তে হলো। এই যে পদে পদে অন্যায় ভালোবাসা গ্রহণ করতে হচ্ছে খিড়কি দরজা দিয়ে, এ-ই কি আমার প্রাপ্য? মনে মনে ভাগ্যের মা-কে ভালোবেসে আজকে দুপুরবেলা বড় কষ্টে প্রস্তুতি নেয়া শেষ করেছি। প্রফেসর রোরিগ আর লাঙ্গের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসার সময় শুনলাম আমার প্রেজেন্টেশেন ২,৩ পেয়েছি, শুনে মনটা একটু খারাপই হলো। তবে মৌখিক পরীক্ষা ভালো হওয়ার আনন্দে আর তেমন গা করলাম না। উপস্থাপন আর মৌখিক পরীক্ষায় আধাআধি নাম্বার, কাজেই হয়তো টেনেটুনে ১,৭ এ উঠে যাবো। জার্মানীতে গ্রেড দেয়ার পদ্ধতি আমাদের ঠিক উল্টো। তার আগে আরো একটা উল্টো জিনিসের ফিরিস্তি দিয়ে রাখি। ইয়োরোপে কমা আর দশমিকের ব্যবহার উল্টো, অর্থাৎ আমরা পাঁচ হাজার আটশো দুই দশমিক পাঁচ তিনকে লিখি ৫,৮০২.৫৩, আর এখানে লেখা হয় ৫.৮০২,৫৩। এখানে সবচেয়ে ভালো গ্রেড হচ্ছে ১,০, তারপর ১,৩, তারপর ১,৭, তারপর ২.০, তারপর ২,৩ ... এভাবে। সাধারণত ৯৫% এর বেশি পেলে ১,০ দেয়া হয়, তবে এর বিন্যাসও একেক প্রফেসরের কাছে একেক রকম, যেমন গেলো পরীক্ষায় প্রফেসর হায়ারের কাছে ১,০ মানে ১০০%। কিছু কিছু পরীক্ষায় অনেক সময় পাশ-ফেল নিয়েই এক সঙ্কট থাকে (৬০% এর কম পেলে ফেল), সেক্ষেত্রে সেই পরীক্ষায় পূর্ববর্তী ফলাফলের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। কোন কোর্সে গণহারে বেশিরভাগ ছাত্র ফেল করলে ছাত্ররা গিয়ে পরীক্ষানিয়ন্ত্রণ দপ্তরে নালিশ ঠুকে দেয়, তখন প্রশ্নকর্তাকে সেই পরীক্ষা নিজে বসে দিতে হয়। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুনেছি আইন আছে, কোন প্রফেসর নিজে যদি ৪০ মিনিটের মধ্যে নিজের করা প্রশ্ন সবক'টার সঠিক উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে পরীক্ষা বাতিল হয়, আবার নতুন করে প্রশ্ন করতে হয়। সোমবার থেকে একটা সিম্যুলেশন প্রোগ্রামের ওপর কোর্স চলছে, সেটা পরপর দু'দিন বাং মেরেছি। আজকে সেই কোর্সের এক পরিচালকের ঘরে গিয়েছি এক কাজে, সে আমাকে দেখে লাফিয়ে উঠলো, ব্যাপার কী, আমি থাকি কই, কোর্সে নাম লিখিয়ে করছি না কেন? তাকে আমার দুঃখের কাহিনী বিস্তারিত বর্ণনা করলাম, আশ্বাস দিলাম যে আগামীকাল থেকেই সহিসালামতে শুরু করে দেবো। সে আমাকে কয়েকটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাঁকিয়ে দিলো। তার সহকর্মিনীরা অবশ্য অনেক দয়ালু ও মিষ্টি, তারা বাকি কাজ শেষ করে দিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের উষ্ণ শুভাশিস জানিয়ে বিদায় দিলো। পরীক্ষানিয়ন্ত্রণ দপ্তরে একটা ঝামেলা পাকিয়ে এসেছি, সেটার জন্যে একটা দরখাস্ত দিতে হবে কাল। প্রফেসর শ্মিডের কাছেও দুইটা বড় বড় মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে, সেজন্যে গিয়ে নাম লেখাতে হবে। কিচ্ছু করা হয়নি, একের পর এক কাজ জমছে কেবল। বহুদিন পরে আবার থার্মোডাইনামিক্স পড়তে হচ্ছে, অনেক কিছু ভুলে গিয়েছিলাম, একেবারে রগে রগে গিয়ে ঘা খেতে হচ্ছে আবার। কাসেলে ঠান্ডা এখন একটা মশকরার পর্যায়ে রূপ নিয়েছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে দুপুরে তাপমাত্রা একে নামবে, তার প্রস্তুতি নিয়ে ঘর ছাড়লে একটু পরেই ঘেমেচুরে শেষ হয়ে যাবার যোগাড়। আবার অবিশ্বাসী হয়ে শুধু সোয়েটার পরে বেরোলে দাঁতে দাঁত বাড়ি খায়। মার্চ মাস থেকে শুরু হচ্ছে কলিজা কাঁপানো একেকটা পরীক্ষা, বিশেষ করে বিয়োমাসে, অর্থাৎ জৈববস্তু। হাজার খানেক চার্ট আর গ্রাফ জমে আছে ফাইলে। সেদিন দুই সহপাঠীকে পাকড়াও করে বললাম, তোমরা একটা বুদ্ধি দাও, কিভাবে এই গু-টাকে ম্যানেজ করা যায়? (জার্মান শাইসে মানে গু, তবে এর ব্যবহারকে মোটামুটি অভদ্র হিসেবে ধরা হয়, অনেকটা আমাদের কথ্য গুপ্তকেশের মতো। সেদিন আমাদের এক সহপাঠী প্রেজেন্টেশনের সময় মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে বিড়বিড় করে শাইসে বলে ফেলায় প্রফেসর প্রিস ঘ্যাঁচ করে তার নাম্বার কেটে দিয়েছেন) একজন গম্ভীর হয়ে বললো, আমি এই গুয়ের ওপর থিসিস করেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, আমাদের সবার কপালে দুঃখ আছে। এ আর কিছু নয়, শুধু গু!
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সোমবার। আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিন। বইমেলা শুরু হয়েছে বিকাল তিনটায়, চলেছে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। আজ বইমেলায় গেছি চারটায়, ছিলাম শেষ পর্যন্ত। যথারীতি সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে ঢু মেরে তারপর লিটলম্যাগ চত্বরে গেছি। আজ একাডেমি'র মূল মঞ্চে আলোচনার বিষয় ছিল 'সবুজপত্রের শতবর্ষ'। এ বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন আবুল মোমেন। আলোচক ছিলেন সৌভিক রেজা ও আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোলাম মুরশিদ। সন্ধ্যায় ছিল যথারীতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।মেলায় এসেছে তরুণ লেখক এহ্‌সান মাহ্‌মুদের রচনা একজন অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবনী ‘একাত্তরের লাল মিয়া'। জীবন কাহিনী হলেও বইটিতে পাঠক পাবেন একাত্তরে মাদারীপুর অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ-আখ্যান। বইটি প্রকাশ করেছে প্লাটফর্ম। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় প্লাটফর্ম-এর স্টলে (স্টল নং ২০)।সংবেদ থেকে অমর একুশে বইমেলায় এসেছে কবি মোজাম্মেল মাহমুদের কবিতার বই 'তাকাও, দেখবে'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী শাহীনুর রহমান। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় সংবেদ-এর স্টলে (স্টল নং ৪১৩-৪১৪)। আগামীকাল থেকে চট্টগ্রামের বন্ধুরা পাবেন বাতিঘর-এ। শুদ্ধস্বর থেকে মেলায় এসেছে সংগ্রহে রাখার মত দুইটি বই। লেখক ও গবেষক রণদীপম বসু'র 'চার্বাকের খোঁজে: ভারতীয় দর্শন' এবং লেখক ও গবেষক মাহবুব লীলেনের 'অভাজনের মহাভারত'। বই দুইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় শুদ্দস্বরের স্টলে (স্টল নং ( ১৭৪-১৭৬)। এছাড়া নালন্দা থেকে মেলায় এসেছে কবি জাহানারা পারভীনের দীর্ঘ কবিতার বই 'স্কুল বলতে তোমাকেই বুঝি'। বইটির প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় নালন্দা'র স্টলে (স্টল নং ( ২৭৪-২৭৬)। আজ বই বিক্রিবাট্টার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানে চলেছে আড্ডা। আজ আমার লেখা 'মুজিব দ্য গ্রেট' বিক্রি হয়েছে ১৯ কপি। গত চার দিনে ৮৯ কপি। আড্ডায় আজ ক্ষণে ক্ষণে ছিল চেহারা বদল। ক্ষণে ক্ষণে নতুন নতুন বৃত্ত। নতুন মুখ নতুন কবি, পুরান মুখ, পুরান কবি-লেখকে ঠাসা। বইমেলায় এখন বিদায়ের সুর বাজছে। তাই জমে উঠেছে কবি-সাহিত্যিক-পাঠকদের জমজমাট আড্ডা। আজ যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে তারা হলেন- কবি মাসুম মোকাররম, লেখক ও গবেষক রণদীপম বসু, কবি কবির হুমায়ুন, কবি ও গবেষক তপন বাগচী, কবি শামীম রেজা, কবি শামীম আজাদ, লেখক এহ্‌সান মাহ্‌মুদ, কবি মঈন চৌধুরী, কবি জুয়েল মাজহার, কবি মামুন খান, কবি কাজল শাহনেওয়াজ, কথাসাহিত্যিক খোকন কায়সার, কবি সাখাওয়াত টিপু, প্রকাশক মেনন, কবি ও সম্পাদক নীলসাধু, কবি জাহানারা পারভীন, কবি আলফ্রেড খোকন, কবি শাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি সেঁজুতি বড়ুয়া, শিল্পী চারু পিন্টু, নাট্যাভিনেতা ইকতারুল ইসলাম, নাট্যাভিনেতা শাহজাহান সম্রাট, মাস্টার ঝিল্লুর রহমান, লেখক কামরুল ইসলাম, কবি তানিম কবির, কবি শহীদুল্লাহ সিরাজী, কবি সরসিজ আলীম, লেখক রুদ্র সাইফুল, রিয়াজ ভাই পরিবার, কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, কথাসাহিত্যিক রাখাল রাহা, শিল্পী শতাব্দী ভব, কবি মোশতাক আহমেদ, লেখক ও গবেষক তপন বড়ুয়া প্রমুখ।আজ রাত সাড়ে এগারোটার ট্রেনে কথাসাহিত্যিক খোকন কায়সার চট্টগ্রাম যাচ্ছেন। তাই খোকন কায়সারকে ঘিরে মেননের নেতৃত্বে মেলা শেষেও আমাদের আরেক পশলা আড্ডা হল একাডেমির সামনের রাস্তায়। তারপর ছবিরহাট এসে দেখা হল কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর, ফটোগ্রাফার সূর্য ও শিল্পী সাদিকের সঙ্গে। পরে টোকন ঠাকুর আর আমি যথারীতি ধ্রুব'দার বাসা ঘুরে আবার শাহবাগ হয়ে বাসায় ফিরলাম। ...............................২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
fe
বাংলাদেশে চোরাগুপ্তা আক্রমণের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশে চোরাগুপ্তা আক্রমণের ধারাবাহিকতাফকির ইলিয়াস---------------------------------------------গেল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যানেলে অনুষ্ঠান দেখছিলাম। মনে পড়ে গেল ১৯৭৫ সালের কথা। মেজর ডালিম, বাংলাদেশ বেতারের দখল নেয়ার পর, বলেছিল- ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। কায়দাটা ছিল ওই একই, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’। একটি অনুষ্ঠানে এই ২০১৬ সালেও ডালিমের সেই ঘোষণাটি আবার শুনলাম। কী দাম্ভিক উচ্চারণ! ওরা ভেবেছিল, মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করলেই আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেষ হয়ে যাবে।শেখ হাসিনা-শেখ রেহানা সেদিন স্রষ্টার কৃপায় বেঁচে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে এসে হাল ধরেছিলেন বহুধা বিভক্ত আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজটি সহজ ছিল না। সেই কাজটিই করেছিলেন তিনি। সামরিক জান্তারা চেপে বসেছিল জগদ্দল পাথরের মতো। তা সরানোর কাজটিও সহজ ছিল না। সেই কাজের দিকেও এগিয়ে ছিলেন শেখ হাসিনা। জাতির জনককে চোরাগুপ্তা প্রক্রিয়ায় হত্যা করা হয়েছিল। এর বিচার ঠেকাতে যা যা করা দরকার করেছিলেন জিয়াউর রহমান। এই চোরাগুপ্তা হত্যার কাজটি পাকাপোক্ত হয়েছিল সামরিক জান্তাদের হাতে। কালের আবর্তনে অনেক কথাই এখন বেরিয়ে আসছে। লন্ডন থেকে তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিক তানভীর আহমেদের একটি লেখায় আমরা জানতে পারছি- ‘শশাঙ্ক ব্যানার্জীকে থামিয়ে দিয়ে জানতে চাইলাম, জিয়াউর রহমানকেই টার্গেট করে রাওয়ালপিন্ডির সামরিক কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনার ছক আঁকছেন, ১৯৭৩ সালেই এই সিদ্ধান্তে তিনি কেমন করে পৌঁছেছিলেন?ব্যানার্জী বলতে শুরু করলেন, ‘রাওয়ালপিন্ডির সামরিক গোয়েন্দা ও জেনারেলরা অ্যাবোটাবাদের যে প্রশিক্ষণ শিবিরে ট্রেনিং নিয়েছেন জিয়াউর রহমানও একই স্থানে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। তাছাড়া জিয়াউর রহমান এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতেই কর্মরত ছিলেন। তাই পাকিস্তানি গোয়েন্দা ও জেনারেলদের জন্য জিয়াউর রহমান ছিলেন একটি ভালো অপশন। ১৯৭৩ সালের দিকে ভারতে একটি গুজব চলছিল যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, এই দুই সংস্থা মিলে শেখ মুজিবের হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আর সেই সময়ে জিয়াউর রহমান ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাছাড়া ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছিলাম জিয়াউর রহমান ওয়াশিংটনে গিয়ে পাকিস্তানি মিলিটারি অ্যাটাশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, অথচ জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে (শশাঙ্ক ব্যানার্জী) লন্ডনে বৈঠকের সময় কিন্তু নিজে থেকে বলেননি তার সঙ্গে আইএসআই-এর বৈঠক হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে আমি জানতে চাইলে জিয়াউর রহমান স্বীকার করেন, তিনি পাকিস্তানি মিলিটারি অ্যাটাশের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।’ ভারতীয় ক‚টনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জীর লেখা ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ (অ্যা পলিটিক্যাল ট্রিটিজ) গ্রন্থটির ১৬তম অধ্যায়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে শশাঙ্ক ব্যানার্জী লিখেছেন, ‘১৯৭৩ সালে লন্ডনে যুদ্ধখেলায় যুক্ত হয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।’জিয়ার শাসনামলে মোট ১৯টি ক্যু হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের সাড়ে পাঁচ বছরের শাসনামল ছিল খুন গুম আর রক্তপাতময় শাসন। সরকারি হিসাব মতে, শুধুমাত্র ৭৭ সালেই ১১৪৩ জন সৈনিককে মৃত্যুদণ্ড দেন জিয়া। জিয়া জাসদ সমথর্ক বা যাদের সমথর্ক সন্দেহ করা হয়েছে এমন সিপাহিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন ক্যাঙ্গারু কোর্ট মার্শাল করে। জিয়ার ইচ্ছায় ১৯৭৮ সালে বাজিতপুরের পাঁচজন রাজনৈতিক কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তাদের আপিল গ্রহণ করা হয়নি। রাজশাহীর জেলে আব্দুল গনি, কুমিল্লায় জয়নুল আবেদিন এবং ঢাকা জেলে হাবিলদার মতিন ও মতি মিয়া নিহত হন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাসদের প্রায় ১৫০০ কর্মী হত্যার শিকার হন। জিয়ার শাসনামলে আওয়ামী লীগের ৩৫১ জন নেতাকর্মী নিহত হন। ১৯৭৬ সালে জানুয়ারি মাসে ৬২ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আটকে রাখা হয়েছিল কারাগারে। ১৯৮০ সালে রাজশাহী ও খুলনা জেলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ৫০ জন রাজনৈতিক কর্মী নিহত হন। জিয়ার শাসনামলে অনেক বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীকে গুম করা হয়! তাছাড়া রাজনৈতিক বন্দিদের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে পেটানো এবং লজ্জাস্থানে লোহা-বরফ-কাঠ ঢুকানোসহ বিভিন্ন অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।এরকম অনেক তথ্য রয়েছে, জিয়ার অপশাসনের। সেই জিয়ার বিএনপি এখনো চোরাগুপ্তা আক্রমণের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখনো ভুলে যায়নি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের কথা। যে দিনটিকে তুলনা করা যায় একাত্তরের কোনো দিনের সঙ্গে। ২১ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার একটি ঘৃণ্য চক্রান্তের দিন এটি। শোকাবহ-রক্তাক্ত আগস্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়েনার দল গ্রেনেড দিয়ে রক্তস্রোতের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশ স্থলে। টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা চালায় এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ। জাতির সামনে আবারো স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ স্পৃহা। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময়ই খোদ রাজধানীতে দিনে প্রকাশ্যে চালানো হয়েছিল এই ভয়াল ও বীভৎস গ্রেনেড হামলা।ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা। পরিস্থিতির তাৎপর্য বুঝতে পেরে, ট্রাকে অবস্থানরত নেতারা ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যাকে। নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটাতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা। গ্রেনেডের আঘাতে পরাস্ত করতে না পেরে ওইদিন শেখ হাসিনার গাড়িতে ঘাতকরা ছুড়েছিল বৃষ্টির মতো গুলি। একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রæফ গাড়ির কাচ। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ।আজ বাংলাদেশে জঙ্গিদের মহিলা টিমও তৈরি হয়েছে। এরা কারা? কে তাদের নেপথ্যে? হলি আর্টিজান কিংবা শোলাকিয়ায় কারা এমন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে? বাংলার মাটি থেকে এসব চক্রান্তকারীকে সমূলে বিনাশ করতেই হবে। কারণ এরা সুযোগ পেলেই মুছে দিতে তৎপর হবে আমাদের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা। প্রজন্মকে বিষয়গুলো বুঝতে হবে, কেন পেছন দুয়ার দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সুযোগ খোঁজা হয়। কেন ওরা ’৭১-কে বলে ‘গণ্ডগোলের বছর’। দেশে আইনি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এসব বিচার কাজ শেষ করতেই হবে। এর নেপথ্যে কারা ছিল তা বের করে আনতে হবে। দাবিটি গোটা বাঙালি জাতির। যারা বুকে একাত্তরকে লালন করেন। আগেই বলেছি, চোরাগুপ্তা হত্যার একটা ধারাবাহিকতার শিকড় খুঁজতে হবে। তা বের করতে না পারলে প্রজন্মের মুক্তি সম্ভব নয়।---------------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ ২০ আগস্ট ২০১৬ শনিবার সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:২৫
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! রেজা ঘটক আজ ১৪ ডিসেম্বর, শনিবার। আজও বইমেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। ধুলো থেকে বাঁচতে আজ আর উদ্যানে যাই নি। একাডেমি প্রাঙ্গনেই কাটিয়েছি। আজ মেলায় এসেছে তরুণ কবি তানিম কবিরের কবিতার বই 'সকলই সকল'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন খেয়া মেজবাহ। বইটি পাওয়া যাবে শুদ্ধস্বরের স্টলে। দাম ১৪০ টাকা। গতবছর তানিমের প্রথম কবিতার বই ‘ওই অর্থে’ বের হয়। এবার আসল 'সকলই সকল' তানিমের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। তানিমকে অভিনন্দন। আজ বইমেলায় মূল আড্ডা শুরু হয় তানিমের বইটি ঘিরে। লিটল ম্যাগ চত্বরে বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়। মোড়ক উন্মোচন আড্ডার সঞ্চালক ছিল তরুণ কবি শিমুল সালাহ্উদ্দিন। ছিলেন কবি জুয়েল মাজহার, কবি অমিতাভ পাল, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি কাজল শাহনেওয়াজ, কবি শোয়াইব জিবরান, কবি আলী আফজাল খান, কবি নৈরিৎ ইমু, শিল্পী পদ্ম, শিল্পী শতাব্দী ভব প্রমুখ। আজ শমপ্রকাশ থেকে বইমেলায় এসেছে কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদের কবিতার বই 'দাহকাব্য'। বাংলাদেশের চলমান সময় বাস্তবতার পেট্রোলবোমার রাজনীতির পোড়া সময়ের কাব্যিক দলিল যেন 'দাহকাব্য'। আহমেদ স্বপন মাহমুদ এবার সময় বাস্তবতার বার্ন ইউনিট তুলে এনেছেন কবিতায়। চারদিকে পুড়ছে সময়। পুড়ছে তাজা মানুষ। পুড়ছে নোলক-নূপুর। পুড়ছে মানুষের অন্তর। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারী অস্থির সময় এটা। মানুষের জীবনের কোনোই নিরাপত্তা নেই। কবি যেন অগ্নিদগ্ধ রাতের হাহাকার লিখেছেন এবার 'দাহকাব্যে'। রাজনৈতিক কবিতা কিন্তু সময়কে সাক্ষ্য রেখে তা যেন হাহাকার করে ওঠে- ভাই তোমার বুক কয়লা হতে আর ক'দিন বাকি?আজ দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে কবি কবির হুমায়ুন, শিল্পী চারু পিন্টু, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি দিলদার হোসেন, কবি বদরুল হায়দার, কবি সাফি সমুদ্র, কবি সরসিজ আলীম, কবি মামুন খান, কবি শিহাব শাহরিয়ার, কবি ও নির্মাতা আশরাফ শিশির, কবি কাবেরী রায় চৌধুরী, কবি সেঁজুতি বড়ুয়া, মণি, বিশ্বজিৎ, শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন, লেখক ও গবেষক আহমাদ মাযহার সহ অনেকের সঙ্গে। জানা গেল কবি শিহাব শাহরিয়ারের সপ্তম কাব্যগ্রন্থ 'খড়ের খোয়াড়' গতকাল মেলায় এসেছে। এক ফাঁকে দেখা হল জাকির ভাইয়ের সঙ্গে। কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার পেট্রোলবোমার ভয়কে অবজ্ঞা করেই নাটোর ঘুরে আবারো প্রিয় একুশের বইমেলায় চলে এসেছেন। দেখা হয়েছে কবি ও গবেষক তপন বড়ুয়া ও টোটেম ঠাকুরের সঙ্গে। কবি ও সম্পাদক নীলসাধু ও শিমুল ভাবীর সঙ্গে। শিমুল ভাবীর ডুপ্লিকেট কন্যাও ছিল সঙ্গে। কবি সেঁজুতি বড়ুয়া ও তার বর বিশ্বজিৎদা আড্ডা দিতে দিতে কফি খাওয়ালেন। বিশ্বজিৎদা সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। তিনিও একজন লেখক। তবে তিনি লেখেন প্রোগ্রামিং। কম্পিউটারের ভাষায় সব সাংকেতিক কোড। মেলার শেষের দিকে দেখা হল আমার দাদা ও বৌদির সঙ্গে। নির্মাতা ও অভিনেতা প্রাণেশ চৌধুরী ও লেখক শিল্পী চৌধুরী। আজ ছিল দাদা বৌদির ষষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকী। দুই কপোত কপোতি পাঙ্খা লাগিয়ে বইমেলায় ঘুরঘুর করছেন। পরে দাদা-বৌদি সহ প্রাঙ্গনের বাইরে গিয়ে আমরা চা খাই। যাবার পথে নজরুল মঞ্চের সামনে আমাদের ছবি তুলে দেন মুর্শিদ ভাই (মুর্শিদ আনোয়ার)। ততক্ষণে বইমেলার ছুটির ঘণ্টা বাজার সময় হল। আমি দাদা-বৌদি'র থেকে বিদায় নিয়ে নন্দনের স্টল বন্ধ করতে করতে আসল অভিনেতা প্রিন্স। প্রিন্স আমার গল্প সংকলন 'পঞ্চভূতেষু'র একটি কপি কিনল। পরে প্রিন্স সহ মেলা থেকে শাহবাগ আসি। পেয়ে যাই বন্ধু চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি টোকন ঠাকুর ও ফটোগ্রাফার সূর্যকে। ক্ষাণিক আড্ডা শেষে সোজা বাসায়। ...............................১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
rg
উৎসব চলছে!!! ফেসবুকে সাইকো চেনার কী উপায়? আমার তো মনে হয়, যারা ঘনঘন ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার চেইঞ্জ করে, এরা সবাই বড় বড় সাইকো। ফেসবুক এসেছে একুশ শতকের ২০০৪ সালে। আর বাংলাদেশে ২০০৭ সাল থেকে আমি যখন ফেসবুক চালাই, তখন বন্ধুদের অনেকেই আমাকেও সাইকো কইতো। এখন সেই সকল বন্ধু যখন ফেসবুক চালায় দেখে আমার সত্যি ভালো লাগে। কারণ এদের অনেকের ফেসবুকে হাতেখড়ি আমার কাছে। বন্ধুদের অনেকের ইন্টারনেটেও হাতেখড়ি আমার কাছে। অথচ ইন্টারনেট-ফেসবুক নিয়ে মাতামাতির কারণে বন্ধুদের অনেকে এক সময় আমাকে বকাবকি করতো।বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখনো ঠিকমত পাসওয়ার্ড দিতে জানে না। অনেকে আবার পাসওয়ার্ড ভুলে যায়। এর প্রধান কারণ, বাংলাদেশের মানুষ কোনো জিনিস ভালো ভাবে শেখে না। আধাআধি শিখেই সেই বিষয়ে নিজেদের পণ্ডিৎজ্ঞান করেন। অথচ শুধুমাত্র ফেসবুক দিয়েই দেশের বড় বড় সন্ত্রাসীদের পাকরাও করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের পুলিশ সেই শিক্ষাটা ভালোমত নেয় না। সবার আগে ঠিক করা দরকার আমাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটা ইউনিক নাম্বার হবে। এই ইউনিক নাম্বারটি তার সারাজীবন সবখানে দরকার হবে। কেউ যদি মোবাইল ফোন নিতে চায়, ওটা দিতে হবে, কেউ যদি পাসপোর্ট নিতে চায়, ওটা দিতে হবে। ন্যাশনাল আইডি কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজের লাইসেন্স নেওয়া যাবে না। বন্দুকের লাইসেন্স হোক আর ড্রাইভিং লাইসেন্স হোক, মোবাইল ফোন হোক, আর এনজিও লাইসেন্স হোক, যে কোনো বিজনেস লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল আইডিকে মৌলিক ভিত্তি করলে, কারো সাধ্য নাই, কোনো অন্যায় করে পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়া। অথচ রাষ্ট্র সেই ন্যাশনাল আইডি কার্ড করার ক্ষেত্রে এখনো কোনো ধরনের জোড়ালো আগ্রহ দেখায় না। একটি শিশুর জন্ম হলেই পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে তার জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ড বরাদ্দ করতে হবে। মৌলিক এই জায়গাটায় যত আধাখেচরা কাজ হবে, এর সঙ্গে রিলেটেড অন্য সব ক্ষেত্রেও গোটা রাষ্ট্রে তাই হবে। আমাদের রাষ্ট্রই এসব ফাঁকফোকর ইচ্ছে করেই রেখে দেয়। যাতে সন্ত্রাসীরা তাদের অভয়অরণ্যে আরামে ঘুরে বেড়াতে পারে। বায়োমেট্রিক তো আরো অনেক পরের বিষয়। আমাদের টেলিফোন মন্ত্রী মাঝখান থেকে মনে করছেন, কেবল বায়োমেট্রিক হয়ে গেলেই সব সন্ত্রাসী পাকরাও করা সম্ভব। কিন্তু আসল সত্য হলো, আমাদের মন্ত্রী বা পুলিশের চেয়ে সন্ত্রাসীদের বুদ্ধি অনেক বেশি। সমস্ত ফাঁকফোকর আমাদের মন্ত্রী বা পুলিশের চেয়ে সন্ত্রাসীরা বেশি জানে। সেই ফোকর বন্ধ না করার উদ্যোগ না নিলে ঘটনা কেবল ঘটতেই থাকবে। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোতে সদিচ্ছা ব্যাপারটা প্রায় পুরোটাই লোক দেখানো। কাজের ভেতরে অসংখ্য ফাঁকফোকর রেখেই আমাদের রাষ্ট্র চলছে। ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। চোখের সামনে একটা দেশের রাজধানী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের শাসকগোষ্ঠী বড় বড় উন্নয়নের বুলি ছুড়ছে। প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যামে যত শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, তার আর্থিকমূল্য কত? রাষ্ট্র সেই হিসাব দিতে পারবে না। রাষ্ট্রের সেই সদিচ্ছাও নাই। আমাদের রাষ্ট্র চলে স্রেফ হুজুগে। এখানে আইনের কোনো বালাই নাই। আমাদের রাস্তা নির্মাণ ব্যয় বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিন্তু আমাদের সেই ব্যয়বহুল রাস্তা সবচেয়ে কম সময় টিকে থাকে। রডের বদলে বাঁশ দিয়ে সরকারি ভবন নির্মাণ একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বে বিরল। চোখের সামনে এই দেশটাকে পৃথিবীর সাক্ষাৎ নরক বানানোর প্রচেষ্টা চলছে। সুন্দরবন ধ্বংস করা হচ্ছে। নদী মেরে ফেলা হচ্ছে। চারিদিকে কেবল দখল উৎসব। আহা এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!......................................৭ মে ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪২
false
rn
রাস্তায় পাওয়া ডায়েরী থেকে- ২৪ মানুষ তার ঘর থেকে তেলাপোকা, মশা-মাছি, ধূলোবালি তাড়ায় আর আমি নিজের কাছ থেকে আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব তাড়াই। কারণ কিছু লোকের বোকামি গোঁড়ামি ন্যাকামি একেবারেই সহ্য করতে পারি না । তাদের সান্নিধ্যে অস্বস্থিবোধ করি ।ইচ্ছা করে তাদের গালে ঠাস ঠাস করে পাঁচ টা থাপ্পড় দেই। তিনটা না পাঁচটা । তিনটা থাপ্পড়ে হলে কি পাঁচ টার কথা বলতাম ? যদি তিন দিনের ঔষধে কাজ হতো তাহলে ডাক্তার সাত দিনের ঔষধ দিত না ।আর যাদের সঙ্গ আমার ভালো লাগে তাদের সন্তুষ্ট করতে পারি না । যাদের সাথে মনের মিল নেই, বুদ্ধির সমতা নেই, চিন্তার মিল নেই- তাদের সাথে আমি একে বারেই মিশতে পারি না । আমি চাই স্বাধীনতা, শান্তি- আনন্দ । এযুগের বেশীর ভাগ মানুষই দেশ প্রেমিক কিন্তু বিশ্বাসঘাতকও কম নেই ।এক সময় আমি নানান রকম বই টই কিনতাম। মানুষের সঙ্গ পরিত্যাগ করে বইকেই বেছে নিয়ে ছিলাম । তখন আমার কোনো শত্রু ছিল না । বেশ ছিলাম । দিন রাত শুধু বই পড়তাম । বাইরেও বের হতাম না । মা শুধু বলতো- আমার পন্ডিত, আমার পন্ডিত !আগে আমি অনেক লিখতাম । অনেকে আমার লেখা পছন্দ করতো । অনেক কঠিন সমালোচনা করতো । সমালোচনা মানেই তো, "আমার কেমন লাগল সেইটা স্পষ্ট করে বলা"। কিন্তু অনেকের স্বভাবই হচ্ছে- খোঁচা দিয়ে কথা বলা। সমালোচনা এবং খোঁচা এক জিনিস নয় । কেউ আমায় বকলে ফ্যাল ফ্যাল করে বোকার মতন তাকিয়ে থাকি । মাথা গুলিয়ে যায় । আবার রামায়ন পড়তে গেলেও মাথা গুলিয়ে যায় ।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু বদলে যায় । যাকে সুখ শান্তি এবং আদর্শ ভাবি, দুইদিন পর সেই-ই অসুখ এবং অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় । রবীন্দ্রনাথ একজন মহান সাহিত্যিক। এখন, তাকে যদি আমি ঝালমুড়িওয়ালা ভাবি, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয় ? আমি অনেক ভেবে দেখলাম শতকরা নব্বই জনের সাথে নব্বই জনের মিলে না । শুধু মিলের অভিনয় করে যায় । ইদানিং নিজেকে কুমির বলে মনে হচ্ছে । কিন্তু সব সময় আমি আদরে তুলতুলে খরগোশ হয়েই থাকতে চেয়েছিলাম ।যে কোনো অবস্থাতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারি না । মাঝে মাঝে ভাবি আমাদের দেশে যদি কার্ল মার্কস, লেনিন, আইনস্টাইন, বুদ্ধ, বার্টেন্ড রাসেল অথবা ফ্রয়েড জন্মাতেন !রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষ্যাপা পরশ পাথর খুঁজে বেড়াত । আমি খুঁজে বেড়াই এক আকাশ আনন্দ- যা এদেশে পাওয়া সম্ভব নয় । আমাদের দেশের নিয়ম হচ্ছে-সকলের মন রক্ষা করে চলা, মানে তেল দেওয়া । সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চাকরীজীবি, ব্যবসায়ী, দালাল সবাইকে তেল দেওয়া । কিন্তু আমি এদের গন্ডির মধ্যে থাকতে চাই না । আমি যদি মাছ হতাম তাহলে তাদের টোপ গিলে ফেলতাম । আমি মাছ নই তাই একটু হেসে এড়িয়ে যাই । মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক কি দিয়ে হয়? কেন হয় ? আজকাল তো কারো মধ্যে মনুষ্যত্ব দেখি না । এযুগে প্রান ভরে প্রেম করা যায় না । ভালোবাসা যায় না । এমনকি প্রান ভরে কাউকে ঘৃ্নাও করা যায় ।অনেকদিন আগে আমি একটা ভিক্ষুককে রোজ ভিক্ষা দিতাম । সে একদিন আমার মাথায় হাত রেখে বলল - বাবু, আমাকে মা বলে ডাকো । তারপর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করো আমি তোমাকে দোয়া করে দেই ।"মানুষের মত মানুষ হও, আমি দোয়া করছি তুমি হবে ।" সেদিন অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম । সেই ভিক্ষুক সেদিন আমাকে রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা শুনিয়ে ছিল। "সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া"। অদ্ভুত মানুষের সৃস্তি সংগ্রহ করে রাখার বাতিক আছে আমার ।You Are My Pumpkin, Pumpkin,Hello Honey Bunny...I Am Your Dumpling, Dumpling,Hello Honey Bunny...Feeling Something Something,Hello Honey Bunny...Honey Bunny, Toko Toko...
false
rn
টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা- ২৫ ১। রাত দুইটা। খুব ভয় ভয় করছে। আমি ঘরে আলো জ্বেলে ঘুমাতে পারি না। হঠাত দেখি ঘরে কে যেন আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে। সাদা কাপড় পরা। চোখ মুখ সব সাদা কাপড়ে ঢাকা। আমি স্পষ্ট তার উপস্থিত টের পাচ্ছি। সে একবার দরজার পাশে লুকাচ্ছে, একবার জানালার পর্দার আড়ালে লুকাচ্ছে। ইচ্ছা করছে উঠে একটা থাপড়া দেই কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। আমি একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে- এই ধরনের ব্যাপার(ভূত) বিশ্বাস করতে পারি না। নিজেকে বুঝালাম- গভীর ঘুমে স্বপ্ন দেখছি। আর যদি সে সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তাকে তার মতো থাকতে দেওয়া উচিত।সে তো আমাকে মারতে আসেনি, গলা টিপে ধরেনি বা রাক্ষসের মত গলার কাছে কামড় দেয়নি।খুব সাহস করে বিছানা থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরালাম। আর কি আশ্চর্য সাথে সাথে সে বাতাসের সাথে মিশে গেল !২। ছোট ভাইয়ের বন্ধু তুহিন আমার কাছে আসে ফোটোগ্রাফী শিখতে।তুহিনের ধারনা আমি একজন ভালো ফোটোগ্রাফার। সত্যি কথা বলতে- আমি ভালো ছবি তুলতে জানি না। অনেকের মত তুহিন ও একথা বিশ্বাসই করে না। তুহিনের সাথে ফোটোগ্রাফির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। সে খুব আগ্রহ নিয়ে আমার কথা শুনে। মাঝে মাঝে ডায়েরীতে লিখে রাখে। আমি তুহিনকে বুঝিয়ে বললাম- লেন্স শব্দটি লাতিন ভাষা থেকে এসেছে। ক্যারেরার চোখ হচ্ছে এই ল্যান্স। এই ল্যান্সকে চার ভাগে ভাগ করা যায়... । কথায় কথায় একদিন তুহিন আমাকে বলল- ভাইয়া, আমাদের ক্লাসে সব বুড়া বুড়া স্যার ম্যাডাম। ক্লাস করে আনন্দ পাই না। অন্য ক্লাসে কি সুন্দর সুন্দর ম্যাডাম ! একেবারে অল্প বয়স। দেখলে মনে হয়- টিচার না যেন স্টুডেন্ট।একদিন আমরা সবাই রেগে গিয়ে আন্দোলন করলাম- পরের দিন দেখলাম খুব সুন্দর একজন ম্যাডাম এসেছে। এখন ক্লাস করে মজা পাই। ৩। সারারাত ঘুম হয় নি। শুধু এপাশ-ওপাশ করেছি। ফযরের আযানের পর ঘুম আসলো। সকাল সাড়ে ছয়টায় বুয়া এসে খট খট শুরু করলো।সাত টায় ছোট ভাই জোরে গান ছাড়লো। আট টায় মা টিভি অন করলো- চারিদিকে শুধু শব্দ আর শব্দ । মনে হচ্ছে কে যেন আমার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে মা'র সাথে চিল্লাচিল্লি করলাম। মা বলল- সারারাত কি চুরী করছো? এখন সকাল, সকালে কেউ ঘুমায় না। টিভির শব্দ কমানো হবে না। হঠাত করে মাথাটা গরম হয়ে গেল- ইচ্ছা করলো টিভি টা ভেঙ্গে ফেলি। কিন্তু ভাংলাম না, তাহলে খবর আর টক শো দেখব কি করে। হাতের কাছে ছিল পানির জগ- দিলাম পানির জগে একটা লাথথি। ব্যাথা পেলাম পায়ে। সাথে সাথে আঙ্গুল টা ফুলে গেল। এক আকাশ রাগ নিয়ে দরজাটা ধাম করে বন্ধ করে- বাইরে চলে গেলাম। এখন রাস্তায় এলোমেলো বেশ কিছু সময় হাঁটতে হবে।৪। অদ্ভুত একটি উপন্যাস ''দিবারাত্রির কাব্য'' ।উপন্যাসটা পড়তে পড়তে ঘোর লেগে যায়। দিবারাত্রির কাব্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত তুমুল জনপ্রিয় এবং আলোচিত উপন্যাস ।১৯৩৫ সালে দিবারাত্রির কাব্য মলাটে প্রকাশিত হয়।আমরা সাধারনত যে উপন্যাস পড়ি তা থেকে সম্পুর্ণ আলাদা 'দিবারাত্রির কাব্য'।দিবারাত্রির কাব্য অবশ্যই প্রেমের উপন্যাস ।উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হেরম্ভ । উপন্যাসে হেরম্ভের জীবনে ৩টি মেয়ে আসে।উমা,সুপ্রিয়া এবং আনন্দ ।উপন্যাসের শুরু হয় দারোগা অশোকের স্ত্রী সুপ্রিয়ার বাড়িতে ।উমা হেরম্ভের স্ত্রী । এক সন্তান রেখে আত্যহত্যা করে সে ।হেরম্ভের জীবনে সব কিছু উলটপালট করে দেয় আনন্দ নামের মেয়েটি ।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাব্বিশ বছর বয়েসে গল্প লেখেন ‘একটি দিন’, ১৯৩৪ সালে।উপন্যাস নিয়ে ছবি করার কারও সাহস হবে এমন কথা মানিক ভাবেননি নিশ্চয়ই। মানিক তাঁর এক গল্পগ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছিলেন, ‘ভাবের আবেগে’ ভেসে যাওয়া মধ্যবিত্তকে কশাঘাত করার কথা। সাহিত্যে সরল আবেগ চর্চার সঙ্গে ওঁকেও লড়াই করতে হয়েছে। ৫। অনেকদিন পর আবারও 'কোথাও কেউ নেই' নাটকটা দেখলাম। সেই ভালো লাগা, সেই পাক খেয়ে উঠা কষ্ট! কারাগারে বাকেরের লাশ নিতে আসা মুনার সেই পান্ডুর মুখ! চারদিকে আজান হচ্ছে, কী হাহাকার করা দৃশ্য! বুকের উপর পাথর চেপে বসে। ইচ্ছা করে বাথরুমে গিয়ে খানিকটা কেঁদে আসি!কোথাও কেউ নেই, বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও নির্দেশক বরকত উল্লাহ নির্দেশিত জনপ্রিয়তম নাটক।নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল "বাকের ভাই"। বাকের ভাই গুন্ডা প্রকৃতির লোক এবং তার সঙ্গী ছিল "বদি" আর "মজনু", তারা তিনজনই মোটর সাইকেলে করে চলাফেরা করতো।বাকের ভাইয়ের একটা মুদ্রাদোষ ছিল, সে একটা চেইন হাতের তর্জনিতে অনবরত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচাতো, আবার উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচ খুলে আবার প্যাঁচাতো। মুনা এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে, চাকরি করে, এবং তার মামাতো ভাই-বোনদের দেখাশোনা করে। বাকের ভাই এলাকার সন্ত্রাসী হলেও অধিকাংশ মানুষ তাকে ভালোবাসতো।ঘটনাপ্রবাহে বাকের ভাই এলাকার প্রভাবশালী এক নারীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ঐ নারী তার বাড়িতে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন, বাকের ভাই তা জানতে পেরে প্রতিবাদ করে। মধ্যে রাতের অন্ধকারে কুত্তাওয়ালীর বাড়িতে একজন খুন হয়। ফাঁসানোর জন্য এই খুনের দায় দেয়া হয় বাকের ভাইকে, সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয় কুত্তাওয়ালী'র দারোয়ান।নাটকের নামকে সার্থক করে মুনা নাটকের শেষ দৃশ্যে ভোরের আদো-অন্ধকারে ছায়া হয়ে একা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকে। 'কোথাও কেউ নেই' নাটকটা ঠিক কত সালে প্রচারিত হয়েছিল বিটিভিতে আমার মনে নাই। সম্ভবত ৯০ সাল হবে। "কোথাও কেউ নেই"-এ কোর্টের একটা দৃশ্য থাকে এরকম। একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন, খুন করার সময় বাকেরের গায়ে তিনি লালচে টাইপের চাদর দেখেছেন। উকিল হুমায়ূন ফরিদি এই মিথ্যা সাক্ষ্য তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। রাস্তায় সোডিয়াম লাইট ছিল বিধায় লালচে বা মেরুন কালারের চাদর কুচকুচে কালো দেখা যাওয়ার কথা। মুনাঃ চশমাটা খুলুন। (বাকের ভাই চশমা খুললেন) এখন বলুন রিকশাওয়ালাটাকে মার খাওয়ালেন কেন?বাকের ভাইঃ মারলাম কোথায়!? একটু টিপে দিয়েছি। মুনাঃ আপনাকে টিপে দিতে বলেছি? আমার সমস্যা আমি দেখব বাকের ভাইঃ তুমি Angry হচ্ছ কেনো? অকারনে Angry is bad for health.মুনাঃ কথায় কথায় ইংরেজি বলবেননা। যে ভাষাটা জানেননা সেটা বলতে জান কেন? বাকের ভাই (অবাক হয়ে): আমি ইংরেজি জানিনা!! Who told! Wrong information very wrong information.মনের কিছু এলোমেলো কথা যদি ব্লগে না লিখি, তাহলে কোথায় লিখব ?
false
hm
শ্বাসরুদ্ধকর তুর্ক-ক্রোয়াট কোয়ার্টার ফাইন্যাল আজকে এ খেলা যারা মিস করলেন, তাদের জন্যে দুঃখই হচ্ছে। থাকি তুর্কি পাড়ায়, চলতে ফিরতে রোজই তুর্কিদের সাথে দেখা। তুর্কি তরুণীরা বেশ শ্বাসরুদ্ধকর একটা ব্যাপার হলেও, ওদের মধ্যে এমন একটা রুক্ষতা আছে যে ভালো লাগে না শেষ পর্যন্ত। তুর্কি তরুণদের কথা বলার নেই কিছু, চরম অভদ্র আর উগ্র মনে হয়েছে বেশিরভাগকেই। ক্রোয়াটদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই খুব একটা। যতগুলো ক্রোয়াট দেখেছি এই স্বল্প প্রবাসজীবনে, সবক'টাই অভদ্র, জাতিবিদ্বেষী ও দুর্মুখ। তবে ক্রোয়াট মেয়েগুলি দারুণ! কিন্তু তুর্কি আর ক্রোয়াট ফুটবল অনন্য! খেলার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাণপণে খেলে দুই দল। গতি আর পায়ের কাজ চমৎকার, মাঝমাঠ থেকে হঠাৎ বল টেনে ত্বরিৎ আক্রমণে সিদ্ধপদ দুই দলই, অযথা মেরে খেলার প্রবণতাও তেমন একটা নেই। কিন্তু তুলনাহীন একজনই, তুর্কি গোলকিপার রুশতু। সময় কিভাবে যায় টের পাওয়া মুশকিল, ২০০৮ এ এসে চমকে উঠি রুশতুকে দেখে। বুড়ো হয়ে পড়েছে তুর্কি বাঘ। কিন্তু সেই বুড়ো হাড়েই ভেলকি দেখিয়ে চলেছে ১১৯ মিনিট ধরে। ক্রোয়াট মিডফিল্ডার দানিয়েল স্রনা আর তুর্কি গোলরক্ষক রুশতুর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলেছে গোটা ম্যাচ ধরে, স্রনার দর্শনীয় সব আক্রমণ চিতাবাঘের ক্ষিপ্রতা নিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে রুশতু, স্রনা আবার ঠান্ডা চোখে গোলকিপার আর মাঠ মেপে এগিয়ে আসছে হঠাৎ, পায়ে বল। ওদিকে সফট পাসে অভ্যস্ত তুর্কি মিডফিল্ডারদের কোন তোয়াক্কাই করছে না ক্রোয়াট ব্যাক সিমোনিচ, তুর্কিদের প্রত্যেকটা আক্রমণের মুখে সে একাই একশোজন হয়ে দেয়াল তুলে দাঁড়াচ্ছে। ১১৯ মিনিট ধরে এমনই চলছিলো। কখনো তুর্কিরা শিথিল হয়ে পড়ছে, বিদ্যুতের মতো এগিয়ে যাচ্ছে ক্রোয়াটরা, ভরসা তখন শুধুই রুশতু। মাঠের এক পাশ নিশ্চুপ হয়ে প্রার্থনা করছে, আরেক পাশ লাল সাদা চেক ঝান্ডা তুলে চেঁচাচ্ছে সমানে। চকিতে ঝলসে উঠছে রুশতুর গ্লাভস, বল আবার নিরাপদ দূরত্বে, নিরাপদ পায়ে, মাঠের অন্যপাশে লালে লাল তুর্কিরা শুরু করেছে চেঁচানো, ক্রোয়াটদের মুখ গোমড়া। এরই মধ্যে হঠাৎ মাঠ কাঁপিয়ে সামনে ছুটছে তুর্কি মিডফিল্ডাররা, চোখের পলকে পাঁচছয়জনের একটা দেয়াল তুলে দাঁড়াচ্ছে ক্রোয়াটরা। এমনই চলছে প্রত্যেকটা মিনিট। কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করা, ফাইবার গ্লাসের রক্ষাবরণ পরা ক্রোয়াট স্কোরার ক্লাসনিচ নেমেছেই গোল দেয়ার পণ করে। ১১৯ মিনিটের মাথায় প্রৌঢ় রুশতুর ছোট্ট একটা গাণিতিক ভুলের সুযোগ নিয়ে নিলো ক্রোয়াট বাহিনী, ক্লাসনিচের হেড মাঠের অর্ধেককে বিষন্ন করে দিয়ে জালে ঢুকে গেলো। রুশতু যেন কয়েক মাইল দূর থেকে ছুটে আসছিলো বল ঠেকানোর জন্যে, বলের সাথে সাথে সেও মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ক্লান্ত, হতাশ, বৃদ্ধ রুশতু। কমেন্টেটররা পারলে তখনই রুশতুর ব্যাগ গুছিয়ে দেয়। আহা বেচারা, এ-ই ছিলো তার শেষ টুর্নামেন্ট। বাড়ি ফিরতে হচ্ছে রুশতুকে ভিয়েনা ছেড়ে। আহা, আহা। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ কথাটার মর্ম টের পাওয়া গেলো তুর্কি মিডফিল্ডারদের আচরণে। ১২১ মিনিটের মাথায় সামিহ প্রথম সুযোগেই বল জালে পাঠিয়ে দিলো, ছয়জন ক্রোয়াটের দেয়ালকে হতভম্ব করে দিয়ে। সারাটা খেলা জুড়ে মাঠে তড়পে বেড়ানো ক্রোয়াট কোচ বোধ করি টের পেয়েছিলেন এমন কোন অশনি সংকেত, প্রাথমিক হুড়োহুড়ি কেটে যাবার পর তিনি হাত পা ছুঁড়ে সাবধান করছিলেন খেলোয়াড়দের, কিন্তু গরিবের কথা কেবল বাসি হলেই ফলে। ১২০ মিনিটের খেলা শেষ হলে পেনাল্টি শুটআউট। এই একটা জায়গায় তুর্কিরা আত্মবিশ্বাসী। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, পুরনো বাঘও চালে বাড়ে। রুশতু হতাশ করেনি তুরস্ককে। ক্রোয়াটরা হেরে গেছে। পাড়ার তুর্কি হারামজাদারা মনে হচ্ছে না আজ রাতে দু'টার আগে ঘুমাতে দেবে। পটকা ফুটছে, জঘন্য সব তুর্কি গান বেজে চলছে আশপাশে, হর্ন বাজিয়ে চলছে গাড়ির মিছিল। তবে তুরস্কের কপালে দুঃখ আছে, সেমিফাইন্যালে সেরা তিনজন খেলোয়াড়ই বাদ পড়ছে হলুদ কার্ডে নাম তুলে। সুইৎজারল্যান্ডের বাজেলে তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ঠান্ডা, হিসাবী, মারমুখো জার্মানরা। এই খেলার দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকতে হবে। মারপিট না হয়েই যায় না। এই খেলা দেখার সময় খুব মিস করছি ঢাকাকে। সবাই মিলে হইহট্টগোল করে খেলা দেখবো, একটু পর পর মুড়িমাখা আসবে, চা আসবে, প্রতিবেশীরা আসবে হৈচৈ শুনে হৈচৈ বাড়াতে, হাফ টাইমে ফোন করে ধমকাবো অন্য দলের সাপোর্টার বন্ধুদের ... তা না, একা একা চুপচাপ বসে বসে দেখলাম ম্যাচ। বাল বলে চিৎকার দিতে খুব ইচ্ছা করছে। বাল বলা ভালো নয় বলে দিচ্ছি না।
false
mk
দৈনিক যুগান্তর ০১ অক্টোবর ২০০৯ এর একটি শিরোনাম_ দলীয়করণ চাকরিচ্যুতি ও এসডিতে রেকর্ড জোট সরকারের পাঁচ বছর পার হতে চলেছে। এ সময়ে সরকার তার গৃহীত কর্মসূচি ও পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রশাসনিক যে মিশন ও ভিশন নিয়ে ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার সফল পরিসমাপ্তিও ঘটতে যাচ্ছে। চিহ্নিত কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত , হয়রানির মাধ্যমে জোট সরকারের অভিষেক হয়েছিল। ৫টি বছর কেটেছে দলীয় করণ দফায় দফায় পদোন্নতি বঞ্চিত করার ঘটনা, শাস্তিমূলক ওএসডি এবং পুরুষ্কারস্বরূপ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মধ্য দিয়ে অন্যায়ভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত শত শত কর্মকর্তার দীর্ঘ শ্বাসে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসার আগেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জোট সরকারের সমর্থক একটি আমলা সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে ছিল সরকার গঠনের পর এদের সহায়তা ও রেকর্ড মদদে প্রশাসনে সরকারবিরোধী কর্মকর্তা চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ সময় সরকারের পক্ষে-বিপক্ষের নাম দিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। রাজনৈতিক হয়রানি, নিপীড়ন ও দলীয়করণের প্রবণতা বেড়ে যায়। ভালো পোষ্টিয়ের থাকা অধিকাংশ কর্মকর্তাকে আওয়ামী লীগার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সরকার গঠনের দ’মাসের মধ্যে তালিকা অনুযায়ী ৩১১ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর ২২৩ জন এবং বেসামরিক প্রশাসন ক্যাডারের ৩ জন অতিরিক্ত সচিবসহ ৪২ কর্মকর্তা এবং পুলিশ ক্যাডারের ছিলেন ৪৬ জন। ফলে শুরুতেই প্রশাসন জুড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম বছরই রাজনৈতিক কারণে ২ হাজার কর্মকর্তার দফতর রদবদল, ২শ’ কর্মকর্তাকে ওএসডি এবং ১২৫ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। সচিব পদে বেশি সংখ্যায় পছন্দের আমলাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ায় প্রশাসনের নিচের দিকে পাঁচ স্তরে শত শত পদোন্নতি আটকে যায়। ৭৩ ব্যাচের পদোন্নতি ঠেকাতে প্রথম বছরে সচিব পদে ২১ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এক পর্যায়ে ২০০৪ সালে তা ২৪ জনে এসে উন্নীত হয়। দলবাজ ও আস্থাভাজন আমলাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে দিতে মাঝে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে, চুক্তি’দের ওপর ভর করেই প্রশাসন চলছিল। ক্যাডার পদের বাইরেও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে চুক্তিতে সরাসরি দলীয় লোকজন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন বিতর্কিত সচিবকে গত বছর অনির্ষ্টিকালের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনে রেকর্ডও সৃষ্টি করা হয়। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ওপরের দিকে পছন্দের নিয়মিত আমলাদের তুলে আনা সম্ভব হওয়ায় বর্তমানে ক্যাডার সার্ভিসে চুক্তি নিয়োগ কিছুটা কমে এসেছে। ওএসডিতেও জোট সরকার বিশাল রেকর্ড গড়েছে। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ওএসডি ছিলেন ৩৫৫ জন। বর্তমানে কিছুটা নেমে এসে ২৯০ জনে ঠেকেছে । এর মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কাউকে বছরের পর বছর পোষ্টিং না দিয়ে ওএসডি করে বসিয়ে রাখা হয়েছে।এ তালিকায় উপসচিব পদে ২০০২ সাল থেকে ১ জন, ২০০৩ সাল থেকে ১২ জন , ২০০৪ সাল থেকে ১ জন, ২০০৫ সাল থেকে ৩৩ জন এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা ওএসডি রয়েছেন। ২০০৩ সালের ফেব্র“য়ারি, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাস এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া বহু কর্মকর্তা অদ্যাবধি পোষ্টিং পাননি । এসব কর্মকর্তারা জন্ম থেকে জ্বলছি অবস্থায় রয়েছেন।
false
fe
বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়নের আলোরেখা বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়নের আলোরেখাফকির ইলিয়াস============================================বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে মানুষের পদরেখা। মানুষ জানতে পারছে। দেখছে, শিখছে অনেক কিছু। আমরা গত জুন-২০১৬ মাসেই জেনেছি, প্রথমবারের মতো দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে বিনিয়োগ বোর্ডে আয়োজিত আঙ্কটাডের ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০১৬’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে দেশে ২২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে যা আগের বছরের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি। ২০১৪ সালে ১৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছিল। ২০১৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর প্রথম অবস্থানে রয়েছে ভারত। ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৪ হাজার ৪২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে জ্বালানি খাতে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়াম খাতে এ বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এ ছাড়া টেলিকমিউনিকেশন খাতে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ব্যাংকিং খাতে ৩১ কোটি ডলার, ফুড প্রোডাক্টে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার, কৃষি ও মৎস্য খাতে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং অন্যান্য খাতে ৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।আরো শুভ সংবাদ হচ্ছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগের পরিমাণও। এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইতে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে ৬১৭ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিদেশিরা মোট ৩ হাজার ৪৯২ কোটি টাকায় বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেছেন। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৭৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অবশ্য এ সময়ে শেয়ার ক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৫ সালের প্রথম নয় মাসে বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালের প্রথম নয় মাসে ২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানির তুলনায় স্থানীয় কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়তে দেখা গেছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস, ডিবিএইচ, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক উল্লেখযোগ্য।এদিকে বিনিয়োগের নামে বেশ কিছু অসাধু চক্রও মেলতে চাইছে তাদের ডালপালা। অল্প পরিচয়ের বিদেশিরা আকর্ষণীয় বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিচ্ছেন দেশীয় উদ্যোক্তাদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রতিশ্রæতি দেয়া হয় প্রাথমিক ব্যয়ের নামে সরলমনা মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য। এ ছাড়া সন্ত্রাসী উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ অনেক সময় বৈধ করতে এসব প্রস্তাব আসে। এই বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতন করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের আগস্ট মাসে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও প্রিন্সিপাল অফিসে পাঠিয়েছে। ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্সধারী সুনাম ও সঙ্গতি সম্পন্ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান নয় এমন পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা অনেক সময় বড় বড় অঙ্কের আপাতদৃষ্টে আকর্ষণীয় বিদেশি বিনিয়োগ জোগানের প্রস্তাব পেয়ে থাকেন। এসব বিনিয়োগের জন্য অনুমতি নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রস্তাব পাওয়া ব্যক্তিরা। প্রশ্নযোগ্য পরিচিতির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া এসব তহবিল জোগান প্রস্তাব তথ্যগতভাবে অসম্পূর্ণ, অস্বচ্ছ হয়।সার্কুলারে বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে কেউ ব্যাংকে এলে বিনিয়োগ তহবিল জোগানকারীর পরিচিতি, সুনাম ও সঙ্গতির তথ্যাদির যথার্থতা যাচাই ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাইবে ব্যাংক। বিনিয়োগ প্রস্তাবে উল্লেখ করা পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় প্রথিতযশা আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্থানীয় উদ্যোক্তা গ্রাহকের হাতে পাওয়া বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রাথমিক পরীক্ষায় সন্দেহজনক প্রতীয়মান হলে গ্রাহককে সে বিষয়ে যথাযথভাবে অবহিত করে সতর্কতার উপদেশ দেয়ার দায়িত্ব ব্যাংকগুলোকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে।আমাদের মনে রাখা দরকার বিশ্বে জঙ্গিবাদ চলতি সময়ে একটি গ্লোবাল ইস্যু। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি ডলার বিভিন্ন খাতে পাচার হচ্ছে। তাই এমন কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়ছে কিনা তা দেখা রাষ্ট্রের জরুরি দায়িত্ব।বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বিষয়টি এখন বহুল আলোচিত বিষয়। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি- বাংলাদেশে চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে চারশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে দেশটি। সেখানে দুই থেকে আড়াই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া ইতালির নাগরিককে হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে চীনা নাগরিকদের জন্য কোনো ভ্রমণ সতর্কতা জারির পরিকল্পনা তাদের নেই। বাংলাদেশিদের জন্য চীনা ভিসা সহজ করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ আগ্রহী হলে বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চায় চীন। সম্প্রতি ‘উদীয়মান চীনা অর্থনীতি : বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক দেশভিত্তিক বক্তৃতায় ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং এসব তথ্য জানান।বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ২০১৫ সালে ৫৬.৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যার ৬৫ শতাংশই গেছে টেক্সটাইল খাতে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব এটি। অনেক চীনা কোম্পানি এর বাইরেও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে চামড়া, রাসায়নিক সার, বিদ্যুৎ, ওষুধ শিল্পের কথা উল্লেখ করা যায়। বেসরকারি কোম্পানির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনুসন্ধান করতে শুরু করছে। বিদ্যুৎ ও ম্যানুফ্যাকচারিংসহ বিভিন্ন খাতে চীনা বিনিয়োগকারীরা প্রবেশ করছেন। কারণ এসব খাতের রয়েছে সম্পূর্ণ সম্ভাবনা। বিদ্যুৎ খাতের উদাহরণ টেনে বলা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে চীনা বিনিয়োগের ফলে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্যমান ৪০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশে আরো শিল্পপার্ক স্থাপিত হলে সে দেশে বিনিয়োগের পথ চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য আরো প্রশস্ত হয়ে যাবে।চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আগ্রহের মূল কারণ হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনও করছে এই দেশ। তাছাড়া বাংলাদেশে শ্রম ব্যয় অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম। পারিশ্রমিক তুলনামূলক কম এমন খাতে বিনিয়োগ করতে পারা চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য হবে বড় সুযোগ। এদিকে বাংলাদেশ সরকার দেশে ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নয়নে বেশকিছু নীতি গ্রহণ করেছে। তাই দুই দেশের সরকারই বাণিজ্য সফরে ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে সহযোগিতা ও উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে। এতে চীনা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ব্যাপারে জানার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা সুযোগটি কাজেও লাগাচ্ছেন।যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকনোমিস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে গত ৩০ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের অধিকাংশই দরিদ্র। তারপরও বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হচ্ছে গড়ে ৭ শতাংশ করে। কিছু সামাজিক মানদণ্ডে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। চীনের পর দেশটি এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বিদেশ থেকে নিজ দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন এক কোটি প্রবাসী কর্মী। গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়লেও বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দ্রুত বিকশিত এই অর্থনীতির দিকে এখন অনেকেরই দৃষ্টি।বাংলাদেশের গণমানুষের উন্নয়ন দেখতে ঢাকায় এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। বাংলাদেশে গাভী পালন বা মাছচাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা নারীদের ‘নতুন জীবনের’ গল্প শুনে ফিরে গেলেন তিনি। বাংলাদেশের ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ দেখছেন কিম, তবে কাক্সিক্ষত সেই সফলতা পেতে বাংলাদেশ সরকারের তিনটি খাতে কাজ করা দরকার বলে মনে করছেন তিনি। প্রথমত, ব্যবসার পরিবেশ আরো উন্নত করতে নীতিতে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন কিম। বলেছেন- ‘বর্তমানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর থেকে পিছিয়ে আছে। বেসরকারি খাত থেকে আরো বিনিয়োগ টানতে পারলে তা অবকাঠামো প্রকল্পে খাটানো যাবে।’ দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। তৃতীয়ত, তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছেন, যার মধ্যে শক্তিশালী বেসামরিক প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সরকারি ব্যাংক, রাজস্ব সংগ্রহ ও দুর্নীতি দমন কমিশন রয়েছে। তার ভাষায়- ‘দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স আমাদেরও চাওয়া, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, দরিদ্রদের থেকে চুরি করে কোনো অর্থ সুবিধাভোগীদের কাছে যায় না।’জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় আগামী তিন বছরে বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সামনের কাতারে রয়েছে মন্তব্য করে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ঝড়, সাইক্লোন ও বন্যার ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ যাতে দুর্যোগ প্রশমনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে সে জন্য বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সহায়তা করার পরিকল্পনা করেছে।’ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে একটি আলোকিত এবং আলোচিত দেশ।তরুণ প্রজন্ম আজ গুগল সার্চে হাতের মুঠোয় যে বিশ্বকে পাচ্ছেন- এটাই উন্নয়নের আলোরেখা। এই রেখাকে পাথেয় করে পথ চলতে হবে। ডিজিটাল সময়ের ভালো দিকগুলো গ্রহণ করতে হবে। খারাপগুলো বর্জন করতে হবে। মানুষ কোনো অন্ধকার যুগকে তার স্থায়ী নিবাস ভাবতে পারে না। আলোই তার মূল সহায়। এই বীজ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বুনে যেতে হবে। জ্ঞানের কোনো বিকল্প আগেও ছিল না, এখনো নেই, আগামীতেও হতে পারবে না।------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:১৪
false
ij
কবিতা থেকে গান_ উৎসবের পর মানুষ স্মৃতিকাতর এক প্রাণি; প্রতি মুহূর্তেই সে সৃষ্টি করে যাচ্ছে স্মৃতি। মানুষ যদিও নিমজ্জ্বিত থাকে সুখি ও নিরাপদ ভবিষ্যতের স্বপ্নে -তার অধিকাংশ লেখাই অতীতমূখি ও স্মৃতিবিষয়ক। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মানুষের চেতনার পেন্ডুলামটি ঝুলে থাকে ফেলে আসা মুহূর্তগুলির দিকেই । যে কারণে আমাকেও একটি গানে লিখতে হয়েছে-একাকী অন্য জীবনে কেউ হারিয়ে যাচ্ছিল?হারিয়ে যাওয়ার আগে শেষবার দেখছিল?তারপর দীর্ঘ ঘুমে অচেতন কে যেন ডাক দিল আবার ফিরে যেতে। প্রায়শ আমার মনে হয় যে শিল্পের অন্যতম উপাদান ও অনুষঙ্গ হল স্মৃতি। স্মৃতি ব্যতীত যে কোনও প্রকার শিল্প যে সম্ভব নয় তাও আমার মনে হয়। যে কারণে স্মৃতি হল শিল্পের মূল উপাদান: গানে কবিতায় কিংবা উপন্যাসে। নীল রঙের আধিক্যে নাকি সাদা ক্যানভাসেও ফুটিয়ে তোলা যায় স্মৃতি। সে সব আঁকিয়েরা ভালো বলতে পারবেন।‘উৎসবের পর’ গানটি এভাবে শুরু-এখানে এসে দাঁড়ালে মনে পড়ে যাবে।বুকের ভিতর হাওয়া ঘুরে উঠবে আবার;এখন রাস্তায় জমে আছে শুকনো পাতা দিয়েছে ঢেকে হারানো পায়ের ছাপ।সেদিনের উৎসবে আলোয় অজস্র মুখহৃদয়ে শান্তির নীল স্রোত বইছিল?একাকী অন্য জীবনে কেউ হারিয়ে যাচ্ছিল?হারিয়ে যাওয়ার আগে শেষবার দেখছিল?তারপর দীর্ঘ ঘুমে অচেতন কে যেন ডাক দিল আবার ফিরে যেতে। সেদিনের উৎসবে আলোয় অজস্র মুখহৃদয়ে শান্তির নীল স্রোত বইছিল?‘উৎসবের পর’ ব্ল্যাক এর ২য় অ্যালবাম। উৎসবের পর গানটি ঠিক কোন্ মানসিক পরিস্থিতিতে লিখেছিলাম আজ আর তা মনে নেই। সম্ভবত সেই সময়ে কেউ বিদেশ চলে গিয়েছিল; তার আগে একটা হাসিখুশি গেটটুগেদার হয়েছিল ...সেদিনের উৎসবে আলোয় অজস্র মুখহৃদয়ে শান্তির নীল স্রোত বইছিল?তারপর সে ফিরে এসেছিল।এখানে এসে দাঁড়ালে মনে পড়ে যাবে।বুকের ভিতর হাওয়া ঘুরে উঠবে আবার;এখন রাস্তায় জমে আছে শুকনো পাতা দিয়েছে ঢেকে হারানো পায়ের ছাপ।আমার মনে আছে। অ্যাকুয়েস্টিক গিটারে যখন প্রথম জন এর কম্পোজিশনটা শুনি আমার নির্জন ঘরে । হ্যাঁ। ঠিক এমনটিই চাই। বলেছিলাম। নাইনটিন থার্টি, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। গিটার বাজিয়ে লিরিকের কিংবা কবিতার মর্যাদা দেওয়া গেল। জন। উৎসবের পর গানটির কম্পোজার। ওর ভিতরে কেমন এক রহস্যময়তা টের পেয়েছি দীর্ঘকাল আগেই। গিটারে ফুটে ওঠে সে মিসট্রি। অদ্ভূত অদ্ভূত সব কর্ড এর সমাহার; অসাম রিদমিক পজ ... ক্যাচি বেজ লাইন ... মেলোডিক ফ্যান্টাসি ... সব মিলিয়ে এক ধ্বনিময় গাঢ় দিকচিহ্ণহীন কুয়াশাময় জগৎ ...পুরো কম্পোজিশনটা আমার কাছে কেমন সাদাকালো সাদাকালো এবং ধূসর বলে মনে হচ্ছিল । কর্ডের আর্তনাদে অবিকল স্মৃতি বিষয়ক কাতরতা। কম্পোজিশনটি প্রবল ভাবে স্মৃতিময় হওয়ায় আমি প্রায় চমকে উঠেছিলাম।গানটির অডিও লিঙ্কhttp://www.mediafire.com/?1int0zjm2iv
false
hm
বরাহশিকার! দুই সপ্তাহ আগে এই পোস্টে জানিয়েছিলাম গণরণসঙ্গীতের কথা। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার জন্যে, যূথবদ্ধ কণ্ঠে গাওয়ার জন্যে একটা গানের প্রয়োজন বোধ করছিলাম। প্রতিশ্রুতি ছিলো, শুধু গানটিই নয়, একটি অ্যানিম্যাটিকও আমরা একই সাথে পরিবেশন করবো। এই অ্যানিম্যাটিকের ভাবনাটি গত দুই সপ্তাহে অনেক ভাবনা উসকে দিয়েছে কালাইডোস্কোপের আয়োজক আর শুভানুধ্যায়ীদের মধ...[justify] দুই সপ্তাহ আগে এই পোস্টে জানিয়েছিলাম গণরণসঙ্গীতের কথা। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার জন্যে, যূথবদ্ধ কণ্ঠে গাওয়ার জন্যে একটা গানের প্রয়োজন বোধ করছিলাম। প্রতিশ্রুতি ছিলো, শুধু গানটিই নয়, একটি অ্যানিম্যাটিকও আমরা একই সাথে পরিবেশন করবো। এই অ্যানিম্যাটিকের ভাবনাটি গত দুই সপ্তাহে অনেক ভাবনা উসকে দিয়েছে কালাইডোস্কোপের আয়োজক আর শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে, এবং একটি চমকপ্রদ দিকে এটি মোড় নিয়েছে। দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, অ্যানিম্যাটিকটির জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকটি দিন। কিন্তু গানটি পরিবেশনে কোনো বাধা নেই। নতুন বছর শুরু হোক বরাহশিকারের রণসঙ্গীত দিয়ে। সবাইকে ২০১০ এ জানাই শুভাশিস। ফুল ভলিউমে শুনুন। আপনাদের সুবিধার জন্যে গানের বাণী নিচে যোগ করা হলো। গান বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে শক্ত ফলা চাই তীক্ষ্ণ ফলা চাই মস্ত সে বরাহ তাকে মারতে মোরা যাই চুপি চুপি চলো, পা টিপে টিপে, বরাহ সে কান পেতে শোনে সব শোনে লম্বা লম্বা কান উঁচিয়ে শোনে শব্দ যেন ঘাসে অথবা বাতাসে না ছড়ায় বরাহ সে শোনে সব শোনে শুনতে কি সে পায়, বল্লমেরই ঘায় আসছে ধেয়ে আজকে তারই মৃত্যুমৃত্যুমৃত্যুদূত বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে চুপি চুপি চলো, ঘাসেরই আড়ালে, বরাহ সে চোখ মেলে দ্যাখে সব দ্যাখে কুঁতকুঁতে দু'চোখ মেলে সে দ্যাখে দেখতে পেলে ছায়া বরাহ বেহায়া পালাবে সে চোখ মেলে দ্যাখে সব দ্যাখে দেখতে কি সে পায়, বল্লমেরই ঘায় আসছে ধেয়ে আজকে তারই মৃত্যুমৃত্যুমৃত্যুদূত বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে মস্ত ধূর্ত হিংস্র ক্ষিপ্র বনবরাহ সে বন্ধু তুমি বর্শা ধরো দৃপ্ত সাহসে শিকারীর কথা আগে জানতে যদি পায় অন্ধকারে বন্ধদ্বারে গর্তে সে লুকায় জানতে কি সে পায়, বল্লমেরই ঘায় আসছে ধেয়ে আজকে তারই মৃত্যুমৃত্যুমৃত্যুদূত বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে শক্ত ফলা চাই তীক্ষ্ণ ফলা চাই আমাদের ভরসা শুধু আমরা দু'জনাই! গানটির আকার ৭ মেগাবাইটের মতো। কেউ যদি ডাউনলোড করতে না পারেন, royesoye অ্যাট জিমেইল ডট কমে জানাবেন, মেইল করে পাঠানো হবে। এ গানটি ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। আপনাদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে, পরিচিতদের গানটি শুনতে দেয়ার। মেইলগ্রুপে, ফেইসবুকে গানটির লিঙ্ক ছড়িয়ে পড়ুক। ধন্যবাদ।
false
fe
দিনবদলের যাত্রা _ সতর্কতা চাই ঘরে-বাইরে দিনবদলের যাত্রা : সতর্কতা চাই ঘরে-বাইরেফকির ইলিয়াস=======================================দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। গঠিত হয়েছে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রীপরিষদও। বেশ চমক দেখালেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। নতুন এই মন্ত্রীপরিষদে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা। বাদ পড়েছেন বেশকিছু সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল বলেছিলেন আর রাজনীতি করবেন না। পরে তিনি তার কথা পাল্টান। বলেন, চাপের মুখে এমনটি বলেছিলেন। কিন্তু তিনি দলে বেশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কাজ চালিয়ে যান ‘মুখপাত্র’ বলে পরিচিত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।নতুন গঠিত মন্ত্রীসভায় বাদ পড়েছেন আবদুল জলিল, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম সাজেদা চৌধুরী, মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ আরো কিছু নেতা। দেশবাসী মনে করেছিলেন, কিছু সিনিয়র নেতার মন্ত্রীভাগ্য বোধহয় প্রসল্পু হতে পারে। না, তা হয়নি। অন্তত প্রথম দফার ৩২ জনের মধ্যে এদের কারোরই স্থান হয়নি।ওয়ান-ইলেভেনের পর পাল্টে যায় বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ। শুরু হয় নতুন প্রেক্ষাপট। এ সময় কঠোর হাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জিল্লুর রহমান। অভিযোগ আছে, ওয়ান-ইলেভেনের প্রণেতা সংস্কারবাদীরা আওয়ামী লীগে একটা ভাঙন ধরিয়ে ‘সংস্কার’ করতে আগ্রহী হয়ে পড়েন। এ সময় রাজ্জাক-আমু-তোফায়েল-সুরঞ্জিত (কিছু মিডিয়ার ভাষায় র‌্যাটস) সংস্কারবাদী বলে পরিচিতি পেয়ে লাইমলাইটে চলে আসেন। জিল্লুর রহমানের বিশেষ কৃতিত্ব এখানে, তিনি এই সংকটকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে দলে ঐক্য বজায় রাখতে পেরেছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনের প্রণেতাদের ‘সংস্কার’ বাস্তবায়নে ড. মুহাম্মদ ইউনুস, ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, ড. কামাল হোসেন কিংবা কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমরা ব্যর্থ হওয়ার পর দুই নেত্রীই মুখ্য হয়ে ওঠেন। এর পরের ঘটনার ধারাবাহিকতা ছিল প্রায় সবাইকেই জামিনে ছেড়ে দেওয়ার পালা।শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের মাটিতে পা রেখেই বলেছিলেন, ‘আমি তাদের মাফ করে দিলাম। কিন্তু ভুলব না।’ ৬ জানুয়ারি ২০০৭-এর মন্ত্রীপরিষদের তালিকা দেখে এটাই মনে হলো শেখ হাসিনা ঠিকই ভোলেননি। একটি বিষয় স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, দিনবদলের যে খতিয়ান শেখ হাসিনা দেশবাসীকে দিয়েছেন তা মেনেই আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আর এখন মন্ত্রীপরিষদ গঠনও সেই দিনবদলেরই একটি প্রাথমিক ধাপ বলা যেতে পারে। যারা বাদ পড়েছেন, এদের অনেকেই আগের টার্মে শেখ হাসিনার মন্ত্রীপরিষদে ছিলেন। তাদের বেশ ক’জনের বিরুদ্ধে নানারকম দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ১৯৯৬-২০০০ সালের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। ওয়ান-ইলেভেনের পর এর সহৃত্র ধরেই আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়। সে মামলাগুলো এখনো আদালতে বিচারাধীন। শেখ হাসিনা সে বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আপাতত মনে হচ্ছে।একটি কথা মানতেই হবে, পনেরো কোটি মানুষের বাংলাদেশে অনেক মেধাবী রাজনীতিকই রয়েছেন। তাদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত। বিশ্বের রাজনীতির অসংখ্য উদাহরণ আমাদের সে শিক্ষাই দেয়। এই বাস্তবতা না মানলে দিনবদলের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। শেখ হাসিনা সে কথা মনে রেখেই এগিয়েছেন। যারা প্রবীণ, তারা সংসদে থেকে নানাভাবেই নবীন মন্ত্রীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। দেশসেবাই যদি মূল লক্ষ্য হয়, সেখানে মন্ত্রীর চেয়ার কখনোই কোনো ফ্যাক্টর হতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জিমি কার্টার কিংবা ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর বিশ্বমানবতা, বিশ্ব পরিবেশের পক্ষে যে পরিশুদ্ধ কাজ করে যাচ্ছেন, তা যে কোনো দেশের নেতাদের পাথেয় হতে পারে। এবার মন্ত্রীপরিষদে যারা স্থান পেয়েছেন, তাদের অনেকেরই মন্ত্রীর অভিজ্ঞতা না থাকলেও রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা। সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ূয়া, আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, তারা অনেকেই উঠে এসেছেন প্রত্যন্ত জনপদ থেকে। সঙ্গত কারণেই দেশের পোড়-খাওয়া মানুষের চাওয়া তাদের কাছে অনেক বেশি। প্রত্যাশা করছি, গণমানুষের সেই চাওয়াকে সর্বশক্তি দিয়ে তারা কাজে লাগাতে ব্রতী হবেন। পূরণ করতে পারবেন এই প্রজন্মের স্বপ্ন।বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় হচ্ছে ৪৬টি। প্রধানমন্ত্রীসহ শপথ নিয়েছেন মাত্র ৩২ জন। তাই অদূর ভবিষ্যতে আরো মন্ত্রী নেওয়া হবে সে প্রত্যাশা করাই যায়। সে সময় জাপার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননসহ আরো কিছু মুখ মন্ত্রী পেতে পারেন এমন গুঞ্জন আছে। মন্ত্রী মর্যাদায় আরো কেউ কেউ উপদেষ্টাও হতে পারেন। একটি কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে, জামায়াত-জাতীয়তাবাদী চক্র দেশে যে জাল বিস্তার করার চেষ্টা করেছিল তা ছিন্নবিছিন্ন না হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জেতা তো দূরের কথা, অংশই নিতে পারত না। সে অবস্থার অবসান হয়েছে ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে। আর এই ওয়ান-ইলেভেন অনেককেই সম্মুখীন করেছে কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষায়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা পুরস্কৃত হবেন এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। যারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন, তাদের মনে রাখতে হবে দলীয় অঙ্গীকারগুলো। স্মরণ রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন তারা মানুষকে দেওয়া ওয়াদাগুলো ভঙ্গ না করেন। না হয় তাদের পরিণতিও হতে পারে অনেক সিনিয়রের মতো। রাজনীতিতে নতুনের অবগাহন না থাকলে রাষ্ট্রে নবপ্রাণের স্পন্দন আসে না। ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে তাই সিংহভাগ নতুন মন্ত্রীর শুভযাত্রাকে স্বাগত জানাতেই হয়। শেখ হাসিনা অত্যন্ত প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে শুরু করেছেন তার এবারের ক্ষমতার যাত্রা। তিনি তা সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাবেন বলেই বিশ্বাস। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ দুষ্টদ্বচক্র সম্পর্কেও সজাগ থাকতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। কারণ, কর্মের পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ নয়।------------------------------------------------------------দৈনিক সমকাল। ঢাকা। ২৩ জানুয়ারি ২০০৯ প্রকাশিত
false
rn
হাজি মুহম্মদ মুহসীন একদিন রাতে তাঁর ঘরে এক চোর ধরা পড়ল। চোর ভাবল এবার প্রাণটাই বুঝি যায়! কিন্তু গৃহকর্তা চোরকে কোনো শাস্তি না দিয়ে চোরের অভাবের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তাকে খাবার, টাকা -পয়সা আর ভালো হওয়ার উপদেশ দিয়ে বিদায় করলেন। এমন মানবদরদি মানুষটি হলেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন। অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল ইতিহাস ও বীজ গণিতে। অশ্বারোহণ ও অস্ত্র চালনায় ছিলেন পারদর্শী। নিজ হাতে রান্না করে খেতেন তিনি। মানুষকেও খাওয়াতেন। বহু নবাব-নাজেম রাজপুরুষ তার কাছে যেতেন। কিন্তু তিনি কখনো রাজদরবারে যেতেন না।মহসীন ছিলেন সংসারবিরাগী মানুষ। ঘর-সংসার, ধন -দৌলতের প্রতি তার কোন লোভ ছিল না। কিন্ত বোনের এই বিশাল সম্পত্তি নিয়ে তিনি এখন কি করবেন। তাঁর তো ঘর নেই, সংসার নেই এ সম্পত্তি ভোগ করার মত কোন বংশধরও নেই। তাছাড়া তিনি নিজেও এখন বৃদ্ধ। বয়স সত্তর বছর। আর ক’দিনইবা বাঁচবেন। তাই তিনি স্থির করলেন এই বিশাল সম্পত্তি তিনি মানব জাতির কাজে ব্যয় করবেন। দেশের দ্বীন-দুঃখী ও দুস্থদের সেবায় তিনি নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেবেন। তার সম্পত্তির অধিকাংশই তিনি ব্যয় করেন শিক্ষার উন্নয়নের জন্য। তৎকালীন অনগ্রসর মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন অনেকগুলো স্কুল, কলেজ। মুসলমান ছেলে মেয়েদের জন্য প্রবর্তন করলেন মহসীন বৃত্তি। গঠিত হল মহসীন ফান্ড। ভারতের মুসলমান ছেলে মেয়েরা এই ফান্ড থেকে আজো বৃত্তি পেয়ে থাকে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হুগলীর ইমামরারা, হুগলী মহসীন কলেজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনাথদের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন কয়েকটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। তাঁর দান কর্ম নিয়ে প্রচলিত আছে অনেকগুলো গল্প। তিনি রাতে সাথে টাকা নিয়ে ছদ্ম বেশে শহরের অলি-গলিতে ঘুরে বেড়াতেন। দ্বীন-দুঃখী, অন্ধ, যাকে সামনে পেতেন তাকে মুক্ত হস্তে দান করতেন। হাজি মুহসীন জন্মেছিলেন ১৭৩২ সালের ১ আগস্ট। তাঁর পিতা হাজি ফয়জুল্লাহ। জানা যায়, তাঁর পূর্বপুরুষেরা এসেছিলেন সুদূর ইরান বা পারস্য থেকে। তবে তাঁদের আদি বাস ছিল আরবে। আরবি-ফারসি ভাষাশিায় মুহসীন অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। কুরআন, হাদিস, সাহিত্য, গণিত, ইতিহাস, দর্শন সব কিছুতেই অসামান্য ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। সে যুগের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ ভোলানাথ ওস্তাদের কাছে মুহসীন কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত শিক্ষা করেছিলেন। খুলনার হাজী মহসীন কলেজও ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হাজি মুহাম্মাদ মহসীনের নামে ছাত্রাবাস আছে। স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসন্তান মন্নুজান তাঁর সম্পত্তি মুহসীনকে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এতে রাজি হননি মুহসীন। অবশেষে মন্নুজান ১৮০২ সালে সমুদয় সম্পত্তি লন্ডনের সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে মুহসীনকে দান করেন। পরে মুহসীন ১৮০৬ সালের ২০ এপ্রিল হুগলীতে এক অছিয়তনামা রেজিস্ট্রি করেন। তাতে মেধাবী ছাত্রছাত্রীসহ মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্য তাঁর সম্পত্তি থেকে আয়ের অর্থ ব্যয় করার কথা বলেন।মুহসীন ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। সেই সাথে মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালা প্রভৃতি পবিত্র স্থানে যান। পবিত্র হজ পালন করেন। এরপর দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।মানবদরদি মুহসীন ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ নভেম্বর হুগলিতে ইন্তেকাল করেন। ইমামবাড়ার পাশের বাগানে তাকে দাফন করা হয়। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
false
mk
শেষ নিঃশ্বাসের আগেও চক্রান্ত গোলামের পরাধীন ভারতবর্ষে নানা মতে নানা দলে দলাদলি সত্ত্বেও আলেম-ওলামা, সুফি, সাধু-সন্ন্যাসীসহ সব জাতপাত, শ্রেণি-পেশা ও দলের মানুষ যখন স্বাধীনতা কামনায় ‘মানব না এ বন্ধনে, মানব না এ শৃঙ্খলে’ বলে একাট্টা, তখনো এ ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র একটি অংশ লিপ্ত ছিল ব্রিটিশ শাসকদের তাঁবেদারিতে। এর কারণও ছিল। জামায়াতে ইসলামী নামে ধর্মের লেবাস পরা ওই দলটির যে জন্মই দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ প্রভুদের তাঁবেদারি করার জন্য। গোলাম আযমের গুরু মওদুদীর গড়া দলটি সেই কাজ ভালোভাবেই সেরেছে তখন। তবে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। তবে ধর্ম ব্যবসায়ী একটি মহলের চক্রান্তের সুযোগে ভারতবর্ষকে দুর্বল করার হীন উদ্দেশ্যে তখন তথাকথিত দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ করা হয় দেশ। ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও হাজার মাইল দূরে থাকা দুটি ভূখণ্ডকে এক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যদিও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও গোলাম আযমের দল জামায়াতের সমর্থন ছিল না। গোলাম আযমের গুরু ও জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী তখন বলেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করা কেউই ‘খাঁটি মুসলমান’ নয়।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বেশির ভাগ সময়েই দেশটি থেকেছে সামরিক শাসনের জাঁতাকলে। আর গোলাম আযমরা বরাবরই থেকেছেন সামরিক স্বৈরশাসকদের পক্ষে। মওদুদী তাঁর এক বইয়ে লেখেন, ‘গণতন্ত্র বিষাক্ত দুধের মাখনের মতো।’ আরেক বইয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে কোনো সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ইসলাম অনুযায়ী হারাম।’ যদিও পরে জামায়াত পাঞ্জাবের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ব্যাপক প্রচার চালিয়ে মওদুদীকে জেল থেকে বের করে আনে। ১৯৫১ সালে দলটি পাঞ্জাবের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশ নেয় এবং তাতে ভরাডুবি হয়।পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকেই গোলাম আযম জামায়াতে যোগ দেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি দলটির প্রাদেশিক শাখার শীর্ষপদে আসীন হন। ১৯৫৭ সালে গোলাম আযমকে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত করা হয়। ১৯৬৬ সালে ৬ দফার বিরোধিতা করে গোলাম আযমের দল। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে ঘিরে পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে উঠলে এবং সারা পাকিস্তানে চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে আইয়ুব খানের আস্থা অর্জন করে নেয় জামায়াত।মুক্তিযুদ্ধকালীন যত চক্রান্ত ও অপরাধবাঙালি নির্মূল ‘অভিযানে পাকিস্তানিদের সাফল্য ছিল সামান্যই। কারণ পাকিস্তানি সেনারা সন্দেহভাজন বাঙালিদের চেহারা যেমন চিনত না, তেমনি পড়তে পারত না বাংলায় লেখা অলিগলির নম্বরও। এ জন্য তাদের নির্ভর করতে হতো স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতার ওপর।...ওই সময় যাঁরা এগিয়ে আসেন তাঁরা হলেন কাউন্সিল মুসলিম লীগের খাজা খয়ের উদ্দিন, কনভেনশন মুসলিম লীগের ফজলুল কাদের চৌধুরী, কাইয়ুম মুসলিম লীগের খান এ সবুর খান, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক গোলাম আযম ও নেজামে ইসলাম পার্টির মৌলভি ফরিদ আহমদের মতো মুষ্টিমেয় কিছু ডানপন্থী।’ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের তখনকার জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর (পরে ব্রিগেডিয়ার) সিদ্দিক সালিক তাঁর উইটনেস টু সারেন্ডার বইয়ে এসব কথা লিখেছেন।গোলাম আযমদের এই এগিয়ে আসাটা নিছক গণহত্যার জন্য বাঙালিদের চিনিয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং রাজাকার-আলবদরের মতো বিভিন্ন সহযোগী বাহিনী গঠন করে তাঁরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়েও বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার নকশাকার ছিলেন গোলাম আযম। তিনি জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন। এই জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আধাসামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি, আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। এসব বাহিনীর অপরাধের দায় তাঁর।দলিলপত্র থেকেও দেখা যায়, ১৯৭১ সালে গোলাম আযম তাঁর পুরো দলকেই সহযোগী বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছিলেন। গোলাম আযম নিজেই তখন বলেছেন, ‘পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতেই জামায়াতে ইসলামী শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে।’ (সূত্র : দৈনিক পাকিস্তান, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১)। একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার ১০ দিনের মধ্যে ৪ এপ্রিল নূরুল আমিন, গোলাম আযম, খাজা খয়ের উদ্দিনরা পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। দৈনিক সংগ্রামসহ কয়েকটি পত্রিকায় তখন এ-সংক্রান্ত খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মে মাসে জামায়াতের নেতা-কর্মীরাই প্রথম খুলনায় শান্তি কমিটির তত্ত্বাবধানে রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিল। পরে গোলাম আযমের তদবিরেই রাজাকার বাহিনীকে সরাসরি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীনে নেওয়া হয়।গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিটিও কোনো সাধারণ কমিটি ছিল না। নামে শান্তি কমিটি হলেও একাত্তরের ৯ মাস তারা অশান্তির আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে বাঙালিদের। একাত্তরের ২৯ জুলাই ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জারের নেতৃত্বাধীন সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের জন্য প্রণীত একটি পেপারে শান্তি কমিটিকে সামরিক শাসনের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যমদূত রাজাকার বাহিনী সাধারণভাবে শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন ছিল। প্রতিটি রাজাকার ব্যাচের ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর শান্তি কমিটির স্থানীয় প্রধান তাদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন।এ ছাড়া গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামীর অফিস থেকেও রাজাকারদের পরিচয়পত্র দেওয়া হতো। সারা দেশে সব থানা-জেলার জামায়াত নেতারা ছিলেন রাজাকার বাহিনীর সংগঠক। আর জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘকে রূপান্তরিত করা হয়েছিল কুখ্যাত আলবদর বাহিনীতে। জামায়াতিরাই তখন বলত, ‘আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।’রাজাকার বাহিনী গঠনের উদ্যোগ, ভারী অস্ত্র পেতে দেনদরবার : যমদূত রাজাকার বাহিনী গঠনের প্রস্তাবটি গোলাম আযম দিয়েছিলেন ১৯ জুন রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করে। এর আগের দিন দৈনিক পাকিস্তানের খবরে বলা হয়, গোলাম আযম লাহোরে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে কিছু সুপারিশ রাখবেন। তবে এগুলো আগেভাগে প্রকাশ করা ভালো হবে না।’ ২০ জুন জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির ‘দুষ্কৃতকারীদের মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে দেশের আদর্শ ও সংহতিতে বিশ্বাসী লোকদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।’ উল্লেখ্য, জামায়াতিরা তখন মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সমর্থকদের ‘দুষ্কৃতকারী’, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ইত্যাদি বলত।সাম্প্রদায়িক উসকানি : আরেকটি গোপন প্রতিবেদনে [নম্বর ৫৪৯(১৫৯) পল/এস(আই)] উল্লেখ আছে, আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সম্মেলনে গোলাম আযম বলেন, ‘হিন্দুরা মুসলমানদের শত্রু। তারা সব সময় পাকিস্তানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে।’ ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাইয়ের দৈনিক সংগ্রামের খবর অনুযায়ী, ১৬ জুলাই রাজশাহীতে শান্তি কমিটির সমাবেশে গোলাম আযম বলেন, হিন্দুরা মুসলমানের বন্ধু এমন কোনো প্রমাণ নেই। এ উসকানিরই ফল হলো ওই সময় অনেক বাঙালিকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা এবং হিন্দুদের হত্যা, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, সহায়-সম্পদ লুট ইত্যাদি।মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করার নির্দেশ : পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদন [নম্বর ৫৪৯(১৫৯) পল/এস (আই)] মতে, কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের ওই সম্মেলনে গোলাম আযম প্রতি গ্রামে শান্তি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের নির্মূল করারও নির্দেশ দেন তিনি। গোলাম আযম বলেন, খুব শিগগির রাজাকার, মুজাহিদ ও পুলিশ মিলে দুষ্কৃতকারীদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধের প্রতিবেদনে [নম্বর ৬০৯(১৬৯) পল/এস(আই)] বলা হয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জামায়াতের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে গোলাম আযমসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। সভায় প্রদেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ‘বিদ্রোহীদের’ (মুক্তিযোদ্ধা) নির্মূল করার ওপর জোর দেওয়া হয়।একাত্তরের ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে রাজাকার ক্যাম্প পরিদর্শন করেন গোলাম আযম। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়, প্রশিক্ষণার্থী রাজাকারদের প্রতি ‘ভালোভাবে ট্রেনিং গ্রহণ করে যত শিগগির সম্ভব এসব অভ্যন্তরীণ শত্রুকে (মুক্তিযোদ্ধা) দমন করার জন্য গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার আহ্বান’ জানান তিনি।স্বাধীনতার পরও দেশবিরোধী চক্রান্তগোলাম আযম ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৮ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে নিজে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা ও আলোচনার মাধ্যমে এবং বিবৃতি, স্মারকলিপি, প্রবন্ধ ও প্রচারপত্র বিলি করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশকে দুর্বল, সহায়হীন ও বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলে গোলাম আযম পাকিস্তানে বসে মাহমুদ আলী ও খাজা খয়ের উদ্দিনের মতো আরো দুই দেশদ্রোহীর সঙ্গে মিলে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এই খাজা খয়ের উদ্দিন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালে কুখ্যাত শান্তি কমিটির আহ্বায়ক, আর মাহমুদ আলী ছিলেন ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারী তখনকার পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য। ১৯৭২ সালে গোলাম আযম লন্ডনেও ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ গঠন করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র উচ্ছেদ করে আবার এই ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের অংশে পরিণত করার চক্রান্ত করেন।১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে গোলাম আযম রিয়াদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী যুব সম্মেলনে যোগ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব মুসলিম রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল নাগাদ তিনি সাতবার সৌদি বাদশাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। কখনো তিনি বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে আবার কখনো বাংলাদেশকে আর্থিক বা বৈষয়িক সাহায্য না দিতেও অনুরোধ করেন বাদশাহকে। ১৯৭৪ সালে রাবেতায়ে আলমে ইসলামীর উদ্যোগে মক্কায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবং ১৯৭৭ সালে কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন তিনি। ১৯৭৩ সালে বেনগাজিতে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে জোর তদবির করেন প্রতিনিধিদের কাছে। একই বছর মিসিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা অ্যান্ড কানাডার বার্ষিক সম্মেলনে গোলাম আযম বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানভুক্ত করার জন্য কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭৭ সালে ইস্তাম্বুলে ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দেন। ১৯৭৩ সালে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস ইসলামিক সোসাইটিজের বার্ষিক সম্মেলনে এবং লেস্টারে ইউকে ইসলামিক কমিশনের বার্ষিক সভায় তিনি বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দেন। ১৯৭৪ সালে তিনি মাহমুদ আলীসহ কয়েকজন পাকিস্তানিকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির এক বৈঠক করেন পূর্ব লন্ডনে। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশে পরিণত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে- এটা বুঝতে পেরে ওই বৈঠকে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে একটি কনফেডারেশন গড়ার আন্দোলন চালানোর। ওই সভায় গোলাম আযম তাঁর বক্তব্যে ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাংলাদেশে ফিরে অভ্যন্তরে থেকে ‘কাজ চালানো’র প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। ১৯৭৭ সালে লন্ডনের হোলি ট্রিনিটি চার্চ কলেজে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি ওই কথারই পুনরাবৃত্তি করেন এবং সেই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আসেন। গোলাম আযমের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়েও এসব তথ্য উল্লেখ আছে।শেষ নোংরামিঅনেক গুরুতর অপরাধীর ক্ষেত্রেও জীবনের শেষ মুহূর্তে তথা মৃত্যুর সময় অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হতে বা ক্ষমা চাইতে দেখা যায়। ব্যতিক্রম এই গোলাম আযম। মৃত্যুকালেও তিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাননি, এমনকি অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁর কোনো অনুশোচনাও ছিল না। বরং তাঁর ছেলের দাবি সত্যি হয়ে থাকলে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত কাউকে দিয়ে জানাজায় ইমামতি করানোর ‘ইচ্ছা’ জানিয়ে নোংরা ‘রাজনীতি’ করে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে একাধিক বেসরকারি টেলিভিশনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন জামায়াত নেতার আইনজীবী তাজুল ইসলাম। তাজুল বলছিলেন, গোলাম আযম মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত হতে চেয়েছেন এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অথবা মতিউর রহমান নিজামীর ইমামতিতে জানাজা পড়ানোর ইচ্ছার কথা পরিবারকে জানিয়ে গেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের মতো দলের বর্তমান নায়েবে আমির সাঈদীও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। দলটির আমির নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় অপেক্ষমাণ।পরে গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমীও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জানাজা পড়াবেন। কিন্তু তাঁরা দুজনই কারাগারে থাকায় জানাজা কে পড়াবেন, তা দলের নেতারা ও পরিবারের সদস্যরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ট্রাইব্যুনাল রায়ে যাঁকে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী সব অপরাধের পরিকল্পনাকারী বা নকশাকার আখ্যা দিয়েছেন, তেমন একজন গুরুতর অপরাধীর ইচ্ছা পূরণ হলে ভবিষ্যতে অন্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও একই ধরনের শেষ ইচ্ছা জানাতে পারেন।
false
mk
ম্যাডামের আম ছালা দুইই গেল গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আশকারা ও ছত্রছায়ায় দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী একটি চিহ্নিত কুচক্রী মহল সরকার দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে বলে চিৎকার করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। শুধু সাইনবোর্ডধারী লোকবলহীন দু’একটি রাজনৈতিক দলের ভাবসাব দেখানো গায়ে মানে না আপনি মোড়ল ধরনের নেতাও এই অপপ্রচারে শামিল হয়েছেন। নিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী সুশীল সমাজের লোক বলে পরিচিত কিছু মুখচেনা লোকও এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে পরিবেশ গরম করে তুলতে চাইছেন। পত্রিকায় ছবি ছাপানো ও টিভির পর্দায় চেহারা দেখাতে উন্মুখ সুবিধাবাদী চরিত্রের এই লোকগুলো একবারও বলছেন না যে নবম সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ধনুকভাঙ্গা পণ করে বসেছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার জন্য। কারণ, বেগম জিয়ার পরম পেয়ারের পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র পরামর্শ মোতাবেক এদেশে তার বিশ্বস্ত দোসর জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে নির্বাচন বানচাল করে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিরত থেকে নির্বাচনের পূর্বে খালেদা জিয়ার কিছু বেসামাল মন্তব্য ও বক্তব্যও তার স্বাক্ষর বহন করে।ইপ্সিত লক্ষ্য হাসিলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গি ক্যাডারদের নানারূপ হিংস্র তৎপরতা ও প্রচ- সশস্ত্র বাধাবিঘœ উপেক্ষা করে গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর দেশের মানুষের মধ্যে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি ফিরে আসে। স্বাধীনতা বিরোধীচক্র দশম সংসদ নির্বাচন বানচালের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলার মুখে নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্পাত-কঠিন দৃঢ়তার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। কারণ, স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কঠিন দিনগুলোর কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের মূল লক্ষ্য ছিল এদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের নাম-নিশানা মুছে ফেলা। তাই তারা হরতাল-অবরোধের নামে হত্যা-অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মতো নানা জঘণ্য সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে নির্বাচন ভ-ুল করার ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠেছিল। সর্বত্র একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে ককটেল ও পেট্রলবোমা মেরে নিরীহ শিশু-মহিলা-বৃদ্ধসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মূল্যবান জীবন কেড়ে নেওয়ার উন্মত্ত মহোৎসবে মেতে উঠেছিল। নির্বাচনকালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের কারণে সারাদেশে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও আনসারসহ মোট ২২ জন প্রাণ হারান। কিন্তু দেশপ্রেমিক বীর বাঙালি ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে তাদের নাগরিক অধিকারের প্রকাশ করেছিল।জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী তা-ব ও হিংস্রতার কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছিল বটে। কিন্তু এদেশের সাধারণ মানুষের বুঝতে আর কিছু বাকি ছিল না, একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াতে ইসলামী ও তাদের দোসররা মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এখনও তারা মাঠে সক্রিয় রয়েছে তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে।জামায়াত-শিবির এবং ১৮ দলীয় জোটভুক্ত কিছু দলের ক্যাডার ও সশস্ত্র কর্মীরা এতোটাই হিংস্র হয়ে উঠেছিল যে গত প্রায় দু’টি মাসই মনে হয়েছে যে, দেশে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির যুদ্ধ চলছে। বাঙালি জাতি যেন একাত্তরে ফিরে গিয়েছিল। এ যেন স্বাধীনতাকামী গণমানুষের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার শত্র“দের যুদ্ধ ঘোষণা। একাত্তরের বাঙালির অকুতোভয় দামাল ছেলেরা যেমন দুর্বার হয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবেলা করে তাদের শুধু পরাজিতই করেনি, একেবারে পর্যুদস্ত করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল, তেমনি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ পাকিস্তানিদের ঘৃণ্য আদর্শের দোসর ও তাদের এদেশীয় দালাল ও তস্য দালালদের এবারও মোকাবেলাকরেছে এবং তা অব্যাহত রাখার দৃঢ়তা প্রদর্শন করে চলেছে। একাত্তরে যেমন নিকট প্রতিবেশী ভারত আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল, এবারও তারা এদেশের ন্যায় যুদ্ধে নৈতিক সমর্থনদানে পিছিয়ে নেই।বর্তমান এ যুদ্ধে একটি অপূর্ব মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। নানা অপপ্রচার ও অপপ্রয়াসের মধ্যেও এবারও শুধু ভারতই এগিয়ে আসেনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকের মতো রাশিয়াও আবার এগিয়ে এসেছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি গঠিত নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া। দেশের একজন সচেতন নাগরিক, বিশেষ করে একজন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত সবকিছু এখনও চোখের সামনে ছবির মতো ভাসছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ এদেশের স্বাধীনতাকামী কোনো মানুষের পক্ষেই সেই ঐতিহাসিক দিনগুলোর কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ভারত ও তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নসহ আরও বেশ কিছু পূর্ব ইউরোপীয় দেশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। এদেশের মানুষ অবশ্যই ভুলে যায়নি যে আমেরিকা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কীভাবে দাঁড়িয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে এদেশে গণহত্যা ও তাদের ঘৃণ্য আগ্রাসনের নগ্ন সহযোগী হয়েছিল। দেশের জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যাননি যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে এবং বেগম জিয়ার সাধের পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সপ্তম নৌবহরের পারমাণবিক যুদ্ধ জাহাজ ইউএস এন্টারপ্রাইজ আমাদের বঙ্গোপসাগরে পাঠিয়ে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিজয়কে ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। চীনও অত্যন্ত সক্রিয়ভাবেপাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। একাত্তরের ডিসেম্বরের শুরুতেই রণাঙ্গন ও কূটনৈতিক ফ্রন্টÑউভয় ফ্রন্টেই পাকিস্তানিরা বেধড়ক মার খেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানের সব কূটকৌশলই ব্যর্থ হচ্ছিল। হানাদার পাকিস্তানিরা বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমশ বন্ধুহীন হয়ে পড়েছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ ঠেকাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করে। নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশের বড় বন্ধু সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পোল্যান্ড প্রস্তাবের বিপক্ষে দাঁড়ায়। কিন্তু ১০টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদান করে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাবটি ঠেকানোর জন্য সেভিয়েত ইউনিয়ন অবশেষে তার ভেটো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের এক মহান নেতা মাও সে তুংয়ের চীনের মুখে চুনকালি পড়ে।দেশে কোনো গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে বিদেশি কূটনীতিকদের মুখাপেক্ষী হওয়া আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ মানসিকতা আমাদের দেশের জন্য যে কতটা সম্মানহানিকর তা বোধহয় আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচন বানচালে বদ্ধপরিকর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে আলোচনায় বসার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে ও তালবাহানা করে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন। শুরু থেকেই বিএনপি তার ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার পথ পরিহার করে আসছিল। তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে অনেক আগে থেকেই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত আহ্বানে কোনোরূপ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। তারা ন্যক্কারজনক বাঁকাপথ ধরেছিল। একদিকে তারা বোমাবাজি করে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আর অন্যদিকে আবার আলোচনার নামে বিদেশি কূটনৈতিকদের দ্বারস্থ হয়েছে। নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেত্রী ঢাকায় নিযুক্ত ৩৪টি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু কূটনীতিকরা সহিংসতা ও নাশকতা পরিহারের জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় বিরোধী জোট আশা করেছিল সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলেও তাদের ভাষায় এই ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের পর গঠিত নতুন সরকারকে বিদেশি সরকার সমর্থন বা অভিন্দন বার্তা পাঠাবে না। কিন্তু বিরোধীদলকে চরম হতাশায় ডুবিয়ে রাশিয়া, চীন, ভারত, বেলারুশ, কুয়েত, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা ও নেপালসহ দুই ডজনেরও বেশি দেশ এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিন্দন জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শেখ হাসিনা অপূর্ব দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সঙ্গে নির্বাচন বানচালে বিএনপি-জামায়াতের সকল বাধাবিঘœ মোকাবেলা করে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব করে তুলে নতুন সরকার গঠন করে তৃতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর পদটিও হারিয়ে এখন শুধু বিএনপির চেয়ারপারসনই থাকলেন। তাই তাঁর হা-হুতাশের মাত্রা একটু বাড়ারই কথা। আর সেজন্যই এখন আবোল-তাবোল বকতে শুরু করেছেন। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর তত্ত্ব¡াবধানে আরাম-আয়েশে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে দিন কাটানো খালেদা এখন হয়ত স্বপ্নে ভারতীয় বাহিনী দেখতে পান। সেজন্যই হয়ত তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় ওরকম উদ্ভট মন্তব্য করতে পেরেছেন। এখন দুর্মুখেরা বলতে শুরু করেছে, নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন আম ও ছালা দুটোই হারালেন।নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি গঠিত সরকার নিয়েও এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবী প্রশ্ন তোলেন। এরা আবার নিজেদের দেশপ্রেমিক বলে দাবি করেন। তাঁরা নতুন সরকারকে ঐকমত্যের সরকার বলতে একেবারেই নারাজ। বিশেষ পরিস্থিতিতে একাধিকবার বিশ্বে ঐকমত্যের সরকার গঠনের নজির রয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিরোধীদল লেবার পার্টি থেকে উপ-প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। বিশ্বের এক মহান নেতা সদ্য প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলার দক্ষিণ আফ্রিকায়ও আমরা এ ধরনের সরকার দেখেছি। যারা বলছে বাংলাদেশে যুদ্ধাবস্থা চলছে না, তাদের উদ্দেশেই বলছিÑএ দেশে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামায়াত এবং দলটির অঘোষিত বর্তমান কা-ারি বেগম জিয়ার নেতৃত্বে যে খুনখারাবি, হত্যা-ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চলছে এবং এখনও হচ্ছে তাকে যুদ্ধাবস্থার চেয়ে কোনো অবস্থায়ই ভালো বলার উপায় নেই। নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের মদদপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা সারাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। নারীদের ধর্ষণ করে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই বলছি, এ যেন একাত্তরেরই প্রতিচ্ছবি। একাত্তরে তারা যেভাবে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করার পৈশাচিক খেলায় মেতে উঠেছিল, এবারও তারা তাই করেছে। অথচ বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া এখনও গলা ফুলিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারের লোকজন হামলা চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। মিথ্যাচারেরও সীমা থাকা উচিত। দোষ দিয়ে লাভ নেই মিথ্যাচার আর ধোঁকাবাজির ওপরই বিএনপি প্রতিষ্ঠিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া স্বাধীনতার শত্র“ জামায়াতকে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন। বেগম জিয়া এখন তাদের কা-ারি হবেন তাতে আর অবাক হওয়ার কিছুই নেই।বিদেশি কিছু পত্র-পত্রিকায় এদেশের নানা বিষয়ে অহেতুক নাকগলানো সম্পর্কে কিছু না বললে লেখাটি অসমাপ্ত থেকে যাবে বলে এ বিষয়ে কিছু না লিখে পারছি না। সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় দৈনিক ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক খবর ছাপতে গিয়ে কিছু ন্যক্কারজনক কা- ঘটিয়েছে। প্রভাবিত হয়ে এই পত্রিকা দু’টি বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছিল। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর চার দিনের ব্যবধানে এই পত্রিকায় দু’টি দারুণ তথ্যবহুল ও চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টা, ঢালা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা’ শিরোনামে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর এবং ‘কথা বলছে ২৫ মিলিয়ন ডলার, আমেরিকান লবিস্ট ফার্ম ও জামায়াত নেতার মধ্যে চুক্তি’ শিরোনামে ২০১১ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন দু’টি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের মধ্যে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অর্থ নামক অব্যর্থ অস্ত্রটি ব্যবহার করে জামায়াত তখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দু’টি পত্রিকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠাতে সমর্থ হয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের আগুন চরিতার্থ করতে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ লিখেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বাংলাদেশের বড় ইসলামিক দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে। টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন করে এসব পত্রিকা আবার সাংবাদিকদের নৈতিকতা সমুন্নত রাখার ছবক দেওয়ার দুঃসাহস দেখায়। এবারও বাংলাদেশ সম্পর্কে এ দু’টি পত্রিকাসহ কিছু বিদেশি পত্রিকার ভূমিকা খুবই ন্যক্কারজনক।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিতর্কিত প্রায় সবাইকে নতুন মন্ত্রিসভার বাইরে রেখে প্রশংসিত হয়েছেন। সবারই প্রত্যাশা, মন্ত্রিসভার সদস্যরা সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। সন্ত্রাসীরা দেশের শত্র“ সে বিবেচনায়ই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ‘দেশি-বিদেশি কোনো চাপের কাছে মাথানত নয়’ প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রত্যয়ী ঘোষণাও প্রশংসার দাবিদার। কৃষি, শিক্ষা ও বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগত মহাজোট সরকারের সাফল্য অনেক। এ সাফল্য সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে দিতে হবে। পোশাক শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। তাহলে দেশের জনগণ খুবই খুশি হবেন।
false
fe
সাংবাদিকতার নৈতিকতা, সাংবাদিকের সময়কাল সাংবাদিকতার নৈতিকতা, সাংবাদিকের সময়কালফকির ইলিয়াস============================================একটি ভয়াবহ সংবাদ দিয়ে শুরু করি। এখন বাংলাদেশে ‘ভয়াবহতম’ বলেই অনেক সংবাদকে আখ্যায়িত করা যায়। তাই কোনটা যে ‘খারাপ’ সংবাদ নয় তা পড়ার জন্যই উদগ্রীব থাকেন পাঠক সমাজ। ফেনীতে সাংবাদিকদের কোন্দলের শিকার হয়ে চাপাতির কোপ খেয়েছেন একজন সাংবাদিক। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি ফেনী প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলাভিশনের ফেনী প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম এবং তিন সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। ফেনী প্রেসক্লাবের সদস্য শেখ ফরিদ উদ্দিন মিডিয়াকে জানিয়েছেন, গত সোমবার রাত ৮টার দিকে একদল লোক প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে সভাপতি রফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় একাত্তর টিভির ফেনী প্রতিনিধি জহিরুল হক মিলু, এশিয়ান টিভির ফেনী প্রতিনিধি জাফর সেলিম ও দৈনিক দিনকাল প্রতিনিধি মফিজুর রহমান তাদের ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত হন। সভাপতি রফিকুল ইসলামকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে আহত রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সময় টিভির ফেনী ব্যুরো প্রধান বখতেয়ার ইসলাম মুন্না, মাছরাঙ্গা টিভির ফেনী প্রতিনিধি জমির বেগ, জয়লষ্কর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল হাজারীর সাবেক পিএস মিলন তার ওপর হামলা করেছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যারা আক্রমণ করেছেন এরাও সাংবাদিক! তাহলে আসলে হচ্ছেটা কি?বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় বিভক্তি নতুন কোনো বিষয় নয়। বিএফইউজে, ডিএফইউজে তো ভাগাভাগি হয়েছেই, এখন প্রায় প্রতিটি জেলায় সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন। এই ফণা এখন উপজেলা পর্যন্ত ছড়াচ্ছে। অনেকে বলবেন, ষোলো কোটি মানুষের দেশে সংগঠন তো বাড়বেই! হ্যাঁ তা বাড়ুক। কিন্তু এগুলো কি নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে?আমরা জানি, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিকরা অনেক কিছুই পারেন। প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে সাংবাদিকরা আগেই সংকেত দিতে পারেন, ওই দেশের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। তা ফলেও যায়। এর অন্যতম কারণ এরা কোনোভাবেই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট নয়। আর নয় বলেই তাদের চোখ খোলা। কান সজাগ। বাংলাদেশে এমন নৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। না ওঠার অন্যতম কারণ হচ্ছে- রাজনীতিকরা সাংবাদিকদের প্রলোভন দেখিয়ে ক্রয় করে নেন। তারা নিজেদের প্রয়োজনে সাংবাদিকদের ব্যবহার করেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক মওলানা আকরম খাঁ, জহুর হোসেন চৌধুরী, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সিরাজুদ্দীন হোসেন প্রমুখ সাংবাদিক কিন্তু এই বাংলারই সন্তান। এরাও ছিলেন বাংলা ভাষাভাষি সাংবাদিক। দুঃখের কথা হচ্ছে, আজকের নবিস সাংবাদিকরা এদের জীবনাচার বিষয়ক বইগুলো মোটেই পড়াশোনা করেন না। বাংলাদেশে যারা সাংবাদিকতা বিষয়ে লেখালেখি করেন, তাদের লেখাগুলো নতুনরা পড়েন কি? একটু পেছন ফিরে তাকাই। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর তার একটি নিবন্ধে লিখেছেন- ‘অনেক সাংবাদিক ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রসঙ্গে বলে থাকেন, ‘পাবলিক ফিগারের আবার প্রাইভেসি কি?’ এটাও একটা ভুল ধারণা। এই ধারণা নিয়েও আলোচনা করা দরকার। এ ধরনের ইস্যু নিয়ে আলোচনা প্রশিক্ষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত। কারণ, আজকের তরুণ সাংবাদিক একদিন সংবাদপত্র, টিভি বা বেতারে নীতিনির্ধারণী পদে যাবেন। তাকে বুঝতে হবে সাংবাদিকের নৈতিকতা কি। ধনী লোক বা বড় শিল্পপতি, বিখ্যাত ব্যক্তি, বড় তারকা কোনো বিপদে পড়লে অনেক সাংবাদিক উল্লসিত হন। তাদের সেই উল্লাস প্রতিফলিত হয় তাদের লেখায়। এটা সাংবাদিকের বিকৃত মানসিকতা। অসুস্থ মানসিকতা। এ ধরনের মানসিকতা সাংবাদিকতা পেশার জন্য উপযুক্ত নয়। সাংবাদিকের দৃষ্টি হবে বস্তুনিষ্ঠ। তথ্য, প্রমাণ দিয়ে তিনি লিখবেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য প্রকাশ করা তাঁর প্রধান শর্ত।’ (ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সাংবাদিকের নৈতিকতা, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ : ১৬-০১-২০১১)বাংলাদেশে এখন অনেক অনলাইন মিডিয়ার ছড়াছড়ি। প্রায় প্রতিটি থানায় কয়েকটি ওয়েব ডেইলি। এতে সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়। এসব সাংবাদিকের অনেকে টাকাকড়ি কামানোর ধান্ধাও করছেন। ফলে এরা পথভ্রষ্ট হচ্ছেন। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চাইছেন। আমরা দেখছি, বিশেষ করে অনলাইন মিডিয়াগুলোর কোনোটি ‘গসিপ’ নিউজের বন্যা বইয়ে দেয় মাঝে মাঝে। ‘ভেঙে গেল অমুকের সংসার’, ‘লাশ হয়ে ফিরলেন অমুক’, ‘যে দৃশ্য না দেখলেই নয়’- এরকম অনেক সংবাদ লিখে শেষে জানাচ্ছে, এটা একটি নাটকের, ছায়াছবির দৃশ্য! এটা কি ধরনের রিপোর্টিং? সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হলো ব্লু্যাকমেইলিংয়ের। চাঁদা না দিলে রিপোর্ট করা হবে- এমন হুমকি দিতে গিয়ে প্রাণও গেছে কারো কারো! তারপরও গ্রামে গ্রামান্তরে গড়ে উঠছে এক ধরনের ‘সাংবাদিক’। ফেসবুকে, অনলাইন মিডিয়ায় এদের কারো কারো ভিজিটিং কার্ড দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। অনেক পদবি তাদের। নিজে নামের সঙ্গে টাইটেল দিয়ে কার্ডের প্রচার করাটা কোন নৈতিকতার আওতায় পড়ে? বিশ্বের কোথাও এমনটি আছে কি?মোটরসাইকেল, গাড়ির পেছনে ‘সাংবাদিক’ লিখে পার পেয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারি, খুনিও। নির্বিকার সরকারি আইন প্রয়োগকারী বাহিনী। এর সবই হচ্ছে বাংলাদেশে। সাংবাদিকতা করার আগে এর বেসিক বিষয়গুলো জানা দরকার। বিশ্বব্যাপী অনেক সংগঠন আছে যারা এসব প্রশিক্ষণ দেয়। প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কজন গ্রামীণ সাংবাদিক? এদের অনেকে হয়তো পিআইবির নামও জানেন না। একটা উদাহরণ দিতে পারি। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জর্নালিস্টস (আইসিএফজে), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলকাতা ক‚টনৈতিক মিশন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহায়তায় ২০১৬ সালের বসন্তে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’-এর কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তারা ভারতের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। মধ্যম সারির অভিজ্ঞ সাংবাদিক যারা কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ) ও পাটনা (বিহার) থেকে ইংরেজি অথবা স্থানীয় যে কোনো ভাষার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত এবং সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের এই শহরে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগদানের জন্য আবেদন করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সাংবাদিকতার মান, নীতি- নৈতিকতা এবং নাগরিক সাংবাদিকতার বিষয়ে কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক সব মিলিয়ে ১২০ জন সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-নির্ভর সরঞ্জামের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দেবেন, একই সঙ্গে জনস্বার্থবিষয়ক প্রতিবেদনের মান উন্নতকরণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেবেন।প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ কমিউনিটির স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোকপাত করতে বলা হবে, যে বিষয়ে তারা আরো কার্যকরভাবে প্রতিবেদন তৈরি করতে আগ্রহী। কমিউনিটির স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়কে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষের পরেও যেন ওইসব বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেন, সে ব্যাপারে অংশগ্রহণকারীদের আগ্রহ সৃষ্টি করা হবে। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে সাংবাদিকরা এমন প্রতিবেদন তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেবেন যার মাধ্যমে ডিজিটাল ও নাগরিক সাংবাদিকতার চর্চা একীভূত হবে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা একে অন্যের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষকদের সঙ্গে ইমেইল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেবেন এবং তাদের পরিকল্পিত নিজ নিজ প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন। যৌথভাবে এসব কাজ বাংলাদেশেও করা যেতে পারে। এজন্য উদ্যমী মানুষের দরকার। দরকার সত্যের পক্ষে দাঁড়াবার শক্তি। একটি সাধারণ তথ্য দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই।‘হলুদ সাংবাদিকতা’ বিষয়ে উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে- ‘হলুদ সাংবাদিকতা বলতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকে বোঝায়। এ ধরনের সাংবাতিকতায় ভালো মতো গবেষণা বা খোঁজ-খবর না করেই দৃষ্টিগ্রাহী ও নজরকাড়া শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হলো সাংবাদিকতার রীতিনীতি না মেনে যেভাবেই হোক পত্রিকার কাটতি বাড়ানো। অথবা টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা বাড়ানো। অর্থাৎ হলুদ সাংবাদিকতা মানেই ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন, দৃষ্টি আকর্ষণকারী শিরোনাম ব্যবহার করা, সাধারণ ঘটনাকে একটি সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা, কেলেঙ্কারির খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা, অহেতুক চমক সৃষ্টি ইত্যাদি।আমেরিকার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক ফ্র্যাঙ্ক লুথার মট হলুদ সাংবাদিকতার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন- ১. সাধারণ ঘটনাকে কয়েকটি কলামজুড়ে বড় আকারের ভয়ানক একটি শিরোনাম করা। ২. ছবি আর কাল্পনিক নকশার অপরিমিত ব্যবহার। ৩. ভুয়া সাক্ষাৎকার, ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে এমন শিরোনাম, ভুয়া বিজ্ঞানমূলক রচনা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ভুল শিক্ষামূলক রচনার ব্যবহার। ৪. সম্পূর্ণ রঙিন রবিবাসরীয় সাময়িকী প্রকাশ, যার সঙ্গে সাধারণত কমিকস সংযুক্ত করা হয়। ৫. স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানো পরাজিত নায়কদের প্রতি নাটকীয় সহানুভূতি। বাংলাদেশে এখন সাংবাদিকদের যে হানাহানি শুরু হয়েছে- এর নেপথ্যের কারণ এগুলোই। এরা না জেনে না বুঝে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। নিজেদের আয়নায় নিজেদের মিলিয়ে না দেখা পর্যন্ত এই হানাহানি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।---------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৭ মে ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ ভোর ৬:৩১
false
mk
বোমাবাজদের বর্জন করুন খালেদা জিয়া বেরিয়ে এলে নাটক হবে বা নাটকীয় কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর অনেক সাবধানবাণী বা দূরদর্শী কথা সময়ে ফলে যায়। এটা তাঁর অভিজ্ঞতার ফসল। বাংলাদেশের রাজনীতি বিগত কয়েক মাসে যে ধরনের সমস্যা পাড়ি দিয়েছে, তাতে বিচক্ষণ না হয়ে ওঠার আদৌ কোন কারণ দেখি না। একইভাবে অন্য প্রান্তের নেত্রীও সময়ের সঙ্গে হুঁশিয়ার ও সেয়ানা হয়ে উঠেছেন। খালেদা জিয়া গুলশান থেকে ফিরোজায় যাবার পর তাঁর ভয়ভীতি, অবরোধ বা দুঃশাসন প্রতিরোধ স্পৃহা যেন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে। এদ্দিন ধরে গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার রক্ষার নামে পেট্রোলবোমা, আগুন জ্বালিয়ে মানুষ মারার পর মেয়র নির্বাচনের ভোটের প্রচারে মাঠে নেমেছেন তিনি। একই সরকার, এক প্রশাসন ও পূর্ববৎ অবস্থা, তবু তিনি মাঠে। যেভাবেই হোক ম্যানেজ গেম বা চাপের মুখে আপাত মুক্ত খালেদা জিয়া মাঠে নামার পর দৃশ্যপটে ঘটেছে পরিবর্তন। এই পরিবর্তন শুভ কি অশুভ জানি না, তবে চাকা তিনি ঘুরিয়ে দিচ্ছেন।ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা হঠাৎ এত বেপরোয়া হয়ে উঠল কি কারণে? পথেঘাটে খালেদা জিয়া ও তাঁর গাড়ির বহরকে হামলা করলেই কি আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন জিতে যাবেন? যে বা যারাই এই হামলা করুক না কেন, মানুষ ধরে নিচ্ছে এর পেছনে আছে ছাত্রলীগ ও সরকারী দল। এই অনুমান ভুল হলেও অযৌক্তিক কিছু না। আমাদের দেশে সরকারী দলের ছায়া ও মদদ ছাড়া রাজপথে এমন হামলা অসম্ভব। হামলাকারীদের প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নরম মনোভাবও মানুষকে তেমনি ভাবতে বাধ্য করছে। ইতোমধ্যে তেমন কোন হামলার খবর জানেন না বলে ঘটনার ঘনঘটা আরও ধুমায়িত করা হয়েছে। অন্যদিকে যদি বিএনপি বা জামায়াত জোট এটা পরিকল্পিতভাবে করেও থাকে, তাদের অপকৌশল সার্থক। অতি আবেগ আর পীড়িতজনের জন্য বাঙালীর মায়া চিরকাল। প্রয়াত ওয়াহিদুল হক বলেছিলেন, দশাসই সাত ফুট উচ্চতার পাঞ্জাবী সৈন্যকে গুলি করে মেরে ফেলার পর মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা তার লাশ দেখে আহা উহু না করলেও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত। কেউ কেউ এমন স্বগতোক্তিও করতÑ বাব্বা কত বড় এক মানুষ মারলাম!আগুন, পেট্রোলবোমা বা নাশকতায় মারা যাওয়া মানুষগুলো বড়সড় কেউ ছিলেন না। তারা আকার-আয়তনে যেমন ছোট, পরিচয় বা ইমেজেও ছিলেন অতি সাধারণ। গরিব দুঃখী মজুর বা ছাত্র জনতার মৃত্যু এদেশে স্বাভাবিক। তাদের অনেকেই যেন জন্মেছেন এভাবে মারা যাবার জন্য। কিন্তু বেগম জিয়া তো সেলিব্রেটি। তাঁর গাড়ির কাঁচে ঢিল পড়লেও খবর আছে। আমাদের জীবনের কোন ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের লেশ না থাকলেও মিডিয়ায় তা আছে। সে প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার কাছাকাছি একটি মাছি মরলেও তা ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে খবর হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। পেট্রোলবোমা আর আগুন দেয়ার দায়ে দোষী নেতাকে স্পর্শকাতরতার সুযোগ দেয়া কি যৌক্তিক না উচিত? অথচ তাই দেখছি আমরা। ধীরে ধীরে রক্ত, আগুন, পেট্রোলের দাগ পেরিয়ে আবার নির্দোষ হয়ে উঠছেন খালেদা জিয়া। তিনি প্রচার চালাতেই পারেন। বরং এ জাতীয় কর্মকা-ে তাঁকে বাধা না দিলে বা এগিয়ে যেতে দিলে মানুষই জবাব দিত। কোন না কোন জায়গায় সাধারণ মানুষের বিবেকের কাছে পরাজিত হতেন খালেদা জিয়া। হয়ত প্রতিরোধের সম্মুখীনও হতে হতো তাঁকে। অতি উৎসাহী ছাত্রলীগ বা অপকৌশলীরা তা হতে দিচ্ছে না। অধিকন্তু তাঁকে নেগেটিভ পপুলারিটির বরমাল্য পরিয়ে দিচ্ছে তারা। গোয়েন্দা রিপোর্টে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থীরাই নাকি এগিয়ে আছেন। কোন হতাশা ও ক্ষোভে মানুষ লাশ ডিঙ্গিয়ে তাঁদের ভোট দিতে চায়? ছাত্রলীগ নামধারীরা খালেদা জিয়া ও জামায়াতকে পপুলার করার দায়িত্ব নিয়ে থাকলে বলার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য, আদর্শ ব্যর্থ করে দেয়ার মানুষজনকে এরাই জনপ্রিয় করে। মুখে তুলে দেয় বিরোধিতার ভাষা, হাতে কলম, ক্যামেরায় ছবি। সে নাটকের মঞ্চায়নে প্রধানমন্ত্রী কী নীরব থাকবেন? আগাম সতর্ক করে থাকার দূরদর্শিতায় কী এ প্রক্রিয়া রোধের ব্যবস্থা নেয়া ছিল না?যেভাবেই হোক নাটকের শেষ দৃশ্যে খালেদা জিয়া ও জামায়াতের জন্য মধুরেণ সমাপয়েত মানে নিহত, আহত আর ধুঁকতে থাকা মানুষের প্রতি অপমান ও অবহেলা। ভোটযুদ্ধে এক্সট্রা পয়েন্ট দেয়ার এই আত্মবিধ্বংসী খেলার শেষ কোথায়, কেউ কী জানেন? কবে ধবল ধোলাই হবে অপরাজনীতি? বিএনপি-জামায়াতের অপকৌশলের বাংলাওয়াশ কি আদৌ হবে কোনদিন? যা এদেশের ঐক্য আর সম্ভাবনার জন্যই জরুরী।
false
fe
দেশপ্রেমে ঐক্যবদ্ধ মানুষের বলিষ্ঠ হাত দেশপ্রেমে ঐক্যবদ্ধ মানুষের বলিষ্ঠ হাত ফকির ইলিয়াস============================================ ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত আমার লেখা কলামগুলো সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকার মতামত সম্পর্কিত প্রায় দশ-পনেরোটি ইমেইল প্রতি সপ্তাহে আমি পাই। তারা তাদের মতামত জানান। কখনও, আমার মত ও মন্তব্যের বিপক্ষে কড়া সমালোচনা থাকে। কখনও সুমিষ্ট বাহবাও পেয়ে যাই। মনে পড়ছে, বাংলাদেশ যখন তীব্র জঙ্গিবাদী তাণ্ডবের লীলাক্ষেত্র, তখন আমাকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করে ইমেইল পাঠাত কেউ। তাদের বক্তব্য ছিল, ধর্মীয় চেতনা আর জঙ্গিবাদ এক নয়। এমনকি দেশে যখন একযোগে বোমা ফাটানো হলো তখনও একটি মহল বলতে চেয়েছিল এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।যারা আমার মতের বিপক্ষে কঠোর যুক্তি উপস্খাপন করতে চান, তাদের আমি একটি প্রশ্নই করি। এই দেশটি কার? কেন? কীভাবে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল ও যারা একাত্তরে প্রাণ সঁপে দিয়েছিলেন এই দেশের জন্য তাদের মূল চাওয়া কী ছিল? যারা আমার সঙ্গে ভিন্নমত কিংবা বিপক্ষ মত পোষণ করেন তারা বলতে চান, অতীত টেনে লাভ নেই। ‘মিলে মিশে’ এই দেশটির জন্য কাজ করতে হবে। আমি উত্তরে তাদের বলি, ‘মিলে মিশে’র পক্ষপাতী আমি নই। অতীত স্মরণ রেখে, মৌলিক স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র এগিয়ে যায়। যারা মহান, মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করে না তাদের সঙ্গে আবার ‘মিলামিশা’ কিসের?আমি খুবই আপ্লুত হই, যখন কেউ আমার লেখাগুলো পড়ে আমাকে প্রেরণা দেন। এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগান। আমি জানি বিদেশে অবস্খান করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো কঠিন কাজ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, একজন সৎ নির্ভীক লেখকের কলম আজীবন মানুষকে সাহস ও শক্তি জোগাতে পারে।বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেসব ইমেইল পাই, তার অধিকাংশের লেখক-লেখিকার দেশপ্রেম আমাকে খুব মুগ্ধ করে। প্রবাসে অবস্খানরত বাঙালিরা দেশকে যে কত ঘনিষ্ঠভাবে প্রতিদিন দেখেন তা ভেবে আমি আকুল হয়ে যাই মাঝে মাঝে। ‘সংবাদ’-এ আমার লেখা কলামগুলোর তেমনি একজন পাঠক জনাব আহসানুল করিম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে অভিবাসী জীবনযাপন করছেন তিনি। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে তিনি পাবলিক পলিসি এন্ড পলিটিক্যাল ইকনোমি বিষয়ে পিএইচডি করছেন। আহসানুল করিম বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন খুব ঘনিষ্ঠভাবে। তিনি মনে করেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণের আরও সম্পৃক্ততার প্রশ্নে আরও তিনটি বিভাগ চালু করা দরকার। তার প্রস্তাবিত বিভাগগুলো হচ্ছে­ রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা। তার মতে, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রে সিনেট এবং কংগ্রেস যেমনটি রয়েছে। যারা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখেন।আহসানুল করিমের প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে­ সরকার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। স্খায়ী গণতন্ত্র এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাজনীতিকদের সৎসম্পৃক্ততাসহ বেশকিছু নতুন ধ্যান-ধারণা।প্রবাসে এমন অনেক বোদ্ধা দেশপ্রেমিক রয়েছেন যারা যে কোন ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে আত্মোৎসর্গ করতে পারেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, সে ক্ষেত্র দেশে আছে কি? দেশ গড়তে হলে কিছু কাঠামো আগে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর তার অন্যতম হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় নীতিমালা। উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন রাজনীতিক কিংবা সমাজ নির্ধারক কখনই প্রকৃত দেশপ্রেমিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, আমার রাষ্ট্রই আমার শ্রেষ্ঠ আরাধনা। যেদিন দেশসেবা করতে পারব না সেদিন আর বেঁচে থাকার কোন প্রয়োজন মনে করব না। কি প্রখর চেতনা। দুই.এই যে ‘মিলে মিশে’ দেশ গড়ার স্বপ্নধারী রাজনীতিকরা একাত্তরে তাদের ভূমিকা কেমন ছিল? তারা আদৌ কি দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন? না চাননি। পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে দেশের বুদ্ধিজীবী নিধনের মাধ্যমে জাতিকে পঙ্গু করে দেয়ার শেষ ষড়যন্ত্রটি করেছিল তারা। এদেরই একজন জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী। দুর্নীতি মামলায় শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুধু দুর্নীতি কেন, একাত্তরে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। সে অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্খা অনেক আগেই নেয়া যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চুপ হয়ে থাকা এই মৌলবাদী চক্রের কাছ থেকে নানাভাবে রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের চেষ্টা করেছে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি। ফলে তারা শক্তি সঞ্চয় করার সাহস পেয়েছে ক্রমেই।ওয়ান-ইলেভেনের পটপরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষকে কী দিয়েছে? এর একটি খতিয়ান তৈরি করলে দেখা যাবে দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসের নির্মূলতাই দেখতে চেয়েছেন দেশের মানুষ। তারা চেয়েছেন রাজনীতি একটি বলয় থেকে বেরিয়ে আসুক। আমি মনে করি, যারা ওয়ান-ইলেভেন সম্ভব করেছেন তারাও এই একই চেতনা লালন করেছেন এবং করে যাচ্ছেন।প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে জামায়াত নেতা নিজামীকে গ্রেফতার করতে এত সময় নেয়া হলো কেন? কোন কোন পর্যবেক্ষকের মতে, নিজামীর খুঁটির জোর সৌদি আরব থেকে গ্রিন সিগনাল পাওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। আর তা আদায় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই মিশন নিয়ে তিনি সৌদি আরব সফর করেন সম্প্রতি। এরশাদ সৌদি থেকে ‘ইয়েস কার্ড’ নিয়ে আসার পর পরই নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়।তিন.নেপথ্যের ঘটনাবলি নিয়ে আরও বিশ্লেষণ করছেন রাজনীতিক পর্যবেক্ষকরা। খবর বেরিয়েছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আর দেশে ফিরছেন না সহসা। যদি না অলৌকিক কোন পরিবর্তন ঘটে। সাইফুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে বিলেতে স্খায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে যেতে পারেন বলেও খবরে বলা হয়েছে। তার দ্বিতীয় পছন্দের দেশ হিসেবে আছে অস্ট্রেলিয়া। ঘটনা যদি এই হয়, তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে একটি গ্রুপ দুর্নীতি মামলার সম্ভাব্য আসামি হচ্ছেন সাইফুর রহমান তা জানার পরও রাষ্ট্র তাকে বিদেশে যাওয়ার ছাড়পত্র দিল কীভাবে? কেন দিল? তা হলে কি একটি মহল চেয়েছে সাইফুর রহমান দেশ ছেড়ে চলে যান কৌশলে?যদি তাই হয় তবে তো এই পুরো মামলাটি একপেশে হয়ে যাচ্ছে। মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে সঙ্গত কারণেই। প্রশ্ন উঠছে মামলার উদ্দেশ্য নিয়েও।গ্রেফতারের আগে নিজামী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুই নেত্রীকে বাদ দিয়ে সংলাপ-নির্বাচন কিছুই হবে না। তিনি আরও বলেছেন, ওই দুই দল আন্দোলনমুখী। যদি অন্য কোন দলপ্রধানকে গ্রেফতার করা হয় তবে ওই দলও আন্দোলনে যাবে।নিজামী গ্রেফতারের মাধ্যমে সে সম্ভাবনা দেখা দিতেই পারে। এখন জামায়াত দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। এর প্রথমটি হচ্ছে­ বিএনপি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য খুঁজে আন্দোলনে নেমে যাওয়া। কিংবা একাই ওই দুই দলের সমান্তরালে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া। যেমনটি তারা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দিয়েছিল। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে­ পুরনো কায়দায় জঙ্গিবাদী শক্তিকে উস্কে দেয়া। দেশের স্খিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা।মান্নান ভূঁইয়া, শামসুল ইসলাম এবং নিজামী কারাগারে যাওয়ার পর বদলে গেছে দেশের রাজনীতির দিনলিপি। এমকে আনোয়ারসহ অন্য চার্জশিটভুক্তরা অন্তরীণ হলে এ চিত্র আরও বদলাবে। সংস্কারপন্থি বিএনপি নেতারা বুঝে গেছেন শেষ রক্ষা সম্ভব নয়। প্রায় একই বার্তা পাচ্ছেন সংস্কারপন্থি আওয়ামী লীগাররাও। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সরকার এবং বাদবাকি রাজনীতিকদের বৃহৎ অংশই এখন প্রায় বিপরীত মেরুতে অবস্খান নিতে যাচ্ছেন। রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয়করণের তালিকায় জামায়াতের সেক্রেটারি মুজাহিদের নামও যুক্ত হতে পারে।কিন্তু কথা হচ্ছে, আগামী দিনের রাজনীতি এবং দেশ পরিচালনার জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীনরা কাদের সমর্থন পাবেন কিংবা পেতে যাচ্ছেন? আর তারা কতটা পলিটিক্যাল ক্লিনম্যান বলে পরিচিত? মনে রাখতে হবে জামায়াত ক্যাডারভিত্তিক দল। তারা নিজামী-মুজাহিদের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত ঠিক করেই রেখেছে। বাকি দুটি প্রধান দলের প্রস্তুতি কী? কী ভূমিকা নেবে এরশাদের জাতীয় পাটি?---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ২৩ মে ২০০৮ শুক্রবার , প্রকাশিত
false
mk
নির্বাচন-জামায়াত ইস্যুতে অস্থিরতায় বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি কী করবে তা নিয়ে দলের ভিতরে নানামুখী আলোচনা চলছে। তবে দলের একটি অংশ যে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে চায় তা এখন স্পষ্ট। এ নিয়ে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাছাড়া জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইস্যুতেও দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির অভ্যন্তরে বিভক্তি রয়েছে। দলের এক গ্রুপ জামায়াতমুক্ত বিএনপি দেখতে চায়, আবার অন্য গ্রুপ জামায়াতকে জোটভুক্ত রাখার পক্ষে। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করলেও তিনি এ কথা স্পষ্ট করেই বলেছেনÑকোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা বিএনপি সমর্থন করে না। রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত বলে বিএনপি মনে করে। তবে বিএনপির রাজনৈতিক বক্তব্য যাই হোক না কেন আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ হওয়ায় বিএনপিতে চলছে বড় ধরনের অস্থিরতা। বিএনপির নীতিনির্ধাকরা মনে করছেন ১৮ দলীয় জোটে বিএনপির পরই জামায়াতের অবস্থান। সাংগঠনিক শক্তির দিক দিয়ে কখনো কখনো তা বিএনপিকেও ছাপিয়ে যায়। ১৮ দলের বাকি ১৬টি দলের অবস্থা খুবই করুন। ব্যক্তি নির্ভর এসব দলের কোনো জনসমর্থনও নেই। এমতাবস্থায় জামায়াত নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হলে সে ক্ষেত্রে ১৮ দলীয় জোটের ভবিষ্যত কোন পথে যাবে। আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল বিএনপি। কারণ আন্দোলন করে মহাজোটের সঙ্গে কুলিয়ে ওঠার মত শক্তি ও সাহস যে বিএনপির নেই সে কথা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও ভালভাবেই জানেন। ফলে এখন জামায়াত নির্বাচন না করতে পারলে জামায়াত কি বিএনপিকে ভোট দেবে নাকি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারের দেয়া ফাঁদে পা দিবে। কিংবা ইসির নিবন্ধন পাওয়ার শর্তে আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচনে যাবে জামায়াত। নাকি হেফাজতের সঙ্গে একিভূত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রািতশোধ নিবে। ওদিকে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় মুসলিম বিশ্বের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।ওদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে এ ধরনের অস্থিরতার বিষয়টি জানা গেছে। তারা স্বীকারও করেছেন, দলের গুটিকয়েক নেতা আছেন, যারা খালেদা জিয়াকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে নেয়ার চেষ্টা করছেন। কূটনীতিকপাড়ায়ও দলটির নেতাদের সঙ্গে এমন আলোচনা হচ্ছে, যা ডালপালা হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করছে। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। কারণ, সরকারের জনপ্রিয়তা এমন জায়গায় নেমেছে যে কারচুপি করেও পরাজয় ঠেকানো সম্ভব হবে না। তা ছাড়া বর্তমানে মিডিয়া এতোটা শক্তিশালী যে, ব্যাপকভাবে কারচুপিও করা সম্ভব নয়। যদিও এমন যুক্তি মানছেন না দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। তারা মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে আবারও ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। এটি তাদের মাস্টার প্ল্যান। আর কয়েকটি নির্বাচনে মিডিয়া যেভাবে দৃষ্টি রাখতে পারে, সারাদেশে ৩০০ আসনে নির্বাচন হলে মিডিয়ার পক্ষে ওইভাবে কাজ করা সম্ভব হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ ধরনের খবর তাদের কাছে নেই। এবার এ রকম কিছু হলে নেতাকর্মীরা প্রতিহত করবে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে ভবিষ্যতে দল লাভবান হবে, না-কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটি বলার সময় এখনও আসেনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় ‘প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘লো মঁদ’ পত্রিকা থেকে তথ্য নিয়ে।’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার হেফাজতের শক্তিকে উপেক্ষা করতে পারছে না। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে হেফাজত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যদিও এই দলটি এখনও সরাসরি রাজনীতিতে আসতে রাজি নয়। কারণ দলটির বিবেচনায় রাজনীতি এখনও পুরোপুরি ‘বিশুদ্ধ’ নয়। প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল অস্বস্তিকর অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ দেশটির সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আওয়ামী লীগকে বিরোধী দল ও হেফাজতের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ বিরোধী দল এটা জোর দিয়ে দাবি করছে, নির্বাচনে সম্ভাব্য হার এড়াতে সরকারি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের অধীনে বাংলাদেশের মৌলবাদী দলগুলো একত্রিত হচ্ছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৫ মে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পর দলটিকে নিয়ে রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। কারণ ওই মহাসমাবেশে দলটি তাদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফীর নির্দেশে ১৩ দফা দাবি আদায়ে ৫ মে ঢাকার রাস্তায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হয়। ১৩ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, জনসমক্ষে ছেলেমেয়েদের অবাধে বিচরণ নিষিদ্ধকরণ, ভাস্কর্য অপসারণ এবং সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এ কথাটি পুনর্স্থাপন। পরে হেফাজতের ওই আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অর্ধশত মানুষ নিহত এবং বহুজন গ্রেফতার হন। সেই থেকে হেফাজতে ইসলাম গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছে। সরকার হেফাজতের ‘শক্তি দেখানো’ সেই আন্দোলন নিয়ে এখনও ভীত। হেফাজতে ইসলামের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা সরকারের নারীর সমান অধিকার দেয়ার প্রতিবাদে ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়। এরপর চলতি বছর শাহবাগে ধর্মনিরপেক্ষ হাজার হাজার লোকের আন্দোলন শুরু হলে হেফাজত নতুন করে জেগে ওঠে। দলটির অধিকাংশ কর্মী মাদ্রাসার ছাত্র। এরা গ্রামের মধ্যবিত্ত সমাজ থেকে উঠে আসা দরিদ্র-অর্ধশিক্ষিত। কিন্তু শাহবাগের ওই আন্দোলনকে মৌলবাদী দলগুলো ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে থাকে। ব্লগারদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। ফরহাদ মজহারের উদ্ধৃতি টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হেফাজতের আন্দোলনে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নেই। কিন্তু দলটিকে একঘরে করে রাখা হলে এটি আরও মৌলবাদী হয়ে উঠতে পারে।’ সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ মৌলবাদী দলগুলোকে এ সুযোগে নিজেদের দলে টানছে হেফাজত। হেফাজতের ছত্রছায়ায় আসা এসব দল অভূতপূর্ব একতা দেখাচ্ছে বলেও গার্ডিয়ান দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজ গার্ডিয়ানকে জানান, গত ৩০ বছরে ধর্মকে অবলম্বনকারী মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রাজনীতি, সমাজ প্রায় সব ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করেছে। আর যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে নারীদের অধিকার ক্ষুণœ হবে, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। সরকার সংখ্যালঘু মানুষগুলোকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মত দেন আলী রিয়াজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার এক শিক্ষাবিদ গার্ডিয়ানকে জানান, আওয়ামী লীগ হারতে যাচ্ছে এই ভেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মৌলবাদীদের সমর্থন ছাড়া আপনি জিততে পারেন, কিন্তু তাদের বিপক্ষে গিয়ে জয় পাবেন না। তাই আগামী নির্বাচনে শফীর দলের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ।‘হস্তক্ষেপ’ চায় পাকিস্তান জামায়াতবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল এবং দলটির নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশেহস্তক্ষেপ করার জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান জামায়াত। পাকিস্তান জামায়াতের আমির সৈয়দ মুনাওয়ার হাসান ১ আগস্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আক্রান্ত হচ্ছে। নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে এবং তাদেরকে যাবজ্জীবন সাজা, এমনকি মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হচ্ছে।’ সৈয়দ মুনাওয়ারকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের দি নিউজ লিখেছে, আদালতের এই রায়কে ‘অসাংবিধানিক, আংশিক ও পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ভারতপন্থী হাসিনা ওয়াজেদ সরকারের’ প্রতিহিংসা রোধে বিশ্বের সব দেশ, গণতান্ত্রিক শক্তি ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহকে ভূমিকা রাখার আবেদন জানিয়েছেন পাকিস্তান জামায়াতের আমির। এক রিট আবেদনের রায়ে বাংলাদেশ হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায়ের ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, কেননা আইন অনুযায়ী, কেবল নিবন্ধিত দলই বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। মুনওয়ার তার বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘এতোদিন তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল এ কাজ করলেও এখন একই কাজে নেমেছে হাইকোর্ট। নির্বাচন থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে দূরে রাখতেই জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।’ উপমহাদেশের বিতর্কিত ধর্মীয় রাজনীতিক আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে দলটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। জামায়াতের তখনকার পূর্ব পাকিস্তান শাখার আমির গোলাম আযমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সে সময় বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটানো হয় বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ঘোষিত রায়গুলোতে উঠে এসেছে। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের দায়িত্ব নেন গোলাম আযম। একাত্তরে যুদ্ধাপাধের দায়ে চলতি মাসেই এক রায়ে তাকে ৯০ বছরের কারাদ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। ট্রাইব্যুনালের এই বিচারকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলায় পাকিস্তান সরকারেরও সমালোচনা করেছেন জামায়াত আমির মুনাওয়ার। তার ভাষায়, পাকিস্তান সরকারের এই অবস্থান ‘জঘন্য অন্যায়’ ও ‘পুরোপুরি অনাকাক্সিক্ষত’। তিনি দাবি করেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জামায়াতের পক্ষে দাঁড়ালেও মূলত ভারতের আদেশে দলটিকে জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখতে এবং ধ্বংস করতে চায় শেখ হাসিনা সরকার।’ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- তারা বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছেন এবং একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন’ বানচাল করতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেছেন। পাকিস্তানকে ‘ঐক্যবদ্ধ রাখার সংগ্রামের জন্যই’ বাংলাদেশে জামায়াত নেতাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের দুনিয়ানিউজ ডট টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাবেক জামায়াত আমির গোলম আযম ও তার সহযোগীদের ওপর হাসিনা সরকারের আক্রমণের বিরুদ্ধে শুধু মৌখিক প্রতিবাদ নয়, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবল থেকে তাদের মুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববাসী, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তান জামায়াতের আমির। মুনাওয়ার দাবি করেছেন, গত চার দশক ধরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে, যার কারণে দল ভাল জনসমর্থনও পেয়েছে। ‘জামায়াত বাংলাদেশের ক্ষমতায়ও ছিল। তাই দলটিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে এবং এর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে দেয়া ঢাকা হাইকোর্টের রায় গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারকে হত্যার সামিল।’জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধরাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায় ঘোষণার আধা ঘণ্টার মধ্যেই জামায়াত এর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পাঁচটি মামলায় জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে রায় দিয়েছিলেন। গত ১ আগস্ট বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন। তবে কোন বিচারপতি ভিন্ন মত দিয়েছেন, তা বলা হয়নি। রায়ে আদালত বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে রুল অ্যাবসলিউট (রুল মঞ্জুর) করা হলো। নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে যে নিবন্ধন দিয়েছে, তা অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। রায় ঘোষণার পর জামায়াতের পক্ষে আইনজীবীর আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল করার বিষয়ে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে দলটির পক্ষে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি আবেদন করা হয়। রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের কৌঁসুলি মহসীন রশিদ বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে আদালত রুল মঞ্জুর করেছেন। নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার কারণগুলো পরে পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এ রায়ের সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। ফলে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে দলীয় প্রতীক নিয়ে জামায়াত আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জামায়াতের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আমরা আপিল করেছি। ফলে বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আমি মনে করি, আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারব। আর আপিল বিভাগ রায় স্থগিত করলে তো পারবই।’ ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি। প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয় গত ১২ জুন।ওদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা বিএনপি সমর্থন করে না। রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত বলে বিএনপি মনে করে।’ গত ২ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘রায়ের ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটি একটি বিচারিক ব্যাপার। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়।’ সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘সরকার তাদের ব্যর্থতা, পরাজয় বুঝতে পেরে একদলীয় নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। এখন তারা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার কাজ শুরু করেছে।’ এটি তাদের দলীয় প্রতিক্রিয়া হলেও দলের ভেতর চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে তাতে বিএনপির লাভ না লোকসান তা নিয়ে চলছে বিএনপিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিএনপির একটি বড় অংশ চাচ্ছে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করুক। তাহলে জামায়াতের এসব লোক বিএনপিতে যোগ দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান করবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তাতে জামায়াতকে ক্ষমতার ভাগও দিতে হলো না, অন্যদিকে মহাজোটেরও পতন হল। অন্য একটি গ্র“প মনে করে জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও বিএনপির কোনো লাভ নেই। কারণ অতীতে জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও অন্য নামে পুনরায় রাজনীতির মাঠে ছিল এবারও হয়তো সেদিকেই যাবে জামায়াত। কাজেই এখানে জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও বিএনপির খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে চিন্তার বিষয় হলো জামায়াত নিষিদ্ধ হলে জামায়াতের অসংখ্য ক্যাডার বিএনপি বা এর অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে ঢুকে জঙ্গীবাদি আচরণ শুরু করলে দেশ-বিদেশে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হবে।
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার। আজ অমর একুশে বইমেলায় গেছি সাড়ে চারটায়। ছিলাম মেলার শেষ পর্যন্ত। যথারীতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটু ঢু মেরে চলে যাই একাডেমির লিটল ম্যাগ চত্বর। গোটা বিকেল মেলায় আগত বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরেছি। ফাঁকে ফাঁকে বই বিক্রি করেছি। আজ পাঁচটি বই বিক্রি করেছি। তিনটি আমার গল্পের বই, একটি লিমনের নাটকের বই, আরেকটি নন্দন পত্রিকা। আজকের লিটল ম্যাগ চত্বরে আড্ডা ও দেখা হয়েছে যাদের সঙ্গে তারা হলেন- শিল্পী চারু পিন্টু, কবি কাজী টিটো, কবি সাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, লেখক ও গবেষক জয়শ্রী বীথি, কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, কবি ও সম্পাদক নীলসাধু, কবি কবির হুমায়ুন, কবি অমিতাভ পাল, কবি ও প্রকাশক আলী আফজাল খান, রিয়াজ ভাই, রানা ভাই, তুলা ভাবী ও দুই কন্যা, কবি মারিয়া রিমা, মেধা, কবি শহিদুল্লাহ সিরাজী, কবি তপন বড়ুয়া, কবি সরসিজ আলীম প্রমুখ। বইমেলায় আজ উপস্থিতি ছিল মোটামুটি। কিন্তু বইপ্রেমীদের মধ্যে বই কেনার তেমন কোনো তাড়া ছিল না। এ বছর সম্ভবত বইয়ের চেয়ে অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষ্যে ফুল বিক্রি বেশি হচ্ছে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরানো বই, পাইরেসি বই ও বারোয়ারি জিনিসের মেলা বসেছে জাকিয়ে। প্রশাসনকে টু পাইস দিয়ে বইমেলার সময় প্রতিবছরই এই কম্মটি হরহামেশা হয়। এটি নিয়ে লিখে বাংলাদেশে কোনো লাভ নেই। কারণ সরকারের প্রশাসন যা চায়, অমর একুশে বইমেলা ঠিক সেভাবেই চলে। মজার ব্যাপার হল, আজও একাডেমির মূল মঞ্চে বিকালে প্রথম অধিবেশনে ছিল যথারীতি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। আমি বেশ কয়েকবার সেখানে উকি দিলাম, দেখলাম দর্শক সারির চেয়ে মঞ্চে আলোচকের সংখ্যা বেশি!!! ফাঁকা চেয়ারের উদ্দেশ্যে মহান বক্তাগণ চমৎকার লিখিত বা মুখস্থ বক্তৃতা করছেন। মাভৈ মাভৈ। সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে ছিল যথারীতি গানের অনুষ্ঠান। কান্ট্রি সং থেকে শুরু করে নজরুল গীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, পাঁচ মিশেলি গান। টিএসসি তে আজ বিকালে ছিল একটি প্রতিবাদ সমাবেশ। ইরানি লেখক আলি দাশতি'র বই বাংলায় প্রকাশ করার দায়ে হেফাজতে ইসলামের নালিশের জবাবে বাংলা একাডেমি কর্তৃক রোদেলা প্রকাশনীকে বইমেলায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধের প্রতিবাদে, প্রগতিশীল কবি, লেখক, সাহিত্যিক, প্রকাশক ও সচেতন সর্বস্তরের পাঠকদের প্রতীকি সমাবেশ আয়োজন করে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদ থেকে জানা যায়, ইরানি লেখক আলি দাশতির মূল ফার্সিগ্রন্থ ‘বিস্ত ও সেহ সাল’ এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে ‘মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত’ করায় নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান। পাশাপাশি গত কয়েকদিনে নানাভাবে তিনি জীবননাশের হুমকিও পাচ্ছেন। রিয়াজ খান জানিয়েছেন, তার গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাবাজারের পুস্তক ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ। এসব দাবির পেছনে জামায়াতে ইসলামী এবং নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদসহ জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে সরকারের একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাবাজারে রোদেলা প্রকাশনীর বিরুদ্ধে সামনের কাতারে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মাকতাবাতুল আশরাফের কর্ণধার হাবিবুর রহমান খান। বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদে দাবি করা হয়, ''বাংলাবাজারে রোদেলা প্রকাশনীর দোকানে হামলা, গোডাউনে তালা লাগানোর মতো ঘটনা প্রকাশক জগতে এই প্রথম। মাকতাবাতুল আশরাফের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান খান কামরাঙ্গীরচর থেকে প্রকাশিত মাসিক রহমতের পূর্বসংস্করণ মাসিক জাগো মুজাহিদ পত্রিকার প্রস্তুতিকালীন সময়ে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওই পত্রিকাটি নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদের মুখপাত্র হিসেবে বাংলাদেশে পরিচিত ছিল''। বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদে বলা হয়, ''গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা যায়, সরকারের বিরুদ্ধে একটি মহল যেকোনও মুল্যে চলমান অবরোধ-হরতালের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে মানুষকে রাজপথে নামানোর পরিকল্পনা করছে। এ কারণেই বাংলা একাডেমিতে স্টল নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও বিষয়টিকে নিয়ে আরও বড় করা হচ্ছে। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিবাদী কোনও গোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মতেই আন্দোলনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে গোয়েন্দাসূত্রে''। বাংলা ট্রিবিউনকে রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান বলেন, ''প্রথম কথা হচ্ছে, আমি একজন বংশগতভাবে মুসলমান এবং ইমানদার মানুষ। নিজে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করি, রোজা রাখি। আমার বাবা-মা, স্ত্রী সবাই ধর্মপ্রাণ। ফলে, আমি বুঝতে পারছি আমার এই অনাকাঙ্খিত ভুলে যেকোনও মুসলমানমাত্রই কষ্ট পাবেন। আমি নিজেও এই গ্রন্থটি দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। অনুতপ্ত হচ্ছি। তওবা করছি বারবার। এরকম ভুল যেন আর না হয় আল্লাহ। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এই গ্রন্থটি এবারের বইমেলায় প্রকাশিত প্রায় ৪০টি বইয়ের প্রায় শেষ মুহূর্তের গ্রন্থ, যা আমি নারায়ণগঞ্জ বসবাসকারী কবি ওয়াহিদ রেজার অনুরোধে প্রকাশ করি। আমি বইমেলার কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, ওই সময় পর্যন্ত আমি ৩০টির মতো বই নিজে পড়েছি, দেখেছি। কিন্তু বইয়ের কাজ শেষ করার প্রায় শেষ দিকে, ওয়াহিদ রেজা অনুরোধ করেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে ইরানের একজন লেখকের একটি গ্রন্থ যেন প্রকাশ করি। আমি ওয়াহিদ রেজাকে বিশ্বাস করি। আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তার গ্রন্থও আমি প্রকাশ করেছি। কিন্তু তিনি আমাকে জানালেন, শেষ মুহূর্ত হলেও সমস্যা নেই। পুরো বইটি তিনিই দেখবেন। প্রয়োজনে দশবার প্রুফ ও সম্পাদনা করবেন''। রিয়াজ খান বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, ''এখানে বলে রাখি যে, অনুবাদকদ্বয় আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী দুজনকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং জানি না। ওয়াহিদ রেজাই আমাকে বললেন- খুব ভাল অনুবাদ করা হয়েছে। আপনি নিশ্চিত হয়ে প্রকাশ করতে পারেন এবং গ্রন্থটি স্বত্বাধিকারীও কিন্তু ওয়াহিদ রেজা''। রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশিত সেই বিতর্কিত বইয়ের লেখক আলি দাশতি'র জন্ম ১৮৯৬ সালে ইরানের বুশেহর রাজ্যের দাস্তেস্তান জেলার একটি গ্রামে। তিনি শিয়া ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন। ট্র্যাডিশনাল শিয়া ধর্মের শিক্ষা পেলেও জীবনের বিভিন্ন সময়ে আলি দাশতি পশ্চিমা দুনিয়ার সংস্পর্শ পেয়েছেন। আলি দাশতিকে বলা যায় আধুনিক ইরানের মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদের প্রাণপুরুষ। বেশ কয়েক বছর তিনি রেজা শাহ পাহলভি'র পার্লামেন্টে তিনবার সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আয়াতুল্লাহ খোমেনির বিপ্লবের সময় ১৯৭৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধারণা করা হয় যে, ১৯৮৩ সালের কোনও এক সময় বন্দি অবস্থায় তিনি মারা যান। অভিযোগ রয়েছে, খোমেনি সরকারের নির্যাতনেই তার মৃত্যু ঘটে। সত্তরের দশকে তিনি ‘বিস্ত ও সেহ সাল’ গ্রন্থটি রচনা করেন। লেবাননের রাজধানী বৈরুত থেকে গ্রন্থটির ইংরেজি সংস্করণ ‘২৩ ইয়ার্স, এ স্টাডি অব প্রোফেটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ’ নামে প্রকাশিত হয়। ফার্সিতে অভিজ্ঞ এক কওমি মাদ্রাসার লেখক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘রোদেলার দুই অনুবাদক আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী সম্ভবত ইংরেজি ভাষা থেকেই বইটির বঙ্গানুবাদ করেছেন। মূল ফার্সির ধারে কাছেও তারা যাননি। এমনকি অনুবাদকরা আলি দাশতির নামটাও ভুলভাবে লিখেছেন। তারা লিখেছেন ‘আলি দস্তি’। অথচ ফার্সিতে তার নাম লেখা ফার্সি অক্ষর শিন দিয়ে, সিন দিয়ে নয়। ইংরেজি থেকে ভুল-ভাল মেরে দিলে যা হয় আর কি!’ এমনিতে আমাদের লেখক প্রকাশকদের বাংলাদেশে কোনো একক শক্তিশালী প্লাটফরম নেই। বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু লেখক সংগঠন, কয়েকটি প্রকাশক সংঘটন রয়েছে। তবে রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির ব্যাপারে লেখক বা প্রকাশকদের কোনো সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। নামী দামী লেখক-প্রকাশকদের কেউ এখনো এ বিষয়ে কোনো রূপ বিবৃতি দেননি। সবাই মুখে এক ধরনের কুলুপ এটেছেন। তবে ব্যক্তিগত ভাবে অনেক লেখক ও প্রকাশক বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন। বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও প্রকাশ করার বিরুদ্ধে বাংলা একাডেমির এই সিদ্ধান্ত একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে বলে অনেকে মতামত ব্যক্ত করেন। যে বইটি প্রকাশক ইতোমধ্যে প্রকাশনা ও বইমেলার স্টল থেকে প্রত্যাহার করেছেন, তারপরেও বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ থাকায় এই উদ্বেগ আরো বেড়েছে। আমরা চাই, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ শিঘ্রই রোদেলা প্রকাশনীকে অমর একুশে বইমেলায় স্টল খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি প্রকাশক রিয়াজ খানের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করবে। হেফাজতে ইসলামের দৃষ্টিতে আজ রোদেলা প্রকাশনী আক্রান্ত হওয়ায় যারা মুখ বুজে আছেন, তারা যে জিনিসটি বুঝতে পারছেন না, যে কাল হয়তো সেও আক্রান্ত হবেন। নিজে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত এমন চুপ করে থাকার সংস্কৃতি বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের একটি কৌশল হিসেবে নিয়েছে অনেকে। যা মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও প্রকাশের জন্য এক ধরনের নতি স্বীকারের সামিল। একটি বিশেষ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অযৌক্তিক দাবির মুখে বাংলা একাডেমি কর্তৃক রোদেলা প্রকাশনীর উপর নেওয়া পদক্ষেপ মুক্তচিন্তার উপর আঘাতের সামিল। আমরা চাই, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ অভিভাবক হিসেবে লেখক-প্রকাশকদের পাশে দাঁড়াবে। রোদেলার স্টল খুলে দেবে এবং রোদেলার উপর আরোপিত আগামী বছরের নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেবে। যে বইটি নিয়ে আপত্তি এসেছে, সেই বইটি যেহেতু ভুল স্বীকার করে প্রকাশক নিজেই প্রত্যাহার করেছেন। এখন রোদেলা প্রকাশনী থেকে অন্যান্য লেখকদের যেসব বই প্রকাশ পেয়েছে, তারা তো এ কারণে পাঠক থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। হেফাজতে ইসলামের রাজনীতিকে সরকারি প্রশাসন কিভাবে সামাল দেবে, তার সঙ্গে বাংলা একাডেমি জড়াতে পারে না। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক জ্ঞান চর্চায় বাংলা একাডেমি যে জাতির মননের প্রতীক, কাজের মাধ্যমেই তাকে সেটি প্রমাণ করতে হবে। কারো অযৌক্তিক দাবির কাছে বাংলা একাডেমি মাথা নত করা মানে, গোটা বাঙালি জাতির মুক্তবুদ্ধি চর্চার মাথা নত করা। আমরা চাই, সরকারি প্রশাসন এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে সবাইকে জ্ঞানগৃহে অবাধ প্রবেশের সুযোগ দান করবেন। ..................................... ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১৬
false
rn
নীল শাড়ির রহস্য অমিমাংসিত You can fool some of the people all of the time,And all of the people some of the time,But you cannot fool all of the people all the time".ছোট বেলা থেকেই অনেক ভূতের বই পড়েছি,ভূতের ছবি দেখেছি।কিন্তু কোনোদিন সত্যিকার ভূত দেখলাম না,আফসোস!কত মানুষ কত কিছু দেখে বেড়ায়,শুনি।অশরীরি দেখার জন্য কত কিছুই না করেছি।সারারাত কবরস্থান এ থেকেছি,কত গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছি,কত পুরনো বাড়িতে রাত কাটিয়েছি।আমি একজন আধুনিক ছেলে।কোনো কুসংস্কার বিশ্বাস করি না।অনেকে যখন অদ্ভুত কাহিনী শুনায়,আমি তাদের ভুল গুলো কে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেই-যুক্তি দিয়ে।আমি দেখেছি গ্রামের মানুষরা বেশী কুসংস্কার বাদী হয়।তাদের অলৌকিকতা আমি বিজ্ঞান দিয়ে বুঝিয়ে দেই।কিছুদিন ধরে আমার কিছুই ভালো লাগছে না।এই ঢাকা শহর আর ভালো লাগছে না।দূরে কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে।অনেক দিন দূরে কোথাও যাই না।অনেক দিন সুন্দরবন যাই না।হঠাৎ ঠিক করলাম সুন্দরবন যাবো।সুন্দরবনের কাছে একটা গ্রামে আমার বন্ধু থাকে বাবলু।বাবলু'র বাবা-মা আমাকে অনেক আদর করেন।তারা অনেক দিন থেকে আমাকে যেতে বলছেন,সময় আর সুযোগের কারনে যাওয়া হয়ে উঠেনি।ঠিক করলাম আজ রাতের গাড়িতেই বাগেরহাট যাবো।বাসার কাউকে কিছু না বলে রাত দশটার গাড়িতে উঠে পড়লাম।আমি আগেও এরকম অনেক করেছি।বাসার সবাই আমাকে খুব ভালো চিনে জানে বুঝে কাজেই কোনো সমস্যা নাই।আমি কোনো কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারি না।আর এই জন্য আমার কোনো দুঃখও হয় না।আমি তো আর লেখক না।তাই,বুদ্ধিমানের মতো এই লেখাটা এলোমেলো হওযায় আগেই আমি আমার মূল কাহিনীতে চলে যাবো।বেশী ভনিতা করতে গেলেই ধরা খাবো।রাত তিনটায় বাস থেকে নেমে বিপদে পড়ে গেলাম।আমি যাবো রসুল পুর গ্রামে।কোনো রিকশা বা ভ্যান নেই।সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।অপেক্ষা করতে আমার কোন দিনই ভালো লাগে না।আমি হেঁটেই রওনা দিলাম। সাত মাইল,যেতে ২ ঘন্টার বেশী লাগার কথা না।আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।এক কাপ চা হলে ভালো হতো।এতো রাতে আমার জন্য নিশ্চয় কোন দোকান খোলা থাকবেনা।সুন্দর জ্যোস্না রাত।চারিদিক ফক ফকা।মাটির রাস্তা।কি সুন্দর পরিবেশ মন ভালো হয়ে যায়।রাস্তার দু'পাশে ধানক্ষেত।একটু পরপর ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে।আমি ফুরফুরা মেজাজে হেঁটে যাচ্ছি।একটা ব্যাপারে আমি নিজেই অবাক হচ্ছি-গভীর রাত আমার ভয় লাগছে না।নির্জন রাস্তা।আমি গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চলেছি-''আমি চাই তোমারে যেমনতুমি চাও তেমনি আমারে-কৃ্তার্থ হইব আশে...গেলেম তোমার পাশে,তুমি এসে বসে আছো আমার দুয়ারে।।"কতক্ষন ধরে হাঁটছি।পথ আর শেষ হয় না,ভুল পথে চলে এলাম নাকি?।হঠাৎ আমি থমকে গেলাম।দেখি একটা মেয়ে গাছের ডালে দোলনা বানিয়ে বসে আছে আর গুনগুন করে গান গাইছে-''কবে পরিবে বেলা...ফুরাবে সব খেলা,নিবাবে সব জ্বালা শীতল জল,জানিস যদি কেহ আমায় বল''।আমি কসম খেয়ে বলতে এতো সুন্দর মেয়ে আমি আগে কখনো দেখিনি।মনে মনে আমি তিন বার বলেই ফেললাম-কি সুন্দর!কি সুন্দর!কি সুন্দর!আমি সাহস করে মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়াই।মেয়েটার মাথা ভরতি চুল,চুলে অনেক গুলো ফুল গোঁজা মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছি কোন ফুলের ঘ্রান মনে করতে পাচ্ছি না,চোখে কাজল।কপালে একটা নীল টিপ।আমার মনে হলো চারপাশটা চাঁদের আলো'র চেয়ে মেয়েটার রুপের আলো বেশী অনেক বেশী।যেন চারপাশ ঝলমল করছে।আমি এখন কি করবো? আমি কি মেয়েটার পাশে বসে গল্প করবো নাকি আমার বন্ধু'র বাসায় চলে যাবো?মেয়েটাকে একা ফেলে চলে যাবো!মেয়েটা কি কোন অশরীরি বা মেয়েটার বাসা হয়তো আশে পাশেই ঘুম আসছিল না তাই এখানে বসে আছে।নাকি মেয়েটা আমাকে মেরে ফেলবে?অনেক ক্ষন চুপ থাকার পর মেয়েটা বললো-তুমি ভুল পথে চলে এসেছো,এটা রসুল পুর যাবার রাস্তা না।আমার হাত ধরো,আমি তোমাকে রসুরপুর দিয়ে আসি।মেয়েটার গলার স্বর খুব মিষ্টি।আচ্ছা মেয়েটা জানলো কি করে যে, আমি রসুল পুর যাবো?এখন আমার এতো কিছু ভাবার সময় নেই,আপাতত এই নীল শাড়ি পরা মেয়েটার পাশে থাকলেই আমি বেশী আনন্দ পাবো।মেয়েটা আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো।আহ্ কি নরম হাত।যদি একটা জীবন এই মেয়েটার হাত ধরে পার করে দিতে পারতাম!পরিশিষ্ঠভোরবেলা আমার বন্ধু'র বাবা ফযরের নামাজের জন্য অজু করতে এসে আমাকে পুকুর পাড়ে অজ্ঞান অবস্থায় আবিস্কার করেন।
false
mk
বিএনপিকে রক্ষার আন্দোলন ও লন্ডনে বসে তারেকের বাণী ( বুলি) ১) ‘আসুন বিএনপিকে রক্ষা করি’ শীর্ষক একটি লিফলেট নিয়ে হুলস্থূল চলছে বিএনপিতে। ‘তৃণমূল নেতৃবৃন্দ’র নামে গত দুই সপ্তাহ ধরে ছড়ানো হচ্ছে এ লিফলেট। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সভা-সমাবেশ চলাকালে এ লিফলেট ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে কয়েকবার। সোমবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান চলাকালেও কয়েকজনকে ভিড়ের মধ্যে লিফলেট ছুড়ে দিয়ে সরে যেতে দেখা গেছে। লিফলেটটি ছুড়ে মারার সময় দুইজনকে ধরে গণপিটুনি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে সেখানে। লিফলেটটি পড়ে দেখা গেছে, তার বিষয়বস্তু ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনে অনিয়ম। লিফলেটের শীর্ষভাবে রয়েছে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক নানা তথ্য। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের বাইরের নেতা হিসেবে নগর কমিটিতে তার অযোগ্যতা প্রমাণই লিফলেটের মূল লক্ষ্য। লিফলেটের প্রধান দাবি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব পদ থেকে সোহেলের অপসারণ ও অভিযুক্তদের প্রভাবমুক্ত হয়ে অঙ্গদলগুলোর পুনর্গঠন। সোহেলকে দিয়ে শুরু হলেও লিফলেটে আক্রমণের তীর ছোড়া হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, হাওয়া ভবনের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু ও ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের বিরুদ্ধে। হাবিব-উন নবী সোহেল ও রফিকুল ইসলাম বকুলের বিরুদ্ধেই করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ। লিফলেটে ঢাকা মহানগর, ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দলের চলতি কমিটি গঠন ও কর্মসূচি প্রণয়নে প্রভাব সৃষ্টি এবং আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য উল্লিখিত নেতাদের দায়ী করা হয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক গুম দিবসের মানববন্ধন শেষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিফলেটের বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন কয়েকজন সিনিয়র নেতা। মানববন্ধন শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার কক্ষে গেলে সেখানে জড়ো হন অভিযুক্তদের অনেকেই। এ সময় সেখানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী, শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। মির্জা আলমগীরের কাছে এ লিফলেট বিতরণকারী গ্রুপের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান নেতারা। শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, সরকারের এজেন্টরাই এ লিফলেট বিতরণ করছে। চিহ্নিত করে এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় মির্জা আলমগীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির মিটিংয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণের কথা চিন্তা করা যায়? এটা ভাল লক্ষণ নয়। এটা দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের অংশ। যে কোন মূল্যে দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। ২) বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে ধর্মের অবদান থাকতে পারে, কিন্তু ধর্মকে ভিত্তি করে কোনো রাজনৈতিক দল হতে পারে না।দেশ ও জনগণের উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের দর্শন সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান বিশ্বাস করতেন, কোনো রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। এর একটা অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনো রাজনীতি করা যেতে পারে না। ধর্মকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান আমলে রাজনীতি বিফল হয়েছে।বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্ব লন্ডনের অ্যাট্রিয়াম ব্যাংকুয়েট হলে সোমবার যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। ই-মেইল বার্তা ও অনলাইনের মাধ্যমে তাঁর এ বক্তব্য পাওয়া গেছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম কয়ছর আহমেদ।সভার শুরুতে জাতীয় সংগীত, এরপর দলীয় সংগীত পরিবেশন করে যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে 'লং ওয়াক টু ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠা, বিএনপির দর্শন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা এবং পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন তারেক রহমান।তারেক বলেন, বাংলাদেশের জনগণের কাছে জিয়াউর রহমানের গ্রহণযোগ্যতা ও বিপুল জনপ্রিয়তার কারণেই শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল কিংবা যাঁরা তাঁকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরাই জিয়াউর রহমানকে অপপ্রচারের টার্গেট করেছেন। ইতিহাস বিকৃত করছেন। তিনি বলেন, দুজন ব্যক্তি তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন হলেন মোশতাক আহমদ। অন্যজন বিচারপতি সায়েম। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিতে চাইলে এত দিন অপেক্ষা করার দরকার ছিল না। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবজনক ও সাহসী ভূমিকার কারণে জিয়াউর রহমান দেশের জনগণের কাছে প্রিয় ছিলেন।বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আহ্বানকারী জিয়াউর রহমানের কারণেই আওয়ামী লীগ এখন নিজ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। শেখ মুজিবের দীর্ঘদিনের রাজনীতির একমাত্র আদর্শ বাকশাল। যাঁরা শেখ মুজিবকে নেতা কিংবা পিতা মনে করেন, তাঁরা আওয়ামী লীগ করেন, তাঁরা তাঁদের নেতার আদর্শের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।তারেক বলেন, যাঁরা এখন বিএনপি কিংবা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অনেকেরই গৌরবজনক অংশগ্রহণ ছিল না। তাঁদের অনেকেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের কাছে স্বেচ্ছাসমর্পণের আগে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। এই তেলবাজরা এখন নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে তেল ব্যবহার করছেন। নিজেদের মতো করে তৈলাক্ত ইতিহাস রচনা করছেন।বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা হানাদারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন। ছিনিয়ে এনেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনীতিক ছিলেন। ছিলেন সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা। বাংলাদেশে তাঁর হাত দিয়েই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও তিনিই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁর মতো নেতা বিরল।তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৮ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই কর্মসূচির ওপর জনগণের আস্থা আছে কি না তা যাচাইয়ে ৩০ মে গণভোট হয়। কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ৯৮.৮৮ শতাংশ ভোট পড়ে।তারেক বলেন, জিয়াউর রহমান সামরিক আইন ও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক আইন ও ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন মোশতাক। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সামরিক আইন প্রত্যাহার করেছিলেন। তিনি দালাল আইন বাতিল করেননি।সরকারের মনি্ত্রসভার সদস্য হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের ভূমিকারও সমালোচনা করেন তারেক রহমান।সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরুদ্দিন আহমেদ অসীম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নওশাদ জমীর, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক, সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম ও আব্দুল হামিদ চৌধুরী।
false
rg
দলকানা বা ইগো সমস্যায় না ভুগে সুন্দরবন রক্ষায় মনোযোগী হন!!! রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধীতা মোটেও কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়। এটা সম্পূর্ণরূপে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, যারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের ক্ষতি করবে, ধীরে ধীরে এটি সুন্দরবনের সর্বনাশ ডেকে আনবে, সুন্দরবনের বিভিন্ন জীববৈচিত্রের ভারসাম্য নষ্ট করবে, এটা তাদের আন্দোলন। এটাকে গণহারে বাম রাজনৈতিক দলের আন্দোলন বা তেল-গ্যাস-বন্দর-জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির আন্দোলন বা শেষ পর্যায়ে বেগম জিয়া এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে বলে এটি এখন বিএনপি'র আন্দোলন, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নাই। এমন কি এটা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেও কোনো আন্দোলন নয়। এটা সুন্দরবন রক্ষা করার জন্য গণসচেতনামূলক আন্দোলন। আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার যদি মনে করে, যেহেতু সুন্দরবন রক্ষার এই আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে, তার মানে এই আন্দোলনে আগে থেকেই বিএনপি'র মৌন সমর্থন ছিল, এখন রাজনৈতিক ভাবেই এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য রামপালেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, তাহলে সেটি হবে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। 'মা'র চেয়ে মাসীর দরদ বেশি' এই ধরনের কথা বলে সরকার যদি মনে করে কেবল তারাই বাংলাদেশের মা বাকি জনগণ দেশের মাসী, তাহলে সেটাও ভুল অনুমান।বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভেতরে অন্য কোথাও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প করেন, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের ক্ষতি না করে অন্য যেখানে খুশি করেন, কিন্তু সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে বা এই প্রকল্প সুন্দরবন ধ্বংস করতে পারে, কেবল এই আশংকা থাকলেই তো এই প্রকল্প অন্য কোথাও সিফট করা উচিত। অমুকে কেন কইলো, এইবার কইরা ছাড়বো, এমন বক্তব্য কোনো ফল দেবে না। এই প্রকল্প যেহেতু সুন্দরবনের জন্য হুমকি, কেবল সেই বিবেচনায় এটাকে সরিয়ে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্পের সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। ফুলবাড়ির স্থানীয় মানুষই সেই আন্দোলন শুরু করেছিল। পরবর্তী সময় সারা দেশের মানুষ সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছিল। বিএনপি সরকারের পুলিশ ফুলবাড়ির আন্দোলনকারীদের উপর গুলি ছুড়েছিল। একসময় প্রধান বিরোরধীদল আওয়ামী লীগও সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ফুলবাড়ির আন্দোলন আওয়ামী লীগের আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পায় নাই। তারপর বিএনপি সরকার জনগণের দাবির কাছে নত হতে বাধ্য হয়েছিল। বলতে হবে বিএনপি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছিল। তখন বিএনপি সরকার ফুলবাড়ি আন্দোলনের দাবি মেনে না নিলে আরো ভয়ংকর ঘটনা ঘটত। কিন্তু ফুলবাড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না। এবার রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আন্দোলনের সময় ঘটনাচক্রে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। গোটা দেশের মানুষের প্রাণের দাবি সরকার এই প্রকল্প অন্য কোথাও সরিয়ে নিক। দেশের মানুষের প্রাণের বিট বুঝতে পেরে বিএনপি এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে। এখানে দোষের কিছু নাই। কোনো রাজনৈতিক দল সংহতি প্রকাশ করলেই সেই আন্দোলনটি তাদের হয়ে যাবে বা তাদের আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পাবে, এমনটি ভাবারও কোনো কারণ নাই। দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন রক্ষার জন্য বাংলাদেশের যে কোনো সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে পারে। তাতে দোষের কিছু নাই। বরং আওয়ামী লীগ ও সরকার যে এটা নিয়ে ঘাড় তেড়া করে এখনো ঘাউরামি করছে, এটাই একটা অশুভ ইঙ্গিত। সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এই আন্দোলনে হৃদয় দিয়ে সংহতি জানাবে। এটাই হলো বাস্তবতা। বিএনপি এই আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে সেই জন্য এর বিরোধীতা করে রামপালেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, সরকারের এমন মনোভাবের মধ্যে রাজনীতি থাকলেও দেশের মঙ্গলের বা কল্যাণের চিন্তা নাই। বাংলাদেশের মানুষ কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কাছে নিজেদের সারা জীবন বন্দক দেয় নাই। সরকারের সকল কর্মকাণ্ডকে দেশের মানুষ নিশর্ত সমর্থন দেবে এমনটি ভাবারও কোনো কারণ নাই। ভোটের সময় যে কোনো রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়ে বা সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলেই সেই দল দেশের একক মালিক হয়ে যায় না। দেশের মালিক সবসময় দেশের সাধারণ মানুষই থাকে। এই ন্যূনতম কমোন সেন্স যদি সরকারের ভেতরে কাজ না করে, তাহলে সুন্দরবনকে সত্যি সত্যি বাঁচানো যাবে না। কারণ একটি স্বার্থন্বেসী মহলের সুন্দরবনের সম্পদের উপর শকুন চোখ পড়েছে। সুন্দরবনের হাজার কোটি টাকার সম্পদকে এভাবে খোলা আকাশের নিচে রেখে তাদের ঘুম হারাম হচ্ছে। এরাই সরকারকে যত ধরনের তেলমর্দন সম্ভব তাই করে যাচ্ছে। এরাই সুন্দরবন শিল্পাঞ্চলে নিজেদের অবকাশ যাপনের পায়তারা করছে। এই সিন্ডিকেট এমন শক্তিশালী যে সরকারকে তারা ভালোই জাদু করে নিজেদের স্বপ্নকে কৌশলে বাস্তবায়নের কাজে লিপ্ত হয়েছে। যা সরকার আমলে নিতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের কথাও যদি হিসেবে না ধরি, এই বন যে প্রতি বছর বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে রক্ষা করছে, ঘূর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাথমিক ধাক্কা যে সুন্দরবন নিজেই প্রতিরোধ করে বাংলাদেশকে রক্ষা করছে, সুন্দরবনের কেবল এটুকু অবদানের জন্যই আমাদের উচিত এই প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে রক্ষা করা। এটা নিয়ে খামাখা রাজনীতিতে জড়িয়ে এটাকে ধ্বংস করা মোটেও মনুষ্য সভ্যতার কাজ হতে পারে না। ভারতের সঙ্গে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কেমন বৈষম্যমূলক চুক্তি হয়েছে, সেই চুক্তি কতোটা দেশবিরোধী, সেই আলোচনায় যদি নাও যাই, যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি অন্তত এটুকু হিসাব করতে জানে যে, ভারতের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পের ৭০ ভাগ খরচ দেবে। বাকি ৩০ ভাগের ১৫ ভাগ বাংলাদেশ ও ১৫ ভাগ ভারত বহন করবে। কিন্তু প্রকল্প থেকে লাভ বা সুবিধা ভোগ করবে উভয় দেশ ৫০ ভাগ করে। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে কেবল বাংলাদেশের। আবার এই প্রকল্প থেকে সব ধরনের ঝুঁকিও বহন করবে কেবল বাংলাদেশ। এই চুক্তির কেবল এটুকু বিশ্লেষণ করলেই এটাকে দেশ বিরোধী চুক্তি হিসাবে আখ্যা দেওয়া যায়। একটি দেশের সরকার কতটা অসহায় হলে এমন একটি বৈষম্যমূলক চুক্তি করতে রাজি হয়! আবার সেই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে যেখানে সুন্দরবনের মত আমাদের একটা জাতীয় সম্পদ ধ্বংস হবার আশংকা আছে। সেখানে তেমন একটি চুক্তি করার পেছনে অন্য কোনো সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র আছে। যা সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন বা বৈষম্যমূলক চুক্তি বা সরকার বনাম বিরোধী দলের কোনো আলোচনায় নেই। সেই অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের আড়ালেই সরকার এখন নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা নষ্ট করার খেলায় মেতে উঠেছে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা কোনো চিরস্থায়ী বিষয় নয়। আজ যে সুপার ডুপার জনপ্রিয়, কাল সে খলনায়ক হতে পারে যে কোনো দেশ বিরোধী কাজের অছিলায়। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মালিক বনে যায় নাই। সুন্দরবন আওয়ামী লীগের একক কোনো সম্পত্তি নয় যে তা নিয়ে তারা যা খুশি তাই করতে পারবে। বাংলাদেশের মানুষ জানে কীভাবে আন্দোলন করতে হয়। কীভাবে আন্দোলন করলে সুপার ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারও পিছু হটে, তা বাংলাদেশ জানে, বাংলাদেশের মানুষ জানে। কেউ যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়, তাহলে তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। এখন ভারতের জনগণের উচিত তাদের সরকারকে বোঝানো যে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প যদি তারা করতে চায়, বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে আরো বেশি ভারত বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হবে। প্রতিবেশি দুইটি দেশের জনগণের মধ্যে এমন বৈরি মনোভাব কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। ভারত সরকার যদি রামপাল ইস্যু দিয়ে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টির পায়তারা করে, সেটিও বাংলাদেশের মানুষের বুঝতে বেশি দেরি হবার কথা নয়। বাংলাদেশের মানুষের হার্টবিট বুঝতে পেরে ভারত সরকারের এখন উচিত এই প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়া বা প্রত্যাহার করা। এটাই হতে পারে প্রতিবেশি দেশের জনগণের প্রতি ভারত সরকারের বন্ধুত্বের নিদর্শন। আর যদি সেরকম কিছু না হয় এবং আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার রামপালেই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল শক্তি নিয়োগ করে, তাহলে বুঝতে হবে সরকার নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছে। তাদের পতন ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষের আন্দোলন করতে হবে না। ভবিষ্যতে ভোটের বাক্সেই তার প্রতিদান পাবে। কারণ পুলিশের গুলির মুখে হয়তো সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন একসময় সরকারের জবরদস্তির কাছে থেমে যাবে, কিন্তু মানুষের মন থেকে দেশের জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করার জন্য কেউ হয়তো এই সরকারকে আর ক্ষমা করবে না। এই সরকারের অনেক ভালো কাজের প্রতি দেশের মানুষের যেমন অকুণ্ঠ সমর্থণ রয়েছে তেমনি তারা যদি অন্যায় কিছু চাপিয়ে দিতে চায়, তার প্রতি বিরোধীতা করার মনোভাবও দেশের মানুষের রয়েছে। ক্ষমতা কোনো চিরস্থায়ী বিষয় নয়, যে জনগণকে উপেক্ষা করে যেন তেন ভাবেই ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও ক্ষমতার চিরস্থায়ী ব্যাপারটি নাই। অটোমান সাম্রাজ্যও ছয়শো বছরের মাথায় ভেঙে গেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য ডাইনেস্টির পতন ঘটেছে। আমরা এখনো বিশ্বাস করতে চাই, প্রয়োজনে সরকার দেশের ও বিদেশের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের উপর সমীক্ষা করুক। যাচাই বাছাই করুক। কোনো ধরনের লুকোচুরির আশ্রয় না নিয়ে সকল বৈজ্ঞানিক দিক বিবেচনায় নেবার পরেও জনগণের সমর্থন নেবার বিষয়টি খুবই জরুরি। দেশের জনগণ যদি না চায় সেটি জোর করে সরকারের করার কোনো এখতিয়ার নাই। সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, সুন্দরবন রক্ষা করার দায়িত্ব দেশের সকল নাগরিকের এমন কি সরকারেরও কর্তব্য। দেশের জনগণকে উপেক্ষা করে সুন্দরবন ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়নের যে কোনো ধরনের প্রচেষ্টা হবে আগামী বাংলাদেশের জন্য একটি কলংকের ইতিহাস। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি কলংক করবেন নাকি শুভ বুদ্ধি বিবেচনায় সুন্দরবন রক্ষায় মনস্থ হবেন। অপ্রয়োজনীয় শিবের গীত না শুনিয়ে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করুন। নইলে বাংলাদেশের জনগণই এই প্রকল্প ছুড়ে ফেলবে! অতএব সাধু সাবধান।...................................২৮ আগস্ট ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৫:৫০
false
hm
সুখের রূপকথা সত্তরের কোঠায় পা দিয়েও বেশ টনকোই আছে বুড়োটা, আমার মুখোমুখি বসে, এই ধোঁয়ায় ঢাকা পানশালায়। তার চুলগুলোতে যেন তুষার জমেছে, আর চোখগুলো ঝকঝক করছে বরফ ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করা পথের মতো। 'ওহ, লোকগুলো আহাম্মক বটে!' বললো সে মাথা ঝাঁকিয়ে, আর আমার মনে হলো, এই বুঝি তার চুল থেকে তুষারকণা ঝরে পড়বে। 'সুখ তো কোন যাদুসসেজ নয়, যে রোজ ওর থেকে লোকে এক এক টুকরো কেটে নেবে!' 'ঠিক!' বলি আমি। 'সুখ অত সস্তা মাল না। যদিও .. ..।' 'যদিও?' '.. .. যদিও এখন আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, ঘরে আগুনের ওপর আপনার কয়েক চিলতে সুখ শুকোতে দেয়া আছে?' 'আমার কথা আলাদা,' বললো বুড়ো, আর এক ঢোঁক গিলেও নিলো, 'আমি আলাদাই। আমি হচ্ছি সেই লোক, যার একটা ইচ্ছে এখনও পূরণের জন্যে পড়ে আছে!' আমার মুখটা আগে খুঁটিয়ে দেখে নিলো বুড়ো। 'অনেক আগের কথা,' নিজের দু'হাতে মাথাটাকে সঁপে দিয়ে শুরু করলো সে, 'অনেক আগের। চল্লিশ বছর। তখন আরো চ্যাংড়া ছিলাম, আর ভুগছিলাম জীবনটাকে নিয়ে, যেভাবে লোকে ফোলা গাল নিয়ে ভোগে। বসে ছিলাম সেদিন, এক দুপুরে, তিতিবিরক্ত হয়ে একটা পার্কের বেঞ্চে বসে ছিলাম, এমন সময় পাশে বসে থাকা বুড়োটা বললো, যেন ওর সাথে আমার অনেকক্ষণের আলাপ, তা বেশ তো, আমরাও ব্যাপারটা ভেবে দেখেছি। তোর তিনটে ইচ্ছে পূরণ করা হবে। আমি আমার খবরের কাগজের দিকেই চেয়ে রইলাম, যেন কিছুই শুনিনি। কিন্তু বুড়োটা বকে চললো, ভেবে নে, কী চাই তোর। সবচে' সুন্দরী মেয়েটা, নাকি সবচে' বেশি টাকা, নাকি সবচে' বড় গোঁপ .. .. যা তোর খুশি। কিন্তু শেষতক খুশি হওয়া চাই, বুঝলি? তোর এই ভাল্লাগেনা-ভাব আমাদের আর ভাল্লাগে না। বুড়োটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো, সাদা পোশাকে সান্তা ক্লজ বুঝি। একমুখ সাদা দাড়ি, আপেলের মতো টুকটুকে দু'টো গাল, শিমুলতুলোর মতো ভুরু। পাগলছাগল নয়। বোধহয় বেশ খানিকটা খোশমেজাজি। ব্যাটাকে আগাপাস্তলা খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে আমি আবারও আমার কাগজে মন দিলাম। বুড়োটা বললো, তোর তিনটে খায়েশ নিয়ে তুই কী করবি, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তবে যদি এ ব্যাপারে আগে থেকে একটু ভেবে রাখিস, তাহলেও কোন ভুল হবে না। দেখিস, তিনটে ইচ্ছে কিন্তু চারটা বা পাঁচটা নয়, ঠিক তিনটে। আর এর পরও যদি তুই অমন ব্যাজার হয়ে থাকিস আর হিংসুটেপনা করিস, তাহলে কিন্তু আমরা তোকে আর সাহায্য করতে পারবো না বাপ। আমি জানি না, আপনি নিজেকে আমার জায়গায় কল্পনা করতে পারছেন কি না। ভাবুন একবার, আমি একটা বেঞ্চে বসে, এই দুনিয়া আর খোদাতালার ওপর চরম বিরক্ত .. .. দূরে ট্রাম যাচ্ছে টিং টিং করে, প্যারেডের পোলাপান হাত পা ছুঁড়ছে আর ট্রাম্পেট ফুঁকছে, আর আমার পাশে বসে বাকোয়াজ করে যাচ্ছে কেবল ঐ ব্যাটা হতচ্ছাড়া!' 'আপনি চটে গেলেন খুব?' বলি আমি। 'চটলাম। আমার মনে হচ্ছিলো, আমি একটা ফাটো ফাটো বয়লার। আর যখন বুড়োটা তার অমন তুলোটে দাদু দাদু মুখটা খুললো, নতুন কিছু বকবার জন্যে, আমি গর্জে উঠলাম, রীতিমতো কাঁপছিলাম রাগে, বেশ তবে, আমি আমার একমাত্র ইচ্ছা, আমার অন্তরের অন্তস্থলের ইচ্ছাটি মুখে বলছি, যাতে করে আপনি, ব্যাটা বুড়ো গাধা, আমাকে আর তুইতোকারি করতে না পারেন .. .. আপনি জাহান্নামে যান! জানি, ওভাবে বলাটা ভদ্র বা মার্জিত নয়, কিন্তু আমি একেবারেই নিরুপায় ছিলাম, ওভাবে না বললে আমি ঠিক রাগে কাবু হয়ে পড়তাম।' 'তারপর?' 'কী তারপর?' 'সে চলে গেলো?' 'ওহ্! .. .. গেলো তো বটেই! উধাও হয়ে গেলো যেন। তখনই। বাতাসে মিলিয়ে গেলো যেন। আমি এমনকি বেঞ্চের নিচেও উঁকি মেরে দেখলাম। সেখানেও ছিলো না ব্যাটা। আর আমি ভ্ভীষণ ভয় পেলাম। এই ইচ্ছে পূরণের ব্যাপারটা তাহলে সত্যি! আর প্রথম ইচ্ছেটা পূরণ করা হয়ে গেছে! বাপ রে! আর যদি সত্যিই ইচ্ছেটা পূরণ করা হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই সেই শান্ত, শিষ্ট, ভদ্র দাদুটা, যার দাদুই হওয়ার কথা, এখন কেবল চলেই যায়নি, কেবল আমার বেঞ্চ থেকেই উধাও হয়ে যায়নি, গেছে তো গেছে, একেবারে জাহান্নামে! খোদ শয়তানের কাছে! আমি নিজেকে বোঝালাম, গাধামি করো না। জাহান্নাম বলে কিছু নেই, আর শয়তান বলেও নেই অমন কিছু। কিন্তু, এই তিনটে ইচ্ছে কি তবে পূরণের জন্যে রয়েছে? আর, সেই বুড়োটা তো উবে গেছে, যদিও ওভাবে যাক, তেমনটা আমি চাই নি .. .. আমার কালঘাম ছুটে গেলো। হাঁটু কাঁপতে লাগলো আমার ঠকঠকিয়ে। কী করা উচিত আমার? সেই বুড়োটাকে এখুনি আবার এখানে ফিরতে হবে, চাই জাহান্নাম থাকুক আর না থাকুক। আমারই দোষে সে এখন উধাও। এখন আমাকে আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে কাজে লাগাতে হবে, তিনটের মধ্যে দু' নম্বরটা, হায় রে, এমনই বলদ আমি! নাকি ব্যাটা যেখানে আছে, সেখানেই থাকবে, সেখানেই তাকে রয়ে যেতে দেবো, সেই টুকটুকে আপেলের মতো গাল দুটো নিয়ে? আপেলের কাবাব, ভাবলাম আমি, আর কেঁপে উঠলাম। আমার আর কোন গতি ছিলো না। আমি চোখ বন্ধ করলাম, আর ভয়ে ভয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম, আমার ইচ্ছে, সেই বুড়োটা আবার আমার পাশে এসে বসুক! ভাবতে পারেন, আমি বছরের পর বছর ধরে, এমনকি এখনো মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে নিজেকে গালমন্দ করি, কেন ওভাবে আমার দ্বিতীয় ইচ্ছেটাকে নষ্ট করলাম, তবে তখন আমি অন্য কোন উপায় দেখিনি, আসলে অন্য কোন উপায় ছিলোও না .. ..।' 'তারপর?' 'কী তারপর?' 'বুড়ো ফিরে এলো?' 'ওহ্! .. .. এলো তো বটেই! তৎক্ষণাৎ। সে আবারও আমার পাশে বসলো, যেন সে অমনই বসে ছিলো। তবে তাকে দেখে বোঝা গেলো, যে সে এমন কোথাও ছিলো, যেখানে কি না খুব ভুগেছে বেচারা, মানে .. .. খুব গরম কোনও জায়গায়। হ্যাঁ, ঠিক তাই। তার সেই ঝোপালো সাদা ভুরু দুটো একটু ঝলসে গেছে, দাড়িটাও কুঁকড়ে আছে একটু, কিনারার দিকে বিশেষ করে। আর তার গা থেকেও সেঁকা হাঁসের মতো গন্ধ বেরোচ্ছিলো। আমার দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে ছিলো বেচারা। তারপর বুকপকেট থেকে একটা চিরুনি বার করে নিজের দাড়ি আর ভুরু আঁচড়ালো সে, আর খোনা গলায় বললো, শুনুন ভাই, কাজটা কিন্তু আপনি ভালো করলেন না। আমি আমতা আমতা করে মাপ চাইলাম, বললাম যে তিনটে ইচ্ছের কথা আমি মোটেও ভেবে দেখিনি, আর নিজের ভুল বুঝতে পেরে তো যথাসম্ভব ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করেছি। তা অবশ্য ঠিক, বললো বুড়ো। এতো অমায়িক মুচকি হাসলো সে, যে আমার চোখে পানি চলে আসার জোগাড়। তবে হয়েছে কি, এখন আপনার কেবল একটি মাত্র ইচ্ছে বাকি, বললো সে, তৃতীয়টা। আশা করি এটার ব্যাপারে আপনি আরেকটু সাবধানে থাকবেন। আমায় কথা দিন, সাবধানে থাকবেন? আমি ঢোঁক গিলে মাথা নাড়লাম, নিশ্চয়ই, কিন্তু আপনি আমাকে তুমি তুমি করে বলুন। এবার বুড়ো হেসে ফেললো। বেশ তো, বাছা, আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো সে, ভালো থাকো। মনমরা হয়ে থেকো না। আর তোমার শেষ ইচ্ছের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। আমি এবার খুশি হয়ে বললাম, আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি। আর এরপর বুড়ো চলে গেলো, যেন হাওয়ায় মিশে গেলো একেবারে।' 'তারপর?' 'কী তারপর?' 'সেদিন থেকেই আপনি সুখী?' 'ওহ্! .. .. সুখী?' আমার পার্শ্ববর্তী উঠে দাঁড়ালো, হুক থেকে নিজের টুপি আর কোট খুলে নিলো, ঝকঝকে চোখে আমাকে তাকিয়ে দেখলো কিছুক্ষণ, তারপর বললো, 'আমার শেষ ইচ্ছেটাকে আমি গত চল্লিশ বছরে আর ঘাঁটাইনি। মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয়েছে, চাই কিছু একটা। কিন্তু না। ইচ্ছেগুলো ততক্ষণই সুন্দর, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের কিছু একটা চাইবার রয়ে যায়। ভালো থাকবেন।' আমি জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলাম, রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছে সে। তাকে ঘিরে চারপাশে তুষারকণাগুলো যেন নাচছে। আর আমাকে বলতে একদম ভুলে গেছে সে, বাস্তবিক সে একটু হলেও সুখী কি না। নাকি সে ইচ্ছে করেই আমাকে উত্তরটা দিলো না? স্বাভাবিক, অমনও তো হতে পারে। মূল জার্মান, এরিখ কেস্টনার-এর ডাস মেয়ারশেন ফম গ্লুয়ক থেকে অনূদিত। প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর ২৬, ২০০৪। পুরনো পোস্ট।
false
rg
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বাঁচাতে চাই সমুন্নত যৌথ উদ্যোগ। বোর্ড, সরকার, খেলোয়াড়, দর্শক সবার এই যাত্রায় শরিক হওয়া জরুরী!!! বাংলাদেশে সম্ভবত শুধুমাত্র ক্রিকেটই এখন একমাত্র একটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। বাংলাদেশ যেদিন ভালো ক্রিকেট খেলে, সেদিন গোটা বাংলাদেশ আনন্দে নেচে ওঠে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যেদিন খড়া যায়, সেদিন গোটা বাংলাদেশ কষ্ট পায়। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল যখন বাইরে খেলতে যায়, গোটা বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়েই যায়। আর ঘরের মাঠে তো গোটা বাংলাদেশই সারাক্ষণই অপেক্ষায় থাকে কখন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান একটা চার মারল, কখন একটা ছয় মারল, কে সেঞ্চুরি করল, কখন একটা বিপক্ষ দলের উইকেট পড়ল, এসব দেখার জন্য। বাংলাদেশের হৃদয় এখন ক্রিকেট। বাংলাদেশের ক্রিকেট যেখানেই যায়, সেখানেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ওড়ে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ওড়ে খুব গর্বের সঙ্গে। খুব মর্যাদার সঙ্গে। অথচ সেই ক্রিকেটের সামনে যখন দারুন এক ক্লান্তিময় সময়, নতুন এক ক্রিকেটীয় রাজনীতি'র খপ্পরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করার পায়তারা চলছে, তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের কর্মকাণ্ড আমাদের দারুনভাবে হতাশ করেছে।আমাদের টেস্ট স্টাটাস কেড়ে নেবার জন্য ক্রিকেটের তিন মোড়ল ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড এক নতুন ফর্মুলা আবিস্কার করেছে। কারণ, বাংলাদেশ এখন এই মোড়লদেরও ক্রিকেটে ছেড়ে কথা বলে না। খেলতে নামে কোমড়ে শক্তি নিয়ে। লড়াই করে সমানে সমান। হয়তো সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশও ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতবে। আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ এই কাজটি খুব শিঘ্রই করে দেখাবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু আমরা খুব দুঃখের সঙ্গে খেয়াল করলাম, বাংলাদেশের ক্রিকেটের যারা কর্তা ব্যক্তি, তাদের কোথায় যেনো একটা মনের টানের অভাব আছে। ক্রিকেটকে তারা টাকার অঙ্কে হিসাব করা শিখেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডে এখনো ওই ২০ জন পক্ষে মতামত দেওয়া কর্মকর্তা কিন্তু বহাল তবিয়তে পদে আছে!!এক সময় কেনিয়া আমাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলত। কেনিয়ার ক্রিকেট আমাদের চেয়েও অনেকটা মজবুত, টেকসই আর রাজকীয় ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ওয়ান ডে/টেস্ট স্টাটাস না পাওয়ায় কেনিয়ার ক্রিকেট আর উন্নত হতে পারল না। কেনিয়ার ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক দূতিয়ালিতে ব্যর্থতার কারণে তারা এই পেছনেই থেকে গেল। কিন্তু আমরা ক্রিকেট দূতিয়ালিতে সমানে পাল্লা দিয়ে লড়াই করে ওয়ান ডে/টেস্ট স্টাটাস আনতে পেরেছি। আমাদের এই স্টাটাসের কারণেই আমাদের ক্রিকেটের ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি আমরা স্পন্সর থেকে শুরু করে সকল বিষয়ে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন সকল সুবিধা আদায় করতেও সক্ষম হই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই আমরাই এখন আমাদের ক্রিকেটকে টাকার কাছে বলি হবার আয়োজন করছি!!! ক্রিকেট যারা বোঝে, ক্রিকেট দূতিয়ালি যারা বোঝে, ক্রিকেট ব্যবস্থাপনা যারা বোঝে, আমরা কেন তাদের বোর্ডে রাখতে পারি না? আমাদের স্টাটাস আনার পেছনে যারা সেদিন অবদান রেখেছিলেন, তারা আজ কোথায়? তারা কেন রাজনীতি'র দুষ্টু খপ্পরের বলি হবেন?? ক্রিকেটকে কেন আমরা অযোগ্য, অপেশাদার, অব্যবস্থাপকদের হাতে তুলে দেব??? অমুককে খুশা করার, তমুককে পদে রাখার, অমুককে ভোট প্রদানের ক্ষমতা দেওয়ার, এ কোন অপসংস্কৃতি আমাদের ক্রিকেটেও ভর করল? ক্রিকেট যারা বোঝে না, তাদের ক্রিকেট বোর্ডে কামটা কি শুনি???এসব অপদার্থদের এখনই ঝেটিয়ে বিদায় করার সময়। নইলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সামনে কঠিন দুর্দিন আসবে। আমাদের একটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে। এখনো সেখানে কোনো পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী নেই। ক্রিকেটের তিন মোড়ল যখন আইসিসিতে এসব কূট পরামর্শ/প্রস্তাব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, তখন রাষ্ট্রের উচিত আমাদের ক্রিকেটের পাশে দাঁড়ানো। শ্রীলংকা একবার আমাদের মত ক্রিকেটীয় খপ্পরে পড়েছিল। তখন শ্রীলংকার সরকার ক্রিকেটের পাশে দাঁড়ানোর উদাহরণ আমরা জানি। আমাদের ক্রিকেট বোর্ড আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবার কথা! তারা কিভাবে নাকে তেল মেরে ঘুমায়??? ক্রিকেট দুনিয়া তো বেশি বড় নয়। মাত্র দশটি দেশের স্টাটাস আছে। এই দশটি দেশের ক্রিকেট বোর্ড ও সরকারকে কেন আমরা আমাদের সামর্থ দিয়ে দূতিয়ালি করছি না। তিন মোড়লের এই অশুভ প্রস্তাব পাশ করতে অন্তত ৮টি ভোট লাগবে। সেই ভোটাভুটি যাতে না হতে পারে, আমরা কেন যুক্তিসঙ্গত কারণ নিয়ে তাদের বোঝাতে উঠে পড়ে লাগছি না?বাংলাদেশে ক্রিকেটের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা এখন আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের দর্শক আছে। আমাদের স্পন্সর আছে। আমাদের মাঠ আছে। আমাদের মিডিয়া আছে। আমাদের ক্রিকেটের প্রতি অসীম ভালোবাসা আছে। যা উপেক্ষা করার ক্ষমতা আইসিসি'র নেই। এটা ওই দেশগুলো'র ক্রিকেট বোর্ড ও সরকারকে বোঝানোটা কি কোনো কঠিন ব্যাপার? নইলে আমরা ক্রিকেটে আর কীসের স্বপ্ন দেখব?আসন্ন বাংলাদেশ-শ্রীলংকা টেস্ট ও ওয়ান ডে ম্যাচে বাংলাদেশের সকল দর্শককে মাঠে একটি দাবী নিয়েই হাজির হবার জন্য আমার আহবান থাকবে। তিন মোড়লের এই কুকীর্তি আমরা মানি না। আমরা স্টাটাস নিয়ে, সম্মান নিয়ে, ভালোবাসা নিয়েই ক্রিকেট খেলতে চাই। ক্রিকেট খেলে মোড়লদের হারিয়ে আমাদের বিজয় কেতন উড়িয়ে দেখাতে চাই, যে আমরাও পারি। সেই বিজয় মিশনে, সেই স্বপ্নযাত্রায় প্রতিটি দর্শক, প্রতিটি খেলোয়াড়, প্রতিটি কলাকুশলী'র সমান অংশগ্রহন এখন খুব প্রয়োজন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে বিসিবিকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডকেই প্রমাণ করতে হবে, তারা অথর্ব নয়। যারা এই কাজটি পারেন, তাদের নিয়ে নতুন করে বোর্ড এখনই ঢেলে সাজানো হোক। অথর্বদের বোর্ডে কোনোই দরকার নেই। এই অথর্বদের হাততালিতেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এক নতুন অশণি সংকেত। এদের এখনই ঝেটিয়ে বিদায় করা হোক। উল্লেখ্য, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির তিন ‘শক্তিধর’ দেশ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটকে ‘আকর্ষণীয়’ করার অভিপ্রায়ে দ্বি-স্তরবিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ ও ১০ নম্বর দলকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে খেলার প্রস্তাব করেছে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড কোনো এক অদ্ভুত কারণে তিন মোড়লের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। এখন যদি আইসিসি ক্রিকেটের তিন মোড়লের টেস্ট ক্রিকেটের এই প্রস্তাব পাস করে, তাহলে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ থাকবে। থাকবে টেস্ট মর্যাদাও। কিন্তু এই প্রস্তাব পাশ হলে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারবে না বাংলাদেশ! আমরা ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের এই মোড়লসুলভ প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও বিসিবিকে এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার জন্য জোড়ালো অনুরোধ জানাই।প্রস্তাবিত ২১ পাতার খসড়ায় অনুচ্ছেদ আছে ছয়টি। ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর পয়েন্টের শিরোনাম—‘আইসিসি র‌্যাঙ্কিং সিস্টেম’। এখানে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সময়কালে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ ও ১০ নম্বর দলকে খেলতে হবে আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে। আইসিসির শীর্ষ সহযোগী দেশগুলোর অংশগ্রহণে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচের টুর্নামেন্ট এই ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ। বর্তমান টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ৯ নম্বরে আছে জিম্বাবুয়ে, ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দশ নম্বরে বাংলাদেশ। র‌্যাঙ্কিংয়ের আটে থাকা নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট ৮২, সাতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৮৭। বছর শেষেও যে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ নয় ও দশ নম্বরে থাকবে, সেটি প্রায় নিশ্চিত। টেস্ট ক্রিকেটের বদলে এই দুই দেশকেই তাই চার দিনের ম্যাচ খেলতে হবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে। সর্বশেষ (২০১৩) এই টুর্নামেন্টে খেলেছে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড, আরব আমিরাত, নামিবিয়া, কানাডা, কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস। সহযোগী এই আট দেশের সঙ্গে এখন শিরোপা যুদ্ধে নামতে হবে পূর্ণ সদস্য দুটি দেশকে!ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে শিরোপাজয়ী দল এরপর চ্যালেঞ্জ টেস্ট সিরিজ খেলার সুযোগ পাবে ওই সময় টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের আটে থাকা দলের বিপক্ষে। দুটি করে টেস্ট ম্যাচের দুটি সিরিজ হবে ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ পদ্ধতিতে। এই চ্যালেঞ্জ সিরিজে জয়ী দেশ অষ্টম দল হিসেবে খেলার সুযোগ পাবে টেস্ট ক্রিকেট। হেরে যাওয়া দলকে খেলতে হবে পরবর্তী ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে। ২০১৫ থেকে ২০২৩, এই আট বছর সময়কালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ হবে দুটি। নতুন নিয়মের প্রথম ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের শিরোপা নির্ধারিত হবে ২০১৯ সালে। যদি আইসিসি এটা পাশ করে তাহলে এ বছরের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত অন্তত আর টেস্ট খেলতে পারবে না বাংলাদেশ।তিন মোড়লের এই অশুভ প্রস্তাবের বাইরে আরেকটি বিষয়ও ছায়ার মত জড়িত। ধরুন, বাংলাদেশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে শিরোপাজয়ী দল হল। তারপর কি হবে? আট নম্বরে থাকা নিউজিল্যান্ডের সাথে এরপর ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ পদ্ধতিতে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। তখন যদি নিউজিল্যান্ড আবার নিরাপত্তার অযুহাত তুলে বাংলাদেশে খেলতে আসতে না চায়, তখন কিন হবে? নিউজিল্যান্ডের হোম গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ গিয়ে খুব একটা সুবিধা কি করতে পারবে? যেখানে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড এই তিন মোড়ল গিয়েও এখনো ধরা খায়। তো নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশ হেরে আসল, আর নিউজিল্যান্ড নিরাপত্তা বা অন্য কোনো অযুহাত তুলে বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে আসলো না। তখন কি হবে? মানে এই কুপ্রস্তাবের মধ্যে অনেক খারাপ নষ্ট রাজনীতি আছে। আমাদের বোর্ডকে সেটা শতভাগ বুঝে নিয়ে লড়াইটা করতে হবে। হেরে গেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিদায় ঘণ্টা বাজবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পররাষ্ট্র নীতিই যারা বোঝে না, তারা কি ক্রিকেটের এই রাজনীতি নিয়ে লড়াই করতে পারবে? সেই প্রশ্নের চেয়ে সবচেয়ে বড় জরুরী এখনই সরকারের উচিত আামাদের ক্রিকেটের পাশে দাঁড়ানো। নইলে সময় ফুরিয়ে গেলে কাচকলায়ও কাম হবে না। আর এখনই বোর্ড থেকে সব অপদার্থদের বিদায় করা হোক। হাততালি মারার জন্য বোর্ডের চেয়ার দখলে রাখার কোনো সুযোগ যদি রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতির আড়ালে বাসা বাধে, তাহলে বুঝতে হবে, আমাদের ক্রিকেট ধ্বংস করার জন্য এই তিন মোড়লের দরকার নেই, আমরা নিজেরাই সেটা করে দেখিয়ে দেব।জয় হোক বাংলাদেশের ক্রিকেটের। জয় হোক ক্রিকেটর শুভ উদ্যোগের। ক্রিকেটের সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ। ।
false
fe
‘পলিটিকস ইজ দ্য ব্যাটেলস অব আইডিয়াস’ ‘পলিটিকস ইজ দ্য ব্যাটেলস অব আইডিয়াস’ফকির ইলিয়াস==========================================প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পলিটিকস ইজ দ্য ব্যাটেলস অব আইডিয়াস’। রাজনীতি মানেই ধ্যান-ধারণা বিকাশের যুদ্ধ। যা মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে। শিকাগোতে দেয়া প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রায় ৫৫ মিনিটের শেষ ভাষণ মনোযোগ দিয়ে শোনলাম। তিনি বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলেছেন প্রায় ৮ মিনিট। বলেছেন, ২০ বছর আগে এই আমেরিকায় যেমন বর্ণবাদ ছিল, এখন আর তা নেই। কিন্তু আমরা আরো উন্নতি চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমরা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিচার করেছি। কিউবার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছি। পরমাণু বোমার প্ল্যান্ট বন্ধ করেছি।তিনি বলেন, আমরা অনেক জব ক্রিয়েট করেছি। বলতে পারি, একটি আশাবাদী আমেরিকা রেখে যাচ্ছি। ওবামা বলেছেন, আর মাত্র ১০ দিন বাকি। দশ দিনের মাঝেই বিশ্ব দেখবে পরিবর্তন। নতুন প্রেসিডেন্ট আসছেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তনে বিশ্বাসী। সেটাই হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি একটি সম্মানিত, ধনবান, শক্তিশালী আমেরিকা রেখে যাচ্ছি আমার প্রজন্মের জন্য। আমরা একসঙ্গে দাঁড়াই। সুখে-দুঃখে গলাগলি করে থাকি। এটাই আমাদের সংস্কৃতি।ওবামা বলেন, আমি আপনাদের গর্বিত কমান্ডার ইন চিফ। নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যতেও সেই দায়িত্ব পালন করে যাব। আমি জানিয়ে রাখি, আইসিস এই বিশ্ব থেকে নিশ্চিহ্ন হবেই। তিনি বলেন, আমি আমার কন্যাদের গর্বিত পিতা। আমি মিশেলের কাছে ঋণী। কারণ তিনিই আমাকে সাহস দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছেন। ওবামা চলে যাচ্ছেন। তিনি অবসরে গিয়েও হয়তো অনেক অজানা কথা নিয়ে আত্মজীবনী লিখবেন। এভাবে বুশও লিখেছিলেন। ইরাকে কোনো আণবিক বোমা পাওয়া যায়নি- এই ঘোষণা খোদ বুশই দিয়েছিলেন তার বইয়ে। জর্জ বুশের বই ‘ডিসিশনস পয়েন্ট’ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়েছে মার্কিন মুলুকে। দুঃখ প্রকাশ করে ইরাক সম্পর্কে বুশ লিখেছেন, ‘সাদ্দামের পতনের পর যখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল তখন আমাদের উচিত ছিল খুব দ্রুত এবং আক্রমণাত্মকভাবে বিষয়টিকে মোকাবেলা করার।’ তার মতে, ‘দ্রুত সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে নেয়াটাই ছিল যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।’তবে ইরাকে যে গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি সে বিষয়ে তার মনের ভেতর সব সময় একটা ‘বিরক্তিকর অনুভূতি’ কাজ করছে। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন যে, সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা যুক্তিযুক্ত ছিল। ‘আমেরিকা এখন নিরাপদ। সাদ্দাম ছিল একজন বিপজ্জনক স্বৈরাচার, যে গণবিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদে মদদ জোগাচ্ছিল।’ অথচ এটা সবার জানা, গাদ্দাফি কিংবা সাদ্দাম এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের খুব পেয়ারা ছিলেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকে যুদ্ধ কি সঠিক ছিল, তা জানতে ও জানাতে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, জন চিলকোটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন এবং ইরাক যুদ্ধ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন।সেই প্রতিবেদন আমাদের জানাচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্যের পর্যাপ্ত মূল্যায়ন ছাড়াই ইরাক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন টনি বেøয়ার। ওই প্রতিবেদনে বেøয়ার প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘শান্তিপূর্ণ আরো পথ থাকতেও যুক্তরাজ্য ওই যুদ্ধে জড়িয়েছিল’।জবাবে বেøয়ার বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ‘সরল বিশ্বাসে’ তিনি যুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, ওই সময়ে সাদ্দামকে উৎখাত করাই ছিল সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। তবে বেøয়ারের সিদ্ধান্তের অনেক সমালোচনা করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে ইরাক অভিযানের বৈধতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের অবসান হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর চিলকোট বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ইরাকে সামরিক অভিযানের একটি আইনি ভিত্তি ছিল। যদিও সেটি সন্তোষজনক পর্যায় থেকে অনেকটাই দূরে।’এগুলো সবই হলো আসলে মার্কিনি চাপিয়ে দেয়া গণতন্ত্রের চেহারা। সেই মার্কিন মুলুকের ভেতরের গণতন্ত্রের চেহারা কেমন? তা একটু খতিয়ে দেখা যাক। খবর বেরিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাড়তি সুবিধা দিতে প্রভাব খাটিয়েছিলেন খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। আমেরিকার তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এমনটাই প্রকাশিত হয়েছে। প্রাক্তন বিদেশ সচিব হিলারি কিনটন যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় না পান, সে জন্য পুতিনের নির্দেশেই হ্যাক করা হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘জানতে পেরেছি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের নির্দেশেই প্রভাবিত হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষ যেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে কোনোভাবেই বিশ্বাস না করে। আর নির্বাচনে পিছিয়ে পড়েন প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পই রুশ সরকারের প্রথম পছন্দ ছিল।’ গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট মানতে চাননি নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রথমে তিনি হ্যাকিংয়ের কথা মেনে নিলেও পরে টুইট করেন, ‘হ্যাকিং হলেও সেটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ভোট প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট দেয়ার মেশিনেও কোনো কারচুপি করা হয়নি।’মার্কিন গোয়েন্দারা যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে রাশিয়ান হ্যাকারদের মূল লক্ষ্য ছিল, ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি এবং শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্রেট নেতাদের ই-মেইল হ্যাক করা। এসব হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যেসব তথ্য পাওয়া যাবে সেগুলো উইকিলিকসের মতো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া। এসব করতে রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করা এবং সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের নোংরা মন্তব্যের সুযোগ করে দেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট করা। প্রতিদ্ব›দ্বী ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নামে কুৎসা রটানো, যাতে সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা হারান। রাশিয়ার কোন কোন গোয়েন্দা এই হ্যাকিংয়ে কাজ করেছে, তাদের পরিচয় যুক্তরাষ্ট্র জানে। তবে তাদের পরিচয় প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়নি। ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকনি ও সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্রোয়েডার নাম উল্লেখ রয়েছে। তাদের সঙ্গে পুতিনের ব্যবসায়িক স্বার্থ ও কাজের ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই বিষয়েও প্রতিবেদনে বিশেষ ইঙ্গিত রয়েছে।অতীত ইতিহাস বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এই প্রথম নয়। তবে ২০০৮ এবং ২০১২ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ প্রবল ছিল। প্রকাশিত রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। কিন্তু কবে থেকে রুশ হ্যাকাররা নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে- তা স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলছেন না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকেই ডেমোক্রেট দলের সদস্যদের কম্পিউটারে ঢোকে রুশ হ্যাকাররা। ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ওই কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করেছে তারা। আমেরিকার তরফ থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ এবং এফএসবিকে এই হ্যাকিংয়ের জন্য দায়ী করা হয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে তথ্য সংগ্রহের পর গত মার্চ থেকে সেই তথ্যগুলো জনসমক্ষে আনা শুরু করে তারা। এই কাজে উইকিলিকসসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটও ব্যবহার করা হয়। যার জ্বলন্ত উদাহরণ হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল ফাঁস। তাকে বিপাকে ফেলতেই এই কারসাজি করা হয়েছিল। সব কিছু জেনেও রুশ সরকারের যোগ্য জবাব দেননি বারাক ওবামা। যার জন্য সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে ওবামাকে। এদিকে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি সাইবার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেছেন।কিন্তু কথা হলো- তিনি তো পাস করেই ফেলেছেন। ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়েই মসনদে বসবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টিম নির্বাচন করছেন। তিনি তার মেয়ে-জামাই জেরাড কুশনারকে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার পদে বসাচ্ছেন। ট্রাম্প-কন্যা ইভাঙ্কার স্বামী কুশনার গত নির্বাচনের সাফল্যে দৃশ্যপটের বাইরে থেকে বড় ভূমিকা রেখেছেন এমনটাই বলা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তারই পুরস্কার দিচ্ছেন শ্বশুর ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘোষণায় বলা হয়েছে, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ভেতরের লোক হিসেবে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস ও চিফ স্ট্রাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানোনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন কুশনার। ট্রাম্প নিজেও এক বিবৃতিতে জেরাড কুশনারের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, জেরাড পুরো ক্যাম্পেইনে আস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। আমার প্রশাসনের নেতৃত্ব পর্যায়ে তাকে পেয়ে আমি গর্বিত।ট্রাম্প আরো বলেন, জেরাড ব্যবসায় যেমন তেমনই রাজনীতিতে অবিশ্বাস্য রকমের সফল একজন। আমার যেসব উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে তিনি অমূল্য একজন সদস্য হবেন। অন্যদিকে কুশনার এক বিবৃতিতে বলেছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও আমেরিকার জনগণের ভালোবাসায় আমি বাড়তি শক্তি পাচ্ছি। ট্রাম্পের নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হতে যাচ্ছেন অ্যালাবামার রিপাবলিকান সিনেটর জেফ সেশনস। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এক বিবৃতিতে সেশনসকে বর্ণনা করেছেন একজন বিশ্বমানের আইনজ্ঞ হিসেবে। সাবেক কৌঁসুলি সেশনস ১৯৯৬ সালে সিনেটর নির্বাচিত হন। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের গোটা সময়টাই তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তার ফেডারেল জজ হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল বর্ণবাদী মন্তব্যের অভিযোগের কারণে। এক বিবৃতিতে ৬৯ বছর বয়সী সেশনস বলেছেন, ট্রাম্প এক আমেরিকা ও সবার জন্য সমান বিচারের যে দর্শন নিয়ে সামনে এসেছেন, তা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে চান। এই কয়েক দিন সেশনস মার্কিন সিনেট কমিটির মুখোমুখি হয়েছেন। নানা প্রশ্ন করা হয়েছে তাকে। সিনেট ও কংগ্রেস অনুমোদন দিলেই তিনি এই পদ পাবেন। মার্কিন ক্ষমতা বদলের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শিকাগোতে জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউস, সিনেট, প্রতিনিধি পরিষদ সব জায়গায় প্রতিক‚ল অবস্থায় পড়া ডেমোক্রেটরা এখন সংগ্রাম করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় আছে। এ পরিস্থিতিতে মেয়াদের শেষ সময়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ জনসমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম হওয়া ওবামা তার শেষ ভাষণে তাদের সামনের দিনগুলোতে নতুন লড়াইয়ের জন্য মনোবল জুগিয়েছেন। ওবামা চলে যাচ্ছেন। ট্রাম্প আসছেন। আমেরিকা তথা বিশ্বের সামনে এখন নতুন স্বপ্ন। কেমন হবে এই স্বপ্ন? কেমন হবে দ্য নিউ ব্যাটেলস অব আইডিয়াস? আমরা তা দেখার প্রতীক্ষায়ই আছি কেবল।------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:১৪
false
rg
বিএনপি এখন কুখ্যাত আল কায়েদা স্টাইলে রাজনীতি চর্চা করছে!!! এতোদিন দেখেছি ওসামা বিন লাদেন অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে আমেরিকাকে হুশিয়ার করতো। বারাক ওবামার বাহিনীর হাতে লাদেন ধরাশায়ী হবার পর সেই কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তার অনুসারীরা। আল কায়েদা স্টাইলে বিশ্বের অনেক সন্ত্রাসী সংগঠন একই রকম ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তাদের নানান কর্মসূচি জানান দেয়। কখনো বা তারা কোনো গুপ্ত গামলা করার পর এভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে সেই হামলার দায় স্বীকার করে। গত সপ্তাহে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ৭১ ঘণ্টা অবরোধের সময় গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেলগাড়িতে আগুন লাগানো, ট্রাক, সিএনজি থামিয়ে আগুন দিয়ে পোড়ানো এবং যাত্রীবাহী বাসের উপর পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুনে সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে দেবার ঘটনা ঘটেছিল। তখন কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে এবং বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে সেই সব হামলার দায় দায়িত্ব স্বীকার করে জামায়াত শিবিরের কোনো কোনরো মহল সেই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল। যেটি সাধারণত চরম সন্ত্রাসী দলের পক্ষেই এরকম হামলার পরে দায়িত্ব স্বীকারের নজির আমরা দেখতে পাই। আর আজ দুপুরে বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ অজ্ঞাত স্থান থেকে কয়েকটি টেলিভিশনে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় দাবী করেছেন, দমন-পীড়ন, হত্যা-নির্যাতন এবং মামলা-হামলা চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে। এখনো সময় আছে, সরকারকে আহ্বান জানাব, গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন। নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিন। চলমান সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানজনকভাবে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিভিশনে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে কি আল কায়েদার নীতি অনুসরণ করলেন? গত সপ্তাহে জামায়াত-শিবির যেটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করেছিল, আজ সেটি বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব জনাব সালাহউদ্দিন আহমদ অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছেন? তাহলে কি বিএনপি এখন আর প্রকাশ্যে রাজনীতি করার মত কোনো রাজনৈতিক দল নয়? আল কায়েদার মত আন্ডারগ্রাইন্ড রাজনীতিই বেছে নিল বিএনপি? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়েছিল মেজর জিয়া। পরে কিছু রাজনীতিবিদদের পটিয়ে, কিছু বুদ্ধিজীবীদের ধার করে একটি রাজনৈতিক দল দাঁড় করিয়েছিলেন। যেটির নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। সংক্ষেপে বিএনপি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত বিএনপি বা তাদের দোসররা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। তারপর ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি'র নের্তৃত্ব রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। তারপর ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের ১/১১ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার নের্তৃত্ব বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। তিন বার বিএনপি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে দেশ শাসন করেছে। তিন বারে মোট ৬ + ৫ + ৫ = ১৬ বছর তারা দেশ শাসন করেছে। এছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৮ থেকে ২০১৩ মোট ৫ + ৫ = ১০ বছর বিএনপি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাকাল যদি ১৯৭৮ ধরা হয়, তাহলে দলটির এখন রাজনৈতিক বয়স ৩৫ বছর। যার মধ্যে ১৬ + ১০ = ২৬ বছর ক্ষমতা এবং ক্ষমতার অংশিদার ছিল বিএনপি। মাত্র ৯ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে ছিল। এখনো বিএনপি সংসদের প্রধান বিরোধীদল হিসেবে ক্ষমতার অংশদারী একটি দল। সেই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কিভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিভিশনে ভিডিও বার্তা পাঠান?তাহলে কি বিএনপি এখন আর প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে চাইছে না? মহামান্য আদালতের রায়ের কারণে জামায়াতে ইসলামী এখন একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল। সেই দলের অনেক বড় বড় নেতা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মামলায় ফাঁসির রায়ে কারাগারে বন্দী। বর্তমান ব্যবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী'র নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিএনপি তো দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। জামায়াতের খপ্পরে পরে দলটি কি শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্থ হতে চললো!!! যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপি এতোদিন প্রকাশ্যে কোনো বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তারা আবার ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কি হবে, তা নিয়েও কিএনপি এখনো ধোয়াশার মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিভিশন চ্যানেলে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বিএনপি'র মত একটি বড় রাজনৈতিক দল কি আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি করার ইচ্ছা জানিয়ে দিল? যদি বিএনপি সত্যি সত্যি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়, তাহলে একথা এখন প্রায় নিশ্চিত, জনগণের উপর বিএনপি'র আর কোনো আস্থা নেই। দলটি জামায়াতের তোষামোদ করতে করতে নিজেই জনবিচ্ছিন্ন একটি সন্ত্রাসী দলের দিকে ভিড়ে যাচ্ছে। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে বিএনপি'র রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে গেল! এমনতি চলমান আন্দোলনের নামে বিএনপি এখন যে বিচ্ছিন্ন সহিংস হামলার রাজনীতি করে যাচ্ছে, তা জনগণের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছে। হরতাল অবরোধের মত রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নিরীহ সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি তো সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষেই শোভা পায়। আর যদি এখন তারা অজ্ঞাত স্থান থেকে এভাবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে রাজনীতি করতে চায়, তাহলে বিএনপিকে আর রাজনৈতিক দল বলা যাবে না। যদি তারা সত্যিই সেদিকে চলে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে বিএনপি'র রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। সেখান থেকে একটি সন্ত্রাসী দলে রূপ নিয়ে তারা জনবিচ্ছিন্ন সহিংস আন্দোলন করছে। যা মোটেও জনগণের নামে রাজনীতি করা বোঝায় না। যা সরাসরি সন্ত্রাসী গোপন বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গেই মানানসই। আমরা আশা করব, বিএনপি'র নের্তৃত্বের শীঘ্রই শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স বাদ দিয়ে তারা জনগণের কাতারে এসে জনগণের রাজনীতি করবেন। গ্রেফতারের ভয়ে লুকিয়ে না থেকে রাজপথে অহিংস জনসস্পৃক্ত রাজনীতির মূল ধারায় ফিরে আসবেন। নির্বাচনের ধারায় ফিরে আসবেন। রাষ্ট্রীয় আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা অব্যাহত রাখবেন। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব না বাড়িয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে বিএনপি যতো দ্রুত স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসবে, ততোই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্থির নিঃশ্বাস পড়বে। আমরা জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি দেখতে চাই না। আমরা পেপ্রোল বোমার রাজনীতি দেখতে চাই না। আমরা যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার সহিংস রাজনীতিও দেখতে চাই না। আমরা রেললাইন খুলে ফেলে দেশের সম্পদ নষ্ট করার রাজনীতিও দেখতে চাই না। যদি বিএনপি জনগণের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে এসে সত্যি সত্যিই জনগণের বন্ধু হতে পারে, তাহলে ভোটের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে বিএনপিকে আবারো হয়তোক্ষমতায় আনবে। কিন্তু এভাবে ভুল রাজনীতির মাধ্যমে ভুল নের্তৃত্বের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বড় রাজনৈতিক দল আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবার অর্থই হল, জনগণের প্রতি তাদের আর কোনো আস্থা নেই। তারা এখন দিশেহারা হয়ে ভুল পথে চলে যাচ্ছে। আমরা চাই, বিএনপি'র নের্তৃত্বে শীঘ্রই শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। অজ্ঞাত স্থানের পরবর্তে তারা জনগণের সামনে প্রকাশ্যে রাজনীতি করবেন। প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করবেন। প্রকাশ্যে মিটিং মিছিল করবেন। প্রকাশে জনগণের দাবী নিয়ে কথা বলবেন। নইলে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া কোনো সন্ত্রাসী দলকে জনগণ কখনোই গ্রহন করবে না। জনগণকে হয়তো ভয় ভীতি দেখিয়ে, গুপ্ত হামলা করে, পুড়িয়ে মেরে উল্লাস করা যাবে। তাতে জনগণ থেকে বিএনপি আরো জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিনত হবে। বিএনপি'র শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলেই আমি এখনো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
false
hm
রানওয়ে তারেক মাসুদের "রানওয়ে" সিনেমাটি দেখলাম মাত্র। "মাটির ময়না" দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সম্ভবত একই রকম ভালো লাগার প্রত্যাশা নিয়ে দেখতে বসেছিলাম, তাই হতাশ হতে হলো। সিনেমা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে সিনেমার কাহিনী বলে দেয়াটা হয়রানির সমপর্যায়ে পড়ে। আমি ধরে নিচ্ছি এই পোস্ট পাঠক রানওয়ে সিনেমাটি দেখেননি, তাই কাহিনী নিয়ে যত কম বলা যায়, দর্শকের আসনে বসে পাঠকের রসভঙ্গ তত কম হবে। আর অনিচ্ছাসত্ত্বেও বারবার মাটির ময়নার প্রসঙ্গ উঠে আসবে, সেজন্যে আগাম ক্ষমাপ্রার্থী। আমার কাছে সিনেমা দুটি খোলা বইয়ের রেক্টো আর ভের্সোর মতো, একটির দিকে চোখ রাখতে গিয়ে আরেকটি চোখের সামনে ভেসে থাকছে। মাটির ময়না আর রানওয়ে, দুটি সিনেমার গল্পই পরস্পর সাদৃশ্যবহুল। ধর্মীয় কট্টরপন্থার প্রতি ঝুঁকে পড়া কোনো একটি প্রধান চরিত্রের মোহভঙ্গ এই দুটি সিনেমার মূল উপজীব্য, বাকি সবকিছুই এই ঘটনাটিকে কাঠামো যোগায়, আর সিনেমাকারের চেষ্টা থাকে সেই কাঠামোর মধ্যে অনুচ্চস্বরে আরো কিছু গল্প বলার। মাটির ময়নার কাজী সাহেব আর রানওয়ের রুহুলের সাদৃশ্য উভয় সিনেমার দর্শককে স্মরণ করিয়ে দেয়, সময় পাল্টেছে, কিন্তু সংস্কার পাল্টায়নি। কিন্তু এই স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাঝে দর্শকের জন্যে মৃদু পীড়াও থাকে, কারণ রানওয়ে মাটির ময়নার মতো মসৃণ নয়। উভয় চলচ্চিত্রের সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন ক‌্যাথরিন মাসুদ, কিন্তু দর্শক উপলব্ধি করবেন, রানওয়ের সম্পাদনায় কিছু অযত্ন রয়ে গেছে। সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন মিশুক মুনীর, ভালো লাগেনি তাঁর কাজ। মাটির ময়নায় আলোকসম্পাত ও দৃশ্যসজ্জা (কম্পোজিশন) শুধু চমৎকারই ছিলো না, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক ছিলো। রানওয়েতে এর অনুপস্থিতি আমাকে হতাশ করেছে। মিশুক মুনীর টিভি সাংবাদিকতার সাথে আমৃত্যু জড়িত ছিলেন বলেই হয়তো টিভি সাংবাদিকের চোখে সিনেমাটিকে ধারণ করেছেন। কয়েকটি অপূর্ব শট রয়েছে রানওয়েতে, কিন্তু সিনেমার একটা বড় অংশের সাথে সুবিচার হয়নি বলে মনে হয়েছে। ক্যামেরার সরণ-বিচরণ অনেক সীমিত ছিলো, যার ফলে কিছু দৃশ্য একঘেয়ে বা নিরুত্তাপ লেগেছে আমার কাছে। রানওয়েতে ভালো লাগেনি নেপথ্য সঙ্গীত, তানভীর আলম সজীব দৃশ্যের মেজাজের সাথে আরো সঙ্গতিপূর্ণ সুরারোপ করতে পারতেন। রানওয়ের গল্প মাটির ময়নার মতো গীতিবান্ধব নয় বলেই নেপথ্য সঙ্গীত এখানে অনেক বেশি গুরুত্ববহ ছিলো। রান-অফ-দ্য-মিল নেপথ্য সঙ্গীত মনোযোগী দর্শককে বিরক্ত করবে একাধিকবার। রানওয়ের কলাকুশলীরা প্রায় সবাই অপেশাদার অভিনেতা, কিন্তু তাদের অভিনয় ত্রুটিপূর্ণ, এমন অভিযোগ করা অনুচিত হবে। নাজমুল হুদা বাচ্চু অনেক দক্ষ অভিনেতা, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ও ভালো অভিনয় করেছেন। উর্দু ভাই চরিত্রে অভিনেতা মোসলেমউদ্দিন মাটির ময়নাতেও উগ্র মাদ্রাসা শিক্ষকের ভূমিকায় উতরে গিয়েছিলেন, রানওয়েতেও তাঁকে মানিয়েছে। তবে যে সমস্যা মাটির ময়নাতে ছিলো, তা রানওয়েতেও রয়েছে, সংলাপের ভাষায় অসঙ্গতি আর কৃত্রিমতা। পরিচালককেই এর জন্যে দায়ী করতে হবে, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নয়। অভিনয়ে কিছু জড়তা রয়েছে, যা খুব বেশি দৃষ্টিকটু নয়। একেবারেই মানায়নি তিশাকে (ইনি অভিনয় জানেন না, ডেরেক জুল্যান্ডারের মতো সকল চরিত্রেই এর একই ডেলিভারি), কিন্তু কুশলীদের তালিকায় তার নামটি হয়তো গতানুগতিক চলচ্চিত্রের দর্শককেও টেনে আনবে বলে বিবেচনা করেছেন নির্মাতা। প্রত্যাশা পূরণ না হলেও, রানওয়ের অন্যতম শক্তিশালী দিকটি উল্লেখ না করলেই নয়, এর কাহিনী ও বিন্যাস প্রশংসনীয়। যে সময় আর যে সব গল্প সিনেমাকার তুলে ধরতে চেয়েছেন, তা নব্বই মিনিটে শেষ করতে গেলে সিনেমার লয় একটু চড়া থাকারই কথা। সে কারণেই হয়তো অনেক ছোটো ছোটো টুকরো শটে ধারণ করতে হয়েছে একে। প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষের পেছনে ফেলে যাওয়া পরিবারটিকে রানওয়ের একেবারে প্রান্তে রেখে দেখানোর ভাবনাটি অভিনব। রুহুল-ফাতেমা-রহিমার পরিবারটিকে প্রতি ভোরে সগর্জনে উড্ডীন বিমানগুলো স্মরণ করিয়ে দেয় প্রবাসী পিতার কথা, যে মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সন্ধানে গিয়েই মাৎস্যন্যায়ের মুখোমুখি হয়ে দিশাহারা আর অন্তর্হিত। আকাশে উড়ে যাওয়া বিমানের গর্জন ভেসে এসে বারে বারে থামিয়ে দেয় তাদের কথা, সেই অব্যক্ত সংলাপের মধ্যে সিনেমাটির আত্মা লুকিয়ে আছে অনেকাংশে। রহিমার ঘরের অদূরে পড়ে থাকা শূন্য রানওয়ে দর্শকের চোখের সামনে তুলে ধরে তাদের মনের নৈরাশ্যশাসিত শূন্যস্থান, যেখানে ক্ষুদ্র ঋণ আর উগ্র মৌলবাদ এসে দর্পী সাপের মতো ফুটো গলে ঢুকে পড়ে, আকাশে ডানা মেলা বিশাল বিমানের মতোই এই অসহায় মুমূর্ষু ফাঁদবন্দী পাখির মতো পরিবারটির ওপর ক্ষণে ক্ষণে উড়ে যায় শকুনের ধৈর্য নিয়ে। আর যথেষ্ট সাহস নিয়ে মৌলবাদী ইসলামী রাজনীতির ময়দানের খেলোয়াড়দের চরিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে রানওয়েতে, আমি বাংলাদেশের আর কোনো সিনেমায় এমনটি দেখিনি। সিনেমাটির গল্প আরো একটু সময় দাবি করে দর্শকের হাত থেকে। আরেকটু সময় ধরে বিধৃত হলে হয়তো কিছু সংক্ষিপ্ত দৃশ্য আরো বিস্তারিত হয়ে পরিস্ফূট হতে পারতো। সেইসাথে পেশাদার কুশলীদের নিয়ে কাজ করলে পরিচালক সম্ভবত সিনেমাটিকে অন্যভাবেও চিত্রায়িত করার কথা চিন্তা করতে পারতেন। মাটির ময়নার নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন নাতালি ক্রয়ঠার, হয়তো সে কারণেই সিনেমাটিকে মিঠা করার জন্য গুড়ের অভাব হয়নি। তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ নিজেদের প্রযোজনায় সীমিত সাধ্যের কথা হিসাবে রেখেই হয়তো রানওয়েকে এভাবে তৈরি করেছেন। আবদুল জলিল অনন্তের হাস্যকর সিনেমার পেছনে যতো টাকা খরচ হয়, ততো টাকা এই সিনেমাটির পেছনে খরচ হলে আমরা নিশ্চয়ই দীর্ঘদিন একে নিয়ে আলাপ করার মতো একটা কিছু পেতাম। রানওয়ের যা কিছু ত্রুটি, তার জন্যে দর্শক হিসেবে আমার আর আমাদের ভূমিকার দায়ও কি কম? বুকে ব‌্যথা নিয়ে স্মরণ করছি তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর ও তাঁদের তিন সহকর্মীর কথা, যাঁদের মৃত্যু আমাদের দরিদ্র করে রেখে গেছে। মানুষ ভাতের অভাবে দরিদ্র হয় যেমন, তেমনি দরিদ্র হয় কল্পনার অভাবেও। আমাদের দেশে কল্পনার চর্চা যাঁরা করেন, তাঁদের একজনের মৃত্যুই যেন জনপদের মৃত্যুর সমকক্ষ। কামনা করি, তাঁদের রেখে যাওয়া শূন্যস্থানটি যেন নতুন নির্মাতারা বহুগুণে পূর্ণ করেন।
false
ij
সুফীবাদের গোড়ার কথা সুফীবাদের মানে যাই হোক না কেন-এর মূলে রয়েছে প্রেম। যে কারণে তুরস্কের মহান সুফীসাধক মাওলানা জালালউদ্দীন রুমী বলেছেন-"When I come to Love, I am ashamed of all that I have ever said about Love." সুফী শব্দের অর্থ ধার্মিক। (দ্র. কাজী রফিকুল হক সম্পাদিত "বাংলা ভাষায় আরবী র্ফাসী তুর্কী হিন্দী উর্দু শব্দের অভিধান।" বাংলা একাডেমী।) সুফী শব্দের অন্য অর্থ-ধ্যান-রসিক বা মরমী সাধক। তবে সুফী শব্দটির আরও মানে করা যায়। যেমন এর এক মূলগত অর্থ হল “সুফ”। সুফ আরবী শব্দ; এর মানে উল। আদি মুসলিমরা সাদাসিধে উলের পোষাক পরতেন। কিংবা আরবী শব্দ সাফা বা শুদ্ধতা থেকেও সুফী শব্দটার উদ্ভব হতে পারে। সব মিলিয়ে বলা যায়-সেই সুফি- যে শুদ্ধতার ওপর উলের পোষাক পরে! এই কথায় কিছু রহস্যময়তা থেকে গেল; যা অস্বাভাবিক বলে মনে হয় না। সুফীবাদ ব্যাপারটাই মিসটিক। তবে সুফী শব্দটা আরও একটা ব্যাখ্যা সম্ভব। ইসলামের নবীর সময়কালে একদল সাদাসিদে মুসলিম মদীনায় নবীর মসজিদের বারান্দায় থেকে নামাজ পড়ত। কোরানের সদ্য অবতীর্ণ আয়াত মুখস্ত করত। এদের বলা হত, "আসহাব আস সুফা।" মানে বারান্দার লোক। এই সুফা শব্দটি থেকেও সুফী শব্দটির উদ্ভব হতে পারে। তবে, দশম শতকের পারশিক ঐতিহাসিক আবু রাইহান আল বিরুনীর মতে গ্রিক শব্দ সোফিয়া থেকেই সুফী শব্দটা এসেছে। ২ সুফীবাদের উত্থান সপ্তম শতকে হলেও নবম শতক থেকেই মুসলিম বিশ্বে এর মহাজাগরণ লক্ষ করা যায়। নবম শতক থেকেই সুফিরা বলতে থাকে যে আল্লাকে পাওয়ার রহস্যময় উপায় তাদের জানা। আর, আল্লার জ্ঞান অর্জন সম্ভব। এ জন্য প্রাথমিকভাবে সাতটি শর্ত অনিবার্য। যেমন, অনুতাপ, সংযম, পরিত্যাগ, দারিদ্র, ধৈর্য ও আল্লার ইচ্ছার কাছে সমর্পন। এরপর আল্লার ইচ্ছায় হৃদয়ে এক উচ্চতর চেতনা অনুভূত হতে পারে। এভাবে জ্ঞাত ও জ্ঞাতা অভিন্ন হয়ে যেতে থাকে। যা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ অনুচিত। কেননা,সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ পবিত্রতার লঙ্ঘন। যা হোক। মুসলিম বিশ্বে সুফীসাধকদের প্রভাব হু হু করে বাড়ছিল। অনেক বিশিষ্ট সুফীই নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে প্রতিষ্ঠা করছিলেন মরমী সম্প্রদায়; আর এভাবে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন ইসলামের মূলস্রোত থেকে। তাতে ইসলামী বিশ্বের মূল ভিতটি হয়ে যাচ্ছিল শিথিল। তা ছাড়া সেই সময় ইসলামী দর্শনের ওপর গ্রিক দর্শনের প্রভাব পড়েছিল । বিশেষ করে, গ্রিক দার্শনিক আরিসটোটোলের। একাদশ শতকের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ইমাম গাজ্জালী গ্রিক দর্শনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন। তিনি গ্রিক দর্শনের ধ্বংস কামনা করে লিখলেন "তাহাফাতুল ফালাসিফা।" (দর্শনের ধ্বংস) সুফীবাদের ক্ষেত্রে ইমাম গাজ্জালী বিশিষ্ট সূফীদের আল্লাতত্ত্ব সংক্রান্ত দাবিদাওয়া অস্বীকার করেন নি; তবে বললেন, সুফীসাধকদের মূল ইসলামী সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে। বিচ্ছিন্ন হওয়া চলবে না। বিচ্ছিন্নতা মানে দূর্বলতা। তাঁর মতবাদ ইসলামী বিশ্বে সাদরে গৃহিত হয়েছিল। তারপর সুফিবাদ আর ইসলামী বিশ্বে বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল না। তবে সমগ্র ইসলামী বিশ্বজুড়ে শত শত পৃথক ও স্বতন্ত্র্য সুফীমঠ (খানকাহ্) প্রতিষ্ঠা হওয়ায় সূফীসাধকের মরমী অভিজ্ঞতার শত শত ব্যাখ্যা ও পদ্ধতিতে জনগন বিভ্রান্ত হল। ত্রয়োদশ শতকের তুরস্কের প্রখ্যাত সূফী সাধক মাওলানা রুমি সুফী সাধানায় নাচ-এর গুরুত্ব দিলেন। বললেন, Whosoever knoweth the power of the dance, dwelleth in God.তাঁর অনুসারীরা নেচে নেচে সাধনা করে বলে তাদের বলা হল ঘূর্নায়মান দরবেশ (দরবেশ তুর্কি শব্দ মানে ভিক্ষুক); রুমীর অনুসারীরা মৌলভী (তুর্কি শব্দ) নামেও পরিচিত। তুরস্কের কোনিয়ায় রুমীর মাজার। তাছাড়া, ভ্রাম্যমান সুফিই ফকির নামে পরিচিত হল। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে। আমরা সেসব সম্বন্ধে কমবেশি জানি। ৩ সুফীবাদ সম্বন্ধে একটি বিশেষ সুফী সম্প্রদায়ের ব্যাখ্যাবিশ্লেষন- The definition of the Sufi The sufi is one who is a lover of Truth, who by means of love and devotion moves towards the Truth, towards the perfection which all are truly seeking. As necessitated by love's jealousy, the sufi is taken away from all except the Truth. The substance and meaning of Sufism The substance of Sufism is the Truth and the meaning of Sufism is the selfless experiencing and actualization of the Truth. The practice of Sufism The practice of Sufism is the intention to go towards the Truth, by means of love and devotion. This is called the tariqat, the spiritual path or way towards God. তথ্যসূত্র: http://www.nimatullahi.org/sufism http://www.allaboutreligion.org/sufism.htm Sufism সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:০৯
false
mk
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন সাধনের জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। দরকার হয় পথের সন্ধানের। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সেই সন্ধানটি করে যাচ্ছে। আমরা তা দেখছি- সরকারের পরিকল্পনার মাঝে। দেখছি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সনদে। নিউইয়র্কে এখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলছে। বিভিন্ন দেশের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান এখন নিউইয়র্কে। তারা জাতিসংঘে তাদের মতবিনিময় করছেন। তারা বলছেন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পথ কী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এখন নিউইয়র্কে। এবার জাতিসংঘে তার ‘জঙ্গি দমন নীতি’ বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তিনি জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে বলেছেন-‘আমি সন্ত্রাসী এবং উগ্রবাদীদের অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রের জোগান বন্ধ এবং তাদের প্রতি নৈতিক এবং বৈষয়িক সমর্থন না দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গুলশান হামলার বিষয়টি তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভয়ঙ্কর ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে আমরা এই নতুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি।’ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে তাতে বিশ্ববাসীর সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে ভাষণে এই আহ্বান জানান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো এখন কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিশ্বের সব স্থানেই ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো দেশই আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ নয়, কোনো ব্যক্তিই সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুর বাইরে নয়। তিনি মনে করিয়ে দেন- ‘আমেরিকা থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে এশিয়ায় অগুনতি নিরীহ মানুষ সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে।’ এর শিকড় খুঁজতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- ‘সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে এদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি যোগ করেন- ‘কী অপরাধ ছিল সাগরে ডুবে যাওয়া সিরিয়ার ৩ বছর বয়সী নিষ্পাপ শিশু আইলান কুর্দির? কী দোষ করেছিল ৫ বছরের শিশু ওমরান, যে আলেপ্পো শহরে নিজ বাড়িতে বসে বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে? একজন মা হিসেবে আমার পক্ষে এসব নিষ্ঠুরতা সহ্য করা কঠিন। বিশ্ব বিবেককে কি এসব ঘটনা নাড়া দেবে না?’ শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কেন্দ্র’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত সহিংসতার কবল থেকে বেরিয়ে আসা দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ করে দেবে।’ শেখ হাসিনা সাহসের সঙ্গে কথাগুলো বলেছেন। এই কথাগুলো সব বাঙালির। এই কথাগুলো আপামর মানুষের। আশার কথা জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে আজকের বাংলাদেশ।তার ভাষণে তিনি গত বছর গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিতের ওর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমরা একটি উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন এজেন্ডা এসডিজি গ্রহণ করেছি। এই এজেন্ডার রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে পশ্চাৎপদ দেশগুলোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ এবং অর্থবহ অবলম্বনে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন। এ জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ভিশন-২০২১’ এবং ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে তার সরকার। তিনি বিশ্ববাসীকে জানান ‘আমাদের লক্ষ্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, শক্তিশালী, ডিজিটাল এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সে জন্য আমাদের সরকার উদ্ভাবনমূলক সরকারি সেবা বিতরণ, জনসাধারণের তথ্য লাভের অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনা ও সেবা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।’ জনগণের দোরগোড়ায় ২০০ ধরনের সেবা পৌঁছে দিতে প্রায় ৮ হাজার ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন, স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ও ডিজিটাল ল্যাব ব্যবহারের কথা বলেন তিনি। নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু, একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা এবং রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরুর কথাও তিনি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন।জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং সংসদ উপনেতা সবাই নারী।’ আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপাল (বিবিআইএন)-এর মধ্যে ‘মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক’ তৈরি এবং বিনিয়োগ বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অনেকগুলো উন্নয়ন অর্জনকে হুমকির মুখোমুখি করছে জানিয়ে ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তিটি অনুসমর্থনের জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।তিনি জানিয়ে দেন- ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এই জলবায়ু চুক্তিটি অনুসমর্থন করেছে। আমি আশা করি বৃহৎ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলি অতি সত্বর চুক্তিটিতে অনুসমর্থন জানাবে।’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে- এই উপলব্ধি থেকে সহযোগিতার নতুন পথ খুঁজতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এদিকে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গত সোমবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দফতরের কাছে ইউএন প্লাজা হোটেল মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জয়ের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন হলিউডের অভিনেতা রবার্ট ডেভি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার চালানো শিখেছি, এ জন্য সে আমার শিক্ষক। শুধু তাই নয়, তথ্যপ্রযুক্তির সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র মেহনতি মানুষ থেকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তার মন্ত্র এসেছে জয়ের কাছে থেকেই। এমন সন্তানের মা হতে পেরে আমি গৌরবান্বিতবোধ করছি।’জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) গৃহীত হওয়ার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গভর্নেন্স অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস, প্ল্যান ট্রিফিনিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিউ হেভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস সম্মিলিতভাবে এ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ২০০৭ সালে ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার’ নির্বাচন করেছিল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওই সম্মান পান তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। যিনি এই প্রজন্মেরই একজন সুযোগ্য প্রতিনিধি।শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল। তেমনি সময়ে জয়ের জন্ম। সে সময় আত্মীয়স্বজন কাউকে পাশে পাইনি।’ আর জয় যখন হার্ভার্ডে, তখনও বাংলাদেশে জরুরি অবস্থার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নিজের বন্দি থাকার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।এ পুরস্কারের প্রবর্তকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকার স্বীকৃতি প্রকারান্তরে বাংলাদেশের মানুষের অদম্য কর্মস্পৃহার প্রতিই সম্মান বলে মনে করছি। পুরস্কার নেয়ার পর আবেগ আপ্লুত জয় বলেন, আমার মা তার কষ্টের কাহিনী বললেন, আমার জন্মের সময়ের অসহনীয় দুর্দশার দিনগুলো তিনি ভোলেননি।হ্যাঁ এই অর্জন গোটা দেশের মানুষের। যারা একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেন প্রতিটি ভোরে। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য দরকার ছিল একটি গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার। এই সরকার এখন ক্ষমতায়। প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে তুলনা করে বিবেচনা করতে হবে। অতীতে কারা কিভাবে মানুষের পাঁজরের ওপর দিয়ে সামরিক বুট চালিয়েছে- তা মনে রেখে এগোতে হবে। এই দেশের মানুষ বড় কর্মঠ। আর এটাই রাষ্ট্রের প্রধান শক্তি। নিউইয়র্ক থেকে ফকির ইলিয়াস : কবি, সাংবাদিক। সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০১
false
rn
অধরা ('অল কোয়ায়েট ইন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট।')একদিন বিকেলে হিমির মন খারাপ দেখে আমি হিমি কে একটা কৌতুক বলি।আমার কৌতুক শুনে হিমি রাগ করে একটা সিএনজি ডেকে চলে গেলো।কৌতুকটা ছিল এই রকম-"নারী বিদ্বেষী এক যুবক ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করল—হে ঈশ্বর, তুমি নারীকে এত সুন্দরী বানিয়েছ কেন?—যাতে তুমি তাকে ভালোবাস।—তাহলে ঈশ্বর, তুমি নারীকে এত বোকা বানিয়েছ কেন?—যাতে সে তোমাকে ভালোবাসে।"এই কৌতুকে রাগ করার কি আছে আমি বুঝতে পারি না।ইদানিং হিমি আমার উপর খুব বেশী রাগ করছে।মন থেকে কিছু চাইলে সেটা বিফল হয় না।হিমি একটু একটু করে আমার রক্তে মিশে গেছে।যত ক্ষন হিমির সাথে থাকি তত ক্ষন নিজেকে সম্রাট বলে মনে হয়।তখন কোনো চিন্তা মনে আসে না।কোনো সমস্যার কথা মনে পড়ে না।মনে হয় পৃথিবীটা খুব সুন্দর।হিমি পাশে থাকলে সব সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে পাবো।আত্নবিশ্বাস বেড়ে যায়।কিন্তু হিমি মুখটা গম্ভীর করলেই বুকের ভেতরে জ্বলে।মরে যেতে ইচ্ছা করে।আবেগ ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝি না।আমার কৌতুহল ও খুব কম।আমি ভাবতাম হিমি আমাকে খুব বুঝে।হিমি আমাকে একটুও বুঝে না।সে সবাই কে বুঝে শুধু আমি ছাড়া।আমাকে শুধু বকতে পারে।আদর করতে পারে না।হিমিকে আমি বুঝাতে পারি না-আমি একা।বড়ো একা।আমার জীবনের সব সুন্দর মুহূর্তে আমি একা ছিলাম।আমার আজও স্পষ্ট মনে আছে আমি যখন হিমিকে ভালোবাসি,তখনো আমি একা ছিলাম।যেই মুহুর্তে আমি হিমিকে মনে করি ঠিক সেই মুহুর্তেও আমি একা।আমার কপাল এমন খারাপ যখন প্রথম সমুদ্র দেখি,সেটাও আমি একা।বোকা হিমিকে আমি বুঝাতে পারি না-অবিশ্বাস আর সন্দেহের কারনে ভালোবাসা হারিয়ে যায়।কিন্তু অবিশ্বাস আর সন্দেহ দিয়ে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।একটু ভুলের জন্য পরে সারা জীবন কাঁদবে।হিমির মূল সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারছি না।ফলাফল আমার মাথায় যন্তনা হচ্ছে।"যতই আমি দূরে যেতে চাইততই আসি কাছেআমার গায়ে তাহার গায়ের গন্ধ লেগে আছে।"গভীর রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তখন হঠাৎ কেন জানি চোখ ভিজে উঠে।আকাশের সবচেয়ে জ্বল জ্বল করা তারাটির নাম হিমি।আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি 'হে ইশ্বর ভালোবাসা কি আমাকে বুঝিয়ে দাও।এই ভালোবাসা কোথায় লুকিয়ে থাকে?কোন অচেনা ভুবনে?কি করে সে আসে?কেন সে আসে?কেন সে আমাদের অভিভূত করে?হাসায় কাদায়?পাশের বাসায় ইংরেজী গান বাজছে।গানটি সুর সারা জগতময় যেন পরিচিত।গানের কথা গুলো এই রকম-"f u missed the train l'am on/U will know that l am gone/U can hear the whistle blow a hundred miles/A 100 miles A 100 miles/Not a Penny to my name/And the land that l once loved is not my own/Lord l'm 1,Lord l'm 2,Lord l'm 3,Lord l'm 4/Lord l'm 500 miles Away from Home/Away from Home."সেদিন আমার ভাবি আমাকে বলছেন,তোমার হিমিকা'র খবর কি?আমি ভাবি কে বললাম-ভাবি হিমিকা নয় 'হিমি'।অনেক দিন থেকে কিছু কথা গুছিয়ে রেখেছি,হিমিকে বলার জন্য।আজ বলবো।হিমি পৃথিবীর যেখানেই তুমি থাকো-তুমি আমার'ই।চিরটা কাল তুমি আমার'ই থাকবে।মনে রেখ আদিম মানুষেরাই ঠিকভাবে বাঁচতে জানত।কারন তারা ছিল জ্ঞানী এবং স্বপ্নবাজ।তারা অনুভব করতো বেঁচে থাকার গভীর আনন্দ।জ্ঞানী এবং সৎ স্বপ্নবাজ মানুষদের সভ্যতার কৃএিমতা থেকে দূরে থাকাই ভালো।আমাদের বাঁচতে হবে মুক্ত আকাশের মতো।চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে আনন্দের বীজ।গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখি হিমির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে!বিয়ের তিন দিন পর্যন্ত ভালো ছিলাম।তারপর শুরু হয়েছে অত্যাচার।হিমি কঠিন গলায় আমাকে বললো-প্রতি মাসে তাকে সংসার চালানোর জন্য ৬০,০০০ হাজার টাকা দিতে হবে।আরো অনেক কথা।তারপর ৩ বছর চলে যায়।আমাদের দু'টা বাচ্চা হয়।মেয়েটার নাম নীলাঞ্জনা আর ছেলেটার নাম মেঘ।বাচ্চাদের নাম হিমি'ই রাখে।সারাদিন কর্মব্যস্ততার পরে যখন বাসায় ফিরি নীল শাড়ি পড়া হিমি কে দেখলে আমার সব ক্লান্তি ভুলে যাই।হিমি হাসে।বড়ো ভালো লাগে এই বোকা মেয়েটার হাসি।এই হাসির জন্য আমি অনেক কিছুই করতে পারি।হিমির হাসি অনেক সুন্দর।মনে হয়,একসঙ্গে অনেকগুলি কাচের চুড়ি বেজে উঠলো।হিমির হাসি জলতরঙ্গের মতো।শুনলেই মনে হয়-এটা শুধু হাসি নয়।হাসি দিয়ে দু'হাত বাড়িয়ে দেয়া।হাসির মাধ্যমে কাছে ডাকা।(সত্যি সত্যি কি কেউ বাস্তবে এমন করে হাস্তে পারে?আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে?)তোমার একটু স্পর্শ।অদ্ভুত এক ভালো লাগা।হিমি তুমি কেন এতো রহস্যময়?কী অদ্ভুত আকর্ষন শক্তি তোমার ভেতর।মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে তুচ্ছ এই জীবন থেকে পালিয়ে যাই।এটা কি মোহ?আবেগ?নাকি নিছক পাগলামি,না ভালোবাসা?জানি না আমি জানি না।এই অনুভূতির শেষ নেই?জানি ভুল,তবু মায়াময়।
false
rn
নীল গিরি (মানুষ যখন কাউকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে,তখন হাত দুটো অনেক সময় একটার উপর আরেকটা চলে আসে,নিজের অজান্তে দুটি হাত দিয়ে তৈরি হয় একটা ক্রস।এই ক্রসের অর্থ ভালোবাসা।মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা। -মুহাম্মদ জাফর ইকবাল)এখন মাঝ রাত।তবু ঘুম আসে না।ব্যালকনিতে গিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি।ঘন ঘন সিগারেট খাই।ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাই,যেখানে আমাদের পরিচিত কেউ থাকবে না।আচ্ছা নীল গিরি পাহাড়ে গেলে কেমন হয়?তোমার হাত ধরে নীল পাহাড়ে হেঁটে বেড়াব!পাশের বাসায় কে যেন গুন গুন করে গাইছে,আহ্ কি সুন্দর গলা।এই গান টা অনেকদিন আগে 'হিমি' আমাকে শুনিয়ে ছিল।''আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি/বাহির প্রানে চোখ মেলেছি,আমার হৃ্দয় পানে চাইনি/আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায় তুমি ছিলে আমার কাছে/তোমার কাছে যাইনি।তোমার হাত ধরে বিশাল সমুদ্রে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে।আকাশের চাঁদ টাকে মনে হয় তোমার কপালে টিপ।আর আমি এই মাটির মানব তোমার দিকে তাকিয়ে আছি,চোখে হাজার ও স্বপ্ন নিয়ে...।আমার স্বল্প গুলো পূরন করবে তুমি?থাক্ করতে হবে না।কিন্তু তোমার স্বপ্ন পূর্ন হোক।প্রকৃতি তার মানব সন্তানের কষ্ট,নিঃসঙ্গতা সহ্য করতে পারে না।প্রকৃ্তি বৃষ্টি হয়ে তাকে সঙ্গ দেয়।অনেকদিন আগে কোন বইতে যেন পড়েছিলাম-পৃ্থিবীতে একবারই এসেছ,মেয়েদের আঁচল ধরে না ঘুরে,ইশ্বরের হাত ধরে ঘোরো।হয়তো পাবে না কিছুই,যতই না পাবে তত পেতে চাবে,ততই বাড়িবে পিপাসা তোমার,ফুরাবে না তুমি।তুমি তোমাতে হবে একাকার।আর তিনি অনন্ত।''লিভ এনাদার ডেক্লাইম্ব এ লিটল হাইয়ারফাইনড এনাদার রিজন টু ষ্টেইউ ওনট ফাইনড ইট হিয়ারলুক এনাদার ডে ওয়েসো ট্রাই এনাদার ডে...'''হিমি' তোমার সাথে আমার অনেক কথা জমে আছে।আমি তোমাকে কোনোদিনও হতাশা,গ্লানি,বঞ্চনা,দুঃখের কথা বলবো না।শুধু সুখ আর আনন্দের কথা বলবো।এ জন্য যে তুমি মূলতই আমার নিজস্ব।আমি তোমাকে অবহেলা করি না।তোমাকে অবহেলা করা মানে নিজের আত্না কে অবহেলা করা।তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো?তুমি যা জানো তাই কেন আমি এত ভুমিকা করে লিখছি?আরে...,বোকা মেয়ে এসব লিখছি নিজের কিছু অক্ষমতা স্বীকার করতে।আমি আছি বন্দি শিবিরে,আমি তো কিছু করতে পারি না,কিংবা আমার কোনো যোগ্যতাই নেই।একক ভাবে নিঃসঙ্গ আমি ক্ষমা চাই তোমার কাছে,তুমি কি ক্ষমা করবে?একটি প্রচন্ড প্রাচীন বট গাছ চোখের সামনে শুকিয়ে যাচ্ছে।সবুজ পাতা ঝড়ে যাচ্ছে,একটু একটু করে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে আমার'ই চোখের সামনে।আমি তাই দেখছি তাকিয়ে তাকিয়ে।কিন্তু আমি চুপচাপ।পাখি যেমন আকাশে উঁড়ে যায়-তেমনি করে আমাদের যাবতীয় দুঃখ কষ্ট কেন উঁড়ে যায় না?কবে আমি মনোবল ফিরে পাবো?বলো হিমি বলো?তোমার মতোন করে কেউ আস্বাসের কথা বলে না।হিমি আমি বরং অপেক্ষাই করি।সীমাহীন অপার্থিব অপেক্ষা।তবুও হিমি তুমি ভালো থাকো।ঠিকানা খুঁজে পাও সুন্দর যুবকের বুকে।খুঁজে পাও আদর আর পরম ভালোবাসা,য ত আকাংখার ধন।আমি বরং প্রতিক্ষায় থাকি।(অন্ধকারের তবু আছে সীমানা,সীমানা পেরুতে চাই।)'হিমি' তোমার মনে আছে,একদিন নিউ মার্কেট এ ফুচকা খেতে খেতে বলেছিলে- 'ছেলেরা অনেক আবেগ দিয়ে ভালোবাসতে জানে কিন্তু তা মেয়েরা কখনো বুঝতে পারে না।আর পারলে ও অনেক কম।মেয়েদের হচ্ছে ভালোবাসা-ভালোবাসা খেলা।কিন্তু ছেলেদের ব্যাপার সম্পুর্ন অন্যরকম,তাদের ভালোবাসার সাথে অনেক স্বপ্ন যুক্ত হয়ে যায়।গতকাল রাতে স্বপ্ন দেখি,আমি বিয়ে করে ফেলেছি!তারপর নীল গিরি পাহাড়ে চলে যাই আমার বঊ কে নিয়ে।সেখানে এক খন্ড জমি কিনে নিজের জমি নিজেই চাষ করি।দুপুর বেলা বঊ ভাত নিয়ে আসে।গরম গরম মোটা চালের ভাত।ভাতের সাথে ছোট ছোট দু'টি বাটিতে আলু ভাজি আর মাছ ভাজা।একটা ভর্তা আর দুটা কাঁচা মরিচ।আমার অনেক ক্ষিদা লাগছে,আমি হাত না ধুয়েই খাওয়া শুরু করি।আমি খুব তাড়াহুড়া করে খাই।অনেক কাজ পড়ে আছে।বউ পাশে বসে আমার খাওয়া দেখছে।ক্লান্তির খাওয়া।আমার বঊ'র দুই হাত ভরতি কাঁচের চুড়ি।রিন-ঝিন করে বাঝে।আমার খুব ভালো লাগে।খাওয়া শেষে আমার বউ কোমড়ে জড়ানো তার নীল শাড়ির আঁচল বাড়িয়ে দেয় হাত মোছার জন্য।বউ একটা অর্জুন গাছ দেখিয়ে বলে-এই খানে বসে বিড়ি টিড়ি খাইয়া একটু জিড়াইয়া লও।আমি গাছে ছায়ায় বউ এর কোলে মাথা রেখে বিড়িতে টান দিতে দিতে একটা দীর্ঘশ্বাস উওরের বাতাসে মিলিয়ে দেই।সূর্য ডুবে যাবার পর আমার কাজ শেষ হয়।আমি এক বড় ঝুঁড়ি সবজি মাথায় করে হাঁটে নিয়ে যাই।বিক্রি করি।তারপর বউ এর জন্য-নীল আর সবুজ ছোট ছোট ফুল আঁকা একটা শাড়ি কিনি।কারন দুপুরে ভাত খেয়ে বউ এর শাড়িতে হাত মোছার সময় দেখি তার শাড়ির আঁচল অনেক খানি ছিঁড়ে গেছে। বউ নতুন শাড়ি পড়ে মাটির চুলায় রান্না করতে বসেছে।আমি তার পাশে বসে নানান বিষয়ে গল্প করি।বউ আমাকে একটু হেসে আদর করে বোকা দিয়ে বলে-এইখান থেকে সরো তো,চুলার সামনে এইভাবে বসে থাকলে,আমি রান্না করি কি করে?উঠানে চাদর বিছিয়ে আমরা দুই জন রাতের খাবার খাই।আমার বউ এর হাতের রান্না দারুন।শুধু ডাল দিয়েই দুই প্লেট ভাত খেয়ে ফেলতে পারি।বউ থালা বাসন ধুয়ে আমাদের জীর্ন বিছানা সাজায়।আমার অবসন্ন শরীর এলিয়ে দেই বিছানায়।আমার বউ আমার গায়ে হাত রেখে আমাকে গান শোনায়-''আকাশের গায়ে আছে,একরাশ নীল/বাতাসের আছে কিছু গন্ধ/রাএির গায়ে জ্বলে জোনাকি,তটিনীর বুকে মৃ্দু ছন্দ/আমার এ দু'হাত শুধু রিক্ত/আমার এ দু'চোখ জলে সিক্ত''।তারপর গান শেষ করে আমার কপালে একটি ছোট চুমু দিয়ে বলে,এই বার একটা কবিতা বলে,কবিতা বলতে বলতে বউ এর চোখ জলে ভিজে যায়।''দুঃখ পেলে কেঁদো নাদুঃখ পেলে হেসো,তা যদি না পারো-তাহলে আমায় ভালোবেসো।''সকালে ঘুম থেকে উঠার অনেকক্ষন পর বুঝতে পারি,স্বপ্ন।স্বপ্ন!!! আমার মন খারাপ হয়ে যায়।আমি বন্টি কে ফোন দেই।বন্টি বলে-কোনো বস্তুর প্রতিটি ইলেকট্রন,প্রোটন কী অবস্থায় আছে এবং এটম গুলি কীভাবে আছে,সেগুলি যদি জানা থাকে এবং ঠিক সেই অনুপাতে যদি ইলেকট্রন,প্রোটন এবং এটম রাখা যায় তবেই সেই বস্তুটি তৈরী হবে।শুধু কিছু শক্তি খরচ করলেই হয়।আমি ফোন কেটে দেই।(হাঃ হাঃ হাঃ,আমি হচ্ছি এই পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান অভাগা।)
false
ij
আওয়ামী লীগ কি জনগনের স্বার্থে মাফিয়া-সিন্ডিকেট চক্র ধ্বংস করতে পারবে_ পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই রয়েছে মাফিয়াচক্র। এই কুখ্যাত চক্রটি যেমন নৃশংস পদ্ধতিতে অহরহ খুনখারাপি করে, তেমনি মজুতদারী করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। বিগত ৪দলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশি মাফিয়াদের অমানবিক আচরণ সাধারণ জনগনের নাভিশ্বাস উঠেছিল-যা এবারের ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে বলেই আমার বিশ্বাস। আমরা জানি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির নানা কারণ আছে। যেমন: আর্ন্তজাতিক বাজারের আচরণ। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির অভ্যন্তরীণ কারণের মধ্যে মজুদদারী যে অন্যতম সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সাধারণত মাফিয়া-সিন্ডিকেটরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। বিগত ৪দলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ মাফিয়াদের জন্য হয়ে উঠেছিল স্বর্গরাজ্য। কী এর কারণ? আমার তো মনে হয় ৪দলীয় জোট সরকারের শ্রেণিচরিত্রের কারণেই বাংলাদেশ মাফিয়াদের জন্য হয়ে উঠেছিল স্বর্গরাজ্য। কথাটার সামান্য ব্যাখ্যা করি। গ্রামীন মানুষের স্বার্থে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু যে আমূল ভূমিসংস্কারের নীতি গ্রহন করতে যাচ্ছিলেন তারই প্রতিক্রিয়া সরুপ বাংলাদেশে ভূস্বামীদের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীদের উত্থান ঘটে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বি এন পি আসলে প্রথম থেকেই ভূস্বামী শ্রেণিরই প্রতিনিধি। এবং তাদের উগ্র ডানপন্থা ও ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতার ব্যাখ্যাও এটি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীরা বাংলাদেশের ভূস্বামী শ্রেণির প্রতিনিধি হওয়ায়, লক্ষ্য করে থাকবেন, “তৃণমূল” শব্দটা আওয়ামী লীগের পক্ষে যতটা মানানসই বি এন পি-র ক্ষেত্রে ততটা নয়। এবারের নির্বাচনে এই তৃণমূল পর্যায়ের অব্যাহত গনঃসংযোগই ভোটের ফলাফলের পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। যা হোক। যে কোনও দেশেই মাফিয়া-সিন্ডিকেটের উত্থান ঘটে সে দেশের উচ্চবিত্ত ধণিকশ্রেণির বলয় থেকেই- যে কারণে অভিন্ন শ্রেণিভূক্ত হওয়ায় ৪দলীয় জোট সরকারের আমলে মাফিয়া-সিন্ডিকেটদের দমন করা সম্ভবপর হয়নি। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক অবস্থান, আবেগ ও শ্রেণিচরিত্র খানিকটা ভিন্ন হওয়ায় দলটি মাফিয়াসিন্ডিকেট চক্রে নির্মম আঘাত হানতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মুখে দিকে চেয়ে এই ঝুঁকিটি তাদের গ্রহন করতেই হবে। কেননা, সমাজের অসাধু ব্যবসায়ীদের নানান গর্হিত কর্মকান্ড সমূলে নিশ্চিহ্ন করতে এবং সৎ ব্যবসায়ীদের পৃষ্টপোষকতা করার জন্যই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া অবধি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবার বি এন পি-কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে এমন অকল্পনীয় হারে ভোট দিয়েছে। কাজেই, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎও এই অনিবার্য সিদ্ধান্তটির ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৬
false
rn
আমি কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের মানুষ গুলো খুব সহজ সরল এবং শান্তি প্রিয়। বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর আগে। আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৩তম; ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের সমুদ্রতটরেখার দৈর্ঘ্য ৫৮০ কিলোমিটার। আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা দারিদ্রতা। আমাদের দেশের জনসংখ্যা কোনো সমস্যা নয় বরং আশীর্বাদ। জনগনকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ অলস নয়, তারা খুব কর্মঠ। সরকারের ভুলের কারণে আমাদের দেশে দিনদিন বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ এর সর্বমোট ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। আমি মনে করি আমাদের দেশের সংবিধান আবার নতুন করে লেখা উচিত। আমাদের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে- সবার আগে সংবিধান পরিবর্তন খুব প্রয়োজন। নতুন করে একটা আধুনিক সংবিধান তৈরি করতে হবে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সংবিধান করতে হবে। একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। শুধু নিজের এবং নিজের দলের কথা ভাবলে হবে না। ভাবতে হবে দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা। অযোগ্য লোককে দেশ পরিচালনার কাজে রাখা যাবে না। খুব দুঃখ লাগে যখন দেখি, দেশের কর্তা ব্যাক্তিরা সামান্য চেকাপের জন্য সিঙ্গাপুর -আমেরিকা যান। দরিদ্র দেশে বিলাসিতা করতে তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।বাংলাদেশের সরকারী প্রশাসন যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু হলো বাংলাদেশ সচিবালয়। আমি সরকারী সমস্ত অফিস আদালতে দেখেছি- কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অফিস সহকারী পর্যন্ত, তারা অফিস করেন জিম ধরা মুরগীর মতন। তাদের হাত চলে না, পা চলে না- তারা সবাই ক্লান্ত। অনেকে তো লুঙ্গি পরে অফিস করেন। সমস্ত অফিস গুলোতে ঘুষ ব্যাপারটা হয়ে গেছে ডাল ভাত। দেশের উন্নতির জন্য সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করা খুব জরুরী। সদিচ্ছা থাকলে দুর্নীতি বন্ধ করা খুব কঠিন কিছু না। সত্যি কথা বলতে কি, দেশ পরিচালনা করার জন্য আমাদের দরকার যোগ্য লোক। আওয়ামীলীগ বা বিএনপিতে যোগ্যলোকের খুব অভাব। সারা বাংলাদেশ চষে যোগ্য লোক খুঁজে বের করতে হবে। বুড়া-বুড়ি দিয়ে সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আমাদের বর্তমান সকল রাজনীতিবিদদের মন-মানসিকতা কলুষতায় ভরা। তারা লোভী এবং বড্ড হিংসুটে।সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর দুটি স্তর রয়েছে যথা হাইকোর্ট ডিভিশন ও আপীলাত ডিভিশন। দলীয়করণ অনেক বড় একটা সমস্যা। প্রতিটা ক্ষেত্রে দলীয়করণ চলছে। দলীয়করণ টাইপ মানসিকতা পুরোপুরি বাদ দিতে হবে- দেশের স্বার্থে। মনে রাখতে হবে সবার আগে দেশ। আমরা তো বাঙ্গালী, দেশের জন্য আমাদের অনেক ভালোবাসা আছে। ভালোবাসা আছে বলেই আমরা ৭১ এ জয়ী হতে পেরেছিলাম। গাছ ভালো হলে- ভালো ফল পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি একটি দেশের প্রধান কর্তা ব্যাক্তিরা ভালো হলে সৎ হলে- খুব দ্রুত দেশের উন্নতি সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে- মালোশিয়ার কথা, মাহাথীর মোহাম্মদ এর কথা। দুবাই দেশটি থেকেও আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। শুধু মুখে মুখেই বললে হবে না- ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশী মানুষ জানে না 'ডিজিটাল' ব্যাপারটা কি ।বাংলাদেশের জেলার সংখ্যা মোট ৬৪টি। সারাদেশে উপজেলা রয়েছে ৫০৭টি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ও জলোচ্ছ্বাস প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশের কোনো না কোনো স্থানে আঘাত হানে। সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। নদী পথ বা সড়ক পথ কোনোটাই খুব উন্নত নয়। এর জন্য দায়ী মন্ত্রী এমপিরা। আমাদের দেশে জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই বলে- উন্নতি খুব কম হয়। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে- পুরো বাংলাদেশটাই যেন তাদের হয়ে যায়। পত্রিকা তাদের, টিভি চ্যানেল তাদের, এমন কি সড়ক পথ, নদী পথও তাদের হয়ে যায়। দেশ টা যেন তাদের বাপ দাদার জমিদারী। কথায় বলে, ছোটলোকের পোলায় যদি জমিদারী পায়- কানের আগায় কলম খুঁজে বাঈজী নাচায়। ক্ষমতায় আসার পর তাদের শরীর ভারী হয়ে যায়। যেন তাদের নড়াচড়া করতেই যেন কষ্ট হয়ে যায়। এই গুলারে কানে ধরে দেশ থেকে বের করে দেওয়া দরকার।বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। আমাদের সারা বাংলাদেশে যে পরিমান আবাদী জমি আছে- যদি তা সঠিক ভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে আমাদের খাদ্যশস্য'র অভাব হওয়ার কথা নয়। আমাদের দেশের কৃ্ষি মন্ত্রী বলতে পারবেন না- এক একর ধানী জমিতে কি পরিমান সার প্রয়োজন। বাংলাদেশের কৃ্ষকরা সব রকম সুযোগ সুবিধা পেলে- এত এত ফসল হবে যা সারা দেশের মানুষরা খেয়েও শেষ করতে পারবে না। তখন এই সব ফসল আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। কিন্তু সরকারের সেদিকে খেয়াল নেই। কিন্তু মিটিং মিছিল সমাবেশে দেশ নিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়ান। কাজের বেলায় ঠনঠন। পাঁচ বছরে একটি দেশের যে পরিমান উন্নয়ন সম্ভব তা কোনো সরকারই করতে পারেন নি। কারণ, তাদের বুদ্ধি কম, তারা লোভী, তারা অসৎ। দেশের উন্নতির জন্য আমাদের যোগ্য লোক দরকার। অনেক উন্নত দেশে, হাতী ঘোড়া অথবা কুকুরের যখন অনেক বয়স হয়ে যায়- তখন তাদের মেরে ফেলে। কারন তারা অকেজো হয়ে পড়েছে। ঠিক আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ গুলো অকেজো হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তারা অবসর নিচ্ছেন না। তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাঁদের ৯০%-ই নারী শ্রমিক। কয়দিন পর-পরই গারমেন্টেসে আগুন লাগে। সরকারের উচিত পোশাক শিল্পের দিকে খুব বেশী মনোযোগ দেওয়া। এবং অনেক বেশী পোশাক কারখানা স্থাপন করার সুযোগ করে দেওয়া। উন্নত দেশ গুলোতে আমাদের দেশের তৈরি পোশাকের অনেক চাহিদা। পোশাক শ্রমিকদের আরও বেশী সুযোগ সুবিধা প্রদান করা উচিত। তারা তো এই দেশেরই মানুষ।বাংলাদেশ খুব ছোট হলেও এবং শিক্ষিত লোকের সংখ্যা কম হলেও- প্রায় ২০০টি দৈনিক সংবাদপত্র ও ১৮০০রও বেশি সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তবে নিয়মিতভাবে পত্রিকা পড়েন এরকম লোকের সংখ্যা কম, মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫%। (চলবে...)
false
mk
খতমে নবুয়ত ও হেফাজতে ইসলাম সূরা ইয়াসিনে আল্লাহ পাক বলেছেন- 'ইযা আরাদা শাইআন আইয়াক্বুলা লাহু কুন্ ফায়াকুন' অর্থাৎ আমি যখন কোনো কার্যসম্পন্ন করার ইচ্ছা পোষণ করি তখন শুধু বলি হয়ে যাও আর তা সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যায়। মহান আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর তিনি আরেকটি ইচ্ছা পোষণ করলেন; তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী সে ইচ্ছাটি হলো- 'ইনি্ন জায়িলুন ফিল আরদে খালিফাহ্' অর্থাৎ নিশ্চই আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করব। আল্লাহ পাকের কথা মতে, আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষই হচ্ছে তাঁর প্রতিনিধি আর মানুষের সমাজে আল্লাহ প্রেরিত বিশেষ দূতরাই নবী বা রাসূল হিসেবে পরিচিত। অজ্ঞানতার অন্ধকার, যাবতীয় কুসংস্কার ও সবধরনের পঙ্কিলতা দূর করে সত্য, ন্যায় ও আদর্শের আলোকরশ্মি ছড়ানোই ছিল নবী-রাসূল প্রেরণের মূল লক্ষ্য। যুগের চাহিদানুযায়ী, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে মানবসভ্যতার প্রয়োজনে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ বলেন- 'ওলাক্বাদ বাআসনা ফি কুলি্ল উম্মাতির্ রাসূলা' অর্থাৎ আমরা অবশ্যই সব জাতি-গোষ্ঠীর কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি। নবী-রাসূল প্রেরণের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় এ কাফেলার প্রথম প্রেরিত পুরুষ হচ্ছেন সৃষ্টির আদি মানব হজরত আদম (আ.) এবং সর্বশেষ হলেন মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.); বসুন্ধরায় যাঁর শুভাগমনের মাধ্যমে নবুয়তের দীর্ঘ সিলসিলার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে।সুফি কবি ফরিদুদ্দিন আক্তার বলেছেন- 'সাইয়েদুল কাউনাইন ওয়া খাতামুল মুরসালিন, আখের অমাদ বুদ ফাখরুল আউয়ালিন' অর্থাৎ দুজাহানের সম্রাট তিনি সর্বশেষ রাসূল, এলেন শেষে কিন্তু তিনিই হলেন সৃষ্টির প্রথম গৌরব। হাদিসে কুদসিতে রয়েছে- 'লাউলাকা লামা খালাকতুল আফলাক' অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন, হে রাসূল! আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে পৃথিবীর কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। রাসূল (সা.) নিজে বলেছেন- 'আউয়ালু মা খালাক্বাল্লাহু নুরি' অর্থাৎ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নুরকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহর প্রথম, প্রিয় ও গৌরবোজ্জ্বল সৃষ্টি হলেন তাঁর পিয়ারা হাবিব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। রাসূল (সা.) বলেন, আমি তখনো ছিলাম যখন হজরত আদম (আ.)-এর অস্তিত্ব মাটি ও পানির ভেতরে ছিল। সুতরাং সৃষ্টি তাঁর সর্বাগ্রে কিন্তু মানুষ, মানবতা আর মানবসভ্যতার সর্বোচ্চ প্রয়োজনে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবহিতৈষী রূপে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছে নবী-রাসূলগণের সবার শেষে। বোখারি ও মুসলিম শরিফের মতো সিহাসিত্তার বিশুদ্ধ দুই হাদিস গ্রন্থের বর্ণনা মতে, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) হলেন নবুয়তের অতিশয় সুরম্য ও চাকচিক্যময় সেই অপূর্ণ প্রাসাদের সর্বশেষ মহামূল্যবান ইট; যার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নবুয়ত ও রেসালতের প্রাসাদকে পরিপূর্ণতা দান করা হয়েছে।ইসলাম শান্তি ও উদারতার ধর্ম। সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম। আল্লাহ পাক নির্দেশিত ও রাসূল (সা.) প্রবর্তিত শান্তির ধর্ম ইসলামের রয়েছে অনুপম বৈশিষ্ট্যাবলি; রয়েছে মানুষকে প্রকৃত মানুষ তথা ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সব ধরনের পালনীয় উপকরণ। পবিত্র ইসলামের রয়েছে কিছু মৌলিক আকি্বদা-বিশ্বাস; যেগুলো অন্য সব মতবাদ বা ধর্ম-দর্শন থেকে একজন মুসলমানকে স্বাতন্ত্র্য দান করে। ইসলামের শীর্ষ মৌলিক আকি্বদা-বিশ্বাসসমূহের অন্যতম হলো খতমে নবুয়ত; যা বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)কে অন্য সব নবী-রাসূল এবং পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠী থেকে তাঁকে অনন্য উচ্চতায়, সীমাহীন মর্যাদায় ও অপরিসীম স্বাতন্ত্র্য-বৈশিষ্ট্যে অলঙ্কৃত করেছে। নিম্নে আমরা খতমে নবুয়ত-সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত দালিলিক আলোচনার প্রয়াস পাব।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- 'মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।' মহানবী (সা.)-এর কোনো পুত্র সন্তান জীবিত ছিলেন না। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, হজরত আদম (আ.)-এর পরে তাঁর পুত্র হজরত শীষ (আ.) নবী হয়েছেন, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পরে তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) ও হজরত ইসহাক (আ.) নবী হয়েছেন, হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পরে তাঁর পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.) নবুয়ত পেয়েছেন এবং হজরত দাউদ (আ.)-এর পর তাঁর পুত্র হজরত সোলায়মান (আ.) নবুয়ত লাভ করেন। কিন্তু বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ক্ষেত্রে এ ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম ঘটেছে; কেননা আল্লাহ পাক তাঁকে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূলের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। মহানবী (সা.) হলেন খাতামুন্ নাবিয়্যিন। তাফসির শাস্ত্র বিশারদ হজরত কাতাদাহ, হজরত বায়যাবি ও ইবনে কাসির প্রমুখের মতে, খাতামুন্ নাবিয়্যিন মানে হলো আখিরুন্ নাবিয়্যিন বা নবিগণের শেষ। আল কামুসসহ বিখ্যাত আরবি অভিধানসমূহে 'খাতাম' এর অর্থ হিসেবে শেষ শব্দকেই উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের বাণী- 'আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম'- এর মধ্যেও নবুয়ত ও রেসালতের ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তির ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ পাক কখনো কোনো গোত্রে, কখনো কোনো বিশেষ অঞ্চলে আবার কখনো কোনো নির্দিষ্ট ভাষা-গোষ্ঠীর মাঝে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু মহানবী (সা.)কে আল্লাহতা'আলা কোনো বিশেষ অঞ্চল, গোত্র বা নির্দিষ্ট কোনো ভাষাভাষীর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি সমগ্র বিশ্বমানবতার নবী, বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন রাসূল। আল্লাহ পাক বলেন- 'বল হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহ পাক আমাকে তোমাদের সকলের জন্য রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন।' তাই তিনি শুধু আরবের নবী নন; আরব-আজমসহ সমগ্র বিশ্ববাসীর নবী। আল্লাহ পাক আরও বলেন- 'হে রাসূল! আমি আপনাকে গোটা জগদ্বাসীর জন্য করুণার মূর্তপ্রতীক হিসেবে প্রেরণ করেছি।' সুতরাং গোত্র, অঞ্চল, দেশ, কাল ও ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের সবার রাসূলে পরিণত হয়েছিলেন। তাই সঙ্গত কারণেই তাঁর পরে আর কোনো নবী-রাসূলের আবির্ভাব কাঙ্ক্ষিত নয়। এমনকি এ বিষয়ে খোদ মহানবী (সা.)-এর বাণী আরও সুস্পষ্ট। তিনি বলে- 'আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী নেই (বোখারি ও মুসলিম)।'খতমে নবুয়ত সম্পর্কে উলি্লখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এটি পরিষ্কার হলো যে, ইসলামের নবুয়ত ও রেসালতের কাফেলার সর্বশেষ কাপ্তান হলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর মাধ্যমেই নবুয়তের দ্বার চিরতরে রুদ্ধ হয়েছে; রেসালতের দাবি নিয়েও পৃথিবীতে আর কারও আবির্ভাব হবে না। নবুয়ত ও রেসালতের সফল ও সার্থক পরিসমাপ্তি ঘটেছে রাসূলে মাকবুল (সা.)-এর তিরোধানের মধ্য দিয়ে- এ বিশ্বাসকেই ইসলামে খতমে নবুয়ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যারা এ বিশ্বাসের বাইরে অবস্থান করবেন অথবা এ বিশ্বাসের গণ্ডিতে থেকে এর অবস্থানকে দুর্বল করবেন_ ইসলামের দৃষ্টিতে এতদুভয়ের দৃষ্টিভঙ্গিই অগ্রহণযোগ্য হবে। বস্তুত আমাদের এ নিবন্ধে খতমে নবুয়ত-সংক্রান্ত কোনো উচ্চতর গবেষণা বা বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরা মুখ্য বিষয় নয়; হেফাজতে ইসলাম নামের কথিত অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠনের ইসলাম রক্ষার নামে অঘোষিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি প্রদানও এ রচনার উদ্দেশ্য নয়। একজন ইসলামপ্রিয় মুসলিম ও ধর্মপ্রাণ সচেতন মানুষ হিসেবে হেফাজত নেতারা আমাদের ধর্মীয় আকি্বদা-বিশ্বাসে ও আবেগ-অনুভূতিতে মারাত্দক আঘাতের মাধ্যমে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছেন- তার সম্পর্কে সর্বস্তরের নবীপ্রেমিক মুসলিম জনসাধারণকে অবহিতকরণ ও এর প্রতিকার চাওয়াই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।৬ এপ্রিল হেফাজতের লংমার্চ-পরবর্তী মতিঝিলের জনসমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন- 'আল্লাহ যুগে যুগে কাফের-বেইমানদের শাস্তিদানের জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নমরুদকে শিক্ষা দেবার জন্য ইব্রাহিম (আ.)কে প্রেরণ করেন, ফেরাউনকে শায়েস্তা করার জন্য পাঠান হজরত মূসা (আ.)কে, মক্কার কাফের-বেইমানদেরকে শিক্ষা দেবার জন্য রাসূল (সা.)কে পাঠিয়েছেন; ঠিক অনুরূপভাবে বর্তমানে বাংলাদেশের নাস্তিক ব্লগার আর ইসলামের দুশমনদেরকে শাস্তি দেবার জন্য আল্লাহ পাক আল্লামা আহমেদ শফীকে পাঠিয়েছেন।' হেফাজত নেতার এ বক্তব্য মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মহাপুরুষ হিসেবে স্বীকৃত ও নবী-রাসূলগণের নিষ্পাপ কাফেলার অগ্রদূততুল্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত মূসা (আ.)-এর সুউচ্চ মর্যাদা ও অতুলনীয় শানের প্রতি চরম অবমাননা। বিশেষ করে গোটা বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ, রাহমাতুলি্লল আলামিন, সাইয়েদুল মুরসালিন, খাতামুন্ নাবিয়্যিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আযিমুশ্ শানের প্রতি অমার্জনীয় ধৃষ্টতা প্রদর্শন। নামের সঙ্গে আল্লামা, মাওলানা খেতাবধারী এ হেফাজত নেতা তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে অশীতিপর বয়োবৃদ্ধ ও দেশের শীর্ষ বুজুর্গ একজন আলেমকে একদিকে যেমন চরম বিতর্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন অপরদিকে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্দক আঘাত দিয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। তার এ বক্তব্য নিঃসন্দেহে খোদাদ্রোহী, অনৈসলামিক ও কুফরির নামান্তর।নবী-রাসূলগণ পৃথিবীর অধঃপতিত, দুর্দশাগ্রস্ত ও অমুসলিম অধ্যুষিত জনপদে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে সত্য-ন্যায়ের মহান আদর্শের পতাকাবাহী হিসেবে আগমন করেছিলেন। ব্যক্তিত্বের জাদুময়িতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অলৌকিক কারিশমা, মানবিক ঔদার্য্য, ন্যায়-নীতি ও মূল্যবোধ, সমকালীন বাস্তবতা, জ্ঞান-বুদ্ধি ও মেধা-মননের প্রখরতা, ধৈর্য-সংযম ও সহিষ্ণুতার সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করে তারা উন্নত জাতিসত্তা ও প্রত্যাশিত মানবসভ্যতার গোড়াপত্তন করেন। তারা মহাসত্যের দিকে হেকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে মানুষকে আহ্বান করেছেন, ইসলামের সরল-সহজ ও সুন্দর পথের দাওয়াত দিয়েছেন; কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য, কাউকে শায়েস্তা করার জন্য তারা আসেননি। হেফাজত নেতা নবুয়ত ও রেসালতের মহান দায়িত্ব পালনকারী নবী-রাসূলগণের সঙ্গে মাওলানা আহমেদ শফীকে সমান্তরাল করে দিয়েছেন। নবী-রাসূলগণের আগমন ও উদ্দেশ্য বিবৃত করে তিনি একইভাবে মাওলানা শফীকে টেনে এনে সেসব মহাপুরুষের কাতারে স্থান দিয়েছেন। তাহলে কি মাওলানা শফীর আগমন নবুয়তের ধারাবাহিকতা? হেফাজতের অন্য সবাই কি তাহলে একই মত পোষণ করেন? কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সঙ্গে হেফাজতের তাহলে পার্থক্য কোথায়? ধর্মতত্ত্ববিদগণ মনে করেন, এ বক্তব্যের মাধ্যমে খতমে নবুয়তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা, মানুষ যত বড় হোক না কেন তাকে কখনো পয়গম্বরগণের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। হেফাজত নেতা তাই করলেন আর তা প্রকাশ্য দিবালোকে, স্বজ্ঞানে এবং সুস্থ মস্তিষ্কে। তার এই সাগ্রহ তুলনায় বুঝা যায় নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়নি, কারও কারও জন্য এখনো খোলা রয়েছে; মাওলানা আহমেদ শফী তাদেরই একজন (নাউজুবিল্লাহ)। অবশ্য শফী সাহেব এ বিষয়ে কি ভাবেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে হেফাজত নেতার এই কুফরি বক্তব্যের সময় তিনি তো মঞ্চেই ছিলেন। আমরা তাকে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। 'নীরবতা অবলম্বন মানে সম্মতির লক্ষণ' কথাটিকে যদি মানদণ্ড ধরি তাহলে বিষয়টি গিয়ে কোথায় দাঁড়ায়?বাংলাদেশ হেফাজত নেতাদের ভাষায় কাফের-বেইমান বা ইসলামের দুশমন অধ্যুষিত কোনো জনপদ নয়। এটি অজস্র অলি-আউলিয়া, সুফি-সাধক ও গাউস-কুতুবের পদধুলি বিজরিত ও তাঁদের পবিত্র স্মৃতিধন্য হাজার বছরের একটি ঐতিহ্যিক দেশ। ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার শুমারে এটি শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সহস্র বছরের এটি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের দেশ। সেই দেশের বুকে দাঁড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও আকি্বদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী বক্তব্য দিয়ে হেফাজত নেতা শুধু ইসলামের বিরুদ্ধেই যে অবস্থান নিলেন তাই নয়; তার এ অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়েও পড়ে। তাই আমাদের সুস্পষ্ট দাবি- নবী-রাসূলগণের অবমাননাকারী ও ইসলামকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহারকারী এসব চিহ্নিত ব্যক্তিকে অবিলম্বে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। ধর্মীয় উসকানি দিয়ে মুসলমানদের মাঝে উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টায় মেতে ওঠা ও স্থীতিশীলতা নষ্ট করা- কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর যদি তা ধর্মের মোড়কে, ইসলামের নামে বা ইসলাম রক্ষার নামে করা হয় তাহলে তা হবে আরও চরম গর্হিত অপরাধ।সম্প্রতি বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ডে আপামর জনগণ ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা পেতে শুরু করেছেন। ইসলামের নামে মাতৃত্ব ও সম্মানের প্রতীক নারীর ওপর আঘাত, গণমাধ্যমকর্মীদের নির্যাতন, অবাস্তব দাবিনামা, সংঘাত-সংঘর্ষে জড়ানো, ধর্মীয় লেবাসে প্রতিপক্ষের দিকে অগি্নমূর্তি ধারণ, সংবাদ সম্মেলনে ও বক্তব্যে অবাধে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন, নির্বিচারে-ঢালাওভাবে মানুষকে নাস্তিক-মুরতাদ ঘোষণা- সর্বোপরি শারীরিকভাবে একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে নবী-রাসূলগণের সঙ্গে তুলনা করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে খতমে নবুয়তের মতো ইসলামের খুবই স্পর্শকাতর আকি্বদা-বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম এ দেশে শান্তির ইসলামকে বিতাড়নের ঘৃণ্য অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তাই শান্তিপ্রিয় সব মানুষকে দেশ, জাতি ও ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। হেফাজতে ইসলামের রুক্ষ্মমূর্তিতে বিভ্রান্ত না হয়ে ইসলামের প্রকৃত, শাশ্বত, চিরন্তন ও সর্বমানবিক রূপ পরিগ্রহের মাধ্যমে আমাদের সমাজজীবনে কাঙ্ক্ষিত শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধি আনয়নে অবদান রাখতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।লেখকদ্বয় : র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসংসদ সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, সম্পাদক, মত ও পথই-মেইল : muktadir.chowdhury@yahoo.comড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ,সহযোগী অধ্যাপক, ফারসিভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।ই-মেইল : bahauddindu@yahoo.com
false
rg
বন্ধুদের আমলনামা-৫ _ _ রাজা ভানু সিং রাজীব নূর ।। রেজা ঘটক একনিষ্ঠ উপন্যাস পাঠক হিসেবে বন্ধুদের মধ্যে যার জুরি নেই সে হল রাজীব নূর। রাজীব নূর নিজেও গল্প লেখেন। নব্বই দশকের গল্পকারদের মধ্যে রাজীব নূরও অন্যতম। কিন্তু সংবাদপত্রের বিশাল বিশাল লেখার ভারে রাজীবের গল্প ধীরে ধীরে কোথায় যেনো জোছনা দেখতে চুপ করে বসে আছে। অথবা রাজীব গোপনে কোথাও সব লিখে রাখছে যার খবর পাওয়া নিতান্তই কঠিন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স মাস্টার্স করার সময় থেকেই সংবাদপত্রে হাতেখড়ি। চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকায় তখন রাজীবের গল্পও ছাপা হত। চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করে ঢাকায় এসে আবার তখনকার দিনে সবচেয়ে উচুমানের পত্রিকা দৈনিক ভোরের কাগজে যোগ দিল রাজীব। ততোদিনে সাংবাদিকতার পাঠেও হাত পেকে গেছে। ভোরের কাগজ থেকে যখন মতিউর রহমান বেরিয়ে গিয়ে দৈনিক প্রথম আলো বের করার চিন্তা করলেন, তখন সেই দলে রাজীব নূরও রইলেন। সবাই বলেন, মতিউর রহমান সবচেয়ে যে রিপোর্টারকে বেশি স্নেহ করেন সে হল আমাদের রাজীব নূর। আমরা একই বছর এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স পাস করলেও ঢাকায় পরিচয়ের প্রথম দিন থেকে আমি ডাকি রাজীব দা। আর রাজীব নূর আমাকে ডাকেন শুধু রেজা। আমাদের সসম্পর্কটা আপনা আপনি'র। ২০০২ সালে আমিনুর রহমান মুকুলের নের্তৃত্ব আমরা যখন পালাকার গঠন করি তখন থেকই রাজীব দা'র সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতার শুরু। তারপর ২০০৩-এর জুন মাস থেকে প্রায় আড়াই বছর আমরা একই বাসায় ব্যাচেলর লাইফ যাপন করেছি। রাজীব দা খুব ভালো গরুর মাংস রান্না করতে জানেন। আর খুব ভালো নুডুলস বানাতে পারেন। রাজীব দার সঙ্গে রাজীব'দার কম্পিউটারে আমরা ১৯ কাঁঠালবাগানের বাসায় প্রচুর ছবি দেখেছি। রাজীব দার বইয়ের সংগ্রহ ইর্ষা করার মতো। সেই সুযোগে আমি প্রচুর বই পড়েছি তার বুক সেলফ থেকে। রাজীব নূরের বিয়ের আগের এবং বিয়ের পরের দুটো পর্বই আমার জানা। সেই বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। কালো সে যতোই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ, কৃষ্ণকলি বলে গাঁয়ের লোক... একবার এফডিসির উপর রাজীব নূর একটা সিরিয়াল নিউজ করলেন। রোজ প্রথম আলোতে তা ধারাবাহিক ছাপা হচ্ছিল। সেই সময় রাজীব দা'র গলা ভাঙা। যতো ফোন আসে রিসিপ করি আমি। এফডিসি থেকে প্রাক্তন অভিনেতা রাজীব সাহেব ফোন করে হুমকি দিলেন। এসব তথ্য তুমি কোথায় পেলে? আসো, দুপুরে একত্রে লাঞ্চ করি? রাজীব দা একটু ঘাবড়ে গেলেন। প্রথম আলো'র ক্রাইম বিট করেন তখন পারভেজ খান। তিনি রাজীব দাকে সাজস যোগালেন। রাজীব দা এমনিতে খুব দুঃসাহসী। কিন্তু কেউ হুমকি দিলে তখন তার নরম দিলের খবরটা বোঝা যায়। ততোদিনে রাজীব নূরকে প্রথম আলো থেকে মটর সাইকেল দেওয়া হয়েছে। দিনে আমাদের বন্ধু শিল্পী শাহীনুর রহমান, ডাক্তার কল্লোল চৌধুরী, গোলাম রসুল আর রেজাউল কবির মাহমুদ নাছিম রাজীব দাকে মটর সাইকেল পালানোর প্রশিক্ষণ দেন। আর রাতে কখনো আমি যাই কখনো নাছিম যায়। এভাবে পালা করে রাজীব দাকে মটর সাইকেল চালানো শেখানো হল। মটর সাইকেল চালানো শিখলেন শাহীনের মটর সাইকেল দিয়ে। কারণ ওটা একটু সাইজে ছোট। কয়েক দিন না যেতে প্রথম আলো থেকে পাওয়া মটর সাইকেল চালানো শুরু করলেন। বন্ধুদের চোখ তখন ছানাবড়া। একবার রাতে আমি আর রাজীব দা ধানমন্ডি চক্কর মেরে সাত মসজিদ রোড ধরে মোহাম্মদপুর হয়ে আসাদ গেটের দিকে যাচ্ছি। রাত প্রায় বারোটা। ফাঁকা রাস্তা। রাস্তার বামপাশে সারি সারি থামানো রিক্সাভ্যান। কি মনে করে হঠাৎ রাজীব দা সেই ভ্যানের স্তূপের মধ্যে মটর সাইকেল ঢুকিয়ে দিলেন। পাল্টি খেয়ে দু'জনের অবস্থা কেরোসিন। দুঃখ ভুলতে রাজীব দা জাফরকে ফোন করলেন। জাফরের বাসা ফিজিক্যাল কলেজের পেছনে। সাত মসজিদ রোডে জাফর আসলো। আমরা চায়ের দোকানে চা খেলাম। জাফর বললো, দে, আমি একটু ট্রাই করি। মটর সাইকেল নিয়ে জাফর সাই করে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত ঘুরে ব্যাক করলো। রাজীব দার সেই দৃশ্য বিশ্বাস হচ্ছিল না। জাফরও মটর সাইকেল চালাতে পারে? এটা রাজীব নূরের বিশ্বাস করতে আর চোখে সেই দৃশ্য সরাসরি ধারণ করতে টাসকি খাবার দশা। কথায় কথায় বললেন, জাফর পারলেও আপনি নিশ্চয়ই পারেন না। জবাবে বললাম, আমি পারি কিন্তু ঢাকায় কখনো চালাইনি। রাজীব দার চোখে আবারো অবিশ্বাসের ছায়া। পরে কলাবাগান অফিসার্স কোয়ার্টারের মাঠে এসে আমাকে মটর সাইকেল চালিয়ে দেখিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে, আমিও পারি। তারপর রাজীব দা বায়না ধরলেন, আপনি রাস্তায় পারেন না? পরে কলাবাগানের অফিসার্স কোয়ার্টারের ছোট্ট রাস্তায় চালিয়ে দেখালাম যে, নিশ্চয়ই বড় রাস্তায়ও পারার কথা! ততোদিনে রাজীব দা কাঁপাকাঁপি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একরাতে হঠাৎ শাহীনের বউ রাজীব দাকে ফোন করে বললো, সন্ধ্যা থেকে শাহীনের কোনো খবর নাই। জানা গেল বিকালে গোলাম রসুল আর শাহীন উত্তরা একটা অফিসের কাজে বেরিয়েছিল। রাজীব দা বললো, নিশ্চয়ই অফিসে রাত জেগে গোলাম রসুলের কোনো কাজ করছে শাহীন। আমাদেরও সেই ধারণা হল। তবু নিশ্চিত হবার জন্যে আমরা কাঁঠালবাগান থেকে মটর সাইকেল নিয়ে বের হলাম। সোজা সিদ্দেশ্বরী শাহীনের অফিসের সামনে গিয়ে দেখি অফিসে কোনো আলো নেই। গেইট বন্ধ। তার মানে ওরা উত্তরা থেকে ফেরেনি। আমাদের দু'জনের মোবাইলেই টাকা ফুরিয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত হল, প্রথম আলোতে গিয়ে কয়েক জায়গায় ফোন করা হবে। তারপর ঢাকা মেডিকেলে চেক করতে যাবো। উল্লেখ করা উচিত, তখনকার দিনে প্রায়ই শাহীন আর গোলাম রসুল মটর সাইকেল অ্যাকসিডেন্ট করতো। আমারা নিউ বেইলী রোড ধরে মগবাজারের দিকে টার্ন করব। বিপরীত দিকে বেশ গতিতে বিশাল সাইজের ট্রাক আসছে। আমাদের উচিত ট্রাক চলে যাবার পর রাস্তা ক্রোচ করা। কিন্তু রাজীব দা ট্রাককে পাত্তা দিলেন না। আমরা যাচ্ছি, ট্রাকও আসছে। রাজীব দা হঠাৎ কি মনে করে জায়গায় ব্রেক কষে দিলেন। ট্রাক চালক রাজীব দা'র চেয়ে দক্ষ। কোনো মতে ফুটপথে তুলে দিয়ে আমাদের সেইফ করলেন। আমার গায়ে মরনের বাতাস ছুঁয়ে গেল। এখনো কেউ যদি ভিকারুন নেছা স্কুলের ওই ক্রোচিংয়ে টেলিফোন থাম্বাটা একটু খেয়াল করেন, দেখবেন ওটা দেয়ালের দিকে ঝুঁকে দক্ষিণে সিজদা দেবার ভান করছে। প্রাক চালক বাজখাই গলায় আমাদের বকা দিলেন। আমরা বকা খেয়ে মটর সাইকেল না চালিয়ে ঠেলতে ঠেলতে প্রথম আলোতে পৌঁছালাম। সেখানে মটর সাইকেল রেখে রাজীব দা অনেক জায়গায় ফোন করলেন। তারপর আমরা ঢাকা মেডিকেল ঘুরে আবার প্রথম আলো থেকে মটর সাইকেল নিয়ে যখন ব্যর্থ হয়ে ফিরছি, তখন শাহীনের বউয়ের মোবাইলও বন্ধ। পরে জানা গেল শাহীন বাসায় যাবার পরেই শাহীনের বউ মোবাইল সুইস অফ করেছিল আর শাহীনের ফোনে চার্জই ছিল না। হুট করে একদিন রাজীব দা প্রথম আলো'র চাকরিটা ছেড়ে দিলেন। একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থার অফিস দিলেন পান্থপথ। তিন বন্ধু পার্টনার। আমাকেও পার্টনার হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমার টাকা নাই তাই হই নাই। কবি শাহেদ কায়েস, রাজীব নূর আর আরেকজন মিলে সেই অফিস। জাকজমক করে সাজানো হল। অনেকগুলো কম্পিউটার কেনা হল। প্র্রসিডেন্ট সেক্রটারির আলাদা আলাদা রুম। বিশাল কারবার। দৈনিক সংবাদপত্রের এক্সকুলুসিভ নিউজগুলো তারা সেই অফিসে আর্কাইভ করা শুরু করলো। কয়েক মাস না যেতেই রাজীব নূর সেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে পান্থপথে আরেকটা বিজ্ঞাপনী সংস্থা দিলেন। এবার পার্টনার ছয় জন। রাজীব নূর। রাজীব নূরের বউ তনূজা আতবর, কবি শাহেদ কায়েস, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু, কবি অতনু তিয়াস, আর কে যেনো একজন। সংস্থার নাম দিল যোগসূত্র। ঐতিহ্য-প্রথম আলো গল্প লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করলো যোগসূত্র। ভারী মার মার কাট কাট ব্যস্ততা। প্রজেক্ট যখন শেষ তখন ঐতিহ্যের আরিফুর রহমান নাঈম আর রাজীব নূরের মধ্যে দেখা দিল এক রহস্যময় দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে রাজীব নূর যোগসূত্রের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাঠসূত্র প্রকাশনী'র কাজ শুরু করলেন। প্রথম বছরে ২০০৭ সালে অমর একুশে বইমেলায় পাঠসূত্রের নিজস্ব কোনো দোকান ছিল না। পরিবেশকের মাধ্যমে বইমেলা বই তোলা হল। দ্বিতীয় বছরে আমিও রাজীব দা'র সঙ্গে যোগ দিলাম। যোগসূত্রের পাওয়া বিভিন্ন ইভেন্ট থেকে টাকা আয় করে পাঠসূত্রে ব্যয় করা শুরু হল। ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত আমি যোগসূত্র ও পাঠসূত্রে ছিলাম। যোগসূত্র এই সময় বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে কোটি টাকার উপরে ইনকাম করেছে। ইভেন্ট শেষেই রাজীব নূরের কাছে টাকা নেই!! পরে অবশ্য গাজীপুরে একটি জমির সন্ধান মিলেছিল। সেখানেও জমির দখল নিয়ে জমির ক্রেতাদের দেন-দরবার শুরু হবার পর আমি জানতে পারলাম। শাহীন, ডাক্তার কল্লোল আর রাজীব নূর সেই জমি শেয়ারে কিনেছিল। পরে বিক্রি করে সব টাকা ফেরত পেয়েছে কিনা জানি না। যোগসূত্র থেকে আমি থাকা কালীন অনেক ইভেন্ট করেছি। ওয়ার্লড হেলথ অরগাইনেজাশান থেকে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্টি ট্যোবাকো ক্যাম্পেইন, গানচিল থেকে চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠদের সিডি কভার, কনসার্ন ওয়ার্লড ওয়াইড থেকে বিভিন্ন ইভেন্ট আমরা করেছিলাম। আমি যো্গসূত্র থেকে চলে আসার পর রাজীব নূরের মাথায় শুদু আইডিয়া খেলা করে। শেষ পর্যন্ত যোগসূত্র বন্ধ করে দিয়ে রাজীব নূর আবার চাকরি নিয়ে প্রথম আলোতে সাংবাদিকতা শুরু করেছন। রাজীব নূরের গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে দুইটি। বাংলা একাডেমী থেকে 'ধ্রুপদী ও তার প্রেমিকেরা' আর ঐতিহ্য থেকে সোনার তরী সকাল'। রাজীব নূর ১৯৬৯ সালের ৮ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে জন্মগ্রহন করেন। বিয়ে করেছেন তনুজা আকবরকে। রাজীব-তনুজা'র এক কন্যা। কন্যার নাম অপার সর্বজয়া। অপরের বয়স এখন চার বছর। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮
false
ij
কুরু_ প্রাচীন পারস্যের এক দার্শনিক রাজা কিংবা সুফি শাসক। প্রাচীন পারস্যের রাজা সাইরাসকে বাংলায় কুরু বলা হয়। কেননা, প্রাচীন পারস্যের ভাষায় শব্দটি ছিল "কুরোস"। ওখান থেকেই বাংলায় কুরু। সাইরাস বলে ইংরেজরা । কাজেই আমরাও বলি। কুরু শব্দের মূলে রয়েছে "সূর্য" শব্দটি। তো, কুরু ছিলেন প্রাচীন পারস্যের আকামেনিদ রাজবংশের সর্বশ্রেষ্ট শাসক। কুরুর সময়কাল ৬০০ থেকে ৫৩০ খ্রিস্টপূর্ব। কুরুর ছেলেবেলা এমন চমকপ্রদ যে কী বলব। সে বিষয়ে লিখেছেন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোদতাস তাঁর বিখ্যাত “ইতিহাস” গ্রন্থে। সেসবই এখন একবার স্মরণ করি। সে কালে পারস্যে ছিল মদ্র রাজ্য। সেই মদ্ররাজ্যের অধিপতি ছিলেন সম্রাট এসটাইয়াজেস। তাঁর মেয়ের নাম ছিল মাদানে। মাদানের স্বামীর নাম ছিল ক্যামবাইসেস। ক্যামবাইসেস পারস্যের এনশান প্রদেশের শাসক করত। সম্ভবত বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে প্রদেশটি পেয়েছিল ক্যামবাইসেস। সম্রাটরা তো কন্যার সুখের জন্য সব ব্যবস্থাই করেন। মাদানে মা হল। ফুটফুটে সুন্দর পুত্রকে নিয়ে মাদানে-ক্যামবাইসেস দম্পতির দিন কাটছিল সুখে। তো, কার দীর্ঘকাল সুখে কাটে এ ধরায়? ভয়ঙ্কর এক বিপর্যয় নেমে এল। কেননা, একরাত্রে এক বদ স্বপ্ন দেখলেন সম্রাট এসটাইয়াজেস। দেখলেন, তার সদ্যজাত নাতি, মানে মাদানের ছেলেটি তাকে উৎখাত করবে। কী ভয়ঙ্কর কথা! সম্রাট এসটাইয়াজেস-এর ছিল পাথর-হৃদয়। তিনি তার সদ্যজাত নাতিকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন! ঐ জঘন্য কাজটি যাকে করতে বললেন তার নাম ছিল হারপাগাস। হারপাগাস-এর ছিল কোমল-হৃদয়। সে মায়বশত নবজাতককে হত্যা করতে পারেনি। সে অনভিপ্রেত দায়িত্বটি অন্যকে দেয়। দায়িত্ব যে পেল-সেই লোকটার, কী আশ্চর্য, ঠিক তখনই একটি সদ্যজাত সন্তান মারা গিয়েছিল। কাজেই সে শিশুটিকে খুন না-করে বরং শিশুটিকে তার বউয়ের কোলে তুলে দিল। লোকটার বউ শিশুটিকে লালনপালন করতে লাগল। কুরুর বয়স বছর দশেক হলে তার শরীরে আভিজাত্যের লক্ষণ ফুটে উঠতে লাগল। এই সময়, হিরোদোতাস লিখেছেন, সম্রট এসটাইয়াজেস বালক কুরুকে দেখলেন। সম্ভবত কোনও রাজকীয় অনুষ্ঠানে। দশ বছরের বালক দেখে তিনি সম্রাট ভীষন অবাক। আমার সঙ্গে এত মিল! তিনি হারপাগাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। হারপাগাস সব জানল সম্রাটকে । সম্রাট তখন কুরুকে মেয়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। ততদিনে হয়তো স্বপ্নের কথা ভুলে গিয়েছিলেন সম্রাট এসটাইয়াজেস। হয় তো এ সবই কাল্পনিক। গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোদোটাসের লেখায় পাই। তবে চমকপ্রদ যে- সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। যাহোক। আগেই বলেছি-কুরুর বাবা ছিলেন পারস্যের এনশান প্রদেশের শাসক। বয়স হলে কুরু বাবার উত্তরাধিকার পেল। কী ভেবে কুরু মদ্র শাসনের বিদ্রোহ করলেন। তিনি মাতামহ এসটাইয়াজেসকে বন্দি করলেন! এসটাইয়াজেস এর স্বপ্ন যখন ফলল তখন তিনি বন্দি। সম্রাট এসটাইয়াজেসকে উৎখাত করে কুরু নিজেকে পারস্যের সম্রাট বলে দাবি করলেন। সেই দাবির বৈধতা দিতেই যেন পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলো জয় করার জন্য এক সামরিক অভিযানে বেরুলেন কুরু। একে একে জয় করলেন লিডিয়া ব্যাবিলন মিশর। কিন্তু, কোথাও অহেতুক ধ্বংসযজ্ঞ চালান নি। ইউরোপের ইতিহাসবিদেরা এ বিষয়ে একমত। কোথাও অহেতুক ধ্বংসযজ্ঞ চালান নি কুরু। তিনি স্থানীয় প্রশাসনই বহাল রাখতেন। কেবল তাদের পারস্যরাজকে কর দিতে হত। ব্যাবিলন জয় করার পর এক মহৎ সিদ্ধান্ত নিলেন কুরু। ইহুদিরা দীর্ঘদিন ব্যাবিলয়ে বন্দি ছিল। তিনি ইহুদিদের মুক্ত করে দিলেন। জেরুজালেমে ফিরে সলোমনের উপাসনালয়টি পুনর্নিমানের অনুমতি দিলেন। সলোমনের উপাসনালয়টি ব্যবিলনের রাজা নেবুচাদনেজার ধ্বংস করে ফেলেছিলেন। এই ঘটনাটি ওল্ড টেস্টামেন্টে রয়েছে। পারস্য সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে, বর্তমান আফগানিস্থানে স্থানীয় ট্রাইবের সঙ্গে এক যুদ্ধে নিহত হন কুরু। তাঁর মরদেহটি পারস্যের। পাসারগাদ-এ আনা হয়েছিল। কেননা, কুরুর রাজধানী ছিল পারস্যের পাসারগাদ-এ। তাঁর সমাধিসৌধটি ওখানেই। সেই সমাধি সৌধটি এত ছিমছাম যে কি বলব। প্রবল প্রতাপশালী সম্রাট বলেই মনে হয় না। সাইরাসকে তাই আমার দার্শনিক রাজা কিংবা সুফি শাসক বলেই মনে হয়। অতি সাধারণ সমাধিসৌধের ছবিটি নিচে দেখুন। সূত্র: Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৪৬
false
ij
জেন গল্প (৪) অনেক বছর আগের কথা। জাপানে দু’জন জেনগুরু বাস করতেন। এদের একজন হলেন: উনশো; আর অন্যজন হলেন, তানজান। এঁরা জেনগুরু ঠিকই, তবে এঁদের চরিত্র ছিল একে অন্যের বিপরীত। যেমন, উনশো কঠোর ভাবে বুদ্ধের নীতি মেনে চলতেন। এই যেমন, উনশো মদ খেতেন না। সকাল এগারোটার পর কোনও ধরনের খাদ্য গ্রহন করতেন না। ওদিকে তানজান এসবের কিছুই মানতেন না। তিনি যখন ইচ্ছে খেতেন, যখন ইচ্ছে ঘুমাতেন। এমনকী দিনের বেলাও ঘুমাতেন তানজান । একদিন। উনশো এলেন তানজান-এর বাড়ি। তানজান তখন বসে বসে মদ খাচ্ছিলেন। অথচ, মদ্য পান করা জেন সাধকদের জন্য কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে তানজান উৎফুল্ল হয়ে বললেন, আরে, আপনি! আসুন, আসুন । তানজান মদ খাচ্ছেন দেখে উনশো-র চোখমুখ বিকৃত হয়ে উঠল। তানজান ওসব খেয়াল না-করে মদের পেয়ালাখানি ওপরে তুলে ধরে চোখ টিপে উনশো কে জিগ্যেস করলেন, আরে ইয়ার, পান করবেন নাকি? আপনি জানেন তো আমি ওসব খাই না! প্রায় চিৎকার করে উঠলেন উনশো । তানজান-এর ভরাট গোলাকাল হলদে মুখখানিতে কৌতূকের আভা ছড়িয়ে পড়ল। তিনি বললেন, ধুরও। যে মদ খায় না সে তো মানুষই না। এই বলে বেশ আয়াস করে এক ঢোঁক তরল গলায় ঢাললেন তানজান । কি! আমি মদ খাই না বলে আমাকে বললেন আমি মানুষ না! হুঁ। বলি, আমি যদি মানুষই না হই-তাহলে আমি কি? উনশো চোখ সরু করে জিগ্যেস করলেন। বুদ্ধ। মুচকি হেসে উত্তর দিলেন তানজান। জেন দর্শনের পটভূমি: পঞ্চম শতাব্দীর গোড়ার কথা। একজন ভারতীয় বৌদ্ধ সন্ন্যাসী-তাঁর নাম বোধিধর্ম; তিনি বৌদ্ধ ধর্মের ধ্যানধারণা নিয়ে চিনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বোধিধর্ম চিনের বুদ্ধের ধর্ম-দর্শন প্রচার করলেন। চিনের লোকে শ্রদ্ধাভরে গ্রহন করল। যদিও চিনে সে সময় ‘তাওবাদ’ প্রচলিত ছিল। বৌদ্ধধর্মের অন্যতম ধারণা হল ধ্যান। কিন্তু, তাওবাদের প্রভাবে ধ্যান শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে চিনে গিয়ে হল Chán। অস্টম শতাব্দীর শুরুতে Chán এর ধারনা পৌঁছল জাপানে । জাপানে Chán শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে হল Zen এবং Zen Buddhism হয়ে উঠল বুদ্ধের অনুসারী জাপানি সাধু স¤প্রদায়ের দর্শন । জেন গল্পের সূত্র: ‘ওয়ান হানড্রেড ওয়ান জেন স্টোরিজ’ সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১০
false
ij
গল্প_ হার থেলমা কাল চলে যাচ্ছে । সাজিদ বলল। আন্দালিব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তখন অল্প অল্প করে সন্ধ্যার গুমোট অন্ধকার ঢুকছিল ঘরে । জানালার ওপাশে বাড়িগুলির গায়ে লেগে থাকা রোদের ম্লান রং মুছে যাচ্ছিল। আর ফিরোজা রঙের আকাশে শেষবেলার রং বদলে যাচ্ছিল দ্রুত। সন্ধ্যার মুখের শীতল বাতাসের স্পর্শের আশায় ছাদের ওপর সারাদিনের বৃষ্টিহীন গরমে সেদ্ধ হওয়া মেয়েদের আর বালকদের জটলা। সাজিদ আর আন্দালিব কার্পেটের ওপর পা-ছড়িয়ে বসে আছে। মুখোমুখি । সাজিদের হাতে সিগারেট। বিকেল থেকে ঘনঘন সিগারেট টানছে ও। এ্যাশট্রে উপচে পড়েছে। ফিল্টারে আগুন ধরে গেছে, কটূ গন্ধ ছড়াচ্ছে। আন্দালিব পাশে ঠান্ডা পানির একটা বোতল। কিছুক্ষণ আগে ফ্রিজ থেকে বের করে এনেছে ও। দ্রুত এ্যাশট্রের ওপর পানি ঢালল। তাতে আগুন নিভল ঠিকই - তবে বাজে গন্ধটা আরও ঘন হয়ে উঠল। ব্যাপরটা যেন খেয়ালই করল না সাজিদ। ওর পরনে কালো জিনস আর সাদা রঙের টি-শার্ট। টি-শার্টের ওপর গোলাপী রঙে ‘ফেয়ারওয়েল’ কথাটা লেখা। ‘ফেয়ারওয়েল’ কথাটা কি মারাত্মক! ওর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চুল উশকো-খুশকো। আজ যেন সাজিদের চৌকোণ শ্যামল মুখটা বড় বেশি বিমর্ষ দেখাচ্ছে। সিগারেটে টান দিয়ে এক মুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বলল, মায়ের কাছ থেকে আমি এ রকম কঠিন সিদ্ধান্ত আশা করিনি রে আন্দালিব । আন্দালিব মাথা নাড়ে। তারপর চুপ করে থাকে। সাজিদের মা রওনক আন্টির অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত ওকেও ব্যথিত করেছে। অথচ রওনক আন্টি অত্যন্ত উদার মনের মানুষ, ছেলেবেলা থেকেই রওনক আন্টি আন্দালিব-এর আদর্শ। ছেলেবেলায় আন্দালিব রওনক আন্টির কাছ থেকেই রবীন্দ্রসংগীতের হাতেখড়ি নিয়েছে । আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে? আন্দালিব আর সাজিদ তো পাশাপাশি বাড়িতে একই পাড়ায় বড় হয়েছে । একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরি, রাস্তার মুখে আলপনা আঁকা, ২২ শে শ্রাবণ, ১১ ই জ্যৈষ্ঠ, পহেলা বৈশাখ, বন্যার্তদের জন্য ত্রাণের বন্দোবস্ত - ছেলেবেলা থেকে কোনওবারই বাদ যায়নি...সবই হয়েছে রওনক আন্টির নেতৃত্বে। রওনক আন্টির সর্বাঙ্গে সারাক্ষণ কেমন এক সমাহিত ভাব, কেমন এক অর্ন্তগত আত্মশক্তিতে বলীয়ান। যা ঠিক ব্যাখ্যা করা যায় না। কোথাও কোনও অন্যায় হলে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন, কখনও-বা প্রেসক্লাবের সামনে অনশন। কারও-বা ব্যাক্তিগত শোকে অনিবার্য সেই রাবীন্দ্রিক উপদেশ ‘এই আগুনের পরশমনি ছোঁওয়াও প্রাণে, এ জীবন ধন্য কর দহন দানে।’ অথচ ... অথচ রওনক আন্টি ছেলের জন্য একটা মার্কিন মেয়েকে গ্রহন করতে নারাজ। এর কি কারণ? থেলমা ব্রুক আমেরিকান। আমেরিকান ব্ল্যাক। তাই? অথচ ... অথচ রওনক আন্টি অত্যন্ত উদার ও মানবিক মূলমন্ত্রে বিশ্বাস করেন। আন্দালিব এর আজও মনে পড়ে ছেলেবেলায় রওনক আন্টি গভীর তন্ময় হয়ে সুললিত কন্ঠে আবৃত্তি করতেন: অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে। নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর কর হে। জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে। মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে। অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে। যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ, সঞ্চার করো সকল মর্মে শান্ত তোমার ছন্দ। চরণপদ্মে মম চিত নিঃস্পন্দিত করো হে, নন্দিত করো, নন্দিত করো, নন্দিত করো হে। অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে। আবৃত্তি শেষ করে রওনক আন্টি অনেক ক্ষণ চোখ বুজে থাকতেন। তারপর চোখ খুলে বলতেন, কবিগুরু এই কবিতাটি কোথায় বসে রচনা করেছেন? শিলাইদহ। সাজিদের বোন লাবণী বলত। সময়কাল? ২৭ অগ্রাহায়ণ ১৩১৪। হয়তো আন্দালিব কিংবা অন্যকেউ বলত। এটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের কবিতা? গীতাঞ্জলি । আন্দালিব এর বোন শম্পা বলত। রচনা সংখ্যা? ৫। এমনই গভীরভাবে রওনক আন্টি ওদের রবীন্দ্রনাথের জগতে প্রবেশ করাত। বুয়েটে পড়ছে আন্দালিব । সাজিদের মতো বাইরে পড়তে যেতে পারেনি। এ নিয়ে আক্ষেপও নেই ওর। যা হোক। আজও রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের সমাজজীবনে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে সে বিশ্বাস করে। আজও বাংলাদেশের কোথাও কোনও অন্যায় হলে ...ধরা যাক ....উগ্র জাতীয়তাবাদীরা নওগাঁ কি বান্দরবানের আদিবাসী গ্রাম পুড়িয়ে দিল ... বুয়েটের ক্যান্টিনে বসে হুঙ্কার ছাড়ে আন্দালিব: যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ ... রওনক আন্টি প্রণোদনায় এ পাড়ার কিশোর-কিশোরীরা এই মহত্তম শ্লোগান নিয়েই বেড়ে উঠেছে । আন্দালিব-সাজিদরা, শম্পা-সঞ্চিতারা। এবং অন্যান্যরা। রওনক আন্টির কারণেই এ পাড়ার পরিস্থিতি ঢাকা শহরের অন্যান্য পড়ার মতো নয়। যেমন, এ পাড়ায় ইভটিজিং নেই, বরং দেওয়াল পত্রিকা বেরয়, নিয়মিত খেলাঘরের আসর বসে। এ পাড়ার নিজস্ব ফুটবল-ক্রিকেট ও হকি টিমও রয়েছে। তাহলে? সাজিদের পছন্দের মেয়ে থেলমা ব্র“ক আমেরিকান। আমেরিকান ব্ল্যাক। কৃষ্ণকায়। তাই রওনক আন্টি ছেলের বউ হিসেবে গ্রহন করতে পারছেন না? আন্দালিব হতাশ বোধ করে। এক অভিন্ন পৃথিবীর স্বপ্নে বিভোর ও । যে পৃথিবীর মূলমন্ত্র - যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ। আন্দালিব অস্বস্তি বোধ করে। সাজিদের মুখের দিকে তাকায়। সাজিদের মুখ ধোঁওয়ায় ঢাকা পড়েছে। তবে বোঝা যায় বিমর্ষ সাজিদ এর কপালে ঘামের স্রোত বইছে। এইসব জুনের দিনগুলো পুড়ে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে শহর ঢাকা। পুড়ে যাচ্ছে নাগরিক আশা-ভরসা। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাজিদের দুঃখকষ্ট। থেলমার জন্য ওর অনিবার্য বিরহ-দূরত্ব। হঠাৎই আন্দালিব এর মনে পড়ল ... সাজিদ যখন আমেরিকা থাকতে প্রথম ই-মেইলে থেলমা সম্পর্কে বলেছিল...আমার সঙ্গে একটি মার্কিন মেয়ের পরিচয় হয়েছে। ওর নাম, থেলমা, থেলমা ব্রুক । জানিসই তো গত সামারে নেভাদার রেনো শহরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ওখানেই একটা বারে আমি থেলমাকে এক বৃষ্টিশূন্য দিনে প্রথম দেখি । কৃষ্ণবর্ণের দীর্ঘ শরীর, কোঁকড়া চুল, মিষ্টি মুখে টলটলে চোখ । মুহূতেই আমি ওর নাম দিলাম:‘কৃষ্ণকলি।’ সময়টা গ্রীষ্ম কাল। বেশ ক’দিন ধরে নেভাদায় বৃষ্টি হচ্ছে না। থেলমা গিটার বাজিয়ে গান করছিল। বৃষ্টির গান। থেলমা গাইছিল: Summer rain Whispers me to sleep And wakes me up again Sometimes I swear I hear her call my name To wash away the pain My summer rain ঠান্ডা বিয়ার খেতে খেতে থেলমার গান শুনে আমার মনে হল যেন সত্যিই আজ বৃষ্টি নামবে। সত্যিই তাইই হল। সন্ধ্যের মুখে বৃষ্টি নামল। আমরা সবাই বারের বাইরে শিশুদের মতো ছুটে গেলাম। তারপর রাস্তার ওপরই ভিজতে শুরু করলাম নেভাদার বিখ্যাত বৃষ্টির ভিতর । তুই তো জানিস ...সে সময় আমার আফরোজার সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। বৃষ্টির ভিতর ভিজতে ভিজতে আমি আর আফরোজার কথা ভাবছিলাম না, প্রাণপন অন্য কাউকে চাইছিলাম ... আমি থেলমার হাত ধরার কথা ভাবছিলাম। অঝোর বৃষ্টির ভিতরেই কী করে যেন থেলমা আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছিল ঠিকই। বৃষ্টির শব্দের ভিতরই আমার চোখে মুগ্ধতা ওই কৃষ্ণকায় মেয়েটি ঠিকই দেখে ফেলেছিল। ...তারপর বৃষ্টি থামল। আমরা বারে ফিরে এলাম। আস্তে আস্তে জানলাম থেলমাদের বাড়ি নেভাদার রেনো শহরের উপকন্ঠে। থেলমার মা স্কুলটিচার। মিসেস ব্রুক বিধবা। আর থেলমা মিউজিক নিয়ে পড়ছে। মিসেস ব্র“ক আমার নাম শুনে মৃদু হাসলেন শুধু। আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কেননা তিনি জানেন, এ পৃথিবীটা অনেক বড়, আর তাতে নানা রঙের মানুষের বসবাস। যাক। আমার তখন ঘোর ঘোর অবস্থা। কার জন্য ভালোবাসা কোথায় যে অপেক্ষা করে থাকে। আশ্চর্য! উনিশ বছর বয়সী একটা মেয়ে কি না আমার জন্যই অপেক্ষা করেছিল। প্রেম এমন? আমি বাংলাদেশি বাঙালি। বাংলাদেশের একটা মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম। আর কৃষ্ণকলিরা আমেরিকান। আমেরিকান ব্ল্যাক। খ্রিস্টান। রবীন্দ্রনাথও তো সত্তর বছর বয়েসে আর্জেন্টাইন এক নারীর প্রেমে পড়েছিলেন। কী যেন নাম ... যা হোক। ভালোবাসার প্রাথমিক ঘোর কাটলে আমি আর থেলমা বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে বসলাম। আমাদের দু-জনের দূরত্ব যে অনেক বেশি। ও আমার দেশটা দেখতে যাবে বলল ... সাজিদের ই-মেইলের কথাগুলি মনে করতে করতে আন্দালিব বোতল তুলে গলায় ঠান্ডা পানি ঢালল। তারপর ঝুঁকে সিগারেটের প্যাকেট তুলে সিগারেট ধরাল। সাজিদ বলল, থেলমা বাংলাদেশ যতটুকু দেখেছে ভালো লেগেছে বলল। মা ওর সঙ্গে খুবই ভালো আচরন করেছে। আমার বোনরাও ...জানিস তো গত সপ্তাহে আমরা টাঙ্গাইলের নাগরপুর গেলাম দাদুর বাড়ি। আন্দালিব মাথা নাড়ল। নানার বাড়িতেও ‘কৃষ্ণকলি’কে ঘিরে অনেক প্রশ্ন। কে এই মেয়ে? দেখতে এমন কেন? পোশাক-আশাক দেখে তো বড়লোকই মনে হয়-তাহলে গায়ের রং এত কালো কেন? আমেরিকান? কিন্তু তাহলে গায়ের রং এমন কালো কেন? হয়তো আরও প্রশ্ন উঠেছিল। সব আমার কানে আসেনি। থেলমার বিরুদ্ধে আমার বোনদের অভিযোগ ... থেলমার ইংরেজি নাকি বোঝা যায় না। থেলমা ইচ্ছে করেই নাকি পেঁচিয়ে কথা বলে। উন্নাসিক। মার্কিন দেশের মেয়ে তো। ধনীর দেমাগ। ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ব্যর্থ বুঝলি আন্দালিব। হুম। গত পরশু আসল কথা তুলল থেলমা। বাস্তববাদী স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড মেয়ে তো। ইসলাম ধর্মে কনভার্ট হতে থেলমার আপত্তি নেই । মাকে জানাল। তারপরও মা রাজী না। আশ্চর্য! আমার ব্যাপারে থেলমার মা মিসেস জেনিফার ব্রুক যতটা উদারতা দেখাতে পারলেন । আর আমার মা পারল না। মিসেস জেনিফার ব্রুক -এর কাছে আমার মা হেরে গেল। অথচ ... অথচ, পশ্চিম বাংলার একটি আবৃত্তি সংগঠন মাকে রবীন্দ্রভাব প্রসারের জন্য এবার বিদ্যাসাগর পুরস্কার দিল। আশ্চর্য! হ্যাঁ। আর মা কি বলল জানিস? কি? নাগরপুর থেকে তোর বাবা ইলেকশনে দাঁড়াবে ভাবছে। এমন সময় এসব ...এলাকায় তোর বাবার একটা ইমেজ আছে না? ইলেকশনে অনেক টাকা খরচ হবে। হেরে গেলে? তখন? ওহ্ । বাবা কাল বললেন, তোর আর বিদেশ পড়ে লাভ নেই রে সাদিজ। তুই বরং দেশেই পড়ালেখা শেষ কর। ওহ্ । আন্দালিব জানে, এই ইচ্ছেটা মোশারফ আঙ্কেলের নয়, রওনক আন্টির। ওর মনে হল বাড়িটা একবার কেঁপে উঠল। অনেক অনেক বছর আগে মহাদেশগুলি একসঙ্গে ছিল। তারপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আন্দালিব জানে, নানা কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মনগুলি আর জোরা লাগবে না। বিশ্ব বিভেদের বেড়াজাল সমুন্নত রেখেই শুকিয়ে মরে যাবে। সাজিদ বলল, মা আরও বলল, মেয়েটা তোর দাদার বাড়িতে গিয়ে গিটার বাজিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে গান গাইল। না গাইলে কি এমন হত? জানিসই তো ওরা কত কনজারভেটিভ। তুই ও ঢাকা থেকে গিটার নিয়ে গেলি। আন্দালিব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রওনক আন্টি ভীষন ব্যাক্তিত্বসম্পন্না মহিলা। শ্বশুরবাড়িতেও বিস্তর প্রভাব। ইচ্ছে করলেই থেলমার পক্ষে দাঁড়াতে পারতেন রওনক আন্টি, দাঁড়ালেন না। আন্দালিব দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাপাস্বরে বলল, আন্টির সৌন্দর্যবোধ তীব্র । এই তীব্র সৌন্দর্যবোধ দূরত্ব সৃষ্টি করল কি না কে জানে । থেলমা ব্রুক ...তোর কৃষ্ণকলি আমেরিকান ব্ল্যাক। হু। সাজিদ মাথা নাড়ল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সিগারেটে টান দিল। তোর কৃষ্ণকলির গায়ের রং ব্ল্যাক হলেও ভারি মিস্টি দেখতে কিন্তু। আন্দালিব বলল। সাজিদ বলল, কৃষ্ণকলিকে আমি যেভাবে দেখি সেভাবে তো আর কারও পক্ষে ওকে দেখা সম্ভব না। তা ঠিক। রবীন্দ্রনাথের চোখে কৃষ্ণকলি যেমন। হুম। বুঝেছি। আন্দালিব বলল। ঘরে এখন অন্ধকার জমতে শুরু করেছে। সেই ঘনায়মান অন্ধকারে সিগারেটের ঘন গন্ধ ছড়িয়ে আছে। জানালার বাইরে পোড়াটে এ শহরটার তাপদাহ থমকে আছে। কখনও-কখনও এ ঘরেও বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়ছে। জানালার বাইরে পুড়ে যাচ্ছে একটা শহরের জুনের সন্ধ্যা। ক’দিন হল আকাশে মেঘ নেই, বৃষ্টি নেই .. কোথাও কোনও ধরনের শুভেচ্ছা নেই, শুভ সংবাদ নেই ... এই রকম দুঃসময়ে একমাত্র ছেলের প্রাণ দ্বগ্ধ করছেন রওনক আন্টি । অথচ রওনক আন্টি কত শত মানুষের প্রাণে আশার সঞ্চার করেছেন এই গান গেয়ে- নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার জানি জানি তোর বন্ধনডোর ছিঁড়ে যাবে বারে বার॥ খনে খনে তুই হারায়ে আপনা সুপ্তিনিশীথ করিস যাপনা বারে বারে তোরে ফিরে পেতে হবে বিশ্বের অধিকার॥ আন্দালিব জিগ্যেস করল, কৃষ্ণকলি, মানে থেলমা কাল চলে যাচ্ছে বললি? হ্যাঁ। কখন ফ্লাইট ওর? কাল সকালে। সাজিদের কন্ঠস্বরে বিষন্নতা স্পষ্ট। আন্দালিব বলল, তাহলে তো তোকে কাল অনেক ভোরে উঠতে হবে। না। কেন? আমি এয়ারপোর্টে যাবো না। সাজিদ বলল। কেন? আন্দালিব অবাক হয়ে যায়। কাল ভোরবেলা এ শহরে বৃষ্টি নামবে। কৃষ্ণকলি বাংলাদেশের বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছিল ... সাজিদের কথায় আন্দালিব অসম্ভব বিষন্ন বোধ করে। আন্দালিব সাজিদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। আন্দালিব জানে কাল ভোরে ঠিকই বৃষ্টি হবে। ... ঠান্ডা বিয়ার খেতে খেতে থেলমার গান শুনে আমার মনে হল যেন সত্যিই আজ বৃষ্টি নামবে। সত্যিই তাইই হল। সন্ধ্যের মুখে বৃষ্টি নামল। আমরা সবাই বারের বাইরে শিশুদের মতো ছুটে গেলাম। তারপর রাস্তার ওপরই ভিজতে শুরু করলাম নেভাদার বিখ্যাত বৃষ্টির ভিতর ... আহ্ । রওনক আন্টি এত সংকীর্ণ কেন? পবিত্র একটা প্রেমকে খুন করতে পারলেন? অথচ ... অথচ ... রওনক আন্টিকে সবাই আদর্শবাদী ও পরিশীলিত নারী বলেই চেনে। বিটিভিতে পুরনো দিনের গানের আসর উপস্থনা করেন, রওনক আন্টির বাচনভঙ্গি অত্যন্ত সুন্দর। সুন্দর এবং শুদ্ধ। ফরসা ঢলোঢলো মুখ। কপালে লাল রঙের বড় টিপ। তিরিশ বছর ধরে ধ্যান করছেন, বিয়ের পর মাছ-মাংস ছেড়ে দিয়েছেন; নিরামিষ খান। রবীন্দ্রনাথের গান তো গানই। বছর কয়েক আগে রওনক আন্টি একবার আন্দালিব কে বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে আজও পুরোটা বুঝতে পারিনি রে আন্দালিব । মাত্তর চল্লিশ ভাগ চিনেছি, আর তাতেই আমি পাগলপারা, বুঝলি। আমার মনে হয় না কেউ ওই বুড়োকে ষাট ভাগ বুঝেছে। আমার খুব ইচ্ছে ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়ে শান্তিনিকেতন চলে যাব। কবিগুরুকে একশ ভাগ বোঝার চেষ্টা করব। তারপর পাগল হয়ে গেলে যাব। বলে গান ধরলেন, মধুর তোমার শেষ যে না পাই ... রওনক আন্টি আরও বলতেন, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। পৃথিবীতে এমন কোথায় আছে বল্ তো? আমরা কি কখনও বলেছি যে আমাদের তেরো পার্বণে এ আসতে পারবে না, ও আসতে পারবে না ... সাজিদের কথাটা এখনও কানে বাজছে ...মিসেস জেনিফার ব্রুক -এর কাছে আমার মা হেরে গেল। সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১:৪২
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৫ ১. বোতল আমার হইলো না আদায় বোতল আমি টানতে পারলাম নাআআআ ...। দশ তারিখ পরীক্ষা শেষে ভরপেট মদ খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু ডিপার্টমেন্টের কাজে কামলা দিতে গিয়ে সব বরবাদ হলো। ধন্য আশা কুহকিনী। কাজ আর কিছুই না, কয়েকটা প্রোজেক্টে কর্মরত ডক্টোরান্ডদের একটা সম্মেলন গোছের ব্যাপারস্যাপার হবে, সেখানে গ্রিলের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে চেপেছে। প্রথম কাজ হচ্ছে, বিয়ারের বেঞ্চ আর টেবিলসহ পানীয় ডেলিভারি দিয়ে যাবে এক প্রতিষ্ঠান, তাদের কাছ থেকে সব বুঝে শুনে নিয়ে স্টোররুমে গুছিয়ে রাখা। সময়মতো অ্যাপয়েন্টমেন্ট রক্ষার ব্যাপারে জার্মানরা বিখ্যাত, আর আমি কুখ্যাত। যখন টিউশনি করতাম, প্রথম দিনই ছাত্রছাত্রীদের বিএসটি আর এইচএসটির তফাৎ বুঝিয়ে বলতাম। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টাইম হিমু স্ট্যান্ডার্ড টাইম থেকে কিছুটা পিছিয়ে। অর্থাৎ কখনো যদি বলি যে মঙ্গলবার দিন সাতটার সময় আসবো, তাহলে আটটার আগে কখনোই আমাকে আশা করা উচিত হবে না। ২১ তারিখ বিকেল ৫টায় কোন এক বালিকার সাথে সময় নির্ধারণ করে ২২ তারিখ সন্ধ্যে ৬টায় দেখা করার উদাহরণও আছে। কিন্তু জার্মানিতে এসে আমাকে দৌড়ের ওপর থাকতে হচ্ছে, এরা অ্যাপয়েন্টমেন্টে গড়বড় একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আমিও সময়মতো জিনিসপত্র বুঝে নিতে গিয়ে টাশকি খেলাম বেঞ্চ আর টেবলের আকৃতি দেখে। এর্গোনমিক্সে জার্মানরা বেশ এগিয়ে, টিংটিঙে এক ছোকরা আর দানবের মতো তার বস জনাব কোয়লার একটা ঠেলাগাড়ির ওপর পটাপট ছয় কেস বিয়ার আর আবঝাব কোমল পানীয় চাপিয়ে দোতলার স্টোর রুমে রেখে দিলো। সেদিনের জন্যে একটা বিশেষ চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে আমাকে, ডিপার্টমেন্টের সব ঘরের দরজা সেটা দিয়ে খোলা যায়। হারিয়ে গেলে সব ঘরের দরজার তালা বদলাতে হবে, সেটার খরচ বহনের দায় আমার ঘাড়ে চাপবে, তাই একটু পরপরই পকেটে চাবির রিং চাপড়ে দেখি। বিয়ারের বেঞ্চ আর টেবিল যে কেমন জঘন্য জিনিস, তা টের পেলাম বিকেলে সব সেট করার সময়। আমাকে সাহায্য করার মতো আর কেউ নেই, ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা ফারষ্টুলে (রোলিং টেবল) নিয়ে সেটার ওপর চাপিয়ে এলিভেটরে করে নিচে নামালাম সব। বড়সড় জিনিস বহনের জন্যে বিশেষ একটা এলিভেটর আছে, কিন্তু সেটার চাবি আবার আমাকে দেয়া হয়নি। জার্মানরা নিজেদের আন্দাজে সবকিছু পোক্ত করে বানায়, যে টেবিল কোয়লার একাই শিস দিতে দিতে এনে ল্যাবের মেঝেতে জড়ো করে রেখেছে, সেটা ফারষ্টুলেতে চাপিয়ে নিচে ঘাসে ছাওয়া লন পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে যেতে গিয়ে আমার নাভিশ্বাস উঠে গেলো। গ্যাস দিয়ে গ্রিল হবে, সেজন্যে বিশেষ একটা গ্রিল আর প্রোপেনের একটা ট্যাঙ্ক ল্যাবমাস্টার হের নয়মান আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন বিকেলেই। জিনিসটা বেশ কাজের। কয়লা দিয়ে গ্রিল করার দুটো ঝামেলা, এক হচ্ছে কয়লায় আগুন ধরানোটা একটা ছোটখাটো ভ্যাজাল, দুই হচ্ছে বাতাসে কয়লার গুঁড়ো চারদিকে ছিটকে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। সে তুলনায় গ্যাস গ্রিল অনেক পরিচ্ছন্ন। গ্রিলের সাথে একটা প্রেশার রেগুলেটর লাগানো আছে, বিপদের আশঙ্কাও তেমন নেই। হের নয়মান আমাদের ল্যাবে প্রাকটিকুম করান, তাই সব কিছুই গুছানো ধাপ অনুযায়ী বোঝানোর অভ্যাস হয়ে গেছে তার। পরিষ্কার করে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না তা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। সেইসাথে নানা ফতোয়া। "আপনি গ্রিলমাস্টার, আপনি যেভাবে ভালো মনে করবেন সেভাবে করবেন। লোকের কথায় কান দেবেন না। দেখবেন সবাই নিচে এসে একেক রকম কায়দার কথা বলবে, মাথা ধরিয়ে ফেলবে। পাত্তা দেবেন না। নিজের কাছে যা ভালো মনে হয় করবেন। কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝবেন কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ? আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি! প্রথমত ...।" বাস্তবে তেমনটাই হলো। পরে যখন গ্রিল সেট করছি, এক ডক্টোরান্ড দৌড়াতে দৌড়াতে এসে হাজির। পোস্টার লাগানো হয়নি, এদিকে তার প্রেজেন্টেশন শুরু হয়ে গেছে। আমি তাকে উদ্ধার করতে পারি কি না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পোস্টার সাঁটানো শুরু করলাম গ্রিল ফেলে। ডিপার্টমেন্টের হেড এসে আমাকে এক ফাঁকে বলে গেছেন, তাড়াহুড়োর কিছু নেই, আরো ঘন্টাখানেক সময় লাগবে প্রেজেন্টেশন শেষ হতে, আমি যেন নেক কাজ করি দিলে মনে। পোস্টার লাগিয়ে এসে গ্রিলে আগুন দিয়ে দেখি লোকজন বিয়ারের কেস হাতে বেরিয়ে আসছে লনে। গ্রিল শুরু হবার পর দেখা গেলো, মিছিমিছিই টেবিল পাতা হয়েছে। প্রফেসরেরা একটা টেবিল দখল করে বিয়ারের বোতল নিয়ে নিবিষ্ট মনে গুজগুজ করছেন, ডক্টোরান্ডরা সবাই হাভাতের মতো গ্রিলের চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। নিরামিষাশীরা সব্জির শাসলিক গ্রিল করা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। কয়েকজন ছোঁচার মতো এসে বারবার সসেজ উল্টেপাল্টে দেখছে, হলো কি না। আমি হের নয়মানের অমৃতবাক্য স্মরণ করে দেখলাম, কথা সত্যি। বড়দের কথায় এ জন্যেই কান দিতে হয়। তবে যারা মাতবরি করতে এসেছে, তাদের হতাশ না করে আমি খুশিমনে বিয়ারের বোতল খুলে একপাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারতে লাগলাম। যার যেমন খুশি করে খাক, আমার কী? এর আগের হপ্তায় কাসেলের কয়েকটা গ্রিলকেন্দ্রের একটা, বুগা হ্রদের পাশে একটা ছোটখাটো গ্রিল করেছিলাম আমরা, কয়লা দিয়ে, তাই তাৎক্ষণিক তুলনায় বলতে পারি, গ্যাসের গ্রিল আসলেই কয়লার চেয়ে ভালো হয়। নয়মানের ভাষ্যমতে ইলেকট্রিক গ্রিল সবচেয়ে ভালো, কিন্তু সেটা তো আর সব জায়গায় ব্যবহারের সুযোগ নেই। আসর ফুরিয়ে যাবার পর আশেপাশে যাকে পেলাম পাকড়াও করলাম জিনিসপত্র গোছানোর জন্য। আমাদের হেডও এসে হাত লাগালেন (এ ব্যাপারটা সম্ভবত আমাদের দেশে কখনোই হবে না), ব্যাটার গায়ে যে প্রায় আসুরিক শক্তি আছে, সেটাও দেখলাম। যেখানে আমরা দু'জন মিলে একটা টেবিল ভাঁজ করে নিয়ে যাচ্ছি কষ্টেসৃষ্টে, তিনি একাই সেরকম দুটো বগলে করে ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন। গ্রিলের ফাঁকে ফাঁকে বিয়ার খাওয়া হলেও বাসায় ফিরে আর মাল খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না। গোসল করে দিলাম ঘুম। যদিও চাবি ফিরিয়ে দিয়ে এসেছি সেক্রেটারিয়েটে, কিন্তু ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখলাম, ডিপার্টমেন্টের সব দরজা হাঁ করে খোলা, আর আমার ইমিডিয়েট বস এসে গোমড়া মুখে গান গাইছে, ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে? ২. আর ইউ সাজেস্টিং দ্যাট কোকোনাটস মাইগ্রেট? মন্টি পাইথনের দু'টো সিনেমা খুঁজে পেলাম, দেখলাম পরীক্ষায় প্রস্তুতির ফাঁকে ফাঁকে। মন্টি পাইথন প্রায় চল্লিশ বছর আগের এক ব্রিটিশ কমেডি গ্রুপ, যাকে বলে স্কেচ শো, অর্থাৎ বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক মিনিটের কমেডি, সেই ধারার অন্যতম জনপ্রিয় শো ছিলো তাদের। পাঁচটা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমাও হয়েছে মন্টি পাইথনের ভাঁড়ামোর ভাঁড়ার থেকে, লাইফ অব ব্রায়ান আর হোলি গ্রেইল দেখলাম, বাকি তিনটা এখনো দেখিনি। মন্টি পাইথন গ্রুপের ছয়জনের মধ্যে গ্রাহাম চ্যাপম্যান বাদে সবাই মোটামুটি নাম কামিয়েছেন শো-বিজনেসে, চ্যাপম্যান মারা গেছেন ১৯৮৯ সালে। জন ক্লিজ মোটামুটি প্রবাদপ্রতিম কমেডিয়ান, এককালে বিটিভিতেও দেখাতো তাঁর অন্যতম টিভি সিরিয়াল ফল্টি টাওয়ারস। সে সময় আমি নিতান্ত নাদান ছিলাম, পরবর্তীতেও ফল্টি টাওয়ারস দুয়েকটা পর্ব দেখে খুব একটা ভালো লাগেনি। এরিক আইডল, মাইকেল প্যালিন বা টেরি জোনস ক্লিজের তুলনায় সিনেমা লাইনে তেমন আর এগোতে পারেননি, তবে টেরি জিলিয়াম পরিচালনায় বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মন্টি পাইথনের টিভি স্কেচগুলোও যে সবকয়টাই খুব জুতের, এমনটা নয়। ইউটিউব থেকে দু'টো স্কেচ যোগ করছি। তবে সিনেমাগুলিতে কিছু জায়গায় হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবার যোগাড়। লাইফ অব ব্রায়ান যেমন। যীশুর পাশের আস্তাবলে জন্মায় ব্রায়ান, তিন জ্ঞানী ব্যক্তি প্রথমে ভুল করে তার মায়ের কাছেই সোনা, ধূপ আর পবিত্র মলম গছিয়ে দিয়ে চলে যায়, পরে আবার নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এসে কেড়েকুড়ে নিয়ে গিয়ে যীশুর আলোকিত আস্তাবলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। সেই ব্রায়ানকেই আবার লোকে পরে পাকেচক্রে মেসিয়াহ হিসেবে মানতে শুরু করে। ব্রায়ান আবার জড়িয়ে পড়ে রোমানবিরোধী গোপন নিষিদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনে। শহরের দেয়ালে রাতের আঁধারে চিকা মারা শুরু করে, Romanus eunt domus! টহলরত ডেসিউরিয়ান এসে আচমকা তার কান পাকড়ে ধরে, "এটা কী লিখেছিস, অ্যাঁ? মানে কী এর?" কানমলা খেয়ে ব্রায়ান ডুকরে ওঠে, "রোমানরা বাড়ি যাও!" ডেসিউরিয়ান আরো ভালো করে কান ডলতে ডলতে বলে, "বটে? লেখাপড়া তো কিছুই করিসনি মন দিয়ে! রোমানের বহুবচন কী হবে?" ব্রায়ান কাতরে ওঠে, "রোমানি! রোমানি!" ডেসিউরিয়ান বলে, "তার নিচে ওটা কী লিখেছিস? এউন্ত! এউন্ত! শব্দান্ত কর দেখি, "ইর" ক্রিয়ার শব্দান্ত কর!" ব্রায়ান কাঁদতে কাঁদতে শব্দান্ত করে। "এউন্ত মানে কী দাঁড়ায় তাহলে? তারা যায়! এখন বল, রোমানেরা বাড়ি যাও, এটা কি সাধারণ ক্রিয়া নাকি আদেশ ক্রিয়া?" ব্রায়ান বলে, "আদেশ! আদেশ ক্রিয়া!" ডেসিউরিয়ান বলে, "বেশ, এবার তাহলে ঠিক করে বল!" ব্রায়ান বলে, "ইৎ! ইৎ!" ডেসিউরিয়ান বলে, "বটে? কয়টা রোমানকে বাড়ি যেতে বলছিস? একটাকে না সবক'টাকে? বচন কী হবে?" ব্রায়ান এবার ফুঁপিয়ে ওঠে, "ইতে! ইতে!" ডেসিউরিয়ান বলে, "শেষমেষ ওটা কী লিখেছিস? বাড়ি যাও! এখানে বাড়ি কোন কারক? অ্যাঁ? কোন কারক কোন বিভক্তি? Domus নয়, এখানে হবে Domum! ল্যাটিন তো কিচ্ছু শিখিসনি দেখছি! এবার যা, শহরের দেয়ালে পাঁচশোবার শুদ্ধ করে লেখ, Romane ite domum!" ওদিকে হোলি গ্রেইলে রাজা আর্থার একটা স্বল্প বাজেট অভিযান চালায় পবিত্রপাত্র উদ্ধার করার জন্যে। আর্থারের ঘোড়া নেই, তার ভ্যালেট যাবতীয় মালপত্র বহন করে, আর দুটো নারিকেলের আধখোসা একটা আরেকটার সাথে বাড়ি মেরে ঘোড়ার খুরের খটখট আওয়াজ তোলে। এক দুর্গের সামনে এসে আর্থার হাঁক ছাড়ে, "কে তোমার লর্ড? তাকে বলো, সে রাজা আর্থারের এই অভিযানে যোগ দিতে রাজি কি না!" ওপর থেকে দুর্গের রক্ষী বলে, "বটে? কেমন রাজা আপনি? আপনার তো কোন ঘোড়াই নেই, দুটো নারিকেলের খোল নিয়ে একটা আরেকটার সাথে বাড়ি দিচ্ছেন! আপনি নারিকেল পেলেন কোথায়?" আর্থার বলে, "নারিকেল কোথায় পেলাম মানে?" রক্ষী বলে, "নারিকেল তো এদিকটায় জন্মায় না। এটা তো ক্রান্তীয় এলাকার ফল। কোত্থেকে পেলেন?" আর্থার বলে, "আমাদের সোয়ালোরা শীতে দক্ষিণে উড়াল দেয়! কই, সেটা নিয়ে তো কোন প্রশ্ন ওঠে না!" রক্ষী এবার বলে, "আর ইউ সাজেস্টিং দ্যাট কোকোনাটস মাইগ্রেট?!" ৩. ব্যারন মুনশাউজেনের অভিযানগুলি ফ্যান্টাসি আমার বেশ প্রিয়। যদিও লর্ড অব দ্য রিংস, হ্যারি পটার কিংবা ক্রনিকলস অব নার্নিয়ার ধাঁচের ফ্যান্টাসি না, আমার ভালো লাগে বাস্তবের হাতে হাত ধরে চলা অলীক বাস্তবতা, যে ফ্যান্টাসির সাথে মানুষের একেবারে খটখটে জীবনের বাস্তবতাও মিশে থাকে নিবিড়ভাবে। এ কারণে "দন হুয়ান দি মার্কো" আর "হীরক রাজার দেশে" আমার বেশ প্রিয় সিনেমা। তেমনি আরেকটা সিনেমা দেখে খুব ভালো লাগলো, টেরি জিলিয়ামের পরিচালনায় অ্যাডভেঞ্চারস অব ব্যারন মুনশাউজেন। ব্যারন মুনশাউজেন এক বীরপুরুষ, তার সঙ্গীরাও একেকজন নানা বিষয়ে কৃতী। বের্টোল্ড যেমন গুলির চেয়েও আগে ছুটতে পারে, যে কারণে সে দরকার না পড়লে পা থেকে শেকল দিয়ে বাঁধা লোহার গোলা খোলে না। আলব্রেখট অন্যতম শক্তিশালী লোক, ভারি ভারি জিনিস সে অক্লেশে কাঁধে তুলে নেয়। পৃথিবীর এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করে অ্যাডোলফাস, আর গুস্তাফাস তার বড় বড় কান দিয়ে শুনতে পায় নিযুত যোজন দূরের শব্দ। এমনই এক ব্যারনের কাহিনী রঙ্গমঞ্চে মঞ্চস্থ করছে শহরের থিয়েটার দল। ওদিকে বাইরে চলছ তুর্কিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ। ছোট্ট স্যালি তার বাবার থিয়েটার দলের ছোট্ট কান্ডারী, সে শহরে ঘুরে ঘুরে যেখানেই পোস্টারে "সল্ট অ্যান্ড সন" লেখা দেখে, সেখানেই "সন" কেটে "ডটার" লিখে দিয়ে আসে। ব্যারন মুনশাউজেনের গল্পে স্যালির দারুণ আগ্রহ। একদিন রঙ্গমঞ্চে স্যালির বাবা ব্যারন সেজে যখন নানা কাহিনী শোনাচ্ছে শহরের লোকজনকে, তখনই হঠাৎ মঞ্চে আবির্ভাব সত্যিকারের ব্যারন মুনশাউজেনের! মঞ্চ তছনছ করে দিয়ে ক্রুদ্ধ ব্যারন গর্জাতে থাকে, "বন্ধ করো এই প্রহসন! গল্প শুনতে চাইলে আমার কাছ থেকে শোনো!" তারপর শুরু হয় ব্যারনের আশ্চর্য গল্পযাত্রা। সিনেমা মঞ্চ টপকে চলতে থাকে সিনেমার পথে। এরই ফাঁকে আবার তুর্কি বাহিনী শহর আক্রমণ করে, গোলাবৃষ্টি হতে থাকে, মৃত্যুদূত এসে বৃদ্ধ ব্যারনের আত্মার ওপর হামলা করে, ছোট্ট স্যালি ছুটে গিয়ে হটিয়ে দেয় তাকে। ব্যারন হঠাৎ হাল ছেড়ে দেন, শান্তিতে মরতে চান তিনি, এই যুক্তির যুগ তাঁর আর ভালো লাগে না। যেখানে সব কিছুর জন্যেই একটা করে নিয়ম থাকে, রুলস অব হাইড্রলিকস, রুলস অব সোশ্যাল ডাইন্যামিক্স, যেখানে আর তিন পা অলা সাইক্লপসদের জায়গা হয় না, সেই সময়ে কেন তিনি বেঁচে থাকবেন? কেউ শুনতে চায় না তাঁর গল্প, কেউ বিশ্বাসে করে না। ছোট্ট স্যালি গুটিসুটি মেরে বসে তাঁর পাশে, সে শুনতে চায় সব গল্প, সে সব বিশ্বাস করে। এরই মধ্যে আবার শুরু হয় গোলাবৃষ্টি। এবার স্যালি ছুটতে ছুটতে বের হয়, শহরের প্রাচীরের ওপর রাখা কামানের ওপর বসে সে ঢিল ছুঁড়ে মারে তুর্কি বাহিনীর ওপর। "দূর হও তোমরা, আমাকে গল্প শুনতে দাও!" আমাকে যদি গত শতাব্দীর সেরা কিছু সিনেমার দৃশ্য বাছাই করতে বলা হতো, এ দৃশ্যমালা আমি ওপরের দিকে রাখতাম। ছোট্ট একটি শিশু এক টুকরো পাথর নিয়ে আক্রমণ করছে একটি সেনাবাহিনীকে, তার ফ্যান্টাসির জগতকে সে আক্রান্ত হতে দেবে না, তার সবটুকু সাধ্যমতো সে রক্ষা করে চলছে বাস্তবতার বিপরীতের কল্পজগতকে, এর মতো অপূর্ব দৃশ্য আর খুব বেশি আছে কি? সিনেমা এর পর অনেকদূর গড়ায়। ব্যারনের ভূমিকায় জন নেভিল আর স্যালির ভূমিকায় সারা পলি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। সিনেমাটা দীর্ঘ, কিন্তু অভিনয় আর দৃশ্যায়নের গুণে দর্শক এই দৈর্ঘ্যের কথা ভুলতে বাধ্য। সিনেমাটা দেখে একটাই কাঁটা খচখচ করছে মনের মধ্যে, একটা ফ্যান্টাসিনির্ভর বড়গল্প লেখার চেষ্টা করছি গত দেড়বছর ধরে, প্লটটা মনের মধ্যে সাজানো আছে সবটুকুই, শুধু লিখতে বসা হচ্ছে না। মাঝে মাঝে মনে হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ মদ্যপান করে এক বসায় লিখে ফেলি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয় না। এই গল্প নিয়ে গল্প লেখা হয়ে যায়, দিনপঞ্জিতে গল্পের চেহারা আঁকা হয়ে যায় শৈশবের গাছ-নদী-ফুল-পাখির মতো, কিন্তু গল্পটা নিজে রয়ে যায় নাগালের বাইরে।
false
mk
নতুন জঙ্গি জোটের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা কক্সবাজারের হোটেলে বৈঠকে বাঁ থেকে আরএসওর সামরিক প্রধান মাস্টার আইয়ুব, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম, প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান ইউনূচুর রহমান (মাঝে চশমা পরা), নাইক্ষ্যংছড়ি আ. লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শফিউল্লাহ (ডানে দাঁড়ানো)। ফাইল ছবিবাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং সরকার উত্খাত করতে জোট বেঁধেছে দেশি-বিদেশি ২৮ সংগঠন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও ইসলামপন্থী আরো সাতটি জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। অন্যগুলো ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন। মতাদর্শ ভিন্ন হলেও পারস্পরিক স্বার্থে এক হয়ে ‘হিলফুল ফুজুল আল ইসলাম আল বাংলাদেশ’ নামে কাজ করছে তারা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান ঘিরে পরিকল্পনা আঁটছে তারা। কৌশলগত স্থান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা চালিয়ে সরকারকে কাবু করতে চাইছে এ জোট। এ জন্য তারা হাতে নিয়েছে দুই বছরের কর্মসূচি। চলতি বছর ও আগামী বছরের মধ্যেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় তারা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব সংগঠন ওই তিন জেলায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের সদস্যরা কৌশলে সরকারি দল ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিড়ছে। স্থানীয় সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে গোপনে একাধিক বৈঠকও করেছে তারা।সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনের সূত্র ধরে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গোয়েন্দা সংস্থাটি গত বছরের শেষ নাগাদ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।ষড়যন্ত্রের জাল বোনা ওই জোটে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বাংলাদেশের অন্য যে সংগঠনগুলো সক্রিয় রয়েছে সেগুলো হলো—জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ-বি, হিযবুত তাহ্রীর, হিজবুত তাওহীদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, শহীদ হামজা ব্রিগেড ও দাওয়াতে ইসলাম।পাকিস্তানের সংগঠন জামাত-আল-পাকিস্তান এবং ভারতের কাশ্মীর অঞ্চলে সক্রিয় পাকিস্তানের মদদপুষ্ট সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদও জোটে রয়েছে। জোটভুক্ত ভারতীয় সংগঠনগুলো হলো—জুম্ম হিজাব-উল-মুজাহিদিনি, হরকাতুল জিহাদ-আই ও উলফা। পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে সক্রিয় লস্কর-ই-তৈয়বাও এ জোটে রয়েছে। মিয়ানমারের সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান আর্মি। আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখাও (একিউআইএস) এ জোটের প্রভাবশালী সদস্য। আরএসওর সামরিক প্রধান মাস্টার আইয়ুব বাংলাদেশের পুলিশের তালিকায় মোস্ট ওয়ানটেন্ড হিসেবে চিহ্নিত। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীগুলো বলছে, আইয়ুবকে তারা খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কক্সবাজারে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে মাস্টার আইয়ুবসহ আরএসওর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের।জানা গেছে, ধরপাকড় চলার কারণে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো এখন তাদের নেটওয়ার্ক চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত করেছে; যদিও সম্প্রতি র্যাব ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বেশ কিছু অভিযানে এসব সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী আটক হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদও জব্দ করা হয়েছে। তবে তাতে দমে যায়নি সংগঠনগুলো। এখন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পাহাড়তলীকে শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আঞ্চলিক সহায়তা দানের ক্ষেত্র তৈরি করে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো যাতে অন্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে সে জন্য সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে আটক উলফা নেতাদের ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে উলফাসহ ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সংগঠনের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে সরকারের ওপর নাখোশ হয় উলফা।মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসও এবং আরাকান আর্মির ঘাঁটি নির্মূলেও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এতে এসব সংগঠন ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করায় পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কর্তৃক পরিচালিত ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোও খেপে যায় সরকারের ওপর। এই সম্মিলিত ক্ষোভ থেকেই সরকার উত্খাত করতে জোট বেঁধেছে ওই ২৮টি সংগঠন।ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তারা বিশেষভাবে বেছে নিয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলাকে। এই তিন জেলাকে গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অর্থ, অস্ত্র, যোগাযোগ ও প্রশিক্ষণের বিশাল নেটওয়ার্ক। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের এই জোট বাংলাদেশে সরকার উত্খাতের লক্ষ্যে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বড় ধরনের নাশকতার ছক নিয়ে এগোচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও বন্দরসংলগ্ন অন্তত আড়াই শ শিল্পকারখানা বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেওয়া। এ জন্য ইতিমধ্যে পাকিস্তানের আএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গোপনে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। কর্নেল পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তার নাম গোলাম সামদানি ইবনে বিন ইয়ামিনি। সার্বিকভাবে নাশকতার অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব পড়েছে মাসুদউল্লাহ নামের এক বাংলাদেশির ওপর। তিনি এ জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, নাশকতাকারীরা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তিন তেল কম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় একযোগে গ্যাস বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তা করতে পারলে চট্টগ্রাম বন্দর ধ্বংস হওয়া ছাড়াও এ অঞ্চলের ছোট-বড় অন্তত আড়াই শ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী সার কারখানা (কাফকো), টিএসপি সার কারখানা, ডিএপি সার কারখানা এবং নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণকেন্দ্র। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি বিভিন্ন কারখানা ও তেল শোধনাগারে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা চাকরিও করছে।কক্সবাজারে সরকারি দলে ভিড়ছে জঙ্গিরা : অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী এলাকা কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম বিস্তৃত করছে আরএসও। এ কাজ করতে গিয়ে তারা সরকারি দলে ঠাঁই নিচ্ছে, কখনো সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে অর্থের বিনিময়ে নিজেদের কবজায় রাখছে। আরএসওর সামরিক প্রধান মাস্টার আইয়ুব সম্প্রতি একাধিকবার কক্সবাজার ঘুরে গেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠকও করেছেন তিনি। বৈঠকে আইয়ুব ছাড়াও আরএসওর প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান মোহাম্মদ ইউনূচুর রহমান ও সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইবরাহিমও ছিলেন। কক্সবাজারে পাঁচতারা মানের একটি হোটেলে বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শফিউল্লাহ। বৈঠকের একাধিক ছবি কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে।অনুসন্ধানে জানা যায়, শফিউল্লাহর বাবা সালেহ আহমদ আরএসওর প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি ছিলেন। শফিউল্লাহ ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনের জন্য অবৈধভাবে পাঠানো হুন্ডির টাকা গ্রহণ ও তা বিতরণের মূল দায়িত্ব শফিউল্লাহর ওপর। পাঁচ বছর ধরে তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও সরকারি দলের প্রভাবশালী এক নেতার কারণে দীর্ঘদিন সেসব প্রতিবেদন চাপা পড়ে ছিল।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে তত্কালীন বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবুর রহমানের (বর্তমানে বহিষ্কৃত) হাত ধরে শফিউল্লাহ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ওই বছরই উপজেলা সম্মেলন কমিটির সদস্যসচিব হন। ২০১২ সালে শফিউল্লাহ উপজেলা কমিটির মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন। একই বছর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করে হেরে যান। ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেল থেকে শফিউল্লাহ ও এক পাকিস্তানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সময় পুলিশ দাবি করে, ওই পাঁচজন আরএসও নেতা।সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাইল আহম্মদ (সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে) ও শফিউল্লাহ বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবদী সংগঠনগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। তাঁরা রোহিঙ্গা জঙ্গিদের মদদ দেন।তবে এ ব্যাপারে শফিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র। আমি কোনো আরএসওকর্মীকে সহায়তা দিই না। প্রতিপক্ষের লোকেরা এসব অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে।’কক্সবাজার অঞ্চলের আরেক জঙ্গি নেতা আরএসওর সাবেক কমান্ডার হাফেজ সালাউল ইসলাম কক্সবাজার ও বান্দরবানে সরকারি জমি দখল করে একের পর এক মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন। এসব মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা জঙ্গি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী জঙ্গিবাদী সংগঠনের সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে থ্রি মার্ডারের একটি মামলাসহ কয়েকটি মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। অথচ তিনি প্রকাশ্যেই চলাফেরা করেন। অভিযোগ রয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন সংসদ সদস্য এবং বিএনপি ও ইসলামী ঐক্যজোট নেতারা পাশে থাকায় পুলিশ তাঁর কিছু করতে পারে না। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর সালাউলের উত্থান শুরু হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজারের লিংক রোডে দক্ষিণ মুহুরীপাড়ায় সরকারি বন বিভাগের সাত একর ও স্থানীয় মানুষের তিন একরসহ ১০ একর জায়গা দখল করে সেখানে ইমাম মুসলিম (রহ.) ইসলামিক সেন্টার গড়ে তুলেছেন তিনি। কার্যত এখান থেকেই আরএসওর সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইমাম মুসলিম (রহ.) ইসলামিক সেন্টার নামের মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে আহাম্মদ হোসেন। সালাউলের সঙ্গে তাঁর সখ্যের অনেক ছবি কালের কণ্ঠের কাছে আছে। সালাউলের আশ্রয়দাতা হিসেবে আহাম্মদ হোসেন ছাড়াও রয়েছেন জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল্লাহ, ওলামা দলের জেলা সভাপতি মাওলানা আলী আহসান, জেলা ইসলামী ঐক্যজোট নেতা ও হেফাজতে ইসলাম নেতা মুফতি এনামুল হক, জেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি হাফেজ সালামত উল্লাহ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইসমাইল। সালাউলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করছেন জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম সাহেল। সালাউলের আরেক ঘনিষ্ঠ সহচর জেলা ইসলামী ঐক্যজোট ও হেফাজতে ইসলাম নেতা মুফতি এনামুল হক। ইমাম মুসলিম (রহ.) ইসলামিক সেন্টার ছাড়াও আরো ১২টি মাদ্রাসায় প্রতি মাসের খরচ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, হুন্ডির মাধ্যমে। টেকনাফে রহস্যঘেরা সোনার দোকান : কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় দীর্ঘদিন চারটি সোনার দোকান ছিল। কিন্তু গত তিন বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে প্রায় ২০০ সোনার দোকান গড়ে উঠেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কুমারপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ রোড, শীলবুনিয়া, নাজিরপাড়া, নয়াপাড়াসহ পৌর এলাকায় এসব দোকান গড়ে উঠেছে। বেচাকেনা নেই, অথচ একেক দোকানে অন্তত ৯ জন কর্মচারী। স্থানীয় যুবক আহাদ সরকার জানান, কিছুদিন আগেও এসব দোকানে আরাকান আর্মির পোস্টার সাঁটানো থাকত। অধিকাংশ সোনার দোকানের মালিক মিয়ানমারের নাগরিক। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, প্রতিদিনই রহস্যময় এসব দোকানের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ হয়ে পাচার হওয়া সোনা এসব দোকানের মাধ্যমে লেনদেন হয়।২১টি একে-৪৭-এর খোঁজে গোয়েন্দারা : আরএসও সামরিক প্রধান মাস্টার আইয়ুব ২১টি একে-৪৭ রাইফেল বাংলাদেশে এনে তা কক্সবাজারে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী কোথাও লুকিয়ে রেখেছিলেন বেশ কিছু বছর আগে। আরএসও ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে আসা একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় রোহিঙ্গা সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মাস্টার আইয়ুব বাংলাদেশে এসেছেন। এসব অস্ত্র তিনি হিলফুল ফুজুলের জোটসঙ্গী কোনো বন্ধু সংগঠনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।কেন্দ্র এখন চট্টগ্রামে : জেমএবি তাদের ঘাঁটি এলাকা হিসেবে বেছে নিয়েছে চট্টগ্রামকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে বন্দরনগরীতে শক্তি সঞ্চয় করেছে তারা। সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীতে বিভিন্ন পেশায় জড়িত। গত বছরের ৫ অক্টোবর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর আজিমপাড়া লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়কের হাজি নূর আহমদ টাওয়ার এলাকা থেকে গ্রেনেড, বোমা, অস্ত্রসহ জেএমবির পাঁচ জঙ্গিকে আটক করা হয়। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাতে পাহাড়তলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই আস্তানা থেকে একটি এমকে-১১ রাইফেল, ১৯০ রাউন্ড গুলি, বিস্ফোরক জেল, ১০টি ডেটোনেটর, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া যায়। খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে হিযবুত তাহ্রীর সারা দেশের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় রয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে হিযবুত তাহ্রীরের সক্রিয়তার খোঁজ পাওয়া গেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই পাহাড়তলী। এ ছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আস্তানা গড়ে উঠছে এ সংগঠনের। গত বছরের ৯ আগস্ট হিযবুত তাহ্রীর চট্টগ্রামের কমান্ডার সোহান ইয়ারিসকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়তলীর হাফেজ এনায়েত উল্লাহর বাড়িতে হিলফুল ফুজুলের নেতারা বৈঠক করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবপাচার হয় এ বাড়ি থেকে।২০১৩ সালে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবির থেকে বেরিয়ে শহীদ হামজা ব্রিগেড গঠনের পর এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে র্যাব এ সংগঠনের অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য। বিভিন্ন সময় অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ছাড়াও আন্তর্জাতিক এক অস্ত্র বিক্রেতাকে আটক করা হয়। এ সংগঠনের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে একে-২২ রাইফেল, এলজি ও বিস্ফোরক জেল পাওয়া গেছে।জঙ্গিবাদীদের সহায়তা, পাহাড় কাটা ও রোহিঙ্গাদের দিয়ে পাহাড় দখলের অভিযোগ রয়েছে হাটহাজারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আজমের বিরুদ্ধে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পাহাড় কাটা মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। ছোট ভাই আফছারকে দিয়ে পাহাড় কেটে আফছার ফার্ম নামে একটি মুরগির খামার করেছেন। এখানে কম টাকায় রোহিঙ্গারা কাজ করে। এখানকার সন্দ্বীপপাড়া, আদর্শগ্রাম ও গুচ্ছগ্রামে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা থাকে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে গত বৃহস্পতিবার আলী আজম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য না। আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না।’ ফোন করে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তিনি থানায় জিডি করারও হুমকি দেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর সক্রিয়তার ব্যাপারে জানতে চাইলে গত শুক্রবার র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরা চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে থাকে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তবে আমাদের অভিযানে তাদের বড় বড় নেতা ও অস্ত্র ধরা পড়ায় তারা অনেকটাই কোণঠাসা। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৬
false
fe
যুক্তরাষ্ট্রে লেখক ধর্মঘট যুক্তরাষ্ট্রে লেখক ধর্মঘট ফকির ইলিয়াস ---------------------------------------------------- যুক্তরাষ্ট্রে লেখক ধর্মঘট, ঘটনাটি শুনতেই অন্যরকম মনে হয়। হ্যাঁ, সত্যিই তাই। নিউইয়র্কের বিভিন্ন ক্যাটাগরির বেশ কিছু লেখক, অনুবাদক ধর্মঘট পালন করছেন। তারা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনার সামনে অবস্থান করছেন। তাদের দাবি, তাদের প্রাপ্ত সম্মানীর ভাগ দিতে হবে কড়ায় গণ্ডায়। এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, নিউইয়র্কের শো বিজনেসে। মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে থিয়েটারগুলো। ‘ব্রডওয়ে শো’ দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন নিউইয়র্কে। সেই ‘ব্রডওয়ে শো’তে এখন মানুষের ভিড় নেই। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে যেসব নিয়মিত শো চালিত হয়, তাতেও ভাটা পড়েছে। কারণ স্ক্রিপট রাইটাররা স্ক্রিপট জমা দিচ্ছেন না। লেখকদের ইউনিয়ন ‘লোকাল ওয়ান’ বলেছে, লেখকদের দাবি মানতে হবে। তাদের উপযুক্ত সম্মানীর অংশ দিতে হবে। লেখকরা দাবি করছেন তারা যেসব বিভিন্ন শো, সিরিজের জন্য স্ক্রিপট লিখে দেন, তার জন্য তারা এককালীন সম্মানী পান। কিš' পরে এসব অনুষ্ঠানগুলোর অডিও, ভিডিও, ডিভিডি, সিডি তৈরি করে নির্মাতা সংস্থাগুলো। তা থেকে তারা মিলিয়ন ডলার মুনাফা করে। এমন কি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আইপড বা অন্যান্য ইকেট্রনিক মাধ্যমের জন্য মিউজিক, শো, সিরিজ ডাউনলোড করে নেওয়া হয়। এ জন্যই ডাউনলোডকারীকে বিভিন্ন পরিমাণের অর্থ মূল্য দিতে হয়। ওয়েবসাইটের মালিক সংস্থা, প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে ভালো অঙ্কের মুনাফা লুটে নেয়। অথচ লেখকদেরকে তা থেকে কোনো প্রকার লভ্যাংশ সম্মানী হিসেবে প্রদান করা হয় না। লেখকরা দাবি করছেন, বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে তাদের লেখা কর্মগুলোকে কাজে লাগিয়ে যে মুনাফা লাভ করা হচ্ছে, লেখকদেরকে এর অংশ দিতে হবে। বিষয়টি নিউইয়র্কের শোবিজপাড়ায় এতোই প্রভাব ফেলেছে যে বিভিন্ন সংস্থার মালিক-প্রযোজকরা কয়েক দফা লেখক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেও এখনো কোনো সুরাহা করতে পারেননি। তবে উভয়পক্ষই আশা করছেন, খুব শিগগিরই একটি সম্মানজনক সমাধান হবে উদ্ভূত সমস্যাটির। ইউরোপ আমেরিকায় এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে, মাত্র একটি সিডি যদি কোনো শিল্পীকে প্রতিষ্ঠার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়, তবে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় না। আর লিরিক লেখার জন্য একজন গীতিকার যদি সামান্য পরিমাণ সম্মানী প্রতিটি সিডি থেকে পান তবে ওই গীতিকারও সহজে হয়ে যেতে পারেন মিলিয়নিয়ার। ধরা যাক একজন শিল্পীর গাওয়া হিট করা একটি সিডি যদি চার মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়, আর একজন গীতিকার যদি সিডি প্রতি মাত্র পঁচিশ সেন্ট (অর্থাৎ কোয়ার্টার ডলার) পান তবে চার মিলিয়ন সিডি থেকে গীতিকার পাবেন এক মিলিয়ন ডলার। প্রকাশনার সংখ্যা যদি বাড়ে তবে আয়ের পরিমাণও বেড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। আর তা হচ্ছে একজন লেখকের ন্যায্য পাওনা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে কপিআইন স্বত্বাধিকারের খুব কড়াকড়ি। অবৈধভাবে কিছু কপি করে বিক্রি করাটা এখানে দণ্ডনীয় অপরাধ বলেই বিবেচিত। তাই বলে যে পাইরেসি হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। নিউইয়র্কের ফুলটন স্ট্রিট, ব্রংনকস কাউন্টির ফোর্ডহাম রোড এসব পাইরেসির কেন্দ্রবিন্দু বলে পরিচিত। গোয়েন্দারা এসব স্থানে অভিযান চালায় প্রায় প্রতিনিয়ত। চলে আইনের কড়া শাসন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে; সাধারণ কাস্টমাররা সব সময়ই অরিজিন্যাল কপি কিনতে বেশি আগ্রহ দেখান। ফলে পাইরেসিকারী নিরুৎসাহিত হয় বারবার। শিল্প সংস্কৃতিকে লাভজনক অবস্থানে রেখে তা মানুষে মানুষে পৌঁছে দেওয়ার এই যে প্রচেষ্টা তাই বাঁচিয়ে রাখে শিল্পী-লেখককে। ইউরোপ-আমেরিকায় একটি শিল্পকর্ম মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হতেও আমরা দেখি। স্বল্প পরিচিত চিত্রশিল্পী, ফটোগ্রাফাররা তাদের নিজ নিজ কর্ম দিয়ে ক্যালেন্ডার বানিয়ে বিক্রি করেন বছরের শুরুতে। এ থেকেই কারো কারো জীবন চলে। তাছাড়া সারা বছর ধরে পার্ক, স্ট্রিট ফেয়ার, বিভিন্ন উপলক্ষ, উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে শিল্পকর্ম বিক্রি। শিক্ষানবিস চিত্রশিল্পীরা অনেক সময় বিভিন্ন চ্যারিটি ফান্ডের জন্যও দান করে দেন তাদের কর্মগুলো। ক্রিসমাস শুরু হতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। বড়দিন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের শোবিজপাড়া আবারো রমরমা হয়ে ওঠে। রেডিও সিটি মিউজিক হলের মতো দুনিয়াখ্যাত হলগুলো হয়ে যায় প্রতিটি শোতেই হাউজ ফুল। কিন্তু এবারের লেখক ধর্মঘটের প্রভাব তাতেও পড়তে পারে। তাই ‘রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা’সহ বিভিন্ন লেখক সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রযোজক-নির্মাতাদের বুঝাপড়া, দরকষাকষি অব্যাহত রয়েছে। লেখক সম্মানী একজন লেখককে তার মহান কর্মে আরো দায়িত্বশীল হতে শক্তি জোগায়। মেধা এবং মননের মূল্যায়ন করা না হলে একটি জাতি পরিশুদ্ধ চেতনা নিয়ে কখনোই দাঁড়াতে পারে না। সাহিত্য এবং সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার অন্যতম কাজটি হচ্ছে লেখককে বাঁচিয়ে রাখা। ইউরোপ-আমেরিকার আর্ট এন্ড কালচার মিনিস্ট্রিগুলো প্রতি বছরই নিজ নিজ সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টি লালনে এবং উপাত্ত সংগ্রহে নানা কর্মসূচি প্রণয়ন করে। নতুন প্রজন্মকে নিজ সংস্কৃতির পাশাপাশি, ভিন্ন সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পাঠায় দেশে-দেশে শিক্ষা সফরে। সংস্কৃতির এই যে আদান-প্রদান তাই বিশ্ব মানবসভ্যতার ভিতকে মজবুত করে ক্রমশ। ================================== দৈনিক ভোরের কাগজ ডিসেম্বর ০১, ২০০৭, শনিবার : অগ্রহায়ণ ১৭, ১৪১৪ সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:৪৮
false
ij
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর ‘অবরোধবাসিনী’ থেকে পাঠ (২) প্রথম পর্ব [ ৪ ] উড়িষার অন্তর্গত রাজকণিকায় একজন ভদ্রলোক চাকুরী উপলক্ষে ছিলেন। বাসায় তাঁহার মাতা, দুইজন ভগিনী এবং স্ত্রী ছিলেন। বর্ষার সময়। তাঁহার বাঙ্গলায় চারিজন পাখাটানা কুলি পালাক্রমে সমস্ত দিন ও রাত্রি পাখা টানিত। সাহেব “টুরে” বাহিরে গিয়াছেন; রাত্রিকালে তাঁহার স্ত্রীর কামরায় একজন চাকরাণী শুইয়াছিল। তাঁহার ভগিনীগণ অন্য কামরায় ছিলেন। সে অঞ্চলে গরমের সময় লোকে বেশী বিছানা ব্যবহার করে না। রাত্রিকালে প্রবল বেগে বৃষ্টি হওয়ায় সাহেবের স্ত্রীর শীত বোধ হইল। তবু তিনি চাকরাণীকে ডাকিয়া পাখা বন্ধ করিতে বলিলেন না। ক্রমে শীত অসহ্য হওয়ার দরি (শতরঞ্জি) ও সুজনী তুলিয়া গায়ে দিলেন। কিন্তু হতভাগা পাখা-কুলী আরও জোরে জোরে পাখা টানিতে লাগিল। তখন অগত্যা বউ বিবি ঐ দরি চাদর সমস্ত গায়ে জড়াইয়া পালঙ্কের নীচে গিয়া শুইলেন। পরদিন সকালে একজন চাকরাণী কামরায় ঝাঁটা দিতে আসিয়া পালঙ্কের নীচে সাদা একটা কি দেখিয়া দিল ঝাঁটার বাড়ি-ঝাঁটার চোটে তাড়াতাড়ি বউ বিবি পাশ ফিরিলেন-বেচারী চাকরাণী যেন মরিয়া গেল! [ ৫ ] ই· আই· রেলযোগে কোন বেহারী ভদ্রলোকে সস্ত্রীক পশ্চিমে বেড়াইতে যাইতেছিলেন। তিনি স্ত্রীকে লেডীর কক্ষে না দিয়া নিজেই সঙ্গে রাখিলেন। তাঁহারা সেকেণ্ড কাসের টিকিট লইয়াছিলেন। বেগম সাহেবা বোরকা পরিয়াই রহিলেন। এক সময় সাহেব বাথরুমে থাকিতে ট্রেন কোন ষ্টেশনে থামিল। অপর এক যাত্রী কোথাও স্থান না পাইয়া ঐ কক্ষে উঠিয়া অতি সঙ্কুচিতভাবে বসিয়া একটা জানালা দিয়া মুখ বাহির করিয়া রহিলেন। এদিকে পূর্ব্বোক্ত সাহেব বাথরুম হইতে আসিয়া দেখেন, তাঁহার স্ত্রী অনুপস্থিত! কি করিবেন-তখন চলন্ত ট্রেন! পরবর্ত্তী ষ্টেশনে আগন্তুক নামিয়া গেলেন। আমাদের কথিত সাহেবও নামিয়া ষ্টেশনের পুলিশে সংবাদ দিলেন যে তাঁহার স্ত্রী অমুক ও অমুক ষ্টেশনের মধ্যবর্ত্তী স্থানে হারাইয়াছে। বেচারা পুলিশ বিভিন্ন ষ্টেশনে টেলিগ্রাম করিল যে কালো বোরকায় আবৃতা একটি মহিলার খোঁজ কর। একজন কনষ্টেবল বলিল, “একবার এই গাড়ীখানাই ভাল করিয়া খুঁজিয়া দেখি না।” যে বেঞ্চে সাহেব বসিয়াছিলেন, কনষ্টেবল সেই বেঞ্চের নীচে কালো একটা কি দেখিতে পাইয়া টানিয়া বাহির করিবা মাত্র সাহেব চেঁচাইয়া উঠিলেন, “আরে ছোড় ছোড়-ওহি ত মেরা ঘর হায়!” পরে জানা গেল সেই নবাগত ভদ্রলোককে দেখিয়া ইনি বেঞ্চের নীচে লুকাইয়া ছিলেন। [ ৬ ] ঢাকা জিলায় কোন জমীদারের প্রকাণ্ড পাকা বাড়ীতে দিনে দুপুরে আগুণ লাগিয়াছিল। জিনিষপত্র পুড়িয়া ছারখার হইল-তবু চেষ্টা যথাসম্ভব আসবাব সরঞ্জাম বাহির করার সঙ্গে বাড়ীর বিবিদেরও বাহির করা প্রয়োজন বোধ করা গেল। হঠাৎ তখন পাল্কী, বিশেষতঃ পাড়াগাঁয়ে এক সঙ্গে দুই চারিটা পাল্কী কোথায় পাওয়া যাইবে? অবশেষে স্থির হইল যে একটা বড় রঙীন মশারীর ভিতর বিবিরা থাকিবেন, তাহার চারিকোণ বাহির হইতে চারিজনে ধরিয়া লইয়া যাইবে। তাহাই হইল,-আগুনের তাড়নায় মশারী ধরিয়া চারিজন লোক দৌড়াইতে থাকিল, ভিতরে বিবির সমভাবে দৌড়াইতে না পারিয়া হোঁচোট খাইয়া পড়িয়া দাঁত, নাক ভাঙ্গিলেন, কাপড় ছিঁড়িলেন। শেষে ধানক্ষেত দিয়া, কাঁটাবন দিয়া দৌড়াইতে দৌড়াইতে মশারীও ছিঁড়িয়া খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল। অগত্যা আর কি করা যায়? বিবিগণ একটা ধানের ক্ষেত্রে বসিয়া থাকিলেন। সন্ধ্যায় আগুণ নিবিয়া গেলে পর পাল্কী করিয়া একে একে তাঁহাদের বাড়ী লইয়া যাওয়া হইল। ক্রমশ সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:২৬
false
ij
লাসানথার মৃত্যুর পর। শ্রীলঙ্কা। সমুদ্রপাড়ে বেলাভূমি আর নারকেলবীথির অপরুপ সমাহার। এই কারণেই কি সিংহল দ্বীপটিকে এককালে আরবরা বলত:Serendib? সুন্দর দ্বীপ? ঐ Serendib শব্দটি থেকেই পরবর্তীতে উদ্ভব হয়েছে ইংরেজী serendipity শব্দটির;যার মানে- আকস্মিক সৌভাগ্য। সৌভাগ্য? নাঃ, আসলে তামিল-সিংহলী সংঘাতের কারণে দ্বীপটিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজ করছে চরম দুর্ভাগ্য। সেখানে চলছে রক্তের হোলিখেলা। তামিল-সিংহলী দ্বন্দ সংঘাতে আরবদের ওই শান্ত সুন্দর Serendibটি আজ হয়ে উঠেছে রক্তাক্ত এক রক্তদ্বীপ। আজকে প্রথম আলোয় এই মর্মে একটি সংবাদ বেরিয়েছে : শ্রীলঙ্কা সরকার সে দেশে নিযুক্ত একজন জার্মান রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তীব্র ভাষায় র্ভৎসনা করেছে। লাসানথা বিক্রমাতুঙ্গা নামে আততায়ীর গুলিতে নিহত একজন পত্রিকা সম্পাদকের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ওই রাষ্ট্রদূত সরকারের এলটিটিইবিরোধী নীতির সমালোচনা করেছিলেন। সরকারের এলটিটিইবিরোধী নীতির কট্টর সমালোচক ‘সানডে লিডার’ পত্রিকার সম্পাদক লাসানথা বিক্রমাতুঙ্গা গত বৃহস্পতিবার কলম্বোর কাছে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন। তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত ইয়রগেন ভেরথ বলেন,‘আজ আমরা নির্বাক। সম্ভবত বহু আগেই আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে।’কলম্বো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার জানান, ইয়রগেনকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে সরকারের অসন্তষ্টির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। (পৃষ্ঠা,৭) ২ কিছুদিন ধরে আমি গভীর উৎকন্ঠার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি লক্ষ করছি এবং তা নিয়ে যৎসামান্য লিখছি। আমার লেখার প্রতিক্রিয়াসরুপ দেখলাম বেশির ভাগই শ্রীলঙ্কা সরকারের পক্ষে এবং তামিল টাইগারকে তারা জঙ্গি সংগঠনই মনে করে। একজন তো রায় দিয়েই ফেলল: শ্রীলঙ্কায় গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র, কেননা, শ্রীলঙ্কার একজন ক্রিকেটার তামিল! শ্রীলঙ্কা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ? আচ্ছা। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া কি অতই সোজা? কলম্বোর ‘সানডে লিডার’ পত্রিকার সম্পাদ লাসানথা বিক্রমাতুঙ্গার নির্মম হত্যাকান্ড কি প্রমাণ করে? কী ছিল লাসানথা বিক্রমাতুঙ্গার দোষ? না, লাসানথা বিক্রমাতুঙ্গা ছিলেন শ্রীলঙ্কা সরকারের এলটিটিইবিরোধী নীতির কট্টর সমালোচক। তা হলে বোঝা যাচ্ছে-সরকারের এলটিটিইবিরোধী নীতি একচোখা-যেহেতু খোদ সিংহলীরাও সে নীতির প্রতিবাদ করছে। গাজায় ইসরাইলী অভিযানে সে দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকলেও ইসরালী বামপন্থি-মানবতাবাদী দলগুলো ইসরাইলী আক্রমের শুরুতেই তেল আবিবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল এবং একই ভাবে শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলের তামিলঅধ্যুষিত এলাকায় সরকারি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞে সে দেশের আমজনতার সমর্থন থাকলেও সে দেশের সাংবাদিক বুদ্ধিজীবিরা সঙ্গতকারণেই সরকারের এলটিটিইবিরোধী নীতির তীব্র সমালোচনা করে আসছে। রাষ্ট্রদূত ইয়রগেন ভেরথ-এর বক্তব্যে যেন আর্ন্তজাতিক মহলের মতামতই প্রতিফলিত হয়েছে। লাসানথা বিক্রমাতুঙ্গার শেষকৃত্যা অনুষ্ঠানে ভেরথ কী বলেছিলেন তা আরেকবার স্মরণ করি: ‘আজ আমরা নির্বাক। সম্ভবত বহু আগেই আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে।’ ৩ কাল সন্ধ্যার পর ঘরে সোফায় হেলান দিয়ে পা তুলে বসেছিলাম। টিভির পর্দায় চোখ। শ্রীলঙ্কা সরকারের তামিলবিরোধী সাম্প্রতিক নৃশংসতার ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন নির্মান করেছে আল জাজিরা । তামিল গ্রামগুলোর বিধস্ত ঘরবাড়ি, উপরানো গাছ, এখানে-সেখানে লাশ, একটা লাশ চেক-চেক লুঙ্গি পরা দেখে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল; একজন কালো মিশমিশে যুবক আহত এক থুত্থুরে বৃদ্ধাকে কোলে করে বার করে আনল ঘর থেকে-সম্ভবত মা। একজন বৃদ্ধ আর্তনাদ করতে করতে বলল: আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে, জমিজমা সব গেছে; খাবার পর্যন্ত নাই। তামিল ঐ বৃদ্ধটির মুখটি সহসাই ফিলিস্তিনি এক বৃদ্ধের মুখের মত হয়ে যায়। আমি ইতিহাসের ছাত্র। ক্যামেরা ঘুরে যায়। ছিমছাম একটি ঘর। কোথায়? কলম্বো? একজন মহিলা, টি-শার্ট পরা, কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা চুল-সম্ভবত সাংবাদিক- কম্পিউটারের সামনে বসে; আছেন। বললেন, ‘এখানে এত কিছু যে হয়ে যাচ্ছে, কেউই প্রতিবাদ করছে না, সবার চোখ এখন গাজার দিকে।’ আমি আমার লেখায় প্রায় এ রকম কথাই লিখেছিলাম। আমি ইতিহাসের ছাত্র। আমার চোখ টিভি পর্দায়। লাসানথা বিক্রমাতুঙ্গার খুনের কথা আগেই জেনেছি। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমার কেবলি মনে হয়েছে আমাদের পক্ষের একজন শক্তিমান প্রতিবাদী চলে গেলেন। কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা চুল মহিলাটি কে? লাসানথা বিক্রমাতুঙ্গার বন্ধু কি সহকর্মী নয় তো? হতে পারে। একেও কি হত্যা করা হবে? হয়তো। হয়তো-বা না। আমার চোখ টিভি পর্দায়। বছর পাঁচেক হল সিগারেট ছেড়েছি। নইলে এক্ষুনি একটা ধরাতাম। ঘরে টিউবলাইট জ্বলেছিল। শিউলি এসে এককাপ চা দিয়ে গেল। 'র' । চায়ে আমি চিনি খাই না। লাসানথা? শ্যামলা সুদর্শন লাসানথা: নেট খুঁজে ছবি দেখলাম। আমাদের সময়ের এক সাহসী যোদ্ধা। আমার চোখ টিভি পর্দায়। হাসপাতালে আহতদের কাতরানি। নারীশিশুবৃদ্ধ। আল জাজিরার প্রতিবেদক বললেন, শ্রীলঙ্কার সেনারা হাসপাতালেও বোমা ফেলেছে ...লাসানথা এই জঘন্য কর্মের প্রতিবাদ করেছিলেন। আমি হাত বাড়াই। চায়ের কাপের উষ্ণতা স্পর্শ করি আঙুলের ডগায়। মৃত্যুর সময় কী রকম যন্ত্রনা হয়েছিল লাসানথার? তাঁর স্ত্রী আর সন্তানদের এখন কী রকম যন্ত্রণা হচ্ছে। লাসানথার মৃত্যু আমাদের কী শিখিয়ে যায়? ভেবে ভেবে দিশেহারা বোধ করি। চ্যানেল বদলাই। একটা ভালো খবর পাই-বাংলাদেশ সরকার সারের দাম অর্ধেক করেছে; তবু আমার উদ্বেগ কাটে না। তখন আমাদের আরেকজন বন্ধু- জার্মান রাষ্ট্রদূত ইয়রগেন ভেরথ- আমার খুব কাছে দাঁড়িয়ে যেন আমাকে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্যই শান্তস্বরে বললেন: ‘আজ আমরা নির্বাক। সম্ভবত বহু আগেই আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে।’ তবু আমি বলি-লাসানথার মৃত্যুর পরও সবকিছু বদলে যাবে না? লাসানথার হত্যাকান্ড সংক্রান্ত মূল সংবাদটির লিঙ্ক- Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৩৫
false
fe
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বিচ্ছিন্নতার রূপায়ণ _ এ ম_ আ ব দু ল আ লী ম জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বিচ্ছিন্নতার রূপায়ণ এ ম. আবদুল আ লী ম ====================================== তিরিশোত্তর বাংলা কাব্যের প্রধান কবি কবি জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)। তিনি যুগের বৈনাশিকতায় বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং লিখেছেন_ 'সকল লোকের মাঝে বসে/আমার নিজের মুদ্রাদোষে/আমি একা হতেছি আলাদা?' কবির বিচ্ছিন্নতাদীর্ণ কবিসত্তার এই আত্মস্বীকৃতির বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় তাঁর কবিতার বিষয় ও প্রকরণশৈলীর মধ্যে। ফলে আধুনিক কবিদের মধ্যে সবচেয়ে নির্জন; অন্ধকারের নির্জন কবি; পৃথিবী পলাতক কবি; বিষণ্ন বেদনার সিন্ধুতটে নিক্ষিপ্ত কবি প্রভৃতি অভিধা জীবনানন্দের জন্য অনিবার্যভাবেই জুটে গেছে। 'অস্তিত্বের যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট, যান্ত্রিক যন্ত্রণায় পিষ্ট, মৃত্যু যন্ত্রণায় আড়ষ্ট এবং মানসিক ও আত্মিক সংকটে নিমজ্জিত' এই কবি পারিপাশ্বর্িক পরিবেশ; পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক এমনকি বৈশ্বিক পরিম-লের কোন কিছুর সঙ্গে অন্বয় খুঁজে পান নি। প্রেম, নারী, প্রকৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, যুগজীবনের জটিলতা এবং সমকালীন মানুষের ক্লেদাক্ত জীবনের বহু-বর্ণিল চিত্র রূপায়ণের ক্ষেত্রে সর্বত্রই তিনি নিঃসঙ্গতা ও বিচ্ছিন্নতার মর্মবিদারী যন্ত্রণার কথা বলেছেন। তাঁর কবিচেতনার মর্মমূলে সংগ্রথিত ছিল বিচ্ছিন্নতার প্রাণবীজ। জীবনানন্দের অনতিক্রান্ত এই বিচ্ছিন্নতা যাকে তিনি এড়াতে পারেন না বলে সহজ স্বীকারোক্তিতে মেনে নিয়েছেন, সেটা শুধু বক্তব্যে ও চিন্তায় কাব্যদেহে সমাচ্ছন্ন হয়নি। কবিতার প্রকরণে, শব্দে-শব্দে, বাক্যে-চরণে সর্বত্র বিচ্ছিন্নতার প্রচ্ছাপ ছড়িয়ে গেছে। ব্যক্তিজীবনের সীমাহীন দুর্ভোগ এবং যুগমানসের জটিলতায় তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। তিনি নিমজ্জিত হয়েছিলেন হতাশা, ক্লান্তি, নৈরাশ্য, বিচ্ছিন্নতা আর একাকিত্বের গভীরে। 'যুগধর্মের বৈনাশিকতায় তাঁর মানসপ্রান্তর হয়েছিল বৃত্তাবদ্ধ-জীবনসন্ধিগ্ধ-শিকড়উন্মূলিত-বিশ্বাসবিচ্যুত, কখনো-বা সত্তাবিচ্ছিন্ন। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় পৌনঃপুনিকভাবে চিত্রিত হয়েছে অনাশ্রয়ী পৃথিবীর ছবি, শিল্পিত হয়েছে তাঁর নৈঃসঙ্গ্যপীড়িত বিপন্ন সত্তার বহুভুজ যন্ত্রণার কথা'। 'ঝরাপালক' (১৯২৭) থেকে শুরু করে 'ধূসর পা-ুলিপি' (১৯৩৬), 'বনলতা সেন' (১৯৪২), 'মহাপৃথিবী' (১৯৪৪), 'সাতটি তারার তিমির' (১৯৪৮) প্রভৃতি কাব্য এবং অগ্রন্থিত কবিতাসমূহের মধ্যে তিনি বিচ্ছিন্নতার শৈল্পিক রূপায়ণ ঘটিয়েছেন। ইংরেজি ধষরবহধঃরড়হ শব্দের বাংলা পরিভাষা বিচ্ছিন্নতা। 'বিচ্ছিন্ন' শব্দের আভিধানিক অর্থ সম্পূর্ণ বা সম্যক ছিন্ন, পৃথককৃত, বিযুক্ত এবং খ-িত । 'কোন কিছুর গুণ বা শক্তিকে তার মূল আধার নিরপেক্ষভাবে স্বকীয় সত্তা হিসাবে প্রতিপন্ন করাকে দর্শনে বিচ্ছিন্নতা বলা হয়।' শুদ্ধস্বত্ব বসু বলেছেন : 'বিচ্ছিন্নতা আসলে এক ধরনের মানস অনুভূতিজ্জযে অনুভূতির ফলে মানুষ নিজের সত্তাকে আর নিজের শাসনাধীন বলে ভাবতে পারে না। এই অনুভূতির জন্যই সে নিজেকে সম্পূর্ণ একা মনে করতে বাধ্য হয়, সমাজ-সংসার তার কাছে নিজের আত্মীয় বলে মনে হয় না, এদের থেকে সে পর পর ভাবে একাকীত্বের সংবেদনে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেয়। সমাজের একজন বলে তখন নিজেকে জাহির করা তার পক্ষে কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। হেগেল এবং মার্কস ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাবচেতনার আলোকে বিচ্ছিন্নতার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। তবে পরবর্তীকালে দার্শনিক ও সমাজতাত্তি্বকের ব্যাখ্যায় বিচ্ছিন্নতা বিষয়ে মার্কসীয় ধ্যান-ধারণাই সর্বাধিক গুরুত্ববহ হয়েছে। আধুনিককালে বিচ্ছিন্নতা সব সমাজেই এক জটিল সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। ফলে সমাজতাত্তি্বক, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক এবং মনস্তত্ত্ববিদ সকলের কাছেই বিচ্ছিন্নতা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন_ 'মূলত, সভ্যতার অভিশাপজীর্ণ ও সমাজের অভ্যন্তর দ্বন্দ্বশাসিত আধুনিক মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অভিশঙ্কা-চিত্তবৈকল্য এবং বহিশ্চাপ-অন্তশ্চাপই ব্যষ্টি-চেতনে সৃষ্টি করে বিচ্ছিন্নতাবোধ।' আধুনিক যুগে পুঁজিবাদ মানুষের বিবেক, নীতিবোধ এবং সামাজিক মূল্যবোধ কেড়ে নিয়েছে। ফলে ব্যষ্টি-চেতনে বাসা বেঁধেছে বিচ্ছিন্নতার কর্কট-রোগ। রেনেসাঁ পরবর্তী সময়ের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বৈপরীত্য এবং তার ভেতর-বাহির কাঠামোর দ্বন্দ্বের ফলেই আধুনিক যুগের মানুষের মনে বিচ্ছিন্নতার উন্মেষ ঘটেছে। জীবনানন্দ দাশের কবিচেতনায় বিচ্ছিন্নতার প্রকোপ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গেলে কতকগুলো বিষয়ের উপর আলোকপাত করা অত্যাবশ্যক। সেক্ষেত্রে প্রথমেই আসে কবির ব্যক্তিজীবন, তারপর আসে তাঁর সমকালীন জীবনের মূল্যায়ন, আসে সমকালীন সাহিত্যের নানা প্রবণতা এবং সেগুলোর সঙ্গে কবির সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ। জীবনানন্দ দাশের ব্যক্তিজীবন ছিল প্রতিকূল পরিস্থিতির সামূহিক বৈনাশিকতায় পর্যুদস্ত; তিনি ছিলেন লাজুক, গম্ভীর, স্বল্পবাক এবং প্রচার বিমুখ মানুষ। সাংসারিক কাজকর্মেও কতকটা উদাসীন ছিলেন। তাঁর জীবনের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা খুব চরিতার্থতা লাভ করে নি। ভাগ্যের প্রসন্ন দৃষ্টি থেকেও তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করার পরও প্রত্যাশানুরূপ চাকরি পাননি, দীর্ঘদিন তাঁকে বেকারত্বের গদ্বানি সহ্য করতে হয়েছে। চাকরিচ্যুত হওয়ার মতো বেদনাদায়ক ঘটনাও তাঁর জীবনে ঘটেছে। জীবিতকালে জীবনানন্দ দাশ কবি হিসেবে তেমন মূল্যায়িত হননি; বরং তাঁর কবিতা সম্পর্কে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও তীর্যক সমালোচনা করা হয়েছে। কবি-'গ-ার'; ভাবান্তরহীন কবি প্রভৃতি নামে আখ্যায়িত করে অনেকেই তাঁকে প্রাণঘাতী যন্ত্রণা দিয়েছেন। তাঁর চেতনায় বিচ্ছিন্নতা বাসা বাঁধার মূলে বরিশাল ত্যাগ করে কলকাতার জটিল যান্ত্রিক জীবনে বসবাসও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বরিশালের শ্যামলিম প্রকৃতির মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর শৈশব-কৈশোর; বলা চলে বরিশালের প্রকৃতির সি্নগ্ধ পরিবেশের সঙ্গে জীবনানন্দ একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির বাস্তবতা তাঁকে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। কলকাতার ফাঁপা মানুষ আর যান্ত্রিক জীবন তাঁর দুর্বিষহ মানসিক যাতনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া তাঁর কোন উপায় ছিল না। জীবনানন্দ দাশের দাম্পত্য জীবনও সুখের হয়নি। এর মূলে বিশেষভাবে দায়ী অর্থনৈতিক অনটন। তাছাড়া কবির ধীর, স্থির ও স্থিতধী জীবনযাপন স্ত্রী লাবণ্য দাশের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। স্ত্রীর আচরণে জীবনানন্দ দাশ অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। কবির ভ্রাতুষ্পুত্র অমিতানন্দ দাশ বলেছেন : 'জীবনানন্দের বিয়ে সম্বন্ধ করে হয়েছিল, তাঁর সম্মতিতেই।...কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওঁদের দু'জনের মধ্যে ভালো মনের মিল হয়নি্ত তার প্রতিফলন রয়েছে জীবনানন্দের কবিতার মধ্যে।' যুগজীবনের জটিলতা তাঁকে নিক্ষেপ করেছে একাকিত্ব অর্ণবে, তাঁকে জর্জরিত করেছে রোমান্টিক বিষণ্নতায়, আত্মসমাহিত করেছে মর্মান্তিক বেদনায় আর বিচ্ছিন্নপীড়িত করেছে তাঁর মানসচারিত্র্যকে। বিদেশী সাহিত্যের অধ্যয়নলব্ধ জ্ঞান জীবনানন্দের কাব্য ভাবনায় বিচ্ছিন্নতার সনি্নপাত ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। যুদ্ধসৃষ্ট যন্ত্রণায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে জীবনানন্দ দাশ উচ্চারণ করেছেন : 'এখন অপর আলো পৃথিবীতে জ্বলে;/কি এক অপব্যয়ী অক্লান্ত আগুন'! এতে স্যাসুন এবং ওয়েনের কবিতার সুস্পষ্ট প্রভাব পরিদৃশ্যমান। যুদ্ধের ভয়াবহতা, অবক্ষয়, ক্লান্তি, হতাশা, বিচ্ছিন্নতা প্রকটভাবে চিত্রিত হয়েছে টি. এস. এটিয়টের ্তুঞযব ডধংঃব খধহফ্থ, ্তুএবৎড়হঃরড়হ্থ, ্তুঞযব ঐড়ষষড় িগবহ্থ ইত্যাদি কবিতায়। এসব কবিতার প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিদৃষ্ট হয় জীবনানন্দের কাব্যে বিধৃত বিচ্ছিন্নতার মধ্যে। এক কথায় বলা যায়, ইংরেজি সাহিত্যের অধীত জ্ঞান তাঁর বিচ্ছিন্নতা বা অনন্বয়বোধকে তীব্র ও গভীরতর করেছে। 'জীবনানন্দ প্রকৃত কবি; প্রকৃতির কবি' হলেও প্রকৃতি তাঁর বিচ্ছিন্নতাপীড়িত কবিচৈতন্যে সৃষ্টি করেছে অনিঃশেষ নিঃসঙ্গতা। এ-জন্যই 'রূপসী বাংলা' কাব্যের কবিতাগুলো তিনি পত্রিকা কিংবা গ্রন্থে প্রকাশ না করে বাক্সবন্দি করে লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখেছিলেন। কবিতা রচনায় সূচনালগ্ন থেকেই তাঁর কবিসত্তায় হানা দিয়েছে নিরাকপরা প্রকৃতির শূন্যরূপ। ফলে প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাতেই তিনি উচ্চারণ করেছিলেন : 'আমি কবি,জ্জসেই কবি,জ্জ/আকাশে কাতর অাঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি'! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি প্রকৃতির ধূসর-ঊষর রূপচ্ছবি অবলোকন করেছেন। ফলে প্রকৃতিকে তিনি উপস্থাপন করেছেন হেমন্তের ভয়ংকর শূন্যতার আস্তরণে। হেমন্তের ধূসর জীর্ণ-শীর্ণ প্রকৃতি, রিক্ত মাঠ, শূন্য প্রান্তর ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর কবিতায়। জীবনের জ্বালাকে, নিঃসঙ্গ চিত্তের বেদনাকে প্রকাশ করতে তিনি হেমন্তকেই বেছে নিয়েছিলেন। কবিসত্তার বিচ্ছিন্নতার কারণে জীবনানন্দের প্রিয় ঋতু হেমন্ত তাঁর চেতনায় প্রাচুর্য নিয়ে উপস্থিত হয়নি, উপস্থিত হয়েছে শূন্যতা, রিক্ততা এবং বেদনা নিয়ে। প্রকৃতির মোহনীয় রূপমাধুরী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন বলে সবুজ রূপের মহিমা নয়, হেমন্তের নেতিবাচক ভাবলোকই ভিড় করেছে তাঁর কবিচেতনায় : 'প্রথম ফসল গেছে ঘরে, ্ত/হেমন্তের মাঠে-মাঠে ঝরে/শুধু শিশিরের জল;/অঘ্রাণের নদীটির শ্বাসে/হিম হয়ে আসে/বাঁশ-পাতা্তমরা ঘাস্তআকাশের তারা!' হেমন্তের শূন্য প্রান্তরের পাশাপাশি কুয়াশাচ্ছন্ন পরিপার্শ্ব, পাখির নষ্ট নীড় আর প্রকৃতির বিধ্বস্ত রূপের ভয়াল চিত্র পাওয়া যায় জীবনানন্দের কবিতায়। কেবল হেমন্তের বিষণ্নতা নয়, শীতের রিক্ততাও জীবনানন্দের বিচ্ছিন্নতাক্লিষ্ট কবিচিন্তায় প্রকাশ পেয়েছে। মাঘ সংক্রান্তির রাত যেমন বার বার স্থান পেয়েছে তাঁর কবিতায়, তেমনি রূপায়িত হয়েছে পৌষের কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতির বিষণ্নমূর্তি 'পউষের কুয়াশায় সাপের খোলস, পাতা, ডিম/প'ড়ে আছে ঘাসে/কেন যে করুণ চোখ পথ ভুলে ভেসে গেল/ময়জানি নদীটির পাশে।' নিঃসঙ্গতাপীড়িত কবি জীবনানন্দ প্রকৃতির নেতিবাচক চিত্রই তাঁর কাব্যে অঙ্কন করেছেন। নিসর্গের সতেজ, সৌন্দর্যম-িত, প্রাণোচ্ছল ছবি তিনি অাঁকেননি। শুধু তাই নয়, হেমন্তের ঝড়, সবুজ রোমশ নীড়, বাসি পাতা ভূতের মতন, হলুদ জ্যোৎস্না, হলুদ নদী, সোনালী ডিমের মত ফা-ুনের চাঁদ, নীল হাওয়ার সমুদ্র, শিঙের মত বাঁকা নীল চাঁদ, কমলা রঙের রোদ, শতাব্দীর নীল অন্ধকার, সোনালি সোনালি চিল প্রভৃতি সব অস্বাভাবিক নৈসর্গিক প্রসিদ্ধি ব্যবহৃত হয় তাঁর কবিতায়। তাঁর বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণাদগ্ধ কবিমানসে প্রকৃতি লাভ করে ধূসর রং। পরিবার ও প্রেম বিচ্ছিন্নতা জীবনানন্দের কবিমানসের অন্যতম মৌল উপাদান। পিতা-মাতা, ভাইবোনের সম্মিলনে যে শিক্ষিত, সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও আদর্শিক পারিবারিক আবহাওয়ায় জীবনানন্দ বড় হয়েছেন বাস্তবতার নির্মমতায় সে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। মায়ের সঙ্গে ছিল কবির অন্তরঙ্গতা। মঞ্জুশ্রী দাশ জানিয়েছেন : 'আমার ঠাকুমা ছিলেন বাবার সবচেয়ে প্রিয়জন। ঠাকুমার মৃত্যুর সময়ে দেখেছি বাবার মুখে অফুরান বেদনা। কিন্তু চোখে জল নেই।' পারিবারিক জীবনে মাতৃনির্ভরতা কবিকে অনেক সময় মানসিক প্রশান্তি দিয়েছিল। সংসারকর্মে উদাসীন, জীবন সংগ্রামে পর্যুদস্ত, ভাগ্যের প্রসন্ন দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে তাঁর মায়ের উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না। তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন জীবনানন্দের মানসিক শান্তি বজায় রাখার জন্য। তিনি যাতে সুস্থিরভাবে কাব্যচর্চা করতে পারেন সেজন্য কবিমাতা সারাক্ষণ তাঁকে আগলে রাখতেন। জীবনানন্দের সহোদরা সুচরিতা দাশ লিখেছেন : 'দাদা যে ঠিক সাংসারিক মানুষ নন, তাঁর জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা খুব যে চরিতার্থতা লাভ করে নি, ভাগ্যের প্রসন্ন দৃষ্টি যে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি লাভ করলেন না, সেজন্য অন্তত তাঁর কাব্যসাধনার জন্য একটুখানি অনুকূল পরিবেশ থাক, আর সেইখানে থাক অন্তত একটু সান্ত্বনা, সারাজীবন ধরে সেই চেষ্টাই করে গেছেন মা।' জীবন ও সময়ের তাড়না এবং মহাকালের অমোঘ বিধান জীবনানন্দকে মা-বাবা, ভাইবোনের অন্তরঙ্গতায় গড়া পারিবারিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরিবার বিচ্ছিন্নতা তাঁর মধ্যে অনন্বয় সৃষ্টি করে। প্রেম বিচ্ছিন্নতা জীবনানন্দের ব্যক্তিজীবন ও কবিসত্তাকে সবচেয়ে বেশি নৈঃসঙ্গ্যপীড়িত করেছে। 'অপ্রেম' শব্দটি জীবনানন্দই শিখিয়েছেন আমাদের। ব্যক্তিজীবনের নানা পরিসরে তিনি প্রেয়সী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। তাঁর প্রেমের কাহিনী এখন আর কল্পকথা নয়। 'বরং পেয়ে হারানোর ট্র্যাজেডিই সত্য হয়ে উঠেছে তাঁর জীবনে।' কিশোর বয়সের প্রেমিকা, পরিণত বয়সের প্রেমিকা সবাই তাঁর কাছ থেকে দূরে চলে গেছে। স্ত্রীও প্রেম দিয়ে তাঁর মনের অলিন্দ পরিপূর্ণ করেননি; বরং উপেক্ষার বিষাক্তবাণে তাঁর হৃদয়কে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করেছেন। এ সম্পর্কে আহমদ রফিক বলেছেন : 'দিনলিপিতে কথিত গ্রামীণ কিশোরী (রুরাল গার্ল)-কে অনিবার্য কারণে সরে যেতে হয়; কারণ হতে পারে মৃত্যু অথবা সামাজিক বাধ্যবাধকতা। তেমনি সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে পরিণত বয়সী নাগরিক প্রেমিকাকে (দিনলিপির 'ণ' চিহ্নিত নারী) কবি'র জীবন থেকে সরে যেতে দেখা যায়। কবির প্রগাঢ় আহ্বানে প্রেমিকার তরফ থেকে সাড়া মেলে না। একটি সংরক্ত প্রেমের মৃত্যুই সত্য হয়ে ওঠে। এ ধরনের ঘটনা জীবনানন্দ দাশের আপাত শান্ত জীবনে ঝড় তুলেছিল, চেতনা বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।' বিবাহোত্তর পর্বেও দু'দ- শান্তির উৎসব তাঁর জীবনের জন্য তৈরি হয়নি। প্রেম প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বেদনা জীবনানন্দের চিত্তকে বিধ্বস্ত করেছে। তাঁর কবিতার পরতে পরতে সনি্নবেশিত হয়েছে প্রেমের অপ্রাপনীয়তার বেদনাগাঁথা : 'তারে আমি পাই নাই;্ত কোন এক মানুষীর মনে/কোনো এক মানুষের তরে/যে- জিনিস বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীর গহ্বরে!্ত/নক্ষত্রের চেয়ে আরো নিঃশব্দ আসনে/কোন এক মানুষের তরে এক মানুষীর মনে!' যে প্রেয়সী জীবনানন্দকে ব্যথা দিয়ে দূরে চলে গেছে তাকে তিনি ভুলতে পারেননি কখনো। বার বার তার কথা স্মরণ করেছেন। প্রেয়সীর বিচ্ছেদ যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করেছেন। তাঁর মানসী বনলতা সেন, সুচেতনা, সুদর্শনা, সুরঞ্জনা, সবিতা, বেহুলা, শ্যামলী, শঙ্খমালা সবাই অনন্ত কালের পরিচিত হয়েও যেন চির অচেনা, তারা তাই অধরা প্রতিমারূপে ধরা দিয়েছে। কাব্যজীবনের সূচনা থেকে তিনি নির্বেদ নিঃসঙ্গতার দুর্মর আবর্তে নিমগ্ন হলেও, কোন নারী এসে সেখান থেকে তাকে মুক্তির অমরাবতীতে নিয়ে যেতে পারেনি, তাই একাকিত্ব আর নৈঃসঙ্গ্যতার বেদনায় দীর্ণ জীবনানন্দ প্রেমের অধরা রূপ ফুটিয়ে তোলেন তাঁর কবিতায়। নারীকে ভেবেছেন ঘাইহরিণী। প্রেমের পাত্রীর মধ্যে দেখেছেন মেকি কৃত্রিমতা : 'চেয়ে দেখি, ্তদুটো হাত, ক'খানা আঙুল/একবার চুপে তুলে ধরি;/চোখ দুটো চূন-চূন, ্তমুখ খড়ি-খড়ি!/থুত্নিতে হাত দিয়ে তবু চেয়ে দেখি/সব বাসি, সব বাসি,্তএকেবারে মেকি!' প্রেম বিচ্ছিন্নতা জীবনানন্দের কবিসত্তায় অনন্ত শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। এই শূন্যতাকে ব্যাপকতা দান করেছে ধানসিঁড়ি নদীর পাশে ভিজে মেঘের দুপুরের চিলের ডাক। বিচ্ছিন্নতার বেদনায় মুষড়ে পড়ে কবি উচ্চারণ করেছেন : 'হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে/তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!/তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার সস্নান চোখ মনে আসে!/.../কে হায় হৃদয় খুঁড়ে/বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!' এই বেদনা প্রেম বিচ্ছিন্নতার বেদনা। জীবনানন্দ দাশকে বলা হয় 'এক বিমূঢ় যুগের বিভ্রান্ত কবি।' তাঁর কবিতা রচনার কাল ছিল নানা কারণে দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং বিপর্যয়ের কর্কটরোগে আক্রান্ত। মানুষের স্বার্থপরতা, হীনম্মন্যতা, হিংসা, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ধ্বংসযজ্ঞ, ফ্যাসীবাদের তা-বলীলা সমকালীন যুগের এই নির্মম অসঙ্গতিগুলো জীবনানন্দের কবিচিত্তকে আহত করেছিল। পৃথিবীর অসুন্দর রূপ ও যুগজ্বর দেখে ক্লান্ত, নিরাশ এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন : 'ছিঁড়ে গেছি,্ত ফেঁড়ে গেছি,্ত পৃথিবীর পথে হেঁটে-হেঁটে...।' কখনো বলেছেন : 'আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন...।' অধঃপাত কবলিত যুগের বিপন্ন অবস্থা দেখে তিনি শূন্যতা ও হাতাশায় জর্জরিত হয়েছেন। তিনি অনুভব করেছেন : 'পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন'। সমকালীন জীবনকে মর্ম দিয়ে উপলব্ধি করে আর্থ-সামাজিক-নৈতিক ও মানবিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পরিণতির রূপ দেখে কবির ধারণা জন্মেছে সবকিছুর মতোই মানুষের হৃদয়ও আজ শেয়াল-শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাদের নির্মমতা যুগের যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে তার উদ্ভাসন জীবনানন্দের কবিতায় : 'কিন্তু সেই শুভ রাষ্ট্র ঢের দূরে আজ।/চারিদিকে বিকলাঙ্গ অন্ধ ভিড়্ত অলীক প্রয়াণ।/মন্বন্তর শেষ হ'লে পুনরায় নব মন্বন্তর;/যুদ্ধ শেষ হ'য়ে গেলে নতুন যুদ্ধের নান্দীরোল;/মানুষের লালসার শেষ নেই/উত্তেজনা ছাড়া কোন দিন ঋতু ক্ষণ/অবৈধ সংগম ছাড়া সুখ/অপরের মুখ সস্নান করে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ/নেই।' যুগজীবনের জটিল রূপ দেখে জীবনানন্দ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে তাঁর পারিপাশ্বর্িক পরিম-ল এমনকি আপন সত্তার মধ্যেও দানা বেঁধেছে বিষণ্নতা। তাঁর চোখে পড়েছে : 'ভোরের বেলায় আজ একটি কঠিন অবসাদ/বিকেল বেলায়ও আজ একটি কঠিন/বিষণ্নতা লেগে আছে পৃথিবীর বুকে।' তিনি আরও অনুভব করেছেন : 'মৃত্যু আর মাছরাঙা ঝিলমিল পৃথিবীর বুকের ভিতরে/ চারিদিকে রক্ত ঋণ গ্লানি ধ্বংসকীট নড়েচড়ে'। এ সবকিছু অবলোকন করে কবির ধারণা জন্মেছে,_ 'অদ্ভুত অাঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ'। সমাজ, পরিবার তথা জগৎ-জীবনের সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উচ্চারণ করেন : 'আলো-অন্ধকারে যাই্তমাথার ভিতরে/স্বপ্ন নয়,্ত কোন এক বোধ কাজ করে;/স্বপ্ন নয়,্ত শান্তি নয়্ত ভালোবাসা নয়,/হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!' ক্লান্তি আর অবসাদভরা মন নিয়ে তিনি যেদিকে তাকিয়েছেন, সেদিকেই দেখেছেন শূন্যতা। বিচ্ছিন্নতাবোধ থেকেই জীবনানন্দ দাশ তাঁর ইতিহাস চেতনার মধ্যে ভয়াবহ বেদনার চিত্র অঙ্কন করেছেন। অতীত ইতিহাসের কোথাও গিয়ে তাঁর কবিসত্তা স্বস্তি পায় নি। আঘাতের পর আঘাত, বেদনার পর বেদনার অভিঘাতে তিনি একবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি দেখেছেন : 'সময়ের হাতে সবি বিচ্ছিন্ন ভঙ্গুর।' কোথাও তিনি আশার আলো দেখতে পাননি; কারণ : 'একটি পৃথিবী নষ্ট হ'য়ে গেলে এবারে মানুষ/চেয়ে দেখে আরেক পৃথিবী বুঝি ধ্বংসপ্রায়;/লোভ থেকে লোভে তবু ্ত ভুল থেকে ভুলে/শূন্যতার থেকে আরো অবিকল শূন্যতার দিকে/আবর্ত ক্রমেই আরো দ্রুত হ'য়ে আসে।' এই হতাশা, অবসাদ ও নৈরাশ্য তাঁর হৃদয়ে স্থায়ী আসন পেতে বসেছিল। হতাশা ও নৈরাশ্য থেকে তিনি বিচ্ছিন্নতায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন এবং নক্ষত্রের দিকে চেয়ে উচ্চারণ করেছেন : 'সন্ধ্যার নক্ষত্র, তুমি বলো দেখি কোন্ পথে কোন্ ঘরে যাবো!/কোথায় উদ্যম নাই, কোথায় আবেগ নাই,্ত চিন্তা স্বপ্ন ভুলে গিয়ে/শান্তি আমি পাবো?/রাতের নক্ষত্র তুমি, তুমি বলো দেখি কোন্ পথে যাবো?' সত্যিই কোন পথ তিনি পাননি, যে পথে শান্তি আছে, আছে আলো। অন্ধকার সমুদ্রের তিমির মতো রাত্রির ভয়াবহতা ছাড়া আর কিছুই দেখেননি তিনি। বিচ্ছিন্নতা ধীরে ধীরে কবির নিজের কাছেই নিজেকে অপরিচিত করে তুলেছে। মার্কসীয় তত্ত্বে দেখা যায় বিচ্ছিন্নতা যেভাবে শ্রমিকের কাছে শ্রমিকের নিজের কাজকে অপরিচিত (ওহফরভভবৎবহঃ) বলে মনে হয়, জীবনানন্দেরও ঠিক তেমনি নিজের সত্তাকে, নিজের ভুবনকে অপরিচিত মনে হয়েছে। নিজের প্রতি সংশয়িত ্তনিজের সত্তার প্রতি দ্বিধান্বিত হয়ে কবি উচ্চারণ করেছেন : 'যারা পৃথিবীর বীজক্ষেতে আসিতেছে চ'লে/জন্ম দেব্তে জন্ম দেবে ব'লে :/তাদের হৃদয় আর মাথার মতন/আমার হৃদয় নাকি? ্ত তাহাদের মন/আমার মনের মতো না কি?' কখনো সত্তা বিচ্ছিন্নতার জ্বালায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে বলেছেন : 'কোনোদিন মানুষ ছিলাম না আমি।/হে নর, হে নারী,/তোমাদের পৃথিবীকে চিনি নি কোনদিন;/আমি অন্য কোন নক্ষত্রের জীব নই।/যেখানে স্পন্দন, সংঘর্ষ গতি, যেখানে উদ্যম, চিন্তা, কাজ,/সেখানেই সূর্য, পৃথিবী, বৃহস্পতি, কালপুরুষ, অনন্ত আকাশ গ্রন্থি,/শত শত শূকরের চিৎকার সেখানে,/শত শত শূকরীর প্রসববেদনার আড়ম্বর;/এইসব ভয়াবহ আরতি!/গভীর অন্ধকারের ঘুমের আস্বাদে আমার আত্মা লালিত;/আমাকে কেন জাগাতে চাও?' পরিবার, সমাজ, নৈতিক-সামাজিক মূল্যবোধ এমনকি আপন সত্তা থেকে বিচ্ছিন্নতার পর যে ক্লান্তিচেতনা ও নৈঃসঙ্গ্য সৃষ্টি হয় তার চূড়ান্ত রূপায়ণ ঘটে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। কার্ল মার্কস বিচ্ছিন্নতা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সমাজ পরিবর্তনের কথা বলেছেন। শিল্পের যে অগ্রগতি বুর্জোয়া শ্রেণী না ভেবেই বাড়িয়ে চলে, তার ফলে শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতাহেতু বিচ্ছিন্নতার জায়গায় আসে সম্মিলনহেতু বৈপ্লবিক সংযুক্তি। বুর্জোয়ার পতন ও প্রলেতারিয়েতের জয় লাভের ভেতরে ধনতান্ত্রিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে। জীবনানন্দের সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বিষ্ণু দে ও সমর সেন মার্কসবাদে দীক্ষিত হয়ে বিচ্ছিন্নতা উত্তরণের রসদ খুঁজেছেন। কিন্তু জীবনানন্দ না ধর্ম, না মার্কসবাদ_ এ দুয়ের কোন কিছুকে অন্বিষ্ট করতে পারেননি। কাব্য সাধনার প্রথম পর্যায়ে মৃত্যু তথা জীবন থেকে পলায়নকে তিনি বিচ্ছিন্নতা উত্তরণের উপায় ভেবেছিলেন। তিনি কখনো ঘাস, কখনো কমলালেবু, কখনো বনহংস, কখনো শঙ্খচিল শালিকের বেশে জন্মগ্রহণ করতে চেয়েছেন। কিন্তু বিচ্ছিন্নতার মর্মভেদী যন্ত্রণা যখন ভোগ করেছেন, তখনই মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের জ্বালা মিটিয়ে বিচ্ছিন্নতা উত্তরণের পথ খুঁজেছেন : 'মৃত্যুরে বন্ধুর মত ডেকেছি তো, জ্জপ্রিয়ার মতন!্ত/চকিত শিশুর মত তার কোলে লুকিয়েছি মুখ;/...।' শরীরের অবসাদ, হৃদয়ের জ্বর থেকে মুক্তি পেতে এবং বিচ্ছিন্নতার অভিঘাত দূর করতে তিনি মৃত্যুকেই ভেবেছেন কাঙ্ক্ষিত মুক্তির পথ। এভাবে জীবনানন্দ 'যতদিন বেঁচে আছি,' 'যেদিন মরিয়া যাব,' 'ঘুমায়ে পড়িব আমি,' 'যখন মৃত্যুর ঘুমে,' 'যদি আমি ঝ'রে যাই', 'মনে হয় একদিন,' 'একদিন কুয়াশায়' প্রভৃতি কবিতায় প্রত্যক্ষভাবে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের জ্বালা দূর করার কথা বলেছেন। আত্মহত্যার চিন্তায় মগ্ন হয়ে লিখেছেন 'আট বছর আগের একদিন' কবিতাটি। জীবনানন্দের কবিতায় বিষয়ের পাশাপাশি প্রকরণশৈলীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতার প্রকোপ পরিদৃষ্ট হয়। বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণাজাত অস্থিরতা, ক্লান্তি, মৃত্যুচিন্তা ও বিষণ্নতা তাঁর কাব্য-কবিতার নামকরণ, চরণ ও শব্দবিন্যাস এবং ছন্দ-অলঙ্কার প্রয়োগের মধ্যেও আভাসিত হয়। 'ঝরা পালক', 'ধূসর পা-ুলিপি,' 'সাতটি তারার তিমির,' 'বেলা অবেলা কালবেলা' _কাব্যের এ জাতীয় নামকরণের মধ্যে শূন্যতা, বিবর্ণতা এবং বিচ্ছিন্নতার আবহ ঘনীভূত হয়। কবিতার নামকরণের মধ্যেও এ বৈশিষ্ট্য পরিদৃশ্যমান। 'মরীচিকার পিছে', 'জীবন-মরণ দুয়ারে আমার', 'অস্তচাঁদে', 'ছায়া প্রিয়া', 'শ্মশান', 'মরুবালু', 'নির্জন স্বাক্ষর', 'স্বপ্নের হাতে', 'হায় পাখি একদিন', 'যদি আমি ঝরে যাই', 'ভিজে হয়ে আসে মেঘ', 'হায় চিল', 'নগ্ন নির্জন হাত', 'অন্ধকার', 'ধান কাটা হয়ে গেছে', 'অঘ্রাণ প্রান্তরে', 'নিরালোক', 'শব', 'স্থবির যৌবন', 'মৃত্যু স্বপ্ন সংকল্প', 'হে হৃদয়', 'একটি নক্ষত্র আসে', 'মানুষের মৃত্যু হলে', 'মৃত মাংস'্ত কবিতার এসব নাম বিচ্ছিন্নতার ভাবকে প্রকাশ করে। কাব্যভাষায় বক্তব্য সনি্নবেশে জীবনানন্দের অনন্বয়বোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাঁর ভাবনা কখনো এলোমেলো, কখনো আবার পরস্পরবিরোধী। একইসঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর কাব্যভাষায় সঞ্চারিত হয়েছে। অনেক সময় কবিতার মধ্যে বিপরীতধর্মী বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। বেদনার উল্লাস, ভয়াবহ স্বাভাবিক, ভীষণ সুন্দর, উল্লাসের মতন যন্ত্রণা প্রভৃতির ব্যবহার বিচ্ছিন্নতাবোধের পরিচায়ক। একই কবিতার মধ্যে বক্তব্যের বৈপরীত্য আনয়ন করে জীবনানন্দ দাশ বিচ্ছিন্নতাকে প্রগাঢ়তর করেছেন। তিনি একবার লেখেন : 'মড়ার কবর ছেড়ে পৃথিবীর দিকে তাই ছুটে গেল মন'। ঐ কবিতাতেই আবার লিখেছেন : 'ঘুমাব বালির পরে জীবনের দিকে আর যাব নাকো ছুটে'। এভাবে কাব্যভাষায় ও ভাবে জীবনানন্দ বিচ্ছিন্নতার এক জটিল গ্রন্থি রচনা করেছেন। শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও হতাশা, ক্লান্তি, অবসাদ, ব্যর্থতা এবং সংশয়ের যন্ত্রণা লক্ষ্যগোচর হয়। কাতর অাঁখি, স্তম্ভিত নয়নে, দুরাশার মোহে, কুহকের কুলে, দুপুরের আকাশ, ঝরা পাতা, ভিজে মেঘের দুপুর, মরা দরিয়া, চিলের কান্না, ঘুমসাগরের রাতে, নিখিলের নীরবতা, ধূসর মেঘের ফাঁক, পউষ নিশা, শিরশিরে পুবালী হাওয়া, শ্মশান, মরুবালি, ভাঙ্গা হাল, আলেয়া, অন্ধকার, হায়, নষ্টশসা, পচা চাল কুমড়া, প্রলাপপা-ুর, বৃশ্চিক- গ্রথিক অাঁধার,্ত এসব শব্দ চয়নের মধ্যে এক ধরনের রিক্ততা ও বিষণ্নতার আবহ সৃষ্টি হয়্ত যা জীবনানন্দের কবিতায় বিচ্ছিন্নতা বোধকে শাণিত করে। কাব্যে ছন্দ-অলঙ্কার-চিত্রকল্প এবং প্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও জীবনানন্দ বিচ্ছিন্নতার স্ফুরণ ঘটিয়েছেন। যুগের ক্লান্তি, তিক্ততা, হতাশা প্রভৃতি ফুটিয়ে তুলতে যে ছন্দের প্রয়োজন, তিনি সে ছন্দেই কবিতা লিখেছেন। নির্জনতা, একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতার রূপনির্মাণে কবি অজস্র প্রতীক ব্যবহার করেছেন। নির্জন খড়ের মাঠ, ইঁদুর, পেঁচা, নক্ষত্র, ঝিঁঝির ডাক, রাতের তারা, নীরব চাঁদ্ত এসব নির্জনতার প্রতীক। কাজেই জীবনানন্দের কবিতার শৈল্পিক পরিসরেও বিচ্ছিন্নতার উদ্ভাসন পরিলক্ষিত হয়। বিচ্ছিন্নতা জীবনানন্দ দাশের কবিসত্তার মর্মমূলে প্রোথিত। ব্যক্তিজীবনের দুর্ভোগ; দৈশিক, বৈশ্বিক এবং কালিক জীবনের জটিলতা তাঁকে নৈঃসঙ্গ্যপীড়িত করেছে। কবিতার পরতে পরতে, ভাবে এবং ভাষার মধ্যে বিচ্ছিন্নতাদীর্ণ কবিচেতনাকে তিনি বাঙ্ময় করে তুলেছেন। ধনতান্ত্রিক শোষণ-নিষ্পেষণ, যান্ত্রিক জীবনের অভিঘাতে তিনি পরিবার, সমাজ, সমস্ত মূল্যবোধ এমনকি আপন সত্তা থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তির জন্য কখনো প্রকৃতির বুকে লীন হতে চেয়েছেন, কখনো প্রেমের মহিমাতে হয়েছেন অবলীন, কখনো আবার মৃত্যুর কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চেয়েছেন। সবদিক বিচারে বলা যায়, বিচ্ছিন্নতার রূপায়ণে জীবনানন্দ সার্থক। কাব্যের বিষয় এবং আঙ্গিক সবকিছুতেই তিনি নির্মাণ করেছেন অতলান্ত নিঃসঙ্গতা, দুঃসহ বিচ্ছিন্নতা এবং দুর্ভর যন্ত্রণার শিল্পপ্রতিমা। # --------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ সাময়িকী / ২২ অক্টোবর ২০০৯ সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৪৮
false
fe
এসএম সুলতান _ আমাদের শিল্পচিত্রের মুখ আজ ১০ আগষ্ট । বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানে ৮৪তম জন্মদিন। তাঁর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা । ---------------------------------------------------------------------------------- এসএম সুলতান : আমাদের শিল্পচিত্রের মুখ -------------------------------------------------- বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানের (১৯২৩-১৯৯৪) প্রকৃত নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। কিন্তু এসএম সুলতান নামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল জেলার মাসিমদিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রী। নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে পাঁচ বছর পড়াশোনার পর সুলতান বাবার সঙ্গে কাজে যোগ দেন। তার বাবা যেসব ভবনের কাজ করতেন, সুলতান সেসব ভবনের নকশা আঁকতে শুরু করেন। এর ফলে চিত্রশিল্পের প্রতি তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। ১৯৩৮ সালে স্থানীয় জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের আর্থিক সহযোগিতায় সুলতান কলকাতায় পৌঁছেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহযোগিতায় সুলতান আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। সুলতান অবশ্য পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তিন বছর অধ্যয়নের পর তিনি স্কুল ছেড়ে দেন এবং একজন ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সুলতান ছিলেন চিরকালের এক বাউন্ডুলে বোহেমিয়ান। জীবন শুরুর সে সময় তিনি নেমে আসেন রাস্তায়, ঘুরতে থাকেন ভারতের নানাপ্রান্তে জীবন ধারণের জন্য তিনি এসময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প গড়ে তোলা সম্মিলিত বাহিনীর সৈন্যদের ছবি আঁকেন। সুলতানের আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয় ১৯৪৬ সালে সিমলায়। কিন্তু এসময়কালে তার আঁকা একটি ছবিও আজ আর নেই। এমনকি নেই একটি ফটোগ্রাফও; কেননা সুলতান সবসময়ই নিজের কাজ সংরক্ষণের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। কিছুদিনের জন্য সুলতান কাশ্মিরে বাস করেন। এ সময় তিনি মূলত ল্যান্ডস্কেপ ও পোট্রেট আঁকেন। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর তিনি নড়াইলে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৫১ সালে তিনি করাচি যান। সেখানকার একটি স্কুলে তিনি আর্ট শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পঞ্চাশ দশকে সুলতান আমেরিকা যান। আমেরিকার নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো ও বোস্টনে তার আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়। এরপর তিনি আসেন লন্ডন। সেখানকার প্রদর্শনীতে সে সময়ের বিশ্বের সেরা চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে সুলতানের আঁকা ছবি স্থান পায়। ১৯৫৩ সালে তিনি আবারো ফিরে আসেন জন্মস্থান নড়াইলে। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এসএম সুলতান পেয়েছেন একুশে পদক (শিল্পকলায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক-১৯৮২) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৯৩। অতি অল্পসংখ্যক ব্যক্তিত্বই একাধারে এদেশের সর্বোচ্চ দুটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এসএম সুলতানের আঁকা ছবিতে ক্যানভাস অনেক বড়; যেন বিরাট একটি মঞ্চ, যেখানে জীবন নাটক মঞ্চস্থ হয় নানা রঙে। সুলতান বিশ্বাস করতেন প্রান্তিক মানুষ তাদের যাবতীয় অপ্রাপ্তি, ত্রাস, না পাওয়ার পরও জীবনযুদ্ধে নিয়তই সংগ্রামশীল। গ্রামবাংলার এসব জীবনজয়ী ও সংগ্রামমুখর মানুষই হাস্যমুখর ও মাংসল অবয়ব নিয়ে স্থান পেয়েছে সুলতানের ছবিতে। এই বরেণ্য শিল্পী ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর নড়াইলে মৃত্যুবরণ করেন। নড়াইলের চিত্রানদীর পাড়ে সুলতানের নিজ হাতে গড়ে তোলা ব্যতিক্রমী আর্ট স্কুল ‘শিশু স্বর্গ’ সারাবিশ্বের সামনে এই ঋষি শিল্পীর স্মৃতি তুলে ধরছে। তার জন্মস্থান নড়াইলের এই শিশু স্বর্র্গে সুলতানের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলালিংকের পৃষ্টপোষকতায় ৯ আগস্ট প্রথমবারের মতো সুলতান জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি আয়োজন করেতে যাচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী সুলতান উৎসব-২০০৮। পাঁচদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে সুলতানের কর্ম ও তার আঁকা ছবির প্রদর্শনীসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকছে। উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী একক : সিমলা-ভারত, ১৯৪৬। পাকিস্তান-করাচি ১৯৪৮, ১৯৪৯ , যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য - নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, শিকাগো ইন্টারন্যাশনাল হাউজ, মিসিগান ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন ১৯৫৯। বাংলাদেশ - শিল্পকলা একাডেমী গ্যালারি ১৯৭৬, জার্মান কালচারাল সেন্টার, ঢাকা- ১৯৮৭ । বাংলাদেশের নয়জন সিনিয়র শিল্পীর গ্রুপ প্রদর্শনী, ১৯৯৩। তিনি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডের ভিক্টোরিয়া এমবাঙ্কমেন্টে আয়োজিত প্রদর্শনীতে অংশ নেন। প্রদর্শনীতে পাবলো পিকাসো, সালভাদোর দালি, জর্জ ব্রাক, পল লিসহ আরো অনেক বিখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে এক সারিতে সুলতানের ছবির প্রদর্শনী হয়। --------------------------------------------------------------------------------- যায়যায়দিন -থেকে সংকলিত সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৮:০০
false
mk
মুক্তিযুদ্ধ ও মিরপুর ৩০ জানুয়ারি মিরপুর মুক্তি দিবস পালিত হয়। ১৯৭২-এর এদিনে মিরপুরকে মুক্ত করতে গিয়ে লে. সেলিমসহ সামরিক বাহিনীর ৪১ জন সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৪১ দিন পর মুক্ত বাংলাদেশের বুকের কোণে অবরুদ্ধ মিরপুরে দলছুট পাকিস্তানি সেনাসহ আলবদর বাহিনী তথা বিহারি মুজাহিদ কর্তৃক আত্মসমর্পণ চুক্তি ও জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করে বাঙালি সেনাদের ওপর আক্রমণ করে। পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মাটিতে পরাভূত হওয়ার পরও এ দেশকে তাদের করায়ত্ত রাখার জন্য যে অশুভ পরিকল্পনা ও অভিলাষ পোষণ করছিল, মিরপুরে সংঘটিত ঘটনা ছিল তারই একটি প্রমাণ।শহীদ লে. সেলিম ১৯৪৮ সালে যশোরের অভয়নগরের চিকিৎসক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব থেকেই গণিতে ছিল অসাধারণ মেধা। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের আগে তিনি রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। সেখানে তিনি কেবল একজন আপসহীন ছাত্রনেতাই ছিলেন না, একজন অসাধারণ অ্যাথলেট ও কৃতী খেলোয়াড় হিসেবে কলেজ ও বিভাগীয় পর্যায়ের অধিকাংশ ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। ১৯৭১-এর জুনের শেষে এবং জুলাইয়ের শুরুতে শহীদ লে. সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রথম শর্ট কোর্স গ্রহণ করেন এবং ৯ অক্টোবর ১৯৭১ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। জুলাইয়ের শেষে ভারতে যে ৬১ জন অফিসারকে ট্রেনিং দেওয়া হয় তাদের মধ্যে মেধা তালিকায় শীর্ষদের মধ্যে স্থান করে নেন শহীদ লে. সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান। অক্টোবরের ১৮ তারিখে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলে যোগ দিয়ে শহীদ লে. সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান ক্যাপ্টেন হেলাল মোর্শেদকে নিয়ে বেলোনিয়া যুদ্ধে শরিক হন। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ আখাউড়া যুদ্ধে লে. বদি শহীদ হলে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের ব্রাভো কোম্পানির দায়িত্ব নেন সেলিম। শহীদ লে. সেলিম এমন এক মায়ের সন্তান যার স্বপ্নে ছিল দ্রোণাচার্যের মতো এক সাহসী যোদ্ধা। মেধা, বুদ্ধি, ক্রীড়া কৌশল, সাহস, শৌর্য ও বীর্যে অপূর্ব হওয়া সন্তান তার নানা কাজের মাঝে জয় করে নেয় সবার প্রাণ। ১৯৭২-এর ৩০ জানুয়ারি অকালে সমাপ্ত হলো অসাধারণ সম্ভাবনাময় এক অভিযাত্রা। সেলিম তখন বঙ্গভবনে থাকতেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে ৩০ জানুয়ারি সকালে মিরপুর যান। ওই দিন সকাল থেকেই মিরপুর উত্তপ্ত ছিল। প্রতি রাতে সেখান থেকে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যেত। ৯ মাস ধরে মিরপুর ছিল অবাঙালিদের মিনি ক্যান্টনমেন্ট। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মজুদ ছিল। হানাদাররা এই অস্ত্রশস্ত্রের বলেই অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে সেলিম গুলিবিদ্ধ হলে নিজের গায়ের শার্ট খুলে ক্ষতস্থান বেঁধে নেন। তার সহযোদ্ধারা বলেছিল, 'স্যার, আপনি আমাদের ফেলে যাবেন না।' সেলিম প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলেন, 'আমার গায়ে একবিন্দু রক্ত থাকতে তোমাদের ফেলে যাব না।'মুক্ত হলো মিরপুর। মিরপুর মুক্তিদাতা লে. সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান এভাবেই শেষ করলেন নিজের জীবন। বিকেলের দিকে জীবিত সেনাদের নিয়ে কালাপানির ঢালের কাছে তিনি দাঁড়িয়েছেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফ্যাকাশে ও ক্লান্ত। সবাইকে উৎসাহ জুগিয়েছেন বিল পার হয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে যেতে। নিজে পানিতে নামেননি। ক্লান্ত শরীরটা একটি গাছের আড়ালে রেখে একটা একটা করে গুলি চালাচ্ছিলেন ঘাতকের দিকে। কভার ফায়ার দিয়ে সহযোদ্ধাদের সরে যেতে সাহায্য করছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন জবরহভড়ৎপবসবহঃ আসবে। সেদিন রাতে মেঘে ঢাকা চাঁদ ছিল। ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছিল। হয়তো সেলিম আমার কথা, দেশের কথা, সহযোদ্ধাদের সাহায্যের কথা ভাবছিলেন। না কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। ওর প্রতীক্ষা কত দীর্ঘ হয়েছে জানি না। এক সময় আকাশে ওই ফ্যাকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আমার চাঁদ বুঝি বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে। তখন ওর স্বপ্নে হয়তো ওর ভাই এবং অজস্র অশ্বারোহী। সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫১
false
ij
লালননগরে বৃষ্টি (স্বপ্নের কথা গল্পে বলি) ২০১২, জুন মাস। মেঘলা ভোর। লালননগর স্টেশনে ট্রেন থামল। আমরা সতর্ক হয়ে নামি। হুটোপুটি করি না। আমরা জানি আমরা কোথায় এসেছি। এখানে প্রতি পদক্ষেপে সমীহ প্রয়োজন। স্টেশনে অন্ধকার। ঝিরঝির বৃষ্টি। স্টেশনের কাছেই হোটেল। নিরবধি। আমরা ঢাকা থেকে রিজারভেশন করেই এসেছি। কণা ফিসফিস করে বলল, কী সুন্দর। ছিমছাম । সর্বত্র বাঙালিয়ানার ছাপ। হু। রিসিপসনে আব্দুল আলীমের একটা বড় পোট্রেট। সহসা সেই গানটার কথা মনে পড়ে গেল। চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি। আশ্চর্য! এই গানটা আব্দুল আলীম ছাড়া অন্য কারও মুখে কখনও শোনা যায়নি। কেন? এও এক রহস্য। চারতলায় আমাদের ঘর। হাতমুখ ধুয়ে পরিস্কার হয়ে নিচে নেমে এলাম। রেঁস্তোরায় ভিড়। বেশির ভাগই বিদেশি। ট্রেনেও প্রচুর বিদেশি দেখেছি। লালন এখন বিশ্বময় সেক্সপীয়রের মতোই বিখ্যাত। এরা সবাই বাঙালি গুরুর টানে লালননগর এসেছে। আমি মাত্র বসেছি। আমার পাশে রেজা। ও আমাকে কনুই দিয়ে গুঁতাল। কি? ওই দেখ। কে? জ্যঁ-মারি গুস্তাভ ল্য ক্লেজিও। ওমা তাই তো! ২০০৮ সালে নোবেল পেয়েছেন ক্লেজিও । তিনি এক বিরল আত্মার মানুষ। একেবারেই ভিন্ন মানুষ। পশ্চিমের মানুষ হলেও তাঁর আত্মাটি প্রাচ্যের মরমী ধাচের। তিনিও লালননগরে এসেছেন। ক্লেজিওর পাশে মহিল কে? অরুন্ধুতী রায়। কণা বলল। এতক্ষণে মহিলাকে চিনতে পারলাম। ছবি আগেই দেখেছি। সম্প্রতি চুলের স্টাইল বদলেছেন। কণা বলল, দুপুরে অরুন্ধুতী রায়ের পেপার পড়ার কথা। লালন: অ্যান ইটারনাল এক্সপিডিশন। রেজা বলল, বাউল-সেন্টারে? কণা মাথা ঝাঁকাল, হ্যাঁ। দুপুরের আগেই রোদ উঠল। আমরা তিনজন রাস্তায় হাঁটছি। রাস্তাটা ছেঁউরিয়ার দিকে চলে গেছে। দু’পাশে মলিন দোকানপাট। গম্ভীর ব্যাঙ্ক। একঘেয়ে রেস্টুরেন্ট। সকালে মেঘলা থাকায় রোদ এখন ঝকঝকে। মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকাই। জুন মাসের নীলাভ-ধূসর আকাশ। সাদা মেঘের ভেলা। লালন কি এই আকাশই দেখতেন। রবীন্দ্রনাথ? গড়াই নদীর জলো হাওয়া টের পাই। নদীর ওপারে একটা কুঠিবাড়ি আছে। কাল ওদিকটায় যাব। আমরা লালনের মাজারে কাছাকাছি চলে আসি। জায়গাটা মেলার মতন হয়ে আছে। চিরকালের মেলা। মেলায় দেশের মানুষের ভিড়। বিদেশের মানুষের ভিড়। কী যে ভালো লাগছে। সরকারের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বিখ্যাত সচিবকে দেখলাম একা একা ঘুরে বেড়াতে। দেখে ভালো লাগল। এখানে কেউই স্বতন্ত্র নয়। ভিড়ের মধ্যে সুবর্ণা মোস্তফা।একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওপারের অঞ্জন দত্তকেও দেখলাম। দুপুরে কণা বাউল সেন্টারের দিকে চলে গেল। ও নিউ ডেজ-এ চাকরি করে। অরুন্ধুতী রায়ের ওপর একটা রিপোর্ট লিখতে হবে। আমি আর রেজা ভিড়ের মধ্যে ঘুরছি। বিকেলে চালাঘরের নিচে দাঁড়িয়ে গান শুনছি। হাতের কাছে হয় না খবর কি দেখতে যাও দিল্লী লাহোর? লালনের এই প্রজ্ঞা। আমরা কেই দিল্লীপন্থি বা লালনপন্থি; বাংলাপন্থি কেউই নই। কণা বলল। হু। কণা বিকেলের আগেই ফিরেছে। তারপর ভিড়ের মধ্যে কথা বলতে বলতে কণা রেজাকে কখন হারিয়ে ফেলেছি। থাক। ওদের আর খুঁজতে চাই না। এই ভিড় হারিয়ে যাওয়ার জন্যই তো। সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামল ঝাঁপিয়ে। আর উথালপাথাল হাওয়া। আশ্চর্য! কেউই আড়াল নিল না। সবাই অন্ধকার বৃষ্টিতে নেমে এল। রাস্তায়। যেন সবাই বৃষ্টির জন্যই অক্ষা করছিল। কে যেন আমার পাশে চিৎকার করে কি বলল। একজন মাঝবয়েসী মহিলা। কি বললেন! লালননগর। কী সুন্দর নাম। ও। আমার মনে পড়ল-২০০৮ সালের অক্টোবরে ঢাকায় বিমানবন্দরের কাছে বাউলদের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। তার পরপরই এক তীব্র আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। যার ফলে কুষ্টিয়ার নাম হয়েছিল লালননগর। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৬
false
rg
দেশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার দুর্বলতার আড়ালেই জঙ্গিসন্ত্রাসের বিস্তার ঘটছে!!! কেবলমাত্র সুনির্দিষ্ট দিবস ছাড়া দেশের জাতীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়ের বাজর বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধসহ সারা দেশের শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ বা মনুমেন্টগুলো অবহেলায় অযত্নে অপাংতেয় থাকে। কেবল ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৪ ডিসেম্বর আর ১৬ ডিসেম্বর সেখানে আমাদের সকল ত্যাগ-সম্মান-আবেগ বিস্ফোরণের মত ঝড়ে পড়ে। অথচ সারা দেশেই এই মনুমেন্টগুলো বছরের অবশিষ্ট ৩৬৪ দিনও পরম শ্রদ্ধায়, মননে, প্রদর্শনে ও যত্নে থাকার কথা। এই যে বিপরীত চিত্র দেখি, বছরের একদিন একেবারে জীবন উৎসর্গ করে দেবার মত আবেগ-দরদ, সারা বছর তা কোথায় লুকিয়ে থাকে? আর এটা নিয়ে সরকারেরও তেমন কোনো আগ্রহ নেই! জাতি হিসাবে আমাদেরও কোনো ভাবান্তর নেই। অথচ দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই এই বিষয়ে সচেতন হবার কথা ছিল! দেশের প্রায় প্রতিটি মনুমেন্টের টেক-কেয়ার করার জন্য সরকারের লোকবল আছে, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ আছে। কেবল সারা বছর এগুলোর যত্ন নেবার বা সম্মান দেখানোটা আমাদের খাসিলতে নেই! এ কেমন বিপরীত সংস্কৃতির অভ্যাস এখানে!এসব নিয়ে আমাদের মিডিয়াও তেমন সরব হয় না। অথচ নতুন প্রজন্মের শিশুদের জন্য এসব বিষয়ে সারা বছরই নানান ধরনের খবরাখবর প্রচার করা সম্ভব। আমাদের মিডিয়াগুলো কেবল ইস্যুভিত্তিক খবরের আশায় বেকার দিন কাটায়। কোনো নতুন ঘটনা না ঘটলে তাদের যেন কিচ্ছু করার নেই! অথচ এসব বিষয়ে মিডিয়ার বিশাল ভূমিকা থাকার কথা ছিল, যেখানে মিডিয়া পুরোপুরি ব্যর্থ বা অনাগ্রহ দেখায়। তাহলে প্রশ্ন হলো সামাজিক শিক্ষার জন্য মিডিয়ার যে নিজস্ব একটি রেসপনসিবিলিটি আছে, সেটি তারা কোথায় পালন করছে? কিভাবে পালন করছে?সরকারের উচিত মিডিয়ার প্রতি এসব বিষয়ে কিছু শর্তারোপ করা। প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে কোনো মিডিয়া যদি সামাজিক শিক্ষায় কোনো অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের জন্য কিছু মাইনাস পয়েন্ট রাখার ব্যবস্থা করা উচিত। আর একটি সীমা পর্যন্ত তা পৌঁছালে সেই মিডিয়াকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। সরকারি বিজ্ঞাপন বা সুযোগসুবিধা পাবার বা নেবার বেলায় কিন্তু কোনো মিডিয়া শূন্য পারেসন্টও ছাড় দেয় না। তাহলে তাদের এসব দায়িত্ব এড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা জবাবদিহিতা হবে না কেন?আমাদের মিডিয়ায় দেশের কোনো শহীদ মিনার বা কোনো স্মৃতিসৌধ নিয়ে কোনো অবহেলার খবর যদি সারা বছল থাকতো, তখন সরকারও সেখানে খোঁজখবর নিতে আরো বেশি আগ্রহ দেখানোর কথা। সরকারের দায়িত্ব যেখানে অবহেলা বা জবাবদিহিতার আড়ালে থাকে, সেখানেই তো মিডিয়ার সচল থাকার কথা! নইলে মিডিয়াকে কেন আমরা রাষ্ট্রের পঞ্চ ইন্দ্রীয় বলি!কেবল রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যেভাবে সারা বছর অবহেলার অযত্নের শিকার, এটা নিয়েই তো সারা বছর নিউজ হবার কথা। সরকারের যতক্ষণ টনক না নড়ে ততক্ষণ মিডিয়ার সেই বিষয়ে লেগে থাকার কথা। কিন্তু আমরা যেন এক আদিখ্যেতা জাতি। সুনির্দিষ্ট দিবস না থাকলে বছরের বাকি দিনগুলোতে আমাদের মনুমেন্টগুলোকে আমরা কেবল অসম্মান দেখাই বা অযত্ন অবহেলা করি। এটা জাতির জন্য বড় লজ্বার! একটি জাতি গঠনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার উপর যতক্ষণ সর্বশক্তি নিয়োগ করা না হবে, ততক্ষণ সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেসী মহলগুলো বিভিন্ন দিবসের আড়ালে আসলে কেবল উৎসব পালন করবে। তা দিয়ে নতুন প্রজন্মের কোনো শিক্ষা হবে না। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা দেশেই ধর্মীয় অন্ধ শক্তিগুলো শেকড় গড়ার সুযোগ পায়। বর্তমানে সারা দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি উত্থানের যে চিত্র দেখা যায়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার ঘাটতির কারণেই এটি উত্থান হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কেবল রাজনীতির মাঠ গরম করে এই দানব প্রতিরোধ করা যাবে না। রাষ্ট্রের প্রতিটি যন্ত্রের সঙ্গে দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও সেখানে ভূমিকা নিতে হবে। নইলে দানবের এই থাবা কেবল প্রসারিত হবে। সেই প্রসারণ প্রতিরোধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই ভাবতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় লজ্বা যে, আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একটি অন্ধ ষাড়ের মত এসব কিছুই দেখতে পায় না। আমার তো মনে হয়, আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয় নামে আলাদা কোনো মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রয়োজন নাই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেই এটি একীভূত হওয়া উচিত। আমাদের ধর্মীয় যে উৎসব ও পার্বনগুলো রয়েছে সেগুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আলাদা থাকার কোনো প্রয়োজনীয়তা নাই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনেই এটি থাকার কথা। আমাদের দেশের বয়স ৪৫ বছর। অথচ অলিম্পিকে আমাদের কোনো পদক নাই এই লজ্বা সরকারের যেমন হয় না, দেশের কোনো নাগরিকের মধ্যেও হয় না। অথচ গ্রেনাডা, পোয়েত্রো রিকো, ফিজি, বাহামা, ইথিওপিয়ার মত দেশগুলো অলিম্পিকে পদক জয় করে। আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এক ক্রিকেট নিয়েই সারা বছর হৈ চৈ করে এখন! আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কেবল কয়েকটি দিবসের ভেতরেই ৪৫ বছর ধরে আটকে আছে। অথচ একজন চৌকশ সংস্কৃতিমন্ত্রী সেখানে ঘোড়ার ঘাস কাটছে সারা বছর! এটা জাতির জন্য লজ্বার। আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয় দুই ঈদে চাঁদ দেখা, হজ্ব ব্যবস্থাপনা, দুর্গাপূজা, খ্রিস্টমাস্ট, বৌদ্ধপূর্ণিমাসহ মাত্র কয়েকটি বিষয় নিয়েই বছর পার করছে! আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সারা বছর ঘুমায়। কেবল ক্রিকেট খেলা থাকলে এটার কিছু অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। এভাবে লেজেগোবরে অবস্থায় জড়িয়ে একটি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রসর কিছুতেই হতে পারে না। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের বয়স ৪৫ বছর হয়ে গেছে। এখনো কেবল স্বপ্নের কথা বলে বছর বছর বাজেট পাস করার সুযোগ নাই। ৪৫ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষার জন্যও সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। নইলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের এই যে ক্রমবর্ধমান উত্থান, এটাকে প্রতিরোধ করা যাবে না। কেবল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, আইন-আদালত, কারাগার, ক্রোসফায়ার এগুলো কোনো সমাধান নয়। নজর দিতে হবে শিকড়ে যেখান থেকে এই ব্যাধি ছড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। নইলে একসময় আমও যাবে ছালাও যাবে। তখন আর হায় হায় করেও কোনো কূল পাওয়া যাবে না। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষায় আমাদের মিডিয়ার আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান পালন করতে হবে। আর সেটা করতে হবে দেশের স্বার্থেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মত আমাদের মিডিয়াগুলোও যদি নামকাওয়াস্তা দায়সারা দায়িত্ব পালন করে, তাহলে তা দিয়ে জাতির আসলে কোনো লাভ হবে না। বরং আমাদের মিডিয়াগুলোর এখন বিদেশী মিডিয়ার টাকা খেয়ে তাদের হাতে গোপনে খবর পৌঁছে দেবার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তা হয়তো ব্যবসা দিচ্ছে, কিন্তু দেশের বারোটা বাজাচ্ছে। আমাদের মিডিয়াকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। নইলে কেবল সরকারের পক্ষেও এই অদ্ভুত উটের পৃষ্ঠের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নাই!.............................১৯ আগস্ট ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:২৯
false
rg
কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল_ কিছু সত্য কথন। পর্ব দুই। রেজা ঘটক কাঁঠালবাগানের আমিন নিলয়ের বাড়িওয়ালা থাকেন তাদের লালমাটিয়ার আরেকটি নিজস্ব বাড়িতে। আসল বাড়িওয়ালী যিনি তিনি থাকেন বুয়েটের শিক্ষক কোয়ার্টারে। কারণ, ভদ্রমহিলা বুয়েটের টিচার। মিজান নামের একজন কেয়ারটেকার থাকেন আমিন নিলয়ে। আমরা ডাকি মিজান ভাই। মিজান ভাই ডাকারও রহস্য আছে। প্রতি মাসে ভাড়া কিছু বাকি থাকে। সেই বাকি ভাড়া কেয়ারটেকার মিজান ভাই যখন চাইতে আসেন, তখন ভাড়া বিষয়ক দপ্তরের নতুন মনোনীত মন্ত্রী মহোদয় জনাব রেজাউল কবির নাছিম, মিজান ভাইকে নিয়ে কাঁঠালবাগানের লাকি হোটেলে চা খেতে চলে যায়। নাছিমের ভাবটা থাকে এমৃন, চলেন মিজান ভাই চা খেতে খেতে আলাপ করি। তাদের চা খাওয়া যখন শেষ হয়, নাছিম হাসিমুখে বাসায় ঢোকে। আমরা জানতে পারি, বন্ধু নাছিম এক সপ্তাহ ডেড বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমরা করতালি দিয়ে উঠি। পবন হারমোনিয়াম নিয়ে অজয়কে ডাক দেয়। ভাড়া বিষয়ক দুঃশ্চিন্তা তাড়াতে তখন আনন্দের হল্লা বয়ে যায় আমিন নিলয়ে। আমাদের বন্ধু নয়ন মনি চৌধুরী ধানমন্ডির চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে রোজ নতুন অফিস করা শুরু করলো আমিন নিলয়ে। সকালে বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের বাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে সোজা কমলাপুর। সেখান থেকে এক পুরিয়া খাঁটি তামুক নিয়ে নয়ন সোজা হেঁটে হেঁটে চলে আসতো আমিন নিলয়ে। বাসায় আমি বেকার সময় কাটাই। আর ভালো লাগলে কিছু লেখালেখি করি। কাজল ব্রাদার্সের নবম দশম শ্রেণীর অর্থনীতি বইটি আমার লেখা। কাজল ব্রাদার্সের সঙ্গে আমার চুক্তি হল প্রতি শনিবার কাজল ব্রাদার্স থেকে একজন এসে এই সপ্তাহের লেখা নিয়ে যাবে। আর কিছু টাকা দিয়ে যাবে। সেই টাকায় আমি পরের এক সপ্তাহ ব্যাচেলর পূজা করব। অজয়, হ্যারি আর আমি বাসায় থাকি। নয়ন আসলে আমাদের সময় কাটে ভালো। তামুক খাই। গান-বাজনা করি। নয়নের গলা ভারী মিষ্টি। কিন্তু দোস্তো আমার হারমোনিয়াম বাজাতে পারে না। অজয় হারমোনিয়াম বাজালে আমি তবলায় টুং টাং শব্দ করি। অথবা বসনিয়ান হ্যারি তবলা বাজায়। আমাদের বসনিয়ান বন্ধু হ্যারি খুব ভালো খোল বাজাতে পারতো। তবলায় কিছু ঝামেলা হতো। তবু পবন নিসু এ্যাডভারটাইজিংয়ের চাকরি শেষ করে আসতে আসতে বিকাল। কোনো কোনো দিন পবন দুপুরের আগেই মার্কেটিংয়ের কথা বলে বাসায় চলে আসতো। চলতো জাম্পিস আড্ডা। রিয়াজ অটোবিতে চাকরি করতো। নাছিম একটা শিপিং এজেন্টে। মুকুল এশিয়াটিকে। মনি'দা জেনারেল ফার্মাসিটিকালে। তো সারাদিন বাসায় থাকতাম আমি অজয় আর হ্যারি। সকাল দশটার মধ্যেই নয়ন চলে আসতো। আমাদের আড্ডা চলতো সারাদিন। সন্ধ্যায় সেই আড্ডায় একে একে যোগ দিতো তখনকার ভোরের কাগজ থেকে শামীম ভাই আর জাফর ভাই। কখনো ওদের সঙ্গে আসতো কবীর ভাই। বিখ্যাত ফটোগ্রাফার কামালউদ্দিন কবীর। বাংলাদেশ বেতার থেকে আসতো খোকন ভাই। বিখ্যাত গল্পকার খোকন কায়সার। প্রথম আলো থেকে আসতো বিখ্যাত তরুণ রিপোর্টার রাজীব নূর। আমাদের সবার প্রিয় রাজীব'দা। কখনো রাজীব'দার সঙ্গে আসতো আরেক বিখ্যাত রিপোর্টার তরুণ সরকার। আমাদের প্রিয় তরুণ দা। মাঝে মধ্যে মুকুলের সঙ্গে আসতো আমাদের আরেক বন্ধু আলমগীর বিপ্লব। চট্টগ্রাম থেকে প্রায়ই এসে আড্ডায় যোগ দিতো লিটন ভাই। চট্টগ্রাম বেতারের বিখ্যাত বাঁশিয়াল ...এবং আরো অনেকে। রাত এগারোটার পর থেকে আড্ডায় বাইরে থেকে যারা আসতেন তাদের প্রস্থান ঘটলেও আমাদের আড্ডা চলতো রাত দুইটা/তিনটা/চারটা/পাঁচটা/ছয়টা পর্যন্ত। কখনো আড্ডা শেষে যারা অফিসিয়াল তারা গোসল দিয়ে অফিসে চলে যেতো। গ্যারি, অজয় আর আমি ঘুমাতে যেতাম। নয়ন এসে নিজের মতো মশলাবাটি রেডি করে আমাদের উঠাতো। কখনো কখনো নয়ন চেক করতো যে আমাদের নাস্তার কোনো আয়োজন নাই। নিজ দায়িত্বে লাকি হোটেল থেকে নাস্তা এনে তামুক বানিয়ে সব ঠিকঠাক রেডি করে ঘুমন্ত আমাদের ঠোঁঠে গুজে ধরতো থামুক। আমরা ঘুমের ভান করে সেই তামুকে টান মেরে দুনিয়ায় সুপ্রভাত জানাতাম। কখনো কখনো আড্ডায় আসতো বিখ্যাত কলকেম্যান বন্ধু জাহেদ ও বন্ধু শিবলী। এরকম আড্ডায় আড্ডায় একদিন মুকুল প্রস্তাব করলো, চল আমরা একটা নাটকের দল করি। প্রথম নাটকের দল করার আলোচনা হল আমিন নিলয়ে। কিন্তু আমিন নিলয়ের আড্ডায় নাটকের কথা বার্তা ঠিক অফিসিয়াল হবে না বলে আমরা আনুষ্ঠানিক মিটিং করার জন্য ধানমন্ডির আট নাম্বার ব্রিজের পাশে রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত প্রান্তর বেছে নিলাম। শুক্রবার বিকালে আমরা নাটকের দল গঠন বিষয়ক প্রথম আনুষ্ঠানিক মিটিং করলাম ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে। প্রথম মিটিংয়ে আমরা দুইটি মিনিট ফাইনাল করলাম। নাটকের দলের নাম হবে 'পালাকার'। পালা বা নাটক করেন যিনি তিনিই পালাকার। মুকুল নামটি প্রস্তাব করেছিল। আমরা সবাই সমর্থণ করেছিলাম। নাটকের দলের নাম ফাইনাল হল। তারপর আমরা ঠিক করলাম, আমাদের 'পালাকার'-এ আনুষ্ঠানিক পদবি থাকবে মাত্র দু'টি। দলের প্রধানকে আমরা ডাকব 'অধিকারী'। আর দলের হিসাব নিকাশ করার জন্য একজন সেক্রটারি-কাম হিসাবরক্ষক থাকবে। যাকে আমরা ডাবক 'ম্যানেজার বাবু'। ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে দ্বিতীয় বৈঠকে আমরা এই দুই পদে আনুষ্ঠানিকভাবে দুইজনকে সর্বসম্মতিক্রমে মনোনয়ন দিলাম। বৈঠকে 'পালাকার'-এর অধিকারী নির্বাচিত হল আমিনুর রহমান মুকুল। আর ম্যানেজার বাবু নির্বাচিত হল নয়ন মনি চৌধুরী। কারণ নয়নের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এমবিএ। শুরু হল পালাকারের কার্যক্রম। আমরা তখন একটি রেজিস্টার খাতা কিনলাম। বৈঠকে উপস্থিত সবাই সেই খাতায় নিজেদের নামের পাশে সাক্ষর করে জানান দিল এরা সবাই পালাকার নাট্যদলের সদস্য। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল প্রাথমিক সদস্যপদের জন্য আপাতত সবাই ১৫০ টাকা করে ম্যানেজার বাবু'র কাছে জমা করবেন। টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হল আমাকে আর হ্যারিকে। আমরা টাকা আদায় করে নয়নের কাছে জমা করব। পরদিন সকালে হ্যারি আর আমি টাকা কালেকশানের জন্য আমিন নিলয় থেকে পদব্রজে শাহবাগ রওনা হলাম। উদ্দেশ্য বাংলাদেশ বেতারের খোকন ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা তোলা। জীবনে সেই প্রথম বাংলাদেশ বেতারে প্রবেশ করব। কেমন যেনো গা ছিম ছিম করছে। কারণ, এই সেই রেডিও অফিস যেখান থেকে মেজর ডালিম বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন- আমি মেজর ডালিম বলছি...বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে..ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা গেইটে গিয়ে অমুকের কাছে যাবার জন্য নাম ধাম ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা সারলাম। আমাদের বসিয়ে রাখা হল। বলা হল স্যার এখন জরুরী মিটিংয়ে আছেন। হ্যারি বললো, ভাই, বলেন যে একজন বিদেশীও আছেন। ওনাদের মামলাটাও বেশ জরুরী। হ্যারীর সুন্দর বাংলা শুনে ওই ভদ্রলোক একটু পুলকিত হয়ে আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে চললেন। পাশ টাসের কারবার নাই ক্যা। স্যারের রুমে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের, ঠিক তখনই খোকন ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের করিডোরে দেখা। খোকন ভাই'র রুমে ঢুকেই একটা সিগারেট ধরিয়ে গা ছম ছম ভাব তাড়াতে ঘোষণা দিলাম, মেজর ডালিম যদি এইখানে আইসা জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দিতে পারে, আমরা ক্যানো সিগারেট খাইতে পারুম না? এ্যাস্ট্রের ব্যবস্থা না হবার আগেই সিগারেট প্রথমটা শেষ। খোকন ভাই জানতে চাইলো, ব্যাপার কি? কি মনে কইরা? কইলাম, পালাকারের মেম্বারশিপের ১৫০ টাকা নগদ জমা করেন। খোকন ভাই কইলো, সন্ধ্যায় দিমুনে। আমনেরা আর কোথাও কাম থাকলে কইরা আহেন। হামার তো অফিস করতে অইবো, স্যারেরা। আর ভুলে আবার গাঁজা ধরাইয়া আমার ইজ্জত মাইরেন না যেনো। আমরা রেডিও অফিস থেকে বের হয়ে লোকাল বাসে উঠলাম। উদ্দেশ্য বনানী অনিকেত পাল বাবু'দার অফিস।।...............চলবে.................
false
hm
অনুবাদ ১. সেবা প্রকাশনীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনো দ্বিধা করি না। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি কাজী আনোয়ার হোসেনের উদ্যোগকে। তাঁর নামে প্রকাশিত হলেও শুনেছি কাজগুলো বেশিরভাগই অন্যের করা (সত্যিমিথ্যা যাচাই সম্ভব নয়, তবে বইয়ের ফ্রিকোয়েন্সি তেমনটিই নির্দেশ করে), সেই আড়ালে থাকা লেখকদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই সবসময়। শেখ আবদুল হাকিম, নিয়াজ মোরশেদ, জাহিদ হাসান, রকিব হাসান, সেলিম হোসেন টিপু ... এক একটা নাম শৈশবের এবং কৈশোরের সেই অসম্ভব সুন্দর সময়গুলির সাথে মিশে আছে। আপনারা যেখানেই থাকুন, খুব ভালো থাকুন, দীর্ঘায়ু হোন, আমার সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞ অভিবাদন গ্রহণ করুন। ২. সেবা প্রকাশনী যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে দিয়েছিলো আমার এবং আমার মতো আরো অনেকের জন্যে, তা হচ্ছে বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিকগুলোর চমৎকার ঝরঝরে অনুবাদ খুব স্বল্পমূল্যে তুলে দিয়েছিলো আমাদের হাতে। আমি ইংরেজিতে বই পড়তে শুরু করেছি কলেজে উঠে, তার আগে পুরো একটা বই পড়ে বোঝার মতো ইংরেজি জ্ঞান ছিলো না। কিন্তু প্রাইমারি স্কুলে থাকতেই পড়ে শেষ করেছি অনেক ক্লাসিক। সহজ ভাষায়, সহজ ভঙ্গিতে করা সেইসব অনুবাদ আমার মনে রস যুগিয়েছে, আমার কল্পনাকে উসকে দিয়েছে। এখনও মনে করতে পারি, অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট পড়ে কী তীব্র কষ্ট অনুভব করেছিলাম (জাহিদ হাসানকে ধন্যবাদ আবারও), আমি যুদ্ধ কেন, বড় আকারের মারপিটও দেখিনি তখন, কিন্তু পলের বন্ধুরা সবাই যখন এক এক করে মারা যাচ্ছে, আমি বই বন্ধ করে কাঁদছিলাম হু হু করে। এই বইটা যদি আমি কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে পড়তাম, আমি হয়তো দুঃখটা অনুভব করতাম না সেভাবে। পলের বন্ধুরা মরলে আমার সেই বয়সে তখন আর কিছু যেতো আসতো না। আমার বয়স তখন কত, এগারো? ঐ বয়সের একজন কিশোরের কাছে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের মতো একটি মহৎ উপন্যাস পৌঁছে দেয়ার জন্যে সেবা প্রকাশনী ধন্যবাদার্হ। খটমটে, আক্ষরিক অনুবাদ হলে আমি হয়তো বিরক্ত হতাম, বইটা শেষ না করেই হয়তো উঠে পড়তাম, হয়তো শেষে গিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতাম, যখন প্রজাপতি দু'টো পলের করোটি ছেড়ে উড়ে চলে যায় অন্য কোথাও, কিন্তু জাহিদ হাসানের অনুবাদটি এতো নরম, এতো হৃদয়গ্রাহী যে তা গভীর ছাপ ফেলেছিলো মনের মধ্যে। পরবর্তী ইংরেজি সংস্করণটি পড়ে অনুভব করেছি, তাঁর কাজটি খুব একটা সহজ ছিলো না। সেবা প্রকাশনীর সেই সময়ের লেখকরা শক্তিমান অনুবাদক ছিলেন, তাঁরা কিছুটা স্বাধীনভাবে খানিকটা ছাড় দিয়ে অসাধারণ সব অনুবাদকর্ম হাজির করেছেন আমাদের সামনে। ইংরেজির পায়ে পায়ে অবোধ শিশুর মতো ঘোরেফেরেনি তাঁদের অনূদিত লেখাগুলো, কিছুটা স্বতন্ত্র থেকে স্বাদ যোগ করেছে। পরবর্তীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রচুর অনুবাদকর্ম পড়েছি, সেই সাবলীল গতি আর ভঙ্গি না পেয়ে হতাশ হয়েছি খুব। ৩. আমি অনুবাদের কাজ শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মাঝামাঝি এসে। কোথাও প্রকাশ করার জন্যে নয়, সময় (দুঃসময়ও বলা যেতে পারে) কাটানোর জন্যেই। মার্ক টোয়েনের কিছু গল্প আর আজিমভের কিছু কল্পবিজ্ঞানগল্প। অনুবাদের কাজটি যে কতটা খাটুনির হতে পারে, তখন তা একেবারে রগেমজ্জায় অনুভব করি। সেবা প্রকাশনীর অনুবাদকবৃন্দের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা বহুগুণিত হয় সেই অনুবাদের কাজগুলো করতে গিয়ে। আজিমভের গল্পগুলির অনুবাদ হয়তো কঠিন নয়, কিন্তু তার স্বাদ বজায় রাখতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। ইংরেজি আর বাংলা ভাষার "গতি" একরকম নয়, ইংরেজিতে যা পড়ে চমৎকৃত হই, নিজের করা তার বাংলা অনুবাদ পড়ে ইচ্ছা করে নিজের গালে চড় বসাতে। সব দুঃসময়ই কেটে যায় একসময়, তাই অনুবাদের কাজে আমিও ক্ষান্ত দিই। অনূদিত গল্প পড়া হয়েছে প্রচুর, বেশিরভাগই ইংরেজিতে, সেখানেও অনুবাদকের দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। গার্সিয়া মার্কেজের বেশিরভাগ লেখাই পড়েছি এডিথ গ্রসমানের অনুবাদে, মূল স্প্যানিশ তো চোখে দেখিনি, কিন্তু লেখাগুলো গভীরভাবে স্পর্শ করেছে আমাকে। বাংলায় অনুবাদকর্ম পড়তে গেলে তাই অনুবাদের জড়তা খুব দ্রুত হতাশ করে আমাকে, যদিও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ঝরঝরে অনুবাদ কী ভীষণ কষ্টসাধ্য একটি কাজ। বাংলায় জি. এইচ. হাবীবের করা শার্লক হোমসের অনুবাদ পড়ে যেমন ভালো লাগেনি, একটা কিছুর অভাব বোধ করেছি। অনুবাদকের কষ্টগুলো পাঠকের অনুধাবন করা মুশকিল। যিনি অনুবাদ করছেন, তিনি অন্য একটা ভাষায় গল্প বা উপন্যাসটিকে পাঠ করেছেন, সেই অন্য ভাষার ভঙ্গিটি তাঁর কাছে পরিচিত, সেই ভাষার রস তিনি আস্বাদন করছেন অনুবাদের প্রতিটি মূহুর্তে। অথচ তাঁকে হয়তো ভিন্ন ভঙ্গিতে, ভিন্ন ছাঁচে ঢালতে হচ্ছে সে রস, আর সেটি হয়তো প্রায়ই সম্ভব হচ্ছে না। বাংলা বাক্যে ঢুকে পড়ছে অন্য ভাষার ভঙ্গি। এই হংসমধ্যে বকো যথা এড়ানো এক ভীষণ কষ্টসাধ্য কাজ। অনুবাদক হিসেবে যখন আমি চাইছি, পাঠক এ ব্যাপারটি অনুভব করে কিছুটা ছাড় দিয়ে পড়ুন লেখাটি, পাঠক হিসেবে আমি হয়তো একপাশে সরিয়ে দিচ্ছি অন্য কারো করা অনুবাদকর্ম। এ এক বিষম জ্বালা। আক্ষরিক অনুবাদের কষ্টসাধ্য কাজ এড়িয়ে ভাবানুবাদের সমস্যা অন্য জায়গায়। তাতে মূল লেখার রসটুকু অনেকখানি ফেলে আসতে হয় পথে। যাঁর লেখা আমি অনুবাদ করবো, তাঁর লেখার মণিমুক্তোগুলো ফেলে শুধু ঝিনুকের খোসা পাঠকের সামনে ধরার মতো পরিস্থিতি দাঁড়ায় তখন। ৪. বহুদিন হয়ে গেলো, সেবা প্রকাশনীর নতুন কোন বই পড়া হয়নি। আশা করছি তাঁরা এখনও তাঁদের মহৎ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। টিফিনের পয়সা জমিয়ে জমিয়ে এখনও কি বাচ্চারা খাওয়া ফেলে, পড়া ফেলে, টিভি ফেলে পড়ছে বইগুলো? এখনও কি বাচ্চারা অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট পড়ে কাঁদে পলের বন্ধু কাৎসিনস্কির মৃত্যুতে, রূদ্ধশ্বাসে সময় গুণতে থাকে আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ পড়তে পড়তে, জলদস্যু হবার স্বপ্ন দেখে লং জন সিলভারের বর্ণনা পড়ে? দেশ থেকে বহুদূরে বসে তা-ই কামনা করি, পড়ুয়ায় ছেয়ে যাক আমাদের দেশটা, তাদের ভেতরটা বর্ণিল হয়ে উঠুক বিশ্বসাহিত্যের রঙে।
false
ij
হায়, দুঃখিনী চন্দ্রাবতী! জয়চন্দ্রের আত্মহত্যার পর বাকিটা জীবন এভাবেই কেটেছিল কবি চন্দ্রাবতীর । মহিলা কবি বলাটা কি এ যুগে সঙ্গত হবে? তা হলে মহিলা কবি নাই বললাম। তবে বলে রাখি যে চন্দ্রাবতীই নারীদের মধ্যে বাংলাসাহিত্যে প্রথম উল্লেখযোগ্য কবি। তাঁর হাতে অতি সহজেই ভাষা ও ছন্দ ধরা দিলেও তাঁর জীবনে ছিল গভীর বিরহ। আমৃত্যু তাঁর কেটেছিল সর্বনাশা এক বিয়োগান্তক স্মৃতি নিয়ে। চন্দ্রাবতীর জন্ম ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন বাংলার বৃহত্তর ময়মনসিংহের পাটবাড়ি গাঁয়ে; বাবা ছিলেন বিখ্যাত কবি-দ্বিজ বংশীদাস। মেয়েবেলায় কিশোরী চন্দ্রা ভালোবেসেছিল গ্রামেরই এক কিশোর জয়চন্দ্রকে। পরে জয়চন্দ্র কমলা নামে এক মুসলিম তরুণীর সঙ্গে কী এক সর্বনাশা মুহূর্তে প্রনয়ে জড়িয়ে পড়েছিল।পরে অবশ্য ঘোর কেটে গেলে চন্দ্রাবতীর কাছে ফিরেও এসেছিল জয়চন্দ্র। না। চন্দ্রাবতী গ্রহন করেনি জয়চন্দ্রকে। পাটবাড়ি গাঁয়ের পাশেই কূলকূল করে বইছিল ফুলেশ্বরী নদী। জয়চন্দ্র রাগে দুঃখে হতাশায় ক্ষোভে সে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল! না। চন্দ্রাবতী আর বিবাহ করেননি। বরং আমৃত্যু বসেছিলেন ফুলেশ্বরী নদীর ঘাটে। কন্যার অভিপ্রায় বুঝতে পেরে চন্দ্রাবতীর বাবা কবি দ্বিজ বংশীদাস একটি শিবমন্দির গড়ে দিয়েছিলেন ফুলেশ্বরী নদীর পাড়ে। সেই মন্দিরের ঘাটেই আমৃত্যু বসেছিলেন চন্দ্রাবতী। মধ্যরাত্রির জ্যোস্নায় ... আমৃত্যু কাব্যসাধনা করেছেন কবি। তারই কিছু নমুনা। 1. Dear Alien Do women not carry water From where you come? Are river banks not allowed To the female sex! Do men bring in the drinking water, carry the vessels? Have your forefathers always scolded you for Looking at a woman? Is it unbearable the thought of a woman touching water, water that gives life… all too precious to be trusted in the hands of women… by the way where is it that you come from? Over here women go to the river everyday, And no ones stares the The way you did today! 2. Divinest Chandraboti I do not know What women carry or do not carry at home or in other parts of the world. I cannot have lived at all Not having seen, before yesterday, you Chandraboti. Oh, was there a river too??! Where I come from Women are sweet, docile, tulsi-tending, husband-worshipping Son-giving, everything a man could ask for And did I still stare at Chandraboti? I did IF she made me Stare Or breathe Or live Or die. Yours, Joydev 3. Dear Joydev How thoughtful of you To leave your letter Among the flowers I had collected For my father, the Acharya’s pooja! Had I not had a wasp to displace settled among that bed of white jui and crimson hibiscus how would I have known that an alien whom I may now call Joydev not only stares but also snoops on women unawares!? You must try harder Joydev. I read a little and Do not easily Swoon at sweet nothings Specially those From men Who know what artifice to use To make menials of fawning women. Truly, Chandra. 4. Chandra Chandra fawn for me! So that I can make a menial out of Chandra? Why mock me, Chandra? I gathered that you read voraciously. My artifices are simple Naïve, a lot more down to earth Than yours that you collect from your books As a bee gluts itself on the honey it takes. Tell me honestly, Without artifices that make virgins virtuous… Have you not felt as I Unabashedly declare I did? Did not your blood rush to touch my letter, I, the Snooper, did not imagine you turning crimson I saw you, wet and trembling, standing among the morning dew in a white saree, your hair like Meghdoot’s clouds. I could have given my life to cling to the moment I laid my eyes on you, Loving you, I did no wrong If your dawn rituals are done out of obsequiousness to a God one cannot see My rituals to follow Chandra, to worship her flesh and soul should not appear unseemly! Truly, Deeply, Madly Yours, Joy. 5. Sutra I have professed I read a little I have not, however, come across any Virgin’s Manual for Fooling Men!! I do not know how to deceive whatever artifices I may possess, I know of a simple sutra though Written by a bachelor (?) sage. The sutra proclaims that Joy is ephemeral And suffering real What Joy gives easily (no puns here on your name) Is taken away summarily on a whimsy. Suffering is the more faithful love Who sits, sighs, woos you to the end. I trembled this dawn, Joydev, as I was cold, Turned crimson because I felt caught In fetters that I did not think existed for Chandraboti. Yes, I am flesh and blood and everything in between that Makes us weak and unwise! You did not do anything wrong to love me because No sanyasi’s sutra clouds your mind. I on the other hand have been warned And I know I am out of my mind To tell Joy that I love him back. -Bewildered, Chandra 6. Bewildered I trembled too, Chandra, because I was hot And not just with desire But because I felt a bewildering sort of peace. I pledge myself a slave to Chandra, in dreams, in waking moments and in slumber. I will hold you, hold me forever too, Chandra Mock me some more, tell me I am raving. But banish sutras, my Chandra, that bewilder you Be my wife, my mate, my soul! Enraptured, Chandra’s Joy 7. Riverbank Why do I tremble so, she is ravishing, I am hot with desire with a bewildering weakness, She’s exquisite, perfect! I will hold you, woman without a name Mock me, tell me I am raving, unfaithful Remind me that I have pledged myself to Chandra. No, banish such thoughts, this Moslem beauty that bewilders me Shall be my wife, my mate, my soul! 8. The Bride-to-be Oh this red is too red for me And oh dear! must I wear those too The filigree gold chains and anklets? Pardon me, I can dress myself. I know Joy wouldn’t care if his Bride came in ashes or in alta We will pay homage to the sacred fire together And I’ll wear my vermillion and shanka Only for Joy, my husband, my equal, my other self. 9. How’s that ! “She is extremely stupid, if I may say so Imagine reading all those books, such a father’s daughter Being so stupid!” “Did you see her shed her gold chains and forget that her aanchal trailed?” “And wipe all those alpanas we made with her dragging feet Silly girl, to think men can be constant!” “But Joydev marrying a Muslim forsaking our ancestral Gods, Isn’t that so over the top?” “I knew this would happen, told her just as much!” “Did you now, how come?” “Strange you should need to ask. Doesn’t falling in love tell you something does it not have an ominous ring?” “Oh, Oh, poor Chandraboti , what will she do, who will have her now?” “Silly girl, to think men can be constant!” 10. Lost in Translation Chandra, hate me As I deserve But I must tell you Of my grief I don’t know how it was I married someone I did not love And forsook, left my Chandra, shindoor-less Waiting for me in her bridal wear. Like in a foreign tongue, Something incomprehensible Was jibber-jabbering in my head My heart, I wish…Chandra You had left me my heart as an amulet! My well-read Chandra, Read in my unabashed anguish, I love you more than myself Translate my monstrous regret As my sincerest protestations of love. Sweet Chandra, hate me as I deserve But have me back! Jalal/Joy 11. Statue This is not you Chandra The Gods have substituted My Chandra with a blankness stone for flesh And stillness for breath Ah! Chandra I know you love me still But are blind to your Joy, to his fate, to his life! I am raving, it wasn’t you, it was I who was blind, Blind in love for Chandra, blind in my errant ways, blinded now by your glistening reserve. Tell me, Chandra, tell me you are human Like the rest of us, that blemishless Though you are, you understand Frailty and Weakness, and Corruption Not only as discourse, but also as human passions We are not statues or Gods Chandra, speak to me one more time And I will be gone, Forever, leaving you My unwed wife! in your barren temple. 12. Temple Door How quiet it grows all of a sudden! How peaceful How monstrous looks the dawn Red, vermillion, gold! Or may be it’s just my reddened eyes that makes it look so vile Old temple threshold, hold me, protect me Ancients guide me What poor comfort my books are now And you Gods that stare and stare Chandra’s tears are too human to mean anything to you my Gods! Well, here’s a new dawn A fresh deluge of torture Forget, remember, forget, and with ferocity remember I had Joy and lost Joy and could have had him again! No, he left me, left his Gods, He wanted me, he repented his errant ways No, he left me, left his Gods. He wanted…Enough, Women go to the river here every day I can do it again. How quiet it grows all of a sudden! And how sharp the air is today How cold the water’s touch I tremble, Joydev, are you here? Bloated with peace at last? Why, Joydev, the river? you always hated water! সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০০
false
fe
বায়ান্ন-পূর্ব সিলেটে ভাষা আন্দোলন বায়ান্ন-পূর্ব সিলেটে ভাষা আন্দোলনসুকেশ চন্দ্র দেব ------------------------------------একুশে ফেব্রয়ারি সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত। জাতিসংঘ একুশে ফেব্রচ্ছারিকে এই স্বীকৃতি প্রদান করে যেমন বাঙালি জাতির সংগ্রামী ঐতিহ্যকে সম্মানিত করেছে তেমনিই স্বীকৃতি দিয়েছে পৃথিবীর সকল জাতিসত্তার ভাষার অধিকার তথা সংস্কৃতির অধিকারকে। আর এই স্বীকৃতির মধ্যদিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমস্ত অন্যায়, অবিচার ও শোষণের বির"দ্ধে পৃথিবীব্যাপী মানুষের সংগ্রামের ইতিহাসকে। ১৯৫২ সালের মহান একুশে ফেব্রচ্ছারি মাতৃভাষা আন্দোলনের যে চূড়ান্ত পর্ব, তার পথ বয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতির প্রথম জাতিরাষ্ট্র স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে সিলেটবাসীর রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আর এই ভূমিকার পেছনে রয়েছে বায়ান্ন পূর্ব সিলেটে ভাষা আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ।মধ্যযুগের শেষার্ধে যে কজন বাঙালি কবি বাংলাকে কাব্য রচনার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে সিলেটের অন্যতম কবি সৈয়দ সুলতান। সৈয়দ সুলতানকে নিয়েও কম টানাহ্যাঁচড়া হয়নি। অবশেয়ে গবেষণায় পরিশুদ্ধ হয়ে ‘হবিগঞ্জের গৌরব’ হিসেবে তিনি স্বীকৃতি লাভ করেছেন। কবি সৈয়দ সুলতান সাহসিকতার সঙ্গে লেখেন, ‘যারে যেইভাবে প্রভু করিল সৃজন/সেই ভাষ হয় তার অমূল্য রতন’। মাতৃভাষাকে অমূল্য রতন আখ্যায়িত করার মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রতি সৈয়দ সুলতানের গভীর মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। পরবর্তীকালেও মাতৃভাষার প্রতি সিলেটের কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের নিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯০৯ সালে সিলেটের একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ মৌলভী হামেদ আলী সুস্পষ্টভাবে বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুর"ষ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান অথবা ভারতের অধিবাসীই হোক, আর এতদ্দেশবাসী হিন্দুই হোক, আমরা এক্ষণে বাঙালি-আমাদের মাতৃভাষা বাংলা’ (দুমুখী লড়াই আমরাই বাঙালি, এস আর আখতার মুকুল, পৃষ্ঠা ২০, প্রকাশকাল ১৯৯২)১৯১১ সালে ধনবাড়ির জমিদার আসাম ও বঙ্গীয় আইনসভার এককালের সদস্য নওয়াব আলী চৌধুরী রংপুর প্রাদেশিক শিক্ষা সম্মেলনে উপমহাদেশের অন্যতম ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার গুর"ত্বের কথা উল্লেখ করেন এবং জাতীয় পর্যায়ে এর স্বীকৃতির জন্য আহ্বান জানান। ১৯২১ সালে রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে আলোচিত হলে তিনি বাংলাকে এতদঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন (ভাষা আন্দোলন ১৯৪৭ ও ১৯৫৬ দৈনিক বাংলা, ২১ ফেব্রচ্ছারি সংখ্যা ১৯৯৭ এ বি এম শামসুদ্দীন আহমদ) বাঙালি মুসলমানদের মাতৃভাষা বাংলা এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশ বিভাগের আগেই বাংলাকে সরকারি ভাষা এবং রাষ্ট্র ভাষা করার প্রশ্নটি সামনে আসে।১৯২৭ সালে সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলার দাবি জোরালোভাবে উচ্চারণ করেন সিলেটের রাজনীতিবিদরা। এ বছর তৎকালীন আসাম প্রদেশের অন্তর্গত সিলেট জেলার এমএলএ গণসংসদে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছর একটি আপিল মামলা নিষ্পত্তি বিষয়ক প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষা প্রশ্নটি নিয়ে আসাম প্রাদেশিক ব্যবস্থাপনা পরিষদে বিতর্ক দেখা দেয়। পরিষদে দোষী একজন পুলিশ কর্মকর্তার বরখাস্তের দাবি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সিলেট থেকে নির্বাচিত পরিষদ সদস্য গোপালগঞ্জের রনিকেলি গ্রামের আবদুল হামিদ চৌধুরী বাংলা ভাষায় পেশ করেন এবং এ বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত জানতে চান। কিš' যেহেতু বাংলা ভাষায় প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়ার বিধান আইনে ছিল না তাই সরকার পক্ষ উত্তরদানে বিরত থাকে। এ ঘটনা সিলেট থেকে নির্বাচিত সদস্যদেরকে প্রতিবাদমুখর করে তোলে। তারা প্রত্যেক সদস্যের মাতৃভাষায় বক্তৃতাদানের অধিকারসহ সরকার পক্ষ থেকে প্রস্তাবের জবাবদানের বিধান তৈরি করার দাবিতে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। এ নিয়ে পরিষদে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বাকবিতণ্ডা চলে এবং পরে সদস্য আব্দুল হামিদ চৌধুরী বাংলা ভাষায় বক্তব্য রাখার সুযোগ লাভ করেন। তখন থেকে আসাম ব্যবস্থাপনা পরিষদের বাংলা বক্তব্য রাখার এবং প্রশ্ন উত্থাপন করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিষদ সদস্য আব্দুল হামিদ চৌধুরীর সঙ্গে এ বিষয়ে গুর"ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন গোপেন্দ্র লাল চৌধুরী ও রাজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী প্রমুখ সদস্য। (সিলেটের দুশ বছরের আন্দোলনÑ তাজুল মোহাম্মদ ১৯৯৫ পৃষ্ঠা ৪১-৪২)১৯৩৮ সালের ৫ ডিসেম্বর আসাম বিধান সভায় প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত একটি বিলের আলোচনা পর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামনাথ দাস একটি প্রশ্নের জবাব ইংরেজিতে প্রদান করলে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এর প্রতিবাদ করলে তার পক্ষ সমর্থন করে সিলেট সদর (দক্ষিণ) থেকে নির্বাচিত সদস্য স্পিকার বসন্ত কুমার দাস বাংলা ভাষায় বক্তব্য রাখার জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ করে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। মন্ত্রী অপারগতা প্রকাশ করলে স্পিকার বসন্ত কুমার দাস মন্ত্রীর ইংরেজি জবাব বাংলায় অনুবাদ করে দেন (বাংলা ভাষার পক্ষে মওলানা ভাসানী, বসন্ত কুমার দাস ও ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, সৈয়দ আবুল মকসুদ, আজকের কাগজ, ২৪ এপ্রিল সংখ্যা, ১৯৯৮ সাল)১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার মাত্র ৩ মাসের মাথায় ১৯৪৭ সালের ৯ নভেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ আলোচনা সভাই আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা সভা। বিশিষ্ট সাহিত্যিক মতিন উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তৎকালীন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা মুসলিম চৌধুরী। মুসলিম চৌধুরী পঠিত প্রবন্ধের ওপর সারগর্ভ আলোচনা করেন মৌলভী সৈয়দ আমির"ল ইসলাম, হেনা দত্ত (হেনাদাস), মাওলানা ছখাওয়াতুল আম্বিয়া, মৌলভী সয়ফুল আলম খান, মাওলানা কাজী বদর"দ্দীন হায়দার, মৌলভী হানিফ লস্কর, মৌলভী সিরাজুল ইসলাম, সৈয়দ আব্দুল মালেক, কবি মহিউদ্দিন প্রমুখ। মুসলিম চৌধুরী তার দীর্ঘ প্রবন্ধের উপসংহারে লেখেনÑ‘পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রভাষা হইবে বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানের কোন ভাষা গৃহীত হইবে এ নিয়া মাথা ঘামাইবার আবশ্যক। আমাদের এই মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষা আমাদের শিক্ষার বাহন হইতে পারে না। যতোদিন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ক গ্রন্থাদি যথেষ্ট পরিমাণ অনূদিত ও রচিত না হইয়াছে ততোদিন পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি এই দুই ভাষায়ই পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রের কাজ চলিবে। প্রতিভাশালী লেখক ও আরবি, ফরাসি ভাষার অভিজ্ঞ বাংলার আলেমগণকে কালবিলম্ব না করিয়া প্রয়োজনীয় বাংলা গ্রন্থ রচনার কাজে আত্মনিয়োগ করিতে বিনীত অনুরোধ জানাইতেছি।’ (আল ইসলাহ, ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা, পৃষ্ঠা ১২১)রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালের ৩০ নভেম্বর সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা হলে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সিলেটের কৃতী সন্তান সৈয়দ মজুতবা আলীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে না বাংলা হবে এর ওপর আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। উক্ত আলোচনা সভাকে বানচাল করার জন্য বাংলা ভাষা বিরোধী কতিপয় নেতা চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। রস সাহিত্যিক মতিন উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সারগর্ভ প্রায় ৩ পৃষ্ঠার ভাষণটি ‘আল-ইসলাহ’ ১১ বর্ষ ৭ম-১২শ সংখ্যা ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া এ ঐতিহাসিক ভাষণটি কলকাতার ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়।১৯৪৮ সালে ২৩, ২৪, ২৫ ফেব্রচ্ছারি ও ২ মার্চ গণপরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কুমিল্লার সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত গণপরিষদে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় বক্তব্য রাখার প্রস্তাব করেন। কিš' নাজিম উদ্দিন এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করলে কলকাতায় অনুষ্ঠিত যুব সম্মেলনে যোগদানকারী সিলেটের আখলাকুর রহমান ও হাজেরা মাহমুদ এক বিবৃতি দিয়ে নাজিম উদ্দিনের বিরোধিতার প্রতিবাদ করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে অভিনন্দন জানান। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের দাবি প্রত্যাখ্যান হলে ঢাকায় ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নামে। এ সময় গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। পরিষদ ১১ মার্চ দেশব্যাপী ধর্মঘট আহ্বান করে। সিলেটেও পীর হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। মার্চের শুর"তেই সিলেটে চলতে থাকে হরতালের প্র¯'তি। এ উপলক্ষে বড়ো ধরনের কর্মসূচি হিসেবে ১৯৪৮ সালের ৮ মার্চ সিলেটের গোবিন্দ পার্কে (বর্তমান হাসান মার্কেট) তমদ্দুন মজলিস এবং সিলেট জেলা মুসলিম ফেডারেশনের উদ্যোগে এক সভার আয়োজন করা হয়। মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সভা শুর" হওয়া মাত্র মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের হামলায় সভা পণ্ড হয়ে যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা ১০ মার্চ প্রতিবাদ সভা আহ্বান করলে সরকার সিলেটে দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। ৮ মার্চ সভার দুই আহ্বায়ক অহিদুর রহমান ও আব্দুস সামাদ আজাদ একটি প্রতিবাদলিপি নওবেলালে পাঠান এবং তা ছাপা হয়। সরকার ও মুসলিম লীগের বাধা সত্ত্বেও ১১ মার্চ সিলেটে সফলভাবে হরতাল পালিত হয়।১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সুনামগঞ্জ কলেজে ভাষা সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল বলে ‘ভাষা আন্দোলনে সুনামগঞ্জ’ প্রবন্ধের লেখক হাজেরা খাতুন উল্লেখ করেন। এ সভার আহ্বায়ক ও সভাপতি ছিলেন কলেজ ছাত্র আব্দুল মতিন। সভা শুর" হতে না হতেই পুলিশি আক্রমণে সভা পণ্ড হয়ে যায়। সভা থেকে পুলিশ সুনামগঞ্জের ভাষা আন্দোলনের নেতা হোসেন বখতকে গ্রেপ্তার করে। বিচারে তার ৬ মাসের জেল হয়।এদিকে ১৯৪৮ সালের শুর" থেকেই সিলেটের নারী সমাজ বিভিন্ন তৎপরতার মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন। ১৯৪৮ সালের ১১ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুর রব নিশতার সিলেটে এলে স্থানীয় মহিলাদের একটি প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন। এদের মধ্যে জোবেদা খাতুন চৌধুরী, শাহেরা বানু, সৈয়দা লুৎফুন্নেছা খাতুন, সৈয়দা নজিবুন্নেছা খাতুন ও রাবেয়া খাতুন ছিলেন অন্যতম। মহিলারা মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেন। ভাষার দাবিতে মহিলারা ১৯৪৮ সালের ১০ মার্চ এক সভা করেন। কিš' সভা শুর"র কিছুক্ষণের মধ্যে সিলেটের ডিসি ১৪৪ ধারা জারি করে সভা বন্ধ করে দেন।সিলেটের উলেমা এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দও বাংলার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। জমিয়ত-ই-উলেমা-ই-ইসলামের উদ্যোগে রাজনগর থানার মুন্সিবাজারে এক সভা হয়। এ সভায় পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই মর্মে প্রস্তাব গৃহীত হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হবে উর্দু এবং বাংলা হবে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা। এ ছাড়া বাংলা ও ইংরেজি হবে পশ্চিম পাকিস্তানের যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা সরকারি ভাষা। একইভাবে উর্দু ও ইংরেজি হবে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা (সিলেট ইতিহাস ও ঐতিহ্য, পৃষ্ঠা ১৯০)সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘নওবেলাল’ ও কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের মুখপত্র ‘আল-ইসলাহ’-এর বায়ান্ন-পূর্ব সিলেটে ভাষা আন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।সুকেশ চন্দ্র দেব : লেখক।-----------------------------------ভোরের কাগজ / ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮
false
hm
সবচেয়ে বড় সংখ্যার খোঁজে ১. মোতালেবের মেজাজটা খিঁচড়ে আছে। রিসার্চ গ্র্যান্টটা মিলে গেছে, তারপরও। ৎসাইলবের্গারের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসিটা সে ভুলতে পারছে না কিছুতেই। বুড়ো বিরাট খচ্চর। ধবধবে সাদা পেয়ালায় কফি খেতে খেতে বুড়ো শুধু বলেছিলো, "অসীম হচ্ছে একটা বিমূর্ত বালছাল। ভুলো না কিন্তু।" মোতালেব পছন্দ করেনি কথাটা। গণিতবিদ হিসেবে তার ক্যারিয়ারটাই দাঁড়িয়ে আছে অসীমের গায়ে হেলান দিয়ে। আর এই ব্যাটা এক পা কবরে ঢুকিয়ে আরেক পা নাচাতে নাচাতে বলছে, অসীম একটা বিমূর্ত বালছাল? এটা কোনো কথা হলো? জাপানী বন্ধু হিদেকুশি আগেই সাবধান করে দিয়েছিলো মোতালেবকে, ৎসাইলবের্গার নাকি অতিশয় গিরিঙ্গিবাজ লোক। এর সাথে পোস্টডক করার বুদ্ধিটা সে মোটেও ভালো মনে করেনি। মোতালেব নিজেও জানে, ৎসাইলবের্গার সসীম সংখ্যার নানা প্যাঁচঘোঁচের সাথে মোকাবেলার কারণেই গণিতজ্ঞ মহলে সমাদৃত। কিন্তু উপায় ছিলো না তার, কারণ প্রস্তাবনাটা খোদ ৎসাইলবের্গারের পাকাচুলে ঢাকা মাথা টপকেই বেরিয়েছে। ব্যাটা বেশ মোটা গ্র্যান্টও যোগাড় করে রেখেছে, মোতালেবের কাজ শুধু কামলা খাটা। ব্যাপারটা খুবই গণ্ডগুলে, কোনো সন্দেহ নেই। এটা একেবারে জ্বলন্ত সত্য, এমনই জ্বলন্ত যে একটা ভালো হাভানা চুরুট ধরানো যেতে পারে, যে সংখ্যার কোনো শেষ নেই। একবার গুণতে শুরু করলে আর থামার উপায় নেই। সবচেয়ে বড় সংখ্যা যদি কেউ প্রস্তাব করে, তার সাথে সবসময় একখান এক যোগ করে আরেকটা সবচেয়ে বড় সংখ্যা পয়দা করা সম্ভব, এবং সেটার সাথেও আবার এক যোগ করে আরেকখানা, এইভাবে চলতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের ঝোল থাকে, এক যোগ করে যাওয়ার মোজো থাকে। আর হ্যাঁ, ট্যাঁকে ফাণ্ডিঙের টাকা যতক্ষণ থাকে। ওটা ফুরিয়ে গেলে এক যোগ করার কাজে ক্ষান্ত দিয়ে সবচেয়ে বড় সংখ্যাটা ছাপিয়ে ৎসাইলবের্গারের কপালে সেঁটে দিয়ে আসা যায়। কিন্তু বিটকেলটা বলছে, সবচেয়ে বড় সংখ্যা একটা আছে, এবং সেটাতে পৌঁছানোও খুব সম্ভব। কারণ সেটার সাথে এক যোগ করলে ফলাফল হবে শূন্য। সবচেয়ে বড় সংখ্যা এমনই এক সংখ্যা, যার গায়ে শেষ খড়টা চাপালে সে ভেঙে চুরমার হয়ে শূন্য হয়ে আছড়ে পড়বে মাটিতে। এ-ও কি সম্ভব? ৎসাইলবের্গার বলছে, হুঁ, সম্ভব নয় কেন? দাঁড়াও পথিকবর, একেবারে হাতে কলমে দেখাচ্ছি। বাবা মোতালেব ...! খাতা কলম নিয়ে আসো তো একটু! মোতালেবকে যে ভাবায়নি ব্যাপারটা, এমন নয়। সে যথেষ্ট আগ্রহী, এই প্রকল্পকে একটা ডলা দিয়ে দেখার জন্য। সংখ্যা বড়ই রহস্যে ভরা একটা ব্যাপার, আর অসীমের আচরণ তো আরো রহস্যময়। অসীমের সাথে এক যোগ করলেও ফলাফল অসীম, অসীম থেকে এক বিয়োগ করলেও ফলাফল অসীম। অসীমকে দুই টুকরো করে ফেললেও সে অসীমই রয়ে যায়, দুটো অসীমকে জোড়া দিলেও সে অসীমই থাকে। বেশি দেরি করেনি মোতালেব, প্রথম সাক্ষাতের সময় ৎসাইলবের্গারের সামনেই একটা কাগজ টেনে নিয়ে বড় বড় করে লিখেছে সে, গামা। Γ । ৎসাইলবের্গারের প্রস্তাবিত সবচেয়ে বড় সংখ্যা। বুড়ো বসে বসে কান চুলকাচ্ছিলো একটা কানকাঠি দিয়ে, কাগজটা রগ-ওঠা বাঁদুরে হাতে টেনে নিয়ে দেখে নাক সিঁটকে বলেছিলো, সে কী, গামা বলে ডাকছো নাকি ওটাকে? মোতালেব বিড়বিড় করে বলেছিলো, সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর, গামার মাঝে প্রকাশ তোমার তাই এত মধুর! ৎসাইলবের্গার কিছুক্ষণ পিটপিটে চোখে তাকিয়ে থেকে বলেছিলো, বেশ, গামাই সই। ২. ব্যাপারটা যে এত ভোগাবে, মোতালেব আশা করেনি। একটা কম্পিউটার আর একজন গ্র্যাড স্টুডেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছিলো সে, কিন্তু ৎসাইলবের্গারের পেড়ে রাখা ডিম থেকে যে এতো ভূতপ্রেত ফুটে বেরোবে, সে ভাবেনি। সপ্তম সপ্তাহের মিটিঙে মিনমিন করে তাই সে বুড়োকে জানিয়েছে, আরো দু'জন গ্র্যাড স্টুডেন্ট লাগবে তার। আর একখান কম্পিউটারে কিছুই হবে না, আরো দু'টো লাগবে। ৎসাইলবের্গার উদার হাতে কান চুলকাতে চুলকাতে বলেছে, বেশ! মোতালেব খিঁচড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে আবার। কারণ একটাই, বুড়োর ঠোঁটের কোণে আবছা বাঁকা হাসিটা। কেমন যেন। দেখলে ভালো মেজাজও বিগড়ে যেতে বাধ্য। ৩. ছয় মাস পর মোতালেব আচমকা নিজেকে আবিষ্কার করলো পাঁচজন গ্র্যাড স্টুডেন্ট আর একটা নতুন কম্পিউটার ল্যাবের মাঝখানে। আঠারোটা কম্পিউটার সেখানে একটা নেটওয়ার্কে নিরন্তর খেটে চলছে ৎসাইলবের্গারের প্রস্তাবনার পেছনে। কিন্তু ...। কফির মগ হাতে উদভ্রান্তের মতো ৎসাইলবের্গারের ঘরে গিয়ে হাজির হলো মোতালেব, হাতে একটা কাগজ। বুড়ো কোনো বাক্যব্যয় না করে কাগজটা হাতে নিয়ে মন দিয়ে দেখলো, তারপর হাতের তর্জনী নাকে গুঁজে বললো, "মেইনফ্রেম ল্যাবটা কিছুদিনের জন্যে ব্যবহার করতে পারো।" মোতালেব ক্লান্ত পায়ে বেরিয়ে এলো ৎসাইলবের্গারের ঘর ছেড়ে। মেজাজ খারাপ করার জোশও পাচ্ছে না সে। কাগজটা নামিয়ে রাখার আগে বুড়ো মুচকি হেসেছে শুধু, সেই খচ্চরমার্কা বাঁকা হাসিটা। ৪. জাহাভি টেকনিকস যখন তাদের সুপারকম্পিউটার দুই বছরের জন্য ৎসাইলবের্গারের গবেষণার জন্যে ছেড়ে দিলো, মোতালেব অবাক হয়নি। বুড়োর কানেকশনের জোর মারাত্মক। "কাজ আগাচ্ছে, কী বলো?" বিস্কুট খেতে খেতে বললো বুড়ো। মোতালেব হাতে ধরা কাগজের তাড়ার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালো। কোনো সন্দেহ নেই। বুড়োর হাসিটা যতই বিরক্তিকর হোক না কেন, কথায় দম আছে। ৫. সাদা ওভারঅল পরা চারজন লোক মিলে যখন স্ট্রেইট জ্যাকেট পরিয়ে মোতালেবকে ল্যাব থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলো, দৃশ্যটা হৃদয়বিদারক ছিলো। ৎসাইলবের্গারের অনুরোধে জাহাভি টেকনিকস গোটা ঘটনা নিয়ে একটা ছোটো ডকুমেন্টারি বানিয়ে ডিভিডি পাঠিয়ে দিয়েছে ডাকে। মন খারাপ থাকলে ৎসাইলবের্গার সেটা ছেড়ে দেখেন। প্রভূত আমোদপ্রদ দৃশ্য। বিশেষ করে মোতালেব যখন এক পর্যায়ে একটা কীবোর্ড তুলে কামড়াতে শুরু করে, সেটা অভূতপূর্ব। ডকুমেন্টারি যে সম্পাদনা করেছে, তার সুরজ্ঞান মন্দ নয়, মোতালেবকে ধাওয়া এবং পাকড়াওয়ের দৃশ্যগুলোকে সে একটা চমৎকার ওয়াল্টজ ছন্দে খুঁজে পেয়ে দ্মিত্রি শস্তাকোভিচের একটা কম্পোজিশন জুড়ে দিয়েছে। মোতালেব আপাতত একটা আরোগ্যের অযোগ্য মানসিক রোগীদের অ্যাসাইলামে আছে। গবেষণা প্রকল্পটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, কিন্তু মোতালেবের রিসার্চ থেকে বেশ কিছু মূল্যবান ডালপালা বেরিয়ে এসেছে, যেগুলো ফলিত গণিতের বেশ কিছু অমীমাংসিত ব্যাপারের একটা দফারফা করার কাজে আসবে, বিশেষ করে সসীম সংখ্যার বিশ্লেষণে। নতুন পোস্ট ডক গনজালেস মোতালেবের ডিভিডিটা প্রথম সাক্ষাতকারেই দেখেছে, বলা যায়, দেখতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু গনজালেস হণ্ডুরাসের লোক, এত সহজে সে ভয় পাবার বান্দা নয়। নিরস গলায় গনজালেস শুধু জানতে চেয়েছে, আপনার প্রস্তাবনাটার কী হলো তাহলে? ৎসাইলবের্গার কান চুলকাতে চুলকাতে উদাস গলায় শুধু বলেছেন, "কী আবার হবে?" গনজালেস জানতে চেয়েছে, "গামা নিয়ে আর কিছু ভাবছেন না?" ৎসাইলবের্গার কিছুক্ষণ গনজালেসের দিকে তাকিয়ে বলেছেন, "দ্যাখো, শুরুতে একজন পোস্ট ডক ফেলো নিয়ে কাজ শুরু করলাম। তারপর একটা কম্পিউটার এলো, আর একটা গ্র্যাড স্টুডেন্ট। সেই থেকে গোণা শুরু। পুরো একটা সুপার কম্পিউটার ফ্যাসিলিটি যখন গামার পেছনে ছুটছে, তখন মোতালেব কী একটা বাংলা লেখার সফটওয়্যার ইনস্টল করতে গিয়ে পুরো সিস্টেম অকেজো করে ফেললো। এখন এই প্রজেক্টে একটা মশাও নাই। সব ফাঁকা, শূন্য। কী বুঝলে?" গনজালেস চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে থেকেছে শুধু। ৎসাইলবের্গার সিলিঙের দিকে তাকিয়ে বলেছেন, "মাঝে মধ্যে একটা একের মতো এক যোগ করতে পারলে গোটা ব্যাপারটাই শূন্যে নেমে আসে। তার আগ পর্যন্ত যা থাকে হাতে, ওটাই গামা।" অফটপিক: চণ্ডীশিরা লিখে শেষ করবো, কথা দিচ্ছি। সমস্যায় ভুগছি, সমস্যা কেটে গেলে পুরোটা লিখে একবারে পোস্টাবো।
false
ij
কবি পূর্ব ইউরোপীয় এক তরুণের সঙ্গে আমার গত জানুয়ারিতে পরিচয় হয়। তরুণটি মার্কিন যুক্তরাষ্টের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রযুক্তির ওপর গবেষনা করছে- বাড়ি চেক রিপাবলিক, নাম লুকাস, ছ’ ফুটের ওপর লম্বা, গায়ের রংও সেরকম আর বেশ মিশুক। যা হোক। শীতের সন্ধ্যায় আমার ঘরে আড্ডা জমে ওঠে। অনেকেরই মনে থাকার কথা-গত জানুয়ারিতে ঢাকায় তীব্র শীত পড়েছিল। কী শীত রে বাবা! এ কথা বলতেই লুকাস হেসে উঠেছিল। কই চেক রিপাবলিকের শীত আর কই ঢাকার শীত! যা হোক। আড্ডা বেশ জমেছে। লুকাস ইতিহাস-সাহিত্য-দর্শনে আগ্রহী, আগ্রহী বাংলাদেশ নিয়েও ... আমার তৈরি তেজপাতা দেওয়া ‘র’ চা খেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। তেজপাতা জিনিসটা হাতে নিয়েও নেড়েচেড়ে দেখল। পানও চেনে না বলল। বাড়ির মুরুব্বীদের পানের বাটা এনে দেখালাম। পানের সাইজ, রং ও আমার মুখে এর রসের ক্ষমতার কথা শুনে লুকাস রীতিমতো অবাক হয়ে গেল। চেক রিপাবলিক। পূর্ব ইউরোপের মধ্যে অনেক অগ্রসর একটি দেশ। লুকাস বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া যাবে। ইন্ডিয়া ২/৩ দিন থেকে দেশে ফিরবে। লুকাস চলে যাওয়ার কিছুদিন পরে এক শক্তিমান চেক কবির একটি কবিতার বইয়ের সঙ্কলন হাতে পেলাম। কবির নাম জারোস্লাফ সেইফার্ট ... নাম আগেই শুনেছি, সেভাবে পড়া হয়নি। কবি জারোস্লাফ সেইফার্ট নজরুল ও জীবনানন্দের সমসাময়িক। সেইফার্ট অবশ্য জন্মেছেন ১৯০১ সালে এবং নজরুল ও জীবনানন্দের উভয়ই ১৮৯৯ সালে। সেইফার্ট ১৯৮৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন-এটি বিস্ময়ের নয়; সেইফার্ট চেক কমিউনিষ্ট পার্টির মেম্বার ছিলেন -আমার খটকা এখানেই। কবি জারোস্লাফ সেইফার্ট চেক কমিউনিষ্ট পার্টির মেম্বার ছিলেন এবং পার্টির পত্রপত্রিকা সম্পাদনা করতেন; কবিরা মেহনতি মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতেই পারে, কাজেই এই তথ্যটিও বিস্ময়কর নয়; সেইফার্ট ১৯৮৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন-আমার খটকা এখানেই ... যা হোক। হঠাৎই কবি জারোস্লাফ সেইফার্ট এর লেখা একটি কবিতায় চোখ আটকে গেল। কবিতার নাম : In An Empty Room ... পড়তে লাগলাম Even the raven belongs to the song bird family and that gives me courage when sadness like a stifling smog falls on my life. What price sweet verses when a man is old. Even the whiteness of the snow revolts him. But for you, nonetheless, I'd like to bring along a little white dove. If you held it in your hands it would softly peck your finger. I see it often on the roof across the road and could invite it over. It has come from afar, from King Solomon's love songs. Gently press it to your breast, that's where it belongs. But if it flies up with the others it is a momentary flash of glitter like a mirror caught in the sun. You can stay silent if you don't feel like talking, only please smile, and when you give me a kiss not only on my cheek but also on my lips, I want to feel your hot breath. How greedy I am. I remember the days when it was much darker in the cinemas than today. The films were darker and moreover the screen always looked as if it were raining. Only above the doors glowed dim red bulbs in case of panic. In those days young people kissed not only hidden in dark boxes but also in the back row of the stalls. In thirst I drank saliva from the mouths of girls. It was intoxicating like chewed betel juice but that is a deep red and burns on the tongue. আহ্! কী অসাধারন কবিতা। কবি কি আমার কথাই বলেন নি কবিতায়? প্রিয় কবিতা তো তেমনই হয়। হঠাৎই খেয়াল হল-আশ্চর্য! চেক কবির কবিতার শেষের দিকে পানের রসের কথা আছে। It was intoxicating like chewed betel juice but that is a deep red and burns on the tongue. আর লুকাস কিনা পানই চিনত না। ভাবলাম লুকাস তো আর কবি না। কবিদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য এখানেই। লুকাস পান চেনে না আর কবি জারোস্লাফ সেইফার্ট পানের রসকে কবিতায় ব্যবহার করেছেন। ঠিক করলাম জারোস্লাফ সেইফার্ট কে নিয়ে লিখব। লিখেও ছিলাম। In An Empty Room কবিতার অনুবাদ। একটি শূন্য ঘরে এমন কী দাঁড় কাকও গায়ক পাখিদের একজন আর সে আমায় শক্তি দেয়, যখন আমার জীবনে অনঢ় কুয়াশার মতো ছড়ায় বিষন্নতা । বুড়ো মানুষের কাছে মধুর গদ্যের কী এমন মূল্য বল? তখন তো তুষারের রংও তার বিরুদ্ধে করে বিদ্রেহ। সে যাই হোক। কিন্তু আমি তোমার জন্য একটা ছোট্ট ঘুঘু পাখি এনে দেব। যদি তুমি ওকে ধর তো ওটি তোমার আঙুলে আলত করে ঠোকরাবে। আমি ওকে রাস্তার ওপারের একটি ছাদের ওপরে দেখি আর ওকে ডাকলেই কাছে আসে। দূরের দেশ থেকে পাখিটা এসেছে রাজা সলোমনের প্রেমগীত থেকে। ওকে বুকে চাপ দিয়ে ধরে রাখ ওখানেই ওর স্থান। কিন্তু যদি ও অন্যদের সঙ্গে উড়ে যায় তা হবে ক্ষণিকের ঝলক যেনবা আয়নায় বিম্বিত সূর্যালোক। কথা বলতে ইচ্ছে না করলে চুপ করেই থেকো আর দয়া করে হেসো আর যখন তুমি আমাকে দেবে চুমু কেবল গালে নয়, ঠোঁটেও, আমি তোমার উষ্ণ নিঃশ্বাস অনুভব করতে চাই। আমি কী লোভী! সেইসব দিনগুলির কথা আজও মনে আছে আজকালকার দিনের তুলনায় সিনেমা হলগুলি ছিল কেমন অন্ধকার অন্ধকার । তাছাড়া সিনেমার দৃশ্যগুলি কেমন ভিজে ভিজে। কেবল দরজার ওপরের জ্বলত ম্লান লাল বাতি আতঙ্কের তৈরি হলে। সেসব দিনে তরুণতরুণীরা চুমু খেত কেবল অন্ধকারে লুকোন বাকশোয় নয় স্টল-এর পিছনের সারিতে। পিপাসা পেলে পানের রসের মতন উত্তেজক পান করতাম মেয়েদের মুখের লালা । হায়, ওই গভীর লাল লালায় জ্বালা পোড়া করত জিভ । সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১০ সকাল ১০:৪০
false
rn
একমাত্র আকাশেরই আছে নির্ভুল ঠিকানা গুল্লু নামের একটি ছেলেকে বাসা থেকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। গুল্লু তার বন্ধু রিয়া'র সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল। গুল্লু সুন্দর একটা সাদা গেঞ্জি আর মিড নাইট কালার জিন্স প্যান্ট পরেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনী হাতে নিয়েছে- এমন সময় ঘরে ঢুকে আট জন ডিবি পুলিশ এসে গুল্লুকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারল না তার অপরাধ কি! পুলিশ গুল্লুকে হাত কড়া পরাতে গেলে গুল্লু বলে- আমি কি এমন কোনো আসামী, যে আমাকে হাত কড়া পরাতে হবে ? খুন করেছি? ধর্ষণ করেছি ? দুর্নীতি করেছি ? আর দয়া করে টানা হেঁচড়া বন্ধ করুন। আমি নিশ্চয় পালিয়ে যাব না! ডিবি পুলিশ একটা সাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে গেল। গুল্লুকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবার সময় অনেক গুলো টিভি চ্যানেল আর ক্যামেরা অনেক আগ্রহ নিয়ে গুল্লুকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ ক্যামেরা বন্ধী করছে। গুল্লু আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক! সে মনে মনে বলল- আজকের আকাশটা এত সুন্দর কেন !! স্বচ্ছ রোদ ! গুল্লুকে ডিবি অফিসের ছোট্র একটা ঘরে বন্ধী করে রাখা হয়েছে। রিয়াকে একটা ফোন করার দরকার ছিল- মেয়েটা এলিফ্যান্ট রোড, বাটা'র দোকানের সামনে এসে অপেক্ষা করবে। তারপর মন খারাপ করে ফিরে যাবে। তখন কি চোখ থেকে দু'ফোটা পানি গড়িয়ে পরবে না! ডিবি পুলিশ গুল্লুর মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে। খুবই নোংরা একটি ঘর। সবচেয়ে দুঃখের কথা আকাশ দেখা যায় না! সে জানে, আগামীকাল তাকে ডিবি অফিস থেকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে। কোর্ট থেকে কারাগারে। এর মধ্যে প্রথমবার পাঁচ দিন এবং দ্বিতীয় বার তিন দিন রিমান্ডে নেওয়া হবে। সব কিছু হয়তো আগে থেকেই ঠিক করা থাকে উপরের নির্দেশে। গুল্লু ভয় পাচ্ছে না, ঘাবড়ে যাচ্ছে না। নির্বোধ সরকারের কাছে ভালো কিছু আশা করা ভুল। গুল্লুর অপরাধ হচ্ছে- সে দেশ এবং দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে ব্লগ এবং ফেসবুকে তার চিন্তা তুলে ধরেছে। তার চিন্তা সরকারের এবং কিছু সুশীল ব্যাক্তির ভালো লাগে নি। এই জন্য গুল্লুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আধুনিক যুগে বা সরকারী ভাষায় ডিজিটাল যুগে- নেট অথবা টিভি খুলে বসলেই মুহূর্তের মধ্যে সব জানা যায়। এই জানার মধ্যেও নানান রহস্য এবং জটিলতা মিশে থাকে। পুরোপুরি সত্য কেউ জানাতে পারে না। সত্যের মধ্যে মিথ্যা আর মিথ্যার মধ্যে সত্য লুকানো হয়। গুল্লুর বাসার পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের- গুল্লুর বাবা চিৎকার চেচামেচি করছেন। কার সাথে চিৎকার চেচামেচি করছেন- স্পষ্ট না। গুল্লুর মা কাঁদছে আর তার ভাইরা মন খারাপ করে বসে আছে। এদিকে রিয়া মেয়েটি বাসায় এসে গুল্লুর ঘটনা জানার পর থেকেই প্রচন্ড অস্থিরবোধ করছে। তার ইচ্ছা করছে- এক্ষন গুল্লুকে ছাড়িয়ে আনে। হিমি নামের মেয়েটির বুকের ভেতর আনচান করছে- গুল্লুকে দেখার জন্য তার সাথে একটু কথা বলার জন্য। অনলাইন পত্রিকা গুলো রসালো প্রতিবেদন করেছে। ফেসবুকে তোলপাড় হচ্ছে। দু'টো দল হয়ে গেছে। একদল বলছে- গুল্লুকে গ্রেফতার করে সরকার উচিত কাজ করেছে। গুল্লু হচ্ছে ক্যান্সার। ক্যান্সার কে চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। আরেক দল বলছে- গুল্লু হচ্ছে- মুক্তমনা একজন মানুষ। সরকার গুল্লুকে গ্রেফতার করে ভুল করেছে। অবিলম্বে তার মুক্তি চাই। গুল্লু যা ভেবেছিল- তাই হলো। কোর্ট থেকে তাকে রিমান্ড অতঃপর কারাগার প্রেরন। রিমান্ডে গুল্লুকে চারটা থাপ্পড় আর ভয়াবহ সব নোংরা কথা বলা হলো। এমন সব নোংরা কথা যা একজন সুস্থ মানুষ শুনলে- সাথে সাথে মস্তিস্কে রক্তক্ষরন হয়ে যাবার কথা অথবা স্ট্রক করে মরেও যেতে পারে। রিমান্ডের অত্যাচার শেষে গুল্লুকে কারাগারে পাঠানো হলো। তাকে যে 'সেল'-এ রাখা হলো- তার নাম ছাব্বিশ 'সেল'। ছাব্বিশ 'সেল' খুবিই ভালো। নিজের একা একটা রুম আর সবচেয়ে বড় কথা বিশাল একটা বারান্দা আছে। খবরের কাগজ পড়তে দেওয়া হয়। কোনো মশা নীই এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। গুল্লুর পাশের সেল-এ একজন দুর্নীতিবাজ আছে। গুল্লুর সাথে তার এখনও দেখা হয়নি। গুল্লু যখন ঘুমায়, তখন দুর্নীতিবাজ বারান্দায় আসে, আবার দুর্নীতিবাজ যখন ঘুমায় গুল্লু তখন বারান্দায় আসে। কিছুক্ষন আগে দুর্নীতিবাজের সাথে গুল্লুর অনেক দেখা হয় কথা হয়। অনেক কথার মধ্যে একটা কথা এই রকম- " লালু, কালু, মালু আমার চেয়ে বেশী দুর্নীতি করে ছাড়া পেয়ে গেল, আর আমি তাদের চেয়ে অনেক কম দুর্নীতি করে ছাড়া পেলাম না। আজিব । আজিব বলে সে একটা সিগারেট ধরালো। তারপর আকাশের দিকে ধোয়া ছাড়ল। অনেকেই গুল্লুর সাথে দেখা করতে এসেছে। গুল্লু এখন অনেক নিশ্চিন্ত। আগামী এক মাসের বই গুল্লুর মজুদ আছে। দুর্নীতিবাজ বলেছে- বই যা লাগে আমাকে বলবে- ব্যবস্থা করে দিব। গুল্লু প্রতিদিন নিয়ম করে, সকালে এবং গভীর রাতে অনেকক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। গুল্লু তার ডায়েরী'তে লিখেছে- "বিনা অপরাধে সাজা ভোগ করছি। সত্যিকার অর্থে কারাগারে থাকার মত অপরাধ করিনি। ক্ষমতাবানদের কাজ কারবার অন্যরকম। তাদের মতিগতি বোঝা যায় না। জেলখানাতে বেশ ভালোই আছি । কোনো কাজ নেই । অনেক অবসর। এখানকার সবার সাথে অল্প দিনেই খুব খাতির হয়ে গেছে। চোর ছিনতাইকারী যেমন আছে- আবার আছে কিছু আছে জ্ঞানী সহজ সরল মানুষ। বিকেলবেলা সবার সাথে দেখা হয়। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানের মতই আড্ডা দেই। গল্প করি। অনেক কয়েদী নিয়মিত নামাজ পড়ে। জেলখানায় সব পাওয়া যায়। শুধু টাকা থাকতে হবে। গাঁজা ফেনসিডিল কোনো ব্যাপার না। টাকা দিলে সব ব্যবস্থা হয়ে যায়। আমার ছাব্বিশ সেল এ প্রতিদিন সকালে দুইটা কাক আসে। কা-কা করে কি যেন বলে। কাকদের ভাষা জানা থাকলে ভালো হতো। ওদের সাথে গল্প করা যেত। দুর্নীতিবাজ টার জন্য প্রতিবেলায়ই বাইরে থেকে খাবার আসে। সে প্রতিবার খাওয়ার আগে- আমাকে ডেকে নেয়। তার সাথে খেতে বলে। লোকটা নানান গল্প বলে, সব গল্পই দুর্নীতি নিয়ে। দিন তারিখের হিসাব রাখি না। আজ কি বার তাও জানার আগ্রহ বোধ করি না। এখন পর্যন্ত রিয়া বা হিমি কেউ দেখা করতে আসিনি । এই দুই জন কে দেখার জন্য মনে মনে তীব্র ভাবে অস্থির বোধ করছি । একজন প্রেমিকা আর একজন বন্ধু । দুইজনই জীবনের অংশ । রিয়া এবং হিমি আকাশ খুব পছন্দ করে। তারা বলেছে- গুল্লু মন খারাপ হলে- আকাশ দেখো। আকাশ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারে। সাজানো বা বানোয়াট অথবা কোনো নাটক বা সিনেমার দৃশ নয়। গুল্লুর সাথে দেখা করতে আসছে- রিয়া এবং হিমি। ছোট একটা ঘরে গুল্লু বন্ধী। ছোট ছোট কাঁটা তারের ভেতর দিয়ে গুল্লু তার দুইজন প্রিয় মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে। কাকতালীয় ভাবে রিয়া এবং হিমি একই সাথে দেখা করতে আসছে। এবং তারা দুই জনই আকাশি রঙের শাড়ি পড়েছে। তবে রিয়া'র শাড়িতে বড় বড় ফুল আঁকা। হিমির শাড়িতে ছোট ছোট ফুল। রিয়া কাঁদছে। রিয়ার চোখের পানি তার চশমা'তে পড়ছে। সে চশমা থেকে চোখের পানি পরিস্কার করছে না। হিমি জেলখানায় আসার আগেই অনেক কেঁদেছে। তার চোখ মুখ ফুলে আছে। গুল্লুর ইচ্ছা করল- তাদের দুইজনকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু এমন ভাবে কাঁটা তার দিয়ে আটকানো- যে একটা আঙ্গুল পর্যন্ত ধরা যাবে না। তিনজন মানুষ কিন্তু তারা সবাই চুপ করে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। কথা না বলেও অনেক কিছু বলা যায়। নিরবতারও একটা ভাষা আছে। কারাগারের লোকদের উচিত- বিশেষ করে শরত কালে কয়েদীদের আকাশ দেখার ব্যবস্থা করা। ছোট্র একটা খুপরী ঘর থেকে আকাশ দেখে আনন্দ পাওয়া যায় না। আকাশ দেখতে হয় প্রিয় মানুষের হাতে হাত রেখে। একমাত্র আকাশেরই আছে নির্ভুল ঠিকানা। গুল্লুর সাত বছরের জেল হয়েছে। এই সাত বছরে কত কিছুই না বদলে যাবে। কিন্তু এই তিনজন মানুষ কখনও বদলে যাবে না। আর বদলে যাবে না- আকাশ। আকাশ কি বিশাল ! কি সুন্দর ! কি সুন্দর ! আকাশ সবার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। থাকবে। ঠিক যেভাবে প্রেমিক প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে। মা সন্তানের জন্য। রিয়া গুল্লুর জন্য। গুল্লু হিমির জন্য। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮
false