label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
fe
বলয় ভাঙার রাজনীতি, বৃত্তের ভেতরের মানুষেরা বলয় ভাঙার রাজনীতি, বৃত্তের ভেতরের মানুষেরা ফকির ইলিয়াস------------------------------------------------------------------- চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন দেশের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া। তার একটা পরিচয় ছিল, তিনি জাতির জনক বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী। অত্যন্ত মেধাবী এই মানুষটি ছিলেন খুই নিভৃতচারী। কোন মোহ, কোন লোভ তাকে কখনই স্পর্শ করতে পারেনি। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতি তার একজন মেধাবী সন্তানকে হারিয়েছে। ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যু সংবাদ শুনে ‘সুধাসদনে’ ছুটে গিয়েছিলেন বিরোধীদলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পাশে একান্তে সময় কাটিয়েছেন ২০ মিনিট। এ সংবাদটিও জাতির জন্য আশার সঞ্চার করছে। চরম দু:সময়ে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে­ এটাই মানবিক শক্তি এবং প্রত্যয়।নি:সন্দেহে বলা যায়, বেগম জিয়া একটি ভাল কাজ করেছেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে ঐক্য-সংহতি প্রকাশে অসুবিধা কি? অন্যদিকে বেগম জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির বিষয়টির শুনানিতে বিব্রত বোধ অব্যাহত রয়েছে। এই কথাটি অনেকের কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না, মাননীয় বিচারকরা দেশের আইন অনুসরণ করে অগ্রসর হচ্ছেন না কেন? তারা কেন বার বার বিব্রত বোধ করছেন।পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে- লন্ডনে অবস্খান করলেও বিএনপির সব নীতিনির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন তারেক রহমান। তার নির্দেশেই সেনানিবাসের বাড়ি নিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই বছরের মাঝেই দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান। নতুন করে ধরতে পারেন দলের হাল। তারেক রাজনীতিতে ফিরে আসবেন­ তা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ বাংলাদেশে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা আরও দীর্ঘকাল চলবে তা প্রায় নিশ্চিত। আর এক্ষেত্রে বি. চৌধুরী, সাইফুর রহমানরা কিছুটা অকৃতকার্য হলেও বড় দুটি দলের নেতৃত্ব থেকে যাবে দুই শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পারিবারিক বলয়ে। আমরা পত্রপত্রিকায় এ সংবাদ দেখছি, শেখ রেহানা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনিও জাতির জনকের কন্যা। আগামী কাউন্সিলে শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে সত্যি সরে দাঁড়ান তবে কে সভাপতি হচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা তো রয়েছেই। মোট কথা হচ্ছে দেশ এগিয়ে যাবে একটি নিয়মতান্ত্রিক পারিবারিক রাজনৈতিক ধারায়।বাংলাদেশে প্রথা ভাঙার রাজনীতির কথা আমরা কম শুনিনি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে শুরু করে, বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম কোন দলেই হালে পানি পায়নি। পারেননি কর্নেল অলি, জে. ইবরাহিম, ড. ফেরদৌস কোরেশীর মতো পরিচিত রাজনীতিকরাও। নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস সাহস করতে পারেননি। মহাজোটের শক্তি নিয়ে জাসদ কয়েকটি আসন পেয়েছে। সেটাকেও বৃত্তভাঙার রাজনীতি বলা যাবে না। চেষ্টা করা হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমেও। যারা সংস্কারের কথা বলে নাব্য নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন তারাও ছিটকে পড়েছেন। এভাবে গত সাঁইত্রিশ বছরে বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক ধারা, অনেক রাজনৈতিক নেতার অকাল মৃত্যু হয়েছে রাজনীতির ময়দানে। এর মাধ্যমে মানুষ কি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে? আদৌ কোন অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে কি না সে প্রশ্নটিও থেকে যাচ্ছে প্রকারান্তরে।দুই.বাংলাদেশে যে পীড়াদায়ক পরিস্খিতিটি জনমানুষকে সবচেয়ে বেশি বিব্রত করেছে তা হচ্ছে ইতিহাস বিকৃতি। এটা স্বীকার্য বিষয়, জাতির জনক শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন সে সময়ের একজন মেজর জিয়াউর রহমান। জিয়া তার জীবদ্দশায় কখনই দাবি করেননি তিনি স্বাধীনতার ঘোষক। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন অভ্যুথান, পালটা অভ্যুথান পেরিয়ে ক্ষমতার স্পর্শ পান তৎকালীন সামরিক বাহিনীর উপপ্রধান জে. জিয়াউর রহমান। তারপর রাজনীতিতে তার উত্তরণের প্রক্রিয়া, সিঁড়ি এবং ধারাবাহিকতা দেশবাসীর অজানা নয়। সেই জিয়াউর রহমান আরেকটি সামরিক ক্যুতে নিহত হওয়ার পরই তাকে ‘অবতার’ বানাবার চেষ্টা করা হয়। মূলত মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান, কালের প্রক্ষেপণে রাষ্ট্রপতি হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তিনিই হয়ে গেলেন ইতিহাসের মহানায়ক। অথচ তাই করা হয়েছে। আজকের প্রজন্মকে ভ্রান্ত ইতিহাস বলে ‘ব্রেনওয়াশ’ করা হয়েছে, হচ্ছে অথবা চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা গোটা জাতির জন্যই বড় মর্মবিদারক।সেনানিবাসের বাড়িটি যে জিয়া পরিবারকে দেয়া হয়েছিল সে সময়ের জিয়া পরিবার আর আজকের জিয়া পরিবার কি সমান? না সমান নয়। বিত্তবৈভবে তারেক-আরাফাতরা এখন অনেক শক্তিশালী। তারপরও তাদের এই সেনানিবাসের অভ্যন্তরে থাকার খায়েশ কেন? তা ছেড়ে দিতে এতো কঠোর হচ্ছেন কেন জিয়া পরিবার? স্মৃতির তপস্যার জন্য? সেনানিবাসে বসবাসের স্মৃতি তো বাংলাদেশের অন্যান্য অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ও তাদের পরিবারেরও রয়েছে।বিভিন্ন সংশোধনী, বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় খাতের তোয়াজ করে সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমান এই দেশে যে জঞ্জাল তৈরি করে গেছেন তার খেসারত আজও দিতে হচ্ছে গোটা জাতিকে। তার দল এখনও এই দেশে রাজাকার-আলবদরকে বাঁচাবার জন্য নানা ফন্দি ফিকির করছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লেবাসে মূলত জিয়া এই দেশে কি কি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিলেন এর পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার এই প্রজন্মের পক্ষ থেকে। শেষ পর্যন্ত একাত্তরের চিহ্নিত রাজাকার গো. আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অন্যদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ অর্থাৎ বর্তমান সরকার এসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ব্যাপারে কতটা আন্তরিক তা দেখার সময় আসছে। বিচার করা যাবে কি না এমন সংশয়ও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের আইন, সংবিধান, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্খা সবই আছে। তাই কোন মিছিল-মিটিং, হুমকি ধমকিকে পরোয়া না করে সুষ্ঠু বিচার কার্য সম্পন্ন করাটাই কালের-প্রজন্মের দাবি। একটা সময় এসেছে এই ব্যাত্বের বলয় ভাঙার। একটা সময় এসেছে বৃত্তের ভেতরে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করার মাধ্যমে সেই সত্যটিই প্রতিষ্ঠিত হোক।১২ মে ২০০৯ --------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ।ঢাকা। ১৫ মে ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - জুলি জোনস
false
hm
পিচ্চিতোষ গল্প ১১: বড়বুর কাছে লেখা চিঠি টুটুলের বড়বু টুটুলদের সাথে থাকে না। সে থাকে দূরের ঢাকা শহরে, মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে। ছুটিতে সে ফেরে বাড়িতে। তাই বাকিটা সময় টুটুলকে চিঠি লিখতে হয় বড়বুকে। টুটুলের চিঠি লিখতে যে খুব ভালো লাগে, এমনটা নয়। কিন্তু বাসার লোকজন এক এক সময় যা করে, তা চিঠি লিখে না জানিয়ে চুপ করে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। টুটুল প্রতিবাদী আত্মা। তবে যেসব জায়গায় প্রতিবাদ করলে একটু সমস্যা হয়, কিংবা কোনো লাভ হয় না, সেসব জায়গায় সে মুখ বুঁজে সব সহ্য করে নিয়ে বড়বুকে চিঠি লিখতে বসে পড়ার ফাঁকে। টুটুল বড়বুকে চিঠি লেখে বড়বুর দিয়ে যাওয়া প্যাডের কাগজে। কাগজগুলি খুব সুন্দর, পাতলা, ধবধবে সাদা, কিন্তু কোথাও না কোথাও একটা বিশ্রী ওষুধের ছবি থাকবেই থাকবে। টুটুল একটা স্কেল বসিয়ে সাবধানে সেই ছবিগুলি ছিঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর একদম সাদা কাগজে লিখতে বসে। বড়বুকে চিঠি লিখতে গেলে টুটুল ড্রয়ার থেকে ফাউন্টেন পেন বার করে আনে। সে এমনিতে লেখে বলপয়েন্ট পেন দিয়েই, কিন্তু কালির গন্ধ তার কাছে খুব ভালো লাগে। বড়বুকে চিঠি লেখার সময় কাগজ আর কালির গন্ধ মিলিয়ে একটা টাটকা, চনমনে গন্ধ ভাসে আশেপাশে, যত বেশি লেখা তত বেশি গন্ধ। কিন্তু ফাউন্টেন পেন অনেক ভারি লাগে টুটুলের কাছে, বেশিক্ষণ লিখলে হাত টনটন করে তার। অনেক সময় লাইনগুলি বেঁকে একটু নিচে নেমে যায়, পরের লাইনটা আবার একটু নিচ থেকে শুরু করে সেটাকে সোজা করতে হয়। এত ঝামেলা করেও টুটুল চিঠি লেখে। কারণ সে প্রতিবাদী আত্মা। সেদিন যেমন মায়ের সাথে দূরে একটা বাসায় গিয়ে টুটুলের ভালো লাগছিলো না। কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার বাসা, টুটুলের সমবয়সী কেউ নেই সেখানে, একেবারেই ছোটো একটা বাচ্চা একটু পর পর ট্যাঁ করে চিৎকার করে ওঠে, আর তার মা তাকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ ভুলিয়েভালিয়ে আবার ছেড়ে দেয়। টুটুলের ছোটবুর বয়সী একটা মেয়ে একটু পর পর এসে টুটুলের দিকে কড়াচোখে তাকিয়ে আবার কোথায় যেন চলে যায়। টেলিভিশনও বন্ধ। কোনো বই নেই পড়ার জন্যে। টুটুল আনমনে এ ঘর সে ঘর করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে এক পর্যায়ে মায়ের পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বলছিলো, "মা চলো বাসায় যাই। ভাল্লাগছে না।" মা টুটুলের কথায় পাত্তা না দিয়ে হড়বড় করে সেই মহিলার সাথে কী যেন কথা বলেই যাচ্ছিলো, বলেই যাচ্ছিলো। তাই টুটুল বাধ্য হয়েই একটু গলা চড়িয়ে মাকে অনুরোধ করছিলো বারবার। এক পর্যায়ে মা চটেমটে সবার সামনেই কষে ধমক দিয়েছিলো টুটুলকে, "আহ, থামলি! অসহ্য এই ছেলেটা! একটু যদি শান্তি দিতো!" টুটুল বাড়ি ফিরে মুখ গোঁজ করে চিঠি লিখতে বসেছিলো বড়বুকে। কাজটা মা ঠিক করেনি। বড়বুর উচিত মাকে একটু শাসন করা। এবারের ছুটিতে এসেই যেন সে মাকে বকে দেয়। বাবাকে টুটুল অনেক ভয় পায়, কিন্তু বাবার নামে কিছু লিখতে সে সাহস পায় না। তাছাড়া বড়বুও মনে হয় বাবাকে একটু ভয় পায়, তাই টুটুল বাবার নামে অভিযোগগুলি সরাসরি লেখে না। যেমন সেদিন বাবা তার ওপর অনেক রাগ করেছে, সে নাকি লেখাপড়া করে না, সে নাকি শুধু খেলে আর টিভি দেখে, তাই বাবা অনেকক্ষণ বসিয়ে বসিয়ে ট্র্যান্সলেশন করিয়েছে টুটুলকে। "বালকটির আচরণ দেখিয়া তাহার পিতা বাকরুদ্ধ হইয়া পড়িলেন", এ ধরনের শুধুশুধু কঠিন কঠিন সব সেনটেন্স। কিন্তু সবচেয়ে অসহনীয় যার আচরণ, সে হচ্ছে ছোটবু। ছোটবু হিংসুটির হদ্দ, আর অতি চতুর, তাই সে সবসময় টুটুলকে শোষণ নিপীড়নের ওপর রাখে। সে টুটুলকে কিলঘুষি মারে, কিন্তু অনেক অত্যাচার সহ্য করার পর উল্টে টুটুল মোটে একটা কিল মারতেই সে হাউমাউ করে গড়িয়ে কেঁদে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যে মা দৌড়ে এসে টুটুলকে চটাশ করে চড় বসিয়ে দেন। টুটুল যতই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে, সে মোটে একটা মেরেছে, আর ছোটবু অনেকগুলি, কিন্তু মা শোনে না। "মেয়েদের গায়ে হাত তুলিস, ছোটলোক কোথাকার" বলে চেঁচামেচি করে। আর ছোটবু এত বড় শয়তান, সে সন্ধ্যাবেলা বাবা অফিস থেকে ফিরলে একটু পর তার কাছে গিয়েও কাঁদো কাঁদো গলায় নালিশ দেয়। বাবা তারপর টুটুলকে অ্যায়সা কড়া ধমক লাগায় যে টুটুলের মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। এরপর আর টিভি দেখার জো থাকে না, ট্র্যান্সলেশন করতে হয়। ছোটবু আর টুটুল পাশাপাশি টেবিলে বসে পড়ালেখা করে। টুটুল তার ড্রয়ারটায় নিজের সবকিছু রাখে, সে একটু উঠে আশেপাশে কোথাও গেলে ছোটবু তার ড্রয়ার হাঁটকে রেখে দেয়। কিছু বললে বলে, গুছিয়ে দিলাম তো! টুটুল অনেক রেগে যায়, কারণ সে তো ছোটবুর ড্রয়ার হাঁটকাতে যায় না! আর ছোটবুর কী দরকার পড়েছে তার ড্রয়ার গোছানোর? কাজের সময় ছোটবুকে বললে সে কিছু করে দেয় না, কেবল গায়ে পড়ে বদমাইশি করে। ড্রয়ারে একবার একটা বড় তেলাপোকা কীভাবে যেন ঢুকে বসে ছিলো, টুটুল এতবার করে গিয়ে ছোটবুকে বলেছে তেলাপোকাটা বের করে দেবার জন্যে, ছোটবু শোনেনি, সে দাঁত বের করে হাসে আর বলে, তোর ড্রয়ার তুই পরিষ্কার কর! রাতে মাঝে মাঝে টুটুলের বাথরুম পায় খুব, কিন্তু তার ভয় লাগে একা যেতে। সারাটা বাড়ি তখন নিঝুম হয়ে থাকে, পাশের গাছগুলি বাতাসে খড়খড় শব্দ করে, আর রাতে বাথরুমে একটা মাকড়সা কোত্থেকে যেন বের হয়ে আসে। সে ছোটবুর কাঁধ ধরে ঝাঁকায়, ছোটবু ছোটবু, একটু আসবি আমার সাথে? ছোটবু ঘ্যানঘ্যান করে, তাকে ঠেলে গুঁতিয়ে তুলতে হয়। সে হাই তুলতে তুলতে বাথরুমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ, টুটুলের বাথরুম শেষ হলে তারপর সে আলো নিবিয়ে দিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। কিন্তু সে এতবড় পাষণ্ড যে সেদিন টুটুল বাথরুমের ভেতরে থাকতেই আলো বন্ধ করে দিয়েছে। অন্ধকারে ভয়ে টুটুলের দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। ছোটবুর নামে অভিযোগ গুণে শেষ করার নেই, তাই টুটুল একটা রুল টানা খাতার পেছনে সব সংক্ষেপে টুকে রাখে। মিথ্যা বিচার। আমি মাত্র একটা মেরেছি। ও আগে মেরেছে। মিথ্যা বিচার। আমি খেলতে গিয়ে রবিনকে মারিনি, রবিন পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। চা বানাতে বলেছিলাম, বানিয়েছে কিন্তু আমাকে দেয়নি। মুড়ি বানাতে বলেছিলাম, বানায়নি। ... ছোটবু এত বড় বদমাশ যে সেই রুল টানা খাতাটার পৃষ্ঠা একদিন ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। কত কত নোট ছিলো তাতে! টুটুলের স্মৃতিশক্তি ভালো। সে একেবারে প্যাডের পাতায় আবার সব লিখতে থাকে গুটি গুটি হরফে। বাবাকে দিয়ে একবার বানান দেখিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু তার চিঠি কেউ পড়ুক, এটা টুটুল চায় না। এ কারণেই টুটুল কখনো চিঠিগুলি বাবাকে পোস্ট করতে দেয় না। বাবা যদি খুলে পড়ে? মাঝে মাঝে বড়বুকে লেখা দুয়েকটা এমনি চিঠি সে বাবাকে দেয়, যেমন ছোটবু দেয়, বাবা সব ক'টা একটা হলুদ খামে ভরে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু বাবা নিশ্চয়ই পড়ে, তারা কী লিখেছে। টুটুল তাই পুরনো চিঠির খামগুলি জমিয়ে রাখে, বুবুকে লেখা চিঠিগুলি সে সেগুলিতে ভরে রাখে। ড্রয়ারে রাখতে সে সাহস পায় না, ছোটবু ড্রয়ার হাঁটকায়। তোষকের নিচে সে রাখতো আগে, কিন্তু ছোটবু মাঝে মাঝে তোষকের নিচটাও হাঁটকায়। টুটুল তাই চিঠি লেখা শেষ হলে গিয়ে মাকে ধরে ঝুলোঝুলি করে, আলমারিতে একটা ড্রয়ারের মালিকানা টুটুলের, সেটাতে সে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রাখে চিঠিগুলি। ছুটিতে বড়বু ফেরে হোস্টেল থেকে, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয় তারা বাসায় ফিরতে ফিরতে, সেদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে টুটুলের পা টনটন করতে থাকে। রাস্তায় সব ক'টা হুড তোলা রিকশাকেই তার মনে হতে থাকে বড়বুর রিকশা। কিন্তু সেসব রিকশা সব আস্তে আস্তে তাদের গেট পেরিয়ে ডানে বাঁয়ে সোজা অন্যদিকে চলে যায়, অনেক অনেকক্ষণ পর বড়বুর রিকশাটা ঢোকে বাসায়। টুটুল দৌড়ে গিয়ে বড়বুকে জাপটে ধরে, তার ব্যাগটা নিজেই টেনেটুনে ওপরে নিয়ে আসে, তারপর মায়ের কাছে গিয়ে খোঁচাতে থাকে আলমারিটা খুলে দেবার জন্যে। মা চটে যায়, বলে, আহ মাত্র বাসায় এলো তো, পরে দেখাবি, পরে দেখাবি। রাতে খুলে দিবো, ঠিকাছে? এখন যা। টুটুল তারপর খেলতে চলে যায়, কিংবা বড়বুর গোসল করা শেষে তার সাথেই খেতে বসে এক পাতে। মা বড়বু ছোটবু কলকল করে কথা বলতে থাকে, সন্ধ্যায় বাবা বাজার নিয়ে বাসায় ফেরে উৎফুল্ল মুখে, টুটুলের আর সময় হয় না চিঠিগুলি দেখানোর। রাতে খাবার পর টুটুল মাকে গিয়ে ফিসফিস করে বলতে থাকে আলমারি খুলে দেবার জন্যে। মা খুলে দিলে সে ঐ প্লাস্টিকের ব্যাগটা নিয়ে ছুটে যায় বড়বুর কাছে। বড়বু ছুটিতে বাড়ি এলে টুটুল আর ছোটবুর সাথে বড় বিছানাতে ঘুমায়, সে কোন পাশ ফিরে শোবে সেটা নিয়ে টুটুল তার ছোটবুর সাথে ঝগড়া করে। টুটুল বিছানায় উঠে ব্যাগ থেকে চিঠিগুলো বের করে, তারপর বড়বুকে পড়তে দেয়। ছোটবু হিহি করে হাসে, বলে, মুদির হিসাব লিখে রেখেছে! শয়তান, বুবুর কাছে চুকলি কাটে খালি! টুটুল চোখ রাঙিয়ে শুয়ে থাকে বুবুর পাশে। টুটুলের বড়বু হয়তো সেই ভোরে ঢাকায় ট্রেনে চেপে বসেছে, সারাটা দিন জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছে, ঘুমে তার চোখ বুঁজে আসে, কিন্তু সে টুটুলের প্রত্যেকটা চিঠি খুলে খুলে পড়ে, পুরানো ভাঁজ খোলার পর আবারও কালির মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঘরের বাতাসে। বাবা ভারি গলায় ডাকে কয়েকবার, "ঘুমাও না মা? আলো বন্ধ করে শোও!" বড়বু বলে, "এইতো বাবা, যাই!" নচ্ছাড় ছোটবু বলে, "বাবা, বুবু টুটুলের চিঠি পড়ে! অনেকগুলি চিঠি!" টুটুল জোর করে চোখ টেনে জেগে থাকে, সব ক'টা চিঠি পড়া শেষ হবার পর সে ক্ষীণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "পড়েছো? পড়েছো সব?" টুটুলের বড়বু উঠে গিয়ে আলো নিবিয়ে দিয়ে এসে টুটুলকে জড়িয়ে ধরে বলে, "হ্যাঁ, সব পড়েছি! কালকেই সব বিচার করবো। এখন চলো ঘুমাই!" টুটুল বড়বুকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে, তার খুব হালকা লাগে সবকিছু।
false
rg
টেলিভিশন কেন দেখব, কেন দেখব না_ আমাদের দেশে এখন অনেকগুলো টেলিভিশন চ্যানেল। সংখ্যায় কতগুলো হবে? ২৫টি? ২৮টি নাকি ৩০ টি? জানি না। তবে আগে যেখানে কেবল বাংলাদেশ টেলিভিশন ছিল, সে তুলনায় এই সংখ্যা কিন্তু অনেক। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল, এতোগুলো টেলিভিশন চ্যানেল থাকা স্বত্ত্বেও একটি চ্যানেলও বিশেষায়িত চ্যানেল হতে পারলো না। সবগুলো চ্যানেলেই একই ধরনের বস্তাপচা অনুষ্ঠান। কোনো নতুনত্ব নেই। সবচেয়ে বিরক্তিকর হল, যখন সংবাদ প্রচার শুরু হয়, প্রায় সবাই সংবাদ দেখায়। যখন বিজ্ঞাপন বিরতি শুরু হয়, তখন প্রায় সবার বিজ্ঞাপন বিরতি। যখন টক শো শুরু হয়, তখন প্রায় সবারই টক শো। যখন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান শুরু হয়, তখন সবার প্রায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। যখন বাংলা সিনেমা দেখানো শুরু হয়, তখন প্রায় সবাই বাংলা সিনেমায় হাবুডুবু খায়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর এই নাজুক দশার পেছনে কি কি কারণ থাকতে পারে? চলুন একটু আলোচনা করা যাক। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে যারা অনুষ্ঠান সূচি বানানোর দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, আপনাদের মাথায় কি নতুন কিছু নাই? যদি না থাকে তাহলে টেলিভিশন চ্যানেলের একজন অনুষ্ঠান বিষয়ক প্রযোজক বা এডিটর বা ম্যানেজার, আপনার পদমর্যাদা যা-ই হোক না কেন, আপনি কারো দয়ায় বা অনুরোধে এই চাকরিটা করছেন। এই চাকরিটা করার জন্য আপনি মোটেও উপযুক্ত কোনো ব্যক্তি নন। স্বজনপ্রীতি বা আত্মীয় বা বন্ধুত্ব বা কোনো এক সম্পর্কের জোরে আপনি এই পদটি দখল করে আছেন। টেলিভিশনে কিভাবে দর্শক ধরে রাখতে হয়, সে বিষয়ে আপনার কোনো বিবেক নেই। বুদ্ধির কথা নাইবা বললাম। ফলে একই ধরনের প্রোগ্রাম দেখার জন্য দর্শক মোটেও বাধ্য নয়। দর্শকের হাতে থাকে শক্তিশালী এক রিমোট। যা দিয়ে দুনিয়ার অনেক চ্যানেল সে মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তাই যখনই আপনি সংবাদের মাঝে উচ্চারণ করেন- 'সঙ্গেই থাকুন' বা 'দেখতে থাকুন' বা যতো ধরনের চালাকি করে বিজ্ঞাপন বিরতিতে যেতে চান, দর্শক সঙ্গে সঙ্গেই রিমোট বাটন চেপে পছন্দের বা অন্য কোনো প্রোগ্রাম খুঁজতে থাকে। তখন আর আপনার চালাকিটা কাজে লাগে না। আরেকটা জিনিস হল, টেলিভিশনের মনিটরে দর্শকের কিন্তু দুটো চোখ দিয়েই দেখার নিয়ম। আপনি যদি নিজেকে বেশি বুদ্ধিমান মনে করে একদিকে প্রোগ্রাম চালাতে থাকেন, নিচে স্ক্রলে সর্বশেষ সংবাদ এবং বিজ্ঞাপন চালাতে থাকেন, আবার মনিটর বিশেষ কায়দায় ছোট করে একপাশে বা দুইপাশে বিজ্ঞাপন চালাতে থাকেন, বা কোনো এক কোনায় একটা জিনিস কিছু সময় পরপর ফুটে ওঠে, এগুলো দর্শকদের নিশ্চয়ই বিরক্তি ধরায়। চোখের সমস্যা তো করেই। আপনাদের প্রোগ্রাম দেখতে গিয়ে আমার চোখ নষ্ট করার সময় একদম নাই। দেশে আইনের যথাযথ ব্যবহার থাকলে, কোনো দর্শক টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে এই চোখ নষ্ট করার ফাজলামি সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে মামলা ঠুকে দিতো। ভাগ্যিস, আমাদের আইন-কানুন এবং তার প্রয়োগ ততোতা শক্তিশালী এবং কঠোর নয়। কিন্তু কোটি কোটি দর্শকের চোখ নষ্ট করার অপরাধে তাই আপনাদের কিছুই হয় না। সবগুলো চ্যানেলে একই সংবাদ দেখানোর মানে কি? কয়েকজন মন্ত্রী, কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতার প্রায় সারাদিনের সকল অনুষ্ঠান সবাই প্রচার করেন। এটা খুবই বিরক্তিকর। টেলিভিশনে আমার সবচেয়ে প্রিয় অনুষ্ঠান শাইখ সিরাজের 'মাটি ও মানুষ'। সেখানে নতুনত্ব যেমন আছে, তেমনি নতুন নতুন বিষয়ও উঠে আসে প্রায়ই। টক শোতে সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় হল, যখন আলোচনা জমে ওঠে, তখন যিনি অ্যাংকর তিনি বক্তাকে থামিয়ে দিয়ে বিজ্ঞাপন বিরতিতে চলে যান। আসল কথাটি আর বলা হয় না। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, যারা সম্মানিত আলোচক, তাদেরও কোনো ব্যক্তিত্ববোধ নেই। ওনারা তারপরেও অনুষ্ঠানে থাকেন এবং পরের দিন বা একই দিন অন্য চ্যানেলে আবার আলোচনার জন্য টক শোতে হাজির হন। অনেক আলোচক তো কি বলেন, নিজেরাই জানেন না। কিছুক্ষণ বগবগ করেন। আচ্ছা, আপনি-ই বলুন, সাদি মোহাম্মদকে কি রবীন্দ্রসঙ্গীত বাদ দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলে সবজি রান্না করতে দেখতে আপনার ভালো লাগবে? মিতা হককে গানের বদলে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতে দেখলে ভালো লাগবে? শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়াকে টেলিভিশনে কৌতুক বলতে বা গান গাইতে দেখতে ভালো লাগবে? ঈদের সময় আমাদের প্রায় সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেল একই বস্তাপচা অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হয়। কারো সাতদিন, কারো আটদিন, কারো ছয় দিন ব্যাপী ঈদের প্রোগ্রাম। কিন্তু কোনো প্রোগ্রামে কোনো নতুনত্ব নেই। তারপর বিজ্ঞাপনের বিরক্তিতে সেই বস্তাপচা অনুষ্ঠান দেখে সময় কাটাবেন, সে সুযোগও নেই। আমাদের দেশে সবাই নাট্যকার। সবাই পরিচালক। যার যখন ইচ্ছে হয় নাটক বানায়। সেই নাটক আবার এই চ্যানেলগুলোতে দেখায়!!বছরে অন্তঃত যদি একটা ভালো নাটক দেখার সুযোগ পেতাম, কোনো আফসোস থাকতো না। কিন্তু সেই সুযোগ কোথায়? সেদিন, একাত্তর টিভিতে আমার দুইজন কাছের মানুষ একাত্তর জার্নালে কিছুক্ষণ কথা বললেন। একজন বিশিষ্ঠ নাট্যকার ও পরিচালক অনিমেষ আইচ। আরেকজন টেলিভিশন সংগঠক ও কবি, ও লেখক পারভেজ চৌধুরী। আমার খুব দুর্ভাগ্য যে, এই দুইজন ব্যক্তিও টেলিভিশনে গিয়ে সরাসরি অনুষ্ঠানে কোনো নতুন কথা শোনাতে পারলেন না। বরং দুইজন যার যার পক্ষে আলোচনা করলেন। যা অনেকটা যাতে কেউ অখুশি না হন এমন একটা অবস্থা বজায় রেখে ভারী কৌশলে কথা বললেন। আমার কথা হল, তাহলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবে? কারো একজন তো দায়িত্ব নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এখন নাটক বানানোর দিকে প্রচুর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এটাই আশার আলো দেখায়। কিন্তু সবাইকে কেন নাটক বানাতে হবে? কেউ তো অন্য প্রোগ্রাম বানাতে পারে। নতুন নতুন হাজার হাজার সাবজেক্টে কাজ করা যায়। সেদিকে কারো আগ্রহ না দেখে আমি একটু হতাশ হই। টেলিভিশন চ্যানেল গুলো যদি তাদের অনুষ্ঠানে, সংবাদে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামে নতুনত্ব না আনে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই চ্যানেলগুলো দর্শক হারাতে বাধ্য হবে। সেই সুযোগে বিদেশী চ্যানেলগুলো ব্যবসা বাগিয়ে নেবে। আমাদের সরকার এবং দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো'র এই বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল বা ডিসকোভারি চ্যানেলও কিন্তু বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু তাদের সেই সেন্সটা যথেষ্ট উন্নত মানের। সেই সেন্সটা না থাকলে একশো প্রাইভেট চ্যানেল আসলেও দেশে টেলিভিশন প্রোগ্রামে কোনো বৈচিত্র্য আসবে না। দর্শকেরও কোনো আগ্রহ থাকবে না। আমাদের বিশেষায়িত প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল দরকার। যেমন শুধু মিউজিক নিয়ে মিউজিক চ্যানেল। শুধু সংবাদ নিয়ে সংবাদ চ্যানেল। শুধু টক শো নিয়ে টকশো চ্যানেল। শুধু ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নিয়ে ম্যাগাজিন চ্যানেল। শুধু নাটক নিয়ে নাটক চ্যানেল। শুধু বাংলা সিনেমা নিয়ে সিনেমা চ্যানেল। খেলাধুলা নিয়ে খেলার চ্যানেল। নইলে এই জগাখিচুরি চ্যানেলের সংখ্যা যতোই বাড়ুক, কাজের কাজ কিছুই হবে না। তবে হ্যা, যারা সেই চ্যানেলের মালিক থাকবেন, তাদের কর ফাঁকি বা রাজনৈতিক ব্যাপার স্যাপারে কিছু সুযোগ সুবিধার কৌশল বরাবরই থাকবে। যেমন সংবাদপত্রের মালিকগণ করে থাকেন। তাই টেলিভিশন চ্যানেলে নতুন নতুন বিষয় বিশেষায়িত হয়ে না আসলে দর্শক হারানোর পাশাপাশি অনেক কিছুই হারানোর সুযোগ রয়ে যাবে। সরকার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো'র বিষয়টি নিয়ে নতুন করে এখনই ভাবার সময়।
false
hm
তোমার ঘরে বাস করে কারা ... এক চৌধুরীর বাড়িতে যাবার জন্যে দুলাল কয়েকদিন ধরেই ঘ্যাঙাচ্ছিলো। চৌধুরী নাকি কী একটা নতুন রেসিপি পেয়েছেন গরুর মাংস রান্না করার। আমাদের নিমন্ত্রণ। চৌধুরীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ মানেই পেঁয়াজ-রসুন-আদা কাটা, মশলা বাটা, খাটাখাটনির চূড়ান্ত। তবে রান্নার নিন্দা করা যাবে না। খাবারের পাশাপাশি যেসব গল্প পরিবেশিত হয়, সেগুলি গুলগল্প হলেও মুখরোচক। দুলালের আগ্রহ যে কোনটার দিকে বলা মুশকিল। আজ হাতে কিছুটা সময় আছে বলে আমি নিমরাজি হয়েছি, তবে দুলালকে রিকশা ভাড়া দিতে হবে। দুলাল এ শর্তে রাজি, যদি চৌধুরীর বাড়িতে ঢোকার আগের গলিতে চায়ের দোকানে ওকে চা খাওয়াই। চৌধুরীর বাড়ির আগের গলির চায়ের দোকানে আমরা দীর্ঘদিন ধরে চা খেয়ে আসছি, কখনো ব্যাটাকে চায়ের দোকানের ভেতরে বসতে দেখিনি। আজ ভেতরে ঢুকেই ঘাবড়ে গেলাম। বড় বেঞ্চের পুরোটা দখল করে বসে আছেন চৌধুরী, উল্টোদিকে দু'জন গোবেচারা চেহারার ভদ্রলোক। তিনজনের সামনেই চায়ের কাপ। চৌধুরী যেন আমাদের দেখেও দেখলেন না। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে স্মিত মুখে উল্টোবর্তী এক বেচারাকে বললেন, "বুঝলেন খান সাহেব, বড় বিচিত্র আমাদের এ পৃথিবী। তাই চোখ কান খোলা রাখতে হয়। উঁচিয়ে রাখতে হয় নাকটাকে। সুযোগ পেলেই জিভ দিয়ে চেটে এই পৃথিবীর স্বাদ নিতে হয়।" খান সাহেব দেখলাম জিভ দিয়ে শুকনো ঠৌঁট ভেজাচ্ছেন। বিচক্ষণ লোক। জিভের নাগালের বাইরের পৃথিবীকে চেটে দেখতে যাওয়া একটা বিপজ্জনক কর্ম, তা তিনি ভালোই জানেন মনে হলো। চৌধুরী এবার খানের পার্শ্ববর্তীর দিকে তাকিয়ে এক বিকট নোবেলজয়ী হাসি উপহার দিলেন। "পর্যবেক্ষণ! পর্যবেক্ষণ বড় জরুরি, বুঝলেন সৈয়দ?" সৈয়দ গোমড়া মুখে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন শুধু। আমরা আলগোছে পাশের টেবিলে বসে চায়ের ফরমাশ দেই। চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, "পর্যবেক্ষণেরও নানা সহি কায়দা আছে। সঠিক পন্থা অবলম্বন করলে আজ ভূঁইয়াকে এভাবে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হতো না। ঝামেলাটা ঐ ছোকরা আর ছেমরির ওপর দিয়েই যেতো।" একটা গল্পের গন্ধ পেয়ে দুলাল দেখি নড়েচড়ে বসেছে। অ্যাকশন আর রোমান্স, দু'টোই আছে দেখা যাচ্ছে। চৌধুরী উদাস গলায় বললেন, "শুধু হাড্ডি ভাঙলে একটা কথা ছিলো, নিজের বাড়ির ছাদে তিন তিনটা বডি এভাবে পাওয়া গেলো ... লোকে কী বলবে?" সৈয়দ শুকনো গলায় বললেন, "পুলিশ তো সবাইকে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে!" চৌধুরী সোৎসাহে বললেন, "তা তো বেড়াবেই! পুলিশের কাজই হচ্ছে বেড়ানো। হুমকি টুমকি দিয়েই তারা কোনমতে করে খাচ্ছে।" খান সাহেব মিনমিন করে বললেন, "ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণে কী সমস্যা ছিলো যেন বলছিলেন?" চৌধুরী বললেন, "বলিনি, এখন বলবো। দাঁড়ান, তার আগে আরো চা দিতে বলি। ... অ্যাই, এই দুই টেবিলে পাঁচ কাপ চা দিয়ে যা!" দুলাল হাসিমুখে বললো, "হেঁ হেঁ হেঁ ... ভালো আছেন তো, না?" দুই "ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণের প্রথম সমস্যা হচ্ছে, এখানে বাড়ি বানানোর আগে সে পড়শিদের যাচাই করে দেখেনি।" চৌধুরী নতুন চায়ের কাপে সুড়ুৎ করে চুমুক দিলেন। "যার বাড়ির গায়ে গা ঘেঁষে সে বাড়ি বানিয়েছে, সেই মামুন ব্যাটা মস্তবড় বদমাশ।" সৈয়দ আর খান, দু'জনেই দেখলাম ইতিবাচক সাড়া দিলেন এ কথায়। "যদি মামুনের বাড়ির পাশে তিনি বাড়ি না বানাতেন, আজ এ সমস্যায় ভূঁইয়াকে পড়তে হতো না।" চৌধুরী রায় ঘোষণা করলেন। দুলালটা ফস করে বলে বসলো, "কিন্তু ক্যান? মামুন কী করসে?" চৌধুরী দুলালের বালখিল্যতায় যেন করুণা বোধ করলেন, সেকেন্ড দশেক জুলজুলিয়ে দুলালের দিকে চেয়ে থেকে বললেন, "কী করেছে? মামুন কী করেছে জানতে চান? শুনুন তবে! মামুন দু'টো বিয়ে করেছে!" আমি আর দুলাল একে অপরের মুখ দেখি। জনৈক মামুন দু'টো বিয়ে করায় কেন জনৈক ভূঁইয়াকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, সেই সমীকরণ আর পরের লাইনে নিয়ে যেতে পারি না আমরা, ইজ ইকুয়েল টু জিরো লিখেই বসে থাকতে হয়। খান দেখি মাথা নাড়ছেন, "মামুন লোকটা ভালো না। বড় বখাটে। শুনেছি আগে গুন্ডা ছিলো।" চৌধুরী বললেন, "ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণের এটাও একটা ত্রুটি। সে মোটেও খেয়াল করতে পারেনি যে সে দুই বউওয়ালা এক লোকের বাড়ির পাশে বাড়ি বানিয়ে বাস করতে যাচ্ছে।" দুলাল চায়ের কাপ না ধরা হাতটা দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। ওর জিজ্ঞাসা আমার মনেও, মুখ ফসকে বলে ফেললাম, "সেটা ঠিক কিভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়?" চৌধুরী বাঘের হাসি হাসলেন। "যখন জানতেই চাইলেন, তখন বোঝা গেলো, পর্যবেক্ষণের সেই শক্তি আপনার মধ্যেও নেই! ... আছে! উপায় আছে! তবে তার জন্যে চাই ইচ্ছা। ভূঁইয়ার মধ্যে আদপে সেই ইচ্ছা ছিলো কি না, সেটাই প্রশ্ন। আমাকে দেখুন।" বুক চিতিয়ে বসলেন তিনি। "বাড়ি ভাড়া নেবার আগে দু'পাশে দুই পড়শি দেখে নিয়েছি। এই যে খান সাহেব, নিরীহ ভালোমানুষ। এই যে সৈয়দ সাহেব, আরেক ভদ্দরলোক।" খান আর সৈয়দ দু'জনেই লজ্জা লজ্জা ভাব করে চায়ের কাপে ফড়াৎ করে চুমুক দিলেন। দুলাল বললো, "কিন্তু ভূঁইয়া সাহেবের হইসেটা কী?" চৌধুরী বললেন, "গত পরশু সন্ধ্যায় ভূঁইয়ার ছাদে তিনটা বডি পাওয়া গেছে। তিনটাই ভাঙা।" আমি জানতে চাইলাম, "ভূঁইয়া তার মধ্যে একটা বডি?" চৌধুরী ইতিবাচক হাসি দিলেন। "বাকি দু'জনের একজন হচ্ছে মওদুদ, আরেকজন মরিয়ম।" দুলাল চা নামিয়ে বলে, "এরা কারা?" চৌধুরী আবারও চায়ের ফরমায়েশ দেন। "মওদুদ ভূঁইয়ার বাড়ির চিলেকোঠার ভাড়াটিয়া। পেশায় ছাত্র। আর মরিয়ম হচ্ছে ঐ ব্যাটা বদ মামুনের কোন এক স্ত্রীর খালাতো বোন। পেশায় ছাত্রী।" কেমন যেন ঘোরালো হয়ে ওঠে ব্যাপারটা। দুলাল বলে, "আচ্ছা! এইবার একটু একটু বুঝতে পারসি! মওদুদ আর মরিয়মের মধ্যে মনে হয় ...।" চৌধুরী মিটিমিটি হেসে মাথা নাড়েন। "একটু মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিলো। ঠিক ধরেছেন। কিভাবে বুঝলেন?" দুলাল থতমত খেয়ে বলে, "মতপার্থক্য? কীসের মতপার্থক্য?" চৌধুরী একটি ভুরু ওপরে তোলেন দ্য ফল গাই-তে দেখা লী মেজরস এর ভঙ্গিতে। "অহ! আন্দাজে ঢিল মেরেছিলেন।" দুলাল মরিয়া হয়ে বলে, "মওদুদ আর মরিয়মের মধ্যে প্রেম ছিলো না?" খান সাহেবও দুলালের প্রশ্নকে সমর্থন যোগান। "সে কী চৌধুরী সাহেব, মওদুদ আর মরিয়মের মধ্যে প্রেম ছিলো না?" চৌধুরী মাথা নাড়েন। "উঁহু।" সৈয়দ বলেন, "কিন্তু পুলিশের নাকি সেরকমই ধারণা?" চৌধুরী বলেন, "পুলিশের পর্যবেক্ষণক্ষমতা খুবই কাঁচাস্তরের। অবশ্য তারা ঘটনার পর এসে হাজির হয়, আর কতটুকুই বা আশা করা যায় পুলিশের কাছ থেকে? তবে পুলিশকেও হার মানিয়েছে আমাদের ভূঁইয়া, বাড়ি বানানোর আগে খেয়াল করেনি যে পড়শি বদমায়েশ মামুনটার একটা ডাঁসা শালি আছে!" দুলাল সোৎসাহে বলে, "শালি? ডাঁসা?" চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বলেন, "বাড়ি বানানোর আগে ভূঁইয়া এ-ও খেয়াল করেননি যে মামুন ব্যাটার বাড়িটা ছ'তালা, আর তাঁর বাড়ি হবে মোটে তিনতালা। এই তিনটি তালার তফাৎ যে কত মর্মান্তিক হতে পারে, তা আঁচ করা ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণ শক্তিতে কুলোয়নি।" আমি চুপচাপ চা খাই। দুলালটা উসখুস করে, বলে, "মরিয়ম কীসে পড়ে?" চৌধুরী বললেন, "ভূঁইয়া আরও খেয়াল করেনি, যে মামুন বদমায়েশটার দু'টো বউ থাকার পরও সে মাঝে মাঝেই বাইরে রাত কাটায়।" সৈয়দ খুক খুক করে কাশলেন। চৌধুরী পরোয়া করলেন না। "সামান্য পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকলে এরকম একটা লোকের বাড়ির পাশে মানুষ কখনো বাড়ি বানায়?" খান সাহেব কী যেন বলেন বিড়বিড় করে। চৌধুরী বললেন, "ভূঁইয়া না হয় পরের বাড়ির লোকজনের পরোয়া না-ই করলো, কিন্তু তার নিজের যে একটা দামড়া ছেলে আছে, আক্কাস, তার কথা তো অন্তত মাথায় রাখা উচিত ছিলো, নাকি?" দুলাল একটু বিভ্রান্ত হয়ে যায়। "আক্কাসের কী হইসে?" চৌধুরী চায়ের কাপে বিলম্বিত লয়ে চুমুক দ্যান। "আক্কাসের কিছুই হয়নি। আপাতত একটু মন খারাপ।" দুলাল মাথা নাড়ে। "হ, বাপ পঙ্গুতে ভর্তি, পোলার মন তো একটু খারাপ হইবোই ...।" চৌধুরী হাসেন ঠা ঠা করে। "উঁহুহুহু! আক্কাস ভূঁইয়া বংশের কলঙ্ক। বাপ পঙ্গুতে ভর্তি হয়েছে বলে ওর মন মোটেও খারাপ নয়, দরকার পড়লে সে-ই বাপকে পেঁদিয়ে পঙ্গুতে পাঠাতে পারে! যে হারে লাই দিয়ে তাকে মাথায় তোলা হয়েছে!" আমি বলি, "আক্কাসের মন তাহলে খারাপ কেন?" চৌধুরী বলেন, "মরিয়মের জন্যে, আবার কেন!" এবার যেন কিছুটা স্পষ্ট হয় ছবিটা। দুলালের মন বোধহয় খারাপ হয়েছে আক্কাসের সাথে মরিয়মের একটা কিছু আছে বলে, সে গোমড়া মুখে বলে, "বদমাইশ পোলা!" চৌধুরী গরম গলায় বলেন, "তিনতালা বাড়ির তৃতীয় তলার এক পাশে ইয়া বড় এক ঘর নিয়ে আক্কাস থাকে। ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণ শক্তি বলে কিছু থাকলে কিছুতেই ঐ ঘরে আক্কাসকে থাকতে দিতেন না তিনি।" দুলাল আবারও হাত ঢোকায় গল্পে। "ক্যান? ঐ ঘরে কী হইসে?" চৌধুরী বলেন, "ঐ ঘরের বরাবর ঘরটা কার, আন্দাজ করুন দেখি?" সৈয়দ উত্তেজনায় ঝুঁকে পড়েন। "মরিয়মের?" চৌধুরী প্রসন্ন হাসেন। "ব্রাভো! এই তো চাই ব্রাদার! এরকম চোখা চোখ থাকতে হবে। দেখুন, এই দুই ইয়াংমেনকে এই তরুণ বয়সেই কেমন ভূঁইয়ামো পেয়ে বসেছে! ওদের জন্য বড় মায়া হয় আমার! একটা অযথা জেনারেশন ...।" রাগে চাঁদি জ্বলতে থাকে, কিছু বলি না। চৌধুরী আড়চোখে আমাদের পর্যবেক্ষণ করে আবার গল্পে ফিরে যান। "শুধু মরিয়মের ঘর হলে সমস্যা ছিলো না। মরিয়মের ঘরের জানালা আবার আক্কাসের ঘরের বারান্দার দিকে ফেরানো।" দুলাল শিউরে ওঠে। "উই মা!" খান সাহেব গোঁ গোঁ করে ওঠেন। "উচ্ছন্নে গেলো, সমাজটা উচ্ছন্নে গেলো!" চৌধুরী হাসেন। "ওদিকে ভূঁইয়ার ভাড়াটিয়া পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতাও খারাপ। এতো লোক থাকতে বেছে বেছে পালোয়ান এক ছোকরাকে চিলেকোঠা ভাড়া দিয়েছেন। মওদুদ কলেজে থাকতে ভারোত্তলন করতো। শটপুটেও প্রাইজ পেয়েছে। রোজ সকালে উঠে সে ল্যাঙোট পড়ে ডনবৈঠক করে ছাদে। সারা গায়ে কিলবিল করছে মাসল। ভূঁইয়া সাহেবের বাড়িতে একবার চোর ঢুকেছিলো, মওদুদ চিবিয়ে তার একটা কান ছিঁড়ে নিয়েছে শুনেছি।" দুলাল আঁতকে ওঠে। চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন, "ভূঁইয়া যদি খেয়াল করতেন, যে পাশের বাড়ির চারতালায় নচ্ছাড় মামুনের ছোট বউয়ের মহল, তাহলে কি ওরকম একটা মাসলম্যানকে চিলেকোঠা ভাড়া দিতেন? কক্ষণো না!" গল্প আবারও গুলিয়ে যায়। চৌধুরী বকে যান। "মামুন তার কোন বউকেই ঠিকমতো সময় দেয় না। সে হয় বাড়ির বাইরে রাত কাটায়, নয়তো দারোয়ান মকবুলের বউ সখিনাকে দিয়ে গায়ে তেল মালিশ করায়।" খান সাহেব মুখ কুঁচকে বলেন, "ছি ছি ছি, ঘেন্না!" চৌধুরী কাপটা নামিয়ে রাখেন টেবিলের ওপর ঠক করে। "কিন্তু মামুনের দুই বউ, বড় বউ জুবাইদা আর ছোট বউ জুলেখা, দু'জনেই তো মানুষ, নাকি? তাদেরও তো মন বলে একটা বস্তু আছে, নাকি?" দুলাল ঘন ঘন মাথা নাড়ে, "ঠিক, ঠিক!" চৌধুরী বলেন, "ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণশক্তি এতো কম বলেই এইরকম সব ঘটনা ঘটতে পারলো।" দুলাল বলে, "কীরকম সব ঘটনা?" চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, "এই পাড়ায় প্রায়ই সন্ধ্যাবেলা কারেন্ট চলে যায়। ঘন্টা দুইয়ের জন্য।" আমি গলা খাঁকারি দিই। চৌধুরী উদাস হয়ে বলেন, "যখন কারেন্ট থাকে না, টিভি দেখা যায় না, মনটা উদাস লাগে, তখন তো একটা কিছু করা দরকার, নাকি?" সৈয়দ সাহেবও দেখি কাশছেন। চৌধুরী বলেন, "মওদুদ অ্যাথলেট মানুষ, তাই সে মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে পড়ে। সেখান থেকে চারতলায় জুলেখার কাছে যায়।" দুলাল গাধাটা বলে, "ক্যান?" চৌধুরী বিষদৃষ্টিতে দুলালকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেন, তারপর বলেন, "হয়তো সুডোকু খেলে!" দুলাল থতমত খেয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। চৌধুরী বলতে থাকেন, "মরিয়মের জীবনটাও আক্কাসের মতোই নিঃসঙ্গ, তাই সে-ও মাঝে মাঝে কারেন্ট চলে গেলে ছাদে হাঁটতে যায়। তারপর মুড থাকলে পাইপ বেয়ে আক্কাসের বারান্দায় এসে নামে।" দুলাল মুষড়ে পড়ে একেবারে। "মরিয়মও সুডোকু খেলে?" চৌধুরী কাঁধ ঝাঁকান। "খেলতেই পারে। সুডোকু খুব ইন্টারেস্টিং খেলা। বিশেষ করে কারেন্ট চলে গেলে!" আমি ঘটনা আঁচ করতে পারি কিছুটা। "এতদিন ধরে মওদুদ আর মরিয়মের মধ্যে কোন ট্র্যাফিক জ্যাম হয়নি। দু'জনেই পাইপ খালি পেয়েছে আসা যাওয়ার পথে। গত পরশু দিন একটু সমস্যা হয়েছিলো। মওদুদ পাঁচতালা বরাবর উঠে পড়েছে, ওদিকে মরিয়ম মোটে ছয়তালার ছাদ থেকে নেমে পাঁচতালা বরবার পৌঁছেছে।" খান সাহেব মাথা নাড়েন। "ছি ছি ছি, ঘেন্না!" চৌধুরী সাহেব ভুরু কোঁচকান। "মওদুদ চোরের কান কামড়ে ছিঁড়ে ফেললেও এমনিতে খুব ভদ্রলোক, বিশেষ করে মেয়েদের সে খুব তমিজের সাথে দেখে। আর মরিয়ম পাইপ বেয়ে ওঠানামা করলেও বাস্তবে খুব ভদ্র মেয়ে।" দুলাল বললো, "তো?" চৌধুরী বললেন, "মওদুদ ফিসফিসিয়ে বললো, "লেডিজ ফার্স্ট!" সৈয়দ হাঁ করে শুনতে থাকেন। চৌধুরী বেঞ্চে হেলান দিয়ে টেবিলের ওপর কনুই রাখেন। "লেডিজ ফার্স্ট বললেই তো আর হয় না। মরিয়ম কিভাবে মওদুদের মতো একটা দুইমনী লাশকে ডিঙিয়ে নিচে নামবে? সে বলে, "মওদুদ ভাই, আমি কার্নিশে নামছি, আপনি আগে যান।" দুলাল বলে, "কন কী?" চৌধুরী বলেন, "মওদুদ রাজি হয় না, সে বলে, না, আমি কার্নিশে নামি, তুমি আগে যাও।" আমি বিরসমুখে বলি, "পেহলে আপ সিচুয়েশন!" চৌধুরী উদ্ভাসিতমুখে বলেন, "এগজ্যাক্টলি! কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমান। মরিয়ম মওদুদকে রাস্তা ছেড়ে দেবেই, আর মওদুদও প্রাণ থাকতে মরিয়মকে পরে যেতে দেবে না।" দুলাল বলে, "তারপর?" চৌধুরী হঠাৎ নিচুকণ্ঠে বললেন, "গল্পে আরো দু'টো ক্যারেক্টারের নাম বলেছি। বলুন তো এরা কারা?" খান সাহেব সাগ্রহে বলেন, "আমি বলি, আমি বলি!" চৌধুরী বলেন, "ওহ প্লিজ, গো অ্যাহেড!" খান সাহেব ভুরু কুঁচকে জিভ কামড়ে কিছুক্ষণ ভাবেন। তারপর বলেন, "দারোয়ান মকবুল, আর তার বউ সখিনা।" চৌধুরী মৃদু, রহস্যময় হাসেন। তারপর বলেন, "আংশিক সঠিক। আপনাকে পাঁচ নাম্বার দেয়া হলো। কিন্তু ফটকা মামুনের বড় বউ জুবাইদার কথা ভুলে যাবেন না!" দুলাল চমকে ওঠে। "ক্যান, উনি আবার কী করসে?" চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। "পাড়ায় কারেন্ট গেলে কি আর জুবাইদার ঘর রওশন থাকে? তার ঘরেও তো তখন অন্ধকার।" দুলাল এবার সটান দাঁড়িয়ে যায়। "উনিও সুডোকু খ্যালে?" ভাঙা গলায় শুধায় সে। চৌধুরী ফরাসী কায়দায় কাঁধ ঝাঁকান। "খেলতেই পারে। খেলাটা খুব জনপ্রিয়, জানেন না বোধহয়?" আমি গম্ভীর হয়ে বলি, "উনি কার সাথে খেলেন? মকবুল?" চৌধুরী স্মিত হাসেন। "আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আছে। ছাইচাপা আগুনের মতো। আরো চর্চা করতে হবে আর কি! ঠিক ধরেছেন। মকবুল লোকটা দারোয়ান হলে কী হবে, বেশ হ্যান্ডসাম। তাই সে মাঝে মাঝেই কারেন্ট চলে গেলে তিনতালায় যায় আর কি।" দুলাল বলে, "কিন্তু মরিয়ম আর মওদুদের কী হইলো?" চৌধুরী গলা খাটো করে বলেন, "মকবুল হ্যান্ডসাম হতে পারে, কিন্তু চোরছ্যাঁচড়ের সাথে কী যেন একটা কানেকশন আছে, বুঝলেন? কী করবে বেচারা, দারোয়ান তো! চোরের সাথে খাতির না হয়েও উপায় নাই। দুষ্ট লোকে বলে," গলা আরো নামিয়ে আনেন তিনি, "মওদুদ যে চোরটার কান চিবিয়ে ছিঁড়ে নিয়েছিলো, সে নাকি মকবুলের খালাতো ভাই হয়!" দুলাল স্তম্ভিত হয়ে যায়, আমি কাপে চুমুক দিই। সৈয়দ খানিক ভেবে বলেন, "চোরে দারোয়ানে মাসতুতো ভাই!" চৌধুরী হাসেন। "হা হা হা, বেশ বলেছেন। ... তো, আমাদের মকবুল আমাদের মওদুদের ওপর বেশ অনেকদিন ধরেই ক্ষ্যাপা। আর চোরদের সাথে মিশে মিশে তার মনটাও একটু পুলিশ পুলিশ ... সেদিন সেই ঘুটঘুটে সন্ধ্যায় তিনতালায় ডিউটি না দিয়ে মকবুল ছাদে উঠে এসেছিলো মওদুদকে পাকড়াও করার জন্যে। হাতে একটা গাঁটালো লাঠি।" সৈয়দ সাহেব বলেন, "বলেন কী?" চৌধুরী বিষণ্ণ মুখে বলেন, "আর আমাদের ভূঁইয়া সাহেব, কী আর বলবো, লোকটা পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তো নাই-ই, পর্যবেক্ষণ জ্ঞানটাও নাই। আশেপাশে নানা কথা চালাচালি হয়, তো তিনি গত পরশুদিন ওরকমই কিছু একটা শুনে হয়তো একেবারে সরজমিন পর্যবেক্ষণ করতে ছাদে গিয়ে হাজির।" আমার কাছে এবার বাকিটা স্পষ্ট হয়ে যায়। চৌধুরী বলেন, "ওদিকে পাঁচতলা বরাবর মওদুদ আর মরিয়ম ভদ্রতার পরাকাষ্ঠা দেখাতে ব্যস্ত, মকবুল হতচ্ছাড়াটা এসেই বসিয়েছে এক ঘা। আর নিচ থেকে ভূঁইয়া সাহেবও হেঁকে উঠেছেন, "বলি হচ্ছেটা কী, অ্যাঁ?" সৈয়দ সাহেব বললেন, "হুঁ, আমিও শুনেছি এই হাঁক।" চৌধুরী বললেন, "সামান্য লাঠির ঘায়ে মূর্ছা যাবার পাত্র নয় মওদুদ। বরং লাঠিই ওর গায়ে লেগে ভেঙে যাবার সম্ভাবনা চৌদ্দ আনা। কিন্তু ভূঁইয়া সাহেবের হাঁক শুনে বেচারার মধ্যবিত্ত আত্মা একেবারে টলে গেলো, বুঝলেন? ওদিকে মরিয়মের গায়েও লাঠির বাড়ি পড়েছে, পাইপ থেকে তার হাত ফসকে গেছে। দু'জনে মিলে জড়াজড়ি করে একেবারে নিচে ভূঁইয়া সাহেবের ওপর গিয়ে পড়েছে।" দুলাল শিউরে ওঠে, "বলেন কী?" চৌধুরী মাথা নাড়েন। "মওদুদের ওজন কমসে কম পঁচাশি কেজি হবে। মরিয়মকে যা দেখেছি এপাশ ওপাশ থেকে, তার ওজনও কেজি পঞ্চাশেক হবে। একশো পঁয়তিরিশ কেজি ওজনের দুইজন সুডোকু খেলোয়াড় কুড়িফুট ওপর থেকে গায়ের ওপর পড়লে আমি আপনি টেঁসে যাবো, কিন্তু ভূঁইয়া ঘুষখোর সরকারী লোক, এন্তার গোস্ত গায়ে, তাই কয়েকটা হাড্ডি ভেঙেছে শুধু। আর এমন একটা শক অ্যাবজরবার ছিলো বলেই মওদুদ আর মরিয়মও জানে বেঁচে গেছে, চোটটা কয়েকটা হাড্ডির ওপর দিয়ে গেছে শুধু।" আমার আর সহ্য হয় না, কাপটা নামিয়ে রেখে বলি, "আপনি এসব জানলেন কিভাবে?" চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বলেন, "পর্যবেক্ষণ!" আমি বলি, "সেটাই কিভাবে করলেন, জানতে চাই!" চৌধুরী বললেন, "কারেন্ট চলে গেলে বারান্দায় বসে আশপাশটা পর্যবেক্ষণ করি আর কি! রীতিমতো সিনেমা।" দুলাল মুখ কুঁচকে বলে, "কিন্তু আপনের বাড়ি তো রাস্তার উল্টাদিকে! দৃশ্য না হয় দেখলেন, কথাবার্তা শুনলেন কেমনে?" চৌধুরী কঠোর মুখে বলেন, "মামুনের বাড়ির পাঁচতলায় কে থাকে জানেন?" দুলাল ভড়কে গিয়ে বলে, "না। কে থাকে?" চৌধুরী বলেন, "মামুন নিজে। কারেন্ট চলে গেলে সে কী করে জানেন?" দুলাল ভয়ে ভয়ে বলে, "সুডোকু?" চৌধুরী বলেন, "সে সখিনাকে ডেকে এনে পিঠে তেলমালিশ করায়। মওদুদ আর মরিয়মের আলাপসালাপ হচ্ছিলো তার একেবারে জানালার পাশেই। সবকিছুই সে শুনতে পেয়েছে।" দুলাল হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। আমি বলি, "মামুন আপনাকে এসব কথা জানিয়েছে?" চৌধুরী বললেন, "হুমম! কত্তবড় বদ লোকটা, ভাবতে পারেন? তবে পর্যবেক্ষণ শক্তি আছে ভালোই। যেভাবে খুঁটিনাটিসহ বললো, আমি শুনে একটু বিস্মিতই হয়েছি। শুধু বাইনোক্যুলার হাতে আমাকে দেখতে পায়নি বলে কিছু গোঁজামিল দেবার চেষ্টা করছিলো আর কি ...।" আমি বললাম, "আপনি বাইনোক্যুলার দিয়ে এসব পর্যবেক্ষণ করেন নাকি?" চৌধুরী হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়লেন। "চলুন চলুন, অনেক পেঁয়াজ কাটতে হবে আজকে, বুরবকশাহী বিরিয়ানি রান্না হবে ...।" . . এ গল্পটি ২০১০ এ প্রকাশিত গল্প সংকলন ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প"-তে অন্তর্ভুক্ত
false
fe
সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে আমার এক বছর _ ব্লগাভিজ্ঞতার ছায়াপাঠ দেখতে দেখতে একবছর চলে গেলো।২০০৭ সালের ঈদুল ফিতর এর সময় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় চলছিল। সুজন সারওয়ার চৌধুরী। কবি , প্রাবন্ধিক। দেশে থাকতে সাপ্তাহিক অনুপম এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। অনুপম ছিল আমাদের আড্ডাস্থল। সারওয়ার চৌধুরী এখন আবুধাবী প্রবাসী। দীর্ঘদিন পর সমকাল এর কালের খেয়া'য় তার গল্প পড়ি। ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে জানতে চাই , তার সাম্প্রতিক লেখালেখির কথা। তিনি জানান, এখন ব্লগে লিখেন। ব্লগঠিকানা জানান। আমি তার লেখা পড়ি।ভালো লাগে। আমি এর আগেও এই ব্লগ দেখেছি। দেখেছি সচলায়তন ও। আমার ক'জন অনুজ সাহিত্যিক ব্লগিং করেন সেখানে ও। হঠাৎ আমার ও ইচ্ছের পালে হাওয়া লাগে। সারওয়ার চৌধুরীর আহবানে সাড়া দিই। ১৪ অক্টোবর ২০০৭। রেজিষ্ট্রেশন করি সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে। লিখি আমার ব্লগ জীবনের প্রথম লেখাটি। Click This Link দুই. সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে এসে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। শুরুতেই কজন ব্লগারের যে সহযোগিতা পাই , তা কোনোদিন ভুলা যাবে না। রাশেদ, মুকুল, এস্কিমো, অমি রহমান পিয়াল, মুজিব মেহদী,আরিফ জেবতিক এই কজনের কথা কখনোই ভুলা যাবে না। রাশেদ ভাই অনলাইনে থেকে আমাকে গাইড দেন। মুকুল ভাই তাৎক্ষণিক বিএনওয়েব টুলস এর ঠিকানা দিয়ে আমাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। এস্কিমো, পিয়াল, মুজিব মেহদী , সারওয়ার চৌধুরী, হাসিব মাহমুদ, বিষাক্ত মানুষ, লাল দরজা, বিহংগ, না না ভাবে নৈতিক সমর্থন দিয়ে আমাকে এগিয়ে নিয়ে যান । আমি তাঁদের কাছে ঋণী। তিন. এই ব্লগে আমার এই একটি বছর কেটেছে খুবই বর্ণিল। এখানে না এলে অনেক কেই আমার ভালো করে চেনা হতো না। একটি ঘটনা বলি। একজন তরুণ লেখক। যাকে আমি দেখিনি, কিন্তু তার লেখালেখির সাথে পূর্বপরিচিত ছিলাম। আমি যখন ঢাকার কাগজগুলোতে নিয়মিত লিখি ,তখন তিনি মফস্বল থেকে ঢাকা এসে পৌঁছুন নি। এই ব্লগে তিনি পুরনো তা আমি জানতাম । আমি তাকে সমীহ ও করতাম। প্রখ্যাত লেখক দেবেশ রায়ের একটি ঢাকা ভাষণ বিষয়ে আমি সামহ্যোয়ারে একটি ছোট্ট লেখা লিখি। এর সূত্রধরেই ঐ ব্লগার একটি লম্বা পোষ্ট দেন তার ব্লগে। যেখানে আমার নাম ধরে তিনি তুই-তাকারি পর্যায়ে নেমে আসেন। তার আচরণে আমি চমকিত হই। এই তাহলে তার আসল চেহারা ! তার এই উগ্র , জঘন্য মানসিকতা আমাকে আহত করে।পরে ঢাকার বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে যাই তার আরো অনেক নৈতিক অবক্ষয়ের ফিরিস্তি । তার জীবনের অনেক বসন্ত-বর্ষার গল্প(?)। তার প্রতি ঘৃনা আরো বহুগুণ বেড়ে যায় আমার। চার. এই ব্লগে আমি কখনোই অন্যায় ভাবে কোনো আচরণ কারো সাথে করিনি। আমার মৌলিক চেতনায় আমি সবসময় সুদৃঢ় থেকেছি। তারপরও আক্রান্ত হয়েছি না না ভাবে। বিনা কারণে। ফলে , বাধ্য হয়ে বেশ কিছু ব্লগার কে ব্যান করতে বাধ্য হয়েছি। এখনো কর্ণফুলি পাড়ের একজন ব্লগার আছেন , যিনি আমার প্রতিটি লেখায় মাইনাস দিয়ে যান।আমি তাকে সারমেয় শ্রেণীর ব্লগার বলেই মনে করি। তার আচরণে আমি মাঝে মাঝে হাসি । আহারে ! বেচারা আর কিছু না পেরে মাইনাস অস্ত্রটির প্রয়োগ করছেন ! তার জন্য আমার করুণা হয় !!!!! পাঁচ এই ব্লগ, আমাকে এক বছরে অনেক কিছু দিয়েছে।আমি প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখেছি। মত প্রকাশ করতে পেরেছি।এজন্য ব্লগ কর্তৃপক্ষ, মডারেটর, এবং সম্মানিত ব্লগারবৃন্দকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন , আমি অন্যদের ব্লগে মন্তব্য করিনা । আমি তা খন্ডন করে বলতে চাই, আমি বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থেকে মন্তব্য করতে সচেষ্ট থেকেছি।সময় দেয়া ও একটা ব্যাপার । তা আমার সীমাবদ্ধতাকে আরো সংকুল করে তুলেছে হয়তোবা। আজ এক বছর পূর্তিতে যখন পিছন ফিরে তাকাই , তখন দেখি আমি যা লিখেছি তার সংখ্যা একেবারে কম নয়। কিছু লেখা এই ব্লগ থেকেই আমার অনুমতি সাপেক্ষে অন্যান্য কাগজ ও ছেপেছে। তাদেরকে ও ধন্যবাদ। আজ আমার নতুন বছরে যাত্রাশুরু উপলক্ষে , আমি সে সব ব্লগারদেরকে আবারো স্মরণ করি যারা মতের ভিন্নতা নিয়েও বিভিন্নভাবে আমার লেখায় সৃজনশীল মত বিনিময়ে ব্রতী হয়েছেন। রাফা, রামন, হায়দার কারিগর,ফারিহান মাহমুদ, আলী আরাফাত শান্ত, কালপুরুষ, মুয়ীজ মাহফুজ, শেখ জলিল, মাহবুব লীলেন, অশোক দেব, তারিক টুকু, ইফতেখার ইনান, মাহমুদ শাওন, রন্টি চৌধুরী,আন্দালীব, শফিউল আলম ইমন, মাহমুদুল হক ফয়েজ, ইমরান খান ইমু, নেমেসিস, ঘোর, অপূর্ব সোহাগ, জুয়েল মোস্তাফিজ ,মুনীর উদ্দিন শামীম সহ আরো অনেকের নামই প্রণিধান যোগ্য। আমি সবাইকে বিনীত ধন্যবাদ জানাই। ছয় সবিনয়ে আবারো বলি , আমি লিখতে চাই। আমার কাজ আমি বিবেকী সত্তায় করেই যাবো। যারা আমার সতীর্থ তাদের জন্য আমার দরোজা সবসময় অবারিত থাকবে। ফুলেল শুভেচ্ছা সবাইকে । সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৭:৩৭
false
ij
গল্প_ রূপা চাকমার গান এই যে শুনছেন। পিছন থেকে কিশোর কন্ঠ শুনে ঘুরে দাঁড়াল অরূপ । তখন প্রান্তিক হ্রদের চার ধারের পাহাড়ে সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। অরূপ পিছন ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল ১৪/১৫ বছর বয়েসি এক কিশোরের হলদে মুখে বেলা শেষের রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে। দূরের বৌদ্ধমন্দির থেকে ঘন্টা ধ্বনি ভেসে আসল। কিশোর ছেলেটিকে চাকমা বলেই মনে হল। ছেলেটি বলল, এই যে -আমার দিদি আপনাকে ডাকছে। কে তোমার দিদি? অরূপ রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যেতে থাকে। কিশোর হাত তুলে দেখাল, ঐ যে। কাছেই একটি দীর্ঘ ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে লাল রঙের সারং পরা একজন চাকমা তরুণী কে নমস্কারের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরূপ অবাক হয়ে যায়। ক’দিন হল বান্দরবানের এই সব প্রত্যন্ত পাহাড়িয়া এলাকায় একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘটছে অনেককিছুই ...ওর মনে হল ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে ওই নমস্কারের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা চাকমা মেয়েটি ওকে এক বিস্ময়ের জগতে নিয়ে যাবে ... অরূপ এগিয়ে যায়। এগিয়ে যেতেই মেয়েটি বলল, নমস্কার দাদা, আমি রূপা চাকমা। আমি অরূপ হায়দার। অরূপ বলল। ঘিয়ে রঙের অদ্ভূত সুন্দর মুখোশ্রী রূপা চাকমার। নিভৃতচারী বনবালার মতন স্নিগ্ধ রূপ । অনেকটা সুন্দরী থাই এয়ারলাইন্সের এয়ারহোস্টেসেদের মতন । ঘুরতে এসেছেন বুঝি? প্রশ্নের সঙ্গে হাসির ঝিলিক। অরূপ অভিভূত হয়ে যায়। হ্যাঁ। আমাদের এই সব প্রত্যন্ত পাহাড়িয়া এলাকার নির্জনতা আর রইল না। অরূপ কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল: কেন- অচেনা আগন্তকের পদচারনায় পাহাড়িয়া এলাকার নির্জনতা ভেঙে গেলে আপনার কোনও আপত্তি আছে? না, না। আপত্তি কী সের। রূপা চাকমা সপ্রতিভ হয়ে উঠতে চায়। বলে, আমাদের নিরিবিলি সবুজ উঠানে পৃথিবীর সব মানুষ আসুক, আমাদের নিভৃত প্রাঙ্গন ভরে উঠুক প্রাণের মেলায় ... এই আমার প্রার্থনা। আপনি কিন্তু বেশ ভালো বাংলা বলেন । তাই? রূপা চাকমা উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। হ্যাঁ। অরূপ মাথা ঝাঁকাল। রূপা চাকমা হাত তুলে দূরের সেই কিশোরকে দেখিয়ে বলল, ও আমার ভাই, ওর নাম অঢং। ও। একবার আমাদের বাড়ি এলে খুশি হব কিন্তু। আপনাদের বাড়ি কি কাছে? দূরে হলেই কি? বলে সুন্দরী চাকমা মেয়েটি হাসি চাপতে মুখে আঙুল চাপা দিল। অরূপ থতমত খেলেও নিশ্চিন্ত হল। কেননা, তখন প্রান্তিক হ্রদের আশেপাশে সূর্যটা অস্তমিত হয়ে আসছিল। আর জাত ভবঘুরের দিনের বেলাটি নিশ্চিন্তে কাটলেও -রাত্রিতে কোথাও না কোথাও ঠাঁই নেওয়ার কথা ভাবতেই হয়। আপনার আতিথ্য আমি বরণ করলাম। অরূপ হেসে বলল। ইউক্যালিপটাস গাছের পাশ দিয়ে লাল মাটির চড়াই-পথ। ওরা পাশাপাশি উঠতে থাকে। ইউক্যালিপটাস গাছের ডালপালার ফাঁকে চৈত্রের পূর্ণ বয়স্ক চাঁদ উঁকি দেয়। হঠাৎই রূপা চাকমা গম্ভীর কন্ঠে বলল, খুঁজলে ওই ইউক্যালিপটাস গাছের গুঁড়িতে পাবেন বুলেটের দাগ। অরূপ চমকে ওঠে। ওর রাজনীতির আলোচনা ভালো লাগে না। রূপা চাকমাদের বাড়িটা টিলার ওপর। বাড়ি মানে বাঁশের টং ঘর। কাছেই কোথাও একটি পাহাড়ি ঝোরা বয়ে যাচ্ছে। পানির গড়িয়ে যাওয়ার ক্ষীণ ঝিরঝির শব্দ কানে এল। এখানে দাঁড়ালে প্রান্তিক হ্রদের অনেকটা চোখে পড়ে। বাঁশের সিঁড়ির ধাপে পা দিয়ে রূপা চাকমা বলল, জানেন, আমি কিন্তু ঢাকায় ছিলাম। তাই? হ্যাঁ। কলাবাগানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। ও। বাঁশের টং -ঘরটির বারান্দাটি ছোট হলেও ছিমছাম। চাঁদ উঠেছে। জোছনা ফুটছে। প্রান্তিক হ্রদের দিক থেকে সুমধুর বাতাস বয়ে আসছে। আমি এখানেই বসি। অরূপ বলল। হ্যাঁ, হ্যাঁ, বসুন। বলে ভিতরে চলে যায় মেয়েটি। হয়তো আরও সুন্দর করে সেজে আসবে। আজ মেয়েটির নারীজন্ম সার্থক হল। আজ সুদর্শন অতিথি এল ঘরে । অরূপ পা ছড়িয়ে বাঁশের বেড়ায় হেলান দিয়ে বসল। অঢং গেল কই? ওর কিশোর বয়েস, হয়তো হ্রদের পাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতক্ষণে স্বস্তি লাগছে অরূপের। অরূপ ঢাকায় একটা পত্রিকা অফিসে চাকরি করে; পত্রিকাটির সুনাম থাকলেও পেমেন্ট ভালো না, এ নিয়ে সংসারে অশান্তি ... ওর বউ রুমানা আলটিমেটাম দিয়েছে ...এক দলা বিষাদ সঙ্গে করে পাহাড়ে পালিয়ে এসেছে অরূপ... প্রান্তিক হ্রদের কথা ওর এক ডাক্তার বন্ধুর কাছে শুনেছে ...ক’দিন ধরে একা একাই ঘুরছে ... অবচেতন মনে ভীষণ বিপদে পড়তে চাইছে ...যেন মধ্যরাত্রির অন্ধকার চিড়ে বুনো শূকরের দল ওর আঠাশ বছরের শরীরটি ছিঁড়ে খুঁড়ে খাক ...কিংবা, যেসব শান্তিবাহিনীর সদস্য আজও অস্ত্র জমা দেয়নি তারা স্টেনের ব্রাশ ফায়ারে এই ক্ষয়ে যাওয়া বুকের পাঁজরখানি ঝাঁঝরা করে দিক ...অথচ ... অথচ কী সহজে মায়াবী এক বনবালার আতিথ্য পেয়ে গেলাম ... জীবনানন্দের কবিতার সেই রহস্যময় চরণটি মনে এল অরূপের- এ জীবন যেন এক হংসীর মতন ... কী এর মানে! সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে হল। ধরালো না। টিলার ওধারে কারা যেন আগুন জ্বেলেছে। চৈত্রের রাতের বাতাসে পোড়া কাঠের গন্ধ ভাসছে । অনেকটা বার্মিজ চুরুটের গন্ধ যেন। জোছনার আলোর বিপরীতে অন্ধকারও ফুটে উঠছে পাহাড়ের ঢালে। দূরে প্রান্তিক হ্রদের রূপালি জলের বিস্তার যেন সে জল ফুঁড়ে উঠে আসবে অতিকায় রূপা বর্ণের চিতল। রূপা চাকমা ফিরল। বুনো ফুলের গন্ধ নিবিড় হয়ে উঠল। আমি কিন্তু দাদা রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারি। তাই নাকি! (আমি কি স্বপ্ন দেখছি? বাস্তবে এমনও হয়? তীব্র হতাশায় আক্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল প্রান্তিক হ্রদের কিনারে ...বিকেল কখন শেষ হয়ে এল। ঢাকায় ফিরে যাবে কিনা ভাবছিল ...ঠিক তখনই ... এই যে শুনছেন। পিছন থেকে কিশোর কন্ঠ শুনে অরূপ ঘুরে দাঁড়াল। তখন প্রান্তিক হ্রদের ওপারের পাহাড়ে সূর্য অস্ত যাচ্ছিল ...) রূপা চাকমা বলল, আপনাকে দেখে কবি বলে মনে হয়। হুমম। তা হলে নিন। বলে রূপা চাকমা একটি বোতল বাড়িয়ে দিল। কি? দোচোয়ানি। আমার বড়দার ... আগে খাননি? ওঃ। হ্যাঁ, আগে খেয়েছি। তবে গন্ধটা কড়া। রূপা চাকমা হাসল। বলল, বুনো জিনিস তো। তা দাদা আমি যখন ঢাকায় ছিলাম তখন রবীন্দ্রসংগীত শিখেছি। কার কাছে? আমার এক দিদির বর, সেই দীপু ভাই য়ের কাছে। আমার সেই দিদির বাড়ি রাঙামাটি। দিদি ঢাকায় আর্ট কলেছে পড়ত। দীপু ভাইও পড়ত। দিদি ভালোবেসে দীপু ভাই কে বিয়ে করল । ওরা এখন ঢাকার কলাবাগানে থাকে। গেল বছর আমি ওদের ওখান থেকে বেড়িয়ে এলাম। দীপু ভাই চমৎকার রবীন্দ্রসংগীত গায়। রবীন্দ্রসংগীত শুনে এত ভালো লাগল যে কী বলব। তারপর দীপু ভাই য়ের কাছে শিখলাম। শুনব। অবশ্যই শোনাব। সে জন্যই তো আপনাকে ডেকে আনলাম। কথাটা ভালো লাগল অরূপের। জিগ্যেস করল, তা অঢং গেল কই? ঝর্না পাড়ে। রূপা চাকমা বলল। আজ চৈত্র পূর্ণিমা। আজ রাতের আলো অনেক স্বচ্ছ হবে। অঢং ওর বন্ধুদের সঙ্গে মাঝরাত অবধি থাকবে ঝর্না পাড়ে । ও। এরা কি সুখি! শহরে থাকলে টিভি দেখতে বসত। রুমানা এখন কি করছে? সম্ভবত টিভি দেখছে। বিয়ের আগে রুমানা কত নরম ছিল মধুর ছিল বিয়ের পর পালটে গেল-কেন? হোমইকোনমিক্সে পড়ত, অরূপ রাত জেগে ওর টিউটোরিয়াল করে দিত ...ঢাকা ছাড়ার আগে রুমানার জ্বর ছিল, এ সময়ে জ্বর ... রূপা চাকমা বলল, আমার মায়ের জ্বর। নৈলে মা আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসত। রূপা চাকমার কন্ঠে বিষন্নতা ঝরে ঝরে পড়ে। ওহ্। অরূপ কী রকম কষ্ট টের পায়। রুমানার সঙ্গে অরূপের মায়ে অ্যাডজাস্ট হয়নি। মা এখন দেশের বাড়ি কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এত কষ্ট ... এত কষ্ট ...জীবনে এত কষ্ট কেন ...অথচ এই চৈত্রের রাত্রিখানি কী সুন্দর ... আর আমার বাবা গেছে প্রান্তিক হ্রদে মাছ ধরতে। রূপা চাকমা বলল। আমার বাবার আবার মাছ ধরার খুব শখ। ও। আজ রাতে চাঁদের আলো নির্মল থাকবে। জলের নিচে মাছের কালচে পিঠ পরিস্কার দেখা যাবে। শোনা যায় চৈত্র পূর্ণিমার রাত্তিরে হ্রদের অতল তলদেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসে অতিকায় মহাচিতল। কেবল সুযোগ্য মৎস্যশিকারী তা টের পায়। আমার বাবা দক্ষ জলশিকারী, মহাচিতলের ঝাঁক সহজে বাবার নৌকটি উল্টিয়ে ফেলতে পারবে না। রূপোলি রঙের মহাচিতলের সন্ধান তিনি ঠিকই পাবেন। ওহ্। টং ঘরে বারান্দায় নীরবতা জমে উঠল। একটু পর অরূপ জিগ্যেস করে, তা কী গান শোনাবে আমায়? আমার সবচে ভালো লাগা গানইি শোনাব। কোন্টি? রূপা চাকমা গাইতে লাগল: দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে।। গান শেষ হল। অরূপ কোন্ মগ্ন চোরাস্রোতের টানে কোন্ সুদূরে ভেসে যেতে থাকে। চৈত্রের রাতের বাতাসে পোড়া কাঠের গন্ধ ভারী হয়ে ওঠে। যে পোড়া কাঠের গন্ধ অনেকটা বার্মিজ চুরুটের গন্ধের মতো। সে দূরে তাকিয়ে দেখল ... জোছনার আলোর বিপরীতে অন্ধকারও ফুটে উঠছে পাহাড়ের ঢালে। সেই সঙ্গে প্রান্তিক হ্রদের দিক থেকে বাতাস বয়ে আসে। সে হ্রদের রূপালি জলের বিস্তার যেন সে জল ফুঁড়ে উঠে আসবে একটি অতিকায় রূপাবর্ণের চিতল। রূপা চাকমার শরীরের বুনো ফুলের গন্ধ নিবিড় হয়ে উঠল। অরূপের ঘোর লাগে। ...আজ এ মুহূর্তে সে বুঝতে পারল রবীন্দ্রনাথকে কেন বিশ্বকবি- রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি এই জন্য নন যে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবি বরং রবীন্দ্রনাথ এই জন্য বিশ্বকবি যে তিনি বিশ্বের কবি, বিশ্বের সবার কবি, তিনি যদ্দিন বেঁচে ছিলেন বিশ্বকে নিয়েই বেঁচেছিলেন। রবীন্দ্র জগতের বাইরেও রবীন্দ্রনাথকে মানায়। এই বনপাহাড়ের বৌদ্ধ-চাকমা আবহে কাঠপোড়া গন্ধের ভিতরে দোচোয়ানির মৃদু নেশায় রূপা চাকমার কবোষ্ণ সান্নিধ্যে রবীন্দ্রনাথ মোটেও বেমানান নন-এই জন্যেই রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। অরূপ একটি নিবন্ধ লেখার তাগিদ অনুভব করে। রূপা চাকমা আবার গাইতে লাগল: ও বঁধু, কোন্ আলো লাগল চোখে ! বুঝি দীপ্তিরূপে ছিলে সূর্যলোকে ! অরূপ চমকে ওঠে। এই গানটি ওর ভীষণ প্রিয় ... গলায় দোচোয়ানি ঢালে অরূপ। কাল ভোরে আবার নরকের উদ্দেশে রওনা হতে হবে; নরক-ঢাকায় ফিরতে হবে। তবে ভিতরে সামান্যতম হতাশাও টের পেল না ও। আশ্চর্য! সন্তানসম্ভাবা রুমানা ওর কাছ থেকে বিবাহবিচ্ছেদ চাইছে। অরূপ এখন জানে রুমানা ওর জীবন থেকে হারিয়ে যাবে না ... সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৬
false
hm
ক্যামকর্ডার বৃত্তান্ত ১. গরীব মনটা কিছুদিন ধরে ওনাপ্যানা করছে, ক্যামকর্ডার একখানা কেনা যায় কি না। কিন্তু ক্যামকর্ডার নিয়ে জ্ঞান সামান্য আমার। অন্যের ক্যামকর্ডারও ছেনেঘেঁটে দেখার সুযোগ মেলেনি। তাই গুগল মারলাম। কিছু পড়াশোনা করে যা বুঝলাম, ক্যামকর্ডার কিনতে গেলে অনেক কিছু দেখে কিনতে হবে। নিচের জিনিসগুলি নাকি থাকলে ভালো। ম্যানুয়াল ফোকাস। অটোফোকাস দিয়ে দুনিয়ার অনেক কিছুই মনমতো তোলা যাবে না। আমি যেমন স্টিল ছবিও ম্যানুয়াল ফোকাসেই তুলি। ম্যানুয়াল আইরিস। এক্সপোজার ঠিক করার জন্যে এটা দরকার। হোয়াইট ব্যালান্স। যখন আলোর একাধিক কিসিমের উৎস থাকে, তখন হোয়াইট ব্যালান্স ছাড়া ম্যানেজ করা মুশকিল। থ্রি সিসিডি। এক সিসিডির পরিবর্তে তিন চিপের ক্যামকর্ডারগুলিতে কালার স্যাচুরেশন ভালো আসে। হেডফোন জ্যাক। এটা না থাকলে কী শব্দ রেকর্ড করা হচ্ছে, তা মনিটর করা মুশকিল। সাউন্ড কন্ট্রোল। ক্যামেরা যদি নিজেই শব্দ নিয়ন্ত্রণের কাজটা করে, তাহলে মনমতো শব্দ পাওয়া যাবে না। অডিও ইনপুট। একটা এক্সটার্নাল মাইক্রোফোন লাগানোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো কোয়ালিটির শব্দ যোগ করা যাবে। ফিল্টার রিং। লেন্সের সাথে ফিল্টার যোগ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমি আমার স্টিল ক্যামেরার লেন্সগুলিতে একটা করে আলট্রাভায়োলেট ফিল্টার লাগিয়ে রাখি লেন্সের নিরাপত্তার জন্যে, ক্যামকর্ডারের ক্ষেত্রেও একই নিরাপত্তা দরকার। এছাড়া পোলারাইজিং ফিল্টার বা স্টার ফিল্টারও যোগ করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। লেন্স অ্যাডাপটার। খুব উঁচুদরের জিনিস ছাড়া ক্যামকর্ডারে সংযোজ্য লেন্স মেলে না, তবে মাঝারিদরের যন্ত্রে লেন্সের সাথে অ্যাডাপটার লাগানোর ব্যবস্থা মাঝেসাঝে থাকে। তবে আমার মনে হয় না এ জিনিস আমার প্রয়োজন হবে। ট্রাইপডের স্ক্রু ঢোকানোর জন্যে একটি রন্ধ্র। আমার হাত মোটামুটি স্টেডি, কিন্তু মাঝপথে কোন কিছু ম্যানুয়ালি পাল্টাতে হলে ক্যামেরা কাঁপুক, তা চাইবো না। ২. এ তো গেলো ক্যামেরার বাইরের দিক। এর নাড়িভুঁড়ি নিয়েও বিয়াপক কথাবার্তা আছে। ক্যামকর্ডার ছবি রেকর্ড করবে কীসে? দেখলাম, সুযোগ আছে তিন ধরনের। এদের সুবিধা-অসুবিধাও আছে নানারকমের। অসুবিধাগুলিকে লাল কালি দিয়ে দাগিয়ে রাখলাম। মিনি-ডিভি। এই ভুঁড়ির ক্যামকর্ডারগুলি সবচেয়ে প্রচলিত, বেছে নেয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। এক একটা মিনি-ডিভি ক্যাসেটের দাম দুই ইউরোর মতো পড়বে দেখলাম। এক থেকে দেড় ঘন্টা রেকর্ড করা যায় এক একটা ক্যাসেটে। ক্যামকর্ডার থেকেই টিভির সাথে যোগ করে ফুটেজ দেখা যায়, তবে এক এক করে দেখতে হয়, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলেই ফরওয়ার্ড বা রিওয়াইন্ড করার ভ্যাজাল। আর ক্যামকর্ডার থেকে সরাসরি দেখতে গেলে যন্ত্রটার ওপর চাপ পড়ে, তাই এই কাজ ঘন ঘন করা ঠিক নয়। বেশির ভাগ এডিটিং সিস্টেমই মিনি-ডিভিতে শুট করা ফুটেজ এডিট করার জন্যে তৈরি, তবে এর সবচেয়ে বড় ভেজাল হচ্ছে, পিসিতে ফুটেজ ইমপোর্ট করার ব্যাপারটা ঘটে রিয়্যাল টাইমে, মানে এক ঘন্টার ফুটেজ ইমপোর্ট করতে এক ঘন্টা সময় লাগবে। মিনি-ডিভি সংরক্ষণ করা যায় দীর্ঘদিন, তবে মোটামুটি নাতিশীতোষ্ণ, ধুলো আর আর্দ্রতা থেকে মুক্ত জায়গায় সাবধানে রাখতে হয়। ডিভিডি। এক একটা ডিভিডির দাম পঁচাত্তর সেন্টের মতো পড়বে। তিরিশ মিনিট রেকর্ড করা যায় এক একটা ডিস্কে। এক এক ক্যামেরার জন্য এক এক পদের ডিস্ক লাগতে পারে। ডিভিডির সুবিধা হচ্ছে দুমদাম কোন ডিভিডি-প্লেয়ারে নিয়ে দেখা যায়, তবে কমপ্যাটিবিলিটি চেক করে নিতে হবে। ডিভিডি ক্যামকর্ডারগুলি এমপিইজি-২ ফরম্যাটে রেকর্ড করে, যেটা ঠিক এডিটবান্ধব নয়, আবার এডিট করার পর অনেক সময় কোয়ালিটি পড়ে যায়। ডিভিডি সংরক্ষণ করা সহজ। হার্ড-ডিস্ক। এর সবচে বড় সুবিধা হচ্ছে, আলাদা কোন খরচ নেই। তবে ফুটেজ সংরক্ষণের জন্যে আলাদা মিডিয়াম লাগবে, যেমন পিসির হার্ডডিস্ক, ডিভিডি বা মিনি-ডিভি ক্যাসেট। এর ধারণ ক্ষমতা হার্ড ডিস্কের আকারের ওপর নির্ভর করবে। ক্যামকর্ডার থেকে ফুটেজ দেখাও সুবিধাজনক, ড়্যান্ডম অ্যাকসেসের সুযোগটা থাকে। পিসিতে ট্র্যান্সফার করাও সহজ। লালকালির দিক বিবেচনা করলে হার্ড-ডিস্ক মিডিয়ামই দেখা যাচ্ছে সেরা। তবে যা বুঝি, হার্ড-ডিস্ক গেলে খবরই আছে। ৩. এই সেকশনটা লিখবো নানা ক্যামকর্ডারের রিভিউ পড়ে। ততক্ষণে আপনাদের কাছ থেকেও মূল্যবান পরামর্শ পেয়ে আলোকিত হবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে, ক্যামকর্ডার কিনলে সর্বোচ্চ কয়দিন উপবাসে থাকা উচিত হবে। ভোজনরসিকদের জন্যে আগাম সুখবর থাকবে, ক্যামকর্ডারের প্রথম শিকার হবে বদ্দার "তেহারি"র উপর একটি ডকুমেন্টারি।
false
rg
চলচ্চিত্রে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান !!! সাহিত্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও কাজী নজরুল ইসলাম বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। চলচ্চিত্রে নজরুলের যখন আর্বিভাব তখন চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগ থেকে সবাক যুগে পর্দাপন কাল। তখন অনেকটা মঞ্চের মত চলচ্চিত্রেও শব্দ ও সঙ্গীত সংযোজন শুরু হয়েছে। চলচ্চিত্রে নজরুল পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ লেখক, সংগীতকার, সুরকার, গীতিকার, অভিনেতা, গায়ক ও সংগঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রে যুক্ত ছিলেন। তবে সবচেয়ে প্রধান অবদান ছিল সংগীতকার বা সংগীত পরিচালক হিসেবে। নজরুল ১৯৪২ সালে পিকস রোগে আক্রান্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ২০ থেকে ২২ টি চলচ্চিত্রে সরাসরি জড়িত ছিলেন। চলচ্চিত্রের গানে তিনি কন্ঠ দিয়েছেন, অভিনয় করেছেন এবং একটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন। ত্রিশের দশকে নজরুল পার্সি মালিকানাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাডান থিয়েটার্সের ‘সুর ভান্ডারী’ পদে নিযুক্ত হন। সিনেমায় যারা গাইবেন ও অভিনয় করবেন তাদের গান শেখানো ও উচ্চারণ শুদ্ধ করার দায়িত্ব ছিল নজরুলের। পাশাপাশি তাঁকে গান লেখা ও সুর করারও দায়িত্ব পালন করতে হতো। ১৯৩১ সালে প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাই ষষ্ঠী’তে সুর ভান্ডারীর কাজ করেন নজরুল। ম্যাডান থিয়েটার্স কোম্পানির আরও যেসব চলচ্চিত্রের সঙ্গে নজরুল তখন সম্পৃক্ত ছিলেন সেগুলো হল, ‘জ্যোৎস্নার রাত’ (১৯৩১), ‘প্রহল্লাদ’ (১৯৩১), ‘ঋষির প্রেম’(১৯৩১), ‘বিষ্ণুমায়া’ (১৯৩২), ‘চিরকুমারী’ (১৯৩২), ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’(১৯৩২), ‘কলঙ্ক ভঞ্জন’(১৯৩২), ‘রাধাকৃষ্ণ’ (১৯৩৩) এবং ‘জয়দেব’(১৯৩৩)। ১৯৩১ সালে নজরুল নিজেই ‘ধূপছায়া’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেন। সেই ছবির সংগীত পরিচালনাও নিজে করেন। এছাড়া তিনি বিষ্ণুর ভূমিকায় অভিনয়ও করেন। ম্যাডান থিয়েটার্সের একজন অংশীদার ছিলেন মিসেস পিরোজ ম্যাডান। তিনি ১৯৩৩ সালে পায়োনিয়ার ফিল্মস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। গিরীশ চন্দ্রের কাহিনী আর ‘পাইওনিয়ার ফিল্মস’ প্রযোজিত ‘ধ্রুব’ ছবিটি ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারী মুক্তি পায়। এ ছবিতে প্রথমে নজরুল সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ছবির ‘নারদ’ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। তাঁর নাদুস নুদুস চেহারা, সাজ শয্যা, বাবরী চুলের বাহার আর বেশ ভূষায় তিনি অভিনয়ে তখন আলোড়ন তুলেছিলেন। নারদ চরিত্রে নজরুলের সাজসজ্জা নিয়ে পত্রিকায় সমালোচনা হলে নজরুল তখন তাঁর জবাবও দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি চিরতরুণ ও চির সুন্দর নারদের রূপই দেবার চেষ্টা করেছি।” ম্যাডান থিয়েটার্স বিভিন্নভাবে নজরুলের প্রাপ্য সম্মানী নিয়ে প্রতারণা করায় ১৯৩৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সম্পর্কচ্ছেদ করেন।১৯৩৫ সালে বন্ধু শৈলজানন্দের অনুরোধে ‘পাতাল পুরী’ ছায়াছবিতে আবার নজরুল সঙ্গীত পরিচালনায় আসেন। এই ছবিতে তিনি অসাধারণ কাজ করেন। সাঁওতালি আর ঝুমুর তালে এমন এক ধরণের সঙ্গীত সৃষ্টি করেন, যা পরবর্তী কালে ‘নজরুলের ঝুমুর তাল’ নামে বিখ্যাত ও পরিচিত পায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ১৯৩৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গৃহদাহ’ সিনেমার সুরকার ছিলেন নজরুল। এ ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন রাইচাঁদ বড়াল। ১৯৩৭ সালে নজরুল ‘গ্রহের ফের’ নামক একটি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। ১৯৩৭ সালের সেরা ছবি ছিল ‘বিদ্যাপতি’। কবি বিদ্যাপতির জীবনীভিত্তিক এ ছবির মূল গল্প ছিল নজরুলের। ছবিটির সুরকার ছিলেন নজরুল ও রাইচাঁদ বড়াল। মধ্যযুগের বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতির বিভিন্ন কবিতায় নজরুলের সুর দানের কাজ ছিল অসাধারণ। বাংলা ‘বিদ্যাপতি’র সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দিতে নির্মিত হয় ‘বিদ্যাপতি’। সে ছবিও ব্যবসাসফল হয়। এ সিনেমার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন নজরুল।রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় ১৯৩৮ সালে ‘গোরা’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘গোরা’ নামেই চলচ্চিত্র বানালেন ত্রিপুরার চলচ্চিত্র নির্মাতা নরেশ চন্দ্র মিত্র। এই ছবিতে সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। নরেশ মিত্র (১৮৮৮-১৯৬৮) ১৯২২ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রায় ২০টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এই ছবিতে নরেশ মিত্র পানুবাবু বা হারান চরিত্রে অভিনয় করেন। ওই সময়ে গোটা বাংলা গানে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের জয়জয়কার। ‘গোরা’ চলচ্চিত্রে নরেশ মিত্র নজরুলকে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব দেন। কিন্তু ছবিটি মুক্তির দুইদিন আগে রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘বেসুরো’ করে গাওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ তোলে বিশ্ব ভারতীর মিউজিক বোর্ড। বোর্ড অভিযোগ করে যে, ছবিতে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ব্যবহারে ‘কবিগুরুর অনুমতি’ নেওয়া হয়নি। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘সেন্সর বোর্ড’ ছবিটির মুক্তি আটকে দেয়। এই অভিযোগ শোনা মাত্রই নজরুল নরেশ মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে সোজা শান্তিনিকেতনে চলে যান। সাথে নিয়ে যান ‘প্রজেক্টর ও ছবির একটি প্রিন্ট। বিষয়টি শুনে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “ওহে কাজী, ওরা কি আমার গান তোমার থেকে ভালো বোঝে ? কই, দাওতো কাগজটা, এখনই অনুমতি দিয়ে দিচ্ছি !” সেইদিনই সন্ধ্যেবেলায় কবিগুরুর আগ্রহে ছবিটি শান্তিনিকেতনে প্রদর্শিত হয়। 'গোরা' ছবিতে নজরুল রবীন্দ্রনাথের চারটি গান ব্যবহার করেন। ছবি শুরু হয় যন্ত্রসঙ্গীতে 'গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ...' ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিয়ে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের তিনটি গান ছাড়াও নজরুলের লেখা এবং সুর করা গান ‘ঊষা এলো চুপি চুপি, সলাজ নিলাজ অনুরাগে’ গানটি এই চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের গান- ''ওহে সুন্দর, মম গৃহে আজি পরমোৎসব-রাতি, রেখেছি কনকমন্দিরে কমলাসন পাতি॥ তুমি এসো হৃদে এসো, হৃদিবল্লভ হৃদয়েশ, মম অশ্রুনেত্রে কর' বরিষন করুণ-হাস্যভাতি॥ তব কণ্ঠে দিব মালা, দিব চরণে ফুলডালা-- আমি সকল কুঞ্জকানন ফিরি এনেছি যূথী জাতি। তব পদতললীনা আমি বাজাব স্বর্ণবীণা-- বরণ করিয়া লব তোমারে মম মানসসাথি'' গানটি নজরুল মিশ্র খাম্বাজ রাগে দাদরা তালে নতুন আঙ্গিকে প্রয়োগ করেন। এছাড়া ললিতার কণ্ঠে ''সখী প্রতিদিন হায় এসে ফিরে যায় কে'' গানটি আংশিক ব্যবহৃত হয়। এই গানটিরও নজরুল নতুন করে সুর করেন। এছাড়া ছবিতে সুচরিতার কণ্ঠে ব্যবহৃত হয় রোদন-ভরা এ বসন্ত কখনো আসে নি বুঝি আগে। মোর বিরহবেদনা রাঙালো কিংশুকরক্তিমরাগে। কুঞ্জদ্বারে বনমল্লিকা সেজেছে পরিয়া নব পত্রালিকা, সারা দিন-রজনী অনিমিখা কার পথ চেয়ে জাগে। দক্ষিণসমীরে দূর গগনে একেলা বিরহী গাহে বুঝি গো। কুঞ্জবনে মোর মুকুল যত আবরণবন্ধন ছিঁড়িতে চাহে। আমি এ প্রাণের রুদ্ধ দ্বারে ব্যাকুল কর হানি বারে বারে, দেওয়া হল না যে আপনারে এই ব্যথা মনে লাগে॥ গানটি। এই গানেও নজরুল চমক আনেন। তিনি গানের প্রথম স্থায়ীটির ''কুঞ্জদ্বারে বনমল্লিকা সেজেছে পরিয়া নব পত্রালিকা, সারা দিন-রজনী অনিমিখা কার পথ চেয়ে জাগে'' অংশটুকু গানে ব্যবহার করেননি। সে সময় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হাল বাংলা’ নামে আরেকটি সিনেমার গানেও সুর করেছিলেন নজরুল। হালবাংলা সিনেমায় কৌতুকময় একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেন তিনি। এরপর ১৯৩৯ সালে মুক্তি পায় ‘সাপুড়ে’। এই সাপুড়ে ছবির একাধারে কাহিনীকার, গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন স্বয়ং নজরুল। পরিচালক ছিলেন দেবকী বসু। বেদে সম্প্রদায়ের জীবনভিত্তিক এ সিনেমাটি দারুণ ব্যবসাসফল হয়েছিল। ‘সাপেড়া’ নামে সিনেমাটির হিন্দি রিমেকও হয়েছিল। তার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন নজরুল। ১৯৪১ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের পৃষ্ঠপোষকতায় নজরুল ‘বেঙ্গল টাইগার্স পিকচার্স’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। ১৯৪২ সালের ‘চৌরঙ্গী’ ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন। একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিলরুবা’ সিনেমার গীতিকার ও সুরকার ছিলেন নজরুল। চৌরঙ্গী হিন্দিতে নির্মিত হলে সে ছবির জন্য ৭টি হিন্দি গান লেখেন নজরুল। ‘রজত জয়ন্তী’(১৯৩৯), ‘নন্দিনী’ (১৯৪১), ‘অভিনয়’ (১৯৪১), ‘দিকশূল’(১৯৪১) ইত্যাদি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গান লিখেছিলেন নজরুল। তার গানগুলো সে সময় লোকের মুখে মুখে ফিরত। ১৯৪১-৪২ সালে ‘মদিনা’ নামে একটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। এ সিনেমার জন্য তিনি ১৫টি গান লেখেন। কিন্তু ১৯৪২ সালে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়ায় সিনেমাটি আর মুক্তি পায়নি। মস্তিষ্কের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ৩৪ বছর নজরুল বাকরুদ্ধ ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নজরুলের অসুস্থতার সময় ও মৃত্যুর পর অনেক সিনেমায় তাঁর গান ব্যবহার করা হয়েছে। সব সময়ের জন্যই নজরুলের গানগুলো দর্শকপ্রিয় হয়েছে। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায় ‘পথহারা পাখি কেঁদে ফেরে একা’, জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, ‘লায়লা-মজনু’ সিনেমায় ‘লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া, মজনু গো আঁখি খোলো’ গানগুলো আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা পায়। নজরুলের গান নিয়ে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে। সানিয়াত হোসেন তার ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ ছবিতে নজরুলের একটি গান ব্যবহার করেছেন। ‘আলগা করো খোপার বাঁধন’ গানটি এ সময়েও তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কাজী নজরুলের গল্প ও উপন্যাস নিয়ে আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মিত হলেও হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মান হয়েছে । নজরুলের ‘মেহের নিগার’ গল্প অবলম্বনে ২০০৬ সালে মুশফিকুর রহমান গুলজার ও মৌসুমী একটি সিনেমা নির্মাণ করেন। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই ছবির প্রধান দুই চরিত্রে মৌসুমী এবং ফেরদৌস অভিনয় করেন। একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আরেকটি সিনেমা নির্মিত হয় নজরুলের গল্প ‘রাক্ষুসী’ অবলম্বনে। ‘রাক্ষুসী’ সিনেমার পরিচালক মতিন রহমান। তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রোজিনা, পূর্ণিমা ও ফেরদৌস। এর আগে নজরুলের গল্প ‘জ্বিনের বাদশাহ’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন বাপ্পা রাজ ও কবিতা। খান আতা নির্মাণ করেন ‘পদ্ম গোখরা’ অবলম্বনে ‘সুখদুঃখ’ নামে চলচ্চিত্র। নজরুলের উপন্যাস ‘মৃত্যুক্ষুধা’ এবং গল্প ‘ব্যথার দান’ অবলম্বনেও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। নজরুলের ছোটগল্প ‘অতৃপ্ত কামনা’ অবলম্বনে ২০১৪ সালে গীতালি হাসান নির্মাণ করেন ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’। এ ছবিটিও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের। এতে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস ও শায়লা সাবি। কাজী নজরুলের ‘লিচুচোর’ এবং ‘খুকি ও কাঠবিড়ালি’ কবিতা নিয়ে শিশুদের জন্য দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে। ...................................২৬ মে ২০১৫ঢাকা[তথ্যসূত্র সংগ্রহ: অনুপম হায়াৎ-এর বই 'চলচ্চিত্র জগতে নজরুল' (১৯৯৮), শেখ দরবার আলমের বই 'অজানা নজরুল' (১৯৮৮), আহমাদ মাযহারের প্রবন্ধ 'বাংলা সিনেমার নজরুল', মাসুদুর রহমানের প্রবন্ধ 'চলচ্চিত্রে কাজী নজরুল', মেহফুজ আল ফাহাদের প্রবন্ধ 'নজরুলের সিনেমার গান']
false
rn
অনেকদিন পর আজ সাভারের ঘটনায় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল অনেক লোক আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় এখন হসপিটালে আছে। তাদের জন্যে বিভিন্ন গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন।যারা সাভার বা অতো দূরে যেতে পারছেন না তারা অন্তত শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে চলে আসুন।রক্ত দিন জীবন বাঁচান।রক্ত দিতে যোগাযোগ করুন: এনাম মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, সাভার, ঢাকা।৯/৩, পার্বতী নগর, থানা রোড, সাভার।মোবাইল: ০১৬৮১২১২৭৭৭, গণজাগরন মঞ্চ- ডাঃ উজ্জ্বল ০১৭১৭৬৪৩২০৫, সাগর ০১৯২৫১৫০২০৪ উদ্ধার কাজ যত দেরীতে হবে-যত ধীরে হবে- মৃত্যুর সংখ্যাও তত বাড়বে।আনমানিক ৩৫০০০-৪০০০ মানুষ এখনো আটকে আছে ভেতরে।ইতোমধ্যেই আমরা জেনেছি ৭৬ জনের মৃত্যুর খবর।অনেক লোক আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় এখন হসপিটালে আছে। যারা দিন রাত পরিশ্রম করে এই দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে তারা মারা গিয়েছে।স্বাধীন দেশে কেন পশুর জীবন !আর কত এই রকম দুর্ঘটনা দেখতে হবে জাতিকে? বাংলাদেশে বাস করে মন ভালো রাখাটা খুব কঠিন ।হাসিনা খালেদা ক্ষমতার লড়াই করছে আর তাতে জীবন দিচ্ছে গরীবের সন্তান ।তাদের ছেলেরা বিদেশে বসে আছে ক্ষমতার আশায়।অনেকদিন পর আজ সাভারের ঘটনায় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু কিছুই করতে পারছি না।কেবল লাশের সারি লম্বা হচ্ছে।সারীবদ্ধ লাশ, নারী পুরুষের কোন ভেদাভেদ নেই। ঘুমিয়ে পড়েছে মানুষ গুলো। ওরা আর জেগে উঠবেনা, ফিরে যাবেনা মায়ের কাছে, নিজের সন্তানের কাছে।যারা বেঁচে আছেন তাদের জন্য এই মুহুর্তে ৫০০ ব্যাগের উপর রক্ত প্রয়োজন ।যাদের পক্ষে সম্ভব নিন্মোক্ত নাম্বারে ফোন করে রক্ত দিয়ে আসতে পারেন ।01923337010 (জাহাঙ্গীরনগর)01681212777 (এনাম ম্যাডিক্যাল)ডাঃ সনেট: 01711733175 (শাহবাগ)ডাঃ টিপু: 01714107670 (শাহবাগ)ডাঃ উজ্জ্বল-০১৭১৭৬৪৩২০, সাগর- ০১৯২৫১৫০২০৪‘আমার পা কেটে বাহির কর, আমি আর সইতে পারি না...’ ধ্বংসস্তুপের ভেতর শোনা যাচ্ছে এক নারীর এমন আর্তনাদ।মানুষের হাহাকার আর আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।কাঁদছে বাংলাদেশ,ঊঠে দাঁড়াও,- যদি মানুষ হও! ছুটে যাও,- যদি মানুষ হও!রক্ত দাও,- যদি মানুষ হও!মাননীয় ব্যাক্তি বর্গরা, শোক প্রকাশ করলে কি দুই একটা লাশ জীবিত হয়ে যাবে?? পারলে এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে আসুন।আপনাদের শোক প্রকাশ দেখলে- রাগে শরীর জ্বলে।এখন, সাভার নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেন, টিভিতে টকশো'তে বুদ্ধিজীবিরা ঝড় তুলেন।হে ঈশ্বর, কি অপরাধ করেছিল ওরা ! কাজ করে খেতে এসে লাশ হতে হলো।টক শো'তে এসে বকবকানি বন্ধ করেন আপনারা।খুব রাগ লাগে এখন আপনাদের বক-বকামিতে।ভাওতাবাজির খেলা বন্ধ করে সত্যিকারের মানুষ হতে চেষ্টা করেন।সাভারে আজকে যে ঘটনাটা ঘটলো,সেইটাকে কোনোভাবেই দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। প্রশাসনের কোথায় কোথায় টাকা ঢালতে হবে সেই লিস্টটাকি বের করেছেন গার্মেন্টস মালিক?নাকি মোটা হলুদ খামগুলি অলরেডি পৌছে গেছে ইটালিয়ান টাইলস ঘেরা এসি রুমগুলোতে?
false
mk
জঙ্গিবাদ ইসলামের আদর্শ বিরোধী বেশ তো চলছিল দেশ। বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে স্বধর্মের মানুষ বসবাস করে আসছিল। ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিবেচনায় বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ ছিল না। বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছিল এ ভূমিতে। ১১ শতক থেকে বহিরাগত মুসলমান সুফি সাধকরা ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকেন বাংলায়। সীমিতভাবে ইসলাম প্রচারিত হতে থাকে। ১৩ শতকে তুর্কি মুসলমানরা দখল করে নেয় বাংলার একাংশ—পরে পুরো বাংলা। এ পর্বে আরব, ইরান, সমরখন্দ, বুখারা প্রভৃতি দেশ থেকে সুফি-সাধকরা বাংলায় আসতে থাকেন। ইসলাম ধর্মের বিস্তারে মুসলিম শাসকরা তেমন ভূমিকা রাখেননি। জোরজবরদস্তি ছিল না ধর্ম প্রচারে। ইসলামের শান্তির বাণী ও মানবিকতার আহ্বানে ধর্ম প্রচারে নেমেছিলেন সুফিরা। অত্যাচারী সেন রাজাদের ও পরে কট্টর ব্রাহ্মণদের নিপীড়নের শিকার সাধারণ হিন্দু মানবতাবাদী সুফিদের প্রতি অনুরাগী হয়। এভাবে ধীরে ধীরে মুসলিম অধ্যুষিত দেশে পরিণত হতে থাকে বাংলা। নৃতাত্ত্বিক বিচারে বাংলাদেশের মুসলমানদের বড় অংশই ধর্মান্তরিত মুসলমান; যে কারণে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতিই লালন করে এ দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। আর এটিই প্রধান কারণ এ দেশের মানুষের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জায়গা করে নেওয়া।কিন্তু বলা যায়, এই চমত্কার মানবিক দৃশ্যপটের বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে অমানবিক হিংস্রতা নিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীরা এ দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনকে কলঙ্কিত করছে। জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহ্রীর, জামায়াত-শিবির চক্র ইসলামের মূল সৌন্দর্যকে কলঙ্কিত করে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কিশোর-তরুণদের মগজ ধোলাই করছে। ওদের ভালো করে ধর্মচর্চার সুযোগ না দিয়ে মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে বিকৃত ব্যাখ্যা। হাতে তুলে দিচ্ছে অস্ত্র। মানুষ খুন করার মতো গর্হিত কাজে নামিয়ে দিচ্ছে। যেখানে ইসলামী আইনে যুদ্ধের ময়দান ছাড়া মানুষ হত্যা করা নিষিদ্ধ; যেখানে স্বয়ং মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একটি মুসলিম দেশে আইনানুগভাবে বসবাসকারী কোনো অমুসলিমকে হত্যা করলে হত্যাকারী কখনো বেহেশতের স্বাদ পাবে না এবং তার অবস্থান হবে বেহেশত থেকে ৪০ মাইলের দূরত্বে’, সেখানে সুবিধাবাদী বড় ভাইরা ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা করে নিজেদের কবজায় নেওয়া তরুণদের মগজ ধোলাই করে খুনি বানাচ্ছে। জান্নাতের লোভ দেখিয়ে তাদের জাহান্নামে পাঠাচ্ছে। আমি দেখেছি চটি চটি জিহাদি বই তারা এসব বোকা তরুণকে পড়াচ্ছে, যার মধ্যে কোরআন-হাদিসের আলোকে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণীর প্রকাশ নেই। যেটুকু প্রচারণা করলে ওদের বিভ্রান্ত করা যাবে সেটুকুই উপস্থাপন করা হচ্ছে। ইসলামের ভাষায় যা একরকম মোনাফেকি।এসব নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য মধ্যযুগে খ্রিস্টান পোপদের একাংশ একইভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ খ্রিস্টানকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। প্রাচীন বাংলায় সেন শাসক ও ব্রাহ্মণরা একইভাবে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা প্রচার করে সাধারণ শূদ্র হিন্দুকে নির্যাতন করেছিল। আর এখন একই পথে ইসলামী মৌলবাদী দলগুলো নিজেদের লোভী উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কিছুসংখ্যক তরুণকে বিভ্রান্ত করে মানবতার প্রতি আঘাত হানছে আর ইসলামের সৌন্দর্যকে কলঙ্কিত করছে।ইসলামের শিক্ষা এ ধারার সন্ত্রাসবাদী ধারণা গ্রহণ করে না। ইসলামে জিহাদের জন্য প্রেরণা আছে; কিন্তু সে জিহাদের ব্যাখ্যা ও তাত্পর্য আলাদা। এই বিভ্রান্ত তরুণরা সে ব্যাখ্যা জানার সুযোগ পায় না। সেই সাত শতকে প্রথম আরবে একটি গোষ্ঠীকে দেখা যায়, যারা প্রয়োজনে অমুসলিমদের প্রতি শক্তি প্রয়োগের কথা বলেছিল। তারা ইতিহাসে খারিজি সম্প্রদায় নামে পরিচিত হয়। তাদের এই দর্শন মোটেও ধর্মীয় নয়—রাজনৈতিক। পরবর্তীকালে আলজেরীয়, মরোক্কান ও ইয়েমেনিদের মধ্যে জঙ্গি তত্পরতা দেখা যায়। আধুনিক সময়ে এসে ফিলিস্তিন, ইরাক ও আফগানিস্তানে জঙ্গি ধারণা প্রসার লাভ করে; যার পুরোটাই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে।২০০৭ সালে ১১০ জন আফগান আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী জঙ্গির শারীরিক-মানসিক গঠনের ওপর গবেষণা করেন আফগান বিজ্ঞানী ড. ইউসুফ ইয়াদগারি। তিনি দেখিয়েছেন, ৮০ শতাংশ এ-জাতীয় জঙ্গি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। সাধারণ মুসলমানের মানসিক ও ধর্মীয় চিন্তার সঙ্গে এদের তেমন মিল নেই।নাইন-ইলেভেনে আমেরিকায় আল-কায়েদার হামলার পর সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ আল আশ-শাইখ অফিশিয়াল প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ইসলামী শরিয়াহ এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না। ইসলামী জঙ্গিরা ২০০৩ সালে রিয়াদে বোমা হামলা করেছিল। তখন ইসলামী ধর্মবেত্তা মুফতিরা বলেছিলেন, এই কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে শরিয়াহ আইনের লঙ্ঘন এবং এই কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা ইসলামের শত্রু।ইসলাম ধর্মের একটি প্রধান দর্শন মানুষের পাপ-পুণ্যের শাস্তি প্রদান বা পুরস্কার দান একমাত্র আল্লহর এখতিয়ার। এই সত্য বুঝতে পারলে কোন ব্লগার কী লিখল, কে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করল বা একজন অমুসলিমের আচরণ কিভাবে গৃহীত হবে এসবের নির্ধারণ তো আল্লহরই করার কথা। যারা আল্লাহর বিচারের তোয়াক্কা না করে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে নেয় তারা কি শিরক করছে না? এ প্রসঙ্গে পবিত্র বুখারি শরিফের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি। কিতাবুল ই-তিছামে উল্লিখিত আছে, হজরত ইবনে ওমর নবী করীম (সা.)-কে ফজরের নামাজের রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময় বলতে শুনেছেন, ‘হে আল্লাহ আপনি অমুকের অমুকের প্রতি অভিসম্পাত বর্ষণ করুন।’ তারপর এ আয়াত নাজিল হয়, ‘(হে নবী!) চূড়ান্তভাবে কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বা এখতিয়ার আপনার হাতে নেই। (বরং এটা) আল্লাহরই এখতিয়ার রয়েছে। তিনি চাইলে তাদের ক্ষমা করবেন আর চাইলে তাদের শাস্তি দেবেন।’এভাবে হাদিস-কোরআনের আলোকে বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হবে জঙ্গি নামধারী বিপথগামী সংগঠন ও তরুণরা যেভাবে জনজীবন সংকটাপন্ন করে তুলছে, তা প্রকৃত ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর তাকিয়ে থাকলে চলবে না। বিশেষ করে ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুফতিদের এগিয়ে আসতে হবে। বিচ্ছিন্ন কোনো সংলাপ নয়, দেশব্যাপী প্রবলভাবে কোরআন-হাদিসের আলোকে ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। সংবাদমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে অভিন্ন প্রেরণায়। উন্মোচন করতে হবে জঙ্গিবাদীদের আসল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এই প্রচারণায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের। আর একে সম্ভব করতে হলে শক্তি ও সামর্থ্যের ছায়া নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে। ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তাই এখন খুব প্রয়োজন। এভাবেই সাধারণ সরল তরুণ-তরুণীদের বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এই পথ ধরে গড়ে উঠবে সামাজিক প্রতিরোধ। আইনের শাসন ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস করি, এ দেশ থেকে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন সম্ভব। কারণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো এখনো শক্ত পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। এ দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। ফলে যদি আমাদের ক্ষমতাবান রাজনীতিকদের মধ্যে সততা থাকে ও দলীয় স্বার্থকে তাঁরা সবার ওপরে না দেখে জাতীয় স্বার্থকে বড় করে দেখেন এবং সামাজিক প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেন, তাহলে সাফল্য পাওয়া নিয়ে দ্বিধা থাকার কোনো কারণ নেই।সুখের কথা, গত ১৮ জুন এ দেশের এক লাখ মুফতি, আলেম ও ইমাম ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। তাঁরা কোরআন-হাদিসের আলোকে জানিয়েছেন, চলমান জঙ্গি তত্পরতা হারাম। ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড। আমি মনে করি, এখানে থামলেই চলবে না। এখন বারবার এই বার্তা দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো তত্পরতা অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু এই বাহিনীর তত্পরতা সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই বাহিনী কতটা লক্ষ্য অর্জনে নিবেদিত আর কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে মনোযোগী এই ধোঁয়াশা মানুষের মধ্য থেকে দূর করা যায়নি। এই প্রশ্নের সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না যে জঙ্গি সমস্যা তো রয়েছেই, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। এর বদলে কেন বিশেষ সপ্তাহের নাকাড়া বাজিয়ে ‘সাঁড়াশি’ অভিযান করতে হয়? ১০০ জঙ্গি ধরা পড়লে কেন পাঁচ হাজার অজঙ্গি ধরা পড়ে? এমন হাটবাজার বসিয়ে জঙ্গি প্রতিরোধ কার্যক্রম কতটুকু সাফল্য বয়ে আনবে?মাদারীপুরে শিক্ষকের ওপর হামলাকারীর অন্যতম ধৃত ফাহিম কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এর আগে সে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে গেছে। এর ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে বলে পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি। তাতে এসব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জামায়াত-শিবিরের নীলনকশার কথা বলা হয়েছে। এমনটি এ দেশের মানুষের অনুমানেও ছিল। এখন পরিষ্কার হলো। আমার মনে হয়, এই তথ্য এখন এসব খুনি চক্রের মূলোচ্ছেদে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।আমাদের পরিবারগুলো ও প্রতিবেশীদেরও সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। ধরা পড়া জঙ্গিদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কম বয়সী তরুণই বেশি। তারা নিজেরা যে গভীরভাবে ধর্ম অধ্যয়ন করে জিহাদি হয়েছে তেমন নয়। তাদের ধর্মপ্রবণ মন পাশাপাশি ধর্মের ব্যাখ্যা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও সরলতার সুযোগ নিয়েছে সুযোগসন্ধানী ওস্তাদরা। নিজেরা নিরাপদে থেকে শাগরেদদের পাঠিয়ে দিচ্ছে অপরাধ আর মৃত্যুর দিকে। অথচ হয়তো পরিবারের অভিভাবকরা জানেনই না তাঁদের সন্তান বা শান্তশিষ্ট ধর্মপ্রবণ ভাইটির মগজ ধোলাই হয়ে যাচ্ছে। সে ক্রমে অন্ধকারের দিকে পা বাড়াচ্ছে। কোনো পরিবারও জঙ্গি ভাবাপন্ন হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন আছে। এমনই করে নানাভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুললে এ দেশের মাটি থেকে জঙ্গিবাদ নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব।যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দা নিতে চায় তাদের চেয়ে ভয়ংকর অমানবিক আর কেউ হয় না। মধ্যযুগে রোমান পোপ ধর্মযুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছিলেন নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য। চারটি ক্রুসেডে মুসলমানদের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে ভয়ংকর নরপিশাচের ভূমিকায় নেমেছিলেন ধর্মযাজকরা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার খ্রিস্টান শিশু এনে জড়ো করেছিলেন। জাহাজের সামনে মানব-ঢাল হিসেবে রেখেছিলেন শিশুদের। বিশ্বাস ছিল, মুসলমানরা শিশুদের ওপর আঘাত করবে না। কিন্তু দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার কারণে, ক্ষুধার্ত হয়ে ও গরমে অধিকাংশ শিশু পথেই মারা যায়। শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয় ক্রুসেড।পৃথিবীর নানা দেশে ও আমাদের দেশেও জঙ্গিরা একই মানসিকতায় ধর্মের নাম ভাঙিয়ে মানুষ খুন করছে। ইসলামের নামে ভয়ংকর ইসলামবিরোধী কাজ করছে। তাই ধর্মের দায়ে, মানবতার দায়ে এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংহতির প্রশ্নে এই নিকৃষ্ট মানসিকতার জঙ্গিদের মূলোচ্ছেদে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
false
rg
সুখবর সুখবর সুখবর___ আপনি চাইলেই দেশের বাইরে টাকা পাঠাতে পারবেন___ তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগবে!!! যে অযুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসীদের দেশ থেকে বাইরে টাকা নিয়ে যাবার অনুমতি দিতে যাচ্ছে, এই অযুহাতের ভেতরে বড় ধরনের সমীকরণ জড়িত। এর পেছনে ক্ষমতা জড়িত। রাঘববোয়ালরা জড়িত। দুবৃত্ত একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত। এতোদিন হুণ্ডি বা অবৈধ পথে বাইরে টাকা যেত। এখন বৈধ পথেই দুর্নীতিবাজদের টাকা বাইরে পাচার করার চক্রের কাছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নত হল। এটি কোনো একটি দেশের মধ্যে অত্যন্ত চরম অবস্থা তৈরি হলেই কেবল সম্ভব।কী ভয়ংকর কথা। আপনি কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেই আপনার একাউন্টে থাকা টাকা বাইরে পাচার করতে পারবেন। তাহলে দেশের দুবৃত্তায়নকে একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে চুপচাপ মেনে নিল? অবৈধ হুন্ডি বন্ধ করতে না পেরে সোজাসুজি টাকা বাইরে পাঠানোর রাস্তা করে দিতে হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক ওইসব দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে যে সব কারণ জানতে চাইবে, বা পরখ করবে, তা নিয়ে যে আরো দেনদরবার হবে না, আরো দুর্নীতি হবে না, সেই গ্যারান্টি কোথায়? অবৈধ পথে বাইরে টাকা যাবার ক্ষেত্রেও কিছু ঝুঁকি থাকে। বৈধ কাগজপত্র থাকে না। এক ধরনের আস্থা ও কোডিং সিস্টেমের উপর আস্থা নিয়েই এই অবৈধ ব্যবসা চলছে। একটা পিন নাম্বার বা একটা কোড বলতে পারলে বা দেখাতে পারলেই পাচার হওয়া টাকা বাইরে অবস্থানরত সোর্স ক্যাশ করতে পারছে।আর এখন বাংলাদেশ ব্যাংক এটাকে জায়েজ করে দেওয়ায়, অনেকে নানান বাহানা দেখিয়ে বৈধ পথেই টাকা বাইরে পাচার করবে। দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো কড়াকড়ি আরোপ করার কথা, সেখানে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়ে দুবৃত্তায়নের কাছে নতি স্বীকার করে, দুর্নীতিকে এক ধরনের ছাড়পত্র দিতে যাচ্ছে।এমনিতে এতোদিন শুনতাম, দুর্নীতিবাজদের বাইরে সেকেন্ড হোমের কথা। এখন সেকেন্ড হোমে যাতে অনায়াসে টাকাও গিয়ে হাজির হয়, সেই ব্যবস্থা এই ঘোষণায় পাকাপাকি করা হল। আপনার বউ ছেলেমেয়ে কী বাইরে থাকে? আপনি কি দুর্নীতির টাকা বাইরে পাঠাতে চান? আপনার জ্ঞাতী গোষ্ঠীর কারো স্থানীয় খরচের ব্যবস্থা রেখে, অবশিষ্ট টাকা এখন চোখের সামনেই বাইরে পাচার করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক আপনাকে সেই নিশ্চয়তা দিতে যাচ্ছে।একটি দেশ যখন ধ্বংসের চূড়ান্তপ্রান্তে চলে যায়, সেই দেশে যখন সততার কোনো উপস্থিতি না থাকে, দুবৃত্তায়নে সেই দেশের যখন সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চরম অরাজকতায় নিপতিত হয়, তখন সেই দেশের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এমন একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখে ফেলে দেয়? বাংলাদেশ আসলে স্বাধীন কিনা? স্বাধীন হলে দুর্নীতিবাজরা বাইরে টাকা পাচার করবে কেন? বাইরে তাদের কিসের স্বার্থ? তাহলে তাদের আসল দেশ কোনটি? তাহলে কি একটি দেশের ধারণার মধ্যে একদল মানুষ শুধু এখানে থেকে নানাভাবে ব্যবসা করে অন্যত্র পাচারেই ব্যস্ত থাকবে। আর তাদের পরিবারগুলো থাকবে ক্ষমতায় বা ক্ষমতার কাছাকাছি?দেশের কোনো বিরোধীদলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একটি ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে চোখে পড়ল না। সংবাদপত্রে খরবটি তেমন গুরুত্ব পেল না। সাদামাটা খবরের মত একটি খবর মাত্র। অথচ এই খবরটি টানা একমাস সকল সংবাদপত্রের হেডলাইন হতে পারে। দেশ থেকে টাকা পাচারে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈধতা দিচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলাও অনেকটা ঝুঁকির। কারণ, যাদের টাকা আছে, তাদের কাছে বিরোধিতা মানে যেচে শত্রু হওয়া। কার ঘাড়ে কয়টা মাথা দুবৃত্তায়নের এমন ভয়ংকর একটি গোপন সত্য প্রকাশ করবে!!!জামার্নির নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারকে আমি শুধুমাত্র একটি কারণে খুব পছন্দ করি। হিটলার ঘোষণা দিয়েছিলেন, একটি মার্কও জার্মানির বাইরে যেতে পারবে না। আর সেটা তিনি কঠোরভাবেই অনুসরণ করতেন। হিটলারের মানিটারি পলিসি খোদ জার্মান রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত কল্যানকর ছিল। যে কারণে খুব কম সময়ের মধ্যেই জার্মানি এক শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিনত হয়ে গোটা বিশ্বকেই চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও এই চ্যালেঞ্জ কেবল জার্মানিই দুইবার পৃথিবীবাসীকে করেছিল। যার পরিনতি দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধ। লাখ লাখ প্রাণহানি।কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই মোড়ল রাশিয়া আর আমেরিকা যেভাবে গোটা বিশ্বকে ভাগ করে নিল, নব্বইয়ে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতনের পর যা এখন আমেরিকার একক করায়াত্ত, যেখানে এখন নতুন সিংহ হিসেবে চিন দাঁড়িয়ে আছে। এই গোটা রাষ্ট্র কাঠামো চিন্তার মধ্যে একটা ব্যাপার খুব পরিস্কার। সেটা হল, সারাবিশ্বে দুবৃত্তায়নকে কঠোর ভাবে শক্তিশালীরা অনুসরণ করে। তাদের কাছে রাষ্ট্রকাঠামো একটি ধারণা মাত্র। তাদের কাছে বাংলাদেশ বা ইসরাইল বলতে কোনো আলাদা রাষ্ট্র নয়। তাদের কাছে পুরো গ্লোবটাই একটি মাত্র রাষ্ট্র।মজার ব্যাপার হল, বিশ্বায়নের এই যুগে এখন বাংলাদেশেও অনেক টাকাওয়ালা নিজেদের বিশ্ব নাগরিক দাবি করতে পারেন। কারণ, এরা কিভাবে টাকা বানালো, তার চেয়ে তাদের কাছে কোথায় কিভাবে কত আমোদ-প্রমোদে জীবনযাপন করছে, কত ক্ষমতা নিয়ে জীবন উপভোগ করছে, এটাই বড় কথা। তাদের কাছে ঢাকা যা, লন্ডনও তাই। ফ্লোরিডা যা, ঢাকাও তাই। যেখানেই থাকবে গোটা দেশের রাষ্ট্রকাঠামো সেই অদৃশ্য শক্তির কাছে নতি স্বীকার করে বসে থাকে। তাদের কাছে দেশ ধারণাটি একেবারে গৌণ। ক্ষমতার ধারণাটাই একমাত্র মৌলিক ব্যাপার।বাংলাদেশ ব্যাংক সেই অদৃশ্য অশুভ শক্তির কাছে স্বেচ্ছায় পরাজয় মেনে নিয়ে, তাদের দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে এখন বলছে, দেশের বাইরে টাকা নেওয়া যাবে। তার মানে, দেশের বাইরে এখন অনেকের টাকা পাচার করা খুব প্রয়োজন। তার মানে দেশের বাইরে এখন টাকা নেওয়ার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তার মানে দেশের বাইরে টাকা নেবার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। তার মানে দেশের বাইরে টাকা নেবার মত একটি পক্ষ এখন খুব সচল। তার আরো হাজারো মানে। সেই সমীকরণের পেছনে গোলক ধাঁধায় হাঁটার মত সময় কোথায় সাধারণ মানুষের। তোমরা আমজনতা, আমজনতা হয়েই থাক। আমাদের বাইরে টাকা পাঠানো প্রয়োজন, তাই আইনে একটু সংশোধন আনা হয়েছে। সো, সাধু সাবধান।...............................১১ ডিসেম্বর ২০১৪ঢাকা
false
fe
জননিরাপত্তায় রাষ্ট্র ও সমাজের সফলতা-ব্যর্থতা জননিরাপত্তায় রাষ্ট্র ও সমাজের সফলতা-ব্যর্থতাফকির ইলিয়াস------------------------------একটি রাষ্ট্রে জননিরাপত্তা যখন ভেঙে পড়ে, তখন মানুষের অসহায় না হয়ে উপায় থাকে না। একজন এমপিকে খুন করা হয়েছে। তার নিজ বাড়িতেই তিনি খুন হয়েছেন। মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন গাইবান্ধার এমপি ছিলেন। তিনি ক্ষমতাসীন দলেরই একজন সংসদ সদস্য। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি সরকারি বিভিন্ন বাহিনী। সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ঘটনাকে সন্ত্রাসীদের নতুন কৌশল বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনমনে আতঙ্কের জন্য এই কৌশল হতে পারে। তদন্তে সব কিছুকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।গাইবান্ধায় এমপি লিটন নানা কারণেই আলোচিত ছিলেন। তিনি মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকাটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি প্রায় একাই ওই এলাকায় ঘাতক রাজাকার শিরোমনি গোলাম আযমকে ঠেকিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিগত ১৯৯৮ সালের ২৬ জুন সুন্দরগঞ্জ ডিডাব্লিউ ডিগ্রি কলেজ মাঠে জামায়াত-শিবির আয়োজিত জনসভায় গোলাম আযমের বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল। সে সময় স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের এই সভা পণ্ড করে দিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ লিটন তার বন্দুক হাতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ওই জনসভায় প্রবেশ করে গোলাম আযমকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এতে জনসভাটি পণ্ড হয়ে যায়। ফলে সেই থেকে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী লিটনকে যে কোনো মূল্যে হত্যার টার্গেট করে রেখেছিল। সে সময় তার গুলিতে আহত জামায়াতের ফতেখাঁ গ্রামের ক্যাডার হেফজসহ আরো দুর্ধর্ষ জামায়াত ক্যাডাররা লিটনকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে এবং মোবাইল করে দীর্ঘদিন থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।এই নির্মম হত্যা তারই জের বলে উল্লেখ করে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, গোলাম আযমের ওই সভা পণ্ডের রেশ ধরেই জামায়াত-শিবিরের খুনিরাই তার স্বামীকে হত্যা করেছে। তিনি মর্মান্তিক এই হত্যার বিচার চান এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি ছোড়ার একটি পরিকল্পিত মিথ্যা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমপি লিটনের লাইসেন্সকৃত রিভলবার ও শটগান জব্দ করে নেয়া হয়। খুনি জামায়াত-শিবির চক্র জানত তার বাড়িতে তাদের প্রতিরোধ করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। সেই সুযোগে বাড়িতে এসে পরিকল্পিতভাবে খুনিরা তাকে হত্যা করতে সাহসী হয় বলে স্মৃতি জানান। প্রয়াত এমপির স্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন তা সবার ভেবে দেখা দরকার। তিনি বলেছেন, প্রতিদিন বিকেলে অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে থাকতেন। এ ছাড়া তার বাড়িতে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা ছিল রাতে। সাধারণত সন্ধ্যার আগেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এমপি লিটন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন-সংলগ্ন তার অফিসে গিয়ে বসেন এবং রাত ৯টা থেকে ১০টা অবধি সেখানে থাকেন। কিন্তু কেন জানি না সেদিন কোনো নেতাকর্মী তার বাড়িতে ছিলেন না। ..তিনি ও তার ভাই বাড়ির উঠানের রান্নাঘরের কাছে ছিলেন। সে সময় গুলির শব্দ শুনতে পান এবং লিটন ঘর থেকে বাড়ির ভেতর দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে বলেন, ওরা আমাকে গুলি করেছে, আগে ওদের ধর। এ সময় তিনি বুকে হাত দিয়ে ছিলেন এবং বুকের বাম পাশ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। কী মর্মান্তিক দৃশ্য! এটাই কি দেখতে চেয়েছিল এই বাংলাদেশ? লিটন হত্যার মাধ্যমে কে কি মেসেজ দিতে চেয়েছে সরকারকে? সরকার কি তা পাচ্ছে?এর আগেও আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা ঘাতকের হাতে খুন হয়েছেন। গত ১২ বছরে গুলি ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগের তিন এমপি-মন্ত্রী। ২০০৪ সালে গাজীপুরে হত্যা করা হয় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। পরের বছর হবিগঞ্জে বোমা হামলায় প্রাণ হারান সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। এসবের এক দশক পেরিয়ে গেলেও একটি মামলারও চূড়ান্ত রায় আসেনি। এদিকে গত কয়েক বছরে জঙ্গি সংগঠনের নামে হত্যার হুমকি পেয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ নানা শ্রেণি-পেশার অন্তত ৫০ জন।টঙ্গীতে এক জনসভায় গুলি করে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। হবিগঞ্জে জনসভা শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ হত্যা করা হয় তিনজনকে। এ ঘটনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেটের বরখাস্ত সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি তাজউদ্দিনসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। ২০১৫ সালের জুনে সিলেটের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় বিচার। এক দশকেরও বেশি সময় পার হলেও নিষ্পত্তি হয়নি বিচার কাজ।মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য (সাবেক ও ক্ষমতাসীন) আততায়ীদের হাতে নিহত হয়েছেন। ১৯৭২ সালের ৬ জুন সন্ত্রাসীরা খুলনা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত আব্দুল গফুরকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন বরিশালের মঠবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত এমপি সওগাতুল আলম সহুর। একই বছরের ৩ মে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থেকে নির্বাচিত নুরুল হককে হত্যা করা হয়। ১৯৭৪ সালের ১০ জানুয়ারি হত্যা করা হয় ভোলা থেকে নির্বাচিত এমপি মোতাহার উদ্দীন আহমেদকে। একই বছরের ১৬ মার্চ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন নরসিংদীর মনোহরদী থেকে নির্বাচিত এমপি ফজলুর রহমান। ওই বছরই ১ আগস্ট ও ডিসেম্বরে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে হত্যা করা হয় ময়মনসিংহের এডভোকেট ইমান আলী এমপি এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী আসন থেকে নির্বাচিত এমপি গোলাম কিবরিয়াকে। আর ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয় নেত্রকোনার সাংসদ আব্দুল খালেককে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকেও সে রাতে হত্যা করে ঘাতকরা। এসব ঘটনা জাতি ভুলবে কি করে?এ হামলা অব্যাহত রয়েছে। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জেড এ মাহমুদকে (ডন) লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এক পথচারী নারীর গায়ে লাগে। শিপ্রা কুরুর (৫০) নামের ওই নারীকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।খবর বেরিয়েছে- গাইবান্ধায় এমপি লিটন খুন হওয়ার পর জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ২২ জেলার এমপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে ওই সব জেলার এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। ওইসব জেলার এমপিদের সার্বক্ষণিক গানম্যানের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশি তৎপরতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে এমপিদের পরামর্শও নিতে বলা হয়েছে। এর আগে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম খুন হওয়ার আশঙ্কায় থানায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ওই এমপিরও নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঝুঁঁকিপূর্ণ জেলাগুলো হচ্ছে নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট, ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এটি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশের সব আসনের এমপিকেই গানম্যানসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দেয়া দরকার। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এর সমমর্যাদার সবারই নিরাপত্তা আরো জোরদার করা দরকার। কারণ সব কিছু পেরিয়ে ২০১৭ সাল চোরাগোপ্তা হত্যার বছর হয়ে দাঁড়াতে পারে।মনে রাখতে হবে ঘাতকরা কিন্তু বসে নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই সরকার ও নীতিনির্ধারকদের হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক সফলতার অনেক দিক আছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ব্যর্থতা দৃশ্যমান। এটা কাটিয়ে উঠতে হবে। মনে রাখা দরকার, আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। আর হয় না বলেই রাজনীতিকদের চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। সিদ্ধান্ত নিতে হয়- গণমানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে।--------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ ৭ জানুয়ারি ২০১৭ শনিবার সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১১
false
ij
সম্রাট দারায়বৌষ_ প্রাচীন পারস্যের একজন প্রতাপশালী সুশাসক। দারায়বৌষই ইতিহাসে প্রথম যিনি দাসদের মজুরি মুদ্রায় প্রদান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে আমি প্রাচীন পারস্যের সম্রাট করু বা সাইরাস দ্য গ্রেটকে নিয়ে লিখেছিলাম। আজ আরেকজন পারশিক সম্রাটের কথা বলব। তিনি দারায়বৌষ; ইংরেজিতেDarius । ভারতের পশ্চিম সীমান্ত থেকে শুরু করে গ্রিসের পূর্ব সীমান্ত এবং দক্ষিণে মিশর অবধি ছড়িয়ে ছিল তাঁর রাজ্য; খনন করিয়ে ছিলেন নীল নদের খাল, নির্মান করেছিলেন বিশাল এক রাজকীয় সড়ক। দারায়বৌষ সময়কাল ছিল ৫৪৯ থেকে ৪৮৬ খ্রিস্টপূর্ব। তিনি সাইরাসের (আকামানিদ) বংশের একজন হলেও ঠিক সাইরাসের পুত্র ছিলেন না। দারায়বৌষ আসলে ছিলেন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী; তিনি সাইরাসের এক ছেলেকে হত্যা করে পারস্যের ক্ষমতা দখল করেছিল। খুলে বলি। দারায়বৌষ এর বাবার নাম ছিল হাইসতাসপেস। হাইসতাসপেস প্রথমে ছিলেন সাইরাসের সময় পারশিক সেনাবাহিনীর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা। হাইসতাসপেস মনে হয় সাইরাসের প্রিয়ভাজন ছিলেন। সাইরাস তাকে পার্থিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন । হাইসতাসপেস স্বপ্ন দেখতেন- ছেলে একদিন পারস্যের সম্রাট হবে-বাবাকে শেষ জীবনে সুখেশান্তিতে রাখবেন। সাইরাস ছিলেন প্রজ্ঞাবান। তিনি দারায়বৌষ কে ঠিকই সন্দেহ করতেন। কাজেই সন্দেবশত, দারায়বৌষ কে মিশরে পাঠিয়ে দিলেন সম্রাট সাইরাস। দারায়বৌষ বাধ্য হয়ে মিশরে গেলেন। সাইরাসের এক ছেলে তখন মিশরের শাসক। নাম: ক্যামাইসেস। ক্যামবাইসেস -এর সেনাবাহিনীতে দারায়বৌষ-এর সামান্য চাকরি জুটল। সে বর্শা বহন করার দায়িত্ব পেল।। তবে দারায়বৌষ-এর ব্যাক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। সৈন্যবাহিনীতে সে দারুণ জনপ্রিয় ছিল। সৈন্যবাহিনীতে সে হয়ে উঠল মধ্যমনি। কাজেই ক্যামবাইসেসের মৃত্যুর পর সৈন্যরা দারায়বৌষকেই ক্যামবাইসেসের সৈন্যবাহিনীর দায়িত্ব নিতে চাপ দিল। দারায়বৌষ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সুযোগ এল। সাইরাসের অন্য ছেলের নাম ছিল গাওমাতা। ক্যামবাইসেসের মৃত্যুর কথা শুনে গাওমাতা পারস্যের সিংহাসনের বসল। ১১ মার্চ ৫২২ খ্রিস্টপূর্ব। দারায়বৌষ সসৈন্য পারস্য অভিমূখে রওনা হল। জুলাই মাসে পারস্য পৌঁছল দারায়বৌষ। তারপর পরিকল্পনা মোতাবেক এক সামরিক অভ্যূত্থান ঘটাল সে। তার অনুগত সৈন্যরা গাওমাতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। পরে এ ব্যাপারে দারায়বৌষ-এর বক্তব্য ছিল এরকম: সে নাকি নকল গাওমাতাকে গত্যা করেছে। কারণ ক্যামবাইসেসের মিশর যাওয়ার আগেই এই নকল গাওমাতা নাকি আসল গাওমাতাকে হত্যা করেছিল। লোকটা আসলে নাকি মদ্র। আর মদ্ররা তো ঠিক পারশিক নয়। ইত্যাদি। ইত্যাদি। পারস্যের বেহিসতুন নামে একটা জায়গায় সম্রাট দারায়বৌষ-এর আমলের শিলালিপি পাওয়া গিয়েছিল। সেই শিলালিপিতে এসব তথ্য লেখা রয়েছে। যাহোক। তারপর কি করলেন দারায়বৌষ? সম্রাট সাইরাসের রাজধানী ছিল পাসারগাদে। তারই দক্ষিণে বিশাল এক প্রাসাদ নির্মানে হাত দিলেন দারায়বৌষ। পরবর্তীকালে গ্রিকরা যে প্রাসাদটির নাম দিয়েছিল পার্সিপোলিস। পার্সিপোলিস মানে- পারশিকদের নগর। পার্সিপোলিস পৃথিবীর স্থপত্যের ইতিহাসে আজও এক প্রগাঢ় বিস্ময়! দারায়বৌষ তারপর পার্থিয়া থেকে বৃদ্ধ বাবাকে, মানে, হাইসতাসপেসকে নিয়ে সেই প্রাসাদে তুললেন। বাবা ছেলেকে বললেন, পারস্যের সম্রাট হয়েছ। এখন তো ইজ্জত বাড়াতে হয়। ইজ্জত বাড়াতে হলে রাজকীয় ঘরে বিয়ে করতে হয় বাছা। মানে? তুমি কি বলছ বাবা? দারায়বৌষ তো অবাক। হাইসতাসপেস তখন বললেন, আরে এখন বিয়ে কর। সম্রাটের দুই মেয়ের এখনও বিয়ে হয়নি। রাজকীয় পরিবারে বিয়ে না করলে ইজ্জত বাড়ে? ও আচ্ছা। সাইরাসের দুই মেয়ে ছিল। তাদের নাম- আটোসা আর আরতিসতোন। তাদের বিয়ে করলেন দারায়বৌষ। অভ্যূত্থানে নিহত সাইরাস-পুত্র গাওমাতারও এক মেয়ে ছিল। নাম পারমিস। পারমিসকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ। বাপের খুনির সঙ্গে বিছানায় যেতে কেমন লেগেছিল পারসিসের? যা হোক। ব্যাবিলনে তখন দারায়বৌষ-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছিল। গাওমাতাপন্থিরা একজোট হচ্ছিল ওখানে। অত্যন্ত নির্মম উপায়ে দারায়বৌষ দমন করলেন সে বিদ্রোহ। সাম্রাজ্য এখন শান্ত। কাজেই, দারায়বৌষ এবার সাম্রাজ্যে বির্নিমানে মন দিলেন। সম্রাট দারায়বৌষ ভালো করেই জানতেন যে- যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে ব্যবসা বানিজ্যের অন্যতম প্রধান শর্ত। এই লক্ষ্যে সারদিস থেকে ইলম অবধি বিশাল এক রাজকীয় সড়ক নির্মান করেছিলেন। (সারদিস থেকে ইলম মানে বর্তমানকালের তুরস্ক থেকে দক্ষিণ ইরান।) গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস সে রাজকীয় পথের বর্ননা লিখে রেখেছেন আমাদের জন্য। ভারি নিরাপদ ছিল নাকি সে রাজকীয় পথ। পথে অশ্বারোহী পারশিক সৈন্যরা পাহারা দিত। পথের দুপাশে ছায়াময় গাছের সারি। পথে চলেছে বাজিন্য ক্যারাভান। কয়েক মাইল পরপর মনোরম সরাইখানা। সরাইখানায় নাকি থাকাখাওয়ার সুবন্দোবস্ত ছিল। কাজই, সম্রাট দারায়বৌষ-এর আমলে ওই অঞ্চলের ব্যবসাবানিজ্যের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছিল। আগেই বলেছি আমি- ভারতের পশ্চিম সীমান্ত থেকে শুরু করে গ্রিসের পূর্ব সীমান্ত এবং দক্ষিণে মিশর অবধি ছড়িয়ে ছিল সম্রাট দারায়বৌষ-এর রাজ্য। মিশরের নীল নদের খাল খনন করেছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ। আজ যেটা সুয়েজ খাল-সেটি খননের উদ্বোধন সম্রাট দারায়বৌষই করেছিলেন। একটি শিলালিপিতে সে কথার উল্লেখ রয়েছে:King Darius says: I am a Persian; setting out from Persia I [1] conquered Egypt. I ordered to dig this canal from the river that is called Nile [2] and flows in Egypt, to the sea that begins in Persia. Therefore, when this canal had been dug as I had ordered, ships went from Egypt through this canal to Persia, as I had intended. দারায়বৌষই ইতিহাসে প্রথম দাসদের দিনের মজুরি মুদ্রায় প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর অন্যতম কারণ। সম্রাট দারায়বৌষ ছিলেন জরথুশত্র ধর্মের অনুসারী। জরথুশত্রর অন্যতম নির্দেশ ছিল গরিবদুঃখীদের প্রতি সদয় আচরণ ও তাদের যথাসম্ভব প্রতিপালন। সম্ভবত কথাটা সম্রাট দারায়বৌষ জীবনভর মনে রেখেছিলেন:দাসদের মজুরি মুদ্রায় প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গরিবের হাতে টাকা এসেছিল। মুদ্রার সঞ্চলন হয়েছিল। অর্থনীতির বিকাশ হয়েছিল। প্রাচীন পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার কথা মনে রাখলে এ অবশ্যই এক অনন্য নজীর। কাজেই অনুমান করা যায় যে -সম্রাট দারায়বৌষ ছিলেন সুশাসক। অধিকন্তু, কর আদায়ে অনন্য নজীর স্থাপন করেছিলেন সম্রাট দারায়বৌষ। কর কত হবে-তা নাকি প্রজারাই ঠিক করতে পারত তাঁর আমলে। প্রাচীন পারস্যে এই অতি প্রতাপশালী সম্রাটের মৃত্যু; ৪৮৬ খ্রিস্টপূর্ব। উৎস: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:০২
false
fe
প্রভাবের দ্বন্দ্ব ও অসহায় জাতিসত্তা প্রভাবের দ্বন্দ্ব ও অসহায় জাতিসত্তাফকির ইলিয়াস =========================================এই দ্বন্দ্বটা প্রকটই হচ্ছে। আর তা হচ্ছে প্রভাব বিস্তারের। মুখোমুখি দুই পক্ষ। একপক্ষ সমাজের কালো টাকার মালিক। অপশক্তির অধিপতিরা। অন্যপক্ষ সরকার। জিতবে কে? কার জেতা উচিত? মাঝখানে মানুষেরা খুবই অসহায়। তারা জানেন না কী করতে হবে। কোন পক্ষকে সমর্থন করলে মুক্তি পাওয়া যাবে জানা নেই তাদের। অপশক্তিরা হরণকারী। আর সরকারপক্ষ হচ্ছে মুক্তিদাতা। কিন্তু সরকারপক্ষ জিতে উঠছে না কেন? কেন বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে জাতিসত্তার স্বপ্ন?জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘নদী বাঁচাও, ঢাকা বাঁচাও’ নামে একটি সমাবেশ হলো। এর বক্তব্য হওয়া উচিত ছিল ‘নদী বাঁচাও- দেশ বাঁচাও’। তা হয়নি। তারপরও শুরু হয়েছে এটা শুভ লক্ষণ। প্রধানমন্ত্রী সমীপে অনেক দাবিই জনগণের থাকে। এর মাঝে যুক্ত হয়েছে ‘নদী বাঁচাও’ দাবিটি। পরিবেশ বাঁচানোকে অনেকেই গৌণ বিষয় মনে করেন। আসলে তা একটি প্রধান বিষয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে। যেখানে ভূমিখেকোর মতো দানবরা সদা তৎপর। যেখানে বৃক্ষ কর্তনকারীরা উল্লাস করে বন উজাড় করে। এদের শিকড় অনেক বিস্তৃত। এরাই প্রভাবশালী। এদের হাত অনেক লম্বা।‘নদী বাঁচাও ঢাকা বাঁচাও’ সমাবেশে অনেক রাজনীতিকই উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার এডভোকেট আব্দুল হামিদও। তাদের বক্তব্য টিভিতে শুনলাম। মন্ত্রীরা বললেন, প্রভাবশালী মহলকে রুখতে হবে। কারা এই প্রভাবশালী? তাদের হাত কি সরকারের হাতের চেয়েও শক্তিশালী? যদি না হয় তবে সরকার তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না কেন? বাংলাদেশে নদী বাঁচানোর দাবিটি দীর্ঘদিনের। এই সব নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে বদলে গেছে গ্রামীণ জনপদের সুস্থ জীবনযাত্রা। বন্যার সময় দ্রুতই আক্রান্ত হচ্ছে ফসলি জমি। এর কোনো প্রতিকার নেই। নদীগুলো ড্রেজিং করার কোনো উদ্যোগ নেই। বাজেট নেই। আজ ঢাকা বাঁচাও স্লোগান তোলা হচ্ছে। ঢাকা বাঁচানোর জন্য অনেক কিছু করা দরকার। প্রয়োজন পরিকল্পিত নগরায়ন। তা নিয়ে অনেক তত্ত্ব-উপাত্ত আওড়ানো হয় প্রতি বছর। কাজের কাজ কিছুই হয় না। একশ্রেণীর ফড়িয়া বুর্জোয়া টাকা দিয়ে সরকারকে কিনে নেয়। কিনে নেয় উচ্চপদস্থদেরকে। তাদের ইচ্ছে মতো পরিকল্পনা পাস করিয়ে নেয়। নগরে ভবন গড়ে ইচ্ছে মাফিক। সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে এসব দুর্বৃত্তের বাস। এরা কোথায় নেই! চ্যানেল আইতে একটি প্রতিবেদন দেখলাম। ব্রাজিলে লোক পাঠানোর নামে বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছে জাতীয় দৈনিকে একটি চক্র। ঢাকায় ব্রাজিলের দূতাবাস নেই এখন পর্যন্ত। অথচ এরা বলছে তারা ব্রাজিলের ভিসার ব্যবস্থা করে লোক পাঠাবে। এ জন্য তারা ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। বেকার মানুষের ভিটেমাটি বিক্রি করে এসব টাকার জোগান দিচ্ছে। তারপর সব হারিয়ে পথে নামছে। প্রশ্ন হচ্ছে কোনো বৈধ লাইসেন্স না থাকার পরও এরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে কিভাবে? এরা মানুষকে ঠকাচ্ছে কিভাবে? এরাও প্রভাবশালীদের ছায়াপুত্র?বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা দলীয় স্বার্থে অন্ধ হয়ে যা কিছুই করতে পারে এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের আরেকটি উদাহরণ আমরা দেখলাম। এই হত্যাযজ্ঞের খুনি বিদ্রোহী অনেক বিডিআর জওয়ান পালিয়ে গিয়েছিল। এদেরকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসিরুদ্দিন পিন্টু। এটা সাম্প্রতিক ঘটনা। এই অভিযোগ শুরু থেকেই শোনা যাচ্ছিল। এবার দেখা যাক তার বিরুদ্ধে এই আনীত অভিযোগ কতোটা প্রমাণিত হয়। তার শাস্তি কী হয়।এ রকম দেখার অনেক প্রত্যাশা দেশের মানুষের। সাতক্ষীরা থেকে নিজস্ব রেডিও ট্রান্সমিশন কেন্দ্রসহ ধরা পড়েছে শিবিরের কর্মীরা। তারা একটি নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে তা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। একই রকমের অয়ারল্যাস নেটওয়ার্ক সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরেরও ছিল। ফখরুদ্দীন আহমদ সরকারের সময়ে তাকে গ্রেপ্তারের পর এমন নেটওয়ার্কের সন্ধানই পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। বাবর চক্র দেশে এমন নেটওয়ার্ক গড়লেন কিভাবে? এর উত্তর খুবই সহজ। কারণ জোট সরকারের আমলে সরকারের প্রভাব আর সকল অশুভ শক্তির প্রভাব একাকার হয়ে গিয়েছিল। ফলে চিহ্নিত করা কষ্টকর ছিল কে সরকার পক্ষ আর কে অশুভ শক্তির পক্ষ। এখন তো সে অবস্থা নেই। তাহলে সরকারি প্রভাব, সকল অশুভ শক্তির প্রভাবশালীকে পরাস্ত করতে পারবে না কেন? কেন পূরণ হবে না গণমানুষের প্রত্যাশা? বাংলাদেশের সংবাদ মিডিয়া খুললেই আমরা যা দেখি তাতে পজিটিভ দিক কম। নেগেটিভ দিক বেশি। সম্প্রতি মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফল ভালো করেছে অনেকেই। এই যে ছাত্র সমাজ, এই যে মেধাবী প্রজন্ম এরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক। রাষ্ট্রের কর্ণধার। কিন্তু আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি প্রায় অর্ধ লাখ ছাত্রছাত্রীর কলেজে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আসন নেই সারা দেশে। দেশে প্রাইভেট কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। পাঁচ-সাতটি রুম ভাড়া করেই শুরু হচ্ছে প্রাইভেট কলেজ। এতে পরিচালকরা মুনাফার মুখ দেখছেন ঠিকই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা প্রকৃত শিক্ষার আলোমুখ দেখছে না।মনে রাখা দরকার শিক্ষা খাতের উন্নয়নের কথা শুধু মুখে বললেই কোনো কাজ হবে না। এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এর কার্যকারিতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একটি জাতিকে সকল ধরনের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে সে দেশের শিক্ষার মান। শিক্ষিত মানুষ। এখানে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করে বলা দরকার। তা হচ্ছে, বাংলাদেশে শিক্ষার ক্যারিকুলাম সমসাময়িক করার দাবিটিও বর্তমান সময়ের। কারণ এই যুগে এসে আকবর, বাবর আর আলীবর্দী খাঁর শাসনামলের ইতিহাস আর বিশেষ কোনো দরকারি নয়। পানিপথের যুদ্ধ ইতিহাস পড়ে আধুনিক প্রজন্মের কিছু তুলনামূলক অবস্থা জানা ছাড়া আর কোনো উপকারেই আসবে না। তাই শিক্ষার বিষয় বিজ্ঞানমনস্ক, প্রযুক্তিনির্ভর, আধুনিক করাটা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার যোগাত্মক দিকগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনুকরণীয় হতে পারে।শুরুতেই বলেছি, বাংলাদেশে সামাজিক দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাড়ছেই। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যাদের অন্যের ওপর নির্ভর করে থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মানুষ স্বনির্ভর হতে পারলেই এই দ্বন্দ্ব কমে আসবে। কারণ এখন শিক্ষিত সমাজ, দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালীদের টুঁটি চেপে ধরতে পারবে সহজেই। এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আমাদের রাজনীতিকরা মুখে অবৈধ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বললেও নিজ নিজ স্বার্থের জন্য তারা মধ্য দুপুরেই এদের সঙ্গে হাত মেলান। আর এই আস্কারা পেয়েই এসব দখলদার ক্রমশ গ্রাশ করছে গোটা জাতির স্বপ্ন, ইচ্ছা, মাটি, বৃক্ষ। বর্তমান সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন মানুষকে দেখাচ্ছেন এর বাস্তবায়ন করতে হলে দক্ষ সৎ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে সর্বাগ্রে।নিউইয়য়র্ক, ৩ জুন ২০০৯--------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ।ঢাকা। ৬ জুন ২০০৯ শনিবার প্রকাশিতছবি- আনা লেবরেইরো
false
fe
ন্যায়বিচার যখন গণমানুষের শেষ ভরসা ন্যায়বিচার যখন গণমানুষের শেষ ভরসাফকির ইলিয়াস========================================শেষ পর্যন্ত রসরাজ জামিন পেয়েছেন। গত বছরের ২৯ অক্টোবর ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার ছবি পোস্ট করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফেসবুকে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট দেয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় জামিনে কারামুক্ত হয়ে আড়াই মাস পর বাড়ি ফিরছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস। ঘটনা পরিক্রমায় এখন জানা যাচ্ছে মিছেই রসরাজকে ফাঁসানো হয়েছিল। ওই হামলার ঘটনায় নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আঁখিকে গ্রেফতার করা হয়েছে অতিসম্প্রতি। এর আগে আঁখির ব্যক্তিগত সহকারী উত্তম কুমার দাস (২৫) ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মনোরঞ্জন দেবনাথকেও (৪০) আটক করে পুলিশ।মিডিয়ার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, হরিপুর ইউনিয়ন থেকে ১৪-১৫টি ট্রাক ভরে মানুষ আসার পর নাসিরনগরের হিন্দু পল্লীতে হামলা হয়। যেসব ট্রাকে হামলাকারীরা এসেছিল সেগুলোর ব্যবস্থা ও অর্থের জোগান চেয়ারম্যান আঁখি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে।এরই মধ্যে নাসিরনগরের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারীরা জানতে পারেন রসরাজের মোবাইল ফোন থেকে ধর্মীয় অবমাননার ছবি আপলোড হয়নি। ওই ছবি সম্পাদনা করা হয়েছিল হরিণবেড় বাজারে আল আমিন সাইবার পয়েন্ট এন্ড স্টুডিও থেকে, যার মালিক জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি। জাহাঙ্গীর আলম তার সাইবার ক্যাফে থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবিটি প্রিন্ট করে লিফলেট আকারে তা এলাকায় বিতরণ করেন। গত বছরের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তা স্বীকারও করেন। জাহাঙ্গীর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আশুতোষ দাসের নাম বলেন, যিনি রসরাজের ফেসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড জানতেন। কী জঘন্য সংবাদ! কী হীন মানসিকতা! বাংলাদেশে আসলে চলছে একটি দূরাচারী কালচার! এর মূল হোতা কে? কারা এর নেপথ্যে?খুলনার রূপসা উপজেলায় এক কীর্তন গায়ককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে প্রফুল্ল বিশ্বাসের (৬০) লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান রূপসা থানার পরিদর্শক জিয়াউল হক। তিনি বলেছেন, পিঠাভোগ গ্রামের পালপাড়ায় এক অনুষ্ঠানে কীর্তন গেয়ে রাত ১২টার দিকে বাড়ি ফেরেন। স্ত্রী বাবার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ায় রাতে একাই বাড়িতে ছিলেন। এরকম গুপ্ত হত্যা চলছে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে। নদীতে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। এর প্রতিকার কি? সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার মামলার রায় হয়েছে। রায়ে নারায়ণগঞ্জের বিচারিক আদালত ৩৫ আসামির ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। এই রায়কে দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা ‘দৃষ্টান্তমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। নিত্যদিন মানুষ খুনের ঘটনায় যে নারায়ণগঞ্জ খবরের শিরোনাম হতো; সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, নদী দখলের কারণে নেতিবাচক খবর হতো নারায়ণগঞ্জ।আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার রায়ে জনগণ সন্তুষ্ট হবে। এই ঘৃণ্য অপরাধে যে একটা ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল সেই ভীতি দূর হবে। সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার মামলার রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, যারা এ ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত এর সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালত পেয়েছেন। আমি যতটুকু আইন জানি, যদি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হয় তাহলে ফাঁসি দেয়াটা হচ্ছে ফার্স্ট পানিশমেন্ট। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার রায়ে সব আসামির শাস্তি বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা আরো বাড়িয়েছে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। বিচারপতি সিনহা বলেছেন, ‘অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, সে দায়মুক্তি পাবে না। চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলা প্রভাবশালী আসামি র‌্যাবের কতিপয় কর্মকর্তা লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, যা সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে।’ দেশের বিচারাঙ্গনের শীর্ষ পদে নিজের দায়িত্ব নেয়ার দুই বছর পূর্তিতে দেয়া এক বাণীতে এই মত প্রকাশ করেন তিনি। বাণীতে প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মামলা জট, আইনের সংস্কার, বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত ও জনবল সংকট, বিচার বিভাগের সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্ক ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিজের মত তুলে ধরেন। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের ভূমিকা অপরিহার্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংবিধানের মূল চেতনায়, বিচার বিভাগ এর সীমার বাইরে গিয়ে অন্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।‘তেমনিভাবে আমিও প্রত্যাশা করি রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ বিচার বিভাগের দায়িত্ব পালনে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অপরিহার্যভাবে সৃষ্ট শীতল সম্পর্ককে ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করলে প্রত্যেক বিভাগের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রভূত কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে’- যোগ করেন তিনি। মাননীয় প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে সব আদালতে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ২৪০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। একই সময় ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে দেশের সব আদালতে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৮। তিনি বলেছেন, ‘বিগত ২ বছরে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪০২টি। ফলে নিষ্পত্তির হার ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে অপরাধ প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন নতুন ধরনের অপরাধ হচ্ছে। সেই তুলনায় আইনের শাসন যথার্থভাবে সফল করা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, তার কারণ খুঁজতে হবে। আমরা দেখছি- একটি শ্রেণি মানুষের স্বপ্ন দখল করতে মরিয়া। সরকার অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ধমক দিয়ে কথা বলবেন আর সরকারের এমপি, মন্ত্রীরা এমন হীন কর্মের মদদ দেবেন- তা তো চলতে পারে না। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বখাটে, দখলদার, লুটেরা সবাই মানবতার ভিন্নপক্ষ। এরা সব সময়ই সত্য এবং ন্যায়ের বিপক্ষে। বিএনপি-জামায়াতের অমানবিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি চেয়েছিল মানুষ। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগের ভেতরে ঢুকে পড়া হাইব্রিড লুটেরা ও বখাটে শ্রেণি রাষ্ট্রের মানুষকে আরো অতিষ্ঠ করে তুলছে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জরুরি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। যে কোনো জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির বিষয়গুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সে জাতি নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ হতে পারে না। সুবিচারের দরজা অবারিত হতে হবে সবার জন্য। এখানে ধনী-দরিদ্র, ক্ষমতাবান-অক্ষম, এমন কোনো শ্রেণি বিভেদের প্রশ্ন কখনোই আসা উচিত নয়। অথচ বাংলাদেশে তেমনটিই হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি সেক্টরে বেড়ে ওঠা বেনিয়া শ্রেণি নিয়ন্ত্রণ করছে সাধারণ মানুষের জানমাল। কালো টাকার মালিকরা তাদের ব্যবহার করছে লাঠিয়াল হিসেবে। একটা কথা আমরা জানি এবং মানি, সুবিধাবাদীরাই আগুন লাগা বাড়ির অবশিষ্টাংশ লুটপাট করে নেয়। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও আমরা এমন কিছু নব্য লুটেরা দেখেছি। এখন তো দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তাহলে আমাদের এমন ছোবল দেখতে হবে কেন?বাংলাদেশে পেশিশক্তি ও কালো টাকার এই যে মহড়া দেখানোর প্রতিযোগিতা, তা ধ্বংস করে দিচ্ছে দেশের মননশীল মানুষের মেরুদণ্ড। প্রজন্ম সাহস পাচ্ছে না দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। বরং তাদেরই কেউ কেউ টেন্ডার, চাঁদাবাজি, ভাগ-বাটোয়ারায় অংশ খেতে কক্ষচ্যুত হয়ে দলীয় সন্ত্রাসী বনে যাচ্ছে। অথচ আমরা জানি, এই বাঙালি জাতির তরুণ প্রজন্মই বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তাহলে আজ এই প্রজন্মের এত সামাজিক অবক্ষয় কেন? এর কিছু কারণ আছে। তার অন্যতম হলো রাষ্ট্র মেধাবী প্রজন্মকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে বারবার কার্পণ্য দেখিয়েছে। ফলে পচনশীল সমাজ ব্যবস্থার ছত্রছায়ায় অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত নেতৃত্বের দাপট গণমানুষের স্বপ্নের বাংলাদেশের দখল নেয়ার অপচেষ্টা করেছে। দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে মানুষ যে চেষ্টা করছে না, তা কিন্তু নয়। তারপরও নিষ্পেষণের করাঘাতে মানুষ বারবার পরাজিত হয়েছে লুটেরা শ্রেণির কাছে। একটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য দেশপ্রেম কতটা অপরিহার্য, তা বিশ্বের যে কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পারি।আমরা জানি, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত দ্বিগুণের বেশি হয়েছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা। ভূমি বাড়েনি। বরং বাসস্থানের অন্বেষণ হরণ করছে ক্ষেতের জমি। তাই জনবহুল এ রাষ্ট্রে অভাব-অভিযোগ বাড়ছে। হয়তো আরো বাড়বে। তাই যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা, মননশীল সমাজ গঠন এবং আইনসিদ্ধ সামাজিক অবকাঠামো বিনির্মাণ ছাড়া এ সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। এ সত্যটি বিশেষ করে দেশপ্রেমিক রাজনীতিকদের অনুধাবন করতে হবে। মানুষের আশ্রয় হচ্ছে ন্যায়বিচার। তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। খুনি যে কাউকে ক্ষমা করে না- তা আমরা দেখছি। আমরা দেখছি, ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের রূপ। টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহম্মেদ হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার প্রধান আসামি সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।বহিষ্কৃৃত অপর তিন ভাই হলো- শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এবং টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগের সদস্য জাহিদুর রহমান খান কাকন। তাদের বহিষ্কারের পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল করেছে।টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইকে দল থেকে বহিষ্কার করায় ফারুক আহম্মেদের স্ত্রী নাহার আহম্মেদ স্বস্তি প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি স্বামীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি, মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহম্মেদকে হত্যা করে শহরের কলেজ পাড়ায় তার বাসার সামনে ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাহার আহম্মেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দীর্ঘদিন তদন্তের পর সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ চার ভাইয়ের নাম উঠে আসে। পরে এমপি রানাকে প্রধান আসামি করা হয়।এগুলো কিসের আলামত? সরকারকে তা ভাবতে হবে। না ভাবলে আরো বড় খেসারত তাদের দিতে হতে পারে।--------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫৯
false
mk
বিএনপি মানুষ মেরে আন্দোলন করছে! বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ কর্মসূচিতে ও ৭২ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে গতকাল রোববার সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছেন আরও দুই নিরীহ ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে গত শুক্রবার রাতে গাইবান্ধায় বাসে পেট্রলবোমায় দগ্ধ আবুল কালাম (৪০) রংপুর মেডিকেলে ও গত শনিবার রাতে বগুড়ায় ট্রাকে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হাসিবুল ইসলাম (২৮) শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে মৃত্যুবরণ করেছেন। অবরোধের মধ্যে হরতালে ঢাকা, কুমিল্লা ও যশোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন আরও তিনজন। এ নিয়ে মাসাধিককাল ধরে চলা অবরোধে নিহত হলেন ১৮ জন।এ ছাড়া অবরোধের ৩৪তম দিন গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় পাবনায় মৈত্রী ট্রেন ও তিন পরীক্ষাকেন্দ্র এবং ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, ফেনী ও নীলফামারীসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাস-ট্রাকে বোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় দগ্ধ ও আহত হয়েছেন ১০ জন। আগুন দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাসে। কুমিল্লায় জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই জামায়াত কর্মী। আর নোয়াখালীতে আদালত প্রাঙ্গণে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ২৪ ঘণ্টায় সহিংসতা-নাশকতার ঘটনা ঘটেছে ১৩ জেলার অন্তত ৩৫টি স্থানে। আগুন দেওয়া হয়েছে ১৯টি যানবাহনে। ভাঙচুর করা হয়েছে ছয়টি। গত বছরের ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে টানা এ অবরোধ কর্মসূচি চলছে। তবে এর দুই দিন আগেই সহিংসতার শুরু। সহিংসতায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮৫ জন; আহত সহস্রাধিক। আগুন দেওয়া হয়েছে ৪৯৪টি যানবাহনে এবং ভাঙচুর করা হয় আরও ৪৯৬টি। নাশকতার আশঙ্কায়, সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে এবং মামলা ও অন্যান্য ঘটনায় গতকাল আটক করা হয় সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য আবদুল খালেক মণ্ডলসহ ১০৬ জনকে।মৈত্রী ট্রেনে বোমা হামলা: ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে অবরোধ-হরতালে ১১ দফায় নাশকতার ঘটনা ঘটল। গতকাল বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ৫০০ গজ দূরে সাম্প্রতিকতম এ হামলার ঘটনা ঘটল। হামলায় কেউ হতাহত না হলেও ইঞ্জিনের আংশিক পুড়ে গেছে।রেল-পুলিশ ও আনসার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা দুইটার দিকে কলকাতা থেকে মৈত্রী ট্রেনটি ২১৫ জন যাত্রী নিয়ে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এসে যাত্রাবিরতি করে। পরে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ২টা ৫৩ মিনিটে লোকো সেডের দক্ষিণে রহিমপুর এলাকায় দুর্বৃত্তরা ট্রেনটি লক্ষ্য করে তিনটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ইঞ্জিনের বাইরে আগুন ধরে যায়।মৈত্রী ট্রেনের পরিচালক হেলাল উদ্দিন ও রেললাইন পাহারারত আনসার সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, ইঞ্জিনে আগুন ধরার পর চালক তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হন। অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলার পর পুনরায় সেখান থেকে ঈশ্বরদী জংশনে ফিরে আসে ট্রেনটি। ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনটি পরিবর্তন ও অন্য ইঞ্জিন সংযোগ করে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেনটি আবার ছেড়ে যায়। রেলের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ মনিরুল ইসলাম ফিরোজী জানান, ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য ঈশ্বরদী লোকো সেডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনার পর জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদসহ রেল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনা তদন্তে পাকশী রেল বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা শফিকুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। হামলার পর পুলিশ ও র্যাব নাশকতাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। মারা গেলেন আরও দুজন: গাইবান্ধার তুলসীঘাট এলাকায় শুক্রবার রাতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে আবুল কালাম (৪০) নামের একজন গতকাল বেলা দুইটায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামে। তাঁকে নিয়ে ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল আটজনে। দগ্ধ হয়েছেন ৪০ জন। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে এখন ১৯ জন রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।হামলার ঘটনাটিতে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতিসহ বিএনপি-জামায়াতের ৯০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে সদর থানার উপপরিদর্শক মাহবুব হোসেন একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডে এক মানববন্ধন করে ১৪ দল। ওদিকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা সয়ে শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ট্রাকচালকের সহকারী হাসিবুল ইসলাম ওরফে হাসিব (২৮)। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার পাঁচগাছি গ্রামে। শনিবার রাতে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের শাজাহানপুরে সবজিবাহী ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় হাসিব ছাড়াও চালক গোলাম মোস্তফা (৩৬), দুই ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (২৬) ও আবদুল আজিজ অগ্নিদগ্ধ হন। হাসিবের শরীরের শতভাগই পুড়ে গিয়েছিল। শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বগুড়ার পূর্ব পালসা এলাকায় দুটি বাস পেট্রলবোমায় পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আগুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে মিরপুর যাওয়ার পথে শিক্ষার্থীদের বহন করা ‘তরঙ্গ’ নামের একটি দ্বিতল বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসচালক শাহজাহান আলী বলেন, ‘সিটি কলেজের সামনে যাওয়ার পর হঠাৎ ছাত্র-ছাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে বাস থেকে নামতে শুরু করে। গাড়ি থামিয়ে দেখি ওপর তলায় আগুন ধরে গেছে। আগুন নেভানোর পর ওপর তলায় একটি বোতলে পেট্রলও পাওয়া যায়।’এ ছাড়া সকালে কলাভবনের ভেতর একটি, দুপুরে শহীদ মিনারের সামনে তিনটি, সন্ধ্যায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ও ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। দুপুরে যাত্রাবাড়ীর সালাহউদ্দীন স্কুলের সামনে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে পালানোর সময় জাকির হোসেন (২৫) নামে এক যুবককে গুলি করে পুলিশ। দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ধ্যায় মৎস্য ভবনের সামনে গুলিস্তানগামী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে যাত্রী রাকিবুল ইসলাম (৩২) আহত হয়েছেন। তাঁর মাথা ও দুই হাতে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে।তিন পরীক্ষাকেন্দ্রে হামলা: পাবনার চাটমোহর উপজেলা সদরে শনিবার রাতে এসএসসি পরীক্ষার তিনটি কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ সাতটি স্থানে একযোগে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আহত হয়েছেন একজন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ, চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, চাটমোহর আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, নারিকেলপাড়া মহল্লা ও কাজীপাড়া মহল্লায় এসব বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দগ্ধ আরও সাতজন: ময়মনসিংহ শহরের টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শনিবার রাতে যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমায় তিন যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। তাঁরা হলেন বাসযাত্রী মো. আলমগীর, নওশের আলী ও শহীদুল ইসলাম। তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ রাতে ফেনীর দাগনভূঞায় পথচারী রণজিত কর, আমিরগাঁও এলাকায় পিকআপ ভ্যানচালক আবদুস সামাদ, কাজীর দিঘিতে কাভার্ড ভ্যানচালক মো. পারভেজ পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হন। গতকাল ভোরে নোয়াখালী শহরে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন ট্রাকচালকের সহকারী লোকমান হোসেন।তিন জামায়াত-শিবির কর্মী গুলিবিদ্ধ: কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের নাঙ্গলকোট উপজেলার লুদুয়া পেট্রলপাম্পের কাছে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার রাতে এ সংঘর্ষের ঘটনায় দুই জামায়াত কর্মী গুলিবিদ্ধ ও নাঙ্গলকোট থানার ওসি আহত হন। পুলিশ ১২টি পেট্রলবোমা উদ্ধারের দাবি করেছে। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন উপজেলার বাম গ্রামের প্রয়াত আবদুল হাদির ছেলে বেলাল হোসেন ও আবদুল হালিমের ছেলে বেলায়েত হোসেন। তাঁদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক ঘটনায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে পিকেটিংয়ের সময় মহদিপুর ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আইয়ুব আলীকে (২২) গুলি করে পুলিশ। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার বাইরের আরও চিত্র: পাবনা শহরের মাসুমবাজার এলাকায় শনিবার রাতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। গাজীপুরের শ্রীপুরের আশকোনা মোড়ে গতকাল সকালে একটি কাভার্ড ভ্যান ও শনিবার রাতে একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নীলফামারীর সৈয়দপুরে শনিবার রাতে একটি ট্রাক ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় চালক মো. নান্নু ও সহকারী বাবু গুরুতর আহত হন।নোয়াখালী জেলা জজকোর্ট এলাকায় গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিচারিক হাকিমের আদালত ভবনের পাশে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নোয়াখালী শহর ও সেনবাগে সন্ধ্যায় চারটি অটোরিকশা ও একটি ট্রাকেও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফেনী-নোয়াখালী সড়কের ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাজারের পাশে শনিবার রাতে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। সিলেট নগরের শেখঘাটে গতকাল দুপুরে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে পেট্রলবোমা ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। একই সময় শিবগঞ্জে পাঁচটি অটোরিকশা ভাঙচুর করেন হরতাল-সমর্থকেরা। জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কের ক্ষেতলালে শনিবার রাতে আলুবোঝাই একটি ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিজিএস কলোনি এলাকা থেকে গতকাল ভোরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১০টি পেট্রলবোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া কর্ণফুলী ইপিজেড এলাকায় গত রাতে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টিএ রোডে গতকাল বিকেলে ককটেল বিস্ফোরণে শাহ আলম নামে একজন রিকশারোহী গুরুতর আহত হন।
false
rn
সূরাঃ আন নূর শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।আমি একজন ভাল মুসলিম হতে চাই । এজন্য ইসলাম নিয়ে আমার সাধ্যমত পড়াশুনা করার চেষ্টা করি । সূরা আন নূর মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ২৪ নং সূরা। সূরার নামের বাংলা অর্থ আলো। এটি মাদানী সূরা। এ সূরায় হযরত আয়েশা রা. এর উপর দেওয়া অপবাদ খন্ডন করা হয়েছে। এ সূরায় ব্যাভিচারের শাস্তি ঘোষণা করা হয়। কারো বিরুদ্ধে অহেতুক ব্যাভিচারের অপবাদ দেবার শাস্তি ঘোষিত হয়। ১১ নং আয়াতে হযরত আয়েশা রা. এর বিরুদ্ধে আনা অপবাদের জবাব দেওয়া হয়। ২৭ নং আয়াতে অনুমতি ছাড়া অপরের ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করে আইন করা হয়। ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে যথাক্রমে পুরুষ ও নারীদের জন্যে পর্দার বিধান দিয়ে দৃষ্ঠি নিচু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩১ আয়াতে গাইরে মাহরামদের (যাদের সাথে বিয়ে জায়েয কিন্তু দেখা দেওয়া হারাম) তালিকা দেওয়া হয়। ৩৫ আয়াতে আল্লাহ একটি উপমার দ্বারা নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন । পরবর্তী আয়াতগুলোতে সৃষ্ঠিজগতের প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক কিছু নিদর্শনের প্রতি ইঙ্গিত করে পরকালের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। ধর্ষণের সঙ্গা আমরা সবাই জানি। সহজ কথায়-ধর্ষণ বলতে এক চরম পাশবিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতনকে বোঝায়। যা একই সঙ্গে অশ্লীলতা, বিকৃত মানষিকতা ও কুশিক্ষার ফলাফল হিসেবেই আমরা দেখে থাকি।আর সমাজ থেকে এই অশ্লীলতাপূর্ণ অমানবিক নির্যাতন নির্মূল করা শুধুমাত্র আইন করে সম্ভব নয়, দরকার মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশ। নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে সমাজ আজ যে অভিশাপে ভুগছে তা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের ইসলামের দারস্থ হতেই হয়। আমরা একটি সুন্দর বাসযোগ্য সমাজ চাই, যেখানে কোনো মানুষকে আর নির্যাতিত হতে হবে না, আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমাদের সবাইকে ন্যায় নীতির ভিত্তিতে এক সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে, সব অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। প্রকৃত সুখ-শান্তি অর্জন, পৃথিবীতে খেলাফাত (ইসলামিক কর্তৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা) প্রতিষ্ঠা, ইসলামের বিশুদ্ধ চর্চা এবং সমস্ত রকম বাতিল ও শয়তানি অপশক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে ধৈর্য এবং নিষ্ঠার সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া- এসবের একটিও সম্ভব নয় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌” এর বাস্তবিক প্রয়োগ ছাড়া। ১। এটি একটি সূরা, এটি আমি অবতীর্ণ করেছি এবং এর বিধানকে অবশ্য পালনীয় করেছি, এতে আমি অবতীর্ণ করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।২। ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী_ তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করবে,১ আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাসী হও; মু'মিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।৩। ব্যভিচারি-ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়াবিবাহ করে না এবং ব্যভিচারিণী_ তাকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়াকেউ বিবাহ করে না, মু'মিনদের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।৪। যারা সাধ্বী রমনীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি কশাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই তো সত্যত্যাগী।৫। তবে যদি তারপর তারা তাওবা করে ও নিজেদেরকে সংশোধন করে, আল্লাহ তো অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।৬। এবং যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অথচ নিজেরা ছাড়া তাদের কোন সাক্ষী নাই, তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য এই হবে যে, সে আল্লাহর নামে চারবার শপথ করে বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী,৭। এবং পঞ্চমবারে বলবে যে, সে মিথ্যাবাদী হলে তার উপর নেমে আসবে আল্লাহর লা'নত।৮। তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্বামীই মিথ্যাবাদী,৯। এবং পঞ্চমবারে বলে যে, তার স্বামী সত্যবাদী হলে তার নিজের উপর নেমে আসবে আল্লাহর গজব।১০। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেহই অব্যাহতি পেতে না এবং আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময়।১১। যারা এই অপবাদ৩ রচনা করেছে তারা তো তোমাদেরই একটি দল; একে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এটা তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর; তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এই ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তার জন্য আছে মহাশাস্তি।১২। যখন তারা এটা শুনল তখন মু'মিন পুরুষ এবং মু'মিন নারীরা আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভাল ধারণা করল না এবং বলল না, 'এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ।'১৩। তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সে কারণে তারা আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদী।১৪। দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে, তোমরা যাতে লিপ্ত৪ ছিলে তজ্জন্য মহাশাস্তি তোমাদেরকে স্পর্�র মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।২০। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেতে না এবং আল্লাহ দয়াবান ও পরম দয়ালু।২১। হে মু'মিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দকর্মের নির্দেশ দেয়। আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই কখনও পবিত্র হতে পারতে না, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করে থাকেন এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।২২। তোমাদের মধ্যে যরা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য�� করত,১৫। যখন তোমরা মুখে মুখে তা ছড়াতেছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করতেছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা তাকে তুচ্ছ গণ্য করেছিলে, যদিও আল্লাহর নিকট এটা ছিল গুরুতর বিষয়।১৬। এবং তোমরা যখন তা শ্রবণ করলে তখন কেন বললে না, 'এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়; আল্লাহ পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ!'১৭। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিতেছেন, 'তোমরা যদি মু'মিন হও তবে কখনও অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করো না।'১৮। আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।১৯। যারা মু'মিনদেের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা হিজরত করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না;৫ তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন? এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।২৩। যারা সাধ্বী, সরলমনা৬ ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি।২৪। যে দিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে তাদের জিহ্বা, তাদের হস্ত ও তাদের চরণ তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে_২৫। সে দিন আল্লাহ তাদের প্রাপ্য প্রতিফল পুরোপুরি দিবেন এবং তারা জানবে; আল্লাহই সত্য ও সুস্পষ্ট ।২৬। দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য। লোকে যা বলে তারা৭ তা থেকে পবিত্র; তাদের জন্য আছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক রিয্ক।২৭। হে মু'মিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া কারও ঘরে তার বাসিন্দাদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।২৮। যদিও তোমরা ঘরে কাউকে না পাও তা হলেও তাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, 'ফিরে যাও', তবে তোমরা ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, এবং তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ ভালভাবেই জানেন।২৯। যে ঘরে কেউ বসবাস করে না তাতে তোমাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী থাকলে সেখানে তোমরা প্রবেশ করলে কোনও পাপ নাই এবং আল্লাহ জানেন যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন কর।৩০। মু'মিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।৩১। আর মু'মিন নারীদেরকে বল, 'তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান হিফাজত করে; তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের আভরণ৮ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের পুত্র, বোনের পুত্র, আপন নারীগণ,৯ তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মু'মিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।৩২। তোমাদের মধ্যে যারা আয়্যিম১০ তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।৩৩। যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি চাইলে, তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও। আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে দান করবে। তোমাদের দাসীরা, সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিনী হতে বাধ্য করো না,১১ আর যে তাদেরকে বাধ্য করে, তবে তাদের উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।৩৪। আমি তোমাদের নিকট অবতীর্ণ করেছি সুস্পষ্ট আয়াত, তোমাদের পূর্ববতর্ীদের দৃষ্টান্ত এবং মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ।৩৫। আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি,১২ তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার যার মধ্যে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ; এটা প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যায়তূন বৃক্ষের তেল দ্বারা যা প্রাচ্যের নয়, প্রতীচ্যেরও নয়, আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও যেন তার তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করেন তাঁর জ্যোতির দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।৩৬। সে সকল ঘরে১৩ যাকে সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে,৩৭। সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সে দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে_৩৮। যাতে তারা যে কাজ করে সেজন্য আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের প্রাপ্যের অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিয্ক দান করেন।৩৯। যারা কুফুরী করে তাদের কাজ মরুভূমির মরীচিকার মত, পিপাসার্ত যাকে পানি মনে করে থাকে, কিন্তু সে তার কাছে উপস্থিত হলে দেখবে তা কিছু নয় এবং সে পাবে সেখানে আল্লাহকে, অতঃপর তিনি তার কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দিবেন। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।৪০। অথবা তাদের কাজ গভীর সমুদ্র তলের অন্ধকারের মত, যাকে আচ্ছন্ন করে ঢেউয়ের পর ঢেউ, যার উপরে মেঘমালা, স্তরে স্তরে অন্ধকার, এমনকি সে হাত বের করলেও তা দেখতে পাবে না। আল্লাহ যাকে আলো দেন না তার জন্য কোন আলো নেই।৪১। তুমি কি দেখ না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উড়ন্ত পাখীরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই জানে তার ইবাদতের ও পবিত্রতা ঘোষণার পদ্ধতি এবং তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ ভালভাবেই জানেন।৪২। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই এবং আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন।৪৩। তুমি কি দেখ না, আল্লাহ পরিচালিত করেন মেঘমালাকে, এরপর তাদেরকে একত্র করেন এবং পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বের হয় বৃষ্টি; আকাশের শিলাসতূপ থেকে তিনি বর্ষণ করেন শিলা এবং এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তার উপর থেকে তা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন। মেঘের বিদু্যৎ ঝলক দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়।৪৪। আল্লাহ দিন ও রাতের পরিবর্তন ঘটান, তাতে শিক্ষা রয়েছে অন্তদর্ৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য।৪৫। আল্লাহ সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে, তাদের কিছু পেটে ভর দিয়ে চলে, কিছু দুই পায়ে চলে এবং কিছু চলে চারপায়ে, আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।৪৬। আমি তো সুস্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করেছি, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করেন।৪৭। তারা বলে আমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনলাম এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করলাম', কিন্তু এর পর তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নিল; আসলে তারা মু'মিন নয়।৪৮। এবং যখন তাদেরকে ডাকা হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে, তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়।৪৯। আর যদি তাদের কোন পাওনা থাকে১৪ তাহলে তারা বিনীতভাবে রাসূলের কাছে ছুটে আসে।৫০। তাদের অন্তরে কি রোগ আছে, না তারা সন্দেহ করে? না তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন? বরং তারাই তো যালিম।৫১। মু'মিনদের উক্তি তো এই_ যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হয় তখন তারা বলে, 'আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।' আর তারাই তো সফলকাম।৫২। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম।৫৩। তারা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর শপথ করে বলে যে, তুমি তাদেরকে আদেশ করলে তারা অবশ্যই বের হবে১৫; তুমি বল, 'শপথ করো না, যথাযথ আনুগত্যই কাম্য। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে ভালভাবে জানেন।'৫৪। বল, 'আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।' অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নেও, তবে তার১৬ উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সেই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, আর রাসূলের কাজ তো শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।৫৫। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দিবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দিয়েছিলেন তাদের পূর্ববতর্ীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দিবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার কোন শরীক করবে না, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী।৫৬। তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হতে পার।৫৭। তুমি কাফিরদেরকে পৃথিবীতে কখনো প্রবল১৭ মনে করো না। তাদের আশ্রয়স্থল আগুন; কত নিকৃষ্ট এই পরিণাম।৫৮। হে মুমিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি তারা যেন তোমাদের ঘরে প্রবেশ করতে তিন সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের সালাতের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ তখন এবং ঈশার সালাতের পর; এই তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়। এই তিন সময় ছাড়া অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের একজনকে অন্যের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে তাঁর নিদর্শন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।৫৯। আর তোমাদের সন্তান-সন্তুতি প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে যেমন অনুমতি প্রার্থনা করে তাদের পূর্ববর্তীরা১৮। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের কাছে তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।৬০। বৃদ্ধা নারী যারা বিয়ের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রর্দশন না করে তাদের কাপড়১৯ খুলে রাখে; তবে তা থেকে তাদের বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।৬১। অন্ধের জন্য দোষ নেই, খোঁড়ার জন্য দোষ নেই, রুগ্নের জন্য দোষ নেই এবং তোমাদের নিজেদের জন্যও দোষ নেই আহার করায়_২০ তোমাদের ঘরে অথবা তোমাদের পিতাদের ঘরে, মায়েদের ঘরে, ভাইদের ঘরে, ফুফুদের ঘরে, মামাদের ঘরে, খালাদের ঘরে অথবা সেসব ঘরে যার চাবির মালিক তোমরা অথবা তোমাদের বন্ধুদের ঘরে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথক পৃথকভাবে আহার কর তাতে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই। তবে যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদনস্বরূপ যা আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র। এভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝতে পার।৬২। মু'মিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে এবং রাসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে তার অনুমতি ছাড়া সরে পড়ে না;২১ যারা তোমার অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী। অতএব তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য তোমার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দিও এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।৬৩। রাসূলের আহ্বানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহ্বানের মত গণ্য করো না; তোমাদের মধ্যে যারা অলক্ষ্যে সরে পড়ে আল্লাহ তো তাদেরকে জানেন। সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরোধিতা করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আপতিত হবে।৬৪। জেনে রাখ, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই; তোমরা যাতে ব্যস্ত তিনি তা জানেন। যেদিন তারা তাঁর কাছে ফিরে যাবে সেদিন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন তারা যা করত। আল্লাহ সবকিছুই জানেন।
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-৯৯ আজ থেকে দেড়'শো বছর আগে, খাঁচার পাখির মতো বন্ধী থাকতে হতো নারীদের। বাইরের দুনিয়ার সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ করার কোনো নিয়ম ছিল না। এমন কি লেখাপড়া নিষিদ্ধ ছিল তাদের জন্য। আর পোশাক বলতে ছিল, শুধু শাড়ি। রবীন্দ্রনাথ নিজেই ১৯৩৬ সালে লেখা একটি প্রবন্ধে মেয়েদের এই পোশাক পরার সেকেলে সংস্কারের কথা বলেছেন- সেই এক বস্ত্রের দিনে সেমিজ পরাটাও নির্লজ্জতার লক্ষন ছিল। এমন কি, মেয়েদের ছাতা ব্যবহারও লজ্জার কারণ ছিল। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার নারীদের আধুনিক করে তোলেন। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত কম-বেশী অবদান রাখেন। সত্যেন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ উভয়ই নারী মুক্তির দিকে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের জন্মের পর। আমার ধারনা রবীন্দ্রনাথ প্রথম প্রেমে পড়েন- আনা তরখড়ের। আনা তরখড় নিয়ে তার পিতা আত্মারাম পান্ডুরঙ কলকাতায় এসেছিলেন ১৮৭৯ সালে। উদ্দেশ্য ছিল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কন্যার বিবাহ। কিন্তু আত্মারাম পান্ডুরঙ কে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয়। এরপর রবীন্দ্রনাথ আট মাস ছিলেন স্কট পরিবারের সাথে। এ পরিবারে অবিবাহিত তিনটি কন্যা ছিল। তাদের মধ্যে ছোট দুই বোনের সাথে তার খুব ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। বিশেষ করে, কনিষ্ঠ কন্যা 'লুসি'র সাথে রবীন্দ্রনাথের যে সম্পর্ক হয়েছিল- তাকে প্রেম বলা যায় অনায়াসেই। ( রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী জোড়াসাঁকোর একান্নবর্তী পরিবারে সুখী ছিলেন না।)রবীন্দ্রনাথ তার 'কঙ্কাল' গল্পের নায়িকাকে তৈরি করেছিলেন সব সৌন্দর্য দিয়ে এবং সবচেয়ে বড় কথা নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে। একান্নবর্তী পরিবারে নারীদের যে হৃদয়স্পর্শী নিগ্রহ ও নিপীড়ন সহ্য করতে হয়, তারও দরদি চিত্র উপস্থাপন করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে 'দেনাপাওয়া' (১৮৯১) গল্পের নিরুপমাকে মনে পড়া খুব স্বাভাবিক। খুব সুন্দরী এই কিশোরীকে অনেক পছন্দ হয়েছিল তার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর। কিন্তু তার পিতা পণের টাকা দিতে না পারায় নিরুপমা বাপের বাড়ি যাওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেলে। পিতাকেও অনেক অপমান সহ্য করতে হয়। এখানে আমি একটা ব্যাপার উল্লেখ্য করতে চাই- ১৯১০ সালে রবীন্দ্রনাথ তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ কে বিয়ে দিয়েছিলেন, বালবিধবা প্রতিমা দেবীর সঙ্গে। দেবেন্দ্রনাথ জীবিত থাকলে সেটা সম্ভব হত না। রবীন্দ্রনাথ ১৯২৮ সালে লেখা 'নারীর মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধে নারীর উপর পুরুষের সর্বব্যাপী কৃতিত্বের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ১৮৮৪ সালে রবীন্দ্রনাথ 'ঘাটের কথা' লিখেন। নায়িকা কুসুম। কুসুমের বয়স ছিল সাত বছর। ১৮৯৩ সালে লিখেন 'মহামায়া'। নায়িকা মহামায়া, কুলীন কন্যা। বয়স ছিল ২৪ বছর। ১৯১৮ সালে লিখেন 'পাত্রপাত্রী' । নায়িকা ছিল দীপালি। বয়স ২৫ বছর, সংকরবিবাহজার কন্যা। ১৯৩৪ সালে লিখেন 'মালঞ্চ'। নায়িকা সরলা। বয়স ছিল- ৩০ বছর। এবং 'চার অধ্যায়' এর নায়িকা ছিল এলা। এলার বয়স ছিল ২৯ বছর, উচ্চশিক্ষিত ও বিপ্লবী। রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে- এখন আসি তার জীবনে। রবীন্দ্রনাথ নিজের কন্যার বিয়ে দিতে গিয়ে- বাল্যবিবাহ ও পণপথা মেনে নিয়েছিলেন। এবং পাত্র বেছে নেওয়ার ব্যাপারেও রবীন্দ্রনাথ তার কন্যাদের কোনো রকম সুযোগ দেননি।রবীন্দ্রনাথের 'যোগাযোগ' উপন্যাসের কুমু শেষ পর্যন্ত নীরবে পরাজয় স্বীকার করে নিলেও স্বামীর সঙ্গে শয্যায় যেতে রাজি হয়নি। 'গোরা' উপন্যাসের কিশোরী চরিত্র ললিতা তার পারিবারিক ধর্মকে পর্যন্ত মেনে নিতে অসম্মত হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের রচনাতেই প্রথম বারের মতো এমন নারী দেখা যায় , আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াও যারা একজন পুরুষের সাথে অসংকোচে বন্ধুভাবে কথাবার্তা বলতে পারে এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। ১৮৯১ সালের অক্টোবর মাসে কৃষ্ণভাবিনী দাস 'শিক্ষিতা ও নারী' নামে যে প্রবন্ধ লিখেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তার দীর্ঘ সমালোচনা লিখেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন যে, 'পুরুষের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়া অর্থোপার্জন স্ত্রী লোকের কার্য নহে।' ১৯২৫ সালে রবীন্দ্রনাথ এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন- 'নারীকে ইতর ভাষায় অপমান করতে পুরুষ কুন্ঠিত হয় না। কেননা পুরুষ এখনো- মনে করে যে সেই হলো মানুষ।' ১৯২৮ সালে লেখা 'হিন্দুবিবাহ' প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন- 'সাহিত্য, কলা বা বিজ্ঞান প্রভৃতিতে মেয়েদের যথেষ্ট পরিমানে দেখতে পাওয়া যায় না তার কারণ অনেকে রকম নির্ণয় করেন'।রবীন্দ্রনাথ রচনাবলির প্রবন্ধের বর্ণানুক্রমিক তালিকা লক্ষ করা যায় অক্ষয় চন্দ্র চৌধুরী থেকে হিসাব পর্যন্ত কবি আট শতের অধিক প্রবন্ধ রচনা করেন। প্রমথ চৌধুরীকে এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ বলেন : 'শাস্ত্রে আছে মৃত্যুতেই ভবযন্ত্রণার অবসান নেই, আবার জন্ম আছে। আমাদের যে লেখা ছাপাখানার প্রসূতিঘরে একবার জন্মেছে তাদের অন্ত্যেষ্টি সৎকার করলেও তারা আবার দেখা দেবে। অতএব সেই অনিবার্য জন্ম-প্রবাহের আবর্তন অনুসরণ করে প্রকাশকেরা যদি বর্জনীয়কে আসন দেন সেটাকে দুষ্কর্ম বলা চলবে না।' প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'ঘুষাঘুষি' প্রবন্ধে বলেন : 'ছবিতে যেমন চৌকা জিনিসের চারিটা পাশই একসঙ্গে দেখানো যায় না, তেমনি প্রবন্ধেও একসঙ্গে একটি বিষয়ের একটি, বড়োজোর দুইটি দিক দেখানো চলে।' ১৩৪১ সালের বৈশাখে রবীন্দ্রনাথ 'গদ্যছন্দ' প্রবন্ধে বলেন, ''আজ সরস্বতীর আসনই বল, আর তাঁর ভাণ্ডারই বল, প্রকাণ্ড আয়তনের। সাবেক সাহিত্যের দুই বাহন, তার উচ্চৈঃশ্রবা আর তার ঐরাবত, তার শ্রুতি ও স্মৃতি; তারা নিয়েছে ছুটি। তাদের জায়গায় যে যান এখন চলল, তার নাম দেওয়া যেতে পারে লিখিতি। সে রেলগাড়ির মতো, তাতে কোনোটা যাত্রীর কামরা কোনোটা মালের। ১৯০০ তেই ব্রহ্মবান্ধবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয়, কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়। কার্তিক লালের বেথুন রোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ আসতেন। কবিকে চেয়ার ব্রহ্মবান্ধব আসনে বসা, ঘন্টার পর ঘন্টা আদর্শ বিনিময় চলত। তখন 'সারস্বত আয়তন' নামে একটা স্কুল সিমলা স্ট্রীটে চালাচ্ছিলেন ব্রহ্মবান্ধব ও তাঁর সিন্ধি শিষ্য রেবাচাঁদ। এই বিদ্যালয় ব্যবস্থা ছিল প্রাচীন আশ্রম পদ্ধতিতে গুরুকুল রীতির।ব্রহ্মবান্ধবই সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথকে 'বিশ্বকবি'র মর্যাদা দেন, সর্বপ্রথম 'গুরুদেব' আখ্যা দেন। প্রথমটি Sophia পত্রিকায় The World Poet of Bengal এই নামে বেরিয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর, ১৯০০ তে। এ প্রবন্ধের বক্তব্য হল - রবীন্দ্র কবিতা তাঁর দেহ লাবণ্যের থেকে মহত্তর। তিনি প্রকৃতির যাবতীয় শোভা ও সৌন্দর্যের সঙ্গে প্রণয়ডোরে আবদ্ধ। তবে আনন্দচিন্তার সঙ্গে আছে বিষণ্ণতা। তিনি এক বিশ্বকবি, দেবদারুর মতো যার শিকড়গুলি চলে গেছে মাটির নীচে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রকৃতির পরিশোধ, কাবুলিওয়ালা, টেনিসনের ইন মেমোরিয়াম, শেলীর এপিসাইকিডিয়ন থেকে প্রসঙ্গ এনে কবিকে বিশ্বসাহিত্যে স্থাপন করেন। দ্বিতীয় প্রবন্ধ 'নৈবেদ্য' বেরিয়েছিল The Twentieth Century পত্রিকার জুলাই ১৯০১-এ 'নরহরিদাস' ছদ্মনামে। নৈবেদ্য কাব্যের এই প্রথম দীর্ঘ আলোচনা রবীন্দ্রনাথকে খুবই খুশী করেছিল। এ প্রবন্ধে তিনি একাধিক কবিতার উদাহরণ দিয়ে কবিতার ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, কাব্যটি ধর্ম ভাবুকদের কাছে আনন্দের খনি, এখানে ধর্মচিন্তার কোনো ভুল নেই। তিনি এ কাব্যে পেয়েছেন হিন্দু মনের নতুন শক্তির পরিচয়, অনন্তের মাঝে মিশে যাবার তীব্র বাসনা। তিনি আবিষ্কার করেন চারটি প্রসঙ্গ - একের সঙ্গে একের যোগ, মানবের মধ্যে ঈশ্বর চেতনা, জাতীয় ভাগ্য গঠনে ঈশ্বরের ভূমিকা, ঈশ্বরের নিজ চেতনার উন্মোচন।
false
ij
গল্প_ রক্ত। সিগারেটে টান দিল জেরিন। তারপর ধোঁওয়া ছেড়ে জিজ্ঞেস করল, জাফর ভাই জানে? ওর কন্ঠস্বরটা গম্ভীর। দীর্ঘশ্বাস ফেলল বৃষ্টি । সংক্ষেপে বলল-মেইল করে জানিয়েছি। রি-অ্যাকশন? রি-অ্যাকশন আর কী। সামান্য কাঁধ ঝাঁকালো বৃষ্টি। সহজ ভাবেই নিয়েছে। এখন নাকি ফিরতে পারবে না। তা ছাড়া, জানিসই তো ওর তিন বোন। বোনদের বিয়ে না দিয়ে নিজে বিয়ে করবে না। ওদিকে ওখানে চাকরিবাকরির অবস্থাও ভালো না; ওর মাস তিনেক ধরে চাকরি নাই, চাকরি খুঁজছে। জার্মানিতে এখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছে-জানিসই তো। বৃষ্টি ম্লান স্বরে বলল। জেরিন হাসল। হাসিটা ক্রর। বলল, মার্কসকে অবজ্ঞা করল ওরা -এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মানে? বৃষ্টি অবাক। দু’জনই অর্থনীতির ছাত্রী ছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে গভীরচিন্তাভাবনা না করেই পাস করে গেছে বৃষ্টি । জেরিন অবশ্য অন্যরকম। এখন বলল, কিছু না রে সই, কিছু না। তোর পাশে জাফর ভাইকে বেশ মানাত রে। জেরিনের কন্ঠস্বর এখনও গম্ভীর । বেইলি রোডের থিয়েটার পাড়ায় সেই বিকেলগুলির কথা তোর মনে আছে রে? হুঁ। বৃষ্টি কেঁপে উঠল। সেই দিনগুলির কথা মনে পড়লে আমার কেমন যেন লাগে রে বৃষ্টি। নরম স্বরে বলল জেরিন। একবার সন্ধ্যায় কী ঝুম বৃষ্টি- তোর মনে নাই? মনে আবার নাই? বৃষ্টি মনে মনে বলে। আমরা চারজন অনেকক্ষণ ভিজলাম -আদিত্যকে কেমন ভেজা কাকের মতন দেখাচ্ছিল। জাফর ভাই কে সে কথা বলতেই কী যেন বললেন। আর এখন? এখন জাফর ভাই কতদূরে -একা একা, হয় তো এখন বৃষ্টি ঝরছে শুরু করেছে স্টুটগার্টে । ভিজছে। একা। সো স্যাড। বলে বৃষ্টির কাঁধে আলতো করে হাত রাখল জেরিন। চোখের জল আড়াল করতেই বৃষ্টি যেন চোখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকালো। জানালায় সোনালি উজ্জ্বল রোদ। জেরিনদের এই পুরনো আমলের বাড়িটি দোতলা। দোতলার ড্রইং রুমটার দুটি বড় বড় জানালা- জানালা দুটি দিয়ে মধ্য এপ্রিলের অফুরান ঝাঁঝালো রোদ ঢুকেছে। জানালার ওপাশে একটি ঝাঁকড়া কামরাঙা গাছ। সে গাছের ধুলোমলিন সবজে পাতায় সোনালি রোদের ঝিকিমিকি। পাতার আড়ালে বসে অনেক ক্ষণ ধরে একটা কাক ডাকছিল। এখন প্রায় বেলা বারোটার মতন বাজে। নিচের গলিতে রিক্সার টুং টাং। বৃষ্টি কান পাতে। অসুস্থ্য বাবার কথা মনে পড়ল ওর। ক্ষীণ উদ্বেগ বোধ করে বৃষ্টি। পোড়া তামাকের গন্ধ পেল বৃষ্টি। জেরিন আরেকটা সিগারেট ধরাল । জেরিনের মুখোমুখি কার্পেটের ওপর বসে আছে বৃষ্টি । আজ ছাই ছাই সুতির একটা শাড়ি পরেছে বলেই পা গুটিয়ে বসেছে বৃষ্টি; জেরিন বসেছে পা ছড়িয়ে- জেরিন আজ জিন্স আর হাতা-কাটা কালো পাঞ্জাবি পরেছে। ওর বাঁ পাশে ওর চশমাটা পড়ে আছে। চশমা ছাড়া একদমই অন্যরকম লাগে জেরিনকে। তবে ওর গম্ভীর ফরসা মুখটিতে পড়াশোনার গভীর ছাপ। কত যে বই পড়েছে জেরিন, ওর রেজাল্টও ভালো -ও অনেককিছু জানে; যা বৃষ্টি জানে না। যখনই সমস্যায় পড়ে বৃষ্টি -জেরিনকে খুলে বলে। দুর্দান্ত স্মার্ট জেরিন, অ্যাক্টিভিষ্ট। জেরিনের পরামর্শ যে সব সময়ই কাজে দেয় তা নয়-তবে পরিস্থিতির ভালো বিশে¬ষন করেতে পারে জেরিন। এম এ পাস করে জেরিন এখন থিসিস করছে। বৃষ্টি পড়াচ্ছে ওদেরই পাড়ার একটা শিশুদের স্কুলে । জেরিনের সঙ্গে আজ অনেকদিন পর দেখা বৃষ্টির। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষার পর আর দেখা হয়নি। অনেক দিন পর আজ এ বাড়িতে এল বৃষ্টি । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অবশ্য এ বাড়িতে অনেকবার এসেছিল বৃষ্টি। তার পর আর আসা হয়নি। জেরিনের মা লুৎফা আন্টি। বৃষ্টিকে ‘রুপসী বাংলা’ বলে ডাকেন লুৎফা আন্টি। তার কারণও আছে। ঘন কালো চুল আর মাঝারি গড়নের বৃষ্টির শ্যামলা মতন চেহারাটি ভারি মিষ্টি। দেখা হলেই থুতনি নেড়ে দিয়ে লুৎফা আন্টি বলেন, রুপসী বাংলার কি খবর? কথাটা শুনে মিষ্টি করে হাসত বৃষ্টি। ঝকঝকে সুন্দর দাঁত বৃষ্টির। হাসার সময় গালে টোল পড়ে। আজ অনেকদিন পর বৃষ্টিকে দেখে কী খুশি লুৎফা আন্টি। দুপুরে খেয়ে যাবে। বললেন। আজ না আন্টি, অন্যদিন। তখন বলেছিল বৃষ্টি। তোমার কোনও কথাই আমি শুনব না মেয়ে। বলে লুৎফা আন্টি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। সম্ভবত রান্না ঘরের দিকেই গেলেন। বাড়িটা ফাঁকা। পুরনো দিনের মতন জেরিন আর বৃষ্টি বসে ড্রইং রুমের মেঝেতে। সোফার ওপর কতগুলো সাদা খাম পড়ে ছিল। একটা খাম তুলে একটা কার্ড বার করল জেরিন। চোখ বোলাল। সর্বনাশ! কী! বৃষ্টি চমকে উঠল। তোর হবু শ্বশুড় খান মোহাম্মদ ঈসমাইল? জেরিনের কন্ঠস্বর তীক্ষ্ম। হ্যাঁ, তো? বৃষ্টি থতমত খায়। লোকটা তো চরম ফান্ডামেন্টালিস্ট! যুদ্ধাপরাদের অভিযোগ আছে। ইস্, একটা মৌলবাদী ফ্যামিলিতে তোর বিয়ে হবে! কথাটা ভাবতেই আমার কী রকম খারাপ লাগছে। এরা এখনও মুগল ঐতিহ্য ধরে রেখেছে রে বৃষ্টি। বদলায়নি। তোকে কালো কাপড়ে ঢেকে ফেলবে। দেখবি। কথাগুলি সেভাবে ভাবেনি বৃষ্টি। ও শুধু জানে ওর হবু শ্বশুড় ডাক সাইটে সংসদ সদস্য। চট্টগ্রামের বনেদি বংশ। বিয়েটা হচ্ছে খুব শিগগির-এ মাসের শেষেই। বাবার রিসেন্টলি একবার স্টোক হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া বৃষ্টিদের পরিবারের অবস্থাও ভালো না। বাবা দেরি করতে চান না। পাত্ররা ধনী -তার ওপর অভিজাত-এও একটা কারণ। পাত্র খান মোহাম্মদ সোহরাব গাজীপুরের আই আই ইউটিতে পড়ত। আয়ারল্যান্ড থেকে স্টিলের (ইস্পাত) ওপর থিসিস করে এসেছে। ঢাকার ওয়ারিতে দশ কাঠার ওপর পুরনো আমলের বিশাল বাড়ি। বাড়ির নাম রাখা হয়েছে পাকিস্তানের স্থপতি কায়েদ দে আযম-এর সম্মানে। মেন গেটের বাইরে শ্বেতপাথরে লেখা-‘আযম ভিলা।’ খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের পিতা মোহাম্মদ সুলতান আলী বেগ; তিনিই পাকিস্তান আমলে তুলেছিলেন আযম ভিলা। সুলতান আলী বেগ মুসলিম লীগ করতেন । দেশের বাড়ি চট্টগ্রামের চকোরিয়া । কাঠের একচেটিয়া ব্যবসা ছিল বেগ পরিবারের। সুলতান আলী বেগ-এর বাবার নাম শাহ্ জাহাঙ্গীরির। চকোরিয়ার বিশিষ্ট পীর ছিলেন। মুগল আমলে চকোরিয়ার এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন শাহ্ জাহাঙ্গীরির পূর্ব পুরুষ। এসবই বাবার মুখে শুনেছে বৃষ্টি। বৃষ্টির বিয়ের কার্ডের ওপর চোখ বুলিয়ে জেরিন বলল, ছেলের নাম খান মোহাম্মদ সোহরাব। বৃষ্টি মাথা ঝাঁকালো। তো ছেলের ডাক নাম কি রে বৃষ্টি? জানিস? জেরিন জিজ্ঞেস করে। সজল। বৃষ্টি বলল। সজল? জেরিন মুখ তুলে তাকাল। হ্যাঁ, সজল। হি, হি। জেরিন হেসে উঠল। কী রে-হাসিস কেন? বৃষ্টি অবাক। মুগলদের ছেলের নাম সজল। খান মোহাম্মদ সোহরাব মুগল নাম নয় তো কি। বাহ্, বেশ। বাংলা এখানেই লড়াই করছে। ওরা বুঝতেও পারছে না। মুগলদের ছেলে মানে? ওরা তো টিচাগাঙের! বৃষ্টি অবাক। তুই এসব বুঝবি না সই। বলে ঝুঁকে বৃষ্টির কপালে চুমু খায় জেরিন । ফিসফিস করে বলে, বাংলা সত্যিই দুঃখিনি রে বৃষ্টি। ইওরোপও এক সময় তাই ছিল। মধ্যযুগে। যখন মনে করা হত খ্রিস্টীয় মতবাদই সব। বাংলাও এখন ডুবে আছে ঘোর অন্ধকারে ...বাদ দে। ২ দরজার কাছে শব্দ। বৃষ্টি মুখ তুলল। লুৎফা আন্টি। কিচেন থেকে এলেন? আঁচলে কপাল মুছছেন। ভারি স্নিগ্ধ দেখতে লুৎফা আন্টি। মাঝবয়েসী, সামান্য পৃথুলা, শ্যামলা, কোঁকড়া চুল, গোল্ড রিমের চশমা। জেরিন ওর মায়ের মত হয়নি। জেরিন ফর্সা। কাঁধ অব্দি ছাঁটা স্ট্রেইট চুল। আজ সাদা শাড়ি পরেছেন লুৎফা আন্টি। লুৎফা আন্টি কী স্মার্ট। টিভির টক শো তে যখন নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে অকাট্য যুক্তি উপস্থাপন করেন লুৎফা আন্টি- বৃষ্টি তখন মুগ্ধ হয়ে শোনে । তা ছাড়া লেখার চমৎকার হাত লুৎফা আন্টির-‘সমকালে’ নিয়মিত কলাম লেখেন। ফরিদা আখতারের কী রকম যেন আত্মীয় হন। তুমি শুঁটকি মাছ খাও তো বৃষ্টি? খাই আন্টি। উলটো দিকে সোফায় বসতে বসতে লুৎফা আন্টি বললেন, আজ বেগুন দিয়ে শুঁটকি মাছ রেঁধেছি। রোমেল গত সপ্তায় টেকনাফ গিয়েছিল-ওখানে ওর বন্ধুরা মিলে একটা মোটেল করছে। চাকরি করবে না ঠিক করেছে। ওখান থেকেই পাঁচ কেজির মতো নিয়ে এসেছে। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে জেরিন বলল, জানিস বৃষ্টি-রোমেল না বান্দরবানের একটা ম্রো মেয়ের প্রেমে পড়েছে। তাই? হ্যাঁ। মা বিয়েতে রাজী। বলে গোল্ড লিফের প্যাকেটটা টেনে একটা সিগারেট বার করল জেরিন। ধরাবে। বৃষ্টি জানে- জেরিন ওর মায়ের সামনেই সিগারেট খায়। জেরিনদের পরিবারটা ভীষন প্রৌগ্রেসিভ । যে কারণে রক্ত সইতে পারে না, দুর্গন্ধও সহ্য করতে পারে না। জেরিনদের পুরো পরিবার কক্সবাজার চলে যায় কুরবানী ঈদের ঠিক আগে আগে। কর্পোরেশনের লোকেরা অবোধ প্রাণির রক্ত ধুয়ে সাফ করলে তারপর ঢাকায় ফিরে আসে। রোমেল-মানে জেরিনের ভাই একটা আদিবাসী মেয়েকে বিয়ে করবে? বৃষ্টি ক্ষাণিকটা অবাক হয়ে লুৎফা আন্টির দিকে তাকাল। লুৎফা আন্টি বললেন, ম্রো রা তো কনজারভেটিভ। বিয়েটা হবে কিনা বলতে পারি না। তবে দিন বদলাচ্ছে। ওরা যদি রাজি হয় তো আমার ওদের মেয়েকে ঘরে তুলতে আপত্তি নেই। তা, তুমিও আমাদের সঙ্গে চল না বৃষ্টি। কই? নেকস্ট উইকে আমরা খাগড়াছড়ি যাচ্ছি। মানে, খাগড়াছড়ির কয়েক কিলোমিটার উত্তরে সাজেক। ওখানে একটা জার্মান সংস্থা আদিবাসী উৎসবের অর্গানাইজ করছে। তিন দিন ধরে চলবে মেলা। যাবে? জেরিন বলল, ও যাবে কি মা-বৃষ্টির তো মা বিয়ে ঠিক। কন্ঠে মৃদু শ্লেষ টের পেল বৃষ্টি। লুৎফা আন্টি চুপসে যান।ওহ্, তা হলে তো তোমার পায়ে বেড়ি পড়েই গেল। দেখি, কার্ডটা দেখি। ছেলে কি করে? লুৎফা আন্টি বললেন। জেরিন ঝুঁকে কার্ডটা ওর মাকে দিতে দিতে গম্ভীর স্বরে বলল, পাত্রপক্ষকে তুমি চেন মা। কে? কার্ডটা নিতে নিতে লুৎফা আন্টি থমকে যান। খান মোহাম্মদ ঈসমাইল। তার মেজ ছেলে। জেরিনের কন্ঠস্বরটা কেমন গম্ভীর। বৃষ্টির বুকের ভিতরটা মুহূর্তেই শীতল হয়ে ওঠে। কী! ও। লুৎফা আন্টির মুখটা কালো হয়ে উঠল। কী হল আন্টি? বৃষ্টির বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। কিছু না মা। না, বলেন, আপনি কিছু জানেন? বৃষ্টি কেমন মরিয়া হয়ে উঠল। ও সিধে হয়ে বসল। জেরিনের দিকে তাকালেন লুৎফা আন্টি। জেরিন বলল, মা, তুমি বলেই দাও। লুকিয়ে কী লাভ। একদিন তো বৃষ্টি সবই জেনে যাবে। আমি কী জেনে যাব? বৃষ্টির বুকের ভিতরে কনকনের ঝড়ো হাওয়ার উথালপাথাল নাচ। লুৎফা আন্টি বললেন, জান তো খান মোহাম্মদ ঈসমাইলরা চট্টগ্রামের চকোরিয়ার প্রভাবশালী অভিজাত পরিবার। জানি আন্টি। একাত্তরের যুদ্ধের সময় ... মানে খান মোহাম্মদ ঈসমাইলরা আর তার বাবা মোহাম্মদ সুলতান আলী বেগ ...মানে তারা মিলে ওখানকার ...মানে ...চকোরিয়ার অসংখ্য বাঙালি হত্যা করেছে। ওহ! হ্যাঁ। পাকিস্তান ভেঙ্গে যাক- তারা তা চায়নি। পাকিস্তান নাকি আল্লার ঘর। মোহাম্মদ সুলতান আলী বেগ এ নিয়ে উর্দুতে একটা বইও লিখেছিলেন। সেই বই পড়ে আমার বাবা তো হাসতে হাসতে শেষ। আমার বাবা আবুল ফজলের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন-শওকত ওসমানকেও চিনতেন বাবা। যাক। চকোরিয়ায় নিহতদের মধ্যে সংখ্যালঘুই ছিল বেশি। সংখ্যালঘুদের ওপর মোহাম্মদ সুলতান আলী বেগ এর ছিল ভীষন রাগ -হয়তো তারা মুসলমান হয়ে যায়নি বলে। তার চোখে অমুসলিম মানেই বিপথগামী, অশুদ্ধ, বেদ্বীন-লোকটা ছিল এমনই মূর্খ! মোহাম্মদ সুলতান আলী বেগ এর নির্দেশেই তার লোকেরা বৌদ্ধ গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দিত-পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে তালিকা তুলে দিত-কাকে কাকে মেরে ফেলতে হবে । কত বৌদ্ধ মঠ যে পুড়িয়ে দিয়েছে-বুদ্ধের একটা কুড়ি ফুট উচুঁ মূর্তি ছিল চকোরিয়ার ডুলাহাজারায়-সেটি গলিয়ে টিক্কা খানকে উপহার দিয়েছে । খুন-ধর্ষনেও মোহাম্মদ সুলতান আলী বেগ এর লোকেরা কম যায়নি। বৃষ্টি শিউড়ে ওঠে। আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় বাড়িও ওখানেই, মানে চকোরিয়ার বড়ুইতলীতে। লোকমান চাচা কাঠের ব্যবসা করতেন। ব্যবসা করলে কী হবে- তরুণ বয়েস থেকেই রবীন্দ্রনাথের ভারি ভক্ত ছিলেন লোকমান চাচা; সে একই কারণেই লোকমান চাচা ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুরও ভক্ত- তাই বঙ্গবন্ধুকে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছিলেন লোকমান চাচা । বাঙালির শ্রেষ্ট কবিকে ভালোবাসলে বাঙালির রাজনৈতিক নেতাকেও ভালো না বেসে যে উপায় নেই। লোকমান চাচা তাঁর চকোরিয়ার বড়ুইতলীর বাড়ির এক তলার বসার ঘরে রবীন্দ্রনাথের ছবির পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙ্গিয়ে ছিলেন । তাঁর অপরাধ এইটুকুই- মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা লোকমান চাচার ‘নিরালা কুটির’ তছনছ করে। তোমার হবু শ্বশুড়, মানে- খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের বাবা সুলতান আলী বেগ লোকমান চাচাকে ধরে নিয়ে যায়। চকোরিয়া সদরে তাদের বাড়ির নিচে ছিল জল্লাদখানা। জবাই করে খুন করেছে আমার লোকমান চাচাকে। বলতে বলতে ফুঁপিয়ে ওঠেন লুৎফা আন্টি। বৃষ্টি চমকে ওঠে। কী করবে বুঝবে পারে না। এ বিয়ে আমি করব না আন্টি! বৃষ্টি ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল। ইষৎ কাঁপছে। দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেন লুৎফা আন্টি। নরম সুরে বললেন, না করে কি উপায় তোমার মা? শুনেছি তোমার বাবার একবার স্ট্রোক হয়ে গেছে। বাইপাস করাতে হবে। এই অবস্থায়- কিন্তু, তাই বলে খুনির সঙ্গে ঘর করা! বৃষ্টির শান্ত সুন্দর মুখটা এখন কী রকম বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে। এদেশের মানুষ কি খুনখারাপি বোঝে মা? লুৎফা আন্টি বললেন। খুনখারাপি বুঝলে একাত্তরের খুনিরা এদেশে মন্ত্রী হয় কী করে বল? খান মোহাম্মদ ঈসমাইল ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের অনুমতি পেলেন। খুনি হলে কি অনুমতি পেতেন? তুমিই বল? বলে উঠে দাঁড়ালেন লুৎফা আন্টি। তোমরা কথা বল। আমি যাই-দেখি রান্নার কী হল। লুৎফা আন্টি চলে যেতেই জেরিন আরেকটা সিগারেট ধরাল। তারপর বৃষ্টির কানে কানে ফিসফিস করে কথাটা বলল । ৩ রাত বারোটার দিকে বাসর ঘরটা ফাঁকা হয়ে গেল। তারপর বৃষ্টির শ্বশুর খান মোহাম্মদ ঈসমাইল বাসর ঘরে এলেন। বৃষ্টির তখন বুক কাঁপে-ও মুখ তুলে তাকায়। এই লোকটা খুনি! খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের বয়স অনেকদিন আগেই ষাট পেরিয়ে গেছে; এখনও বেশ শক্তসমর্থই আছেন। ধবধবে সাদা দীর্ঘ শরীরটি বলিষ্ট। মাথায় তুর্কি ফেজ টুপি, টুপির রংটি লাল। লাল রঙের ফেজ টুপি পরায় খান মোহাম্মদ ঈসমাইলকে অবিকল অটোমান সুলতানদের মতো মনে হচ্ছিল। খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের থুতনির কাছে পাকা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আর হাতে একটা ছড়ি। সাদা পায়জামা আর ঘিয়ে রঙের শেরওয়ানি পরেছেন খান মোহাম্মদ ঈসমাইল। সব মিলিয়ে খান মোহাম্মদ ঈসমাইলকে মনে হচ্ছিল যেন মুগল রাজপুরুষ-মুগল চিত্রকলা থেকে নেমে এসেছেন । খালি তরোয়ালটি কোমরে গুঁজতে ভুলে গেছেন। বৃষ্টি আড়চোখে ওর শ্বশুরের দিকে তাকাল। জেরিন থাকলে নিশ্চয়ই বলত-মুগল রেলিক! সামান্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে এসে লোকটা বিছানার এককোণে বসলেন। তীব্র আতরের গন্ধ পেল বৃষ্টি। ওর মাথা টলে ওঠে। এই লোকটাই লুৎফা আন্টির আত্মীয়কে জবাই করে খুন করেছিল! বৃষ্টির গা হাত পা কেমন অবশ হয়ে আসে। লাল বেনারশী আর একগাদা গয়না পরে বিছানার এককোণে বসেছিল। এই ঘরটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত- তারপরও ঘামছিল বৃষ্টি। চার চারটে টিউব লাইটের তীব্র আলো। কেন যেন তেমন ফুল ছড়ায়নি এরা-কেবল তীব্র আতরের গন্ধ পেল বৃষ্টি। ও ওর বরের দিকে তাকালো। আকবরের কোর্টে মুগল সুবেদারের মতন খান মোহাম্মদ সোহরাব বিনীত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। খান মোহাম্মদ ঈসমাইল কেশে গলা পরিস্কার করলেন। তারপর বললেন - শোন, জান্নাতুল ফেরদৌসী। তোমারে কয়েকটা কথা বলার আছে। মেয়েমানুষ হইল কবুতরের মতন। কবুতরের বাকুম বাকুম বেশি দূর হইতে শোনা গেলে কিন্তু বিড়ালে খাইব। মনে রাখবা- স্বামীরে কখনও ‘তুমি’, ‘তুমি’ কইরা বলবা না। ‘আপনি’, ‘আপনি’ কইরা বলবা । স্বামী হইল স্বামী, আর স্ত্রী হইল স্ত্রী । তুমি ইনভারসিটিতে পড়ছ। শুনছি ইনভারসিটিতে শিখায় স্বামী-স্ত্রী হইল বন্ধু। আসতাগফিরুল্লা। এইটা কোনও কথা হইল? আর শুন- টেলিভিশন দেখবা না। নামাজ পড়বা। সোহরাবের মায়ের সঙ্গে বোরখা পইরা টাইম মতন পার্টি অফিসে যাবা। ঘরের মধ্যেও বোরখা পইড়া থাকবা। তোমার জন্য করাচি থেইকে এক ডরজন বুরখার আসতেছে। আমিই অর্ডার দিসি। কালো কালার। বাদামী কালার। ঘরের মধ্যেও বোরখা পইরা থাকবা। কী পরবা না? বৃষ্টি মাথা নাড়ে। ও আর কী বলবে। ওর গলায় আটার দলা। ওর গরম লাগে। টার্কিশ আতরের বিচ্ছিরি দুর্গন্ধ পায়। আতরের গন্ধ ওর বমির উদ্রেক করে। ও জানে এই মুহূর্তে জেরিন এখানে থাকলে খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। তারপর খালি হাতেই খুন করত। খান মোহাম্মদ ঈসমাইল বলতে থাকেন-আমরা আমাগো কওমের জন্য কালা মেয়ে কখনও নেই নাই-তোমার বাবার তরিকার কথা চিন্তা কইরা নিলাম। কথাটা মনে রাইখ। বৃষ্টির দু’কানে কারা যেন জোর করে গরম সীসা ঢেলে দিল। অথচ ... অথচ ... লুৎফা আন্টি আমাকে বলত-‘রুপসী বাংলা।’ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে এক প্রবল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সম্ভাবনা টের পেয়ে এই মুহূর্তে শিউরে উঠল বৃষ্টি । সেই যুদ্ধই কি দ্বিতীয় একাত্তর? খান মোহাম্মদ ঈসমাইল বলতে থাকেন-তুমি মহিলা মাদরাসায় পড়ো নাই জান্নাতুল ফেরদৌসী। তোমার আব্বা আবদুর রহিম সরকার তোমারে ইনভারসিটিতে পড়ায়ছে। তারপরও তোমায় আনলাম তোমার বাবার তরিকার কথা চিন্তা কইরা । তোমার বাবা আমার ইনকাম ট্যাক্সের কাগজপত্র বছরভর যতœ নিয়া গুছায়া রাখে কি না। বলেই কেন যেন হেসে উঠল লোকটা। খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের কথা মনে হয় শেষ। তিনি এবার ছেলের দিকে তাকালেন। খান মোহাম্মদ সোহরাব চোখের নিমেষে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওপাশের দেওয়াল আলমীরার পাল্লাটা খুলে ফেলল। তারপর একটা চাদর বার করল। চাদরের রংটা সাদা। বৃষ্টির বুকটা ধক করে ওঠে। সহসা বৃষ্টির শরীর হিম হয়ে আসে। নির্দেশ সম্ভবত আগেই দেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টি সামান্য সরে বসল। সাদা চাদরটা বিছানার ওপর বিছিয়ে সিদে হয়ে দাঁড়াল খান মোহাম্মদ সোহরাব । বেড কাভারের রং সবুজ। সাদা কাপড় বিছানোর পর একটা স্পস্ট কনট্রাস্ট তৈরি হল। ছিঃ। কী এরা! ছিঃ। চাদর বিছানোর পর সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়লেন খান মোহাম্মদ ঈসমাইল। উঠে দাঁড়ালেন। তার আগে ছেলের দিকে অর্থপূর্ন চোখে তাকিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। লোকটা চলে যাওয়ার পর খান মোহাম্মদ সোহরাব দরজা লক করে দিল। তারপর বিছানার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। বৃষ্টি জানে- কেন এরা বিছানায় সাদা কাপড় পেতেছে? তারপরও খসখসে গলায় বৃষ্টি জিজ্ঞেস করল-সাদা ... সাদা কাপড় কেন? পরনের শেরওয়ানিটা খুলতে খুলতে খান মোহাম্মদ সোহরাব বলল, আমাগো কওমের নিয়ম। বিশ মিনিট পরে বুঝবা। আশ্চর্য! এভাবে কথা বলছে কেন সোহরাব। সেদিন কত মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলছিল বকশীবাজারে ওর খালার বাড়িতে। ঘরে বাইরে এদের আচরন এত আলাদা কেন? খান মোহাম্মদ ঈসমাইল পার্লামেন্টে ইংরেজীতে কথা বলেন। এদের আচরনে এত অস্বাভাবিকতা কেন? সহসা জেরিনের কথা মনে পড়ল। জেরিন বলেছিল: খান ঈসমাইলরা আজও মুগল ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বৃষ্টি জিজ্ঞেস করল, কী পরে বুঝব? ততক্ষনে খান মোহাম্মদ সোহরাব প্রায় নগ্ন হয়ে পড়েছে। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, আহ্,কথা কম। আগে এইদিকে আস। বৃষ্টি থমকে যায়। এখুনি? তার আগে কথা বলে নিলে হত না? মধুচন্দ্রিমা কোথায় হবে -তা নিয়ে। বৃষ্টির ভালো লাগে পাহাড়। তা হলে বান্দরবান। জেরিন সেদিন বলছিল- এরা বাঙালি না বৃষ্টি, এরা মুগলচেঙ্গিসের বংশধর। এরা কি মধুচন্দ্রিমা বোঝে? এই দিকে আস। বিছানার পাশে দাঁড়ানো, নগ্ন, খান মোহাম্মদ সোহরাবের কন্ঠটা সহসা কর্কস হয়ে উঠল। বৃষ্টি নড়ে ওঠে। মুখ তুলে স্বামীর দিকে তাকায়। কী সুন্দর মুখ। এখন অবশ্য চশমা ছাড়া বলেই অন্যরকম লাগছে। তারপরও কী সুন্দর; তবে এমনি এমনিই সুন্দর, যে সুন্দরের কোনও মানে নেই। যেমন-পাকিস্তান। এমনি-এমনিই একটা দেশ-যে দেশের কোনওই মানে নেই! খান মোহাম্মদ সোহরাব সামান্য ঝুঁকল; হাত বাড়ায় বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে। বৃষ্টি ব্যথা টের পায়। তারপর বাধ্য হয়ে কতকটা হামাগুঁড়ির ভঙ্গিতে যায়। আমি তো বিক্রি হয়ে গেছি-তা হলে আর লজ্জ্বা করে কী লাভ। খান মোহাম্মদ সোহরাব বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে টানতে থাকে। ক্ষাণিক বাদে বৃষ্টি ঠিকই বোঝে-খান মোহাম্মদ সোহরাব আসলে একটা সুন্দর খোলশমাত্র- যে খোলশের ভিতরে অত্যন্ত লোভী একটা পশুর বাস। প্রবল এক ঘৃনাবোধ হয় বৃষ্টির। তথাপি ও ব্যস্ত বলেই দীর্ঘশ্বাস পড়ে না-কেবল নাসারন্ধ্রের কাছে ক্ষীণ আগুনের তাত তিরতির করে কাঁপে। ওর নিজেকে মনে হল ১৯৭১ সালের চকোরিয়ার কোনও এক বৌদ্ধ কিশোরী। খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের বাবা সুলতান আলী বেগ-এর নির্দেশে কিশোরীর পরিবারের সবাইকে খুন করে কিশোরীকে চকোরিয়া সদরের বাইরে একটা ‘স’ মিলে তুলে এনেছে। কয়েকজন আর্মি অফিসার বেঞ্চির ওপর বসে মদ খাচ্ছিল। একটু পর অফিসাররা পালা করে মেয়েটিকে ধর্ষনের পর করাতের নিচে ফেলে টুকরো টুকরো করে কাটবে। মাস কয়েক হল আর্মি অফিসারের কুত্তাগুলি... তারপর, প্রায় বিধস্ত হতে হতে জাফরের মুখটাও মনে পড়ল বৃষ্টির। জাফরও ওর নগ্নদেহটি ছেনে ছেনে প্রায় উন্মাদ হয়ে উঠেছিল গত বছর এপ্রিল মাসে এলিফ্যান্ট রোডে জাফরেরই এক বন্ধুর ফাঁকা ফ্ল্যাটের একটা বদ্ধ ঘরে। তবে, জাফরের সেই উম্মাদনায় মায়ামমতা মিশে ছিল। জাফর ছিল নাটকপাগল-সেলিম আর দীনের একনিষ্ট ভক্ত। কাজেই, তার উন্মাদনায় বিবেচনাবোধ ছিল। আর এই পেশল দীর্ঘ বলিষ্ট দেহের সোহরাব একটা দক্ষ ধষর্ক! তারপরও শরীর বলে কথা- বৃষ্টির শরীরও সাড়া দেয় কয়েক মিনিট পর- কথা কথা বলে ওঠে। চরম মুহূর্তে এসে বৃষ্টি ঠিক কী করবে বুঝতে পারে না। জেরিনের মুখটা আবছা মনে পড়ল ওর। জেরিন বলেছিল, সাবধান। শীৎকার করবি না। অহসায় ভাবে এখন বৃষ্টি ভাবল-আমি না হয় চুপ করে থাকলাম। কিন্তু, এখন যদি সাদা চাদরের ওপর রক্তও না ঝরে- তো! ৪ সেদিন লুৎফা আন্টি রান্নাঘরে চলে যেতেই বৃষ্টির কানে কানে ফিসফিস করে কথাটা বলেছিল জেরিন। কী! বৃষ্টি হতভম্ভ। হ্যাঁ। জেরিন বলল। মুখ বুঁজে থাকবি। শব্দ করবি না। তা ... তা কি ভাবে সম্ভব। বৃষ্টি ভীষন অবাক হয়ে যায়। গত বছর এপ্রিলে জাফরের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়েছিল বৃষ্টি। এলিফেন্ট রোডে -জাফরের এক বন্ধুর বাসায়। তখন ...তখন ...ফাঁকা ফ্ল্যাটে খুব শব্দ করেছিল বৃষ্টির। প্রথম প্রথম বলে বেশ খানিকটা রক্তও- জেরিন বলল, বিয়েটা টেকাতে হলে তোকে মুখ বন্ধ রাখতেই হবে। খালুর যখন শরীর ভালো না বললি-তখন বিয়েটা হয়ে যাক। যদিও একটা রিলিজিয়াস ফান্ডামেন্টালিস্ট পরিবারে তোর বিয়ে হচ্ছে- এটা আমি কিছুতেই টলারেট করতে পারছি না। রিলিজিয়াস ফান্ডামেন্টালিস্ট- এই কথায় কী ছিল। বৃষ্টির বুকটা ধক করে ওঠে। ওর শ্যামবর্ণ পায়ের কাছে কিছু জঙ্গি রোদ মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল। জানালায় এপ্রিল মাসের ফ্যাকাশে আকাশের কিছু অংশ। কামরাঙা গাছের পাতার আড়ালে একটা কাক ডাকছিল। ডাকটা কর্কস। কাকটা পাতার আড়ালে লুকিয়ে আছে কেন? কী অলুক্ষুনে। জেরিন বলল, তোর হবু শ্বশুর খান মোহাম্মদ ঈসমাইল স্বাধীনতাবিরোধী। ফান্ডামেন্টালিস্ট। ঘন ঘন সৌদি আরব যায় পাকিস্তান যায়। ফেরার সময় বুরখা নিয়ে আসে। পরিবারের মেয়েদের বুরখার তলায় রাখে । মেয়েদের সম্বন্ধে এদের ধারনা এখনও মধ্যযুগীয়। শীৎকার করা মেয়েদের ওরা নষ্ট মেয়ে মনে করে। বিয়ের রাতে তুই শব্দ,-মানে শীৎকার করবি না বৃষ্টি। শব্দ করলে খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের কানে যাবেই। বিকৃত রুচির লোকজন সব-দেখবি তোর বরই বলে দেবে। তুই শব্দ করলে খান মোহাম্মদ ঈসমাইল ভাববে তুই একটা খারাপ মেয়ে। পরদিনই তালাক করিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেবে। জেরিনের কথা অস্বীকার করে কী করে বৃষ্টি? দুর্দান্ত স্মার্ট জেরিন অ্যাক্টিভিষ্ট। জেরিন অনেককিছু জানে যা বৃষ্টি জানে না। জেরিন বলল, সবচে ভালো হয় চুপ করে থাকলে। বিয়েটা টেকাতে হলে শীৎকার করবি না। শীৎকার করা মেয়েদের ওরা মনে করে নষ্ট মেয়ে । ওদের এক বউ শীৎকার করেছিল। পরের দিনই খান মোহাম্মদ ঈসমাইল ঘাড় ধরে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল মেয়েটাকে। বৃষ্টির মাথার ভিতরটা রীতিমতো টলে ওঠে । ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, শব্দ, মানে শীৎকার তো স্বাভাবিক। ওরা বুঝলে তো? বলে জেরিন ধীরেসুস্থে একটা গোল্ডলিফ ধরাল। তারপর একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বলল, ফান্ডামেন্টালিস্টদের কাছে সেক্স হচ্ছে বাচ্চা পয়দা করার প্রসেস। জেরিনের কন্ঠস্বরে তিক্ততা। কথাটা শুনে বৃষ্টির গা গুলিয়ে ওঠে। সোহরাবের মুখটা মনে পড়ে যায় ওর। দিন কয়েক আগে বকশীবাজারে সোহরাবের এক খালার বাড়িতে সোহরাবের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল বৃষ্টির। ব্যাপারটা অবশ্য খান মোহাম্মদ ঈসমাইল জানতেন না। কী সুন্দর চেহারা সোহরাবের। ক্লিন সেভড। লম্বা, ফরসা। চোখে ছোট্ট চৌকোন কালো ফ্রেমের চশমা। অনেকটা মডেল ফায়সালের মতন দেখতে। আর কী অমায়িক ব্যাবহার। মিষ্টি করে বলেছিল, আমি কিন্তু। ক্রিকেটের দারুন ভক্ত। পাকিস্তানই আমার ফেরারিট। তারপর নোনতা বিসকিট আর চা খেতে খেতে কত কথা হল। বৃষ্টি সেসব কথা মনে করে বলল, কই, ছেলেকে দেখে আমার তো সেরকম কনজারভেটিভ মনে হলো না। মুখে দাড়িও নাই। ক্লিন সেভড। দেখবি সব এক রকম। জেরিনের কন্ঠস্বরটা তিক্ত। দেখবি বিয়ের রাতেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমরা বাঙালিরা বিয়ের রাতকে বলি ‘বাসর রাত’। রাত জাগা, কবিতা পড়া কিংবা নতুন মানুষটার সঙ্গে গল্প করা -এসবই বাঙালি মেয়ের স্বপ্ন ...মানে বুঝতেই পারছিস । ঈসমাইল পরিবারের লোকেরা ওরকম না। মানে একদমই রোম্যান্টিক না। রোম্যান্টিক না? কেন? কারণ, মুগল চেঙ্গিসরা রোম্যান্টিক ছিল না। তোর কপাল খারাপ বৃষ্টি। খান মোহাম্মদ ঈসমাইলরা নিষ্ঠুর খুনি চেঙ্গিসমুগলদের বংশধর। সে জন্যই তারা রোম্যান্টিক না। সাতশ বছর আগে পশ্চিম থেকে ঘোড়া ছুটিয়ে বাংলায় এসেছে চেঙ্গিসমুগলদের বংশধর । বাংলায় ঢোকার মুখে বিহারে মানবতাবাদী অহিংস বৌদ্ধদের হত্যা করেছে। সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের ওপর ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর ছিল ভীষন রাগ -হয়তো তারা মুসলমান হয়ে যায়নি বলে! তার চোখে অমুসলিম মানেই বিপথগামী, অশুদ্ধ, বেদ্বীন-লোকটা ছিল এমনই মূর্খ! তার নির্দেশেই তার লোকেরা বৌদ্ধ গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দিত- কত বৌদ্ধ মঠ যে পুড়িয়ে দিয়েছে-বর্বরতার সেই শুরু। সেই বর্বরতার সূত্র ধরেই ১৯৭১ সালে চকোরিয়ার ডুলাহাজারায় বুদ্ধের সেই কুড়ি ফুট উচুঁ মূর্তিটি গলিয়ে খুনি টিক্কা খানকে উপহার দিয়েছিল খান মোহাম্মদ ঈসমাইলের বাবা মোহাম্মদ সুলতান আলী বেগ। বৌদ্ধ মেয়েদের খুন-ধর্ষনও করেছিল মোহাম্মদ সুলতান আলী বেগ এর পেটোয়া পোষ্যরা। তারপর জেরিন যে কত কথা বলে। সে সব রক্তাক্ত ইতিহাস শুনতে শুনতে শিউরে উঠছিল বৃষ্টি। জেরিন বলছিল, একমাত্র অনুভূতিশীল প্রেমময় রোম্যান্টিক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে পৃথিবীকে অহেতুক সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করতে। বুদ্ধ ছিলেন পরম রোম্যান্টিক। আর বাংলা গত আড়াই হাজার বছর ধরেই বুদ্ধপ্রভাবিত। দুঃখ এই-রোম্যানিটক বৌদ্ধ বাংলা বর্বর মুগল হানাদারদের কখনও প্রেমময় অনুভূতিশীল করে তুলতে পারল না; কারণ, তিনটি আব্রাহামিক ধর্মই পুরোদস্তুর অ্যানটাই-রোম্যান্টিক। যে কারণে আজও মুগল-জঙ্গিরা রক্ত ঝরাচ্ছে-রমনা বটমূলে, ময়মনসিংহের সিনেমা হলে, পল্টনে সিপিবির মিটিং-এ। রমনা বটমূলের রবীন্দ্রনাথ, সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র আর সমাজতন্ত্র নতুন এক পৃথিবীর পথ দেখায়-যা মধ্যযুগীয় অন্ধকার জগতের বিপরীতে। কাজেই, মুগলজঙ্গিরা বা বলা যায় অটোমানজঙ্গিরা আরও রক্ত ঝরাবে-বাংলায় ও পৃথিবীময়। এই দুঃখ। এখন বৃষ্টির নগ্ন পিঠের নিচে, নগ্ন কোমড়ের নিচে সাদা রঙের চাদরটার খসখসে অনুভূতি । ওর শরীরের ওপর একটা পাহাড় সমান বোঝা- খান মোহাম্মদ সোহরাব; শক্তসমর্থ এক মুগল যুবক- যে এ মুহূর্তে ধর্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। ‘আজও ওরা রক্ত ঝরাচ্ছে। রক্ত তারা আরও ঝরাবে। এই দুঃখ।’ জেরিনের কথাগুলি বিস্ফোরণের মত ফেটে যায় বৃষ্টির বাসর ঘরটির চার দেওয়ালের মাঝখানে -যেহেতু জেরিনের কথায় আগুন আছে। জেরিনরা প্রৌগ্রেসিভ । যে কারণে ওর ভাইয়ের সঙ্গে বান্দরবানের একটি ম্রো মেয়ের বিয়ে হতে পারে। জেরিনরা প্রৌগ্রেসিভ। যে কারণে -এমনকী প্রাণির রক্ত সইতে পারে না ওরা, দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারে না। জেরিনদের পুরো পরিবার কক্সবাজার চলে যায় কুরবানী ঈদের আগে। কর্পোরেশনের লোকেরা ঢাকার রাস্তার গলির প্রাণিরক্ত ধুয়ে সাফ করলে ফিরে আসে। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:২৪
false
fe
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ক্ষমতাবানদের দূরদৃষ্টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ক্ষমতাবানদের দূরদৃষ্টিফকির ইলিয়াস ============================================= জনগণের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বাশীরের বিরুদ্ধে বর্বরতম গণহত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। ১৫ জুলাই ’০৮ মঙ্গলবার এটা ছিল মার্কিনি সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত অন্যতম শীর্ষ খবর। সুদানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে ডারফুরে আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর ওপর যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে এর প্রধান পরিকল্পনাকারী ওমর আল বাশীর। খুন, ধর্ষণসহ জঘন্যতম অমানবিক কর্মযজ্ঞের প্রধান হোতা তিনি। এ জন্য তার বিচার হওয়া প্রয়োজন।ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রসিকিউটর লুইস মরেনো -ওকামপো বলেছেন আমরা ডারফুরে আড়াই মিলিয়ন মানুষের নির্মম হত্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে দায়ের করা এই মামলার মাধ্যমে যথাশিগগির সম্ভব ওমর আল বাশীরকে গ্রেপ্তার করার সুপারিশ করা হয়েছে।এদিকে সুদানী রাষ্ট্রপক্ষ এর দায় অস্বীকার করে বলেছে অভিযোগটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে করা হয়েছে। সরকার গণহত্যার দায় এড়িয়ে গিয়ে বলেছে, তারা শান্তি রক্ষার চেষ্টা করছে।আš-র্জাতিক আদালতে গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে দাবি তা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য স্বস্থির সংবাদ বয়ে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যারা যুদ্ধাপরাধী তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবেই। এর প্রয়োজনে সুদানের ওপর অর্থনৈতিক এমবার্গো দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র।গণহত্যার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়-খুনিরা আশি বছরের বৃদ্ধাকেও যেমন খুন করে, দশ বছরের নাবালিকাকেও ধর্ষণ করতে তেমনি পিছপা হয়নি। এর উদাহরণ আছে বাংলাদেশেও। একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে হিংস্রভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হায়েনারা বাঙালি আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ওপর। সেই যে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর হোতারা এখনো রয়ে গেছে এই বাংলাদেশে।তারা মাঝে মাঝে এটাও বলছে যে, তারা ভুল করেনি। একাত্তরে যারা ভুল না করার দাবি করছে, প্রকারান্তরে তারা সেসব ধর্ষণ, গণহত্যার পক্ষেই সাফাই গাইছে। আর সেই দাবি করার জন্যই তাদের বিচার শুরু হতে পারে ধর্ষণ-গণহত্যার অপরাধে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি জানিয়ে আসছেন দেশের মানুষ দীর্ঘদিন থেকেই। দেশে ও বিদেশে যে সব সচেতন বাঙালি সমাজ রয়েছেন তাদের উচিত হবে এই কাজটি ত্বরান্বিত করতে এগিয়ে আসা।আমরা জানি একটা সমাজ পরিচালিত হয় কিছু নীতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখেই। সময় ও মানুষের পক্ষে সে নীতির সৃষ্টিশীল পরিবর্তন হতেই পারে। নিজ ভূমির নিরাপত্তা রক্ষায় আইনের প্রয়োগও করা হয় বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করেই। অতিসম্প্রতি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে তেমনি একটি আইন পাস করেছে ফটোগ্রাফি ও চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে।এখন থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ফটোগ্রাফাররা নিউইয়র্কের যত্রতত্র শুটিং করতে কিংবা ছবি তুলতে পারবেন না। সাইডওয়াক, ফুটপাথ বন্ধ করে ছবি তুলতে কিংবা শুটিং করতে গেলে তাদেরকে স্টেট গভর্নমেন্টের অনুমতি নিতে হবে। এর সঙ্গে তাদের কমপক্ষে এক মিলিয়ন ডলারের ইন্সুরেন্স থাকতে হবে। শুটিং বা ছবি তুলতে যে সব গাড়ি, জনবল ব্যবহার করা হবে, তাও ইন্সুরেন্সের আওতায় থাকতে হবে।এই আইন প্রণয়নের পেছনে অন্যতম একটি কারণও রয়েছে। খ্যাতিমান একজন ডকুমেন্টারিয়ান রাকেশ শার্মা ম্যানহাটানের একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে কিছু চিত্র গ্রহণ করছিলেন। সেটা ২০০০ সালের ঘটনা। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আটক রেখে। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি ফেডারেল কোর্টে ক্ষতিপূরণ ও মানহানি মামলা করেন। মামলায় তিনি জয়ী হন। সিটি কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে সেটেলম্যান্ট করতে বাধ্য হয়।আলোচ্য আইনটি প্রণয়নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফটোগ্রাফার, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং মানবাধিকার সংস্থার আইনজীবীরা। তারা বলেছেন এই আইনের আওতায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তি ৩০ মিনিটের বেশি সিটির কোনো অংশে ছবি তুলতে গেলেই অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। যা স্বাধীন চিন্তা, মননের পথে অন্তরায়। অন্যদিকে নিউইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ বলেছেন, সুশৃঙ্খলতা, সৃজনশীলতা রক্ষা এবং আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের জন্যই এসব আইন করা হয়েছে। আগে ছিল না, তাই এখন যে করা যাবে না, তেমন তো কোনো কথা কোথাও লেখা নেই।আমি মনে করি মেয়র ব্লুমবার্গ যথার্থই বলেছেন সময় বদলাচ্ছে। অপরাধের ধরন, অপরাধীর মানসিকতা বদলাচ্ছে। তাই আগে ছিল না, এমন অপরাধ দমনে নিরাপত্তা আইনও করতে পারে যে কোনো রাষ্ট্রপক্ষ। সমাজ বাঁচাবার জন্য সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রণীত হতেই থাকে জনপ্রিতিনিধিদের দ্বারা কালে কালে।এর সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ বিষয়টিও লক্ষ করি, প্রণীত আইন কখনোই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য চাপিয়ে দেন না কিংবা বাক স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতার নামে জাতি-গোষ্ঠী বর্ণ-ধর্ম বৈষম্যমূলক ঘটনাবলীকেও প্রশ্রয় দেন না বিশ্বের বরেণ্য রাজনীতিকরা।এখানে সে রকমই আরেকটি ঘটনার উদাহরণ দিতে পারি। গত সপ্তাহে বিখ্যাত ‘দ্যা নিউইয়র্কার’ ম্যাগাজিন বারাক ওবামা ও তার স্ত্রী মিশাল ওবামাকে নিয়ে একটি প্র"ছদ কার্টুন ছেপেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বারাক ওবামা একজন মুসলমান হিসেবে পোশাক ধারণ করেছেন। তার মুখোমুখি তার স্ত্রী মিশাল দাঁড়িয়েছেন পায়ে বুট, কাঁধে রাইফেল নিয়ে একজন সন্ত্রাসী হিসেবে।ম্যাগাজিনটি বাজারে আসার পরপরই হৈ চৈ পড়ে যায় সর্বত্র। বারাক ওবামার নির্বাচনী সদর দপ্তর থেকে বলা হয়, নিছক টেস্টলেস প্রোপাগান্ডা। ডেমোক্রেট শীর্ষ নেতারা বলেন, দ্যা নিউইয়র্কার ম্যাগাজিন তাদের বৈষম্যমূলক হীন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে, মার্কিনিরা তা সাহসী চিত্তেই প্রত্যাখ্যান করছেন এবং করবেন। সিনেটর হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, এ সব হীনকর্ম ডেমোক্রেটদের বিজয় ঠেকানো যাবে না।রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন ম্যাককেইন বলেছেন, এটা খুবই অসঙ্গত এবং অপ্রত্যাশিত। আমরা একটি সভ্য সমাজে বাস করি। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা সিনেটর ওবামা, তার স্ত্রী ও সমর্থককে অবশ্যই দার"ণভাবে মর্মাহত করবে।একটি কথা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, কোনো যুদ্ধাপরাধীকে যেমন বিচার থেকে বাঁচানো যায় না, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক দুষ্ট অভিসন্ধি বা লক্ষ্য নিয়ে কারো ব্যঙ্গ কার্টুন এঁকেও তাকে সন্ত্রাসী বানানো যায় না। জনগণ চতুরতা ঠিকই বুঝতে পারে। ধরতে পারে সব শঠতার সুপ্ত অভিপ্রায়। সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বাশীর ডারফুরে ঘৃণ্যতম নরহত্যায় তার বাহিনী পাঠিয়ে যে ইন্ধন জুগিয়েছেন, সে জন্য তার বিচার এখন সময়ের দাবি। ঠিক তেমনি বারাক ওবামা কৃষ্ণাঙ্গ বিধায় তাকে থামিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা এটাও চরম ঘৃণার দাবি রাখে। শান্তি ও সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে ক্ষমতাবানদের ক্রিয়েটিভ আউটলুককে সম্প্রসারিত করতে হবে। ভেতরে ক্যানসারের রাহুগ্রাস রেখে উপরে প্রলেপ দেওয়ার মাধ্যমে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় কখনোই, কোনো দেশে।১৬ জুলাই ২০০৮ ---------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ । ১৯ জুলাই ২০০৮ শনিবার প্রকাশিত
false
ij
মনসুর আল হাল্লাজ_ মা ফি জুবাতি লা-আলা। Even beyond the Muslim faith, Hallaj was concerned with the whole of humanity ... শুসতার জায়গাটা ছিল পারস্যের পশ্চিমে। প্রখ্যাত মরমী সাধক মনসুর আল হাল্লাজ-এর জন্ম হয়েছিল সেই পারস্যে শুসতার-এই। ৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে। মনসুরের পরিবার তুলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। আরবিতে হাল্লাজ মানেও কিন্তু তাই। সময়টা নবম শতক। ইসলাম ততদিনে গৃহিত হয়ে গেছে পারস্যে। তবে ধারনা করা হয় যে -মনসুরের পিতামত ছিলেন জরথুশত্রবাদী। ইসলাম পারস্যে গ্রহনযোগ্য হওয়ার আগে ওই জরথুশত্রবাদই ছিল পারস্যের রাষ্ট্রধর্ম। মনসুরের পূর্বপুরুষ ছিল কুর্দি। মনসুরের বাবা সাধারণ জীবন যাপন করতেন। বালক বয়েসে যে জীবনটা সম্ভবত ভালো লাগত মনসুরের। ওই বয়েসেই হেবজ করেছিলেন কোরান; সেই সঙ্গে প্রাত্যহিক জীবন এড়িয়ে রহস্যবাদের দিকে ক্রমেই ঝুঁকছিল বালক মনসুর। যুবা বয়েসে পৌঁছে বিবাহ করলেন। তারপর হজ পালন করতে বেরুলেন। কাবা শরীফে যতদিন ছিলেন রোজা রাখলেন; মৌন হয়ে রইলেন। তারপর ভ্রমনে বেরুলেন। পথে পথে ঘুরলেন। ভারত থেকে মধ্যএশিয়া। কত কিছু যে শিখলেন। শেখালেন। বহু শিষ্যও পেয়ে গেলেন। আরও কয়েকবার মক্কা গেলেন হাল্লাজ। তখন অনেকেই সঙ্গে ছিল তাঁর। তারপর তিনি বাগদাদেই স্থায়ী ভাবে বাস করতে লাগলেন। সেই সময়টায় বাগদাদ ছিল শিক্ষা-দীক্ষার কেন্দ্র। আব্বাসীয় খলিফাদের রাজধানী। অল্প সময়ের মধ্যেই হাল্লাজ নিজেকে লোকে তাঁকে শ্রদ্ধা করত। শ্রদ্ধা করত খলিফারাও। অবশ্য হাল্লাজ ছিলেন অন্য সূফীদের চেয়ে ব্যাতিক্রম। কী ভাবে? তৎকালীন অধিকাংশ সূফী-সাধকই আধ্যাত্মিক মরমী সাধনার তত্ত্ব নিয়ে আলাপ আলোচনা নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতেন, সাধারণ জনগনের সঙ্গে সে সব নিয়ে আলাপ করতেন না। মহাত্মা হাল্লাজ করতেন। তাতে তাঁর শক্র তৈরি হল। তারাই খলিফার কানে বিষ ঢালল। সুতরাং, তৎকালীন শাসকগন শঙ্কিত হয়ে উঠল। একবার ঘোরের মধ্যে বলে বসলেন- “আনাল হক।” কি এর মানে? হক মানে সত্য। আনাল মানে আমি (হই)। যার মানে দাঁড়ায় আমিই সত্য। কথা ছড়াল এভাবে-আমিই আল্লা। যেহেতু আল্লা সত্য। কী! শুসতার-এর মনসুর নিজেকে আল্লা দাবি করছে! কী স্পর্ধা! বাগদাদে শোরগোল উঠল। তখনই মনসুর একবার বললেন যে-আমার পাগড়ীতে আল্লা ছাড়া আর কিছু জড়ানো নেই। বাগদাদে শোরগোল আরও তীব্র হয়ে উঠল। তারপর মনসুর একবার নিজের পোশাক দেখিয়ে বললেন, মা ফি জুবাতি লা-আলা। কি এর মানে? আমার পোশাকের নিচে আল্লা ছাড়া কিছু নেই। এসব উদ্ভট কথাবার্তায় বাগদাদের শাসকবর্গ ভীষন উৎকন্ঠিত হয়ে উঠল। তাদের নির্দেশে মনসুরকে বন্দি করা হল। দীর্ঘ বিচার চলল। মানে বিচারের নামে প্রহসন ... প্রায় ১১ বছর বন্দি থাকলেন বাগদাদের জিন্দানে।In the end, he was tortured and publicly crucified (in some accounts he was beheaded and his hands and feet were cut off) by the Abbasid rulers for what they deemed "theological error threatening the security of the state." Many accounts tell of al-Hallaj's calm demeanor even while he was being tortured, and indicate that he forgave those who had executed him. According to some sources,[who?] he went to his execution dancing in his chains. He was executed on March 26, 922. হাল্লাজের লেখা বইটির নাম "কিতাব আল তাওসিন।" কিংবা "তা সিন আল আযল"। বাংলা করলে এমন দাঁড়ায়-প্ররিত পুরুষের প্রদীপ। এই বইয়ে দুটো অধ্যায়ে শয়তান ও আল্লার সংক্ষিপ্ত সংলাপ রয়েছে। আমরা জানি আল্লা আদেশ করলেও শয়তান আদমকে সেজদা করতে অস্বীকার করেছিল। শয়তান ভেবেছিল, আল্লাই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তা হলে আমি আল্লা ব্যতীত অন্যকে সেজদা করব কেন! অথচ, এই প্রত্যাখানই বিয়োগান্তক ভাবে খোদ আল্লাকেই প্রত্যাখানের শামিল হয়ে দাঁড়াল। হাল্লাজ নাকি বলতেন,If you do not recognize God, at least recognise His sign, I am the creative truth -Ana al-Haqq-, because through the truth, I am eternal truth. My friends and teachers are Iblis (Satan) and Pharaoh বলাই বাহুল্য, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে আল্লার সন্ধানের ওপর জোর দিতেন হাল্লাজ। লালনের মতন। তাঁর পথ ছিল “সর্বজনীন রহসবাদী অর্ন্তদৃষ্টি।” কাজেই, কেবল মুসলিমজাহান নয়-হাল্লাজ বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিতাব আল তাওসিন ...লিঙ্ক Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৮
false
hm
সর্বরোগীহর কয়েকদিন বাদেই কস্তুরের বিয়ে। তাই একটু অন্যমনস্ক হয়ে থাকে সে। অফিসে কেউ প্রথমবার ডাকলে সে সবসময় ঠিকমতো শুনে ওঠে না যেন, দ্বিতীয়বার একটু জোরে ডাকতে হয়। সহকর্মীদের অনেকেই বিবাহিত। তারা কস্তুরের আসন্ন বিয়ের কথাও জানে। কস্তুরের মুখে অনেকে নিজের এক বছর, দেড় বছর, দুই বছর, কেউ কেউ পাঁচ বছর অতীতের বিম্ব দেখে মিটিমিটি হাসে। অবিবাহিত দুয়েকজন ডেঁপো তাকে এটা সেটা বলে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করে। কস্তুর অবশ্য তাতে দমে যায় না। সে মিটিমিটি হাসে আর গোঁফে তা দেয়। তারপর আবার একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। বসও এসে মশকরা করেন, বলেন, দেখো, কামের কল্পনায় যেন কাজে সমিস্যা না হয়। এখন থেকেই দুটোকে আলাদা করে ফেলতে হবে। সেপারেশন অফ স্টেট অ্যান্ড চার্চের মতো। অফিসে কাজ, বাড়িতে কাম। তাহলেই জীবনটা ধনধান্যেপুষ্পেবসুন্ধরায় একেবারে গিসগিস করবে। ইন্টার্নশিপ করতে আসা দুটি টলটলে তরুণী সন্দেহভরা চোখে বস আর কস্তুরকে দেখে আড়চোখে। কস্তুরের সহকর্মিনীরাও তাকে সাহস যোগায়। চম্পাচামেলি চৌধুরী বয়সে কস্তুরের চেয়ে বছর তিনেকের বড়, তিনি লাঞ্চে অকাতরে বিড়ি ফোঁকেন আর কস্তুরকে সাহস যোগান, বলেন, বাসর রাতে বেড়াল মেরে দিও। লজ্জা ঘেন্না ভয়, এ তিন থাকতে নয়। বেড়ালের কথা শুনে কস্তুর আবার অন্যমনস্ক হয়ে যায়। বাসর রাতে প্রতীকী বেড়াল বধের উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার বদলে একটা সুখসুখ স্বপ্নস্বপ্ন আলোআলো ভাব ফুটে থাকে তার চেহারায়। কিন্তু যতোই দিন কাছে আসে, কস্তুর একটু একটু গম্ভীর হয়ে যায়। আগে যেমন কাজের ফাঁকে হঠাৎ একটু ব্রেক নিয়ে চেয়ারটায় হেলান দিয়ে টলটলে ইন্টার্ন মেয়েদের ফিরে অন্যমনস্ক হয়ে কী একটা ভাবতো সে, সেই ভাবনার আকাশে ঈশানাগত মেঘ যেন এ টি এম শামসুজ্জামানের মতো ভিলেনি আকার ইঙ্গিত দেয়। বিবাহিত সহকর্মীরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে সমঝদারের হাসি হাসে। তারা জানে, জাহাজকে সতর্ক থাকতে হয় বন্দরের আশেপাশে এসেই। তীরবর্তী তরঙ্গেই তরীর তিরোধান ঘটে বেশি। তারা পিঠ চাপড়ে সাহস দেয় কস্তুরকে। টলটলে ইন্টার্ন মেয়েগুলো সাবধানে সবকিছু ঢেকেঢুকে বসে। কিন্তু ক্রমশ কস্তুরের মুখের সুখচ্ছটা কমে আসতে দেখে একদিন অফিসের গুরুজনেরা ঠিক করেন, সময় হয়েছে। লাঞ্চের পর অবিবাহিত দুটো ছোকরাকে টলটলে ইন্টার্ন দুটোর সঙ্গে আরেক ব্রাঞ্চে পাঠিয়ে দিয়ে তারা পিয়ন বাদশাকে হাঁক দিয়ে বলেন, বাদশা রে, চা লাগা। এলাচি দিয়া গরম গরম তুরন্ত! কস্তুর একটু উৎকণ্ঠিত চোখে অগ্রগামীদের মুখের দিকে তাকায়, কী যেন খোঁজে। একজন বলেন, দ্যাখো, শুরুতেই বলি, এই যে গণ্ডারের শিং, বাঘের নুনু, তক্ষকের তেল, এগুলি আসলে কুসংস্কার। বুচ্ছো না? কস্তুর নড়েচড়ে বসে। পশুবান্ধব সহকর্মীটি জোর দিয়ে বলেন, আমি গ্যারান্টি দিয়া বলতে পারি, এইসবে আসলে কোনোই ফায়দা হয় না। সবই বোগাস। আরবান লিজেন্ড। যুগ যুগ ধরে চলে আসা মিথলজি, মেয়েদের অর্গাজমের মতোই। শিল্প সাহিত্যের চিপাচাপায় এইসব আছে, বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নাই। অন্যেরা একটু উসখুস করে। আনমনা হয়ে পড়েন দুয়েকজন, বাকিরা জোর গলায় সমর্থন দেন, ঠিক ঠিক। বক্তা কস্তুরের ঊরুতে দুর্যোধনী চাপড় দিয়ে বলেন, কাজেই তুমি যদি এই মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নেপাল বা আসাম থেকে গণ্ডারের শিং আনানোর অর্ডার দিয়াও থাকো, আমি শুধু বলবো, দ্যাট ওয়াজন্ট ওয়াইজ। গণ্ডারের শিং তো বাস্তবে গণ্ডারের লোম। গণ্ডারের শিং গুড়া করে দুধ আর চীনাবাদামের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে কোঁৎ করে গিলে ফেললে যেসব ঘটনা ঘটে বলে প্রচার করা হয়, তা আসলে ঘটে না। নিশ্চিত থাকো। কস্তুরের চেহারায় যেন সামান্য আশঙ্কার ছায়া পড়ে। বক্তা বাঘের নুনু ও তক্ষকের তেল সম্পর্কেও জোর আশ্বাস দেন, কিছুই নাকি ঘটে না। কস্তুরের মুখটা আরো এক পর্দা আঁধার হয়ে আসে। একজন ক্ষীণ গলায় বলেন, ষাণ্ডার তেলে কিন্তু উপকার পাওয়া যায়। এবার কস্তুর একটু ধাতস্থ হলেও পশুমিত্র তেড়ে আসেন চেয়ার ছেড়ে। তক্ষককে হিন্দিতে বলে ষাণ্ডা, তার তেলে কী এমন হাতিঘোড়া হতে পারে? তক্ষক কি সয়াবিন না নারিকেল যে তাকে পিষে তেল বার করতে হবে? আর সেই তেলে তো রোগ জীবাণু কিলবিল করবে। সেই তেল মাখার পর এঞ্জিন চিরতরে ডাউন হয়ে পড়বে না, তার নিশ্চয়তা দেবে কে? তার আবেগমথিত ভাষণে ষাণ্ডার তেলের উপকারপন্থী একটু দমে যান। আরেকজন বলেন, ডাহুক পাখির মাংস ভুনা করে খেলে কিন্তু আসলেই শরীরে একটা জোশ আসে। সারাদিন মনমরা হয়ে ঘুরছেন, এক থাল ভাত খান ডাহুক পাখির গোশভুনা দিয়ে, দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই দুনিয়াটাকে মনে হবে নরম নরম, গরম গরম ... । অন্যেরা থামিয়ে দেন তাকে। পশুমিত্র কিছু বলেন না, আনমনে কী যেন ভাবেন। ডাহুকলিপ্সু তবুও বকে চলেন, ইন্ডিয়াতে, এগজ্যাক্ট জায়গাটা মনে নাই, মহারাষ্ট্র না গুজরাট কোথায় যেন গোড়াবন পাখি পাওয়া যায়। আহা, গোড়াবন পাখির স্যুপ, একেবারে গুষ্টিশুদ্ধা চুপ! আবারও থামিয়ে দেওয়া হয় তাকে। ষাণ্ডার তেলবিলাসী বলেন, ডাহুক পাখির গোস্তের ব্যাপারে আসলে জোর দিয়ে কিছু বলা যায় না। আসলে দৈনিক কচুবনকে দিয়ে একটা জরিপ করানো প্রয়োজন। আজকাল জরিপ ছাড়া এভাবে কিছু বলা ঠিক না। সবাই তাকে কড়া চোখের চাহনিতে পুড়িয়ে ছাই করে বসিয়ে দেন। এতক্ষণ চুপ করে শোনা একজন বলেন, এ সবই হচ্ছে বেদেদের বুদ্ধি। এরা এইসব গণ্ডার ফণ্ডার, বাঘছাগ, তক্ষক টক্ষক, ডাহুক মাহুক ধরে, আর বোকাসোকা লোকজনকে সেগুলো গছায়। এইসব সেবন করে সাদেক হোসেন খোকা কখনও আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ হতে পারবে না। আপনারা কেউ সাধনা ঔষধালয়ের মহাদ্রাক্ষারিষ্টের নাম শুনেছেন? কস্তুরের মুখে আলোআলো ভাবটা ফিরে আসে। সে হৃষ্টচিত্তে বলে, আমি শুনেছি, আমি শুনেছি। কামানরাঙা [অলঙ্করণ: সুজন চৌধুরী] মহাদ্রাক্ষারিষ্টভক্ত গদগদ গলায় বলেন, আমাকে আমার এক বড় ভাই এর খোঁজ দিয়েছিলেন। নামে নয়, গুণে পরিচয়। আমি বলবো, কস্তুর, তুমি এটা এস্তেমাল করে দেখো। একদম শুরু থেকেই। শুরু থেকে শুরু করার কোনো বিকল্প নাই ভায়া। বাদশা ট্রেতে এতক্ষণে চায়ের কাপ সাজিয়ে ঘরে ঢোকে। সবাই তড়িঘড়ি করে চায়ের কাপ টেনে নিয়ে যখন চুমুক দিচ্ছে, তখন বস মুখ খোলেন। চায়ের কাপটিকে সানি লিওন জ্ঞান করে ফড়াৎকারে এক প্রলয়ঙ্করী চুমুক দিয়ে তিনি বলেন, কস্তুর, এইসব ফটকাদের কথায় কান দিও না। কলকাতায় শপিংটপিং করতে যদি যাওয়া হয়, ডাবুর শিলাজিৎ বা থ্রি নট থ্রি ক্যাপসুল আনাও। ব্যাক আপ হিসাবে কলিকাতা হারবাল। এঁচড়ে পাকারা স্তব্ধ হয়ে যায়। কস্তুর প্যাড টেনে নিয়ে সাগ্রহে খসখস করে নোট করে। আরেকটি জোরালো চুমুকের পর বস বলেন, অফিস শেষে একদিন হামদর্দ ঔষধালয়ে গিয়ে হানা দিও। বাদশাহী বটিকা অথবা সাফুকে সুজাক, কিংবা যদি তোমার প্রয়োজন পড়ে, দুইটাই। কস্তুরের প্যাডে কলম দৌড়ায় জেরোনিমোর ঘোড়ার মতো। বস এক একটি পিলেচমকানো চুমুক মেরে মেরে চায়ের কাপটিকে প্রথম দফায় তৃপ্ত রমণীর মতো হাফখালি করে এনে বলেন, বরযাত্রা তো যাবে চট্টগ্রাম, নাকি? আগেই কাউকে পাঠিয়ে দিও। কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের কী একটা সালসা আছে, নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে ওটায় মকরধ্বজ প্লাস সারিবাদ্যরিষ্ট প্লাস দশমূলারিষ্ট প্লাস স্বর্ণসিন্দুর প্লাস মহাদ্রাক্ষারিষ্ট। পশু পাখি সোনা দানা মূলা দ্রাক্ষা কোনো কিছুরই অভাব ওতে নাই রে বাছা। কস্তুরের প্যাড থেকে সূক্ষ্ম ধোঁয়া ছোটে সিলিঙের পানে। বস আড়নয়নে সবার দিকে চান একবার, তারপর আনমনে বলেন, তবে তোমরা আজকালকার পোলাপান। বড় হয়েছো ভ্যাজাল খেয়ে খেয়ে। দুধে পানি আর পাউডার, এক তেলে অন্য তেল, মরিচে ইটের গুঁড়া, লবণে আয়োডিনের অভাব। কেবল যে কোনো একটায় তোমাদের কাজ না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে শক্তি ঔষধালয়ের মৃতসঞ্জিবনী সুরার সাথে উদ্যম সুধা, কিংবা ধরো গিয়ে সাধনা ঔষধালয়ের সারিবাদী সালসার সাথে ধনঞ্জয় মোদক মিলিয়ে সেবন করে দেখতে পারো। খোকাকে শুধু গোলন্দাজ হলেই চলবে না, ব্লিৎজক্রিগও চালিয়ে যেতে হবে সিজনের পর সিজন। হিটলারি হিটের জন্যে পারমুটেশন কম্বিনেশনের কোনো বিকল্প নাই। ষাণ্ডার তেলবিলাসী কস্তুরের প্যাড থেকে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে হাঁক ছেড়ে বলেন, বাদশা রে, ছয় কপি ফোটোকপি কর। একজন ভয়ে ভয়ে বলেন, আমরা তো খালি এক দিকের কথা চিন্তা করছি, অন্য দিকের কথাও তো আমাদের ভাবতে হবে, তাই না? বস নাক কুঁচকে বলেন, অন্য দিক মানে? য়্যাই খাচ্চর পোলা তুমি কী বলতে চাও, য়্যাঁ? এই বয়সেই এইসব কী? কস্তুর তাড়াতাড়ি বলে, না না আপাতত একদিক নিয়েই আলোচনা হোক, একদিক নিয়েই। লজ্জা পেয়ে সহকর্মী বলেন, আরে ধ্যৎ আমি বলতে চাচ্ছি, খালি কস্তুরের কথা ভাবলেই তো চলবে না। বাচ্চা একটা মেয়ের ওপর এইভাবে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া কি ঠিক? হারমিওনি গ্রেঞ্জারের ওপর হাল্ককে লেলিয়ে দিলে তো চলবে না। কস্তুর শুধরে দেয়, বলে, জেনেটিক্যালি নয়, কেমিক্যালি। জেনেটিক্সের ব্যাপারগুলো অন্যরকম, পরে বুঝিয়ে বলবো'ক্ষণ। বস হাসেন মিটিমিটি। বলেন, সে বন্দোবস্তও আছে বৈকি। আয়ুর্বেদ ও হেকিমী জগতে কোনো জেন্ডার বায়াস নাই। হামদর্দের রফিকুননেছা, সাধনার পতরঙ্গাসব, শক্তি ঔষধালয়ের লাবণী মোদক আছে, বেছে নাও যেটা খুশি! পারমুটেশন কম্বিনেশন রে বাছা, পারমুটেশন কম্বিনেশন। কস্তুর ফোটোকপিয়ারের নিচে মিশনারি পজিশনে যাওয়ার আগেই পৃষ্ঠাটা আবার বাদশার হাত থেকে হাতিয়ে নিয়ে কলম ছোটায়। বস নিজের কাপের চা শেষ করে বলেন, এককালে ঢাকায় হালুয়া পাওয়া যেতো নানারকম। পালংতোড়, বিজলি কা খাম্বা, উলট বব্বর, রাত বাকি বাত বাকি। তারপর ছিলো মশলা পান, কী সব বাহারি নাম তাদের ... ফিরে ফিরে আসি, যেও না সাথী, লৌহ কপাট কর রে লোপাট, পথে হলো দেরি, দীপ জ্বেলে যাই। আহ, কী দিনই না ছিলো সেসব। আজ আর কিছুই নেই। সেই পানও নাই সেই শানও নাই। কী সব ইয়াবা, বিজয় ট্যাবলেট, শক্তি দই ... অবক্ষয়, বুঝলে, অবক্ষয়! কস্তুরের কলম পাওয়ার প্লে নিয়ে মাঠে নামে। এদিক ওদিক দুদিক নিয়েই চিন্তা করা সহকর্মীটি এবার আবারো চিন্তিত হয়ে পড়েন। ভয়ে ভয়ে শুধান, আচ্ছা, মিয়া বিবি দুইজনই নাহয় অস্ত্রশস্ত্র বুঝে পেলো। কিন্তু পাড়াপড়শীদের কী হবে? কস্তুরের মুখ অন্ধকার হয়ে আসে। সে ধরা গলায় বলে, আমার ঘরটা আসলে না খুব শক্তপোক্ত না। একটু জোরে সাউন্ড দিয়ে সিনেমা দেখলেও বাইরে থেকে শোনা যায়। মানে, ঐ যে ডকুমেন্টারি আর কি। প্রকৃতি, বিজ্ঞান, মহাবিশ্ব নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রের কথা বলছিলাম। যেগুলোতে অ্যাটেনবোরো, ব্রায়ান কক্স, এরা থাকেন। আমি তো এগুলোই দেখি। অন্য কিছু নয় কিন্তু। বস শূন্য কাপটা তুলে নিয়ে আনমনে চুমুক দিতে গিয়ে আবার নামিয়ে রেখে বলেন, পাড়াপড়শীদের জন্যও ব্যবস্থা আছে বই কি। উত্তম ঘুমের জন্য শরবতের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে পারো শক্তিশেল আয়ুর্বেদের নিদ্রানীহার, ভীমধ্বজ কেমিক্যালসের নিন্দিয়া কি বুন্দিয়া, যশোহর ঔষধালয়ের পড়শীপ্রিয় আরকশৃঙ্গার। আশেপাশের চল্লিশ বাড়ির মানুষকে বিলাতে হবে অবশ্য। তবে এর চেয়ে সহজ ব্যবস্থা হচ্ছে ইনজিনিয়ার ডেকে ঘরে ফলস প্যানেল বসানো। কস্তুরের মুখে আবার সেই সুখচ্ছটা ফিরে আসে, সে সুখসুখ স্বপ্নস্বপ্ন আলোআলো মুখে প্যাড চুরমার করে শুধু নোট নিতে থাকে, নোট নিতে থাকে, নোট নিতে থাকে ... । অভিনন্দন হে পাত্র ! বিভিন্ন কারিগরি পরামর্শের জন্যে বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার ষষ্ঠ পাণ্ডবের কাছে।
false
rg
মোদি'র বাংলাদেশ সফরে যেসব বিষয় আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে!!! আগামী ৬ জুন দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত বছর মে মাসে ভারতের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর এটাই হবে মোদি'র প্রথম বাংলাদেশ সফর। ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকেই মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই এক বছরে প্রতিবেশী দেশ ভূটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, মাঙ্গোলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া; দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল; উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা; ইউরোপের দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন। এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এবং নেপালে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদি'র সাক্ষাত হয়েছে। দু'বারই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক পৃথক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগামী ৬ ও ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র বাংলাদেশ সফরের তথ্য নিশ্চিত করেছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ ৩০২ বছরের সীমান্ত জটিলতা দূর করার ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি সাক্ষর হবে। যা উভয় দেশের সম্পর্কে একটি নতুন মাইলফলক রচনা করবে। স্থল সীমান্ত চুক্তি'র আওতায় উভয় দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হবে। যার মাধ্যমে ছিটমহলবাসীরা পেতে যাচ্ছেন নাগরিক সুবিধা। এছাড়া এই চুক্তির আওতায় উভয় দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকার বিষয়েও স্থায়ী নিস্পত্তি হবে। উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরো নিবিড় করতে কিছু নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিশেষ করে নেপাল ও ভূটানে যেভাবে ভারত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, এবার বাংলাদেশেও তারা একই ধরনের প্রকল্প শুরু করতে আগ্রহী। কুমুদিনী ট্রাস্টের একটি পানি প্রকল্পের মাধ্যমে হয়তো এর সূচনা হবে। মোদি'র এই সফরে বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি সাক্ষর হবার সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়া উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল নবায়ন, সামুদ্রিক অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, দুই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি চলছে। নতুন একটি ঋণ চুক্তিও সাক্ষর হতে পারে। গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপক্ষীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব সুজাতা মেহতা দ্বিতীয় মেয়াদে সহজ শর্তে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছিলেন। যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের একটি খসড়াও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে। এছাড়া মোদি'র সফরের সময় বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হবে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তৃতা দিবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করবেন মোদি।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও শক্তিশালী করার যে নতুন কৌশল গ্রহন করেছেন, তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পরাস্পরিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করবে। ওয়ান ইলেভেনের পর গোটা বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট এককভাবে যেভাবে বাজার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল, তার বিপরীতে চীন ও ভারতের মধ্যে নতুন সম্পর্ক উন্নয়নের যে পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে, তা কেবল এশিয়া অঞ্চলেই বাজার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করবে না, বরং গোটা বিশ্বে মার্কিন আধিপত্যকে নতুন চ্যালেঞ্জ জানাবে। দক্ষিণ-এশিয়ায় ভারতের একক বাজারের বিপরীতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ছোট দেশগুলোকে ভারতের গুরুত্ব দেওয়ায়, এই অঞ্চলে শান্তি ও পরাস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় নরেন্দ্র মোদি'র কূটনৈতিক তৎপরতা ভবিষ্যতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি স্বত্ত্বেও ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের কাছে অনেক ইস্যুতেই নমনীয় আচরণ করছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে ভারতের সাতটি প্রদেশের অবস্থান। ভারতের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই সাতটি প্রদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে। তাছাড়া সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে দমাতে হলে এ্ই সাতটি প্রদেশে কেন্দ্রীয় সরকারের আরো নিয়ন্ত্রণ এখন জরুরী। জবরদস্তিমূলক নিন্ত্রয়ণ নীতি এই সাতটি প্রদেশকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, সেই আশংকায় নরেন্দ্র মোদি সেখানে উন্নয়ন কর্মসূচি জোড়দার করতে ইচ্ছুক। সেজন্য বাংলাদেশের ভেতর থেকে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে সেখানে নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন ভারতের মুখ্য বিষয়। নরেন্দ্র মোদি'র বাংলাদেশ সফরে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি সাক্ষরের আড়ালে ভারতের প্রধান টার্গেট ট্রানজিট সুবিধা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুবিধা। সীমান্ত বিরোধ মিটিয়ে ভারত ট্রানজিট ও বন্দর ইস্যুতে সুবিধা নিতে চায়। শীঘ্রই কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা সরাসরি বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালুর চিন্তা করছে ভারত। এছাড়া শিলং-তমাবিল-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-আগরতলা, দার্জেলিং-পাটগ্রাম-ঢাকা-কলকাতা, সিকিম-বাংলাবান্দা-সোনামসজিদ-কলকাতা এমন অনেক রুটে পণ্য চলাচল ও যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এছাড়া কলকাতা-যশোর-মংলা রুট দিয়ে মংলা বন্দর ব্যবহারের ইচ্ছাও ভারতের পরিকল্পনায় রয়েছে। আবার মংলা বন্দর থেকে ঢাকা-সিলেট-শিলং রুটে পণ্য চলাচল সুবিধার চিন্তাও ভারতের রয়েছে। যে কারণে মংলার কাছে রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগ এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বসংকেত। ভারত যেমন বাংলাদেশ ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে অনেকগুলো সমস্যা সমাধানে আগ্রহী, তার বিপরীতে বাংলাদেশকেও এখন কূটনৈতিক দূতিয়ালীতে অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। ভারতের প্রতিটি পাওনার বিপরীতে বাংলাদেশকেও এখন অনেক কিছু আদায় করার কৌশল গ্রহন করতে হবে। স্থল সীমান্ত বিরোধের আড়ালে সবগুলো রুটে ভারতের এককভাবে ট্রানজিট সুবিধা ভারতকে কিছুটা এগিয়ে রাখবে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে সুবিধা প্রদান এবং অনেকগুলো রুটে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের আগে অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সকল নদীর বিরোধ নিস্পত্তি হওয়া জরুরী। কেবল তিস্তা নদী নয়, গঙ্গা ও পদ্মায় পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি ফেনী, মুহুরী, সুরমা নদী থেকে ভারত উজানে থাকায় যে পরিমাণ সুবিধা নিচ্ছে তার বিপরীতে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হবে। তিস্তার উজানে ভারতের সিকিম রাজ্য সরকার একাধিক বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সিকিম সরকারের এসব প্রকল্প অব্যাহত থাকলে আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা চুক্তি হলেও বাংলাদেশের তেমন লাভ হবে না। তাই কাগজে কলমে তিস্তা চুক্তি করে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। তিস্তার উজানে ভারতের চলমান প্রকল্পগুলোর সুদূরপ্রসারী নেগেটিভ ফলাফল ভবিষ্যতে বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে। ওদিকে হিমালয় থেকে উৎপন্ন হওয়া ব্রহ্মপুত্রের উজানে বাঁধ দিয়ে চীন সরকার দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারত ও বাংলাদেশে বন্যা ও নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। উজানের যে কোনো আন্তর্জাতিক নদীতে ভারত ও চীনের যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে ভাটি অঞ্চলের বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হবে। এসব বিষয় যথাযথভাবে বিবেচনায় না রাখলে, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে নদী অববাহিকার দু’পাশের জনগণের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। উজানে পানি প্রত্যাহার করা হলে ভাটির অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যও নষ্ট হবে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ব্যবস্থাপনার জন্য নদীর উৎসস্থল থেকে সমুদ্র পর্যন্ত সব দেশের অংশগ্রহণে যৌথ নদী কমিশন গঠন করতে হবে। এটা না করলে প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থার সংকট বাড়তে থাকবে। আন্তর্জাতিক নদীতে কোনো একক দেশের ইচ্ছায় কোনো নদীর উজানে পানি প্রত্যাহার করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও ভাটির অঞ্চলের জনগণের সম্মতি ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প যাতে কেউ নিতে না পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো জোড়ালো ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে উজান ও ভাটির অঞ্চলের জনগণের মধ্যকার আস্থার সংকটে যে ক্ষতি হবে, ভবিষ্যতে তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হবে না। বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদীগুলো শুষ্ক মৌসুমের তিস্তার মত করুণ দশায় পরিনত হবে। বাংলাদেশকে এই বিষয়গুলো নিয়ে শুধু ভারত নয় চীনের সঙ্গেও জোড়ালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। কারণ ভারত ও চীন উভয়েরই এখন বাংলাদেশের কক্সবাজারের অদূরে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজটি পেতে চায়। একই প্রকল্প পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, বৃটেনসহ অনেকেই একপায়ে দাঁড়ানো। বাংলাদেশের উচিত হবে আন্তর্জাতিক নদীগুলোতে পানির ন্যায্য হিসাব কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিয়ে তবেই এসব বিষয়ে দক্ষ পদক্ষেপ নেওয়া। সেক্ষেত্রে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে কোনো একটি দেশকে একক দায়িত্ব না দিয়ে একেক দেশকে একেক ধরনের দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের উচিত হবে আসল চাবিটি নিজেদের হাতে রাখা। কারণ, ভারত বাংলাদেশকে পানির হিসাব পুরোপুরি না বুঝিয়ে দিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা দেবার নামেই ট্রানজিটসহ অন্যান্য সুবিধা নেবার চেষ্টা করবে। এর আগে মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সমুদ্র সীমা জয়ের পর তড়িঘড়ি করে যেভাবে সমুদ্র ও যৌথ নদীগুলোতে ভারতকে বেশি সুবিধা প্রদান করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক পরাজয় ছিল। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে ভারত বাংলাদেশের সুন্দরবনের যে ক্ষতি করবে, তা বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি বুঝতে অক্ষম রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সুন্দরবন অঞ্চলে নৌ দুর্ঘটনার যে হিরিক পড়েছে, এটা সুন্দরবন ধ্বংসের নীলনকশারই প্রতিফলন। যে ঘটনায় প্রতিবারই বাংলাদেশের মানুষকে সরকার বারবার ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে হলে দেশ দুটিকে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির পর এ বিষয়ক জটিলতা দূর করতে তেমন সময় লাগার কথা নয়। ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে কতভাবে লাভবান হতে পারে তা আমাদের নিজস্ব উদ্যোগেই দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এখনই এসব অপরচুনিটিগুলো চিন্থিত করা খুবই প্রয়োজন। এমনিতে বিশ্বমন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ার প্রেক্ষাপটেই ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশকেও সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক দিকগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ-মায়ানমার-চীন যে গ্র্যান্ড এশিয়ান হাইওয়ের কথা আলোচনা হচ্ছে, যা এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সড়ক পথে বাংলাদেশকে সরাসরি যুক্ত করবে, সেসব অপরচুনিটি নেবার আগে ভারত, মায়ানমার ও চীনের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো মেটানোর উপর সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। ভারতকে যে কোনো ধরনের সুবিধা প্রদানের আগে তার বিপরীতে বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে হবে। গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি এখনো ভারত পুরোপুরি মেনে চলে না। তিস্তার উজানের বিষয়গুলোর সমাধান না বুঝে দায়সারা গোছের নামকাওয়াস্তে তিস্তা চুক্তি করা হলেও তা বাংলাদেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। মনে রাখতে হবে, সমুদ্রে ভারতীয় নৌবাহিনীকে অবাধ চলাচলের সুবিধা দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে আমরা ভারতের কাছ থেকে সুন্দরবন ধ্বংসের রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহন করেছি। পাশাপাশি রায়মঙ্গল ও হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর উপর বাংলাদেশের একক আধিপত্য ভারতের কাছে বিসর্জন দিয়েছি। মোদি'র বাংলাদেশ সফরে স্থল সীমান্ত চুক্তির আড়ালে তেমন কোনো বিসর্জনের পাল্লা যেনো ভারী না হয়, সেদিকেই বাংলাদেশকে সজাগ থাকতে হবে। ট্রানজিট ও সমুদ্রবন্দর যেমন বাংলাদেশের পক্ষের ঘুটি, তেমনি তিস্তা, গঙ্গা, ফেনী, মুহুরী, সুরমা নদীগুলো ভারতের পক্ষের ঘুটি। কূটনৈতিক দক্ষতা ও হিসাব নিকাশে একটু ভুল করলেই মূলা ঝুলিয়ে ভারত তাদের সকল সুবিধা আদায় করে নিয়ে যাবে। কারণ, ভারত ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সামনে যে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের মূলা ঝুলিয়েছে, সেই আহলাদে যেনো সরকার বাহাদুর অন্যান্য বিদ্যমান ইস্যুতে চোখে টিনের চশমা এটে চুপ করে না থাকে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র আসন্ন সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কূটনৈতিক হিসাব নিকাশে এক চুলও ছাড় দিলে তা হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে ভারতের একটি প্রদেশে পরিনত হওয়ার চূড়ান্ত নীলনকশা। তাই সরকার বাহাদুরকে প্রতিটি চালই বুঝে শুনে হিসাব কষে দিতে হবে। এখানে আরেকটি জিনিস পরিস্কারভাবে মনে রাখতে হবে যে, মোদি বাংলাদেশে আসছেন গোটা ভারতের সকল দলের যৌথ মতামত ও সিদ্ধান্তকে পকেটে পুরে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখনো কোনো ইস্যুতেই দেশের অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। ভারতের সঙ্গে যে কোনো ইস্যুতে চুক্তি করার আগে সরকারের উচিত এসব বিষয় নিয়ে মোদি'র পথ অনুসরণ করেই সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া। নইলে ভারতের সঙ্গে যে কোনো চুক্তিতে বাংলাদেশের যে কোনো ধরনের চুল পরিমাণ পরাজয়ের দায়ও কিন্তু বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে। অতএব সাধু সাবধান।.................................২৭ মে ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:২৩
false
hm
কচুরিপানা কয়েকদিন আগে খবরে পড়লাম [১], কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার মারাত্মক উৎপাতে মোট চারটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কর্ণফুলি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত। জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে টারবাইনে পানি প্রবেশের পথে একটা ধাতব স্ক্রিন থাকে, যেটা পানিতে ভাসমান যে কোনো বর্জ্যকে আটকে দেয়। কচুরিপানা সম্ভবত এই স্ক্রিনটিকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে রেখেছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পচে যাওয়া কচুরিপানার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কুলিং সিস্টেমও বিপন্ন। দ্রষ্টব্য যে কুলিং সিস্টেম কাজ না করলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয় সমস্যাটি নৌপরিবহনে। কচুরিপানার কারণে কর্ণফুলি কাগজকলে বাঁশ চালান দেয়া যাচ্ছে না। কাগজকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, এর মধ্যেই বাঁশের মূল্য দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাঁশের চালান এতটাই বিপন্ন যে ২৮ হাজার মেট্রিক টন কাগজ কম উৎপাদন হবে। তৃতীয় সমস্যাটি সংমিশ্রিত। কচুরিপানা বেশ দক্ষতার সাথে জলাশয়ের উপরিভাগ ঢেকে ফেলে, ফলে সূর্যের আলো আর মাইক্রোফ্লোরার বিকাশ ঘটাতে পারে না, ফলে জলাশয়ের খাদ্যচক্র বিপন্ন হয়। কাপ্তাই হ্রদে কোটি কোটি টাকার মাছের পোনা পুষ্টির অভাবে বাড়তে পারছে না। যা-ও বা পারছে, সেসব মাছ ধরে মৎস্যজীবীরা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ল্যাণ্ডিং স্টেশন পর্যন্ত আসতে পারছে না পরিবহনজনিত জটিলতার কারণে। চতুর্থ সমস্যাটিও নৌপরিবহনে। কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে কচুরিপানা ছেয়ে আছে বলে কাপ্তাই হ্রদে চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে এলাকাবাসীর। সময় আর অর্থের অপচয়ের ব্যাপারটা সহজবোধ্য সমস্যা নিরসনের লক্ষে কর্তৃপক্ষ একটি যান্ত্রিক সমাধান চাইছেন। বিএফডিসি'র ব্যবস্থাপক কমাণ্ডার জাহিরুল আলম জানিয়েছেন, এ সমস্যার "স্থায়ী সমাধানের জন্য" বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে হার্ভেস্টার মেশিন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠানো প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে তিনি জানান। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস জানিয়েছেন, সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে শিগগিরই হার্ভেস্টার মেশিন কেনার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কচুরিপানার এই দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়, কিংবা স্থানীয় কিছুও নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে কচুরিপানা জলীয় বাস্তুসংস্থান, কৃষি ও নৌপরিবহনের জন্যে মোটামুটি আতঙ্কোদ্দীপক নাম। মোটামুটি দুই সপ্তাহে পরিমাণে দ্বিগুণ হতে পারে সাধারণ কচুরিপানা [Eichhornia crassipes]। কোন হতভাগা একে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বাংলার পুকুরে এনে ছেড়েছিলো, তাকে ধরে চেয়ারে বেঁধে জোরজার করে ইভা রহমানের গান শোনানো উচিত তিন বেলা। কাপ্তাই হ্রদে যে সমস্যাটা এখনও শুরু হয়নি, বা শুরু হলেও নজরে আসেনি কারো, সেটা হচ্ছে মশা। কচুরিপানা মশার আদর্শ বিস্তারভূমি [স্পনিং গ্রাউণ্ড]। কেবল মশা নয়, আরো নানারকম জীবাণুবাহক পোকামাকড়ের উপযুক্ত আবাস হচ্ছে কচুরিপানার ভাসমান আর্মাডা। আর এ ব্যাপারটি মোটামুটি পরীক্ষিত যে যান্ত্রিকভাবে কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণ একটি অত্যন্ত দুরূহ ও ব্যয়সাধ্য পদ্ধতি। এ কারণেই মোটামুটি চল্লিশ বছর ধরে কচুরিপানাকে জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে মোকাবেলার চেষ্টা চলছে। আরেকটি সমস্যা খুব সূক্ষ্ম, কিন্তু আমলে আনার মতোই। সেটি হচ্ছে, খোলা জলাশয়ের উপরিতল থেকে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, তার প্রায় দ্বিগুণ বাষ্পীভূত হয় কচুরিপানার শ্বসনের কারণে [ইভাপোট্রান্সপিরেশন]। ভিক্টোরিয়া হ্রদে কচুরিপানার কারণে নীল নদের প্রবাহ প্রায় এক দশমাংশ কমে গিয়েছিলো। কাজেই কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে এই কচুরিপানার কারণে খানিকটা হলেও হেড লস বাড়বে। ১৯৮৯ সালে ভিক্টোরিয়া হ্রদে কচুরিপানার একটি লাওয়ারিশ গোছা শনাক্ত করার সাত বছরের মাথায় এটি হ্রদের উগাণ্ডীয় অংশের ৮০% গ্রাস করে ফেলে। কচুরিপানার বিস্তারে বাধা দেয়ার মতো কিছুই ছিলো না ভিক্টোরিয়া হ্রদে। ফলাফল কমবেশি কাপ্তাইয়ের মতোই, তার সাথে যোগ করা যেতে পারে পচে গিয়ে পানীয় জলসংস্থান নষ্ট করা আর শিস্টোসোমিয়াসিস রোগ ছড়ানো কৃমির হোস্ট এক ধরনের শামুকের বংশবিস্তার। জেমস ওগোয়াং নামে এক ভদ্রলোক কচুরিপানার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন [২]। ওগোয়াঙের আক্রমণ ছিলো জৈবপ্রযুক্তি। খুব জটিল কিছু নয়, ভিক্টোরিয়া হ্রদে কচুরিপানার কোনো স্থানীয় শত্রু ছিলো না বলে তিনি এমন একটি শত্রু প্রজাতি খুঁজে আনেন কচুরিপানার মাতৃভূমি সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। প্রজাতিটি এক ধরনের গুবরে পোকা। ওগোয়াং খুব সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করেন, এই পোকা কি কেবল কচুরিপানার ওপরই হামলা করে, নাকি ডানেবামে অন্য কোনো কিছুতেও দাঁত বসায়। একেবারেই কচুরিপানার জানি দুশমন প্রমাণিত হবার পর তিনি এই গুবরে পোকাকে ভিক্টোরিয়া হ্রদে চরে খাবার জন্যে ছেড়ে দেন। ফলাফল সন্তোষজনক, ২০০১ সালের মধ্যে ভিক্টোরিয়া হ্রদে কচুরিপানার উৎপাত কমে আসে। একই ধরনের সমস্যা ফ্লোরিডাতেও হয়েছিলো। সেখানে ১৮৮৪ সালে প্রথম কচুরিপানা আসে। তারপর কী হইল জানে শ্যামলাল। ১৯৭২ সালে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সেখানে Neochetina eichhorniae প্রজাতির গুবরে পোকা ছাড়া হয়। এগুলোর জীবনকাল ছিলো ৯০-১২০ দিন। দু'বছর পর সেখানে আরো স্বল্প জীবনকালের Neochetina bruchi ছাড়া হয়। পরবর্তীতে মাত্র ৩০ দিনের জীবনচক্রের ম্যারাডোনামার্কা সংস্করণ, আর্জেন্টিনার দুর্ধর্ষ পানাখেকো Sameodes albiguttalis উন্মুক্ত করা হয় কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণের জন্যে। এই প্রজাতিটি এখন আরো কয়েকটি দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। এদের সাফল্য যে খুব আহামরি, এমনটি নয়, কারণ কচুরিপানার বীজ প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়, আর তিরিশ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। পানিতে যথেষ্ট পুষ্টি থাকলে [যেমনটা কমবেশি আমাদের জলাশয়ে রয়েছে] কচুরিপানার বিস্তার ঠেকানো খুব মুশকিল। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিভাগের গবেষণা শাখা থেকে আরেকটি কচুরিপানাখোর পতঙ্গ ছাড়া হয় [৩], এ-ও ম্যারাডোনার জাতভাই, আর্জেন্টিনীয় Megamelus scutellaris, একেবারে খাস কচুরিপানার দুশমন, অন্য কিছু দাঁতে কুটেও দেখে না। কেনিয়াতে কিছু ছত্রাক-প্যাথোজেন পাওয়া গেছে, যা দিয়ে কচুরিপানাকে গলা টিপে মারা সম্ভব, কিন্তু এ ধরনের পরজীবী কতটুকু প্রজাতিনিষ্ঠ, সেটি খুব সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের জন্যেও নতুন হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের দেশে হারভেস্টার কিনে কিনে কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণ করতে দিলে কর্মসংস্থান হবে নিশ্চয়ই, কিন্তু গোটা প্রকল্পটাও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে, যদি কচুরিপানাকে প্রাকৃতিক কোনো খাদকের শিকারে পরিণত করা না যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক একর জলাশয়ে কচুরিপানার ওজন ২০০ টন পর্যন্ত হতে পারে [৪]। আমাদের কৃষিবিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও পতঙ্গবিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারটিকে গুরুত্বের সাথে যদি নেন, তাহলে কিছু কার্যকর গবেষণা যেমন হবে, ব্যয় সংকোচনও সম্ভব হবে। কচুরিপানাকে গণশত্রু ভাবার কারণ যেমন আছে, তেমনি এর সম্ভাবনাকেও যাচাই করে দেখা জরুরি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতনু কুমার দাশ যেমন কেমিক্যাল পাল্পিঙের মাধ্যমে কচুরিপানা থেকে কাগজের মণ্ড তৈরি করার প্রক্রিয়া আবিষ্কারের দাবি করছেন [৫]। কর্ণফুলি পেপার মিলে এই হতভাগাদের মিজান-পিষে-ফ্যালো করে যদি কাগজ তৈরি করা যায়, মন্দ কী? কচুরিপানা থেকে আরো অনেক তন্তু-সামগ্রী প্রস্তুত করা সম্ভব, যেমন সম্ভব একে পচিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা কিংবা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা। তবে কচুরিপানা থেকে প্রস্তুতকৃত পশুখাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও বেশি, যেহেতু কচুরিপানা পানি থেকে প্রচুর ভারি মৌল [বেশিরভাগই জীবদেহের জন্যে বিষাক্ত] শোষণ করতে পারে [৬]। কচুরিপানার এই শেষ গুণটির কারণেই কিন্তু একে আরেকটি অতি চমৎকার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিদ্যা বিভাগে ড. মোজাম্মেল হকের নির্দেশনায় এক গবেষকদল চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত ক্রোমিয়াম-যৌগকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন তিনটি ব্যাকটিরিয়া শনাক্ত করেছেন [৭]। কচুরিপানার মূলের অংশটুকু প্রচুর অণুজীবের আদর্শ সূতিকাগার, কাজেই আমাদের ট্যানারির বর্জ্য শোধনের কাজে এই অণুজীবগুলোর বাহক হিসেবে দূষণসহ কচুরিপানা ব্যবহার করা যেতে পারে। একই সাথে প্রবল দূষিত বুড়িগঙ্গা, যেখানে আর কোনো ফ্লোরা বা ফনাই টিকতে পারছে না, সেখানে কচুরিপানা ছেড়ে পলিউট্যান্টগুলোকে ফিল্টার করার একটি প্রকল্প আরো গবেষণার দাবি করে বলে মনে করি। আমি তো মিস্ত্রি মানুষ, সত্যিকারের বিজ্ঞানীরা এই ধরনের আইডিয়াগুলোকে গুরুত্বের সাথে দেখলে আমরা এক ঢিলে কয়েক পাখি মারতে পারবো না কেন? [১] কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র হুমকির মুখে [২] Lake Victoria's Water Hyacinth Problem, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক [৩] উইকিপিডিয়ায় কচুরিপানা [৪] Biological Control of Water Hyacinth with Arthropods: a Review to 2000, M. H. Julien [৫] কচুরিপানা, কলাগাছ ধঞ্চে থেকে কাগজ! [৬] Principle and Process of Biofiltration of Cd, Cr, Co, Ni & Pb from Tropical Opencast Coalmine Effluent [৭] দূষণ ঠেকাবে তিন অণুযোদ্ধা
false
rg
ভোম ভোম শংকর ।। রজো ঘটক ভোম ভোম শংকর রজো ঘটক ভোম ভোম শংকর। বাসাবদল পদ্ধততিে দশরেে প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি ব্যাখ্যা করা যায় কভাব?েি চলুন চষ্টো করা যাক। লালু আর আমি তখন সাবলটে থাকি ধানমন্ডরি শংকর এলাকায় এক স্কুল মাস্টাররে বাসায়। সটো ১৯৯৩ সালর্র কেথা। যখন আমরা মাস্টাসে পড়।ি একতোে সাবলটে তার উপরে ব্যাচলরে তাই স্বাভাবকভাবইিে আমরা তুলনামূলক কম সুবধাপ্রাপ্তি কক্ষরে অধবাসী।ি কক্ষটরি ভাড়া আঠারোশ টাকা মাস।ে তবে মোস্তফা সাহবে আমাদরে থকেে ছ’শ টাকা কম নতন।িে এজন্য তখন তাঁর প্রতি আমাদরে কৃতজ্ঞতার্র শষ নই।ে একজনে আদশ শক্ষকরিে এমন মহানুভতায় আমরা বরং পরম আনন্দইে কমোন বাথরুম ব্যবহাররে বড়ম্বনাটুকুি নরবইিে মনেে চলতাম। তার চয়েে বরং আমাদরে বশেি যাতায়াতটা তখন কচন।িেে কারণ মোস্তফা সাহবরেে স্ত্রী ছলনেি অসম্ভব সুন্দরী আর কচনটোি ছলি কমোন। এবং কমন কচনেিে আমাদরে ঘনঘন যাতায়াতটা মোস্তফা সাহবরেে স্ত্রীও কোন এক রহস্যময় কারণে মনইেে নতন।িে তাছাড়া সুযোগ পলইেে আমরা তাঁকে অকারণে বশেি বশেি ভাবী ডাকতাম। বষয়টাি ভাবী টরে পতনেে কনাি কি জান!ি উল্টো যটো ঘটত আমরা কি রান্না করছ,ি কভাবিে রান্না করছ,ি রান্নায় কোনো ভুলচুক হয় কনাি নাকি অন্য কোন রহস্য ধরার জন্য ভাবী অকারণে রানাঘররে দরজায় প্রায়ই ঠায় দাঁর্ড়য়িে থকেে আমাদর কোণ্ডকীতি দখতন।েে আবার কখনো কখনো অকারণইে খুব শব্দ করে হাসতন।ে হাসলে ভাবীর চহোরায় আরো কি যে রূপরে জাদু ভর করতো কি বলব, যা উপভোগ করতে গয়িে প্রায়ই আমাদরে রান্নার বাজতো বারোটা। এমনতিে ভাবীও আমাদরে ব্যাপারে অতরক্তিি নানান বশষণিে দয়িে পতি সাহবকেে এটা বোঝাতনে যÑে ছলেে দুটো এবার ভালোই পয়ছো।েে কয়কদনেি যতেে না যতইেে মোস্তফা সাহবওে স্পষ্ট বুঝতে পারলনে র্য এেবারর সোবলট নবোচনটাি অন্তত ঘরনীর পছন্দ হয়ছ।েে তাই তনিি আমাদরে সাথে সখ্যতা বাড়াতে বাসায় শয়োরে একটা দনকিৈ পত্রকাি রাখার প্রস্তাব করলন।ে আমরাও সানন্দে তার প্রস্তাবে রাজি হলাম। তনিি আমাদরে উৎসাহকে অভনন্দতিি করলনে এভার্ব যে, পপোরে বলরেি অধকটো তনইিি দবন।িে ওদকিে ভাবীর সাথওে আমাদরে সখ্যতার মাত্রা দনিে দনিে জ্যামতকিি হারে বাড়তে থাকল। সইে সুযোগে আমরাও অনকে রাত করে বাসায় ফরতামি আর ব্যাচলরে লালু-ভুলু স্পশোল রান্না চড়াতাম। ভাবী তখন দরজায় দাঁড়য়িে মজার মজার সব গপ্পো জুড়ে দতন।িে হাসি ঠাট্টা তামাশায় ভরা পারস্পরকি জানাজানরি সইে আড্ডাটা আমাদরে বশে ভালোই লাগত। এসব কাজে লালু আবার আমার চয়েে একধাপ এগয়।েি ভাবীর কাছ থকেে পাওয়া নুনরে বদলে পানটাও খাওয়াতে চাইত। কমোন কচনেিে ভাবীর প্রাণোচ্ছল বাড়তি উপস্থতরিি ওপর নজরদারি রাখতে মাস্টার সাহবে তখন ঘনঘন বাথরুমে যতন।েে উদ্দশ্যটো কস্তুি ভাবী আর আমাদরে কথপোকথনে ইনটনশনোলি কানপাতা। মাঝমধ্যেে তাঁদরে একবছর বয়সী তপু উঠে গছেে এমন অযুহাতে ভাবীকে আমাদরে কাছ থকেে ডকেে নতনেি মাস্টার সাহব।ে অথচ তপু উঠলে কন্তুি কচনেি থকইেে টরে পাওয়া যত।ে অজানা কোন কারণে আমাদরে তখন মাস্টার সাহবরেে উপর ভীষণ মজোজ খারাপ হতো। আবাহনী মাঠে এসে আমরা তাঁর চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারসহ ভাবীকে নয়িে বচত্রিি গবষণোয় মতেে উঠতাম। বশষেি করে ভাবীর ডান গালরে বড় তলটাি নয়িে তো আমাদরে মধ্যে রীতমতোি প্রতযোগতািি শুরু হয়ে গল।ে ওই তলটাকর্েি ঘর্রিে ভাবীর চহোরার সৌন্দর্য বণনায় ক বশেেি পারদশী বাল্মকীি তা প্রমাণরে আপ্রাণ প্রচষ্টো র্থাকতো তখন প্রতযোগতারিি শীষ।ে দনরেি বলোয় যখন মাস্টার সাহবে স্কুলে থাকতনে তখন ভাবীকে এসব কে আগে শোনাবো, কভাবিে কতো মন্ত্রমুগ্ধরে মতো শোনাবো তা নয়ওেি আমাদরে মধ্যে বড় ধরণরে টনশনে তাড়া করতো। এভাবে শংকররে ওই নয়া সাবলটে বাসাটা আমাদরে অজান্তইে দনদনিেেি প্রয়ি হয়ে গল।ে ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। তনি মাস পর । একরাতে মাস্টার সাহবে আমাদরে মৌসুমী ফল খাবার নমন্ত্রণি দলন।িে সৌজন্যতা দখোতে আমরাও বশেি বশেি তপুকে এটা ওটা বলে আদর করতে থাকলাম। ভাবী আমাদরে রসালো লোলুপ কি সব ফল পরবশণিে করছন।ে আমরা যখন খুবই ফুরফুরে মজোজ,ে তখনই মোস্তফা সাহবে কথাটি পাড়লনÑে Ñ আমার ছোট ভাইটার সাথে তো আপনাদরে পরচয়ি হয়ছ?েে Ñ জ।ি Ñ ও ভীষণ একটা ঝামলোয় পড়ছ।েে Ñ কী ধরণরে ঝামলো? Ñ বাসস্থানরে । Ñ তাই নাক?ি সইে ফাঁকে ভাবী বললনÑে শুধু থাকার সমস্যা হলে তো কথা ছল,ি খাবারওে ওর ভীষণ সমস্যা। Ñ বলনে কী ! মাস্টার সাহবরেে কথা শষে হয় না। Ñ প্রায় রাতইে এখান থকেে খয়েে যাবার পর ও বাসায় ঢুকতে পারে না। পরে বাবরদরে মসেে গয়িে ঘুমায়। পড়াশুনায়ও ওর ভীষণ ক্ষতি হচ্ছ।ে ওর জন্য কী করি বলুন তো? মোস্তফা সাহবরেে কথা শষে হবার ফাঁকে ভাবী বললনÑে আগে বড় বাসা ছল,ি ও তখন আমাদরে সাথইে থাকতো। তপু’র জন্য খরচটা বড়েে যাওয়ায় আমরা ছোট বাসায় উঠতে বাধ্য হয়ছ।িে ভাবীর মুখরে কথা কড়েে নয়িে মোস্তফা সাহবে যোগ করনÑে আর ওকে বাইরে মসেে রখেে বাড়তি রুমটা আপনাদরইে সাবলটে দলাম।ি তাতে খরচ কছুটাি বাঁচ।ে কন্তুি ওর ভীষণ কষ্ট হচ্ছ।ে আবার ওর পছনেি টাকাটা তো আমাদরইে দতিে হচ্ছ।ে ইস্কুল মাস্টারি করে কি আর রাজধানীতে ভাই পালা যায়! লালু আর আমি পরস্পর চোখাচোখি কর।ি ভাবী এবার সরাসরি স্বামীকে থাময়িে দয়িে আমার্দর উদ্দেশ্যেে বললনÑ মতুজো আপনাদরে সাথে থাকলে কি আপনাদরে খুব অসুবধাি হব?ে এতো অল্প দনরেি পরচয়েি ভাবী যভোবে আমাদরে আপন করে নয়ছনিেে তাঁর অমোন ছোট্ট আবদাররে আমরা কি জবাব দবো।ে কৃতজ্ঞতা বলে তো একটা ব্যাপার আছ।ে তাছাড়া র্বাসাটা ভাড়া নওয়োর সময় মতুজাই আমাদরে পক্ষে মাস্টার সাহবে আর ভাবীর কাছে অসামান্য ওকালতি করছল।েি এতোকছুি জানার পরওে আমরা না বলি কভাব?েি পরদনইি আমাদরে কক্ষে নতুন একটা বছানাি পাতা হলো। এবার আমাদর্র আেড্ডাটা আরো সন্দহরর্েে উধ্ব জমতে থোকলো। মতুজা আমাদরে মজার মজার সব পোংটা চটুকি শোনায়। আমরা হো হো করে গলা ফাঁটয়িে হাস।ি আমাদরে উত্তাল আড্ডার কারণে ওপাশে তখন তপু’র ঘুমরে ব্যাঘাত ঘট।ে কোনো কোনো দনি তপু কান্না জুড়ে দলিে ভাবী আমাদরে ওপর তার বদলা নন।ে তপুকে আমাদরে রুমে ছড়েে দয়িে যান। আর যদি তপুর কান্না না পায় ওপাশ থকইেে আমাদরে কণ্ঠে কোরাস শোনার আকুতি জানান ভাবী। অমোন সুন্দরী একজন শ্রোতাভক্তকে না হারানোর ভয়ে আমরাও একটার পর একটা কোরাস গয়েে যাই। কোনো কোনো গানরে সুর লয় তাল আমরা লালু-ভুলুর মতো উল্টা পাল্টা করে ফল।িে তারপরওে ভীষণ বাহবা পাই ওপাশ থক।েে অতএব গান চালয়িে যতেে সমস্যা তো নাই। ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। পররে মাসে ভাড়া দবোর সময় মোস্তফা সাহবে আমাদরে দুশো টাকা ফরয়েিি দলন।িে কারণ জানতে চাইলে মাস্টার সাহবরেে বদর্ল জেবাব দলনেি ভাবীÑ মতুজা আপনাদরে সঙ্গে থাক।ে ব্যাপারটাকে আমরা হসইেে স্বাগত জানার্ই। এভাব ধীরে ধীরে মতুজো আমাদরে ঘনষ্টি বন্ধুতে পরনতি হল। ফর্লাফল আমার আসল নামটা মতুজার দওয়ো উপাধীর কাছে দনদনিের্েি হারয়িে যতেে থাকল। মতুজা আমার আসল নাম পাল্টে লালুর সঙ্গে মলয়েিি রাখলো ভুলু। আর ভাবী তো মনরে ভুলওে আমাদরে কারোর নামই মুখে আনতনে না। তনিি আমাদরে ডাকতনে ‘মানক-জোড়’।ি মানক-জোড়ি হলে কি হব?ে আমরা কন্তুি নজদরিেে মধ্যর্ েএটা ওটা নয়িে ভীষণ তক করতাম। আরর্ মুদ্রাস্ফীত ব্যাপারিটা তখন সবত্র বশে চাউর ছল।ি সমাজতন্ত্ররে পতনে রাশয়ায়ি তখন প্রায় ৭০% মুদ্রাস্ফীত।ি আগে আমরা বারোশো টাকা বাসা ভাড়া দতাম।ি খাবার আর পকটে খরচ মলিে দু‘জনার তখন একত্রে খরচ হতো প্রায় তনি হাজার টাকা। আর এখন মাস্টার সাহবে ভাড়া ননে এক হাজার টাকা। খরচরে জন্য বাড়তি হাতে থাকে দুশো টাকা। অথচ মার্স শষেে দখো যায় প্রায়ই মতুজার কাছে আমরা প্রায় দড়ে থকেে দুশো টাকার মতো লোন হই। তাহলে আমাদরে জন্য মুদ্রাস্ফীতি তর্খন কতো? অনকর্ রোত র্পযন্ত এসব নয়িে তক-বতকি শষেে আমরা এমন সদ্দান্তিে পৌঁছাতাম য,ে ভাড়া থকেে বঁচেে যাওয়া দুশো টাকার কারণের্ আমাদর খরচে করার সামথ্যও ওইর্ দুশো টাকা বশেি থাকতো। অথ হাতে জমা মানর্, ভেোক্তার র্খরচ করার সামথ্য র্বাড়া। অথ খরচ করার সামথ্য বর্ড়েে যাওয়া মান বোজার অথরেে প্রচলন গর্তও বৃিদ্ধ পাওয়া।ি আর অথরে প্রচলন গতরি এই বৃদ্ধইি তো মুদ্রাস্ফীতরি একটি প্রত্যক্ষ কারণ। মুদ্রাস্ফতরিি অমোন অমমাংসতিি জটলি গাণতকিি হসাবি নকাশি বরে করতে করতে প্রায়ই আমাদরে মাথা তখন র্ভনভন করতো। বুঝলাম, অথরে প্রচলন গতি বৃদ্ধরি জন্য মুদ্রাস্ফীতি বাড়লো, কন্তুর্ িআমরা য মোস শষেে মতুজার কাছে দুশো টাকার মর্তো ঋন থাকতাম, দশরেে অথনীতবদরািি তার কি ব্যাখ্যা দবন?িে আমরা তখন যভোবে ব্যাখ্যা করতামÑ বাসা ভাড়া থকেে দুশো টাকা আমাদরে হাতে জমা হওয়ার ফলের্ আমাদর খরচে করার সামথ্য দুশো টাকা বাড়তো। একই সাথে খরচ করার মানসকতারওি তখন ইতবাচকি প্রতফলনি ঘটতো। বাড়তি দুশো টাকার বপরোয়ো খরচরে সঙ্গে আমরা আর তাল মলাতিে পারতাম না। আর তখন খরর্চর লোগামও আমাদর সোমথ্যকে অতর্ক্রম করিতো। অতক্রান্ত সামথ্যি আমাদরে বশেি বশেি খরচরে ঝুঁকি নতিে যমনে উৎসাহতি করতো, তমনিে ভাবীর সঙ্গে ইনটনশনোলি সৌজন্যতা দখোতে বাড়তি খরচরে বলোয় আমরাও অনকটোই উদার্র থাকতাম। য কোরণ মতুজোর কাছ থকেে মাস শষেে দনো হবার লাইফ-সাইকল-ইনফ্লশোন-ইমপ্যোক্টটা আমরা এক প্রকার মনইেে নতাম।ি কন্তুি এক্ষত্রেে মুদ্রাস্ফীতরি হার বরে করতে আমরা ভীষণ হমসমিি খতোম। কছুতইেি এই অমমাংসতিি রটে অব ইনফ্লশোন বষয়রিে আমরা কোন সমাধান পতোম না। আমাদরে হসাবিে দু‘জনার তনি হাজার টাকা খরচরে সঙ্গে অতরক্তিি দুশো টাকার দনোর সমীকরণে মুদ্রাস্ফীতি হলোÑ ৩০০০ টাকায় ২০০ টাকা। শতকরা হসাবিে ৬.৬৭%। আসলইে বা তখন আমরা কতো মুদ্রাস্ফীতি ফসে করতাম? বাসা ভাড়া থকেে দুশো টাকা বঁচেে যাওয়ায় আসলে আমাদরে তখন খরর্চ হত ২৮০০ টাকার পরবতেি ৩২০০ টাকা। অতএব, ২৮০০ টাকার বপরীতেি ৪০০ টাকা অতরক্তিি খরচ হসাবিে মুদ্রাস্ফীতি আসলে তখন শতকরা প্রায় ১৪.২৯%। এতো গলোে আমাদরে মাথাপছুি ব্যয়রে হসাবিে মুদ্রাস্ফীতরি দুধরণরে হসাব।ি নাকি কোথাও ভুল হচ্ছ?ে ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকরর্। ছয় মাস পর। মতুজা একদনি কথায় কথায় আবদার করল য,ে দু’মাসরে পাওনা ৪০০ টাকার সাথে ১০০ টাকা যোগ করে আমরা যদি তার চলতি মাসরে ভাড়াটা মাস্টার সাহবকেে দয়িে দই,ে তাহলে তার বড়োই উপকার হয়। আমরা আবাহনী মাঠরে স্বান্ধ্যকালীন আলো-আঁধারী র্আড্ডার মধ্যও বষয়টিেি নভুলি বুঝতে পরেে ব্যাপারটায়র্ বমোলুম চুপ থকেে উল্টো মতুজার কৃতজ্ঞতাকে খুব করে স্মরণ করলাম। আর প্রতশ্র“তিি দলামি যে সে যনোে ভাড়া বষয়েি নশ্চন্তিি থাক।ে পরদনি ভাবীর হাতে পুরো ১৫০০ টাকা গুজে দয়িে ব্যস্ততার ভান করে দ্রুত বাসা থকেে র্বড়য়েে যায়ি লালু। আর পূব পরকল্পনাি মতো আগে থকইেে বাথরুমে লাইট নভয়েিি বসে থাকলাম আম।ি মাস্টার সাহবে আর তাঁর র্গন্নরিি ভাড়া বষয়ক কথাবাতায়ি নজরদারি করার জন্য।র্ গোয়ন্দোগরতেি যি এতোে চাম আগে কি জানতাম। মাস্টার সাহবে আর তাঁর র্গন্নরিি কথোপকথোনর সোরমম হলÑ ছলেে দুটো আসলইে বর্শ সেহজ সরল। কন্তু মতুজাি যা করছেে তা যনোে আর কনটনউিি না কর।ে গোপনে যনোে ভাবী তাকে এ বষয়েি শাসয়িে দয়ে নইলে ধরা পরে যাবার সম্ভাবনা থাকব।ে বষয়টকেিি আমরা বমোলুম এড়য়িে থাকলাম। পররে মাসে মাস্টার সাহবে ভাবীর মাধ্যমে আমাদরে আরকটো মজার প্রস্তাব দলর্ন।িে তাদর একে দুর সম্পকরে ভাই ঢাকায় এসছেে নয়া চাকরি পয়।েে আর চাকরস্থলওি বলতে গলেে আমাদরে ঘররে সাথ।ে শংকর বাসস্টান্ডরে উল্টোপাশে ইবনে সনাি ক্লনক।িেি সাবলটে উঠয়িে দয়িে হলওে এই ভাইকে তাঁদরে সঙ্গে না রখেে নাকি কোনো উপায় নই।ে পররে দনি দুপুরইে সইে কথতি ভাইয়রে সাথে আমরাও পরচতিি হলাম। ছলেে ভালো গোলগাল। বাড়ওি তার বরশাল।ি লালু আবার দশেি ভাইয়রে সাথে এক্্রট্রা খাতরি পাতালো। পরনতিি সইে ভাইও ধীরে ধীরে চলতি মাসরে খুচরা দনগুলোরি জন্য আমাদরে রুমমটে হলন।ে নয়া গস্টে রুমমটে পয়েে আমরা আরো বশেি বশেি হৈ চৈ হল্লা করতে থাকলাম। পররে মাসে আমরাই প্রস্তাব করলামÑ রহমত ভাই আমাদরে সাথইে থকেে যাক। শুধু শুধু রহমত ভাই নতুন বাসা আর কোথায় খুঁজব?ে তাছাড়া এতো কাছে বাসা থাকায় চাকরি করওে ভীষণ মজা পাচ্ছনে রহমত ভাই। আমাদরে রুমটায় আগরে চয়েে আনন্দ আরো উপচে পড়তে থাকলো। ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। এক বছর পর। সদা প্রাণোচ্ছল বনয়ীি লালুর মধ্যে একটা নতুন রোগরে লক্ষণ ধরা পড়ছ।েের্ প্রায়ই ও দুপুর ইউনভোসটিিি থকেে বাসায় চলে আস।ে টএসস’রিি সান্ধ্যকালীন আড্ডায়ও বলতে গলেে সে অনুপস্থতি থাক।ে আমরার্ বন্ধুরা মলিে ওর রোগ ননয়রিে অনকে চষ্টো করছ।িে ও ধরা দয়ে না। শষেে সবাই মলিে একটি তদন্ত কমটিি গঠন করলাম। আর সবার সম্মতক্রমেি আমাকে করা হল সইে কমটরিি প্রধান। কারণ লালুকে অন্যদরে চয়েে আমি বশেি সময় কাছে পাই। দখভোল বা নজরদারি করার জন্য অন্য বন্ধুদরে চয়েে আমার সুবধাওি বশ।িে তখন আজকরে মতো সবার হাতে হাতে অমোন মোবাইল ছলি না। বাড়ওয়ালারি ল্যার্ন্ডফোন থাকলও কবলে ইমোজন্সেি কছুি হলে সটেি ব্যবহার করা যত।ে সাধারণ কোন ঘটনায় বাড়ওয়ালাি ভায়া হয়ে কল করাটা এক ধরণরে বোকাম।ি সক্ষত্রেেে বাড়ি হারানোর ভয়টা থাকে অনকে বশ।িে একতোে আমরা ব্যাচলর।ে তার উপর সাবলট।ে তাই আমাদরে বলোয় ল্যান্ডফোনে সরাসরি কথা র্বলারও রওয়োজ নই। ইমোজন্সেি কল হলে ভাবীকে ডাকার নয়ম।ি আমাদরে তমনে কোন জরুরি ফোন আসলে ভাবী বাড়ওয়ালারি বাসায় গয়িে ফোনে কথা বলে আসন,ে তারপর ফোনরে খবরটি দনে আমাদর।ে তো আমরা সদ্ধান্তি নলামি বন্ধুদরে কউে না কউে রোজ একবার লালুকে ফোন করব।ে লালুকে ফোন করা মানে ভাবীর সঙ্গওে কথা বলার সুযোগ। আর সইে সুযোগে লালুর খবর নবোর পাশাপাশি লালুর সাথে ভাবীর দহররম-মহররমটাও একটু আন্দাজ করার চষ্টো। ভাবীর সাথে লালুর কছুি একটা যে আছে তা প্রথম দনিে ফোন করইে আবস্কারি করল প্রকাশ। সইে কছুি একটা যে কী তা তদন্ত করার দায়ত্বি আবার তদন্ত কমটর।িি লননিে ফোন করে জানতে পারল যে লালুর খুব মাথা ব্যথা। তাই ক্লাসে যায়ন।ি ভাবীকে লননিে একটু আবদাররে সুরইে বলল য,ে লালুর যদি আপন কউে থাকত এই সময় মাথাটা একটু টপর্িে দলিে বচোরার আর আমপট্যান্ট ক্লাসগুলো কামাই হত না। জবাবে ভাবী বললন,ে আপনাদরে এতো হাজার হাজার বন্ধবী, কাজরে সময় তো কাউরে পাওয়া যায় না। লননিে দুষ্টুমরি ভঙ্গতিে রকোয়স্টেি করলÑ ভাবী আপনি থাকতে আবার বান্ধবী লাগবে কন!ে Ñ বান্ধবী লাগবে ক্যান, বোঝনে না? Ñ আরে আপনাকে হারয়িে কে পারবে অতো ভালো সবো দত?েি Ñ তাতো দচ্ছ,িি কন্তুি সইে সবোয় কি আর মাথা ব্যথা সার?ে Ñ কি যে বলনে ভাবী, আপনার হাতরে ছাঁয়ো লাগলে মাথা ব্যথা তো শংকর ছড়ইেে পালাব।ে পরদনওি আবারো লালুর ক্লাস মসি এবং এবার যথারীতি ফয়জে নূররে ফোন। ওপাশ থকেে ভাবীর জবাবÑ শুধু ফোনে খাঁজে নলিে কি আর বন্ধুর মাথা ব্যথা সার?ে এভাবে রোজ পালা করে ফোন করা হয়র্, আর লালুর মাথা ব্যথার সবশষে পরস্থতিিি জানার জন্য আমরা ব্যাকুল হয়ে থার্ক। এরিমধ্য চত্রো পরামশি দল,ি চল সবাই মলিে একবার লালুকে গয়িে দখেে আস,ি মাথা ব্যথা নাকি অন্য কছুি সরাসরি সব জানা যাব।ে এরপর দল বঁধেে বন্ধুরা লালুকে দখতেে আসা শুরু করল। ফলাফল সপ্তাহ না র্গড়াত লোলু আবার ইউনভাসটতিেিি নয়মতিি হয়ে গল।ে ওর্দকিে তদন্ত কমটরিি রপোটি দতিে দরেি হওয়ায় কোন কোন বন্ধু তো নতুন ঝামলো পাকানোর পায়তারা করছ।ে আমার নাকি মড-নাইটি সান-টুতে দুপুররে খাবার খাওয়াতে হবে সবাইক।ে এ জন্য ওরা সময় সীমা ও বঁধেে দলি এক সপ্তাহ। অগত্যা আমার পকটে বাঁচাতে বাংলাদশরেে অন্যসব তদন্ত কমটরিি মতো র্দায়সারা গোছর একটো রপোটি দবোর জন্য আমি যখন খুব মরয়া,ি তখন একদনি ক্লাস ফাঁকি দয়িে এক অলস দুপুরে চুপসারিে বাসায় হাজরি হলাম। নজি চোখে যা দখলোম তাকি প্রমোস্ফতিি নাকি পরকীয়া-স্ফত?িি নাকি মাথা ব্যথা নাশফত!িি দোষ ¯ী^কার করলে নাকি স্বয়ং ভগবানও সব অন্যায় মাপ করে দন।ে দোষরে মধ্যে যা করছলামিে তা একটু এখানে বল।ি সবার অলক্ষ্যে আমাদরে কমোন বাথরুমরে দরজায় একটি ছোট্ট ছদ্রি করছলাম।েি যা খালি চোখে হঠাৎ কারো নজরে আসবে না। আর দনরেি বলোয় ডাইনংি স্পসরেে বাতি নভোনো থাকে বলে সখোন থকেে ওৎ পাততওে অনকটো সুবধা।ি দুপুরে মাস্টার সাহবে লান্সরে পর যখন ক্লাসে চলে যান, তখনই খুব চুপসারিে কোন ধরণরে শব্দ না করে বাসায় ঢুকে দখেি কউে নই।ে লালুও নই,ে ভাবীও নই।ে শুধু তপু একা ওদরে ঘরে বঘোরেে ঘুমোচ্ছ।ে অথচ বাথরুমে আলো জ্বলছ।ে সন্দহে আরো তীব্রতর হল। বড়ালরেি মত আস্তে আস্তে হঁটেে সইে ছদ্রমুখেি চোখ রাখতইে আমার তদন্ত কাজরে সবটুকুই একসাথে ধরা পরল। কাউকে কছুি বুঝতে না দয়িে চুপসারইেি আবার গৃহত্যাগ করলাম। এবার সাক্ষ্যপ্রমাণরে পালা। ব্যাপরটায় বন্ধুরা সবাই খুব মজা পাচ্ছ।ে ওদকিে ধরা খলেে আমাদরে বাসস্থান হারানোর ভয়। তাই সদ্ধান্তি হল, যে যে বষয়টরিি সত্যাসত্য যাছাই করতে চায়, তারা আমার শখোনো মন্ত্রে সইে ছদ্রপথিে লালুর মাথা ব্যথা আবস্কারি করতে যনে উঁকঝুঁকিি মার।ে পালা করে প্রকাশ, লনন,েি ফয়জে নূররা দুপুররে অবসরে হানা দলি সইে ছদ্রমুখ।িে গোপনে র্ওৎ পতেে কারো প্রমলীলো পযবক্ষণকোরীদরে কী বল?ে লালুর বন্ধুরা কি সবাই তাহলে ভোয়ার? একদনি আড্ডায় বষয়টিি তোলা হলে লালুর ঠকি আগরে মতোই জবাব। সে নাকি ভাঁজা মাছটি উল্টে খতইেে জানে না। আর আমরা হসেে তখন এ ওর গায়ে গড়াগড়।ি ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। দড়ে বছর পর। পরকীয়া প্রমরেে ফলন যত বশেি ধরা পরার আশঙ্কাও নাকি তত র্বশ।িে ভাগ্যস ব্যাপারটি মতুজাি দখছল।িেে মাস্টার সাহবরেে দখলেে অন্য কতো কছুইি না ঘর্টত পোরত। বষয়টর্ মতুজািি আমার সঙ্গ পরোমশ করইে একদনি প্রকাশ করল যভোবÑে সকাল বলো নাস্তার টবলেেি মাস্টার সাহবে পরীক্ষার খাতা দখছন।েে আমরা নাস্তা করছি আর পত্রকাি পড়ছ।ি ভাবীর্ তপুক খোওয়াত ব্যস্ত।ে মতুজা প্রসঙ্গরে সূচনা করল। Ñ বাবরদরে পাশরে রুমটা ১ তারখিে খালি হচ্ছ।ে পত্রকাি আর খাতার ওপরর্ থকেে সবার চোখ এবার মতুজার দক।েি আমি জানতে চাইলামÑ ভাড়া কত র?ে Ñ ভাড়া চব্বশি শ’ Ñ কন,ে বাবররা কি চলে যাচ্ছ?ে ভাবীর প্রশ্ন। Ñ না, র্ফজলু আর কামাল যাচ্ছ। মতুজোর জবাব। Ñ তাহলে ওই রুমটা আমরা নয়িে নই।ে কি বলস?ি আমার প্রস্তাব। Ñ ভাড়াটা একটু বশেি হয়ে যায় না? লালুর আতঙ্ক। Ñ বশেি হলওে র্আম ওইি রুমটা নচ্ছ।িি মতুজার আবদার। Ñ তাহলে আমওি যাবো। Ñ আর আম?ি লালুর হতাশা। Ñ তাহলে আমাদরে কি হব?ে মাস্টার সাহবরেে চোখ চশমার ওপর।ে Ñ কন,ে রহমত ভাই ভাবীকে নয়িে র্আসব। আমোর প্রস্তাব। মাচ মাসরে এক তারখ।ি আমরা যখন বাসা ছড়েে চলে যাচ্ছি তখন দু’জন লোকরে কী খুব মন খারাপ! যে আনন্দদায়ী কক্ষটায় আমরা প্রায় দুই বছর ছলাম,ি হুট করে সইে ঘরটা আমরা এভাবে ছড়েে দয়োয় মাস্টার সাহবরওেে কী হসাবিে কছুটাি গণ্ডগোল হচ্ছ?ে নইলে সাজ সকালে নতুন একটা ব্যাচ প্রাইভটে পড়তে আসবে কন?ে বাসাটরি মোট ভাড়া যদি আঠাশ’শ টাকা হয়, প্রয়ি পাঠক বলুন তো আমাদরে কক্ষটার আয়রে হসাবিে মুদ্রাস্ফীতি তখন কতো ছলি ? ভোম ভোম শংকর। লালু ভুলুর ট্রান্সফার। ভোম ভোম শংকর। ভোম ভোম শংকর। রজো ঘটক ফোন: ০১৬৭৪১৮০১৬৩ ঊ-সধরষ: ৎবুধমযধঃড়শ@মসধরষ.পড়স সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৮
false
rg
অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!!! গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার বাঁইশতম দিন। এখনও বইমেলায় যে পরিমাণ মানুষ যায়, প্রত্যেকে একটি করে বই কিনলে প্রকাশকদের স্টল খালি হয়ে যাবার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনেকেই কেবল আড্ডা দেবার জন্য বইমেলায় যায়। আজকে বইমেলার লিটলম্যাগ প্রাঙ্গন থেকে ফোন করে আমাকে ঘুম থেকে তুলেছে 'সূর্যাই ডোম ও রাম্বা আখ্যান' খ্যাত তরুণ কথাসাহিত্যিক রুদ্র সাইফুল। পরে বইমেলায় যাবার আগেই পথে পথে কয়েক দফা আড্ডা হলো। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে দীর্ঘদিন পর দেখা হলো শিল্পী মামুন হোসাইনের সাথে। এ বছর 'দিগন্ত ধারা সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭'তে সেরা প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে মামুন। কিন্তু মামুন এতোটা নিভৃতচারী যে, আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলেও পুরস্কারের কথাটি একবারও বলেনি। মামুনকে অভিনন্দন। মামুনের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থায় পেছন থেকে ডাক দিলেন জাকির ভাই। কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার গতকাল ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু আজই আমার সঙ্গে প্রথম দেখা। পুরুলিয়া বইমেলা উদ্ভোধন করার অভিজ্ঞতা ও এবারের ভারত সফরের অনেক টাটকা স্মৃতি নিয়ে জাকির ভাই কথা বললেন। এই সময় বন্ধু কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুরের ফোন। ঠাকুর বললেন, শক্তি কমিশনের সামনে বসে আছি। মেলায় ঢুকতে পারব না। আজিমপুরে একটা কাজে যাব। আপনার সঙ্গে দেখা হওয়া লাগবে। জাকির ভাই পাবলিক লাইব্রেরিতে একটা সেমিনারে ঢুকলেন আর আমি মামুনের থেকে বিদায় নিয়ে টিএসসি'র দিকে হাঁটা ধরলাম। ঠিক পরমানু কমিশনের সামনে আমার পথ রোধ করলেন গিয়াস ভাই। ঝিনেদা'র গিয়াস ভাইকে আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে গিয়াস ভাই নাম বলতেই জড়িয়ে ধরলাম। বললাম, দেখেন ওই যে কে বসে আছে? পরমানু কমিশনের সামনে লাল টি-শাট পড়া টোকন ঠাকুর। সেদিকে আমি, গিয়াস ভাই ও আমার তিন সঙ্গী অভিনেতা ও নাট্যকর্মী ইকতারুল ইসলাম, সুরকার নিহার আহমেদ ও সুরকার মুরাদ নূর এগিয়ে গেলাম। ঠাকুর আমাদের উদ্দেশ্যে হাতে থাকা ডিএসএলআর দিয়ে কিছুক্ষণ ব্রাশ-ফায়ার করলেন। তারপর সেই মেশিনগান হাতে নিয়ে ঠাকুর আর গিয়াস ভাই'র ছবি তুললাম আমি। দেখি, ওপাশে শিল্পী শতাব্দী ভব বসে আছে। ভবরে জিগাইলাম, কীরে তুই এখানে বসে আছিস কেন? ভব বলল, টোকনদার জন্য! পরে ঠাকুর নতুন ছবি 'কাঁটা'র জন্য দুই আর্টিস্ট শতাব্দী ভব আর ইকতারের ছবি তুললেন। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে গিয়াস ভাই চলে গেলেন। এই পর্যায়ে দেখি একটা সুন্দরী মেয়ে হঠাৎ ভবকে পা ছুয়ে সালাম করছে। ঘটনা কী? বললাম, ভব'র চেয়ে এখানে অনেক মুরব্বী আছে। তুমি কেমন মেয়ে হে! পরে ও আমাকে আর ঠাকুরকেও পায়ে-হাত দিয়ে সালাম করল। পরে দেখি, এই সেই সায়মা। সায়মা আমাদের একটা গোপন ইনফরমেশান দিল। কুহক সেই নষ্টের গোড়া! তাই আমরা বইমেলার দিকে ছুটলাম আর ঠাকুর চলে গেলেন আজিমপুর, মনজুরে মওলার ইন্টারভিউ নিতে। বইমেলায় ঢোকার মুখে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল বন্ধু শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার। লিটলম্যাগ চত্বরে গিয়ে পেলাম কুহক অ্যান্ড গংকে। যথারীতি কুহক ওর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ততক্ষণে লীলা শেষ করেছে। পরে কুহক আমাদের মনের কষ্ট ভোলাতে কিছু ছবি তুললো। কিন্তু দুধের স্বাদ কী আর ঘোলে মেটে! পরে আমি, মোবাশ্বির আর শিমুল চললাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিদ্যাপ্রকাশের স্টলে গিয়ে কথাসাহিত্যিক জুলফিয়া ইসলামের বাসায় বানানো পিঁয়াজো খেয়ে আমরা দুঃখ ভোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যখনই কুহকের কথা মনে পড়ে, তখনই ওরে মারতে ইচ্ছা করে! বিদ্যাপ্রকাশ থেকে বের হয়ে আমরা এলোমেলা ঘুরছিলাম। হঠাৎ শতাব্দী সানজানা এসে ছো মেরে শিমুলকে ভাগিয়ে নিয়ে গেল। আমার তখন প্রচণ্ড চায়ের তৃষ্ণা। তাই শ্রাবণ প্রকাশনীতে গিয়ে নিজে চা বানালাম। বিপ্লবী আকরাম ভাই আর মোবাশ্বিরকে নিয়ে চা খেলাম। তখন শ্রাবণের সামনে দেখি বিশাল একটা বাহিনী নিয়ে শফিক ভাইয়ের আগমন। লেখক গোলাম শফিক বললেন, একটা কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে গিয়ে আমার দশা খুব খারাপ! কে যেন তখণ আমাদের মিষ্টি খাওয়ালেন। বিপ্লবী বাবুদা বললেন, কবি'র সঙ্গে কথা না বলে মিষ্টি খাই কী করে? এই সময় সেখানে উপস্থিত হলেন শাকুর ভাই। এ বছর আজ প্রথম বইমেলায় আসলেন লেখক, স্থপতি, শিক্ষক ও নির্মাতা শাকুর মজিদ। শাকুর ভাই শ্রাবণ থেকে আমার 'ফিদেল দ্য গ্রেট কমরেড' কিনলেন। রবীন কী যেন নালিশ দিচ্ছিল শাকুর ভাইকে। তখন শাকুর ভাই দুই কপি কিনলেন ফিদেল দ্য গ্রেট কমরেড'। তখন রবীনের মুখ বন্ধ। এই সময় কোনো একটি চ্যানেল রবীনের ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য ওকে জেকে ধরলো। আমরা সেই সুযোগে পালালাম। এই সময় কবি ও নির্মাতা মাসুদ পথিকের ফোন। মাসুদ পথিক আগরতলা থেকে 'দক্ষিণারঞ্জন ধর স্মৃতি স্রোত সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মাননা' নিয়ে তখন মাত্র ঢাকায় ফিরেছেন। বললেন, বেহুলাবাংলা থেকে আমার 'লাঙলের ভুবন' বইমেলায় এসেছে। আমি আসতে আসতে বইমেলা শেষ হয়ে যাবে। আমার জন্য 'লাঙলের ভুবন' নিয়ে আসেন। আমি ছুটলাম বেহুলাবাংলায়। শাকুর ভাই গেলেন অন্যপ্রকাশে। বেহুলাবাংলায় আমার সঙ্গে যোগ দিলেন নির্মাতা সন্দিপ বিশ্বাস। 'লাঙলের ভুবন' নিয়ে আমি আর সন্দিপ আবার লিটলম্যাগ প্রাঙ্গনে ফিরলাম।সেখানে বহেড়াতলায় সব্যসাচীতে দেখা হলো শিল্পী ও তরুণ কবি ফারিসা মাহমুদ ও তার বন্ধু অরণ্য শারমিনের সঙ্গে। দেখা হলো শিল্পী ও নির্মাতা উজ্জ্বলদার সঙ্গে। পরে সন্দিপ আর আমি যাব একাডেমির উত্তরাধিকার দপ্তরে। তখন শিল্পী এষা জাবিনের ফোন। পরে এষাকে সহ গেলাম কবি সরকার আমিনের সঙ্গে দেখা করতে। গিয়ে পেলাম কবি সাদ কামালী ও ডক্টর অনু হোসেনকে। আমিন ভাই নিজ হাতে দার্জেলিংয়ের চা বানিয়ে খাওয়ালেন। ওখানে আড্ডা শেষে আমরা যখন লিফটে নামব, তখন আরেক পশলা আপ্পায়ন করলেন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। পরে আমরা লিটলম্যাগে আসতে আসতেই বইমেলার ঘণ্টা বেজে গেল। সেখানে দেখা হলো তরুণ কবি পরাগ রিছিলের সঙ্গে। এ বছর তিউড়ি প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে কবি পরাগ রিছিলের কাব্যগ্রন্থ ' ফুলগুলি ফুলকপির'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রাজীব দত্ত। বইটি পাওয়া যাচ্ছে লিটলম্যাগ চত্বরের চিবিমা স্টলে। পরাগ রিছিলকে অভিনন্দন। বইমেলা থেকে বের হব তখন দেখ হলো কবি ফরিদ কবিরের সঙ্গে। একটু আড্ডার ফাঁকেই পেছন থেকে ডক্টর মাসুদুজ্জামান দুই সুন্দরী রমনী বেষ্টিত আমাদের হামলা করলেন। তাদের একজন শিলা বৃষ্টি। আমাকে দেখেই বললেন, আপনি রেজা ঘটক। কী আর করা? পরে আমরা হেঁটে হেঁটে বইমেলা থেকে বের হলাম। মিলন চত্বরে এসে পেলাম ব্যাচেলর সমিতির প্রেসিডেন্ট শেখ শাহেদ আলীকে। শাহেদ ভাই এক ফোন পেয়ে কালো গ্লাসের এক গাড়িতে চড়ে গুলশান ছুটলেন। আমরা চারুকলার সামনে এসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন মাসুদ পথিক, রুদ্র সাইফুল ও তূর্ণা। পরে যোগ দিল জেরিন ও ইমু। আরো পরে যোগ দিল নজরুল কবির। নজরুল আজ আমাদের চা খাওয়ালো। পথিক আমার জন্য আগরতলা থেকে সিগারেট নিয়ে এসেছে। ধন্যবাদ ভাইডু। গুণদা জাদুঘরের সামনে আছে শুনে আমরা সেদিকে এগোলাম। গিয়ে পেলাম গিরিশ ও মাহবুবকে। কিন্তু গুণদার ততক্ষণে পাখা গজিয়েছে। মার্কিন প্রবাসী কবি হাসানআল আবদুল্লাহ'র গাড়িতে গুণদা বাসায় চলে যাচ্ছেন। ফোন দিলাম গুণদাকে। গুণদা বললেন, কাল দেখা হবে। কিছুক্ষণ পর আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন টোকন ঠাকুর। তারপর শাহবাগ হয়ে গেল আমাদের কাছে এক টুকরো রাতের ল্যাটিন আমেরিকা। ..............................২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:১৭
false
rn
মৃত্যুর আগে যে ১০০ টি মুভি আপনাকে দেখতে হবে (আট) ৭১। ব্যালাড অফ এ সোলজার (Ballad of a Soldier) লাইফ ইজ বিউটিফুল এবং ব্যালাড অফ এ সোলজার দু'টি মুভিই আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। নায়ক ১৯ বছর বয়স্ক রাশিয়ান সৈনিক অ্যালোশা। যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ছেলেটি মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য দশদিনের ছুটি পায় । অ্যালোশার বাড়ি যাওয়া নিয়েই মুভিটির গল্প। ঘটনাবহুল ও নাটকীয় বাড়ি ফেরার যাত্রায় ছেলেটি শেষ পর্যন্ত তার ঘরে ফিরতে পারে। কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য। কারণ তার ছুটি যাত্রাপথেই ফুরিয়ে যায়। যাত্রা পথের ঘটনাগুলো খুবই চমকপ্রদ ও কিছু কিছু জায়গায় খুবই আবেগঘন। এ যাত্রাপথেই মুভির নায়িকার সঙ্গে নায়কের পরিচয়। আইএমডিবি রেটিং ৮.১/১০ । ৭২। জন কার্টার (John carter) এডগার রাইস বারোর ‘বারসুম’ সিরিজের উপন্যাস আ প্রিন্সেস অফ মার্স অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই ছবি। ছবিটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। অনেকে মনে করেন, এই ছবির চরিত্র-চিত্রায়ন রীতিমতো হাস্যকর। সোয়া ২ ঘণ্টা ব্যাপ্তির ছবিটি পুরোটাই একঘেয়েমিতে ভরা। কাহিনীতে কোনো গতি নেই। ৭৩। চুংকিং এক্সপ্রেস (Chungking Express) এই মুভিটি হংকং এ ১৯৯৪ সালে নির্মিত হয়। মুভিটিতে মূলত দুটি ভাগ রয়েছে। দুইটিতেই ভালবাসায় হৃদয়বিদীর্ণ হওয়া দুই পুলিশ অফিসার এর সাধারন জীবনে মানিয়ে নেওয়ার কাহিনি। তাদের দুইজনের জীবনে একটিই মিল তারা একই রেস্টুরেন্টে খাবার খেত। কেউ যদি হংকং এর মুভি মনে করে এটিকে কুং-ফু কারাতের কোন অ্যাকশান মুভি ভেবে বসেন বিরাট ভুল করবেন। এটি অতি বিশেষ ধরনের রোমান্টিক মুভি যার শেষ অংশে রয়েছে অতি সূক্ষ্ম কমিক কিন্তু বেশ হৃদয়স্পর্শী কিছু সংলাপ যাতে করে চরম কষ্টের মাঝেও আপনি হাসতে পারবেন। ৭৪। দ্য পোস্টম্যান অলওয়েজ রিং টোয়াইস (The Postman Always Ring Twice) একটি নিভৃত মোটেলে হাজির হয় এক আগুন্তক। সে সেখানে কাজ নেয়। এরপর পরকীয়ায় জরিয়ে পরে মোটেলের মালিকে স্ত্রীর সাথে, যে কিনা অসম বয়সের স্বামী নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, সে শুধু তার টাকাই ভালোবাসে। আই ডি এম রেটিং ৬.৪/১০ এবং আমার রেটিং ৭.৫/১০।৭৫। এ্যাজ গুড এ্যাজ ইট গেটস (As Good As It Gets) এক আত্মকেন্দ্রিক ও সার্থপর লেখক ও তার চিত্রকর প্রতিবেশিকে নিয়ে ছবির গল্প এগিয়েছে । মাঝখানে সিঙ্গেল মাদার যে কিনা একটি রেস্টুরেন্টের ওয়েট্রেস এবং তার অসুস্থ শিশুপুত্রকে নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে জীবনযুদ্ধে-তার প্রেমে পড়ে যায় লেখক। ৭৬। দ্য সাইলেন্স অব দি ল্যাম্বস (The Silence of the Lambs) কিছু বিরল ছবির মধ্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি যাতে বাস্তবতার সেই কঠোরতা ভয়ের মধ্যদিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে যাতে ভৌতিক আর অপরাধের মিশ্রণ এক নির্লজ্জ বাস্তবতার কোনে এসে ঠেকেছে এবং তা এগিয়েছে এক রোমহর্ষক পরিণতির দিকে । কাহিনী সংক্ষেপে বলা প্রয়োজন এফবিআই শিক্ষানবিশ ক্লারিস স্টার্লিং যাকে একজন সিরিয়াল কিলার (বাফেল বিল ) কে ধরার জন্য পাঠান হয় অন্য একজন বন্দি সিরিয়াল কিলার হানিবাল লেক্টারের কাছে । যে একজন ফরেনসিক মনোবৈজ্ঞানিক এবং অত্যন্ত ধূর্ত এবং বিচিত্র স্বভাবের মানুষ যে বন্দি মানুষ হত্যা এবং খাওয়ার জন্য । ক্লারিস স্টার্লিং কে হানিবাল লেক্টারের সাহায্য করতে রাজি হয় একটা শর্তে, তাকে ছোট বেলার কথা সুনাতে হবে বিনিময়ে সিরিয়াল কিলার বাফেল বিলের কথা সে তাকে বলবে এই ভাবে ছবিটি একটি পরিণতির দিকে এগোয়। ৭৭। মিলিয়ন ডলার বেবি (Million Dollar Baby) এই মুভির কাহিনী এক নারী বক্সার আর তার প্রশিক্ষক কে নিয়ে! আর মর্গান ফ্রীম্যান হলো সেই প্রশিক্ষকের সহকারী! এটুকু বলতে পারি অস্থির এই মুভিটা দেখলে আপনার মন অবশ্যই খারাপ হয়ে যাবেই! IMDB তে রেটিং এর কথা ভাবছেন? হুম, এর রেটিং ৮ দশমিক ১! মুভিটি বের হয়েছিলো ২০০৪ সালে,আর ২০০৫ সালে এটা চারটি বিভাগে অস্কার পেয়েছিলো। ৭৮। টু কিল এ মকিংবার্ড (To Kill A Mockingbird) একজন আইনজীবি, যিনি বর্ণবাদ এবং কুসংস্কারে আচ্ছন্ন জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত নির্দোষ এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির পক্ষে আদালতে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার কৌতূহলী দুই ছোট ছেলে মেয়ে এবং তাদের প্রতিবেশী এক ছোট ছেলে প্রায়ই চুপি চুপি কোর্টে গিয়ে শুনানী শুনে আসে। তাদের এলাকায় বাস করে এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক, যাকে নিয়ে পুরো এলাকায় বিভিন্ন ভয়ঙ্কর কল্পিত কাহিনী চালু আছে। এলাকার সব ছোট ছেলে মেয়েরা তাকে ভয় পেলেও অ্যাটিকাসের ছেলে-মেয়ে এবং তাদের বন্ধু কৌতুহল বশে রাতের বেলা সেই বাড়ির আশেপাশে উঁকিঝুকি মারা চেষ্টা করে। ছোট শহর হওয়ায় বিচারকার্য কোর্টের বাইরেও আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং অনাকাঙ্খিক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে ছেলে মেয়েগুলো এবং প্রতিবন্ধী যুবকটা। ৭৯। এ ক্রাই ইন দ্য ডার্ক (A Cry in the Dark) সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি অস্ট্রেলিয়ান মুভি। পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া এক দম্পতির নয় মাস বয়সী ছোট মেয়েকে তাঁবুর ভেতর থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় এবং লাশ খুঁজে না পাওয়ায় সন্দেহের তীর মায়ের দিকেই আসতে থাকে। পত্র-পত্রিকা আর টেলিভিশনের অত্যাচারে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে থাকে তাদের। সেই সাথে যুক্ত হয় এলাকার ক্ষিপ্ত মানুষেরা, যাদের ধারণা মা নিজেই বাচ্চাকে খুন করে গুম করে ফেলেছে সম্ভবত বলি দিয়ে স্রষ্টাকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে। ৮০। দি একসরসিস্ট (The Exorcist) ভূতের মুভি গভীর রাতে একা লাইট বন্ধ করে দরজা জানালা খুলে না দেখলে মজা পাবেন না। এটি একটি পিশাচ কাহিনী হলেও ভৌতিক ব্যাপার গুলো বেশ যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই মুভিটা যখন প্রথম সিনামায় প্রর্দশীত হয়, কিছু মানুষের সিনেমা হলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ার রেকর্ড আছে। খুব যত্ন করে হুমায়ূন আহমেদ দি একসরসিস্ট বইটি অনুবাদ করেছিলেন। সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০
false
hm
সাহিত্যআমজাদ আমজাদ আলি উসখুস করছে দেখে ভালো লাগে তাঁর। করুক, আরো উসখুস করুক। আমজাদ আলি গলা খাঁকারি দিয়ে তাকায় বাম পাশের এক চিলতে বারান্দার দিকে। সেখানে স্তুপ করে রাখা আছে নানা ফলমূল, পা-বাঁধা দু'টি রাজহাঁস, একটি চটের ব্যাগে দু'টি প্রকাণ্ড চিতল মাছ। আমজাদের খাদেম চিকন আলি বসে আছে বারান্দায়, উপহারসামগ্রীর পাশে, এদিকে পিঠ দিয়ে। তার মাথার ওপর কুণ্ডলী পাকিয়ে ওপরে উঠছে ধোঁয়া। রমণ সুমহান সোফায় আরো নড়েচড়ে বসেন। "আমজাদ আলি সাহেব, ফলমূলগুলি কি নিজে কিনলেননি?" আমজাদ চমকে ওঠে, গলা খাঁকরে বলে, "জ্বি ... মানে ... আঙ্গুর তরমুজ আর বাঙ্গি আমার মুরিদানের যোগাড় করা। আম আর লিচু আমিই কিন্না আনছি।" রমণ সুমহান প্রশান্ত চোখে তাকান বারান্দার দিকে। প্রচুর ফলমূল। ফ্রুট সালাদ বানাতে হবে। "রাজহাঁস পাইলেন কই?" তিনি প্রশ্ন করেন। "জ্বি ... পাশের গেরামের সামাদের বাবারে জ্বিনে ধরছে ... সে বাপরে লইয়া আইছে ... আমার খাদেম মনজিল কইল কীরে সামাইদ্যা, তগো বাড়িত না রাজআস আছে চাইড্যা ... দুইডা লইয়ায় ... জ্বিন কি য়্যাম্নে য়্যাম্নে ছুডে রে?" রমণ সুমহানের মুখে খুশির আলো ফোটে। "দুইটা রাজহাঁস দিলো আপনারে, দুইটাই আপনি আমার জন্য নিয়াসছেন? বাহ!" "চিতল মাছও আনছি!" আমজাদ আলি তাড়াতাড়ি বলে। রমণ সুমহান মুখ ব্যাদান করেন হাসির চাপে। "খুব খুশি হইছি আমজাদ সাহেব, খুব খুশি হইছি। আপনি মানীর মান রাখতে জানেন।" আমজাদ আলি এতক্ষণে তেলতেলে একটা হাসি হাসে। "স্যার ... আমার দিকে যদি একটু রহমত ...।" রমণ সুমহান হাসেন। "হবে, হবে। মুশকিলে যখন পড়ছেন, আহসানও একটা হবে। ... আপনি তো আবার আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ, বুঝেনই তো এইসব!" আমজাদ আলি গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মোছে। মাথার ওপর ঘুরছে চার ব্লেডের ফ্যান, তারপরও গরম কাটছে না। খাসনগরে তার বাড়িতে কখনোই এত গরম পড়ে না, যেমনটা পড়েছে এই ঢাকা শহরে। এখানে মানুষ থাকে কীভাবে? রমণ সুমহান একটু ঝুঁকে বসেন, হাতে একটা প্যাড আর পেনসিল। "আমজাদ আলি, আপনি তো শাকসব্জি বিক্রি করতেন, তাই না?" আমজাদ মাথা নাড়ে। "হ ... ভ্যানে কইরা লাউশাক, কচুশাক, মুলাশাক, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, পটল, চিচিঙ্গা, লাউ এডি বিক্রি করতাম গঞ্জে।" রমণ সুমহানের মুখে সহানুভূতির ছাপ পড়ে। "বাহ। খুব ভালো। ব্যবসা করা ভালো। নবীজিও ব্যবসা করতেন। সুবহানাল্লাহ। তো শাকসবজি বিক্রি করা বাদ দিয়া আধ্যাত্মিক লাইনে ঢুইকা পড়লেন যে?" আমজাদ আলি কিছু বলে না, তাকায় বারান্দার দিকে। চিকন আলি মনে হয় নতুন একটা বিড়ি ধরিয়েছে। রমণ সুমহান ছাড়েন না আমজাদকে, "কী হইল?" আমজাদ নিরাসক্ত গলায় বলে, "হ ঢুকলাম। আধ্যাত্মিক জগতে ঢুকার তরিকা পাইলাম। ঢুইকা পড়লাম।" রমণ সুমহান খবরের কাগজ তুলে নেন। তাতে ছাপা হয়েছে ছবি, ঘটনার বিবরণ। তিনি বলেন, "আপনি নাকি দুইটা নিরপরাধ দুধের বাচ্চারে নিয়া ফুটবল খেলছেন?" আমজাদ আলির মুখে একটা সূক্ষ্ম হাসি ফুটে ওঠে, যে কোনো সুস্থ লোক সে হাসি দেখলে আতঙ্কিত হতে বাধ্য। জোব্বার পকেট থেকে একটা নেভির প্যাকেট বের করে সে। রমণ সুমহান হাত তুলে থামাতে চান ট্রাফিক পুলিশের মতো, "ঘরে ধূমপান নিষেধ।" আমজাদ আবার তাকায় বারান্দায় বসা চিকন আলির দিকে, তার দৃষ্টি অনুসরণ করে রমণ সুমহানও তাকান বারান্দার দিকে। আমজাদের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে তিনি দেখেন, আমজাদের মুখে হাসি অদৃশ্য, সেখানে ফুটে উঠেছে আবছা মিনতি, আর প্রকট ভ্রুকুটি। রমণ সুমহান দূর থেকে চিতল মাছের প্রস্থ অনুমানের চেষ্টা করেন, তারপর প্রশ্রয়ের হাসি ফুটিয়ে তোলেন মুখে। আমজাদ সিগারেটে আগুন সংযোগ করে ম্যাচ জ্বেলে, রমণ সুমহান ছাইদানি বের করে আনেন টেবিলের নিচ থেকে, সেটা ঠেলে দেন আমজাদের দিকে। "ছাই ফালাইতে হইলে এইখানে ফালাইবেন।" চিতল মাছের প্রস্থ আর রাজহাঁসের হঠাৎ কককককক শব্দের ঝঙ্কারকে ছাপিয়ে রমণ সুমহানের কণ্ঠস্বর কঠিন হয়ে ওঠে। আমজাদ সায় দেয় মাথা নেড়ে, পাতলা অশ্লীল হাসিটা আবার তার মুখে ফুটে উঠেছে। "সবই আল্লাহর ইশারা। উনি বলে দেন, কোন রোগীর জন্য কী করতে হবে।" আমজাদ হাসিমুখে বলে। "খালি কি ফুটবলের মতো শট দিছি? মাটিতে ফালাইয়া পাড়াইছি। পাও বাইন্ধা ঝুলাইয়া রাখছি। পাও ধইরা ঘুরাইছি।" রমণ সুমহান নোট করেন প্যাডে খসখস করে, মুখে চাপা হাসি। আমজাদ বলে, "সবই খোদার ইশারায় বুঝি। বুঝলেন না?" রমণ সুমহান বলেন, "বুঝছি। আধ্যাত্মিক জগতের কারবার। তবে বুঝতে পারছি সবই। ... আপনি দেখি মেয়েছেলে রুগীর লগে নাচানাচিও করেন? এইটা কেমন ইশারা?" আমজাদের হাসিটা চেশায়ার বেড়ালের হাসির ছায়ায় ঢুকে পড়ে যেন। "জ্বিনে ধরে তাদের। পেত্নীতে ধরে। জ্বিন ভূত পেত্নী মেয়েছেলেদের উপর পেরায়ই আছর করে। তাদের নাচায়। জামাকাপড় খুইলা ফালায়। তখন মাঝে মাঝে জ্বিনের সাথে নাচতে হয়।" রমণ সুমহান নোট করতে করতে বলেন, "ছবিতে যে দেখলাম মোটা লাঠি দিয়া পিটাইতেছেন?" আমজাদ গামছা দিয়ে মুখের লালা মোছে হাসির ফাঁকে। "সব জ্বিন কি আর নাচলে আছর ছাড়ে? কিছু জ্বিনের দরকার মাইর। মাইর দিলে কাম হয়।" "কুয়েত গেছিলেন নাকি? পেপারে যে লিখলো?" আমজাদ আলি মাথা নাড়ে। "অনেক আগে গেছিলাম, চইলা আসছি। রমণ সুমহান কুয়েত নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন করেন না। তিনি পেন্সিলটা দুই আঙুলে নাড়াচাড়া করতে করতে বলেন, "ডাবপড়া, ডিমপড়া, তেলপড়াও শুরু কইরা দিছেন দেখি?" আমজাদ আলি মাথা ঝাঁকায়। "সবাই আল্লার দান। আল্লাহ আমারে একটা জিনিস দিছেন। সেইটার কুদরত আর দশজনে ভোগ করুক, এইটাই চাই। আর কিছু না। অন্য ধান্ধা নাই।" রমণ সুমহান প্রশান্ত মুখে বলেন, "আপনের বাড়ির কোণাতেই নাকি এইসবের দোকান বসাইছে আপনের মায়ের পেটের ভাই? আর চাস্তো-মামাতো ভাইদের দিয়া নাকি ১০ টেকা, ৫০ টেকা, ১০০ টেকা কইরা তোল্লা আদায় করতেছেন? সবই তো লিখছে দেখি পেপারে!" টাকার প্রসঙ্গ উঠতেই আমজাদ আলি সতর্ক হয়ে যায়। বারান্দার দিকে তাকায় সে আবারও। তারপর বলে, "ছেমরাগুলি অনেক খাটাখাটনি করে। সংসার আছে তাগো। আমি আল্লাহর পথে আছি, তারা আমার পথে আছে। তাদের পেটের দিকে যদি না দেখি, তাইলে ক্যাম্নে ...।" তার স্বর আস্তে আস্তে নৈঃশব্দ্যের আড়ালে ঢাকা পড়ে। রমণ সুমহান এবার প্যাড নামিয়ে রাখেন টেবিলের ওপর। তারপর ধীরে ধীরে ঘাড় ঘোরান বারান্দার দিকে। সেখানে স্তুপ হয়ে আছে ফল, মাছ, পাখি, চিকন আলির বিড়ির ধোঁয়া, চিকন আলি নিজে। আমজাদ আলি জোর দিয়ে বলে, "কিন্তু আমার দিকে তো একটু দেখতে হয়।" রমণ সুমহান দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। "আমি কথা বলবো।" আমজাদ আলি বলেন, "খালি কথাই বলবেন? লিখবেন না কিছু?" রমণ সুমহান বলেন, "লিখবো। কিন্তু ...।" আমজাদ আলি একটু শক্ত হয়ে যায়। "জ্বে?" রমণ সুমহান কিছুক্ষণ স্থিরচোখে তাকিয়ে থাকেন আমজাদের দিকে। তারপর হাসেন। আমজাদ আলির শিরদাঁড়াটা হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সে ঢোঁক গেলে। "বেপারি সাহেব, আপনাকে আবারও আসতে হবে।" রমণ সুমহান মুখে আমজাদ আলির হাসি নিয়ে বলেন। "নিজে আসতে না চাইলে আপনার খাদেমরে পাঠাবেন। ফলমূলের সিজন এখন। চিতল মাছ আমি পছন্দ করি। হাঁসের সিজন যদিও শেষ, তারপরও খারাপ না। আইসেন আবার। আমি দেখতেছি কী লেখা যায়।" আমজাদ আলি টের পায়, লোকে তাকে বেপারি ডাকলেও, তার সামনে বসে থাকা এই লেখাপড়া জানা লোকটা আরো বড় বেপারি। সে বোঝে, আজকের মতো আলাপ এখানেই শেষ। সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আমজাদ আলি। টাকাপয়সার প্রসঙ্গ আর না ওঠাতেই বরং স্বস্তিবোধ করছে সে। সংক্ষিপ্ত ধমক খেয়ে চিকন আলি তার খালাতো ভাইকে অনুসরণ করে। বারান্দায় জমে থাকে বিড়ির ধোঁয়া, তার নিচে ফুটে থাকে চিকন আলির অবয়ব। রমণ সুমহান দরজা লাগিয়ে এসে প্যাড তুলে নেন হাতে। লিখবেন তিনি, আমজাদের হয় অবশ্যই লিখবেন। লিখবেন আমজাদের মনে তরল ভয়ের কথা, যে ভয় তাকে তাড়িয়ে ফিরছে বছরের পর বছর। মধ্যপ্রাচ্যফেরত দরিদ্র শ্রমিক আমজাদ আলিকে কেন দেশে ফিরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতে হয়? আলো ফেলতে হবে এ অন্ধকার জায়গাতেও, ফুটিয়ে তুলতে হবে কুয়েতফেরত শ্রমিকের যন্ত্রণার কথা। লিখতে হবে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রম-রাজনীতির খাঁজভাঁজ নিয়ে, আমজাদ বেপারির আগে বলতে হবে আদম বেপারির কথা। তিন প্যারা সে কথা লিখবার পর লিখতে হবে দেশে সবজির অগ্নিমূল্যের কথা, কীভাবে পদে পদে তার দাম বাড়ায় ফড়িয়া-দালালেরা, অসহায় আমজাদ বেপারিদের ভ্যানে সবুজ লাউশাক আর লাল লালশাকের লাল-সবুজ যে আক্রান্ত, সে নিয়ে কথা বলতে হবে, একফাঁকে বলতে হবে সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত আমজাদের মতো নিরীহ মানুষের করুণ মৃত্যুর কথা। সমাজ কি পারছে আমজাদদের রক্ষা করতে? পারছে না। নিম্নবর্গীয়পনার দিকে কারো নজর নেই। সবাই মাথা ঘামাচ্ছে যার যার বিষফোঁড়া নিয়ে। ভালো মুসলমান আর খারাপ মুসলমান নিয়ে আরো একটু কথা বলতে হবে এ ব্যাপারে। তারপর আবারও বলতে হবে তরল ভয়ের কথা। অনলাইন ফ্যানাটিকেরা খুনী ভাড়া করে দিনের পর দিন লাশের পর লাশ ফেলে দিচ্ছে, সেদিকে নজর না দিয়ে দু'টি শিশুর চিকিৎসার রহমফের নিয়ে কি সমাজের মাথা ঘামানো মানায়? কত কত ভুল চিকিৎসা হচ্ছে প্রতিদিন, প্যাথলজি টেস্ট ল্যাবগুলোতে কত কারসাজি, কত বড় বড় হাসপাতালে কত বড় বড় সমস্যা, সেদিকে বরং আগে মনোযোগ দেয়া জরুরি। চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুর কোনো সুরাহা হলো না, বস্তির লোকদের হৃদয়ের রাজা চিকিৎসাবিভ্রাটে মারা গেলেন, তার সমাধান আগে পেতে হবে। দরিদ্র, নিরন্ন আমজাদদের ফাঁসানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের হাতে আছে। আমাদের বুঝতে হবে, এই কবিরাজ, এই হাকিম, এই পীর ... এরাও একটি সমান্তরাল ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে সমাজে। এদের মুখাপেক্ষী কোটি কোটি মানুষ, কোটি কোটি ভোটার। এই ভোটাররাই দুর্নীতিবাজ লোকজনকে ভোট দিয়ে এমপি বানায়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মন্ত্রী হয়। আবার এরাই নির্মাণ করে পীর, দরবেশ, আউলিয়া। আমজাদ যদি পীর হয়, তার এলাকার মানুষ সে পীরের নির্মাতা, মুর্শিদ। চিকিৎসা সেবা পৌঁছানোর আগে আমজাদদের নামে সত্যমিথ্যা গুজব রটানো তাই মিডিয়ার দায়িত্বশীলতার পরিচয় হতে পারে না। তাই আমজাদকে দোষী না করে তাকাতে হবে কড়াইল বস্তির ইলিয়াস আলির দিকে, মোমেনা বেগমের দিকে, খদেজার মায়ের দিকে। এদের পরিচয় পাবেন পাঠক, আগামী কলামে। রমণ সুমহান হাঁপিয়ে ওঠেন পয়েন্টগুলো লিখতে লিখতে। মনটা খচখচ করে ওঠে তাঁর। টাকা না চাওয়া কি ঠিক হলো? এ কথা সত্য যে ভাড়া খাটার জন্যে দীর্ঘদিন জাল পেতে বসে আছেন তিনি, তাই বলে শেষ পর্যন্ত কলাটামূলাটাকচুটা? বড় রাজনৈতিক দল বা কর্পোরেট কি যোগাযোগ করবে না শেষ পর্যন্ত? জামাতের উম্মু আবদুলের ওপর বেশি ভরসা করতে পারেন না তিনি। বারান্দায় আবার ডেকে ওঠে রাজহাঁসটা, চিতল মাছ দু'টো চুপচাপ ফলের মতোই নিথর হয়ে পড়ে থাকে, কানে আসে অস্পষ্ট মাছির গুঞ্জন। না, আমজাদের কাছে টাকা চাইতে পারেননি তিনি শেষ পর্যন্ত। কোথায় যেন নিজের সাথে আমজাদের মিল খুঁজে পেয়েছেন রমণ সুমহান। একসময় তিনিও কবিতা লিখতেন, এখন ডালদার্শনিকতায় মন দিয়েছেন, কবিতার হিন্দু মুসলমান খুঁজে বের করেন ফেসবুকে, আমজাদ যেমন সবজি বিক্রি ছেড়ে অসুস্থ মহিলাদের পেটায়। আমজাদের হয়ে লড়ে যায় তার চামচারা, আমজাদ চিকিৎসার নামে স্যাডিজম চরিতার্থ করে যায়, আমজাদ ওষুধের নামে হাজির করে ডাবপড়া, তেলপড়া, আমজাদ ভেট নিয়ে হাজির হয় তারচেয়ে বড় দুর্বৃত্তের আশ্রয় নিতে, আমজাদ শেষ পর্যন্ত গলা ফাটিয়ে দাবি করে যায় সে আধ্যাত্মিক লাইনের লোক, আল্লাহ তাকে পথ দেখায়। আমজাদের সাথে কী আশ্চর্য সাদৃশ্য তাঁর জীবনের! রমণ সুমহান বিড়বিড় করেন। ইদানীং সিনেমা দেখছেন, গোল্ডমেম্বারে অস্টিন পাওয়ারসকে ছুঁড়ে দেয়া ডক্টর ঈভল এর চ্যালেঞ্জ উঠে আসে তাঁর ঠোঁটে, "উই আর নট সো ডিফরেন্ট, ইউ অ্যান্ড আই!" রমণ সুমহান আচমকা হাসেন। না, আমজাদ এখনও পিছিয়ে আছে তাঁর চেয়ে। রমণ সুমহান উঠে চলে যান ভেতরের ঘরে, কম্পিউটারের কাছে। লেখাটা শেষ করে শাহজাদ ভাইয়ের কাছে পাঠাতে হবে। তবে হাসিটা রয়ে যায় প্যাড-পেন্সিলের কাছে, চেশায়ার বেড়ালের হাসির মতোই।
false
fe
শুভ জন্মদিন _ ড_ সফিউদ্দিন আহমদ _ অর্ক হাসান এই গণমানুষের বাংলাদেশে অনেক মহান মানুষের জন্ম হয়েছে।এই মাটি লালন করেছে অনেক কৃতিসন্তান। ড. সফিউদ্দিন আহমদ তাঁদেরই একজন। এক কৃতি বুদ্ধিজীবি। তাঁর স্নেহে আমি ধন্য হয়েছি বারবার। তাঁর জন্মদিনে অসীম শ্রদ্ধা । ============================================= শুভ জন্মদিন : ড. সফিউদ্দিন আহমদ অর্ক হাসান ----------------------------------------------------------------------------- ১৯ অক্টোবর, গবেষক সাহিত্যিক প্রফেসর ড. সফিউদ্দিন আহমদের শুভ জন্মদিন। প্রফেসর ড. সফিউদ্দিন আহমদ শিকড় সন্ধানী মৌলিক গবেষক ও সৃজনশীল সাহিত্যিক এবং একজন সম্মোহক অধ্যাপক হিসেবে নন্দিত। সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর, প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডে এবং নান্দনিক ঐশ্বর্যে ভরপুর ও কৃতী সন্তানের উজ্জ্বল ভূমি রায়পুরায় তার জন্ম (১৯৪৩)। ড. সফিউদ্দিন আহমদের পিতা মোঃ আবদুচ্ছামাদ মোল্লা একজন কংগ্রেস নেতা, সমাজ সেবক ও শিক্ষক ছিলেন। কংগ্রেস নেতা সুন্দর আলী গান্ধী, মানিক ভট্টাচার্য ও অতীন রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। মাতা দিলবর"ন নেসা আত্মগোপনকারী বামপন্থী নেতা কর্মীদের মাতৃস্নেহে আশ্রয় দিতেন। তিনি একজন সমাজ সচেতন মহিলা ছিলেন। আত্মগোপনকারী নেতাকর্মীরা তাকে ‘মা’ সম্বোধন করতেন। ড. সফিউদ্দিন আহমদের রায়পুরা সদরে ছায়াবীথি নামক বাড়িটি দেশবরেণ্য নেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের তীর্থ কেন্দ্র ছিল এবং বর্তমানেও। ড. সফিউদ্দিন আহমদ বাংলা ও লজিকে লেটার মার্কসহ ইন্টার মিডিয়েট পাস করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স ও এমএর কৃতী ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে, বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্র সাহিত্যের ওপর উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশুনা ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, মৌলিক গবেষক এবং তথ্যসমৃদ্ধ ও সৃজনশীল বক্তব্যের জন্য তিনি দেশে ও বিদেশে একজন বিদ্বত ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে তিনি কলকাতা, যাদবপুর, বিশ্বভারতী, বর্ধমান, কল্যাণী, গৌয়াহাটি, আসাম ও ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিরোজিও, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, উনিশ শতকের রেনেসাঁ ও বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ে বক্তব্য রেখে নতুন তথ্য সন্নিবেশনও পাণ্ডিত্যের প্রাখর্যে তিনি পণ্ডিতজনের প্রশংসা অর্জন করেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে তিনি নিখিল ভারত সাহিত্য সম্মেলন, বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন, আসাম রাজ্যের শিলচরে মাতৃভাষা সম্মেলন, সুরমা বরাক উপত্যকা বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের সহস্রাব্দ সম্মেলনে ভাষণ দেন। ড. সফিউদ্দিন আহমদের গবেষণা ও সাহিত্যকর্ম বহু বিচিত্র মাত্রিক। লেখায় তিনি তুলনামূলক মাত্রিকতা যোজনা করে উভয় বাংলার সাহিত্যে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন। তার গদ্য ছন্দিত, ধ্বনি তরঙ্গময়, অনুপ্রাসের অভিযোজনে রসমাধুর্য এবং আকর্ষণীয় ও সুখপাঠ্য। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত দশটি গবেষণা গ্রন্থসহ তার মোট গবেষণা গ্রন্থ ত্রিশটি এবং এ সমস্ত গ্রন্থ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বই হিসেবে পাঠ্য তালিকাভুক্ত। এ সব ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা পত্রিকা ও বিশ্বভারতী পত্রিকায় পঞ্চাশটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ সমস্ত প্রবন্ধে আরো দশটি বই হতে পারে। এখনো তিনি নিরলস গতিতে লিখছেন বাংলাদেশ ও কলকাতার বিভিন্ন সাময়িকীতে। বাংলাদেশ উনিশ শতকের রেনেসাঁর বিশ্লেষণ ও গবেষণায় তিনি একজন ম্যাচিয়্যুর অথরিটি এবং এ বিষয়ে তিনি একক ও অনন্য। অতিসাম্প্রতিক প্রকাশিত তার ‘ভাষার সংগ্রাম-শিক্ষার সংগ্রাম’, ‘ইয়ংবেঙ্গল মুভমেন্ট ও ডিরোজিও’ খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কবীর চৌধুরী, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বইগুলোর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে ‘প্রথম আলো’ ও অন্যান্য পত্রিকায় আলোচনা করেছেন। তার গবেষণা গ্রন্থ ‘ডিরোজিও’ এবং ‘ইয়ংবেঙ্গল মুভমেন্ট ও ডিরোজিও’ আমাদের গবেষণা সাহিত্যে মৌলিক ও অনন্য অবদান। তিনি একজন দক্ষ ও কৃতী অনুবাদক। প্লেটোর 'ঞঐঊ খঅঝঞ উঅণঝ ঙঋ ঝঙঈজঅঞঊঝ’ নামক মহৎ গ্রন্থটি তিনি ‘সক্রেটিসের শেষ দিনগুলো’ নামে অনুবাদ করেছেন এবং বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমী। এ ছাড়াও তিনি পাবলো নের"দা, ডিরোজিও এবং টি.এস. এলিয়টের কবিতা অনুবাদ করে পন্ডিতজনের প্রশংসা অর্জন করেছেন। বাইপাস সার্জারির পর হাসপাতালে ও বাসায় শয্যায় শুয়ে,বসে তিনি ডিরোজিওর কবিতা অনুবাদ করে বিস্ময়কর সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তার প্রকাশিত গল্প ‘মানুষ গড়ার কারিগর’, ‘ডাক পিয়ন; ‘মের"দণ্ড; ‘উত্তরণ সিঁড়ি’, ‘ঈদ মানে আনন্দ’ ‘ওরা আমাদের কেনো খেতে দেয় না’ প্রভৃতি খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ‘ডাক পিয়ন’ ও ‘মের"দণ্ড’ ইভনেভ কৃদ্রভ কর্তৃক র"শ ভাষায় এবং ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ নয়েল গার্নিয়ে কর্তৃক ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়। অনুবাদ সাহিত্যেও তার প্রতিভার ঔজ্জ্বল্য প্রকাশ পেয়েছে। ছাত্র জীবনেই তিনি তুখোর বক্তা ছিলেন। আবৃতি, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, নির্ধারিত বক্তৃতা ও পর্যায়ক্রমে বলায় এবং নান্দনিক উপস্থাপনায় তিনি চৌকস ছিলেন। হল ভরা শ্রোতাদের তিনি মাতিয়ে তুলতেন। ঢাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় দু’দুবার তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। প্রথম জীবনে তিনি নেত্রকোনা কলেজ, পরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়ে বি.এম. কলেজ, আনন্দ মোহন কলেজ ও সিলেট এম.সি. কলেজ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় ২০০৫ সালে অবসর গ্রহণ করেছেন। স্বাতন্ত্র্য ব্যক্তিত্ব, মুক্তবুদ্ধি, প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা ও আত্মপ্রত্যয়ে তিনি ঋদ্ধ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিনয়ী, অমায়িক, সুসংস্কৃত মন-মানসিকতার অধিকারী ও লোকপ্রিয়। ঘরোয়া আলোচনা ও সাহিত্যের আড্ডায় তিনি সদাহাস্য, উচ্চকণ্ঠ ও প্রাণ খোলা। তথ্যসমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় বক্তব্যের জন্য তিনি শ্রোতাদের কাছে যেমন প্রিয় ব্যক্তিত্ব, ছাত্রছাত্রীদের কাছেও তেমনি একজন সম্মোহক শিক্ষক হিসেবে শ্রদ্ধান্বিত। ড. সফিউদ্দিন আহমদ পরিশ্রমী ও সচেতন লেখক। তার লেখায় শব্দ ও বাক্য এবং এর বিন্যাস প্রয়োগ পরিমিত, সুচিন্তিত ও নান্দনিক ঐশ্বর্যে উজ্জ্বল। ক্লাসিক ও আধুনিক উভয় সাহিত্যে তার স্বছন্দ পরিক্রম। বিশ্ব সাহিত্যের ওপর তার লেখাগুলো আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তার বিভিন্ন লেখায় এবং অনুষ্ঠানে তিনি প্রায়ই বলেন, খ্যাতি বা পরিচিতির দুয়ারে আমি কোনোদিনই হাত পাতিনি। জনগণের প্রদত্ত ট্যাক্সে আমি পড়াশুনা করেছি। আমার প্রতি রক্ত কণিকায় এ ঋণের স্পন্দন আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের অবদানের কথা এবং এ ঋণ আমাকে ঘনিষ্ঠ একাত্মতায় সম্পৃক্ত করে দেয় শ্রমে-ঘামে সিক্ত, উষ্ণ নিঃশ্বাসে উপ্ত নিরন্ন ক্লিষ্ট মানুষের সঙ্গে। এ ঋণের স্বীকৃতি ও দায়বদ্ধতাকে ব্রত হিসেবেই আমি গ্রহণ করেছি। আমি বিশ্বাস করি মানুষ কখনো পরাজিত হয় না, মানুষ কখনো পেছনে যায় না। প্রগতির পদাতিক হয়ে আমার যাত্রা সামনের দিকে। আমার জীবনে পরাজয় বলতে কিছু নেই। প্রথম দিনের সূর্যকে প্রণাম করে আমি সামনে চলেছি। ড. সফিউদ্দিন আহমদ গতানুগতিক সাহিত্যের ধারা ও বিলাসী নন্দনতত্ত্বেও বিশ্বাসী নন, তাই তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমার লেখা বাণীর বেদীতে পুজোর ফুল হিসেবে স্থান পাবে না, তবে সে বেদীতে ফাটল ধরাতে ও অনিয়ম সৃষ্টি করতে পারবে। সাহিত্যে ও শিল্পে কলাকৈবল্যবাদ ও নন্দনলোকের নান্দীপাঠ তত্ত্বেও আমি বিশ্বাসী নই। আমি মনে করি মেহনতই সমস্ত শিল্পকর্মের উৎস। সাহিত্য ও সংস্কৃতি সমাজ ও সভ্যতার সুস্থ বিকাশের জন্য এবং সমাজ পরিবর্তনের শানিত হাতিয়ার। এজন্যই আমার ছাত্রছাত্রীদের আমি বলি তোমাদের এক হাতে থাকবে বই অপর হাতে থাকবে হাতুড়ি। বই থেকে জ্ঞান অর্জন করবে আর হাতুড়ি দিয়ে পুরাতন সমাজ ভাঙবে ও নতুন সমাজ গড়বে এবং তোমাদের দৃষ্টি থাকবে আকাশে আর পা থাকবে দেশের মাটিতে। --------------------------------------------------------------------------------- ভোরের কাগজ সাময়িকী । ১৭ অক্টোবর ২০০৮ সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:০০
false
fe
তথ্য চুরির অপরাধ ও রাজনৈতিক চালবাজি তথ্য চুরির অপরাধ ও রাজনৈতিক চালবাজিফকির ইলিয়াস=======================================লাভ রোডের কথা আপনাদের মানে আছে? সেটি ঢাকার একটি সড়ক। লাভ রোডের ‘লাভ’-এর নহর বইয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। দৈনিক কাগজ করেছিলেন খুব জৌলুস নিয়ে। বিদেশি স্টাইল ফেল করেছিল তার কাছে। জিম থেকে শুরু করে মিউজিয়াম, চিড়িয়াখানা সবই থাকবে সেখানে। এমন পরিকল্পনা ছিল। খুঁটির জোর ছিল অন্য মানুষের টাকা। বেশ ডাক-হাঁক ছিল। না, তিনি কিছুই পারেন নি। পরে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন সে যাত্রায়। অনেক সাংবাদিকের বেতন বাকি ছিল। এখনো অনেকে টাকা পাবেন- শোনা যায়। তা নিয়ে বাজারে অনেক কথা। বিলাতে তার পরিচয় ছিল- তিনি তালেয়া রেহমানের স্বামী। তার নাম শফিক রেহমান। তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় অনেক নাটকই করেছেন। তা জানেন সবাই। তার খুব খায়েশ ছিল- তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উষ্ণতার ধারে-কাছে থাকবেন। কিন্তু পারেন নি। না পেরে পরে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন বিএনপির রাজনীতিতে। এর পরের ধারাবাহিক ঘটনা সবার জানা। গেল সেপ্টেম্বর ২০১৫ তিনি নিউইয়র্কে এসেছিলেন নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ (এনএবিসি) কনভেনশনে। সেখানে একটি সেমিনারে অনেক বিতর্কিত কথাবার্তা বলেছিলেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, আমি বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের বলে দিয়েছি, ডোন্ট টাচ মি! নিউইয়র্কে নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ সম্মেলনে একটি সেমিনারে যোগ দিয়ে কি নোট স্পিকার হিসেবে তার বক্তব্যে প্রচ্ছন্নভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মৃত্যুসংবাদ’ পাওয়ার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করে তোপের মুখে পড়েছিলেন বাংলাদেশের আলোচিত সাংবাদিক ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শফিক রেহমান।৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুরে ম্যানহাটানের পেন প্লাজা প্যাভিলিয়নে নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ সম্মেলনের- ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রায়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়।’ শীর্ষক কি নোট স্পিকার ছিলেন শফিক রেহমান। তার সঙ্গে প্যানালিস্ট ছিলেন সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলাম, একুশে টিভি ইউএসএ’র ইমরান আনসারী ও আমেরিকান চ্যানেল এবিসির ফ্লোরিডার সাংবাদিক অনিভা জামান।তার বক্তব্যে শফিক রেহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বর্তমান সরকারের সমালোচনা করার এক পর্যায়ে একটি রাশিয়ান জোকস যুক্ত করে বলেন, একজন পাঠক প্রতিদিন একটি দৈনিক পত্রিকা কিনে প্রথম পাতা দেখেই তা ফেলে দেন। একদিন পত্রিকার হকার সেই ব্যক্তির কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি মৃত্যুসংবাদের অপেক্ষায় আছি- তার কথা শুনে হকার বলল মৃত্যু সংবাদ তো সচরাচর ভেতরের পাতায় তাকে। লোকটি তখন বলল, ‘না, আমি এমন একজনের মুত্যু সংবাদের অপেক্ষায় আছি যার মৃত্যু সংবাদ প্রথম পাতায় থাকবে।’ শফিক রেহমান যখন এই বক্তব্য প্রদান করছিলেন ঠিক তখনই দর্শক- শ্রোতাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। পরে প্যানেলিস্ট সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলামকে প্রথম বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানালে তিনি শফিক রেহমানের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে এমন কোনো মৃত্যু সংবাদ পেতে চাই না যা পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বা ১৯৮১ সালের ৩০ মে’র ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে।মনোয়ারুল ইসলামের পর সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমানও শফিক রেহমানের বক্তব্যের সমালোচনা করেন। শফিক রেহমানের ‘খণ্ড খণ্ড সত্য’ নিয়ে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধের কঠোর সমালোচনা করে মাহফুজুর রহমান বলেন, ১৯৯১ সালে জাতীয প্রেসক্লাবে পুলিশের বর্বরোচিত হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের সাংবাদিকদের ওপর যে ন্যক্করজনক ঘটনার জন্ম দেয়া হয়েছিল তাই শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের মধ্যে স্থায়ী বিভেদ তৈরি করে দেয়। শফিক রহমান তার ৩০ মিনিটের বক্তব্যে বর্তমান সরকারের সমালোচনামুখর ছিলেন নেতিবাচকভাবে। তিনি বলেন, আজকে দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ; এটা ডাহা মিথ্যা কথা। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হলে সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশ পাড়ি দিতে গিয়ে এতগুলো মানুষকে মরতে হতো না। আমি বলব বাংলাদেশের উন্নয়ন সব ভূমধ্যসাগর ও বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। বাংলাদেশে সভ্যতা, গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। মধ্যম আয় নয়; সবার আগে দরকার মধ্যম সভ্য দেশ প্রতিষ্ঠা।শফিক রেহমান বলেন, গণমাধ্যমকে সরকার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তা উদ্বেগজনক। এভাবে চলতে থাকলে দেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে। জেল-জুলুম রিমান্ড কালচার দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে না। আজকে যেভাবে বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে, তা সবার জানা। কেউ সত্য বলতে পারছে না। মুখ ফুটে কিছু বলার অধিকার নেই। কোনো আর্টিকেল পত্রিকায় ছাপানো হচ্ছে না। সরকারের সমালোচনা করার দায়ে জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল দিগন্ত, ইসলামিক টিভি ও চ্যানেল ওয়ান এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ। আমি নিজে ‘মৃত্যুদণ্ড’ নিয়ে একটি বই লিখতে গিয়েও প্রেসের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তার বক্তব্যে প্রতীকী একটি কৌতুক ব্যবহার করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুসংবাদ কামনা করার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন শফিক রেহমান। সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসেরের সঞ্চালনায় এই সেমিনারে সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, আজকে শফিক রেহমান যেসব কথা বলেছেন তা সাম্প্রতিক সময়ের কিন্তু বিষয়বস্তু বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি আলোচনার দাবি রাখে। যদি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের কথা বলি আমরা তাহলে এর জন্য দায়ী কারা তা অকপটে বলতে হবে। ১৯৯১ এ গণতন্ত্র পাওয়ার অব্যবহিত পরেই সাংবাদিকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তির শুরু। সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে অতীতে বিএনপির সেই আমলে। সে সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে পুলিশ ঢুকে সাংবাদিক নির্যাতনসহ নানা বিষয়ই আজকের এই পরিণতি। সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলাম, শফিক রেহমানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনার বিষয়টি নিন্দা করে দেশে আর কোনো ১৫ আগস্ট ও ৩১ মে’র মতো সরকারপ্রধানের হত্যাকাণ্ড সংঘটনের মতো কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে তা কামনা করেন। একুশে টিভি ইউএসএ’র ইমরান আনসারী তার বক্তব্যে কি নোট স্পিকার শফিক রেহমানের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি সরকারের সময়ে একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে একুশে টিভির কর্ণধার আব্দুস সালামের গ্রেপ্তারের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন শফিক রেহমান। সাংবাদিক অনিভা জামান বলেন, আমার আমেরিকাতে জন্ম। আমি একজন গণমাধ্যম কর্মী। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের টিভিতে যেসব খুন-রক্তপাত দেখানো হচ্ছে তা দেখে বিস্মিত পুরো বিশ্ব। আমার আম্মু মাঝে মধ্যে বলেন, এসব দেখাচ্ছে কেন; ভয় লাগছে। আমি বলি দেখানো উচিত। আরো অনেক ঘটনা আছে, এসব প্রকাশ করাই হচ্ছে স্বাধীনতা। অনেক সাংবাদিক সত্য বলে খুনের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশে। এটা ঠিক না। চুপ করে থাকা যাবে না। সত্য প্রকাশ করতে হবে। এই সেমিনারে পরে শফিক রেহমানকে উপস্থিত দর্শকরা নানা প্রশ্ন করেন। তারা জানতে চান, ২০০১-২০০৬ সময়ে দেশে যখন জঙ্গিবাদ চলছিল, বাংলাভাই-শায়খ আবদুর রহমানের রাজত্ব ছিল তখন তিনি প্রতিবাদ করেন নি কেন? এর জবাবে তিনি বলেন আমাদের সামনে এগোতে হবে- পেছনে নয়। দর্শকরা তখন ছি ছি দিতে থাকেন। এই হলো শফিক রেহমানের চরিত্রের খণ্ডচিত্র। এরকম আরো অনেক আছে। সেই শফিক রেহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন দেখা যাচ্ছে- অনেকেই গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে শফিক রেহমানের পক্ষে কথা বলছেন। এরা মূলত যে নিজেরাই ঘাপটি মেরে বসেছিলেন- সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে কালে কালে। একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার- সজীব ওয়াজেদ জয় কিংবা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মানবাধিকার পাবার দাবি রাখেন। তারা সুবিচার চাইতেই পারেন। হ্যাঁ, আমি বলতে চাইছি, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই সুবিচার পাক। আমেরিকার যে মামলার সূত্র ধরে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- তা খোলাশা হওয়া দরকার। তাকে সাংবাদিক হিসেবে, তার লেখালেখির জন্য এ্যারেস্ট করা হয়নি। তাই বিচার, আইনি প্রক্রিয়ায়ই চলতে দেয়া উচিত।আমরা দেখছি, গণজাগরণের নেতা ইমরান এইচ সরকার ‘মত প্রকাশ’ ও ‘মানবাধিকারের’ নামে শফিক রেহমানের পক্ষে কথা বলার পর এখন তিনি এমন অনেকের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন- যারা তীব্রভাবে গণজাগরণের বিপক্ষে ছিলেন। তাহলে তাদের মতলবটি কি? সেই ‘নালায়েক ইমরান’ এখন আপনাদের ‘হিরো’ হয়ে গেলেন? অতএব সমীকরণটি খুবই সোজা। তা কারও না বুঝার কথা নয়। কারও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা একটি বড় ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধ। সেই অপরাধের কারণেই নিউইয়র্কে আমেরিকান আইনে অপরাধীদের সাজা হয়েছে। এর নেপথ্যে বাংলাদেশের কে বা কারা ছিল- তা বাংলাদেশ খতিয়ে দেখার ক্ষমতা ও দাবি রাখে। এখন সেটাই হচ্ছে। এতে ডেভিড বার্গম্যান নামের ভাড়াটেরা কি বলল না বলল- তাতে বাংলাদেশের কিছুই আসে যায় না। কথাও নয়।বাংলাদেশের রাজনৈতিক চালবাজি করতে গিয়ে অনেকেই নীতি পাল্টেছে। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের ক্ষমতায় আনতে নানা ধরনের উপদেশ বিতরণ করেছে। এদের মুখোশ এখন খসে পড়ছে। যাদের ‘টাচ’ হবার কথা ছিল না- তারা ‘টাচড’ হচ্ছে। এটাই আইনের ধারাবাহিকতা। আমরা সব অপরাধের বিচার চাই। সব অপরাধীদের বিচার চাই। তার অর্থ এই নয়- একটি অপরাধকে অন্যটির সঙ্গে তুলনা করে মানুষের চোখে ধুলো দেবার চেষ্টা করা হবে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী পুরো চক্রের তালিকা প্রকাশ করা হোক। যারা বাংলাদেশে আরেকটি ১৫ আগস্টের পাঁয়তারা করে- তাদের চিহ্নিত করা হোক। আবারো বলি, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে খুন, ছিনতাই, কিডন্যাপ, রাহাজানি অনেক কিছুই করা যায়। তাই এই বিষয়টিকে আইনিভাবেই মোকাবেলা করা হোক বাংলাদেশে, দরকার হলে বিদেশি তথ্য-উপাত্ত আরো সংগ্রহ করে হলেও।--------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫১
false
rg
ছোট্ট জিয়াদ গোটা বাংলাদেশের কাছে অনেকগুলো প্রশ্ন রেখে গেল!!! চার বছরের শিশু জিয়াদ গোটা বাংলাদেশের দুবৃত্তায়নকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল। আমরা হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফায়ার সার্ভিস লালন পালন করি। তাদের মেধা, দক্ষতা তাহলে কোথায় গেল? দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিস কোটি টাকার যন্ত্র দিয়ে যা পারেনি, এক মেকানিক ফারুক তা আধাঘণ্টায় করে দেখালেন। রাজধানীর মিরপুর থেকে ঘটনাস্থলে আসা আবু বকর সিদ্দিকের বানানো খাঁচার সাহায্যেই জিহাদকে উদ্ধার করল সাধারণ জনতা। জিয়াদকে উদ্ধার নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেভাবে ফায়ার সার্ভিসকে বিভ্রান্ত করেছেন, তার দায় এখন কার?শিশু জিয়াদের উদ্ধার, মৃত্যু আর বাংলাদেশের প্রশাসনের ব্যর্থতা আবার জনতার কাছে দিনের আলো মত এখন পরিস্কার হল। এই রাষ্ট্র একটি দুবৃত্তায়নে এতটা এগিয়েছে যে, এখানে কেউ নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে না। গোটা রাষ্ট্রের প্রশাসন কিভাবে চলে, তা এক জিয়াদ সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল। ওয়াসার একটি গভীর নলকূপের মুখ এক বছর ধরে খোলা থাকে কিভাবে? এটা একটি অমার্জনীয় অপরাধ। নতুন গভীর নলকূপ স্থাপনে প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আর হাউস এই অপরাধটি এক বছর ধরে করতে পারল কোন সাহসে? এদের পেছনের শক্তির রহস্য কি? ফায়ার সার্ভিস তাহলে সারা বছর কি প্রশিক্ষণ নেয়? ওয়াসা উচ্চ মূল্যের প্রযুক্তি দিয়ে তাদের সীমাহীন ব্যর্থতা কি ঢাকতে পারল?মজার বিষয় হল, আমাদের বুয়েট আধুনিক বিজ্ঞানের উচ্চ কৌশল নিয়েও ব্যর্থ হল হাতুড়ি বিদ্যার কাছে। এক জিয়াদের দুর্ঘটনা থেকে বাংলাদেশের গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থার নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, দুবৃত্তায়ন সব ফাঁস হয়ে গেল। আর এসব সরকারি কর্মকর্তাদের বছরে বছরে বেতন বাড়ে কিভাবে? এমন হাজারো প্রশ্ন জাগিয়ে দিয়ে গেল চার বছরের জিয়াদ। দ্য পুয়োর চাইল্ড। গড ব্লেজ ইউ। দলীয় সংকীর্ণ মনোভাবের বাইরে উঠে একবার নিজের বিবেক দিয়ে চিন্তা করে দেখুন, ছোট্ট জিয়াদ বাংলাদেশকে কি কি দিয়ে গেল? জিয়াদ দেখিয়ে দিয়ে গেল, এই রাষ্ট্র একটি চার বছরের ছোট্ট শিশুকে উদ্ধার করতে ২৩ ঘণ্টা সময় ধরে ব্যর্থ। এই রাষ্ট্র একটি ক্যামেরা অন করতে ছয় ঘণ্টা সময় নেয়। এই রাষ্ট্রের ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা লেট। এই রাাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনগণকে বিভ্রান্ত করেন, ফায়ার সার্ভিসের কাজের মধ্যে বাম হাত দেন। এই রাষ্ট্রের প্রাইভেট চ্যানেলগুলোার সংবাদকর্মীরা ভালো ফুটেজের জন্য উদ্ধার কাজে বিঘ্ন ঘটায়। এই রাষ্ট্রে দুর্ঘটনাস্থলকে ফিতা দিয়ে কর্ডন করা হয় না। এই রাষ্ট্রে ৩০০ বা ৬০০ বা ৮০০ ফুট গভীর একটি নলকূপের পাইপ এক বছর ধরে উন্মুক্ত থাকলেও সেটির মুখ বন্ধ করার কেউ নেই। এই রাষ্ট্রের প্রশাসন জিয়াদের দুর্ঘটনাকে গুজব বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। যে কারণে জিয়াদের বাবা ও মামাকে পুলিশ সারা রাত থানা হেফাজতে আটক রেখেছে। এই রাষ্ট্র নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার লুকাতে ভিকটিমের পরিবারকে উল্টো নির্যাতন করায় ওস্তাদ। এই রাষ্ট্র জনগণের চোখ অন্যত্র ঘুরিয়ে দিতে নানান বাহানা করতে পারদর্শী। এই রাষ্ট্রের অনিয়মগুলো মানুষ বেশিদিন মনে রাখে না। জিয়াদের ঘটনাও এই রাষ্ট্র ভুলতে বেশি সময় নেবে না। সুন্দরবনে তেলের ট্যাংকার দুর্ঘটনাকে এই রাষ্ট্র পাত্তা দেয় না। উল্টো প্রশাসন এবং নৌমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী দাবি করেন, তেলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। এই রাষ্ট্র জিয়াদের ঘটনা ভোলার জন্য আরেকটি অঘটন ঘটিয়ে জনতার চোখকে সেদিকে নিতেও বেশি সময় লাগাবে না। এভাবে হাজার হাজার ব্যর্থতাকে পুঁজি করে এই রাষ্ট্র ৪৩ বছর পার করেছে। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এই রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক রক্ষাকবজ সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে, এটি এরা বুঝতে পারে না। গভীর নলকূপের মুখ খোলা রাখলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এই রাষ্ট্র এটা স্বীকার করে না। এই রাষ্ট্র মানুষের মানবতাকে কেয়ার করে না। কেয়ার করে প্রশাসন আর দুবৃত্তদের চৌর্যবৃত্তিকে। শিশু জিয়াদকে এই রাষ্ট্রের প্রশাসনিক অনিয়মই হত্যা করেছে। ছোট্ট শিশু জিয়াদ মাঠে খেলতে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই মাঠের ভেতর যে এই রাষ্ট্রের প্রশাসন তার জন্য মৃত্যুকূপ বানিয়ে রেখেছে, তা ওই ছোট্ট শিশুটি কিভাবে জানবে? তার তো এই দুবৃত্তদের বানানো ফাঁদ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আমাদের ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা নেই। বাবা স্কুলের নৈশপ্রহরী। জাতে গরীব। তাই প্রশাসন ছেলে হারানোর দুঃখের মধ্যেও জিয়াদের বাবা ও মামাকে থানায় আটক রেখেছে সারারাত। গুজবকে বিশ্বাস করানোর জন্য এই যে প্রশাসনের অকৃত্তিম প্রচেষ্টা, এটাকে এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?গোটা রাষ্ট্রের চেষ্টা যেখানে ব্যর্থ, হাতুড়িবিদ্যায় পারদর্শী সাধারণ জনতাই মাত্র আধাঘণ্টায় জিয়াদকে উদ্ধার করে আবার প্রমাণ করে দিল, জনতাই সবচেয়ে বড় শক্তি। জনতার ইচ্ছার চেয়ে বড় কিছু নেই।আমাদের প্রশাসন যে কি খায়, কোন বাতাসে চলে, কার ইসারায় কি রটিয়ে দেয়, এটাই এই রাষ্ট্রের জন্য এখন সবচেয়ে বড় মৃত্যুকূপ। এক শিশু জিয়াদ দুর্ঘটনায় পড়ে এই রাষ্ট্রের প্রশাসন, সরকার, রাজনীতি, মিডিয়া, রাষ্ট্রের কাণ্ডজ্ঞান, মন্ত্রীদের মুর্খামী, অনেকগুলো বিষয়ের উপর দিনের আলোর মত প্রশ্নবোধক চিন্থ রেখে গেল। তারপর কি হবে? কিছুই হবে না। কারণ, এই রাষ্ট্র এভাবেই অভ্যস্থ হয়ে গেছে। দুবৃত্তায়নকে যে লালন করে, অনিয়মকে যারা মাথায় হাত বুলায়, ব্যর্থতাকে যারা পুঁজি করে অলৌকিক গুজব দিয়ে, ধর্মকে যারা ব্যবহার করে মানুষের চেতনাকে কাবু করার কাজে, সেই রাষ্ট্রে একজন জিয়াদের জন্ম নেওয়াই ছিল পাপ।আজ যদি জিয়াদ শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার ছেলে হতো, আজ যদি জিয়াদ ন্যূনতম কোনো মন্ত্রীর ছেলে হতো, কোনো সচিবের ছেলে হতো, সেনাপ্রধানের ছেলে হতো, পুলিশ প্রধানের ছেলে হতো, বা একজন সংসদ সদস্যের ছেলে হতো, বা দলীয় কোনো রাঘববোয়ালের ছেলে হতো, তাহলে এই রাষ্ট্রের এই বিদ্যমান প্রশাসন অন্যরকম আচরণ করত। আমাদের মিডিয়া তখন অন্যভাবে এটাকে বিচার বিশ্লেষন করত। জিয়াদ যেহেতু একজন নৈশপ্রহরীর ছেলে, তা নিয়ে আর কেন এত মাতামাতি! কিন্তু একথা সত্য, চার বছরের জিয়াদ মাত্র ২৩ ঘণ্টায় গোটা বাংলাদেশের প্রশাসন, সরকার, রাজনীতি ও দুবৃত্তায়নকে যেমন চোখে আঙুল দিয়ে সুস্পষ্ট করেছে, তেমনি সাধারণ মানুষের অন্তরে যে এত দুবৃত্তায়নের জয়জয়কারের মধ্যেও মানবিকতা কাজ করে, সেই কোটি কোটি মানুষের হুদয় জয় করেছে ছোট্ট জিয়াদ। জিয়াদের মা খাদিজা আক্তার আর বাবা নাসিরউদ্দিন হয়তো মানুষের এই সহানুভূতিকে পুঁজি করে এখন বেঁচে থাকবেন। রাষ্ট্র যেখানে ব্যর্থ সেখানে তাঁদের আর কী বা করার আছে। রাষ্ট্রের দুবৃত্তায়ন ও অনিয়ম যখন সীমা লংঘন করে, তখন এমন হাজার হাজার দুর্ঘটনা ঘটার মত মৃত্যুকূপ গোটা ছাপান্ন হাজার মাইল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দলীয় লেজুড়বৃত্তি যারা করেন, দুবৃত্তায়নের সঙ্গে যারা জড়িত, অনিয়ম করে যারা কোটি টাকার আখের করছে, সেসব অবিবেচকের কাছে জিয়াদের এই মৃত্যু কোনো দায়বোধ তৈরি করবে না। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে যদি আপনার চিন্তা করার ক্ষমতা থাকে, আপনি যদি মানুষকে ঠিক মানুষের আসনে বিচার বিবেচনা করেন, তাহলে আপনার বিবেককে প্রশ্ন করুন, এক ছোট্ট জিয়াদ বাংলাদেশের কত অনিয়ম, কত ব্যর্থতাকে উন্মোচন করে দিল। দুর্ঘটনা ঘটার মত হাজারো ঘটনা এই রাষ্ট্রে আমরা নানাভাবে রাষ্ট্রীয় সেবায় লালন পালন করছি, চর্চা করছি, পরিচর্যা করছি, নিজেদের মৃত্যুকূপ নিজেরাই রচনা করছি, সেই বিষয়টি সুস্পষ্ট করল ছোট্ট জিয়াদ। ছোট্ট জিয়াদ, তোমার জন্য ষোলো কোটি মানুষ একবার হলেও আহাজারি করেছে, এটাই তোমার শান্তনা। ষোলো কোটি মানুষ একটি রাত তোমার উৎকণ্ঠায় থেকেছে, এটাই তোমার পরম পাওয়া। এই রাষ্ট্রে জন্ম নিয়ে তুমি কী হতে চেয়েছিলে? একজন গরীব নৈশপ্রহরীর ঘরে জন্ম নিয়ে তোমার তো ওভাবেই দুর্ঘটনায় পড়ে অকালে মরে যাবার কথা। এই স্বীকৃতি এই রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবেই স্বীকার করে। নইলে কোন আক্কেলে রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোমার দুর্ঘটনাকে স্রেফ গুজব বলে উদ্ধার অভিযানকে প্রভাবিত করতে পারে? তুমি কি জানো না, এই রাষ্ট্রে একজন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কত বড় শক্তিশালী? দোহাই, তোমার, তুমি চিরশান্তিতে ঘুমাও। এই রাষ্ট্র নিয়ে তোমার আর চিন্তা করতে হবে না, তোমার এটাই সবচেয়ে বড় শান্তি। এই রাষ্ট্রে তোমার আর না খেয়ে থাকতে হবে না, এটাই বড় শান্তি। জিয়াদ, তুমি কী জানো, এই রাষ্ট্র তোমার সেই মৃত্যুকূপে জুস পাঠিয়েছিল, আলোর জন্য টর্চলাইাট পাঠিয়েছিল, ক্যামেরা পাঠিয়ে তোমাকে তন্নত্ন্ন করে খুঁজেছে, তুমি কোথায় লুকিয়েছিলে হে অভাগা? তুমি তো মায়ের পাশে দুপুরে খাবারের পরে ঘুমিয়েছিলে। মাকে না বলে তুমি খেলতে গিয়েছিলে কেন? তোমার দস্যিপানা যে এমন দুর্ঘটনা ডেকে আনবে, তা কি তুমি জানতে না? জিয়াদ, তুমি সত্যিই বড় অভাগা। নইলে তুমি এভাবে পাইপে পরে মরতে পার না! এভাবে তুমি ২৩ ঘণ্টা গোটা বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষকে উৎকণ্ঠায় রাখতে পারো না। তুমি মরে এখন বরং বেঁচে গেলে। নইলে এই রাষ্ট্রই তোমার মরার ব্যবস্থা করত। তোমার বাবাকে জেলে পুরত। তোমার মামাকে জেলে পুরত। কারণ, এই রাষ্ট্র প্রমাণ করত, তুমি পাইপের মধ্যে নেই। তুমি যে হারিয়েছ, তুমি যে গুম হয়েছ, তা প্রমাণ করতে এরা তোমার মাকেও নির্মমভাবে নির্যাতন করত। তুমি মরে গিয়ে বাকিরা এখন সবকিছু থেকে রেহাই পেল। জানো তো এই রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। এমন দেশটি তুমি আর কোথাও খুঁজে পাবে না। ...............................২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ঢাকা
false
rg
টাইগার্সদের অনভিজ্ঞতা আর নির্বাচকদের বিচক্ষণহীনতার পাশাপাশি ব্যাটিংব্যর্থতাই মিরপুর টেস্টের পরাজয় !! বাংলাদেশের কোনো স্পোর্টস রিপোর্টার কি মিরপুর টেস্টের পিস কিউরেটরের একটা সাক্ষাৎকার নেবে এখন?ওই কিউরেটর মুশফিককে পিস সম্পর্কে কি ধারণা দিয়েছিল? নাকি কিউরেটর পাকিস্তানের বুকিদের খপ্পরে পড়ে মুশফিককে পিস সম্পর্কে ভুল ধারণা দিয়েছিল? যে তথ্যের উপর নির্ভর করে পিসে একটু ঘাস দেখেই মুশফিক টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল। ঢাকার তাপদাহকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে। অথচ টাইগার্স দলের মূল পরাজয় হয়েছে সেই তাপদহের কাছে। বাংলাদেশ দল প্রায় ১৯২ ওভার ফিল্ডিং করেছে তিনদিনে। আর ব্যাটিং করেছে মাত্র ১০০ ওভার। ঢাকার প্রচণ্ড তাপদহে মুশফিক বাহিনী ডিহাইড্রেশানে ভুগেছে। যা ব্যাটিংয়ে কনসেনট্রেশানে সমস্যা তৈরি করেছে। আগে তো শরীরে জোর থাকা চাই। তারপর না খেলোয়াড়রা ব্যাট চালাবে। পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ডিকলার করার আগ পর্যন্ত খেলেছে ১৫২ ওভার। জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গেছে মাত্র ৪৭.৩ ওভারে। পাকিস্তান ফলোঅনের সুযোগ পেয়েও খুলনা টেস্টে তামিদের দ্বিতীয় ইনিংসের দৃঢ়তার কথা মাথায় রেখে জয় নিশ্চিত করতে আবার ব্যাট করল। আর পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১.১ ওভার খেলে ১৯৫ রান তুলে বাংলাদেশের সামনে ৫৫০ রানের টার্গেট দিল। তখনো হাতে ছিল প্রায় দুই দিনের ৯০+৯০=১৮০ ওভার আর তৃতীয় দিনের শেষ সেশনের আরো ১৪ ওভার। মোট ১৯৪ ওভার খেলা বাকি রেখে পাকিস্তান বাংলাদেশের সামনে চতুর্থ ইনিংসের জন্য ৫৫০ রানের বিশাল পাহাড় দাঁড় করিয়ে দিল। যার মানে হল তোমরা যতই ভালো ব্যাট চালাও মাগার দুইদিন টিকতে পারবা না। বাস্তবে হলও তাই। চতুর্থ দিনের লাঞ্চের আগেই টাইগার্সদের ৫ উইকেট নাই। মিরপুর টেস্ট শুরুর প্রথম বলেই শাহাদাত হোসাইন রাজীব ইনজুরিতে পরায় বাংলাদেশ হয়ে গেল ১০ জনের টিম। রাজীব আগামী ছয় মাস আর মাঠে ফিরতে পারবে না। যা টাইগার্সদের জন্য এক বিশাল ক্ষতি। জুন মাসে ভারত বাংলাদেশ সফরে আসছে। তখন পূর্ণ শক্তির বাংলাদেশ দল মাঠে নামানোই আমাদের জন্য টাফ হবে। রুবেল ইনজুরিতে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফর্মে নেই। শাকিব ফর্মে নেই। বিশেষ করে শাকিবের বোলিং, যার উপর বাংলাদেশ ভরসা করে, সেখানে সে ব্যর্থ। খুলনা ও মিরপুর টেস্টে পরপর শূন্য মেরে মুশফিক নিজেও নতুন আশংকা জাগিয়ে তুলেছেন। টাইগার্সদের বোলাররা এখনো টেস্টের জন্য ফুল ভোল্টেজ স্ট্যামিনা নিয়ে যে ফিটনেস বোঝায়, সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ভালো করার রেকর্ড নেই। টেস্টে এখনো বাংলাদেশ যে নবীন, তা একটা দুটো টেস্টের পরেই আবার প্রমাণিত হচ্ছে। অথচ এই দলটি ওডিআইতে বিশ্বের যে কোনো দলকে সমীহ জাগাতে এখন বাধ্য করছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে টেস্টে কেন আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না? তার জবাব খুঁজলে অনেক অপ্রিয় সত্য বেড়িয়ে আসবে। প্রথম বিষয় হল বেস্ট ইলেভেন নির্বাচনে দলের নির্বাচকদের ব্যর্থতা। নতুনদের দলে নেওয়া হলেও বেস্ট ইলেভেনে নেওয়া হয় না। দু'একজনকে নেওয়া হলেও একটু ব্যর্থতার দায়ে পরের ম্যাচে অনেকেই দল থেকে বাদ পড়েন। আর বড় খেলোয়াড়রা ফর্মে না থাকলেও নাম বিবেচনায় বারবার দলে থাকেন। এমনকি বেস্ট ইলেভেন সাজাতে তাদের ফর্ম বিবেচনায় থাকে না । বিবেচনায় থাকে তাদের অভিজ্ঞতা। তাহলে নতুন যে ছেলেটি দলে সুযোগ পেল, সে কিভাবে তার যোগ্যতা দেখানোর সুযোগ পায় এভাবে দল নির্বাচন হলে? সে তো দুই টেস্টে খারাপ করলে তৃতীয় টেস্টে ঝড় যাচ্ছে। সে তো তামিম শাকিব মাহমুদউল্লাহদের ব্যর্থতার পরেও দলে থাকার মত, তাদের সমান সুযোগ পাচ্ছে না। বরং এক ধরনের বিচক্ষণহীনতার খড়গে কাঁটা পড়ছেন। তামিম শাকিবরা কিন্তু বারবার ব্যর্থতার পরেও দলে থাকার সুযোগ পেয়ে আজ বড় তারকা। নতুনদের জন্য সেই জায়গাটা বরং নির্বাচকদের কাছে এক ধরনের বাজির মত। পারলে টিকে গেল। না পারলে দল থেকে বাদ। সৌম্য সরকার একজন প্রথম শ্রেণীর ব্যাটসম্যান। ওডিআইতে সে ওপেনার বা ওয়ান ডাউনে ব্যাট করে। তাঁকে কেন টেস্টে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামতে হবে? নির্বাচকদের এই সিলেকশানেই আমার মত নেই। হয় সৌম্যকে চার বা পাঁচ নাম্বারে ব্যাট করার সুযোগ দেওয়া হোক, নইলে টেস্ট দলে তাকে বেস্ট ইলেভেনে আসলে তার যোগ্যতার অবিচার করা হয়। মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপে ভালো করায় টেস্টে তাকে চার নাম্বারে খেলানোটা আমার পছন্দ হয়নি। টেস্টে চার নাম্বারে ব্যাট করার মত যোগ্যতা এখনো মাহমুদউল্লাহর হয়নি। শুনতে খারাপ শোনালেও এটাই টেস্টের বিচারে সত্য। বরং মুশফিক বা শাকিব চার নাম্বারে আরো ভালো করতো। মিরপুর টেস্টে মাহমুদউল্লাহকে বরং বিশ্রামে রাখলে দলে একটা বাড়তি বোলার নেওয়া যেত। মাহমুদউল্লাহ'র এই বিশ্রামটি ভারতের আসন্ন সফরে বরং বেশি কাজে লাগত। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের যারা নির্বাচক, তারা কয়জন কয়টি টেস্ট খেলেছেন? তাদের নিজেদেরই তো সেই অভিজ্ঞতা নেই যে, টেস্টের কখন কেমন সিচুয়েশন তৈরি হয়। তারা নিজেরাই যেহেতু অনভিজ্ঞ। তাই তাদের বিচার বিবেচনায় যে দলটি মাঠে নামে সেটি খেলা শুরু হবার আগে থেকেই একটি দুর্বল একাদশে পরিনত হয়। দলে আটজন ব্যাটসম্যান আর তিনজন বোলার নিয়ে যে নির্বাচকরা টেস্ট দল সাজায়, তাদের টেস্ট ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা নিয়েই তো সবার আগে প্রশ্ন করা যায়। আটজন ব্যাটসম্যান দিয়ে টেস্ট দল সাজানো এটা কোনো সুবিবেচনার দল হতে পারে না। তাহলে বিপক্ষ দলকে অলআউট করবে কোন বোলাররা? পাঁচজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান, পাঁচজন স্বীকৃত বোলার আর একজন অলরাউন্ডার এই হল টেস্টের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্বিনেশান। বিপক্ষ দলের ব্যাটিং শক্তি, বোলিং শক্তি বিবেচনায় নিয়ে সেখানে ছয়জন ব্যাটসম্যান, চারজন বোলার নেওয়া হয় অনেক সময়। তবে সেই চারজন বোলারই স্বীকৃত বোলার। রিয়াদের মত বোলার না বা সৌম্যর মত বোলার না যে ব্যাটে না পারলে বলে করে দেখাও। রুবেলের মত স্বীকৃত বোলার। শুভাগত হোমের মত বোলার না যে ব্যাটও ভালো করবে, বলও ভালো করবে, সেই আশায় দলে নেওয়া। এমন অবাস্তব আশা কখনোই টেস্ট ক্রিকেটে কাজে দেয় না। এটা কালেভদ্রে খুলনা টেস্টের মত কাজে লাগে। সবসময় তা টেস্ট ক্রিকেটে কাজে লাগবে না, এটাই চরম সত্য। বাঙলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট একাদশ কোনটা বেস্ট হবে, সেই বিতর্কে এখনো আমাদের নির্বাচকরা জুতসই জবাব দিতে পারবে না। কারণ তাদের নিজেদেরও সেই পরিমাণ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তারা আন্দাজের উপর ভর করেন সবচেয়ে বেশি। টেস্ট ক্রিকেট সবার আগে বুদ্ধির খেলা। বুদ্ধিতে যারা এগিয়ে থাকবে, খেলায়ও তারা এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। টেস্ট ক্রিকেট হল সেশনের খেলা। পাঁচদিনে মোট পনেরো সেশনের খেলা। এই পনেরো সেশনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় খেলার মেজাজ বদল ঘটে। তখন যে দলে ক্যাপ্টেন যতবেশি বুদ্ধি খাটিয়ে বোলারদের ব্যবহার করতে পারেন, তাদেরই খেলায় আধিপত্য বিস্তারে সুবিধা হয়। যেটি খুলনা বা মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ দলে একদম অনুপস্থিত ছিল। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় মহাষৌধের নাম ধৈর্য্য। ধৈর্য্য যার যত বেশি, সে তত ভালো খেলবে টেস্ট। আমাদের ব্যাটসম্যানদের গ্যালারি থেকে ক্লাপ পাবার একটা প্রবণতা আছে। টেস্ট খেলতে নেমে চার ছক্কা হাঁকাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। যা টেস্ট ক্রিকেটে মোটেও এলাউ করা যায় না। আমি ব্রায়ান লারাকে দেখেছি, সারাদিনেও একটা ছক্কা না মেরে চুপচাপ ক্রিজে পড়ে থাকতে। ম্যাথুউ হেইডেনকে দেখেছি। রাহুল দ্রাবিঢ়কে দেখেছি, লক্ষণকে দেখেছি, চন্দরপলকে দেখেছি তো কেবল সিঙ্গেল নিয়ে টেস্টে ক্রিজে পড়ে থাকতে। চন্দরপল আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ধৈর্য্যধীল টেস্ট খোলোয়াড়। যিনি মাঠে অনেকক্ষণ কাটিয়ে দেবার নেশায়ই মাঠে নামেন। আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতাম এন্ডি ফ্লাওয়ারের খেলা। গ্র্যান্ড আর এন্ডি এই দুই ভাইয়ের জোরে জিম্বাবুয়ে বড় বড় টেস্ট খেলুড়ে দেশকে টেস্টম্যাচে কুপোকাত করেছে। অথচ জিম্বাবুয়ে দলটি তখন বলার মত আর কোনো খেলোয়াড় ছিল না। এই দুইভাই যখন ব্যাট করতো তখন মনে হতো অনেকক্ষণ তারা ব্যাট করার জন্য মাঠে নেমেছে। সহজে বাড়ি যাবার জন্য আসেননি। তেমন ধৈর্য্য আমাদের ব্যাটসম্যানদের কারোর মধ্যেই দেখি না। চার ছক্কা মারার জন্য উতলা হয়ে যান। টেস্টে চার ছক্কা লারা, চন্দরপল, এন্ডি, দ্রাবিঢ়, লক্ষণ, সচীন, মহেলা জয়বর্ধনা, সাঙ্গাকারারাও মারতো। কিন্তু তারা কেবল মারার বলটি মারতো। শেন ওয়ার্ন, ওয়াশিম আক্রামদেরও টেস্টে ভালো ব্যাট করার রেকর্ড আছে। এমনকি কুম্বলে পর্যন্ত টেস্টে রান না নিয়ে অনেকক্ষণ ক্রিজে পড়ে থাকতেন। ব্যাটসম্যানকে যোগ্য সমর্থন দেবার জন্য। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে সেই ধৈর্য্যের আগমন যত শীঘ্র ঘটবে, তত শীঘ্র আমরা টেস্টে ভালো করা শুরু করব। টেস্ট ক্রিকেটে সারা দিনে ৯০ ওভারে ২৫০ থেকে ৩০০ রান করতে পারলে সেটাকে অনেক ভালো রান ধরা হয়। আর আমাদের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করে ওয়ানডে স্টাইলে। কুঁড়ি ওভারে ১০০ করে ফেলে। কিন্তু ৫/৬টা উইকেট বিসর্জন দেয়। টেস্ট ক্রিকেটে এই ধরনের টেম্পারেমেন্ট যতক্ষণ তৈরি না হবে ততক্ষণ আমাদের শেখার বাকি অনেক কিছু্‌ই। দুর্বল পাকিস্তান দলের বিপক্ষে আমরা টেস্ট ক্রিকেটে কি শিখলাম, সেখান থেকে যদি আমাদের নির্বাচকরাও কিছু না শেখে, তাহলে আমাদের খেলোয়াড়রাও কিছুই শিখতে পারবে না। এটাই আসল কথা। হুদাই আটজন ব্যাটসম্যান আর তিনজন বোলার নিয়ে যারা দল গঠন করেন, আমার বিবেচনায় মিরপুর টেস্টের এই পরাজয়ে সব দোষ এই অবিবেচক নির্বাচকদের দিকেই। দুর্বল পাকিস্তান দলের বিপক্ষে আজকে খেলার চতুর্থ দিনেই ৩২৮ রানের বিশাল পরাজয়ে সবার আগে তাই আমাদের নির্বাচকদের মাথা নিচু করার কথা। দ্বিতীয় টেস্টের সংক্ষিপ্ত স্কোর: টস: বাংলাদেশ অ্যান্ড টেকিং টু ফিল্ডিং পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ৫৫৭/৮ ডিকলার (আজহার আলী ২২৬, ইউনিস খান ১৪৮, আসাদ শফিক ১০৭ ও তাইজুল ৩/১৭৯) বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২০৩ (শাকিব ৮৯* ও ইয়াসির শাহ ৩/৫৮, ওয়াহাব রিয়াজ ৩/৭৩) পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯৫/৬ ডিকলার (মেসবাহ ৮২ ও শহীদ ২/২৩) বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২২১ (মোমিনুল ৬৮, তামিম ৪২ ও ইয়াসির শাহ ৪/৭৩) পাকিস্তান ৩২৮ রানে জয়ী। দুই ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ১-০ তো সিরিজ জয়। ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজ আজহার আলী (পাকিস্তান) .................................... ৯ মে ২০১৫ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২১
false
ij
বাল্মীকি_ প্রাচীন ভারতের সচেতন এক পরিবেশবাদী। বাল্মীকি, ক্রৌঞ্চ পাখি ও ব্যাধের গল্পটা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। এবং এই একুশ শতকে বসে গল্পটার নতুন এক ব্যাখ্যা দাঁড়াতে পারে বলেই মনে হয়। আজকাল আমরা যেমন কবির লেখা কাব্য পাঠ করে আনন্দ পাই- সেইরকম জেনে নিতে চাই মানুষ হিসেবে কবিটি কেমন ছিলেন। মানুষ হিসেবে কবি বাল্মীকি কেমন ছিলেন সেই রকম একটা প্রশ্নও কিন্তু মাঝে মাঝে আমা মনের চৌকাঠে আছড়ে পড়ে ...এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের খ্রিস্টপূর্ব যুগের সেই প্রাচীন ভারতে ফিরে যেতে হবে। প্রাচীন (উত্তর) ভারতের এক ঘন অরণ্য। সেই অরণ্যে ছিল ভয়ঙ্কর এক দস্যু। সেই দস্যুর নাম ছিল রত্মাকর। গহীন অরণ্যে ওত পেতে থেকে সে একাকী নিঃসঙ্গ পথিকের সর্বস্ব লুটে নিত। এভাবে দিন কাটত তার। দস্যুটি একদিন ধবধবে শুভ্র দড়ির বৃদ্ধ এক বৈদিক ঋষিকে একা পেয়ে পথরোধ করে দাঁড়াল। ঋষি বলেই ভারি দুঃসাহস ছিল বৃদ্ধর। তিনি গহীন অরণ্যে ভয়ানকদর্শ এক সশস্ত্র দস্যুকে দেখেও মোটেও ভীত না হয়ে গিয়ে অবলীলায় যা বললেন তাতেই দস্যু রত্নাকরের জীবন বদলে গেল আমূল। দস্যু রত্নাকর প্রথমে ঋষি ও পরে হয়ে উঠেছিলেন কবি। তো, কি বলেছিলেন ধবধবে শুভ্র দড়ির সেই বৈদিক ঋষি? ঋষি বলেছিলেন,“ ওহে তস্কর, তুমি যে লুন্ঠন করে পরিবারের ভরণপোষন করছ, তাতে তোমার পরিবার পাপের ভাগী হবে তো?” "নিশ্চয়ই।" বুক ফুলিয়ে দস্যু রত্মাকরের সদম্ভ উত্তর। "যাও, বাড়ি ফিরে কথাটা সবাইকে জিজ্ঞেস করগে।" ঋষি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন। রত্নাকর তখনই হন হন করে হেঁটে বাড়িতে ফিরে গিয়ে সবাইকে ডেকে জড়ো করল। তারপর জিজ্ঞাসা করল, “এই যে আমি পাপ করছি, লুন্ঠন করছি, দস্যুবৃত্তি করে তোমাদের খাওয়াচ্ছি, পরাচ্ছি, তোমরা আমার পাপের ভাগীদার হবে তো?” না। সবার শ্রেফ জবাব। এই উত্তর শুনে তখনই মনের দুঃখে সংসার ত্যাগ করল রত্মাকর। নির্জন এক নদীর ধারে বসে কী সব আকাশ পাতাল ভাবল। সংসারের অসারতার কথা ভাবল। দস্যুবৃত্তি পরিহার করার কথা ভাবল। ভাবল তমসা নদীর নির্জন পাড়ে এক আশ্রম গড়ে ধ্যান করার কথা। তাই করল রত্মাকর। দস্যুবৃত্তি পরিহার করে তমসা নদীর নির্জন পাড়ে ধ্যান করতে বসল। দিন যায়। সে ধ্যান ছেড়ে ওঠে না। সে পণ করেছে: সংসার যখন অসার; তখন জগতের সার ঈশ্বরকেই জানবে। দেখতে দেখতে তার ধ্যান করার স্থানটি ঘিরে গড়ে উঠল উইয়ের ঢিপি। সংস্কৃতভাষায় উয়ের নাম বল্মীক। সুতরাং, রত্নাকরের নাম হল বাল্মীকি। (এর মানে উইজাত) যা হোক। একদিন। ভোর বেলা। স্নান করতে তমসা নদীর পাড়ে যাচ্ছেন বাল্মীকি। এমন সময় অতি সুন্দর একটি দৃশ্য দেখে প্রীত হলেন। নদীর ঠিক পাড়েই ঝোপের ভিতর একজোড়া কোঁচ বক মিলনের উদ্যেগ নিচ্ছিল । ততদিনে জেনে গিয়েছিলে বাল্মীকি-মহামহিম ব্রহ্মা এভাবেই জীবের মিলনের মাধ্যমে পরমের দিকে আপন পূর্ণতার দিকে বিকাশ লাভ করেন। সুতরাং, জীবের মিলনে ঋষিগন প্রীত হন। সহসা কী হল! বাল্মীকি চমকে উঠলেন। তারপর একটি অতি মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে থমকে গেলেন। দুঃখযন্ত্রনায় তাঁর অন্তর বিদীর্ণ হল। এক লোভী শিকারী আড়াল থেকে মিলনরত কোঁচ বকের একটি তীর ছুঁড়ে মেরে ফেলেছে। অন্যটি প্রাণভয়ে না-পালিয়ে মৃত সঙ্গীটির পাশে ঘুরে ঘুরে আর্তনাদ করছে। কী মর্মান্তিক হৃদয়বিদাক দৃশ্য। কবি বাল্মীকি অতিশয় ক্ষিপ্ত হয়ে শিকারীকে অভিশাপ দিলেন। শিকারী তো ঋষির এহেন আচরণ দেখে হেসেই খুন। সামান্য পাখির জন্য এত মায়া! আসলে মুনিঋষিরা হচ্ছে ছন্নছাড়া জীব-নৈলে তারা জনপদে বাস না করে কেন বাস করার জন্য নির্জন স্থান বেছে নেয় । এই ভেবে সে দ্বিতীয় পাখিকেও মারার জন্য ধনুকে তীর যোযনা করতে থাকে। না। মানুষ, বদলাবে না। সে নিরামিষ আহার করবে না। সে চিরকাল আমিষভোজী তামসিক ক্রোধীলোভীই থেকে যাবে। বিষন্ন মনে বাল্মীকি তমসার জলের কিনারায় এসে দাঁড়ালেন। ততক্ষণে রোদ উঠে গেছে। ওপারের তালতমালের বন ক্রমেই সমুজ্জ্বল হয়ে উঠছে রাঙা রোদে। ভাদ্রপ্রভাতের ঝিরঝির শীতল মিস্টি বাতাস। ঋষিটির ভালো লাগে না। "আমার দয়ালু মন ও জ্ঞানই আমার মনের যন্ত্রণার উৎস।" ভাবলেন। আজ আমরা বুঝি-বাল্মীকি ছিলেন জীবের প্রেমিক; যে জীবে বাস করেন ঈশ্বর। যে ঈশ্বর আপন পূর্ণতার দিকে হন বিকশিত। কাজেই সচেতন মানুষকে তো দয়ালু হতেই হবে। হতে হবে মানবিক বোধ সম্পন্ন - বাল্মীকি ছিলেন তেমনই এক মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ। একুশ শতকে বসে আমরা সহজেই এই সত্যটা উপলব্দি করতে পারি। কেননা, ইতিহাসের যে কোনও যুগ থেকেই আমরা পৃথক। কেননা, আমরা আমাদের সময়ে আমাদের বিপর্যস্থ পরিবেশ নিয়ে ভারি উদ্বিগ্ন। এই রকম উদ্বেগ এর আগে কখনও দেখা যায়নি। আজ আমাদের শ্লোগান-"পশুপাখি পরিবেশের অনিবার্য অঙ্গ। এদের যত্ন নিন।" এমন কথা ৩০০ বছর আগে আকবর বাদশাকে বললে তিনি হেসে খুন হতেন। অথচ আজ আমরা পশুপাখির ভালোমন্দ ভেবে দিশেহারা বোধ করি। কবি বাল্মীকি কত কত বছর আগে তমসা পাড়ে একটি কোঁচ বকের মৃত্যুতে অস্থির হয়ে উঠে ছিলেন- যখন বৈদিক যজ্ঞের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যেত শত শত ষাঁড় শত শত ছাগশিশু! কেননা, বেদে আছে এভাবে পশুহত্যা করা হলে দেবগন সন্তুষ্ট হন! মনে রাখতে হবে, শিকারীটি ছিল কবি বাল্মীকিরই গোত্রের একজন। অর্থাৎ, মানুষ। একটি বকপাখির জন্য নিজের গোত্রের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন কবি বাল্মীকি! তাঁর মহত্ত্ব এখানেই। সেই কতকাল আগে তমসাপাড়ে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনাটির তাৎপর্য এত বছরে সেভাবে কারও চোখে না পড়লেও কবি বাল্মীকির মহত্ত্ব আমাদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। একুশ শতকে বসে প্রাচীন এই কবিকে পৃথিবীর সমস্ত সচেতন পরিবেশবাদীর পক্ষ থেকে প্রণাম জানাই। প্রাচীন ভারতের প্রথম সচেতন পরিবেশবিদ হিসেবে এই মহাত্মাকেই কৃতিত্ব দিই। এবং তাঁর নামে একটি আর্ন্তজাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখছি। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:১২
false
hm
আঠার পাঁচালি মারুফি ভাইয়ের সাথে পরিচয় ধানমণ্ডি লেকের আড্ডায়। রাইফেলস এর মার্কেট কমপ্লেক্সের উল্টোদিকে সন্ধ্যার পর আমরা নানা কিসিমের লোক জড়ো হয়ে রাজাউজির মারি এবং তাদের স্ত্রীকন্যাদের নিয়ে আদিরসাত্মক গল্প ফাঁদি। একেক দিন একেক লোকের বন্ধুবান্ধব সেই আড্ডায় এসে জোটে, তাদের কেউ কেউ নিয়মিত আড্ডাধারীতে পরিণত হয়, কেউ হয়তো তর্কাতর্কি ঝগড়াবিবাদ করে সেই তল্লাট ছেড়ে বিবাগী হয়ে চলে যায়। এমনই এক সন্ধ্যায় আড্ডামঞ্চে পায়ের ধূলো দিলেন মারুফি ভাই। তাঁকে দেখলেই বোঝা যায় তিনি আর্টকালচার লাইনের লোক। মাথায় একটি জিন্নাহ টুপি, পরনে টিশার্ট, তার ওপরে ফোটোগ্রাফারদের জ্যাকেট, সেই জ্যাকেটের পকেটগুলো রহস্যময় রকমের ফোলাফাঁপা, এবং সবশেষে একটি ঢলঢলে জিন্সের প্যান্ট। তাঁর স্যাণ্ডেল দুটো যে দুইরকম সেটা বোঝার জন্যে প্রচুর মনোযোগ ব্যয় করতে হয়, কারণ যত্রতত্র পায়ের ধূলো গ্রহণ ও বর্জনের প্রক্রিয়ায় ওগুলো ঝাপসা হয়ে আছে। মারুফি ভাই একটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে বসে পকেট থেকে একটা পাইপ বার করেন, তারপর শীতল চোখে আমাদের পরখ করেন একবার। সন্ধ্যার অন্ধকারে পরিষ্কার বোঝা যায় না, কিন্তু আমরা এই ভেবে রোমাঞ্চিত হই যে তাঁর দৃষ্টি নির্ঘাত শার্লক হোমসের মতো তীক্ষ্ণ আর অন্তর্ভেদী। আমরা আরও টের পাই, তাঁর মধ্যে হোমস, ফাইনম্যান আর আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গুণাবলী সব একসঙ্গে ঘুটা মেরে দিয়েছেন ওপরোলা। ঐ একটি পাইপই যেন তাঁর সব গুণকে পিলসুজ হয়ে ধারণ করছে। পাইপের পর জ্যাকেটের আরেক পকেট থেকে একটা পোঁটলা বার করেন মারুফি ভাই, তারপর সন্তর্পণে তামাক ভরেন পাইপে। সবশেষে একটি ভরসা ম্যাচ জ্বালিয়ে সেই তামাকে অগ্নিসংযোগ করেন। তারপর ফোঁসফোঁস করে পাইপে কয়েকটা টান দিয়ে একটা তৃপ্তির ধোঁয়াশা ছড়িয়ে দ্যান আশপাশটায়। "আমি একটা ডকুমেন্টারি বানাইতেছি, বুঝলা তোমরা?" মারুফি ভাই বলেন। আমরা খুশি হই আমাদের অনুমান মিলে যাওয়ায়। বলছিলাম না, উনি আর্টকালচার লাইনের লোক, এমন একটা ভঙ্গি করে সবাই সবার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসি। "কী নিয়া বানাইতেছেন বস?" আমাদের একজন জানতে চায়। মারুফি ভাই কটমটিয়ে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে পাইপে একটি দীর্ঘ নীরব চুমুক দেন। আমরা বুঝি, এই পাইপের অনেক গুণ, মাঝেমধ্যে সাইলেন্সার পাইপ হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। আরো কয়েক লিটার ধোঁয়ার পর মারুফি ভাই মুখ খোলেন। বলেন, "আঠা!" আমরা হতবিহ্বল হয়ে যাই। আঠার ওপর যে ডকুমেন্টারি তৈরি হতে পারে, এমনটা আমরা কস্মিনকালেও ভাবিনি। মারুফি ভাই যে আম আর্টকালচারী নন, সেটা বুঝে শ্রদ্ধায় জড়োসড়ো হয়ে পড়ি আমরা। ইনি ক্ষণজন্মা। ইনি বহুদূর যাবেন। নিশ্চয়ই ফেসবুকে ইনার ফ্যান পেজ আছে। আগের সেই প্রশ্নামোদী আড্ডিক আবার প্যাঁ করে ওঠে, "আঠা? মানে, ঐ যে গাম?" মারুফি ভাই এবার হাসেন মৃদু। রহস্যময় হাসি। এভাবেই হোমস, ফাইনম্যান আর ইলিয়াস হাসতেন নিশ্চয়ই। "গাম? হাঁ, গাম বলা যায় বটে। গাম-এ-জিন্দেগিও বলতে পারো। ঐ যে একটা শের আছে না, হামে তো গাম নহি থা গাম-এ-আশিকি কে পেহলে? আঠা এক গামই বটে।" আমরা কিছুই বুঝি না, কিন্তু এটা বুঝি, মারুফি ভাই সেই বিরল প্রতিভাদের একজন, যাদের কথা বোঝা যায় না। প্রশ্নওয়ালা রবিন হুডের মতো তূণ থেকে প্রশ্ন বার করে ছুঁড়তেই থাকে, "গাম নিয়া ডকুমেন্টারি কীরকম বস?" মারুফি ভাই এবার আরেকটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে নেন একপাশ থেকে। তারপর সেটার ওপর একটা পা তুলে একটু আয়েশ করে বসেন। তারপর বলেন, "চা চু দেয় না তোমাদের এদিকে?" আমাদের কয়েকজন একসঙ্গে লাফিয়ে উঠে অদূরে চারচাকার কেঠো চলমান চায়ের স্টলের দিকে ধেয়ে চাচা চা চু লাগান বলে হাউকাউ করে উঠি। মারুফি ভাই ইত্যবসরে তাঁর পাইপটি ফুঁকতে থাকেন। চা আসার পর তাতে একটি মৃদু, সুসংস্কৃত, পরীক্ষামূলক নিঃশব্দ চুমুক দেন মারুফি ভাই। দাড়ির ফাঁকে তার হৃষ্ট মুখ দেখে বুঝি, চা তাঁর পছন্দ হয়েছে। এবং এরপরই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ভেসে আসে এক প্রলয়ঙ্করী চুমুকের আওয়াজ, তাতে তিন অক্টেভের শব্দই মিলে মিশে আছে। "ভালো চা।" চায়ের কাপের ওম নিতে নিতে বলেন মারুফি ভাই। একজন আকলমন্দ আরেক কাপ চা দিতে বলে চাওয়ালা চাচামিয়াকে। প্রশ্নকর্তা উসখুস করছিলো, তাই মারুফি ভাই খানিক করুণা করেই মুখ খোলেন। "আঠা নিয়ে ডকুমেন্টারি বহুরকম হতে পারে ভাইটু। কিন্তু আমি বানাচ্ছি আমার মতো করে।" প্রশ্নওয়ালা সোৎসাহে বলে, "স্ক্রিপ্ট ছাড়া? মানে স্পন্টেনিয়াস শুটিং? ক্যামেরা ছাইড়া রাইখা সামনে যা পান সব শুট করবেন?" মারুফি ভাই মুখটা কুঁচকে ফেলেন। "স্ক্রিপ্ট ছাড়া ডকুমেন্টারি! স্ক্রিপ্ট ছাড়া ডকুমেন্টারি? স্ক্রিপ্ট ছাড়া মারুফি পায়খানাতেও যায় না মিয়া!" আমরা প্রচণ্ড ধমক দিই এতক্ষণ যে প্রশ্ন করছিল তাকে, "ঐ হালায় চুপ মার! বুঝে না সুঝে না খালি কথা কয়! চুপ বে!" একজন কাঁচুমাচু হয়ে বলে, "সরি বস, ওর কথায় কিছু মনে কইরেন না, ও একটা ইয়া। যাজ্ঞা, কীরকম বানাইতেছেন বস?" মারুফি ভাই এবার দ্বিতীয় কাপটি তুলে অভিমানী চুমুক ‌দ্যান একটি, যেন ইস্রাফিলের শিঙা বেজে ওঠে ভিভা রহমানের গলায়। তারপর অপমানের জ্বালা সয়ে নিয়ে ধিকিধিকি পাইপটিকে আবার চাঙা করেন। "বেসিকালি আমার ডকুমেন্টারিটা আঠার ছয় হাজার বছরের ইতিহাসকে কাভার কইরা। বুঝলা না?" আঠার ইতিহাসের বয়স জেনে আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই। মারুফি ভাই যে একজন কঠিন পথের পথিক, সেটাও দিলঙ্গম করি, বুঝতে পারি, একদিন এই আড্ডার স্মৃতি আমরা অফিসে, দাওয়াতে রোমন্থন করবো। মারুফি ভাই আমাদের মাইকেল মুর। মারুফি ভাই বলেন, "ডকুমেন্টারি বানাইতে গেলে বিস্তর খরচা। লোকেশনে যাওয়া-আসা, শুটিং, কাগজপত্র, দৌড়াদৌড়ি, দোভাষীর খরচ, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, তারপর ধরো দেশের বাইরে গেলে তো কিনাকাটাও করতে হয় কিছু না কিছু, তাই না? সব মিলাইয়া খুব ইয়া আর কি। এইজন্য আমি একটা বিকল্প ধারা ঠিক কইরা ফালাইছি। অনেক কথা যাই যে বলে, কোনো টাকা না ঢালি ... এই হইতেছে আপাতত আমার মটো।" আরেকজন আকলমন্দ আরো এক কাপ চায়ের অর্ডার দেয় চাচামিয়ার দরবারে। মারুফি ভাই পাইপে টান দিয়ে বলেন, "আঠার আলামত প্রথম পাওয়া গেছে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এক সাইটে খুব খোদাখুদি করতেছে, তো সেইখানে উইঠা আসছে ভাঙ্গা পাতিল, সেইটা আবার আঠা দিয়া জোড়া লাগানো। সেই আঠা আবার গাছের কষের আঠা। তারপর ধরো গিয়া, ব্যবিলনে মাটি খুইদা এক মন্দির পাইছে, সেই মন্দিরে মূর্তির চোখ হাতির দাঁতের, সেই চোখ গর্তের মধ্যে আঠা দিয়া ফিট করা। আলকাতরার আঠা, ছয় হাজার বছর পরেও যেমন ছিলো তেমনই।" ধমক খাওয়া প্রশ্নকর্তা ফস করে বলে, "বস এইটা ক্যামনে দেখাইবেন? ব্যবিলন যাইবেন?" মারুফি ভাই গম্ভীর মুখে বলেন, "ব্যবিলন কি আর আস্তা আছে? বুশ আর ওবামা মিল্লা ভাইঙ্গা চল্টা উঠায় দিছে না? সাভারে শুটিং হবে এইসব। গর্তের মধ্যে ভাঙ্গা পাতিল, আর কুমারপাড়ায় মূর্তির চোখ।" আমরা শিহরিত হই মারুফি ভাইয়ের সূক্ষ্ম কৌশলের কথা জেনে। কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, সাভারেরই মাঝে স্বর্গনরক ... মারুফি ভাই আবার কথা বলছেন দেখে ভাবনা থামিয়ে দিই। "এরপর এক হাজার বছর ধইরা লোকজন নানা জায়গায় আঠা নিয়া অনেক ইয়া করছে, বুঝলা? এই যে ফারাও তুত আনখ আমেন, তার কবর তো বৃটিশেরা ঠিকই খুইদা খাইদা বাইর কইরা লইয়া গেছে, তো সেই কবরে যেইসব কাঠের বাক্সমাক্স ছিলো, সেইসব বাক্সেও আঠার আলামত মিলছে।" "এইটাও কি সাভারে হবে বস?" জানতে চায় একজন। মারুফি ভাই একটু ভাবেন পাইপে টান দিতে দিতে। তারপর বলেন, "না। এইটা একটু অন্যভাবে দেখাইতে হবে। মিশরী এমবেসির দরজাটা শুট করা হবে কয়েক সেকেণ্ড। তারপর আশুলিয়া থেকে প্লেন টেকঅফ করার দৃশ্য। এরপর পুরান ঢাকার মাদ্রাসা আর নিউমার্কেটে বোরখার দোকানের ক্লোজআপ শুটিং। তারপর একটা মমি দেখামু।" "মমি পাইবেন কই?" কে যেন বলে। মারুফি ভাই বলেন, "এক কম্পাউণ্ডারের সাথে আলাপ করা আছে। সে খুব ভালো ব্যাণ্ডেজ বানতে পারে। আমার বন্ধু বশীরের বাবার জামার দোকান আছে বসুন্ধরায়, ঐখান থিকা একটা ‌ম্যানিকিন হাওলাত করা হবে, ঐটারেই ব্যাণ্ডেজ প্যাচাইয়া মমি বানাইয়া ফালামু।" মিনমিন করে একজন বলে, "ইয়া, কী জানি বলে, পিরামিড আর নীল নদ দেখাইবেন না?" মারুফি ভাই ভীষণ খাপ্পা হয়ে বলেন, "পিরামিড আর নীল নদের সাথে মিশরের কী সম্পর্ক?" আমরা স্তব্ধ হয়ে উত্তর খুঁজি। তাই তো? মারুফি ভাই বলেন, "পিরামিড কি খালি মিশরেই আছে? সুদানে আছে, ইথিওপিয়ায় আছে, মেক্সিকোতে আছে! নীল নদ কি খালি মিশরেই আছে? উগাণ্ডা থিকা শুরু কইরা সুদান ফুদান হইয়া তারপরে না সে মিশরে আসছে। তোমরা মিয়া খালি স্টিরিওটাইপিং করো। এইভাবে শিল্প হয় না!" মিনমিন কণ্ঠ আরো মিনমিনে হয়ে বলে, "পুরান ঢাকার মাদ্রাসা আর নিউমার্কেটের দোকানের ফুটেজ দিয়া কী হবে?" মারুফি ভাই বলেন, "আরবী জামাকাপড় পরা লোকজন দেখাইতে হবে না? খালি পুরুষ দেখাইলে হবে? জেণ্ডার বায়াস এড়াইয়া এখন কাজ করতে হয়। সেইজন্য বোরখার দোকানে বোরখা পরা নারীও দেখাইতে হবে। খেজুরের আড়তে খেজুরের বস্তার ক্লোজআপও নিমু ভাবতেছি। যাজ্ঞা, মমিতে গিয়া ব্যাপারটার ক্লাইম্যাক্স। আর সেইসাথে কিছু আরবী মিউজিক। আজানের আওয়াজও রাখতে হবে।" আমরা আর কিছু বলি না। শুধু অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি। মারুফি ভাই চায়ের কাপ নামিয়ে রাখেন। বলেন, "এরপর ধরো দেড় দুই হাজার বছর আগে রোমান আর গ্রীক লোকজন তাদের কাঠের কাজে আঠা ব্যবহার করছে প্রচুর। এরা আবার আঠা বানাইতো জন্তু জানোয়ারের হাড্ডিগুড্ডি দিয়া। কসাইয়ের দোকান থিকা শিং, হাড্ডি, খুর এইসব নিয়া বড় বড় পাতিলে ফুটাইয়া জেলাটিন বাইর কইরা সেইটা দিয়া আঠার কাম করতো। কেউ কেউ আবার মাছের কাটাকুটা দিয়াও আঠা বানাইতো।" একজন বলে, "হ বস, এইটা শুট করা সহজ। নিউমার্কেটে গরুর গোস্তের দোকান আর সেনপাড়ায় কাঠের ফার্নিচারের দোকান দিয়াই ম্যানেজ করা যাবে।" মারুফি ভাই বলেন, "না নিউমার্কেটের গরুর গোস্তের দোকানে ঠিক ফ্লেভারটা ফুটে না। টাউন হলের একটা গোস্তের দোকান আমি রেকি কইরা আসছি, ঐখানে ঐ প্রাচীন রোমান ভাবটা মোটামুটি আসে, যা দেখলাম। আর কাঠের কাজের শুটিংও সাভারে হবে। একটু নেচার রাখতে হয় মাঝেমাঝে, তোমরা তো বুঝো না এগিলি।" কে যেন বলে, "এইটার লগে কী মিউজিক দিবেন?" মারুফি ভাই বিরক্ত হয়ে বলেন, "এইটার সাথে মিউজিক দিমু ক্যান? আরে না বুইঝা খালি কথা বলে রে!" আমরা আবার ধমক লাগাই। বলি, "এই চুপ বে!" মারুফি ভাই বলেন, "আঠা নানা জিনিস থিকা বানানো হইতো। ডিমের সাদা অংশ, গরুবাছুরের রক্ত, হাড্ডি, চামড়া, দুধ, তারপর ধরো গিয়া শাকসব্জি, কী নাই? একবার খালি ফুল ফ্যামিলির জন্য বাজার করলেই সারা বছরের আঠা বানাইয়া ফেলা যায়। এই যে আমরা নৌকায় আলকাতরা লাগাই, এইটা প্রথম বাইর করছিলো কিন্তু রোমানরাই।" আমরা ভয়ে ভয়ে চুপ করে থাকি। মারুফি ভাই বলেন, "এগুলি সহজ সিন। নৌকাতে আলকাতরা লাগানোর সিন সাভারেই পাওয়া যাবে। আর তারেক অণুর কাছ থেকে রোমের কিছু ছবি হাওলাত করা হবে। সিদ্দিকা কবীরের একটা বই রাখা হবে ফ্রেমের এক পাশে, অন্য পাশে এক এক করে বাকি সব জিনিস একটা বাটিতে করে এক একটা শট নেয়া হবে। " কে যেন অস্ফূটে বলে, "লারমিন শাকি!" আমরা সবাই সমর্থন করি ব্যাপারটাকে। "‌হ্যাঁ হ্যাঁ লারমিন শাকি!" মারুফি ভাই লাজুক হাসেন। "আচ্ছা দেখি, কথা বলে দেখবো শাকির সাথে। ও খুব বিজি, বুঝলা না? তারপরও আমি রিকোয়েস্ট করলে না করবে না হয়তো। দেখি। যাজ্ঞা। কী বলতেছিলাম যেন?" তবুও কে যেন নাছোড়বান্দা বলে, "লারমিন শাকি!" মারুফি ভাই বলেন, "আরে চুপ বে! এর পরে প্রায় এক হাজার বছর আঠা নিয়া তেমন আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় নাই দুনিয়াতে। এরপর আবার কাঠমিস্ত্রিদের কাজকামে আঠার আলামত পাওয়া যায়। কিন্তু!" আমরা নড়েচড়ে বসি। "খালি সাদা চামড়ার লোকের আঠার কথা বললেই হবে? এডওয়ার্ড সাইদের কথা কিন্তু ফালায় দেওয়ার মতো না। ঠিক্কিনা?" মারুফি ভাই চেয়ারের ওপর দুই পা তুলে জুত করে বসেন। আমরা জানি না এডওয়ার্ড সাইদ কী বলেছিলো, কীভাবে ফেলি তার কথা? তাই সবাই বলি, ঠিক ঠিক! "যেমন ধরো, এই যে চেঙ্গিস খান, সে কীভাবে এত রাজ্য জয় করলো? টেকনোলজি। চেঙ্গিস খানের সাঙ্গোপাঙ্গোরা নানা অদ্ভুত অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতো। যেমন তাদের ধনুক ছিলো লেবুকাঠের সাথে গরুর শিং জোড়া দিয়া বানানো। ঐ কাজে ব্যবহার করা হইতো এক রহস্যময় আঠা, যেই আঠার মশল্লা সময়ের অতল গর্ভে হারায় গেছে। গন। ফিনিশ।" মারুফি ভাই হাতের খালি কাপটা নাড়েন। একজন আকলমন্দ আবার চাওয়ালা চাচাকে হুড়ো দেয়। "চেঙ্গিস খান কই পাইবেন?" একজন রূদ্ধশ্বাসে জানতে চায়। মারুফি ভাই হাসেন। "আমার বন্ধু সোহিনীর ছোটো চাচারে তো তোমরা দেখো নাই। দেখলে মনে হবে এইমাত্র মঙ্গোলিয়া থিকা আইসা নামছে এয়ারপোর্টে। ওনারে একটা চক্রাবক্রা আলখাল্লা পরাইলেই একদম রেডিমেড চেঙ্গিস খান। গরুর শিং আর কাঠের ধনুকও যোগাড় করা যাবে, ব্যাপার না। খালি মঙ্গোলিয়ার যুদ্ধের সিনটা দেখানো ট্রিকি। দেখি এইটা মঙ্গোলিয়ার দূতাবাসের সাথে কথা বলে, তারা কোনো ফুটেজ টুটেজ দিতে পারে কি না। না পারলে একদিন একটু কষ্ট কইরা কোনো হরতালের সিন শুট করতে হবে আর কি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ঐটারে একটু আউট অব ফোকাস কইরা তুললেই যুদ্ধের সিন হয়ে যাবে। পুরান ঢাকার ঘোড়ার গাড়ির ঘোড়ার ডাক রেকর্ড করে ছেড়ে দিলেই খেল খতম।" চা আসে। মারুফি ভাই চায়ের কাপে নতুন করে চুমুক দিয়ে বলেন, "অ্যান্টোনিও স্ট্র্যাডিভ্যারিয়াসের নাম শুঞ্ছো? না, শুনবা ক্যামনে। বেহালা বানাইতো এই লোক। সেইখানেও আঠার কেরামতি। এক রহস্যময় আঠা দিয়া সে কাঠ ল্যামিনেট করতো। সেই আঠার মশল্লাও কালের গর্ভে বিলীন। রহস্য।" "এই লোকরে ক্যামনে দেখাইবেন?" একজন বলে। মারুফি ভাই বলেন, "আমার বন্ধু বশীরের ছোটো বোন বেহালা বাজায়। ঐ বেহালার একটা ক্লোজ আপ গ্লাইডিং শট নিলেই হবে। অ্যান্টোনিওরে না দেখাইলেও চলে। নিতান্ত যদি দেখাইতেই হয় তো অ্যান্টোনিও বান্দেরাসের কোনো সিনামা থিকা ফুটেজ কাটা যাবে।" আমরা চমৎকৃত হই। মারুফ ভাই বলেন, "এরপর তো শিল্প বিপ্লব। তখন একের পর এক নতুন আঠা আবিষ্কার হইছে। একটা কইরা যুদ্ধ লাগে আর নতুন নতুন আঠা আবিষ্কার হয়, আর নতুন নতুন ফ্যাক্টরি খোলে। এমনেই চলতে আছে তারপর থিকা। টঙ্গীর আকাশে চিমনির ধোঁয়া দিয়া দেখামু এই অংশটা। আর পাটকলের ভিতরের মেশিনপাতি।" একজন বলে, "তারপর শেষ?" মারুফি ভাই বলেন, "না আরো আছে। সুপারগ্লু দেখাইতে হবে না? এইটা আবিষ্কারের কাহিনীটা দেখাইতে হবে। ইস্টম্যান কেমিক্যাল কোম্পানি পলিমার নিয়া গবেষণা করতেছিলো, একদিন তারা দেখে, মাইক্রোস্কোপের নিচে তাদের দুইটা স্লাইড জোড়া লাইগা গেছে। সে জোড়া এমনই জোড়া, টাইনাও খোলন যায় না। এইটা দেখানো এমন শক্ত কিছু না। বদরুন্নেসার বায়োলজি ল্যাবেই শুট করা যাবে।" কে যেন এক হতভাগা বলে, "বদরুন্নেসায় ক্যান?" মারুফি ভাই বলেন, "জানাশোনা চিন পরিচয় আছে সেইজন্য। খালি আলতু ফালতু কোশ্চেন কর ক্যান?" আরেকজন বলেন, "তারপর শেষ?" মারুফি ভাই বলেন, "না। এরপর দেখামু প্রাণীজগতে আঠা। যেমন ধরো তক্ষক ক্যামনে দেয়ালের সাথে চিপকায় লাইগা থাকে, এইটা দেখামু। শ্রীমঙ্গলে আমার এক বন্ধু থাকে, তার বাসার পিছের দেয়াল ভর্তি তক্ষক।" কে যেন বলে, "তারপর শেষ?" মারুফি ভাই বলেন, "আরে না রে ভাই। দেশীয় আঠা নিয়ে কিছু বলতে হবে না? গাবের আঠা, ভাতের আঠা।" একজন বলে, "পিরিতি কাঁঠালের আঠা?" মারুফি ভাই বলেন, "হ্যাঁ, ভালুকায় কাঁঠাল বাগানে কিছু শুটিং হবে, আর বলধা গার্ডেনে কিছু।" কে যেন বলে, "তারপর শেষ?" মারুফি ভাই বলেন, "হুঁ। ডকুমেন্টারি শেষ হবে বসন্ত বিলাস সিনামার ঐ গানটা দিয়া, ও শাম যখন তখন খেলো না খেলা অমন ধরিলে আজ তোমায় ছাড়বো না।" একজন বলে, "ডকুমেন্টারি প্রডিউস করতেছে কারা বস?" মারুফি ভাই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পাইপ টানেন, তারপর বলেন, "আপাতত আমার বন্ধু বশীরের বাপ। অবশ্য উনি জানে না যে উনি প্রডিউস করতেছেন। বশীর ওনার দোকানের ক্যাশ থেকে টাকাটা ম্যানেজ করতেছে আর কি।" কে যেন বলে, "বস, সরকারি অনুদানের চেষ্টা করে দেখবেন না একবার? এইরকম একটা মূল্যবান জিনিস, সরকারের তো উচিত হেল্প করা!" মারুফি ভাই ফোঁসফোঁস করে বলেন, "সেই চেষ্টা করি নাই ভাবছো?" আমরা নড়েচড়ে বসি, বুঝি গল্প শেষ হয়নি। কে যেন বলে, "কী হইছিল বস?" মারুফি ভাই ধরা গলায় বলেন, "মানিকদা তো ধরো গিয়া পথের পাঁচালির জন্য পশ্চিমবঙ্গের সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছ থিকা ফাণ্ড পাইছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীরে ধইরা। আমি ভাবলাম, আমিও যাই। মন্ত্রী তো সিনামা লাইনেরই লোক। মন্ত্রীর এপিএস আবার আমার বন্ধু বশীরের চিনাজানা।" একজন বলে, "কোন মন্ত্রী? যোগাযোগমন্ত্রী? ঐ বাবুল?" মারুফি ভাই বলেন, "হ, ঐ বাবুল হোসেনের কাছেই গেছিলাম। তিন মাস ঘুরাঘুরি কইরা শেষে একদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইলাম। গেলাম। সব খুইলা কইলাম। লোকটা খালি শোনে আর হাসে। যা-ই কই, সে খালি ক্যালক্যালাইয়া হাসে। তেল দিলাম, কইলাম আপনার তো এই ব্যাপারে অনেক রেপুটেশন, কয় সব ষড়যন্ত্র, ঐসব কানে নিয়েন না। কথা শেষ করার পর সে কয়, হুমমম, ওকে, দেখি, গুড বাই। তারপর সে বেল বাজাইয়া সেক্রেটারিরে ডাক দিলো, সেক্রেটারি আইসা তার চেয়ারটা ঠেইলা ঠেইলা টয়লেটে নিয়া গিয়া দরজাটা লাগাইয়া আমারে কইল, খাড়ায় খাড়ায় কী দেখেন ভাইডি, যান গিয়া, কথা শ্যাষ।" আমরা শিহরিত হই। বলি, "এই লোক হাগতে মুততেও কি চেয়ার ছাইড়া উঠে না নাকি?" মারুফি ভাই পাইপে টান দিয়ে বলেন, "না। গদির সাথে সে এমন টাইট হইয়া বসছে, নিজেও উঠে না, কেউ তারে টাইনাও তোলে না।" কে যেন বলে, "তাইলে বস, ডকুমেন্টারিটা বলধা গার্ডেনে শেষ না কইরা, ওনার গদি আর ওনার পিছনের কিছু ফুটেজ দিয়া শেষ করেন।" মারুফি ভাই কিছুক্ষণ ভাবেন, তারপরে হাসেন। বলেন, "হ!" [সমাপ্ত]
false
hm
শকুন ঐ যে আকাশে চক্কর কাটছে, ওগুলো কি শকুন? আসাদুল হক ভাবতে ভাবতে কখন প্রশ্নটা উচ্চারণ করে ফেলেন, নিজেও টের পান না। পাশের চেয়ারে বসে একটা পুরনো ম্যাগাজিনে চোখ বুলাচ্ছিলো আলী সুজা, সে চোখ তুলে তাকিয়ে ঘোঁৎ করে একটা শব্দ করে বলে, "ঢাকা শহরে শকুন আসবে কোত্থেকে?" আসাদুল হক নিজের ভাবনার উত্তর আসতে শুনে চমকে ওঠেন, তারপর বুঝতে পারেন, আজকাল ভাবনাগুলো উচ্চারিত হয়ে যাচ্ছে। এমনটা আগে হতো না। মানুষের ভিড়ে নিজের চিন্তাগুলো সশব্দে জানানো বিড়ম্বনাকর। চিন্তাগুলো যদি প্রশ্নাকার হয়, তাহলে আরো যন্ত্রণা। সব প্রশ্নের উত্তর সবার কাছ থেকে আসা ঠিক নয়। আলী সুজার মুখ থেকে এই প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন শোনার ইচ্ছা যেমন তাঁর এখন ছিলো না। কিন্তু প্রশ্নটা মাথার আকাশে শকুনের মতোই চক্কর কাটে। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। আজ সকালটা ভালোই লাগছে তাঁর। শরীর দুর্বল হলেও খানিকটা সুস্থ বোধ করছেন, ইচ্ছা করছে রাস্তা ধরে একটু হেঁটেও আসতে। সেটা যাতে তিনি করতে না পারেন, সেজন্যে সবসময় কেউ না কেউ তাঁকে পাহারা দেয়। মদের বোতল নাগালের বাইরে রাখে, সিগারেটের প্যাকেট দেখলে চুরি করে সরিয়ে রাখে। এরা তাঁকে ভালোবাসে বলেই মরতে দিতে চায় না। কিন্তু বাঁচতেও দিতে চায় না। সিগারেটের তৃষ্ণা হননের বেশ কিছু কায়দা তাঁকে নানা সময়ে নানা শুভার্থী শিখিয়ে দিয়ে গেছে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তার চেষ্টা না করা। এর চেয়ে বড় কাঠবলদপনা আর কী হতে পারে? একটা মানুষ জেগে থাকলে গভীর চিন্তা থেকে দূরে থাকে কীভাবে? আলী সুজা আবার ঘোঁৎ করে শব্দ করে বলে, "টিভি দ্যাখ। কিংবা গান শোন। কিংবা বইটই পড়। ফেসবুকে সময় কাটা।" আসাদুল হকের মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো। চিন্তার গোপনীয়তার স্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে বয়স আর ব্যাধি। টিভি দেখতে ভালো লাগে না তাঁর। জীবনের বড় একটা সময় ঐ জিনিসটাকে ঘিরেই কেটে গেলো। শোনার মতো গানও পান না ইদানীং, সবই পুনরাবৃত্ত একঘেয়ে মনে হয়। বই পড়তে গেলেই তো ভাবতে হয়। ফেসবুকে সময় কাটানো যায় কীভাবে? আলী সুজা বলে, "অচেনা কাউকে অ্যাড করে আলাপ করতে থাক।" আসাদুল হক চোখ বন্ধ করে মাথা থেকে শকুন তাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। আলী সুজা অনেক চেষ্টা করছে স্বাভাবিক আচরণের জন্যে। তার নিয়মিত বিদ্রুপ হাসিঠাট্টা মশকরাগুলোকে অন্যদের মতো খাপে পুরে রাখছে না সে। হয়তো বোঝানোর চেষ্টা করছে, সবকিছু আছে আগের মতোই। শুধু শরীরের ভেতর থেকে কেউ একজন একটু পর পর ফিসফিস করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, সময় নেই আসাদুল হক। "ঢাকা শহরে শকুন নাই?" প্রশ্নটা স্বেচ্ছায় করতে পেরে একটু খুশি হয়ে ওঠেন আসাদুল হক। আলী সুজা উঠে বারান্দার রেলিঙে প্রকাণ্ড দুই হাতের ভর রেখে আকাশ দেখার চেষ্টা করে। তারপর বলে, "ঢাকা শহর কেন, গোটা দেশ থেকেই শকুন মরে সাফ হয়ে গেছে।" আসাদুল হক গ্রামের বাড়ির কথা স্মরণ করার চেষ্টা করেন। বছর দুয়েক আগে শেষ যাওয়া হয়েছিলো। গত দশ বছরে তিনি কি শকুন দেখেছেন কোথাও? এখন কি তাহলে আর মাঠে গরু ছাগল মরে পড়ে থাকে না? শকুনেরা কি না খেতে পেয়ে মারা গেলো? আলী সুজা বিরক্ত হয়ে বলেন, "গরু ছাগলের কি এখন আর অসুখে মরার হালত আছে নাকি? সব খেয়ে সাফ করে ফেলছে লোকজন। অসুস্থ গরুর মাংসও বাজারে চলে আসে। কোটি কোটি লোক দেশে, কোটি কোটি লোক। দুইদিন পর মানুষের মাংসও বাজারে চলে আসবে।" আসাদুল হক বলেন, "তাহলে শকুন কী খায়?" আলী সুজা কাঁধ ঝাঁকায়। "আই ডোন্নো। কী খায় শকুন? দেয়ার মাস্ট বি সামথিং আউট দেয়ার।" আসাদুল হক বলেন, "শকুনের দুর্ভিক্ষ!" আলী সুজা হাসে ঠা ঠা করে, তারপর বলে, "না। শকুন মারা যাচ্ছে কী একটা ওষুধের কারণে। একটা অ্যান্টিবায়োটিক। গরুছাগলের অসুখ হলে ওটা দেদারসে খাওয়ায় গ্রামের লোকজন। খুব কড়া ওষুধ। গরুর রোগ ভালো হোক না হোক, একেবারে গরুর হাড্ডিমাংসে গিয়ে জমা হয়। পরে ঐ গরুর মাংস কোনো শকুন খেলে, শকুনও মরে যায়। দেশের ৯৯% শকুন এভাবে মরে গেছে, পড়িসনি কাগজে?" আসাদুল হক খবরটা পড়েছিলেন। খুবই নাড়া দেয়ার মতো খবর। দেশ থেকে শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেলে ব্যাপারটা কেমন হবে? একাত্তর সালে শকুনের খুব বাড়বাড়ন্ত হয়েছিলো। চল্লিশ বছরের মধ্যে এভাবে শেষ হয়ে গেলো ওরা? আলী সুজা কিছু বলছে না দেখে আসাদুল হক মুখ তুলে তাকান। আলী সুজা বাইরে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। তবে কি আসাদুল হক মনে মনে একটা প্রশ্ন গোপনে ভাবতে পারলেন? নাকি আলী সুজা শুনতে পায়নি? আলী সুজা বিরক্ত হয়ে ফিরে তাকায়, "কী শুনতে পাইনি?" হচ্ছে না। মুখ গলে বেরিয়ে যাচ্ছে মনের চিন্তা। আসাদুল হক বিমর্ষ মুখে বললেন, "ওষুধটার নাম কী?" আলী সুজা মাথা নাড়ে, "কে জানে? বিদঘুটে নাম। গরুর ওষুধের নাম মনে রাখার তো কোনো দরকার নাই আমার।" আসাদুল হক চিন্তা করতে থাকেন। নামটা বেশ শক্তই। মস্তিষ্কের কোনো এক গোপন চিলেকোঠায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে নামটা। কী যেন নামটা, কী যেন? আলী সুজা আবার এসে বসে চেয়ারে, "ওগুলো শকুন না। চিল।" আসাদুল হক আধশোয়া হয়ে বসে দেখতে থাকেন চক্কর কাটতে থাকা পাখিগুলোকে। চিল ধানমণ্ডির আকাশে কেন উড়ছে? ধানমণ্ডিতে তো মাছ নেই। মুরগিও নেই। হাজার হাজার কংক্রিটের বাড়িঘর কেবল। আর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। আর খাবারের দোকান। আলী সুজা বলে, "চিল কি আর আগের মতো আছে যে মাছ-মুরগি ধরে খাবে? চিলও এখন কাকের মতো ডাস্টবিন থেকে খাবার খায়।" কিন্তু ওষুধটার নাম যেন কী? আসাদুল হক প্রাণপণে চেষ্টা করেন স্মরণ করার। বাইরে একটা গাড়ি হর্ন দেয়। আলী সুজা ঘড়ি দেখেন। বলেন, "হাই লোকটা পাংচুয়াল আছে রে। একেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে হাজির।" আসাদুল হক চেষ্টা করেন ভাবনা গোপন রাখতে। আনিসুল হাই আসলেই সময়ানুবর্তী। সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে উপস্থিত থাকার ব্যাপারটা সে আয়ত্ব করেছে ভালো। বছর কুড়ি আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ছেলেটা শাইন করবে। দারোয়ান ঘড় ঘড় করে বাড়ির দরজা খুলে দেয়, মসৃণ গুঞ্জন তুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে একটা গাড়ি। ওরা আজকাল ভালোই গাড়ি দিচ্ছে অফিস থেকে, ভাবেন আসাদুল হক। আগে ভারতীয় গাড়িতে চড়তো হাই। এখন জাপানি গাড়ি পেয়েছে মনে হচ্ছে। আলী সুজা উঠে গিয়ে বারান্দা থেকে উঁকি দেন। ফিরে এসে বলেন, "হুঁ। অ্যালিয়ন।" আসাদুল হক ক্লান্তি বোধ করেন। এ কেমন অভিশাপ? গোপনে একটু চিন্তারও অবকাশ মিলবে না এই শেষ সময়ে এ্সে? সবাই যদি মনের সব কথা জেনে যায়, কীভাবে হবে? সিঁড়িতে মৃদু পায়ের শব্দ শোনা যায়। আসাদুল হক নিজেকে প্রবোধ দেন, কথোপকথনের সময় গভীর চিন্তা করা যাবে না। অল্প কয়েকটা কথাই তো। হাইকে ফোনেই জানিয়েছিলেন তিনি, দশ মিনিটের বেশি সময় তিনি প্রার্থনা করেন না। বুদ্ধিমান হাই নিশ্চয়ই সাক্ষাতের একাদশ মিনিটের যন্ত্রণা থেকে তাঁকে রেহাই দেবে। আনিসুল হাইয়ের মোটাসোটা হাসিমুখটা দেখে দুর্বল একটা হাত তুলে নাড়েন তিনি। বারান্দা দিয়ে থপথপ করে এগিয়ে আসছে লোকটা। বেশ সুখী, পরিতৃপ্ত হাসিমুখ। খালি চেয়ারটার দিকে ইঙ্গিত করেন আসাদুল হক, "কেমন আছো হাই?" আনিসুল হাই মিষ্টি করে হাসে। "এই তো আসাদ ভাই। শরীরটা একটু খারাপ, জ্বর, সামান্য কাশি। আপনি কেমন আছেন? সুজা ভাই, ভালো আছেন আপনি?" আলী সুজা ঘোঁৎ করে বলে, "আছি রে ভাই। নানা যন্ত্রণা। বুঝতেই তো পারো।" আসাদুল হক পুরনো রসিকতা করার চেষ্টা করেন, "হাই চলে এসেছে।" আলী সুজা নিজের অজান্তেই একটা হাই তুলে ফেলেন, তারপর অর্ধেক হাসি অর্ধেক ধমকের সুরে বলেন, "উফফফ, এই পুরনো ক্লিশে ভাঁড়ামোটা না করলে হয় না?" আনিসুল হাই হাসতে হাসতে বলে, "একটু পরেই আবার হাই উঠবে।" আসাদুল হক ভাবেন, হ্যাঁ, দশ মিনিট। আনিসুল হাই একটু থতমত খেয়ে বলে, "জ্বি, দশ মিনিটই। বলেন আসাদ ভাই। কী অবস্থা?" আসাদুল হক মনে মনে মাথা নাড়েন। হচ্ছে না। বেরিয়ে যাচ্ছে সব। "তোমার ঐ উপন্যাসটা কেমন চলছে হাই? ঐ যে, মামা?" দুর্বল কণ্ঠে বলেন তিনি। আনিসুল হাই সন্তুষ্ট মুখে মাথা ঝাঁকায়। "জ্বি আসাদ ভাই, চলছে আর কি। করাচি থেকে ইংরেজি আর উর্দুতে বের হবে। আমি মোটে ফিরলাম করাচি থেকে।" আসাদুল হক আনিসুল হাইয়ের মুখটা দেখেন মন দিয়ে। হাই কী ভাবছে কে জানে। তার মুখে একটা হাসির মুখোশ পরা। আড়ালে তার ভাবনা বোঝার উপায় নেই। "পত্রিকাতে পড়লাম তোমার লেখায়। মাঝে মধ্যেই পড়ি।" আসাদুল হক একটু নড়ে চড়ে বসেন। "বইমেলায় খুব চলছে বইটা, নাকি?" আনিসুল হাই হাসে। মুখোশে ঢাকা হাসি। "চলছে আর কি।" আসাদুল হক সারা শরীরের শক্তি দিয়ে গোপনে ভাবেন, হাই কি ভাবছে, ওর বই নিয়ে আমি সিনেমা বানাবো? সেজন্যেই কি এতো বিনম্র সে? আনিসুল হাইয়ের দিকে তাকিয়ে তিনি বোঝার চেষ্টা করেন, তাঁর ভাবনাটা গোপন রইলো কি না। হুঁ, এবার মনে হয় কাজ হয়েছে। হাই হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে কেবল, টি-টেবিলের নিচে অল্প অল্প পা ঝাঁকাচ্ছে। "হাই, যে কারণে তোমাকে ডেকেছি। তুমি তো জানো ... আমার সময় তেমন নেই আর। আই উইল হ্যাভ টু লিভ প্রেটি সুন।" আলী সুজা গলা খাঁকারি দেয়। আনিসুল হাই গম্ভীর মুখে বলে, "আসাদ ভাই, এ ধরনের কোনো কথা বলবেন না। আপনি আরো বহু বছর বাঁচবেন। এই ধরনের চিন্তাকেই প্রশ্রয় দেবেন না। মেন্স সানা ইন করপোরে সানো। সুস্থ দেহে সুস্থ মন।" আসাদুল হক হাসিমুখে মাথা নাড়েন। "না হাই। সুস্থ দেহ নাই আর। আমার সময় প্রায় শেষ। এ কারণেই একটা অনুরোধ করতে তোমাকে ডাকলাম।" আনিসুল হাই নড়েচড়ে বসে। "বলেন আসাদ ভাই।" আসাদুল হক আনিসুল হাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন, "হাই, আমি জানি, আমি মারা গেলে তুমি একটা স্মৃতিকথা লিখবে তোমার কলামটায়। ঐ যে, প্রতি রবিবারে যেইটা লেখো।" আনিসুল হাই কাশে একটু। "জ্বি আসাদ ভাই।" আসাদুল হক বড় একটা দম নিয়ে চর্চিত শীতল কণ্ঠে বলেন, "আমার অনুরোধ, তুমি তোমার ঐ মামা উপন্যাসটার বিজ্ঞাপন আমার স্মৃতিকথার ফাঁকে গুঁজে দিও না। ধান ভানতে শিবের গীত গেও না। সুজাকে আজকে এ কারণেই ডেকেছি, যাতে একজনকে সাক্ষী রেখে তোমাকে কথাটা বলতে পারি। ও আমার আগে মরে গেলে অবশ্য সমস্যা। যাই হোক, হ্যাভ ইউ গট মাই পয়েন্ট?" আনিসুল হাইয়ের মুখটা সামান্য কালো হয়ে যায়, "জ্বি আসাদ ভাই।" আসাদুল হক বলেন, "আমি তোমাকে আঘাত দিতে চাই না। কিন্তু মরা মানুষের কান্ধে পাড়া দিয়ে নিজের মামা উপন্যাসটার ঢোল বাজিও না। ইফ ইউ নিড এনি সর্ট অব হেল্প টু গেট ইট অ্যাডভার্টাইজড, সুজা আছে এখানে, ওকে বোলো, হি উইল টেইক গুড কেয়ার অভ দ্যাট। ঠিক আছে না?" আনিসুল হাই মনমরা হয়ে কাশতে কাশতে বলে, "ঠিক আছে আসাদ ভাই।" আসাদুল হক বলেন, "তোমার ছেলেটা কেমন আছে?" আনিসুল হাই মুখ কালো করে রেখেই বলে, "জ্বি, আছে ভালো। আপনার খুব ফ্যান।" আসাদুল হক আকাশে চক্কর কাটতে থাকা চিলগুলোর দিকে তাকিয়ে বলেন, "ঠিক আছে হাই। তুমি ব্যস্ত মানুষ। তার ওপর অসুস্থ। তোমাকে আর বিরক্ত করবো না আজ।" আনিসুল হাই উঠে পড়ে। আলী সুজা তাকে এগিয়ে দিতে ওঠে। ওষুধটার নাম যেন কী? আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকেন আসাদুল হক। মনে পড়ছে না কিছুতেই। নিচে গাড়ির এনজিনের গুঞ্জন শুনতে পান তিনি। সুজা আর হাই কথা বলছে, কী কথা বলছে শোনা যাচ্ছে না স্পষ্ট। আসাদুল হক আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, সেই সাথে বিদ্যুচ্চমকের মতো ওষুধটার নাম তাঁর মনে পড়ে গেলো। ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে বারান্দার রেলিঙের সামনে ঝুঁকে পড়ে গলা চড়িয়ে ডাকলেন তিনি, "হাই! হাই, শোনো!" আনিসুল হাই মুখ তুলে তাকায়। আসাদুল হক বলেন, "ডাইক্লোফেনাক! ডাইক্লোফেনাক খেও হাই! তোমার না জ্বর? কাশি? ডাইক্লোফেনাক খেও!"
false
rg
কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল_ কিছু সত্য কথন। পর্ব এক। রেজা ঘটক ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে আমাদের বাড়িওয়ালী আমেরিকান আন্টি সকালেই জরুরী তলব করলেন। ব্যাপার কি? ব্যাপার কিছু না, বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, আমরা লেক-সার্কাসের ওই টিনের একচালা ভাড়া নেবার পর অনেক শর্তই ভঙ্গ করেছি। কি শর্ত ভঙ্গ করেছি? কথা ছিল আমরা চার জন থাকব। কে কে? আমি, বন্ধু নাসিম, বন্ধু রাজা আর বিখ্যাত ফেন্সি-পাইল এক্সপার্ট মনি'দা। কিন্তু ভাড়া নেবার পর থাকছি কে কে? আমরা চার জন তো আছিই। এছাড়া থাকছে বন্ধু-খালাতো ভাই রিয়াজ ও বন্ধু মামুন। আমাদের চালাকি টা ছিল এরকম, মনি'দা অফিসের কাজে প্রায়ই ঢাকার বাইরে থাকে। মাসে প্রায় ২৫/২৬ দিন ট্যুর থাকে মনি'দার। আর মামুনও রিসার্সের কাজে প্রায়ই ঢাকার বাইরে যায়। তো ওরা দু'জন আমাদের সঙ্গে থাকলে পার হেড ভাড়া একটু কম পড়ে। কিন্তু আমেরিকান আন্টি যেদিন রাতেই চেক করেন, সেই রাতেই অন্তঃত ছয় জনের উপস্থিতি দেখতে পান। আমরা ইনিয়ে বিনিয়ে, আমেরিকান আন্টির ছোট ছেলে মামুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে, মামুনের ওকালতিতে মোটামুটি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। শুনলাম, আন্টি বড় ছেলের কাছে আমেরিকা যাচ্ছেন, তো আমাদের চালাকি আর ধরে কে?কিন্তু আমেরিকা আন্টির ছিল এক পোষ্য বীজ বান্দর। নাম তার জামাল। বয়স বারো বছর। জামালের একমাত্র কাজই হল, আমরা কখন কি করি, সেই বিষয়ে আমেরিকান আন্টির কাছে নালিস দেওয়া। এছাড়া জামাল সকাল-সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে পানির কল ছাড়তো। আর আমাদের উপর নজরদারী করতো। তো জামাল একদিন রিপোর্ট করলো যে, রাজা আর আমি বিকালে ঘরে বসে গাঁজা বানিয়ে টেনেছি। আন্টি রাতে বাসায় ফিরে আমাদের তলব করলেন। আমরা স্রেফ অস্বীকার করলাম। বললাম, আন্টি আমরা সবাই সিগারেট খাই। জামাল তাই দেখেছে। ব্যাস, আমাদের আন্টি একটু শাসিয়ে দিলেন যে সেরকম কিছু হলে আমাদের কিন্তু বাসা ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের বন্ধু মামুনও আন্টির দলে যোগ দিল। কারণ, মামুন সিগারেটও খায় না। আর গাঁজা তো একদম দেখতে পারে না। অথচ এই মামুন অন্যত্র একাকী বাসা নেবার কথা ছিল। টিনের ছাপড়ায় থাকলে তার জাত চলে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই মামুন যাকে আমরা করুণা করে আমাদের সঙ্গে রাখলাম আর তা নিয়ে আন্টির সঙ্গে চালাকি করতে হচ্ছিল, সেই মামুন আন্টির দলে যোগ দেওয়ায়, আন্টি আমাদের শাসিয়ে চলে যাবার পর নিজেদর মধ্যে একচোট বিবাদ হয়ে গেল। বিবাদ বন্ধে মনি'দা মুরুব্বি মানুষ মামুনকে গালমন্দ করলেন। আমরা চুপচাপ গাঁজা বানিয়ে লেক-সার্কাস গালর্স স্কুলের সামনের ছোট্ট মাঠের পানির ট্যাংকির পাশে গিয়ে টেনে আসলাম। রিয়াজ এক দুই টানের বেশি কখনো দেয় না। মনি'দা দুই টানের বেশি দিলেই আউলা হয়ে যায়। আর রাজা আর আমি এই জিনিসটা ছাড়া তখন দিনই পার করতে পারি না। আমেরিকান আন্টির ছোট ছেলে মামুন কিন্তু ফেন্সি ডাইল খায়। কথাবার্তায় লাইনের লোক মনে হওয়ায় আমার আর রাজার সঙ্গে মামুনের বেশ গলায় গলায় খতির হল। মামুন আমাদের ডাইল খাওয়ায় বিনিময়ে মামুনকে আমরা গাঁজা খাওয়াই। সেই সুযোগে আমরা ভাড়া দিতে প্রায় প্রতি মাসেই একটু দেরী করি। আন্টি আমাদের উপর বেশি চড়াও হলে আন্টির ছোট ছেলে মামুন আমাদের পক্ষে ওকালতি করে। আন্টি মামুনের কথা মেনে নেয়- ছেলেগুলো ভাল। শুধু শুধু কয়টা টাকার জন্যে ওদের গালমন্দ কেন করো, মা? পরে মামুন আমাদের ডেকে নিয়ে আড্ডা দেয়। আমরা যথারীতি বিনিময় প্রথায় খাওয়া-খাওয়ি করি। লেক-সার্কাসের ওই টিনের চালার একতলার বাসার নাম ছিল পাখিকুঞ্জ। পাশের বাড়িটি মামুনের বড় চাচার। ওটার নাম ছিল শ্যামাকুঞ্জ। আমরা পাখিকুঞ্জের পেছনের টিনের চালার গাঁঞ্জাখোর বেকার ব্যাচেলর। দিন এভাবে যাচ্ছিল। একদিন মামুন গাঁজায় একটু বেশি টান দিয়ে বাড়ির মেইন গেইটে এক সিন ক্রিয়েট করলো। মামুনের বাবা দৈনিক জনকণ্ঠে চাকরি করতেন। ৫০ সিসি'র একটা লাল মটর সাইকেলে করে প্রায়ই রাত দশটার সময় আংকেল বাসায় ফিরতেন। আমরা ফিরতাম আরো পরে। সন্ধ্যায় মামুন আমাদের থেকে গাঁজা খেয়ে প্রথমে বউ পিটিয়েছে। তারপর পানির ট্যাংকির সামনে বাবার জন্যে বসে ছিল। রাতে আংকেল যখন বাসায় ঢুকছেন, মামুন তার পরিচয় জানতে চাইলো। আংকেল মামুনের নেশার ব্যাপারটি জানতেন। সঙ্গে সঙ্গে দিলেন মাইর। মামুনও লাঠি সোটা খুঁজতে পানির ট্যাংকির দিকে ছুটলো। আমরা ওই সময় এসে পরায় আংকেল চুপচাপ বাসার মধ্যে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আন্টি আমাদের তলব করলেন। ব্যাপার কি? বাপ-ছেলের ঝগড়ার মধ্যে আমরা কি করলাম? আন্টি ঘোষণা দিলেন, আমি ফেব্রুয়ারির এক তারিখ আমেরিকা চলে যাচ্ছি। তার আগেই তোমরা বিদায় হও। জানতে চাইলাম, আন্টি আপনার আমেরিকা যাবার সঙ্গে আমাদের বাসা ছাড়ার সম্পর্ক কি? আন্টি বললেন, তোমরা বাইরে থেকে আসছো কেবল, খাওয়া দাওয়া কর, তারপর আমি আবার আসছি। ঘন্টা খানেক আমাদের রান্নাবাড়া চলল। কিন্তু রাহাকে দেখলাম কুব বিমর্ষ। ঘটনা কি? আমাদের খাওয়া শেষ হবার আগেই আন্টি আবার পেছনের দরজা খুলে আমাদের মুখোমুখি হলেন। আন্টির বাসার পেছনের দরজার পাশেই আমাদের একচালায় ঢোকার দরজা। মেইন বাড়ির মেইন গেইট থেকে ঢুকে বাম পাশের ছোট্ট গলি মারিয়ে আমাদের টিনের চালার ডেরায় যাবার নিয়ম। আমরা রান্না করি টিনের চালার একেবারে ভেতরে ছোট্ট একটা পার্টিসান করা। সেখানে একটা এক চুলা ফিট করা। বাসায় ঢোকার ওই ছোট্ট গলিপথেই আমাদের জন্য একটা টয়লেট। ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে বাথরুমে যাবার নিয়ম। আমাদের ছোট্ট কিচেনের ঠিক বেড়ার ওপাশে আন্টির সার্ভেন্ট রুম। সেখানে থাকে রূপালি। রূপালি ঠিক আন্টির কাজের মেয়ে নয়। আন্টির গ্রামের মেয়ে। পরিচিত। গ্রামে প্রেম-ঘটিত কি এক কাণ্ড ঘটিয়ে রূপালির বাবার অনুরোধে আন্টির বাসায় থাকে। আন্টির শরীর মেসেজ করে দেয়। পান বানিয়ে দেয়। কাপড় গুছিয়ে দেয়। অনেক সময় আন্টির আসল কাজের বেটি ছুটিতে গেলে রূপালি রান্নাবান্নাও করে। রূপালি'র বেডরুম আমাদের কিচেন থেকে দেখা যায়। কিচেনের টিনের বেড়ায় ছোট্ট দুইটা ফুটো ছিল। সেই ফুটো দিয়েই রাজা আর রূপালি'র মধ্যে প্রেম বিনিময় চলতো খুব গোপনে। আমরা কেউ জানতাম না। বিকালে কেউ বাসায় না থাকলে পাশাপাশি দুই দরজা খুলে তারা নিকটে আসতেও কুণ্ঠাবোধ করতো না। প্রেমের ব্যাপারে যা ঘটে আরকি। কিন্তু হামাল নাকি দোকানে যাবার নাম করে ছাদে গিয়ে পানির ট্যাংকির আড়ালে লুকিয়ে ছিল। উপর থেকে জামাইল্যা রাজা আর রূপালি'র যতো প্রেম কীর্তি সব দেখেছে। রাতে আন্টি বাসায় ফিরলে জামাইল্যা সব আন্টিকে শুনাইছে। রূপালিকে বকাঝকা করেছে। সন্ধ্যা থেকে রূপালি'র চোখ ফুলে ডালিম আকার ধারণ করেছে। আন্টির কথা শেষ না গতেই মনি'দা বলল, আন্টি আপনি যা বললেন, এটা এখানেই শেষ। এখন থেকে আর কিছু হবে না। আপনারে গ্রান্টি দিলাম। আর রাজাকে আন্টির সামনে ধমক মারলেন মনি'দা, রাজা, তুমি রূপালি'র সাথে কিসের আলাপ মারাও? আমরা আন্টিকে বুঝানোর জোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আন্টি রাজি নয়। আন্টি আমেরিকা যাবার আগেই বাসা খালি দেখতে চান। মিটিং ওখানেই শেষ হল। ২৬ জানুয়ারি ২০০২ রাতেই বাসা ছাড়ার নোটিশ পেয়ে আমরা সবাই রাজার উপর মহা ক্ষ্যাঁপা। কিন্তু উপায় নাই গোলাম হোসেন। বাসা আমাদের ছাড়তেই হবে। রাতেই রিয়াজ আর নাছিম ফোনে বন্ধু মুকুলকে ঘটনা সব বললো। জবাবে মুকুল বললো, আমরা তো কাঁঠালবাগান আছি। তোরা চলে আয়। কিন্তু রাজা যেনো না আসে। মামুন ঘোষণা দিল, সে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। অতএব আপাতত আগামী ছয় মাসে রিসার্সের কারণে ঢাকায় বাসা দরকার নেই। রাজা মগবাজার নয়াটোলা শ্বশুড়ের বাসার পাশে বাসা খুঁজতে লাগল। মাঝখান দিয়ে বাটে পরলাম মনি'দা আর আমি। পরের দিন রিয়াজ আর নাসিম মুকুলদের কাছে কাঁঠালবাগান চলে গেল। রাজা রাতে আর ফিরলো না। মনি'দা তিন তারিখ পর্যন্ত ঢাকায় আছে। এর মধ্যে বাসা খুঁজে না পেলে আমাদের দু'জনের ঠিকানা স্রেফ রাস্তা বা হোটেল। চারদিনে ঢাকায় ব্যাচেলর বাসা খুঁজে পেতে বড় কপাল লাগে। আমাদের মত ফাঁটা কপালের সেই ভাগ্য নেই। ৩১ জানুয়ারি রাত ১২ টায় রিয়াজকে ফোন করলাম। রিয়াজ, বাসা তো পালাম না। জবাবে রিয়াজ বললো, মুকুল আসুক। মুকুলকে বলি। ওই সময় মুকুল আর নাছিম বাসায় ঢুকেছে। রিয়াজ বললো, রেজা, আমি দশ মিনিট পরে তোমারে কল ব্যাক করতেছি। মনি'দা আর আমার ঘুম হারাম। রিয়াজ কল ব্যাক করতে ভুলে গেছে। কারণ, নাকি কয়েক টান বেশি পড়েছিল। রাত দেড় টায় আমি আবার ফোন করলাম রিয়াজকে। রিয়াজ, কিছু তো জানাইলা না? রিয়াজ বললো, দ্যাখো দেহি কারবার? মাল টাইনা তো তোমারে কল করতেই ভুলে গেছি। অসুবিধা নাই। মুকুল কইছে। সকালে জিনিসপত্র নিয়া চলে আসো। বক্স খাট ছাড়া বাকি ওই চড়াই খাট আনার দরকার নাই। আমার সেমি-ডাবল বক্স খাট। মনি'দার ঢাকা কলেজের সামনের চড়াই মার্কা তিনশো টেহার খাট। অগত্যা সকালে মনি'দার খাট আমরা আমেরিকান আন্টির কাজের বেটিকে গিফট করে বাকি তল্পি-তল্পাসহ কাঁঠালবাগানের বিখ্যাত আমিন নিলয়ে প্রবেশ করতে করতেই বারোটা বাজলো। আমিন নিলয়ের মুকুলের বাসার দরজা খোলা। কিন্তু কারো কোনো সাড়াশব্দ নাই। রিয়াজকে নিচ থেকে ফোন করলাম। ফোন রিসিপ হল না। উপরে উঠে দরহা ঠেলে ঢুকে দেখি, সামনের রুমের ফ্লোরে পাশাপাশি লেপ-কাঁথা মুড়ি দিয়ে পাঁচ জন ঘুমিয়ে। নাছিমের লুঙ্গি দেখে নাছিমকে জাগালাম। নাছিমের সঙ্গে আলাপের জের ধরে রিয়াজও উঠে গেল। আমার আসতে দেরি দেখে মনি'দাও উপরে আসলো। মুড়ি দেওয়া কাঁথা সরিয়ে উঠে বসে হাত মিলালো পবন আর অজয়। পবন বললো, সিগারেট থাকলে দাও মিঞা। তোমাদের বরণ করার জন্যে আমরা বাসায় বসে আছি। অজয় সিগারেট নিয়ে বাথরুমে গেল। ফিরে এসে দেখে পবন হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে বসেছে। অজয়কে বললো, তবলাটা ধর অজয়। রেজা আর মনিকে স্বাগক জানিয়ে এখন গান-বাজনা হবে। মনি'দা চিফ গেস্টের মত সেখানেই বসে পড়লো। নাছিম ভ্যানওয়ালাকে দেখিয়ে দিল কোথায় কি রাখবে মাল জিনিস। দুপুর দুইটা পর্যন্ত টানা গান বাজনা হল। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার এক পর্যায়ে ঘরে ঢকুলো বসনিয়ান হ্যারি। হ্যারি মুকুলদের সঙ্গে থাকে। মাঞে মাঝে কোথায় যেনো হারিয়ে যায়!পবন, হ্যারিকে একটা ধমক লাগালো- ওই মিঞা, তোমার তো দুপুরের মিল নাই। জবাবে হ্যারি বললো, আমি তোমাদের মত দুপুরে পেট পুরে খাই না। আমার জন্য একটু ভাত রাখো। আমি ওটা ভেজে খাব। সারা বিকাল আমরা আড্ডা মারলাম। চরম গাঁজাখোরের সম্রাজ্যে প্রবেশ করলাম। মনি'দা একটু ভয় পেয়ে গেল। কানে কানে আমাকে বললো, কপালের নাম গোপাল মহাশয়, যাহা সই, তাহা সয়। রাতে মুকুল আসার পর আবার আড্ডা জমলো। শুরু হল জীবনের আমিন নিলয় পর্ব। এই পর্বেই পালাকারের জন্ম ২০০২ সালের ১৪ এপ্রিল, বাংলা ১ লা বৈশাখ ১৪০৯।।...............................চলবে......................
false
rn
বাসর রাতে বিড়াল মারা একদা বাগদাদের বাদশাহ এর ছিল দুইজন কন্যা। এই দুই রাজকন্যা ছাড়া তার ছিলনা কোন রাজপুত্র। রাজকন্যা দুজন ছিল বাদশা এর অনেক অনেক আদরের। সবসময় দুই রাজ কন্যার জন্যে দশ পনেরো জন দাসী প্রস্তুত থাকতো। কখন কোনো রাজকন্যার কি দরকার হবে আর তারা হুকুম পালন করবে। দুই রাজকন্যারই একটা করে বিড়াল ছিলো। বিড়াল দুটো ছিলো তাদের সবসময় এর সাথী। তারা খেতে বসলে এমনকি ঘুমাতে গেলেও ঐ বিড়াল দুটো সাথে সাথে থাকত। দেখতে দেখতে দুই রাজকন্যাই একসময় বড় হয়ে গেলো। তারা বিবাহ উপযুগি হয়ে গেলো। তারপর বাদশাহ এর চিন্তা বাড়তে লাগল, কারন এই দুই রাজকন্যার জামাইদের উপরেই তার এই বিশাল রাজ্যের দায়িত্ত দিয়ে যেতে হবে। সুতারাং এমন যোগ্য দুজন ছেলে খুজে বের করতে হবে। যারা এই গুরু দায়িত্ব ভালো ভাবে পালন করতে পারবে। সারা রাজ্যে অনেক খোজাখুজি করে এমন দুইভাই পাওয়া গেলো যাদের কাছে রাজকন্যাদের বিয়ে দেয়া যায় বলে বাদশাহ এর মনে হল। তারপর অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হল দুই রাজকন্যার একসাথে। অতঃপর বাদশাহ দুই মেয়ে জামাইকে সমান ভাবে রাজ্যের দায়িত্য ভাগ করে দিলেন। এরপর দুই ভাই রাজ্য চালনা নিয়ে অনেক ব্যাস্ত হয়ে পরলো। দুইজনের অনেক দিন দেখা সাক্ষাত নেই। হঠাত করেই রাজ্যের একটা বড় অনুষ্ঠানে দুই ভাই এর দেখা হয়ে গেলো। তারপর দুইজনই আবেগে আপ্লুত হয়ে পরলো এতদিন পরে ভাইএর সাথে দেখা এই জন্যে। তারপর অনেক কথায় কথায় ছোট ভাই জিজ্ঞাসা করলো তাদের বৌ মানে রাজকন্যাদের কথা। তখন বড় ভাই বলল হুম, বড় রাজকন্যা তাকে অনেক সমীহ করে চলে। তার কোন কাজই করা লাগে না। ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব শুনে ছোটভাই বলল ছোট রাজকন্যা তার কোন যত্নই করে না। সবসময় রাগা রাগি করে এমনকি মাঝে মাঝে গায়েও হাত তুলে। তখন বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করল কিভাবে রাজকন্যাকে বশ করল? তখন বড় ভাই বলল, রাজকন্যার বিড়ালের কথা। ছোট ভাই বলল হ্যাঁ ওই বিড়ালকে তো আমার চাইতেও বেশি যত্নে রাখে। বড়ভাই বলল, হ্যাঁ, প্রথম দিন বাসর রাতে ঘরে ঢুকেই আমি একটা তরবারি দিয়ে ওই বিড়ালের ওপরে দিলাম এক কোপ। ব্যাস একবারে দুইভাগ। এই ঘটনায় বড় রাজকন্যা ভাবলো আমি মনেহয় অনেক বড় কোন বীর, এরপর থেকেই সে আমাকে অনেক সমীহ করে চলে। তো এই কথা শুনে ছোটভাই মনে মনে ভাবলো ঠিক আছে আজকে বাড়ী ফিরেই বিড়ালের জীবন নাশ করা লাগবে। তারপরে আবার অনেকদিন পরে দুই ভাই এর দেখা। এবার ছোট ভাইএর শরীরে অনেক কাটা দাগ। বড়ভাই জিজ্ঞাসা করলো কি খবর কোন যুদ্ধে আহত হয়েছিলে নাকি? ছোটভাই বলল, না ভাই তোমার ঘটনা শুনে আমি ওইদিন বাসায় গিয়ে তরবারি নিয়ে এক কোপে বিড়ালটাকে দুইভাগ করে দিলাম। কিন্তু আমার বেলায় ঘটনা উলটো হল। আমাকে এর শাস্তি সরূপ একমাস কারাবন্দি আর অত্যাচার ভোগ করা লাগলো। তখন বড়ভাই বলল, বিড়াল বাসর রাতেই মারতে হয়, পরে মারলে কোন লাভ নাই।(সংগ্রহ )
false
rn
পহেলা বৈশাখ পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুনের স্বপ্ন রচনা করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৈশাখী গান গেয়ে নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাই আমরা। মিষ্টি মুখ, পান্তা ইলিশ আর নতুন দেশি পোশাকে আমরা এই দিনটিতে একদিনের জন্য হলেও পুরো বাঙালি হয়ে যাই।পহেলা বৈশাখ আর পান্তা ইলিশ যেনো সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষণ এখন পান্তা ইলিশ। তাও আবার মাটির সানকিতে। এখন তো অনেকে নিজের বাড়িতেই এই বিশেষ খাবারের আয়োজন করছে। আর এ কারণেই বৈশাখ আসার আগেই ইলিশের দাম চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্ব শেরা উৎ‍সবের দিন ৷ পুরাতনকে ভুলে নতুনকে আলিঙ্গন করার দিন ৷ এদিন গোটা বাঙালি আলোড়িত হয়, আন্দোলিত হয় নতুনের শক্তিতে উদযেবিত হয়ে ৷সবচেয়ে রঙচঙে ও আনন্দঘন নববর্ষ উদযাপিত হয় ঢাকায়। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় রমনার বটমূলে। ছায়ানটের শিল্পীরা বৈশাখের আগমনী গান গেয়ে স্বাগত জানায় নববর্ষকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলায় একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইনস্টিটিউটের সকল শিক্ষক-ছাত্ররা মিলে আনন্দ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। চারুশিল্পীদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নববর্ষের আহ্বানকে করে তোলে নয়ন-মনোহর ও গভীর আবেদনময়। এদিন শহীদ মিনার, টি.এস.সি এবং চারুকলা সহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে।শক রাজবংশকে স্মরণীয় করে রাখতেই ৭৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রবর্তিত শকাব্দ (শক বর্ষপঞ্জির) থেকে বাংলা সনের নামগুলি এসেছে। বিভিন্ন তারকারাজির নামে বাংলা মাসগুলির নামকরণ করা হয় সেগুলো হলো: বিশাখা থেকে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা থেকে জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, অগ্রাইহনী থেকে অগ্রহায়ণ, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফল্গুনি থেকে ফাল্পুন, এবং চিত্রা থেকে চৈত্র। অগ্রহায়ন মাসের নামের আরেকটি ব্যাখ্যা হলো: অগ্র অর্থ প্রথম, হায়ন অর্থ বর্ষ বা ধান। আগে এই মাস থেকেই বছর গণনা আরম্ভ হতো কিম্বা এই সময়ে প্রধান ফসল ধান কাটা হতো। তাই এই মাসের নাম হয় অগ্রহায়ণ। ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলা ইনস্টিটিউট আয়োজন করে পহেলা বৈশাখের এ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবণ এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো নয় রং-বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ।বাংলা নববর্ষকে উৎসব হিসেবে পালন শুরু হয় আকবরের সময় থেকেই। ওই সময় নববর্ষ পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষি কাজের, আর কৃষিকাজ হলো ঋতুনির্ভর। সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষ দিন অবধি জমিদার, তালুকদার ও অন্যান্য ভূ-স্বামীদের খাজনা শোধ করতো। পরদিন নববর্ষে ভূ-স্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা ও অন্যান্য আয়োজন করা হতো। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পহেলা বৈশাখ পালন হতো খাজনা আদায়ের উৎসব হিসেবে। পরে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে পহেলা বৈশাখ হয়ে ওঠে আনন্দময় এক উৎসব। নববর্ষ পালিত হতে থাকে শুভদিন হিসেবে।জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটা ছিল পুরোপুরিই ব্যবসায়িক ব্যাপার। ব্যবসায়িরা তাদের পুরনো হিসাবপাতি সম্পন্ন করে নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন, এটাই ছিল হালখাতা। হালখাতা উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টিমুখ করাতেন ও নতুন করে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এই উৎসব আজও ভারতের কলকাতা ও আমাদের গ্রামবাঙলায় প্রচলিত আছে।পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান বৈশাখী মেলা। কোন কোন জায়গায় এই মেলা চলে সপ্তাহ জুড়ে। এক হিসেবে দেখা গেছে, সারা বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ ও বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২০০টি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পড়ে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটমুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবার পান্তা ইলিশের ব্যবস্থাও থাকে। গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী ৷কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া বৃহৎ।’ আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়।হিজরী ৯৬৩ সনে চন্দ্র সনকে সৌর সনে রূপান্তর করে বাংলা সনের প্রচলন করা হয়। সেই মোঘল আমল থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্র মাসের শেষে পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা পহেলা বৈশাখে ‘‘হালখাতা’’ করতেন। ঈশা খাঁর সোনারগাঁয় ব্যতিক্রমী এক মেলা বসে, যার নাম 'বউমেলা'। জয়রামপুর গ্রামের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর ধরে পয়লা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা পাঁচ দিনব্যাপী চলে। প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের নিচে এই মেলা বসে, যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুজো হিসেবে এখানে সমবেত হয়। বিশেষ করে কুমারী, নববধূ, এমনকি জননীরা পর্যন্ত তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনা করেন। সন্দেশ-মিষ্টি-ধান দূর্বার সঙ্গে মৌসুমি ফলমূল নিবেদন করে ভক্তরা। পাঁঠাবলির রেওয়াজও পুরনো। বদলে যাচ্ছে পুরনো অর্চনার পালা। এখন কপোত-কপোতি উড়িয়ে শান্তির বার্তা পেতে চায় ভক্তরা দেবীর কাছ থেকে। বউমেলায় কাঙ্ক্ষিত মানুষের খোঁজে কাঙ্ক্ষিত মানসীর প্রার্থনা কিংবা গান্ধর্ব প্রণয়ও যে ঘটে না সবার অলক্ষে, তা কে বলতে পারবে। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ।
false
rg
উপকূলের দিকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’_ সবাই সতর্ক থাকুন।। ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ উপকূলের দিকে আরো এগিয়ে আসায় দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, সোমবার বেলা ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। বাংলাদেশের উপকূল জুড়ে উত্কণ্ঠা: ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ধেয়ে আসার খবরে দেশের উপকূলীয় এলাকায় উত্কণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজারে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির তীব্রতা কেমন হতে পারে বা কবে কখন এটি বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে সে সম্পর্কে আবহাওয়া বিভাগ গতকাল পর্যন্ত কিছু জানাতে পারেনি। গত রাতে আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মহাসেন উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মহাসেন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সমুদ্রে চলাচল না করতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় চট্টগ্রামে সমন্বিত কমিটি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন'-এর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম আবদুল কাদেরকে এ বিশেষ কমিটির প্রধান করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটিতে সেনাবাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধিদের সদস্য করা হয়েছে। গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান বলেন, 'বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জীবনরক্ষায় ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপকূল জুড়ে অজানা আতংক: ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রবেশের খবরে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা, কুয়াকাটা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী এলাকায় আতংক দেখা দিয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রবিবার কক্সবাজারে তীব্র গরম অনুভূত হয়েছে। বাতাস চলাচলও একেবারেই কম। আবহাওয়া গুমোট হয়ে পড়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা পর্যায়ের সকল সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুতি নিচ্ছে। রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার থেকে কক্সবাজারের নিচু এলাকায় মাইকিং করা হবে। এছাড়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ১১৩টি জরুরি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. কাজল কান্তি বড়ুয়া। এদিকে উপকূলের দিকে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার খবরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে লাল পতাকা পুঁতে দেয়া হয়েছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সমুদ্র শান্ত দেখা গেছে। সমুদ্রে মাছ ধরারত ট্রলারসমূহ গভীর সাগর থেকে উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’: দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি এখন ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এসকাপ (ইএসসিএপি) প্যানেল এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ‘মহাসেন’। এটি শ্রীলঙ্কান শব্দ। তৃতীয় শতকে শ্রীলংকা শাসন করা রাজা মহাসেনের নাম অনুসারে এ ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে 'মহাসেন'। তথ্য সংরক্ষণ ও বোঝানোর সুবিধার জন্যে ঞড়গুলোর নাম আগেই ঠিক করে রাখা হয়। ৪ মে ২০১৩ সালে এটি বঙ্গোপসাগরের নিকোবর দীপপুঞ্জের অদূরে নিম্নচাপ আকারে ঘনীভূত হতে শুরু করে। ৮ মে ২০১৩ থেকে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়টির উৎপত্তিস্থলের অবস্থান ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ (শনিবার) সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়-কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-কেন্দ্রের কাছে সাগর খুব উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৯৯৬ কিলোমিটার। জয়েন্ট তাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার (জেটিডব্লিউসি) -এর মতে ঘূর্ণঝড়টি বর্তমানে ২.৫ টি মাত্রার তাইফুন আকার ধারণ করেছে। ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা বা ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে শক্তিশালী হারিকেন আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে ১৩ মে বিকাল নাগাদ মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এবং ১৬ মে সকালে বাংলাদেশের তৎসংলগ্ন উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে 'ইয়োলো সিগন্যালের' তাইফুন আকারে রয়েছে। তবে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অগ্রসর হতে হতে ঘূর্ণিঝড়টি 'রেড সিগন্যালের' শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বঙ্গোপসাগরের সকল সমুদ্রবন্দরকে আইএমডি বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা সকল ট্রলার ও নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলে নিরাপদ স্থানে থাকার অনুরোধ করেছে। কিন্তু ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সাইক্লোনের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, তা আগামী মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং এর সংলগ্ন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে। এই সময় বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ১৬৬ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমান বাহিনীর যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। 'ঘূর্ণিঝড় মহাসেন' যেনো আমাদের মহা বিপদে না ফেলতে পারে সেজন্য আগাম সতর্ক হওয়া খুব জরুরী। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও মায়ানমারের আবজহাওয়া অধিদপ্তরগুলো বারবার সবাইকে সতর্ক বার্তা পাঠাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর 'ঘূর্ণিঝড় মহাসেন'কে এখনো তেমন আমলে নিচ্ছে না। ভয়টা সেখানে। অন্যরা সবাই বলছে সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দিতে এবং উপকূলের মানুষজন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে। আর আমরা বলছি, সাবধানে উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচল করতে। আর আমাদের তিনটি সমুদ্রবন্দরকে তিন নাম্বার স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর জন্য তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি গড়ে ১০ কিলোমিটার করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূলের কাছাকাছি এসে এটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার করে বা তার বেশি গতিতে অগ্রসর হতে পারে। ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। নিজ বাড়ি থেকে সাইক্লোন সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার আগে যা যা জরুরী: ১. সাথে নেবার জন্য একটি জরুরী কিট প্রস্তুত রাখুন। জরুরী কিটে রাখুন পোর্টেবল ব্যাটারি, ছোট রেডিও, টর্চলাইট, অতিরিক্ত ব্যাটারি; ম্যাচ বাক্স/ম্যাচলাইট, মোমবাতি, জলরোধী ব্যাগ, প্রয়োজনীয় হাল্কা বিছানাপত্র, পাস্পিং বালিশ, হালকা কম্বল ইত্যাদি। ২. সাথে নেবার জন্য একটি জরুরী ফার্স্ট এইড বক্স। জরুরী ওষুধ বক্সে রাখনু প্রয়োজনীয় খাবার স্যালাইন, প‌্যারাসিটামল, ফ্লাজিল, এন্টাসিড, গ্লুকোজ, এবং আপনার বর্তমানে প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী। ৩. সাথে নেবার জন্য একটি জরুরী খাবার বক্স । জরুরী খাবার বক্সে রাখুন পানির বোতলে খাবার পানি, শুকনো খাবার বা টিনজাত খাবার, যেমন চিড়া-মুড়ি, গুড়, নাড়ু ইত্যাদি। ৪. যদি সম্ভব হয় সাথে রাখুন তাহলে জ্বালানী ল্যাম্প, পোর্টেবল চুলা, রান্নার হাড়ি, কিছু চাল, ডিম, গোলআলু ইত্যাদি। ৫. যদি আপনার কোনো পোষা প্রাণী থাকে তাহলে সঙ্গে নেওয়া সম্ভব হলে নিতে পারেন নতুবা তাকে ছেড়ে দিন। কোনো অবস্থায় ছেড়ে যাবার আগে এদের বেধে রাখবেন না। বেধে রাখলে এরা নিশ্চিতমৃত্যুর সন্মুখীন হতে পারে। ৬. বসবাসের ঘরে আপনার জরুরী বা মুল্যবান দ্রব্যসামগ্রী অখবা ভারী বস্তুগুল একত্রে বড় একটি শক্তিশালী আলমারিতে রাখতে পারেন। নতুবা যদি সম্ভব হয় পলিথিন মুড়িয়ে ঘরের মেঝেতে মাটিতে গর্ত করে রেখে দিন। ফিরে এসে আবার তুলে নিতে পারবেন। ৭. বাড়ি ছাড়ার আগে ঘরের সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংযোগ অবশ্যই বিচ্ছিন্ন করুন। ৮. সাইক্লোন সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার আগে বাড়ির ও আশে পাশের শিশু বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মায়ের খোঁজ নিন। সম্ভব হলে তাঁদেরকে আপনার সাথে যাবার জন্যে সাহায্য করুন। ৯. সাইক্লোন সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে মহিলা ও শিশুদের একত্রে থাকার সুযোগ করে দিন। ১০. যতোটা সম্ভব আপনার পরিবারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। ১১. নিয়মতি আবহাওয়ার পূর্বাভাষ শুনুন এবং জরুরী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত টিমের সঙ্গে বা ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন। ১২. সাইক্লোন সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার সুযোগ না পেলে কাছাকাছি বড় রাস্তা, ভেড়ি বাঁধ, এবং উঁচু সড়কে আশ্রয়গ্রহন করুন। আমাদের আক্কেল!! আমাদের কখন আক্কেল হবে? যখন আর সময় থাকবে না, নিরাপদ স্থানে চলে যাবার মত সুযোগ থাকবে না, তখন রাতারাতি ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত দেখালে কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসের পরিমাণ কমানো যাবে না। আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরে যারা চাকরি করেন, তাদেরকে আরো সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও আগাম সঠিক পরামর্শ দেবার জন্যে অনুরোধ রইল। নইলে সময় মত আপনাদের সিগন্যাল যথাযথ না হলে সেই মাশুল সাধারণ জনগণের উপর দিয়ে খুব তীব্র আকারে বয়ে যাবে। সবাইকে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন থেকে নিরাপদ স্থানে নিরাপদে থাকার জন্যে আকুল আবেদন করছি। মঙ্গলবার কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়। অতএব সাধু সাবধান। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন থেকে সাবধান। উপকূলীয় অন্যান্য জেলা কি করছে? নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরিশাল, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষিরা জেলার আগাম প্রস্তুতি সম্পর্কে মিডিয়ায় কোনো খবর নেই। কেবল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা বিশেষ টিম গঠন করেছে। ওইসব জেলার ডিসি সাহেবরা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছেন? যাতে মহাসেন আসলে পরে ত্রাণ লুটতে সুবিধা হবে? আপনাদের কাণ্ডজ্ঞান কবে হবে? আপনাদের একটিভিটি দেখতে পাচ্ছি না কেন? ওই সব জেলায় কি সরকারের কোন মন্ত্রী বা স্থানীয় সংসদ সদস্য নেই। থাকলে তাদের এখনো কোনো একটিভিটি নেই কেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় মহাসেন অপেক্ষা করবে না। কিন্তু আপনার মন্ত্রী সাংসদরা, আপনার ডিসি এসপিরা আপনার মহানির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। আপনি মহাসেন নিয়ে জরুরী নির্দেশ পাঠাতে দেরি করবেন না। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন যদি সিডর বা আয়ালাকেও হার মানায়, তখন আমাদের বাঁচার আর পথ থাকবে না। তাই সময় ক্ষেপণ না করে দয়া করে এখনই করনীয় ঠিক করুন। সবাই সতর্ক থাকুন। সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৩
false
ij
গল্প_ পরিরা যখন নামল হনুমানের রূপ ধরে সাদা ভূতটা অশথ গাছের ডালে ঝুলে ছিল। কোনও কারণ ছাড়াই। মানে, সাদা ভূতটা অশথ গাছের ডালে এমনি-এমনিই ঝুলে ছিল। ওই সাদা ভূতটা কিন্তু যখন-তখন নিজের ইচ্ছে মতন আপন খেয়াল খুশি মতন যে কোনও রূপ ধরতে পারে। এই এখন যেমন সাদা ভূতটা একটা হনুমানের রূপ ধরে অশথ গাছের ডালে ঝুলে আছে। অশথ গাছটা ছিল একটা ছোট্ট নদীর ধারে। সেই নদীর নাম ঝিলিমিলি। ঝিলিমিলি নদীর তীরে বালুচর। বালুচর যেখানে শেষ সেখানেই ঘাসের বনের শুরু। আবার ঘাসের বন যেখানে শেষ অশথ গাছটা ঠিক সেখানেই । আর হ্যাঁ, অশথ গাছটা মস্ত বড় । এই অশথ গাছেই কুটুস নামে একটা কাঠবেড়ালী, চিরি নামে একটা ফিঙ্গে পাখি, গড়ান নামে একটা দাঁড়কাক, ভুতুম নামে একটা কাছিম আর লালসারি নামে পিঁপড়ের দল বাস করে । এখন রাত্রি বলে ওরা সবাই ঘুমিয়ে আছে। কেবল গড়ান নামে দাঁড়কাকটা জেগে। আর সাদা ভূতটাও জেগে। রাত যতই বাড়ে ততই ওই সাদা ভুতটার চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে যায় কি না তাই। হ্যাঁ, ভূতেদের এমনই নিয়ম। মানে, অন্তত ওই সাদা ভূতের অমনই নিয়ম। সময়টা এখন রাতদুপুর। সময়টা এখন রাতদুপুর হলেও কিন্তু চারিদিকে মোটেও ঘুটঘুটে অন্ধকার নেই। বরং সারা আকাশে ছড়িয়ে আছে চাঁদের দুধ-সাদা আলো । আর ওই নীল আকাশের মাঝমধ্যিখানে ভেসে রয়েছে রুপার থালার মতন মস্ত একটা গোল চাঁদ। সেই চাঁদ থেকেই তো রুপালি আলো গলে গলে পড়ছিল ঝিলিমিলি নদীটার ওপর। তাইই ঝিলিমিলি নদীর দুপাশটা আজ রাতে ঝলমলে জোছনায় ভরে রয়েছে। এইরকম সময়েই তো পরিরা নেমে আসে ঝিলিমিলি নদীর পাড়ে, বালুচরের ওপর। পরিরা আসে পরির দেশ থেকে। চাঁদের দেশের পাশেই তো পরির দেশ। চাঁদের দেশের পাশ ঘেঁষে আকাশপথ দিয়েই তো যেতে হয় পরির দেশে। পরিরা যখন দলবেঁধে আকাশ থেকে নীচে নামে তখন কিন্তু আকাশে মস্ত একটা গোলপানা পূর্নিমার চাঁদকে থাকতেই হয় । হ্যাঁ, এটাই নিয়ম। ঘোর অমাবশ্যার রাতে পথ হারিয়ে ফেলার ভয় থাকে বলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে পরিদের নীচে নামা নিষেধ। হ্যাঁ, শুধুমাত্র পূর্নিমার রাতেই পরিরা পৃথিবীতে নেমে আসতে পারে। হ্যাঁ, এটাই নিয়ম। আর, কত রকম যে পরি হয়। লাল পরি, নীল পরি, হলুদ পরি, বাদামি পরি, খয়েরি পরি। খয়েরি পরি? হ্যাঁ, এমনকি খয়েরি পরিও হয় কিন্তু। ওরা সবাই হাত ধরাধরি করে গান গাইতে গাইতে দল বেঁেধ আকাশ থেকে নেমে আসে নীচে। অশথ গাছের ডালে হনুমানের মতন ঝুলে থাকা সাদা ভুতটা কিন্ত পরিদের এতসব ব্যাপারস্যাপার জানে না। এই ঝিলিমিলি নদীর পাড়ের দেশটায় এক মাসও হয়নি ও এসেছে । এক মাস আগে সাদা ভূতটা তা হলে কোথায় ছিল? এক মাস আগে ওই সাদা ভূতটা ছিল বড় একটা শহরে। তা হলে ও এই এই ঝিলিমিলি নদীর পাড়ের দেশটায় কেন এল? জানই তো শহরে কত রকমের ঝক্কিঝামেলা। এই ধর ট্রাফিক জ্যাম, গাড়িঘোড়ার ভিড়, তার ওপর লোকজনের ভিড়, তার ওপর ইলেকট্রিকের তার, ইলেকট্রিকের আলো। সন্ধ্যের পর শহরের বাড়িঘর আর দোকাপাটে জ্বলে ওঠে নানা রকম রঙবেরঙ-এর ঝলমলে আলোর নিয়ন সাইন। জান তো ভূতেরা কিন্তু রাত্রিবেলা ইলেকট্রিকের আলো একেবারেই সহ্য করতে পারে না। ওই অশথ গাছের ডালে ঝুলে থাকা সাদা ভূতটা তো আরও পারে। সেজন্যই তো সাদা ভূতটা পালিয়ে এল ঝিলিমিলি নদীর নিরিবিলি পাড়ে। তা, এই ঝিলিমিলি নদীর পাড়ের এই নিরিবিলি দেশটা কিন্তু বেশ। বড় শান্ত আর নির্জন। এখানে এসে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে সাদা ভূতটা। সেজন্যই তো ও মনে মনে বলল, এখানে এসে ভালই আছি আমি। সময় পেলেই অশথ গাছের ডালে ঝুল খাচ্ছি আর নদীর পাড়ে ঘাসের বনে লুকিয়ে থাকছি। আমার যা খুশি তাই করছি। এই যেমন এখন আমি অথশ গাছের ডালে হনুমানের মতন ঝুলে আছি । আর একটু পরেই যাব ঝিলিমিলি নদীর ধারে বড় বড় ঘাসের বনের ভিতর। ওই বড় বড় ঘাসের বনে যাওয়ার পর সাদা ভূতটা কী রুপ ধরবে তা এখনও ঠিক করেনি ও । হয়তো সে তখন হয়ে যেতে পারে একটা কাঠবেড়ালি কি একট ময়না পাখি। হ্যাঁ, সাদা ভূতটা যে কত রুপই না ধরতে পারে। ওদিকে আকাশটা আজ জোছনায় ভরে আছে বলেই পরিদের ছোট্ট দলটা আকাশপথ ধরে ধরে ধীরে ধীরে নেমে আসছিল নীচে। একেবারে চাঁদের কোল ঘেঁষেই নেমে আসছিল ওরা । আর তাতেই ওদের ছোট্ট শরীরে চাঁদের হলুদ কিরণ লেগে যাচ্ছিল। আর তাতেই হলুদ পরিকে যেন আরও একটু বেশি হলুদ লাগছিল। সেজন্য লাল পরি তো বলেই ফেলল, ভাই হলুদ পরি, তোকে যে আজ আরও হলুদ লাগছে দেখতে। হলুদ পরিটা উড়তে উড়তে এক টুকরো সাদা মেঘের ভিতরে ঢুকে পড়েছিল। সাদা মেঘকে ও ভেবেছিল আইসক্রীম। তাই কামড়ে দিল। ভুল বুঝতে পেরে আবার দলে ফিরে এল। ঠিক তক্ষুনি লাল পরির কথাটা ওর কানে গেল। তখন হলুদ পরি বলল, লাগবে না? আমরা যে চাঁদমামার হলদেটে আলোর মধ্য দিয়ে উড়ে যাচ্ছি। দেখ্ না, নীল পরিকেও কেমন নীল নীল লাগছে। সবাই একসঙ্গে নীল পরির দিকে তাকাল। হ্যাঁ, সত্যিই তো নীল পরিকে আজ যেন একটু বেশিই নীলাভ লাগছে। নীল পরির নাম রাকা। রাকার আজ ভীষন মন খারাপ। কেন? কারণ রাকা আজ আম্মুর কাছে বকুনি খেয়েছে। কেন? রাকা আজ বিকেলে দুধ খায়নি, তাই। জান তো, ওরও না তোমাদের মতোই দুধ খেতে মোটেও ভালো লাগে না, তাইই ও বিকেলবেলায় দুধ খেতে চায়নি। এই জন্যেই তো আম্মু বকল। এই জন্যেই তো রাকার এখন ভীষনই মন খারাপ লাগছে। নীচে নামতে নামতে রাকা ভাবল, পরিদের দেশটা মোটেই ভালো না। দুধ না খেলে পরির দেশের আম্মুরা বকে। আর ওই নীচের পৃথিবীটা কী সুন্দর। নীল রঙের। ঠিক যেন আমার গায়ের রঙের মতনই রঙ। এর ওপর থেকে ওই নীল-নীল গোল পৃথিবীটাকে স্বপ্নের দেশের মতন লাগছে। হ্যাঁ, তাই। এখন থেকে আমি ওই স্বপ্নময় নীলাভ পৃথিবীতেই থাকব। ঝিলিমিলি নদীর পাড়ে বালুচরে নেমেই আমি ঘাসের বনের মধ্যে লুকিয়ে যাব, হ্যাঁ, আমি তাইই করব। আমি আর কখনোই পরির দেশের রানিবাড়িতে ফিরে যাব না। হ্যাঁ। কিন্তু, পরিদের দেশের রাজবাড়ি না বলে রানিবাড়ি কেন বলল রাকা? রানিবাড়ি- এই কথাটা কেমন অদ্ভুত তাই না? সেটাই এখন তোমাদের খুলে বলছি। আসলে পরির দেশের রাজ্যটা শাসন করেন একজন রানি। রাজা নয় । সেজন্যই পরির দেশের রাজপ্রাসাদের নাম রানিবাড়ি, রাজবাড়ি নয়। ভারি মজার, তাই না? সে যাই হোক। খানিক বাদে পরিদের দলটা এসে নামল ঝিলিমিলি নদীর পাড়ে। নদীর ধারেই বালুচর। চাঁদের আলোয় বালুচরটা যেন দিনের বেলার মতো হয়ে আছে। নদীর ওপার থেকে শীতল মিষ্টি বাতাসেরা ছুটে এসে লুটোপুটি খাচ্ছিল বালুচরের ওপর। তাতে অবশ্য সামান্য ঘূর্ণির মতন উঠছিল। তবে গান গাওয়ার জন্য আর নাচবার জন্য এমন জায়গা আর কটা আছে বল? সেই জন্যই তো বালুচর নামার পরপরই গান ধরল সুকন্ঠি সবুজ পরি: আমরা যে ভাই পরির দল থাকি পরির দেশে, রাত ফুরোলেই চলে যাব চোখের নিমিষে । গান গাইতে গাইতে সবুজ পরি মাথা দুলিয়ে হাততালিও দিচ্ছিল। অন্য পরিরাও সব সবুজ পরির ঘিরে ঘিরে নাচছিল। রাকা কিন্তু ওদের সঙ্গে গেল না। বরং ও খানিক দূরে দাঁড়িয়ে মুখ গোমড়া করে থাকল। এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কী করে পালানো যায়। হলুদ পরিটা আবার সবচে পাজী। ওর চোখ ফাঁকি দেওয়াই তো সবচে মুশকিল। ঘাসের বনের ভিতরে লুকিয়ে থেকে সাদা ভূতটা কিন্তু সবই দেখছিল। ও কিন্তু এর আগে কখনও পরি দেখেনি। কেন? ও একটা শহুরে ভুত তো তাই। আর জান তো, শহরের ভিড় রাস্তায়, জঞ্জালে ভরা ফুটপাতের ওপর কি লোকে ভরতি পার্কে কিংবা ছাদের ওপর পরিরা কখনও নামে না। কোনও নিরিবিলি নদীর তীরের এমন শুনশান নিশুতি রাতেই পরিরা নামে। ধর, পরিরা কখনও-কখনও শহরের রাস্তায়, ফুটপাতে, বাড়ির ছাদে এমনকী পার্কেও নামল। তা হলেও ধর যে ওই সাদা ভুতটা ওদের কখনও দেখেনি। এজন্যই তো সাদা ভুতটা পরির দলটাকে মন দিয়ে দেখছিল আর ভাবছিল, কারা এরা? সাদা ভুতটা ভালো করে রাকাকেই দেখছিল। ভাবল, এর সঙ্গেই খাতির করে সব জেনে নেব নাকি? ঘাসের বনের দিকে তাকাল রাকা । কে যেন ওখানে লুকিয়ে রয়েছে মনে হল। সে যেই হোক, হাতছানি দিয়েও ডাকছে। আমি কি এখন ওর কাছে যাব। হ্যাঁ সেই ভালো। আমার তো এখন একজন পৃথিবীর বন্ধু চাই, ও নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে। আমি বরং ওর কাছেই যাই। এইসব ভেবেই ঘাসের বনের ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেল রাকা। আর ওদিকে তখন সবুজ পরিকে ঘিরে সবাই গান গাইছিল: মোরা ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াই ঘুমাই সবুজ পাতায়, মোদের চোখে স্বপ্নে ভরা লিখি তোমার খাতায় । গান গাইতে গাইতে পরিরা নাচছিল। এই কারণে, রাকা যে ঘাসের বনের ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেল তা কিন্তু ওদের মধ্যে কেউই খেয়াল করল না। এমন কী হলুদ পরিও না। রাকা তো ঘাসের বনে গেল। তারপর কী হল শোন। ঘাসের বনের ভিতরে সাদা ভূতটা একটা ছোট ছেলের রুপ ধরে ছিল। রাকা সাদা ভূতটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বেশ কতক্ষন সাদা ভূতের দিকে তাকিয়ে রইল। অবশেষে সাদা ভূতটাই বলল, তুমি কে ভাই? রাকা বলল, আমি? আমি হলাম একটা নীল পরি। আমার নাম রাকা। কিন্তু তুমি কে? সাদা ভূতটা বলল, আমার নাম পিদিম। আমি হলাম সাদা রঙের একটা ভূত। সাদা রঙের ভুতটার নাম পিদিম শুনে রাকা মনে মনে হাসল। কী অদ্ভূত নাম রে বাবা। কারও নাম পিদিম হয় বলে রাকা জীবনে শোনেনি। যাক, আমার হাসি পেলেও হাসা ঠিক হবে না। কারণ, এখানে লুকিয়ে থাকতে হলে এই পিদিমের সাহায্য নিতে হবে। সেজন্য হাসি লুকিয়ে রাকা জানতে চাইল, তা পিদিমবাবু, কোথায় থাক তুমি? পিদিম হাত তুলে একটু দূরে একটা অশথ গাছটা দেখিয়ে বলল, ওই যে ওখানে। চাঁদের আলোয় ভালো করে অশথ গাছটা দেখে নিয়ে রাকা বলল, আমাকে ওখানে নিয়ে যেতে পারবে? পিদিম খুশি হয়ে বলল, হ্যাঁ। খুব পারব। চল আমার সঙ্গে। রাকা ভারি খুশি হয়ে পিদিমের হাত ধরে হাঁটতে লাগল। ঘাসের বনের শেষে কিছুটা ভেজা মাটি ছড়ানো তারপরই সেই অশথ গাছটা। ওরা অশথ গাছের নীচে এসে দাঁড়াল। গভীর রাত বলেই অশথ গাছটায় যারা থাকে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমায়নি কেবল গড়ান নামে দাঁড়কাকটা। সে পাতার আড়ালে একটা ডালের ওপর বসে রাকা আর পিদিমকে দেখছিল। রাকা অশথতলার ঝিঁঝি-ডাকা অন্ধকারের দিকে চেয়ে বলল, জায়গাটা বেশ। আমি কিন্তু এখন থেকে এখানেই থাকব পিদিম। পিদিম ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে গুঁড়ির ওপর উঠে বসে দুহাতটা ঝেরে নিয়ে ভারি অবাক হয়ে জানতে চাইল, কেন, তুমি এখন থেকে এখানে থাকবে কেন? রাকাও তখন খানিকটা উড়ে পিদিমের পাশে বসল। অবাক হয়েই পিদিম রাকার উড়াল দেখল। আর আবছা অন্ধকারে মিষ্টি একটা গন্ধও ছড়িয়েছে। পিদিম ভাবল, রাকা একটা নীল পরি। নীল পরিদের গায়ে বুঝি মিষ্টি গন্ধ থাকে। ভারি অদ্ভুত তো! পিদিমের পাশে বসেই গলায় অভিমানী সুর ফুটিয়ে রাকা বলল, জান তো পিদিম, আমরা হলাম গিয়ে পরি। পরির দেশ থেকেই আমরা এসেছি । একটু পরই অন্য পরিরা সব পরির দেশে চলে যাবে। আমি কিন্তু যাব না। একটা পাজি মশা পিদিমের ঠিক নাকের ওপর বিনবিন - বিনবিন করছিল। ডান হাতের একটা ঝাপটায় মশাটাকে তাড়িয়ে দিয়ে পিদিম এবার যেন খানিকটা অধৈর্য্য হয়েই বলল, আহা, আমি তো সেটাই জানতে চাচ্ছি রাকা। তুমি আর পরির দেশে যাবে না কেন, আর এখানেই বা থাকতে চাচ্ছ কেন তুমি? রাকা তখন পিদিমকে সবকথা খুলে বলল। রাকা দুধ খায়নি বলে কেমন করে ওর আম্মু বকাঝকা করল । অবশ্য একটু বানিয়েই বলল। যেমন, রাকার মা নাকি রাকাকে “মুখপুড়ি” বলেছে। আসলে রাকার মা রাকাকে মোটেও “মুখপুড়ি” বলেননি। কথাটা রাকা একটু বানিয়েই বলল পিদিমকে। রাকার মুখে সব বৃত্তান্ত শুনেটুনে তখন পিদিম ভীষণই সিরিয়াস হয়ে বলল, ঠিক আছে রাকা। তুমি মোটেও ঘাবড়িও না । আমিও শহর থেকেই পালিয়ে এসেছি কিনা। তবে এই জায়গাটা বেশ নিরিবিলি আর শান্ত। এখন থেকে আমরা তা হলে বন্ধু, কী বল? হ্যাঁ, তাইতো। রাকা মাথা নেড়ে বলল। পিদিম ওর নাকের ওপর এসে পড়া আরেকটা মশা তাড়িয়ে বলল, এখন থেকে আমরা তা হলে এই গাছেই থাকব, কী বল। তা হলে কেউ তোমাকে খুঁজে পাবে না। রাকা চারদিকের অন্ধকার-অন্ধকার ডালপালার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করল, এই গাছটায় আর কেউ থাকে না পিদিম? না, তুমি একাই থাক? না না। পিদিম হাত নেড়ে বলল, এই গাছে আমি ছাড়াও থাকে কুটুস নামে একটা কাঠবেড়ালী, চিরি নামে একটা ফিঙ্গে পাখি, লালসারি নামে পিঁপড়ের দল, ভূতুম নামে একটা কাছিম আর গড়ান নামে একটা দাঁড়কাক। রাকা চোখ বড় বড় করে বলল, ওরে বাবা এতকিছু। বলে, তাপরপর জিগ্যেস করল, সবাই তোমার বন্ধু? পিদিম মাথা দুলিয়ে বলল, হ্যাঁ। রাকা চারদিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করল, ওরা এখন কোথায়? পিদিম বলল, রাত্রি বলে ঘুমিয়ে আছে সব। কথা বলতে বলতে অল্প অল্প ঘুম পাচ্ছিল রাকার । ও হাই তুলে বলল, ওরা আমার সঙ্গে মিশবে তো? আমি আবার একটু লাজুক কিনা। পিদিম অভয় দিয়ে তাড়াতাড়ি বলল, মিশবে না মানে, একশোবার মিশবে। তুমি সাই হলেও ওরা তো সাই নাও হতে পারে। কাল ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবার সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব, হ্যাঁ। রাকা হাই তুলতে তুলতে বলল, ঠিক আছে। তাই দিও। কিন্তু এখন আমার ঘুম পেয়েছে, তার কী হবে। ভূতেদের অবশ্য এত সকাল-সকাল ঘুম ধরে না। আজ রাকার সঙ্গে পরিচয় হল বলেই কিনা কে জানে পিদিমেরও হাই উঠতে লাগল ঘনঘন । ও বলল, আমারও একটু একটু ঘুম পেয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে রাকা। রাকা খুশি হয়ে বলল, চল, তা হলে চল ঘুমাই। চল। পিদিম বলল। একটু পর ওরা দুজনে অশথ গাছের একটা মোটা ডালের ওপরে পাশাপাশি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। অশথ গাছটার পাতার আড়ালে বসে থেকে গড়ান নামের দাঁড়কাকটা পিদিম আর রাকার কথাবার্তা সবই শুনছিল। ওরা ঘুমিয়ে পড়লে গম্ভীরভাবে কয়েকবার মাথা নাড়ল গড়ান । আর ততক্ষনে অথশতলার অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাকও বেশ তীব্র আর ঘন হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে ঝিলিমিলি নদীর ওপারের তালবন থেকে এক দমকা শীতল হাওয়া বয়ে এসে অশথ গাছটার ডালপালা কাঁপিয়ে দিল সরসর করে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করল রাকা । স্বপ্নটা ভারি সুন্দর হবে বলেই মনে হল । সবুজ গাছপালায় ভরতি রানবাড়ির সুন্দর বাগানটার ঠিক মাঝমধ্যিখানে ফোয়ারার ধারে শ্বেত পাথরের একটা বেদিতে বসে রয়েছে ও। একা। বাগানে যে কত রকমের ফুলের ফলের গাছ। আর মাথার ওপরে আকাশটা তো নীলবর্ণের হয়েই ছিল। আর সে আকাশ থেকে সোনা রোদ ঝরে ঝরে পড়ে সবদিক আলোয় ভেসে অপরুপ হয়ে ছিল। সেই সঙ্গে মিষ্টি বাতাসও বইছিল। নানা বর্নের ফুলের গাছে গাছে মউমাছিরা উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছিল। ফুলের গন্ধ ভাসছিল বাতাসে। পাখিরাও ডাকাডাকি করছিল। এই জন্যই স্বপ্নটা ভারি সুন্দর হবে বলেই মনে হল রাকার। দূরে সিংহদুয়ারের কাছে রানবাড়ির দারোয়ান পবনবাবু রঙচঙা উর্দি পরে পায়চারি করছিল; ওখানেই তো সে দিন নেই রাত নেই দাঁড়িয়ে থাকে কিংবা পায়চারি করে। পবনবাবু ইয়া দশাশই চেহারা, এর ওপর ইয়া বড় একটা মোচ নাকের নীচে ঝুলছে, হাতে একটা মুগুর, ভারি কটমট করে তাকায়, রাকার খানিক ভয়ই লাগে অবশ্য সেকথা মুখে কখনও স্বীকার করে না রাকা। তো বাগানটার ঠিক মাঝমধ্যিখানে ফোয়ারার ধারে শ্বেত পাথরের একটা বেদিতে বসে একা একা বসে রঙ্গন ফুলের মালা গাঁথছিল রাকা। মনে রেখ কিন্তু, রঙ্গন ফুলটা যেমন পৃথিবীতে ফোটে, তেমনি পরির দেশেও ফোটে । সে যাই হোক, দূর থেকে সবুজ পরিকে আসতে দেখা গেল। রাকা মুখ তুলে তাকাল। সবুজ পরি আজ চকোলেট কালারের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। তাই ওকে ভারি সুন্দরই দেখাচ্ছিল। সবুজ পরি রাকার কাছে এসে বলল, ভাই নীল পরি, আমাকে এক্ষুনি একটা ছড়া লিখে দে না। রাকা পালটা প্রশ্ন করল, কেন রে সবুজ? আমায় এক্ষুনি ছড়া লিখতে হবে কেন? সবুজ পরি বলল, কাল তো হলুদ পরির জন্মদিন, তাই। নতুন একটা গান করে কাল ওর জন্মদিনে ওকে গানটা শুনিয়ে সারপ্রাইস দেব। রাকা মাথা নেড়ে বলল, না রে আনিলা, আমি এখন ছড়া লিখতে পারব না। আমার মাথায় এখন ছড়া আসছে না। হ্যাঁ, সবুজ পরির নাম আনিলা। আনিলা অবাক হয়ে জিগ্যেস করল, কেন রে রাকা তোর মায় এখন ছড়া আসছে না কেন? রাকা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, আমি কি জানি কেন আমার মাথায় ছড়া আসছে না। আনিলা তখন বলল, তবু একটু ভাবতে চেষ্টা কর না ভাই। আমাদের মধ্যে একমাত্র তুই তো ছড়া লিখতে পারিস। ইস, আমার কত ইচ্ছে ছিল কাল হলুদ পরিকে সারপ্রাইস দেব। এত করে যখন বলছে তখন তো ছড়া একটা লিখে দিতেই হয়। এই কথাটা ভেবে নাক টানল রাকা । আজ সকাল থেকে নাকের ভিতরে সামান্য সর্দি সর্দি ভাব। নিয়ে রাকা বলতে লাগল: হলুদ পরি, হলুদ পরি পাচ্ছে না টের সুড়সুড়ি, হলুদ পরির মনটা ভালো ওই দ্যাখো ভাই ফুটছে আলো। আনিলা অসম্ভব খুশি হয়ে হাততালি দিয়ে বলল, বাহ্, খুব ভালো হয়েছে রে রাকা। রাকা লজ্জ্বা পেল। ও হেসে বলল, দূর, মোটেও ভালো হয়নি। আনিলা ঘুরে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, না না, সতি বলছি, দারুন ভালো হয়েছে। তিন সত্যি। হলুদ পরির মনটা ভালো / ওই দ্যাখো ভাই ফুটছে আলো। বাহঃ, কী সুন্দর। আফসানা খুশিতে মরে যাবে। আমি এখন যাই রে রাকা। ল্যাপটপে ছড়াটা তুলে নিই, তারপর প্রিন্ট করে পিয়ানোর সামনে বসে সুর বসাতে চেষ্টা করি। হাতে একদমই সময় নেই, ইস্, কী যে হবে। এই কথা বলে আনিলা হন হন করে হেঁটে প্রাসাদের ওদিকে চলে গেল। আনিলা চলে যেতেই রাকা আবার রঙ্গন ফুলের মালা গাঁথায় মন দিল । ঝুড়িভরতি ফুল। এই বেতের ঝুড়িটা মা ওকে গত জন্মদিনে গিফট করেছে। রাকার জন্মদিন দশ জুলাই। ইস্, ফুলগুলি এত সুন্দর ... এত সুন্দর ফুল কই পেলে রাকা ? বলতে বলতে হলুদ রঙের সূর্যমুখীর ঝারটার ওপাশ থেকে রাকার সামনে এসে দাঁড়াল পিদিম। ওমাঃ, পিদিম তুমি? এখানে কী করে এলে? বলে রাকা উঠে দাঁড়াল। ভারি অবাক হয়ে গেছে রাকা। হাত তুলে নীলবর্ণের আকাশটা দেখিয়ে পিদিম বলল, সবাই যেভাবে আসে, ওই আকাশপথ দিয়ে। বলে মিহিন ঘাসের ওপর পা গুটিয়ে বসে পড়ল পিদিম । বসেই বলল, এই রাকা, আমার না ভীষন খিদে পেয়েছে। ইস, পরির দেশ এতদূর জানলে এক ঠোঙা কাসুন্দি দেওয়া ঝালমুড়ি নিয়ে আসতাম। সকাল আমায় কিছু খাওয়া না । তোদের দেশে এই প্রথম এলাম। আমায় না খাইয়ে রাখবি? পিদিমের কথা শুনে রাকা মিটমিট করে হাসছিল। এবার বলল, আহা কী খাবে তাই বল না, এত গিট্টু মারছ কেন? পিদিম গম্ভীর হয়ে বলল, যা খাওয়াবে। আমি হলাম অতিথি। কী খাব না খাব অতিথিদের তা বলার নিয়ম নেই। তবে রসগোল্লা হলে ভালো হয়, আবার আবার রসগোল্লা খেতে ভালো লাগে কি না তাই। আচ্ছা, ঠিক আছে তুমি এখানে একটুখানি বস, আমি তোমার জন্য এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসছি। আচ্ছা। আমার মোটেও দেরি হবে না কিন্তু। বলতে বলতে রাকা রঙ্গন ফুলগুলি ঝুড়িতে রেখে প্রাসাদের সিঁড়ির কাছে চলে এল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে রাকা ঘুরে একবার দেখল পিদিমটা ঘাসের ওপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়েছে। রাকার হাসি পেল। পিদিমটা কী মজা করেই না বলল, আমি হলাম অতিথি। কী খাব না খাবো অতিথিদের তা বলার নিয়ম নেই। দেখা গেল বাগান থেকে প্রাসাদের যে সিঁড়িটা উঠে গেছে তার রং সাদা। দুপাশে সোনার তৈরি অদ্ভূত অদ্ভূত জন্তুর সব মূর্তি। যেমন একটা সোনার তৈরি ঘোড়ার পিঠে ডানা লাগানো। সিঁড়ির দিয়ে উঠলে সাদা দেওয়াল ঘেরা লাল রঙের মেঝের বড় একটা প্রাঙ্গন। সকাল বেলাকার রোদে ডুবে রয়েছে। সাদা দেওয়াল কালো রঙের সিঁড়ি আঁকা ওখান দিয়েই যেতে হয় দোতলায়। এই মুহুর্তে প্রাঙ্গনে কেউ নেই। মেঝের ওপর রোদের ভিতর কেবল মু আড়মোড়া ভাঙ্গছে। মু হল বাদামি রঙের একটা বেড়াল; ওই মু নামের বেড়ালটা রাকার দিদিমা মমতাময়ীর। রাকার দিদিমা মমতাময়ী খুব ভালো, নীল চোখ আর দারুন ফরসা গায়ের রং রোজ রাতে ঘুবোবার আগে কত যে গল্প বলেন রাকাকে। রাকা শুনেছে দিদিমা নাকি চাঁদের বুড়ির কী রকম আত্মীয় হন। রাকা ডান দিকে ঘুরর। প্রাসাদের কিচেনটা ও দিকেই কিনা। বড় একটা বারান্দা মতন, দিকটা খোলা, বাগান চোখে পড়ে। সেখান থেকে অনেক আলো এসে পড়েছে। বারান্দার মেঝেটা সাদা পাথরের; মাঝে-মাঝে কালো নকশা। সকাল বেলায় মেঝের ওপর সর্ষে দানা ছিটিয়ে দিয়েছে সচেতন নামে বুড়ো মালি। কালোসাদা পায়রাগুলি তাই খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে এখন। পরিরানির কঠিন নির্দেশ; পরিরাজ্যে একটি প্রাণিও যেন না খেয়ে থাকে। এবার বাঁয়ে ঘুরল রাকা । সামনে ঘুঙ্গুরঘর। এই ঘুঙ্গুরঘরটা আসলে নাচ শেখার ঘর। কাচের ঘরটা এখন ফাঁকা। ওস্তাদজীর নাম নৃত্যরতন রায়। তিনি আসবেন বিকেলে। তখন রাকাও নাচের তালিম নেবে। ঘুঙ্গুরঘরটা পেরিয়ে গেলেই সুইমিংপুলঅলা বিশাল স্নানঘর। স্নানঘরের চারপাশে কাচে-ঘেরা আর মাথার ওপরে ছাদটাও কাচের; সুইচ টিপে সরানো যায়। তখন বৃষ্টি এলে ভেজা যায়। বাগানেও অবশ্য বৃষ্টিতে ভেজা যায়। তবে বৃষ্টির সময় বাগানের ব্যঙেরা বড্ড বেশি লাফালাফি করে। স্নানঘরে ব্যাঙেদের উৎপাত নেই। স্নানঘরটা পেরিয়ে যেতে যেতে রাকা ভাবল, ইস, সাংঘাতিক একটা ভুল হয়ে গেল। পিদিমকে বাগানে না-বসিয়ে রেখে প্রাসাদের ভিতরে এনেই বসানো উচিত ছিল। ও কী ভাববে। ভাববে, আমরা পরিরা এটিকেট-ম্যানারস্ জানি না। ছিঃ। কত বড় ভুল হয়ে গেল। আচ্ছা, আমি না-হয় পরে পিদিমের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব । এখন দেখি ওকে কী খেতে দেওয়া যায়। ভাবতে ভাবতে কিচেনের সামনে চলে এল রাকা। কিচেনের দরজাটা হলুদ রঙের প্লাসটিকের । দরজার গায়ে বড় বড় করে কালো অক্ষরে লেখা: বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেদ! । রানবাড়ির হেড বাবুর্চি ভোলা মিঞাই কথাটা লিখে রেখেছে । বলা বাহুল্য লোকটা ভীষন মজার। রাকার সঙ্গে ভোলা মিঞার দারুন খাতির। ভোলা মিঞা রাকাকেই সবচে বেশি ভালোবাসে । সুতরাং কিচেনে ঢোকার জন্য রাকার অনুমতি প্রয়োজন হয় না। রাকা দরজা ঠেলে কিচেনের ভিতরে ঢুকল। ভোলা মিঞা যথারীতি মাথায় সাদা রঙের কিচেন-পোশাক আর টুপি পরে ছিল। পেয়াজ কাটছিল। হাতে একটা চকচকে ছুড়ি। ভোলা মিঞা লোকটা ভীষন শুকনো আর দারুন লম্বা একটা মানুষ। দরজায় ক্যাচ করে শব্দ হতেই মুখ তুলে রাকাকে দেখল ভোলা মিঞা। হেসে বলল, গুড মরনিং, রাকাসোনা। মরনিং, ভোলা কাকা। রাকা বলল। তারপর বলল, এখন বল ভোলা কাকা কি কি খাবার আছে তোমার ভাঁড়ারে? ভোলা মিঞা গম্ভীর হয়ে বলল, রাকামণি, এখন তো পূর্বাহ্ণ। তাই এখনও রান্না হয়নি। রাকা মুখচোখ কুচঁকে বলল, পূর্বাহ্ণ মানে কী। উফ, তুমি এত কঠিন কঠিন কথা বল না। ভোলা মিঞা বলল, পূর্বাহ্ণ মানে, সকালের শেষ কিন্তু তখনও দুপুর ঠিক শুরু হয়নি । বুঝেছি। কিচেনটা বেশ বড়। এক কোণায় একটা মেরুন রঙের নো-ফ্রস্ট স্যামসঙ ফ্রিজ। রাকা ফ্রিজের কাছে গিয়ে ফ্রিজের দরজাটা খুলল। এক ঝলক ঠান্ডা ধোঁওয়া বেরুল। ফ্রিজের ভিতরে তেমন কিছু নেই। কেবল কুমড়ার একটা ফলি, দুটো লেবু, একটা ঢেঁড়শ আর একটা ক্যান প্রাণের অরেঞ্জ জুস পড়ে আছে। না, একটা আইসক্রিমের নীল বাক্সও দেখা যাচ্ছে। বাস্কটা খুলল রাকা। অনেক কটা রসগোল্লা। ফাইন। এই নিয়ে যাই। আর অরেঞ্জ জুসটা। আজ বাজার করনি ভোলা মিঞা? ভোলা মিঞার পেয়াজ কাটা শেষ। কিচেনের কলটা ছাড়তে ছাড়তে বলল, মেরুন বজারে গেছে, এখনও ফেরেনি। মেরুন হল ভোলা মিঞার সাগরেদ। অল্প বয়েসি একটা ছেলে। রান্নাবান্নার তালিম নিচ্ছে। বড় হয়ে সে-ই তো হেড বাবুর্চি হবে। রাকা একটা রুপোর ট্রে বার করল। একটা প্লেটে রাখল মিষ্টিগুলো । অরেঞ্জ জুসটাও রাখল। রাখার পর জিগ্যেস করল, আজ কী রাঁধবে ভোলা কাকা? ভোলা মিঞা বলল, বাঁধাকপি দিয়ে কুচোচিংরি আর ঝিকিমিকি নদীর বোয়াল। বোয়াল না-পেলে মেরুনকে চিতল মাছ আনতে বলেছি, ভেজে দেব। আজ মধু ময়রা বলেছে দই দিয়ে যাবে। দিয়ে গেলে খেও। আর নীলবর্নের পাহাড়ের মধু তো রয়েছেই, খেও তাও পনিরের সঙ্গে । রাকা বলল, আচ্ছা, ভালো করে রেঁধ। আজ আমার এক বন্ধু খাবে দুপুরে। ভোলা মিঞা কল বন্ধ করতে করতে বলল, আচ্ছা। রাঁধব। তা তোমার বন্ধুটি কে? রাকা বলল, ওর নাম পিদিম। পৃথিবীতে থাকে। ও একটা সাদা ভূত। ভোলা মিঞা মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, ভালো। খাওয়ার সময পরিচয় করিয়ে দিয়ো না হয়। আমি জীবনে কখনও সাদা ভূত দেখিনি। দেব। বলে রাকা ট্রেটা নিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এল। পিদিম শুয়ে ছিল। রাকা ট্রেটা এনে রাখাল পিদিমের সামনে। পে¬টভরতি রসগোল্লা দেখে তড়াক করে সিদে হয়ে বসল পিদিম। বসেই একটা রসগোল্লা মুখে পুড়ে বলল, তুমি কী করে জানলে ভাই আমি রসগোল্লা খেতে ভালোবাসি? রাকা ওর পাশে বসতে বসতে বলল, আমি তো জানি না তুমি রসগোল্লা খেতে ভালোবাস। রান্নাঘরে দেখি রসগোল্লা ছাড়া আর কিছু নেই, তাই রসগোল্লাই নিয়ে এলাম। পরির দেশের রসগোল্লা বড় খাসা রে রাকা। বলে আরও দুটো মুখে পুরে দিল পিদিম। রাকা হেসে বলল, হবে না। রসের হাঁড়ি দোকানের তো তাই। রসগোল্লা খেতে পেয়ে পিদিমের মুড ভালোই ছিল। তাই সে পরম আহলাদে জিগ্যেস করল, রসের হাঁড়ি আবার কী গো। রাকা বলল, রসের হাঁড়ি হল একটা মিষ্টির দোকানের নাম। দোকানটা পান্তুয়া পাড়ায়, সন্দেশ পল্লির পাশে, দইপাড়ার পাশ দিয়ে যেতে হয়। পান্তুয়া পাড়া মানে? পিদিম আরও অবাক হয়ে বলল। রাকা বলল, আহা মিষ্টির দোকানগুলি তো সব ওখানেই, মানে পান্তুয়া পাড়ায়, তুমি কিছুই জান না। পিদিম বলল দাঁতে জিভ কেটে বলল, নতুন এসেছি তো। আস্তে আস্তে সবই জেনে যাব। তা অরেঞ্জ জুসটা তুমিই খেও। আমি খাব না। রাকা হাত নেড়ে বলল, না না আমি জুস খাই না। আমার জুস খেতে তেতো লাগে। তেতো না তিতো না বল তিতা। পিদিম শুধরে দিল। রাকা বলল, আমাদের দেশে আমরা তিতেকে তেতোই বলি ভাই। আঙুলের রস চাটতে চাটতে পিদিম বলল, পৃথিবীতে তিতে বলে বা তিতা বলে। রাকা একটু রাগ করেই বলে ফেলল, এটা পৃথিবী নয় ভাই। এটা হল পরিরাজ্য। জানি। আর আমি পরিরাজ্যে বেড়াতে এসেছি। আমায় তুমি ফ্রিজের রসগোলা ...না না পান্তুয়া পাড়ার রসগোলা খাওয়াচ্ছ আর আমিও সব চেটেপুটে খাচ্ছি। বলে পিদিম আরও দুটো রসগোল্লা মুখের ভিতর দিয়ে পেটের ভিতরে চালান করে দিল। দোতলার ঝুলবারান্দায় রাকার মা, মানে পরিরানিকে দেখা গেল। তিনি বললেন, কে এসেছে রে রাকা? কার সঙ্গে বসে কথা কইছিস? রাকা মুখ তুলে সামান্য চেঁচিয়ে বলল, এ আমার বন্ধু মা। এর নাম হল পিদিম। পৃথিবী থেকে এসেছে, বেড়াতে। ও। তা, ওকে বলিস দুপুরে ভাত খেয়ে যেতে । এই পিদিম, তুমি দুপুরে আমাদেন সঙ্গে খেও কিন্তু। আচ্ছা, মাসিমা তাই খাব। রাকা আদুরে গলায় বলল, মা, তা হলে তুমি ভোলা মিঞাকে ঝিকিমিকি নদীর চিতল মাছের পোলাও রাঁধতে বলো, বাদামি বাদাম দিয়ে। কিচেনে গিয়ে দেখলাম, ভোলা মিঞা কী সব ঝিঙে দিয়ে চিংড়ির চচ্চড়ি রাঁধার প্ল্যান করছে। মনে হচ্ছে মাছের ডিম দিয়ে করলাও রাঁধবে। পরিরানি হেসে বললেন, আচ্ছা, তুমি অত ভাবিস নে। আমি ভোলা মিঞাকে যা বলার বলছি। বলে হাসতে হাসতেই রানিমা ওপাশে চলে গেলেন। পরিরানি চলে যেতেই পিদিম জানতে চাইল, উনি কে রে? সাত সকালে এত সেজে রয়েছেন? রাকা জিগ্যেস করল, যাকে এই মাত্র দোতলার বারান্দায় দেখা গেল? হ্যাঁ। রাকা বলল, উনিই আমার মা হন। আমায় যিনি খেয়ে যেতে বললেন। আর আমিও বললাম, আচ্ছা, মাসিমা তাই খাব। হ্যাঁ। ও। দুপুরে তা হলে আমাকে পোলাও খাওয়াবে রাকা? হ্যাঁ। ঝিকিমিকি নদীর চিতল মাছের চিতলপোলাও। পিদিম বলল, আমি ইলিশপোলাও খেতে ভালোবাসি। চিতলপোলাওয়ের নাম জীবনে আমি শুনিনি। রাকা বলল, আমিও ইলিশপোলাওয়ের নাম জীবনে শুনিনি ভাই। পিদিম বলল, ইলিশ হল এক ধরনের মাছ। নদীতে হয়। সকালবেলায় শান্তিনগর বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। অবশ্য মাছগুলি শান্তিনগর বাজারে কী করে আসে তা অনেক ভেবেও আমি বার করতে পারিনি। রাকা বলল, ও, ইলিশ তাহলে হল গিয়ে মাছ, আমি ভাবলাম কী না কী, বাদাম বুঝি। পিদিম হাত নেড়ে ভয়ানক গম্ভীর হয়ে বলল, না না ইলিশ মোটেও বাদামের মতন তো নয়। এবার বুঝেছি। ইলিশ হল গিয়ে মাছ। পিদিমের সবগুলি রসগোল্লা খাওয়া শেষ। ও অরেঞ্জ জুস দিয়ে হাত ধুয়ে নিল। রাকা হাসি চেপে ওকে একটা নীল রঙের টিস্যুপেপার বার করে দিল। পিদিম হাত মুছে নিল। রাকা বলল, পিদিম তুমি তো পরির দেশে প্রথম এলে না তাই না? পিদিম বলল, হ্যাঁ, তাই তো। রাকা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, তা হলে চল, তোমায় আমি আমাদের দেশটা ঘুরিয়ে দেখাই। আমরা অবশ্য দুপুরের আগেই ফিরে আসব। আশা করি ততক্ষনে চিতলপোলাউ রান্না হয়ে যাবে। পিদিম খুশি হয়ে বলল, আমরা মজা করে খাব। হ্যাঁ। এখন চল। বলে ফোয়ারার ওপাশে হাঁটতে লাগল রাকা। এখানে ঘন ঝোপ। মাঝখানে পাথর বিছান পথ। ঝোপটা পেরিয়ে গেল রাকা । পিদিম ওকে লক্ষ্মী ছেলের মতন অনুসরন করল। দেখা গেল একটা বড় একটা ঝাঁকড়া শিমুল গাছ। আর শিমুল গাছের তলায় একটা সোনার রথ দাঁড়িয়ে। সাদা রঙের চারটে দারুন হৃষ্টপুষ্ট ঘোড়া । একটা ঘোড়া রাকাকে দেখেই চিহি হি করে ডেকে উঠল। রাকা হাসল। পিদিম দেখল রথের ওপর লাল রঙের জোব্বা পরে ভীষনই থুরথুরে এক বুড়ো বসে । ধবধবে সাদা দাঁড়ি আর ভীষনই ফর্সা চেহারা। রাকাকে দেখেই বুড়ো বলল, গুড মরনিঙ রাকাসোনা। রাকা বলল, গুড মরনিং সারথী দাদু। পিদিমও বলল, গুড মরনিং সারথী দাদু। গুডমরনিং। ওরা রথে উঠে বসল রথটা দুলে উঠল। একটা ঘোড়া চিহি হি করে ডেকে উঠল। পিদিম ফিসফিস করে জানতে চাইল, সারথী বুড়োর নাম কি রে রাকা? আন্দালিব। কোথায় যাবে গো মা? সারথী বুড়ো আন্দালিব জিগ্যেস করল। রাকা বলল, কোথাও না সারথীদাদু। এমনি এমনি চল কত ক্ষন। আমার এই বন্ধুটাকে পরির দেশটা দেখিয়ে আনি। ও এর আগে কখনও আসেনি তো তাই। আচ্ছা, বেশ। তাই হবে । বলে সারথী বুড়ো রথটা ঘুরিয়ে নিল। রথটা চলতে শুরু করলেই রাকা বলল, জান পিদিম, এই রথটার না অনেক বয়স। কত? পিদিম বলল। রাকা সামান্য ভেবে বলল, কম করে সাতশো বছর তো হবেই। আর সারথীবুড়োর বয়সও সাড়ে সাতশ বছরের কম না। কে বলল? মা। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ৯:৩০
false
rg
নজরুলের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের দিনগুলি !!! ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহাকুমার জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামের খড়ের ছাওয়া এক মাটির ঘরে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে ১৮৯৯) কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহন করেন। সেই মাটির ঘরের পূর্বদিকে রাজা নরোত্তমের গড়, দক্ষিণে পীর পুকুর, পুকুরের পূর্ব পাড়ে হাজি পালোয়ানের মাজার, পশ্চিম পাড়ে মসজিদ। নজরুলের বাবার নাম কাজী ফকির আহমদ ও মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। ১৯০৮ সালে নজরুলের বাবা কাজী ফকির আহমদ মারা যান। তখন নজরুলের বয়স মাত্র নয় বছর। দশ বছর বয়সে নজরুল গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর গ্রামের মক্তবের শিক্ষকতা, হাজী পালোয়ানের মাজারে খাদেম এবং মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজে নিযুক্ত হন। মূলত পিতার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য নজরুলকে এসব দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল। নজরুলের চাচা কাজী বজলে করিম ছিলেন ওই অঞ্চলের লেটো দলের একজন নামকরা ব্যক্তি। তাঁর আরবী, ফারসী ও উর্দু ভাষায় অগাধ জ্ঞান ছিল। যাঁর কাছ থেকে নজরুল সঠিক ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন । এছাড়াও কাজী বজলে করিম মিশ্রভাষায় কবিতা ও গান রচনা করতেন। চাচার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবে লেটো দল নজরুলকে আকর্ষণ করেছিল। নজরুলের কবি ও সংঙ্গীতজ্ঞ জীবনের শুরু ওই লেটো দল থেকেই। লেটোদলের জন্য পালা গান রচনা করতে গিয়েই হিন্দু পুরাণের সঙ্গেও নজরুলের পরিচয় ঘটেছিল। লেটো দলের কিশোর কবি নজরুলের সৃষ্টি চাষার সঙ্, শকুনি বধ, রাজা যুধিষ্ঠরের সঙ্, দাতা কর্ণ, আকবর বাদশাহ্, কবি কালিদাস, বিদ্যাভুতম, রাজপুত্রের সঙ্, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ , মেঘনাদ বধ প্রভৃতি।লেটো দলের পর ১৯১০ সালে নজরুল পুনরায় ছাত্র জীবনে ফিরে আসেন। জনশ্রুতি হল, নজরুলের পাড়াপড়শিরা তাঁকে প্রথমে রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই ঐ স্কুল ছেড়ে নজরুল মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল বা নবীনচন্দ্র ইন্সটিটিউটে ষষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হন। তখন ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক। তিনি তাঁর ছাত্র সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে- "ছোট সুন্দর ছেলেটি, আমি ক্লাস পরিদর্শন করিতে গেলে সে আগেই প্রণাম করিত। আমি হাসিয়া তাহাকে আদর করিতাম। সে বড় লাজুক ছিলো।" কিন্তু আর্থিক কারণে ষষ্ঠ শ্রেণীর পর ছাত্র জীবনে আবার বিঘ্ন ঘটে। মাথরুন স্কুল ছেড়ে তিনি সম্ভবত: প্রথমে বাসুদেবের কবিদলে যোগদেন। তারপর বর্ধমান-অন্ডাল ব্রাঞ্চ রেলওয়ের এক খ্রিষ্টান গার্ড সাহেবের খানসামার এবং শেষে আসানসোলের এক বেকারি ও চা-এর দোকানে চাকুরি নেন। এভাবে দারিদ্র্যের কারণেই স্কুলের পড়াশুনা ত্যাগ, গার্ডের বয় বিয়ারার, আসানসোলের বেকারি ও গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে চায়ের দোকানের কিশোর শ্রমিক নজরুল কৈশোরেই জীবনের রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত হন। এজন্য তাঁর অপর নাম দুঃখু মিঞা। আসানসোলের চা-রুটির দোকানে চাকুরির সুবাদেই তিনি পুলিশের দারোগা রফিজউল্লাহর সঙ্গে পরিচিত হন। এবং তাঁর অনুগ্রহে ১৯১৪ সালে ময়মনুসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হতে পেরেছিলেন। দরিরামপুর স্কুলের পর নজরুল পুনরায় নিজের এলাকায় ফিরে যান এবং সম্ভবত: ১৯১৫ সালে প্রথমে নিউ স্কুল বা অ্যালবার্ট ভিক্টর ইন্সটিটিউশনে এবং পরে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এ স্কুলে নজরুল ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ সাল একটানা অষ্টম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং ১৯১৭ সালের জুলাই মাসের পর সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। নজরুলের ছাত্রজীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি সিয়ারসোল রাজ স্কুলের চারজন শিক্ষক-দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল, বিপ্লবী ভাবধারায় নিবারনচন্দ্র ঘটক, ফারসি ভাষায় ফারসি শিক্ষক হাফিজ নুরুন্নবী এবং সাহিত্যে-চর্চায় প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়।নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর প্রশিক্ষণের জন্যে প্রথমে কলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম, পরে লাহোর হয়ে নওশেরা এবং ট্রেনিং শেষে করাচি সেনানিবাসে তাঁর সৈনিক জীবন অতিবাহিত হয়। ১৯১৭ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর থেকে ১৯২০ সালের মার্চ - এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় পৌনে তিন বৎসর তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন। এ সময়ে তিনি সাধারণ সৈনিক থেকে ব্যাটেলিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পদে উন্নীত হন। সেনাবাহিনীতে সৈনিক জীবনের কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যেও তাঁর সাহিত্য ও সঙ্গীত চর্চা অব্যাহত ছিল। এই সময়ে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঞ্জাবি মৌলভীর কাছে তিনি ফারসি শেখেন। সঙ্গীতানুরাগী সহসৈনিকদের বিনোদনের জন্যে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী বাদ্যযন্ত্র সহযোগে তখন তিনি সঙ্গীত চর্চা করতেন। আর গদ্য-পদ্য সাহিত্যে চর্চা তিনি অব্যাহত রাখেন। করাচি সেনানিবাসে রচিত এবং কলকাতায় প্রেরীত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুল রচনাবলীর মধ্যে ছিল "বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী" - নজরুলের প্রথম প্রকাশিত রচনা (সওগাত,মে ১৯১৯), প্রথম প্রকাশিত কবিতা "মুক্তি"(বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, জুলাই ১৯১৯), করাচিতে রচিত অন্যান্য রচনা- গল্প "হেনা", "ব্যথার দান", "মেহের নেগার", ঘুমের ঘোরে",কবিতা "আশায়" এবং "কবিতা-সমাধি" প্রভৃতি। করাচিতে সেনানিবাসে থেকেও তিনি কলকাতার সমকালীন প্রধান প্রধান সাহিত্য পত্রিকা যেমন:- "প্রবাসী", ভারতবর্ষ, "ভারতী", "মানসী", সবুজপত্র", সওগাত", "বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা" প্রভৃতির গ্রাহক ছিলেন।এছাড়াও তাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র এবং ফরাসি কবি হাফিজের কিছু গ্রন্থও ছিল। ফলে নজরুলের আনুষ্ঠানিক সাহিত্য চর্চার শুরু আসলে করাচি সেনানিবাস থেকেই। সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় আর যাননি। ১৯২০ সালে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এর পর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।
false
mk
মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের তিন বছরের মাথায় জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এ পর্যালোচনা শুধু সরকারের দায়িত্বশীল মহল বা সংস্থাই করছে না, একই মূল্যায়ন ও আলোচনা হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও। এই আলোচনায় হয় হাটে-ঘাটে-মাঠে বাজারে, চায়ের দোকানে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের নিজ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। একই সঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পৃথক করে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম মূল্যায়ন শুরু করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের তিনবছর পূর্ণ হচ্ছে ১২ জানুয়ারি। তাই সরকারের তিন বছর পূর্তিকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার তথা মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া মোটামুটি সন্তোষজনক বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মেগা প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতিতে স্বস্তিতে রয়েছে সরকার।সরকারের দ্বিতীয়মেয়াদে তিন বছরে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন সার্বিক অগ্রগতিতে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যয় ও সবচেয়ে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে গত কয়েক বছরে। ফলে অবকাঠামো খাতে নতুন স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের উন্নয়নযজ্ঞে যুক্ত হচ্ছে নতুনমাত্রা। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) গ্রহণে নজির সৃষ্টি হয়েছে। মূলত একটি দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি, যোগাযোগসহ অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের বিকল্প নেই। পাশাপাশি এজন্য দরকার সরকারের ধারাবাহিকতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিশোরগঞ্জের মরমি কবি, গবেষক ইবনে সালেহ মুনতাসির রচিত 'বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা' শীর্ষ লিরিকটি প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। তার লিরিকটি, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আজ অনেকদূর এগিয়ে/বাংলাদেশিরা আজ পণ করেছে উন্নয়নের সকল সূচক তারা নেবে বাগিয়ে/ মধ্যম আয়ের দেশের পরে তারা উন্নত দেশের কাতারে যেতে চায়/ তাই তো তারা সারা দুনিয়ার সব বিনিয়োগ আকর্ষণ আহ্বান করে যায়। বাংলাদেশ আজ সক্ষম নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশ-জাতি রক্ষায়/ যোগাযোগ ব্যবস্থায় তারা গড়ে তুলতে চায় বিশ্বমান আর সহায়/ গড়ে তুলবে তারা উত্তর-দক্ষিণ আর পূর্ব-পশ্চিম জাতীয় মহাসড়ক/ দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঘটবে বিপ্লব থাকবে না আর যানজটের যন্ত্রণা/ চার লেন, আট লেনের জাতীয় সংযোগ মহাসড়ক আজ বিশেষ প্রয়োজন/ সাথে থাকবে স্থানীয় সংযোগ সড়ক করতে হবে বিশেষ আয়োজন/ আন্ডার পাস ও ভাব পাসের মাধ্যমে যোগাযোগ সহজ হবে/ স্থানে স্থানে থাকবে রাডার সিস্টেম বেষ্টনী দুর্ঘটনা প্রতিরোধ হবে বাংলাদেশ আজ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেকদূর এগিয়ে/ আধুনিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বুলেট ম্যাগনেটিক ট্রেন নিয়ে যাবে বাগিয়ে/ রাজধানীতে হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে যানজট যাবে চলে/পাতাল রেল, ট্রেন, নৌপথ নির্মাণ হবে সবাই তাই তো বলে ইবনে সালেহ মুনতাসির বলেন, সাবাস পিতার সাবাস দেশ, জাতির জনকের বাংলাদেশ/ বাংলাদেশ খুঁজতে শিখেছে বাংলাদেশ আজ নিজ পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে/ ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চলেছে/বাংলাদেশ আজ সক্ষম, বাংলাদেশ আজ শিল্পোন্নত দেশ হতে চলেছে দুই দেশের সুরক্ষার প্রয়োজন সীমান্ত ভারত দিল কাঁটাতারের বেড়া/ নির্মাণ করল ভারত সাড়ে চার হাজার মাইল কাঁটাতারের বেড়া/ উভয় দেশের সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান বন্ধ হবে।উভয় দেশের সব সীমান্ত সমস্যার চির সমাধান হবে উজানের দেশ ভারত সকল নদ-নদীর ওপর দিয়েছে বাঁধ/ কৃষি সেচ জলজ বিদ্যুতে ভারত অনেকদূর এগিয়ে যাবে/ ভাটির দেশ বাংলাদেশের যে তাতে অনেক উপকার হবে/ হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল-জলাশয়গুলো যে বিনি পয়সায় গেল ভরাট হয়ে শুকনা কালে বাংলাদেশের সর্বত্র ফসল চাষাবাদ হবে/ বর্ষাকালে বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ তো কৃষি সেচ জলবিদ্যুৎ পাবে/ বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরের দিকে যাবে সব পলি মাটি/ মহীসোপান ভরাট হয়ে সাগর সমুদ্রে হবে অনেক নদ-নদী ফসল পাবো, জল পাবো, জলবিদ্যুৎ পাবো, হবে সৃষ্টি নদ-নদী/ অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ বিস্ময়ে বিশ্বকে করতে পারে যদি/ বাড়তি মানুষের বাস বাংলাদেশে স্রষ্টার লীলাখেলা বোঝা বড় দায়/ বাংলাদেশ অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে স্রষ্টা যদি হন সহায়। ইবনে সালেহ মুনতাসির বলেন, এভাবেই স্রষ্টা ছোট জাতিকে বড় করেন আপন রহমতে/ছোট-বড় সবই স্রষ্টার খেলা বোঝা বড় দায়রে বোঝা বড় দায়/ স্রষ্টা আপন হাতে গড়েন বাংলাদেশ রহমতের নাই যে শেষ/ ভবিষ্যৎই বলে দেবে কেমন হবে আজকের বাংলাদেশ শেষমেশ তিনদিক থেকে বাংলাদেশকে ঘিরে রেখেছে ভারত মিয়ানমার/ তিনদিক থেকেই সুরক্ষা পাব সুরক্ষা দেবে ভারত মিয়ানমার/ সমর শক্তির পিছনে খরচ করতে হবে না বাঁচবে যে সরকার/ ভারত মহাসাগরের নীল অর্থনীতির খোঁজে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ সরকার' পর্যালোচনা বলা হয়, ২০১৪ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজ বর্তমানে শেষ হচ্ছে। এখন চলছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এসব পরিকল্পনার উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং দারিদ্র্যের হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। বর্তমান সরকার পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এ মেয়াদেরও তিন বছর পার করছে। সরকারের পূর্ব ও বর্তমান মেয়াদকালে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আশাজনক অগ্রগতি হয়েছে। এ সময়কালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও অর্জিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারের দক্ষ সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার ফলে আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। কেননা গত তিন বছরে প্রবৃদ্ধির হার সর্বাধিক করা হয়েছে।সরকারের আরেকটি মহৎ উদ্দেশ্য 'আয়ের সুষম বণ্টনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের ব্যাপক বিস্তৃতি করা, বাস্তবেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। ২০২১ সালের মধ্যে সব দরিদ্রজনগোষ্ঠীকে এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার কর্মযজ্ঞ চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানো হচ্ছে। গত তিন বছরে তার ভিত্তি তৈরি হয়েছে। এখনই ১৫ হাজার ২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রতিবেশী ও সমমানের রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। গত অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত জুনে সমাপ্ত হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩৫টি। এ সময় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় ২৭৮টি। এগুলোর ব্যয় ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ কোটি ৬৭ হাজার টাকা। এ অর্থবছরে মোট এডিপির আকার ছিল ৯৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে ২৫৪টি। এডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ৯৩ শতাংশ। তার আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩১টি। এর মধ্যে ২১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ৭৭ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছিল ৭১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে ২৮০টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়ন হার হয়েছিল ৯১ শতাংশ।২০১৩-১৪ অর্থবছরে একনেক বৈঠক হয়েছিল ২৬টি। মোট ২১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ২১ হাজার ৯৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ৬৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৫৯ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছিল ৯৩ শতাংশ। এ সময় প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছিল ২৩৬টি। গত তিন বছরে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রকল্পের সঠিক ও গুণগত বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া দরকার। কেননা ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। একইভাবে গত তিন বছরে বৃহৎ প্রকল্পগুলো পরিণতির দিকে গেছে। আগে যেগুলো পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ ছিল, সেগুলো আলোর মুখ দেখার ব্যবস্থা হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের রাস্তা। এগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে নভেম্বর পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৮ শতাংশ। যেভাবে বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যেই কাজ সমাপ্ত হবে। এ ছাড়া গত তিন বছরে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। সম্প্রতি ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কাজ শুরুর আশাবাদ সরকারের। এসব মেগা প্রকল্পের বাইরে বাইরে স্বপ্ন জাগানো আরও বেশকিছু প্রকল্প অনুমোদন, কাজের উদ্বোধন বা সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। এগুলো হলো, কর্ণফুলী নদীর নিচে দেশের প্রথম টানেল তৈরি প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ২০ লাখ এবং চায়নিজ এক্সিম ব্যাংকের ঋণ থেকে ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটারের এই টানেল নির্মিত হলে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সেই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে এবং এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে।দেশের মেগা প্রকল্পের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে আরেকটি স্বপ্নময় প্রকল্প। যেটির নাম ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে। এটি নির্মিত হলে গুরুত্বপূর্ণ দুই অংশের মধ্যে সহজ ও দ্রুত সড়ক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই ও ডিটেইল্ড ডিজাইনের কাজ শেষ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ৪টি প্যাকেজে বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ১৮ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। এ প্যাকেজের বাইরে সেতু ও সেতু কালভার্টসহ অন্যান্য কার্যক্রম করতে আরও ১০ হাজার কোটিসহ মোট ব্যয় হতে পারে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সওজ। ৪ প্যাকেজে কাচপুর থেকে চট্টগ্রামের সলিমপুর পর্যন্ত এটি নির্মাণ করা হবে। এটি ২০২২ সালের মধ্যে নির্মাণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এক নাম্বার প্যাকেজে মদনপুর থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৭ হাজার ৫৫০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় প্যাকেজে কুমিল্লা থেকে ফেনী পর্যন্ত ব্যয় ৪ হাজার ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। তৃতীয় প্যাকেজে ফেনী থেকে চট্টগ্রামের কুমিরা পর্যন্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্যাকেজ চারের আওতায় কুমিল্লা থেকে সলিমপুর পর্যন্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া ওভারপাস ও আন্ডারপাস তৈরি করতে হবে ১০৭টি, দুটি বড় সেতু (মেঘনা ও গোমতি সেতু) এবং অন্যান্য ২৮ সেতু, এলিভেটেড সেকশন তৈরি করতে হবে ১৬টি এবং দুটি প্রধান টোলপ্লাজা এবং ৫টি ইন্টারচেঞ্জ টোল প্লাজা তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া ৩টি রেস্ট এরিয়া থাকবে। এ ছাড়া রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেলের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি)। এজন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া যানজট নিরসনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মূল প্রকল্পটি ৮ হাজার ৭০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৪৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড বিনিয়োগ করবে। এ ছাড়া ২ হাজার ২৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ড (ভিজিএফ) হিসেবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মহল শতভাগ তৎপর হবেন। তবেই সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৫
false
ij
যারা ভালোবেসে আলো জ্বেলেছিল কবি আল মাহমুদ লিখেছেন- আবাল্য শুনেছি মেয়ে বাংলাদেশ জ্ঞানীর আতুড় অধীর বৃষ্টির মাঝে জন্ম নেন শত মহীরুহ, ( সোনালি কাবিন) বাংলাদেশ সত্যিই জ্ঞানীর আতুড়। এখানে অধীর বৃষ্টির মাঝে জন্ম নিয়েছেন শত মহীরুহ। তাদেরই একজন আচার্য শান্তিরক্ষিত। আচার্য শান্তিরক্ষিতের জন্ম বিক্রমপুরের বজ্রযোগীনি গ্রামে। হ্যাঁ। অতীশ দীপংকরও ওই বিক্রমপুরের বজ্রযোগীনি গ্রামেই জন্মেছিলেন । অবশ্য, আচার্য শান্তিরক্ষিতের আরও তিনশ বছর পর। আচার্য শান্তিরক্ষিত-এর জন্ম তাহলে সপ্তম শতকে, যেহেতু অতীশের জন্ম দশম শতাব্দীতে। হ্যাঁ। তাইই। তো, কেমন ছিল সপ্তম শতক, বাংলায়, উত্তর ভারতে? খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দিকে বাংলার পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের অংশবিশেষে গৌড় রাজ্যের উদ্ভব হয়েছিল। শশাঙ্কের নাম শুনে থাকবেন। ইনি গৌড়ে ক্ষমতা দখল করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর থেকে ছয় মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত রাঙ্গামাটিতে তাঁর রাজধানী কর্ণসুবর্ণ বলে চিহ্ণিত করা হয়েছে। বর্তমান বিহারের মগধ রাজ্যটিও শশাঙ্কের গৌড় রাজ্যের অংশ ছিল! এবং শশাঙ্কই বাংলার প্রথম রাজা যিনি বাংলার ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে বাংলার বাইরে বহূদূর অবধি আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। সেই সপ্তম শতকে উত্তর ভারত শাসন করতেন সম্রাট হর্ষবর্ধন। শশাঙ্ক একটি উত্তর ভারতীয় সাম্রাজ্য স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে শশাঙ্ক এমন কী হর্ষবর্ধনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। এদিক থেকে তিনি পরবর্তীকালের পাল বংশীয় রাজা ধর্মপাল ও দেবপাল এর আক্রমণাত্মক উত্তর ভারতীয় নীতির অগ্রদূত। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলায় বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয়। একেই বলে মাৎস্যন্যায়। যে কারণে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ অবধি গৌড়ের ইতিহাস অস্পস্ট। ওদিকে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর (৬৪৬/৬৪৭ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর সাম্রাজ্যে নৈরাজ্য ও সংশয় দেখা দেয়। ঠিক ওই সময়ে তিব্বতের যুদ্ধবাজ রাজা শ্রং-ছান-গেমপো বাংলায় ও উত্তর ভারতে পর পর বেশ কটি সামরিক কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। এমনই এক ঘোর অরাজক অবস্থায় তিব্বতে গিয়েছিলেন বিক্রমপুরের বজ্রযোগীনি গ্রামের আচার্য শান্তরক্ষিত। কেন? বলছি। আচার্য শান্তরক্ষিত ছিলেন বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। সেই সময়টায়, অর্থাৎ, সপ্তম অস্টম শতকে শিবপন্থি ও বিষ্ণুপন্থিদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে বৌদ্ধধর্ম ভারতবর্ষ থেকে অপসারিতে হয়ে যেতে থাকলেও বাংলা বৌদ্ধধর্মকে প্রায় একাদশ শতক অবধি আগলে রেখেছিল তার বুকে। বাংলার এই আশ্রয়ী ভূমিকা বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। আগেই বলেছি, তিব্বতের ক্ষমতাধর রাজা বাংলায় শ্রং-ছান-গেমপো পর পর কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে শান্তিবাদী ধর্মের প্রচার জরুরি ছিল। বৌদ্ধধর্ম তিব্বতের ভিতর দিয়েই চিনে গিয়েছিল তৃতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যে। কাজেই বৌদ্ধধর্মটা চিনে তখন ছিল। হয়তো কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। সপ্তম শতকের আচার্য শান্তরক্ষিত তিব্বতে শান্তিবাদী বৌদ্ধধর্ম প্রচারে গিয়েছিলেন। সে যুগে তিব্বত যাওয়া কি অত সহজ ছিল? অবশ্যই না। তবু আচার্য শান্তরক্ষিত গিয়েছিলেন। বিপদসঙ্কুল পথ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গিয়েছিলেন শান্তরক্ষিত। যুদ্ধবিধস্ত অস্থির সময়টাকে শান্ত করতেই গিয়েছিলে। তিব্বতবাসীকে এই কথাই বলতে গিয়েছিলেন -যুদ্ধ নয়, আজ শান্তি চাই। আর শোনো- শান্তি এক জরুরি বিষয়। যুদ্ধ করে কি লাভ বল-আর আমি শান্তিময় একটি দেশ থেকেই এসেছি। আমার গ্রামের দক্ষিণে যে নদীটি প্রবাহিত- তার নাম পদ্মা, ওই নদীতে যে সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়, তার নাম ইলিশ। ইলিশ? হ্যাঁ। ইলিশ। আর পুবের নদীটির নাম মেঘনা, ওই মেঘনা নদীর পাড়ে চন্দ্রপুর নামে এক নৌ-ঘাট আছে, অর উত্তরের নদীর নাম ধলেশ্বরী ...ওখানেই তো শীতলক্ষ্যা নদী আর স্বর্ণগ্রাম। স্বর্ণগ্রাম? তিব্বতী কিশোরীটির চোখে প্রগাঢ় বিস্ময়। হ্যাঁ, স্বর্ণগ্রাম। আমার দেশের নাম যে স্বর্নবঙ্গ। ভিজা মাটির দেশ, জলের দেশ আর মাছের দেশ। তারপর বৃদ্ধ শান্তরক্ষিত ফিসফিস করে বলেন- আবাল্য শুনেছি মেয়ে বাংলাদেশ জ্ঞানীর আতুড় অধীর বৃষ্টির মাঝে জন্ম নেন শত মহীরুহ, অজানা ভাষা শুনে তিব্বতী কিশোরীটির চোখে প্রগাঢ় বিস্ময়। শান্তদাদু মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে বোঝা যায় না। তখন বেলা পড়ে এসেছে। ওরা দুজন সেই দুপুর থেকে মন্দিরের সিঁড়িতে বসে ছিল। ওদের ওপর ঝরে ঝরে পড়ছিল সপ্তম শতকের রোদ। প্রাঙ্গনে একটা দীর্ঘ কৃষ্ণচূড়া গাছ, তলায় তার অজস্র শুকনো পাতা। সময়টা শেষ অগ্রহায়ন। শীত আসছে। বাতাসে শীতের মৃদু কামড়। দূরের পবর্তশীর্ষে শেষবেলার রক্তিম রৌদ্রালোক প্রতিফলিত। শান্তরক্ষিত সেদিকে তাকিয়ে ভারি অন্যমনস্ক হয়ে যান। কিশোরীটি আদুরে গলায় বলল, শান্তদাদু? কি রে নরবু। তুমি আমাকে তোমার ভিজে মাটির জলের মাছের দেশে নিয়ে যাবে? কিশোরী নরবু গাঢ় স্বরে বলল। এই কথায় শান্তরক্ষিতএর চোখে জল জমে। তিনি দূরের পবর্তশীর্ষে প্রতিফলিত শেষবেলার রক্তিম রৌদ্রের দিকে তাকালেন। তারপর ফিসফিস করে যা বললেন তা আজ আর এত বছর পর জানা যায় না। সেই সপ্তম শতকে আচার্য শান্তরক্ষিত শান্তিবাদী বুদ্ধবাণী নিয়ে তিব্বতে গিয়েছিলেন । আমাদের মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগীনি গ্রামের একজন জ্ঞানী মানুষ। ভাবলে কেমন যেন লাগে। বারবার আল মাহমুদের কবিতা মনে পড়ে। বাংলাদেশ জ্ঞানীর আতুড় ... একজন প্রখ্যাত বাঙালী গীতিকার/সুরকার গেয়েছেন- কারা যেন ভালোবেসে আলো জ্বেলেছিল সূর্যের আলো তাই নিভে গিয়েছিল। যারা ভালোবেসে আলো জ্বেলেছিল- সপ্তম শতকের আচার্য শান্তরক্ষিত তাদেরই একজন। তথ্যসূত্র: (ক) একরাম আলি: অতীশ দীপংকর। (খ) বাংলাপিডিয়া সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩০
false
fe
যুদ্ধাপরাধীদের মুখ _ বিচারের অপেক্ষায় জাতি জাতি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে এই বিচারের ।বিচার সুষ্ঠু হবে তো ? প্রতীকি বিচারের নামে পার পেয়ে যাবে রাঘব বোয়ালরা ?পড়ুন দৈনিক সংবাদ এর রিপোর্ট / ২৯ মার্চ২০১০আজ থেকে শুরু হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। তদন্ত দলের সদস্যরা আজ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু করছেন। যুদ্ধাপরাধীদের কেউ দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েও রেহাই পাবে না, তাকে ধরে আনার জন্য ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রয়োজনে জেলা ও বিভাগীয় শহরে আদালত বসানো হবে। গত বৃহস্পতিবার সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল ও তদন্ত কমিটির নাম ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনালের জন্য স্থান নির্বাচন করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে অপরাধের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা।জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া দু'ভাবে চলবে। প্রথমত, অভিযোগের ভিত্তিতে এবং দ্বিতীয়ত; দেশী-বিদেশী আর্কাইভ, ভিডিও ক্লিপ ও পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত দেখে। যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের মাধ্যমে বিচার শুরু হবে। গতকাল রোববার আইনমন্ত্রী, আইন প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত্র বিচার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, এটর্নি জেনারেল, আইনজীবী প্যানেলের সদস্য, তদন্ত সংস্থার প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিচারের জন্য প্রস্তুত পুরাতন হাইকোট ভবন পরিদর্শন করেন। আদালত পরিদর্শন শেষে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক দুপুরে বৈঠকে বসেন। বিচারের জন্য প্রস্তুত পুরাতন হাইকোর্ট ভবন পরিদর্শনের সময় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিচার কাজে সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট এবং বিচারকদের বিচার কাজে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। নিরাপত্তারও কোন ঘাটতি নেই।বিচারের জন্য সময়সীমা নির্দিষ্ট রয়েছে কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে টাইম ফ্রেম বেঁধে দেয়া যায় না। এর আগে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেছিলেন, অপরাধী শনাক্ত হলে অনেক পরেও তার বিচার হবে। প্রয়োজনে একাধিক আদালত থাকবে। বিভাগ বা জেলাতেও বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। গতকাল মন্ত্রী বিচারের সব প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ বিচারের মাধ্যমে জাতির প্রত্যাশা এবং দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।গতকাল রোববার দুপুরের আগে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের অপর বিচারক হাইকোর্টের বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর এবং ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাবেক জেলা জজ একেএম জহির আহমেদ এজলাস, হাজতখানা, মিডিয়া রুম, তদন্ত রুম, চেয়ারম্যানের খাস কামরাসহ বিভিন্ন শাখা ঘুরে দেখেন। বিচারকরা আদালতের আশপাশের পরিবেশও দেখেন।ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম তার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, এতদিন ন্যায়সঙ্গতভাবে সুষ্ঠু বিচার করে এসেছি, এখনও করব। এ নিয়ে আলাদা কোন অনুভূতি নেই। এখন শুধু দায়িত্ব পালন। যেহেতু বিচারক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না, তাই মিডিয়া সেলের ব্যবস্থা করে মুখপাত্র নিয়োগ করবেন বলে উল্লেখ করেন। এর আগে চেয়ারম্যান বলেছেন, হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সব সময় তিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন। তার বিচারে যেন কোন নিরপরাধ লোক শাস্তি না পায় এবং অপরাধী যেন ছাড়া না পায় সেভাবে তিনি বিচার করেছেন, এখনও করবেন।তদন্ত সংস্থার প্রধান সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবদুল মতিন আদালতের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে দুটি উপায়ে যুদ্ধাপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রথমত, অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে সেক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণে তদন্ত করা হবে। দ্বিতীয়ত, দেশী-বিদেশী আর্কাইভ, ভিডিও ক্লিপ ও পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে অভিযোগ প্রমাণের ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ না করলেও বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা সংগ্রহ করে অভিযোগ প্রমাণ করা হবে।গ্রেফতার প্রসঙ্গে আবদুল মতিন সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গ্রেফতার করা যাবে। এজন্য আইনের আলোকে ট্রাইব্যুনালের নতুন বিধিও তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন।এর আগে সকালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং আইনজীবী প্যানেলের সদস্য মোশাররফ হোসেন কাজল, ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করেন।বিদেশে থাকা অভিযুক্ত ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজনে সরকার ইন্টারপোলের সাহায্য চাইবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমার কাছে কোন যুদ্ধাপরাধীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর নেই। আর কেউ পালিয়ে গেলেও রেহাই পাবে না। ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।' গতকাল রোববার উত্তরা বালিকা বিদ্যালয়ের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা বলেন।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমার কাছে এখনো রিপোর্ট আসেনি যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে কেউ পালিয়ে গেছে। পুলিশকে নির্দেশ দেয়া আছে যাতে কোন যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে। যদি কেউ পালিয়ে গিয়ে থাকে অবশ্যই তাকে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রয়োজনে আমরা ইন্টারপোলকে ব্যবহার করে সেই যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে আনব।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে তদন্ত সংস্থাকে তথ্য দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের কেউ পালিয়ে গেলেও রক্ষা পাবে না। এখন পৃথিবী অনেক ছোট। যুদ্ধাপরাধীরা অন্য কোন দেশে পালিয়ে গিয়েও পার পাবে না। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেই। জামায়াতে ইসলামীর কেন্ন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলীর বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি ধরে গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এ কথা বলেছেন।সাভারে লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) 'গভর্নেন্স রিফর্মস থ্রু আইসিটি এপলিকেশন' শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।এইচটি ইমাম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন ধরনের চাপ নেই। তবে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করতে পারে_ এমন আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা দেশে ব্যাংক, বীমা, স্কুল-কলেজ ও মিডিয়ার মতো লাভজনক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছে। এ অর্থ দিয়ে তারা বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।যুদ্ধাপরাধীদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত কিংবা অর্থ উপার্জনের উৎস বন্ধ করতে সরকার কোন পদক্ষেপ নেবে কি না_ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইমাম বলেন, প্রকাশ্যে তা বলা সম্ভব নয়। দেশে বর্তমান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত তারা বিডিআর হত্যাকা- ঘটিয়েছে। আর তাদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদেরও যোগসূত্র রয়েছে।
false
fe
কথামালার রাজনীতি বনাম কর্মের প্রত্যয় কথামালার রাজনীতি বনাম কর্মের প্রত্যয় ফকির ইলিয়াস========================================কথার রাজনীতি বাংলাদেশে নতুন নয়। গণমানুষের জন্য কাজ করতে হলে প্রত্যয় থাকতে হয়। সে প্রত্যয় অনেকের থাকে না। যা থাকে, তা হচ্ছে কথার ফুলঝুরি। আর এ কথামালার রাজনীতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত, দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে বরাবরই তৎপর থাকে একটি মহল।বিএনপির রাজনীতিতে যুগ্ম মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন বেশ সরব। জাতীয় রাজনীতিতে তার একটি পারিবারিক পরিচয় আছে। পিতাও ছিলেন রাজনীতিক। তার চাচা মীর্জা গোলাম হাফিজ ছিলেন বিএনপি মনোনীত স্পিকার। সেই মীর্জা ফখরুল অতি সম্প্রতি একটি নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের 'স্বপ্নদ্রষ্টা' নাকি তারেক রহমান! মীর্জা ফখরুলের মতে, তারেক রহমানই বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'ল্যাপটপ কালচার' চালু করেন। তিনিই ল্যাপটপে বিএনপির সব ডাটা (?) এন্ট্রি করে রাখতেন। মীর্জা ফখরুল আরও বলেছেন, তারেক রহমানই প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।স্বপ্ন কে, কোথায়, কি দেখেন তা বাংলাদেশের গণমানুষের জন্য মুখ্য কোন বিষয় নয়। এটা বাংলাদেশের অনেক মানুষই দেখেছেন, তারেক রহমান ব্যক্তিগত প্রয়োজনে, হাওয়া ভবন কন্ট্রোলিংয়ের প্রয়োজনে একটি ল্যাপটপ সঙ্গে রাখতেন। তিনি ছিলেন একটি বিরাট নেপথ্য শক্তির প্রতিভু। তাই তাকে অনেক কিছুই কন্ট্রোল করতে হতো।কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এ পরিণত করতে চান, তা কোথাও বলেননি। কোন রাজনৈতিক মতবাদ কিংবা দর্শনও চালু করেননি। তার ওই ল্যাপটপ দিয়ে নানা ধরনের অপকর্মের খোঁজখবর তিনি এন্ট্রি করে রাখতেন, তা সে সময়ও অনেক সমালোচক বলেছেন। ল্যাপটপ সঙ্গে রাখা মানে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর স্বপ্নদ্রষ্টা বনে যাওয়া এক নয়। এমন তত্ত্ব চর্বণ করে মীর্জা ফখরুল 'স্বাধীনতার ঘোষক' ছিনতাই নাটকের পুনরাবৃত্তিই করতে চেয়েছেন। তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কারণ নেই।'পবন' নাটকের মধ্য দিয়ে বিএনপি নতুনভাবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। সংসদীয় উপনেতা পদে মওদুদ আহমদ, মহাসচিব পদে মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ঢাকা মহানগরী বিএনপির সভাপতি পদে সাদেক হোসেন খোকা স্থান পাচ্ছেন তা প্রায় নিশ্চিত। খোন্দকার দেলোয়ার শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ছেন কিংবা কোন নিষ্ক্রিয় পদে আসীন হতে পারেন- এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।এদিকে জামায়াতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক যাচ্ছে না বিএনপির। আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত মোলাকাত করেও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সায় পাননি। এর প্রধান প্রতিবন্ধকতা বিএনপির নতুন কার্যকরী কমিটির অধিকাংশ সদস্য। তারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার গিবত আর নিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু এটাও স্পষ্ট বলা যায়, এ অভিমান তাদের বেশিদিন টিকবে না। বিএনপি-জামায়াতের মিত্রতা শেষ পর্যন্ত অটুটই থাকবে। কারণ তারা একে অন্যের অঙ্গে যে মনিহার, তা অন্য কোথাও মানাবে না।দুই.এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্র ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে শিবিরের গ্রেফতারকৃত নেতা ইকরাম হোসাইন। তার মতে, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আদেশেই এ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে এবং সে সময় পুলিশও বেশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দখলের পর এসব রগকাটা বাহিনী দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দখলও নিতে চাইছে। এ সংবাদ নতুন নয় এবং প্রশাসনেরও তা খুব ভাল করে জানার কথা। তারপরও পুলিশের নাকের ডগার ওপর দিয়ে ফারুক হোসেনের শবদেহ কীভাবে ম্যানহোলে রাখা হলো, সে প্রশ্নটি জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে দেখা দরকার। যারা দায়িত্বে ছিল, তাদের কী কী গাফিলতির কারণে এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সাধিত হলো, তার শ্বেতপত্র সরকারের প্রকাশ করা উচিত।মনে রাখা দরকার, এই যে মরণ কামড় দেয়ার জন্য একটি শক্তি সংঘবদ্ধ হতে চাইছে এদের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তা সহজে উপড়ে ফেলা যাবে না। আমরা দেখছি, সরকার চন্দ্রিমা উদ্যানের নামটি পুনঃপ্রবর্তন করতে চাইছে। বিএনপির চাটুকাররা গোটা দেশকেই জিয়ার নামে লিখিয়ে নিতে পারলে শান্তি পেত! এমন একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করেছি। এরা এখনও তৎপরতা বন্ধ করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। তাই নামবদলের প্রচেষ্টার মতো ক্ষুদ্র কাজগুলোকে বর্তমান সরকারের গুরুত্ব দেয়া উচিত নয়। কারণ এসব ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তারা ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টায় অতীতের মতো লিপ্ত হতে পারে।বর্তমান সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বারবার বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে প্রতীকী বিচার। এ প্রতীকী বিচারে দেশের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে কি? নাকি আবারও 'চিকন আলী' ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বাংলাদেশে?বাংলাদেশ সেই দেশ যে দেশের মহান সংসদ চত্বরে এখনও কুখ্যাত রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী খান এ সবুরের কবর রয়েছে। এ কাজটি কারা, কেন করেছিল তা জাতির অজানা নয়। জাতীয় সংসদ এলাকাকে এ কালিমা থেকে মুক্ত করার কথাটিও সরকারকে ভাবতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, এসব কাজ জামায়াত-বিএনপির জোট ক্ষমতায় গিয়ে অতীতে করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। তাই বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোটকে এসব কাজ সাধন করতে ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি।বাংলাদেশ সরকার, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, মন্ত্রিপরিষদ এবং এমপিদের বেতনও ৮৩ শতাংশ বাড়িয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ বেতন বৃদ্ধি হতেই পারে। কিন্তু জনগণের যে চাহিদা তা পূরণেও সব রাজনীতিককে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ এমনই একটি দেশ যে দেশটি গেল প্রায় চার দশক কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধন করতে পারেনি। কেন পারেনি, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হওয়া দরকার। প্রয়াত ড. হুমায়ুন আজাদ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'এই দেশটিকে সবাই ভোগ করতে চায়। দেশটিকে ভালবাসার মানুষ আসলেই খুম কম।'এই যে দেশপ্রেম তা এখনও রয়ে গেছে সুদূর পরাহত বিষয়। প্রতিযোগিতা বেড়েছে ভোগের, ত্যাগের নয়। মুখে কথার ফানুস ওড়ালেও অনেকেই দল এবং শীর্ষ নেতা-নেত্রীর মনোরঞ্জনে ব্যস্ত।যে কথাটি না বললেই নয় তা হচ্ছে, ব্যক্তি বন্দনা বাদ দিয়ে রাষ্ট্র বন্দনায় রাজনীতিকদের মনোনিবেশের কোন বিকল্প নেই। চাঁদকে ছেঁড়া কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের বিশ্বের সভ্য মানুষ কীভাবে সম্মান করেন তা শেখা দরকার বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদেরই। 'দেশকে ভালবাসি' মুখে নয়, কর্মে প্রমাণ করতে না পারলে প্রজন্ম তাদের প্রত্যাখ্যান করবে, সন্দেহ নেই।নিউইয়র্ক৯ মার্চ, ২০১০। --------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ১২ মার্চ ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- রব হীথ
false
mk
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরো জোরদার করতে নয়াদিল্লি প্রতিবেশী দেশটির প্রস্তাবিত পায়রা সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে অত্যন্ত আগ্রহী। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় পটুয়াখালী জেলার পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের কিছু অংশ ভারতকে দিতে অনাগ্রহী নয়।এই ঠিকাদারি পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য পরিচালিত মুম্বাইভিত্তিক জওহরলাল নেহরু পোর্ট ট্রাস্ট এবং গুজরাটভিত্তিক কান্দলা পোর্ট ট্রাস্টের ‘ইন্ডিয়া পোর্ট গ্লোবাল’ নামে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার এগিয়ে রয়েছে। পায়রায় বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য নকশা তৈরি, তহবিল জোগান এবং নির্মাণে এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করতে আগ্রহী। ভারতের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমুদ্রপথে পরিচালিত হয়। তবে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দেশটিতে নতুন কোনো সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হয়নি। বাংলাদেশের খুব দ্রুত একটি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রয়োজন। কারণ চট্টগ্রাম ও মোংলায় দেশের বাকি দুটি সমুদ্রবন্দর অগভীর। ফলে বড় মালবাহী জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারে না। অতিরিক্ত চাপের কারণে বেহাল দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত চট্টগ্রাম বন্দরের। এই বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৯.২ মিটার। যে কারণে বড় জাহাজগুলো এ বন্দরে ভিড়তে পারে না।বাংলাদেশে ব্লু ইকোনমি উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করেছে, যাতে দেশের বিপুল সমুদ্র সম্পদ আহরণ সম্ভব হয়।প্রস্তাবিত পায়রা বন্দরের বিষয়টি প্রথম ওঠে ২০১৩ সালে। ওই বছর ৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন’ পাস হয়। এর দুই সপ্তাহ পর ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার রমনাবাদ চ্যানেলে পায়রা সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।পায়রা বন্দরের নির্মাণকাজ গতি পায় ২০১৪ সালে। এ সময় চট্টগ্রাম প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের অধীনে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকার এ বন্দরের নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।এই অনুমোদনের পর বন্দর উন্নয়নে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় ভারত। দুই সরকারের (জিটুজি) মধ্যে চুক্তির আওতায় এই সহযোগিতা করা হবে। কৌশলগতভাবে পায়রা বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ভারত চায়নি চির বৈরী চীন তাদের (ভারতের) উপকূলের কাছাকাছি এই অবকাঠামো তৈরিতে হাত দিক। জানা গেছে, যদি আর্থিকভাবে লাভজনক নাও হয়, তবু নয়াদিল্লি এই প্রকল্প গ্রহণে আগ্রহী।পায়রা বন্দরের প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণের খরচ জোগান দিচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই বন্দরটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে থাকায় দেশের বাকি দুটি সমুদ্রবন্দর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সর্বাধুনিক কনটেইনার ক্যারিয়ার ও জেটিসহ সহায়ক অবকাঠামো এরই মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত কাঠামোর জন্য ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়াও চলছে।বাংলাদেশ সরকার পায়রা বন্দরকে পর্যায়ক্রমে গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত করতে চায়। পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করার পর এটি বছরে ৭৫ হাজার কনটেইনারের ব্যবস্থাপনা করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমান বন্দরগুলোর চেয়ে এটি পাঁচ গুণ বেশি।বিশেষজ্ঞদের মতে, পায়রা বন্দরে ভারী জাহাজের আসা-যাওয়ার স্বার্থে ড্রেজিংয়ের কাজ চালাতে হবে। বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বন্দরের টেকসই নাব্যতা নিশ্চিত করতে ৯৪ লাখ কিউবিক মিটার ড্রেজিং করতে হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিংফোর্ডকে নিয়োগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের তৈরি এক খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট প্রস্তাবিত দুই হাজার কোটি ডলার বাজেটের ৩৫ শতাংশই খরচ হবে শুধু ড্রেজিংয়ের কাজে। ঢাকার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকার এরই মধ্যে বেলজিয়ামের ড্রেজিং কম্পানি জ্যঁ দে নুলকে পায়রা বন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিয়োগ করেছে।পায়রা সমুদ্রবন্দরের সব ধরনের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার একটি মাস্টার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জানা গেছে, সরকার এরই মধ্যে বন্দরের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে এবং পাঁচটি বিদ্যুৎ প্রকল্প, ভূমিভিত্তিক তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইসি), তেল শোধনাগার, একটি বিমানবন্দর এবং বন্দরের কাছে একটি নৌঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া এই বন্দর রেললাইন ও চার লেনের মহাসড়কের সঙ্গেও যুক্ত থাকবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।এর মধ্যে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ব্রিটেনের সঙ্গে ঢাকা-পায়রা ২৪০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরকেই দেশের প্রধান বন্দর হিসেবে কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সে কারণেই রেলপথে এই যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে সীমিত আকারে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।পায়রা বন্দরের সঙ্গে ভারতের বিচ্ছিন্ন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্ণ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়রা বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ভূমিবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এই দেশগুলোকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারকে নিয়ে অর্থনৈতিক করিডর (বিসিআইএম-ইসি) তৈরির যে প্রস্তাব রয়েছে সে ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সুযোগ তৈরি করবে এই পায়রা বন্দর। এভাবেই পায়রায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক বাণিজ্য, চলাচল ও যোগাযোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ।সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পায়রা বন্দর প্রকল্প নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের শিপিং মন্ত্রণালয় এই ঠিকাদারি জিটুজির আওতায় ভারতকে দিতে সম্মত হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে দুই দেশের শিপিং সচিব পর্যায়ে আলোচনা হয়। ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল ভারতের শিপিং মন্ত্রী নিতীন গড়করি বলেন, বাংলাদেশের সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল বন্দর উন্নয়নের কাজটি পাবে—এমন সম্ভাবনাই বেশি। প্রস্তাবিত এই বন্দরের জরিপকাজ করার জন্য ভারত এরই মধ্যে একটি দল বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।ভারত এই চুক্তি করতে অতিমাত্রায় আগ্রহী। কারণ সে ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য শুধু শিলিগুড়ির সংকীর্ণ রাস্তার ওপর নির্ভর করতে হবে না। পায়রা বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এটি ভারতীয় উপকূল রেখারও খুব কাছাকাছি।২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় শিপিং চুক্তি সই হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে। এ সময় দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতা আরো জোরদার হয়েছে। তারই নজির নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে শুরু করে পায়রা প্রকল্প নিয়ে দুই দেশের অবস্থান।তবে চীনের মতো অন্য আঞ্চলিক শক্তিও বাংলাদেশের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত সক্রিয়। তাদের ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনও পায়রা বন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে একই রকম আগ্রহী। তারা যেকোনো দেশের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পায়রা প্রকল্পের মোট ১৯টি উপাদানের মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে দুই চীনা কম্পানির সঙ্গে ৬০ কোটি ডলারের সমঝোতা স্মারকে সই করে।প্রকাশিত খবর অনুসারে, চায়না হারবর ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি বন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণ করবে। এ ছাড়া চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন তীরবর্তী কাজ এবং আবাসিক ভবন তৈরি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করবে। এসব তত্পরতা থেকেই স্পষ্ট যে ঢাকা বিদেশি কম্পানিগুলোকে কাজ বণ্টনের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের অবদান ঠিক কতখানি হবে, তা সরকারিভাবে এখনো স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।এক বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারত সমুদ্র বিষয়ে এবং পায়রা চুক্তি নিয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এর মধ্যে সমুদ্রের নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাও রয়েছে। পায়রা বন্দরকে দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি কেন্দ্র এবং দেশের সুন্দরবনসহ দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নজরদারি ব্যবস্থার ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। এই সক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৫
false
hm
মাদার্চো- গল্পটি কল্পবিজ্ঞান হলেও কিছুটা ইয়ে। নানা অশ্লীল গালিগালাজ আছে গল্পের প্রয়োজনে। গল্পের থিমটিই প্রাপ্তমনস্ক ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে। ১. প্রফেসর হক মহা অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরলেন গোলাম আম্বিয়ার দিকে। "কী হইল আম্বিয়া, আবার কী সমস্যা তোমার?" গোলাম আম্বিয়া হাউমাউ করে উঠলো, "স্যার, একটা বিহিত করেন। এই লোকটা স্যার আমারে উঠতে বসতে মা বাপ তুইল্যা গালি দিতাসে স্যার। আমার কিন্তুক জিদ্দে শইলটা খালি ফাটতাসে। কিসু কই না খালি। আমি কিন্তুক স্যার, চেতলে খুব খরাব মানুষ, কখন যে তুইল্যা শালার পুতেরে একটা আছাড় দিমু ...।" প্রফেসর হক চশমার ফাঁক দিয়ে গোলাম আম্বিয়ার পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি লম্বা টিংটিঙে কলেবর দেখেন মনোযোগ দিয়ে। "কী করসে মোয়াজ্জেম হোসেন?" আম্বিয়া আবারও ডুকরে ওঠে, "গাইল দিসে স্যার! অসইভ্য সব খাচড়া খাচড়া কথাবার্তা কয় হ্যায়।" প্রফেসর হক বললেন, "আচ্ছা তুমি যাও, কাম করো গিয়া। মোয়াজ্জেমরে আমি কমুনে বুঝাইয়া।" আম্বিয়া তড়পে ওঠে, "স্যার, লাথো কা ভূত বাতো মে নেহি যাতা, আমগো পাশের বাড়ির বিহারী দাদি সবসময় কইতো! আপনি স্যার অরে পানিশমেন্ট দেন!" প্রফেসর হক বললেন, "এখন এইখানে ক্যামনে অরে পানিশমেন্ট দেই? আমরা ফিরত গিয়া লই, তারপর দেখা যাবেনে। তুমি যাও, কাম করো গিয়া।" গোলাম আম্বিয়া আবারও কী যেন বলতে গিয়ে থেমে যায়। তারপর ঝট করে ঘুরে দুপদাপ পা ফেলে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। গোলাম আম্বিয়া বেরোতে না বেরোতেই কেবিনে ঢোকে মেজর মোয়াজ্জেম। "গুড মর্নিং, স্যার! কোন নিউজ?" প্রফেসর হক গম্ভীর হয়ে বলেন, "মোয়াজ্জেম, তুমি নাকি আম্বিয়ারে খালি গালাগালি করো?" মোয়াজ্জেম একটা টুল টেনে বসে পড়ে ধপ করে। "না স্যার, বিনা কারণে কি আর কেউ কাউরে গালি দেয়? আম্বিয়া লোকটা স্যার আইলসার হদ্দ। সে খালি শুইয়া বইসা থাকে। কাম করতে কইলে নড়েচড়ে না। তাই তারে মাঝেমধ্যে শরীর গরম করানোর জন্য ধরেন গিয়া একটু বড়দের গালি দেই আর কি। নাথিং পারসোনাল স্যার। আমাদের লাইনে এই জিনিস তো স্যার ধরেন গিয়া দুধভাত।" প্রফেসর হক আরো গম্ভীর হয়ে বলেন, "তুমি তো আর তোমার লাইনে নাই মোয়াজ্জেম। তুমি এখন আমার লাইনে। আমার লাইনে এইসব না করাই ভালো। তিনজন মোটে মানুষ আমরা, তার মধ্যে দুইজন খালি একজন আরেকজনের পিছে লাইগা থাকবো, আর আমারে বইসা বইসা তার ফিরিস্তি শুনতে হইবো, ঐসব চলবে না। মিলমিশ কইরা চলবা এখন থিকা।" মোয়াজ্জেম তার সাড়ে ছয় ফিট লম্বা শরীর কাঁপিয়ে হাসে। "ইয়েস স্যার! কিন্তু আমি আপনাকে বলতেসি স্যার, আম্বিয়ারে আমার হাতে ছাইড়া দ্যান, ওরে আমি এক সপ্তার মধ্যে সোজা করে ফেলবো। রোজ সকালে আমার সাথে এক ঘন্টা ব্যায়াম করলেই ও মানুষ হয়ে যাবে!" প্রফেসর হক বলেন, "তোমার সাথে এক ঘন্টা ব্যায়াম করলে ও মরা মানুষ হইবো। গতর খাটার জন্য তো তুমি আছো, আম্বিয়ার কাম যন্ত্রপাতি লইয়া। ওর তো পালোয়ান হইয়া কাম নাই। বোজলা? এইবার যাও, দুইজনে মিলা মিশা কাম করো গা। ফড়িংগুলির কাছ থিকা আইজকা পর্যন্ত কোন রিপোর্ট আইলো না, চিন্তায় আছি।" মোয়াজ্জেম উঠে আড়মোড়া ভাঙে। তারপর খটাশ করে একটা স্যালুট দেয় কেবিন কাঁপিয়ে। "স্যার ইয়েস স্যার!" প্রফেসর হক কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ ফিরিয়ে আবার কাজ করতে থাকেন। মিনিট খানেক পরই বাইরে কিছু দূরে চাপা হুঙ্কার শুনতে পান, "আম্বিয়া! ইউ ব্লাডি মাদার্চোদ! এইদিকে আসো, এই বাক্সটা খোলো জলদি! মুভ ইওর ফ্যাট বাট রাস্কেল! কুইক কুইক!" প্রফেসর হক দীর্ঘশ্বাস ফেলে লগবুক ওপেন করেন, তারপর মোয়াজ্জেমের খাতায় একটা লাল ক্রস দিয়ে রাখেন। তারিখের জায়গায় লেখা, দিন ০৬। ২. প্রফেসর হককে সব বিজ্ঞানীই কম বেশি দুয়ো দিয়েছিলেন প্রজেক্টের শুরুতে। সময়ভ্রমণকে অ্যালকেমির সাথে তুলনা দিয়ে দুনিয়ার বড় বড় বিজ্ঞান পত্রিকা বিজ্ঞানী হকের তুলা ধুনে সোয়েটার বানিয়ে ছেড়েছিলো। এগিয়ে এসেছিলো শুধু তার দেশের লোক, চাপাতি মফিজ। "স্যার, আমি জানি আপনি পারবেন।" চাপাতি মফিজ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিলো। "আমি স্যার বদ লোক, বহুত খুন খারাবি কইরা পয়সা বানাইছি, কিন্তু আমি লোক চিনি। আপনি পারবেন। আপনি স্যার সব কিছু আমার হাতে ছাইড়া দেন।" প্রফেসর হক সেই থেকে নিশ্চিন্তে সব কিছু চাপাতি মফিজের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। মাসখানেক পরই পত্রিকায় প্রফেসর হকের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর খবর বেরোয় ফলাও করে। বিজ্ঞান পত্রিকাগুলি খবর ছেপেছিলো, টাইম ট্র্যাভেলার'স ট্র্যাভেলিং টাইম ইজ আপ নাউ। চাপাতি মফিজ এসে বলে, দেখেন স্যার কত্ত বড় চুতমারানি এরা। প্রফেসর হক ওয়েবসাইটে নিজের মৃত্যু সংবাদগুলি খুঁটিয়ে পড়ে কিছুটা মন খারাপই করেছিলেন। লোকজন কী বদ! মরা মানুষের পিছনে লাগতেও ছাড়ে না। চাপাতি মফিজ চেষ্টার কোন ত্রুটিই করেনি। আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাব বানিয়ে দিয়েছে আফ্রিকার এক মরু এলাকায়। দুনিয়ার নানা কোণ থেকে খুঁজে এনেছে প্রফেসর হকের সহকর্মীদের। তারা সবাই জানেও না কী নিয়ে কাজ হচ্ছে, প্রফেসর হককে তারা ডক্টর চৌধুরী নামে চেনে। প্রথম রোবটটা যেদিন ফিরে এলো এক হাজার বছর আগের ছবি তুলে, সেদিন প্রফেসর হক মরুর আকাশের নিচে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকক্ষণ। ওপরে অনেক তারা মিটমিট করছে, নিচে তিনি অন্ধকারে শীতল বাতাসে দাঁড়িয়ে। মহাবিশ্বের এক গোপন সিন্দুকের চাবি যেন তিনি কুড়িয়ে পেয়েছেন। এরপর বাকিটা সময় কেটে গেছে টাইমশিপ তৈরিতে। ভলান্টিয়ার যোগাড়ও মফিজই করেছে। গোলাম আম্বিয়া বাংলাদেশে আণবিক শক্তি কমিশনে কাজ করেছে অনেকদিন, আর মেজর মোয়াজ্জেম হোসেন মৌরিতানিয়ায় জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে দেশে ফিরে মোটে অবসর নিয়েছে। দু'জনেই মোটা টাকা পেয়েছে এককালীন, অতীতে গিয়ে ফিরে আসা যাবে শুনে তারা আর আপত্তি করেনি। প্রফেসর হক টাইমশিপ বোঝাই করেছেন নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে। তাঁর উদ্দেশ্য নানা রকমের তথ্য সংগ্রহ। মাটি, বাতাস, পানির গুণাগুণ মাপা, নমুনা সংগ্রহ, আর আশপাশের ছবি তোলা। আশপাশ বলতে অবশ্য তিনি কয়েক হাজার কিলোমিটার ব্যাসার্ধ ধরে নিয়েছেন। তাঁর নিজেরই আবিষ্কৃত রোবটবেলুন শুধু ফাঁপিয়ে ছেড়ে দেবেন, তারাই এদিক সেদিক ঘুরে আবার জায়গামতো ফিরে আসবে ছবি নিয়ে। আর আছে ফড়িং রোবট, তারা সূর্যের শক্তিতে ওড়ে, তারা ছবি তুলবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ক্যামেরা দিয়ে, আশেপাশের ল্যান্ডস্কেপের। কেউ টেরটিও পাবে না তাদের উপস্থিতি। পরে সেই সূক্ষ্ম ছবিকে ম্যাগনিফাই করে দেখবেন প্রফেসর হক। ছয় হাজার বছর আগের পৃথিবীর চেহারাটা কম্পিউটারে গেঁথে নিয়ে আবার বর্তমানে ফিরে আসবেন, এ-ই ছিলো পরিকল্পনা। ৩. আম্বিয়া দুপুরে খাওয়ার সময় আবারও বিচার নিয়ে এলো। "স্যার, মোয়াজ্জেম আমারে খালি মাদার্চোদ কইয়া গালি দেয়। স্যার আপনি একটা বিচার করেন!" মোয়াজ্জেম বিশেষ স্যুপের প্যাকেট খুলে গরম পানিতে মেশাতে মেশাতে বললো, "আম্বিয়া, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত! শরম করে না, এইসব আজেবাজে কথা বলো স্যারের সামনে? তোমার খারাপ লাগলে চলো মারামারি করি!" আম্বিয়া বিষদৃষ্টিতে মোয়াজ্জেমের দিকে তাকালো শুধু, মুখে কিছু বললো না। প্রফেসর হক মহা বিরক্ত হয়ে মোয়াজ্জেমকে বললেন, "মোয়াজ্জেম, তোমারে কী কইলাম সকালে?" মোয়াজ্জেম কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, "কী করমু স্যার, অভ্যাস। আইলসা লোক দেখলেই জিহ্বা সুলসুল করে।" প্রফেসর হক বললেন, "ফড়িংগুলি রিপোর্ট করছে কোনোটা?" আম্বিয়া গোমড়ামুখে বললো, "না স্যার।" প্রফেসর হক বললেন, "বেলুন থিকা কোন সাড়াশব্দ পাইলা?" আম্বিয়া স্যুপ খেতে খেতে বললো, "একটু আগে আবার চেক করছিলাম স্যার। সিগন্যাল স্ট্রেংথ দেইখা মনে হইলো বারোশো কিলোমিটার দূরে আছে।" প্রফেসর হক মনে মনে মাপলেন। ইয়োরোপের মাঝামাঝি পর্যন্ত গেলেই কাজ হয়ে যাবে তাঁর। আম্বিয়া বললো, "স্যার, মোয়াজ্জেমরে বলেন সোলার সেলগুলি সব বসাইয়া ফেলতে। আমার আরো পাওয়ার লাগবো কালকে থিকা।" প্রফেসর হক বললেন, "মোয়াজ্জেম, আজকে বিকালে সেলগুলি বসানো শুরু করো তাইলে।" মোয়াজ্জেম বললো, "স্যার, আম্বিয়া হাত লাগাইলে কাজ তাড়াতাড়ি হইতো।" আম্বিয়া বললো, "আমার তো মনিটরিং করতে হইবো। তুমি এতবড় শইলটা লইয়া কতগুলি সেল বসাইতে পারবা না? তুমি না কত হাতিঘোড়া মারসো?" মোয়াজ্জেম চোখ রাঙায়, "আম্বিয়া, রোসো! খাওনটা খালি শ্যাষ হোক!" আম্বিয়া বললো, "স্যার, মোয়াজ্জেম যদি আমারে আর একবারও মাদার্চোদ কইয়া গাইল পাড়সে, আমি কইয়া দিলাম, আমি আর কোন কাম করুম না!" প্রফেসর হক বললেন, "মোয়াজ্জেম, দুষ্টামি বাদ দিয়া কাম করো, আম্বিয়ারে তার নিজের কাম করতে দ্যাও। আর লগে একটা রেডিও আর একটা ডার্ট গান লইয়া যাইও।" মোয়াজ্জেম বললো, "স্যার, ডার্ট গানের বদলে আসল বন্দুক রাখলে ভালো হইতো। এইদিকে কি হোস্টাইল এনিমি থাকতে পারে?" প্রফেসর হক বললেন, "মরুভূমির মধ্যে আছি ... তারপরও কিছু বলা যায় না। আশেপাশে লোকজন চলে আসতেও পারে। আর শোনো মন দিয়া! কোন প্রাণহরণ চলবে না। আমরা এখন ছয় হাজার বছর অতীতে আছি। একটা প্রাণী মারা মানে ভবিষ্যতে পুরা একটা বংশ ধ্বংস করা। খুব খিয়াল কইরা চলবা।" খাওয়া শেষে আম্বিয়া আর মোয়াজ্জেম বেরিয়ে গেলে প্রফেসর হক আবারও বসলেন কাজে। একটা রোবট, যার নাম রাখা হয়েছে পেলিক্যান, ফিরে এসেছে কিছুক্ষণ আগে। পেলিক্যানও সূর্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে ওড়ে, কিন্তু তার কাজ ফড়িঙের চেয়ে ভারি। সে মিষ্টি জলের সন্ধান করে তার ঠোঁটে ভরে নিয়ে এসেছে। প্রফেসর হক বসে বসে তার উড়ালের তথ্য বিশ্লেষণ করতে লাগলেন। ছয় হাজার বছর অতীতে জিপিএস ট্র্যাকিঙের সুবিধা নেই, তাঁকে অতি আদিকালের সার্ভে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পেলিক্যানের গতিপথ হিসাব করতে হবে, দেখতে হবে জলের খোঁজ সে এই মরুভূমি থেকে কোথায় কত দূরে গিয়ে পেলো। এরকম আরো কয়েকটা পেলিক্যান চারদিকে ছড়িয়ে আছে, তারা ফিরলে আশেপাশে জলের উৎস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। কাজ করতে করতেই প্রফেসর হক শুনতে পেলেন, মোয়াজ্জেম ধমকাচ্ছে আম্বিয়াকে, "আমি এই হেভি হেভি খাটনি খাটমু, আর তুমি মাদার্চোদ বইয়া বইয়া আরাম করবা? চলো আমার লগে! হাত লাগাইবা না মানে? চাইর হাত পায়ে কাম করামু তোমারে দিয়া, ইউ ব্লাডি ফুল ... !" প্রফেসর হক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লগবুক খুলে মোয়াজ্জেমের নামে বারোটা লাল ঢ্যাঁড়া কাটলেন। ৪. নবম দিনের মাথায় ফিরে এলো প্রথম ফড়িংটা। প্রফেসর হক ছবিগুলি দেখে গম্ভীর মনে গোঁফ চোমড়াচ্ছিলেন, আম্বিয়া হন্তদন্ত হয়ে আবার মোয়াজ্জেমের নামে বিচার নিয়ে এলো। "স্যার, আইজকা এই খবিশ আমারে বৈতল ডাকসে স্যার!" আম্বিয়া উত্তেজিত কণ্ঠে বলে। প্রফেসর হক বিরক্ত হয়ে বলেন, "বৈতল কী?" আম্বিয়া বলে, "এইটা স্যার একটা খুবই খরাব গালি।" প্রফেসর হক বলেন, "আম্বিয়া যাও তো, কাম করো গিয়া। আমারে কাম করতে দ্যাও।" আম্বিয়া স্ক্রিনে ছবিগুলি দেখে চমকে উঠলো। "স্যার, এইগুলি কোথাকার ছবি?" প্রফেসর হক বললেন, "আমার হিসাব বলতেসে মিশরের।" আম্বিয়া থতমত খেয়ে দেখতে থাকে ছবিগুলি। প্রফেসর হক ছবিগুলি দেখে কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারেন না। ছবিতে নদী আছে, গাছপালা মরুভূমি পাথুরে প্রান্তর সবই আছে, কিন্তু কোন লোকালয় নেই। অথচ কোঅর্ডিনেট যা হিসাব করে বার করেছেন তিনি, তাতে করে এখানে প্রাচীন মিশরীয়দের বেশ কিছু নগরাঞ্চল থাকার কথা। আম্বিয়া মাথা চুলকাতে চুলকাতে বেরিয়ে যায়। খানিক বাদেই মোয়াজ্জেম এসে বললো, "স্যার, এই মিশনে আসলে একজন লেডিস দরকার ছিলো। এই অমানুষ আম্বিয়ার বদলে স্যার কোন মিস চম্পা-চামেলিকে যদি নিতেন, সময়টা ভালো কাটতো। রোজ এই কুইড়া বদমাইশটার মুখ দেখতে হয় ঘুম থিকা উইঠা!" প্রফেসর হক গম্ভীর হয়ে যান। "মোয়াজ্জেম, কোন কাজের কথা বলবা?" মোয়াজ্জেম গোমড়া মুখে বলে, "না স্যার। সুখদুঃখের আলাপ করতে আসছিলাম আপনার সাথে। আম্বিয়া অমানুষটার সাথে তো আসলে কথা বলা যায় না। সে বুঝে গাইল আর মাইর। আপনি ব্যস্ত, বুঝি নাই স্যার। আসি এখন।" মোয়াজ্জেম বেরিয়ে যাবার পর প্রফেসর হক লগবুক খুলে মোয়াজ্জেমের নামে পাঁচটা লাল ঢ্যাঁড়া দিয়ে রাখেন। ৫. পরের পাঁচ দিনে ফিরে এলো বাকি ফড়িংগুলিও। কিন্তু ফলাফল কম বেশি এক। লোকালয়ের কোন চিহ্ন নেই। সবচেয়ে অস্বস্তিকর ছবি রাতের। আগুনের কোন নমুনাই নেই কোন ফড়িঙের ছবিতে। এর একটাই অর্থ, মানুষের কোন বসতি নেই। অথচ প্রফেসর হক হিসেব করেই ফড়িংগুলিকে পাঠিয়েছেন। আম্বিয়া আর মোয়াজ্জেম প্রফেসর হকের অস্থিরতা দেখে আর বিরক্ত করলো না তাঁকে। মোয়াজ্জেম বাইরে বেরিয়ে এসে সিগারেট ধরিয়ে বললো, "আম্বিয়া, ডার্লিং, সমস্যাটা কী?" আম্বিয়া দাঁত খিঁচিয়ে বললো, "আশেপাশে কোন মানুষ নাই।" মোয়াজ্জেম বিড়বিড় করে বললো, "ড্যাম! মানুষ না থাকুক, মেয়েমানুষ থাকা উচিত ছিলো! আর কত?" আম্বিয়া সন্দিহান চোখে মোয়াজ্জেমকে দেখতে দেখতে বলে, "মতলব কী তোমার?" মোয়াজ্জেম গালে হাত ঘষতে ঘষতে বললো, "আরে আশেপাশে গ্রামগঞ্জ থাকলে একটা ছেরিরে ধইরা নিয়া আসা যাইতো। অ্যামনে কইরা আর কতদিন যাইবো? একটা চাহিদা থাকে না মানুষের?" আম্বিয়া বললো, "ঐ সাবধান! হুঁশিয়ার! কোন তাফালিং চলবো না। এইখানে একটু ঊনিশ বিশ হইলে কিন্তু আসল সময়ে পুরা খবর হইয়া যাইবো কইলাম!" মোয়াজ্জেম হাসিমুখে পকেট থেকে একটা কনডমের প্যাকেট বার করে দেখায়। "তোমার মতো বাঙ্গু পাইসো আমারে? আমরা সচেতন। মোজা পইরা হাঁটি।" আম্বিয়া বলে, "ফুলাইয়া বেলুন বানাইয়া কানের লগে বাইন্ধা রাখো গিয়া। স্যারে কী কইলো শুনো নাই? আশেপাশে জনমনিষ্যি নাই!" মোয়াজ্জেম চোখ টিপে হাসে। "তাইলে রাত্রে সাবধানে ঘুমাইও!" আম্বিয়া ফ্যাকাসে মুখে অন্যদিকে হাঁটা ধরে। মোয়াজ্জেম ঠা ঠা করে হাসে। ৬. আরো চারদিন পর যখন বেলুনরোবট ফিরে আসে, তখন প্রফেসর হক অস্থির হয়ে ওঠেন। বেলুন রোবটের তোলা ছবি শুধু বিস্ময়করই নয়, আতঙ্কজনকও। সে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিস্তৃত মরুভূমির মধ্যে কিছু ইতস্তত সুতোর মতো সরু নদীর চিহ্ন, পরিষ্কার নীল নদ, মরুভূমির সীমানা পেরিয়ে নিশ্ছিদ্র সবুজ জঙ্গল, ভূমধ্যসাগর, আর তার ওপাশে ... আবারও নিশ্চিদ্র জঙ্গল। মানুষের সভ্যতার কোন চিহ্ন সেখানে নেই। রাতের বেলা তোলা ছবিতে চাঁদের আলো ছাড়া আর কোন আলোর চিহ্ন নেই। আগুন নেই কোথাও এতটুকু। নীল নদের তীরে নেই কোন বসতির চিহ্ন। মাত্র ছয় হাজার বছর আগের কথা। অথচ কোন মানুষের চিহ্ন নেই কোথাও। প্রফেসর হক উত্তেজিত হয়ে পায়চারি করতে লাগলেন। এমনটা হবার কথা নয়, এমনটা কখনোই হবার কথা নয়। আম্বিয়া এসে ধরা গলায় বললো, "স্যার আমি ক্যালিব্রেশন নিজের হাতে চেক করসি। আমরা ছয় হাজার বছর আগেই আছি। কোন ভুল হয় নাই।" প্রফেসর হক বললেন, "আকাশের ছবি তুলবা আজকে রাতে। স্টেলার ম্যাপ মিলাইয়া দেখবা ঠিকাছে কি না। কোন একটা গণ্ডগোল হইসে। নাইলে মানুষের আলামত নাই কেন?" মোয়াজ্জেম বলে, "স্যার, ডাইনোসরের আমলে আইসা পড়লাম না তো?" প্রফেসর হক বললেন, "না, আমাদের এনার্জি লেভেল এতো বেশি অতীতে যাওয়া সাপোর্ট করবে না।" মোয়াজ্জেম বলে, "স্যার, তাহলে এক কাজ করি। এয়ার স্কুটার লইয়া আমি আর আম্বিয়া দুইটা চক্কর দিয়া দেইখা আসি আশেপাশে।" প্রফেসর হক গোঁফ চোমড়ান। "খাড়াও, স্টেলার ম্যাপ মিলাইয়া দেখি। আকাশের তারাগুলি ছয় হাজার বছর আগে যেমন থাকার কথা, যদি তেমনই থাকে, তাহলে আমরা ঠিক সময়ে আছি।" ৭. সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় আম্বিয়া জানালো, স্টেলার ম্যাপ নির্ভুল। ছয় হাজার বছর আগেই আছে টাইমশিপ। মোয়াজ্জেম বললো, "স্যার, তাহলে অনুমিত দেন। চক্কর দিয়ে আসি।" প্রফেসর হক বললেন, "ঠিক আছে। কিন্তু ভূমধ্যসাগর পার হইও না। মিশরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত রেঞ্জটা দেইখা আসো খালি। লুক্সর থিকা মেমফিস ... এর মধ্যে কিছু না কিছু থাকা উচিত।" মোয়াজ্জেম বললো, "পিরামিডের আশেপাশে কি নামতে হবে স্যার?" প্রফেসর হক বললেন, "পিরামিড বানাইতে মানুষের আরো দুই হাজার বছর সময় লাগবে। শনের ঘর পাইলেই আমি খুশি। দেখো কী পাও।" এয়ার স্কুটারও একটা বেলুন, তার সাথে একটা শক্তিশালী ইমার্জেন্সি জেট আছে শুধু। বাকিটা সময় সৌরবিদ্যুত চালিত একটা ছোট মোটর দিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মেমফিস আর লুক্সর, কোন দিকে কে যাবে, তা নিয়ে মোয়াজ্জেম আর আম্বিয়ার মধ্যে একটা তর্ক পাকিয়ে উঠছিলো, প্রফেসর হক ঝাঁঝিয়ে উঠে মোয়াজ্জেমকে উত্তরে মেমফিসে যাবার হকুম দিলেন। মোয়াজ্জেম কাঁধ ঝাঁকিয়ে রাজি হয়ে গেলো। প্রফেসর হক দু'জনকে সাতদিনের রসদ দিয়ে বিদায় জানালেন। এই সাতদিন তাঁকে একা একা এই বিরাট নির্জন মরুভূমিতে বসে বসে ছবিগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে। কেবিনে ঢুকে প্রফেসর হক দরজা আটকে আবার বসলেন কম্পিউটারের সামনে। তাঁর সার্ভের তথ্যে কোন ভুল নেই, এ নিয়ে তিনি মোটামুটি নিঃসন্দেহ, মরুভূমির মাঝে মিশনের আগে এ নিয়ে পুরো একটি মাস তিনি পরীক্ষা করেছেন, স্যাটেলাইটের ডেটার সাথে মিলিয়ে ক্যালিব্রেট করেছেন সবকিছু। কাজেই ফড়িঙের তোলা ছবিগুলি ভুল ঠিকানার নয়, তিনি নিশ্চিত। বেলুন থেকে তোলা ছবিগুলিতে তো দুই মহাদেশের সব কিছুই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কোন ছবিতেই মানুষের বসবাসের কোন চিহ্ন নেই। এমন তো হতে পারে না। তিনি আবার সব ছবি খুলে মন দিয়ে দেখতে লাগলেন এক এক করে। ৮. ছয় দিনের মাথায় ফিরে এলো আম্বিয়া। ভয়ানক উত্তেজিত সে। "স্যার, মাত্র একজন মানুষ পাইসি স্যার!" বেলুন থেকে নেমেই হাঁপাতে হাঁপাতে বললো সে। প্রফেসর হক ছুটে এলেন, "ছবি কই?" আম্বিয়া ক্যামেরা এগিয়ে দিলো। প্রফেসর হক বললেন, "স্কুটারটা প্যাক কইরা আসো আমার কেবিনে। শুনি কী ঘটসে।" ক্যামেরা থেকে ছবি নিয়ে স্ক্রিনে দেখতে লাগলেন প্রফেসর হব। আম্বিয়া এক মগ চা হাতে ঢুকলো কেবিনে। আম্বিয়ার দূর পাল্লার শক্তিশালী লেন্সে নিখুঁতভাবে ধরা পড়েছে মানুষটা। মাঝারি গড়ন, মুখে দাড়িগোঁফ, প্রায় উলঙ্গ, পরনে শুধু একটা লতাপাতার কৌপিন। গায়ের রং কালচে, চেহারার গড়ন আবিসিনীয়দের মতো। সব ছবিতেই তার হাত খালি। কোন অস্ত্র বা যন্ত্র নেই হাতে। "মাত্র একজনরেই পাইলা?" প্রফেসর হক হতাশ হয়ে বললেন। "জ্বি স্যার।" আম্বিয়া সড়াৎ করে চায়ে চুমুক দেয়। "লোকটার সাথে যোগাযোগের কোন চেষ্টা করো নাই?" "না স্যার।" আম্বিয়া চা খায় মন দিয়ে। "ক্যান?" আম্বিয়া হাসে। "স্যার, আমি যদি বেলুন থিকা নাইমা ওরে কিসু বলতে যাইতাম, ও আমারে দেবতা মনে কইরা পূজা শুরু করতো। তারপর স্যার আমরা আসল সময়ে ফিরলে দেখা যাইতো সারা দুনিয়ায় আমারে লোকে প্রাচীন দেবতা হিসাবে চিনে!" প্রফেসর হক মাথা দোলান। "হুমম। খুব সত্য। ভালো করসো যোগাযোগ না কইরা। তাছাড়া লোকটা তোমারে মাইরও দিতে পারতো।" আম্বিয়া ঢোঁক গেলে। "জ্বি স্যার। জংলি তো।" প্রফেসর হক বলেন, "আশেপাশে কোন বসতি পাও নাই?" আম্বিয়া বললো, "না স্যার। ছবিগুলি দেখেন একটু ... সব কমবেশি ফড়িঙের ছবির মতোই। একটা কোন ঘরবাড়ি নাই স্যার। দালানকোঠা ক্ষেতখামার কিচ্ছু নাই।" প্রফেসর হক বলেন, "তাহলে এই লোকটা একা একা ঘুরতেসে ঐ জায়গায়?" আম্বিয়া বললো, "জ্বি স্যার। ওরে আমি সারাদিন ফলো করসি। পুরাই জংলি স্যার। টিলার গায়ে একটা গর্তের মধ্যে থাকে। সারাদিন ঘুরেফিরে, ফলমূল খায়, খোলা ময়দানের মধ্যে পেচ্ছাপপায়খানা করে। পুরাই অসভ্য স্যার।" প্রফেসর হক বলেন, "হুমম। দেখি মোয়াজ্জেম কী খবর আনে।" আম্বিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিলো, এমন সময় কেবিনের দরজায় টোকা পড়লো। আম্বিয়া কেবিনের দরজা খুলে দিতেই হাস্যোজ্জ্বল মোয়াজ্জেম কেবিনে ঢুকলো দুপদাপ করে। "স্যার, দেখেন কী নিয়ে আসছি!" প্রফেসর হক ভুরু কুঁচকে মোয়াজ্জেমের পেছন পেছন বাইরে বেরিয়ে এসে ধাক্কা খেলেন। মোয়াজ্জেম বেলুনে করে এক তরুণীকে নিয়ে এসেছে সাথে। তরুণীর গায়ের রং ভূমধ্যসাগরীয়, খাড়া নাক, কালো চোখ আর চুল, পরনে লতাপাতার সংক্ষিপ্ততম পোশাক। প্রফেসর হক মোয়াজ্জেমের কলার চেপে ধরে বললেন, "তুমি কোন বুদ্ধিতে এই মেয়েকে তুইলা নিয়া আসলা?" মোয়াজ্জেম লজ্জিত মুখে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো, "স্যার, কী করবো, বলেন? একা একা ঘুরতেসিলো মেয়েটা। আশেপাশে জনমনিষ্যি নাই। আমিও স্যার একটু বোরড হইয়া গেসিলাম, ভাবলাম নিচে নাইমা গল্পসল্প করি।" প্রফেসর হক প্রচণ্ড এক ধমক দিয়ে বললেন, "গল্পসল্প মানে? তুমি এর ভাষা জানো যে গল্পসল্প করবা?" মেয়েটা ভড়কে গিয়ে বিচিত্র শব্দে ফুঁপিয়ে ওঠে। মোয়াজ্জেম এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়। তারপর বলে, "স্যার আপনি লোকটা বেরসিক। মাইয়াটারে ভয় পাওয়ায় দিলেন।" প্রফেসর হক মাটিতে পা ঠুকে বললেন, "তুমি ওরে তুলে নিয়ে আসছো কেন কেন কেন?" মোয়াজ্জেম একটা সিগারেট ধরালো। "স্যার, আসলে হইছে কী, দিনের পর দিন এইখানে কোন মেয়েমানুষ ছাড়া এই হাবিজাবি কাজ করতে করতে আমি বিরক্ত হইয়া গেছিলাম। তাই স্যার ভাব জমানোর জন্য মাটিতে নাইমা এই মাইয়ার সাথে একটু আলাপ করলাম। আর ভাষার কথা বলেন স্যার? দুনিয়ার একটা ভাষা সবাই বোঝে!" অশ্লীল হাসি ফুটে ওঠে তার মুখে। প্রফেসর হকের মুখ থেকে রক্ত সরে যায় রাগে। "তুমি ... তুমি এই মেয়েরে ... এই মেয়ের সাথে ... ?" মোয়াজ্জেম লাজুক হাসে। "জ্বি স্যার। তবে স্যার দোষ আমার না। ঈভ স্যার ঐ জায়গায় একা একা ঘুরতেসিলো, আশেপাশে লোকজন নাই, আমি স্যার নামতে না নামতেই আইসা আমারে জাপটাইয়া ধরছে। আমি কী করুম কন?" আম্বিয়া এসে ফুঁসে ওঠে, "মিছা কথা স্যার! মোয়াজ্জেম স্যার ধান্ধাতেই ছিলো আশপাশ থিকা মাইয়া তুইলা আনার। ওর পকেটে আপনি কনডম পাইবেন স্যার, খুঁইজ্যা দ্যাখেন!" প্রফেসর হক আম্বিয়ার কথা শোনেন না. বিস্ফারিত চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললেন, "মোয়াজ্জেম, তুমি মাইয়াটার নাম কী কইলা?" মোয়াজ্জেম বলে, "ঈভ, স্যার!" প্রফেসর হক ধীর গলায় বলেন, "ক্যামনে জানলা ওর নাম ঈভ?" মোয়াজ্জেম বলে, "স্যার, এইটা টারজান দেইখা শিখছিলাম। ঐ যে জেইন গিয়া বলে আই অ্যাম জেইন, ইউ আর টারজান ... তারপর টারজান বলে আই টারজান ইউ জেইন ... ঐ কায়দায় স্যার ... কইলাম আই মোয়াজ্জেম ... ইউ? কয়েকবার জিগানোর পর মাইয়া কয়, ঈভ। ওরে ঈভ ডাকলে সাড়াও দেয়। ডাইকা দেখেন?" ডাকতে হয় না, নিজের নাম শুনে মেয়েটা কান খাড়া করে তাকায় মোয়াজ্জেমের দিকে। প্রফেসর হকের মুখ থেকে রক্ত নেমে যায়। হঠাৎ করেই যেন গোটা ব্যাপারটা বুঝে ফেলেন তিনি। লুক্সরের কাছে এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো সেই জংলি লোকটা আদম। আর মোয়াজ্জেমের বেলুনে তুলে আনা মেয়েটা ঈভ। আশেপাশে কোন জনবসতি নেই, কারণ আশেপাশে কোন জন নেই। মানুষের সভ্যতা এখনও শুরু হয়নি। পৃথিবীতে মাত্র দুইজন মানুষ এই খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার সালে। প্রফেসর হক অস্ফূটে বলেন, "আশারের ক্রোনোলজি!" মোয়াজ্জেম বলে, "স্যার?" প্রফেসর হক ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে বলেন, "মোয়াজ্জেম, ঠিক কইরা বলো, এই মাইয়ারে কিসু করসো তুমি?" মোয়াজ্জেম বুক টান করে দাঁড়িয়ে বলে, "স্যার, যদিও এইটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়, তারপরও কই। হ, করসি। প্রথম যেদিন দেখা হইলো সেইদিন চারবার, আর বেলুনে বাকিটা পথ ফিরতে ফিরতে এগারোবার। মোট পনেরোবার। আর কিছু জানতে চান?" প্রফেসর হক মুখ ঢাকেন। পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাস শুরু হবে যে যুগলকে দিয়ে, তারা এখনও বিচ্ছিন্ন। আদি মাতা ঈভের সাথে সঙ্গম করে বেড়াচ্ছে কোন এক মোয়াজ্জেম হোসেন। মানুষের ইতিহাস পাল্টে যেতে পারে চিরতরে। যে ভবিষ্যৎ বর্তমানে তাঁরা ফিরবেন, সে ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অন্যরকম হতে পারে। সেখানে তাঁর বা আম্বিয়ার জায়গা না-ও হতে পারে। মোয়াজ্জেমের জায়গা হয়তো হবে মানুষের জিনের গভীরে। প্রতিটি মানুষের ভেতরে থাকতে পারে মোয়াজ্জেমের জিনের স্বাক্ষর। মোয়াজ্জেম ঝুঁকে পড়ে ডাকলো, "স্যার, ঠিকাছেন তো? কোন সমস্যা?" প্রফেসর হক মুখ তুলে তাকিয়ে মোয়াজ্জেমকে চাপা গলায় শুধু বললেন, "মাদার্চোদ!" গল্পে ব্যবহৃত সব ঘটনা ও চরিত্রের নাম কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে সাদৃশ্য কাকতালমাত্র।
false
mk
গণতন্ত্র রক্ষা যেভাবে___ ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক তারিখ। ২০১৪ সালের ওই দিন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ দেশ সন্ত্রাসের কালো হাত থেকে মুক্ত হয়; সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা পায়। আর আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হওয়ায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়। মানুষের জীবনে স্বস্তি ও শান্তির মোক্ষম মুহূর্ত সৃষ্টিতে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা বিশ্ববাসীর কাছে আজ স্পষ্ট। এ জন্য তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা মহিমান্বিত। ২৮ ডিসেম্বর (২০১৩) নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তার নেতারা নিজেদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছেন। কারণ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। বিশ্বের ৭৬তম ধনী রাষ্ট্র এটি; বিশ্বের ১১তম সুখী দেশও। বিশ্বের ষষ্ঠতম ভাষা হিসেবে বাংলা অনেক আগে থেকে স্বীকৃত। আমরাই একমাত্র ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। অন্যদিকে বাংলাদেশ শক্তিশালী ১০টি মুসলিম দেশের একটি। এখানে (কক্সবাজারে) রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় লোনাপানির বনাঞ্চল সুন্দরবন এখানে অবস্থিত। বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতু। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সৈন্য প্রেরণ করেছে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার। এ দেশটি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে ২৭তম, গার্মেন্টশিল্পে প্রথম। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ দেশটি ২০৫০ সালে বিশ্বের অন্যতম ১০টি ক্ষমতাধর দেশের একটিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে এদেশ নতুন বছরে (২০১৫) পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে যাচ্ছে। আসলেই লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা এবং ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার ইতিহাসই আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। আমরা এ দেশ নিয়ে গর্ব করতেই পারি। আর এ গৌরব অর্জনে যে দলটির সবচেয়ে বেশি অবদান সেটি হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'। সবাই এক কথায় স্বীকার করবেন যে আওয়ামী লীগ একটি সংগ্রামী রাজনৈতিক সংগঠন। এই দলের অভ্যুদয়ও সংগ্রামের মধ্যদিয়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকার ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচন অনুষ্ঠানের দ্বারা প্রমাণ করেছে যে দলটি জনগণের মঙ্গল চিন্তা করে। কারণ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান অনুসরণ করে কর্মকা- পরিচালনা সরকারের পবিত্র দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে দলীয় আদর্শের চেয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা গুরুত্ববহ। এ জন্য আওয়ামী লীগ তার উদ্দেশ্য ও আদর্শের বাস্তবায়নে যেমন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এগিয়ে চলেছে তেমনি জনগণের সঙ্কট মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে। কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়_ আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন বিপুল। কারণ এ দলটি জনগণের সংগঠন। বাংলাদেশ ভূখ-ের বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠনের অন্যতম আওয়ামী লীগ। এ দলটি দেশপ্রেমিক সংগ্রামী, প্রতিবাদী, নির্ভীক ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধাবমান। উদার জাতীয়তাবাদের আদর্শের কারণে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক, সাধারণ মানুষের জীবন মানোন্নয়নের জন্য প্রণীত অর্থনীতিতে বিশ্বাসী সংগঠন। পক্ষান্তরে বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনার বিরোধী। এ জন্য ৩১ ডিসেম্বর (২০১৪) সংবাদ সম্মেলন করে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করলেও খালেদা জিয়া জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে নতুন কোনো দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত বছর নির্বাচন বানচালের জন্য মরিয়া জামায়াত-বিএনপি যে কোনো সময় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে পারে বলেও গোপন সংবাদ পেয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মূলত বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন করবেন এবং সরকার যেসব আচরণ করেছে তার নির্মম জবাব দেবেন এই বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া গিয়েছিল ২৯/১২/২০১৩ তারিখের ঘটনায়। তিনি নিজের ডাকা কর্মসূচিতে যোগ দিতে না পেরে যেসব কথা বলেছিলেন এবং উষ্মা প্রকাশ করেছেন তাতে তার দলীয় অপ-মনোবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে। যদিও আগেই দেশবাসী জেনেছিল 'ঢাকা অভিযাত্রা'র অনুমতি মেলেনি এবং তিনি নিজে বাড়ি থেকে বের হয়ে গন্তব্যে পেঁৗছতে পারেননি তবু তার মন্তব্যগুলো আমাদের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছিল। আসলে 'বিএনপি জনগণের মুক্তি চায়, দেশ বাঁচাতে চায়'- এসব তাহলে কথার কথা? ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের সুধী সমাজ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিএনপি নামক দলটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠার (১৯৭৮) পর গত ৩৫ বছরে এর নেতাকর্মীদের অপতৎপরতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে বিএনপি মানে নাশকতা, বিএনপি মানে অরাজকতা। স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার দক্ষতা তাদের মধ্যেই দেখা গেছে। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। বরং দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে এ দেশের সেনাবাহিনীতে চলছিল অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থানের পালা। সেই পটভূমিতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসীন হন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। প্রথমে তিনি ১৯ দফা অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে দল গঠনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বেই বিএনপির জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকা-ের পর জিয়া নেতৃত্বশূন্য রাজনীতির মাঠে আবির্ভূত হয়ে দেশের সংবিধান থেকে শুরু করে মূল নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেন। ভিন্ন ভিন্ন মতের রাজনীতিক জড়ো করে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বলেই দলটির আদর্শ একটি গুবলেটে পরিণত হয়। তারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শকে গ্রহণ করে এগিয়ে গেলেও সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের স্থান থাকায় দলীয় আদর্শ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ভারতবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে প্রথম থেকেই বিএনপি পাকিস্তান ঘরানার মতাদর্শ প্রচারে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। ফলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে পরবর্তী সময় স্বাধীনতার ঘোষকে পরিণত হওয়া জিয়ার জন্য ছিল অনিবার্য। কারণ পাকিস্তানি মতাদর্শ বিএনপির মজ্জাগত আদর্শ বলে গণ্য হয়। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জিয়ার পতাকাতলে সেদিন ইসলামপন্থী, চীনা বামপন্থী ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি সমবেত হয়েছিল। তারাই এ দেশের ইতিহাসকে আওয়ামী লীগের আদর্শের বিপরীতে প্রবাহিত করার সুযোগ পায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করার পুরো কৃতিত্ব বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীদের। আর তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির দাপট দেখিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এ জন্য ২০১৩ সালের ২৬-২৭ ডিসেম্বর এবং ২০১৪-এর প্রথমে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার নির্বাচনী প্রচারণায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জামায়াতের জন্য দরদের কারণে বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তখন তিনি যথার্থই বলেছিলেন। ১৯৮৩ সাল থেকে খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেন এবং দলটি দীর্ঘদিন যে সেনাছাউনির মনোবৃত্তিতে বেড়ে উঠেছে তাকে লালন-পালন করতে থাকেন। খালেদা জিয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতার কারণে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক ধারার বিলুপ্তি ঘটে। বিএনপির একাধিক নেতা কখনো এরশাদ আবার কখনো বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে রাজনীতি করে বিতর্কিত হয়েছেন। বর্তমান বিএনপি ২০ দলীয় জোট করে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে সহিংস ঘটনার জন্ম দিয়ে জনমনে অস্থিরতা সৃষ্টি করে চলেছে। ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়ার মধ্যে তাদের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে মারাত্মকভাবে। ওই দিন সম্ভবত বিএনপির সহযোদ্ধা এবং যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক জামায়াত-শিবির তাদের নেতাদের ফাঁসির হাত থেকে রক্ষার জন্য সারাদেশের মধ্যে মানুষ হত্যায় সংঘবদ্ধ হতে চায়। কোনো আদর্শিক লড়াই এখন আর জামায়াত-বিএনপির নেই। মূলত বিএনপির জোট ধর্মভিত্তিক বা চরম ডানপন্থী দলগুলোকে জায়গা করে দিয়ে দেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। রাজনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- ব্যাপক। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনী প্রচারণায় আমরা দেখতে পেয়েছিলাম অসাধারণ উপস্থাপনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের সাফল্যগুলো নিরন্তর কয়েকটি টিভি চ্যানেলে প্রচার করে চলেছে। সেখানে তথ্যাদির নিরিখে উন্নয়নমূলক কর্মকা- প্রচার করা হয়েছিল। আর তা যে সম্পন্ন হয়েছে এটা জনগণের কাছে স্পষ্ট। না হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া কিংবা কোনো ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশিত হলে তার সমালোচনা করা কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। তৎকালীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে যদিও কেউ কেউ মিথ্যাচার করেছিলেন। তবে উপস্থাপিত তথ্যাদি বা সরকারের উন্নয়ন না হওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি কেউ। সরকারের উন্নয়নের ব্যাপারে কোনো চ্যালেঞ্জ না করে নির্বাচনকে ভ-ুল করার জন্য উদ্ভট আর মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিল বিএনপি-জামায়াত। তারা আসলে সরকারের উন্নয়নকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। উল্লেখ্য, সেই সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণায় বর্ণিত উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি। মহাজোট সরকারের আমলে সমুদ্র সীমানাসংক্রান্ত মামলায় মিয়ানমারের কাছে জয়ী হওয়া, বিশাল সমুদ্র অঞ্চল বাংলাদেশ প্রাপ্তি, জোট সরকারের চেয়ে মহাজোট সরকারের আমলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়া, খিলগাঁও ফ্লাইওভার ও কুড়িল উড়াল সড়ক তৈরি হওয়া, সেনাবাহিনীর জন্য মেকানাইজড ব্রিগেড ও ব্যাটালিয়ন গঠন করা, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কিংবা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়া সবই হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সদিচ্ছায়। মূলত মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্যাদি, সরকারের সাফল্য, মহাজোটের উন্নয়ন দিবালোকের মতো সত্য ছিল। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে আওয়ামী লীগ ১৫৪টি আসনে আগেই জয়ী হয়েছে। এ জন্য বাকি আসনে নির্বাচন ভ-ুল করেও তাদের পরাজিত করার কোনো সুযোগ কেউ পায়নি। এ জন্য বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের ওই নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তিহীন বিরোধিতা মূল্যহীন। তারা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার রাজনীতিতে অবরোধ-হরতাল দিয়ে কোনো মীমাংসায় উপনীত হতে পারেনি। বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে আলোচনা করেও লাভ হয়নি। বিগত বছরগুলোয় বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট বলে আসছিল সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করা হবে, বিরোধী জোট আরো শক্তিশালী হবে, কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। কিন্তু গত ডিসেম্বর (২০১৪) পর্যন্ত তাদের সরকার পতনের কিছু দেখা গেল না। তবে হরতাল-অবরোধ দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে বিএনপি-জামায়াত। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এখন আরো কয়েকজন কুখ্যাতের রায় কার্যকর হওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা শতগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা একসময় ভাবতে শুরু করেছিল এই দলটি ব্যর্থ, কোনোকিছু গোছাতে পারছে না তারা এখন বলতে শুরু করেছে সাহসী দল হিসেবে এবং নির্ভীক নেতারূপে শেখ হাসিনাই এ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সক্ষম। অন্যদিকে বর্তমানে আন্দোলন গড়ে তোলা, সরকার উৎখাত করা বা অন্যকিছু করার মতো ইস্যু ও সাংগঠনিক শক্তি বিএনপি ও জামায়াত কারো নেই। এ অবস্থায় হরতাল-অবরোধ আর ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নেয়ার অপপ্রয়াস তাদের জন্য স্বাভাবিক। জনগণের প্রত্যাশা ও দাবি, আসুন আমরা মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি পরিহার করে দেশ ও জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠনমূলক রাজনীতি শুরু করি। ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচন সফল হয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশকে বিশ্বসভার মধ্যমণিতে আসীন করার জন্য। উপরন্তু সফল বাংলাদেশ দেখার জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে 'সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা দিবস' হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
false
rn
আমার বস হুমায়ূন আহমেদ ১। রূপার চিঠি এসেছে। কী অবহেলায় খামটা মেঝেতে পড়ে আছে। আরেকটু হলে চিঠির উপর পা দিয়ে দাঁড়াতোম। খাম খুলে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম—এতবড় কাগজে একটি মাত্র লাইন, তুমি কেমন আছ? নাম সই করেনি, তারিখ দেয়নি। চিঠি কোথেকে লেখা তাও জানার উপায় নেই। শুধু একটি বাক্য—তুমি কেমন আছ? প্রশ্নবোধক চিহ্নটি শাদা কাগজে কী কোমল ভঙ্গিতে আঁকা হয়েছে। আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম এবং সঙ্গে সঙ্গে মনে হল রূপার আগের চিঠি পুরোটা পড়া হয়নি। কী লেখা ছিল সেই চিঠিতে? কোনোদিনও জানা যাবে না, কারণ চিঠি হারিয়ে ফেলেছি। নীতুকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানা যাবে। চিঠিটা নীতু পড়েছে। নীতুর কাছে যেতে হবে। যেতে ভরসা পাচ্ছি না, কারণ ইয়াদের খোঁজ পাচ্ছি না। সে আগের জায়গায় নেই। তুলসী মেয়েটি ছিল। সে কিছু জানে না কিংবা জানলেও কিছু বলছে না। হিমু।২। বড় ফুপুর বাড়ির কাছাকাছি এসে টহল পুলিশের মুখোমুখি হয়ে গেলাম। তারা দলে চারজন। আগে দু’জন দু’জন করে টহল বেরুত। ইদানীং বোধহয় দু’জন করে বেরুতে সাহস পাচ্ছে না, চারজন করে বের হচ্ছে। আমাকে দেখেই তারা থমকে দাঁড়াল এবং এমন ভঙ্গি করল যেন পৃথিবীর সবচে’ বড় ক্রিমিন্যালকে পাওয়া গেছে। দলের একজন (সম্ভবত সবচে’ ভীতুজন, কারণ ভীতুরাই বেশি কথা বলে) চেঁচিয়ে বলল, “কে যায়? পরিচয়?”আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং অত্যন্ত বিনীত ভঙ্গিতে বললাম , আমি হিমু। আপনারা কেমন আছেন, ভাল?পুলিশ পুরো দলটাই হকচকিয়ে গেল। খাকি পোশাক পরা মানুষের সমস্যা হচ্ছে, কুশল জিজ্ঞেস করলে ওরা ভড়কে যায়।যে কোন ভড়কে যাওয়া প্রাণীর চেষ্টা থাকে অন্যকে ভড়কে দেয়ার। কাজেই পুলিশদের একজন আমার দিকে রাইফেল বাগিয়ে ধরে কর্কশ গলায় বলল, পকেটে কি?আমি আগের চেয়েও বিনয়ী গলায় বললাম, আমার পকেট নেই।‘ফাজলামি করছিস? হারামজাদা! থাবড়া দিয়ে দাঁত ফেলে দিব।’ ‘দাঁত ফেলতে চান ফেলবেন। পুলিশ এবং ডেনটিস্ট এরা দাঁত ফেলবে না তো কে ফেলবে। তবে দাঁত ফেলার আগে দয়া করে একটু পরীক্ষা করে দেখুন, সত্যিই পকেট নেই। একজন পরীক্ষা করার জন্যে এগিয়ে এল। সারা শরীর হাতাপিতা করে বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গীদের একজনকে , ওস্তাদ , আসলেই পকেট নেই । এবং হিমু৩। মাজেদা খালাকে আপনাদের মনে আছে তো? কঠিন মহিলা। ইংরেজিতে এই ধরনের মহিলাদের বলা Hard Nut. কঠিন বাদাম। কঠিন বাদাম জাতীয় মানুষদের মাথায় কিছু ঢুকে গেলে বের হয় না। মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে। মাজেদা খালার মাথায় এখন ‘বিবাহ’ ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনি আমাকে বিয়ে দেবার মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। ভোরবেলাতেই টেলিফোন। তাঁর উত্তেজিত গলা। হ্যালো! কে হিমু? হিমু শোন, আজ তোর বিয়ে! আজ হিমুর বিয়ে৪। পিচগলা রোদ উঠেছে। রাস্তার পিচ গলে স্যান্ডেলের সঙ্গে উঠে আসছে। দু’টা স্যান্ডেলে সমানভাবে লাগলে কাজ হত, তা লাগেনি। ডান দিকেরটায় কম। শুধুমাত্র রোদের কারণে এই মুহুর্তে আমর ডান পা, বাঁ পায়ের চেয়ে লম্বা। আমি ইচ্ছা করে ডান পায়ের স্যান্ডেলে আরো খানিকটা পিচ লাগিয়ে দেড় ইঞ্চি হিল বানিয়ে ফেললাম। এখন আমাকে হাঁটতে হচ্ছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আমার হাঁটার ভঙ্গি দেখে যে-কেউ মনে করতে পারে—উদ্দেশ্যবিহীন যাত্রা। আসলে তা নয়। দুপুর রোদে অকারণে হাঁটছি না। বিশেষ উদ্দ্যেশ্য আছে, বিশেষ পরিকল্পনা আছে। আমি যাচ্ছি মন্ত্রীর সন্ধানে। সরাসরি মন্ত্রী ধরা যাচ্ছে না। জহিরের মাধ্যমে ধরা হবে। সুক্ষ্ম পরিকল্পনার ব্যাপার আছে। দরজার ওপাশে সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৩০
false
hm
যে জাতি ছাগলকে ভালোবেসেছিলো শহরে লোকের গণপিটুনিতে মারা পড়ে ছিনতাইকারী, পকেটমার, ছেলেধরা। আর জঙ্গলে গণপিটুনিতে মারা পড়ে বাঘ। হাতে একটা দা পেলে লোকে কচু কাটে, তারপর কচু কাটতে কাটতে একসময় গলাও কাটা শিখে যায়। তারপর মানুষ কাটতে শেখে জঙ্গল। সুন্দরবনকে উত্তর আর পূর্ব দিক থেকে কচুকাটা করতে করতে এখন সুন্দরবনও বাড়ির পেছনের ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। লোকে সেখানে হাগতে যাবে দু'দিন পর। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আবাদচণ্ডীপুরও তেমনি একটা গ্রাম, হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সুন্দরবনের গায়ে। এই গ্রামে একটা বাঘ ঢুকে পড়লো গতকাল। বাঘের পাপ হচ্ছে বাঘ মানুষ মারে। সে তো মানুষও মানুষকে মারে? কয়টা মানুষ-মারা-মানুষকে পিটিয়ে মারতে পেরেছে মানুষ? খুব বেশি নয়। তাই সেই ঝালই বাঘের ওপর ঝাড়া যায়। এই যে বাঘটা, সে আরো বড় একটা পাপ করেছে। সে হিযরত আলী মোল্লার দু'দুটো ছাগল প্রথমে খেয়ে ফেলে। আর কে না জানে, ছাগলকে ভালোবাসে সবাই? বাঘ আমাদের মোনোগ্রাম মার্কাফার্কায় আছে বটে, কিন্তু জনচেতনায় ছাগলই বীর ও আরাধ্য, পূজিত ও প্রীত। তারপরও যদি থামতো বাঘটা, জনতার মনে হয়তো ভিন্ন চিন্তা খেলা করতো। কিন্তু চুতমারানি বাঘ এরপর মোরশেদ মির্জার বাড়িতে হানা দিয়ে আরো দুটো ছাগল খেয়ে ফেললো। চার চারটা হিরোর অকালমৃত্যু! স্থানীয় জনতা ফুঁসে উঠে তাড়া করলো এই ভিনগাঁয়ের বাঘকে। হ্যাঁ, বাঘটা আরো একটা পাপ করেছে বটে। ওর পাপ, ও পোষা নয়, ওর মালিক নেই। চার চারখানা ছাগল ভোজনের তৃপ্তি নিয়ে কোথায় একটু ঘুম দেবে, তা না, জনতার তাড়া খেয়ে বাঘ মোরশেদ মির্জারই বাড়ির চালে গিয়ে চড়ে। আশপাশ থেকে পিলপিল করে জড়ো হতে থাকে লোকজন। শ্যামনগরের মানুষ। এরা বাঘের দেশের লোক। সুন্দরবনে বাঘের হাতে প্রাণ দিয়েছে এদের অনেকের আত্মীয় স্বজন, অনেকের গায়ে বাঘের আঁচড় কামড়ের দাগও মিলবে মন দিয়ে খুঁজলে। বাঘের পেটে যাবার আগে বাঘের মাথায় দা দিয়ে শেষ কোপটা মারার ইতিহাস আছে এদের অনেকের বাপদাদার। আর খানকির ছেলে বাঘ কি না শ্যামনগরের আবাদচণ্ডীপুরের চারটা ছাগল মেরে খেয়ে তাদেরই একজনের চালে চড়ে বসেছে? রোসো। গত এগারো বছরে ছটা বাঘ মেরেছে শ্যামনগরের সন্তানেরা, পাঁচটাকে পেঁদিয়ে আর একটাকে গুলি করে, তুই হবি সাত লম্বর। কয়েক হাজার লোক যখন চার চারজন বীরের খুনীকে মারতে সড়কি আর রামদা উঁচিয়েছে, সিনে ঢুকে পড়ে এলাকার সাংসদ। এই পলিটিশিয়ানগুলিকে বুঝতে পারে না জনতা। শালার ব্যাটারা ভোটের সময় পারলে কোলে তুলে মাই খিলায়, কিন্তু একবার নির্বাচিত হয়ে গেলে আর হুঁশজ্ঞান থাকে না। একটা হিরোঘ্ন বাঘ মারবে জোয়ানেরা, এই ব্যাটা এসে শুরু করলো তার মাঝে মাইকিং। "ভাইসব, ছেড়ে দিন বাঘটাকে। ওকে মারবেন না। আমরা ওকে ধরে নিয়ে যাচ্ছি। ভাইসব, শান্ত হন। বাঘটাকে মারবেন না!" বাঘটাকে মারবো না কি বাঘকে কোলে তুইলে চুমাবো র‌্যা? জনতা ক্ষেপে ওঠে। কোথায় ছিলো সাংসদ, যখন বাঘটা হিযরত আলী মোল্লার মাসুম দুটো ছাগলকে ঘাড় মটকে চিবিয়ে খেলো? কোথায় ছিলো সাংসদ, যখন বাঘটা মোরশেদ মির্জার দুটো কচি ছাগলকে কোতল করে কড়মড়িয়ে খেলো? বল্লেই হোলো? কিন্তু হাজার হলেও সাংসদ। এমনি এমনি তো আর সাংসদ হয়নি। এদিক সেদিক কিছু কলকাঠি নাড়ার, দুচারটে বেয়াদবকে শায়েস্তা করার কালো হাত না থাকলে আজকালকার জমানায় কি আর কেউ সাংসদ হতে পারে? আর হ্যাঁ, সাংসদরা তো একা চলেন না। পুলিশ আর বিডিয়ারের খাকি ঝলকায় তাঁর আশেপাশে। তাই জনতা একটু পেছায়। সড়কি নামায়, রামদার ফলা একবার মুছে নেয় গামছা দিয়ে। বেশ তবে। আসুক ফরেস্টের লোকজন। ধরে নিয়ে যাক তাদের বোনজামাইকে। সুন্দরবনটাকে ফরেস্টের লোকজন উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পচ্চিম কতো বিচিত্র দাগে কেটেকুটে ভাগ করেছে। পশ্চিম বিভাগের এক কর্তা ঠাকুর আর টাইগার প্রজেক্টের এক কর্তা নেওয়াজ সম্ভবত সাংসদের হুড়ো খেয়েই দুখানা পেল্লায় ঘুমের বন্দুক আর টাইগার দলের পাঁচজন ব্যাটাছেলে টানতে টানতে নিয়ে মোরশেদ মির্জার ভিটার কাছে আসেন আরো ঘন্টা আড়াই বাদে। এসে বলে কী, ঘুমের ইনজেকশন তাদের কাছে যা আছে সেগুলোর ভীমরতি ধরেছে বহু আগেই। হাঁ, বাঘের পোঁদে তারা ইনজেকশন মারতে পারেন জরুর, কিন্তু তারপরে কী হবে তা জানে শ্যামলাল। বাঘ নাও ঘুমাতে পারে। তেড়ে এসে উল্টো জনতার পোঁদে ইনজেকশন বসিয়ে দিতে পারে দুই থাবার দশ নখ দিয়ে। তারচে বরং চার চারটা ছাগল খেয়েছে, মন্দডারে একলা থাকতি দ্যাও। ও এখন এমনিতেই নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। আর যায় কোথায়? এই কথা শুনে মোল্লা আর মির্জার ছাগলের সাপোর্টে যারা ছিলো, তারা বেজায় চটে। মার মার চুতমারানিকে মার রবে হুলুলুলু আওয়াজ তুলে বীর জনতা ঢিল মারতে শুরু করে। বাঘের দিকে কিছু, ফরেস্টের লোকের দিকে কিছু। কাছে যেসব পুলিশ আর বিডিআর এতক্ষণ হাতে লাঠি নিয়ে বিড়ি খাচ্ছিলো তফাতে, তারা এবার একটা কাজ খুঁজে পায়। জনতা ঢিল মারছে, অতএব চালাও লাঠি। অচিরেই গোলন্দাজ শ্যামনগরবাসী লাঠির চচ্চড়ি খেয়ে তফাত হঠে। সাংসদের মোবাইলে ফোন আসে পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতার কাছ থেকে। তাকে তিনি বলেন, তুরা সব পাপিষ্ঠ। এদিকে জনতার হুড়ো আর মাছির কামড় খেয়ে আমার জানটা কালি! এই বাঘের হোগা বাঁচাতে ফোন দিলুম বন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে, ব্যাটা হাঁ না কিছু বলে না! ওয়ার্ল্ড লাইফ পোজেক্টের ফরেস্ট কনজারভেটরকে ফোন দিলুম, বল্লুম ইনজেকশনসহ বাঘবন্দী দলকে জলদি করে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে সাতক্ষীরায় পাঠান, মামুর বেটা কানেই তোলে না কথা! বলে স্যার হেলিকপ্টারে চড়িয়ে পাঠানোর মতো বাজেট আমার নেইকো। ফেলুন কড়ি মাখুন তেল। এখন তুই কান চুলকে শুনে রাখ বাচ্চু, এই বাঘকে যদি চুতিয়া পাবলিক পিটিয়ে মারে, আমি সালার কোনো দোস নেই এতে। দায় নেবে ফরেস্ট। আবার এই খানকির ছেলে বাঘ যদি কোনো মানুস মারে, তার দায়ও নেবে ফরেস্ট। তাদের বাঘ তাদের মানুস, তাদের ইনজেকশন, তাদের রেসপনশিবিলিটি। এই আমি বলে রাক্লুম। পত্রিকা অফিসের স্থানীয় সংবাদদাতা ভয় দেখায়, বলে বড় ভাই চার বছর বাদে ভোট চাইতে এলে পাবলিক কিন্তু ধুনে দেবে হেঁহেঁহেঁ। সাংসদ চটে যান, বলেন পাবলিকের বোনকে নিয়ে শুই শালা! ফরেস্টের লোকের কাছে ইনজেকশন নাই ক্যানো রে? পত্রিকায় লেক এ কতা! ইনজেকশন কি তারা নিজের পোঁদে মেরে রাতে ঘুম করে নাকি র‌্যা? ইনভেশটিগেসন করতে হবে! এরপর সময় কাটে। মোরশেদ মির্জার ঘরে বাঘ, তাই মোরশেদ মির্জা দুপুরের খানাটা হিযরত আলী মোল্লার বাড়িতেই খায়। দুজনেরই দুটো করে ছাগল মেরেছে বাঘটা, ভাতের থালা ভেসে যায় অশ্রুতে। সেই কান্না হয়তো সংক্রামক, ছড়িয়ে পড়ে আস্তে আস্তে, সেই অশ্রুই ক্যারাসিন হয়ে জ্বলে ওঠে বেলা তিনটার দিকে। জানি না সাংসদ বেচারা কোথায় কী দিয়ে ভাত খেয়েছিলো এ সময়, হয়তো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়িতেই আতিথ্য নিয়েছিলেন তিনি, আর তার সাথের পুলিশ বিডিয়ারগুলো। খেয়েদেয়ে মুখে একটা পান ঠুসে পায়েস আর চা খেতে যাবেন হয়তো, এমন সময় এক কনস্টেবল ছুটতে ছুটতে এসে জানায়, স্যার পাবলিক আবার বাঘ মাইরতে চায়! সাংসদ একটা মাইক হাতে গিয়ে পাবলিককে বলেন, "হে বীর জনতা! আমি ফোনে পেসিডেন্টের সাতে কতা কয়েছি! তুমরা একটু সবুর কর। মহানবী কী বুইলেছেন? বুইলেছেন সবুরে ম্যাওয়া ফলবে। তুমাদের ছাগল চাইরটাকে রাশ্টিও মজ্জাদায় দাফন করা হবে। বিম্পি আমলের বেলাক বেঙ্গল পোজেক্টের পয়সা থিকে তুমাদের চাইরটার জায়গায় আটটা ছাগল কিনে দেওয়া হবে। তুমরা থামো দিকি। ছাগল মরলে ছাগল হাট থিকে কিনে আইনে দেয়া যাবি। বাঘ মরলে যাবি? বাঘ কিনাবিচা হয় ইখানটায়? বাঘ হইতেছে তুমাদের মামুর মতন। মামুরা মাঝে মধ্যে পোঁদে একটা দুইটা আঙুল দিয়েই থাকেন। তুমরা কি মামুবাড়িতে গিয়া মামুরে পিটাইয়া মারো?" এবার হিযরত আলী মোল্লা আর মোরশেদ মির্জার সান্ধ্য তাসের আড্ডার কাচ্চু টীমের পার্টনাররা খেপে ওঠে। তখন থেকে সাংসদটা ম্যালা বকছে। এই কে আছিস ছোড় তো একটা রসিয়াল দেখে আধলা শালার ভুঁড়িতে! পাবলিক বাঘ ফেলে বাঘের মোক্তার সাংসদকে ঢিল মারা শুরু করে। একটি ঢিল সাংসদের ঊরুতে এসে লাগে, তিনি উফ মাইরে ফেললো রে বলে ব্যাপক চিৎকার দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে পিছিয়ে যান। তাঁর সেক্রেটারি উলু দিয়ে ওঠেন, ওরে তোরা চাইয়ে চাইয়ে ছিনামা দেকতিছিস নাকি, মার শালেকো! পুলিশ এবার টিয়ার গ্যাস মারে। দুখানা শেল। হিযরত আলী মোল্লা আর মোরশেদ মির্জা হাপুস নয়নে কাঁদে ছাগলের শোকে, বাকিরা কাঁদে টিয়ার গ্যাস খেয়ে। সাংসদ ফোঁপান ইঁটের ঘায়ে। আরো ঘন্টা দুয়েক জটলা পাকাতে থাকে লোকজন। তারপর আরো দুই গাড়ি বিডিয়ার এসে পাবলিকে হুড়ো লাগায়। লোকে বিডিয়ারকে এখন একটু ভয়ই পায়। এই শালারা আর্মি মেরে ফেলে, আর পাবলিক তো পাবলিকই। ভয়ে ভয়ে জনতা একটু তফাত হঠে। বাঘটা ঘুমায় মোরশেদ মির্জার ঘরে। বহুদিন বাদে পেটটা ভরে খেয়েছে সে। জঙ্গলে খাবার পানি নাই, সিডরের নোনা জলে সব পুকুর ভেসে গেছে, হরিণ নাই, শূকর গুলি হয় সব সরে গেছে উত্তরে নয় জামাত করে, খাবে কী বেচারা? মোরশেদ মির্জা জটলা পাকায়, বলে, চুতমারানি বাঘ ভিটা দখল করে রেখেছে। মির্জা বাড়ির একটা মান সম্মান আছে না? ঘন্টা দেড়েক বাদে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রহমান পত্রিকার লোককে মোবাইল মারেন। বলেন, বাচ্চু রে, পাবলিককে ঠেকানো গেলো না। ফরেস্টের লোকজন তো বাল ছিঁড়লো সারাদিন। আর কতো ঠেকিয়ে রাখা যায়? চার চারটা ছাগল মেরেছে বাঘটা। পাবলিক শেষমেশ ঘরে ঢুকে পিটিয়ে মেরেছে। পত্রিকার পালোয়ান মোবাইল ঠোকেন ঠাকুরকে। তিনি বলেন, আরে বললেন দাদা একটা কথা। বাঘকে কি কোলে তুলে নিয়াসবো নাকি? জ্যান্ত সোঁদরবনের কেঁদো, পাদ দিলে চালা উড়ে যাবে আর আপনি এসে বড় বড় বারফট্টাই ঝাড়ছেন। ও বাঘ আটকানোর মতো এক্সপাট খুলনায় নেইকো। এক্সপাটেরা সব ঢাকায় নিজেদের বাসাবাড়িতে মাগছেলে নিয়ে সোংসার করছেন। টাইগার দলের যেসব ছেলেপুলেকে ইস্পটে নিয়ে এলুম তারা আগে দুয়েকটা শেয়াল ধরেছে বটে, কিন্তু বাঘ আগে টিপে দ্যাখেননি। তাদের সাহসে কুলোচ্ছে না। উপর অফিসে জানিয়েছি কী হচ্ছে না হচ্ছে, তারা পালোয়ান কিছু পোড় খাওয়া বাঘচোদাকে পাঠিয়েছেনে ঢাকা থেকে, তারা দুপুরে ঢাকা ছেড়েছে, সাতক্ষীরা আসবে। অবশ্য এসে তেমন একটা কিছু করতে পারবেন না। যাই দেখি, মাছ আর মুরগির বন্দোবস্ত করি তাদের জন্য। রাখি তাহলে। সাবধানে থাকবেন। কোথাও ছাগলটাগল মারলে চট করে কেটে পড়বেন, চালায় উঠে বসে থাকবেন না আবার হ্যা হ্যা হ্যা। ফোন কেটে যায়। পত্রিকার লোক এবার সাতক্ষীরা রেঞ্জের অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজারভেটরকে মোবাইল মারেন। তিনি বলেন, আরে হ্যাঁ জানেনই তো সব, আবার মিছিমিছি মোবাইল পোন্দাচ্ছেন ক্যানো গো? দিনের আলো নিবতেই পাবলিক ধরে চুদে দিয়েছে বাঘটাকে। একদম ফিনিশ। লাশ আমরা বুঝে নিয়েছি। বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনে আনা হয়েছে ব্যাটাকে। কাল পোস্ট মরটেম সেরে ছাল ছালিয়ে কলাগাছীর টহল ফাঁড়ির দিকে গোর দিয়ে দোবো। ছালটা কী হবে? আরে বাঘের ছালের কী হয় আপনি জানেন না? সোনধা বেলা যত্তোসব বাজে আল্লাপ! যান তো ভাই ভাত খেয়ে ঘুম দিন, আমাদেরও ঘুমাতে দিন! সংযোগ কেটে যায়। চারটা ছাগল শর্ট পড়ে দুনিয়ায়। কিন্তু বন বিভাগের সচিব, হেলিকপ্টার ভাড়ায় গররাজি কনজারভেটর আর বুড়িয়ে যাওয়া ঘুমের ইনজেকশনবাহী দুই ফরেস্টার সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়, বহুগুণে। . . . . যে জাতি চারটা ছাগল মারলে দশ ঘন্টার মধ্যে একটা বাঘকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, সে জাতি ৩৮ বছরেও বাবা মা ভাই বোনের হন্তারকদের বিচারের মুখোমুখি করতে পারে না, পিটিয়ে মারা তো দূরের কথা। আরো ২৯৯ টা বাঘ নাকি সুন্দরবনে আছে। মানুষের সংখ্যার সাথে তুলনা করলে, ১ টা বাঘকে হত্যা বাংলাদেশের ৫ লক্ষ মানুষ হত্যার সমতুল্য। তারপরও তো আমরা মারি। কারণ বাঘ ছাগল হত্যা করে। ছাগল, আমাদের প্রিয় ছাগল। যে ছাগলের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে আমাদের মন ও মনন। আসুন, এই বাঘকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলি। বাকি ২৯৯টা মাদাফাকা বাঘকে কানে ধরে টেনে এনে পুটকি মেরে দেই চলুন। রাষ্ট্রীয় প্রতীক করি ছাগলকে। মনোগ্রামে ছাগলকে চড়াই, সুন্দরবনের খোলা হাওয়ায় ছাগল পালি। সব ঘটনা আর চরিত্র কাল্পনিক। শুধু আমরা আর বাঘটা বাদে।
false
hm
জনপ্রতিনিধি সঙ্কট ফুটবল খেলার মাঠগুলোর পাশে কেন যেন সবসময় বদমেজাজী লোকজনের বাড়ি থাকে। আর তাদের বাড়িতেই হঠাৎ হঠাৎ পাঁচিল টপকে বল গিয়ে পড়ে। তো এমনি এক বেমক্কা শট মেরে জনৈক বদমেজাজীর চৌহদ্দিতে বল পাঠিয়ে দিয়ে আমরা মহামুশকিলে পড়লাম। কী করা যায়? আমরা এখন আর ছোট নই, রীতিমতো ধাড়ি, বিয়েশাদি করা ছেলেপেলেও আছে আমাদের মধ্যে দুয়েকজন, এই বয়সে কে যাবে ঐ ঝাড়ি খেয়ে বল আনতে? মান অপমান বোধ তো সবারই আছে। একজন প্রস্তাব দিলো, একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা হোক খেলোয়াড়দের মাঝ থেকে। কিন্তু প্রার্থী হতে আগ্রহী পাওয়া গেলো না কাউকেই। সবাই একটু উদাস, আনমনা, বল-না-পেলে-খেলবো-না-কিন্তু-বলও-আনতে- যাবো-না ভাব চেহারায়। শেষমেশ সবাই দেখি আমার দিকেই একমন টেরিয়ে তাকাচ্ছে। আমি অস্বস্তিতে পড়ে যাই, বলি, কী, কী দেখিস আমার দিকে এরকম ড্যাবড্যাব করে? বাড়িতে বাপভাই নাই? সবাই গুজগুজ করতে থাকে। হুমম, হিমুটার গায়ের চামড়া অত্যন্ত পুরু মনে হচ্ছে। দুইচারটা তিক্ত কথা শুনলেও ওর কিছু এসে যাবে না। জনপ্রতিনিধি হবার জন্য আদর্শ। বলতে না বলতেই হ্যাঁ-না ভোটাভুটি শুরু হয়ে যায়, ব্যাপক ভোটে জিতে আমি জয়ী হই। আমার বিপক্ষে না ভোট দিয়েছে দুইজন, তাদের মধ্যে একজন আমার সত্যিকারের বন্ধু, আরেকজন বলের ভবিষ্যৎ ভেবে আমাকে না ভোট দিয়েছে, তার ধারণা আমি বল আনতে গেলে ঐ বলটা বটি দিয়ে কুচিয়ে ফেরত দেয়া হতে পারে, রাস্তার পোলাপানকে নাকি ঐভাবেই বল ফেরত দেয়া দস্তুর। কী আর করা, বিষাদগ্রস্ত মনে দাঁড়াই সবার সামনে। আমাকে শপথ পাঠ করায় সকলে মিলে, যেভাবেই হোক বল হাসিল করতে হবে, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে হলেও। ঐ বাসার বুড়া মালিকের ঐতিহ্য আছে বল ও বলপ্রার্থীদের যুগপৎ আটকে রেখে বেওয়ারিশ মাল হিসেবে পুলিশে সোপর্দ করার, তাছাড়া ঐ বাড়িতে লেলিয়ে দেয়ার জন্য অভ্যস্ত কুত্তা আছে, আছে লাইসেন্স করা শটগান, জব্বারের বলী খেলায় কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট দারোয়ানসহ আরো অনেক প্রতিকূলতা, সর্বোপরি বাড়ির সিংহদরোজায় কোন ঘন্টা নেই, সেটার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক পেড়ে অভ্যন্তরস্থ লোকজনের মনোযোগ ও কুকুরের অমনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। তবে একটি সুন্দরী ও যৌনাবেদনময়ী তরুণীও সে বাড়িতে থাকে, হতে পারে সে কাজের বুয়া কিন্তু তাতে কি, সুন্দরী ও যৌনাবেদনময়ী তো, আমি বল উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় তাকে কয়েক ঝলক দেখে ফেলতে পারি, চাই কি মুরোদে কুলালে তাকে পটিয়ে বার করে এনে নন্দন পার্কেও নিয়ে যেতে পারি নাকি। আমি বিরসমুখে শুনি। শপথ পাঠ করানোর পর সবাই হুড়ো দেয় আমাকে, কই, যা! আমি দূর অস্ত বাড়ির দরজার দিকে তাকাই। তারপর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। নাহ, প্রতিনিধি যখন আমাকে নির্বাচিত করাই হয়েছে, প্রতিনিধিসুলভ আচরণই আমাকে করতে হবে। তাছাড়া শাস্ত্রে আছে, দূত অবধ্য, আমার কী ভয়? আমি কেশে গলা পরিষ্কার করি, তারপর রাজনের দিকে ফিরে বলি, "তোর মোটরসাইকেলটা দে আমাকে!" রাজন অতিশয় কঞ্জুস, সে সব কিছুই বাঁচিয়ে চলে, গালি পর্যন্ত গুনে দেয়, আর ওর কয়েক হাতফেরতা মোটরসাইকেলটার মতো মহার্ঘ্য জিনিস হস্তান্তর করবে আমার মতো জনপ্রতিনিধির কাছে, এ আশা করা অন্যায়। তাই ও যখন ফুঁসে উঠে প্রত্যাখ্যান করে, আমি অবাক হই না। "মোটরসাইকেল লাগবে কেন তোর?" রাজন ওর ময়লা দাঁতগুলি খিঁচায়। "কত দূরে বাড়িটা দেখেছিস?" আমি কপালের নিচে হাত রেখে সেই দিল্লির মতোই দূরবর্তী বাড়িটার আগাপাস্তলা খুঁটিয়ে দেখি। "পায়ে হেঁটে যাই কিভাবে? বাহন লাগবে না?" অন্যরা একে অন্যের দিকে তাকায়। একজন দুর্বল যুক্তি দাঁড় করায়, "কী বলিস? এক শট মেরে বল ফেলে দিলাম, আর তুই বলছিস দূর? ঐ তো দেখা যায় ---!" আমি উদাস হাসি। বলি, "ওরে, আসমানের চাঁদও তো দেখা যায়! কোনদিন চাঁদে না বল পাঠিয়ে দিস এক শট মেরে। তাছাড়া বেশি কিছু চাইনি আমি। আইনপ্রণেতা জনপ্রতিনিধিদের মতো বিনাশুল্কে গাড়ি তো চাইনি। স্রেফ মোটরসাইকেল, তাও পুরানা! ভেবে দ্যাখ, মোটরসাইকেলে চড়ে গেলে একটা মানসম্মান থাকে, হয়তো চাওয়ার আগেই বল দিয়ে দেবে!" সবাই নিমরাজি হয়, একা রাজনটা গজগজ করতে থাকে। আমি ওকে আশ্বস্ত করি, "আরে ভাই এমপিদের মতো বেচে দিবো না তোর মোটরসাইকেল! খালি যাবো আর আসবো! এটুকু মেনে নিতে তোর হোগা জ্বলে?" রাজন দাঁত কিড়মিড় করে চাবিটা দেয় আমার হাতে। আমি তবুও আনমনে কী যেন ভাবি। ওরা হুড়ো দেয়, "যা এবার! দাঁড়িয়ে আছিস কেন খাম্বার মতো?" আমি শিবলির দিকে তাকাই। "দোস্ত তোর ক্যামেরাঅলা মোবাইলটা দে!" শিবলি সিঁটিয়ে যায়, "যা ভাগ! মোবাইল দিয়ে তুই কী করবি?" আমি অভিমান করি। "মোবাইল দিয়ে কী করবো মানে? ফুটানগি দেখাবো, আবার কী? তাছাড়া ওরা ... ওরা যদি সত্যি সত্যি কুত্তা ছেড়ে দেয়, শটগান দিয়ে গুলি করে, দারোয়ান দিয়ে প্যাঁদায়, ওগুলোর একটা প্রমাণ লাগবে না? তাই ক্যামেরাঅলা মোবাইল। তাছাড়া আটকে রাখলে আমিই পুলিশের ছোটবোনকে ফোন করবো, তোরা তো জরিনাকে চিনিসই ... ঐ যে ডিআইজির ছোট বোন ...।" শিবলি রাজি হয় না, ওর এতো শখের মোবাইল। আমি রাগ করি। "আরে ভাই আমি তো সাংসদদের মতো কোটি কোটি টাকা ফোনবিল বাকি রাখার আব্দার করি নাই! বড়জোর পাঁচসাত টাকা বিল উঠবে! তা-ও তোরা এমন করিস? মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বল উদ্ধার করতে যাচ্ছি, তবু তোরা কান্টামি করিস বাল!" বাকিরা গুজগুজ করে, শিবলি মুখ গোঁজ করে ওর ঝাক্কাস মোবাইল সেটটা বাড়িয়ে দেয়। আমি সেটাও পকেটস্থ করে দাঁড়িয়ে থাকি। তারপর আরো কিছু নিখাদ যুক্তির প্রকোপে রাশেদের সানগ্লাস, মাহমুদের ব্রেসলেট আর মুন্নার গলার মোটাসোটা চেনটাও বাগাই। ওরা দাঁড়িয়ে থাকে আশা নিয়ে। সবকিছু নিয়ে রওনা হতে যাবো, এমন সময় ছ্যাঁক ছ্যাঁক করে তেলেভাজার শব্দ আর ঘ্রাণ যথাক্রমে কানে ও নাকে ভেসে আসে। গুনগুন করি, ভেসে আসে সুদূর পুরির সুরভী হায় সন্ধ্যায় ...। সবাই অগ্নিদৃষ্টি হানে আমার দিকে। আমি অসহায় হয়ে পড়ি। "আরে বাবা কয়েকটা ডাল পুরি আর কয়েককাপ চা-ই তো খাওয়াবি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মতো কোটি টাকার বাজার তো আর করে দিতে বলছি না। এই সামান্য কাজটুকু করে দিবি না তোরা?" এরপর সবাই ফুঁসে ওঠে। বলে, বল নাকি আর লাগবে না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, খেলা ডিসমিস। একে একে যে যার মালসামানা ফিরিয়ে নিতে উদ্যত হয়। আমার একটু মন খারাপ হয়, বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি যে জনপ্রতিনিধিদের কিছু কিছু সুবিধা দিতে হয়, নইলে কাজ উদ্ধার হয় না, কিন্তু ওরা যেন কেমন, এদেশে বাস করেও এই নিকষিত সত্য কথা মানতে চায় না। আমাদের খেলা ভেস্তে যায় সেদিনের মতো। পুনশ্চঃ বহু আগে অন্যত্র প্রকাশিত। তবে পরিস্থিতি পাল্টায় নাই, তাই এখনও প্রযোজ্য।
false
rn
আলোহীন সেই বিশাল হৃদয়ে আমার বিজন বাস আমি আজ রাতে বই পড়বো না,টিভি দেখবো না,কম্পিউটার নিয়ে বসবো না।গাঢ় ঘুম দেব।এক ঘুমেই রাত পার করে দিব।আনন্দময় একটা ঘুম দেব এবং সুন্দর স্বপ্ন দেখবো।মা'র ঘরে গিয়ে দু'টা ঘুমের ট্যাবলেট নিলাম,এবং চুপি চুপি খেয়ে বিছানায় গেলাম।জানালা এবং লাইট বন্দ করে দিলাম।আগেই মোবাইল অফ করে ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি।আনন্দময় কিছু ভাবলে ঘুম তাড়াতাড়ি আসে,তাই 'হিমি'র কথা ভাবা শুরু করলাম।'হিমি'র জন্য আমি অনেক গুলো শাড়ি কিনে রেখেছি।বেশির ভাগই নীল শাড়ি।শাড়ি গুলো কিনেছি হঠাৎ করে।রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি,দেখি একটা পুতুলকে শাড়ি পরিয়ে রেখেছে-দেখে এতো সুন্দর লাগলো কিনে ফেললাম।আরো কতো কি কিনেছি...! এই পর্যন্ত ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।আর কি আশ্চর্য সাথে সাথে স‌্বপ্ন দেখা শুক রলাম!আমি আজিম পুরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি বিকেল বেলা।আহ্ কি সুন্দর বিকেল!হঠাৎ দেখি একটা চায়ের দোকানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসে আছেন।সামনে গিয়ে দেখি শুধু রবীন্দ্রনাথ না আরো আছেন আইনষ্টাইন এবং বানার্ড শ।তারা কিনে আলোচনা করছিলেন শোনার জন্য আমি আইনষ্টাইনের পাশে গিয়ে চুপ করে বসি।অবাক হয়ে শুনি তারা তিন জনেই নারী রহস্য নিয়ে গভীর ভাবে আলোচনা করছেন।বানার্ড আমার দিকে তাকিয়ে বললেন বাবু তুমি এখানে কি করছো?যাও গ্রামে যাও।আইনষ্টাইনও বললেন যাও গ্রামে যাও।আমি রবীন্দ্রনাথের দিকে তাকিয়ে বললাম চাচা আপনি কি আমাকে একটা কবিতা শুনাবেন?আপনার মুখে আপনার একটা কবিতা শুনেই আমি গ্রামে চলে যাবো।রবীন্দ্রনাথ বললেন পুরো কবিতা শুনাতে পারবো না তবে কবিতার কয়েকটা লাইন শুনিয়ে দেই।পুরো কবিতা মনে থাকে না।আমি মাথা নেড়ে বললাম আচ্ছা।চাচা কবিতা আবৃওি শুরু করলেন- "কী করিয়া শুনাইব,কী সহজ ভাষায় ধরিয়া- দিব তারে উপহার ভালোবাসি যারে, মোরে করেছ সম্রাট। তুমি মোরে পরায়েছ গৌরব মুকুট; নিভৃত সভায় আমারে চৌদিকে ঘুরে সদা গান গায় বিশ্বের কবিরা মিলি; প্রেমের অমরাবতী, বিকশিত পুষ্পবীথিতলে শকুন্তলা আছে বসি, হাত ধ'রে মোরে তুমি লয়ে গেছ সৌন্দর্যের নন্দন ভূমি অমৃ্ত-আলয়ে। সহস্রের মাঝে একজন- সদা বহি সংসারের ক্ষুদ্র ভার,কত অনুগ্রহ কত অবহেলা সহিছে অহরহ। অয়ি মহীয়সী মহারানী, তুমি মোরে করিয়াছো মহীয়ান। হে মহিমাময়ী,মোরে করেছ সম্রাট্। আমি কবিতা শুনে এবং এক কাপ চা খেয়ে বিদায় নিলাম।রবি বাবু'র কবিতা আবৃওি ভালো হয়নি।এর'চে গোলাম মোস্তফা বা নূর সাহেব ভালো আবৃওি করেন। তাদের কথা শুনে আমি সত্যি সত্যি গ্রামে চলে গেলাম এবং বিয়ে করে ফেললাম 'হিমি'কে।এখন আমি সারাদিন জমিতে কাজ করি।দুপুর বেলা 'হিমি' আমার জন্য ভাত নিয়ে আসে।খাবার মেন্যু আহামরি কিছু না।'হিমি' দুই হাত ভরতি থাকে সবুজ কাঁচের চুড়ি,'হিমি আমাকে ভাত বেড়ে দেয়। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:৫৫
false
rg
বিএনপি আগামী দশম সাধারণ নির্বাচনে না আসলেও মহাভারত অশুদ্ধ হবে না!! বর্তমান সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছাড়া মোট রাজনৈতিক দল আছে আটটি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে হিসেবের বাইরে রাখলে সংখ্যাটি এখন সাত। নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিয়েছে মোট চারটি রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। নির্বাচনকালীন সরকারে এখনো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এলডিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি যোগ দেয়নি। সুতরাং নির্বাচনকালীন যে সরকারকে আজ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে সেটিকে সর্বদলীয় সরকার বলা যায় না। সেটি ব্যকরণ শুদ্ধও নয়। কিন্তু গণমাধ্যম এবং সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে সর্বদলীয় সরকার বলা হচ্ছে। এটা সর্বদলীয় সরকারের একটি ব্রান্ডিং করার কৌশল মাত্র। বরং এটাকে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার বলাই শ্রেয়। এই সরকারে মোট কত জন থাকবে তা দুই-এক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে। পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় এখন অনেকটাই স্পষ্ট। সেগুলো কি কি? বর্তমান সংবিধানের আলোকে ২৪ শে জানুয়ারির মধ্যেই আগামী দশম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। যদি এই সরকার সেটি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধানের আরেক দফা মুচলেকার কৌশল নিয়ে সেটাকে আরো ৯০ দিন অর্থ্যাৎ ২৪ শে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। তারপর? ২৪ শে এপ্রিলের মধ্যে যদি কোনো সাধারণ নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশে সুস্পষ্টভাবেই একটি সাংবিধানিক সংকট শুরু হবে। অর্থ্যাৎ নির্বাচনকালীন সরকার ২৪ শে জানুয়ারি'র মধ্যে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে ২৪ শে এপ্রিল পর্যন্ত লাইফ সাপোর্ট নিয়ে চলতে পারবে। তারপরেই সেই সাংবিধানিক সংকটের শুরু হবে। এখন প্রশ্ন হল, প্রধান বিরোধীধল বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে? যদি না যায় তাহলে সেই নির্বাচন কি গ্রহনযোগ্য হবে? এর আগে ১৯৮৬ সালে, ১৯৮৮ সালে ও ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কখনো কখনো অংশগ্রহন করেনি। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি যায় নি। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-আওয়ামী লীগ কেউ যায় নি। আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি'র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যায় নি। ওই তিনটি সংসদের মেয়াদ ছিল সংক্ষিপ্ত। ওই তিনটি সংসদের উদাহরণ আমাদের সামনে থাকলেও তখন পরিস্থিতি অনেকটা ভিন্ন রকম ছিল। প্রথম দুইটির সময়ে দেশে ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। সংসদ সেখানে মুখ্য ছিল না। কিন্তু ১৯৯১ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী শাসিত সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে আসার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি'র নির্বাচনে সংসদের মেয়াদ ছিল ভয়াবহ রকমের সংক্ষিপ্ত। সংসদীয় গণতন্ত্রে কে কখন সরকারি দলে থাকবে আর কে বিরোধীদলে থাকবে এটা জনগণ ভোটের মাধ্যমেই ঠিক করে। কোনো একটি রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে না যায়, সেটি সেই দলের নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতার লোভ সংক্রান্ত একটি ব্যাপার। যদি সেই দল মনে করে, তারা বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচনে গেলে হেরে যাবে, ক্ষমতায় যাবার সাধ পূরণ হবে না। তাই নির্বাচনে যাবে না, সেটা স্রেফ সেই দলের দলীয় নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। মোটেও গোটা রাষ্ট্রের সকল জনগণের বিষয় নয়। যদি বিএনপি আগামী নির্বাচনে না যায়, সেটা বিএনপি'র নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়-আশয়। সেখানে গোটা রাষ্ট্রের সকল জনগণের বিষয় মোটেও সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যায় না। স্রেফ বিএনপি'র নিজস্ব দলীয় বিষয়। এখন বিএনপি ছাড়াই যদি আগামী নির্বাচনে শতকরা পঞ্চাশ ভাগের বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকে, তাহলেই সেই নির্বাচন ব্যকরণে সিদ্ধ হবে। সেটাকে যদি শতকরা ষাট ভাগ বা তার চেয়েও বেশিতে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের যে কাউকে সেই নির্বাচন মানতে বাধ্য করবে। কারণ, একটি দেশের যদি শতকরা ষাট ভাগ বা তারও বেশি মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে, তাহলে সেই নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহন করেনি, সেটা আর বিবেচ্য বিষয় থাকবে না। কারণ, পৃথিবীর বহু দেশে বহু-বহু রাজনৈতিক দল আছে। অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে না। তাদের ছাড়াই সেই দেশ চলছে। এর অনেক ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ দেওয়া যাবে। যদি বিএনপি আগামী নির্বাচনে না যায়, আর যদি সেই নির্বাচনে শতকরা ষাট ভাগ বা তারও বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকে, তাহলে বিএনপি কে আর কেউ গণনায় রাখবে না। নির্বাচন সিদ্ধ হবে। হয়তো সরকার আগামী নির্বাচনে বিএনপি না গেলে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেই এখন বেশি মনযোগী হবে। সেটাই হবার কথা। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে না যাবার পর, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি শতকরা পঞ্চাশের কম থাকে বা সেটা চল্লিশের কোঠায় নেমে আসে, সেই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষই গ্রহন করবে না। বিশ্বের কোনো কুতুব বা কোনো প্রভু সেটা মানলো আর না মানলো, সেটা তখন বিবেচ্য হবে না। মোটকথা, দেশের মানুষের বিবেচ্য বিষয়ই প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশের ৪২ বছরের জীবনে যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের 'হ্যা না' ভোট আর সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের 'হ্যা না' ভোট বাদ দিলে অন্য সকল নির্বাচনই ব্যকরণে সিদ্ধ। সেখানে সংসদের মেয়াদ যতোদিনই থাকুক না কেন। সুতরাং বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে না যায়, তাহলে বিএনপি হয়তো ভবিষ্যতে একটি মুসলিম লীগের মতো জনসম্পৃক্ততা হীন রাজনৈতিক দলে পরিনত হবে। কেন সেই ব্যাখ্যাটিও দিচ্ছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত জেনারেল জিয়াউর রহমান বা তার অনুসারী বা তার সাঙ্গপাঙ্গরা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা ভোগ করেছে। ক্ষমতা দখল করার সেই প্রক্রিয়াটি ছিল বন্দুকের নলের মাধ্যমে। দেশের রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে হত্যা করে সেই খুনিচক্র রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করেছিল। ৬ বছর ৭ মাস ৯ দিন সেই খুনিচক্র দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রেখেছিল। ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বলি দেওয়া হয়েছিল। দেশের রাজনৈতিক গতিধারাকে সরাসরি উল্টোপথে হাঁটানো হয়েছিল। জিয়া নিজেই বলেছিলেন, 'আই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট, মানি ইজ নো প্রব্লেম'। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংসের সেই শুরু। সেখান থেকে এখনো বাংলাদেশ বের হতে পারেনি। তারপর জেনারেল জিয়ার যোগ্য সাগরেদ জেনারেল এরশাদ ২৪ মার্চ ১৯৮২ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত আরেকটি বন্দুকের নলের ডগায় ক্ষমতা দেখিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়েছিলেন। মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো গণতন্ত্র ছিল না। দীর্ঘ এই ১৫ বছরে সামরিক দুই শাসক দেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করেছেন। রাষ্ট্রের জনপ্রশাসন ধ্বংস করেছেন। নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করেছেন। বিপরীতে কি কি করেছেন? টাকা বানানোর মেশিন চালু করেছেন। টাকা দিয়ে রাজনৈতিক নেতা কেনার সংস্কৃতি চালু করেছেন। বিচারপতিদের ক্ষমতার লোভ শিখিয়েছেন। রাষ্ট্রের জনপ্রশাসনকে দলীয় আনুগত্য স্বীকার করা শিখিয়েছেন। রাজনীতি'র বাইরে ধামাধরা রাজনীতি করে কিভাবে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যায়, সেই মন্ত্র শিখিয়েছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একটি দেশের প্রশাসন যে ব্যবস্থায় অভ্যস্থ হয়ে যায়, সেটি তারা রাতারাতি ছেড়ে দেবে? আর যদি সেটা হয় টাকা আয়ের সবচেয়ে সহজ ও শর্টকাট পদ্ধতি? তো ১৯৯১ সালে স্বৈরাচার পরবর্তী প্রথম সরকার গঠন করলো বিএনপি। তারা সেই চারিত্রিক দোষের গুনেই হোক আর ক্ষমতাকে আরো পাকাপাকি করতেই হোক, জিয়ার প্রদর্শিত পথই অনুসরণ করলো। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরো সুস্পষ্ট ধ্বংসের চূড়ান্ত দোরগোড়ায় নিয়ে গেল। এবার দলীয় বিচারপতিকে দিয়ে যেনোতেনো ভাবে একটা নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য বিএনপি তখন তালবাহানা করতে শুরু করলো। বঙ্গবন্ধু'র খুনিদের জাতীয় সংসদে হাজির করলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে নিয়ে ৩০ মার্চ ১৯৯৬ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হল। কিন্তু নির্বাচনী দাওয়ায় কিছু সূক্ষ বিষয় রেখে গেছিল তারা। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সেটি প্রয়োগ করার মতো দুঃসাহস জনরোষের মধ্যে পরবে, তাই সেটি কাগজে থেকে গেল। ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই কাগুজে বিষয়টিকে আরো পাকাপাকি করতে বিচারপতিদের বয়স সীমা বাড়ালো। সেটায় কাজ না হলে নিজেদের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন খড়গ জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। তারপরের ইতিহাস ওয়ান ইলেভেনের। একটি সাধারণ নির্বাচন করার নাম করে তারা দুই বছর ক্ষমতা ধরে রাখলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শুধুমাত্র বিএনপি এককভাবে যতোটা দায়ী, অন্য দলগুলো সম্মিলিতভাবে ততোটা দায়ী হবার মত খারাপ এখনো হয়নি। বিএনপি গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দিল। বঙ্গবন্ধু'র খুনিদের বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করলো। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেট হামলা হল। সেই হামলা দিয়ে আওয়ামী লীগকে চিরতরে গুড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তারপর জাতিকে একটি জজ মিঞা নাটক দেখালো খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সংসদে আসন পেয়েছে মাত্র ৩০টি। ৩০ আসন নিয়ে দেশের প্রধান বিরোধীদল হিসেবে তারা গোটা পাঁচ বছর সংসদে যায়নি। নানান তালবাহানা করে সংসদে যায়নি বিএনপি। কিন্তু সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখতে মাঝে মাঝে হাজিরা দিয়েছে। বেতন ভাতা ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা ভোগ করেছে। শুল্কবিহীন গাড়ি আমদানির সুযোগ ভোগ করেছে। সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে। ক্ষমতার মোহে আক্রান্ত একটি দলের নাম বিএনপি। আমরা হাওয়া ভবন কেস স্টাডির কথা জানি। আমরা মানি লন্ডারিংয়ের কথা জানি। আমরা খাম্বা থিউরির কথাও জানি। আমরা দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের কথাও জানি। আমরা কথিত বাংলা ভাইয়ের কথাও জানি। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে জাতীয় পতাকা দিয়ে জাতি'র সামনে ঘোরানোর ইতিহাসও জানি। এখন বিএনপি'র একমাত্র লক্ষ্য বিচারাধীন যুদ্ধপরাধীদের কিভাবে বাঁচানো যায় সেটি। আর ক্ষমতায় না যেতে পারলে বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের যা হবার সেটি হবে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো'র রায় হয়ে গেছে। এখন পুরানা বাহানায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দাও এই কথা বলে, হরতালের নামে নাশতকা করে, জ্বালাও পোড়াও করে, নিরীহ মানুষ মেরে বিএনপি আসলে দিশেহারা। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বিএনপি কি করে নির্বাচনে যায়? ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহনের সুযোগ নেই। ভাসুরকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে গিয়ে কি করবে? তাই নানান অজুহাতে তারা সময় ক্ষেপন করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে শেষ হবে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে চালাবে, তা নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো সুস্পষ্ট কথা বলেনি। সেটি বলার মত অবস্থায় এখন বিএনপি নেই। কারণ, বিএনপি এখন কাগজে কলমে প্রধান বিরোধী দল হলেও কার্যত এটি জামায়াতে ইসলামী'র বি-টিমে পরিনত হয়েছে। জামায়াত যেহেতু নির্বাচনে যেতে পারবে না। তাই বিএনপি কিভাবে যায়? তার চেয়ে আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও মানুষ মারা লুটপাট করাটা যেহেতু রক্তের ভেতরেই আছে, সেটিই এখন করছে তারা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে না গেলেও দেশের মানুষ এখন একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অপেক্ষায়। বিএনপি'র অনেক নাটক দেখা হয়েছে। এটি এখন সোজা কথায় বাদ। অর্থ্যাৎ আপনি এখন ধামুন। আপনাদের অপকর্ম অনেক দেখা হয়েছে। আর নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে ২০১৯ সালের একাদশ সাধারণ নির্বাচনে এই দলটিকে তখন বাটি চালান দিয়ে বাংলাদেশে খুঁজতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও আগামী দশম সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা থাকবে। শতকরা ৬৫ ভাগেরও বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকবে। দেশের মানুষ আর হরতাল চায় না। ক্ষমতায় কে থাকলো, কে গেল, কে গেল না, কো গোস্যা করলো, এটা নিয়ে ভাবার আর সময় নাই। আমরা শান্তি চাই। আমরা নিরাপত্তা চাই। আমরা নিজেদের কাজ নিজেরা করতে চাই। ক্ষমতাবানরা আমাদের কাজ করে দেবেন না। আমাদের দেশের ৮০ ভাগ কৃষক কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে ফসল ফলায় না। তারা নিজেদের কাজটি নিজেরা করেন। দেশের এই ৮০ ভাগ কৃষক যেহেতু রাজনীতি ছাড়াই দেশে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন। ক্ষমতার তারা কিছুই বোঝার চেষ্টা করেন না। হরতালে তাদের কাজের কিছুটা ব্যঘাত ঘটে বটে। নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়। যদি এখন সরকার আইন করে হরতালটি বন্ধ করে দেয়, তাহলে দেশের মানুষ রাজনৈতিক অধিকারের নামে এই সহিংস অধিকারের অকারণে বলি থেকে মুক্তি পাবে। দেশের মানুষের সেবা করাই যদি প্রধান বিষয় হয়, তাহলে হরতাল বন্ধের আইন করতে হবে। হরতাল বন্ধ করাটা ধীরে ধীরে জাতীয় গণ-দাবিতে পরিনত হচ্ছে। আপনি হরতাল ডেকে এসি রুমে নিরাপদে শুয়ে বসে টেলিভিশন দেখে কাটাবেন, প্রধানমন্ত্রী'র ডাকেও আপনি ঘর থেকে বের হতে পারবেন না, আমরা নিরীহ মানুষ যারা, আমাদের তো পেটের তাগিদে বাইরে যেতে হবে। কাজকাম করতে হবে। সুতরাং বিএনপি'র আন্দোলনের নামে হরতাল এখন কেন বেআইনী হবে না, সেটা নিয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আগামী দশম সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণ হলে সেখানে শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে, বিএনপি একটি ভাগাড়ে দলে পরিনত হবে। যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে তাদের সেই বাটি চালান থিউরির সামনে যেতে হবে। মুসলিম লীগের ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। সো, বিএনপি নির্বাচনে গেল কি গেল না, সেটি এখন মোটেও বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় ভোটে সর্বোচ্চ মানুষের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা। আমরা শান্তি চাই। নিরাপদে নিজেদের কাজকাম করতে চাই। এটাই আসল কথা। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ গেলেও আমাদের পকেটে পয়সা হেঁটে আসবে না। ক্ষমতায় বিএনপি গেলেও আমাদের খাবার কেউ যোগাড় করে দেবে না। আমরা সাধারণ জনগণ, নিজেদের আহারের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়। তাই আমরা শুধু রাষ্ট্রের কাছে শান্তি আর নিরাপত্তা চাই। ক্ষমতার ভেলকি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নাই। সো, সাধু সাবধান।। সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৮
false
rn
মৃত্যুর আগে যে ১০০ টি চিত্রকর্ম আপনাকে দেখতে হবে (দুই) ছবি দেখতে আমার খুবই ভাল লাগে। জীবনে কত ছবির দিকে যে হা করে তাকিয়ে থেকেছি তার ইয়ত্বা নেই। মাঝে মাঝে গুলশান ২ আর নিউ মার্কেট এর ছবির দোকান গুলোয় এমনি এমনিই ঘুরে বেড়াই। নানারকম ছবি দেখি ঘুরে ঘুরে অথবা আমার বিশেষ প্রিয় কাজের একটি হলো নেট ঘুরে ঘুরে ছবি দেখা। কার্টুন, জলরং, তেলরং সব ধরণের ছবিই আমার পছন্দ। একজন চিত্রশিল্পী মানুষের মনোলোককে ঋদ্ধ করে, তাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও অমৃতের সন্তানের পঙিক্ততে উন্নীত করে।Leonardo Vinci (লিওনার্দ দ্যা ভিঞ্চি) বহুমুখী প্রতিভাধর লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অন্যান্য পরিচয়ও সুবিদিত- ভাস্কর, স্হপতি, সংগীতজ্ঞ, সমরযন্ত্রশিল্পী এবং বিংশ শতাব্দীর বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য জনক । লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জন্ম ফ্লোরেন্সের অদূরবতী ভিঞ্চী নগরের এক গ্রামে, ১৪৫২ সালের ১৫শে এপ্রিল ।লিওনার্দোর জীবনের প্রথম অংশ বিষয়ে খুবই অল্প জানা গিয়েছে । তাঁর জীবনের প্রথম ৫ বছর কেটেছে আনসিয়ানো-র একটি ছোট্ট গ্রামে । তারপর তিনি চলে যান ফ্রান্সিসকো তে তার পিতা,দাদা-দাদী ও চাচার সাথে থাকতে।তার পিতা অ্যালবিরা নামে এক ষোড়শী তরুণী কে বিয়ে করেছিল । খেয়ালী রাজকুমারের মত এলোমেলো ভাবে নোটবুকের পৃষ্ঠায় ভিঞ্চি তার চিন্তাভাবনা লিখে রেখে গেছেন । তার নোট এবং ড্রয়িং থেকে দেখা যায় যে লিওনার্দো ব্যাপক বৈচিত্র্যময় বিষয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন । তার চুড়ান্ত চিন্তাভাবনা কি তা বর্তমানে জানা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আর মজার বিষয় হচ্ছে যে, সবকিছুই তিনি অসমাপ্ত রেখে গেছেন ।৯। ভিঞ্চির আকাঁ ছবিটিকে পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট চিত্রকর্ম বলা হয়। ছবিটি তিনি ১৫০৪ সালে একেঁছিলেন। ফ্লরেন্সের এক ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে লিসা ডেল জিওকন্ডের নাম অনুসারে চিত্রটির নামকরণ করা হয়। ছবিটি এখন ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত করা আছে। প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ লোক এই চিত্রকর্মটি দেখার জন্য জাদুঘরে যায়। পাইন কাঠের টুকরোর ওপর মোনালিসার এ ছবিটি আঁকেন। ১০। The last Supper এর মূল বক্তব্য হচ্ছে যীশু খ্রিস্টের খাওয়া সর্বশেষ খাবার অর্থাৎ তিনি ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে যে খাবার খেয়ে ছিলেন। ছবিটি এঁকেছেন লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্ছি। ছবিটি আঁকার পর পুরো ইউরোপ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সবাই ছবিটিকে এক ঝলক দেখার জন্য তখন উপচে পড়ে। ছবিটিতে দেখা যায় যীশু খ্রিষ্ট সবার সাথে ভাগ করে খাবার খাচ্ছেন এবং সবার মধ্যে একটা কৌতূহল বিরাজ করছে। ১১। কেন জানি এই ছবিটা আমার খুব বেশি ভাল লাগে। ১২। মোনালিসার চেয়ে এই ছবিটা আমার বেশি ভাল লাগে। Bob Ross (বব রস) বব এর জন্ম ১৯৪২ সালে আমেরিকায়। তিনি একজন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক। মাত্র ৫২ বছর বয়ে এই শিল্পী মারা যান। তার ছবি দেখলে মনেই হয় না- রঙ তুলি দিয়ে আঁকা। মনে হয় এসএলআর ক্যামেরা তোলা ছবি। এত নিখুঁত !১৩। ১৪। Rabindranath Thakur (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) রবি ঠাকুর ঘটা করে ছবি আঁকা শুরু করেন ১৯২৪ সালে,তখন তাঁর বয়স প্রায় ৬৩ বৎসর। রবি ঠাকুর তাঁর ছবি আঁকাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন, যখন আর্জেন্টিনার অন্যতম জনপ্রিয় লেখিকা ভিক্টোরিয়া অকাম্পো তাঁর কবিতার খাতা ঘাটাঘাটি করার সময় তাঁর আঁকা "পুরবী" ছবিটি দেখেন এবং এর ভূয়সী প্রসংসা করেন। এই স্বনামধন্য লেখিকাই কবিগুরুর প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করেন প্যারিস এ ১৯৩০ সালে। বার্লিন ন্যাশনাল মিউজিয়াম রবীন্দ্রনাথের ৫ টি ছবি কিনে নেয়। রবি ঠাকুরের ছবি গুলোর বৈশিষ্ট্য হল, তাঁর ছবিতে রঙ এর চেয়ে আঁকিবুঁকি বেশি থাকত। শান্তিনিকেতন এর আর্ট মিউজিয়াম এ আছে রবীন্দ্রনাথ এর ১৫৮০ টি পেইন্টিং। ১৫। রবীন্দ্রনাথের আঁকা এই ছবিটা আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। ১৬। তিনি অনেক গুলো নারী প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন, যাদের মুখছবি গুলো ছিল দুঃখিত এবং বিকৃত। একবার তিনি নন্দলাল বসু কে বলেছিলেন যে, এই ছবি গুলো তিনি তাঁর বউদি কাদম্বরী দেবী কে স্মরণ করে এঁকেছিলেন।
false
mk
জামায়াতে ইসলামী আগাগোড়াই একটি অবৈধ সংগঠন ২৮ মার্চ দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে অনেকদিন জামায়াতের সহিংসতা চলেছে। সে সঙ্গে তারা আমাদের যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নানা ধরনের নাশকতা চালিয়েছে। আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে ও জনমনে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে ওরা। পুলিশ সদস্যদের পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে। একটি দেশে এমন অরাজতা চলতে পারে না।স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে জামায়াতে ইসলামীর মতো যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী একটি দল এভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর অধিকার রাখে না। আমি তো বলব ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরেই দলটি এ অধিকার হারিয়েছে। ওইদিন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনি আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিল এটা আমরা জানি। কিন্তু এটা অনেকেই খেয়াল করেন না যে সে দলিলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তানি বাহিনি তার সব অক্সিলারি ফোর্সসহ আত্মসমর্পণ করছে। এখানে অক্সিলারি ফোর্স বলতে বোঝানো হচ্ছে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনিকে। এ তিন বাহিনির পিতৃসংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীও এদেশে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর অধিকার হারিয়েছে। একে আরও জোরালো করার জন্য বাহাত্তরের সংবিধানের আর্টিকেল ৩৮-য়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ধর্মের নাম ব্যবহার করে কোনো ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ।এসব আইনগত দিক ছাড়াও বাস্তব অবস্থার দিক থেকে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করতে দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাদের অনেক নেতা তখন জেলে ও আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকলেও, দেশের বাইরে থেকে কেউ কেউ তখনও বাংলাদেশবিরোধী নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক তৎপরতা বৈধ করে দেওয়া হল। এরই ফলে নানা সমঝোতার মাধ্যমে জামায়াত আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পেল। জিয়াউর রহমান এ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।এ জন্যই পরে আমরা দেখেছি যে, জিয়াউর রহমানের এ ব্যবস্থা বৈধ ছিল কিনা সেটা কোর্টে উপস্থাপন করা হলে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এ মর্মে রায় দেন যে, সংশোধনীটি ছিল অবৈধ। শুধু তাই নয়, এ সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত সব পদক্ষেপ অবৈধ ঘোষিত হল। রায়ে আরও বলা হল, আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানের ধারাগুলোতে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।এ রায়ের ফলে অবস্থাটা এই দাঁড়াল যে, কার্যত আর্টিকেল ৩৮ পুনঃপ্রবর্তিত হল। তখন আইনমন্ত্রী জনসমক্ষেই বলেছিলেন যে, কোর্টের এ রায়ের ফলে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে গেল। কিন্তু বাস্তবে কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বাহাত্তরের সংবিধানে আর্টিকেল ৩৮-য়ের যে বয়ানটি ছিল, সেটিকে হুবহু সংবিধানে না ঢুকিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীতে তাতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হল। এটা এমনভাবে করা হল যে, এর ফলে বাহাত্তরের সংবিধানের অধীন জামায়াতে ইসলামী যেমন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল- এখন আর সেটা রইল না।ওই অর্থে এটাই সত্য যে, জামায়াতে ইসলামীকে একবার বৈধতা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, আরেকবার একে বৈধ করলেন মহাজোট সরকার। কিন্তু কোর্ট আমাদের জানিয়েছেন যে ওইভাবে এদের বৈধতা দেওয়া যায় না। প্রথমবার জানিয়েছেন এভাবে যে পঞ্চম সংশোধনী বৈধ ছিল না। দ্বিতীয়বার যদিও এটা কোর্টে উত্থাপিত হয়নি, তবে হলেও এটা বোঝা যায় যে, একই রায় আসত- আর তা হল, রাষ্ট্রের অন্যতম আদর্শ বা মূলনীতি যদি হয় ধর্মনিরপেক্ষতা তাহলে বাহাত্তরেরর আর্টিকেল ৩৮-এ হাত দেওয়া যায় না।এ জন্যই আমি বলব, জামায়াতে ইসলামী আগাগোড়াই একটি অবৈধ সংগঠন- সেই একাত্তর সাল থেকেই। একে যে বৈধতা দেওয়া হয়েছে সেটা প্রথমবারও ছিল অবৈধ, দ্বিতীয়বারও তাই।অন্য আরেকটি দিক থেকে আমি মনে করি জামায়াত অবৈধ একটি সংগঠন। বিশ্ব ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব যে, যে সব সংগঠন গণহত্যা পরিচালনা করেছিল সেগুলো যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গণ্য হযেছে। আর প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী কোনো সংগঠন এমনিতেই অবৈধ হয়ে যায়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জার্মানিতে নাজি পার্টিকে এবং বর্ণবাদী কাজকর্মের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ক্লু-ক্লাক্স-ক্লান নামের একটি পার্টিকে অনন্তকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সন্ত্রাসী কাজকর্ম পরিচালনার জন্য হিজবুত তাহরির ও হরকাতুল জিহাদের মতো সংগঠন চিরতরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।সর্বশেষ যে যুক্তি আমি দেব তা হল, জামায়াতে ইসলামী কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। যদি আল কাযেদা বা তালেবানের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়, তবে জামায়াতকেও করা উচিত। কারণ তারাও একইভাবে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার এটাই যে, জামায়াতের মতো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে কথা বলছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তাতে এটাই প্রমাণ হয় যে, তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনো রকম নীতি-নৈতিকতার ধার ধারেন না। নিজেদের যখন যেভাবে সুবিধা সেভাবে নৈতিকতার কথা বলেন।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ধরনের সুবিধাবাদী নৈতিকতা আমাদের মেনে নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। একটি দেশ কীভাবে চলবে, জাতীয় পর্যাযে কী কী পদক্ষেপ নেবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সে দেশের জনগণের। সম্প্রতি শাহবাগের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের জনগণ রায় দিয়েছে যে, জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী সংগঠন বলে এদেশে এদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। ওই সংগঠনটি গত কয়েক মাস ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার জন্য সহিংসতা ও তাণ্ডব চালাচ্ছে- এমনকি রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে বৈধ একটি ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে তাতে তারা নিজেদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলেই প্রমাণ দিচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতাও করছে। কয়েক বছর আগেও এরা গান পাউডার ও রগকাটার রাজনীতি করত।এখন প্রশ্ন উঠতে পারে জামায়াত গত কয়েক দশকে কেন এভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠল? আমাদের রাজনীতিবিদরাই-বা কেন দলমত নির্বশেষে জামায়াতকে রাজনীতিতে শক্তিশালী করে তুলেছেন? এর জন্য আমি মূলত দায়ী করব মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে। ওরা জামায়াতকে বরাবরই একটি মডারেট মুসলিম দল বলে মনে করে এসেছে। ফলে ওরা জামায়োতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। সে সঙ্গে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর তারা জামায়াতের সঙ্গে সহাবস্থানের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত জামায়াতের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। একাত্তরে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ব্যাপারে একই ধরনের ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই ভাষায় কথা বলেছে ওরা।আমাদের প্রধান দলগুলো মূলত রাজনীতি করার সুবিধার্থে যুক্তরাষ্ট্রকে চটাতে চায় না। কারণ তাহলে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না বলে ভয় পায়। আর এ জন্যই বড় দলগুলো নানা সময়ে জামায়াতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ওদের কোলে টেনে নিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ সবসময় চেষ্টা করেছে জামায়াত যাতে তাদের কাছে না থাকলেও বিএনপির কাছ থেকে দূরে থাকে। দু’দলের এ ধরনের আত্মঘাতী কৌশলের ফলে জামায়াত বস্তুত, বিএনপির কাঁধে ভর করে আমাদের রাজনীতিতে জায়েজ হয়েছে। আর কৌশলগত ঐক্যের নামে আওয়ামী লীগ ওদের সঙ্গে সংলাপ করে ওদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে।রাজনীতিতে এভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পর জামায়াত প্রয়োজনমতো নিজেদের বিকাশ ঘটিয়েছে। গত জোট সরকারের আমলে জামায়াত প্রশাসনের মাধ্যমে সমাজে গভীরভা্বে অনুপ্রবেশ করেছে। ওই দলের দুজন তখন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াত তাদের বিশাল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে, বছরে যার পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ দিয়ে এরা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি অংশ এদের লবিংয়ের ফলে প্রভাবিত হয়েছে। হাজার কোটি ডলার খরচ করে এরা এসব লবিংকে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করেছে।এমন একটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই আমাদের তারুণ্য হাল ধরল। ক’দিন আগেও অনেকেই বলত যে, এখনকার তারুণ্য অতীতের দিকে তাকাতে চায় না, কারণ তাতে জাতি বিভক্ত হয়ে যাবে। এ ধরনের প্রতিটি কথা মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে। শাহবাগে সমবেত হয়ে তরুণরা বলে দিয়েছে যে, আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে যাবে। এ তরুণরাই একদিন বয়োজ্যেষ্ঠ হবে। তাদের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত রয়ে যাবে এ চেতনা। আর এভাবেই জনগণের কণ্ঠ সোচ্চার থাকলে একাত্তরের ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধীদের প্রাপ্য সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে।জামায়াতের লবিংয়ের দ্বারা প্রভাবিত হযে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যারা বলেন যে, মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়, তাদের উদ্দেশে বলব- গণহত্যার অপরাধের মাত্রা ভিন্ন। অবশ্য এটা তারা খুব ভালো করেই জানেন। আর তাই এখন জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের পক্ষে ওরা চিৎকার-চেঁচামেচি করলেও, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করার পরও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল টু শব্দটি করেনি। বরং যুদ্ধশেষে পাকসেনাদের যখন বন্দী করা হল তখন ওরা ওই সেনাদের মানবাধিকার রক্ষার্থে বাংলাদেশে একটি মিশন পাঠিয়েছিল!তাদের অতীতের এসব ভ্রান্তি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মকাণ্ড বলে দেয় যে, যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত প্রসঙ্গে তারা এ ধরনের ভূমিকাই সবসময় পালন করবে। আফগানিস্তানের তালেবানরাও তাদেরই সৃষ্টি। তাই আমরা মনে করি, আমাদের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে আগামীতে এ দেশে জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ কতটুকু থাকবে কি থাকবে না। সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালের আইনে কিছু পরিবর্তন আনার ফলে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতকে অভিযোগের কাঠগড়ায দাঁড় করানোর যে পরিস্থিতি তৈরি হযেছে তাতে এ দলের নেতারা গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হবেন। জাতিও দায়মুক্ত হবে।মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। বিডিনিউজ২৪.কম
false
hm
হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যার নীড় সন্ধানীর সাম্প্রতিক পোস্টে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিয়ে দুর্ভোগের পেছনে নগরবাসীর আচরণ যে একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, সে কথা উঠে এসেছে। এই পোস্টটা পড়ার আগে পৃথ্বী শামসের অনুবাদে নোম চমস্কির একটি সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। আমার এই পোস্টে লেখা ভাবনা উসকে দিয়েছে মূলত এই দুটি পোস্টের আধেয়। আসল প্যাচাল পাড়ার আগে চমস্কি কী বলছেন একটু পড়ি। আমাদের মনে রাখা উচিত যে সমাজ বিশ্লেষণ এমন কোন কর্ম না যা বিশেষজ্ঞদের হাতে ন্যস্ত রেখে আমাদের নিশ্চিন্ত থাকতে হবে। বুদ্ধিজীবিরা আমাদের এটাই বিশ্বাস করাতে চায় যে তারা এমন এক কর্মে প্রবৃত্ত যা জনসাধারণের কাছে দুর্বোধ্য। কিন্তু সামাজিক বিজ্ঞান এবং সমসাময়িক ঘটনাবলি অধ্যায়ন আসলে মোটেই জটিল কিছু না, কারো এসব বিষয়ে আগ্রহ থাকলে সে নিজেই এগুলোতে সিদ্ধহস্ত হতে পারে। এসব বিষয়কে অযাচিতভাবে “জটিল” হিসেবে উপস্থাপন করে বুদ্ধিজীবিরা আসলে জনসাধারণকে ননির পুতুল বানিয়ে রাখতে চায় যাতে সাধারণ মানুষ এসব মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তা ব্যতিরেকে সমাজকে উপলদ্ধি করতে নিজেদেরকে অক্ষম মনে করে। একারণে সমাজবিশ্লেষণকে বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমের সাথে তুলনা করার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে, কারণ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আসলেই কোন কিছু বিশ্লেষণের পূর্বে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে একটি সুবিশেষ বৌদ্ধিক কাঠামো আয়ত্ত করতে হয়। এই বাক্যগুলোতে যদি সমাজ বিশ্লেষণের জায়গায় নাগরিক জীবনের সমস্যা সমাধানের কথা বসাই, তাহলেও কি তা গ্রহণযোগ্য থাকবে? চট্টগ্রামের মতো পাহাড়ি শহর যে বর্ষার জলে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে, সে সমস্যার সমাধান কি ক্ষমতাবান কতিপয়তন্ত্রের মর্জিমাফিক আসবে, নাকি নাগরিকের এতে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে? সমস্যাগুলো কি এতোই দুর্বোধ্য যে আমাদের নিজেদের সক্রিয় অংশগ্রহণে তার সমাধান সম্ভব নয়? আরেকটু ভাবতে গিয়ে মনে হলো, আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলোকে আমরা নাগরিকের সামষ্টিক অংশগ্রহণের সুযোগ নেই, এমন "হার্ডওয়্যার" দিয়ে সমাধানের ব্যাপারে খুব বেশি উৎসুক (যদিও এসব হার্ডওয়্যার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিকের সামষ্টিক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়)। সে তুলনায় নাগরিকের অংশগ্রহণসাপেক্ষ "সফটওয়্যার" দিয়ে সমাধানের ব্যাপারে আমাদের সামষ্টিক আগ্রহ কম। এখানে হার্ডওয়্যার বলতে বোঝাচ্ছি অবকাঠামো বা বস্তুকেন্দ্রিক আয়োজন, আর সফটওয়্যার বলতে বোঝাচ্ছি আচরণ বা বিধি। প্রসঙ্গ পাল্টাই। বনানীতে পথচারীরা রাস্তা পার হবেন, সেজন্যে বিপুল টাকা খরচ করে ফুটওভার ব্রিজে বিদ্যুৎচালিত সিঁড়ি বসানো হয়েছে। কিন্তু পথচারীরা আগের মতোই নির্বিকার চিত্তে রাস্তার ওপর দিয়েই পার হচ্ছেন, ফুটওভার ব্রিজ ছুঁয়েও দেখছেন না। দুর্ঘটনা এড়াতে আর যানজট কমাতে ঢাকা নগর কর্তৃপক্ষ এখানে বিপুল ব্যয় করে "হার্ডওয়্যার" দিয়ে একটি সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই হার্ডওয়্যারের সাথে মানানসই সফটওয়্যার নাগরিকের মাঝে অনুপস্থিত। মনে করুন আপনার ফোনে ক্যামেরা আছে, কিন্তু ছবি তোলার জন্যে কোনো প্রোগ্রাম নেই। তখন সেই ক্যামেরা বাহুল্য ছাড়া আর কিছু নয়। তখন হয় আপনাকে ছবি তোলার প্রোগ্রামসহ ফোন কিনতে হবে, নয়তো ক্যামেরায় ছবি তোলার লাগসই প্রোগ্রাম গুঁজে দিতে হবে। আমরা চাইলেই আমাদের নাগরিকসমষ্টিকে বদলে পৌরকাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ভিন্ন নাগরিকসমষ্টি আমদানি করতে পারবো না। কাজেই নাগরিকের মধ্যে নগরজীবনের প্রাত্যহিক হার্ডওয়্যারগুলোর সাথে মানানসই "সফটওয়্যার" ইনস্টল করতে হবে। এই কাজটা মূলত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর ঐ সফটওয়্যারকে আমরা মোটাদাগে "শিক্ষা" বলে ডাকি। এই উপলব্ধি খুব কঠিন কিছু নয় যে আমাদের সাম্প্রতিক জীবন আর আমাদের পাঠ্যক্রমের শিক্ষার মধ্যে বড়সড় দূরত্ব আছে। আমরা স্কুলকলেজে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও গণিত, ভাষা ও ইতিহাস, ভূগোল ও ধর্ম, হিসাব-কৃষি-গার্হস্থ্য বিষয়াদি নিয়ে কিছু পল্লবগ্রাহী কাজকর্ম করি, তারপর শিক্ষার জোর পরিমাপ করি কিছু প্রান্তিক পরীক্ষার ফল দিয়ে। সকল বিষয়ে এ প্লাস পাওয়া কোনো ছাত্র যদি ফুটপাথের ওপর থুথু ফেলে, কিংবা কোনো দেয়ালের সামনে জিপার খুলে পিশু করা শুরু করে, তখনই কেবল বোঝা যায়, আমাদের সফটওয়্যার আপডেট করা প্রয়োজন। অন্যের বাড়ির দরজার সামনে ইঁট-বালু-রড স্তুপ করে নিজের বাড়ি বানানো, গলির মুখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছাদে প্যাণ্ডেল টাঙিয়ে রাত তিনটা পর্যন্ত বীভৎস শোরগোল করা, রমজানে গায়ে পড়ে সেহরির সময় অচেনা লোককে বিনা অনুমতিতে ডেকে তোলা, এরকম আরো বহু প্রত্যক্ষ ভোগান্তির অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমরা এখনও নগর ও অপর নাগরিকের সাথে সম্পূর্ণ "কম্প্যাটিবল" নই। একটা গোল গর্তে একটা চৌকোণা জিনিস গায়ের জোরে ঢোকানোই আমাদের প্রতিদিনের নাগরিক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাঝের ফাঁকগুলো আমরা "হার্ডওয়্যার" দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করছি, যেটা দেখিয়ে আমরা একে অন্যকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাই। এই অযথা হার্ডওয়্যারের পেছনে যে টাকাগুলো নাগরিকের পকেট থেকেই বের হয়, সেগুলো ঘুরে ফিরে গদিঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের পকেটে ঢোকে, তাই হার্ডওয়্যারের অপ্রয়োজনীয়তা নিয়েও খুব বেশি কথা ওঠে না। প্রান্তিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কিছুদিন আগে যে শোরগোল হয়ে গেলো, সেখানে মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর ড. আনোয়ার হোসেন ছাড়া কাউকে উচ্চগ্রামে কিছু বলতে দেখিনি। ষোলো কোটি মানুষের দেশে আমরা পনেরো কোটি নিরানব্বই লক্ষ নিরানব্বই হাজার নয়শো আটানব্বই জন মানুষ চুপ করে ছিলাম এই ভেবে, যে আমাদের সমস্যা নিয়ে কেবল এই দুটি লোক কথা বলবেন। এই দুজন মানুষই আমাদের গোল গর্তে ঢোকানো চারকোণা জিনিসটার চারপাশের ফাঁক বোঁজানোর জন্য চুনমশলা। এ থেকে বোঝা যায়, আমাদের হাতে যদি সফটওয়্যার থেকেও থাকে, সে সফটওয়্যার আমরা চালাচ্ছি না, অপর ব্যক্তি এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন, সেই দুরাশায়। ঠিক যেমন করে আত্মীয়ের অসুখের সময় আমরা রক্ত খুঁজি, কিন্তু নিজেরা রক্ত দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসি না। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা যেমন শুধু গভীর নালা আর খাল খননের হার্ডওয়্যার দিয়ে সমাধান করা যাবে না, তেমনি বনানী মোড়েও বিদ্যুৎচালিত সিঁড়ির হার্ডওয়্যার দিয়ে পথচারী পারাপারের সমস্যা সমাধান করা যাবে না। কোটি টাকার নালা বোঁজানোর জন্য আড়াই টাকার চিপসের প্যাকেটই যথেষ্ট। হার্ডওয়্যারের সাথে আমাদের মানানসই "সফটওয়্যার" লাগবে। এই সফটওয়্যার হতে পারে নাগরিক আচরণবিধি, হতে পারে স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্যে পৃথক "নাগরিক সচেতনতা" ক্লাসের শিক্ষা ও বাড়ির কাজ, হতে পারে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম, কিন্তু তা কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে এসে করতে হবে। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের আওতাধীন সকল প্রতিষ্ঠানকে নিজ উদ্যোগে এ ধরনের "সফটওয়্যার আপডেট"-এর ব্যবস্থা করতে হবে। নাগরিক সমস্যা সমাধানের জন্যে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যেই চিন্তা ও কর্মে চর্চা চালু করতে হবে দ্রুততম সময়ে, যাতে তাদের প্রজন্ম আমাদের প্রজন্মের চেয়ে এগিয়ে থাকে। কেবল ইঁট-বালু-সুড়কি-রড-সিমেন্ট-ঠিকাদারি দিয়ে সমস্যার সমাধানে নাগরিককে বিচ্ছিন্ন রেখে নয়, নাগরিকের আচরণ দিয়ে নাগরিকের অংশগ্রহণে নাগরিক জীবনের সমস্যার সমাধান করা শিখতে আর শেখাতে হবে। এ ব্যাপারে যারা সামাজিক চাপ প্রয়োগ করার সামর্থ্য রাখেন, তারা মুখ খুলুন, অনেক বিলম্ব ঘটার আগেই।
false
ij
আমরা কি অভ্যন্তরীন পর্যটনের কথা ভাবতে পারি_ সম্প্রতি আমার ছোট ভাই সাব্বির বান্দরবান ঘুরে এল। এটা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের উদাহরণ। কিছুদিন হল আমি অন্য রকম অভ্যন্তরীণ পর্যটনের কথা ভাবছি। বেঁচে থাকতে থাকতে নানা কারণে আমাদের মনে বাস্প জমে। আমাদের তখন এ শহরটা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছে করে। এমন হয় না? হয়, জানি। প্রত্যেকেরই হয়। মনে মেঘ ঘনালে আমরা দিন কয়েকের জন্য শহর ছাড়ার কথা ভাবি। সব সময় কক্সবাজার বা টেকনাফ যেতে হবে কেন? তা হলে? ধরুন একটা মোবাইল নাম্বার। খবরের কাগজে কিংবা অন্য কোনও উৎস থেকে পেলেন। তারপর আপনি বাসে কি ট্রেনে উঠলেন। নামলেন অজানা কোনও স্টপেজে কি স্টেশনে। সেই স্টপজে কি স্টেশনের হদিশ আপনাকে মোবাইলের মাধ্যমে দিয়ে দেওয়া হবে। তারপর একটা গ্রাম্য পথ। নির্মল বাতাস। কলাঝোপ। পুকুর। একটা উঠান। ভিতরে ঢোকার মুখে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাল একটা পরিবারের সদস্যরা। ওদের সঙ্গেই দিন কয়েক থাকবেন। বাজারসদাই করার পয়সা দেবেন। ওরা যা খায় তাই খাবেন। বোরহানি কিংবা কাসটাডের অর্ডার না-দিলেই হল। গ্রামের লোকেরা ওসব খায় না। ও বাড়িতেই দিন কয়েক থাকবেন। পরিবারের লোকদের সঙ্গে ঘনিষ্ট হবেন। গ্রামের লোকের সঙ্গে গল্প করবেন। পাড়া ঘুরবেন। পুকুর পাড়ে বসে থাকবেন। হাঁস দেখবেন। ছাগলছানা কোলে নিয়ে আদর করবেন। দেখবেন কখন আপনার মনের মেঘ কেটে গেছে। এই হল অভ্যন্তরীণ পর্যটনের ধারণা। এর সরাসরি কয়েকটি লাভ। ১) মনের বাস্প কাটল। ২) যে বাড়িতে থাকলেন তারা দুটো পয়সা পেল। দেশের পয়সা বাইরে চলে যায়। এখন শহরের পয়সা গ্রামে নিতে হবে। ৩) একটা পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হল। এই আমার প্রস্তাব। বন্ধুরা, আপনারা মেধাবী। এই থিউরিটাকে আরও নিখুঁত ও কার্যকরী করার জন্য প্লিজ ভাবুন। এই তত্ত্বে প্রধান সমালোচনা হয়তো অচেনা পরিবেশ। অচেনা গ্রাম। অচেনা লোক। গ্রামীন সমাজের রক্ষণশীলতা। ইত্যাদি। ক্রমশ সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২৭
false
mk
জঙ্গিবাদে খালেদা জিয়ার অবদান বাংলাদেশের জনগণ নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে, ভারতের বর্ধমানে বোমা গ্রেনেড বিস্ফোরণ সংঘটিত হওয়ার আগে আগে হঠাৎই খালেদা জিয়া নীরবতা ভেঙ্গে দুটি জনসভা করেছেন। বলা চলে, তাঁর এ জনসভাগুলো তেমন কোন ইস্যু না থাকা সত্ত্বেও। এদিকে কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে, যেটি রোজার ঈদে করা হয়নি, খালেদা জিয়া রীতিমতো উৎসবের সাজসজ্জা করে, উৎসবের সাজে সাজা একটি হোটেলে প্রধানত বিদেশী কূটনীতিকদের জন্য, সঙ্গে দেশীয় কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি, দলীয় ও জোটের রাজনীতিকদের জন্য আয়োজন করেন চোখ ধাঁধানো এক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের মেলা। সেখানে খালেদা নিজেকে উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী অথবা বিরোধী নেত্রীর অবস্থানে থাকা ব্যক্তির মতো করে, যা অনেকের মনেই সেদিন নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছিল, বিরোধী নেত্রী না থাকা সত্ত্বেও খালেদা এই বিদেশী কূটনীতিক, সাংবাদিক, রাজনীতিকদের কি অকথিত অব্যক্ত বাণী বা ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন? তাছাড়া এ প্রশ্নও উঠেছে যে, রাজনীতির মাঠে অনেক বেশি রাজনৈতিকবোধ ও বুদ্ধিসম্পন্ন বর্তমান বিরোধী নেত্রী অনুপস্থিত কেন? তাঁকে ঈদ-সংবর্ধনা আয়োজন না করার জন্য কোন কোয়ার্টার থেকে কি অনুরোধ জানানো হয়েছিল? তা না হলে এটি তো আয়োজন করার কথা সংসদের বিরোধী নেত্রীর। যেন স্মরণ রাখেন- ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন ‘আই এম ইমপ্রেস্ড’, এ প্রশংসা বাক্য রওশন এরশাদের রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও বুদ্ধিকে প্রমাণ করেছে যা আমাদেরও গৌরবান্বিত করেছে। মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। এই বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের আগে আগে অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যার দুটি শুরুতে উল্লেখ করেছি। এ ছাড়াও ঘটেছে আরও কয়েকটি ঘটনা। লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ ঘোষণা এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানপ্রেমিক, পাকি ‘অনুগত’, আত্মসমর্পণ করে প্রাণ রক্ষা করেছেন এবং কোন স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি ইত্যাদি বালখিল্য, তবে উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত উত্তপ্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল এই কিছুদিন আগে।মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষত ইরাকে, সিরিয়ায় সরকারবিরোধী জঙ্গীগোষ্ঠীর মধ্য থেকে আইসিস নামের এক প্রবল বলদর্পী অমানবিক জঙ্গী দলের উত্থান হয়েছে এবং ইরাক-সিরিয়ায় দখলকৃত অংশে ‘খেলাফত’ বা ধর্ম রাষ্ট্র স্থাপনে ওই অঞ্চলে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে! অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরশাসক বিরোধী গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীর হাত থেকে ক্ষমতা চলে গেছে জঙ্গী, উগ্র, ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর হাতে, যাদের মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নী কুর্দীদের পরস্পরবিরোধী লড়াইয়ের ফলে আরও ক্ষমতাবান করে তুলেছে, যার ফলাফল এ দেশেও প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা আছে। আইসিসের প্রবল পরাক্রম দেখে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি তাঁর দীর্ঘকালীন নীরবতা ভঙ্গ করে ঘোষণা দেন- শীঘ্রই দক্ষিণ এশীয়, ‘আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট’ সংঘটিত হচ্ছে! তাঁর লোকজন এ লক্ষ্যে কাজ করছে!বর্ধমানের বিস্ফোরণ থেকে জানা গেল বাংলাদেশে জেএমবি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন এবং পাকিস্তানের আল জিহাদের সংশ্লিষ্টতায় গড়ে উঠছে দক্ষিণ এশীয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক যাতে মিয়ানমারও যুক্ত।জাওয়াহিরির নাম, ছবিসহ ২০১৪-এর ফেব্রুয়ারিতে যে ‘ম্যাসাকার বিহাইন্ড আ ওয়াল অব সাইলেন্স’ নামে ইন্টারনেটে অডিওবার্তা প্রচারিত হয় তাতে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারকে ‘ইসলামবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার’ উল্লেখ করে একে প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়েছে! এটি তো খালেদা-তারেকের ও তাঁদের মিত্র জঙ্গীদের এবং জামায়াতের প্রধান এজেন্ডা! পাঠক, দুই এ দুই-এ চার মিলে যাচ্ছে।বর্ধমান বিস্ফোরণের পর তদন্ত কর্মকর্তা ও সেগুলোর সংবাদপত্র সূত্র মতে জঙ্গীরা ঈদের দিন কলকাতার নেতাজী সুভাষ বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল! উপরন্তু বাংলাদেশের কিছু বিদ্যুত কেন্দ্র ধ্বংস করা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল।বাংলাদেশে খালেদা-তারেক ও জামায়াত হচ্ছে জেএমবির জন্মদাতা, আশ্রয়দাতা, তাই জঙ্গীবিরোধী নেতা শেখ হাসিনার কঠোর পদক্ষেপের ফলে জেএমবি বর্তমানে ভারতে ঠাঁই নিয়ে বোমা, গুলি, গ্রেনেড বানিয়ে চলছে। আর জঙ্গীদের আশ্রয় দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে জঙ্গী মিত্র প্রদেশে পরিণত করছে। এ কাজে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল দলের কিছু নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা স্বয়ং জড়িত বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে।এরপর, খালেদা, তারেক ও জামায়াতের আনন্দ রাখার জায়গা থাকবার কথা নয়! সুতরাং খালেদা দ্রুত গতকাল বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে ডেকেছেন এবং মমতা যদি জঙ্গী হতে পারেন, তাহলে তিনি ও জামায়াত বন্ধু হয়েও হিন্দুবান্ধব হতে পারবেন না কেন- তা বোঝানোর জন্য আকস্মিক হিন্দুদের জন্য মায়ের বদলে এক ‘মাসী’ হয়ে তাদের সমর্থন চেয়েছেন! সম্ভবত এর মধ্যে মমতা-খালেদা যোগাযোগ সংঘটিত হয়েছে এবং মমতার উপদেশে হতে পারে খালেদার তড়িঘড়ি এই হিন্দু তোষণ! খিলাফত যুগে, জেএমবি-জামায়াতের শাসনে, জঙ্গীবাদী জামায়াত জেএমবির মিত্র খালেদা-তারেকের বিএনপি আমলে হিন্দুরা, অন্য সংখ্যালঘু, আদিবাসীরা কেমন ছিলেন, থাকবেন তার নমুনা তো খালেদা-নিজামী-তারেক-বাংলাভাইরা ২০০১-২০০৬-এ দেখিয়ে দিয়েছেন। তারপর আর তাঁদের ভুল পথে পা বাড়াবার কথা নয়। খালেদার হিন্দুদের নিয়ে সভাটি কোন লক্ষ্যহীন, রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন ঘটনা নয় তা হিন্দু নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীরা নিশ্চয় বোঝে।সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গোলাগুলি, সেনা-বেসামরিক ব্যক্তি নিহতের ঘটনা এবং ইমরান খানের আকস্মিকভাবে নেওয়াজ শরীফবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে আইএসআইয়ের সম্পৃক্ততা না থেকে পারে না বলেই অভিজ্ঞ মহল মনে করে। এদিকে তৃণমূলের সাংসদ মুনমুন সেন ও ইমরান খানের সখ্য রয়েছে বলে আগেই জানা গেছে। তাহলে, পাকিস্তানের আইএসআই থেকে কাশ্মীরের মুজাহিদীন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল, ভারতীয় জামায়াত, বাংলাদেশের জামায়াত-জঙ্গীবান্ধব খালেদা-তারেক, জেএমবি, মিয়ানমারের ইসলামীগোষ্ঠী কি বর্তমানে এক সম-অবস্থানে পরস্পর পরস্পরের হাত ধরে দাঁড়িয়েছে? জিহাদী-দিদি, জিহাদী-ম্যাডাম আর জিহাদী ভাইয়া এখন এক লক্ষ্যে অবস্থান গ্রহণ করেছে কি? তা যদি হয়, তা তো অবশ্যই গণতন্ত্র ধ্বংস ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ এবং এর নেত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান! জনগণকে সাবধান হতে হবে।অভিযোগ উঠেছে গত ২০১৩ সালে জামায়াত- বিত্রনপি আন্দোলনের নামে যে ভয়াবহ সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল তার অর্থ যোগান দিয়েছিল তৃণমূলের ইশারায় দরিদ্রের অর্থ লুটকারী পশ্চিমবঙ্গের সারদা গ্রুপ। এই সারদার অর্থ ওদিকে তৃণমূলের নির্বাচনে বিজয়ী হতে ব্যয় হয়েছে, এদিকে জামায়াত-বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জোট সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যয় হয়েছে যার সুবিধাভোগীদের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের নামও উঠে এসেছে।হঠাৎ করে মমতা ব্যানার্জী উর্দুকে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছেন! বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু হলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১ লাখ উর্দুভাষী মুসলমান এই বিচার বন্ধের দাবিতে, সাঈদীর মুক্তির দাবিতে রাজপথে মিছিল করে! অথচ মুক্তিযুদ্ধপন্থী বাম দলসহ অন্য দলকে বিচারের সমর্থনে মমতা সরকারের পুলিশ মিছিল করতে দেয়নি!এসবের অর্থ কি এই নয় যে, খালেদা-মমতা-তারেক-ইমরান-আইএসআই, বাংলাদেশে এবং পাকিস্তানে গণতন্ত্র উচ্ছেদে ঐক্যজোট গঠন করে কাজ করছে?বিশ্বস্তসূত্র মতে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, দুই চব্বিশ পরগনা, দুই দিনাজপুর, মালদহ, হাওড়া ও কলকাতার কয়েকটি মহল্লায় মৌলবাদী জঙ্গীরা নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ওখানে তৈরি বোমা, গ্রেনেড বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে বিশাল আকারের ধ্বংসকা- চালানোর লক্ষ্যে।সম্প্রতি জঙ্গী হিসেবে গোয়েন্দা বাহিনী গ্রেফতার করেছে বেশ কয়েকজন ভারতাগত যুবককে এবং কিছু পরে বাঙালী ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমান ওরফে ইবনে হামদান নামে জঙ্গী রিক্রুট করার জন্য আগত যুবককে। সে আনসারুলা বাংলাটিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। এর আগে সে সিরিয়ায় নুসরা ব্রিগেডের জেহাদি হামলায় অংশগ্রহণ করে! এর পরে জিহাদী কাজের জন্য যুবক রিক্রুট করতে মৌরিতানিয়া ও মরক্কো যায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আসিফ আদনান ও নাহিদ জঙ্গী রিক্রুট হিসেবে গ্রেফতার হয় যারা উচ্চশিক্ষিত পরিবারের সন্তান! বাংলাদেশে শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করা তাদের লক্ষ্য বলে হামদান জানায়। সুতরাং এতসব ঘটনা-অপঘটনার হোতারা কিন্তু তাদের সেই পুরনো লক্ষ্য-শরিয়া রাষ্ট্র বা ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা থেকে সরে তো আসেইনি, বরং অত্যন্ত শঙ্কার ও উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে যে, এতে অকল্পনীয়ভাবে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু নেত্রী, উদার উচ্চশিক্ষিত, পাশ্চাত্য ধারায় শিক্ষিতদের কাউকে অর্থ ও ভোটের লোভ দেখিয়ে কব্জা করে ‘ইসলামী শরিয়া রাষ্ট্রের’ সমর্থক সদস্য হিসেবে তাদের সমর্থন লাভ করছে! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপন্থী মুসলমান, হিন্দু, আদিবাসীরা, জামায়াত-খালেদা-তারেক ও জেএমবির হিন্দু- আদিবাসী, সংখ্যালঘুবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধপন্থীবিরোধী বর্বর কালো শাসন দেখেছে। সুতরাং এখন পড়শীর আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখে তাঁদের নিজেদের ঘরে আগুন লাগার ভয়ে শঙ্কিত হওয়ার কথা! মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই ’৭১-এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যেমন বাঙালী ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তেমনি একই রকম ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গী ও জঙ্গীমিত্র, শরিয়া রাষ্ট্রপন্থীদের আরেকবার পরাজিত করতে হবে। নিজেদের সুরক্ষিত রাখার স্বার্থে সব সময়ের জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শত্রুকে এখনই বিনাশ করে দিতে হবে। সরকারকে এখনই জঙ্গীবিনাশী ‘আঞ্চলিক টাস্কফোর্স’ গঠনে উদ্যোগ নিতে হবে। সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের শত ফোঁড় থেকে রক্ষা করে এ কথা ভেবে ভারত-বাংলাদেশকে যৌথ ‘টাস্কফোর্স’ গঠন করে জঙ্গী দমনের সময়োপযোগী কাজ এখনই শুরু করতে হবে।
false
rg
স্বেচ্ছায় নির্বাসন চাই !!! একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ৪২ বছর পর নতুন করে আবার যখন বিচার প্রক্রিয়া শুরু হল, তখণ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, তাদের মধ্যে আবারো একটি আশার আলো ঝিলিক মেরেছিল। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি নব্বইয়ের দশকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে চেতনা রোপন করেছিল, সেই চেতনার ধারাবাহিকতায় তখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলে হয়তো একটা সমাধান হবে, এই আশায় তখন সবাই বুক বেঁধেছিল। নব্বইয়ে এরশাদের সামরিক শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিকে নতুন করে আবার আশ্রয়-প্রশয় দিতে শুরু করল। যে কারণে তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে সবচেয়ে সোচ্চার যে রাজনৈতিক দলটি, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপর মানুষের ভরসা আরো বহুগুন বেড়ে যায়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সবচেয়ে প্রধান লক্ষ্য স্থির করল বঙ্গবন্ধু'র খুনিদের বিচারের কাজ। খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবার আগেই আবার ক্ষমতার ছন্দ-পতন ঘটল। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় এবং দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের সহিংস কর্মকাণ্ড নতুন করে আবার সেই সমীকরণকে সামনে নিয়ে আসল। সেটি হল বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি ক্ষমতায় থাকলে এদেশের মুক্তিকামী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। যে কারণে সবাই আবারো জোরালোভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করল। তখন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক প্লাটফরম না থাকায় আওয়ামী লীগের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যশা আরো বেড়ে গেল। সেই প্রত্যশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে বিএনপি-জামায়াত জোট আবারো ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করল। সেই অপচেষ্টার ফসল ওয়ান-ইলেভেনের নতুন সেনা সমর্থিত ফকরুদ্দিন সরকার। যে সরকারের প্রধান কাজ ছিল একটি সুস্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। যেটি করতে তারা প্রায় দুই বছর সময় নিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি স্থগিত রেখেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে সেই মামলা নিস্পত্তি করার উদ্যোগ নিল। খুনিদের পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হল। অন্য আসামিরা বিভিন্ন দেশে এখনো দাপটের সঙ্গেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নতুন করে আওয়ামী লীগকে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষমতায় বসিয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কার্যকর পরিনতি দেখার জন্য। যা দলটি ক্ষমতার পাঁচ বছরে আংশিক পূরণ করতে সমর্থ হয়েছে। সেই আশা পূরণেও এক ধরনের রাজনীতি ছিল। বিষয়টাকে দীর্ঘায়িত করার রাজনীতি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে না করে সাধারণ বিচারিক আদালেত করার মধ্যেই সেই দীর্ঘ সূত্রতার রাজনৈতিক দুষ্টামি জড়িত। অন্যান্য আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় না আনতে পারার ব্যর্থতাও সেখানে সমান ভাবে দায়ী। সেই দায়ের খেসারত জাতি এখনো ভোগ করছে। ইস্যুই যদি না থাকে তখন নতুন কোন মোক্ষম ইস্যু দেখিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাবে, সেখানে এই দুষ্ট-দীর্ঘ সূত্রিতার প্রশ্নটি লুকায়িত। আবার ক্ষমতায় গেলে বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য খুনিদের বিচার কার্য চালিয়ে যাবার একটি অযুহাত অন্তত জনগণের সামনে দলটি ইচ্ছে করেই ঝুলিয়ে রাখল। একই সময়ে দলটি নব্বইয়ের দশেকের সেই পূরনো দাবীটি সামনে এনে একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করল। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে সাড়া জাগাল। কিন্তু সেখানেও সেই রাজনৈতিক সমীকরণ!যুদ্ধাপরাধিদের বিচার শেষ হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ নতুন কোন ফর্মুলা দিয়ে জনগণের মন জয় করবে? দলটির হাতে কি সেরকম কোন মোক্ষম ইস্যু আছে? তাই আবারো নতুন সমীকরণ সেই দীর্ঘ সূত্রিতা। অন্তত আওয়ামী লীগ চেয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষ করার জন্য দলটির আবারো ক্ষমতায় যাওয়া প্রয়োজন। আর এই প্রশ্নে জনগণ নিশ্চয়ই নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না। কারণ, ওই জোট ক্ষমতায় গেলেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যটিও স্থগিত করে দেবে। সেই প্রশ্নে বিএনপি শেষ পর্যন্ত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত বয়কট করল। কারণ বিএনপি'র সামনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে যুক্তি ছিল, সেই যুক্তি ততটা জোড়ালোভাবে তারা নিজেরাই তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সুযোগে ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগ গোল করে নতুন বিশ্ব রেকর্ড করেছে। ১৫৩ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিনা ভোটে জয়লাভ করেছে। যা সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য একটি নতুন অবক্ষয় বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার একটি নতুন দুর্বলতা। মুরব্বিরা কহেন, রাজনীতিতে নাকি শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই সুযোগ নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সরকার গঠনের মত সুযোগ আদায় করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের মানুষ সেই বিশ্ব রেকর্ড হবার মত নির্বাচনও ইতোমধ্যে হজম করেছে। কারণ, সংসদীয় রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সেই গণতন্ত্র এক সময় মুখ থুবরে পড়ে। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতি ধীরে ধীরে হয়তো সেই পথেই হাঁটছে। কিন্তু যে কথা বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারো সরকার গঠন করল, সেই কথা যেন তারা ভুলতে বসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যান্য আসামিদের কত দিনের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা হবে, সেই উদ্যোগটি এখন হয়তো শুধু কাগজে কলমেই আছে। বাস্তবে সেই উদ্যোগের কোনো তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায় না। সঙ্গে আরো যে মোক্ষম ইস্যুটি এখনো সচল, সেখানেও দলটির এক ধরনের গাছাড়া গাছাড়া ভাব প্রতিলক্ষিত হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজটি আরো দীর্ঘায়িত করাই এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান কাজ হয়ে গেছে। ধান ভানতে শিবের গীত না গেয়ে এবার আসল কথায় আসি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় শুরুতেই কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়ায় তার প্রতিবাদে গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে একটি তীব্র আন্দোলন শুরু হল। সরকার বাধ্য হয়ে সংসদে আইন পাশ করে আইনে সংশোধনী এনে তারপর আবার বিচারে সেই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করতে অনেকটাই বাধ্য হয়েছিল। এখানে প্রশ্ন হল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে সৃষ্ট নতুন আইনে যে এরকম একটি ফাঁক ছিল, তা কি আমাদের মহান সাংসদ গণ জানতেন না? অবশ্যই জানতেন। বরং বিষয়টাকে দীর্ঘায়িত করার কৌশল হিসেবে সেই ফাঁক ইচ্ছে করেই তখন রাখা হয়েছিল। তরুণ প্রজন্ম শাহবাগে আন্দোলন করে সেই ফাঁক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পর সাংসদের টনক নড়ে। তারা বাধ্য হয়ে আইনে পরিবর্তন এনে নতুন করে আবার বিচার শুরু করল। কিন্তু এই বিচার প্রক্রিয়ার প্রধান লক্ষ্য যেহেতু দীর্ঘায়িত করা, সময় ক্ষেপণ করতে পারলেই যেন ইস্যুটি বেঁচে থাকে, সেই আশায় আওয়ামী লীগ এখনো স্বপ্ন দেখে যে অন্তত এই ইস্যুটি দিয়ে আবারো ক্ষমতায় যাবার সহজ সিড়ির কৌশলটি অন্তত টিকে থাকুক। বাকি আল্লাহ ভরসা।কিন্তু সেই আশায় যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন মিষ্টির বদলে তা চিটাগুড় হবার দিকে মোড় নিচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরন মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার আপিল বিভাগের রায়। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যেখানে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, আপিল বিভাগের রায়ে সেখানে সাজা কমে এখন আমৃত্যু কারাদণ্ডের পর্যায়ে গেছে। মানে সরকারকে এখন জনগণের করের টাকায় এই যুদ্ধাপরাধীর আসামীকে আমৃত্যু জেলখানায় জামাই আদরে ভরণ-পোষণ দিয়ে পালতে হবে। যতক্ষণ এই কুলাঙ্গারের মৃত্যু না হবে ততক্ষণ জনগণের করের টাকায় সোজা কথায় শ্রাদ্ধ করার দায়িত্ব এখন সরকারের। পাশাপাশি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের যেসব দুর্বলতা ইতোমধ্যেই আবিস্কার হয়েছে সেই দুর্বলতা নিয়েই সরকার বাহাদুর বাকি মামলাগুলো পরিচালনায় অনেকটাই যেনোবা আগ্রহী। এই আগ্রহের পেছনে কি কি কারণ থাকতে পারে? প্রথম কারণ রাজনীতি। এটা নিয়ে যত দিন রাজনীতি করা যাবে ততদিন অন্তত ইস্যুটি বেঁচে থাকল। নতুবা প্রশ্ন আসতে পারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতের স্মরণাপন্ন হয়, সরকার কেন সেই পথে গেল না? তাহলে বিএনপি'র কথিত আদালত আন্তর্জাতিক মানের হয়নি, এই ধুয়ো অন্তত ধোপে টিকত না। মানে সরকার ইচ্ছে করেই বিচারের কাজটি নিজের হাতেই রাখতে চেয়েছে। আর এটি নিয়ে দীর্ঘ দিন রাজনীতি করার খায়েসও আছে মনে মনে। সেই খায়েসের ছিটেফোঁটা এখন ধীরে ধীরে আরো সুস্পষ্ট হচ্ছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে জানিয়েছেন, সারা দেশে এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ৫৭৭টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১২, চট্টগ্রামে ৮৪, রাজশাহীতে ৬৬, খুলনায় ১৮৪, সিলেটে ৫০ এবং বরিশালে ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ কিন্তু এ সব মামলা তদন্ত ও নিষ্পত্তির কোন পর্যায়ে আছে তা জানাননি আইনমন্ত্রী৷ তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে এ পর্যন্ত দায়ের করা ৫৭৭টি মামলা মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বর্তমান কাঠামো দিয়ে নিষ্পত্তি করতে কমপক্ষে ১৪৫ বছর লাগবে!!!!মানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার কৌশলটি এখানে একেবারেই সুস্পষ্ট। আর এই বিচার প্রক্রিয়া যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য সরকারে অন্তত আওয়ামী লীগের মত স্বাধীনতার পক্ষের একটি দলকে ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি সবার আগে এদেশের মানুষকেই ঠিক করে দিতে হবে। নইলে সব দোষ হবে জনগণের। যে তোমরা আমাদের ক্ষমতায় রাখলে অন্তত ওআি কুলাঙ্গারদের আমরা বিচার শেষ করতাম! সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত যে ৫৭৭টি যুদ্ধাপরাধী মামলা দায়ের হয়েছে, তার বিচার কাজ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শেষ করার জন্য আগামী ১৪৫ বছর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য জনগণেকেই যেনো একটি সুস্পষ্ট সংকেত দিয়ে রাখল দলটি। যার ধারাবাহিকতায় মামলাগুলো নিরলস দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা এখনো আরো বলবত আছে। ধারবাহিক রাজনৈতিক সমীকরণে সাধারণ মানুষের মনে যে প্রশ্নটি নতুন করে জেগেছে, সেটি হল, আওয়ামী লীগ কি তাহলে জামায়াতের সঙ্গে একটি গোপন আতাঁত করতে সক্ষমত হয়েছে। সেই আতাঁতটি কোন ধরনের হতে পারে? এক. জামায়াত যদি বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চায়, তাহলে যে সকল নেতারা যুদ্ধাপরাধী মামলায় আসামি বা সাজা ভোগ করছে, তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে রাজনীতি করার সুযোগ। দুই. বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মেনে নিয়ে রাজনীতি করলে আওয়ামী লীগের সেই জামায়াতকে মেনে নিতে কোনো অসুবিধা নেই। তিন. জামায়াতের গঠনতন্ত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের কথা বলে ব্যাপক পরিবর্তন এনে নতুন প্রজন্মের জামায়াত নেতাদের দিয়ে জামায়াতের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ করা। চার. বাংলাদেশে জামায়াত রাজনীতি করার সুযোগ পাবে যদি তারা বিএনপি জোট থেকে বেড়িয়ে আসে। পাঁচ. জামায়াতের সঙ্গে পাকিস্তানের যত ধরনের যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব আছে তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতি করার শেষ সুযোগ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা। যার সঙ্গে বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। এই দলটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। এরকম অনেক বিষয়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্তমানে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে থাকা জামায়াতে ইসলামীর এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে বলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে। নতুবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউশনে এখনো কেন এতো হাজার হাজার দুর্বলতা বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে? এসব দুর্বলতা কাটানোর জন্য কি হাজার বছর লাগবে?? তাহলে মামলাগুলো কেন হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে তোলা হল না? এই মামলাগুলো নিয়ে দীর্ঘ দিন রাজনীতি করার খায়েস থেকেই ৪২ বছর পরে এই মামলাগুলো শুরু হলেও সেখানে এখনো সেই রাজনীতির দুষ্ট নজরের কলুষমুক্ত হতে পারেনি। মূল কথা হল এই মামলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফয়দা ঘরে তুলতে চায়। দেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে, চেতনার সঙ্গে, আবেগের সঙ্গে, মুক্তিযুদ্দের সঙ্গে, ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মার সঙ্গে, তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের সঙ্গে, যার কোনোই সম্পর্ক নাই। মামলাগুলোর একমাত্র লক্ষ্য রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া। সেই সুবিধার পেছনে ক্ষমতায় টিকে থাকার বা ক্ষমতায় যাবার ইস্যু হিসেবে এটিকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশলটিই প্রধান। ৪২ বছর চেতনা ধুয়ে আমরা পানি খেয়েছি। চেতনা এখন শাহবাগের মোড়ে তিন ভাগে চেয়ার ছোড়াছুড়ি করতে ব্যস্ত। চেতনা এখন সংগ্রামের মাঠে ফানুস ওড়াতে ব্যস্ত। চেতনা এখন নিজেরাই ঠোকাঠুকি করে লাভ লোকসান ভাগাভাগিতে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগ খুব সচেতনভাবেই যে কাজটি করেছে, সেটি হল মানুষের প্রধান দাবিকে যে কোন মূল্যেই হোক তা দীর্ঘায়িত করা। সেই দীর্ঘায়িত করার অপকৌশলের সুযোগে হেফাজতের মত নতুন গোষ্ঠী সৃষ্টি হচ্ছে। একথা এখন সবাই স্বীকার করবে যে, বিএনপি-জামায়াত জোট পাঁচ বছর আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে নানান ইস্যুতে আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকারকে যতোটা না বেকায়দায় ফেলতে সক্ষম হয়েছিল, তার চেয়ে এক সফি হুজুর শাপলা চত্বরে সমাবেশ ঘটিয়ে সরকারের পায়ের তলার মাটি সরিয়ে ফেলার মত অবস্থা তৈরি করেছিল। ৬৫ বছরের অভিজ্ঞ একটি রাজনৈতিক দল এক সফি হুজুরের হুমকিতে টলমল করতে শুরু করেছিল। যার প্রধান কারণ, জনগণের সঙ্গে দলের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গেলে এতো বড় শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকেও হা-হুতাশ করতে হয়? বাংলায় একটা কথা আছে, জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পাঠায়। কিন্তু দলটি ক্ষমতায় বসেই দলের বাইরের সবাইকে প্রতিপক্ষ মনে করা শুরু করে। যে কারণে দেশের উন্নয়নের বদলে শুধু দলীয় নেতা কর্মী-চামচা-তোষামোদকারীদের ভাগ্যে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যায়। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে যে দলটি এতো জোড়ালো ভাবে কুজকাওয়াজ করে, সেই দলটি এক সফি হুজুরের হুমকিতে কি করে দোয়া ইউনুস পড়া শুরু দেয়। এর পেছনে রহস্য কি?আসল রহস্য হল জন-বিচ্ছিন্নতা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই দলটির যে কি পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, তা দলীয় উচ্চ নেতানেত্রীরা একদম আমলে নিচ্ছেন না। জনসভা দেখে দলীয় সমর্থণ বোঝা যায় না। কারণ, দলীয় জনসভায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখন লোক ভাড়া করে উপস্থিতি নিশ্চিত করে। এতে কাজের কাজ হয় দুইটি। এক- জনগণের থেকে নানান ইস্যুতে চাঁদাবাজীটা করা যায় স্বাচ্ছন্দে। দুই- জনসভার উপস্থিতিও নিশ্চিত করা যায়। তিন- দলীয় মধ্যম সারীর নেতাদের এই সুযোগে পকেটে কিছু গরম নোট ঢোকে। কিন্তু জনসভায় উপস্থিত শতকরা কত ভাগ লোক দলীয় চেতনায় বিশ্বাস করে জনসভায় হাজির হল, তা কেউ নিরূপন করতে পারে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন বরং মাস্টার্সে ছাত্রছাত্রীদের থিসিস হিসেবে জনসভায় কত ভাগ লোক দলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী ও কত ভাগ ভাড়ায় আসে, এর উপর নতুন করে গবেষণা করার জন্য উদ্যোগ নিতে পারে। তাতে অন্তত বড় ভাইদের নোট দেখে থিসিস করার বদলে নতুন মাত্রা ও চমক আসতে পারে। আর সেই থিসিসের ফলাফল যদি রাজনৈতিক দলগুগুলোর মধ্যে বিতরণ করা যায়, তাতে উচু সারীর নেতাদের অন্তত মাঠ পর্যায়ের দলের অবস্থা সম্পর্কে আসল ধারণা হতে পারে। সাধারণ বিচারে কিছু যুক্তি তর্ক ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র শাসন কার্যের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। আমাদের ছাত্র বয়সে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের নামে আমাদের কোমল মনে যে চেতনা ধরিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ফয়দা তুলেছে, নব্বইয়ের পর সেই স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গেই যখন সেই সব রাজনৈতিক দলগুলোর আতাঁত ও পক্ষে টানাটানির বিষয়টি জোড়ালো হয়ে যায়, সেখানে চেতনা তো এখন রাজধানীর ড্রেনে গড়াগড়ি খায়। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর আসল মুখোশটি খুলে গেছে নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর থেকেই। বাকি ২৪ বছরে তারা নতুন প্রজন্মকে এখনো কোনো সত্যিকার চেতনার মন্ত্র শেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ যে কোনো ইস্যুর ভেতরেই এখন রাজনীতির গন্ধ, লাভলোকসানের গন্ধ, টাকা পয়সা লেনদেনের গন্ধ। বিষয়গুলো রাজনৈতিক না হলে, স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর তার তো বিচার হবার কথা। নূর হোসেন হত্যার বিচার হয়নি। ডাক্তার মিলন হত্যার বিচার হয়নি। অসংখ্য ছাত্র হত্যার বিচার হয়নি। এসব রাজনৈতিক কারণে মৃত্যু হিসেবে ধরলেই একটি দেশের চেতনা সমৃদ্ধ হয় না। বরং এসব হত্যার বিচার যতদিন না হবে ততদিন বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যা বন্ধ হবে না। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণবাসনের কথা ছিল। কোথায় সেই পূর্ণবাসন? আমাদের মহান সাত জন বীরশ্রেষ্টদের পরিবারের এখনো কি দশা? কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে আরামসে শিক্ষাগ্রহন করছে। তারপর উড়ে এসে বলছে, এবার আমাদের নেতা হবার পালা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযুদ্ধ কোঠা এবং পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোঠা বা নাতী-নাতনী কোঠা একটি ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। গুটি কয়েক রাজাকার-আলবদর-আলসামশ বাদ দিলে গোটা জনপদের সবাই যুদ্ধ করেছে। সবাই মুক্তিযোদ্ধা। সেখানে সার্টিফিকেট চালু করে বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করার একটি অপকৌশল হাতে নেওয়া হয়েছে। যা আজও জীবিত আছে। বিভক্ত জাতির কোনো দিন সঠিক উপায়ে উন্নতি আশা করা যায় না। এগুলো আমাদের দুষ্ট রাজনীতির এক একটি অপকৌশল। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চও এখন তিন ভাগে বিভক্ত। কারণ ওই একই। হালচাষের সময় সামনের গরু যেদিকে হাঁটে, পেছনের গুলোও সেদিকের হাঁটে। এমনটাই সব সময় দেখে আসছি। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই বিভক্তি সৃষ্টি করাটাই আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের একটি সুচতুর অপকৌশল। সেই অপকৌশলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশে দেশপ্রেম প্রশ্নে রাজনৈতিক নেতাদের দেশপ্রেম নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে আলাদা চাপ্টার থাকা উচিত। বাংলাদেশে দেশপ্রেম আছে আমার কৃষকের। আমার শ্রমিকের। আমার মেহনতি মানুষের। আমার গার্মেন্টস শ্রমিকদের। আমার রিক্সাচালকদের। এখনো জাতির বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ করে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে সত্যিকারের মুক্তি যোদ্ধাদের জাতীয় পতাকা ফেরি করে তিন বেলার আহারের সংস্থান করতে দেখি। তখন সবচেয়ে যে প্রশ্নটি সবার আগে সামনে আসে সেটি হল, এদেশে দেশপ্রেম কোনো রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সত্যিকার অর্থেই নেই। একদম নেই। থাকলে তারা দেশের স্বার্থে কাজ করতেন। বিদেশে নিজেদের সেকেন্ড হোমের স্বপ্নকে যমুনায় ডুবিয়ে দিয়ে আমার কৃষকের পাশে দাঁড়াতেন। নিজেদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা বিদেশে না করিয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতেন। যুদ্ধাপরাধীদের মত স্পর্শকাতর মামলায় শক্তিশালী প্রসিকিউশন গঠন করতেন। যাতে একজন অপরাধীও সাজা থেকে আইনি দুর্বলতা থেকে বেড়িয়ে যেতে না পারে। ইতিহাস বেঁচে বেশি দিন রাজনীতি করা যায় না। রাজনীতি করার জন্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থাকতে হয়। জনগণের সঙ্গে দৈনন্দিন নিবিঢ় যোগাযোগ থাকতে হয়। পাঁচ বছরে একবার এলাকায় গিয়ে ভোটের সময় হাজিরা দিয়ে জননেতা হওয়া যায় না। নেতা গঠিত হবার নিয়ম মাঠ পর্যায় থেকে। কিন্তু আমাদের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নেতা কেন্দ্র থেকে বানিয়ে জনগণের ঘাড়ে সেই বানানো নেতার নেতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়। যার সঙ্গে জনগণের সেই নিবিঢ় সম্পর্ক কখনোই তৈরি হয় না। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের এখন প্রধান টার্গেট থাকে দল ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে বাকি জীবনের অর্থ উপার্জন করাই মোক্ষম সুযোগ। সেই সুযোগর তারা এক মিনিটও নষ্ট করতে রাজী নয়। দলগুলোও সেই সুযোগে নির্বাচনী নমিনেশান দেবার সময় দলীয় খরচ হিসেবে মোটা অংকের চাঁদা অ্যাডভান্স ভাগিয়ে নিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল, যে লোকটি সাংসদ হবার আগেই দলের পেছনে এতো টাকা ইনভেস্ট করলেন, তার কাছে জনসেবা আগে নাকি সেই খরচ উঠিয়ে বাড়তি কিছু লাভ ওঠানোর ধান্ধা আগে? স্বাভাবিকভাবেই সে খরচ আর লাভ দুটো একসাথে ওঠাতে গিয়ে চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, চুরি-চামারি করতে উৎসাহিত হচ্ছে। আর পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে এসব করতে না পারলে তার মিশন ব্যর্থ। তখন তার ছেলেমেয়েরা স্ত্রী, তাকে আর পাত্তা দিবে? তাদের চাই নতুন মডেলের গাড়ি, নতুন মডেলের বাড়ি, বিদেশে একটা স্বপ্নের সেকেন্ড হোম, দামি জামাকাপড়, দামি সেন্ট, নানান পদের ফাস্ট ফুড, কত চাহিদা তাদের। সেই চাহিদার কাছে জনসেবা নেহাত একটা ফালতু বিষয়। তাই এমপি সাহেবের মাথা সময় সময় আউলা থাকে। আগে তো ঘর সামলাতে হবে। সময় তো মাত্র পাঁচ বছর। এই যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে এটা দুর্নীতিকে ভয়াবহভাবে উসকে দিচ্ছে। এই দুর্নীতি উৎসাহিত করার জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রবলভাবেই দায়ী। তবে একটা কথা খুবই সত্য, বাঙালি সবকিছুকেই খুব তাড়াতাড়িই সহ্য করার এক আশ্চার্য শক্তি পেয়েছে। যানজট এখন সহ্য করে নিয়েছে। দুর্নীতি সহ্য করে নিয়েছে। ভোট চুরি সহ্য করে নিয়েছে। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা সহ্য করে নিয়েছে। নব্বই পরবর্তী গণতান্ত্রিক শাসন-দুঃশাসন সহ্য করে নিয়েছে। মঈনুদ্দীন-ফকরুদ্দীনকে সহ্য করে নিয়েছে। নিজামী-মুজাহিদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা সহ্য করে নিয়েছে। খালেদা জিয়ার শাসন-দুঃশাসন সহ্য করে নিয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনও একসময় এই বাঙালি সহ্য করে নিবে। বাঙালি জাতি এক অতিআশ্চার্য ধৈর্য ক্ষমতার অধিকারী। সেই ভরসায় আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এখনো প‌্যাচ খেলাতে পালেই মনে মনে খুশি। দেশের বারোটা বাজলেও তারা যে প‌্যাচ খেলাইতে সক্ষম হলেন, এতেই তারা মহাখুশিতে গদগদ।বিআরটিসি নাকি সরকারি বাস। এই বাসগুলো সব কন্টাক দেওয়া। ঢাকায় যতগুলো বিআরটিসি'র বাস আছে, ততগুলোর ভাড়ার রেট আলাদা আলাদা। কারো সাথেই কারো মিল নেই। যেভাবে যে পারছে সেভাবে সে ভাড়া তোলে। বাসের মধ্যে এই নিয়ে রোজ যাত্রীদের সঙ্গে বচ্চা। এই বচ্চাও বাঙালি সহ্য করে নিয়েছে। নইলে যোগাযোগমন্ত্রীকে পাবলিক বাসে এই বাঙালি আটকে রাখতো। যে ভাই নিজের চোখে দেখেন, আপনার সিস্টেম কি করে???বাংলাদেশে এখন সবকিছু সিস্টেম নির্ভর হয়ে গেছে। ফুটপথে একদিন হকার পুলিশের ধাওয়া খায়, পরের ঘণ্টায় আবার সিস্টেম হয়ে সব ঠিক হয়ে যায়। ধুমছে চলে বেচাকেনা। এই সিস্টেমর নাম টুপাইস। টুপাইস দিলেই সব এক্কেরে ঠিক। কোথায় কোন সিস্টেম চলছে বাংলাদেশ সেই কথা কেউ জানে না। সবাই কয়, উপরের নির্দেশ। এই উপর যে কোন উপর, স্বয়ং আল্লাহর নির্দশ কিনা সেই কথায়ও কেউ ভরসা পায় না। তবু দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সেই বেশ ভালো আছি। চেতনার গোষ্টী কিলাই। আমি স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের বাইরে অন্য যে কোনো দেশে নির্বাসনে যেতে চাই। চোখের সামনে এত হাজার হাজার অনিয়ম দেখে দেখে দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। অসুস্থ থাকলে মন ভালো থাকে না। মন ভালো না থাকলে তখন কি করব জানা নেই। মাননীয় সরকার বাহাদুর, প্লিজ আমাকে কোথাও নির্বাসনে পাঠান। আপনাদের এই ভেলকি আর ভালো লাগে না। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪শনিবার, ঢাকা
false
ij
কবি চন্ডীদাস ও মানবতাবাদ It is better to will the good than to know the truth. Francesco Petrarca. যে ক’জন কবিকে নিয়ে বাঙালি গর্ব বোধ করে চতুর্দশ শতকের বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাস তাদের মধ্যে অন্যতম। চন্ডীদাস বিশ্বাস করতেন : “ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। ” এই রকম বিশ্বাস সে যুগে অত সহজ হয়নি। কারণটি সহজেই অনুমেয়। চতুর্দশ শতকের বাংলায় দেবতার স্থান ছিল মানুষের উপর কাজেই, দেবতারে টেনে মানুষের নীচে নামিয়ে আনাটা চাট্টিখানি কথা না। ভাবছি, চন্ডীদাস এমন আধুনিক মানবতাবাদী বিশ্বাসের উৎস কি? সে উত্তরের খোঁজে চন্ডীদাস এর জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়। চন্ডীদাস-এর সময়কাল আনুমানিক ১৪১৭-১৪৭৭ খ্রিস্টাব্দ। এবং তাঁর জীবনে এক অতি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। যে রকম ঘটনা সচরাচর অনেকের জীবনে ঘটে না। চন্ডীদাস ছিলেন গ্রামের এক মন্দিরের পুরোহিত। গ্রামের এক নীচু জাতের অস্পৃশ্য মেয়েকে ভালোবেসে পুরোহিত থেকে কবিতে পরিনত হয়েছিলেন চন্ডীদাস । চৈতন্যের এমন বিপ্লব বিস্ময়কর বৈ কী। তবে চতুদর্শ শতকের বাংলার বর্ণাশ্রমিক সমাজে হই হই রই রই পড়ে গিছল। ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজপতিরা কবিকে একঘরে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। লাভ হয়নি। আজ একুশ শতকে সেইসব সংকীর্ণমনা সমাজপতিদের নাম কেউই জানে না-অথচ চন্ডীদাস-এর এক সামান্য ভাবশিষ্য ‘কবি চন্ডীদাস ও মানবতাবাদ’ নামে ইন্টারনেট ব্লগ-এ নিবন্ধ লিখছে। এরও অনেক আগে বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস রচয়িতা দীনেশচন্দ্র সেন কবি চন্ডীদাস কে ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গীতি লেখক’ বলে অবহিত করেছেন। (দ্র. ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ পৃষ্ঠা, ২১১) না। চন্ডীদাস-এর উৎপীড়ণকারী সেই গ্রামীণ সমাজপতিদের কেউই আজ মনে রাখেনি। মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা। এই জেলার নান্নুর গ্রামে চন্ডীদাস-এর জন্ম । দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থে লিখেছেন,‘ কেন্দুবিল্ব ও বিস্ফী হইতে নান্নুর শ্রেষ্ঠ তীর্থ।’ (পৃষ্ঠা, ২১১) এই কথাটি কেন বলেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেন? কেন্দুবিল্ব কোথায়? বিস্ফী-ই বা কোথায়? এ দুটির শব্দে কি তাৎপর্য? কেন্দুবিল্ব পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের একটি গ্রামের নাম, যে গ্রামে ১২ শতকে কবি জয়দেবের জন্ম হয়েছিল। ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে তথা বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে জয়দেবের স্থান চিরস্মরণীয়। কেননা, জয়দেবই প্রথম দেবতার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষের দিকে তাকিয়েছিলেন। অধ্যাপক অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “অলৌকিক দেবতাদের মানবীকরণের ইঙ্গিত তিনিই প্রথম দেন।” ( প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ২য় খন্ড; পৃষ্ঠা, ৩৫৫) ...বিস্ফী হল মিথিলার সীতামারী মহকুমার একটি গ্রাম, যে গ্রামে মৈথিলী বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতির (আনুমানিক, ১৩৭৪-১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে) জন্ম হয়েছিল। বিদ্যাপতির সঙ্গে বাংলা কাব্যসাহিত্যের সম্পর্ক ঘনিষ্ট। তিনি মৈথিলী ভাষার শব্দের সঙ্গে বাংলা ভাষার শব্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে ব্রজবুলি নামে এক উপভাষা সৃষ্টি করেছিলেন এবং ব্রজবুলি ভাষায় রাধাকৃষ্ণের লীলা বিষয়ক পদাবলী রচনা করেছেন। ব্রজবুলি ভাষায় পদাবলী বাংলায় ব্যপক প্রচলন ঘটেছিল। রবীন্দ্রনাথও বজ্রবুলি ভাষায় তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী থেকে পাঠ করা যাক: বসন্ত আওল রে ! মধুকর গুন গুন , অমুয়ামঞ্জরী কানন ছাওল রে । শুন শুন সজনী হৃদয় প্রাণ মম হরখে আকুল ভেল , জর জর রিঝসে দুখ জ্বালা সব দূর দূর চলি গেল । বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে জয়দেব ও বিদ্যাপতি-এই দু’জনের অবদান অপরিসীম । তাহলে দীনেশচন্দ্র সেন কেন বললেন, কেন্দুবিল্ব ও বিস্ফী হইতে (কবি চন্ডীদাস এর জন্মগ্রাম) নান্নুর শ্রেষ্ঠ তীর্থ কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে মানবতাবাদ সম্বন্ধে কিছু কথা বলে নিতে হয় । মানবতাবাদ মূলত একটি নৈতিক দর্শন যা কেবলমাত্র মানুষকেই অগ্রাধিকার দেয়, মানবীয় বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দেয়। মানবতাবাদী ধ্যানধারণায় মানুষের বিবেচনা বোধ সম্মান যোগ্যতা গুরুত্ব পায়। অতিপ্রকৃত শক্তির কাছে নতজানু না হয়ে মানবীয় আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়াই মানবতাবাদের একটি অন্যতম মূল সুর। সমাজের অপর মানুষের প্রতি কেবল নমনীয় অনুভূতি নয়-অযৌক্তিক একচ্ছত্র স্বগীয় কর্তৃত্বের অবসান কামনা করে মানবতাবাদ। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকে দার্শনিক থালেস ও জোনোফানেস এর চিন্তাভাবনায় গ্রিক মানবতাবাদের প্রাথমিক স্ফরণ লক্ষ করা যায় । ‘নিজেকে জান’-এ কথা সক্রেটিস নন, থালেসই প্রথম বলেছিলেন। আর জোনোফানেস? তিনি প্রচলিত ঈশ্বরবিশ্বাস অস্বীকার করে ঈশ্বরের স্থলে মহাবিশ্বের ঐক্যের মূলনীতিকে গ্রহন করে অ্যারিস্টোটলীয় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার পথটি সুগম করেছিলেন। পরবর্তীকালে দার্শনিক অ্যানেক্সাগোরাস- যাঁকে প্রথম মুক্তচিন্তার দার্শনিক বলে অবহিত করা হয়ে থাকে, তিনি বিশ্বজগৎকে উপলব্ধি করবার পদ্ধতি হিসেবে বিজ্ঞানের নানা শাখায় অবদান রাখেন। এই আয়োনিয় (আয়োনিয়ার অবস্থান ছিল বর্তমান তুরস্কে) দার্শনিকগনই প্রথম ঘোষণা করলেন যে, অতিপ্রাকৃতের প্রভাব এড়িয়ে বিশ্বকে ব্যাখ্যা করা যায়। অ্যানেক্সাগোরাস এর শিষ্য পেরিক্লিস গনতন্ত্রের অগ্রগতিতে, মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। দার্শনিক প্রোটাগোরাস ও ডেমোক্রিটাস অজ্ঞেয়বাদের ধারণা প্রচার করেছিলেন। এঁরা অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস ব্যাতিরেকে এক ধরনের আধ্যাত্বিক নৈতিকতার ওপর আস্থা আরোপ করেছিলেন । ঐতিহাসিক থুকিডিডিস ইতিহাসের অধ্যয়নে যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরিয়াস বিশ্বজগতে একজন দয়াময় ঈশ্বরের উপস্থিতি সত্ত্বেও অশুভ কী ভাবে সম্ভব-এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি পারলৌকিক জীবনে অনাস্থা ও মানবকেন্দ্রিক জ্ঞানের পক্ষপাতী ছিলেন। এমন কী দার্শনিক এপিকিউরিয়াস নারীকেও জ্ঞানের তাঁর আথেন্সের পাঠশালায় অর্ন্তভূক্ত করেছিলেন। মানবকেন্দ্রিক দর্শন প্রাচীন ভারতেও গড়ে উঠেছিল; যা লোকায়ত দর্শন নামে পরিচিত। এই দর্শনের অন্য নাম চার্বাক দর্শন। চার্বাক দর্শন অনুযায়ী মানবচৈতন্য গড়ে উঠেছে জাগতিক বস্তুর সম্মিলন থেকে এবং জগৎ স্বয়ংউদ্ভূত বলেই জগতের ঘটনাবলীকে পরিচালননার জন্য কোনও জগৎনিরপেক্ষ সত্তার প্রয়োজন নেই। পরবর্তীকালে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকে প্রাচীন ভারতে পালি ভাষায় গৌতম বুদ্ধ অলৌকিক শক্তির অস্তিত্ব বিষয়ে নীরব থেকে সংশয় প্রকাশ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকে চিনে লাওৎ-সে ঈশ্বরহীন চিন্তার প্রকাশ করেন। কনফুসিয়াসও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষায় ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি লোকোত্তর ঈশ্বরের চেয়ে মানবীয় আচারআচরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। মধ্যযুগের শেষে ইউরোপে রেঁনেসাকেন্দ্রিক মানবতাবাদ ছিল মূলত একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন। ইউরোপীয় চিন্তাচেতনায় ঘোর কালিমার প্রলেপ পড়েছিল মধ্যযুগে । চেতনার এরূপ অন্ধকার দূর করতে সে সময়কার সত্যসন্ধ মননশীল শিক্ষাবিদেরা গ্রিক ধ্র“পদী গ্রন্থগুলি পাঠের আহবান জানান। মানবকেন্দ্রিক পঠনপাঠনে রোমানদের রচনাও অর্ন্তভূক্ত ছিল। বিশেষ করে রোমান দার্শনিক সিসোরো। এই রোমান দার্শনিক লিখেছেন:‘ ব্যাকরণ চর্চা করে ভাষা শেখার পর ভাষাশিক্ষার দ্বিতীয় পর্ব আরম্ভ হয়। ভাষা শিক্ষার দ্বিতীয় পর্বের বিষয় ভাষার লালিত্য ও সৌন্দর্য। ভাষাচর্চার মূল উদ্দেশ্য হল ভাষার মাধ্যমে অন্যদের প্রভাবিত করা। সমাজের প্রতিটি নারীপুরুষের জীবন যাতে সুন্দর ও মঙ্গলময় হয়ে ওঠে সে লক্ষ্যেই ভাষার চর্চা করা যেতে পারে।’ রোমান দার্শনিক সিসোরো এই কথাগুলি বলেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ১০৬ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৩ এর মধ্যে। কেননা, ঐ সময়কালে বেঁচে ছিলেন সিসেরো। সিসেরোর এই মানবিক বক্তব্যের প্রতিধ্বনি তোলা জরুরি হয়ে উঠেছিল ইউরোপীয় অন্ধকার মধ্যযুগে। ইউরোপের অনেক চিন্তাবিদকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সিসেরো। তাঁর মধ্যে অন্যতম ইতালিও পন্ডিত ফ্রানসেসকো পেটরাক; এঁর সময়কাল ১৩০৪-১৩৭৪ খ্রিষ্টাব্দ। (এই লেখাটি বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাস কে নিয়ে। আমাদের মনে রাখতে হবে চন্ডীদাস -এর সময়কাল আনুমানিক ১৪১৭-১৪৭৭ খ্রিস্টাব্দ।) ফ্রানসেসকো পেটরাককেই ইউরোপীয় রেঁনেসার প্রাণপুরুষ মনে করা হয়। কেননা ফ্রানসেসকো পেটরাক একটি যুগান্তকারী উক্তি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: ‘ ইট ইজ বেটার টু উইল দ্য গুড দ্যান টু নো দ্য ট্রুথ।’ তার মানে, সত্যকে জানার চেয়ে অপরের মঙ্গলকামনায় ব্রতী হওয়াই উত্তম। এই কথার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপে পুরনো যুগের অবসান ঘটল। এই পরম মানবিক ধারণা ইউরোপকে বদলে দিল। পঞ্চদশ শতকেই ইতালিও ‘ইউম্যানিস্টা’ শব্দটি ইউরোপময় তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করল। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় সমাজে ইতিহাস, কাব্য, নৈতিক দর্শন, রেটোরিক ও ব্যাকরণ চর্চা বৃদ্ধি পায়। একজন লেখকের মতে, Since the 19th century, humanism has been associated with an anti-clericalism inherited from the 18th-century Enlightenment philosophes. কবি চন্ডীদাস এর জীবনেও এই অপার মানবতাবাদ এর প্রতিফলন দেখতে পাই। আগেই একবার বলা হয়েছে যে চন্ডীদাস-এর জন্ম পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম জেলার নান্নুর গ্রামে । সেই নান্নুর গ্রামে ছিল একটি মন্দির। সে মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বাশুলি -স্থানীয় গ্রামীণ দেবী তিনি। সেই বাশুলি দেবীর মন্দিরে চন্ডীদাস প্রথম জীবনে পুরোহিত ছিলেন । বাশুলি দেবীর ভজনা করতেন পুরোহিত চন্ডীদাস। তখন একবার বলেছিলাম। চন্ডীদাস এর জীবনে এক অতি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল, যে রকম ঘটনা সচরাচর অনেকের জীবনে ঘটে না। নান্নুর গ্রামের এক রজকিনী (ধোপনী) বাস করত। রজকিনীর নাম রামী। রামীর অন্য দুটি নাম- রামমনি ও রামতারা। রামীকে শ্রদ্ধাভরে শ্রীরামীও বলা হয়ে থাকে। শ্রীরাধিকা যেমন। ১৪ শতকে ধোপারা ছিল সমাজের অন্ত্যজ শ্রেনি। আজও। গ্রামীন বাংলায় পদদলিত। পুরোহিতগন বরাবরই উচ্চশ্রেনিজাত। তা সত্ত্বেও কোনও এক পরম মুহূর্তে দু’চোখের মিলন হল। নান্নুর গ্রামের সদবংশজাত পুরোহিত চন্ডীদাস ও অন্ত্যজ ধোপনী শ্রীরামীর ভালোবাসা বিনিময় হল। চন্ডীদাস ছিলেন বৈষ্ণব। তাঁর জন্মের দুশো বছর আগেই কবি জয়দেব তাঁর সুবিখ্যাত গীতগোবিন্দ কাব্যে শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনীশক্তি স্বরূপিনী ব্রজ গোপিকা হিসেবে রাধাকল্পনা করেছেন। রামীর মধ্যে রাধাদর্শন করলেন পুরোহিত চন্ডীদাস । এটি বাইরের দিক। আসল কথা হল পুরোহিত চন্ডীদাস এক নিুবর্গীয়া কন্যাকে মর্যাদা দিলেন, পুরোহিত পদ পরিত্যাগ করে কবি হলেন; সমাজের নিরাপদ উচ্চকোটির আসন থেকে রজকিনীর হাত ধরে ধুলোমাটির পথে নেমে এলেন, চিরন্তন প্রেমের মধুর অভিঘাতে আপন জীবনের পুর্নজাগরণ ঘটালেন। যে কারণে দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থে লিখেছেন,‘ কেন্দুবিল্ব ও বিস্ফী হইতে নান্নুর শ্রেষ্ঠ তীর্থ।’ চতুদর্শ শতকেই কবি চন্ডীদাস নান্নুর গ্রামে মানবতাবাদের প্রতিষ্ঠা করলেন। এভাবে নান্নুর গ্রাম মানবতীর্থে পরিনত হল। ইতালিও পন্ডিত ফ্রানসেসকো পেটরাক-এর এক অবিস্মরনীয় বাণী সফল করেছেন। যিনি বলেছিলেন: ‘ইট ইজ বেটার টু উইল দ্য গুড দ্যান টু নো দ্য ট্রুথ।’ চলুন নান্নুর যাই। এ লেখার সূচনায় বলেছিলাম: যে ক’জন কবিকে নিয়ে বাঙালি গর্ব বোধ করে চতুর্দশ শতকের বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাস (আনুমানিক ১৪১৭-১৪৭৭) তাদের মধ্যে অন্যতম। চন্ডীদাস বিশ্বাস করতেন : “ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। ” পুরোহিত চন্ডীদাস ভালোবেসে বর্ণাশ্রমভিত্তিক বংশগৌরব ও কুল বিসর্জন দিলেন -কিন্তু তিনি কবি হয়ে উঠলেন কেন? এ প্রসঙ্গে রোমান দার্শনিক সিসোরোর ভাষাবিষয়ক সেই উক্তিটি পুর্নবার স্মরণ করি।‘ ... ভাষাশিক্ষার দ্বিতীয় পর্বের বিষয় ভাষার লালিত্য ও সৌন্দর্য। ভাষাচর্চার মূল উদ্দেশ্য হল ভাষার মাধ্যমে অন্যদের প্রভাবিত করা। সমাজের প্রতিটি নারীপুরুষের জীবন যাতে সুন্দর ও মঙ্গলময় হয়ে ওঠে সে লক্ষ্যেই ভাষার চর্চা করা যেতে পারে।’ পরিশেষে এই তথ্যও ফাঁক করি। কবি স্বামীর সঙ্গ লাভ করে চন্ডীদাস-এর প্রেমিকা রামীও কবি হয়ে উঠেছিলেন। দীনেশচন্দ্র সেন এর ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ থেকে শ্রীরমীর লেখা কবিতার চারটি চরণ উদ্ধৃত করি: ‘কোথাও যাও ওহে, প্রাণ-বঁধু মোর, দাসীরে উপেক্ষা করি। না দেখিয়া মুখ, ফাটের মো বুক, ধৈরজ ধরিতে নারি। বাল্যকাল হতে, এ দেহ সপিঁনু , মনে আন নাহি জানি, কি দোষ পাইয়া মথুরা যাইবে, বল হে সে কথা শুনি। আচ্ছুৎ এক নিুবর্গীয়া দলিত নারীর এ কাব্য ফুল হয়ে ফুটেছিল মানবতাবাদী এক কবির মানবিক স্পর্শ আবহমান বাংলায়-এ কথা ভাবলে কী রকম শিহরণ ও উত্তাপ বোধ করি। উৎসর্গ: কবি মুক্তি মন্ডল। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৪৩
false
rn
বাঁচতে হলে জানতে হবে-৬ ১০০০সাল ১০০০সাল ইংরেজী ভাষার প্রাচীন যুগ ধরা হয়। দক্ষিন আফ্রিকায় ইসলাম প্রচার শুরু হয়। ১০০১সাল হাঙ্গেরী প্রথম সাধীন রাজ্যে পরিনত হয়। ১০১০সাল সুলতান মাহমুদ ভারত জয় করেন। ১০২০সাল চীন দেশের রাজা সে উন হো 'তাস' খেলা প্রবর্তন করেন। ১০২৬সাল সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দির আক্রমন করেন। ১০২৯সাল বাদশা আল্প আরসলান জন্মগ্রহন করেন। ১০৩৭সাল ইবনে সীনা মারা যান। ১০৪৭সাল বিজ্ঞানী ও পন্ডিত আল-বিরুনী মারা যান। ১০৫০সাল সেন বংশের উথথাণ হয়। ১০৫৮শাল পারস্যে (বতর্মান ইরাক)তুস নগরে ইমাম গাজ্জালি জন্মগ্রহন করেন। ১০৫৯সাল চাগরি বেগের উওরাধিকারী হিসেবে আল্প আরসলান খোরাসানের গর্ভনর নিয়োজিত হন। ১০৬৪সাল সেলজুক বাদশা হিসেবে সিংহাসনে বসেন এবং পারস্যের সুলতান হন। ১০৬৬সাল ইংল্যান্ডে এবং ওয়েলসে প্রতিবর্গ মাইলে ২৬জন মনুষ্য বসতি ছিল। ১০৬৮সাল আরসলান সিরিয়া হয়ে বাইজান্টাইন সামজ্য আক্রমন করেন। ১০৭২সাল ১৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরন করেন সেলজুক সামজ্যের ২য় সুলতান আল্প আরসলান। ১০৭৬সাল বড় পীর আবদুল কাদির জিলানী জন্ম গ্রহন করেন।(ইরাকে) ১০৮৫সাল খ্রিষ্টানরা 'টলেগে' দখলে নেয়। ১০৯০সাল সমগ্র স্পেন ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১১০০সাল ১১০০সাল চীন এবং ভূমধ্যসাগরীয় নাবিকেরা চুম্বক খন্ডকে সূতা দিয়ে ঝুলিয়ে কম্পাস তৈরী করত। খেমর রাজা শিবের উদ্দেশ্যে মহা জাকজমক পূর্ন মন্দির নির্মান করেন। ১১২৪সাল পাল বংশের বিলুপ্তি ঘটে। ওমর খৈয়াম মৃত্যুবরন করেন। ১১৩০সাল চীনারা সর্ব প্রথম Solid Propellant Rocket ব্যবহার করে বলে প্রামান্য দলিল আছে। সেন্ট আগষ্টাইন ৭০জন রমনীকে রক্ষিতা হিসেবে রেখেছেন। ১১৪৭সাল অভ্যন্তরীন জলপথের সুবিধার জন্য মস্কো বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ১১৪৮সাল খ্যাতিমান চিকিৎসক ও দার্শনিক আল-বাযি'র জন্ম হয়। ১১৬২সাল মঙ্গো্লিয়ায় চেঙ্গিস খাঁ জন্ম হয়। ১১৬৮সাল বল্লান সেন 'দান সাগর' রচনা করেন। ১১৭১সাল সেন্ট আগষ্টাইনের উপর অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায় যে,একটি গ্রামে তার ১৭জন বেআইনী সন্তান আছে। ১১৭৪সাল লন্ডন শহরের প্রবেশ দারের বাইরে স্থিমফিল্ড পল্লিতে প্রতি শুক্র বার ঘোড়া বিক্রির বাজার বসতো। ১১৭৬সাল বাংলায় দেখা দেয় চরম দূর্ভিক্ষ। ১১৭৮সাল এক নথিতে ফ্রান্সে ফার্মাসিষ্ট বা ঔষধ প্রস্তুতকারক শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। ১১৮২সাল ইসলামের মহান সাধক শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া মুলতান জন্মগ্রহন করেন। ১১৮৪সাল ফার্সি কবি শেখ সাদি জন্মগ্রহন করেন। ১১৮৭সাল সালাদিন খ্রিষ্টানদের জেরুজালেম থেকে বিতারিত করেন। ১১৯২সাল দিল্লীতে মুসলিম শাসনের সুএপাত ঘটে। লায়লি মজনু লিখেন মহাকবি নেজামি। ১১৯৩সাল খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি দিল্লীতে আসেন। ১১৯৫সাল গাজী সালাহ্ উদ্দিন দামেস্কে মৃত্যুবরন করেন। শেখ সাবির জন্মগ্রহন করেন। ১১৯৬সাল হযরত শাহজালাল ইয়েমে জন্মগ্রহন করেন। ১১৯৮সাল রাজা ভীম জগন্নাথ মন্দির তৈরী করেন। সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৫৬
false
mk
সেনা সমর্থিত সরকার চান খালেদা_ গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর একবছর বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এর ছন্দপতন কেন? কী কারণে আবার অস্থিরতার পায়তারা শুরু হলো? জামাত বিএনপি এখন আর ক্ষমতায় নেই। নেই বিরোধী দলেও।হঠাৎ করে তারা ঘোষণা দিল, গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করবে। কিন্তু এটি তো গত একবছর ধরে কোনো এক দিন পালন করতে পারতো। নির্বাচনের পরপরই এটা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারাতো তখন আন্দোলন করেনি। দেশে বিদেশে যখন সরকারের সাফল্য চরমে, কূটনৈতিকভাবে সরকার সফল, ঠিক তখনই বিএনপি জামাত অস্থিরতা তৈরির ফাঁদ পাতল। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সরকারের চাপ দেওয়ার মতো একটি ভুল কৌশলে পা দিল। গত এক বছর ধরেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছিল, বিএনপি ভুল পথে এগোচ্ছে। সেই সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করলেই চোখে পড়ে, বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীদের মধ্যে একটা চরম বিরোধ বিদ্যমান। কয়েকদিন আগে রিয়াজ রহমানের উপর হামলা সেই চরম দণ্ডকে চোখের সামনে আনে।বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা চাপা অসন্তোষ চলছিল অনেকদিন যাবত। সেই চাপা ক্ষোভ অনেকটা খালেদা জিয়ার ভুল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নির্দেশনার কারণে। নেতাকর্মীরা দিশেহারা। কে কী করবে সেই সিদ্ধান্তহীনতায় সবাই।আজকের দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে সেই সংবাদ। খালেদা জিয়া সরাসরি তার নেতাকর্মীদের ফোন করে হুমকি দেন। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না করলে পদ বাতিল! একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি কী করে এরকম নির্দেশনা দিতে পারেন!ভাবলে গাঁ শিউরে ওঠে। সাধারণ মানুষকে পুরিয়ে মারার দায় তিনি কোনোভাবে এড়াতে পারেন না। যারা মারা পড়ছে,দেশের বার্ন ইউনিতে যন্ত্রণায়-জ্বালায় কাতরাচ্ছেন, তাদের পাশে কি তিনি একবারো গিয়েছেন? শান্তনা দিয়েছেন? বিএনপির কি কোনো নেতাকর্মী গিয়েছেন সেখানে? তাহলে কে ঘটাচ্ছে এসব কর্মকাণ্ড তা কি গোপণ? আন্দোলনে বিএনপির কোন নেতাকর্মী মাঠে? কখনো কোথাও কি তারা জড়ো হচ্ছেন? শুধু লাশ দিয়ে কি রাজনীতি হয়? লাশ নিয়ে রাজনীতি করার কৌশল একটা পুরোনো হাতিয়ার।যার লাশ সেই বোঝে লাশের ভার কতো। বেগম জিয়া নিশ্চয় সেই ব্যাথা হারে হারে টের পাচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে পুরিয়ে সেই সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে তিনি ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছেন, সেটা কি আদৌ সম্ভব? খালেদা জিয়ার মূল পরিকল্পনা সম্ভবত, তিনি চাচ্ছেন একটা অস্থিরতা তৈরি করে দেশে একটা জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা। এটা অসুস্থ মস্তিষ্কের উর্বর চিন্তা। বারবার তিনি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কিন্তু নিজে কোনো রকম আলোচনায় যেতে চান না। সেনা সরকার বসিয়ে তিনি কী করে আশা করেন তারা তাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন? এই চিন্তা কী করে তার মাথায় কাজ করে? কেন এত আস্থা তার সেনাবাহিনীর উপর। এর আগে যখন তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ চালায় প্রায় বছর দুয়েক,তখন তো তারাই তাকে আবার ক্ষমতায় আনতে পারতো। কিন্তু আদৌ সে কৌশল কি তার ব্যর্থ হয়েছে? এখন আবার প্ল্যান বি ধরে এগোচ্ছেন তিনি? কোন বিদেশী কূটকৌশল তাকে এসব পরামর্শ দিচ্ছেন? কে তার সাথে যোগাযোগ রাখছেন, লাশের রাজনীতি কার পরামর্শ?দেশে এমন পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য মনে হয় বর্তমান সরকারই যথেষ্ঠ। সাধারণ মানুষ আবার জরুরি অবস্থা দিয়ে দেশে সামরিক শাসককে চায় না। ম্যাডাম জিয়া সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ক্ষমতায় যাওয়াকে কেবল গুরুত্ব দিলে এমন অলীক স্বপ্ন তিনি দেখতেই পারেন। কিন্তু ব্যাপারটা খুব সুবিধার হবে না। মনে রাখতে হবে দেশে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতায় তার ভূমিকা দেশবাসীর জানা আছে। ফলে, এসব কর্মকাণ্ড কারা ঘটাচ্ছে, কে এর নির্দেশদাতা, বাংলাদেশে জঙ্গিদের সম্মানরক্ষা কার আমলে বেশি হয়েছে সেটা বোধহয় এবার দেশের মানুষ হারে হারে টের পাচ্ছে।
false
rn
প্রেমিকার কাছে খোলা চিঠি জান আমার, কলিজা আমার- তুমি কেমন আছো গো ? মাঝে মাঝে তুমি আমাকে একটুও বুঝতে চাও না। তখন খুব কষ্ট হয়। হুকুম এবং দাবী একটাই আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো। পকেটে টাকা না থাকলে- কি করে তোমার সাথে দেখা করতে যাই? কিভাবে তোমাকে জুটকটন শাড়ি কিনে দেই ? মাঝে মাঝে মনে হয় যারা দুর্নীতি করে, নিজের জন্য করে না। বৌ এর জন্য করতে বাধ্য হয়। বৌ এর চাহিদা মিটাতে গিয়ে দুর্নীতি করে বা অসৎ ভাবে টাকা ইনকাম করে। আমি তো এসব পারবো না। দয়া করে খারাপ কিছু করতে আমাকে বাধ্য করো না। তুমি একটা ব্যাপার বুঝ না কেন- সুখের থেকে স্বস্তিতে থাকা অনেক ভালো। দরকার নেই আমাদের গাড়ি বাড়ি। হারামের পথে আরাম ভালো না। আমরা দু'জন ডাল ভাত ভর্তা খেয়ে একটা জীবন পার করে দিব। আমার আয় খুব সামান্য ( পুরোটাই সৎ পথে ) এই সামান্য আয় দিয়েই তোমাকে চলতে হবে। সত্যি কথা বলতে- তোমাকে নিয়ে কখনও বড় বড় রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে পারবো না কিন্তু রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা বিস্কুট খাওয়াতে পারব। বসুন্ধরা মার্কেট থেকে কেনা কাঁটা করতে পারবো না। দামী শাড়ি গহনা দিতে পারব না। এমিটেশনের গহনা দিব। টাঙ্গাইল শাড়ি দিব বছরে দুইটা। দুই ঈদেও বিশাল অংকের টাকা তোমাকে দিতে পারব না কেনাকাটা করার জন্য। আর সত্যি কথা বলতে, কি বিলাস বহুল জীবন যাপন আমার পছন্দ না। একদম ছোটবেলা থেকেই বিলাসিতা করা আমার অপছন্দ। বিয়ের পর যেন কোনো ঝামেলা না হয়- এজন্য তোমাকে আগেই সব জানিয়ে রাখলাম। তোমার কাছে কি টাকা পয়সা বড় না তোমার ভালোবাসার মানুষটা বড় ? জাঁকজমক পূর্ণ বিয়ে আমাদের হবে না। নো নেভার। ঘরোয়া ভাবে আমাদের বিয়ে হবে। বিয়ে নিয়ে নানান রঙ ঢং আমি করতে পারব না। আমার কাছের আত্মীয় স্বজন নিয়ে তোমার বাসায় যাবো- তারপর তিন বার কবুল বলে তোমাকে নিয়ে আসবো সিএনজি'তে করে। ঝামেলা শেষ।ছোট্র একটা ঘরে আমাদের সংসার জীবন শুরু হবে। আমি জানি শুরুতে মানিয়ে নিতে তোমার খুব কষ্ট হবে। কিন্তু কয়েক মাস পর তুমি সব কিছু গুছিয়ে নিতে পারবে। যেহেতু আমার অনেক টাকা পয়সা নাই- তাই আশা করি- তুমি অনেক রকম বায়না- আবদার করবে না। তবে তোমার ছোট ছোট আবদার আমি অবশ্যই রাখব। যেমন রিকশায় করে ঘুরাঘুরি, ফুচকা আইসক্রিম, কাঁচের চুড়ি, কপালের টিপ, চোখের কাজল- এই সব পাবে। আমার ভাগ্য ভালো যে আমি তোমাকে পেয়েছি- অন্যসব মেয়েদের নানান রঙ চং মাখতে হয়- তারপর তাদের সুন্দর দেখায়- আর আল্লাহর রহমতে তোমাকে শুধু চোখে কাজল আর কপালে টিপ এ দেবী প্রতিমার মতন লাগে। পার্লারে গিয়ে ভ্রু প্লাক করাটাও আমার পছন্দ না। আমাদের বিয়ের পর বাচ্চা হলেও আমরা বাচ্চার জন্য বিলাসিতা করবো না। ধরো, ঘটা করে বাচ্চার জন্মদিনও পালন করবো না। আদিখ্যাতা ভালো লাগে না। দরকার নেই বাচ্চাকে ইংলীশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানো। সরকারী একটা স্কুলে ভর্তি করাবো। বাসায় বাচ্চার জন্য কোনো টিচার রাখব না। আমাদের বাচ্চাকে তুমিই পড়াবে। নেপোলিয়ান বলেছেন- বাচ্চাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক হচ্ছে তাদের 'মা' । আর আমাদের বাচ্চা তোমার কাছে লেখা-পড়া শিখলে আমি একেবারে নিশ্চিন্ত। আর একটা কথা বিয়ের পর কিন্তু তুমি ঘন ঘন বাপের বাড়ি যেতে পারবে না। খুব কম যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় বছরে দুই একবার গেলে। ধরো, দুই ঈদে চান্দে গেলে। একবেলা থেকে চলে আসলে। ও...আমার রাজকুমারী আর একটা দরকারী কথা বলতো ভুলেই গেছি। আমাদের সংসারে আমরা কোনো কাজের বুয়া রাখব না। অযথা টাকা নষ্ট করে লাভ কি ? আমাদের ছোট্র ঘর আমরা দু'জন মানুষ- ঘরে তো খুব বেশী কাজও নেই। আমি মনে, করি এতটুকু কাজ তুমি একাই করতে পারবে। অপচয় আমার একেবারে অপছন্দ। আমি জানি, তুমি অবশ্যই আমার পছন্দ-অপছন্দের খেয়াল রাখবে? তাছাড়া তোমার সংসারের সব কাজ তো তোমারই করা উচিত। আমি ১০০% নিশ্চিন্ত তুমি যদি লক্ষ্মী মেয়ের মত আমার সব কথা মেনে চলো- তাহলে আমরা সুখী দম্পতি হবো। আমাদের দেখে- অন্যরা বললে- ওদের টাকা নেই, তারপরও ওরা কত সুখী। বেবি, সত্যিকারের সুখ টাকা পয়সায় হয় না, মনের সুখই আসল সুখ। তবে আমরা একটা বিষয় নিয়ে বিলাসিতা করবো। অবশ্যই করবো। তা হচ্ছে বই। আমাদের ঘরে এসি থাকবে না কিন্তু বইয়ের সেলফ থাকবে। থাকে থাকে সাজানো থাকবে অনেক বই। আচ্ছা, এখন চিঠি শেষ করছি- পরে আবার লিখব। আরোও কিছু বিষয় বাকি আছে। যথা সময়ে তোমাকে জানাবো। তুমি ভালো হয়ে থাকো। সুন্দর ভাবে থাকো। আর বেশী দিন তোমাকে বাপের বাড়ি থাকতে হবে না। আমি নিয়ে আসব আমার কাছে। আমি তোমাকে এক বস্ত্রে তোমাদের বাসা থেকে তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবো। নো যৌতুক । আমি দরিদ্র হতে পারি কিন্তু লোভী নই। তুমি তোমার অবস্থান থেকে- তোমার দায়িত্ব সুন্দর ভাবে পালন করবে। তোমার ভাই বোন এবং বাবা যেন তোমার উপর কখনও বিরক্ত না হয়। তাদের আমার সালাম দিও। অনেক আদর ও ভালোবাসা।
false
hm
বইয়ের পাঠক আর ক্রেতা বাংলাদেশে বইয়ের পাঠকসংখ্যা কত? কোন বয়সশ্রেণীর পাঠকের কাছে কোন ধরনের বইয়ের কদর বেশি? একটা বই একজন ক্রেতা কিনলে কয়জন পাঠক পড়েন? বই কেনার আগে একজন ক্রেতা কী কী দিক বিবেচনা করেন? জানি না এর একটিরও উত্তর। ধারণা করতে পারি বড়জোর, আবছাভাবে। বই, ক্রেতা, পাঠক নিয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের ঐ নিজস্ব আবছা ধারণার ওপর নির্ভর করেই থাকতে হবে হয়তো। আমি জানি না, বাংলাদেশে বই নিয়ে কোনো বড় আকারের মার্কেট রিসার্চ হয়েছে কি না। সম্ভবত হয়নি। বই যে একটা পণ্য, একে ঘিরে যে সফল ব্যবসা হতে পারে, এই ধারণাটাই আস্তে আস্তে কার্পেটের নিচে চলে যাচ্ছে। নোট-গাইড আর রসময় গুপ্তের চটি চুরি করে হলেও বেচার আর কেনার লোক আছে, সাধারণ বইয়ের অত কদর নেই। এর একটা কারণ হতে পারে সমন্বয়হীনতার অভাব। প্রকাশকের সাথে সম্পাদক আর লেখকের [কয়টা বই সম্পাদিত হয়ে বেরোয় বছরে?], কিংবা বিপণকের কোনো মান সমন্বয় ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতাদের একটি সমিতি আছে, কিন্তু তারা কী করে আমি জানি না। শুধু টেক্সটবুক বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্তের পর তাদের প্রতিক্রিয়া কাগজে পড়ে জানা যায়। কারণ নোট-গাইড আর রসময় গুপ্তের চটির মতো পাঠ্যবইয়ের বাজার দেশব্যাপী। সাধারণ বই ... আবারও কয়েক সারি পেছনে। বইয়ের ব্যাপারটা অন্য যে কোন পণ্যের মতো করেই দেখা যেতে পারে, এর বড় চাহিদা তৈরি করতে পারলে এর মাথাপিছু খরচ কমে আসবে। একটি বই যদি ১০০ কপি ছাপা হয়, তাহলে তার যা খরচ, ১০০০ কপি ছাপালে হয়তো পার ইউনিট খরচ তার অর্ধেকে নেমে আসবে, ১০০০০ কপি ছাপালে হয়তো তারও অর্ধেকে [উদাহরণের খাতিরে লগ-স্কেল দিয়ে বলছি]। কিন্তু আমার মনে হয়, এক ধাক্কায় ১০ হাজার কপি বই ছাপা হবে, এমন লেখক বাংলাদেশে দুই তিনজন আছেন। তাহলে বাকিরা কি পাতে ওঠার যোগ্য নন? মাহমুদুল হক কি একজন ফেলনা লেখক? কিংবা শহীদুল জহির? তাঁদের বই তাঁদের জীবদ্দশায় কয় কপি করে ছাপা হতো? ১০০ টাকা খরচ করে পাঠক অচেনা লেখকের লেখা না কিনে চেনা লেখকের বই কিনবেন। এটি পরীক্ষিত সত্য। অচেনা লেখককে পরিচিত করানোর দায় গ্রন্থবিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের। এমন কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান আছে বলে আমার জানা নেই, প্রকাশক নিজেই সাধারণত বিপণনের কাজটি করেন। বেশির ভাগ প্রকাশক ঢাকাকেন্দ্রিক, তাঁদের সাথে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে থাকা গ্রন্থবিপণীগুলোর কেমন যোগাযোগ, বলা মুশকিল। সেবা প্রকাশনী বোধহয় এ ব্যাপারে সর্বাধিক এগিয়ে, দেশের একটা অখ্যাত রেলস্টেশনের বুকস্টলেও তাদের বই মেলে। অতখানি যোগাযোগের দায় বোধহয় আর কোনো প্রকাশক নিতে যান না। একটা ছোটো সংখ্যা বলি। এজুকেশন বোর্ডের ওয়েবসাইটের স্ট্যাট ঘাঁটতে গেলাম [বিশ্রী ওয়েবসাইট, কোনো স্ট্যাট উদ্ধার করা যায় না ডেটাবেজ থেকে, স্ট্যাটিক একটা পেইজে ২০০৬ সালের তথ্য আছে শুধু], ঢাকা-চট্টগ্রাম-রাজশাহী-যশোর-সিলেট-কুমিল্লা-বরিশাল-মাদ্রাসা এই আটটি বোর্ডে মোট সাড়ে নয় লক্ষ পরীক্ষার্থী ছিলেন ২০০৬ সালে। যদি এঁদের মধ্যে ১০% সাধারণ বই পাঠক ধরা যায়, পঁচানব্বই হাজার পাঠককে আমরা পাই এই একটি ব্যাচ থেকেই। যদি কেবল শিক্ষার্থীদের সক্রিয় বই পাঠক ধরে নিই আমরা, তাহলে এর আগের চার ব্যাচ [ক্লাস এইট থেকে] এবং পরের চার ব্যাচ [অনার্স পর্যন্ত], মোট নয়টি ব্যাচে প্রায় আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার পাঠক আছে সারা দেশে। যদি একজন ধনবানের কেনা বই দশজন জ্ঞানবান পড়ে থাকেন, তাহলেও পঁচাশি হাজার বইয়ের ক্রেতা পাই আমরা, যে কোন এক বছরে। সারা বছরে বই কেনার পেছনে এঁরা যদি একশো টাকা খরচ করে থাকেন, তাহলে মাত্র পঁচাশি লক্ষ টাকার সাধারণ বইয়ের বাজার, বছরে। এই বাজারের একটা বড় অংশ দখল করে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ এবং মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বাকি লেখকরা কিছুমিছু পান। বইয়ের বাজারটাকে আমরা মাছের বাজারের তো করে রেখেছি, যে ক্রেতা নিজেই উজিয়ে যাবেন। এখন বোধহয় সময় এসেছে একটু অন্যভাবে চিন্তা করার। বইয়ের বাজারকে পাঠক আর ক্রেতার সামনে নিয়ে যেতে হবে, সক্রিয়ভাবে। বইয়ের ব্যবহার খুব কমে গেছে, এটা বাড়াতে হবে। বড় কর্পোরেটগুলো এগিয়ে আসতে পারে পৃষ্ঠপোষকতার জন্যে। তাদের ভেন্ডররাও অনেক সময় টুকটাক এটাসেটা উপহার পাঠায় তাদের সন্তুষ্ট রাখার জন্যে, এ তালিকায় বইকে তোলা যেতে পারে। স্কুলকলেজ পর্যায়ে নানা কিসিমের প্রতিযোগিতা হয়, পুরস্কার হিসেবে বইকে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে আমবুলি ছাপানো কার্ড না কিনে বই কিনে প্রথম সাদা পাতাটায় প্রেমার্থী লিখে জানাতে পারেন তাঁর মনের কথা। জন্মদিন থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত উপহার দিতে পারেন বই [তবে বই অনেকেই পছন্দ করে না]। দশ লক্ষ টাকা সমপরিমাণ বইয়ের জন্যে দশ টাকা দামের টিকেটে লটারি ব্যবস্থা চালু করতে পারে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। প্রকাশকরা সবাই সম্মিলিতভাবে একটি শক্তিশালী বিপণন ও বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারেন। অথবা যেমন চলছে তেমন চলতে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে পাঠ্যবই বাদে অন্য বইয়ের ব্যবসা লাটে তোলার জন্যে আপনাদের হাতে মোটামুটি পাঁচ বছর সময় আছে।
false
hm
হস্তীমূর্খ সার্কাসের তাঁবু অনেক দূরে। রোদে আর মেঘে মাখামাখি দিনটায় হাতিটা এতখানি পথ হেঁটে এসে একটু তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে, শুঁড়টা আকাশে তুলে বাতাসের ঘ্রাণ নেয় সে। মাহুত জানে, হাতি জলের গন্ধ পায় বহু দূর থেকে। কুঁচকির নিচে হাতিটার পিঠের পেশীর নড়াচড়া টের পায় সে, সেই চাঞ্চল্যে উত্তরে গলা খাঁকারি দেয় তার ডাঙস। "র মুখোশি, র।" স্নেহের ধমক দেয় মাহুত। এখন পানি খেতে নিয়ে যাওয়া যাবে না হাতিটাকে। অনেক কা ... সার্কাসের তাঁবু অনেক দূরে। রোদে আর মেঘে মাখামাখি দিনটায় হাতিটা এতখানি পথ হেঁটে এসে একটু তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে, শুঁড়টা আকাশে তুলে বাতাসের ঘ্রাণ নেয় সে। মাহুত জানে, হাতি জলের গন্ধ পায় বহু দূর থেকে। কুঁচকির নিচে হাতিটার পিঠের পেশীর নড়াচড়া টের পায় সে, সেই চাঞ্চল্যে উত্তরে গলা খাঁকারি দেয় তার ডাঙস। "র মুখোশি, র।" স্নেহের ধমক দেয় মাহুত। এখন পানি খেতে নিয়ে যাওয়া যাবে না হাতিটাকে। অনেক কাজ সামনে। মুখোশি নামের হাতিটা শুঁড় নামিয়ে নেয় মনমরা হয়ে। মাহুত ঘ্যাসঘ্যাস করে বগল চুলকায়। সে বোঝে, সার্কাসের দিন আসলে শেষ। বোঝে না সার্কাসের মালিক আর ম্যানেজার। ময়লা তাঁবুটা দেশের বিভিন্ন বিষণ্ণ গ্রামের নিঃস্ব মাঠগুলোতে তাই অভ্যাসের টানে ফুলে ওঠে বর্ষার পর। লোকজনের এখন বিনোদনের কত বিচিত্র পদ্ধতি, সার্কাসের তাঁবুর নিচে আর ভিড় হয় না আগের মতো। আর হবেই বা কেন, আগের মতো জৌলুস কি আর আছে? রং উঠে তাঁবুটার চেহারা হয়ে গেছে পল্টনের হাবিলদারের খাকির মতো। আগের সেই দড়াবাজেরা মরে সাফ হয়ে গেছে, নয়তো জমি বেচে চলে গেছে মালয়েশিয়া। বাঘটা আফিম খেয়ে ঝিমাতে ঝিমাতে একদিন নিরভিযোগ মারা গেলো, বাঘের দেখনদার উদভ্রান্ত হয়ে চলে গেলো সাতক্ষীরা, আর তার খোঁজ পেলো না কেউ। সুন্দরী নটী নেই, তীর ধনুকের খেলোয়াড় নেই, মুখ দিয়ে আগুন গিলে খাওয়া বাজিকর নেই, চোখ বেঁধে চাকু ছুঁড়ে মারা ভোজালিবর্দার নেই, সার্কাসের সম্বল শুধু তার অতীত, গোটা কয়েক সস্তা বাজির খেলা, একজন রাতকানা ম্যাজিশিয়ান, আর বুড়ি মুখোশি। মুখোশির শোটাও খুব সাধারণ। মুখোশি পেছনের দুই পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে জানে। একটা আগুন জ্বলা রিঙের ভেতর দিয়ে পার হয়। শুঁড় দিয়ে বল তুলে দূরে একটা গামলার মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে। তারপর তার খেলা শেষ। মুখোশির বাড়ি শেরপুরের ওপরে গারো পাহাড়ের মাটিয়াল জেলায়, মাটিয়ালি সারল্য নিয়ে এগুলোই সে ঘুরেফিরে দেখায় বোকাসোকা গেঁয়ো অডিয়েন্সকে। মাহুত ভাবে, ক'জনই বা হাতি দেখেছে জীবনে? চাক্ষুষ হাতি দেখার সুযোগ হয় শেরপুর, সিলেট আর চট্টগ্রামের মানুষের। তার সার্কাস ওদিকটায় যায় না বললেই চলে। তাদের কারবার যমুনার এপাশে, মাঝেমধ্যে পদ্মা পাড়ি দেয় তারা। মাহুত সার্কাসে জোকারও সাজে। আগের বুড়ো জোকারটা চাকরি ছেড়ে চলে গেছে শেষ বয়সে কী আরেকটা ভালো চাকরি পেয়ে। তার লাল নাক আর সাদা কালো ডোরা জামা রয়ে গেছে পেছনে। মাহুত সেগুলো পরেই নাচে, ভাঁড়ামো করে, আবার মুখোশিকেও খেলায় টেনে আনে। লোকে হো হো করে হাসে, হাততালি দেয়, দুষ্ট ছেলেরা ঢিল ছুঁড়ে মারে মাঝে মাঝে, বোকা বাচ্চারা ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠে। মাহুতের খারাপ লাগে না। ভাঁড়ামো করেও যদি তাঁবুর নিচে টেনে আনা যায় লোকগুলোকে, সন্ধ্যার প্রথম আলোয় যদি চোখে পড়ে সারবন্দী সার্কাসমুগ্ধ বোকাসোকা জনতা, মন্দ কী? মাহুত আদর করে হাত বোলায় মুখোশির পিঠে, মুখোশি একটা মৃদু শব্দ করে স্নেহের প্রতিদান দিতে চায়। বট গাছ থেকে কিচির মিচির করে উড়ে চলে যায় এক ঝাঁক পাখি। হাতির গতর যেমন বড়, আয়ুও তেমনি দরাজ। সেই কবে থেকে মুখোশিকে নিয়ে দেশটা ঘুরে বেড়াচ্ছে মাহুত, ক্যালেণ্ডারও ক্লান্ত হয়ে যায় তাদের সাহচর্যের হিসাব রাখতে গিয়ে। আগে মুখোশির খোরাক নিয়ে তেমন চিন্তা ছিলো না, সার্কাসে হাতির জন্যে খোরাকের অভাব হতো না, তাছাড়া মাঝেমধ্যে এটাসেটা খ্যাপ লেগেই থাকতো। মুখোশিরও গায়ে বল ছিলো তখন। নতুন সিনেমা এলে তার পোস্টার গায়ে নিয়ে মুখোশি মাইক হাতে ঘুরে বেড়াতো টাউনে গঞ্জে, পিঠে মাহুতের পেছনে চোঙা হাতে সিনেমার লোক, ভাইসব, ভাইসব, আসছে বিউটি সিনেমা হলে, রাজ্জাক ও শাবানা অভিনীত, বিষণ্ণ বাসর, বিষণ্ণ বাসর, ভাইসব ভাইসব ... । মাহুত নিজেই কিনেছিলো প্রথম শোয়ের টিকেটখানা। তার সাধ্য থাকলে মুখোশিকেও সে নিয়ে যেতো হলের ভেতরে। আহারে বেচারি, সারাটা গঞ্জে চক্কর মারলো, সিনেমাটা নিজে দেখতে পারলো না। মুখোশি অবশ্য দূরে সার্কাসের তাঁবুতে সেই দুপুরে বিশ্রাম নিচ্ছিলো, আর হলের ভেতরটা ক্রমশ বিষণ্ণ বাসর হয়ে এসেছিলো মাহুতের জন্যে, শাবানার দুঃখে। এখন আর সেই দিন নেই, মুখোশির শরীর চলতে চায় না, ভারি কাজ তেমন একটা পারে না সে, সার্কাসের লোকে নিজেরাই খেতে পায় না ঠিকমতো, হাতির খোরাক জুটবে কোত্থেকে? মাহুত তাই পথে নেমে পড়ে মুখোশিকে নিয়ে। দূরে আধফোলা তাঁবুটা ফাঁপা চাঁদের মতো টলমল করে, মাহুত পথঘাট আটকে মুখোশির খোরাকের টাকা তোলে। বুদ্ধিটা তাকে দিয়েছিলো সার্কাস ম্যানেজার মতি। "রাস্তায় নাইমে পড়। আল্লা সিজন কইরেছে আল্লায় রিজিক দেবে। আল্লার বান্দাদের পকেটে মুখোশির রিজিক বান্ধা। রাস্তায় নাইমে সব বাস টেরাক আইটকে দিবি সেই রিজিকের টেকা তোর হাতে ধইরে দিতে।" বোকা মাহুত প্রশ্ন করেছিলো, "ক্যামনে?" মতি চোখ পাকিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মরে যাওয়া আফিমখোর বাঘটার মতো মরাটে গর্জন ছেড়ে বলেছিলো, "শিশুকালে নুনে আয়ুডিন পাসনি রে ভেড়াচ্চোদা? মুকোশির গতর দিয়ে আইটকে দিবি, আবার শুধাচ্ছিস ক্যামনে? ঐরকম একখান কলেবর থাইকতে রাস্তা আইটকানো কুনো সমেস্যা?" মাহুত লজ্জিত হেসে মাথা চুলকেছে শুধু। তবে পদ্ধতিটা অব্যর্থ। সেদিনই হাজার খানেক টাকা তুলেছিলো মাহুত, ভাঙ্গার মোড়ে, মাদারিপুরগামী বাস আর প্রাইভেট গাড়ি থেকে। মতি শুধু সন্ধ্যাবেলা এসে জ্বলজ্বলে একটা দৃষ্টি হেনে পঞ্চাশটা টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। কমিশন। সেই থেকে চলছে। বৃদ্ধা মুখোশি সড়ক মহাসড়ক আগলে দাঁড়ায় তার বিরাট শরীরখানা নিয়ে। মাহুতের হাতে একটি দীর্ঘ বেতের ছড়ি, তার মাথায় বাঁধা গামছা। বাসের ড্রাইভার, ট্রাকের ওস্তাদ, প্রাইভেট কারের সফেদ ভদ্রলোকেরা সকলেই কিছু না কিছু দেয়। "হুজুর, সেলামি।" চেঁচায় মাহুত। কিছু কিছু বেরসিক গালাগালি করে। রসিকেরা টাকা দিয়ে বলে, পায়ে ধইরা সেলাম দিতে কও গো হাতিয়াল। মুখোশি সেলাম ঠুকতে জানে বটে। সার্কাসের শিক্ষা। একেবারে বুক ডন দিয়ে শুঁড় দিয়ে পেল্লায় এক স্যালুট ঠুকে একটা একটা করে গাড়ি ছেড়ে দেয় সে। সকলেই জানে, হাতির পেটটা অনেক বড়। হায়াতও বড়। দিনের পর দিন তাকে বেঁচে থাকতে হয় হাতির খোরাক খেয়ে। কলাগাছ, ভুষি, খৈল, আলু, ঘাস, দিন ভালো গেলে কয়েকটা কুমড়া। তার জন্যে খরচ আল্লাহ নিজ হাতে পুরে দিয়েছেন এই সড়ক ধরে চলতে থাকা উদভ্রান্ত বাস, ট্রাক আর প্রাইভেট গাড়ির চালকদের পকেটে। তারাই রোজ রোজ খোরাকি জুটিয়ে যায় মুখোশির জন্যে। মুখোশির মাহুতের ডালভাতের জন্যেও কিছু টাকা বেঁচে যায়। মাহুত মাঝে মাঝে শখ করে গরুর গোস্তো দিয়ে ভাত খায়। মুখোশিকে দেয় গুড় মেশানো জাবনা। বেহেস্ত থেকে সেদিন কয়েকটা ফুল খসে পড়ে পৃথিবীতে, তার খোশবুতে মাতোয়ারা বাতাসে ভেসে ভেসে আসে বাড়তি বাস, বাড়তি ট্রাক, বাড়তি দরাজদিল প্রাইভেটের বাদশাজাদারা। মাহুত হাত বোলাতে থাকে মুখোশির পিঠে। আজ বেশিদূর যাবে না সে। রংপুর রোডের একটি শাখায়, পথের পাশে একটি কিশোর বটের ছায়ায় মুখোশিকে নিয়ে দাঁড়িয়েছে সে। আগামীকালের খোরাকির টাকাটা উঠে পড়লেই ফিরে যাবে তাঁবুতে। তার আগে কোনো পুকুরের পাশে, কিংবা কোনো কলতলায় দাঁড় করিয়ে পানি খাওয়াবে তার বুড়িকে। মুখোশির জীবনে কিন্তু গৌরবের অন্ত নেই। ছোটোবেলা থেকেই সে হাতি ছিলো। সেই ছোট্টোটি থেকেই মুখোশি সগৌরবে চারদিক প্রকম্পিত করে চেঁচিয়ে আসছে, দ্যাখো, আমি একটা হাতি! হাতিইইইই! বৃংহণণণণণণণণণণণ! খালকাটা পেসিডেন্ট সস্নেহে মাহুতকে বলেছিলেন, তোমার হাতিটা কি ইনডিয়ার? মাহুত কাঁপা গলায় বলেছিলো, "হুজুর মাই বাপ, মুখোশি আমাগো হাতি। চট্টগ্রামের হাতি স্যার। আমার চোক্ষের সামনে জন্মাইছে স্যার।" মুখোশির তখন নয় বছর বয়স, বগুড়া সার্কিট হাউজের চত্বরে পেসিডেন্টকে সেলাম ঠুকতে গিয়েছিলো। জহুরির চোখ পেসিডেন্ট সাহেবের, মৃদু হেসে একশো টাকা বখশিশ দিয়েছিলেন। ইংরেজিতে কী যেন তারপর বলাবলি করছিলেন কোদাল হাতে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মৌদুধ সাহেবের সাথে। অনেক কেষ্টুবিষ্টুর সাথে পরিচয় হয়েছে মুখোশির। খালকাটা পেসিডেন্ট সাহেব দুয়েকবছর বাদেই ইন্তেকাল করেন, তার বহু বছর পর এই বগুড়াতেই তার গালকাটা পুত্র যখন ইলেকশনের সিজনে এলেন, মুখোশি তখন খ্যাপ মারছে ইলেকশনের কাজে। হালুয়া দিয়ে রুটি খেতে খেতে গালকাটা সাহেব মাহুতকে এক হাজার টাকা বখশিশ দিয়ে বলেছিলেন, হাতি নদী পার হয় কীভাবে মাহুত? নৌকায়? জিভ কেটে মাহুত বলেছিলো, "হাতরাইয়া পার হয় স্যার। নৌকা উহার চোক্ষের বিষ, চিনে খালি ধানের শীষ।" গালকাটা সাহেব খিলখিল করে হেসে উঠেছিলেন পাখির মতো। কাকপাখি। তারপর আরো একশো টাকা বখশিশ দিয়েছিলেন। এক চামচাকে ডেকে বলেছিলেন, নৌকা আমার চোক্ষের বিষ, চিনি খালি ধানের শীষ। চামচা গদোগদো হয়ে বলেছিলো, স্যার দারুণ স্যার স্যার স্যার! মুখোশি মাহুতকে পিঠে নিয়ে সারা আদমদীঘি চক্কর মেরে বেরিয়েছিলো, মাহুতের পেছনে চোঙা হাতে ইলেকশনের লোক। নৌকা আমার চোক্ষের বিষ, চিনি খালি ধানের শীষ, চিনি খালি ধানের শীষ, নৌকা আমার চোক্ষের বিষ। মাহুত জানে, মুখোশিই ইলেকশন জিতিয়েছিলো সেবার। খালকাটা পেসিডেন্টের গালকাটা ছেলে রাজাও বেশিদিন টিকতে পারেনি। মাহুত শুনেছে, আর্মি নাকি পিটিয়ে পোঁদ ফাটিয়ে দিয়েছে বেচারার। তবে ডাঙসের মালিক বদল হবার পর রাজনীতির সার্কাসে নতুন খেলুড়েরা ঢুকলো। শেখের নাতনি দেশে ফেরার পর মুখোশির কপালটা খুব খারাপ ছিলো, বলতেই হবে। নড়াইলে তাঁবু পড়েছিলো সেবার। গোপালগঞ্জে গিয়ে সেই রাজকন্যা আবদার ধরেছিলেন, তিনি কোনোদিন হাতি দেখেননি, হাতি দেখতে চান। খবরটা মাহুত শোনে পরদিন। ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বিলাতি রাজকন্যার জন্য বরিশাল থেকে হাতি যোগাড় করে এনেছিলো কে এক হতভাগা। বড় একটা নৌকা যোগাড় করতে পারলে মধুমতী ধরে এগিয়ে যেতো মাহুত। শেখের নাতনিকে পিঠে নিয়ে একটা ছবি তুলিয়ে রাখতে পারলে মুখোশিকে কেউ হেলাফেলা করতে পারতো না আর। মুখোশির চোখে সেদিন সন্ধ্যায় জল দেখতে পেয়েছিলো মাহুত। আদর করে দিয়ে সে বলেছিলো, "কান্দিসনা। বিলাতের রাণীর সাথে তর ফটু তোলামু। সেই ফটু বান্ধাইয়া তোর গলায় ঝুলাইয়া দিমু। যেইখানে যাবি লোকজন তোরে দেখবো আর সেলামি দিবো।" মুখোশি কিছু বলেনি সেদিন। মুখোশি তেমন কিছু বলতে জানেও না। মুখে কিছু বলেও না সে। মুখোশির যা কিছু বক্তব্য, সবই তার লাদিতে। ক্ষেপে গেলে মুখোশি ভড়াশ করে এক চাঙড় লাদি ছেড়ে দেয়, খুশি হলে টুলুপ করে এক খাবলা। দীর্ঘদিন মুখোশির সাথে থেকে তার পোষ মেনে গেছে মাহুত, সে বুঝে গেছে, মানুষের সাথে হাতির কথোপকথন হতে পারে না। হাতির ডাক বুঝতে পারে শুধু অন্য একটা হাতি। মানুষের সাথে হাতির হতে পারে হাগোপহাগন। মেনে নিয়েছে মাহুত। তার পক্ষে তো আর মুখোশির মত যখন তখন যত্রতত্র হেগে বেড়ানো সম্ভব নয়, তাই নিজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ মানুষের ভাষাতেই করার চেষ্টা করে সে। মুখোশি সেইটুকু ছাড় দিয়েছে তাকে। হাতি হলেও মুখোশির বিবেচনাবোধ রয়েছে। মুখোশির লাদি পড়তে শিখেছে মাহুত দিনের পর দিন ধরে। হড়বড়িয়ে হেগেই খালাস হাতিটা, কিন্তু মাহুতকে তো সেই মলের অক্ষর চিনতে হয়েছে নিদারুণ পরিশ্রম করে, কখনো সূর্যের আলোয়, কখনো রাতে কেরোসিনের কুপি ধরে। মুখোশির এলোমেলো এবড়োখেবড়ো গুয়ের তালে লুকিয়ে আছে যে অন্তর্গত বেদনা আর জ্ঞানের কথা, তার রহস্যভেদ করতে সময় লেগেছে তার। সার্কাসে আর কেউ তা বোঝার চেষ্টা করেনি, তাই মাহুতের চাকরিটা আর কেউ কেড়ে নিতে পারেনি ফাঁকতালে। মাহুত এখন সব বোঝে। মুখোশির রাগের লাদি, আনন্দের লাদি, কষ্টের লাদি, একটু মনোযোগের জন্যে হাহাকারের লাদি, সবই সে এখন বুঝে যায়। সেবার কুলা পার্টি যখন এলো রাজশাহীতে, সার্কাসের তাঁবু পড়েছিলো নাটোরে। বনপাড়ায় বাস আটকে পয়সা তুলছিলো মাহুত। একজন সাহেব গাড়ি থেকে মাথা বার করে হাঁক দিলো, পার্টির খ্যাপ মারবা নাকি মাহুত? মাহুত সালাম করে বলেছিলো, জ্বি হুজুর। কোন পার্টি? পার্টির নাম শুনে ফড়াৎ করে এক চাকলা লাদি ছেড়েছিলো মুখোশি। মাহুত মুখোশির পিঠ থেকে নেমে সেই লাদি দেখেই বুঝে ফেললো, নাম মনে ধরেছে মুখোশির। কুলার মতো কান দুটোর জন্যেই হয়তো কুলা পার্টিকে মুখোশির পছন্দ হয়েছিলো। মাহুত মন দিয়ে খাটাখাটনি করেছিলো সেবার। দিন পাল্টে গেছে, গালকাটা রাজা সাহেব নাকি লণ্ডনে, তার পার্টির লোকেরা সব এদিক ওদিক পালিয়ে, বখশিশ দেবার আত্মা নাই কারো। কুলা পার্টির সাহেবরা বেশ দিলদরিয়া, ভালোই দিন যাচ্ছিলো মুখোশির। ইলেকশন স্যারেরা অনেক কড়াকড়ি করেছে সেবার, রঙিন পোস্টারের জাঁকজমক নেই, মাইক বাগিয়ে চক্কর মারার সুযোগ নেই, অনেক হাঙ্গামা। মাহুতি শুধু গায়ে কুলা মার্কা চাদর পরে পায়চারি করেছিলো এদিকে সেদিকে। কুলা পার্টির সাহেবেরা অবশ্য খুব যে আশাবাদী ছিলেন, তা নয়। এদিকে সিট পাবার আশা তেমন একটা করেনি। ক্যাণ্ডিডেট নাকি বিরাট গাছভুদাই, বলাবলি করছিলো এক ছোটো সাহেব। "এর থিকা এই হাতিডারে খাড়া করাইলেও বেশি ভুট পামু।" পিচিক করে মাটিতে কোকাকোলার কুলি ফেলে বলেছিলো সেই ছোটো সাহেব। মাহুত পলকের জন্যে মুখোশির মুখে খুশির ছায়া দেখতে পেয়েছিলো। তার মনে হয়েছিলো, আহা, মুখোশি যদি এম্পি হতে পারতো! সে হতো এক এম্পির মাহুত। মুখোশি নিজের জন্য সরকার থেকে গাড়ি পেতো, বাড়ি পেতো, কলাগাছ পেতো। মন্দ কী আর হতো? সংসদে কী হয় সে জানে না। কিন্তু মুখোশির মতামত তো সে লাদি পড়ে জানাতে পারতো সরকার বাহাদুরকে। মুখোশি টিকেট পায়নি, আর টিকেট পেলেও সিট পায়নি কুলা পার্টির সাহেব, যাকে অন্যেরা গাছভুদাই ডাকছিলো। কিন্তু তাতে মাহুতের মন খারাপ হয়নি। ইলেকশনে ভালোই কামাই হয়েছিলো তার আর মুখোশির। দূরে একটা গাড়ি আসতে দেখে মাহুতের অতীতচারণে ছেদ পড়ে। সে মুখোশিকে গুঁতো দিয়ে তুলে আনে পথের ওপর। রাস্তা আটকে দাঁড়াতে দক্ষ হয়ে গেছে মুখোশি। আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে ছলাৎ ছলাৎ করে দুই দলা হাগে সে। মাহুত সেই লাদি পড়ে। আহারে, মুখোশির পিপাসা পেয়েছে। গাড়িটা আস্তে করে এসে থামে মুখোশি থেকে কয়েক ফুট দূরে, তার ইনজিনটা বিরক্ত হয়ে ঝিকঝিক করতে থাকে শুধু। কচ্ছপের মতো বেরিয়ে আসে ড্রাইভারের মাথা, "এইখানেও বিজনেস শুরু কইরা দিছো?" মাহুত হাসে। "সেলামি, হুজুর!" মুখোশি শুঁড় বাড়িয়ে দেয়। ড্রাইভার একটা দশ টাকার নোট বার করে দেয় মুখোশির শুঁড়ে। মাহুতের কাছে ফিরে আসে শুঁড়টা। মুখ কালো করে সে বলে, "দশ টাকা দিলেন হুজুর?" ড্রাইভার অধৈর্য হয়ে আরেকটা দশটাকার নোট বার করে দেয়। মাহুত সেলাম দিতে খোঁচা দেয় মুখোশিকে। মুখোশি বয়স্কাউটের মতো চৌকস স্যালুট দেয় গাড়িটাকে, তারপর হেলেদুলে সরে গিয়ে পথ করে দেয়। প্রাইভেট গাড়িটা ঊর্ধ্বশ্বাসে পালিয়ে বাঁচে। মাহুত হাসে মনে মনে। সেলামি দিতে হবে বৈকি। মুখোশিকে ভয় পেতে হবে, সমঝে চলতে হবে। সে একটি হাতি। ছোটোকাল থেকেই। নতুন গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোঁড় গাড়িগুলোকে এ সত্যটা বুঝতে হবে। দূরে আরো কয়েকটা গাড়ি আসতে দেখে মাহুত। যাক, এতক্ষণে শুরু হয়েছে তবে বিজনেস। উল্কাবেগে ছুটে আসছে দুটো গাড়ি আর একটা অ্যামবুলেন্স। তবে অ্যামবুলেন্স কোনো শব্দ করছে না। দেখতে দেখতে দূরের ধূলোর দলা থেকে তারা পরিণত হয় চকচকে ধাতব গাড়িতে, মুখোশির সামনে এসে থেমে যায় একে একে। মাহুত হাসিমুখে বলে, "সেলামি, হুজুর!" একটা বাটিছাঁট মাথা বেরিয়ে এসে খিস্তি করে, "য়্যাই বোকাচ্চোদা! কীসের সেলামি?" মাহুত বিস্মিত হয়। কীসের সেলামি মানে? মুখোশি হাতি। তাকে সেলামি দিতে হবে না? এরকম কমবুদ্ধি লোকে গাড়ি চালায় কী করে? মুখোশিও চটে ওঠে, হড়হড় করে এক পশলা লাদি ছাড়ে রাস্তার ওপর। সামনের গাড়ি ভর্তি পাঁচ ছয়জন বাটিছাঁট মাথা, তারা সকলেই উসখুশ করে। অ্যামবুলেন্সটা চুপচাপ দিনে দুপুরেই নিজের রঙিন বাতিটা ঘোরাতে থাকে ধর্মের কলের মতো। আর মাঝখানের গাড়িতে বসা পুলিশের ডিআইজি ইখলাছুল হাই গর্জে ওঠেন দেহরক্ষী এএসআই মতলুবের ওপর, "এসব কী? রাস্তায় হাতি কেন?" মতলুব ঢোঁক গিলে বলে, "স্যার, সেলামি চায়।" ইখলাছুল হাই বলেন, "যত্তোসব রাবিশ! সরতে বলো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।" মতলুব গাড়ি থেকে নেমে একটা বাঘা গর্জন দেয়, "য়্যাই ব্যাটা! রাস্তা থেকে সর! জানিস কার গাড়ি আটকেছিস?" মাহুত বোঝে না কিছুই। সে বলে, "সেলামি হুজুর, হাতির সেলামি।" মতলুব বলে, "ডিআইজি স্যারের কাছ থেকে আবার কীসের সেলামি রে?" মাহুত ভয় পেয়ে যায়। সে কী! পুলিশের গাড়ি আটকেছে নাকি সে? তাড়াহুড়ো করে রাস্তা থেকে সরে গাড়িগুলো চলে যেতে দেয় মাহুত, মুখোশি বিরক্ত হয়ে ধুপধাপ হাগে দুই দলা। ইখলাছুল হাই গাড়িতে বসে বিরক্ত হন। টয়লেট ট্রেনিং করায়নি হাতিটাকে, এ কেমন মাহুত? মতলুব এসে বলে, "স্যার সরাইয়া দিছি স্যার।" ইখলাছুল হাই বলেন, "এরকম কি রোজই হয় নাকি এখানে?" মতলুব বলে, "সার্কাসের হাতি স্যার। খোরাকের টাকা ওঠানোর জন্যে সেলামি নেয় স্যার।" গাড়ি চলতে থাকে, মুখোশি আর মাহুত পেছনে পড়ে থাকে। ইখলাছুল হাই বলেন, "এ তো পুরোই চাঁদাবাজি! লোকাল পুলিশও কি বখরা পায় নাকি? কিছু বলে না কেন?" মতলুব মাথা চুলকায়। ইখলাছুল হাই মোবাইল তুলে গাইবান্ধার এসপিকে কল দ্যান। "মোতালেব, আপনার এরিয়ায় একটা হাতি রাস্তা আটকে চান্দা তুলতেছে। এটাকে আটকান, আর এর পরিচালককে গ্রেফতার করুন।" ফোন রাখতে না রাখতেই কল আসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। যুগ্ম-সচিব বাচপান শিকদার বলেন, "হাই সাহেব, কংগ্র্যাচুলেশন্স!" ইখলাছুল হাই বলেন, "না শিকদার সাহেব, এ তো সামান্য হাতি।" শিকদার বলেন, "আরে না না, হাতি নয়, পুরা বাঘ। রক্তখেকো বাঘ। আপনি এখন কুইক অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের ডিজি।" ইখলাছুল হাই চমকে ওঠেন। বলে কী! গিন্নিকে ফোন দেন তিনি। সুখবরটা জানানো দরকার। কালো জুতা আর কালো সানগ্লাস তো তাঁর আছেই, এবার বাকি সবও গায়ে চাপাতে হবে। প্রচুর মালপত্র অবশ্য পাঠাতে হবে নতুন কোয়ার্টারে। কয়েক বছর পর পর বাসা বদলানোর ঝামেলা, আর ভারি ভারি সেগুন কাঠের ফার্নিচার এখান থেকে ওখানে নেয়া, কী যে ঝামেলা পুলিশের চাকরিতে! গিন্নির সাথে আলাপ শেষে খোশমেজাজে মতলুবকে বলেন তিনি, "কোয়্যাবের ডিজি বানিয়ে দিলো। কপাল!" মতলুব বসে থেকেই চটাশ করে একটা স্যালুট কষায় নিজের কপালে। ওদিকে গাইবান্ধার এসপির হুড়ো খেয়ে স্থানীয় থানার এসআই ছয়জন কনস্টেবল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হাতি আটক করতে। মাহুত আবারও পথের ওপর মুখোশিকে দাঁড় করিয়ে ভাবছিলো, পুলিশের গাড়ি আটকে কাজটা সে ঠিক করলো কি না। দূরে পুলিশের গাড়ির প্যাঁ-পোঁ শুনে মাহুত সচকিত হয়ে ওঠে। বুঝতে পারে, আশেপাশে সবচেয়ে বড় কোনো অপরাধী এখন একজনই, সে নিজে। মুখোশিকে জোর তাড়া লাগায় সে, "ভাগ মুখোশি, ভাগ! পুকুরের কাছে যা!" মুখোশি হেলেদুলে ছুট দেয় মাঠ পেরিয়ে। এস আই ইমদাদ মোটর সাইকেলে চড়ে এসে দেখতে পায়, মুখোশি মাঠের কোণাকুণি ছুটছে। সে পুলিশদের ইঙ্গিত করে গাড়ি থেকে নেমে পিছু নিতে। কনস্টেবলরা চোঁ-চাঁ দৌড় লাগায়। একটা তালপুকুরে মুখোশিকে নেমে পড়ার হুকুম দেয় মাহুত। মুখোশি আয়েশ করে ধীরেসুস্থে নেমে পড়ে পুকুরে, মাহুত লুকিয়ে পড়ে একটা ঝোপের আড়ালে। পুলিশের বাবার সাধ্য নেই পুকুর থেকে মুখোশিকে টেনে তোলে। মুখোশি মনের সুখে পুকুরের পানি শুঁড়ে নিয়ে গায়ে ছিটায়, খায়, লাদি ছাড়ে। হাতির লাদি মাছের জন্যে ভালো। প্রচুর ভিটামিন আছে। পুলিশের দল পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে খিস্তি করতে থাকে। মাহুত মনে মনে চটে। হাতির মতো একটা খানদানী জানোয়ারের কদর করতে শিখলো না এরা। অথচ মুখোশি খালকাটা পেসিডেন্টকে সালাম করতে গিয়েছিলো, গালকাটা রাজার হয়ে ইলেকশনে খেটেছিলো, অল্পের জন্যে শেখের নাতনির সাথে ছবি তুলতে পারেনি, কিন্তু একদিন বিলাতের রাণীর সাথে ঠিকই ছবি তুলবে, তাকে এতো অবহেলা, এতো অসম্মান? মুখোশি আজ মরে গেলেও যা তার দাম লাখ টাকা, আর তাকে খিস্তি বকে এসব বামন পুলিশ? এসআই ইমদাদ মোটর সাইকেলে করে এসে থামে পুকুরের পাড়ে। "এইটা পুকুরে নামলো ক্যামনে?" খেঁকিয়ে ওঠে সে। কনস্টেবল বলে, "স্যার, মাহুত হারামজাদার কাম।" ইমদাদ বলে, "টাইনা তোলোন যাইবো না?" কনস্টেবলরা একে অন্যের মুখ দ্যাখে। দোতলা সমান উঁচু হাতিকে পুকুর থেকে কয়েকজন পুলিশ কি আর টেনে বের করতে পারে? এই হাতি নিজ থেকে উঠলে এক কথা, নয়তো মাহুত যদি এসে ডেকে তোলে। ইমদাদ বললো, "এইটারে এখন আটকাই ক্যামনে?" এক কনস্টেবল বলে, "স্যার, এইটারে ধরলে যদি অ্যানথ্রাক্স হয়?" মুখোশি এক শুঁড় পানি ছুঁড়ে মারে পুলিশের দিকে। ইমদাদের ওয়্যারলেস কটকট করে ওঠে। সে কানে দিয়ে সোজা হয়ে বসে, "স্যার! স্যার! জ্বি স্যার! বন্দী করার চেষ্টা করছি স্যার! এখনও দেখতে পাইনি স্যার! না স্যার! পালাতে পারবে না স্যার!" কনস্টেবলরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। খাটনি বাড়লো। ইমদাদ বলে, "ডিআইজি স্যার এখন কোয়্যাবের ডিজি। কোয়্যাবের লোকজন আসবে হাতিরে গ্রেফতার করতে। ততক্ষণে তোমরা খোঁজ লাগাও বাইনচোদ মাহুত কোথায় ঘাপটি মাইরা রইছে!" মাহুত ঝোপের আড়াল থেকে সব শোনে। তার বুকটা হিম হয়ে যায়। কোয়্যাবের লোকজন এসে তো মুখোশিকে রিমাণ্ডে নেবে। তারপর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে নিয়ে যাবে কোনো নির্জন কলতলায়। সেখানে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসী হাতিরা কোয়্যাবের ওপর গুলিবর্ষণ করবে। আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুঁড়বে কোয়্যাব। পালাতে গিয়ে মারা পড়বে মুখোশি। অকুস্থলে খুঁজে পাওয়া যাবে একটা কাটা রাইফেল, তিন রাউণ্ড পিস্তলের গুলি আর একটা আধখাওয়া কলাগাছ। মাহুতের চোখে জল আসে। টানা দশমিনিট নিঃশব্দে কাঁদে সে। এত জল যে জমা হয়ে ছিলো চোখে, সে আগে বোঝেনি। মুখোশি বোঝে না, তার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে। সে পানি ছিটিয়ে খেলা করে, আর লাদি ছাড়ে ধুপুশধাপুশ। চারপাশ ঘিরে রাখে বামন পুলিশের দল। এস আই ইমদাদ আপনমনে নিজের নসিবকে গালাগালি করতে থাকে। "এখন এই হাতিরে কতক্ষণ পাহারা দিমু? গোটা থানার লোক নিয়া চইলা আসছি!" এক কনস্টেবল বলে, "স্যার চলেন যাই গা। কোয়্যাবের লোকজন আইসা খুইজ্যা বাইর করবো।" ইমদাদের পছন্দ হয় কথাটা। সে গলা উঁচিয়ে বলে, "তোমরা কেউ কিচ্ছু দ্যাহো নাই। ঠিকাছে না? লও থানায় যাই। খাওনদাওন দরকার।" মাহুতের বুকে স্বস্তি এসে ঝাপটা মারে। খিস্তিবাজ পুলিশগুলো চলে যায় একে একে, একজন আবার যাবার আগে একটা ঢিল কুড়িয়ে ছুঁড়ে মারে মুখোশির গায়ে। মুখোশি রেগে গিয়ে হড়হড় করে লাদি ছাড়ে পুকুরে। পুলিশের গাড়ির এনজিনের শব্দ মিলিয়ে যাবার পর মাহুত ঝোপ থেকে বেরিয়ে এসে সাবধানে আশপাশটা উঁকি মেরে দেখে। তারপর শিস দিয়ে উঠে আসতে বলে মুখোশিকে। মুখোশি আয়েশ করে পুকুর ছেড়ে উঠে আসে ঝোপঝাড় পায়ে দলে। চটজলদি তার পিঠে বাঁধা হাওদায় উঠে পড়ে মাহুত, তারপর ইশারা করে ঘুরপথে সার্কাসের দিকে চলতে। এখন ভরসা ঐ আধফোলা তাঁবুটাই। মাহুত জানে, এ জাতিকে উদ্ধার করতে পারে একমাত্র মুখোশিই। তার পেছনের পায়ে ভর হয়ে দাঁড়ানো, আগুন-জ্বলা রিঙের ভেতর দিয়ে পার হয়ে যাওয়া, শুঁড় দিয়ে বল তুলে বালতির মধ্যে ফেলা, কোনোটিই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু মানুষের আইনে মানুষের চেয়ে বড় সবকিছুই ক্রসফায়ারে পড়ে। মুখোশিকে তাই সাবধানে থাকতে হবে, চার পা তুলে অ্যাটলাসের মতো ঠেকিয়ে রাখতে হবে ভেঙে পড়া আকাশ। কে না জানে, শুয়ে থাকলে বুদ্ধি বাড়ে? মাহুত মুখোশিকে জোর তাড়া লাগায়। পুকুরের জলে ভিজে মুখোশির মেজাজটা ভালো, সে কয়েক দলা খুশিমাখা লাদি ফেলে যায় নাম না জানা মাঠের ওপর। এই খবরের সাথে মিল কাকতালমাত্র
false
mk
বিদেশী হত্যার দায় গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হলে সবাই চমকে ওঠে। তার পরপরই রংপুরে ঘটে জাপানি নাগরিক কুনিয়ো হোশি হত্যা। বিদেশিদের নিশঙ্ক মনে বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ানোর মুক্ত পরিবেশে ছেদ পড়ে। হত্যার অভিযোগে আটক সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশি হলেও বিদেশি হত্যার পেছনের রাজনীতি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। উদ্দেশ্য নতুন না হলেও সন্ত্রাসের নতুন চরিত্র ও মাত্রা লক্ষ্য করার মত।গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশি নিহত হলে আতঙ্ক তৈরি হয় দেশি-বিদেশির মনে সমানভাবে। বিদেশি দূতাবাসগুলো নিরাপত্তার দাবিতে বেশ সোচ্চার হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা ঘাটতির কারণ দেখিয়ে পূর্বঘোষিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন, বৈঠক ও দেশীয় অনুষ্ঠান খুব দ্রুত বাতিল করে সারা বিশ্বে শঙ্কার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বিদেশি চলাচলে সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের দেশত্যাগসহ অনেক কিছুই চোখে পড়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করে নিরাপত্তা জোরদার করতে স্নায়ুচাপ বাড়িয়ে দেয়। নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা নিরাপদ মনে হলেও সারা দেশে বিদেশি নিরাপত্তার ব্যাপ্তি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।বাংলাদেশের নিরাপদ পরিবেশ না পেয়ে সন্ত্রাসী ক্রীড়নকরা বিদেশে আস্তানা গেড়ে বাংলাদেশে হামলা করার কলকাঠি নাড়লেও বিদেশি সরকারগুলোকে বেশ নির্বিকার দেখা যায়। সন্ত্রাসের বিশ্বায়নের সঙ্গে নিরাপত্তার ঝুঁকি আন্তর্জাতিক সীমানার বেড়া অনেক আগেই ভেঙে ফেলেছে। ইন্টারনেটের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সন্ত্রাসের মাত্রাও বেড়েছে। নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তার ধারণাও বদলে গেছে। সব দেশের দায় সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তার বর্মকে শক্ত করার জন্য।যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোর সমকামী ক্লাবে জঙ্গি হামলায় অর্ধশত মানুষের জীবনহানি হলেও কোনো দেশ নিরাপত্তার অভাব নিয়ে চেঁচামেচি করেনি। নিজ দেশে মরলে নিরাপত্তা হুমকির মাত্রার হেরফের হয় না বলেই মনে হয়। ইস্তাম্বুলের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার পর দ্রুত বেগে মেরামত কাজ শেষ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে সবাই সাধুবাদ জানায়। জঙ্গি হামলার উদ্দেশ্য পরাভূত হয়েছে বলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। জঙ্গিবাদী হামলার পর দ্রুত জনজীবন স্বাভাবিক করে জঙ্গি হামলার উদ্দেশ্যকে পণ্ড করার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে জীবনধারাকে স্থবির করে ফেলা যাবে না বলে পশ্চিমা নেতাদের নির্দেশনা শুধু তাদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেলেও তৃতীয় বিশ্বের প্রেক্ষাপট যেন সম্পূর্ণ আলাদা। ফ্রান্সের নিস শহরে ট্রাক দিয়ে পিষে মারলো ৮৪ জন নিরীহ মানুষকে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী অকপটে বললেন ফ্রান্সকে জঙ্গিবাদের মধ্যেই বাস করতে হবে।ইসলামিক স্টেট খেলাফতের পরিধি ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সমর্থিত বাহিনীর যুগপত্ আক্রমণের মুখে জায়গা হারাচ্ছে, প্রাণ হারাচ্ছে, সম্পদের ক্ষয় হচ্ছে। সম্মুখ যুদ্ধে পিছু হটলেও দৃশ্যত মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে জঙ্গি হামলার মাত্রা বেড়ে চলেছে। নিরাপদ স্থানের হদিস পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। বিদেশি দূতাবাসগুলো বাংলাদেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মুখে স্বাগত জানালেও নির্ভীক আচরণ থেকে দূরেই থাকছে।কূটনৈতিক পাড়াকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়ায় দেশীয়রা দুর্ভোগে পড়েছেন। চলাচলের কড়াকড়িতে গুলশান এলাকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা পথে বসতে চলেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিতের সরকারি কৌশল হিসেবে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্ছেদ নোটিস জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে স্বাভাবিক আচরণের বিপরীত অবস্থা প্রদর্শন করছে। প্রতিরক্ষা বর্মকে শক্ত করে হামলার সম্ভাব্যতা ও ক্ষতি কমানো গেলেও ঝুঁকি কমানো যাবে না। নিশ্চয়তা তৈরি করতে হলে সব রাষ্ট্রকে দায় নিতে হবে এবং স্ব স্ব ভূমিতে জঙ্গি ও উগ্র মতাদর্শের নিরাপদ জায়গার অবসান ঘটাতে হবে।গুলশানে হামলার পর সেনা অভিযানে সব হামলাকারী নিহত হয়েছে, শোলাকিয়ার ঈদ জামায়াতের হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে পাওয়া সূত্র থেকে কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিললে নয়জন ভয়ানক জঙ্গি নিহত হয়। সূত্র থেকে সূত্র খুঁজে গোয়েন্দারা এগুচ্ছে আর নতুন নতুন তথ্যের দেখা পাচ্ছেন। আইএস-এর নাম করে চালানো হামলার পেছনে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির মদদ সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে।গুলশানে বিদেশি হত্যার পরিকল্পনা বিদেশের মাটিতে হয়েছে এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশিরাই হামলা সংগঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বলে খবর বের হচ্ছে। বাংলাদেশের জঙ্গি হামলা শুরু থেকেই বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে ঘিরেই বিবর্তিত হয়েছে। বিএনপি জোট ক্ষমতা হারানোর পর ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসে। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠিত হলে জঙ্গিবাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় শাসক পরিবর্তন। শাসক বদলে আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরির উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই জঙ্গি হামলা আবর্তিত হয়। বিদেশি হত্যার পেছনে কাজ করেছে অদৃশ্য রাজনৈতিক স্বার্থ—যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করা।যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীকে বাঁচাবার জন্যই চালিয়েছে ইদানীং কালের জঙ্গি হামলা। হামলার পরিকল্পনার নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ওয়াশিংটনের হোটেল, পরিকল্পনায় জড়িয়েছেন ফাঁসিতে ঝোলা যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান ও জামায়াতের দেশি ও বিদেশি নেতারা। হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে প্রবাসী বাঙালি কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীকে বলে প্রকাশিত হয়েছে খবর। কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শেহজাদ রউফ অর্ক। এর আগেও একজন বাঙালি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক আইএসের জন্য যোদ্ধা সংগ্রহের কাজে নেমে ধরা পড়েছিল আরেক জন সরাসরি জঙ্গিদের হামলার পেছনে কাজ করছিলেন। এই সব বাঙালি বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে সহিংস ইসলামের চিহ্ন পাওয়া গেলেও খুব একটা জায়গা করে নিতে পারেনি। বিদেশি বিদ্বেষের উপস্থিতি আগে কখনও দেখা যায়নি। ৩০ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ধর্মান্ধতার বেড়াজাল ভেঙে মানুষের সার্বজনীন অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিবিষ্ট ছিল। শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠিনভাবে প্রত্যয়ী বাংলাদেশ লড়েছে ধর্মান্ধ পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানকে বাঁচাতে গিয়ে ইসলামকে ভর করে রাজনীতি করা দলগুলো বেছে নিয়েছিল সহিংসতার পথ। নিরীহ জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল অন্যায্য যুদ্ধ। জিহাদি তকমা লাগিয়ে জায়েজ করতে চেয়েছিল গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধকে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বদলে বাঁচানোর চেষ্টায় পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।দুইমেরু সম্পন্ন বিশ্বের ঠাণ্ডা লড়াইয়ের মারপ্যাঁচে ফেলে বাংলাদেশের অঙ্কুর বিকশিত হতে বাধা পেয়েছে পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি দেশ নিয়ে গড়ে ওঠা পশ্চিমা মোর্চা থেকে। মদদ পেয়েছে উগ্রবাদী সহিংস ইসলামে বিশ্বাসী রাজনীতি। জনতার আক্রোশ থেকে বাঁচতে অনেক যুদ্ধাপরাধী আশ্রয় পেয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোতে। ইউরোপ ও আমেরিকাতে গড়ে তুলেছে ইসলামের নামে উগ্রবাদী ঘাঁটি। চোখের সামনে সহিংস উগ্রবাদের বিস্তার ঘটলেও না দেখার ভান করে থেকেছে সেদেশের সরকার। ভূ-রাজনীতির স্বার্থ হাসিলের অবলম্বন হিসেবে ইসলামবাদী রাজনীতিকে সুরক্ষা দিয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার নামে। আফগানিস্তানের মুজাহিদ বাহিনী সময়ের বিবর্তনে পরিবর্তিত অবয়ব নিতে থাকে, জন্ম হয় তালেবান ও আল-কায়েদা। পৃথিবী সংক্রামিত হতে থাকে জঙ্গিবাদের ক্যান্সারে। ইরাক যুদ্ধের অদূরদর্শিতা থেকে জন্ম নিল বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক জঙ্গিবাদী অপশক্তি দায়েস বা ইসলামিক স্টেট এবং সিরিয়ার পশ্চিমা মদদপুষ্ট অরাজকতা থেকে পুষ্টি নিয়ে বিস্তার ঘটিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করলো।জঙ্গি হামলা হার্ড টার্গেট থেকে সরে গিয়ে সফট টার্গেটে নিবদ্ধ হলে নিরীহ মানুষ অকাতরে প্রাণ হারাতে থাকে। নিরীহ মানুষের নিরাপদ বিশ্ব হয়ে ওঠে মারাত্মকভাবে অনিরাপদ। কোথাও কম আর কোথাও বেশি। নিউইয়র্কের জোড়া স্তম্ভ ধ্বংস হলে ঘোষিত হলো জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।পঁচাত্তর পরবর্তী ২১ বছরের শাসনামলে ধর্মপুঁজি করা রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে জায়গা করেছে। ধর্মীয় মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়ে নতুন দলেরও জন্ম হয়েছে। রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তিকে পরিবর্তিত করে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাবার মানসে সহিষ্ণু ইসলামের মধ্যে উগ্রবাদকে ঢুকিয়ে মূলত তাদের শাসনকে স্থায়ী রূপ দিতে চেয়েছে। তৈরি হলো ধর্মান্ধকরণের মহাকৌশল, একদিকে আসলো পাকিস্তানি কৌশল অপর দিকে আসলো অঢেল রিয়েল, দিনার, ডলার ও পাউন্ড। ছোট থেকেই মাথা দখলের জন্য অলক্ষ্যে বদলে গেল পাঠ্যসূচী, গড়ে উঠলো নতুন নতুন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থ প্রাপ্তির বিদেশি নির্ভরতা কমাতে বিনিয়োগ করা হলো ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, মিডিয়া, ব্যবসা ও বাণিজ্যে। গড়ে উঠলো বিশাল উগ্রবাদী ইসলামের আর্থিক সাম্রাজ্য। মানুষের মনকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন মোড়কে জনকল্যাণমুখি সংস্থা। স্থায়ী ক্যাডার তৈরি ও ধরে রাখার জন্য শুরু করা হলো আর্থিক প্রণোদনা, চাকরি, ব্যবসার পুঁজি ও ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা ইত্যাদি।প্রবাসে বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় গড়ে উঠলো বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধী ও ইসলামি উগ্র মতাদর্শ ধারকদের নিরাপদ স্বর্গ। বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের ইসলামের দাওয়ার আড়ালে জিহাদি যোদ্ধা বানানো শুরু হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতারা দেশে চিহ্নিত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হবার সম্ভাবনায় পড়লে পশ্চিমা দেশে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশে চিহ্নিত জঙ্গিবাদী ও ইসলামি উগ্রবাদীদের দেখা যায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার রাস্তায়, নির্বিঘ্নে প্রচার চালাচ্ছে, মসজিদে বয়ান দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, সেমিনার করছে, রেডিও-টেলিভিশন কেন্দ্র চালাচ্ছে, পত্রিকা প্রকাশ করছে, উগ্রবাদের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। বিদেশে পড়তে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের জিহাদি বানিয়ে সিরিয়া পাঠাচ্ছে নতুবা বাংলাদেশ পাঠাচ্ছে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাতে।পশ্চিমা ডিগ্রির শিক্ষক সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সবচেয়ে বেশি ভয়ানক জঙ্গির জন্ম হয়েছে। শিক্ষকদের নামেও জঙ্গি হামলার সহায়তার অভিযোগ আসছে। যুক্তরাজ্যের শিক্ষা কর্মসূচির অংশীদার স্বনামধন্য স্কুলগুলোতে জঙ্গিবাদী মতাদর্শ শেকড় গেড়েছে। পশ্চিমা সখ্যে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বেশি জড়িয়ে পড়েছে। বাঙালি সংস্কৃতি ও কৃষ্টি চর্চার প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা আত্মপরিচয় ও আত্মগরিমার জায়গা সঙ্কুচিত করে মরু সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক প্রকারান্তরে জঙ্গিত্ব বরণে শিক্ষার্থীদের উত্সাহিত করেছে। দোষ না ধরলেও দায় খুঁজতে হবে নির্মোহভাবে।সরকার বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রবিরোধী বা জন-বিরোধী ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা হয় বিদেশের মাটিতে। বিদেশি হত্যার পরিকল্পনা হয় বিদেশের মাটিতে। বিদেশি নিরাপত্তার দায় কি বাংলাদেশের একার? বাংলাদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য নিরাপদ জায়গা করে দিয়ে নিরাপত্তা খুঁজলে সমাধান মিলবে না।জঙ্গি হামলায় জর্জরিত ফ্রান্স হুমকির মুখেই ইউরোপ ফুটবল শিরোপা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। নিস শহরে ট্রাক হামলার ৮৪ জনের প্রাণহানি হলে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী বলেন ফ্রান্সকে জঙ্গি হামলার মধ্যেই বাসকরা শিখতে হবে।বিশ্বকে নিরাপদ করতে হলে সব রাষ্ট্রকে সমানভাবে আন্তরিক হতে হবে। জঙ্গি মতাদর্শকে জায়গা দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। রাজনৈতিক স্বার্থকে চরিতার্থ করতে জঙ্গিবাদের ব্যবহার থেকে সরে আসতে হবে। এক দেশের জঙ্গি সব দেশের হুমকি বলে স্বীকৃতি না দিলে জঙ্গি হামলা বন্ধ করা যাবে না। থামানো যাবে না নিরীহ মানুষ খুন। জঙ্গিবাদের দায় শুধু আক্রান্ত দেশের নয়, দায় সব দেশকেই নিতে হবে ভবিষ্যতে নিরাপদ পৃথিবী গড়তে হলে। সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১০
false
ij
পন্ডিত শিবকুমার শর্মা এবং তাঁর সন্তুর ___ একটা সময় ছিল-যখন প্রাচীন ভারতের পশ্চিম দিকটায় শাসন করত পারস্য, মানে, ইরান । তেমনটা হলে যা হয়- বিজিত অঞ্চলের জীবনধারার ওপর আগ্রাসি পক্ষের সভ্যতা-সংস্কৃতির নিদারুন প্রভাব পড়ে-ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেও তাইই হয়েছিল এবং প্রাচীন ইরানের সে প্রভাব অনিবার্যভাবেই প্রাচীন ভারতের পশ্চিম দিকের সংগীতের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়েছিল। পারস্যের সন্তুর বাদ্যযন্ত্রটি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে ভীষনই লোকপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এভাবে সন্তুর বাদ্যযন্ত্রটি আজও পারস্যশাসনের স্মৃতি বহন করছে। তবে বাদ্যযন্ত্রের বিবতর্নের ধারাটি অত সরল নয়-বরং বেশ জটিল। কাজেই, সন্তুরের ওপর পারস্যের সন্তুর ছাড়াও প্রাচীন শততন্ত্রী বীণার প্রভাবও সংগীততত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপকগন লক্ষ করেছেন । সন্তুর যা হোক। দীর্ঘদিন ধরে সন্তুর ভারতবর্ষে- বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মিরে শুধুমাত্র লোকবাদ্যযন্ত্র হিসেবেই পরিচিত ছিল । উনিশ শ পঞ্চাশের দশক থেকে ভারতের প্রতিভাবান একজন সঙ্গীতজ্ঞ - পন্ডিত শিবকুমার শর্মা সন্তুরের সেই সীমাবদ্ধ গন্ডিটি ছাড়িয়ে সুরেলা ঐ তারের বাদ্যযন্ত্রটিকে নিয়ে গিয়েছেন লোকোত্তর এক উচ্চতায়- সন্তুরকে দান করেছেন এক গভীরতম স্বর্গীয় মহিমা- সেই সঙ্গে পেয়েছেন বিশ্বের সংগীতপিপাসু মানুষের অকৃত্রিম অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। শিবকুমার শর্মা ১৯৩৮ সালের ১৩ জানুয়ারি ভারতের জম্মুতে জন্ম গ্রহন করেন পন্ডিত শিবকুমার শর্মা । বাবা প্রখ্যাত গায়ক পন্ডিত উমা দত্ত শর্মা। পাঁচ বছর বয়েসে তবলায় ও কন্ঠে তালিম শুরু। পন্ডিত উমা দত্ত শর্মা সন্তুর নিয়ে ভাবতেন। ইচ্ছে, ছেলে যেন সন্তুরে ভারতীয় রাগসংগীত বাজিয়ে সন্তুরকে সারাবিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলে। তেরো বছর বয়েসে শিবকুমারের সন্তুর শেখা শুরু। বাবার স্বপ্ন সফল করতে হবে। পন্ডিত উমা দত্ত শর্মার স্বপ্ন সফল হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে তৎকালীন বোম্বে শহরে প্রথম এক অনুষ্ঠানে সন্তুরে রাগ বাজিয়ে দশর্কশ্রোতাদের মুগ্ধ করেন পন্ডিত শিবকুমার শর্মা । তারপর কী হয়েছিল তা আমরা কমবেশি জানি ... পাহাড়ি ধুন গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে সূর্যোদয় Click This Link সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২৩
false
mk
তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়ন দেশে তিন স্তরে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ স্তরে থাকবেন ‘ইনোভেটররা’। তাদের মেধা কাজে লাগিয়ে ‘এচিভাররা’ কাজ করবেন। সর্বশেষ স্তরে থাকবে ‘ফ্রিল্যান্সিং’। ফ্রিল্যান্সাররা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কাজ করবেন। এজন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। সোমবার রাজধানীর কাওরানবাজারে জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ‘ক্রিয়েটিং এ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকো-সিস্টেম-গবর্নমেন্টস রোল’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ কথা বলেন। তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে উক্ত গোলটেবিল আলোচনায় সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক সিপিএ ভেঞ্চার ক্যাপিটালের কনসালট্যান্ট টিনা জাবিন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান জামিল আজহার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের মহাপরিচালক বনমালী ভৌমিক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সুশান্ত কুমার সাহা, বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান, সহজ ডট কমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম তৈরির জন্য তিন স্তরের ‘পিরামিড স্ট্রাকচার’ নিয়ে কাজ করছে সরকার। প্রথম স্তরে থাকবেন ইনোভেটররা। পরের স্তরে থাকবেন এচিভারররা। সবশেষে থাকবেন ফ্রিল্যান্সাররা। ইনোভেটররা হয়ত সংখ্যায় অল্প হবেন কিন্তু দেশে আইটি শিল্পে তারা বিশাল অবদান রাখবেন। এর পরের স্তরে থাকবেন এচিভারররা, যারা আইটি ও আইটিএস গ্র্যাজুয়েশন করে কোম্পানির সিইও বা সিএফও হবেন। তাদের মেধা লালন করতে সরকার সহযোগিতা দেবে। সবশেষে থাকবেন যারা আমাদের ফ্রিল্যান্সিং খাতসহ অন্যান্য খাতে সংশ্লিষ্ট এবং এ খাতকে এগিয়ে নিতে ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন। এ তিন স্তরে কাজ হলে দেশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বমানের পর্যায়ে চলে যাবে। সরকারের ভিশন ’২১ বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। দেশের প্রতিটি মানুষকে প্রযুক্তি সুবিধা দেয়া হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সবার হাতের নাগালে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত। এ খাতে তাই দক্ষ জনবল তৈরি করা জরুরী। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিকাশে জেলায় জেলায় আইসিটি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় আইসিটি পার্ক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ সিলেটে ইলেক্ট্রনিক সিটি, ঢাকার মহাখালীতে আইটি ভিলেজ, রাজশাহী আইটি ভিলেজ, কাওরানবাজারে জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোর সফটওয়্যার পার্ক, নাটোর ফ্রিল্যান্সার ইনস্টিটিউট, গাজীপুরে আইসিটি পার্কসহ পর্যায়ক্রমে সব জেলায় আইসিটি পার্ক হবে। ফ্রিল্যান্সিং তথ্যপ্রযুক্তির খাতে আয়ের অন্যতম উৎস। ঘরে বসেই এ খাত থেকে বড় অঙ্কের টাকা আয় করা সম্ভব। সরকার এজন্য দেশে ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষ ফ্রিল্যান্সার গড়ে উঠলে ভিশন ২০২১-এর মধ্যে এ খাতে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে ‘ইনোভেশন ডিজাইন এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ একাডেমি’ (আইডিইএ) নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নতুন প্রকল্পে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবন, সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের সিড ফান্ড প্রদান ও গবেষণা ও উন্নয়নে সহায়তা দেয়া হবে। এভাবেই দেশে একটি অনন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকো-সিস্টেম তৈরি করতে আমরা কাজ করছি।গোলটেবিল আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, দেশে একটি স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম, ইনোভেশন কালচার তৈরি করতে আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শুনতে চাই যে, সরকারের কী কী করণীয়। আমরা প্রাইভেট সেক্টরগুলোর কাছ থেকে জানতে চাই তাদের প্রবৃদ্ধিতে সরকারের কাছে কোন্ ধরনের সুযোগ-সুবিধা চান। এজন্য বিশেষজ্ঞ ও প্রাইভেট সেক্টরের মতামত প্রয়োজন। আইসিটি ডিভিশন এ খাতসংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে একযোগে কাজ করার মাধ্যমে একটি ক্রিয়েটিভ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকো-সিস্টেম সৃষ্টি করা হবে।গোলটেবিল আলোচনায় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকো-সিস্টেম গড়ে তুলতে করণীয় ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনির্ভাসিটির ড. মাহমুদ হুসাইন কি-নোট উপস্থাপন করেন। দেশী তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সংযোগ, স্টার্ট-আপদের সহযোগিতা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গৃহীত ইনোভেশন ডিজাইন এ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ একাডেমির (আইডিয়া) উদ্যোগে গোলটেবিল আলোচনায় বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫০
false
rg
লেখক বন্ধুদের লেখা নিয়ে কিছু এলোমেলো ভাবনা। রেজা ঘটক এ বছর অমর একুশে বই মেলায় আমি ২৭ দিন গিয়েছিলাম। নতুন বইয়ের নতুন ঘ্রাণ আমাকে বার বার মেলায় যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে। নতুন বই হাতে নিলে মনটাও ভলো হয়ে যায়। পাশাপাশি কিনতে না পাড়ার বিড়ম্বনায় মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। আমার অনেক বন্ধু হয়তো বিষয়টা বুঝতে পেরে অনেকেই আমাকে বই উপহার দিয়েছে। আমি তাদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। আবার আমার অনেক বন্ধু আমার কাছে বই চেয়ে না পেয়ে তাদের মন খারাপের বিষয়টিও আমি খুব বুঝতে পারি। বাট, আমার সীমিত আয় আর এই বিপুল চাহিদার কোনোই ব্যালেন্স নেই। তাই মন খারাপ করাও ঠিক যৌক্তিক হবে না। ইতোমধ্যে আমার অনেক বন্ধুর লেখা পড়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি, তাদের লেখার বেশ উন্নতি হয়েছে। যাদের নাম বলতে আমার কোন অসুবিধা নেই। যেমন আহমাদ মোস্তফা কামাল। ওর এক্সপারিমেন্টগুলো আমার দারুন পছন্দের। উপন্যাস নিয়ে ও যেভাবে এক্সপারিমেন্ট করলো ওর অন্ধ জাদুকর-এ, আমি বেশ আশাবাদি ওকে নিয়ে। পড়লে যে কারো মনে হবে- চরিত্রগুলো আবার নতুন করে সামনে আসছে। নতুন করে তাদের আবার চিনছি। অনেকটা প্রবন্ধের আলোকে উপন্যাসের ব্যবচ্ছেদ। কামালের চরিত্রের সাথে ফিলোসপিক্যাল কো-রিলেশানটা বেশ উপভোগ্য। ও একটা সুনির্দিষ্ট ফিলোসপি নিয়ে আসে। যা নতুন করে ভাবনা তৈরি করে পাঠকের মনে। এটা আমি খুব এনজয় করি। অন্ধ জাদুকর নিয়ে আমি তাই বেশ আশাবাদি। কামালের গল্পে কিছু না বলা দৃশ্যায়ন থাকে, যেখানে পাঠক তার নিজের মতো করে স্থান-কাল-পাত্র সাজাতে পারে। এই যে সুযোগ লেখক করিয়ে দেন, এটা একটা মস্ত কাজ। দুনিয়ার সব বড় বড় রাইটারদের এই ক্ষমতাটা আছে। কামাল যতো লিখছে, ও ততো শাণিত হচ্ছে। কামালের গল্পগ্রন্থ যেমন `দ্বিতীয় মানুষ', `আমরা একটি গল্পের জন্য অপেক্ষা করছি', `অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না বলে', `ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ', `ভোর ও সন্ধ্যারা নামছে বেদনায়', এবং উপন্যাস `আগন্তুক' এবং `অন্ধ জাদুকর' পড়ে আমি ভীষণভাবে আশাবাদি। আলফ্রেড খোকন কবি। কিন্তু আমি ওর গদ্যেরও ভীষণ ভক্ত। ওর কবিতায় একটা না বলা ভাষা আছে। কিছু না বলা স্বৃতিচারণ আছে। কিছু শব্দ নিয়ে খেলা আছে। আছে কিছু মুন্সিয়ানা শব্দের ব্যবহারে। জীবনানন্দের যারা ভক্তকুল, তারা হয়তো নতুন জীবনানন্দকে খুঁজে পাবে খোকনের মধ্যে। খুব সাধারণ জিনিস কিংম্বা ভাবনাকেও খোকন কবিতা বানিয়ে ফেলে। এটা সবাইকে দিয়ে হয় না। একটা সময় কেটেছে আমার খোকনের উৎপাতে। হয়তো ও দুটা লাইন বানালো। এবার ওইদিন ওর ওই দুই লাইন আমরা যারা ওর বন্ধ, তাদের সারাদিন হাজারবার শোনার জন্য বাধ্য করতো ও। এখন সেই ছেলেমানুষিটা নেই। বাট নিজেকে অনেক পরিশীলিত করেছে ও। বিশেষ করে এক বিংশ শতাব্দিতে ওর কবিতা নতুন মাত্রা নিয়েছে। ওর ভাবনা অনেক দিক পরিবর্তন করেছে। ওর ভাষার প্রতি দখল অনেক ঈর্ষা করার মতো। নিছক হেয়ালির কোনো বিষয়ও খোকনের হাতে কবিতা হয়ে যায়। আর ওর গদ্য অনেকটা দার্শনিকের হেলিকাপ্টার ভ্রমণের মতো। বিন্দু বিসর্গ সবকিছুকেই ও লেখার আইটেম বানাতে পারে। আমি খোকনের লেখা নিয়েও খুবই আশাবাদি। খোকনের কাব্যগ্রন্থ `উড়ে যাচ্ছো মেঘ', `সম্ভাব্য রোদ্দুরে', `ফালগুনের ঘটনাবলী', `মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ', `সে কোথাও নেই', `সাধারণ কবিতা' এবং গদ্যজার্নাল `আলের পাড়ে বৈঠক' পড়ে আমার শুধু একথাই মনে হয়েছে যে, খোকনের লেখার শ্রেণীবিন্যাস করলে ওর কাব্যিক ও ভাষার দখলের উন্নতি সত্যিই চোখে পড়ার মতো। একজন বড় কবি যেভাবে নিজেকে বিচরণ করায় খোকন দিনদিন সেদিকেই যাচ্ছে। ভাবতে ভালোই লাগছে যে ও বড় কবিদের কাতারে যাবে।আমি এই ধারাবহিক লেখায় আমার সকল লেখক বন্ধুদের লেখা ও বিষয় আশয় নিয়ে লিখতে চাই। বন্ধুদের মতামত পেলে আমি হয়তো আরো দুঃসাহসী হয়ে উঠবো। এমনিতে আমি ভীষণ সাহসী। কারো কোনো ঠ্যাস মারা বা ব্যঙ্গবিদ্রুপে আমার কিছুই যায় আসে না। আমার যার যা ভালো লাগে, তা বলতে আমি পছন্দ করি। আবার যার যা কিছু খারাপ লাগে তা মাইক নিয়ে না বললেও আলাপের জায়গা পেলে না বলে থাকতে পারি না। ভালোকে ভালো বলায় আর খারাপকে খারাপ বলার স্পর্ধা আমার ছোটবেলা থেকেই। আমার বন্ধুরা বলে যে আমার চোপার জন্য নাকি চাকরি বাকরিও পাইলাম না। আসল সত্য হল চাকরি করা মোটেও আমার কাজ নয়। আমার যখন যা ভালো লাগে, তাই করি। ভবিষ্যতেও করে যাবো। কেউ আটকাতে পারবে না। এদিক দিয়ে আমি গোয়ারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গোয়ার। আবার আমি যখন কিছু পড়ে মজা পাই, তার সবকিছু পড়ার জন্য উতলা হয়ে উঠি। ফ্রি-ল্যান্স রিসার্স করেছি ১০ বছরের বেশি। বাংলাদেশের সব বড় বড় এনজিও, রিসার্স প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেক। অনেকে যাকে খুব ভালো মানুষ হিসাবে চেনেন, আমি হয়তো তার অনেক আকাম বা খারাপ কাজের ফিরিস্তি দিতে পারবো। আবার অনেক ভালো মানুষের সাথে হয়তো এখনো আমার পরিচয় হয়নি।বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার আমি ৫০টির বেশি তন্যতন্য করে ঘুরেছি। সেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও কর্ম অভিজ্ঞতা আমার অনেক প্রতিষ্ঠিত বন্ধুদেরও নেই। নতুন মানুষের সাথে মিশে এবং মিশতে আমার খুব ভালো লাগে। পুরানা মানুষদের পুরানা প্যাঁচালী আর ভালো লাগে না। অনেক লোককে আমি চোখের সামনে খারাপ হতে দেখেছি। অনেক লোককে আমি প্রতারণার খপ্পরে পড়তে দেখেছি। আর প্রতারণা আমার ছোটবেলা থেকেই সঙ্গি। প্রতারণা নিয়ে ভবিষ্যতে একটা বড় গল্প লেখার ইচ্ছা আছে। আমি কর্মের মধ্যে বাঁচতে চাই। যারা কাজ না জেনে মুখে খই ফোঁটানোয় ওস্তাদ, তাদের আমি ভীষণ ভয় পাই। আর মিডিয়ার বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমের লোকদের বরাবরই পাপারাজ্জি মনে হতো। এখনো তাই মনে হয়। সব সময় সুবিধা আর সুযোগ সন্ধানি চাপাবাজদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করাটাও বোকামি। যুদ্ধের মধ্যে থেকে যুদ্ধ দেখায় আমার বেশি আনন্দ। বাহির থেকে অন্য কোনো চাপাবাজের মুখে শুনে আসল ঘটনাকেই আমার সন্দেহ লাগে। সর্বশেষ বিডিআর বিদ্রোগ ও আর্মি অফিসারদের মেরে ফেলার ঘটনা আমাদের মিডিয়া যেভাবে পাল্টি দিয়ে দেখাল। প্রথম মিডিয়া ছিল বিডিআরদের পক্ষে। সেই মিডিয়া আবার রাতারাতি পাল্টি খেয়ে এখন আর্মির পক্ষে। মাঝখান থেকে সাধারণ জনতা কিছুই বুঝল না। যারা করার তারা কাম করে গেল। যারা বলার তারা মুখ বুজে থাকল। বাংলাদেশের মিডিয়ার সত্যিকার কোনো চরিত্র নেই। সেটি তারা আবারো প্রমান করলো যে তারা আসলে পাপারাজ্জি।আমার লেখক বন্ধুদের অনেকেই এই পাপারাজ্জি দলের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মেম্বার। ফলে এখানে সরাসরি কথা বললে পরাদিন অনেকের চেহারার দিকে তাকানো যাবে না। তবু রোজ যেমন সূর্য ওঠে আমরা একটা নতুন স্বপ্নের জন্য অপেক্ষা করি। কারো দোষ না দিয়ে কারো কারো ভালোটুকু এখানে বলার চেষ্টা করবো। ************** চলবে**************
false
rn
হে চন্দ্রকারিগর তোমায় জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। 'আমার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ' -মুহম্মদ জাফর ইকবাল | ১৮ জুলাই ২০১৩ হুমায়ূন আহমেদ আমার বড় ভাই তাকে নিয়ে নৈর্ব্যক্তিকভাবে কিছু লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, যেটাই লিখি তার মাঝে ব্যক্তিগত কথা চলে আসবে, আশা করছি পাঠকেরা সে জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। হুমায়ুন আহমেদ এই দেশের একজন বিখ্যাত মানুষ ছিল, বিখ্যাত মানুষেরা সবসময় দূরের মানুষ হয়, সাধারণ মানুষের কাছে তাদের পৌঁছানোর সুযোগ থাকে না। হুমায়ূন আহমেদ মনে হয় একমাত্র ব্যতিক্রম, কমবয়সী তরুণেরা তার বই থেকে বই পড়া শিখেছে, যুবকেরা বৃষ্টি আর জোছনাকে ভালোবাসতে শিখেছে, তরুণীরা অবলীলায় প্রেমে পড়তে শিখেছে, সাধারণ মানুষেরা তার নাটক দেখে কখনও হেসে ব্যাকুল কিংবা কেঁদে আকুল হয়েছে। (হুমায়ূন আহমেদ কঠিন বুদ্ধিজীবীদেরও নিরাশ করেনি, সে কীভাবে অপসাহিত্য রচনা করে সাহিত্যজগৎকে দূষিত করে দিচ্ছে তাদের সেটা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে!) হুমায়ূন আহমেদ শুধু বিখ্যাত হয়ে শেষ করে দেয়নি সে অসম্ভব জনপ্রিয় একজন মানুষ ছিল। আমিও সেটা জানতাম কিন্তু তার জনপ্রিয়তা কত বিশাল ছিল সেটা আমি নিজেও কখনও কল্পনা করতে পারিনি। তার পরিমাপটা পেয়েছি সে চলে যাওয়ার পর (আমি জানি এটি একধরনের ছেলেমানুষী, কিন্তু মৃত্যু কথাটি কেন জানি বলতে পারি না, লিখতে পারি না।) .... আমি আর আমার স্ত্রী চব্বিশ ঘণ্টার নোটিসে নিউ ইয়র্কে হাজির হলাম। প্রকাশক মাজহার আমাদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে গেলেন, সেখানে তার স্ত্রী শাওনের সঙ্গে দেখা হল। ওর বিছানায় নানা ধরনের যন্ত্রপাতি হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে রেখেছে। তাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। অবস্থা একটু ভালো হলে তাকে জাগিয়ে তোলা হবে। আমরা প্রতিদিন কাকভোরে হাসপাতালে যাই। সারাদিন সেখানে অপেক্ষা করি, গভীর রাতে ব্রুকলিনে ফিরে আসি। হুমায়ূন আহমেদকে আর জাগিয়ে তোলা হয় না। আমি এত আশা করে দেশ থেকে ছুটে এসেছি, তার হাত ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলব, অভিমানের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল– মুহূর্তে সেই দূরত্ব দূর হয়ে যাবে। কিন্তু সেই সুযোগটা পাই না। ইনটেনসিভ কেয়ারের ডাক্তারদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। এতদিনে তারা বিছানায় অসহায়ভাবে শুয়ে থাকা মানুষটির গুরুত্বের কথাও জেনে গেছে। তারা আমাকে বলল, “হুমায়ূন আহমেদ ঘুমিয়ে থাকলেও তারা তোমাদের কথা শুনতে পায়। তার সঙ্গে কথা বলো।” তাই যখন আশপাশে কেউ থাকে না তখন আমি তার সঙ্গে কথা বলি। আমি তাকে বলি– দেশের সব মানুষ, সব আপনজন তার ভালো হয়ে ওঠার জন্য দোয়া করছে। আমি তাকে মায়ের কথা বলি, ভাইবোনের কথা বলি, ছেলেমেয়ের কথা বলি। সে যখন ভালো হয়ে যাবে তখন তার এই চেতন-অচেতন রহস্যময় জগতের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে কী অসাধারণ বই লিখতে পারবে তার কথা বলি। তার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হলেও এটা যে স্বপ্ন নয় আমি তাকে মনে করিয়ে দিই, দেশ থেকে চলে এসে এখন আমি যে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি এটা যে সত্যি, সেটা তাকে বিশ্বাস করতে বলি। ঘুমন্ত হুমায়ূন আহমেদ আমার কথা শুনতে পারছে কি না, সেটা জানার কোনো উপায় নেই। কিন্তু আমি বুঝতে পারি সে শুনছে। কারণ তার চোখ থেকে ফোটা ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। আমি অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকি।... http://arts.bdnews24.com/?p=5151 সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৩১
false
hm
নিজ্ঞাপন ০৪ খালি বাড়িতে যুবক তাড়া করছে যুবতীকে। তবে রয়েসয়ে। যুবকের পরনে গেঞ্জি আর লুঙ্গি, যুবতী শাড়ি। শুধু শাড়িই নয়, যুবতীর পরনে অন্যান্য আনুষঙ্গিকে কাপড়চোপড়াদিও আছে। নেপথ্য বাজছে গান পোরো, পোরো চৈতালি সাঁঝে কুসুমী শাড়ি আজি তোমার রূপের সাথে চাঁদের আড়ি পোরো, পোরো চৈতালি সাঁঝে (উঁহু, অনুপ জলৌটার গাওয়া গানে হবে না। এখানে আরো মাদকতা চাই। আরো রস চাই। আরো ইয়ে চাই। সেক্সি আবহাওয়া লাগবে।) যুবকের হাতের ছোবলে যুবতীর আঁচল কিছুটা স্খলিত হয়ে পড়ে। সেটা সামলাতে গিয়ে যুবতী যুবকের আলিঙ্গনে কিছুক্ষণের জন্য বন্দিনী হয়ে পড়ে। যুবক মুখ নামিয়ে আনে চুমো খাওয়ার জন্য, কিন্তু যুবতী আলিঙ্গন ছাড়িয়ে আবার ছুট দেয়। গান বাজতে থাকে পোরো ললাটে কাঁচপোকার টিপ পোরো ললাটে কাঁচপোকার টিপ আলতা পোরো পায়ে তুমি আলতা পোরো পায়ে হৃদি নিঙাড়ি তুমি আলতা পোরো পায়ে হৃদি নিঙাড়ি পোরো, পোরো চৈতালি সাঁঝে ... রান্নাঘর থেকে বারান্দা, বারান্দা থেকে অন্দরমহলে কিছুক্ষণ ছুটোছুটির পর শোবার ঘরে এসেই যুবতী ফাঁদে আটকা পরে। যুবক দরজার গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়, যুবতী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে শ্বাস ফেলতে থাকে, তার ঊর্ধ্বাঙ্গ আন্দোলিত হয় শ্বাসের ঢিমে তালে। (দর্শক মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে নিজ্ঞাপন, যেখানে স্ফূরিতবক্ষা মডেলা প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করে আর হাঁপায়। মাহবুব লীলেন হাসেন।) গানেরও তাল ফেরে। দাদরার (নাকি দাদরার কোন খালাতো ভাই) সাথে লয় মিলিয়ে যুবক এবার ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় যুবতীর দিকে। মতলব খারাপ। গান বাজতে থাকে। প্রজাপতির ডানাঝরা সোনার পাতে প্রজাপতির ডানাঝরা সোনার পাতে ভাঙা ভুরু জোড়া দিও ভাঙা ভুরু জোড়া দিও রাতুল শোভাতে বেল-যুঁথিকার গোড়ের মালা পোরো খোঁপাতে বেল-যুঁথিকার গোড়ের মালা পোরো খোঁপাতে দিও উত্তরীয় শিউলি বোঁটার রঙে ছোপাতে এই গানের সাথেই যুবক দুহাত বাড়িয়ে যুবতীর মুখ নিজের করপুটে নিয়ে আদর শুরু করবে। ভুরুর প্রসঙ্গে সে আঙুলে ছুঁয়ে দেখবে ভুরু, খোঁপার প্রসঙ্গে টান দিয়ে খোঁপা খুলে দেবে। ইত্যাদি। বেশি ধ্যাষ্টামো না করলেই ভালো। রয়েসয়ে। আবার তাল ফিরবে। যুবক এক ঝটকায় যুবতীর দুই বাহুমূল ধরে আকর্ষণ করবে নিজের দিকে। শাড়ি খসে পড়বে কাঁধ থেকে, বেচারির এখন ব্লাউজই সম্বল। গান বাজবে। রাঙা সাঁঝের সতিনী তুমি রূপকুমারী রাঙা সাঁঝের সতিনী তুমি রূউউউউপকুমারী পোরো, পোরো চৈতালি সাঁঝে কুসুমী শাড়ি ...। যুবতী এবার যুবকের কব্জি চেপে ধরবে। ফিসফিস করে মাদকতাময় কণ্ঠে বলবে, "তুমিও কিছু পোরো!" যুবক বুঝতে পারবে না, বলবে, "কী পরবো?" যুবতী লজ্জারুণ হাসি হাসবে। এই হাসির দাম বর্তমান বাজারে পৌনে দুই লাখ টাকা ভরি। যুবক এবার বুঝতে পারবে। খুব ধীরে ধীরে হাসি ছড়িয়ে পড়বে তার মুখে। ক্যামেরা পিছিয়ে আসবে, ঘরের আলো ঘোলা হয়ে আসবে, ফোকাস সরে আসবে এই যুগলের ওপর থেকে, বেরসিক নেপথ্য কণ্ঠ ফিসফিস করে বলবে, "দুর্নিবার কনডম! সকল পুরুষের পরিধেয়!!" (পরবর্তী নিজ্ঞাপন সংসারে এক সন্ন্যাসীর ফরমায়েশ অনুযায়ী নারীদের সেবনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণবড়ি। কনডমের প্রস্তাবনাটিও তাঁরই ছিলো। পাঠকপাঠিকা পরবর্তী নিজ্ঞাপনের মশলা যুগিয়ে দিতে পারেন আমাকে। ধন্যবাদ।)
false
rg
মাকে খুব মনে পড়ে !!! মাকে খুব মনে পড়ে। যাদের মা নেই, তাদের পৃথিবী সত্যি সত্যি অন্যরকম। যাদের মা আছে সেই কষ্ট তারা বুঝতে ঠিক পারবে না। বোঝানো সম্ভবও নয়। জীবনের সকল দুঃখ-আনন্দ একসাথে যাকে বলা যেতো, সে ছিল আমার মা। মায়ের চেয়ে বড় বন্ধু পৃথিবীতে নাই। যারা মা হারিয়েছে তাদের চেয়ে অভাগা আর কে হতে পারে! ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি আমি মাকে হারাই। মাকে হারানোর সেই বেদনা আজো সমান ভাবে বুকের গহীনে বাজে। নিরন্তর সেই বোবা কষ্ট আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মা হারানোর বেদনা জীবদ্দশায় পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন একটা অধ্যায়। এই বেদনা ঠিক ভাষায় অনুবাদ করা যায় না। শব্দে আটকানো যায় না। মুখে বলাও যায় না, কেমন ব্যথাতুর সেই কষ্ট। আমার মা ছিলেন একজন সত্যিকারের গ্রামীণ বাঙালি নারী। পৃথিবীর সকল সন্তানই মনে করে, তার মায়ের হাতের রান্না সবচেয়ে সুস্বাদু। আমিও তাই মনে করি। আমার মায়ের হাতের রান্নার এখনো আমি সুস্পষ্টভাবেই মনে করতে পারি। খুব ভালো রান্না জানতেন মা। মাকে সারা জীবন সুতার শাড়ি পড়তে দেখেছি। একটা কি দুইটা স্পেশাল শাড়ি মা ট্রাংকে রেখে দিতেন। কোথাও বেড়াতে গেলে সেই শাড়ি পড়তেন। এছাড়া বারো মাস মাকে দেখেছি দুইটা শাড়ি পড়েই জীবনযুদ্দ চালাতে। সব সময় পড়ার জন্য যে দুইটা শাড়ি, ওগুলো ছিড়ে গেলে বাবা আবার নতুন দুইটা শাড়ি কিনে আনতেন। রোজ গোসলের পর মা সেই শাড়ির একটি পড়তেন আর অন্যটি ধুয়ে শুকা দিতেন। এ নিয়ে মায়ের মধ্যে কোনো দিন কোনো দুর্ভাবনা দেখিনি। মনকষ্টও দেখিনি। দুইটা শাড়িতেই আমার মা ভারী খুশি থাকতেন। বছর শেষে মায়ের দুইটা শাড়ি দিয়ে কাঁথা সেলাই হতো। প্রতি বছর আমরা ভাইবোনরা কেউ একজন সেই কাঁথা আগাম বুকিং দিতাম। কে কোন বছর সেই কাঁথা পাবে তা আগেভাগেই মা ঘোষণা দিতেন। যাতে এই নিয়ে কোনো বচ্চা না হয়। আমরা অনেকগুলো ভাইবোন। পাঁচ ভাই চার বোন। তাই কাঁথা ভাগে পাবার সিরিয়াল আসতে মিনিমাম নয় বছর লাগতো। আমরা ভাইবোনরা তাই নিয়েই বরং সন্তুষ্ট থাকতাম। মা ছিলেন পুরোপুরি গৃহিনী। সংসারের যাবতীয় কাজ নিজের মনে বেশ আনন্দের সঙ্গেই করতেন। কোনো দিন মাকে দেখিনি সংসারের কাজে একটু অবহেলা করতে। সংসারই ছিল মায়ের কাছে এক অন্য ধর্ম। আমার মা ক্লাস টু-থ্রি পর্যন্ত স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। মায়ের দাদুভাই ছিলেন মাস্টার। বাড়িতে তার দাদুর কাছেও পড়া দেবার নিয়ম চালু ছিল। মায়ের কাছে সেই গল্প শুনেছি। আমার বাবাও অনেকটা তাই। ক্লাস থ্রি কিংম্বা ফোর পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। কিন্তু সন্তানদের স্কুলের ব্যাপারে বাবা মা ছিলেন সমান আগ্রহী। আমাদের পাঁচ ভাইয়ের তিনজন মাস্টার্স করেছি, একজন বিএ পাস করেছে আর একজন মেট্রিক ফেল। চার বোনের একজন মাস্টার্স পাস, দুইজন ক্লাস টেন পর্যন্ত আর একজন ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশুনা। আমাদের গ্রামে এটা অনেকটা বিরল ঘটনা। আমাদের পড়াশুনার ব্যাপারে মা-বাবার প্রবল আগ্রহের কারণেই আমরা পড়াশুনা করতে পেরেছি। আমাদের বিশাল সংসারে কখনোই সত্যিকারের স্বচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু সত্যিকারের সুখ ছিল। মা-বাবার মৃত্যুর পর বরং সেই সুখ কিছুটা ম্লান হয়েছে। কারণ, আমাদের বাড়িতে এখন একই সংসারের ভেতরে অনেক মতের লোক আছে। মা-বাবা জীবিত থাকাকালে মতের অনেক ব্যাপার থাকলেও আমাদের সংসার ছিল সত্যিকার ভাবেই একটি সুনির্দিষ্ট ছকে বাধা। বাবা সেই ছকটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করতেন সংসারের কর্তা হিসেবে। ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবা মারা যাবার পর সেই নিয়ন্ত্রন স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের উপরে গিয়েছিল। কিন্তু মা বাবার মত কঠোর ছিলেন না বলে, সেই কঠোর নিয়ম কানুন গুলো ঠিক মত পালন করতে মা অনেকটাই অকার্যকর ছিলেন। মায়ের মধ্যে তখন এক ধরনের নির্ভরতা ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছিল। মা আমাদের সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। কিন্তু বাবার মত সমান ভাবে কঠোরতার সঙ্গে পালন করতে পারতেন না। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের মধ্যে এই জিনিসটার একটা দুর্বলতা লক্ষ্য করেছি। তা নিয়ে মায়ের মধ্যে কিছু দুঃখবোধও হয়েছিল। অযৌক্তিক অনেক অনেক কারণে আমার মা তাই জীবনের শেষভাগে অনেক দুঃখ পেয়েছেন। সেই দুঃখ প্রদানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে আমাদের বাড়িতে যারা বউ হয়ে এসেছে, তারা। তাদের নিজস্ব স্বার্থের কাছে মা তখন অনেক ক্ষেত্রে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু মা তা নিয়ে কোনো দিন প্রকাশ্যে দুঃখ করেননি। নিজের মনের কষ্ট নিজে লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই কষ্ট চট করেই আমি বুঝতে পারতাম। মা আমাকে খুটিয়ে খুটিয়ে সব বলতেন। কিন্তু তা নিয়ে সংসারে আবার কেউ অখুশি হোক, সেই ঝামেলায় যেনো আমি না যাই, সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিতেন। সাংসারিক ব্যাপার স্যাপারে এই পরাজিত হবার প্রধান কারণ ছিল আমার মায়ের সরলতা। আমার মা খুব সরল সোজা ছিলেন। সবাইকে অন্তর দিয়ে ভালো বাসতেন। সবাইকে কাছে টানতেন। খুব আপন মনে করতেন। অন্যরা সেই সুযোগটির পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতেন। সংসারে অস্বচ্ছলতার জন্য মাকে অনেক সময় খুব দুঃশ্চিন্তা করতে দেখেছি। কিন্তু কখনো ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সংসারের অনেক ছোটখাটো বিষয়ে মাকে আমি কাঁদতে দেখেছি। কারণ, মাকে কেউ কেউ তখন নানান বিষয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছে। যা আমি জীবনে কখনো ভুলবো না। তাদের সেই আচরণগুলো আমাকে এখনো কঠিন পিড়া দেয়। কিন্তু তারা সবাই এখনো আমাদের সংসারের সদস্য। তারাও এখনো তাদের মত আনন্দে আছে। সুখে আছে। কারণ আগের চেয়ে তাদের অনেক স্বচ্ছলতা ফিরেছে। বলতে গেলে ১৯৯০ সাল থেকে আমি সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন এক যাযাবর। কিন্তু মা যতদিন জীবিত ছিলেন মায়ের সঙ্গে আমার আত্মার যোগাযোগ ছিল। এখনো আমার মায়ের সঙ্গে আত্মার যোগাযোগ অটুট রয়েছে। আমরা ভাইবোন সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ছড়ানো ছিটানো। বিভিন্ন উৎসব বা পার্বনে আমরা বাড়িতে এক হতাম। তখন নাদেখা সেসব দুঃখের বিষয় নিয়ে অনেক সময় মা আমার কাছে বিলাপ করতেন। মনের কষ্টের কথা খোলাখুলি বলতেন। আমার ছোট্ট বুদ্ধিতে যতটুকু মাকে শান্তনা দেওয়া সম্ভব ছিল, আমি তাই চেষ্টা করতাম। খেয়াল করতাম, মা কষ্ট ভুলে আবার সবার সঙ্গে বেশ সহজভাবেই মিশতেন। মায়ের এই গুণটি আমি এখন পর্যন্ত অনেক মানুষের মধ্যে ঠিক দেখতে পাই না। নারীদের মধ্যে তা দেখতে পাবার উদাহরণ তো আমার পক্ষে আবিস্কার করা আরো কঠিন। সত্যি সত্যিই কঠিন। জীবনে যত নারী দেখলাম, তারা কইতে নারী কিন্তু চলন বলন একটু বাঁকা। এটা দায়িত্ব নিয়ে অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। বরং ছেলেরা সেই তুলনায় অনেক কঠিন বিষয় খুব সহজে মিটমাট করে ফেলে। কিন্তু নারীদের বিষয় পৃথিবীর প্রলয় পর্যন্ত মিমাংসা হয় না। আমার মা-বাবা দুজনেই সিগারেট খেতেন। একবার বাবার খুব অসুখ করলো। ডাক্তার বাবার সিগারেটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। বাবা সিগারেট ছেড়ে দিয়ে পান ধরলেন। তারপরেও কিছু দিন মা একা একা সিগারেট খেয়েছেন। বাবাই মাকে সিগারেট কিনে দিতেন। মা লুকিয়ে লুকিয়ে খেতেন। ছোট কাকা-কাকীর কাছ থেকে হুক্কাও খেতেন। এক সময় বাবার মত মাও নিজে নিজেই সিগারেট ছেড়ে দেন। আর পান খাওয়ার অভ্যাস করেন। আমার মা বাংলা ও আরবি পড়তে পারতেন। সহজ সরল াংকের হিসাব কসতে পারতেন। হিসাব জটিল হলে গুলিয়ে ফেলতেন। আমাদের পড়াশুনা দেখে দেখে মা কিছু কিছু ইংরেজি বানান করে পড়তে পারতেন। কিন্তু শিশুদের মত তার একটু লজ্বা লজ্বা লাগতো। মা নিয়মিত নামাজ পড়তেন। রোজ সকালে ফজরের নামাজ পড়ার পর নিয়মিত কোরআন পড়তেন। তারপর সংসারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কেবল অসুস্থ হলে এর কিছু ব্যতিক্রম দেখেছি। বাবার মৃত্যুর চার বছর পর একবার মা পুকুরের ঘাটে অযু করতে গিয়ে স্লিপ কেটে পড়ে যান। বাম হাত ভেঙ্গে ফেলেন। বাম হাতে জোড়া লেগেছিল। কিন্তু মায়ের হাতটা বাঁকা ভাবে জোড়া লেগেছিল। ডাক্তার অপারেশন করে সোজা করতে চেয়েছিল। কিন্তু মা অপারেশন খুব ভয় পেতেন। তাই আর অপারেশন করা হয়নি। বাঁকা বাম হাত নিয়ে মা বাকি জীবন কাটিয়েছেন। নিজের কাপড় নিজে পড়তে পারতেন। আমরা তাই মায়ের হাত অপারেশনের ব্যাপারে তাকে আর নতুন করে কোনো ঝামেলা দেইনি। আমার নানানানীর ছিল এক ছেলে ছয় মেয়ে। সবার বড় ছিল আমাদের একমাত্র মামা। তারপর বড় খালা। তারপর মা। তারপর বাকি চার খালা। নানা যেদিন মৃত্যুবরণ করল সেদিন একঘণ্টা পর আমার একেবারে ছোটো ভাইটার জন্ম। বড়খালা ছিলেন আমাদের বাড়িতে। বড়খালা আর আমার মা তাদের বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনেছিলেন এক মাস পর। সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হল, আমার নানার প্রায় সবগুলো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমার ছোটো ভাইয়ের মধ্যে এখনো বিরাজমান। আমার নানা ছিলেন তার বাবার একমাত্র ছেলে। আমার মামাও তার বাবার একমাত্র ছেলে। আর আমার মামারও একটি মাত্র ছেলে। মামাতো ভাইটার কয়টি ছেলে এখন আমার জন্য বলা কষ্টকর। কারণ মায়ের মৃত্যুর সময় মামাতো ভাইকে আমি সর্বশেষ দেখেছিলাম। মামাতো ভাই আর চার মামাতো বোনের খবর আমি জানি। মামাও অনেক আগে মারা গেছেন। মামাতো ভাইবোনদের ছেলেমেয়েদের খবর আর আমার কাছে নাই। আমার মা-খালাদের ছয়জনের এখন তিনজন জীবিত আছেন। বড় খালা, নোয়া খালা আর ছোটখালা। সবার আগে মারা যান সেজো খালা। তারপর মা। আর তিন বছর পর সেজো খালাও মারা যান। আমার মায়ের পৌঢ়া বয়সেই সকল দাঁত পড়ে গিয়েছিল। কোনো ধরনের কৃত্রিম দাঁত মা ইচ্ছে করেই লাগাননি। তাই হাসলে মাকে খুব সুন্দর লাগতো। মা যখন পান খেতেন, তখন তার প্রস্তুতি নিতেই অনেকটা সময় লাগতো। প্রথমে সুপারি কেটে কুচি কুচি করতেন। তারপর পান আর সুপারি মিলিয়ে হামান দস্তার মধ্যে রাখতেন। তারপর গল্প করতেন আর পান ছিছতেন। এক সময় পানের গুড়াগুলো জড়ো করে মুখে পুড়ে দিতেন। তারপর আবার গল্প শুরু করতেন। আর নতুন করে পান ছিছতেন। গল্প যখন শেষ হতো, পান খাওয়া বা পান সংক্রান্ত কার্যক্রমেরও তখন পরিসমাপ্তি ঘটতো। আমার মায়ের চুল ছিল হাটু পর্যন্ত লম্বা। আমাদের ছোটো ভাইয়ের জন্মের পর সেই চুল অনেক কমে যায়। তবুও যে কোনো নারীর কাছে আমার মায়ের অবশিষ্ট চুলও ছিল ইর্ষার বিষয়। আমার বড় আপার চুল মায়ের মত বেশ লম্বা। কিন্তু মায়ের চুল বেশি লম্বা ছিল। ঘন কালো ছিল। ছোটবেলায় দেখেছি মা চুল পরিস্কার করার জন্য কলাগাছের খোলা বা একেবারে ভেতরের অংশটা পানিতে মিশিয়ে কোনো পাত্রে আগুনে জ্বাল দিতেন। সেই পানি দিয়ে গোসলের সময় চুল পরিস্কার করতেন। অনেক সময় দেখেছি সময় বাঁচাতে পুকুর থেকে সোনালি রঙের মাটি দিয়ে সাবানের মত চুলে মাখতেন গোসলের সময়। তাতেই চুল পরিস্কার হতো খুব। সাবান খুব একটা ব্যবহার করতেন না। ঘরে সাবান থাকলেও মা সাবানের বিকল্প দিয়ে কেন চুল পরিস্কার করতেন, সেটা এখনো আমার কাছে একটা রহস্য। অথচ আমরা চুল পরিস্কার করার জন্য কত টাইপের স্যাম্পু যে ব্যবহার করি, চুলও পরে সেরাম। অথচ আমার মার চুল কখনো তেমন পড়তে দেখিনি। চুল শুকানোর পর মা খাঁটি নারকেল তেল দিতেন। তারপর একটা শুকনা কাপড় চুলে বেধে রাখতেন। তেলটা সেই কাপড়ে চলে যাবার পর চুল বেধে রাখতেন। বা খুলে রাখতেন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে মা চুল খুলে ঘুমাতেন। চুলগুলো বালিশের পেছনের দিকে খুব যত্ন করে ছড়িয়ে দিতেন। বেশি চুলের কারণে চুল বাধার সময় মা সব সময় কারো সহযোগিতা নিতেন। আমার বোনেরা, চাচিরা, চাচাতো বোনেরা বা পরসি কেউ না কেউ মার চুলে তেল দিয়ে দিতেন। তারপর চুল বেধে দিতেন। তখন তাদের মধ্যে নানান কিসিমের গল্প হতো। মা চুলে কখনো ক্লিপ বা ফিতা পড়েননি। চুল দিয়েই মা চুল বাধতেন। একেবারে ন্যাচারাল। মামা বা খালাদের চেয়ে আমার মা একটু ছোটখাটো গড়নের ছিলেন। সেজো খালাও ছোটখাটো গড়নের ছিলেন। মামা বা অন্য খালারা অনেক লম্বা লম্বা ছিলেন। আমার বাবা খুব লম্বা ছিলেন। বাবা ছয় ফুট এক ইঞ্চি লম্বা ছিলেন। আমার দাদু ছিলেন আরো লম্বা। ছয় ফুট চার ইঞ্চি। কিন্তু আমার দাদি মায়ের মত ছোটখাটো গড়নের ছিলেন। আমরা অবশ্য দাদিকে দেখিনি। মায়ের কাছে শুধু দাদির গল্প শুনেছি। আমার বড় ভাইয়ের জন্মের আগেই দাদি মারা যান। দাদুভাইকে আমরা পেয়েছি। দাদুভাই কালো ছিলেন। কিন্তু দাদি ছিলেন টুকটুকে ফরসা। আমার বাপচাচারা ফুফুরা সবাই দাদির গায়ের রঙ পেয়েছেন। আমার বাবা-মা দুজনেই ফরসা ছিলেন। আমরা ভাইবোনদের মধ্যে কেবল আমি আর আমার ছোটবোন ছাড়া বাকি সবাই ফরসা। মায়ের সঙ্গে আমার মধুর স্মৃতি হল, আমার স্কলারশিপে পাওয়া টাকা আমি মায়ের কাছে জমাতাম। কিন্তু নেবার সময় কখনো হিসাব করতাম না। মাও কোনোদিন বলতেন না যে, তোর জমানো টাকা শেষ। কাগজ কলম কেনা, বইকেনা, মেলায় যাবার খরচ, যাত্রায় যাবার খরচ, নৌকা বাইচ দেখতে যাবার খরচ, কোথাও বেড়াতে যাবার খরচ সব সময় মায়ের কাছ থেকেই নিতাম। স্কুল জীবন আমার এভাবেই কেটেছে। কেবল উপরের ক্লাসে ওঠার পর মানে কলেজে আসার পর থেকে খরচ নিতাম বাবার কাছ থেকে। বড় ভাইও অনেক সময় খরচ দিতেন। সেই হিসাবের বিড়াম্বনা এখনো মাঝে মাঝে শুনতে হয়। কারণ সংসারে আজ পর্যন্ত আমি কোনো টাকা পয়সা দিতে পারিনি। ছোটবেলায় মাকে আমি কিছু কাজে খুব সহযোগিতা করতাম। বিশেষ করে স্কুল জীবনে। প্রতি বছর বৈশাখী মেলা থেকে মার জন্য আমি কুলা আর তালপাতার পাখা কিনে আনতাম। এটা ছিল পার্মানেন্ট জব। আর ধান ওঠার পর মাঠ থেকে নাড়া কেটে আনতাম। প্রতি বছর আমি নিজ উদ্যোগে একটি নাড়ার পালা দিতাম। সেই নাড়া শুকিয়ে মা ভাত রান্না করতেন। এ বিষয়ে আমার চাচাতো ভাই কালামের সঙ্গে আমার একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলতো। কিন্তু সেই নাড়া রান্না করার জন্য মার খুব উপকারে লাগতো। এছাড়া মা গরুর গোবর দিয়ে পাটখড়ির মুঠি বানিয়ে শুকাতেন। যেগুলো বর্ষাকালে রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে খুব ব্যবহৃত হতো। মা অবসর পেলেই রেডিও শুনতে খুব পছন্দ করতেন। গান শুনতে খুব পছন্দ করতেন। আর রেডিও তে নাটক হলে সবার সঙ্গে বসে শুনতেন। কিন্তু নাটক শেষ হলে অন্য কাউকে আবার সেই নাটকের মূলবিষয় মাকে বুঝিয়ে দিতে হতো। কারণ নাটকের শুরুর অংশ প্রায় কখনোই মার শোনা হতো না। কাজ শেষ করে নাটক শুনতে বসতে বসতে নাটকের একটা অংশ আগেই হয়ে যেতো। বাবা ছিল এক্ষেত্রে বিপরীত। বাবা শুনতেন খবর। বিবিসি আর ভয়েস অব আমেরিকা রোজ শুনতেন বাবা। আবার সেই খবর আমার সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতেন। ইরাক ইরান যুদ্ধের আট বছর, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালের প্রায় প্রতিটি খবর বাবা আমার সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতেন। আমি তখন স্কুলের ছাত্র হলেও বাবা সেই খবর আমার সঙ্গে আলোচনা করতেন। আমি পড়ার টেবিল ছেড়ে খবরের সেই সময় টুকু বাবার সঙ্গে আড্ডা দেবার স্বাধীনতা ভোগ করতাম। অন্য ভাইবোনেরা যে সুযোগটা পেতো না। বা আগ্রহ দেখাতো না। খবর শোনার স্বাধীনতা পেলেও সেই সময় আমার একটি বাড়তি চাকির করতে হতো। বাবার হাত-পা টিপে দিতাম। পিঠের চামড়া টিপে দিতাম। মাথা বানিয়ে দিতাম। আর বাবা খবরের বিষয়গুলো আমার সঙ্গে আলোচনা করতেন। রাতে বাবা ঘুমিয়ে যাবার পর রেডিওটা চলে আসতো আমার দখলে। কেবল খুলনা বা ঢাকা সেন্টারে কোনো নাটক থাকলে সেই রাতে বাড়ির অন্য অনেকের সঙ্গে রেডিওতে নাটক শোনা শেয়ার করার ব্যাপার ছিল। বাবা বাড়িতে থাকলে গান শোনার নিয়ম ছিল ভলিউম কমিয়ে। আর বাবা বাড়িতে না থাকলে অটোমেটিক আমরা রেডিওর ভলিউম বাড়িয়ে দিতাম। মা অবশ্য তা নিয়ে তেমন কিছুই বলতেন না। শুধু খেয়াল রাখতেন রাতে যাতে বাবা খবর শুনতে পারেন, সেরকম ব্যাটারি যেনো থাকে। বাবা অবশ্য রেডিওতে শব্দ কম শোনা গেলে টর্চলাইট খুলে ব্যাটারি দিতেন। অনেক সময় নাটক শোনার জন্য আমরা চুরি করে বাবার টর্চলাইট থেকে ব্যাটারি নিয়ে রেডিওতে ঢুকাতাম। বাবা অবশ্য পরের রাতে টের পেতেন। আর টর্চের ব্যাটারি দুর্বল হয়ে গেলে নতুন ব্যাটারি কিনে টর্চের ব্যাটারিগুলো আমাদের রেডিও শোনার জন্য দিয়ে দিতেন। কারণ বাবা টর্চলাইটে ফকফকা সাদা আলো পছন্দ করতেন। যখনই সেই আলো লালচে হতো, তখনই আমরা সেই ব্যাটারিগুলো রেডিও শোনার জন্য পেতাম। দিনের বেলায় বাবা টর্চের তিনটা ব্যাটারির একেবারে পেছনেরটা উল্টা করে রাখতেন। এতে নাকি ব্যাটারি ভালো থাকতো। দিনের বেলায় কখনো চুরি করে বাবার টর্চ থেকে ব্যাটারি নিলে রেডিও শোনার পর তা যদি ঠিকঠাক রাখতে না পারতাম, মার কাছ থেকে পরে শুনতাম যে, বাবা ঠিকই টের পেয়েছেন। আর বকাঝকা করেছেন। তখন রেডিও বাদ দিয়ে পড়াশনায় একটু মনযোগ দিতাম পিঠ বাঁচাতে। মাত্র ছয় বছর হল মা নেই, অথচ মনে হয় কত বছর মাকে দেখি না। মনে হয় হাজার বছর ধরে মাকে দেখি না। কতোকাল মার ডাক শুনি না। কতোকাল মার কণ্ঠ শুনি না। কতোকাল মাকে ডাকি না। কতোকাল মা মা বলে কোনো আবদার করি না। কতোকাল কারো বিরুদ্ধে মায়ের কাছে নালিশ দেই না। অন্য কারো নালিশ মায়ের থেকে শুনি না। কতোকাল মাকে জড়িয়ে ধরি না। মা, তুমি কোথায় আছো!! কেমন আছো তুমি, মা। .................................. ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:২৭
false
fe
আলো ও আঁধারে ঘেরা ২০১৬ আলো ও আঁধারে ঘেরা ২০১৬ফকির ইলিয়াস==========================আরো একটি বছর আমাদের জীবন থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। ২০১৬ খুব স্মরণীয় হয়েই থেকে যাবে আমাদের কাছে। ইতিহাস হয়ে থাকবে কালের প্রজন্মের কাছে। বলা দরকার, বিশ্ব একটি নতুন যাত্রার দিকে এগিয়েছে এ বছরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাশ করে এসেছেন একজন ধনকুবের মি. ডোনাল্ড ট্রাম্প।না- তিনি রাজনীতিক নন। তিনি ব্যবসায়ী। কিন্তু ‘অর্থ কামানো’র নিরিখে কি রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায়? প্রশ্নটি উঠছে বিভিন্ন মহলে। ফলে উদ্বিগ্ন রাজনীতিকরা। যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স নিউজ জানাচ্ছে- ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ওবামা প্রশাসন দ্রুত কয়েকটি বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতা ছাড়ার আগে তার গোপন ইচ্ছেমতো রাতারাতি নির্বাহী নির্দেশে কী কী পদক্ষেপ কার্যকর করতে চান, তা নিয়ে রিপাবলিকানদের উদ্বেগ নতুন করে জেগে ওঠেছে।ইতোমধ্যেই ওবামা প্রশাসন আর্কটিক ও আটলান্টিক মহাসাগরে ভবিষ্যতে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের ইজারা দান নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি এক দিনেই রেকর্ড সংখ্যক ব্যক্তির শাস্তি মওকুফ ও হ্রাস করেছেন। তিনি মুসলিম প্রধান দেশগুলো থেকে আগত পুরুষ অভিবাসীদের প্রচ্ছন্ন তালিকা বাতিল করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ফক্স নিউজকে বলেছেন, ‘গুয়ানতানামো বে’ কারাগার থেকে আরো ২২ বন্দিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আর জাতিসংঘে নিযুক্ত ওবামার রাষ্ট্রদূত ইহুদি বসতি নির্মাণের নিন্দা করে নিরাপত্তা পরিষদে আনীত এক প্রস্তাব প্রসঙ্গে ভোটদান করা থেকে বিরত থেকে ইসরাইলকে তাক করে দিয়েছেন ওবামা। এতে প্রস্তাবটি পাস হয়। ওবামার ক্ষমতা ছাড়ার আরো এক মাস বাকি আছে। ফার্স্ট ফ্যামিলি যখন হাওয়াইতে অবকাশ কাটান, তখন সাম্প্রতিক ঘোষণাগুলো প্রচার করা হয়। কিন্তু এতেও ওবামা ওয়াশিংটনে ফিরে এসে কী করবেন তা অস্পষ্ট রয়ে যায়। যে কোনো পদক্ষেপ প্রসঙ্গেই এ সম্ভাবনা রয়েছে, ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব পদক্ষেপের অনেক বাতিল করে দেবেন। ওবামা সম্পর্কে প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার নিউট গিনগ্রিচ ফক্স নিউজ সানডেকে বলেছেন, তিনি চলতি সপ্তাহে যে কাজগুলো করেছেন, সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হবে। ওবামা মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে আরো কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছেন।প্রতিনিধি পরিষদের ৬৪ জন ডেমোক্র্যাট সম্প্রতি ওবামাকে তার ডেফারড এ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড এ্যারাইভ্যালস নির্দেশ রক্ষার জন্য তার ক্ষমা করার ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর অনুরোধ করেছেন। এ নির্দেশ শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল এমন লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কৃত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিল। ওই নির্দেশ রক্ষার লক্ষ্য হলো তাদের বহিষ্কার করা ট্রাম্পের পক্ষে আরো কঠিন করে তোলা। হোয়াইট হাউস অসহিংস মাদক অপরাধী ও অন্যদের আরো বেশি সংখ্যায় ক্ষমা করার সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে আরো পদক্ষেপ নিতে এবং ক্ষমতা ছাড়ার আগেই এক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে ওবামার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জোশ আর্নেস্টও সম্প্রতি বলেন, প্রেসিডেন্ট এ পর্যায়ে গ্রহণ করবেন এমন নির্বাহী পদক্ষেপের প্রক্রিয়া সম্ভবত নভেম্বরের নির্বাচনের পূর্বেই শুরু হয়েছিল। কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা নতুন নতুন নির্দেশ থামাতে বা পাল্টে দিতে প্রতিজ্ঞ। ৫ ডিসেম্বর লেখা এক চিঠিতে ১০ রিপাবলিকান সিনেটর ওবামাকে আর বাকি সময় দায়িত্ব পালনকালে আমেরিকান জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাতে এবং কোন নতুন অজরুরি বিধি জারি করা থেকে বিরত থাকতে আহবান জানান। কিন্তু তারপরও ওবামা আর কী কী করে যাবেন তা দেখার অপেক্ষায় আছেন ট্রাম্পের নীতি নির্ধারকরা। তিনি ক্ষমতা পাবেন ২০ জানুয়ারি।২০১৬ বছরটি বাংলাদেশের জন্যও ছিল আলো ও আঁধারে ঘেরা। এ বছরে গুলশানে হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ড কাঁপিয়েছে গোটা বিশ্বকে। ১ জুলাই শুক্রবার ছিল পবিত্র রমজানের সময়। ওইদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ২-এর ৭৯ নম্বর রোডের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান দখলে নেয় জঙ্গিরা। পরদিন সকাল পর্যন্ত তারা জিম্মি করে ১৩ জন বিদেশিসহ প্রায় ৫০ জনকে। এ দিন ইতালীয়, জাপানি ও ভারতীয় ১৭ নাগরিকসহ মোট ২০ জন নিরীহ মানুষ জঙ্গিদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে প্রথম দিনই মারা যান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খান। জঙ্গিদের ছোড়া বোমায় আহত হন র‌্যাব, ডিবি, সোয়াট ও পুলিশের বেশ কয়েক সদস্য। পরদিন শনিবার সকালে জিম্মি উদ্ধারে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামে কমান্ডো অভিযান চালায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর মাত্র ১২-১৩ মিনিটের ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে ১৩ জিম্মিকে মুক্ত করা হয়। অভিযানে ৫ জঙ্গিসহ নিহত হয় ৬ জন।গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের হামলার শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই পবিত্র ঈদের দিন দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে জঙ্গিরা হামলা করে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শোলাকিয়া মাঠের পাশে শহরের আজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের ওপর বোমা হামলা করে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় জহিরুল ইসলাম ও আনছারুল ইসলাম নামে ২ পুলিশ সদস্য, ১ হামলাকারী ও এক নারী নিহত হন। আরো ৬ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন।এরপরই বাংলাদেশে শুরু হয় জঙ্গি ধরতে বিশেষ অভিযান। রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের গার্লস হাইস্কুলের পাশে ‘জাহাজ বাড়ি’ খ্যাত তাজ মঞ্জিল নামের ছয়তলা ভবনের পাঁচতলায় ঘাঁটি বানিয়েছিল জঙ্গিরা। শোলাকিয়ায় গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যে, ২৬ জুলাই ভোরে ‘জাহাজ বাড়ি’ ঘিরে ফেলে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াট। তাদের সহায়তা করে ডিবি ও থানা পুলিশ। সোয়াটের ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন স্টর্ম ২৬’। অভিযানের সময় গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ৯ জঙ্গি।২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার বড় কবরস্থানের কাছে ‘দেওয়ান বাড়ি’তে সোয়াট, সিটি ইউনিট, র‌্যাব ও পুলিশের ‘অপারেশন হিট স্ট্রম ২৭’ নামে যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ কানাডাপ্রবাসী তামিম চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হয়। এরপরে আরেকটি বড় অপারেশনে ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় সূর্য ভিলা নামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটি) ইউনিট। প্রায় ১৭ ঘণ্টার অভিযানে এক নারী জঙ্গি সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়। সে জঙ্গিনেতা সুমনের স্ত্রী। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ১৪ বছরের আফিফ কাদেরি আদর নামে এক কিশোর। সে পূর্বে পুলিশি অভিযানে নিহত জঙ্গি তানভির কাদেরির ছেলে। গুরুতর আহত এক শিশুসহ ৫ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতা আলোচনায় ছিল বিশ্বজুড়ে। এছাড়াও রিজার্ভ চুরি ও এটিএম জালিয়াতি, ব্লগার নাজিম উদ্দিন সামাদ হত্যাকাণ্ড, সোহাগী জাহান তনু হত্যা, রাবি শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা, বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে হত্যা, সুরাইয়া আক্তার রিশাকে হত্যা, হামলার শিকার খাদিজা, নারী নির্যাতন ও শিশু হত্যার ঘটনা বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময় বিশ্বমিডিয়ায় নিয়ে আসে। এসব অনেক ঘটনার বিচার এখনো হয়নি।রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সাফল্যও দেখিয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ যুক্তরাষ্টের খ্যাতনামা ফরচুন ম্যাগাজিনের বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে উঠে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফরচুন ম্যাগাজিন তাকে ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র নারী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে।মার্কিন অপর খ্যাতনামা সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৬ সালের ৬ জুন প্রকাশিত বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ৩৬ নম্বরে উঠে আসেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এ তালিকায় জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, যুক্তরাষ্টের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের পাশে অবস্থান করেন তিনি। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে জাতিসংঘের ইউএন উইমেন-এর প্ল্যানেট ফিফটি-ফিফটি চ্যাম্পিয়ন সম্মাননা এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরামের এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।বাংলাদেশ থেকে ২০১৬ সালে অভিবাসন প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬-এর জানুয়ারি থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ জন বাংলাদেশি কর্মী উপসাগরীয় ও অন্যান্য আরব দেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন। ২০১৫ সালে মোট পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অভিবাসী হয়েছেন। ২০১৩ সালে মোট চার লাখ নয় হাজার ২৫৩ জন কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যান। ২০১৪ সালে মোট চার লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গেছেন। সে ক্ষেত্রে সাত লক্ষাধিক কর্মীর অভিবাসন সত্যিই বাংলাদেশের অভিবাসন খাতে একটি বড় সাফল্য।বাংলাদেশ জাতিসংঘ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ সাফল্য লাভ করেছে। ইতোমধ্যে দারিদ্র্যের হার কমানো, দারিদ্র্য অনুপাত হ্রাস, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, টিকাদান উন্নতি এবং সংক্রামক রোগের প্রকোপ হ্রাস প্রভৃতিতে অগ্রগতি লাভ করেছে বাংলাদেশ।শঙ্কার বিষয় হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যমতে, গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৩১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এ টাকার অঙ্ক বাংলাদেশের অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ গড়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ১৩২ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো পাচার হচ্ছে। জিএফআই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বেশিরভাগই পাচার হচ্ছে আমদানি-রপ্তানির সময় পণ্যের মূল্য বেশি বা কম দেখিয়ে। অর্থাৎ কম দামে বিদেশ থেকে পণ্য কিনে বেশি দাম দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) অর্থ পাচার করা এবং বেশি মূল্যে রপ্তানি করে কম মূল্য দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) বাড়তি টাকা বিদেশেই রেখে দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। গত দশকের প্রথম দিকে বেশিরভাগ অর্থই পাচার হয়েছে আমদানি-রপ্তানির সময়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নগদ অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল খুবই ভয়াবহ।সব মিলিয়ে ২০১৬ সালটি ছিল গোটা বিশ্বের কাছেই একটি দোলাচলের বছর। কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর মতো নেতার চিরবিদায় ছিল অত্যন্ত বেদনাবহ।শুরুতেই বলেছি, বিশ্ব এখন ট্রাম্প যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। রাশিয়ার সাথে কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক? মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ দমনে কেমন হবে তাদের যৌথ ভূমিকা?বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কী ভূমিকা রাখবেন ট্রাম্প-পুতিন? তারা কি আরো কারো কারো হাতে পরমাণু অস্ত্র বানাবার রসদ তুলে দিয়ে বিশ্বে সমতা আনার চেষ্টা করবেন? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর আমরা হয়তো ২০১৭ সালে পেয়ে যাবো। তারপরও আমরা পুরাতনের সকল আঁধার ভুলে যেতে চাই। চাই শান্তির আলোয় উদ্ভাসিত হোক ২০১৭। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। -------------------------------------------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ১ জানুয়ারি ২০১৭ রোববার সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩৩
false
ij
গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরিয়াস এপিকিউরিয়াসআজ থেকে প্রায় ২৩ ’শ বছর আগে গ্রিসের রাজধানী এথেন্স শহরে ঢাকার শহীদ মিনারের মতো একটি পবিত্র অঙ্গন ছিল । এথেন্স শহরের সেই পবিত্র অঙ্গনটি আসলে ছিল একটি উদ্যান; যে উদ্যানে বসে জীবনজগৎ সম্বন্ধে মতামত ব্যক্ত করতেন এক গ্রিক দার্শনিক; সেই দার্শনিকের নাম এপিকিউরিয়াস । জ্ঞানচর্চা প্রকারন্তরে ভাষারই চর্চা, সে কারণেই ঢাকার শহীদ বেদির মতো গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরিয়াস এর সেই উদ্যানটিকে অত্যন্ত পবিত্র জ্ঞান করি। সেই পবিত্র জ্ঞানপীঠে এপিকিউরিয়াস এর বক্তব্য শ্রবণ করার জন্য এথেন্স নগরের অনেকেই আসত; এমন কী মেয়েরাও আসত। এ তথ্যটি কিঞ্চিৎ বিস্ময়ের করে বৈ কী। কেননা, গ্রিসের পুরাকালের ইতিহাসপাঠে আমরা জানতে পারি যে, আজ থেকে ২৩ ’শ বছর আগে এথেন্স নগরের রাস্তায় মেয়েদের প্রকাশ্যে চলাচলের অনুমতি ছিল না। তবে এথেন্সের রাস্তায় রথ চলত। এ থেকে দুটো সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারি। (ক) মেয়েরা ঢাকা-রথে চেপে এপিকিউরিয়াস এর বাগানে যেত। (খ) সেই মেয়েরা ছিল সম্পন্ন ঘরের। কেননা, বাঙালি মুসলিম সমাজের নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে রংপুরের প্রান্তিক খেটে খাওয়া নারী হিসেবে কল্পনা করা কঠিন। আমি কখনও এথেন্স যাইনি। তবে আমার মনে এই প্রশ্ন জাগে। এপিকিউরিয়াস এর পবিত্র উদ্যানটি কোথায় ছিল? প্লাকায় কি? প্লাকা হল এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসের কাছে একটি আবাসিক এলাকা। প্লাকা। এপিকিউরিয়াস ৩০৬ খ্রিস্টপূর্বে এথেন্স যান। এবং There he founded The Garden, a school named for the garden he owned about halfway between the Stoa and the Academy that served as the school's meeting place. এপিকিউরিয়াস পবিত্র বাগানটি কি প্লাকায় ছিল? একদিন এথেন্স যাব এই প্রশ্নের উত্তরটি খুঁজতে। গ্রিসের মানচিত্র। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক একবার বলেছিলেন গ্রিসের সঙ্গে বাঙালির অনেক মিল আছে। বাঙালিরা যেমন পৃথিবীর নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে প্রাচীনকালে গ্রিকরাও নানান নগররাষ্ট্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করত। আমি গ্রিক ইতিহাস পাঠ করে বাঙালির সঙ্গে গ্রিকদের আরও এক সাদৃশ্য খুঁজে বার করেছি। প্রাচীন গ্রিসের এথেন্সবাসী বাঙালিদের মতো মাছ খেতে পছন্দ করত বেশি।এপিকিউরিয়াস এর সময়কাল ৩৪১ থেকে ২৭০ খ্রিস্টপূর্ব; সর্বমোট ৭২ বছর বেঁচে ছিলেন। ৩৪১ খ্রিস্টপূর্বের ফেব্রুয়ারি মাসে এপিকিউরিয়াস-এর জন্ম সামোস নামে একটি দ্বীপে। মানচিত্রে সামোস দ্বীপ।সামোস দ্বীপ।এপিকিউরিয়াস এর কিশোর বয়েসে এক গুরুর কাছে শিক্ষা আরম্ভ। সেই গুরুর নাম প্যামফিলাস। তিনি ছিলেন প্লেটোবাদী। এপিকিউরিয়াস এর ভাবনার ওপর গ্রিক দার্শনিক ডোমোক্রিটাস এর প্রভাব আছে। অবশ্য এপিকিউরিয়াস তা অস্বীকার করেছেন। নিজেকে স্বশিক্ষিত দার্শনিক বলতেন এপিকিউরিয়াস । যা হোক। ১৮ বছর বয়েসে এথেন্স যান। সময়টা ৩০৬ খ্রিস্টপূর্ব।এথেন্স । উঁচু পাহাড়টিই অ্যাক্রোপলিস। অ্যাক্রো মানে উঁচু, আর পলিস মানে নগর। পিছনে বর্তমান কালের এথেন্স নগর; ঐ নগরেই আজ থেকে ২ হাজার ৩০০ ’শ বছর আগে বেঁচে ছিলেন এপিকিউরিয়াস নামে এক ভাবুক যার ভাবনায় উঁকি দিয়েছেন গৌতম বুদ্ধ ...এথেন্সে নিজের বাড়ির বাগানে জ্ঞানচর্চা করতেন এপিকিউরিয়াস । বিয়ে করেননি। কিন্তু, কী বলতেন এপিকিউরিয়াস বাগানে বসে? বলতেন, দর্শন চর্চা অবাস্তব এবং অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। জীবনে দর্শনচর্চার প্রয়োজন আছে। দর্শনের চর্চা জীবনকে সুখি করে। অল্প দুঃখ আর বেশি সুখ হলেই জীবন আনন্দময় হয়ে ওঠে। অথচ কিছু চেয়ে না পেলেই জীবনে দুঃখ ঘনিয়ে ওঠে। আপনার ইচ্ছে হল বিকেলে নৌকা বাইবেন হাঁপানি জন্য কষ্ট তো হবেই। তা হলে কি করবেন? বিকেলে নৌকা নৌকা বাওয়ার ইচ্ছে না বিসর্জন দিন। কিছু চাইবেন না। চাইলেই কষ্ট পাবেন। কিছু চাওয়ার আকাঙ্খাই যন্ত্রণা দেয়। ঘনিষ্ট বন্ধু করবেন না। বন্ধু চলে গেলে কষ্ট পাবেন। প্রেমও করবেন না। ঐ একই কারণেই । দ্য লেস ইউ ওয়ান্ট, দ্য হ্যাপীয়ার ইউ ইউল বি। সর্বনাশ! এতো দেখছি ভারতীয় দর্শনের প্রভাব?হু। এ বিষয়ে পরে বলছি। এপিকিউরিয়াস আরও বলতেন, লোকে যখন মারা যায় সেই সঙ্গে তার আত্মাও বিনাশপ্রাপ্ত হয়। কেননা, অণুদ্বারা শরীর ও মন সৃষ্ট। মৃতের শরীরের অণুগুলি ভেঙে অন্য বস্তু তৈরি হয়। কাজেই মৃত্যু ভয় না করাই উচিত। মৃত্যুর পর কী হবে সেসব নিয়েও ভেবে কোনওই লাভ নেই। ঈশ্বর দেবতা নিয়েও ভেবে লাভ নেই। কেননা দেবতারা মানবজীবনে হস্তক্ষেপ করে না। দেবতারা অনেক দূরের লোকে সুখে শান্তিতে বসবাস করেন। ঘটনা যখন ঘটে প্রাকৃতিক বৈজ্ঞানিক কারণেই ঘটে। ঘটনাপ্রবাহে ইশ্বরের ভূমিকা নাই। এ তো চাবার্ক দর্শনের কথা। এর কারণ ব্যাখ্যা করি। এপিকিউরিয়াস বেঁচে ছিলেন হেলেনিস্টিক সভ্যতায়। হেলেনিস্টিক শব্দটাকে একজন লেখক বাংলা করেছেন হেলেনসম্ভুত । আমরাও তাকে অনুসরণ করে বলি: হেলেনসম্ভুত সভ্যতার সময় কাল ৩২৩ থেকে ১৪৬ খ্রিস্টপূর্ব। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে ব্যবিলনে আলেকজান্ডারের মৃত্যুবরণ করেন -সেই থেকে হেলেনসম্ভুত সভ্যতার সূচনা আর এবং ১৪৬ খ্রিস্টপূর্ব নাগাদ রোমান সাম্রাজ্য গ্রিক মূলভূমি দখল করে নেয়-হেলেনসম্ভুত সভ্যতার সমাপ্তি। হেলেনসম্ভুত সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল পূর্বপশ্চিমের সংস্কৃতির বিনিময়। এ প্রসঙ্গে জনৈক ঐতহাসিক লিখেছেন, The spread of Greek culture throughout the Near East and Asia owed much to the development of cities. Settlements such as Ai-Khanoum, situated on trade routes, allowed cultures to mix and spread. The identification of local gods with similar Greek deities facilitated the building of Greek-style temples, and the Greek culture in the cities also meant that buildings such as gymnasia became common. Many cities maintained their autonomy while under the nominal rule of the local king or satrap, and often had Greek-style institutions. Greek dedications, statues, architecture and inscriptions have all been found. However, local cultures were not replaced, and often mixed to create a new culture.ফলে, প্রাচ্যে যেমন গ্রিক তথা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অবাধ প্রবাহ সম্ভব হয়েছিল তেমনি পাশ্চাত্য তথা গ্রিসও লাভ করেছিল প্রাচ্যের অপার জ্ঞান-ঐশ্বর্য; বিশেষ করে ভারতীয় দর্শন। এইসূত্রে পশ্চিমের বোদ্ধামহল যে বুদ্ধের বাণীতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন-তাতে আর সন্দেহ কী। এপিকিউরিয়াস এর মতবাদকে বলা হয় এপিকিউরিয়বাদ। দর্শনটি হেলেনসম্ভুত সভ্যতার বলেই এপিকিউরিয়বাদ এর ওপর বৌদ্ধদর্শনের অনিবার্য প্রভাব পড়েছিল।বুদ্ধ। বুদ্ধের সময়কাল ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব। ইনি প্রভাবিত করেছিলেন গ্রিসের এক দার্শনিককে। কিংবা এপিকিউরিয়াস এর কিছু ভাবনাচিন্তার সঙ্গে বুদ্ধের মিল ছিল। সবচে বড় কথা এঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদে অবিচল ছিলেন। অনেকে অস্তিত্ববাদের জনক হিসেবে বুদ্ধের নাম করেন। এ তালিকায় এপিকিউরিয়াস এর নামও উঠতে পারে।ইংরেজিতে Epicurean বলে একটি শব্দ আছে। এর অভিধানগত অর্থ: 1. devoted to sensual pleasure: devoted to sensual pleasures and luxury, especially good food 2. pleasing to an epicure: suitable for or pleasing to an epicureepicurean delicaciesআসলে এপিকিউরিয়াস এর মতবাদ অনৈতিক নয়। আসলে এর ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এপিকিউরিয়াস বলতে চেয়েছেন অল্প দুঃখ বেশি সুখ হলেই জীবন আনন্দময় হয়ে ওঠে। কিছু চেয়ে না পেলেই জীবনে দুঃখ ঘনিয়ে ওঠে। এপিকিউরিয়াস দুঃখতে এড়াতে চেয়েছেন ঠিকই তবে আনন্দবাদী হয়ে উঠেননি কখনও; ঘনিষ্ট বন্ধু করবেন না, বন্ধু চলে গেলে কষ্ট পাবেন; প্রেমও করবেন না ঐ একই কারণেই; এরকম প্রেমবিরোধী লোক ডেভোটেড টু সেনসুয়াল প্লেজারস অ্যান্ড লাক্সারি ...কী করে হয়? বরঞ্চ খ্রিস্টধর্মে এপিকিউরিয়াস এর দর্শনের সন্ন্যাসধর্মীতার প্রভাব স্বীকার করা হয়েছে। সন্তরা জগৎ-সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাস করবেন, শরীর নিয়ে ভাববেন না, ঘর-সংসার, বন্ধুবান্ধব, বিষয়-আশয় নিয়ে ভাববেন না। এসব এপিকিউরিয়াস এরই নির্দেশ। তবে এপিকিউরিয়াস এর প্রতি খ্রিস্টীয় ধর্মতাত্ত্বিকগনের রয়েছে প্রবল এক ঘৃণা। কারণ এপিকিউরিয়াস এর দর্শন আত্মার অমরত্ব ও স্বর্গনরক বেমালুম অস্বীকার করে। কাজেই খ্রিস্টধর্মের উত্থানের সঙ্গে মতবাদটিকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এপিকিউরিয়াস ছিলেন প্রকৃত দার্শনিক। তাঁর কিডনিতে পাথর হয়েছিল। দীর্ঘকালীন যন্ত্রণা সত্ত্বেও লিখেছিলেন: আমার জীবনের শেষ দিন ঘনিয়ে আসছে। তারপরও খুশিমনে আমি এই কথাগুলি লিখছি। ভয়ানক উদারাময়সহ প্রশ্রাব না হওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করছি। আমার অবস্থা এতই ভয়ঙ্কর যে এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু আমার মনে রয়েছে আনন্দের গভীর অনুভূতি; এ আনন্দময় অনুভূতির উৎস আমার দর্শনের সিদ্ধান্তসমূহ। বুদ্ধও তাঁর অন্তিম বাণীতে বলেছিলেন:‘বয়ধন্মা ভিকখবে সংঘাবা অপপমাদেন সম্পাদেয়।’ (দ্র.শ্রী শান্তিকুসুম দাশ গুপ্ত, বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম এবং প্রাচীন বৌদ্ধসমাজ। পৃষ্ঠা, ৭৪) এই পালি বাক্যটির বাংলা মানে: অপ্রমত্ত থেকে কর্তব্য সম্পাদন করা। এপিকিউরিয়াস এরও মৃত্যুকালীন আনন্দের কারণ তার দর্শনের সিদ্ধান্তসমূহের ওপর অবিচল আস্থা।এই প্রসঙ্গে একটি কথা মনে পড়ে। বিখ্যাত নিরেশ্বরবাদী দার্শনিক ডেভিড হিউম মৃত্যু শয্যায়। সারা জীবন অধিবিদ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন অধিবিদ্যা সম্ভব নয়, অর্থাৎ মানবিক ভাষায় ঈশ্বর এবং স্বর্গনরকের জ্ঞান সম্ভব না। জেমস বসওয়েল গেছেন দেখা করতে; ইনি প্রখ্যাত সাহিত্যবিশারদ স্যামুয়েল জনসন এর জীবনী লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। তো জেমস বসওয়েল মৃত্যুকে ভয় পেতেন। তিনি ডেভিড হিউম কে সবিনয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মাননীয় আপনি মৃত্যুশয্যায়। এখন স্বর্গনরক এবং আত্মার অমরত্ম সম্বন্ধে আপনার মত কি বদলিয়েছেন? ডেভিড হিউম ধমক দিয়ে বললেন, প্রশ্নই ওঠে না। এপিকিউরিয়বাদী দর্শন রোমান আমল অবধি টিকে ছিল। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময়কাল ১০০ থেকে ৪৪ খ্রিস্টপূর্ব; সেই সময়ে রোমান সাম্রাজ্যে লুক্রেটিয়াস নামে একজন এপিকিউরিয়বাদী দার্শনিক বেঁচে ছিলেন। তিনি একটি বই লিখেছিলেন। তাঁর বইয়ের নাম ডি রেরাম নাটুরা। ইংরেজিতে: অন দ্য নেচার অভ থিংঙ্কস।আজও এই একুশ শতকে বৌদ্ধধর্ম এবং বৌদ্ধদর্শন টিকে থাকলেও খ্রিষ্টধর্ম এপিকিউরিয়াস এর দর্শনকে ধ্বংস করেছিল এর নাস্তিক্যবাদী বৈশিষ্ট্যের জন্য।উৎসর্গ: পল্লী বাউল।
false
rn
আমার ভালো লাগে না একদিন ঝুম বৃষ্টিতে হাত রেখে কারো হাতে-পথ চলি আমরাভিজে যায় চোখ,চোখের পাতাভিজে যায় আমাদের সনাতনী মন...প্রতিদিন নতুন নতুন শব্দ,পদ উপমা কোথা থেকে এসে মাথায় ভন ভন করে।আমার কোন কথাই হারিয়ে যেতে দিব না।পৃষ্টার পর পৃষ্টা না লিখলে ভালো লাগে না।আমি কি লিখি আমি নিজেই জানি না।তবে লিখে আমি আনন্দ পাই,এটাই বড়ো কথা।আমি জানি 'হিমি' আমার লেখা কোন দিনও পড়বে না,আফসোস!ইচ্ছা করে 'হিমি'কে একটা কঠিন চুমু দেই।কাল রাতে স্বপ্নে দেখলাম 'হিমি' চা খাচ্ছে।হিমি,যখন চা খায় তখন ওর লিপিষ্টিক মুছে যায় না।আমি অবাক হয়ে 'হিমি'র মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।পৃ্থিবীতে প্রতিদিন একশো কোটি মানুষ না খেয়ে থাকে।ইশ্বরের উপর আমার খুব রাগ হয়।"যে ইশ্বর মানুষকে ইহকালে ক্ষুধার অন্ন দিতে পারেন না,তিনি পরকালে সুখে রাখবেন তা আমি বিশ্বাস করি না"।(কি লেখার কথা আর কি লিখছি,মাথাটা পুরাই গেছে!)মানুষ ভুল করে যা শিখে সেটাই সঠিক।এই জন্য আমি বার বার ভুল করি।এই ভুলের মধ্যে দিয়ে কোনদিন হয়তো বড় ও সঠিক সিদ্বান্তে পৌছাতে পারবো।আমি খুব নরম মনের মানুষ।আমি কাউকে কষ্ট দিতে পারি না।তাই তো সমস্ত কষ্ট একা বয়ে চলেছি।সবাইকে আমি সুখি করতে চাই।একই শহরে মানুষের জীবন যাপনের ষ্টাইল কত আলাদা।আমি একটা স্বপ্ন প্রায়ই দেখি।তা হলো-ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়ছে টিনের চালে।আমি আমার গ্রামের বাড়ির বারান্দায় বসে আছি।হাতে একটা বই।তখন মধ্য রাত,টেবিলের উপর হ্যারিকেন জ্বলছে।হ্যারিকেন ক্ষীন আলোয় আমি বই পড়ছি (রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা'।এই বইটা আমি কিছু দিন পরপর পড়ি।)- এমন সময় বারান্দায় কাকে যেন দেখা যায়।আরে... হিমি না!!! হ্যা হিমি।আমার প্রিয়তমা।আমার জান।আমার কলিজা।হিমি বললো-'এই খুব বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টিতে ভিজবে?আমি রেগে গিয়ে বললাম- না,না।ফাজলামো করছো,মধ্য রাতে বৃষ্টিতে ভিজবো?এই সব পাগলামো বন্দ করো।তখন 'হিমি' মন খারাপ করে বারাব্দায় এক কোনার বসে থাকে।তার ভেজা চোখ শাড়ির আঁচল দিয়ে একটু পরপর মুছে নিচ্ছে।আমি শেষের কবিতায় মন দিতে পারি না।একআকাশ বেদনা আমার উপর ভর করে।এই স্বপ্নটা আমি বারবার দেখি।ইচ্ছা করে দেখি।আমার ভালো লাগে।ও আচ্ছা ভালো কথা,এখনো স্বপ্ন শেষ হয়নি আর একটু বাকি আছে।শেষের টুকু এই রকম।আমি শেষের কবিতা বন্দ করে 'হিমি'র দিকে তাকালাম,দেখি অভিমানে 'হিমি'র মুখ লাল হয়ে গেছে।আর চোখ দিয়ে জল পড়ছেই বৃষ্টি মতন।আমার বুকের ভিতর টন টন করে উঠে।তখন আমি হ্যারিকেন নিভিয়ে দিয়ে বলি-চলো ভিজি বৃষ্টিতে ভিজি।হিমি আনন্দে লাফিয়ে উঠে।আমি হিমি'র হাত ধরে উঠোনে নামি।আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে।মাঝে মাঝে বিদুৎ চমকায়।তখন হিমি'র মায়াবি মুখ দেখে নিই।হিমি'র শাড়ি ভিজে লেপটে গেছে।ঝুম বৃষ্টির সাথে হিমি গলা মিলিয়ে গান গায়-"যদি ডেকে বলি,এসো হাত ধরো..চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে"।আহ্ কী সুন্দর স্বপ্ন।মন ভরে যায়।ইশ্বরকে ধন্যবাদ।চমৎকার একটি স্বপ্ন আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য।আমি আর কিছু চাই না।
false
fe
আত্মবিশ্বাসের পাশে দাঁড়াও , বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের পাশে দাঁড়াও ,বাংলাদেশ ফকির ইলিয়াস ======================================= মহান বিজয়ের মাস। একটি শোক সংবাদ মনটা খুব বিষণ্ন করে গেল। কমরেড বরুণ রায় পরলোকগমন করেছেন। রাজনীতিবিদ প্রসূন কান্তি রায়। সুনামগঞ্জের জমিদার পরিবারের সন্তান। না তার জীবনের কোন জৌলুস ছিল না। বাংলাদেশে গণমানুষের রাজনীতির যে মুখচ্ছবি, তিনি ছিলেন তার সরল প্রতীক। কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না তার। মনে পড়ছে, তার সানি্নধ্যে বসে কথা বলার দিনগুলোর কথা। বড় হাসিখুশি ছিলেন বরুণ দা। বলতেন, 'আমি তো ভাটি অঞ্চলের মানুষ। মনটা আমার হাওরের মতোই সাদাসিধে'। বাংলাদেশে যে ক'জন নিঃস্বার্থ রাজনীতিবিদ জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে গেছেন, বরুণ রায় তাদের অন্যতম। স্বপ্ন তার একটাই ছিল, মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। সুদিন আসবে বাংলাদেশের। যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল এই দেশ যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা অর্জন করেছিলাম বিজয়। বরুণ রায় দেহত্যাগ করেছেন। কিন্তু তার স্বপ্ন থেকে গেছে এই দেশের প্রতিটি মজলুম মানুষের প্রাণে প্রাণে। তার আদর্শ কোটি তরুণ-তরুণীকে অনুপ্রাণিত করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। বরুণ রায় যেদিন চিরবিদায় নিয়েছেন, সেদিনই ৮ ডিসেম্বর ২০০৯ বাংলাদেশে ঘটে গেছে ভোগবাদী রাজনীতির একটি বিবর্তনধর্মী ঘটনা। হ্যাঁ, তা বিবর্তনই। আর তা হচ্ছে বংশ পরম্পরায় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রাখার সম্মেলন সনদ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল 'বিএনপি'র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তারেক রহমান। সাবেক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তিনি। বর্তমানে ইংল্যান্ডে রয়েছেন। বিএনপি'র কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি একটি ভিডিও ভাষণও দিয়েছেন। সেখানে তিনি 'যোগ্য নেতৃত্ব' নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। কাউন্সিলররা শেষ পর্যন্ত তার কথা শুনে 'যোগ্য নেতৃত্ব' নির্বাচন করেছেন। বিএনপি'র দ্বিতীয় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করেছেন তাকে। আগামী ক'বছরের মধ্যে তারেক রহমান যে বিএনপি'র চেয়ারপারসন হচ্ছেন, তা সময়ের ব্যাপার মাত্র। হ্যাঁ, তিনি এতদিন নেপথ্য নায়ক ছিলেন। এখন সামনে আসছেন। বিদেশ থেকে ফিরে আসবেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। সেটাও প্রায় নিশ্চিত। বিএনপি বেগম খালেদা জিয়াকেই সর্বময় ক্ষমতার দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটি শিগগিরই ঘোষণা করবেন। মোটকথা এই জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের অভিষেক হয়েছে, সেটাই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাওয়া। বিএনপি'র জাতীয় কাউন্সিলে অন্যতম অতিথি ছিলেন একাত্তরের ঘাতকদের নেতা, আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী। তাকে বেশ খোশমেজাজেই দেখা গেছে কাউন্সিলে। নিজামী-মুজাহিদের সঙ্গে তারেক রহমানের বেশ সখ্য ছিল, জাতি ২০০২-২০০৬ সালের বিভিন্ন জনসভায় দেখেছে। তারা পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করে বাংলাদেশে রাজনীতি করেন। যেমনটি রাজাকার শাহ আজিজ, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, খান এ সবুরদের পাশে রেখে রাজনীতি করতেন জিয়াউর রহমান। দুই. সেই মাওলানা নিজামী আরেকটি 'জোশে'র বক্তব্য দিয়ে দেশবাসীর নজর কেড়েছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধারাধীদের বিচার করা নাকি ইসলাম বিরোধী। এই বক্তব্যের মাধ্যমে নিজামী মূলত নরহত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, লুণ্ঠনকে জায়েজ করে নেয়ার ধৃষ্টতা দেখালেন মতিউর রহমান নিজামী। আমার জানতে ইচ্ছে করে, কোন ইসলাম ধর্মের কথা বলছেন নিজামী? তা যদি মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর প্রচারিত ইসলাম ধর্ম হয়ে থাকে তবে সেই ইসলাম ধর্ম তো কখনই নরহত্যা, গণহত্যাকে কবুল করেনি। বরং মহানবী (সাঃ) এর আদর্শ থেকে আমরা জেনেছি, কেউ যদি অন্যায়ভাবে তোমাকে আক্রমণ করে, তবে তার হাত গুঁড়িয়ে দাও। নিজামী বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষদের এভাবে মিথ্যা বলে প্রতারিত করতে চাইছেন কেন? এসব আবোল-তাবোল বলার মাধ্যমে তারা যে নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিল করতে চাইছেন তা কি ভুলে গেছেন নিজামী? একাত্তরে রাজাকার আলবদর বাহিনী বাংলাদেশে কি করেছে, তা দেশবাসী ভুলে যাননি। তারা ভুলে যাননি, সেই হীন চক্রান্তকারীদের কথা- যারা ছড়িয়ে দিয়েছিল বিভীষিকাময় সময়ের প্রবাহ। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি চরম কঠিন সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আরেকটি বিজয় দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। যে সময়ে ষড়যন্ত্র চলছে ঘরে বাইরে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থামিয়ে দেয়ার আন্তর্জাতিক চাপ, বিভিন্ন চরমপন্থি গ্রুপের উস্কানি শঙ্কিত করে তুলেছে বাংলাদেশের প্রান্ত জনপদ। সম্প্রতি ভারতের উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াকে গ্রেফতার নিয়ে নানা কথা আসছে মিডিয়ায়। উলফার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাকে বাংলাদেশে গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারত সফরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক তখনই এমন একটি ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। তবে কি ভারতের কাছ থেকে কোন আনুকূল্য পাওয়ার জন্য বর্তমান সরকার এমনটি করেছে? ইতোমধ্যে ভারতের উগ্রবাদী গ্রুপগুলো বাংলাদেশের সরকারকে নানা হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে অপরাধী-বন্দিবিনিময় চুক্তি সম্পন্ন করে তারপরই 'অপরাধী বিনিময়' কাজটি করা যেত। বাংলাদেশ সে পর্যন্ত অপেক্ষা করল না কেন? বাংলাদেশের বেশকিছু শীর্ষ সন্ত্রাসী, অপরাধী ভারতে পালিয়ে আছে অথবা ভারতের কারাগারে রয়েছে বলে আমরা সংবাদ দেখছি। কই, ভারত তো তাড়াহুড়ো করে এমন কোন সন্ত্রাসীকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়নি। তবে কি বাংলাদেশের সরকার কোন ভুল করছে? ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশের মানুষের কাছে খোলাসা করা দরকার। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী নানা দিক থেকেই চাপের মুখোমুখি হতে পারেন। তাই ক্ষমতাসীনদের সবসময় থাকতে হবে গণমানুষের আত্মবিশ্বাসের কাছাকাছি। কারণ এর বিকল্প কোন শক্তি নেই। মহান বিজয়ের মাসে সঠিক পথ চলার প্রত্যয়ই দিতে পারে আগামী দিনের উজ্জ্বল নির্দেশনা। নিউইয়র্ক, ৯ ডিসেম্বর ২০০৯ -------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১০ ডিসেম্বর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - অ্যালন টেইলর জেফরিস সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৫
false
rn
দীপশিখা কাঁপে ভালোবাসা আকাশে চাঁদ নেই।রাস্তার নিয়ন বাতি গুলো জ্বলে আছে।অমাবস্যার অন্ধকার শহর টাকে পুরোপুরি ডেকে দিতে পারেনি।ঘুমিয়ে আছে সারা শহর।নিজের দাপটে কালো পুরুষ গুলো তলিয়ে গেছে গভীর তন্দ্রায়।শুধু 'হিমি' আর আমার চোখে ঘুম নেই।হঠাৎ দুপুরবেলা যদি কোনো দিন ঘুমিয়ে পড়ি,ঘুম ভাঙ্গলেই কী যে চাপ চাপ কষ্ট অনুভব করি!কেনো কষ্ট কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না।তখন আর কিছুই ভালো লাগে না।কথা বলতে ভালো লাগে না,বই পড়তে ভালো লাগে না,গান শুনতে ভালো লাগে না,কমপিউটার ভালো লাগে না,বন্ধুবান্ধব ভালো লাগে না,টিভি ভালো লাগে না,কিচ্ছু ভালো লাগে না।কোন শব্দ ও ভালো লাগে না।ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।আম গাছের ডাল বেয়ে অঝোরে জল পড়ছে।আম গাছে থাকা একটি চঁড়ুই পরিবার ভয়ে চিৎকার করছে।ব্যক্তিগত সমস্যায় পৌছে প্রতিটি মানুষই হয়ে পড়ে লোভী।কেউ কেউ প্রকাশ্যে নারীকে নিয়ে খেলতে চায়।অথবা প্রেমিক সেজে প্রিয়তমা কে বলবে আমাকে তুমি ভালোবাসো তাহলে পাহাড় থেকে লাভ দাও।দেখি কতটুকু ভালোবাসা তোমার।যেন নারী শুধু পন্যসামগ্রী!ছেলেদের মন খুশি রাখার জন্য মেয়েদের খোলামেলা হয়ে নেঁচে বেড়াতে হচ্ছে আর সেটাকে মেয়েরা স্বাধীনতা ভেবে ছাগল ছানার মতো লাফাচ্ছে!এটা স্বাধীনতা না,এটা মরীচিকা!স্বাধীনতা হলো উদার মনের অনুভুতি।আমরা সভ্য হলেও পৃথিবীতে এখনও আদিকালের নিয়মটাই চলছে।গভীর বেদনায় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আমার হৃৎপিন্ড।রাগ নয়,দুঃখ নয়,প্রেম নয়,অভিমান নয়,এ যন্তনার উৎস আরও গভীরে।জীবন বড় অদ্ভুত!ফোঁটা ফোঁটা মধুর লোভেই আমাদের বেঁচে থাকা।মাঝে মাঝে ভাবি-সব কিছু বুঝলেই যদি যন্তনার উপশম হতো!অজস্র দুঃখ অপমানের গল্প শুনলেই যদি ফিরে আসতো অপার শান্তি!সব কিছুই আমরা হিসাব করে মিলাতে চাই।আরে বাবা,মানুষের মন হলো হিসেবের বাইরের জিনিস।'আমি এখন একটা মহা সত্য কথা বলবো-আদিকাল থেকে মেয়েরা ক্ষমা করে আসছে বলেই টিকে আছে এই সমাজ-সংসার।আমরা একবারও ভাবি না কত অভিমান,রাগ, যন্তনা গোপন করে,নারী'রা ভালোবাসে।এই ভালোবাসা বড় দরকার পুরুষদের।আমার প্রিয় বিষয় হলো গনিত এবং বিজ্ঞান।এই বিষয় গুলো আমার কোন লেখাতেই আনতে পারি না।আজ আনবো।আল-খারিজমী তার রচনায় বীজ গনিতের সমস্ত সুএ,নানা প্রকার গানিতিক সমস্যা ও সমাধান খুব সুশৃ্ংখল ভাবে তুলে ধরেছেন।ax = bx, ax2=c, ax2 + bx = cax2 + c = bx, ax2 = bx + c, ax + c = bx2আবর,(x ± a) এবং (x ± b)a√b=√(a2b) এর √a √b = √abবৃত্তের ব্যস কে 3 1/7 দিয়ে গুন করলে পরিধি পাওয়া যাবে;১/৭ এবং ১/৭ এর ১/২ বাদ দিলে বৃত্তের আয়তন দাড়ায়=n(ব্যাস)2 = ২২/(৭×৪) (ব্যাস)2 = (১ ১/৭ - ১/২ × ১/৭)(ব্যাস)2সূর্য্যের ঘনত্ব Sin ( 90 - ∞) = (cot∝60)/√(122 + cot2 ∝)এখন একটা কবিতা হবে-"একটা দিন-তোমাকে উপহার হিসেবে দিতে চাই,ধরো ১০অক্টোবর তোমাকে দিলামএই পুরোদিন আমি তোমার সাথে থাকবোসকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।সুগন্ধি কোন ফুলের মতো-এই দিনটা কে তুমি তোমার খোঁপায় পড়তে পারোতোমার যত দুঃখ কষ্ট আনন্দ বেদনাসকল ঘটনা হাসি কান্না-সব আমি তোমার কোলে মাথা রেখে শুনবো।উপহার হিসেবে আমি তোমাকে তোমার সব প্রিয় কবিতা শোনাবো।কবিতা না হয়ে গান ও হতে পারে।বা তোমাকে আমার পছন্দের দুইটা শাড়িও কিনে দিতে পারি।আচ্ছা,এখন শুনো প্রতিবারের মতো-বিদায় নেয়ার সময় যেন তোমার চোখে জল না দেখি।তোমার চোখে জল দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।এবার আমাকে এই কষ্টটুকু দিবে না আশা করি।
false
rg
বেগম খালেদা জিয়া আবারো ইতিহাস নিয়ে প্রকাশ্যে মিথ্যাচার করলেন। খালেদা জিয়ার মিথ্যাচারকে বুঝতে হলে ইতিহাসের সেই ঘটনাগুলো একটু পড়তে হবে!!! বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আবারো গতকাল সাংবাদিক সম্মলনে মিথ্যাচার করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যাচার করেছেন পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালে সৃষ্ট যে সংকট, সেই সংকটের ইতিহাস নিয়েও। ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের রাজধানী দিল্লীতে যে ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তি হয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশ একাত্তরে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের কখনোই সাধারণ ক্ষমা করেনি। এমন কি যে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা টপ মোস্ট মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধ করেছিল, তাদের বিষয়ে ওই ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তিতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল যে, পাকিস্তান তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে জাতিসংঘের মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া শেষ করবে। যা পাকিস্তান ওই ১৯৫ জন মানবতা বিরোধী টপ মোস্ট যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে নিলেও বিচার কাজ আর শেষ করেনি। এছাড়া বাংলাদেশে আটকে পরা প্রায় চার লাখ বিহারী অবাঙালীকে পাকিস্তান আর ফিরিয়ে নেয় নি। পাকিস্তান ওই ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তি'র এই দুইটি প্রধান বিষয় পুরোপুরি লংঘন করেছিল। যা এখনো অমিমাংসীত। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়া যিনি দুইবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর মুখে এই ইস্যুতে মিথ্যাচার করাটা শোভা পায় না। বেগম খালেদা জিয়া খুব ভালো করেই জানেন, পাকিস্তান ওই ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তির দুইটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে লংঘন করেছিল। যা এখনো অমিমাংসীত রয়েছে। সুতরাং পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের ইস্যু ১৯৭৪ সালে শেষ হয়নি বরং এখনো তা অমিমাংসীত রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার অবগতির জন্য কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে ওই ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তিগুলো এবং ধারবাহিক বিষয়গুলো আবারো এখানে তুলে ধরছি। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ইতিহাসের মিথ্যাচার করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে আর প্রপাগাণ্ডা চালানো যাবে না। আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিম্তানের জাতীয় পরিষদে যে শোক প্রস্তাব পাশ হয়, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া বিএনপি জানায়নি। বরং হতকাল বিএনপি নেত্রী সেই প্রেক্ষিতে আবারো ইতিহাসের মিথ্যাচারের আশ্রয় নিলেন। যা কোনো বাংলাদেশের নাগরিকের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। এবার আসুন, ইতিহাসের সেই ঘটনাগুলো একটু খোলঅ মনে দেখে আসি। তাহলে বেগম জিয়ার মিথ্যাচারকে বুঝতে আপনাদের সুবিধা হবে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে ভারত-বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত সিং অরোরা'র কাছে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি (এএকে নিয়াজি) ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করেন। জন্ম হল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলায় একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যা আসলে শিমলা চুক্তি নামে পরিচিত। (মূলত উভয় দেশের দুই নেতা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় স্থানীয় সময় ছিল রাত ১২টা ৪০ মিনিট, যা আসলে ৩ জুলাই ১৯৭২)। শিমলা চুক্তির প্রধান বিষয়গুলো ছিল নিম্নরূপ:১. ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সকল দ্বিপাক্ষিক সমস্যা জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী সমাধান করা হবে২. উভয় দেশ নিজেদের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট হবে। সে লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে বিরাজমান সকল সতল সমস্যা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে৩. উভয় দেশ শান্তিপূর্ণভাবে বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশীসুলখভ সহ-অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য সীমান্তবর্তী সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে এবং উভয় দেশ কারো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না৪. উভয় দেশ নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করবে, সীমান্তবর্তী সহ-অবস্থান শান্তিপূর্ণ রাখবে, উভয় দেশের সীমানাকে সম্মানের সঙ্গে দেখবে৫. জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী উভয় দেশ শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে অন্য দেশের উপর কোনো আক্রমণ বা দখল করার প্রচেষ্টা চালাবে না৬. উভয় দেশ বন্ধুত্ব শক্তিশালী করতে নিজেদের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে বিনিময় শুরু করবউভয় দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যে বিষয়ে একমত হয় সেগুলো হল-ক. উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ চালু করবে, ডাক ও টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করবে, নৌপথে, স্থল পথে ও আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করবেখ. উভয় দেশ অপর দেশের পর্যটকদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করবেগ. উভয় দেশ নিজেদের মধ্যে সম্ভাব্য ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে ঘ. উভয় দেশ নিজেদের মধ্যে বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপন ও বিনিময় করবেশান্তিপূর্ণ প্রতিবেশী সুলভ দেশ হিসেবে বসবাসের জন্য উভয় দেশ যে বিষয়ে একমত হয় সেগুলো হল:১. উভয় দেশ আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে নিজ নিজ সৈন্য প্রত্যাহার করবে২. জম্বু ও কাশ্মীর সীমান্তে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে উভয় দেশের মধ্যে গুলি বিনিময় হচ্ছে তা বন্ধ করা হবে। উভয় দেশ যার যার অবস্থানে যার যার সীমানায় ফিরে যাবে। উভয় দেশ এই চিজ ফায়ার বন্ধ রেখে নতুন করে আর সীমান্তে গুলি বিনিময় করবে না৩. উভয় দেশ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জম্বু ও কাশ্মীর থেকে যার যার সেনা যার যার আগের অবস্থানে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে নেবেশিমলা চুক্তি'র পর ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান আরো জোরদার করার জন্য ১৯৭৩ সালের ২৮ শে আগস্ট ভারতের রাজধানী দিল্লীতে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। যা দিল্লী চুক্তি নামে পরিচিত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো দিল্লী চুক্তি সই করেন। বাংলাদেশ দিল্লী চুক্তি'র কোনো পক্ষ না হলেও ওই চুক্তির সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত দিল্লী চুক্তিতে আসলে পাঁচটি প্রধান ইস্যু ছিল। সেগুলো হথ:১. পাকিস্তানে বসবাসরত বাঙালীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা২. বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালীদের পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন করা৩. ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী ও শরনার্থীদের প্রত্যাবাসন করা৪. বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে তাদের বিচার প্রক্রিয়া৫. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেওয়া১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ১৯৭২সালের ২ জুলাই'র শিমলা চুক্তি এবং ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্টের দিল্লী চুত্তির ধারাবাহিকতায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাবার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ৫ থেকে ৯ এপ্রিল ভারতের রাজধানী দিল্লীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেন, ভারতের বিদেশমন্ত্রী স্মরণ সিং ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ বেশ কয়েকবার বৈঠক করে একটি সমঝোতায় উপনীত হয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। যা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বা বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান চুক্তি নামে পরিচিত। ৯ এপ্রিল ১৯৭৪ সালে দিল্লীতে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ওই ত্রিপক্ষীয় চুক্তির প্রধান প্রধান বিষয়গুলো ছিল নিম্নরূপ:১. ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীগণ ১৯৭২ সালের ২ জুলাই শিমলা চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে ঐক্যমত হয়েছেন। যা বাস্তবায়ন করার জন্য উভয় দেশ শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যে সমাধানে পৌঁছানোর জন্য এখনো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।২. বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শিমলা চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে শান্তি ও আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ শিমলা চুক্তিকে সমর্থণ করে।৩. ১৯৭১ সালে এই উপমহাদেশে যে দুঃখজনক মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছিল তা এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমস্যা যার রাজনৈতিক, মানবিক ও পনুর্বাসন করাটা শান্তিপূর্ণ ভাবেই করা উচিত। সকল পক্ষকে স্বাধীন ও সার্বভৌম সম অধিকারের ভিত্তিতে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সকল পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ৪. ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল ভারত ও বাংলাদেশ এই রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে একধাপ অগ্রসর হয়েছে যা মানবিক বিপর্যয়কে অনেকটা সমাধানে সহায়তা করেছে। ভারত ও বাংলাদেশ ওই তারিখে ঐক্যমত হয়েছে যে, উপমহাদেশে রাজনৈতিক সমস্যা ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের জন্য সকল পক্ষকে একসঙ্গে বসেশান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধানে ভূমিকা পালন করবে।এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভারত ও বাংলাদেশ ঐক্যমত হয়েছে যে, উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতি রক্ষার জন্য এবং পরাস্পরিক বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য এবং উক্তজনা প্রশোমনের জন্য আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিকভাবেই এই মানবিক সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। বাংলাদেশ সরকার যেসব পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্থ করেছে, তাদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাবার ইচ্ছে পোষণ করে উভয় দেশ। ৫. ওই ঘোষণা অনুযায়ী, ভারত ও বাংলাদেশ এবং ভারত ও পাকিস্তান কয়েকটি সিরিজ বৈঠকের পর ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্ট দিল্লীতে ভারত ও পাকিস্তান যে চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং যাকে বাংলাদেশ সমর্থণ করেছে, সে অনুযায়ী সকল পক্ষ মানবিক সমস্যা সমাধানে একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চায়।৬. এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের সুপারিশ অনুযায়ী, অন্তত তিন লাখ মানুষকে এখন জরুরী ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন করতে হবে। আর উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখার জন্য রাজনৈতিকভাবেই এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।৭. ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের পূর্ণ স্বীকৃতি বিবেচনায় সম্পৃক্ত করা হয়। যাতে বাংলাদেশ দিল্লী চুক্তিকে সমর্থণ দিয়ে বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেন, ভারতের বিদেশমন্ত্রী স্মরণ সিং ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ দিল্লীতে ১৯৭৪ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল দিল্লী চুক্তি'র খুটিনাটি বিষয় ও সমাধানের উপায় নিয়েবৈঠক করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানবতা বিরোধী যুদ্দাপরাধী ট্রাইব্যুনালে যে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিচার প্রকিয়া কিভাবে শেষ হবে এবং ভারতের জেলে পাকিস্তানের যেসব সেনা আটক আছে তাদের কিভাবে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেওয়া যাবে, সে বিষয়ে একটি সমাধানের উপায় খোঁজা হয়।৮. ১৯৭৩ সালের ২৮ আগস্টের দিল্লী চুক্তি রিভিউ করে তারা এই তিন দেশের বিশাল মানবিক সমস্যার একটি প্রত্যাবাসনের উপায় বের করেন।৯. এই তিন মন্ত্রী তিন দেশের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারগুলো কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ধাপে ধাপে সমাধান করা যাবে সে বিষয়ে একমত হন।১০. ভারত ব্যখ্যা করে যে, সেই সমাধানে উপায় হিসেবে ভারত থেকে ট্রেনে ৬,৫০০ জন করে যুদ্ধবন্দীকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে। তবে কুম্ভ মেলার কারণে ভারত থেকে এই যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন ১০ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিরত থাকবে। ১৯ শে এপ্রিলের পর তা আবার শুরু হবে। আর আশা করা যায় যে, এপ্রিলের মধ্যেই ভারতের জেলে থাকা পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে। ১১. পাকিস্তান ব্যাখ্যা করে যে, পাকিস্তানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন প্রায় শেষের দিকে। আশা করা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট বাঙালিদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যাবে। আর তা কোনো ধরনের অন্তরায় বাধা বা প্রতিরোধ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবেই করা যাবে।১২. বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালিদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে পাকিস্তান দাবী করে যে, ইতোমধ্যে পাকিস্তান সরকার একটি ছাড়পত্র তৈরি করেছে, যারা পাকিস্তানের নাগরিক কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে আটকা পড়েছে, কিংম্বা যারা পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারে চাকরির কারণে যারা সেখানেআটকা পেড়েছে তারা এবং তাদের পরিবাবর্গ, আর যারা দেশ ভাগের কারণে আত্মীয় হিসেবে সেখানে আটকা পড়েছে,তাদের একটা তালিকা পাকিস্তান সরকার চূড়ান্ত বরেছে। কিন্তু যারা নির্বাসিত অবাঙালি কিন্তু পাকিস্তানে আটকা পড়েছে তাদের ব্যাপরে পাকিস্তান সরকার একটি মানবিক বিবেচনা নিয়ে তাদেরও পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন করার জন্য আগ্রহী। আর এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজারের একটি তালিকা পূড়ান্ত হয়েছে যারা সবাই পাকিস্তানের নাগরিত কিন্তু বাংলাদেশে আটকা পড়েছে।পাকিস্তান আরো ব্যাখ্যা করে যে, প্রথম তিন ক্যাটাগরিতে যেসব অবাঙালি পড়বে পাকিস্তান বিনা শর্তেই তাদের ফিরিয়ে নেবে, আর সেই সংখ্যা যতোই হোক না কেন। কিন্তু যাদের আবেদনপত্র বাতিল হয়েছে পাকিস্তান তাদের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে যে, কোন কারণে কিসের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকার তাদের আবেদন বাতিল করল। যদি তারা কোনো কারণে ওই তিন ক্যাটাগরিতে না পড়ে তাহলে তাদের বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের কোনো দায় নেই। তবু তাদের আবেদন পাকিস্তান পুনঃবিবেচনা করে দেখবে কেন তারা বাদ পড়ছে। আর এজন্য কোনো সসময় সীমার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এমনকি তারা কোন ক্যাটাগরিতে পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন চায় সেই আবেদন নতুন করেও করতে পারবে। তাছাড়া পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার একটি সম্মানজনক সমাধানেরও চেষ্টা করবে। ১৩. ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী যুদ্ধবন্দীর ব্যাপারে তিনমন্ত্রী একটি গঠনমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সহজ উপায় বের করার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন যে, এই ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধ করেছে, জোনোসাইডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল, যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের আইন করেছে, তার আওতায় তারা পড়ে। যে কারণে তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী হিসেবেই বিচার করতে হবে। জবাবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, পাকিস্তান সরকার মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের মত কোনো সন্ত্রাসীকে একদম সমর্থণ করে না। যদি তারা এর আওতায় পড়ে তাহলে পাকিস্তান সরকার তাদের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের নিয়ম কানুন অনুসরণ করেই তাদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করবে। ১৪. তিনমন্ত্রী ঐক্যমত হন যে, তিন দেশে বিরাজমান মানবিক এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হবে। তিনমন্ত্রী আরো জানান যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে আমন্ত্রণ দিয়েছেন তাতে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যাবেন। আর বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতীতের ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন। আর এই তিন দেশের মানবিক প্রত্যাবাসন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরে সহযোগিতা চাইবেন। আর অতীতের ভুলকে ক্ষমা করে নতুন করে দুই দেশের বন্ধুত্ব শুরু করার জন্য আহবান জানাবেন। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থণাকে সম্মান দেখিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে নতুনভাবে একটি দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের উপর জোড় দেবেন। আর বলবেন যে, বাঙালি জাতি জানে কি করে ক্ষমা করে দিতে হয়।১৫. পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থণা ও অতীতের ভুলকে ভুলে যাবার যে আবেদন করা হবে, তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন যে, পাকিস্তানের অতীতের ভুল স্বীকার ও ক্ষমাপ্রার্থণাকে বাংলাদেশ অবশ্যই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করবে। আর পাকিস্তানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি, ক্ষমাপ্রার্থনা, আর ভুল স্বীকারের কারণে বাংলাদেশ অন্যান্য যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে আলোচিত ১৯৫ জন মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সেনাকে পাকিস্তানের ফেরত পাঠাতে রাজী আছে। তবে এই ১৯৫ জন মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরী সেনার বিচার পাকিস্তান যথাযথভাবেই করবে এমন প্রতিশ্রুতি পাবার পরেই সেটা কার্যকর হবে যা দিল্লী চুক্তিকে কার্যকর করতে সহায়তা করবে।১৬. তিন মন্ত্রী এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, উপরের বিষয়গুলো বিবেচিত হলে তিন দেশে ১৯৭১ এ সংঘটিত মানবিক বিপর্যয়কে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা সম্ভব হবে। তিন দেশে অন্তত ৭০০ মিলিয়ন মানুষের জীবনে যে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে তার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পাশাপাশি এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি তিন দেশের ভবিষ্যতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তারা সম্মত হয়েছেন। আর এটা বাস্তবায়ন করা গেলে উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতি ফিরে আসার পাশাপাশি মানবিক সমস্যাটির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়াও তিন দেশের মধ্যে নতুন করে একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে।১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের রাজধানী দিল্লীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেন, ভারতের বিদেশমন্ত্রী স্মরণ সিং ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ এই ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।এই ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তির পর ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সেনাসহ অন্তত ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৯ জনকে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন করা হয়। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, যার অন্তত ১ লাখ ২১ হাজার ৬৯৫ জন বাংলাদেশীকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়। আর অন্তত ১ লাথ ৮ হাজার ৭৪৪ জন পাকিস্তানীকে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন করা হয়। ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হয়। আর জেনারেল এএকে নিয়াজি কে সর্বশেষ পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী হিসেবে ভারত থেকে ওয়াগাহ সীমান্ত পথে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু পাকিস্তানী সর্বশেষ যুদ্ধবন্দী ও মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর পর ত্রিপক্ষীয় এই শান্তি চুক্তির পাঁচটি প্রধান ইস্যুর অন্তত চারটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও দুইটি অন্যতম বিষয় ভবিষ্যতের জন্য অমিমাংসীত থেকে যায়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এই দুইটি সমস্য আজও সমাধান হয়নি। সেই দুইটি ইস্যু কি? একটি হল ১৯৫ জন যে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী পাক সেনা যারা ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করেছিল, পাকিস্তান তাদের ফিরিয়ে নিলেও তাদের বিচার করেনি। অপরটি হল, বাংলাদেশে আটকে পরা প্রায় চার লাখ বিহারী অবাঙালি পাকিস্তানীদের পাকিস্তান আর ফিরিয়ে নেয়নি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইতিহাসের মিথ্যাচার করে আবারো প্রমাণ করলেন, তিনি আসলে পাকিস্তানের চর, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোই তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য। সারা দেশে জামায়াত শিবিরকে নিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে সহিংস আন্দোলন, যা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর গোটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় রূপ নেয়, নিরীহ সাধারণ মানুষের উপর হামলা, খুন, আগুণ, জ্বালাও পোড়াও, রেল লাইন তুলে ফেলা, যাত্রীবাহী বাসে আগুন, ট্রেনে আগুন, অন্তত ১২০ জন মানুষে পুড়িয়ে হত্যার পরেও বেগম খালেদা জিয়া দাবী করেন যে তাদের এটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন!! বেগম জিয়া যে বিশ্বাস নিয়ে জামায়াত শিবির বিএনপি'র এই নাশকতাকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বলেন, ঠিক সেই বিশ্বাস নিয়েই তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের এই শোক প্রস্তাবে আমরা মর্মাহত। তাদের নিন্দা জানানোর মত কোনো ভাষা উচ্চারণে বেগম জিয়ার হৃদয় সায় দেয় না। তেমনি একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে তাঁর সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। বরং একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য তাদেরকে নিয়ে মিটিং মিছিল সমাবেশ করে তাদের মুক্তি দাবী করেন। সারা দেশে নাশকতা করে তাদের বিচার প্রত্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে চান। মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন, আর গলায় গলায় পাকিস্তান আর জামায়াত শিবিরের সঙ্গে এই যে পিড়িত, বেগম খালেদা জিয়া, মিথ্যাচার করে রাজনীতির এই মুখোশটি বেশিদিন আড়ালে রাখা যায় না। দয়া করে আপনি মিথ্যাচার ছাড়ুন। আর বাংলাদেশের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুষ্ঠু রাজনীতি করতে চাইলে পাকিস্তান আর জামায়াত সঙ্গ ত্যাহ করুন। নইলে ভবিষ্যতে আপনার এই ভূমিকার জন্য বাংলার মাটিতে আপনারও একদিন বিচার হতে পারে। ইতিহাস কাউকে ছেড়ে দেয় না। আপনাকেও ইতিহাস নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবে না। পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো মিমাংসা হয়নি। বাংলাদেশে আটকে পরা পাকিস্তানীদের বিষয়েও এখনো কোনো মিমাংসা হয়নি। অতএব খামাখা মিথ্যাচার করে ইতিহাসকে আর কলংকিত করবেন না। বেগম খালেদা জিয়া, আপনি কোন পক্ষের রাজনীতি করেন, কেন করেন, কার স্বার্থে করেন, তা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশের কাছে ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা করারও সুযোগ নাই। অতএব যা বলবেন, জেনে শুনে বলবেন। আপনার কোনো মিথ্যাচার বাংলাদেশের মানুষ আর এক মিনিটের জন্যও মেনে নেবে না।
false
fe
কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠফকির ইলিয়াস=======================================শিরোনামটি ধার নিয়েছি কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতা থেকে। কৃতজ্ঞতা কবির কাছে। হ্যাঁ, আমাদের চারপাশে এখন অনেক প্রতিচ্ছায়া। এ ছায়াগুলো কার? এরা কারা? কোথায় ছিলেন তারা এতদিন?একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র শাখা গঠনের জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা সেই কমিটি গঠন করেছি। আজ মনে পড়ছে অনেক স্মৃতি। শহীদ জননীর নেতৃত্বে এই কমিটি গঠিত হয়েছিল দুটি পৃথক কমিটির সমন্বয়ে। একটি ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদ’ আর অন্যটি ছিল ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। এই দুটি কমিটি একত্র করে গঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’। এর আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় শহীদ রুমীর আম্মা বেগম জাহানারা ইমামকে।কমিটি যাত্রা শুরুর পরই, তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় একটি আহ্বান ছাপা হয়। তাতে শহীদ জননী বহির্বিশ্বে এই কমিটির শাখা গঠনের আহ্বান জানান। ছিল ফোন নম্বরও। আমি সে সপ্তাহেই নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফোন করি। কথা হয় শহীদ জননীর সঙ্গে। তার ‘একাত্তরের দিনগুলি’ পাঠ করে আমিও হয়ে পড়েছিলাম তার সন্তান। শহীদ জননী আমাকে দিকনির্দেশনা দিলেন। বলে দিলেন কীভাবে কী করতে হবে। আমি তখন টগবগে তরুণ। নিউইয়র্কে সংগঠন গড়ার কাজ আমার রপ্ত ছিল ভালোই। কাজে লেগে গেলাম। ফোনে কথা হলো অনেকের সঙ্গে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের আহ্বান জানালাম। আমরা ক’জন তরুণ মিলে আহ্বান করলাম সভা। আব্দুর রউফ খান মিষ্টু, দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী, নাজমুল হক হেলাল, চন্দন দত্ত, আবু তালেব, সালেহ আহমদ মনিয়া, … আমার পাশে একঝাঁক তরুণ। আমরা পর পর ক’টি সভা করলাম। প্রায় প্রতিদিনই কথা বলে নির্দেশনা নিলাম শহীদ জননীর। এলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিকরা। ডা. নুরুন নবী ও কাজী জাকারিয়াকে যৌথ আহ্বায়ক করে গঠিত হলো কমিটির যুক্তরাষ্ট্র শাখা। সদস্য সচিব করার জন্য আমার নাম প্রস্তাব করা হলো। আমি সবিনয়ে বললাম, আমি তরুণ। সিনিয়র কাউকে সে দায়িত্ব দেয়া হোক। সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হলো বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ফরাসত আলীকে। আমাকে দেয়া হলো সহকারী সদস্য সচিবের দায়িত্ব। আমরা কাজে নেমে পড়লাম। শুরু হলো নানা লবিং। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় গণআদালত বসল। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন বিশিষ্ট আইনজীবী পাঠালাম। তার নাম টমাস কে কিটিং। তিনি গণআদালত প্রত্যক্ষ করার জন্য ঢাকায় গেলেন। আমেরিকায় ফিরে কাজ করলেন আমাদের পক্ষে, বিভিন্নভাবে।এক অসম সাহসের অধিকারিণী ছিলেন মা, জাহানারা ইমাম। তাকে আমি ‘মা’ ডাকতাম। তার সঙ্গে কাজ করার স্মৃতি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রেরণা। এই সেই জাহানারা ইমাম, যাকে ১৯৮১ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তার কেবিনেটে মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা বানানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই সময় অনেক বাম-ডানপন্থীরা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দিলেও শহীদ জননী তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন দৃঢ়তার সঙ্গে। এই সেই জাহানারা ইমাম, যাকে দেশের মফস্বল এলাকার তরুণরা চিঠি লিখে বলেছে, ‘মা আপনি হুকুম দিন। নরঘাতক গোলাম আযমকে হত্যা করে আমি ক্ষুদিরামের মতো হাসিমুখে ফাঁসিতে ঝুলব।’ এমন চিঠিপত্র সে সময় জাতীয় দৈনিকেও ছাপা হয়েছে। গণআদালত বসার এক সপ্তাহ আগে নির্মূল কমিটির ঢাকা মহানগর শাখা ঘোষণা দিয়েছিল, গণআদালতের কর্মসূচি সফল করার জন্য মৃত্যুঞ্জয় স্কোয়াড গঠন করা হবে। যারা নিজের জীবন দিয়ে হলেও এই কর্মসূচি সফল করবে। এই ঘোষণা পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর প্রতিদিন শত শত তরুণ নির্মূল কমিটির অফিসে এসে নাম লিখিয়েছে। অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছে। মনে পড়ছে, সেই বছরই জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদ জিয়া নিউইয়র্কে এলে, আমরা হাজারো প্রবাসীরা প্লাজা হোটেলের সামনে থমকে দিয়েছিলাম তার গাড়ির বহর। তীব্র প্রতিক‚লতা ডিঙিয়ে ছুটে এসেছিলেন বাঙালিরা আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে। এই সময়গুলোতে শহীদ জননীর সঙ্গে আমার প্রায়ই ফোনে কথা হয়। ঢাকায় গণআদালত গঠিত হবে। সেই কমিটিতে কিছু ‘এজেন্ট’ ঢুকে পড়েছে- এমন তথ্য আমাদের কাছে ছিল। আমি এই বিষয়ে তার কাছে নাম ধরে ধরে জানতে চাই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমিও সজাগ। আমি বিষয়টি দেখছি।মজার বিষয় হচ্ছে, সেই সময়ে বিএনপি সরকার দ্বৈত ভূমিকা নিয়েছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকার একদিকে গোলাম আযমের প্রতি, আরেক দিকে গণআদালত গঠনের উদ্যোক্তাদের- উভয়ের প্রতি কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করে। গোলাম আযমের প্রতি কারণ দর্শাও নোটিশে বলা হয়, ‘কেন তিনি একজন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে তার অবস্থানের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ত্যাগ করছেন না এবং বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিধি লঙ্ঘন করে জামায়াতে ইসলামীর আমির (দলপ্রধান) হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।’ অপরদিকে সরকার গণআদালত গঠনের উদ্যোক্তাদের প্রতি নোটিশ জারি করে বলে, তারা সংবিধান ও আইনের শাসন অবজ্ঞা করে গণআদালত গঠনের আয়োজন করেছেন। নোটিশের জবাবও দেন গোলাম আযম। কিন্তু সরকার নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২৪ মার্চ গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার করে। মূলত গোলাম আযমকে বাঁচাতেই এই খেলা পাতানো হয়।অন্যদিকে, জাহানারা ইমামকে চেয়ারপারসন করে বিচারকমণ্ডলী গঠন করা হয়। বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, মাওলানা আবদুল আউয়াল, সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামান, আবু ওসমান চৌধুরী, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, এডভোকেট গাজীউল হক, ড. আহমদ শরীফ, স্থপতি মাযহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ব্যারিস্টার শওকত আলী খান। গণআদালতে অভিযোগকারীদের পক্ষে কৌঁসুলি ছিলেন এডভোকেট জেড আই পান্না, এডভোকেট শামছুদ্দীন বাবলু ও এডভোকেট উম্মে কুলসুম রেখা। গণআদালতে বিচারে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অনুপস্থিত থাকায় ন্যায়বিচারের জন্য গণআদালত ড. নজরুল ইসলামকে (আসিফ নজরুল) গোলাম আযমের কৌঁসুলি নিযুক্ত করেন। তাকে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো পাঠ করে শোনানো হয়। ফরিয়াদির পক্ষে ২১২ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। তাদের মাঝে অন্যতম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, লেখিকা মুশতারী শফি, প্রখ্যাত নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ প্রকৌশলী ফজলুর রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান, শহীদ সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ছেলে অমিতাভ কায়সার, ড. হামিদা বানু, মাওলানা ইয়াহিয়া মাহমুদ, আলী যাকের ও ড. মুশতাক হোসেন।রায়ের দুদিনের মাঝেই ২৮ মার্চ গণআদালতের ১২ সদস্যের বিচারকমণ্ডলী, ৮ কৌঁসুলি এবং ১২ জন সাক্ষীর ৭ জন ও সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুল হক ভুঁইয়া। তাদের নামগুলো আমি বিস্মৃতি হয়ে গিয়েছিলাম। নামগুলো এই লেখার প্রয়োজনে আমাকে টাইপ করে পাঠিয়েছেন বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত বিশিষ্ট লেখক-গবেষক অমি রহমান পিয়াল। তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকছি। প্রিয় পাঠক, প্রিয় আজকের প্রজন্ম, আমি মনে করি এই ২৪ জনের নাম আপনাদের জানা দরকার। তারা হলেন- জাহানারা ইমাম, গাজীউল হক, ড. আহমদ শরীফ, স্থপতি মাযহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমদ, ফয়েজ আহমদ, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, মাওলানা আবদুল আউয়াল, লে. ক. (অব.) কাজী নুরুজ্জামান, লে. ক. (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, ব্যারিস্টার শওকত আলী খান, এড. জেড আই পান্না, এড. শামসুদ্দিন বাবুল, এড. উম্মে কুলসুম রেখা, এড. নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল), ড. আনিসুজ্জামান, ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সৈয়দ শামসুল হক, শাহরিয়ার কবির, মাওলানা ইয়াহিয়া মাহমুদ, আলী যাকের, ডা. মোশতাক হোসেন ও অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী।দুই.প্রিয় পাঠক, আগেই বলেছি- এই নির্মূল কমিটিতে যারা এসেছিলেন তাদের কয়েকজনের পরবর্তী সময়ের ভূমিকা দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তারা না বুঝেশুনে অথবা অন্য কারো এজেন্ট হিসেবে এসেছিলেন। আমাদের মনে আছে, কবি আল মাহমুদ ‘দৈনিক গণকণ্ঠে’র সম্পাদক ছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডাধারী ছিলেন। তার শেষ পরিণতি দেখেছেন? তিনি জামায়াত-শিবিরের মেহমান হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন এমন ভিডিও আপনারা অনেকেই ইউটিউবে দেখেছেন। পেয়েছেন বড় মাসোহারাও মৌলবাদী রাজাকারদের কাছ থেকে। যে কথাটি আমরা বারবার দেখছি, তা হলো- ‘রাজাকার সবসময়ই রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা সবসময় মুক্তিযোদ্ধা নয়।’ আচ্ছা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেউ যদি নাৎসিবাদকে মদদ দেয় তা আমেরিকা মানবে কি? না- মানবে না। কেউই মানবে না। তাহলে আজো যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আলবদর রাজাকার ও তাদের পুনর্বাসনকারী জিয়াউর রহমানকে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেন তারা কি না বুঝেশুনে সেদিন নির্মূল কমিটিতে গিয়েছিলেন, নাকি বিশেষ কোনো এজেন্ডা নিয়ে? গোলাম আযমের কৌঁসুলি হয়েছিলেন গণআদালতে? হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক, আমি আজকের ড. আসিফ নজরুলের কথা বলছি। শাহাদত চৌধুরীর হাত ধরে যিনি ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র প্রতিবেদক হিসেবে শহীদ জননীর নজরে এসেছিলেন। আমরা তো সেই জাতি, যাদের অনেকে ‘কমান্ডার ইন চিফ’ আর ‘প্রধান সেনাপতি’র পার্থক্যই বুঝি না। জে. ওসমানীকে যারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক’ বলেন তারা কি ভেবে দেখেছেন কিংবা দেখেন বিষয়টি? মতপ্রকাশের অনেক তরিকা আছে। কিন্তু যারা পাকহানাদের সঙ্গে রাজাকার সেজে এই দেশে জুলুম-হত্যা করেছিল, তাদের বাঁচিয়ে কিসের মতপ্রকাশ?রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে কথা বলার আগে, এজেন্ট হিসেবে নয়- মুক্তিযুদ্ধের তিরিশ লাখ শহীদকে সম্মান করে কথা বলতে হবে। আমরা দেখেছি, এই দেশে অনেকেই আদর্শ ত্যাগ করে বোল পাল্টেছেন। আতাউস সামাদ, সিরাজুর রহমান, মাহমুদুর রহমান, কিংবা আজকের শফিক রেহমান-ফরহাদ মজহাররা কোন বিপ্লব চেয়েছেন কিংবা চান- তা তো আমরা কম জানি না। না- এমন কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ বাংলাদেশ চায়নি। বাংলাদেশ চেয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সমাজ। আড়ালে আবডালে যারা সরকারের সমালোচনার নামে মহান মুক্তিযুদ্ধকে হেয়প্রতিপন্ন করে খলনায়কদের কাতারে দাঁড়ান, তাদের তো বিশ্বস্ত দেশপ্রেমিক বলা যায় না। আর মধ্যপন্থা অবলম্বন করে তো এই দেশ, এই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তাই সেই পথ তো বাতিল বলেই মনে করেন বাংলাদেশের আপামর মানুষ।---------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা॥ শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৩
false
fe
দৈনিক সমকাল এর রিপোর্টে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা এই তালিকা টা দেখুন । আরও কি নাম যুক্ত হবে ? কেউ জানে না । আমার কাছে খুবই জগাখিচুড়ি মনে হচ্ছে ।................................................................................'যুদ্ধাপরাধী'দের ছবিসহ তালিকা যাচ্ছে বিমান ও স্থলবন্দরে তালিকায় সাবেক আ'লীগ নেতা!পিনাকি দাসগুপ্ত========================================সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের আরও একটি তালিকা পাওয়া গেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত এ তালিকায় ৪৬ জনের নাম-ঠিকানা রয়েছে। তালিকায় সাবেক এক আওয়ামী লীগ নেতার নামও আছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৮ জন। জীবিত ৩৮ জন। এর মধ্যে ১৭ জনেরই অবস্থান রাজধানীতে। এ তালিকার অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। রয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার বহিষ্কৃত এক আওয়ামী লীগ নেতা। তালিকাভুক্ত এসব যুদ্ধাপরাধীর ছবি সংগ্রহের কাজ চলছে। দু'এক দিনের মধ্যে ছবিসহ তাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বন্দরে পাঠানো হবে। যাতে তারা দেশ ত্যাগ করতে না পারে। তালিকায় যে ৩৮ জনের নাম : আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন ভুইয়া, কাকচর, থানা নান্দাইল, জেলা ময়মনসিংহ। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমিরগোলাম আযম, গ্রাম বীরগাঁও, থানা নবীনগর, বি-বাড়িয়া। এটিএম আজহারুল ইসলাম, গ্রাম বালুয়াভাটা প্রফেসরপাড়া, থানা বদরগঞ্জ, জেলা রংপুর। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আমির আবদুল কাদের মোল্লা, গ্রাম আমিরাবাগ, কোতোয়ালি ফরিদপুর, বর্তমান ১৪ডি মীরবাগ, নয়াটোলা, মগবাজার, রমনা, ঢাকা-১২১৭। জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, গ্রাম মাহমুদপুর, থানা সাথিয়া, জেলা পাবনা। ১০/এফ/২ মধুবাগ (মীরবাগ) রমনা, ঢাকা। সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, গ্রাম পশ্চিম খাবাসপুর, মাওলানা আঃ আলী সড়ক, কোতোয়ালি, ফরিদপুর। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, কুমারী মুদিপাড়া, থানা+জেলা শেরপুর। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী. গ্রাম গহিরা চৌধুরী বাড়ি, রাউজান, চট্টগ্রাম। জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফ, ২২ দিলখোলা রোড, টুটপাড়া, খুলনা। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, গ্রাম সাঈদখালী, থানা জিয়ানগর, জেলা পিরোজপুর। গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, গ্রাম গহিরা চৌধুরী বাড়ি, থানা রাউজান, জেলা চট্টগ্রাম। জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা মোহাম্মদ আবদুস সোবাহান, গ্রাম হাজী মুহসীন, পাথরতলা, থানা+জেলা পাবনা। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলী, গ্রাম চালা, থানা হরিরামপুর, জেলা মানিকগঞ্জ। রফিকুল ইসলাম খান, পিতা মোঃ খোরশেদ আলম, গ্রাম নওকৈর, থানা উল্লাপাড়া, জেলা সিরাজগঞ্জ। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (বাচ্চু মিয়া), গ্রাম খারদিয়া, থানা সালতা, জেলা ফরিদপুর। মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, বায়তুল আবেদ টাওয়ার চতুর্থ তলা, পল্টন, ঢাকা। চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাহজাহান, ভোলা, বর্তমান বাসা ১৬, রোড ৩০, ২য় তলা, গুলশান-১, ঢাকা। ডা. কাজী এমদাদুল হক, বর্তমানে ভাঙ্গা ফরিদপুরে অবস্থানরত। এবিএম খালেক মজুমদার, ছনটেক মসজিদ রোড, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার (সাবলীচর, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর) বাসা নম্বর-১৩৬, পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। সৈয়দ মোঃ কায়ছার, ১১৭, ব্যাংকার্স রোড, নাখালপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। জামায়াতের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আনছার আলী, বাসা ফকিরাপুল। ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল বাছেদ, বর্তমানে রামপুরা টিভি ভবনের উল্টোদিকে ১৪তলা ভবনের মালিক। মোঃ রিয়াসাত আলী বিশ্বাস, গ্রাম কুড়ি কাবু বুনিয়া, থানা আশাশুনি, জেলা সাতক্ষীরা। গাজী নজরুল ইসলাম, গ্রাম চকবাড়া, থানা শ্যামনগর, জেলা সাতক্ষীরা। বিএনপি নেতা সাবেক এমপি আবদুল আলীম, সদর রোড, শান্তিনগর, জয়পুরহাট। মাওলানা হাবিবুর রহমান, লোকনাথপুর, থানা দামুড়হুদা, জেলা চুয়াডাঙ্গা। শাহ মোঃ রুহুল কুদ্দুস, গ্রাম জায়গির মহল, জেলা পাইকগাছা, খুলনা। আবু সালেহ মোঃ আজিজ মিয়া, গ্রাম সাথিয়া মীরগঞ্জ, থানা সুন্দরগঞ্জ, জেলা গাইবান্ধা। মাওলানা আবদুল হাকিম, গ্রাম দিয়াবাড়ী, থানা বালিয়াডাঙ্গা, জেলা ঠাকুরগাঁও। অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, গ্রাম তালবাড়ী, থানা কানাইঘাট, সিলেট। মাওলানা হাবিবুর রহমান, গ্রাম সুবিদ বাজার, কোতোয়ালি, সিলেট। মাওলানা সামছুল ইসলাম, বারদোলা, সাতকানিয়া, জেলা চট্টগ্রাম। অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার, গ্রাম শিরোমনি, থানা খানজাহান আলী রোড, খুলনা। আফতাব উদ্দিন মোল্লা, উপজেলা চেয়ারম্যান চিবিরবন্দর, দিনাজপুর। ফজলুর রহমান সুলতান, গ্রাম সালতিয়া, থানা গফরগাঁও, জেলা ময়মনসিংহ। আমির আলী, গ্রাম ফকিরাপুর, থানা সুধারাম, জেলা নোয়াখালী। জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর শাখার সাবেক আমির গোলাম সরোয়ার, নোয়াখালী। যারা মারা গেছে, ৮ জন : তারা হলো আবুল কাশেম, গ্রাম ও থানা উলিপুর, জেলা কুড়িগ্রাম। আবদুল মজিদ তালুকদার, সান্তাহার, বগুড়া। এএনএন ইউসুফ, পিতা আবদুল গণি, গ্রাম দাদপাড়া, থানা কুলাউড়া, জেলা মৌলভীবাজার। একেএম শফিকুল ইসলাম, পিতা মৃত আবদুস সোবহান, গ্রাম বীরগাঁও, থানা নবীনগর, জেলা বি-বাড়িয়া। আবদুল মতিন, পিতা হেলাল উদ্দিন, গ্রাম সোহাগপুর, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ। আক্তার উদ্দিন, ঠিকানা পাওয়া যায়নি। একেএম মোশারফ হোসেন, পিতা মৃত ইমাম হোসেন, গ্রাম পাঁচরখি, থানা নান্দাইল, জেলা টাঙ্গাইল। মাওলানা নুরুজ্জামান, পিতা ইমাম উদ্দিন। ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, নান্দাইল উপজেলার আবদুল মতিন ভূঁইয়া একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, বাড়ি-ঘরে অগি্নসংযোগসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। সে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ঘোষিত তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী। একাত্তরে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হওয়া সত্ত্বেও সে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নান্দাইল থানায় ৩টি মামলা রয়েছে। আবদুল মতিন ভূঁইয়া এরশাদের শাসনামলে আওয়ামী লীগের সমর্থনে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিল। পরে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে এবং আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হয়।
false
fe
বিজয়ের চেতনায় ঘাতক দালালদের বিচারের দাবি বিজয়ের চেতনায় ঘাতক দালালদের বিচারের দাবি ফকির ইলিয়াস ------------------------------------- বাংলাদেশের রাজাকাররা তাদের ক্ষমতা পরীক্ষা অতীতে করেছে। এখনো করে যাচ্ছে। তা নতুন কিছু নয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে তাদের। সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রাজনীতিকদেরকে তারা কাজে লাগিয়েছে নিজেদের প্রয়োজনে। আবার ছুড়ে দিয়েছে। ব্যবহার করে ছুড়ে দেওয়াই মওদুদীপন্থীদের হীন কর্ম। যারা ব্যবহৃত হয়েছেন তারা অনেকেই আজ অন্তরীণ। অথচ সেরা রাজাকার, আল-বদর কমান্ডাররা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটাই আজ বাংলাদেশে মহান বিজয় দিবসের প্রকৃত বাস্তবতা। এদের টুঁটি চেপে অনেক আগেই ধরা যেতো। কিন্তু রাজনীতিকরা তা ধরেননি। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১১ হাজারের মতো। অথচ জনসংখ্যা দেশে ১৪ কোটির উপরে। এদের তো রা করার কোনো উপায় থাকার কথা ছিল না। কিন্তু তারপরও দেশের মহান বিজয়ের তিন দশক পার হওয়ার আগেই তারা মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। যারা সরাসরি একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। ভাগ বাটোয়ারা করে ক্ষমতায় যাওয়ার এবং টিকে থাকার জন্যও প্রতিযোগিতার ফল এমনটিই হয়। ভাবতে অবাক লাগে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে, ডিসকাশন গ্রুপে রাজাকারপন্থী কিছু কিছু উত্তরসূরি প্রশ্ন তোলে, ‘একাত্তরে আদৌ ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছিলেন কি না।’ ধৃষ্টতা আর কাকে বলে? তারা বলে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা চাননি, পশ্চিমাদের সঙ্গে সমঝোতা করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলেন। এমন নানা উদ্ভট তথ্যও হাজির করে মাঝে মাঝে। এসবের উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতিকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের রাজাকারী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা। প্রজন্মের ব্রেনওয়াশ করা। এরা কোনো ইতিহাস, কোনো ডকুমেন্টারি মানতে চায় না। বিদেশের বিভিন্ন আর্কাইভে রাখা তথ্য, তত্ত্বগুলো বিশ্বাস করতে চায় না। না বুঝতে চাইলে তাদেরকে বুঝাবে কে? কিন্তু কথা হচ্ছে আজকে যারা সত্যের অন্বেষণের রাজনীতি উপহার দিতে লেভেল প্লেইং ফিল্ডে কাজ করছেন, তাদের অভিপ্রায় কী এ ব্যাপারে? খুনিদের বিচার না করে কি সে লেভেল বাংলাদেশে তৈরি হবে? বর্তমান আইন উপদেষ্টা বলেছেন, আগামীতে কারা ক্ষমতায় আসবে তাও দেখতে হবে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে। খুবই ভালো কথা। আমরা ধরে নিচ্ছি, একটি সম্মিলিত (কোয়ালিশন) সরকার ক্ষমতায় আসবে। আমরা ধরে নিতে পারি সরকার, বর্তমান সরকারের সব কাজের বৈধতাও দেবে। কিন্তু মানুষের মৌলিক যে চাওয়া সে চাওয়াটি পূরণে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের এতো ভয় কিংবা অনীহা কেন? যা বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ পারেনি, তা করার জন্যই তো ওয়ান-ইলেভেনের জন্ম হয়েছে। তাই নয় কি? যদি তাই হয়, তবে সুবিচারের মাধ্যমে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে বাধা কোথায়? রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা শুধু রাষ্ট্রই করতে পারে এ তত্ত্ব বাঙালি জাতিকে নানাভাবে শিখানো হয়েছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কথা বাঙালি ভুলে যায়নি। কিন্তু জাতির স্বাধিকারের প্রশ্নটি যখন জোরালো হয়ে যায় তখন তা দমিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারই যদি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বাদী হওয়ার ক্ষমতা রাখে তবে বাদী হয়ে মামলা তারা করছে না কেন? সঙ্গত এই প্রশ্নটি আবারো করতে হয় সরকার পক্ষকে। আমরা দেখছি ইউরোপ-আমেরিকায় এখনো নাৎসিবাদের গন্ধ পাওয়া গেলে সেখানে কামান দাগাবার চেষ্টা করে সরকার পক্ষ। এটি হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিকত্ব রক্ষার প্রশ্ন। এ প্রশ্নে আপোষ করলে রাষ্ট্র বিপন্ন হতে পারে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। আর পারি না বলেই বিষয়টি জিইয়ে রেখে শুধুই রাষ্ট্রের ক্ষতি করা হবে। শহীদ মতিউর, শহীদ হামিদুরের দেহাবশেষ দেশে আনা হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের প্রতি ভারত সরকার সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়েছে। কিন্তু বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষের প্রতি পাকিস্তান সরকার কোনো সম্মান দেখায়নি। কারা একাত্তরে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য পাকিদের শলাপরামর্শ দিয়েছিল, তা কিছুই লুকানো নয়। এসব বিষয়ে সে সময়ের দলিলপত্র দেশে-বিদেশে এখনো সংরক্ষিত আছে। কথা হচ্ছে, নানা রাজনৈতিক ছলচাতুরী সুবিধাভোগের ফন্দিফিকিরের নামে রাজনীতিকরা বেহুশ থাকায় ঘাতক দালালদের বিচার করা যায়নি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এদের বিচার কোনো দিনই করা যাবে না। কিংবা কেউ করতে পারবে না। আজ বাংলাদেশে প্রধান দুই দলের শীর্ষ পর্যায়সহ সব পর্যায়ে যে খড়গ নেমে এসেছে তা সম্ভব হয়েছে ওয়ান-ইলেভেনের পর। এমনটি হতে পারে তা কি কোনোদিন কল্পনা করা যেতো? না, তেমন ভাবার কোনো অবকাশ ছিল না। অথচ ঘাতক-দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলতেই আজ সরকারি পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন, শঙ্কার কথা তোলা হচ্ছে। এর নেপথ্য কারণ কী? তবে কি বিচারের ব্যাপারে সরকার, সকল অপরাধীদেরকে সমান চোখে দেখছে না? না হলে ২৫/২৬ বছরের দুর্নীতির খতিয়ান তল্লাশি করা গেলে, ৩৬ বছর পূর্বের গণহত্যার নথিপত্রের দিকে ফিরে তাকাতে অসুবিধা কোথায়? মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিচার চেয়ে কেউ উদ্যোগী হলে রাষ্ট্র পক্ষ তাকে সহযোগিতা করবে। এটা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ভালো করেই জানেন, যারা একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তারাই রাষ্ট্রদ্রোহী। যারা যুদ্ধ চলাকালে সুস্থ মস্তিষ্কে গণহত্যা করে কিংবা মদদ জোগায়, তারাই যুদ্ধাপরাধী। এসব যুদ্ধাপরাধীদের অবস্থান একাত্তরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল তীব্রভাবে। তাই এই ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রটিকেই বিচার চেয়ে বাদী হতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যুগে যুগে যেমনটি বিচার চাওয়া হয়েছে। এবং রাষ্ট্র সেসব বিচারের ব্যবস্থাও করেছে। একটি কথা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে সত্যের পক্ষে মানুষ যেকোনো সময়, যেকোনো দেশে দাঁড়াতে পারে। এ প্রসঙ্গে একটি সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। সম্প্রতি পাকিস্তানে সামরিক শাসক পারভেজ মুশাররফ গণতন্ত্র, মানবতা এবং গণমানুষের বিরুদ্ধে যে দাপট দেখাচ্ছেন তা বিতর্কিত হচ্ছে দেশে-বিদেশে। মুশাররফ নিজ দেশের আইনজীবী, বিচারকদের ওপর চরম নির্যাতন চালিয়েছেন। এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবীরা প্রতিবাদ করে রাজপথে নেমে এসেছেন। নিউইয়র্ক বার এসোসিয়েশনের প্রায় পাঁচ শতাধিক আইনজীবী নিউইয়র্ক সিটি হলের সামনে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ করেছেন। কালো ব্যাজ ধারণ করে সামরিক জান্তার পতন দাবি করেছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে, নির্যাতিতদের পক্ষে সৎ সাহস নিয়ে মানুষেরা দাঁড়ান বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকেই। তা কোনোভাবেই রোখা যায় না। সম্প্রতি নিউইয়র্কে বিভিন্ন সমাবেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছেন অভিবাসী বাঙালি সমাজ। তারা জাতিসংঘ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য প্রমাণ নিয়ে বাংলাদেশের একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার পথে অগ্রসর হচ্ছেন। বর্তমান সরকার বারবার বলছে, তারা সুস্থ রাজনীতির ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ তৈরি করছেন। এই ফিল্ডটি কাদের জন্য তৈরি হচ্ছে? রাজাকার, আল-বদরদের জন্য? তারাই এ দেশে রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ামক হবে? একটি কথা খুব গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই। আর তা হচ্ছে, এ দেশে যদি কোনোভাবে রাজাকারদেরকে পক্ষপাত করা হয়, তবে কারো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎই শুভ হবে না। কারণ রাজাকাররা এমন এক অশুভ শক্তি, যারা সময় সুযোগ পেলেই ছোবল দেয়। অতীতে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও দেবে। দেশের আপামর জনগণ জানেন এরা কতো জঘন্য মানসিকতা সম্পন্ন। তাই এদের বিচার আজ রাষ্ট্রীয় দাবি। বর্তমান সরকার এদের বিচার না করলে কালের আবর্তে এই দেশ আবারো ওয়ান-ইলেভেন পূর্ববর্তী পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে। রাষ্ট্রের বুকে সৃষ্ট ক্ষত আরো বিশাল আকার ধারণ করতে পারে। জাতিকে এদের রাহুগ্রাস থেকে বাঁচাতে বর্তমান সরকার বিহিত উদ্যোগ নেবেন বলেই জাতির প্রত্যাশা। ================================== দৈনিক ভোরের কাগজ । ঢাকা। ১৫ ডিসেম্বর২০০৭, শনিবার। সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ ভোর ৬:৪৩
false
ij
গল্প_ সাবিন-এর গল্প শেষ বিকেলের ম্লান আলো বৈরুতের হামরা স্ট্রিট-এর ওপর ছড়িয়ে আছে। ফুটপাতের ওপর ক্যাফে, ছোট ছোট দোকান। বেশির ভাগই ফুল আর কেক-প্যাষ্ট্রির । বৈরুতের নাট্যমঞ্চগুলোও সব এই হামরা স্ট্রিট-এই। এ কারণে ষাটের দশক থেকেই হামরা স্ট্রিট বৈরুতের প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ওই একই কারণে বেশ ক’বার জঙ্গিদের বোমা হামলা হয়ে গেছে হামরা স্ট্রিট-এ । তন্ন তন্ন করে খুঁজলে পিচ রাস্তায় বারুদের চিহ্ন হয়তো এখনও দেখা যাবে, অবশ্য দেয়ালে লেগে থাকা রক্ত ও মগজের হলুদ অবশ্য মিলিয়ে গেছে।হামরা স্ট্রিট -এর ভবনগুলি সবই ফরাসি স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত। তার কারণ আছে। প্রথম মহাযুদ্ধের আগে লেবানন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন। প্রথম মহাযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়। লেবাননের ম্যানডেট লাভ করে ফ্রেঞ্চরা । ১৯৪৩ সালে লেবানন স্বাধীনতা লাভ করে এবং লেবাননের রাজধানী হয়ে ওঠে বৈরুত । তা সত্ত্বেও স্বল্পকালীন ফরাসি প্রভাবেই লেবাননে, বিশেষ করে বৈরুতের ইমারত শৈলীতে ছাপ পড়েছিল ফরাসি স্থাপত্য রীতির । একান্ন বছর বয়েসী ব্রিটিশ সাংবাদিক জেমস গ্রিন ফুটপাতের ওপর দিয়ে ধীরেসুস্থে হাঁটছেন । বাশহির ব্লিস স্টিটে একটা কফি শপের সামনে অপেক্ষ করছে। সে দিকেই যাচ্ছেন জেমস গ্রিন। হঠাৎই গাড়ির হর্নের শব্দে সচেতন হয়ে উঠলেন । পুলিশের একটি গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে চলে গেল। আজ দুপুরের পর থেকে খানিক বিষন্ন বোধ করছেন জেমস গ্রিন । আজও বাগদাদে সিরিজ বোমা হামলায় অন্তত কুড়ি জন নিহত হয়েছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসনে ইরাক রক্তাক্ত হচ্ছে। এই অকাঙ্খিত রক্তপাতের জন্য জেমস গ্রিন অনুতপ্ত। বর্তমানে জেমস গ্রিন এখন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, আগে রয়টার্সে ছিলেন, রয়টার্স ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান, ২০০২ সালে ইরাক আক্রমনে ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শামিল হলে জেমস গ্রিন প্রতিবাদসরূপ চাকরি ছেড়ে দেন। তারপর থেকে বৈরুতেই পাকাপাকি ভাবে বাস করছেন, লিভারপুলের বাড়িটা বিক্রি করে বৈরুতের আশরাফিয়ায় একটি দু কামড়ার ফ্ল্যাট কিনেছেন। জেমস গ্রিন নিজেকে লেবানিজই মনে করেন। বৈরুত থেকে প্রতিদিন বেশ ক’টি আর্ন্তজাতিক মানে সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। আল নাহার, আস সাফির, আল বালাদ, আদ দিয়ার এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার । জেমস গ্রিন এসব সংবাদপত্রে নিয়মিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে থাকেন। একটু থেমে সিগারেট ধরালেন জেমস গ্রিন; কাছেই কোথাও গান বাজছে। অত্যন্ত পরিচিত গান। জনপ্রিয় লেবানিজ কন্ঠশিল্পী ন্যান্সী নাবিল আজরাম এর একটি হিট গান। এনতা ইহ মেশ কেফায়া আলাইকতেগরানি হারাম আলাইক এন্ত ইইহজেমস গ্রিন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সংগীত ও বাস্তব এক জিনিস নয়। ন্যান্সী আজরাম যতই সুরেলা ভঙ্গিতে নিজস্ব দুঃখের কথা বলুন না কেন- এই হামরা স্ট্রিট এর বাস্তবতা কিন্তু অতি নির্মম। কে জানে, বাশহির আজ কী অশুভ সংবাদ নিয়ে অপেক্ষা করছে। হঠাৎই সাইরেনের বিকট শব্দে চমকে উঠলেন জেমস গ্রিন। ব্লিস স্টিটের মাথায় একটা পুলিশের গাড়ি থেমে আছে। সাংবাদিক বলেই সেদিকে দ্রুত এগিয়ে গেলেন জেমস গ্রিন । পুলিশ টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে দু-জন যুবককে তুলছে । জেমস গ্রিন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। কারা এরা? দেখে তো জঙ্গি বলে মনে হল না। ইরাকি উদ্বাস্তু নয় তো? হ্যাঁ, তাইই হবে। জেমস গ্রিন চলার গতি বাড়িয়ে দেন। ইরাক আক্রমনের পর সিরিয়া ও জর্দানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ইরাকি উদ্বাস্তুরা । এদেরই একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যা লেবাননেও বাস করছে। অবশ্য লেবানন সরকার এই রিফুজিদের কখনোই লিগ্যাল স্ট্যাটাস দেয়নি। যে কারণে ইরাকি উদ্বাস্তুরা লেবাননে দুর্বিষহ পলাতক-জীবনযাপন করছে। জেমস গ্রিন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি ব্রিটিশ। এই কারণে তিনি অনুতপ্ত। তবে ব্রিটেনের সবাই ইরাক আগ্রাসন সমর্থন করে না। সান্ত্বনা এখানেই ... ব্লিস স্টিটের মাথায় বাশহির কে দেখতে পেলেন। বাশহির ছেলেটির সঙ্গে জেমস গ্রিন-এর অনেক দিনের জানাশোনা। বাশহির অত্যন্ত বিশ্বস্ত একটি ছেলে। ছেলেটি আগে আল বালাদ পত্রিকার পিওন ছিল। এখন বেতন বেশি বলে একটা কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করছে । সপ্তা খানেক আগে জেমস গ্রিন বাশহির কে নতুন একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। সান্ড্রা কারেন নামে একজন মার্কিন সাংবাদিক লেবাননে ইরাকি উদ্বাস্তুদের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করতে চান। সান্ড্রা কারেন মানবতাবাদী, ফিলাডেলফিয়ার একটি যুদ্ধবিরোধী সংস্থার জয়েন্ট সেক্রেটারি। ব্যাক্তিজীবনের ওপর সামরিক আগ্রাসনের পরিণাম মার্কিন তরুণ-তরুণীদের দেখাতে চান । সান্ড্রা কারেন তার প্রামাণ্যচিত্রের জন্য লেবাননে ইরাকি উদ্বাস্তুদের বেছে নিয়েছেন। এবং জেমস গ্রিন এর কাছে লেবাননে ইরাকি উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন। বাশহির এগিয়ে আসে। ছেলেটি বেশ লম্বা। কালো কর্ডের প্যান্ট আর সাদা টি-শার্ট পরে আছে বাশহির । ঈষৎ লাল রঙের কোঁকড়া চুল, ফরসা মুখে লাল লাল ছোট, নীলাভ চোখ। দেখলেই বোঝা যায় শরীরে ফিনিসিয় রক্ত বইছে। বয়স ২৫/২৬ এর বেশি না।কোনও খবর পেলে? এদিক-ওদিক তাকিয়ে জেমস গ্রিন জিগ্যেস করলেন। যে কাজটি তিনি করতে যাচ্ছেন সেটি বিপদজনক। পুলিশ টের পেলে সমস্যা করবে। হয়তো নাগরিকত্ব বালিত করে দেবে। হ্যাঁ, আমার সঙ্গে আসুন। বাশহির চাপাস্বরে বলল। বলে বাশহির ঘুরে হাঁটতে থাকে। জেমস গ্রিন একটু পিছিয়ে পড়ে হাঁটতে থাকেন। প্রায় কুড়ি মিনিট পর বাশহির ব্লিস স্টিটের তিনতলা হলুদ রঙের বাড়ির সামনে এসে থামল। দেখেই বোঝা যায় অনেক পুরনো বাড়ি। জেমস গ্রিন এর চোখে আগেও পড়েছে। তিনি জানেন এটি একটি ব্রথেল। বৈরুতের এসব পুরনো বাড়িতেই সভ্যতার আদিমতম পেশা চলছে। এই বাড়িটিও ফরাসি স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত। চওড়া সিঁড়ি, ঘোরানো কাঠের রেলিং, সিঁড়ির ধাপে পুরনো কার্পেট মোড়ানো। দোতলায় করিডোরের দু-পাশে সার সার ঘর। একটি দরজার সামনে এসে বাশহির চোখের ইঙ্গিত করল। কোটের পকেট থেকে একশ পাউন্ডের কয়েন বার করলেন জেমস গ্রিন । তারপর কয়েনটি বাশহির কে দিলেন। চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল বাশহির । জেমস গ্রিন এদিক-ওদিক তাকিয়ে দরজায় নক করলেন। একটু পর দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলেন। সস্তা পারফিউমের গন্ধ পেলেন। ঘরটি ছোট, দেওয়ালে হলুদ রং করা। বড় একটি জানালা। জানালায় শেষ বেলার রোদ। দেওয়াল ঘেঁষে কালো সোফাসেট। সোফার ওপর কালো গাউন পরা একটি মেয়ে বসে আছে। ঢেউ খেলানো কালো চুল। নিষ্পাপ ফরসা মুখ, সে মুখে বিষন্নতা। গভীর কালো চোখ। বয়স ছাব্বিশ-সাতাশ বেশি মনে হল না বলে মনে হল জেমস গ্রিন এর ।জেমস গ্রিন মুখোমুখি বসলেন। সিগারেট ধরালেন। কোটের পকেট থেকে সনি রেকর্ডার বার করে অন করলেন। তারপর মেয়েটিকে বললেন, আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করব।হ্যাঁ। আমাকে বাশহির বলেছে।মেয়েটিকে প্রথম প্রশ্ন জিগ্যেস করলেন, কি নাম তোমার?সাবিন। মনে হল শব্দটা অনেক দূর থেকে ভেসে এল। ইরাকে বাড়ি কোথায় ছিল?মসুল। আমরা সাত পুরুষ ধরে ইরাকের মসুল-এই বাস করছিলাম । ওহ্ ।‘করছিলাম’ শব্দটি কানে বাজল। ইঙ্গ-মার্কিন স্বার্থের জন্য ইরাকের মসুলে সাত পুরুষ ধরে বসবাস করা একটি পরিবার উৎখাত হয়ে গেল। জেমস গ্রিন বিষন্ন বোধ করেন। তিনি গম্ভীর কন্ঠে জিগ্যেস করলেন, মসুলের কোথায়?মসুলের নাবী ইউনুস মসজিদের পাশে। জায়গাটা মসুলের আল-তাওবা পাহাড়ের কাছে। জেমস গ্রিন মাথা নাড়লেন। তিনি মসুলে গিয়েছেন। তারপর?সাবিন বলল, দশ বছর বয়েসে আমার মা মারা যায়। আমি আমার মা-বাবার বেশি বয়েসের সন্তান। আমি যখন কিশোরী তখন আমার বাবা বৃদ্ধ।বাবার নাম?তাহা ইয়াসিন। তিনি কি করতেন?বাবা ছিলেন সোউক এর মুহতাসিব। জেমস গ্রিন মাথা নাড়লেন। তিনি ভালো আরবি জানেন। সোউক মানে বাজার। ইরাকের সোউকগুলি গনপূর্ত অধিদপ্তরের অধীন। মুহতাসিব সোউক দেখভাল করেন। কর আদায় করেন।তারপর? যুদ্ধের বছরে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এ কথার পর ঘরে নীরবতা। জানালায় তখন শেষবেলার রোদ। একটা কবুতর জানালার কাছে পাখসাট করছে। যেন ঘরে ঢুকতে চাইছেন। তারপর?ছেলের নাম হাওয়ার মোহাম্মদ। বাড়ি আল মসুল ইউনিভারসিটি স্টেডিয়ামের কাছে। তারপর?তারপর পাত্রপক্ষকে আর পাওয়া যায়নি। ইরাকে বিদেশি সৈন্যরা ঢুকে পড়েছে। মসুলে বোম ফেলছে প্লেন থেকে। তারপর?তারপর আমরা কে কোথায় ছিটকে পড়লাম। বৃদ্ধ বাবার হাত ধরে ছাড়লাম দেশ । সিরিয়া হয়ে অতি কষ্টে ঢুকলাম লেবানন । লেবানন কেন? সাবিন এর মুখের ওপর জেমস গ্রিন এর দৃষ্টি প্রখর হয়ে ওঠে।সুলেইমান শাকের নামে বাবার এক দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই ছিলেন বৈরুতে । সুলেইমান চাচার সঙ্গে বাবার চিঠিপত্রে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল । ইরাক আক্রমনের পর তিনিই ফোন করে বৈরুত যেতে বলেছিলেন।ওহ্ । তা কি করতেন তিনি?অধ্যাপনা করতেন। সুলেইমান চাচা ছিলেন ইতিহাসের অধ্যাপক । অবসরে যাওয়ার আগে বৈরুতের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। ওহ্ । জেমস গ্রিন এবার ভদ্রলোককে চিনতে পারলেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সুলেইমান শাকের। ফিনিসিয় সভ্যতার ওপর বিশেষ পান্ডিত্য ছিল ভদ্রলোকের। কিন্তু তিনি তো বছর কয়েক আগে খুন হয়েছেন। সুলেইমান চাচা ছিলেন অন্ধ। জেমস গ্রিন মাথা নাড়লেন। তিনি জানেন ঐতিহাসিক সুলেইমান শাকের অবসর নেওয়ার কিছুদিন পর অন্ধ হয়ে যান।সুলেইমান চাচার বাড়ি ছিল আশরাফিয়ার এক গলির ভিতরে । তিন তলায় থাকতেন। একাই থাকতেন, স্ত্রীর সঙ্গে অনেক আগেই ডির্ভোস হয়ে গিয়েছিল । আমরা তার বাড়িতেই উঠলাম। বুঝতে পারলাম আমরা বৈরুত যাওয়ায় তিনি খুশি হয়েছিলেন । মেরি নামে একটি খ্রিস্টান মহিলা সুলেইমান চাচার দেখাশোনা করতেন। আমি বললাম, চাচা এখন থেকে আমি আপনার দেখাশোনা করব। সুলেইমান চাচা মেরি কে ছাড়িয়ে দিলেন। ... বাবা সারাক্ষণ টিভির সামনে বসে থাকত। খাওয়া-দাওয়া এক রকম ছেড়েই দিয়েছিলেন। সারাক্ষণ আমেরিকাকে অভিশাপ দিত বাবা। ২০০৬ সালে ডিসেম্বরে বাবা মারা যায়। কি হয়েছিল?স্ট্রোক। সাদ্দাম হুসেন-এর ফাঁসী সেদিনই কার্যকরা হয়েছিল।জেমস গ্রিন বিষন্নতা টের পেলেন।তারপর? তারপর আর কি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার জীবনে দুঃসময় নেমে এল। বলছি কেন। সুলেইমান চাচা ছিলেন নিঃসন্তান। তবে তার এক পালক ছেলে ছিল। সেই ছেলের নাম মিচেল সাদ। মিচেল সাদ এর মা ছিল নেস্টরিয় খ্রিস্টান। বাবা বেঁচে থাকতেই মিচেল সাদ মাঝে-মাঝে আশরাফিয়ার বাড়িতে আসত। ব্যবসা করত। সাদ দেখতে ছিল সুদর্শন, ফিলম স্টারদের মতন। সাদ ... সাদ আমার রূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিল। আমি সব ভুলে গিয়ে নিরাপত্তার আশায় সাদকে ভালোবাসলাম। সাদ এর ইঙ্গিতে আমরা মিলিত হতাম। তখন বুঝিনি ঠিক প্রেমিক নয় মিচেল সাদ। যৌনমিলনের ছলে রেইপ করত। ...আমি ছিলাম কুমারী। ধর্ষন আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হলেও মেনে নিলাম। বিয়ের জন্য সাদ-কে বলতাম। সাদ এড়িয়ে যেত। তখনও জানি নি সাদ স্মাগলার। বুঝলাম আমার বাবা মারা যাওয়ার পর। ব্যবসায় কি লস হয়েছিল ... টাকা-পয়সার জন্য সুলেইমান চাচাকে প্রেশার দিত। অসহায় সুলেইমান চাচা আমাকে আঁকড়ে ধরল। সাদ এর বিশ্বাস সুলেইমান চাচার কাছে গুপ্তধন আছে। আমি সাদ কে ঘৃনা করতাম। আমি সুলেইমান চাচার পক্ষ নিলাম। সাদকে কে বোঝাতাম সুলেইমান চাচা ইতিহাসের গবেষক তার কাছে গুপ্তধন থাকা সম্ভব না। আমার কথা বিশ্বাস করত না সাদ। বলল, তুমি কিছু জান না সাবিন। এই লেবাননে অনেক অনেক বছর আগে ফিনিসিয় জাতি বাস করত। ওদের অনেক ধনসম্পদ ছিল। বাবার কাছে পুরনো দিনের ম্যাপ আছে। অন্ধ হওয়ার আগে মাঝে-মাঝে বেক্কা উপত্যকায় যেত বাবা। লেবাননের মানুষজন বিশ্বাস করে বেক্কা উপত্যকার এক পাহাড়েই ফিনিসিয়দের ধনসম্পদ লুকানো আছে । তুমি কিছু জান না। এরপর সাদ আমাকে মানারার একটি বাড়িতে তুলল। সুন্দর দোতলা বাড়ি, একেবারে সমুদ্রের ধারে। দোতলার বারান্দায় দাঁড়ালে সমুদ্র চোখে পড়ত। মানারার বাড়িতে বিদেশি লোকজন আসত। অ্যানিটা পার্ল নামে একজন মধ্যবয়েসী সুন্দরী মার্কিন মহিলাকে ওই বাড়িতে দেখলাম । মহিলা আমাকে জিগ্যেস করলেন, আমি নীলছবি করব কি না। আমি ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করলাম। কয়েকদিন পর আল বালাদ পত্রিকায় পড়লাম আশরাফিয়ার বসবাসকারী প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সুলেইমান শাকের খুন হয়েছেন । বুঝলাম কার কাজ ... আমি ক্রোধে উন্মাদ হয়ে যাই ...পরে সাদ এলে আমি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ও আমাকে বেল্ট দিয়ে ভীষণ মারল। মার খেয়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার জ্ঞান ফিরে এলে আমি এই ঘরে নিজেকে আবিস্কার করি। কতক্ষণ পর সাদ এসে বলল, এখন থেকে তুমি এখানে থাকবে। পালাতে চেষ্টা করো না। তুমি রিফিউজি, পালাতে চেস্টা করলে পুলিশে ধরিয়ে দেব। তোমার যা ইনকাম হবে অর্ধেক তোমার অর্ধেক আমার। পরে জানলাম এখানকার দেহব্যবসার সঙ্গে সাদও জড়িত। জেমস গ্রিন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বাইরে সন্ধ্যা নামছে। সাবিল উঠে ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দিল। রেকর্ডার অফ করলেন জেমস গ্রিন । মনে মনে ভাবলেন সাবিন এর গল্প শুনে সান্ড্রা কারেন দুঃখ পেলেও সন্তুষ্ট হবেন নিশ্চয়ই। অত্যন্ত অপরাধী বোধ করছেন জেমস গ্রিন । উঠে দাঁড়ালেন। সাবিন দরজা অবধি এল। সাবিন কে এক হাজার পাউন্ডের সবুজ একটা নোট দিয়ে বেরিয়ে এলেন জেমস গ্রিন । ৩এখন অনেক রাত। ভূমধ্যসাগরের বেলাভূমিতে হাঁটছেন জেমস গ্রিন। মুখ তুলে একবার দেখলেন ফ্যাকাশে আকাশে মুঠো মুঠো অনেক নক্ষত্র ছড়ানো। আর বেলাভূমির ওপর অশান্ত ঢেউয়ের গর্জন। আবছা আলোয় দেখলেন শতাব্দী প্রাচীন একটি ফিনিসিয় কাঠের জাহাজ বেলাভূমির ওপর নোঙর করে আছে। জলদস্যুরা শেকল বাঁধা বাক্স নামাচ্ছে জাহাজ থেকে ...ওই গুপ্তধনের জন্যই কত হাজার বছর পর খুন হলেন ঐতিহাসিক সুলেইমান শাকের ... জেমস গ্রিন ঢেঁকুর তুললেন। ঘন্টাখানেক আগে ওই ক্লাবে ঢুকে ভোদকা পান করেছেন জেমস গ্রিন। কিছুতেই সাবিন এর নিষ্পাপ মুখটি ভুলতে পারছেন না। ...মানারা এলাকাটি হামরা স্ট্রিট-এর পশ্চিমে । মানারার পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের নিথর সৈকত। এখানেই সমুদ্রের পাড়ে একটি স্পোটিং ক্লাব রয়েছে। স্পোটিং ক্লাব থেকে বেরিয়ে বেলাভূমিতে হাঁটছেন জেমস গ্রিন। ভীষণ অস্থির বোধ করছেন। ইউরোপ -আমেরিকার ভোগ-সুখের জন্য এই শতাব্দীতেই সারা পৃথিরীর সম্পদ লুঠ করা হবে। একদিন এই বেলাভূমিতেও ল্যান্ড করবে ইঙ্গমার্কিন সৈন্যরা । কপাল পুড়বে লেবাননের নিস্পাপ সাবিনদের। ...বেলাভূমির ওপর এক জোড়া তরুণ-তরুণী পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে। হেলুসিনেশন হচ্ছে? তরল মদ কাজ করছে না। সাবিন-এর গল্পটা মাথায় ঘুরছেই। সান্ড্রা কারেন ইরাকি উদ্বাস্তুদের নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করবেন। সাবিন এর বাবার মৃত্যু দৃশ্য। ২০০৬। ডিসেম্বর; লেবানন, বৈরুত। আশরাফিয়ার গলি। অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। অন্ধকার ঘর। এক জোড়া তরুণ-তরুণী জানালার কাছে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে। ... মিচেল সাদ ঘুমিয়ে গেলে সাবিন অন্ধকার ড্রইংরুমে উঁকি দিল। টিভির আলো। সোফায় এক বৃদ্ধ। ঢলে পড়ে আছে। বাবা! সাবিন এর চিৎকার। সহসা জেমস গ্রিন টের পেলেন পকেটে তার মোবাইল-এর রিং টোন বাজছে। হ্যালো গ্রিন। সান্ড্রা কারেন এর কন্ঠস্বর। হ্যালো কারেন।খবর কি?এই তো। জেমস গ্রিন বললেন।কারেন জিগ্যেস করলেন, আমার প্রামাণ্যচিত্র জন্য তেমন কোনও তথ্য পাওয়া গেল গ্রিন?হ্যাঁ।খুলে বল। কারেন এর কন্ঠস্বরে উত্তেজনা। আজ একজন ইরাকি উদ্বাস্তুর সঙ্গে আমার কথা হল। নাম সাবিন।মেয়ে?হ্যাঁ।ওহ্ । তা মেয়েটার গল্পটা কেমন লাগল?ভীষণ করুন কারেন ।করুন তো হবেই। কারেণ বললেন। অন্যায় যুদ্ধের কারণে নিজের দেশ থেকে উৎখাত হয়ে অন্য একটা দেশে জীবন কাটাচ্ছে। আমি ...আমি মার্কিন তরুণ-তরুণীদের দেখাতে চাই যে কোনও দেশে আগ্রাসনের পরিণাম কী রকম ভয়াবহ হতে পারে। গ্রিন?বল।সে রকম ম্যাসেজ কি সাবিন এর গল্পে আছে?আছে।তাহলে সংক্ষেপে সাবিন এর গল্পটা বল।সাবিন এর জন্ম ইরাকের মসুল শহরে জন্ম । ওর মা কম বয়েসে মারা যায়। বাবা ছিলেন স্থানীয় একটা মার্কেট -এর সুপারভাইজার। ২০০২ সালের মার্চ মাসের শেষে সাবিন এর বিয়ে ঠিক হয়। তখনই ওরা ইরাক অ্যাটাক করে। সাবিন ওর বাবার সঙ্গে লেবাননের বৈরুত শহরে পালিয়ে আসে।লেবানন কেন? কারেন এর কন্ঠস্বর প্রখর হয়ে ওঠে।বলছি ...সাবিন এর গল্পটা বলতে বলতে জেমস গ্রিন টের পেলেন, মোবাইল-এর অপর প্রান্তে কারেন কাঁদছে ...উৎসর্গ: যারা শান্তির পক্ষে ...
false
mk
প্রয়োজন অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায়ে আল-বদল কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল ৩ নভেম্বর, ২০১৩ ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘‘আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ না দিলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।’’১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন কীভাবে আল-বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন তা আদালতের রায়ে উঠে এসেছে। আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন সেই হত্যাকাণ্ডের চিফ এক্সিকিউটর, আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার অপারেশন ইনচার্জ।উল্লেখ্য যে, এই দুই অপরাধীর অনুপস্থিতিতেই আদালত রায় দিয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামান খান পালিয়ে পাকিস্তানে চলে যান। তারপর সেখান থেকে যান যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকায় বসবাস করছেন।চৌধুরী মুঈনুদ্দীনও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং সেখান থেকে যান যুক্তরাজ্যে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।দুজনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষক, ৬ সাংবাদিক এবং ৩ চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগের সবগুলোতেই দুই আসামীর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে।বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যায় নেতৃত্বদানকারী বিদেশে অবস্থানরত ঘৃণ্য দুই আল-বদর নেতার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়ায় দেশের মানুষ নিঃসন্দেহে স্বস্তিবোধ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিবিরোধী ভূমিকা পালন করার জন্য এই বর্বরদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য ছিল। বিলম্ব হলেও আদালত তাদের এই শাস্তি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।তবে এই দুই অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া দণ্ড কার্যকর করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সে প্রশ্নও দেশাবাসীর মনে দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মোট ৯ জনের বিচার সম্পন্ন করে শাস্তি ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলে তার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে তরুণ প্রজন্মসহ লাখ লাখ প্রতিবাদী মানুষ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে তোলেন।যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দেশব্যাপী প্রবল আন্দোলন গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবব্যুনাল আইনে সংশোধন এনে দুপক্ষেরই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছে।জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা চালায়। এছাড়া অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা কেন্দ্র করেও জামায়াত-শিবির ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য জামায়াত-শিবির দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল শেষ হয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত একজন যুদ্ধাপরাধীরও শাস্তি কার্যকর না হওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ অব্যাহত থাকবে কিনা এবং ইতোমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হয়েছে সে রায়ও বাস্তবায়ন হবে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে।কারণ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলছেন, বর্তমান সরকার বিদায় নিলে কারাগারে আটক সকল রাজনৈতিক নেতা মুক্তি পাবেন। এই নেতাদের মধ্যে যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারকৃত জামায়াত-বিএনপির নেতারাও রয়েছেন, সেটা বেগম জিয়া পরিষ্কার করে না বললেও দেশের মানুষের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ কি এমন শক্তিকে নির্বাচিত করবে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বন্ধ করে দিবে?যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, যারা একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে চান এখন আর তাদের নিষ্ক্রিয় থাকার সময় নেই। ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে রাজাকার, আল-বদররা যাতে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ না পায় তার জন্য নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়ে প্রচারণায় নামার কোনো বিকল্প নেই।আওয়ামী লীগের দুর্বলতা-সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিতর্ক করে শত্রুপক্ষকে উৎসাহ না দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি কার্যকর করা সম্ভব হবে। আবার আওয়ামী লীগকেও সব ধরনের অহমিকা পরিহার করে নিজেদের ভুল-ত্রুটি শুধরে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে মোকাবেলায় দৃঢ়তার সঙ্গে সামনে অগ্রসর হতে হবে।শত্রুদের দুর্বল ভাবার চেয়ে বড় বোকামি আর কিছু নেই। শত্রুশিবির ঐক্যবদ্ধ। মিত্রশিবিরের বিভেদ পরাজিত শক্তিকেই উৎসাহ যোগাবে।
false
fe
নাগরিক বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় অবিচার নাগরিক বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় অবিচারফকির ইলিয়াস==========================================গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষে মানুষে নাগরিক বৈষম্য থাকবে- তা ভাবা খুবই বেদনাদায়ক। বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রতি অবিচারের বিষয়টি বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গেল চার সপ্তাহে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বারবার হামলে পড়েছে হামলাকারীরা। এর জের না কাটতেই গাইবান্ধায় সাঁওতালদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনা প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, চিনিকলের ওই জমি সাঁওতালদের না হলেও তাদের ব্যবহার করে ‘ভূমিদস্যুরা’ সেগুলো দখল করতে চেয়েছিল।১৯৬২ সালে সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ। সেখানে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। চিনিকলটি বন্ধ হওয়ার পর সেই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করা হয়। এতে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে সেই জমির দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। এরপর চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। হত্যা ও লুটপাটের পর সেখানে সরকারি ত্রাণ পাঠানো হয়েছিল। প্রথমদিকে সাঁওতাল সম্প্রদায় সেই ত্রাণ নিতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সহসভাপতি ফিলিমন বাসকে বলেন, কাঁটাতার দিয়ে আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি থেকে যখন বঞ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নিহতদের ক্ষতিপূরণের যখন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ফলে যে ব্যাপক ক্ষতি হয় তা পূরণের যখন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে সামান্য খাদ্য দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীরা তাই প্রশাসনের ওই ত্রাণ সামগ্রী প্রত্যাখ্যান করেছে।মাদারপুর গ্রামে লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত ইলিখা মার্ডি বলেন, আমরা প্রশাসনের সাহায্য নেব না। তারা আমাদের গুলি করেছে, আমাদের হত্যা করেছে, আমাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে, তাদের দেয়া খাবার আমরা গ্রহণ করব না। আমরা আমাদের বাপ-দাদার জমি ফিরে পেতে চাই। সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দা পাওলুস মাস্টার বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে যে ত্রাণ আনা হয়েছে এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তাই এটা গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। একটি রাষ্ট্রের জনগণের এরচেয়ে বেশি ক্ষোভ আর কী হতে পারে? তারা কতটা অসহায় হলে এমন দ্রোহ দেখাতে পারে?সাঁওতালদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। রিটে সাঁওতালদের জানমালের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কোন কর্তৃত্ববলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালিয়েছে- এই প্রশ্নেও রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে। বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এবং ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থা হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের ডিভিশন বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, খাদ্য ও চিনিশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও সাহেবগঞ্জ সুগারমিলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটে বলা হয়, সাঁওতালরা বাংলাদেশের নাগরিক। হামলার পরে এখন তারা নিতান্তই অসহায়। এতটাই অসহায় যে, তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। খাদ্য সংকটে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সাঁওতালদের পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। আজ তাদেরই ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।একটি রাষ্ট্রে নাগরিকের যথাযথ মূল্য পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। মানুষের মৌলিক চাহিদা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো অবারিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু রাষ্ট্র যখন কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর পক্ষাবলম্বন করে বা খপ্পরে পড়ে শ্রেণি বৈষম্যকে জিইয়ে রাখে বা বাড়িয়ে দেয়ার পক্ষে ভূমিকা নেয় তখন মানুষ হতাশ হয়।লুটেরা শ্রেণিকে উসকে দিয়ে শ্রমিক শ্রেণির ওপর শোষণের পথ সুগম করে দেয়া হলে সমাজে নেমে আসে মানবতার সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। যুদ্ধ বিগ্রহের চেয়েও তা মানবতাকে অনেক বেশি ক্ষতি করে। কিন্তু সুচতুর প্রচারণা ও দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার কৌশলের মাঝে তা নিভৃতই থেকে যায়। যেকোনো সম্মুখ নির্যাতনের ঘটনা সামনাসামনি বুঝে ও মোকাবেলা করে নির্দিষ্ট ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়। কিন্তু পুঁজিবাদ ও শ্রেণি শোষণের সূ², চাতুর্যপূর্ণ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশ্রিত ও কৌশলী ক‚টকৌশলগুলো মোকাবেলা করা বড় কঠিন কাজ। নাসিরনগর কিংবা গাইবান্ধায় সেটাই করা হয়েছে। নীরবে-নিভৃতেই কতিপয় মানুষের দখলদারিত্বকে অবারিত করার জন্য অধিকাংশ মানুষকে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করা হয়। সৌভাগ্যবান ওই শ্রেণিকুল, যারা নিজেদের সমাজের উচ্চশ্রেণি ভাবতে পছন্দ করেন, তাদের পক্ষেই দাঁড়ায় রাষ্ট্র। এর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে শায়েস্তা করার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও বিচারালয়গুলোকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করা হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে তখন রাষ্ট্রের চালিকাশক্তিকেই দোষী হতে হয়।চাপা ক্ষোভ, অনাস্থাজনিত অস্থিরতা, অবিশ্বাস ক্রমশ রাষ্ট্রকেই মানুষের কাছে অনিরাপদ করে তোলে। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যে ন্যূনতম সম্প্রীতি প্রয়োজন এই বৈষম্যের কারণে তা অর্জিত হতে পারে না। ফলে এক ধরনের চাপা অস্থিরতা সব সময়ই ক্রিয়াশীল থাকে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জেলাগুলোতে দরিদ্র ও গরিব মানুষের সংখ্যা বেশি। এসব অঞ্চলকে বলা হয় মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল। উত্তরাঞ্চলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দারিদ্র্য। উত্তর জনপদে গ্রামীণ জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার ওপর বাস করে। তারাই ভোগ করে গ্রামীণ আয়ের ষাট শতাংশ। বিপরীতে ৮০ শতাংশ লোক বাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে। গ্রামের ৬০ ভাগের বেশি লোকই ভূমিহীন। গ্রামের আয় বৈষম্যের কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে ভূমি মালিকানার বৈষম্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা, মজুরি কম ইত্যাদি। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে যে বৈষম্য যে একটি বড় বাধা, এই উপলব্ধির ঘাটতি এ সমাজে প্রকট। এই বৈষম্যই মাঝে মাঝে দ্রোহে পরিণত হয়।আর লুটেরা শ্রেণি ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ নাগরিকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। বর্তমানে দেশে হিজড়া-যৌনকর্মী-প্রতিবন্ধীসহ অনগ্রসর লোকের সংখ্যা প্রায় এক কোটির কাছাকাছি। তারা সুবিধা বঞ্চিত। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও এদের দলিত হিসেবে আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অনেক আন্দোলন করতে হচ্ছে। অথচ তারা এ দেশেরই নাগরিক কিন্তু বৈষম্যের শিকার। একটি স্বাধীন জাতির জন্য এরচেয়ে দুঃখের বিষয় আর কি হতে পারে?গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক সেমিনারে আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ দেশের সংবিধানও বৈষম্যকে সমর্থন করে না। তবে ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ হবে প্রচলিত আইনগুলোর সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক। এই আইন পাস করে আমাদের যুগোপযোগী করতে হবে। আশা করি ২০১৫-এর ডিসেম্বরের মধ্যে এ আইন পাস হবে। তিনি বলেন, শুধু আইন পাস করে দলিত শ্রেণি ও অনগ্রসরদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব নয়। এর জন্য মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। নইলে এ আইনে বাধা আসবে। এ জন্য সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আলোচনা সভা, সেমিনার আয়োজন করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, পুলিশ যদি কোনো মামলা না নেয় তাহলে কোর্টে মামলা করতে পারেন। কোর্টের ক্ষমতা আছে মামলা নেয়ার। কোর্ট মামলা নিতে বাধ্য। পরে মামলার তদন্ত কিংবা এজাহারের জন্য পুলিশকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেবে কোর্ট। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- বাংলাদেশের মানুষ পুলিশকে বিগড়ে কি কিছু করার সাহস রাখেন? তারা কি গেল ৪৫ বছরে এই শক্তি অর্জন করতে পেরেছেন?বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে- তা হওয়ার কথা ছিল না। মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায়। এই দেশে মনিপুরী, সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, গারো, হাজং, টিপড়া, খাসি, মুরং, রাখাইন এবং সেন্ধুসহ প্রায় পঁয়তাল্লিশটি জাতিসত্তার বসবাস। বাংলাদেশের আদিবাসী, সংখ্যালঘু হবেন কেন? ধর্ম বিশ্বাস দিয়ে তাদের বিচার করা হবে কেন? সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে- সমাজের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একধরনের রাষ্ট্রীয় অবিচার বন্ধ করতে হবে। যারা ক্ষমতায় আছেন- তাদের মনে রাখা দরকার, সাধারণ মানুষ দ্রোহী হয়ে উঠলে যেকোনো কালো শক্তি তাদের মদদ দিয়ে মোড় ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করতে পারে। এতে ক্ষতি হতে পারে রাজনীতির, ক্ষতি হতে পারে উন্নয়নের। না- বাংলাদেশে ধর্ম পরিচয়ে মানুষের ওপর নিপীড়ন চলতে পারে না। সংখ্যালঘু বলে কারো অধিকার হরণ হতে পারে না। রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সব সময়।-------------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৩৩
false
rn
আমি যদি মরি-ঠিক ভূত হবো আমি মনে করি পুরো বাংলাদেশ টাই আমার।যখন যেখানে ইচ্ছা আমি চলে যেতে পারি।কোন পার্সপোট ভিসা লাগে না।যদি এমন হতো-ইচ্ছা করলেই পৃথিবীর যে কোনো জাগায় চলে যেতে পারতাম,কোনো পার্সপোট ভিসা লাগবে না,সব নেতারা মিলে একটা সিদ্বান্ত নিলেই হয়।কোনো কারন ছাড়াই আজ আমার হঠাৎ চাকরী চলে গেল।হা হা হা...।এই জন্য আমার একটুও মন খারাপ না।বেশ ভালো হয়েছে-এখন দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারবো।রাতে বাসে উঠে পড়লাম-যাবো বান্দরবন।দারুন সুন্দর জায়গা।মন ভরে যায়।একটি উপজাতি পরিবার আমাকে থাকতে দিতে রাজি হলো।আহ্ কি সুন্দর পরিবেশ মন ভরে যায়।রাত ৮ টা বেজে গেছে।রাতের খারার টা মুনাং পরিবারের সাথেই করলাম।আহ্ কি স্বাধ খাবারের।এই রকম ভালো খাবার অনেকদিন খাইনি।চিড়িং মাছ আলু দিয়ে ঝোল করেছে আর শাক ভাজি,সাথে সুখনা মরিচ দিয়ে ডিম ভর্তা আর ডাল।ডাল টাকে মনে হলো সুপ।আহ্ মন ভরে গেল।মুনাং আমাকে বারান্দার পাশে বড় ঘরটাতে থাকতে দিয়েছে।রাত ১২ তা বেজে গেল কিন্তু আমার ঘুম আসে না।ঘুম আসে না।ঘুম আসে না।আমি একা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ছটফট করছি।ভাবলাম বারান্দায় বসে একটা সিগারেট খাই।সিগারেটে একটা টান দিতেই 'হিমি'র কথা মনে পড়লো।অনেক দিন আগে গভীর রাতে আমি অফিসের কাজ করছি,হঠাৎ 'হিমি'র ফোন পেলাম।আমি হ্যালো বলতেই 'হিমি' বললো- তোমাকে একটা কবিতা শোনাবো,তাই ফোন করেছি।আমি বললাম আচ্ছা বলো কবিতা-'হিমি তার মিষ্টি গলায় চার লাইন কবিতা শুনিয়ে ফোন কেটে দিন।"শুনেছ কি বলে গেল সীতানাথ-আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ,টকটক থাকে নাকো হলে পড়ে বৃষ্টি;তখন দেখেছি চেটে একেবারে মিষ্টি"।সিগারেট শেষ।ঘরে যেতে ইচ্ছা করছে।বারান্দাতেই বেশ ভালো লাগছে।জ্যোন্সা রাত।এক কাপ চা হলে দারুন হতো।হঠাৎ উঠানে ৫ টা কুকুর খুব ঘেউ ঘেউ করছে।আমি ভাবলাম আমাকে দেখে হয়তো এমন করছে।আমি এই বাড়ীতে নতুন মানুষ।কিন্তু কিছুতেই কুকুর গুলো থামছে না।আমি উঠে দাঁড়াতেই দেখি দূরে যেন কাকে দেখা যাচ্ছে অশ্বথ গাছটার সামনে।আমার সারা শরীর অসাড় হয়ে পড়লো মুহূর্তেই-আমি কাকে দেখছি!'হিমি'!এই মধ্য রাতে!এই অপরিচিত জায়গায়!আমি 'হিমি'র দিকে তাকাতেই ;হিমি' মিষ্টি করে একটু হেসে দিল।আহ্ কী সুন্দর হাসি।মন ভরে যায়।দুঃখ কষ্ট ভরা পৃ্থিবীতে অনেকদিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে।'হিমি' আজও নীল শাড়ি পরে আছে।ঘন চুলের মধ্যে পড়েছে সাদা ফুল।আচ্ছা আমি ভুল দেখছি নাতো,আমার মস্তিস্ক ভুল দেখাচ্ছে নাতো?কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে মুনাং পরিবারের সবাই ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় চলে আসে।মুনাং 'হিমি'র সামনে গিয়ে বলে- এই মেয়ে আপনে কে?কি চান?কোথা থেকে আসলেন?উওরে 'হিমি' একটুরো হাসি উপহার দিলো মুনাং কে।মুনাং আমার দিকে তাকিয়ে বললো- ভাই আপনি ঘরে যান।আমি দেখছি।সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, আমার অনেক জ্বর।মুনাং আমার মাথায় পানি ঢালছে।৩ দিন পর আমার জ্বর অনেক বেড়ে যায়।জ্বর নিয়েই আমি ঢাকা চলে আসি।
false
rg
ধুনক ধুনারি ধোনকার___ আমাদের গ্রামে একটা পাড়া ছিল যেখানে অনেকের পেশা ছিল তুলা ধোনা। তুলা ধুনে যিনি লেপ তোশক বালিশ ইত্যাদি বানান তাদের বলা হয় ধুনক বা ধুনারি। আমাদের গ্রামে তাদের বলা হত ধোনকার। তুলা ধুনা করেন যিনি তিনি আসলে ধুনক। অনেক সময় তাকে ধুনরি বা ধুনুরি বা ধুনারিও বলা হয়। কিন্তু আমরা চিনতাম ধোনকারকে। বন্দুকের মত দেখতে একটা যন্ত্র নিয়ে আমাদের সেই ধোনকারগণ সকালে বাড়ি থেকে বের হতেন। তাদের ঘাড়ে থাকতো সেই লম্বা ধুনাচি। ছোটবেলায় আমি সেই সব ধোনকারদের দেখলে ভারী ভয় পেতাম। মনে হত তাদের ঘাড়ে কোনো মিসাইল টাইপ কোনো মারাত্মক অস্ত্র বুঝিবা সেটা। আর মজার ব্যাপার হল, তাদের গায়ে থাকতো খাকি শার্ট। দেখতে অনেকটা পুলিশ পুলিশ। রাস্তা দিয়ে সেই সব ধোনকাররা যখন হেঁটে যেতেন, দূর থেকে তাদের দেখেও মনের মধ্যে আমার একটা ভয় কাজ করতো। কি জানি, ওই যন্ত্র দিয়ে দূর থেকে হয়তো গুলি করা যায়! আমার তখন মনে হত, ওদের কাছে তীরও আছে। হয়তো ছোট ছোট ছেলেপেলেদের দেখলে সেই তীর ছোড়ে ওরা। আমি ওদের দেখামাত্র পজিশান নিতাম। পজিশান নিতাম কোনো গাছের আড়ালে। অথবা রাস্তার ঢালে। অথবা মাঠের মধ্যে উঁচু কোনো ঢিবি'র আড়ালে। ধোনকারদের দেখে আমি যে এভাবে পালাই তা কেউ জানতো না। একদিন সেই ধোনকার আমাদের রাস্তা দিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে আসছে। আমি যতোই লুকিয়ে তাকে দেখতে থাকি, ধোনকার ততোই আমাদের বাড়ির কাছে আসতে থাকলো। এক সময় আমি আর দিশা না পেয়ে মাকে বললাম যে, পুলিশ আসতেছে! জবাবে মা বললো, পুলিশ আসলি আমি কি করব? কোথায় পুলিশ? আমি রাস্তার দিকে দেখিয়ে বললাম, ওই যে এদিকেই আসতেছে... মা আগন্তুককে দেখে স্বভাবসুলভ ভাবে বললো, ও তো ধোনকার। আমাদের লেপ বানাতে আসতেছে। আমি কিছুটা আতংকিত কিছুটা স্বস্থির মিশ্রণে কিছুক্ষণ দোল খেলাম। এক সময় ধোনকার আমাদের উঠোনে পৌঁছলেন। আমি ঘরে ঢুকে টেবিলের নিচে লুকালাম। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম, মা দুইটা হোগলার পাটি উঠোনে বিছিয়ে দিলেন। তার একপাশে ধোনকার তার ধুনাচি রেখে আয়েস করে বসলেন। তারপর মা তুলার বস্তা দেখিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকলেন ধোনকারের জন্য পান নিতে। দেখলাম মা ধোনকারকে পান দিয়ে তার সঙ্গে আমার কথা বলছেন। তক্ষুণি ধোনকার আমাকে ডাক দিল। আমি ভয়ে ভয়ে ধোনকারের কাছে গেলাম। ধোনকার ধুনাচি হাতে নিয়ে বললেন, এটা তুমি ধরে দেখো। তাইলে আর ভয় করবে না। তারপর কিছুক্ষণ ধুনাচি নিয়ে গবেষণা করার পর আমি দেখে নিলাম ধোনকারের কারবার। পরে সারা দিন ধোনকারের আমি যোগ্য এসিসট্যান্ট হয়ে তুলা ধুনায় ধোনকারকে সহযোগিতা করতে লাগলাম। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে মেজো আপা বললো, তোর চুল তো সব সাদা হয়ে গেছে, কি করছিলি? তারপর মেজো আপা বললো, আব্বা আসার আগে শিগ্গির গোসল করতি চল। নইলে তোরেই তুলা ধুনা করবেনে... ধোনকারদের যে পাড়ায় বাড়ি ওটাকে সবাই ডাকতো বাজাদার পাড়া। কারণ, ওখানের সবার ঘরেই ঢোল আছে। পূজার সময় তারা মন্দিরে মন্দিরে ঢোল বাজানোর অর্ডার পায়। বাজাদার পাড়ার ছেলে বুড়ো গুড়ো সবাই ঢোল বাজাতে জানতো। কিন্তু বারো মাসে তেরো পূজার বাইরে তাদের আরো অনেক পেশা ছিল। কেউ তুলা ধুনতো। কেউ গরু-ছাগলের চামড়া ছুলতো। কেউ বাজারে মুচি'র কাজ করতো। কেউ বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার গড়া বানাতো। কেউ মাছ ধরার জাল বুনতো। কেউ মুরগি আটকানোর বাশেঁর খাঁচা বানাতো। এমন বিচিত্র সব কাজ করতো বাজাদার পাড়ার মানুষজন। কিন্তু বাজাদার পাড়ার কেউ স্কুলে যেতো না। ছোটবেলা থেকেই তারা বড়দের সঙ্গে এসব কাজ করতো। আর যাদের বিশেষ করে মহিলাদের ছেলেমেয়ে বা স্বামী নেই, তারা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতো। ভারী হরেকরকম কাজের সুনসান ছিল বাজাদার পাড়ায়। তো সেই ধোনকারকে আমি এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করলাম তার নাম। জবাবে তিনি বললেন, কলিমউদ্দিন। আমি ঘরে ঢুকে মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ওনারা কি মুসলমান? মা বললো, হু। তখন আমার মনের মধ্যে ভারী খচখচ করতে লাগলো। তাহলে ওনারা ঈদের সময় মুসলমানদের বাড়িতে আসে না কেন? বড় হয়ে জানলাম, ওরা আসলে কাদিয়ানী মুসলিম। হিন্দুদের পূজায় ঢোল বাজায় বলে ওদের মুসলমানেরা তেমন নিজেদের মনে করতো না। এছাড়া ঋষি-মুচি-চামাড়ের কাজ করে বলে ওদের তেমন কেউ সামাজিক কাজ-কারবারে ডাকে না। বিশেষ করে মুসলমানেরা। অথচ তারা আমাদের গ্রামের প্রায় সকল কাজে লাগতো। লেপ বানাতে ওদের ডাক পড়তো। পূজায় ঢাক বাজাতে ওদের ডাক পড়তো। মাছ ধরার জাল বুনাতে ওদের ডাক পড়তো। কিন্তু কারো বিয়ে সাধি বা শ্রাদ্ধে ওদের কেউ ডাক পেতো না। একই গ্রামে বাজাদার পাড়ার মানুষগুলো অনেকটা উচ্ছিষ্ট'র মতো ছিল। সমাজের এই যে শ্রেণীকরণ, এটা কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। ছোটবেলা থেকে দেখা সেই বাজাদার পাড়াটি আমার কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো। কারণ সেখানে অনেক চমক। কেউ কেউ বসে বসে তাস খেলছে। কেউ জাল বুনছে। কেউ ঢোল বাজাচ্ছে। কেউ খাঁচা বুনছে। কেউ তুলা ধুনছে। সে এক দেখার মতো পাড়া। যা আমাদের গ্রামের অন্য কোথায় এমন বৈচিত্র্যময় ছিল না। এখনো আমি বাড়িতে গেলে ওই বাজাদার পাড়া থেকে একটা ঘুরা দেই। বাজাদার পাড়ায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে... সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৩৭
false
rn
আমি তোমাকে ভালোবাসি- তার মানে আমি তোমার সাথে সেক্স করতে চাই তুমি সখী, ডুবে যাবে মুহূর্তেই রোমহর্ষে — অনিবার অরুণের ম্লানে জানি আমি; প্রেম যে তবুও প্রেম; স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে রবে, বাঁচিতে সে জানে। এমন গভীর করে পেয়েছি কি? প্রেম যে নক্ষত্র আর নক্ষত্রের গান, প্রাণ যে ব্যাকুল রাত্রি প্রান্তরের গাঢ় নীল অমাবস্যায় – এযুগে বিয়ের আগেই ছেলে-মেয়েরা শারীরিক সম্পর্ক করতে আগ্রহী। এর কারণ কি ? জৈবিক এবং মানসিক শান্তি ? ছেলেরা যে মেয়েদের সেক্স করার জন্য জোর করে তা কিন্তু নয় । মেয়েরা নিজে থেকেই ডাকে। কিন্তু আমার প্রশ্ন বিয়ের আগে কেন ডাকে ? পরে যদি ঐ ছেলেটির সাথে মেয়েটির বিয়ে না হয় ! প্রেম ভালোবাসা হওয়ার পর- ছেলেরাই মেয়েদের সাথে বেশী খারপ ব্যবহার করে থাকে। মেয়েদের সহ্য করার ক্ষমতা অনেক। নারী-পুরুষের সম্পর্ক, বিয়ের আগে বা পরে- সমাজ এবং পরিবারের অপর অনেক প্রভাব বিস্তার করে। প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক কে দার্শনিক যুক্তি তর্ক ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষনের সাথে মিলানো ঠিক হবে না।ভালোবাসা প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক শারীরিক মিলন৷সব সম্পর্কের মূলে থাকে ভালোবাসা। বিয়ের আগে যখন কোনো নারী-পুরুষ একজন আরেকজনকে বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তখন তাদের অবচেতন মনে ঘুরতে থাকে- আমি তোমার সাথে সেক্স করতে চাই। সেক্স টাই বড়। কিন্তু সরাসরি সেক্সের কথা বলাটা শোভন দেখা যায় না- তাই তারা বলে প্রেম করি, ভালোবাসি। মেয়েদেরকে বলি- আপনারা যারা প্রেম ট্রেম করেন- তারা আপনাদের প্রেমিককে বলুন- বিয়ের আগে আমার কাছ থেকে একশো হাত দূরে থাকবে, আমার হাতও ধরবে না। চুমু তো দূরের কথা। তাহলে দেখবেন আপনার প্রেমিক আস্তে আস্তে আপনার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। তার মানে কি? সে আপনার সাথে প্রেম করে- আপনাকে চুমু দেওয়ার জন্য, জড়িয়ে ধরার জন্য। শুধু যে ছেলেরাই জড়িয়ে ধরতে চায়- চুমু দিতে চায় তা কিন্তু নয়- বরং মেয়েরা আরও বেশী চায়। আপনাকে একটা জ্ঞানের কথা বলি- পুরুষ হচ্ছে কুত্তার জাত। ঘরে হাজার ভালো খাবার থাকলেও বাইরের নোংরা খাবারে মুখ দিবেই। কাজেই বিয়ের পরও সুযোগ পেলে পুরুষগন অন্য নারীর দিকে ঝুঁকবেই। শুনুন, কথায় বলে অন্যের পাগল ছেড়ে দাও, নিজের পাগল ধরে রাখো। ভালোবাসা, ভালোবাসি এগুলো ভুল কথা। আসল কথা হলো- সেক্স। নারী পুরুষ প্রেম ভালোবাসা করেই সেক্স করার জন্য। সেক্স করা খারাপ আমি কিন্তু তা বলছি না- বিশেষ একজন বা প্রিয় মানুষের সাথে সবাইই সেক্স করতে চায়। চাওয়াটাই স্বাভাবিক। সমস্যা হলো- কয়দিন পর পর একটা করে প্রেম করবো আর ভিন্ন ভিন্ন আদরের স্বাদ নিবো সেটা ঠিক না।উপযুক্ত বয়সে কোনো নারী ও পুরুষের যৌথ সম্মতিতে গড়ে ওঠা যৌন সম্পর্ক- ঠিক নয়। যদিও এটাকে অনেকে আধুনিকতা মনে করেন। ছেলেদের মন তো উরু উরু, তাই অনেক মেয়ে ভেবে থাকেন- শারীরিক সম্পর্ক করলে বুঝি ছেলেটাকে আটকে রাখা যাবে। একেবারে ভুল চিন্তা। শারীরিক সম্পর্ক দিয়ে কাউকে আটকে রাখা যায় না। তখন ঐ ছেলে মৌ মাছির মতন হয়ে যায়। মধু খাবে তারপর চলে যাবে। কিন্তু আপনি ভাববেন- ও তো আমার কাছেই আছে। আসলে 'ও' আপনার কাছে নেই। মধু দেওয়া বন্ধ করে দেন- সেও উধাও হয়ে যাবে। যত দিন মধু দিবেন, তত দিনই বারবার বললে- অনেক ভালোবাসি তোমাকে, জান আমার, কলিজা আমার। মধু দেওয়া বন্ধ ওমনি কোনো উছিলা ধরে সে আপনার কাছ থেকে চলে যাবে- অন্য কোথাও মধু সংগ্রহের আশায়। তবে যাই-ই বলি না কেন- একজন আরেকজন কে অনেকখানি দখল করে রাখে সব সময় অদৃশ্য ভাবে।যে কোন পুরুষের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু যদি হয়ে থাকে কোন নারী, তাহলে ধরে নিতে হবে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। তাকে দিয়ে কোন মহৎ কর্ম করানো সম্ভব নয়।মানুষ বিয়ে করে কেন? সেক্স করার জন্য ? সন্তানের জন্য? সেক্স খুবই তুচ্ছ কিন্তু ভয়াবহ একটি ব্যাপার। সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য সেক্স করার প্রয়োজন আছে।অনেক বিষয়েই মানুষ যুগে যুগে আকর্ষিত হয়েছে। পাগল হয়েছে, মাতোয়ারা হয়েছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই উন্মত্ততা আবার হারিয়েও গেছে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, মানুষ কখনোই এই পরকীয়া প্রেমের অমোঘ টান থেকে সরে যায় নি। গবেষণার ফলাফল "মেয়েদের যৌনতা ভালবাসা তাড়িত, আর ছেলেদের যৌনতা ইন্দ্রিয়সুখ তাড়িত।অনেক নারীই তাদের প্রেমিকদের সকল ধরণের যৌন চাহিদা মেটানো দায়িত্ব বলে মনে করে।সমাজ কিসে বৈধতা দিল না দিল তাতে কিছুই যায় আসে না।সুতরাং এই সমাজ মানুষের স্বাধীনতাকে পরাধীনতায় আটকাতে চাইলেও যুগে যুগে স্বাধীনচেতা মানুষেরা সেই প্রথাকে দুমরে মুচড়ে দিয়ে গেছেন। এই লিস্টটির দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিন।রবীন্দ্রনাথের জীবনে এসেছিলেন কোন কোন নারীঃ কাদম্বরী দেবী, আনা তরখড় 'নলিনী', লুসি, ভবতারিণী পরে মৃণালিনী দেবী, ইন্দিরা দেবী, রানু অধিকারী, ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো; সর্বমোট ৭ (সাত) জন।এবার আমরা দেখি নজরুলের জীবনে এসেছিলেন কোন কোন নারীঃ নার্গিস (সৈয়দা খাতুন), মিস ফজিলাতুন্নেসা, রানু সোম (প্রতিভা বসু), কানন দেবী, ও প্রমীলা সেনগুপ্তা; সর্বমোট ৫ (পাঁচ) জন। এর বেশীর ভাগই বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক। এ জন্যেই বোধহয় আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের থেকে পশ্চিমা বিশ্বের ছেলে-মেয়েরা আর বেশী সৃজনশীল। কেননা আমাদের ছেলে-মেয়েরা তার সময়ের একটা বড় অংশ ব্যয় করে তার যৌন স্বপ্নে। কেউ যদি এই বিশ্লেষণকে অতি সরলীকরণ মনে করেন তবে তাকে চিজার থেকে চার্লস, তলস্তয় থেকে রবীন্দ্রনাথ বা রুশো থেকে হু.আজাদ অথবা ভিঞ্চি থেকে সুলতানের উপর ব্যাপক বর্ণনায় যেতে হবে। “Every man knows that his highest purpose in life cannot be reduced to any particular relationship. If a man prioritizes his relationship over his highest purpose, he weakens himself, disserves the universe, and cheats his woman of an authentic man who can offer his full, undivided presence.”
false
hm
বনবাসের স্মৃতি ধূসর গোধূলির বড় ভাই শ্রদ্ধেয় গম্ভীর গোধূলি সেদিন ফোন করেছিলেন এক দূরদেশ থেকে। অভিযোগ, ধূসর দিনকেদিন বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে। আমরা যারা তার নিকটতম গার্জিয়ান ও গুরুজন, তারা যেন তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার লাইনে আনি। মিষ্টি কথায় কাজ না হলে পোঁদে লাথি মারার অনুরোধ জানালেন। গোধূলি বংশের মুখে নাকি ধূসর কালিমা লেপন করে চলছে প্রতি পলে পলে। এর একটা আশু বিহিত করা জরুরি। মুসিবতেই পড়লাম। হাজার হোক গোধূলি বন্ধু মানুষ, হোক অর্বাচীন, তাকে কি কথা না শুনলেই পোঁদে লাথি মারা উচিত? কিন্তু গম্ভীরদা কোন সুযোগ দিলেন না প্রতিবাদের, আমাদের গার্জেনগিরির ওপর গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করে ফোন রেখে দিলেন। চৌধুরীকে এরপর জানালাম, জানালাম বলাইকেও। কী করা যায় গোধূলির জন্যে। বলাই রমজানে রোজা রেখে কিছুটা কাহিল, তিনি দুটার বেশি লাথি মারতে পারবেন না জানালেন। চৌধুরীর প্যান্টে নাজুক জায়গায় সেলাইগুলি আরো নাজুক, লাথি মারতে গেলে ছিঁড়ে যেতে পারে। কিসমতকে গালি দিতে দিতে ফোন্দিলাম ধূসরকে। কেন আমাকেই বার বার এগিয়ে যেতে হবে গোধূলিকে প্যাঁদানোর জন্যে? আসল কথা জানলে গোধূলি পিছলে যেতে পারে জেনেই প্রস্তাব দিলাম, বন শহরে আমাদের প্রিয় বড়ভাই লিটন ভায়ের ওখান থেকে একটা চক্কর মেরে আসার। রমজান উপলক্ষে বলাই আর যাচ্ছেন না, আমি চৌধুরী গোধূলিই শেষমেশ গেলাম বনে। যাত্রা করলাম ভোরবেলা। এদিক থেকে আমি আর চৌধুরী, আর ওদিক থেকে গোধূলি। জার্মানিতে মোটামুটি শস্তায় রেলযাত্রা সম্ভব সপ্তাহান্তে, আগেই বলেছি, সেই সপ্তাহান্তের টিকেট আবার শহরের ট্রামেবাসেও খাটে। তাই ওরকম একটা টিকেট কেটে চড়ে বসেছি আমরা। গিসেনে নেমে ট্রেন বদলাতে হয় একবার, তারপর কোয়ল্নে আরেকবার। খুব বেশি অপেক্ষার হ্যাপাও তাই নেই। বেশ আরামসেই সীট দখল করে ঝিমাতে ঝিমাতে একসময় বনে এসে পৌঁছুলাম আমরা। গোধূলি আরো আগেই এসে পৌঁছে গেছে বনে, স্টেশনে নেমেই দেখি সে গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে, চোরের মতো হাবভাব। বুঝলাম, গম্ভীর ভাইয়ের উদ্বেগের পেছনে যথাযথ কারণ আছে। চৌধুরীকে বললাম, আগে মিষ্টি কথা শুরু করবো, নাকি কড়াটা দিয়েই শুরু করবো? চৌধুরী বললেন, কথাবার্তাই উত্তম। কিছু মিষ্টি কথা আর হালকা চড়চাপড়ে কাজ হয়ে গেলে আর মাইর না-ও দেয়া লাগতে পারে। তিনজনে স্টেশন থেকে বার হয়ে হাল্টেষ্টেলেতে যাবার পথে যার দেখা পেলাম, তাকে দেখতে পাবো এমনটা আশা করিনি। তিনি এক মহাজন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ও ব্লগিঙের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, যাঁর পরিচয় জানলে লোকে মূত্রত্যাগেরও অবসর পায় না, এমনই কাবিল তিনি। হাতে একটি ঝুড়ি নিয়ে অলস স্মার্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে, গেঞ্জিতে লেখা, হাবিব'স। মহাজনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা নিয়ে গুজুর গুজুর আলাপ করছিলাম, আলাপ শেষে দেখি সিনেমার মতোই বাস চলে যাবার পর তিনিও অদৃশ্য। কী আর করা, এমন মহারথীর সাথে আলাপ না হওয়ার বেদনাকে বুকে পুষেই বাসে চড়ে চললাম লিটন ভায়ের বাসায়। লিটন ভাই বেশ খাতিরযত্ন করলেন আমাদের। খিচুড়ি খেয়ে তিনজনে বেরোলাম শহরে এক চক্কর হাঁটতে, লিটন ভাই কী একটা কাজে বেরিয়ে গেলেন। ব্যস্ত মানুষ, একটা না একটা কাজ লেগেই আছে তাঁর। রাইন নদীর পার ধরে হাঁটতে হাঁটতে গোধূলিকে কিছু সবক দিলাম। আচারব্যবহার, ন্যায়নীতি, ধর্মাধর্ম প্রভৃতি নিয়ে কয়েক পশলা লেকচারের পর মনে হলো, এ যাত্রা আর লাথি না মারলেও চলবে। সে তার অনেক ভুল বুঝতে পেরেছে। প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে এক দফা কফিও খাওয়ালো ব্যাটা। কফিপানের পর জানা গেলো, রাইনাউতে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক মেলা বসেছে, বিভিন্ন দেশের লোক সেখানে স্টল খুলে বসেছে। পুরো পার্কটাই অপূর্ব সুন্দর ও ছিমছাম, হাঁটা বা সাইকেল চালানোর জন্যে আদর্শ, হাঁটতে হাঁটতেই মেলায় গিয়ে হাজির হলাম আমরা। মেক্সিকোর স্টলে মায়া আর আজটেক নাচ দেখে অন্যদিকে পা বাড়াতেই দেখি পোলিশ স্টল থেকে এক হৃষ্টপুষ্ট যুবতী হাতছানি দিয়ে গোধূলিকে ডাকছে। গোধূলি সবিনয়ে হাত নেড়ে জানালো, সে পোলিশ নয়, বাংলাদেশের যুবক, পোল্যান্ডের তরুণীরা যেন তার গুলাবি গায়ের রং দেখে বিভ্রান্তা না হয়। ওদিকে কিনিয়ার স্টলের বাইরে কয়েকজন আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গ কাঠের ড্রাম বাজাচ্ছিলো মন দিয়ে, আমরা কাছাকাছি যেতেই একজন ড্রাম বাড়িয়ে ধরলো আমার দিকে, দেশোয়ালি ভাই ভেবে। আমিও কম বিনয়ী নই, জানালাম, আমার পূর্বপুরুষ আফ্রিকা ত্যাগ করেছেন বহুবছর হলো, সেই লক্ষাধিক বছর আগের গ্রেট মাইগ্রেশনের সময়, তাই ড্রাম বাজানোর অভ্যাস প্রায় বিস্মৃত হয়েছি। মিশরের কুক্ষিনৃত্যের স্টল দেখে গোধূলিকে আর আটকে রাখা গেলো না। যত বলি চল বাড়ি ফিরি ক্ষুধা লাগসে, সে ততই তেড়েফুঁড়ে যায় ওদিকে। কী আর করা, ভুঁড়ি কাঁপানো মিশরী নাচ আর বলিভিয়ার কিছু বিদঘুটে নাচ দেখে আমরা আবার উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলাম। বেশিরভাগ স্টলেই শুধু খাবারদাবারের ব্যবস্থা। বাংলাদেশের কোন স্টল চোখে পড়েনি, ভারত আর শ্রীলঙ্কার স্টলে ভাজাভুজি বিক্রি চলছে সমানে। ফিলিপাইন্সের স্টলে অনেক ফিলিপিনো মহিলা ব্রাজিলীয় গানের সুরে নেচে চলছেন, কিরগিজিস্তানের স্টলটা একটা কিরগিজ তাঁবু, বুলগেরিয়ার স্টলের সামনে কিছু বুলগেরিয় ওয়াইনের বোতল আর গ্লাস রাখা, এমনকি একুয়াডর আর বেনিনের স্টল পর্যন্ত চোখে পড়লো, কিন্তু বাংলাদেশের স্টল নেই। গোধূলি প্রস্তাব দিলো, তিনজন মিলে একটা টাওয়েল নিয়ে বসে পড়ি। এর আগে ফ্রাঙ্কফুর্টে গোধূলির সঙ্গীতপ্রতিভার সাথে পরিচয় হয়েছে, তাই টেনেহিঁচড়ে তাকে বার করে নিয়ে এলাম মেলা এলাকা থেকে। এরপরের ঘটনা সামান্যই। বনের পথে চলতে গিয়ে পথ হারিয়ে একটা তুর্কি দোকান থেকে খানিক মাংস আর আলদি থেকে টুকিটাকি কেনাকাটা করে আবার লিটন ভায়ের ডেরায় হামলা করলাম আমরা। চৌধুরীর তেহারি খেয়ে লিটন ভাই বাকরুদ্ধ। আমি বাকরুদ্ধ লিটন ভাইয়ের ভোনগেমাইনশাফটের জনৈকা চৈনিকা তরুণীকে দেখে। ধূসর বাকরুদ্ধ আমরা মোটে একটি ভোদকার বোতল সঙ্গে নিয়ে এসেছি বলে। আর চৌধুরী কথা বলার ফুরসৎ পাচ্ছিলেন না তেহারি খাওয়ার ব্যস্ততায়। খাওয়াদাওয়ার আগে ও পরে তিনজনের উদ্যোগের মস্কোভস্কায়ার ক্ষুদে বোতলটা শেষ হবার পর আমাদের মনে কিছুটা ফূর্তির উর্দ্রেক হলো। গোধূলি জড়ানো গলায় ভূপেন হাজারিকার গানের প্যারোডি ধরলো, "পকেট যেন মেরো না আমার, পোঁদ মেরে দাও বরং পোঁদ মেরে দাও, হো মালিক, সারাজীবন কাঁদালে যখন ...।" বহুকষ্টে তাকে শান্ত করে লিটন ভায়ের ঘরে গিয়ে এদিকে সেদিকে ভূমিশয্যায় আশ্রয় নিলাম আমরা। পরদিন আবার বনে এক চক্কর মেরে কোয়ল্ন হয়ে ঘরের ছেলেদের ঘরে ফিরতে হবে। ঘুমানোর আগে সচল খুলে দেখি কার্ল মার্ক্স আলুথালু বেশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন হাপুশ নয়নে, তাঁর লুঙ্গির একদিক ধরে আছেন অভিজিৎদা আর সুবিনয়, অন্যদিক চেপে আছেন ফারুক ওয়াসিফ আর জনৈক অতিথি মুনশি। মার্ক্সের জন্যে গভীর উদ্বেগ আর সমবেদনা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম সবাই। দুনিয়াটা দিনকেদিন বড় কঠিন হয়ে যাচ্ছে, মুখ খুললেই বিপদ। মেক্সিকোর সেই নাচের অনুষ্ঠানের মোবাইলধৃত ভিডিওটা আছে। থ্রিজিপি থেকে অন্য কোন চলেবল ফরম্যাটে নেবার কায়দাটা শিখতে পাল্লেই সচলদের জন্যে তুলে দেবো।
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৫৩ ১. অনেক কিছু লেখার জমে গেছে এ ক'দিনে, তবে সর্বশেষ ঘটনা নিয়েই বরং কথা বলি। আমার তাজিক পড়শী বাহুদুর বিদায় নিয়েছে। লাথি মেরে দরজা ভেঙে কয়েকদিন খুব মনমরা ছিলো সে। কফি বানাচ্ছিলাম এক সকালে, আমাকে এসে তার সেই দুঃখের কাহিনী বিশদ বর্ণনা করলো। বাহুদুর জার্মান জানে না তেমন, ইংরেজি-জার্মান মিশেল একটা প্রোগ্রামে এসেছে সে, আমার সাথে বাতচিত ইংরেজিতেই হয়, এ ভাষাটা বেশ ভালোই বলে সে। "আমার দোষ ছিলো না।" শুরুতেই সে রায় দিলো। "চিন্তা করো, আমি বাথরুম থেকে বের হয়েছি একটা জাইঙ্গা পরে, সারা গা ভিজা, টাওয়েলটা পর্যন্ত ঘরের মধ্যে, দরজা খুলতে গিয়ে দেখি দরজা আর খোলে না। তখন আমি আর কী করতে পারি?" আমি সমবেদনা জানালাম। বললাম, যে সে ঠিক কাজটাই করেছে। "তুমিই বলো, আমি এই শীতের রাতে আর কোথায় যাবো? আমার সারা গা ভিজা। পরনে খালি একটা জাইঙ্গা।" আমি আবারও সমবেদনা জানালাম। শীতের রাতে ভেজা গায়ে জাঙ্গিয়া পরে যে কোথাও বের হওয়া উচিত না, এ ব্যাপারে জোর নৈতিক সমর্থন দিলাম। "দরজা না ভাঙলে আমার ঠান্ডা লাগতে পারতো।" আমি জানালাম, দরজা একটা গেলে আরেকটা আসবে। জীবন একটাই। সেটাকে সামলেসুমলে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এরপর বাহুদুর উৎসাহ পেয়ে গেলো। সে ঘ্যানর ঘ্যানর করেই চললো। সে মোটেও এই ভোনহাইমে থাকতে চায় না। সে অয়রোপাহাউস নামের চমকদার ভোনহাইমে থাকার জন্যে ছয় মাসের ভাড়া আগাম শোধ করে তবে এসেছে। এই যে এখানে তাকে রাখা হয়েছে, সেটা এক প্রকারের অবিচার। আমি জানতে চাইলাম, অয়রোপাহাউসে ঘর বরাদ্দ না করে ষ্টুডেন্টেনভেয়ার্ক কেন তাকে আমার প্রতিবেশী বানানোর হীন চক্রান্তে লিপ্ত হলো? বাহুদুর গনগনে মুখে বললো, "আর বইলো না, ঐ রুমে আগে যেই ব্যাটা থাকতো সে যাওয়ার আগে সব ভাইঙ্গা রাইখা গেসে!" আমার কফি মাথায় উঠতো আরেকটু হলেই। বাহুদুর ক্ষেপে গেলো। "হাসো কেন?" আমি আবার গম্ভীর হয়ে গেলাম। যে ছোকরা লাথি মেরে এই মজবুত পার্টিকেল বোর্ডের দরজা ফ্রেম থেকে খসিয়ে দিতে পারে, তাকে না চটানোই ভালো। বললাম, "তুমি ঐদিন গোসলে গেসো, খামাকা দরজায় তালা মারসিলা ক্যান?" বাহুদুর থতমত খেয়ে গেলো। "আমি মারবুর্গে বড় একটা ভিগি (ভোনগেমাইনশাফটের সংক্ষিপ্ত রূপ, মানে কয়েকজন মিলে একত্রে এক অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস)-তে ছিলাম, বুঝছো, ঐখানে আমাদের বলে দিসিলো দরজায় তালা না মাইরা কোথাও না যাইতে। আমার অভ্যাস হয়ে গেসে।" তবে বাহুদুরের কপাল ভালো, অয়রোপাহাউসের পূর্বতন শক্তিমানের কীর্তি কর্তৃপক্ষ মেরামত করেছে শিগগীরই। চাড্ডিগাঁটরি গুটিয়ে সে ভাগলো। কয়েকদিন পর ট্রামে তার সাথে দেখা, বিশালদেহী এক মধ্যএশীয় মেয়ের সাথে। বললাম, তোমার নতুন ভোনহাইমের তালাগুলি ঠিকাছে তো? সে দেখলাম আবার গম্ভীর হয়ে গেলো। ২. কয়েকদিন তারপর একাই অ্যাপার্টমেন্টে বাস করছি। একা থাকলে যা হয়, কোন কিছু পরিষ্কার করার তাড়া থাকে না সহজে। আমি প্রকৃত অলস, ফলে বাসনকোসন ডাঁই হয়ে যায়, মেঝেতে হালকা ধূলো জমে। একদিন সারারাত কী যেন বালছাল কাজে ব্যয় করে সকালে ঘুমাতে গিয়েছি, দুপুরে কলিং বেল বেজে উঠলো। উঠে গিয়ে রান্নাঘরের জানালা খুলে নিচে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে মাথায় বাজ পড়লো। কাসেলে পাকিস্তানী কিছু ছাত্র আছে, যাদের নানা কারণে এড়িয়ে চলি, তাদেরই একজন এক নতুনমুখো ছোকরাকে নিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ইংরেজিতে অনুরোধ ভেসে এলো, আমরা ঘর দেখতে এসেছি। তোমার সময় হবে? মনে মনে বললাম, ব্যাটা বেওকুফ, চাবি ছাড়া তুমি ঘর দেখবা কিভাবে? পরক্ষণেই মনে হলো, আরে, বাহুদুর তো দরজাই ভেঙে রেখে গেছে। দরজা খুলে ঢুকতে দিলাম ব্যাটাদের। এদের মধ্যে একজনকে আগে দেখেছি ক্রিকেটের মাঠে, ভালো বোলিং করে, আর আরেকজন নবাগত, বোঝা যায়। দরজার অবস্থা দেখে চিন্তিত হলেও ঘর দেখে খুশি দুইজনেই। ঐ ঘরটা বেশ বড়। সাথে কমন বারান্দাও আছে। পুরনো পাকি ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো, আমি কোথাকার লোক। আমি লৌকিক ভদ্রতা করে হাত বাড়িয়ে দিলাম। "আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।" বাংলাদেশ শুনে একটা উল্লসিত ভাব দেখা গেলো পুরনো পাকির মুখে। "উর্দু সমঝতে হো?" সদ্য ঘুম থেকে না উঠলে আমি নিশ্চিতভাবেই কোন খারাপ কথা বলতাম, কিন্তু মেজাজ সামলে রেখে বললাম, না। এবার প্রশ্ন, "হিন্দি?" কেমন লাগে? আমি বাংলাদেশের লোক, হিন্দি কেন বুঝতে হবে আমাকে? আমি কর্কশ গলায় বললাম, তোমার যদি ইংরেজিতে সমস্যা থাকে, জার্মানে কথা বলতে পারি আমরা, সমস্যা নেই। পুরনো পাকি চুপ করে গেলো এবার। নতুন পাকি ছোকরার সাথে পরিচিত হলাম। এই ঘরটি তার প্রাপ্য ছিলো, কিন্তু বাহুদুরের অয়রোপাহাউসপ্রাপ্তিতে দেরি হচ্ছিলো বলে তাকে একেবারে অন্য শহরের এক ভোনহাইমে নিয়ে ফেলেছে ষ্টুডেন্টেনভেয়ার্ক। রান্নাঘর টয়লেট দেখে দুইজনেই বিদায় নিলো। আমি রক্তলাল চোখ নিয়ে কড়া এক কাপ চা বানাতে বসলাম। এই ছিলো ললাটলিখন। পাকি মশলা খাই না, পাকি চাল খাওয়া বাদ দিলাম, পাকি দোকানের ছায়া মাড়াই না, আর এখন এক ছাদের নিচে এক পাকির সাথে বাস করতে হবে। কোথায় এক নির্বান্ধব চেক সুন্দরী এসে উঠবে পাশের ঘরে, আধো আধো জার্মানে এটা সেটা জানতে চাইবে, তাকে সব রগে রগে বুঝিয়ে দেবো ক্যাম্নেকী, তা না। স্পষ্টই এ সৃষ্টিকর্তার চুথিয়ামি। আমাকে প্যাঁচে ফেলে দেখছে শালা। ৩. নতুন পাকি পড়শী সৈয়দ বাবাজি কয়েকদিন আগে এসে উঠেছে। বয়স বেশি নয় তার। কয়েকদিন আগে সচলে হয়ে যাওয়া আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলাম, দেখি কী হয়। আগ বাড়িয়ে ভ্যাজাল পাকানো আমার স্বভাব না, কাজেই সদ্ব্যবহারের পথই বেছে নিলাম। সৈয়দ সাহেবের ইংরেজি মোটামুটি, আর প্রথম দিন উর্দু হিন্দিকে রুল আউট করে দেবার পর তিনি উর্দুতে বাতচিতের চেষ্টা করেননি। মনে মনে একটা প্লাস পয়েন্ট দিলাম তাকে। রাতের বেলা বসে কাজ করছি, এমন সময় দরজায় টোকা। সৈয়দ সাহেব কুণ্ঠিত মুখে জানতে চাইলেন, আমার কাছে অ্যালার্ম ঘড়ি হবে নাকি। আমার অ্যালার্ম নষ্ট, মোবাইলের অ্যালার্ম ব্যবহার করি। সৈয়দের মোবাইল নেয়া হয়নি এখনো, ভিসা প্রলম্বিত করার আগে মোবাইল নেয়ার উপায় নেই। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, ঠিকাছে, আমি ভোরে তোমাকে তুলে দিবো। সৈয়দ ধন্যবাদ জানিয়ে কেটে পড়লো। পরদিন সন্ধ্যায় তাকে রান্নাঘরের জিনিসপাতি বুঝিয়ে দিলাম। বেশির ভাগ জিনিস আমার কেনা, বাকিগুলি পুরনোদের রেখে যাওয়া জিনিস, নিয়মানুযায়ী ভোনহাইমের সম্পত্তি এখন। বললাম, "তুমি ব্যবহার করতে পারো যে কোন কিছু, তবে ব্যবহার করে ফেলে রেখো না। এখানে সাবান আছে, স্পঞ্জ আছে, ধুয়ে রেখে দিও।" টুকটাক আরো আলাপ হলো। সে এসেছে বালুচিস্তান থেকে, কোয়েটার ছেলে। ওকে দেখে মনে হয় না সে বালুচ, তাই জিজ্ঞেস করলাম, সে এথনিক বালুচ কি না। সৈয়দ সবেগে মাথা নাড়লো, "না! আমি পাখতুন!" তারপর একগাদা তথ্য দিলো পাখতুনদের সম্পর্কে। তারা কোথায় কোথায় থাকে, কোথায় সংখ্যায় কম, কোথায় বেশি। একই সাথে তার জিজ্ঞাসা, কিবলা কোন দিকে। সৈয়দকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বললাম যে আমি কিবলা সম্পর্কে কেন নিশ্চিত না। আমি মুসলিম পরিবারে বড় হলেও যে ধর্মউদাসীন, এবং অজ্ঞেয়বাদিতার পথের পথিক, শুনে সে ঘাবড়ে গেলো। বললাম, আমরা এখন কা'বার উত্তর পশ্চিমে আছি, তুমি সকালে উঠে দেখে নিও সূর্য কোন দিকে ওঠে, ওদিকে ফিরে নামাজ পড়ে নিও। আজকে সন্ধ্যায় কাজ করছি, আবার দরজায় টোকা। সৈয়দ লজ্জিত মুখে দাঁড়িয়ে। তার আব্দার আকাশচুম্বি। সে কখনো রান্না করেনি জীবনে, তাকে আমি একটু দেখিয়ে দিতে পারি কি না। বিরাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠলাম। আলুর দম খাওয়ার শখ হয়েছে ছোকরার। আলুর দম আমি নিজেও কোনদিন রান্না করিনি, আবছা ধারণা আছে শুধু। নিজে রাঁধতে গিয়ে ইতোমধ্যে মশলার দফারফা করে ছেড়েছে ব্যাটা। রান্না নিয়ে আর চুলা বন্ধ করা নিয়ে একটা গুরুগম্ভীর লেকচার দিয়ে আলুর দম রান্না দেখালাম সৈয়দকে। নিরামিষাশী কি না জিজ্ঞেস করতে সে মনমরা হয়ে গেলো। জানালো, বালুচিস্তান খুব ঠান্ডা জায়গা। ওখানে মাংসচর্বি না খেলে টেকা যায় না। আরি পাকিস্তানী নিরামিষাশী বলে নাকি কোন কিছু নাই দুনিয়ায়। বুঝলাম, তা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতো। এত কিছু ফেলে সে কেন আলুর দম খেতে চায়, এ প্রশ্নের জবাবে সে জানালো, এই দেশে হালাল তরিকায় কেউ ছাগল কাটে না। মাত্র নাকি একটা দোকানে শুধু শুদ্ধ পদ্ধতিতে কাটা মুরগি পাওয়া যায়। রাঁধতে রাঁধতে আরো টুকটাক আলাপ হলো। সৈয়দ জানালো, কোয়েটা সম্পর্কে আমি যা জানি, পাকিস্তানীরা তা-ও জানে না। সে একবার ইসলামাবাদে একটা কাজে গিয়ে জানিয়েছিলো, সে কোয়েটা থেকে এসেছে, উত্তরে নাকি তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কোয়েটা গিলগিটের কাছে কি না। ক্ষুব্ধ গলায় সে বললো, এটা একটা কথা, বলো? গিলগিট হচ্ছে চীনের কাছে। আমি বললাম, বালুচিস্তান তো সবচেয়ে বড় প্রভিন্স, আর কোয়েটা তো বালুচিস্তানের রাজধানী। এত বড় শহর চেনে না কেন? সৈয়দ তিক্ত গলায় বললো, চিনবে কিভাবে? কোন নজর দিলে তো? সরকার কিছু করে না কোয়েটার জন্য। করাচী এয়ারপোর্টে তাকে হেনস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ, সে কোয়েটার লোক হয়ে জার্মানি যাচ্ছে শুনে। করাচী গেলেই ওখানকার লোকে তাদের নিয়ে মস্করা করে। আমি বললাম, কোয়েটাতে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নাই কেন? সৈয়দ এবার মুখ কালো করে ফেললো। আস্তে করে শুধু বললো, কিছু নাই। অনেক কিছুই নাই। আমি খুব শক্ত গলায় বললাম, জানি। এই জিনিস আমরা চিনি। এ জন্যেই আমরা পাকিস্তানকে লাত্থি মেরে আলাদা হয়েছি। সৈয়দ আমার চেহারা দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। তারপর আস্তে করে বললো, খুব অন্যায় হয়েছিলো তখন তোমাদের উপর, আমি জানি। ৪. পাকি ঘৃণা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে সচলে। সেই আলোচনায় আমি ঘৃণার সপক্ষেই কথা বলেছি, ভবিষ্যতেও বলবো। কোন পাকিস্তানী যতদিন পর্যন্ত স্বীকার না করবে এই অন্যায়ের কথা, ততদিন পর্যন্ত সে মানুষ না, হি অর শি ইজ জাস্ট অ্যানাদার পাকি। এই অন্যায় স্বীকার করুক, আমরাও ঘৃণার পাত্রটুকু ঢেকে রাখবো।
false
rg
আজ বাবা'র আঠারোতম মৃত্যুবার্ষিকী_ আজ আমার মন ভালো নেই !!! বাবাকে আমি খুব ভালোবাসি। বাবাকে আমি খুব মিস করি। ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবা আমাদের ছেড়ে অকালে চলে যান। আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে হারাই সেদিন। পরিবারে বাবার সাথে আমার ছিল খুব ভালো সম্পর্ক। বাবা আমার প্রতিটি কথা বুঝতে পারতেন। আমার যে কোনো আবদার যে কোনো মূল্যে মেটাতে চেষ্টা করতেন। আমরা অনেকগুলো ভাইবোন। পাঁচ ভাই চার বোন। পরিবারে আমার অবস্থান ষষ্ঠ হলেও বাবার সাথে আমার যে কোনো বিষয়ে সরাসরি একটা বোঝাপড়া হতো। পরিবারের অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার সময় বাবা সিরিয়াসলি আমার সাথে পরামর্শ করতেন। আমাকে জিজ্ঞসে করতেন, আমার জায়গায় তুই হলে কী করতি? আমার ছোট্ট মাথায় ভেবে চিন্তে যা মনে হতো, আমি তাই বলতাম। অনেক ক্ষেত্রেই বাবা আমার বলা সেই সিদ্ধান্তটি নিতেন। এভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, বাবা অনেকটা হাতেকলমে আমাকে তাই শেখাতেন। আমরা অনেকগুলো ভাইবোন হওয়ায়, আমাদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে বাবাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে বাবা ছিলেন অনন্য। কৃষিকাজটা বাবা খুব ভালো বুঝতেন। আমাদের গ্রামের অনেকেই বাবার কাছে কৃষি বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসতেন। কখন কোন ফসল বুনতে হবে, কখন ধান কাটা শুরু করতে হবে, কখন ধানের বীজ দিতে হবে, কখন মরিচের জমি চাষ করতে হবে, কোন জমিতে একসাথে দুই ফসল দেওয়া সম্ভব, কোন জমিতে ডাল চাষ করতে হবে, কোন জমিতে তীলের সাথে ধান বোনা সম্ভব, এসব প্রায় সকল কিছুই বাবা খুব যত্নের সাথেই দেখাশুনা করতেন। শীতকালে বাবার সাথে আমি কিছু বাড়তি দায়িত্ব পালন করতাম। সাধারণত ইরি জমিতে বারবার পানি সেচ দিতে হয়। সেচের পানির জন্য জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হতো। আমাদের একটা পাওয়ার পাম্প ছিল। খুব ছোটবেলায় সেই পাওয়ার পাম্প চালানোর প্রায় সকল কৌশলই আমি বাবার নির্দেশে শিখে ফেলেছিলাম। আমাকে অনুসরণ করে আমার ছোট ভাই জাকিরও পাওয়াার পাম্প চালানো শিখে ফেলল। পাম্প নষ্ট হলে মেকানিকের বদলে আমরা দুই ভাই মিলেই সেই পাম্প ঠিক করে ফেলতাম। একেবারে বড় ধরনের বিপর্যয় না হলে আমরাই ছিলাম ছোটখাটো মেকানিক। জোয়ারের সাথে পাম্প চালানোর একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত, মাঝরাত হোক আর ভোর হোক যখনই জোয়ার আসত, তখনই আমাদের পাম্প চালাতে হতো। অনেক সময় গভীর রাতে বাবা পাম্প চালানোর জন্য আমাকে ডেকে তুলতেন। মেশিন চালিয়ে দিয়ে আমি এসে হেরিকেনের আলোতে বই নিয়ে পড়তে বসতাম। সবাই যখন জেগে উঠতো, মেশিন বন্ধ করে আমি ঘুমোতে যেতাম। মা-বাবা ছাড়া আর কেউ টের পেত না, আমি বেলা পর্যন্ত ঘুমালেও আমার আসলে পড়া শেখার কাজটি আগেই হয়ে গেছে। এভাবে রাত জেগে পড়ার অভ্যাসটা ওই পাওয়ার পাম্প চালানোর কারণে হয়েছিল। বাড়িতে যখন ইরি ধান উঠতো তখন আমার একটা বাড়তি দায়িত্ব পড়তো। কোন জমিতে কত ধান হল, মাড়াই শেষে সেই ধানের হিসেব রাখতাম আমি। আগের বছরের তুলনায় ফলন কত বেশি হল বা কম হল, এসব আমি অংক কষে বাবাকে হিসেব দিতাম। বাবা পরবর্তী বছরে সেই জমির জন্য সেভাবে প্রস্তুতি নিতেন। বাবা এক জমিতে ভিন্ন বছর ভিন্ন ধান লাগিয়ে এক ধরনের এক্সপারিমেন্ট করতেন। কখনো সেই এক্সপারিমেন্ট বিফলে গেলে বাবা মনে মনে খুব কষ্ট পেতেন। আবার যেটা সফল হতো, বাবা তখন ভারী খুশি হতেন। ষড়ঋতুর নানান কিসিমের হিসেব নিকেশের সাথে বাবা খুব সিরিয়াসলি তাল রাখতেন। আর ফসলের চাষবাস করতেন সেই হিসেবের সাথে মিল রেখে। অনেক সময় চৈত্র মাসের শেষের দিকে আমাদের চাল কেনা লাগত। বাবা চাল কেনা সামাল দিতে কিছু জমিতে বোড়ো ধান দিতেন। বোড়ো ধান ইরি ধানের চেয়ে একটু আগে উঠতো। যা দিয়ে চৈত্র বৈশাখ সামাল দিতে দিতেই ইরি ধান উঠে যেত। কখনো অতিরিক্ত বন্যার পানিতে আউশ-আমন ধানের ক্ষতি পোষাতে বাবা উঁচু জমিতে কিছু অন্যান্য ফসলের আবাদ করতেন। কখনো তীল, কখনো মরিচ, কখনো মুগ ডাল, কখনো কখনো তীল ধান একসাথে, কখনো করল্লা, কখনো বা নানান জাতের সব্জির চাষ করতেন। অনেক সময় আমার মনে হতো, বাবার নিজের সন্তানদের চেয়ে ফসলের দিকেই তার বেশি মায়া। আবার যখন দেখতাম সেই ফসল বিক্রি করেই আমাদের পড়ালেখার খরচ যোগাচ্ছেন, তখন বাবার হিসেবকে খুব সঠিক মনে হতো। বাবা ফসলের চাষবাসে বাংলা পঞ্জিকা খুব মনযোগ দিয়ে অনুসরণ করতেন। একেবারে কাঁটায় কাঁটায় সেই তারিখে সেই ফসলের বপন করতেন। একটু এদিক সেদিক হলেই বাবা খুব অস্থির হয়ে যেতেন। আমার বাবা লেখাপড়া তেমন জানতেন না। ক্লাস টু-থ্রি পর্যন্ত হয়তো স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। নিজে কিষানের হিসাব ডায়েরি লিখে অনুসরণ করতেন। এই কাজটি বাবা কোনো ধরনের বিরক্ত না হয়ে নিয়মিত খুব যত্ন নিয়েই করতেন। বাবার হাতের লেখা ছিল খুব সুন্দর। ছোট ছোট হরফে একটু ডান কাতে লিখতেন। ডায়েরির ভেতরে সব সময় একটা কলম থাকতো। দুপুরে গোসলের আগে আগে বাবা ডায়েরি খুলে কিষানের হিসাব লিখতেন। কে কে সারা দিন কিষান দেবে আর কে কে অর্ধ বেলা দেবে, তা তখনই ঠিক করতেন। যারা সারা দিন কাজ করবে, তাদের নামের সাথে লিখতেন একটা যোগ চিন্থ দিয়ে ১। আর যারা অর্ধ বেলা করবে, তাদের নামের শেষে একটা যোগ চিন্থ দিয়ে লিখতেন ১/২। সাধারণত হাটের দিন বাবা কিষানের দাম পরিশোধ করতেন। যাদের এমার্জেন্সি থাকতো, তারা প্রায় রোজেরটা রোজ নিত। বাকিরা হাটের দিন সবাই দুপুরের খাওয়ার পর আমাদের বাড়িতে আসতো। বাবা হয়তো কিছু একটা বিক্রি করে কিষানের দাম দিবেন। সে অনুযায়ী তারা সেই জিনিস হাটে নিয়ে বিক্রি করে বাবার হাতে টাকা দিতেন। অনেকে আবার ফিরতি পথে আমাদের সদাইপাতি মার কাছে দিয়ে যেতেন। কোনোদিন এই কাজে কোনো অনাকাঙ্খিত বিপত্তি হলে দেখতাম বাবার মেজাজ চরম খারাপ। যাদের টাকা দেবার কথা, তাদের অনেকে চুপচাপ বাড়িতে এসে মায়ের কাছ থেকে চাল নিয়ে যেতেন। কখনো আমাদের বাগান থেকে সব্জি, কখনো আমাদের পুকুর থেকে মাছ ধরে নিতেন। মাকেও কিছু মাছ দিয়ে যেতেন, যাতে পরবর্তী দুই বেলা চলে। ছোটবেলায় আমরা কখনো মরা মাছ খেতাম না। রান্নার আগে আগে পুকুর থেকে মাছ ধরার পর সেই তাজা মাছই রান্না হতো। বাবা মরা মাছ একদম সহ্য করতেন না। বর্ষাকালে আমাদের পরিবারের আমি ছিলাম প্রধান জেলে। সারা দিন মাছ ধরতাম। অনেক সময় মাছ ধরার নেশায় স্কুল ফাঁকি দিতাম। মা মাছ ঠিকই রান্না করতেন। কিন্তু স্কুল ফাঁকির নালিশটাও বাবাকে চুপি চুপি বলে দিতেন। পরের দিন আর স্কুল কামাই দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ হতো না। কারণ, বাবা পরের দিন স্কুলের বেলায় চোখে চোখে রাখতেন। বর্ষাকালে আমার দুই হাতের আঙুলের ফাঁকে বড় বড় ঘা হতো। আর পায়ের গোড়ালি পচে যেত। কারণ, সারাক্ষণ মাছ ধরা বা ফুটবল খেলার কারণে কাদাপানির সাথে আমার দিন কাটত। পায়ের অবস্থা বেশি খারাপ হলে বাড়ির পাশের জুমির দুদুর কাছ থেকে তুঁতে এনে লাগাতাম। পরের দিন আবার পা তখন পানিতে নামার উপযোগী হতো। শিং মাছের কাঁটা খেয়ে হাতের আঙুল বল্টু পাকিয়ে থাকতো। বাবা একটু বকাঝকা করতেন। কিন্তু সুযোগ পেলেই আমি আবার মাছ ধরতে নেমে যেতাম। বর্ষাকালে রোজ সন্ধ্যায় আমি কৈয়া জাল পাততাম। আর খুব ভোরে একটা লাঠি আর একটা মাছের হাড়ি নিয়ে সেই জাল উঠাতে যেতাম। যদি কোনো জালের এক প্রান্তে একটা শিং মাছ আটকাতো আর অন্যপ্রান্তে একটা ঢোরা সাপ আটকাতো, তাহলে ওই জালের মাঝখান থাকতো একেবারে ফাঁকা। হয়তো সন্ধ্যারাতেই ঢোরা সাপের ওই প্রান্তে কোনো মাছ ধরা পড়েছিল, সেই মাছ খেতে গিয়েই ঢোরা সাপ জালে জড়াত। আর অন্যপ্রান্তে শিং মাছ জড়ালে, শিং মাছ সারাক্ষণ ডিগবাজি দিত। ফলে গোট জাল শিং মাছ আর ঢোরা সাপের যৌথ প্রযোজনায় একেবারে ফাঁকা। ঢোরা সাপ আটকালে সব মাছ ছাড়িয়ে তারপর ঢোরা মশাইকে নিয়ে চলত আমাদের আচ্ছা মত তামাশা। একটু মারতাম। আবার গোয়াল থেকে গোবর নিয়ে সাপের মুখে দিলে সাপ একটু তাজা হতো। আবার মারতাম। আবার গোবর দিতাম। এই নিয়ে আমাদের ছোটদের সেদিন সকালের নাস্তা খাওয়ার সময় বয়ে যেত। জাল পরিস্কার করে আবার রোদে শুকাতে দিতাম। কখনো কখনো জালে আবার গাব লাগাতাম। গাব লাগানো জালে খুব মাছ ধরা পড়তো। রহস্যটা আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। একটা ব্যাপার ছিল জালের ফাঁস গুলো গাব লাগালে বেশ টাইট হতো। কিন্তু বেশি মাছ সেদিন জালে আটকা পড়ার অন্য কি মানে থাকতো বুঝতাম না। কারণ কৈয়া জালে কোনো মাছ আটকা পড়লে তার নিজেকে ছুটিয়ে নেওয়াটা চাট্টিখানি কথা নয়। কখনো কখনো শৈল মাছ কিন্তু জাল ছিড়ে ঠিকই পালিয়ে যেত। পরদিন আমাদের অনেক বেলা পর্যন্ত সেই জাল রিপেয়ার করতে চলে যেত। বর্ষাকালে অনেক সময় রাতে আমি মাছ কোপাতে যেতাম। সঙ্গে নিতাম দা, কোচ আর হাড়ি। বাবা জানতে পারলে খুব বকা দিতেন। কারণ, মাছের চলাচলের সাথে নাকি সাপের চলাচলের একটা অদ্ভুত মিল আছে। কিন্তু বাবা বাইরে গেলেই আমি আর চাচাতো ভাই কালাম ঠিকই মাছ কোপাতে নেমে যেতাম। কখন কোথাও আমরা মাছ ধরতে যাব, সেই পরিকল্পনা আমরা আগেভাগেই করে রাখতাম। অন্যরা মাছ ধরছে, আর আমরা পড়ার টেবিলে, এই ঘটনা খুব বিরল ছিল। বাইরে মাছ না পেলে অনেক সময় পুকুর থেকেই মাছ ধরে মনের জ্বালা মেটাতাম। অনেক সময় নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যেতাম রাতে। সেক্ষেত্রে বাবার টর্চলাইট চুরি করে নৌকা নিয়ে পালাতে হতো। বাবা টের পেলেই বাড়িতে যাবার জন্য নির্দেশ আসতো। বাবার পছন্দের মাছ পেলে সে যাত্রা কোনোভাবে রক্ষা হতো। আর না হলে কারো হাতে টর্চ দিয়ে একদিকে পালিয়ে যেতাম। কিন্তু মাছ ধরার জন্য কোনোদিনই বাবা আমাকে মারেনি। বকাঝকা করেছে। এই পর্যন্তই। কারণ, পরিবারের সারাদিনের মাছের যোগান প্রায় আমি একাই দিতাম। আমার যখন কলেজ পর্ব শুরু হল। তখন থেকে মাছ ধরায় এক ধরনের ছন্দপতন ঘটল। কলেজের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে প্রথম কাজ হতো তখন মনের সাধ মিটিয়ে মাছ ধরা। আহা সেই দুরন্ত কৈশোরে আমি কত না মাছ ধরেছি। আর এখন ঢাকায় তাজা মাছের চেহারাই দেখা হয় না। শহরে আসার পর তাজা মাছের বদলে মরা মাছের সাথেই আমাদের নতুন করে পরিচয় ঘটল। তাজা মাছের যে স্বাদ, সেই স্বাদ দুই তিন জিয়িয়ে রাখা তাজা মাছেও নাই। শহরে যারা মাছ খায়, তারা সেই কয়েক দিনের পরের পরিবর্তিত স্বাদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে। প্রায় প্রতি বছর বাবা আর আমি মিলে গাছ লাগাতাম। বাবা খোন্তা দিয়ে মাটি কাটতেন। আমি গর্ত থেকে মাটি তুলতাম। তারপর গাছ লাগানোর সময় আমার কাজ থাকত মাটি ছড়িয়ে দেওয়া। গাছের গোড়ালি কতটা শক্ত রাখতে হবে, কতটা মাটি দিতে হবে, কতটা পানি দিতে হবে, এটা বাবা নিয়ন্ত্রণ করতেন। বাবার হাতে লাগানো বেশ কিছু গাছ ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় নষ্ট হয়েছিল। মেহগনি, কড়াই, নিম, সিরিজ, এরকম অনেক গাছ সিডরে নষ্ট হয়েছিল। বাবার হাতের একটা জিনিস আমার কাছে এখনো সংরক্ষিত আছে। বাবার একটা মাফলার। ওটা আমি বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমার কাছে রেখেছি। ওই মাফলারে আমি এখনো বাবার শরীরের ঘ্রাণ পাই। কিন্তু বাবাকে কাছে পাই না। এই দুঃখ বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। এটাই নাকি নিয়তি।১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রতি বছর ডিসেম্বর আসলেই আমার আর মন ভালো থাকে না। বাবাকে খুব মিস করি। কিন্তু কাউকে সেই কথা বলে বোঝানো যাবে না। কতোটা মিস করি। আর ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি মা মারা যাবার পর থেকে জানুয়ারি মাসেও আমার সেই মন খারাপ ভাবটা চলতে থাকে। ডিসেম্বর আর জানুয়ারি আমার সবচেয়ে পরম সম্পদ হারানোর মাস। এই দুই মাস আমি তাই শত চেষ্টা করেও ভালো থাকতে পারি না। ভালো থাকার উপায়ও আমার জানা নাই। যাদের বাবা-মা নেই, এই কষ্ট শুধু তারাই বুঝতে পারবে। আর কেউ না। কোনোভাবেই না। বাবা তুমি যেখানে থাকো, ভালো থেকো। আই লাভ ইউ, বাবা। আই রিয়েলি মিস ইউ, বাবা। ভ্যারি ভ্যারি মিস ইউ, বাবা.... ..........................৬ ডিসেম্বর ২০১৪ঢাকা
false
mk
জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতি নয় বর্তমানে জঙ্গিবাদের উত্থান আমাদের জাতীয় জীবনে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সমস্যা কেবল আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী উদ্বিগ্নের বিষয়। একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের নেপথ্যে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির তত্ত্বকে দাঁড় করানো হচ্ছে। আদৌ কি জঙ্গিবাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তা চিন্তার বিষয়। শুক্রবার (জুন ১০) রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত জিয়াউর রহমান এবং মোহাম্মদ আলী স্মরণে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে সহিংসতা ও উগ্রবাদ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সরকার বিএনপিকে দোষারোপ করেই ব্যর্থতা ঢাকছে। এতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সরকার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। গণতন্ত্র না থাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে। জঙ্গিবাদ উত্থান প্রসঙ্গে মওদুদ আরো বলেন, বেøমগেম বন্ধ করুন। এটি একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। আমরা জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করি। গণতন্ত্র না থাকায় উগ্রপন্থীরা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। সত্যিকারের গবেষণা করেন। দেশে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কোনো স্বাধীনতা নেই।আসলে তাদের এই বক্তব্য কতটা যৌক্তিক সেটাও ভাবার বিষয়। কেবল গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিই কি জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণ। বর্তমানে দেশে কি গণতন্ত্র একেবারেই নেই! তবে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি বক্তব্য হলো দেশে গণতন্ত্র নেই। আবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় দেশে গণতন্ত্র নেই। কাজেই গণতন্ত্র কেবল দুই দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারাই গণতন্ত্রের নির্মাতা। আর আমরা আমজনতা গণতন্ত্রের নীরব দর্শক। এবার আসুন দেখা যাক আমাদের দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনের কথা। যখন দেশে গণতন্ত্র উপস্থিত ছিল অর্থাৎ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের মোট ৬৪ জেলার ৬৩টিতেই একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের শক্তির জানান দিয়েছিল জেএমবি। তাছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সেই সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। হামলায় শেখ হাসিনা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। তবে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। জানা যায়, এই হামলা চালায় মুফতি হান্নানের হরকাতুল জিহাদ। এর আগেও ঢাকার রমনা বটমূল এবং যশোরে উদীচী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ। জেএমবি ১৭ আগস্টের পর সারাদেশে একের পর এক আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জনকে হত্যা করে। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় তখনকার জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ছয়জন জঙ্গির ফাঁসি হয়। ১৭ আগস্টের বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে মোট ১৫৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে ৯১টি মামলার বিচার শেষে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, ১১২ জনের যাবজ্জীবন এবং ১০১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পলাতক আছে ফাঁসির তিন আসামিসহ ৭৪ জন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি। অন্যদিকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এবং ২৪ জনকে হত্যার মামলা এখনো বিচারাধীন। তবে প্রধান আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ অধিকাংশ আসামি এখন কারাগারে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও এই মামলার আসামি। যারা এখন গণতন্ত্র নেই বলে জঙ্গিবাদের উত্থানের ব্যাখ্যা দেন কিন্তু তাদের শাসনামলে গণতন্ত্র সম্পূর্ণ উপস্থিত ছিল। তাহলে কেন তাদের সময় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটল। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কলঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ। গণতন্ত্র রক্ষার নামে হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রল বোমা। নির্বাচনের নামে এসব অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দিয়ে মানুষ হত্যার উৎসবে মেতে উঠছিল কারা? যারা গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তারা মনে হয় সেদিনের কথা ভুলে গেছেন। কাজেই কখন গণতন্ত্র উপস্থিত আর কখন অনুপস্থিত তা কেবল রাজনৈতিক দলের লোকরাই জানেন।বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জঙ্গিরা একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছে। সেগুলো তো গণতান্ত্রিক পরিবেশেই করা হয়েছিল। কোটালিপাড়ায় তার জনসমাবেশ স্থলেও বোমা পেতে তাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত জঙ্গিরা তাকে অন্তত ১৪ বার হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। এ ব্যাপারে তাকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও সতর্ক করা হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সব সময়ই জঙ্গিদের ‘টার্গেট’-এ রয়েছেন। তাহলে এর সঙ্গেও নিশ্চয় গণতন্ত্রের সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭১ সালে জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক হয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল। দলটির অনেক নেতাকর্মী সে সময় গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল, যারা গণহত্যা, বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে স্থানান্তরের মতো যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আধা-সামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে লেখক হুমায়ুন আজাদকে জঙ্গিরা কুপিয়ে আহত করে। এমন ঘটনা অবশ্যই গণতান্ত্রিক শাসনামলেই ঘটেছে।ধরেই নিলাম আমাদের এখানে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিই জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণ। কিন্তু বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণ কি? বর্তমানে বিশ্বের উন্নত মডেল গণতন্ত্রের দেশেও জঙ্গিদের নগ্ন হামলা হচ্ছে। ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এ বছরের ৮ জানুয়ারি ফ্রান্সের প্যারিসে রম্য সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’র কার্যালয়ে হামলায় নিহত হন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকসহ আট সাংবাদিক, দুই পুলিশ সদস্য ও অন্য দুজন। জঙ্গিবাদের সমস্যাটি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, এখন উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেই জঙ্গিবাদ জন্ম নিচ্ছে। বাইরে থেকে গিয়ে জঙ্গি হামলা করার প্রয়োজনীয়তা আর নেই। কেবল আরব দেশে নয়, এই আইএসের আক্রমণের শিকার হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোও। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় একই সময়ে কয়েকটি স্থানে বোমা হামলা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলার দায়িত্ব কেউ স্বীকার না করলেও মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়াও ২২ মার্চ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের ইয়াবেনতেম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ের নিকটবর্তী মালবিক মেট্রো স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩১ জন নিহত এবং ২৭০ জন আহত হন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলাগুলোর দায় স্বীকার করেছে। কাজেই উগ্র জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।এই জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই অপশক্তির উত্থান মোকাবেলা করা। জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতির করার এখন সময় নয়। এই দেশ জঙ্গিদের দখলে চলে গেলে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কোনো দলের জন্যই শুভকর হবে না। সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের উচিত হবে সম্মিলিতভাবে একুশ শতাব্দীর প্রধান সমস্যা এই জঙ্গিবাদকে দমন করা। ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে ধর্ম, দল, মত নির্বিশেষে সবাইকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। একে অপরকে দোষারোপের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ক্ষুণœ স্বার্থ ত্যাগ করে সবার সম্মিলিত প্রয়াস এখন একান্ত কাম্য। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করলে চলবে না, আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের এই দেশ আশাবাদের দেশ, নতুন স্বপন বোনার দেশ, এগিয়ে চলার দেশ, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়ার দেশ। আমরা উন্নয়নের বিশ্বাসী। বাঙালি জানে বিজয় ছিনিয়ে আনতে। উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে দেশকে আর কেউ পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। শত বাধাবিপত্তি এড়িয়ে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবেই। কাজেই সেখানে এই জঙ্গিবাদের মতো সমস্যা আমাদের কাটিয়ে উঠতেই হবে। যেভাবেই হোক এ জঙ্গিবাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।বর্তমান সরকার বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আটক করে আইনের আওতায় আনছে। কোনোভাবেই বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা আমরা চালাতে দেব না- এটি হোক আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মূলমন্ত্র। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অবস্থা এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য জড়িত বলা হলেও বিশ্বব্যাপী হত্যাকাণ্ডের কারণ কী? কারো মতামত, চিন্তা, ধ্যান-ধারণা তথা জীবন ধারণের ব্যাপারে অন্যের থেকে ভিন্ন হতে পারে- তাই বলে তাকে হত্যা করতে হবে- এমন কোনো বিধান নেই। দেশে প্রচলিত আইনকানুন রয়েছে- যার আশ্রয় নিয়ে যে কেউ প্রতিবাদ করতেই পারে। কারো বক্তব্য যদি অন্যের অনুভূতিতে আঘাত লাগে তবে সেই ব্যক্তি প্রচলিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে আমরা এর বিপরীত অবস্থা দেখছি। একটি গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্নমত থাকবেই। কিন্তু ভিন্নমত দমনের নামে মানুষ হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এসব হত্যার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত, তাদের উচিত হবে যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের দাবি-দাওয়া প্রকাশ করা। আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা।পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতার কারণ কী। এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের পেছনে কিছু কারণ হলো শ্রেণি বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামরিক ও বেসামরিক আমলা ও ভূস্বামীদের কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে। রয়েছে। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু উন্নত দেশে তো গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তবে সেখানে জঙ্গিবাদের হামলা হচ্ছে কেন। তবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় জঙ্গি উত্থানের পেছনে কেবল গণতন্ত্রই দায়ী নয়। তবে হতে পারে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি একটি কারণ। তাই বলে এটিই যে প্রধান কারণ তা বলা যাবে না। এখানে জঙ্গি হওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। কাজেই আমাদের এখন সেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, সুশিক্ষার অভাব, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নসহ জঙ্গি হওয়ার জন্য নানা উপকরণই সমাজে রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে।বলা হচ্ছে, জঙ্গিদের লক্ষ্য ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। সেটাই যদি তাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে ভালো। কারণ ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের কথা বলে। পৃথিবীর যেকোনো ধর্মেরই মূল কথা হলো শান্তি। ধর্ম কল্যাণকর। ধর্ম মানুষকে সুপথ দেখায়। কিন্তু ধর্ম প্রতিষ্ঠার পথ কি হত্যা! মানুষ হত্যা করেই কি ধর্মের অনুশাসন কায়েম করতে হবে! কিন্তু মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠার নজির কোনো সময়েই নেই। আমাদের ইসলাম ধর্ম কি মানুষ হত্যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহানবী (স.) তাঁর আদর্শ এবং সৎ গুণাবলির মাধ্যমে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি শান্তি এবং কল্যাণের কথা বলেছেন। তাঁর কথার মাধ্যমে সে সময় মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। তিনি সব ধর্মের মানুষকে সম্মান দেখিয়েছেন। এই মহামানব ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে কত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি তা মুখ বুজে সহ্য করেছেন। তারপরও তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু এখন আইএস নামে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে বিশ্বব্যাপী নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তারা ভুলে গেছে ইসলামের আদর্শ। তারা ধর্মকে ভুল ব্যাখ্যা করে মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত।এসব হত্যার সঙ্গে ইসলামের মতো শান্তির ধর্মের নাম জড়িয়ে দিয়ে ইসলামকে কলুষিত করছে। ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি তারা ক্ষুণœ করছে। মানুষ হত্যা মহাপাপ এবং জঘন্য কাজ। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কেবল তাই নয়, ইসলাম ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। কিন্তু যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে- তারা কোনো ধর্মের লোক হতে পারে না। তাদের কোনো ধর্ম নেই। যারা মানুষ হত্যা করে তারা কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত মতাদর্শ কোনোভাবেই শুভকর হতে পারে না। মানুষ হত্যা ছাড়াও বর্তমান বিশ্বে ধর্ম এবং নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠার নানা পথই রয়েছে। কাজেই এই জঙ্গিবাদ যেন অপর একটি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রধান নিয়ামক না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। জঙ্গিবাদ একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটি নিয়ে আমাদের প্রত্যক রাজনৈতিক দলের উচিত হবে হিংস্র রাজনীতিতে লিপ্ত না হয়ে বরং জঙ্গিবাদ নির্মূলে এগিয়ে আসা।মো. মিঠুন মিয়া : প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
false
rg
বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো, বাড়ি___বলতে বলতে কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন জয়নগরের বাড়িতেই গেলেন।। রেজা ঘটক কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন শেষ পর্যন্ত জামালপুরের শরিষাবাড়ির জয়নগরের বাড়িতেই চলে গেলেন। পেছনে রেখে গেলেন অসংখ্য স্মৃতি। প্রতি বছর বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বই মেলায় যে মানুষটির সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডা হতো, তিনি ছিলেন কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন। আমি ডাকতাম খন্দকার ভাই। সম্ভবতঃ ২০০১/২ সালের দিকে বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা মোবারক হোসেন (কবি সাজ্জাদ আরেফিন) ভাইয়ের রুমে আমি আর কবি খায়রুল আলম সবুজ বসে আড্ডা দিচ্ছিলুম। আমরা সিগারেট ফুকছিলুম আর মেলার ধুলা নিয়ে ক্ষোভ ঝারছিলুম। তখন ওই রুমে প্রবেশ করলেন কাজী নজরুলের মতো ঝাকরা চুলের এক আধুনিক বাউল। সবুজ ভাই আর খন্দকার ভাই কুশল বিনিময় করলেন। আর মোবারক ভাই আমার সঙ্গে খন্দকার ভাইয়ের পরিচয় করিয়ে দিলেন। শুনলাম, খন্দকার ভাই হুমায়ুন আজাদ স্যারের ডিপার্টমেন্টে ইংরেজি পড়ান। আমি একটু বিব্রত ছিলুম, স্যার বলবো নাকি ভাই বলবো? খন্দকার ভাইরে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার তো আমি ছাত্র না, সো সিগারেট কিন্তু ফেলতে পারছি না। খন্দকার ভাই ভরাট গলায় এমুন একটা হাসি দিলেন, তখন থেকেই বুঝলুম, মানুষটা রসিক বটে। তারপর সবুজ ভাই, খন্দকার ভাই আর আমি একসঙ্গে কেওড়াতলায় আসলুম। 'একবিংশ'-এর অনেক পুরানো সংখ্যা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে লাগলুম। আমি পড়ছিলুম টোকন ঠাকুরের সাত দিনের নামে সাতটি চমৎকার সনেট। সবুজ ভাই আমাকে ধমক দিলেন, তুই আমার কবিতা না পড়েই টোকনের কবিতা পড়া শুরু করলি? দে, আমার সিগারেট ফেরত দে? জবাবে বললুম, সবুজ ভাই, আপনার কবিতা তো বড়োরা পড়ে। আমরা লিলিপুটরা কি কবিতা বুঝি? একবিংশের সামনে আমাদের আড্ডা তখন জমে উঠেছে। আড্ডায় এসে যোগ দিল আমার কবি বন্ধু আলফ্রেড খোকন। খোকন তখন রোদ্দুর নিয়ে খুব মাতামাতি করছিল। রোদ্দুর নিয়ে খোকনের অনেক কবিতা হয় আমাকে খোকনের মুখে শুনতে হয়েছে, নতুবা পড়তে হয়েছে। আমরা আড্ডার এক ফাঁকে খোকন আর আমি মেলা ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লুম। তারপর প্রায় প্রতি বছরই খন্দকার ভাইয়ের সঙ্গে বই মেলায় আড্ডা মেরেছি। এভাবে ধীরে ধীরে কবি খন্দকার আশরাফ হোসেনের সঙ্গে আমার আন্তরিকতার শুরু। অমায়িক ভদ্রলোক বলতে যা বুঝায় এক কথায় খন্দকার ভাই তাই ছিলেন। দাম্ভিকতা একদম ছিল না। আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ 'বুনো বলেশ্বরী'র প্রথম ক্রেতা ছিলেন খন্দকার ভাই। আলফ্রেড খোকন ছিল দ্বিতীয় ক্রেতা আর আমাদের বন্ধু সাংবাদিক নজরুল কবির ছিল তৃতীয় ক্রেতা। খোকন আমার বইয়ের প্রথম ক্রেতা হতে না পারার দুঃখে সেদিন আমাকে কড়া ধমক দিয়েছিল। প্রতি বছরই আমার মনে হত এবার কবিতায় বা প্রবন্ধে বা অনুবাদে কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন বাংলা একাডেমী পরুষ্কার পাচ্ছেন। এই পারপাস অ্যাডভান্স আমরা চা খেয়ে ফেলেছি। কিন্তু আমার ধারণা পাল্টে দিয়ে রাম শ্যাম যদু মধুরা বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পেয়েছেন। খন্দকার ভাই পেলেন না। বাংলা একাডেমী পুরষ্কার নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছিলুম একাডেমী'র মোবারক ভাইয়ের রুমে। হঠাৎ সেখানে অরুনাভ সরকার দাদা ঢুকলেন। দাদা সেবার বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পান। দাদাকে বললুম, একটা দুইটা ছাড়া বাংলা একাডেমী'র অধিকাংশ পুরষ্কার যায় তোষামোদীদের কপালে, ব্যাপার কি দাদা? জবাবে অরুনাভ সরকার দাদা বলেছিলেন, আমারে তুমি কোন দলে রাখলা? কইলাম, আপনি দাদা সেইভ সাইডে পড়েছেন। আমি আপনার গল্পের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। টোকন ঠাকুরের কাছে আপনার ধানমণ্ডির ১৯-এর অনেক গল্প শুনেছি। আজ বড় আফছোস লাগছে, কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন বাংলা একাডেমী পুরষ্কার না পেয়েই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। গতকাল হঠাৎ তাঁর স্থায়ীভাবে বাড়ি যাবার কথা মনে হল। মনে পড়ল তার সেই বাড়ি যাবার কবিতা- ''বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো, বাড়ি... পথ ছাড়ো অন্ধকার, পথ ছাড়ো দূরত্বের দূরগামী পথ বাড়ি যাবো, বাড়ি... বৈশাখের বটবৃক্ষ তালুতে কপোল রেখে বলে, 'হায়, এ ছেলেকে কিছুতেই ফিরতে দেয়া চলবে না'; নগরীর পথ, দালানের পরভৃত কোকিলের পঞ্চস্বর ডেকে বলে, শোন তোর কোনো বাড়ি নেই, অন্তরঙ্গ উচ্চারণে যাকে বলে হোম সুইট হোম - সে আজ ভেসে গেছে বিস্মৃতির যমুনার জলে। তোমার আসার জন্য কেউ নেই হাট করে ঘরের দরোজা, পলাতক সময়ের ঝুঁটিবাঁধা কাকাতুয়া দাঁড় ছেড়ে পালিয়েছে সেই কবে; ঘাটলার কাঠগুলো কবে কোন চোর নিয়ে গেছে অন্তপুরে চুলোর হৃদয় জুড়ে শান্তি দেবে বলে। তবু বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো, বাড়ি.... পথ ছাড়ো সুসময়, প্রতিশ্রুত সুখনিদ্রা, নিমগ্ন বালিশ, পথ ছাড়ো জীবনযাপন ব্যথা, পথ করে দাও। আজ যাবো ঝিনাই নদীর জল হাঁটুতে কাপড় তুলে পার হবো, মধ্যরাতে ডাক দেবো মা মাগো এসেছি আমি! সেই কবে গভীর নিশীথে তোমার নিমাইপুত্র ঘর ছেড়েছিল, আজ কাশী বৃন্দাবন তুলোধুনো করে ফের তোর দীর্ণ চৌকাঠে এসেছি। আমার কিছুই হলো না মা, লোকে বলে আমি ভীষণ নারাজ জীবনের তপ্ত গালে চুমু খেতে, আমি ভীতু, জীবনের দ্রুতগাড়ি বৃদ্ধাঙ্গুলি তুলে কেন থামাতে পারি না, হিচহাইকিঙ করে কত লোক চলে গেলো দূরতম গন্তব্যে, তবুও আমি একা এখানে দাঁড়িয়ে আছি, বাসভাড়া হয়েছে লোপাট অন্য কারো কলাবতী আঙ্গুলের হাতে তবু আমি বাড়ি যাবো বাড়ি যাবো, বাড়ি এ বিশাল পৃথিবীতে এ মুহূর্তে অন্য কোনো গন্তব্য তো নেই! পথ ছাড়ো অন্ধকার, পথ ছাড়ো দূরত্বরে দূরগামী পথ বাড়ি যাবো, বাড়ি..'' বাংলা একাডেমী অনেক আকাম করেছে। গত বছর প্রথম আলো ডেইলি স্টারের তোষামোদী রোষে 'হে ফেস্টিভাল'-এর নামকা ওয়াস্থে আয়োজক হয়েছিল। তখন 'হে ফেস্টিভাল' নিয়ে আমরা যারা বিরুদ্ধাচারণ করেছিলাম, বাংলা একাডেমী তাদের জামায়াত পন্থী বলে গালি দিয়েছিল। কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন তখন আমাদের দলেই ছিলেন। আমার অনেক লেখায় তখন খন্দকার ভাই কমেন্ট করেছিলেন নিঃস্কোচে। অনেক লেখক কবি বন্ধুরা তখন বাংলা একাডেমীর কুনজর এড়াতে কমেন্ট থেকে বিরত ছিলেন। অনেকে চেহারা দেখাতে তখন বাংলা একাডেমীতে কাঁঠালের বিচি টোকাতে গিয়েছিলেন। ডক্টর আনিসুজ্জামানরা কিছু তোষামোদী পাণ্ডা পোষেন। কিছু তেল মাখা বানরও রাখেন দলে। আর বছর ঘুরে তাদের পকেটে যায় বাংলা একাডেমী পুরষ্কার। কিন্তু কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন-এর মত নিরেট নির্লোভ সত্যিকারের কবি, প্রবন্ধকার বা অনুবাদকদের ভাগ্যে দৈববাণী না হওয়া পর্যন্ত কোনো পুরষ্কার জোটে না। দুঃখটা সেখানে। এমন কি শুদ্ধ বাক্য লিখতে জানেন না এমন লোকও বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পাবার রেকর্ড আছে। তখন সেই দুঃখ ক্ষোভের নদী পার হয়ে ভূবনডাঙ্গায় পাড়ি জমায়। দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে আমাদের কিছু তোষামোদি লোক আরামছে লোকালয়ে ঘুরে বেড়ায়। এ দুঃখ রাখি কোথায়? খন্দকার ভাই যেখানেই থাকুন, শান্তিতে থাকুন। আমরা বরং আপনার 'মানুষ' কবিতাটি একটু এই ফাঁকে পড়ে নি- মানুষ কবি খন্দকার আশরাফ হোসেন মানুষকে কেউ ধারণ করতে পারে না না নিসর্গ ঈশ্বর না প্রেম না ঘৃণা মানুষের হাতে নীল বেলুন তার চোখে দুই কালো মাছি মানুষকে কেউ ধারণ করতে পারে না, মানুষের কোনো জন্মদাতা নেই, তার কটির উত্তাল যৌবন কারো উত্তরাধিকার নয়। মানুষকে কেউ ধারণ করতে পারে না না নিসর্গ না ঈশ্বরের দিগন্ত-প্রসারী আলখাল্লা না নদী না জন্মভূমি। মানুষের কোনো উপমা নেই, রূপকল্প নেই, ব্যতিহার বহুব্রীহি নেই, স্বরলিপি ব্যাকরণ নেই শাসনতন্ত্র, অর্থ-অভিধান চর্যাচর্য নেই। মানুষ আত্মভেদী, আত্মনাশী নীল পতঙ্গ একদিন সে পাঁজরের হাড় দিয়ে গড়েছিল এ পৃথিবী একদিন মানুষই ধ্বংস করবে তাকে। না ঈশ্বর না দেবতা না পাষাণ মৃদঙ্গ না প্রভাত না মধ্যরাতে নিমগ্ন বালিশ না ফোয়ারা না যোনি না কবন্ধ রাত্রির ঘুম কোনো কিছু না। শুধু মানুষই পারে নিজেকে ভাঙতে। যেমন সাজাতে। আমি সেই ভঙ্গুর ভঙ্গপ্রিয় ত্রিভঙ্গ মুরারির জন্যে আমার কবিতা রেখে যাই। আর কেউ নয়, আর কারো জন্যে আমার দীর্ঘশ্বাস নেই, না গ্রন্থ না সুহৃদ না পলাতক ভ্রমর গুঞ্জন না নারী না নিশ্চল বসন্ত বাহার… আমি মানুষকে ভালোবাসি কেননা সে একদিন নিজহাতে নিজেকে পোড়াবে। সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪১
false
mk
মোশরেকা মিশু সম্পর্কিত তথ্যবলী_। তিনি সরকার বিরোধী বাম রাজনীতির সহিত জড়িত। দেশের গামেন্টর্স শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা, সুনাম ও গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। ঢাঃ বিঃ থেকে øতোকোত্তর ডিগ্রীধারী এই নেত্রী সরকার বিরোধী বাম রাজনীতি সমর্থিত গামেন্টর্স শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি ও বিপ¬বী গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি। তদুপরি তিনি বর্তমানে তোবা গামেন্টর্স কেন্দ্রীক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তি বিগত ২০১২ সনে গাজীপুরের একটি পেট্রোল পাম্পে প্রাইভেট কারের বিনা মূল্যে তৈল নিতে গিয়ে পেট্রোল পাম্প শ্রমিকদের সাথে হাতাহাতি ও মামলা পরবর্তীতে গ্রেফতার হোন। এতদছাড়া মাদক সেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।তোবা গার্মেন্টেসের শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ৬ আগস্ট গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের প্রেসিডেন্ট মোশারেফা মিশুর সঙ্গে থমাস নামে এক জার্মান সাংবাদিকের ফোনালাপ হয়। এতে শ্রমিকদের আন্দোলনের কথা ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান মিশু। ইউটিউবে ফাঁস হওয়া এ কথোপকথনটির বিস্তারিত:থমাস: মোশারেফা মিশু বলছেন? আমি ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে থমাস। হাই মিশু আপনি কেমন আছেন? শুনলাম আপনি অসুস্থ।মিশু: হ্যাঁ, আপনি কেমন? আমরা অনশনে আছি। আজকে নবম দিন চলছে।থমাস: অনশন করছে কতজন?মিশু: সবমিলিয়ে ১৬০০। এর মধ্যে ১৩০০ নারী আর ৩০০ পুরুষ কর্মী। ৩ মাসের বেতন, এক মাসের ওভারটাইম আর ঈদ বোনাসের জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের সংগঠন অনশন করছে।থমাস: অর্থাৎ তোবা গ্রুপের কাছে আপনাদের বিশেষ দাবি রয়েছে। এখন পরিস্থিতি কেমন?মিশু: এখন পরিস্থিতিটা বেশ মজার। সব বামদল, সব উদারপন্থী বাম গণতান্ত্রিক দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। ঢাবিতেও শিক্ষকরা প্রতীকী অনশন করেছে। এই ফাঁকে আমরা তোবা গ্রুপ ওয়ার্কার্স অ্যাকশন কমিটি নামে একটি সংগঠনও গড়ে তুলেছি। এরই মধ্যে সব ছাত্র ও নারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো যেমন- জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও খুশি কবীরের মতো মানুষেরাও আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বস্তুত, সকল দেশপ্রেমী ও গণতান্ত্রিক মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। এখন মানুষগুলো সব একতাবদ্ধ। সরকার ও বিজিএমইএ’কে এখন গোটা জাতি এখন ঘৃণার চোখে দেখছে। ৯ দিন ধরে অনশনে আছি আমরা, এখনও তারা কর্মীদের বেতন দেয়নি। আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি, আমার নিজের রক্তচাপ এখন ১৭০ বাই ১২০। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী। তাদের স্যালাইন ও ভিটামিন দিচ্ছি। প্রথম দিন থেকেই আমরা মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। আমার সহপাঠী ডাক্তাররাও সাহায্য করছে। লোকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এই প্রথম গার্মেন্টস শ্রমিকরা এত কঠিনভাবে একতাবদ্ধ হয়েছে। কয়েক মিনিট আগেও ১০টি গার্মেন্টের কর্মীরা আমাদের কাছে এসে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তারা বাড্ডা ও গুলশান এলাকা থেকে এসেছে।থমাস: এখন আপনি কোথায়? কারখানা ভবনে?মিশু: হ্যাঁ, তোবা গ্রুপের ১২তলা ভবনের ৮তলায় আছি।থমাস: বিজিএমইএ’র সঙ্গে কি আপোস করছেন? নাকি করছেন না?মিশু: অনশনের আগে তোবা গ্রুপ ও বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছিলাম। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বেতন বোনাস দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। শ্রমমন্ত্রী, বিজিএমইএ ও তোবা গ্রুপের সঙ্গে আলাপ করেছি। কিন্তু তারা পাত্তা দেয়নি। তাই ঈদের আগের দিন আমরা অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এই শ্রমিকরা বিশ্বকাপে জার্মানি, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জন্য জার্সি তৈরি করেছিল। আমি খুব খুশি যে আপনি আমাকে কল করেছেন। এখন এই খবর যদি জার্মানি থেকে ইউরোপীয়দের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন যে, বিশ্বকাপটা কোটি কোটি দর্শক উপভোগ করলেও এ কর্মীরা তাদের মজুরি পায়নি। এটা নৃশংস-অমানবিক।থমাস: জার্মান কোম্পানিগুলোর নাম জানেন?মিশু: হ্যাঁ আমি জানি কোম্পানিগুলোর নাম।থমাস: কোম্পানির নামগুলো আপনি আমাকে মেইল করতে পারেন।মিশু: এখানে ইন্টারনেট নেই। তবে আমি নাম বলতে পারি- ওডাব্লিউআইএম।থমাস: আপনি এসএমএস করে পাঠাতে পারেন।মিশু: আপনি আপনার ইমেইল ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর পাঠিয়ে দিন। আর এই খবর ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে দিন।থমাস: আমি করবো। এটাকে ইন্টারভিউ হিসেবে ছাপবো।মিশু: এখানে চারটা শ্রমিক ইউনিয়ন আছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ এগুলোকে পাত্তা দেয় না। আপনি এটাও উল্লেখ করবেন যে, রানা প্লাজা ও তাজরীনের ঘটনার পর বিজিএমইএ বলেছিল গার্মেন্ট কারখানার কর্মীদের অবস্থা বেশ ভাল, তাদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু আদতে এসব সত্য নয়।থমাস: আমাকে মেইলে প্রতিদিনকার আপডেট পাঠানো সম্ভব কি? তাহলে এটা যতোদিন চলবে, আমি ইন্টারনেটে প্রতিদিন আপডেট করতে পারবো।মিশু: ঠিক আছে।থমাস: আমার শুভেচ্ছা রইল। আমরা যোগাযোগের মধ্যে থাকবো।মিশু: দয়া করে আমাদের জন্য ও এই আন্দোলনের জন্য একটা কিছু করবেন। জার্মান পত্রিকাগুলোতে এ নিয়ে লিখবেন যাতে বাস্তবতাটা সবাই বুঝতে পারে।থমাস: ঠিকাছে। ধন্যবাদ। মিশু। লাল সালাম।মিশু: লাল সালাম।
false
rn
আসুন কিউবা দেশটি সম্পর্কে জানি কিউবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। হাভানা কিউবার রাজধানী। ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র কিউবা। কিউবা ৪০০ বছর ধরে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। দিগ্বিজয়ী নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার প্রথম অভিযানে কিউবায় পৌঁছে এই অঞ্চলটিকে স্পেনের অধীন বলে দাবী করেন। ১৯৭৪-এ বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য আমেরিকা যে খাদ্য–সাহায্য পাঠাতে অস্বীকার করে, তার কারণ ছিল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশ কিউবায় পাট রপ্তানি করেছিল। কিউবা সবুজ, শস্য-শ্যামলা দেশ। ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল আবহাওয়া খুবই চমৎকার থাকে, শীতভাবাপন্ন, নাতিশীতোষ্ণ বলা চলে। মে থেকে অক্টোবর-নভেম্বর গ্রীষ্মকাল থাকে, বৃষ্টিও নিয়মিত হয়। সমুদ্রবেষ্টিত কিউবাকে দেখতে অনেকটা বিশাল এক কুমিরের মতোই মনে হয়। হাভানা শহরের তিন দিকই সমুদ্র এবং নদীতে মিশে আছে। কৃষিতে সমৃদ্ধ হলেও কিউবা খুব কম কৃষিদ্রব্যই রপ্তানি করে, এর মধ্যে আছে চিনি, তামাক, লেবুজাতীয় ফল এবং বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত দ্রব্য। কিউবা বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। মেহগনি, সিডার, বিকলগ্রাম, মাজাগুয়া, টেকা প্রভৃতি কাঠের জন্য বিখ্যাত। খনিজ সম্পদে কিউবা সমৃদ্ধ। নয় হাজার শান্তিকামী গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে হাভানায় ক্যাস্ট্রোর বিপ্লবী অভিযানে সহযোদ্ধা ছিলেন চে গুয়েভারা। পালিয়ে যায় বাতিস্তা যুক্তরাষ্ট্রে। ক্যাস্ট্রো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে কিউবার প্রতি বন্ধু হিসাবে হাত বাড়িয়ে দেয়। ১৯৬১ সালে কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন কিউবা সরকারি ভাবে মার্কসবাদ গ্রহণ করে। কিউবার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অঘোষিত যুদ্ধ সুফল বয়ে আনেনি। কিউবাকে পিষে মারার জন্য কী করেনি আমেরিকা? ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়ে সামরিক অভিযানের চেষ্টা করেছে। সে দেশের নেতা ও বিপ্লবের প্রতীক ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে আঠারো শত কিলোমিটারের দ্বীপ দেশটি। কত কাছের হলেও আদতে বহু দূরের। সম্পর্কের দূরত্ব উত্তর-দক্ষিণ মেরু হতেও অধিক। বিশ্ব মানচিত্রে এখনও কমিউনিস্ট দেশ হিসেবে কিউবা নিজের শক্ত অবস্থানকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বহু বাধা-বিপত্তির পরও। যুক্তরাষ্ট্র চায়, কিউবা একদলীয় সরকারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসুক। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং কিউবায় একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করেন। কিউবান নাগরিকদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর বা বিরোধী নেতা নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে যখন দেখা হয়েছিল কিউবার নেতার সঙ্গে, ফিদেল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তাঁর সিদ্ধান্ত; অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল কিউবা। কিউবার শতকরা ৮৫ জন মানুষের নিজের বাসস্থান আছে। বাকী ১৫ শতাংশ মানুষ সরকারী আবাসনের আওতায় বাস করে, যেখানে তারা তাদের বেতনের মাত্র ১০% ভাড়া হিসেবে দেয়। ফিদেল যত ভালোই হোক, একটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা এতদিন ধরে আঁকড়ে থাকাও এক ধরনের দুর্নীতি। কারণ, দিন শেষে এ পৃথিবীতে কেউই অপরিহার্য নয়। কিউবার মাথাপিছু বাৎসরিক আয় $৯৫০০, বাঙলাদেশে মাত্র $১৫০০। কিউবা একটি সমাজবাদী রাষ্ট্র যেখানে নীতি নির্ধারিত হয় দশের জন্য। আমেরিকার আবহাওয়া অফিস আগে পূর্বাভাসের জন্য কিউবান আবহাওয়াবিদদের কাছে ধর্না দিত। ১৯০০ সালে গ্যালভেস্টনে যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় হয়েছিলো তার পূর্বাভাস কিউবার আবহাওয়া অফিস অনেক আগেই দিয়েছিলো। কিন্তু আমেরিকানরা সেটা পাত্তা দেয় নি। ফলশ্রুতিতে প্রায় ৮-১২ হাজার লোক সেবার নিহত হয়েছিলো, যা আমেরিকার ইতিহাসে এখনো সর্বোচ্চ। এরপর থেকে আমেরিকান আবহাওয়াবিদরা কিউবাকে অনেক সমীহ করতো (সে যুগে রাডার, স্যাটেলাইট ইত্যাদি কোনো ধরনের প্রযুক্তি ছিলো না, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিলো অনেক দুরূহ ব্যাপার)। সবচে’ কম পয়সায় কিউবা ঘুরে আসার সুযোগ দিচ্ছে Sunwing Airlines। কিউবা'ইয় ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর দাম কানাডা আমেরিকার তুলনায় দ্বিগুন। কমিউনিষ্ট দেশ কিউবায় মুসলমানের সংখ্যা মাত্র পাঁচ হাজার। শহর আলামারার এক পরিত্যক্ত খেলার মাঠে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য জড়ো হন কয়েকজন কিউবান মুসলিম। এই শহরে হাতে গোনা অল্প কজন মুসলিমের বাস। খেলার মাঠে যখন তারা নামাজ পড়েন, তখন পাশ দিয়ে বিকিনি হেঁটে যায় মহিলারা, বিয়ারের ক্যান হাতে পার্কে বসে থাকা পুরুষরা তাকিয়ে দেখে নামাজ পড়ার দৃশ্য। কিউবার মতো একটা দেশে ইসলামিক রীতি এবং ঐতিহ্য মেনে চলার চ্যালেঞ্জ খুব স্পষ্ট। কিউবার রাজধানী হাভানায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জায়গা এখন পর্যন্ত একটাই। সেটা হলো ইমাম ইয়াইয়া পেড্রো টোরেজের বাড়িতে। তিনি কিউবার ইসলামিক লীগের প্রেসিডেন্ট। ইমাম পেড্রো টোরেজ স্বীকার করলেন, কিউবার মত দেশ, যেখানে মদ্য পান আর খোলামেলা যৌনতা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার, শুকর যেখানে জাতীয় খাদ্য, সেখানে কড়াকড়িভাবে ইসলাম মেনে চলা খুবই কঠিন। বিমল মুখারজি'র 'দুচাকায় দুনিয়া' বইটি পড়লে কিউবা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। অভিনেতা মামুনুর রশিদের এক সাক্ষাৎকারে দেখলাম তিনি বলেছেন- মানুষ যে কত ভাল হতে পারে তা আমি কিউবা যেয়ে বুঝেছি। অধিকাংশ ট্যুরিস্ট আসেন কানাডা, ইউরোপ চীন, রাশিয়া কোরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। পেট্রোলের দাম আমেরিকা কানাডা থেকে বেশী, লিটার প্রতি দেড় ডলার। হাভানায় গেলে আপনি বিনামূল্যে টাইম মেশিনে চড়ার সুযোগ পাবেন। রাস্তায় নামলে দেখবেন এখনো ১৯৫০-এর দশকের ট্যাক্সিক্যাবগুলো রীতিমতো রাস্তা কাঁপিয়ে চলছে। উঠে পড়ুন ট্যাক্সিক্যাবে, সেটাই টাইম মেশিন। ভুলেই যাবেন অর্ধশতাব্দী এগিয়ে আছেন আপনি। মানুষ দেখতে হলেও কিউবায় যাবেন। বন্ধুবৎসল হিসেবে খ্যাতি রয়েছে কিউবানদের। ছোট ছোট গলির ভেতরে দেখবেন দাদার বয়সীরা হাফপ্যান্ট পরে আরাম কেদারা বিছিয়ে দিব্যি বসে আছেন। রাস্তায় দেখবেন বাচ্চাদের সাথে পাল্লা দিয়ে বুড়োরা ফুটবল নিয়ে কাড়াকাড়ি করছেন। এই দৃশ্যগুলোই কিউবানদের প্রাণবন্ত জীবন-যাপনের উদাহরণ। হাভানার নাম অনেকেই মনে রাখে হাভানা চুরুটের নামে। রাম এবং সিগারেটের বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত হাভানা। অনেকেই কার্টুন ভর্তি করে সিগারেট নিয়ে আসেন হাভানা থেকে। এত সস্তায় এত ধরনের সিগারেট সহজে আর কোথাও মিলবে না। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৩
false
rg
শচীন কর্তার রাজকীয় সমাচার!!! গান তখনই আপনার আরো কাছের হয়ে ওঠে, যখন আপনি মাটির গন্ধটা মেখে হয়ে ওঠেন রাজসিক। গান আপনার আত্মার আরো কাছাকাছি চলে আসে, যখন আপনি সেটাকে ছুঁতে পারেন। গান তখনই আপনার আরো মনের কাছের হয়ে যায়, যে মুহূর্তে আপনি বলে উঠতে পারেন, আরে এটা তো আমার গান!আজ লিখব শচীন কর্তাকে নিয়ে। শিল্পী শচীন দেব বর্মন। শচীন কর্তা নামেই আমরা যাকে বেশি চিনি। তাঁর একহাতে ক্ল্যাসিকালের ক্ল্যাসিক, অন্যহাতে পল্লীর মেঠো সুর। আজ আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, শচীন দেব বর্মন ছাড়া ভারতবর্ষের গানের বর্ণ, গন্ধ, ছন্দ, গীতি কোনোটাই সম্পূর্ণ হতে পারে না। বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছো দোলা, রঙেতে রাঙিয়া রাঙাইলে মোরে, একি তব হরি খেলা। তুমি যে ফাগুন রঙেরও আগুন, তুমি যে রসেরও ধারা, তোমার মাধুরী তোমার মদিরা, করে মোরে দিশাহারা; মুক্তা যেমন শুক্তিরও বুকে তেমনি আমাতে তুমি, আমার পরাণে প্রেমের বিন্দু তুমি শুধু তুমি! প্রেমের অনলে জ্বালি যে প্রদীপ, সে দীপেরও শিখা তুমি, জোনাকি পাখায় ঝিকিমিকি নেচে, এ রীতি নাচালে তুমি, আপনও হারায়ে উদাসী প্রাণের লহগো প্রেমাঞ্জলি, তোমারে রচিয়া ভরেছি আমার, বাউল গানের ঝুলি; মুক্তা যেমন শুক্তিরও বুকে তেমনি আমাতে তুমি, আমার পরাণে প্রেমের বিন্দু তুমি শুধু তুমি। চমকি দেখিনু আমার প্রেমের জোয়ারও তোমারই মাঝে, হৃদয় দোলায় দোলাও আমারে তোমারও হিয়ারিই মাঝে; তোমারও প্রানের পুলকও প্রবাহ নিশীথে চাহিয়া মাতে, যত মোর নাম গাহ মোর গান আমারই একতারাতে; মুক্তা যেমন শুক্তিরও বুকে তেমনি আমাতে তুমি, আমার পরাণে প্রেমের বিন্দু তুমি শুধু তুমি। গানটি লিখেছিলেন মীরা দেব বর্মন। যিনি শচীন কর্তার এক সময়ের ছাত্রী, পরবর্তীকালে জীবনসঙ্গীনি। আর গানটিতে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছিলেন শচীন কর্তা নিজেই। দেখুন, বর্ণ গন্ধ আর ছন্দ দিয়ে তো আর একটা মানুষকে বিচার করা যায় না। বরং তাঁর ইনার কোয়ালিটিগুলো কোনো একজন মানুষকে সাধারণ মানুষ থেকে তাঁকে একটু উঁচু পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। আর সেরকমই ছিলেন স্বয়ং শচীন দেব বর্মন। কি করি আমি কি করি, বনে ফাগুন মনে আগুন! পলে পলে দহে মোর, ধিকি ধিকি হিয়া রে; হিয়া যদি হয় ছাই, বাঁচিব কি নিয়া রে। কি করি, আমি কি করি, বনে ফাগুন, মনে আগুন। সজনীগো রজনীগো এনে দেরে চাঁদরে, অন্দরে অঙ্গার হয়ে জ্বলে জ্বলে পাজরে। কি করি, আমি কি করি, বনে ফাগুন, মনে আগুন। একাকীনি আমি ডরি বিরহে সপিরে, বধু বিনা নাহি যেন পলক না জোড়ে। কি করি, আমি কি করি, বনে ফাগুন, মনে আগুন। এই গানটি মীরা দেব বর্মনের লেখা আর সুর ও কম্পোজ করেছেন শচীন কর্তা। মনে আগুন লাগে বটে। কখনো কখনো কোনো চেনা মানুষের কাছ থেকে ধাক্কা পেলে সেখানেও মনে আগুন লাগে। শচীন কর্তার জীবনের অনেক জানা-অজানা গপ্পো আছে। তাঁর কম্পোজ করা এমন অনেক গান, যে গানগুলোর উপর কখনো ধুলো পড়ে না, সময়ের ধুলোগুলো যে গানগুলোকে কখনো মলিন করে দেয় না, যেগুলো চির রোমান্টিক, চির অক্ষয়। শচীন কর্তার সেই গানগুলোকে এখনো নতুন কোনো প্রেমে পড়লে নতুন করেই আবার প্রোপোজ করা যায় যেন। একবার এক বিখ্যাত গীতিকার শচীন কর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা বৌদি নতুন কোন গানটা লিখেছে, একটু শোনান না? শচীন কর্তা তো কিছুতেই গানটা শোনাবেন না! আর সেই গীতিকারও নাছোরবান্দা। প্লিজ একটু শোনান, শুনি না, কেমন হয়েছে? শচীন কর্তা একটু ভ্রু কুচকে সেই গীতিকারকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই তুমি আবার মেরে দেবে নাতো? এখনো গানটার রেকর্ড হয়নি। আমার সুর, আমার গানের আইডিয়া কেউ যদি মেরে দেয়, তখন বুকে বড্ড ব্যথা লাগে। মজার ব্যাপার হলো, শচীন কর্তা কখনো রেকর্ড না হওয়া গান কাউকে শোনাতেন না। সত্যি, শোনাবেন বা কেন? আশেপাশে তো আর দুষ্টু লোকের অভাব নেই! কে কখন কোথা থেকে কার আইডিয়া চুরি করে নেবে, কে বা বলতে পারে!মীরা দেব বর্মনের লেখা এই গানটিরও সুর ও কম্পোজ করেছেন শচীন কর্তা। শোন গো দখিনো হাওয়া, প্রেম করেছি আমি, লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি; মনেতে লুকানো ছিল সুপ্ত যে পিয়াসা, জাগিল মধু লগনেতে বাড়ালো কি আশা; উতলা করেছে মোরে, আমারি ভালোবাসা। অনুরাগে প্রেম শরীরে ডুব দিয়েছি আমি, শোনগো মধুর হাওয়া প্রেম করেছি আমি। দহনো বেলাতে আমি, প্রেমেরো তাপসী, বরষাতে প্রেম ধারা, শরতের শশী। রচিগো হেমন্তে মায়া, শীতেতে উদাসী, হয়েছি বসন্তে আমি বাসনা বিলাসী; শোনগো মধুর হাওয়া প্রেম করেছি আমি, লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি। ও মনো দিল না বধু, মনো নিল যে শুধু, আমি কি নিয়ে থাকি। ও মহুয়া মাতায় ঢোলক, দোলে পলাশের নোলক, বাঁধে কেউ বাহুরও রাখি, আমি কি নিয়ে থাকি। পিয়া তোর অবুঝ হিয়া, খোঁজে কোন সবুজ টিয়া, দিতে চাস আমায় ফাঁকি, আমি কি নিয়ে থাকি। এই গানটা আপনি যতবার শুনবেন, ততবার আপনি প্রেমে পড়বেন। এটা প্রেমে পরার গান। যতদিন ধরে কোনো মানুষের বুকে প্রেম ব্যাপারটা থাকবে, রোমান্টিকতা থাকবে, ততদিন আপনি প্রেমে পড়বেন। এই গানটাও ততদিন সুপার হিট থাকবে। এটা একটা অসামান্য গান। এই গানটি কোনোদিনই পুরনো হবে না। আমার বিশ্বাস আপনিও এই কথাটি বিশ্বাস করবেন! আগে একটা নিয়ম বা রীতি ছিল এমন যে, আগে গীতিকার গান লিখবেন, তারপর সেই গীতিকারের পছন্দ অনুযায়ী সুরকার সেই গানে সুর করবেন। কিন্তু শচীন কর্তা গানের সেই প্রচল ভেঙে দিয়ে সেখানে নতুন চমক দিলেন। শচীন কর্তা আগে সুর করতেন। তারপর সেই সুর অনুযায়ী গীতিকার লিরিক বসাতেন। কী অদ্ভুত ব্যাপার তাই না! নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক, পায়েলখানি বাজে, মাদল বাজে সেই সংকেতে, শ্যামা মেয়ে নাচে। পাগলপারা চাঁদের আলো, নাচের তালে মেশে, নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক। চাঁদের আলোয় কালো কাকা, নাচের তালে দোলেরে আহা মরি, ঢলে ঢলে দোলে, যেন সাদা মেঘের কোলে, কালো তড়িৎ খেলেরে খেলে ঐ, কি কৌতুকে খেলে; ঝলক ভরা দামিন সে যে, ঝিলিক মারে হেসে। কালো মেয়ের চপল বুকে, সভ্রম নিঃশ্বাস নাচেরে তারই তালে, বুকের মালা নাচে; থরে থরে ঝুমকা জবা, কবরীতে রাজে রে রাজে ঐ, রঙে রঙে রাজে; শ্যামল বনভূমি শিহরে ঐ, শ্যামের পরশে। পল্লীগানের ব্যাপারটা শচীন কর্তার এই গানে এমন অসাধারণ মাধুর্য মিশিয়েছে যে, আপনি যদি চোখ বন্ধ করে এই গানটি শোনেন, আপনি চোখের সামনেই পুরো ফিলটা পাবেন। আপনার সেই ছোটবেলায় ফেলে আসা পুরনো বাড়িটার কথা। যে বাড়ির দাওয়ায় আপনি একসময়ে খেলা করতেন। একবার সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় একটা স্টেজে পারফর্ম করতে গেছেন। তখন তাঁর বয়স খুবই কম। ঘটনাচক্রে সেখানে উপস্থিত ছিলেন শচীন কর্তা। তখন শচীন কর্তার খ্যাতি গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে। তিনি যেখানে যান সেখানেই বীরের সম্মান পান। তখন তিনি ভারতের এককথায় সুপার স্টার। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তখনো তেমন নাম করেননি। একেবারে বাচ্চা বয়স। অনেক ছোট। সময়টা কিন্তু শীতকাল। খোলা আকাশের নীচে অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় স্টেজে পারফর্ম করতে উঠেছেন, ঠিক তখন স্টেজে বসা শচীন কর্তা গান শুরুর আগে সন্ধ্যাকে থামিয়ে দিলেন! যারা ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক, তাদের তো তখন চোখ ছনাবড়া। সেকি! শচীন কর্তা কী করছেন এটা! হঠাৎ শচীন কর্তা এই বাচ্চা মেয়েটির গান থামিয়ে দিলেন কেন? রহস্য কী? শচীন কর্তা নিজের গায়ের শালটা খুলে মাটিতে পেতে দিলেন। আর বললেন, তুমি বাচ্চা মেয়ে। মাটিতে বসলে তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে। গলা খারাপ হয়ে যাবে। আমার শালের উপর বসে তুমি গানটা গাও। ভাবুন একবার, একটা মানুষের মন কতটা উদার হলে, গানের প্রতি কতটা কমিটমেন্ট থাকলে, নিজের গায়ের দামি শাল দিয়ে একেবারে অপরিচিতা একটা বাচ্চা মেয়ের জন্য আসনের মত করে সেটি বিছিয়ে দিতে পারেন! এই বিষয়টা মনে হয় শব্দে বা ভাষায় ঠিক বোঝানো যাবে না। এ কারণেই ত্রিপুরার রাজ পরিবারের এই মানুষটি সত্যি সত্যিই রাজসিক। গানের ক্ষেত্রেও শচীন কর্তা ছিলেন রাজসিক, তেমনি ব্যক্তিত্বের বেলায় ছিলেন এমন উচুতে। ও…ও বাঁশি, ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও, বাঁশি আল্লাহ’র দোহাই। এই পরাণের বিনিময় তোমার পরান দিও বাঁশি আল্লাহ’র দোহাই। ও…ও বাঁশি, বানের টানে টানে আইসো আমার পাণে, মধু লাগাইও মনে মজিও পানের গুনে আসিও। আমার রঙ্গে পানের রঙ্গে রাঙ্গা হইও বাঁশি, আল্লাহ’র দোহাই। ও…ও বাঁশি, ঘাটে আসিও পিড়ি পেতে দেব পাশে বসাব মুখেতে পান দিব, দিব রে, অন্যের হাতের পান ছাইড়া, আমার হাতের পান খাইয়ো। ও…ও বাঁশি, নাহি পান পানি দিনের পাখানি আছে, জগতে জানি আসিও গুল মনি আসিও; কোন রসেতে ডুইবা তুই দিনের অধিকারী, দিনের অধিকারী হইও। এই গানটিও মীরা দেব বর্মনের লেখা আর শচীন কর্তার সুর ও কম্পোজ করা। শচীন কর্তার এই গানটি যখন আপনি শুনছেন, তখন কিন্তু আপনি আর আপনার ঘরে নাই। কম্পিউটারের সামনেও নাই। বিছানায় উবু হয়ে শুয়েও নাই। আপনার চারপাশের সবকিছু পাল্টে গেছে। আপনি তখন সত্যি সত্যি চলে গেছেন আপনার গ্রামে। যেখানে নদীর ঘাটে একটা ডিঙ্গা আছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, শচীন টেন্ডুলকারের নাম শচীন হয়েছে কার কারণে? শচীন টেন্ডুলকারের বাবা রমেশ টেন্ডুলকার কী শখ করে ছেলের নাম রেখেছেন শচীন টেন্ডুলকার? মোটেও না। রমেশ টেন্ডুলকার ছিলেন শচীন কর্তার একনিষ্ঠ একজন ভক্ত। তাই নিজের ছেলের নাম তিনি শচীন কর্তার নামেই রেখেছিলেন। একজন সুরের সম্রাট। সুর তুলেছেন গান গানে। অন্যজন ক্রিকেট সম্রাট। সুর তুলেছেন ক্রিকেট খেলায়। ক্রিকেটের চার ছক্কায় সুর লাগাতেন শচীন টেন্ডুলকার। সুরে ছয় মারা তাঁরই সাজে যিনি বাঁশির সুরে মনের ডাকাত তাড়াতে পারেন। চলুন, শুনে আসি শচীন কর্তার আরেকটা অদ্ভুত সুরের অবিস্মরণীয় গান। ও... বাঁশি শুনে আর কাজ নাই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি। সে যে দিন-দুপুরে চুরি করে রাত্তিরেতে কথা নাই, ডাকাতিয়া বাঁশি। ও... শ্রবণে বিষ ঢালে শুধু বাঁশি পোড়ায় প্রাণ গড়লে, ঘুচাব তার নষ্টামি আজ আমি, সপিব তা অনলে; সে যে দিন-দুপুরে চুরি করে রাত্তিরেতে কথা নাই, ডাকাতিয়া বাঁশি; বাঁশি শুনে আর কাজ নাই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি। ও... বাঁশেতে ঘুণ ধরে যদি কেন বাঁশিতে ঘুণ ধরে না, কতজনায় মরে শুধু পোড়া বাঁশি কেন মরে না। চোরা দিন-দুপুরে চুরি করে রাত্তিরেতে কথা নাই, ডাকাতিয়া বাঁশি, বাঁশি শুনে আর কাজ নাই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি। সে যে দিন-দুপুরে চুরি করে রাত্তিরেতে কথা নাই, ডাকাতিয়া বাঁশি, বাঁশি শুনে আর কাজ নাই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি। এই কালজয়ী গানটির গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। আর এটি সুর ও কম্পোজ করেছেন শচীন কর্তা। তুমি যে গিয়াছ বকুল-বিছানো পথে, নিয়ে গেছ হায়– একটি কুসুম আমার কবরী হতে। নিয়ে গেছ হিয়া কী নামে ডাকিয়া, নয়নে নয়ন দিয়া, আমি যেন হায় ফেলে-যাওয়া মালা, কূলহারা নদী স্রোতে। খেলাঘরে কবে ধূলির খেলায়, দু’টি হিয়া ছিল বাঁধা, আমার বীণাটি তোমার বাঁশিটি একসুরে ছিল সাধা। সে খেলা ফুরালো, সে সুর মিলালো, নিভিলো কনক আলো; দিয়ে গেছ মোরে শত পরাজয় ফিরে এসো জয়রথে। এই গানটি লিখেছিলেন অজয় ভট্টাচার্য আর এটি সুর ও কম্পোজ করেছেন শচীন কর্তা। রবি গুহ মজুমদার লিখেছিলেন নিচের এই গানটি। আর এটি সুর ও কম্পোজ করেছিলেন শচীন দেব বর্মন। তুমি আর তুমি আর, তুমি আর নেই সে তুমি, জানি না জানি না কেন এমনও হয়, জানি না; জানি না জানি না কেন এমনও হয়, তুমি আর নেই সে তুমি, তুমি আর তুমি আর, তুমি আর নেই সে তুমি। তোমার চোখেরও পাতা নাচে না, নাচে না আমারো পথ চেয়ে, তোমার পায়ে পায়ে মল বাজে না, বাজে না আমারো সাড়া পেয়ে; হাসো না হাসো না সে হাসি মধুময়, তুমি আর নেই সে তুমি, জানি না জানি না কেন এমনও হয়, জানি না, জানি না জানি না কেন এমনও হয়, তুমি আর নেই সে তুমি, তুমি আর তুমি আর, তুমি আর নেই সে তুমি। তোমার সাপেরও বেণী দোলেনা, দোলে না হাওয়ার বাঁশি শুনে, তোমার চোখে বিজলী খেলে না, খেলে না মেঘেরো গর্জনে; গুণগুণ গুণগুণ করো না অসময়, গুণগুণ, গুণগুণ গুণগুণ করো না অসময়, তুমি আর নেই সে তুমি; জানি না জানি না কেন এমনও হয়, জানি না, জানি না জানি না কেন এমনও হয়, তুমি আর নেই সে তুমি, তুমি আর তুমি আর, তুমি আর নেই সে তুমি। হায় কি যে করি এ মন নিয়া, সে যে প্রণয়ও হুতাশে ওঠে উথলিয়া, ওই দুষ্টু পাপিয়া বলে পিয়া পিয়া, পিয়া পিয়া... তার মিষ্টি কুজন তবু জ্বলে হিয়া, মুখে অভিমান ওঠে মনে উছলিয়া। আছে সবারি কেহ না কেহ মরমিয়া, হায় একেলা আমারই শুধু নাই প্রিয়া, ওই দুষ্টু পাপিয়া বলে পিয়া পিয়া, পিয়া পিয়া... ঐ ফুলেরও বাসরে দেখি বনলতা, বুঝি তরুণও তরুর সনে বলে কথা, তারা কেহতো বুঝেনা মোর আকুলতা, তাই মরমে মরিগো আমি গুমরিয়া, ওই দুষ্টু পাপিয়া বলে পিয়া পিয়া, পিয়া পিয়া... দেখ একটি চাঁদের সাথী কত তারা, মেশে একটি সাগরে কত জল ধারা, শুধু আমি কি একেলা রব সাথী হারা, মোরে কেহ কি বাঁধিবে না গো মালা দিয়া, ওই দুষ্টু পাপিয়া বলে পিয়া পিয়া, পিয়া পিয়া। এই গানটি লিখেছেন মোহিনী চৌধুরী আর এটি সুর ও কম্পোজ করেছেন শচীন কর্তা। অজয় ভট্টাচার্যের লেখা এবং হিমাংশু কুমার দত্তের সুর করা এই গান গেয়েছিলেন শচীন কর্তা। গানটি হলো- মম মন্দিরে এলে কে তুমি? তব পূজা-ধূমে লুকায়ে আজি, আমারে পূজিলে ওগো কে তুমি? প্রেম-দেবতার আরতি লাগি, আঁখি-দীপ তব রয়েছে জাগি, মোরে দিলে মালা ভুলে কে তুমি? অন্ধ বাতাস হেথা নিশাসে, পাষাণ দেবতা আমি যে আজ, শত বেদনার হিম-পরশে। ওগো পূজারিণী যাও গো ফিরে, পাষাণ গলে না এ-আঁখিনীরে, মরুতে মলয় চাহ কে তুমি? অজয় ভট্টাচার্যের লেখা এবং হিমাংশু কুমার দত্তের সুর করা এই গানটিও গেয়েছিলেন শচীন কর্তা। গানটি হলো- আলো-ছায়া-দোলা উতলা ফাগুনে বনবীণা বাজে, পথচারী অলি চলে যেথা কলি জাগে মধু লাজে। মৃদু ফুলবাসে সমীর নিশাসে, অজানা আবেশ ধীরে ভেসে আসে আজি হিয়া-মাঝে। দোলে লতা-বেণী, সাজে বন-পরী, বাঁধে ফুল-রাখী বুঝি মোরে স্মরি; চারুদিঠি তার, ডাকে অনিবার, এ শুভ লগনে আজিকে কেমনে রহি আন কাজে?শচীন দেব বর্মন নিজেও কিছু গান লিখে সেই গানে সুর করেছেন এবং নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন। শচীন কর্তার তেমন একটি গান হলো- তুমি এসেছিলে পরশু কাল কেন আসোনি, তুমি কি আমায় বন্ধু কাল ভালবাসনি। নদী, নদী যদি হয়রে ভরাট কানায় কানায়, হয়ে গেলে শূন্য হঠাৎ তাকে কি মানায়; তুমি কি আমায় বন্ধু কাল মনে রাখোনি, কাল কেন আসোনি কাল ভালোবাসনি, তুমি এসেছিলে পরশু কাল কেন আসোনি। আকাশে ছিল না বলে হায় চাঁদের পালকি, তুমি হেঁটে হেঁটে সন্ধায় আসোনি কাল কি! তুমি কি আমায় বন্ধু কাল অভিলাসনি, কাল কেন আসোনি, তুমি এসেছিলে পরশু কাল কেন আসোনি। বনে, বনে বনে পাখি ডেকে যায় আবোল তাবোল, থেকে থেকে হাওয়া ডেকে যায়, দিয়ে যায় দোল। তুমি কি আমায় বন্ধু একবারও ডাকোনি, কাল কেন আসোনি কাল ভালোবাসনি, কাল ভালোবাসনি। শচীন কর্তার লেখা আরেকটি বিখ্যাত গান, যেটি নিজেই সুর করেছেন এবং নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন। শচীন কর্তার তেমন একটি গান হলো- তাকডুম তাকডুম বাজাই, আমি তাকডুম তাকডুম বাজাই, বাংলাদেশের ঢোল, সব ভুলে যাই, তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল। বাংলা জনম দিলা আমারে, তোমার পরাণ আমার পরাণ, এক নাড়িতে বাঁধা রে, মা-পুতের এ বাঁধন ছেড়ার, সাধ্য কারো নাই, সব ভুলে যাই, তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল। মা তোমার মাটির সুরে সুরেতে, আমার জীবন জুড়াইলা মাগো, বাউল ভাটিয়ালিতে। পরাণ খুইলা মেঘনা তিতাস, পদ্মারই গান গাই, সব ভুলে যাই তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল। বাজে ঢোল নরম গরম তালেতে, বিসর্জনের ব্যাথা ভোলায়, আগমনের সুরেতে; বাংলাদেশের ঢোলের বোলে ছন্দ পতন নাই, সব ভুলে যাই তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল। হিন্দি গানের জগতে শচীন কর্তা একেবারে জুলিয়াস সিজারের মত। এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। এমন একটা সময় তিনি রাজত্ব করেছেন, যখন তাঁর চারপাশে অজস্র প্রতিভা, অজস্র মণিমুক্তো ছিল। কিন্তু তিনি ঠিক রাজার মতই রাজত্ব করেছেন। একটা সময় বড় সাফল্যের জন্য শচীন কর্তা বোম্বে গেলেন। কিন্তু তিনি বাংলা ছাড়লেও, বাংলা গানকে তিনি একদম ছাড়েননি। বরং বাংলার মাটির সুরকে তিনি সর্বদা, তাঁর গানে, তাঁর গায়কিতে, তাঁর মনমে, তাঁর আত্মায় সবসময় স্থান দিয়েছেন। শচীন কর্তার আগেও বোম্বে বাঙালি সুরকার গিয়েছেন। প্রাণ চন্দ্র পাল গেছেন। অনীল বিশ্বাস গেছেন। কিন্তু শচীন কর্তা বোম্বে গিয়েই যেন ঘোষণা করলেন, তিনি যেন প্রমাণ করলেন, তিনি সবার কাছে এই মেসেজটি পৌঁছে দিলেন যে, তিনি এখানে রাজত্ব করতেই এসেছেন। তাঁর সুরের মাধ্যমে, তাঁর গায়কির মাধ্যমে। তাঁর অবিস্মণীয় সেই সব সৃষ্টির মাধ্যমে। একই সময় আরেকজন বাঙালি বোম্বে গিয়েছিলেন। তাঁর নাম কৃষ্ণ চন্দ্র দে। মান্না দে'র কাকা। তিনি কিন্তু বোম্বে বেশি দিন থাকতে পারেননি। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তিনি কলকাতা ফেরত আসেন। কিন্তু শচীন কর্তার কাছে রেখে আসেন মান্না দে-কে। মান্না দে তখন শচীন কর্তার এসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। মান্না দে ভয়েস অব আমেরিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শচীন কর্তা সম্পর্কে বলেছিলেন, শচীনদা সর্দি না হলে গান রেকর্ড করতেননা। গান রেডি কিন্তু রেকর্ডের জন্য শচীনদার সর্দি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। আমার বিশ্বাস এবার এই কথাটি শোনার পর আপনার মনের ঝিলে ঢেউ উঠেছে। ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলের জলে ঢেউ খেলিয়া যায়রে, ঝির ঝির ঝির হাওয়ায়রে ঢেউ খেলিয়া যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল, ঝিলমিল ঝিলমিল। মল বাজায়ে মন মাতায়ে জল নিতে কেউ যায় না, বউ কথা কউ পাখি ডাকে বউ তো ফিরে চায় না, মন কাঁদে হায় হায় রে, আজ তুমি কোথায় কোথায় রে তুমি কোথায়, টলমল টলমল, টলমল টলমল ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলিয়া যায় রে, শনশন শন হাওয়ারে, ঢেউ খেলিয়া যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল। চুল উড়ায়ে ফুল ছড়ায়ে আলপথে কেউ যায় না, পাগল হাওয়া আঁচল টেনে আর তো নাগাল পায় না, মন কাঁদে হায় হায় রে, আজ তুমি কোথায় কোথায় রে তুমি কোথায়, ছলছল ছলছল, ছলছল ছলছল আঁখির জলে ঢেউ খেলিয়া যায়রে, রিমঝিমঝিম বরষায়রে ঢেউ খেলিয়া যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল। ও... গুণগুণায়ে গান শুনায়ে কেউ ব্যথা ভোলায় না, একলা থাকার দিন যে আমার শেষ হতে আর চায় না, মন কাঁদে হায় হায় রে, আজ তুমি কোথায় কোথায় রে তুমি কোথায়, ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলের জলে ঢেউ খেলিয়া যায়রে, ঝির ঝির ঝির হাওয়ায়রে ঢেউ খেলিয়া যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল, ঝিলমিল ঝিলমিল। একবার আরডি বর্মন (রাহুল দেব বর্মন, শচীন কর্তার ছেলে) তাঁর জন্মদিনে শচীন কর্তার বাড়িতে এলেন। দরজা খুলে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে যাবেন, হঠাৎ তিনি চমকে গেলেন। বাড়িতে তাঁর গান বাজছে। মানে আরডি বর্মনের কম্পোজ করা গান বাজছে। শুনছেন তাঁর বাবা, স্বয়ং শচীন কর্তা। দরজার সামনে থমকে দাঁড়িয়ে রইলেন আরডি বর্মন। কিছুক্ষণ পর যখন গান থামলো তখন আরডি বর্মন বাড়িতে ঢুকলেন। বাবা তাঁকে বললেন, তোমারই গান শুনছিলাম। বাবা তাঁর গান শুনছেন, এটি আরডি বর্মনকে রীতিমত চমকে দিল। এটাকে একটা বিরাট বড় পুরস্কার বলে মনে হলো আরডি বর্মনের। প্রণাম করলেন তিনি বাবাকে। বাবা বিখ্যাত সুরকার, ভারতবর্ষের লিজেন্ড এসডি বর্মন ছেলে আরডি বর্মনের মাথায় হাত রেখে বললেন, আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দের ঘটনা কী জানো? ছেলের কাছে বাবার হার। আসলে এই ঘটনা একজন গ্রেট আরেকজন গ্রেটকে মন থেকে স্বীকৃতি দিলেন। যে গ্রেট কিনা জীবনের শেষপ্রান্তে গিয়েও আকড়ে ধরবেন সেই বাবাকেই। ফিরে আসতে চাইবেন সেই মাটির কাছাকাছি, যে মাটি থেকেই সুর বানাতেন সম্রাট এসডি বর্মন। আমাদের বাংলা গানের অঘোষিত সম্রাট শচীন দেব বর্মন। জয়তু শচীন কর্তা। জয়তু বাংলা গান। .....................................৮ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩০
false
mk
দারিদ্রজয়ের বিশ্বস্বীকৃতি দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ এক অনুকরণীয় নাম। এত দিন সরকারের নীতি-নির্ধারকদের মুখ থেকে কথাটি শোনা গেলেও এবার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলল বহুজাতিক সংস্থা বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটি বলেছে, সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশে হতদরিদ্রের হার ১২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সংখ্যায় বললে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দুই কোটি ৮০ লাখ অতি দরিদ্র এখন। অথচ ২০০৫ সালে এ হার ছিল ৪৩.৩ শতাংশ। অর্থাত্ প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশি ছিল অতি দরিদ্র। ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশে এখন অতি দারিদ্র্যের হার বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলনের চেয়ে আরো কম। এই হার ১১.২ শতাংশ। কয়েক বছর ধরে সরকারের নেওয়া সমন্বিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অতি দরিদ্রের হার কমে আসার মূল কারণ। সরকার গত ছয় বছরে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের আওতায় নেওয়া কর্মসূচি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে সড়ক-নেটওয়ার্কের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। শহর কি গ্রামে সব ক্ষেত্রে সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে সাধারণ জনগণ। এখন কৃষক তার উত্পাদিত পণ্য খুব সহজে শহরে আনতে পারছে। এসব কারণে অতি দরিদ্রের হার কমে এসেছে। লক্ষণীয় বিষয় যে, কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে অতি দরিদ্রের হার কমেছে। গত বছর অর্থাত্ ২০১৫ সালে এ হার ছিল ১৩.৮ শতাংশ। আগের বছর ছিল ১৪.৭। তার আগের বছর ২০১৩ সালে অতি দরিদ্রের হার ছিল ১৫.৫ শতাংশ। এর আগের বছর ছিল ১৬.৪ শতাংশ।বাংলাদেশ এখন যে হারে মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ শতাংশের নিচে অতি দরিদ্রের হার নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়লে দারিদ্র্য কমে ১.৫ শতাংশ। বাংলাদেশ যদি প্রতিবছর ৮.৮ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, তাহলে ২০৩০ সালে অতি দরিদ্রের হার ২.৯৬ শতাংশে নেমে আসবে। আশা জাগার মতো তথ্য যে, গেলো দুই যুগে দেশে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় তিন কোটি। বিশ্বে যে হারে দারিদ্র্য কমেছে, বাংলাদেশে কমেছে তার চেয়ে দ্রুতগতিতে। এ তথ্য বিশ্ব ব্যাংকের। তারপরও অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ৮ নম্বরে বাংলাদেশ। সরকার বলছে, দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরো কমাতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কর্মসংস্থান তৈরির বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রতি ১০ জনের আট জন অতিদরিদ্র মানুষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশে মাত্র সাড়ে চার দশকে দারিদ্র্য নামিয়ে এনেছে আট জনের এক জনে। বিশ্ব ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে দেশে এখন অতি দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৯০ সালের পর দরিদ্র মানুষের যে সংখ্যাটা নামিয়ে আনা গেছে অর্ধেকেরও নিচে। এই সময়ে পাশের দেশ ভারত তো বটেই। পুরো বিশ্বের চেয়েই বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে বেশি দ্রুতহারে। শুধু গেল পাঁচ বছরেই দেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে ৮০ লাখ। বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দরিদ্র মানুষের বাস এখন আফ্রিকার দেশগুলোতে। ১৯৯০ সালেও যা ছিল দক্ষিণ এশিয়ায়। তারপরেও অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ ১০ দেশের চারটিই দক্ষিণ এশিয়াতে। যে তালিকায় প্রথম নামই ভারতের। প্রায় একশ কোটি মানুষের দেশটির ২২ কোটি ৪০ লাখই অতিদরিদ্র। এ হিসাবে আমরাতো পুলকিত হতেই পারি।বাংলাদেশের সামনে অনেক সম্ভাবনা। উন্নয়নের ধারাবাহিতকা চলতে থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব। কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি অপরিহার্য। গোল্ডম্যান-স্যাকস ২০০৫ সালেই বাংলাদেশকে উদীয়মান ১১টি দেশের নেক্সট ইলেভেন তালিকায় রেখেছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বিনিয়োগের জন্য পূর্ব এশিয়া খুবই ব্যয়বহুল, পাকিস্তান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারত অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। আফ্রিকার দেশগুলোতে উত্পাদনক্ষমতা কম। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের যাওয়ার জায়গা এই বাংলাদেশই। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের সামনে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও কাজে লাগানোর সুযোগ অসীম সময়ের জন্য থাকবে না। দেরি করলে ‘নেক্সট ইলেভেনের’ অন্য ১০টি দেশ তা দখল করে নেবে। সুতরাং বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মূল বিষয় সুশাসন। বাংলাদেশে সুশাসনের অভাবই সবচেয়ে প্রকট। এদিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি আরো একটি ঝুঁকি দূর করতে হবে। এই ঝুঁকি সম্প্রতি তৈরি হয়েছে। উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাগুলো দূর করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সে সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
false
rg
আজ বাংলাদেশ হারেনি, হেরেছে জেনটেলম্যান ক্রিকেট !!! আলোচনার শুরুতেই আজকের খেলার বিতর্কিত বিষয়গুলো একটু সামনে আনা যাক: ১. ৩৪তম ওভারে মাশরাফি'র করা দ্বিতীয় বলে রায়ানা ক্লিয়ার এলবিডব্লিউ ছিল। যখন ভারতের রান ১৪৭/৩, তখন রায়ানার আউটটি আম্পায়ারদ্বয় দেয়নি। ওই সময় রায়ানা আউট হলে ভারতের ইনিংস ২০০ রানের আগেই গুটিয়ে যেত!!! আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সুরেশ রায়না তখনো রান পেতে হাঁসফাঁস করছেন। ভারত হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট। আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ড কিছুক্ষণ মাথা নেড়ে ‘না’ বলে দিলেন। কিন্তু মাশরাফি আত্মবিশ্বাসী। চেয়ে বসলেন রিভিউ। পরে তৃতীয় আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস রিপ্লে দেখলেন। কিন্তু তিনিও নাকচ করে দিলেন আবেদন। বলটি শতভাগ স্টাম্পেই ছিল। ২. রায়ানা লাইভ পেয়ে পাওয়ার ব্যাটিং শুরু করে। যেখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে'র ৫ ওভার থেকে ভারত ৪৭ রান নিতে সক্ষম হয়। ৩. ভারতের রান যখন ৩৯ ওভারে ১৯৪ তখন রোহিত শর্মা ব্যক্তিগত ৮৭। ৪০ তম ওভারে রুবেলের চতুর্থ বলে রোহিতের ব্যক্তিগত রান তখন ৯০, তখন রোহিত ক্লিয়ার আউট ছিল। এবার পাকিস্তানের আম্পায়ার আলীম ধর লেগ আম্পায়ার থাকা অবস্থায় রুবেলের বলকে নো কল দেয়। যেটি ক্রিকেটের ভাষায় শিষ্টাচার বর্হিভূত। ক্রিকেটে কখনো কোনো লেগ আম্পায়ার নো বল কল করতে পারে না। আম্পায়ার ইয়ান গৌল্ডের দেওয়া ‘নো’ বলটা যে স্পষ্ট ভুল ছিল। পাকিস্তানের ও ইংল্যান্ডের দুই আম্পায়ারের দেয়া নো বলের সিদ্ধান্ত ভুল বলে মন্তব্য করেন মাইকেল হোল্ডিং, অজিত আগারকার, শেন ওয়ার্ন, ভিভিএস লক্ষন ও মার্টিন ক্রো। ৪. রোহিত শর্মা লাইভ পেয়ে সেঞ্চুরি করা সহ ১২৬ বলে করেন ১৩৭ রান, যা ভারতকে অন্তত বাড়তি ৪৭ রান এনে দেয়। যা ভারতের রান ৩০০ ক্রোস করতে সহায়তা করে। ৫. ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়ানা দুইবার লাইভ পেয়ে ভারতের স্কোর তিনশো করতে সক্ষম হয়। যা সরাসরি শিষ্টাচার বর্হিভূত আম্পায়ারিংয়ের কুকর্মের ফসল। নইলে ভারত ২৬০ রানে গুটিয়ে যেত। ৬. বাংলাদেশের ভাইটাল উইকেট মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদের যে ক্যাচটি শেখর ধাওয়ান তিনবারের প্রচেষ্টায় ধরেছে, সেটা সুস্পষ্টভাবে ছক্কা। কারণ, ধাওয়ান যখন দ্বিতীয় প্রচেষ্টা নেন, তখন তার পা সাইড লাইন স্পষ্টভাবেই স্পর্শ করেছে। তাই তৃতীয় প্রচেষ্টায় ধাওয়ান যখন বলটি হাতে জমায়, তার এটিচুডে এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করেছে। কারণ ছক্কার বলটিকে আম্পায়ারগণ সম্মিলিতভাবে আউট দিলেন!! ৭. যখন ভারতের সকল খেলোয়াড় আউটের জন্য চিৎকার করছে, তখন ধাওয়ান কিন্তু অপরাধবোধ থেকে একেবারে চুপ ছিল। ওই সময় মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদকে জোড়পূর্বক এভাবে দুঃখজনক আউট দিয়ে আসলে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজের প্রধান প্রযোজক আজকের আম্পায়ারগণ। এমনিতে ভারত একটি শক্তিশালী দল। বর্তমান ডিপেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দলটি এবারের বিশ্বকাপেও জোড়ালো প্রতিপক্ষ। কিন্তু ভারতের মত একটি শক্তিশালী দলকে যখন বাংলাদেশের মত প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা একটি দলের বিরুদ্ধে এভাবে নির্লজ্বভাবে আম্পায়ারদের উপর ভর করতে হয়, সেই জয়ে ভারত নৈতিকভাবে দুর্বলই থাকবে। নৈতিকভাবে দুর্বল একটি দল বড়জোড় সেমি-ফাইনাল খেলবে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া হবারই সম্ভাবনা খুব বেশি। যদি কোনো কারণে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠে, তখন হয়তো আজকের আম্পায়ারিংয়ের মত আবারো ভারতকে আম্পায়ারদের উপর নির্ভর করতে হবে একটি জয়ের জন্য। কারণ ভারত ফাইনাল না খেললে তো আইসিসি'র ইভেন্ট কমর্শিয়ালি লাভজনক হবে না। স্রেফ একটা লস প্রজেক্ট হয়ে যাবে। বিশ্বকাপের মত একটি বড় টুর্নামেন্টে এত বাজে আম্পায়ারিং থাকলে সেই খেলাকে কোনোভাবেই জেনটেলম্যান খেলা বলা যাবে কিনা, এটা এখন একটি কঠিন প্রশ্ন! আজকের আম্পায়ারগণ কত মিলিয়ন ডলারে এই কুকর্মটি করেছেন, তাই নিয়ে এখন ক্রিকেটপ্রেমী সবার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের পক্ষে সৌম্য, সাকিব, মুশফিক ও মাশরাফি খুব বাজেভাবে আউট হয়েছে, সত্য। শাকিব তো মনে হল ক্যাচ প্রাকটিস করল!! আইপিএল খেলা নিশ্চিত করার জন্য শাকিব কী আজ এত নিস্ক্রীয় ছিল? মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন বটে!! শাকিব ১০ ওভার বল করে ৫৮ রান দিয়ে পেয়েছে একটি মাত্র উইকেট। কিন্তু আগের ম্যাচে শাকিব ক্যাপ্টেন হিসেবে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচে অনেক সিরিয়াস ছিল। শাকিবের আজকের খেলায় নিউজিল্যান্ডের খেলার মত সিরিয়াসনেসের ঘাটতি ছিল। এটা মনে হয় আইপিএল খেলার ফল। দাদাদের বিরুদ্ধে ভালো খেললে না আবার আইপিএল ডাক বন্ধ হয়ে যায়!!! বাংলাদেশ টস হেরে ফিল্ডিং করার সময় প্রথম উইকেট পায় ১৬.৩ ওভারের মাথায়। ভারতের রান তখন ৭৫। অর্থ্যাৎ ভারত একটি শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু ৪ রান পরে ভারতের ৭৯ রানের মাথায় যখন কোহলি মাত্র ৩ রান করে আউট হল, তখন কিন্তু ভারতের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। যে কারণে ভারতের ১০০ রান করতে লেগেছে ২৬ ওভার। তারপর একটা ড্রিংকস ব্রেক। আর ঘটনাটা তখনই পাল্টে যায়। ভারত ওই ড্রিংকস ব্রেকে আম্পায়ারদের পুরোপুরি চোখ রাঙিয়ে দেয়। যদি ভারত তিনশো পেরোতে না পারে, তাহলে গোপন চুক্তির মিলিয়ন ডলার আর দেওয়া হবে না, এমন হুমকি হয়তো ছিল তখন। তাই রোহিত শর্মার আউটকে নো বল দেওয়া হল। তারপরও ৩০৩ রান টার্গেট বাংলাদেশের জন্য কোনো ব্যাপার না। তামিম আর কায়েস যখন শুভ সূচনা করল, তখন তামিমের দলীয় ৩৩ রানের মাথায় আউটের পর সৌম্য সরকার যেভাবে ইমরুল কায়েসকে রান আউট করাল, এটাও আজকের ম্যাচের একটা টার্নিং পয়েন্ট। পরের বলেই সৌম্য যেভাবে ইমরুলকে রান আউট করাল, এই আউটর ফলে মুহূর্তে ৩৩ রানে ১ উইকেট থেকে বাংলাদেশ ৩৩ রানে ২ উইকেটে পরিনত হয়। এবারের বিশ্বকাপে বলতে গেলে বাংলাদেশ মূলত ওপেনারদের অবদান ছাড়াই খেলেছে। ভারত এবং কন্ট্রাকচুয়াল আম্পায়ারগণ সেই ঘটনা জানতেন। মোহাম্মদউল্লাহর ভাইটাল উইকেটটি তাদের খুব প্রয়োজন ছিল। তাই মোহাম্মদউল্লাহর ছক্কার বলকে ওরা আউট দিয়ে দিল। ১৬.৩ ওভারে ৭৩ রানে ৩ উইকেট পরার পরেও বাংলাদেশ ম্যাচে ছিল। তারপর সৌম্য সরকার আউট হবার উপায় খুঁজল। শাকিব আইপিএল খেলা নিশ্চিত করল। মুশফিক সাব্বিরকে নিয়ে যখন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, ঠিক তখনই আবার একটা বাজে শটে মুশফিক দুর্ভাগ্যজনক আউট। বলটি ব্যাটের ব্লেডে লেগে উপরে উঠে যায়। ধোনি যা ধরতে একদম ভুল করেনি। তারপরেও নাসির আর সাব্বির বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু দলের যখন প্রয়োজন চার ছয়, তখন তো যে কোনো বলেই একটু রিক্সের জন্য আউট হওয়া একটা ব্যাপার। ব্যাটিং পাওয়াার প্লেতে নাসির আউট হবার পর ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ একপ্রকার ছিটকে যায়। বাংলাদেশ ১০৯ রানে হারলেও এই ম্যাচে আসলে ভারত জেতেনি। জিতেছে শিষ্টাচার বহির্ভূত বাজে আম্পায়ারিং। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মত একটি বড় আাসরে শুধুমাত্র ভারতকে জেতানোর জন্য এমন নির্লজ্ব বাজে আম্পায়ারিং আগামী দিনের জন্য একটি কালো উদাহরণ হয়ে থাকবে। নইলে অবুঝ গাঙচিল পাখি কেন পাকিস্তানের আম্পায়ার আলীম ধরকে কামড়ে দেবে? আর ইংলিশ আম্পায়ার গৌল্ডের গায়ে হাগু করবে?? আজকের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে একমাত্র অবুঝ গাঙচিল পাখি আর বাংলাদেশি সমর্থকরা ছাড়া বাকি সবাই ছিল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। তবু টিম টাইগার্সদের হারানোর কিছুই নেই। এবারের বিশ্বকাপে আমাদের লক্ষ্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। আমরা সেই লক্ষ্য শতভাগ অর্জন করেছি। বাজে আম্পায়ারিং না হলে আমরা সেমি-ফাইনালেও যেতাম। ওয়েল ডান টাইগার্স। বিশ্ববাসী এখন জানে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে এখন আর কেউ নাক সিটকাতে পারবে না। এখন আমরা ইচ্ছে করলেই এক নাম্বার টেস্ট প্লেয়িং দল ইংল্যান্ডকে ওয়ান ডে তে যখন তখন নাকানি-চুকানি খাওয়াতে সক্ষম। ভারত এখন আমাদের রীতিমত সমীহ করে। নিউজিল্যান্ড তো হারতে হারতে জিতেছিল। এবারের বিশ্বকাপে বিশ্ববাসী বাঘের সত্যিকারের গর্জন দেখেছে। এখন থেকে সামনের সকল বিশ্বকাপে এই গর্জন আরো জোড়ালো হবে। এই প্রত্যাশা আমাদের। ডোন্ট অরি ব্রাদার্স। আওয়ার বয়েস হ্যাভ ডান এ গুড জব। ইউ অল সুড গো টু এয়ারপোর্ট টু রিসিপ আওয়ার টিম টাইগার্স উইথ ফ্লাওয়ারস। রাজনৈতিক টানাপোড়নের এই দিনে বাংলাদেশে যখন কোথাও মানুষের ভরসা করার মত কিছু নেই, তখন টিম টাইগার্স আমাদের লাল-সবুজের পতাকা তলে যেভাবে একবিন্দুতে একত্রিত করেছে, আমরা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই স্মরণীয় মুহূর্তগুলো মনে রাখব। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য নব যুগের সূচনা। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এখন স্বয়ং আইসিসি (কেউ কেউ বলছেন আই ছিঃ ছিঃ) হিসেবে নেবে। নিতে বাধ্য হবে। কারণ, আগামী ২০১৯ সালে চার বছর পরে ইংল্যান্ডে যে বিশ্বকাপ হবে, সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ স্বয়ং কাপের ভাগিদার। এখন আমরা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারি। এটাই আমাদের এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় অর্জন। মন খারাপ করার কিছু নেই। টিম টাইগার্স দেশে ফিরলে আমরা টিম টাইগার্সকে নিয়ে গোটা রাজধানীতে ট্রাক মিছিল করব। আনন্দ করব। ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশ এখন সত্যি সত্যিই গর্ব করতে পারে। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট। ............................................... ঢাকা ১৯ মার্চ ২০১৫ সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫৮
false
mk
অগোছালো বিএনপি দীর্ঘ দুই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি। ঢাকা মহানগরসহ অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ‘অগোছালো’ সংগঠন নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছে দলটি। কেন্দ্রের ব্যর্থতার মাশুল গুনতে হচ্ছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে তারা এখন নাচার। ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটির অধিকাংশই ‘নিষ্ক্রিয়’। তিন মাসের আন্দোলনে অধিকাংশই ছিলেন আত্মগোপনে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সাংগঠনিক ‘চেইন অব কমান্ড’ও ভঙ্গুর। বেহাল অবস্থায় জেলা, থানা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটিগুলো। এ অবস্থায় দলে শুদ্ধি অভিযান চায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। নতুন করে আন্দোলনে যাওয়ার আগে দল পুনর্গঠন জরুরি বলেও মনে করেন তারা। নইলে আন্দোলনে কোনো সফলতা আসবে না। মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে বিএনপির এই নাজুক পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। সর্বশেষ বিএনপির কাউন্সিল হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার কথা। ২০১২ সালের শেষের দিকে জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতিও নেয় বিএনপি। এ জন্য ভেন্যুও ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু কাউন্সিলের আগ মুহূর্তে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৫৪ জন নেতা-কর্মীকে নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়। অবশ্য কাউন্সিলকে ঘিরে ওই সময় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দলও বেড়ে যায়। এরপর কয়েক দফা চেষ্টা করেও কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। অবশ্য নির্বাচন কমিশন থেকে কয়েক দফায় সময়ও নেওয়া হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিগত আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করছি। এর মধ্যে আমাদের ভুলত্রুটিগুলোও শুধরানোর চেষ্টা করছি। আগামীতে আন্দোলনকে সামনে রেখে দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যেসব এলাকায় সংগঠনে দুর্বলতা আছে, তা চিহ্নিত করে পুনর্গঠনও করতে হবে। আশা করি, শিগগিরই আমরা সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হব।’চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সংগঠনকে শক্তিশালী করার চিন্তা-ভাবনা করছেন। গুলশান কার্যালয়ে এসে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছেন তিনি। এ সময় দলের কোনো কোনো নেতা দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কাউন্সিল ও নির্বাহী কমিটির সভা করার বিষয়েও দৃষ্টি আনেন খালেদা জিয়ার। তবে বিএনপি প্রধান বলেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতা-কর্মীরা বেরুলেই সাংগঠনিক পুনর্গঠন নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে। এরপরই আন্দোলনে যাওয়া যাবে।বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দল পুনর্গঠনের বিষয়ে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মনোভাব ইতিবাচক। সিনিয়র নেতাদের কারামুক্তি হলে আগামী দুই মাসের মধ্যে কাউন্সিলসহ দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এর মধ্যে বড় কোনো ইস্যু না সৃষ্টি হলে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ তিন মাসের আন্দোলনে ফল ঘরে তোলার আগেই তা বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এরপর হঠাৎ করেই সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে আগেভাগেই ভোট বর্জনেও হতাশ তারা। ভোট ডাকাতির অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করার পর কোনো কর্মসূচি না দেওয়ার বিষয়টিকেও ভালোভাবে নিচ্ছেন না বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।তাদের অভিযোগ, দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের কৌশল গ্রহণেই বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। মাঠের বাস্তবতা অনুযায়ী সঠিক চিত্র হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরেনি একটি মহল। দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতাদের থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কৌশলে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। একইভাবে আন্দোলনে থাকা নেতাদের থেকেও বিএনপি প্রধানকে আলাদা করে ফেলা হয়। তা ছাড়া তিন মাসের আন্দোলনে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতারা। যে কারণে বিএনপিকে শেষ পর্যন্ত ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ডেকে ঘোষণা ছাড়াই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুলশান কার্যালয়ে অনড় থাকা বেগম জিয়াকেও আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাসায় ফিরে যেতে হয়েছে। চট্টগ্রামের বাকলিয়ার এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিতে বড় বড় পদে থাকা কিছু সুবিধাবাদী, বিত্তশালী ও মোনাফেক নেতাকে বাদ দিতে হবে। পরীক্ষিত, ত্যাগী, যোগ্য ও দক্ষ নেতাদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করলেই আন্দোলনে গতি আসবে। তা ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনকেও গুলশান কার্যালয়ের আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্ভরতা বাদ দিয়ে দলের ত্যাগী নেতাদের পরামর্শ নিতে হবে। কূটনৈতিক পর্যায়েও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া চেয়ারপারসনকে গুলশান কার্যালয়ের পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত তিনদিন নয়াপল্টন কার্যালয়ে অফিস করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।দলীয় সূত্র মতে, দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময়ের আন্দোলন হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়ে আদালত থেকে ঘরে ফেরার পর কিছু বুদ্ধিজীবী ও কার্যালয়ের কর্মকর্তার প্ররোচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচনে দলীয় নেতাদের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত দেন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে ২০-দলীয় জোটের শরিকদের মতামতও নেয়নি বিএনপি। নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর সমর্থন নিয়েও দলের মধ্যে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কয়েক দফায় কাউন্সিলর পদে রদবদলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় বিএনপির দলীয় কর্মকান্ড এখন প্রায় ‘বিবৃতি-নির্ভর’ হয়ে পড়েছে। এমনকি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আহ্বানেও কোনো কর্মসূচি এখন আর তেমনভাবে পালন হয় না। কেন্দ্রীয় নেতারাও কথায় কথায় মামলা-হামলা, গ্রেফতার আর পুলিশের গুলিসহ গুম-খুনের অজুহাত দেখান। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল বিএনপি। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন-দুপুরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়াকেও ভালোভাবে নেয়নি মাঠের নেতা-কর্মীরা।তাদের মতে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কোথাও সেদিন (২৮ এপ্রিল) বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে কেন্দ্র পাহারা দূরের কথা, কোনো কেন্দ্রের আশপাশেও দেখা যায়নি। ঢাকায় ৯০ ভাগ কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টই আসেননি। চট্টগ্রামে এজেন্টরা কেন্দ্রে গেলেও ভোটগ্রহণের পরপরই তারা বেরিয়ে যান। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।বিএনপির গলার কাঁটা ঢাকা : ৫ জানুয়ারির ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচনের বছর পূর্তি উপলক্ষে গত জানুয়ারি থেকে সারা দেশে কম-বেশি আন্দোলন হলেও পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। সেই সঙ্গে ব্যর্থতার দায় বর্তায় কেন্দ্রীয় অঙ্গ-সংগঠনগুলোর ওপরও। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত তিন মাসের ফলাফল-শূন্য আন্দোলনের দায়ভারও ঢাকা মহানগর বিএনপির দিকে ইঙ্গিত তৃণমূল বিএনপির। গেল বছরের ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাসকে মহানগর আহ্বায়ক ও হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের হাইপ্রোফাইলের ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগরে ৪৯টি থানা ও ১০০টি ওয়ার্ড ও ১৮টি ইউনিয়নের সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। দুই মাসে কাউন্সিল করে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েক দফায় উদ্যোগ নিয়েও থানা-ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি দলটি। প্রায় ১০ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অবশ্য বিগত কয়েক মাস ধরেই মামলার হুলিয়া নিয়ে দায়িত্ব পাওয়া নেতারা আত্মগোপনে। এখনো তারা প্রকাশ্যে আসতে পারেননি।জেলা-উপজেলাও সাংগঠনিক বেহাল অবস্থা : কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও বেহাল সাংগঠনিক অবস্থা। বিএনপির সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের পকেটে তৃণমূলের এসব কমিটি। অধিকাংশই তিন বা ৫ সদস্য বিশিষ্ট। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোরও একই অবস্থা। প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থকরাই অঙ্গ-সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। আন্দোলন সংগ্রামে অধিকাংশ নেতাদের নেই কোনো ভূমিকা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ের যারা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন- তাদের খোঁজ-খবরও নিচ্ছেন না তারা। মাঠের ত্যাগী নেতাদেরও নেতৃত্বে বাধা সাবেক মন্ত্রী এমপিরা।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও নাটোরের লালপুর বিএনপি নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন ও আন্দোলনে বিএনপির ত্রুটিগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। এখন বিএনপির হাইকমান্ডের উচিত, সাধারণ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সকল পর্যায়ের কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা। এতে সংগঠন যেমন শক্তিশালী হবে, ঠিক আন্দোলনেও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে’। বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৬ মে ২০১৫
false
mk
মুক্তিযুদ্ধের দার্শনিক ভিত্তি বিজয়ের ৪৫ বছরে আমাদের প্রাপ্তি কোনো অংশে কম নয়। তবে প্রত্যাশা আমাদের অনেক। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি কিছুটা হলেও কম। এই দীর্ঘ পথ চলায় আমাদের নানা চড়াই-উতরাইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে বাংলাদেশের অর্জন আরো বেগবান করতে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দিতে হবে। প্রায় সাড়ে চার দশকে রাজনৈতিকভাবে আমাদের আরো ভালো করা উচিত ছিল। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়নি। অর্থনৈতিক সূচকের ভিত্তিতে আমরা ২০২১ সালে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালে উন্নত আয়ের দেশ হবো। মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে আমরা সেই লক্ষ্যে উপনীত হতে সক্ষম হবো। মধ্যম এবং উন্নত আয়ের দেশের স্বীকৃতি নির্ভর করে বিশ্বব্যাংকের হিসাবের উপর। কেননা তারা ডলারের হিসাবে তা নির্দেশ করে। মাথাপিছু আয় এতো হলে মধ্যম আয় এবং এতো হলে উন্নত দেশ। দেশ যেভাবে এগিয়ে চলছে, তাতে আমরা একসময় উন্নত দেশ হবো। কারণ কেউ না চাইলেও দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকসমূহ খুবই সক্রিয়। কেবল আইন-শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা বজায় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ বেগবান হবে। আমাদের এই দেশ সত্যিকার অর্থে অনেকগুলো আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা নিয়ে স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। কিন্তু এই সোনার বাংলা ডলারের হিসাবে চিন্তা করেননি বঙ্গবন্ধু। তাঁর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা এমন হবে যেখানে মানুষের কোনো অভাব থাকবে না। মানুষে মানুষে কোনো দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং বিভেদ থাকবে না। একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং মুসলমানসহ সকল ধর্মের লোকের পারস্পরিক সহ-অবস্থান থাকবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান থাকবে না। আমাদের এই ভূ-খণ্ডে বিশেষ করে ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন করার ইতিহাস দীর্ঘদিন থেকেই ছিল। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এর অবসান ঘটবে। এখানে একে অপরের বিরোধী মতামত গ্রহণ করে আমরা একসঙ্গে থাকবো। আমাদের কৃষ্টি-কালচারগত বৈচিত্র্য আমরা রক্ষা করবো। এসব বিবেচনায় আমাদের এখনো অনেক কাজ করার বাকি আছে। কাজেই ধর্মীয়ভাবে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার সম্মিলন ঘটেনি। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ। আমরা আশা করেছিলাম দ্বি-জাতিতত্ত্ব থেকে বের হয়ে এসে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্র্রিষ্টান এবং মুসলমান সবাই মিলে একটি দেশ গড়বো। আমাদের মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার ডলার হতে সময় লাগুক, কিন্তু আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাবো। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমছে না। কিন্তু বলা হচ্ছে একসময় তা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ইতোমধ্যে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। আমরা এখন চরম বৈষম্যের একটি দেশের দিকে চলে যাওয়ার আশঙ্কার পর্যায়ে আছি। এসব বিষয়ে আমাদের অতিদ্রুত নজর দিতে হবে। আয়ের বৈষম্য দূর করা জরুরি। জাতির জনকের সোনার বাংলার স্বপ্ন ছিল সবাইকে নিয়ে এক সাথে থাকা। আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যে মেলবন্ধন রয়েছে, তা সুদৃঢ় করেই সোনার বাংলা গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অনুসারে বলা হয়, একজনও যদি ন্যায্য কথা বলে তবে তা মেনে নেওয়ার মাঝেই গণতন্ত্রের সার্থকতা নিহিত। গণতন্ত্র বলতে আমরা সংখ্যায়, দল ও গোষ্ঠীগতভাবে বেশি এমন বোঝায় না। ন্যায্য কথা গায়ের জোর দিয়ে বললে হবে না। কিন্তু আমাদের এখানে গণতন্ত্র বলতে বোঝায় বেশি সংখ্যক লোক যেদিকে, সেদিকেই ধাবমান হওয়া। অনেকটা হ্যাঁ বা না ভোটের মত। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যেকটি কাজের দর্শন ছিল। তিনি দার্শনিক পথে অগ্রসর হতেন।বর্তমানে আমাদের এখানে বড় সমস্যা হচ্ছে জঙ্গিবাদ। যদিও জঙ্গিবাদ আমরা নানাভাবে মোকাবিলা করছি। ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদ রুখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে জঙ্গিবাদ এভাবে শেষ হবে না। এটা হয় তো সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পথে অগ্রসর হতে হবে। চলতি মাসের গত তিন-চারদিনে অনেকেরই খোঁজ মিলছে না। হতে পারে তারা আইএসে যোগদানের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশে চলে গেছে। কিংবা তারা দেশের কোনো জায়গায় ফের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তাদের এসব তত্পরতা রুখবে। কিন্তু তা হবে ক্ষণিকের জন্য, দীর্ঘদিনের জন্য নয়। যারা জঙ্গিবাদে লিপ্ত তারা দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা থেকে এসব করছে। তারা যা করছে তা ভ্রান্ত। কিন্তু তাদেরও একটি দর্শন রয়েছে। তারা সারাবিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু তাদের মাথায় গুলি করে ভ্রান্ত দর্শন দূর করা যাবে না। এর জন্য দরকার দর্শনের। দার্শনিক সংকট দার্শনিক মতবাদ দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। আমরা ভেবেছিলাম জঙ্গিবাদের উত্স কেবল ক্বওমী মাদ্রাসা। যেখানে প্রধানত এতিমরা পড়াশুনা করে। কিন্তু হলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদের নতুন করে ভাবালো। ক্বওমী মাদ্রাসার প্রধান ভাষা হচ্ছে উর্দু। সেখানে যদি আরবি ভাষা শিখে তারা ভালোভাবে আরবি বলতে পারে তাহলে তাদেরকে কাজে লাগানো যেতো। আরবিতে তারা যা পড়ছে পড়ুক, তার সঙ্গে টেকনিক্যাল জ্ঞান দেয়া হোক। তাহলে তারা সৌদি আরবে গিয়ে কাজ করতে পারে। ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করা খুব সহজ। যারা ক্বওমী মাদ্রাসায় পড়ছে তারা বাঙালিত্ব ধারণ করে না। আবার বড়লোকদের সন্তানরাও এক প্রকার এতিম। কারণ তাদের সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক শিথিল। দামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সত্ত্বেও তারা আমাদের কৃষ্টি-কালচার ধারণ করছে না। যারা এতিমখানায় রয়েছে, তাদের বাবা-মা তো নেই। আর যারা ধনীদের সন্তান, বাবা-মা থাকা সত্ত্বেও তারা এতিম। কাজেই আমাদের বাঙালির যে ঐতিহ্য একে অপরের পাশে থাকা সেটা তাদের মাঝে গড়ে ওঠেনি। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তবে ধর্মভীরু না হয়ে থাকা লোকের সংখ্যা কম। বিশেষ করে ধর্মভীরু লোক যদি নিরক্ষর হয়, কোনো শিক্ষার আলো যদি না থাকে, তবে সে শেষপর্যন্ত ধর্মান্ধ হতে বাধ্য। কারণ নানা উস্কানিমূূলক কথাবার্তা যা বলা হবে, তাতেই সে প্রলুব্ধ হবে। কাজেই ধর্মভীরুর সঙ্গে নিরক্ষরতা যোগ হলে সে ধর্মান্ধে পরিণত হবে। যারা দুনিয়াতে সাম্প্রদায়িক হামলা, দাঙ্গা ছড়াচ্ছে, তাদেরও একটি দর্শন রয়েছে। তা হলো সালাফি মতবাদ। সিরিয়া, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশেও খ্রিস্টান, ইহুদিরা মারা যাচ্ছে না, মুসলমানরাই মারা যাচ্ছে। আমাদের ইসলাম ধর্মের অনেক আকীদা রয়েছে, অনুশীলনগত ভিন্নতা রয়েছে। সালাফি মতবাদে বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে সামান্যতম বিচ্যুতি গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের ধর্মবিরোধ নিষ্পত্তি হবে হত্যার মাধ্যমে। শিয়া, সুন্নী, সালাফিয়া নামে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ রয়েছে। কাজেই ধর্মীয় উন্মাদনা বিশেষ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। তাহলে একে মোকাবিলা করা হবে কিভাবে? এজন্য আবার সেই দর্শনেই ফিরে যেতে হবে। পৃথিবীতে অনেক দার্শনিক রয়েছেন, যারা ধর্মান্ধতা এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ধর্মীয় সন্ত্রাস দমন করা যাবে কিভাবে? ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে রেসকোর্স ময়দানে প্রথম বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালি, আমি মুসলমান, আমি মানুষ।’ তাঁর এই বক্তব্যকে আমরা যদি একটি দার্শনিক মতবাদ হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে ধর্মীয় উন্মাদনা অনেকাংশেই কমে যাবে। আফগানিস্তান, তুর্কিসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এখানে লোকজন এসেছে। এখানে ইসলামের দাওয়াত দিতে এসেছিলেন সূফি সাধক, শাহজালাল, খান জাহান আলী, বায়েজিদ বোস্তামী। তারা পীর, ফকির, উদার মন-মানসিকতার লোক ছিলেন। তারা ইসলামের একেবারেই কট্টর কথাবার্তা বলেননি। যার কারণে আমাদের চেহারা লেবাস আরব দেশের মত নয়। বর্তমানে অনেক কিছুই দেখা যায়, যা কোনো বাঙালিত্বের লেবাস নয়। হাজার হাজার বছর আগে আমরা মানুষ ছিলাম। প্রথম মানুষ ছিলাম, পরে বাঙালি হয়েছি, অতি সামান্যকালে মুসলমান হয়েছি। সেটাও আবার সূফিবাদী মুসলমান। কাজেই ‘মানুষ, বাঙালি, মুসলমান’- এই তিনটি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানিকৃত সালাফি মতবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব। কেবল র্যাব, সোয়াত, কোবরা দিয়ে এইসব দমন করা যাবে না। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সাম্যবাদ কায়েম করার নামে আমাদের এখানে লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। চরম অবৈজ্ঞানিক লোকদের দ্বারা হাজার হাজার তরুণদের জীবন শেষ হতে দেখেছি। শেষ পর্যন্ত কোনোটিই টেকেনি। এখনো ভারতের ঝাড়খণ্ডে নকশাল কিংবা মাওবাদী বাহিনী একই কাজ করে যাচ্ছে। নকশাল এবং মাওবাদীদের সাথে আইএস জঙ্গিদের পার্থক্য কোথায়? নকশাল এবং মাওবাদীদের বলে ধর্ম বলতে কিছু নেই। আর আইএস জঙ্গি বলে ধর্মই সব। কাজেই মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা সবসময়ই ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন হবে। কাজেই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর তত্পরতার পাশাপাশি আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা বাঙালি আমরা মানুষ- এই দর্শনে বিশ্বাসী হতে হবে। আমরা যদি বাঙালি চাল-চলন, আচার-বিশ্বাস ধারণ করি তাহলে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব আমাদের মাঝে আসতে পারবে না। আমাদের এই অঞ্চলে শিয়া ও সুন্নির বিভেদ কোনোদিনই ছিল না। আমরা কোনোদিন এই বিভেদ চিন্তা করিনি। হিন্দু এবং মুসলমানদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সবাই অংশগ্রহণ করি। কিন্তু এখন এগুলোর মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করা হচ্ছে। আমি যখন কোনো কিছু শ্রেষ্ঠ বলবো তার মানে অন্যটি নিকৃষ্ট। কাজেই আমরা আবার যদি বাঙালির কৃষ্টি-কালচারে ফিরে যাই, তাহলে আমরা সোনার বাংলা গড়তে পারবো। আমাদের টেকসই উন্নয়ন হবে তখনই, যখন ডলারের হিসাবের সঙ্গে মন-মানসিকতার উন্নয়ন হবে। গুণগত শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরিমূলক শিক্ষার উপর জোর দেয়া দরকার। আয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে সুষম আয়ের দিকে গুরুত্বারোপ করা জরুরি। মানুষ যখন বঞ্চনার শিকার তখন বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হবে। কাজেই আজকে আমাদেরকে সেই দর্শনে পৌঁছতে হবে, যাতে করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দ্বন্দ্ব, সংঘাত, হানাহানিসহ ধর্মীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে পারি। যাতে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে পারি। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২২
false
rg
অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!!! গতকাল ছিল পহেলা ফাগুন। অথচ আমি হাবার মত ঘুমোচ্ছিলাম। বন্ধু কবি আলফ্রেড খোকন ফোন করে ঘুম ভাঙালো। খোকন জিগাইলো- বসন্ত কোনদিকে আজ? কইলাম চারুকলার দিকে। জবাবে খোকন কইলো, ব্যাডা হ্যালে কী তুই খালি ঘুমাই থাকবি? চল চারুকলায় যাই। ডিউকের নাম্বারটা দে। ডিউক মানে আর্টিস্ট নাসিমুল কবির ডিউক, আমাদের বন্ধু, চারুকলার মাস্টার। ফোন খুঁজে দেখি ডিউকের নাম্বার নাই। তারপর ফোন করলাম বন্ধু কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুরকে। ঠাকুর ডিউকের নাম্বার এসএমএস করলো। আমি খোকনকে তা দিলাম। তারপর খোকন লাপাত্তা! বাট হারামজাদা কইছিল- অফিসে ঢুকব আর বের হব, তুই রেডি হ! আমি খোকনের আশায় আশায় দুপুর পার করলাম। বসন্ত আসে না। গোসল করে লাঞ্চ করলাম। এই সময় ঠাকুরের ফোন। কই আপনারা? বললাম আমি বাসায়। খোকনের কোনো সাড়া নাই! জবাবে ঠাকুর কইলো, আমি তো শাহবাগ, চলে আসেন। তারপর আমি রওনা দিলাম। আমি শাহবাগ পৌঁছানোর পরে খোকনের ফোন। কিরে ব্যাডা, তোর কোনো খবর নাই? কী কমু দুঃখের কথা! কার খবর নাই! অথচ বসন্ত চলে যাচ্ছে!ততক্ষণে ঠাকুর আর আমি চারুকলায় ঢুকে পড়েছি। বর্ষা বিভাবরি মানে ঠাকুরের ভাগ্নি, আমরা সবাই বর্ষার মামা, বর্ষা এবার ত্রিশালের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ভর্তি হয়েছে। গতকাল বর্ষার নবীন বরণ ছিল, আজ ক্লাশ শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাশ। বর্ষা ত্রিশাল যাবার সময় ওর ক্যামেরা নিতে ভুলে গেছে। সেজন্য বর্ষার কিছুটা মন খারাপ। বর্ষার মন ভালো করতে ঠাকুর সৈয়দ শামসুল হকের সাথে বর্ষার কিছু ছবি ফেসবুকে আপ করেছে। বর্ষা তাই দেখে কিছুটা খুশি। তো বর্ষার সেই ক্যামেরা নিয়েই ঠাকুর শাহবাগে হাজির। তারপর আমরা ইচ্ছামত ক্যামেরা চালানো শুরু করলাম। আমাদের সঙ্গে যোগ দিল সাদিক আর সাদিকের বান্ধবী। একটু পর শিল্পী শেখ শাহেদ আলী'র ফোন। আমরা চারুকলায় শুনে শাহেদ ভাই, মানে ব্যাচেলর কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন। আমরা ইচ্ছামত ফটো সেশন করছি, এমন সময় খোকনও আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। আজকের বসন্তে ঘুরে ঘুরে ক্যামেরা চালিয়েছে ঠাকুর, খোকন আর আমি। অনেক ছবি তোলা হয়েছে। সাদিকের যে ছবি ঠাকুর তুলেছে, ওটা দেখিয়ে নাকি আগামীকাল সাদিক একটা প্রেম করবে। খুব ভালো, প্রেম করা ভালো। আমাদের মত না করা আরো ভালো। অনেকদিন পর আমরা চারুকলার ছাদে উঠলাম। ছাদের পুরো সেশনটা ক্যামেরা চালিয়েছি আমি। খোকনের যেখানে দুপুরে লাঞ্চ করানোর কথা, সেখানে ও পাঁচটার পর আমাদের টাকা পয়সা না দিয়ে রমনা পার্কে ব্যায়াম করতে চলে গেল। ও মাঝখানে অবশ্য দশ টাকার বাদাম খাওয়াইছে খোকন। আর একবার সিগারেট। খোকন চলে গেলে কী আমাদের বসন্ত থেমে যাবে? আমরা ছুটলাম বাঙলা একাডেমি। সেকি? লিটল ম্যাগ চত্বরে কোনো কবি নাই, কোনো কবিতা প্রেমিক সুন্দরীরা নাই। অথচ পহেলা ফাগুন, এইটা কিছু হইলো। ঠাকুর আর শাহেদ ভাই কইলো, আপনার স্কোর কিন্তু কাটা যাচ্ছে। ততক্ষণে শাহেদ ভাই দুইটা ছক্কা মারছে। তবুও বাংলাদেশ ভারতের কাছে একমাত্র টেস্টে ২০৮ রানে হেরেছে। কেবল পুকুর পারে মহান কবি ও নির্মাতা দিলদার হোসেনকে পেয়ে আমরা কিছুক্ষণ দিলদার ভাই'র স্টলে আড্ডা মারলাম। তারপর বাংলাদেশের টেস্ট হারার সেই কষ্ট বুকে নিয়েই আমরা আবার টিএসসিতে আসলাম। আমাদের ভব, মানে শিল্পী শতাব্দী ভব ওর বউ শতাব্দী সানজানারে লিটল ম্যাগ চত্বরে সব্যসাচী স্টলে বসাই দিয়ে নিজে টিএসসিতে বসে বসে আড্ডা মারতেছিল। ভবরে জিগাইলাম, তুই তো ফাঁকি মারলি, সানজানারে কইয়া দিমু। তুই এখন আমাদের কিছু খাওয়া। নইলে তোরে এখন লিটল ম্যাগে পাঠামু। তারপর ভব আমাগো সিগারু খাওয়াইলো। তখন আমাদের সঙ্গে যোগ দিল তরুণ কবি অনার্য আদিম। এবারের বইমেলায় কবি অনার্য আদিমের কবিতার বই 'শূন্যতার স্বর' প্রকাশ পেয়েছে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে। বন্ধুরা খোঁজ নিতে পারো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাগৃতি'র ১৫৮-১৫৯-১৬০ নাম্বার স্টলে। আমরা সিগারু শেষ করে আবার চারুকলায় ফিরলাম। চারুকলায় ফিরে অনেকক্ষণ আমরা বসে বসে আড্ডা মারলাম। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, এই তিন পাগলরে কেউ প্রেম নিবেদন করলো না। তখন শাহেদ ভাই ক্ষেপে গিয়ে বলল, চলেন আবার বইমেলায় যাই। ঠাকুরের তখন খুব মন খারাপ হলো। কোনোমতে বাসায় যেতে পারলে বাঁচে। কারণ চেকে ঠাকুর বানান ভুল হওয়ায় মানে ডাবল ও'র জায়গায় ইউ লিখে দেওয়ায় টাকা তুলতে পারেনি ঠাকুর। বেচারার পকেট ফাঁকা। ঠাকুরের বাসায় যেতে লাগবে দুইশো টাকা। শাহেদ ভাই আর আমি দশ টাকা করে নিজেদের পকেটে রেখে ঠাকুরকে যা দিলাম, তাতে একশোও পুরলো না। এই টাকায় বসন্ত হয় কী করে? শাহেদ ভাই কইলো- বইমেলায় গেলে টাকা পাব। কিন্তু ঠাকুর বইমেলায় ঢুকবে না। বাসায় যাবে। পরে ঠাকুরকে চারুকলার গেট রেখে আমি আর শাহেদ ভাই বইমেলায় গেলাম। এবার দু'জনের পকেটে মাত্র দশ দশ বিশ টাকা। কী করি। খুব ক্ষুধাও লাগছে। শাহেদ ভাইরে কইলাম, চলেন শ্রাবণে যাই। রবীনের ওইখানে অনেক লেখক মিষ্টি নিয়ে আসে। আমরা মিষ্টি আর জল খেয়ে পেটের ক্ষুধা মিটাব! প্রেমের ব্যাপার আজ বাতিল হোক। শ্রাবণে গিয়ে পেলাম বাবু ভাইকে। বিপ্লবী বাবু ভাই কইতে না কইতে মিষ্টি আর পানি এগিয়ে দিলেন। আমরা খাওয়া শেষ করতে না করতে সাদিয়া নাসরিন আপা কইলেন, ছবি তুলবে। জবাবে আমরা কইলাম- প্রতিটি ছবি তোলার জন্য আমাদের ত্রিশ টাকা দিতে হবে। আর অটোগ্রাফ নিতে চাইলে কুঁড়ি টাকা লাগবে। আর একসঙ্গে প‌্যাকেজ হইলে পঞ্চাশ লাগবে। শ্রাবণ প্রকাশনীর সামনে হেতিরা আমাগো লগে ছবি তুললো মাগার টেহা দিল না। বাবু'দাকে আমরা সেই নালিশ জানিয়ে ছুটবো ঠিক তখন বাচিক শিল্পী শিমুল মোস্তফা অ্যান্ড গং আমাদের চারদিকে থেকে ঘিরে ধরলো। কাহিনী কী?আমাগো ইন্টারভিউ নিবে। আমরা কইলাম, ভাই আমরা ক্ষুধার্ত। আমাগো ইন্টারভিউ নিতে চাইলে আগে খাওয়াইতে হবে। শিমুল ভাই কইলো, তোমার ভাবী আইসা খাওয়াবে। তোমরা যা যা খাইতে চাও সব পাওনা থাকল। চলো, আমরা আড্ডার স্টাইলে কথা কই। পরে শুনলাম, ওইটা এসএ-টিভি। পাপারাজ্জিদের পাল্লায় পইরা আমাগো পেট তহোন আরো চিউ চিউ করতাছে। শাহেদ ভাই কইলো, চলেন, একাডেমির ভেতরে পুকুর পারে উন্মাদ স্টলে শাহীন ভাই আছে। ওইহানে গিয়া কিছু খামু। আমি কইলাম, চলেন বিদ্যাপ্রকাশে গিয়া হামলা করি। খোকা ভাই আমেরিকা থাকলেও নাস্তা ঠিকই থাকবে। আমরা বিদ্যাপ্রকাশে হামলা করার আগেই রুদ্র ও তূর্ণা আমাদের অ্যাটাক করলো। কাহিনী কী? রুদ্র'র কাছে আমার একটা বই পাওনা আছে, রুদ্র কয় গণি ভাই বই দেয় না। আর ওসমান গণি মানে বইমেলার সবচেয়ে বড় মোড়ল প্রকাশক আমাদের গণি ভাই কইলেন, বই দিয়ে দিছেন! সেই জন্য ও আমার কাছে কোনো বই চাইতে পারবে না। চালাকি কইরা তাই রুদ্র ওর বউ নিয়া বইমেলায় আইছে। আমারে কয়, আপনার বুনডিরে আপনি অটোগ্রাফসহ বই দেবেন। বই ঠিকই তূর্ণাকে অটোগ্রাফসহ দিছি। রুদ্র তার ফটোও তুলছে। মাগার লস যা হবার খোকা ভাই'র হইছে। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে নাস্তা খেয়ে আমরা বাংলা একাডেমিতে ঢুকলাম। আজ মোহিত ভাই আমাদের একটা ফাঁকি দিছে। এইটা আমরা সুদে আসলে শিগ্গির উসুল করুম, কইয়া রাখলাম! একাডেমিতে ঢুকে পুকুর পারে উন্মাদ স্টলে পাইলাম শাহীন ভাইকে। শাহীন ভাই মানে উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবীব। শাহীন ভাই সবসময় অনেক ভক্ত পরিবেষ্টিত থাকেন। কে যে কী খাওয়াবে, আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। তিনবার আইসক্রিম বদল কইরা আমি নিলাম কাপ আইসক্রিম আর শাহেদ ভাই লাঠি আইসক্রিম। খাওয়ার পর সাধারণত আমাগো সবার বাড়ি হয় নোয়াখালী। উন্মাদ গং থেকে বিদায় নিয়ে আমরা লিটল ম্যাগ চত্বরে ঢুকলাম। স্বকৃত নোমান আর প্রশান্ত মৃধা গংরা মিলে সেখানে বিশাল আড্ডা জমিয়েছে। আমরা কইলাম, এবার আমাগো সিগারেট লাগবে। প্রশান্ত এবার আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস পুরস্কার পেয়েছে। প্রশান্ত'র এই অর্জনে আমরা বন্ধুরা খুব খুশি। প্রশান্তও খুশি। কারণ ইলিয়াস ভাই প্রশান্ত'র সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। প্রশান্ত কইলো, ১৭ তারিখ ওর সব কাজ শেষ হবে। তারপর যা আমাগো খাওয়াবে সিলেট থেকে আইসা খাওয়াবে। রাতেই প্রশান্ত সিলৈট যাচ্ছে। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রশান্ত আমাদের বন্ধুদের পুরান ঢাকায় লাঞ্চ করায়। এবারও ২১ তারিখ প্রশান্ত ঢাকায় থাকবে। প্রশান্ত'র বউ মানে ফারজানা সিদ্দিকা রণি'র বাবা এখন সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে ভর্তি। সেই বিষয়ে খোঁজখবর নিলাম। এই সময় শাহেদ ভাই বিদায় নিলেন। কারণ শাহেদ ভাই'র স্টুডিওতে রেকর্ডিং আছে। পরে আমরা সিগারু খাওয়া শেষ না করতেই আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন কবি ফরিদ কবির। ফরিদ ভাইকে নাকি সারাদিন ঝর্না আপু ঘরে বন্দী কইরা রাখছে। আপু যহোন বাথরুমে গেছে, সেই ফাঁকে ফরিদ ভাই পালিয়ে বইমেলায় আইসা পড়ছে। ফরিদ ভাই কইলো, সিগারেট খাবি? কইলাম, খামু। আমাদের আড্ডা যখন প্রায় জমে উঠেছে, তখন আমার বন্ধু ফিরোজ হাজির। দীর্ঘ বারো বছর পর ফিরোজের লগে দেখা। তাই ফরিদ ভাই, প্রশান্ত, নোমানদের আড্ডা ছেড়ে আমি আর ফিরোজ বেড়িয়ে পড়ি। মাঝখানে কুশল বিনিময় ও বাসন্তি শুভেচ্ছা বিনিময় হলো নীল সাধু ও তুলা ভাবী, কবি শাফি সমুদ্র, কবি ও সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক, লেখক ঋষি এস্তেবান, নাটোরের বনলতা সারা, কবি মাহবুব আলম, কবি তানিম কবিরসহ অনেকের সাথে। তারপর আমি বন্ধু ফিরোজের সঙ্গে মেলা থেকে বের হই। চারুকলার সামনে এসে আবার ঠাকুরকে পেলাম। যেখানে রেখে গেছি সেখানেই। সঙ্গে আছে ২৭ বছর আগে থিয়েটারে ঠাকুরের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা কানাডা প্রবাসী বান্ধবী ও তার স্বামী, শিল্পী সাবা অ্যান্ড গং সহ অনেকে। আমরা সেখানে আরেক দফা আড্ডা মেরে পরে বন্ধু ফিরোজের গাড়িতে চেপে আমি বাড়ির পথ ধরি। বসন্তের প্রথম দিন এভাবে গেল রাস্তায় গড়াগড়ি। আহা আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। তো কার লগে যে কে প্রেম করে, কে জানে!......................................১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩৮
false