label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
rg
প্রথম আলো বর্ষ সেরা বই ১৪১৪।। রেজা ঘটক কবি আলতাফ হোসেনের জন্ম ১৯৪৯ সালরে ২৭ অক্টোবর । আজ থেকে পঁয়ত্রশি বছর আগে যখন তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘সজল ভৈরবী’ বের হয় তখন কবি শামসুর রাহমান অচেনা এই কবিকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন তাঁর একটি কলামের মাধ্যমে । কবি শহীদ কাদরী ও আরো কয়েকজন কবিও তাঁর স্বাতন্ত্র্যকে শনাক্ত করেছিলেন আগে-পরে। এরপর ত্রিশ বছরের ব্যবধানে বের হয়েছে তাঁর আরো পাঁচটি বই । ‘পাখি বলে’ তাঁর সপ্তম কাব্যগ্রন্থ । `পাখি বলে' বের হয়েছে প্রকাশনা জগতে চমক লাগানো নবীন প্রকাশনা পাঠসূত্র থেকে ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এ। সে বছর কবি আলতাফ হোসেনের আরো একটি কবিতার বই বের হয়। `কী ফুল ঝরিল বিপুল অন্ধকারে'। কবি আলতাফ হোসেনের অন্য বইগুলো হল: ‘লাজুক অক্টোপাস’, ‘ভূমধ্যসাগরে অন্ধ ঘূর্ণি যা বলুক’, ‘সঙ্গে নিয়ে চলে যাই পাহাড়চূড়োয়’, ‘বলি যে তারানা হচ্ছে’, ‘তারপর হঠাৎ একদিন মৌমাছি’। কবি আলতাফ হোসেনের কবিতায় রয়েছে ভাষা ও ভঙ্গির নতুন আস্বাদ। আলতাফ হোসেনের `পাখি বলে' প্রসঙ্গে শংসাবচনে আরেক তারুণ্যের প্রতীক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক কবি মোহাম্মদ রফিক বলেন, সৃষ্টির সূত্র ধরে তৈরি হতে থাকে কবির ভূবন, বিপুল ঘোরের মধ্যে। প্রলয়ের মধ্যে থেকে উৎপত্তি হতে থাকে শব্দ, উপমা, পঙক্তি, স্তবক- যেন একেক খণ্ড দাহ্যমান শিলা, শূন্যতায় নিক্ষিপ্ত নক্ষত্র। কবিকে যে যোগসূত্র নির্মাণ করতেই হয়- প্রলয়ের সঙ্গে সৃষ্টির, মানুষের সঙ্গে ব্রਜ਼াণ্ডের। তিনি বলেন, কবি আলতাফ হোসেনের দু:সহ, দઓমગর, একাকী বিশੴসৃষ্টি পরিনত কাব্যভাষা ও অভিনবত্ব পরিগઝহণ করেছে পাখি বলে কাব্যগ্রন্থে। কবি আলতাফ হোসেন নবীনতা অভিসারী। চর্চিত ও বহুল ব্যবহৃত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তাঁর কবিতা আস্বাদনের জন্য প্রয়োজন অনুভববেদ্য একটি হৃদয়, যে হৃদয় ক্ষোয়াটে-পাংশুটে প্রতিপার্শ্ব ব্যক্তির আহত স্বরকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে জানে। জগৎ সংসারের প্রাণের অসুখকে অনুধাবন করে তাকে দু-কথায়, চার কথায় কবিতা করে তোলায় তাঁর যেন তাঁর স্বস্তি । আনন্দ এবং বিষাদ যেখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় কবি আলতাফ হোসেন সেখান থেকেই শুরু করেন। কবি আলতাফ হোসেনের স্ট্যাডিকালেও রয়েছে বৈচিত্র্য। তিনি পড়াশোনা করেছেন প্রাথমিক যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও করাচি। মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। এবং অনার্স ও মাস্টার্স চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকুরিসূত্রে প্রশিক্ষণের সুযোগে ভ্রমণ করেছেন যথাক্রমে থাইল্যান্ড, দ. কোরয়া, ফিলিপাইন্স, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন। কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি গল্প ও প্রবন্ধ লেখেন। এখন লিখছেন উপন্যাস। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি বই পড়তে ভালোবাসেন। গান শোনা, ছবি দেখা আর গৃহকর্মে কাটে ব্যস্ত সময়। বাজার করায় তাঁর রয়েছে অসম্ভব বিরক্তি। বিরল সুযোগে ভ্রমণ করতে খুব পছন্দ করেন। এ বছর অক্টোবরে তিনি ৬০ বছরে পা দেবেন। সৃজনশীল শাখায় প্রথম আলোর বর্ষ সেরা বই পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় কবি আলতাফ হোসেন বলেন- কবিতা তাঁকে অদম্য শক্তি দেয়, মনের দু;খ প্রকাশে সাহায্য করে। নি:সঙ্গতাকে দূর করতেই তিনি কবিতার মতো শক্তিশালী মাধ্যমকে বেছে নেন মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষার হাতিয়ার হিসাবে। কবি আলতাফ হোসেন এক দুর্লভ বিরল প্রজাতির নি:সঙ্গ সাধক। সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৫৩
false
mk
ভুঁইফোড় দুটি সংগঠনকে আইএসআইয়ের অর্থায়ন! বাংলাদেশের দুটি সংগঠনকে পাকিস্তানের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের অর্থায়নের অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ১১ জানুয়ারি ‘মুক্তচিন্তা ফাউন্ডেশন’ ও ‘স্বাধীনতা ফোরাম, বাংলাদেশ’ নামের দুটি সংগঠনের নামে আইএসআই ৪০ হাজার মার্কিন ডলার ছাড় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক মতাদর্শী এই সংগঠনগুলোর কাজ হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেসক্লাব বা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আলোচনা সভা করা। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এই সম্পর্কিত বিষদ ডকুমেন্ট তাদের হাতে রয়েছে। কী কারণে পাকিস্তানি একটি গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের এরকম দুটি সংগঠনকে অর্থ দিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই অর্থের সঙ্গে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ষড়যন্ত্র কিংবা জঙ্গি তৎপরতা চালানোর কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের স্কাইপি সংলাপ ফাঁস কিংবা আমার দেশ সম্পাদকের সঙ্গে এ দুটি সংগঠনের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না তা নিয়েও তদন্ত হচ্ছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।আইএসআইয়ের পক্ষ থেকে অর্থগ্রহণের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে সংগঠন দুটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল তাদের বিতর্কিত করতে সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে থাকতে পারে। সংগঠন দুটি জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই বলেও দাবি করেন তারা।মুক্তচিন্তা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ও দিগন্ত টেলিভিশনের সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন মানিক জানান, সাংবাদিকতার পাশাপাশি জনস্বার্থ বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন তারা। এই সংগঠনের নামে আইএসআইয়ের অর্থ গ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের একটি অনুষ্ঠান করতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকার বেশি প্রয়োজন হয় না। এরই মধ্যে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আমাদের ৫০ হাজার টাকা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তাতেই আমাদের তিন-চারটি অনুষ্ঠান করা সম্ভব। আমাদের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসে বয়োজ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী যুদ্ধাপরাধের বিচার চেয়ে বিএনপির নীরব থাকার কথা উল্লেখ করেন। অপর আইনজীবী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধের যে বিচার প্রক্রিয়া চালু করেছিলেন বর্তমান সরকারকেই তা নিষ্পত্তি করতে হবে। আমিরুল মোমেনীন আরো বলেন, আমাদের সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে আইএসআইয়ের কাছ থেকে অন্য কেউ অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। আর তদন্তের ব্যাপারেও আমাদের কিছুই জানা নেই এবং তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।২০১০ সালে মুক্তচিন্তা ফাউন্ডেশন আত্মপ্রকাশের পর ৭-৮টি অনুষ্ঠান করা হয়। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে আসেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। এর পর ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসেন ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রবসহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব। আহ্বায়ক আশীষ কুমার সেন ও আমিরুল মোমেনীন মানিকের স্বাক্ষরেই ব্যাংক হিসাব পরিচালনা হয়ে আসছে বলে জানালেন তারা।অপর সংগঠন স্বাধীনতা ফোরামের প্রতিষ্ঠা ১৯৯৪ সালের ৩০ মার্চ। সংগঠনটির সভাপতি আবু নাসের মো. রহমত উল্লাহ জানান, নিজেদের উদ্যোগে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করছি। সংগঠন সংশ্লিষ্টরাই এর পৃষ্ঠপোষক। তিনি ছাড়া অন্য কেউ অর্থনৈতিক লেনদেন করেন না বলেও জানান তিনি। আইএসআইয়ের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলেও জানান তিনি। সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের অর্থায়নেই বিভিন্ন প্রকার সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকেন বলেও তিনি দাবি করেন। রহমত উল্লাহ বলেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর ব্যানারে নানারকম সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।লিনক
false
ij
গল্প_ সন্ধ্যায়, মাটিরাঙ্গার আধো-অন্ধকার টিলায় ___ মধ্য অক্টোবরের শীত মাখানো রোদে ঝলমল করছিল টিলাটা । বাতাসে ভাসছিল শিশির ভেজা গাছের ছাল ও বুনো লতাপাতার ঘন গন্ধ । ডাকবাংলোর মেন গেটের কাছে একটি লিচু গাছ। সে গাছেই ভোর থেকেই ঝাঁক ঝাঁক টিয়ে বসেছিল । ওদের ডাকাডাকিতে মূখর হয়েছিল ডাকবাংলোর বাগান। সকাল এগারোটার দিকে মাটিরাঙ্গা ডাকবাংলোর বারান্দায় বেতের সোফার ওপর গা এলিয়ে বসে ছিল আবিদ । বারান্দা ভর্তি ঝলমলে রোদ। বেশ ঘোর লেগেছিল আবিদের। কদিন ধরে ভিতরের কাঠ কাঠ ভাবটা মরে আবার জেগে উঠছিল সে-সেরে উঠছিল। এ জন্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামে আসা। মাটিরাঙ্গা উপজেলাটি খাগড়াছড়ির দক্ষিণ-পশ্চিমে। হঠাৎই মেন গেটের ওপাশে গাড়ির হর্নের শব্দে ঘোর কাটল । এই রে সরকারি কর্তাব্যাক্তিরা বুঝি এসে গেল। আবিদের সঙ্গে মাটিরাঙ্গার এই সরকারি ডাকবাংলোটিতে থাকার অনুমতিপত্র নেই-কাজেই ক্ষীন অস্বস্তি বোধ করতে থাকে সে । এসব ক্ষেত্রে কর্তাব্যাক্তি ভালো হলে নরম সুরে চলে যেতে বলেন, কিংবা মন্দ হলে গালাগাল না করলেও থানায় ফোন করার হুমকি দেন। বেতের টেবিলের ওপর আয়েস করে পা তুলে বসেছিল আবিদ। পাটা এখন নামিয়ে বসল। সিগারেট ধরিয়েছিল। চটজলদি ওটা অ্যাসট্রেতে গুঁজে রাখল। ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার বুড়োটি মেন গেট খুলে দিতে দৌড়েছিল। একটু পর সাদা একটি মাইক্রোবাস এসে থামল ডাকবাংলোর চত্তরে। মাইক্রোর গায়ে লাল রঙের সড়ক ও জনপদ বিভাগের ছিলছাপ্পড় দেখে যা বোঝার বুঝল আবিদ । মাইক্রোবাস থেকে প্রথমে নামলেন বেঁটে কালো আর থলথলে একটি লোক। লোকটার পরনে কালো রঙের বাহারি আর দামি সাফারি স্যুট হলেও লোকটার চেহারা কী রকম গেঁয়ো । ভদ্রলোকের পর মাইক্রোবাস থেকে যিনি নামলেন তাকে দেখে আবিদ মুগ্ধ বিস্ময়ে একেবারে হতবাক হয়ে গেল। কালো ব্লাউজ আর নীল পার শাদা শাড়ি পরা মধ্যবয়েসী শ্যামলা আঁটোসাঁটো শরীরের এক মহিলা । মিষ্টি চোখমুখ। নাকে সরু নথ। কী দারুন অভিজাত দেখতে। এত সুন্দরী মহিলা ঐ রকম বেঢপ একটা লোকের বউ! আবিদ ভিতরে ভিতরে দারুন হতাশ হয়ে পড়ে–। কালো রঙের সাফারি স্যুটপরা থলথলে লোকটি ততক্ষণে বারান্দায় উঠে আসার জন্য কাঠের সিঁড়ির দিকে এগিয়ে আসছেন। আবিদ প্রবল অস্বস্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল। বারান্দায় উঠেই আবিদকে দেখে থমকে গেলেন ভদ্রলোক। আবিদের ঈষৎ কোঁকড়া বাদামি রঙের চুল, ফরসা মুখে কদিনের না-কাটা দাড়ি আর নীল জিন্সের ওপর নীল সোয়েটারের ফাক গলে সাদা শার্টের কলারের ওপর চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর আবিদকে প্রায় অবাক করে দিয়ে হেসে হাত বাড়িয়ে ভদ্রলোক বললেন, আমি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন। রোডস অ্যান্ড হাইওয়েতে আছি। ভদ্রলোকের থলথলে হাতটা হাতের মুঠোয় নিয়ে জড়োসরো ভঙ্গিতে নীচু স্বরে আবিদ বলল, আমি আবিদ সারওয়ার । স্টুডেন্ট। বসেন। বসেন। কবে আইছেন মাটিরাঙ্গায়? বলেই বেশ শব্দ করেই উলটো দিকের সোফায় বসলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন । আবিদও জড়োসরো হয়ে বসে বলল, গতকাল। তার চোখ- নীল পার সাদা শাড়ি পরা মহিলার দিকে। বারান্দায় না-বসে বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে ভিতরে চলে গেলেন ভদ্রমহিলা। মনে হল আগেও এখানে এসেছেন। ডাকবাংলোর গেট লাগিয়ে কেয়ারটেকার বুড়োটি এসে দাঁড়িয়েছিল। মাইক্রো থেকে ততক্ষনে দুটো স্যুাটকেস ছাড়াও দুটো বাঁশের খাঁচায় খরগোশ আর কবুতর নামিয়ে রেখেছে ড্রাইভার। সেগুলি বুড়োকে বুঝিয়ে দিতে লাগল। মাইক্রোবাসের ড্রাইভারকে চাকমা মনে হল আবিদের। ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন বললেন, মাটিরাঙ্গা থেকে মহালছড়ি পরজন্ত রাস্তার মেরামত চলতে আছে। প্রজেক্টটা হইল আমারই আন্ডারে। কাজে কাজেই মাঝেমইধ্যে মাটিরাঙ্গা আসতে হয়। ও। আবিদ জানে মাটিরাঙ্গার দক্ষিণপুবে মহালছড়ি উপজেলা । খাগড়াছড়ির দক্ষিণে। আইজকাল চিটাগাং হিল ট্র্র্যাক্টস্ এ পর্যটক এত বাড়ছে। ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন বললেন। নতুন রাস্তা না করলে বাঁচনের কায়দা নাই -বলে কী মনে করে ভদ্রলোক বললেন- গুইমারার কাছে লাস্ট নাইটে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হইয়া গেছে। অ্যাক্সিডেন্ট! আবিদ মৃদু ঝাঁকুনি খেল। ওর সৌম্যদের কথা মনে পড়ল। সৌম্যরা তো মানিকছড়ি। মানিকছড়ি এখান থেকে অনেকই দূর। অনেক দক্ষিণে। ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন বললেন, হ্যাঁ। গুইমারার ওসি সাহেব আইজ সকালে ফোন করছিলেন। জিপের ড্রাইভার নাকি আমার রেফান্সে দিসে। খাওয়াদাওয়ার পর একবার গুইমারার দিকে যাইতে হইবে। তখন সব শুইনা আইসা বলব নে। কথা বলতে বলতে আবিদের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুনের একটা সর্ম্পক বেরিয়ে আসে। রোডস অ্যান্ড হাইওয়েতে ছিলেন আবিদের বাবার এক বন্ধু- মোকতাদির আঙ্কেল । এখন অবশ্য তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে গারমেন্টস দিয়েছেন । সেই মোকতাদির আঙ্কেলই ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন এর কলিগ । দুজন দীর্ঘদিন একসঙ্গে চিটাগাঙে ছিলেন । আরে মোক্তাদিরের তো অ্যাজমা ছিল। আমিই তারে নাইনটি থ্রিতে ফটিকছড়িতে সত্তর হেকিমের কাছে নিয়া গেলাম । সত্তর হেকিমে কী ডোজ দিল-মোক্তাদির তো কইল শ্বাসকষ্টটা নামি কম। আসলেই- কার কাছে যে কী থাকে আঙ্কেল। আবিদ বলল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হারুন আঙ্কেলের কাছ থেকে সত্তর হেকিমের ঠিকানা নিয়ে মাকে নিয়ে একবার ফটিকছড়িতে কাছে গেলে হয় না । অবশ্য এতদিন পর -সত্তর হেকিমের বেঁচে আছেন কি না কে জানে। তুমি ঠিকই কইছ ভাইসতা। কার কাছে যে কী থাকে। কই- ফটিকছড়িতে সত্তর হেকিম আমার ছোটবোন জামাইয়ের অ্যাজমা সারাইতে পারল? না, পারল না। কেমন নিভে যাওয়া কন্ঠে বললেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন। দুপুরে খাওয়ার টেবিলে মিসেস হারুন এলেন। ভদ্রমহিলা খুব একটা কথা বললেন না। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিলেন। মহালছড়ি থেকে আসার পথে মাটিরাঙ্গার হাটে মাইক্রো থামিয়ে ড্রাইভারকে দিয়ে তিন জোড়া কবুতর আর দুটি খরগোশ কিনেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন। সেসবেরই মাংস ছোট আলু দিয়ে ঝাল ঝাল লাল লাল করে রেঁেধছে বুড়ো কেয়ারটেকার। খেতে খেতে আড়চোখে মিসেস হারুনকে দেখছিল আবিদ । মুখচোখে উপচে পরা মাধুর্য। মায়ের সঙ্গে কোথায় যেন মিল। অথচ মা- ভাইসতা সাবধান, একা একা বনেজঙ্গলে ঘুরবা না কিন্তু।ভাত খেতে খেতে কী মনে করে ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন বললেন। কেন আঙ্কেল? আবিদ বিস্মিত। মহালছড়ির থানার ওসি রুকুনুদ্দৌলা সাহেবের কাছে শুনছি খাগড়াছড়ির গভীর জঙ্গলে নাকি বাঙালি তালেবানরা জড়ো হইতেছে। ঐ দিকে শান্তিবাহিনীও নাকি রিঅর্গানাইজ হইতেছে। কাজেই, অতি সত্তর কেয়ামৎ ঘনায়া আসতেছে। তাই কইলাম-একা একা মাটিরাঙ্গার বনেজঙ্গলে না ঘোরনই ভালো। ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুনের কথা শুনে আবিদ অবাক। বলল, মুসলিম ফান্ডামেন্টালিস্টদের ব্যাপারটা না-হয় বুঝলাম আঙ্কেল -কিন্তু কিন্তু শান্তিবাহিনী কেন? শান্তিচুক্তি তো সাইন হয়ে গেছে। ধুরও -তুমি যে কী কও না। ২০০১ সালে জোট সরকার আইসা তানে নানে কইরা শান্তিচুক্তির কনডিশন বাস্তবায়ন করল না। তেনারা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করবে কী-তেনারাই তো নাইনটিন সেভেনটি ফাইভে চাকমাগো ক্র্যাশ করার জন্য চিটাগাং হিল ট্র্র্যাক্টস্ এ আর্মি পাঠাইল। তারাই আবার ২০০১ সালে ক্ষমতায় বইসা নানান টালবাহানা কইরা শান্তিচুক্তির কনডিশন বাস্তবায়ন করল না। সেই আক্রোশে পাহাড়ি যুবকরা আবার একজোট হইতেছে শোনা যায়। ওইদিকে জোট সরকারের আমলে জোট সরকারের কয়েকজন মৌলবাদী মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় হাজার হাজার শিবির, জে এম বি আর হিযবুল তাহরির গং হিল ট্র্যাক্টস-এ ঢুকছে। কেন? বাংলাদেশরে আফগানিস্থান বানাইলে আমেরিকার লাভ-বাংলাদেশে ইনভেড করার উছিলা পাইব। জোট সরকারের আমলে জোট সরকারের কয়েকজন মৌলবাদী মন্ত্রী এই নিয়তে আমেরিকার টাকা খাইসে। জোট সরকারের আমলে জামাতি ইসলামিরে মডারেট গনতান্ত্রিক পার্টি কয় নাই আমেরিকা? কইছে। তাইলে? প্যাঁচ আরও আছে ভাইসতা। বাংলাদেশি মুসলিম ব্রাদারহুডেরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের টোটালি আপরুট করতে চায় । পাহাড়ি যুবকরা তাদের আর্মড প্রোটেকশান তো দিবই দিব-জাতের টান বড় টান না? কাজে কাজেই, বিপদ গ্র্যাজুয়ালি বাড়তেছে। তাই কইলাম একা একা তুমার মাটিরাঙ্গায় না ঘোরাই ভালো। তুমি বরং আজই ঢাকায় ফির‌্যা যাও ভাইসতা । যাইবা? আমি ব্যবস্থা কইরা দিতে পারি। রোডস অ্যান্ডের গাড়ি রোজ ঢাকায় যায় আসে। দেখি। আবিদের মায়ের মুখটা মনে পড়ল। নাঃ এখন ঢাকা ফেরা যাবে না। মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো যাবে না। ও দীর্ঘশ্বাস লুকায়। খাবার পর মিসেস হারুন ভিতরে চলে গেলেন। সম্ভবত বিশ্রাম নেবেন। ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন আর আবিদ বারান্দায় এসে বেতের সোফায় বসল। কি সিগারেট খাও তুমি ভাইসতা? দেও একটা ধরাই। যদিও ডাক্তার সাব ধূমপান নিষেধ করছেন-ধুরও ...সঙ্কোচ বোধ করলেও ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে একটা বেনসন লাইট বের করে দিল আবিদ । নিজে অবশ্য ধরালো না। গ্রাম্য কৃষকের মতন সিগারেট অর্ধেক টেনেছেন -এই সময়ে ভদ্রলোকের এলজিটা বেজে উঠল। কতক্ষণ মোবাইলে হু হা করলেন তিনি । তারপর এলজিটা অফ করে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, এখনই আমারে একবার মাটিরাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ি যাইতে হইব ভাইসতা। সেই অ্যাক্সিডেন্টের কেস। ফির‌্যা আইসা তোমারে ইন ডিটেলস সব বলব । বলেই কাঠের সিঁড়ি বেয়ে চত্তরে নেমে গেলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন। একটু পর মাইক্রোবাসটা স্টার্ট নিল। আবিদ ঘরে না গিয়ে বেতের সোফাতেই বসে থাকল। ওর ধারনা-একটু পর মিসেস হারুন এই বারান্দায় আসবেন। খুব কাছ থেকে তখন শান্ত অভিজাত সৌন্দর্য দেখবে সে। মহিলা যদিও মায়ের বয়েসী -তাতে কী। আবিদের একটা আশ্রয় দরকার-গভীর আশ্রয়। ওর পায়ের তলার মাটি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। ও একটা গভীর বিষাদে ডুবে আছে- ও ওর এক্স গাল ফ্রেন্ড রুমার ২২টি ছবি নিয়ে ঘুরছে কোনও নির্জন পাহাড়ি টিলায় পুড়িয়ে ফেলবে বলে। আবিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অন্যমনস্ক হয়ে সিগারেট ধরায়। মধ্য অক্টোবরের শীত মাখানো হলুদ রঙের রোদ ওর পায়ের কাছে ছড়িয়ে আছে। টিলার বাতাসে তখনও ভাসছিল শিশির ভেজা গাছের ছাল ও বুনো লতাপাতার গন্ধ । সেই গন্ধে ঘোর লাগল আবিদের । গতকাল বিকেলে মাটিরাঙ্গা পৌঁছে খুঁজেপেতে রেষ্ট হাউজ উঠেছে আবিদ। সরকারি ডাকবাংলো। জাত ভবঘুরে সে; তার সঙ্গে পারমিশন থাকার কথাই না। ডাকবাংলোর কেয়ারটেকারটি বুড়ো-জাতে ম্রো বোধহয়। একে অন্যের ভাষা বোঝার কথা না। আকারে ইঙ্গিতেই যা বলার বলেছিল আবিদ । বহুকষ্টে বুড়োকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ডাকবাংলোয় উঠে পড়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে মিরসরাই থেকে পুবমুখো হয়ে রামগড় অবধি এসেছিল আবিদ। জায়গাটা মাটিরাঙ্গার দক্ষিণে। ক’দিন তুফানের মতন ঘুরল রামগড়। পাঠাছড়া, হাপছড়ি ... সৌম্য-রনিরা তারপর হালদা নদীর ছবি তুলবে বলে মানিকছড়ির দিকে চলে গেল । মানিকছড়ি রামগড়ের দক্ষিণপুবে। আবিদ ওদের সঙ্গে গেল না। আবিদের হঠাৎই কী কারণে মানুষের সঙ্গ ভালো লাগছিল না। ওর সঙ্গে রুমার তেত্রিশটি ছবি ছিল । এগারোটি ছবি পাঠাছড়ার কাছে খুব ভোরে একটি টিলার ওপরে উবু হয়ে বসে পোড়ালো। বাদবাকি বাইশটি ছবি রেখে দিল। পরে পোড়াবে ... মাটিরাঙ্গা রামগড়ের উত্তরে। একাই সে মাটিরাঙ্গা চলে আসে। ডাক বাংলোটি ফাঁকাই ছিল। ম্রো বুড়োটি একটা ঘর খুলে দিয়েছে কাল বিকেলে। যতœ করে পাহাড়ি স্টাইলে বনমোরগ রেঁধে খাইয়েছে রাত্রে। যাওয়ার সময় বুড়োকে শ ’পাঁচেক টাকা দিয়ে যেতে হবে। ট্যালকম পাউডারের হালকা সুগন্ধ পেল আবিদ। পিছনে খসখস শব্দ হতেই মুখ ফিরিয়ে দেখল মিসেস হারুন। শাদা শাড়ি বদলে নীল একটা সুতির শাড়ি পরেছেন ভদ্রমহিলা। ভদ্রমহিলা প্রায় মায়ের বয়েসী । কী রকম সঙ্কোচ হল আবিদের। আধখাওয়া সিগারেটটা রেলিংয়ের ওধারে ছুঁড়ে মারল । ভদ্রমহিলা মিষ্টি কন্ঠে বললেন, ঠিক আছে খাও। আমার ছেলেও তো আমার সামনেই খায়-কী এমন। বলে ভীষন ঘরোয়া ভঙ্গিতে আবিদের ঠিক উলটোদিকের সোফায় মিসেস হারুন বসলেন । ভদ্রমহিলার হাতে একটা নকিয়া। বললেন, এদিকে নতুন? নাকি আগেও এসেছ? না। মাটিরাঙ্গায় আগে আসা হয়নি। বেশ সুন্দর জায়গা। পিলাক নদী, আলুটিলা। তাইনডং, তবলছড়ি। তবে, মহালছড়ি আরও সুন্দর। কাছেই কাপতাই লেক। মিসেস হারুন বললেন। আবিদ বলল, আমি অবশ্য রাঙামাটি গেছি বেশ কবার। রাঙামাটি? হ্যাঁ। আবিদ মাথা নাড়ে। হঠাৎই মিসেস হারুন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। জান। বছর পনের আগে, তখনও শান্তি চুক্তি হয়নি, রাঙামাটিতে সাপছড়ির কাছে এক টিলায় শান্তিবাহিনীরা আমাদের ঘিরে ফেলেছিল। বলেন কী! তারপর? আবিদকে কৌতূহল গ্রাস করে। তারপর আর কী- মিসেস হারুন বললেন। সময়মতো আর্মি এসে পড়েছিল। গোলাগুলি হল। ওরা পালিয়ে গেল। লোকে শান্তিবাহিনী বলতে কি না কি বোঝে-আসলে ওরা তোমাদের মতোই বাচ্চা ছেলে। আবিদ কী মনে করে বলল, আপনার হ্যাজবেন্ড কিন্তু বেশ আমুদে। দেখলে রাশভারী মনে হয়। তখন ভাবলাম আমাকে দেখে কী না কী বলেন। কে আমার হ্যাজবেন্ড? মিসেস হারুন হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন। কেন? হারুন আঙ্কেল- আবিদ থতমত খেল। ভদ্রমহিলা মুখে হাতচাপা দিয়ে খিলখিল হাসিতে ভেঙ্গে পড়লেন। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন, ও। সবাই তাইই মনে করে। তুমি, এই ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার বুড়ো, মহালছড়ির গেস্ট হাউজের স্টাফরা ... তা হলে? আবিদ অবাক। কী তা হলে? ভদ্রমহিলার মুখে চাপা হাসি। তা হলে আপনি হারুন আঙ্কেলের কে হন? শুনতেই হবে? আপত্তি না থাকলে ... আপত্তি আর কি। আমি মিসেস হারুন নই। আমার নাম শায়লা, শায়লা পারভীন । আমার স্বামীও ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি বেঁচে নেই। সরি। এত বছর পর সরি বলে আর কী হবে। তখন বললাম না- বছর পনের আগে তখনও শান্তি চুক্তি হয়নি রাঙামাটিতে সাপছড়ির কাছে এক টিলায় শান্তিবাহিনীরা আমাদের ঘিরে ফেলেছিল। হ্যাঁ। তখন ওরা ওয়াহেদ, মানে আমার স্বামীর পায়ে গুলি করেছিল। আপনি? আমাকেও করত। করার আগেই ছেলেটির মাথার মগজ উড়ে গিয়েছিল। আবিদ শিউড়ে ওঠে। আমার আজও মনে আছে- শায়লা পারভীন বলেন-আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। আমি আর আমার হাজবেন্ড পাশাপাশি পড়ে আছি ঘাসের ওপর। আমরা গোলাগুলি শুনে রেস্ট হাউজের পিছনে কাঁঠাল বনে লুকিয়েছিলাম। কেউ একজন এগিয়ে আসে। শার্টপ্যান্ট পরা। মাথায় পট্টি। চাঁদের পাশে তার মুখ- মুখটা বাঙালির মতো নয়। হাতে চাইনিজ স্টেনগান। প্রথমে ওয়াহেদের মুখের কাছে নলটা নিয়েও পরে কী মনে করে ওর পায়ের দিকে তাক করে ... তারপর আমার দিকে নল ঘোরায়। গুলি করার আগেই চাকমা ছেলেটির মাথার মগজ উড়িয়ে দিয়েছিল আর্মির গানম্যান। আবিদ শিউড়ে ওঠে। ওয়াহেদের ডায়াবেটিস ছিল- বাঁ পায়ে গ্র্যাংরিন হয়েছিল। শায়লা পারভীনের কন্ঠস্বরটা বিষন্ন হয়ে যেতে থাকে। পাটা কেটে ফেলতে হয়েছিল। তার পরও বাঁচানো যায়নি ওকে। আবিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ওয়াহেদ মারা যাওয়ার পর আমি অথৈ জলে পড়লাম। ছোট ছোট দুটি ছেলেমেয়ে। তখন আমার হ্যাজব্যান্ডের বন্ধুরা এগিয়ে এল। আমি দ্রৌপদী হলাম। দ্রৌপদী মানে? আবিদ অবাক। দ্রৌপদীর নাম শুননি? থাক তা হলে। তোমাদের ভাষাতেই বলি-আমি আমার হ্যাজব্যান্ডের বন্ধুদের এবং আরও অনেকের এসকর্ট হলাম -মানে-সঙ্গীনি হলাম। কী এখন বোঝা গেল? নাকি আরও ভেঙ্গে বলতে হবে? তা হবে না। শাস্ত্রে নিষেদ। আবিদের ফরসা মুখটা কীরকম কুকরে যাচ্ছিল। স্ট্রেঞ্জ! এই মহিলা স্লাট! কী মিষ্টি চোখমুখ- সাবলাইম, অভিজাত, নাকে সরু নথ। তখন আবিদ ঘরে না গিয়ে বেতের সোফাতেই বসে থাকল। ওর ধারনা ছিল-একটু পর মিসেস হারুন এই বারান্দায় আসবেন। খুব কাছ থেকে শান্ত অভিজাত সৌন্দর্য দেখবে সে। মহিলা যদিও মায়ের বয়েসী -তাতে কী। আবিদ একটা গভীর বিষাদে ডুবে আছে ওর পায়ের তলার মাটি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। আবিদের একটা আশ্রয় দরকার-গভীর আশ্রয়। আশ্রয় তো জুটল না-বরং ওর বিষাদ আরও ঘন হয়ে উঠল। শায়লা পারভীন উঠে চলে যাবেন- এমন সময় তার হাতের নকিয়াটা বেজে উঠল । ওটা কানে তুলে কতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বললেন । তারপর ফোনটা অফ করে আবিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব। বললেন ফিরতে রাত হবে। বেশ ঝামেলা হইছে নাকি। ঢাকার ৬/৭জন পোলাপান নাকি একটা পাহাড়ি মেয়েকে রেপ করছে। পোলাপাইনের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের এক ছেলেও বোনের ছেলেও আছে। কী! আবিদ চমকে ওঠে। ... আমার আজও মনে আছে-আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। কেউ একজন এগিয়ে আসে। শার্টপ্যান্ট পরা। মাথায় পট্টি। চাঁদের পাশে তার মুখ- মুখটা বাঙালির মতো নয়। হাতে চাইনিজ স্টেনগান। প্রথমে মুখের কাছে নলটা নিয়েও পরে কী মনে করে পায়ের দিকে তাক করে ... যাই। ঘুম পেয়েছে। তোমার হারুন আঙ্কেল কাল রাতে আমাকে ঘুমাতে দেননি। মাঝে মাঝে তিনি এত জ্বালাতন করেন। আমাকে সারারাত জাগিয়ে রাখেন। আজও রাখবেন বলে মনে হচ্ছে। শায়লা পারভীন চলে যান। তারপরও ট্যালকম পাউডারের গন্ধ ভাসতে থাকে বাতাসে আবিদ বসে থাকে। অবশ বোধ করে। সিগারেট বের করে ধরায়। শক্তি পায় না। মাথার ভিতরে শীতল স্রোত, জলের শব্দ ...ওর কেবলি মনে হতে থাকে-শায়লা পারভীনকে কিছুতেই এই রকম অস্বাভাবিক ভূমিকায় মানায় না। ডাকবাংলোর নিঃসঙ্গ ম্রো বুড়োকে মানায়-বাগানের ঐ হলুদ হলুদ সূর্যমূখির ঝারকে মানায়-এমন কী ওর অর্ন্তগত দুঃখ-শোককেও মানায় - কেবল ... কেবল শায়লা পারভীনকে কিছুতেই রক্ষিতার ভূমিকায় মানায় না। ...তারপর কখন সে উঠে দাঁড়ায়, কাঠের সিঁড়ি বেয়ে বাগানে নামে আসে। দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায়। তারপর দিকে হাঁটতে থাকে । বাগানে শেষ অক্টোবরের শীত মাখানো হলুদ রঙের রোদ ছড়িয়ে। তখনও টিলার বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল শিশির ভেজা গাছের ছাল ও বুনো লতাপাতার গন্ধ । ডাকবাংলোর মেন গেটটা হা করে খোলা। পথটা ধীরে ধীরে নেমে গেছে। দুপাশে ইউক্যাপিটাস গাছ। দেবদারু গাছ। সেসব গাছে সবুজ রঙের ফার্ণ ঝুলে আছে। তাতে শেষ দুপুরের ঝলমলে রোদ। টিলা বেয়ে নামতে থাকে আবিদ। একটা কাঠবেড়ালী দৌড়ে গেল। আর কত যে শুকনো পাতা পথের ওপর। সিগারেটটা ছুড়ে মারল ...তাতেও আগুন জ্বলে উঠল না। শায়লা পারভীনের স্বামীর পায়ে গুলি না লাগলে? ঢালু পথটা পিচ রাস্তায় গিয়ে মিশেছে । ধুলো উড়িয়ে হর্ন বাজিয়ে একটা ট্রাক চলে গেল। তারপর একটা আর্মির জিপ। পিচরাস্তার দুপাশে বড় বড় কৃষ্ণচূড়া আর কড়–ই গাছ। সেসব গাছের পাতায় পাতায় অপরাহ্নের রোদ। সবুজ রঙের পুরনো একটা ধ্যাড়ধ্যারা একটা লোকাল বাস থেমে আছে। বাসের মাথায় কাঁঠাল আর মুরগির ঝাঁকা। কয়েকজন আদিবাসীর সঙ্গে দু-তিনজন হজুর-টাইপ লোক নামল বাস থেকে। চোখের পলকে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল তারা। হারুন আঙ্কেল তখন বলছিলেন: জোট সরকারের আমলে জোট সরকারের কয়েকজন মৌলবাদী মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় হাজার হাজার মুসলিম ফান্ডামেন্টালিস্ট হিল ট্র্যাক্টস-এ ঢুকছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের রাখতে চায় না ... কড়–ই আর কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে রাস্তার দুপাশেই হাটের মতন ভিড়। রাস্তার দুপাশেই বেতের ঝুরি নিয়ে আদিবাসী মহিলারা বসেছে। বেতের ঝুরি ভিতর শূকর। কোনও কোনওটায় বক, পায়রা কি ময়লা রঙের খরখোশ। হাটের পরিবেশটা কেমন থমথম করছিল। ৬/৭জন ঢাকার পোলাপান নাকি একটা পাহাড়ি মেয়েকে রেপ করেছে। আবিদ দ্রুত হাঁটতে পারে। পাকা কাঁঠালের গন্ধ ভাসছিল বাতাসে। এই বিকেলেও রাস্তার দু’পাশে কাঁকরোল আর করলার স্তুপ। ছালা বিছিয়ে একজন বুড়ি বসেছে দুটো পাঁতি হাঁস নিয়ে। কে কিনবে ওগুলো? মায়ের জন্য কি কেনা যায়? মায়ের ক্যান্সার। খবরটা শুনেই শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করল; মায়ের মুখটার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না ... তখনই শুনল রনি-সৌম্যরা মিরসরাই-রামগড় হয়ে আরও দক্ষিণে হালদা নদীর ছবি তুলবে বলে মানিকছড়ির দিকে যাবে। কোনওকিছু না-ভেবেই আবিদ ওদের সঙ্গ নেয়। শহরটা ছেড়ে ওর পালানো দরকার ছিল আরও একটি কারণে- রুমার ২২টি ছবিও কোনও নির্জন স্থানে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বাজারের আদিবাসী ভিড়ে চোখ ঘুরছে আবিদের। রাস্তার ধারে একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা ঘরে বোনা তাঁতের কাপড় নিয়ে বসেছে। লাল রঙের। মায়ের জন্য নেব ওটা? এখন থাক। পরে। এখন রুমার ছবিগুলি কোথাও পুড়িয়ে আসি। হাঁটতে হাঁটতে মুখ তুলে তাকাল আবিদ। বাজার ছাড়িয়ে ডান দিকে একটা নালা। তারপর একটা পাহাড়ি পথ বেঁকে ওপরে উঠে গেছে। শালগাছে ঘেরা পথ। বাঁ পাশে সিমেন্টের সিঁড়ি-উঠে গেছে বৌদ্ধ মন্দিরের চাতালে। একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘোরের মধ্যে আবিদ হাঁটতে থাকে। তখনও কানে বাজছিল শায়লা পারভীনের কন্ঠস্বর। আমি দ্রৌপদী হলাম। দ্রৌপদীর নাম শুনেছ তো। না শুনে থাকলে বলি: দ্রৌপদী মানে এসকর্ট। কী এখন বোঝা গেল? নাকি আরও ভেঙ্গে বলতে হবে? ...ঐ মহিলা বেশ্যা! কী মিষ্টি চোখমুখ- সমাহিত, ধ্যানী, নাকে সরু নথ। অত সুন্দর বেশ্যা হয়। বাঙালি? তখন কী অমায়িক ভঙ্গিতে বললেন-জান। বছর পনের আগে তখনও শান্তি চুক্তি হয়নি রাঙামাটিতে সাপছড়ির কাছে এক টিলায় শান্তিবাহিনীরা আমাদের ঘিরে ফেলেছিল। ওয়াহেদ, আমার স্বামীর পায়ে গুলি করেছিল। ডায়াবেটিস ছিল- বাঁ পায়ে গ্যাংরিন হয়েছিল। পাটা কেটে ফেলতে হয়েছিল। তার পরও বাঁচানো যায়নি ওকে। শায়লা পারভীনের স্বামীর পায়ে গুলি না লাগলে? টিলার ওপরে আসন্ন সন্ধ্যার গাঢ় ছায়া। আবিদ চারিদিকে তাকায়। কাঁঠাল আর শালগাছে ঘেরা খানিকটা সমতল জায়গা-আসলে সমতল জায়গাটাকে মাঠই বলা যায়-যেহেতু ঘাস আছে। মাঠের মাঝখানে বড় একটা পাথর। ডান পাশে একটা স্কুলঘরের মতন টিনসেড। কাউকে দেখা গেল না। বড় পাথরের দিকে এগিয়ে যায় আবিদ। ওর মনে হল ওকে কেউ আড়াল থেকে দেখছে। রুমার বাইশটি ছবি পকেট আছে। সেগুলি এখনও পোড়ানো হয়নি। বড় পাথরটার কাছে এসে পকেট থেকে লাইটার আর খামটা বার করল। তারপর উবু হয়ে বসে। এক পশলা বাতাস ছুটে এলো শালগাছের দিক থেকে। রুমার মুখটা আর সেই সঙ্গে মায়ের মুখটা মনে পড়ল। মাসখানেক হল মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছে । এই সময় রুমা বিট্রে করল। লাইটারটায় স্পার্ক করে। ছবিগুলোর এক কোণায় লাফিয়ে পড়ে আগুনর স্ফুলিঙ্গ -তারপরে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসছিল বলেই আগুন লাগা ছবির আগুন অনেকই স্পস্ট উঠল। ভিতরে ভিতরে অবশ বোধ করে আবিদ। কাদের যেন পায়ের শব্দ। মুখ তুলে দেখল ক’জন ছেলে ওকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। ছেলেগুলির বয়স ২২/২৩ বছরের বেশি হবে না। ওদের মায় টুপি, মুখে দাড়ি, পরনে পাকিস্তানি স্টাইলের সালোয়ার আর পাঞ্জাবি । কারও কারও পরনে গেঞ্জি। আবিদ উঠে দাঁড়ায়। কারা এরা? বাঙালি তালেবান? এই-এইখানে আপনি কি করেন? না, কিছু না। ঘুরে দেখছি। কার ছবি পোড়ান? না, মানে ... একটা মেয়ের। কোন্ মেয়ে? আমার এক্স গার্ল ফ্রেন্ডের নামাজ নাই কালাম নাই- এইসবই করেন মিঞা। শালা আমেরিকানের বাচ্ছা। এই-গলায় এইটা কী। শালার পুতে গান শুনে। নামাজ নাই কালাম নাই। কোরান তেলোয়াৎ শুন না ...শালা আমেরিকানের পুটকি দিয়া বারাইছ। কী বলতেছেন আপনারা? চোওপ! বেশি কথা বললে কললা নামায়া ফেলমু। এই মিঞা আপনে হিন্দু না মুসলমান? আমি আমি মুসলিম। বললাম না আমার নাম আবিদ সারওয়ার জয়। কি নাম আপনের? আবিদ সারওয়ার জয়। নামাজ পড়েন? পড়ি। মিছা কথা। মিথ্যে কথা বলে কী লাভ? কয় ওয়াক্ত পড়েন? ওয়াক্ত পড়িনা ... শুক্রবারে পড়ি ... জুম্মা শালা ইহুদির বাচ্ছা। নামাজ পড়ে না। সত্য কইরা ক- কি নাম তোর? নাম তো তখন তখন বললাম। কইল মুসলমান। দেকি নুনু বাইর কর। শুয়োরের বাচ্ছা ... এই এ কী কী করছেন ...ছাড়েন ...উহ্ ... থাক। নাকে খত দিলে ছাইড়া দে। হাজার হইলেও মুসলমানের পোলা। অয় শালা আমেরিকানের বাচ্ছা ...তুই আবার মুসলমান হইবি। কলেমা পড়বি? তরুণ জঙ্গিরা আবিদের জিন্সের প্যান্টটা টেনে টেনে প্রায় খুলেই ফেলেছে। ওরা আবিদের জাঙ্গিয়া খুলতে যাবে। ঠিক এমন সময় কাঁঠাল আর শালগাছের ওপাশ থেকে কারা যেন ফায়ার করতে থাকে । একজন তরুণ জঙ্গি চিৎকার করে বলল, শান্তিবাহিনী। চোখের পলকে সবাই মাটিতে শুয়ে পড়ে। আবিদও ... এক নাগাড়ে কটা কট কটা কট শব্দ হচ্ছে। মেশিন পিস্তল? ওর ঠিক পাশে সেই বড় একটা পাথরটা ...ও আড়চোখে দেখল -একজন জঙ্গি ক্রলিং করে টিনসেডের দিকে যাচ্ছে। সম্ভবত অস্ত্র আনতে। বুকটা ধরাস ধরাস করছিল ওর। কাঁঠাল আর শালগাছের ওপাশ থেকে কারা যেন ফায়ারিং করেই চলেছে। শান্তিবাহিনী। তখন হারুন আঙ্কেল বলছিলেন- প্যাঁচ আরও আছে ভাইসতা। বাংলাদেশি মুসলিম ব্রাদারহুডেরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের টোটালি আপরুট করতে চায় । পাহাড়ি যুবকরা তাদের আর্মড প্রোটেকশান তো দিবই দিব-জাতের টান বড় টান না? কাজে কাজেই, বিপদ গ্র্যাজুয়ালি বাড়তেছে। ওপাশ থেকে কেউ গর্জে ওঠে: নারায়ে তাকবির ... এদিকে প্রতিধ্বনি ওঠে-আল্লাহু আকবার ... তারপর দুপক্ষের প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে আবিদের কেমন ঘোর লাগে। যদি গুলি লাগে? যদি মরে যাই? আমি নতুন করে আর কী মরব। মায়ের ক্যান্সার ... রুমাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে...শায়লা পারভীন ... অনেক্ষণ পর। যখন ভয়ঙ্কর সব শব্দগুলি থেমে গেছে ... আবিদ চেয়ে দেখে আকাশে মধ্য অক্টোবরের পরিপূর্ন গোল চাঁদ। কার যেন পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। আজ সন্ধ্যার খন্ডকালীন যুদ্ধের বিজয়ী? ... শার্টপ্যান্ট পরা ... মাথায় পট্টি। মধ্য অক্টোবরের পরিপূর্ন গোল চাঁদের পাশে তার মুখ- মুখটা বাঙালির মতো নয় ... হাতে মনে হয় একটা স্টেনগান। চাইনিজ? প্রথমে আবিদের মুখের কাছে নলটা নিয়েও পরে কী মনে করে পায়ের দিকে স্টেনের নলটা তাক করে সে ... যেমন করে অনেক অনেক বছর আগে শায়লা পারভীনের স্বামীর পায়ের দিকে লক্ষ করে ঠিক এভাবে গর্জে উঠেছিল একটি চাইনিজ স্টেনগান... উৎসর্গ: খলিল মাহমুদ। কেন যেন তাঁর ওইসব পার্বত্য অঞ্চলের প্রতি অন্যরকম এক টান ... সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:১২
false
rg
দিনো'র মা'র পাঠশালা !!! দিনো'র মা'র পাঠশালা ছিল আমার প্রথম স্কুল। আমাদের হরিসভার ঠিক পেছনে বিপদভঞ্জন দাদু'র বাড়ি। বিপদভঞ্জন দাদু'র বাড়ির পেছনে একটা পুকুর। পুকুরের পাড় ঘেঁষে দিনোদের গোয়াল ঘর। গোয়াল ঘরের ঠিক পশ্চিম পাশে পূর্বমুখী আমাদের পাঠশালা। তার ডানপাশে দক্ষিণমুখী দিনোদের বসত ঘর। বসত ঘরের ডানদিকে দিনোদের রান্নাঘর। গোয়ালঘর, পাঠশালা, বসত ঘর আর রান্নাঘরের মাঝখানে দিনোদের উঠান। পাঠশালা আর বসত ঘরের মাঝখান থেকে শশধরদের বাড়িতে যাবার রাস্তা। আর গোয়াল ঘর ও রান্নাঘরের মাঝখান থেকে বিপদভঞ্জন দাদু'র বাড়িতে যাবার রাস্তা। সাধারণত আমরা বর্ষাকালে শশধরদের বাড়ির পথ দিয়ে পাঠশালায় যেতাম। আর শুকনোকালে যেতাম সোজা মাঠ পেরিয়ে গোয়াল ঘর আর রান্না ঘরের মাঝখানের পথ দিয়ে। দিনোদের বাড়ির পূর্বপাশটা ছিল ফাঁকা মাঠ। ওই ফাঁকা মাঠ দিয়ে সোজা পূর্বদিকে আমাদের বাড়ি প্রায় মাইল খানেক দূর। আমাদের বাড়ি থেকে দিনোদের বাড়ি আর বিপদভঞ্জন দাদু'র বাড়ি তখন খালি চোখে দেখা যেত। শুকনোর সময় আমরা দলবেঁধে ফাঁকা মাঠের ভেতর দিয়ে দলবেঁধে হেঁটে হেঁটে পাঠশালায় যেতাম। আর বর্ষাকালে যেতে হতো গ্রামের রাস্তা ধরে কৃষ্ণদের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে, তারপর বাড়ৈ বাড়ির পুকুর পাড় থেকে যতীন মণ্ডলের বাড়ির ভেতর দিয়ে শশধরদের উঠোন মাড়িয়ে। তবে শুকনো মৌসুমেও পাঠশালা থেকে ফেরার পথে সাধারণত আমরা বর্ষকালের ঘুর পথই বেছে নিতাম। কারণ গাছের ছায়ায় ছায়ার আসার জন্য ওই দূরের পথ মাড়াতে হলেও তা ছিল অনেকটা আরামদায়ক আর ঘটনাবহুল। আমাদের বাড়ি থেকে দিনো'র মা'র পাঠশালায় যেতাম আমরা পাঁচজন। আমার বড় তিন বোন, আমার চাচাতো ভাই কালাম আর আমি। কালাম ছিল বয়সে আমার চেয়ে মাত্র এক মাসের বড়। কিন্তু মারামারিতে কখনো আমার সাথে পারতো না। আমাদের সাথে তখন পড়ত বিনয়, ভজন, স্বপন, ঋষিকেশ, কৃষ্ণ, শশধর, সুখময়, বীরেন, সুনীল, সুবোধ, প্রকাশ, জীবন, প্রভাতী, সুভাষিণী আর পারুল। এদের মধ্যে শশধর আর জীবনকে আমরা সবাই দাদা ডাকতাম। কারণ ওরা বয়সে আমাদের চেয়ে অনেক বড় ছিল। আর মেয়েদের মধ্যে প্রভাতী ছিল বয়সে বড়। পাঠশালায় যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই তখন শশধর আর জীবনের মধ্যে একটা কনফ্লিক্ট হতো। আমরা ছোটরা তখন প্রায় পুরোটা পথ একেক সময় ওদের যুদ্ধরত একেকজনের পক্ষ নিতাম। পাঠশালা থেকে কৃষ্ণদের বাড়ি পর্যন্ত আমরা প্রায়ই থাকতাম শশধরের পক্ষে। কারণ ওই পর্যন্ত ছিল শশধরের টেরিটরি। এরপর আমরা ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কিসিমের অযুহাত দেখিয়ে জীবনের পক্ষ নিতাম। কারণ পরের পথটুকু পাড়ি দিতে সামনে জীবনের বাড়ি পড়তো। মাঝে মাঝে আমাদের উপরের ক্লাসের গোউর, নিতাই, রমেশরা যেদিন শশধরের পক্ষ নিতো, সেদিন একেবারে বিমলদাদের বাড়ি পর্যন্ত আমরা শশধরের পক্ষেই থাকতাম। বিমলদাদের বাড়ির ঠিক পরেই ছিল জীবনদের বাড়ি। তখন আমরা আবার দু'চার কথা ইনিয়ে বিনিয়ে শশধরের নামে বলে জীবনের পক্ষ চলে আসতাম। মাঝে মাঝে কখনো পুরো পথ আমরা জীবনের বিপক্ষে থাকতাম। সেদিন অবশ্য সুনীল, সুবোধ, প্রকাশরা মিলে আমাদের একেবারে জীবনদের বাড়ি ক্রোস করে ঘরামী বাড়ি যেখানে শেষ সেই ত্রিমোহনা পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকতো। যাতে জীবন আমাদের কিছু করতে না পারে। শশধর আর জীবনের মধ্যে যুদ্ধটা শুরু হতো পাঠশালায় বসেই। আমরা তখন তালপাতা ক্লাসের ছাত্র। দিনো'র মা'র নিয়ম কানুন ছিল ভারী কড়া। তালপাতার উপর লোহা পুড়িয়ে বড়রা আমাদের অক্ষর লিখে দিত। পাঠশালায় গিয়ে আমাদের প্রথম কাজ ছিল দোয়াতের মধ্যে জল আর কয়লা গুলিয়ে পছন্দ মত ভালো কালি বানানো। কালি বানানো শেষ হলে আমরা টুনির কলম দিয়ে সেই তালপাতায় প্রথমে লিখতাম স্বরবর্ণের অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৯, এ, ঐ, ও, ঔ, অং, আঃ। তারপর লেখা শেষে দিনো'র মাকে তা দেখাতাম। দিনো'র মাকে আমরা ডাকতাম দিদিমণি। দিদিমণি'র যে কোনো কথার জবাব দিতে হতো 'আজ্ঞে' বলে। দিদিমণি প্রত্যেকের তালপাতা খুব মনোযোগ দিয়ে পরখ করতেন। তারপর আরেকবার ব্যঞ্জনবর্ণ ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, ব, শ, ষ, স, হ, ক্ষ, ড়, ঢ়, য়, ৎ, ং, ঃ, ঁ লিখে আবার দিদিমণিকে দেখাতাম। তারপর তালপাতা ধোয়ার জন্য দিনোদের পুকুরে যেতাম হৈ হৈ করতে করতে। যতক্ষণ আমরা পাঠশালায় থাকতাম, ততক্ষণ এটাই ছিল আমার ডিউটি। আর দুপুর বারোটা বাজলেই আমাদের ছুটি হতো। তখন সবাই দিনোদের উঠানে ক্লাস অনুযায়ী কয়েক লাইনে দাঁড়িয়ে ক'য় অ কারে কা, ক'য় ই কারে কি, ক'য় ঈ কারে কী ইত্যাদি পড়ে দে বাড়ির দিকে ছুট। তালপাতা ধোয়ার জন্য পুকুর পাড়ে যাবার সময়ই শশধর আর জীবনের মধ্যে প্রথম যুদ্ধটা শুরু হতো। প্রথমে জল ছিটিয়ে, তারপর একেঅপরের গায়ে তালপাতার কালি মাখিয়ে দিয়ে। এরপর একসময় হাতাহাতি। ভেতর থেকে কেউ দেখে ফেললেই সেই যুদ্ধে তখন কয়েক ঘণ্টার বিরতি লাগত। কখনো কখনো দিনো'র মা নিজেই রান্না ঘর থেকে এই হাতাহাতি দেখে ফেলতেন। তখন শশধর আর জীবন দু'জনকেই কড়া শাস্তি দিতেন। মাঝখানে কোনো এক সময় শশধর পাঠশালা থেকে পালিয়ে একবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসত। আসলে শশধর তখন জীবনকে মারার জন্য পথে কোথাও লাঠি লুকিয়ে রেখে আসতে যেত। পাঠশালা ছুটির পর তখন যুদ্ধটা আবার শুরু হতো পথে। কখনো কখনো জীবন তখন মাইর খাওয়ার ভয়ে ফাঁকা মাঠ দিয়ে বাড়ি চলে যেত। আর যদি জীবন ছায়াপথে যেত তখন যুদ্ধটা তর্ক দিয়ে শুরু হতে হতে নিতাইদের বাড়ি পর্যন্ত চলত। তারপর নিতাই আর কৃষ্ণদের বাড়ির ফাঁকা রাস্তায় মারামারিটা হতো। মাঝে মাঝে জীবন প্রথম মাইরটা খাবার পর হয় শশধরের লাঠি কেড়ে নেবার চেষ্টা করত। আর তখন লাঠি কেড়ে নেওয়া নিয়ে শুরু হতো দু'জনের মহা ঠাসাঠাসি। আমরা পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তখন হাততালি দিতাম। তখন একটা বিষয় প্রায়ই ঘটত সেটা হলো, ওদের মারামারিতে আমাদের মত দর্শক না থাকলে সেদিন ওরা পরম্পর গালাগালি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকত। পরে ও ওকে দেখে নিবে এমন হুমকি ধমকি দিয়ে সেদিনের যুদ্ধ শেষ হতো। দর্শক না থাকলে কদাচিৎ ওরা মারামারি করত। কিন্তু দর্শক থাকলে তখন ওরা মারামারিতে সবসময় বেশি আগ্রহ দেখাত। এমন ভাব দেখাত যে, আজকের লড়াইটাই জীবনমরণ লড়াই। কেউ একজন বাঁচবে আর অন্যজন আজ নিশ্চিত মারা যাবে। কখনো কখনো জীবন প্রথম মাইরটা খাওয়ার পর গাছের ডাল ভেঙ্গে পাল্টা শশধরের উপর চড়াউ হতো। তখন সত্যি সত্যি যুদ্ধটা খুব জমতো। তবে লাঠির চেয়ে হাতাহাতি'র যুদ্ধটাই আমরা বেশি উপভোগ করতাম। কারণ তখন ওরা কিছুক্ষণ হাতাহাতি করার পরেই এক পর্যায়ে ঠাসাঠাসি শুরু করত। কেউ নিচে বেশিক্ষণ থাকলে আমরা দর্শকরা আবার ওদের পেছন থেকে ঠেলা দিয়ে তখন উল্টে দিতাম। এই কাজটা সাধারণত বেশি করত রমেশ আর বীরেন। কারণ আমরা ছোটরা কেউ এই কাজে জড়ালে আড়চোখে ওরা দেখে নিত কে কাকে উল্টে দিতে সহায়তা করছে। তখন কখনো কখনো নিজেদের মারামারি বাদ দিয়ে ওরা সেই তৃতীয় দুর্বল পক্ষকে অ্যাটাক করতো। তবে প্রকাশ, সুবোধ, সুনীল, রমেশরা কেউ এটা করলে জীবন আর পাল্টা আক্রমণে তখন সাহস পেত না। কারণ সুবোধ আর প্রকাশ ছিল চাচাতো ভাই। আবার রমেশ আর সুনীলও পরস্পরের চাচাতো ভাই। আবার সুবোধ, সুনীল, রমেশরা মামতো-পিসাতো ভাই। সুনীলের বাবা হলো সুবোধের বড় মামা। আর রমেশের বাবা হলো সুবোধের মেজো মামা। সেই হিসাবে প্রকাশ, সুবোধ, সুনীল, রমেশরা অটোমেটিক একটা শক্তিশালী জোট হয়ে যেত। জীবন তখন এমনিতেই লেজ গুটিয়ে বাড়ির পথ ধরতো। আবার তখনো শশধরের পক্ষে ওদের পাড়ার নিতাই, গোউর, কৃষ্ণ, ঋষিকেশ, স্বপনরা থাকতো। তাই কৃষ্ণদের বাড়ি পর্যন্ত জীবন মূলত একাই লড়াই করত। কখনো গোউর নিতাইদের সাথে রমেশের কোনো ব্যাপার ঘটলে সেদিন দেখা যেত রমেশ বীরেন, সুখময়রা শশধরের পক্ষ ছেড়ে জীবনের পক্ষ নিতো। সেদিন আসলে লড়াইটা বেশি জমতো। শশধর আর জীবনের এই লড়াই ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। যেদিন পাঠশালা বন্ধ থাকতো, সেদিন বিকালে খেলার মাঠেও এই যুদ্ধটা গড়াতো। এই লড়াইটা না করলে আসলে সেদিন ওদের কারোর পেটের ভাত হজম হতো না। যেদিন মারামারিটা একটু বেশি হতো বা কেউ সিরিয়াস ইনজুরি হতো, সেদিন আবার এটা নিয়ে পরে বিচার-শালিশ বসতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তী কয়েকদিন শশধর আর জীবনের লড়াইটা কেবল গালাগালি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতো। পরে মাঝখানে কয়েকটা দিন গেলেই আবার শুরু হতো ওদের সেই নিত্যকার যুদ্ধ। সাধারণত শশধর আর জীবনের এই লড়াইয়ে আমি যেদলে যেদিন থাকতাম, আমার চাচাতো ভাই কালামও সেদিন সেই দল বেছে নিতো। কোনো কারণে যদি কালাম আমার বিপক্ষ দল বেছে নিতো, সেক্ষেত্রে ত্রিমোহনা থেকে আমাদের বাড়ির রাস্তায় এসেই কালাম আর আমার মধ্যে শুরু হতো ঠিক শশধর আর জীবনের করা লড়াইটার শেষ অংক। আর সেদিন কালাম ঘুঘুঠাসা আর দু'চারটা মাইর খেয়ে বাড়িতে এসে মা'র কাছে কেঁদেকেটে নালিশ দিতো। সেই নালিশে আবার আমার বিচার হবার পালা আসতো। সেই বিচার সবসময় করতেন বাবা। যেদিন কালাম মাইর খেয়ে বাড়িতে এসে মা'র কাছে বেশি নালিশ দিতো, সেদিন আবার আমার দুপুরের খাওয়া থাকতো বন্ধ। কারণ ভয়ে আমি বাবার সামনে খাবার খেতে যেতাম না। আমি তখন কালামদের ঘরের খাটের নিচে গিয়ে পালিয়ে থাকতাম। কালামের মা মানে আমার চাচী তখন আমাকে ডেকে খাবার দিতেন। কালাম তখন চোখ পাকিয়ে পাকিয়ে দাদির কাছে নালিশ দিতো। বলতো, ও আমারে মারছে, আবার আমাদের ঘরে খাচ্ছে। কখনো কখনো সেই খাবার খাওয়ার সময় কালাম পাল্টা অ্যাটাক করতো আমাকে। আমি তখন খাওয়া ফেলে আবার মারামারি শুরু করতাম। কালামদের ঘরে বসে সেই মারামারিতেও আমাকে হারানো কালামের সাধ্য ছিল না। ও আসলে ছিল একটা ভীতুর ডিম। আমার তখন কাজ ছিল লাফ দিয়েই কালামকে জাপটে ধরে ঠাসাঠাসি করা। কারণ গায়ের শক্তিতে কালাম আমার সাথে তখন কিছুতেই পারতো না। তখন দাদী আর চাচী মিলে আমাদের সেই যুদ্ধটা ছাড়াতেন। সেক্ষেত্রে কখনো কখনো ভয়ে আমি রাতের খাবারও কালামদের ঘরেই খেতাম। কারণ এসব মারামারির খবর মা ঠিকই বাবাকে একফাঁকে বলে দিতেন। বিপদভঞ্জন দাদু ছিলেন একজন জাত শিল্পী। ওনার নিজের একটা কীর্তনের দল ছিল। তিন মেয়ে সবিতা, কবিতা, নমিতা ও একমাত্র ছেলে বিনয়, আর একই পাড়ার বিন্দু, মরাইদা (শশধরের বড় ভাই), বিষ্ণু, সাধু (সুবোধের মেজো ভাই), মনোজদের নিয়ে ছিল এই কীর্তনের দল। সকালে আমাদের পাঠশালা যখন শুরু হতো, ওদিকে ওপাশে তখন বিপদভঞ্জন দাদু বিন্দু, সাধু, মরাইদা, সবিতা, কবিতাদের নিয়ে গান অনুশীলন করতেন। হারমোনিয়াম, মন্দিরা আর খোলের শব্দ শুনলেই আমার পাঠশালার পড়াশুনার তখন কার্যত বারোটা বাজত। তখন একফাঁকে আমি পাঠশালা ফাঁকি দিয়ে (সাধারণত তালপাতা পুকুর ঘাটে ধুইতে এসে) পালিয়ে বিপদভঞ্জন দাদু'র বাড়িতে গিয়ে হাজির হতাম। বিপদভঞ্জন দাদু আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমাকে দেখলেই তিনি কোলে নিয়ে বসাতেন। আর হারমোনিয়াম বাজাতেন। বিপদভঞ্জন দাদু হরিসভায় যখন কীর্তন করতেন, তখন বাজাতেন খোল। তখন হারমোনিয়াম বাজাতেন মনোজ কাকু। বিন্দু, কখনো মন্দিরা কখনো খোল কখনো বাঁশি বাজাতেন। মরাইদা বাজাতেন মন্দিরা। সাধু বাজাতেন মন্দিরা বা খোল। আর গায়ক গায়িকা ছিলেন সবিতা, কবিতা, নমিতা আর বিনয়। পেছন থেকে বিপদভঞ্জন দাদু আস্তে আস্তে বলে ওদের প্লট ধরিয়ে দিতেন। বিনয় আমাদের সঙ্গে পড়লেও হরিসভায় যখন কীর্তন করতো তখন বড়দের মত ধুতি পড়তো বিনয়। এই পুরো কীর্তনের দলের দলপতি ছিলেন বিনয়ের বাবা বিপদভঞ্জন দাদু। যেদিন কীর্তনের এই অনুশীলনটা বেশি বেশি দেখতাম, সেদিন পাঠশালা থেকে কখনো বিনয়, কখনো সুনীল, বীরেন, সুখময়কে পাঠিয়ে দিদিমণি আমাকে ডেকে পাঠাতেন। আমাকে ডাকতে এসে ওরাও তখন কিছুক্ষণ এই কীর্তন অনুশীলন দেখতে মজে যেতো। সাধারণ পরপর তিনদিন পাঠশালায় বেশি ফাঁকি দিয়ে কীর্তন দেখলে আমার নামে বাড়িতে আপাদের কাছে নালিশ পাঠাতেন দিদিমণি। সেক্ষেত্রে আমার কাজ ছিল পাঠশালা ছুটির পথে শশধর আর জীবনের লড়াই না দেখে আপাদের ম্যানেজ করার জন্য আগেভাগেই তাদের সাথে বাড়িতে ফেরা। আর যদি কোনো কারণে ওদের লড়াই দেখার জন্য পথে জমে যেতাম, তখন নালিশটা বাবার কানে কখনো কখনো পৌঁছাত, মা ভায়া হয়ে। তবে আপাদের কেউ আমার বিরুদ্ধে নালিশ করে বেশিক্ষণ সেই খুশি হজম করতে পারতো না। কারণ, আমি তখন বানিয়ে বানিয়ে বা কখনো পেছনের কোনো সত্য ঘটনার কাহিনী আরো লম্বা করে পাল্টা ওদের নামেও কেস ফিট করার হুমকি দিতাম। কখনো সেই হুমকিতেই কাজ হতো। ওরা পথেই ম্যানেজ হয়ে যেতো। বাবার কানে পর্যন্ত দিদিমণি'র নালিশ তখন পৌঁছাতো না। কিন্তু আমার ফাঁকির মাত্র সীমা ছাড়িয়ে গেলে দিদিমণি কখনো কখনো সরাসরি বাবার কাছেই নালিশ দিতেন। কারণ বাবা সন্ধ্যাবেলায় একবার পাড়ায় হাঁটতে যেতেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পান খেয়ে আড্ডা দেওয়া ছিল বাবার খুব প্রিয় বিষয়। নালিশ থেকে যদি আমার গায়ে কখনো উত্তম-মাধ্যম কিছু পরতো, তখন আমি তার বদলা নিতাম তালপাতা ছিড়ে বা দোয়াত ভেঙ্গে। তখন নতুন দোয়াত ম্যানেজ করাটা একটা দুরূহ ব্যাপার ছিল। বড়রা তখন কালির কলমে লিখতো। সেই কালি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দোয়াত পাওয়ার কোনো চাঞ্চ নাই। অতএব তখন দোয়াত নাই অযুহাতে ইচ্ছামত পাঠশালা ফাঁকি দিয়ে বিপদভঞ্জন দাদু'র কীর্তন অনুশীলন দেখতাম। আবার সেই ফাঁকির মাত্রা সীমা লঙ্ঘন করলে অনেক সময় অন্য কাঁচের শিশিতে কালী বানানোর জন্য বিকল্প একটা ব্যাপার করতেন বড়রা। আসলে আমরা যত ফাঁকি দেবার চেষ্টা করতাম, বড়রা তখন অল্পদিন কয় পরেই বিকল্প একটা উপায় বের করে ফেলতেন। সেই বিকল্প উপায় নষ্ট করতে আবার কিছু বাড়তি নালিশ আসার মত ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত তখন মনে আসলে শান্তি পাতাম না। তখন হয়তো খামাখা পথে কারো কারো সাথে মারামারি করতাম ইচ্ছে করেই। আমাদের বাড়িতে তখন একটা বিষয় ছিল ভারী কড়া। স্কুল কামাই করা যেত না কিছুতেই। ওটা ছিল বাবার একেবারে কড়া হুকুম। যে স্কুলে যাবে না তার সেদিন ভাত বন্ধ। কোনো কোনো দিন বড় রাস্তা পর্যন্ত গিয়ে ইচ্ছে করেই পথ হারিয়ে স্কুল পালানো গ্রুপের সঙ্গে মিশে যেতাম আমরা। আমরা মানে আমি আর কালাম। সেদিন পাঠশালার পুরো সময়টা পর্যন্ত আমরা হয় বলেশ্বরে সাঁতার কাটতাম। নতুবা কোনো নিরিবিলি পথে বা বাগানে মার্বেল খেলতাম। নতুবা কোনো ঝোপঝাড় মার্কা গাছে বসে পুরো দুপুর কাটিয়ে দিতাম গল্প করে। ত্রিমোহনার কাছে ছিল একটা ছাড়াভিটা। সেই ভিটায় কয়েকটা ঝোপওয়ালা কাঁঠালগাছ ছিল। সাধারণত ওটাই ছিল আমাদের পাঠশালা ফাঁকি দেবার একটা বড়সর আস্তানা। একবার পাঠশালা ফাঁকি দিয়ে কালাম আর আমি সেই গাছে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। পাশেই মাঠে হাল চাষ করছিলেন কামুরুল মামাদের রাখাল আক্কেল। আক্কেল গরুর হাল নিয়ে লম্বা মাঠের ওপাশ ঘুরে আমাদের কাছ থেকে ঘুরে যাবার সময় আমাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনায় অংশগ্রহন করছিল। আমরা যেখানে গাছের ডালে বসেছিলাম, বাইরে থেকে কারোর আমাদের দেখার কোনো সুযোগ নাই। কিন্তু রাস্তা দিয়ে কে কোনদিকে যাচ্ছিল এসব আমরা সব দেখতে পেতাম। তখন প্রায় দুপুর। পাঠশালা ছুটির সময় প্রায় হয়ে গেছে। ওই পথ দিয়ে তখন বাবা বাড়ির দিকে ফিরছিলেন। বাবার মাথায় ছাতা। বাবা হঠাৎ খেয়াল করলেন আক্কেল হাল নিয়ে ঘুরে যাবার সময় কাদের সঙ্গে যেন কথা বলছে। হঠাৎ বাবা আক্কেলকে জিজ্ঞেস করলেন, কথা কও কার সাথে? জবাবে আক্কেল কিছু বলল না। শুধু হাসলো। কারণ আক্কেলের উপর আমাদের হান্ড্রেড পারসেন্ট বিশ্বাস ছিল যে আমাদের কারো নাম সে বলবে না। বাবা আবার জোরগলায় জানতে চাইলেন, কীরে কথা কইস কার সাথে? আক্কেল তখনো হাসলো। বাবা তখন আন্দাজে গাছের উদ্দেশ্য হাঁক ছাড়লেন, গাছে কারা? আমরা তখন স্পষ্টভাবেই বাবাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। বাবা আমাদের দূর থেকে ঠিক বুঝলেন না। কিন্তু আন্দাজে ঠাওর করলেন যে আমরা হতে পারি। আক্কেল অবশ্য ইসারায় বলতে চেয়েছিল, না ওই ডাঙ্গির পোলাপান। কিন্তু আক্কেলের অধিক হাসির কারণে সেই ইসারা কোনো কাজে লাগে নাই তখন। বাবা যা বোঝার বুঝে ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে চলে গেলেন। পাঠশালা ছুটির পর আপারা যখন ফিরছিল, তাদের ত্রিামোহনায় দেখামাত্রই আমরা সুরসুর করে গাছ থেকে নেমে আবার তাদের সামনে সামনে বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলাম। পথে দোয়াত থেকে কিছু কালি দুই গালে, গায়ে, প‌্যান্টে শার্টে ইচ্ছা করেই মাখালাম। এগুলো হলো পাঠশালায় ব্যাপক পড়াশুনা করার হাতেনাতে চিন্থ। এই কালি দেখে কারো বোঝার সাধ্য নাই যে আমরা সেদিন পাঠশালা ফাঁকি দিয়েছিলাম। বাড়িতে এসে দূর থেকে বাবার মতিগতি বোঝার চেষ্টা করলাম। দেখে বুঝলাম বাবা নরমাল। তার মানে পাঠশালা ফাঁকি ধরা খাই নাই। যথারীতি বাবার গোসল শেষে আমরা আবার দ্বিতীয়বারের মত ডুবাডুবি করতে পুকুরে নামলাম। তারপর যথারীতি রান্না ঘরে বাবার পাশেই খেতে বসলাম। প্লেটে ভাত মাখা মাত্র শুরু করেছি, খেয়াল করলাম বাবা মিটমিট করে হাসছেন। হঠাৎ বলা নাই কওয়া নাই বাবা প্রশ্ন করলেন, গাছে আর কে কে ছিল? তখন আমি বাবার থেকে এমন দূরত্বে বসা যে মিথ্যা বা বানিয়ে বলার কোনো বিকল্প চাঞ্চ নাই। সত্য বললে বরং মাইর থেকে বাঁচার একটা সুযোগ আছে! তাই ভয়ে ভয়ে দ্রুত নামগুলো বললাম, কালাম, মনোরঞ্জন, জীবন, স্বপন, আর কামরুল..........................................২২ এপ্রিল ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:৫০
false
ij
গল্প_ কাঞ্চনা নির্জন দীঘির পাড়ে সন্ধ্যা ১২৬০ খ্রিস্টাব্দের বর্ষাকালের মাঝামাঝি এক সন্ধ্যা । বাঙ্গালার এক নিভৃত পাড়াগাঁয়ের এক নির্জন দীঘির পাড়ে এক তরুণ মুসাফির দাঁড়িয়ে ছিল । মুসলমান তরুণটির নাম ইয়াসিন মালিক; তরুণের পরনে সাদা রঙের চাপকানের ওপর কালো রঙের চোগা, কালো রঙের পায়জামা, মাথায় সবুজ টুপি। তরুণের গায়ের রং ফরসা, চোখ দুটি আয়ত ও উজ্জ্বল, মুখময় বাদামি চাপ দাড়ি; কাঁধে রেশমী কাপড়ের ঝুলি, কোমরবন্ধে সুতীক্ষ্ম তরবারি। বহু পথ অতিক্রান্তের ফলে মুসাফিরকে মুখ ক্লিষ্ট দেখায়। তথাপি এই মুহূর্তে সন্ধ্যালগ্নের গভীর ছায়ায় ছাওয়া দীঘির বিস্তীর্ণ কালচে পানি দেখে ভিনদেশি তরুণ মুসাফিরটি মুগ্ধ হয়ে যায়। তার দিলে কাঁপন ধরে। তরুণটি কবি বলেই ঘোর লাগে, যেন সদ্য মোরাকাবা থেকে উঠে এসেছেন ঋদ্ধ এক পীর কিংবা সমরখন্দের পান্থশালায় রাত্রিভর পান করেছে পারস্যের ‘মেই’ মদিরা । বাঙ্গালার নিভৃত এক পাড়াগাঁয়ের এক নির্জন দীঘির এমনই মায়া ঘোর। তদুপরি সন্ধ্যা নামছিল বলেই রক্তিম আকাশের বুক চিরে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা উড়ছিল । দূরের দিগন্ত রেখায় একখানি পূর্নাঙ্গ চাঁদের উদ্ভাস, ইয়াসিন মালিকের বিশ্বাস: মেঘ না করে এলে আজ রাতটি হতে পারে চাঁদনি সফেদ রাত। দীঘির পাড়ে পাড়ে ঘন গাছগাছালির সারি, তার ওপর স্নিগ্ধ কিরণ ঝরে ঝরে পড়ে। চারিদিকে অদৃশ্য ঝিঁঝির ডাক ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে উঠতে থাকে। দূরে শেয়ালের ডাকও শুনতে পায় ইয়াসিন মালিক। এ দিকটায় কতগুলি সারিবদ্ধ তালের গাছ। ঘাসে ছাওয়া পাড়টি গড়িয়ে নেমে গেছে দীঘির পানির কিনারায় । ইয়াসিন মালিক তরবারি খুলে ঘাসের ওপরে রাখে; তারপর নিপুন ভঙ্গিতে ঢাল বেয়ে পানির কাছে চলে যায়; অজু করে। তারপর আবার পাড়ে উঠে আসে, উচ্চস্বরে আজান দেন। আজান শেষে পশ্চিমমুখী হয়ে নামাজ আদায় করে। ততক্ষণে অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে। চতুর্দিক থেকে মশারা এসে আক্রমন করছে। রাতের আশ্রয়ের খোঁজে হাঁটতে থাকে ইয়াসিন মালিক। ইয়াসিন মালিকের বৃত্তান্ত ইয়াসিন মালিকের জন্ম ইয়েমেন দেশের জাবাল আল তাইর প্রদেশে। তার বাবা শাহ্ আব্বাস শেখ পঁচিশ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেছিলেন; ইয়াসিনের সে সময় দুই বছর বয়স । ইয়াসিন মাতামহ আমজাদ বেহরৌজ ইয়েমেনের তিহামা প্রদেশে বড় হাকিম। ইয়াসিন শোকগ্রস্থা মায়ের সঙ্গে মাতামহের বাড়িতে বড় হয়। ইয়াসিনের মায়ের বিশ্বাস তার স্বামী বেঁচে আছেন। স্বপ্নে দেখেছেন শাহ্ আব্বাস শেখ হিন্দুস্থানে বহাল তবিয়তে আছেন। ইয়াসিন আমজাদ বেহরৌজ এর কঠোর তত্ত্বাবধানে বড় হয়, কিশোর বয়স থেকে হেকিমি বিদ্যা আয়ত্ম করতে থাকে। ক্রমে ইয়াসিন তরুণ বয়সে উপনীত হয়। তখন তার মা বলেন, তোমার আব্বা জানকে কৌশিশ করো। মায়ের আদেশে বাবাকে খুঁজতে বের হয় ইয়াসিন। একদল মুসাফিরের সঙ্গে আরব উপদ্বীপ হয়ে পারস্য পৌঁছে ইয়াসিন। ইয়াসিন সুদর্শন তরুণ; আরবি কবিতা কন্ঠস্থ, উপরোন্ত প্রতিভাবান হেকিম -পারস্যের কেরমান প্রদেশের এক ধনী ব্যবসায়ীর নজরে পড়ে যায় সে। ব্যবসায়ীর নাম বাহরাম আসগর; কেরমান প্রদেশে এক চেহেল সতুন-এ (চল্লিশ স্তম্ভ বিশিষ্ট প্রাসাদ) বাস করত। সেই ধনবান ব্যবসায়ীর খুবসুরৎ এক কন্য ছিল। অস্টাদশী সে কন্যার নাম গুলেনার। গুলেনার অপূর্ব রূপ দর্শন করে মায়ের আদেশ বিস্মৃত হয়ে যায় তেইশ বছরের তরুণ ইয়াসিন। গুলেনারের সঙ্গে ধুমধাম করে শাদী হয় তার। সে শাদীতে বয়েছিল ধনরতেœর নহর, বেশুমার রোশনাই। কেরমান প্রদেশের মানুষের মুখে মুখে বহুকাল ফিরবে সে বিবাহের কথা । বিবাহের পূর্বে ইয়াসিন মালিকের ছিল কুমার। মা ও মাতামহের কড়া নজরে ছিল। গুলেনারের সফেদ নগ্ন শরীর ছুঁয়ে ছেনে দিশেহারা বোধ করে মখমল নম্র বিছানায়, নম্র ভদ্র তরুণ ইয়াসিনের ছালের ভেদ করে বেড়িয়ে আসে সমরখন্দের উদ্যত বন্য ভালুক...গুলেনারের তৃষ্ণা তবুও নির্বাপিত যায় না ... বিবাহের পূর্বে গুলেনার মোটেও কুমারী ছিল না .. মেয়েটির অজাচার কেরমান বাসী জানে ...বুদ্ধি করে ধুরন্ধর বনিক বাহরাম আসগর ভিনদেশি পাত্রের কাছে অর্পন করেছে ... ,বহুভোগ্যা অষ্টাদশীটি শেষ রাত অবধি গুমড়ে গুমড়ে কাঁদে, উদ্যত ভালুককে আঁচড়ায় কামড়ায় ... এভাবে বন্য ভালুকটিকে নিঃস্ব করে ফেলতে চায় ... কারও কারও সুখ চিরকাল সয় না। আল্লাহতালার ইচ্ছে তেমন নয়ও ...সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় গুলেনার ইহ জগতের মায়া কাটিয়ে পরকালে চলে যায় ...ভগ্নহৃদয় ইয়াসিন মালিক আবার পথে নামে। হিন্দুস্থানে আসে। আগ্রায় এক সরাইখানায় উঠেছিল। মন খারাপ করে যমুনার ধারে বসে থাকত মধ্যরাত অবধি। এক রাতের স্বপ্নে পূর্বদিকে যাওয়ার নির্দেশ হয়। বিহার পর্যন্ত বড় একটি ইসলাম প্রচারক দলের সঙ্গে ছিল ইয়াসিন । এরপর ঠগীদের খপ্পড়ে পড়েছিল। কে কোথায় ছিটকে যায়! বাঙ্গালা মুল্লুকে একাই এসেছে। তার মনে হয় তার বাবা শাহ্ আব্বাস শেখ বাঙ্গালা মুলুকের কোথাও আছে... দীঘির পাড় ঘেঁষে ইয়াসিন মালিক হাঁটতে থাকে। দীঘির পাড়ে আবছা অন্ধকার আর ঘন বাঁশঝাড়। অবশ্য জ্বোনাকীর আলোয় ভরে আছে। নির্ভীক ইয়াসিন বাঁশ ঝাড়ে প্রবেশ করে। তার পায়ের নীচে অজস্র শুকনো পাতা। বাতাসে কচি বাঁশ পাতার গন্ধ, মৃদু ঘর্ষন-ধ্বনি। ঝিঁঝির ডাক গভীর হয়ে উঠছিল। খস খস শব্দ ওঠে। আপনাআপনি হাত চলে যায় কোমড়বন্ধের কাছে। নিরীহ খরগোশ কি বুনো শূকর-ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। আরও কিছুদূর যেতেই আধো অন্ধকারে পুকুর চোখে পড়ে। তার টলটলে পানিতে চাঁদের ছায়া। পুকুর পাড়ে আবছা একটি কাঠামো চোখে পড়ে। পুরাতন অট্টালিকা হবে হয়তো। পাথরে বাঁধানো বড় একটি চাতাল। ফুটফুটে জোছনায় দেখা যায় চাতাল ঘিরে কয়েকটি দালান। একটি দালান এখনও অক্ষত রয়েছে, ছাদ ধসে পড়েনি। চাতালে অনেক শুকনো পাতা পড়েছিল। ইয়াসিন সে পাতা জড়ো করে নিয়ে আসে। ঝুলি থেকে চকমকি পাথর বের করে আগুন ধরায়। ধক করে কমলা রঙের আগুন জ্বলে ওঠে। টের পেল খিদে পেয়েছে। কেরমান প্রদেশে শ্বশুরালয়ে সুখে ছিল। দাসদাসী সর্বক্ষণ সেবায় নিয়োজিত ছিল। আর এখন? ঝুলি থেকে শক্ত রুটি বার করে, মধু মাখিয়ে চিবায়। মশক বার করে পানি খেল। শুকনো কিসমিস চিবাল। অপূর্ব জ্যোস্না ছড়িয়ে আছে চাতালে। ইয়াসিন মালিকের ঘোর লাগে। সে ঘুমিয়ে পড়ে। কাঞ্চনা মাঝরাত। চাতালের শুকনো পাতার ওপর দিয়ে কে যেন হেঁটে যায়। সেই খসখস মৃদু শব্দে ইয়াসিন মালিকের ঘুম ভেঙে যায়। পাশে রাখা তরবারি টেনে নেয়। চাতালে ঘন জোছনা। একটি মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েটির হাতে কি যেন? দড়ি? ইয়াসিন চমকে ওঠে।দ্রুত উঠে মেয়েটি সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আশ্চর্য! মেয়েটি চমকে উঠল না। ইয়াসিন মেয়েটির হাত থেকে দড়ি ছিনিয়ে নিয়ে বলল, ছিঃ! মেয়েটি মাথা নীচু করে। যাও, ঘরে যাও । ইয়াসিন ইশারায় বলে। মেয়েটি চলে যায়। দ্রুত পায়ে। ফিরে এসে ইয়াসিন মালিক ঘুমের চেষ্টা করে। অনেক ক্ষণ হল আগুন নিভে গেছে। তার ঘুম আসে না। কে মেয়েটি? এত রাতে এখানে কি করছিল। হাতে দড়িই-ই বা ছিল কেন? এসব প্রশ্ন মাথার ভিতরে উঁকি দেয়। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল। অস্বস্তি বোধ করে ইয়াসিন। ...কখন ঘুমিয়ে পড়ে। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে ভোরে । দিনটি মেঘলা বলে আজ আর আলো ফুটল না। পুকুরে অজু সেরে এসে নামাজ পড়ে নিল। তার আগে নির্জনতা কাঁপিয়ে আজান দিল। মেয়েটি আসে। ঝিরঝির বৃষ্টি ঝরছিল। কলাপাতায় কী যেন ঢেকে এনেছে। ইয়াসিন মেঝের ওপর বসে ছিল। তসবি জপছিল। সে অবাক হয়। ওর পাশে লাল মাটির বাসন রাখল মেয়েটি। কলাপাতা সরিয়ে দেখল ভাত আর দই। বিহারের সরাইখানায় এ খাবার খেয়েছে। মেয়েটি দৌড়ে নারকেলের মালায় পুকুর থেকে পানি এনে দিল। খিদে পেয়েছিল ইয়াসিনের। সঙ্গে খাবার-দাবার যা ছিল ফুরিয়ে গেছে। খেতে খেতে ইয়াসিন হাতের ইশারায় জিগ্যেস করে, কি নাম? কাঞ্চনা। মিষ্টি কন্ঠস্বর। দেখতেও চমৎকার। শ্যামলা রঙের মিষ্টি মুখ। বড় বড় উজ্জ্বল চোখ। মুখখানি ঘোমটায় ঢাকা। খাবারটার স্বাদ কেমন টক টক। তবে ভালো লাগল খেতে। থাকা হয় কই? কাছেই, গ্রামে। কাঞ্চনা হাত তুলে দেখাল। তা কাল রাতে মরতে গিয়েছিলে কেন-স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বুঝি? কাঞ্চনা চুপ করে থাকে। বুঝেছি। তা ছেলেমেয়ে ক’টি তোমার? মাথা নাড়ল। তার মানে হয়নি। বুঝেছি।তা আমি ভিনদেশি মানুষ-বুঝলে? কাঞ্চনা মাথা নাড়ে। ইয়াসিনের খাওয়া শেষ। পানি খেয়ে হাত ধুয়ে নেয়, রূমাল বার করে মুখ মুছে নেয়। বলে, আমি আমার বাবাকে খুঁজতে এসেছি। কথাটা শুনে কাঞ্চনার মুখের রং কেমন বদলে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে ইশারায় বলে, আমার সঙ্গে আসুন। কোথায়? কথা না-বলে হাঁটতে থাকে কাঞ্চনা। ইয়াসিন উঠে দাঁড়ায়। তারপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে কাঞ্চনাকে অনুসরন করতে থাকে। শাহ্ আব্বাস শেখ-এর জীবনকাহিনী দীঘির পাশ দিয়ে পথ। যেতে যেতে কাঞ্চনা বলল, এই দীঘির নামই রানীর দীঘি। ওহ্। ঝির ঝির বৃষ্টি। আকাশ মেঘলা। ডান পাশে কলাঝোপ। সাদা রঙে গাই। ওদের দেখে হাম্বা রবে ডেকে ওঠে। গোয়াল ঘরের পাশ দিকে সরু পথ। উঠান। লোকজন চোখে পড়ল না। উঠানে কাদা। একটা ঘরের সামনে থেমে কাঞ্চনা ইশারায় ভিতরে যেতে বলে। ইয়াসিন ঘরে ঢোকে। ঘরের ভিতরে আধো অন্ধকার। মাঝখানে একটা চৌকি, চৌকির ওপরে একজন বৃদ্ধ বসে। গায়ের রং ধবধবে ফরসা, মাথায় টাক, মুখে পাকা দাড়ি, জোরা পাকা ঘন ভুঁরুর নিচে নীলাভ দুটি চোখ, যদিও চোখের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে এসেছে; ময়লা গেঞ্জি পরা, পরনে পাজামা; বৃদ্ধ কাশছিল। এখন মুখ তুলে তাকাল। ইয়াসিন বলল, সালাম। আমি ইয়াসিন মালিক । বৃদ্ধের চোখে মুখে আলো ফুটে উঠল যেন। আপনি কি শাহ্ আব্বাস শেখ? বৃদ্ধ সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। আপনার জন্ম কি ইয়েমেন দেশের জাবাল আল তাইর প্রদেশে? হ্যাঁ। আমি আপনার পুত্র। ইয়াসিন মালিক । আমার মায়ের নাম খোদাই করা এই চেরাগদানীটি দেখুন । বলে চাপকানের ভিতর থেকে একটি ছোট্ট পিতলের চেরাগদানী বার করে দিল ইয়াসিন। চিনেছি। বস বাবা। শাহ্ আব্বাস শেখ-এর মুখচোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ইয়াসিন চৌকির কিনারে বসল। জানালার ওপাশে কলাঝোপ। ঝিরঝির বৃষ্টির শব্দ হয়। কাঞ্চনা ভিতরে এল না কেন? ও কি বাবাকে চেনে? নিশ্চয়ই চেনে। বৃদ্ধ শাহ্ আব্বাস শেখ খনখনে কন্ঠে ছেলেকে এক বিচিত্র কাহিনী শোনান: ... পঁচিশ বছর বয়সে শাহ্ আব্বাস শেখ স্বপ্ন দেখে গৃহত্যাগ করেন । প্রথমে ইয়েমেন থেকে মক্কা শরীফ গেলেন হজ্জ পালন করার উদ্দেশে। মক্কায় সিরিয়ার বিশিষ্ট আলেম শাহ কুতুব ইব্রাহীমির কাছে দীক্ষা নিলেন। ওস্তাদ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে হিন্দুস্তান যেতে আদেশ করলেন। ইসলাম প্রচারকদের এক বৃহৎদলের সঙ্গে পারস্য হয়ে হিন্দুস্তান এলেন শাহ্ আব্বাস শেখ । দিল্লিতে কয়েক বছর থেকে ইসলাম প্রচারক দলের সঙ্গে বাঙ্গালায় এলেন। এক সরাইখানায় উঠেছিলেন। সেখানেই একটা স্বপ্ন দেখে দল পরিত্যাগ করেন। তারপর এখানে ওখানে ঘুরে সন্ধ্যালগ্নে এক দীঘির পাড়ে উপস্থিত হন। পরে জেনেছিলেন দীঘির নাম রানীর দীঘি। দীঘির অতল রূপে মুগ্ধ হন। তারপর নামাজ শেষে রাত্রি যাপনের কথা ভাবেন। দীঘির পাড়ে বাঁশ ঝাড়। আধো অন্ধকারে আবছা দালান চোখে পড়ে। পাথরে বাঁধানো বড় চাতাল। চাতাল ঘিরে ঘর। একটি তখনও অক্ষত। ছাদ ধসে পড়েনি। সেখানেই ঘুমোবার আয়োজন করেন। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। ...পাতার ওপর দিয়ে কে যেন হাঁটে। চাতালে ঘন জোছনা। দেখেন যে একটি মেয়ে। মেয়েটির হাতে কি যেন? দড়ি? শাহ্ আব্বাস শেখ চমকে ওঠেন। দ্রুত মেয়েটি সামানে গিয়ে দাঁড়ান। মেয়েটি চমকে উঠল না। তবে মাথা নীচু করে। যাও ঘরে যাও। বললেন । মেয়েটি চলে যায়। পরদিন খাবার নিয়ে মেয়েটি আসে । কথাবার্তা হয়। দিন কাটে। মেয়েটির সঙ্গে বিবাহ হয়। ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মেয়েটি, তবে নাম বদল করতে রাজী হয়নি। এই গ্রামে ঘর বাঁধেন। অবশ্য বাচ্চাকাচ্চা হয়নি। বছর দশেক আগে বউ মরল। ওই তো বাঁশঝাড়ের ভিতরে কাঞ্চনার কবর। বলে শাহ্ আব্বাস শেখ হাত তুলে বললেন। কী নাম বললেন! কাঞ্চনা? হ্যাঁ। আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। ইয়াসিন ভীষণ চমকে ওঠে। দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সে। মেঘলা উঠান খাঁ খাঁ করছে । কেউ দাঁড়িয়ে নেই... সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৪
false
ij
আজ মেল গিবসনের জন্মদিন। মেল গিবসন। প্রতিভাবান অভিনেতা, দক্ষ চলচ্চিত্র পরিচালক ও সফল প্রযোজক। আমরা জানি-সমকালীন বিশ্বের চলচ্চিত্র জগতে তাঁর আসন বিশিষ্ট। তাঁর ছবিগুলি কোথাও যেন অন্যদের চেয়ে আলাদ। গৎ বাধা নয়, মুখস্ত ফর্মূলাও নয়। বরং, ছবির নির্মান প্রকল্পে সাহসী ঝুঁকি লক্ষ করি। তাঁর ছবিতে আদিবাসী মায়ারা তাদের মাতৃ ভাষায় কথা বলে: যা অন্যের জন্য অভাবনীয়- তাইই মেল গিবসনের জন্য সহজ। কেন? তার কারণ অনুসন্ধান করা যাক। আমার যে কারণে ভালো লাগে ইতিহাস - ঠিক সেই একই কারণেই মেল গিবসনের ছবিগুলি আমার ভালো লাগে। মেল গিভসনের প্রধান প্রধান ছবি গুলির প্রায় সবই ইতিহাস ভিত্তিক। 'হ্যামলেট', 'ব্রেভহার্ট,' 'দ্য প্যাশন অভ দ্য ক্রাইস্ট,' 'অ্যাপোকালিপটো' এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে ‌'উই ওয়্যার সোলজারস।' থিয়েটারের প্রতি আজন্ম টানের কারণেই গিবসন ১৯৯০ সালে নির্মান করেছেন উইলিয়াম শেক্সপীয়রের 'হ্যামলেট' । এর প্রধান কারণ- তাঁর প্রথমদিককার থিয়েটারের শিক্ষক ছিলেন ব্রিটিশ। অন্য কারণ, গিবসনের সাহিত্যপ্রীতি। প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি অনুরাগ। শেক্সপীয়রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। ভারতীয় উপমহাদেশের কথা বলতে পারি না। তবে 'ব্রেভহার্ট' ছবির মাধ্যমেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন গিবসন। ১৯৯৫ সালের পর ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। ছবিটা রিলিজ পাওয়ার পরপরই তুমুল সাড়া পড়ে গিয়েছিল। সেই সব স্মৃতি আজও আমার মনে আছে। ছবিটা দেখতে দেখতে আমাদের মনে পড়ে গিয়েছিল একাত্তরের কথা। হায়, আমরা তেমন একটা ছবি নির্মান করতে পারলাম না একাত্তর নিয়ে যা দেখে পৃথিবীর সব মানুষ কাঁদবে। মিডিয়া এবং কলাকৌশল এবং অর্থ গিবসনদের দখলে থাকায় বিশ্বের চোখে একজন স্কটিশ বিদ্রোহী বড় হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে! যাক। গিবসনের 'দ্য প্যাশন অভ দ্য ক্রাইস্ট, নামে বিখ্যাত যিশুর ছবিটির কথা না বললেই না । তিনি আমার বিশ্বাসকেই চলচ্চিত্রে রুপ দিয়েছেন। আমার কি বিশ্বাস? আমার বিশ্বাস মা মেরী ছিলেন সে যুগের তুলনায় ছিলেন সচেতন ও অগ্রসর। তিনি বিজাতীয় রোমান শাসন-শোষন ও হিব্রু পুরুতদের ঘৃনা করতেন। অবস্থার পরিবর্তনের একমাত্র পুত্রকে উৎসর্গ করেছেন। নিজের চোখের সামনে নিজের ছেলের মৃত্যু দেখেছেন। মেরীর মতন নারী বিশ্বের ইতিহাসে খুব বেশি নেই। এবং খ্রিষ্টান ধর্ম আসলে ঠিক ধর্ম না-এক সুমহান বিপ্লবের গৌরবময় ব্যর্থ ইতিহাস। পরে ঘটনার ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে-যা আজও চলেছে। গিবসন সম্ভবত প্রকৃত সত্যটি বুঝতে পেরেছিলেন। যে কারণে গিবসনের পুরো ছবিটা জুড়ে মা মেরীকে দেখবেন। আমি মায়ের চোখের দিকে চেয়ে যা বোঝার বুঝে গেছি। আমার কথা বোঝার জন্য ছবিটি আবার দেখুন। খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। 'দ্য প্যাশন অভ দ্য ক্রাইস্ট' ছবিটির ভাষা আরামিক, লাতিন ও হিব্রু। ইংরেজী সাবটাইটেল ছাড়াই করত চেয়েছিলেন গিবসন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গিবসনের অসাধারণ সৃজনশীল শিল্পমনস্কতার পরিচায়ক নয় কি? এবং আমরা তাঁর কাছ থেকে শিখতে চাই। আমরা যদি কখনও সাঁওতাল/মারমাদের নিয়ে ছবি করতে চাই তো ছবিতে ওদের ভাষাই থাকুক না কেন? হাঁসদা নামে কোন্ এক মেয়ে এন টি ভি তে গানের প্রতিযোগীতায় সাওতালী গান গেয়ে কাঁপিয়ে দিল না? যা হোক। ব্যাক্তিগত জীবনে গিবসন একজন বিশ্বাসী ক্যাথলিক। পোপ কী বলেন না বলেন সে সব মন দিয়ে শোনেন। কাজেই তাঁর বিরুদ্ধে 'দ্য প্যাশন অভ দ্য ক্রাইস্ট' ছবিটা নিয়ে অ্যান্টিসেমিটিকবাদের অভিযোগ উঠেছে। উঠতেই পারে। আমি আগেই বলেলি-মা মেরী যথার্থ কারণেই ইহুদি পুরুতদের ঘৃনা করতেন। ইহুদিরা আজও ওসব ন্যক্কারজনক কানুন আঁকড়ে ধরে রেখেছে আর গাজা ধ্বংস করছে খুনিরা। যাক। অনেকের কাছেই 'অ্যাপোকালিপটো' ছবিটা ভালো লাগে নাই। শুনে আমি অবাক হয়নি। এ যুগে ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ শুন্যের কোঠায় নেমে গেছে। ইতিহাসভিত্তিক বলেই ছবি আমার ভালো লেগেছে। নিখাদ ঐতিহাসিক ছবি অ্যাপোকালিপটো। শুরুতেই ঐতিহাসিক Will Durant এর গভীর উক্তি : "A great civilization is not conquered from without until it has destroyed itself from within." ( কথাটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্য প্রযোজ্য। ওরা দুনীর্তি আর জামায়াত ছাড়ুক। ২০১৪ সালে তারাই দেশ শাসন করবে।) ছবির প্রারম্ভে Will Durant এর উক্তির সংযোজন গিবসনের ইতিহাস বোধেরই পরিচয়। গিবসন Apocalyptoশব্দের অর্থ করেছেন- ধ্বংসের পর নতুন যুগের শুরু। ছবির প্রেক্ষাপট ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে মায়া সভ্যতা । অভিনয় করেছেন স্থানীয় আদিবাসীরা। সংলাপ লিখেছেন প্রখ্যাত ইরানি সংলাপ লেখন ফরহাদ সাফিনিয়া ও গিবসন নিজে। তারপর সে সংলাপ ইউকাটেক মায়া ভাষায় অনুবাদ করা হয়। যদিও ইংরেজী সাবটাইটেল ছিল। লক্ষ্য করুন, পুরো ব্যাপারটায় গিবসনের সৃজনশীলতা কী রকম ভাবে ছড়িয়ে আছে। ছবিটির সুটিং, মানে ফিল্মিং হয়েছিল মেক্সিকোর ভেরাকুজ প্রদেশের গভীর অরণ্যে। তার আগে ঐ অঞ্চলে বন্যা হয়েছিল। রোটারি ক্লাবকে গিবসন ১ মিলিয়ন ডলার দান করলেন দুর্গতদের সাহায্য করার জন্য। এ ধরনের দান-আরও করেছেন গিভসন। তবে সে সব নিয়ে জনসমক্ষে প্রচারে বিরোধী। তারপরও দয়াশীলতার কথা সব জানাজানি হয়ে যায়। বিশ্বজুড়ে শিশুদের চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ দান করেছেন গিবসন। এবং গিবসন যেহেতু শিল্পকলার ভক্ত। কাজেই রেনেঁসা যুগের শিল্পকর্ম সংরক্ষণে মিলিয়ন ডলার দান করেছেন সংশ্লিস্ট সংস্থাকে। তাঁর সম্বন্ধে যতই জানছি। ভালো লাগছে। তখন বলেছি, 'উই ওয়্যার সোলজারস' নামে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ওপর একটি ছবি নির্মান করেছেন গিবসন। ছবিটা যুদ্ধবিরোধী। ২ ৩ জানুয়ারি ১৯৫৬ সালে মেল গিভসনের জন্ম নিউইয়র্কের পিকস্কিল-এ। মা অ্যানি রেইলি গিভসন। আইরিশ। পঞ্চম শতকের আইরিশ সাধু ছিলেন সেন্ট মেল। মেল গিবসনের ‘মেল’ নামটা ওখান থেকেই। মনে রাখবে হবে মেল গিবসনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি ‘ব্রেভহার্টের’ জন্যই। নিখাদ ব্রিটিশবিরোধী ছবি। হয়তো মায়ের কাছেই বালক মেল শুনেছিল স্কটিশ আর আইরিশদের ওপর ব্রিটিশদের অমানবিক শাসন-শোষনের ইতিবৃত্ত -যেমন আমি আমার মায়ের কাছেই শুনেছিলাম একাত্তরের নির্মম অত্যাচারের ইতিবৃত্ত এবং শপথ করেছিলাম ঐ নির্মম অত্যাচারের ইতিবৃত্তটা নিয়ে একদিন এক পৃষ্ঠা হলেও লিখব। ১৯৯৫ সালে ‘ব্রেভহার্ট’ রিলিজ পেয়েছিল। বিশ্ববাসী মেল গিবসনের মায়ের গল্পটা শুনল, শুনে চোখ ভেজাল। ঠিক একইভাবে ফিলিস্তিনী মায়ের গল্পটাও যেন বিশ্ববাসী শোনে। ইজরেলি ট্যাঙ্কগুলি এখন গুঁড়িয়ে দেবে গাজার বাড়িঘর ...হায়! মেল গিবসনের বাবার নাম হাটন গিভসন। সম্ভবত ব্যবসা করতেন। অর্থনৈতিক কারণেই হাটন গিবসন ১৯৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সিডনিতে চলে যান। তখন গিবসনের ১২ বছর বয়েস। বালক মেল পড়াশোনা করেছে মিশনারী স্কুলে। অভিনয়ের প্রতি টান হয়তো তখন থেকেই ছিল। এক ভাই অভিনয় করত। তা ছাড়া পরিবারে অভিনয়ে ইতিহাস আছে। যা হোক। যথা সময়ে মেল ভর্তি হলেন সিডনির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ ড্রামাটিক আর্ট-এ । প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল ব্রিটিশ থিয়েটার ঐতিহ্য । ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নাটকে অভিনয় করেছেন মেল। ‘আ মিড সামার নাইটস ড্রিম’। আগেই বলেছি, ১৯৯০ সালে হেমলেট নির্মান করেছেন মেল-যার অনুপ্রেরণা ওই শৈল্পিক পরিকেশ থেকেই লাভ করেছিলেন। এখানে আরেকটা কথা বলে নিই। মেল তখন অষ্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইডে থাকেন। যে বাড়িটায় থাকতেন সেই বাড়িরই ভাড়াটে ছিল রবিন মুর নামে এক নারী। পেশায় রবিন ডেন্টাল নার্স। মেলের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তারপর পছন্দ ... প্রেম ... ভালোবাসাবাসি ...ইত্যাদি। বিয়ে ৭ জুন; ১৯৮০। বিয়েটা হয়েছিল নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্যাথলিক চার্চে। আগেই বলেছি যে- গিবসন বিশ্বাসী ক্যাথলিক। পোপ কী বলেন মন দিয়ে শোনেন ... তো, যথাসময়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ ড্রামাটিক আর্ট থেকে পাস করে বেরুলেন গিবসন। সময়টা ১৯৭৭। পাস করেই একটা ছবির কাজে হাত দিলেন। ছবির নাম: ‘ম্যাড ম্যাক্স’ । অবশ্য মঞ্চেও অভিনয় চলছিল। প্রথম হলিউডি ছবি- ‘দ্য রিভার’। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। ১৯৯৫ সালে নির্মান করলেন ব্রেভহার্ট -যার ফলে আমরা তাঁকে চিনলাম, তাঁর মায়ের গল্পটা শুনলাম। তারপর ... আজ, ৩ জানুয়ারি। মেল গিবসনের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মেল গিভসন। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:২১
false
rg
কালো টাকা সাদা এবং অর্থনীতির সুফল কুফল।। রেজা ঘটক বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৪২ বছরে ১৩ হাজার ৫১৬ কোটি টাকার কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) -এর হিসাব অনুযায়ী সেই টাকার বিনিময়ে সরকারি কোষাগারে ট্যাক্স জমা হয়েছে মাত্র ১৪০৭ কোটি টাকা। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ১৯ লাখ টাকা। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ৮১ লাখ টাকা। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ১৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ১৪১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ১০২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৯,৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ৯১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ১,৮০৫ কোটি ১ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ২৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকা।উপরের চিত্র থেকে এনবিআর-এর হিসাবকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশে আসলে সেনা শাসন ছিল। আর ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় ছিল। এই ১৬ বছরে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৯,৭৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর তা থেকে সরকারের কোষাগারে কর জমা হয়েছে মাত্র ৯১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ২৬ বছর দেশ শাসন করেছে গণতান্ত্রিক সরকার। তারা কালো টাকা সাদা করেছে ৩,৬৩৬ কোটি ২ লাখ টাকা। আর তা থেকে সরকারের কোষাগারে কর জমা হয়েছে মাত্র ৪৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ ১৬ বছরের সেনা শাসন বা সেনা সমর্থিত শাসনের সময় দেশে বেশি কালো টাকা সাদা হয়েছে। যা অন্তঃত ২৬ বছরের গণতান্ত্রিক সরকারের তুলনায় প্রায় তিন গুন বেশি। আর কর আদায়ের ক্ষেত্রে তা প্রায় দ্বিগুন বেশি। এনবিআর বলছে, কালো টাকা হল সেই টাকা যা বৈধভাবে প্রদর্শণ করা হয় না। মানে অপ্রদর্শিত টাকা হল কালো টাকা। আর একটি আরামদায়ক হারে কর প্রদান করে তাকে বৈধ করলে তা সাদা টাকায় পরিণত হবে। তাহলে কালো টাকার সংজ্ঞায় খোদ এনবিআর একটি তামাশা করছে। কালো টাকা বা ব্ল্যাকমানি হলো অবৈধ পথে কামানো টাকা। দেশের প্রচলিত আইনে অবৈধ পথে টাকা কামালে আইনের চোখে তা বেআইনি। বেআইনি ভাবে টাকা কামাই করে কর দিলেই তা জায়েজ হওয়ার অর্থই হল, অবৈধ পথে টাকা কামানোর জন্য কালোবাজারীকে উৎসাহিত করা। কর দিয়ে টাকা জায়েজ করায় কালো টাকার মালিকদের তাই উৎসা তেমন নেই। বরং করের টাকাই তারা লস মনে করেন। যদিও এনবিআর-এর ধারণা, দেশে মোট জিডিপি'র অন্তঃত শতকরা ৮২ ভাগ সমান কালো টাকা রয়েছে। এটা ধারণা মাত্র। সত্যিকার অর্থে দেশে কালো টাকার পরিমাণ দেশের জিডিপি'র চেয়ে কয়েকগুন বড়। মানে দেশে কালো টাকার চেয়ে সাদা টাকার পরিমাণ নিশ্চিত ভাবেই কম। ৮২% বলা মানে হতে পারে ৮২% বেশি বা ১৮২% বেশি। কিন্তু কম হবে না এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।এই কালো টাকার মালিক কারা?কালো টাকার মালিক মন্ত্রী, এমপি, সচিব, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতানেত্রীরা। তারা কি সবাই আইন মানেন? জবাব হল- না, আইন তাদের জন্য মানার বিষয় নয়। আইন তারা বানায় সাধারণ জনগণের মানার জন্যে। আইন মানলে তো তারা কালো টাকার মালিক হতে পারেন না। কালো টাকার প্রধান উৎস কালোবাজারী, চাঁদাবাজি, খুন. গুম, মাদক ব্যবসা, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, বাজার সিন্ডিকেট, সীমান্ত পথে চোরাচালান, খেয়াঘাট, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, এয়ারপোর্ট, রেলপথ, নৌপথের ঠিকাদারী, ঘাট ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জমি দখল, সরকারি খাস জমি দখল, চর দখল, ব্যবসা দখল, মার্কেট দখল, নির্বাচনী নমিনেশান পাবার লেনদেন, দলীয় পদ দখলের লেনদেন, বিদেশে অর্থ পাচার, নারী ও শিশু পাচার, অবৈধ ব্যবসা, দুর্নীতি, অবৈধ ও বেআইনিভাবে অর্জিত এমন সকল আয়ই হল এক কথায় কালো টাকা। আইনের চোখে যার প্রত্যেকটি অপরাধ। একজন অপরাধী রাষ্ট্রের কাছে কর প্রদান করে কিভাবে তার অপরাধ থেকে মুক্তি পায়? এই দ্বৈত আইন যে দেশে প্রচলিত, সেখানে অন্তঃত আইনের শাসন কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না। জোর যার মুল্লুক তার। এটা যেনো মগের মুল্লুক। কালোবাজারীর ধর্ম কি? কালোবাজারীর কোনো দেশাত্ববোধ নেই। যে কোনো পথেই টাকা কামাই তার একমাত্র ধর্ম। তার কোনো রাজনৈতিক দাল নাই। নামে সে রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ে এসব করে। তার কোনো সামাজিক দায়দয়িত্ব নেই। সে সামাজিকতার নামে যা করে সেখানেও চাঁদাবাজি একটা বিশাল ফ্যাক্টর। এদের তারা প্রশ্রয় ও লালন পালন করে? আমাদের মন্ত্রী, এমপি, সচিব, আমলা, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা, সবাই। কেনো এদের লালন পালন করে? সেখানেও সেই লেনদেনের মামলা। সবই অবৈধ ব্যাপার স্যাপার। তারা কেনো তা সমর্থণ করেন? কারণ, অবৈধ পথে শর্টকাট টাকা কামনো যায়। কেবল কোথাও কোথাও একটু পার্সেন্টেজের ব্যাপার স্যাপার। সেই পার্সেন্টেজের সর্বশেষ বলি কো্থায়? স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে। সো, কালো টাকা সাদা হবে। দেশে কালোবাজারীর দৌরাত্মে যেহেতু সব কিছুই চলছে। সো আইন তো তাদের হাতে মোয়া। যখন খুশি সেই মোয়া যেভাবে পারে চাটে পোটে আর খায়। আর আমরা আমজনতা সেসব দেখে করি শুধু হায় হায়। আহারে কালো টাকা ....তুই যদি আমার হইতি রে, তোরে নিয়া উড়াল দিতাম, রাজস্ব অফিসে। সেখান থাইকা সাদা কইরা, শেয়ার বাজার ধ্বংস কইরা, খেয়াঘাটে গিয়া মুই গান ধরিতাম, ওরে কালো টাকা....তুই যদি আমার হইতি রে...
false
fe
বিশিষ্ট সাহিত্য ব্যক্তিত্ব সরদার ফজলুল করিম -এঁর একটি সাক্ষাৎকার সরদার ফজলুল করিম আমাদের সময়ের এক অসীম সাহসের নাম।বিশিষ্ট চিন্তক , দার্শনিক এই ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার টি নিয়েছেন প্রাবন্ধিকরতনতনু ঘোষ। সবার সাথে শেয়ার করতে এখানে পোষ্ট করলাম।---------------------------------------------------------------------------------জীবিত মানুষের চেতনায় নবজন্ম ঘটে মৃত মানুষের - সরদার ফজলুল করিম রতনতনু ঘোষ : আপনি কেমন আছেন?সরদার ফজলুল করিম : আমাকে কেউ যখন প্রশ্ন করেন : ‘আপনি কেমন আছেন?’ তখন আমি প্রশ্নকর্তাকে পাল্টা বলি : ‘কেমন’ শব্দের মধ্যকার ‘ম’ বাদ দিয়ে বলুন ‘আপনি কেন আছেন?’ প্রশ্ন করি আমার পরিবার ও শুভাকাংখীদের : আমি যখন অচেতন হয়ে মরে যাচ্ছিলাম তখন আমাকে কেন বাঁচালে? আমার আর বাঁচার ইচ্ছা নেই। বাঁচলে জীবনের কঠিন বোঝা বহন করতে হয়। এ বৃদ্ধ বয়সে আমি চোখে দেখি কম, দাঁত নেই, হাঁটা-চলা তেমন করতে পারি না, বেশিক্ষণ বলতেও পারি না, মাথা ধরে। আমি তো কারো জন্য কিছু করতেও পারি না। অনেক চেষ্টা করে, অর্থ ব্যয় করে আমাকে কেন অনর্থক বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। দেশে প্রতিদিন কত মানুষ মরে অনাহারে, অর্ধাহারে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটছে মানুষের। আমি বেঁচে আছি বার্ধক্যের জর্জরিত অবস্খা নিয়েও। সে জন্যই আমার প্রশ্ন : আমি বেঁচে আছি কেন? আমাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা কেন! এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি শেষ বয়সে।রতনতনু : বাঁচা-মরা নিয়ে এতো সিরিয়াসলি ভাবছেন কেন?সরদার : ওপার থেকে আমার ডাক এসেছে। সে ডাক আমি শুনতে পেলেও তোমরা তা শুনতে পাচ্ছ না। কারণ ওপারের ডাক শোনার চ্যানেল তোমরা ধরতে পারছো না। প্লেটোর রিপাবলিকে আছে সক্রেটিসের প্রশ্ন : তোমরা আমাকে যেতে বলছো, আমি কোথায় যাব? মৃত্যুর মাধ্যমে আমি সেখানে যাব সেখানেও কেউ না কেউ থাকবে। আমি তো একা সেখানে থাকবো না। মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের রূপান্তর ঘটে। কেউ থাকেনি। ‘জন্মিলে মরিতে হয়’­ সবার ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। যারা জন্মেছিল তারা কেউ নেই। যেতে হবে আমাকেও। এ জীবন যাপনীয়, আবার তা মরণীয়। মৃত্যু নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু নেই। তা আসবেই।রতনতনু : আপনি অনেক বই লিখেছেন, অনুবাদ করেছেন। প্রচুর বই সংগ্রহ করেছেন, পড়েছেন। এসব বই নিয়ে কী ভাবছেন?সরদার : আমি বইয়ের বলদ। জীবন ভরে বইয়ের শরীর স্পর্শ করে আনন্দ পেয়েছি। বইকে ভালবেসে বইয়ের বনে রয়ে গেলাম। আমার আর আছে কী। বইতো আমার সম্পদ। কোনো কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমার গড়া গ্রন্থাগারটি না হয় পাঠকদের জন্য দান করে দিতাম। যে বাসায় ভাড়া থাকি সেখানে তো পাবলিক এসে পড়তে পারছে না। তেমন পরিসর নেই, সুযোগও নেই। অনেক ডায়েরি লিখেছি। ভাল প্রকাশক পেলে সেগুলো প্রকাশের জন্য দিতে চাই। গুপ্তধনের মতো এগুলো আর পাহারা দিয়ে রাখতে চাই না। এ ডায়েরিতে আছে বাংলাদেশের তথ্যপঞ্জি, ঘটনার পটভূমি, কালের চিত্র।রতনতনু : শেষ জীবনে এসে আপনার কোনো চাওয়া-পাওয়া আছে কি? আপনি মরণোত্তর দেহ ও চক্ষু দানের জন্য উইল করেছেন?সরদার : শেষ জীবনে আমার আর কিছুই চাওয়া-পাওয়ার নেই। আগে জন্মেছি বলে পরের প্রজন্মের মতো বৈজ্ঞানিক সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে পারি না। আমি তোমাদের মতো ইন্টারনেট, কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারি না। ইলেক্ট্রিক্যাল জগতের সুবিধা থেকে আমি পিছিয়ে আছি। তোমরা আমার পিছু নিয়েছ বলে আমি মরতে পারি না। তোমাদের টানে-আকর্ষণে আমি বেঁচে আছি। আমাকে মরতে দিতে চায় না স্ত্রী, পুত্র, মেয়ে, মেয়েজামাই আর শুভাকাáক্ষীরা। তাদের ভালবাসার আকর্ষণে, পরিচর্যায় বেঁচে আছি আজো। আমি মরণোত্তর চোখ ও দেহদান করে যেতে চাই। তুমি আমার উইলটি ড্রাফট করে নিয়ে এসো। যদি কোনো হাসপাতালে কাজে লাগে তো লাগবে।রতনতনু : একদিন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন­ এটা ভাবতে আপনার কেমন লাগে?সরদার : অনেক আগে আমার এক বু হাত দেখে বলেছিল; তোমার মৃত্যুতে দুর্ভোগ আছে। মানে সহজে আমার মরণ হবে না। সেই বু আমার আগেই এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। ভাবছি এতো মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল আর আমি বার্ধক্যের যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। আমি নিজে এখন একটি প্রশ্নে পরিণত হয়েছি। নিজের প্রতি বিস্ময় আমার বেড়েছে। কী থেকে কী হচ্ছে আজো বুঝতে পারছি না, মেলাতে পারছি না। কীভাবে আজো বেঁচে আছি, তা আমারও প্রশ্ন। মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল আমার কয়েকবার। একবার পাকহানাদারদের হাতে, আরেকবার বন্দি অবস্খায় কারাগারে। বার্ধক্যে এসে আমার পা ভেঙেছে, দীর্ঘদিন ঘরে ছিলাম। আমার হাত ভেঙেছিল, অনেকদিন ঘর থেকে বের হইনি। কিছুদিন আগে আমার অপারেশন হলো। হাসপাতালে থাকলাম অনেকদিন। এখন ঘরবন্দি হয়ে বেঁচে আছি। চিকিৎসক মেয়ে, মেয়ের জামাইর চেষ্টা আর তোমাদের ভালবাসা আমাকে সহজে মরতে দিচ্ছে না। যতোই চেষ্টা করো তোমরা, মৃত্যু একদিন আমাকে নিতে আসবেই। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক, কবি শামসুর রাহমান আমাকে ভালবাসতেন। তারা চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। আমি কোন ঘোড়ার ডিম! আমাকেও যেতে হবে। আমি মৃত্যু নিয়ে দু:শ্চিন্তিত নই। মরার সাহস আমার আছে। মরবো তোমাদের ভালবাসা নিয়েই। আমি আমৃত্যু ভালবাসার ভৃত্য।রতনতনু : মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের সবকিছু কী শেষ হয়ে যায়? মৃত্যু সম্পর্কে আপনার ভাবনা কী রকম?সরদার : মৃত্যুতে মানুষের শেষ হয় না। মৃত্যুর পর মানুষের জীবন ও কর্মের প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব হয়। ব্যক্তির জীবনের স্বরূপ তাতে উপলব্ধি করা যায়। আমার প্রথম মৃত্যু ঘটেছিল যখন সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অচেতন অবস্খায় ছিলাম। আর অচেতন অবস্খায় আমার বুকে মালিশ করার পর চেতনা ফিরে আমার মাধ্যমে আমার পুনর্জন্ম অথবা দ্বিতীয় জন্ম ঘটেছিল। এ দুটো ঘটনা মিলিয়ে আমি অনুভব করি আমার প্রথম মৃত্যু ও দ্বিতীয় জন্ম। মানুষ বাঁচে তার কাজের মাধ্যমে, স্মৃতির ভেতর। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষ একেবারে হারিয়ে যায় না। মানুষের প্রকৃত জন্ম ঘটে মৃত্যুর পর। জীবনের বৃত্ত সমাপ্ত না হলে কাউকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায় না। জীবিত মানুষের চেতনায় নবজন্ম ঘটে মৃত মানুষের। আমি মনে করি, মৃত্যুর দিনই ব্যক্তির আসল জন্মদিন। জীবিত অবস্খায় ব্যক্তির মূল্যায়ন মূল্যবান হয় না।রতনতনু : এ মুহূর্তে আপনার জীবনের স্মরণীয় কোনো ঘটনা মনে পড়ছে?সরদার : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে গেলে সেখানকার একজন কর্মচারী বলেছিলেন : স্যার, আপনি তো ড্যাঞ্জারাস লোক! বলেছিলেন, পাকিস্তান না ভেঙে আপনি আর ফিরবেন না। পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ হলো, তারপরই আপনি আসলেন। লাইব্রেরির এ কর্মচারীর মন্তব্য আমি এড়াতে পারিনি। মিথ্যা বলে তা নাকচ করতে পারিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথমে বাংলা একাডেমীতে গিয়েছিলাম। সেখানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন : তুমি তোমার জীবনী লিখতে শুরু কর। আমাকে তিনি বাংলা একাডেমীতে চাকরি দিয়ে রক্ষা করেছিলেন দু:সময়ে। ‘দর্শনকোষ’ প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক অভিভূত হয়ে আমাকে গ্রহণ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে বলেন। একবার বিল দিতে ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ব্যাংকের কর্মচারী চিৎকার করে বলেছিলেন : ‘সরদার ফজলুল করিম কে? কে সরদার ফজলুল করিম?’ আমি ভেবেছিলাম একটা কিছু ভুল হয়েছে হয়তো-বা। আমি এগিয়ে যাওয়ার পর ওই কর্মচারী জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আপনি কি প্লেটোর সংলাপ লিখেছেন?’ জবাবে আমি বললাম, আমি সেটি অনুবাদ করেছি। একজন ব্যাংক কর্মচারীর এ জিজ্ঞাসায় আমি সেদিন খুব বিস্মিত ও অভিভূত হয়েছিলাম। জীবনে এসবই আমার বড় প্রাপ্তি মনে করি।-------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ/ সাহিত্য সাময়িকী/ ১২ জুন ২০০৮ বৃহস্পতিবার
false
ij
গল্প_ মথুরায় বছর তিনেক ধরে রায়হান আর কৌশিকের মাঝখানে পেন্ডুলামের মতন দুলছিল ইলোরা; শেষে রায়হানের দিকে ঝুঁকে গেলে কৌশিকের সঙ্গে ইলোরা সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পরপরই পশ্চিমদিকে যাত্রা করে কৌশিক। কলকাতায় তত ভালো লাগেনি এবার। টালীগঞ্জের সৌরভ-সমীররা ঘর-সংসার আর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত, কফিহাউজের মুখগুলি সব অপরিচিত। অনেকটা বাধ্য হয়েই দিল্লিগামী ট্রেন ধরেছিল সে; অবশ্য আমীর খসরুর ওপর একটা বই লেখার কথা কৌশিকের; গ্রন্থকীটের পান্থ মুর্শেদ খুব করে ধরেছে; ওদের প্রকাশনীটা নতুন; আসছে বইমেলায় হিট আইটেম চাই। ট্রেনে সারাক্ষণই ঝিমুচ্ছিল সে। সহযাত্রী এক নাইজেরিয়; মাঝবয়েসি ভদ্রলোক দর্শনের অধ্যাপক; সারাক্ষণই বোঝা যায় না এমন ইংরেজিতে সেলফ আর বিয়িংয়ের পার্থক্য বোঝাচ্ছিল। তারপর দিল্লি স্টেশনে নেমে সস্তা হোটেলের খোঁজ। তারপর রাতদিন পুরনো দিল্লির অলিগলি চষে বেড়িয়ে ইলোরা আর রায়হানের ওপর ক্রোধ নিভিয়ে ফেলা। হলিউডি ছবি দেখার মতো সস্তা আমোদে ডুবে যাওয়া ...তখনই পুরনো দিল্লির একটা সিনেমাহলের সামনে অনেকটা আকস্মিকভাবেই আমানডার সঙ্গে পরিচয় । স্লামডগ মিলিয়নিয়ার দেখে বেরুনোর সময় ভিড়ের মধ্যে আচানক আমানডার হ্যান্ডব্যাগটি ছিনতাই হয়ে যায়। সোনালি চুলের নীলাভ চোখের ফরসা বিদেশিনী মেয়েটি অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে কাঁপছিল; কৌশিকই ওকে বুঝিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য নিকটস্থ থানায় নিয়ে যায়। থানায় ব্রিটিশ তরুণি আমানডা ডিক্সনকে যেভাবে তোয়াজ করল তাতে মনে হল ভারতে এখনও ব্রিটিশ শাসন বিদ্যমান। বাংলাদেশি বলে কৌশিককে পছন্দ করেনি অফিসারা, যেন কৌশিক পাকিস্তানি আতঙ্কবাদী । ওসির নাম শিবলাল ইয়াদপ। অল্পের জন্যে লোকটার নাকে ঘুষি মারেনি কৌশিক। আমানডা কে চা অফার করলেও কৌশিককে করেনি। আমানডা অবশ্য চা খেল না। তারপর থানার বাইরে চায়ের দোকানে যখন ওরা দুজনে মুখোমুখি বসল- ততক্ষণে ব্রিটিশ তরুণিটি অনেকখানি ধাতস্থ। মুচকি হেসে বলল, হ্যান্ডব্যাগে টাকা-পয়সা যথেস্ট ছিল না। হেটেলে রেখে গেছি মুভি দেখার আগে। তুমি যথেস্ট বুদ্ধিমতী আছ। কৌশিক বলল। আমানডা হাসল। পালটা প্রশ্ন করল। মুভি কেমন লাগল?মন্দ না। এ আর রাহমান ভালো। কৌশিক বলল।হ্যাঁ। ভালো। আমানডা মাথা নাড়ে। হাসল। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনি?আমি কৌশিক আল আমিন। ডাক নাম রাতুল। নিবাস, ঢাকা শহরের কলাবাগান। সাংবাদিকতা করি। শখের ফটোগ্রাফার। ছেলেবেলার স্ট্যাম্পগুলি এখনও যতœ করে রেখেছি। এই আর কী। বলে কৌশিক কাঁধ ঝাঁকাল। হি হি। আমি আমানডা ডিকসন; লিভারপুল শহরে বল্ডষ্ট্রিটে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকি। চার্চ ষ্ট্রিটে পারিবারিক ব্যবসা, মানে জুয়েলারির শপ আছে। কি করব এখনও ঠিক করিনি। জাস্ট স্টাডি শেষ করেছি। ঘুরছি।একা।হু।এই প্রথম আমানডা অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন টের পেল কৌশিক। কী এক ব্যথার চোরাস্রোত নীলাভ চোখের আড়ালে বয়ে চলেছে। কৌশিক কবি: এসব সহজে বুঝতে পারে। অন্ধকারে ভেসে ওঠে ইলোরার মুখ ...আমানডা কি হারিয়েছে? চা স্টল থেকে বেরোতে বেরোতে রাত নটার মতন বাজল। ওরা আর হোটেলে ফিরল না। ঠিক করল, রাতভর ঘুরবে। রাতের পুরাতন দিল্লি। খিদে পেলে কোথাও নান রুটি আর শিশ কাবার খেয়ে নেবে। সাংবাদিক বলায় অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছে আমানডা। কাঁধের ঝুলি থেকে কবিতার বই বার করে অটোগ্রাফসহ উপহার দিল। কৌশিকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শিলালিপি থেকে পাঠ’ বইটি গত বইমেলায় বেরিয়েছিল। বইটি উপহার পেয়ে আমানডা পুরোপুরি বদলে যায়, কবি কৌশিক যেন অনেকদিনের পরিচিত। পরে জেনেছিল আমানডা সাজিটেরিয়াস। এরা ভীষণ আলাপি হয়, সম্পর্ক দ্রুত গড়ে তুলতে পারে। একটা রেস্টুরেন্টে দহিবড়া খেতে খেতে কৌশিক আমানডাকে রাধাকৃষ্ণের উপখ্যানটি বলে। ইন্ডিয়ান মিথটি নাকি অল্প অল্প জানে আমানডা। কৌশিক বলল, এসব অল্পই জানা যায়। সবটা জানা যায় না।আমানডা মাথা নাড়ে। পরদিন ভোরে ওরা বাসে উঠল। মথুরা জায়গাটা দিল্লির দক্ষিণ-পুবে। যেতে যেতে অনেক কথা হল বাসে। আমানডার হাতে একটা সুদৃশ্য মটোরোলা মাইলস্টোন। ঢাকায় এখনও এ জিনিস আসেনি। মাঝেমাঝে ফোন আসছে। কার সঙ্গে কথা বলছে ফিসফিস করে। মনে হচ্ছে চাপা গলায় কারও সঙ্গে ঝগড়া করছে। ব্যাপারটা না-দেখার ভান করল কৌশিক। তার বদলে জয়দেবের গীতগোবিন্দের কথা বলল কৌশিক। আমানডা বাংলা শিখবে। কৌশিক ওকে বাংলা শেখাতে রাজী হল। বলল: বল-আকাশ ছড়িয়ে আছে নীল হয়ে আকাশে আকাশেআমানডা বলল: আকাশ ছড়িয়ে আছে নীল হয়ে আকাশে আকাশেএবং এভাবেই ইলোরার মুখখানি অপসৃত হয়ে যেতে থাকে । তখনও জানেনি ও যে অচিরেই আমেনডাকে হারিয়ে ফেলবে! ‘শিলালিপি থেকে পাঠ’ থেকে ‘যে জন্য’ কবিতাটি অনুবাদ করে আমানডাকে শোনাল কৌশিক। যে জন্য তোমায় ডাকিঅবেলায়;শামুক-খুনিদের ভিড়ে মিশে আছো তুমিদেবতারা তখন থেকে ডাকছেন চল যাই।কী এর মানে? আমানডা অবাক।কৌশিক হাসে। সিগারেটে টান দেয়। ওরা এখন মাঝপথের যাত্রাবিরতিকে ধাবায় বসে চা পুরী খেয়ে নিচ্ছে। কবিতার কি সব মানে বোঝা যায়? পালটা প্রশ্ন করল কৌশিক। আমানডার মুখের ওপর জুলাই মাসের রোদ এসে পড়েছে। বাদামি রঙের ভ্র“ঁ। কুঁচকে আছে। ঘনঘন চোখের পাতা পড়ছে। আপনমনে বলছে: দ্য রিজন আই কল ইউ ইন আ ব্যাড টাইম ...অবেলায় কি ইন আ ব্যাড টাইম হবে? আসলে কবিতা অনুবাদ অসম্ভব। ভাবল কৌশিক। মথুরায় বাস স্টপে নেমে প্রথমে চিপ হোটেল খুঁজল ওরা। বেশি খুঁজতে হয়নি। কৌশিক এসব এলাকায় অনেকবার এসেছে। তবে হোটেলে বেশ ভিড়। ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে আমানডা ম্যানেজ করল। বিকেল আর সন্ধ্যা যমুনার ঘাটে কাটিয়ে অনেক রাতে হোটেলে ফিরে এল ওরা। আমানডা বলে: আমার জ্বর জ্বর লাগছে। কই দেখি! কৌশিক সংস্কারবশত ওর কপালে আর গলায় হাত রাখে... তখনই আমানডা ঢলে পড়ে কৌশিককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এমনটা যে হবে কৌশিক জানত। ছাইচাপা এক আগুন থাকে শরীরে । কৌশিককে গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরে আমানডা বলল, তোমাকে আমার ভালো লাগে। আমাকে বিবাহ কর। প্লিজ। আজ বিকেলে যমুনার ঘাটে বসে থাকার সময় আমানডা বলেছিল যে সেও আহত। আমি আর পারছি না। আই নিড সামওয়ান টু লাভ। কৌশিক দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। দু’জনেই আহত। দু’জনেই আহত মানুষ মথুরায় এসে মিলেছে। অন্ধকারে ফিসফিস করে আমানডা বলে, আমার অতীত নিয়ে কোনও প্রশ্ন করবে না। প্লিজ।ওকে। এখন অন্ধকারে আমানডার তলপেটের কাছে হাত রাখে কৌশিক । টানটান মেদশূন্য কোমল জায়গাটি ঈষৎ উষ্ণ। ঈষৎ উষ্ণ আর ভিজে ভিজে। তিরতির করে কাঁপছিল। কেন কাঁপছিল ? আমানডা নগ্ন। ঘুমিয়ে আছে। হাত আর নিচে নামায় না কৌশিক, বরং সরিয়ে নেয়। ঘুমন্ত মেয়ে-শরীরে হাত না-রাখার কী এক অলিখিত সীমারেখা আছে যেন নৈতিকতায়। সে সীমারেখা লঙ্ঘন করা যায় না। হাত সরিয়ে সিগারেট ধরায় কৌশিক। তামাকের ধোঁওয়াও তো ঘুমন্ত মেয়ের ক্ষতি করতে পারে? যদিও আমানডা জাগ্রত অবস্থায় প্রচুর সিগারেট টানে। তা হলে? আমানডার সঙ্গে তার বৈধ সম্পর্ক নেই। আজ রাতেই কেবল গভীর আবেগ বশত আমানডা বলেছে: আমাকে বিবাহ কর। প্লিজ। সিগারেটে টান দেয় কৌশিক; আর-অন্ধকারে ভেসে ওঠে ইলোরার মুখপরদিন দুপুরের দিকে আমানডা বলল, আজ না আমাদের সেই সাধু বাবার কাছে যাওয়ার কথা?ও হ্যাঁ, চল। কৌশিক বলল। কাল যমুনা ঘাটে বসে থাকার সময় একজন মাঝবয়েসি সাধুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। মাথায় বাদামি জট পরা দীর্ঘ চুল, পরনে হলুদ পাঞ্জাবি, লাল রঙের সিল্কের লুঙ্গি। সাধুর নাম শ্রীকৃষ্ণধন; আগে নাম ছিল বিশ্বনাথন আয়ার। বাড়ি দক্ষিণের ব্যাঙ্গালোরের কৃষ্ণরাজপুর। প্রথম জীবনে সংশয়বাদী ছিল। শ্রীকৃষ্ণকে স্বপ্ন দেখে সাধু হয়েছেন। সাধুর সঙ্গে টুকটাক কথা হল। আমানডাকে ইংরেজিতে বলল, গড হ্যাজ ম্যানেজড দি অ্যামাজিং ফিট অভ বিয়িং ওরশিপড অ্যান্ড ইনভিজিবল অ্যাট দ্য সেইম টাইম। সাধুর অমৃতবচনে আমানডা রীতিমতো ইমপ্রেসড। বাইবেলও নাকি মুখস্ত। কয়েকটি ভার্স শোনাল। আমানডার মুখচোখ থেকে বিস্ময় ঝরে ঝরে পড়ে।সাধু বাবার আস্তানা শহরের বাইরে। ঠিকানা কালই দিয়েছিল। ওরা বাসে উঠে শহরের বাইরে চলে আসে। তারপর বাস থেকে নেমে হাঁটতে থাকে। সরু গলি। মন্দির। ষাঁড়। দেওয়ালে আর বাড়ির কার্নিসে বাঁদর। একটা সিনেমাহল। স্লামডগ মিলিয়নিয়ার চলছে। ভিড়। সিনেমাহল ছাড়িয়ে গেলে মাঠ। আমবন। সাদা চুনকাম করা দেওয়াল। সবুজ রঙের দরজা। এটাই।হ্যাঁ। ২২/২; নিকুম্ভিলা। নক করল কৌশিক। খানিক ক্ষণ পর একজন মাঝবয়েসি মহিলা খুলে দিল। ভিতরে সিমেন্টের উঠান। লাল রংকরা টবে গোলাপ ফুলের গাছ। চারদিকেই বারান্দা। টিনসেডের ঘর। এখন শেষ বিকেল। ধূপের গন্ধ পেল কৌশিক। মেঝের ওপর বসে ছিলেন, লাল রঙের মেঝের ওপর নীল রঙের শতরঞ্জি পাতা। তারই ওপর বসেছিলেন সাধু শ্রীকৃষ্ণধন। পরনে ধপধবে সাদা আলখাল্লা। ও, আপনারা? আসুন। বসুন।শতরঞ্জির ওপর ওরা বসল। এ ঘরে ধূপের গন্ধ তীব্র। বাঁ দিকে তবলা আর সেতার চোখে পড়ল কৌশিকের। টিনের মগে কী যেন খাচ্ছিলেন সাধু শ্রীকৃষ্ণধন। তার পিছনে সাদা চুনকাম করা দেওয়াল। তাতে বাদামি রঙে লেখা: গড হ্যাজ ম্যানেজড দি অ্যামাজিং ফিট অভ বিয়িং ওরশিপড অ্যান্ড ইনভিজিবল অ্যাট দ্য সেইম টাইম। বাড়ি চিনতে অসুবিধে হয়নি? সাধু শ্রীকৃষ্ণধন জিজ্ঞেস করলেন। না। সাধু শ্রীকৃষ্ণধন অত্যন্ত আন্তরিক কন্ঠে বললেন, এই বাড়ি আসলে আমার পরম পূজনীয় গুরু দাদাহরির। তিনি এখন সুইডেন। ভক্তেরাই নিয়ে গেছে। এখন আমিই থাকছি। আসলে আমি বাস করি অন্যত্র। দাদাহরি কে?সে এক বৃহদায়তন চিন্ময় সত্ত্বা। নিরাকারের সাকার রুপ ধারণ করেছেন অপোরাক্ষ অনুভূতির বলে। স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। পরমপদ্মের নির্যাস তিনিই লাভ করেছেন মহাগুরুর ভাবকৃপায় রুপমায়াদির বশে তিনিই নিত্য শুভ্র জ্যোতিরুপে উদয় হন ...কৌশিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার মনে পড়ে অনেক কাল আগে লালা হরদয়াল নামে একজন ভারতীয় লেখক ভারতীয় ধর্মকে বলেছিলেন: শব্দ শব্দ শব্দ। নিন, চা খান।সেই হলুদ শাড়ি পরা মাঝবয়েসি মহিলা একটা ট্রেতে দুটো হলুদ রঙের টিনের মগ নিয়ে ঘরে ঢুকল। একটা প্লেটে পাঁপড় ভাজা। পাঁপড় ভাজা খেয়ে আমানডা ভারি প্রশংসা করল। একটু পর বলল, গুরুজী আমি ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ শিখব। বেশ । শিখবে। তা হলে এবার বল, পহেলা প্রহর মে সবকোই জাগেদুসরা প্রহর মে ভোগী;তিসরা প্রহর মে তস্কর জাগেচৌঠা প্রহর মে যোগী। তুলসী দাসের চৌখুপি। কৌশিক কোথাও আগে পড়েছে। আমানডা রিপিট করার চেষ্টা করে তিসরা প্রহর মে তস্কর জাগেচৌঠা প্রহর মে যোগী।সাধু শ্রীকৃষ্ণধন চৌখুপি ব্যাখ্যা করছে। আমানডা মুগ্ধ হয়ে যায়। সাধু শ্রীকৃষ্ণধন এরপর গুনগুন করে গান ধরেন। তেরে পাস হ্যায় হিরেমতিমেরে মনমন্দিরমে জ্যোতিমাত কার দু অভিমান রে বান্দা ঝুটি তেরি শান রে মাত কার দু অভিমানচমৎকার গলা। নাহ্, লোকটার গুণ আছে। আমানডা তো আকর্ষন বোধ করবেই। সেতারও বাজাতে পারেন সম্ভবত। আমানডা বলল, সংটা ট্রান্সলেট করুন গুরুজী । প্লিজ।সাধু শ্রীকৃষ্ণধন গানটার মানে বলে দিলেন। কৌশিক টের পায়। আমানডা অভিভূত হয়ে যেতে থাকে। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। সাধুবাবা অনেকটা এগিয়ে গেছে। কৌশিকের শূন্য শূন্য বোধ হয়। কৌশিক আমানডাকে বলল, চল এবার ফিরে যাই।না। আমি যাব না। যাবে না মানে?আমার যতদিন ইচ্ছে আমি এখানে থাকব ।তোমার জিনিসপত্র?কাল এক সময় যেয়ে নিয়ে আসব।ওহ্। তা হলে কি আমি চলে যাব?ভালো না-লাগলে চলে যেতে পার। ভালো লাগলে থাক।কৌশিক বিষন্ন বোধ করে। উঠে দাঁড়ায়। সাধু শ্রীকৃষ্ণধন সেতার টেনে নিয়েছেন। ঘরের বাইরে বারান্দায় বেরিয়ে আসে কৌশিক। সন্ধ্যার আকাশে ঝলমলে চাঁদ। মথুরার ওপর ধবল কিরণ ঢেলে দিচ্ছে। সেতারের ঝঙ্কার কানে আসে। সুরটা পরিচিত লাগল। ভারতবর্ষের এই মায়া। সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সেই হলুদ শাড়ি পরা মাঝবয়েসি নারীটি কৌশিককে প্রণাম করে।এই দৃশ্যটাই অনন্তকাল মনে থাকবে তার। বাইরে বেরিয়ে আসে সে। একটা সিগারেট ধরায়। তারপর হনহন করে হাঁটতে থাকে। উদ্দেশ্যহীন । এমন কত কত রাত ঢাকার রাস্তায় হেঁটেছে সে। উদ্দেশ্যহীন । আজও অনেক ক্ষণ ধরে হাঁটল। আমানডার মুখটা মাঝেমধ্যে মনের মধ্যে ভেসে উঠছে। আমানডা এক আহত মানুষ। কৌশিকের সঙ্গে শরীরি প্রেমের ঘোর কেটে গেছে। আসলে ওসব ব্রিটিশদের কাছে নতুন কিছু না; আমানডা ইন্ডিয়ায় এসেছে মূলত অতীন্দ্রিয় রহস্যময়তার খোঁজে, তার খোঁজ পেয়ে গেছে আমানডা। এখন ওর দুঃখবোধ ঘোচাতে অন্যরকম আবহ চাই; হাইলি মিস্টিক স্পিরিচুয়াল ফিলিংস ...জুলাই মাসের পূর্ণিমার রাত। মথুরা শহরের উপকন্ঠে আজ রাতে জোছনার ঢল নেমেছে। কে যেন বাঁশি বাজায় দূরে। ঘোরের মধ্যে হাঁটতে থাকে কৌশিক ।
false
ij
আমরা কি অভ্যন্তরীন পর্যটনের কথা ভাবতে পারি_ (৩) গ্রামের মধ্যে হোটেল কিংবা কাদামাটির প্রলেপ রহমান সাহেব পাগলাটে ধরনের লোক। দীর্ঘদিন খুলনার ইউসুফ জুটমিলে চাকরি করেছেন। এখন গ্রামের বাড়িতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। স্ত্রী দীর্ঘদিন হলো মৃত। ছোট মেয়েটা ঢাকায় থাকে। বড় ছেলেটি অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়া তো দূরের কথা, ঢাকাতেও কালেভদ্রে যান রহমান সাহেব। এও তাঁর এক খেয়াল। তো, বছরখানেক হল এক নতুন খেয়ালে মেতেছেন রহমান সাহেব। হোসেনপুর গ্রামে রীতিমতো হোটেল খুলে বসেছেন। হোটেল মানে পৈত্রিক ভিটের ওপর কাচারিবাড়িটাই খানিক সাফসতরো করে নিয়েছেন। ছ-সাতটি ঘর। শহর থেকে অথিথি আসবে। ঘরসংলগ্ন পরিস্কার বাথরুম করেছেন। শহরের অতিথির প্রথম দাবী ঘর সংলগ্ন পরিস্কার বাথরুম । খববেরর কাগজের বিজ্ঞাপনে সে কথা বলাও হয়। কিছু টাকা খরচ হয়ে যায়। হোক। হোটেল থেকে আয়ও তো হবে। হচ্ছেও। শহরের পেপারে বিজ্ঞাপন দেখে লোক আসছে । খরচ তো কক্সবাজারের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ। তবু রহমান সাহেবের আয় ভালোই। টাকা জমিয়ে মায়ের নামে গ্রামে একটা বার্ধক্যনিবাস করবেন ভাবছেন। হোটেলের রাঁধুনি রাঙার মা। বৃদ্ধা। বিধবা। স্বামী মরার পর ছেলে তাড়িয়ে দিয়েছিল। পুবপাড়ায় খালপাড়ে বসেছিল। কথাটা শামসুলের মুখে শুনে রহমান সাহেব নিজে গিয়ে ডেকে এনেছেন। তা, হোসেনপুর গ্রামটি এমন কিছু আহামড়ি নয়। তবে যথারীতি সবুজ। আর শহর হল ধূসর। শহরের মানুষ হোসেনপুরে এলে চোখের আরাম টের পায়। এখানে আকাশের নিচে বিস্তর চাষের জমি। গাছপালা। মাঠ। পুকুর। গ্রামের পুব দিকে বড় একটা দিঘী। লোকে বলে, চন্দ্রদিঘী। দিঘীর পাড়ে শতাব্দী প্রাচীন এক ছায়াময় বটবৃক্ষ। অতিথিরা ঘুরে ঘুরে দেখে মুগ্ধ হয়। গ্রাম ঘুরিয়ে দেখায় শামসুল। ষোলসতের বছরের শ্যামলা মিষ্টি চেহারার কিশোর। এতিম। বাপ-মা মারা যাওয়ার পর চাচার বাড়ি ছিল। ওখানে অনেক কষ্ট। রহমান সাহেবই মায়াবশত ডেকে এনেছেন। বাপ-মা মারা যাওয়ার পর লেখাপড়া মাথায় উঠেছিল শামসুলের। এখন রাতের বেলা পড়ান শামসুলকে। স্কুলেও নাম লিখিয়ে দিয়েছেন। গত জুনে মিসেস ইসলাম ঘুরে গেলেন হোসেনপুর। তখন একটা ঘটনা ঘটেছিল। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখেই ছেলেমেয়েসমেত গিয়েছিলেন মিসেস রুবি ইসলাম । মেয়ের নাম ফরিয়া। সার্টপ্যান্ট পরা গোমড়া মুখের শ্যামলা মতন দেখতে। আসলে মেয়ের জন্যই যাওয়া। মেয়েটা দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন টেলিফোনে কথা বলে ... মিসেস রুবি ইসলামের বড় ছেলের নাম শিহাব। বুয়েটে পড়ে। লম্বা। ফরসা। চশমা-পরা। একটা অ্যাকুয়েস্টিক গিটার এনেছে। কাট-এওয়ে। আইভানেজ। রহমান সাহেব পাগলাটে ধরনের লোক। শিহাবকে বললেন, মাইজভান্ডারি পার নি? স্কুল খুইলাছে রে মওলা স্কুল খুইলাছে হে হে ...বলে বুকে দুম দুম বারি। মিসেস ইসলাম হেসে বললেন, না না চাচা। ওরা কী সব অলটারনেটিভ শুনে। শুনি বাবা। বাজাও। দুপুরের খাওয়ার পর সবাই বারান্দায় বসে ছিল। শিহাব ঘর থেকে গিটার এনে টিউনটা ঠিক করে পাওয়ার কর্ড বাজিয়ে গাইতে শুরু করে- দুজনকে মনে হয় দুগ্রহের ... গান শেষ হলে রহমান সাহেব মাথা দুলিয়ে বললেন, ভালো। শামসুল দাঁড়িয়ে ছিল কাছেই। ওর মুখচোখে আনন্দের আভা। শিহাব গিটার রেখে আশপাশটা ঘুরে দেখতে উঠানে নেমে গেল। ওর পিছন পিছন ফারিয়া। উঠানে রোদ ঝকঝক করছিল। খড়ের গন্ধ। গোবরের গন্ধ। রহমান সাহেব গাই পালছেন। শহরের অতিথিরা খাঁটি দুধের স্বাদ পেয়ে মুগ্ধ। যা দেখছি ভালোই লাগছে। মিসেস রহমান বললেন। রহমান সাহেব বললেন, সবাই কক্সবাজার যায় সুখে। আর আমার এখানে মানুষ আসে মনে বাস্প জমলে। ও। মিসেস ইসলামের মুখে ছায়া ঘনালো। কি যেন আড়াল করতে চাইছেন। রহমান সাহেব বললেন, আমি যেই অপিসে চাকুরি করতাম,খুলনায়, সেখানে জুবায়ের রহমান নামে আমার এক কলিগ ছিল। ইন্টারনাল টুরিজমের আইডিয়াটা তারই। আমি রিটায়ার কইরা এখন বাস্তবায়ন করতেছি। মিসেস ইসলাম বললেন, পেপারে দেখে এলাম। ছেলেমেয়েদের শহরে ভালো লাগছে না। বিশেষ করে মেয়েটার। বুঝছি। আস্তে আস্তে লাগব। বিকালে চন্দ্রদিঘীটা দেখলে ভালো লাগবে। যান বেড়াইয়া আসেন। শামসুল নিয়া যাবে। আপনার মেয়ের মনে হয় সমস্যা। জ্বী। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। রাতে তেমন ঘুমায় না। খালি জেদ করে। বুঝছি। বৃষ্টি নামলে সব ঠিক হয়া যাবে। মানে? মিসেস ইসলাম অবাক। মানে পরে বলব। বলে রহমান সাহেব উঠে গেলেন। মিসেস রহমান ছেলেমেয়েদের নিয়ে গ্রাম দেখতে বেরুলেন। সঙ্গে শামসুল ছিল। চন্দ্রদিঘীর পাড়ে এসে ফারিয়া একবার ফোন করতে চাইল। রিফাতকে বলবে, ¯স্প্রেডিং অ্যানসিয়েন্ট বানিয়ান ট্রিটার কথা। মিসেস ইসলাম দিন কয়েক হল মেয়ের সেলফোন জব্দ করেছেন। মেয়েকে ধমক দিলেন। ফারিয়ার মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে ওঠে। ইংরেজীতে কী যেন বলল। চাপা স্বরে। শিহাব বলল, উফঃ, তোমরা আবার শুরু করছ। বিকেলের আগেই সবাই ফিরে এল। বেড়ানোটা তেমন জমল না। সন্ধ্যের পর ধুম বৃষ্টি শুরু হল। খাওয়া-দাও সারতে সারতে নটা বাজল। ফারিয়া খেতে এল না। রহমান সাহেব মিসেস ইসলামকে বললেন, যান মেয়েরে নিয়া উঠানে যান। উঠানে যাব কেন? । মিসেস রহমান অবাক। উঠানে বৃষ্টি আর অন্ধকার। কাদা। যান। মেয়েরে উঠানে নিয়া গিয়া জামা খুইলা কাদায় গড়াগড়ি দেন। কেউ দেখব না। মানে? মিসেস রহমান অবাক। রহমান সাহেব বললেন, আপনাগো গায়ে অনেকদিন হইল কাদা লাগে না। তাইতে মনের অসুখ হইসে। যান মেয়েরে উঠানে নিয়া গিয়া জামা খুইলা কাদায় গড়াগড়ি দেন। কেউ দেখব না। মনের অসুখ সাইরা যাইব। যান। মেয়ের গায়ে কাদা মাখায় দেন। বৃষ্টিতে ভিজেন গিয়া। এইখানে আরছেন ক্যান? রাঙার মার হাতের রান্না খাইতে? কথাগুলি বলে রহমান সাহেব ভিতরে চলে গেলেন। মরিয়া হয়ে তাই করবেন মিসেস ইসলাম। ভাবলেন। ( এই লেখাটি হয়তো কাল্পনিক। কিন্তু আমি ’৯৩ সালের বর্ষায় পদ্মার এক চরে বসে ছিলাম দুপুরে। অর্ধনগ্ন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। নানা কারণে আমার মনে অসুখ করেছিল। আমি পদ্মার ঝিকঝিকে পানির দিকে চেয়ে গায়ে থিকথিকে কাদা মাখছিলাম ... গায়ে থিকথিকে কাদা মাখছিলাম আর সেরে উঠছিলাম। কাদা কি ঠান্ডা! তখন থেকেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই-মনের অসুখের নিদান কাদাজলে আছে। গ্রামের লোকের মনের তেমন অসুখ কই? ওদের কেবল ভাতের কষ্ট ... সেটা দূর করা যায় যদি মাঝে মাঝে আমরা ওদের কাছে গিয়ে দিন কয়েক থাকি। ওদের উঠানের কাদা মাখি গায়ে সন্ধ্যারাতের বৃষ্টিতে ...) সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২৩
false
fe
নির্বাচনকে সামনে রেখে চরম সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নির্বাচনকে সামনে রেখে চরম সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ফকির ইলিয়াস ------------------------------------------------------------------------------ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা ক্রমশ চরমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ধস নামার পর স্টক মার্কেটেও নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। লেহমান ব্রাদার্স নামের বিখ্যাত স্টক ব্রোকার কোম্পানিটি ‘চ্যাপ্টার ইলেভেন’ দাখিলের মাধ্যমে ব্যাংকক্রাপসি করার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থনীতির এই দেউলিয়াপনা শঙ্কিত করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন। ওয়াশিংটন মিচ্যুয়াল, গোল্ডম্যান শাকস প্রভৃতি বড় বড় কোম্পানিতেও শুরু হয়েছে নানা ধকল। বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল লেহমান ব্রাদার্স। নিউইয়র্কে ৬ হাজারসহ পুরো বিশ্বে ২৬ হাজার ২০০ কর্মজীবী ছিলেন এই কোম্পানিতে। দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ায় এরা সবাই চাকরি হারিয়েছেন। ম্যারিন লিঞ্চ নামের আরেকটি ইনভেস্টম্যান্ট ব্যাংককে ৫০ বিলিয়ন মূল্যে কিনে নিয়েছে ব্যাংক অব আমেরিকা। মর্গেজ লগ্নিকারী দুটি সংস্থা ‘ফানি মে’ এবং ‘ফ্রেডি ম্যাক’কে সরকারি অনুদান দিয়ে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগার। সব মিলিয়ে এক বিপন্ন সময় অতিক্রম করছে যুক্তরাষ্ট্র। জর্জ বুশের শাসনকাল শেষ হওয়ার মাত্র ২ মাস আগে এই চরম সংকটাপন্ন অবস্থা আরও বিষিয়ে তুলেছে নাগরিক জীবন। রাজনীতিতে এখন মুখ্য আলোচনার বিষয় হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দার ঘটনা। ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারাক ওবামা বলেছেন, বুশ প্রশাসনের চরম ক্রান্তিকালের শেষ পর্যায়ে আছি আমরা এখন। তার শাসনের ৮ বছর গোটা জাতিকে কয়েক যুগ পিছিয়ে দিয়েছে। বুশ প্রশাসন কখনোই ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করেনি। মধ্যশ্রেণীর জনজীবনের দিকে তাদের কোনো নজরই ছিল না। ফলে এখন আমরা এমন ঘোর সংকটে নিপতিত হয়েছি। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জন ম্যাককেইন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভিত অত্যন্ত মজবুত। এখন আমরা খুব ‘ডিফিকাল্ট টাইম’ অতিক্রম করছি। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমরা কখনোই জাতিকে আর এই দুঃসময়ের মুখোমুখি হতে দেব না। আমরা ওয়াল স্ট্রিটের রমরমা অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনব। জন ম্যাককেইনের সুরেই কথা বলেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। তিনি বলেছেন, আমরা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার জোর চেষ্টা করছি। প্রতিবেশী দেশগুলো এবং মিত্র শক্তির সহযোগিতায় আমরা অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব বলেই আমার বিশ্বাস। বুশ কিংবা ম্যাককেইন যাই বলুন না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ চাইছেন ৮ বছর পর একটা পরিবর্তন আসুক। অবসান হোক রিপাবলিকান যুগের। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বারাক ওবামা এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে কি আছে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। একজন কৃষ্ণাঙ্গকে হোয়াইট হাউসের অধিকর্তা হিসেবে দেখতে মার্কিনী জাতি কতটা প্রস্তুত কিংবা আদৌ প্রস্তুত কি না, সে প্রশ্ন বারবার করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বারাক ওবামার মূল ভোটের পুঁজিতে হানা দেয়ারও সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন জন ম্যাককেইন। জরিপে দেখা গেছে আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর সারাহ পলিনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয়ার পর জন ম্যাককেইনের পক্ষে মহিলা ভোট বেড়েছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে হঠাৎ করেই জন ম্যাককেইনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। যদিও নিউইয়র্ক রাজ্যটি ডেমোক্রেটদের ভোটব্যাংক বলে পরিচিত। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ইরাক-আফগান ইস্যু, স্বাস্থ্যনীতির উন্নয়ন, শিক্ষা উন্নয়ন, গোয়েন্দা শক্তি বৃদ্ধি প্রভৃতি ইস্যুতে বারাক ওবামা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে সন্ত্রাস দমন, স্বদেশের স্বার্থরক্ষা, অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব প্রভৃতি ইস্যুতে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন জন ম্যাককেইন। দেশব্যাপী জরিপে এই মুহূর্তে জন ম্যাককেইন ৭৯ ভাগ এবং বারাক ওবামা ৬৭ ভাগ জনপ্রিয়তা পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে তা প্রায় প্রতিদিন উঠানামা করছে। এ দিকে ক্ষমতার শেষ মাসগুলোতে এসেও বুশ প্রশাসনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব আরও অতিষ্ঠ করে তুলেছে মার্কিনী জনমানস। পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরুর হুমকি, ইরানে আক্রমণ পরিচালনার অভিলাষ বারবারই নিন্দিত হচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিনী জনজীবনে রিসেশনের রাহুগ্রাস, এই প্রজন্মকে রিপাবলিকানদের প্রতি আরও ঘৃণাপ্রবণ করে তুলছে। -------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি । ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ রোববার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:১৯
false
ij
গল্প_ এক ধরনের নির্লিপ্ত মানুষ জীবনের রহস্যময় দিকটি বুঝবেন বলেই সত্তরের দশকের মাঝামাঝি মার্কসবাদী আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন আলী আহমেদ; এখন প্রায় পঁচিশ বছর পর অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন তিনি। দীর্ঘদিন তিনি আর মার্কসবাদী আন্দোলনে নেই, মার্কসবাদী আন্দোলন থেকে তার নাম মুছে গেছে-তবে জীবনের রহস্য কতটুকু বুঝতে পারলেন সে প্রশ্নটি এখন উঠতেই পারে। পঞ্চাশের দশকের শেষে মার্কসবাদী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন আলী আহমেদ। ষাট দশকজুড়ে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তার, তবে মার্কসবাদী প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে । স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনীতির সঙ্গে আলী আহমেদের সম্পর্কটা শিথিল হয়ে যেতে থাকে। এর কারণও বিচিত্র। পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে প্রায়ই একটা স্বপ্ন দেখতেন আলী আহমেদ। একটা ষ্টেশন; দিন কি রাত বোঝা যায় না; ফাঁকা ষ্টেশন, ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে আছেন আলী আহমেদ; একজন কেউ এসে পাশে বসে, তাকেও বোঝা যায় না। পঞ্চাশের দশকের শেষে স্কুলজীবন শেষ করেছেন; তখন থেকেই এই একই স্বপ্ন দেখে আসছেন দিনের পর দিন। স্বপ্নের মোহেই কি না কে জানে- রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীণ হতে যেতে থাকে তার, এককালের রাজনৈতিক সহকর্মীদের এড়িয়ে চলতে থাকেন, তার কেবলি মনে হচ্ছিল স্বপ্নটার মানে বোঝা দরকার, কেন আমি বারবার দেখছি স্বপ্নটা, কী এর মানে? স্বপ্নের মানে বুঝলেই জীবনকে বুঝতে পারবেন-এমন একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল তার মনের ভিতরে। পুরনো ঢাকার সরু একটা গলির রংচটা জীর্ণ দালানের তিনতলায় থাকেন আলী আহমেদ। বিয়ে থা করেননি। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি বিজয় নগরের ‘ শাপলা ইন্সুরেন্স ’ নামে একটা ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে সেই যে কেরানির চাকরি নিয়েছেন, একেবারে ষাট পাড় করে চাকরি ছেড়েছেন। একা মানুষ, দিন কোনওমতে চলে যায়। সমস্যা হল বছর দুয়েক হল চোখে ছানি পড়েছে। ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে। আশ্চর্য! আমি কি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি? দু-চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়ে। বইয়ের পৃষ্ঠার ওপর হলুদ হলুদ ছোপ দেখেন, ঘরে টিভি নেই, হাজার পাঁচেক বই আছে, বই না পড়লেও দৈনিক পত্রিকা পড়তেই হয়; সমস্যা তখনই হয়-ঐ হলুদ হলুদ ছোপের কারণেই। স্বপ্নটা আজও দেখছেন আলী আহমেদ। তবে ফ্রিকোয়েন্সি আগের তুলনায় অনেক কম। অবশ্য মাসে অন্তত একবার হলেও দেখেন। একটা ষ্টেশন; দিন কি রাত বোঝা যায় না; ফাঁকা ষ্টেশন, ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে আছেন আলী আহমেদ; একজন কেউ এসে পাশে বসে, তাকেও বোঝা যায় না। মাথা অনেক ঘামিয়েও আলী আহমেদ বুঝতে পারেননি কেন তিনি ঐ একই স্বপ্নই পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে দেখে আসছেন। যে স্বপ্নটা তাকে মার্কসবাদী আন্দোলন থেকে সরে দাঁড় করিয়ে দিল। একদিন দুপুরবেলা। আলী আহমেদ নিচে নেমে এসে রিকশা নিলেন। আজকাল দুপুরে ভাত খাওয়ার পর অনেকক্ষণ ধরে কাশি হয়। তবে আজ কাশী হয়নি। রিকশায়ও কাশী এল না। তবে সারাটা পথ ভয়ে ভয়ে কাটল। শীতের দুপুর। শীত শীত করছিল। চাদরটা টেনে নিলেন গায়ে। আলী আহমেদের স্বপ্নটা ষ্টেশন সংক্রান্ত হলেও এর আগে তিনি কখনোই একা ষ্টেশনে যাননি। আজই প্রথম ষ্টেশন যাচ্ছেন। সব কিছুই যেন পানির ভিতর থেকে দেখছেন। স্টেশনে একটা ট্রেন থেমে আছে মনে হল। সে দিকে লক্ষ না করে বেঞ্চি খুঁজে বসলেন। বেশ ভিড়। ভিড়ের গুঞ্জন। গুঞ্জন কখনও বাড়ে, কখনও একেবারে কমে যায়। গত দশ বছর ধরে এমন হচ্ছে। মাঝে মাঝে পরিপূর্ন বধির হয়ে যান আলী আহমেদ। তবে এসব অস্বস্তিকর অনুভূতি পাত্তা দেন না তিনি। আলী আহমেদ এক ধরনের নির্লিপ্ত মানুষ। ষ্টেশনে এদিক-ওদিক গরীব মানুষের জটলা। এদের জীবনে শুভ পরিবর্তন আনবেন বলেই পঞ্চাশের দশকের শেষে মার্কসবাদী আন্দোলনে জড়িয়েছিলেন আলী আহমেদ। অথচ ...সেই স্বপ্নটা ... আলী আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। স্বপ্নটা কেন যে দেখেন, বারবার দেখেন, এখনও বুঝে ওঠা গেল না। জীবনের রহস্যময় দিকটিও ঠিক বুঝে ওঠা গেল না। ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে থাকেন আলী আহমেদ। স্বপ্নে দেখেছেন, একজন এসে পাশে বসে। নাঃ, তেমন কেউই আসে না, পাশে বসে না। ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে থাকে এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ। সময় কেটে যেতে থাকে। সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৯
false
rg
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশ পরিচয় নীলমনি ঠাকুর কলকাতার মানুষ। পারিবারিক পদবি ব্যানার্জী। কলকাতার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রদায়ের। কিন্তু নীলমনি পদবি হিসেবে ঠাকুর গ্রহণ করেন। নীলমনি ঠাকুরের দুই ছেলে। রামলোচন ঠাকুর আর রামমনি ঠাকুর। বড় ছেলে রামলোচন ঠাকুর বিয়ে করেন অলকাসুন্দরী দেবীকে। রামলোচন-অলকাসুন্দরী'র কোন পুত্র ছিল না। নীলমনি ঠাকুরের ছোট ছেলে রামমনি ঠাকুর বিয়ে করেন অলকাসুন্দরী দেবী'র ছোট বোন মেনকা দেবীকে। রামমনি-মেনকা দেবী'র তিন ছেলে। রাধানাথ ঠাকুর (১৭৯০-১৮২৮), দ্বারকানাথ ঠাকুর (১৭৯৪-১৮৪৬) ও মহারাজ রামনাথ ঠাকুর (১৮০০-১৮৭৭)।রামমনি বৃটিশ ভারতের পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। আর বড় ভাই রামলোচন ঠাকুর ছিলেন জমিদার। তাই রামেলাচন তার ছোট ভাই রামমনি ঠাকুরের ২য় ছেলে দ্বারকানাথ ঠাকুরকে ১৭৯৯ সালে দত্তক নেন। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুর মারা গেলে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই দ্বারকানাথ ঠাকুর বড় কাকার বড় আকারের সকল সম্পত্তি সহ বহরমপুর আর কটকের জমিদারীর উত্তারাধীকার লাভ করেন। পরবর্তীতে দ্বারকানাথ ঠাকুর নিজের বিবেক বুদ্ধি আর মেধার শক্তি খাটিয়ে সেই সম্পদকে আরো অনেকগুন বৃদ্ধি করেন। দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু। এছাড়া ইংল্যান্ডে তাঁর অনেক বন্ধু ছিল। পরবর্তীতে দ্বারকানাথ ঠাকুর বিলেতে লাক্সারিয়াস জীবন যাপন করেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে লর্ড উপাধিতে ভূষিত করেন। তখন থেকেই দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৮১১ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর বিয়ে করেন ৯ বছর বয়সী দিগম্বরী দেবীকে। তাঁদের ১ মেয়ে আর ৫ ছেলে। তাঁদের বড় ছেলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) হলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) বিয়ে করেন সারদা দেবী (১৮৩০-১৮৭৫) কে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবী'র পনের সন্তান। ছয় মেয়ে ও নয় ছেলে। তাঁদের সন্তানদের নাম ক্রমানুসারে হল: ১। কন্যা: শিশুকালেই মারা যান। ২। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪০-১৮২৬): পন্ডিত, কবি, গীতিকার, দার্শনিক ও গণিতশাস্ত্রবিদ । ৩। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪২-১৯২৩): প্রথম ভারতীয় সিভিল সার্ভিস অফিসার, কবি ও গীতিকার। ৪। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪৪-১৮৮৪): বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। ৫। বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪৫-১৯১৫): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। ৬। সৌদামিনী দেবী: (১৮৪৭- ১৯২০): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। ৭। জোতিরিন্দ্রণাথ ঠাকুর (১৮৪৮- ১৯২৫): পন্ডিত, সঙ্গীত শিল্পী, নাট্যকার, সম্পাদক ও শিল্পী। ৮। সুকুমারী দেবী: (১৮৪৯- ১৮৬৪): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। ৯। পুন্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৫০-১৮৫১): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। ১০। শরৎকুমারী দেবী। (১৮৫৬- ১৯২০): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। ১১। স্বর্ন কুমারী দেবী। (১৮৫৮- ১৯৩২): কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীত শিল্পী ও সমাজসেবক। ১২। বর্নকুমারী দেবী। (১৮৫৯- ১৯৩৪): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। ১৩। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬০-১৯২৩): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। ১৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬১- ১৯৪১): নোবেল জয়ী বাংলা ভাষার বিশ্বকবি। ১৫। বুধেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬৩- ১৮৬৪): বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেন শ্রীমতি ভবতরিণী দেবীকে। ভবতরিণী দেবী'র বয়স তখন মাত্র ১০ বছর আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাত্র ২২ বছর ৭ মাস। ভবতরিণী দেবী'র নাম ঠাকুর পরিবারের কাছে অনেকটা সেঁকেলে মনে হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তাঁর বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখেন মৃণালিনী দেবী (১৮৭৩-১৯০২)। রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনী দেবী'র তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। তাঁরা হল: ১. মাধুরীলতা দেবী (বেলা) (জন্ম: ২৫ অক্টোবর ১৮৮৬- মৃত্যু: ১৬ মে ১৯১৮) ২. রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর (রথী) (জন্ম: ২৭ নভেম্বর ১৮৮৮- মৃত্যু: ৩রা জুন ১৯৬১) ৩. রেণুকালতা দেবী (রানী) (জন্ম: ২৩ জানুয়ারি ১৮৯১- মৃত্যু: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৩) ৪. মীরা দেবী (অতসি) (জন্ম: ১২ জানুয়ারি ১৮৯৪- মৃত্যু: ১৯৬৯) ও ৫. সমীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সমি) (জন্ম: ১২ ডিসেম্বর ১৮৯৬- মৃত্যু: ২৩ নভেম্বর ১৯০৭)। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল একজন নাতী এবং দুইজন নাতনী। তাঁরা হলেন নীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর (গঙ্গোপাধ্যায়), নন্দিতা কৃপালনী (বুড়ি) ও নন্দিনী ঠাকুর। এদের মধ্যে মীরা দেবী ও নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ে'র এক ছেলে নীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর (গঙ্গোপাধ্যায়)। ডাক নাম নীতু। নীতু'র জন্ম ১৯১২ সালে আর মৃত্যু ৭ আগস্ট ১৯৩২ সালে। আর এক মেয়ে নন্দিতা কৃপালনী (বুড়ি)। বুড়ি'র জন্ম ১৯১৬ সালে। বিয়ে করেন কৃষ্ণ কৃপালনীকে। মারা যান ৫১ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী প্রতিমা দেবী একটি কন্যা দত্তক নেন। নাম নন্দিনী। পুরো নাম নন্দিনী ঠাকুর। ১৯২২ সালে নন্দিনী ঠাকুর জন্মগ্রহন করেন। ১৯৩৯ সালের ৩০ জানুয়ারি নন্দিনী ঠাকুর বিয়ে করেন ডক্টর গিরিধারী লালা-কে। গিরিধারী লালা শান্তিনিকেতনের পিয়ারসন মেমোরিয়াল হাসপাতালের একজন ডেন্টিস্ট ছিলেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে গিরিধারী লালা পথ-ভাবনা ও শিক্ষা-ভাবনা শিখতে শান্তিনিকেতনে আসেন। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত তিনি শান্তিনিকেতনে শিক্ষালাভ করেন। ১৯৫৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন নন্দিনী ও গিরিধারী লালা'র পুত্রসন্তান সুনন্দন লালা। সুনন্দন লালা বর্তমানে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে বসবাস করেন। তিনি একজন বিজ্ঞানী। সুনন্দন লালা'র স্ত্রী সমিতা একজন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। সুনন্দন-সমিতা'র দুই ছেলে। বড় ছেলে নীলঞ্জন ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা বর্তমানে আমেরিকার আটলান্টায় বসবাস করছেন। আর ছোটছেলে প্রতীক পেশায় একজন উকিল। বর্তমানে ব্যাঙ্গলোরে চাকুরি করছেন। সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ৮:৪৭
false
hm
গজব পড়বে, গজব জেলখানায় আয়না পেতে বিস্তর লড়তে হয়েছে দেলু রাজাকারকে। আব্বুজির তাহফীমুল কুরআনের কপি পেতে তেমন সমস্যা হয়নি, সমস্যা হয়নি বড় হুজুরের মানব সৃষ্টির হকিকতের কপি পেতেও, কিন্তু একটা আয়না যোগাড় করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যাওয়ার দশা। সীমারের দল দেয়নি শেষপর্যন্ত। নিজের মাসুম শাকল দেলুকে পত্রিকায় দেখতে হয়, মাসে এক দুইবার। খবরের কাগজটা অবশ্য আসে। মাঝেমধ্যে একটু দেরি হলেও আসে নিয়মিত। শুরুতে সংগ্রাম দেয়া শুরু করেছিলো, চোখ রাঙিয়ে দৈনিক আলু দিতে বলেছেন তিনি। বলেছিলেন, আমারে কাষ্ঠুভুদাই পাইছেন? সংগ্রামের দিন বহু আগেই ফুরিয়েছে, এখন ভরসা আলু। ওখানেই যা একটু আশার আলো দেখতে পান তিনি মাঝেসাঝে। বড় বড় মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবীরা ওখানে হরবখত চিকন চিকন আর্টিকেল ঝাড়েন। একটু মন দিয়ে পড়লে, একটু কান পেতে শুনলে একটা দূরাগত হুক্কাহুয়া শুনতে পাওয়া যায় সেসব লেখায়। আজ সেলে ফিরে গুম হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কথাটা ওভাবে দুম করে বলে ফেলাটা ঠিক হয়নি। বাজারে তার নামে অনেক বাতেনী কাবিলিয়তের গল্প চালু আছে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় এক জেনারেল ফট করে মরে যাওয়ার পর তার নাম বেশ ফেটেছিলো। কবে সেই জেনারেল তার সাথে বেয়াদবি করে, তার কানে হাত দিয়ে গুনাহগার হয়েছিলো, আর তারই শাস্তি হিসেবে একেবারে আসমান থেকে জমিনে তাকে নামিয়ে দিয়েছিলেন পরওয়ারদিগার, সেই গল্প খুব রটেছিলো। কিন্তু ... এবার যদি গজবটা সময়মতো না পড়ে? কয়েকদিন আগে বেশ একটা জোর ভূমিকম্প হয়েছিলো অবশ্য। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। মালাউনের দেশের ভূমিকম্পের ওপর বিশ্বাস নাই। মধুপুর না কই যেন একটা ফল্ট না কী জানি আছে, ঐখানে একটা ভূমিকম্প দিতে আল্লাহপাকের এত গড়িমসি কেন? তসবি নিয়ে কয়েকটা নাম জপেন তিনি। খালেক মালেক হাই হকের পর তার মনোযোগ কেটে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কে এখন? একটা সলিড ভূমিকম্প দরকার। ঢাকা শহরের অর্ধেক ধ্বসে পড়ে যেতে হবে। যারা নেকদিল, যাদের হৃদয়ে কোনো মোহর মারা নেই, কিংবা শুধু তার দলের মোহর মারা আছে, তারা বেঁচে যাবে। আর যুদ্ধাপরাধের বিচার বিচার করে যেসব বুজদিল লাফাচ্ছে, তাদের বাড়িঘর সব গুড়া গুড়া হয়ে যাবে। চারদিকে তার নাম রৌশন হবে তারপর। গজবের ফোরকাস্ট কে করেছিলো? হুঁহুঁ বাবা, ইয়োরস ট্রুলি। সেই আল্লামা দেলু। এরপর তিনি দেখে নেবেন, এই টেরাইবোনাল তাকে কয়দিন জেলখানায় আটকে রাখে। কিংবা একটা সাইক্লোনও হতে পারে। সত্তর সালের মতো। একেবারে পিরোজপুর থেকে শুরু করে ঢাকা শহর পর্যন্ত এক প্রকাণ্ড সুনামি না কী যেন বলে, ঐটা দিয়ে সব কাফের মোশরেককে একেবারে ধুয়ে সাফ করে দিতে পারেন আল্লাহ পাক। এমন তো না যে এসব আগে হয় নাই? সদোম আর গোমর্হার মতো ঢাকা শহরটা উল্টিয়ে দিলেও মন্দ হয় না। বিমর্ষ মনে পেছনে হাত বুলাতে বুলাতে দেলু রাজাকার ভাবনাটা পাল্টে ফেলেন। সদোম নিয়ে আর ভাবতে চান না তিনি। শালার উটপাখি! আর অ্যানথ্রাক্স না কী যেন একটার খবর ছড়িয়েছিলো বছর খানেক আগে। অসময়ে অ্যানথ্রাক্স, বার্ড ফ্লু হয়ে লাভ কী? আর এয়াহুদি নাছারাদের চামচা কিছু লোক আছে, এরা গবেষণা টবেষণা করে এইসব রোগের ওষুধ বের করে ফেলে। দেলু রাজাকার আরো জোরেসোরে তসবি ঘুরাতে থাকেন। খালেক মালেক হাই হক ... তারপর স্মরণশক্তি আর সহযোগিতা করে না। শুয়োর থেকে নাকি একটা ভাইরাস ছড়াচ্ছিলো, ঐটাতে লাখখানেক লোক মরলেও মন্দ হতো না। গজব দরকার একটা, সেইরাম একটা গজব। এককালে যক্ষ্মা, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া, কলেরা, গুটিবসন্ত ... কত ভালো ভালো জিনিস ছিলো। কই গেলো সেই স্বর্ণালী দিন? নাছারাদের পাল্লায় পড়ে সব গেল। গুজরা হুয়া জমানা, আতা নাহি দুবারা ...। বন্যা কিংবা খরার সিজনও চলে গেছে। অথচ এখনই সেগুলির জরুরি দরকার ছিলো। আমনের ক্ষেতে পঙ্গপালের হামলা হলেও চলতো। পদ্মা নদীতে লোনাপানি ঢুকলেও মন্দ হতো না। ইনডিয়া বসে বসে কী বালটা ফেলে? কয়েকটা নদী আটকায় দিলেই তো একটা টাটকা গজব হাতে চলে আসতো। মনমোহন লোকটার কোনো পুরুষকার নাই, হুদাই মুখে দাড়ি আর শিরে পাগ। পাকিস্তান থেকেও কোনো সুখবর নাই। চুদির ভায়েরা একাত্তর সালে যেভাবে তাদের একলা ফেলে পালিয়েছিলো, আজও সেইরকম। হুদাই এদের এতো খিদমত খাটলেন তিনি। খালেক মালেক হাই হক। বিষাক্ত মনে দৈনিক আলু হাতে তুলে নিলেন তিনি। একগাদা ফালতু খবর। তার একটা ছবি প্রথম পাতায় দিয়েছে, সেইটাতে তাকে দেখাচ্ছে গরুচোরের মতো। মেহেদি রাঙানো দাড়িটা ফটোতে মোটেও ভালো আসে নাই, মনে হচ্ছে কেউ তার দাড়িতে পানের পিক ফেলেছে সমানে। তিনি অবশ্য সাংবাদিকদের জন্য একটু ভালো পোজ দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু এক এসআই হারামজাদা তাকে "চলেন হুজুর" বলে দুষ্ট জায়গায় হেলমেট দিয়ে ঠেলা দিয়ে মহিষ তাড়ানোর মতো করে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে আদালতের সামনে। একটা গজব দরকার। দাঁতে দাঁত পেষেন দেলু রাজাকার। রেডিমেড গজব দরকার একটা। তার মতো লোকের জন্য কি আবাবিল পাখি আসবে? কিছু পাথরটাথর ঐ কমজাতদের মাথায় কি ফেলা দরকার ছিলো না? খবরের কাগজে মালাউন নায়িকাগুলোর চেহারাছবি আর ক্রীড়া পাতায় শহীদ আফ্রিদির লোমশ বক্ষদেশ খানিকটা দেখে পাতা উল্টে বিজ্ঞান পাতায় গেলেন তিনি। সেইটার এক কোণায় আবার জাকের নালায়েকের লেকচার সিডির বিজ্ঞাপন। এই ইনডিয়ান বদমাশটাকে তিনি দুই চোখে দেখতে পারেন না। কিছু বুদ্ধিজীবী আন্দোলন করায় শেখের সরকার নাকি এরে দেশে ঢুকতে দেয় নাই। অসংখ্য খারাপ কাজের ভিড়ে এই একটা ভালো কাজ অন্তত তারা দেখাতে পারবে। দেশী ওয়াজ ইন্ডাস্ট্রি এইভাবে ইনডিয়ার হাতে তুলে দেয়া যায় না। ইনশাল্লাহ তিনি একদিন লুণ্ঠিত কদর ফিরে পাবেন, দুই আঙুল উঁচিয়ে ভিকারুন্নিসা নুনের কচি ছাত্রীদের মতো ভি দেখিয়ে জোরকদমে জেলের বাইরে বেরিয়ে আসবেন, তারপর আবার দেশজুড়ে ওয়াজ করবেন। তারেক মনোয়ার এই কয়দিন একটু বিজনেস করলে করুক। ছেলেটা লোক খারাপ না। খালেক মালেক হাই হক ...। খবরের কাগজ উল্টাতে উল্টাতে দেলু রাজাকারের হৃদযন্ত্র একটু জোরে ছুটতে শুরু করে। বিজ্ঞানই মনে হচ্ছে গজবটা জুটিয়ে দেবে। এয়াহুদি নাছারাদের একটা স্যাটেলাইট খসে পড়ছে আসমান থেকে, সেইটা দুনিয়ার যে কোনো জায়গায় যে কারো মাথায় পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা সবাইকে হুঁশিয়ার থাকতে বলেছেন, বাড়ির বাইরে বেরোলে ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। কাগজ নামিয়ে তসবি ঘোরাতে লাগলেন দেলু। খালেক মালেক হাই হক। আল্লাহ যখন দেন তখন ছপ্পর ফুঁড়ে দেন। দে রে খোদা, একেবারে বত্রিশ নাম্বারের উপর নামিয়ে দে স্যাটেলাইটখানা। কিংবা ছয় নাম্বারে। কিংবা টেরাইবোনাল বিল্ডিঙে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। তোর অসীম দয়া। গত কয়েক বছর বড় বিলা হয়ে আছিস ওরে, এইবার বুলস আই মেরে বাঁচিয়ে দে, ইয়া পরওয়ারদিগার, হাতির সাইজের জোড়া উট জবাই দিবো য়্যায় মালিক তেরে বন্দে হাম। অথবা, চিড়িয়াখানার ঐ দুষ্ট মাদী উটপাখিটার জান কবচ করে নে খোদা। পিলিজ।
false
fe
কমান্ডার , স্যালুট টু ইউ এগেইন কমান্ডার, স্যালুট টু ইউ এগেইন ফকির ইলিয়াস যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ। সে প্রমাণটি আমরা গেল দু’সপ্তাহে আবারও দেখলাম। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, সম্মানিত সেক্টর কমান্ডাররা ইতোমধ্যে ‘সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম’ গঠন করেছেন। এই ফোরাম দেশে-বিদেশে অবস্খানরত লাখ লাখ বাঙালির কাছে সমাদৃত হয়েছে ইতোমধ্যে। এই ফোরাম ঘোষণা দিয়েছে ৬৪টি জেলায় মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত মানুষকে আইনি সহায়তা দেবে। অত্যন্ত সাহসী কথা। গেল ৩৬ বছরে কোন সরকার, রাষ্ট্রপক্ষ এমন ঘোষণা দেয়নি। যদি দিতো তবে হয়তো অনেকেই এগিয়ে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্খা গ্রহণে উদ্যোগী হতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি এবং সেক্টর কমান্ডাররা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা আমাদের আবারও একাত্তরে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অংশ নেয়া অনভিপ্রেত। তিনি আরও বলেছেন, যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। সে দরজা এখনও খোলা আছে। সেক্টর কমান্ডাররা জানিয়েছেন, তারা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলার ব্যবস্খা করবেন। তবে যেহেতু এরা স্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্খান নিয়েছিল, সেহেতু মামলাগুলোর বাদি রাষ্ট্রপক্ষকেই হতে হবে। প্রিয় কমান্ডারবৃন্দ, এই জাতি আপনাদের স্যালুট করছে। প্রচলিত আইনে এসব মামলার বিচার সম্ভব কি না কিংবা মামলা করে যথাশীঘ্র সম্ভব কোন সুবিচার পাওয়া যাবে কি না তা নিয়েও হচ্ছে নানা কথা। উদাহরণ হিসেবে আসছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বিচারের কার্য প্রক্রিয়ার কথাও। ‘বিব্রতবোধ করা’ কিংবা পূর্বের ক্ষমতাসীনদের অনিচ্ছার কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এখনও রয়ে গেছে বিভিন্ন অনিশ্চয়তার মাঝে। যদি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ বিচার শুরু হতো, তবে হয়তো এতদিনে রায় কার্যকর হতে দেখতে পেত বাঙালি জাতি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচলিত আইনের প্রতি অগাধ বিশ্বাসই মামলাটিকে এখনও বর্তমান পর্যায়ে রেখেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এভাবে প্রচলিত আইনের ধারায় নিবদ্ধ করে কালক্ষেপণ সমীচীন হবে কি-না তাও ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর বাংলাদেশে অনেক অসম্ভবই সম্ভব হয়েছে, যা কোনদিন কল্পনাও করা যেত না। এরই ধারাবাহিকতায় গেল ছত্রিশ বছরের অসমাপ্ত কাজটি বর্তমান সরকার শেষ করে যাওয়ার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কারণ খুনি, পিশাচ, নরঘাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ঐতিহাসিক ক্ষণটি অত্যন্ত স্বর্ণোজ্জ্বল হয়েই থাকবে বাঙালির ইতিহাসে। দুই বাংলাদেশে ঘাতক রাজাকার, আলবদর-আলশামসদের বিচারের যখন ঐক্যবদ্ধ দাবি উঠেছে, তখনই আমরা সেই পুরনো শকুনদের চরিত্র আবারও দেখছি। এটা অজানা নয় রাজাকার-আলবদরদের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। রয়েছে তাদের ‘বুদ্ধিজীবী মহল’ও। সাবেক সচিব শাহ আব্দুল হান্নান, মীর কাশেম আলী কিংবা ব্যা. আবদুর রাজ্জাকের মতো ব্যক্তিরা তাদের ‘সুশীল সমাজ’। তাদের এসব তথাকথিত সুশীলরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে গেল তিন দশক থেকেই মওদুদীবাদী মোনাফেকি পারপাস সার্ভ করে আসছে। অত্যন্ত দু:খ ও বেদনার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের অনেক মুক্তমনা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বুঝে হোক না বুঝে হোক ইসলামী ব্যাংকসহ এই ব্লকের বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা আমানত রেখে পক্ষান্তরে রাজাকারদের হাতকেই শক্তিশালী করেছে। বিএনপির কথা বাদই দিলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালেও রাজাকারি ব্লকের ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লিনিক, কারখানা-মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা পেয়েছে আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে। আওয়ামী ও রাজাকার ব্যবসায়ী কাম-রাজনীতিকরা মিলেমিশে একই ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। এদের বিরুদ্ধে কিছু বলা তো দূরের কথা, তাদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমেই আজ এ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা দেখে খুব অবাক হচ্ছি, আজ রাজাকারদের বিচারের দাবিতে জাতি সোচ্চার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘সেমি রাজাকার’ নামের একটি বোদ্ধা মহলও নানাভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখে, বিবৃতি দিয়ে, টিভি টক শোতে বলতে চাইছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার অর্থ হচ্ছে ইসলামকেই নিষিদ্ধ করা। এসব বেওকুফ এভাবেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র ফেরাতে চাইছে। এসব কলাম লেখক বলছে, বাকশাল কায়েম করতেই নাকি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলা হচ্ছে। এমনকি তারা পূর্বের মতো আবার ‘ভারতের চর’ ‘বামপন্থী চেলা’ প্রভৃতি শব্দাবলিও ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এটা প্রতিটি সচেতন বাঙালিই জানেন মওদুদীবাদী বিশ্বাসঘাতকদের আঁতে ঘা লাগলেই তারা নানা প্রলাপ বকে। ভারত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন দিয়েছিল। ১০ হাজার ভারতীয় সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। ভারতীয় জনগণ তাদের বেতনের টাকা, সিনেমার টিকেটের সঙ্গে অতিরিক্ত কর প্রদান করে কোটি কোটি বাঙালি শরণার্থীকে সাহায্য করেছিল। গেল ৩৬ বছরে বাংলাদেশ কি ভারতের ‘সেবাদাস’, ‘তাঁবেদার’ হয়ে গেছে? না যায়নি। বরং নিজামী গিয়ে বাজপেয়ির সঙ্গে বৈঠক করেছেন হিন্দু ও মুসলিম মৌলবাদের শিকড় শক্ত করার জন্য। জামায়াত-বিএনপি জোটই গোপন চুক্তি করে ফেনসিডিল থেকে দিয়াশলাই পর্যন্ত আমদানি করেছে ভারত থেকে। কমিশনের অর্থ না পাওয়ার ক্ষোভে টাটা কোম্পানিকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে ‘হাওয়া ভবন'পন্থিরা। সেই ভারতের প্রতি রাজাকারদের ‘বড়গলা’ দেখলে করুণা করতেই ইচ্ছে করে। তাদের মুখে মানায় এসব কথা। এসব তস্করবৃত্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?তারা কি মানুষের স্বার্থ দেখে? তিন . বাংলাদেশে বেশ কিছু 'ক্লিন সেভড' সাংবাদিক-সম্পাদক আছেন, যারা খুব কৌশলে রাজাকারদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এরা লাল গোলাপ হাতে ভালবাসা সড়কে বসবাস করলেও রাষ্ট্র, বাঙালি জাতি, বাংলা সংস্কৃতির প্রতি এদের নূন্যতম কোন দরদ নেই। এরাই বলে বেড়ায়, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হননি। যারা সত্য ইতিহাস ও মিথকে অস্বীকার, বিকৃত করতে চায় এদের চেয়ে বড় রাষ্ট্র শত্রু আর কে থাকতে পারে? এই দেশে যারা ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎ মানুষের শাসন চাই’ এই বাণীর প্রবক্তা, তাদের এমপিরা কোন্ কোন্ চরম অপরাধের দায়ে গ্রেফতার হচ্ছেন তা দেখছেন দেশবাসী। তাদের নির্বাচনী ওয়াদা পরণ তো দরের কথা, তারা যা করেছে তা হচ্ছে মন্ত্রী-আমলা হয়ে বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের লোক বসিয়ে দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে। অত্যন্ত পরিতাপের কথা, তা জানার পরও বাংলাদেশের এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপী এদের কাজকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মঞ্চে নেপথ্যে। এই দু’সপ্তাহের জাতীয় দৈনিকগুলোতে তাদের লেখা, মìব্য প্রতিবেদন, কলাম পড়লে তা আরও স্পষ্ট হবে। গর্বের কথা হচ্ছে, এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ে বাঙালি জাতির ভাবার কিংবা শঙ্কার কোন কারণ নেই। এ পার্যন্ত প্রতিটি রাজনৈতিক দলই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছে। ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর এই বিশ্ব রাজনীতিতে এখনও এই সত্যটি জোরাল আছে, খুনি হায়েনাদের কেউ প্রশ্রয় দিচ্ছে না। এই যে সত্যের বিজয়, সে পথেই দাঁড়াচ্ছে বিশ্বের আপামর মানুষ। বাংলাদেশে তেমন দাবি এরই একটি অংশ মাত্র। না, বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধীকে জনগণ ক্ষমা করে দেয়নি। ১৫ আগস্টের পর্ব পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলে বাইশ হাজারেরও বেশি রাজাকার-আলবদর বন্দি ছিল। জাতির জনক হত্যার পরবর্তী সরকারগুলো কৌশলে এদের ক্রমে ছেড়ে দেয়। জিয়া-সায়েম সরকার ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়ে দেশের সব জেল থেকে সব রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়েছিলেন। রাজনীতিতেও তাদের নিজ স্বার্থে পুনর্বাসিত করে তারাই। একাত্তরের গণহত্যার বিবরণ দিতে গিয়ে ‘সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম’ তাদের বক্তব্যে একটি বর্ণনা দিয়েছে যা পড়ে আমার গায়ে কাঁটা দিয়েছে; শিউরে উঠেছি। তারা বলেছেন, ‘এই গণহত্যার ব্যাপকতা ও বিশালতা ছিল সুপরিকল্পিত। প্রায় সত্তর ভাগ শহীদের দেহাবশেষ জলা এবং নদীতে ভেসে না গেলে গণকবরের সংখ্যা কী বিশাল হতো তা কল্পনা করা যায় না।’ তাদের যুক্তিতে কি সত্যের উদ্ভাস! এই হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মানবতার বিরুদ্ধে এমন অপরাধ বিশ্বে খুব কমই সংঘটিত হয়েছে। সেসব ধর্ষিতার কেউ কেউ এখনও বেঁচে আছেন দু:সহ যাতনা নিয়ে। এরা কি সে সব ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নন? শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিধবা স্ত্রী রা কি এখনও বলে যাবেন না সেসব জল্লাদ দোসরদের কথা? যারা বাসা থেকে এসে নিয়ে গিয়েছিল বাংলার কৃতী বুদ্ধিজীবীদের? মৌলবাদীদের দাপটে পাকিস্তানের অবস্খা আজ কেমন, তা দেখছে বিশ্ববাসী। একটি অশুভ চক্র বাংলাদেশকেও পাকিস্তানের কলোনি বানাতে এখনও তৎপর। এই চক্রকে সমূলে উৎখাত করা না গেলে রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি হতে পারে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডাররা যে প্রত্যয়ী উদ্যোগ নিয়েছেন তা ছড়িয়ে দিতে হবে দেশে-বিদেশে প্রতিটি বাঙালির মাঝে। সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতায় যে যে প্লাটফর্মে আছেন সবাই এগিয়ে এলেই এই মাইলফলকটি স্খাপিত হবে। নিউইয়র্ক, ৬ নভেম্বর ২০০৭ ---------------------------------------------------- (দৈনিক সংবাদ/ ঢাকা / ৯ নভেম্বর ২০০৭ শুক্রবার প্রকাশিত) সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:৪৭
false
rn
ঢাকা ক্লাব ঢাকা ক্লাব বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রাচীনতম বিনোদনমূলক সংগঠন। রমনা এলাকায় অবস্থিত এই পার্কটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয়দের বিনোদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং বিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এখানে কেবল শ্বেতাঙ্গদেরই প্রবেশাধিকার ছিল।ঢাকা ক্লাবের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাধারণ মানুষ তথা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই ।১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরার পর ঢাকা ক্লাবের জন্য ৫ একর জমি রেখে বাকিটা বারডেম হাসপাতাল নির্মাণের জন্য দিয়ে দেন। ক্লাবের নামে যে ৫ একর জমি দেওয়া হয় সেটা ছিল নির্দ্দিষ্ট মেয়াদের লিজ।ঢাকা ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়- ১৮৫১ সালে ।ক্লাবটি নিবন্ধন করা হয় ১৯১১ সালে।১৯৪১ সালে রমনা এলাকার ৫২৪ বিঘা জমি ক্লাবটিকে ইজারা দেয়া হয়। পরে ঐ জমিতে স্থাপিত হয়েছে ঢাকা শেরাটন হোটেল, বেতার ভবন, বারডেম, ইত্যাদি।ঢাকার নওয়াব পরিবার ঢাকা ক্লাবকে ভূমি লিজ দিয়েছিল।ঢাকা ক্লাবের আয় থেকে সরকারকে কোনো ধরনের রাজস্ব দেওয়া হয় না। বরং ২ হাজার ৩শ জন সদস্যের মধ্যে গড়ে মাত্র ২০০ জন এই বৃহৎ জায়গা তাদের ভোগ-বিলাসের জন্য দখল করে রেখেছে। সেই সঙ্গে জনগণের সম্পত্তি হাতের পর হাত বদলে বেহাত হয়ে যাচ্ছে।” ’৭২ সালের শেষদিকে ঢাকা ক্লাবের কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব মারাত্মক রূপ ধারণ করলে ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন (এসপি মাহবুব) এক অভিযানের মাধ্যমে ক্লাবটি বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ক্লাবটি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন। ঢাকা ক্লাবের কর্মকর্তারা এই ক্লাবটির ‘জন্মলগ্ন’ নিয়ে গর্ব করছেন। কিন্তু সেটা তো ইংরেজের ঔরসে। আমাদের জন্ম সাল কি একাত্তর নয়? আমাদের জন্ম কি ইংরেজের ঔরসে? ঔপনিবেশিকতায়?ঢাকা ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাদত হোসেন সেলিম।ঢাকা ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫ একর জমি। এখানে সভাকক্ষ, সেমিনার কক্ষ, হলঘর, অতিথিশালা, রান্নাঘর ও খাবার ঘর এবং টেবিল কোর্ড, বিলিয়ার্ড ক্লাব, স্কোয়াশ ক্লাব, গলফ ক্লাব, সুইমিংপুল, লন টেনিস ইত্যাদি খেলার সুবিধা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ঢাকা ক্লাবের দখল ধীরে ধীরে এক শ্রেণীর নব্য ধনী ব্যবসায়ীর কব্জায় চলে যেতে থাকে। এমনকি এক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীল স্বাধীনতা বিরোধী ব্যাক্তিও এই ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা চালায়। ২০০২ সালে ক্লাবটির গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে এর সদস্যপদ বিক্রির বিধান চালু করা হয়। এর ফলে এক শ্রেণীর কালো টাকার মালিক খুব সহজেই ক্লাবটির সদস্য হওয়ার সুযোগ পায়।ঢাকা ক্লাবের সদস্য, তাদের পরিবার ও অতিথিদের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন ও সুযোগ সুবিধা। এখানে উন্নতমানের একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অভিজ্ঞ দেশি-বিদেশি শেফ এখানে রকমারি খাবার তৈরি করেন। ক্লাবের ভেতরে ১৯টি কক্ষের বিশেষ অতিথিশালা রয়েছে। একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটসসহ মোট ১৮টি ডাবল বেডরুম রয়েছে।“শোনা যায়, ঢাকা ক্লাবের অধিকাংশ সদস্যই তাদের বৈধ আয়কর বহির্ভূত অবৈধ কালো টাকা ক্যাশ লেনদেন করে মদ খাওয়া এবং সংবিধান বিরোধী জুয়া খেলা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করে কর ফাঁকি দিচ্ছে।” বর্তমানে ক্লাবটিতে অব্যবসায়ী (বিচারপতি, আমলা, আইনজীবি, শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ব্যাংকার ইত্যাদি) সদস্যের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। তবে অত্যন্ত চাতুরতার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ কতিপয় পেশার কিছু লোককে অনারারী সদস্য বা ব্যবহারকারী সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে, যা খুবই অস্থায়ী এবং যে কোনো সমস্য এসব সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়া যায়। এখানকার সদস্যরা হেলথ ক্লাবে নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। সদস্যদের পরিবারের জন্য রয়েছে গানের স্কুল, নাচের স্কুল, ছবি আঁকার স্কুল, সাঁতার শেখার ব্যবস্থা। প্রায় ১০ হাজার দুষ্প্রাপ্য বইয়ের একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারও রয়েছে। ক্লাব সদস্যরা বাড়িতে বই নিয়ে পড়ার সুযোগ পান। বর্তমানে ঢাকা ক্লাবের এক হাজার ৫০০ জন আজীবন সদস্য এবং দুই হাজার ৮০০ সাধারণ সদস্য রয়েছেন।সরকারি ৩০০ কাঠা জমি দখল করে ঢাকা ক্লাব বছর বছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে এখানে প্রতিনিয়ত অবৈধ উপার্জনের লাখ লাখ টাকা দিয়ে দেদারসে হোলি খেলা হয়।ঐতিহ্যের নামে ঢাকা ক্লাবে কিছু অমানবিক ও জঘন্য নীতি-নিয়ম অনুসরন করা হয়। ক্লাব কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত পোশাক ছাড়া অন্যকোনো পোশাক পরে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবেও এই ক্লাবে প্রবেশ করা যায় না। ইতিপূর্বে সমাজের বহু গুনী মানুষকে এই নিকৃষ্ট অজুহাতে ক্লাবটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। প্রখ্যাত গবেষক ও লেখক ফরহাদ মজহার তার এক আত্মীয়ের আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে একবার ঢাকা ক্লাবে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্যুটকোট না পরার অপরাধে সেদিন তাকে ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিনোদনের নামে ক্লাবটিতে মদ্যপান এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত জুয়া খেলার আসরও বসে। গত বছর ব্যাপক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এই ক্লাবের ১০০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়। তখন বলা হয়েছিল যে, ঢাকা ক্লাবের গৌরবের ১০০ বছর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঢাকা ক্লাবকে ঘিরে বাঙ্গালীর গৌরবের কিছুই নেই।১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে এই ক্লাব ছিল হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নানা অপকর্মের কেন্দ্র। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার আগে-পরেও এই ক্লাব মেজর ডালিমসহ তার সহযোগীদের দখলে ছিল বলে জানা যায়। অভিযোগ আছে যে, এই ক্লাবে বসেই খুনীরা হত্যকান্ডের পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্রের ছক তৈরী করে।যে কারণে যুদ্ধের সময় মুক্তিবাহনীর আওতাধীন ঢাকার ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকা ক্লাব লক্ষ্য করে বেশ কয়েকবার গ্রেনেড বিষ্ফোরণ ঘটায়। এই ক্লাবে কার্ডরুম নামের একটি কক্ষ আছে, যেখানে কোটি কোটি টাকার জুয়ার আসর চলে দিনরাত এবং এর বিপরীতে সরকারকে কোনো রাজস্ব দেওয়া হয় না। শুধু জুয়া নয়, আরও বিভিন্ন রকম আর্থিক ও বানিজ্যিক কর্মকান্ড রয়েছে এই ক্লাবের। কিন্তু এসবের বিপরীতে সরকারকে কোনোরূপ ভ্যাট বা ট্যাক্স দেওয়া হয় না। ঢাকা ক্লাবের মালিক-সদস্যরা প্রায় প্রতেক্যেই ধনী মানুষ। তারা নিজেদের টাকায় আরও অনেক বড় জায়গা ক্রয় করে সেখানে নিজেদের ক্লাব সরিয়ে নিতে পারেন।যে স্থানটিতে বর্তমানে ঢাকা ক্লাব নামের রঙ্গশালাটি পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে প্রতিকাঠা জমির বাজারমূল্য এখন কম করে হলেও ১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৩০০ কাঠা জমির দাম ৩ হাজার কোটি টাকা।
false
hm
আমিও রাজনীতি বিশ্লেষণ করতে পারি, হুঁহুঁ আমার পাকি রুমমেটের সাথে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ হচ্ছিলো। ইমরান খান সম্প্রতি পাকিস্তানের ভোটের রাজনীতিতে নিজেকে একটা জোরালো চলক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, লাহোরে তার ডাকা সমাবেশে নাকি প্রায় চার লক্ষ লোক সমবেত হয়েছিলো, ইতিমধ্যে পাঞ্জাবের তৃতীয় প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তিনি মাথা তুলেছেন, উত্তরপশ্চিম সীমান্তপ্রদেশেও তিনি বেশ জনপ্রিয়, ইত্যাদি শুনছিলাম। সৈয়দ আবার ইমরান খানের বেজায় ভক্ত। তাকে সেনাবাহিনী আর আমলাতন্ত্র নিয়ে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতেই বেচারা ব্যাজার হয়ে গেলো। তবে আরো যেটা জানলাম, ইমরানের এই উত্থানকে স্বাগত জানাচ্ছে পাকিস্তানের মিডিয়া। আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোর কথা মনে পড়ে গেলো। প্রথম আলো কয়েক বছর ধরেই বদলে দিতে আর বদলে যেতে বলছে, আর সম্প্রতি বেশ পরিষ্কার সুরেই প্রথম আলো গোষ্ঠীর লেখকেরা একটি কার্যকর "তৃতীয় শক্তি"র কথা বলছেন। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি, এই দুই শক্তি যে একই বিষ্ঠার দুটি পিঠ, এমন একটি কথা ঠারেঠোরে বলছেন অনেকে। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও দেখলাম অনেক স্বপ্নের কথা রয়েছে। মিডিয়া যখন স্বপ্ন দেখায়, তখন সাধারণত তার পেছনে অন্য অনেক কিছু থাকে। পাকিস্তানে ইমরান খানের রাজনৈতিক উত্থান (ইমরান রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই আছে, কিন্তু এবার সে দারুণ সাড়া পেয়েছে, আশরাফুল পার্টি খুলে বিপুল লোকজনকে পাশে পেলে যেমনটা হবে আর কি) আর বাংলাদেশে তৃতীয় শক্তির সন্ধানে প্রথম আলোতে গ্যানীগুণী লোকজনের কুম্ভীরাশ্রুস্রোতের মধ্যে কেমন যেন একটা মিল পাই। ইমরানের প্রতিশ্রুতির দুটি প্রধান ধারা। তিনি দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করবেন এবং এর জন্যে চীনের অনুসরণে দুর্নীতির জন্যে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করবেন। এই জিনিস দারুণ হিট করেছে পাঞ্জাবে। মিনার-এ-পাকিস্তানের চারপাশে বাচ্চা কোলে মহিলারা পর্যন্ত জড়ো হয়েছেন। নওয়াজ শরিফ আর জারদারি, দুজনেই ইমরানকে নিয়ে তাই বিপদে। ইমরানের দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি, তিনি এই পুরনো দুটি দুর্নীতিবাজ দলের সাথে কোনো রকম জোট করবেন না। এতে পাবলিক আরো উল্লসিত। ইমরান বরাবরই পাকিস্তানে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, কিন্তু তার রাজনৈতিক ভোল্টেজ আগে তেমন ছিলো না, এবার তিনি একেবারে জ্বলে উঠেছেন আপন শক্তিতে। আমেরিকার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই চান ইমরান। আমেরিকাও চায় আফগানিস্তানে নিজেদের পরাজিত ইমেজটি ঢেকেঢুকে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে। ইমরান লাহোরের ঐ সমাবেশ করার পরপরই চীন চারদিনের সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইমরানকে। আমেরিকা আফগানিস্তান আর পাকিস্তানে নিজেদের লেজটি গোবরমাখা করেছে চীন যাতে বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দরটির ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে, সে মতলবে, সৈয়দের তেমনি ধারণা। আমেরিকা তাই চায় না, চীনের সাথে ইমরানের আলাদা কোনো পিৎলা খাতির হোক। ইমরান বলছেন, আমি আমেরিকার দোস্তি চাই, কিন্তু তার খেদমত খাটতে চাই না। আবারও বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে গেলো। ইমরানের মতোই কাউকে খুঁজছে হয়তো প্রথম আলো, যাকে শিখণ্ডী করে দুর্নীতি নিয়ে বিরক্ত মানুষেরা তৃতীয় শক্তির ছায়া খুঁজবেন। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম আলো এই দুই দলকে শুরুর কয়েক মাস খুব ধুয়েছিলো, শেষদিকে এসে আবার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে সব ম্যানেজ করে নিয়েছে। তখন আমাদের নোবেলপতি ড. ইউনূসের নাগরিক শক্তিকেই তৃতীয় শক্তি হিসেবে মাঠে নামাতে চাইছিলেন কেউ কেউ, প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারের সেই মাতম চিরস্মরণীয়। দূরদর্শী ড. ইউনূস শুরুতে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় গ্রামীণ ব্যাঙ্ক মডেলে কুড়িজনের "ডাগদর ইউনূস সমর্থক গোষ্ঠী" খোলার আহ্বান জানালেও, পরে হালে পানি মেপে সেযাত্রা রাজনীতির ম্যারাথন থেকে কেটে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকদিন আগে দেখলাম ইউনূস সাহেবের ছোট ভাই মিডিয়া বিশ্লেষক মুহম্মদ জাহাঙ্গীর সেই নাগরিক শক্তির মডেলটিকেই রিপ্যাকেজিং করে "যুব শক্তি" নাম দিয়ে সংগঠিত হতে বলছেন। তবে এবার ইউনূস সাহেবের নাম খুব সাবধানে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিবর্তে জাহাঙ্গীর সাহেব প্রস্তাব করেছেন, কচি কচি যুবকেরা মিলে একটি কচি সংসদ গঠন করবেন এবং ভোট দিয়ে বুড়োদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবেন। প্রবাসীরা যাতে বঞ্চিত না হন, তাই তাদেরও রাখা হবে এসবে। মন বলছে, ইউনূস সাহেব নাগরিক শক্তি দিয়ে মানুষের মন জয় করতে না পারলেও, যুব শক্তির উপদেষ্টা হিসেবে জরুর পারবেন। কিন্তু এ কথা সত্য, আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দল দু'টির প্রতি মানুষের হতাশা ক্রমবর্ধমান। পাকিস্তানের রাজনীতিতে যদিও পিপিপি আর মুসলিম লীগ বাদেও শক্তিশালী দল রয়েছে, কিন্তু মডেলটা কম বেশি একই রকম। পাকিস্তানে ইমরান ময়দানে নেমে পড়েছেন, বাংলাদেশে আপাতত কোন ইমরান দাঁড় করানো যাচ্ছে না। মিডিয়া কথাবার্তা বলে মাদুর গরম রাখছে। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়, যেদিন ইমরানের বাংলাদেশ সংস্করণকে আমরা ময়দানে পাবো। বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর হতাশ কেন? কেবল দুর্নীতির জন্য? দুর্নীতি তো একা রাজনীতিকরা করে না, আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী, মিডিয়া, সবাই তাতে কমবেশি জড়িত। শুধু নতুন একটা রাজনৈতিক দল, একটা তৃতীয় শক্তি চলে এলেই কি দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী, সম্পাদকেরা সাধু হয়ে যাবেন? দেশ ফুলে ফলে ছেয়ে যাবে? তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি জরুরি, এ কথা অনস্বীকার্য, কিন্তু একটা দ্বিতীয় আমলা শক্তির জন্যে মিডিয়া কেন কাঁদে না, দ্বিতীয় ব্যবসায়ী শক্তির জন্যে কেন মাতম নেই, দ্বিতীয় মিডিয়া শক্তি কেন জরুরি নয় মিডিয়ার চোখে? দুর্নীতির প্রবলযন্ত্রটির কলকব্জা সব এক রেখে, শুধু চেহারা পাল্টে কি দেশ পাল্টানো যাবে? বাংলাদেশের মানুষ হতাশ, কারণ রাজনীতিকরা মানুষের প্রায়োরিটি বুঝতে অপারগ। সারাদিন কাজ করে পরিশ্রান্ত মানুষ অল্প কিছু জিনিস চায়, সে একটা জ্যামহীন রাস্তায় দ্রুত বাড়ি ফিরতে চায়, বাড়ি ফিরে একটু ফ্যানের বাতাস খেতে চায়, বাজার থেকে যথাযথ দামে জিনিসপত্র কিনে ছিনতাইকারীর মুখোমুখি না হয়েই ঘরের দোরের সামনে রিকশা থেকে নামতে চায়। এরচেয়ে বেশি কিছু চেয়ে লোকে ভোট দিয়ে সরকার পরিবর্তন করে না। কিন্তু এই জিনিসগুলো যখন মানুষ পায় না, কাটা ঘায়ে লবণ পড়ে, যখন তারা তাদের ক্ষোভের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে কোনো রাজনীতিক বা রাজনৈতিক দলকেও পায় না। তারা দেখে, খালেদা জিয়া নিজের বাড়ির জন্য হরতাল ডাকে, আর শেখ হাসিনা আড়িয়ল বিলে এয়ারপোর্ট করতে চায়। ট্রাফিক জ্যাম, ইলেকট্রিসিটি, দ্রব্যমূল্য, নিরাপত্তা, এসব জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে থাকে। তৃতীয় কেন, একশো একটা শক্তি আসুক, কোনো লাভ নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ সংবিধানের ঐ ধারাটির মর্ম না বুঝবে, যে দেশের সব কিছুর মালিক দেশের মানুষ। জাহাঙ্গীরের মতো যারা হরতাল-মিছিলবিহীন সুশীল রাজনৈতিক দলের কথা বলেন, তারা ইয়োরোপের হরতাল মিছিলগুলো দেখেননি, বা দেখলেও না জানার ভান করেন। এখানে মানুষ নিজেকে রাষ্ট্রের মালিকদের একজন বলে ভাবতে অভ্যস্ত, নিজের ন্যায্য পাওনাটুকু তারা এত জোরালোভাবে দাবি করে আদায় করে ছাড়ে, যার প্রায় প্রতিটি উদাহরণই তীব্র। আমরাই কেবল নিজেদের মনের মধ্যে একটা মিছিলমুক্ত রাজনৈতিক ইউটোপিয়া কল্পনা করে মনকলা খাই। একটা আইডিয়ার কথা বলে শেষ করি। মাঝখানে খবরে দেখেছিলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক কিছু সংগঠন নাকি রয়েছে। তারা আবার নিজেদের মধ্যে কিলাকিলিও করে। এই কিল বাংলা থেকে মাঝেমধ্যে ইংরেজির দিকেও মোড় নেয়ার উপক্রম হয়। প্রথমে পড়ে খুব হেসেছিলাম, কিন্তু অচিরেই ব্যাপারটার গুরুত্ব উপলব্ধি করে চুপ করে গেলাম। সংগঠন জন্মায় প্রয়োজনীয়তা থেকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিতে নিশ্চয়ই কিছু ব্যাপার আছে, যা এই সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। চট্টগ্রাম আউলিয়াদের খাস এলাকা, মারফতি ব্যাপারস্যাপারের অভাব নেই। এরপর কয়েকদিন দেখলাম, সড়ক পরিবহন শ্রমিক সংগঠন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবরোধ করে বসেছে। মাসুদ-মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যু ঘটেছে যে ঘাতক বাসের আঘাতে, তার চালক জামিরকে কেন জামিন দেয়া হচ্ছে না, তার প্রতিবাদে। সেই অবরোধ যেন তেন অবরোধ নয়, এর পিলান করতে বিমানে উড়ে যশোরে গেছেন সংগঠনের নেতারা। অবরোধের সময় তারা অন্য যানবাহন ভেঙেছেন, চালকদের পেঁদিয়েছেন, এবং কুরবানি ঈদের পর আবার অবরোধ চালু করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। সংগঠনের নেতা মন্ত্রী শাজাহান বলে এই সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সরকার কিছু করছে না। এর নেতা বিম্পির কেউ হলে এতদিনে সংগঠনের টপ লোকজনকে পিটিয়ে ছাতু করা হতো বলে অনেকের বিশ্বাস। যে সরকারের মন্ত্রীই দেশের পোয়াটাক অচল করে রাখায় নেতৃত্ব দেয়, সেই সরকারের ওপর মানুষের আস্থা বেশিদিন থাকার কথা নয়। দুটো খবর এক করে ভেবে মনে হলো, আমাদের দেশে এত সংগঠন আছে, কিন্তু যাত্রীদের কোনো সংগঠন নেই কেন? ঢাকা শহরে প্রতিদিন ষাট-সত্তর লক্ষ কমিউটার পথে নামেন, এঁরা দিনের পর দিন পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের নানা কর্তৃপক্ষের নির্বিকার তাচ্ছিল্য ও সীমাহীন অব্যবস্থাপনা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে চলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সংখ্যক বাসে গাদাগাদি করে গরু ছাগলের মতো চড়ছেন, হাতজোড় করে মিনতি করছেন নারাজ সিএনজিওয়ালার কাছে, কিন্তু একটি বারের জন্যেও নিজেরা সংগঠিত হয়ে আওয়াজ তুলছেন না। মেট্রো রেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মুলা দেখানো হচ্ছে পাবলিককে, কিন্তু সবচেয়ে সহজ আর সস্তা বাস ড়্যাপিড ট্র্যানজিট কেন চালু করা হচ্ছে না? সংবিধানের কোন এক ধারায় যেন বলা আছে, জনগণ সকল সম্পত্তির মালিক। জনগণ নিজেদের সম্পত্তি থেকে কিছু পয়সা খরচ করে ঢাকায় আরো একশো (অথবা দুইশো) নতুন বাস কেনার জন্যে কেন সরকারকে চাপ দিচ্ছে না, কেন কেবল দিনের পর দিন নিজে ভুগে চলছে? জনগণ কি সারাটা জীবন খালি জামে আটকে থাকবে, ঈদের বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনের ছাদ থেকে ছিটকে পড়ে মরবে, আর গরু-ছাগল চিনতে ওস্তাদ ড্রাইভারদের চালানো বাসের তলে পড়ে মরবে? ঢাকার জামের আসল সমাধান গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি, তার কিছুই কি পাবলিক নিজেরা সংগঠিত হয়ে আদায় করতে পারবে না? শাজাহান খান পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে সংগঠন করে নিজের শক্তি দেখাতে পারে, আর পরিবহনের যাত্রীরা ঢাকায় সংগঠিত হতে পারবেন না? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন থাকতে পারলে, ঢাকায় লক্ষ লক্ষ কমিউটারেরও একটা সংগঠন থাকতে পারে। একদিন একজোট হোন সকলে, দশ মিনিটের জন্য সব বাস ট্যাক্সি সিএনজি থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়ান, বলুন, বাস দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো। এই কাজ করতে না পারলে, তৃতীয় শক্তি নিয়ে মনকলা খেয়ে লাভ নেই। এই ধরনের লেখার শেষে একটা পরিচয় দিতে হয়। যেমন ধরুন, "গবেষক ও সাহিত্যিক", "কবি ও সাংবাদিক", "শিক্ষক ও রুম্বা নর্তক", "প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও মাজার ব্যবস্থাপক" কিংবা "সংস্কৃতি আন্দোলন কর্মী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা"। আমার এমন কিছু নাই । আমি একজন ব্লগার ও বিশ্বনিন্দুক। আমার কিছু ভাল্লাগেনা।
false
mk
বিএনপির বর্তমান আন্দোলন অগণতান্ত্রিক প্রবল রাষ্ট্রশক্তির কাছ থেকে নিরস্ত্র মানুষের দাবি আদায়ের পন্থা হিসেবে উপমহাদেশে হরতালের সূচনা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তবে সেই হরতালগুলো ছিল সম্পূর্ণ অহিংস। হরতালের আগে পিকেটিং তখনো হতো। কিন্তু বল প্রয়োগের ঘটনা ঘটত বলে জানা যায় না। সেই অহিংস হরতালও হামেশাই পুলিশি হামলার শিকার হতো। কিন্তু হরতালকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করেনি, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। লবণ সত্যাগ্রহের সময় চৌড়িচূড়ায় জনতা সহিংস হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালালে মহাত্মা গান্ধী ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন স্থগিত করে দেন। তাঁর বিবেচনায় সেই সহিংসতা অহিংস আন্দোলনের মূল চেতনার পরিপন্থি ছিল।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার ছিল অহিংস অসহযোগ ও সময়ে সময়ে হরতাল। এই অহিংস আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের সময়েও হরতাল হয়েছে। এগুলোও সহিংস ছিল না। আর এসব হরতাল ডাকা হতো খুব বিরল ক্ষেত্রে। প্রবল জনসমর্থন থাকত এসব হরতালের পেছনে। আগের দিন সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বা এ ধরনের কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে অহিংস পিকেটিং হতো। গুটি কয়েক হরতালই স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের গদি কাঁপিয়ে দেয়। এই হরতালগুলো কালানুক্রমিকভাবে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ঘটায়। একপর্যায়ে আসে একাত্তরের মার্চে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। বাঙালি জনগোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট এই আন্দোলনে সাধারণ লোকজন যাতে কষ্ট ভোগ না করে, তার নিশ্চয়তার বিধান করা হয়, জনজীবনের অনেকগুলো ক্ষেত্রকে সচল রেখে।স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর হরতাল একটু ভিন্নরূপ পেতে থাকল। তবু কিছুটা নিয়মকানুন উভয় পক্ষই মেনে চলত। সবকিছু উল্টে যায় আশির দশকে। তখন থেকে হরতালে সহিংসতা, বিশেষ করে গাড়ি ভাঙ্গা একটি রেওয়াজে পরিণত হয়। হরতাল কার্যকর করতে বল প্রয়োগের কৌশল অনেকটা তখন থেকেই লক্ষণীয় হয়। তখনকার আন্দোলনরত দলগুলোর কর্মসূচির প্রতি জনসমর্থন থাকলেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ জনসমর্থন পায়নি তখনো। অফিসগামী কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে নাজেহাল করার বহু কদর্য নজির তখন সৃজন করা হয়। লক্ষ্য করা যায় আমাদের ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক মূল্যবোধ। যা-ই হোক, ১৯৯০-এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আসে। একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা পেল ১৯৯১-এর শুরুর দিকে।আশা করা হয়েছিল, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সেই ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক মূল্যবোধকে পুনরুদ্ধার করায় সচেষ্ট হবে সব রাজনৈতিক দল। তারা সবাই গণতান্ত্রিক শক্তির দাবিদার। এটা সত্যি, তাঁরাই ঘুরেফিরে সংসদে নির্বাচিত হয়ে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ঘণীভূত হলো। আরও নিম্নমুখী হলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। ক্ষমতায় থাকা আর ক্ষমতার বাইরে থাকা সবার কাছেই তাঁরা তাঁদের অবস্থানে অটল থাকছেন। মাশুল দিচ্ছে দেশের অগণিত মানুষ। অথচ তাঁরাই আমাদের নেতা। তাঁরাই ঘুরেফিরে ক্ষমতায় যান। বিরোধী দলের সাংসদ হয়ে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধাও উপভোগ করেন। তাঁরা যেসব রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে হরতাল ডাকছেন বা অতীতে ডেকেছেন, সেগুলোর কোনোটির পেছনে কী পরিমাণ জনসমর্থন আছে বা ছিল, সেটা মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তবে প্রতিটি হরতালেই মাশুল দেয় সাধারণ মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। দিনের পর দিন বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। জেদাজেদিটা একটু ছেড়ে জনস্বার্থে আলাপ-আলোচনা করে অনেক বড় বিষয়ই নিষ্পত্তি করা যায়। চলমান আন্দোলনে দাবিগুলোর কয়েকটি ক্ষেত্রেও তাই। এখানে নিজ অবস্থানে অটল থেকে সুফল কি কখনো এসেছে?হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। তেমনি একে মানা বা না মানাও যে কোনো ব্যক্তির গণতান্ত্রিক অধিকার। না মানার অধিকারটি বাস্তবে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। হরতালে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের প্রধান শিকার যানবাহন। তাই দূরপাল্লার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথও ইদানীং হরতালকালে নাশকতামূলক কাজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নৌপথে পিকেটিং সম্ভব নয়। তবে নৌপথের যাত্রীরা নদীবন্দরে যেতে আর কাক্সিক্ষত বন্দরে পৌঁছানোর পর প্রকৃত গন্তব্যে পৌঁছাতেও সড়ক ব্যবহার করতে হয় প্রায় ক্ষেত্রেই। তাই নৌপথে নৌযান চলাচল সীমিত হয়ে যায় হরতালের সময়। কিন্তু হরতালের নির্ধারিত দিনের আগের দিন গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কী কারণ, তা কি হরতালকারীরা ব্যাখ্যা করতে পারবেন? সেদিন তো হরতাল নেই। প্রকৃতপক্ষে হরতালের আগের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় হরতালকারীদের তৎপরতা। এতে হয় জনজীবন বিপর্যস্ত। জনগণ থাকে শঙ্কিত। তারপর থাকছে আকস্মিক হরতাল। ছুটিতে কেউ কোথাও বেড়াতে গেলে হঠাৎ জানল, পরদিন থেকে হরতাল। তাও দিবা-রাত্রি এবং ক্ষেত্রবিশেষে তিন-চার দিন। পকেটে খুব কম লোকেরই অফুরন্ত টাকা থাকে। গুনতি টাকা নিয়ে তারা বাসা থেকে বেরিয়েছিল। বিভিন্নভাবে নাজেহাল হয়ে তবে ঘরে ফেরে। বিদেশ থেকে এসে বিমানবন্দরে আটকা পড়ে হাজার হাজার যাত্রী। এর মধ্যে বিদেশিও থাকে। অথচ প্রতিবেশী নেপালে পর্যটক লেখা গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত। তাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য কিন্তু আমাদের চেয়ে দীর্ঘ নয়। আমাদের তো এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।হরতাল যেসব দাবিতে হয়, সে সবের পক্ষে বা বিপক্ষের জনমত বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু দাবি আদায়ের জন্য হরতাল করে অন্যদের জীবন দুর্বিষহ করার অধিকার কারও আছে বলে তো মনে হয় না। এগুলো তো হরতালের প্রচলিত নিয়মকানুনের মধ্যেও পড়ে না। আমাদের সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকারের মধ্যে সভা, সমাবেশ, মিছিল, সংগঠন ইত্যাদি অনেক কিছুই আছে। তবে সেই অধিকারগুলো কিন্তু নিরঙ্কুশ নয়। আইনের দ্বারা যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে এগুলো ভোগ করার কথা।যারা হরতাল ডাকছেন, তারা তো বিষয়টিকে জনগণের জন্য সহনশীল করতে কিছুটা উদ্যোগ নিতে পারেন। বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন বিভাগের গাড়ি আর এম্বুলেন্স কখনোই হরতালের আওতায় ছিল না। থাকার কথাও নয়। অথচ এখন ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ক্ষেত্রবিশেষে হরতালকারীদের হামলার শিকার হচ্ছে। চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গাড়িগুলোও হরতালের আওতামুক্ত থাকার কথা। কিন্তু তাও কি থাকছে? তিন-চার দিন একটানা দিবা-রাত্রি হরতাল দিলে দেড় কোটি লোকের জনপদ ঢাকার বাজারে খাদ্যপণ্য আসবে কীভাবে? খাবারের দোকান যেমন হরতালের আওতামুক্ত, তেমনি খাদ্যপণ্য বহনকারী পরিবহনকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার দাবিও তো নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য। আয়ের অন্যতম উৎস বলে নেপালে যদি পর্যটকদের ভ্রমণসহ সবকিছু হরতালের আওতামুক্ত থাকে; সেখানে আমাদের ৩৬ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধানতম উৎস তৈরি পোশাকশিল্পের সব ধরনের পণ্য পরিবহন হরতালের আওতামুক্ত রাখা যায় না কেন?এমনিতেই অন্তত গত দুই যুগ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে হরতাল সাধারণ জনগণের কাছে তেমন গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নয়। বিরোধী দল সরকারের সঙ্গে দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য দর-কষাকষি করতে অন্য প্রক্রিয়া নিতে পারে। আর সরকারও অকারণ ইন্ধন না জুগিয়ে বিরোধী দলকে হরতালের সুযোগ না দিতে সচেষ্ট থাকতে পারে। এমনিতেই যখন যারা বিরোধী দলে থাকছে, তখন তারাই যেকোনো ইস্যুতে যখন তখন হরতাল ডেকে বসছে। আর তা কার্যকর করা শুরু করছে আগের দিন মধ্যাহ্ন থেকে।আমরা যা-ই বলি না কেন, প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে হরতাল দেশ থেকে শিগগিরই যাচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে সেই কর্মসূচিটিও কিছু নিয়মাবলি মানবে না কেন? হরতালের দিনই গাড়ি ভাঙচুর ও নাশকতা বেআইনি। আর হরতালের আগের দিন গাড়ি ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগ হবে কেন? আর কেনই বা আকস্মিক হরতাল ডেকে কারও বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা কুলখানি লন্ডভন্ড করে দেবে? বিমানবন্দরে আটকে থাকতে বাধ্য করবে দেশি-বিদেশি আগত যাত্রীকে? কোন বিবেচনায় হাজার হাজার পর্যটক আটকা পড়বে এ ধরনের সিদ্ধান্তে? হরতাল বন্ধ না-ই বা হলো, অন্তত বিষয়গুলো ভেবে দেখা জরুরি; এ দাবি তো আমরা করতে পারি। ঠিক তেমনি যেকোনো কাজকর্মের জন্য কিছু নিয়মাবলি থাকে। শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবনও নিয়মকানুনের আওতাতেই পরিচালিত হয়। রাষ্ট্র আর সমাজ তো বটেই। সেগুলো চলে সংবিধান ও আইনের আওতায়। রাজনীতি এগুলোর নিয়ন্ত্রক। আর রাজনীতিও নিয়ম মেনেই চলার কথা। হরতাল রাজনীতিরই একটি কর্মকাণ্ড। তাই সেই কর্মকাণ্ডও নিয়মের বাইরে চলতে পারে না। তারও নিয়ম থাকা দরকার।বিপন্ন মানুষ যখন উন্মুখ হয়ে প্রত্যাশা করছিল আমাদের ক্ষমতাপ্রিয় রাজনীতিকরা এবার দেশের কথা ভাববেন, মানুষের কথা ভাববেন, তখনই আশার উষ্ণতায় পানি ঢেলে দিলেন বিএনপি নেতৃত্ব। বিএনপি ও তার জোটবন্ধুরা একদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল; অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সংবিধান ও আদালতের কথা বলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে অনড়।এ অবস্থা জনমনে নানা শঙ্কার সৃষ্টি করে। সবাই দেখেছে, দুই পক্ষই সংলাপে বসার কথা বলে বার বার কানামাছি খেলেছে। গণতন্ত্র রক্ষা নয়, দুই পক্ষই সিংহাসন দখলে রাখা আর দখল করার পথ পাকা করতে চায়। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, অসহিষ্ণু রাজনীতি ততই মানুষের মধ্যে তৈরি করছে অশুভ আশঙ্কা। এমন সময় এক ঝলক আলো দেখা দেয়। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। অচলায়তন একটু নড়ল। যদিও এতে অনেক জরুরি প্রশ্নের নিষ্পত্তি ছিল না। তবু এ দেশের অসহায়, বিপন্ন মানুষের আনন্দের সীমা রইল না। এ যেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেত্রীর অসীম দয়া। এক বড় রাজনৈতিক উদারতা। অন্তত নির্বাচনকালীন সরকারটিকে দলীয় সরকার করার দৃঢ় পণ থেকে সরে এসে সর্বদলীয় করার পথে নেমে বিরোধী পক্ষকে দেশপ্রেম প্রদর্শনের একটি সুযোগ করে দিলেন। তবে প্রতিক্রিয়ায় বরাবরের মতো প্রতিপক্ষের খুঁত ধরায়ই ব্যস্ত থাকলেন বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা। আর মুলা ঝোলানো হলো। বলা হলো, আতঙ্ক ছড়ানো ২৫ অক্টোবরেই বিএনপির দেশনেত্রী জাতিকে জানাবেন তার পক্ষের উদারতা ও দেশপ্রেমের কথা। অথবা, উল্টে দেবেন গণেশ।
false
mk
ইউপি নির্বাচন এবং গণতন্ত্র ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার এখন তুঙ্গে। প্রার্থীরা ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে হাজির হচ্ছেন। উদ্বেগের বিষয় হলো, একদিকে নির্বাচনী প্রচার যেমন চলছে অন্যদিকে চলছে সংঘর্ষ-সংঘাত। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না। এতে করে ক্রমাগত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ। নির্বাচনী পরিবেশ শান্ত এবং স্বাভাবিক রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর হাতে সংঘর্ষ-সংঘাত বন্ধ করতে হবে।দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয়ে কয়েক দফায় শেষ হবে জুন মাসে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হবে সন্ত্রাসী এবং দুর্বৃত্তদের ব্যাপারে কঠোর হওয়া। নির্বাচনী পরিবেশ যদি প্রতিকূলে চলে যায় তাহলে ভোটাররা ভোট দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। ভোটাররা চান শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে। কিন্তু ভোটাভুটির আগে পরিস্থিতি দিন দিন যেদিকে যাচ্ছে তা শান্তিপ্রিয় মানুষকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে।প্রথমবারের মতো এবারই দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ কারণে নির্বাচন বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। দলগুলো দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। বিশেষ করে প্রধান দলগুলোর সমর্থিত ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ-সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। সংঘর্ষ-সংঘাত এখন যে পর্যায়ে রয়েছে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। এই আশঙ্কা লাঘবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সক্রিয় ও কঠোর হওয়া জরুরি। উত্তপ্ত পরিবেশ বিদ্যমান থাকলে নানা প্রশ্ন উঠবে। সুষ্ঠু ও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আদৌ হবে কি-না এ প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়াবে। এ কারণেই নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে।অনেক নির্বাচনী এলাকায় দল সমর্থিত প্রার্থী এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক প্রার্থীর বাড়িঘর পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে শিথিল ভূমিকা রাখছেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন উদ্বিগ্ন হলেও তাদের কথামতো কাজ করছে না আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এটা আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে সুষ্ঠু ও বিতর্কহীন নির্বাচন। তবে এখনও সময় আছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার, যার কোনো বিকল্প নেই।নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠলে যারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার ঘোর বিরোধী, তারা কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাবেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকেই তারা বিরূপ প্রচারে লিপ্ত আছেন। ফলে দায়িত্বশীলরা যদি তাদের আরও বিরূপ প্রচারের সুযোগ করে দেন, সেটা অনুচিত হবে।ইতোপূর্বে আর কখনোই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় সমর্থন নিয়ে হয়নি। এবারই সেটা হতে যাচ্ছে। এ কারণে ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন দায়িত্বশীলরা, এটা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু যে ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীনই হোন না কেন তারা, তাদের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা আশা করি দায়িত্বশীলরা এ বিষয়ে সচেতন আছেন। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে সেই চেষ্টাই তারা করে যাচ্ছেন। আর এজন্যই এই নির্বাচন হোক সব নির্বাচনের জন্য মাইলফলক। জাতিকে পথ দেখাক আগামী দিনে। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:২১
false
fe
মননের স্বাধীনতা, সুচিন্তিত বিবেকের বাংলাদেশ মননের স্বাধীনতা, সুচিন্তিত বিবেকের বাংলাদেশফকির ইলিয়াস=====================================একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে মানুষের মননের স্বাধীনতা থাকবে। থাকবে তার চেতনার সাহসী শক্তি। এটাই নিয়ম। এই নিয়ম ভেঙে যারা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে চায়- তাদেরই বলা হয় অশুভ শক্তি। স্বাধীন বাংলাদেশে এই অশুভ শক্তি বিভিন্ন সময়ে দাপট দেখিয়েছে। এখনো দেখাচ্ছে। একটি বিজ্ঞাপন আমাদের অনেকেরই চোখে পড়েছে। ‘সাইফুরস’ নামের একটি কোচিং সেন্টার ‘ভালো ইংরেজি’ শেখানোর নামে মূলত হ্যাকারদের উৎসাহিত করেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। ‘চোর বানানোর বিজ্ঞাপন’ দিয়ে সাইফুরস মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।বিবিসিকে উদ্ধৃত করে ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘হ্যাকিংকৃত ডলার শ্রীলঙ্কাতে স্থানান্তরের সময় ‘Foundation’ শব্দকে ‘Fandation’ লেখাতে বিদেশি Deutsche ব্যাংকের সন্দেহ হয়। তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ২০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর বন্ধ করে দেয়।’‘একইভাবে ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে MBA, অফিসার, Lawyer (এমনকি দক্ষ হ্যাকার!) প্রভৃতি হতে হলে reading, রাইটিং, Speaking, লিসেনিং ও spelling সবকিছুতেই ভালো হওয়া জরুরি!’কত জঘন্য ব্যবসায়িক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছে কেউ কেউ। এটাও কি একটি স্বাধীন বাংলাদেশের চাওয়া ছিল?আরেকটি সাম্প্রতিক ঘটনা তাক লাগিয়ে দিয়েছে পুরো জাতিকে। সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডে কেঁপে উঠেছে পুরো দেশ। কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের অলিপুর এলাকায় একটি কালভার্টের কাছ থেকে তনুর (১৯) লাশ পাওয়ার পর পুলিশ আলামত দেখে বলেছে, এই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তনু কলেজ থিয়েটারের সদস্য ছিলেন। অলিপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি।কোথায় চলেছে বাংলাদেশ? কোথায় চলেছে আমাদের স্বাধীনতার চেতনা? মানুষ কি এতই নিষ্ঠুর হতে পারে?রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী চারজনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে নিহত সিফাতের স্বামী আসিফ, সিফাতের শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী এবং প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে প্রমাণ মিলেছে সিফাত আত্মহত্যা করেননি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আঘাতজনিত কারণে সিফাতের মৃত্যু হয়েছে।তিনি আরো জানান, সিফাতের লাশের প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক আত্মহত্যার ভুল প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। তাই অভিযোগপত্রে ওই চিকিৎসকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায় অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন রমজানের বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাতের। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রথমে সিফাত আত্মহত্যা করেছে বলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন দাবি করলেও পরে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হয়।এরকম অনেক ঘটনা প্রায় প্রতি মাসেই বাংলাদেশে ঘটছে। খুন-ধর্ষণ এখন বাংলাদেশে যেন গা সওয়া ব্যাপার। কী এক ঘন অন্ধকার গ্রাস করছে আমাদের মানবিক বিবেক! প্রয়োজনে সারা বাংলাদেশে অবরোধ করে হলেও খুন-ধর্ষণের মিছিল বন্ধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ডা. ইমরান এইচ সরকার নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চ।কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মশাল মিছিল থেকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।দেশব্যাপী গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাটসহ সব অপরাধের মহোৎসব চলছে অভিযোগ করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, খুব সুকৌশলে আমাদের এমন একটি পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়া হচ্ছে যেন আমরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধের উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাট হলো, একজন তরুণ প্রযুক্তিবিদ নিখোঁজ হলেন। আজ আমরা জানতে পারলাম জোহাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু অসংখ্য প্রশ্নের এখনো উত্তর মেলেনি। আমাদের প্রশাসন জনগণকে আশ্বস্ত করার বদলে নির্লজ্জ বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। গত ২০ মার্চ সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এরপর তিনদিন সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা দেখিনি।তিনি বলেন, যে জায়গাটিতে তনুকে খুন করা হয়েছে সেটি অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি জায়গা, সেনানিবাস। যে জায়গাটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত সেখানে কিভাবে অপরাধীরা ধর্ষণ ও খুন করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারল, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। তবে কী এই ঘটনার সঙ্গে ‘অসাধারণ’ কেউ জড়িত? শক্তিশালী কারো মদদে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই কী তনুকে ধর্ষণ ও হত্যা?ইমরান বলেছন- দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নারীর প্রতি সহিংসতাকে আস্কারা দিচ্ছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কেউ কেউ নারীর প্রতি সহিংসতাকে আস্কারা দিয়ে থাকেন। তাদের বক্তব্য-বিবৃতি যেমন মূল অপরাধের ঘটনা থেকে মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়, তেমনি তাদের অব্যাহত গাফিলতি নতুন আরেকটি অপরাধকে আস্কারা দেয়।তিনি যোগ করেন- ‘গত বছর বর্ষবরণের উৎসবে নারী নিপীড়নের ঘটনার এক বছর হতে চলেছে, এখন পর্যন্ত একজন অপরাধীও ধরা পড়েনি, এমনকি আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদনটিও দাখিল করা হয়নি। এই আস্কারা, গাফিলতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের এক অন্ধক‚পে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের জোটবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ করতে হবে। ধর্ষক ও খুনিদের বিচারের মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, নতুবা ধ্বংসই হবে আমাদের নিয়তি’।আরেকটি বিষয় আমাদের চরম হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তা হলো বাংলাদেশে শিশু হত্যার প্রবণতা। বাংলাদেশে শিশু হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিশু হত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। পরিবারের একটি ছোট ঘটনার জন্য একটি শিশুকে কেন হত্যা করা হবে?’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই শিশু হত্যার ঘটনায় আমি ধিক্কার জানাই। যারা শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত, আমি আশা করি আদালত তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি দেবে।’ শিশু হত্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘যারা পালিয়ে গেছে তাদের ধরিয়ে দিন।’ এখানে আমার প্রশ্নটি হচ্ছে ধরিয়ে দেয়ার পরও এসব খুনিরা যে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবে না তার গ্যারান্টি কি?বাংলাদেশে শিশুদের ওপর সহিংসতা বেড়েই চলেছে। গত চার বছরে দেশে ১ হাজার ৮৫টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আর এ বছরের জানুয়ারিতেই হত্যা করা হয়েছে ২৯টি শিশুকে। অপরাধ প্রবণতা আমাদের স্বাধীনতার স্মৃতি ও গৌরবকে ¤øান করে দিচ্ছে বড় করুণভাবে। যে বাংলাদেশে আমরা আমাদের প্রজন্মকে বাড়িয়ে তুলব বলে যুদ্ধে গিয়েছিলাম- সেই বাংলাদেশ এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হতে চলেছে! তা ভাবতেও কষ্ট হয় খুব।যে চেতনা, স্বপ্ন এবং প্রত্যাশার লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় হয়েছিল তা আজ কতটা বাস্তবতার পরশ পেয়েছে, সে প্রশ্নটি উত্থাপিত হচ্ছে বারবার। প্রায় সাড়ে চার দশক সময়, একটি জাতি এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনে কম সময় নয়। রাষ্ট্রের রাজনীতিকরা চাইলে অনেক কিছুই হতে পারত। কিন্তু হয়নি। কেন হয়নি সে প্রশ্নের জবাব কারোরই অজানা নয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মৌলিক মূলনীতি ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ। একটি দেশে গণতন্ত্রের পাশাপাশি সমাজতন্ত্র চলতে পারে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তারপরও ঊনসত্তর-সত্তর-একাত্তরে জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল ওই চার মূলনীতির পক্ষে। যার ওপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ।বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলানোর জন্য হঠাৎ করে কোনো দেবদূত আবির্ভূত হবে না। বদলাতে হবে এ দেশের মানুষকেই। এ জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। আর সেই নেতৃত্ব হতে হবে সৎ এবং সত্যবাদী। বাংলাদেশের প্রতিটি অঙ্গনে মননশীল, দানশীল মানুষের একটি মোর্চা গঠিত হওয়া খুবই প্রয়োজন মনে করি। যারা শুধু সরকারি সাহায্যের দিকে না তাকিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে রাষ্ট্রের সব মহৎ কাজগুলোতে হাত বাড়িয়ে দেবেন। বাংলাদেশে বেসরকারি উদ্যোগে স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য, মেধাবী দরিদ্র ছাত্রসমাজকে সাহায্য, দুস্থ রোগীদের সাহায্য করার বৃহৎ পরিকল্পনা দানশীল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত হতে পারে। এই দেশটি একটি সম্মিলিত স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল। সেই স্বপ্নটি আজ গোষ্ঠীর কাছে বন্দি। এই বন্দিত্বের অবসান প্রয়োজন। আর এজন্য বিত্তবানদের উদার হস্ত বাড়িয়ে দেয়া খুবই প্রয়োজন। স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে স্বাবলম্বী হওয়া। প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে নিতে অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টির গুরুত্ব অপরিসীম।আমরা সুচিন্তিত বিবেক কাজে লাগিয়েই এই প্রজন্মের হাত ধরতে হবে। তাদের জানাতে হবে আমাদের অতীত সংগ্রামের উজ্জ্বল ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনোই কালিমাপূর্ণ ছিল না।-------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ রবিবার, ২৭ মার্চ ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:০৪
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৪০ ১. অসহ্য লাগে এক একটা আয়ুষ্মান দিন, ভোরে জন্মে প্রায় মাঝরাতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে রোদের, রাত ন'টাতেও জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে কৌতূহলী রোদের বৃদ্ধ আস্তিন হেলান দিচ্ছে ঘরের দেয়ালে। এতোখানি উত্তর অক্ষাংশে আগে কখনো গ্রীষ্ম কাটাইনি, আমার শরীরের ঘড়ি তাই বিকেলের রোদেই সন্ধ্যার ইঙ্গিত দিতে থাকে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠাও একটা কিচ্ছা। ভোরে বেশ ভালোই ঠান্ডা থাকে, লেপের আরামটুকু ছেড়ে বেরোতে ভাল্লাগেনা। ওদিকে রাতেও ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়। রীতিমতো আপদ। গতকাল এক্সকারশন ছিলো নয়ডর্ফ বলে এক জায়গায়, একটা ভিন্ডপার্কে। কাসেল থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে সে জায়গাটা, অপূর্ব সর্ষে ক্ষেতের মাঝখানে দানবের বউয়ের মতো এক একটা ফুটফুটে উইন্ড টারবাইন আনমনে ঘুরে চলছে হু হু বাতাসের স্রোতে ডানা ভাসিয়ে। ক্যামেরা সাথে নিয়েছিলাম, কিছু ছবিও তুলেছি, তবে আমার ক্যামেরা ম্যানুয়াল বলে ফিল্ম ডেভেলপ করার আগে তেমন কিছু দিতে পারছি না। আর সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে আর ওঠা যায়নি বলে টারবাইনের চূড়া থেকে আশপাশটা চর্মচোখে দেখেই কর্ম সেরে আসতে হয়েছে। দুঃখিত। আমাদের এক্সকুরজিওনের আয়োজিকা ছিপছিপে কাথরিন, ওর গাড়িতে চড়েই গিয়েছি নয়ডর্ফে। নয়ডর্ফ যাওয়ার পথও অপূর্ব সুন্দর, ঘন বিশাল উঁচু সব গাছ রাস্তার দুই পাশে, একটু পর পর হরিণ পারাপারের চিহ্ন। নয়ডর্ফ একেবারেই গ্রাম, খেতে চড়ে বেড়াচ্ছে ঘোড়া আর ভেড়া, বাড়ির পাশে পাকা আস্তাবলে গোমড়ামুখো জার্মান গরু কী যেন চিবাচ্ছে, তার পাশেই ওয়ার্কশপে পড়ে আছে চাষের নানা যন্ত্রপাতি, সরু রাস্তার পাশে অলস হেঁটে বেড়াচ্ছেন গ্রামের বুড়িদাদীরা। আমরা মোট এগারোজন, ওদিকে পার্কের মালিকপক্ষের তিনজন অপেক্ষা করছিলেন আমাদের জন্যে। তাঁরা জার্মানির একদম শুরুর দিকের টারবাইনগুলির সাথে জড়িত ছিলেন, এখন ঈশ্বরের রহমতে নিজেরাই ব্যবসা করছেন। পাঁচটা টারবাইন নিয়ে তাঁদের দশ মেগাওয়াটের পার্ক, মোটামুটি এগারো মিলিয়ন ইউরো (একশো দশ কোটি টাকার মতো) খরচা পড়েছে মোটমাট। আমাদের দেশে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির ইরেকশন কস্ট মোটামুটি প্রতি মেগাওয়াট তিন কোটি, আর এর পর বাকিটা খাবার খরচ, স্থলভাগে বায়ুবিদ্যুতের ইরেকশন কস্ট মোটামুটি তিনগুণ হলেও অপারেশনাল কস্ট প্রায় নেই বললেই চলে। ভেস্তাস ডেনমার্কের নামকরা উইন্ড টারবাইন নির্মাতা, এক সময় ইন্ডাস্ট্রির মাথা ছিলো তারাই (এখন এনারকন ভেস্তাসকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেছে), জার্মানিতেও তাদের মার্কেট খারাপ ছিলো না বছর ছয়েক আগে। এক একটা টারবাইনের হাব হাইট নব্বই মিটার, রোটর ব্যাস আশি মিটার। টিলার চূড়ায় একেকটা টারবাইনের টাওয়ার, রোটরের ঘূর্ণনের ফলে সাগরের স্রোতের মতো শব্দ ভেসে আসছে ওপর থেকে। একটা টারবাইনের নিচে গিয়ে না দাঁড়ালে ঠিক বোঝা যায় না জিনিসটা কী বিশাল। আমাদের জন্যে কয়েক পদের পানীয় মজুদ ছিলো টাওয়ারের গোড়ায়, তাতে চুমুক দিতে দিতে জনাব ব্রুনোর বক্তৃতা শুনলাম সবাই। ষাটের কাছাকাছি বয়স হবে, রীতিমতো জোয়ানের মতোই চলাফেরার ভঙ্গি, বরং তাঁর ছেলেকে দেখে অনেক বেশি ল্যাবা মনে হলো। বক্তৃতা শেষ করে টাওয়ারে চড়া শুরু হলো। মই বেয়ে টাওয়ারে চড়ার অভিজ্ঞতা আমার খুব কম নয়, কিন্তু নব্বই মিটার আগে কখনো চড়িনি। তাছাড়া দেশে টাওয়ারে চড়ার সময় কোন ধরনের নিরাপত্তা-বেল্ট ব্যবহার করিনি, কারণ দেশে কোন টাওয়ারেই ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সেফটি লাইন বাঁধা নেই, বেল্টের হুক বাঁধবো কীসের সাথে? নয়ডর্ফের টাওয়ারগুলিতে তা-ও মই মাটির সাথে নব্বই ডিগ্রী কোণ করে আছে, অন্যান্য টারবাইনের টাওয়ারে মই থাকে দেয়ালের সাথে গাঁথা, আর টাওয়ারও ক্রমশ সরু হতে থাকে বলে একটা পর্যায়ে গিয়ে রীতিমতো ঝুলে ঝুলে উঠতে হয়। প্রফেসর হায়ার একদিন পরম তৃপ্তির সাথে কিছু ছবি দেখাচ্ছিলেন, পোলাপাইন অনেকেরই দেখেছিলাম মুখ শুকিয়ে গেছে। টাওয়ারের গন্ডেল, অর্থাৎ চোঙার ভেতরে খুব সামান্যই ফাঁকা জায়গা, সেখানেই পালা করে দাঁড়িয়ে যা দেখার দেখলাম সবাই। গন্ডেলের ঘুলঘুলি খুলে মাথা বার করে যা দেখলাম তা খুবই দারুণ ব্যাপার। নিচে অপূর্ব টুকরো টুকরো হলুদ সর্ষে ক্ষেত আর সবুজ বন, যতদূর পর্যন্ত দেখা যায়, একই রকম। খুবই আফসোস হচ্ছিলো ক্যামেরার জন্য, কিন্তু ক্যামেরা নিয়ে ওপরে ওঠা সম্ভব ছিলো না। আমরা যতক্ষণ ছিলাম ওপরে, টারবাইন লক করা ছিলো বলে ব্লেডগুলো ঘোরার দৃশ্য আর কাছ থেকে দেখা হয়নি, চল্লিশ মিটার দীর্ঘ বিশাল তিনটা ব্লেড নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো শূন্যে, শুধু পুঁচকে অ্যানেমোমিটার ঘুরে চলছিলো বনবন করে। বাতাসের বেগ ওরকম উচ্চতায় ভয়ানক, সাতআট মিটার প্রতি সেকেন্ডে। বাংলাদেশের দক্ষিণে কিছু স্পটে একশো মিটার উচ্চতায় ছয় থেকে সাত মিটার প্রতি সেকেন্ডে পাওয়া সম্ভব, হিসেব করে দেখেছিলাম। যতক্ষণ নিচে ছিলাম, আরেক ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হচ্ছিলো। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে তিনি খুব উৎসাহ নিয়ে গেস্টবুক বার করে দেখালেন, বাংলাদেশ থেকে আগেও আরো চারজন অতিথি এসেছিলেন এই পার্ক দেখতে। জার্মানির অজ পাড়াগাঁয়ের ভিন্ডপার্কের অতিথির খাতায় সুন্দর হস্তাক্ষরে বাংলায় লেখা মন্তব্য দেখে খুব ভালো লাগলো, মনে মনে বললাম, হুঁ হুঁ বাবা, দুনিয়াতে প্রতি চল্লিশ জনে একজন বাংলাদেশী, প্রতি তিরিশজনে একজন বাঙালি, যাবা কই? এক্সকারশন শেষে একটা প্লাস্টিকের গ্লাসে করে বিয়ারের খরচ চাঁদা করে ওঠানো হলো। তারপর কয়েকটা গ্রুপ ছবি তুলে আবার কাসেলের দিকে যাত্রা শুরু হলো। ২. এই ক'দিনে কাজের ফাঁকে আরো কিছু সিনেমা দেখলাম। খেকশিয়ালকে ধন্যবাদ, চমৎকার লেগেছে "দ্য প্রেস্টিজ" দেখে। জাড আপাতো-র "নকড আপ" দেখেছিলাম দুর্দান্তের সুপারিশে, সেটাও দারুণ লেগেছে। মোটামুটি লাগলো "হাউ টু রব আ ব্যাঙ্ক" আর "আই অ্যাম লিজেন্ড" দেখে, যদিও শেষেরটাকে পিচ ব্ল্যাক আর আই রোবোট এর একটা ককটেল বলে মনে হচ্ছিলো কেন যেন। আরও একটা ছবি ভালো লেগেছে, "কিস কিস ব্যাং ব্যাং।" এ সপ্তাহে লালনীল সুতার বাম্পার ফলন হবে মনে হচ্ছে, অন্তত নোটবুক দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮২ ‘সময় হলো খোলা তলোয়ারের মতো, তুমি যদি সময়কে না কাটো, তবে ঠিক যেন সময় তোমাকে কাটবে।’ রবীন্দ্রনাথ সময়কে কেটেছিলেন, আর সময় কেটেছিল কাদম্বরীকে।কাদম্বরী ছিলেন ঠাকুরবাড়ির বাজার সরকার শ্যাম গাঙ্গুলির তিন নম্বর মেয়ে। সেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ আর তাঁর বিলেত-ফেরত স্ত্রী জ্ঞানদানন্দী মনে করতেন কাদম্বরী কখনই জ্যোতিরিন্দ্রের যোগ্য নয়। ঠাকুরবাড়িতে কাদম্বরীর বাবা আত্মীয় হিসেবে কখনোই সম্মান পাননি। সামাজিক লজ্জার ভয়ে একসময় বাবা শ্যাম গাঙ্গুলিকে ঠাকুরবাড়ি থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গাজীপুরের বাড়িতে। এসবই কাদম্বরীকে দহন করত। ঠাকুরবাড়িতে চিরকালই তাঁকে ‘আদরের উপবাস’ সইতে হয়েছে। কাদম্বরী গান পারতেন, অভিনয় পারতেন, সাহিত্য আর কবিতার দারুণ সমঝদার ছিলেন। ঠাকুরবাড়ির অবহেলা-অপমান থেকে যিনি তাঁকে আগলে রাখতেন, যাঁর প্রেম তাঁর যাপিত জীবনের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিত, সেই রবীন্দ্রনাথ যখন বিয়ে করে ফেললেন, তখনই তিনি সত্যিকারের নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের তখন ২৩, কাদম্বরী দেবীর ২৫; ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল আফিম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নতুন বউঠান, মারা যান ঠিক দুই দিন পরে। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী, রবির নতুন বউঠানকে কেন আত্মহননের পথ বেছে নিতে হলো?তাঁর শেষ চিকিৎসার জন্য সাহেব ডাক্তার ডি বি স্মিথকে আনা হয়েছিল ৪০০ টাকা খরচ করে, ওষুধ কেনা হয়েছিল ২৫ টাকায়, ডাক্তারকে টাকা দেওয়া হয়েছিল চেকে; সঙ্গে বাঙালি ডাক্তার ছিলেন নীলমাধব হালদার আর সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়; তেতলার ঘরে রাখা হয়েছিল তাঁকে, যে ঘরে কেউ থাকতেন না; অন্ধকার সেই ঘরে দেড় টাকা খরচ করে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল; কিন্তু বাতির আলোয় নিসাড় পড়ে ছিলেন কাদম্বরী, তাঁর শরীর থেকে প্রাণের আলো ক্রমেই চলে যাচ্ছিল। সবার সমবেত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে ২১ এপ্রিল মারা গেলেন কাদম্বরী। লোপাট করা হলো সব প্রমাণ; কোথাও ছাপা হলো না তাঁর মৃত্যুর খবর। রবীন্দ্রনাথের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কাদম্বরী দেবীর ৫ই জুলাই ১৮৬৮ সালে বিয়ে হয়। তখন কাদম্বরী দেবীর বয়স ৯ বছর। কাদম্বরী দেবীর আসল নাম ছিল মাতঙ্গিনি গঙ্গোপাধ্যায়।রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাল্যস্মৃতিতে লিখেছেন যে জ্যোতি দাদা ও বৌঠান চিৎপুরের রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে গঙ্গার ধারে ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে যেতেন।রবীন্দ্রনাথ তার প্রত্যেকটি কবিতা আগে কাদম্বরি দেবীকে পড়ে শুনাতেন।কাদম্বরি দেবীর একাকিত্ব আর নিঃসঙ্গতা দূর করতে তাকে নিয়ে বাগানে ঘুরে বেড়াতেন।এমনি ভাবে রবীন্দ্রনাথ একদিন বেরিয়েছেন কাদম্বরি কে নিয়ে, এমন সময় আকাশ কেলো করে বৃষ্টি নামলো, দুজনে বৃষ্টিতে ভিজলেন, আর রবীন্দ্রনাথ লিখলেন-“এসো নীপবনে, ছায়াবীথি তলেএসো কর স্নান, নবধারা জলে” জ্যোতিদাদা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-জ্যোতিদাদা পিয়ানোর উপর হাত চালিয়ে নতুন নতুন ভঙ্গিতে ঝমাঝম সুর তৈরি করে দিতেন আমাকে পাশে রাখতেন,তখনই সেই ছুটে চলা সুরে কথা বসিয়ে বেধেঁ রাখার কাজ ছিলো আমার বৌঠাকুরাণ গা ধুয়ে চুল বেধেঁ তৈরি হয়ে বসতেন আমি ধরতুম চড়া সুরের গান সূর্য-ডোবা আকাশে ছাদে ছড়িয়ে যেত আমার গান।কবির শৈশব ও কৈশোর কেটেছিলো নারী স্নেহ বঞ্চিত হয়ে জীবনটা ছিলো তাঁর অত্যন্ত একঘেয়ে,অতি সাধারণ এবং ছেলে মানুস বলে অবহেলার সে সময় নতুন বৌঠান এলেন ঠাকুর পরিবারে,কবি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন প্রাণের আবেগ মিশিয়ে-দিনগুলো এমনি চলে যায় একটানা,নিজের ঘরে ঢুকতেই ক্লাসের বেঞ্চি,টেবিলগুলো মনে যেন শুকনো কুনুইয়ের গুঁতো মারে।রোজই তাদের একই আড়ষ্ট চেহারা...। এমন সময় একদিন বাড়িতে বাজলো সাঁনাই বারোয়াঁ সুরে বাড়িতে এলো নতুন বউ কচি শ্যামলা হাতে সরু সোনার চুড়ি।পলক ফেলতেই ফাঁক হয়ে গেলো বেড়া,দেখা দিল চেনাশোনার বাহির সীমানা থেকে মায়াবী দেশের নতুন মানুষ।শ্যামা কবিতায় কবি এই নতুন বউ এর কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে- উজ্জ্বল শ্যামল বর্ন,গলায় পলার হারখানি চেয়েছি অবাক মানি তার পানে বড় বড় কাজল নয়ানে, অসংকোচে ছিলো চেয়ে নব কৈশরের মেয়ে। এই নারীর স্নেহ ও শাসন রবীন্দ্রনাথের যৌবনকে সুন্দর পথে চালিত করেছিলো।‘রবীন্দ্রনাথ কাদম্বরী দেবীকে শ্রদ্ধা করতেন, আবার স্মৃতি ও প্রীতির আসনেও বসিয়েছিলেন।’কবি যে শুধু কাদম্বরী দেবীকে নিয়ে লিখেছেন ঠিক তা নয়। তার মৃত্যুর পর একবার যখন বিদেশে গিয়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো নামে এক বিদেশিনীর প্রেমে পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ, তিনি তখন ওকাম্পোকে উদ্দেশ্য করে একটি গান রচনা করেছেন_ 'আমি চিনিগো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী/তুমি থাকো সিন্ধু পারে ওগো বিদেশিনী'। ওকাম্পো নামক সেই যুবতীর ভালোবাসার আশ্রয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন কবি। কতভাবে যে তিনি বলেছেন প্রেমিকাকে_ 'তোমায় দেখেছি শায়দ প্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে/তোমায় দেখেছি হৃদি মাজারে, ওগো বিদেশিনী'। আপন আত্মার অন্তরালে থেকে প্রকৃতির অভ্যন্তরে কান পেতে কবি কেবলই শুনতেন সেই প্রেয়সীর প্রেম গান_ 'আমি আকাশে পাতিয়া শুনিছি, শুনিছি তোমারি গান/আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ ওগো বিদেশিনী'। জগৎ সংসার পরিভ্রমণ করে অজানা নিখিলে দিনের পর দিন অতিবাহিত করে কবি অবশেষে পেঁৗছালেন ওকাম্পোর দোরগোড়ায়। দীন দরিদ্রের মতো আতিথ্য প্রার্থনা করেছেন সেই বিদেশিনীর কাছে_ 'ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি এসেছি নূতন দেশে/আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী'।
false
fe
প্রজাতন্ত্রের শক্তি, গণমানুষের স্বাধীনতা প্রজাতন্ত্রের শক্তি, গণমানুষের স্বাধীনতা ফকির ইলিয়াস======================================যে কোন প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রশাসকরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন কি না তা একটি দ্রষ্টব্য বিষয়। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, এই তত্ত্বই যদি সত্য হয় তবে কোনভাবেই শাসককুলের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল কাম্য নয়। তারপরও আমরা দেখি সরকারের মন্ত্রীরা মাঝে মাঝেই ক্ষমতার গরমে বেশ তপ্ত হয়ে উঠেন। আর তখনই রাষ্ট্রে নেমে আসে অশনি সঙ্কেতের ধ্বনি। সম্প্রতি দেশের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ আলোচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি একটি ব্যাংকের এমডিকে অপহরণের জন্য গানম্যান পাঠিয়ে ছিলেন। এ বিষয়ে মন্ত্রীর একটি তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার একটি টিভি চ্যানেলে দেখলাম। তাতে মন্ত্রী বলেছেন, মন্ত্রী নাকি ওই ব্যাংকের এমডিকে ফোন করে ছিলেন একটি তদবিরের জন্য। এমডি, মন্ত্রীকে চিনতে পারেননি। তাই মন্ত্রী তার কার্ড পাঠিয়ে ছিলেন, তার গানম্যান দ্বারা। বিষয়টি আমাদের কাছে কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়েছে। কারণ একজন মন্ত্রী যখন নিজ রাষ্ট্রীয় আসনে বসে কাউকে ফোন করেন, তখন প্রথমে ফোনটি করেন মন্ত্রীর সচিব। অন্য পক্ষকে জানিয়ে দেন, মন্ত্রী তার সঙ্গে কথা বলতে চান। অন্যপক্ষও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। এটাই বিশেষ নিয়ম। ব্যক্তিগত ফোনালাপ ছাড়া। প্রশ্নটি হচ্ছে, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কি ওই ফোনটি ব্যাংকের এমডিকে করে ছিলেন? তিনি কেন করতে গেলেন? প্রতিমন্ত্রী টিভি চ্যানেলে বলেছেন, তিনি 'কিডন্যাপ' করার দায়িত্ব নেবেন কেন? প্রজাতন্ত্রে মন্ত্রী এমন কাজ করতে পারেন না। হ্যাঁ, প্রজাতন্ত্র তো রাষ্ট্রের প্রজাদের শক্তি কেন্দ্র। তাই তারা কোন অবৈধ পেশি শক্তি দেখাতে যাবে কেন? কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশে কি তেমন নীতি পালন করা হচ্ছে? না হচ্ছে না। ইডেন কলেজে যা ঘটে গেছে তা ইতিহাসের নির্মমতম লজ্জা। যা লিখে প্রকাশ করার মতো নয়। সোজাসাপটা কথা হচ্ছে নিরীহ সাধারণ ছাত্রীরা দলীয় রাজনীতির শিকার হবে কেন? তারা কেন গ্রুপিংয়ের বলি হবে? আমরা একটি কথা বারবার শুনছি, সরকারের বিভিন্ন অবকাঠামোতে ষড়যন্ত্রকারীরা ঢুকে পড়েছে। এরা কারা? কীভাবে ঢুকল? এসব প্রশ্ন খুঁজে দেখা দরকার। দেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলছেন, মোটা চালের দাম ২৪ টাকা। আর খদ্দেররা বলছেন, ২৮ টাকা কিংবা তারও বেশি। সবচেয়ে ভয়াবহ কথা হচ্ছে, সরকারের মুখপাত্ররা বলছেন, বাজার নাকি প্রধান বিরোধীদলের একটি সিন্ডিকেট অস্থিতিশীল করছে। আর বিরোধীদল বলছে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারিদলের সিন্ডিকেট। এই যে, নিয়ন্ত্রণ পাল্টা নিয়ন্ত্রণের মহড়া তা হতাশ করছে সাধারণ মানুষকে।মনে রাখা দরকার দোষারোপ করে বাঁচার কোন পথই কোন সরকারের থাকে না। সমস্যা সমাধানের জন্যই জনগণ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। ঢাকা ওয়াসার পানিতে বিষাক্ত জীবাণু আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে আদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। পান করা পানিতেও জীবাণু। এমন চরম হতাশা আর শঙ্কা নিয়েই বেড়ে উঠছে এ প্রজন্ম। যা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। লজ্জাজনকও বটে। ওয়াসার এমন কর্মকা- চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। দুই. আর ক'দিন পরই পালিত হবে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা বার্ষিকী। প্রায় চার দশক সময় পার করল বাংলাদেশ। এই চার দশকে দেশটি কি স্বনির্ভর হয়ে দাঁড়াতে পেরেছে। না পারেনি। কেন পারেনি? এর কারণগুলো খুঁজে দেখা খুবই দরকার। যে মৌলিক চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল তা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ভোগবাদী মানসিকতা হরণ করেছে গোটা রাষ্ট্রের মানুষের লালিত স্বপ্নকে। এই বেদনায় আক্রান্ত বর্তমান প্রজন্ম। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র অংশ নিয়েছিলেন তারা কি খুব বেশি চেয়েছিলেন এই রাষ্ট্রের কাছে? না চাননি। আমি সেই '৭২ সালে দেখেছি যুদ্ধ-ফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের রিলিফের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকতে। পরে ক্রমশ সামান্য রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও মান-সম্মান বাঁচাতে পারেননি এসব বীর মুক্তিযোদ্ধা। অথচ দেশে হাজার হাজার মানুষ কোটিপতি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়। পরাজিত ঘাতক আলবদর, রাজাকার শক্তি, প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের আখের। পরবর্তী সময়ে এরাই বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এখনও তল্লাশি করলে দেখা যাবে দেশে অনেক বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, শিল্পকারখানা, মিল ফ্যাক্টরিতে রাজাকার-আলবদররা প্রগতিশীল রাজনীতিকদের 'পার্টনার' হিসেবে রয়েছে। তারা জানে, নিজেদের অতীত অপকর্ম ঢাকতে হলে একটা ঢালের প্রয়োজন। এই ঢাল হিসেবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাদী শক্তিরা ব্যবহৃত হচ্ছেন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার শক্তির হাতে। দীনতা কাটিয়ে উঠে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রগতিশীল রাজনীতিকরা কতটা ঐক্যবদ্ধ তা প্রমাণের সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। আমরা প্রগতিশীলদের নগ্ন বিভক্তি দেখছি। অথচ মৌলবাদী জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন লেবাসে। আর তাদের শিকড় থেকে যাচ্ছে ওই একই। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলানোর জন্য হঠাৎ করে কোন দেবদূত আবির্ভূত হবে না। বদলাতে হবে এদেশের মানুষকেই। এজন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। আর সেই নেতৃত্ব হতে হবে সৎ এবং সত্যবাদী। বাংলাদেশের প্রতিটি অঙ্গনে মননশীল, দানশীল মানুষের একটি মোর্চা গঠিত হওয়া খুবই প্রয়োজন মনে করি। যারা শুধু সরকারি সাহায্যের দিকে না তাকিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে রাষ্ট্রের সব মহৎ কাজগুলোতে হাত বাড়িয়ে দেবেন। বাংলাদেশে বেসরকারি উদ্যোগে স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য, মেধাবী দরিদ্র ছাত্রসমাজকে সাহায্য, দুঃস্থ রোগীদের সাহায্য করার বৃহৎ পরিকল্পনা দানশীল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত হতে পারে। এই দেশটি একটি সম্মিলিত স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল। সেই স্বপ্নটি আজ গোষ্ঠীর কাছে বন্দি। এই বন্দিত্বের অবসান প্রয়োজন। আর এজন্য বিত্তবানদের উদার হস্ত বাড়িয়ে দেয়া খুবই প্রয়োজন। স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে স্বাবলম্বী হওয়া। প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে নিতে অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টির গুরুত্ব অপরিসীম। নিউইয়র্ক, ১৭ মার্চ ২০১০ --------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ১৯ মার্চ ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- ফিলো সহো
false
rn
আমার বস হুমায়ূন আহমেদ ১। মেয়েরা হচ্ছে জন্মদাত্রী জননী। হাজার ভুল করলেও এদের উপর রাগ করতে নেই। এদের উপর রাগ করাটাই কাপুরুষতা। অক্ষম এবং দুর্বল পুরুষরাই শুধু স্ত্রীর সঙ্গে রাগারাগি করে। --- জোছনা ও জননীর গল্প - হুমায়ূন আহমেদ২। “নি” বিশেষশ্রেণীর ক্ষমতাধর কিছু মানুষ। অনেক বছর পর পর প্রকৃতিতে একজন “নি” আসে। প্রকৃতি এদের অসীম সৃষ্টিশীল ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছে। উপন্যাসের মুল চরিত্র “মুবিনুর” একজন “নী”। তবে সে এই বিষয়ে অবগত নয়। মাঝে মাঝেই স্বপ্নে কিছু বুড়ো মানুষকে দেখতে পায়, যাদের কথা সে কিছুই বুঝে না। নীলগঞ্জ হাইস্কুলের জন্য “ফুড ফর ওয়ার্ক” প্রজেক্টে সরকারীভাবে ১০ বস্তা গম দেয়া হয়। হেডমাস্টার হাফিজুল কবির মুবিনুরকে দিয়ে সাইন করিয়ে গম আনেন। মূলত গম বরাদ্ধ হয়েছিল ১০০ বস্তা। বাকীগুলা উপজেলা অফিসের লোকজন খালাস করে দিয়েছে। উপর থেকে এই বিষয়ে খোঁজ করা হলে হেডমাস্টার মুবিনুরকে ফাসিয়ে দেয়……মৃত্যুতে খুব বেশি দুঃখিত হবার কিছু নেই। প্রতিটি জীবিত প্রানীকেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মরতে হবে। তবে এ মৃত্যু মানে পুরোপুরি ধ্বংস নয়। মানুষের শরীরে অযুত, কোটি,নিযুত ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলস যেমন- ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন-এদের কোন বিনাশ নেই। এরা থেকেই যাবে। ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। কাজেই মানুষের মৃত্যুতে খুব বেশি কষ্ট পাবার কিছু নেই। নি # হুমায়ূন আহমেদ৩। হাঁটতে হাঁটতে হাসান আকাশের দিকে তাকাল। আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। কে জানে আজও হয়তো বৃষ্টি হবে।হাসানের ইচ্ছা করছে কোনো জনমানবহীন শুন্য দ্বীপে নতুন কোনো প্রোজেক্ট শুরু করতে। দ্বীপটার নাম দেয়া যাক মায়া দ্বীপ। সেই দ্বীপে শুধুই কদম গাছ থাকবে। বর্ষায় ফুটবে কদম ফুল।কোনো এক আষাঢ় সন্ধ্যায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। হাসান বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কদম বনে ঘুরে বেড়াবে। সে খুঁজে বেড়াবে তার প্রিয় মুখদের। যেহেতু দ্বীপের নাম মায়াদ্বীপ কাজেই খুঁজলেই সব প্রিয়জনদের সেখানে পাওয়া যাবে। তাদের খুব কাছে যাওয়া যাবে না। কিন্তু তাদের পায়ের শব্দ পাওয়া যাবে। প্রিয় পদরেখা দেখা যাবে। শোনা যাবে তাদের চাপা হাসি। হাসান যখন ডাকবে - বাবা অন্তু তুমি কোথায় গো? তখন কোনো কদম গাছের আড়াল থেকে অন্তু বলবে, আমি এখানে।হাসান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে বৃষ্টি ও মেঘমালা। --- বৃষ্টি ও মেঘমালা - হুমায়ূন আহমেদ৪। হোটেল গ্রেভার ইন # হুমায়ূন আহমেদ বইটিতে মোট ১৭ টির মত ছোট গল্প আছে। বইটা যারা পড়েননি আমার মতে অনেক বড় কিছু একটা মিস করলেন!! বইটা পড়ার পর হয়তো হুমায়ূন স্যার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। "হোটেল গ্রেভার ইন" এই গল্পটি বইটির প্রথম গল্প। হোটেল গ্রেভার ইন মূলত একটি হোটেলের নাম আর এই হোটেলটি তার মালিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য দান করে গিয়েছেন। আর তার মধ্যেই হুমায়ূন স্যার এর থাকার ব্যবস্থা হয়। ৫। বাদশা নামদার - হুমায়ূন আহমেদ বইয়ের ১৩৬ পৃষ্ঠায় স্ত্রী হামিদা বানু এই সম্রাটকে বলছেন, ‘আপনি দুর্বল সম্রাট; কিন্তু অত্যন্ত সবল একজন কবি।’ ৭৩ পৃষ্ঠায় তার চিরশত্রু শের শাহ যিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন। তাঁরও নির্দেশ ছিল সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।” এই বইটি পড়লে মনে হবে রাজসভা থেকে যুদ্ধক্ষেত্র, জলসাঘর থেকে হেরেমে ঢুকে পড়ছেন!! ৬। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৩২
false
hm
সাবিয়া সুলতানাদের জন্যে প্রথম আলোতে একটা খবর পড়ে মনে পড়ে গেলো মালেনা সিনেমাটার কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনী, মালেনার স্বামী যুদ্ধে গেছে, সে শহরে একা। শহরের সব পুরুষ সুন্দরী মালেনার প্রতি লুব্ধ। কিন্তু সামাজিক চাপে মালেনা একঘরে হয়ে পড়ে। তার কাছে কেউ কোনো কিছু বিক্রি করে না। মালেনাকে সামান্য খাবারের বিনিময়ে দেহদান করতে হয় লুব্ধ পুরুষের কাছে। জার্মান সৈন্যরা যখন শহরে আসে, মালেনা দেহোপজীবিনী হয়ে তাদের কাছে যায় জীবিকার তাগিদে, এরই মাঝে তাকে নানা ছুতোয় ভোগ করে চলে শহরের পুরুষেরা। জার্মান সৈন্যেরা চলে যাওয়ার পর নগরের বিবাহিতা নারীরা মালেনার ওপর চড়াও হয়, তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এরই মাঝে ফিরে আসে মালেনার স্বামী, সে যুদ্ধে পঙ্গু। সে এসে খুঁজতে থাকে তার স্ত্রীকে, শহরের সবাইকে অভিসম্পাত করে, এক পর্যায়ে প্রহৃত হয় সে-ও। কিন্তু সে হাল ছাড়ে না, খুঁজে বের করে ফিরিয়ে আনে মালেনাকে, দু'জনে হাত ধরাধরি করে মাথা উঁচু করে হেঁটে যায় বাজারের মাঝ দিয়ে। মালেনাকে আবারও কারো মালিকানায় দেখতে পেয়ে লম্পট স্বামীর স্ত্রীরা নিশ্চিন্ত হয়, তারা মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন করে, শুভেচ্ছা জানায়। গোটা সিনেমাটি দেখানো হয় এক বয়োসন্ধি উত্তীর্ণ কিশোরের চোখে, যার চোখে মালেনা এক অধরা যৌনতার প্রতীক। শহরের সবাই যখন মালেনাকে কামনা করে, একমাত্র সেই কিশোরটিই মালেনাকে ভালোবাসে। প্রথম আলোতে ছাপা খবরটা পড়ে মন খারাপ লাগছে কয়েকটি কারণে। এক কিশোরী নির্জনে আরেক কিশোরের সাথে ঘনিষ্ট হয়েছে, সেই কিশোর এই ইন্টিমেসির মূল্য দিতে জানে না বলে সেই দৃশ্যগুলো মুঠোফোন আর ইন্টারনেট প্রযুক্তির হাত ধরে চলে গেছে বহু মানুষের কাছে। এর জের ধরে মেয়েটিকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়েছে। আমাদের দেশে পাঠ্যক্রমে যৌন শিক্ষার কোনো স্থান নেই। ফলে এ সংক্রান্ত শিক্ষা আসে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট অথবা বহুলাংশে অপ্রীতিকর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। যৌনতার অবদমনই আমাদের দেশে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য পথ, এবং তার বিচ্যুতিকে সামাজিকভাবে শায়েস্তা করাকেই প্রশস্ত বলে ধরে নেয়া হয়। আর এর ঘানি মেয়েদেরই টানতে হয়। প্রথম আলোতে জানানো হয়েছে, বাগেরহাট আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুখার্জি রবীন্দ্রনাথ জানান, ৪ এপ্রিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ওই ছয়জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ডাকা হয়। পাঁচজন অভিভাবকের উপস্থিতিতে ওই ছয় শিক্ষার্থীকে প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা ও নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে অভিভাবকদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়। এ ছাড়া তাদের স্কুলে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার মানে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা ঐ শারীরিক ঘনিষ্টতার দৃশ্যগুলো দেখে সিদ্ধান্তে এসেছেন, এই ঘটনার পাত্রপাত্রীদের সামাজিকভাবে "শাস্তি" দিতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে বসে যৌনাভিচার চালানো বিশৃঙ্খলার মধ্যেই পড়ে, তার শাস্তি নিশ্চয়ই দেয়া যেতে পারে, কিন্তু সে শাস্তি কি অস্ট্রাসিজম বা জনবিচ্ছিন্নকরণ হতে পারে? স্কুল কর্তৃপক্ষ এখানে যা বিবেচনায় আনেননি, তা হচ্ছে, তারা নিজেরাই ডাইনিশিকারের সূচনা করলেন। এই কাজটিকে অভিভাবকরাও সমর্থন করেছেন। এরপর ঘটনাটিকে আরো বহুদূর টেনে নিয়েছেন দুই সাংবাদিক। প্রথম আলো লিখেছে, ১৫-২০ দিন আগে বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আবদুর রব ও রিফাত আল মাহমুদ বলেন, ‘আপনার মেয়ের আপত্তিকর কিছু ছবি আমাদের কাছে আছে। আমরা এ বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নিতে চাই।’ তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি না হলে তাঁরা কয়েকটি সংবাদপত্রে ও টেলিভিশনে মেয়ের এ ঘটনা প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে চলে যান। মেয়েটি ঘরের ভেতর থেকে সাংবাদিকদের সব কথা শুনেছিল। এর পর থেকে সে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়। গত বৃহস্পতিবার স্যাভলন পান করে আত্মহত্যা করে। কোনো কিশোরের সাথে কোনো কিশোরীর ঘনিষ্ট হওয়ার ব্যাপারটি ঠিক কী বিবেচনায় সংবাদপত্র বা টেলিভিশনে আসতে পারে? কারো আপত্তিকর ছবি কোনো সাংবাদিকের হাতে এলে এ নিয়ে সাক্ষাৎকার নেয়ারই বা কী আছে? রাস্তার ধারে কারো প্রস্রাব করার দৃশ্যটিও আপত্তিকর, এই নিয়ে কোনো ছবি তো মুঠোফোনে ছড়ায় না, কিংবা সাংবাদিকরাও সাক্ষাৎকার নিতে যান না? ঐ দুই সাংবাদিক মেয়েটিকে আরো হেনস্তা করতেই গিয়েছেন, কারণ মেয়েটির ছবিটির পর্নোগ্রাফিক আবেদন রয়েছে। তার ছবিটি প্রকাশ না করেও তাকে পর্নোগ্রাফির উপকরণ হিসেবে সমাজের কাছে উপস্থাপন করা সম্ভব। মেয়েটিকে শুধু তার স্কুলের শাস্তি বা অভিভাবকের শাস্তিতে এই দুই সাংবাদিক সন্তুষ্ট ছিলো না, তারা মেয়েটিকে মালেনার মতো করে বাজারে টেনেহিঁচড়ে এনে সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়ে শাস্তি দিতে চেয়েছে। মেয়েটির অপরাধ, বা সমাজের চোখে "পাপ" হচ্ছে ভিকটিম হওয়া। প্রথম আলো বলছে, সাবিয়া তাকে বলে, ‘ঘটনার জন্য দায়ী ছেলেদের বাড়ি সাংবাদিক যায় না, আমার বাড়িতে সাংবাদিক আসে। আমি কোথাও বের হতে পারি না। বাড়ির মধ্যেও অনেক কথা শুনতে হয়। আমি আর পারছি না। আমার মনে হয় মরে যাওয়াই ভালো।’ ওই বান্ধবী সাবিয়াকে অনেক বুঝিয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই স্যাভলন পানে আত্মহত্যা করে সাবিয়া। পর্নোগ্রাফিক দৃশ্যে একটি ছেলের উপস্থিতি নিয়ে আমাদের সমাজের কোনো মাথাব্যথা নেই, ঐ ছেলেগুলো সে কথা জানে বলেই তারা নিশ্চিন্ত মনে সে দৃশ্য ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা জানে, স্কুল বা অভিভাবক তাদের শাস্তি দিলেও, সমাজ এসে তাদের কিছু বলবে না। তারা হয়তো তাদের অন্য বন্ধুদের কাছে বাহ্বাই পাবে এমন মর্দাঙ্গি দেখানোর জন্যে। মেয়েটাকে শুধু একঘরে হলেই চলবে না, তাকে আবার সেই ঘর থেকে টেনে বের করে অযুতজনের সামনে আবার উন্মোচন করা হবে, মিডিয়ার কল্যাণে। সাংবাদিক সংগঠনের সদস্যেরা সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর পত্রিকায় তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে কিছু আপত্তিকর লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর পত্রিকায় কলম ধরেছিলেন, মানববন্ধন করেছিলেন, অনেক শোরগোল করেছিলেন। তারা কি এই বাচ্চা মেয়েটার আত্মহননের পেছনে নিজেদের গোষ্ঠীর সদস্যদের ইন্ধন বা দায়ের কথা স্বীকার করে একটা অ্যাপোলজি নোট দিতে পারবেন? কোথাও মানববন্ধন করে বলতে পারবেন, তারা লজ্জিত? মানুষ কত প্রবল সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। মানুষ দুর্গম মরুভূমিতে বসে দূরবীণে চোখ রেখে সহস্র আলোকবর্ষ দূরের তারার কাছে গ্রহের সন্ধান করে একদিন সেখানে পা রাখার আশা নিয়ে, পৃথিবীর হৃদস্পন্দন শুনতে সাগরের গভীরতম খাদে নেমে পড়ে ছোট্ট ডুবোজাহাজে ঢুকে, উন্মত্ত বিশাল উল্কাপিণ্ড থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র জীবাণুর হাত থেকে অন্য মানুষকে রক্ষার জন্যে নিজের সবটুকু সময় ব্যয় করে, কেন করে? মানুষের কাছে মানুষের প্রাণের মূল্য আছে বলে। আমাদের দেশের মানুষ ক্রমশ এই মূল্য দিতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়ছে। যে কিশোরী সাংবাদিকের ভয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিলো, সে কিন্তু এই ক্রমহ্রাসমান মূল্যের কথাই আবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেলো আমাদের। আর তার এই আত্মহননের সংবাদ তার মতো আরো অনেক কিশোরীর কাছে একটি মেসেজই বহন করবে, এমন কিছু যদি তাদের ক্ষেত্রে ঘটে, সমাধান এটিই। স্কুল-অভিভাবক তাদের আড়াল করতে চাইলেও সাংবাদিক এসে তাকে পুনরায় উলঙ্গ করতে চাইবে,তখন বাঁচতে হলে তাকে মরতে হবে। মানুষের জীবন অনেক বড়। কোনো ছবি তার জীবনের চেয়ে বড় নয়। যারা ছবিকে জীবনের চেয়ে বড় করে দেখাতে চায়, তারা মানুষ নয়। ঐ দুই সাংবাদিকের শাস্তি চাই। আর এই বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পাশে তার স্কুল আর অভিভাবকরা এসে দাঁড়ান প্লিজ, তারা আপনাদের শিক্ষা, দিকনির্দেশনা আর সহযোগিতা দাবি করে। সংযোজন: বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ধারা ১১ এর উপধারা ২ এর গ অংশে প্রেস কাউন্সিলের উদ্দেশ্যে ও কার্য সম্পর্কে বলা হয়েছে [সূত্র], to ensure on the part of newspapers and news agencies and journalists the maintenance of a high standard of public taste and to foster a due sense of both the rights and responsibilities of citizenship; কোনো মানুষের "আপত্তিকর দৃশ্য" জনরুচির উচ্চমানের মধ্যে পড়ে কি না, কিংবা নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্বের যথাযথ বোধ জাগিয়ে তোলে কি না, তা নিয়ে মাননীয় প্রেস কাউন্সিল কি স্বতপ্রণোদিত হয়ে সাংবাদিকদের কোনো সবক দেবেন? মনে হচ্ছে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের শিক্ষা ছাড়াই অনেকে সাংবাদিকতা পেশায় সক্রিয় আছেন।
false
ij
গল্প_ স্বর্গরাজ্যের গান মর্মর পাথরের রাজপ্রাসাদের পিছনে একটি মনোরম উদ্যান। রাজপ্রাসাদ থেকে উদ্যানে ঝকঝকে পাথরের সোপান নেমে গেছে । উদ্যানে নানা ধরনের ফল ও ফুলের গাছ। উদ্যানের মাঝখান দিয়ে পারসিক রীতিতে তৈরি সুন্দর একটি প্রস্তরনির্মিত পথ চলে গেছে। তারই একপাশে ঝাউগাছ, অন্যপাশে সফেদা ও ডালিম গাছের সারি। উদ্যানের শেষ প্রান্তে ঘন আম্রকানন। আম্রকাননের ভিতর দিয়ে একটি অপরিসর পথ ভাগীরথী নদীর পাড়ে গিয়ে থেমেছে। ওখানেই একটি পুরাতন শ্যওলা-ধরা পাথরের সিঁড়ি নেমে গেছে ভাগীরথী নদীর গভীরে। ... দক্ষিণমূখী প্রবাহিত গঙ্গারই এক শাখা ভাগীরথী । সুপেয় জলের আধার বলেই নদীটি গৌড়বাংলার জনপদের প্রাণের উৎস । নদীটি এখানে দু’ভাগ হয়ে গেছে- এটির পূর্বমূখী ধারাটি পূর্ববঙ্গের শ্যামল মাটির বুক চিরে সমুদ্রে মিশেছে। উদ্যানে এই মুহূর্তে ভোরের নম্র আলো ছড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে ভোরের আজান সমাপ্ত হয়েছে। ঠিক তখুনি সম্রাটের ঘুমভেঙে যায় । তিনি শয্যা ত্যাগ করে রাজকীয় কক্ষ ত্যাগ করে রাজপ্রাসাদের পিছনে বিশাল অলিন্দে চলে আসেন তারপর সম্মূখস্থ উদ্যানটির রূপ বিস্মিত করে দেয় এবং নিজের অজান্তে ঝকঝকে পাথরের সোপান ভেঙে উদ্যানে নেমে আসেন। এবং এই মুহূর্তে সুমধুর বাতাসের স্পর্শে নিজের ভিতরে মুগ্ধতার উত্থান টের পান মুগল সম্রাট হুমায়ুন । ওপরে ভোরের নম্র নীল আকাশ, সে আকাশে পাখিদের ওড়াউড়ি; কচি লতাপাতার গন্ধ মেশানো ভোরের শীতল বাতাসের স্পর্শে হুমায়ুন বাদশাহ টের পেলেন তাঁর মনের ভিতরের জমে ওঠা উদ্বেগ আর নেই। সম্রাটের উদ্বেগের প্রধান কারণ: উদীয়মান আফগান নেতা শেরখান (শেরশাহ শূরী) । সম্রাট সামনে তাকিয়ে উদ্যানময় গোলাপ ফুলের সমারোহ দেখতে পেলেন এবং সে ফুলের মিষ্টি সুবাস সম্রাটের মনে আফগান নেতা শেরখান এর নিষ্ঠুর মুখটি ভেসে উঠতে দিল না। সম্রাট এগিয়ে যেতে থাকেন। গোলাপঝাড়ের পিছনে একজন আফগান সৈন্যের লাশ। সম্রাট থমকে দাঁড়ালেন। এতক্ষণ চারি দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে চোখে আরাম পাচ্ছিলেন ...এখন আফগান সৈন্যের লাশটি মনের প্রসন্নতা ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। সসৈন্য গৌড় পৌঁছতে কাল বিকেল হয়ে গিয়েছিল; তারপর আফগান সৈন্যদের প্রতিরোধ ধ্বংস করে রাজপ্রাসাদ দখল করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। ক্লান্ত ছিলেন বলে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সম্রাট। আজ ভোরের আজানের সময় ঘুম ভাঙল ... ... সম্রাট হুমায়ুনের বাবা সম্রাট বাবর। তিনি ১৫২৬ সালের এক যুদ্ধের পর ভারতবর্ষে মুগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে বাবরের মৃত্যুর পর আগ্রায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হুমায়ুনের মুগল বংশের শাসনভার গ্রহন করেন এবং অবিলম্বে পশ্চিমে স্থানীয় মুসলিম অধিপতিদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। পূর্বদিকেও উদীয়মান আফগান নেতা শেরখান শক্তি শালী হয়ে উঠছিলেন। ১৪৭২ খ্রিস্টাব্দে শেরখান-এর জন্ম; পিতার নাম হাসান খান শূর। শেরখান বিহারের অর্ন্তগত সাসারামের জায়গিরদার। যা হোক। শেরখান ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দের এক যুদ্ধের পর বিহারের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হন। এবং ক্রমান্বয়ে ১৫৩৮ সালে গৌড় (সে সময়কার বাংলার রাজধানী) দখল করেন। এতে হুমায়ুন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। তিনি সসৈন্য পূর্বদিকে অগ্রসর হন। গতকাল বিকেলে সম্রাট হুমায়ূন গৌড়ে প্রবেশ করেন ... অল্প অল্প করে আলো ফুটে উঠছে। সম্রাট এগিয়ে যেতে থাকেন। স্বচক্ষে একবার ভাগীরথী নদীটিকে দেখার ইচ্ছা। পিছনে পাথরের সোপানে পায়ের শব্দ হল। সম্রাট পিছন ফিরে তাকালেন। তরুণ আল মনসুর দ্রুত পায়ে এদিকেই আসছে। ছেলেটি স্থানীয় দোভাষী। আল মনসুরের সঙ্গে পরিচয় বিহারে । বাইশ -তেইশ বছর বয়েসি বুদ্ধিদীপ্ত ছেলে। বাংলা ভালোই জানে । জাঁহাপনা আপনি এখানে? আর আমি আপনাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান। তিরিশ বছর বয়েসি সম্রাট হাসলেন। বললেন, এখনকার নদীটিকে একবার স্বচক্ষে দেখবার ইচ্ছে হল বড়। বলে প্রস্তরনির্মিত পথে আম্রকাননের দিকে যেতে থাকেন সম্রাট। মাস দুয়েক ধরে সম্রাটের সঙ্গে আছে আল মনসুর। জাঁহাপনা হুমায়ুন যে সামান্য খেয়ালি আছেন-তা আল-মনসুর বিলক্ষণ জানে। আল মনসুর হুমায়ুন বাদশাহকে অনুসরন করে। ক্রমের ভোরবেলার উদ্যানে পাখির ডাক আরও ঘন হয়ে উঠতে থাকে। এ ছাড়া মনোরম আলো ও মধুর বাতাসের ছড়াছড়ি। পথের পাশে ইতস্থত ছড়ানো আফগান সৈন্যের লাশ নজর এড়ালো না। আম্রকাননের ভিতর দিয়ে সরু পথ। এখনও অনেকটা অন্ধকার ও কুয়াশা ছড়িয়ে আছে। তারই মধ্যে মুগল সৈন্যদের ছোট্ট শিবির। পাতার আড়ালে মুগল সৈন্যদের সতর্ক দৃষ্টি । আমবাগানেও আফগান সৈন্যের বর্শাবিদ্ধ লাশ। কারও-বা মস্তক দ্বিখন্ডিত। সম্রাট নদীর ধারে পৌঁছলেন। পাথরের সোপান যেখানে নদীজলে মিশেছে সেখানে বৃহৎ দুটি বজরা নৌকা বাঁধা। বজরা নৌকায় মুগল সৈন্যদের স্পস্ট চোখে পড়ে। নৌকায় নদীর দিকে মুখ করে কামান বসানো। এসব এড়িয়ে নদীর গহীন বিস্তার দেখে থমকে গেলেন সম্রাট। গঙ্গা নদীটিকে আগেও দেখেছেন । কিন্তু এমন গভীর গহন জলরাশির অপার বিস্তার এই প্রথম দেখলেন। নদীতে নৌকা ভেসে চলেছে। শরৎকাল। ওপারের চরে বিস্তীর্ণ বালুকারাশি, কাশবন, চখা-চখির মেলা। হঠাৎই একজন মাঝবয়েসি রমনীকে এ দিকে আসতে দেখে সম্রাট অবাক হয়ে গেলেন। রমনীটিকে দেখে গৃহস্থ ঘরের নারী বলে মনে হল না। শ্যামলা, কপালে সাদা নকশা কাটা। পরনে স্থানীয় বঙ্গীয় নারীদের সাদা রঙের পোশাক। শ্যামবর্ণে মিষ্টি ঢলোঢলো মুখ, হাঁটার ভঙিটি ভারি চমৎকার; তরে রমনীকে কেমন বিষন্ন আর উদাসীন মনে হল। আল মনসুর বলল, জাঁহাপনা, এ জেনানা বৈষ্ণবী। বৈষ্ণবী? হ্যাঁ। বৈষ্ণবী কাছে এসে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল। আল মনসুর বৈষ্ণবী কে বলল, ইনি মুগল সম্রাট হুমায়ুন, একে প্রণাম ক’রো। নমস্কার । বৈষ্ণবী হেসে প্রনাম করল। বড় মলিন সে হাসি। তবে সম্রাটকে দেখে যে মোটেও ঘাবড়ে যায়নি তা বোঝা গেল। সম্রাট হাসলেন। মাথা নাড়লেন। জিগ্যেস করলেন, কি নাম তোমার? বিগত দুশো বছর ধরে গৌড়বাংলায় তুর্কি-আফগান শাসন চলেছে। বৈষ্ণবী আখছার পীর ফকিরের থানে যায়, তাদের সঙ্গে মিশে, গান শোনায়। এসব কারণেই বৈষ্ণবী বিলক্ষণ টুকটাক ফারসি ভাষা বোঝে। সে বলল, মহারাজ, আমার নাম সুনন্দা। আমি বৈষ্ণবী । সম্রাট মাথা নাড়েন। তারপর আল মনসুরকে জিগ্যেস করলেন, রমনীটি কি বিশেষ ধর্মসম্প্রদায়? জ্বী, জাঁহাপনা। এরা হল জাতে বৈষ্ণব। এরা দয়াল মুর্শিদের আরাধনা করে। গানে গানে মওলার কলবের সঙ্গে আশরাফুল মাখলুকাতের জানের মিলনের কথা বলে। গানই এদের ইবাদতের মাধ্যম। তাই নাকি? সম্রাট তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে বৈষ্ণবীর মুখের পানে তাকালেন। সে মুখে গাঢ় বিষাদ থাকলেও প্রসন্নতার প্রলেপও ছিল। জ্বী। জাঁহাপনা। তা হলে ওকে বল তো একটা গান করতে । সম্রাট বলেন। নদী পাড়ের বাতাসে যুদ্ধকালীন উদ্বেগ কেটে গেছে বলে সম্রাট নরম শান্তি বিরাজ করছিল। এই বৈষ্ণবী, সম্রাট তোমার গান শুনবেন। সুনন্দ বৈষ্ণবী অবাক হল না। এমন অনুরোধ ওকে নিত্যি শুনতে হয়। ... তবে বৈষ্ণবী বিষন্ন ছিল। তার কারণ আছে। আজ থেকে ৬ বছর আগে নদীয়ার মহাপ্রভূ (শ্রীচৈতন্যদেব) নীলাচলে দেহ রেখেছেন। সে শোক সুনন্দা বৈষ্ণবী আজও কাটিয়ে উঠতে পারল কই। আজ থেকে তিরিশ বছর আগে মায়াপুরে মহাপ্রভূকে এক পলক দেখেই মায়াপুরের মেয়ে সুনন্দা সেই যে ঘর ছাড়ল- আর ঘরে ফিরল কই। তবে প্রভূ হারানোর শোক বৈষ্ণবী হাসিমুখে ঢেকে রেখেছে। বৈষ্ণবী শোক ভুলে গাইতে থাকে: আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, তাই হেরি তায় সকল খানে।। আছে সে নয়নতারায় আলোক-ধারায়, তাই না হারায় ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায় তাকাই আমি যে দিক-পানে।। আমি তার মুখের কথা শুনব ব’লে গেলাম কোথা, শোনা হল না, হল না আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি শুনি তাহার বাণী আপন গানে।। কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল বেশে দ্বারে দ্বারে, দেখা মেলে না, মেলে না তোরা আয় রে ধেয়ে, দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে।। গান শেষ হল। সম্রাট বললেন, সুরটা ভালো লাগল। এবার গানের মানেটা বুঝিয়ে দাও তো মানসুর। আল মনসুর বৈষ্ণবীর সঙ্গে কথা বলে যা বুঝতে পারল সেসব সম্রাটকে বুঝিয়ে দিল। হুমম। বলে সম্রাট গম্ভীর হয়ে যান। সম্রাটের গলায় ভূমধ্যসাগরের অতল দেশের নীলাভ মুক্তোয় নির্মিত একটি মূল্যবান মালা। মালাটি খুলে বৈষ্ণবীকে দিলেন সম্রাট। বৈষ্ণবী অভিভূত হয়ে মালাটি নিল, নীচু হয়ে পদধূলিও নিল। (মহারাজের মুখের এক পাশটা নদীয়ার মহাপ্রভূর মতন মনে হল যেন ...) বৈষ্ণবীর কন্ঠের বকুল ফুলের বাসী গন্ধ ছড়াল নদীর পাড়ের আঁষটে বাতাসে। সম্রাট নরম স্বরে জানতে চাইলেন, কার গান? তোমার? না, মহারাজ। তা হলে? এ রকম অনেক গান এ দেশের আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে আছে। আমি কেবল কুড়িয়ে নিয়িছি। ওহ্ । সম্রাট টের পেলেন তিনি সহজে এ রহস্যময়তার নীল প্রদেশের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না-উষর মরু-পর্বতই তাঁর নিয়তি। (সম্রাটের জন্ম কাবুলে) ... সম্রাট দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন। এবং তাঁর দৃষ্টি ঘুরে যায় এবং নিবদ্ধ হয় ভাগীরথীর ওপরকার নম্রনীল আকাশে, সেই আকাশে ভেসে যাওয়া সাদা মেঘপুঞ্জে ... সম্রাটের দৃষ্টি আবার নিবদ্ধ হয় নদীর ওপর, নদীর বুকে ভেসে চলা বানিজ্য নৌকার ওপর, ওপারের চরের সফেদ কাশবনে; আবার আকাশে, আকাশে বকের সারির উড়াল পথে। আল মনসুর? জ্বী। গৌড় কি স্থানীয় লোকেদের কোনও দেবতার নাম? জ্বী না জাঁহাপনা। এর একটি অর্থ সফেদ রং। তবে গৌড় অনেকের নাম হয়। যেমন আমার এক দোস্তের নাম গৌড় সাহা, সে স্বর্নলঙ্কারের ব্যবসা করে। ওহ্। আমি ...আমি ঠিক করেছি আমি গৌড়ের নামটি বদলে দিব। জ্বী জাঁহাপনা। অবশ্যই দেবেন। আল মনসুর দু’হাত কচলে বলল। ছেলেটির ফরসা মুখে ও বাদামি মিহিন দাড়িতে সকালের রোদের প্রতিফলন। সম্রাট বললেন, আমি ঠিক করেছি গৌড়ের নাম বদলে রাখব -জান্নাতাবাদ। জান্নাতাবাদ! হ্যাঁ। জান্নাতাবাদ । খুবই চমৎকার নাম জাঁহাপনা। আল মনসুর উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে বলে। এ সময় আম্রকাননের দিক থেকে ব্যস্ত পদশব্দ ও বহুকন্ঠের কোলাহল ভেসে আছে। সবাই মনে হয় আমায় খুঁজছে। আমি যাই। বলে একপলক বৈষ্ণবীর চোখের দিকে তাকিয়ে সম্রাট দ্রুত আম্রকাননের দিকে যেতে লাগলেন। আল মনসুরও সম্রাটকে অনুসরন করতে যাবে-বাংলার রাজধানীর নতুন নামটি বৈষ্ণবীকে জানানোর জন্যই মুহূর্তের জন্য থামল। তারপর বলল, সম্রাট গৌড়ের নাম বদলে দেবেন বললেন। কি নাম শুনি? বৈষ্ণবী অবাক। যদিও মিটমিট করছে হাসছে। জান্নাতাবাদ। এর মানে কি গো? বৈষ্ণবী শুধোয়। স্বর্গনগর। আল মনসুর বলল। স্বর্গনগর? হ্যাঁ, স্বর্গনগর। আল মনসুর বলল। বলে দ্রুত সম্রাটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। সুনন্দ বৈষ্ণবী গঙ্গাপাড়ের আকাশ বাতাসকে শুনিয়ে বলল: ও আমার দেশের মাটি, দেশের মানুষ, মহারাজ তোমাদের জন্য ভালো নাম দিয়েছেন গো। আমাদের দেশের জন্য এর চেয়ে সুন্দর নাম আর হয় না। আসলে গৌড় নামটি সুনন্দা বৈষ্ণবীরও তেমন ভালো লাগে না। সে এই দেশের জন্য একটি সুন্দর নাম খুঁজছিল। আজ পেয়ে গেল। তবে নারী বলেই নামটি সামান্য ঘুরিয়ে দিল। বৈষ্ণবী ভাগীরথী পাড়ের জনপদের নাম দিল: স্বর্গরাজ্য। সুনন্দা বৈষ্ণবী এতক্ষণে যেন মনে শান্তি পেল। উত্তর পাড়ার লোকমান পীরের থান। বৃদ্ধ লোকমান পীর সুনন্দা বৈষ্ণবীর ধর্মপিতা। ক’দিন ধরে পীর সাহেব শিরঃপীড়ায় কাহিল হয়ে আছেন। বৈষ্ণবী লোকমান পীর কে দেখতে যাচ্ছে। সুনন্দা বৈষ্ণবী লোকমান পীরের থানের দিকে যেতে যেতে গান ধরে- আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা।। আজ ভ্রমর ভোলে মধু খেতে উড়ে বেড়ায় আলোয় মেতে, আজ কিসের তরে নদীর চরে চখা-চখীর মেলা।। ওরে, যাব না আজ ঘরে রে ভাই, যাব না আজ ঘরে। ওরে, আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ নেব রে লুট করে। যেন জোয়ার-জলে ফেনার রাশি বাতাসে আজ ছুটেব হাসি, আজ বিনা কাজে বাজিয়ে বাঁশি কাটবে সকল বেলা।। বৈষ্ণবীর সে গান বহূদূর থেকে আমাদের কালেও যেন আছড়ে পড়ে ... তথ্যউৎস: বাংলাপিডিয়ায় কে. এম করিম লিখেছেন: ... শেরখান ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দের এক যুদ্ধের পর বিহারের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হন এবং ক্রমান্বয়ে ১৫৩৮ সালে গৌড় (সে সময়কার বাংলার রাজধানী) দখল করেন। এতে হুমায়ুন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। হুমায়ূন সসৈন্য পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে গৌড়ে প্রবেশ করেন। সম্রাট হুমায়ুন বাংলার রাজধানীর নতুন নামকরণ করেন ‘জান্নাতাবাদ’ এবং হুমায়ুন এখানে ছয়মাস অবস্থান করেন। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৪৯
false
mk
নবরূপে ঢাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্ধিত সীমানায় নতুন যুক্ত হওয়া ১৬ ইউনিয়নকে পাল্টে দিতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। নতুন সংযুক্ত হওয়া এসব ইউনিয়নকে সাজাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে নতুন ১৬ ইউনিয়নের বর্তমান চেহারাই বদলে দেয়া হবে। সার্বিক উন্নতি কল্পে দুই সিটির সহযোগিতায় তৈরি করা হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। এর মাধ্যমে দ্বিগুণ আয়তনের সীমানা নিয়ে সাজানো হবে নতুন ঢাকা।নতুন এলাকায় উন্নত পর্যায়ের নানা নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বিদ্যুত, পানি, ড্রেনেজ, গ্যাসলাইন, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও রাস্তার জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান। ১৬ ইউনিয়নে নতুন ছয়টি আঞ্চলিক অফিস ও ৩৬ ওয়ার্ড তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। খুব শীঘ্রই এসব এলাকার রাস্তায় বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইউনিয়নগুলোতে নতুন ভবন নির্মাণ অনুমোদন বন্ধ করা হয়েছে। এসব এলাকার ব্যবসায়ীরদের ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। সীমানা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইউনিয়নগুলো আর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত থাকবে না বিধায় এসব এলাকার নাগরিকগণ পাবেন উন্নত শহরে জীবনের নানান সুবিধা। এসব এলাকার বাসিন্দাদের ইতোমধ্যেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সীমিত আকারে সেবার আওতায় নিয়ে এসেছে। যার প্রভাব গত ঈদ-উল-আযহায় লক্ষ্য করা গেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটি কর্পোরেশনের সীমানা বৃদ্ধির সরকারী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব ইউনিয়নের উন্নতিকল্পে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এই মহাপরিচকল্পনার আওতায় নতুন এলাকায় কোথায় কী হবে ও কেমন হবে, স্থান নির্ধারণ, অলিগলিসহ বিভিন্ন ছোটবড় রাস্তার আয়তন নির্ধারণ করা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার নক্সা প্রণয়ন, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতসহ বিভিন্ন সেবা সার্ভিসের সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা করা, নতুন খেলার মাঠ, পার্ক, জলাধার সংরক্ষণ করা, রাস্তা ও অলিগলিতে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করে দ্রুত আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া নতুন অঞ্চল, ওয়ার্ড ও প্রতিটি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা, ওয়ার্ড কার্যালয়, এলাকা পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ, পশু জবাইয়ের নির্ধারিত স্থান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা, ট্রেড লাইসেন্সসহ একাধিক বিষয়াদির সঠিক ও সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে চলছে।এর বাইরে ঢাকা ওয়াসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানা গেছে।সূত্র জানায়, এসব উদ্যোগ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েকদফা বৈঠক করেছে। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও ঢাকা জেলা প্রশাসন দুই সিটি কর্পোরেশনের উর্ধতন কর্মকর্তাগণসহ নতুন ১৬ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারদের সঙ্গে কোন্ পদ্ধতিতে এসব এলাকার নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে কী কী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। এ বিষয়ে আরও একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সিটি কর্পোরেশন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এসব এলাকার সার্বিক উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে বুয়েটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাছাড়া এসব এলাকার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে ডিএনসিসি প্রকৌশলীদের নির্দেশ দিয়েছেন।উল্লেখ্য, নগরবাসীর সেবা বাড়াতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আশপাশের ১৬টি ইউনিয়নকে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ (ডিএসসিসি) সিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। গত ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত দেন। এতে ঢাকা উত্তর সিটিতে ৮টি এবং দক্ষিণ সিটিতে ৮টি ইউনিয়ন যুক্ত করা হয়। নতুন আয়তন অনুসারে দ্বিগুণ হয়েছে ঢাকা নগরীর আয়তন। এসব ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় দুই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এলাকার আয়তন ১২৯ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে ২৭০ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। তবে ডিএসসিসির চেয়ে ডিএনসিসির আয়তন বেশি।১৬টি ইউনিয়ন সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আসায় এখানকার কমপক্ষে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এ দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এসেছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে যুক্ত হওয়া আট ইউনিয়ন হলোÑ বেরাইদ, বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনি (খিলক্ষেত)। ঢাকা দক্ষিণে যুক্ত হওয়া আট ইউনিয়ন হলো শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ। ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে এই দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি ৮১ লাখ ৮৪ হাজার ৪১ জন। তবে ধারণা করা যায়, এই সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে।ডিএসসিসির সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোর জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মেয়র সাঈদ খোকন গত ২৪ জুলাই বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে গত ৩০ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই), স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা জেলা প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের নতুন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে দুই সিটির উর্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর ঢাকার দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইউনিয়নগুলো নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করছেন। এ ছাড়া সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে তারা প্রস্তুত। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তা হচ্ছে :পশু জবাই দিতে হবে নির্ধারিত স্থানে ॥ পবিত্র ঈদ-উল-আযহাসহ সকল পশু নির্দিষ্ট স্থানে জবাই করতে হবে। গত ঈদে কোরবানি উপলক্ষে দক্ষিণ সিটির ইউনিয়নগুলোতে সর্বমোট ৭৫টি অস্থায়ী কোরবানি পশু জবাই খানার ব্যবস্থা করা হয়। এ জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে একটি করে কমিটি করা হয়। কমিটিতে মসজিদের ইমাম ও কসাইদের তালিকার পাশাপাশি কোরবানি দাতাদের নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই দিতে উৎসাহিত করা হয়।ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ॥ কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে নতুন এলাকার সকল ছোট-বড় ব্যবসায়ীকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। নতুন যুক্ত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ব্যবসায়ীদের নতুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করতে হলে সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এর আগে যারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ব্যবসার অনুমতি নিয়েছেন, কর্পোরেশনের কাছে তাদের নাম ও ঠিকানাসহ তালিকা পাঠাতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানসহ নতুন সকল প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের ফি’সহ কর ধার্যের ব্যাপারে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন করে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে ট্যাক্স ধার্যের বিষয়টি নিয়েও কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন।নতুন ভবন অনুমোদন বন্ধ ॥ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নতুন যুক্ত হওয়া এসব ইউনিয়নে ভবন নির্মাণের নক্সা অনুমোদন দেয়া বন্ধ থাকবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। এরই মধ্যে যেসব নক্সা অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেগুলোর একটি তালিকা সিটি কর্পোরেশনে পাঠাতে হবে। তবে এর আগে যারা নক্সা অনুমোদন নিয়েছেন তারা ভবন নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবেন।রাস্তায় আলো জ্বলবে ইউনিয়নগুলোতে ॥ নতুন যুক্ত হওয়া এসব ইউনিয়নের সড়কগুলোতে নতুন করে স্ট্রিট লাইট লাগানো হবে। প্রাথমিক অবস্থায় সিটি কর্পোরেশন লাইট সরবরাহ করবে। তবে ইউনিয়ন পরিষদকে তার নিজস্ব অর্থায়নে সেগুলো লাগাতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে ॥ অবহেলিত পুরো জনপদকে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতায় আনছে সিটি কর্পোরেশন। এ জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ করছে সংস্থাটি। প্রাথমিক অবস্থায় এলাকার চাহিদা দিতে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।সিটি কর্পোরেশনে আসছে সস্পত্তির মালিকানা ॥ যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোর মালিকানায় থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা তৈরি করে সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভৌত অবকাঠামোর তালিকাও দিতে হবে।মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আসছে পুরো এলাকা ॥ নতুন বর্ধিত অংশে নতুন অঞ্চল স্থাপন, ওয়ার্ড বৃদ্ধি, জনবল কাঠামো, সীমানা নির্ধারণ এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে অতি দ্রুত একটি বৈঠক আহ্বান করবে সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ও বেশ কয়েকটি বিদেশী সংস্থা এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশনকে প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) নতুন করে আরও ৩৬টি ওয়ার্ড যুক্ত করা হচ্ছে। যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলো দুই সিটিতেই ১৮টি করে ভাগ করে দেয়া হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সিটি কর্পোরেশনের আলোচনা চলছে। বর্তমানে ডিএসসিসির ওয়ার্ড রয়েছে ৫৭টি আর ডিএনসিসির ৩৬টি। ঢাকা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। কমিটিতে রাখা হয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, উভয় সিটির জন্য ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ড হতে পারে। তবে এর সংখ্যা কম-বেশিও হতে পারে। তবে কোন্ ইউনিয়ন কোন্ ওয়ার্ড বা কোন্ জোনের আওতায় আসবে তা ওয়ার্ড সংখ্যা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হওয়ার পর বলা যাবে। উল্লেখ্য, গত ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন পায়। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আয়তন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ২৮ জুন এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব খান মোহাম্মদ রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে জানান, আমরা ডিএসসিসিতে কতটি ওয়ার্ড প্রয়োজন বা আঞ্চলিক অফিস কতটি নির্মাণ করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করছি। তবে এর সংখ্যা নির্ধারণে কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোর সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা একাধিক বৈঠক করেছি। বৈঠকে ওই এলাকার উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশকিছু বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, খুব দ্রুতই এসব ইউনিয়নে উন্নয়নের আলো জ্বলবে। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কয়েকটি বৈঠক করেছি। মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে খুব শীঘ্রই নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে একটি সভা আহ্বান করা হবে। এরপরই এসব ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যেই মেয়রের নির্দেশে নাগরিকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে তথ্য সংগ্রহে আমাদের বিভিন্ন দফতরকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা নতুন যুক্ত হওয়া ৮টি ইউনিয়নে বসবাসরত বাসিন্দাদের বিভিন্ন নাগরিক সুবিধার আওতায় আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে এসব ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বুয়েটের শিক্ষকদের একটি দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা ও দফতরের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক করছি। ডিএনসিসির প্রকৌশলীগণ এসব ইউনিয়নের রাস্তা, বিদ্যুত, ড্রেনেজ সমস্যা, মাঠ, পার্কসহ বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কিত সকল তথ্য সংগ্রহে কাজ শুরু করেছেন। প্রাথমিকভাবে আটটি ইউনিয়নকে আমরা নাগরিক সেবা প্রদানের স্বার্থে ৩টি আঞ্চলিক অফিস ও ১৮টি ওয়ার্ড করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তবে কতটি ওয়ার্ড করা হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এছাড়া সকল বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা পরামর্শ ও বৈঠক করে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। গত ঈদে আমরা এসব এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধার্থে ৩টি গরুর হাট ইজারার মাধ্যমে পরিচালনা করেছি। সরকার ও আমাদের গৃহীত কর্মকা- অনুযায়ী আশা করি নতুন যুক্ত হওয়া ৮ ইউনিয়নের নাগরিকগণ দ্রুতই উন্নত নাগরিক সেবা পাওয়া শুরু করবেন। এ লক্ষ্যেই পুরোদমে কাজ চলমান রয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৪
false
fe
ঢেউ জাগছে, স্রোত কার অনুকূলে যাবে ঢেউ জাগছে, স্রোত কার অনুকূলে যাবে ফকির ইলিয়াস=============================================বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ঢেউ পরিলক্ষিত হচ্ছে। হঠাৎ করে আবারও দুই নেত্রীকে চিকিৎসার নামে বিদেশে পাঠানোর নেপথ্য কারিগরি লক্ষ্য করছে দেশবাসী। শেখ হাসিনার শারীরিক বিভিন্ন অসুবিধা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় পুত্র আরাফাত রহমান কোকোকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। চিকিৎসা তালিকায় খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নামও যুক্ত হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের পরবর্তী সরকারের সময়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্রথম মুক্তি পান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। তিনি এখন প্যারোলে সিঙ্গাপুর হাসপাতালে রয়েছেন। কেউ জটিল অসুখে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা সুবিধা পেতেই পারেন। তা দেশে কিংবা বিদেশে হোক। আর রাজনৈতিক বন্দিদের বিষয়ে তো বিশেষ সুযোগ-সুবিধার দরজা অবারিত আছেই। সংলাপ এবং নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় একই অবস্খানে রয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপি নেতা খোন্দকার দেলোয়ার ''আল্লাহর ওয়াস্তে'' আওয়ামী লীগকে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দেলোয়ারের ভাষায়, দেশ ও জাতি বাঁচাতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য প্রয়োজন। সে আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, যারা ঘাতক, রাজাকার-মৌলবাদী জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল তাদের সঙ্গে কোন ঐক্য হবে না, হতে পারে না। প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন, লীগের অন্যান্য সিনিয়র নেতারাও। ঐক্য প্রস্তাব নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন বিএনপি নেতা হান্নান শাহ ও খোন্দকার দেলোয়ার। হান্নান শাহ বলেছেন, দেলোয়ার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য চেয়ে মহা ভুল করেছেন। তা কোন মতেই ঠিক হয়নি। সব রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের কথা স্বয়ং খালেদা জিয়াও বলেছেন কোর্টে হাজিরা দেয়ার সময়। খালেদা জিয়া সবগুলো দলকে এক কাতারে দাঁড় করানোর আভাস দিয়েছেন তার বক্তব্যে। কারণ তিনি জানেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হলেই কেবল তারেক-বাবর-ফালু-মামুন চক্রটিকে জেল থেকে বের করে আনার চেষ্টা শুরু হতে পারে। আর সে প্রয়োজনে ডানে জামায়াত ও বামে আওয়ামী লীগকে নিয়ে আন্দোলন করার পরিকল্পনা বিএনপি করেই যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্তে দেখা করেছেন খোন্দকার দেলোয়ার। তাই তিনি যা বলছেন, তা বেগম জিয়ার সম্মতিতেই বলছেন তা ধরে নেয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না।খালেদা জিয়া এখনও মনে করছেন বর্তমান সরকারকে হটিয়ে আবারও বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকার দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই তিনি বলেছেন, কেরানি দিয়ে দেশ চালানো যাবে না। কথা হচ্ছে, দেশের মানুষই ও তো সৎ রাজনীতিকদের দ্বারা দেশের পরিচালনা দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা সম্ভব হলো না কেন? কেন গরিব মানুষের ত্রাণের টিন গিয়ে উঠল দাপটবাজ এমপিদের বৈঠকখানায়? দুর্নীতি ও লুটপাটের চরম নজির স্খাপন করেছিল জোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। তারপরও প্রধানমন্ত্রী হয়ে বেগম জিয়া, এদের বিরুদ্ধে নূন্যতম ব্যবস্থাটুকু নেননি কেন?দুই.দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংলাপ করেছে বর্তমান সরকার। সেসব বৈঠকে দুইনেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ কোন কথা বলেননি। একটি দেশের রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের একটি নেপথ্য ভূমিকা থাকে। কারণ দলগুলোর পরিচালনায় ব্যবসায়ী সংগঠন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মোটা অঙ্কের ডোনেশন দিয়ে থাকে। তা সব দেশেই দেখা যায়। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে এই এসব আয়-ব্যয়ের হিসাব দলগুলো সরকার ও জনগণকে জানাতে বাধ্য থাকে। ফান্ড রেইজংয়ের অর্থ কড়ায় গণ্ডায় হিসাব দিতে হয়। বাংলাদেশে এই ব্যবস্খা না থাকার কারণেই ব্যবসায়ী নেতারা সরাসরি সরকারকে প্রভাবিত করতে কাজ করেছে নেপথ্যে থেকে। বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ীরা নতুন করে তাদের যাত্রা শুরু করতে চাইছেন। এর দুটি কারণ রয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রথমটি হচ্ছে, কোন দলের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বিতর্কে জড়াতে চাইছেন না। আর দ্বিতীয় : তারা যে অতীতে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করেছেন তা ঢাকা দেয়ার জন্যও তারা এসময়ে রাজনৈতিক মতামত থেকে দরে থাকছেন। ভাল কথা, ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে চান। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, এসব ব্যবসায়ী ধনকুবেররা জনগণের প্রতি কতটা দায়বদ্ধ? যেসব ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি সেজে সরকার ও জনগণের কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ কতটা সোচ্চার?এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। ‘রাজনীতিক কাম ব্যবসায়ী’ যারা রয়েছেন, তারাও এখন বেশ নীরবতা পালন করছেন। সাবেক আওয়ামী লীগ মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও বর্তমান ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে মামলাগুলোও চলছে ধীরগতিতে। যেমনটি মান্নান ভূইয়া ও নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার গতি ধীর ছিল।তিন.এই লেখাটি যখন লিখছি তখন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। শেখ হাসিনাকে কয়েকটি মামলায় হাজিরা দেয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা প্যারোলো মুক্ত হয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। অন্যদিকে বেগম জিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিদেশে যাবেন না। তার চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার দেশেই রয়েছেন। বেগম জিয়াকে কোন মূল্যেই দেশ থেকে বিদেশে পাঠানো যাবে না। এটা খুবই স্পষ্ট। তিনি স্বদেশে থেকেই আবারও তার ‘আপসহীনতা’ প্রমাণ করতে চান। কারণ তার দুই উত্তরাধিকারী তারেক রহমান ও কোকোকে রেখে তিনি যাবেন না কোথাও। একথা খালেদা জিয়া আকারে-ইঙ্গিতে বারবার জানিয়েছেন। এখন তার ইচ্ছা, তারেক ও কোকোকে প্রয়োজন হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক। বর্তমান সরকার ভারসাম্যতা রক্ষায় কোকোকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্খা করতেও পারে। তবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বসুন্ধরা গ্রুপের হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ থাকায় তাকে বিদেশ পাঠানো হবে কি না তা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার বিদেশ গমনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি আবারও বিদেশ নির্ভরতা বাড়িয়ে দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই এবং কি শর্তে, কতদিন শেখ হাসিনা বিদেশে চিকিৎসার জন্য থাকবেন তাও দেখার বিষয়। ঢাকাস্খ মার্কিন রাষ্ট্রদত জেমস মরিয়ার্টি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন সঠিক গতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সঠিক গতি কি তা দেখার জন্যও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই যাচ্ছেন। পত্রপত্রিকায় সংবাদ অনুযায়ী, শেখ হাসিনার কন্যা সায়েমা হোসেন পুতুল সদ্য ইমিগ্র্যান্ট হয়ে ফ্লোরিডা থেকে কানাডায় স্খানাস্খরিত হয়েছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় এখনও রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাই সঙ্গত কারণে উত্তর আমেরিকার এই দুটি দেশে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে আওয়ামী রাজনীতি। শেখ হাসিনা বস্টন হয়ে কানাডা যাবেন। চিকিৎসা নেবেন ফ্লোরিডায়। এদিকে খালেদা জিয়া উদ্বিগ্ন তার দুই পুত্র নিয়ে। দুই পুত্রের চিকিৎসা দাবি করেছেন তিনি, শেখ হাসিনার আদলে। খুব জটিল এবং কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্খিতির দিকে এগুচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি। নির্বাচন ও সরকার গঠন পরবর্তী সময়ে কেমন হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চালচিত্র? সম্প্রতি একজন বিশ্লেষক সাংবাদিক ফোনে তার মতামত জানালেন আমাকে। তার ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে আসছে সংসদে। বিএনপি নির্বাচনে নাও যেতে পারে। জামায়াত শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতেও পারে। বাংলাদেশ আগামী ক’বছর পরিচালিত হতে পারে মিসর কিংবা তুরস্কের আদলে। জঙ্গিবাদী সহিংসতা দেশে বেড়ে যেতে পারে।আমার এই সাংবাদিক বন্ধু যে ধারণা দিলেন তা কি খুব সুখবার্তা মনে করছে দেশ ও জাতির জন্য? না, করছে না। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও অন্যান্য অপশক্তি কীভাবে থামাবে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। না কি আরও ভয়ঙ্কর দৃশ্যাবলি অপেক্ষা করছে?নিউইয়র্ক ১১ জুন, ২০০৮--------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১৩ জুন ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
mk
পাঁচ বছরে দারিদ্র্য কমার বিস্ময়কর সাফল্য পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুফল মিলছে। অর্জিত প্রবৃদ্ধির ফল পৌঁছাচ্ছে সারাদেশে। যার প্রতিফলন ঘটছে দারিদ্র্য হারে। চলতি বছরের (২০১৫ সাল) সর্বশেষ প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে কমেছে অতি দারিদ্র্যও। এ হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশে, যা ২০১০ সালে ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মূল্যায়নে দারিদ্র্য হ্রাসের এ চিত্র উঠে এসেছে। বলা হয়েছে প্রতিবছর দারিদ্র্য কমছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। দারিদ্র্য কমার কারণ পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম, বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচী যেমন, ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, ওএমএস কর্মসূচী, টেস্ট রিলিফ, কাবিখা এবং ফেয়ার প্রাইস কার্ড প্রভৃতির কার্যকর বাস্তবায়ন।এর আগে চলতি বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ্যানেট ডিক্সন বলেছিলেন, দারিদ্র্য নিরসন ও মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতা থেকে অন্য দেশগুলো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচ দিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করার আগে তিনি এসব কথা বলেছিলেন তিনি।সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, দারিদ্র্যবান্ধব উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের কারণেই দারিদ্র্য হার প্রত্যাশিত মাত্রায় কমে আসছে। চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য মেয়াদি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হাইজ হোল্ড ইনকাম এ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের (হায়েস) তথ্য অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১০ সাল সময়ে দারিদ্র্য গড়ে এক দশমিক চুয়াত্তর শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। এ প্রবণতা নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন।তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১) অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণের সংখ্যা ১৩ দশমিক পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে চলতি বছর বাইশ দশমিক পাঁচ শতাংশে দারিদ্র্য হার নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়। এই লক্ষ্যের বিপরীতে গত পাঁচ বছরে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসের হার হচ্ছে, ২০১১ সালে উনত্রিশ দশমিক ছয় শতাংশ, ২০১২ সালে সাতাশ দশমিক আট শতাংশ, ২০১৩ সালে ছাব্বিশ দশমিক চার শতাংশ এবং ২০১৪ সালে পঁচিশ শতাংশ। আর অতি দারিদ্র্যের হার গত পাঁচ বছরে কমেছে যথাক্রমে ষোল দশমিক তিন শতাংশ, পনের দশমিক দুই, চৌদ্দ দশমিক দুই এবং ২০১৪ সালে তের দশমিক দুই শতাংশ।জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের মাধ্যমে দারিদ্র্য পরিমাণ করা হয়। দেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে খানা আয়-ব্যয় জরিপ পরিচালিত হয় এবং পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি জরিপ পরিচালিত হয়। সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ পরিচালিত হয় ২০১০ সালে। ১৯৯১-৯২ অর্থবছর পর্যন্ত পরিচালিত খানা আয় ব্যয় জরিপে দেশেল দারিদ্র্য পরিমাণের জন্য খাদ্য শক্তি গ্রহণ এভং প্রত্যক্ষ ক্যালরি গ্রহণের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সেক্ষেত্রে দারিদ্র্য পরিমাপে জনপ্রতি প্রতিদিন দুই হাজার ১শ’ বাইশ কিলোক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণকে দারিদ্র্য এবং এক হাজার ৮০৫ কিলোক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণকে চরম দারিদ্র্য হিসেবে গণ্য করা হতো। পরবর্তীতে প্রথমবারের মতো ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপে মৌলিক চাহিদা ব্যয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অনুরূপভাবে পরবর্তীতে দুটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ২০১০ সালে এসে পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপে মৌলিক চাহিদা ব্যয় পদ্ধতিকে দারিদ্র্য পরিমাপে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ভোগ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ পদ্ধতিতে খাদ্যের ক্ষেত্রে দুই হাজার একশ বাইশ কিলোক্যালরির মাত্রা ঠিক রেখে এর ক্রয় ব্যয় ও খাদ্যবহির্ভূত ভোগ্যপণ্য ক্রয় ব্যয়কে একত্রিত করে মাসিক জনপ্রতি এক হাজার ছয়শ’ টাকার নিচে আয়কে দারিদ্র্য হিসাবে এবং মাসিক জনপ্রতি এক হাজার তিনশ টাকার নিচে আয়কে অতি দারিদ্র্য হিসেবে গণ্য করা হয়।পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে পরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তীকালীন উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে গত তত্ত্বাবধায় সরকার আমলে প্রণীত দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্রটি বাতিল না করে সংশোধন করা হয়। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের উন্নয়ন দর্শন ও লক্ষ্যের আলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র-২ (২০০৯-১১) দিন বদলের পদক্ষেপ প্রণয়ন করা হয়। ওই সময় সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ মনে করেছিল স্বল্প সময়ে পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রথমবারের মতো দীর্ঘ মেয়াদি রূপকল্প হিসেবে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১) শীর্ষক পরিকল্পনা দলিল প্রণয়ন করে। পরিকল্পনায় দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়নের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ উল্লেখ করে আপামর জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতির দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন দর্শন ও স্বপ্ন প্রতিফলিত করা হয়েছে। এই দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্পের মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, যেখানে দারিদ্র্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস পাবে।সরকার ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প ২০২১ এর আলোকে প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ দুটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ দুটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হচ্ছে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ মাত্র আঠার মাসের মধ্যে প্রণয়ন করে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-১৫), যা প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২০১১ সালের জুন মাসে অনুমোদন করা হয় এবং জুলাই মাস থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। চলতি জুন মাসে শেষ হচ্ছে এই ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। ফলে আগামী জুলাই মাস থেকে বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।এ পরিকল্পনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং দেশের অর্থনীতির নিজস্ব সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে আগামী পাঁচ বছরে দারিদ্র হার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্য হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য শুন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকৌশল গ্রহণের বিষয়টিও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের আর আগের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীতে সবসময় বরাদ্দ বাড়িয়ে চলছে। বলা হয়েছে সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব নীতি ও বিচক্ষণ কর্মসূচীর কারণে বাংলাদেশে খাদ্যভাব এখন নেই। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার সুলভ মূল্যে খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নানামুখী আয়বর্ধক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। তুলনামূলকভাবে অতিদরিদ্র এলাকাসহ (উত্তরাঞ্চল, উপকূলবর্তী এলাকা ও যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল ইত্যাদি) এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অতি-দরিদ্রের জন্য কর্মসস্থান কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এ কর্মসূচীর আওতায় প্রতিবছর গড়ে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ৮ লাখ লোকের ৮০ দিনের কর্মসংস্থান করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গার পদধ্বনি শোনা যায়নি।চালের মূল্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে গত চার বছরে শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। একদিনের মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিক প্রায় সাড়ে আট কোটি চাল কিনতে পারছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শ্রমিকের একদিনের মজুরি দিয়ে পাঁচ দশমিক সাত কোটি চাল কেনা যেত। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৩৬
false
rg
জাগ্রত প্রজন্ম চত্বর, চলো চলো, শাহবাগ চলো।। রেজা ঘটক শিশুর মুখে, শাহবাগ। মায়ের মুখে, শাহবাগ। বোনের মুখে, শাহবাগ। ভাইয়ের মুখে, শাহবাগ। বাংলার ঘরে ঘরে এখন কেবলই শাহবাগ। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এখন একুশ শতকের বাংলার তারুণ্য। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এখন আগুনবুকের তারুণ্যের দাবানল। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এখন নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে শপথ নেওয়া তারুণ্যের দিপ্ত শপথ। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এখন এক টুকরো লাল সবুজের সত্য প্রকাশের বাংলাদেশ। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর এখন সারা পৃথিবীর অবাক বিস্ময়। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর এখন নতুন ইতিহাস। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর এখন বাংলার বসন্ত। বিগত ৪২ বছরে রাজনীতির মিথ্যাচারে বাংলাদেশ যেভাবে পেছনের দিকে হাঁটছিল, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে একুশ শতকের তারুণ্যের মুষ্টিবদ্ধ সত্যনিষ্ঠ হাত সেই বাংলাদেশকে কলংকমুক্ত করে সামনের দিকে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এখন প্রতিদিনই ৭ মার্চ। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর এখন দিনরাত সব সময়ই ৭ মার্চ। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে একটাই দাবি, একাত্তরে মানবতা বিরোধী সকল যুদ্ধাপরাধীর নিঃশর্ত ফাঁসি। বাংলার বুকে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বসবাসের কোনো অধিকার নাই। বাংলার বুকে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি খেলার কোনো অধিকার নাই। বাংলার বুকে অসুস্থ রাজনীতির মিথ্যাচারের ষড়যন্ত্র খেলার আর কোনো সুযোগ নাই। বাংলাদেশ আজ রাজপথে। কলংকমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আর ঘুমাবে না। বাংলার বুক থেকে সকল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বাংলার বুক থেকে জামাত শিবির রাজাকারের সকল রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলার বুক থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এবং তাদের অনুচর, অনুসারী, দোসরদের আস্তানা গুড়িয়ে দিতে হবে। নতুন বাংলাদেশ হবে সত্যিকারের ধর্ম নিরপেক্ষ একটি আধুনিক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ হবে সারা বিশ্বের অনুকরণীয় উদাহারণ। জয় বাংলা।বিগত ৪২ বছরে বাংলাদেশের ঘাড়ে অনেক ভূত চেপে বসেছিল। কেউ কেউ ধর্মের নামে রাজনীতি ব্যবসা করেছে। কেউ কেউ ইতিহাসের মিথ্যা বয়ান শুনিয়ে রাজনীতি ব্যবসা করেছে। কেউ কেউ সাধারণ মানুষের মধ্যে ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়িয়ে রাজনীতি ব্যবসা করেছে। কেউ কেউ নিজেদের আখের যোগানের আড়ালে রাজনীতি ব্যবসা করেছে। বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে এরা সম্মিলিত ভাবে নিজেদের স্বার্থে ধ্বংসের একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন মাথা তুলে দাড়িয়েছে। এখন নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে নতুন প্রজন্ম একুশ শতকের চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু নতুন করে আবার নির্মাণ করবে। এই হার না মানা দিপ্তশপথের দাবানল নিয়ে কোনো রাজনীতি, কোনো ষড়যন্ত্র, কোনো কানঘুষা, কোনো প্রলোভোন, কোনো মিথ্যাচার, কোনো নাটক নতুন প্রজন্মের তারুণ্য বরদাস্ত করবে না। শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে নতুন বাংলাদেশ শপথ নিয়েছে। এই শপথের সঙ্গে বেঈমানী করার পরিণাম হবে খুবই ভয়ংকর। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো বিদেশী দালাল দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো রাজনীতি ব্যবসায়ীকে দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো অসাধু ধর্ম ব্যবসায়ীকে দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো দুর্নীতিবাজকে দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো ঘুষখোরকে দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো সুদখোরকে দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো ধর্ষককে দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো বকধার্মিককে দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো ভোটচোরকে দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা কোনো মিথ্যাচার আর দেখতে চাই না। ৪২ বছর আগে বিশ্বের বুকে আমরা একটি মানচিত্র পেয়েছিলাম। এখন সেই মানচিত্র সুন্দর করে সাজানো হবে এই তারুণ্যের দায়িত্ব। একুশ শতকের নতুন প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ গড়বে।নতুন বাংলাদেশে আমরা আর কোনো শকুনের ছায়া দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা আর কোনো অন্যায় অবিচার দেখতে চাই না। নতুন বাংলাদেশে আমরা আর কোনো মুখোশধারী কুলাঙ্গারকে দেখতে চাই না। সকল কলংকমুক্ত করে একুশ শতকের নতুন প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ গড়বে। নতুন বাংলাদেশে যার যার ধর্ম তার তার, কিন্তু নতুন বাংলাদেশ গড়তে হাতে হাত রেখে ভূমিকা রাখবে একযোগে সবাই। নতুন বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে পুঁজি করে কেউ আর আখের গোছাতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কেউ আর আখের গোছাতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশে উন্নয়নের মূলা ঝুলিয়ে কেউ আর শাসকের ভূমিকায় থাকতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশ হবে সকল কলংকমুক্ত এক টুকরো পূণ্যভূমি। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, কলংক সব নিপাত যাক। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, রাজাকার নিপাত যাক। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, যুদ্ধাপরাধী নিপাত যাক। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, ধর্ম ব্যবসায়ী নিপাত যাক। শাহবাগ দিচ্ছে ডাক, কুমতলব নিপাত যাক। বাংলার ঘরে ঘরে এখন একুশ শতকের নতুন বসন্ত। বাংলার ঘরে ঘরে এখন নতুন শিশুর মুখে হাসি। বাংলার ঘরে ঘরে এখন নতুন শপথের তূর্যবাণী। বাংলার ঘরে ঘরে এখন নতুন প্রজন্মের মাথা উচু বুকটান করে দাঁড়ানোর শপথ। এই শপথ জয় না ছিনিয়ে ঘরে ফিরবে না। এই তারুণ্য জয় না ছিনিয়ে ঘুমাবে না। এই দাবানল কলংকমুক্ত না হয়ে নতুন ভোর না আসা পর্যন্ত নিভবে না। চলো চলো, শাহবাগ চলো। জয় বাংলা।
false
mk
২৯ ফর নাশকতা, পুলিশও প্রস্তুত আগামীকাল রোববার বিএনপির ডাকা অভিযাত্রাকে পুঁজি করে নাশকতার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। এই নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীর আবাসিক হোটেল, মেস, কোয়ার্টার বা সাবলেট হিসেবে কোনো অপরিচিত ব্যাচেলকে ভাড়া না দিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি পুলিশের সদর দপ্তর থেকে ডিএমপির থানাগুলো এমন একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু মেস কোয়ার্টার থেকে বিপুল বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার এবং বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ায় পুলিশের টনক নড়েছে। নগরীর আবাসিক হোটেল, প্রাইভেট ক্লিনিক, মেস, কোয়ার্টারগুলো এখন পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওইসব মেস, হোটেল ও মেসে আশ্রয় নিয়ে হরতালে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার করছে জামায়াত-শিবির। এ অভিযোগে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীকেও ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডার বলে জানায় পুলিশ। এ কারণে রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকার বাসা-বাড়িতে মেস বা ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ওইসব মেসের একটি তালিকাও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে নিজ থানার কর্মকর্তারা। ওই তালিকা অনুযায়ী সন্দেহপ্রবণ অনেক বাড়ির মালিক ও ব্যাচেলরদের নজরদারি করছে গোয়েন্দারা।দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে পুলিশের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে রাজধানীর আবাসিক হোটেল, মেস, প্রাইভেট ক্লিনিক ও একশ্রেণীর বাড়ি মালিকদের মধ্যে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন নির্দেশনায় মেস কোয়ার্টারের ব্যাচেলরদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ আর হতাশা। তারা মেস বা ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো আবাসিক বোর্ডিং বা বাড়ির মালিক ব্যাচেলরদের মেস ভাড়া দিচ্ছেন না।অন্যদিকে এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে প্রায় ৪৫ হাজার বাসা-বাড়িতে মেস কোয়ার্টার রয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ব্যাচেলর বসবাস করছেন। এরমধ্যে ছোট-বড় প্রায় ৪ হাজার ৫৫৬টি মেস কোয়ার্টার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ওইসব মেস কোয়ার্টারের ব্যাচেলর সদস্যদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি বিরোধী দলের ডাকা হরতালের আগে ও পরে রাজধানীজুড়ে নাশকতা শুরু করেছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। এ সময় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, দুদক চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়ে মারার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক রয়েছে। ওইসব নাশকতার পরিকল্পনা করা হয় রাজধানীর বিভিন্ন মেস, প্রাইভেট ক্লিনিক ও আবাসিক হোটেলেÑ এমন তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। তাই জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।এ ব্যাপারে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আবাসিক হোটেল, বাসা-বাড়িতে মেস কোয়ার্টার বা ব্যাচেলরদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে এই তল্লাশি নির্বাচনকালীন সময় পর্যন্ত। সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকার মেসে পরিচয় গোপন করে আশ্রয় নেয়। পরে সেখানে থেকে দুর্বৃত্তরা হরতালে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করে থাকে।
false
rg
নির্বাচন কমিশনের বর্তমান চিত্র!!! চলুন দশম সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কিছু বিষয় জেনে নেওয়া যাক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮ এর অধীনে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ গঠন করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গঠিত। একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কমিশনের সভাপতিরূপে কাজ করেন। সংবিধান অনুয়ায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ তাঁর কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বছর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯-তে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বর্ণিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হল, রাষ্ট্রপতি ও সংসদে নির্বাচন পরিচালনা, নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, আইন কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য নির্বাচন পরিচালনা (এর মধ্যে সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ যেমনঃ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ অর্ন্তভুক্ত) এবং আনুষাঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন করা। সংবিধানে বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।বর্তমান নির্বাচন কমিশন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে গঠিত। তারা হলেন:১. প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ২. নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক৩. নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ৪. নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাবেদ আলী৫. নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজপ্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ২০১২ সালের ৯ ফেব্রিয়ারি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা'র স্থলাভিষিক্ত হন। আর নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাবেদ আলী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহন করেন ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ এবং নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ দায়িত্ব গ্রহন করেন ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সচিব হলেন সচিব মোহাম্মদ সাদিক। ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ লক্ষ ৪৮ হাজার ৮৬১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ কোটি ৬১ লক্ষ ১১ হাজার ৮৮০ জন এবং মহিলা ভোটার ৪ কোটি ৫৮ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯৮১ জন। ২০১৩ সালের ০১ জানুয়ারি পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকে বাংলাদেশের ভোটার হিসাবে গণ্য করে তালিকায় হালনাগাদ করা হয়েছে।
false
mk
ফেরারী আসামী তারেকের লাদেন স্টাইলে আন্দোলনের আহ্বান জানুয়ারির ৫ তারিখ গোটা জাতির জন্য একটি অপেক্ষার দিন। দেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ছিল এটি। একদিকে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন, অন্যদিকে বিএনপি জামাতের নির্বাচন প্রতিহতের দিন। বিএনপি জামাতের প্রতিহত মানে তাণ্ডব, আগুণ, ভয়ভীতি, অসংখ্য মানুষের প্রাণহানী, নিরীহ পশু, গাছপালা কারও রেহাই নেই। এটা নাকি তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন। জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই আন্দোলন। নির্বাচনের ২/১ দিন আগে দেশের প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রিজাইডিং অফিসার খুনসহ নানা জঙ্গিমূলক কাজের মধ্য দিয়ে তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে তাদের কাছে গণতান্ত্রিক আন্দোলন মানে এইসব? জানুয়ারী ৪, ২০১৪ ইং তারিখ বাংলাদেশের প্রতিটি গণ মাধ্যমে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব ও এই মূহুর্ত পর্যন্ত বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর একটি ভিডিও বার্তা সারা দিন রাত প্রচারিত হয়েছে।তিনিও তাঁর ভিডিও বার্তাটি গণ মাধ্যমে প্রচারের জন্যই পাঠিয়েছেন। গণ মাধ্যম দায়িত্বশীলতার সাথে সেই ভিডিও বার্তাটি যথারীতি সম্প্রচার করে জনগণের কাছে জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এই ভিডিও বার্তায় তিনি যা বলেছেন সেটা বাংলাদেশের আপামর জনগণ যারা টেলিভিশন দেখার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা দেখেছেন ও শুনেছেন। দেশ ও জাতির জন্য উদ্বিগ্ন জনাব তারেক রহমান (পিনো) বাংলাদেশের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের দিন জনগণকে ”বর্তমান সরকারের এই ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন” করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ”গণ আকাঙ্খা বিরোধী সংবিধান” বলে দাবী করেছেন। তিনি আরো অনেক কিছুই বলেছেন এবং বলতেই পারেন কারণ একজন রাজনীতিবিদ ও স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে তাঁর বলার এখতিয়ার আছে। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর দরদ এর কথা (যদিও কথা বলার ভঙ্গিমা তাঁর মায়েরই মতো কঠোর) তাঁর দলের লোকজনের কাছেও কতটুকু বিশ্বাস যোগ্য সেটা নিয়ে সংশয় আছে। বিশেষত তাঁর অতীত পর্যালোচনায় যতটুকু বোঝা যায়। কিন্ত বিষয়টি সেখানে নয় একেক জনের কথা বলার ভঙ্গিমা একেক রকম হতেই পারে। কিন্তু তিনি জনাব তারেক রহমান (পিনো) যা বলেছেন সেসব কি তিনি নিজে থেকে বলেছেন নাকি তাঁরই চারিপাশের কোন একটি বিশেষ চক্র তাঁকে বাধ্য করেছেন এমন একটি ”লাদেন মার্কা” ভিডিও বার্তা পাঠাতে? আমি চিন্তিত! কারন, এক. জনাব তারেক রহমান (পিনো) একজন ফৌজদারী মামলার আসামী। তিনি ১/১১ এর সময় এতটাই নির্যাতিত হয়েছিলেন যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবার অনুমতি দেন। তিনি সুস্থ্য হয়ে দেশে ফিরে আসার কথা কিন্তু যে কোন কারণেই হোক তিনি আর বাংলাদেশে ফেরেন নি বা ফিরতে পারেন নি। এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা গুলি ম্যাচিউরড হয়ে একটিতে তিনি খালাশ পেয়েছেন এবং অন্যান্য গুলিতে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা, হুলিয়া সবই জারি হয়ে মামলা গুলি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। আইনের চোখে সবাই সমান আর আইন তার নিজের গতিতেই চলবে এটা আমরা সবাই জানি। তাঁর বিরুদ্ধে যেহেতু গ্রেপ্তারী পরোয়ানা, হুলিয়া জারি হয়েছে সেহেতু তিনি একজন ফেরারী আসামী। আইনের চোখে একজন ফেরারী আসামী কোন ভিডিও বার্তা পাঠাতে পারেন বলে দেশের জনগণের জানা নাই। তার উপরে সেই ভিডিও বার্তা যখন হয় দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে সেটা আরো বড় ধরনের বিষয়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত এর কাছে আইনত প্রতীয়মান হয় যে, তিনি (জনাব তারেক রহমান (পিনো) তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলি বর্তমান অবস্থার বিষয়ে সম্পূর্ণ অবহিত এবং তিনি ইচ্ছা কৃতভাবে দেশে ফিরছেন না এবং আদালতকে অবমাননা করছেন। এটা নিয়ে আদালত চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে স্বপ্রনোদিত হয়ে আদেশ দিতে পারেন। তাঁকে দিয়ে যে বা যারাই এই কাজটি করিয়েছেন সে বা তাঁরা কাজটি ঠিক করেননি। পরোক্ষভাবে তাঁর (জনাব তারেক রহমান (পিনো) ক্ষতি করেছেন। দুই. তিনি জনাব তারেক রহমান (পিনো) ভিডিও বার্তায় সরাসরি নির্বাচন প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করার জন্য তাঁর দলের ও দেশের জনগনকে আহবান করেছেন সেই ‘আহবান’ টি ছিল পক্ষান্তরে একটি ”নির্দেশ”। তিনি ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে যতটুকু ক্ষতি নিজের করেছেন তেমনি পক্ষান্তরে তাঁর দলেরও করেছেন। কারণ তিনি বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর দলকে আহবান জানাতে পারেন কিন্তু সমগ্র দেশবাসীকে নির্দেশ দিতে আইনত কতটুকু দাবীদার সেটি প্রশ্ন বিদ্ধ বিষয়। কারন তিনি কোন নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি নন। তিনি দলীয় মনোনীত সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিন. ”প্রতিরোধ” শব্দের আভিধানিক অর্থর সঠিক ধারনা তাঁর নিশ্চয়ই জানা আছে। ”প্রতিহত” শব্দটিও তাঁর কাছে অবোধ্য নয়। এই দুটি শব্দ চয়ন কওে তিনি যে দেশের একটি উচ্ছৃংখল সন্ত্রাসী বাহিনীকে তান্ডব চালানোর জন্য পক্ষান্তরে নির্দেশ দিলেন সেটা আমরা গতকাল থেকেই খুব হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি। কারন তাঁর ঐ ভিডিও বার্তা প্রচারিত হবার পর পরই বাংলাদেশের সন্ত্রাস ও তান্ডবের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেল যে সরকারী কাজে নিয়োজিত অসহায় সহকারী রিটার্নিং অফিসার এর জীবন তৎক্ষনাত কেড়ে নিল ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধীরা। পক্ষান্তরে এই হত্যার দায় তাঁর (জনাব তারেক রহমান (পিনো) কাঁধেই পড়বে। চার. এর আগেও আমরা ”ডিজিটাল যুগের” বরাতে তাঁর (জনাব তারেক রহমান (পিনো) সাথে জনাব শমসের মবিন চৌধুরীর ফেনালাপ শুনেছি সেখানেও দেখেছি যে তিনি দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর আছেন এবং জনাব চৌধুরীকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। জনাব চৌধুরীও তাঁকে বারংবার আশ্বস্ত করছেন যে, জনাব মাহাফুজুল্লাহ (সাংবাদিক) সাহেবকে দিয়ে তিনি সেই সব কথা ”টক শো”গুলিতে বলাচ্ছেন। আমরা যারা নিয়মিত টক শো” গুলি দেখি তারা জানি সিনিয়র সাংবাদিক জনাব মাহাফুজুল্লাহ সাহেব ”টক শো” গুলিতে কী কথা বলছেন। তিনি (জনাব তারেক রহমান (পিনো) বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব সম্পর্কেও অত্যন্ত ক্ষুব্ধ তাঁর সাথে জনাব চৌধুরীর কথোপকথোন এই বোঝা গেল। সুতরাং টেলিফোন এ কথা বললেও জনাব জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর একটু সতর্কতার সাথে বলা ভালো বৈকি। তিনি যদিও একটি দলের নেতা তাঁর পরও তাঁকে সর্বদাই মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে দেশের হাল ধরতে হলে ”কারো পেতে দেয়া ফাঁদে” তাঁর পা না ফেলাই ভালো। পাঁচ. জনাব তারেক রহমান (পিনো) তাঁর ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন ইতোপূর্বে আওয়ামীলীগ সরকার কতদিন হরতাল করেছেন এবং সাধারন মানুষ কে জীবন দিতে হয়েছে। তবে মাত্র এই কয়েকদিনে সারা বাংলাদেশে যে মানুষগুলি পেট্রোল বোমায়, গুলিতে, লাঠিপেটায় বা চাপাতির আঘাতে নিহত হয়েছেন এবং এখোনো যারা মৃত্যুও সাথে পাঞ্জা লড়ছেন সেই সংখ্যাটি তাঁর জানা আছে বলেই আমার বিশ্বাস। তাহলে কী এরা কেউ সাধারন মানুষ নন? বা এরা কেউই মানুষই নন? এই প্রশ্ন আসে কী খুবই অনুচিৎ? ছয়. তাঁর (জনাব তারেক রহমান (পিনো) দল নির্বাচন বর্জন করেছেন। করতেই পারে। এটা তাদেও গণতান্ত্রিক অধিকার। যদিও একজন সাধারন নাগরিক হিসাবে এখোনো আমি মনে করি বি এন পি নির্বাচনে এলে ভালো করত। কারন বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের সাধারন ভোটারদেও মন বোঝা ভার। প্রতি পাঁচ বছর পর পর তাঁদেও মনের গতিধারা পরিবর্তিত হয়। তাই আমরাও খুব মহানন্দে নূতন নূতন দূতদেরকে মহান জাতীয় সংসদে বসাই। তিনি (জনাব তারেক রহমান (পিনো) তো বলেছেন ভিডিও বার্তায় যে, ”আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় তাই তাঁরা এমন নির্বাচন করছেন।” তাই যদি হয় তাহলে তো বিএনপি’র মতো বৃহৎ ও জনপ্রিয় দল অনায়াসে নির্বাচনে এসে জয়যুক্ত হয়ে সরকার গঠন করতেই পারতো। সেটা যখন বিএনপি করে নি এখানে জনগনের মনে তো প্রশ্ন উঠতেই পাওে কেন? যেখানে আওয়ামীলীগ এর জনপ্রিয়তা শূন্যেও কোঠায় সেখানে বি এন পি নির্বাচনে এল না কেন? বিএনপি নির্বাচনে আসার পর যদি কোন কারনে সংখ্যাগরিষ্টতা না পেত তাহলেও তো নির্বাচনের কারচুপি সহ শত সহশ্র অভিযোগ এনে সংসদ বাতিলের গন আন্দোলন করতে সক্ষম হতো এবং বলতে পারতো যে আমরা আগেই বলেছিলাম, ”এই সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না।” সেটা বলার পথ বিএনপি নিজেই বন্দ করে দিল। বিষযটি আসলে সেটা নয়। বিষয় হলো জামাত। জামাত বিএনপি কে নির্বাচনে আসতে দিল না। কারণ জামাত জানে তাদেরকে ছাড়াও নির্বাচন করলে বি এন বিজয়ী হয়ে যেতে পারে। আর একবার জামাত ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভবিষ্যতে জামাত এর ছায়াও বাংলাদেশের কোন মানুষ সহ্য করবে না। জামাত এখন আইনত একটি অবৈধ সংগঠন। তাদেও কোন চালই বাংলাদেশের কীট পতঙ্গও মেনে নিবে না । তাই অতি কূট চালে বিএনপি কেও শেষ করে দিতে চাইছে জামাত। আর জামাত এর সূক্ষাতিসুক্ষ কূট চালে এবং বিএনপি’র মাঝে ঘাপটি মেওে পড়ে থাকা জামাত পন্থীরা সেই চক্রের আবর্তেই ফেলে দিল ”বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল”কে। জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর সাথে জনাব শমসের মবিন চৌধুরীর টেলিফোনালাপ ও জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর ভিডিও বার্তাও পর দেশে যে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেও হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে তার জন্য আইনত সরকার জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করতে বাধ্য। এখানে ব্যক্তি জনাব তারেক রহমান (পিনো) কোন বিষয় নয় বিষয় হলো ”এটাই নিয়ম”। তবে জনগণ হিসেবে আমরা চাই, ফেরারী আসামীর দেশ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার কোনো সুযোগ আছে কিনা সেটা জনগণের কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার। আশা করি নতুন সরকার এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিবেন।
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮৮ রবীন্দ্রনাথের একটি আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল- সংলাপের আসরে বসে অনুরুদ্ধ হলে রবীন্দ্রনাথ মুখে মুখে নূতন গল্প ও উপন্যাসের প্লট তৈরি করে দিতে পারতেন।বিস্মিত হতে হয় এই দেখে যে কত প্রথম সারির সাহিত্যিক কবির থেকে প্লট সংগ্রহ করেছেন তাঁদের গল্পের জন্য। এই সব প্লট থেকে জন্ম নিয়েছে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সব কীর্তি।প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘দেবী’ গল্পটি বহুপঠিত এবং সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের কল্যাণে বহু-আলোচিত। নব-কথা গল্পসংকলন-ভুক্ত এই গল্পটির প্লটও রবীন্দ্রনাথের রচনা। নব-কথা-র দ্বিতীয় সংস্করণে প্রভাতকুমার নিজেই সেকথা উল্লেখ করেন।বিখ্যাত সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের থেকে একটি প্লট পেয়েছিলেন। তিনি হলেন বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুল। নির্মোক-এর অমর নামক চরিত্রটি বনফুল সৃষ্টি করেছিলেন পত্রযোগে প্রাপ্ত রবীন্দ্রনাথের এই প্লটটি অনুসরণে।অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শরৎকুমারী চৌধুরাণী ঠাকুরবাড়ির বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। শরৎকুমারীর সাহিত্যরচনার অনুরাগী ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও। এই শরৎকুমারীকে রবীন্দ্রনাথ একটি প্লট দিয়ে গল্প রচনা করতে অনুরোধ করেছিলেন। পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই শরৎকুমারী সেই প্লট অবলম্বনে লিখে ফেলেন তাঁর ‘যৌতুক’ গল্পটি। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ সেকথা জানতেন না। একই প্লট তিনি চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দেন। চারুচন্দ্র সেই প্লট অবলম্বনে লেখেন ‘চাঁদির জুতো’ গল্পটি, যেটি স্থান পায় তাঁর বরণডালা গল্পসংকলনে।হেমেন্দ্রকুমার রায়ের লেখা থেকে জানা যায়, “বন্ধুবর চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ঐভাবে রবীন্দ্রনাথের মুখে মুখে সৃষ্ট কয়েকটি আখ্যানবস্তুর সদ্ব্যবহার করতে পেরেছিলেন।” চারুচন্দ্রের চারটি উপন্যাসের প্লট রবীন্দ্রনাথের থেকে পাওয়া – স্রোতের ফুল, দুই তার, হেরফের ও ধোঁকার টাটি।রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের চমৎকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল অনেক দিন। শেষের দিকে তা একেবারে বিষিয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথকে ঈর্ষার করার কোনও কারণই নেই দ্বিজেন্দ্রলালের। তাঁর জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাননি। তাঁর সুনাম বাংলার বাইরে ছড়ায়নি। দু’জনেই কবি। দু’জনেই গান সৃষ্টি করেন। রবীন্দ্রনাথও নাটক লেখেন, কিন্তু নাট্যকার হিসাবে দ্বিজেন্দ্রলাল অনেক বেশি জনপ্রিয়। দু’জনেই অভিজাত পরিবারের সন্তান।সারা জীবনে রবীন্দ্রনাথ কখনও নিন্দুকদের সঙ্গে পাল্লা দিতে যাননি। কোনও আক্রমণেরই তিনি প্রতিআক্রমণ-অস্ত্র শানাননি। তা বলে কি তিনি আঘাত পেতেন না? সামান্যতম আক্রমণেই তিনি আহত হতেন। তিনি লিখেছেন, কটাক্ষ যতই ক্ষুদ্র হইক, তাহারও বিদ্ধ করিবার ক্ষমতা আছে, কিন্তু সেই সব আঘাতের কথা তিনি অতি সন্তর্পণে গোপন রেখেছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল যখন থেকে রবীদ্র-বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন, তখনও একাধিকবার রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রশংসা করেছেন। একধিক প্রবন্ধে দ্বিজেন্দ্রলাল রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রতি যে দুটি অভিযোগ এনেছেন, তা হল দুর্বোধ্যতা এবং অশ্লীলতা। দ্বিজেন্দ্রলালের মতে, রবীন্দ্রনাথের কবিতা অস্পষ্ট এবং অস্বচ্ছ। তাই তার মধ্যে চিন্তার গভীরতা নেই। আর তাঁর কবিতার নীতিহীনতা দিয়ে তিনি কলুষিত করছেন এই সমাজকে। দুই কবির মধ্যে নীতিগত বিরুদ্ধ মত থাকতেই পারে। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলালের সেই প্রতিবাদের ভাষাই যে কুৎসিত।সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন যে, দ্বিজেন্দ্রলাল একদিন রবীন্দ্রনাথের প্রতি একটি চিঠি লেখায় ব্যস্ত ছিলেন, একটু পরেই তাঁর মাথায় বজ্রাঘাত হয়। স্ত্রীলোকেরা তাঁর মাথায় ঘড়া ঘড়া জল ঢালতে থাকেন, তাতে সব কাগজপত্র ভিজে যায়। একটি চিঠিতে শুধু রবীন্দ্রনাথের নামটি পড়া যাচ্ছিল। তাতেই অনুমান করা যায় যে, দ্বিজেন্দ্রলাল সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সব বিবাদ মিটিয়ে আবার পুনর্মিলনের আশাই ব্যক্ত করেছিলেন।কবি জেনেছেন সুশাসনের জন্য চাই দেশজ ভাবনা। দেশের তরুণ সমাজকে এ কারণে করেছেন উদ্বুদ্ধ। শাণিত করতে চেয়েছেন তাদের কর্মক্ষমতা। বুঝিয়েছিলেন আধুনিক বা সভ্য হওয়ার জন্য ইউরোপীয় হওয়ার প্রয়োজন নেই। বলেছেন, ”দেশের জন্য স্বাধীন শক্তিতে যতটুকু কাজ নিজে করিতে পারি তাহাতে দুই দিকে লাভ, সেটা ফল লাভের চেয়ে বেশি বৈ কম নয়।”তিনি মনুষ্যত্বের ধারণা, সংস্কৃতির বার্তা যুবসমাজের কাছে পৌঁছে দিতে স্থাপন করেছেন শান্তিনিকেতন। কারণ তিনি জানতেন যে, সামরাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার কর্তৃক শিক্ষার আলো ছাত্রদের কাছে পৌঁছবে না। তাই তিনি দেশে বিদেশে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন।সৃষ্টির স্রোতধারা প্রবাহিত হয় দুই খাতে। কখনও সেই খাত স্রষ্টাই খনন করেন। আবার কখনও তিনি মরা নদীর সোঁতায় সৃষ্টিস্রোতের নতুন প্লাবন আনেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিপ্রতিভার নেপথ্যেও এমন কিছু কিছু মরা নদীর সোঁতা ছিল। ১৬ আগস্ট রবীন্দ্রনাথ বিলাতে অবস্থানরত জগদীশচন্দ্র বসুকে যে চিঠি লিখলেন, তাতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক প্রস্ত চর্চা করে শেষ দিকটাতে লিখলেন : 'একটা খবর তোমাদের দেওয়া হয় নাই। হঠাৎ আমার মধ্যমা কন্যা রেণুকার বিবাহ হইয়া গেছে। একটি ডাক্তার বলিল, বিবাহ করিব_আমি বলিলাম কর। যেদিন কথা তার তিন দিন পরেই বিবাহ সমাধা হইয়া গেল। এখন ছেলেটি তাহার অ্যালোপ্যাথিক ডিগ্রির ওপর হোমিওপ্যাথিক চূড়া চড়াইবার জন্য অ্যামেরিকা রওয়ানা হইতেছে। বেশি দিন সেখানে থাকিতে হইবে না। ছেলেটি ভালো, বিনয়ী ও কৃর্তী।'“আজিকে তুমি ঘুমাও, আমি জাগিয়া রব দুয়ারে-রাখিয়া জ্বালি আলো। তুমি তো ভালোবেসে আজি একাকী শুধু আমারে বসিতে হবে ভালো। আমার রাত্রি তোমার আর হবে না কভু সাজিতে তোমার লাগি আমি এখন হতে হৃদয় খানি সাজায়ে কুল রাজিতে রাখিব দিনযামী।”
false
fe
বাংলার আকাশে উড়ছে আবার সেই হায়েনা শকুন হঠাৎ করেই কেঁচো খুড়তে সাপ। সাংসদ তাপস এর উপর বোমা হামলার ঘটনায় কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা জড়িত থাকার সন্দেহ । গ্রেফতার। আই এস পি আর - এর প্রেসনোট। আসলে কি হচ্ছে বাংলাদেশে ? জাতির জনক হত্যামামলার বিচার কাজ চলছে। চলছে একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নানা প্রক্রিয়া। দেশে তো বটেই , বিদেশে অবস্থানরত ঘাতকদের কে দেশে নিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার জোর চেষ্টা চলছে। এমন সময়ই হন্য হয়ে উঠেছে সেই খুনীচক্র। কি চায় ওরা ? এদের শিকড় কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ?? এর কিছু উত্তর দিয়েছেন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। খালেদা জিয়া তনয় , তারেক রহমানের খুব ঘনিষ্ট ছিলেন এই উজির। ছিলেন হাওয়া ভবনের অন্যতম চেলা। রিমান্ডে গোয়েন্দাদেরকে তিনি বলেছেন ....... [ দৈনিক ইত্তেফাক / ১১ নভেম্বর ২০০৯ বুধবার ] শেখ হাসিনা বেঁচে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন রশিদ-ডালিম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর টেলিফোনে পাওয়া তথ্য দিলেন বাবর ।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।। সিআইডির জিজ্ঞাসবাদে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা কেন মারা যাননি এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোন করেছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি লে.কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ ও মেজর (অব.) শরিফুল হক ডালিম । তবে তাদের ফোনের ব্যাপারে তিনি (বাবর) কোন রকম আগ্রহ দেখাননি । ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সিআইডি লুৎফুজ্জামান বাবরকে তৃতীয় দফায় তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গতকাল মঙ্গলবার ছিল রিমান্ডের প্রথম দিন। সিআইডির জিজ্ঞাসবাদে বাবর জানান, ডালিম ও রশিদের সঙ্গে তার আগে কোন যোগাযোগ হয়নি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বেশ কয়েকদিন পর তারা টেলিফোনে হামলার মিশন চালানোর জন্য তারা তাকে (বাবরকে) ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন। এদিকে হরকাতুল জিহাদ নেতা কারাবন্দি আব্দুল মজিদকে সিআইডি গতকাল মঙ্গলবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে। অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আজ বুধবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আব্দুল মজিদ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হয়। মজিদ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে রয়েছে। আদালতে পাঠানো পুলিশি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার হওয়া হরকাতুল জিহাদের সাবেক আমীর আবদুস সালামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আবদুল মজিদকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো। সিআইডি সূত্র জানায়, গতকাল হরকাতুল জিহাদের সাবেক আমীর মাওলানা আবদুস সালাম ও লুৎফুজ্জামান বাবরকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । সালামের বক্তব্যের পর বাবর ছিলেন নিশ্চুপ। এদিকে সিআইডির জিজ্ঞাসবাদে সালাম জানিয়েছে, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাল। কিন্তু প্রকাশে তা কাউকে বুঝতে দেননি। সালামের দাবি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছে মুফতি হান্নান। তবে হামলার আগে গোপন আস্তানায় হামলায় অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। সিআইডি সূত্র জানায়, বাবরের দেয়া তথ্যমতে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুই-একদিনের মধ্যে তাদেরকে সিআইডি দফতরে ডাকা হবে। বাবর গতকালও গ্রেনেড হামলায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, হামলা পরবর্তী সময় নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাইকমান্ডের নির্দেশে তাকে কাজ করতে হয়েছে। অপরদিকে ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে জেলগেটে হাজির করার গতকাল মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি আরিফের আবেদনে বিচারপতি এএফএম আব্দুর রহমান ও বিচারপতি মোঃ ইমদাদুল হক আজাদের বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ নির্দেশ দেন। আরিফের পক্ষে শুনানিতে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, আরিফুল ইসলাম অসুস্থ। রিমান্ডে নিলে তার অবস্থার অবনতি হতে পারে। ঢাকার হাকিম আদালত সোমবার আরিফকে ৫ দিন পুলিশি হেফাজতের আদেশ দেন। সন্দেহ নেই , এই চক্রটি বেশ শক্তি নিয়েই মাঠে নেমেছে। এরা তাদের বীজ পুঁতে রেখেছে দেশের সর্বোচ্চ শান্তি,সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী বাহিনীতেও। যা আসলেই শংকার কারণ। জাতির আকাশে আবার সেই হায়েনার পাখা । সেই শকুনেরা আবার রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে বাঙালী জাতিকে ! সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২২
false
rn
মৃত্যুর আগে যে ১০০ টি মুভি আপনাকে দেখতে হবে (দুই) ১১। দি গ্রেট গ্যাটসবি (The Great Gatsby) মুভিটা বেশ লম্বা। ২ ঘন্টা ২০ মিনিট। মূল উপজীব্য বিষয় হলো রোরিং টুয়েন্টির সময় আমেরিকান পার্টি ও এলকোহল সংস্কৃতি এবং উচ্চবিত্ত সমাজে এর প্রভাব। ১৯২০ থেকে ১৯৩০ এই দশক টাকে বলা হয় রোরিং টুয়েন্টি। এই সময় চারিদিকে ছিল বিলাসিতা ও অদ্ভূত এক প্রতিযোগিতা। একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।সামাজিক কলুষতা ও বিশ্বাসঘাতকতার সেই সময়ে এক রহস্যময় মানুষের সবকিছু নতুন করে শুরু করার আকুতি আমাদের স্পর্শ করে। মুভিটা শেষ করে খুব মন খারাপ হয়ে গেছিলো। কি জানি একটা আছে স্টোরি টাতে .. একদম ভিতরে গিয়ে আঘাত করে। কিছু মুভি দোষ ত্রুটি উপেক্ষা করে দেখতে হয় ! তা, নাহলে দুনিয়া বিরস হয়ে যাবে ! এই মুভির সবচেয়ে আমেইজিং জিনিস হলো এর চিত্রায়ণ। মনে হয় পুরাটাই যেন গ্রিন স্ক্রিনের সামনে করা। প্রতি মিনিটে মিনিটে প্রচণ্ড সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ, মনে হয় যেন ডিজনির ফেইরি টেল টাইপ এনিমেশন দেখছেন তবে আরও বেশি বেশি দুন্দর। অনেক সুন্দর, চোখ জুড়িয়ে থাকে। চরিত্রগুলো জানালার পাশে বসে আছে, জানালা দিয়ে এত চমৎকার দৃশ্য দেখবেন যে পজ করে স্ক্রিন ওখানেই রেখে দিতে মনে চাইবে। ১২। টাইটানিক (Titanic) একটি বিশাল জাহাজ দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ বেঁচে থাকার জন্য হাতের কাছে খরকুটো যা পেয়েছেন তা আকড়িয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। দৃশ্যটির কথা মনে হলে আজও মনটা স্তব্ধ হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। তাছাড়াও সিনেমাটিতে প্রেমের একটি সুন্দর আবহ তৈরী করা হয়েছে। সিনেমায় চোখ ধাধানো আলোকসজ্জা এবং জাহাজের অভ্যান্তরের বিলাসবহুল দৃশ্যগুলি চমৎকারভাবে চিত্রয়িত করা হয়েছে। এক কথায় “অসাধারণ একটি মুভি।” জাহাজটি যখন পুরোটাই পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল তখন নায়ক একটি কাঠের টুকরো ধরে ভেসে থাকার চেষ্টা করছিল। তখন নায়িকাকে কাছের টুকরোটির উপর বসিয়ে নিজে আটলান্টিকের হিমশীতল জলে কাঠের টুকরোটিকে ভাসিয়ে রাখার প্রাণপন চেষ্টা করছিল। একসময় নায়ক ঠান্ডায় মারা যায়। নায়িকা বেঁচে থাকে। এই মুভিটা প্রতি বছর আমি একবার করে দেখি।১৩। অল ইজ লস্ট (All is lost) সিনেমাটিতে একজন মানুষ ভারত মহাসাগরে হারিয়ে যায়। সেখানে সে নিজেকে কিভাবে আত্মরক্ষা করে তা নিয়েই মুলত মুভিটি নির্মিত হয়েছে। এতে কোনো সংলাপ নেই বললেই চলে। এতে অভিনয় করেছেন রবার্ট রেডফোর্ড। ১০৬ মিনিটের ছবিটি কোনোভাবেই ক্লান্তিকর হয়ে যায় না দর্শকদের কাছে। অতি আধুনিক, জীবনধারনের প্রায় সব উপাদান মজুত একটি নৌকায় করে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। সমুদ্র ভাসমান লোহার ওয়াগানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায় তার নৌকার একাংশ। সে ক্ষতি মেরামত করতে পারলেও, বিকল হয়ে যাওয়া রেডিও কোনওভাবেই সারাতে পারেন না, সেই বৃদ্ধ। এক সময় ঝড়ের ধাক্কায় নৌকা ভাঙে৷ তারপর হাওয়া ভরা ভেলায় ঠাঁই হয়। তাতেও পানি উঠতে থাকে। খাবার ফুরতে থাকে৷ বৃদ্ধ বাঁচবেন কি না, সে প্রশ্নেই গল্প এগিয়ে চলে। 'অল ইজ লস্ট' আসলে নিজের সঙ্গে নিজের সময় কাটানোর গল্প। একেবারে প্রতিদিনের জীবনের গল্প। যেখানে কিছু হয় না৷ বিরক্তি মানুষকে গ্রাস করে। সময় কী করে কাটবে, সে চিন্তা মাথার মধ্যে ভারী হয়ে আসে। মৃত্যুচিন্তাও যে আসে না, তা নয়। কিন্তু অন্য সারভাইভাল ছবির মতো মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে বেরানোর কোনও তাগিদও যেন এর গল্পে নেই। নামহীন এক বৃদ্ধ, যাকে এন্ডস্ক্রোলে 'আওয়ার ম্যান' হিসাবে চিনিয়ে দেওয়া হয়, তিনি শুধু অপেক্ষা করেন। অপেক্ষা করেন পরিবর্তনের। দিগন্ত পর্যন্ত কিংবা তারও অনেক অনেক পরে পর্যন্ত বিস্তৃত অপরিবর্তনের সমুদ্র থেকে জনজীবনে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু ঈশ্বর বোধহয় আবারও ক্লান্ত হয়ে পড়েন এই ইউলিসিস-কে উদ্ধার করতেও। ১৪। রোমান হলিডে (Roman Holiday) মুভিটি সাদাকালো হওয়ার পরেও আজও মানুষের মনে চির রঙিন। সম্পূর্ণ শুটিং ইটালিতে হওয়া প্রথম আমেরিকান মুভি এই রোমান হলিডে। মুভির বাজেট ১.৫ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার হলেও, এটি তৈরি করতে লেগে যায় ৫ মিলিয়ন ডলার। মুভির শুটিংয়ের সময় ইটালিতে চলছিলো গ্রীষ্মকাল। তাপমাত্রা ছিলো গড়ে প্রায় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। শুধু রোমান্টিক সিনেমা বললে ভুল হবে, যথেষ্ট কমেডি সমৃদ্ধ সিনেমা “রোমান হলিডে”। কিছু ছবি থাকে বারবার দেখেও পিয়াস মেটেনা, এটি সেরকম একটা ছবি। আরেকটা কথা বলি- হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় সিনেমা এটি। ১৫। চিলড্রেন অফ হ্যাভেন (Children of Heaven) প্রথম দৃশ্যেই ছবির গল্প স্পষ্ট। মানে পুরো ছবির কাহিনী যেটিকে কেন্দ্র করে তা প্রথম দৃশ্যেই উঠে এসেছে। এক্সট্রিম কোজ শটে দেখানো হয় একটি ছেঁড়া জুতো সেলাই হচ্ছে। একটু পর ধীরে ক্যামেরার ফ্রেম বাড়ে। দেখা যায়, একজন মুচি এবং তার সামনে দাঁড়ানো একটি ছেলে। এ ছেলেটির নাম আলী। আলী তার ছোটবোন জাহরার স্কুলের জুতা সেলাই করাতে এসেছে। সেই ছেঁড়া জুতোর অবস্থা দেখেই কিন্তু বলে দেয়া যায় একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আলী। এই জুতো নিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আলী জুতোটা হারিয়ে ফেলে। তাও তার দোষে নয়। একটি ছোট সুপার শপ থেকে কাঁচাবাজার কেনার সময় আলী পলিথিনে মোড়ানো জুতোটা দোকানের বাইরে একটি বাক্সের সাইডে রাখে। ভেতরে গিয়ে আলু, টমেটো ইত্যাদি নিয়ে বাইরে এসে দেখে যেখানে জুতো রেখেছিল, তা আর নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও জুতোর পলিথিনটা মেলে না। পাবে কোত্থেকে? সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এসে সেই পলিথিনটাকে ফেলে দেয়ার জন্য রাখা জিনিস ভেবে নিয়ে যায়। এটা তো আর আলী দেখেনি। সে তখন দোকানের ভেতর কাঁচাবাজার নিয়ে ব্যস্ত।১৬। ডিপার্চারস (DeparTures) ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে এক চাকরি হারানো যুবককে ঘিরে যে নিজের কষ্টগুলো নিজের ভিতর চেপে রাখে। টোকিও শহরে মিউজিক টিমে কাজ করা দাইগো যখন চাকরি হারিয়ে শখের বাদ্যযন্ত্রটি বিক্রি করে দেয় তখন অন্যরকম একটা অনুভূতি হয় । পরবর্তীতে সে চলে আসে নিজের শহরে যেখানে কাজ নেয় মৃতদেহকে সাজ-সজ্জা করানোর । একাজ মেনে নিতে না পেরে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায় । সে সময়ে দাইগোর অবলম্বন হয় ছোটবেলার কমদামি পুরনো বাদ্যযন্ত্রটি আর হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ ।একসময় সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ফিরে আসে দাইগোর কাছে যখন দাইগোর ডাক পড়ে কাছের একজন মানুষকে শেষবারের মত সাজানোর কাজের । ছবির শেষাংশে দেখা যায় ৩০ বছর আগে চলে যাওয়া পিতার জন্য সন্তানের ভালবাসা, দাইগোর স্মৃতিতে পিতার কোন চেহারা ছিল না।ছিল একজন পুরুষের হাতে ছোট্ট এক শিশুর তুলে দেওয়া একটি শ্বেতপাথরের ছবি। পিতার মৃতদেহের হাতে থাকা সেই পাথরটি মনে করিয়ে দেয় সন্তানের প্রতি জন্মদাতার অকৃত্রিম ভালবাসা । যে দৃশ্য জমতে থাকা কান্নাকে থামতে দিতে চায় না।মনে করিয়ে দেয় আমাদের চারপাশে থাকা শত শত পিতার কথা। এই ছবিটির IMDb রেটিং ৮.১/১০।১৭। বাইসাইকেল থিফ (Bicycle Thieves) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালি।হতাশায় নিমজ্জিত আরো অনেকের মত এক বেকার এন্টনিও রিকি। একদিন সে হঠাৎ করে বিভিন্ন যায়গায় পোষ্টার লাগানোর একটি চাকরি পেয়ে যায়।কিন্তু এই কাজের জন্য প্রয়োজন একটি বাইসাইকেল।চাকরিদাতাদের কঠিন শর্ত 'বাইসাইকেল যোগার করতে না পারলে চাকরি হবেনা'।যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে যেখানে হাজার হাজার লোক একটি চাকরির জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে সেখানে এরকম একটি চাকরি পাওয়া বিশাল ব্যাপার।কাজেই চাকরি হাতছাড়া করা যাবেনা।"সাইকেল যোগার করা যাবে" এই শর্তে সে চাকরিটি নিয়ে নেয়।কিন্তু ঘিরে ধরে আরেক চিন্তা, কথা তো দিল কিন্তু সাইকেল পাবে কোথায়?এগিয়ে আসে রিকির স্ত্রী মারিয়া।বিয়েতে পাওয়া চাদরগুলো বিক্রি করে সাইকেল কেনা হয়। চলচ্চিত্রে।সমাজ এবং মানুষের সম্পর্ক,সেখানে অর্থনীতির প্রভাব,পিতা-পুত্রের সম্পর্কের একেবারে গভীরের রুপ,একজন সৎ মানুষের হাহাকার, পরোক্ষভাবে যুদ্ধের কুফল সম্পর্কে নাড়া দেয়া কী নেই এই ছবিতে! ১৮। দ্যা ক্লাসিক (The Classic) মুভিতে নায়িকা'র পার্ট দুইটা, মা ও মেয়ের। কিছুক্ষন মেয়ের কাহিনি দেখায়, কিছুক্ষন ফ্ল্যাস ব্যাক। যদিও কাহিনি শুরুর হয় মেয়েকে দিয়ে, কিন্তু মূল সিনেমার কাহিনী মায়ের প্রেম কাহিনী নির্ভর। পুরাতন কোরিয়ান সংস্কৃতি, মূল্যবোধ কিছু কিছু এসেছে। কাহিনী রোমান্টিক। গ্রামের মেম্বর টাইপ লোকের নাতনী সুন এ জিন, আর ঐ গ্রামে নায়কের আত্মীয়র বাড়ি। গ্রামেই তারা জানতে পারে তারা আসলে একই শহরের ছাত্রছাত্রী। মেয়েটার পারমিশন নাই, এখানে ওখানে যাওয়ার, কিন্তু নদীর ঐ পারের ভুতুরে বাড়িটা দেখার খুব শখ, ছেলেটারে জানায়। ... ফেরার পথে নৌকা নাই ঘাটে আর তুমুল বৃষ্টি। মেয়েটার কিন্তু বিয়ে ঠিক পারিবারিক ভাবে, পাত্র নায়কের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ভালো মানুষ....সেও ভালোবাসে নায়িকারে। এই গোলযোগের মাঝে নায়ক কে যেতে হয় যুদ্ধে। নায়ক কি ফেরৎ আসে? মায়ের চিঠি আর ডায়েরী গুলা পড়তে পড়তে জানতে চেষ্টা করে মেয়েটা...আর এই ফাঁকে তার জীবনেও ঘটতে থাকে রোমান্টিক টুইস্ট। মা-মেয়ের দুইজনের প্রেম কাহিনীর দুইরকম সমাপ্তি। ১৯। চার্লি এন্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরী (Charlie and the Chocolate Factory) ২০০৫ সালে মুভিটি মুক্তি পায়। অভিনয়ে সবসময়ই নতুন কিছু নিয়ে কাজ করে এমন অভিনেতার সংখ্যা খুব বেশি নেই। সেই অল্প ক’জন অভিনেতার অন্যতম হলেন জনি ডেপ। সবসময়ই নতুন কিছু করতে পছন্দ করেন ‘পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ান’ খ্যাত অভিনেতা জনি ডেপ। ২০। দ্যা প্রেস্টিজ (The Prestige) মুভিটির দর্শন, নাটকীয়তা, সংলাপ সব অসাধারন। শুধু গল্প বলার ভঙ্গিটা একটু জটিল। দুইজন তরুন ম্যজিশিয়ানের দ্বন্দ্ব এই ছবির কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে গেছে... যেটার শুরু হয় ক্রিশ্চিয়ান বেল এর অসাবধানতার কারনে হিউ জ্যাকম্যান এর স্ত্রী এর মৃত্যুর ফলে.. হিউ আঙ্গুল তোলে বেল এর দিকে এবং কাহিনী এক অসাধারন গা শিউরে ওঠা পরিনতির দিকে এগিয়ে যায়...। মুভির মুল আকর্ষন এর চমক গুলো। একটু পর পরই আপনাকে চমকাতে হবে নোলান এর অসাধারন ভাবে গল্প সাজানোর জন্য। মুভিতে আছেন হিউ জ্যাকম্যান এবং ক্রিশ্চিয়ান বেল। আমি অনুরোধ করবো এই মুভিটা দুইবার দেখবেন।
false
rg
বিএনপি'র আগামীকালের বিক্ষোভের সঙ্গে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের একটা যোগসূত্র আছে !! সরকারের উচিত ছিল আজ বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া। সরকার সেই কাজটি না করে বলটি বিএনপি'র হাতে তুলে দিল। এখন বিএনপি সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আগামীকাল সারা দেশে বিক্ষোভ করবে। এতে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি চাঙ্গা হবার একটা চেষ্টা চালাবে। পাশাপাশি আগামীকাল একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের সাতদিনের সময় সীমা শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি'র কাছে ক্ষমা প্রার্থণা চাওয়ার। সেই হিসেবে আগামীকাল রাতেই এই নরঘাতকের ফাঁসির রায় কার্যকর হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিক এই সময়কে মাথায় রেখেই বিএনপি শেষ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে দেশে আবারো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। এতে বিএনপি'র এক ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ। এক, বিক্ষোভের নামে সারা দেশে তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। দুই, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি'র যে দুরত্ব তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে জামায়াতের বাংলাদেশ চাপ্টারের গুরু গোলাম আযম মারা যাবার পর, বিএনপি যে আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রকাশ বা জানাজায় অংশগ্রহন না করে, গোলামপুত্র কর্তৃক চপেটাঘাত পেয়েছে, তার কৈফিয়ত দিয়ে জামায়াতকে আবারো কোলে টেনে নেবার একটা সুযোগ পেল বটে। আর যদি আগামীকাল রাতেই কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়ে যায়, তখন জামায়াত বিএনপি'র বিক্ষোভ থেকে প্রসূত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গত সপ্তাহের টানা ব্যর্থ হরতালের ঘাটতি পুষিয়ে নেবার জন্য আবার সোমবার থেকে টানা হরতালের একটা মঞ্চ পায়। মাঝখান থেকে বিএনপি আবার জামায়াতের সাথে কোলাকুলি করার একটা প্রাকাশ্য সুযোগ পেয়ে গেল, যা তাদের কর্মীদেরও নিঃসন্দেহে চাঙ্গা করবে। জামায়াত বিএনপি'র কোলে সবসময়ই আছে। কিন্তু জামায়াত নেতাদের সারা দুনিয়ায় লবিষ্ট থাকা স্বত্তেও যেহেতু একটা একটা করে মামলার নিস্পত্তি হচ্ছে, এবং তাদের সাজা হচ্ছে, যা তারা মেনে নিতে পারছে না। আর বিনএপি একেবারে ঘরে ঢুকে যাওয়া থেকে আবার রাস্তায় বের হবার একটা মহড়া দেবার সুযোগ পেল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আগামী সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত থাকবে। আর এই টোটাল বিষয়টি নিয়ে জুয়া খেলছে স্বয়ং সরকার। জামায়াতকে কেন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করা হবে না, সেই প্রশ্নে সরকার এখনো তালবাহানা করছে। সময় ক্ষেপন করছে। রাজনীতি করছে। একটা জিনিস আমরা ভুলে যেতে পারি না, কিছুতেই ভুলতে পারি না। একাত্তরে এই জামায়াত সারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যে নিপিড়ন, অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ, দখল, লুটপাট ও মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে, সেই দলটিকে বাংলাদেশ কেন পরবর্তী ৪৩ বছরেও নিষিদ্ধ করতে পারলো না? কারণ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের পাকিস্তানমুখী যাত্রা। সেই যাত্রার সকল কৃতিত্ব বিএনপি'র। বিএনপি বাংলাদেশকে একটি পাকিস্তানপন্থী দেশ হিসেবেই দেখতে চায়। জামায়াত তাদের সেই সদিচ্ছার প্রধান শক্তি। গোলাম আযমরা বিএনপি'র ডাকে আবার বাংলাদেশের মাটিতে রাজনৈতিকভাবে শিকড় গাড়ার সুযোগ পেয়েছে। এখনো তাদের একমাত্র ভরসা বিএনপি। আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে কিছু কিছু রাজনীতিতে না জড়ালে, সরাসরি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে, তাদের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের আটক করে বিচার আরো দ্রুত করার উদ্যোগ নিলে, এই সমস্যা সৃষ্টি হতো না। মামলা পরিচালনায় আরো গতি থাকা খুব দরকার ছিল। এই মামলাকে পুঁজি করে ক্ষমতায় থাকার কৌশলের মধ্যে কোনো ভালোত্ব নেই। বরং আওয়ামী লীগের অনেক অপকর্ম এই মামলা দিয়ে ঢাকার যে কৌশল, সেটি সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদেরর বিচার এবং বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারটি বাংলাদেশে গুটি কয়েক বিএনপি'র চামচা আর জামায়াতের আণ্ডাবাচ্চা ছাড়া গোটা বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া। আওয়ামী লীগ সেই জনগণের মনের কথা বুঝতে পেরে সেই উদ্যোগটি নিয়ে একটি ভালো আশা জাগিয়েছে। কিন্তু সেটিকে রাজনৈতিকভাবে ক্যাশ করতে গিয়ে কিছুটা তালগোল পাকিয়েছে। আর বাংলাদেশের বিগত ৪৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, স্বার্থের জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র সবার প্রায় একই। চুরি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, সম্পদ বানানো এই জায়গাগুলোতে কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, কে জামায়াত চেনার উপায় নাই। কিন্তু বৃহত্তর জনসাধারণের সস্তা সমর্থন লাভের জন্য এসব দলগুলোর কিছু কিছু বিষয়কে রাজনৈতিকভাবে পুঁজি করার কৌশল দীর্ঘদিনের প্রাকটিস। সেই রাজনৈতিক কৌশল থেকে এরা নিজেরাই বের হতে চায় না। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, এখনো দেশে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হয়!!! যেখানে রাজাকারের তালিকা করার কথা, সেখানে এরা মুক্তিযুদ্ধের তালিকা নিয়ে ব্যস্ত। মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করে বাংলাদেশ ৪৩ বছর চলল। আর কত? আর কত? চেতনা বিক্রি করে যারা মুখে বড় বড় কথা বলে, তাদের হাড়ির খবর নিতে গেলেই দেখি, অনেক ব্যাপার স্যাপার জড়িত। নইলে গোলাম আযমের জানাজা কিভাবে দেশের জাতীয় মসজিদে হয়? একজন চিন্থিত অপরাধীর জানাজা জাতীয় মসজিদে করতে দিয়ে আওয়ামী লীগ যে বদনামটি করেছে, সেটি ঢাকার জন্য পরপর কয়েকটি মামলার রায়। এই সহজ বিষয়টি বোঝার মত হাজার মানুষ আছে। অন্য মামলাগুলো, বিশেষ করে যে গুলোর রায় হয়ে গেছে, তা নিয়ে এতো সময় ক্ষেপন কেন? কারণ, এই মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবার খায়েস নিয়েছে। দেশের জনসাধারণের চাওয়া পাওয়া সেখানে মুখ্য নয়। কিংম্বা বাংলাদেশকে কলংকমুক্ত করার ব্যাপারটিও মুখ্য নয়। মুখ্য বিষয় হল, রাজনৈতিক লাভ লোকসান। হায়রে রাজনীতি। আমি যখন কোনো মন্ত্রীর মুখে শুনি, অমকু কাজটি করতে হবে, তমুক বিষয়টি করতে হবে, তখন প্রশ্ন জাগে, তাহলে কাজটি কে করবে? অন্য কোনো মন্ত্রী এসে পূর্ববর্তী মন্ত্রী বাহাদুরের এই স্বপ্ন পূরণ করতে চেষ্টা করবে। একজন মানুষ সরকারে থেকে কিভাবে বলে- করতে হবে। কাজটি তো তারই করার কথা। জনগণ বরং তার কাজের দায় কতোটা সফল হল, সেই বিচার করবে। আসলে আমরা এক উদ্ভট উল্লুকের দেশে বাস করি। এখানে কারো বিরুদ্ধে সত্য কথাটি বললে তারা ধরে নেয়, লোকটি হয়তো অন্য দলের। সমালোচনা করার ক্ষেত্র বাংলাদেশে নেই। সরকার ইচ্ছা করে বিএনপিকে রাস্তায় পাঠিয়ে যে খেলাটি খেলার ইচ্ছাপোষণ করল, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের সাধারণ মানুষ। যাদের কাজের জন্য ঘরের বাইরে যেতেই হবে। বাংলাদেশে জন দুর্ভোগ বাড়ানোর এই যে রাজনৈতিক কালচার, এ থেকে আমাদের মুক্তি নাই। কারণ, দেশের মানুষ জানে না, কুটনৈতিক পাড়ায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সবাই একই সোফায় বসে আড্ডা মারে। একই অনুষ্ঠানে গিয়ে তারা কোলাকুলি করে। কুশল বিনিময় করে। আর রাস্তায় এসে জনগণের সামনে একগাদা মিথ্যা কথা বলে। হয়তো কি কি বলবে, সেই খতিয়ানও আগের রাতে তারা একত্রে বসে ঠিক করে। নইলে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য শুরু হয়েছে, তা নিয়ে এতো রাজনৈতিক ক্যাচাল হবার কথা না। নইলে মামলা দ্রুতগতিতে এগোতো। দ্রুত গতিতে রায় কার্যকর হতো। বিএনপি ক্ষমতায় এসে ইতিহাস নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছে, তার কেন বিচার হবে না? বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় আজ পর্যন্ত যত মানুষ নিহত হয়েছে, তার কেন বিচার হবে না? আমরা নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের বর্তমান নিদারুন হালের কথা জানি। কই তাদের তো সম্পত্তি বাড়লো না। পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধরা তো সুচিকিৎসা পায় না। আর গোলাম আযম রাষ্ট্রীয় খরচে সবচেয়ে সেরা চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে মরার সুযোগ পেল। সাঈদীকে এখন জেলে জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় আমদুধকলা খাওয়াতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত। এ যেনো জনগণের সব দায়। তোরা কেন জনগণ? তোদের সব দায়। আমরা রাজনীতি করি। আমরা দুটা ভালো খেয়ে আরামে আয়াসে থাকব। নিরাপত্তায় থাকব। ৪৩ বছরে বাংলাদেশে অনেক টাকাওয়ালা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কোনো উন্নতি হয়নি। যারা সংখ্যার বিচারে এটা যাচাই বাছাই করে, একটু ভালো খাবার চেষ্টা করেন, তারাও কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক শাসকদের সঙ্গে এক ধরনের আতাত করেছে বলে, গুণ গায়। জাতিসংঘের উদ্বেগের কথা বলে আজকের এই লেখাটি শেষ করব। একাত্তরে যখন বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করা হল, তখন কোথায় ছিল এই জাতিসংঘ? একাত্তরে যখন চার লাখ মা বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়া হল, তখন কোথায় ছিল এই আমেরিকার চামচা জাতিসংঘ? ফিলিস্তিনে ইসরাইল যে এখনো হামলা করে, তখন কোথায় থাকে জাতিসংঘ? শুধু বাংলাদেশে এখনো মিথ্যা মামলায় যে সব লোক কারাগারে আটক আছে, তাদের বেলায় জাতিসংঘ নিরব কেন? কেবল মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে আটক নেতাদের রায় কার্যকরের সময় আসলেই জাতিসংঘের মানবিকতা উথলে ওঠে। হায়রে জাতিসংঘ, তোরা গু খা। কারণ, তোদের কাছে মানবিকতা একটা প্রহসন। তোরা আমেরিকার একটা দালাল, এছাড়া তোদের আর কোনো পরিচয় আমার জানা নেই। বিএনপি নানান অছিলায় তাদের মিত্রদের জন্য দুঃখ দেখানোর খায়েস করবে, এটাই জানা কথা। কিন্তু সরকারকে আরো দক্ষ হাতে সেটি মোকাবেলা করতে হবে। কারণ, জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া, দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করার দায়িত্বটি সরকারের ঘাড়েই বর্তায়। একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করার জন্য এই সরকার ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। কিন্তু সেটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানোর প্রয়াস রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের সামিল। ভালো কাজ করলে দেশের মানুষ তাদের আবারো ক্ষমতায় বসাবে। কিন্তু সেই আস্থাহীনতায় যারা ভোগে, তাদের বুঝতে হবে, আসলে দেশের জনগণের সাথে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নিযুত নিযুত দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এই দূরত্ব যতো কমিয়ে আনা যাবে, ততোই দেশের মঙ্গল। আইন সবার জন্য সমান, এই কথাটিকে বাস্তবে রূপ দিতে চাইলে, সেটি খালেদা জিয়ার জন্যই যেমন প্রযোজ্য, শেখ হাসিনার জন্যও প্রযোজ্য। আবার আমাদের মত কলিম ছলিম রাম শ্যামদের জন্যও প্রযোজ্য। অমুক নেতা বলে, সে আদালতে হাজিরা না দিয়েই অ্যাডভান্স জামিন পেয়ে যাবে, আর মুরগি বিক্রেতা রাজপথে হেঁটে কেন মুরগি বিক্রি করলো, এজন্য তার জামিন হবে না। এটা কোনোভাবেই আইনের সবার জন্য সমান প্রমাণ করে না। বাংলাদেশে আইন যে সবার জন্য সমান নয়, এই বিষয়টি বোঝার জন্য গবেষক হবার দরকার নেই। ইতিহাস সেই সাক্ষ্য দেয় যে, আইন হচ্ছে ব্যক্তি কতোটা দাপুটে তার উপর নির্ভরশীল। যদি ব্যক্তিটি গোলাম আযম হয়, তাহলে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধ করলেও, সে ফাঁসি থেকে রেহাই পাবে, তার দেশি বিদেশি দাপটের জোরেই। এই দাপটের জোরেই তার জাতীয় মসজিদে জানাজা হবে। আর যদি ব্যক্তিটি হয় মোরের চায়ের দোকানদার, যার রাগের মাথায় চপেটাঘাতে সহযোগী কর্মচারীর মৃত্যুজনিত কারণে তার ফাঁসিই হবে। বাংলাদেশে আইনের এমন ব্যবহার দেখেই আমরা অভ্যস্থ। সুতরাং, আইনের সবার জন্য সমান কথাটি আর দয়া করে উচ্চারণ করার প্রয়োজন দেখি না। সবশেষে আবারো বলতে চাই, একাত্তরের মানবতা বিরোধী সকল যুদ্ধাপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। যারা এটা নিয়ে রাজনীতি করবে, তালবাহানা করবে, কোন মানের হল বলবে, মানবিক কিনা, তা কেবল নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা দেখে রাখবে। দেখে রাখবে এই কারণে যে, ভবিষ্যতে এই রাজনৈতিক দুবৃত্তদেরও একদিন বাংলাদেশে বিচার হবে। হতেই হবে। নইলে বাংলাদেশের উন্নয়ন, সভ্যতা এসব মিথ্যা এবং লোক দেখানো বলেই বিবেচিত হবে। সো, সাধু সাবধান।। সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯
false
fe
বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেচনা ও স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাঠামো বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেচনা ও স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাঠামোফকির ইলিয়াস============================================লেখাটি এবারের নোবেল শান্তি পদক দিয়েই শুরু করি। মালালা নোবেল পেয়েছেন। ওর বয়স ১৭ বছর। মালালা পাকিস্তানের মেয়ে। এখন থাকেন বিলাতে। একটি প্রতিবাদই তাকে ‘হিরোইন’ বা ‘আইকন’ এ পরিণত করেছে। গেলো দুবছর থেকেই ওর নাম শোনা যাচ্ছিল নোবেল তালিকায়। হয়তো ওর বয়সের অপেক্ষায় ছিল নোবেল কমিটি। ১৮ পর্যন্ত অপেক্ষার তর তাদের সয়নি। তাই ১৭-তেই নোবেল দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছে নোবেল কমিটি।মালালা ইউসুফজাই তালেবানদের মুক্তাঞ্চল পাকিস্তানের সোয়াত জেলার মিঙ্গোরা শহরের মেয়ে। ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই জন্ম তার। বেশি কিছু জীবনে চাননি মালালা। শুধু চেয়েছিলেন একটু লেখাপড়া করতে। পৃথিবীকে জানতে। কিন্তু তালেবানদের ফতোয়া ছিল, মেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারবে না। জঙ্গিদের হুমকির মুখে যখন সোয়াত জেলার অনেক মেয়েই লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে, তখন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মালালা। বদলা নিতে ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর বিকেলে তার ওপর হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা। একদম সামনে থেকে তিন-তিনটি গুলি চালানো হয়। গুরুতর জখম মালালা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে সুস্থ হন। এখন তিনি ব্রিটেনের বার্মিংহামের বাসিন্দা।দুই হাজার নয় সালে গর্জে ওঠেন এগারো বছরের মালালা ইউসুফজাই। বিবিসিতে ছদ্মনামে তার লেখা প্রকাশিত হয়। ব্লগে উঠে আসে সোয়াত উপত্যকায় তালেবানের প্রভাব বিস্তারের খুঁটিনাটি। তালিবানি শাসনে তার জীবন। এই উপত্যকায় তার দৃষ্টিতে নারীশিক্ষার গুরুত্ব। তখন অশান্ত সোয়াতে একের পর এক স্কুল ধ্বংস করে ফেলছে তালেবান। আর তখনই উর্দু কবি, শিক্ষা আন্দোলনের কর্মী জিয়াউদ্দিন ইউসুফের মেয়ে বছর এগারোর মালালার লেখা আলোড়ন তৈরি করে। সোয়াতে পৌঁছায় পাকসেনা। শুরু হয় যুদ্ধ। সে সময়ই এগারো বছরের মালালার জীবন নিয়ে তথ্যচিত্র করেন সাংবাদিক অ্যাডাম বি এলিক। প্রকাশ্যে আসে মালালা।খুব অল্পদিনেই বিখ্যাত হয়ে যাওয়া এই কিশোরী চলে যায় তালেবানের হিটলিস্টে। তার কণ্ঠরোধ করাই ছিল তালিবানদের উদ্দেশ্য। নয় অক্টোবর দুই হাজার বারো। স্কুল বাসে ওঠার সময় এক ব্যক্তি তার নাম জিজ্ঞাসা করে। মালালা নামটা শুনেই অত্যাধুনিক অস্ত্র থেকে তিন রাউন্ড গুলি করে ওই ব্যক্তি। এরপর জীবন-মৃত্যুর লড়াই। দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন মালালা। ততোদিনে গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে মিঙ্গোরার এই লড়াকু মেয়েটির নাম। গোটা বিশ্ব দাঁড়িয়েছে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এই কিশোরীর পাশে। মালালার জীবন সামনে আসার পরই জাতিসংঘও সকলের জন্য শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যোগ নেয়। দুই হাজার পনেরোর মধ্যে বিশ্বের সকলকে স্কুলে পাঠাতে মালালার নামে প্রকল্প তৈরির সুপারিশ হয়। যার জেরে পাকিস্তানে শিক্ষার অধিকার আইন আসে। দুই হাজার তেরোর এপ্রিল মাসে মালালাকে বিশ্বের একশ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে টাইম ম্যাগাজিন। দুই হাজার তেরোর বারোই জুলাই তার জন্মদিনে জাতিসংঘে তিনি বিশ্বের সকলের জন্য শিক্ষার কথা বলেন। সেই দিনটিকে ‘মালালা ডে’ নামে স্মরণীয় করে রাখে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন মালালা বলেন, এই দিন শুধু তার নয়, সকল মহিলা, ছেলে এবং মেয়ে, যারা নিজেদের অধিকার নিয়ে আওয়াজ উঠিয়েছেন, এ দিন সকলের। নারীশিক্ষা আন্দোলন, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ তাকে এনে দিয়েছে দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কার এবং সম্মান। এই কিশোর বয়সেই তিনি সাম্মানিক ডক্টোরেট পেয়েছেন হ্যালিফ্যাক্সের ইউনিভার্সিটি অফ কিংস কলেজ থেকে। প্রতি মুহূর্তেই বিশ্বের সকল মানুষের কাছে শিক্ষার বার্তা দিতে নিরলস কাঝ করে যাচ্ছেন সতের বছরের মালালা ইউসুফজাই। প্রতি মুহূর্তেই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের মালালাদের গর্জে উঠতে ভরসা জোগান তিনি। প্রতি মুহূর্তেই নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য সরব হন তিনি। সেই কাজের জন্য এবার সর্বোচ্চ সম্মান পেলেন মালালাÑ বলেছে নোবেল কমিটি। এই বিষয়ে আমার কিছু কথা আছে। মালালা যে কাজটি করেছেন- তা কি বিশ্বে আর কোনো বালক-বালিকারা করেনি কিংবা করছে না? হ্যাঁ- করছে। কিন্তু তারা মিডিয়ার পাদপ্রদীপে আসতে পারছে না। আসার সুযোগ নেই। অথবা আসতে দেয়া হচ্ছে না। এখানে মালালাকে একটি প্রতীক হিসেবেই ব্যবহার করেছে পশ্চিমা প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো।পাকিস্তানে দানবতন্ত্র, নতুন কোনো বিষয় নয়। এই পাকিস্তানেই তাদের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল জিঘাংসা চরিতার্থে।শক্তিশালী আত্মঘাতী বোমা হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এই চরম লজ্জাজনক ঘটনাটি জানান দিয়েছিল উপমহাদেশে একটি কালো দাঁতালো শক্তি কতো জঘন্যভাবে বেড়ে উঠছে। ঘটনার মাত্র আড়াই মাস আগে বেনজির দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে পাকিস্তানে ফিরেছিলেন। তার এই ফেরা নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নাকি, স্বৈরশাসক পারভেজ মুশাররফের সঙ্গে আঁতাতÑ নিয়ে বিতর্ক ছিল। কিন্তু বেনজির খুব সুদৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মৌলবাদ মুক্ত, স্বৈরশাসনমুক্ত পাকিস্তান চান। যে কোনো মূল্যে তিনি কাজ করে যাবেন সে লক্ষ্যে।পাকিস্তানের ইতিহাসে বেনজির ভুট্টোর নামটি রাজনৈতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। তার পিতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছায়ায় তার রাজনীতির যাত্রা শুরু হলেও ক্রমশ তিনি নিজের আসনটি সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিতে পেরেছিলেন। মূলত একাত্তর সালের ষোলই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় সাধিত হবার পর ‘পশ্চিম পাকিস্তানের’ শরীর থেকে পশ্চিম শব্দটি খসে পড়ে। একক পাকিস্তান রাষ্ট্রের পুনর্জন্ম হয়। যা ১৯৪৭ সালেই হতে পারতো। বাঙালিদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম সে সময়ে হলেই তা হতো উত্তম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। ফলে চব্বিশ বছর ‘হামভি মুসলিম, তুমভি মুসলিম’ এই বুলি আওড়িয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি উর্দু ভাষীরা বাঙালি জাতিকে শাসন এবং শোষণ দুটিই করে। জিন্নাহ-লিয়াকত আলীরা যে গণতন্ত্রী ছিলেন নাÑ তা সে সময়ের ইতিহাসই বলেছে। গণতন্ত্র মানলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতির শাসক, সংখ্যালঘিষ্ট উর্দু ভাষীরা হয় কি করে?এভাবে স্বৈর মানসিকতার ছায়াদানব হয়েই বেড়ে উঠেছিল পাকিস্তান। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খাঁ, কিংবা জে. ইয়াহিয়া খাঁরা জনগণের টুঁটি চেপে ধরতেই ক্ষমতা গ্রহণের নামে মার্শাল ল’ জারি করেন। এমন কি তারা বাঙালি জাতিকে মাতৃভাষা বাংলা পরিত্যাগ করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের বল প্রয়োগ করার ধৃষ্টতা দেখান। এরপরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় ছিল এ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ঘটনা। কিন্তু তারপরও কি পাকিস্তানে গণতন্ত্র চর্চা হয়েছে? না হয়নি। বেলুচ, সিন্ধি, পাঞ্জাবি, পাঠান প্রভৃতি গোত্র-সম্প্রদায়ের নানা কূটকৌশলের কাছে পাকিস্তানিরা নিজেদের কাছেই প্রতারিত হতে শুরু করে বিভিন্নভাবে। শাসক জুলফিকার আলী ভুট্টোর গদি কেঁপে ওঠে বিভিন্ন কারণে। কারণ তার গণতন্ত্র চর্চা স্বচ্ছ ছিল না। কিন্তু তা যাই হোক না কেন আবার সামরিক শাসক জে. জিয়াউল হকের ক্ষমতা গ্রহণ প্রমাণ করেছিল, পাকিস্তানিরা গণতন্ত্রের চেয়ে গাদ্দারি মার্কা একনায়কতন্ত্রই বেশি পছন্দ করে। বিভিন্ন টালবাহানা করে প্রায় জোর করেই ভুট্টোর ফাঁসির হুকুম দেয় সামরিক জান্তারা। যে জুলফিকার আলী ভুট্টো জনরায় না মেনে দুই পাকিস্তানের শাসক হতে চেয়েছিলেন, তাকে বিদায় নিতে হয় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। জেনারেল জিয়াউল হক বিভিন্ন ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে শাসন চালাতে থাকেন। এরপর মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় জিয়াউল হক নিহত হলে দেশের রাজনৈতিক প্রবাহ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়। একটি কথা লক্ষণীয় পাকিস্তানে মৌলবাদী জঙ্গিরা কিন্তু মূলত সংঘটিত হতে শুরু করে জেনারেল জিয়াউল হকের সময়েই। কারণ এ রকম একটি মোল্লাবাদীতন্ত্রের খুব প্রয়োজন ছিল জিয়াউল হকের।এরপরে পাকিস্তান শাসন করেন বেনজির ভুট্টো। কিন্তু জঙ্গিবাদের বিষক্রিয়া তিনি থামাতে পারেনি। তাছাড়া তার নিজ স্বামী আসিফ জারদারিসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সিংহভাগের দুর্নীতি ছিল সীমাহীন। ফলে তিনি টিকে থাকতে পারেননি। ক্ষমতায় আসেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয়ভাবে দেউলিয়া করে তুলে তার সরকারকেও। বিশেষভাবে সীমান্তবর্তী দেশ আফগানিস্তান থেকে আল-কায়েদাপন্থী জঙ্গিবাদের দাপট কাঁপিয়ে তুলে পাকিস্তানের গুহা, মরু, পর্বত। কারো কারো মতে পাক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই খুব কৌশলে নিজেদের রাষ্ট্রটিকে আংশিক অকার্যকর করে তোলে। সে সুযোগ নিয়ে খুব পরিকল্পিতভাবে নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেন জেনারেল পারভেজ মুশাররফ। সবচেয়ে মারাত্মক কথা হচ্ছে, জে. মুশাররফ ও জেনারেল জিয়াউল হকের কায়দায় পাকিস্তানে জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্ককে ম“ দিয়েছেন, নিজে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আজকের পাকিস্তানবাসী সেই কুফল ভোগ করছে।মালালা সেই পাকিস্তানেরই মেয়ে। আজকের আফগানিস্তানে যা ঘটছেÑ তা কি উঠে আসছে মিডিয়ায়? না, আসছে না।খবর বেরিয়েছে, মার্কিন মল্লুকের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ের জায়গা করে নিয়েছে মালালা। মালালা ইউসুফজাইয়ের লেখা বই ‘আই অ্যাম মালালা’ এবার পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ‘আই অ্যাম মালালা’- বইয়ের প্রতি ছত্রে উঠে এসেছে পাকিস্তানের তালেবান অধ্যুষিত এলাকার মেয়েদের দুর্দশার কথা। এবার সেই অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারবে মার্কিন মল্লুকের শিক্ষার্থীরা। তবে, আই অ্যাম মালালার পুরোটাই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। বইটির প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে বসবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। বইটির কোন অংশ কতোটা ও কিভাবে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রমের পর হাইস্কুলের পাঠ্যক্রমেও অন্তর্ভুক্ত হবে আই অ্যাম মালালা। শুধু নারীশিক্ষা নয়, মুসলিম দুনিয়ায় মেয়েদের অবস্থা জানার ক্ষেত্রেও মালালা অভিজ্ঞতার দলিল কাজে লাগবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহল। আমি বলি- এগুলো সবই হলো বাজারি জঙ্গিবাদ দমনের লোক দেখানো প্রচেষ্টা।আমেরিকা চাইলে শিশু উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে অনেক কিছুই করতে পারে। তারা তা না করে এক একটি ছোট্ট ঘটনাকে বড় ক্যানভাসে দেখাচ্ছে কেন? এর প্রকৃত মতলব কি? আর নোবেল কমিটিই এই মার্কিনি ফরমান তামিল করছে কেন? বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেচনা বিষয়টি যেন বিশ্ব থেকে বিদায় নিতে চলেছে। ধ্যানী কর্মের কোনো মূল্যায়ন নেই। সব কিছুই যেন শর্টকাট। সবাই খ্যাতি চায়। আর খ্যাতি বিক্রেতারা লুফে নিচ্ছে তাদের মনের মতো খদ্দের। সর্বত্র এখন স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাঠামো- ছকের খেলা। আরো একটি অতি সাম্প্রতিক ঘটনা দিয়ে লেখাটির যবনিকা টানতে চাই। একজন শিক্ষক পিয়াস করিম মারা গেছেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নিজের ছায়া বিক্রি করতেন। ছায়া বিক্রেতা কেন বলছি তা বুঝিয়ে বলি।তিনি দেশের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন বিভিন্ন টকশোতে- তাতে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। আপত্তি ছিল, তিনি মিথ্যার বেসাতি দিয়ে ‘ইতিহাস’ শোনাতেন। তিনি কি কি বলেছেন- তা টিভির আর্কাইভগুলোতে সংরক্ষিত আছে। জানেন বাংলাদেশ ও বাইরে থাকা লাখ লাখ মানুষ। সেই পিয়াস করিম মারা যাবার পর তার মরদেহ শহীদ মিনারে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার তা প্রতিহত করার ডাকও দেয়া হয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তার পরিবার তা করতে চেয়েছে।অবস্থা যদি এমনই হয়Ñ আমি বলবো তাহলে তো বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের মরদেহই তাদের স্বজনরা শহীদ মিনারে নিতে চাইবে। প্রশ্ন করি- কে এই পিয়াস করিম? কি করেছেন তিনি? আমেরিকা থেকে লেখাপড়া করে গেছেন। থেকেছেন বুর্জোয়া বেশে। আর কথা বলেছেন কখনো বামপন্থী কখনো ডান মৌলবাদীর মুখোশে। শিক্ষক আর টকশোর কথক ছাড়া আর কি পরিচয় ছিল তার? চাপিয়ে দেয়া মানসিকতা মানুষ গ্রহণ করে না। যেমনটি মালালার ব্যাপারে করেনি- তেমনটি পিয়াসের ব্যাপারেও।শেষ প্রশ্নটি করতে চাই এই বলে- পিয়াস করিম মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কৌশলে কথা বলে, শহীদ স্মৃতির বিরোধিতা করে, রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেও যদি শহীদ মিনারে যাবার ধৃষ্টতা দেখাতে পারেন, তাহলে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল অনুঘটক গোলাম আযম মারা গেলে তাকেও ‘ভাষাসৈনিক’ হিসেবে শহীদ মিনারে নেয়ার চেষ্টাও কেউ কেউ করবে। এটাও মেনে নেবে বাংলাদেশ? বিবেক জেগে ওঠার সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দানবশক্তিকে রুখতে মানবের তুমুল ঐক্য চাই আজ।------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥: ১৮/অক্টোবর/২০১৪ শনিবার প্রকাশিত
false
ij
None রামপ্রসাদ সেন: বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ট ভক্তিগীতির রচয়িতা। অত্যন্ত উদাসী মানুষ ছিলেন। কলকাতায় এক জমিদারের কাচারিতে মহুরির কাজ করতেন ... কখন যে ঘোরে পড়ে জমিদারির হিসাবের খাতায় লিখে ফেলতেন গান ... যে গান এমন কী বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মুগ্ধ করেছিল। একবার কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পথে নদীর পাড়ে রামপ্রাসাদের গান শুনে মুগ্ধ হন ... নবাব তারপর সাধক কবিকে নৌকায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আরও গান শোনেন ... যে গানের পরতে পরতে বৈরাগ্যের প্রবল হাতছানি... অন্তরে প্রবল বৈরাগ্য নিয়ে সংসারে বেঁচে থেকে রামপ্রসাদ অবিশ্যি গৃহত্যাগ করেননি ... মায়ের উদ্দেশে লেখা একটি গানে বলেছেন: ‘আমি কি দুঃখেরে ডরাই।’ ...রামপ্রসাদ সেন মূলত কবি। সব কবিই কি আর গান গাইতে পারেন। রামপ্রসাদ গানও গাইতে পারতেন। ছিলেন ধর্মনিষ্ট কালীসাধক, যে কারণে তাঁর সংগীত ও কাব্য প্রতিভা দেবী কালীর চরণে অর্পণ করেছিলেন। তবে তাঁর সব গানই যে কেবল দেবী কালীর চরণে সমর্পিত -তা কিন্তু নয়। কেননা, রামপ্রসাদের গানের বাণীতে রয়েছে মানবঅভিজ্ঞতাপ্রসূত চিরন্তন সত্যের প্রতি দিকনির্দেশ। রামপ্রসাদের সর্বপ্রেক্ষা নন্দিত গানটির প্রাথমিক চরণগুলি স্মরণ করি-মন রে কৃষিকাজ জান না এমন মানব জনম রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা। গানটি যেন বাঙালির কৃষিসমাজের প্রতিচ্ছবি । বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে কৃষিসমাজের সংযোগ নিবিড়। আজও আমরা বাঙালিরা বৈশাখের প্রথম দিবসে লাল রঙের মাটির বাসনে পান্তা ভাত খাই। রামপ্রসাদের গান সেই বাঙালির কৃষিসমাজের নান্দনিক প্রতিনিধি ...কিন্তু, রামপ্রসাদ সেন কোন্ সময়ের মানুষ? কবে বেঁচেছিলেন তিনি? রামপ্রসাদ সেন এর সময়কাল ১৭২০ থেকে ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দ। অর্থাৎ, অষ্টাদশ শতক। যে শতকে বাংলার সমাজে একই সঙ্গে ভাঙন ও পরিবর্তনের সুর বাজছিল। নবাব সিরাজউদ্দেীলা (১৭৩৩-১৭৫৭) ক্রমশ আটকে যাচ্ছেন ইংরেজ বেনিয়া ও স্থানীয় রাজাকারদের ষড়যন্ত্রের জালে। নদীয়ায় রাজত্ব করছেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। তাঁর শাসনকালেই বাংলায় ইংরেজ শাসন কায়েম হয় এবং মুসলিম রাজত্বের অবসান ঘটে। এমন এক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কুমারহট্ট গ্রামে ১৭২০ সালে রামপ্রসাদ সেন জন্মগ্রহন করেন। পিতার নাম রামরাম সেন। তিনি ভেষজ ঔষুধের ব্যবসা করতেন। রামরাম সেন এর কিছু কাব্য প্রতিভা ছিল বলে জানা যায়। যা হোক। রামপ্রসাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। ছেলেবেলায় অবশ্য পাঠশালায় পড়েছেন। এরপর পারিবারিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ব্যবসার প্রয়োজনে সংস্কৃত ভাষা শিখতে হয়েছিল। তবে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ ছিল না, আগ্রহ ছিল সংগীত ও কবিতার প্রতি। পিতা তখন ফারসি ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করেন। ফারসি ভাষার জ্ঞান তার গানেও পড়েছিল। যেমন ‘মন রে কৃষিকাজ জান না’ গানটির একটি চরণ-কালী নামে দেওরে বেড়া, ফসলে তছরুপ হবে না ।‘তছরুপ’ শব্দটি লক্ষণীয়। রামপ্রসাদের আরও অনেক গানে ফারসি শব্দের আধিক্য লক্ষ করা যায়। উনিশ শতকের লালনের অনেক গানেও আমরা সেরকম আরবি-ফারসির মিশেল লক্ষ করি। নজরুল যে মনোরম লক্ষণটিকে অপ্রতিরোধ্য ভাবে বহাল রেখেছেন কুড়ি শতকের মধ্য ভাগ অবধি। এ হল আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার নজীর। যা হোক। পিতার মৃত্যুর পর সংসারে আর্থিক অসচ্ছলতা ঘনিয়ে আসে। ১৮ বছরের কিশোরের কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাতে হয় কলকাতায় । আগেই একবার বলেছি- রামপ্রসাদ কলকাতায় জমিদারের কাচারিতের মুহুরির কাজ নেন। একদিন সেরেস্তায় দপ্তরের খাতায় জমিদার ‘আমায় দেও মা তহবিলদারী’ গানটি দেখতে পেলেন। এভাবে রামপ্রসাদের সংগীত প্রতিভার পরিচয় পেয়ে জমিদার মুগ্ধ হন এবং রামপ্রসাদকে মুহুরির কাজ থেকে অব্যাহতি দেন। শুধু তাই নয়, মাসিক ৩০ টাকা বৃত্তি মঞ্জুর করে রামপ্রসাদকে দেশে চলে যেতে বলেন। অস্টাদশ শতকের মাঝামাঝি মাসিক ৩০ টাকা কিন্তু কম টাকা নয়!যা হোক। রামপ্রসাদ কুমারহট্ট গ্রামে ফিরে আসেন। এবং সংগীত রচনায় নিমগ্ন হন। গান নিজেই লিখতেন নিজেই সুর করতেন। যে গান ২০০/২৫০ বছর পরও বাঙালির হৃদয়ে অম্লান। আজও বাংলাদেশের সন্দীপনের কন্ঠে শোনা যায় ‘মন রে কৃষিকাজ জান না’ ...এপাড় বাংলা-ওপাড় বাংলার বাঙালি গানের অসাধারন মমার্থ বুঝে মাথা দোলায়। কে বলবে এ গান রচনার পর ২০০ বছরের অধিক কাল কেটে গেছে। রামপ্রসাদী সুরের এ গান যেন চিরন্তন। রামপ্রসাদের বলা হয় রামপ্রসাদী সুর। যে রামপ্রসাদী সুর পরবর্তীকালের বাঙালির সুরকারদের প্রভাবিত করেছিল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ রামপ্রসাদী সুরে কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান সৃষ্টি করেছেন।আলোচনার এ পর্যায়ে রামপ্রসাদের একটি গান পাঠ করা যাক। মায়ের এম্নি বিচার বটে।যেজন দিবানিশি দুর্গা বলে, তার কপালে বিপদ ঘটে।।হুজুরেতে আরজি দিয়ে মা, দাঁড়িয়ে আছি করপুটে।কবে আদালতে শুনানি হবে মা, নিস্তার পাব এ সঙ্কটে।।সওয়াল-জবাব করব কি মা, বুদ্ধি নাইকো আমার ঘটে।ওমা ভরসা কেবল শিববাক্য ঐক্য বেদাগমে রটে।।প্রসাদ বলে শমন ভয়ে মা, ইচ্ছে হয় পালাই ছুটে।যেন অন্তিমকালে জয়দুর্গা ব’লে, প্রাণ ত্যজি জাহ্নবীর তটে।।বাংলা গানের একটি মূলভাব এ গানে রয়েছে। পরবর্তীকালে লালন লিখেছেন-অগতির না দিলে গতিঐ নামে রবে অখ্যাতি ...নাম শুনেছি পতিতপাবন ...রামপ্রসাদের গানে আমরা একজন মাকে পাই । কে তিনি? করুণাময় গোস্বামী তাঁর ‘বাংলা গানের বিবর্তন’ বইতে লিখেছেন,‘ রামপ্রসাদ শ্যামাসংগীত রচনা করে নতুন ধারার সৃষ্টি করেন।’ শ্যামাসংগীত কি? শ্যামাসংগীত হল দেবী কালী বা শ্যামা বা শক্তির উদ্দেশে রচিত এক ধরনের ভক্তিগীতি। এর অপর নাম শাক্তগীতি। রামপ্রসাদের গানে যে মায়ের কথা রয়েছে-তিনিই কালী বা শ্যামা বা শক্তি। খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকে বাংলায় বৈষ্ণবধর্মের পাশাপাশি শাক্তধর্মের উদ্ভব ঘটে এবং একে ঘিরেই শাক্তগীতি চর্চার একটি ক্ষীণ ধারার প্রচলন ঘটে। রামপ্রসাদ শাক্তগীতি চর্চার ক্ষেত্রে প্রাণসঞ্চার করেন। শ্যামাসংগীত রচনা করে ভক্তিগীতির চর্চার ক্ষেত্রে নতুন ধারার সৃষ্টি করেন। রামপ্রসাদের চেষ্টা ছিল শক্তি সাধনাকে নীরস শাস্ত্রাচার ও তান্ত্রিকতা থেকে মুক্ত করে একটি সহজ আবেদন পূর্ণ সাংগীতিক অভিব্যক্তি দান করা। যেমন, মন রে কৃষিকাজ জান না গানের শেষ দুটি চরণ এরকম-গুরু বপন করেছেন বীজ, ভক্তি করি তায় সেঁচ না ।তবে একা যদি না পারিস মন, রামপ্রসাদ কে ডেকে নে না ।।আগেই একবার বলেছি যে সে সময় নদীয়ার রাজা ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র রায়। তিনি রামপ্রসাদের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। রাজসভায় রামপ্রসাদকে যোগ দিতে আহবান জানান। বিষয়বিমূখ রামপ্রসাদ প্রত্যাখান করেন। (কতকিছু যে শেখার আছে এই সাধক কবির কাছ থেকে! কৃষ্ণচন্দ্র রায়-এর প্রস্তাব প্রত্যাখান করা সহজ কথা!) এর পর কৃষ্ণচন্দ্র রায় কি করলেন? রামপ্রসাদকে বেঁধে আনতে লাঠিয়াল পাঠিয়ে দিলেন? না। রামপ্রসাদকে ‘কবিরঞ্জন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁর ভরণ-পোষণের জন্য একশত বিঘা নিষ্কর জমি দান করলেন।বাংলার ইতিহাস এমনই বিস্ময়কর। তখন বলেছিলাম। একবার কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পথে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নদীর পাড়ে রামপ্রাসাদের গান শুনে মুগ্ধ হন। নৌকায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আরও গান শোনেন।সিরাজউদ্দৌলা কি বাংলা জানতেন? জানি না। তবে নবাব গান বাংলাতেই শুনেছিলেন। তখন বলেছিলাম। ... তবে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ ছিল না, আগ্রহ ছিল সংগীত ও কবিতার প্রতি। পিতা তখন ফারসি ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করেন। ধরে নিলাম নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও রামপ্রসাদ সেনের মধ্যে কথা হয়েছিল ফারসি ভাষায়। ... নবাব কিন্তু বাংলা গানই শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বাংলার ইতিহাস এমনই বিস্ময়কর।শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩) যে ভাববিপ্লব ঘটিয়েছিলেন-তাতে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ সমর্থন জুগিয়েছিলেন। আবদুল মমিন চৌধুরী লিখেছেন, ‘ (আলাউদ্দীন হোসেন শাহ) শ্রীচৈতন্য এর প্রতি তিনি খুবই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং তাঁকে তিনি (শ্রীচৈতন্য) ঈশ্বরের অবতার বলে মনে করতেন। শ্রীচৈতন্যের ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে হোসেন শাহ সার্বিক সুবিধা প্রদান করেছেন। (বাংলাপিডিয়া) বাংলার ইতিহাস এমনই বিস্ময়কর।আসুন আমরা বাংলার ইতিহাস-এর প্রতি আরও মনোযোগী হই। রামপ্রসাদের মৃত্যু সম্বন্ধে নানা কথা প্রচলিত রয়েছেন। একবার প্রতিমা বিসর্জনের সময় রামপ্রসাদ নদীর জলেঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আসল ঘটনা আমরা অনুমান করতে পারি। বিরহ সইতে না পেরে শ্রীচৈতন্যদেব নীলাচলে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন ...কিংবা মৃত্যু সম্বন্ধে কবিসুলভ কৌতূহল টেনে নিয়ে গেছে সলিল সমাধিতে ...তথ্য উৎস: ১ করুণাময় গোস্বামী রচিত ‘বাংলা গানের বিবর্তন’।২ খান মোঃ সাঈদ রচিত বাংলা পিডিয়ার একটি নিবন্ধ । উৎসর্গ: পরম সুহৃদ মেঘদূত। রামপ্রসাদের গানের লিঙ্ক
false
hm
একটি নবজাতক ফেসবুক বন্ধুত্বের অকালমৃত্যু গল্পটি কোনরকম চাপানবিরতি ছাড়াই সমাপ্ত। কষ্ট করে নিচে স্ক্রল করে গিয়ে দেখতে হবে না। ধন্যবাদ। ১. জেসমিন জোয়ারদার অফিস থেকে ফিরে এসে নানা ঘরোয়া কাজের পর এখন একটু ফেসবুক খোলেন। বিদেশ থেকে তার ভাইবোনেরা ঢোকে মাঝে মাঝে, প্রায়ই নিত্যনতুন ছবি বিনিময় হয়। আর নিশ্চিন্দিপুরব্লগের লোকজন তো আছেই। তারা ফেসবুকে বড় সক্রিয়, একজন লেখার লিঙ্ক দিলে আরেকজন ছবি আপলোড করে পাল্টাপাল্টি। একটা না একটা ঘটনা লেগেই আছে ফেসবুকে। জেসমিন জোয়ারদারও তাই তাদের খোঁজখবর রাখেন সেখানে। অবশ্য সবার খোঁজ রাখতে পারেন না, সবার ফেসবুক নাম তিনি জানেন না। ব্লগে যে পালোয়ান নিকে লিখছে, তার হয়তো "টিনু খান" টাইপ রোগাভোগা নাম। নিকবন্দী মানুষরা অনেকেই ফেসবুকে নিজ নামে আছে, তাদের সেই স্বনামে বড় অপরিচিত লাগে। তাই একদিন যখন তিনি দেখেন, একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে ছামছুল আরেফিনের কাছ থেকে, তখন তিনি তাতে সানন্দে সম্মতি দেন। শামসুল আরেফিন তো নিশ্চিন্দিপুরব্লগের মডারেটর। ভালোই হলো, ফেসবুকে ব্যাটাকে পেলে কোন সমস্যায় পড়লে ত্বরিত সমাধান পাওয়া যাবে। বন্ধুত্বের অনুরোধ রক্ষিত হতে না হতেই একটি নীলজামাপরা মূর্তি টোকা দেয় তাঁকে। জেসমিন মনোযোগ দিয়ে দেখেন। বিদঘুটে চেহারার এক লোক একটি নীল ফতুয়া পরে পরম পরিতৃপ্তিভরে উদাস চোখে তাকিয়ে আছে কোন এক দিকে। চেহারায় একটি হামবড়া ভাব। জেসমিনের মনটা একটু দমে যায়। নিশ্চিন্দিপুরব্লগে শামসুল আরেফিনকে তিনি আরেকটু বিনয়ী, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার কোন যুবক হিসেবে কল্পনা করেছিলেন। এখন তো দেখা যাচ্ছে আসলেই লোকজনের কানকথা সত্যি, এরা মহা ঘাড়ত্যাড়া আর বেয়াদব। চোখেমুখে একটা উগ্র মারকুটে ভাব স্পষ্ট। শামসুল আরেফিন তাকে মেসেজ পাঠায়। "কেমন আছেন?" জেসমিন টাইপ করেন, "ভালো। আপনি কেমন?" শামসুল আরেফিন বলে, "ভালো আছি। কী করছেন?" জেসমিন বলেন, "আর কী করমু বলেন? ভাবছিলাম অফিসের একটা কান্ড নিয়ে একটা পোস্ট করবো, কিন্তু নিশ্চিন্দিপুরে আজকে কী জানি হইছে একটা, লেখা পোস্ট করতে গেলেই একটা উল্টাপাল্টা নোটিশ আসে। একটু দেখেন না ঠিক করতে পারেন কি না?" শামসুল আরেফিন একটা দীর্ঘ বিরতি নেয়। তারপর বলে, "আপনি আমাকে এ টি এম শামসুল আরেফিনের সাথে গুলাইয়া ফালাইছেন। আমি এ টি এম নই, এ টি এম ছাড়া ছামছুল আরেফিন।" জেসমিন জোয়ারদার একটু থতমত খান। আসলেই তো। এই লোক শামসুল নয়, ছামছুল। পাশাপাশি তিনি গোপনে আনন্দিতও হন। যাক, এই ব্যাটা নিশ্চিন্দিপুরের পরোপকারী এ টি এম শামসুল আরেফিন নয়, কোন এক অজানা হতভাগা ছামছুল আরেফিন। জেসমিন জোয়ারদার টাইপ করেন, "আসলেই! আমারই ভুল। আপনাকে তো তাহলে চিনতে পারলাম না?" ছামছুল আরেফিন আবারও দীর্ঘ বিরতি নেয়। তারপর লেখে, "আমি ছামছুল আরেফিন। কবি, গল্পকার, সাংবাদিক। ২০০০ সালে প্যানাসনিক পুরস্কারপ্রাপ্ত গল্পগ্রন্থ ব্যক্তিগত অর্শরাত আমার লেখা। বর্তমানে আমি মতিচুরব্লগের বিভাগীয় সম্পাদক। আমি অ্যান্টিনিশ্চিন্দিপুর।" জেসমিন লেখাটা পড়ে আগামাথা কিছুই বুঝতে পারেন না। এই কবি-গল্পকার-সাংবাদিক মতিচুরব্লগের বিভাগীয় সম্পাদক তাকে কেন বন্ধু হিসেবে যোগ করতে চায়? দৈনিক মতিচুর তিনি নিয়মিতই পড়েন, কখনো কোন লেখায় ছামছুল আরেফিনের নাম চোখে পড়েনি। আর অ্যান্টিনিশ্চিন্দিপুর মানেটা কী? তিনি লেখেন, "আসলে আমি গল্প উপন্যাসের অত খোঁজ রাখি না তো, তাই চিনতে পারছি না আপনাকে।" এবার ছামছুল আরেফিন দ্রুত জবাব দেয়, "ইসলামাবাদব্লগ পড়েন?" জেসমিন ভুরু কুঁচকে লেখেন, "না। আমি দিলখোলা আর নিশ্চিন্দিপুর পড়ি শুধু।" ছামছুল আরেফিন লেখে, "ও। আপনি তো দেখি খুব একটা পড়াশোনা করেন না!" রাগে জেসমিনের গা জ্বলে যায়। আরে হাবড়া, তোর নাম শুনি নাই দেইখা আমি এখন পড়াশোনা করি না? তুই কী লেখছস যে তোর নাম শুনতে হইব? তিনি লেখেন, "জ্বি। ঠিকই ধরছেন।" ছামছুল লেখে, "আমি আপনাকে আমার কিছু লেখার লিঙ্ক পাঠাচ্ছি। এ সবই গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন নামীদামী পত্রিকা আর ইসলামাবাদব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। পড়ুন, অনেক কিছু জানতে বুঝতে পারবেন। নিশ্চিন্দিপুর নিয়ে পড়ে থাকলে কিছুই শিখা হবে না।" জেসমিন লেখেন, "এখন তো কিছু কাজে বসবো ভাই। এত কিছু পড়ার সময় নাই।" ছামছুল লেখে, "পজেটিভ থিঙ্কিঙের চেষ্টা করবেন সবসময়। আমি শিগগীরই মতিচুরব্লগ ঢেলে সাজাচ্ছি। কামলাদের ভাইভা চলছে এখন। আপনাকে লিখার আমন্ত্রণ জানাই। নিশ্চিন্দিপুরের ফ্যাসিস্ট পরিবেশ আপনাকে নষ্ট করবে। আপনার প্রয়োজন খোলা ঘাসে ছাওয়া ময়দান।" জেসমিন লেখেন, "আচ্ছা আসি তাহলে আজ।" ছামছুল লেখে, "জাযাকুল্লাহ খায়ের। আমার বন্ধুরা আমাকে ছামো ডাকে, আপনিও তাই ডাকতে পারেন। ডাকবেন আশা করি।" জেসমিন হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন ছামছুল আরেফিনের সাথে আলাপ শেষ হবার পর। আর মনে মনে ভাবেন, আম্মার কথাই ঠিক, আমি চেহারা দেইখাই চিনতে পারি কোন ব্যাটা ভালো আর কোন ব্যাটা মন্দ। এই ব্যাটা যে লোক সুবিধার না, দেইখাই বুঝছি। ২. দুইদিন পর ছুটির দিনে ছেলেকে প্রাইভেট টিচারের জিম্মায় দিয়ে এসে জেসমিন আবার ফেসবুক খোলেন। মাঝের দু'টা দিন অফিসের কাজের চাপে এত ব্যস্ত গেছে যে খোঁজখবর রাখা হয়নি। পাঁচ মিনিটের মাথায় উঁকি দেয় সেই মনহুঁস সুরত। ছামছুল আরেফিন, তার নীল ফতুয়াসহ। মেসেজ আসে, "জেসমিন, কেমন আছো?" জেসমিন জোয়ারদারের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। তিনি অপরিচিত মানুষের মুখে তুমি শুনতে পছন্দ করেন না। টিভিতে দেখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা হরদম বয়সে বড় আর ছোটদের বেশ তুমি ডেকে আপন করে কথা কয়, কিন্তু এটা তো আর পশ্চিমবঙ্গ নয়। তিনি লেখেন, "ছামো ভাই, আপনার সাথে পরিচয় হলো সপ্তাও ঘুরে নাই। এর মধ্যে আপনে আমার এমন কোন বড় দোস্তো হইয়া যান নাই যে তুমিতামারি শুরু কইরা দিবেন।" ছামছুল আরেফিন চুপ হয়ে যায়। তারপর প্রায় মিনিট পাঁচেক নীরবতার পর এক দীর্ঘ মেসেজ পান জেসমিন। ছামছুল সেখানে লিখেছে, "তুমি জানো আমি কে? কী আমার পরিচয়? তুমি জানো আমি মতিচুরব্লগের বিভাগীয় সম্পাদক? তুমি জানো এপার বাংলায় আর কে কে প্যানাসনিক সাহিত্য পুরস্কার পাইছে? তুমি জানো ওপার বাংলায় ভাবেশ রায় আমারে লইয়া মছলন্দবাজার পত্রিকায় কী লিখছেন? তুমি জানো বাংলা সাহিত্যে শূন্য দশকের গল্পকারদের মধ্যে আমার অবস্থান কোথায়? তুমি জানো ডালিম আল দীন তার পরিচিতজনদের কাছে বাংলা ছোটগল্পের ভবিষ্যৎ মশালবাহক হিসাবে কার নাম উচ্চারণ করতেন? তুমি জানো ... ?" জেসমিন জোয়ারদার আর পড়েন না। তিনি কিছুই জানেন না, জানার ইচ্ছাও নাই। এই ছাগলটার হাত থেকে নিষ্কৃতি চান, এটুকুই শুধু জানেন তিনি। নিশ্চিন্দিপুরে শেখা একটা বুলি আলগোছে ঝেড়ে দেয়ার লোভ আর সামলাতে পারলেন না তিনি। "ছামো ভাই, খুব খিয়াল কইরা। আপনারে ব্লক করলাম। এই দোস্তি দিয়া কাম নাই আমার। গেলাম। খুদাপেজ।" মাউসের শেষ খোঁচায় ছামছুল আরেফিনকে ব্লক করতে করতে তৃপ্তির সাথে জেসমিন জোয়ারদার ভাবতে লাগলেন, কিছু কিছু বন্ধুত্বের গোড়া সময় থাকতে থাকতেই কাটা জরুরি। তা না হলে হুদাই ঝামেলা বাড়ে। জীবিত বা মৃত কোন চরিত্রের সাথে গল্পের চরিত্রদের কোন সম্পর্ক নাই। কোন মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই কাকতাল, আর পাঠকের কল্পনাপ্রবণ মনের পরিচয়মাত্র। [সমাপ্ত]
false
ij
চট্টগ্রাম শব্দের উৎপত্তি চট্টগ্রামের পুরনো নাম ছিল হরিকেল। আর সেই হরিকেল রাজ্যের পুবে ছিল যে রাজ্যটি সেই রাজ্যের নাম ছিল আরাকান । এই আরাকান রাজ্যেরই প্রাচীন নাম ছিল “রাখাইনপিয়ে”। হ্যাঁ, আপনারা যে রাখাইন শব্দটির সঙ্গে কমবেশি পরিচিত সেই শব্দের উৎপত্তির মূলে ওই রাখাইনপিয়ে। আর আপনারা যে রাখাইন সম্প্রদায়ের নাম জানেন তাদের পূর্ব পুরুষের নিবাস ছিল ওই রাখাইনপিয়ে রাজ্যে। তো, এবার বলি ৯৩০ খ্রিস্টাব্দ কী ঘটল। সমগ্র ইতিহাসজুড়েই তো দেখি, কথায় কথায় যুদ্ধ বাধে। তেমনি কী কারণে রাখাইনপিয়ে রাজ্যের আরাকানী সৈন্যরা হরিকেল রাজ্য-মানে বর্তমান চট্টগ্রাম আক্রমন করে বসল । তখন আরাকানের রাজা ছিলেন সু-ল-তইং সান-দ-ইয়া। যুদ্ধের নেতৃত্ব তিনিই দিয়েছিলেন সম্ভবত। সময়টা দশম শতাব্দী। তখন তো তেমনি হত। রাজারা স্বয়ং হাতির পিঠে চড়ে যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছে যেতেন। তো আরাকানের রাজা সু-ল-তইং সান-দ-ইয়া হঠাৎই যুদ্ধ বন্ধ করার ঘোষনা দিলেন। সবাই তো অবাক। কেন? হয়তো অযাথা রক্তপাত রাজা সু-ল-তইং সান-দ-ইয়ার ভালো লাগেনি। সম্ভবত তিনি ছিলেন শান্তিবাদী। রাজা সু-ল-তইং সান-দ-ইয়া বললেন, সেট ত গোইং। সেট ত গোইং? কী এর মানে? আরাকানী ভাষায় সেট ত গোইং শব্দগুচ্ছের মানে, যুদ্ধ করা অনুচিত। কারও কারও ধারনা এই কল্যানকর আরাকানী বাক্যটি থেকেই কালে কালে চট্টগ্রাম শব্দটির উৎপত্তি। ভাবলে কেমন লাগে। বাংলাদেশ এমনিতেই কল্যানকর শান্তিবাদী দেশ। চট্টগ্রামে তার গুরুত্বপূর্ন সমুদ্রবন্দর রয়েছে। প্রতিদিন কতশত জাহাজ ভিড়ছে সেখানে; দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখছে। সেই চট্টগ্রাম শব্দের পিছনে এমন কল্যানকর সদিচ্ছা! ভাবলে কেমন যেন লাগে। অবশ্য একটি বৌদ্ধসূত্রমতে, চট্টগ্রাম শব্দের উৎপত্তি চৈত্যগ্রাম থেকে । হয়তো এককালে চট্টগ্রামে চৈত্যগ্রাম নামে কোনও বৌদ্ধবিহার ছিল, আর সে বিহারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল গ্রাম-লোকালয়-জনপদ। হতে পারে। তেমন সম্ভাবনা আমি একেবারেই উড়িয়ে দেব না। তবে আমারদের ভাবতে ভালো লাগে যে এক শান্তিবাদী আরকানী রাজার সদিচ্ছাই ছিল চট্টগ্রাম শব্দটির উদ্ভবের পিছনে। এবং আমাদের দেশে যে রাখাইন সম্প্রদায় রয়েছে তাদের কাছে যাওয়ার পর আমরা যেন একবার হলেও রাখাইনদের পূর্বপুরুষ সেই মহৎ হৃদয়ের রাখাইনরাজের কথা ভাবি। আর আমরা যেন রামুতে রাজা সু-ল-তইং সান-দ-ইয়া-এর একটি ভাস্কর্য গড়ে তুলি। আর, কোনও এক ভাদ্রের ঝকঝকে দিনে সে ভাস্কর্যটি যেন উদ্বোধন করে কোনও এক রাখাইন শিশু । সে সময় যেন ওখানে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষে উপস্থিত থাকে। কেননা, রাজা সু-ল-তইং সান-দ-ইয়া ছিলেন দ্বিতীয় অশোক। মৌর্য সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অহিংস বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছিলেন। এমন ভাবতে উৎসাহিত হই-রাখাইন রাজা সু-ল-তইং সান-দ-ইয়া কি যুদ্ধবিরোধী কোনও শিলালিপি স্থাপন করেছিলেন? হয়তো। তা হলে সেটি কোথায়? হয়তো সেই শিলালিপিটি আজও পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘন কোনও বাঁশঝাড়ে ঢেকে আছে। সম্ভবত রামুর গহীন জঙ্গলে। বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের সেই শিলালিপিটি আজ যে খুঁজে বার করতেই হবে। আর আশ্চর্য এই-আমরা কত কত নাম জানি-কত কত সাবষ্ট্যান্ডাড রাজনীতিবিদের নাম জানি-কেবল যুদ্ধবিরোধী ওই মহৎ হৃদয়ের রাখাইন রাজার নামটিই জানি না! তথ্যসূত্র (১) বাংলাপিডিয়া। (২) বছর কয়েক আগে অদিতি ফাল্গুনী রাখাইনদের নিয়ে একটা উপন্যাস লিখেছিলেন কোনও এক ঈদসংখ্যায়। সেখানেও ওই আরাকানী রাজার কথা রয়েছে। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৪
false
rg
২০১৬ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন গানের কবি বব ডিলান!!! মার্কিন সাহিত্য ইতিহাসে নতুন কাব্যিক মূর্চ্ছনা সৃষ্টির জন‌্য এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন রক-ফোক সংগীতের কিংবদন্তি মার্কিন সংগীতশিল্পী ও প্রথাবিরোধী গীতিকার বব ডিলান। ৭৫ বছর বয়সী এই শিল্পীর প্রকৃত নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন, তখন সুইডিশ নোবেল কমিটি রবীন্দ্রনাথের গীতি-কবিতায় প্রকৃতির মধুর সুর মূর্চ্ছনায় আত্মায় শান্তি বর্ষন করে বলে বর্ণনা করেছিলেন। ঠিক ১০৩ বছর পর এবার আবার গীতি-কবিতার জন্য সাহিত্যে নোবেল পেলেন বিশ্বের অন্যতম ইনফ্লুয়েনসিয়াল মিউজিশিয়ান ও গীতিকার বব ডিলান। ১৯৯৩ সালে মার্কিন ঔপন্যাসিক টনি মরিসনের পর এবার কোনো মার্কিনী সাহিত্যের এই ঐহিত্যবাহী পুরস্কার পেলেন। বব ডিলান সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের ১১৩তম নোবেল বিজয়ী। ২০১৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক বিল উইম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ 'Knock, Knock, Knockin’ on Nobel’s Door' নামে একটি কলাম লিখেছিলেন। যেখানে বিল উইম্যান গোটা বিশ্বের খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের সঙ্গে বব ডিলানের গানকে তুলনা করে বব ডিলানকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছিলেন। বৃহস্পতিবার স্টকহোমে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ১৮ সদস্যের সুইডিশ একাডেমি'র স্থায়ী সেক্রেটারি ও লিটারারি স্কলার সারা দানিউস বলেছেন, 'Mr. Dylan “a great poet in the English-speaking tradition” and compared him to Homer and Sappho, whose work was delivered orally. ৫৪ বছর ধরে বব ডিলান তাঁর এই অভিযাত্রায় প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করে চলছেন আর সৃষ্টি করছেন নতুন পরিচয়। বব ডিলানের ‘দ্য টাইমস দে আর আ-চেইঞ্জিং’ গানটিকে সারা দানিউস তুলনা করেছেন গ্রিক কবি হোমার আর শ‌্যাফোর সঙ্গে। সারা দানিউস বলেন, আমরা যদি পাঁচ হাজার বছর পিছনে ফিরে যাই, আমরা হোমার আর শ‌্যাফোকে পাব। তাঁদের গীতিকবিতা লেখাই হতো গেয়ে শোনানোর জন‌্য। বব ডিলান সেই একই কাজ করছেন। ১৯৬১ সালে নিউ ইয়র্কের গ্রিনউইচ ভিলেজের ক্লাব ও ক্যাফেগুলোকে অ্যাকুইস্টিক গিটার হাতে প্রথম দেখা যায় বব ডিলানকে। বব ডিলান গুরু মানতেন প্রতিবাদী গানের শিল্পী উডি গুথরিকে। বব ডিলান ড্যাজলিং লিরিকের জন্য খুব কম সময়ের মধ্যেই মার্কিন সংগীত জগতে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেন। ১৯৬৩ সালে বব ডিলানের লেখা “Blowin’ in the Wind” গানটি অ্যালবামে যোগ করে পিটার, পল ও মেরি যে ফোক গ্রুপ তৈরি করেছিলেন, মার্কিন বিলবোর্ড পপ চার্টে এই গানটি তখন রাতারাতি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল।১৯৬৫ সালে নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভালে বব ডিলান একটি ইলেকট্রিক রক ব্যান্ডে 'পপ অ্যান্ড রোল' টাইপের ভিন্ন ধারার ফোক গান গেয়ে সবার নজর কারেন। কিন্তু ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কের উডস্টকে নিজের বাড়ির কাছে এক মটর সাইকেল দুর্ঘটনার পর বব ডিলান পাবলিক প্লেসে গান গাওয়া অনেকটা বন্ধ করে দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য নিউ ইয়র্কে বিটলস শিল্পী জর্জ হ্যারিসন, ভারতের বিখ্যাত সেতার শিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্করের অনুরোধে আয়োজন করেছিলেন 'দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'। 'দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'-এর অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য জর্জ হ্যারিসন বব ডিলানকে ফোন করলে বিনা বাক্য ব্যয়ে বব ডিলান সাড়া দিয়েছিলেন। 'দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' অনুষ্ঠানে বব ডিলান মোট ছয়টি গান গেয়েছিলেন। যার মধ্যে "Blowin' In The Wind" গানটি সবচেয়ে জনপ্রিয়। বব ডিলানের এই গানটি বাংলা করে গেয়েছিলেন শিল্পী কবীর সুমন। সেই বাংলা গানের কথাগুলো এমন- কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়, কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার দায়, কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়, প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।। কত বছর পাহাড় বাঁচে ভেঙে যাবার আগে, কত বছর মানুষ বাঁচে পায়ে শিকল পড়ে; ক’বার তুমি অন্ধ সেজে থাকার অনুরাগে, বলবে তুমি দেখছিলে না তেমন ভালো করে। কত হাজার বারের পর আকাশ দেখা যাবে, কতটা কান পাতলে তবে কান্না শোনা যাবে; কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে, বড্ড বেশী মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে। ' ওই অনুষ্ঠানে ‘ব্লোইং ইন দ্য উইন্ড’ ছাড়াও ডিলান 'এ হার্ড রেইন’স আ-গনা ফল’, ‘জাস্ট লাইক আ ওমেন’সহ মোট ছয়টি গান গেয়েছিলেন। বব ডিলানের 'মি. টাম্বুরিন ম্যান' গানটিরও বাংলা অনুবাদ করে গেয়েছিলেন কবীর সুমন ‘ও গানওয়ালা’ নামে। বব ডিলানের গাওয়া গানগুলো বাংলায় জনপ্রিয় করেছেন শিল্পী কবীর সুমন ও অঞ্জন দত্ত। ১৯৪১ সালের ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার ডুলুথে সেন্ট মেরি'স হাপাতালে রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান জন্মগ্রহন করেন। বব ডিলান বড় হন ডুলুথ ও হিবিং এলাকায় লেক সুপিরিয়রের পার্শ্ববর্তী মেসাবি আয়রন রেঞ্জ এলাকায়। বব ডিলানের জীবনী লেখকদের গবেষণায় দেখা যায় যে, তাঁর দাদা-দাদী জিগম্যান ও আনা জিমারম্যান ইউক্রেনের ওডেসা থেকে অভিবাসিত হয়েছিলেন ১৯০৫ সালের দিকে, তারপর তাঁরা আমেরিকায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর মায়ের দাদা-দাদী বেঞ্জামিন ও লিব্বা এডেলস্টেইন ছিলেন লিথুয়ানীয় ইহুদী। ১৯০২ সালের দিকে তাঁরা আমেরিকায় আসেন। ২০০৪ সালে প্রকাশিত বব ডিলানের আত্মজীবনীমূলক বই 'ক্রনিকলস'-এর প্রথম খণ্ডে বব ডিলান লিখেছেন, 'আমার পিতামহীর কুমারী নাম ছিল কিরগিজ। তাঁদের পরিবারের উত্থান হয়েছিল ইস্তানবুলে। আমার পিতামহী বেড়ে উঠেছিলেন তুরস্কের কাগিজমান এলাকায়। আর আমার পিতামহ তুরস্কের কৃষ্ণ সাগর উপকূলবর্তী ট্রাবজন এলাকা থেকে এসেছিলেন।' বব ডিলানের পারিবারিক ইহুদী নাম হলো শাবতাই জিসেল বেন আভ্রাহাম। বব ডিলানের বাবা আব্রাম জিমারম্যান ও মা বিয়াট্রিস "বেটি" স্টোন ছিলেন ডুলুথ এলাকার ছোট্ট ইহুদি কমিউনিটির সদস্য। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত রবার্ট ডুলুথে বসবাস করেছেন। তাঁর বাবা পোলিওতে আক্রান্ত হলে তাঁদের পরিবার তখন হিবিং এলাকায় চলে যায়। যেখানে কাটে রবার্টের শৈশবের বাকী দিনগুলো। রবার্টের ছোটবেলার বন্ধু অ্যাব্রামের ভাষায়, 'ডিলান ছিলেন রূঢ় ও কঠোর স্বভাবের। কিন্তু ওর মা ছিলেন ভারী কোমল ও বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের। ছেলে ছিল মায়ের ঠিক উল্টো স্বভাবের।' যৌবনের অনেকটা সময় বাড়িতে কেবল রেডিও শুনেই কাটিয়েছেন বব ডিলান। শ্রেভেপোর্ট রেডিওতে তখন যে সকল ব্লুজ ও কান্ট্রি সঙ প্রচারিত হতো সেগুলো শুনেই সময় কাটতো বব ডিলানের। ধীরে ধীরে বব ডিলান 'রক অ্যান্ড রোল' সংগীতের দিকে ঝুকে পড়েন। হাই স্কুলে পড়ার সময় বব ডিলান কয়েকটি ব্যান্ড দল গঠন করেছিলেন। তাঁর গঠিত প্রথম ব্যান্ডদল 'দ্য শ্যাডো ব্লাস্টার্স' অবশ্য খুব বেশিদিন টেকেনি। তবে পরবর্তী সময়ে গঠিত ব্যান্ডদল 'দ্য গোল্ডেন কর্ডস' বেশ কিছুদিন টিকেছিল। স্কুলের মেধা বিকাশ প্রতিযোগিতায় বব ডিলানের ব্যান্ডদল 'ড্যানি অ্যান্ড দ্য জুনিয়র্স', 'রক অ্যান্ড রোল ইজ হেয়ার টু স্টে' গানটি এত জোরে গেয়েছিল যে স্কুলের অধ্যক্ষ তখন রেগে মেগে মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বব ডিলান ১৯৫৯ সালে স্কুলের ইয়ার বুকের ক্যাপশান দেন 'লিটল রিচার্ডে' যোগ দেয়া। একই বছর তিনি 'এলস্টন গান' ছদ্মনামে শিল্পী ববি ভি-এর সাথে পিয়ানো বাজিয়ে ও হাততালি দিয়ে দু'বার ডেট করেন। ১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রবার্ট জিমারম্যান ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটাতে ভর্তি হন এবং মিনিয়াপোলিসে বসবাস শুরু করেন। এ সময় থেকে ধীরে ধীরে তিনি 'রক অ্যান্ড রোলে' তাঁর প্রথম দিককার উৎসাহ থেকে আমেরিকান ফোক সংগীতে বিশেষ করে অ্যাকুইস্টিক গিটার ব্যবহৃত এমন সব সংগীতের দিকে আকৃষ্ট হন। ১৯৮৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বব ডিলানে বলেন, 'প্রথম দিকে ওদেতার ফোক সংগীত আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছিল। আমি তখন একটি দোকানে তাঁর রেকর্ড শুনতাম। এরপর একসময় আমি আমার ইলেকট্রিক গিটার ও অ্যাম্পলিফায়ার ছেড়ে দিয়ে অ্যাকুইস্টিক গিটারে গান করতে শুরু করি। ওটা ছিল একটি ফ্লাট-টপ গিবসন। এ সময় আমি মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির মার্ভিন কার্লিন্সের কাছে গিটার প্রশিক্ষণ নিতাম। এরপর 'টেন ও' ক্লক স্কলার' নামের একটি কফি হাউজে গান গাইতে শুরু করলাম। ওখানে কিছুদিন আমি স্থানীয় ডিঙ্কিটাউন ফোক সংগীতে সক্রিয় ছিলাম। বন্ধুদের থেকে তখন অনেক ফোক সংগীতের অ্যালবাম ধার করতাম।' ডিঙ্কিটাউনে থাকাকালীন সময়ে রবার্ট জিমারম্যান নিজেকে বব ডিলন নামে পরিচয় দিতে শুরু করেন। নিজের আত্মজীবনীমূলক বই 'ক্রনিকলস'-এ বব ডিলান লিখেছেন, 'বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমি নিজেকে রবার্ট অ্যালেন নামে ডাকতে শুরু করলাম। এটা শুনলে মনে হতো কোনো স্কটিশ রাজার নাম। আর এই নামটি আমি খুব পছন্দ করতাম। তবে ডাউনবিট ম্যাগাজিন পড়ে জানতে পারলাম ডেভিড অ্যালিন নামে বাস্তবে একজন স্যাক্সোফোন বাদকের অস্তিত্ব রয়েছে। একই সময় ডিলান থমাসের কবিতার সাথেও আমার পরিচয় ঘটে। তখন আমি অনুভব করছিলাম রবার্ট অ্যালিন ও রবার্ট ডিলান থেকে আমাকে অন্তত একজনকে বেছে নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ডিলানকেই আমার পছন্দ হলো। ওই সময়ে অনেক জনপ্রিয় শিল্পীর নামেই বব ছিল। তাই ডিলানের আগে আমি বব যোগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর তখন থেকেই আমি রবার্ট জিমারম্যান ছেড়ে বব ডিলান হয়ে গেলাম।' ১৯৬০ সালে কলেজের ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা না দিয়ে বব ডিলান নিউ ইয়র্ক ঘুরতে বের হলেন। ১৯৬১ সালে তিনি দেখতে যান তাঁর সংগীতের আইডল উডি গুথরিকে। উডি গুথরি তখন হান্টিংটন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিউ ইয়র্কের গ্রেস্টোন পার্ক সাইকিয়াট্রিক হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। ওই হাসপাতালে তখন বব ডিলানের সঙ্গে পরিচয় হয় আরেক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী রামব্লিন জ্যাক ইলিয়টের। ডিলান নিজের প্রথম অ্যালবাম 'ক্রনিকলস' ভলিউম ওয়ান ইলিয়টকে ট্রিবিউট করেন। বব ডিলানকে বলা হয় Rebel King of the Rock। মার্কিন কিংবদন্তি এই গায়ক-গীতিকার, মিউজিশিয়ান, চিত্রকর ও কবি বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে জীবনমুখি গানের ধারায় অন্যতম পথিকৃৎ। ডিলানের গানের কথায় মূলত রাজনীতি, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্যিক প্রভাব সুস্পষ্ট। এগুলো তখনকার জনপ্রিয় ধারার অনেকটাই কথিত নিয়ম বহির্ভূত ছিল এবং এ ধারার বিপরীত হিসেবে ধরা হতো বব ডিলানের গানকে। বব ডিলান নিজস্ব একটি সংগীত ধারা প্রসারের পাশাপাশি আমেরিকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সংগীতের প্রতি আকর্ষন অনুভব করেছেন। ফোক বা রক মিউজিকের কথা বললে সেখানে অবশ্যই বব ডিলানের নামটাও আসবে। আমেরিকান লোকগীতি ও কান্ট্রি সঙ, ব্লুজ থেকে রক অ্যান্ড রোল, ইংলিশ, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, এমনকি জ্যাজ, ব্রডওয়ে, হার্ড রক এবং গসপেল সঙও গেয়েছেন বব ডিলান। বব ডিলান প্রকৃতপক্ষে একজন কবি, যিনি নিজের কবিতাকে গিটারের আশ্রয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।বব ডিলানের দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম “The Freewheelin' Bob Dylan” (২৭ মে, ১৯৬৩) এর প্রথম ট্রাক “ব্লোয়িং ইন দ্যা উইন্ড। "Blowin' in the Wind" এবং "The Times They Are A-Changin" গান দুইটিকে নাগরিক অধিকার, মানবতাবাদীতা এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের প্রশংসাগীতি বা জাতীয় সংগীত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 'ব্লোয়িং ইন দ্যা উইন্ড' মানুষের মাঝে প্রতিবাদী ভাবটাকে প্রশ্নের দ্বারা আবদ্ধ করে আরো জাগিয়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে। এই গানটি সারা বিশ্বের শান্তি, যুদ্ধ এবং মানুষের স্বাধীনতার দাবির কথা বলে। এই গানের প্রত্যেক প্যারার শেষে পুনরাবৃত্ত পঙক্তি বা সুর "The answer, my friend, is blowin' in the wind" নিতান্ত রহস্যময় ও দ্ব্যর্থবোধক। যার মর্মার্থ সমাধান সুস্পষ্ট এবং সংশয়াতীতও হতে পারে অথবা বাতাসের মত অস্পর্শনীয়ও হতে পারে। গানটির আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক অর্থ হয়তো আরো সুবিশাল। তাঁর 'লাইক এ রোলিং স্টোন' বিদ্রোহের সঙ্গীত হিসাবে গোটা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিত। বব ডিলান তাঁর কবিতার ভেতরে রহস্যময় সুরের সংগীত আর সংগীতের ভেতরে এক অনন্য চিন্তার সাহিত্য ভুবন গড়ে তুলেছেন। যেখানে রাজনীতি, মানবতা, ঐতিহ্য, সারল্য, তারুণ্য, দক্ষতা, প্রেম, প্রযুক্তি, উন্নাসিকতা, প্রথাগত প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, সৌভ্রাতৃত্ব, তুখোড়পনা, বাউন্ডেলে একসাথে ধরা দেয়। মেহনতী মানুষের দাবিকে বব ডিলান সংগীতে প্রকাশ করেছেন। সারা বিশ্বের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সাধারণ ভিকটিমদের কথা বব ডিলানের গানে গানে যতটা সুরের মূর্চ্ছনা ছড়িয়েছে যে, সেখানে তিনি এক নতুন সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। আর সেই দ্রোহ ও প্রতিবাদী গানের জগতে বব ডিলান যেন একক কোনো সম্রাট। মাত্র ১৯ বছর বয়সে একটি কফি হাউজে যাঁর সংগীত ক্যারিয়ারের শুরু, সেই বালকের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজগুলো সৃষ্টি হয়েছে ১৯৬০ সালের পরে। ধীরে ধীরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যার অনানুষ্ঠানিক ঐতিহাসিক দলিল হয়ে ওঠে বব ডিলানের গানগুলো। "Blowin' in the Wind" গানটি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বব ডিলান বলেছিলেন- ''There ain’t too much I can say about this song except that the answer is blowing in the wind. It ain’t in no book or movie or TV show or discussion group. Man, it’s in the wind—and it’s blowing in the wind. Too many of these hip people are telling me where the answer is but oh I won’t believe that. I still say it’s in the wind and just like a restless piece of paper it’s got to come down some ...But the only trouble is that no one picks up the answer when it comes down so not too many people get to see and know ...and then it flies away I still say that some of the biggest criminals are those that turn their heads away when they see wrong and know it’s wrong. I’m only 21 years old and I know that there’s been too many ...You people over 21, you’re older and smarter".বব ডিলান সাধারণত গিটার, কিবোর্ড এবং হারমোনিকা বাজিয়ে গান করেন। ১৯৮০-এর দশক থেকে কিছু সংগীতজ্ঞকে সাথে নিয়ে তিনি নিয়মিত বিভিন্ন সংগীত ভ্রমণ করে থাকেন। যা তাঁর ভাষায় "নেভার এন্ডিং ট্যুর" নামে পরিচিত। তিনি অনেক বিখ্যাত শিল্পীর সাথেও একত্রে কাজ করেছেন। যেমন- দ্য ব্যান্ড, টম পেটি, জোয়ান বায়েজ, জর্জ হ্যারিসন, দ্য গ্রেটফুল ডেড, জনি ক্যাশ, উইলি নেলসন, পল সিমন, এরিক ক্ল্যাপটন, প্যাটি স্মিথ, ইউ২, দ্য রোলিং স্টোনস, জনি মিচেল, জ্যাক হোয়াইট, মার্লে হ্যাগার্ড, নেইল ইয়ং, ভ্যান মরিসন, রিঙ্গো স্টার এবং স্টিভি নিকস। যদিও তাঁর ক্যারিয়ারে গায়ক হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত এবং সফল হয়েছেন কিন্তু গীতিকার হিসেবেই তাঁর অবদানকে গোটা বিশ্বে বেশি মূল্য দেওয়া হয়।বব ডিলান এ পর্যন্ত গ্রামি এ্যাডওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব, অ্যাকাডেমি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার জিতেছেন। এছাড়া রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম, ন্যাশভিল সংরাইটার্স হল অব ফেম এবং সংরাইটার্স হল অব ফেম-এ তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বব ডিলানের নাম রয়েছে। ২০০৪ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ গায়ক তালিকায় 'দ্য বিটলসের' পর বব ডিলান দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছেন।১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে বব ডিলানকে ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং 'কমান্ডার দেস আর্টস এট দেস লেটার্স' উপাধিতে ভুষিত করেন। ২০০০ সালে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব মিউজিক তাঁকে পোলার মিউজিক পুরস্কার প্রদান করে। ২০০৭ সালে বব ডিলানকে সংস্কৃতিতে 'প্রিন্স অব অস্ট্রিয়াস' পুরস্কার প্রদান করা হয়। এর আগে তিনি কয়েকবার নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেও এ বছর (২০১৬) তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর বব ডিলান বিয়ে করেন সারা লাউন্ডসকে। ডিলান ও সারা'র চার সন্তান। জেসে বায়রন ডিলান (জন্ম ৬ জানুয়ারি ১৯৬৬), আন্না লিও (জন্ম ১১ জুলাই ১৯৬৭), স্যামুয়েল আইজাক আব্রাম (জন্ম ৩০ জুলাই ১৯৬৮) ও জ্যাকব ডিলান (জন্ম ৯ ডিসেম্বর ১৯৬৯)। এছাড়া ডিলানের অ্যাডাবটেড সন্তান মারিয়া লাউন্ডস ( সারা'র আগের পরিবারের সন্তান, জন্ম ২১ অক্টোবর ১৯৬১) পরে যিনি মারিয়া ডিলান নামে পরিচিতি পান। বব ও সারা'র মধ্যে ১৯৭৭ সালের ২৯ জুন ডিভোর্স হয়। ১৯৮৮ সালে মারিয়া ডিলান বিয়ে করেন বিখ্যাত সংগীত শিল্পী পিটার হিমেলম্যানকে। 'দ্য ওয়ালপ্লাওয়ার্স' ব্যান্ডদলের লিড সিঙ্গার বব ডিলানের ছেলে জ্যাকব ডিলান। বড় ছেলে জেসে ডিলান একজন ফিল্ম ডিরেক্টর ও সফল বিজনেসম্যান। ১৯৮৬ সালের ৪ জুন বব ডিলান তাঁর ব্যাকআপ সিঙ্গার ক্যারোল ডেনিসকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তান ক্যারোলিন ডেনিসের জন্ম তাঁদের বিয়ের আগে ১৯৮৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। ১৯৯২ সালে ক্যারোল ও ডিলানের মধ্যে ডিভোর্স হয়। তাঁদের এই সন্তানের কথা অবশ্য ২০০১ সাল পর্যন্ত সিকরেট ছিল। ২০০১ সালে বব ডিলানের আত্মজীবনীমূলক বই 'ডাউন দ্য হাই্ওয়ে: দ্য লাইফ অব বব ডিলান' প্রকাশিত হলে সেখানে ক্যারোলিন ডেনিসের বিষয়টি জানা যায়। বব ডিলানের বিখ্যাত অ্যালবামগুলো হলো- বব ডিলান (১৯৬২), ব্রিংগিং ইট অল ব্যাক হোম (১৯৬৫), হাইওয়ে ৬১ রিভিজিটেড (১৯৬৫), ব্লন্ডে অন ব্লন্ডে (১৯৬৬), ব্ল্যাড অন দ্য ট্রাকস (১৯৭৫), ও মার্সি (১৯৮৯), টাইম আউট অব মাইন্ড (১৯৯৭), লাভ অ্যান্ড থেফট (২০০১), মডার্ন টাইমস (২০০৬)। চলচ্চিত্র নির্মাতা ডিএ পেনেবাকের বব ডিলানের উপর নির্মাণ করেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র 'ডোন্ট লুক ব্যাক (১৯৬৭)। বব ডিলানের লেখা বইগুলো হলো- তারানতুলা (১৯৭১), রাইটিংস অ্যান্ড ড্রয়িংস (১৯৭৩), ডাউন দ্য হাই্ওয়ে: দ্য লাইফ অব বব ডিলান (২০০১), ক্রনিকেলস (২০০৪) এবং নেভার এন্ডিং টুর। এছাড়া বব ডিলানের উপর যে সব ফিল্ম নির্মিত হয়েছে সেগুলো হলো- Dont Look Back / D. A. Pennebaker, 1967; Eat the Document / D. A. Pennebaker, Howard Alk, Bob Dylan, 1971; Pat Garrett & Billy The Kid / Sam Peckinpah, 1973; Renaldo & Clara / Bob Dylan, 1978; The Last Waltz / Martin Scorsese, 1978; Hard to Handle / Gillian Armstrong, 1986; Hearts of Fire / Richard Marquand, 1987; Masked and Anonymous / Larry Charles ; written by Bob Dylan and Larry Charles, 2003; No Direction Home / Martin Scorsese, 2005; I’m Not There / Todd Haynes, 2007; The Other Side of the Mirror : Bob Dylan Live at the Newport Folk Festival, 1963-1965. / Murray Lerner, 2007. মার্কিন কিংবদন্তি শিল্পী ও গীতিকার বব ডিলানকে এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে সুইডিশ নোবেল কমিটি বিতর্ক এড়িয়ে নিজেরাই বরং সমৃদ্ধ হয়েছে। এ বছর সম্ভাব্য নোবেল পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় যে ৫৬ জন ছিল, সেখানে বব ডিলান ছিলেন না। নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, 'বব ডিলান একজন আইকন। সমকালীন সংগীতের ওপর তাঁর প্রভাব অসাধারণ। আর তিনি হয়ে উঠেছেন বিকল্প সাহিত‌্যের ধারাবাহিক উৎস।' আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে বব ডিলানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে নোবেল পুরস্কার সনদ ও পুরস্কারের ৮০ লাখ ক্রোনার (৯ লাখ মার্কিন ডলার)। জয়তু বব ডিলান। জয়তু মেহনতী মানুষের গান। ...................................১৪ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২
false
ij
একটি আরবি গল্পের বাংলা অনুবাদ গল্পের নাম:রাজপথের ডাকাত দল মূল: মারুন ‘আব্বোউদ। বাংলা অনুবাদ: সুমন সোহরাব লেখক পরিচিতি: লেবাননের নামকরা সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, মারুন আব্বোউদ (১৮৮৬-১৯৬২) মূলত একজন গুরুত্বপূর্ন সাহিত্য সমালোচক ছিলেন, সততার একনিষ্ঠ পুজরী এই লেখক সবদিক দিয়েই ছিলেন প্রথা বিরোধী। তার মতো গুনবান লোক সচারাচর যেখানে সেখানে চোখে পড়ে না। আধুনিকতার দিকে অগ্রযাত্রায় ও আরবি কবিতার আধুনিকায়নে তার কাজ নেপথ্য চালিকা শক্তির ভূমিকা পালন করেছে। কবিতা সর্ম্পকে অনেক পুরাতন ধ্যান-ধারনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে তিনি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি কবিতা ও এর সমালোচক দের জন্য নতুন সব পথ উন্মুক্ত করেন। এত সবের পরও তাকে সমালোচকের চেয়ে আরো বেশী কিছু বলে ভাবা হয়। সাহিত্যের অনেক নতুন নতুন ধারার প্রবর্তন করেন তিনি। তার ছোট গল্প গুলোতে চারপাশের জীবন ও জীবনানুভুতির বিশদ বর্ননা ঠাই পেয়েছে। এসব গল্পের মাঝে জীবনের অনিবার্য উপাদান সমুহ ও পৃথীবির প্রতি তার একধরনের সিমাহীন ভালোবাসার অনুপুঙ্খ চিত্রায়নের সন্ধান মেলে। তার কল্প কাহিনি গুলোর মধ্যে ফেরিস আগা, একাউন্টস অব দ্যা ভিলেজ এবং দ্যা প্রিন্স উইদ হুইট-কালার স্কিন উল্লেখযোগ্য। আব্বোউদ এমন একটা সময়ে কলম ধরেছিলেন যখন আরব বিশ্ব থেকে অন্ধকার সরে গিয়ে মুক্ত আবহ বিরাজ করতে শুরু করে, আজকের আরব বিশ্বের মত তখনো সেখানে এক ধরনের বেপরোয়া বোধ কতৃত্ব করছিলো। সমকালিন আরো অনেক লেখকের মতো তার কল্পকাহিনি গুলোতে, অস্থির সেই সময়ের প্রতিফলন সহ, নিজস্ব রসবোধ ও আনন্দ অভিজ্ঞতা ঠাই পেয়েছে। রাজপথের ডাকাত দল বাউ খাত্তার ধুলো মলিন অবস্থায় বড়ি ফিরলো।(আবু শব্দ থেকে উৎপন্ন বাউ এর মানে বাবা) রাইফেলটা ঝুলিয়ে রেখে তার পাশেই দেয়ালের ফোকরের মধ্যে পিস্তলাখানি সেধিয়ে দিয়ে, এক এক করে নিজের সার্টের পকেটে লুকিয়ে থাকা জিনিস পত্র খালাস করে নিলো। এর পর বেল্ট খুলে পাশের একটা পাথরের তাকে ভাজ করে রাখলো। নিত্যদিনকার মতো গতানুগতিক কাজ গুলো সেরে আগুনের কাছে এসে পায়ের উপর পা দিয়ে আরাম করে বসলো। তার বউ বারসিট্টা একটা জগ ও গামলা এনে কাছে রাখলো, প্রায় সাথে সাথে সে মুখ আর টাকের চারপাসের চুল ধুতে শুরু করলো। কিন্তু তারপরও মুখে একটুও বিরতি নেই লোটির, কথা সে বলেই যেতে লাগলো। কিছুক্ষন পর পর সে বউকে একটা প্রশ্ন করার জন্য থামছিলো, এসময় মুখে লেপ্টে থাকা সাবানের দিকেও সে লক্ষ্য রাখছিলো না। তাকানের সময় চোখে জ্বালা ধরলে পর চোখ দুটো বন্ধ করে আবার খুলতে লাগলো, যাতে কথা না থামিয়ে একটানা বলে যেতে পারে। লম্বা সময় ধরে সে বক্ বক্ করে গেলো। বারসিট্টা যখন অমনোযোগী হয়ে পানি ঢালছিলো, সে তখন ভয়ে কেঁপে বিষন্ন হয়ে উঠছিলো, তার পর পরই তার আজকের পাপের কথা মনে পড়লো, এত সব ভেবে মনে মনে শুকনো মুখে সে প্রার্থনা করতে লাগলো তারপরও একটানা কথা সে বলেই যেতে লাগলো। এর পর চুল আচড়াতে আচড়াতে এটার পর একটা প্রশ্ন করে যেতে লাগলো, তবে এর একটারো উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলো না বা আশা কছিলো না। এবার গোঁফে চিরুনি চালিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ঘুরিয়ে আকৃতি দেবার সময় সত্যি সত্যি থামতে হলো তাকে, নিজেকে নায়ক সুলভ উপস্থাপনের জন্য একে বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলা দরকার ছিলো। কাজটি করতে অনেক বেশী নিরবতার প্রয়োজন। খানিকবাদে ঘোরানো একটি নিচু টেবিল ঘিরে পুরো পরিবারটা একত্রিত হলো, এখানে বসেই তারা খাবার খায়। উরুর উপর একটা করে রুটি নিয়ে বসে ছিলো সবাই, রুটি গুলো দেখতে বড় ন্যাপকিনের মতো ছিলো। খাবার সময় তারা নিজের হাতগুলোকে কাঁটা, এবং রুটির টুকরো গুলোকে চামচের মতো করে ব্যবহার করছিলো। খাবার সময় বাউ খাত্তার তাদের কথা বলার অনুমতি দেয়নি। কাজেই কাউকে প্রশ্ন করলে কেবল উত্তর দিতে হতো; অন্যথা আশা করা হতো সবাই চুপচাপ নিজের খবারের বাসনটার দিকে মনোযোগ দিবে। ঠিক যত ক্ষন পর্যন্ত পাতে হাত দিলে ডুমুর বা ঝোলা গুড় ঠেকতো ততক্ষন তাদের এভাবেই কাটাতে হতো; পরিবারটি সচরাচর এ খাবার গুলো খেতো। প্রতিদিন তাদের ভাগ্যে রুটি জুটিয়ে দেবার জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানাবার পর, সবার উদ্দেশ্যে বাউ খাত্তার তার উপদেশ বিতরন করে ও অন্যান্য আদেশ, নির্দেশ জারি করে। প্রথমে স্ত্রী, তারপর দুই শিশুর দিনের যাবতীয় ভুলচুক শুধরে দেয় সে। শেষমেশ তার কমান্ডার-ইন-চিফের মত দুই ছেলের দিকে নজর দেন, খাত্তার ও শালহোব কে কোন একটি কাজ করার উপায় বাতলে দেন, দিনের বেলায় করা প্রতিটি ভুলের জন্য এসময় তাদের সমালোচনা করা হয়। “তুমি পেছন দিক থেকে ওর কাছে ঘেষে ছিলে” খাত্তরকে সে বলে। “সামনে থেকে এটা তোমার করা দরকার ছিলো। ওকে সব কিছু তোমার হাতে তুলে দিতে বলে অপেক্ষা করতে পারতে। অবাক করে দেয়ার চেয়ে এটা অনেক ভালো হতো; এ অবস্থায় লোকটাকে আঘাত করাও সহজ হতো, অন্তত ওকে ধমকাতে পারতে, আর মরার মত ভয় পাইয়ে দিতে পারতে। আর তুমি শালহোব,” ওর দিকে ঝুকে,“আমি যে ভাবে বলেছি সে ভাবে যদি তুমি চার রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে থাকতে, শুয়োরটা তাহলে তোমাকে বোকা বানিয়ে কিছুতেই পালাতে পারতো না- তাতে করে তুমি ওর টাকা গুলোর মালিক বনে যেতে। থাক ওনিয়ে ভেবো না, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আবার সুজোগ আসবে। সে সময় মনযোগী থেকো।” “আজকে আমাদের ভাগ্য তেমন একটা ভলো যায়নি” স্ত্রীর প্রতি সে মন্তব্য ছুড়লো। “আমাদের ওপর প্রচন্ড রাগ করা উচিত ছিলো তোমার।” মৃদু একটা বসমানা হাসি হাসলো ইম্ম খাত্তার (উম বা উম্মে’র আঞ্চলিক উচ্চারন হলো ইম্ম যার মানে মা)। আরো কয়েকটা বিষয়ে সংক্ষেপে আলাপ করার পর বাউ খাত্তার লম্বা একটা হাই তুলে বললো, “চলো এবার হাটু গেরে প্রার্থনা করি।” সে পিলারের মত শক্ত হয়ে দড়িলো। তারপর ছেলে দের একজনের বসা নিয়ম মত হয়নি বলে জানালো। তাকে থামতে বলে, তার পর বাবার সাথে বড় ছেলের নেতৃত্বে প্রর্থনা শুরু হলো: মা মেরির উদ্দেশ্যে প্রর্থনা শুরুর পর বাউ খাত্তার বার কতক গলা চড়িয়ে মেরি ও পূর্ব পুরুষের নাম ধরে ডাকলো, এর পর সে পরের দিন ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করে দেবার জন্য কুমরি মাতার প্রতি আকুল আবেদন করলো। সব শেষে সোজা বিছানায় পিঠ বিছিয়ে শুয়ে পড়লো। “বারসিট্টা” চাদর মুড়ি দিয়ে সে বউকে ডাকলো, “কালকের নিয়ে যাবার জন্য আমাদের খাবার তৈরী করে রাখ। ভুলে যেওনা কাল শুক্রবার, তাই কিছু আলু সেদ্ধ করে দিও।” তারও কিছু ক্ষন পর বালিস থেকে মাথা তুলে, “ আমার পাজামাটা ছিড়ে গেছে,” সে বললো, “ওটার একটা গতি করতো দেখি, পারবে? আর আমার ওয়েস্ট কোটটারও যাচ্ছে তাই অবস্থা,” এটুকু বলেই সে আবার বিড় বিড় করে মনে মনে কিছু একটা আওড়াতে শুরু করে দিলো, “শুয়োরের বাচ্চাটাকে কালকে ধরবোই।” কাঁথার নিচে কিছু ক্ষন থাকার পর, কামানো কুঁচকানো মাথাটা আবার সে বের করলো আর ছেলেদের বলতে লাগলো, ছুরি গুলো ধার দিয়ে রাখো, সাথে বন্দুক গুলো পরিষ্কার করো; আজকের ঘটনা যেন আবার না ঘটে তার জন্য বারুদের পুটলিটাও খানিকটা গরম করে নাও।” একথা শোনার পর কৌতুহলি হয়ে ইম্ম খাত্তার হাতে ইশারা করে জানতে চাইলো, ছেলে পাল্টা ইশারায় বাবা ঘুমিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে এক ফাঁকে জানালো, “আজকে আমরা দু’টি লোককে পাকড়াও করে ছিলাম। এক জনকে সাফাই করতে পারলেও অন্য জন পালিয়ে যায়। লোকটির সাহস ছিলো বলতে হয়, বয়সেও ছিলো তরুন।” ছেলেটি এবার একটা আংটি বের করে দেখালো, সেটার গায়ে “ইয়াজুল” নামের কারো প্রতি উৎসর্গ লেখা ছিলো। “লোকটার প্রেমিকার জন্য উপহার ছিলো এটা,” এই বলে সে বলতে শুরু করলো, কিভাবে তোমরা এ কাজ করতে পারলে?” খাত্তার ঈঙ্গিতে বাবার দিকে দেখালো। আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেনো, উনাকে বলো,” তার পর সে বলতে লাগলো, “আমি যদি কোন রকম প্রতিবাদ করতাম অথবা লোকটিকে ছেড়ে দিতে বোলতাম, তাহলে সে আমার উপর ভয়ানক ক্ষেপে যেতো। ‘শয়তান,’ সে বলতো, ‘তুই সব সময় কিছু একটা ছুতা খুজে বের করিস! ওদের চোদ্দগুষ্টির তোয়াক্কা না করে, যার যা আছে কেড়ে নে, যা!’ ” এর পর পরই সবাই চুপ হয়ে গেলো, কেবল বাউ খাত্তার থেকে থেকে নাক ডাকছিলো। ঘুমের ঘোরে সে কার সাথে যেন কথা বলছিলো, লোকটাকে হুমকি ধামকি দিয়ে সেচ্ছায় আতœসমর্পনের জন্য ডাকছিলো, তারপর ছেলে কে তল্লাশি চালাবার জন্য চিৎকার হাকডাক দিছিলো, “খাত্তার!” সকালে স্বাভাবিকভাবে তার ঘুম ভাঙ্গলো, তার পর বিছানার কোনায় কিছু ক্ষন পায়ের উপর পা রেখে বসে থেকে মা মেররি প্রতি প্রর্থনা জানালো। কোন কোন সময় এই প্রর্থনা দীর্ঘ ক্ষন ধরে চলতে থাকতো, এসময় সে কুমারী মাতার প্রতি অজান্তে করা সব অন্যায় আচরনের জন্য ক্ষমা চাইতেন, ছিনিয়ে আনা সব ধন সম্পত্তির চারভাগের একভাগ তার হাতে তুলে দেবার প্রতিশ্রুতি দিতেন। বেশীরভাগ সময়, র্চাচের জন্য এটাকায় বাতি কেনার, বা বাতিদানি দেবার, অথবা বাতির পরিমান আরো বাড়িয়ে দেবার কথা বলে এধরনের প্রতিশ্র“তি দেয়া হতো, আর যদি সে কাজে কর্মে আরো বেশী উন্নতি করতে পারে তাহলে আস্ত একটা হাতে তৈরী ঘন্টা উপহার দেবার কথা ঘোষনা করে। ঘন্টাখানেক একটানা প্রর্থনার পর, প্রতি দিনের মত আবার তারা রাস্তার সেই জায়গাটায় গিয়ে দাড়ালো। খাবারের পুটলি কাঁধে নিয়ে ছোট ছেলে ওদের পেছন পেছন ছুটলো। হাতে একটি জপ মালা আনতে কখনই ভুল হয়না বাউ খাত্তারের। আবিরাম সে ঈশ্বরের নাম জপতে থাকে, কোন একটা পুঁথি ছেড়ে গেছে এমন সন্দেহ হলে সে ক্ষতি পুরন করবার জন্য আবার জপ মালার প্রথম থেকে শুরু করে সে। আপন প্রর্থনাকে সে পরিচ্ছন্ন, সরল ও শুদ্ধ রাখতে চায়, ভুল বা কোন অংশ বাদ পড়েযাওয়া থেকে মুক্ত রাখতে চায়। তা না হলে কি করে স্রষ্টা তার ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করে দিবে? চার্চের রাশি রাশি ঘন্টা ধ্বনি বেজে ওঠার পর পথেই সে প্রার্থনা সারে। বুকে ক্রুশ একে নিজের যাবতীয় ভুলের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করে মন ও আতœার শান্তি প্রার্থনা করে। সুর্য ওঠার পর প্রতিদিনের মত ঘন্টার ভয়ানক শব্দে সে আপন মুর্তী ধারন করে। লাল রঙের টুপিখানা কপালের পিছে ঠেলে দিয়ে, মেঝেতে হাটুগেরে বসে পুত্র ধনদের সঙ্গে চেঁচিয়ে প্রার্থনা শুরু করে দেয়। তার পর আবার আগের মত তারা স্ব স্ব স্থানে লুকিয়ে, নিজেদের জিবিকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বাউ খাত্তার মনে মনে অনুভব করতে পারে কুমারী মা তার ওপর সব সময়ই তুষ্ট ছিলেন আর তাই ভাগ্য তার সুপ্রশন্ন হবেই হবে। ধারে কাছে কেউ এক জন গাইছিলো, শুনতে পেল সে। বাউ খাত্তার ইশারায় দু’ছেলেকে অভিযানে নামার জন্য তৈরী হতে বললেন। লোকটা সুখি আর নিরাপদবোধ করছিলো বলে মনে হচ্ছিল, তার পর দেখা গেলো লোকটা হাতে একটা জপমালা নিয়ে জপ করতে করতে এগিয়ে আসছে আর হঠাৎ সতর্ক হয়ে উঠছে। লোকটির ভয় জড়ানো প্রতিক্রিয়ায় বিষ্মিত সে, প্রার্থনায় মগ্ন লোকটির সামনে সাহসের সাথে এগিয়ে এসে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে অভিবাদন করলো সে। বাউ খাত্তার চোখে মুখে রোষ প্রকাশ করে তার ফোঁলা লাল দুটি চোখে চোখ রাখলো। লোটি তার শ্যেন দৃষ্টি উপেক্ষা করে আপন মনে হাটতে লাগলো। বাউ খাত্তার নিজের জপ মালা দিয়ে ঈঙ্গিতে তাকে থামতে আদেশ করলো, কিন্তু এবারো সে আকার ঈঙ্গিত উপেক্ষা করে হাটতে লাগলো। এই পর্যায়ে বাউ খাত্তার চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো, দেখ, এমন কিছু করতে বাধ্য করো না যা আমাকে ক্ষেপিয়ে তুলবে! আমাকে আমার প্রার্থনা শেষ করতে দাও!” লোকটি বুঝতে পারছিলো সে বাউ খাত্তারের হাতে পড়েছে। “ এই সে” মনে মনে সে ভাছিলো। লোকটিকে দাড় করিয়ে রেখে বাউ খাত্তার প্রর্থনায় মগ্ন হলো। প্রার্থনা শেষে লোকটির কাছে এসে আঙ্গুল উচিয়ে সে বললো, তোমার কাছে যা কিচু আছে সব আমাদের হাতে তুলে দাও।” “বাউ খাত্তার, আমার কাছে কিছুই নেই।” “তোমার কাছে কিছুই নেই? আর কে বললো আমিই বাউ খাত্তার? “আমি নিজে থেকে তোমাকে চিনতে পেরেছি।” “অন্ধ ঈশ্বরই তোমাকে এ ক্ষমতা দিয়েছেন! যাই হোক, তোমার কাছে যা কিছু আছে আমার হাতে তুলে দাও।” “আমার কাছে কেবল দশ মাজিড আছে, বাচ্চাদের রুটির ব্যবস্থা করতে ওগুলো আমি ধার করেছি।” “ওগুলো আমার হাতে দাও, হয়তো ঈশ্বর আবার ওগুলো ফিরিয়ে দেবেন।” “কুমারী মাতা মেরির দোহাই, ওগুলো আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না!” বাউ খাত্তার মাথা ঝাঁকিয়ে আবারো ওগুলো তার হাতে তুলে দেবার জন্য ইশারা করলো। অনেক অনুনয়, বিনয়, যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও কান্নাকাটির পর, কুমারী মাতা মেরির খাতিরে বাউ খাত্তার মুদ্রা গুলোর ভাগদিতে রাজি হয়। লোকটি অর্ধেক মুদ্রা বাঁচাতে পেরে বিড় বিড় করে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজ গন্তব্যের দিকে পা চালাতে থাকে। মুদ্রা গুলো হাতে নিয়ে বাউ খাত্তার ক্রস কাটলো, তারপর সেগুলো শার্টের ভেতর গলিয়ে দিল। “আজকের এ শার্টটা কত সৌভাগ্য বয়ে এনেছে!” এক জন ধার্মিকের সুরে সে বললো। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে সে তার প্রিয় কুমারি মেরির পানে অনুনয়ের সুরে বললো, কেবল তেমার কারনে লোকটাকে ক্ষমা করে দিলাম,” এর পর সে আবার বললো, “এবার আমাদের সেই ক্ষতি পুরন করে দাও।” কিছু লোক এক পাল খচ্চর নিয়ে এদিকটায় আসছিলো, এবার সে তাদের শব্দ শুনতে পেলো; তারা দ্রব্য মূল্য, ভালো মৌসুম সহ আরো অনেক বিষয়ে আলাপ করছিলো। “আমাদের ভাগ্য এবার হাতের কাছে এসে ধরা দিচ্ছে,” ফিস ফিস করে বললো বাউ খাত্তার, “ও দিক থেকে এক দল লোক এগিয়ে আসছে!” খাত্তার তার রাইফেল তাক করলো আর শালহোব তার কুড়ালি প্রস্তত রাখলো, সে এমন করে এটি তাক করে দাড়ালো যেন শিকার তার একদম সামনে দাড়িয়ে। তিন জন লোক তাদের খচ্চরের আগে আগে পথ দেখিয়ে এগিয়ে আসছিলো। বাউ খাত্তার এবার প্রচন্ড এক চিৎকার জুড়লো, নদীর জলে প্রতি ধ্বনিত হয়ে সেই আওয়াজ বহুগুন বেড়ে গেলো, “ঠিক আছে....., ভদ্রলোকেরা, এর সব গুলো এক্ষুনি আমাদের হাতে বুঝিয়ে দাও।” “ তা না হলে!” তিন জনের মধ্যে থাকা উদ্ধত এক তরুন তীর্যকভাবে এর জবাব দিলো আর তাদের মা তুলে গাল দিলো। লোকটাকে ভয় দেখাতে বাউ খাত্তার এবার একটা গুলি ছুড়লো, জবাবে পাল্টা গুলি ছুড়লো লোকটা, কিন্তু চুড়ান্ত গুলিটা বাউ খাত্তারের রাইফেল থেকেই বের হলো। তরুন লোকটা মাটিতে ছিটকে পড়লো আর তার বন্ধুরা আত্মসমর্পন করলো। তাদের কাছে থাকা সব কিছুই কেড়ে নেয়া হলো, এমন কি তাদের কাপড় চোপড় সহ খাবারের পুটলি পর্যন্ত বাদ যায়নি। সুভ এই দিনটাতে সে কি কি আয় করলো, এক জায়গায় বসে তার একটা হিসেব করছিলো বাউ খাত্তার। এর মধ্যে ছিলো পয়ত্রিশ স্বর্ন মুদ্রা, কিছু রিয়াল এবং ধাতব মুদ্রায় ভরা একটা টাকার থলে, সেটা এত ভারী যে তুলতে গিয়ে বাউ খাত্তার আর্তনাদ করে উঠেছিলো। ছিনিয়ে নেয়া অন্যান্য জিনিসো খুঁটিয়ে দেখছিলো সে-ওগুলোর মধ্যে ছিলো ব্রোঞ্জের একটা বাঁকানো হাতল ওয়ালা কুড়াল, বড় একটা ছোরা, ইস্পাতের ভারী একটা চাকু আর একটা রাইফেল। তার ঈশ্বর আজ তাকে যা দিয়েছে তার জন্য সে নুয়ে মাটিতে চুমু খেলো। “অকৃতজ্ঞ মাটিতে চুমু খাও!” সে তার ছেলেদের বলে উঠলো। তার পর হেসে উঠলো, এক সাথে এত টাকা আর অস্র। একে তো সৌভাগ্যই বলে।” লুটের মালের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে কুমারি মাতা মেরির সাথে মজা করতে শুরু করে দিলো। “ ভদ্রমহিলা তোমাকে ধন্যবাদ, স্রষ্টা তোমাকে আরো দীর্ঘ জীবন দান করুক! আজকে তুমি বাউ খাত্তার কে উজার করে দিয়েছো। আমি তোমাকে এমন ভালো একটা ঘন্টা বানিয়ে দেব যার মতো কখনই তৈরী হয়নি! ছেলেরা কাধের থলে খুলে খাবার বের করো!” নদীর মাঝ বরাবর তিন জনে একটা পাথরের উপর বসে এত বড় বিজয়ের পর বিষ্ময়ে খাবার খাচ্ছিলো। ছোট ছেলেটি ছিনিয়ে পাওয়া পিঠ থলে থেকে এক টুকরো পনির বের করলো, এতে বাউ খাত্তার তাকে একটা চড় বসিয়ে দিলো। “অভদ্র ছোট লোক, কিছুটা হলেও সম্মান দেখাতে শেখ!” সে বললো, “কত বড় সাহস তোমার শুক্রবারে চর্বি খাচ্ছ? কেবল বিশ্বাসে ঘারতির কারনেই লোকটার কি অবস্থা হলো তাকি দেখতে পাওনি, গাঁধা!” সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৮:৩২
false
rn
ফোটোগ্রাফী- ৩০ - একজন ভালো ফটোগ্রাফার হিসাব করেন ইঞ্জিনিয়ারের কলম দিয়ে, চিন্তা করেন দার্শনিকের মন দিয়ে এবং দেখেন একজন কবির চোখ দিয়ে। - ভালো ক্যামেরা সেটিই, যার ওপর একজন ভালো ফটোগ্রাফার আস্থা রাখেন। - প্রথমে শিখে নিন ফুল কাকে বলে। তারপর বুঝুন আপনার সামনে যা আছে সেটি কোন ফুল এবং তার পর ফটো তুলুন। একটি ভালো দৃশ্যের জন্য ফটোগ্রাফাররা ছুটে যান বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকেন মনের মতো একটি দৃশ্যের; যা এক পলকেই অনেক মানুষকে আকর্ষণ করবে। দীর্ঘ ৬ বছর চেষ্টার পর মনের মতো একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন ফটোগ্রাফার অ্যাল্যান ম্যাকফেডেন । মাছরাঙার মাছ শিকারের একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন ফটোগ্রাফার অ্যাল্যান। ৭ লাখ ২০ হাজার বার ক্যামেরায় ক্লিক করে- মনের মতো একটি ছবি ধারণ করতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬ বছর। লক্ষ্য ঠিক থাকলে সাফল্য অর্জন অসম্ভব নয়। পানি থেকে মাছ নেওয়ার সময় মাছরাঙার একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করতে সময় দিতে হয়েছে ৪ হাজার ২০০ ঘণ্টা। নেটে সার্চ দিয়ে এই ফটোগ্রাফারদের ছবি দেখুন খুব মন দিয়ে- নবুয়্যোশি আরাকি, রঘু রাই, স্টীভ, ডেবিট লাজার রবার্ট ফ্রাঙ্ক, ল্যারি ক্লার্ক এবং উইলিয়াম ক্লেইন আরো অনেকই আছে । প্রয়োজনে ISO বাড়িয়ে ছবি তুলুন। আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি auto-ISO আপনি কাজে লাগাতে পারেন। Auto-ISO আপনার বিরাট বন্ধু হতে পারে। কিন্তু, বন্ধু থেকে কাজ বাগাতে হয় কিভাবে, জানেন তো। বন্ধুকে সময় দিন, বন্ধুকে জানুন। যে ছবি ক্যামেরাতেই দেখে বুঝতে পারছেন, বাজে (অস্পষ্ট, মূল-বিষয় কাটা পড়েছে, ঠিকমত এক্সপোজ হয়নি ইত্যাদি) হয়েছে, সেটা ক্যামেরাতেই মুছে ফেলেন। পিসিতে নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। একজন ভাল শিক্ষক অথবা গাইড পওয়া এত সহজ নয়। ভরসা বই। বাংলায় এ বিষয়ে বেশি বই নেই। ইংরেজিতে অনেক আছে অবশ্য। কিন্তু পাচ্ছেন কোথায়? পেলেও, হাজার হাজার বই এর ভীড়ে আপনি জানছেন কিভাবে আপনি সত্যিই কিছু শিখতে পারবেন সেই বই থেকে? সব বইই ভাল নয়, ভাল বই খুজে নিতে হয়। এইযে পৃথিবীকে একটু অন্যরকম ভাবে দেখা – সেটা কি মানুষ জন্ম থেকে নিয়ে আসে? না, আসে না। এই ব্যপারটি অনেকখানি নির্ভর করে শৈশবে আপনি কি রকম পরিবেশে বড় হয়েছেন তার উপর। আমরা জানি যে অনেক সঙ্গীত শিল্পীর সন্তানরাও ভাল শিল্পী হন, অনেক ফটোগ্রাফারের সন্তানেরা ফটোগ্রাফীকে আঁকড়ে ধরেন। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই শিল্পীসত্ত্বা ঘুমন্ত আছে – কে আছে যে গান শোনে না? সিনেমা/নাটক দেখে না? মূল বিষয়টি হলো আগ্রহের যায়গাটিতে লেগে থাকা। প্যাশনটা বেশি জরুরী। প্রচুর বই পড়ুন – বিশেষ করে উপন্যাস। বইয়ের শব্দের গাঁথুনির অন্যতম উপাদান হলো ‘ডিটেইলস’। খেয়াল করলে দেখবেন একজন লেখক কোন ছো্ট বিষযের বর্ণনা দেয়ার সময়ও অনেক পারিপ্বার্শিক ডিটেইলস তুলে নিয়ে আসেন। যখন তিনি একটা সকালের বর্ণনা দেন তখন চায়ের কাপের ধোঁয়া, পাতায় প্রথম রোদের খেলা, দূর্বাঘাসের উপর শিশির বিন্দুর ঝকমকানি – এরকম সব ডিটেইলস এর বর্ণনা দেন। উদাহরণ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর 'শেষের কবিতা’ হতে কিছু লাইন তুলে দিলাম:“আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা, ডান দিকে জঙ্গলে ঢাকা খাদ। এ রাস্তার শেষ লক্ষ্য অমিতর বাসা। সেখানে যাত্রী-সম্ভাবনা নেই, তাই সে আওয়াজ না করে অসতর্কভাবে গাড়ি হাঁকিয়ে চলেছে। ঠিক সেই সময়টা ভাবছিল, আধুনিক কালে দূরবর্তিনী প্রেয়সীর জন্যে মোটর-দূতটাই প্রশস্ত-- তার মধ্যে "ধূমজ্যোতিঃসলিলমরুতাং সন্নিপাতঃ" বেশ ঠিক পরিমাণেই আছে-- আর, চালকের হাতে একখানি চিঠি দিলে কিছুই অস্পষ্ট থাকে না। ও ঠিক করে নিলে আগামী বৎসরে আষাঢ়ের প্রথম দিনেই মেঘদূতবর্ণিত রাস্তা দিয়েই মোটরে করে যাত্রা করবে, হয়তো বা অদৃষ্ট ওর পথ চেয়ে "দেহলীদত্তপুষ্পা" যে পথিকবধূকে এতকাল বসিয়ে রেখেছে সেই অবন্তিকা হোক বা মালবিকাই হোক, বা হিমালয়ের কোনো দেবদারুবনচারিণীই হোক, ওকে হয়তো কোনো-একটা অভাবনীয় উপলক্ষে দেখা দিতেও পারে। এমন সময়ে হঠাৎ একটা বাঁকের মুখে এসেই দেখলে আর-একটা গাড়ি উপরে উঠে আসছে। পাশ কাটাবার জায়গা নেই। ব্রেক কষতে কষতে গিয়ে পড়ল তার উপরে-- পরস্পর আঘাত লাগল, কিন্তু অপঘাত ঘটল না। অন্য গাড়িটা খানিকটা গড়িয়ে পাহাড়ের গায়ে আটকে থেমে গেল।একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। সদ্য-মৃত্যু-আশঙ্কার কালো পটখানা তার পিছনে, তারই উপরে সে যেন ফুটে উঠল একটি বিদ্যুৎরেখায় আঁকা সুস্পষ্ট ছবি-- চারি দিকের সমস্ত হতে স্বতন্ত্র। মন্দরপর্বতের নাড়া-খাওয়া ফেনিয়ে-ওঠা সমুদ্র থেকে এইমাত্র উঠে এলেন লক্ষ্মী, সমস্ত আন্দোলনের উপরে-- মহাসাগরের বুক তখনো ফুলে ফুলে কেঁপে উঠছে। দুর্লভ অবসরে অমিত তাকে দেখলে। ড্রয়িংরুমে এ মেয়ে অন্য পাঁচজনের মাঝখানে পরিপূর্ণ আত্মস্বরূপে দেখা দিত না। পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না। মেয়েটির পরনে সরু-পাড়-দেওয়া সাদা আলোয়ানের শাড়ি, সেই আলোয়ানেরই জ্যাকেট, পায়ে সাদা চামড়ার দিশি ছাঁদের জুতো। তনু দীর্ঘ দেহটি, বর্ণ চিকন শ্যাম, টানা চোখ ঘন পক্ষ্মচ্ছায়ায় নিবিড় স্নিগ্ধ, প্রশস্ত ললাট অবারিত করে পিছু হটিয়ে চুল আঁট করে বাঁধা, চিবুক ঘিরে সুকুমার মুখের ডৌলটি একটি অনতিপক্ক ফলের মতো রমণীয়। জ্যাকেটের হাত কব্‌জি পর্যন্ত, দু-হাতে দুটি সরু প্লেন বালা। ব্রোচের-বন্ধনহীন কাঁধের কাপড় মাথায় উঠেছে, কটকি কাজ-করা রুপোর কাঁটা দিয়ে খোঁপার সঙ্গে বদ্ধ।অমিত গাড়িতে টুপিটা খুলে রেখে তার সামনে চুপ করে এসে দাঁড়াল। যেন একটা পাওনা শাস্তির অপেক্ষায়। তাই দেখে মেয়েটির বুঝি দয়া হল, একটু কৌতুকও বোধ করলে। অমিত মৃদুস্বরে বললে, "অপরাধ করেছি।"মেয়েটি হেসে বললে, "অপরাধ নয়, ভুল। সেই ভুলের শুরু আমার থেকেই।"পড়ে দেখুন – কি পরিমাণ ডিটেইলস তিনি তুলে ধরেছেন! বই পড়লে পৃথিবীকে এইভাবে দেখার ক্ষমতা আপনারও তৈরী হবে। আর ফটোগ্রাফীতে ছোটখাট ডিটেইলস যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের ছবি তোলার একটা পূর্বশর্ত হচ্ছে মানুষের ‘বডি ল্যাংগুয়েজ’ বুঝতে শেখা – বিশেষ করে মুখের অভিব্যক্তি। ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তি ভিন্নভিন্ন মানসিক অবস্থাকে তুলে ধরে, সেই জিনিসগুলো বুঝতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
false
ij
প্রাচীন মিশরের প্রেমের কবিতা অনেকের চোখে প্রাচীন মিশর কেবলি মরুভূমি, নীল নদ, রুখু পাথর আর পিরামিডের দেশ। আসলে তা নয়। প্রাচীন মিশরে স্থাপত্যকীর্তি হিসেবে যেমন গড়ে উঠেছিল আকাশচুম্বি পিরামিড - তেমনি রচিত হয়েছিল সাহিত্য। তবে সাহিত্য, বিশেষ করে সেকুলার সাহিত্য, মিশরসংক্রান্ত আলোচনায় সাধারণত স্থান পায় না। এই কারণেই কি যে প্রাচীন মিশর কেবলি পরকালবাদী ধর্মীয় সাহিত্যের দেশ? অথচ, বাস্তবচিত্র সম্পূর্ন ভিন্ন। প্রাচীন মিশরেও রচিত হয়েছিল সেকুলার সাহিত্য। ১৫৫৪-১০৮৫ খ্রিস্টপূর্ব সময়ের তেমন সাহিত্য খুঁজে পাওয়া গেছে; মূলতঃ কবিতা-প্রেমের কবিতা। তবে আশ্চর্য এই যে -কবিটি একজন নারী-পুরুষ নন। তবে কবির নামটি জানা যায়নি। কবি একজন না বহুজন-সে সম্পর্কেও মিশরতাত্ত্বিকগন কোনও ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেননি আজও। প্রাচীন মিশরের কবিতায় অনিবার্যভাবেই সেকালের সমাজজীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে। যেমন, সে সময় মেয়েরা জাল দিয়ে পাখি ধরতে ঘরের বাইরে চলে যেত । একটি কবিতায় একটি মেয়ে (কবি) বলছে: বুনোহাঁসের তীক্ষ্ম ডাকে আমার শিকার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আমিও প্রেমের ফাঁদে বন্দি পাখিরা আমার জাল নিয়ে উড়ে যাচ্ছে। পাখি নিয়ে মা যখন ফিরে আসবে আর দেখবে যে আমি পাখি ধরতে পারিনি... আমি তখন কী বলব? আমি পাখি ধরতে পারিনি আমি তোমার জালে ধরা পড়ে গেছি। আরেকটি কবিতায় দেখতে পাই-মেয়ে কবি লিখেছে- যখন পাখিরা ওড়ে যেনবা চরাচরে সবুজ ঢেউ ভাসে। তখন আমি কিছুই দেখতে পাই না আমি যেনবা অন্ধ হয়ে যাই। যেন আমি ফাঁদে পড়েছি, আমাকে উি নিয়ে যাচ্ছে। দুটি হৃদয় পাশাপাশি আছে আমার জীবন তোমাতে বাধা পড়েছে তোমার সৌন্দর্য আমাকে টানছে। এরকম আরও অনেক কবিতা আছে। ‘বাগানের গান’ নামে একখানি কাব্যগ্রন্থ লেখা হয়েছিল প্রাচীন মিশরে প্যাপিরাসের পাতার ওপর। সে কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা এরকম: ডালিম বলছে, আমার পাতাগুলি তোমার দাঁতের মতন আমার ফল তোমার স্তনের মতন আমিই সবচে সুন্দর ফল সব ঋতুতে আছি যেমন ইষৎ মাতাল হয়ে প্রেমিক থাকে প্রেমিকার পাশে সবসময়। অন্যসব গাছের পাতা ঝরে যায় ডালিম পাতা বাদে। বাগানে আমার সৌন্দর্যই অত আমি ঋজু পাতা ঝরলেও নতুন পাতা জাগে। আর, ফলের মধ্যে আমিই প্রথম তুমি ল কর: আমি দ্বিতীয় না তারপরও আমাকে অবহেলা করলে তুমি আমায় আর খুঁজে পাবে না! ১৫৫৪-১০৮৫ খ্রিস্টপূর্ব সময়ের অনুভূতি! নারী অনুভূতি। সে যা হোক। প্রাচীন মিশরীয় কবিতার আরও অনুবাদ সম্ভব। তবে তার আর প্রয়োজন কী। আমার কেবল বলার কথা-প্রাচীন মিশর কেবলই পিরামিড আর ‘বুক অভ ডেড’-এর দেশ না, প্রাচীন মিশরে প্রেমের কবিতার মতন সেকুলার সাহিত্যও ছিল-যা আমাদের আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে। তথ্য: Willis Barnstone এবং Tony Barnstone সম্পাদিত Literatures of Asia, Africa, and Latin America. (From Antiquity to the Present) সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:০০
false
rg
এ রেড স্যালুট টু গোবিন্দ হালদার___ প্রখ্যাত গীতিকার গোবিন্দ হালদার আর নেই। আজ ১৭ জানুয়ারি ২০১৫, শনিবার, কলকাতার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার মানিকতলার জিতেন্দ্রনাথ রায় হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে এই মহান গীতিকবি'র বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি কিডনি, গ্লুকোমা ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন লাখ লাখ মানুষ জীবন বাঁচাতে এপার বাংলা ছেড়ে ওপার বাংলায় ছুটেছিল, তখন আকাশবাণী রেডিও সহ খবরের কাগজে নিয়মিত প্রচারিত হতো পাকবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের খবর। তখন কলকাতার সর্বস্তরের মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কলকাতার কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরাও তখন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কলম ধরেছিলেন।সেই সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন কলকাতার গীতিকবি গোবিন্দ হালদার। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪১ বছর। তখন তিনি কলকাতায় আয়কর বিভাগে চাকরি করতেন। আর অবসরে লিখতেন কবিতা আর গান। এক সাক্ষাৎকারে গোবিন্দ হালদার বলেছিলেন, “আমার এক বন্ধু ছিলেন। নাম কামাল আহমেদ। কমার্শিয়াল আর্টিস্ট। থাকতেন কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার ঝাউতলা রোডে। কামালের স্ত্রী ঢাকা বেতারের উর্দু বিভাগে কাজ করতেন। এখন তাঁরা থাকেন কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে। একদিন কামাল আমাকে বললেন, “তুমি তো ভালো গান লেখো। এবার তুমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর কিছু গান লেখো। আমি তা স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারের ব্যবস্থা করে দেব।”আয়কর বিভাগে কর্মরত থাকার মধ্যেই আকাশবাণীর তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে নিয়মিত গান লিখতাম। কামালের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করি গান লেখা। একটি লাইনটানা খাতায় একের পর এক লিখে ফেলি ১৫টি গান। কামাল আমার গানের কলি দেখে দারুণ খুশি। আমাকে নিয়ে গেলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের অন্যতম কর্ণধার কামাল লোহানীর কাছে। আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর তার হাতে তুলে দেন ওই গানের খাতাটি।একদিন হঠাৎ শুনতে পাই আমার লেখা “পূর্ব দিগন্তে সুর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল”−গানটি স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত হয়েছে। গানটির সুর দিয়েছিলেন প্রয়াত সুরকার সমর দাস। এরপর আবার ভেসে আসে, “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি” গানটি। তারপর আরও কটি গান।আর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর সম্ভবত ২৩ কিংবা ২৪ ডিসেম্বর ভেসে আসে সেই অবিস্মরণীয় গানটি, “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা” গানটি। তখন কী যে আনন্দ আমার! গানটির সুর দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও শিল্পী আপেল মাহমুদ।আপেল মাহমুদ তখন শিয়ালদহ স্টেশনের পূরবী সিনেমার পাশে মহাত্মা গান্ধী রোডের শ্রীনিকেতন বোর্ডিংয়ে থাকতেন। এখন অবশ্য ওই বোর্ডিংয়ের নাম বদলে গেছে। আপেল মাহমুদ সে সময় আমাদের বাসায় নিয়মিত আসতেন। মনে আছে, আমি ২১ ডিসেম্বরের দিকে আপেল মাহমুদের সেই বোর্ডিংয়ে যাই। তখন তিনি গানটি আমাকে গেয়ে শোনান। দারুণ লেগেছিল। আমার যতটুকু মনে পড়ে, একাত্তরের ২৩ কিংবা ২৪ ডিসেম্বর গানটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারে। গানটির লিডিং ভয়েস ছিল স্বপ্না রায়ের। আর কন্ঠ দিয়েছিলেন আপেল মাহমুদ ও সহশিল্পীরা।এখন স্বপ্না রায় কোথায় আছেন জানি না। স্বপ্না রায়ের বাড়ি ছিল কুমিল্লায়। তখন স্বপ্না রায়ের বয়স ছিল ২১-২২ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় মা-বাবাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতেই ছিলেন স্বপ্না রায়। পাশের রুমে বসে গানের রেওয়াজ করতেন। পরে অবশ্য ওরা সোদপুর তারপরে দুর্গাপুর চলে যান। স্বপ্না রায়ের এক দাদা ছিলেন। তিনি চা-বাগানে চাকরি করতেন। আমি ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় স্বপ্না রায়ের বাড়িতে বেড়াতেও গিয়েছিলাম। বাঁশের বেড়ার বাড়ি ছিল। পরে শুনেছি ঢাকার এক শিল্পীর সঙ্গে তার কলকাতায় রেজিস্ট্রি বিয়েও হয়। একসময় তিনি ঢাকায় চলে যান।বাংলাদেশ বেতার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আমার লেখা সাতটি গান প্রচার করা হয়েছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক রেকর্ড করা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের গানের একটি লং প্লে রেকর্ডে আমার লেখা তিনটি গান ঠাঁই পায়। এছাড়া ১৯৭২ সালে এইচএমভি 'বিক্ষুব্ধ বাংলা' নামের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি গীতি-আলেখ্যের লং প্লে রেকর্ডে আমার লেখা দুটি গান ঠাঁই পায়। এইচএমভি একই বছর বের করে 'বাংলাদেশের হৃদয় হতে' নামের আরেকটি লং পে রেকর্ড। তাতেও স্থান পায় আমার লেখা “পূর্ব দিগন্তে সুর্য উঠেছে” গানটি। আমার অন্তত ৪০টি গান প্রচারিত হয়েছে আকাশবাণীতে। আর স্বাধীন বাংলা বেতারে সাতটি। আমি তখন আকাশবাণীর তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলাম।''একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গীতিকার গোবিন্দ হালদারের লেখা সেই অবিস্মরণীয় গানগুলো হলো- 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে...', 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে...', 'পূর্ব দিগন্তে সুর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল...', 'লেফট রাইট লেফট রাইট...', 'হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার...', 'পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা...', 'চল বীর সৈনিক...', 'হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার মাটি...'। 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে' গানটি সুর করেছিলেন বিখ্যাত সুরকার শিল্পী সমর দাস। 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে' গানটি সুর করেছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদ। আর গানে মূল কণ্ঠ দিয়েছিলেন স্বপ্না রায়। পরে শিল্পী আপেল মাহমুদ ও সহশিল্পীরা এটি গেয়েছেন।গীতিকবি গোবিন্দ হালদার ১৯৩০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। চাকরি সূত্রে প্রায় ৫০ বছর আগে তিনি কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। বসবাস করতেন কাঁকুরগাছি এলাকার রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের এক সরকারি আবাসনের একচিলতে কোঠায়। সঙ্গে থাকতেন তাঁর স্ত্রী। একমাত্র কন্যা গোপা হালদারের বিয়ে হয়ে গেছে। সরকারি পেনশন নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো এভাবেই কাটিয়ে দেন তিনি। ছেড়ে যাননি এই সরকারি আবাস। দীর্ঘদিন তিনি বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায় ভুগছিলেন। কণ্ঠস্বর অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর ডান চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শরীরও ভেঙে পড়েছিল। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর কিডনির অসুস্থতাজনিত কারণে গোবিন্দ হালদারকে কলকাতার মানিকতলার জিতেন্দ্রনাথ রায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ শনিবার স্থনীয় সময় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই হাসপাতালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত গীতিকবি গোবিন্দ হালদারের গানগুলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দারুণভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। গত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অসুস্থ গোবিন্দ হালদারকে দেখতে কলকাতার মানিকতলার জিতেন্দ্র নাথ রায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিমনার জকি আহাদকে দিয়ে তাঁর চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য পাঠিয়েছিলেন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, ততদিন গীতিকবি গোবিন্দ হালদার বাংলাদেশের মানুষের কাছে চিরসম্মরণীয় হয়ে থাকবেন। হে মহান কবি আপনি যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার আত্মা চির শান্তিতে থাকুক। জয়তু গোবিন্দ হালদার। জয়তু বাংলাদেশ।।..............................১৭ জানুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
fe
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান ও বর্তমান প্রজন্ম বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান ও বর্তমান প্রজন্মফকির ইলিয়াস==============================================বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান কোথায় যাচ্ছে। চারদিকে জিপিএ ৫-এর ছড়াছড়ি। কিন্তু গ্রামীণ জনপদ থেকে এসব জিপিএ ৫ প্রাপ্তটা যখন কলেজমুখী হচ্ছে তখনই দেখা দিচ্ছে নানা সংকট। পর্যাপ্ত পরিমাণ সিট নেই। তাই প্রতিযোগিতা। অনেকেই টিকে থাকতে পারছে না। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি চমৎকার অনুষ্ঠান করেছিল বিবিসি বাংলা গেল সেপ্টেম্বর-২০১৫। সেই অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার মান যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে বলে মত দিয়েছিলেন বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে উপস্থিত দর্শক ও প্যানেলিস্টরা। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে বেরুচ্ছেন তাদের মান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে খুব একটা এগুতে পারেনি। তবে শিক্ষার মান যথেষ্ট না হলেও অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই অবস্থার উন্নয়ন করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহরিয়ার আলম। অনুষ্ঠানে একজন দর্শক জানতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে শিক্ষার স্তরগুলোতে যে মান রয়েছে তা ভবিষ্যতে দেশের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে কি যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে? জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, শিক্ষার বর্তমান মান ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে।শিক্ষকদের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতারও সংকট রয়েছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এজন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানের অন্যতম প্যানালিস্ট প্রযুক্তি বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন ‘মায়া’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহানা সিদ্দিকী মনে করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিয়োগের প্রবণতা লক্ষ করলে বোঝা যায় যে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এখানে কারণ হিসেবে শিক্ষকদের গবেষণার দিকে আগ্রহের ঘাটতি যেমন দায়ী তেমনি ক্লাসরুমের বাইরে কনসালটেন্সির দিকে শিক্ষকদের বেশি মনোযোগ দেয়াকেও দায়ী করেন শাহানা সিদ্দিকী। একজন দর্শক জানতে চান যে, বাংলাদেশে বর্তমানে যে ধরনের রাজনীতি চলছে তা তরুণ প্রজন্মের চিন্তাভাবনা এবং আশা-আকাক্সক্ষাকে কতটা ধারণ করতে পারছে?জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, সরকার তরুণদের প্রয়োজন বা চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়েই নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্তগুলোতে তার প্রতিফলন ঘটছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারেই তরুণদের কথা চিন্তা করে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে এসেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, এটি কি প্রমাণ করে না যে সরকার তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করেই রাজনীতি করছে?’ আরেকজন প্যানালিস্ট গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেছিলেন, দেশের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মকে ব্যবহারের একটি নেতিবাচক প্রবণতা অনেকদিন ধরেই চলছে। তিনি বলেছিলেন, ইংরেজি শিখো। না হয় বিশ্বে দাঁড়াতে পারবে না। এই অবস্থা আমরা এখন দেখছি। আমার মনে আছে, ক্লাস এইটে যখন পড়ি, তখন আমাদের ইংরেজির স্পেশাল টিচার ছিলেন মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। তিনি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর অব স্কুলস। ইংরেজি না শিখলে যে বাইরের বিশ্বে দাঁড়ানো যায় না- সেই তাগিদ পেয়েছিলাম তার কাছ থেকেই। মুখের জড়তা ছাড়িয়ে অনর্গল ইংরেজি কথা হোক- এটাই ছিল তার শিক্ষার মূলমন্ত্র। একটা ঘটনা বলি। একজন তরুণ ডিভি ভিসা পেয়ে আমেরিকায় এসেছে। সে জানাল বাংলাদেশে এমবিএ পড়ে এসেছে। বললাম- চলো তাহলে ইংরেজিতে কথা বলি। তার থমকে যাওয়া আমাকে অবাকই করল না, রীতিমতো হতাশ হলাম। এ কেমন শিক্ষা তার? কি শিখে এসেছে সে? আর সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের কথা না হয় না-ই বললাম। বাংলাদেশে বিসিএস ক্যাডারের বই মুখস্থ করেই অনেকে পাস করে ফেলে। তারপর টাকা বানানোর ধান্ধায় থাকে। এক্ষেত্রে বাইরের দুনিয়াকে কি অনুসরণ করে বাংলাদেশ? কেন করা হচ্ছে না। ‘একজন গোয়ালা ৫ সের দুধের সঙ্গে দুই সের জল মিশিয়ে’- এই ছিল আমাদের নবম-দশম শ্রেণিতে অনুপাত সমানুপাতের অঙ্কের গণিত। শুরুতেই যদি কেউ দুধে জল মেশানোর দীক্ষা পায় তাহলে সে তো সেই চিন্তা নিয়েই বড় হবে? তাই নয় কি? আমরা ইতিহাসে, পানিপথের যুদ্ধ আর আকবর-বাবর-শাহজাহানদের আয়েশি জীবনের ধারাপাত পড়েছি। আচ্ছা, এগুলো বাস্তব জীবনে কি কোনো কাজে লাগছে আমাদের? এখনকার বাংলাদেশ এগোচ্ছে, বলাই যায়। সরকারি ভাষ্যমতে- ২০১০ সালের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকেই প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ৪০% গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জাতীয়ভাবে পরীক্ষা গ্রহণের পদক্ষেপটি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার হ্রাস করেছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। ডিজিটাল যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফলাফল ওয়েব সাইটে ও ই-মেইলে দেয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে মোবাইলফোনে এসএমএস করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফলাফল জানতে পারছে। যার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রসারিত করা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে নিয়ামক শক্তি হলো শিক্ষক। শিক্ষকদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাগার গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলো ভালো লক্ষণ। কিন্তু এই প্রয়াসের পাশাপাশি যদি সুশিক্ষিত করে মানুষকে গড়া না যায়- তাহলে জাতি কি প্রকৃত আলোর মুখ দেখবে?ক্লাশ পাস করা মানেই শিক্ষিত হওয়া নয়। একজন আলোকিত মানুষ পুরো জীবন ভরেই পড়াশোনা করেন। বাংলাদেশের প্রজন্মকে সেই কাজটি করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা আজকের বিশ্বের একটি বড় শক্তি। বাংলাদেশে মানসম্মত বা গুণগত শিক্ষা নিয়ে কারিগরিতে শিক্ষক সংকট, ল্যাব সংকট রয়েছে। একইসঙ্গে অবকাঠামো সংকট তো রয়েছেই। যেহেতু কারিগরি শিক্ষা ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক, তাই এই শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হলে অবকাঠামো, ল্যাব নির্মাণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ পর্যাপ্ত বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। এই শিক্ষায় যত বেশি বিনিয়োগ হবে তার সুফলও তত বেশি আসবে।প্রতিনিয়ত করিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর হার বৃদ্ধির কারণগুলোর অন্যতম হলো- বর্তমানে সাধারণ শিক্ষায় পড়াশোনা শেষ করে অনেক যুবকই বেকার থাকছে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কেউ বেকার থাকে না। শুধু চাকরি নয়, তারা নিজেরা একটি ল্যাব বা ওয়ার্কশপ করেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারে। বলা যায়, কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। মনে রাখা দরকার- ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার, ড্রাইভার এসব চাকরিগুলোও এখন বিদেশে অনেক বেশি সমাদরের।আরেকটি জরুরি বিষয় হলো- শিক্ষার কথা বলে একটি মহল প্রজন্মকে মৌলবাদী দীক্ষায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এদের বিষয়ে সতর্ক থাকা সবার উচিত। কারণ মানবিক জীবন বিধানে প্রকৃত মানুষ হয়ে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নাই।----------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৪ জুন ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ সকাল ৮:০৪
false
mk
বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড বর্তমান বিশ্বে বিদ্যুৎ অপরিহার্য একটি বিষয়। যত দিন যাচ্ছে মানুষ বিদ্যুতের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুতের জোগান চাহিদামতো না হলে একটি দেশের শিক্ষা, প্রযুক্তি, শিল্প-কলকারখানাসহ সব কিছুর ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আশার কথা যে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রগামী। সম্প্রতি দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বর্তমানে ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। দুই মেয়াদে অর্থাৎ বর্তমান সরকার সাড়ে সাত বছরে বিদ্যুতের এই উৎপাদনে এক অনন্য মাত্রা যুক্ত করল নিঃসন্দেহে। আমরা মনে করি, রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন দেশের সামগ্রিক চাহিদার দিক বিবেচনায় অত্যন্ত ইতিবাচক। তথ্য মতে, ২০১৩ সালে ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হওয়ার পর গত তিন বছরে ছয়টি কেন্দ্র থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এ সময়ে আরও কয়েকটি তেলচালিত ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মিত হয়েছে। আবার মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় আগামী বছরের মাঝামাঝি আরও কয়েকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে বলেও জানা যায়। বলাই বাহুল্য, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে, যার সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। বাস্তবতা হলো, তথ্যানুযায়ী দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। সঙ্গত কারণে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে আপামর জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। অস্বীকার করা যাবে না যে, দেশের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। সরকারের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগের কথাও জানা যায়। যার মধ্যে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ছয় হাজার মেগাওয়াটের কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। আবার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার যদি ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে তাহলে দেশের মানুষকে শতভাগ বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় আনার ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি হবে। শুধু উৎপাদন বাড়ানোই নয়, নিরবচ্ছিন্নভাবে সারাদেশে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দিতে সঞ্চালন ব্যবস্থার ওপরও জোর দেয়ার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। কেননা বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় ত্রুটি ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগও পুরনো। যা সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। আমরা মনে করি, উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ এবং সঞ্চালন ত্রুটি নিরসন করা গেলে তা বিদ্যুতের অপচয় রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তথ্য মতে, ২০২১ সালের মধ্যে সব মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এ জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার বিস্তৃতির জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে (আরইবি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানি বিনিময় ও পরস্পরের সম্পদ ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো পারস্পরিক সহায়তাও বাড়িয়েছে। সার্কের আওতায় এসংক্রান্ত একটি ফ্রেমওয়ার্ক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সে অনুযায়ী ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিও করা হচ্ছে। যা আগামী বছরের শেষ নাগাদ আরও ৫০০ মেগাওয়াট এবং ২০১৭ সালের জুনের আরও ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আবার ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করছে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারত হয়ে আমাদের দেশে আসবে। দক্ষিণ এশিয়ায় অভিন্ন বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে ২০২১ সালের মধ্যে আরও ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। সরকারের এ পরিকল্পনাকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।সর্বোপরি বলতে চাই, চাহিদার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে তা হবে সার্বিকভাবেই দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক। এটা মনে রাখা সঙ্গত যে, দেশের যে কোনো উন্নয়নই আজ বিদ্যুৎনির্ভর, তাই এই খাতের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা জরুরি। বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টি মানেই জনদুর্ভোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসা। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। রেকর্ড উৎপাদনের পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার, চালু কেন্দ্রগুলোর ওপর নজরদারি বৃদ্ধিসহ রক্ষণাবেক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের যে কোনো অনিয়ম রোধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। সামগ্রিক এ বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা এলেই বিদ্যুতের আরও উন্নয়ন হবে, যার সুফল পাবে দেশ। সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০০
false
rn
বক্সিং _ মুষ্টিযুদ্ধ বক্সিং এর জন্মলগ্ন প্রাচীন গ্রিস থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬৮৮ অব্দে অলিম্পিক গেমস। ২০০৪ সালে, ESPN এ বিশ্বের সবচেয়ে জটিল খেলা হিসাবে স্থান পেয়েছিল বক্সিং। বড়দিনের পরের দিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর বক্সিং ডে পালন করা হয়। বক্সিং বা মুষ্টিযুদ্ধের ইতিহাসও অনেক পুরনো। যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় ১৬০০ বছর আগেই সান্তরিনির গ্রিক দ্বীপে এ খেলা প্রচলিত ছিল।বক্সিং খেলা যেখানে দুটি মানুষ শক্তি, প্রতিবর্তী ক্রিয়া, এবং সহনশীলতার পরীক্ষায় দস্তানা হাতে নিয়োজিত থাকে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘুষির মাধ্যমে নকআউটের লক্ষে। বক্সিং এক থেকে তিন মিনিট চক্রের অন্তর একটি ধারাবাহিক খেলা যেটি একজন রেফারির তত্ত্বাবধানে খেলা হয়। প্রাচীন গ্রীসে যোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য বক্সিং খেলার আয়োজন করাহত। বক্সিং প্রাচীন রোমে একটি জনপ্রিয় দর্শক সমাগমের খেলা ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রকি মারসিয়ানোই একমাত্র হেভিওয়েট মুষ্টিযোদ্ধা, যিনি অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কখনও হারেননি! বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মুহম্মদ আলী খেলার সময় প্রতিপক্ষকে কনুইয়ের সাহায্যে নিচ থেকে গুঁতা মেরে ধরাশায়ী করতেন। তবে অ্যারন ব্রাউনই প্রথম যোদ্ধা, যিনি মুহম্মদ আলীর ভঙ্গি অনুসরণ করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেন।মোহাম্মদ আলীর একটা লাল সাইকেল ছিল যেটি এক ক্রিসমাস ডেতে তার বাবা তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল। সাইকেলটি তার প্রিয় ছিল। সাইকেলটিকে এক দোকানের পাশে রেখে একদিন সে ও তার বন্ধুরা মিলে পার্শ্ববর্তী বাজারে আড্ডা দিচ্ছিল। পপকর্ন খাচ্ছিল। বাড়ি ফেরার মুহূর্তে দেখেন তার সাইকেলটি আর নেই। তার উপহার পাওয়া সাইকেলটি চুরি যাওয়ায় কষ্ট পান তিনি। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। চোরের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন কিশোর মোহাম্মদ আলী।সিদ্ধান্ত নেন পুলিশকে জানানোর। পাশের এক জিমে (ব্যায়ামাগারে) জয়ি মারটিন (যিনি বক্সিং এর প্রশিক্ষন দিচ্ছিলেন) নামক এক পুলিশের কাছে যান মোহাম্মদ আলী। পুলিশ তার অভিযোগ, ছোট এই বালকের হতাশাগ্রস্ত চেহারা সর্বোপরি চোরের ওপর তার প্রতিশোধ নেয়ার তীব্র ক্ষোভ দেখে মোহাম্মদ আলীকে পরামর্শ দিলেন- যুদ্ধে যাওয়ার আগে যুদ্ধ শিখে নাও। এমন উৎসাহ দিয়েই বালক মোহাম্মদ আলীর হাতে জিমে ভর্তি হওয়ার ফরম তুলে দিলেন।মুষ্টিযুদ্ধ খেলা বৈধ নয়। কারণ এ খেলা বড় ঘাত প্রতিঘাত এর খেলা। যাতে বিপদাশঙ্কা খুব বেশী। আর মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করো না।” (বাকারাহঃ ১৯৫)। বক্সিং খেলা মানেই হল মুখে আঘাত করা, যাতে পয়েন্ট পাওয়া যায় সব থেকে বেশি। আল্লহ রব্বুল আলামীন পাক কালামে চারিত্রিক ত্রুটি জনিত ঘটনায় স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পূর্বে তিনটি ধাপ রেখেছেন। তার তৃতীয় নাম্বার ধাপ হল প্রহার করা। তাফসীরের বর্ণনায় সেমতাবস্থায়ও স্ত্রীর মুখে আঘাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লহ রব্বুল আলামীন বলেছেন, “মানুষকে সর্বোত্তম সুরতে (আকৃতিতে) সৃষ্ট করা হয়েছে”। মানুষের মুখ বাদ দিলে আর তাকে বাহ্যিক-ভাবে চেনার মত কিছুই থাকেনা। মুখের কোন চিহ্ন ঢেকে রাখার বা আড়াল করার মত ব্যবস্থাও নেই। শত কাপড়-চোপড় পরলেও মুখ বা চেহারাকে খোলাই রাখতে হয়। শুধু মাত্র মুখের মাধ্যমেই আমরা একে অপরকে চিনে থাকি। অতএব শরীরের সর্ব শ্রেষ্ঠ অংশ তথা অবয়বে বক্সিং, কারাটে অথবা যে কোন উছিলায় আঘাত করাকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে।
false
ij
মোমের আলোয় স্নান কিংবা মোমস্নান জ্বলে মোম, অনুক্ষণ .... এই লেখার শিরোনাম যেমনই শোনাক না কেন-মোমের আলোয় স্নান ব্যাপারটা আসলে -বিদ্যুৎ চলে গেলে বাথরুমের ভিতরে মোমবাতি জ্বেলে গোছল।এই হল: মোমস্নান; প্রতিদিন যে বাথরুমে গোছল করতে যেতে হয়-ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটবাড়ি বলেই-ভেন্টিলেটর কি ছোট জান্লা নেই। কারেন্ট না-থাকলে বাথরুমের ভিতরে আঁধার নিকষ । ‘তো, কারেন্ট না- থাকলে গোছল করতে যান কেন শুনি?’ দূর থেকে কাল্পনিক বান্ধবী সামান্য খোঁচা দিয়ে বলে। আমি মিনমিন করে বলি: না। এই মানে, যৌথপরিবারে থাকি,তো...যাক। তো, মোম আর ম্যাচের বাক্স-হাতের কাছেই রাখতে হয়। শাওয়ারটা অল্প চিপায়-কাজেই মোমটা রাখি কমোডের ঢাকনা ফেলে-তার ওপর- যাতে আলোটা পাই, আর যাই হোক-নিকষ আঁধারে তো স্নান করা যায় না। আমার ফোবিয়া (নাকি ম্যানিয়া?) আছে ... তো কমোডের ঢাকনা ফেলে-তার ওপর মোমটা রেখে দিয়াশলাই কাঠির খস স স স। বারুদের মৃদু গন্ধ টের পাই। দিয়াশলাইয়ের বাক্সটা বাথরুমের ভিতরে রাখি না; ফিরে এসে দরজা বন্ধ করি আস্তে-যেন বাতাসের ঢেউয়ে না নিভে যায় মোম। দরজা বন্ধের পর বাথরুমে মৃদু অন্ধকার-কেননা, মোমটা ভালো করে তখনও জ্বলে ওঠেনি। এবার আমার নগ্ন হওয়ার পালা। নগ্ন হওয়া মানে পরনের লুঙ্গিটা টান মেরে খুলে ফেলা। তাই করলাম; নগ্ন হওয়ার পর নিজেকে তখন কেমন আদম- আদম লাগে। যেনবা তখনও জন্ম হয় নাই ঈভের। একলা আমি - আর,বাথরুমের টাইলসে প্রতিফলিত ম্লান হলুদ-শীতলতা – পানির টুপটাপ গান। মোমস্নান আমাকে ক্রমশ নিয়ে যাবে অন্যজগতে। শাওয়ারের দিকে যাই। ছায়া ছায়া ঈষৎ অন্ধকার; সাবানের মৃদু গন্ধ। শাওয়ারের নবটা ধাতব শীতল। স্পর্শ করি। এখন শাওয়ারের নবটা ডানদিকে ঘোরালেই নিমিষে এই মোমালোকিত স্নানঘরে ঢুকে পড়বে বান্দরবানের শৈলপ্রপাত । ১৯৯৪ সালে ওখানে একবার গিয়েছিলাম। ...ইদানীং, কোহিনূর কোম্পানীর ‘আইস কুল’ সাবান ভীষনই প্রিয় হয়ে উঠেছে। আইস কুলের নরম সুগন্ধটা আমার ভালো লাগে। ভেজা শরীরে ওই সাবান মাখার সময় মিস্টি সুরভীতে ডুবে যাই; আমার তখন মনে হয় মুগল বাদশাও গোছলের সময় এত সুখবিলাসিতা পেত কি না সন্দেহ। তাদের সময়ে দিল্লিতে গরুর গাড়ি বোঝাই করে বরফ আসত কান্দাহার থেকে। গতকালই ওয়ালটন ফ্রিজ খুলে ফ্রুটিকার ঠান্ডা বোতল বার করে ঢকঢক করে গিললাম আধ বোতল আমের রস। ভীষন গরম লাগছিল। রসটুকু খেয়ে ভারি তৃপ্তি পেলাম। মুগল বাদশা? ধুরও ... শাওয়ারের নবটা ধাতব শীতল। স্পর্শ করি -ডানদিকে ঘুরাই; নিমিষেই ঝরঝর শব্দ -সেই সঙ্গে এই মোমালোকিত স্নানঘরে ঢুকে পড়ে বান্দরবানের শৈলপ্রপাত ...ঝরঝর জল পড়ে ...অঝোর ধারায় আমি ভিজতে থাকি। এবং আমি বোধ করতে থাকি গভীর সুখ। সেই সঙ্গে মনে পড়ে এক বালতি পানির জন্য বিশ্বময় কত হাহাকার-এই ঢাকা শহরেই ক’দিন পর পানির জন্য তুমুল বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে; আর আমি নব ঘোরাতেই পেয়ে যাচ্ছি (কোন্ এক সৌভাগ্যবলে) শীতল পানির ধারা। একে কী বলে? মোমের ম্লান হলুদ আলোয় আধো-অন্ধকারে অঝোর ধারায় আমি ভিজতে থাকি। এবং আমি আইস কুল সাবানের অদ্ভুত মিষ্টি সুগন্ধ পেতে পেতে বোধ করতে থাকি গভীর আনন্দ ও সুখ। ফ্ল্যাটপ্রতি বরাদ্দ জলে ভিজে যেতে যেতে প্রাণপন নিজেকে বোঝাচ্ছি এটা ঢাকার কোনও ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটবাড়ি নয়- বান্দরবানের জ্যোস্নামথিত নির্জন শৈলপ্রপাত ...এবং তুমি মুক্ত-তুমি মুক্ত আদম; নগ্ন-অথচ নির্লজ্জ নও। আমি আধো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে। ভিজছি।বাথরুমের টাইলসে প্রতিফলিত ম্লান হলুদ-শীতলতা; পানি ঝরার শব্দ। একটু পরে শাওয়ার বন্ধ করি। হাত বাড়িয়ে আইস কুলটা তুলে নিই। গন্ধটা দারুন- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফার্মেসী বিভাগের (নাকি অ্যাপ্লাইয়েড ক্যামিস্ট্রি) ছাত্রছাত্রীরা বেশ রোম্যান্টিক হয়ে উঠেছে আজকাল। নইলে এত সুন্দর গন্ধের উদ্ভাবন তারা করল কী করে? ভেজা শরীরে ওই সাবান মাখার সময় মিষ্টি সুরভীতে ডুবে থেকে আমার মনে হয় আমার এই স্নানসুখবিলাসিতার কাছে মুগল বাদশারা কোন্ ছাড়। সাবান মেখে সাদা ভূত হয়ে যাবার পর আবার শাওয়ারের ধাতব শীতল নবটা স্পর্শ করি -ধীরে ধীরে ডানদিকে ঘুরাই; নিমিষেই এই মোমালোকিত স্নানঘরে ঢুকে পড়ে বান্দরবানের শৈলপ্রপাত ... ঝরঝর জল পড়ে ...অঝোর ধারায় আমি ভিজতে থাকি। তারপর এক সময় শেষ হয়ে যায় আমার মোমের আলোয় স্নান কিংবা মোমস্নান। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৫৯
false
hm
সরিষার তেল মেখে ভূতে খায় মুড়ি পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলাফল? ১৯৭২ এর দালাল আইনকে বাতিল করে জারি করা সামরিক ফরমান এখন অবৈধ। দালাল আইন এখন পুনরায় সক্রিয়। যেমন সক্রিয় ১৯৭৩ এর আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইবুন্যাল) আইন। শক্তিশালী এই দু'টি আইনের আওতায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধসমূহের বিচার সরকারের পদক্ষেপগ্রহণের অপেক্ষায় ক্যালেন্ডারে চোখ রেখে বসে আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তারা এবার করবে। ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই একদিক দিয়ে যেমন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এই ব্যাপারটি নিয়ে ঢিলামি লক্ষ করা গেছে [শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জনগণ ভোট দিয়েই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ফেলেছে], অপরদিকে ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মতো নির্মম ঘটনা সশস্ত্রবাহিনীতে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। সশস্ত্রবাহিনীকে সংযত করার দুরূহ কাজটি করতে গিয়ে সরকারের জনবল ও সময় ব্যয় হয়েছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েক হাজার বিডিআর জওয়ান ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে। সরকারের টপ প্রায়োরিটি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করাতেই ছিলো [শেখ হাসিনার কথাবার্তা শুনে মনে হয় দেশে এই একটি মাত্র সমস্যাই রয়েছে এবং এই বিচারকার্য সমাধা করতে পারলেই দেশটা ফুলেফলে ভরে যাবে]। ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটি সরকারের টু-ডু লিস্টের কোনো একটি দুর্গম অবস্থানে পড়ে পড়ে গায়ে ফাঙ্গাস চড়াচ্ছে। তবে আমার মনোযোগ সরিষা আর ভূতের মধ্যে সম্পর্কের টেনশনটি নিয়ে। কিন্তু শিরোনামে যা বলেছি, সেটিই আমি বিশ্বাস করি, ভূত সরিষা পিষে তেল বার করে তা দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে খাচ্ছে। পত্রিকা পড়ে আমরা জানতে পাই, খোদ রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এহতেশামুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা মামলায় জড়িত জঙ্গিদের সাথে সংশ্লিষ্টতার। পত্রিকার সাথে যোগাযোগে তিনি সাড়া দেননি। ব্যাপারটি পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় রংপুর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং হিসেবে। পিলখানা এলাকার সাংসদ ফজলে নূর তাপসের সাথে বিডিয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনার আগে সাক্ষাত করেছিলো। আবার তাপস বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইনজীবী হিসেবেও সংশ্লিষ্ট। আরো কোনো কারণ আছে কি না আমরা জানি না, কিন্তু তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আধুনিক প্রযুক্তির দূরনিয়ন্ত্রিত বোমা বিস্ফোরিত হয়, যার সাথে সেনাবাহিনীর একজন মেজর ও চারজন ক্যাপ্টেন জড়িত হিসেবে গোয়েন্দা তদন্তে ধরা পড়েন। তারা সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্তাধীন আছেন, একজন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেনাবাহিনীতে যা কিছু ঘটে, সবই খুব গোপন এবং স্পর্শকাতর ব্যাপার, কিন্তু যতদূর বুঝি, ওপরের দুটো ঘটনাই ভূতের ঢেঁকিতে সরিষা পেষার মতো। সেনাবাহিনীতে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন একটি অংশ থাকা অস্বাভাবিক নয়, যেখানে ১৯৭৫ সালের পর থেকে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলো, এবং এই পনেরো বছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় টিকে থাকার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশের সেনাসংস্কৃতি অগণতান্ত্রিক দেশের সেনাসংস্কৃতির মতো নয়, পার্থক্য বুঝতে হলে ভারত আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে তুলনা করে দেখা যেতে পারে। আমরা গণতন্ত্রের পথে হাঁটছি বছর কুড়ি, কিন্তু সেনা নেতৃত্বের বিপুল অংশই ৭৫ থেকে ৯০, এই পনেরো বছরের সেনাশাসনের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে, এবং এ সময় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরপন্থীদের দলের হাইকম্যান্ড থেকে প্রবলভাবে উৎসাহিত করা হতো [এখনও হয়] সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য। এই অফিসাররা এখনও অনেকেই বাহিনীতে থাকাই স্বাভাবিক, এবং মেধায় কোনো অংশে কম নয় বলে বিভিন্ন কম্যান্ড পদে তাদের আসীন হওয়াটিও বিচিত্র কিছু নয়। গোলাম আযমের পুত্র ব্রিগেডিয়ার [বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত] আযমী একজন চৌকস অফিসার হিসেবেই বাহিনীতে পরিচিত ছিলো। কঠোর সেনা প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলা এই ভিন্ন আদর্শবাদ তাদের মন ও আচরণ থেকে মুছে দিতে পেরেছে কি না তা বলা মুশকিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীতে নবতর সংযোজন র‌্যাব এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ বাহিনী, পুলিশে গত জোট সরকারের আমলে প্রচুর নিয়োগ ও পদোন্নতি [এবং পদচ্যুতি] হয়েছে, এবং তাদের ওপর জোট-সরকারের জুনিয়র পার্টনার জামায়াতের কতটা প্রভাব, এ নিয়ে খতিয়ে দেখা অতি জরুরি। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হামলায় ছাত্র নিহত হয়েছে পুলিশের চোখের সামনে, আহতদের অভিযোগ, পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে। এ অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও এসেছে। চট্টগ্রামে শিবিরের মেসে অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় খণ্ডিত ও দুর্বল অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। কৌঁসুলি এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অস্ত্র উদ্ধারের পর জামাতি আমীর নিজামী প্রকাশ্য জনসভায় হুমকি দিয়েছিলো, যে ঐ পুলিশি অভিযানে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের জীবন সুখের হবে না। আবারও ভূতকে দেখি সরিষা পিষতে। সরকারের আমলাতন্ত্রেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধাচারী একটি অংশের কথা পত্রিকায় পড়েছি। তাদের ধারণা, সরকার অনেকগুলি ফ্রন্টে বিরোধিতার মুখোমুখি, তাদের আর শত্রুবৃদ্ধি করা উচিত নয় [ছাগল কোথাকার]। এবার আসি ক্ষমতাসীন দলের কপিরাইট করা নির্বুদ্ধিতা নিয়ে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের সমমনা ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগে শিবির ঢুকে পড়েছে। যদিও লীগ আর শিবিরের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক সরিষা আর ভূতের মধ্যে সম্পর্কের মতো নয়, কারণ অতীতে লীগকে বহুবার শিবিরবান্ধব ভূমিকায় দেখা গেছে [আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল আর ছাত্রফ্রন্টের ছেলেদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে দেখেছি শিবিরের বিরুদ্ধে, লীগ কী কী যেন উৎপাটন করতো বসে বসে]। একটা ছাত্র সংগঠন কতটুকু ছ্যাঁচড়া হলে সেখানে "অন্য দল" এর লোকজন কেন্দ্রীয় ও হল শাখার শীর্ষে আসীন হতে পারে, তার দারুণ উদাহরণ ছাত্র লীগ। এ প্রসঙ্গে শিবির সভাপতির বক্তব্য হচ্ছে, "সৈয়দ আশরাফের কথা শুনে আমরা হেসেছি। তিনি কী দল পরিচালনা করেন যে তাঁর দলে অন্য দল থেকে লোক ঢুকে?" আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কোনো এক বিচিত্র কারণে জামায়াতের কোনো সমস্যাই হয় না, বিচার হওয়া তো দূরের কথা, তারা আরো শক্তিশালী হয়। এর ফল হয়তো ভুগতে হয় একজন আবু বকর, একজন ফারুক, একজন প্রফেসর ইউনুস, একজন প্রফেসর তাহের, একজন গোপালকৃষ্ণ মুহুরী, একজন হুমায়ূন আজাদকে। কারণ আওয়ামী লীগের আছে এক বান্ডিল সাহারা খাতুন, যারা সংসদে ঘুমিয়ে পড়ে আর দুই কুকুরের লড়াইয়ে নিরীহ ছাত্রের নিহত হবার ঘটনাকে "বিচ্ছিন্ন" বলে উড়িয়ে দেয়। কোনো ঘটনাই বিচ্ছিন্ন না। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী, ডান কানটায় কি এখন একটু একটু শুনতে পান? কোনো ঘটনাই বিচ্ছিন্ন না।
false
hm
মিসির আলি প্রচণ্ড টেনশন আর ব্যস্ততা থাকলে মাঝেমধ্যে ঢিল দিতে ইচ্ছা করে। ওরকম একটা ঢিল দিয়ে বসে আছি, এরপর আবার নাট ঘুরিয়ে তারে টাইট দেবো। শেষ পর্যন্ত হয়তো সিদ্ধার্থের মঝ্যিম পন্থাই অবলম্বন করতে হবে। গিয়েছিলাম মিউনিখে, অক্টোবরফেস্টে, অগ্রজপ্রতিম তীরন্দাজের আতিথ্য বরণ করে। সেই আতিথ্য আবার শটগান আতিথ্য, তীরুদার হাজারটা কাজের ব্যস্ততা, আমরা এদিক দিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে মনে পড়লো, আচ্ছা তীরন্দাজ কি জানেন যে আমরা আসছি? শেষ পর্যন্ত মানুষটা তীরন্দাজ বলেই হয়তো জার্মানির তিন দিক থেকে আমরা চারজন গিয়ে হামলা করি তাঁর আর উশি ভাবীর ওপর, তাঁরাও অম্লানবদনে সহ্য করেন আমাদের উৎপাত। সে গল্প সামনে করছি ছবিসহ, আপাতত মিসির আলিকে নিয়ে বলি। আমি নেটাসক্ত মানুষ, এটা টের পেয়ে গেছি ইতিমধ্যে। হাতের কাছে নেট না থাকলে শরীর কামড়াতে থাকে, মেজাজ খারাপ হয়, চা-কফি খাবার পরিমাণ বেড়ে যায়, একমাত্র নারীসংসর্গই এর নিরাময় করতে পারে। দীর্ঘ নয় ঘন্টা জার্নির পর মিউনিখে পৌঁছে আরো ঘন্টা তিনেক আড্ডা মেরে তীরুদার বাসায় পৌঁছেই তাই সচল হাসিবের ল্যাপটপ ছিনতাই করে বসে পড়লাম। সচলায়তন খুলে চোখ বুলাচ্ছি নীড়পাতায়, চোখে পড়লো অতন্দ্র প্রহরীর চমৎকার একটি রিভিউ। তা-ও আবার মিসির আলি। রহস্যগল্প আমি এমনিতেই ভালোবাসি, আর মিসির আলির গল্পগুলোর মেজাজই অন্যরকম। রাত তখন অনেক, কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে শুয়ে পড়েছে বাকিরা, আমি ডাউনলোড করে পড়তে শুরু করলাম। পড়া শেষ করে ভোরে ঘুমাতে গেলাম। বইটা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া প্রহরীর পোস্টেই বলেছি। কিন্তু মিউনিখে দেড়দিন প্রবল আড্ডাবাজি আর ঘোরাঘুরি করে আবারও দীর্ঘ ক্লান্তিকর জার্নি সেরে কাসেলে ফিরে এসে আমার মাথায় মিসির আলির ভূত চেপে রইলো। হাসিব ভাইকে টোকা দিয়ে মিসির আলির আরো কিছু পিডিয়েফ যোগাড় করলাম, সেগুলো পড়ছি এক এক করে। একটানা কয়েকটা গল্প পড়ে যে সিদ্ধান্তে এসেছি, সেটি হতাশাব্যঞ্জক। আমার কাছে মনে হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদ সময়ের সাথে এই ঘরানার গল্প বা বড়গল্প লেখার শৈলীটি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছেন। দেবী বা নিশীথিনীর কথা বাদ দিই, সেগুলো বাদেও মিসির আলিকে নিয়ে তিনি চমৎকার কিছু গল্প লিখেছেন [নাম উল্লেখ করতে গেলে বলতে হয় "বৃহন্নলা" আর "অন্য ভূবন"], সেগুলি ভবিষ্যতে তাঁর মশালবাহক হবে। কিন্তু নিকট অতীতে লেখা মিসির আলিগুলিতে আগের সেই টানটান ভাবটা নেই। হুমায়ূন আহমেদের বইগুলিতে সাধারণত বর্ণনাগত ত্রুটি থাকে, দারুণ ঘটা করে বর্ণিত লেজকাটা কুকুর কয়েক পৃষ্ঠা পর লেজ নাড়তে থাকে, এইসব ছোটখাটো ত্রুটি মিসির আলির বইগুলিতে বরাবর অনুপস্থিত ছিলো, সেগুলি অনেক গোছানো, পরিমিত আর টানটান থাকতো, কিন্তু সময়ের সাথে হুমায়ূন আহমেদের গড় উপন্যাসগুলির ত্রুটি হেঁটে এসে মিশে গেছে মিসির আলির সাথে। আরো সহজ করে বললে, মিসির আলির লেখাগুলি লেখক নিজেই গোড়া থেকে কয়েকবার পড়েছেন, উলটে পালটে দেখেছেন, কোনো ত্রুটি থাকলে মার্জনা করেছেন, এমন একটা ধারণা পাঠকের মনে তৈরি হতো, যেটা এখন আর হয় না। মনে হয়, কোনোমতে টেনেটুনে শেষ করা এক একটা লেখা, যেটি লেখক নিজে দ্বিতীয়বার পড়ে দেখার উদ্যোগ নেননি। এই যে অযত্নটুকু, এটিই পাঠকের জন্যে অপমানকর বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। মিসির আলির গল্পের দু'টি ধারা আছে, একটিতে লেখক উত্তম পুরুষে উপস্থিত থাকেন, মিসির আলিকে বর্ণনা করেন। অপরটিতে মিসির আলি স্ক্রাইবের অনুপস্থিতিতেই যা করার করে চলেন। এই দু'টি ধারা বরাবরই সমান্তরাল ছিলো, কিন্তু সময়ের সাথে যা হয়েছে, সেটি হচ্ছে, মিসির আলি চরিত্রটি জোলো আবেগের আধিক্যের শিকার হয়েছে, যা হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য লেখায় সুলভ। বরাবর যে স্বাতন্ত্র্য মিসির আলির চরিত্রে ছিলো, সেটি ক্রমশ লোপ পেয়েছে, এখন মিসির আলির গল্পে মিসির আলিকে লম্বা, শুকনো, নিরাবেগ, তীক্ষ্ণধী মানুষ বলে কল্পনা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, মনে হয়েছে একজন প্রৌঢ় হুমায়ূন আহমেদকেই দেখছি মিসির আলির গেঞ্জি গায়ে। এই পরিবর্তনটি হজম করা কষ্টকর। গল্পের চরিত্রে লেখক সেই তাঁবুর উটের মতো একটু একটু করে ঢুকে পড়ছেন ক্রমশ, এতে মিসির আলির চরিত্রহননই হচ্ছে কেবল। যখন ঘনাদা পড়ি, প্রথম থেকে সেই শেষ পর্যন্ত, ঘনাদার চরিত্রটি স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখে, যেমন রাখে সত্যজিতের শঙ্কু আর তারিণীখুড়ো, কোনান ডয়েলের প্রফেসর চ্যালেঞ্জার, শরদিন্দুর বরদাচরণ। বাস্তব পৃথিবীকে অতিক্রম করে লেখা গল্পের শিখণ্ডী চরিত্রগুলির এই স্বাতন্ত্র্য জরুরি বলে মনে হয় আমার কাছে। লেখকের ওতে হামাগুড়ি দিয়ে ঢোকার অধিকার আছে, প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি আমি এ-ও স্বীকার করবো, মিসির আলির গল্পগুলিতে রহস্যগুলি মান্টোর গল্পের টোবাটেক সিং এর মতোই যেন, অর্ধেক বাস্তব পৃথিবীতে, বাকি অর্ধেক মানুষের মনে ... এ ধরনের গল্পের মানকে পরিমাণের বিপরীতে রেখে ছক কাটলে তা ওপর থেকে নিচের দিকেই নামে। এ ধরনের গল্প গণ্ডায় গণ্ডায় লেখা সহজ নয়, লিখলে মান বজায় রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অগণিত ছাইপাঁশের পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ মিসির আলির গল্পগুলি লিখেছেন বড় সযত্নে, যে যত্ন তিরোহিত হচ্ছে ক্রমশ। হুমায়ূন আহমেদ নিজস্ব পাঠকবলয় তৈরি করে নিয়েছেন, যারা তাঁর নামাঙ্কিত সবকিছুই নির্বিবাদে ভক্ষণ করে; কিন্তু এই যে মিসির আলির টানটান গল্পের ঘরানা, এটিকে যেন তিনি কমপ্রোমাইজ না করেন, পাঠক হিসেবে এটি আমার কামনা। আমি নতুন কোনো মিসির আলি পড়তে না পেলেও অখুশি হবো না, কিন্তু আধাখ্যাঁচড়া জোড়াতালি মার্কা জোলো রহস্যগল্প পেলে ঐ অযত্নের অভিযোগ করবো। পাঠক হিসেবে সে অধিকার আমি অর্জন করে নিয়েছি কয়েক দশকে।
false
mk
বিএনপি রাজনীতির পরিবেশটা নষ্ট করে দিল বাংলাদেশে নাশকতার ভয়ঙ্কর মাত্রা এবং অগ্নিসংযোগ করে বাস জ্বালানো ও মানুষ হত্যার তৎপরতায় শুধু দেশের সাধারণ জনগণই অনিরাপত্তায় ভুগছে না। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন শ্রমিক এবং সংবাদকর্মীরাও হত্যার শিকার হচ্ছেন। ক্রমাগত অবরোধ ও হরতালের সহিংসতায় সরকারি ও বেসরকারি সম্পদের প্রচুর ক্ষতিসাধন করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। একদিনের হরতালে দেশের অর্থনীতিতে দু’হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়, বিপর্যস্ত হয় জনজীবন ও নিরাপত্তা। সামাজিক কর্মকা- ব্যাহত হয়। মাত্র এক বছরে পরিবহন খাতে নাশকতায় একশত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিহত হয়েছে ৪২ জন পরিবহন শ্রমিক। তাতে তিন হাজার পরিবহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিলাসবহুল বাস ও এসি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে আটশত। দেশের সর্বমোট তিন লাখ গাড়ির মধ্যে দুই লাখ গাড়ির রয়েছে ব্যাংকঋণ। দেশের সম্পদ এভাবে বিনষ্ট করে যারা তারা নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলায় লিপ্ত।এসব জঙ্গি সন্ত্রাসের হুকুমদাতা, উস্কানিদাতা এবং গণতান্ত্রিক সরকার পতনের হুমকিবাজরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী, খুনী ও বোমাবাজদের নেতা হলেও জনগণের নেতা এবং দেশপ্রেমিক নেতা নন কোনোভাবেই। এদেরকে বারবার গাড়ি পোড়ানোর মামলা এবং সন্ত্রাস ও ভাঙচুরের হুমকিদানের কারণে গ্রেপ্তার করা হলেও জেল থেকে জামিনে বেরিয়েই পুনরায় সচেতনভাবে মানুষ হত্যার প্ররোচনা দেয়। সমাজকে অশান্ত ও অনিরাপদকারীদের জনবিচ্ছিন্ন স্থানে রাখাই সমাজের জন্য মঙ্গল। পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংস্থা জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো দু’দফায় সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য ঢাকায় আসেন। তার সংলাপ তৎপরতা এবং সমঝোতার লক্ষ্যে সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে দু’বারই হরতাল ও অবরোধ দেওয়া হয়েছে। তিনি হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করেই সংলাপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, এইচএম এরশাদ, জামায়াতে ইসলামী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।ব্যবসায়ীরা সংকট নিরসনে ঘন ঘন তাগিদ দিলেও দেশের ব্যাবসাবাণিজ্য ও অর্থনীতি রক্ষার অনুরোধে হরতাল-অবরোধ বন্ধ না করে আরো কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হলো। ক্ষুব্ধ নাগরিক, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণ সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হরতালের আগের দিন থেকেই শুরু হয় নাশকতা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। মানুষকে আতঙ্কিত ও অনিরাপদ করার নোংরা রাজনৈতিক কৌশল জনগণ কর্তৃক ধিক্কৃত হলেও তা পরিহার করা হচ্ছে না। বিএনপির কিছু হুমকিদাতা ও উস্কানিদাতা নেতা গ্রেপ্তার হয়ে এখনও জেলবন্দি আছেন, কিছু নেতা পালিয়ে গোপন স্থান থেকে লাদেনীয় কায়দায় সংবাদমাধ্যমে ভিডিও বার্তা প্রেরণ করছেন। একের পর এক গণবিরোধী ও হিংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে জনজীবনকে অনিরাপদ ও শঙ্কিত করে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল না হওয়া সত্ত্বেও সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে জনগণের ওপর প্রতিহিংসা চালাচ্ছেন। হরতাল ও সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের আক্রমণ থেকে নিরাপদে পালিয়ে আত্মরক্ষা করছে সন্ত্রাসীদের নেতারা। দায়িত্বহীন, জবাবদিহিহীন রাজনীতির এ ধারায় ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি জনগণের সমর্থন ও আস্থা। জনগণের ক্ষতিসাধন করে কীভাবে জনসমর্থন ও গণসম্পৃক্ততা থাকবে! জনগণের প্রতি ভরসাহীন নেতারা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে, সংলাপভিত্তিক সমঝোতায় অগ্রসর না হয়ে জনগণের ক্ষতি করতেই আরো কঠোর কর্মসূচির আশ্রয় নিচ্ছে। দেশকে ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতো অনিরাপদ ও ভয়ঙ্কর ভূখ-ে পরিণত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জঙ্গিবাদী আদর্শ ও তৎপরতা নিয়েই সন্ত্রাসবাদী নেতাদের আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে সশস্ত্র প্রক্রিয়ায়। বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ করে অগ্নিদগ্ধ করা হচ্ছে অগণিত মানুষকে। বিরোধী দলীয় নেতা-নেত্রীরা অগ্নিদগ্ধ আহত-নিহতদের দেখতে যাননি, তাদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাননি। এ ধরণের জাতীয় নেতাই কি গণতন্ত্রের ভরসা!জনগণের ক্ষতি, হত্যা ও সম্পদ ধ্বংসের জন্য যাদের রাজনীতি তাদের বিদায় দেবে জনগণ। এজন্য নির্বাচনে অংশ নিতেও তারা বিমুখ। কখনো তত্ত্বাবধায়ক পুনরুদ্ধারের নামে সংসদে না গিয়ে রাজপথের ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে সন্ত্রাসী নেতারা সোচ্চার হয়েছেন। কখনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তার বিচার প্রক্রিয়া ও রায়ের বিরুদ্ধে তৎপর থেকে মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রগতিশীল সাংবাদিক ও মুক্তিকামী গণজাগরণকর্মীদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবৈধ ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতকে ১৮ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ রেখে তাদের চালিত ধ্বংসাত্মক জঙ্গি হামলার দায় বিএনপিকে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতে এসব ধ্বংস ও হত্যার বিচার করা হবে। সাংবাদিক, নিরাপত্তাকর্মী, নারী, শিশু, শিক্ষক, ছাত্র কেউ রেহাই পায়নি ধারাবাহিক অবরোধ ও সন্ত্রাসের অপতৎপরতা থেকে। অবরোধ ও হরতালে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিকল্পিত নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে দেশকে অনিরাপদ ও অনিশ্চিত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে নাশকতার শক্তি প্রয়োগ করে। সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতা এবং আগুনে মানুষ পোড়ানোর ঘটনা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।দলীয় টিভি চ্যানেলে দলীয় টকশোওয়ালারা সন্ত্রাস ও নাশকতায় জানমাল ক্ষতিগ্রস্ত করার তৎপরতার নিন্দা না জানিয়ে সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে। সন্ত্রাসীদের প্রতি দরদী টকশোওয়ালারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা নিয়েও শঙ্কিত নন। জামায়াত-বিএনপির পক্ষে বিবেকবন্ধক রাখা টকশোওয়ালা ধান্দাবাজদের নির্লজ্জ্ব অতিকত্থনে দর্শক-শ্রোতারা অতিষ্ঠ। চ্যানেল ঘুরিয়ে তারা অন্যত্র চলে যান ভালো কিছুর সন্ধানে। গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলায় এসব টকশোওয়ালাদের নেই আশঙ্কা, নেই উদ্যোগ। ১৮ দলীয় জোটের সশস্ত্র আন্দোলন, সহিংস বিক্ষোভ আর নৃশংস হরতাল সফল করতে রাজপথে নামিয়ে দেওয়া হয় ভাড়াটে বোমাবাজ, ককটেল বিস্ফোরণকারী ও খুনীদের। ভাড়াটে ও দলপোষ্য বুদ্ধিজীবীরাও থাকে টকশোর আলোচনায় তৎপর। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ও যুদ্ধাপরাদের সন্ত্রাস দমন তৎপরতা নিয়ে বিতর্কে তারা অতি উৎসাহী।যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো আর রাজনৈতিক ও নির্দলীয় ব্যক্তিদের হত্যা করে নাগরিক নিরাপত্তা বিঘিœতকারীদের তৎপরতাকে ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই। তাদের উপযুক্ত শাস্তি আর ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকারই কাম্য। ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার যে মৃত্যুদ-ের রায় কার্যকর করা হয়েছে, ১০ ডিসেম্বর এ রায় কার্যকর হওয়ার আভাস পেয়ে রাতের বেলা সারা দেশে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা করা হয়। সেই রাতে রিভিউ পিটিশনের পর রায় পরদিন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। পুনরায় শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ থেকে কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন চূড়ান্তভাবে খারিজ হওয়ার পর ঐদিন ১২ ডিসেম্বর রায় কার্যকর করা হলো রাত ১০টা ১ মিনিটে। তারই প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে ১১৬ জন মানুষ নিহত হলো এবং অসংখ্য যানবাহনে হামলা হলো। আরও সহিংস হামলার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি এবং পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী। এতে শঙ্কিত মানুষ। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হওয়ার পরও তার সহিংস প্রতিক্রিয়া করলো জামায়াত-শিবির। গণজাগরণ মঞ্চেও হামলা, বোমাবাজি হয়েছে। আন্দোলন-বিরোধিতার নামে এদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পালে হাওয়া দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।যানবাহন দেশের সম্পদ। হরতাল-অবরোধের জন্য কোনো সরকারি ছুটি নেই কর্মজীবীদের, ব্যবসায়ীদের কোনো বিরতি নেই। দরিদ্র, ক্ষুদ্রব্যবসায়ী ও দিনমজুরদের কাজ না করে উপায় নেই। বাধ্য হয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্যই নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়েও তারা যানবাহনে চড়েন। যেসব পরিবহন হরতাল-অবরোধে চলাচল না করে বাসস্ট্যান্ডে রাখা হয় তার ওপরও দেওয়া হয়েছে আগুন। চলন্ত বাসে আগুন, বাস ডিপোতে থেমে থাকা বাসে আগুন দিয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে সন্ত্রাসীরা। এর কঠোর প্রতিকার চায় জনগণ। সরকারের উদারতা ও দুর্বলতা এ ক্ষেত্রে কাম্য নয়। যানবাহনে আগুন ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিরুদ্ধে আইন আছে। তার কঠোর প্রয়োগ করা হোক। রাষ্ট্রকে জনগণের নিরাপদ বসবাসের উপযুক্ত করা হোক। হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ হত্যার উৎসব, গাড়ি জ্বালানোর তৎপরতা বন্ধ হোক। সরকারি তৎপরতা আর প্রচার মাধ্যমের সক্রিয়তা বাড়–ক। তাহলেই রাজনীতির ঘাতক-বাহক নেতাদের তৎপরতা কমবে। রক্ষা পাবে মানুষ।
false
hm
বাঙালিদের আর বেহেস্তে ঢুকতে দেয়া হয় না ১. সগীরের ছোট মামার ইন্তেকালের বয়স এখনও হয়নি। কিন্তু তিনি শৈশব থেকেই একটু এঁচড়ে পাকা। ক্লাস এইটে থাকতেই তিনি একটি মাত্র টিকিট সম্বল করে অম্লানবদনে একাধিক সিনেমার আসর থেকে বেরিয়ে একটি স্টার ফিল্টার বিড়ি পান করতেন বলে আমাদের বহুবার জানিয়েছেন। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে উঠে হুলুস্থুলু প্রেম শুরু করেছিলেন অনার্সের এক শেষবর্ষীয়ার সাথে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষে উঠে এক ইস্কুলগামিনীকে ফুসলি দিয়ে জপিয়ে এক বিকেলে দু'জনেই ইলুপ্ত হন। ইলোপের এমন ঘটনায় ঢিঁঢিঁ পড়ে যাওয়ার পর দেখা গেলো তারা বিলুপ্ত হননি, আবার ঘাটের কলসী ঘাটে ফিরে এসেছেন, তবে বিবাহিত অবস্থায়। আর বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে বেরোনোর আগেই তিনি ব্যবসায় নেমে টেন্ডার-ফেন্ডার হেঁকে একেবারে দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে বসেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট তিনি সংগ্রহ করেন যখন, তখন সগীরের মামাতো ভাই বিল্লু কথা বলতে শিখে গেছে। নানা আড্ডায় সগীরের মামা বিড়িতে বজ্রাদপি কঠোর চুমুক দিয়ে বলতেন, আই ওয়াজ অলওয়েজ অ্যাহেড অফ মাই টাইম! অতএব এমন আগুয়ান মামা যে কিছুটা অপরিণত বয়সেই মরণের দুয়ারে ঘা মারবেন, তা বিচিত্র কিছু নয়। হাসপাতালে একেবারে খোদ আইসিইউ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তাকে। ডাক্তাররা ৭২ ঘন্টার একটা অনিশ্চয়তার কথাও বলছিলেন। কিন্তু ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই তিনি আবার বিপুল বিক্রমে ফিরে এলেন। অভ্যাস। হাসপাতালে চোখ খুলে লোকে সাধারণত, আমি কে, আমি কই, আমি কেন, আমি কীভাবে জাতীয় প্রশ্ন করে থাকে। অন্তত সিনেমা নাটকে তেমনটাই দেখেছি। সগীরের মামা চোখ খুলেই বললেন, বাঙালি আর বেহেস্তে ঢুকতে পারবে না! ঠিক উদ্বেগ নয়, সংশয় নয়, একটা বিষণ্ণ উপলব্ধির সুর তার গলায়। মামী ডুকরে উঠলেন, ওগো ... ! মামা ভুরু কুঁচকে ডানে বামে তাকিয়ে বললেন, এ কী? এত লোকজন কেন? তোমাদের কাজকাম কিছু নাই? মিনিট পনেরো পরেই কেবিন খালি হয়ে গেলো। এমনকি মামীকেও হাঁকিয়ে দিলেন মামা। ঘরে কেবল আমি আর সগীর। আমরা সমবেদনার সুরে জানতে চাইলাম, মামা ভালো আছেন? মামা বিষাদমাখা চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, না রে! ভালো নাই! অনেক টেনশন! সগীর বললো, কীসের টেনশন মামু? মামা বললেন, একটা আয়না যোগাড় করতে পারবি? আমি আর সগীর একটু অস্বস্তি নিয়ে একজন আরেকজনকে দেখে নিয়ে বলি, আয়না কেন মামা? মামা বলেন, চেহারাটা খুঁটিয়ে দেখা দরকার। ... আচ্ছা, আমাকে দেখলে কি ভূটানি মনে হয় না? মনে মনে ভাবি, যমের দুয়ার থেকে একেবারে অক্ষত ফিরতে পারেননি মামা। মস্তিষ্কে একটা কিছু গিয়ানজাম হয়েছে। সগীর বলে, না ভূটানিরা এত কালা হয় না মামু! মামা বিরক্ত হন, আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, কথাটা সত্য নাকি ভাইগ্না? ভূটানিরা নাকি এত কালা হয় না? আমি আমতা আমতা করে বলি, জানি না মামা। কিন্তু আপনি তো অনেক দৌড়াদৌড়ি করেন ... রোদে রোদে ঘুরলে ভূটানি কেন, নরওয়ের লোকেও কালো হয়ে যাবে। মামা একটা সন্তুষ্ট হাসি দেন। বলেন, যাক বাঁচলাম। এইবার নাগরিকত্বের জন্যে আবেদনটা করে ফেলতে হবে। বাঙালি আর থাকা যাবে না! সগীর বলে, ক্যান, বাঙালি থাকা যাইবো না ক্যান? মামা বলেন, কী বললাম? বাঙালিকে আর বেহেস্তে ঢুকতে দেয়া হবে না! ২. গল্প যা শুনলাম, তা অতি জটিল। মামা নাকি মরেই গিয়েছিলেন। সগীর অবশ্য ত্যানা প্যাঁচানোর চেষ্টা করছিলো, মামা ধমকে থামিয়ে দিলেন, বললেন, ত্যানা প্যাচাইচ্চা! আমি বললাম, মৃত্যু ব্যাপারটা কেমন মামা? মামা ধরা গলায় বললেন, খুবই খারাপ কিসিমের ব্যাপার ভাইগ্না! আমারে প্রথমে নিয়া গেলো একটা পরীক্ষার হলে ...। আমি চমকে উঠে বলি, কারা? মামা বললেন, দুইটা লোক। একজনের গায়ের রং লাল, আরেকজনের গায়ের রং নীল। চেহারা সুরত খুব একটা সুবিধার না। একজন দেখতে অনেকটা শক্তি কাপুরের মতো, আরেকজন এই সগীরের বাতেন কাকার মতো। আমি খাড়াইয়া ছিলাম চুপচাপ, আইসা কয়, চলো, তোমার অ্যাডমিশন টেস্ট এখন! সগীর আমার দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকায়। আমি বলি, তারপর? মামা বললেন, খুব ভয় পাইসিলাম। কইলাম, আমার সাথে তো জ্যামিতি বক্স নাই! কলম নাই! পেন্সিল নাই! ইরেজার নাই! শার্পনার নাই! দুইজনই এই কথা শুইনা চেইতা গেলো। কয়, অ্যাডমিট কার্ড আনছো? আমি বললাম, আপনার সাথে অ্যাডমিট কার্ডও ছিলো? মামা বললেন, অ্যাডমিট কার্ডের কথা শুইনা খুব ভয় পাইসিলাম, কিন্তু পকেটে হাত দিয়া দেখি শক্তমতো কী জানি একটা ঠ্যাকে। বাইর কইরা দেখি একটা অ্যাডমিট কার্ড। আমার ছবি লাগানো! সগীর অস্ফূটে বলে, তারপর? মামা বললেন, তারপর আবার কী! নিয়া গেলো পরীক্ষার হলে! আরো আরো লোকজন সেইখানে। নানা লোক নানা দেশের। সবাইরে একটা কইরা কোশ্চেন ধরাইয়া দিলো। আমি বললাম, বাংলা না ইংরেজি? মামা বললেন, আমারটা বাংলাতেই আছিল! সগীর বললো, কী কোশ্চেন আসছিলো, মনে আছে? মামা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, নাহ! কোশ্চেনগুলি ভুইলা গেছি। কিন্তু কঠিন কিসু ছিলো না। পাশে বসছিলো এক পাকিস্তানী, শুয়োরের বাচ্চা খালি একটু পর পর পেন্সিল দিয়া গুতায় আর উত্তর জিগায়। আমি বললাম, সবাইকেই এক প্রশ্ন করে নাকি? মামা বললেন, জানি না। শালার নামে কমপ্লেইন করছিলাম। এক্সপেল খাইছে তারপর। কানে ধইরা বাইর কইরা দিছে, হে হে হে। সগীর বললো, তারপর? মামা বললেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর অটোমেটিক মার্কিং হইয়া গেল, বুঝলি? দেখি খাতার উপরে আপনা থিকাই নম্বর ভাইসা উঠলো! সগীর বললো, কত পাইসিলা মামা?! মামা গর্বিত মুখে বলেন, বিরাশি! লেটার পাইয়া পাশ! আমি বললাম, তারপর? মামা বললেন, এরপর আমারে নিয়া গেলো ভাইভায়! আমি বললাম, সেইখানে কী ঘটলো? মামা গোমড়া মুখে বললেন, আরে সেইখানেই তো প্যাঁচ লাইগা গেলো! সগীর বলে, কীসের প্যাঁচ? মামা বলেন, আমার আমলনামা দেইখা কইলো, খুব ভালো স্কোর! কিছু লালকালি আছে, কিন্তু সেগুলি সমস্যা না। তোমার রিটেন ভালো হইছে! কিন্তু! তুমি তো বাঙালি। তোমারে বেহেস্তে পাঠান যাইবো না! আমি বললাম, এই কথা বললো?! সগীর ক্ষেপে যায়, বলে, এইরাম ডিসক্রিমিনেশান? ক্যাঠা ঐ হালায় নাটকার জানা ...? মামা বলেন, সবুজ রঙের একটা লোক! দেখতে তোর মামীর ইয়াসিন মামার মতো অনেকটা, কিন্তু ধর তার দ্বিগুণ লম্বা! আমি বললাম, কেন? বেহেস্তে ঢুকতে দিবে না কেন? মামা বলেন, আমিও সেই কথাই জিগাইলাম। কইলাম, বেহেস্ত কি তুমার বাপের যে ঢুকতে দিবা না? সে কয়, না আমাগো উপর পরিষ্কার অর্ডার আছে, বেহেস্তে আর বাঙালি না! সগীর বলে, ক্যান বাঙালি কী দুষ করছে? মামা বলেন, আমিও এই কথাই জিগাইলাম! তারপরে সব খুইলা কইলো! ৩. বেহেস্তে বাঙালি ঢুকতে না পারার পেছনে কারণ অবশ্য, মামার মুখে যা শুনলাম, অতিশয় গুরুতর। আসল নামধাম প্রকাশ করা হয়নি, দুই বেহেস্তি, ধরা যাক তাদের নাম দবীর আর কবীর, তারা প্রতিবেশী ছিলো। দুইজনের ভাগেই সত্তরটা করে হুর আর সত্তরটা গেলমান। বাড়ির সামনে দুধের নহর। ফলমূলের গাছ। গাছের ডালে পাখি ডাকে। একদিন দবীর এসে কবীরের দরজায় টোকা দিলেন। হাতে একটা বাক্স। বেহেস্তে মিষ্টি পাওয়া যায় না, তিনি নিজের গাছের কয়েকটা আম নিয়ে এসেছেন। কবীর তখন ঘরের মেঝেতে শোয়া, এক হুর তার পিঠ মালিশ করে দিচ্ছিলো, তিনি বিরক্ত হয়ে উঠে এলেন গজগজ করতে করতে, শালার বেহেস্তেও লোকজন খালি অসময়ে দরজা ধাক্কায়! দরজা খোলার পর দবীর লম্বা সালাম দিয়ে বললেন, ভাইসাহেব, কেমন আছেন? আমি দবীর, আপনার পাশেই থাকি। ভাবলাম চিনপরিচয় করি! কবীর দবীরের সাথে পরিচিত হলেন, একটা গেলমানকে ডেকে বললেন, নুরু চা দিস! বিস্কুট দিস লগে! জাম্বুরা থাকলে ছুইল্যা দিস! কন্দর্পকান্তি গেলমান একটু পরেই চা-বিস্কুট-জাম্বুরা নিয়ে হাজির। দবীর চকচকে চোখে তাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে কবীরকে চোখ টিপে বলেন, বাহ! আপনার ভাগের গেলমানগুলি তো খুবই ছুইট! আমারে কতগুলি দিছে, কোনো লছম নাই বুঝলেন ভাইসাব? সারাটা জীবন আমি শুধু বঞ্চিত হইলাম! কবীর সাহেব বললেন, আপসোস করে আর কী করবেন বলেন? এ সবই তো আপনার কর্মফল। উপরওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। দবীর অসন্তুষ্ট মুখে চায়ের কাপ তুলে নিয়ে বললেন, না না ভাইসাব, এতো সরল হলে বেহেস্তে টিকতে পারবেন না। বেহেস্ত খুব খারাপ জায়গা, পদে পদে সাবধান থাকতে হবে আপনাকে! নিজের ভালোটা আদায় করে নিতে হবে! আমি তো শুঞ্ছি প্রচুর দুই নাম্বারি হয় এইখানে! আমার এক বন্ধু সত্তরটার জায়গায় আশিটা হুর পাইছে! ক্যাম্নে পাইছে? কর্মফল দিয়া? মোটেও না! জায়গামতো লবিইং করতে পারলে বেহেস্তেও অনেক কিছু কইরা ফালানি সম্ভব! কবীর শান্তশিষ্ট ভালোমানুষ, নিরুপদ্রব জীবনযাপন করে এসেছেন, তিনি এইসব গুহ্য তথ্য শুনে হতবাক হয়ে গেলেন। চায়ে চুমুক দিয়েই দবীরের চোখ গোলগোল হয়ে গেলো! বাহ বাহ বাহ, কী ভালো চা! আহা! আপনার ভাগ্যটা সত্যই ভালো ভাইসাহেব! এইরকম ভালো গেলমান পাইছেন! আমারগুলি যদি চা বানাইতে পারতো! চা তো না, বানায় ঘোড়ার মুত! কবীর সাহেব কিছু বলার আগেই দবীর গলা নামিয়ে চোখ টিপে বলেন, তা এই গেলমানগুলি খাটে কেমন? কবীর সাহেব জিভ কেটে বলেন, ছি ছি ছি ছি ছি ... না না দবীর সাহেব, আমার ঐসব বদভ্যাস নাই! বালকপ্রেমে আমি নাই! মাঝে মাঝে আমার হুরদের নিয়ে একটু শুই ... কিন্তু ঐসব গেলমান টেলমানের মধ্যে আমি নাই! ওরা আমার ঘরটর সাফ করে দেয়, চা বানায়, রান্নাবান্না করে মাঝে মাঝে, ফলমূল পেড়ে দেয়, আর বাকিটা সময় নিজেদের মতো থাকে। দবীর সাহেব উৎফুল্ল মুখে বলেন, আরে কাম অন ম্যান! এইটা বেহেস্ত! গেলমান কি চা বানানোর জন্য দেয়া হইছে আপনারে? আজকেই টেস্ট করে দেখেন। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আপনার ভালো লাগবে! কবীর সাহেব হাতজোড় করে বললেন, ভাই এইগুলি অভ্যাসের ব্যাপার। আমার অভ্যাস নাই। আপনার যদি ভালো লাগে, ভালো কথা। আমারে শুধু শুধু টাইনেন না। দবীর সাহেব আরো কিছুক্ষণ চা খেয়ে, বিস্কুট খেয়ে, জাম্বুরা খেয়ে বাজে বকে বিদায় নিলেন। পরদিন কবীর সাহেব কী কাজে যেন নুরুকে ডেকে আরে সাড়া পেলেন না। বার কয়েক ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে বিরক্ত হয়ে তিনি লুৎফা নামে এক হুরকে ডেকে বললেন এক কাপ চা বানিয়ে দিতে। লুৎফা চা নিয়ে এলে পরে কবীর সাহেব জানতে চাইলেন, লুৎফা দ্যাখ তো নুরু কই? বেহেস্তেও যদি একটা কাজে কাউরে ডাইকা না পাই, দেশটা চলবে কীভাবে? লুৎফা মুখ নিচু করে বললো, নুরুরে তো পাশের বাড়ির দবীর সাহেব ডেকে নিয়ে গেছে! কবীর সাহেবের মাথায় আগুন ধরে যায়। তার বুঝতে বাকি থাকে না, দবীর কী উদ্দেশ্যে নুরুকে ডেকে নিয়ে গেছে। তিনি গর্জন করে বলেন, এতবড় সাহস দবীরার! সে আমার গেলমান ডেকে নিয়ে যায়! কেন, তারে কি গেলমান দেয়া হয় নাই? তুই এক্ষণি নুরুরে ডাইকা নিয়ায়! লুৎফা হুকুম তামিল করতে চলে গেলো। আধঘন্টা পরও যখন কোনো সাড়া তিনি পেলেন না, তখন বুঝলেন, লুৎফাও পাপিষ্ঠ দবীরের কবলে আক্রান্ত। তিনি পায়ে স্যান্ডেল পরে নিজেই ছড়িখানা হাতে নিয়ে বেরিয়ে দবীরের বাড়ির দরজায় ঘা মারলেন। একটু পর দবীর হাঁপাতে হাঁপাতে দরজা খুলে দিলেন। আরে কবীর সাহেব যে! আসেন আসেন বসেন! ওরে লিঙ্কন, দুই কাপ চা দে! দরাজ গলায় বলেন তিনি। কবীর সাহেব গম্ভীর মুখে বলেন, দবীর সাহেব, আপনি আমার গেলমানকে ডেকে পাঠাইছেন কেন? দবীর বলেন, হেঁ হেঁ হেঁ ... কী করবো বলেন? আপনি তো আপনার রিসোর্স যাকে বলে ঠিকমতো ইউটিলাইজ করবেন না। আপনার গেলমানরা দিনরাত ফ্রি থাকে, তারা দাড়িয়াবান্ধা খেলে, এইসব দেখে দেখে আমার গেলমানগুলিও ইদানীং বখে যাচ্ছে। তো ভাবলাম, এদের একটু শাসন করি। তাই দুইটা নীতিকথা শোনানোর জন্য ডাকলাম আর কি! কবীর সাহেব গম্ভীরতর মুখে বললেন, নুরু এখন কই? দবীর বলেন, নুরুকে তো আপনার হুর লুৎফা এসে ডেকে নিয়ে গেলো এই একটু আগে! দেখেন তারা আবার দুইজনে কোথায় কী খেলে! আপনি ভাইসাহেব এদের একদম শাসন করেন না, দুইটাই চরম বেয়াদব! মাঝে মাঝে আমি ওদের বকে দিবোনি! কবীর আর সহ্য করতে পারলেন না, হুঙ্কার দিয়ে বললেন, চোপরাও জোচ্চোর! আর কোনোদিন যদি আমার হুর গেলমানকে তোমার কম্পাউন্ডের মধ্যে দেখি, পিটাইয়া তোমার হাড্ডি গুঁড়া করবো, বুচ্ছো? দবীর থমথমে মুখে ক্রুর হাসি দিয়ে বললেন, বুঝলাম কবীর, প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্কে তুমি বিশ্বাসী না! যাও বাইর হও, আমার বাড়িতে তোমার কপালে চা নাই! কবীর বাড়ি ফিরে এলেন। কিন্তু তাঁর কপালে শান্তি ছিলো না। দবীর বেহেস্তে বৃহত্তর নোয়াখালি সমিতির সদস্য, আবার কী কী সূত্রে যেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম সমিতিতেও তার যাতায়াত আছে। কবীরের বাড়ি থেকে প্রায়ই তাঁর গেলমানরা নিখোঁজ হওয়া শুরু হলো। তিনি একদিন সকালে বেহেস্তের কনস্ট্যাবুলারিতে গিয়ে অভিযোগ ঠুকলেন। দবীর তাঁর গেলমানদের বল ও প্রতারণাপূর্বক অপহরণ করে। তারপর কী হয় তা জানে শ্যামলাল। হেড কনস্টেবল বয়স্ক লোক, তিনি বললেন, এ আর নতুন কী? বেহেস্তে এসেছেন বলে গা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না! জোর যার মুল্লুক তার। আপনার গেলমানদের আপনি দৌড়ের ওপর রাখলেই পারেন? কবীর মহা বিরক্ত হয়ে বললেন, কী আপদ, আমার এসবের অভ্যাস নাই! আর এ কেমন কথা? আপনি আইনের লোক হয়ে আমাকে দুষছেন? দবীরকে গ্রেপ্তার করুন। জেলের লপসি খাওয়ান। হেড কনস্টেবল কান চুলকাতে চুলকাতে বললেন, বেহেস্তে জেল সিস্টেম নাই তো। বিকল্প হিসাবে দোজখে পাঠানো যায়, কিন্তু ঐটার এখতিয়ার আমার নাই। আপনার কি উপরমহলে কারো সাথে চেনাজানা আছে? থাকলে একটু যোগাযোগ করেন। কবীর বিহ্বল হয়ে ফিরে এলেন। বাড়ি ফিরে চা চাইলেন গলা চড়িয়ে, কিন্তু কোনো সাড়া পেলেন না। রাগে কবীরের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। তিনি একটা রূপালি ঘন্টা বাজিয়ে জেনারেল অ্যাসেম্বলি কল করলেন। এ ঘন্টা বাজালে তার সকল হুর আর গেলমানকে উঠানে ফল ইন করতে হবে। বাইরে বেরিয়ে এসে কবীর দেখলেন, গুটি কয়েক হুর কেবল গুটি গুটি পায়ে এসে জড়ো হয়েছে। বাকিরা লাপাত্তা। মাথা গুণে তিনি দেখলেন, মোটে আটজন হুর উপস্থিত। বাকি বাষট্টিজন নিখোঁজ। কবীর একটা শক্ত লাঠি সংগ্রহ করে তখনই দবীরের বাড়ি আক্রমণ করলেন। ৪. আমি রূদ্ধশ্বাসে বলি, তারপর? মামা বিরক্ত হয়ে বললেন, তারপর আর কী? লাগলো গণ্ডগোল। মাইর খাইয়া দবীর জাতীয়তাবাদী বেহেস্তি দলের ৮৭২ নাম্বার ওয়ার্ডের কমিশনারের কাছে গিয়া শেল্টার লইলো। সে তার মতো আরো কিছু গুণ্ডাগোছের বেহেস্তিরে নিয়া কবীরের বাড়ি আক্রমণ করলো। কবীর তার পরদিনই বেহেস্তি লীগে জয়েন করলো। তারপর তো বুঝসই কী হয় না হয়। সগীর বলে, বেহেস্তে আর্মি নামছিলো নাকি তারপর? মামা বলেন, আমিও এই কথা জিগাইছিলাম, হালার পুত কিসু কয় না, খালি কয়, তোমারে বেহেস্তে ঢুকান যাইবো না! আমি বললাম, তারপর? দোজখে পাঠায় দিলো আপনাকে? মামা বললেন, এহ, এতো সোজা নাকি? বিরাশি পাইছি রিটেনে! চাইলেও পাঠাইতে পারতো নিকি? সগীর বললো, তাইলে সমাধান কী হইলো? মামা বললেন, আমারে আরো হায়াত বরাদ্দ করা হইলো। বললো, যাও দুনিয়াতে আরো কিছুদিন কাটাইয়া আসো, এইদিকে পরিস্থিতির একটু উন্নতি হইলে তোমার ফাইল আবার বাইর করা হবে। এই বইলা আমার ফাইলে একটা লালফিতা গিট্টু মাইরা আলমারিতে রাইখা দিলো। আমি বললাম, তারপর? মামা বললেন, ফিরার পথে দেখলাম লাইন ধইরা বেহেস্তে যাইতেছে কিছু লোক। শুনলাম তারা ভূটানি। ঠিক করছি ভূটানের নাগরিকত্ব লইয়া লমু। আমি, তোর মামী, বিল্লু ... সবাই! তোরাও দেরি করিস না! ভূটানের এমবেসিতে একটা ফোন লাগাই খাড়া। [সমাপ্ত]
false
rn
মধুর গুনাগুন মধু হল এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি করেএবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু স্বাদ, রং, হালকা সুগন্ধ এবং ঔষধিগুণাবলীর জন্য প্রসিদ্ধ। সুন্দরবনের বেশীরভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন। সুন্দরবনের মাওয়ালী সম্প্রদায়ের লোকেরা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রয় করে জীবন নির্বাহ করে।মধু চিনির চাইতে অনেক গুণ মিষ্টি। তরল মধু নষ্ট হয় না, কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়।প্রাচীন গ্রিসের খেলোয়াড়েরা মধু খেযে মাঠে নামতো ; কারণ মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্রাইকোজেনের রিজার্ভ গড়ে তোলে। রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে মস্তিষ্কের ক্রিয়াক্ষমতা ভালো থাকে। নিয়মিত মধু পানে রোগ-বালাই হ্রাস পায় কেননা মধু মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মধু একটি ভালো বলকারক ও উত্তেজক খাদ্য। অনেকে দীর্ঘসূত্রী সর্দি-কাশিতে বা যাদের ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগে তাদের জন্য উপকারী বলে দাবি করে আসছেন। মহান আল্লাহ চৌদ্দশত বছর আগে তাঁর এক ‘উম্মী’ নবীর কাছে নাজিলকৃত কালামে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- “আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন, পর্বতগাত্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু ডালে গৃহ তৈরি কর, এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে চোষণ করে নাও এবং চল স্বীয় রবের সহজ-সরল পথে। তার পেট থেকে বের হয় নানা রঙের পানীয় যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে রয়েছে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নির্দশন।” পবিত্র কোরআনের আটভাগের একভাগ অর্থাৎ আটশ’রও বেশি আয়াত প্রাকৃতিক ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কিত তথা বিজ্ঞান সম্পর্কিত। মধুতে যথেষ্ট পরিমাণে শর্করা আছে। মধুতে ২৫-৩৭% গ্লুকোজ, ৩৪-৪৩% ফ্রুকটোজ, ০.৫-৩% সুক্রোজ এবং ৫-১২% ম্যাটোজ থাকে। গ্লুকোজ তো আছেই, বাকি শর্করাটুকুও রেচন প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ গৃহীত মধুর প্রায় ৭৫ থেকে ৮০% গ্লুকোজে পরিণত হচ্ছে। প্রতি গ্রাম মধু থেকে ২.৮৮ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে সমান পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। মধু একটি ঘন শর্করাজাতীয় খাদ্য। মধু শরীরকে রিলাক্স করে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে এবং সহজে ঘুম আনতে সাহায্য করে। মধু একটি প্রাকৃতিক এন্টি বায়োটিক, যা শরীরের সব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ইনফেকশন দূর করে। ফলে শরীরের কাজ করার প্রণালী উন্নত হয় এবং হেলদি থাকে।এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানি, আধা চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ মধু। গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন লেবু-মধু পানীয়। আপনি চাইলে এর সঙ্গে সবুজ চা মেশাতে পারেন।সাধারণত সকালে উঠেই প্রথম পানীয় হিসেবে খালি পেটে এটি খাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরে সকালের নাস্তা খেতে পারেন।যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই এটি খালি পেটে খাবেন না। কারণ লেবু এসিডিক।গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিনবেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারে।মধু চাষীরা বিভিন্ন সিজনে তাদের মৌ বক্স নিয়ে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, রাজশাহী, সাভার, শেরপুর, ময়মনসিংহ, বরগুনা ও সুন্দরবনের সাতক্ষীরায় চলে যান। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করে ফিরে আসেন। আবার কেউ কেউ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে উৎপাদিত মধু বিক্রি করে দেয়।
false
rg
কবি শামসুর রাহমানের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি!!! আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংযোগ-এর উগ্যোগে গতকাল ১৭ আগস্ট ২০১৬, বুধবার, কবি শামসুর রাহমান-এর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শাহবাগস্থ কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারে এক স্মরণ সংযোগ আয়োজিত হয়। 'কবি শামসুর রাহমান স্মরণ' শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ও শিশু সাহিত্যিক জনাব ইয়াফেস ওসমান। 'কবি শামসুর রাহমান স্মরণ' অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কবি আসাদ মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও কলা অনুষদের ডিন ড. বেগম অাখতার কামাল ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি দিলদার হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংযোগের সাধারণ সম্পাদক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি মাসুদ পথিক। 'কবি শামসুর রাহমান স্মরণ' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ও শিশু সাহিত্যিক ইয়াফেস ওসমান বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ দেশের যে কোনো ক্রান্তিকালে কবি শামসুর রাহমান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শোকার্ত আগস্ট মাসে কবি'র দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ আমি দু'জন কবি'র কথা স্মরণ করতে চাই। একজন বাংলাদেশের রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের পোয়েট অব পলিটিক্স। অন্যজন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশের পর আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম রূপকার কবি শামসুর রাহমান। আইউব খানের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বৈরাচারী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি কবিতায় ও মিছিলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা সাহিত্য থাকবে, ততদিন বাংলাদেশের এই দুই মহান কবিকে বাংলাদেশ স্মরণ করবে। অনুষ্ঠানে কবি শামসুর রাহমানের উপর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, আমার বোন রূপালী'র বক্ষ সমস্যা ছিল। একই সমস্যা ছিল আমার বন্ধু কবি আবুল হাসানের। মহাখালীর বক্ষব্যাধী হাসপাতালে তখন প্রায়ই আমি বোনের কাছে যেতাম। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। কবি আবুল হাসানও বক্ষব্যাধী হাসপাতালে প্রায়ই যেতেন। তো একবার রাহমান ভাইও বক্ষব্যাধী হাসপাতালে ভর্তি হলেন। তখন আমি রোজ একবার রাহমান ভাইকে দেখতে যেতাম। ডাক্তাররা বললেন, ওঁনার সঙ্গে বেশি কথা বলা যাবে না। আপনি আর বেশি আসবেন না। কিন্তু রাহমান ভাই বললেন, না না, নির্মল আসলে আমার খুব ভালো লাগে। ও খুব মজার মজার কথা বলে। যা শুনে আমি ওই সময়টুকু রোগের কথা ভুলে থাকি। সেই সুযোগে আমি রাহমান ভাইকে একটা প্রস্তাব দিলাম যে আপনি জীবিত থাকতেই আমি অ্যাডভান্স আপনার এলিজি লিখে ফেলি। মনে করেন এটা মৃত্যুকে মৃত্যু দিয়ে চ্যালেঞ্জ করার মত ব্যাপার আর কি! পরে রাহমান ভাই সাড়া দেওয়ায় আমি তাঁর এলিজি লিখেছিলাম। সেই এলিজি শুনে রাহমান ভাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেন। এই ঘটনার পর রাহমান ভাই অন্তত আরো প্রায় ৩০ বছর বেঁচেছিলেন। পরে একটা অনুষ্ঠানে রাহমান ভাই'র উপস্থিতিতে আমি আমার সেই কবিতা পাঠ করেছিলাম। আজকে রাহমান ভাই'র আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি সেই কবিতাটি আবার পাঠ করছি। পরে তিনি কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে লেখা সেই এলিজি পাঠ করে শোনান। অনুষ্ঠানে কবি আসাদ মান্নান বলেন, ব্যক্তি শামসুর রাহমান হয়তো আজ আমাদের সামনে নেই কিন্তু কবি শামসুর রাহমান চিরকাল আমাদের সামনে ও হৃদয়ের গহীনে থাকবেন। রাহমান ভাই'র সঙ্গে আমার অজস্র স্মৃতি। মনে পড়ে আমরা চট্টগ্রামে রাহমান ভাই'র পঞ্চাশতম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সংবর্ধনা দিয়েছিলাম। রাহমান ভাই সারাজীবন কবিতার প্রতি অত্যন্ত সৎ ছিলেন। সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে তিনি অন্তর দিয়ে ভালো বাসতেন। বিশেষ করে তরুণ কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের তিনি খুব প্রশ্রয় দিতেন। রাহমান ভাই'র সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় কারো বয়সের কথা মনে পড়তো না। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. বেগম অাখতার কামাল বলেন, কবি শামসুর রাহমানের কবিতাকে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি তিনি ছিলেন পুরোপুরি একজন নাগরিক কবি। যে বিষয়ে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা নেই, সেই বিষয়ে তিনি কখনো কাল্পনিক বা অলীক কোনো কবিতা লেখেননি। জীবনের অভিজ্ঞতা আর বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের ন্যায্য অধিকারের প্রতি গণমানুষের ও সামাজিক দায়বোধ তাঁর কবিতায় বারবার উঠে এসেছে। নাগরিক জীবনের বিশেষ করে বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে নব্বই শতক পর্যন্ত নগর ঢাকার ক্রমবর্ধমান নাগরিক জীবনের যে মূল সুর, সেই নগর ঢাকার কাব্যিক স্বরটি ছিল কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় সবচেয়ে বড় ক্যানভাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বর্তমানে কবি শামসুর রাহমান অনার্স ও মাস্টার্সে পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়। আশা করি ভবিষ্যতে কবি'র উপর দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরো অনেক কাজ হবে।অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি দিলদার হোসেন আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংযোগের পক্ষ থেকে কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে সরকারের কাছে ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। যার মধ্যে একটি ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে। দাবিগুলো হলো কবি শামসুর রাহমানের জন্মজয়ন্তী ও মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পালন করতে হবে। ঢাকার একটি সড়কের নাম কবি'র নামে করতে হবে। সড়কের মোড়ে কবি'র ভাস্কর্য নির্মাণ করে বসাতে হবে। বাংলা একাডেমি পুরস্কারের যে কোনো একটি কবি'র নামে প্রবর্তন করতে হবে। কবি'র নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে ইত্যাদি। অনুষ্ঠানে কবি শামসুর রাহমানের কর্মময় জীবনের উপর সূচনা বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা ঘটক। এছাড়া কবি শামসুর রাহমানের উপর স্মৃতিচারণ করেন ক্লাসিক্যাল সংগীত শিল্পী ওস্তাদ বাবু রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাঈম রানা, ইউ ল্যাব স্কুল ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও শিল্পী নাজমা আখতার, কবি ও অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, ছোটকাগজ অনিন্দ্য সম্পাদক হাবিব ওয়াহিদ, ছোটকাগজ লোক সম্পাদক কবি অনিকেত শামীম, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান ও কবি শামসুর রাহমানের ছোট বোনের ছেলে মানজারে নাদিম। এছাড়া অনুষ্ঠানে কবি শামসুর রাহমনের প্রতি নিবেদিত কবিতা অাবৃত্তি করেন কবি আয়শা জেবীন, কবি লিলি হক, কবি মিলন সব্যসাচী, কবি বদরুল হায়দার ও কবি সুজন হাজং। সমাপনী বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংযোগ-এর সম্মানীয় সভাপতি ও 'কবি শামসুর রাহমান স্মরণ' অনুষ্ঠানের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, কবি শামসুর রাহমানের দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ আমি রাহমান ভাই'র সঙ্গে আমার শেষ দিকের একটি বিশেষ স্মৃতির কথা বলতে চাই। নোবেল বিজয়ী ও ভারতরত্ন বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও পদ্মশ্রী বিজয়ী বিশিষ্ট লেখিকা নবনীতা দেব সেন-এর কন্যা নন্দনা সেন একবার আমাকে একটি অনুরোধ করেন। ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে ছয়টি ভাষার ছয় জন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়া হবে। আমাকে সেই পুরস্কারের একজন বিচারক হবার অনুরোধ করলেন নন্দনা সেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ থেকে একজন কবি'র নাম ও তাঁর লেখা পাঠানোর অনুরোধ করেন। প্রথমেই আমার রাহমান ভাই'র কথা মাথায় আসে। রাহমান ভাই'র যত লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে, সেখান থেকে আমি কিছু কবিতা নন্দনা সেনকে পাঠালাম। সেটা ২০০৬ সালের মার্চ মাসের ঘটনা। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দুই পয়েন্টে হারিয়ে কবি শামসুর রাহমান তখন অন্য পাঁচ জন কবি'র সঙ্গে বাংলা ভাষার পুরস্কারটি জেতেন। রাহমান ভাই তখন খুব অসুস্থ। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। ওরা দিল্লীতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কবি'র উপস্থিতি চান। কিন্তু রাহমান ভাই কিছুতেই যেতে রাজি না। নন্দনা বললেন, আপনি রাহমান ভাইকে কোনোভাবে দিল্লী পর্যন্ত নিয়ে আসেন। তারপর ওঁনার যাবতীয় টেককেয়ার করার দায়িত্ব আমার। হুইল চেয়ারে বিমানে ওঠানো নামানো যে কত কষ্টের ব্যাপার। আমাদের ফ্লাইট ছিল ঢাকা-কোলকাতা, কোলকাতা দিল্লী। কোলকাতা এয়ারপোর্টে রাহমান ভাইকে বিমানের সিঁড়ির একেবারে গোড়া থেকে এত যত্ন করে ওরা নামালেন আবার দিল্লীর বিমানে তুলে দিলেন। ওরা যে কতটা যত্ন নিলেন সেবার তা আমি নিজের চোখে দেখেছিলাম। এমন কি বিমানের পাইলট রাহমান ভাইকে না নামানোর আগ পর্যন্ত বিমানে বসেছিলেন। আমরা দিল্লীতে নামার পর থেকে ঢাকায় পুনরায় ফেরা পর্যন্ত নন্দনা রাহমান ভাই'র সবটুকু যত্ন অত্যন্ত মনোযোগের সাথে করলেন। রাহমান ভাই যে পুরস্কার পেলেন সেখানে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় রূপীর একটা চেক ছিল। নন্দনা আমাকে বললেন, রাহমান ভাই'র ভুলো মন। কোথায় হারিয়ে ফেলবেন, চেকটা আপনার কাছে রাখেন। আমরা ঢাকায় ফেরার তিন দিন পর আমি রাহমান ভাইকে সেই চেকটি দিতে যাই। শ্যামলীতে রাহমান ভাই আর আমার বাসা খুব কাছাকাছি। অথচ কী আশ্চার্য ঢাকায় নেমে তিন দিন চলে গেলেও রাহমান ভাই একবারও আমাকে চেকটির কথা টেলিফোন করেও জিজ্ঞেস করেননি। এমন নির্লোভ এবং অত্যন্ত সৎ ছিলেন রাহমান ভাই। কবিতার প্রতিও রাহমান ভাই সারাজীবন এমন সৎ ছিলেন। বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একেবারে সামনের সারিতে থেকে তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কবি শামসুর রাহমান কোলকাতা কেন্দ্রীক কবিতার কেন্দ্রকে ঢাকা কেন্দ্রীক কেন্দ্রতে পরিণত করতে পেরেছিলেন তাঁর শক্তিশালী লেখনীর মাধ্যমেই। উভয় বাংলায় তিনি তাঁর সময়ের সমানভাবে উচ্চারিত কবি। রাহমান ভাইর অনেক কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো অন্যান্য ভাষায় তাঁর কবিতা অনুবাদ করে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারলেই তাঁকে যথাযথ সম্মান করা হবে বলে আমি মনে করি। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর কবিতার শক্তি যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারলেই হয়তো আমাদের সেই স্বপ্ন একদিন স্বার্থক হবে। অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্ব শেষে চাষার পাল ব্যান্ড দলের শিল্পী যাদু রিচিল ও টগর ড্রং সংগীত পরিবেশন করে। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংযোগের সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি মাসুদ পথিক অনুষ্ঠানে আগত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আজ 'কবি শামসুর রাহমান স্মরণ' অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংযোগ যে নবযাত্রার সূচনা করলো, ভবিষ্যতে আমরা সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ও বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে আমাদের সংস্কৃতির শেকড় চেনাতে চাই। এখন থেকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি সংযোগ এরকম নিয়মিত আয়োজন করবে। .................................১৮ আগস্ট ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:২০
false
mk
জ্বলছে জামায়াত নীরব বিএনপি ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর দুঃসময়ে নিশ্চুপ বিএনপি। অতীতের মতো এবারও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই জোটের প্রধান দল বিএনপির। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার ও সর্বোচ্চ দণ্ডের এই পরিস্থিতিতে বিএনপির মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। তাদের বক্তব্য, আমরা বিএনপির মাঠের আন্দোলনের প্রধান মিত্র। অথচ আমাদের চরম দুঃসময়ে পাশে নেই বিএনপি। আমরা জ্বলছি, আর তারা নিশ্চুপ, নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে। কামারুজ্জামানের ফাঁসি নিয়ে বিএনপির নীরব ভূমিকায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব আরও বেড়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর এক কর্মপরিষদ সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপে এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের নেতা কামারুজ্জামানের রায় নিয়ে আমরা বিএনপির কাছে প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করেছিলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কখনোই কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হওয়া, গোলাম আযমের মৃত্যু-পরবর্তী শোক প্রকাশ না করে নিশ্চুপ ছিল বিএনপি। কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও বিএনপি একই অবস্থান নেয়। তিনি বলেন, জামায়াতের একের পর এক ভয়াবহ বিপদের সময়ে বিএনপি নীরব থাকায় বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। বিএনপি আমাদের ব্যবহার করছে। জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে জামায়াতে ইসলামী। একদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের একের পর এক শীর্ষ নেতার সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হচ্ছে, সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে দলের নিবন্ধন বাতিলের আশঙ্কা তো রয়েছেই। খাতা-কলমে নিষিদ্ধ না হলেও সারা দেশে সংগঠনটির প্রায় সব কার্যালয় কার্যত বন্ধ রয়েছে। অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দী রয়েছেন। হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন অসংখ্য নেতা-কর্মী। এ অবস্থায় বিএনপিও তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মৃত্যুর পর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শোক জানানো হয়নি। সমবেদনা জানাতে গোলাম আযমের বাসায় বিএনপির কোনো নেতা যাননি। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের রায় ঘোষণার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে না। এমনকি এ ইস্যুতে তাদের ডাকা হরতালে নৈতিক সমর্থনও মিলছে না বিএনপির কাছ থেকে। এদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, একই জোটে থেকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে একসঙ্গে মাঠে থাকলেও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের সাজার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর কোনো কর্মসূচিতে পাশে থাকবে না দল বিএনপি। এমনকি জামায়াতের কর্মসূচিতে সমর্থনও দেবে না বিএনপি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনি প্রক্রিয়ায় কামারুজ্জামানের সাজা দিয়েছে। এটা আদালতের বিষয়। এ নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সবারই শ্রদ্ধা জানানো উচিত বলে আমি মনে করি। এর বাইরে কিছু বলতে চাননি তিনি। বিএনপি নেতারা বলেন, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত হলেও তারা আলাদা একটি রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিকভাবে তারা যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। সে স্বাধীনতা তাদের আছে। তারা যে জন্য কর্মসূচি দিয়েছে তাতে আমাদের ভিন্নমত থাকাই স্বাভাবিক। বিএনপি একমত হলে তো একসঙ্গেই কর্মসূচি দিতে পারত এবং একসঙ্গে পালন করত। অতীতে কি কখনো এমন হয়েছে? তারা বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।তবে তা যেন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হয়। তারা বলেন, জামায়াতের এমন কর্মসূচিতে বিএনপির পাশে থাকার প্রশ্নই আসে না। - See more at: Click This Link
false
fe
তবু দেশে শান্তি আসুক তবু দেশে শান্তি আসুকফকির ইলিয়াস==================================প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই কিছু সুবিধাবাদী থাকে। তারা কখনোই গণমানুষের স্বার্থ দেখে না। তাদের দল ক্ষমতায় গেলে নিজেরা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। বাংলাদেশে অবরোধের নামে যা ঘটছে, এর মূল পরিকল্পকও এরাই। কোনো রাষ্ট্রে যখন রাজনৈতিক গৃহবিবাদ শুরু হয়, তখন অবৈধ অস্ত্রধারীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারাই এখন সক্রিয়। এই চরম ক্রান্তিকালের সব কুফল ভোগ করছে দেশের নিুবিত্ত মানুষ। তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। তারা যাবে কোথায়? তাদের নিজস্ব গাড়ি নেই। তাই বাস-রিকশাই ভরসা। আর পোড়ানো হচ্ছে মূলত বাস-টেম্পো-রিকশাই।যাদের পোড়ানো হয়েছে, তাদের দেখতে গিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ওরা যা বলেছে, তা মিডিয়ায় আমরা পড়েছি, দেখেছি। এ কাজ কোনো মানবতাবাদী মানুষ করতে পারে না। তাহলে যারা করছে, তারা কার স্বার্থে করছে? আমরা আবারও পড়তে পারি একজন গীতা সরকারের বক্তব্য। তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেননি। আমরা আমাদের স্বামীরটা খাই। আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। ... আমরা ভালো সরকার চাই। ... আমরা অসুস্থ সরকার চাই না।’ তিনি বলেছেন, ‘ওরা যে বোমাগুলো মারে বা যাই মারে, ওদের শনাক্ত করুন এবং যারা অর্ডার দেয়, তাদের পরিবারের লোককে ধরে ধরে আপনারা আগুনে পুড়িয়ে দেন। ওরা অর্ডার দিতে পারে, আমাদের তো রক্ষা করতে পারে না। আমাদের জন্য আপনারা সরকার।’মানুষ কতটা অসহায় হলে এমন কথা বলতে পারে! এই যে অবরোধ চলছে, এর শেষ কোথায়? ট্রেন চলছে না। বিমানের ফ্লাইট ছেড়ে আসতে পারছে না। কারণ মানুষ ঢাকা আসতে পারছেন না। সবকিছু এখন নষ্টদের দখলে। এই যে ফ্রাংকেনস্টাইন রাজনীতিকরা তৈরি করেছেন, এদের রুখবে কে?প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার সাহায্য চেয়েছেন। আমরা বিভিন্ন চ্যানেলের টিভি ফুটেজে দেখেছি কারা আগুন লাগিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। এদের শনাক্ত করা গোয়েন্দাদের দায়িত্ব। মিডিয়া কিংবা সাধারণ মানুষ তা পারবে না। এর মাঝে আমরা পড়েছি আরও কিছু অদ্ভুত সংবাদ। কোথায় ককটেল মারা হবে, কোথায় শিবির মিছিল করবে তা নাকি আগেভাগেই জানেন কিছু সাংবাদিক! জানানো হয়, ওই স্থানে যান এখনই ককটেল ফুটবে কিংবা এখনই মিছিল হবে। ক্যামেরা রেডি- মোবাইলে জানাতেই ককটেল বিস্ফোরণ। কিংবা মিছিল।সাংবাদিকতায় এটি নাকি এখন একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। হেফাজতের আন্দোলনের সময় এপিসি দিয়ে গুলির ফুটেজ না পেয়ে পুলিশকে অনুরোধ করলে অযথাই গুলি ফুটানো হতো। ঠিক এমনই একটি ঘটনায় আটক হয়েছেন একটি বেসরকারি টিভির এক সাংবাদিক ও এক ক্যামেরাম্যান। বিরোধী দলের অবরোধ চলাকালে ককটেল হামলার প্ররোচনার অভিযোগে আটক দু’জনকে চারদিনের রিমান্ড দিয়েছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়ার আদালত। এর আগে সকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ককটেল হামলার ছবি সংগ্রহের সময় তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা। কোথায় যাচ্ছে দেশ? এসব সংবাদের শিরোনাম হবেন সাংবাদিকরা? কী জঘন্য ক্রান্তিকাল!অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের কেউ কেউ নাকি নিজ এলাকায়ই যেতে পারছেন না। এটা কেমন রাজনীতি? নেতা এলাকায়ই যেতে পারবেন না! কী করেছেন অতীতে তারা? কেন তারা গণরোষের শিকার? খবর বেরিয়েছে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও প্রতিরোধের মুখে যেসব প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছেন না, তাদের মনোনয়ন বাতিলের চিন্তাভাবনা করছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা ও মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হলেও এখনও অনেক প্রার্থী ঢাকায় বসে আছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে এলাকায় বিক্ষোভ, ভাংচুর, সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। কোনো কোনো প্রার্থীকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন অর্ধশত প্রার্থীর একটি তালিকা তৈরি করেছে। মনোনয়ন যারা পেয়েছেন তাদের পক্ষে-বিপক্ষে মারামারি, আনন্দ উল্লাস শুরু হয়েছে রীতিমতো। এটা কেমন গণতান্ত্রিক আচরণ?আমরা বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে দেখি, নির্বাচনী বোর্ড মনোনয়ন ফাইনাল করার পর ওই প্রার্থীর পক্ষেই সবাইকে খাটতে হয়। অথচ আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা নিজ নিজ দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হওয়ার লাইন দীর্ঘ করছেন। কী বিচিত্র মানসিকতা! কী অভিনব ক্ষমতার খায়েশ!বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক দল যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। জাতিসংঘ এই নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখবে কি-না, কিংবা রাখতে পারবে কি-না- প্রশ্ন আসছে তা নিয়েও। আপাতদৃষ্টিতে বিদেশে বসে আমরা পর্যবেক্ষক হিসেবে যা ধারণা করছি, তার কিছু চুম্বক অংশ পাঠককে শেয়ার করতে চাই। দৃশ্যগুলো (আমার ব্যক্তিগত মতে) এ রকম।রাজনৈতিক সমঝোতা শেষ পর্যন্ত হবে না। একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দশম জাতীয় সংসদ শপথ নেয়ার পর ওই সংসদের নেপথ্য প্রহরী হিসেবে দেশে জরুরি অবস্থাকালীন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে। সামরিক বাহিনী নির্বাচনের আগেই যদি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস দমন ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে আসে, তাদের মেয়াদকাল কিছুটা দীর্ঘই হতে পারে। এই ক্রান্তিকালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কোনো সুযোগ-সুবিধা কাটডাউন করে কি-না তা দেখার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।এ অবস্থার মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ যদি দুই থেকে তিন বছর ক্ষমতায় থাকতে পারে, তাহলে ওই সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন হবে, তা এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তারপরও বলি, আমার এ ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হোক। রাজনৈতিক সমঝোতা হোক। অবরোধ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাক বাংলাদেশ। এটা বিজয়ের মাস। এ মাসে বাঙালি জাতি বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আমরা কি প্রজন্মের জন্য এ বিজয়কে চিরস্থায়ী শান্তিতে পরিণত করে যেতে পারব না? আমরা কি পারব না মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত হতে?না, ঐক্যের নামে আলবদর-রাজাকার শক্তির আস্ফালনকে মেনে নেয়া যায় না। যারা এদেশের শিল্প-সংস্কৃতি-জাতীয় সঙ্গীত-জাতীয় স্মৃতিসৌধকে সম্মান করে না, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে না। বিজয়ের মাসে আমাদের অগ্রসরমান প্রজন্মের মননে এই চেতনা জাগ্রত হোক। ---------------------------------------------------------------দৈনিক যুগান্তর // ঢাকা // ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ মঙ্গলবার প্রকাশিত
false
fe
None অম্লান দত্ত । বিশিষ্ট একজন বুদ্ধিজীবি । ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহন করেন কুমিল্লা জেলায়। দেশ বিভাগের সময় কলকাতাবাসী হন । ছিলেন অর্থনীতির শিক্ষক। দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ - ''উন্নয়নের তত্ত্ব ও ভবিষ্যত '' ,''সাম্যবাদের সংকট ও অন্যান্য রচনা'' , '' দ্বন্দ্ব ও উত্তরণ'' , '' বিকল্প সমাজের সন্ধানে'' , '' সমাজ সংস্কৃতি স্মৃতি '' ইত্যাদি।গেল ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বৃহস্পতিবার ৮৬ বছর বয়সে কলকাতায়প্রয়াত হয়েছেন এই কৃতি মানুষটি ।তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই লেখাটি এখানে তুলে দিলাম ।----------------------------------------------------------------------মননের মূল্য অম্লান দত্ত ====================================== সংস্কৃতে একটি চমৎকার শ্লোক আছে যার ভাবার্থে বলা হয়েছে, বৃক্ষ বাঁচে পশুপাখিও বাঁচে, তবে তিনিই যথার্থভাবে জীবিত বটে মননের দ্বারা যাঁর মন জীবিত রয়েছে। চেতনার বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে এটা মূল্যবান কথা। যাকে আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে জড়বিশ্ব বলে জানি তারই অভ্যনর থেকে দীর্ঘ বিবর্তনের পথে চেতনার উদ্ভব হয়েছে। মননের নানা স্থর আছে। বৃক্ষেরও চেতনা আছে, তবু মানুষের চেতনার সঙ্গে তার গুণগত পার্থক্য অস্বীকার করা যায় না। বিভিন্ন মানুষের ভিতরও চেতনার স্থরের প্রভেদ স্বীকার্য, সবাই মননশীল বলে পরিচিত হন না।মানুষে মানুষে ভেদ ও অভেদ দুয়েরই মান্যতার প্রয়োজন আছে। প্রসঙ্গ অনুসারে কখনো একদিকে জোর দিতে হয়, আবার কখনো অন্যদিকে। মানবাধিকার নিয়ে সাধারণ আলোচনায় সাম্য বা অভেদের কথাটা প্রধান। সংস্কৃতির আলোচনায় কিছু গুণগত পার্থক্য উপেক্ষা করা যায় না। যেমন ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভেদ আছে তেমনই এক যুগের সঙ্গে অন্য যুগেরও মানসিকতায় পার্থক্য লক্ষ করা যায়। মনন শব্দটির অর্থের বিস্তার উল্লেখযোগ্য। সংকীর্ণ অর্থে মননশীল মানুষ বলতে দার্শনিকদের কথাই প্রথমে মনে পড়ে। বিস্তৃত অর্থে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-বৈজ্ঞানিক সবাই নিশ্চয়ই মননের জগতের অন্তর্ভুক্ত। সৃজনশীলতাই মূল কথা। মননের জগতে দ্বন্দ্ব মিলনের খেলা নিরন্তর চলছে। কখনও খেলাটা বিশেষভাবে প্রাণময় হয়ে ওঠে, নবজাগরণের যুগ বলে সেই সময়টা চিহ্নিত হয়। কখনও আবার সৃজনশীলতা নিস্তেজ হয়ে আসে।বাংলার উনিশ শতকের নবজাগরণের কথা ধরা যাক। নাগরিক মধ্যবিত্ত সমাজে সৃজনশীলতার আশ্চর্য বিকাশ ঘটেছিল সেদিন। জীবনের নানা ক্ষেত্র থেকে অসামান্য প্রতিভাশালী এতো মানুষ সহসা আবির্ভূত হয়েছিলেন তখন সময়ের ছোটো ছোটো খণ্ডের ভিতর, সে-কথা ভাবলে আজ শিহরিত হতে হয়। ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্ম, তিনি একাই সেই সময়টাকে আলোকময় করে রাখতেন যদি অন্য কাউকে আমরা না পেতাম তাঁর পাশে। অথচ ১৮৫৯ থেকে ১৮৬৩ অবধি মাত্র চার বছরের ভিতর জন্ম নিয়েছিলেন বিচিত্র গুণময় একঝাঁক যুগস্রষ্টা ব্যক্তিত্ব। ওই চার বছরের সীমার ভিতরই এলেন রবীন্দ্রনাথের বিশিষ্ট বন্ধু বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৯)। এলেন অসামান্য ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩)। উনিশ শতকের শেষ অবধি এই রকম বারবারই ঘটেছে। দুয়েকটি উদাহরণ যোগ করাই যথেষ্ট। ১৮৭০ থেকে ১৮৭২ দুবছরের সময়সীমার ভিতর জন্মেছেন রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, চিত্রকলার জগতে নতুন যুগের দিশারী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ধর্ম ও দর্শনের ক্ষেত্রে অতুলনীয় শ্রীঅরবিন্দ। উনিশ শতকের শেষ প্রান্তে একসঙ্গে প্রবেশ করলেন একদল কবি। নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ সালে, একই বছরে এলেন জীবনানন্দ, তারপর দুবছরের ভিতর সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও অমিয় চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথ থেকে অমিয় চক্রবর্তী অবধি পুরো সময়টাকে একনজরে দেখলে একটা ঝোঁক চোখে পড়ে। রবীন্দ্রনাথের ভিতর কাব্য, দর্শন ও আধ্যাত্মিকতা অনায়াসে মিলেমিশে ছিল। শ্রীঅরবিন্দের সাধনায় কাব্য ও দিব্যদর্শনের মিলন সুস্পষ্ট। আধুনিকতার আগমনে সেই মৈত্রীবন্ধন দুর্বল হলো। এটা কিছু আকস্মিক ব্যাপার নয় যে, কবিতার জগতে দর্শনের প্রবেশকে বুদ্ধদেব বসু সন্দেহের চোখেই দেখতেন। কিছু মার্কসবাদী ভিন্নভাবে ভেবেছেন। তাঁদের প্রভাব ব্যাপক ও গভীর হয়নি। কবিতাকেই যাঁরা স্বধর্মরূপে ভেবেছেন তাঁদের মেজাজের অনেকটা মিল দেখা গেছে বুদ্ধদেবের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে। বাঙালির ঐতিহ্যপুষ্ট পদ্যানুরাগী মানসের সঙ্গে অধ্যাত্মচেতনার বিচ্ছেদের ঝোঁকটাই আধুনিক যুগে প্রবেশের পথে চোখে পড়ে। বৃহত্তর সমাজজীবনের কিছু পরিবর্তনের সঙ্গে এর যোগ আছে। বাঙালি সমাজে মননশীলতার বিকাশের পক্ষে এটা তেমন সহায়ক হয়নি। উনিশ শতকের শেষার্ধের তুলনায় বিশ শতকের শেষভাগ নিষপ্রভ মনে হয়। বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ, শ্রীঅরবিন্দ ও বিবেকানন্দের মতো উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব আমাদের সময়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ভিন্ন পথেও সমমর্যাদার মানুষ বিশ শতকের শেষভাগে তেমন নেই।এই অবস্থান্তরের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। দুয়েকটি কথা সংক্ষেপে বলা যাক। এদেশে উনিশ শতকী নবজাগরণের পটভূমিতে ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নততর পশ্চিমি সভ্যতার সঙ্গে দেশজ সংস্কৃতির মুখোমুখি পরিচয়ের ফলশ্রুতি। বিদেশি আধিপত্যের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাস রক্ষার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল আমাদের আত্মপরিচয় নিয়ে নতুন ভাবনা ও নবনির্মাণ। এই কাজটাই মনপ্রাণ দিয়ে করেছিলেন রাজা রামমোহন থেকে বিবেকানন্দ শ্রীঅরবিন্দ রবীন্দ্রনাথ অবধি নবজাগরণের প্রমুখ সাধক। রামমোহনের মনে হয়েছিল ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যে আত্মজ্ঞানের অভাব নেই। তার সঙ্গে যোগ করা দরকার যুক্তিনির্ভর ব্যবহারিক জ্ঞান, তবেই আমরা আধুনিক যুগে আত্মরক্ষা করতে পারবো। বিবেকানন্দের মতো ধর্মপ্রচারকেরাও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে যুক্তির সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা আন্তরিকভাবে মেনে নিয়েছিলেন। এ সমন্বয়সাধিকা চিন্তার প্রেরণা পরবর্তীকালে দুর্বল হয়ে এসেছে। বৈষয়িক ভাবনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আচারসর্বস্ব ধর্ম। আপাতবিরোধী দুই ভাবের সজীব দ্বন্দ্বের ভিতর নিহিত ছিল নবজাগরণের যুগের সৃজনশীলতার উৎস। শুদ্ধ যুক্তিনিষ্ঠা ও অধ্যাত্মবোধ দুটিই নির্জীব হয়েছে পরবর্তীকালে ভোগবাদের প্রসারের সঙ্গে। এ যুগের মানুষ ভাবতে অভ্যস্ত যে, আর্থিক লাভের কৌশল আয়ত্ত করাটাই হচ্ছে যুক্তির কথা। এই সরল চিন্তা যদিও বাস্তবধর্মী বলেই পরিচিত তবু এটা প্রকৃত প্রস্তাবে অসম্পূর্ণ চিন্তা। গভীর বাস্তবতার বিচারেই এটা অসম্পূর্ণ। সামগ্রিক আর্থিক উন্নয়নের পক্ষেও এটা যথেষ্ট নয়।আমাদের সমাজে সমস্যার বৈচিত্র্যের অভাব নেই। অনেক সমস্যারই মূলে আছে অতি লোভ। লোভের চেয়ে কম ভয়ংকর নয় বিদ্বেষ, অন্ধবিশ্বাসে আশ্রিত বিদ্বেষ। চারিদিকে হিংসা ছড়াচ্ছে। প্রবল হয়ে উঠেছে লোভ ও অন্ধ বিদ্বেষের মিশ্রণে গঠিত সন্ত্রাসবাদ। সন্ত্রাসের তুলনায় কম নাটকীয় তবু কম ক্ষতিকর নয় প্রতিদিনের জীবনের প্রায় নিঃশব্দ সেই দুর্নীতি, যার ব্যাপ্তি পুলিশে প্রশাসনে ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। পাশে পাশে আছে নানাপ্রকারের সামাজিক অসাম্য। এর অন্যতম উদাহরণ নারী ও পুরুষের ভিতর বৈষম্য, যার শোচনীয় পরিণাম পণপ্রথা। এই সময়ে আবার বিকট আকারে দেখা দিয়েছে দলীয় সংঘর্ষ। এক মূঢ় রাজনীতির দাপটে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আজ বিভ্রান্ত। ভিন্ন জাতের এক সমস্যা পরিবেশসংক্রান্ত। পরিবেশ-দূষণে বিপন্ন আমাদের দেশ, বিপন্ন সমগ্র বিশ্ব। সমস্যার বৈচিত্র্য অশেষ।উনিশ শতকের বঙ্গে মননশীলতার অসামান্য উন্মেষ ঘটেছিল পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসী আহ্বানের উত্তরে। আজকের বিচিত্র সমস্যার আহ্বান কম প্রবল নয়, পথের সন্ধান কম জরুরি নয়। অহংকেন্দ্রিক স্বার্থবুদ্ধিকে আশ্রয় করে মুক্ত সমাজে প্রবেশ করা যাবে না। প্রস্তুত হয়েছে এই সময়ে মননশীল ভাবনার উপযোগী এক নতুন পরিবেশ। যুক্তিকে নিযুক্ত করা যায় বিবিধ উদ্দেশ্যে। ছোটো স্বার্থের সেবায় বুদ্ধি তো সতত সক্রিয়। মননের শক্তি দ্বারা বুদ্ধি ও যুক্তিকে নিযুক্ত করা সম্ভব উচ্চতর উদ্দেশ্যে। ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিসর্জন দেবার কথা এখানে বলা হচ্ছে না। জীবনধারণের জন্য ব্যক্তিস্বার্থেরও প্রয়োজন আছে। শুদ্ধ যুক্তিবিচারের কাজ কিছু মাত্রাবোধ ও সীমার নির্দেশ দেওয়া। সেটা অনুধাবনের যোগ্য।মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ জীব। ব্যক্তির পরিচয়ের নানা বৃত্ত আছে। নিকট প্রতিবেশীদের নিয়ে যেমন একটি বৃত্ত তৈরি হয় তেমনি নাগরিকত্বের পরিচয়ে বৃহত্তর বৃত্তের প্রতি ব্যক্তির আনুগত্যের ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। অবশেষে মানুষ বিশ্ব নাগরিক। ছোটো বৃত্তের অংশ রূপে কাজ করাতে দোষ নেই, এমনকি সেটা অপরিহার্য। কিন' কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থের সঙ্গে যখন বৃহত্তর সমাজের কল্যাণচিন্তার দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তখন সেই বৃহত্তর কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া শুভবুদ্ধি ও বিবেকের নির্দেশ।এইসব কথা বহুদিন অবধি তাত্ত্বিক সিদ্ধান্ত মাত্র ছিল, বাস্তব অবস্থার সঙ্গে তার সম্পর্ক তেমন স্পষ্ট ছিল না। কিন' ইতিহাস অথবা কালপ্রবাহের এক অভাবিতপূর্ব পটুত্ব আছে মানুষকে সম্মুখপানে চালিয়ে নিয়ে যাবার। মানুষের ঐক্যের ভাবনাটা একদিন ছিল দার্শনিক চিন্তার সমান। আমরা এখন কিন্ত সভ্যতার এমন স্তরে পৌঁছে গেছি যেখানে এটা আর দার্শনিক তত্ত্ব মাত্র নয়। কিছু পরিচিত তথ্য স্মরণ করা যাক। কোনো এক কালে যুদ্ধ ছিল আঞ্চলিক ঘটনা, এখন বিশ্বযুদ্ধ কল্পনা-মাত্র নয়। দুটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গেছে, তৃতীয় মহাযুদ্ধ যদি ঘটে তবে গোটা বিশ্ব তাতে ধ্বংস হবার সম্ভাবনা আছে। এমন অবস্থা আগে ছিল না। পরিবেশ-দূষণ নতুন ঘটনা নয়, কিন্তু অতীতে এটাও ছিল অঞ্চল-বিশেষের সমস্যা, আজ এটা সমগ্র বিশ্বের সমস্যা। অত্যন্ত বাস্তব অর্থেই সারাবিশ্বের স্বার্থ আজ একসূত্রে গ্রথিত। এমন ঘনিষ্ঠ গ্রন্তন আগে ছিল না। বাস্তব অবস্থার এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে চেতনারও পরিবর্তন আবশ্যক। মানুষ জাতির আত্মরক্ষার জন্য এটা আজ আবশ্যক। সভ্যতার বিবর্তনের এই স্তরে এটাই ইতিহাসের দাবি। অতীতের অন্য এক যুগে লালিত গোষ্ঠীবদ্ধ বিদ্বেষকে যদি আজও আমরা রক্ষা করে চলি তবে আমাদের ভাগ্যে আছে ‘মহতী বিনষ্টি’। এই উপমহাদেশে গোষ্ঠীবদ্ধ সংকীর্ণ বিদ্বেষের এক ভয়াবহ রূপ সামপ্রদায়িকতা, যার বিপরীতে নিযুক্ত করা প্রয়োজন মননের শক্তিকে। বুদ্ধি দিয়ে এসব কথা বোঝা কঠিন নয়। কিন্তু যেটা বুদ্ধিগ্রাহ্য সেটাকে হৃদয়গ্রাহ্য করে তোলা ভিন্ন ব্যাপার। চেতনার পরিবর্তন বলতে একই সঙ্গে বুঝতে হবে বিচারবুদ্ধির এবং হৃদয়ের পরিবর্তন। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই কথাটা নতুনভাবে আজ বুঝতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রথম যুগে ভাবা হয়েছে, প্রকৃতির ওপর মানুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠাই পরম লক্ষ্য। ভোগবাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা এবং পরিবেশঘটিত বিপর্যয়ের ভিতর দিয়ে আজ বুঝবার সময় এসেছে যে, শুধুমাত্র আধিপত্য নয়, বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আত্মিক মিলনের সম্পর্ক ছাড়া মুক্তি নেই। যুক্তির সঙ্গে অধ্যাত্মচেতনার সমন্বয়ের তত্ত্বটা এইভাবে বাস্তবতার ছাড়পত্রসহ আবারো ফিরে আসে, মনুষ্যত্বের সফল বিবর্তনের শর্তরূপে। মননের মূল্য আজ বুঝে নিতে হবে এই নতুন প্রেক্ষিতে। অপেক্ষিত অন্য এক নবজাগরণ। =======================================[কালি ও কলম / ফেব্রুয়ারি ২০১০ ]
false
ij
কবিতা থেকে গান_ এই ছায়াপথে ___ একটা সময় ছিল। খুব হাঁটতাম। বিশেষ করে রাত্রিবেলায় হেঁটে হেঁটে শহর ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত অব্দি পৌঁছে যেতাম; আলো-অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে হলুদ পথবাতির আলোয় দেখতাম ঘুমন্ত একটি শহরের সুনসান নির্জন পথঘাট, তার জড়োসরো ভঙ্গুর মানুষজন, তার ভৌতিক মন্থর সব যানবাহন; কুয়াশায় হেডলাইটের আলো, ট্রাফিকশূন্য রাস্তার মোড়। এ সমস্ত দেখতে দেখতে একা একা কেমন অভিভূত হয়ে যেতাম ... আর আমার মনে হত ... আমি ঠিক এ শহরের কেউ নই; আমি ছায়াপথের অন্য কোনও স্থান থেকে এই ঘুমন্ত শহরের পথে নেমে এসেছি। মাথার ভিতরে গুনগুনিয়ে উঠত কয়েকটি শব্দ ... ছায়াপথ ছেড়ে এখানে এসেছি অথবা ছায়াপথেই রয়েছি যেন। দ্বিতীয় লাইনটি প্রথম লাইনটিকে কনট্রাডিক্ট করে। কারণ। আপেক্ষিক বিন্দু ব্যতীত ছায়াপথে কোনও স্থান নির্ধারন করা সম্ভবপর নয়: রাত্রিবেলায় যে শহরের পথে হাঁটছি সেটিও ছায়াপথেরই অর্ন্তগত। তবুও আমার মনে হত আমি ঠিক এ শহরের কেউ নই; ছায়াপথের অন্য কোনও স্থান থেকে আমি এই ঘুমন্ত শহরের পথে নেমে এসেছি। অস্তিত্ববাদী দর্শনে এরকম অনুভূতির নাম আছে। হাঁটতে হাঁটতে সেই সময়েই একবার এক বালিকা পতিতাকে কাঁদতে দেখেছিলাম। কাজেই আরও দুটি লাইন পেয়ে যাই। এখানে পথের দুধারে ফোটে ফুল যেখানে মেয়েটি কাঁদছে লুকিয়ে। মেয়েটি কাঁদছিল কেন? খিদেয় হয়তো; খদ্দের জোটাতে পারেনি। আমার এগিয়ে গিয়ে আর্থিক সাহায্য করা উচিত ছিল? রাত্রিবেলা অর্থকড়ি নিয়ে বেরুতুম না। তা ছাড়া আমার নেপোলিয়নের মতো সৎ সাহস নেই। শুনেছি নেপোলিয়ন জীবনে প্রথম প্যারিস শহরে এসে এক শীর্তাত সন্ধ্যায় একটি দুঃস্থ মেয়েকে দেখে এগিয়ে গিয়েছিলেন। রাতের পথে নানাজনকে দেখি। আমার মতোই উৎসুক অন্যরাও হাঁটে। এদের কবি বলা হয়। মানুষের কান্না দেখে কবির মুখ ম্লান। কিংবা আমার। শেষরাতের পথে ঘুরে কবিদের ম্লানমুখ দেখি; ভালোবাসার খুব কাছেই ভালোবাসার মৃতদেহ ... ফুটপাতে ভিখেরি মাকে জড়িয়ে ভিখেরি শিশু ঘুমিয়ে। ভিখেরি মাটিকে আমার ভালোবাসার প্রতীক মনে হয়েছে । নৈলে মা হয় কি করে। আর শিশুটি ভালোবাসার মৃতদেহ। আহা, শিশুটির দোলনা অবধি নেই! কিংবা অসুখে পড়লে সুচিকিৎসা কই পাবে। কাজেই- ভালোবাসার খুব কাছেই ভালোবাসার মৃতদেহ ...আর আমার মনে হয় ... ছায়াপথে এত আঁধার দেখিনি। এখানে শীতার্ত রাতে শিশুর মৃত্যু ...(ইচ্ছে করেই বাক্যটি সমাপ্ত করা হয়নি; জনও করেনি ...) এই আঁধার মানুষের ইতিহাসের অনিবার্য আঁধার। যে আঁধার দূর হয়নি। যে কারণে এখানে শীতার্ত রাতে শিশুর মৃত্যু ...যে কারণে শেষরাতের পথে ঘুরে কবিদের ম্লানমুখ দেখি; ভালোবাসার খুব কাছেই ভালোবাসার মৃতদেহ ... তারপর রাত ফুরিয়ে ভোর হয়ে আসে। আমার মনে হয়: কবির বিমর্ষ চোখে দেখি সূর্যোদয়; সূর্যটা যদিও প্রাচীন আকাশে স্থির। পৃথিবীতে বেঁচে থেকে সুখদুঃখ যাইই ভোগ করুক মানুষ; সূর্যটা প্রাচীন আকাশে স্থিরই দেখায়। সব মিলিয়ে আমার সিদ্ধান্ত এই: এখানে স্বপ্নের মৃত্যু, এখানেই ক্ষয়ে যেতে হয়; মানুষ তাকিয়ে থাকে অর্থহীন নীল শূন্যতায়। এই দুটি লাইনের মধ্যে নিহিত রয়েছে কুড়ি শতকের সারমর্ম। আমাদের যাপিত জীবনের ক্লেদ /ক্লেশ ও গ্লানি। একে এড়ানো যায় না। কেননা, ইতিহাসের অন্ধকার এখনও কাটেনি। এখানে স্বপ্নের মৃত্যু, এখানেই ক্ষয়ে যেতে হয়; যে কারণে, মানুষ তাকিয়ে থাকে অর্থহীন নীল শূন্যতায়। এসবই ঘটছে রাত্রির শহরে কিংবা ছায়াপথে। রাত্রির শহরটিও কি ছায়াপথের অর্ন্তভূক্ত নয়? অবশ্যই। যে ছায়াপথ সম্বন্ধে আমরা জেনেছি যে : The Milky Way, or simply the Galaxy, is the galaxy in which the Solar System is located. It is a barred spiral galaxy that is part of the Local Group of galaxies. It is one of billions of galaxies in the observable universe.(উইকিপিডিয়া থেকে) ... আশ্চর্য! এই কথাগুলোয় দুঃখকষ্ট কোথায়? যত দুঃখকষ্ট রাতের শহরে। যেখানে থরে থরে জমে আছে ইতিহাসের অন্ধকার। আর পাঁক। যেখানে মানুষ তাকিয়ে থাকে অর্থহীন নীল শূন্যতায়। এখানে পথের দুধারে ফোটে ফুল যেখানে মেয়েটি কাঁদছে লুকিয়ে ... কিংবা শেষরাতের পথে ঘুরে কবিদের ম্লানমুখ দেখি; ভালোবাসার খুব কাছেই ভালোবাসার মৃতদেহ ... স্বয়ং উদ্ভূত ওই বিশাল ছায়াপথে আর কোথায় দুঃখযন্ত্রণা আছে কি না জানি না তবে ছায়াপথের সূর্যকেন্দ্রীক সৌরজগতের একটি গ্রহে দুঃখযন্ত্রণার ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে এই বিস্ময়কর অনুভূতি নিয়ে রাতভ্রমন শেষে ভোরের আলোয় ঘরে ফিরে আসতাম। এরপর ঘুম। মধ্যাহ্নবেলা অবধি। তারপর জাগ্রত অবস্থায় কখনও চকিতে পূর্বরাত্রের অভিজ্ঞতা স্মরণ হলে ডায়েরির পাতায় সে সমস্ত কথা লিখে রাখার প্রয়াশ। আমি মূলত বেঁচে থেকে সময়কে অনুধাবন করার চেষ্টা করি। কখনও কখনও সেই অনুধাবনে ক্ষোভ ও হতাশার পরিমানই পরিলক্ষিত হয় বেশি। এই ছায়াপথে কবিতায় (কিংবা পরবর্তীকালে গানে) যতটা হতাশা ছড়িয়ে রয়েছে আমার অন্য কোনও গীতিকবিতায় অতটা ঘৃনা ছড়িয়ে নেই। কখনও ভাবিনি এই লেখাটা সুর করার জন্য কোনও তরুণ কম্পোজার গিটার তুলে নেবে একদিন। জন। গানটির কম্পোজার। লেখাটার অবশ অনুভূতি টের পেয়ে জন যে স্কেলটি সিলেক্ট করেছিল সেটিও আমার ভীষণ প্রিয় একটি স্কেল। স্কেলটি আসলে রাগ চারুকেশী। রাগ চারুকেশী তে অর্ন্তগত দুঃখেরা ঝরে ঝরে পড়ে, ঝরে ঝরে পড়ে ...(রাগটি পন্ডিত রবিশঙ্করের সৃষ্ট একটি রাগ) ... কম্পোজ শেষ করার পর অবাক হয়ে লক্ষ করলাম: বিষন্ন সুর আর অর্থহীন নীল শূন্যতায় গাথা এক বিমর্ষ যুগলবন্দী হয়ে উঠেছে “এই ছায়াপথে”। অডিও লিঙ্ক http://www.mediafire.com/?mzdmd2tiyyy উৎসর্গ: হাসান মাহাবুব। প্রকৃত ব্ল্যাক-বোদ্ধা। সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৫৪
false
rg
বাংলাদেশের ১১ প্রধানমন্ত্রী'র ৩ জন খুন, ৪ জন মৃত, ১ জন কারাগারে, ১ জন হাসপাতালে, ১ জন ভাড়াবাসায় ও ১___ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ১১ জন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হবার গৌরব অর্জন করেছেন। তার মধ্যে সাত জন মারা গেছেন আর চার জন জীবিত আছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন-১. তাজউদ্দিন আহমদ (১৯২৫-১৯৭৫) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১১ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২২. শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৭৫) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫৩. ক্যাপ্টেন মুহম্মদ মনসুর আলী (১৯১৯-১৯৭৫) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫৪. মশিউর রহমান যাদু মিঞা (১৯২৪-১৯৭৯) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২৯ জুন ১৯৭৮ থেকে ১২ মার্চ ১৯৭৯৫. শাহ আজিজুর রহমান (১৯২৫-১৯৮৮) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১৫ এপ্রিল ১৯৭৯ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৮২৬. আতাউর রহমান খান (১৯০৭-১৯৯১) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ৩০ মার্চ ১৯৮৪ থেকে ৯ জুলাই ১৯৮৬৭. মিজানুর রহমান চৌধুরী (১৯২৮-২০০৬) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ৯ জুলাই ১৯৮৬ থেকে ২৭ মার্চ ১৯৮৮৮. মওদুদ আহমদ (১৯৪০-) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২৭ মার্চ ১৯৮৮ থেকে ১২ আগস্ট ১৯৮৯৯. কাজী জাফর আহমেদ (১৯৩৯-) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১২ আগস্ট ১৯৮৯ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০১০. খালেদা জিয়া (১৯৪৪-) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০ মার্চ ১৯৯১ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৯৬১১. শেখ হাসিনা (১৯৪৭-) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২৩ জুন ১৯৯৬ থেকে ১৫ জুলাই ২০০১১২. খালেদা জিয়া (১৯৪৪-) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১০ অক্টোবর ২০০১ থেকে ২৯ অক্টোবর ২০০৬১৩. শেখ হাসিনা (১৯৪৭-) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ৬ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ১২ জানুয়ারি ২০১৪১৪. শেখ হাসিনা (১৯৪৭- ) প্রধানমন্ত্রী আছেন ১২ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে বর্তমানমোট ১১ জন ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে হত্যা করা হয়েছে তিন জন তাজউদ্দিন আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, স্বাভাবিক মৃত্যু চারজনের মশিউর রহমান যাদু মিঞা ১৯৭৯ সালে, শাহ আজিজুর রহমান ১৯৮৮ সালে, আতাউর রহমান খান ১৯৯১ সালে ও মিজানুর রহমান চৌধুরী ২০০৬ সালে মারা যান। জীবিত চারজনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ বর্তমানে কারাগারে আছেন। কাজী জাফর আহমেদ অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। খালেদা জিয়া দশম সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহন না করে এখন বিএনপি'র চেয়ারম্যান হিসেবে গুলশানের ভাড়া বাড়িতে আছেন। আর শেখ হাসিনা তৃতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবন গণভবনে আছেন।
false
mk
আওয়ামীলীগ ও বাংলাদেশ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দুই বছর পরেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে একঝাঁক লড়াকু নেতার অংশগ্রহণে এই দলটির জন্ম হয়। দেখতে দেখতে বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল ৬৭ বছর অতিক্রম করল। এই ৬৭ বছরে দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন_ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো অনন্য নেতারা। এখন এই দলের হাল ধরে আছেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। গত ২২-২৩ অক্টোবরে দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনকে ঘিরে বাংলাদেশের মানুষ নানারকম স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। অবশ্য গণমানুষের এই স্বপ্ন দেখা অযৌক্তিক কিছু নয়। যারা বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে তাদের একমাত্র ভরসা তো আওয়ামী লীগই। বাংলাদেশের ইতিহাস মানে আওয়ামী লীগেরই ইতিহাস। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা শুধু অকল্পনীয় বিষয়ই নয়, অযৌক্তিকও। আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনের সস্নোগান ছিল_ 'শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে দুর্বার। এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।' এই সস্নোগানের প্রতিটি শব্দই আজ বাংলাদেশের জন্য সত্য ও বাস্তব। দারুণ এক ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই ভগ্নদশা থেকে দল ও দেশকে টেনে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে মডেল। বিগত সাড়ে সাত বছরে বাংলাদেশে যে অসম্ভব উন্নয়ন হয়েছে আগামী দিনের ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে।সাম্প্রতিক জাতীয় সম্মেলন নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। যারা আওয়ামীপন্থী তাদের কাছে এবারের সম্মেলন ছিল স্মরণকালের সেরা সম্মেলন। যারা আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী তাদের কাছে এই সম্মেলন তেমন সার্থক নয় বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। বিএনপি এই সম্মেলনের কোনো ইতিবাচক দিকই খুঁজে পায়নি। এটা অবশ্য না পাওয়ারই কথা। বিএনপির নেতা-নেত্রীরা কখনো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না। তাদের আগ্রহ ষড়যন্ত্র আর মৌলবাদ বিস্তারের দিকে। সুতরাং আওয়ামী লীগ যেহেতু এবারের সম্মেলনে তাদের গঠনতন্ত্রে মৌলবাদ তথা জঙ্গিবাদ সম্পর্কে প্রস্তাব পেশ করেছে এবং রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের দলীয় বৃত্তের বাইরে রাখতে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাই বিএনপির মতো ডানপন্থী দলের চোখে এসব ভালো না লাগারই কথা। ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সম্মেলনস্থলসহ পুরো ঢাকা শহর নতুন সাজে সেজে ছিল। মধ্যরাতেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছিল মানুষের ঢল। দিকে দিকে নেতাকর্মীদের মিছিল সাধারণ মানুষের কৌতূহল এবং বিদেশি বন্ধুদের আগমনে এই সম্মেলন পেয়েছিল নতুন মাত্রা। প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হওয়া এই সম্মেলনে উৎসব উদ্যাপন নয় বরং দলের আত্মসমালোচনাই ছিল মুখ্য বিষয়।শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ ছিল একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। এই রাজনৈতিক প্লাটফর্ম পরে রূপ নেয় সাহসী রাজনৈতিক পার্টিতে। সূচনালগ্নে নেতা ও নীতিই ছিল এই দলের অমূল্য সম্পদ। এখন নেতা আছেন কিন্তু নীতির প্রশ্নে নানারকম কথা শোনা যাচ্ছে। নীতির প্রশ্নে দলটি যদি অনড় ও অবিচল না থাকে তাহলে এই পার্টি জনগণের কাছ থেকে শ্রদ্ধা ও সমর্থন পেতে ব্যর্থতার পরিচয় দেবে।এবারের সম্মেলন এমন একটি মুহূর্তে সম্পন্ন হলো যেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বর্ণযুগ পার করছে। এই যুগকে আরো দীর্ঘ করতে হলে তাকে আগামী নির্বাচনে কৌশলগত অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সম্মেলন থেকে সেই বার্তাও পেয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা ও দেশের সাধারণ মানুষ। যারা দুর্নীতিবাজ, লোভী, সুযোগ সন্ধানী (হাইব্রিড) ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী এই সম্মেলনে তারা ঝরে পড়েছে। অন্যদিকে যারা বিনয়ী, ভদ্র, পরিশ্রমী তরুণ ও প্রগতিশীল তাদের বেশি বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা পর্যালোচনা এবং দলটিকে জঞ্জালমুক্ত করে একটি গণতান্ত্রিক বাতাবরণ তৈরি করাও এই সম্মেলনের অন্যতম সাফল্য বলেই আমি মনে করি। আওয়ামী লীগে বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের চর্চা আগেও ছিল এখনো আছে। তবে মাঝেমধ্যে সুস্থ দেহেও ক্যান্সারের জীবাণু বাসা বাঁধে_ তদ্রূপ আওয়ামী লীগের বিশাল বৃক্ষেও কখনো কখনো নীড় খুঁজেছে দলছুট, দুর্নীতিবাজ-নীতিভ্রষ্ট সুবিধাবাদীরা। আবার তারা যাযাবর পাখির মতো চলেও গেছে আওয়ামী লীগ ছেড়ে। এরকম যাওয়া-আসা দলের ভেতরে থাকেই। তবে দলের নীতি-নির্ধারক মহল যদি বিচক্ষণ হয়, তাহলে এতে দলের কোনো ক্ষতি হয় না। আওয়ামী লীগ থেকে এবার যারা পদ হারালো এটা তাদের কর্ম ফলের কারণে হয়েছে। এমন কি যারা নতুন করে পদ-পদবি পেয়েছে, তারা তা কর্মফলের কারণেই পেয়েছে। আওয়ামী লীগ বুঝেছে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। দুষ্টু গরুর উপদ্রব থেকে পুরো গোয়াল মুক্ত রাখতে যা করণীয় তা-ই আওয়ামী লীগ করছে। এটা করতেই হবে। কেননা অতীত ইতিহাস বলছে, যারা আওয়ামী লীগ থেকে দলছুট হয় তারা ধ্বংস হয়ে যায়, যারা আওয়ামী লীগে এসে যোগ দেয়, তাদের ভাগ্য খুলে যায়। আওয়ামী লীগ পরশপাথরতুল্য রাজনৈতিক সংগঠন। দিনে দিনে এর উত্থান আরো ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।২.বর্তমান বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে যেই জায়গায় নিয়ে গেছেন তা কল্পনারও বাইরে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি দেশে নেই। তাছাড়া দলটি গত আট বছরে বেশকিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকা- করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের আপেক্ষিক হার হ্রাস, আট বছর ধরে অব্যাহতভাবে ছয় ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা (বর্তমানে যা ৭.১১ শতাংশ), বিশ্ব ব্যাংকের বিরোধিতার মুখেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন তথা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর প্রভৃতি সাফল্য আওয়ামী লীগকে দিয়েছে ব্যাপক গণভিত্তি। এর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও বর্তমান সরকারের সাফল্য শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি কেড়েছে। ভারত-চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র হলেও এই চারটি শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সরকারের সুসম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তির সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি স্বেচ্ছায় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এর আগে কখনো এমন সুসময় পার করেছে বলে ইতিহাসে নজির নেই। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে_ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার এখন ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২২.৪ শতাংশ। বর্তমানে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৩১.৩২ বিলিয়ন ডলার। এই সরকারের আমলে দেশে-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা, আশ্রয়ণ, একটি বাড়ি একটি খামার, দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অসংখ্য সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ, উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সড়ক, নৌ, রেল ও বিমানসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন বাংলাদেশে এখন দৃশ্যমান সত্য।পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাংলাদেশকে বানিয়েছিল মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের কারখানা। সে সময় যেখানে-সেখানে বোমা হামলা হতো, এমন কি ৬৩টি জেলায়ও একসঙ্গে বোমা হামলার নজির রয়েছে। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তা জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে হলে অবশ্যই বাহাত্তরের সংবিধানে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। বাহাত্তরের সংবিধান আওয়ামী লীগের হাতেই রচিত হয়েছিল। ওই সংবিধানই আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের রক্ষাকবচ। সময় লাগলেও শেখ হাসিনা সরকারকে বাহাত্তরেই ফিরে যেতে হবে। তাহলে সব উন্নয়ন টেকসই হবে। তা না হলে মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মান্ধ ও রক্ষণশীল মুসলিম দেশগুলোর ভাগ্যই বরণ করতে হবে বাংলাদেশকে।৩.বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং আওয়ামী লীগের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। যখনই বাংলাদেশের মাটিতে ঘাতকচক্র ও বিরোধী শিবিরের ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত হয়েছে তখনই বাংলাদেশের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম অশান্তি কিংবা সামরিক থাবা। বাংলাদেশের জন্য লড়েছে আওয়ামী লীগ, বর্তমানে দেশও গড়ছেও আওয়ামী লীগ। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে স্বচ্ছ, সুন্দর ও আত্মসমীক্ষার মুখোমুখি হওয়া দরকার। দল এখন ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় থাকলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে কিন্তু পর্যবেক্ষণ শক্তি কমে। আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বে অতুলনীয় নেত্রী। তিনি একাই আওয়ামী লীগের ভার বহন করতে সক্ষম। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, শেখ হাসিনা যতই ক্লিন ইমেজ তৈরি করুন না কেন যদি তার দলীয় লোকজন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, দলীয় নীতি বিসর্জন দিয়ে অবৈধভাবে মানুষকে হয়রানি করে, তাহলে সামনে ভরাডুবি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। অনেক নেতারই মাঠে জনপ্রিয়তা নেই, অনেকেই এলাকায় তেমন কোনো কাজ করছেন না, অনেকেই শুধু ধান্ধায় আছেন কীভাবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বানাবেন ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হবেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধেই সীমাহীন দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ আছে। কেউ কেউ শুধু নিজে নয়, পুত্র ও জামাতাকেও ব্যবহার করেছে দুর্নীতি করতে। কারো কারো সন্ত্রাসী কার্যকলাপে প্রশ্রয় পাচ্ছে দুই খুন, তিন খুন, সাত খুনের আসামিরা। এগুলো জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভুল বার্তা পেঁৗছায়। এই বিষয়ে অবশ্যই সভানেত্রীর সুদৃষ্টি থাকা দরকার। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমনকি পৌরসভার নির্বাচনেও কোনো কোনো নেতা দলীয় প্রতীক নৌকা টাকার বিনিময়ে বিএনপি ও জামায়াতি লোকের হাতে তুলে দিয়েছে। এসব নির্বাচন বাণিজ্যে তারা লাখ লাখ নয়, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাপট লক্ষণীয়। তাদের ঘুষ-দুর্নীতির কথাও মাঝেমধ্যে প্রকাশ হচ্ছে পত্রিকায়।এসব ব্যাপারে এখনি সচেতন হওয়া দরকার। তা না হলে আগামী নির্বাচনে দলের ভাগ্যে কী হবে কেউ বলতে পারে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পুলিশের উৎপাত বাংলাদেশের মানুষকে ভীষণ ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর সীমাহীন দুর্নীতি ও অকারণ হয়রানি জনমনে ভীষণ ভীতি ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে সচেতন না হলে ভবিষ্যতে দল গর্তে পড়তে পারে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে আরো কন্ট্রোল করা দরকার। এদের বিরুদ্ধে মানুষের অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত আট বছরে এই তিন সংগঠনের আটটি ভালো কাজের দৃষ্টান্ত আছে কিনা সন্দেহ_ তবে তাদের বিরুদ্ধে আট লক্ষাধিক অভিযোগ তৈরি হয়েছে জনমনে। দলীয় শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করবে, যারা দলের সুনাম-সুখ্যাতি নষ্ট করবে, তাদের দলে না রাখাই সমীচীন হবে। নির্বাচনের আগে মনোনয়ন দেয়ার মুহূর্তে তাদেরই মনোনয়ন দিতে হবে যাদের বিজয়ে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ থাকবে না। এজন্য অবশ্য দলীয় প্রধানকে একটু কঠোর হতে হবে। আমি জানি তিনি অতটুকু কঠোর হওয়ার মানসিকতা পোষণ করেন। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বিশ্বের সেরা ৪৪টি বক্তৃতা নিয়ে জেকব এফ ফিল্ড যে বক্তৃতা সংকলন বের করেছেন, যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতা স্থান পেয়েছে। জেকব তার সংকলনের নাম দিয়েছিলেন চার্চিলের বক্তৃতার অংশ, সেই চার্চিলও পরবর্তী নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। আমাদের দেশেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়েছিল। সেই কথা মনে রেখে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে দল ও সরকার পরিচালনা করতে হবে। দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যেভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে দাঁড় করিয়েছিলেন ঠিক সেই জায়গায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যেতে হবে। মৌলবাদী ও পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে মানুষের 'মাইন্ডসেট' পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক ভাবধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি এটাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য। বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছেন। এখন মানুষের মধ্যে অনেক আশা তৈরি হচ্ছে। মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। মানুষ বুঝতে পারছে আসলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এজন্যই রাজপথে বিরোধী দলের মিছিল-মিটিং জনশূন্য। কেউ আর অকারণে রাজনীতি নিয়ে ভাবছে না। এটা আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত শুভ লক্ষণ। কিন্তু আগামী নির্বাচনে যদি কোনো কারণে বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার সব উন্নয়ন সূচক হারাবে ঠিকই কিন্তু আওয়ামী লীগ হবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সব দিক সামাল দিয়ে এখন ঠা-া মাথায় সরকার ও দল পরিচালনা করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদকেও স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত করার প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চান সেখানে নিতে গেলে অবশ্যই আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি সঠিক ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, কেননা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ আর বাংলাদেশের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০৩
false
mk
তনু হত্যা ভিন্ন খাতে জড়াবেন না কাছাকাছি সময়ে দুইটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, একটি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর নির্মম হত্যাকান্ড, আরেকটি হল গায়িকা কৃষ্ণকলির বাসার গৃহকর্মী জান্নাত আরা শিল্পীর রহস্যময় হতাকান্ড।আমরা দেখতে পাচ্ছি যে গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান সরকার তনু হত্যাকান্ডের ব্যাপারটি নিয়ে প্রচন্ড পরিমাণ সরব হলেও গৃহকর্মী জান্নাত হত্যার ব্যাপারে একেবারেই নীরব। দেশে ধর্ষণ-হত্যার শিকার তনুই প্রথম এবং একমাত্র নয়, কিন্তু ইমরান সরকার কেবল মাত্র তনুর ঘটনাটি নিয়েই প্রচন্ড সরব। এর পিছের কারণ কি হতে পারে?১। তনু আর কৃষ্ণকলির বাসার ঘটনাদুটি খুবই কাছাকাছি সময়ে ঘটেছে। যেহেতু কৃষ্ণকলি গণজাগরণ মঞ্চের একজন সদস্য, এমনটা অসম্ভব নয় যে, নিজেদের মঞ্চের সদস্যকে রক্ষা করতে এবং কৃষ্ণকলির গৃহকর্মী হত্যার ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে ইমরান এইচ সরকার জান্নাত হত্যার ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ। এই নীরবতা রহস্যময়। তিনি কৃষ্ণকলির বাসায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্যে কেবল তনুর ইস্যুতেই মাঠ গরম করে চলেছেন।২। কৃষ্ণকলি গণজাগরণ মঞ্চকে টাকা দিয়ে জান্নাত হত্যাকান্ড কে চাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। তনুর জন্য কনসার্ট করা হচ্ছে, কনসার্ট করতে টাকা লাগে। নিহত একজন মানুষের জন্য নাচ গানের আনন্দঘন কনসার্ট করে কি প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে উনারাই ভাল বলতে পারবেন, তবে এইসব কনসার্টের খরচ কোত্থেকে আসছে সেইটার খবর নিলে অনেক কিছুই বের হয়ে আসবে ধারণা করি।৩। তনু হত্যাকান্ডের সাথে ইমরান সরকার সেনাবাহিনীকে জড়ানোর চেষ্টা করে বিবৃতি দিচ্ছেন বারবার। কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়া সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে উনার কি লাভ? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষ কে প্ররোচিত করে উনার কি লাভ? তবে কি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের আজ্ঞা পালন করছেন ইমরান সরকার? নাকি কোন বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন??প্রশ্ন অনেক, জবাব নেই। কৃষ্ণকলির স্বামীর মুখে গৃহকর্মী জান্নাতের নখের আচড় পাওয়া গেছে, এটি যে হত্যাকান্ড তা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েই বলা যায়। তনু হত্যার বিচার চাই, জান্নাত হত্যার বিচার চাই। সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৫৯
false
fe
কী হচ্ছে, কী হতে পারে_ কী হচ্ছে, কী হতে পারে?ফকির ইলিয়াস===========================================চলে গেলো ২০১৩ সাল। নতুন বছর এলো নতুন বারতা নিয়ে। কেমন হবে ২০১৪ সাল। কেমন হবে বাংলাদেশের রাজনীতি। অনেক কথা। দেশ একটি নতুন রাজনৈতিক মোড় নিয়ে এগিয়ে যাবে। কি সেই মোড়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন আসছে। সেটা হচ্ছে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪-এর পর বদলে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল। জাতীয় পার্টির কেউ বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেনÑ এটা প্রায় নিশ্চিত। কে আসছেন ঐ পদে? হু মু এরশাদ, নাকি বেগম রওশন এরশাদ? এটাই এখন দেখার বিষয়। এরশাদ কি নির্বাচন করছেন? তিনি এখন হাসপাতালে। কিন্তু তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। নির্বাচনের আগে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের পর প্রায় ৫ কোটি মানুষ ভোটদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের দাবি নির্বাচন ফেয়ার এন্ড ফ্রি হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন প্রচার করছেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হু মু এরশাদকে কেন আটক করা হয়েছে সে খবর কি নির্বাচন কমিশন নিয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া দ্বিতীয় বৃহৎ দলের প্রধানকে আটক রাখা কী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা কী নাÑ সেটাও বিবেচনার বিষয়।তফসিল ঘোষণার পর ৫ জানুয়ারির ভোটে অংশ নেয়ার জন্য ২ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু এর পরদিনই এরশাদ এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন বিরোধী দল বিএনপিসহ সব দল না আসায় এবং ‘পরিবেশ না থাকায়’ জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দেন। এরশাদ কোনো প্রার্থীকে লাঙ্গল প্রতীক না দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেন। তারপরও নির্বাচন কমিশন লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন। এখানে সবকিছুই হয়েছে বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়ার পর। অনেক কিছুই এখন চাপা পড়ে গেছে। এরশাদের দলের মন্ত্রীরা কাজ করছেন কিনা, তারা কোথায় আছেন, কেমন আছেন, অনেক কিছুই এখন মানুষের অজানা। এরশাদের পক্ষেও প্রচারণা চলছে রংপুরে। এরশাদের নির্দেশেই, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। এ কথা জানিয়েছেন, দলটির দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরাসহ দলটির ৬৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে আছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো এরশাদের পক্ষেও রংপুরে চলছে প্রচার। এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মোট ২৯৯ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ২১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার অপেক্ষায়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ না পাওয়ায় আরো ৪৩ জন কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেও এখন তারা পুরোদমে আছেন নির্বাচনের মাঠে, নিজ নিজ এলাকায় চালাচ্ছেন গণসংযোগ। এরশাদের নির্দেশেই রওশন এরশাদ পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি তদারকি করছেন বলে জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এরশাদের নামেও রংপুরে প্রচারণা চলছে জানিয়ে জাতীয় পার্টির এই নেতা। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া আরেক প্রার্থী লিয়াকত হোসেন, বলেছেন একই কথা। জাতীয় পার্টিতে যে সব নাটকীয়তা হচ্ছে তা এরশাদ এবং রওশন এরশাদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই হচ্ছে- তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এই ধারণা ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। তবে এই নাটকের শেষ অঙ্ক ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরই মঞ্চস্থ হবেÑ এমনটাও বলছেন তারা।অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ডাক দেয়া ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ পুরোটাই ফ্লপ করেছে। এখন ডাক দেয়া হয়েছে লাগাতর অবরোধ। খালেদা জিয়া পারলে বাংলাদেশের নামই বদলে দেবেন। এই কথাটিই এখন বলছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক দায়িত্বশীল নেতা। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও গোপালগঞ্জের নাম ধরে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা রাজনীতিকদের জন্য লজ্জাজনক। প্রকৃতপক্ষে গোপালগঞ্জ নয়, তিনি সুযোগ পেলে বাংলাদেশের নামই বদলে দেবেন। গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দেয়ার যে উদ্ভট বক্তব্য দিয়েছেন খালেদা জিয়াÑ তাতে ফুঁসে উঠছেন দেশ-বিদেশের মানুষ। কারণ একটা এলাকা নিয়ে খালেদা জিয়া এমন কটাক্ষ কোনোমতেই করতে পারেন না। এমন ভাষায় কথা বলা উচিত ছিল না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর।ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিডিআর হত্যাকা-ে বিরোধীদলীয় নেতা ও তার দলের নেতাকর্মীরা প্রকৃতপক্ষে জড়িত। তিনি বেলা ১২টার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না। বিডিআর হত্যাকা-ের দিন সকাল ৮টায় তিনি বাসভবন ত্যাগ করে কোথায় গেলেন? তিনি জানতেন এমন ঘটনা ঘটবে, যে কারণে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে গেছেন। এ হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে। যারা তদন্ত করেছেন তাদের উদ্দেশ আমি বলবো, যারা কলকাঠি নেড়েছেন তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।বাংলাদেশের এই পরিস্থিতে গভীর উদ্বেগ দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের চলমান সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ বের করাই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জরুরি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা লিখিত বক্তব্যে এই প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর গেলো মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্টদূত যান খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়িতে। মঙ্গলবার বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা শিথিল করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি কিছুটা কমানো হয়েছে। সরিয়ে নেয়া হয়েছে র‌্যাব সদস্যদের। লিখিত বিবৃতিতে ড্যান মজিনা বলেছেন, ‘আমি ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি।’ বাংলাদেশের জন্য ব্যবসাক্ষেত্রে ২০১৪ সাল কেমন যাবে? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।খবর বেরিয়েছে, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর হিসাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত এক বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানেও। টানা হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির বিভিন্ন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেড়েছে বেকারত্ব। বিশেষ করে গত অক্টোবর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকট হওয়ায় এ সময়ে নতুন কর্মসংস্থান তো হয়ইনি, বরং চাকরিচ্যুত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক শ্রমিক। জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামার প্রেক্ষিতে সেবা ও শিল্পের বিভিন্ন খাতে ১০ লাখেরও বেশি শ্রমিক এরই মধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন। নানা জটিলতার কারণে খেলাপি ঋণের বোঝা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বছরজুড়েই নানা সমস্যার কারণে বেশির ভাগ ব্যবসা সংকুচিত করেছেন উদ্যোক্তারা। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্যালেন্ডারের পাতা খুললেই দেখা যাবে এ বছরই রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১ হাজার ১৩৪ জন। ২০ দিন ধরে চলা উদ্ধার কাজে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার হয়েছে ২ হাজার ৪৩৮ জন। এখনো নিখোঁজ আছেন ২শর বেশি শ্রমিক। এসব একটি দেশের জন্য ভয়াবহ খবর। একটি দেশ তো এভাবে চলতে পারে না।রাজনৈতিক অস্থিরতায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এতে লোকসানে পড়েছে পরিবহন খাত। গত এক বছরে এ খাতে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি। পরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের ৬০০ সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ ছিল। এতে বছরের শুরুতে তেমন প্রভাব না পড়লেও গত এক মাসে টানা অবরোধে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বছরই বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ২০টি পাটকল। লোকসানের কারণে বন্ধ হয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি পোল্ট্রি খামার। পোল্ট্রি খাতে বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। একইভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে মজুদ নিয়ে বিপাকে ট্যানারি মালিকরা। এ খাতে বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে অপদ্রব্যের ব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করলেও শেষ সময়ে বড়দিনের বাজার ধরতে পারেনি। এতে বছরের শেষ ভাগে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। আবাসন খাতের ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এ খাতের বড় বেচাকেনার আসর রিহ্যাব ফেয়ার এবার হচ্ছে না। এতে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে রিহ্যাব। প্লাস্টিক শিল্পে বছরের শেষ ছয় মাসে অস্থিরতার কারণে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। একইভাবে পেট্রোলিয়াম বাইপ্রডাক্ট ৪৫ শতাংশ এবং প্রসাধনী ৫৭ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। এছাড়া সিরামিকস, আয়রন-স্টিল, রাবার, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের মজুদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। ভরা এ মৌসুমে দেশের প্রধান পর্যটন স্পট কক্সবাজারসহ সারা দেশ পর্যটনশূন্য হয়ে পড়েছে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখের বেশি লোক জড়িত। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, লোকসান এড়াতে গত তিন মাসে এ খাতে ৩০ শতাংশ জনবল ছাঁটাই করা হয়েছে। ব্যবসায় ধস নামায় কক্সবাজারের চার শতাধিক হোটেলের মধ্যে ১০০টি ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। গার্মেন্টস শিল্পের বাংলাদেশের যে সুনাম ছিল, তাতে ধস নেমেছে মারাত্মকভাবে। এর থেকে উত্তরণের কোনো পথ কি খুঁজছেন রাজনীতিবিদরা? আমার মনে হয় না, নির্বাচন বাতিল হবে। নির্বাচন হবেই, এটাই আমার মনে হচ্ছে। যা হবার তা হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে দুবছর। এমন একটা ধারণা করছেন অনেকেই। সেটা নাও হতে পারে। আওয়ামী লীগকে এর আগেই ক্ষমতা ছাড়তে হতে পারে। এরপর কি হবে? ক্ষমতা হারালে অবস্থা কেমন হয় তা তো বর্তমান ক্ষমতাসীনরা কম জানেন না। ২০১৪ সবার জন্য মঙ্গলময় হোক। এই দেশের মানুষ শান্তি চান। তা যে কোনো মূল্যে হোক। বাংলাদেশের রাজনীতিকরা যদি বিষয়টি অনুধাবন করেন, তবেই কল্যাণ।------------------------------------------------------------ দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ৪ জানুয়ারি ২০১৪
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৩৪ আমি যে বেশ বুড়ো হয়ে পড়েছি ভেতরে ভেতরে, তার প্রমাণ পাচ্ছি ক'দিন ধরে। রাতে আর পড়তে পারি না। বরং সকালের দিকে মাথাটা একটু টাটকা থাকে। সন্ধ্যের পর একদম হেদিয়ে পড়ি। তখন মন শুধু অন্য কিছু চায়, লেখাপড়া আর ভাল্লাগেনা। আরো নবীন বয়সে সারারাতই জেগে থাকতাম বলতে গেলে, আর এখন রাতে জেগে থাকলে আর চিন্তাভাবনা ঠিকতালে কাজ করে না। আজ প্রায় কাকভোরেই উঠতে হয়েছে পরীক্ষার ঠ্যালায়। আজকে পড়বো কালকো পড়বো, এমন করে করে মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার ব্যাপারটা পরীক্ষার দিন সকালে এসেই ঠেকেছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষের দিকের দিনগুলোতে দায়সারা পরীক্ষা দেয়ার সময় এই অভ্যাসটা এমন গেড়ে বসেছে যে কিছুতেই আর সংশোধন করতে পারছি না। ছ'টার সময় ঘুম থেকে উঠে ভাবলাম, সময় তো আছেই, না হয় একটু মেইল চেক করি। তারপর ভাবলাম, মেইল দেখলাম আর সচলে একটা ঢুঁ মারবো না? এমন করে করে শেষে সাড়ে সাতটার দিকে ফাইল খুলে বসলাম চোখ বুলানোর জন্য। থার্মোডাইনামিক্স শেষ পড়েছি ঊনিশশো নিরানব্বুই সালে, শেষ পড়িয়েছি বোধহয় দুই হাজার তিনে। বেমালুম খেয়ে ফেলেছি এর মধ্যে অনেক কিছুই। প্রফেসর শ্মিডের পড়ানোর ধরনটা একটু অন্যরকম, আমরা যেমন পি-ভি প্লেন বা টি-এস প্লেনে এক একটা চক্রিকপ্রক্রিয়া শিখেছি, তিনি পড়ান ই-টি ডায়াগ্রাম ধরে। খুব একটা জটিল কিছু না, সেই পুরনো গ্যাসের গতিতত্ত্ব, কার্নো-স্টার্লিং-এরিকসন-ব্রেটন সাইকেল, মাইক্রোগ্যাসটারবাইন, বের্নুয়ির সমীকরণ ইত্যাদি। ইদানীং অঙ্ক করতে গেলে মাথায় হালকা চাপ লাগে, অনভ্যাসের কারণেই হয়তো। সব শেষ করে দেখি দশটা বেজে গেছে। তখন মনে পড়লো, আজকে না বাস ধর্মঘট? মোটামুটি বজ্রাহত হবার মতোই ঘটনা, কারণ আমার বাসা থেকে সবচেয়ে কাছের ট্রাম স্টপেজে হেঁটে যেতে লাগে পঁচিশ থেকে তিরিশ মিনিট। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, তাপমাত্রা অবশ্য চড়ে গেছে ওপরে। কী আর করা, হেঁটেই রওনা দিলাম মূল ক্যাম্পাসের দিকে। হু হু বাতাস, হাঁটতেও খারাপ লাগছিলো না তেমন। হল্যান্ডিশার প্লাৎসে যখন পৌঁছেছি, তখনই হাল্টেষ্টেলে (স্টপেজ) কাঁপিয়ে ঘোষণা এলো, আজ ট্রামও চলবে না। ক্যামন লাগে এসব শুনলে? আর হল্যান্ডিশার প্লাৎস থেকে ইংশুলে আরো আধঘন্টার চড়াই পথ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত রাগে জ্বলে গেলো। ঘড়িতে দেখি আটতিরিশ বাজে, এগারোটার সময় আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট। মনে মনে কল্পনার করার চেষ্টা করলাম, আমি আসলে একটা গোলাপি মেঘের ওপর বসে আছি। হাতে ধরা সুরার গেলাস। কাছেই জনৈকা অপ্সরা কুমতলব নিয়ে ওঁত পেতে আছে। ইত্যাদি ...। হুম। কল্পনায় খুব একটা কাজে দিলো না, গ্যাটম্যাট করে হাঁটা দিলাম আবার। সারা শহরের চেহারা হয়েছে অদ্ভুত, অসময়ে লোকজন গিজগিজ করছে রাস্তার ওপর। সবার চেহারাই খিড়কি পথে প্রেম খাওয়া। একদা ছিলো না জুতা চরণ যুগলে। কোয়নিগসপ্লাৎসে আপনমনে একটা গালির গানে সুর দিতে দিতে যাচ্ছি, দেখি আমার ভাইভা গ্রুপের আরেক সদস্য স্লাভ বিরস মুখে খুব কষ্টে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে রাস্তার মাঝখান দিয়ে। ডাক দিতেই স্লাভ থামলো। ইচ্ছামতো কিছু গালাগালি করে মনের ঝাল মিটিয়ে তারপর আবার হাঁটা শুরু করলাম। স্লাভকে বললাম, তুমি পারলে আগে গিয়ে জানাও যে আজ এই অবস্থা, সামান্য দেরি হতে পারে। স্লাভ জানালো, গ্রুপের আরেক সদস্য দিমো ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে, সে জানাবে বলেছে। ইংশুলেতে হেঁটে যাওয়ার ব্যাপারটা এমনিতে খারাপ লাগার কথা নয়, কিন্তু ভাইভার আগে এইসব ফালতু খাটনি কারই বা ভালো লাগে? প্রফেসর শ্মিড ভয়াবহ ব্যস্ত মানুষ, সম্ভবত গতকাল ফিরেছেন ভারত থেকে। আমাদের পরীক্ষা নিয়ে অন্য কোথাও যাবেন। দেরি করলে আমাদের শুধু পরীক্ষাই পিছাবে না, গ্রেডও জুটবে খারাপ। সম্ভাব্য কী কী ঝাড়ি খেতে পারি তার একটা তালিকা করার পর দেখলাম, আসলেই কপালে দুঃখ আছে। এমনিতেই আরেক কোর্সে দেরি করে যাবার জন্যে একদফা ঝাড়ি খেয়েছি শ্মিডের কাছে, আজকে পরীক্ষায় দেরি করে গেলে কী হয় কে জানে। শেষ পর্যন্ত দশ মিনিট দেরি করে বসলাম তিনজন। যে জিনিস আমি নিজে প্রায় বছর চারেক পড়িয়েছি অন্যদের, সেটার এমন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্যাঁচ শ্মিড বার করতে লাগলেন যে টাষ্কি খেয়ে গেলাম। যে প্রশ্ন তিনি দিমো বা স্লাভকে করেন, সেটার উত্তর ঠোঁটের ডগায় চলে আসে, কিন্তু আমার বেলায় এমন বেয়াড়া প্রশ্ন করেন যে সেকেন্ড পনেরো চিন্তা করতে হয়। পাশে বসে আছে প্রোটোকোলান্ট ম্যাথিয়াস, সে ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে কী কী সব লিখে যাচ্ছে প্রোটোকোল পাতার ওপর। প্রফেসর শ্মিড কোন কাজেই সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী নন, পরীক্ষা শেষে দুমদাম করে গ্রেড জানিয়ে দিলেন। ডিপ্লোমআরবাইট, অর্থাৎ থিসিস লেখার সময় আগ্রহ থাকলে যোগাযোগ করতে বললেন, কী বিষয় নিয়ে ইদানীং কাজ করছেন তারও একটা ধারণা দিলেন। তারপর বললেন, যান গিয়ে ফূর্তি করেন। পরীক্ষা শ্যাষ। আবারও ঘন্টা আধেক হেঁটে গিয়ে সুমন চৌধুরীর ওপর হামলা করলাম। চৌধুরী নানা ভ্যাজালে থাকেন, তাকে বগলদাবা করে গেলাম রেয়াল-এ। রেয়াল বেশ বড়সড় বিভাগ-বিপণী, তবে একটু দূরে বলে কম যাওয়া হয়। রেয়ালে ফোরেলের দাম অন্য যে কোন দোকানের চেয়ে কম বলে ফোরেলে খেতে চাইলে সেখানে যাই। বেশ কিছুদিন আগে একদিন ফোরেলের দাম নিয়ে চৌধুরীর সাথে আলাপ করার সময় কোত্থেকে এক নারীকণ্ঠ শোনা গেলো ঐশীবাণীর মতো, "আপনারা বাঙালি?!" দেখলাম জনৈকা সুশ্রী মহিলা বেশ অবাক হয়ে দেখছেন আমাদের। মনে মনে বললাম, কপাল ভালো ফোরেলে নিয়ে আলাপ চলছিলো, কোন গরম বিষয়ে নয়। আলাপ করে জানা গেলো, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের। না, মহিলাটা কোনক্রমেই একাকিনী নন, সাথের গোমড়ামুখো টেকো ভদ্রলোকটি তাঁর সঙ্গী, ধরা যাক এই দম্পতির নাম চক্রবর্তী। সেই থেকে কাসেলে উচ্চস্বরে বাংলায় বাজে কথা বলার পরপরই আমি নিজেকে একটা সতর্কবাণী দিয়ে থাকি, "আপনারা বাঙালি?!" রেয়ালে এতদিন চালের দাম কম ছিলো, সেখানেও দাম চড়চড়িয়ে বেড়ে যাওয়ায় আমরা যার পর নাই ক্ষুব্ধ। সস্তায় ভালো চাল আর কোথায় পাওয়া যায়, তার খোঁজ নেয়ার জন্যে এর আগে এক ছুটির দিনে এক চৈনিক দোকানে হানা দেয়া হয়েছিলো। সেখানে ভক্ষ্য-অভক্ষ্য নানারকমের জিনিস আছে, যেমন কই মাছ আবিষ্কার করে চৌধুরী রীতিমতো উল্লসিত, কিন্তু চালের মূল্য সেখানে প্রীতিকর নয়। সন্দেহজনক চেহারার কিছু চাল দেখলাম, যাদের বাসমতী বা জেসমিন চাল বলে চালিয়ে দেয়ার একটা অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিফল মনোরথে শেষমেশ বর্ধিতমূল্যের চাল খাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আমরা এ ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যে এই অনাচারের শোধ নিতেই হবে। কোন জার্মান তরুণীর ওপর এই ঝাল ঝাড়তে পারলে তো কথাই নেই।
false
mk
গাফফার চৌধুরীর ভাবনা ও করণীয়_ বেগম খালেদা জিয়া ইতোপূর্বে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসার পর যখন তাঁর দল সরকার পতন আন্দোলনের নামে জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজপথে গু-ামি করে বেড়াচ্ছিল, তখন বিএনপির এক প্রবীণ নেতাকে কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম, রাস্তায় গু-ামি করে এই সরকারকে আপনারা ক্ষমতা থেকে হটাতে পারবেন না। কারণ, আপনাদের জনপ্রিয়তা নেই। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের বহু ভুলত্রুটি এবং শহুরে এলিট ক্লাসের সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম অপপ্রচারের ফলে দেশে নির্বাচকম-লীর মধ্যে যে অসন্তোষ ও প্রোটেস্ট ভোট জমা হয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি হয়ত এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারে। আমি জ্যোতিষী নই। কিন্তু এই ব্যাপারে সঠিক প্রেডিকশন করেছি বলে মনে হচ্ছে। দেশব্যাপী ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের মতো সন্ত্রাস সৃষ্টি দ্বারা, এমনকি ৫ মে’র হেফাজতী তা-বের দ্বারাও সরকারের ক্ষমতায় অবস্থান এক চুল পরিমাণও বিএনপি নড়াতে পারেনি। কিন্তু চারটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা চারটিতেই জয়ী হয়েছে। যদি জেদের বশবর্তী হয়ে এই নির্বাচনও তারা বর্জন করত, তাহলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনে যে তাদের জয়ের আশা আছে, এটাও বোঝা যেত না। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এবং জয়ী হওয়াতেই বিএনপির মরা গাঙে আবার জোয়ার এসেছে। এতবড় একটা দৃষ্টান্ত থেকেও বিএনপি কোন শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হয় না। আমি ধরে নিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সদিচ্ছা ও ক্ষমতা দেখানোর পর সরকারের প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার-পদ্ধতির অধীনে বিএনপি সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজি হবে এবং দেশে আর অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা না করে, নাগরিক জীবনে উপদ্রব সৃষ্টি না করে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক বিতর্কিত ও পরিত্যক্ত ব্যবস্থাটি পুনঃপ্রবর্তনের জেদ বজায় রেখে দেশে আর অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালাবেন না। মনে হয় আমার এই আশাটি একটু বেশি আশা পোষণ করা হয়ে গেছে। আগামী ২২ জুন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর অছিলায় দেশব্যাপী বিক্ষোভ দিবস পালনের কর্মসূচী দিয়েছে। এটা অত্যন্ত নিম্নমানের রাজনৈতিক চালাকি ছাড়া আর কিছু নয়, আমার সাংবাদিক ইনটিউসন বলে, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থাতেই নির্বাচনে আসবে। কিন্তু তার আগে রাস্তায় অশান্তি জিইয়ে রেখে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রাখতে চায় এবং নিজেদের আগের সন্ত্রাস সৃষ্টির ব্যর্থতাগুলোর জ্বালা মেটাতে চায়। এই বিক্ষোভ দিবসে কি হবে? বিএনপির ডাকে দেশের মানুষ অকারণে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসবে? মোটেও নয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে কিছু গাড়ি-বাড়ি, ভাংচুর হবে, নাগরিক জীবনে উৎপাত সৃষ্টি করা হবে এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করা হবে। প্রোটেস্ট ভোটে নির্বাচনে জেতা এবং গণসমর্থন নিয়ে আন্দোলন সফল করা এক কথা নয়। পশ্চিমবঙ্গে তিন দশকের বেশি সময়ের বামফ্রন্টের শাসনে জনগণের মধ্যে বিরাট প্রোটেস্ট ভোট জমা হয়েছিল। মমতা ব্যানার্জীর মতো বহুরূপী নেত্রী, যিনি কংগ্রেস ও বিজেপির ক্রমাগত দল-বদলাবদলি করতে কিছুমাত্র লজ্জাবোধ করেন না, তিনি এই প্রোটেস্ট ভোটের সদ্ব্যবহার করে রাজ্য নির্বাচনে বিস্ময়কর জয়ের অধিকারী হন। কিন্তু ক্ষমতায় বসার এক বছরের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তায় বেলুন ফুটো হতে শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আবার বামফ্রন্টের দিকে তাকাতে শুরু করেছে। আগামী রাজ্য-নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বা মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন এমনটা অনেকেই মনে করেন না। বাংলাদেশেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অথবা হুড় হাঙ্গামা না করে বিএনপি যদি তার বর্তমান নির্বাচন-সাফল্যগুলোকে সংহত করে এবং আগামী নির্বাচনে যোগ দেয়, তাহলে আওয়ামী লীগ-বিরোধী প্রোটেস্ট ভোটের সাহায্যে তারা হয়ত এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারবে। এটাও নির্ভর করে আওয়ামী সরকার নিজেদের ভুলগুলো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সংশোধন করে দেশবাসীর মধ্যে জমা হওয়া বিরাট প্রোটেস্ট ভোটের সংখ্যা দ্রুত কমাতে না পারার ওপর। এত অল্প সময়ে সেটা না পারার সম্ভাবনাই বেশি এবং বিএনপির ক্ষমতায় আসায় সুযোগ বেড়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে তাঁরা এও বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে। আন্দোলনের নামে রাস্তায় গু-ামি করে কোন লাভ হবে না। এ ব্যাপারে আমার ধারণা একটু ভিন্ন। আমার ধারণা, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের গত সাড়ে চার বছরের ভুলত্রুটিগুলোর কিছু কিছু সংশোধন এবং মনোনয়নদানের সময় এক বৃহৎ সংখ্যক অসৎ, দুর্নীতিবাজ ও গণবিচ্ছিন্ন এমপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনী এলাকার মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রার্থী বাছাই করলে সিটি কর্পোরেশনের মতো বিপর্র্যয় আওয়ামী লীগের কপালে ঘটবে না। নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এবং তারপর যে দলই জিতুক, তাদের ভারত বা ব্রিটেনের মতো কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে। আগামী নির্বাচনে সংসদে স্বতন্ত্র সদস্যদের সংখ্যা বাড়বে এবং কিছু ছোট ছোট দলের আবির্ভাব ঘটবে বলে আমার ধারণা। আওয়ামী লীগের উচিত হবে, হেফাজতীদের বিশ্বাস করে আর ছাড় না দিয়ে এসব সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং গণতন্ত্র ও সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী ছোট দলগুলোর সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলা। বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতদের সঙ্গী করে ক্ষমতায় যাবে, তারেক রহমানের মতো এক নিকৃষ্ট চরিত্রের ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হবে এবং হেফাজতের মধ্যযুগীয় তেরো দফা দাবির বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে। এ আশঙ্কার কথা আমি ভাবতে চাই না এবং আমার জীবদ্দশায় তা দেখে যেতেও চাই না। তার চাইতে আওয়ামী লীগের ব্যর্থ এবং ভুলভ্রান্তিতে ভরা শাসনও আমার অধিক কাম্য। আওয়ামী লীগের ভেতরের সুবিধাবাদী ডানপন্থীরা এবং বাইরের নিরপেক্ষতায় ভেকধারী সুশীল সমাজ যদি দেশের ভাগ্যে ঘনায়মান গভীর বিপদ সম্পর্কে এখনও সচেতন ও সতর্ক না হন, তাহলে এই ভুলের মাসুল তাদের দারুণভাবে দিতে হবে। যে মাসুল একদিন দিয়েছিল নাৎসি অভ্যুত্থান-পূর্ব ইউরোপের বুদ্ধিজীবীরা। শেখ হাসিনাকেও অনুরোধ জানাই, তিনি ত্রিশের জার্মানির হিডেনবার্গ এবং ইতালির ইমানুয়েলের মতো ভুল করবেন না। আপোসের চোরাবালিতে পা দেবেন না। তিনি এখন প্রমাণ পেলেন হেফাজতীরা ট্রয়ের ঘোড়া। এই ঘোড়ার পেটে লুকিয়ে বিএনপি সিটি কর্পোরেশনগুলোর নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। হেফাজতীরা আওয়ামী লীগকে মুখে আশ্বাস দিয়েছে, তারা রাজনীতি করেন না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের সময় প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে, আপনারা ইসলাম চান, না নাস্তিকদের চান? মানুষ বলেছে, ইসলাম চাই। অমনি কোরান শরীফ বের করে হেফাজতীরা বলেছে, তাহলে এই পবিত্র কোরানে হাত রেখে বলুন, নাস্তিক আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন না। আওয়ামী লীগ হেফাজতীদের এই মিথ্যাপ্রচার ঠেকানোর মতো আগ্রহ ও সক্ষমতা দেখায়নি। আওয়ামী লীগের মধ্যেও একশ্রেণীর এক বিরাট সংখ্যক নেতাকর্মী গড়ে উঠেছে, যারা নিজেরাও ধর্মান্ধতায় ভোগে এবং হেফাজতের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের এক অংশকে আবার বিএনপি অর্থের দ্বারা বশীভূত করে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় প্রচার শক্তিও একেবারে নেই বললেই চলে। সর্বৈব মিথ্যা প্রচারণার মুখোমুখি সামান্য সত্য প্রতিষ্ঠাতেও তারা অক্ষম। হেফাজতীদের তুষ্ট করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গড়ে ওঠা নিজের শক্তি স্তম্ভকেই ভেঙ্গে দিয়েছে। এই তরুণ প্রজন্ম ক্ষুব্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর। তাদের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে। তারা অবশ্যই এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থনদানে এগিয়ে আসেনি। আওয়ামী লীগকে সমর্থনদানে এগিয়ে আসেনি হিন্দু, বৌদ্ধ সংখ্যালঘু শ্রেণীর অধিকাংশ ভোটদাতাও। কক্সবাজার ও রামুতে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের সময় আওয়ামী লীগের একজন এমপিও দুর্গতদের পাশে গিয়ে দাঁড়াননি। বহু সংখ্যালঘু ভোটার এবার ভোট দিতে যায়নি। বেশিরভাগ যায়নি হেফাজত ও জামায়াতের হুমকির মুখে পড়ে। অকেনেই যায়নি আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে এবং অসন্তোষের জন্য। আওয়ামী লীগ কি তাদের সমর্থক শিক্ষিত মধ্যবিত্তদেরÑ বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্তের সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছেন? পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নানা ব্যাপারে তাদের আশাভঙ্গ হয়েছে। ধর্মান্ধদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আপোসের নীতি, বড় দুর্নীতির সঙ্গে সহাবস্থান, বিশেষ করে শেয়ার বাজারে ধস থেকে হলমার্কের দুর্নীতিতে জড়িত রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে এবং সাগর-রুনী সাংবাদিক দম্পতির হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে অক্ষমতা অথবা অনিচ্ছা, নদী ও সীমান্ত সমস্যায় ভারতের সঙ্গে মীমাংসায় পৌঁছতে অসাফল্য ইত্যাদি বহু ব্যাপারে শহুরে মধ্যবিত্তদের আশাভঙ্গ হয়েছে এবং তারা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটদানে বিরত ছিল বলে খবরে প্রকাশ। সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিক খবর ছেপেছে, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে শতকরা ৩৭ ভাগ ভোটদাতা অনুপস্থিত ছিল। তারা ভোট দেয়নি। খবরে বলা হয়েছে, এরা আওয়ামী লীগের সমর্থক ভোটার। এদের মধ্যে আছে আওয়ামী লীগের ওপর অসন্তুষ্ট ও বিরূপ শহুরে মধ্যবিত্ত, বিক্ষুব্ধ তরুণ শ্রেণী এবং আওয়ামী সরকারের ওপর আস্থা হারানো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, হেফাজতীদের বিরুদ্ধে প্রচারযুদ্ধে না নেমে আওয়ামী লীগ নারী ভোটও সংহত করে নিজেদের পক্ষে টানতে পারেনি। আওয়ামী লীগকে এখন এই ভুলগুলো শোধরাতে হবে। আওয়ামী লীগকে নীতিগত সঠিক অবস্থানে ফিরে আসতে হবে। ‘ডুড এবং টামাকু দুই-ই খাব’ এই নীতি এখন অচল। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চমৎকার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, প্রাগমেটিজমের পরিচয় দেখিয়েছে। অবশ্যই আওয়ামী লীগের শাসন বিএনপির শাসনের চাইতে অনেক উন্নত ও গণকল্যাণকামী এই সত্যটাও আজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু দুর্নীতি ও ধর্মান্ধ রাজনীতির সঙ্গে আওয়ামী লীগ আপোসহীন, আওয়ামী লীগ আবার আওয়ামী মুসলিম লীগে পরিণত হতে চায় না এই সত্যটি দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে হবে। একশ্রেণীর বিগ মিডিয়ার প্রচারণাকে ব্যর্থ করার জন্যও আওয়ামী লীগকে তার প্রচার শেল শক্তিশালী করতে হবে। ঢাকার যে দৈনিকটি এখন বকধার্মিক সেজে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ১০টি কারণ দেখাচ্ছেন, সেই দৈনিক এই ব্যাপারে নিজের দুর্বৃত্তপনা ও নষ্ট সাংবাদিকতার কথা লুকাতে চেয়েছেন। নির্বাচনের সময় পত্রিকাটি অনবরত আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের সম্পত্তির হিসাব একতরফাভাবে প্রকাশ করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, এরা সকলেই দুর্নীতিবাজ। পাশাপাশি বিএনপি-সমর্থিত-প্রার্থীদের, এমনকি সিলেটের বহু কীর্তির নায়ক আরিফের সম্পত্তির ব্যাপারে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি। এই প্রচারণা ঠেকাবার কোন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ নেয়নি। যে দৈনিকটি আওয়ামী লীগের প্রতিটি ক্রাইসিসের সময় এই ধরনের ধূর্তামির আশ্রয় নেয়, তার সম্পাদকের গত দশ বছরের অর্থবিত্তের হিসাব নেয়ার কোন উদ্যোগ সরকার নিয়েছেন কি? আমার ধারণা, নিলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ত। এখনও সময় আছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ে ঘরে খিল না দিয়ে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াক। হাসিনা-নেতৃত্বে সাহসের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হোক এবং নিজেদের ভুলগুলো সংশোধন করুক। একজন ক্ষুদ্র বুদ্ধির সাংবাদিক হিসেবে বলছি, আগামী নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হবে না। লন্ডন ১৮ জুন, মঙ্গলবার, ২০১৩। সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৩৪
false
ij
একজন রাজকুনোয়ার কিংবা লুৎফুন্নেসা বেগমের জীবন আমরা দেখেছি যে, পলাশীর যুদ্ধের পর নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের নির্দোষ মহিলাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণের ফলে মীরজাফরের ছেলে মীরন কে এক দৈব প্রতিশোধের সম্মূখীন হতে হয়। মীরজাফরের নির্দেশে ১৭৮০ সালে ঢাকার জিনজিরা প্রাসাদে বন্দিরত নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার মা আমেনা বেগম ও খালা ঘসেটি বেগমকে নৌকায় তুলে নৌকাটি বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে দেয় মীরন। এর অল্প কিছুকাল পরে মীরন পাটনার (বর্তমান বিহার)আমিমাবাদে বজ্রপাতে নিহত হন। এ রকম অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ও চরিত্র ১৭৫৭ কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। বাংলার শেষ হতভাগ্য নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা, সেনাপতি মীরজাফর আলী খান, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারিনী ঘসেটি বেগম, স্বার্থপর ব্যবসায়ী জগৎ শেঠ ও উমিচাঁদ এবং ইংরেজ বেনিয়া শ্রেণির স্বার্থ রক্ষাকারী রবার্ট ক্লাইভ। ১৭৫৭ কেবল বাংলার পটপরিবর্তনই নয়, সে সময় এমন সব ঘটনা ঘটেছিল যার অর্ন্তনিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করে আজও আমাদের কপাল কুঞ্চিত হয়ে ওঠে। মুর্শিবাবাদের মানচিত্র। এককালের (সংযুক্ত) বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজধানী ছিল এই মুর্শিদাবাদ। ভাগীরথী (গঙ্গা) নদীর তীরে অবস্থিত মুর্শিদাবাদ নগর পূর্বাঞ্চলীয় মুগল প্রদেশ সুবাহ বাঙ্গালার প্রধান নগররুপে বিখ্যাত ছিল। অষ্টাদশ শতকে বাংলার নওয়াবদের আবাসস্থল ছিল মুর্শিদাবাদ নগর। এই মুর্শিদাবাদ নগরেই নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার দ্বিতীয় স্ত্রী লুৎফুন্নেসার উত্থান ঘটেছিল, ১৭৫৭-র রঙ্গমঞ্চে লুৎফুন্নেসার সেই উত্থান ছিল অতি বিচিত্র। প্রথম জীবনে লুৎফুন্নেসা ছিলেন মুর্শিবাবাদের নওয়াবের হাজারদুয়ারি প্রাসাদের এক হিন্দু পরিচারিকা । মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রাসাদে নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার মা আমিনা বেগমের সেবায় নিয়োজিত ছিল রাজকুনোয়ার । আমিনা বেগম রাজকুনোয়ার কে আপন কন্যার মতো স্নেহ করতেন। নম্র স্বভাবে রাজকুনোয়ার ছিল অত্যন্ত রুপসী এবং মধুরভাষীনি । মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। এই প্রাসাদের কর্তৃত্ব নিয়েই ১৭৫৭-র ষড়যন্ত্র হয়েছিল, আর পরবর্তীকালে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের জীবনও সুখের হয়নি ... এই প্রাসাদেই এককালে রাজকুনোয়ার বলে এক হিন্দু পরিচারিকা হয়ে উঠেছিল উচ্চাকাঙ্খি ... রাজকুনোয়ার কি আমিনা বেগম-এর বেদনার্ত বিধবা জীবনের সঙ্গী হয়েছিল? আমিনা বেগম-এর জীবন তো তেমন সুখের ছিল না; আমিনা বেগমের স্বামীর নাম জৈনুদ্দীন। তিনি পাটনার (বিহার) নায়েব সুবাহদার ছিলেন। বিদ্রোহী আফগান নেতারা জৈনুদ্দীন কে হত্যা করে দু ছেলেসহ আমিনা বেগমকে বন্দি করে। আলীবর্দী খান বিদ্রোহী আফগান নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তাদের মুক্ত করেন। আমিনা বেগমের অন্য ছেলের নাম মির্জা মেহেদী। একে ১৭৫৭-র পর মীরজাফর আলী খান মির্জা মেহেদী কে ধীরে ধীরে টর্চার করে হত্যা করেছিল। তখনও বেঁচে ছিলেন আমিনা বেগম। শুনেছিলেন বড় ছেলের পর ছোট ছেলের হত্যার রোমহর্ষক কাহিনী... দূর থেকে মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। ... এর একতলায় আছে অস্ত্রাগার, রেকর্ড ঘর এবং অফিস ঘর। সিরাজের তরবারি, আলিবর্দীর তরবারী, নাদির শাহের বর্ম ও শিরস্ত্রান, মীরকাশিমের মুঙ্গের এর কারখানার বন্দুক এবং আরও বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, ছোরা, বল্লম, খঞ্জর রয়েছে এই অস্ত্রাগারে। এছাড়া পলাশীর যুদ্ধে যে কামান ফেটে গিয়ে মীরমদন নিহত হয়েছিলেন সেটি এবং অকৃতজ্ঞ মহন্মদী বেগ যে ছোরা দিয়ে সিরাজ কে হত্যা করেছিল সেই ছোরাটাও সযত্নে রক্ষিত আছে অস্ত্রাগারে। নওয়াব আলীবর্দীর স্ত্রী শরীফুন্নেছা। তার বড় মেয়ে মেহেরুন্নেসা; লোকে তাকে ঘসেটি বেগম নামেই চিনত। দু’ বোনের ব্যাক্তিত্ব পার্থক্য ছিল; একজন অ্যাকটিভ তো অন্যজন প্যাসিভ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার মতো মনে হয়। এ ক্ষেত্রে শেখ রেহানা =আমিনা বেগম; আর ঘসেটি বেগম= ... আমিনা বেগমের তুলনায় ঘসেটি বেগম অনেক ডায়ানামিক পারসোনালিটির অধিকারী ছিলেন- সেই তুলনায় আমিনা বেগম অনেকটাই নিষ্প্রভ...উপরোন্ত সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বড় বোন।কাজেই ঘসেটি বেগমের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকার কথা না। তাই বলছিলাম রাজকুনোয়ার কি আমিনা বেগমের বেদনার্ত বিধবা জীবনের সঙ্গী হয়েছিল ? মুর্শিদাবাদের বর্তমান ছবি। নিসন্দেহে বুদ্ধিমতি ছিল রাজকুনোয়ার। নার্ভাস আমিনা বেগম কে সাহস যোগাত? আমিনা বেগম এর সঙ্গে মুর্শিদাবাদ প্রাসাদের তরুণী হিন্দু দাসী রাজকুনোয়ার বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল-যা ১৭৬৫ অবধি টিকে ছিল। মুর্শিদাবাদের বর্তমান ছবি। রাজকুনোয়ার কি মুর্শিদাবাদের মেয়ে? রাজকুনোয়ার কি বাঙালি ছিল? নাকি পশ্চিমদেশিয়? মানে উত্তর ভারতের? রাজকুনোয়ার বাঙালি হলে কি স্থানীয়? মানে মুর্শিদাবাদের মেয়ে? বাঙালি মেয়েরাও তো সেই রকম সুন্দরী হয়। কোনওকালে এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে কি? আমরা অনুমান করতে পারি রাজকুনোয়ার কেবল রুপসী ও বুদ্ধিমতী ছিল না, ছিল উচ্চাকাঙ্খিও, মানে অ্যাম্বিশাস। সে তরুন সিরাজকে দেখত মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রাসাদে। ভবিষ্যতের বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নওয়াব। সিরাজ সুদর্শন ও সুন্দর তরুণ। তবে যেন কিছু দুঃখী নওয়াব। তার কারণ আছে। সিরাজউদ্দৌলার প্রথম বিবাহ হয়েছিল ইরিজ খান নামে একজন অভিজাত ব্যক্তির কন্যার সঙ্গে, সেই মেয়ের নাম উমদাতুন্নিসা, অবশ্য তাকে হাজারদুয়ারি প্রাসাদের সবাই ‘বহু বেগম’ বলে ডাকত। উমদাতুন্নিসার কোনও সন্তানাদি হয়নি, তাছাড়া বহু বেগম আনন্দ-বিলাসে মগ্ন থাকে, নওয়াব-এর তেমন খোঁজখবর নিত না ...এসব কথা আমিনা বেগম জানতেন ... ওদিকে রাজকুনোয়ার আমিনা বেগমের মন জয় করেছিল। তিনি কৌশলে পুত্রের সেবায় রাজকুনোয়ার কে নিয়োজিত করেন (বিষয়টি আমাদের একালের অনেকের কাছে ‘অড’ লাগতে পারে) ... ওদিকে রাজকুনোয়ার-এর ব্যবহার অত্যন্ত মধুর, দেখতে রূপসী তো বটেই, যে কারণে নওয়াব তো মুগ্ধ হয়েই ছিল। আসলে কেমন দেখতে ছিল রাজকুনোয়ার? আমরা লক্ষ করি তরুণ নওয়াব রুপসী রাজকুনোয়ার কে কেবল হেরেমের রক্ষিতা হিসেবে ট্রিট করেন নি; ইচ্ছে করলে সেরকম সেই পুরুষশাসিত সময়ে করতে পারতেন, করেননি .. যে কারণে বাংলার ইতিহাসের এই পর্যায়ে আমরা অদম্য বন্য কামকে সমাহিত পবিত্র প্রেমে রুপান্তরিত হতে দেখি। কাজেই অপ্রাসঙ্গিক হলেও এক্ষণে একালের তুমুল জনপ্রিয় একটা বাউল গানের প্রথম দুটি কলি স্মরণ করি; করি মানা কাম ছাড়ে না ... মদনে আমি প্রেমরসিক হব কেমনে? মুগ্ধ নওয়াব হিন্দু পরিচারিকা রাজকুনোয়ার কে বিবাহ করতে চায়, আমিনা বেগমও এ বিবাহে অসম্মত হন না, নওয়াব রাজকুনোয়ার কে বিয়ে করেন, ভালোবেসে রাজকুনোয়ার-এর নাম রাখেন লুৎফুন্নেসা বেগম।ধর্মান্তরিত লুৎফুন্নেসা বেগমের গর্ভে একটি মেয়ে হয়, ফুটফুটে মেয়েটির নাম জোহরা। রাজকুনোয়ার-এর উচ্চাকাঙ্খি পরিকল্পনা সফল হয়। কিন্তু সে কি পেল? যাকে পেল তার জীবনের সঙ্কট কি টের পেয়েছিল? পলাশীর যুদ্ধ। একাত্তরের যুদ্ধের পাশাপাশি এই একটি যুদ্ধ যা বাঙালির মনে চিরকালের মতো দাগ কেটে আছে... ১৭৫৭ সালে পলাশীর বিপর্যয়ের পর নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদ নগর থেকে একাকী পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লুৎফুন্নেসা কান্নায় ভেঙে পড়েন, তাঁকে সঙ্গে নেয়ার আকুল আবেদন করেন। ১৭৫৭ সনের ২৪ জুন। রাত। নওয়াব একমাত্র কন্যা জোহরা, লুৎফুন্নেসা এবং একজন অনুগত খোজসহ মুর্শিদাবাদ শহর ত্যাগ করে। ধরা পড়ে যেতে দেরি হয়নি। সপরিবারে নবাবকে মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে আনা হয়। মীরজাফরের জামাতা মীরকাসিম লুকানো সোনা-দানার সন্ধান চেয়ে লুৎফুন্নেসা ওপর অত্যাচার করে। মীরজাফর নবাবকে হত্যার আদেশ দেয় ... এখন প্রশ্ন এই সেসময় মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রাসাদের সাধারন পরিচারিকা দের ভাগ্যে কি ঘটেছিল? তাদের ভাগ্যে তেমন বিপর্যয়কর কিছু ঘটার কথা নয়। তাদের প্রভূদের পরিবর্তন হয়েছিল মাত্র। রাজকুনোয়ার এর সহকর্মীদের কিছু হয়নি। রাজকুনোয়ার ততদিনে লুৎফুন্নেসা বেগম, কাজেই তাকে পরিবর্তিত ভাগ্যের কোপে পড়তে হয়েছিল। বুড়িগঙ্গার পাড়ে জিনজিরা প্রাসাদ। বাংলার মুঘল সুবহাদার ২য় ইব্রাহিম খান (১৬৮৯-১৬৯৭) তাঁর প্রমোদ কেন্দ্র হিসেবে প্রাসাদটি নির্মান করেন। ১৭৫৮ সালে মীরজাফর নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের মহিলা সদস্যদের ঢাকায় নির্বাসিত করে এই জিনজিরা প্রাসাদে থাকার নির্দেশ দেন। এটি ঠিক কারাগার নয়, প্রাসাদ। তাই একে বিশেষ কারাগার বলা যায়। এই প্রসঙ্গে কারও কারও বিগত তত্ত্বাবধায়ক আমলের বিশেষ কারাগারের কথা মনে পড়তে পারে। ঢাকার জিনজিরা প্রাসাদে লুৎফুন্নেসা বেগমের ৭ বছরের দুঃসহ জীবন কাটে । চরম দারিদ্র, দুঃসহ পরিবেশ। যৎসামান্য ভাতা আসত বটে, তবে তা ছিল অনিয়মিত। তার ওপর শোক, গভীর শোক, স্বামীর জন্য শোক। ১৭৮০ সাল। মীরজাফরের নির্দেশে মীরন নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার মা আমেনা বেগম ও খালা ঘসেটি বেগমকে একটি নৌকায় তুলে সেটি ডুবিয়ে দেয়। তার আগে ১৭৬৫ সালে ক্লাইভ এর নির্দেশে লুৎফুন্নেসা বেগম, তার কন্যা জোহরা ও নওয়াব আলীবর্দীর স্ত্রী শরীফুন্নেছাকে মুক্ত করে মুর্শিদাবাদে আনা হয়। কেন ক্লাইভ এই রকম হিতকারী সিদ্ধান্ত নিলেন যেখানে মীরজাফরের নির্দেশে মীরন আমেনা বেগম ও খালা ঘসেটি বেগম কে নৌকায় তুলে সে নৌকা বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে দিল? মুগল সেনানায়কের হিংস্রতার পাশাপাশি একজন ব্রিটিশ সেনাধক্ষ্য উদারতা দেখাল। কী ভাবে একে ব্যাখ্যা করা যায়? মুঘলদের তুলনায় ব্রিটিনের উন্নত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা? ব্রিটেনে (সাম্রাজ্যবাদী হওয়া সত্ত্বেও) নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ছিল বলে? রবার্ট ক্লাইভ। মুর্শিদাবাদে ফিরে এসে শুরু হল দুঃসহ জীবন। লুৎফুন্নেসা বেগম এর জন্য রবার্ট ক্লাইভ তথা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ৬০০ টাকা ভাতা বরাদ্দ করেন। জোহরা ততদিনে বিবাহযোগ্যা হয়ে উঠেছে। মীর আসাদ আলী খান নামে এক পাত্র জুটল। এককালের হাজারদুয়ারির মালিকের কন্যার বিবাহ সম্পন্ন হল অত্যন্ত সাদাসিদে ভাবে। যা হোক। একে একে চার চারটি কন্যা সন্তান মা হল জোহরা। স্বামী মীর আসাদ আলী খান আকস্মিক ভাবে মারা গেলেন। ১৭৭৪ সালে মারা গেল জোহরা। লুৎফুন্নেসা বেগম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমন ভাবতেন কি- এর চে মুর্শিদাবাদের প্রাসাদের পরিচারিকার জীবন কি ভালো ছিল? ৬০০ টাকায় সংসার চলে না। ১৭৮৭ সাল। লর্ড কর্নওয়ালিশের কাছে ভাতা বাড়ানোর আবেদন করলেন। লর্ড কর্নওয়ালিশ নাকচ করে দিলেন সে প্রস্তাব। বর্তমান মুর্শিদাবাদের একটি এলাকা । কোথায় ছিলেন দুঃখীনি লুৎফুন্নেসা বেগম? মুর্শিদাবাদের খোশবাগ-এ ছিল নওয়াবদের সমাধিক্ষেত্র। আলীবর্দী খাঁ ও নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার সমাধির দেখাশোনার জন্য মাসে ৩০৫ টাকা পেতেন লুৎফুন্নেসা বেগম। এর সঙ্গে যোগ হত কোরআন পাঠ ও দান-খয়রাত। আজও মুর্শিদাবাদ নগরের এরকম অনেক স্থাপত্য লুৎফুন্নেসা বেগমের জীবনের শূন্যতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ... ১৭৯০ স্বামীর কবরের পাশে নামাজ পড়ার সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে লুৎফুন্নেসা বেগম। স্বামীর কবরের পাশেই কবর হয়েছিল লুৎফুন্নেসা বেগমের। উৎসর্গ: কবি শিরীষ ও তায়েফ আহমেদ। এ দুজনেরই সেই বিশেষ সময়টা নিয়ে ‘অবসেসন’ রয়েছে। ছবি ও তথ্যের উৎস: বাংলাপিডিয়া ও ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্যাদি ... সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১০ রাত ১১:০২
false
ij
গল্প_ মৃত ভোরের নর্তকী ১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি এক বিনম্র আলোর ভোরে পাকিস্তানি মিলিটারি লঞ্চের ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মেজর জুলফিকার কামরান এর ছোড়া গুলিতে নিহত হয় নদীর পাড়ে নৃত্যের ভঙ্গিমায় থাকা একটি কিশোরী । লঞ্চটি একটি চরের পাশ ঘেঁষে যাচ্ছিল; চরের নাম, শুভগাছা-, দু’পাশে প্রবাহিত যমুনার কালচে জল । এপ্রিল মাসের পর থেকেই ক্রমশ বিপদজনক হয়ে উঠছিল যমুনা- রাতদিন পাকিস্তানি মিলিটারি লঞ্চের টহল। জেলেদের ছদ্মবেশে স্থানীয় সশস্ত্র যুবকেরা আছে ছোট নৌকায় । দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রচন্ড বিস্ফোরনে প্রায়শ কেঁপে কেঁপে উঠছে নির্জন নদী। আবহমান কাল থেকে এ নদীটি অনেক সংঘাত ও মৃত্যুর সাক্ষী- কিন্তু, এ রকম মরণপন লড়াই নদীটি এর আগে কখনও দেখেনি।ভটভট শব্দে চর শুভগাছার খুব কাছে চলে আসা মিলিটারি লঞ্চের ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মেজর জুলফিকার কামরান ১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি এক বিনম্র ভোরের আলোয় সবুজ শাড়ি পরা একটি শ্যামলা মেয়েকে নৃত্যের ভঙ্গিতে দেখে অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন । এত ভোরে নদীপাড়ে ঐ কালো মেয়েটি নাচছে কেন? মেয়েটি কি হিন্দু? হিন্দুই মনে হয়। মুসলিম মেয়ে হলে নাচবে কেন। যেন লাহোরের হীরামন্ডির মুজরো-নাচা মেয়েরা মুসলিম নয়-বিজাতীয়। আর একটু পরেই বলা হবে যে- পাকিস্তানি মেজর জুলফিকার কামরান এর শরীরে পূর্বপুরুষের মুগল রক্ত প্রবাহিত ...সে মুগল রক্তের শরীর এখন পৃথিবীর এ প্রান্তের বদ্বীপের একটি নদীমাতৃক অঞ্চলে রক্তের হোলি উৎসবে মেতে উঠেছে।লঞ্চের পিছনের ডেক থেকে ধস্তাধস্তির আওয়াজ ভেসে এল। মেজর জুলফিকার কামরান নাক দিয়ে অদ্ভূত এক শব্দ করলেন। কাল রাতে সার্চ লাইট আর খান সেনাদের চোখ এড়িয়ে এড়িয়ে চলমান লঞ্চে কয়েকজন মুক্তি উঠে পড়েছিল । ছোট বোটে করে এসেছিল তারা; ধরা পড়ে যায়; স্থানীয় জেলে কৃষক এরা, একেবারেই সংঘটিত নয় - আবেগের বশে লঞ্চ আক্রমন করতে চেয়েছে। লঞ্চের পিছনের ডেকের ওপর হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে মুক্তিদের । তীব্র মানসিক আতঙ্কে রাখার জন্যেই এখনও হত্যা করা হয়নি, বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এটি এক ধরনের খেলা। ভয়ঙ্কর খেলা। ড্যাগার দিয়ে কারও চোখ তুলে ফেলা হচ্ছে। প্লায়ার্স দিয়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে কারও পায়ের আঙুল; আজ সকালে রোদ উঠলে এদের একজনকে অন্যজনের সামনে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হবে। এত কাছে থেকে কাউকে হত্যা করতে ভালো লাগে না মেজর জুলফিকার কামরান-এর । দূর থেকে গুলি করে জান নিতে ভালো লাগে মেজরের। মেজরের নিশানা কখনও মিস হয় না। নিশানা ঠিক রাখতে ভোরবেলা নিয়মিত পাখি শিকার করেন মেজর । পাকিস্তানের মূলতানের আকবরপুরে জন্ম তার; শৈশব থেকে চেনাব নদীর পাড়ে পাখি শিকার করে করে বড় হয়েছেন। বড় হাসিন নদী চেনাব- দু-পার্শ্বে নানাবর্ণের পক্ষীর বাস। কতকাল আগে হিন্দুস্থান দখল করার উদ্দেশ্যে চেনাব নদীর পাড়েই মুগল সৈন্যরা শিবির স্থাপন করেছিল । মেজর জুলফিকার কামরান-এর পূর্বপুরুষ দুর্ধর্ষ লড়াকু মুগল; মেজরের তাকৎ এর উৎসও তাই। ছ’ফুট উঁচু বলিষ্টকায় গড়নের মেজর জুলফিকার কামরান একাই খালি হাতে গর্জনরত শেরকে শায়েস্তা করার হিম্মত রাখেন। তবে যমুনা নদীর বিশালতা মেজরের মনে নিদারুন ভয়ের উদ্রেক করেছে। প্রথম দিন নদীটি দেখে বহুত ডর লেগেছিল মেজরের। এ রকম বিশাল প্রশস্ত নদীকে বশ করে হাজার হাজার বছর ধরে বেঙ্গলিরা বেঁচে আছে! বেঙ্গলিদের পরাজিত করা সহজ হবে তো? মেজরের মনে আজকাল এই প্রশ্নটি উঁকি দেয়। এ রকম বিশাল নদীকে বশ করে হাজার হাজার বছর ধরে বেঙ্গলিরা কী ভাবে বেঁচে আছে? বেঙ্গলিরা হাফ হিন্দু বলেই কি? হিন্দুরা তো অনেক তন্ত্রমন্ত্র জানে। তন্ত্রমন্ত্র দ্বারা কি নদীকে বশ করা যায়? মেজর জুলফিকার কামরান বিভ্রান্ত বোধ করেন।একটু আগে নদীর পাড়ে এক শ্যামলা কিশোরী আপন খেয়ালে নাচছিল বলে বিভ্রান্ত বোধ করেছেন । ভোরের বিনম্র আলোর ভিতর সেই বিচিত্র দৃশ্যটি দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন মেজর জুলফিকার কামরান । ভটভট শব্দ তুলে চরের খুব কাছ দিয়ে লঞ্চটি যাচ্ছিল। হিন্দু মেয়েটির ওপর মেজর ক্রোধান্বিত হয়ে উঠছিলেন। মেয়েছেলে নাচবে কেন? হিন্দু নাকি? মেজরের শরীরের মুগল রক্ত খলবল খলবল করছিল। মেয়েটিকে হত্যা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন মেজর। পশ্চিম পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পৃথিবীর এ প্রান্তের বদ্বীপের অর্ধ-হিন্দুদের গনহারে হত্যা করার মিশনেই তাকে পাঠানো হয়েছে । মেয়েটি খেয়াল করেনি যে মৃত্যু ঘনিয়ে আসছিল; নৃত্যের আরাধনায় মগ্ন ছিল বলেই টের পায়নি।মেজর জুলফিকার কামরান ইঙ্গিত করলে একজন সৈনিক তাকে একটি সেমি-অটোমেটিক মাউজার পিস্তল এগিয়ে দেয়। জার্মান মাউজার মেজরের প্রিয় মারণাস্ত্র। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে মেজর জুলফিকার কামরান-এর অব্যর্থ নিশানার সুনাম আছে। মেজরের তাক নাকি কখনও মিস হয় না। আবাল্য চেনাব নদীর পাড়ে পাখি শিকার করতে করতে এই দক্ষতা অর্জন করেছেন মেজর। পাখির বদলে আজ মানুষ শিকার করবে মেজর । মেয়েটির কপাল তাক করেন মেজর। মেয়েটি স্থির নয় বলে লক্ষটিও স্থির নয় । তবে চলমান পাখি শিকার করে অভ্যস্থ মেজর।একটু পর গুলির শব্দে যমুনা পাড়ের নির্জনতা খানখান হয়ে ভেঙ্গে যায়। জলের কিনারে বসে থাকা একটি কানি বক আকাশে ডানা মেলে। উঁচু পাড় থেকে মেয়েটি ঢলে পড়ে যমুনার কালচে জলের কিনারায়। খান সেনারা হাততালি দিয়ে মেজর এর নির্ভূল নিশানার তারিফ করে । নদীজলে মেয়েটির উষ্ণ লাল রক্ত মিশেছে। ততক্ষণে ভোরের বিনম্র আলো ভেদ করে অদৃশ্য দিগন্ত রাঙিয়ে সূর্য উঠছিল। ভটভট শব্দে লঞ্চটি চলে যেতে থাকে উত্তরে । আর, পিছনে যমুনার কিনারায় পড়ে থাকে একটি মৃত ভোর ও মহাকালের অলীক মহিমা প্রাপ্ত মৃত এক কিশোরীদেহ। মেজর জুলফিকার কামরান যা জানতেন নাচর শুভগাছার এক চতুর্থাংশ জমি দেখেশুনে রাখা ছিল রমজান আলী দেওয়ান এর কাজ । ক্ষেতখামারিও কিছু করত মধ্যবয়সী লোকটা। চরের সবটাই যে বালি আর পানি-তা কিন্তু নয়; শশা-বাঙ্গি -তরমুজ-এর চাষবাস হয় চরে । তবে ধান হয় না। ধানচাল কিনতে হয় কাজীপুরের গঞ্জ থেকে। সে পয়সা দেন কাজীপুরের সুলতান জোতদার। লোকটার নুন খায় রমজান আলী দেওয়ান । রমজান আলী দেওয়ান-এর পূর্বপুরুষ ছিল লাঠিয়াল। অবশ্য অনেক কাল হল ঐ খুনে পেশাটি রক্তপাতহীন হয়ে এসেছে। অনেক কাল হল দেশে জমিদার নেই, তবে কাজীপুরের সুলতান জোতদার জমিদারের চেয়ে কম যান না; যমুনার চরাঞ্চলে তিনি দোদর্ন্ড প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন সেই সঙ্গে চর শুভগাছার এক চতুর্থাংশ জমি নিজের দখলে রেখেছেন। দুঃসংবাদ এই যে-মে মাসের ২য় সপ্তাহে পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্রাশ ফায়ার করে কাজীপুরে নিজ বসতভিটায় সুলতান জোতদারকে সহপরিবারে হত্যা করেছে । সুলতান জোতদারের দুই স্ত্রীসহ, পোষ্য ও জ্ঞাতিগুষ্টি চাকর-বাকর, কামলা-দাসী মিলিয়ে বিশাল পরিবার। আটত্রিশ জনের একজনও নাকি বেঁচে নেই। দুঃসংবাদটি পেয়েই রমজান আলী দেওয়ান গভীর শোকের বদলে বরং গোপন সুখই অনুভব করেছিল। সম্ভবত লোকটার শরীরে পূর্বপুরুষের লেঠেল রক্ত প্রবাহিত বলেই লোকটা খানিক নিষ্ঠুর আছে। সুলতান জোতদার আর বেঁচে নেই - এখন চরের এক চতুর্থাংশ সম্পত্তির মালিক তো সে নিজেই; সে নিজেই একা ভোগ করবে। পাঁচটি পুত্রসন্তান বাদেও দুটি কন্যা সন্তানের জনক রমজান আলী দেওয়ান । বড় মেয়েটির নাম জুলেখা। ঢলোঢলো স্বাস্থবতী ফর্সা শান্তশিষ্ট মেয়েটি মায়ের মতো নামাজী। বছর দুয়েক হল ডাগর হয়েছে জুলেখা । কাজে কাজেই গত ১১ চৈত্র রোজ বৃহস্পতিবার সরিষাবাড়ির ব্যাপারি সালাম মীর্জার মেজো ছেলে লোকমান মীর্জার সঙ্গে জুলেখার বিবাহের কথা পাকা হল মীর্জাবাড়ির বৈঠকখানায় বসে। দীর্ঘক্ষণ বাকবিতন্ডার পর বিয়ের তারিখ স্থির হয় ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৮ রোজ বুধবার মোতাবেক ২৬ মে ১৯৭১। ১১ চৈত্র রাত্রে পাক সেনারা ঢাকায় আগুন দিল । সে আগুন সরিষাবাড়ি পর্যন্ত গড়াল । মীর্জাবাড়ির কেউ বেঁচে নেই। রমজান আলী দেওয়ান-এর বিশ্বাস: দুঃসংবাদটি জুলেখা জানে না। তারপরও জুলেখা কান্দে আর কান্দে। রমজান আলী দেওয়ান মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, কান্দিস না রে মা। দেশে রোজ পাক জানোয়ার গো গুলি খাইয়া কত লোক মরতেছে, তাগো দুঃখে কে কান্দে? জুলেখা কি বলবে। সে কান্দে আর কান্দে। এই দুঃসময়েও বেদেদের নৌকা চরের ঘাটে ভিড়ে। মরম বাইদ্দার কাছে মীর্জাবাড়ির গনহত্যার কথা শুনেছে জুলেখা। তারপর থেকে জুলেখা কান্দে আর কান্দে। হায় আল্লা, ছেলের মুখও দেখলাম না!দেশজুড়ে গনহত্যার কথা প্রত্যন্ত চরাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। এমন কী রমজান আলী দেওয়ানও একবার পালানোর কথা ভাবল। কিন্তু, পরিবার-পরিজন নিয়ে যাবে কোথায়। ধুনট সরিষাবাড়ি কাজীপুর গান্দাইল - এমনকী সিরাজগঞ্জ সদর থেকেও ভয়ার্ত মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে চলে আসছে । কাজীপুরের সুলতান জোতদারের আকস্মিক মৃত্যুতে প্রাপ্ত চরের বিস্তর জমাজমি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চায় না রমজান আলী দেওয়ান । না, রমজান আলী দেওয়ান কোথাও যাবে না। মরলে সে এখানেই মরবে। গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারাও দুই-একজন আসে তার কাছে । রমজান আলী দেওয়ান তাদের পূর্ণ সমর্থন দেয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানিরা বিতাড়িত হলে চরের চার ভাগের একভাগ জমির একচ্ছত্র মালিকানা তো তারই।এভাবেই চিরকাল যমুনার দু’পাশের জনজীবনের পেশা ও শ্রেণি-চরিত্র বারবার বদলে গেছে কালের বিচিত্র ভূমিকায় ।রমজান দেওয়ানের ছোট মেয়েটির নাম রোকেয়া। শ্যামল ছিপছিপে ও দীর্ঘাঙ্গি রোকেয়ার মুখটি পান পাতার মতন মিষ্টি; চোখ দুটি টানা টানা। চরবাসীদের কাছে রোকেয়া এক পরম বিস্ময়। অনেকে বলে রোকেয়ার সঙ্গে নাকি জিন আছে। নইলে সারাক্ষণ গুনগুন করে গাইবে কেন রোকেয়া? আর নাচবেই-বা কেন? রোকেয়ার সঙ্গে জিন না থাকলে এমন হয়? নামাজ-কালামের ধার ধারে না। এই নিয়ে জুলেখার সঙ্গে কথা বন্ধ। জায়নামাজে মন বসে না রোকেয়ার; মন ভারি উদাস থাকে সারাক্ষণ। কেউ কেউ বলে রোকেয়ার শরীরে সাপের বাতাস লেগেছে। অভিযোগটি কি মিথ্যে? নইলে বেদেদের নৌকা চরের ঘাটে ভিড়ছে শুনে রোকেয়াই-বা ছুটে যায় কেন? মরম বাইদ্দার বাজানো বীণের সুরে ডুবে যায় কেন? মরম বাইদ্দার একবার হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছিল: আমাগো লগে যাবি নি রুকু?কেঁপে উঠেছিল রোকেয়া। আমার কাছে বীণ শিখবি?না।তয়?শরীরে হিল্লোল তুলে ঘাট ছেড়ে পালিয়ে যায় রোকেয়া । রোকেয়ার শেষরাতের স্বপ্নে জেগে ওঠে মরম বাইদ্দা । ভিজে তলপেটের কাছে পিছলে যায় আঙুল। অন্ধকারে লোনা গন্ধ পায়। রোকেয়ার শরীরে অশেষ তৃষ্ণা; পাশে জুলেখা ঘুমায়, জুলেখার অত তৃষ্ণা নেই। গভীর তৃষ্ণায় রোকেয়া ঘুমাতে পারে না। অত্যন্ত কাতর হয়ে কল্পনার একটি রৌদ্রময় বেদেনৌকায় মরম বাইদ্দা কে নগ্ন করে। ঠোঁটে চুম্বন করে অনেকক্ষণ ধরে। পুরুষালি স্তনবৃন্তে জিভ রাখে। হাঁটু গেড়ে বসে তলপেটের নিচের ঘনকালো কালো কেশের ঘ্রান নেয়। স্পর্শ করে পাটল রঙের একটি উত্থিত শিশ্ন; ...তারপর অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে দেখে ভাদ্রের অতি উজ্জ্বল রৌদ্রের ভিতরে দেখে নিক্ষিপ্ত বীর্যের শ্বেত রং মিশে যায়। রাত ভোর হয়ে আসে; রোকেয়ার ঘুম আসে না। ভিজে কেশ ও যোনির স্পর্শে ওর আঙুল ভিজে যায়। পাশে জুলেখা ঘুমিয়ে; অন্ধকারে আলতো করে জুলেখার ভরন্ত একটি ঘামে ভেজা স্তন স্পর্শ করে অন্ধকারে শঙ্খিনীর মতো মৃদু হাসে রোকেয়া। রমজান দেওয়ান এর মেজো মেয়ে রোকেয়া কিছু হলেও যে ছিটগ্রস্থ তা চর শুভগাছার কমবেশি সবাই জানে। মেয়েবেলা থেকে রোকেয়া আপন খেয়ালে নাচে আর আপনমনে গান গায় । মেজর জুলফিকার কামরান:- চিররহস্যময় মহাকাল যে পৃথিবীর এ প্রান্তের বদ্বীপের নিভৃত এক চরের এক শ্যামল কিশোরী শরীরে নৃত্যের স্পন্দনহিল্লোল দান করেছেন এটি শিল্পচর্চাবঞ্চিত রক্ষণশীল চরবাসীর পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভবপর নয়। চরের রক্ষণশীল সমাজে নৃত্যগীত তেমন গ্রহনযোগ্য নয়। বীণের সুরে বিরক্ত হয়ে কখনও কখনও চরের ধর্মান্ধ দলটি লাঠিসোটা নিয়ে বেদেদের নৌকার দিকে তেড়ে যায়। রোকেয়া তখন মরম বাইদ্দার অমঙ্গল আশঙ্কায় আতঙ্কে হিম হয়ে যেত। চর শুভগাছায় সুর বলতে কেবল মুয়াজ্জ্বিন শরীফ হাজীর মাইকবিহীন আজানের সুললিত ধ্বনি। অথচ মহাকালের আর্শীবাদে রোকেয়া লাভ করেছিল আকাশমাটিজল ও আলোর তৈরী ছন্দ ও ধ্বনি; মহাকাল থেকে প্রাপ্ত সেই নৃত্যভঙ্গিমা এবং শরীরের তরঙ্গঢেউ কিছুতেই প্রতিহত করতে না পেরে এবং একটি রক্ষণশী বাড়ির উঠানে নৃত্যরত হওয়া সম্ভবপর নয় বলেই ভোরবেলার শিশির ভেজা মাঠ ও কুয়াশা অতিক্রম করে ওকে যেতে হত নদীর নির্জন পাড়ে । তারপর নৃত্যের নিজস্ব ভঙ্গিমা ও মুদ্রা আবিস্কার করতে করতে আত্মমগ্ন হত । রোকেয়ার শরীরে যেমন বইত পূর্বপুরুষ লাঠিয়ালের রক্ত- তেমনি, মহাকালের ইঙ্গিতে নৃত্যের মতন এক আদিম আবেগও নিহিত ছিল ওর শরীরে; আকাশমাটিজল ও আলোয় তৈরি যে আবেগশরীরের অনিবার্য তরঙ্গঢেউ কিছুতেই উপেক্ষাকরতে না পারে প্রদোষকালে নদীটির নির্জন পাড়ে নৃত্যতৃষ্ণার বশবর্তী হয়ে ছুটে যেত । সময়টি ১৯৭১ বলেই নদীর সমূহ বিপদ সম্বন্ধে সচেতন ছিল রোকেয়া । তবুও নৃত্যশীল হওয়ার অমোঘ আকর্ষনে নদীর বিপদ বিস্মৃত হয়েই বিনম্র ভোরের আলোয় নদীপাড়ে নৃত্যরত হত । মেজর জুলফিকার কামরান:- আসন্ন মৃত্যুর চেয়ে ঐ মৃত মেয়েটির শরীরের ভিতরকার অলীক স্পন্দনের তাড়নায় শরীরময় নৃত্যের তৃষ্ণায় পরিস্ফূট ও শ্যামল কোমল তনুটির বাঁকে বাঁকে মধুবর্ণের লোনা ঘাম ঝরানোই ছিল যেন মহাকালের নির্দেশ ...
false
mk
দেশ সমৃদ্ধির পথে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় এবং দেশ থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাঙালী জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, একাত্তরের শহীদদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে। তাই আসুন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরাম্বিত করার মাধ্যমে আসুন আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে সাংবিধানিক রেওয়াজ অনুযায়ী প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে জাতির অগ্রযাত্রার আকাক্সক্ষাকে বাস্তবরূপ দিতে বর্তমান সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথ ধরেই বাংলাদেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশ হিসেবে আপন মহিমায় অধিষ্ঠিত হবে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে এবং শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালী জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণ করতে হবে।রাষ্ট্রপতি প্রায় এক ঘণ্টা ৫ মিনিটের দীর্ঘ ভাষণে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-সাফল্য ও দেশের অগ্রগতির বিষদ বিবরণ জাতির সামনে তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় মুহুর্মুহু টেবিল চাপড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানান সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। রাষ্ট্রপতি তাঁর মূল ভাষণের সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরেন এবং বাকি ভাষণ পঠিত বলে গণ্য করার অনুরোধ জানালে স্পীকার তাঁর পুরো ভাষণটি পঠিত বলে গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ করেন।এরআগে সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদসহ সব সংসদ সদস্যরা দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানান। এ সময় অর্কেস্ট্রায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। রাষ্ট্রপতি স্পীকারের ডান পার্শে থাকা ডায়াসে দাঁড়িয়েই দীর্ঘ ভাষণ উপস্থাপন করেন। বক্তৃতা শেষে অধিবেশন ত্যাগের সময়ও জাতীয় সঙ্গীতের সুরে রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি প্রস্থানের পর স্পীকার সংসদ অধিবেশন আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন।রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং দিনবদলের সনদের ভিত্তিতে প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং এ কার্যক্রমে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা।তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘রূপকল্প-২০২১’, দিনবদলের সনদ ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং বিভিন্ন পরিকল্পনায় গৃহীত কর্মসূচীর যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির এ প্রত্যাশা অবশ্যই পূরণ হবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এসব লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের আপামর জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও আলোকিত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে সরকারী দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে সরকারী দল ও বিরোধী দলসহ সকলকে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরও বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, বিগত মেয়াদে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়। তিনি বলেন, গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার রূপকল্প-২০২১, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের, জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নি¤œমধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এখন জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে ২০৪১ সালের দিকে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার মানসে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সরকার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে জাতির আকাক্সক্ষা পূরণে সক্ষম হবে।রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতামুক্তর অভিশাপমুক্ত একটি সুখী, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ভিত্তিক, জ্ঞান-নির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার দারিদ্র্যনিরসন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্যতম কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে সরকার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণরূখে সক্ষম হবে।সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী পলাতক খুনীদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার কার্যক্রমের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করছে এবং বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। তিনি বলেন, আসেম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনেও সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী নেতৃত্ব বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রশংসা কুড়িয়েছে।দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্র প্রধান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত বছরসমূহে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা বজায় রেখেছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। সরকারের সুষ্ঠু অর্থনৈতিক-ব্যবস্থাপনা, প্রাজ্ঞ রাজস্বনীতি ও সহায়ক মুদ্রানীতির প্রভাবে মন্দাত্তোর বিশ্ব-অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চলমান সঙ্কট সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে দেশে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। সার্বিকভাবে অনুকূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং আর্থ-সামাজিক খাতে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি বাংলাদেশকে মধ্য-আয়ের দেশে উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।তিনি বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের অব্যাহত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করেছে। এর ধারাবাহিকতা সামনের দিনগুলোতে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়ন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি ‘কমপ্লায়েন্ট কান্ট্রি’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশকে এশীয় অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।দেশের পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে বাজার উন্নয়নে মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হবে। তিনি বলেন, গত ছয় মাস যাবত ডিএসই সূচক ৪৫০০ থেকে ৫০০০-এর মধ্যে অবস্থান করছে, যা বাজার স্থিতিশীলতার সাক্ষ্য বহন করে। ২০০১ সালে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোর ইস্যুকৃত মূলধনের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে যথাক্রমে ২৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য ও সুদক্ষ নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আজ সম্মানজনক ও উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্যে এখন সর্বজনবিদিত। স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন কূটনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধসমৃদ্ধ বলিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিবিড়করণসহ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখছে। দারিদ্র্যদূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ নির্মূলে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ফলে বিশ্বাঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি আরও সুদৃঢ় হয়েছে।পদ্মা সেতুর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সকল অঞ্চলে সুষ্ঠু এবং সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সড়ক অবকাঠামো পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলেছে এবং ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ এ সেতু যানবাহন পারাপারের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে। এ সেতু এশিয়ান হাইওয়েতে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্কসহ দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। জাতীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি এবং প্রতিবছর দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্যনিরসনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৫
false
rn
যানজট থেকে মুক্তি চাই এখন সারা বছরই যানজট থাকে। সকাল দুপুর রাত- সব সময় যানজট।শুক্রবার- শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন গুলোতেও যানজট। রাত দু'টায় ও জ্যাম থাকে- যাত্রাবাড়ি, কুড়িল বিশ্ব রোড, গাবতলী, বাবু বাজার ব্রীজ, শ্যামলী ইত্যাদি রাস্তাঘাট। বছরের পর বছর ধরে- আমরা যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। ২০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগে- দুই/তিন ঘন্টা।যানজটের কারণে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়ে।গাড়ির সঙ্গে রিকশা চলার কারণে গাড়িগুলো রিকশার গতিতে চলতে বাধ্য হয়, ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যানজটের সৃষ্টি করে।ট্রাফিক জ্যামের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।ট্রাফিক জ্যাম কমাতে ছোট আকারের যানবাহন কমিয়ে দ্বিতল বাসের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি? ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন সীমিত করা, পুরোনো গাড়ি সরিয়ে ফেলা সুপারিশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অবৈধ রিকশা আটক করা প্রয়োজন। ঢাকা নগরীতে ৮০ হাজার বৈধ রিকশা আর ১০ লাখ অবৈধ রিকশা রয়েছে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি।এছাড়া প্রধান প্রধান সড়ক ও ফুটপাথ ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী দোকান, অপ্রয়োজনীয় দোকানসহ যাত্রী ছাউনি ও বিল বোর্ড উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশও করেছে ডিএমপি।রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো যানজটের অন্যতম কারণ। এটি বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো চলমান বাসগুলোর বর্তমান নকশার বিভিন্ন সিঁড়ি বদলে দেওয়া। গত তিন বছরে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র এক কিলোমিটার। সম্প্রতি হাতিরঝিল প্রকল্পে ১১ কি.মি. রাস্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।বর্তমানে রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে ভাগ করে এক ভাগ দিয়ে গাড়ি যায়, আর অন্য ভাগ দিয়ে গাড়ি আসে।একমুখী পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের গন্তব্যে যেতেও কোনো সমস্যা হবে না, হয়তো সামান্য কিছুটা পথ ঘুরতে হতে হবে কিন্তু কেউ ট্রাফিক সিগন্যালে পড়বেন না, এটা নিশ্চিত।যেসব এলাকার যানজট একমুখী পদ্ধতির সাহায্যে নিরসন করা সম্ভব নয়, ওই সব এলাকায় ওভারপাস পদ্ধতির বাস্তবায়ন করে অবশিষ্ট ৫০ ভাগ এলাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব। মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, রেলগেট ইত্যাদি ব্যস্ত সড়কে বসে ভ্রাম্যমাণ কাঁচাবাজার, যা জ্যামের জন্য অনেকাংশে দায়ী। তীব্র যানজটের কারণে অনেক মুমূর্ষু রোগীদের নিয়েও বিপাকে পড়তে হয়েছে । অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে মোটরসাইকেল পর্যন্ত চলাচলের অনুযোগী হয়ে পড়েছে।গুলিস্তান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নগরীর উত্তর-দক্ষিণে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যানজট লেগেই রয়েছে। এর মধ্যে ধারে-কাছের রাস্তায় গাড়ি ছেড়ে কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ বিভিন্ন সিগন্যাল পার হয়ে একাধিক গাড়ি পরিবর্তন করে গন্তব্যস্থলের পথ ধরেছেন।ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী।রাজধানীর যানজট নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সড়ক। কিন্তু এসব উড়াল সড়ক যানজট নিরসনে কার্যত কোনো ভূমিকাই রাখছে না। খিলগাঁও, মহাখালী উড়াল সড়ক যেখানে যানজট নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে নতুন করে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উড়াল সেতু ও সড়ক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। রাজধানীর সবচেয়ে বড় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্থান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা।হাজার হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদাননির্ভর এসব উড়াল সড়ক ও সেতু কতটুকু কাজে আসবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।“অপরিকল্পিতভাবে গ্রহণ করা এসব প্রকল্প দেখে মনে হয়, শুধু বৈদেশিক মুদ্রা খরচের জন্যই এগুলো করা হচ্ছে।”মাত্র ১৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য এসব ফ্লাইওভার করা হচ্ছে। বাকি ৮৩ শতাংশ মানুষকে পোহাতে হবে দুর্বিষহ যানজট।” দামি স্কুল গুলোতে ধনীদের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে এবং প্রায় প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর রয়েছে আলাদা আলাদা গাড়ি। ধরা যাক রাজধানীতে ২০ টি নামি দামি স্কুল আছে এবং সেখানে মোট ২০০০০ ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা করছে। এখন এই ২০ হাজার ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে প্রতি পরিবারের দুজন ধরা হলে তারা এক সাথে স্কুলে আসে ১০ হাজার জন।তাহলে ? ফুটপাত এখন দখলে চলে গেছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় অনেক বাস স্টপেজে মানুষ প্রধান রাস্তায় নেমে আসে। এতে করে রাস্তার ওই স্থানে কিছুটা সময় বাস বা অন্য পরিবহন পার হতে সময় নেয়। ফুটপাত দখলমুক্ত করলে মানুষ ফুটপাত দিয়ে চলাচল করবে। এতে করে বাস স্টপেজ গুলোর যান চলাচল সুগম হবে।
false
rn
আমি চিৎকার করি, কিন্তু কেউ আমার কথা শোনে না মজার ব্যাপার শুনুন-বিয়েতে যাব। সুরভি সন্ধ্যা থেকেই সাঁজতে বসেছে। এর মধ্যে আবার পার্লার থেকে চুল সাজিয়ে এনেছে। শাড়িও মনে হয় পার্লার থেকে পড়ে এসেছে। তারপরও রেডি হতে-হতে সাড়ে দশটা বাজালো। আমি বেশ কয়েকবার তাড়া দিলাম, লাভ হলো না। সাড়ে এগারো টায় বিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখি অনুষ্ঠান শেষ। ভাবলাম এত কষ্ট করে এসেছি যখন একটা ছবি তুলে নিই। ছবি সুরভি'ই তুলে দিল। সে এখন রান্না করতে বসছে। খেয়ে তারপর ঘুমাবো। ইচ্ছা করলে খাবার বাইরে থেকে কিনে আনতে পারতাম। কিন্তু না... এটা তার শাস্তি। ক্ষুধার্থ অবস্থায় ছবি এর চেয়ে ভালো হবার কথা নয়। ১। ঢাকা শহরের যে জায়গা গুলোতে ছিনতাই হয়- সে জায়গা গুলোতে পুলিশ চেকপোস্ট থাকে না। পুলিশ চেকপোষ্ট থাকে অন্য জাগায়, যেখানে ছিনতাই হয় না। আচ্ছা, পুলিশ কি জানে না কোথায় ছিনতাই হয়? খুব ভালো করেই জানে। এবং এও জানে কে ছিনতাইকারী আর কে পকেটমার। পুলিশ এর চেকপোষ্ট গুলোতে সাধারন মানুষের উপকার হয় না। বরং তারা বিপদে পড়ে। বিশেষ করে রাতের বেলা পুলিশ চেকপোষ্ট বসায়। রিকশা থামিয়ে সাধারন মানুষকে হয়রান করে। তখন তাদের চোখ মুখ আনন্দে ঝিকমিক করে। যেন শিকার ধরা পড়েছে। লোভে চকমক করে চেহারা। যেভাবেই হোক তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা পয়সা নিবেই। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ- তাদের পকেট থেকে ২০/৫০ বা ১০০/২০০ যা পায় নিবেই। তারা কোনো অপরাধী না। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র বা কোনো নেশা দ্রব্য কিছুই পাওয়া আয় না। তারপরও নানান ভাবে কথা প্যাচিয়ে- ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নিবেই। এই কি জনগনের সেবকের নমুনা? ছিঃ ২। ঢাকা শহরের সব অলি-গলিতে সকাল থেকেই মিনি মাজার বসে। এসব বাজারে সব কিছুই পাওয়া যায়- মাছ, সবজি, ফলমুল সবই পাওয়া যায়। সকালে মানুষের তাড়াহুড়া থাকে। সবাই সবার কাজে যায়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়। লেগে যায় জ্যাম। গাড়ি, রিকশা, ভ্যান এবং হোন্ডার জ্যাম। একেবারে আন্ধা গিট্রু। এটা প্রতিদিনকার দৃশ। কেউ দেখার নেই, কেউ বলার নেই। অবশ্য বাসা বাড়ির মহিলারা সহজেই কিনে নিতে পারেন। তাদের বাজারে যেতে হয় না। লাগুক একটু জ্যাম। তারা তো ব্যবসা করছে। চুরি, ডাকাতি করছে না। এই সব ব্যবসায়ীরা ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে- কারওয়ান বাজার বা সদর ঘাটের আড়ৎ থেকে এবং কোনো নদীর ঘাট থেকে মাছ জিনিস কিনে এনে গলির মধ্যে ব্যবসা করেন। সময়ের অভাবে যারা বাজারে যেতে পারেন না, তারা তাদের কাছ থেকে কিনেন। এইসব আমি প্রতিদিন লক্ষ্য করি। আরও লক্ষ্য করি- প্রতিদিন একটা নিদ্দিষ্ট সময়ে পুলিশের গাড়ি আসে- এইসব ব্যবসায়ীদের একজন (যে মুরুব্বী) সব দোকান থেকে ৫০/১০০ টাকা তুলে পুলিশের হাতে দেয়। পুলিশ রাজার হালে গাড়িতে বসে থাকে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া আপেল-কমলা চিবিয়ে খায়। যদি কখনও টাকা তুলতে দেরী হয়- তখন পুলিশ বিকট হর্ন দেয়। টাকা নিয়ে পুলিশ জমিদারের মতো চলে যায়। প্রতিটা দিন একই ঘটনা। ৩। জ্যাম তো আমাদের নিত্যদিনের ঘটনা। এটা মনে হয় ঢাকাবাসী মেনেই নিয়েছে। এখন বড় বড় রাস্তা থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জাগায়'ই জ্যাম। একটা চিপা গলি- এর দুই দিক থেকে দুইটা গাড়ি ঢুকছে। গলির মাঝামাঝিতে এসে দুই গাড়ি আটকে গেল। ড্রাইভার দুইজন দুইজনকে দোষ দিচ্ছে। গালাগালি করছে। এতক্ষনে জ্যাম লেগে গেছে-এক মাইল রাস্তা। যারা পথচারী তারা পড়ে খুব বেশি বিপদে। গাড়ির সাথে সাথে তাদের চলাচলও থেমে যায়। কারণ তারা ফুটপাতও ব্যবহার করতে পারছে না। ফুটপাত হকারদের দখলে। কেউ ফুটপাতে চায়ের দোকান দিয়েছে। কেউ ভাপা পিঠা বিক্রি করছে। কেউ পপ কর্ণ অথবা ডাব বিক্রি করছে। সাধারন মানুষ কি একটু শান্তিতে ফুটপাত দিয়েও হাঁটতে পারবে না? এদিকে সিটি কর্পোরেশন একই রাস্তা সারা বছর নানান কারণে ভাঙ্গতে থাকে। গর্ত করতে থাকে। তারা একবার কাজ শুরু করলে- এই কাজ কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না। সাঈদ খোকন সাহেব মিডিয়ার সামনে চিৎকার করে ফুটপাত দখলকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- এক ইঞ্চি জায়গা দিব না। কিন্তু গুলিস্তান গেলে হকারদের জ্বালায় হাঁটা যায় না। তাদের ব্যবহারও খুব খারাপ। ফুটপাত দখলকারীরা এক ইঞ্চি জায়গা দেয় না হাঁটার জন্য পথাচারীদের। ৪। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। তাদের গাড়ি নেই। সিএনজি'তে চড়ার টাকাও নেই। কাজেই বাস ছাড়া তাদের অন্য কোনো গতি নেই। এই বাস করে সেচ্ছাচারিতা। ১০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ২০ টাকা। বাসে পা রাখার জায়গা নেই- তবুও ঠাসাঠাসি করে আরও যাত্রী নিচ্ছে। মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসছে। কষ্ট হচ্ছে। বাস চলতি অবস্থায় যাত্রীদের উঠতে হয় নামতে হয়। নারী পুরুষ সবার একই অবস্থা। ঢাকার চাকা বাস এবং হাতির ঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিস সাধারন মানুষের কাছ থেকে পাঁচ টাকার দূরত্বের ভাড়া নিচ্ছে ২০/২৫ টাকা। দেখার কেউ নেই। কে দেখবে? কার কাছে নালিশ করবো? দুই মেয়র কি এই সবের খোঁজ খবর রাখেন না? কিন্তু টিভি ক্যামেরা দেখলে তো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলেন। রাগে শরীর টা জ্বলে আমার। আর একটা কথা বলে- আমার এই লেখাটা শেষ করবো- অনেক ছেলে-পেলেকেই দেখি- বাসে উঠে দুই টাকা পাঁচ টাকার জন্য কন্টাকটারের সাথে ঝগড়া শুরু করে দেয়। কথায় কথায় তারা বলে- আমি স্টুডেন্ট। তোরা ছাত্র ভালো কথা। দুই টাকা পাঁচ টাকার জন্য খাচ্ছরের মতো করিস ক্যান? যখন রাত জেগে লেখা পড়া বাদ দিয়ে ডালিং এর সাথে কথা কও, তখন ফ্ল্যাক্সি করার জন্য টাকা কই পাও? যখন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ফাস্ট ফুডের দোকানে দামী দামী খাবার খাও, গার্ল ফ্রেন্ড কে গিফট কিনে দাও তখন টাকা কই পাও? বাসে উঠলেই অশিক্ষিত কন্টাকটারের সাথে পাঁচ টাকার জন্য চিৎকার চ্যাচাম্যাচি করো- লজ্জা করে না তোমার? সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০০
false
rn
বৃক্ষ কথা ১। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম লাউ। লাউ এর ইংরেজি নাম- Bottle gourd। লাউকে আঞ্চলিক ভাষায় কদু বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম লাজেনারিয়াস। লাউয়ের জন্ম কিন্তু আফ্রিকায়। বর্তমানে সারাবছরই এ সবজিটি পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধে সহায়ক। চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়। আপনি যদি ওজন কমানোর কথা ভেবে থাকেন তাহলে খাবার তালিকায় লাউ রাখুন। লাউয়ের চেয়ে এর শাক বেশি পুষ্টিকর। লাউয়ের ৯৬% হলো পানি। লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। নিয়মিত লাউ খাওয়া উচিত। সব ধরনের মাটিতেই লাউ হয়। ছোটবেলা দাদীকে দেখতাম- কচি লাউ এর উপরের আবরন টা কুচি কুচি করে কেটে দুধ দিয়ে কি যেন রান্না করতেন। সবাই একদম চেটেপুটে খেত। আমি কোনো দিন খাই নাই। খেতে ইচ্ছা করে নাই।ছবিঃ ছবি আমার'ই তোলা। যেহেতু আমি একটা পত্রিকাতে ফোটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করি- তাই লেখার সাথে অন্যের তোলা ছবি ব্যবহার করতে ইচ্ছে করে না। নিজের তোলা ছবি ব্যবহার করে অনেক আনন্দ আর তৃপ্তি পাই। বিঃ দ্রঃ আমার ত্রিশ বছরের জীবনে আমি কোনোদিন লাউ খাই নাই। বাকি জীবনে খাবোও না। ২। এ্যাই, দেখো দেখো -কদম ফুল। আমাকে একটা কিনে দাও তো ! ফুটপাতে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কদম ফুল বিক্রি করছে। কদম ফুল বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। এই ফুল নিয়ে রবীন্দ্রনাথের খুব সুন্দর একটা গান আছে- ''বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল/ করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।'' কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রানে যুগে যুগে মুগ্ধ করে এসেছে গ্রাম ও নগরবাসীকে। দেখতে অসাধারণ হলেও এই ফুলের আর্থিক মূল্য খুব কম। কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরি করা যায় না। কাঠ দিয়ে দেয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে। কদম ফুলের আরেকটি নাম হচ্ছে নীপ। বর্ষা - রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ঋতু। এই ঋতুতে কদল ফুল সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের সুবাস। বর্ষা কবিদের ঋতু, কবিতা-গানের ঋতু, আবেগের ঋতু, প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাবার আকাক্ষার ঋতু। কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষা ঋতুর হাসি। বৃষ্টির স্বচ্ছ জলে ধুয়ে-মুছে কদম ফুল হেসে উঠে পাতার আড়াল থেকে। কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। কদম্ব মানে হলো ‘যা বিরহীকে দুঃখী করে’। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। ভগবত গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি। কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে কদম ফুল তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওযা হয়। প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অন্য গাছের পাশাপাশি কদম গাছ রোপণ করা প্রয়োজন। ছবিঃ ছবি আমারই তোলা। একদিন সুরভি আমাকে বলল, তোমার তোলা কোনো কদম ফুলের ছবি নেই !!! আমি ভেবে দেখলাম, আসলেই তো এত্ত এত্ত ফুলের ছবি তুলেছি কিন্তু কোনো কদম ফুলের ছবি তোলা হয় নাই। সর্বনাশ। তারপর একদিন সারা ঢাকা শহর রিকশা নিয়ে ঘুরলাম- কিন্তু কোথাও কদম ফুল খুঁজে পেলাম না। মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। পরের দিন অফিসের সামনের রাস্তার ফুটপাতে বসে চা খাচ্ছি হঠাত দেখি মাথার উপরে কদম ফুল। আহ শান্তি !‍! সাথে সাথে ক্যামেরায় বন্দী করে ফেললাম। ৩। ‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা,খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার,ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!’ রঙ্গন ফুল একান্ত ভাবেই এই উপমহাদেশের ফুল। রঙ্গনের আরেক নাম রুক্সিনী। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষে সুরভি রঙ্গন ফুল ডালসহ ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। রঙ্গনের আদি নিবাস সিঙ্গাপুর। তরুরাজ্যে প্রায় সারাবছরই সবুজ পাতার ফাঁকে রঙ্গনের প্রস্ফুটন মানুষ প্রাণভরে উপভোগ করে। পাতার ঘন বিন্যাস অপূর্ব। এই ফুলের ইংরেজি নামঃ Flame of the woods। রঙ্গন সারা বছরই ফোটে। কিন্তু বর্ষাকালে বেশি ফোটে। ষড় ঋতুর এই দেশে ঋতুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুল ফোটে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত যখন `ফুলের ফসল` কবিতাটি লিখেছিলেন তখন ফুল কতটা বিক্রি হতো, আর হলেও ক্রেতা কারা ছিলেন সেটা গবেষণার বিষয়। এখন মফস্বল শহরেও ফুল বিক্রি হতে দেখা যায়। রাজধানীর রাস্তায় ট্রাফিক সিগনালে গাড়ী থামলে ফুল বিক্রেতারা জানালার পাশে এসে ভিড় করে। সুতরাং ফুলের ক্রেতার সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে এটা বলা যায়। জোছনা রাতে রঙ্গন ফুলের ওপর যখন বৃষ্টি ঝড়ে তখন সেগুলোকে আকাশের তারা বলে মনে হতে পারে। রঙ্গন খুব কষ্টসহিষ্ণু গাছ । ছাদে দুই একটা রঙ্গন গাছের টব থাকলে ছাদের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি পায় । এর চাষ পদ্ধতিও সহজ । ফুল ফোটা শেষ হয়ে গেলে রঙ্গন গাছ ছেটে দেওয়া ভাল । ছবিঃ ছবি আমারই তোলা। আর হাতটা সুরভি'র। সুরভি'র সাথে তখন আমার বিয়ে হয়নি। কিন্তু আমরা খুব ঘুরে বেড়াতাম। একসাথে দু'টা কাজ করতাম। সুরভি'কে সময় দিতাম, নানান জাগায় ঘুরে বেড়াতাম- ফোটোগ্রাফীও করতাম। আমি রঙ্গন ফুলের ছবি তোলার সময় সুরভি বলল- দাঁড়াও, আমি ফুলটা ধরি, তুমি ছবি তুলো। দেখবে ছবিটা বেশি ভাল লাগবে। সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:৫৫
false
ij
রবীন্দ্রনাথ ও আমরা রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমস্ত শিল্পকর্ম দিয়ে একটি কথাই যেন বলতে চেয়েছেন-জীবন সুন্দর। রবীন্দ্রনাথের এই কথাটি কি সত্য? কেননা, চোখ মেললেই চারপাশে অজস্র অ-সুন্দর চোখে পড়ে; তারপর ইতিহাসের উষালগ্ন থেকেই যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত রয়েছে মানুষ । আজও সেই রক্তঘোর কাটল না। আজও আফগান উপত্যকায় যুদ্ধবাজ দেশের বিমান হামলায় নিহত হয় শতাধিক বেসামরিক মানুষ। বিদেশ থেকে প্লেনভরতি করে আসে শ্রমিকের লাশ। পাটকলগুলি বন্ধ হয়ে গেলে খুলনার শ্রমিক পরিবারগুলো পতিত হয় নরকে। তা হলে জীবন কোথায় সুন্দর? অথচ, রবীন্দ্রনাথ নির্দ্বিধায় বলেছেন- জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন। এই দুঃখদুর্দশায় পরিপূর্ন জগতে জন্ম নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ধন্য। আশ্চর্য! তা হলে জীবন সুন্দর-এই কথাটির মানে সম্ভবত জীবনকে সুন্দর করা যায়। হ্যাঁ, তাইই হবে। এবং জীবনকে সুন্দর করে তুলতেই রবীন্দ্রনাথের জীবনভর সাধনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা লক্ষ করেছি- তাঁর উপার্জনের প্রায় সবটুকুই তিনি ব্যয় করেছেন বাংলার হতদরিদ্র মানুষের শিক্ষাবিস্তারের জন্য; কেননা, জীবনকে সুন্দর করা যায়। তিনি জানতেন বাংলার জীবন মূলত কৃষিজীবন। কাজেই, সেই আঠারোশো পচানব্বুই সালেই রবীন্দ্রনাথের উদ্যেগেই স্থাপিত হয়েছিল কৃষিব্যাংক । জীবনকে সুন্দর করা যায়- এই রবীন্দ্রনাথের মূলশিক্ষা। তার আগে বিশ্বাস করতে হবে - শত দুঃখকষ্টগ্লানি সত্ত্বেও জীবন সুন্দর। জীবন সুন্দর-এই অনিবার্য মন্ত্রটিতে অবিচল বিশ্বাস ব্যতিরেকে জীবনকে কখনোই সুন্দর করা যাবে না। আমাদের অনেক অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের অনেক অনেক পরিবর্তন সাধিত করতে হবে। আমরা যেন মনে না করি যে - জীবন সুন্দর নয়। সেরকম মনে করলেই আমাদের শীর্ষে পৌঁছবার পথ আরও দুর্গম হয়ে উঠবে। রবীন্দ্রনাথকে অগ্রাহ্য করবার কোনও অধিকার আমাদের নেই! ২ রবীন্দ্রনাথের শিল্পকর্ম আসলে অতীব সূক্ষ্ম অনুভূতির বিষয়। অনেকক্ষেত্রেই হয়তো আপামর জনমানুষের বোধের অতীত। তারপরও রবীন্দ্রজগৎ থেকে বিচ্যূত হয়ে কেবলমাত্র টেকনোলজি-নির্ভর সমাজ নির্মান করে কী লাভ? কেননা, মানুষের তাকাতে হয় পূর্নিমার আকাশের দিকে। প্রতি মুহূর্তের আশঙ্কা ভুলে তার গাইতে হয়- আজ জোছনারাতে সবাই গেছে বনে। ভবিষ্যতের যুদ্ধগুলি সংঘটিত হওয়ার মুহূতের্ও রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনাবাক্য ধার করে আমাদের বলতেই হবে- বরিষ ধারামাঝে শান্তির বাণী। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৫৯
false
rn
গরমে সুস্থ থাকতে হলে যা করতে হবে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। ততটা পানি পান করতে হবে, যে পর্যন্ত না প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক হয়। পানি শরীরের অভ্যন্তরকে পরিশোধিত করে।শরীরে ঘাম বেশি হলে সেক্ষেত্রে পানিতে খানিকটা লবণ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে খাবার স্যালাইন পান করলে ভালো হয়।ঠাণ্ডা লেবুর শরবত কিংবা তরমুজ জাতীয় রসালো ফলও এ সময় খাওয়া যেতে পারে।প্রচণ্ড গরমে অনেকেরই চোখ জ্বালা করে। এই পরিস্থিতিতে চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিলে আরাম লাগবে। পারলে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিতে হবে, পান করে নিতে হবে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি।এনার্জি ড্রিংকস আর্টিফিসিয়ালি তৈরী করা হয় যা শরীরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।অন্য পানীয় পানে বিশেষ কোনো উপকার নেই। বিশেষ করে অ্যালকোহলযুক্ত বেভারেজ পান করলে শরীরে আরো বেশি পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হয়। তাই পানি স্বল্পতারোধ করতে গিয়ে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করলে শরীর আরো বেশি পানি হারাবে।রিচ্ছন্নতার জন্য গরমকালে দুবার গোসল করে নেয়া ভালো। দুর্গন্ধ দূর করার জন্য বারবার সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তবে গোসলে বিশেষ ধরনের সাবান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহারে উপকার আছে।গরমের সময় সালাদ একটি উপাদেয় খাবার। দই, শসা, টমেটো, গাজর, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে সালাদ করা যায়। অনেক সময় এর সঙ্গে পাকা পেয়ারা ও আপেল দিয়েও সালাদ করা যায়। সালাদ তৈরি করে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে পরে খাওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে টকদই বা কাগজি লেবুও দেওয়া যেতে পারে। লেবুতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম, যা দেহকে ঠান্ডা রাখে এবং ত্বক মৃসণ রাখে।অতিরিক্ত গরমে অনেক সময় হজমে সমস্যা হয়। তাই সাধারণ খাবার, যেমন—ভাত, মাছ, ডাল, ভর্তা ইত্যাদি খাওয়াই ভালো। গরমে শিশুর বিশেষ যত্মের প্রয়োজন। এ সময় শিশুর খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল ও পোশাক নির্বাচনের সময় মায়েদের বিশেষ যত্মবান হতে হবে। গরমে শিশুরা বড়দের তুলনায় অনেক বেশি ঘেমে যায়। এ সময় মৌসুমজনিত নানা রকম ত্বকের সমস্যাও দেখা দেয়, তাই শিশুর প্রতি বিশেষ যত্মবান হলে ত্বকের অনেক সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব।সব সময় শিশুকে হালকা সুতির জামা পরাবেন, এমনকি বেড়াতে যাওয়ার সময়ও। শিশু আরাম পাবে এমন পোশাক নির্বাচন করুন। আজকাল বেশির ভাগ মা বেড়াতে যাওয়ার সময় শিশুকে ডায়াপার পরিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শিশুর ত্বকের যে স্থানে সবচেয়ে বেশি র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি হয় তা হলো ডায়াপারে আবৃত স্থান। তাই ঘন ঘন ডায়াপার বদলে দেবেন , দীর্ঘক্ষণ ধরে এক ডায়াপার পরিয়ে রাখবেন না। সূর্যের দাবদাহ থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন ক্রিম মাখা যেতে পারে। সানস্ক্রিন প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর মাখতে হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন বা সানব্লকার ক্রিম পাওয়া যায়। আমাদের দেশের জন্য এসপিএফ-১৫ শক্তিসম্পন্ন সানব্লকারই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
false
hm
বলদের অভিশাপ খ্রিস্টের জন্মের খোঁজ বাদার বাঘ রাখে না। খ্রিস্টের জন্মের আগেও সে গরানের শ্বাসমূলকে সচকিত করে নিঃসাড়ে নদীর জলে নেমে ওপারে কোনো হতভাগ্যের মাংসে দাঁত বসিয়েছে। বালথাজার, মেলকিওর আর গাসপার যখন বেতলেহেমের রাস্তা ভুলে হাঁ করে আকাশের তারা দেখছিলো, তখনও বাঘ শেষ রাতের অন্ধকারে নদীর ওপর ঝুঁকে পড়া গাছের ছায়া ঠেলে অনায়াসে চড়াও হয়েছে এক তরুণ চিত্রলের ওপর। ক্যালেণ্ডার বাঘের কাছে বাহুল্য। বংশ পরম্পরায় বাদার বুক চিরে তরতর করে বয়ে চলা মন্থরা সব নদী পার হতে হতে কারা দুই হাজার তেরোবার খ্রিস্টীয় ক‌্যালেণ্ডারের পাতা ওল্টালো, সে খবর রাখার ফুরসত বাদার বাঘের নেই। পৌষের রাতে কনকনে ঠাণ্ডা জল ঠেলার শখ বাঘের ছিলো না। কিন্তু পেটের দায়ে তাকে নামতেই হয়। নদীর বুক চিরে এখন মালবাহী জাহাজ চলে সারাদিন সারারাত। কুয়াশার ভেতর সেগুলোর একটিমাত্র জ্বলন্ত চোখ নিভে যায়, হারিয়ে গিয়ে একটু পর পর মা-হারা হরিণবাছুরের মতো ভেঁপু বাজিয়ে একে অন্যকে ডাকে তারা। জাহাজগুলোর রকমসকম দেখে মনে হয়, এই বুঝি একে অন্যের সাথে বাড়ি খেয়ে কাত হয়ে পড়ে গর্ভের সবকিছু নদীর জলে বিসর্জন দিয়ে বনটাকে বিষিয়ে তুলবে তারা। নদীর এপারে হরিণের দল সেই কুয়াশাচর জলযানের রক্তচক্ষু আর আর্তধ্বনি একদম বরদাশত করতে পারেনি। তাদের করণীয় একটাই, সেটাই করেছে তারা, একের পর এক খাল আর খাঁড়ি টপকে সব সরে গেছে আরেক বাঘের তালুকে। বাঘের চেয়ে বড় তালুকদার আর কেউ বাদায় নেই। এক বাঘের তালুকে আরেক বাঘ ঢুকে পড়লে পরিণতির গায়ে রক্তের ছিটা লাগতে বাধ্য। হরিণ যেমন নাচতে নাচতে এক বাঘের তালুক থেকে আরেক বাঘের তালুকে সটকে পড়তে পারে, বাঘ তেমনটা পারে না। কিছুদিন পর পর নিজেই পিশু করে নিজের তালুকের অলঙ্ঘ্য সীমানা দাগিয়ে রাখে সে, তার ওপারে গেলেই অন্য কোনো বিটকেল বাঘের সঙ্গে মরণপণ কুস্তির খাটনি বাধ্যতামূলক। নিজের তালুকের হরিণগুলো এভাবে শেয়ারবাজারের বখরার মতো চোখের সামনে লোকসান হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাঘ সাঁতরে নদী পার হয়। নদীর ওপারে মানুষের তালুক শুরু। ওপারে যে হরিণ নেই, সে কথা বাঘ জানে। কিন্তু আর যা-ই থাক, ঘাড় মটকে আজ সে একটা কিছু খাবেই খাবে। হপ্তাখানেক ধরে পেটে কিছু পড়েনি তার। ভুখা তালুকদারের মতো মরিয়া জীব আর কীই বা হতে পারে? পৌষের হিমে স্নাত নদীখানা পেরিয়ে বাঘ গা ঝাড়া দিয়ে শরীর থেকে জল ঝরায়, তারপর মানুষের চলাচলে প্রশস্ত হওয়া পথ ধরে চুপচাপ চলতে থাকে। কিছুদূর গেলেই গ্রাম পড়বে, গন্ধের সূত্র ধরে টের পায় সে। মানুষের গায়ের নোনতা গন্ধ ক্রমশ তীব্রতর হতে থাকে পথের উজানে, বাঘ সে গন্ধের আঁচল ধরে চুপচাপ হাঁটে। নদীর শরীর বেয়ে বয়ে আসা হঠাৎ বাতাসে আশপাশে খাটো ঝোপঝাড় শিউরে ওঠে, বাঘের পায়ের শব্দ তাদের চেয়েও মৃদু। হঠাৎ করেই বনের পরিচয় মুছে গিয়ে গ্রাম শুরু হয়। বাঘ নাকটা উঁচুতে তুলে বুক ভরে ঘ্রাণ নেয় একবার, তারপর নিশ্চিত পায়ে সামনে এগোয়। বলদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে কাছেই। হরিণের পর বলদই এখন তার ভরসা। বাদার মানুষ গরিব, গরু রাখার সামর্থ্য আছেই কয়েক ঘরের। তাদের গোয়ালের বেড়া গরুর আব্রু রক্ষা করে বড়জোর, বাঘের কাছে সেই বেড়া জাগপার শফিউল আলম প্রধানের মেঠো বক্তৃতায় হুমকির মতোই তুচ্ছ। দুই চাপড়ে বন থেকে চুরি করে কেটে আনা ধুন্দলের ডাল দিয়ে বাঁধা বেড়ার আনুষ্ঠানিকতা উড়িয়ে দিয়ে সে উবু হয়ে গোয়ালের ভেতরে ঢুকে পড়ে। দুটো বলদ ঘুমাচ্ছিলো গোয়ালের ভেতরে, বাঘের গায়ের গন্ধ তাদের উত্তরাধুনিক স্বপ্নে খানিকটা ব্যাঘাত ঘটায়। একটা বলদ লেজ নেড়ে মাছি তাড়িয়ে বলে, ঘুমটা ভেঙে গেলো। আরেকটা বলদ আধো ঘুমের মধ্যেই বলে, বলদের ঘুম সুন্দরী গরুর মনের মতো, অল্পতেই ভেঙে চুরমার। বাঘের খুব মেজাজ খারাপ হয়। বাদার হরিণ এতো বেয়াদব হয় না সাধারণত। বাঘের গন্ধ, শব্দ, দৃশ্য, কল্পনা ইত্যাদির তিলেকমাত্র উদয় হলেই তারা চম্পট দেয়। বাদার হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যই সেরকম। হরিণ দোতলা সমান লাফ দিয়ে খাল টপকে বনের মধ্যে উধাও হচ্ছে, এমন দৃশ্য না দেখলে বাঘের আঁতে মোচড় ঠিকমতো লাগে না। তার আগুন আর ধোঁয়ার ডোরায় ছাওয়া শরীরটার ভেতরে রুদ্ররস যোগায় কেবল হরিণের পলায়ন আর অন্য বাঘের আগমন। শুধু খালি পেট ভরাতেই সে গ্রামে ঢোকেনি, সঙ্গে একটু ক্রীড়ার বাসনাও তার ভুখা মনের এক কোণে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত মেহফিলের ডেকোরেটরের মতো চুপচাপ পড়ে ছিলো। কিন্তু এই অশিক্ষিত বলদ দুটো তার পেট ভরাতে পারলেও মন যে ভরাতে পারবে না, তা সে বুঝে যায় এক ঝটকায়। একটা কাক তখনই কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে গোয়ালের ধোঁয়া তাড়ানোর ছোট্টো ঘুলঘুলিতে। গৌরচন্দ্রিকার ধার না ধেরেই সে বলে, খা খা খা। নাড়িভুঁড়ি আমাকে দিস। বাঘের মেজাজ আরেক কাঠি খারাপ হয়। বাদার পাখিরা এতো বেয়াদব হয় না। কাকটা মনে হয় শহর থেকে এসেছে। বলদগুলো এবার একটু ধড়মড়িয়ে উঠে বসে। চোখ মিটমিট করে কান নেড়ে কানের মাছি তাড়িয়ে এক বলদ বলে, বাঘ ঢুকলো নাকি দোস্ত? অন্য বলদ একটু এগিয়ে গিয়ে ভালোমতো বাঘকে পরখ করে দেখে বলে, বাঘই তো মনে হচ্ছে। দাঁড়া চেটে দেখি। বাঘ প্রথমে একটা কড়া ধমক দিতে যায়, তারপর গেরস্তের কথা চিন্তা করে জিভ কেটে ফিসফিসিয়ে গর্জে বলে, জিভ সামলে কথা বল, বলদ কোথাকার। ঘুলঘুলিতে কাকটা এক পাক নেচে ওঠে গোয়ালের মশা তাড়ানো ধোঁয়ার মতো, বলে, বাঘ বাঘ বাঘ। এক বলদ বলে, গেরস্তকে খবরটা দেওয়া দরকার না দোস্ত? অন্য বলদ বলে, বিলক্ষণ। কিন্তু গেরস্ত তো ঘুমায়। ডাকলে যদি রাগ করে? বাঘ চোখ মিটমিট করে বলদ দুটোকে দেখে কিছুক্ষণ ধরে। বলদের কথা সে ছানাবেলায় মায়ের কাছে শুনেছে কেবল, কিন্তু বাস্তবে যে বলদ এতো বড় বলদ, শীত ঠেলে নদীটা না টপকালে সে কিছুতেই বুঝতো না। বাঘ দুই পা সামনে বাড়ে। কাকটা খুশিতে ডিগবাজি খেয়ে বলে, কা কা কা কা তব কান্তা কস্তে পুত্র? লাগ যা গলে কে ফির ইয়ে রাত হো না হো। বলদ দুটো এবার গলাগলি করে কাকের সঙ্গে পোঁ ধরে কী যেন একটা বিটকেলে গান গেয়ে ওঠে। কাকটাও বলদ দুটোর বলদামিতে অতিষ্ঠ হয়ে বলে, আরে তোদের গলাগলি করতে বলি নাই। বাঘকে বললাম তোদের ঘাড়ে নাজিল হতে। বলদ কোথাকার। এক বলদ অশ্রুসজল চোখে বাঘের দিকে এগিয়ে এসে বলে, আয় ভাই ভায়ে ভায়ে গলাগলি করে একটা গজল গাই। বাঘ একবার পেছন ফিরে গোয়ালের বেড়ার গায়ে গর্তটাকে দেখে, কান খাড়া করে গ্রামভর নিদ্রার শব্দ শোনে, ঘুলঘুলির কাকের নাচ দেখে কিছুক্ষণ, তারপর জিভ দিয়ে নিজের গাল চুলকাতে চুলকাতে বলে, এটা মানুষের গ্রাম তো, নাকি? অন্য বলদ একগাল হেসে বলে, একদম। মানুষ ছাড়া বলদ পাবে কোথায়? বাঘ হতাশ হয়ে কাকের দিকে তাকায়, বলে, আরে কিছু বল না এ দুটোকে। বলদ আমাকে ভাই বলে ডাকে। দেবো নাকি গলাটা টিপে? কাকটা এবার একটু গম্ভীর হয়ে ঘুলঘুলির ওপর দাঁড়িয়ে গলা খাঁকরে বলে, বলদেরা আমার। তোমাদের গোয়ালে রাতবিরাতে বাঘ ঢুকেছে। কিছু বুঝলা? এক বলদ সলজ্জ মুখে বলে, বলদের কাছে এসে বাঘের কীই বা লাভ? আমরা গরু হলে একটা কথা ছিলো। অন্য বলদ গম্ভীর মুখে বলে, আমরা ওরকম বলদ নই। বাঘ তিতিবিরক্ত হয়ে একবার ঘুরপাক খায় গোয়ালের ভেতরে। এ কেমন শিকার? বলদ দুটো বাবুরাম সাপুড়ের সাপের মতো নিরামিষ মাংস হয়ে থাকলে চলবে কীভাবে? আর্তনাদ কোথায়, আতঙ্কের ঘ্রাণ কোথায়, নিজের বুকে রুদ্ররসের দাপটে রক্তের লাফঝাঁপ কোথায়? কাকটা বাঘের বিরক্তি টের পায়, সে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে, তোমরা বাঘের প্রেম নও, গেম। বাঘ তোমাদের মাংস চায়। এক বলদ অন্য বলদকে ফিসফিস করে বলে, বাদায় নাকি বাঘ কমে গেছে। এখন বোঝো ঠ্যালা। অভাবে স্বভাব নষ্ট। এই বেটার মতলব তো ভালো মনে হচ্ছে না। তুই আমার পেছনটা পাহারা দে, আমি তোর পেছনটা দিচ্ছি। খুব হুঁশিয়ার। বাঘ এবার আর মেজাজ সামলাতে পারে না, চাপা হুঙ্কার দিয়ে বলে, ধুত্তেরি! কাকের গলায় সহানুভূতি উপচে পড়ে, আহারে। থাক, রাগ করে না। বলছি বুঝিয়ে। ওরে বলদজোড়, আপাতত গাঁড়ের চিন্তা না করে ঘাড়ের চিন্তা কর। বাঘ কাকের দিকে তাকিয়ে বলে, এরা কি সবসময়ই এরকম কাঠবলদ, নাকি আমাকে চ্যাতানোর জন্য এমন করে? কাক কাঁধের পালক ঝাঁকিয়ে বলে, মানুষের সঙ্গে থেকে থেকে...। বাঘের থাবায় পলকে নখ বেরিয়ে আসে, সে গুঁড়ি মেরে এগোয় বলদ দুটোর দিকে। বলদেরা ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যায়। এক বলদ অন্য বলদকে বলে, দোস্ত বাঘটা মনে হয় আমাদের ব্যথা দিতে চায়। অন্য বলদ বলে, ও লোক ভালো না। বাঘের মুডটাই নষ্ট হয়ে যায়, সে তড়পে উঠে বলে, খবরদার আর কথা কবি না! একদম চোপ! লড়েচ কি মরেচ! এক বলদ শুকনো মুখে বলে, কামন ড্যুড। এইভাবে তুমি রাতবিরাতে আমাদের গোয়ালে ঢুকে মস্তানি করতে পারো না। অন্য বলদ পাংশু হয়ে বলে, তাছাড়া দিস ইজ নট হাউ উই গো ডাউন। গেরস্ত বলেছে মরার আগে সে একবার আমাদের গাবতলি দেখাতে নিয়ে যাবে। বাঘ গোয়ালের অন্ধকারে জুলজুল করে কিছুক্ষণ বলদ দুটোকে চোখ দিয়ে মেপে বলে, গাবতলি কী? এক বলদ মুগ্ধকণ্ঠে স্বপ্ন-স্বপ্ন চোখে বলে, গাবতলি এক স্বপ্নপুরী। সেখানে এন্তার খৈল আর ভুষি। মীরকাদিমের ফর্সা ফর্সা সুন্দরী গরুর কাজল দেওয়া চোখের ভিড় সেখানে। সারাদিন শুধু খাও আর শোঁকো। অন্য বলদও আনমনা হয়ে পড়ে, বলে, শুনেছি মীরকাদিমের গরুগুলো সারাক্ষণ লেজ তুলে রাখে, আর আড়ে আড়ে কেমন করে যেন তাকায়। তাছাড়া বলিউড থেকেও গরু আসে গাবতলিতে। শুনেছি তারাও খুব দুশ্চরিত্রা। তাদের কোনো বাপভাই নেই। বাঘ ধমক দিয়ে বলে, চোপ শালা কাষ্ঠুবলদ! গাবতলিতে গরু আসলে তোদের কী? ধুন্দুল পাকলে কুমীরের কী? এক বলদ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, অবলোকনেও সুখ! অন্য বলদ শিউরে উঠে বলে, রজার দ্যাট! কাকটা কা কা করে হেসে উঠে বলে, সারা সাতক্ষীরায় গাবতলি যাওয়ার রাস্তা জামাতের লোকে কেটে রেখেছে। বাঘের বগলতলির চেয়ে বেশি কিছু দেখার কিসমত তোমাদের নাই, মাই সুইট ইডিয়টস। এক বলদ আঁতকে উঠে বলে, সত্যি? তিন সত্যি? অন্য বলদের পাঁজুরে বুকে তবুও অনেক আশা কিলবিল করে, সে উতলা হয়ে বলে, গাবতলিতে লঞ্চে করে যাওয়া যায় না? বাঘ গোয়ালের মেঝেতে থাপ্পড় মেরে বলে, শাটাপ। ফাক গাবতলি। ফাক মীরকাদিমের গরু। ফাকিউ। কাক নাচতে নাচতে বলে, কা কা কা কামড়া! এক বলদ পিছু হটতে হটতে গোয়ালের কোণে অন্য বলদকে সঙ্গে নিয়ে ঠাসাঠাসি করতে করতে বলে, ঠিকাছে ড্যুড। যদি তোমার হাতেই আমাদের স্বপ্ন মারা পড়ে, আমরাও বলদ পীরের নামে পাল্টা অভিশাপ দিচ্ছি...। বাঘ আবার গুঁড়ি মেরেছিলো, অভিশাপের কথা শুনে সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, কার নামে? অন্য বলদ সব আশা ঝেড়ে ফেলে তার শীর্ণ বুক ফুলিয়ে বলে, বলদ পীর, বাদার সব বলদের ভরসা। বাঘ বিরক্ত হয়ে বলে, বনবিবিকে চিনি, বনের মালকিন। দক্ষিণ রায়কে চিনি, বাঘের বড়ভাই। বলদ পীর কে? এক বলদ অন্য বলদের সঙ্গে গলাগলি করে সুর মিলিয়ে বলে, শুধু বাঘেরই বড়ভাই আছে, বলদের নাই? শোনো বাঘ, ইন দ্য নেইম অফ বলদ পীর, কার্সড বি দাই পিপল, ডেথ মোস্ট ফাউল বি আনফার্লড আপন দেম। বলদের মৃত্যু যেমন তোমার হাতে হচ্ছে, তোমার আর তোমার চোদ্দোগুষ্টির মৃত্যুও যেন কোনো বলদের হাতে হয়। বাঘ জাতির চিত্ত, বিত্ত আর পিত্ত যেন কোনো মহাবলদের ইশারায় ধূলিসাৎ হয়। চিত্তে ফাকিউ, বিত্তে ফাকিউ, পিত্তে ফাকিউ! বাঘ আর সময় দেয় না। গোয়ালের অন্ধকার এক কোণে কাকের শরীর ঠেলে ঘুলঘুলির বাকিটুকি গলে রাতের আকাশ থেকে এক ফোঁটা আলোর দুধ ছলকে পড়ে তার আগুনে শরীরে, এক বলদের শ্বাসনালী পিষ্ট হয় তার চোয়ালে, অন্য বলদের ঘাড়ের হাড় চূর্ণ হয় তার হাতের থাপ্পড়ে। এক বলদকে মুখে করে বাঘ গোয়ালের দেয়ালের ফুটো আরেকটু বড় করে বাইরে বেরিয়ে পড়ে, অন্য বলদ গোয়ালেই পড়ে থাকে নিথর হয়ে। কাক কা কা কা করে নাড়িভুঁড়ির বখরা বুঝে নিতে বাঘের পেছন পেছন ছুটে নদী পেরিয়ে নির্ভয়ে বাদাবনে ঢুকে পড়ে নাছোড় জোটসঙ্গীর মতো। বলদের শরীর তার চোপার তুলনায় সামান্যই, তার ওপর সে খায় খড় আর ভুষি। বনের হরিণের মতো সে পত্রভূক নয় বলে তার মাংসে শুধু কোলেস্টেরোলের ইশারা। বাঘ ভোর পর্যন্ত পেট ভরে খেলেও তার একটু বদহজম হয়, তারপর কয়েকটা দিন সে চুপচাপ ঝোপের আড়ালে শুয়ে গড়াগড়ি করে আর একটা কান খাড়া রেখে ঘুমায়। স্বপ্নে সেও ছুটতে থাকে গাবতলিতে, সেটা যেন তার নিজেরই তালুক, আর সেখানে শত সহস্র মীরকাদিমের হরিণ দোতলা তিনতলা সমান লাফ দিয়ে তিড়িং বিড়িং নাচতে থাকে তার সামনে। হপ্তা খানেক এভাবে ঘুমানোর পর এক বিকেলে বাঘের ঘুমের চটকা ভেঙে যায় কাকের কলরবে। বাঘ ঘুম ভেঙে এক গড়ান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাদা কাঁপিয়ে বুক খোলা ধমক দেয় কাককে, কা হুয়া? কাক একটা গেওয়া গাছের ডালে বসে কাহুতাশ করে বলে, সর্বনাশ হয়ে গেছে বাঘ। পলাও পলাও। মালয়েশিয়া চলে যাও। পুবদিকে এক মাস দৌড় দিলেই ট্রলার ধরতে পারবা। ভাগো বাঘ ভাগো। বাঘ বলে, কা মালয়েশিয়া যামু কা? কাক কাঁদতে কাঁদতে বলে, পাকিস্তান আবারো ভেঙে গেছে রে বাঘা। পাপিষ্ঠ বাকশাল ইজ ব্যাক। বাঘ বলে, তাতে আমার কী? কুমীর মরলে ধুন্দুলের কী? কাক হাহাকার করতে না পেরে কাকাকার করে বলে, এইবার বন ও পরিবেশমন্ত্রীর গদি পেয়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু! তোমার চিত্ত, বিত্ত, পিত্তের খবরই আছে এইবার! বাঘের পেটে হজমের অপেক্ষায় থাকা এক টুকরো বলদ গুড়গুড়িয়ে বলে, ইত্তেফাকিউ!
false
fe
রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির প্রতিভূ ও মজলুম মানুষের কৃতিত্ব রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির প্রতিভূ ও মজলুম মানুষের কৃতিত্ব ফকির ইলিয়াস ==================================== একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা কি হওয়ায় উচিত, তার বিভিন্ন সংজ্ঞা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু একজন স্বঘোষিত খুনি যদি কোন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব পায় -তাহলে বিষয়টি কোন চোখে দেখা যাবে? কোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত? এই প্রশ্নগুলো নতুন নয়। প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়েছে ১৯৭৬ সাল থেকেই। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকেই। না, কেউ কোন উত্তর দেননি। যাদের উত্তর দেয়ার কথা ছিল, তারা বরং প্রকারান্তরে এসব খুনিদের নানা ধরনের জোগান দিয়েছেন। তা না হলে এসব চিহ্নিত খুনিরা বিদেশের মাটিতে কিভাবে মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিক হলো? হ্যাঁ, আমি জাতির জনক হত্যার খুনিদের কথাই বলছি। বলছি, সে সব হায়েনাদের কথা, যাদের হাত থেকে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, কেউই সেদিন রক্ষা পায়নি। যারা আঘাত হেনেছিল রাষ্ট্রসত্তার ওপর। পনেরোই আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর এদের রাতের আঁধারে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এবং তা করা হয় সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় আয়োজনে। এরপরের ঘটনাবলি আরও কলঙ্কজনক। এদের বিদেশে বড় অঙ্কের অর্থপুঁজি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ দেয়া হয়। খুনি মেজর ডালিম কেনিয়ায় এবং কর্নেল রশীদ লিবিয়ায় কীভাবে মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা মালিক হলো, তা জাতির এখনও অজানা। কিছু খুনিদের বিদেশের বিভিন্ন মিশনে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হয়। আচ্ছা, কোন খুনি কি একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হতে পারে? কীভাবে পারে? এই প্রশ্নটি এখনও আমার মনে ঘুরপাক খায়। প্রশ্নটি ঘুরপাক খায় এখনও কোটি প্রজন্মের মনে। যারা বিশ্বাসই করতে চান না, এরা বিভিন্ন মিশনে পোস্টিং পেয়েছিল। অতি-সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রদূত মি. ওয়ালিউর রহমান এ বিষয়ে বেশ কিছু অজানা কথা জাতিকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, (দৈনিক আমাদের সময় ২২ নভেম্বর ২০০৯ রোববার) একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা এসব খুনিদের বিদেশে খুঁজে খুঁজে হত্যা করার প্রস্তাব দিয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রস্তাবে কোনমতেই রাজি হননি। ভাড়াটে এই প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা এজন্য মোটা অঙ্কের অর্থ চেয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হত্যায় বিশ্বাস করেন না। তিনি চান এসব খুনির বিচার হবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাটিতে। সত্য ও ন্যায়বিচার পাক বাংলার মানুষ। ওই সাক্ষাৎকারে সাবেক রাষ্ট্রদূত মি. ওয়ালিউর রহমান খুনিদের ফিরিয়ে আনতে তার প্রচেষ্টার কথা, ওই সময়ের সরকারের তৎপরতার কথাও বর্ণনা করেছেন বিস্তারিতভাবে। বলেছেন, খুনি কর্নেল রশিদ রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমানের বিরুদ্ধে কীভাবে ভাড়াটে মস্তান লেলিয়ে দিয়েছিল। এটা খুবই স্পষ্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের আপামর মানুষ ন্যায় ও সত্যের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচার চেয়েছেন। আর চেয়েছেন বলেই আইন কখনই নিজের হাতে তুলে নেননি। ঘাতকদের রাস্তাঘাটে ধাওয়া করেননি। মেজর ডালিম, কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদ, মেজর বজলুল হুদা প্রমুখ খুনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- বিষয়ে নানা দাম্ভোক্তি করেছে দেশে-বিদেশে। যেহেতু এই ঘটনার বেনিফিশিয়ারিরা রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগ করেছেন তাই তারা এদের বিরুদ্ধে 'টুঁ' শব্দটি পর্যন্ত করেননি। আর এভাবেই ঘাতক হায়েনাচক্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিভূ। দুই. বাংলাদেশে যে চক্রটি এই হত্যাকারীদের, এই নির্মম প্রক্রিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল তারা নব্যরূপ ধারণ করেছিল ২০০১-এর নির্বাচনে জেতার পর। এরা গোটা দেশজুড়ে একটি বলয় গড়ে তুলেছিল নিজস্ব আঙ্গিকে। গড়ে তুলেছিল নিজস্ব 'ভবন'। যে ভবনটি থেকে সব গুপ্তহত্যা, লুটপাট, দুর্নীতি ও ব্যাভিচার মনিটর করা হতো। এসব কথা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুরা এখন অকপটে স্বীকার করছেন। তারা এমনভাবে প্রাচীর তৈরি কওে রেখেছিল, যাতে একটি ভেঙে পড়লে অন্যটি তাদের রক্ষা করে। আর এরই ধারাবাহিকতায় তারা মনে করেছিল 'সংবিধান রক্ষার' দোহাই দিয়ে তারা রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার ভিতটি চিরস্থায়ী করে রাখতে পারবে। এই 'ভবন' ওয়ালারা কখনই ভাবতেই পারেনি, ওয়ান ইলেভেনের মতো একটি ঘটনা বাংলাদেশে ঘটতে পারে। অথচ তাদের দিবাস্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে বাংলাদেশে 'ওয়ান ইলেভেন' সংঘটিত হয়েছিল। জনগণ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল সেই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে। এটা খুবই বেদনার কথা বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির প্রতিভূ কি হবে, কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে কোন গাইডলাইন জোরালোভাবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আওতায় তৈরি হয়নি। কিন্তু এর অর্থ তো এটা ছিল না, প্রকাশ্যে খুনিরা দূতাবাসগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের অবমাননা করবে তারা। ১৯ নভেম্বর ২০০৯ বাংলাদেশে যে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বিশেষ কোন দলের কৃতিত্ব নয়। কৃতিত্ব বাংলাদেশের মজলুম মানুষের। কৃতিত্ব এই তরুণ প্রজন্মের যারা বার বার সত্যের অন্বেষণে শিকড়মুখী হতে চাইছে। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। যে চেতনা সব অসাধ্য সাধন করেই যাবে শেষ পর্যন্ত। মনে পড়ছে, বাংলাদেশের এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী, চিহ্নিত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমান এক জনসভায় বলেছিলেন, 'শেখ মুজিবকে হত্যার পর এই দেশের একটি মানুষও তো কাঁদেনি।' তার এই কথাটি কি সত্য ছিল? মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়ে যায়। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের নির্মমতা এতই নিষ্ঠুর ছিল-এরপর সাধারণ মানুষ পাথর হয়ে গিয়েছিল তাদের আর কিছুই বলার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না। তারা ছিলেন বাকরুদ্ধ। এর অর্থ এই ছিল না, তারা মুজিব হত্যার বিচার চাননি। দেশে তখন জগদ্দল পাথর হয়ে জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছিল সামরিক জান্তা খুনিদের, জিয়ার, এরশাদের। তারা রাষ্ট্রক্ষমতা হাতিয়ে নিয়ে এবং স্থায়ী বন্দোবস্ত রাখতে ছিল নানাভাবে মরিয়া। সেই সুযোগে দেশে ছিল একাত্তরের পরাজিত রাজাকার শক্তির দৌরাত্ম্য। সব মিলিয়ে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরিতে তৎপর ছিল সব সম্মলিত অশুভ শক্তি। তারপরও মুজিব হত্যার প্রতিবাদ হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষাঙ্গনে, শিল্প-কারখানা, হাটে-মাঠে ও গ্রামে-গ্রামান্তরে। প্রতিবাদ হয়েছে সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, কবিতায়, গানে, নাটকে ও মজলুম মানুষের প্রাণে প্রাণে। এটা চরম লজ্জার কথা, ঘাতকদের মদদপুষ্ট ক্ষমতাসীনরা হত্যাকান্ডের মামলা পর্যন্ত করতে দেয়নি। থানা মামলা নেয়নি। অথচ সামরিক বুট, জনগণের বাহুর চেয়ে শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল না শহীদের রক্তেভেজা বাংলাদেশে। জাতির জনক হত্যার বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক- এটা বাঙালি জাতির প্রাণের দাবি। সে সঙ্গে চার জাতীয় নেতা হত্যাকান্ড, এর মদদদাতাসহ অপশক্তি এবং এর ধারাবাহিকতায় সব রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন করা হোক। ২৫ ফেব্রুয়ারির 'পিলখানা হত্যাকান্ড' সেই রক্ত পিপাসু প্রেতাত্মাদের মদদ, যারা দেশকে অস্থিতিশীল রাখতে চায়। এরা কিন্তু এখনও থেমে নেই। তাই এদের মোকাবেলা করতে হবে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়েই। নিউইয়র্ক, ২৪ নভেম্বর ২০০৯ ---------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ। ঢাকা ।২৭ নভেম্বর ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- মারিয়াস ভ্যান মিগদাল সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২৬
false
hm
ছাত্রের রাজনীতি ছাত্ররাজনীতি "নিষিদ্ধ" করা, ছাত্ররাজনীতির "স্বর্ণযুগ", ছাত্ররাজনীতির "শোধন" ইত্যাদি নিয়ে পত্রপত্রিকায় লোকজনকে হড়হড় করে কলমে ফ্যানা তুলতে দেখে অশ্রদ্ধা চলে এসেছে। দেখলাম, সকলেই ছাত্ররাজনীতি নিয়ে দুই কলম লিখতে পারে। যে "ছাত্ররাজনীতি" করেছে, সে তো লেখেই, যে করেনি, সে আরো বেশি লেখে। কাজেই আমিও সাহস করে একটা কিছু লিখে ফেলছি। আমি দ্বিতীয় দলে, অর্থাৎ ছাত্রাবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্রবহীন ছিলাম। শুরুতে একটা উপলব্ধির কথা জানাই, আমরা রাজনীতি শব্দটাকে এখন চূড়ান্তভাবেই পরস্পরের পশ্চাদ্দেশে মধ্যমাসঞ্চালনের ক্রিয়াবিশেষ্যের প্রতিশব্দ হিসেবে নিয়েছি। রাজনীতি শব্দটা আমার কাছে ব্যক্তিনীতির চেয়ে বৃহৎ অর্থে পলিসি হিসেবে অর্থ বহন করে। এটি পরিবারের মতো ক্ষুদ্র সমষ্টি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের মতো বৃহৎ কাঠামো পর্যন্ত বিস্তৃত। আমার বাবা আমাকে স্কুলজীবনে সন্ধ্যেবেলা বাড়ির বাইরে থাকতে দিতেন না, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আবার টিভি দেখতেও নিষেধ করতেন না, সেটা আরেকটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমি ঢাকায় আমাদের বাসায় টিভিতে হিন্দি চ্যানেলগুলোকে প্যাঁচ মেরে সরিয়ে দিয়ে এসেছি, এটা একটা রাজনৈতিক সক্রিয়তা। আমাদের বাড়িঅলা কোনো ছম্মাকছল্লো কিশোরী বা তরুণী আছে এমন পরিবারকে বাসা ভাড়া দিতেন না, এটাও একটা রাজনৈতিক কর্ম। এক কথায় বলতে গেলে, যে নীতি কোনো সমষ্টিভুক্ত ব্যক্তিবর্গের আচরণকে প্রভাবিত করে, সেটাই রাজনীতি। পরিসর ছোটো বলে আমরা পরিবাররাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা ক্রিয়াকে "রাজনীতি" হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি না হয়তো। ছাত্ররাজনীতি শব্দটাকে আমরা তাহলে কীভাবে দেখবো? ছাত্র যে রাজনীতিতে সক্রিয়, সেটিই কি ছাত্ররাজনীতি? নাকি ছাত্রের জন্যে ছাত্রের অংশগ্রহণে ছাত্রত্বের খাতিরে যে রাজনীতি, সেটি ছাত্ররাজনীতি? কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে যা কিছু বহুলাংশে মিডিয়ায় আসে, সেটি মূলত ছাত্রদের দিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলের দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের পাণ্ডামির গল্প। এই পাণ্ডামির সপক্ষে পাণ্ডা আর গুণ্ডা আর তাদের পাণ্ডামোগুণ্ডামোর সুবিধাভোগী ছাড়া আর কেউ কথা বলে না। কিন্তু গালিটা যখন এসে পড়ে, তখন ছাত্ররাজনীতির পুরোটার ওপরেই এসে পড়ে। ফলে একটা প্রস্তাব চলে আসে, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। ভুক্তভোগীরা কথাটা জোরেশোরে বলেন, মতলববাজরা বলেন ইনিয়ে-বিনিয়ে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বরাবরই পাবলিক আর প্রাইভেটে বিভক্ত। পাবলিক শিক্ষাব্যবস্থায় জনগণের করের পয়সা জনগণের মেধাবী সন্তানদের জন্যে ব্যয় করা হয়, আর প্রাইভেটে সেই ব্যয় সংকুলানে জনগণের করের পয়সা ব্যয় করা হয় না। প্রাইভেট শিক্ষা সেক্টরে আগে কওমী মাদ্রাসাই প্রধান ছিলো, এখন সেটি কিণ্ডারগার্টেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গড়িয়েছে। মতলববাজরা বলে থাকেন, প্রাইভেট শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্ররাজনীতি নেই, তাই তারা সুন্দরভাবে তাদের কোর্স সময়মতো সম্পন্ন করে জীবনের পথে নাক বরাবর যাত্রা শুরু করতে পারেন। আর পাবলিকে যেহেতু ছাত্ররাজনীতি আছে, তাই তারা দুইদিন পর পর গিয়ানজাম লাগিয়ে চার বছরের কোর্স সাত বছরে শেষ করে। অতএব ছাত্ররাজনীতি খারাপ, কুয়োড এরাট ডেমনস্ট্রানডুম। এখানে সমস্যাটা অবধারিতভাবেই রাজনৈতিক, কারণ সমস্যাটা স্টেইকহোল্ডিঙে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ছাত্রদের সংগঠিত হবার প্রয়োজন যদি দেখা দেয়, তাহলে তাদের সংগঠিত হতে দিতে হবে কি হবে না, এটাই প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পদ্ধতিতে। সেটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন শিক্ষকদের কাউন্সিল, তারাই সেখানে সর্বেসর্বা। তাদের কোনো সিদ্ধান্ত যদি ন্যায়ানুগ না হয়, ছাত্ররা কোথায়, কী পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাবে? ধরা যাক দবীর একজন "রাজনীতিবিমুখ" পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সে চার বছরের কোর্স চার বছরে পড়ে শেষ করতে চায়। কিন্তু শিক্ষা শুধু কোর্সে সীমাবদ্ধ না, দবীর শুধু বইয়ের পাতা থেকে শিক্ষা নিয়েই জীবনে প্রবেশ করবে, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যও নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু প্রতিনিয়ত নানা ঘটনা ঘটে চলেছে, সেসবকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো সিদ্ধান্তের ন্যায্য প্রতিবাদ করার অধিকার দবীরের আছে কি নেই, সেই প্রশ্নের ফয়সালা আমরা করতে চাই। দবীর কী করতে পারে? সে কি প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবাদ জমা দেবে কোথাও? কী পরিচয়ে? নিজ নামে? তার পরিণতি কী হতে পারে? প্রশাসনে তো থাকেন শিক্ষকরা, যারা দবীরের খাতা দেখবেন দু'দিন পর। কলমের এক খোঁচায় দবীরের গ্রেড দুই তিন ধাপ নেমে যেতে পারে, এ কথা দবীর জানে। বিজ্ঞ দবীর তাই নিজের একক পরিচয়ে প্রতিবাদ দাখিলের পথে হয়তো যাবে না। সে নিরাপত্তা খুঁজবে সমষ্টিতে। সে কবীর সবীর প্রবীর ম্যাকবীরদের নিয়ে প্রথমে একটি সমষ্টিতে পরিণত হয়ে প্রতিবাদ জানাতে চেষ্টা করবে। ভিড়ের মধ্যে একটি মুখের দায় কমে যায়, এমন একটি ধারণাই আমাদের দেশে প্রচলিত। এবং যে মুহূর্তে সে সংগঠিত হলো, সে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করলো। এই রাজনীতি পলিসি নির্মাণের সাথে জড়িত, এবং এই রাজনীতির অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে আমি মত ব্যক্ত করি। এই সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারটা কীভাবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র শাখা লুন্ঠন করে নেয়, সে তর্ক ভিন্ন। এই গল্পের পরবর্তী অংশটুকু কিন্তু দবীরদের ঐ সমষ্টির হাতে থাকবে না, প্রশাসন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তার ওপরও নির্ভর করবে। শিক্ষকদের জোট ঐ প্রশাসন কীভাবে কয়েকজন ছাত্রদের ভেতর থেকে একজনকে নেতা হিসেবে চিনে নিয়ে তাকে ডেকে নেবেন, সিন্নি সাধবেন বা কোঁৎকা দেখাবেন, সেটি আমাদের চোখের সামনে বা মিডিয়াতে আসে না। এবং পাঠক, চিনে নিন, ওটাও রাজনীতি। ওটা প্রশাসনের রাজনীতি। ওটা নিষিদ্ধ করতে আপনি একবারও মুখ খোলেননি সারা জীবনে। ছাত্রের কাজ ভাংচুর করা নয়, আমি এ কথা বিশ্বাস করি। কিন্তু ছাত্রদের ভাংচুরের মুখে যেতে দেখে যে প্রশাসন তাকে বিরত করে না, নিরস্ত করে না, সন্তানপ্রতিম ছাত্রটির কাঁধে হাত রেখে অতীতের নিজেকে স্পর্শ করতে পারে না, সে প্রশাসনও কিন্তু রাজনীতি করে যাচ্ছে ক্রমাগত। যে ছাত্রটি টেণ্ডার সন্ত্রাস করছে, সে একটি ফৌজদারি অপরাধে লিপ্ত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বিকারভাবে তাকে আড়াল করে যায়, শাস্তি দেয় না। এই মেরুদণ্ডহীন প্রশাসনকে দূর না করে ছাত্ররাজনীতি দূর করবেন কীভাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাজ শিক্ষকদের ওপর ন্যস্ত হওয়া উচিত নয়। প্রশাসকের কাজ আর শিক্ষকের কাজ ভিন্ন, এবং একটি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট তাতে স্পষ্ট। শিক্ষকের পদোন্নতি যদি তাঁর অধ্যাপনার গুণগত মানের ওপর নির্ভর না করে প্রশাসনিক কাজে "দক্ষতা"র ওপর নির্ভর করে, তাহলে তিনি শিক্ষক হিসেবে কাজ না করে কেন "বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসক" নামে একটি পদে যোগ দেন না? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্যে কেন একটি আলাদা পেশার ধারা আমরা তৈরি করি না? বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা নামে একটি পৃথক ফ্যাকাল্টিও তো তৈরি হতে পারে, যেখান থেকে পাশ করে ছাত্রেরা যোগ দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে রিসার্চ গ্র্যান্ট সংগ্রহ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ইত্যাদি কাজে? কেন একজন ছাত্র পাশ করে ক্ষমতাভিমুখী রাজনৈতিক চক্রে পা দেবেন শিক্ষক হওয়ার জন্যে, তারপর সেই অন্তহীন চক্রে ঘুরপাক খাবেন আর অন্যদেরকে টেনে নেবেন সেই কৃষ্ণগহ্বরে? আজ আমরা ছাত্ররাজনীতির নামে যা কিছু শুনি, সব এই কৃষ্ণগহ্বরের ইভেন্ট হরাইজন থেকে উঠে আসা হকিং রেডিয়েশন। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ছাত্রই থাকে না, শিক্ষকও থাকেন, প্রশাসকও থাকেন। রাজনৈতিক চুতিয়ামিতে ছাত্ররা থাকলে ধরে নিতে হবে শিক্ষকরাও আছেন। এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয় কেউ দেখাতে পারবেন দেশে, যেখানে সব শিক্ষক ধোয়া তুলসী পাতা, আর ছাত্রগুলো কতগুলো বাইনচোদ, খালি "রাজনীতি" করে বেড়ায়? বিশ্ববিদ্যালয় যে আইনবলে পরিচালিত হয়, ওখানে হাত দিয়ে এর পরিচালনা আর প্রশাসন কাঠামো একটু পাল্টে দিতে বলবেন কেউ? যদি না পারেন, ছাত্ররাজনীতি সিলগালা মেরে বন্ধ করেও লাভ নেই, বিশৃঙ্খলা থাকবেই।
false
hm
বিনিয়োগ ভ্যাপসা গরম। বাস বোঝাই মানুষ। এক ফোঁটা বাতাস নেই। বাসটা নড়ছে না একচুল গত কুড়ি মিনিট ধরে। কিংবা মাঝে এক চুল নড়েছিলো, সগীরের ভ্যাদর ভ্যাদর ভ্যাদরের জ্বালায় টের পাইনি। কত যে বকতে পারে সগীর! হেন বিষয় নাই, যা নিয়ে সে পঞ্চাশ মিনিট আগে মতিঝিল থেকে একসাথে বাসের টিকিট কাটার পর থেকে বকে যাচ্ছে না। সারাদিন অফিস করার পর এত কথা বলার এনার্জি পায় কোথায় সগীর? আর কী কাকতাল, সগীর এনার্জি নিয়ে কথা বলা শুরু করে। "বুঝলেন হিমু ভাই, ইনভেস্টমেন্ট দরকার এনার্জি সেক্টরে।" আমি চেষ্টা করি ভাবলেশহীন মুখে সামনে তাকিয়ে থাকতে। যাতে সগীর ভেবে না বসে, আমি তার কথা শুনছি। কিন্তু সগীর আমার দিকে চেয়েও দেখে না। লোকভর্তি বাসের ভিড়ের ফাঁক দিয়ে এক মাংসল তরুণীর দিকে ঘাড় কাত করে চেয়ে সে বকতেই থাকে, বকতেই থাকে। "ইনফ্রাস্ট্রাকচারে বিনিয়োগ করতে হবে। না না না, আপনি আজকে পয়সা ঢেলে কালকেই লাভ আশা করতে পারেন না। মনে করেন নতুন গ্যাসের লাইন বসানো হবে। এটাকে ছেড়ে দিন পিপিপিতে। প্রাইভেট আর পাবলিক, দুজনে দুজনার। পাবলিককে যেমন পয়সা ঢালতে হবে, প্রাইভেটকেও পয়সা ফেলতে হবে। তারপর হবে অবকাঠামো। সেই গ্যাসের লাইন বেয়ে হড়হড় করে নতুন গ্যাস ঢোকানো হবে গ্রিডে। তাতে নতুন কলকারখানা চলবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। অর্থনীতির চাকা ঘুরবে ...।" বাসের চাকাটা ঘুরে ওঠে সামান্য, আর আমার মাথাটা অর্থনীতির চাকার অনাগত ঘূর্ণনের সাথে তাল রেখে চক্কর দিয়ে ওঠে। চারটা রিল্যাক্সিন খাইয়ে দিলে কেমন হয় চুদির ভাইকে? সগীর রুমালে ঘাম মুছতে মুছতে বকতে থাকে। "আমাদের দেশের মানুষ, তর সইতে জানে না। আরে ব্যাটা, পেট থেকে বাচ্চা বের হতে মানুষের নয় মাস লেগে যায়, আর এ তো টাকার পেট! এর পেট থেকে বাচ্চা বের হতে তো কমসেকম নয় বছর লাগবে?" সামনের সিটের এক ভদ্রলোক এবার ঘাড় ঘোরান। "ক্যান? ব্যাঙ্কে পয়সা রাখলে বছর বছর সুদ পামু তো।" সগীর খেপে ওঠে। "এভাবে পয়সা ব্যাঙ্কে রাখলে চলবে? সবাই যদি পয়সা ব্যাঙ্কে রেখে দেয়, তাহলে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে কীভাবে?" বাসের চাকা আবারও নড়েচড়ে একটু। সম্মুখবর্তী ভদ্রলোক বলেন, "ক্যান? আপনে লোন লইয়া দুকান খুলেন? মানা করছি নিকি?" সগীর হতাশ হয়। "দোকান? আরে দোকান-মাকান দিয়ে তো শহরটাকে পাকা করে ফেললেন ভাই! বৃষ্টির পানি মাটির নিচে যাইতে পারে না আপনাদের দুকানের যন্ত্রণায়! অবকাঠামো লাগবে, অবকাঠামো। অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হবে।" ভদ্রলোক বলেন, "করেন না! মানা করছি নিকি?" সগীর বলেন, "ব্যাঙ্কে টাকা রাখার মানসিকতা ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে। বিনিয়োগ করতে হবে। লাভ হবেই। হতে বাধ্য। কিন্তু ধৈর্যে বুক বাঁধতে হবে।" ভদ্রলোক বলেন, "আর প্যাটে পাত্থর।" সগীর ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে, এমন সময় জ্যামের আগল একটু খোলে। বাসটা কয়েক কদম এগিয়ে তারপর আবার দাঁড়িয়ে পড়ে অর্থনীতির মতো। "অবকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাবে দ্যাখেন, দেশে বিদ্যুৎ নাই। পানি নাই। গ্যাস নাই। টাটকা সবজি নাই।" ভদ্রলোক বলেন, "বিয়া করার মতো মাইয়া নাই।" সগীর বলে, "আরে ধুরো ভাই কইতাছি সিরিয়াস কথা মাঝে দিয়া খালি প্যাচ লাগান! আজকে যদি নতুন রাস্তা বানানো হইতো, এই ট্রাফিক জাম থাকতো না! কিন্তু আমরা কি রাস্তা বানাই? না! আমরা গাড়ি কিনি! জাম তো বাড়বেই!" ভদ্রলোক বলেন, "গাড়ি তো দুকানে পাওন যায়। রাস্তা কি দুকানে পাওন যায়? রাস্তার উপরেই তো দুকান খুইলা বয়া থাকে লুকজন!" সগীর খেই হারিয়ে বলে, "অবকাঠামো ... আর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। খালি তো থাকেন বছর ঘুরলেই সুদের আশায়। উঁহু স্যার! তিষ্ঠাতে হবে। পাঁচ বছর! দশ বছর!" ভদ্রলোক বলেন, "হ। করসিলাম একবারই।" সগীর সোৎসাহে বলে, "কীসে?" ভদ্রলোক বলেন, "বহুদ্দিন আগে একবার ঢাকা থিকা চিটাগাং গেছিলাম পেলেনে।" সগীর বলে, "তো?" ভদ্রলোক বলেন, "গ্যাদা আছিলাম। হাপপেন্ট পরি। বিমানবালা আইসা কয়, বাবু লজেনছ খাইবা?" সগীর বলে, "আরে বিনিয়োগ করলেন কীসে?" ভদ্রলোক বলেন, "আরে মিয়া কইতাছি তো! দীর্ঘমেয়াদী গল্প। মোড়ে মোড়ে আওয়াজ দ্যান ক্যালা?" সগীর থতমত খেয়ে বলে, "আচ্ছা বলেন।" ভদ্রলোক বলেন, "আমি কইলাম, হ, আলবাত খামু। লগে লইয়া ভি যামু আমার আন্টির লিগা।" সগীর বলে, "কোন আন্টি?" ভদ্রলোক বলেন, "আমগো উপরের তলায় থাকতো এক আন্টি। বহুত মহাব্বত করত আমারে। বাচ্চাকাচ্চা আছিলো না তো। আমি ছিলাম গুড়াগাড়া। আমারে হাওলাত লইয়া যাইত মার কাছ থিকা। অনেক আদর করত। আহারে, আন্টির বাচ্চা হইতেছিল না।" সগীর বলে, "তো?" ভদ্রলোক বললেন, "বিমানবালাগুলি তখন ভদ্রসভ্য আছিল। এক বোন্দা লজেনছ আইনা দিয়া কইল, এই লও, কয়টা লইবা। খাবলাইয়া লইলাম কতডি পকেটে।" সগীর বলে, "তো?" ভদ্রলোক বললেন, "চিটাগাং গিয়া আন্টিরে দিলাম। কইলাম তুমার জন্য কী আনছি দেখ।" সগীর বলে, "তো?" ভদ্রলোক বললেন, "ঐ লজেনছ খাইয়াই তো আন্টির বাচ্চা হইল।" সগীর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, "ক্যাম্নে?" ভদ্রলোক বললেন, "খোদার ইশারা। আর আন্টির ঐ মাইয়ার লগেই প্রেম করছি বহুদ্দিন। অ্যালা কন, এইরাম লং-টার্ম ইনভেস্টমেন্ট করার চাঞ্ছ আছে কুনু?" গল্পের আইডিয়া এসেছে সন্ন্যাসীর সাথে আলাপের এক পর্যায়ে।
false
ij
দেবী আফ্রোদিতি দেবী আফ্রোদিতি। প্রেম, সৌন্দর্য ও উর্বরা শক্তির দেবী। শুধু তাই নয় -দেবী আফ্রোদিতি নাবিকদেরও রক্ষাকর্ত্রী । গ্রিক উপকথায় দেবী আফ্রোদিতি একজন অতীব সুপরিচিত দেবী। গ্রিক উপকথায় দেবী আফ্রোদিতির অবস্থান অনন্য । দেবী আফ্রোদিতি কে ঘিরে যেন কি এক রহস্য রয়েছে। যে রহস্য প্রাচীনকাল থেকেই শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছে। শিল্পীরা দেবী আফ্রোদিতি র ভিতরে এক অশেষ আকাঙ্খিত নারীকে খুঁজে পান, যে নারীর আবেদন এত বছরেও ক্ষুন্ন হয়নি। রোমান সভ্যতায় দেবী আফ্রোদিতি ভেনাস নামে পরিচিত। প্রথমেই দেবী আফ্রোদিতির জন্মকথা। গ্রিক উপকথায় রয়েছে ... এককালে দুই দেবতার যুদ্ধ হয়েছিল। একপক্ষে দেবতা আওয়ারানস ও অন্যপক্ষে ক্রোনাস। ক্রোনাস আওয়ারানস এর লিঙ্গ সমুদ্রে নিক্ষেপ করে। তখনই সমুদ্র-ফেনা থেকে আফ্রোদিতিরর জন্ম। কারও কারও মতে দেবতা জিউস ও ডিওনে আফ্রোদিতির বাবা ও মা। যাক।দেবী আফ্রোদিতি ঝিনুকে ভেসে ভেসে সাইপ্রাস দ্বীপে পৌঁছলেন...এই আশ্চর্য মিথিয় উত্থানটি প্রাচীন ও আধুনিক চিত্রকলায় বারংবার প্রতিফলিত হয়েছে। যে কারণে আফ্রোদিতি যেন স্বর্গীয় নারীত্বের প্রতীক রূপে চিহ্নিত হয়ে আছেন। এই ছবিটি ইতালিয় চিত্রকর Sandro Botticelli ( 1445 – May 17, 1510) -র আঁকা। ছবির নাম The Birth of Venus. কিন্তু Venus কেন? মনে থাকার কথা: রোমান সভ্যতায় দেবী আফ্রোদিতি ভেনাস নামে পরিচিত। Sandro Botticelli ইতালিয় চিত্রকর আশ্চর্য এই-দেবী আফ্রোদিতির শিশুবয়েসের উল্লেখ নেই। যেন দেবী আফ্রোদিতি পূর্ণবয়স্ক বিবাহযোগ্যা হয়েই জন্মেছেন। যার যৌন আকর্ষন তীব্র। সৌন্দর্যও গভীর। আমরা ট্রয়যুদ্ধে দেবী আফ্রোদিতির ভূমিকার কথা জানি। পেলেউস ও থেটিস এর বিয়ের উপলক্ষে জিউস একটি ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন। এরিস ছিলেন বিরোধ এর দেবী। তাকে ভোজসভায় নিমন্ত্রন করা হয়নি। এরিস অবশ্য ভোজসভায় যায় এবং একটি সোনালি আপেল ছুঁড়ে বলে: এটি সেরা সুন্দরী পাবে। আফ্রোদিতি সহ সোনালি আপেলটি দেবী আথেনা ও হেরাও দাবী করে বসে। জিউস কারও পক্ষে না থাকায় ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস বলা হল সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য। কাজেই তিনজন দেবী প্যারিসকে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। আফ্রোদিতি প্যারিসকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারীকে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী এই নারী হলেন গ্রিক রাজা মেনেলাউসের স্ত্রী হেলেন অভ স্পার্টা। । প্যারিস হেলেনকে দেখে মুগ্ধ হল এবং হেলেনকে নিয়ে ট্রয়ে পালিয়ে গেল। এর ফলে ট্রয় যুদ্ধ আরম্ভ হয়। গ্রিক দেবদেবীদের মধ্যে দেবী আফ্রোদিতি ছিলেন বিবাহিতা। যা একটি বিরল ঘটনা। দেবী আফ্রোদিতির স্বামী হেপহ্যাসটাস। আগ্নেয়গিরির দেবতা হেপহ্যাসটাস ছিলেন অত্যন্ত কুৎসিত দেখতে । দেবী আফ্রোদিতি স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন না; তিনি স্বাধীন থাকতেই পছন্দ করতেন এবং প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন প্রেমিক খুঁজে নিতেন। এতে অবশ্য দেবী অনুশোচনা ছিল না। তিনি যাকে চাইতেন তাকেই পেতেন। চন্ড মেজাজের যুদ্ধের দেবতা আরেস ছিল প্রিততম প্রেমিক। আরেসকে দেবী বিয়েও করেছিলেন। দেবীর অন্যতম প্রেমিক ছিলেন অ্যাডোনিস । এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন ... দেবীর অভিসারের ফলে কয়েকটি সন্তান। এদের মধ্যে প্রেমের দেবতা এরস ও এনিয়াস উল্লেখযোগ্য। এরস ও দেবী আফ্রোদিতির কাহিনীটি এখানে পাবেন। Greek mythology: Who is Aphrodite? নিবন্ধে Anja Emerson লিখেছেন: Aphrodite represents erotic love as an alluring form of divine influence. The representation of the nude Aphrodite carries powerful meaning and it became a way of delve into exploring female physical attractiveness, sex appeal and beauty. অ্যানজা এমারসন লিখিত Greek mythology: Who is Aphrodite? অবলম্বনে সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:২১
false
rg
এক নজরে বাজেট ২০১৩-১৪।। রেজা ঘটক জাতীয় সংসদে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এবারের বাজেট হবে দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার। আগামী বাজেটে রাজস্ব আয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা । বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি হবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় কীভাবে আসবে?১. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে কর বাবদ আয় হবে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা২. এনবিআর বহির্ভূত কর বাবদ আয় হবে ৫ হাজার ১২৯ কোটি টাকা৩. কর বহির্ভূত রাজস্ব আয় হবে ২৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকাসামগ্রিক আয় হবে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা ব্যয় কিভাবে হবে?১. অনুন্নয় খাতে ব্যয় হবে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকা২. উন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে (এডিপি) ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকাসামগ্রকি ব্যয় দাঁড়াবে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকাবাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি থাকবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকাবাজেটের ঘাটতি কিভাবে মেটানো হবে?১. বৈদেশিক উৎস থেকে ধার করা হবে ২১ হাজার ৬৮ কোটি টাকা২. অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধার করা হবে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যাংক থেকে ধার করা হবে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা আর সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ধার করা হবে ৭ হাজার ৯৭১ কোচি টাকা। বাজেটের কিছু চুম্বক বিষয়:বাজেটে প্রবৃদ্ধি'র লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.২ শতাংশ বাজেটে সম্ভাব্য মুদ্রাস্ফিতি থাকবে ৭.০ শতাংশবাজেটে ব্যক্তিকরের সর্বোচ্চ সীমা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকাপ্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকাস্বরাষ্ট্র মন্ত্রলানয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকাশিক্ষা ও প্রযুত্তি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬হাজার ৯৩ কোটি টাকাস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৪৭০ কোটি টাকাদুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকাজ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৫১ কোটি টাকাকৃষি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ২৭০ কোটি টাকাশিল্প খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২০৬ কোটি টাকাপরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকাসামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যান খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২১১ কোটি টাকাভারতের ২০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহার করবে সরকার। এছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পে ছয় হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।বাজেটে দাম বাড়বে কি কি জিনিসের?সিগারেট, সিম কার্ড, ভোজ্য তেল বাজেটে দাম কমবে কি কি জিনিসের?গাড়ি যত পুরনো, দাম তত কম, পেঁয়াজ, রুসন, চাল,
false
fe
যে স্বপ্ন অভিবাসী বাঙালি প্রজন্মের মননে আমি কলাম লিখি। প্রায় পঁচিশ বছর যাবৎ লিখি এই কলাম। লেখালেখির তিরিশ বছরেরও বেশী সময়ে এই কলাম আমাকে দিয়েছে অনেককিছু। দৈনিক কালের কন্ঠ - তে একটা কলাম শুরু করেছি । আজই প্রথম লেখাটা ছাপা হয়েছে উপসম্পাদকীয়তে। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক এই কলামের নাম - প্রবাহের প্রান্তমেরু । ----------------------------------------------------------------------- প্রবাহের প্রান্তমেরু যে স্বপ্ন অভিবাসী বাঙালি প্রজন্মের মননে ফকির ইলিয়াস ========================================= একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলের কাজ কী তা কারোরই অজানা নয়। এর আগে যে প্রশ্নটি আসে, তা হচ্ছে কার রাজনীতি? কিসের রাজনীতি? রাজনীতি যদি গণমানুষের জন্য হয়, তবে তাতে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা হবে না কেন? দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সহনশীলতার রাজনীতির স্বরূপ কী, তার সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে নিরূপণ করা যায়। তবে শেষ কথা হচ্ছে, জনগণের মতামতকে সম্মান করলে তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলনকেও সম্মান জানাতে হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত সফর করে এসেছেন। তাঁর এই সফরের আগে ও পরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তাঁরা বিভিন্ন ইচ্ছা-আশা ব্যক্ত করেছিলেন। সফরের পরে তাঁরা স্পষ্টই বলছেন, এ সফরে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ রক্ষা হয়নি। বুলিটা সেই পুরনো। সব স্বার্থ নাকি ভারতেরই হয়েছে। শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে বলছে বিএনপি। এবার দেখা যাক, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বাণিজ্যদলের প্রতিনিধিরা কী বলছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, সফর বহুলাংশেই সফল হয়েছে। চুক্তি এবং সমঝোতাগুলো কার্যকর হলেই সফরের প্রকৃত ফল পাবে দুই দেশের মানুষ। কথা হচ্ছে, বন্দিবিনিময় চুক্তি, বাণিজ্য, পানিবণ্টন, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে যেসব চুক্তি হয়েছে তাতে কি বাংলাদেশ মোটেই লাভবান হবে না? অবশ্যই হবে। মনে রাখা দরকার, দুই পক্ষের স্বার্থ রক্ষা না হলে কোনো বেকুবও চুক্তি স্বাক্ষর করে না_করবে না। অথচ বাংলাদেশ একটি দেশ। একটি সার্বভৌম জাতিসত্তা। একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। এ দেশের মানুষ ও সরকারপক্ষ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় কোনো অংশেই কম বোঝে না। তাহলে জামায়াত-বিএনপি জোট এভাবে মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়াচ্ছে কেন? কেন তারা ইস্যু তৈরি করে আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছে? তাদের নেপথ্য উদ্দেশ্য অন্যখানে। তারা চাইছে সব উন্নয়নের ধারাকে স্থবির করে দিতে, রাষ্ট্র যাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে না পারে_সেই পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতে। এ ছাড়া জাতির জনকের হত্যাকারীদের রায় কার্যকরে এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারে বিঘ্ন ঘটানো, মৌলবাদী জঙ্গিচক্রকে উসকানি দেওয়া প্রভৃতি ইস্যু সৃষ্টি করার চেষ্টা তো রয়েছেই। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সম্প্রতি বলেছেন, দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে নাকি গোপন জঙ্গি সংগঠনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাঁর এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মাওলানা নিজামীকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কি ধর্মর্ভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল রয়েছে? সেসব দেশে কি ধর্মের নামে রাজনীতি করা যায়? না, যায় না। বরং সেসব দেশে চলছে রাজতন্ত্রের নামে পারিবারিক স্বৈরতন্ত্র। ওসব দেশের বাদশাহ-আমির-খলিফারা বাংলাদেশে ধর্ম প্রচারের নামে এমন কট্টরবাদিতাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন কেন? উদ্দেশ্যটি হচ্ছে, নিজস্ব 'কলোনিয়াল টেরিটরি' তৈরি। বাংলাদেশের মানুষ তা ক্রমেই অনুধাবন করছে। এরপর আসি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীদের যাত্রা শুরু প্রসঙ্গে। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর সামরিক শাসকদের ছত্রছায়ায় ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে যারা মাঠে নামে, মূলত তারা ছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি। ক্রমেই এরা তাদের শেকড় বিস্তৃত করতে থাকে। একদিকে ধর্মের নামে রাজনীতি, অন্যদিকে সশস্ত্র জঙ্গিবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল_এ দুটি ধারা ছিল তাদের দুটি অভিন্ন প্রশাখা। যার ফলে গেল জোট সরকারের সময় একাত্তরের ঘাতক নেতাদ্বয় মুজাহিদ-নিজামী ক্ষমতায় আসার পর 'শায়খ রহমান', 'বাংলাভাই'-এর মতো জঙ্গিরা প্রকাশ্যে মাঠে নামার সুযোগ পায়। এবং জোট সরকার প্রকাশ্যে বলতে থাকে 'বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই', 'বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি' ইত্যাদি কথাবার্তা। দেশ গঠনে সহনশীল রাজনীতির ঐক্যের কথা অনেকেই বলেন। তা কিভাবে হতে পারে? কারা হতে পারেন এর কাণ্ডারি? এ বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার উল্লেখ করা দরকার। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসেন পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক জান্তা পারভেজ মোশাররফ। সে সময় পারভেজ মোশাররফ ও অনুপ চেটিয়ার মধ্যে নাকি ঢাকা শেরাটনে একটি বৈঠক হয়েছিল। এমন একটি কথা অতিসম্প্রতি বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এই দেড় ঘণ্টা বৈঠকের প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে। যদি অভিযোগ সত্য হয় তবে অবশ্যই তা খুব গুরুতর এবং এর প্রতিকার জরুরি। বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতির কথা এলেই সামনে চলে আসে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। দেশের ডানপন্থী একটি পক্ষ তরুণ প্রজন্মকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা প্রয়োজনে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে কিছু নেই'_এমন তত্ত্বও শোনাচ্ছে যত্রতত্র। যারা একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক ছিল, যারা একাত্তরে এ দেশের মা-বোনদের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছিল, আজ তাদেরই মুক্তিত্রাতা হিসেবে সাজানোর আলোচনা চলছে! জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-ভারত একযোগে কাজ করবে_এ ঘোষণা অনেকের গাত্রদাহের কারণ হতেই পারে। শীর্ষ সন্ত্রাসী বিনিময় চুক্তি কারো কারো তীব্র ক্ষোভের কারণ হতে পারে। কারণ শীর্ষ বন্দী সন্ত্রাসী এবং তাদের গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে অশান্ত করার দীর্ঘতর চেষ্টা কাদের, তা বিভিন্ন ঘটনায় ইতিমধ্যেই বেরিয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সহনশীলতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে খুব সহজ কাজ নয়। অথচ জাতীয় উন্নয়নে সেটাই প্রধান রক্ষাকবচ। যাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের এখনো মনে আছে কী চেতনা বুকে নিয়ে তাঁরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেই শানিত শক্তির আজ খুব বেশি প্রয়োজন। মহাজোট সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সেটাই প্রমাণ করেছে, এ প্রজন্ম ৩০ লাখ শহীদকে ভুলে যায়নি। এ প্রজন্ম বাঙালি জাতিসত্তাকে বলীয়ান করেই বিশ্বে দাঁড়াতে চায়। একই স্বপ্ন অভিবাসী বাঙালি প্রজন্মের মননেও। এ সুযোগের দরজা অবারিত করে দিতে হবে। কারা এর প্রতিপক্ষ, তাদেরও চিহ্নিত করতে হবে। কারণ সত্যের প্রতিপক্ষ যে মিথ্যা, তা তো সবারই জানা। -------------------------------------------------------------------- দৈনিক কালের কন্ঠ । ঢাকা। ২৬ জানুয়ারী ২০১০ মংগলবার প্রকাশিত ছবি - জেমি প্যাকার্ড সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২৬
false
ij
গল্প_ অযান্ত্রিক ডেনভার শহরের বাড়িটা বিক্রি করে শহরের বাইরে কোথাও নিরিবিলি হ্রদের কাছে বাড়ি কিনবেন ঠিক করলেন মি:নরম্যান। ব্রোকার-এর নাম স্টিভ পার্কার। সে লেকসাইড শহরে একটি বাড়ির খবর আনল। লেকসাইড শহরটা জেফারসন কাউন্টির পূর্ব প্রান্তে। মি: নরম্যান যেমন চাইছেন বাড়িটি নাকি ঠিক তেমনই । কলরাডো অঙ্গরাজ্যের কম্যুনিটি প্ল্যানিং বিভাগে চাকরি করেন মি: নরম্যান। অফিসের কলিগরা বাজী ধরে বলল, চাকরিটা তুমি ছাড়তে পারবে না নরম্যান। অথচ মি: নরম্যানকে ডাকছে কলরাডোর নীল পাহাড়, ডাকছে নির্জন হ্রদ । অফিসের কলিগদের ধারণা, মি: নরম্যান-এর মাছ ধরার নেশা আছে, চাকরি ছেড়ে হ্রদের পাড়ে বাস করে বাকি জীবন মাছ ধরে কাটিয়ে দেবেন। না, মি: নরম্যান ঠিক মাছ ধরবেন না। লেকের পানিতে এমনি এমনি ছিপ ফেলে বসে থাকবেন। কখনও মাছ উঠলেও ছেড়ে দেবেন তিনি। বরং তিনি দেখবেন কলরাডোর নীল আকাশ, দেখবেন ঢেউ খেলানো সবুজ পাহাড়শ্রেনি, দেখবেন হ্রদের স্বচ্ছ জল; দূরের সেই হ্রদ-দ্বীপটি দেখবেন। আর ...আর হ্রদের পাড়ের মাছ ধরার কাঠের সেতুর মাঝখানে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের একটি পোষ্টার সাঁটবেন মি: নরম্যান । কেউ পানির ধারে যেতে চাইলে তাকে ঐ পোস্টারটি মাড়িয়েই যেতে হবে।জানালার কাছে মৃদু খসখসে শব্দ। মুখ তুলে সেদিকে তাকালেন মি: নরম্যান । জানালার কাচে তুষার আবার মুখ ঘষঁতে শুরু করেছে। বাইরে আবার তুষার ঝরতে শুরু করেছে। মি: নরম্যান এতক্ষণ অন্যমনস্ক ছিলেন বলে টের পাননি। সেই সঙ্গে ঘরের ভিতরে শীতটাও বাড়ছে খেয়াল করলেন। সকাল থেকে অফিসের ডেস্কে বসে ছিলেন মি: নরম্যান । একটু আগে এক কাপ কফি খেয়েছেন। এখন একটা সিগার ধরালেন । আগুনের আলোয় মি: নরম্যান-এর সাতান্ন বছরের লালচে মুখের বলিরেখাগুলি সব স্পস্ট হয়ে উঠল। একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে তিনি দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালেন। ২০ মার্চ, ২০০৩; ম্লান হাসলেন মি: নরম্যান। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ কলঙ্কিত একটি দিন । আজই মি: নরম্যান সরকারি চাকরিটা ছেড়ে দেবেন, সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছিলেন। আজই শেষবারের মতন অফিস করছেন তিনি। একহাতে কালো ব্রিফকেসটা নিয়ে আধ ঘন্টা পর নিচে নেমে এলেন মি: নরম্যান। ডেনভার শহরের আকাশটিতে কে যেন সাদাটে ধূসর রং লেপে দিয়েছে। সকাল থেকে থেমে থেমে তুষার পড়ছিল। রাস্তা, গাছগুলি আর দালানের ছাদ শুভ্র তুষারে ছেয়ে সাদা হয়ে আছে। অদূরে গাড়িটা পার্ক করা। নীল রঙের পুরনো মডেলের একটা শেভ্রলে: ভালোই সার্ভিস দিল এ কয় বছর; এখন বিক্রি করে দিতে হবে। তিনি ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যান। গাড়িতে ওঠার আগে শেষবারের মতন সরকারি অফিস ভবনটা একবার দেখে নিলেন মি: নরম্যান। বুকের ভিতরে কোনও ধরনের নস্টালজিক অনুভূতি টের পেলেন না। গাড়ি স্টাট নেওয়ার আগে একটা সিগার ধরালেন মি: নরম্যান । খুব শিগগির সিগার ছেড়ে দেবেন। এসব ভেবে তাঁর বুকের ভিতরে কেমন এক শূন্যতার দোলা টের পাচ্ছিলেন তিনি। অফিসের কলিগরা বাজী ধরে বলেছিল, চাকরি তুমি ছাড়তে পারবে না নরম্যান। মি: নরম্যানকে কলরাডোর নির্জন হ্রদ আর পাহাড় অপেক্ষা করে আছে। অফিসের কলিগরা জানে না। কংগ্রেস পার্কের কাছে এসে গাড়ির স্পীড কমিয়ে দিলেন মি: নরম্যান। তুষার আর শীত উপেক্ষা করে প্ল্যাকার্ড হাতে কয়েকজন নারী আর পুরুষ দাঁড়িয়ে। প্ল্যাকার্ডে লেখা: “নো ওয়ার।”, “নো ইরাক।” মি: নরম্যানের ভ্রুঁ কুঁচকে যায়। তাঁর একটাই ছেলে, জেফ; ইউ এস নেভিতে আছে, এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ক্র জেফ: এখন পারসিয়ান গালফে । ওখান থেকে মার্কিন বোমারু বিমানগুলি এই মুহূর্তে বুশ প্রশাসনের নির্দেশে বাগদাদ শহরের ওপর বোমা ফেলছে । মি: নরম্যান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ডেনভার শহরের ভিতরেই অ্যাথমার পার্কের কাছে রুবি হিলে তার বাড়ি । বাড়ি পৌঁছনোর পর অত্যন্ত বিষন্ন বোধ করলেন তিনি। সাদা রঙের দোতলা বাড়ি; অত্যন্ত সখ করে তৈরি করেছিলেন তিরিশ বছর আগে। এখন বিক্রি দিতে হবে। খুব শিগগির ডেনভার শহর ছেড়ে চলে যাবেন মি: নরম্যান। আজ সকালে লিভিং রুমের মেঝের ওপর প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের বড় একটা পোষ্টার সেঁটেছেন মি: নরম্যান । প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের পোষ্টার মাড়িয়ে ভিতরে ঢুকলেন মি: নরম্যান। সান অভ আ বিচ! সরকারি চাকরি করে ঐ পোষ্টারটি পা দিয়ে মাড়ানো যাবে না। কাজেই চাকরি ছেড়ে দিতে হল। শুনশান ফাঁকা ঘরটায় হালকা শীত। মি: নরম্যান-এর স্ত্রী মারা গিয়েছেন সাত বছর হল। জুডিথের ক্যান্সার হয়েছিল। গতরাতে, অনেক দিন পর জুডিথকে স্বপ্নে দেখেছেন, নির্জন হ্রদের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে জুডিথ। স্বপ্নটা দেখার পর ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। আর তখনই অন্ধকারের মধ্যে তুষারপাতের মিহি শব্দ পেয়েছিলেন মি: নরম্যান । তার মনে হয়েছিল খুব শিগগির জুডিথের সঙ্গে তার দেখা হবে। কিন্তু, তা কি করে সম্ভব?এক সকালে ব্রোকার স্টিভ পার্কার-এর সঙ্গে লেকসাইড শহরে রওনা হলেন মি: নরম্যান । দুপুরের আগে আগেই লেকসাইড শহরে পৌঁছলেন । শান্ত, নিরিবিলি শহর। লাঞ্চ করা দরকার। একটা রেস্টুরেন্টের বাইরে গাড়িটা পার্ক করে ঢুকলেন। ভিতরে বেশ ভিড়। নানা বয়েসি মানুষ। গুঞ্জন। সিগারেটের ধোঁওয়া । পিছনের এককোণে বসলেন মি: নরম্যান । স্টিভ পার্কার টয়লেটে গেল। ইষৎ বাদামী চুল, ঘন ভুরু, নীল নীল চোখ আর ফরসা গায়ের রঙ - একজন মাঝবয়েসি মহিলা অর্ডার নিতে এলেন। মহিলাকে দেখে মি: নরম্যান ভয়ানক চমকে উঠলেন। মহিলা দেখতে অনেকটা জুডিথের মতো। মহিলাকে ঠিক ওয়েট্রেস বলে মনে হল না। সম্ভ্রান্ত ঘরের নারী বলে মনে হয়। দিন কয়েক আগে জুডিথকে স্বপ্ন দেখেছিলেন। আশ্চর্য! মহিলা নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, বিফ দেব?মি: নরম্যান চাকরি ছাড়ার পড় থেকে মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বললেন, না। আমি ভেজ। স্টিভ পার্কার ফিরে এল। সে অবশ্য বিফই নিল। ভারি বাচাল। ভিড়ের মধ্যে কে যেন গিটার বাজিয়ে গান গাইতে শুরু করেছে । খেতে খেতে মি: নরম্যান কান পাতেন।আসুন সিনেটর, কংগ্রেসম্যানদয়া করে শুনুন আহবানদরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাঅবরোধ করবেন না হলরুমকেননা, যে কষ্ট পাচ্ছেতার দেরি হয়ে যাচ্ছে।বাইরে একটা যুদ্ধ চলছেএবং সে যুদ্ধটা তীব্র হচ্ছেযে যুদ্ধের আঁচ আপনার জানালা কাঁপাবেধ্বসিয়ে দেবে আপনার দেওয়ালকেননা, সময়ে পরিবর্তন আসে।বব ডিলানের গান: দি টাইমস দে আর আ-চেঞ্জিং ...কারা এরা? মি: নরম্যানের ভ্রুঁ কুচঁকে যায়। তার মনে পড়ে গেল কংগ্রেস পার্কের কাছে তুষার আর শীত উপেক্ষা করে প্ল্যাকার্ড হাতে কয়েক জন নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে ছিল। প্ল্যাকার্ডে লেখা: “নো ওয়ার।” “নো ইরাক।” মি: নরম্যানের ভ্রুঁ কুঁচকে যায়।লাঞ্চ সেরে রেস্টুরেন্টের বাইরে বেরিয়ে এসে মি: নরম্যান রেস্টুরেন্টের নামটা দেখলেন: “লেইক আইল্যান্ড।” আবার আসতে হবে মনে মনে বললেন।রোহ্ডা হ্রদের পাড়ে পৌঁছে মি: নরম্যান মুগ্ধ হয়ে গেলেন। নীলাভ আকাশের নিচে পাহাড় ঘেরা স্বচ্ছজলের বিস্তীর্ণ হ্রদ। নীকাকাশ যেন পাহাড় ও হ্রদের জলে চুম্বন করছে। পাড়ে তুলা গাছ, উইলো আর কলরাডোর বিখ্যাত নীল স্প্রুস। হ্রদের পাড়ে মাছ ধরার জন্য কাঠের সেতু। সবচে বড় কথা, জায়গাটি অসম্ভব নির্জন। পানিতে মাছ ঘাই দিলেও শোনা যায়। হ্রদের মাঝখানে দ্বীপের মতন। লেইক আইল্যান্ড? আশ্চর্য! দ্বীপের মাঝখানে পাহাড়ের মতন। এত সুন্দর। কে বলবে আমেরিকা একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন খুনি দেশ? লেকের পাড়ে রাস্তা, রাস্তার পাশে সাদা রং করা কাঠের বেড়া। ভিতরে কাঠের দোতলা ছিমছাম বাড়িটির সামনে টিউলিপ ফুলের সুন্দর বাগান। স্টিভ পার্কার সব ঘুরিয়ে দেখাল। সত্তর হাজার ডলারে এর চে ভালো বাড়ি পাবেন না স্যার। সবচে বড় কথা বাড়িটি হনটেড নয়। বাড়ির ওনার লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টিভেন ক্যানেথ, ইউ এস আর্মিতে আছেন। স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়াতে বেচে দিচ্ছেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টিভেন ক্যানেথ এর স্ত্রীর নাম বারবারা স্যার। মি: নরম্যান ব্রোকারের বকবকানি শুনছিলেন না। হ্রদের দিকে চেয়ে ভাবলেন: এখানেই কোথাও আমার মৃত্যু হবে। আশ্চর্য!বাকি কাজগুলো সারতে সারতে তুষার ঝরা দিনগুলি শেষ হয়ে গেল। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে লেকসাইড শহরের নতুন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন মি: নরম্যান । নতুন বাড়িতে উঠে পুরনো শেভ্রলে বেচে দেবেন। শহরের বাইরে বাস করলে তেলের দরকার হবে না। কি আছে শহরে? ডেনভার শহরে? আমেরিকার কলরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভার শহরে? এখন শহরগুলি পরিত্যাগ করার সময় হয়েছে ...চূড়ান্ত সর্বনাশ হয়ে যাওয়ার আগেই। এইসব ভেবে ম্লান হাসেন মি: নরম্যান । ঝলমলে রোদ উঠেছে। হাইওয়ের ওপর দিয়ে গাড়ি ছুটছে। অবসর সময়ে গান শোনেন মি: নরম্যান । ঝুঁকে সিডি প্লেয়ারটা অন করলেন। ক্রিস রিয়ার গান বেজে উঠল। I am gone fishing/ I got me a line/Nothing I do is gonna make the difference/ So I am taking the time. ম্লান হাসেন মি: নরম্যান । রোহ্ডা হ্রদের নির্জন পাড়ের নতুন বাড়িতে এসে নিশ্চিন্ত হলেন মি: নরম্যান, তবে তাঁর মনের গ্লানি দূর হল না। ছেলে জেফ ইউ এস এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ক্র। পুরনো শেভ্রলেটা বিক্রি করে দিলেন, বিক্রি করে দিয়ে নির্ভার বোধ করলেন। আজকাল প্রায় সারাদিনই মি: নরম্যান কাঠের সেতুর শেষ মাথায় বসে থাকেন। মাছ ধরেন। আসলে মাছ তিনি ধরেন না। এমনি এমনি লেকের জলে ছিপ ফেলে বসে থাকেন। কখনও কাঠের বেড়ায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে বসে রোদের আলোয় বই পড়েন। এখানে আসার পর পাওলো কোহেলোর, ‘দ্য ওয়ে অভ দ্য বো’ পড়ে শেষ করেছেন; এখন পড়ছেন রবার্ট এইটকেন-এর ‘ টেকিং দ্য পাথ অভ জেন’ বইটি । একদিন অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটল। সময়টা বিকেল। মাথায় মেক্সিকান হ্যাট, হলদে গেঞ্জি আর বাদামী রঙের হাফ প্যান্ট পরে কাঠের সেতুর শেষ মাথায় বসে ছিলেন মি: নরম্যান । সেদিনের মতো মাছ ধরা শেষ। এখন ফিরবেন। উঠে দাঁড়িয়েছেন। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলেন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের পোষ্টারের ওপর সোনালি চুলের পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের একটি ছিপছিপে ফরসা মেয়ে দাঁড়িয়ে। শাদা রঙের ওয়েডিং ড্রেস পরে আছে মেয়েটি । হাতে একগুচ্ছ টিউলিপ ফুল। মেয়েটির হাঁটার ভঙ্গি আর তাকানোর ভঙ্গিতে মেয়েটিকে অন্ধ মনে হল। মেয়েটির অনেকটা পিছনে একজন মধ্যবয়েসি মহিলা ‘অ্যাঞ্জেলিসা’, ‘অ্যাঞ্জেলিসা’ বলতে বলতে দ্রুত এদিকেই আসছে। আশ্চর্য! লেইক আইল্যান্ড রেস্টুরেন্টের সেই ওয়েট্রেস। ইষৎ বাদামী চুল, ঘন ভুরু, নীল নীল চোখ আর ফরসা গায়ের রঙ। মহিলাও মনে হয় দূর থেকে মি: নরম্যানকে চিনতে পারলেন। থমকে দাঁড়ালেন। তারপর এগিয়ে এসে হেসে বললেন, আপনি এখানে?মি: নরম্যান হাসলেন। বললেন, আমি এখানেই থাকি। আমার মেয়ে। অ্যাঞ্জেলিসা। মহিলা বললেন। ও।আপনাকে বিরক্ত করলাম না তো?না, না।মহিলা বললেন, আমি এখন মেয়েকে নিয়ে লেকসাইড শহরে থাকি। আগে এখানেই থাকতাম। আজ মনে হল ঘুরে দেখে যাই। আমার নাম বারবারা। আমার নাম অসকার, অসকার নরম্যান ।আজ কি মাছ ধরলেন মি: নরম্যান? বারবারার মুখে চাপা হাসি। আজ ভাগ্যে তেমন কিছুই জোটেনি ম্যাডাম।ও।মি: নরম্যান জিজ্ঞেস করলেন, অ্যাঞ্জেলিসা মনে হয় ...কথা শেষ করলেন না। হ্যাঁ। তবে ওর সেন্স খুব শার্প। সব বুঝতে পারে। দেখলেন না কেমন গাড়ি থেকে নেমে একাই এখানে চলে এল। এই জায়গাটি ওর খুব প্রিয়। ওর মেয়েবেলা এখানেই কেটেছে । মি: নরম্যান অ্যাঞ্জেলিসার দিকে তাকালেন। অন্ধ মেয়েটি দূরের দ্বীপের সেই পাহাড়ে দিকে তাকিয়ে আছে। অসকার নরম্যান বললেন, চলুন, কাছেই আমার বাড়ি। এক কাপ কফি খাবেন। বারবারা বললেন, যেতে পারি, কফিও খেতেও পারি, তবে একটা শর্ত আছে।মি: নরম্যান অবাক। বললেন, কি শর্ত- বলুন।বারবারা বললেন, রবার্ট এইটকেন-এর ‘ টেকিং দ্য পাথ অভ জেন’ বইটি আমাকে পড়ার জন্য ধার দিতে হবে। অনেক খুঁজেছি। পাই নি। মি: নরম্যান হেসে বললেন, আচ্ছা দেব। এই নিন। বইটি নিয়ে বারবারা বললেন, আজ আপনার বাড়ি চিনে রাখব। পড়া শেষ হলে ফেরত দিয়ে যাব।মি: নরম্যান কেঁপে উঠলেন। মাস কয়েক আগে জুডিথকে স্বপ্নে দেখেছেন, নির্জন হ্রদের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে জুডিথ । জুডিথ কি ফিরে এল? মি: নরম্যান বললেন, ঠিক আছে। ও নিয়ে ভাববেন না। লেকের পাড়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে নির্জন রাস্তা। রাস্তার দুপাশে সার সার দীর্ঘপাতার পাইন গাছ। সেই পাইন পাতাগুলি বাতাসে দুলছিল আর সূর্যের আলোয় ঝলমল করছিল । বাড়ির বাইরে পুরনো আমলের একটি বাদামী রঙের পন্টিয়াক পার্ক করা। টিউলিপ বাগানে শেষ বিকেলের রোদ। আর মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে আছে। কাঠের বারান্দায় উঠে বারবারা বললেন, আমরা বরং এখানেই বসি। একটু পর সূর্য অস্ত যাবে। তখন লেকের জলে রঙের খেলা দেখা যাবে। ঠিক আছে। বলে মি: নরম্যান ভিতরে ঢুকে গেলেন। মাছধরার সরঞ্জামগুলি রেখে অতিরিক্ত দুটি চেয়ার নিয়ে এলেন। লক্ষ করলেন বারবারার মুখে কী রকম বিষন্নতা জমেছে । বারবারা বললেন, বাড়িটি তাহলে আপনিই কিনেছেন?মি: নরম্যান বসতে বসতে বললেন, হ্যাঁ। আগে আমি ডেনভার শহরে ছিলাম। শহরের জীবন আর ভালো লাগছিল না আমার। এখানেই নিরিবিলি বাকি জীবন কাটিয়ে দেব। আপনি এখানেই ছিলেন বললেন?হ্যাঁ। এই বাড়িতেই ।ও। মি: নরম্যানের মনে পড়ল, ব্রোকার কি সব বলছিল। সত্তর হাজার ডলারে এর চে ভালো বাড়ি পাবেন না স্যার। সবচে বড় কথা বাড়িটি হনটেড নয়। বাড়িটা ইউ এস আর্মির এক লেফটেন্যান্ট কর্নেলের ...বারবারা বললেন, অ্যাঞ্জেলিসার বাবার নাম স্টিভেন ক্যানেথ, ইউ এস আর্মিতে আছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল । একটু থেমে বারবারা বললেন, ক্যানেথ এখন ইরাক। গত বছর আমি অ্যাঞ্জেলিসার বাবাকে বললাম: আর্মির চাকরি ছাড়ো। প্রেসিডেন্ট বুশের মতলব ভালো না, হিজ গোয়িং টু ক্রিয়েট সাম ক্রাইসিস ইন দ্য মিডিল ইস্ট। নেভাডায় আমার বাবার একটা অ্যাবানডোনেড র‌্যাঞ্চ আছে, ওটাই দাঁড় করাই না কেন? ক্যানেথ শুনল না। তারপর ...তারপর আমি ডির্ভোস চেয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে এ বাড়ি ছেড়ে রিভারসাইড শহরে চলে যাই, রেস্টুরেন্টে কাজ নিলাম। এখন ... এখন মেয়েকে নিয়েই বেঁচে আছি। মি: নরম্যান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অ্যাঞ্জেলিসার দিকে তাকালেন। অন্ধ মেয়েটি দূরের হ্রদ-দ্বীপের পাহাড়ে দিকে তাকিয়ে আছে । তখনও অ্যাঞ্জেলিসা দূরের হ্রদ-দ্বীপের পাহাড়ে দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু, অ্যাঞ্জেলিসা ওয়েডিং ড্রেস পরে আছে কেন? কথাটা অবশ্য জিজ্ঞেস করলেন না। একটু পর বারবারা ভিতরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর কফি বানিয়ে ফিরে এলেন। সিগার ছেড়ে দিয়েছেন মি: নরম্যান। তামাকের ধোঁওয়ার অভাবে বুকের ভিতরে এখনও চাপা কষ্ট হয়। তবে সবকিছু বিবেচনা করে সহ্য করছেন। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। বাতাসে টিউলিপ ফুলের গন্ধ ছড়িয়েছে। বারবারা বললেন, চলুন। লেকের পাড়ে যাই। চাঁদ উঠেছে। ভালো লাগবে। চলুন।হাঁটতে ভালো লাগছিল মি: নরম্যানের। বারবারার মুখটি অবিকল জুডিথের মুখ যেন। কেন? আগস্ট মাসের মাঝামাঝি। ফুটফুটে জোছনা ফুটেছে। আর উথালপাথাল বাতাস। জোছনার আলোয় পরিস্কার দেখা যায়- হ্রদের জলে চাঁদের প্রতিচ্ছবি আর একটি নৌকা। এদিকেই আসছে। নৌকার একজন যাত্রী হাত নাড়ল। অ্যাঞ্জেলিসা উঠে দাঁড়াল। হাত নাড়ল। বারবারার দিকে তাকিয়ে মি: নরম্যান জিজ্ঞেস করলেন, কারা ওরা? বারবারা বললেন, যারা ডেনভার শহরের কংগ্রেস পার্কের সামনে তুষার আর শীত উপেক্ষা করে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। যাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকে: “নো ওয়ার।” “নো ইরাক।” মি: নরম্যানের ভ্রুঁ কুঁচকে যায়।আজ অ্যাঞ্জেলিসার বিয়ে। বারবারা বললেন। বিয়ে? মি: নরম্যান চমকে ওঠেন। হ্যাঁ। ওর হবু বরের নাম বব। মিউজিশিয়ান। ববের সঙ্গে অ্যাঞ্জেলিসার পরিচয় লেইক আইল্যান্ড রেস্টুরেন্টে । আপনার মনে নেই লেইক আইল্যান্ড রেস্টুরেন্টে বব ডিলানের ‘দি টাইমস দে আর আ-চেঞ্জিং’ গানটি গাইল? ববই তো হাত নাড়ল। অন্ধ মেয়েকে কে বিয়ে করে বলুন। তবে ববরা একেবারেই অন্যরকম। ওই হ্রদ-দ্বীপের পাহাড়ে ববের বন্ধুরা থাকে। সেই বন্ধুদের নিয়ে আসছে বব। আজ রাতে ওই হ্রদ-দ্বীপের পাহাড়ের ওদের বিয়ে হবে। ওই ওই হ্রদ-দ্বীপের পাহাড়ে কি আছে? মি: নরম্যানের বুকের ভিতর কেমন যেন করছে।বারবারা বললেন, অনেক গাছ, পাখি, ঝরনা, হাজার বছর পেছনো সময়, সাদা-কালো মানুষ, তাদের সহজ সরল অযান্ত্রিক ও আদিম জীবনযাপন, আর গান। বিয়ের পর বব আর অ্যাঞ্জেলিসা ওখানেই থাকবে। শুনতে শুনতে কেমন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান মি: নরম্যান। চূড়ান্ত সর্বনাশ হওয়ার আগেই শহর ছেড়েছেন তিনি-এখন আরও আরও গভীর নির্জনে যেতে চাইলেন তিনি -একেবারেই অযান্ত্রিক ও নগ্ন হয়ে যেতে চাইলেন। যে কারণে মৃদুকন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, আমরাও কি যেতে পারি না ওই ওই হ্রদ-দ্বীপের পাহাড়ে বারবারা?পারি। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে গভীর আবেগে বারবারা বললেন।মি: নরম্যানও উঠে দাঁড়ালেন। নৌকাটি ক্রমেই পাড়ের দিকে এগিয়ে আসছে। ওদের হ্রদ-দ্বীপের পাহাড়ে নিয়ে যেতে। উৎসর্গ: সিনডি শিহান। ইরাক যুদ্ধে নিহত এক মার্কিন সৈন্যের মা এবং ইরাক যুদ্ধ বিরোধী মার্কিন অ্যাক্টিভিস্ট ।
false
ij
ব্রেইন ড্রেন তখন সন্ধ্যা নামছিল। ঠিক তখনই একটি ছেলে আমার ঘরে এল। আমি যে পরিবারের সঙ্গে থাকি ছেলেটি তাদের আত্মীয়। শ্যামলা মতন। শুকনো। ঢ্যাঙ্গা। মাথায় ছোট ছোট করে ছাঁটা চুল। ঢাকায় বছর খানেক ধরে ‌'ল' পড়ছে। যমুনার পশ্চিম পাড়ে বাড়ি; এনায়েৎপুরের কাছে, বেলকুচি, না কোথায় যেন। ছেলেটাকে আমি বসতে বললাম। ও বসল। অতি বিনয়ী ছেলে। টিউব লাইটের আলোয় আমার বইয়ে ভরতি ঘরটায় চোখ বুলিয়ে একটু পর বলল, আমারও অনেক কিছু জানার ইচ্ছা হয় ভাই। আমি হেসে বললাম, কি জানার ইচ্ছা হয়? কত কিছু। এই ধরেন ইতিহাস। বললাম, ইতিহাস তো বেশ বিশাল ব্যাপার-ঠিক কোন্ ইতিহাস তুমি জানতে চাও? রোমান। ছেলেটি চটপট উত্তর দিল। রোমান? হ্যাঁ। রোমান। ছেলেটি মাথা নেড়ে বলল। ঠিক রোমান ইতিহাস কেন? অন্য ইতিহাস নয় কেন? হেসে জিজ্ঞেস বললাম। আমার প্রশ্ন শুনে ছেলেটি মুখচোখ পাল্টে গেল। বলল, বলেন কী! রোমানরা ... কত কিছু করছে তারা। আজও আমরা রোমান ল পড়ি। শহরে কেন এসেছ? আমি সামান্য বিরক্ত হয়ে প্রসঙ্গ পাল্টালাম। ও থতমত খেয়ে বলল, কেন-পড়াশোনা করতে। কেন? গ্রামে কি সমস্যা? যমুনায় ঘরবাড়ি ভাঙ্গছে যে শহরে আরছ? না। তা হইলে? ছেলেটি করুন স্বরে বলল, আমাদের অবস্থা বিশেষ ভালো না ভাই। সব শুনলে বুঝতেন। আমি বললাম, এই দেশের এইটটি পারসেন্ট মানুষের অবস্থা বিশেষ ভালো না। তা তোমাগো নিজেদের যৎসামান্য হইলেও জমিজমা আছে? আছে। নিজেদের ঘর? হ। খাট-পালং? চৌকি আছে। ভালো। উঠান? হ। পুকুর? হ। শরিকের। অসুবিধা নাই। গাছগাছালি? আছে। কি গাছ? এই ধরেন আম-জাম-নাড়িকেল। তারপরে খাল পাড়ে গাব গাছও আছে। আর একটা লটকন গাছও আছে। ছেলেটি বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে বলল। শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। তারপর বললাম, দেখ হাবিব, আমি তোমাকে ইর্ষা করি। ক্যান? গ্রামে তোমার জমিজিরাত আছে বইলা। দুপুরবেলা নিরিবিলি পুকুরপাড়ে বইসা থাকার জন্য মাঝে মাঝে আমার মনটা কী রকম যে করে...আমার এই ২২ তলা ফ্ল্যাটবাড়ি ভালো লাগে না। মনে হয় জাহাজের খোলের মরধ্যে আছি। বলেন কী! হ। তোমার শহরে আসার কোনও দরকার ছিল না হাবিব। রোমান সম্রাটদের সম্বন্ধে জাইনাও তোমার কুনো লাভ নাই। রোমান সম্রাট তো আর তোমার সম্রাট না। ঠিক বলছেন। হাবিব মাথা নাড়ে। যাও, এখন গ্রামে ফিরা যাও। দেখ ওইখানকার মানুষজন, গাছপালা, পশুপাখিগুলান কি কইরা আরও ভালো থাকতে পারে। তুমি ভাগ্যবান যে তোমার সামান্য হইলেও জমিজমা, ঘরদোর, উঠান-পুকুর, গাছগাছালি আছে। ওইটাই তোমার জগৎ, তোমার পৃথিবী; ওই জগৎটাকে সুন্দর করার জন্য ওই জগৎটা পরিবর্তন কর। যাতে তোমার গ্রামের মানুষজন, গাছপালা, পশুপাখি আরও ভালো থাকতে পারে। তুমি রোমানদের ল পড়তে ঢাকায় আরস। কেন? কী দরকার?যাও, গ্রামে ফিরা যাও। দেখ ওইখানকার মানুষজন, গাছপালা, পশুপাখি কি কইরা আরও ভালো থাকতে পারে। যাও, গ্রামে ফিরা যাও। তোমার পুকুর আছে, উঠান আছে, নাড়িকেল গাছ আছে। এখানে থাইকা কী লাভ? সেই দিন রাত্রে জেনারেটর বন্ধ ...লিফটে আটকাইয়া মরতে নিছিলাম। আমার কথা শুনে ছেলেটার মুখে ছায়া ঘনালো। ও অস্বস্তি বোধ করে। কথা আর জমে না। জানি জমবে না। আমি ওর স্বপ্নে আঘাত করেছি। ও এখন থেকে আমাকে এড়িয়ে যাবে। ও জানে- কেবল পাড়ভাঙ্গা লোকজনই শহরে আসে না; অনেক স্বচ্ছল পরিবারের লোকজনও আসে। একটা সময় ছুতো করে উঠে চলে যায় ছেলেটি। আর আমি ভাবতে থাকি-কী আশ্চর্য! আজও আমাদের রোমান সম্রাটদের সম্বন্ধে জানতে হয়। নদীতে ঘরবাড়ি না-ভাঙ্গলেও গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতে হয়!কী আশ্চর্য! এভাবে ব্রেইন ড্রেন হয়ে যায়। গ্রামের উন্নতি হয় না। মেধাবীরা শহরে। গ্রামের মেধাবীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পায় না। তবু শহরে যেতে হয়। ব্যাপারটা মনস্ত্বাত্তিক? আমাদের আজও রোমান সম্রাটদের সম্বন্ধে জানতে হয়। আজও এই একুশ শতকেও পশ্চিমা রোমান শাসনের প্রভাব টের পেয়ে আমি শিউড়ে উঠি। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৪
false
fe
উত্তরাধিকারের রাজনীতি কতটা সফল হবে_ উত্তরাধিকারের রাজনীতি কতটা সফল হবে? ফকির ইলিয়াস ======================================একটি সরকারের বিদায়ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসে, ততই ওই সরকারের পোষ্য আইন-শৃংখলা বাহিনী গা ছেড়ে দেয়। হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশের কথাই বলছি। খবর বেরিয়েছে, চলতি মাসেই খুন হয়েছেন ২৪ জন। এর মধ্যে ২৯ জুলাই রাতে পৃথক ঘটনায় খুন হয়েছেন এক যুবলীগ ও এক বিএনপি নেতা এবং এক বাড়ির কেয়ারটেকার। উদ্ধার হয়েছে অজ্ঞাতনামা ১০ জনের মরদেহ। চাঁদাবাজদের হুমকির কারণে চলতি মাসে ঢাকার ৪৮ থানায় জিডি হয়েছে দুই শতাধিক। ছিনতাই যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।কেন এই পরিণতি? এর কোনো জবাব সরকারের শীর্ষজনদের কাছে নেই। বরং তারা ব্যস্ত কথার ফুলঝুরি ওড়াতে। অন্যদিকে খবর আসছে, রাজনৈতিক ও টেন্ডার নিয়ে বিরোধের জের ধরেই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান ওরফে মিল্কীকে খুন করা হয়েছে। তাকে খুন করার অভিযোগে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি ঢাকা যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচএম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক। আমরা যারা ওই সিসিক্যামেরাটি টিভিতে দেখেছি, তারা ভয় পেয়েছি ভীষণভাবে। এ কোন দেশ? সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরা লোকটি কীভাবে গুলি করছে অবলীলায় এই পবিত্র রমজান মাসে! তাকেও মেরে ফেলা ফেলা হয়েছে ক্রসফায়ারে।বাংলাদেশের বর্তমান মন্ত্রীরা বড় বড় কথা বলেই চলেছেন। দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে এফবিসিসিআই উদ্বেগ প্রকাশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় রাজনীতি ব্যবসায়ীদের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রশ্ন আসে, দেশটি আসলে তাহলে কার? দেশের ব্যবসায়ীরা তো এই দেশেরই একটি শক্তি। তারা সম্পূরক ধারা। দেশের অর্থনীতি সচল ও চাঙ্গা না থাকলে রাজনীতি অর্থহীন হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। এটা নামকরা রাজনীতিকরাও জানেন, বোঝেন। তারপরও তারা এমন বেকুবের মতো কথা বলছেন কেন?পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, আওয়ামী লীগ আগেরবার জয়ী হয়েছে, এবারও জয়ী হবে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন। সম্প্রতি চাঁদপুর সার্কিট হাউসে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। ভিন্ন চিত্রও আমরা দেখছি। রাজনীতিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে ঢাকাস্থ জাতীয়তাবাদী ঐক্য ফোরাম আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি।সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তারেক রহমান এখন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশে উত্তরাধিকারের রাজনীতি যে মাথাচাড়া দিয়ে উঁকি দিচ্ছে, তা দেখছে দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই উত্তরাধিকার দেশের উত্তর-প্রজন্মর জন্য কতটা শান্তির হাতছানি দেখাচ্ছে?আমরা জানি, বাংলাদেশের রাজনীতি একটি জরাজীর্ণ বলয়ে সীমাবদ্ধ। অনেকেই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কথা মুখে বললেও বাস্তবে তারা তা ভয় পান। কারণ একটি জাতি যদি সুশিক্ষিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে আর তাদের তাঁবেদার করে রাখা যায় না। তাদের অধিকার কেড়ে নেয়া যায় না। এ কথাটি মনে রেখেই কতিপয় রাজনীতিক এদেশের মানুষকে খাঁচাবন্দি করতে বারবার উদ্যত হচ্ছেন। সময় এসেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতাকে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করার।বলা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। এই চাপ আর কত সইবে রাজধানী ঢাকা? মিরপুর থেকে নয়াপল্টন যেতে যানজটে আটকে থাকতে হয় তিন ঘণ্টা! এটা কোনো মানুষের বসবাসযোগ্য শহর হল! তারপরও বহাল তবিয়তে আছেন ঢাকাবাসী। সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ। এই জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি বলা হচ্ছে। সেই প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু এখন ক্রমেই জনদাবিতে পরিণত হচ্ছে। হ্যাঁ, আমি সাবেক সেনাশাসক এরশাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি- বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে এই জনচাপ কমানো হোক। মানুষের উন্নয়নকে দোরগোড়ায় পৌঁছ দেয়া হোক।আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি, বিএনপি নতুন ইশতেহারের রাজনীতি নিয়ে মাঠে নামবে ঈদের পরই। এই ইশতেহার দু’ভাগে বিভক্ত। এক. সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক প্রথায় বাধ্য করা। আর অন্যটি ‘নতুন ধারা’র রাজনীতির কথা বলে মানুষকে কাছে টানা। এই নতুন ধারার কথা বলেই কিন্তু বাংলাদেশে ‘হাওয়া ভবন’ তৈরি হয়েছিল। এই ভবনের নেপথ্যে কারা ছিল তা দেশবাসী ভুলে যাননি। অন্যদিকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন-২০২১’-এর বাণী শুনিয়েই বর্তমান সরকার ব্র“ট মেজরিটি পেয়েছিল।এই ডিজিটাল স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করেছে পদ্মা সেতু কেলেংকারি, হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার, রেলের কালোবিড়াল, সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড, ইলিয়াস আলী গুম- এমন আরও কত ঘটনা! কেন পারলেন না বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এসব সামাল দিতে? কেন পারলেন না যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে?এটা নিশ্চিত, কতিপয় মৌলবাদীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপি বড়জোর ক্ষমতায় যেতে পারবে। আবারও রাজাকাররা রাষ্ট্রীয় গাড়িতে পতাকা ওড়াতে পারবে। কিন্তু প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাতে পারবে না। মুখে যাই বলা হোক না কেন- নারী গার্মেন্ট শ্রমিকের কাজ বন্ধ করে কি চালানো যাবে বাংলাদেশ? না, যাবে না। তাহলে যারা ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ বিতরণ করছে, তাদের ঘাড়ে বড় দলগুলো সওয়ার হওয়ার এই প্রতিযোগিতা কেন করছে?বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের প্প্রজন্মর বসে থাকার সুযোগ নেই। শিক্ষিত প্রজন্মকে লেজুড়বৃত্তি বাদ দিয়ে আলোর সন্ধানে এগিয়ে যেতে হবে। উপড়ে ফেলতে হবে সব অপশক্তির ভিত। এই দেশ গণমানুষের। যারা উত্তরাধিকারসূত্রে মসনদ পাওয়ার খায়েশ দেখাচ্ছেন- তাদের বলে দিতে হবে, আপনারা রাজনীতি করুন দেশের কল্যাণ চিন্তা করে। দখলদার কিংবা ভোগবাদীদের দুর্বৃত্তপনার জন্য ৩০ লাখ শহীদ তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেননি। পাঁচ সিটি নির্বাচনে গণমানুষ তাদের ভোটাধিকারের ক্ষমতা দেখিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা তা দেখাবে। তারা কার গলায় জয়মাল্য দেবে তা সময়ই বলবে।------------------------------------------------------------দৈনিক যুগান্তর / ঢাকা / ০২ আগস্ট, ২০১৩ শুক্রবার প্রকাশিত
false
hm
নাদের আলি, আমরা আর কত বড় হবো? অবসরপ্রাপ্ত পাকি লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদের আলির একটি আর্টিকেল দৈনিক প্রথম আলোতে অনুবাদ করেছেন বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইসফাক ইলাহী চৌধুরী। গত বারোই ডিসেম্বর লেখাটি [১] সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হয়। নাদের আলি অবশ্য সচলায়তনের পাঠকদের কাছে নতুন কোনো নাম নয়। সচল সাঈদ আহমেদ তাঁর একটি লেখায় [২] এ বছরের সতেরোই মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি ওয়ার্কশপে নাদের আলির নিজের বর্ণনা তুলে ধরেন। প্রথম আলোতে প্রকাশিত অনূদিত লেখাটিতে যা বক্তব্য, সেই একই কথা নাদের আলী সেখানে বলেছিলেন। এ বছরের ২০ মার্চ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারেও [৩] তিনি প্রায় একই বক্তব্য দিয়েছিলেন। কর্নেল (অব.) নাদের আলির বক্তব্যের চমক একটি জায়গাতেই, তিনি ১৯৭১ এ গণহত্যায় অংশগ্রহণকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে বাংলাদেশীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। যুদ্ধে অংশ নেয়া অন্য কোনো পাকিস্তানী অফিসারদের কাছ থেকে গণহত্যার দায় স্বীকার করে এ ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা আগে সম্ভবত আসেনি। দুয়েকজন পাকিস্তানী অফিসার এই গণহত্যায় অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী আর কেউ ক্ষমা চায়নি। আলি নিজেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে দোষী বলে স্বীকার করছেন, কিন্তু তাঁর দাবি, তিনি নিজে কোনো নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা বা অত্যাচার করেননি। তাঁর দায় বাহিনীর অংশ হিসেবে বাহিনীর অপরাধের দায় পর্যন্তই। যুদ্ধের কিছু পরিস্থিতির বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, সেখানে তাঁর সহকর্মীদের কীর্তিকলাপের কিছু নমুনা তুলে ধরা হয়েছে। কর্নেল আলির এই ক্ষমাপ্রার্থনাবাচক লেখাটিকে সাঈদ আহমেদ উল্লেখিত ওয়ার্কশপের লিখিত বক্তৃতার স্ক্রিপ্টের অনুবাদ বলেই মনে হয়। ডিসেম্বর মাসে আলি স্বতপ্রণোদিত হয়ে আবার নতুন করে একে ডেইলি স্টার বা প্রথম আলোতে পাঠিয়েছেন কি না, আমি জানি না। যদি পুরনো লেখারই অনুবাদ হয়ে থাকে, যদি তারা ডিসেম্বর মাসে মিডিয়ার মুক্তিযুদ্ধ মৌসুমে লেখাটিকে সমাধি থেকে তুলে এনে ছাপিয়ে থাকে, তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে, ১৯৭১ এর জন্যে পাকিস্তানিরা অনুতপ্ত, এমন একটি আবহ এই পত্রিকাটি তৈরি করতে চাইছে। এই চেষ্টা নতুন কিছু নয়, মেহেরজান শিরোনামের চরম জঘন্য একটি চলচ্চিত্রের নির্লজ্জ প্রোমোটিঙের কাজে তারা ঘরোয়া ও পোষা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে "পাকিরাউ ভালু" প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে আসছে বছরের শুরু থেকেই। পাকিরাউ ভালু, তার সাথে আলু --- এই অনুচ্চারিত স্লোগানকে আমরা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন প্রবন্ধ আর খবরের মাঝে বিভিন্ন লাইনের ফাঁকফোকরে ছায়া-বক্তব্য হিসেবে দেখি। কর্নেল নাদির আলি সমকালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে [৩] জানাচ্ছেন, তিনি যখন একাত্তরের এপ্রিলে যুদ্ধে নামেন, তখন তিনি তরুণ, ক্যাপ্টেন থেকে মেজর পদে উন্নীত হয়েছেন কেবল। প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে [১] তিনি বলছেন, একাত্তরের সেপ্টেম্বরের শেষে তিনি কর্নেল (লেফটেন্যান্ট কর্নেল) পদে উন্নীত হন। আর সব সাক্ষাৎকারেই তিনি বলছেন, তিনি কোনো গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেননি, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা বা অত্যাচার করেননি। হয়তো কর্নেল আলি সত্য কথাই বলছেন, কিন্তু আমার বিনীত জিজ্ঞাসা, কমাণ্ডো বাহিনীর অধিনায়ক হয়ে কোনো গণহত্যা বা নিরস্ত্র মানুষ হত্যা/অত্যাচার থেকে বিরত থেকে, কী করে তিনি মেজর থেকে চটজলদি লেফটেন্যান্ট কর্নেলে পদোন্নতি পেলেন? পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পাঞ্জাবি অফিসারদের পদোন্নতি একটু তাড়াতাড়িই হতো এবং এখনও হয়, কিন্তু তাই বলে এতো দ্রুত? ঊর্ধ্বতনদের দেয়া গণহত্যার আদেশের প্রতিবাদ করতেন বলে আলি জানিয়েছেন, সাঈদ আহমেদের লেখা [২] থেকে আমরা জানি, একদিন তিনি প্রতিবাদ জানাতে ধুতি পরেও কর্মস্থলে হাজির হয়েছিলেন। এইসব করে কি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে ১৯৭১ এ মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে প্রমোশন পাওয়া সম্ভব? আমি সংকোচ ছাড়াই বলতে চাই, কর্নেল আলির কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে তিনিও গণহত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। এই কথা স্বীকার করলে হয়তো তাঁর সমস্যা হতে পারে, কিংবা তিনি নিজের মানসিক শান্তির জন্যেই হয়তো এই আত্মপ্রবঞ্চনামূলক ফ্যান্টাসিকে সত্য বলে জানছেন। তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনার আন্তরিকতা নিয়ে আমি কোনো প্রশ্ন তুলছি না, কিন্তু নিজেকে গণহত্যা থেকে বিযুক্ত একজন অফিসার হিসেবে যেভাবে তিনি উপস্থাপন করছেন, সেটি সঠিক নয় বলে আমি মনে করি। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথায় আমরা তাঁর ইউনিটের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে অবগত হতে পারবো হয়তো। কর্নেল আলি দাবি করছেন, তিনি পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত গণহত্যা দেখে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরার পর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন, স্কিটসোফ্রিনিয়ায় আক্রান্ত হন এবং ১৯৭৩ সালে মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পান। এর পর তিনি নিজেকে একজন কবি ও গল্পকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ধীরে ধীরে। কর্নেল আলির প্রতি আমার আরো একটি বিনীত জিজ্ঞাসা, আপনি এই চারটি দশক কোথায় ছিলেন? সমকালের সাক্ষাৎকার [৩] থেকে জানতে পারি, ২০০৭ সালে তিনি বিবিসি উর্দু সার্ভিসে পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যার বিবরণ তুলে ধরেন। এর আগে তিনি এ বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন বলে আর কিছু আমরা জানতে পারি না। তাহলে কি ধরে নেবো, পাকিস্তানে জিয়াউল হক আর বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান-এরশাদের শাসনামলে এ নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন অনুভব করেননি এই পাঞ্জাবি কবি ও গল্পকার? পাকিস্তানে বেনজীর ভূট্টো আর বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার শাসনামলেও তিনি মুখ খোলার দরকার মনে করেননি? পাকিস্তানে নওয়াজ শরীফ আর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলেও তিনি মুখ খোলার সাহস পাননি? পাকিস্তানে পারভেজ মুশাররফ আর বাংলাদেশে খালেদা জিয়া-নিজামীর শাসনামলেও তিনি মুখ খোলা সমীচীন মনে করেননি? তিনি সোচ্চার হলেন কেবল মুশাররফের ক্ষমতার অস্তগমনের সময়, ২০০৭ এ এসে, যখন বাংলাদেশে গদি থেকে আলির একসময়ের যুদ্ধ-ময়দানের সহায়তাকারীরা নেমে পড়েছে? কিংবা হয়তো খামোকাই এই প্রশ্ন করছি আমি। পাঞ্জাবে হয়তো শুধু কবি আর গল্পকারের চাহিদাই আছে, নিজেদের অপরাধ নিয়ে কথা বলার মানুষের চাহিদা নেই। পাঞ্জাবিরাই তো বালুচিস্তান আর বাংলাদেশের কসাই টিক্কা খানকে নিজেদের গভর্নর হিসেবে পেয়েছিলো। কর্নেল আলি বলছেন, পাঞ্জাবে নাকি আরো বহু মানুষ তাঁর মতোই লজ্জিত। এই লজ্জিত মানুষগুলিকে খুঁজে বের করতে না পেরে সেই কুমীরশাবকের মতো কয়েকটি মুখকেই বাংলাদেশের মানুষদের সামনে তুলে ধরার মহান মিশনে নেমেছে উটপাখির আদর্শে বলীয়ান প্রথম আলো। তারা কখনও আসমা জাহাঙ্গীর, কখনও হামিদ মির, কখনও নাদের আলিদের খুঁজে এনে দুঃখ প্রকাশের লেখা ছাপায়, ক্ষমা প্রার্থনার লেখা ছাপায়। আর বলতে চায়, পাকিরাউ ভালু। এই পাকিরাউ ভালু ছায়া-স্লোগানের নিচে আড়াল হয়ে যায় ক্রমাগত রাষ্ট্রীয় ক্ষমা প্রার্থনায় অস্বীকৃতি জানিয়ে আসা পাকিস্তান রাষ্ট্রের চেহারা। প্রথম আলোর উটপাখি চোখে ধরা পড়ে না যা, তা ছাপা হয় দৈনিক সমকালে, ১৫ মে, ২০১০ সালের খবরে [৪]। পাকিস্তানের অন্তর্জ্বালা! মুক্তিযোদ্ধাদের নামে গুলশানে দুটি রাস্তার নামকরণের প্রতিবাদ জানিয়েছিল ইসলামাবাদ আবদুল মজিদ গুলশানে পাকিস্তান হাইকমিশন সংলগ্ন দুটি সড়কের নামকরণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে হওয়ায় পাকিস্তানের দারুণ গাত্রদাহ হয়েছে। অন্তর্জ্বালা অন্তরে না রেখে ইসলামাবাদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ পর্যন্ত জানিয়েছে। পাকিস্তান মনে করে এটি বাংলাদেশের 'উদ্দেশ্যমূলক ও উস্কানিমূলক' কাজ। পাকিস্তান ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিবাদ জানালেও দুই দেশের সরকার এতদিন তা গোপন রেখেছিল। সে সময় ইসলামাবাদে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারকে তলব করে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা অনুভব করি, পাকিস্তান রাষ্ট্রের মনোভঙ্গি ১৯৭১ থেকে এক চুল পরিবর্তন ঘটেনি। একটা দুইটা নাদের আলি ক্ষমা চাইতে পারে, সেই ক্ষমা প্রার্থনাকে আমরা স্বাগতও জানাবো, কিন্তু সেই ক্ষমা প্রার্থনার গণ্ডি নিতান্তই ব্যক্তির পরিসরে সীমাবদ্ধ। প্রথম আলো চায় পাকিস্তানকেই নাদের আলি হিসেবে উপস্থাপন করতে। আমরা নাদের আলির মধ্যে পাকিস্তানকে দেখতে পাই না, শুধু নাদের আলিকেই দেখি। দৈনিক সমকালে দেয়া সাক্ষাৎকারে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের বিষয়ে কর্নেল আলির পাকিস্তানি সেনাকর্তার পরিচয়টি কবি ও গল্পকারের চামড়া খুলে বেরিয়ে এসেছে। পত্রিকার ভাষায় [৩], পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে গেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সদস্যদের বিচারের বিষয়টি সামনে আসবে উল্লেখ করায় সাবেক কমান্ডো কর্নেল এ ব্যাপারে সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, অভিযুক্ত অনেকেই এখন মৃত। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তার জানা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে তিনি সে সময়ের ঘটনাবলির জন্য পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করেন। অর্থাৎ, নাদের আলির চোখে পৃথিবীতে শুধু গণহত্যা চলতে পারে, আর সেই গণহত্যার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা চলতে পারে, অপরাধীদের বিচারের স্থান নাদের আলির বিবেচনায় নেই। আমাদের উটপাখি দৈনিকটিও পাকিস্তানের দুঃখী চেহারাটিকেই নাদের আলি-হামিদ মিরদের ডেকে এনে বড় করে দেখাতে আগ্রহী, তার ক্ষমা প্রার্থনায় অনাগ্রহী বিচারে বিরোধী চেহারাটিকে আড়ালে রেখে। আর লেখার মাঝে কর্নেল আলি মৃদু কিন্তু পরিষ্কারভাবে দাবি করেছেন, বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হয়। কর্নেল আলির দেশের লোকজন হামুদুর রহমান কমিশন নামে এক হাস্যকর চ্যাটের বালের কমিশন গঠন করে মৃতের সংখ্যা নিরূপণ করেছিলো মাত্র ছাব্বিশ হাজার, যেখানে কেবল পঁচিশে মার্চের ক্র্যাকডাউনেই মৃতের সংখ্যা পঁয়ত্রিশ থেকে ষাট হাজারের মধ্যে হবে বলে অনুমান করেন বিদেশী সাংবাদিকসহ ঢাকাবাসীরা। হামুদুর রহমান কমিশন যখন কাজ চালায়, তখন টিক্কা খান ছিলো পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, কমিশন টিক্কার নামে কোনো অভিযোগই তোলার সাহস পায়নি। কর্নেল নাদের আলিরা বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে বলতে চায়, গণহত্যায় নিহতের সংখ্যার হিসাব আমাদেরটা ভুল, তাদেরটা ঠিক। ব্যক্তিগতভাবে, কর্নেল আলি, আপনাকে আমি ক্ষমা করছি না। আপনি বাংলাদেশে সভা-সেমিনার কম করে সেগুলো পাকিস্তানে বেশি করুন, পাকিস্তানের বর্তমান প্রজন্মকে জানান পাকিস্তানের অতীত অপকর্মের কথা। আপনি পাঞ্জাবের কবি, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাঞ্জাব বাংলাকে অর্থনৈতিকভাবে চুষে খেয়েছে, তার জন্যে পাঞ্জাবিদের লজ্জিত হতে উদ্বুদ্ধ করুন। পাকিস্তান আমাদের কাছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষমা প্রার্থনা করুক, আমাদের ক্ষতিপূরণ দিক, যুদ্ধাপরাধী সেনাকর্তা ও যুদ্ধে মদদ দানকারী বেসামরিক আমলাদের বিচার করুক, তারপর কর্নেল সাহেব, আমরা বিবেচনা করে দেখবো, আপনাদের ক্ষমা করা যায় কি না। আমার এই লেখাটি শেষ করছি কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজের কবিতার কয়েকটি লাইনের ওপর মূত্রত্যাগ করে: কব নজর মেঁ আয়েগি সবজকি বাহার খুঁন কে দাঁগে ধুলায়ে তো কিতনা বারসাতোঁ কে বাদ হামকো কাহতে তেরে আজনাবি ইতনি মুলাকাত কে বাদ।’ এই লাইনগুলো আপনি বা দৈনিক প্রথম আলো বা মেহেরজান, আপনারা যতবারই উর্দু-বাংলা-ইংরেজিতে আওড়ান না কেন, লাভ নাই। কবিতা আউড়ে হাত থেকে রক্তের দাগ মোছা যায় না। আপনি আমাদের বড় হতে বলছেন কর্নেল সাহেব, বলছেন আসুন সব ভুলে একে অন্যের পাশে দাঁড়াই, কিন্তু আমরা আর কত বড় হবো? আপনাদের আগে মানুষ হতে হবে। তথ্যসূত্র: [১] "একাত্তরের ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি’", দৈনিক প্রথম আলো [২] "একজন নাদির আলি এবং পাকিস্তানে কাউন্টার ন্যারেটিভ", সচলায়তন [৩] "গোলাম আযম-ফ কা চৌধুরীরা মুক্তি বাহিনী আ'লীগ ও হিন্দুদের হত্যার তাগিদ দিত", দৈনিক সমকাল [৪] "পাকিস্তানের অন্তর্জ্বালা!", দৈনিক সমকাল
false
mk
জিডিপি বৃদ্ধি আবারও প্রমাণ হলো বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.১১ শতাংশ। এটি বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ যে প্রাক্কলন করেছিল তার চেয়েও বেশি। এমনকি বিবিএসের আগের প্রাক্কলন থেকেও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এক বছরের কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জিডিপির এই হিসাব চূড়ান্ত করেছে। বিবিএস এর আগে ৯ মাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানিয়েছিল, এবার প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.০৫ শতাংশ। তবে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে নিম্ন মধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য প্রবৃদ্ধির এই হার আরো বাড়াতে হবে।গত দশকে দুনিয়াব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দার সূচনা হয়েছিল তার রেশ এখনো কাটেনি। উন্নত অনেক দেশেরই জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২-৩ শতাংশের বেশি নয়। কোনো কোনো দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। এ অবস্থায়ও বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বরাবরই ৬-এর ওপরে থেকেছে। এমনকি দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংঘাতের বছরগুলোয়ও প্রবৃদ্ধির এই ধারা বহাল থেকেছে। এর আগে বাংলাদেশ একবারই ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সাতের ওপরে (৭.০৬ শতাংশ) প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। সেটি ছিল চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে শুরু হওয়া ও দুই বছরমেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সমাপ্ত অর্থবছর। তাই গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হার একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে, যা আমাদের অনেক আশান্বিত করে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হচ্ছে। আর সেসবের মিলিত প্রভাবে দেশের শিল্পায়ন গতি পাচ্ছে। গত অর্থবছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আসার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। গত অর্থবছরে এফডিআই এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি। আশা করা যায়, চলতি ও পরের অর্থবছরগুলোয় তা আরো বাড়বে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছতে পারেনি, যা জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এর একটি বড় কারণ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোয় দুর্নীতির বাড়াবাড়ি। তা ছাড়া অবকাঠামোগত ঘাটতি এখনো অনেক বেশি। আছে পুঁজির অপ্রতুলতা, ব্যাংকঋণে সুদের উচ্চ হারসহ আরো অনেক বাধা। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা ও কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগিয়ে চলার জন্য বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার ক্ষেত্রে সরকারকে অনেক বেশি মনোযোগী হতে হবে।স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। স্বাধীনতার চার দশক পরে এসে সেই পালে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। এই ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। হাজার বছরের শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস মুছে বাঙালি জাতিকে সমৃদ্ধির সোনালি জগতে নিয়ে যেতে প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আমাদের বিশ্বাস, সেই অঙ্গীকার নিয়েই বর্তমান সরকার দেশ এগিয়ে নেবে। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬
false
ij
গল্প_ সবুজ সমাধির দিকে এ দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলজুড়ে পাহাড় আর পাহাড় । সেসব পাহাড়ে ঘন সবুজ গাছগাছালি আর নানা বর্ণের পাখ-পাখালির ভিড়। তিনি পাহাড়ে যাবেন ঠিক করলেন। আমৃত্যু পাহাড়ে বসবাস করবেন ; কথা বলবেন পাখিদের সঙ্গে, মিশে থাকবেন গাছেদের সঙ্গে । আমৃত্যু ... তারপর এক ধরণের সবুজ সমাধি হয়ে যাবে তার ... থানচি উপজেলার এই আদিবাসী গ্রামটির নাম পাঙখুঙ। জায়গাটা রুমা থেকে অনেকটাই দক্ষিণ-পুবে এবং প্রায় মায়ানমার সীমান্তসংলগ্ন । নীলাভ জলের বিস্তীর্ণ একটা হ্রদ। হ্রদের ওপর ও হ্রদের চারপাশে অটুট নিস্তব্দতা। হঠাৎ কোনও পাখির চিৎকারে সে নিস্তব্দতা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। হ্রদের অনেক ওপরের সমতলে পাঙখুঙ গ্রাম। সাঈদ আহমেদ এসব এলাকা আগেই ঘুরে ফিরে দেখে গেছেন। এলাকাটি বিশেষ করে ম্রো ও খুমি অধ্যুষিত। অবশ্য কয়েক ঘর পাঙ্খোও বাস করে। একটি পাহাড়ি জলস্রোতের ওপর বাঁশের তৈরি ঘর, আপাতত ঠিকানা এখানেই। বাঁশের ঘরটা পাঙখুঙ থেকে বেশ খানিকটা দূরে। বাঁশের তৈরি ঘর কে পার্বত্য জেলায় বলে টং। ম্রো ও খুমিরাও কি বাঁশের তৈরি ঘরকে টং বলে? নাকি শুধু চাকমারাই বলে? এ প্রশ্নটি বহুদিনের পুরনো- সাঈদ আহমেদ যখন এই পাহাড়ি গ্রামে প্রথম এসেছিলেন, তখনকার। বাঁশের ঘরে থাকে একজন ম্রো বুড়ো, বুড়োর নাম ঙারুয়া। তামাটে বর্ণের দীর্ঘদেহী বুড়োটির মাথায় সাদা শনের মতন পাকা চুল ও ঘোলাটে চোখ। ম্রো বুড়োটি নিঃসঙ্গ। সম্ভবত সেও নির্জনবাস করছে। সাঈদ আহমেদ গতশীতে এসে এখানেই থাকতে চেয়েছিল। ম্রো বুড়ো তখন আপত্তি করে নি। তাছাড়া খরচ যা লাগে তিনি দেবেন । ঙারুয়া অনেকটা দার্শনিক গোছের। কথা বলে কম । তবে বাংলা ভালো জানে। উল্লেখ্য, বুড়োর একটি পোষা হাতি আছে। হাতির নাম আদম। আশ্চর্য! বান্দরবানের গহীন অরণ্যের হাতির নাম আদম হতে পারে! সাঈদ আহমেদ তখনও জানতেন না-ঐ হাতির পিঠে চড়ে তাকে আরও গভীর অরণ্যের দিকে চলে যেতে হবে । সাঈদ আহমেদ-এর নির্জনবাস শুরু হয়। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান রওনা হওয়ার সময়ই বাসে মোবাইল ফোনটা অফ করে দিয়েছিলেন, এখন খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে নিচের হ্রদে জিনিসটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। সিগারেট খেতেন দিনে পাঁচটা। প্যাকেটে তখনও তিনটে বেনসন লাইট ছিল, প্যাকেটটাও ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। ম্রো বুড়ো বাজার করে, রান্নাবান্না করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা একা একা ঘুরে বেড়ান। পাখিদের গান শোনেন, শোনেন পাতা ঝরার শব্দ। নির্জন পাহাড়ি ঝরনায় স্নান করেন সাঈদ আহমেদ। ম্রো বুড়োর কাছে ম্রো ভাষা শিখতে শুরু করলেন। নির্জনবাস কিংবা সবুজ সমাধির জন্য ভাষা শেখা অতটা জরুরি নয় যদিও তবে তিনি একটি শখ পূরণ করছেন। তৃতীয় একটি ভাষা শেখার ইচ্ছে তার দীর্ঘদিনের। টুকটাক স্পেনিশ জানেন। ম্রো বুড়ো ঙারুয়া বলে, বলেন- তুই ঙাঙ -নর খাইয়া কই, দাম ইয়ালাইদয় পে ... সাঈদ আহমেদ মেধাবী। তিনি পনুরাবৃত্তি করলেন, তুই ঙাঙ -নর খাইয়া কই, দাম ইয়ালাইদয় পে ... ঙারুয়া মাথা নাড়ে। কি এর মানে? সাঈদ আহমেদ জিজ্ঞেস করে। ঙারুয়া বলে, মাছেরা যেমন জলে, মানুষও তেমনি পরিবেশের কারণে সত্যোচ্চারণে বিরত থাকে। সাঈদ আহমেদ শিউরে উঠলেন। পরে রোহিঙ্গা গেরিলাদের প্রসঙ্গে এ উক্তিটি মনে পড়বে সাঈদ আহমেদ এর যখন তিনি আদম এর পিঠে চড়ে অরণ্যে আরও গভীরে প্রবেশ করবেন! ২ ৫০ বছর হল ফাদার গেরহার্ড পাঙখুঙ গ্রামে বাস করছেন। গতবারই সাঈদ আহমেদ এর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছে। এবার সংলাপ বহূদূর গড়াল। ইউরোপ ছেড়ে চলে এলেন যে? সাঈদ আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন। লজিক। মানে! সাঈদ আহমেদ বিস্মিত। ফাদার গেরহার্ড বললেন, মানে ...আমি আগে দর্শনের অধ্যাপক ছিলাম। আমার বিষয় ছিল হিউমবাদী লজিক্যাল এম্পিরিসিজম। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে ইউরোপীয় দর্শনে লজিকের খুক দাপট ছিল-তবে আমি দর্শনচর্চা করে মনে শান্তি পাইনি। আমি শান্তির আশায় ফ্রানসিসকানদের পবিত্র অডারে যুক্ত হই। যাজকবৃত্তি নিয়ে পলিনেশিয়া চলে যেতাম, শুনলাম ইস্ট পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মুজিব একাই ভীষণ উত্তাল করে ফেলেছেন, সেই ৩৮/৩৯ বছর আগের কথা বলছি আমি। এখানেই চলে এলাম। একেবারে বান্দরবানে। কাজটা সহজ হয়নি। প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব অস্ত্রশস্ত্র আর প্রতিরক্ষা বোধ রয়েছে, খুমিদের দ্বারা কয়েকবার আক্রান্ত হই; ম্রোরা বাঁচায়। ওহ্! ফাদার গেরহার্ড বললেন, পরিস্থিতি আজ অনেক বদলে গেছে। পাঙখুঙ গ্রামের প্রায় সবাই খ্রীস্টে বিশ্বাস করেছে। কেবল, ঐ আপনার ঙারুয়া বাদে। ঙারুয়া মানে, আমি যে ম্রো বুড়োর সঙ্গে থাকি? সাঈদ আহমেদ বিস্মিত। হ্যাঁ, হ্যাঁ সেই। আমি তার নাম দিয়েছি অরণ্যবনের সক্রেটিস। ফাদার গেরহার্ড তিক্তকন্ঠে বললেন। সমাজে সবসময়ই কিছু ব্যাতিক্রমী মানুষ থাকবেই। সাঈদ আহমেদ মৃদু হেসে বললেন। ফাদার গেরহার্ড বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। লেলাং খুমি । পাঙখুঙ গ্রামের ২৯ বছর বয়েসি এক খুমি যুবক। সে সাঈদ আহমেদ এর ওপর বিরক্ত । সাঈদ আহমেদ অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেই আদিবাসী তরুণের অসন্তোষের কথা টের পেয়েছেন। তিনি মনে মনে হাসেন। সাঈদ আহমেদ পাহাড়ে গাছের পাতার ঘ্রান নেন, পাখিদের জীবন অবলোকন করেন। লেলাং খুমিদের পাখিদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলে চলবে না, তাদের নিয়মিত ক্ষিদে পায়- যদিও সে নব্যখ্রিস্টান। তা ছাড়া খুমি গ্রামের কাছে সাঈদ আহমেদ এর উপস্থিতি লেলাং খুমির কাছে অনধিকার চর্চা বলেই মনে হয়। কেননা, ওদের বসবাসের জায়গাটি ওদের কাছে পবিত্র । সাঈদ আহমেদ জানেন: তিনশ বছর আগেও খুমিরা ছিল বার্মায়; ও দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা এখানে এসেছে। তিনশ বছর ধরে বাস করতে করতে পাঙখুঙ গ্রামটি পবিত্র করে তুলেছে লেলাং খুমিরা; সে গ্রামে অচেনা পুরুষের অনুপ্রবেশ সহ্য হবে কেন? সাঈদ আহমেদ লোকটা কে? তাকে তো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সাঈদ আহমেদ সন্ন্যাস নিয়েছেন। তিনি বিরোধ এড়িয়ে লেলাং খুমির মন জয় করার কথা ভাবলেন । এই পাঙখুঙ গ্রামে বড় জলকষ্ট। সন্ন্যাস গ্রহনের পূর্বে প্রকৌশলী ছিলেন সাঈদ আহমেদ। তিনি মনে মনে ছক কাঁটতে লাগলেন। হ্যাঁ। হ্রদের তীরে স্টিমারের চাকার মতো বিশাল একটি কাঠের চাকা বসিয়ে ওপরে পাঙখুঙ গ্রামে জল তোলা সম্ভব। বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না, বাতাসের গতিই চাকা ঘোরাবে। হ্রদ থেকে ওপরে জল তোলার পরিকল্পনাটির কথা ফাদার গেরহার্ড কে খুলে বললেন সাঈদ আহমেদ। ফাদার গেরহার্ড প্রযুক্তিবিরোধী। তবে বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক বলেই ফাদার গেরহার্ড চমৎকৃত হলেন। বাতাসের চাপে নিচের লেক থেকে জল উঠে আসবে বিশেষ ভাবে নির্মিত চাকায়। সাঈদ আহমেদ যদিও সংশয়বাদী। মাঠের কিনারায় গীর্জের নকশা এঁকে ফাদার গেরহার্ড কে দেখালেন । স্থাপত্যে গথিক ছাপ। গীর্জের পিছনের বারান্দায় দাঁড়ালে নিচের হ্রদ ও কাঠের চাকার দৃশ্য পরিপূর্নভাবে দেখা সম্ভব। ফাদার গেরহার্ড চমৎকৃত হলেন। লেলাং খুমি ফাদার গেরহার্ড এর শিষ্য। সে সবই জানল। সাঈদ আহমেদ সর্ম্পকে রাতারাতি তার দৃষ্টিভঙ্গি গেল বদলে । যুগটা মোবাইল এর । এবং লেলাং খুমি অন্তত দশটি এনজিওর সঙ্গে জড়িত- প্রতি সপ্তাহে একবার থানচি যায়। রুমা যায়। মোবাইল আছে তার। যার ফলে সাঈদ আহমেদের পরিকল্পনার কথাটি ইউরোপ অবধি ছড়িয়ে পড়ে। মূলধারার বাঙালিদের চেয়ে ইউরোপীয়দের কারও কারও দরদ আদিবাসীদের প্রতি অনেক বেশি । বিদেশি দাতা সংস্থাগুলি টাকা দিতে আগ্রহী। শোনা গেল প্রজেক্ট শেষ হলে কোন্ প্রতিমন্ত্রী নাকি আসবেন উদ্বোধন করতে। সাঈদ আহমেদ অরণ্যের আরও গভীরে পালিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে এক্ষুনি যাওয়ার দরকার নেই। চাকা তৈরি করতে কম করেও দেড় থেকে দু-বছর লাগবে। ৩ একদিন। সকালবেলায় পিছনের পাহাড়ের ঢালে গাছের ভিড়ে পাতার ফাঁকে রোদের ভিতর একটি সাদা রঙের ঘুঘু দেখে থমকে দাঁড়ালেন সাঈদ আহমেদ। তারপর গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে সাঈদ আহমেদ বললেন, কি রে রীমা, তুই এখানে? ২০/২২ বছরের চশমা পরা ফরসা মেয়েটি চমকে উঠল। দ্রুত সিগারেট ফেলে বলল, মামা! তুমি এখানে! তুই ... তুই কি করছিস এখানে? বোনের মেয়েকে দেখে বিস্ময় কাটছে না সাঈদ আহমেদ এর। রীমা বলল, কেন তোমার মনে নেই আমি বান্দরবানের এথনিক গ্র“পের ওপর রিসার্চ করছি। জার্মানি থেকে ডিপলোমা করে এলাম না? ওহ্ হ্যাঁ, তাই তো। আসলে সবুজ সমাধির আশায় পূর্বজীবন ভুলে যেতে চাইছিলেন সাঈদ আহমেদ। ষাট বছরের জীবনে কত কিছু জমেছে। এখন সবুজ সমাধির আগে মুছতে পারছেন কই। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলেন, তুই একা এসেছিস? রীমা বলল, না, না। পান্থ আর আদিত্যরা ঝর্নায় গোছল করতে গেছে। আমার এক জার্মান ফ্রেন্ড আরনল্ড, মিউনিখে থাকে-ও ম্রোদের মিউজিক নিয়ে ডকু করবে । আমরা লোকেশন দেখতে এসেছি। আমি একটা পাখি ফলো করতে করতে এখানে এলাম। সাদা ঘুঘু। আচ্ছা মামা, সাদা ঘুঘু কি বাংলাদেশে পাওয়া যায়? জানি না। সাঈদ আহমেদ বললেন। জলবায়ূ বদলে যাচ্ছে। বলে সাঈদ আহমেদ কাঁধ ঝাঁকালেন। ওহ্, রীমা তা হলে ম্রোদের মিউজিক নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে। বাঁশ বেত কাঠ এবং পাতা মুড়িয়ে ম্রোরা শ্রুতিমধুর ধ্বনি তুলতে পারে। ওদের মিউজিকের কথা ইউরোপে চলে গেছে। ঙারুয়া রাতের বেলা শোনায় ম্রো-সংগীত। সে সংগীতের অলীক মোহে সাঈদ আহমেদ দিনদিন বিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। তা তুমি তাহলে এখানে? রীমা জিজ্ঞেস করল। হ্যাঁ। আর সবাই তোমায় খুঁজে খুঁজে হয়রান। রীমার কন্ঠে অনুযোগ। সাঈদ আহমেদ হাসলেন। কিছু বললেন না? তুমি ফিরবে না মামা? না রে। এখানেই বেশ আছি। আমারও শহরে ফিরতে ইচ্ছে করে না । রীমা বলল। এখানে পান্থ-আদিত্যদের আচরণ অন্যরকম, কত হেল্পফুল। শহরে পা দিলেই ওরা কেমন বদলে যায়। যেন আমি কেবলই মেয়ে। তা হলে থাক এখানে। সাঈদ আহমেদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। ধ্যাত, তা কি হয়? রীমা মনে হল লজ্জ্বা পেল। সাঈদ আহমেদ জানেন এই ডিসেম্বরে রীমার এনগেজমেন্ট। পরের দিনই রীমারা চলে গেল থানচি। রুমা হয়ে চট্টগ্রাম ফিরে যাবে। লেলাং খুমি ওদের সঙ্গে গেল। বিদেশি একটি ডেলিগেশন নাকি আসছে। তারা ওয়াটার প্রজেক্ট পর্যবেক্ষণ করবে। সাঈদ আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলেন: আমাকে এখান এখান থেকে চলে যেতে হবে। রীমার মুখে খবর পেয়ে ছেলেমেয়েরা আসবে, ওদের মা আসবে। উদার হৃদয়ের মানুষের সামনে সবসময় দুটি পথ খোলা থাকে: (১) আত্বহত্যা করা। (২) আত্বহত্যা না-করা; এবং দূরের কোনও নির্জন স্থানে সবুজ সমাধি খুঁজে নেওয়া। সাঈদ আহমেদ সবুজ সমাধির দিকে যাবেন। ৪ এই পাঙখুঙ গ্রামে সাঈদ আহমেদ এর একমাত্র সুহৃদ ম্রো বুড়ো ঙারুয়া । বুড়ো কেমন অবিচল আর প্রাকৃতিক। এই বয়েসেও আদম নামক হাতিটিকে ঝর্নাতলায় নিয়ে গিয়ে গা ডলে আর বিচিত্র ভাষায় গান করে। ঙারুয়া কে ফাদার গেরহার্ড বলেন অরণ্যবনের সক্রেটিস। তাকে ধর্মচ্যূত করতে পারেননি তিনি। সেন্ট পল আর সেন্ট অগাস্টিনও পারেন নি। ম্রো বুড়ো ঙারুয়ার যে কি ধর্ম-তা-ই এত দিনেও জানা গেল না। সাঈদ আহমেদ ঙারুয়া কে সব খুলে বললেন। আমার এখান থেকে চলে যেতে হবে। ঙারুয়া খানিকক্ষণ কী ভাবল। তারপর বলল, আমাদের অনেক গোত্র, অনেক উপধারা। এদের মধ্যে চিমলুঙরা অরণ্যে আরও গভীরে থাকে । সীমান্তের কাছাকাছি। ওখানে কেবল গাছ আর গাছ। পাখি আর পাখি। ওখানে যেতে চাইলে আমি আপনাকে নিয়ে যেতে পারি। চিমলুঙরা সহৃদয়। আমি সঙ্গে থাকলে তারা আপনাকে গ্রহন করবে। সাঈদ আহমেদ যেতে রাজী হলেন। পরদিন। ভোর ভোর সময়ে আদম এর পিঠে চড়ে বসলেন সাঈদ আহমেদ। ঙারুয়া আগেই চড়ে বসেছে। কার্তিকের কুয়াশার ভিতর দিয়ে পূর্বমূখী পথ। দুপাশে ঘন গাছ। ভিজে যাচ্ছেন সাঈদ আহমেদ। ঙারুয়া নির্বিকার। এ দেশের বুনো পথঘাট সব তার চিরচেনা। পথ হারানোর কোনও ভয়ই নেই। আসলে কোনও পথই যে নেই। এক সময় রোদ উঠল। পাখি ডাকল। যেতে যেতে আশ্চর্য এক প্রশ্ন করেন সাঈদ আহমেদ। যা যা দেখছি, এসব আসলে কি ঙারুয়া? উত্তরে ঙারুয়া এক আশ্চর্য উপকথা বলে। অনেক অনেক দিন আগের কথা। সে সময় ঘন কুয়াশা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সেই কুয়াশা ফুঁড়ে এক হলুদাভ দেবশিশুর আবির্ভাব হয়েছিল। অকস্মাৎ বর্শা ফলক হাতে ছ’জন বলিষ্ট কৃষ্ণদেহী। সেই হলুদাভ দেবশিশুকে হত্যা করে বসে। মৃত শিশুটির মাংস সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। যা যা দেখছি, মাংস থেকে সেসবের জন্ম হল। সাঈদ আহমেদ গলার কাছে টক টক স্বাদ টের পেলেন। এখন একটা সিগারেট ধরালে ভালো হত। বিষন্ন হয়ে ভাবলেন উপকথায়ও রক্ত আর রক্ত। যদিও ঙারুয়া এর মিথটি সাঈদ আহমেদ বিশ্বাস করতে থাকেন। ঙারুয়া রাতের বেলা শোনায় ম্রো-সংগীত। সে সংগীতের অলীক মোহে সাঈদ আহমেদ দিনদিন বিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। যাত্রা বিরতিতে ঙারুয়া এক ভয়ঙ্কর প্রসঙ্গ তুলল। সীমান্তে রোহিঙা গেরিলারারা গোপন ঘাঁটি গড়ে তুলেছে । সাঈদ আহমেদ চমকে উঠলেন। রোহিঙা গেরিলারারা স্বাধীন রোহিঙাভূমি চায়। ঙারুয়া বলল। না! সাঈদ আহমেদ এর কন্ঠস্বর তীক্ষ্ণ শোনাল। কেন ? তোমরা চাওনি? ঙারুয়ার কন্ঠস্বরও তীক্ষ্ণ শোনাল। সাঈদ আহমেদ চুপ করে থাকেন। ঙারুয়া বলল, তারা গেরিলা হবে না কেন-তারা বার্মাদেশ থেকে নির্বাসিত। নিষ্পেষিত। তাদের ওপর গনহত্যা চালিয়েছে বার্মার সামরিক সরকার। সাঈদ আহমেদ মাথা নাড়লেন। তিনি জানে নির্যাতিত নির্বাসিতদের একাংশ সমাজবিজ্ঞানের অনিবার্য সূত্র অনুযায়ী গেরিলা হয়ে ওঠে। ঙারুয়া বলল, রোহিঙ্গা গেরিলাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবেন? সাঈদ আহমেদ চমকে উঠলেন। আমি ওদের সমর্থক। ঙারুয়া বলল। ওদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। তোমরাও ওদের গ্রহন করনি। তোমরা অবিচার করছ। সাঈদ আহমেদ অবাক হয়ে যান। এ রকম সত্য কথা কেউ বলে না। আসলেই তো রোহিঙ্গাদের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে। ঙারুয়া বলেছিল: তুই ঙাঙ -নর খাইয়া কই,/ দাম ইয়ালাইদয় পে ...মাছেরা যেমন জলে, মানুষও তেমনি পরিবেশের কারণে সত্যোচ্চারণে বিরত থাকে। সাঈদ আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ঙারুয়া অরণ্যবনের সক্রেটিস। অরণ্যবনের সক্রেটিসরাও এখন যুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থায় নেয়, অবস্থান নিতে হয়। নিরীহ দার্শনিকতার দিন শেষ! অবস্থান আমাকেও নিতে হবে! কিন্তু, আমি কোন্ পক্ষ নেব? সাঈদ আহমেদ ক্লান্ত বোধ করেন। ঙারুয়া আবার আদম এর পিঠে চড়ে বসেছে। সাঈদ আহমেদও উঠলেন। তখন ঙারুয়া বলেছিল, চিমলুঙরা নাকি সহৃদয়। তবে ওখানকার লোকজন তাকে গ্রহন করবে কিনা সে ভেবে উদ্বেগ বোধ করলেন সাঈদ আহমেদ। রোহিঙ্গা গেরিলাদের সঙ্গে চিমলুঙদের সম্পর্ক কেমন কে জানে। হয়তো আগেকার গভীর শান্তি সেখানে আর নেই। নানা রকম উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা নিয়ে সাঈদ আহমেদ সবুজ সমাধির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। তথ্যসূত্র: তুই ঙাঙ -নর খাইয়া কই, দাম ইয়ালাইদয় পে ... এই ম্রো প্রবাদটি পেয়েছি হাফিজ রশিদ খান এর লেখা “নির্বাচিত আদিবাসী গদ্য” বইতে। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:০২
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! ১৫ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় যাইনি। সারাদিন পল্টনে আমার বইয়ের পেস্টিং, প্লেট, পজেটিভ, প্রেস, এগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে ছিল আমাদের নাটকের দল পালাকারের নাটক 'নারীগণ'। ১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই উপমহাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশ দুইশো বছর ব্রিটিশদের গোলামিতে পরিনত হয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের নারীদের কী হয়েছিল, সেটাই এই নাটকের মূল বিষয়বস্তু। এই পটভূমিকায় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচনা করেন 'নারীগণ' নাটকটি। এটি বৈচিত্র্য সন্ধানী নাট্যদল পালাকারের নতুন প্রযোজনা। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মঞ্চসারথী আতাউর রহমান। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার পর নবাব মহলের অন্তপুরে বন্দি নারীদের নানান উপলব্ধি- নবাব সিরাজের বন্দি নানি, মা, পত্নীর জবানে নাটকটিতে উঠে আসে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ, নারীর মর্যাদা ও ইচ্ছার স্বাধীনতাসহ অনেক বিষয়ে অবমাননার হাত থেকে বাঁচতে এই বন্দি নারীরা আত্মহত্যাও করতে পারে না। কারণ তাদের আত্মহননের পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়। অঙ্গুরির বিষ কেড়ে নেওয়া হয়। কেড়ে নেওয়া হয় খঞ্জর। প্রহরীর রূঢ় হাত তাদের শরীর স্পর্শ করে। তাদের বন্দি করার মাধ্যমেই ঘটনার শেষ হয় না। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এবং বিদ্রোহের পথ রুদ্ধ করতে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এসব নারীদের হত্যাও করা হয়। এসব ঘটনা নিয়েই গড়ে উঠেছে 'নারীগণ' নাটকটি। নাটকটির প্রধান প্রধান চরিত্রগুলো হল নবাব সিরাজের নানী, মা, পত্নী, খালা ঘষেটি বেগম, সিরাজের বাইজি, নবাব সিরাজ, নবাব সিরাজ ও মীরজাফরের লোক লস্কর। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারহানা মিঠু, দীপ্তা রক্ষিত লাভলী, তানিয়া হোসাইন, ফাহমিদা মল্লিক শিশির, জয়িতা মহলানবীশ, মুনিরা অবনী, তিথী দাশ সাথী, কাজী ফয়সাল, শাহরিয়ার খান রিন্টু, তাপস তপু, আমিনুর রহমান মুকুল প্রমুখ। নাটকটির আলোক পরিকল্পক ছিলেন ঠাণ্ডু রায়হান, সঙ্গীত নির্দেশনা দিয়েছেন অজয় দাস, সেট করেছেন অনিকেত পাল। এটি পালাকারের সপ্তম প্রযোজনা। 'নারীগণ' নিয়ে বিস্তারিত পরে কোথাও লিখব। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সোমবার। অমর একুশে বইমেলায় যাই দুপুর তিনটায়। প্রথমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢু মেরে চলে যাই বাংলা একাডেমির লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গন প্রিয় বহেড়াতলায়। শিল্পী চারু পিন্টু ও কবি কাজী টিটোকে নিয়ে চা খেতে বাইরে আসি। আবার গিয়ে লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গনে বসতেই আসেন লেখক স্বকৃত নোমান। নোমানের কাছে শুনলাম- ইরানের লেখক আলি দস্তি'র 'টোয়েন্টি থ্রি ইয়ার্স: এ স্ট্যাডি অব দ্য প্রোফেটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ' বইটির এবার বাংলায় অনুবাদ করেছেন আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী। বইটি প্রকাশ করেছিল রোদেলা প্রকাশনী। হেফাজতে ইসলাম বইটি প্রকাশ করার দায়ে রবিবার বিকেলে বাংলাবাজারে রোদেলার অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। হেফাজত মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি বইটি নিষিদ্ধ এবং ‘নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষক’ রোদেলা প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে। এমনকি প্রকাশক রিয়াজ খানকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ নামে বাংলায় বইটি প্রকাশ করায় রোদেলা প্রকাশনীর ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে একটি ইসলামি হ্যাকার গ্রুফ। ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দিয়েছে এবং আগামী বছর রোদেলাকে বইমেলায় অযোগ্য ঘোষণা করেছে।যদিও রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান বইমেলার স্টল এবং বাংলাবাজারের অফিস থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। বইটি আর বিক্রি করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং বলেছেন ‘বইটিতে নবী মুহাম্মদের বিরুদ্ধে কোনো কথা থাকতে পারে এমনটি আমার ধারণায় ছিল না। যেহেতু ভুল করেছি, তাই অপরাধ স্বীকার করে আমি বইটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’ তারপরেও রোদেলা প্রকাশনীর উপর বাংলা একাডেমি এভাবে কর্তৃত্ব দেখানোর পেছনে কারণ কি?গত দুইদিন এই বইটি নিয়ে দেশের প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যম বলতে গেলে নিরব ছিল। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বইটি পড়েনি। কিন্তু তারা হেফাজতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে রোদেলা প্রকাশনীকে শুধু বইমেলা থেকে বহিস্কার করেনি, আগামী বছরের জন্যও নিষিদ্ধ করেছে। আসলে বাংলা একাডেমি এখানে সরকারের পুতুল হিসেবে কাজ করেছে। কারণ হেফাজত হুমকি দিয়েছে, যদি রোদেলাকে নিষিদ্ধ করা না হয়, তাহলে তারা শাপলা চত্বরের সমাবেশের মত আবারো রাজপথ দখল করবে। সরাকারের কোনো মহলও এই বইটি এখনো পড়েনি। বিএনপি ও তাদের ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালের মধ্যে নতুন করে আবার হেফাজতের রাজপথ দখলের হুমকিকে সরকার গুরুত্ব দিয়েই বাংলা একাডেমিকে যা নির্দেশ করেছে, বাংলা একাডেমি এখানে তা শুধু পুতুলের মত পালন করেছে। সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয়, বইটি কিন্তু সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু হেফাজতের দাবিকে মানতে গিয়ে এভাবে রোদেলা প্রকাশনীকে বইমেলায় নিষিদ্ধ করায় বাংলা একাডেমি যে একটি নপুংসক প্রতিষ্ঠান তা আবারো প্রমাণ করল। খোদ ইরানে আলী দস্তি'র এই বইটি মোটেও নিষিদ্ধ নয়। পৃথিবীর বহু ভাষায় এই বইটি প্রকাশ পেয়েছে। কোথাও বইটি নিষিদ্ধ নয়। ওয়েবসাইটে বইটির ইংরেজি ভার্সান যে কেউ এখনো ডাউনলোড করে পড়তে পারে। অথচ হেফাজতকে সামাল দিতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিল আর বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের অভিভাবক হিসেবে যে কাজটি করল, তা নিসন্দেহে দুঃখজনক। রোদেলা প্রকাশনীতে এই বইটি ছাড়াও আরো তিন চারশো লেখকের বই আছে। সেসব লেখকদের কি অপরাধ? তাদের বই কেন আমরা কিনতে পারব না? রোদেলা বিতর্কিত বইটি তুলে নিয়েছে, এখানেই বিষয়টির মিমাংসা হয়ে গেলে সেটি জাতির জন্য সভ্য আচরণ হতো। কিন্তু হেফাজতকে ম্যানেজ করতে গিয়ে সরকার ও বাংলা একাডেমি যা যা করল, তা বাংলাদেশের যে কোনো লেখক, কবি, সাহিত্যিক, লেখালেখির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত যে কোনো প্রকাশকের জন্য একটি বড় ধরনের অশনিসংকেত। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন অযুহাতে যদি কোনো বই নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে স্বয়ং বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত অনেক বই, গবেষণা, প্রবন্ধ, বাংলা একাডেমিতে চাকরি করেন বা করেছেন এমন অনেক লেখকের বই, ক্লাস টেনে এখনো যে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ'র 'লাল সালু' পড়ানো হয়, সেই বইগুলো তো হেফাজতের মানার কথা নয়। তাহলে কি বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চা কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়েছে? কারণ এখানে হেফাজত আছে। সংবিধানে আমাদের রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম আছে। হেফাজতের রাজপথ দখল করার হুমকি আছে। তাহলে সরকার এখন যা যা করতে পারে-১. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে হেফাজতের কোনো মুফতিকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। বাংলা একাডেমি ইসলামী চিন্তাবিদদের দিয়ে ঢেলে সাজানো হোক। ২. বাংলাদেশের সকল প্রকাশকদের প্রকাশিতব্য বইগুলো হেফাজত কর্তৃক যাচাই বাছাই করার পর প্রকাশযোগ্য ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।৩. বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হেফাজত কর্তৃক নতুন করে সিলেবাস ও পাঠযোগ্য বিষয়বলী নির্ধারণ করা হোক।যদি এই তিনটি কাজ করা না যায়, তাহলে সরকার রাজনৈতিক কারণে যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, এটি লেখক ও প্রকাশকদের জন্য একটি বড় ধরনের অশনিসংকেত। আমরা চাই শিঘ্রই রোদেলা প্রকাশনার স্টলটি বইমেলায় উন্মুক্ত করা হবে। বিতর্কিত বইটি কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে যা করার সিদ্ধান্ত দিক। কিন্তু একজন প্রকাশকের উপর এমন ঢালাউ শাস্তি কোনোভাবেই প্রকৃত লেখক সমাজ বা প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত কেউ মেনে নিতে পারে না। রোদেলা থেকে প্রকাশিত অন্য বইগুলো পাঠক যাতে কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খানকে যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হোক।বইমেলায় এটিই ছিল মূলত আলোচনার বিষয়। আজ আর আমি ঢালাউভাবে বইমেলার বর্ণনা লিখব না। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। যারা প্রতিষ্ঠানের দালালি করে নিজেদের বড় লেখক ভাবেন, তাদের প্রায় সবাইকে দেখলাম বাংলা একাডেমির কথিত বইমেলার নীতিমালার দোহাই ঝাড়তে। প্রকুত বিষয়টি বা কেন এমন হল তা নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। অনেকটা আপনি বাঁচলে বাপের নাম অবস্থা। বাংলা একাডেমি যে একটি অন্যায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে, এটি নিয়ে কথা বলায় তাদের আগ্রহ নেই। সাধু সাধু। ভেড়া চুরি করার জন্য নয় বরং ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো ভেড়া চুরি না হয়, সেজন্য কাউকে সাজা দেওয়াকে কি বলা যায়? এটি হয়তো প্রতিরোধাত্মক শাস্তি। ধর্মীয় অনুভূতিতে ভবিষ্যতে যাতে কেউ আঘাত দিতে না পারে, সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের সঙ্গে খোদ সৌদিআরব ও ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। সৌদিআরব ও ইরানের সঙ্গে এই বইটি নিয়ে কি সরকার এখন একটু কথা বলবে? কেন তাদের দেশে এই বইটি নিষিদ্ধ নয়? তা কি একটু খতিয়ে দেখবে? তাহলে হেফাজতের দাবিকে সমর্থন করে সরকার এই বইটি নিষিদ্ধ করলে ইসলামের নামে ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত লাগার অযুহাত কতোটা যুক্তিযুক্ত, তা কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি?সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ সত্যিই চায় না এখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হোক। বিতর্কিত বিষয়ে জানার আগ্রহ বা সুযোগ রাখার পক্ষেও নয় রাষ্ট্র। হেফাজত কোনো বিষয়ে নোটিশ করলেই তা বন্ধ করার এই মানসিকতায় হয়তো তাৎক্ষণিক দায় এড়ানো সম্ভব হবে, কিন্তু যে ভয়ংকর সাপ পুষতে পুষতে রাষ্ট্র অন্ধকারের দিকে হাঁটছে, সেই অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আর কোনো দিনও হাঁটা সম্ভব হবে না। তাহলে কি আমরা দিনদিন আলো থেকে অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি! কিসিঞ্জার সাহেব ১৯৭১ সালে যে কথাটি বলেছিলেন, সেই কথা নতুন করে আবার বিশ্লেষন করার সময় এসেছে। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছে। আমাদের সরকার বাহাদুর যদি বিষয়টি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এর জন্য বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে আরো কঠিন মূল্য দিতে হবে। .................................১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
ij
একটি হত্যাকান্ডের পটভূমি এই আধুনিক সময়েও মধ্যযুগীয় পুরনো শাস্ত্র আর তার রচয়িতাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না; বললে- মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল ২০০৪ সালে। হল্যান্ডে। মরক্কোর এক ধর্মান্ধ জঙ্গি নির্মম ভাবে খুন করে বসল নেদারল্যান্ডের একজন মুক্তমনা চলচ্চিত্র নির্মাতাকে। আবারও প্রকাশ পেল ধর্মান্ধতার বিভৎস রুপ। চমকে উঠল সমগ্র পশ্চিমাবিশ্ব। সমগ্র পশ্চিমাবিশ্ব আবারও পরম অবিশ্বাসের চোখে মুসলিমবিশ্বের দিকে তাকাল- যা ভবিষ্যৎ সর্ম্পকের ক্ষেত্রে শুভ পরিনতি বয়ে আনবে না বলেই মনে হল ... সোমালিয় নারী আইয়ান হিরসি আলীর জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৬৯ সালে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাডিসুতে। আইয়ান হিরসি আলীর বাবা হিরসি মাগান ইসে ছিলেন রাজনীতিবিদ ও পন্ডিত। মাত্র ৫ বছর বয়েসে আইয়ান হিরসি আলীকে ‘খৎনা’-র ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হতে হয়। নারীর খৎনাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় Clitorectomyবলা হয়। অহেতুক যন্ত্রণাদায়ক এই ঘৃন্য প্রথাটি আফ্রিকাসহ আরববিশ্বের অনেক নারীর জীবনকে করে তোলে বিষময়। হিরসি মাগান ইসে-র অবশ্য তাঁর মেয়ের Clitorectomy করার ব্যাপারে অমত ছিল। তবে তিনি তখন জেলে ছিলেন বলে তিনি ঐ ‘অপকর্মে’ বাধা দিতে পারেননি। আইয়ান হিরসি আলীর ৮ বছর বয়েসে তার পরিবার চলে আসে সৌদি আরব; সেখান থেকে ইথিওপিয়া। পরে পরিবারটি সেটল করে কেনিয়ায়। নাইরোবির মুসলিম গালর্স সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হয়ে ইংরেজি শেখে আইয়ান হিরসি আলী। তবে, মেয়েবেলা থেকেই ইসলাম ধর্মে শিক্ষা হয়েছিল। পড়তে হত কোরান। কেনিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচুর অর্থ ঢালে সৌদি আরব । ফলে, আইয়ান হিরসি আলী কট্টর ওয়াহাবী শিক্ষা পেয়েছিল। স্কুলের ইউনিফর্মের সঙ্গে পরতে হত হিজাব । ওয়াহাবী শিক্ষার তুলনায় সোমালিয়া ও কেনিয়ার ইসলাম ছিল অনেকটা সহনশীল হলেও ওয়াহাবীপন্থি শিক্ষকদের প্ররোচনায় মিশরের কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে আইয়ান হিরসি আলী । মুসলিম আলেমরা ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিলে আইয়ান হিরসি আলী সমর্থন জানায়। মেয়েবেলা থেকেই বই পড়তে ভালো লাগত আইয়ান হিরসি আলীর। কেনিয়ায় থাকাকালে প্রচুর ধর্মনিরপেক্ষ বই পড়ার সুযোগ হল। এভাবে মনের গড়ন বদলে যাচ্ছিল মেয়েটির। কিছু সংশয় তৈরি হচ্ছিল। ২ ১৯৯২ সাল। আইয়ান হিরসি আলীর বাবা তার মেয়ের বিয়ে ঠিক করে। ‘আগন্তুক দ্বারা ধর্ষিতা হব না’-এই শপথ নিয়ে আইয়ান হিরসি আলী বিদেশ পাড়ি জমাবে ভাবল। পলিটিকাল অ্যাসাইলামের অজুহাতে কাগজপত্র সেভাবেই তৈরি করল-করে নেদারল্যান্ডে পৌঁছল। যা হোক, হল্যান্ডে বসবাসের অনুমতি পেল। আমসট্রাডাম শহর। কাজ খুঁজল। অড জব। পেল। ডাচ ভাষা শিখল। ডাচদের সমাজ দেখে মুগ্ধ আইয়ান হিরসি আলী-বিশেষ করে নারীস্বাধীনতার বিষয়টি। সময় পেলেই বই পড়ত। এই প্রথম ফ্রয়েড পড়ে বিস্মিত হল। ধর্ম ব্যতীত যে নৈতিকতা সম্ভব- তা জেনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়বে বলে ঠিক করল। ভর্তি হল লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে । ২০০০ অবধি চলল পড়াশোনা। ৩ রাস্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পাস করে আইয়ান হিরসি আলী রাজনীতি করবেন ভাবলেন। যোগ দিলেন একটি মধ্য-বাম শ্রমিক দলে। পড়াশোনা চলছিল। ইসলাধর্মে আর বিশ্বাস ধরে রাখা যাচ্ছিল না। ৯/১১ পর তার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে বিব্রত বোধ করলেন। লাইডেন অধ্যাপক দার্শনিক হেরমান ফিলিপস ‘দি অ্যাথেইস্ট ম্যানিফেস্টো’ নামে একটি ক্ষুদ্র বই লিখেছিলেন। বইটি পড়ে পুরোপুরি অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন আইয়ান হিরসি আলী। ২০০২ সালে ইসলাম ত্যাগ করে নিজেকে অ্যাথেইস্ট ভাবতে শুরু করলেন। ইসলামের সমালোচনা করে নিবন্ধ লেখতে শুরু করলেন। সমকাম ও পরকীয়ার ইসলামের ধ্বজাধারীরা যে শাস্তি দেয়-তার কট্টর সমালোচনা করলেন। লিখলেন: ‘৯/১১ এর খুনিদের আর আমার ঈশ্বর এক হতে পারে না।’ ইসলামকে বললেন, পিছিয়ে পড়া ধর্ম-যা কি না গনতন্ত্রের সঙ্গে কমপাটিবল না। তাঁর মতে, ইসলাম হল নয়া ফ্যাসীবাদ। খিলাফত চলে শরিয়া আইনে। যেখানে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হলে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়, সমকামীদের মারা হয় বেত -আর অবিশ্বাসীদের করা হয় হত্যা । ইসলাম নাৎসীবাদ না তো কী! আইয়ান হিরসি আলী মেয়েদের Clitorectomy বিরোধী। তাঁর মতে, Clitorectomy যৌনআকাঙ্খা দূর তো করেই না-উপরোন্ত তা হয়ে দাঁড়ায় যন্ত্রণাদায়ক। Clitorectomy করা মেয়েরা জীবনভর যন্ত্রণা সহ্য করে । এসব নিয়েই “দি সন ফ্যাক্টরি” নামে বই লিখলেন আইয়ান হিরসি আলী । বিপদ ঘনিয়ে এল। হল্যান্ডের একটি (মুসলিম) জঙ্গি সংগঠনের নাম:হোফসটাড নেটওয়ার্ক। হল্যান্ডে প্রায় ১০ লক্ষ মুসলিম বাস করে। হোফসটাড নেটওয়ার্ক মুসলিম ডাচদের একটি মৌলবাদী যুব সংগঠন। দীর্ঘকাল ধরেই তারা ইউরোপে তাদের (অপ) তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। স্পেন ও বেলজিয়ামেও নাকি এদের শাখা আছে। মিশরীয় মুসলিম সংগঠন, ‘তাকফির ওয়াল হিজরার’ আদর্শে হোফসটাড নেটওয়ার্ক-এর সদস্যরা অনুপ্রাণিত। হোফসটাড নেটওয়ার্ক-এর কাছ থেকেই প্রথম মৃত্যুর হুমকি পেলেন আইয়ান হিরসি আলী। তবে, ঘাবড়ালেন না। লেখা চালিয়ে গেলেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তকের কঠোর সমালোচনা করে লিখলেন; ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বিকৃতরুচির একজন pedophileছিলেন। pedophile শব্দের অর্থ: An adult who is sexually attracted to children! ৫২ বছর বয়েসে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা ৬ বছরের শিশু আয়েশাকে বিবাহ করেন। আর, বালিকা আয়েশার ৯ বছর বয়েস যৌনমিলন হয়! হোফসটাড নেটওয়ার্ক-এর সদস্যরা ক্রদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে। ঠিক এই সময়েই থিও ভ্যান গগ-এর সঙ্গে পরিচয় হল তাঁর। ৪ থিও ভ্যান গগ। ওলন্দাজ (ডাচ) চিত্রপরিচালক, প্রয়োজক, কলামিষ্ট, লেখক ও অভিনেতা। বিখ্যাত চিত্রকর ভ্যান গগ এঁরই উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ। আইয়ান হিরসি আলীর লেখা পড়ে চমৎকৃত হয়েছিলেন থিও ভ্যান গগ। তিনি নিজেও শাস্ত্রবিরোধী। আইয়ান হিরসি আলীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি ছবি নির্মান করবেন ভাবলেন। আইয়ান হিরসি আলীই চিত্রনাট্য লিখলেন। মাত্র ১০ মিনিটের ছবি। তাতেই যা বলার বলা গেল। থিও ভ্যান গগ নিজেই স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করলেন। নাম রাখলেন: ‘সাবমিশন।’ থিও ভ্যান গগ তখনও জানতেন না ঘনিয়ে আসছে মৃত্যু। ইসলাম নারীদের কী চোখে দেখে ১০ মিনিটের ছবিতে সে কথাই উঠে এসেছে। দুটো কথা বড় বিপদজনক। (১) অবাধ্য হলে মেয়েদের মারধোর করা যাবে। (২) রাজী না হলে-তারপর যা হবে-তা ধর্ষনেরই শামিল! মূলত; আত্মসমর্পন আল্লার প্রতি মানুষের নয়-পুরুষের প্রতি নারীর! ৫ ‘সাবমিশন’ ছবিটি রিলিজ পায় ২৯ আগস্ট ২০০৪। (আমি সরাসরি ছবিটার লিঙ্ক দিলাম না। Submission লিখে গুগল সার্চ করলে আশা করি ইউ টিউবে ১০ মিনিটের ছবিটি পেয়ে যাবেন। ) ছবিটি রিলিজ পাওয়ার পর হল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটিতে প্রচন্ড বিক্ষোভ দেখা যায়। হোফসটাড নেটওয়ার্কসহ ইউরোপের ইসলামী মৌলবাদী সংগঠনগুলি ফেটে পড়ে তীব্র আক্রোশে। অর্ধনগ্ন অভিনেত্রীর শরীরের পবিত্র কোরানের আয়াত! মোহাম্মদ বোওয়েরি। ২৬ বছর বয়েসি মরক্কোর যুবক; ডাচ নাগরিক। হোফসটাড নেটওয়ার্কের সদস্য। সিদ্ধান্ত নিল-সে থিও ভ্যান গগ এবং আইয়ান হিরসি আলীকে খুন করবে! আমসট্রাডাম। ২০০৪। নভেম্বর মাসের ২ তারিখ; সকাল। থিও ভ্যান গগ সাইকেল করে যাচ্ছিলেন কাজে। মোহাম্মদ বোওয়েরি কাছ থেকে এইচ এস ২০০০ হ্যান্ডগান দিয়ে আটবার গুলি করে। তক্ষনাৎ মৃত্যু হয় থিও ভ্যান গগ এর। মোহাম্মদ বোওয়েরি তারপর ধারালো ছুড়ি বের করে থিও ভ্যান গগ এর গলা কেটে ফেলে। বুকে তীক্ষ্ম ছোরা দিয়ে ষ্ট্যাব করে। বুকের ওপর মিশরী সংগঠন তাকফির ওয়াল হিজরার রেফারেন্সসমেত একটা নোট গেঁথে দেয়। নোটে পশ্চিমা সরকার ইহুদিবাদ ও আইয়ান হিরসি আলীর ধ্বংস কামনা করা হয়। পালানোর সময় পুলিশ মোহাম্মদ বোওয়েরি পায়ে গুলি করে। সে ধরা পড়ে। তার বিচার হয়। সে এখন যাবৎজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছে। থিও ভ্যান গগ-এর মৃত্যুর পর আইয়ান হিরসি আলী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেও নিজের বিশ্বাস থেকে বিন্দুমাত্র টলে যাননি। নিহত থিও ভ্যান গগ-এর মা পুত্রশোক কাটিয়ে উঠে বললেন: আমি আমার ছেলের আদর্শে বিশ্বাস করি। বর্তমানে ডাচ সরকারের তত্ত্বাবধানে আইয়ান হিরসি আলী লোকচক্ষুর অন্তরালে আছেন। এই জন্যই বলছিলাম, এই আধুনিক সময়েও পুরনো শাস্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। বললে মৃত্যু অনিবার্য। ৬ অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের সাম্প্রতিক এক গবেষনায় জানা গেছে বাংলাদেশে বছরে দশ (১০) লক্ষ করে ধর্মান্ধ জঙ্গি বাড়ছে! এদের অর্থায়নের যে টাকা লগ্নি করা হয়েছে তার টার্নওভারের পরিমান দেড় হাজার কোটি টাকার মতন! হয়তো, থিও ভ্যান গগ এবং আইয়ান হিরসি আলী ‘সাবমিশন’ নির্মান করে বাড়াবাড়ি করেছেন। কিন্তু, একবার ভেবে দেখুন- আমরা টিভিতে রোজ যে নাটক/চলচ্চিত্র দেখছি-যা আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি- সেসবও তো বাংলাদেশি জঙ্গিদের সহ্য হওয়ার কথা না। তার ওপর জঙ্গিদের পিছনে রয়েছে অঢেল অর্থ। কার্যত, আমরা কেউই নিরাপদ নই। উৎস: http://en.wikipedia.org/wiki/Submission_(film) http://en.wikipedia.org/wiki/Ayaan_Hirsi_Ali Click This Link) সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৪০
false
ij
নজরুলের একটি কৃষ্ণবাদী গান জীবদ্দশায় কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা সম্পন্ন একজন আলোকিত সুন্দর মানুষ, যে কারণে তার পক্ষে মথুরা-বৃন্দাবনের শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে কাওয়ালী ঢংয়ে গান কম্পোজ করা সম্ভব হয়েছে। সেই আশ্চর্য গতিশীল গানটি আমরা অনেকেই শুনেছি ... ‘এল নন্দের নন্দন নবঘনশ্যাম/ এল যশোদা নয়নমনি নয়নাভিরাম / প্রেম রাধার মন নব বঙ্কিম ঠাম/ চির রাখাল গোকূলে এল ... কৃষ্ণজী কৃষ্ণজী কৃষ্ণজী কৃষ্ণজী ’ ...এবং এই ‘ কৃষ্ণজী’, ‘ কৃষ্ণজী’-এই কোরসটি অনেকটা কাওয়ালী ঢংয়ের। ইসলামের নবীকে নিয়ে নজরুল যেমন কাওয়ালী ঢংয়ে গেয়েছেন, ‘সে যে আমার কামলিওয়ালা, কামলিওয়ালা’ ... সেই রকমই কৃষ্ণকে নিয়ে গেয়েছেন: ‘কৃষ্ণজী’, ‘কৃষ্ণজী’, ‘কৃষ্ণজী’, ‘কৃষ্ণজী’ এবং নজরুলের কৃষ্ণবাদী এ আবেগ আরোপিত নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্ত ও সত্য। কেননা নজরুলের স্পর্শকাতর মানস বহু বর্ণিল ভারতীয় ঐতিহ্যে লালিত। হাজার বছর ধরে ভারতীয় সংস্কৃতি মূলত বহুস্রোতে বহমান। জীবনভর তাঁর গানে, তাঁর কবিতায় নজরুল এই বহুমাত্রিক বিচিত্র জীবনধারাকে মেলানোর সাধনা করেছেন । গানেও নজরুল সে প্রমাণই দিয়েছেন। যেমন, কাওয়ালী মূলত মুসলমানী সংগীত রীতির একটি ধারা, সেই কাওয়ালী ঢংয়ে মথুরা-বৃন্দাবনের শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে নজরুল গান বেঁধেছেন: শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে গভীর আবেগ ব্যক্ত করেছেন এবং এভাবে রেখে গেছেন অসাম্প্রদায়িক পথে হাঁটবার ইঙ্গিত ... কৃষ্ণকে নিয়ে রচিত গানকে সাধারনত শ্যামাসংগীত বলে। কেননা, শ্যাম=শ্যামা। কৃষ্ণর গাত্রবর্ণ মহাকালের রং (কৃষ্ণ)। যা হোক। আমরা এ কালে শ্যামাসংগীত কে কৃষ্ণবাদী গান বলেও চিহ্নিত করতে পারি। আলোচ্য গানটির কথা: তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারী আগত ঐ টুটিল আগল, নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী। বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায় হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, ‘আয়,’ বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায় কাল্-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।। বিশ্ব ভরি’ ওঠে স্তব নমো নমঃ অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম। ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন কারার মাঝে এলো বন্ধ-বিমোচন, ধরি’ অজানা রূপ আসিল অনাগত জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।। প্রথমেই কৃষ্ণর সংজ্ঞা নির্ধারন করেছেন। কৃষ্ণ, যিনি অন্ধকার দূর করেন, অদৃশ্যে বিচরণ করেন। তবে তাঁর হাতে একটি বাঁশী রয়েছে। নজরুলও বাঁশী বাজাতেন। যিনি অন্ধকার দূর করেন এবং অদৃশ্যে বিচরণ করেন তার সঙ্গে সাধারন মানুষের দূরত্ব তৈরি হতে পারে; তবে, তাঁর হাতে একটি বাঁশী কাছাকাছি চলে আসেন। কৃষ্ণকে নজরুল বলেছেন, কালো রাখাল। যা হোক। যিনি অন্ধকার দূর করেন, যিনি অদৃশ্যে বিচরণ করেন-সেই ‘কৃষ্ণ-মুরারী’ আসছেন। তাতে কি হবে। তাতে, অর্গল টুটে যাবে। এ জন্যই ‘নিখিল’ বিশ্ব পাগল হয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারী আগত ঐ টুটিল আগল, নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী। সর্বসহা আজি সর্বজয়ী। যারা সহ্য করে তারা সর্বজয়ী হবে। কবি কৃষ্ণর জীবনের ভবিষ্যৎবানী করছেন। কৃষ্ণ, বিষ্ণুর অস্টম অবতাররুপে উত্তরভারতের মথুরা দেবকী-বসুদেবের ঘরে জন্মাবেন। মথুরার রাজা কংস মূতিমার্ন স্বৈরাচারী। স্বীয় পিতা উগ্রসেনকে কারাগারে আটক করে রেখেছেন। কংস সম্পর্কে কৃষ্ণর মাতুল। কংস জানতে পারে ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’ সুতরাং কংস মথুরা শিশুহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।শিশু কৃষ্ণকে তখন গোকুলে নন্দ-যশোদার ঘরে রেখে আসেন। ছোট্ট এক শিশুর কত বিড়ম্বনা! যে কারণে নজরুল লিখেছেন: ‘ সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।’ এবার নন্দ-যশোদার ঘরে ও গোকুলে কৃষ্ণর জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রসঙ্গে নজরুল: বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায় হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, ‘আয়,’ বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায় কাল্-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।। ‘বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়’ অসম্ভব সুন্দর একটি রুপকাশ্রয়ী চরণ। কিন্তু ‘ অশ্রু-যমুনায়’ কেন? শ্রীকৃষ্ণের জন্ম যমুনাপাড়ের মথুরায়। তারই জন্মসংবাদে যমুনায় উজানে আনন্দের অশ্র“ বইছে। এবং- হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, ‘আয়,’ কৃষ্ণর পালক-মাতা যশোদা। যশোদা শব্দের আগে ‘বসুধা’ শব্দটির প্রয়োগ লক্ষনীয়। বসুধা মানে পৃথিবী। কবি কি যশোদাকে পৃথিবী বলছেন? মাতৃস্নেহে কৃষ্ণকে লালন করেছিলেন বলে? তাহলে কৃষ্ণ =মানবতা বা মানবকূল। সেই মা-পৃথিবী গোপাল (বালক কৃষ্ণ) কে লালন করেছেন। সেই চরণটি স্মরণ করি: ‘সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।’ সর্বসহা মা-পৃথিবী যশোদা বালক কৃষ্ণ কে লালন করে সর্বজয়ী হয়েছেন। কিংবা আমাদের প্রতি এটি নজরুলের উপদেশ। যারা সহ্য করে তারা সর্বজয়ী হবে। যাক। যমুনাপাড়ের গোকুলে বালক কৃষ্ণ গোপাল গরু নিয়ে মাঠে যেত। দিনভর নেচে গেয়ে খেলে বেড়াত। সেই অভূতপূর্ব দৃশ্যের বর্ননায় নজরুল লিখেছেন একটি মনোরম চরণ: কাল্-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।। কাল্-রাখাল=কালো রাখাল। কৃষ্ণকে কালো রাখাল বলা একমাত্র নজরুলের পক্ষেই সম্ভব। কালো রাখাল বলায় কৃষ্ণ আরও প্রাণের কাছাকাছি চলে এল এরপর নজরুল বলছেন: বিশ্ব ভরি’ ওঠে স্তব নমো নমঃ অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম। এমন বিরাটের আগমনে বিশ্ব ভরে উঠছে স্তবে, বন্দনায়। অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম। (এই লাইনটির মানে বোঝা গেল না! অর্থ কিন্তু বোঝা গেল ...অন্ধকার রাজ্যে সুন্দর আলোকিত মানুষ এসেছেন ...) স্বৈরাচারী মথুরারাজ কংসের কারাগারে কৃষ্ণের মাতা-পিতা দেবকী-বসুদেবকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে নজরুল লিখেছেন: ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন কারার মাঝে এলো বন্ধ-বিমোচন, ধরি’ অজানা রূপ আসিল অনাগত জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।। কৃষ্ণ আসলে মুক্তির প্রতীক। মানবতার প্রতীক। এবং মানবতার মুক্তি অনিবার্য। নজরুলের এই কৃষ্ণবাদী গান সে কথাই যেন ফুটে উঠেছে। মানবতার সেই অনিবার্য মুক্তি অর্জনের পথে নজরুল একটি যাদুবাক্য আমাদের মনে রাখতে হবে : ‘সর্বসহা আজি সর্বজয়ী ... তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী গানটির ডাউনলোড লিঙ্ক ... http://www.mediafire.com/?5lzqiu2fzjl সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৫১
false
rg
।। এ রেড স্যালুট টু স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।। স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন দীর্ঘদিন জটিল মানসিক রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাকে বলা হয় ডিল্যুশন। স্থপতি মাইনুল এই জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যে কারণে একটা সময় তিনি ভালো কোনো স্থাপত্যকর্ম দেখলেই বলতেন, ওটা ওনার আইডিয়া ছিল। নিশ্চয়ই কেউ ওটা চুরি করেছে। কখনো কখনো অজানা ভয়, আতংক, শংকার কথা বলতেন। কিংম্বা রহস্যময় শাস্তির আতংক তাঁকে তাড়া করতো। চিকিৎসা বিজ্ঞান এই ধরনের রোগীকে সুচিকিৎসা দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব বলে দাবী করে। আর এধরনের অনেক রোগী সুচিকিৎসায় ভালো হবার উদাহরণও নাকি আছে।কিন্তু বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, এক আজব দুনিয়া, যেখানে সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র, আমাদের দুনিয়া দাপিয়ে বেড়ানো মিডিয়া, সংস্কৃতির চেতনা বিক্রি করার বড় বড় দালালবর্গ কেউ এই মহান মানুষটির পাশে দাঁড়ায়নি, এটাই এখন ইতিহাস। এমন এক অসভ্য সভ্যতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি। ১৯৯১ সালে তাঁর সংসার ভেঙে যাবার পরেও স্থপতি মাইনুল ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে একেবারে নিভৃতে চলে যান। স্থপতি মাইনুল কবি গোলাম মোস্তফার দৌহিত্র। ঢাকার শান্তিনগরে কবি গোলাম মোস্তফার বাড়িটায় তিনি থাকতেন। শেষের দিকে যে ঘরে তিনি বসবাস করতেন, সেই ঘরটির সকল জানালা, দরজা সারাক্ষণ বন্ধ থাকতো। সেই অন্ধকারে মশারির মধ্যে তিনি দিনরাত কি অবর্ণনীয় জীবনযাপন করেছেন। যে আতংক বা ভয় ওঁনার মস্তিকে সারাক্ষণ তাড়না দিত, সেটি সম্ভবত মানুষ সৃষ্ট কোনো হুমকি। কেউ হয়তো ওনাকে মেরে ফেলার মত হুমকি দিয়েছিল। সেই হুমকিতে হয়তো কোনো শর্ত জড়িত ছিল। যে এটা করলে এই ধরনের বিপদ তাঁর হবে। তাই জানালা-দরজা বন্ধ করে অন্ধকারে তিনি হয়তো এক ধরনের নিরাপত্তাবোধ করার চেষ্টা করতেন। একেবারে অপরিচিত কারো সঙ্গে সাক্ষাত পর্যন্ত দিতেন না। যে মানুষটি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি সৌধের নকশা করলেন, সেই মানুষটি এই জাতির কাছ থেকে, এই দেশের মানুষের কাছ থেকে, এই দেশের সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতার অভাববোধ থেকেই এভাবে হয়তো সেলফ ডিফেন্স হিসেবে বাকি জীবন একা একা অন্ধকারে লড়াই করে গেলেন। আমরা যা জানতেও পারলাম না। আমাদের জাতীয় সাত জন বীর শ্রেষ্ঠদের পরিবারের বর্তমান নাজুক দশার কথা আমরা জানি। তাঁদের পরিবারের কোনো খোঁজ খবর আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের নেবার সময় নেই। আমাদের সরকারগুলোর সেই সময় হয়ে ওঠে না। আমাদের চেতনা বিক্রি করা দালাল-বাটপারদের সেই সময় কোথায়? এদের পাশে দাঁড়ানোর? অথচ এরাই বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। এদের নাম বেচেই বাংলাদেশের সকল সাংস্কৃতিক ঝড়-তুফান। জাতি হিসেবে কি সত্যি সত্যিই আমরা খুব বড় ধরনের বেকুব?স্থপতি মাইনুল আজ ১০ নভেম্বর ২০১৪, দুপুর আড়াইটায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মারা যান। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আগেরদিন ওনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওঁনার ডায়াবেটিস ছিল মারাত্মক অনিয়ন্ত্রিত। রক্তচাপও ছিল খুব কম। ম্যাসিভ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তিনি মারা গেছেন। এখন সারা দেশে শোক প্রকাশের মহড়া শুরু হয়েছে। অথচ গতকালও এই বেহায়া জাতি জানতো না, এই মহান মানুষটি কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন, তাঁর হাল হকিকত কি?বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নতুন সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মৃতি ধরে রাখতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করে। আর ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তারপর তিন ধাপে এই দীর্ঘ স্থাপত্য পরিকল্পনার কাজ ১৯৮২ সালে শেষ হয়। প্রধম ধাপে এই প্রকল্পের জন্য ৮৪ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ১৯৭৬ সালে এই প্রকল্পের জন্য জাতীয় ভাবে নকশা প্রতিযোগিতা আহবান করা হয়। তখন প্রথমবার মোট ৫৭ জন স্থপতি তাঁদের নকশা জমা দেন। সেখান থেকে কারো নকশাই প্রকল্পের জন্য চূড়ান্ত বিবেচনায় টেকেনি। দ্বিতীয় বার পর্যাপ্ত যাচাই বাছাই করে ২৬ বছর বয়স্ক তরুণ স্থপতি মাইনুলের নকশা রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত হয়। নকশা চূড়ান্ত হবার তিন মাসের মধ্যে স্থপতি মাইনুল চূড়ান্ত নকশার কাজ শেষ করেন। সাভারের ৮৪ একর জমির ঠিক মাঝখানে এই স্থাপত্য কর্মটির পাশাপাশি প্রকল্পের কাজ শুরু করেন স্থপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ। নকশা অনুযায়ী, স্মৃতিসৌধের বেদীমূল থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে সাতটি ত্রিকোণ কলাম। মূল স্মৃতি স্তম্ভের সর্বোচ্চ চূড়া বেদি থেকে ১৫০ ফুট উঁচু। ম্তম্ভের সাতটি ত্রিকোন কলাম বিভিন্ন উচ্চতার কংক্রিটের স্ট্রাকচার। ইংরেজি এল আকৃতির স্তম্ভটি একেক পাশ থেকে এক একেক ধরনের দৃশ্যমান। আর এটি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ আকৃতির। সবচেয়ে বড় স্তম্ভটির সবচেয়ে ছোট বেজ, আর সবচেয়ে ছোট স্তম্ভটির সবচেয়ে বড় বেজ। একেবারে ছোট দেয়াল দিয়ে পরবর্তী ধাপের দেয়ালগুলো বেষ্টিত। স্তম্ভের সামনে ও চারপাশে ধাপে ধাপে জলাধারের ব্যবস্থা, হ্যালিপ‌্যাড, সবুজ বেষ্টনি সহ অনেক দৃষ্টিনন্দন বিষয় যুক্ত হয়। ১৯৭৯ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মূল কলাম সাতটি কংক্রিটের ঢালাই। বাকি চত্বরের সকল নকশায় লাল ইটের ব্যবহার স্থাপনাটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করেছে। কংক্রিটের সাতটি কলাম ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বড় বড় সাতটি আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের প্রতীক। একেবারে নিচের খাঁজটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রতীক, তারপরের খাঁজটি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রতীক, পরেরটি ১৯৫৮ সালের সামরিক আইউব বিরোধী আন্দোলনের, পরেরটি ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের, পরেরটি ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের, পরেরটি ১৯৬৯ সালের আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের এবং একেবারে উঁচু খাঁজটি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতীক। সাতটি বড় আন্দোলনকে সাতটি খাঁজে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সবচেয়ে উঁচু মিনারটি ৪৫ মিটার বা ১৫০ ফুট উঁচু এবং জাতীয় শহীদ সৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং মনোরম বাগান। সৃতিসৌধ চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহীদের দশটি গণ সমাধি। সৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আরও রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ,অভ্যর্থণা কক্ষ, মসজিদ, হেলিপ্যাড, ক্যাফেটেরিয়া।১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ জাতীয় স্মৃতি সৌধ উদ্ভোধন করেন। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল, সেই অনুষ্ঠানে স্থপতি মাইনুলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রন করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় তথাকথিত ভিআইপিরা চলে যাওয়ার পর সেখানে গিয়ে জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে তখন স্মৃতি সৌধটি দেখেছিলেন স্থপতি মাইনুল। তৃতীয় ধাপে মূল স্থাপনার চারপাশে আরো ২৪.৭ একর জমির উপর জলাধার বলঅয় নির্মাণ করে স্মৃতি সৌধকে সাভারের অন্যান্য জায়গা আলাদা করা হয়। মূল স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের মোট আয়তন ৮৪ একর। আর স্মৃতিস্তম্ভ পরিবেষ্টন করে রয়েছে ২৪.৭ একর এলাকাব্যাপী বৃক্ষরাজিশোভিত একটি সবুজ বলয়।স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পর একটি গোষ্ঠি স্থপতি মাইনুলকে বেনামি চিঠি দিয়ে খুন করতে চেয়েছিল। তারপর থেকে পত্রিকায় ইচ্ছা করেই তাঁর নাম ভুল লেখা হয়েছিল। নকশার সম্মানী বাবদ তিনি ২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তাঁর আয়কর ধরা হয়েছিল ৫০ শতাংশ, মানে ১ লাখ টাকা। পরে তিনি রাজস্ব বোর্ডের কমিশনারকে ম্যানেজ করে ২০ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছিলেন। মানে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এমন বড় একটি কাজের জন্য স্থপতি মাইনুল মাত্র এক লাখ আশি হাজার টাকা পেয়েছেন।স্থপতি মাইনুলকে যে গোষ্ঠী বা চক্র বেনামে চিঠি দিয়ে খুন করার হুমকি দিয়েছিলেন, তারাই এই মহান শিল্পীর শেষ জীবনের সমস্ত দুর্দশার জন্য দায়ী হলেও, আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র, আমাদের পরবর্তী সরকারগুলো সেই দায় এড়াতে পারে না। কিছুতেই পারে না। এখন এই মহান শিল্পীর মৃত্যুর পর শোক জানানোর একটা হিড়িক পরে গেছে। এখন থেকে এই মহান শিল্পীর অর্জনকে বিক্রি করে বা মওকা হিসেবে নিয়ে আমাদের সাংস্কৃতির লাঠিয়ালরা আরো আয়-রোজগারের নানান ফন্দি ফিকির করবেন, এটাও এখনই নিশ্চিত করেই বলা যায়। কিন্তু যে মানুষটি আজ চলে গেলেন, তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৬২ বছর। ৬২ বছর কি এমন বয়স? অথচ রাষ্ট্র এই মহান শিল্পীর চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেনি, সেটাই আজ ইতিহাস।স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন ১৯৫২ সালের ৫ মে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার দামপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মুজিবুল হক এবং মায়ের নাম সৈয়দা রাশিদা হক। বাবার চাকরির সুবাধে তাঁর জীবনের অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে এই ফরিদপুর শহরে ৷ ফরিদপুর মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ১৯৬২ সালে তিনি ভর্তি হন ফরিদপুর জেলা স্কুলে ৷ ১৯৬৭ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন ৷ ১৯৬৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি স্থাপত্য বিদ্যায় (নকশা) ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে স্থাপত্য বিদ্যা পাশ করেন।১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত স্থপতি মাইনুল ৩৮টি বড় বড় স্থাপনার নকশা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য নকশাগুলো হল- জাতীয় স্মৃতিসৌধ (১৯৭৮), ঢাকা যাদুঘর (১৯৮২), ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইস্টিটিউট (১৯৭৭), বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন (১৯৭৮), চট্রগ্রাম ইপিজেড এর অফিস ভবন (১৯৮০), শিল্পকলা একাডেমীর বারো'শ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম এবং উত্তরা মডেল টাউন (আবাসিক প্রকল্প, ১৯৮৫)।এই মহান শিল্পী ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রীয় একুশে পদক ও ২০০৭ সালে শেলটেক পদকে ভূষিত হন। তাঁর ভাইপো নাফিজ বিন জাফর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র অস্কার পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি, যিনি অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল পুরস্কার জয়লাভ করেন। স্থপতি মাইনুলের বন্ধু ও এক সময়ের সহপাঠী স্থপতি বদরুল হায়দার জানান, মাইনুল হোসেনের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি দেশে ফিরলেই দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাঙালি জাতি চিরদিন এই মহান শিল্পীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র যতোই নির্বোধ হোক, আমাদের সরকারগুলো যতোই অবিবেচক হোক, আমাদের সংস্কৃতির চেতনাবাহী ইজারাদারা যতোই ধাপ্পাবাজি করুক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ এই মহান শিল্পীকে চিরদিন অন্তর দিয়ে ভালোবাসবে। পৃথিবীর যেখানেই বাংলা ভাষার মানুষ বসবাস করবে, তারা সবাই এই মহান মানুষকে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাবে। হে মহান শিল্পী, আপনাকে লাল সালাম। আমরা সারা জীবন আপনার অবদানকে মনে রাখব। সত্যি সত্যিই অন্তর দিয়ে মনে রাখব। আপনি যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন। ১১ নভেম্বর ২০১৪ঢাকা, বাংলাদেশ
false
hm
মশলার মাসালা আমরা তা-ই, যা আমরা খাই। সেই মাছ-মাংস-শাকসব্জিই তো। এ-ই তো খেয়ে আসছে মানুষ। তারপরও মানুষে মানুষে এতো ভেদাভেদ কেন? উত্তর মিলবে মশলায়। কিছুদিন আগ পর্যন্তও মশলা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। মশলার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভেদজ্ঞান এখনও হয়নি। তবে মনে হচ্ছে এই মশলাই আমাকে আমি করে তুলেছে। কারণ আমি তা-ই, যা আমি খাই। তবে মশলামূর্খ কি আমি একাই? আমার মতো দু'চারজন কি নেই এই বিশাল পৃথিবীতে? নিদেনপক্ষে সচলায়তনের পাঠককূলের মধ্যে? আসুন শুরু করি দারচিনি দিয়ে। এই দারচিনির লোভেই ইয়োরোপীয়রা রাস্তা শুঁকতে শুঁকতে হানা দিয়েছিলো ভারতবর্ষে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum zeylanicum, কারণ তা এককালে কেবল সিলোনে (শ্রীলঙ্কা) মিলতো। আরবরা এককালে দারচিনির একচেটিয়া ব্যবসা করেছে ইয়োরোপ আর চীনে। তাদের গল্পটা ছিলো এমন, দারচিনি পাখি বলে একটা পাখি আছে, যা দূর দেশের অজানা সব জায়গা থেকে দারচিনির কাঠি এনে বাসা বোনে। আরবরা সেই বাসা খুঁজে খুঁজে বার করে দারচিনি জড়ো করে বিক্রি করে। এই গল্প চতুর্দশ শতকের শুরু পর্যন্ত খেয়েছে লোকে। তারপর ধরুন এলাচ, Elettaria cardamomum। আমরা যদিও একে রান্নায় ব্যবহার করি, বা চা-য়ে খাই, আরব আর তুরস্কে লোকে একে হুঁকোতেও ফিট করে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এর ব্যবহারের প্রাধান্য ভেষজ ঔষধে। কিছুদিন আগ পর্যন্তও নেপাল ছিলো এলাচ উৎপাদনে শীর্ষে, এখন এগিয়ে গেছে গুয়াতেমালা। ২০০৭ সালে তারা ১৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এলাচ রপ্তানি করেছে। জ্যাঠা প্লিনি (Pliny the Elder) গজগজ করে বলেছিলেন, "এমন কোন বছর নেই যে ভারতবর্ষ রোমান সাম্রাজ্যের ট্যাঁক থেকে পাঁচ কোটি সেস্টারশিয়াস খালি করে নেয় না।" অভিযোগ ছিলো লবঙ্গের বিরুদ্ধেই। বহু প্রাচীন কাল থেকেই লবঙ্গ, Eugenia aromaticum, ইউরেশিয়া জুড়ে সমাদৃত ছিলো, এমনকি খ্রিষ্টপূর্ব ১৭২১ সালের একটি সিরীয় মাটির জারে লবঙ্গ পাওয়া গেছে। তবে এর উৎপত্তিস্থল ভারতবর্ষে নয়, ছিলো ইন্দোনেশিয়ার অল্প কয়েকটি দ্বীপে (আজকের মালুকু দ্বীপপুঞ্জে), যেগুলো মশলাদ্বীপ নামে পরিচিত ছিলো। সপ্তদশ আর অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ব্রিটেনে লবঙ্গের দাম ছিলো কমপক্ষে সমান ওজনের সোনার দামের সমান। লবঙ্গ শুধু স্বাদেই চমৎকার নয়, এটি নানা পৈটিক গিয়ানজাম সারায় (বিশেষ করে কৃমি)। জিরা (Cuminum cyminum) তো আরো খান্দানি জিনিস। সেই প্রাচীন সুমেরিয় সভ্যতার সময় থেকে জিরা ডানে বামে ছড়িয়ে পড়েছে। লোককথা অনুযায়ী জিরার উৎপত্তিস্থল পারস্যের কেরমুন এর আশেপাশে, ফার্সিতে তেলা মাথায় তেল ঢালার সমার্থ বাক্য হচ্ছে কেরমুনে জিরা নিয়ে যাওয়া। জিরা ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে মেক্সিকো পর্যন্ত বিপুল জনপ্রিয়। জিরা উৎপাদনে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, পাকিস্তান আর তুরস্ক। ম্যারাথনের যুদ্ধ সম্পর্কে আমরা জানি, কিন্তু সেই যুদ্ধক্ষেত্রের নামের অর্থ কি জানি সবাই? বাংলা করলে দাঁড়াবে, মৌরিগাছিয়া। ম্যারাথন মানে মৌরি, আংরেজিতে যাকে বলে ফেনেল, বৈজ্ঞানিক নাম Foeniculum vulgare। কথিত আছে, প্রমিথিউস মৌরির একটি শুকনো ডাল দিয়েই দেবতাদের কাছ থেকে আগুন চুরি করে এনেছিলেন। মৌরি মূলত ভূমধ্যসাগরের আশপাশের অঞ্চলের মশলা, সেখান থেকেই ডানেবামে ছড়িয়েছে। আমরা মৌরি, অর্থাৎ মৌরিগাছের বীজ খাই মশলায় আর পানে, তবে ইতালিতে এর কন্দও সালাদে ব্যবহৃত হয়, রান্নাও হয় সব্জি হিসেবে। মেথি বা ফেনাগ্রিক (Trigonella foenum-graecum) ও জিরার মতোই প্রাচীন খান্দানি বংশের জিনিস, খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দেও এর দেখা মিলেছে মেসোপটেমিয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে, তুত আনখ আমেনের সমাধিতে। ধারণা করা হয় এর মূল মধ্যপ্রাচ্যেই। মেথি আবিসিনীয় অঞ্চলে রুটি আর ঘি তৈরিতে বিপুলভাবে ব্যবহৃত হয়। মিশরে মেথির চা বেশ জনপ্রিয়। আরবে মিষ্টি তৈরিতে মেথি ব্যবহৃত হয়, সেখানে এটি হুলবা নামে পরিচিত। কালিজিরার নাম নিয়ে একটা হুলুস্থূলু কিন্তু চলমান। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nigella sativa, সেই গণ হিসেবে একে নাইজেলা সিড ডাকাটাই বোধহয় নিরাপদ, কারণ চলমান বিকল্প নামগুলি প্রায় সবক'টাই অন্য জিনিসকে নির্দেশ করে। কালিজিরার আক্ষরিক অনুবাদ আছে আংরেজিতে, ব্ল্যাক কিউমিন, কিন্তু সেটা মূলত অন্য একটি মশলা (Bunium persicum)কে নির্দেশ করে, যেটিকে হিন্দিতে শাহীজিরা বলা হয় (আমাদের দেশের রান্নায় এটি মোটেও প্রচলিত নয়)। পারসি দোকানে গেলে সিয়াদানা খুঁজতে পারেন, রুশ দোকানে গেলে চেরনুশকা, তুর্কি দোকানে গেলে চোয়রেক ওতু, হিন্দুস্তানি দোকানে গেলে কালঞ্জি। কিন্তু ইংরেজিতে একে মোটামুটি অন্য সব মশলার সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। মৌরিফুল (ফেনেল ফ্লাওয়ার), রোমান ধনিয়া (রোমান কোরিয়ান্ডার), পেঁয়াজবিচি (ব্ল্যাক ওনিয়ন সিড), কালোতিল (ব্ল্যাক সেজামে), কালো পার্সিজিরা (ব্ল্যাক ক্যারাওয়ে)। একটাই স্বস্তিদায়ক নাম আছে, ব্ল্যাকসিড। কালিজিরা সুগন্ধ আর ঔষধি গুণের জন্যে বিখ্যাত। সর্দি লাগলে কালিজিরার ভর্তা খেয়ে দেখতে পারেন, বেশ কাজে দেয়। কালিজিরাও অতি প্রাচীন কাল থেকে মিশর ও আরবে পরিচিত। ধনিয়াপাতা (সিলান্ত্রো বা চাইনিজ পার্সলি) আর ধনিয়াবীজ , দু'টোই আমাদের রান্নায় কমবেশি অবশ্যম্ভাবী। ধনিয়া (Coriandrum sativum) ঠিক কোথায় প্রথম ডোমেস্টিকেটেড হয়েছে তা জানা যায় না, তবে ধারণা করা হয় গ্রীসে। এখন পর্তুগাল বাদে অন্য কোন ইয়োরোপীয় স্থানীয় ডিশে ধনিয়া দেখা যায় না। এবার আসল কথায় আসি। পাঁচফোড়নে কোন পাঁচ মশলা আছে, জানেন? মেথি, কালিজিরা, সরিষা, মৌরি আর জিরা। পাঁচফোড়ন কেন লাগে জানেন? রসুনের আচার বানাতে। আর রসুনের আচার আমার সেইরকম দারুণ লাগে। মশলা নিয়ে এতো গবেষণার রহস্য সেখানেই। বহু মশলা জীবনে চোখেও দেখি নাই। উইকিপিডিয়ার কল্যাণে মশলার হাই রেজোলিউশন ছবি পেয়েছি, বৈজ্ঞানিক নামের সূত্র ধরে জার্মান আর আংরেজি নামও বার করেছি। এখন শুধু দোকানে গিয়ে কেনা বাকি। এখানে আফগান দোকানে অধিকাংশ মশলার গায়েই কোন নামধাম লেখা থাকে না, তুর্কি দোকানে লেখা থাকে তুর্কি নাম। কাজেই ছবিই ভরসা। যাবি কই? রসুনের আচার আমি খামুই খামু। ছবিসৌজন্যঃ উইকিমিডিয়া
false
rg
দ্বিতীয় জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসবে নৃত্যশৈলীর মনোরম প্রযোজনা 'মহাজনের নাও'!!! ১৭ নভেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি'র জাতীয় নাট্যশালায় নৃত্য সংগঠন 'নৃত্যশৈলী'র আয়োজনে পরিবেশিত হলো 'মহাজনের নাও'। নাট্যকার শাকুর মজিদ লিখিত 'মহাজনের নাও' নাটকটির নৃত্যরূপ নির্দেশনা দিয়েছেন নীলাঞ্জনা যুঁই। নৃত্যনাট্যটি বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের জীবন ভিত্তিক একটি প্রযোজনা। শাহ্ আবদুল করিমের জীবদ্দশায় তাঁর উপর দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর গবেষণা করেছেন বিশিষ্ট নাট্যনির্মাতা, প্রমাণ্যচিত্র নির্মাতা, ভ্রমণ কথা সাহিত্যিক, স্থপতি, গবেষক, শিক্ষক ও আধুনিক নগর-বাউল শাকুর মজিদ। দীর্ঘ ৭ বছরে তিনি নির্মাণ করেছেন শাহ্ আবদুল করিমের প্রামাণ্যচিত্র 'ভাটির পুরুষ'। আর শাহ্ আবদুল করিমের মৃত্যুর পর তিনি লিখেছেন গীতিনাট্য 'মহাজনের নাও'। গীতিনাট্য 'মহাজনের নাও' নাটকটি মঞ্চে এনেছে সুবচন নাট্যসংসদ। আর এটি নির্দেশনা দিয়েছেন নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী। ২০০৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছরে প্রায় ১০ বার বাউল শাহ্ আবদুল করিমের মুখোমুখী হন শাকুর মজিদ। এসময় হাওরের ঢেউ খেলানো জল, কালনী নদী, নৌকাবাইচ, ধলমেলা, উজানধলের ওরস, সিলেটের প্রত্যন্ত উপশহর দিরাই, বাউল শাহ আবদুল করিম ও তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নানাভাবে মিশেছেন তিনি। বাউল শাহ আবদুল করিমের উপর যাদের আগ্রহ রয়েছে, যারা তাঁর গান নিয়ে কাজ করেছেন, গবেষণা করেছেন, নানাভাবে নানান পর্যায়ে যারা শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের সঙ্গে নানান পর্যায়ে নানাভাবে কথা বলেছেন তিনি। এসব করতে গিয়ে নগর-বাউল শাকুর মজিদ যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, সেই সব স্মৃতিচারণই অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায়, মনের মমতা মিশিয়ে তুলে ধরেছেন তাঁর নতুন স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘ভাটির পুরুষ-কথা’য়।আর শাহ্ আবদুল করিমের উপর রচিত শাকুর মজিদের গীতিনাট্য 'মহাজনের নাও'কে এবার নৃত্যনাট্যে রূপ দিল সিলেটের নৃত্য সংগঠন 'নৃত্যশৈলী'। জীবিত ও লোকান্তরিত শাহ্ আবদুল করিমকে শাকুর মজিদ নানান পরিশ্রমী অন্বেষাণে নানান ভঙ্গিতে দেখার চেষ্টা করেছেন। যা এই সময়ের বাংলাদেশে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে গীতল নাট্য মঞ্চায়ন খুব বেশি হয়নি। কারণ গীতল নাট্য রচনা করা যেমন একটু কঠিন, তেমনি এর টিউন, রিদম, পারফেকশান, হিস্ট্রি ও জীবনাচার পরিস্ফূটনের কাজটি অত্যন্ত দুরূহ বটে। বাউল শাহ্ আবদুল করিমের বালকবেলা থেকে জীবনাবসান পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়েই এটি রচনা করেছেন নাট্যকার শাকুর মজিদ। সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান বাউল শাহ্ আবদুল করিম। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি জীবনের তাগিদে রাখালের চাকরি নেন। ভোরে গরু-মোষ নিয়ে চলে যেতেন মাঠে। দিনভর গরু চরিয়ে সন্ধ্যায় মনিবের বাড়ি ফিরতেন। রাতের খাবার খেয়ে গিয়ে বসতেন নসিব উল্লাহ’র ঘরে। করিমের বাবার চাচা নসিব উল্লাহ'র ঘরে বসতো ভক্তিমূলক গানের আসর। এভাবে ধীরে ধীরে বালক বয়সেই করিমকে পেয়ে বসে গানের নেশা। কিশোর করিমের মনে তখন নানা প্রশ্ন ও ব্যাপক জিজ্ঞাসা কাজ করতে শুরু করে। দাদার কাছ থেকে দেহতত্ত্ব ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে তালিম নেন। করিমের গ্রামের ইমাম কমরউদ্দিনের কাছ থেকে তিনি শেখেন শরিয়ত ও মারফতের বিষয়াদি। এভাবে যেসব জিজ্ঞাসা তাঁর মনে ভর করে সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকেন তিনি। আর সেসব প্রশ্ন ও উত্তর আত্মস্থ করে করেই বেড়ে ওঠেন উজানধল গ্রামের উজ্জ্বল কিশোর শাহ্ আবদুল করিম। এভাবে এক সময় নিজেই প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়েন গানের দিকে। গানই হয়ে ওঠে তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-নেশা। এই গান তাঁকে মানসিক শান্তি দিলেও সামাজিকভাবে কিন্তু মোটেও স্বস্তি দেয়নি। ঈদের দিন নামাজ পড়তে গেলেন বালক করিম। নামাজের জামাতে মোল্লা-মুরব্বিরা আপত্তি তুললেন করিমের ব্যাপারে। করিম নাকি ধর্মবিরোধী কাজ করে বেড়ায়! গানবাজনায় ডুবে থাকে। তাঁর কাজ বেশরা ও বেদাতি। এ ধরনের শরিয়তবিরোধী কাজ আর কখনো করবে না বলে তওবা করলেই কেবল করিম জামাতে নামাজ পড়তে পারবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়। শেষপর্যন্ত ফতোয়াবাজ মোল্লা এবং ধার্মিক মুরব্বিদের হুমকিতে ভীত হয়ে করিম তাঁর বেড়ে ওঠার, ভালোবাসার উজানধল গ্রাম ছেড়ে রওনা দেন ভিন গাঁয়ের পথে। সঙ্গী তাঁর একতারা আর কণ্ঠে মধুর গান। গানচর্চায় কোনো খামতি নেই। মাটির গন্ধমাখা তাঁর রচিত সেসব গান ক্রমশ উঠে আসতে থাকে মানুষের মুখে মুখে। এভা্বে নাম-যশও তাঁর উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। কিন্তু দুঃসহ দারিদ্র্যতা কালো ছায়ার মতো লেপ্টে থাকে তাঁর জীবনে। এক পর্যায়ে আবার গ্রামের মানুষ করিমকে নিজের গ্রামে বসবাস করার সুযোগ দেয়।করিমের দুই শিষ্য সুনন্দ গোসাই ও আকবর আলী। সুনন্দ হিন্দু আর আকবর মুসলিম। সুনন্দ করিমের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার পর থেকে করিমের বাড়িতেই থাকে, খায়, ঘুমায়। এক পর্যায়ে মারা যায় সুনন্দ। কিন্তু সুনন্দের আত্মীয়রা সনাতন ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত করিম অনন্যোপায় হয়ে সুনন্দকে তুলসীতলায় কবর দেন। সুনন্দ’র মৃত্যুর কিছুদিন পরেই মারা যায় অন্য শিষ্য আকবর। এবার আকবরের জানাজা পড়াতে যথারীতি ইমাম সাহেব নারাজ। এভাবে নানান প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই করিম কেবল গান নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেন। আর ভুবনমোহিনী গান দিয়ে জয় করেন প্রতিকূল পরিবেশ। ফলে এক সময়ে যারা তাঁর সাথে রূঢ আচরণ করেছে, তারাও পরবর্তীকালে নমনীয় হতে বাধ্য হয়। তাই হয়তো করিমের মৃত্যুর পর নামাজে জানাজা পড়ানোর প্রাক্কালে ইমাম সাহেব দুই বার জানাজা পড়ার ঘোষণা দেন। কারণ বর্ষায় মাঠঘাট তখন ডুবে একাকার। করিম ভক্তদের সবাইকে একবারের জানাজা নামাজে ধরবে না। বাউল শাহ্ আবদুল করিমের জীবনীভিত্তিক সম্পূর্ণ পয়ার ছন্দে রচিত শাকুর মজিদের 'মহাজনের নাও' গীতল নাট্য বাংলা সাহিত্যে এক অভিনব সংযোজন। বাউল সাধক ও শিল্পী শাহ্ আবদুল করিমের জীবন, সাধনা, দর্শন ও কর্মকে উপজীব্য করে রচিত ‘মহাজনের নাও’ নাটকটি মূলত দেহতত্ত্বনির্ভর, যাতে শিল্পীর জীবনের নানা জটিলতা, সংকট এবং তার থেকে উত্তরণের বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে। ব্রিটিশ আমলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শিল্পীর এই জগতে আবির্ভাব। অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় সংগ্রামমুখর জীবনে শিল্পী নিজেকে আবিষ্কার করার পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তাকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। এই প্রচেষ্টাতেই তিনি জীবনভর সাধনা করেছেন। নাটকে দেখা যায় বাউল করিম রাখাল বালক, গরুর পাল নিয়ে ছুটে চলে গ্রামের মেঠোপথে, দোতারা হাতে নদীর তীরে হাঁটে, রাখাল বালক হাঁটতে হাঁটতে গান বাধে। তাঁর গানে থাকে ভাটির কথা, অনাহারী কৃষকের কথা। গানে গানে মানুষের দুঃখে করিম কাঁদে। করিমের কণ্ঠে উঠে আসে হাওর প্রদেশের গান; গানে উঠে আসে ভাটির টান। ভাটি গ্রাম উজানধলের মসজিদের ইমাম বাউল করিমকে গান-বাজনা করে বলে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিতে চান। আকবর, রুহী, বনেশসহ ভাটি অঞ্চলের বাউলের দল করিমের পিছু পিছু দলে এসে ভিড়ে যায়। সবাই মুর্শিদ মেনে করিমের শিষ্য হতে চায়। ভাটি অঞ্চল আর হাওর প্রদেশের নদীর তীরে রাখাল বালক থেকে দিনে দিনে বাউলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে দিন যায় মাস যায় বছর যায়। পরিণত বয়সে এসে করিমের মনে ভাবনার উদয় হয় কোন এক মহাজনের কাছ থেকে পাওয়া ধার করা নৌকা, যে নৌকার মালিক তিনি নন, চালিয়ে নেয়াটাই ছিল শুধু তার দায়িত্ব। এখানেই গীতিনাট্য বা নৃত্যনাট্যটি শেষ হয়। 'মহাজনের নাও' গীতিনাট্যে শাকুর মজিদ কেবল বাউল শাহ্ আবদুল করিমের গান ব্যবহার করেছেন। কিন্তু করিমের গানের যে মূল সুর সেটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা বিকৃত হয়েছে নৃত্যনাট্যে। নৃত্যশৈলী'র নৃত্যনাট্য প্রযোজনায় এটি ইচ্ছাকৃত নাকি নিজেদের অজান্তে এটা আমার পক্ষে বলা একটু মুশকিল। নির্দেশক নীলাঞ্জনা যুঁই এটি ভালো বলতে পারবেন। নৃত্যনাট্যে বিভিন্ন দৃশ্যে নানান ভঙ্গিতে নানান মাত্রার কম্পোজিশান বেশ চোখ জুড়ানো। কিন্তু নৃত্যশিল্পীদের কিছু কিছু দৃশ্যে একই ধরনের ভঙ্গির পুনঃপুনঃ ব্যবহার কিছুটা একঘেয়েমি উদ্রেক করে। এছাড়া কথকের টানা গল্প বলার ঢঙটিও হয়তো এই একঘেয়েমি উদ্রেক করার পেছনে দায়ী। কথককে ব্যাকগ্রাউন্ডে অডিও মাধ্যমে না রেখে বাস্তবে মঞ্চে দেখানো গেলে হয়তো 'মহাজনের নাও' নৃত্যনাট্যটি আরো বেশি উপভোগ্য হতে পারতো। আমার কাছে এই নাটকের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা মনে হয়েছে সেট ও অঙ্গসজ্জ্বায়। নাটকের আখ্যান ও গীতিনাট্যের যে চমৎকারিত্ব, যে মুন্সিয়ানা, তা যেন কস্টিউম ও সেটের দুর্বলতায় কিছুটা ম্লান হয়েছে বলেই আমার ধারণা। কস্টিউমের রঙ ও ডিজাইন নির্বাচনে নির্দেশক আরো যত্নবান হলে এবং নাটকের আখ্যানকে মাথায় রেখে চাহিদা মাফিক সেট নির্মাণ করলে, এই প্রযোজনাটি আরো সুন্দর হতে বাধ্য। সিলেটের নৃত্য সংগঠন নৃত্যশৈলীর কোনো প্রযোজনা হিসেবে 'মহাজনের নাও' আমি প্রথম দেখলাম। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা নেওয়া নৃত্যশৈলী সংগঠনটি ২০০৬ সাল থেকে পেশাদারি প্রযোজনা করছে। মঞ্চে নিয়মিত পরিবেশনা ছাড়াও নৃত্যশৈলী প্রায় ১৫টি প্রযোজনা করেছে। নির্দেশক নীলাঞ্জনা যুঁই সংগঠনটির প্রধান প্রযোজক ও নির্দেশক। তাই অভিজ্ঞতা ও উৎকর্ষের দিক বিবেচনায় নৃত্যশৈলী'র কাছে 'মহাজনের নাও' নৃত্যনাট্যটি আরো মনোমুগ্ধকর পরিবেশনাই আমার কাম্য ছিল। আমার সেই প্রত্যাশা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এ বছর ১৪ থেকে ২২ নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত আয়োজন করছে দ্বিতীয় জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসব ২০১৬। আর উৎসবের চতুর্থ দিনে জাতীয় নাট্যশালায় পরিবেশিত হলো নৃত্যশৈলী'র নৃত্যনাট্য প্রযোজনা 'মহাজনের নাও'। শিল্পকলা একাডেমি দ্বিতীয় জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসব পালন করলেও হলে দর্শক আনার জন্য শিল্পকলার কোনো আগ্রহ আমার চোখে পড়েনি। দর্শক শূন্য নাটক দেখে আসলে নাটকের আসল টেন্টামেন্ট-ই ধরা যায় না। আমাদের দেশে উৎসবের কোনো কমতি নেই। টাকার শ্রাদ্ধেরও কোনো কমতি নেই। কিন্তু যাদের জন্য এই আয়োজন, সেই দর্শক কীভাবে নাটক দেখতে আসবে, সেখানে আয়োজকদের কোনো ক্যারিশমা দেখি না। বাংলাদেশে কতিপয় নাটকের দলের দর্শকরাই কেবল এ ওর নাটক দেখে সময় করে। নাটকের বাইরের সাধারণ দর্শককে কীভাবে হলমুখী করা যায়, সেই ভাবনার জায়গাটি বিগত ৪৫ বছরেও গুরুত্ব পায়নি। অথচ নাসিরনগরে সনাতনদের বাড়িঘর পোড়ানোর লাইন খুব লম্বা হয়। গাইবান্ধায় সাঁওতালদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করায় প্রচুর লোক সমাগম হয়। কেবল সিনেমা, নাটক, আর্ট-কালচারের উৎসবগুলো সারা বছর জনশূন্য। তার মানে আমাদের শিল্পচর্চার কোথাও এখনো একটা বড় ধরনের ফাঁক আছে। সাধারণ পাবলিককে শিল্পের প্রতি আকর্ষন করানোর কাজে আমাদের আয়োজকদের নানান কিসিমের বাহানার আড়ালে বড় ধরনের ব্যর্থতা আছে। আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি কেবল গুটি কতক ব্যক্তি ও সংগঠনের এক দুর্বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে কিনা তা এখন ভেবে দেখার সময়। নইলে খুব সুন্দর সুন্দর নাটকেও কেন দর্শক আসবে না? এমনিতে যে দেশে রাস্তায় দুইটা রিক্সায় ধাক্কা লাগলে যেখানে কয়েকশ লোক জড়ো হয় তামাশা দেখার জন্য, সেখানে আর্ট-কালচারের নামে আমাদের শিল্পকলা একাডেমি বা বাংলা একাডেমিতে যে চর্চা হচ্ছে, সেখানে কেন সেই একই আবালবৃদ্ধবনিতাদের ভিড় নেই? নাকি সাধারণ পাবলিককে এই তামাশার বাইরে রাখতে পারলেই আর্ট-কালচার থেকে চুরি-চামারি করতে কোনো কোনো পক্ষের খুব সুবিধা হয়?সবশেষে সিলেটের নৃত্য সংগঠন নৃত্যশৈলীকে ধন্যবাদ 'মহাজনের নাও' পরিবেশনার জন্য। নির্দেশক নীলাঞ্জনা যুঁইকে অভিনন্দন। অভিনন্দন 'মহাজনের নাও' গীতিনাট্যের রচয়িতা শাকুর মজিদ মহাজনকেও। শাকুর ভাই আমাকে না জানালে এমন সুন্দর একটি নৃত্যনাট্য আমি আসলে মিস করতাম। আগামীতে নৃত্যশৈলী আরো সমৃদ্ধ পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবে এমন প্রত্যাশা রইল। ..................................১৮ নভেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:৪৩
false
mk
বাংলাদেশ উন্নয়নের দেশ আইএসএসের নয় ইসলামিক স্টেট (আইএস) বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যায় লিপ্ত এই সন্ত্রাসী এবং উগ্রবাদী সংগঠনটি সবার কাছে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে উন্নত দেশগুলোতে আইএসের নগ্ন হামলায় প্রাণ হারিয়েছে নিরীহ মানুষ। এর ফলে উন্নত দেশগুলো আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্লগার, বিদেশি, লেখক, প্রকাশক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক হত্যার মতো অনেক মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটেছে। এসব নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর পরই কোনো না কোনো ধর্মীয় লেবাস পরিধানকারী জঙ্গি সংগঠন দায় স্বীকার করেছে। এমনকি আইএসও’র দায় স্বীকার করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে আইএস সক্রিয়। কিন্তু আমাদের দেশে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। সংশয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আসলে কি বাংলাদেশে আইএস আছে নাকি নেই? একই সঙ্গে ভাবনার বিষয়, দেশ যখন সব দিক দিয়ে অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির পথে, ঠিক তখনই আইএস বিতর্ক ছড়ানো হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আন্তর্জাতিক কিছু মহল জোর করেই বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চায়। তবে কি আইএসের দোহাই দিয়ে এদেশেও মধ্যপ্রাচ্যের মতো নগ্ন হামলা চালাতে সচেষ্ট উন্নত দেশগুলো? আমরা বিশ্বাস করি, এই দেশ কেবলই উন্নয়নের দেশ, আইএসের দেশ নয়। সম্প্রতি আইএসের মুখপাত্র অনলাইন সাময়িকী দাবিক-এর ১৪তম সংস্করণে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে সংগঠনটির কথিত বাংলাদেশ প্রধান শেখ আবু-ইব্রাহিম আল-হানিফ বলেছেন, কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে শক্ত ঘাঁটি গড়তে চায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এরপর তারা ভারত ও মিয়ানমারে হামলা করতে চায়। জামায়াতে ইসলামীর মাঠ পর্যায়ের কিছু অনুসারী এরই মধ্যে আইএসে যোগ দিয়েছে বলেও দাবি করা হয়। এই সংস্করণটি অনলাইনে প্রকাশিত হয়। দাবিকে সাক্ষাৎকার প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই প্রথম আইএস কথিত ‘বাংলায় খিলাফতের যোদ্ধা’ দলের আমিরের নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করল। এর আগে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে ১৫টি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। এর মধ্যে দুই বিদেশি নাগরিক, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান ধর্মযাজক ও পুলিশ হত্যা, আহমদিয়া মসজিদ ও শিয়া মসজিদে হামলাসহ শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলা হয়। আইএসের কথিত এই নেতা এ দেশে বিভিন্ন ‘ধর্মদ্রোহী’ গোষ্ঠী ও ‘মুরতাদ’ দল তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এখানে প্রথমত, কিছুসংখ্যক রাফিদা (শিয়া) রয়েছে যাদের মদত ও অর্থ দিচ্ছে ইরান সরকার। এরপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘কাদিয়ানি’ (আহমদিয়া) রয়েছে। তৃতীয়ত, বহুসংখ্যক ‘ধর্মত্যাগী’ রয়েছে, যারা বিভিন্ন ‘দেশি-বিদেশি মিশনারি ও এনজিওগুলোর’ ধোঁকাবাজি প্রচারণার ফলে ধর্মান্তরিত হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ‘কবর-উপাসক সুফি’ ও ‘ভণ্ড সাধুরা’, যারা লোকজনকে ‘শিরক’ করতে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আবু-ইব্রাহিম বলেন, সম্প্রতি সরকার দলটির অনেক নেতাকে কারাবন্দি করেছে ও আদালতের রায় অনুযায়ী ফাঁসি দিয়েছে। আবু-ইব্রাহিম দাবি করেন, জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়ের কিছু অনুসারী ও সমর্থক এরই মধ্যে আইএসে যোগ দিয়েছে। তবে দলটির নেতারা এখনো তাদের আগের সেই ‘ধ্বংসের পথ’-এ অবিচল রয়েছে। এদিকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের মতো জঙ্গি সংগঠন পদ্মাপাড়ে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের স্বঘোষিত শাখা হিসেবে কাজ করছে বলে আশঙ্কা ভারতীয় গোয়েন্দাদের একাংশের। বাংলাদেশে পর পর মুক্তমনা চিন্তাবিদদের কয়েকজন নিহত হয়েছেন। ভারতীয় গোয়েন্দারা নিজস্ব অনুসন্ধান থেকে জেনেছেন, ওইসব আসলে আনসারুল্লাহ আর জেএমবিরই কাজ। ভারতীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার মতো রাজ্যের মানুষের একটা বড় অংশের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও ভাষা অনেকটাই এক। কাজেই আইএস বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে পারলে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামেও সহজেই পারবে। এ ছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশে আইএস (ইসলামিক স্টেট) আছে এবং তারাই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। সম্প্রতি দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান হত্যার তদন্ত বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বার্নিকাট। জুলহাস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, যে ধরনের হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে তা পুলিশ বা সরকারের একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয়, কারো পক্ষেই একা তা সম্ভব নয়। জয়েন্টলি কাজ করতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চাচ্ছে। অবশ্য এ সময় তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত বৈঠকে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসাই করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই আইএসের এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের কথিত প্রধানের সাক্ষাৎকারকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তেমন কোনো সংগঠন বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে ঘাঁটি বানিয়ে প্রতিবেশী কোনো দেশে আক্রমণের সুযোগও কাউকে দেয়া হবে না বলে প্রত্যয় জানিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র, দেশী এবং আন্তর্জাতিক সেই ষড়যন্ত্রের একটি বহিঃপ্রকাশ। গত দেড় বছরে বাংলাদেশে ব্লগার ও বিদেশি হত্যা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিভিন্ন ঘটনায় আইএস দায় স্বীকার করেছে বলে খবর এলেও সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বরাবরই এ দেশে ওই সংগঠনের তৎপরতার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। রাজধানীর কলাবাগানে দুর্বৃত্তদের হামলায় জোড়া খুনের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে।’ হত্যার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্রকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, ‘দেশ যখন সব দিক থেকে সামনে এগোচ্ছে, তখন তারা বেছে বেছে গুপ্ত ও জঘন্য হত্যা সংঘটিত করছে। এ জাতীয় হত্যাকাণ্ড সাধারণ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয় নয়। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য পরিকল্পিত গুপ্ত হত্যাকাণ্ড। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা রয়েছে তা সবাই জানেন।’ আমাদের মর্মন্তুদ অভিজ্ঞতা হলো, আইএসের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ আমরা মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিনিয়ত অবলোকন করছি। তাদের বর্বর হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ। শিশুরাও তাদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। একের পর এক হামলায় ভেঙে পড়ছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। গৃহহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। কেবল আরব দেশে নয় আইএসের আক্রমণের শিকার হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোও। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় একই সময়ে কয়েকটি স্থানে বোমা হামলা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। হামলার দায়িত্ব কেউ স্বীকার না করলেও মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ২২ মার্চ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের ইয়াবেনতেম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ের নিকটবর্তী মালবিক মেট্রো স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩১ জন নিহত এবং ২৭০ জন আহত হন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলাগুলোর দায় স্বীকার করেছে। তবে আশার কথা হলো বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিচ্ছিন্ন যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে তা কেবলই সাময়িক উত্তেজনা মাত্র। আইএস হামলার সঙ্গে এসব হত্যাকাণ্ডের বড় কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এর আগেও আমরা দেখেছি তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একটি রাজনৈতিক দল একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে টানা অবরোধ ঘোষণা করেছিল। অবরোধ চলাকালে দেশের নিরীহ সাধারণ মানুষকে পেট্রলবোমায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় শত শত যানবাহন এবং সম্পদ। নির্বাচন ঠেকানোর নামে দেশের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুর্বৃত্তদের টাকা দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয় বরং এ সবই ছিল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। কাজেই এখন যে সব হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হচ্ছে তাতে কোনো বিশেষ মহলের যে মদত নেই তা বলা যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে হয়তো আইএস নেই। কিন্তু তাদের বংশধররা রয়েছে সক্রিয়। ভিন্ন ভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠনগুলো বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এসব জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ প্রদানকারী সংগঠনেরও সম্পর্ক রয়েছে। দেশীয় এসব জঙ্গি সংগঠনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তার নানা সমীকরণও নজরে আসে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে ধর্মের নামে রাজনীতি নতুন কিছু নয়। ধর্মকে পুঁজি করে একটি মহল সর্বদা নিজেদের ফায়দা লোটার চেষ্টায় নিয়োজিত। আমরা দেখেছি দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছিল তখন অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য বলে এদেশ কখনো আইএস বা জঙ্গিবাদীদের দেশ হতে পারে না। এ দেশ আশাবাদের দেশ। নতুন স্বপ্নপ বোনার দেশ, এগিয়ে চলার দেশ, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়ার দেশ। আমরা উন্নয়নে বিশ্বাসী। বাঙালি জানে বিজয় ছিনিয়ে আনতে। বাংলাদেশে আইএস আছে এমন কথা বলে বাঙালির উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতাকে কেউ রুখতে পারবে না। উন্নয়নের মহাসড়কে থেকে দেশকে আর কেউ পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। শত বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবেই। তরুণরাই এদেশে সম্ভাবনা। তারা দেশ বিনির্মাণে অবদান রাখছে। কিন্তু তার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা যথাযথভাবে বজায় রাখা এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন চ্যালেঞ্জের বিষয়। এক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনগুলো দমনে যথেষ্ট সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। কোনো চক্রান্ত যেন আমাদের অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করতে না পারে সে বিষষে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। তবে এটাই সত্য যে, এ উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলোকে দমন করা কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়। দেশের আপামর জনসাধারণকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামাজিক প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।মিঠুন মিয়া লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:৫০
false
mk
গণআন্দোলন নয় বিএনপি-জামায়াতের টার্গেট হত্যা ও ধ্বংস রাজনীতিতে গণআন্দোলনের সংজ্ঞা রয়েছে। সর্বোপরি আমাদের দেশ হচ্ছে আন্দোলন-সংগ্রামের দেশ। এই মানচিত্রে জাতীয় চেতনার ভ্রƒণ সৃষ্টি হয়েছে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তারপর ৫৪-এর নির্বাচনি সংগ্রাম, ’৬২ ও ’৬৪-এর সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ’৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৯ সালে ১১-দফার গণঅভ্যুত্থান এবং সব শেষে সশস্ত্র সংগ্রামের ভেতর দিয়ে আমরা স্বাধীন স্বদেশ পেয়েছি। স্বাধীন দেশেও ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সামরিক কর্তাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে আমাদের অগ্রসর হতে হয়েছে। তাই আন্দোলন বলতে কি বোঝায় তা কমবেশি সবাই জানে। মানুষ যখন কোনো দাবি আদায়ের জন্য সোচ্ছার হয়ে ক্রমেই বেশি বেশি করে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে ফয়সালা করতে চায়, তখন তাকে বলে আন্দোলন। রাস্তায় মানুষ না নামলে আন্দোলন হয় না। তাই বাংলাদেশের প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান কবিতার ছন্দে লিখেছিলেন, ‘এখানে এসেছি কেন এখানে কি কাজ আমাদের/লোক লোক চোখের পাতায় লোক হৃদয়ের প্রতিটি স্কয়ারে লোক।’অর্থাৎ লোক ছাড়া আন্দোলন সোনার পাথর বাটির সমতুল্য। গণসম্পৃক্ততাই আন্দোলনের প্রধান বিষয়। ধীরে ধীরে সচেতন প্রয়াসের ভেতর দিয়ে জনগণকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য স্বতঃস্ফূর্ততা সৃষ্টি করতে হয়। প্রচার, জনসভা, পথসভা, মিছিল হয় এর প্রধান বাহন। আন্দোলনের গতিধারার ভেতর দিয়েই জনগণ আন্দোলনের রূপ বেছে নেয়। ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়ে রাস্তায় নামো’ কিংবা ‘আমরা তোমাদের ভাতে মারবো, পানিতে মারবো’ প্রভৃতি কথাগুলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন গণবিস্ফোরণের চূড়ান্ত পর্বে। ওই কথাগুলো বলার সঙ্গে সঙ্গে ‘তোমরা আমাদের ভাই’ শব্দটিও উচ্চারণ করে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পথ খোলা রেখেছিলেন। এটাই মানুষকে নিয়ে রাজনীতির আর্ট, যার ভেতর দিয়ে মানুষ ন্যায়সঙ্গত দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে। রাজনীতি হয়ে ওঠে গৌরবম-িত। তাই আমরা গৌরবম-িত ইতিহাস সৃষ্টিকারী জাতি।বিজয়ের মাস ডিসেম্বর যদি শুরু না হতো, তবে হয়তো বা অন্যভাবে কলামটা শুরু করতাম। এই মাসের এ কলামেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও শহীদদের স্মৃতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলতে হয়, আসলেই কি ছিলাম আমরা; আর ৪২ বছর পর কি হয়েছি আমরা! গৌরবম-িত ঐতিহ্যকে আমরা আজ জলাঞ্জলি দিতে বসেছি। এখনো মনে পড়ে স্বাধীনতার পর ঠিক ৪০ বছর আগে ১৯৭৩ সালে বিশ্ব যুব উৎসব হয়েছিল বার্লিনে। ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে নিহত যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে বিশাল এক প্রতিনিধিদল নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম উৎসবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কমরেড মণি সিংহ ও জেনারেল ওসমানী। সব দেশের প্রতিনিধি ছিল উৎসবে। কি সম্মান ও মর্যাদা আমাদের। কারণ আমরা যে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের শেষ দেখে তারপর গেছি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে; ছিনিয়ে এনেছি বিজয়। কিভাবে কি করেছি আমরা তা জানতে ছিল সকলের প্রবল অনুসন্ধিৎসা। রাস্তায় রাস্তায় ‘জয় জয় নবোজাত বাংলাদেশ’ গানটি গাওয়া হতো আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে। বিজয়ী একজন বাঙালি যুবকের অটোগ্রাফ পাওয়ার জন্যকিভাবে যে বিশ্বের ছোট বড় সকল দেশের যুবক যুবতীরা গায়ের জামা বা খাতা এগিয়ে দিতো, তা স্মরণে আনলে এখনো অভিভূত হতে হয়।কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেলো আমাদের! ভাবলে বিজয়ের গৌরব ও আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। এর জন্য দায়ী কে? কোনো কোনো ব্যক্তি গোষ্ঠী মহল রাজনীতিকদের দায়ী করেন। আর এখন তো বলা ফ্যাশন হয়ে গেছে যে, যতো দোষ নন্দ ঘোষ দুই নেত্রী। মহিলা বলেই নাকি ঝগড়া মেটাতে পারেন না। ইত্যাদি ইত্যাদি। ক্ষুদ্র এ কলামে বেশি বলার সুযোগ নেই। তবে বিজয়ের মাসে এটাই বলতে হয়, স্বাধীনতার পর তৎকালীন অর্থনৈতিক সংকটাপন্ন বিশ্ব প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পুনর্গঠন-পুনর্বাসনের বিরাট কর্মযজ্ঞের মধ্যেও আমাদের ইতিহাসে প্রথম একটি গণতান্ত্রিক ও গণমুখী সংবিধান রচনা করে জাতি অগ্রসর হবার পথ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু একদিকে সরকারের অভ্যন্তরে ‘চাটার দল’-এর অপতৎপরতা আর অন্য দিকে উগ্র বাম ও পরাজিত শক্তির সমন্বয়ে গঠিত ‘রাতের বাহিনীর’ নাশকতামূলক কাজ রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনকে অরাজক-অস্থির করে তোলে। এর সঙ্গে যোগ হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর পরও জাতি মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্রিয় ও সচেষ্ট ছিল।কিন্তু পাকিস্তানি আমলের মতো ক্যু-হত্যা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সব কিছুকে পাল্টে দেয়। অস্ত্রের জোরে জন্মের উৎসের গৌরব ও ঐতিহ্য থেকে জাতিকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়। চালু করা হয় ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ এবং হত্যা-ক্যু-পাল্টা ক্যু ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারা। সামরিকীকরণ ও বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘রাজনীতি রাজনীতিকদের জন্য ডিফিকাল্ট’ করে পাকিস্তানি আমলের রাজনৈতিক ধারাকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যেই জন্ম লাভ করে আইয়ুবের কনভেনশন মুসলিম লীগের সঙ্গে সব দিক থেকে মিল থাকা দল বিএনপি। জামায়াত দলটিও পায় পুনরুজ্জীবন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশকেই মিনি পাকিস্তান বানানোর প্রচেষ্টা চলে। এরই ধারাবাহিকতায় চলছে চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে রাজনীতি। তাই রাজনীতিক বা ব্যক্তি বিশেষকে বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী না করে দায় খুঁজে নিতে হতে আমাদের রক্তাক্ত ও অনভিপ্রেত ইতিহাসের মধ্যে।অনভিপ্রেত এই ইতিহাসের ধারায়ই স্বাধীন বাংলাদেশ আমলে আবার শুরু হয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রাম। সামরিক শাসক জিয়ার আমলে ১০ দলীয় জোটের আন্দোলনের ভেতর দিয়ে তা অগ্রসর হয়। ভাবলে বিস্মিত হতে হয়, সামরিক শাসনের মধ্যে সামরিক ফরমানের লাইসেন্স নিয়ে দল করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ১০ দলকে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আর পরে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৪ সপ্তাহ আগে বিরোধী জোটকে দেওয়া হয় নির্বাচনি কাজের সুযোগ-সুবিধা। সামরিক আইন বহাল থাকায় তা হয়ে দাঁড়ায় খাতাপত্রের ব্যাপার। তবে ওই পর্যায়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অতীত ঐতিহ্য তথা অসাম্প্রদায়িক ও নিয়মতান্ত্রিক রূপটি অক্ষুণœ থাকে। কিন্তু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেনাশাসক এরশাদ আমলে এই আন্দোলনে দুই অশুভ উপাদান যুক্ত হয়। প্রথমত ১৫ দলীয় ও ৭ দলীয় জোটের যুগপৎ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সুকৌশলে পবিত্র ধর্ম অপব্যবহারকারী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত যুক্ত হয়ে পড়ে ওই আন্দোলনে। দ্বিতীয়ত শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় ককটেলবাজি, যাকে তখন বলা হতো ফুটফাট।প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি আমলে ষাটের দশকের গণজাগরণের শুরুর দিনগুলোতে জামায়াতসহ পবিত্র ধর্ম অপব্যবহারকারী দল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত ছিল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক শাসক আইয়ুব আমলে কৌশলী ঐক্য তখনো হয়েছে; কিন্তু জাতীয় মূলধারার আন্দোলন সহজেই ওই শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে ওই দিনগুলোতে আন্দোলনের মধ্যে ঘেরাও-জ্বালাও-পোড়াও স্থান করে নিতে চেয়েছিল; কিন্তু গণসম্পৃক্ততা তা হতে দেয়নি। কিন্তু এটাই বাস্তব যে, এরশাদ আমলে যুক্ত হওয়া ওই দুই অশুভ উপাদানকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়নি। ক্ষুদ্র এ কলামে বেশি কথায় না গিয়ে বলা যায়, এটা পারা যায়নি কারণ পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়ে জাতীয় রাজনীতি ঝুঁকে গেছে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে পরিত্যক্ত ডান প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির দিকে। হিসাবটা হলো এই যে, ’৭০-এর নির্বাচনে ভোট ছিল গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে শতকরা ৭০ ভাগের ওপরে আর এখন অর্ধাঅর্ধি ভাগ হয়ে গেছে ভোট অসাম্প্রদায়িক আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে। এ দিকে সমদূরত্বের নীতি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নিরপেক্ষ দাবিদার সুশীল সমাজ ও কিছু রাজনৈতিক দল; তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্রশ্রয়ও পাচ্ছে ওই অপশক্তি। তদুপরি অর্থ ও পেশিশক্তি রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে বিধায় গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নৈতিক মূল্যবোধ দুর্বল; যাতে ওই অপশক্তি খুঁজে পাচ্ছে শক্তি।এই প্রেক্ষাপটেই বিএনপি ও জামায়াত ভয়তালকে হরতাল বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। অবরোধও হয়ে উঠেছে এরই নামান্তর। আন্দোলন মানে গণসম্পৃক্ততা নয়। জনগণ রাস্তায় নামলো কি না তা আদৌ বিচার্য বিষয় নয়। এবারে চোরাগোপ্তা হামলা দিয়ে জামায়াত শুরু করে আন্দোলনের নামে তা-ব। আর এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের কাজ হচ্ছে, ক্যাডার বা ভাড়া করা যুবকদের রাস্তায় নামিয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, ককটেল বা পেট্রল বোমা ফোটানো। পুলিশকে পিটিয়ে কিংবা গুলি করে ঠা-া মাথায় খুন করা। নিরীহ পথচারী ও বাসযাত্রীদের আগুনে পুড়িয়ে মারা। যাত্রীবাহী ট্রেন আসবে জেনেও লাইন উপড়ে ফেলা বা সিøপারে অগ্নিসংযোগ করা। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে চোরাগোপ্তা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা। এক কথায় মানুষকে আন্দোলনে আনা নয়, মানুষ মারা ও সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে টার্গেট। এসবই হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন। এসবকে ওই জোটের নেতারা গণঅভ্যুত্থান বলতেও দ্বিধা করছে না।অতীতের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, অতীতে এই দু’দল কখনো এককভাবে দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে আন্দোলনে নামেনি। আর পাকিস্তানি আমলে জামায়াত আইয়ুববিরোধী জোটে যোগ দিলেও কার্যত গণআন্দোলন বিরোধী অবস্থান নিয়েছে আর শেষ পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার-আলবদর-আলশামস হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে গণহত্যায় শামিল হয়েছে। আর বিএনপি প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ইতিহাস হচ্ছে ক্ষমতায় থেকে ক্যু-পাল্টা ক্যু আর হুকুমের বিচারে হত্যা কিংবা ঠা-া মাথায় অগণিত সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যার ভেতর দিয়ে। জন্মের সঙ্গেই এই দুদলের হাতে রয়েছে রক্তের দাগ। আর এটাই নিষ্ঠুর সত্য যে, ক্ষমতায় গিয়ে এই দুদল হত্যা-খুনের হোলিখেলায় নেমেছিল। উগ্র জঙ্গি দল বাংলাভাই জেএমজেবি এবং মুফতিদের হরকাতুল জিহাদকে এরাই হত্যা-খুনের অভয়ারণ্য সৃষ্টির জন্য আশ্রয়-প্রশ্রয়-উস্কানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছিল।রাজনীতিক শাহ এ এস এম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মমতাজউদ্দিন, মনজুরুল ইমাম এবং বুদ্ধিজীবী হুমায়ুন আজাদসহ আরো অনেকের হত্যা সংঘটিত হয়েছিল কিংবা ২১ আগস্ট গ্রেনেড মেরে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ ও ৭৫-এর বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের হত্যা-খুনের ধারাবাহিকতায়।একটু খেয়াল করলেই এটা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভেতর দিয়ে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা-ফ্যাসাদের রাজনীতি আমাদের দেশের জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে।প্রসঙ্গত, জামায়াতের বুদ্ধিজীবীরা ইদানীং বলতে চাইছেন যে, স্বদেশী আন্দোলনের ভেতর দিয়ে নাকি সন্ত্রাসী ধারা আমাদের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হয়েছে। এটা ঠিক স্বদেশী আন্দোলনের মধ্যে অতর্কিত সশস্ত্র হামলা ও হত্যার বিষয়টা ছিল। কিন্তু মাস্টারদা সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, নলিনী দাস প্রমুখদের রাজনীতির ওই দিকটা গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক জাতীয় রাজনীতি গ্রহণ করেনি। ওদের স্বদেশ প্রেম ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার চিরায়ত আদর্শটা গ্রহণ করেছে। পাকিস্তানিরা মেজরিটির পার্টি আওয়ামী লীগকে যখন ক্ষমতায় বসতে দেয় না, তখন কেবলমাত্র বাধ্য হয়ে ‘তোমরা আমার ভাই’ বলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর স্বাধীনতার পর উগ্র বাম সশস্ত্র রাতের বাহিনীর সঙ্গে পরাজিত ডান সাম্প্রদায়িক শক্তিই মুখোশ পরিবর্তন করে ঢুকে পড়েছিল। এটাই তো সত্য যে, স্বাধীনতার পর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে রাতের বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দিয়েছে পরাজিত পাকিস্তানের আইএসআই।হত্যা-খুনের রাজনীতির ভেতর দিয়ে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিতে যে রাজনৈতিক ধারার সৃষ্টি ও বিকাশ; সেই রাজনীতি বর্তমান পর্যায়ে এসে আবারো মরণ কামড় দিতে উদ্যতহয়েছে। সমদূরত্বের নীতি নিয়ে দুই ধারার রাজনীতিকে যারা এক করতে চান, সেই সব বিজ্ঞজনেরা বলুন তো, রায়ের ভিত্তিতে আদালতকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট না করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে যদি ওই ব্যবস্থা সংশোধন করা হতো, তবে কি ওই সংশোধন প্রক্রিয়ায় থাকতে বিএনপি আদৌ সংসদে যেতো? মহাজোট একা করলে কি বিএনপি তা আদৌ মানতো? কে হতেন ওই পদ্ধতির সরকারের প্রধান? কারা হতেন সেই ১০ জন? তা নিয়ে ফাঁক থাকায় কি এখনকার মতোই মুখোমুখি হতো না রাজনীতি?বিএনপি মূলত চার কারণে এবারে নির্বাচন করতে চাইছে না। প্রথমত গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক ধারা বহাল থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার পরিচালনার ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে মহাজোট সরকারের নজরকাড়া সফলতা। তৃতীয়ত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে অংশগ্রহণ করতে না পারা। চতুর্থত উগ্র জঙ্গিদের ক্ষমতায় থেকে মদদ দেওয়ার প্রেক্ষিতে ২০০১ সালের মতো নির্বাচনে জেতার নিশ্চয়তা না পাওয়া। নির্বাচনে যাওয়ার আগে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত কিংবা অন্তত একটি বিজয় মিছিল বের না করে কি আদৌ নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি-জামায়াত জোট? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেলেও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কেন যুক্ত হয় না তারা?প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরে যাবেন কেন? সংবিধান সংশোধন কি অসাংবিধানিকভাবে করা হয়েছে? মহাজোট তো আর সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধান সংশোধন করেনি? গণতান্ত্রিক পথ গ্রহণ করতে চায় না কেন বিএনপি-জামায়াত জোট? বগলে আছে তাদের কোন ইট!বিজয়ের মাসের শুরুতে তাই বলতে হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হওয়ার ভেতর দিয়ে অগণতান্ত্রিক-সাম্প্রদায়িক শক্তির লেজে নয় মাথায় আঘাত পড়েছে। তাই হত্যা-খুনের রাজনীতির ধারক-বাহক জাতিবিরোধী এই অপশক্তি মরণ কামড় দিতে উদ্যত হয়েছে। রক্তের হোলি খেলা ওরা চালিয়ে যেতে চাইবেই। তাই একাট্টা ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া ভিন্ন বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক জাতীয় মূলধারার শক্তির। পেছনে ফেরা যাবে না। নিজেদের আইন মানতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। হত্যা-খুনের রাজনীতি অব্যাহত রাখলে আইনের মাধ্যমে শাস্তি পেতে হবেই। সংবিধানকে রাখতে হবে সমুন্নত।অসাম্প্রদাদিক গণতান্ত্রিক মানবিক-জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র ও সমাজ গড়া তথা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে ওঠার পথ থেকে একটুও বিচ্যুত হওয়া যাবে না। আবুল হোসেন গংদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নে শক্তি-সামর্থ্য ও দিকনির্দেশের প্রকাশ ঘটিয়েছে। নিরপেক্ষ দাবিদারই বলেছেন, বিতর্কিত মাত্র ১২ জন পেয়েছেন মনোনয়ন। যদি তেমন অভিযোগ সত্যও হয়, তবে বলতে হবে ‘রাজনীতি রাজনীতিকদের জন্য ডিফিকাল্ট’ করার রাজনৈতিক ধারা যে পর্যায়ে এসে আজ পৌঁছেছে, তাতে এক ধাক্কায় সব ফিলিপস বাতির মতো পাকসাফ হয়ে যাবে, এমনটা কেবল ১/১১-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কুশীলব নিরপেক্ষ দাবিদাররাই বলতে পারেন। বর্তমানের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বলে, দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কূটনীতিকদের হাতে ছেড়ে দিলে নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি হবে আরো জটিল ও কঠিন এবং দেশবাসীর নিয়ন্ত্রণহীন।বাংলাদেশ এবারের বিজয়ের মাসে অপেক্ষা করে আছে ২০২১ সালে বিজয়ের রজতজয়ন্তী পালনের জন্য। দেশবাসীর এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য যে যেখানে যেভাবে আছেন, যার যতোটুকু শক্তি আছে; তা নিয়ে সংবিধান ও আইন সমুন্নত রেখে অসমাপ্ত বিজয়কে সম্পূর্ণতা দিতে, প্রত্যাশাকে প্রাপ্তিতে রূপ দিতে সচল-সক্রিয়-উদ্যোগী থাকুন, এবারের বিজয়ের মাসে এটাই হোক সকলের প্রতিজ্ঞা।
false
mk
শুধু মান্না নয়, ফাঁসছেন অনেকেই___ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা, সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগ’... ফোনালাপের ষড়যন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে। ‘কেচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে’। গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে রাজনীতিক, সুশীল সমাজ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের। ফেঁসে যেতে পারেন অনেকেই। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে নিউইয়র্কে অবস্থারনত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ফোনালাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা ও সেনা হস্তক্ষেপের কথাবার্তা ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চিকিৎসার নামে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ষড়যন্ত্র করছেন তারও পরিকল্পনার প্রক্সি দিয়ে চলেছেন নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক খোকা। মান্না ও খোকার ফোনালাপ ষড়যন্ত্র শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তজার্তিক পর্যায়েও বিস্তৃত। অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতাকে আড়াল করার জন্য সংলাপ ও শান্তির আড়ালে নাগরিক ঐক্য, শত নাগরিক, উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ, নাগরিক কমিটি ইত্যাদি নামের বিভিন্ন সংগঠন করে বিএনপি-জামায়াতের ‘বি টিম’ হিসেবে মাঠে নামিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। তাদের ষড়যন্ত্রের সকল শিকড় গিয়ে মিশেছে একই জায়গায়, যেটা হচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় নামাতে হবে। এতদিন ধরে দেশে ও বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলা হলেও এখন তা হাতে নাতে ধরা পড়েছে মান্না-খোকার ফোনালাপের ঘটনায়। তারা ফোনালাপে যা বলেছেন, তার পূর্বাভাস ইতোমধ্যে অনেকের বক্তৃতা-বিবৃতিতে প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপির একজন সিনিয়র আইনজীবী যিনি গত মাসে বলেছেন, ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারের পতন ঘটবে। বিএনপির দলচ্যুত আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি সরকারকে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার জন্য যা যা করার দরকার তা করতে হবে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্নাও গত সপ্তাহেও এক সভায় বক্তৃতায় বলেছেন, সরকার সরে না দাঁড়ালে অন্য কেউ এসে ধাক্কা দিয়ে সরাবে। নিউইয়র্কে অবস্থান করে সাদেক হোসেন খোকা গত সপ্তাহে বলেছেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে ফেলে দিতে পারবে-এমন ধরনের হুমকিও দিয়েছেন।সূত্র জানায়, লন্ডনে তারেক রহমান ও নিউইয়র্কে সাদেক হোসেন খোকা-দু’জনেই চিকিৎসার নামে অবস্থান করছেন বিদেশে। তাদের দু’জনের নামেই রয়েছে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা। তারা বিদেশে অবস্থান করে দেশী ও বিদেশী রাজনীতিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, লবিস্টসহ নানা ধরনের ব্যক্তি যোগাযোগ করে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কংগ্রেস সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি, ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ্র সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ফোনালাপ কেলেঙ্কারি ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ঘটেছে। শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বিদেশেও ষড়যন্ত্রের শিকর ও ডালপালা গজিয়ে আছে।সূত্র জানায়, চিকিৎসার নামে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে নিউইয়র্কে অবস্থারনত বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতে দেশে ফিরে আসবেন না এই দুই নেতা। দুই নেতার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা যে কোন মূল্যে হোক অগণতান্ত্রিক পন্থায় হলেও সরকারের পতন ঘটাতে চান। বিএনপি-জামায়াতের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতার ঘটনার অগ্রগতির বিষয়ে নিয়মিত আলাপ আলোচনার পাশাপাশি ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই নাশকতার পাশাপাশি বিভিন্ন নামের নাগরিক নামের সংগঠন করে মানুষজনের মধ্যে আকর্ষণ দৃষ্টির মাধ্যমে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করা হচ্ছিল। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, জামায়াত-শিবিরের নাশকতা, জঙ্গী তৎপরতা, মান্না ও খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। খোকার সঙ্গে মান্নার ফোনালাপে যেসব বিষয়বস্তু ও ব্যক্তির নাম ওঠে এসেছে, সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।
false
mk
আওয়ামীলীগের জন্মদিন ২৩ জুন ২০১৬ স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর এবং তা ৬৮তম জন্মদিন। আমরা জানি, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামের একটি উদ্ভট রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু প্রগতিশীলরা সে উদ্ভট বিভক্তি মেনে নিতে পারেনি। তারই অংশ হিসেবে ১৯৪৯ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ জুন পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগের দ্বিতীয় কাউন্সিল আয়োজন করেন। তখন সে দলের প্রথম সারির নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান পূর্ববাংলার একাংশকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। পরে এই সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলির কে এম দাশ লেনে অবস্থিত রোজ গার্ডেন হলরুমে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে একটি সম্মেলনে মিলিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। শেরেবাংলা সে সম্মেলনে খানিক সময়ের জন্য উপস্থিত থেকে সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এই সম্মেলনেই পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করা হয়। সেখানে সভাপতি হন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। তখন শেখ মুজিব জেলখানায় থেকেই সেই দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৪০ সদস্যবিশিষ্ট এ অর্গানাইজিং কমিটিতে ২৯ বছর বয়সী শেখ মুজিব সেদিন তাঁর যোগ্যতাবলেই দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হতে পেরেছিলেন। সেই কমিটির অন্যান্য কয়েকজন ছিলেন- সহসভাপতি এডভোকেট আতাউর রহমান খান, ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন, আলী আহমদ এমএলএ, এডভোকেট আলী আমজাদ খান, এডভোকেট আব্দুস সালাম খান, ২নং যুগ্মসম্পাদক খন্দকার মোশতাক আহমদ, সহসম্পাদক এ কে এম রফিকুল হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ ইয়ার মোহাম্মদ খান প্রমুখ। পরে শেখ মুজিব জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দলকে আস্তে আস্তে সংগঠিত করে ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনিই দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৫৪ সালের হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭ আসনের মধ্যে ২২৩ আসন লাভ করে। তার মধ্যে শরিক আওয়ামী লীগ একাই পায় ১৪৩ আসন। ১৯৫৫ সালে ২১ অক্টোবর দলের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। ১৯৫৭ সালের ৩০ মে শেখ মুজিব পুরো সময় দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আরেক নজির সৃষ্টি করলেন, যা রাজনীতিতে সচরাচর দেখা যায় না। ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক হন এবং সে বছরই ছয়দফা ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ৩ মে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫ জনের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। এ সময় জেলে থেকেই শেখ মুজিব বাংলার মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত হন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সামনে তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয়। এরপর ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন আসে আওয়ামী লীগের দখলে। এগুলো ছিল স্বাধীনতার পূর্বেকার আওয়ামী লীগের সাফল্যগাঁথা। তারপর আওয়ামী লীগের হাত ধরেই দেশের স্বাধীনতা। তবে এ দলটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, যার বলি হলেন এর প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু নিজেই। তবে বাংলদেশের মানুষের কল্যাণে আজো তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দলের হাল ধরা পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। তাই এখন অতীতের ঐতিহাসিক দিবসগুলো পালন করা যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গত ৭ জুন পালিত হয়ে গেল বাঙালির ইতিহাসের আরেক ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি ১৯৬৬ সালের ৭ জুন যে ৬ দফার বদৌলতেই পরবর্তীতে তাঁরই নেতৃত্বে রচিত হয়েছিল বাঙালির স্বাধিকার, মুক্তি ও স্বাধীনতা। আর বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি হিসেবে তাঁরই সুযোগ্যা কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশকে কোথা থেকে কোন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন তা কল্পনাই করা যায় না। এসব কোনো কিছুই সম্ভব ছিল না যদি স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু এবং ১৯৮১ সালের ১৭ মে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা বীরের বেশে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না পারতেন।১৯৮১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে দলের সভানেত্রী হন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ তিনি এ দলটি সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ৭ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত নয় মাসের গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধকালীন পাকিস্তানের কারাগারে জাতির জনক বন্দি ছিলেন। সে সময় শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যগণই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসায় গৃহান্তরীণ ছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বীরদর্পে স্বদেশে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মতোই ছিল ১৯৮১ সালের সেই তাঁরই কন্যার স্বদেশে প্রত্যাবর্তন। মাঝখানে পার্থক্য শুধু এক দশক সময়ের।১৯৮১ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবে দেশে গণতান্ত্রিক ধারার প্রবর্তন করতে পারলেও দেশ চলে যায় গভীর ষড়যন্ত্রের কশাঘাতে। উপর্যুপরি ভারতবিরোধী ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতির গভীর এক ষড়যন্ত্রের অপপ্রচারে পড়ে যায় তাঁর দল। তারপরেও তার আন্দোলন থেমে থাকেনি এবং হাল ছাড়েননি তিনি। কিন্তু অবশেষে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন এক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আরোহণ করেন তিনি। সে মেয়াদে তিনি সংসদে কালো ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলপূর্বক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার শুরু করেন। ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, দীর্ঘদিনের অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, দেশের প্রথম ও দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উদ্বোধন, দেশকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচিত করেছিলেন তখন তিনি।তাঁর কর্মকাণ্ডে আবারো ষড়যন্তকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে নতুনভাবে বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁকেও হত্যার পরিকল্পনা করে। তাঁকে মারার জন্য কমপক্ষে ২০ বার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। ১৯৮৩ সালের ১৬ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর বাসভবন আক্রান্ত হয়েছিল, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে তার ওপর গোলাবর্ষণ করা হয়েছিল, ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট খোদ ৩২ নম্বরেই ফ্রিডমপার্টির ক্যাডারদের গোলাগুলির স্বীকার হন তিনি। ১৯৯১ সালে ঢাকায় তাঁর ওপর হামলা হয়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোরে ট্রেনে ভ্রমণের সময় তাঁর ওপর হামলা হয়, ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় একটি জনসভার কাছে ছিয়াত্তর কেজি বোমা পুঁতে রাখা হয় তাঁকে হত্যা করার জন্য, ২০০৪ সালের ৫ জুলাই তুরস্কে ভ্রমণের সময় তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। সবচেয়ে ভয়াবহতম হামলাটি ঘটেছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। সেদিন ঘাতকরা আরেকটি ১৫ আগস্ট বানাতে চেয়েছিল। মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জনের প্রাণ গেছে সেদিন। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে! প্রতিবারই তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য এবং মানুষের ভালোবাসার জোরে রক্ষা পেয়েছেন। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য যখন তিনি আবারো আন্দোলন করছিলেন, তখন ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে দেশে এক অগণতান্ত্রিক জরুরি সরকারের আবির্ভাব ঘটে। তখন তিনি ব্যক্তিগত, চিকিৎসা ও পারিবারিক কাজে বিদেশে অবস্থান করলে, সেই জরুরি সরকার আবার তাঁকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়। কিন্তু তাঁর দৃঢ়তা তাঁকে বাবার মতোই দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি ২০০৭ সালের জুলাই মাসে দেশে প্রত্যাবর্তন করলেও আবার জরুরি সরকারের রোষানলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর মতোই ১৬ জুলাই ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে তাঁকে। সেই জেলখানায় প্রায় এক বছর থেকে ২০০৮ সালের এক ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে আবার তিনি দেশের সরকার গঠন করতে সমর্থ হন।এর পর থেকে পাঁচ বছর সফলভাবে দেশ পরিচালনা করার সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এগিয়ে নেয়া এবং প্রধান প্রধান কয়েকটি রায় কার্যকর করা, দেশকে অর্থনৈতিকভারে নিম্ন-আয়ের কাতার থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের কাতারে উঠিয়ে নিয়ে আসা, দেশকে পুরোপুরি ডিজিটালে রূপান্তরিত করেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন, দেশকে আগামী মিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাজ করছেন। তিনি দেশের জন্য এবং নিজের জন্য বিরল সম্মান, সম্মাননা ও পুরস্কার বয়ে আনছেন, নারীর ক্ষমতান করছেন। কাজেই এসব ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা যাবে না। এ কথা খুব দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের জন্ম না হলে যেমন বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না, ঠিক তাঁর কন্যা দেশের হাল না ধরলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতো না। বাংলাদেশকে হয়তো সেই তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। কাজেই আওয়ামী লীগের জন্যই বঙ্গববন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরিই আজকের দেশের কাণ্ডারি শেখ হাসিনা। কাজেই আজ দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। ক্ষমতায় থাকলে দল ও সরকার অনেক সময় একাকার হয়ে যায়। সেজন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই আওয়ামী লীগকে এগিয়ে যেত হবে।ড. মো. হুমায়ুন কবীর : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
false
rg
যে লাউ সেই কদু___বুঝছো মনু!!! বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ দশম সাধারণ নির্বাচনের জন্য অন্তর্বতীকালীন সরকারের একটি রূপরেখা দিয়েছেন। ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে ১০ জনের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ওই ২০ জন থেকে আওয়ামী লীগ পাঁচ জন এবং বিএনপি পাঁচ জনের নাম প্রস্তাব করবে। সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে ওই সরকারের প্রধান করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের এই সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার আগে নির্বাচিত করে আনা যেতে পারে, যেভাবে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করা হয়। চলুন এবার আগে দেখে আসি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধ্যায়ক সরকারের উপদেষ্টা কে কে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের নের্তৃত্বে যে দশ জন উপদেষ্টা ছিলেন তাঁরা হলেন- ০১. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ০২. প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ০৩. অধ্যাপক মোঃ শামসুল হক ০৪. সেগুফতা বখত চৌধুরী ০৫. এজেডএ নাসিরউদ্দিন ০৬. মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রহমান খান ০৭. ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ০৮. সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ০৯. ড. নাজমা চৌধুরী ১০. ড.জামিলুর রেজা চৌধুরী আর ২০০১ সালৈ বিচারপতি মোঃ লতিফুর রহমানের নের্তৃত্ব যে দশ জন উপদেষ্টা ছিলেন তাঁরা হলেন- ০১. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ০২. বিচারপতি বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী ০৩. এএসএম শাহজাহান ০৪. সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ০৫. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ০৬. একেএম আমানুল ইসলাম চৌধুরী ০৭. এম হাফিজ উদ্দিন খান ০৮. ব্রিগেডিয়ার (অব.) অধ্যাপক আবদুল মালেক ০৯. মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী ১০. রোকেয়া আফজাল রহমান ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মোট উপেদষ্টা ছিলেন ১০ + ১০ = ২০ জন । বিরোধীদলীয় নেত্রী যে ২০ জনের কথা বললেন, এখন একটু খেয়াল করলে দেখবেন ওই দুই সরকারের সময় সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ও সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী উভয় সরকারে উপদেষ্টা ছিলেন। উভয় সরকারে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ও সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী উপদেষ্টা ছিলেন। তার মানে ওই সরকার মিলে আসলে উপদেষ্টা সংখ্যা ১৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন তারা হলেন সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জে. (অব) আব্দুল মালেক, মেজর জেনারেল (অব) মইনুল হোসেন ও অধ্যাপক শামসুল হক। তার মানে বাকি থাকলো ১৪ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন গুরুতর অসুস্থ। বাকি থাকলো ১০ জন। ওই ১০ জন থেকে ৪ জন বলে দিয়েছেন তারা দায়িত্ব নেবেন না। বাকি থাকলো ৬ জন। এই ৬ জনের মধ্যে প্রফেসর মুহম্মদ ইউনুস বিতর্কিত। বাকি থাকলো ৫ জন। তাইলে কেমনে কি!!! এই ৫ জনের মধ্যে বিরোধীদলীয় নেত্রী সবার কাছে গ্রহনযোগ্য বলতে বুঝাতে চেয়েছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে। অর্থ্যাৎ বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে চাচ্ছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে। এখন আওয়ামী লীগ যদি এই প্রস্তাবে রাজী হয়, তো নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হবেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এখন যে সম্পর্ক তা থেকে সবাই বুঝতে পারেন, আওয়ামী লীগ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে সরকারপ্রধান হিসেবে মানবে না। তো, এতো নতুন ধারার রাজনীতি'র কথা বলে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেষে এটা কি প্রস্তাব করলেন!!! আর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাঁচ জন করে নাম দেবেন। দেশের অন্য দলগুলো কি জালের কাঠি? তার মানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ যাদের নাম দেবেন, তারা কি আর নিরপেক্ষ থাকবে? তারা তো সেই প্রস্তাবকারী দলের পক্ষে ওকালতি করবেন। যারা মাত্র ১৮ জন প্রাক্তন উপদেষ্টা'র খবর ঠিক মতো রাখতে পারেন না, তারা কিভাবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের খবর রাখবেন??? খোঁজখবর না নিয়ে আবার অনেক (বুদ্ধিমান প্রাণী) বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বগরবগর করছেন এই ভুয়া ফর্মুলা নিয়ে। হায়রে অভাগা জাতি... আগে হাতি ধরার জন্য হাতিখেদা পাতা হত। তারপর গোটা গ্রামবাসী দলবেধে ধাওয়া করত জঙ্গলী হাতি'র পালকে। তখন দু'একটা হাতি ভুল করে দলছুট হয়ে সেই হাতিখেদায় গিয়ে পড়তো। আর ধরা পড়তো জনতার হাতে। হাতিখেদা'র এই সুত্র বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য কেউ ফর্মুলা হিসেবে প্রস্তাব করলে কেমন হয়!!! ...সো, যে লাউ সেই কদু...বুঝছো মনু!!! সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০৪
false
ij
আর্তুর র‌্যাঁবো_ জীবন ও কাব্য আর্তুর র‌্যাঁবো। ফরাসি কবি। জীবনের অনেকটা সময় বেহিসেবী জীবন কাটিয়েছেন, মৃত্যুর আগে জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন; মাত্র ৩৭ বছরে মারা যান র‌্যাঁবো । কৈশরেই অনন্য কাব্য প্রতিভার কথা সবাই জেনেছিল; যে কারণে ভিক্তর হুগো র‌্যাঁবোকে বলতেন, ‘শিশু শেকসপীয়ার।’ আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্য শিল্পকলা ও সংগীতে র‌্যাঁবোর প্রভাব অপরিসীম । তবে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনটিও কম বৈচিত্র্যপূর্ন নয়। র‌্যাঁবোর পুরো নাম জা নিকোলাস আর্তুর র‌্যাঁবো (আমার ফরাসি প্রতিবর্ণীকরণ ক্ষমা করবেন) ২০ অক্টোবর, ১৮৫৪ সালে ফ্রান্সের শার্লিভেল-এ জন্ম । র‌্যাঁবোর পরিবারটি ছিল মধ্যবিত্ত। বাবা সৈন্য, মা গৃহিনী। ইসাবেলি নামে এক বোন ছিল র‌্যাঁবোর । বড় এক ভাইও ছিল। বোনের কথা পরে আবার আসবে। শার্লিভেল জায়গাটা ফ্রান্সের উত্তরে শার্লিভেল অল্প বয়েসেই র‌্যাঁবোর মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। বাবা নয়, র‌্যাঁবোর ছেলেবেলা জুড়ে ছিল মায়ের কঠোর শাসন। মায়ের শাস্তিও ছিল অদ্ভূত রকমের, পড়া না পারলে ১০০ লাইন লাতিন কবিতা মুখস্ত করতে হত। এরপরও আবৃত্তি ভুল হলে খাবার জুটত না। ৯ বছর বয়েসেই ৭০০ লাইন লাতিন কবিতা ঠোটস্থ হয়ে গেছিল। যখন ১২ বছরের বালক তবে র‌্যাঁবো স্কুলের নিরস পাঠ্যসূচি ও মায়ের বিচ্ছিরি শাসন পছন্দ করত না। যদিও কাব্যের দিকে ঝোঁক। ভিতরে ভিতরে কাব্যের উদগীরণ টের পাচ্ছিল বালক; ১৭ বছর বয়েসেই লিখে ফেলল ‘মাতাল তরণী’-র মতন বিস্ময়কর কবিতা। পল ভার্লেইন ছিলেন তখনকার দিনে ফ্রান্সের নামকরা কবি; তিনি প্রতীকবাদী ধারার পথিকৃৎদের একজন। ফরাসি কাব্যের ইতিহাসে তাঁর স্থান অনন্য। পল ভার্লেইন-এর ‘গোধূলি’ কবিতাটি পাঠ করা যাক। গোধূলি কুয়াশাচ্ছন্ন দিগন্তে লাল চাঁদ নৃত্যরত আবছা তৃণভূমি ধোঁওয়ার ভিতরে ঘুম, ব্যাঙের ডাক নলখাগড়ায় সবুজ শিহরণ। লিলি ফুলেরা ঢাকনা ঢাকে পপলার ছড়ায় দূরে দীর্ঘ ঘনিষ্ট, তাদের ভৌতিকতা ছড়ায় জ্বোনাক পোকার মিটিমিটি আলো ঝোপে প্যাঁচারা জেগে, তাদের নিঃশব্দ উড়াল বাতাসে সারিবদ্ধ ভারী পাখনা আর শীর্ষদেশে পরিপূর্ন নিরানন্দ আলো ফ্যাকাসে, শুক্রের উত্থান ...যেহেতু এখন রাত্রি। ( এই কবিতায় আমরা বাংলার জীবনানন্দকে খুঁজে পাই কি?) ভার্লেইন বলছিলাম। ভিতরে ভিতরে কাব্যের উদগীরণ টের পাচ্ছিল বালক; ১৭ বছর বয়েসেই লিখে ফেলল ‘মাতাল তরণী’-র মতন বিস্ময়কর কবিতা। ভার্লেইন চিঠি লিখলেন র‌্যাঁবো; সাড়া মিলল না। (জীবনানন্দও চিঠি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে , সম্ভবত ১৫ বছর বয়েসে) র‌্যাঁবো এবার কবিতা পাঠালেন, পড়ে ভার্লেইন বললেন, ‘দেখা কর, অপেক্ষা করছি।’ ১৮৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে প্যারিস পৌঁছলেন র‌্যাঁবো । উঠলেন ভার্লেইন এর বাড়িতেই। বাড়িতে তখন ১৭ বছর বয়েসি পোয়াতি বউ -মাতিলদে। ভার্লেইন চাকরি করতেন; সদ্য চাকরি ছেড়ে বিস্তর মদ খাওয়া ধরেছেন। ১৮৭১ সালের প্যারিস। প্যারিস তখন উত্তাল। শ্রেনিসংগ্রাম চরিতার্থ করে সংগ্রামী জনগন ক্ষমতা গ্রহন করেছে, যাকে বলা হয়- প্যারী কমিউন। যে ঘটনা নিয়ে কার্ল মার্কস লিখেছেন, ‘দ্য সিভিল ওয়ার ইন ফ্রান্স।’ যে বিপ্লবী সরকারের প্রতি র‌্যাঁবোর বিপুল সমর্থন ছিল। যা হোক। র‌্যাঁবো ও ভার্লেইন এর মধ্যে তৈরি হল উষ্ণ সম্পর্ক । দুজনকে কথায় পেল আর নেশায় পেল। অ্যাবসিন্থ আর হ্যাসিস হল দুটি ফরাসি নেশা। প্রথমটি তরল আর ২য়টি উদ্ভিজ। দুজনেই বেশ কিছুকাল নেশারাজ্যে ডুবে রইলেন। তাতে বিভ্রম হত, কবিদ্বয় বিভ্রমবশত প্রতীকবাদী পদ্য লিখতেন। আর ছিল উদ্দাম জীবন। যাতে ফরাসি সাহিতচক্র রীতিমতো দিশেহারা। ছবিটি শিল্পী হেনরি ফাতিন লাতোঁ এর আঁকা ... র‌্যাঁবো ও ভার্লেইন এর মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হল, তাকে বলা হয় - সমকাম। র‌্যাঁবোর দুর্নীবার টানে সদ্যজাত পুত্র ও স্ত্রীকে ত্যাগ করার কথা ভাবলেন ভার্লেইন । পরের বছর, অর্থাৎ ১৮৭২ সালের সেপ্টেম্বরে দুজনই লন্ডন চলে গেলেন। থাকতে শুরু করলেন ব্লুলসব্যারি ও কেমডেন টাউন শহরে। স্বেচ্ছা নির্বাসিত কবিদ্বয়ের জীবনে নেমে এল দারিদ্র । তবে আয় হল পড়িয়ে, মানে ইংরেজদের ফরাসি ভাষা শিখিয়ে। তা ছাড়া ভার্লেইন-এর মা টাকা পাঠাতেন। র‌্যাঁবো ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পড়াশোনা করে কাটালেন । তবে দুজনের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়ে উঠতে থাকে। ভার্লেইন এর আঁকা র‌্যাঁবোর ক্যারিক্যাচার ১৮৭৩ সালের জুনে ভার্লেইন প্যারিস ফিরে যান। তবে অচিরেই র‌্যাঁবোর জন্য বিরহ টের পেলেন প্রতীকবাদী কবিটি। প্যারিস থেকে ব্রাসেলস এ গেলেন ভার্লেইন, দেখা করলেন র‌্যাঁবোর সঙ্গে । লাভ হল না। কথায় কথায় ঝগড়া চলতেই থাকে। যার ফলে ভার্লেইন মদে ডুবে যেতে থাকলেন। সেই ঘোরেই সম্ভবত রিভলবার কেনেন । গুলি করেন র‌্যাঁবোকে; গুলি লাগল বাঁ কবজিতে । প্রতীকবাদী কবিটিকে পুলিশ গেরেপতার করল । ভার্লেইন মানসিক রোগী কিনা -জিজ্ঞাসাবাদ চলল। র‌্যাঁবো অভিযোগ তুলে নিলেও ভার্লেইন কে টানা ২ বছর কারাগারে কাটাতে হয়। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত র‌্যাঁবো শার্লিভেল ফিরে যান। কোনও কিছু ভুলতে হলে লেখার মতন কিছু নেই। ‘নরকে এক ঋতু’ লিখে শেষ করেন। এটি ৯ ভাগে বিভক্ত র‌্যাঁবোর একটি বিখ্যাত দীর্ঘ কবিতা। । ৩য় পর্ব ‘নরকে রাত্রি’-র অংশ বিশেষ পাঠ করা যাক। এইমাত্র আমি মুখভর্তি ভয়ানক বিষ গিলেছি, আর্শীবাদপুষ্ট, আর্শীবাদপুষ্ট, আমার উপদেশদাতাকে করা হোক আর্শীবাদপুষ্ট । আমার অস্তিত্বের মূলে অগ্নি। বিষের দহন আমার হাত-পা মুচড়ে দিচ্ছে, পঙ্গু করে দিচ্ছে, আমাকে মাটিতে ফেলে দিচ্ছে। তৃষ্ণায় মরে যাচ্ছি আমি, আমার দম আটকে আসছে। আমি কাঁদতে পারছি না। এই শ্বাশত নির্যাতন। দেখ যে কীভাবে আগুন জ্বলে উঠছে। আমি জ্বলছি আমার জ্বলা উচিত। চালিয়ে যাও শয়তান! র‌্যাঁবোর ‘নরকে এক ঋতু’ আধুনিক প্রতীকবাদী সাহিত্যের উৎকৃষ্ঠ নমুনা। ১৮৭৪ সালে র‌্যাঁবো আবার লন্ডন যান। প্রকাশ করেন কাব্যগ্রন্থ Illuminations;এর মানে রঙিন খোদাই বা রঙের পাত্র। কাব্যগ্রন্থটি র‌্যাঁবোকে বিপুল খ্যাতি এনে দিয়েছিল। ‘ভোর’ কবিতাখানি পাঠ করা যাক। জড়িয়ে ধরি গ্রীষ্মের ভোর । প্রাসাদগুলোয় এখনও সাড়াশব্দ নেই। মৃত জল। ছায়ারা এখনও অরণ্যপথে ক্যাম্প করে আছে। হাঁটছি, উষ্ণ নিঃশ্বাস নিচ্ছি, ঝলমলে রত্ন ... শব্দহীন ডানার ঝাপটানো; প্রথম জন ছিল একটি সতেজ ফ্যাকাশে মেয়ে ফুল যে তার নামটি বলেছিল। পাইন বনে হালকা রঙের জন্তু দেখে আমি হেসেছিলাম। রুপালি শীর্ষে চিনতে পারলাম দেবীকে । তারপর একে এক আমি তার আবরণ উম্মোচন করি । গলিতে হাত নাড়লাম। সমতলে দেখি মোরগ। নগরে গম্বুজ ও গির্জের ভিড়ে হারিয়ে গেল। মার্বেলের জেটিতে দৌড়াল ভিক্ষুকের মতো, আমিও পিছন পিছন গেলাম। লরেল বনের ধারে রাস্তায় আমি তাকে আচ্ছাদিত করি । আমি তার অপরিমেয় দেহ পাই টের । ভোর ও শিশু বনের ধারে পড়ে যায় । জেগে উঠে দেখি দুপুর। ভার্লেইন জার্মানির স্টুটগার্টে ১৮৭৫ সালের মার্চ মাসে ভার্লেইন এর সঙ্গে র‌্যাঁবোর শেষ দেখা । জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ভার্লেইন, গ্রহন করেছেন ক্যাথলিক ধর্ম । র‌্যাঁবোও জীবনে পরিবর্তন চাইছিলেন, হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। আত্মমগ্ন হয়ে পায়ে হেঁটে সারা ইউরোপ ঘুরে বেড়ালেন। লেখা ছেড়ে কোনও সিরিয়াস কাজে জড়াবেন ভাবলেন-অর্থ চাই, বিত্ত চাই। নিজের মনের মত লিখতে হলে প্রচুর অর্থ উপার্যন করা দরকার। ১৮৭৬ সালের মে মাসে ওলন্দাজ সৈন্যদলে যোগ দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার জাভা গেলেন। ভালো লাগল না। পরে অবশ্য ইউরোপ ফিরে এলেন। ১৮৭৮ সালে সাইপ্রাসে এলেন। ফোরম্যান হিসেবে পাথরের কোয়ারিতে কাজ নিলেন । বিধি বাম। টাইফয়েড হওয়াতে সাইপ্রাস ছাড়তে হল। ১৮৮০ সালে ইয়েমেনের এডেন বন্দর এলেন কবি। সে নগরীতেই সেটল করলেন। কাজ নিলেন বারডে এজেন্সি তে। স্থানীয় নারীর সঙ্গে মিশতে লাগলেন ঘনিষ্টভাবে; সেই সময় ইথিওপিয়ার এক রক্ষিতা ছিল কবির। ব্যবসা করবেন বলে চাকরি ছেড়ে দিলেন কবি। ইথিওপিয়ার হারার শহরে এলেন। সেই ইথিওপিয় রক্ষিতার অনুপ্রেরণায় কিনা কে জানে! কফি ও অস্ত্রের ব্যবসায় জড়ালেন। হারার এর গর্ভনর এর সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হল। ১৮৯০ সালের ফেব্রুয়ারি। ডান হাঁটুতে ব্যাথা অনুভব করলেন। পরে তীব্র যন্ত্রনা। ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবলেন। এডেন বন্দরে এক ব্রিটিশ ডাক্তার দেখলেন। ডাক্তার বললেন অপারেশন করতে। ফ্রান্সে ফিরে অপারেশন করালেন। ডান পা’টি কেটে ফেলতে হল। পরে দেখা গেল ক্যান্সার। কিছুদিন শার্লিভেল থাকলেন। আফ্রিকা ফিরে যেতে চাইলেন। তখনই স্বাস্থ্যের অবনতি হল। আবার হাসপাতালে ভর্তি হলেন। ইসাবেলি নামে এক বোনের কথা বলছিলাম। সেই দেখা শোনা করল। লাভ হয়নি। ১৮৯১ সালের ১০ নভেম্বর মারা গেলেন কবি। মাত্র ৩৭ বছর বয়েসে। ‘প্রস্থান’ কবিতায় কবি লিখেছেন: অনেক দেখেছি। প্রতিটি আকাশের নিচে ফিরেছে দৃষ্টি । পেয়েছি অনেক। নগরসমূহের কোলাহল,সন্ধ্যা, এবং আলোয়, আর সর্বদা। অনেক জেনেছি। জীবনের সিদ্ধান্ত। ওহ্, শব্দ ও দৃশ্য। নতুন মায়ায় ও শব্দে প্রস্থান! সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৩১
false
rg
৪৯ সদস্যের নয়া কেবিনেট, কার কোন দপ্তর আর কিছু খুচরা প্রত্যাশা!!! আজ ১২ জানুয়ারি ২০১৪, রবিবার শপথ নিলেন দশম জাতীয় সংসদের পুর্নাঙ্গ মন্ত্রীসভা। নতুন কেবিনেটে প্রধানমন্ত্রীসহ ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী'র দায়িত্ব নিলেন। এর আগে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দুইবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের অধীনে রেখেছেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ। অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের দপ্তর নিম্নরূপ। পুর্নাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে যাঁরা শপথ নিলেন ও তাঁদের দপ্তর- ১. আবুল মাল আবদুল মুহিত- অর্থ মন্ত্রণালয় ২. আমির হোসেন আমু- শিল্প মন্ত্রণালয় ৩. তোফায়েল আহমেদ- বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪. মতিয়া চৌধুরী- কৃষি মন্ত্রণালয় ৫. আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী- ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৬. মোহাম্মদ নাসিম- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় ৭. সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ৮. খন্দকার মোশাররফ হোসেন- প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৯. রাশেদ খান মেনন- বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১০. অধ্যক্ষ মতিউর রহমান- ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১. ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১২. আ ক ম মোজাম্মেল হক- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৩. ছায়েদুল হক- মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় ১৪. এমাজ উদ্দিন প্রামাণিক- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ১৫. ওবায়দুল কাদের- যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ১৬. হাসানুল হক ইনু- তথ্য মন্ত্রণালয় ১৭. আনিসুল ইসলাম মাহমুদ- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১৮. আনোয়ার হোসেন মঞ্জু- পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৯. নুরুল ইসলাম নাহিদ- শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০. শাজাহান খান- নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ২১. অ্যাডভোকেট আনিসুল হক- আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২২. মুজিবুল হক- রেলপথ মন্ত্রণালয় ২৩. আ হ ম মোস্তফা কামাল- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ২৪. মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২৫. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৬. আসাদুজ্জামান নূর- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৭. শামসুর রহমান শরীফ ডিলু- ভূমি মন্ত্রণালয় ২৮. অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম- খাদ্য মন্ত্রণালয় ২৯. সৈয়দ মহসিন আলী- সমাজকল্যান মন্ত্রণালয় এছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যাঁরা শপথ নিলেন ও তাঁদের দপ্তর- ১. মজিবুল হক চুন্নু- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় (মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) ২. স্থপতি ইয়াফেস ওসমান- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) ৩. এম এ মান্নান- অর্থ মন্ত্রণালয় ৪. মির্জা আজম- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৫. প্রমোদ মানকিন- সমাজকল্যান মন্ত্রণালয় ৬. বীর বাহাদুর উ শৈ সিং তঞ্চজ্ঞ্যা- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় (মন্ত্রলায়ের দায়িত্বে) ৭. নারায়ণ চন্দ্র চন্দ- মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮. বীরেন শিকদার- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় (মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) ৯. আসাদুজামান খান কামাল- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০. সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ- ভূমি মন্ত্রণালয় ১১. চৌধুরী ইসমত আরা সাদেক- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১২. মেহের আফরোজ চুমকি- মহিলঅ ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় (মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) ১৩. মশিউর রহমান রাঙ্গা- পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ১৪. শাহরিয়ার আলম- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫. জাহিদ মালেক- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় ১৬. নসরুল হামিদ বিপু- বিদ্যুৎ বিভাগ ১৭. জুনাইদ আহমেদ পলক- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এছাড়া উপমন্ত্রী হিসেবে যাঁরা শপথ নিলেন ও তাঁদের দপ্তর- ১. আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২. আরিফ খান জয়- যুব ও ত্রীড়া মন্ত্রণালয় দশম জাতীয় সংসদের কেবিনেটের যে সব বৈশিষ্ট্য এখন পর্যন্ত স্পষ্ট সেগুলো হল- ১. আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ ও সিনিয়র নেতাদের অন্তর্ভূক্তি ২. নবম জাতীয় সংসদের বিতর্কিত মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি ৩. প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে একজন পুর্ণমন্ত্রী ও দুইজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ ৪. বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ ৫. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ ৬. নতুন কেবিনেটে টেকনোক্র্যাটমন্ত্রী রয়েছেন ৭. নতুন কেবিনেটে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী'র স্ত্রী ৮. নতুন কেবিনেটে রয়েছেন বিশিষ্ট সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ৯. নতুন কেবিনেটে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী'র আত্মীয় ১০. নতুন কেবিনেটে রয়েছেন বিশিষ্ট স্থপতি ও আইনজীবী ১১. নতুন কেবিনেটে বেশ কয়েকজন ইয়ং প্রতিনিধি রাখা হয়েছে নতুন কেবিনেটর কাছে এই মুহূর্তে যে সকল প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের সেগুলো হল- ১. দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা ২. দেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল নিরাপদ ও নিশ্চিত করা ৩. দেশের দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করা ৪. একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধিদের বিচার প্রক্রিয়া চলতি বছরের মধ্যে শেষ করা ৫. দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি'র সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দ্বার উন্মোচন করা ৬. জাতীয় সংসদকে কার্যকর করা ৭. দলীয় প্রভাববলয় থেকে বেড়িয়ে এসে সাধারণ মানুষের সেবা করা ৮. দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ৯. দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত ও নিশ্চিত করা ১০. সকল দুর্নীতির মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা ১১. সংবিধান সংশোধন করে বাহাত্তরের সংবিধানে পূর্ণাঙ্গরূপে ফিরে যাওয়া ১২. রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে পরিবর্তন করে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া ১৩. আন্দোলনের নামে যারা সারা দেশে নাশকতা চালিয়েছে তাদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনা ১৪. নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘুদের উপর যারা হামলা ও নির্যাতন করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা ও কঠোর সাজার ব্যবস্থা করা ১৫. রাজনৈতিক কারণে কোনো মামলায় যদি কোনো রাজনৈতিক নেতা জেলে থাকেন, তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১
false