title
stringlengths 1
251
| url
stringlengths 31
281
| text
stringlengths 0
785k
|
---|---|---|
গট্ফ্রিড লাইব্নিত্স | https://bn.wikipedia.org/wiki/গট্ফ্রিড_লাইব্নিত্স | পুনর্নির্দেশ গটফ্রিড ভিলহেল্ম লাইবনিৎস |
উইকিপিডিয়া | https://bn.wikipedia.org/wiki/উইকিপিডিয়া | উইকিপিডিয়া হলো সম্মিলিতভাবে সম্পাদিত, বহুভাষিক, মুক্ত প্রবেশাধিকার, মুক্ত বিষয়বস্তু সংযুক্ত অনলাইন বিশ্বকোষ যা উইকিপিডিয়ান বলে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক সম্প্রদায় কর্তৃক লিখিত এবং রক্ষণাবেক্ষণকৃত। স্বেচ্ছাসেবকেরা মিডিয়াউইকি নামে একটি উইকি -ভিত্তিক সম্পাদনা ব্যবস্থা ব্যবহার করে সম্পাদনা করেন। এটি ধারাবাহিকভাবে সিমিলারওয়েব এবং পূর্বে আলেক্সা কর্তৃক র্যাঙ্ককৃত ১০টি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে একটি; উইকিপিডিয়া বিশ্বের ৫ম জনপ্রিয় সাইট হিসেবে স্থান পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায় উইকিপিডিয়া সমস্ত ওয়েবসাইটের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে, "মাসিক প্রায় ১৮ বিলিয়ন পৃষ্ঠা প্রদর্শন এবং প্রায় ৫০০ মিলিয়ন স্বতন্ত্র পরিদর্শক রয়েছে। উইকিপিডিয়ায় ইয়াহু, ফেসবুক, মাইক্রোসফট এবং গুগলের পথানুসরণ করে, সর্বাধিক ১.২ বিলিয়ন স্বতন্ত্র পরিদর্শক রয়েছে।"
উইকিপিডিয়া উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক হোস্টকৃত, যা একটি আমেরিকান অলাভজনক সংস্থা যা মূলত অনুদানের মাধ্যমে অর্থায়ন করে।
১৫ জানুয়ারি ২০০১ সালে জিমি ওয়েলস এবং ল্যারি স্যাঙ্গার উইকিপিডিয়া চালু করেন। উইকি এবং এনসাইক্লোপিডিয়ার মিশ্রণ করে স্যাঙ্গার এর নামটি তৈরি করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে এটি ইংরেজিতে উপলব্ধ ছিল। পরবরতীতে একটি পিন্ডারিশব্দে উইকি (এটি সম্মিলিত ওয়েবসাইটের এক প্রকার নাম, হাওয়াইয়ান ভাষায় "হাঁটা")"Wiki" in the Hawaiian Dictionary, revised and enlarged edition, University of Hawaii Press, 1986 এবং বিশ্বকোষ। 'উইকি উইকি' মানে দাঁড়িয়ে ছোট-ছোট পায়ে হাঁটা। উইকি ওয়েব সংস্কৃতিতে সবার ছোট-ছোট অবদান যুক্ত হয়েই এই সাইটটির মত ক্রমবর্ধমান সংগ্রহে গড়ে ওঠে। বর্তমানে এটি সব থেকে বড় এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্যসূত্র হিসাবে ব্যবহার হয়। Cf. Bill Tancer (Global Manager, Hitwise), "Wikipedia, Search and School Homework" , Hitwise: An Experian Company (Blog), March 1, 2007. Retrieved December 18, 2008.
ইংরেজি উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে অন্যান্য ভাষায় উইকিপিডিয়ার দ্রুত বিকাশ করা হয়। উইকিপিডিয়া সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী সম্মিলিতভাবে টি ভাষার উইকিপিডিয়ায় প্রায় ৪০০ লক্ষ নিবন্ধ রচনা করেছেন, যার মধ্যে শুধুমাত্র ইংরেজি উইকিপিডিয়াতেই রয়েছে ৬৬ লক্ষের অধিক নিবন্ধ। উইকিপিডিয়াতে প্রায় প্রতি মাসে ২ বিলিয়ন বার প্রদর্শিত হয় এবং প্রতি মাসে ১৫ মিলিয়নেরও বেশি সম্পাদনা (প্রায় গড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫.৭ টা সম্পাদনা) করা হয় ()। ২০০৬ সালে, টাইম ম্যাগাজিন বলে যে কাউকে সম্পাদনা করার অনুমতি দেওয়ার নীতি উইকিপিডিয়াকে "বিশ্বের বৃহত্তম (এবং সেরা) বিশ্বকোষ" করে তুলেছে।
উইকিপিডিয়া ওয়েবসাইট উন্মুক্ত প্রকৃতির হওয়ায় এখানে লেখার মান, ধ্বংসপ্রবণতা এবং তথ্যের নির্ভুলতা রক্ষা করতে বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে, কিছু নিবন্ধে অপরীক্ষিত বা অযাচাইকৃত বা অসঙ্গত তথ্য থাকতে পারে। উইকিপিডিয়া জ্ঞানের গণতন্ত্রীকরণ, কভারেজের পরিধি, অনন্য কাঠামো, সংস্কৃতি এবং বাণিজ্যিক পক্ষপাত হ্রাস করার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। আবার এটি পদ্ধতিগত পক্ষপাত প্রদর্শনের জন্য সমালোচিত হয়েছে, বিশেষ করে নারীর প্রতি লিঙ্গ পক্ষপাত এবং কথিত আদর্শগত পক্ষপাতিত্বের জন্য। ২০০০-এর দশকে উইকিপিডিয়ার নির্ভরযোগ্যতা প্রায়শই সমালোচিত হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি হ্রাস পেয়েছে, কারণ উইকিপিডিয়া সাধারণত ২০১০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০২০-এর দশকের শুরুতে প্রশংসিত হয়েছে।
ইতিহাস
থাম্ব|alt=Logo reading "Nupedia.com the free encyclopedia" in blue with large initial "N".|উইকিপিডিয়া মূলত নুপিডিয়া নামের অন্য একটি বিশ্বকোষের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল
উইকিপিডিয়া শুরু করা হয়েছিল নুপিডিয়া'র একটি বর্ধিত প্রকল্প হিসাবে। নুপিডিয়া হল ইংরেজি ভাষার একটি মুক্ত বিশ্বকোষ যেখানে অভিজ্ঞরা লিখে থাকেন এবং একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী লেখাগুলি সম্পাদনা করা হয়। Bomis, Inc নামের একটি ওয়েব পোর্টাল প্রতিষ্ঠান ৯ মার্চ ২০০০ নুপিডিয়ার কার্যক্রম শুরু করে। এখানে মূল ব্যক্তিত্ব ছিলেন Bomic-এর নির্বাহী পরিচালক জিমি ওয়েলস এবং প্রধান সম্পাদক ল্যারি স্যাঙ্গার, যারা পরবর্তীকালে উইকিপিডিয়া কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হন। নিউপিডিয়া মুক্ত তথ্য লাইসেন্সের অধীনে পরিচালনা করা হচ্ছিল; তবে রিচার্ড স্টলম্যান উইকিপিডিয়া কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হবার পর গণ্যু মুক্ত ডকুমেন্টেশন লাইসেন্সে পরিবর্তন করা হয়।
ল্যারি স্যাঙ্গার এবং জিমি ওয়েলস হলেন উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা। সকলে সম্পাদনা করতে পারে এমন একটি বিশ্বকোষ তৈরির জন্য এর লক্ষ্যগুলি নির্ধারণের কাজটি করেন জিমি ওয়েলস এবং উইকি প্রকল্প প্রয়োগের মাধ্যমে এটি সার্থকভাবে সম্পাদনের কৌশল নির্ধারণের কৃতিত্ব দেয়া হয় ল্যারি স্যাঙ্গারকে। ১০ জানুয়ারি ২০০১ জিমি ওয়েলস নুপিডিয়ার মেইলিংলিস্টে নুপিডিয়ার সহপ্রকল্প হিসাবে একটি উইকি তৈরির প্রস্তাব করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষার জন্য www.wikipedia.com ওয়েবসাইটটি চালু করা হয় এবং স্যাঙ্গার এটি নুপিডিয়ার মেইলিংলিস্টে ঘোষণা করেন। উইকিপিডিয়া কাজ শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই "নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি" সংক্রান্ত নিয়মটি চালু করা হয়, এই নিয়মটি নুপিডিয়ার "পক্ষপাত এড়িয়ে চলা" সংক্রান্ত নিয়মটির সাথে অনেক সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়াও এই বিশ্বকোষটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রাথমিকভাবে আরও কিছু নীতিমালা ও নির্দেশাবলী তৈরি করা হয়েছিল এবং সেইসাথে উইকিপিডিয়া নুপিডিয়া থেকে আলাদা একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের মত কাজ শুরু করেছিল।
থাম্ব|বাম|লেখচিত্রের মাধ্যমে ইংরেজি উইকিপিডিয়ার নিবন্ধ সংখ্যার বৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে, এখানে ১০ জানুয়ারি ২০০১ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ (যেদিন ইংরেজি উইকির নিবন্ধ সংখ্যা ২০ লক্ষ অতিক্রম করেছিল) পর্যন্ত দেখানো হয়েছে
উইকিপিডিয়ার প্রথমদিকের নিবন্ধগুলি নুপিডিয়া, স্ল্যাসডট পোস্টিং এবং সার্চ ইঞ্জিন ইনডেক্সিং-এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ২০০১ সালের মধ্যে উইকিপিডিয়ায় ১৮ ভাষার প্রায় ২০,০০০ নিবন্ধ তৈরি করা হয়। ২০০৩ সালের শেষের দিকে ২৬টি ভাষায় কাজ শুরু হয় এবং ২০০৩ সালের মধ্যে মোট ৪৬ ভাষার উইকিপিডিয়া চালু হয়। ২০০৪ সাল শেষ হবার আগেই ১৬১টি ভাষার উইকিপিডিয়া প্রকল্প শুরু করা হয়।" ২০০৩ সালে সার্ভারে সমস্যা হবার আগ পর্যন্ত নিউপিডিয়া ও উইকিপিডিয়া আলাদা ছিল এবং এরপর সকল নিবন্ধ উইকিপিডিয়ার সাথে সমন্বয় করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ইংরেজি উইকিপিডিয়া ২০ লক্ষ নিবন্ধের সীমানা পার করে। এটি তখন ১৪০৭ সালে তৈরি করা ইয়ংলে এনসাইক্লোপিডিয়াকে ম্লান করে দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষে পরিণত হয়। গত ৬০০ বছরের মধ্যে ইয়ংলে এনসাইক্লোপিডিয়া ছিল পৃথিবী সবচেয়ে সমৃদ্ধ বিশ্বকোষ।
প্রকৃতি
সম্পাদনা
প্রথাগত অন্যান্য বিশ্বকোষ থেকে ভিন্ন, উইকিপিডিয়ায় শুধুমাত্র বিভিন্ন মাত্রায় "সুরক্ষিত" বিশেষ স্পর্শকাতর এবং/অথবা ধ্বংসপ্রবণ পাতা ব্যতীত অন্যান্য যে কোন পাতায় সম্পাদনা করা যায়, এমনকি কোনো অ্যাকাউন্ট ব্যতীত যে-কোনো পাঠক অনুমতি ছাড়াই যে-কোন লেখা সম্পাদনা করতে পারেন। যদিও, বিভিন্ন ভাষার সংস্করণে এই নীতি কিছুটা সংশোধিত বা পরিবর্তিত হয়ে থাকে; উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি সংস্করণে শুধুমাত্র নিবন্ধিত ব্যবহারকারী একটি নতুন নিবন্ধ তৈরি করতে পারেন। কোন নিবন্ধই, উক্ত নিবন্ধ সৃষ্টিকারী বা অন্য কোন সম্পাদকের মালিকানাধীন হিসেবে গণ্য হয় না। পরিবর্তে, মূলত সম্পাদকদের ক্ষমতাপ্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধের বিষয়বস্তু ও কাঠামো সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ধ্বংসপ্রবণতা
সম্প্রদায়
মুক্ত সহযোগিতা
ভাষা সংস্করণ
{{Pie chart
| caption = বিভিন্ন ভাষা সংস্করণে নিবন্ধের বিতরণ ( তারিখ অনুযায়ী)| other = yes
| label1 = ইংরেজি
| value1 =
| color1 = blue
| label2 = ওলন্দাজ
| value2 =
| color2 = #764F8A
| label3 = জার্মান
| value3 =
| color3 = lightblue
| label4 = সুয়েডীয়
| value4 =
| color4 = #7B7D7D
| label5 = ফরাসি
| value5 =
| label6 = ইতালীয়
| value6 =
| color6 = #764f8B
| label7 = রুশ
| value7 =
| color7 = red
| label8 = স্পেনীয়
| value8 =
| color8 = #99f6ff
| label9 = পোলিশ
| value9 =
| color9 = #2a2a2a
| label10 = ওয়ারে ওয়ারে
| value10 =
| color10 = #55ff77
| label11 = বাংলা
| value11 =
| Color11 = Black
}}
উইকিপিডিয়ায় বর্তমানে টি ভাষা সংস্করণ রয়েছে; এর মধ্যে, পনেরটি ভাষার প্রতিটিতে এক মিলিয়নের বেশি নিবন্ধ রয়েছে (ইংরেজি, সুইডিশ, ওলন্দাজ, জার্মান, ফরাসি, ইতালীয়, পোলিশ, স্পেনীয়, রুশ, সুইডিশ, ভিয়েতনামী, জাপানি, চীনা, পর্তুগীজ, ওয়ারে-ওয়ারে এবং
বাংলা), আরও চারটি ভাষায় ৭০০,০০০-এর বেশি নিবন্ধ রয়েছে (সেবুয়ানো, চীনা, জাপানি, পর্তুগিজ), ৩৭টি ভাষায় ১০০,০০০-এর বেশি নিবন্ধ রয়েছে, এবং ৭৩টি ভাষায় রয়েছে ১০,০০০ নিবন্ধ।List of Wikipedias ইংরেজি উইকিপিডিয়ায়, সর্বাধিক ৪.৫ মিলিয়নের বেশি নিবন্ধ রয়েছে। জুন, ২০১৩ সালে আলেক্সা অনুযায়ী, ইংরেজি সাবডোমেন (en.wikipedia.org; ইংরেজি উইকিপিডিয়া) উইকিপিডিয়ার সর্বমোট ৫৬% ট্রাফিক গ্রহণ করে, অন্যান্য ভাষার মধ্যে যথাক্রমে (স্পেনীয়: ৯%; জাপানি: ৮%; রুশ: ৬%; জার্মান: ৫%; ফরাসি: ৪%; ইতালিয়: ৩%)। ডিসেম্বর ২০১৩ অনুযায়ী, ছয়টি বৃহত্তম ভাষা সংস্করণের মধ্যে রয়েছে (নিবন্ধ গণনা অনুযায়ী) ইংরেজি, ওলন্দাজ, জার্মান, সুয়েডীয়, ফরাসি এবং ইতালীয়। উইকিপিডিয়ার বহুভাষিক কন্টেন্ট সহাবস্থান মূলত ইউনিকোডের মাধ্যমে তৈরি হয়ে থাকে। এই সুবিধা জানুয়ারি ২০০২ সাল থেকে উইকিপিডিয়ায় বিরন ভিকার কর্তৃক প্রথম চালু করা হয়।
{{Bar chart
| title =উইকিপিডিয়ার শীর্ষ ২০টি ভাষা সংস্করণে নিবন্ধের সংখ্যা(ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪ তারিখ অনুযায়ী)<ref>
কার্যক্রম
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন এবং উইকিমিডিয়া চ্যাপ্টার
থাম্ব|উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন লোগো
উইকিপিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেছে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি উইকিপিডিয়ার অন্যান্য সহপ্রকল্পগুলি পরিচালনা করে, যেমন: উইকিবই, উইকিঅভিধান। উইকিমিডিয়া চ্যাপ্টার হল উইপিডিয়ানদের স্থানীয় সংগঠন। যার মাধ্যমে প্রচার, প্রসার এবং প্রকল্প পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহের মত কাজগুলি করা হয়।
সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার
উইকিপিডিয়ার কাজগুলি মিডিয়াউইকির উপর নির্ভর করে করা হয়ে থাকে। মিডিয়াউইকি হল একটি মুক্ত এবং ওপেন সোর্স উইকি সফটওয়্যার প্লাটফর্ম যেটি পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা এবং এটি তথ্যভান্ডারের ভিত্তি হিসাবে মাইসিকোয়েল ব্যবহার করা হয়েছে। সফটওয়্যারটিতে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং বৈশিষ্ট একত্রিত করা হয়েছে, যেমন ম্যাক্রো ভাষা, চলক, টেমপ্লেট এর সমন্বয়করণের মাধ্যমে ব্যবহার এবং ইউআরএল পুনর্নির্দেশনা ইত্যাদি। মিডিয়াউইকি গণু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স এর অধিনে প্রকাশ করা হয়েছে যা সকল উইকিমিডিয়া প্রকল্পে এবং প্রায় সবধরনের উইকি প্রকল্পেই ব্যবহার করা হয়। বিশেষভাবে বলতে গেলে উইকিপিডিয়া Clifford Adams এর পার্ল প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা ইয়ুজমোডউইকি নামের একটি সফটওয়্যার দিলে চালানো হতো (ধাপ ১)। প্রবন্ধের হাইপারলিংক সঠিক ভাবে কাজ করানোর জন্য প্রাথমিকভাবে একটি বিশেষ পদ্ধতি অণুসরন করা হয়েছিল। তখন একাধিক শব্দের কোন হাইপারলিংক তৈরি করার সময় শব্দগুলির মাঝের ফাকা জায়গাগুলি মুছে দিয়ে একটি শব্দ তৈরি কর সেটির সাথে লিংক তৈরি করা হত। দুই জোড়া তৃতীয় বন্ধনি ব্যবহার করে লিংক তৈরির পদ্ধতিটি পরবর্তীকালে সফটওয়্যারটিতে সংযুক্ত করা হয়। জানুয়ারি ২০০২ সালে উইকিপিডিয়াতে পিএইচপি উইকি ইঞ্জিন এবং মাইসিকোয়েল ডাটাবেজ ব্যবহার শুরু করা হয় (ধাপ ২)। উইকিপিডিয়ার জন্য বিশেষ এই পদ্ধতিটি তৈরি করে দেন Magnus Manske। ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী এই সর্বশেষ সংস্করণের সফটওয়্যারটিতে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে। জুলাই ২০০২-এ উইকিপিডিয়াতে Lee Daniel Crocker এর লেখা মিডিয়াউইকি নামের তৃতীয় প্রজন্মের এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার শুরু করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী মিডিয়াউইকির বৈশিষ্ট বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের বর্ধিতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। এপ্রিল ২০০৫ -এ মিডিয়াউইকি সার্চ অপশনের জন্য Lucene এর একটি বর্ধিতাংশ যুক্ত করা হয়, এবং তথ্য খোঁজার এই বিশেষ এই সুবিধার জন্য উইকিপিডিয়া মাইসিকোয়েল এর পরিবর্তে Lucene ব্যবহার শুরু করে। বর্তমানে উইকিপিডিয়াতে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা Lucene Search 2 ব্যবহার করা হচ্ছে যেটি Lucene library 2.0 এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
থাম্ব|উইকিপিডিয়ার গঠনকৌশল, এপ্রিল ২০০৯, দেখুন server layout diagrams on Meta-Wiki.
উইকিপিডিয়ায় তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য লিনাক্সের (প্রধানত উবুন্টু)বহুস্তর বিশিষ্ট বিস্তৃত একগুচ্ছ সার্ভার ব্যবহার করা হয়, তবে ZFS এর বিশেষ সুবিধার জন্য কিছু ওপেন সোলারিস সার্ভারও ব্যবহার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০০৮ পর্যন্ত এই সার্ভারগুলির ৩০০টি ছিল ফ্লোরিডায়, ২৬টি আর্মস্টার্ডাম এবং ২৩টিইয়াহুর কোরিয়ান হোস্টিং সুবিধার আওতায় সিউলে ছিল। ২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত উইকিপিডিয়া একটি মাত্র সার্ভার থেকে পরিচালনা করা হত। এর পরপরই বহুস্তর বিশিষ্ট বিস্তৃত গঠনকৌশল ব্যবহার শুরু করা হয়। জানুয়ারি ২০০৫ এ প্রকল্প পরিচালনার জন্য ফ্লোরিডাতে ৩৯টি সার্ভার ছিল। এরমধ্যে ছিল একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী সার্ভার যেটি মাইসিকোয়েল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। এছাড়াও ছিল অ্যাপাচি এইচটিটিপি সার্ভার এর উপর ভিত্তি করে ২১টি ওয়েব সার্ভার ব্যবহার করা হচ্ছিল এবং ৭টি ছিল স্কুইড ওয়েব প্রক্সি ক্যাশ সার্ভার।
উইকিপিডিয়ায় দিনের বিভিন্ন সময় প্রতি সেকেন্ডে ২৫০০০ থেকে ৬০০০০ পর্যন্ত পাতা দেখার অনুরোধ আসে।"Monthly request statistics", Wikimedia. Retrieved on 2008-10-31. এই সকল অনুরোধ একটি স্কুইড ওয়েব প্রক্সি ক্যাশ সার্ভারের কাছে আসে এবং এখান থেকেই অনুরোধকারীকে নির্দিষ্ট পাতা দেখার ব্যবস্থা করা হয়। যেসব অনুরোধ এখানে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না সেগুলি load-balancing সার্ভারে পাঠানো হয়। লিনাক্স ভার্চুয়াল সার্ভার সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত এই সার্ভার অনুরোধগুলি অ্যাপাচি ওয়েব সার্ভারের পাঠিয়ে দেয়। এই ওয়েবসার্ভরগুলি মূল তথ্যভান্ডার থেকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটি প্রদর্শন করে। উইকিপিডিয়ার সকল ভাষার সংস্করণের জন্য এই একই পদ্ধতি অনুসরন করা হয়। পাতাগুলি দ্রুত ওপেন করার জন্য প্রদর্শন যোগ্য পাতাগুলি একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর ক্যাশ মেমরীতে রেখে দেয়া হয়। এমন কিছু পাতা রয়েছে যেগুলির জন্য অনেক বেশি পরিমাণ অনুরোধ এসে থাকে তাই সেগুলি যদি প্রতিবার উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুযায়ী তথ্যভান্ডার খুজে প্রদর্শন করতে হয় তাহলে অনেক বেশি সময় লাগবে। সেকারণে ক্যাশ মেমরীতে রেখে দেয়ার পদ্ধতিটি অনুসরন করা হয়। নেদারল্যান্ড ও কোরিয়াতে উইকিপিডিয়ার সবথেকে বড় দুটি গুচ্ছ সার্ভার রয়েছে যেগুলি উইকিপিডিয়ার অধিকাংশ ওয়েব ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে।
অভ্যন্তরীণ মান নিয়ন্ত্রণ ও গুরুত্ব মূল্যায়ন
বিতর্কসমূহ
শিক্ষাক্ষেত্রে অনুৎসাহিতকরণ
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাত্রদেরকে একাডেমিক কাজে কোন বিশ্বকোষ থেকে তথ্যসূত্র দিতে নিষেধ করেন, এর বদলে প্রাথমিক উৎসকে একাজে বেছে নিতে বলেন, অনেকে আবার সুস্পষ্টভাবে উইকিপিডিয়া থেকেই তথ্যসূত্র দিতে নিষেধ করেন। ওয়েলস জোর দিয়ে বলেন, যে কোন প্রকারের বিশ্বকোষ সাধারণত তথ্যসূত্র উদ্ধৃতির জন্য সঠিক নয়, এবং প্রামাণ্য হিসেবে এগুলোর উপর নির্ভর করা উচিত নয়। ওয়েলস একবার (২০০৬ বা তার আগে) বলেন তিনি প্রতি সপ্তাহে দশ হাজার ইমেইল পাচ্ছেন যারা বলে তারা তাদের পেপারে ফেল গ্রেড পাচ্ছে কারণ তারা উইকিপিডিয়া থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিল; তিনি ছাত্রদেরকে বলেন তারা তাদের প্রাপ্য নম্বরই পেয়েছে।" ঈশ্বরের দোহাই লাগে, তোমরা এখন কলেজে পড়ছো, উইকিপিডিয়া থেকে উদ্ধৃতি দিও না।" তিনি বলেন।"Jimmy Wales", Biography Resource Center Online. (Gale, 2006.)
খোলামেলা বিষয়বস্তু
সচিত্র যৌন বিষয়বস্তু অনুমোদনের জন্য উইকিপিডিয়া সমালোচিত হয়েছে। শিশু নিরাপত্তা অধিকারকর্মীগণ বলেন উইকিপিডিয়ার অনেক পাতাতেই সচিত্র যৌন বিষয়বস্তু দেখা যায়, কোন সতর্কবার্তা বা বয়স যাচাইয়ের ব্যবস্থা ছাড়াই।
আরও দেখুন
উইকিপিডিয়ার রূপরেখা
জ্ঞানের গণতন্ত্রায়নের
ইন্টারপিডিয়া, সহযোগীতা ইন্টারনেট বিশ্বকোষের জন্য একটি প্রাথমিক প্রস্তাব
অনলাইন বিশ্বকোষের তালিকা
উইকির তালিকা
নেটওয়ার্ক প্রভাব
উইকিপিডিয়া প্রতিরক্ষা
উইকিপিডিয়া পর্যালোচনা
উইকিপিডিয়া:উইকিপিডিয়া আসক্তি
উইকিপিডিয়া:উইকিপিডিয়ায় আসক্তদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র
ডোপামিন উপবাস
বিশেষ অণুসন্ধান
টীকা
তথ্যসূত্র
অতিরিক্ত তথ্যসূত্র
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
Priedhorsky, Reid, Jilin Chen, Shyong (Tony) K. Lam, Katherine Panciera, Loren Terveen, and John Riedl. "Creating, Destroying, and Restoring Value in Wikipedia". Proc. GROUP 2007, doi: 1316624.131663.
বই
(See book rev. by Baker, as listed below.)
বই রিভিউ এবং অন্যান্য প্রবন্ধ
Crovitz, L. Gordon. "Wikipedia's Old-Fashioned Revolution: The online encyclopedia is fast becoming the best." (Originally published in Wall Street Journal online - April 6, 2009, 8:34 A.M. ET)
Baker, Nicholson. "The Charms of Wikipedia". The New York Review of Books, March 20, 2008. Accessed December 17, 2008. (Book rev. of The Missing Manual, by John Broughton, as listed above.)
Rosenzweig, Roy. Can History be Open Source? Wikipedia and the Future of the Past. (Originally published in Journal of American History 93.1 (June 2006): 117-46.)
Learning resources
Wikiversity list of learning resources. (Includes related courses, Web-based seminars, slides, lecture notes, text books, quizzes, glossaries, etc.)
তথ্যভান্ডার
তথ্যের অন্যান্য মাধ্যম
Is Wikipedia Cracking Up?, The Independent, February 3, 2009
The Wiki-snobs Are Taking Over, The Sunday Times, timesonline.co.uk, February 8, 2009
বহিঃসংযোগ
– বহুভাষিক পোর্টাল (এখানে সকলভাষার উইকিপিডিয়ার সবগুলি সংস্করনের লিংক পাওয়া যাবে)
উইকিপিডিয়া — রেডিট
উইকিট্রেন্ডস্: সর্বাধিক পরিদর্শিত উইকিপিডিয়া নিবন্ধ
উইকিপিডিয়া বিষয় পাতা — দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস''
উইকিপিডিয়া জন্মে জিমি ওয়েলসের দ্য টেড আলাপের ভিডিও
সাধারণভাবে উইকিপিডিয়া সম্পর্কে জিমি ওয়েলসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের অডিও — ইকনটক পডকাস্ট
Wikipedia and why it matters – ল্যারি স্যাঙ্গার'র ২০০২ আলাপ — স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়; ভিডিও সংরক্ষাণাগার এবং আলাপ প্রতিলিপি
, উইকিপিডিয়া বুদ্ধিমত্তা প্রকল্পের ব্যবহার বর্ণনা, এবং কীভাবে উইকিপিডিয়া নিবন্ধ ওয়েব সামগ্রী থেকে স্বয়ংক্রিয় উৎপন্ন হয়।
উইকিপেপারস্ – সম্মেলন কাগজপত্রের সংকলন, জার্নাল নিবন্ধ, থিসিস, বই, ডেটাসেট এবং উইকিপিডিয়া এবং উইকি সম্পর্কে সরঞ্জাম
বিষয়শ্রেণী:সহযোগিতামূলক প্রকল্প
বিষয়শ্রেণী:উইকিমিডিয়া প্রকল্প
বিষয়শ্রেণী:বহুভাষিক ওয়েবসাইট
বিষয়শ্রেণী:অনলাইন বিশ্বকোষ
বিষয়শ্রেণী:সাধারণ বিশ্বকোষ
বিষয়শ্রেণী:২০০১-এ প্রতিষ্ঠিত ইন্টারনেট সম্পত্তি
বিষয়শ্রেণী:সামাজিক তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ
বিষয়শ্রেণী:ভার্চুয়াল সম্প্রদায়
বিষয়শ্রেণী:উইকিসমূহ
বিষয়শ্রেণী:বিজ্ঞাপন মুক্ত ওয়েবসাইট
বিষয়শ্রেণী:ক্রিয়েটিভ কমন্স-লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওয়েবসাইট
বিষয়শ্রেণী:জিমি ওয়েলস |
বিশ্বকোষ | https://bn.wikipedia.org/wiki/বিশ্বকোষ | thumb|300px|Brockhaus বিশ্বকোষ
সংযোগ=চিত্র:Print Wikipedia by Michael Mandiberg, NYC June 18, 2015–31.jpg|alt=ইংরেজি উইকিপিডিয়ার মুদ্রিত সংস্করণ (একটি বিশ্বকোষ)। ৭৪৭৩ টি খণ্ডে প্রকাশিত যার প্রতিটিতে ৭০ পৃষ্ঠা রয়েছে। এতে ১১।৫ মিলিয়ন নিবন্ধ রয়েছে যার সূচীপত্রের জন্য ৯১ টি খণ্ড লেগেছে।|থাম্ব|২০১৫ তে প্রকাশিত, ইংরেজি উইকিপিডিয়ার মুদ্রিত সংস্করণ (একটি বিশ্বকোষ)। ৭৪৭৩ টি খণ্ডে প্রকাশিত যার প্রতিটিতে ৭০০ পৃষ্ঠা রয়েছে।এতে ১১.৫ মিলিয়ন নিবন্ধ রয়েছে যার সূচীপত্রের জন্য ৯১ টি খণ্ড লেগেছে।
thumb|300px|এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা -এর ১৫ তম সংস্করণের খন্ডগুলো (২০০২ সালের খন্ড) একটি গ্রন্থাগারের দুটি বইয়ের তাক জুড়ে রয়েছে।
thumb|right|লুকুব্রেসনস এর ১৫৪১ সালের সংস্করণের প্রথম পাতা। নামে encyclopedia -শব্দটির কোনো প্রকরণ ব্যবহার করা প্রথম বিশ্বকোষগুলোর মধ্যে এটি একটি ছিল।
বিশ্বকোষ () হলো সকল শাখা বা কোনো নির্দিষ্ট শাখার সমন্বিত কীর্তি বা একটি নির্দেশক কাজ, যাতে জ্ঞানের সারসংক্ষেপ রয়েছে। Glossary of Library Terms. Riverside City College, Digital Library/Learning Resource Center. Retrieved on: November 17, 2007. বিশ্বকোষে সাধারণত নিবন্ধ বা এন্ট্রি থাকে, যা নামের প্রথম অক্ষরানুসারে বা কখনো কখনো বিষয়ের ভিত্তিতে সাজানো হয়। অভিধানের চেয়ে বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলোর আকার বড় এবং বিস্তৃত হয়। অন্যকথায় অভিধান যেখানে কেন্দ্র হচ্ছে শব্দের বুৎপত্তি, উচ্চারণ, ব্যবহার এবং ব্যাকরণভিত্তিক রূপের মতো ভাষাবিজ্ঞানের বিষয়গুলো সেখানে বিশ্বকোষে নিবন্ধের বিষয়ের বাস্তব সত্য নিয়ে আলোচনা করা হয়।Béjoint, Henri (2000). Modern Lexicography, pp. 30–31. Oxford University Press.
বিশ্বকোষ প্রায় ২০০০ বছর ধরে বিদ্যমান রয়েছে এবং ভাষা (কোনো আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় ভাষায় লেখা), আকার (অল্প বা অনেক অংশ), অভিপ্রায় (বৈশ্বিক বা স্থানীয় সীমিত জ্ঞানের উপস্থাপনা), সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি (প্রামাণিক, নীতিগত, আদর্শগত এবং হিতবাদসংক্রান্ত), লেখকতা (মানের ধরন), পাঠকতা (শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিপাশ্বিক অবস্থা, আগ্রহ এবং যোগ্যতা), বিশ্বকোষ তৈরিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং বণ্টন (হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, বড় বা ছোট প্রিন্ট অনুলীপি এবং ইন্টারনেট) এর ক্ষেত্রে সেই সময় থেকেই বিবর্তিত হতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের প্রদত্ত তথ্যের একটি মূল্যবান উৎস হওয়ায় এটিকে অনেক গন্থাগার, বিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়।
২১ শতাব্দিতে, উইপিডিয়ার মতো বিশ্বকোষ ডিজিটাল এবং ওপেন সোর্স সংস্করণের উৎপত্তির কারণে প্রবেশাধিকার, লেখকতা, পাঠকতা এবং লেখার বিভিন্ন ধরনের বিস্তৃতি ঘটেছে।
বুৎপত্তি
দুটো গ্রিক শব্দ একটি শব্দ হিসেবে ভুলবসত বিবেচনা করা হয়েছে
বিশ্বকোষের ইংরেজি প্রতিশব্দ, “encyclopedia” (encyclo|pedia) কোইন গ্রিক শব্দ, ἐγκύκλιος παιδεία থেকে এসেছে।Ἐγκύκλιος παιδεία, Quintilian, Institutio Oratoria, 1.10.1, at Perseus Project “এনকাইকিওস পিডিয়া” -এর অর্থ “সাধারণ শিক্ষা”, যেখানে বৃত্তাকার, পুনরাবৃত্তিক, নিয়মিত প্রয়োজন এবং সাধারণ এবং পেইডিয়া (παιδεία) অর্থ সন্তান হিসেবে লালনপালন করা।ἐγκύκλιος, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek–English Lexicon, at Perseus Project একত্রে তাদের অনুবাদ করা যায়, “পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান” বা পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা।παιδεία, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek–English Lexicon, at Perseus Project ১৪৭০ সালের কুইন্টিলিয়ান সংস্করণের একটি লাতিন পান্ডুলীপির নকলকারীদের লেখায় একটি ভুলের কারণে এই দুটো পৃথক শব্দ এক হয়ে যায়।According to some accounts, such as the American Heritage Dictionary , copyists of Latin manuscripts took this phrase to be a single Greek word, ἐγκυκλοπαιδεία enkyklopaedia. সেই নকলকারী এই দুটি শব্দকে একটি শব্দ, এরকাইক্লোপিডিয়া (enkyklopaedia) হিসেবে মনে করেন, যদিও এটির অর্থ একই বলে বিবেচনা করেন। এই সমস্যাযুক্ত শব্দটিতে থেকে নতুন লাতিন শব্দ, এনসাইকেলপিডিয়া (encyclopaedia) -এর উৎপত্তি হয় এবং পরবর্তীকালে সেটি ইংরেজি ভাষায় যুক্ত হয়। এই যৌগিক শব্দের কারণে ১৫ শতাব্দির পাঠকেরা এবং তখন থেকে অনেকের রোমান লেখক কুইন্টিলিয়ান এবং প্লিনি কোনো প্রাচীন রীতি ব্যাখ্যা করেছেন বলে ভুল ধারণা ছিল।
১৬ শতাব্দিতে সংযুক্ত শব্দের ব্যবহারসমূহ
১৬ শতাব্দিতে এই নতুন সংযুক্ত শব্দটি কীভাবে ব্যবহার করা উচিত তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা দেখা দেয়। বিভিন্ন শিরোনাম থেকে দেখা যায় যে, শব্দটির বানান এবং নামবাচক শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে বিতর্ক চলছিল, যেমন: জাকোবাস ফিলোমুসাস এর মার্গারিটা ফিলোসোফিকা এনসাইক্লেওপেইডিয়াম (encyclopaediam) এক্সিবেন (১৫০৮), হোয়ানাস আভেনটিনা এর এনসাইকেলপিডিয়া (Encyclopedia) অরবিস্কে ডকট্রিনারুম, হোক এস্ট ডোমনিউম আরটিউম, ইপসিওস ফিলোসোফাইয়ে ইনডেক্স এসি ডিভিসিও, ইযোয়াহিমুস ফোটিয়াস রিঙ্গেলবার্গ এর লুকুব্রেসনস ভেল পর্চিয়স অ্যাবসোলটিসিমা কিক্লোপিডিয়া (১৫৩৮, ১৫৪১), পোল স্কেলিছ এর “এনসাইক্লোপেইডিয়া, সেউ অবলিস ডিসিপনারুম, তাম সাকরারুম কুয়াম প্রোফানারুম, এপিস্টেমোন”, জর্জ রেইচ এর মার্গারিটা ফিলোসোফিকা (১৫০৩ সালে প্রকাশিত এবং ১৫৮৩ সালে নাম পরিবর্তন করে এনসাইকেলপিডিয়া নাম রাখা হয়।) এবং সেমুয়েল আইজেনম্যাঙ্গার এর সাইকেলপিডিয়া প্যারাসেলসিকা (১৫৮৫)।
এই যৌগিক শব্দটির দুটো ভার্নাকুলার ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে। সম্ভবত ১৪৯০ সালে, ফ্রান্সিয়াস পুসিয়াস পলিটিয়ানুসকে একটি চিঠি পাঠান, যেখানে তিনি এটিকে এনসাইকেলপিডিয়া (encyclopedia) বলেছেন। প্রায়ই ফ্রাঁসোয়া রাবলেকে তার পেন্টাগ্রুয়েল -এ এই শব্দটির ব্যবহারের জন্য প্রায়ই উল্লেখ করা হয়।
পিডিয়া (-p(a)edia) প্রত্যয় সম্পর্কে
অনেক বিশ্বকোষের নামে পিডিয়া (-p(a)edia) প্রত্যয়টি যুক্ত থাকে, যাতে বোঝা যায় যে, লেখাটি বিশ্বকোষ শ্রেণিভূক্ত, যেমন: বাংলাপিডিয়া (বাংলাদেশের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে)।
সমসাময়িক ব্যবহার
বর্তমানে ইংরেজিতে সাধারণত এই শব্দটির বানান হলো: encyclopedia, যদিও encyclopaedia (encyclopædia -শব্দটিতে থেকে এসেছে) বানানটি ব্রিটেনে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়।]]
বৈশিষ্ট্য
বিশ্বকোষ ১৮ শতাব্দিতে অভিধান থেকে বিকশিত হয়। অভিধান এবং বিশ্বকোষ দুটোই উচ্চ শিক্ষিত এবং খুবই অবগত বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করেছেন, তবে গঠনের দিক থেকে দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অভিধান ভাষা সংক্রান্ত কীর্তি, যেখানে মূলত শব্দের বর্ণানুক্রমিক তালিকা এবং সেগুলো সঙ্গার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিধানে সমার্থক শব্দ এবং বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ শব্দগুলো বিছিন্নভাবে থাকে এবং সেগুলোর গভীরে যাওয়ার কোনো সুয়োগ থাকে না। যদিও অভিধানে শব্দগুলোর তথ্য, বিশ্লেষণ এবং পটভূমি সীমিতভাবে থাকে। অভিধানে একটি সঙ্গা দেওয়া হলেও, এটি থেকে শব্দের সম্পূর্ণ অর্থ, সীমাবদ্ধতা এবং যেভাবে শব্দগুলো জ্ঞানের কোনো প্রসস্থ ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত থাকে তা পাঠক সম্পূর্ণভাবে বুঝতে না পারতেও পারে।
এই সমস্যা সমাধানে, বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলো শুধু সরল সঙ্গা বা কোনো নির্দিষ্ট শব্দের সঙ্গা দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এতে কোনো বিষয় বা শিক্ষার বিষয়ের একটি আরও বিস্তৃত অর্থ থাকে। কোনো বিষয়ের সমার্থক শব্দগুলো সঙ্গায়িত এবং সেগুলোর তালিকা করা ছাড়াও বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলো বিষয়ের আরও বিস্তৃত অর্থ নিয়ে গভীরভাবে কাজ কর এবং সেই বিষয়ে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ পুঞ্জীভূত জ্ঞান বহন করে। একটি নিবন্ধে প্রায়ই মানচিত্র, চিত্র, গ্রন্থপঞ্জি এবং পরিসংখ্যান থাকতে পারে। তত্ত্বানুসারে বিশ্বকোষ কাউকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে লেখা হয় না, যদিও এর একটি উদ্দেশ্য পাঠকদের এটির সত্যতায় সন্তুষ্ট করা।
চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দ্বারা একটি বিশ্বকোষকে ব্যাখ্যা করা হয়। যেগুলো হলো: বিষয়বস্তু, প্রসার, বিন্যাসের পদ্ধতি এবং তৈরির পদ্ধতি।
কোনো বিশ্বকোষ সাধারণ বিশ্বকোষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে যদি সেটিতে সকল ক্ষেত্রের সকল বিষয় নিয়ে নিবন্ধ থাকে। কোনো সাধারণ বিশ্বকোষে সেটি ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা, অভিধান এবং ভৌগোলিক অভিধান থাকতে পারে। দ্যা গ্রেট সোভিয়েত এনসাইকেলপিডিয়া এবং এনসাইকেলপিডিয়া জুদাইকা -এর মতো বিশ্বকোষও রয়েছে, যেখানে কোনো সাংস্কৃতিক, জাতিগত এবং জাতীয়তা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেক বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বা আইনের বিশ্বকোষের মতো বিশ্বকোষীয় প্রসারের কীর্তিগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুঞ্জীভূত জ্ঞান ধারণ করা। নির্দিষ্ট পাঠক শ্রেণির উপর ভিত্তি করে এগুলো বিষয়বস্তুর বিস্তার এবং আলোচনার গভীরতার দিক থেকে ভিন্ন।
কোনো বিশ্বকোষকে সেটির নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহার করতে বিন্যাসের কোনো শৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতির প্রয়োজন। মুদ্রিত বিশ্বকোষ বিন্যাসের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দুটো পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো হলো: বর্ণানুক্রমিক (এতে প্রত্যেকটি নিবন্ধের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে পারে বা নিবন্ধগেুলোকে বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো হতে পারে) এবং হায়ারার্কি পদ্ধতি। আগের পদ্ধতি এখন আরও প্রচলিত, বিশেষ করে সাধারণ বিশ্বকোষগুলোর ক্ষেত্রে। ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের জন্য একই বস্তু আরও পদ্ধতিতে বিন্যাস করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের কারণে অনুসন্ধান, ইনডেক্স করার এবং ক্রোস রেফারেন্স -এর জন্য নতুন উপায় তৈরি হয়েছে। ১৮ শতাব্দির ওনসিক্লোপিডি -এর প্রথম পৃষ্ঠার হোরাস এর এপিগ্রাফ একটি বিশ্বকোষ কাঠামের গুরুত্ব বর্ণনা করছে। যেখানে তিনি লিখেছেলেন: “সাধারণ বিষয়ে নিয়ম এবং সংযুক্তির শক্তিতে কি আকর্ষণ যুক্ত হতে পারে”।
আধুনিক মাল্টিমিডিয়া এবং তথ্য যুগের সাথে সব ধরনের তথ্যের সংগ্রহ, যাচাইকরণ, সংমিশ্রণ এবং উপস্থাপনায় নতুন পদ্ধতির আবির্ভাব হয়েছে। এভরিথিং২, এনকার্টা, এইচ২জি২ এবং উইকিপিডিয়া -এর মতো প্রকল্পগুলো তথ্য সংগ্রহ তথ্য সংগ্রহ সহজতর হওয়ার সাথে সাথে নতুন ধরনের বিশ্বকোষ আবির্ভূত বিশ্বকোষের উদাহরণ। ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বকোষ তৈরির পদ্ধতি উভয় লাভজনক ও অলাভজনক দিক থেকে সমর্থিত। উপরে উল্লেখিত গ্রেট সোভিয়েত এনসাইকেলপিডিয়া নামক বিশ্বকোষটি রাষ্ট্র সমর্থিত এবং ব্রিটানিকা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের নামক সংস্থার অধীনে একটি অলাভজনক পরিবেশে সেচ্ছাসেবকগণ অবদান রাখার মাধ্যমে উইকিপিডিয়া গড়ে তুলেছে।
কিছু অভিধান নামক কীর্তি বিশ্বকোষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, বিশেষ করে, যেগুলো কোনো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে (যেমন: মধ্যযুগের অভিধান, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজের অভিধান এবং ব্ল্যাকের আইন অভিধান)। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় অভিধান, ম্যককুয়ারি অভিধান সেটির প্রথম সংস্করণের পর সাধারণ নিবন্ধে যথার্থ নামবাচক শব্দ এবং সেই যথার্থ নামবাচক শব্দগুলো থেকে পাওয়া শব্দের ব্যবহারের জন্য একটি বিশ্বকোষ অভিধানে পরিণত হয়।
বিশ্বকোষ এবং অভিধানের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলো অধিকাংশ সাধারণ উদ্দেশ্যে তৈরি অভিধানের চেয়ে বেশি দীর্ঘ, পরিপূর্ণ এবং বিস্তৃত। বিশ্বকোষ এবং অভিধানের বিষয়বস্তুর মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ ভাষায় অভিধানে শব্দের ভাষাগত তথ্য থাকে কিন্তু বিশ্বকোষ যে জন্য ব্যবহার করা হয় সেটির উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। অভিধানের লেখাগুলো শব্দের বর্ণনার সাথে অবিচ্ছিন্ন কিন্তু বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলোর ভিন্ন নাম দেওয়া যায়। এ কারণে, অভিধানের লেখাগুলো অন্য ভাষায় সম্পূর্ণভাবে অনুবাদ করা যায় না কিন্তু বিশ্বকোষের নিবন্ধগুলোর ক্ষেত্রে এটি সম্ভব।
বাস্তবভিত্তিক বিশ্বকোষীয় তথ্য এবং ভাষাগত তথ্যের (যেমনটা অভিধানে থাকে) সুস্পষ্ট কোনো পার্থক্য না থাকায় ব্যবহারিকভাবে পার্থক্যগুলো সদৃশ নয়। এ কারণে, বিশ্বকোষেে এমন কোনো বিষয়বস্তু থাকতে পারে যা অভিধান এবং অন্যান্য সাদৃশ্যপূর্ণ কিছুতেও আছে। বিশেষ করে, কোনো শব্দের মাধ্যমে যে বিষয়টি অভিহিত করা হয় অভিধানে প্রায়ই সেই বিষয়টি সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক তথ্য থাকে।
ইতিহাস
প্রাচীনকালে যেখানে বিশ্বকোষগুলো হাতে লেখা হতো, বর্তমানে সেখানে এগুলো মুদ্রিত হয়। এখন এগুলোকে ইলেক্ট্রনিকভাবে বণ্টন এবং প্রদর্শনও করা যায়।
প্রাচীনকাল
thumb|Naturalis Historiae এর ১৬৬৯ সালের সংস্করণের প্রথম পাতা
প্রথম শতাব্দি খ্রিষ্টাব্দের একজন রোমান রাষ্ট্রনায়ক, প্লিনি দ্য এল্ডার এর নাতুরালিস ইসতোরিয়ে হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীয় বিশ্বকোষীয় কীর্তিগুলোর মধ্যে একটি, যা আধুনিক সময় পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে। তিনি ৩৭ পরিচ্ছেদের একটি কীর্তি তৈরি করেন, যেখানে তিনি প্রাকৃতিক ইতিহাস, স্থাপত্য, চিকিৎসা বিজ্ঞান, ভূগোল, ভূতত্ত্ব এবং তার আশেপাশে থাকা পৃথিবীর অন্যান্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি সেটির ভূমিকায় লিখেছেলেন যে, ২০০ এর বেশি লেখকের কীর্তি থেকে তিনি ২০,০০০টি সত্য একত্রিত করেছেন এবং অনেকগুলো তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যুক্ত করেন। তার কীর্তি ৭৭-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তিনি ৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের সময়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং সম্ভবত তিনি তার জীবনে কীর্তিটির সম্পাদনা শেষ করেননি।Naturalis Historia
মধ্যযুগ
মধ্যযুগের প্রথম দিকের একজন মহান জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, সেভিয়ার ইসিদোরে -কে এটিমোলোজিআই (দ্য এটিমোলোজিআই) বা অরিজিনেস (৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে) নামক মধ্যযুগের প্রথম বিশ্বকোষ লেখার জন্য স্বীকৃত। তিনি সেখানে তিনি সেই সময়ে বিদ্যমান থাকা উভয় প্রাচীন এবং সমসাময়িক শিক্ষার বড় অংশ এতে সংযুক্ত করেন। এতে ২০টি খণ্ডে বিভক্ত ৪৪৮টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। এটিতে থাকা অন্য লেখকদের বক্তব্য এবং লেখার অংশগুলোর জন্য এটি মূল্যবান, কারণ তিনি সেগুলো সংগ্রহ না করলে হয়তো সেগুলো হারিয়ে যেত।
ক্যারোলিংগিয়ান যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্বকোষ ছিল রাবাউনুস মাউরুস ৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে এটিমোলোজিআই এর উপর ভিত্তি করে লেখা দে উনিভার্সো এবং দে রেরুম নাতুরিস।
দশম শতাব্দি খ্রিষ্টাব্দের বাইজেনটাইন সম্রাজ্যের সুদা নামক বিস্তৃত বিশ্বকোষটিতে ৩০,০০০ এর বেশি লেখা ছিল, যার অনেকগুলো প্রাচীন উৎস থেকে এসেছে, যেগুলো তখন থেকে হারিয়ে গেছে এবং অনেক সময় খ্রিষ্টান সংকলকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখাগুলো বর্ণানুক্রমে বিন্যাস করা ছিল, যাতে স্বরবর্ণের ক্রম এবং গ্রিক বর্ণমালায় সেগুলোর স্থানে একটু বিচ্যুতি ছিল।
মধ্যযুগের মুসলিমদের প্রথমদিকের জ্ঞানের সংকলনের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি ছিল। ৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বসরা শহরের ইখওয়ান আল সাফা ইখওয়ান আল সাফা বিশ্বকোষের সাথে সংযুক্ত হয়।P.D. Wightman (1953), The Growth of Scientific Ideas উল্লেখযোগ্য কীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে আবু বকর আল রাযী এর বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ, মুতাজিলা অনুসরণকারী আল-কিন্দি এর ২৭০টি বই এবং ইবনে সিনা এর চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ, যা কয়েক শতাব্দি জুড়ে একটি মানসম্মত নির্দেশক কীর্তি ছিল। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে: আশআরিদের বৈশ্বিক ইতিহাস, আত তাবারি, আল-মাসুদী, আত তাবারি এর নবী এবং রাজাদের ইতিহাস,আমজাদ ইবনে রুস্তাহ, আলি ইবনে আসির এবং ইবনে খালদুন, যাদের মুকাদ্দিমায় বিশ্বাসের সতর্কতা সম্পর্কে লেখা আছে, যা আজও সম্পর্ণভাবে প্রযোজ্য।
left|thumb|254x254px|“লিবার ফ্লোরিদুস” নামক বিশ্বকোষের একটি অংশ। লেখকের ল্যাম্বার্ট এর একটি চিত্র, যেখানে তিনি মনুষ্য জ্ঞান সংকলনের চেষ্টা করছেন। গেন্ট বিশ্ববিদ্যালযের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত পান্ডুলীপি।
চীনের সোং সাম্রাজ্যের প্রথম দিকে (৯৬০-১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দ) ১১ শতাব্দির মধ্যে সংকলিত ফোর গ্রেট বুকস অব সোং নামক মহান কীর্তিটি ছিল সেই সময়ের একটি ব্যাপক প্রতিশ্রুতি। এই চারটির সর্বশেষ বিশ্বকোষ, দ্য প্রাইম টোরটোইস ইন দ্য রেকর্ড ব্যুরো -এর ১০০০টি লেখা খণ্ডে ৯.৪ মিলিয়ন পর্যন্ত চীনা অক্ষর ছিল। ১০ থেকে ১৭ শতক পর্যন্ত বিশ্বকোষবিদদের যুগ স্থায়ী হয়, যেসময়ে চীনা সরকার শতশত জ্ঞানী ব্যক্তিদের ব্যাপক কিছু বিশ্বকোষ তৈরির জন্য নিয়োগ করে। ইয়ংগল বিশ্বকোষ ছিল এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ। এটি ১৪০৮ সালে সম্পন্ন হয়। এটি প্রায় ২৩,০০০টি হাতে লেখা অংশে বিভক্ত। ২০০৭ সালে উইকিপিডিয়ার বৃহত্তম বিশ্বকোষে পরিণত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উইকিপিডিয়ার এটি ইতিহাসের বৃহত্তম বিশ্বকোষ হিসেবে ছিল।
মধ্যযুগের শেষের দিকে ইউরোপে কোনো বিষয়ে বা সকল ক্ষেত্রে পৃথিবীর মানুষের জ্ঞানের সমষ্টি একত্রিত করা অনেকের লক্ষ্য ছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইংল্যান্ডের বার্থোলোমেও, বোভে -এর ভিনসেন্ট, রাডুলফুস আর্ডেনস, সাইদ্রাক, ব্রুনেতো লাটিনি, গোভালনী দ্য সাঙ্গিমিয়ানো, পিয়েে বেরসুয়ার এবং বিঙেনের হিলডেগার্ড ও ল্যান্ডবার্গ এর হ্যারাড এর মতো নারীরা। বোভে -এর ভিনসেন্ট এর স্পেকুলুম মায়উস (বড় দর্পন) এবং ইংল্যান্ডের বার্থোলোমেও এর দে প্রোপিয়েটাটিবুস রেরুম (বস্তুসমুহের বৈশিষ্ট্য) ছিল এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফল বিশ্বকোষ। মধ্যযুগে দে প্রোপিয়েটাটিবুস রেরুম -কে ফরাসি, জার্মান, প্রুভেনাল, ইংরেজি, অ্যাংলো-নরম্যান এবং স্পেনীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয় (অথবা গ্রহণ করা হয়)। দুটো বিশ্বকোষই ১৩ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে লেখা হয়। মধ্যযুগের কোনো বিশ্বকোষ “বিশ্বকোষ” শিরোনামটি ব্যবহার করেনি, বরং সেগুলো “অন নেচার” (দে নাতুরা, দে নাতুরিস রেরুম), দর্পন (স্পেকুলুম মায়উস, স্পেকুলুম ইউনিভার্সাল) বা গুপ্তধন (ট্রেসর) নামে অভিহিত ছিল।Monique Paulmier-Foucart, "Medieval Encyclopaedias", in André Vauchez (ed.), Encyclopedia of the Middle Ages, James Clarke & Co, 2002. জেমস লে পালমার এর ১৪ শতকের ওমনে বনুম -এ প্রথম বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখার একক বর্ণানুক্রমিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
রেনেসাঁ
thumb|নুরেমবার্গ ক্রনিকল ১৪৯৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বিশ্বের জ্ঞানকে নথিভূক্ত করা প্রথম মুদ্রিত বই।
মধ্যযুগের বিশ্বকোষগুলো সব হাতে সম্পাদিত ছিল এবং শুধু ধনী বা জ্ঞান পিপাসু মানুষদের কাছে থাকত। সেগুলো ব্যয়বহুল ছিল এবং যারা জ্ঞান বৃদ্ধির করতে চাইত তাদের জন্য লেখা হতো, সকল ব্যবহারকারীদের জন্য নয়।See "Encyclopedia" in Dictionary of the Middle Ages.
১৪৯৩ সালে, নুরেমবার্গ ক্রনিকল তৈরি হয়, যেখানে ঐতিহাসিক মানুষ, ঘটনা এবং ভৌগোলিক স্থানসমুহের শতশত চিত্র ছিল। এটি একটি বিশ্বকোষীয় ধারাবিবরণী হিসেবে লেখা এই কীর্তিটি সবচেয়ে ভালো নথিভূক্ত মুদ্রিত বই ছিল (একটি ইনকুনাবুলা) এবং লেখার সাথে চিত্র যোগ করতে সক্ষম হওয়া প্রথম দিকের বিশ্বকোষগুলোর একটি। এই চিত্রগুলো আগে কখনো চিত্রিত না হওয়া ইউরোপ এবং পূর্ব কাছাকাছির বড় শহরগুলোকে চিত্রিত করে। এগুলো চিত্রিত করতে ৬৪৫টি কাঠে খোদাই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
রেনেসাঁর সময়ে মুদ্রণের আবিষ্কারের কারণে বিশ্বকোষ আরও প্রসারিত এবং প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তি নিজস্ব একটি সংস্করণ রাখতে পারত। জর্জি ভায়া এর দে এক্সপেডেনন্টিজ এট ফুজানডিস রেবুস তার মৃত্যুর পর ১৫০১ সালে ভেনিসে আলদুজ মানুসিয়স কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এই কীর্তিটি স্বাধীন শিল্পের একটি ঐতিহ্যবাহী উদাহরণ। ভায়া সদ্য আবিস্কৃত এবং অনুবাদ করা গণিতের উপর গ্রিকদের কীর্তিগুলোর (প্রথমে আর্কিমিডিস এর) অনুবাদ যুক্ত করেন। ১৫০৩ সালে মুদ্রিত গ্রেগর রাইচের মার্গারিটা ফিলোসোফিকা ছিল একটি সম্পন্ন বিশ্বকোষ, যেখানে সাতটি স্বাধীন শিল্পের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
১৬ শতকের মানবতাবাদীরা প্লিনি এবং কুইন্টিলিয়ান এর লেখাগুলো ভুলভাবে পড়েন এবং “এনকাইক্লস” “পেইডিয়া” শব্দ দুটিকে শব্দ (έγκυκλοπαιδεία) বলে মনে করলে এনসাক্লেওপেইডিয়া শব্দটির উদ্ভব হয়।Pliny the Elder, Naturalis Historia, Preface 14.Quintilian, Institutio oratoria, 1.10.1: ut efficiatur orbis ille doctrinae, quem Graeci ἐγκύκλιον παιδείαν vocant.έγκυκλοπαιδεία, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek–English Lexicon, at Perseus Project: "f. l. [= falsa lectio, Latin for "false reading"] for ἐγκύκλιος παιδεία" প্লুটার্ক “এনকাইক্লস পেইডিয়া” শব্দটি ব্যবহার করেন (ἐγκύκλιος παιδεία) এবং লাতিন শব্দ, এনসাইক্লোপেইডিয়া (encyclopaedia) প্রবর্তন করেন।
এই শব্দটি ব্যবহার করে নাম দেওয়া প্রথম কীর্তিগুলো ছিল এনসাইকেলপিডিয়া অরবিস্কে ডকট্রিনারুম, হোক এস্ট ওমনিউম আরটিউম, সিনটিয়ারুম এবং হোয়ানাস আভেনটিনা এর ১৫১৭ সালে প্রকাশিত ইপসিওস ফিলোসোফাইয়ে ইনডেক্স এসি ডিভিসিও।
ইংরেজ চিকিৎসক এবং দার্শনিক, স্যার থোমাস ব্রাউন ১৬৪৬ সালে তার সিউডোডক্সিয়া এপিডেমিক -এর ভূমিকায় এনসাইক্লোপেইডিয়া শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা ১৭ শতাব্দির বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি। রেনেসাঁর “সৃষ্টির মাপকাঠি” নামক সম্মানজনক প্রথাটির সময়ের উপর ভিত্তি করে তিনি তার বিশ্বকোষটি তৈরি করেছেন। সিউডোডক্সিয়া এপিডেমিকাস সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া কীর্তিগুলোর একটি ছিল এবং এটি জার্মান, লাতিন, ফরাসি এবং ডাচ ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এটির কমপক্ষে পাঁচটি সংস্করণ বের হয় এবং সর্বোশেষ সংস্করণটি ১৬৭২ সালে প্রকাশিত হয়।
অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং আইনীসহ বিভিন্ন বিষয়ের কারণে বিশ্বকোষের আকার পরিবর্তিত হয়েছে। রেনেসাঁর সময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের পড়ার বেশি সময় ছিল এবং বিশ্বকোস তাদের আরও জানতে সাহায্য করে। প্রকাশকরা তাদের প্রকাশনা বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল, তাই জার্মানির মতো দেশগুলো দ্রুত প্রকাশনার জন্য বর্ণানুক্রমিক অংশ বাদ দিয়ে বই প্রকাশ করা শুরু করে। প্রকাশকরা একাই তাদের সকল ব্যয় বহন করতে পারত না। এজন্য একাধিক প্রকাশক যৌথভাবে একটি ভালো বিশ্বকোষ তৈরি করতে অর্থ ব্যয় করত। যখন একই মূল্যে প্রকাশনা অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন প্রকাশকরা সাবস্ক্রিপসশন এবং সিরিয়াল প্রকাশনা পদ্ধতি ব্যবহার করা শুরু করল। এই পদ্ধতি কার্যকর হলে মূলধন বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্বকোষের জন্য একটি স্থির শুরু হয়। প্রতিদ্বন্দ্বীতার সৃষ্টি হলে, দুর্বল অনুন্নত আইনের কারণে কটিরাইট হওয়া শুরু হয়। বেশি বিত্রি করার জন্য এবং যাতে খদ্দেরদের বেশি অর্থ খরচ না করতে হয় তাই দ্রুততর এবং কম খরচে বিশ্বকোষ তৈরির জন্য কিছু প্রকাশক অন্যান্য প্রকাশকের কীর্তি নকল করেন। মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে থাকা গ্রন্থগারে বিশ্বকোষ রাখা থাকত। ইউরোপিওরা তাদের আশেপাশের সমাজ সম্পর্কে বিস্মিত হতে থাকে, ফলে সরকারের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
ঐতিহ্যবাহী বিশ্বকোষ
thumb|এনসাইক্লোপেডি, ১৭৭৩
সাধারণ উদ্দেশ্যে তৈরি ব্যাপকভাবে বণ্টন করা মুদ্রিত বিশ্বকোষের আধুনিক ধারণা ১৮ শতকের বিশ্বকোষবিদের পূর্বেই এসেছে। চেম্বারের ক্লাইকোপিডিয়া, ইউনিভার্সাল ডিকশনারি অব আর্ট এন্ড সাইয়েন্সেস (১৭২৮), ডেনি দিদেহো (১৭৫০) ও যিন দে রোন্ড দা’লেম্বার্ট (১৭৫১ থেকে) এর এনসাইক্লোপেডি, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (১৭৬৮) এবং কনভার্সেসন লেক্সিকন বর্তমানে আমাদের পরিচিত রূপে প্রকাশিত হয়। এগুলোতে অনেক বিষয় গভীরভাবে আলোচনা করা হয় এবং লেখাগুলো একটি বোধগোম্য, নিয়মানুগ পদ্ধতিতে সাজানো হয়।১৭২৮ সালে, চেম্বার এর ১৭০৪ সালে জন হারিস কর্তৃক প্রকাশিত লেক্সিকুম টেকনিকুম এবং তার পরবর্তী কীর্তিগুলো অনুসরণ করেন। চেম্বারের কীর্তিটি নাম এবং বিষয়বস্তু অনুযায়ী ছিল শিল্প এবং বিজ্ঞানের একটি ইংরেজি অভিধান, যাতে শুধু শিল্পের শর্তগুলোই নয়, বরং শিল্পগুলোরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
১৯২০ এর দশকে হামর্সওর্য়থ এর সার্বজনীন বিশ্বকোষ এবং শিশুদের বিশ্বকোষের মতো জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী বিশ্বকোষগুলোর আবির্ভাব হয়।
১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ব্যাপক জনপ্রিয় বিশ্বকোষ প্রকাশিত হয়, যেগুলো কিস্তিতে বিক্রি করা হয়। ফাঙ্ক এন্ড ওয়াগনালস এবং ওয়ার্ল্ড বুক ছিল এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। এগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িতে-বাড়িতে গিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। জেক লিঞ্চ তার বইয়ের মধ্যে লিখেছেন যে, বিশ্বকোষ বিক্রেতারা এত সুলভ ছিল যে তারা কৌতুকের কেন্দ্র হয়ে যায়। “তারা শুধু বই নয়, বরং তারা একটি জীবনব্যবস্থা, একটি ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক গতিশীলতার একটি প্রতিজ্ঞা বিক্রি করছেন” বলে তিনি তাদের কাজের ক্ষেত্রকে ব্যাখ্যা করেন। ১৯৬১ সালে ওয়ার্ল্ড বুক এর একটি বিজ্ঞাপনে একজন নারীর হাতে একটি অর্ডার ফর্ম দেখিয়ে বলা হয়েছে, “আপনি এখন আপনার হাতে আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ ধরে রেখেছেন”।
thumb| এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা -এর ১৯১৩ সালের একটি বিজ্ঞাপন। এটি ছিল সবচেয়ে পুরানো এবং বৃহত্তম ইংরেজি বিশ্বকোষগুলোর একটি।
বিংশ শতাব্দির ২য় অংশে অনেকগুলো বিশেষায়িত বিশ্বকোষ প্রকাশিত হয়, যেখানে মূলত নির্দিষ্ট কোনো শিল্প বা পেশাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের বিষয়গুলো সংকলিত করা হয়। এই প্রচলনটি স্থায়ী হয়। বর্তমানে কমপক্ষে এক খন্ড আকারের বিশ্বকোষ রয়েছে, যাতে শিক্ষার সকল ক্ষেত্রগুলো না থাকলেও জীবনীতিশাস্ত্রের মতো ছোট বিষয়গুলো ছিল।
ডিজিটাল এবং অনলাইন বিশ্বকোষের উত্থান
২০ শতাব্দির মধ্যে নিজস্ব কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য সিডি-রোমে বিশ্বকোষ প্রকাশ করা হয়। মাইক্রোসফট -এর এনকার্টা এর কোনো মুদ্রিত সংকলন না থাকায় এটি এরকম বিশ্বকোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এর নিবন্ধগুলোতে ভিডিও, অডিও ফাইল এবং অসংখ্য উচ্চ মানসম্মত চিত্র ব্যবহার করা হয়.
thumb|upright=1.5|প্রচুর পরিমাণ বইয়ে ব্যবহৃত "এনসাইক্লোপিডিয়া". "ব্রিটানিকা", "এনকার্তা", এবং "উইকিপিডিয়া" শব্দগুলো আপেক্ষিক ব্যবহারের পরিমাণ (গুগল এনগ্রাম ভিউয়ার)
ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং অনলাইন ক্রাউডসোর্সিং এর কারণে বিশ্বকোষগেুলো বিষয়ের বিস্তৃতি এবং গভীরতার দিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠেছে। ওপেন সোর্স মিডিয়াউইকি সফটওয়্যার এবং উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি বহুভাষাভিত্তিক মুক্ত লাইসেন্স ইন্টারনেট বিশ্বকোষ, উইকিপিডিয়া ২০০১ সালে স্থাপিত হয়। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনলাইন এর মতো বিশেষজ্ঞদের লেখা বাণিজ্যিক বিশ্বকোষ সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণভাবে সেচ্ছাসেবক সম্পাদকরা যৌথভাবে উইকিপিডিয়া গড়ে তুল এবং পরিচালনা করে। উইপিডিয়া যৌথভাবে সম্মত নিয়মকানুন এবং ব্যবহারকারীদের যৌথ অবদানে পরিচালিত হয়। এর অধিকাংশ অবদানকারীরা চদ্মনাম ব্যবহার করে নিজেকে গোপন রাখে। অন্তর্নিহিত মান এবং বাইরের উৎসের সমর্থনের উপর ভিত্তি করে এর উপাদানগুলো পর্যালোচনা, চেক, রাখা এবং অপসারণ করা হয়।
ঐতিহ্যবাহী বিশ্বকোষগুলোর নির্ভরযোগ্যতা রচয়িতা এবং সংযুক্ত পেশাদার বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করে। অনেক শিক্ষাবিদ, শিক্ষক এবং সাংবাদিকরা উইকিপিডিয়ার মতো ক্রাউডসোর্সড বিশ্বকোষকে তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে মনে করেন না এবং উইকিপিডিয়ার উন্মুক্ত সম্পাদনা ব্যবস্থা এবং গোপন ক্রাউডসোর্সিং কাঠামোর জন্য সেটি নিজের মানের দিক থেকেও কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস নয়। ২০০৫ সালে, নেচার এর করা একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এর নিবন্ধগুলোর সাথে মোটামুটিভাবে তুলনাযোগ্য, যেগুলোতে একই সংখ্যক বড় ভুল এবং বাস্তবিকতার আরও ১/৩ বেশি ভুল রয়েছে তবে উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো বিভ্রান্তিকর এবং কম পাঠযোগ্য হতে পারে।Note: The study was cited in several news articles; e.g.:
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা গবেষণাটিতে সমস্যা ছিল বলে বিবেচনা করে সেটি প্রত্যাখ্যান করে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত উইকিপিডিয়ার পৃষ্ঠা দেখা সংখ্যা ছিল ১৮ বিলিয়ন এবং প্রতি মাসে ৫০০ মিলিয়ন নতুন পরিদর্শক ছিল। সমালোচকরা বিতর্ক করে যে, উইকিপিডিয়া এ বিষয়ে পদ্ধতিগত পক্ষপাতমূলক তথ্য প্রদর্শন করে।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর আরও ছোট, সাধারণত আরও বিশেষায়িত কিছু বিশ্বকোষ আছে, যেগুলোর কয়েকটি কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট থাকতে পারে।Sideris A., "The Encyclopedic Concept in the Web Era", in Ioannides M., Arnold D., Niccolucci F. and K. Mania (eds.), The e-volution of Information Communication Technology in Cultural Heritage. Where Hi-Tech Touches the Past: Risks and Challenges for the 21st Century. VAST 2006, Epoch, Budapest 2006, pp. 192-197. . এ রকম বিশ্বকোষের একটি উদাহরণ হলো স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফিলোসফি।
সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষসমুহ
২০২০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষগুলোর মধ্যে রয়েছে: চীনা বাইডু বাইকে (১৬ মিলিয়ন নিবন্ধ), হুডোং বাইকে (১৩ মিলিয়ন নিবন্ধ), ইংরেজি (৬ মিলিয়ন নিবন্ধ), জার্মান (২ মিলিয়ন নিবন্ধ) এবং ফরাশি (২ মিলিয়ন নিবন্ধ) উইকিপিডিয়া। আরও ১২টিরও বেশি উইকিপিডিয়ায় ১ মিলিয়ন বা তার চেয়ে বেশি নিবন্ধ বিভিন্ন মান এবং দৈর্ঘের নিবন্ধ রয়েছে। কোনো বিশ্বকোষের আকার সেটির নিবন্ধ দিয়ে পরিমাপ করা একটি অনিশ্চিত উপায়, যেমন: উপরে উল্লেখিত অনলাইন চীনা বিশ্বকোষগুলোতে কোনো বিষয়ে মাত্র একাধিক নিবন্ধ থাকতে পারে যেখানে উইকিপিডিয়ায় প্রতি বিষয়ে মাত্র একটি নিবন্ধ গ্রহণযোগ্য, যদিও উইকিপিডিয়ায় প্রায় শূন্য নিবন্ধ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হতে পারে।
বাংলা ভাষায় বিশ্বকোষ
নগেন্দ্রনাথ বসু সম্পাদিত 'বিশ্বকোষ' নামে বিশ্বকোষের কাজ ১৯০২ সালে শুরু হয় এবং ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় সতের সহস্র পৃষ্ঠার এই বিশ্বকোষটি ২২ খণ্ডে সঙ্কলিত হয়েছিল। তবে বাংলা ভাষায় 'ভারতকোষ' (প্রকাশকাল: ১৮৯৬-১৯০৬)একটি বিশ্বকোষ আছে, যা তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়। ভারতকোষ এর সঙ্কলক ছিলেন রাজকৃষ্ণ রায় ও শরচ্চন্দ্র দেব। এছাড়াও ১৯৭২ সালে খান বাহাদুর আবদুল হাকিমের সম্পাদনায় ঢাকায় প্রকাশিত ৪ খণ্ডে বিভক্ত মুক্তধারার বাংলা বিশ্বকোষ উল্লেখযোগ্য।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকাশ করে। এটির কাজ শুরু হয় ১৯৮০ সালে এবং প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে।
বিভিন্ন বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা
এনকার্টা
এনসাইক্লোপিডিয়া অ্যামেরিকানা
ব্রিটানিকা ম্যাক্রোপিডিয়া
ইসলামী বিশ্বকোষ
বাংলাপিডিয়া
কিতাবুশ শিফা
গ্রেট বুক্স অফ দ্য ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড
আরও দেখুন
টীকা
তথ্যসূত্র
C. Codoner, S. Louis, M. Paulmier-Foucart, D. Hüe, M. Salvat, A. Llinares, L'Encyclopédisme. Actes du Colloque de Caen, A. Becq (dir.), Paris, 1991.
বহিঃসংযোগ
Encyclopaedia and Hypertext
Internet Accuracy Project – Biographical errors in encyclopedias and almanacs
Encyclopedia – Diderot's article on the Encyclopedia from the original Encyclopédie.
De expetendis et fugiendis rebus – First Renaissance encyclopedia
Errors and inconsistencies in several printed reference books and encyclopedias
Digital encyclopedias put the world at your fingertips CNET article
Encyclopedias online University of Wisconsin Stout listing by category
Chambers' Cyclopaedia, 1728, with the 1753 supplement
Encyclopædia Americana, 1851, Francis Lieber ed. (Boston: Mussey & Co.) at the University of Michigan Making of America site
Encyclopædia Britannica, articles and illustrations from 9th ed., 1875–89, and 10th ed., 1902–03.
নগেন্দ্রনাথ বসু সঙ্কলিত বিশ্বকোষের কিছু খণ্ডের PDF সংষ্করণ
বিষয়শ্রেণী:বিশ্বকোষ
বিষয়শ্রেণী:অভিধান
বিষয়শ্রেণী:মুক্তকোষ
বিষয়শ্রেণী:ইতিহাস বিষয়ক সৃষ্টিকর্ম |
ইন্টারনেট | https://bn.wikipedia.org/wiki/ইন্টারনেট | থাম্ব|400px|বিশ্বের দেশে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রদর্শনকারী মানচিত্র, এপ্রিল ২০০৬-এর হিসেব অনুসারে
অন্তৰ্জাল বা ইন্টারনেট হলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অনেকে ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে সমার্থক শব্দ হিসেবে গণ্য করলেও প্রকৃতপক্ষে শব্দদ্বয় ভিন্ন বিষয় নির্দেশ করে।
পরিভাষা
ইন্টারনেট হচ্ছে ইন্টারকানেক্টেড নেট্ওয়ার্ক(interconnected network) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটা বিশেষ গেটওয়ে বা রাউটারের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো একে-অপরের সাথে সংযোগ করার মাধ্যমে গঠিত হয়। ইন্টারনেটকে প্রায়ই নেট বলা হয়ে থাকে।
যখন সম্পূর্ণ আইপি নেটওয়ার্কের আন্তর্জাতিক সিস্টেমকে উল্লেখ করা হয়, তখন ইন্টারনেট শব্দটিকে একটি নামবাচক বিশেষ্য মনে করা হয়।
ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব দৈনন্দিন আলাপচারিতায় প্রায়ই কোন পার্থক্য ছাড়া ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব একই নয়। ইন্টারনেটের হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার পরিকাঠামো কম্পিউটারসমূহের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে। বিপরীতে, ওয়েব ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদত্ত পরিষেবাগুলির একটি। এটা পরস্পরসংযুক্ত কাগজপত্র এবং অন্যান্য সম্পদ সংগ্রহের, হাইপারলিংক এবং URL-দ্বারা সংযুক্ত।
ইতিহাস
১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি বা আরপা (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত ছিল। এতে প্রাথমিকভাবে যুক্ত ছিল। ইন্টারনেট ১৯৮৯ সালে আইএসপি দ্বারা সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯০ এর মাঝামাঝি থেকে
১৯৯০ এর পরবর্তি সময়ের দিকে পশ্চিমাবিশ্বে ইন্টারনেট ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হতে থাকে।
থাম্ব|The CERN data center in 2010 housing some WWW servers
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
ইন্টারনেট সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহের তালিকা
ইন্টারনেটস
ইন্টারনেটের রুপরেখা
আউটারনেট
আরও পড়ুন
First Monday, a peer-reviewed journal on the Internet established in 1996 as a Great Cities Initiative of the University Library of the University of Illinois at Chicago,
Rise of the Network Society, Manual Castells, Wiley-Blackwell, 1996 (1st ed) and 2009 (2nd ed),
"The Internet: Changing the Way We Communicate" in America's Investment in the Future, National Science Foundation, Arlington, Va. USA, 2000
“Lessons from the History of the Internet” , Manuel Castells, in The Internet Galaxy, Ch. 1, pp 9–35, Oxford University Press, 2001,
"Media Freedom Internet Cookbook" by the OSCE Representative on Freedom of the Media Vienna, 2004
The Internet Explained, Vincent Zegna & Mike Pepper, Sonet Digital, November 2005, Pages 1 – 7.
"How Much Does The Internet Weigh?", by Stephen Cass, Discover, 2007
"The Internet spreads its tentacles", Julie Rehmeyer, Science News, Vol. 171, No. 25, pp. 387–388, 23 June 2007
Internet, Lorenzo Cantoni & Stefano Tardini, Routledge, 2006,
বহিঃসংযোগ
দ্য ইন্টারনেট সোসাইটি
Berkman সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটি
ইউরোপিয়ান কমিশন ইনফরমেশন সোসাইটি
লিভিং ইন্টারনেট, ইন্টারনেটের ইতিহাস এবং এ সম্পর্কিত তথ্য, ইন্টারনেট প্রণেতাদের সম্পর্কিত তথ্য
দ্য ইন্টারনেট (ন্যাশনাল সায়েন্স মিউজিয়াম)
"১০ ইয়ার্স দ্যাট চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড" — ওয়ার্ড লুকস ব্যাক অ্যাট দি এভোল্যুশন অব দ্য ইন্টারনেট ওভার লাস্ট ১০ ইয়ার্স
সিবিসি ডিজিটাল আর্কাইভস—ইনভেন্টিং দ্য ইন্টারনেট এইজ
ইন্টারনেট কীভাবে আসল
RFC 801, planning the TCP/IP সুইচওভার
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন উদ্ভাবন
বিষয়শ্রেণী:ডিজিটাল প্রযুক্তি
বিষয়শ্রেণী:বৈজ্ঞানিক বিপ্লব
বিষয়শ্রেণী:গণমাধ্যম প্রযুক্তি
বিষয়শ্রেণী:জনসেবা
বিষয়শ্রেণী:সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন
বিষয়শ্রেণী:অসদ বাস্তবতা
বিষয়শ্রেণী:প্রসার ও বিপণন যোগাযোগ
বিষয়শ্রেণী:পরিবহনকারী ব্যবস্থা
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:১৯৬৯-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত
বিষয়শ্রেণী:টেলিযোগাযোগ
বিষয়শ্রেণী:নব্য যোগাযোগ মাধ্যম |
টেলিভিশন | https://bn.wikipedia.org/wiki/টেলিভিশন | thumb|right|ব্রন এইচএফ ওয়ান, জার্মানি, ১৯৫৯
thumb|Clivia II FER858A (জার্মানি), ১৯৫৬
টেলিভিশন (সংক্ষেপে টিভি) এমন একটি যন্ত্র যা থেকে একই সঙ্গে ছবি দেখা যায় এবং শব্দও শোনা যায়। টেলিভিশন শব্দটি ইংরেজি থেকে এসেছে, মূলতঃ প্রাচীন গ্রিক শব্দ "τῆλε" (ত্যালে অর্থাৎ "দূর") এবং লাতিন শব্দ "Vision" (ভ়িসিওন্, অর্থাৎ "দর্শন") মিলিয়ে তৈরি হয়ে। তাই টেলিভিশনকে বাংলায় কখনও দূরদর্শন যন্ত্র বা সংক্ষেপে দূরদর্শন বলা হয়।
আবিষ্কার
গ্রিক শব্দ 'টেলি' অর্থ দূরত্ব , আর ল্যাটিন শব্দ 'ভিশন' অর্থ দেখা। ১৮৬২ সালে তারের মাধ্যমে প্রথম স্থির ছবি পাঠানো সম্ভব হয়। এরপর ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে ও স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগনালের মাধ্যমে ছবি পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ব্রিটিশবিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন এবং সাদা কালো ছবি দূরে বৈদ্যুতিক সম্প্রচারে পাঠাতে সক্ষম হন। এর পর রুশ বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবারগের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে বিবিসি। টেলিভিশন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয় ১৯৪০ সালে। অতপর ১৯৪৫ সালে যন্ত্রটি পূর্ণতা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়। গত শতাব্দীর ৫০ এর দশকে টেলিভিশন গনমাধ্যমের ভূমিকায় উঠে আসে।
সম্প্রচার কৌশল
টেলিভিশনের মূল ধারণা হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা। মূলত তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্ট হয় টেলিভিশনের আউটপুট : টিভি ক্যামেরা যার কাজ হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেতে রূপান্তর করা, টিভি ট্রান্সমিটার যার কাজ হচ্ছে এই সংকেতকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং টিভি সেট (রিসিভার) যার কাজ হচ্ছে এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আগের ছবি ও শব্দে রুপান্তরিত করা। সাধারনত ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়: স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র। স্থিরচিত্রের জন্য সাধারণ ক্যামেরা ও চলচ্চিত্রের জন্য মুভি/ভিডিও ক্যামেরার ব্যবহার হয়। প্রকৃতপক্ষে অনেকগুলো স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্র। ভিডিও ক্যামেরা দ্রুত গতিতে পরপর অনেকগুলো স্থিরচিত্র (২৪ ছবি/সে) গ্রহণ করে। এই ছবিগুলোকে যখন একই গতিতে পরপর প্রদর্শন করা হয় তখন আমাদের চোখে এগুলো চলচ্চিত্র বলে মনে করে। ফ্রেমে এই দ্রুতগতিতে ছবি পরিবর্তনের কারগরি কৌশলটি আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। চলচ্চিত্রকে খুবই ধীর গতিতে দেখলে এইসব স্থিরচিত্রগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। অ্যানালগ টিভি ক্যামেরা এইসব ছবির পিক্সেলকে সাধারনত ৫২৫টি লাইনে ভাগ করে লাইন বাই লাইন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করে। একইসাথে শব্দ তরঙ্গকে আলাদা সিগনালের মাধ্যমে প্রেরণ করে। ছবি ও শব্দের সিগনাল অ্যান্টেনা/কেবল/স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি গ্রহণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে আবার ছবি ও শব্দে রুপান্তরিত করে। টেলিভিশন হতে গামা রশ্মি নির্গত হয়।
টেলিভিশনের শ্রেণিবিভাগ
ডিসপ্লে বা প্রদর্শনীর প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে টেলিভিশনকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন : সিআরটি (CRT), প্লাজমা (Plasma), এলসিডি (LCD), এলইডি (LED) ইত্যাদি। সম্প্রচার থেকে প্রদর্শন পর্যন্ত টেলিভিশনের সম্পূর্ণ পদ্ধতিকে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায় : এনালগ টেলিভিশন (সনাতন পদ্ধতি), ডিজিটাল টেলিভিশন (DTV) ও এইচডিটিভি (HDTV)।
এনালগ টেলিভিশন
এনালগ তথা সনাতন টিভি পদ্ধতি অর্থাৎ টিভি ক্যামেরা, ট্রান্সমিটিং সিস্টেম এবং টিভিসেট সবগুলোই কাজ করে এনালগ পদ্ধতিতে। এ ধরনের টিভিতে PAL স্ট্যান্ডার্ড ছবির পিক্সেল হয় মাত্র (720×576) 414,720 এবং ছবির aspect ratio 4 : 3 যার অর্থ স্ক্রীনে ছবির সাইজ ৪ একক প্রশস্ত ও ৩ একক উচ্চতার। অর্থাৎ ২৫ ইঞ্চি ডায়াগোনাল টিভি স্ক্রীনে ২০×১৫ ইঞ্চি হবে।
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:টেলিভিশন
বিষয়শ্রেণী:টেলিভিশন পরিভাষা
বিষয়শ্রেণী:সম্প্রচার
বিষয়শ্রেণী:ভোক্তা ইলেকট্রনীয় দ্রব্য
বিষয়শ্রেণী:ডিজিটাল প্রযুক্তি
বিষয়শ্রেণী:পরিবেশন শিল্পকলা
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন উদ্ভাবন
বিষয়শ্রেণী:ব্রিটিশ উদ্ভাবন
বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর উদ্ভাবন
বিষয়শ্রেণী:মাধ্যম বিন্যাস
বিষয়শ্রেণী:মাধ্যম অনুযায়ী বিজ্ঞাপন
বিষয়শ্রেণী:ভিডিও হার্ডওয়্যার
বিষয়শ্রেণী:জার্মান উদ্ভাবন
বিষয়শ্রেণী:রুশ উদ্ভাবন
বিষয়শ্রেণী:টেলিভিশন শিল্প |
বেতার | https://bn.wikipedia.org/wiki/বেতার | থাম্ব|upright=1.35|রেডিও
বেতার হল তার ব্যতীত যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এতে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষপ্রান্তে অনেক দেশের বিজ্ঞানী প্রায় একই সময়ে বেতার আবিষ্কার করলেও গুগলিয়েলমো মার্কোনিকে বেতারের আবিষ্কারক হিসাবে ধরা হয়। পূর্বে শুধু রেডিওতে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে বেতার প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে সর্বত্র। রেডিও (বেতার), টেলিভিশন (দূরদর্শন), মোবাইল ফোন, ইত্যাদিসহ তারবিহীন যেকোনো যোগাযোগের মূলনীতিই হল বেতার। বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয় বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রেডিও টেলিস্কোপ।
রেডিও হল রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে সংকেত প্রেরণ ও যোগাযোগের প্রযুক্তি। রেডিও তরঙ্গ হল ৩ হার্টজ (Hz) এবং ৩০০ গিগাহার্টজ (GHz) কম্পাঙ্কের মধ্যকার তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ। এগুলি অ্যান্টেনার সাথে সংযুক্ত ট্রান্সমিটার নামক একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র দ্বারা উৎপন্ন হয় যা তরঙ্গ বিকিরণ করে এবং একটি রেডিও রিসিভারের সাথে সংযুক্ত অন্য একটি অ্যান্টেনা দ্বারা গৃহীত হয়। আধুনিক প্রযুক্তি, রেডিও যোগাযোগ, রাডার, রেডিও নেভিগেশন, রিমোট কন্ট্রোল (দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ), রিমোট সেন্সিং এবং অন্যান্য কাজে রেডিও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
রেডিও যোগাযোগে, রেডিও এবং টেলিভিশন সম্প্রচারে, সেল ফোন, দ্বিমুখী (টু ওয়ে) রেডিও, বেতার নেটওয়ার্কিং এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন, অন্যান্য অনেক ব্যবহারের মধ্যে, ট্রান্সমিটারে রেডিও সংকেত পরিবর্তন করে তরঙ্গগুলি শুন্য মাধ্যমে একটি ট্রান্সমিটার থেকে রিসিভারে তথ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত। রাডার এর মাধ্যমে বিমান, জাহাজ, মহাকাশযান এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বস্তুগুলি সনাক্ত এবং ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হয়, একটি রাডার ট্রান্সমিটার দ্বারা নির্গত রেডিও তরঙ্গের একটি লক্ষ্যবস্তুকে প্রতিফলিত করে এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলি বস্তুর অবস্থান প্রকাশ করে। রেডিও নেভিগেশন সিস্টেম যেমন জিপিএস এবং ভিওআর-এ, মোবাইল রিসিভার ইত্যাদি নেভিগেশনাল রেডিও বীকন (যার অবস্থান জানা যায়) থেকে রেডিও সংকেত গ্রহণ করে এবং রেডিও তরঙ্গের আগমনের সময় সঠিকভাবে পরিমাপ করে রিসিভার পৃথিবীতে তার অবস্থান গণনা করতে পারে। ওয়্যারলেস রেডিও রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস যেমন ড্রোন, গ্যারেজ ডোর ওপেনার এবং চাবিহীন এন্ট্রি সিস্টেমে, কন্ট্রোলার ডিভাইস থেকে প্রেরিত রেডিও সংকেত একটি দূরবর্তী ডিভাইসের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
রেডিও তরঙ্গের প্রয়োগ তরঙ্গসমুহকে উল্লেখযোগ্য দূরত্বে প্রেরণের সাথে সম্পর্কিত নয়, যেমন শিল্প প্রক্রিয়াকরণএবং মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ব্যবহৃত RF হিটিং(রেডিও তরঙ্গ উত্তাপন) এবং ডায়াথার্মি এবং এমআরআই মেশিনের মতো মেডিকেল ব্যবহারগুলিকে সাধারণত রেডিও বলা হয় না। রেডিও বিশেষ্যটি একটি সম্প্রচারক রেডিও রিসিভার (যন্ত্র) বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়।
বেতার তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রথম প্রমাণ করেছিলেন জার্মান পদার্থবিদ হেনরিখ হার্টজ ১১ নভেম্বর, ১৮৮৬ সালে । ১৮৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, পদার্থবিজ্ঞানীরা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ অধ্যয়ন করার জন্য যে কৌশলগুলি ব্যবহার করছিলেন তার উপর ভিত্তি করে, গুগলিয়েলমো মার্কনি দূর-দূরত্বের রেডিও যোগাযোগের জন্য প্রথম যন্ত্র তৈরি করেছিলেন,[5] ১৮৯৫ সালে যা এক কিলোমিটার দূরের একটি উৎসে বেতার মোর্স কোড বার্তা পাঠাতে সক্ষম এবং এটি ছিল ১২ ডিসেম্বর, ১৯০১-এর প্রথম ট্রান্সআটলান্টিক সংকেত। প্রথম বাণিজ্যিক রেডিও সম্প্রচার করা হয়েছিল ২ নভেম্বর, ১৯২০-এ হার্ডিং-কক্সের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের লাইভ রিটার্নগুলি পিটসবার্গের ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, কল সাইন কেডিকেএর অধীনে।
রেডিও তরঙ্গের নির্গমন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা বিভিন্ন কাজের ধরনের ভিত্তিতে রেডিও স্পেকট্রামে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড বরাদ্দ করে।
প্রযুক্তি
বৈদ্যুতিক চার্জএর দ্বারা ত্বরণের মধ্য দিয়ে বেতার তরঙ্গ বিকিরণ করা হয়। এগুলি একটি অ্যান্টেনা নামক একটি ধাতব পরিবাহীতে বিভিন্ন সময়ে সামনে পিছনে প্রবাহিত ইলেকট্রন সমন্বিত বৈদ্যুতিক স্রোত (time varying electric currents)দ্বারা কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন করা হয়। যখন রেডিও তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ ট্রান্সমিটিং অ্যান্টেনা থেকে দূরে যায়, তরঙ্গের সংকেত শক্তি (প্রতি বর্গ মিটারে ওয়াটের তীব্রতা) হ্রাস পায়, তাই রেডিও ট্রান্সমিশন শুধুমাত্র ট্রান্সমিটারের সীমিত পরিসরের মধ্যে গ্রহণ করা যেতে পারে। ট্রান্সমিটারের শক্ত দূরত্ব, অ্যান্টেনা বিকিরণ প্যাটার্ন, রিসিভারের সংবেদনশীলতা, শব্দের মাত্রা এবং ট্রান্সমিটার এবং রিসিভারের মধ্যে বাধার উপস্থিতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে । একটি সর্বমুখী অ্যান্টেনা সমস্ত দিক থেকে রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ বা গ্রহণ করে, যখন একটি দিকনির্দেশক অ্যান্টেনা বা উচ্চ-লাভ(high-gain) অ্যান্টেনা একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে রেডিও তরঙ্গ প্রেরণ করে বা কেবল একটি দিক থেকে তরঙ্গ গ্রহণ করে।
রেডিও তরঙ্গ শূন্যে আলোর গতিতে ভ্রমণ করে।
রেডিও তরঙ্গ, ইনফ্রারেড, দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনী, এক্স-রে এবং গামা রশ্মি ছাড়াও অন্যান্য ধরনের তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ সমূহের তথ্যও বহন করতে পারে এবং যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। টেলিযোগাযোগের জন্য রেডিও তরঙ্গের ব্যাপক ব্যবহারের কারণ মূলত ইহার কাম্য বৈশিষ্ট্য থেকে উৎপন্ন বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ।
ব্যান্ডউইথ
তথ্য সংকেত বহনকারী একটি মড্যুলেটেড রেডিও তরঙ্গ বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি দখল করে। একটি রেডিও সিগন্যালে তথ্য (মডুলেশন) সাধারণত ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সির ঠিক উপরে এবং নীচে সাইডব্যান্ডস (SB) নামক সংকীর্ণ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলিতে কেন্দ্রীভূত হয়। রেডিও সংকেত দখল করে ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের হার্টজে প্রস্থ, সর্বোচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি বিয়োগ সর্বনিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি, এর ব্যান্ডউইথ (BW) বলা হয়। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামের যেখানেই থাকুক না কেন, যেকোন প্রদত্ত সংকেত থেকে শব্দ অনুপাতের জন্য, একটি পরিমাণ ব্যান্ডউইথ একই পরিমাণ তথ্য বহন করতে পারে (বিট প্রতি সেকেন্ডে ডেটার হার)। তাই ব্যান্ডউইথ হল তথ্য বহনের একটি পরিমাপ। এটি ব্যান্ডউইথের প্রতিটি কিলোহার্টজে কত ডেটা প্রেরণ করতে পারে সেটি নির্ভর করে তথ্যের ডেটা রেট (মডুলেশন সিগন্যাল) এবং ব্যবহৃত মডুলেশন পদ্ধতির বর্ণালী দক্ষতার উপর। রেডিও দ্বারা বাহিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংকেতের বিভিন্ন ডেটা হার থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি টেলিভিশন (ভিডিও) সংকেতের একটি অডিও সংকেতের চেয়ে বেশি ডেটা হার রয়েছে।
এনালগ থেকে ডিজিটাল রেডিও ট্রান্সমিশন প্রযুক্তিতে ধীরগতির পরিবর্তন ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে শুরু হয়। এর একটি কারণ হল ডিজিটাল মড্যুলেশন প্রায়শই ডেটা কম্প্রেশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে প্রদত্ত ব্যান্ডউইথের মধ্যে অ্যানালগ মডুলেশনের চেয়ে বেশি তথ্য (বৃহত্তর ডেটা রেট) প্রেরণ করতে পারে, যা পাঠানো ডেটার অপ্রয়োজনীয়তা (redundancy) হ্রাস করে এবং আরও দক্ষ মডুলেশন ব্যবহার করে। ট্রানজিশনের অন্যতম কারণ হল ডিজিটাল মড্যুলেশনে অ্যানালগের চেয়ে বেশি কোলাহল (noise) প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং চিপগুলির অ্যানালগ সার্কিটের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, এটি বেশি নমনীয়তা প্রদর্শন করে এবং একই ডিজিটাল মড্যুলেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রেরণ করা যেতে পারে।
যদিও রেডিও তরঙ্গ একটি সীমিত সম্পদ যার চাহিদা ক্রমবর্ধমান, অনেক রেডিও উদ্ভাবন যেমন ট্রাঙ্কড রেডিও সিস্টেম, স্প্রেড স্পেকট্রাম, (আল্ট্রা-ওয়াইডব্যান্ড) ট্রান্সমিশন, ফ্রিকোয়েন্সি পুনঃব্যবহার, গতিশীল বর্ণালী ব্যবস্থাপনা, ফ্রিকোয়েন্সি পুলিং, কগনিটিভ রেডিও, রেডিও স্পেকট্রাম সাম্প্রতিক দশকগুলিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফলে এটিকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
প্রয়োগ
নিচে রেডিওর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছেঃ
সম্প্রচার
সম্প্রচার হল একটি ট্রান্সমিটার থেকে পাবলিক শ্রোতার অন্তর্গত রিসিভারের কাছে তথ্যের একমুখী প্রবাহ। যেহেতু রেডিও তরঙ্গ দূরত্বের সাথে দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই একটি সম্প্রচার কেন্দ্র শুধুমাত্র তার ট্রান্সমিটারের সীমিত দূরত্বের মধ্যে প্রেরণ করা যায়। স্যাটেলাইট থেকে সম্প্রচার করা সিস্টেমগুলি সাধারণত একটি সমগ্র দেশ বা মহাদেশ জুড়ে প্রেরণ করা যেতে পারে। পুরানো টেরেস্ট্রিয়াল রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন বা সরকার দ্বারা অর্থ প্রদান করা হয়। স্যাটেলাইট টেলিভিশন এবং স্যাটেলাইট রেডিওর মতো সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমে গ্রাহক একটি মাসিক ফি প্রদান করে। এই সিস্টেমগুলিতে, রেডিও সংকেত এনক্রিপ্ট করা হয় এবং শুধুমাত্র রিসিভার দ্বারা ডিক্রিপ্ট করা যায়, যা কোম্পানির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং কোন বর্তমান সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান না থাকলে নিষ্ক্রিয় করা যেতে পারে।
সম্প্রচার রেডিও স্পেকট্রামের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার প্রেরিত সংকেতের ধরন এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য শ্রোতাদের উপর নির্ভর করে। লংওয়েভ এবং মাঝারি তরঙ্গ সংকেতগুলি কয়েকশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্ভরযোগ্য কভারেজ দিতে পারে, তবে আরও সীমিত তথ্য বহন করার ক্ষমতা রয়েছে এবং তাই অডিও সিগন্যাল (বক্তৃতা এবং সঙ্গীত) এর সাথে সর্বোত্তম কাজ করে এবং প্রাকৃতিক থেকে রেডিও শব্দ দ্বারা শব্দের গুণমান হ্রাস পেতে পারে। শর্টওয়েভ ব্যান্ডগুলির একটি বৃহত্তর সম্ভাব্য পরিসীমা রয়েছে তবে দূরবর্তী স্টেশন এবং বিভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি যা অভ্যর্থনাকে প্রভাবিত করে তার হস্তক্ষেপের বিষয় বেশি।
খুব উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড যেমন ৩০ মেগাহার্টজের বেশি হলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সিগন্যালের পরিসরে কম প্রভাব ফেলে এবং লাইন-অফ-সাইট প্রচার প্রধান মোড হয়ে ওঠে। এই উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সিগুলি টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় বৃহৎ ব্যান্ডউইথকে অনুমতি দেয়। যেহেতু এই ফ্রিকোয়েন্সিটি প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম শব্দের উৎস কম উপস্থিত থাকে, তাই ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন ব্যবহার করে উচ্চ-মানের অডিও ট্রান্সমিশন করা সম্ভব।
শ্রুত্যঃ বেতার সম্প্রচার
মূল নিবন্ধ: রেডিও সম্প্রচার (https://en.wikipedia.org/wiki/Radio_broadcasting)
বেতার সম্প্রচারের অর্থ হল শ্রোতার অন্তর্গত রেডিও রিসিভারের কাছে অডিও (শব্দ) প্রেরণ। অ্যানালগ অডিও হল বেতার সম্প্রচারের প্রাচীনতম রূপ। এএম(AM) সম্প্রচার শুরু হয় ১৯২০ সালের দিকে। ১৯৩০ এর দশকের শেষের দিকে উন্নত কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে এফএম(FM) সম্প্রচার চালু হয়। একটি ব্রডকাস্ট রেডিও তরঙ্গ রিসিভারকে বেতার বলা হয়। বেশিরভাগ বেতার এএম এবং এফএম উভয়ই গ্রহণ করতে পারে।
এএম (এম্পলিটিউড মড্যুলেশন) - এএম-এ, রেডিও ক্যারিয়ার তরঙ্গের প্রশস্ততা (শক্তি) অডিও সংকেত দ্বারা পরিবর্তিত হয়। এএম ব্রডকাস্টিং, প্রাচীনতম সম্প্রচার প্রযুক্তি, এএম ব্রডকাস্টিং ব্যান্ডগুলিতে, লংওয়েভ সম্প্রচারের জন্য নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি (LF) ব্যান্ডে ১৪৮-২৮৩ kHz এবং মাঝারি তরঙ্গের জন্য মাঝারি ফ্রিকোয়েন্সি (MF) ব্যান্ডে ৫২৬-১৭০৬ kHz-এর মধ্যে অনুমোদিত। সম্প্রচার [43] যেহেতু এই ব্যান্ডগুলির তরঙ্গগুলি ভূখণ্ড অনুসরণ করে স্থল তরঙ্গ হিসাবে ভ্রমণ করে, তাই AM রেডিও স্টেশনগুলি দিগন্ত ছাড়িয়ে কয়েকশ মাইল দূরত্বে গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে AM-এর FM এর চেয়ে কম বিশ্বস্ততা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এএম স্টেশনগুলির বিকিরণকারী শক্তি (ইআরপি) সাধারণত সর্বাধিক ১০ কিলোওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যদিও কয়েকটি (ক্লিয়ার-চ্যানেল স্টেশন) ৫০ কিলোওয়াট এ প্রেরণ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এএম স্টেশনগুলি মনোরাল অডিওতে সম্প্রচারিত হয়; এএম স্টেরিও সম্প্রচার মান অধিকাংশ দেশে বিদ্যমান, কিন্তু রেডিও শিল্প চাহিদার অভাবের কারণে তাদের আপগ্রেড করতে ব্যর্থ হয়েছে।
শর্টওয়েভ ব্রডকাস্টিং - লিগ্যাসি রেডিও স্টেশনগুলির দ্বারা শর্টওয়েভ ব্যান্ডগুলিতেও AM সম্প্রচার অনুমোদিত৷ যেহেতু এই ব্যান্ডগুলির রেডিও তরঙ্গগুলি স্কাইওয়েভ বা "এড়িয়ে যান" প্রচার ব্যবহার করে আয়নোস্ফিয়ার থেকে প্রতিফলিত হয়ে আন্তঃমহাদেশীয় দূরত্ব ভ্রমণ করতে পারে, তাই শর্টওয়েভ আন্তর্জাতিক স্টেশনগুলি ব্যবহার করে, অন্যান্য দেশে সম্প্রচার করে।
এফএম (ফ্রিকোয়েন্সি মড্যুলেশন) - এফএম-এ রেডিও বাহক সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি অডিও সিগন্যাল দ্বারা সামান্য পরিবর্তিত হয়। খুব উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি (VHF) পরিসরে প্রায় ৬৫ এবং ১০৮ MHz এর মধ্যে FM সম্প্রচার ব্যান্ডে FM সম্প্রচার অনুমোদিত। এই ব্যান্ডের রেডিও তরঙ্গগুলি লাইন-অফ-সাইট দ্বারা ভ্রমণ করে তাই এফএম অভ্যর্থনা চাক্ষুষ দিগন্ত দ্বারা প্রায় ৩০-৪০ মাইল (৪৮-৬৪ কিমি) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং পাহাড় দ্বারা অবরুদ্ধ করা যেতে পারে। তবে এটি রেডিও নয়েজ (RFI, sferics, স্থিতিশীল) থেকে হস্তক্ষেপের জন্য কম সংবেদনশীল এবং উচ্চ বিশ্বস্ততা, ভাল ফ্রিকোয়েন্সি প্রতিক্রিয়া এবং AM এর তুলনায় কম অডিও বিকৃতি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এফএম স্টেশনগুলির বিকিরণ শক্তি (ERP) ৬-১০০ কিলোওয়াট থেকে পরিবর্তিত হয়।
ডিজিটাল রেডিও বাতাসে ডিজিটাল রেডিও সংকেত সম্প্রচারের জন্য বিভিন্ন মান এবং প্রযুক্তি জড়িত। কিছু সিস্টেম, যেমন এইচডি রেডিও এবং ডিআরএম, অ্যানালগ সম্প্রচারের মতো একই ওয়েভব্যান্ডে কাজ করে, হয় অ্যানালগ স্টেশনগুলির প্রতিস্থাপন হিসাবে বা একটি পরিপূরক পরিষেবা হিসাবে। অন্যান্য, যেমন DAB/DAB+ এবং ISDB_Tsb, ঐতিহ্যগতভাবে টেলিভিশন বা স্যাটেলাইট পরিষেবার জন্য ব্যবহৃত ওয়েভব্যান্ডে কাজ করে।
ডিজিটাল অডিও ব্রডকাস্টিং (ডিএবি) 1998 সালে কিছু দেশে আত্মপ্রকাশ করে। এটি এএম এবং এফএম-এর মতো অ্যানালগ সংকেতের পরিবর্তে একটি ডিজিটাল সংকেত হিসাবে অডিও প্রেরণ করে। DAB-এর FM-এর তুলনায় উচ্চ মানের সাউন্ড প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে (যদিও অনেক স্টেশন এই ধরনের উচ্চ মানের ট্রান্সমিট করতে পছন্দ করে না), রেডিও শব্দ এবং হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, দুর্লভ রেডিও স্পেকট্রাম ব্যান্ডউইথের আরও ভাল ব্যবহার করে এবং উন্নত ব্যবহারকারী বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদান করে যেমন ইলেকট্রনিক প্রোগ্রাম গাইড। এর অসুবিধা হল যে এটি পূর্ববর্তী রেডিওগুলির সাথে বেমানান যাতে একটি নতুন DAB রিসিভার কিনতে হবে। বেশ কয়েকটি দেশ DAB/DAB+ এর পক্ষে অ্যানালগ এফএম নেটওয়ার্ক বন্ধ করার তারিখ নির্ধারণ করেছে, বিশেষ করে ২০১৭ সালে নরওয়ে[50] এবং ২০২৪ সালে সুইজারল্যান্ড।
একটি একক DAB স্টেশন একটি ১,৫00 kHz ব্যান্ডউইথ সংকেত প্রেরণ করে যা OFDM দ্বারা সংশোধিত ডিজিটাল অডিওর 9-12টি চ্যানেল থেকে বহন করে যেখান থেকে শ্রোতা বেছে নিতে পারেন। সম্প্রচারকারীরা একটি চ্যানেলকে বিভিন্ন বিট হারে প্রেরণ করতে পারে, তাই বিভিন্ন চ্যানেলের বিভিন্ন অডিও গুণমান থাকতে পারে। বিভিন্ন দেশে DAB স্টেশনগুলি UHF পরিসরে ব্যান্ড III (১৭৪–২৪০ MHz) বা L ব্যান্ড (১.৪৫২–১.৪৯২ GHz) তে সম্প্রচার করে, তাই FM অভ্যর্থনা চাক্ষুষ দিগন্ত দ্বারা প্রায় ৪০ মাইল (৬৪ কিমি) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। 52][49]
এইচডি রেডিও হল একটি বিকল্প ডিজিটাল রেডিও স্ট্যান্ডার্ড যা উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়। একটি ইন-ব্যান্ড অন-চ্যানেল প্রযুক্তি, এইচডি রেডিও একটি স্টেশনের এনালগ এফএম বা এএম সিগন্যালের একটি সাবক্যারিয়ারে একটি ডিজিটাল সংকেত সম্প্রচার করে। স্টেশনগুলি সাবক্যারিয়ারে একাধিক অডিও সিগন্যাল মাল্টিকাস্ট করতে সক্ষম, যা বিভিন্ন বিটরেটে একাধিক অডিও পরিষেবার সংক্রমণ সমর্থন করে। ডিজিটাল সিগন্যালটি HDC (হাই-ডেফিনিশন কোডিং) মালিকানাধীন অডিও কম্প্রেশন ফর্ম্যাটের সাথে OFDM ব্যবহার করে প্রেরণ করা হয়। HDC ভিত্তিক, কিন্তু MPEG-4 মান HE-AAC এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি একটি পরিবর্তিত বিযুক্ত কোসাইন ট্রান্সফর্ম (MDCT) অডিও ডেটা কম্প্রেশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে।
ডিজিটাল রেডিও মন্ডিয়েল (ডিআরএম) হল একটি প্রতিযোগী ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল রেডিও স্ট্যান্ডার্ড যা মূলত সম্প্রচারকদের দ্বারা উত্তরাধিকার AM এবং FM সম্প্রচারের জন্য উচ্চতর বর্ণালী দক্ষতা প্রতিস্থাপন হিসাবে বিকাশ করা হয়েছে। ফরাসি এবং ইতালীয় ভাষায় Mondiale মানে "বিশ্বব্যাপী"; DRM ২০০১ সালে বিকশিত হয়েছিল, এবং বর্তমানে ২৩টি দেশ দ্বারা সমর্থিত, এবং ২০০৩ থেকে শুরু হওয়া কিছু ইউরোপীয় এবং পূর্ব সম্প্রচারকদের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। DRM30 মোডটি ৩০ MHz এর নিচে বাণিজ্যিক সম্প্রচার ব্যান্ড ব্যবহার করে, এবং এটি স্ট্যান্ডার্ড AM সম্প্রচারের প্রতিস্থাপন হিসাবে তৈরি করা হয়েছে। লংওয়েভ, মিডিয়ামওয়েভ এবং শর্টওয়েভ ব্যান্ড। ডিআরএম+ মোড এফএম সম্প্রচার ব্যান্ডের চারপাশে কেন্দ্রীভূত ভিএইচএফ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং এটি এফএম সম্প্রচারের প্রতিস্থাপন হিসেবে তৈরি। এটি বিদ্যমান রেডিও রিসিভারগুলির সাথে বেমানান, তাই এটির জন্য শ্রোতাদের একটি নতুন ডিআরএম রিসিভার কিনতে হবে৷ ব্যবহৃত মডুলেশন হল COFDM নামক OFDM-এর একটি ফর্ম যেখানে, 4টি বাহক পর্যন্ত একটি চ্যানেলে প্রেরণ করা হয় যা পূর্বে একটি একক AM বা FM সংকেত দ্বারা দখল করা হয়, যা চতুর্ভুজ প্রশস্ততা মড্যুলেশন (QAM) দ্বারা পরিমিত হয়। [57][45]
ডিআরএম সিস্টেমটি বিদ্যমান এএম এবং এফএম রেডিও ট্রান্সমিটারের সাথে যথাসম্ভব সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে বিদ্যমান রেডিও স্টেশনগুলির বেশিরভাগ সরঞ্জামগুলি ডিআরএম মড্যুলেশন সরঞ্জামগুলির সাথে বর্ধিত ব্যবহারে চালিয়ে যেতে পারে।
স্যাটেলাইট রেডিও হল একটি সাবস্ক্রিপশন রেডিও পরিষেবা যা পৃথিবীর উপরে ২২,000 মাইল (৩৫,000 কিমি) জিওস্টেশনারি কক্ষপথে সরাসরি সম্প্রচারিত যোগাযোগ উপগ্রহ থেকে মাইক্রোওয়েভ ডাউনলিংক সিগন্যাল ব্যবহার করে গ্রাহকদের রিসিভারে সরাসরি সিডি মানের ডিজিটাল অডিও সম্প্রচার করে। এটি বেশিরভাগ যানবাহনে রেডিওর জন্য উদ্দেশ্যে করা হয়। স্যাটেলাইট রেডিও উত্তর আমেরিকায় ২.৩ GHz S ব্যান্ড ব্যবহার করে, বিশ্বের অন্যান্য অংশে, এটি DAB-এর জন্য বরাদ্দকৃত ১.৪ GHz L ব্যান্ড ব্যবহার করে।[58][59](https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/2e/SiriusXM_Display_on_Volkswagen%27s_RNS-510_Receiver.png/330px-SiriusXM_Display_on_Volkswagen%27s_RNS-510_Receiver.png)
দৃশ্য-রেকর্ড দূরদর্শন সম্প্রচার
মূল নিবন্ধ: (https://en.wikipedia.org/wiki/Television_broadcasting)
টেলিভিশন সম্প্রচার হল রেডিওর মাধ্যমে চলমান চিত্রের সংক্রমণ, যা স্থির চিত্রগুলির ক্রম নিয়ে গঠিত, যা একটি টেলিভিশন রিসিভারের (একটি "টেলিভিশন" বা টিভি) একটি সিঙ্ক্রোনাইজড অডিও (শব্দ) চ্যানেলের সাথে পর্দায় প্রদর্শিত হয়। টেলিভিশন (ভিডিও) সংকেত ব্রডকাস্ট রেডিও (অডিও) সংকেতের চেয়ে ব্যাপক ব্যান্ডউইথ দখল করে। এনালগ টেলিভিশন অর্থাৎ মূল টেলিভিশন প্রযুক্তির জন্য ৬ মেগাহার্টজ প্রয়োজন, তাই টেলিভিশন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলিকে 6 মেগাহার্টজ চ্যানেলে বিভক্ত করা হয়েছে, যাকে এখন "আরএফ চ্যানেল" বলা হয়।
বর্তমান টেলিভিশন স্ট্যান্ডার্ড যা ২০০৬ সালে শুরু হয়, হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশন (HDTV) নামে একটি ডিজিটাল বিন্যাস। এটি উচ্চতর রেজোলিউশন, সাধারণত ১০৮০ পিক্সেল উচ্চ বাই ১৯২০ পিক্সেল চওড়া এবং প্রতি সেকেন্ডে ২৫ বা ৩০ ফ্রেম হারে ছবি প্রেরণ করে। ডিজিটাল টেলিভিশন (ডিটিভি) ট্রান্সমিশন সিস্টেম, যা ২০০৬ সালে শুরু হওয়া একটি ট্রানজিশনে পুরানো অ্যানালগ টেলিভিশনকে প্রতিস্থাপন করে, ইমেজ কম্প্রেশন এবং উচ্চ-দক্ষ ডিজিটাল মডুলেশন যেমন OFDM এবং 8VSB ব্যবহার করে HDTV ভিডিও পুরানো অ্যানালগ চ্যানেলগুলির তুলনায় একটি ছোট ব্যান্ডউইথের মধ্যে প্রেরণ করতে, দুর্লভ রেডিও বর্ণালী স্থান সাশ্রয় করে । তাই, ৬ MHz এনালগ RF চ্যানেলের প্রতিটি এখন ৭ টি DTV চ্যানেল বহন করে – এগুলোকে "ভার্চুয়াল চ্যানেল" বলা হয়। ডিজিটাল টেলিভিশন রিসিভারগুলি এনালগ টেলিভিশনের তুলনায় প্রতিবন্ধকতার(noise) উপস্থিতিতে ভিন্ন আচরণ করে, যাকে "ডিজিটাল ক্লিফ" প্রভাব বলা হয়। এনালগ টেলিভিশনের ক্ষেত্রে যেখানে ক্রমবর্ধমান দুর্বল সিগনাল গ্রহণ ছবির গুণমানকে ধীরে ধীরে অবনমিত করে, ডিজিটাল টেলিভিশনে ছবির গুণমান সিগনাল গ্রহণ(reception) দ্বারা প্রভাবিত হয় না যতক্ষণ না, একটি নির্দিষ্ট সময়ে, রিসিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং স্ক্রীন কালো হয়ে যায়।
ভৌম(Terrestrial) টেলিভিশন( :en:Terrestrial_television) বা ওভার-দ্য-এয়ার (ওটিএ) টেলিভিশন বা সম্প্রচার টেলিভিশন বা প্রাচীনতম টেলিভিশন প্রযুক্তি হল ল্যান্ড-ভিত্তিক টেলিভিশন স্টেশন থেকে দর্শকদের বাড়িতে টেলিভিশন রিসিভারে (টেলিভিশন বা টিভি বলা হয়) টেলিভিশন সংকেতগুলিকে প্রেরণ করার মাধ্যম। টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন ব্রডকাস্টিং ব্যান্ড ৪১ – 88 MHz (VHF লো ব্যান্ড বা ব্যান্ড I, RF চ্যানেল ১-৬ বহন করে), ১৭৪ – ২৪০ MHz, (VHF হাই ব্যান্ড বা ব্যান্ড III; RF চ্যানেল ৭-১৩ বহন করে), এবং ৪৭০ – ৬১৪ MHz (UHF ব্যান্ড IV এবং ব্যান্ড V; RF চ্যানেল ১৮ এবং তার উপরে বহন করে)। সঠিক ফ্রিকোয়েন্সি সীমানা বিভিন্ন দেশে পরিবর্তিত হয়। এর বিস্তার হয় লাইন-অফ-সাইট {দৃষ্টি সীমানার মধ্যে} দ্বারা, তাই সিগনাল গ্রহন চাক্ষুষ দিগন্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেলিভিশন ট্রান্সমিটারের কার্যকর বিকিরণ শক্তি (ERP) গড় ভূখণ্ডের উপরে উচ্চতা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। টেলিভিশন ট্রান্সমিটারের কাছাকাছি দর্শকরা টিভির উপরে একটি সাধারণ "খরগোশের কান(rabbit ears)" দ্বীপোল অ্যান্টেনা ব্যবহার করতে পারে, তবে ফ্রিঞ্জ রিসেপশন এলাকায় দর্শকদের সাধারণত পর্যাপ্ত সিগনাল পাওয়ার জন্য ছাদে মাউন্ট করা একটি বহিরঙ্গন অ্যান্টেনা প্রয়োজন।(https://en.wikipedia.org/wiki/File:Sharp-portable-tv.jpg)
স্যাটেলাইট টেলিভিশন - একটি সেট-টপ বক্স হল সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে স্যাটেলাইট টেলিভিশন থেকে সরাসরি-সম্প্রচার গ্রহণ করে একটি সাধারণ টেলিভিশনে প্রদর্শন করার যন্ত্র। পৃথিবীর নিরক্ষরেখা থেকে ২২,২০০মাইল (৩৫,৭০০ কিমি) উপরে জিওস্টেশনারি{ভূস্থির} কক্ষপথে একটি সরাসরি সম্প্রচার উপগ্রহ একটি ১২.২ থেকে ১২.৭ গিগাহার্টজ কু ব্যান্ড মাইক্রোওয়েভ ডাউনলিংক সংকেত ছাদের পাশের সাবস্ক্রাইব করার জন্য অনেকগুলি চ্যানেল (৯০০ পর্যন্ত) প্রেরণ করে। মাইক্রোওয়েভ সিগন্যালটি ডিশের একটি নিম্ন মধ্যবর্তী ফ্রিকোয়েন্সিতে রূপান্তরিত হয় এবং গ্রাহকের টিভির সাথে সংযুক্ত একটি সেট-টপ বক্সে একটি সমাক্ষ তারের মাধ্যমে বিল্ডিংয়ে সঞ্চালিত হয়, যেখানে এটি ডিমোডুলেট করে প্রদর্শিত হয়। গ্রাহক এই সুবিধার জন্য একটি মাসিক ফি প্রদান করে।(https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/c/ca/SuperDISH121.jpg/180px-SuperDISH121.jpg)(https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/0/0d/Berlin-neukoelln_satellite-dishes_20050314_p1010596.jpg/330px-Berlin-neukoelln_satellite-dishes_20050314_p1010596.jpg)
প্রকার
বেতারযন্ত্র সাধারণত দুই প্রকার; যথাঃ
স্থির বেতারযন্ত্রঃ যে বেতার যন্ত্রগুলো কোন নির্দিষ্ট স্থানে রেখে বা কোন নির্দিষ্ট বস্তুর উপর রেখে যোগাযোগ সম্পন্ন করা হয়, তাকে স্থির বেতারযন্ত্র বলে।
ওয়াকি-টকি বেতারযন্ত্রঃ যে বেতার যন্ত্রগুলো ওজনে হালকা, হাতে বহনযোগ্য ও হেঁটে হেঁটে কথা বলা যায়, তাকে ওয়াকি-টকি বেতার যন্ত্র বলে
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:প্রযুক্তি
বিষয়শ্রেণী:বেতার
বিষয়শ্রেণী:শব্দ (ধ্বনি)
বিষয়শ্রেণী:মাধ্যম বিন্যাস
বিষয়শ্রেণী:ব্রিটিশ উদ্ভাবন
বিষয়শ্রেণী:ইতালীয় উদ্ভাবন
বিষয়শ্রেণী:প্রসার ও বিপণন যোগাযোগ
বিষয়শ্রেণী:অবকাঠামো
বিষয়শ্রেণী:যোগাযোগ |
যুক্তিবিজ্ঞান | https://bn.wikipedia.org/wiki/যুক্তিবিজ্ঞান | thumb|150px|অ্যারিস্টটল
যুক্তিবিজ্ঞান (গ্রিক λογικήLog baবা লোগোস,ইংরেজি Logic) দুটি অর্থ আছে: প্রথমত, এতে কিছু কার্যকলাপ বৈধ যুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে; দ্বিতীয়ত, এটি যুক্তি আদর্শ গবেষণা বা তার একটি শাখার নাম, যেখানে ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কে যুক্তিসম্মত আলোচনা বা যুক্তিতর্ক করা হয়। আধুনিক অর্থে- দর্শন, গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্টরূপে যুক্তিবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যগুলি উপস্থিত রয়েছে।
যুক্তিবিজ্ঞান ভারতের বেশ কয়েকটি প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে চর্চিত হয়, চীন, পারস্য এবং গ্রীস। পশ্চিমের দেশগুলোতে যুক্তিবিদ্যাকে একটি প্রথাগত শৃঙ্খলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ও দর্শন এর মধ্যে এটি একটি মৌলিক জায়গা দিয়েছেন এরিস্টটল। যুক্তি গবেষণা শাস্ত্রীয় ট্রিভিয়ামের অংশ ছিল। পূর্বের দেশগুলোতে, যুক্তিবিজ্ঞান বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাবলম্বিদের দ্বারা উন্নত হয়েছিল।
যুক্তিবিজ্ঞান প্রায়ই তিনটি অংশে- আবেশক যুক্তি, মনন যুক্তি, এবং ন্যায়িক যুক্তি- বিভক্ত করা হয়।
যুক্তিবিজ্ঞানের গবেষণা
যৌক্তিক রুপ বা বিন্যাস হলো যুক্তিবিজ্ঞানের কেন্দ্র। কোনো আলোচনা বা যুক্তিতর্কের বৈধতা বা দৃঢ়তা নির্ধারিত হয় এর যৌক্তিক বিন্যাস এর উপর নির্ভর করে, এর বিষয়বস্তুর উপর নয়। পরম্পরাগত এরিস্টটলিয় আনুমানিক যুক্তিবিজ্ঞান ও আধুনিক প্রতীকমূলক যুক্তিবিজ্ঞান হলো প্রথাগত যুক্তির উদাহরণ। প্রথাগত যুক্তি সাধারণত বিষয়ের মূলে এবং কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। এটা পাঠকের বই ও লেখকের কলম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
অপ্রথাগত যুক্তিবিজ্ঞান হলো সাধারণ ভাষায় করা যুক্তিতর্কের গবেষণা। সামান্য বিষয়ে যেই যুক্তিতর্ক করা হয় তার চর্চা করা অপ্রথাগত যুক্তিবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি মূলত আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যুক্তিতর্ক ও আলোচনায় কোন কিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করার কাজেও ব্যাবহার করে থাকি। প্লেটো-র কিছু উদ্ধৃতি এই যুক্তিবিজ্ঞানের উপযুক্ত উদাহরণ।
যৌক্তিক রুপ বা বিন্যাস
যুক্তি সাধারণত আনুষ্ঠানিক রুপে বিবেচিত হয়, যখন এটি বিশ্লেষিত ও প্রতিনিধিত্ব করে কোনো বৈধ আলোচনার। একটি আলোচনার প্রকৃতি প্রদর্শিত হয় তখনই, যখন এর বাক্যগুলো কোনো যৌক্তিক ভাষার প্রথাগত ব্যাকরণ ও প্রকৃতি মেনে চলে, যেন আলোচনাটির বিষয়বস্তু সাধারণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। কেউ যদি "যৌক্তিক বিন্যাস"-এর ধারণাটিকে দার্শনিকতায় ভরপুর মনে করে অর্থাৎ এই ধারনাটি যদি তার জন্য জটিল হয় তবে সেই ক্ষেত্রে, সহজভাবে "বিন্যাস" করা হলো কোন বাক্যকে সরাসরি 'যুক্তির ভাষায়' অনুবাদ করা।
এটিই কোন আলোচনার যৌক্তিক রূপ। এটি প্রয়োজনীয় কারণ সাধারণত যে কোন ভাষায় ব্যাক্ত একটি বাক্য নানান বিভিন্নতা ও জটিলতা প্রদর্শন করে থাকে, যা তাদের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় এবং বাক্যটি যেই অর্থ প্রকাশ করতে ব্যাক্ত হয়েছে তার চেয়ে অবাস্তব রুপে পরিনত হয়। বাক্যকে যৌক্তিক রুপে বিবেচনা করার জন্য কিছু ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করা প্রয়োজন- যেসব শব্দ যুক্তির সাথে সম্পৃক্ত নয় (যেমন, একটি লাতিন আলোচনায় লিঙ্গ ও বিশেষ্য-বিশেষন অপ্রয়োজনীয়) তাদের উপেক্ষা করা, কিছু সংযুক্তি শব্দ প্রতিস্থাপন করা (যেমন, "কিন্তু" অযৌক্তিক। এর পরিবর্তে "এবং" ব্যবহার করা) এবং সাধারণত যেসব অভিব্যক্তি (সকল বা সর্বজনীন ইত্যাদি)এর পরিবর্তে কিছু যৌক্তিক অভিব্যক্তি (কোন, প্রতি ইত্যাদি) বা দ্ব্যর্থক শব্দ ব্যবহার করা।
ইতিহাস
লজিক গ্রীক শব্দ লোগোস থেকে এসেছে, যার অর্থ "শব্দ" বা "যা বলা হয়", তবে এর অর্থ আদতে "চিন্তা" বা "কারণ"। পশ্চিমা বিশ্বে, যুক্তি প্রথমে অ্যারিস্টটল বিকাশ করেছিলেন, যিনি বিষয়টিকে 'বিশ্লেষণ' বলে অভিহিত করেছিলেন। অ্যারিস্টটোলিয়ান যুক্তি বিজ্ঞান ও গণিতে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে পশ্চিমে বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হয়। অ্যারিস্টটলের লজিক সিস্টেমটি অনুমানমূলক সিলোজিস্ম, টেম্পোরাল মডেল যুক্তি এবং ইন্ডাকটিভ যুক্তি - পাশাপাশি প্রভাবশালী শব্দভাণ্ডার যেমন বিভিন্ন টার্ম, প্রেডিক্টেবল, সিলোজিস্ম এবং প্রোপোজিশনের অগ্রদূত ছিল। স্টোয়িক যুক্তিবিজ্ঞান এর বিপরীতে ছিল।
ভারতে মেধাতিথি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে আনভিকসিকি যুক্তি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
আরও দেখুন
সুবিবেচক চিন্তন
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:গণিতের দর্শন
বিষয়শ্রেণী:দর্শনের শাখা
বিষয়শ্রেণী:যুক্তি
বিষয়শ্রেণী:বিমূর্তন
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:যুক্তিবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:রৌপ বিজ্ঞান |
বীজগণিত | https://bn.wikipedia.org/wiki/বীজগণিত | বীজগণিত (নামটি এসেছে আল-জাবর থেকে, যার অর্থ "ভাঙ্গা অংশসমূূহের পুনর্মিলন" এবং "হাড়সংযুক্তকরণ") গণিতের সংখ্যাতত্ত্ব, জ্যামিতি এবং গাণিতিক বিশ্লেষণের একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র। অতি সাধারণ রূপে বীজগণিত হলো গাণিতিক চিহ্নগুলির অধ্যয়ন এবং এই চিহ্নগুলো নিপূণভাবে ব্যবহার করার নিয়ম;See , page 1: "An algebraic system can be described as a set of objects together with some operations for combining them". এটি গণিতের প্রায় সমস্ত শাখার সেতুবন্ধন স্বরূপ। এতে প্রাথমিক সমীকরণ সমাধান থেকে শুরু করে গ্রুপ, রিং এবং ক্ষেত্রগুলির মতো বিমূর্ত বিষয়সমূহের অধ্যয়ন পর্যন্ত সমস্ত কিছুই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বীজগণিতের মৌলিক অংশগুলিকে প্রাথমিক বীজগণিত বলা হয়ে থাকে এবং বিমূর্ত অংশগুলিকে বিমূর্ত বীজগণিত বা আধুনিক বীজগণিত বলা হয়। প্রাথমিক বীজগণিতকে সাধারণত গণিত, বিজ্ঞান বা প্রকৌশল বিষয়ক অধ্যয়নের জন্য; এমনকি ঔষধ, অর্থনীতি সম্পর্কিত প্রয়োগের জন্যও অপরিহার্য বলে মনে করা হয়ে থাকে। বিমূর্ত বীজগণিত হল উন্নত গণিতের একটি প্রধান ক্ষেত্র, যা মূলত পেশাদার গণিতবিদরা অধ্যয়ন করে থাকে।
thumb|250px|centre|এই দ্বিঘাত সূত্রটি সমীকরণটির সমাধান বের করে। যেখানে , এবং সমীকরণটির সহগ এবং ।
প্রাথমিক বীজগণিতের বিমূর্ত ব্যবহার পাটীগণিত থেকে পৃথক, যেমনঃ বীজগণিতে অজানা সংখ্যার মান নির্ণয়ের জন্য যে অক্ষর ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা একাধিক মান গ্রহণ করতে পারে।See , Europe in the Middle Ages, p. 258: "In the arithmetical theorems in Euclid's Elements VII–IX, numbers had been represented by line segments to which letters had been attached, and the geometric proofs in al-Khwarizmi's Algebra made use of lettered diagrams; but all coefficients in the equations used in the Algebra are specific numbers, whether represented by numerals or written out in words. The idea of generality is implied in al-Khwarizmi's exposition, but he had no scheme for expressing algebraically the general propositions that are so readily available in geometry." উদাহরণস্বরূপ, তে অক্ষরটি অজানা, তবে যোগাত্মক বিপরীত সংখ্যার ধারণা প্রয়োগের মাধ্যমে এর মান নির্ণয় করা যেতে পারে: । তে, এবং অক্ষরসমূহ চলক এবং অক্ষর একটি ধ্রুবক, যা শূন্যে আলোর গতি নির্দেশ করে। বীজগণিতে সূত্র লেখার এবং সমীকরণগুলি সমাধান করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যা কথায় সমস্ত কিছু লেখার পুরনো পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট এবং সহজ।
বীজগণিত শব্দটি নির্দিষ্ট কিছু বিশেষ পদ্ধতিতেও ব্যবহৃত হয়। বিমূর্ত বীজগণিতের একটি বিশেষ ধরনের গাণিতিক বস্তুকে "বীজগণিত" বলা হয় এবং শব্দটি ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, রৈখিক বীজগণিত, বীজগাণিতিক টপোলজি ইত্যাদি বীজগাণিতিক শাখাসমূহের নামে।
একজন গণিতবিদ যিনি বীজগণিতে গবেষণা করেন, তাকে বীজগণিতবিদ বলা হয়।বহু বীজগণিতবিদ মিলে এই বীজগণিতকে আরও অনেক সমৃদ্ধ করেছেন।যেমন,"রেনে দেকারতে"সেরকমই একজন বীজগণিতবিদ।
ব্যুৎপত্তি
thumb|
ফার্সি গণিতবিদ আল খারিজমি, তিনি তার বইয়ে আল-জাবর শব্দটি ব্যবহার করেন, এই “আল-জাবর” থেকেই ইংরেজি “আলজেবরা” শব্দটি এসেছে।
বীজগণিত আরবি ( অর্থ "ভাঙা জিনিস পুনঃগঠিত করা") শব্দ থেকে এসেছে এবং শব্দটি ফার্সি গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল খারিজমি রচিত নবম শতাব্দীর প্রথম দিকের বই ইলমুল জাবর ওয়াল মুকাবালাহ্ ("পুনর্গঠন এবং ভারসাম্যের বিজ্ঞান") শিরোনাম থেকে এসেছে। আল-জাবর শব্দটি দিয়ে তার রচনায় তিনি সমীকরণের এক দিক থেকে পদ অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপকে বুঝিয়েছিলেন, المقابلة (আল-মুকাবালাহ্, অর্থগ "ভারসাম্য") দ্বারা উভয় পক্ষে সমান পদ যুক্ত করার বিষয়টিকে তিনি বুঝিয়েছিলেন। লাতিন ভাষায় আলজেবার অথবা আলজেবরা নামে সংক্ষিপ্ত হয়ে, অবশেষে পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্পেনীয়, ইতালীয় বা মধ্যযুগীয় লাতিন ভাষা হয়ে ইংরেজি ভাষায় প্রবেশ করে। এটি প্রকৃতপক্ষে, ভাঙা বা স্থানচ্যুত হাড় স্থাপনের শল্য চিকিৎসার পদ্ধতিকে বোঝায়। গাণিতিক অর্থ (ইংরেজিতে) ষোড়শ শতাব্দীতে প্রথম নথিভূক্ত করা হয়েছিল।
বীজগণিত শব্দের বিভিন্ন অর্থ
"বীজগণিত" এর একক শব্দ বা পরিবর্ধকবাচক শব্দসহ গণিতে বেশ কয়েকটি সম্পর্কিত অর্থ রয়েছে।
কোনও পদাশ্রিত নির্দেশক (article) ব্যতীত, একক শব্দ হিসেবে "বীজগণিত" গণিতের একটি বিস্তৃত অংশের নাম।
একটি পদাশ্রিত নির্দেশক বা বহুবচনসহ একক শব্দ হিসেবে, "একটি বীজগণিত" বা "বীজগণিত" একটি নির্দিষ্ট গাণিতিক কাঠামো বোঝায়, যার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রসঙ্গের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, কাঠামোর একটি যোগ, গুণ এবং স্কেলার গুণ রয়েছে (একটি ক্ষেত্রের উপরে বীজগণিত দেখুন)। কিছু লেখক যখন "বীজগণিত" শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন তারা নিম্নলিখিতঃ সংযোজন, বিনিময়,অভেদক , এবং / অথবা, সসীম-মাত্রার অতিরিক্ত অনুমানের একটি উপসেট ব্যবহার করে থাকেন। সর্বজনীন বীজগণিতে, "বীজগণিত" শব্দটি উপরের ধারণার একটি সাধারণীকরণকে বোঝায়, যা এন-অ্যারি ক্রিয়াকলাপের অনুমতি দিয়ে থাকে।
একটি পরিবর্ধকবাচক শব্দসহ, এখানে একই ধরনের পার্থক্য দেখা যায়:
পদাশ্রিত নির্দেশক ব্যতীত নামটি বীজগণিতের একটি অংশকে বোঝায়, যেমনঃ রৈখিক বীজগণিত, প্রাথমিক বীজগণিত (প্রতীক-নিপুণভাবে ব্যবহার বিধি গণিতের প্রাথমিক কোর্সে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার অংশ হিসাবে শেখানো হয়), বা বিমূর্ত বীজগণিত (বিমূর্ত বীজগণিত অধ্যয়নকারীদের জন্য)।
একটি পদাশ্রিত নির্দেশকসহ এর দ্বারা উদাহরণস্বরূপঃ কিছুটা বিমূর্ত কাঠামোকে বোঝায়, যেমনঃ একটি লাই বীজগণিত, একটি সহযোগী বীজগণিত, বা একটি শীর্ষ অপারেটর বীজগণিত।
কখনও কখনও উভয় অর্থ একই যোগ্যতার জন্য উপস্থিত থাকে। যেমনঃ এক বাক্যে: বিনিময় বীজগণিত হল বিনিময় রিংগুলির অধ্যয়ন, যা পূর্ণসংখ্যার উপর বিনিময় বীজগণিত।
গণিতের একটি শাখা হিসেবে "বীজগণিত"
বীজগণিত পাটিগণিতের মতো হিসাব-নিকাশ দিয়ে শুরু হয়েছিল, যেখানে অক্ষর সংখ্যার মান ধারণ করতে পারে। যা যেকোন সংখ্যার জন্য ধর্মসমূহের প্রমাণ করতে সাহায্য করে।
যে কোনও সংখ্যা হতে পারে (তবে, = হতে পারবে না), এবং দ্বিঘাত সূত্রটি অজানা চলক এর মানগুলি দ্রুত এবং সহজেই বের করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা সমীকরণকে সিদ্ধ করবে। এর অর্থ, সমীকরণের সমস্ত সমাধান সন্ধান করা।
ঐতিহাসিকভাবে এবং বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বীজগণিতের অধ্যয়ন উপরের দ্বিঘাত সমীকরণের মতো সমীকরণের সমাধানের মাধ্যমে শুরু হয়। তারপরে আরও সাধারণ প্রশ্ন যেমন "একটি সমীকরণের সমাধান আছে কি?", "একটি সমীকরণের কতগুলি সমাধান আছে?", "সমাধানগুলির প্রকৃতি সম্পর্কে কী বলা যেতে পারে?" বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এই প্রশ্নগুলো পরবর্তীতে বীজগণিতকে বিভিন্ন অ-সংখ্যাসূচক বিষয়সমূহ যেমনঃ বিন্যাস, ভেক্টর, ম্যাট্রিক্স এবং বহুপদী তে ব্যাপ্ত করে। এই অ-সংখ্যাসূচক বিষয়সমূহের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যগুলি তখন গ্রুপ, রিং এবং ক্ষেত্রের মতো বীজগণিতক কাঠামোতে বিমূর্ত হয়।
ষোড়শ শতাব্দীর আগে, গণিত কেবল দুটি উপ-ক্ষেত্র, পাটিগণিত এবং জ্যামিতিতে বিভক্ত ছিল। যদিও কিছু কিছু পদ্ধতি, যা অনেক আগে বিকশিত হয়েছিল, যা আজকাল বীজগণিত হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, বীজগণিতের উত্থান এবং এরপরেই কেবল ১৬শ বা ১৭শ শতকের দিকে অগণিত ক্যালকুলাস গণিতের শাখা হিসাবে আবির্ভূত হয় । উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে, গণিতের অনেকগুলি নতুন ক্ষেত্র আবির্ভূত হয়েছিল, যার বেশিরভাগই পাটিগণিত এবং জ্যামিতি উভয়ই ব্যবহার করেছিল এবং প্রায় সবগুলিই বীজগণিত ব্যবহার করেছিল।
আজ, বীজগণিত বৃদ্ধি পেয়েছে যতক্ষণ না এতে গণিতের অনেকগুলি শাখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে , যেমনটি গণিতের বিষয় শ্রেণীবদ্ধকরণে দেখা যায়। যেখানে প্রথম স্তরের কোন অংশকে (দুটি অঙ্কের সংখ্যা) বীজগণিত বলা হতো না। আজ বীজগণিতের মধ্যে রয়েছে, ০৮-সাধারণ বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া , ১২- ক্ষেত্র তত্ত্ব এবং বহুপদী, ১৩- বিনিময় বীজগণিত, ১৫- রৈখিক এবং বহুরেখা বীজগণিত ; ম্যাট্রিক্স তত্ত্ব, ১৬- সংযোজন রিং এবং বীজগণিত , ১৭- অসংযোজন রিং এবং বীজগণিত, ১৮- শ্রেণী তত্ত্ব ; সমসংস্থানিক বীজগণিত, ১৯- কে-তত্ত্ব এবং ২০- গ্রুপ তত্ত্ব । ১১- সংখ্যা তত্ত্ব এবং ১৪- বীজগাণিতিক জ্যামিতিতে বীজগণিত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
ইতিহাস
বীজগণিতের আদি ইতিহাস
thumb|upright=0.8|আল-খোয়ারিজমির আল কিতাব আল -মুখতাসার ফি হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবালাহ্ এর একটি পাতা
বীজগণিতের উৎপত্তি প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের কাছে শনাক্ত করা যায়, যারা একটি উন্নত পাটিগণিত ব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যার সাহায্যে তারা একটি অ্যালগরিদমিক প্রক্রিয়ায় গণনা করতে সক্ষম হয়েছিল। ব্যাবিলনীয়রা রৈখিক সমীকরণ, দ্বিঘাত সমীকরণ এবং অনির্দিষ্ট রৈখিক সমীকরণ ব্যবহার করে বর্তমানে সমাধান করা সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য সূত্র তৈরি করেছিল। বিপরীতে, এই যুগের বেশিরভাগ মিশরীয়রা, পাশাপাশি গ্রীক ও চীনা গণিতও খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দে, সাধারণত জ্যামিতিক পদ্ধতি দ্বারা সমীকরণগুলি সমাধান করেছিল। যেমন রিহিন্দ ম্যাথমেটিক্যাল পাপিরাস, ইউক্লিডের উপাদানসমূহ এবং দ্য ম্যাথমেটিকাল আর্টস এর নবম অধ্যায়ে যার উল্লেখ পাওয়া যায় । গ্রীকদের জ্যামিতিক কাজ সূত্রকে সাধারণীকরণের জন্য নির্দিষ্ট সূত্রকে আরও সাধারণ পদ্ধতিতে উল্লেখকরণ ও সমীকরণের সমাধানের বাইরে সূত্রকে সাধারণীকরণের কাঠামো সরবরাহ করেছিল, যদিও মধ্যযুগীয় ইসলামে গণিতের বিকাশ না হওয়া পর্যন্ত এটি উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি।See .
প্লেটোর সময়কালে গ্রিক গণিতের ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে । গ্রীকরা একটি জ্যামিতিক বীজগণিত তৈরি করেছিল যেখানে পদগুলি জ্যামিতিক বস্তুর পক্ষ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হতো, সাধারণত রেখা যেগুলির সাথে অক্ষর যুক্ত ছিল। দাওফান্তাস (খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী) ছিলেন আলেকজান্দ্রীয় গ্রিক গণিতবিদ এবং অ্যারিথমেটিকা নামে একাধিক বইয়ের লেখক। এই গ্রন্থগুলি বীজগাণিতিক সমীকরণগুলি সমাধান করার বিষয়ে আলোচনা করে, এবং সংখ্যা তত্ত্বকে ডায়োফান্তাইন সমীকরণের আধুনিক ধারণার দিকে নিয়ে গেছে।
উপরে আলোচিত পূর্ববর্তী ঐতিহ্যসমূহ ফার্সি গণিতবিদ মুহম্মদ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজমি (সি. ৭৮০-৮৫০) -এর উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছিল। পরবর্তীতে, তিনি কমপ্লেশিয়াস বুক অন ক্যালকুলেশন বাই কমপ্লেশন অ্যান্ড ব্যালান্সিং লিখেছিলেন, যা বীজগণিতকে একটি গাণিতিক নিয়ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে;যা জ্যামিতি এবং পাটিগণিত থেকে স্বতন্ত্র।
হেলেনিস্টিক গণিতবিদ আলেকজান্দ্রিয়ার নায়ক এবং ডিওফ্যান্টাসের গণিতবিদগণ পাশাপাশি ব্রহ্মগুপ্তের মতো ভারতীয় গণিতবিদরা মিশর এবং ব্যাবিলনের ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছিলেন, যদিও ডিওফ্যান্টাসের অ্যারিথমেটিকা এবং ব্রহ্মগুপ্তের ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত উচ্চ স্তরে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,৬২৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিঘাত সমীকরণের জন্য শূন্য ও ঋণাত্মক সমাধানসহ শব্দের মাধ্যমে প্রথম সম্পূর্ণ গাণিতিক সমাধানটি Mackenzie, Dana. The Universe in Zero Words: The Story of Mathematics as Told through Equations, p. 61 (Princeton University Press, 2012). ব্রহ্মগুপ্ত তাঁর "ব্রহ্মসুফাসিদ্ধন্ত" গ্রন্থে বর্ণনা করেছিলেন। পরবর্তীতে,ফার্সি ও আরবি গণিতবিদগণ বীজগণিত পদ্ধতিগুলি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নত করেছিলেন। যদিও ডিওফান্টাস এবং ব্যাবিলনীয়রা সমীকরণগুলি সমাধানের জন্য বেশিরভাগ বিশেষ অ্যাডহক পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল, আল-খয়ারিজমির অবদানটি ছিল মৌলিক। তিনি বীজগাণিতিক প্রতীক, ঋণাত্মক সংখ্যা বা শূন্য ছাড়াই রৈখিক এবং দ্বিঘাত সমীকরণগুলি সমাধান করেছিলেন, সুতরাং তাকে বিভিন্ন ধরনের সমীকরণকে আলাদা করতে হয়েছিল।
যেখানে বীজগণিতকে সমীকরণ তত্ত্বের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে,সেখানে গ্রিক গণিতবিদ ডিওফ্যান্টাস ঐতিহ্যগতভাবে "বীজগণিতের জনক" হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন এবং যেখানে সমীকরণগুলি পরিচালনা ও সমাধানের নিয়মগুলির সাথে সম্পৃক্ত , সেখানে ফার্সি গণিতবিদ আল-খোয়ারিজমিকে "বীজগণিতের জনক" হিসাবে বিবেচনা করা হয় । See , page 181: "If we think primarily of the matter of notations, Diophantus has good claim to be known as the 'father of algebra', but in terms of motivation and concept, the claim is less appropriate. The Arithmetica is not a systematic exposition of the algebraic operations, or of algebraic functions or of the solution of algebraic equations".See , page 230: "The six cases of equations given above exhaust all possibilities for linear and quadratic equations...In this sense, then, al-Khwarizmi is entitled to be known as 'the father of algebra'".See , page 228: "Diophantus sometimes is called the father of algebra, but this title more appropriately belongs to al-Khowarizmi".See , page 263–277: "In a sense, al-Khwarizmi is more entitled to be called "the father of algebra" than Diophantus because al-Khwarizmi is the first to teach algebra in an elementary form and for its own sake, Diophantus is primarily concerned with the theory of numbers".
কে (সাধারণ অর্থে) "বীজগণিতের জনক" হিসাবে পরিচিত হওয়ার অধিক অধিকারপ্রাপ্ত তা নিয়ে এখন বিতর্ক রয়েছে। আল-জাবরের মধ্যে পাওয়া বীজগণিতটি অ্যারিথমেটিকাতে পাওয়া বীজগণিতের তুলনায় কিছুটা বেশি প্রাথমিক এবং অ্যারিথমেটিকা বাকবিতণ্ডিত, যেখানে আল-জাবর সম্পূর্ণরূপে আলংকারিক । See , page 228. যারা আল-খুয়ারিজমিকে সমর্থন করেন তারা এই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেন যে তিনি " পক্ষান্তর " এবং "ভারসাম্য"র পদ্ধতিগুলি চালু করেছিলেন (সমীকরণের এক দিক থেকে অন্য দিকে পদের স্থানান্তর, অর্থাৎ, সমীকরণ এর বিপরীত দিকে একই পদের বাতিলকরণ) যা 'আল-জাবর শব্দটি দ্বারা মূলত বোঝানো হয়েছে,See , The Arabic Hegemony, p. 229: "It is not certain just what the terms al-jabr and muqabalah mean, but the usual interpretation is similar to that implied in the translation above. The word al-jabr presumably meant something like "restoration" or "completion" and seems to refer to the transposition of subtracted terms to the other side of an equation; the word muqabalah is said to refer to "reduction" or "balancing" – that is, the cancellation of like terms on opposite sides of the equation". এবং তিনি দ্বিঘাত সমীকরণগুলি সমাধান করার একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন,See , The Arabic Hegemony, p. 230: "The six cases of equations given above exhaust all possibilities for linear and quadratic equations having positive root. So systematic and exhaustive was al-Khwarizmi's exposition that his readers must have had little difficulty in mastering the solutions". এছাড়া তাঁর বীজগণিত আর মাথাব্যথার কারণ ছিল না " সমস্যার একটি সিরিজ পুনঃমীমাংসা করার সাথে , কিন্তু একটি বর্ণনামূলক বর্ণনা যা আদি পদের সমন্বয়ে গঠিত হয়,যেখানে সকল বিন্যাস সমীকরণ গঠনের জন্য সকল নিয়ম কানুন অবশ্যই দিবে,যা অতঃপর স্পষ্টভাবে অধ্যয়নের সত্য বস্তু গঠন করে"। তিনি একটি সমীকরণের স্বার্থে সমীকরণটি অধ্যয়নও করেছিলেন এবং "সাধারণ পদ্ধতিতে, কারণ এটি কোনও সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে কেবল উত্থিত হয় না, তবে এটি একটি অসীম শ্রেণীর সমস্যার সংজ্ঞা দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে কাজে আসে"।
অপর ফার্সি গণিতবিদ ওমর খৈয়ামকে বীজগাণিতিক জ্যামিতির ভিত্তি শনাক্ত করার জন্য সম্মানিত করা হয় এবং তিনি ঘন সমীকরণের সাধারণ জ্যামিতিক সমাধান আবিষ্কার করেছিলেন।তাঁর গ্রন্থ ট্রিটাইজ অন ডেমোনস্টেশনস অফ প্রবলেমস অফ অ্যালজেবরা (১০৭০)এ বীজগণিতের নীতিমালা রচনা করেন, যা ফার্সি গণিতের অংশ যা শেষ পর্যন্ত ইউরোপে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তবুও আরেক ফার্সি গণিতবিদ শারাফ আল দিন আল তুসি ঘন সমীকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বীজগাণিতিক এবং সংখ্যাসূচক সমাধান খুঁজে পেয়েছিলেন । তিনি একটি ফাংশনের ধারণাও বিকাশ করেছিলেন।ভারতীয় গণিতবিদ মহাবীর এবং দ্বিতীয় ভাস্কর ফারসি গণিতবিদ আল-কারাজি,See , The Arabic Hegemony, p. 239: "Abu'l Wefa was a capable algebraist as well as a trigonometer. ... His successor al-Karkhi evidently used this translation to become an Arabic disciple of Diophantus – but without Diophantine analysis! ... In particular, to al-Karkhi is attributed the first numerical solution of equations of the form ax2n + bxn = c (only equations with positive roots were considered)," এবং চীনা গণিতবিদ চু শি-চিয়ে, ঘনের বিভিন্ন ঘটনা সমাধান , দ্বিঘাত সমীকরণ, কুইন্টিক এবং উচ্চতর-পর্যায়ের বহুপদী সমীকরণ সমাধানের জন্য সংখ্যাগত একটা পদ্ধতি ব্যবহার করেন।১৩তম শতকে, একটি ঘন সমীকরণ গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি দ্বারা সমাধান ইউরোপীয় বীজগণিতে রেনেসাঁ শুরুর একটি প্রতিনিধি। আবু আল-আসান ইবন আলি-আল-কালাসাদি (১৪১২-১৪৮৬) "বীজগণিতে প্রতীকবাদের প্রবর্তনের দিকে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন"।তিনি ∑ n 2, ∑ n 3 গণনা করেছিলেন এবং বর্গমূল নির্ধারণের জন্য ক্রমাগত আনুমানিক পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছিলেন।
বীজগণিতের আধুনিক ইতিহাস
thumb|upright=0.8|ইতালিয়ান গণিতবিদ জিরোলামো কার্দানো ১৫৪৫ সালে রচিত তাঁর গ্রন্থ আরস ম্যাগনা-তে ঘন এবং দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান প্রকাশ করেছিলেন।১৬শ শতাব্দীর শেষের দিকে নতুন বীজগণিত নিয়ে ফ্রান্সোইস ভিয়েটের কাজ আধুনিক বীজগণিতের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। ১৬৩৭ সালে, র্যনে দেকার্ত স্থানাঙ্ক জ্যামিতি আবিষ্কার করেন এবং আধুনিক বীজগাণিতিক চিহ্ন প্রবর্তন করে লা জিওম্যাট্রি প্রকাশ করেছিলেন।বীজগণিতের আরও বিকাশের আরেকটি মূল ঘটনা হল ঘন এবং দ্বিঘাত সমীকরণগুলির সাধারণ বীজগাণিতিক সমাধান,যা ১৬তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিকশিত হয়েছিল।নির্ণায়কের ধারণাটি ১৭তম শতাব্দীতে জাপানি গণিতবিদ সেকি কোওয়া বিকাশ করেছিলেন এবং ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে এক সাথে রৈখিক সমীকরণের সিস্টেমগুলি সমাধানের উদ্দেশ্যে দশ বছর পরে গটফ্রাইড লাইবনিজ স্বাধীনভাবে তার অনুসরণ করেছিলেন। জোসেফ-লুই ল্যাঞ্জরেজ বিন্যাস অধ্যয়ন করেছিলেন,তিনি তার ১৭৭০-এর গবেষণাপত্র " রেফ্লেকশনস সুর লা রিসুলিউশন অ্যালজেব্রিক ডেস অ্যাকুয়েশনস বাংলায় "বীজগাণিতিক সমীকরণ সমাধানের জন্য নিবেদিত" যেখানে তিনি ল্যাঞ্জরেজ রেসলভেন্টস প্রবর্তন করেছিলেন।পাওলো রুফিনি প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি বিন্যাসের গ্রুপ তত্ত্বটি বিকাশ করেছিলেন এবং তাঁর পূর্বসূরীদের মতো বীজগণিত সমীকরণ সমাধানের প্রসঙ্গেও তিনি অবদান রেখেছিলেন।
সমীকরণ সমাধানে আগ্রহ , প্রাথমিকভাবে গ্যালোয়া তত্ত্ব এবং গঠনমূলক বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার কারণে ১৯তম শতাব্দীতে বিমূর্ত বীজগণিত উন্নতি সাধন করেছিল। "The Origins of Abstract Algebra ". University of Hawaii Mathematics Department. জর্জ পিইকক্ গণিত এবং বীজগণিত মধ্যে অচলিত চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। অগাস্টাস ডি মরগান তার প্রস্তাবিত যুক্তির সিস্টেমে রিলেশনাল বীজগণিত আবিষ্কার করেছিলেন। জোসিয়াহ উইলার্ড গিবস ত্রি-মাত্রিক স্থানের ভেক্টরগুলির একটি বীজগণিত বিকাশ করেছিলেন এবং আর্থার কেলি ম্যাট্রিক্সের একটি বীজগণিত বিকাশ করেছিলেন (এটি একটি অনিয়মিত বীজগণিত)।
বীজগণিত শব্দটিসহ গণিতের ক্ষেত্রসমূহ
গণিতের কিছু ক্ষেত্র যা বিমূর্ত বীজগণিতের শ্রেণিবিন্যাসের আওতায় আসে তাদের নামে বীজগণিত শব্দটি রয়েছে; রৈখিক বীজগণিত এর একটি উদাহরণ। অন্যদের নামে অবশ্য বীজগণিত শব্দটি নেই : গ্রুপ তত্ত্ব, রিং তত্ত্ব এবং ক্ষেত্র তত্ত্ব তার উদাহরণ। এই বিভাগে, আমরা গণিতের কিছু ক্ষেত্র তালিকাভুক্ত করেছি যাদের নামের সাথে "বীজগণিত" শব্দটি রয়েছে ।
প্রাথমিক বীজগণিত, বীজগণিতের অংশ যা সাধারণত গণিতের প্রাথমিক পাঠ্যক্রমগুলিতে শেখানো হয়।
বিমূর্ত বীজগণিত, যার মধ্যে গ্রুপ, রিং এবং ক্ষেত্রের মতো বীজগণিত কাঠামো স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থায় সংজ্ঞায়িত এবং গবেষণা করা হয়।
রৈখিক বীজগণিত, যেখানে রৈখিক সমীকরণের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, ভেক্টর স্পেস এবং ম্যাট্রিক্স অধ্যয়ন করা হয়।
বুলিয়ান বীজগণিত, বীজগণিত একটি শাখা সত্য মান মিথ্যা এবং সত্য এর দ্বারা সংক্ষিপ্ত হিসাব করে ।
বিনিময় বীজগণিত, বিনিময় রিংগুলির অধ্যয়ন।
কম্পিউটার বীজগণিত , অ্যালগরিদম এবং কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসাবে বীজগাণিতিক পদ্ধতিসমূহের প্রয়োগ।
হোমোলজিকাল বীজগণিত, বীজগণিত কাঠামোর অধ্যয়ন যা টপোলজিকাল স্পেসগুলি অধ্যয়নের জন্য মৌলিক।
সর্বজনীন বীজগণিত, যেখানে সমস্ত বীজগণিত কাঠামোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য অধ্যয়ন করা হয়।
বীজগণিত সংখ্যা তত্ত্ব, যেখানে সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলি বীজগাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়।
বীজগাণিতিক জ্যামিতি, জ্যামিতির একটি শাখা, এর আদি আকারে বক্ররেখা এবং পৃষ্ঠতলকে বীজগাণিতিক সমীকরণের সমাধানের সাথে সম্পৃক্ত করে।
বীজগণিত সম্মিলন, যেখানে সংযুক্তি প্রশ্নগুলি অধ্যয়নের জন্য বীজগণিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
রিলেশনাল বীজগণিত : অন্বয়ের একটি সেট যা নির্দিষ্ট অপারেটরের অধীনে বন্ধ থাকে
অনেক গাণিতিক কাঠামোকে বীজগণিত বলা হয়:
একটি ক্ষেত্রের উপরে বীজগণিত বা আরও সাধারণতভাবে একটি রিংয়ের উপরে বীজগণিত
ক্ষেত্র বা রিংয়ের মধ্যে বীজগণিতগুলির অনেক শ্রেণীর একটি নির্দিষ্ট নাম থাকে:
সহযোগী বীজগণিত
অ-সহযোগী বীজগণিত
মিথ্যা বীজগণিত
হফ বীজগণিত
সি * -বীজগণিত
প্রতিসম বীজগণিত
বাহ্যিক বীজগণিত
টেনসর বীজগণিত
পরিমাপ তত্ত্ব ,
সিগমা-বীজগণিত
একটি সেটের উপর বীজগণিত
বিভাগ তত্ত্বে
এফ-বীজগণিত এবং এফ-সহযোগী বীজগণিত
টি-বীজগণিত
যুক্তিবিদ্যায় ,
রিলেশন বীজগণিত, একটি অবশিষ্ট বুলিয়ান বীজগণিত যেটি কনভার্স নামে পরিচিতি লাভ করে প্রসারিত হয়েছিল।
বুলিয়ান বীজগণিত, একটি পরিপূরক বিতরণ কাঠামো
হেইটিং বীজগণিত
প্রাথমিক বীজগণিত
thumb|right|বীজগাণিতিক সমীকরণের চিহ্নসমূহ : 1 – ঘাত (সূচক) 2 – সহগ 3 – পদ 4 – প্রক্রিয়া চিহ্ন 5 – ধ্রুবক পদ x y c – চলক/ধ্রুবক
প্রাথমিক বীজগণিত বীজগণিতের সর্বাধিক প্রাথমিক রূপ।এটা ঐ সকল ছাত্রদের শেখানো হয় যাদের পাটিগণিতের সাধারণ নীতিসমূহের বাইরে গণিতের কোন ধারণা নেই। পাটিগণিতে , কেবলমাত্র সংখ্যা এবং পাটিগণিত সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চিহ্ন (যেমন +, −, ×, ÷) ব্যবহার করা হয়ে থাকে । বীজগণিতে , সংখ্যা অনেক সময় চলক এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় (যেমন a, n, x, y অথবা z)। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ :
এটি পাটিগণিতের সূত্রসমূহের সাধারণ সূত্রে পরিণত করতে সাহায্য করে (যেমনঃ a + b = b + a;যা সকল a এবং b এর জন্য সত্য ) এবং বাস্তব সংখ্যার সিস্টেমের ধর্ম সমূহের পর্যায়ক্রমিক আবিষ্কারের এটি প্রথম পদক্ষেপ ছিল।
এটি "অজানা" সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা , সমীকরণের সূচনা এবং এগুলি কীভাবে সমাধান করা যাবে; সে বিষয়ে অধ্যয়নের অনুমতি দেয়। (উদাহরণস্বরূপ, "একটি সংখ্যা x বের কর, যাতে 3x + 1 = 10 হয়"। অথবা, আরও কিছুটা এগিয়ে "একটি সংখ্যা x বের কর যাতে ax + b =c হয় " । এটি আমাদের এই সিদ্ধান্তে নিয়ে যায় যে, নির্দিষ্ট সংখ্যার প্রকৃতির নয়, যা আমাদের সমীকরণটি সমাধান করতে দেয়। বরং এক্ষেত্রে সমীকরণ এর অন্তর্ভুক্ত অপারেশনগুলিই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে ।
এটি ফাংশনসম্পর্কিত সম্পর্ক গঠন করতে অনুমতি দেয়। (উদাহরণস্বরূপ , "যদি তুমি x টিকিট বিক্রি করো , তবে তোমার মুনাফা হবে 3x − 10 টাকা , অথবা f(x) = 3x − 10, সেখানে f হল ফাংশন , এবং x হল ঐ সংখ্যা যার উপর ফাংশনটি কাজ করছে। ")
বহুপদী
একটি ত্রিঘাত বিশিষ্ট বহুপদী ফাংশনের লেখচিত্র |thumb|upright=0.8
একটি বহুপদী হলো এমন একটি রাশি যা সসীম সংখ্যক অশূন্য পদের যোগফল , যেখানে প্রত্যেক পদ ধ্রুবক এবং পূর্ণসাংখ্যিক ঘাতে উন্নত সসীম সংখ্যক চলকের গুণফল ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ , x2 + 2x − 3;একটি x চলকবিশিষ্ট বহুপদী। একটি বহুপদী রাশি হলো এমন একটি রাশি যাকে বিনিময় বিধি ,সংযোজন বিধি ,যোগ এবং গুণের বণ্টন বিধি দ্বারা বহুপদী হিসেবে পুনরায় লেখা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, (x− 1)(x + 3) হলো একটি বহুপদী রাশি।আসলে, সঠিকভাবে বলতে গেলে , এটি কিন্তু বহুপদী রাশি না। একটি বহুপদী ফাংশন হল এমন একটি ফাংশন যা বহুপদী , অথবা , একইভাবে , একটি বহুপদী রাশি দ্বারা সংজ্ঞায়িত। পূর্ববর্তী দুটি উদাহরণ একই বহুপদী ফাংশনকে সংজ্ঞায়িত করে।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পর্কিত বীজগাণিতিক সমস্যা হল বহুপদীর উৎপাদকে বিশ্লেষণ ,যাতে কোন বহুপদীকে অপর এক বা একাধিক বহুপদীর গুণফল আকারে প্রকাশ করা হয়,যাদের আর উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যাবে না , এবং বহুপদীর গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয়। উপরে উদাহরণে বর্ণিত বহুপদীটিকে (x − 1)(x + 3) আকারে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। একই ধরনের সম্পর্কিত একটি সমস্যা হল এক চলকবিশিষ্ট বহুপদীর বর্গমূলের জন্য বীজগাণিতিক রাশি নির্ণয় করা।
বিমূর্ত বীজগণিতবিমূর্ত বীজগণিত প্রাথমিক বীজগণিতে প্রাপ্ত পরিচিত ধারণাসমূহ এবং সংখ্যার পাটিগণিতকে সাধারণ ধারণায় আরও বিস্তৃত করে । নিম্নে বিমূর্ত বীজগণিতের মৌলিক ধারণাসমূহ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
সেট: কেবলমাত্র বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা বিবেচনা করার পরিবর্তে , বিমূর্ত বীজগণিত সেটের আরও সাধারণ ধারণা নিয়ে কাজ করে সেট : সকল বস্তুসমূহের একটি সংগ্রহ (যাদের উপাদান নামে ডাকা হয়)যা সেটের জন্য নির্দিষ্ট করা শর্তের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হয়।একই জাতীয় সকল সংখ্যাসমূহের সংগ্রহই হলো সেট। সেটের অন্যান্য উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে সকল ২×২ আকারের ম্যাট্রিক্স ,সকল দ্বিঘাত বিশিষ্ট বহুপদী (ax2 + bx + c) এর সেট ,একই সমতলে অবস্থিত সকল দুই মাত্রার ভেক্টরসমূহের সেট এবং বৃত্তাকার গ্রুপের মতো বিভিন্ন ধরনের সসীম গ্রুপ , যা পূর্ণসংখ্যার মডুলার n এর গ্রুপ। সেট তত্ত্ব যুক্তিবিদ্যার একটি শাখা এবং প্রায়োগিকভাবে বলতে গেলে এটি বীজগণিতের শাখা নয়।বাইনারি অপারেশন :বাইনারি যোগ এর জন্য বলতে গেলে ∗, যোগের ধারণাটি আলাদা করে তুলে আনা হয়েছে। যে সেটের উপর অপারেশনটি সংজ্ঞায়িত তাছাড়া বাইনারি যোগের ধারণা অর্থহীন। S সেটের দুটি উপাদান a এবং b এর জন্য , a ∗ b সেটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আরেকটি উপাদান ; এই শর্তটিকে বলা হয় আবদ্ধকরণ। যোগ (+), বিয়োগ (−), গুণ (×), ভাগ বায়োনারি অপারেশন হতে পারে যদি তা বিভিন্ন সিটের উপর সংজ্ঞায়িত করা হয় ,যেমনঃ ম্যাট্রিক্স, ভেক্টর, বহুপদীর যোগ এবং গুনের মতো।অভেদক উপাদান :কোন অপারেশনে অভেদক উপাদানের ধারণা দেওয়ার জন্য ০ এবং ১ কে পৃথক করা হয়েছে। ০ যোগের জন্য অভেদক উপাদান এবং ১ গুণের জন্য অভেদক উপাদান। একটি সাধারণ বাইনারি অপারেটর ∗ এর জন্য অভেদক উপাদানটি হল e যা অবশ্যই a ∗ e = a এবং e ∗ a = a,এবং যদি এর অস্তিত্ব থাকে,তবে অবশ্যই এটিকে অনন্য হতে হবে। এটি যোগের জন্য এভাবে কাজ করে a + 0 = a এবং 0 + a = a এবং গুণের জন্য এভাবে a × 1 = a এবং 1 × a = a ।সকল সেট এবং অপারেটরসমূহের সমাবেশের অভেদক উপাদান থাকে না ; উদাহরণস্বরূপ , স্বাভাবিক ধনাত্মক সংখ্যার সেটটি হলো (1, 2, 3, ...) যার যোগের জন্য কোন অভেদক উপাদান নেই।বিপরীত্মক উপাদান :ঋণাত্মক সংখ্যা প্রথম বিপরীত্মক উপাদান এর ধারণাটি তুলে ধরে।. যোগের জন্য , a এর বিপরীত্মককে লেখা হয় −a, এবং গুণাত্মক বিপরীত্মককে লেখা হয় a−1। a−1একটি সাধারণ উভধর্মী বিপরীত্মক উপাদান ,যা a ∗ a−1 = e এবং a−1 ∗ a = e এই ধর্মটিকে সমর্থন করে, যেখানে e একটি অভেদক উপাদান।সহযোজন বিধি :পূর্ণসংখ্যার যোগফলের একটি ধর্ম রয়েছে একে সহযোজন বিধি বলে।এটিতে মূলত,সংখ্যাসমূহের গ্রুপ করা হয় যাতে যোগফলের মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। উদাহরণস্বরূপ : । সাধারণ অর্থে , (a ∗ b) ∗ c = a ∗ (b ∗ c) হয়ে থাকে।এই ধর্মটি অধিকাংশ বাইনারি অপারেশনে ব্যবহার করা হয়,কিন্তু বিয়োগ অথবা ভাগ অথবা অক্টোনিয়ান গুণ বাইনারি অপারেশনে ব্যবহার করা হয় না।
বিনিময় বিধি: বাস্তব সংখ্যার যোগ এবং গুণ উভয়ই বিনিময়যোগ্য। এক্ষেত্রে , সংখ্যার অবস্থানের ক্রম ফলাফলকে প্রভাবিত করে না। উদাহরণস্বরূপ : 2 + 3 = 3 + 2. সাধারণ অর্থে , a ∗ b = b ∗ aহয়ে থাকে। এই ধর্মটি সকল বাইনারি অপারেশনের জন্য কাজ করে না। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাট্রিক্স গুণ এবং কোয়াটারনিয়ন গুণ উভয়ই অ-বিনিময়যোগ্য।
গ্রুপ
উপর্যুক্ত ধারণাসমূহকে একত্রিত করে গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো গঠিত হয় : a গ্রুপ।একটা গ্রুপ হলো একটি সেট S এবং একটি বাইনারি অপারেটর ∗ এর সমাবেশ , তুমি যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করো না কেন , কিন্তু নিম্নোক্ত ধর্মসমূহ তার মধ্যে থাকতে হবে :
একটি অভেদক উপাদান e এর অস্তিত্ব রয়েছে , যেন S এর অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক সদস্য a এর জন্য , e ∗ a এবং a ∗ e উভয়ই a এর প্রতি অভিন্ন হয় ।
প্রত্যেক উপাদানের একটি বিপরীত্মক রয়েছে : S এর অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক সদস্য a এর জন্য, একটি সংখ্যা a−1 রয়েছে; যেন a ∗ a−1 এবং a−1 ∗ a উভয়ই অভেদক উপাদানের প্রতি অভিন্ন।
সংযোজন বিধি : যদি a, b এবং c ;S সেটের সদস্য হয়ে থাকে। তবে (a ∗ b) ∗ c এবং a ∗ (b ∗ c) অভিন্ন।
যদি একটি গ্রুপও বিনিময়যোগ্য হয় – যাতে, S এর অন্তর্ভুক্ত যেকোনো দুটি উপাদান a এবং b এর জন্য , a ∗ b এবং b ∗ a অভিন্ন হলে –এই গ্রুপটিকে বলা হবে আবেলিয়ান
উদাহরণস্বরূপ, যোগ অপারেশনের অধীনে সকল পূর্ণ সংখ্যার সেট একটি গ্রুপ। এই গ্রুপটিতে ,
অভেদক উপাদানটি হলো 0 এবং যেকোনো উপাদান a এর বিপরীত্মক হলো এর ঋণাত্মক , −a। সহযোজন বিধিটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে ,কারণ যেকোন পূর্ণ সংখ্যা a, b এবং cএর জন্য, (a + b) + c = a + (b + c)
অশূন্য মূলদ সংখ্যা গুনের অধীনে একটি গ্রুপ তৈরি করে। এখানে , 1 হল অভেদক উপাদান , যেহেতু যেকোনো মূলদ সংখ্যা a এর জন্য 1 × a = a × 1 = a। a এর বিপরীত্মক হলো 1/a, যেহেতু a × 1/a = 1.
যদিও, পূর্ণসংখ্যা গুন অপারেশনের অধীনে গ্রুপ তৈরি করে না। এটা এ কারণে যে,সাধারণত ,একটি পূর্ণসংখ্যার গুণাত্মক বিপরীত্মক পূর্ণসংখ্যা হয় না। উদাহরণস্বরূপ , 4 একটি পূর্ণ সংখ্যা , কিন্তু এর গুণাত্মক বিপরীত্মক সংখ্যা হলো ¼, যা পূর্ণসংখ্যা নয়।
গ্রুপ তত্ত্বে গ্রুপ সমূহের তথ্য নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। সসীম সাধারণ গ্রপসমূহের শ্রেণিবিভাগ হচ্ছে এ তত্ত্বের একটি বড় ফলাফল , যার অধিকাংশ ১৯৫৫ এবং ১৯৮৩ এর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল ,যা সসীম সাধারণ গ্রুপকে আপাতত ৩০টি মূল ধরনে বিভক্ত করে।
অর্ধ-গ্রুপ , কোয়াসি-গ্রুপ, এবং মনোয়েড এর গঠন কাঠামো গ্রুপের মত , তবে আরও সাধারণ ধরনের।এরা সেট এবং একটি বদ্ধ বাইনারি অপারেশন গঠন করে কিন্তু অন্যান্য শর্তগুলো প্রয়োজনমতো পূরণ করে না। একটি অর্ধ-গ্রুপের একটি সহযোজন বাইনারি অপারেশন রয়েছে কিন্তু এটির অভেদক উপাদান নাও থাকতে পারে। একটি মনোয়েড হলো একটি অর্ধ-গ্রুপ যার একটি অভেদক রয়েছে কিন্তু প্রত্যেক উপাদানের জন্য বিপরীত্মক নাও থাকতে পারে। একটি কোয়াসি-গ্রুপ একটি প্রয়োজন পূরণ করে, যাতে একটি উপাদানকে ওপর আরেকটি উপাদানে হয় অনন্য বাম-গুণ অথবা ডান-গুণ দ্বারা পরিণত করা যেতে পারে। ; যদিও , বাইনারি অপারেশনটি সহযোজন যোগ্য নাও হতে পারে।
সকল গ্রুপগুলো হলো মনোয়েড এবং সকল মনোয়েড হলো অর্ধ-গ্রুপ।
+উদাহরণ সেটস্বাভাবিক সংখ্যা Nপূর্ণসংখ্যা Zমূলদ সংখ্যা Q (আরও বাস্তব সংখ্যা R এবং জটিল সংখ্যা C )পূর্ণসংখ্যা মডুলিয়ান 3: Z3 = {0, 1, 2}অপারেশন + × (w/o শূন্য ) + × (w/o শূন্য) + − × (w/o শূন্য) ÷ (w/o শূন্য) + × (w/o শূন্য)বদ্ধ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ অভেদক 0 1 0 1 0 N/A 1 N/A 0 1 বিপরীত্মক N/A N/A −a N/A −a N/A 1/a N/Aযথাক্রমে, 0, 2, 1 যথাক্রমে, N/A, 1, 2 সহযোজনযোগ্য হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ না হ্যাঁ না হ্যাঁ হ্যাঁ বিনিময়যোগ্য হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ না হ্যাঁ না হ্যাঁ হ্যাঁ গঠন মনোয়েড মনোয়েড আলেবিয়ান গ্রুপ মনোয়েড আলেবিয়ান গ্রুপ কোয়াসি-গ্রুপ আলেবিয়ান গ্রুপ কোয়াসি-গ্রুপ আলেবিয়ান গ্রুপ আলেবিয়ান গ্রুপ (Z2)
রিং এবং ক্ষেত্র
গ্রুপ সমূহের কেবল একটি মাত্র বাইনারি অপারেশন রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা এবং কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যার জন্য দুটি অপারেটর সম্পর্কে অধ্যয়ন করা একান্ত প্রয়োজন। এই তত্ত্বসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি তত্ত্ব হলো রিং তত্ত্ব এবং ক্ষেত্র তত্ত্ব।
একটি রিংয়ের দুটি বাইনারি অপারেটর (+) এবং (×) রয়েছে। যেখানে, × , + এর সাথে বণ্টনযোগ্য। প্রথম অপারেটর (+) এর অধীনে এটি আবেলিয়ান গ্রুপ গঠন করে। দ্বিতীয় অপারেটর (×) এর অধীনে এটি সংযোজনযোগ্য , কিন্তু এটির অভেদক অথবা বিপরীত্বক থাকার কোন দরকার নেই , সুতরাং ভাগের কোন দরকার নেই। যোগাত্মক(+) অভেদক উপাদানটিকে লেখা হয় 0 এবং a এর যোগাত্মক বিপরীত্বককে লেখা হয় −a।বণ্টনযোগ্যতা বণ্টন সূত্রকে সংখ্যার জন্য সাধারণ করে। পূর্ণসংখ্যার জন্য এবং এবং × কে + এর সাথে বণ্টনযোগ্য বলা হয়ে থাকে।
পূর্ণসংখ্যাসমূহ রিং এর একটি উদাহরণ। পূর্ণসংখ্যাসমূহের একটি অতিরিক্ত ধর্ম রয়েছে যা তাকে পূর্ণসাংখ্যিক ডোমেইন এ পরিণত করেছে।
একটি ক্ষেত্র''' হল অতিরিক্ত ধর্মসহ একটি রিং যাতে 0 বাদে সকল উপাদান × এর অধীনে একটি আবেলিয়ান গ্রুপ গঠন করে । a এর গুণাত্বক (×) অভেদককে লেখা হয় 1 এবং a এর গুণাত্বক বিপরীত্বককে লেখা হয় a''−1।
মূলদ সংখ্যাসমূহ , বাস্তব সংখ্যাসমূহ এবং জটিল সংখ্যাসমূহ সবই ক্ষেত্র(ফিল্ড) এর উদাহরণ।
বহিঃসংযোগ
খান একাডেমি: ধারণামূলক ভিডিও এবং কাজের উদাহরণ
খান একাডেমি: বীজগণিতের উৎপত্তি , বিনামূল্যে অনলাইন ক্ষুদ্র লেকচার
অ্যালজেবরা রুলস ডটকম: বীজগণিতের মৌলিক বিষয়গুলি শেখার জন্য একটি মুক্ত উৎস
বীজগণিতের ৪০০০ বছর,গ্রিশাম কলেজে, রবিন উইলসনের বক্তৃতা, অক্টোবর ১৭, ২০০৭ (এমপি৩ এবং এমপি৪ ডাউনলোডের জন্য উপলব্ধ, পাশাপাশি একটি টেক্সট ফাইল হিসেবেও)।
আরও দেখুন
বীজগণিতের রূপরেখা
রৈখিক বীজগণিতের রূপরেখা
বীজগাণিতিক টাইল
সেট
বহুপদী
বহুপদী সমীকরণ
দ্বিপদী উপপাদ্য
আরও পড়ুন
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:গণিত
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
পাটিগণিত | https://bn.wikipedia.org/wiki/পাটিগণিত | thumb|১৮৩৫ সালে সুইজারল্যান্ডের লোজান থেকে প্রকাশিত শিশুদের জন্য পাটিগণিতের একটি বই।
পাটিগণিত হচ্ছে গণিতের অন্যতম প্রাচীন একটি শাখা যা সংখ্যা সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়ে, বিশেষকরে সংখ্যার যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, সূচকীকরণ ও মূল নির্ণয়ের প্রথাগত গাণিতিক প্রক্রিয়াসমূহের গুণাবলীর সাথে জড়িত জ্ঞানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এটি গণিতের সেই শাখা যেখানে গণনা সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ও অন্যান্য গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি সম্পাদন করা হয়। পাটিগণিত হলো সংখ্যাতত্ত্বের একটি মৌলিক অংশ, আর বীজগণিত, জ্যামিতি ও বিশ্লেষণী গণিতের সাথে সংখ্যাতত্ত্বকেও আধুনিক গণিতের শীর্ষ-পর্যায়ের শাখাগুলোর একটি গণ্য করা হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর আগ পর্যন্ত arithmetic (পাটিগণিত) এবং higher arithmetic (উচ্চতর পাটিগণিত) পরিভাষা দুটি সংখ্যাতত্ত্ব-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি অদ্যাবধি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যাতত্ত্বের একটি বিস্তৃত অংশকে বোঝাতে এই পরিভাষা দুটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।Davenport, Harold, The Higher Arithmetic: An Introduction to the Theory of Numbers (7th ed.), Cambridge University Press, Cambridge, 1999, .
পরিভাষা
পাটিগণিতে পাটি (√পট্+ই) শব্দটি সংখ্যা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পাটিগণিত শব্দটি ইংরেজি Arithmetic এর বাংলা পারিভাষিক শব্দরূপে স্বীকৃত। Arithmetic শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক ভাষার ἀριθμός (arithmos) ও τική [τέχνη] (tiké [téchne]) থেকে, যেগুলোর অর্থ যথাক্রমে সংখ্যা, শিল্পকলা ও শিল্পকর্ম (craft)।
এই নিবন্ধে গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য যেসব পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে:
Arithmetic operations বা operations — গাণিতিক ক্রিয়া বা পাটিগাণিতিক ক্রিয়া বা গাণিতিক প্রক্রিয়া
Positional notation — স্থানিক অঙ্কপাতন
Place-value — স্থানীয় মান
Single unit — অনন্য বা অভগ্ন একক
Compound unit — সংযুক্ত বা ভগ্ন একক
Normalization — আদর্শীকরণ
On-going normalization method — চলমান আদর্শীকরণ পদ্ধতি
উৎপত্তি
পাটীগণিত গণিতের একটি শাখা। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ নানান রকমের হিসাব-নিকাশ করেছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে । পাটীগণিত সেসব পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন কালের অনেক মণীষী পাটিগণিতের উৎকর্ষ সাধন করে। তাদের মধ্যে পিথাগোরাস, গ্যালিলিও, মহাবীর, রামানুজম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
ইতিহাস
পাটিগণিতের প্রাক-ইতিহাস কেবল অল্প সংখ্যক নিদর্শনের মধ্যেই পাওয়া যায়। মধ্য আফ্রিকার কঙ্গোয় আবিষ্কৃত সর্বাধিক পরিচিত ইশাংগো হাড় হলো সেই প্রাক-ইতিহাসের একটি প্রমাণ। ২০,০০০ থেকে ১৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই নিদর্শনটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এটা সেই সময়ের যোগ ও বিয়োগের ধারণাকে ইঙ্গিত দেয়।
প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুর দিকে
মিশরীয় ও ব্যাবিলীয়রা যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ এই মৌলিক পাটিগাণিতিক প্রক্রিয়াগুলোর সবগুলোই যে ব্যবহার করত, সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত নথিগুলো থেকে সেটারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সমস্যা সমাধানে ঠিক কোন কোন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হতো তা এই নিদর্শনগুলো থেকে সব সময় উদঘাটন করা না গেলেও, এসব পদ্ধতির জটিলতা বা দুর্বোধ্যতাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে যে স্বতন্ত্র সংখ্যাপদ্ধতি সেটার বৈশিষ্ট্যগুলো এসব নিদর্শন থেকে উন্মোচিত হয়। মিশরীয় সংখ্যাব্যবস্থায় ব্যবহৃত হায়ারোগ্লিফিক পদ্ধতি পরবর্তী যুগের রোমান সংখ্যার মতোই গণনার কাজে ব্যবহৃত টালি চিহ্নের উত্তরসূরী। উভয় ক্ষেত্রেই আদি এই সংখ্যাগুলোর মান এমনভাবে বের করা হতো যেগুলোতে একটি "দশমিক ভিত্তি" ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে এই সংখ্যা ব্যবস্থা দুটির কোনটিতেই অঙ্কের অবস্থানভিত্তিক ব্যবস্থা তথা স্থানিক অঙ্কপাতনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রোমান সংখ্যা দিয়ে জটিল গণনাগুলোর ফলাফল বের করতে গেলে একটি কাউন্টিং বোর্ডের বা রোমান অ্যাবাকাসের সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন হতো।
আবার, প্রাচীন যে সংখ্যাপদ্ধতিগুলোতে স্থানিক অঙ্কপাতনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সেগুলো দশমিক পদ্ধতির (দশভিত্তিক) ছিল না। যেমন: ব্যাবীলনীয় সংখ্যা ছিল ষষ্টিক (ষাটভিত্তিক) এবং মায়া সংখ্যা ছিল বিংশীয় (বিশ-ভিত্তিক)। স্থানীয় মানের এই ধারণার ফলস্বরূপ, ভিন্ন ভিন্ন মানের জন্য একই অঙ্কের পুনর্ব্যবহারযোগ্যতার বিষয়টি গণনার জন্য সরলতর ও আরও কার্যকর পদ্ধতিগুলোর ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পেরেছে।
আধুনিক পাটিগণিতের উৎপত্তি ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয় নজিরগুলোর অনেক পরে হলেও এর চলমান ঐতিহাসিক উন্নয়ন শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসের হেলেনিস্টিক সভ্যতার যাত্রার সাথে। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইউক্লিড যে কাজগুলো করেছিলেন তার সেই কাজগুলোর পূর্ববর্তী সময়ে গ্রিক গণিতের যে শাখাগুলো ছিল সেগুলো দার্শনিক এবং অতীন্দ্রিয় বিশ্বাসের সাথে মিশে গিয়েছিল। যেমন: সংখ্যার ব্যাপারে প্রাচীন পিথাগোরাসীয় চিন্তাধারার কী দৃষ্টিভঙ্গি, সেইসঙ্গে এই দৃষ্টিভঙ্গি ও সংখ্যার পারস্পরিক সম্পর্কসমূহ নিকোমাকোস তার অ্যারিথমিতিকি ইসাগোইয়ি-তে (পাটিগণিতের সাথে পরিচয়) সংক্ষিপ্ত আকারে বিবৃত করে গেছেন।
আর্কিমিডিস, ডিওফ্যান্টাস এবং অন্যান্য পণ্ডিতগণ যে স্থানিক অঙ্কপাতনে গ্রিক সংখ্যাসমূহ প্রয়োগ করেছিলেন, সেটি আধুনিক অঙ্কপাতনের তুলনায় খুব বেশি ভিন্ন ছিল না। হেলেনিস্টিক সভ্যতার আবির্ভাবের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত প্রাচীন গ্রীকরা শূন্যের জন্য প্রয়োজনীয় একটি প্রতীকের অভাবে ভুগেছিল। সে সময় সংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্ক হিসেবে তারা পরস্পর আলাদা তিন সেট প্রতীক ব্যবহার করতো: প্রতীকের এই গুচ্ছ তিনটির একটি ব্যবহার করা হতো একক স্থানের জন্য, আরেকটি ব্যবহার করা হতো দশক স্থানের জন্য এবং অবশিষ্ট গুচ্ছটি শতকের জন্য। সহস্রের ঘরের জন্য তারা একক স্থানের প্রতীকগুলো পুনরায় ব্যবহার করত এবং অন্যান্য ঘরের ক্ষেত্রে তারা একইভাবে কাজ চালাত। যোগের জন্য তারা যে অ্যালগরিদম ব্যবহার করত, তা আধুনিক পদ্ধতির মতই ছিল। আর তাদের ব্যবহৃত গুণের অ্যালগরিদমে কেবল সামান্য পার্থক্যই ছিল। ভাগের জন্য তারা যে দীর্ঘ অ্যালগরিদম ব্যবহার করত সেটাও ছিল একই ধরনের। বর্গমূল নির্ণয়ে অঙ্ক ধরে ধরে (Digit by digit calculation) যে গণনা পদ্ধতি, যা বিংশ শতাব্দীর মতো সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জনপ্রিয়, সেই নিয়মটি আর্কিমিডিস জানতেন এবং সম্ভবত তিনি এর আবিষ্কারকও ছিলেন। বর্গমূল নির্ণয়ের ধারাবাহিক আসন্নায়ন নিয়মটি যা হিরনের নিয়ম বা ব্যাবিলনীয় নিয়ম নামে পরিচিত সেটি অপেক্ষা অঙ্ক ধরে ধরে বর্গমূল বের করার নিয়মটিই আর্কিমিডিসের নিকট অধিক পছন্দের ছিল। কারণ হলো, একবার হিসাব করা হলে এখানে অঙ্কের পরিবর্তন ঘটে না এবং এই নিয়মে পূর্ণবর্গ সংখ্যার বর্গমূল খুব দ্রুতই বের হয়; (যেমন: ৭৪৮৫৬৯৬ এর মতো বড় সংখ্যার বর্গমূল ২৭৩৬ খুব সহজেই বের করা যায়)। ভগ্নাংশযুক্ত সংখ্যার (যেমন: ৫৪৬.৯৩৪) বর্গমূল বের করার ক্ষেত্রে গ্রিকরা ভগ্নাংশযুক্ত অংশের (.৯৩৪) জন্য ১০-এর ঋণাত্মক ঘাতের পরিবর্তে ৬০-এর ঋণাত্মক ঘাত ব্যবহার করত।The Works of Archimedes, Chapter IV, Arithmetic in Archimedes, edited by T.L. Heath, Dover Publications Inc, New York, 2002.
প্রাচীন চীনে শাং রাজবংশ থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে তাং রাজবংশের সময়ে, চীনাদের মৌলিক সংখ্যা থেকে শুরু করে উন্নত বীজগণিতসহ উচ্চতর পাটিগণিতে যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। প্রাচীন চীনারা গ্রিকদের মতই একটি স্থানিক অঙ্কপাতনের ব্যবহার করত। যেহেতু চীনারাও শূন্যের জন্য একটি প্রয়োজনীয় চিহ্নের অভাবে ছিল, তাই তারা সংখ্যার একক স্থানের জন্য এক গুচ্ছ প্রতীক ব্যবহার করত, দশক স্থানের জন্য ব্যবহার করত দ্বিতীয় আরেক সেট প্রতীক। শতক স্থানের জন্য তারা এককের ঘরের প্রতীকগুলো পুনরায় ব্যবহার করত এবং অন্যান্য স্থানীয় মানের জন্য একইভাবে কাজ চালাত। তাদের এই প্রতীকগুলো ছিল প্রাচীন গণনা কাঠিভিত্তিক। চীনারা ঠিক কখন সংখ্যাকে স্থানের (অঙ্কপাতনের) দ্বারা উপস্থাপনের মাধ্যমে গণনা শুরু করে তা অজানা। তবে এই অধিগ্রহণ ৪০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়।Joseph Needham, Science and Civilization in China, Vol. 3, p. 9, Cambridge University Press, 1959. সর্বপ্রথম প্রাচীন চীনারাই ঋণাত্মক সংখ্যার অর্থপূর্ণ আবিষ্কার ঘটায়, এটি হৃদয়ঙ্গম করে এবং এর প্রয়োগ করে। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে লাইয়ু হুই-এর লেখা গাণিতিক শিল্পকলার নয়টি অধ্যায়-এ (Jiuzhang Suanshu) এর ব্যাখ্যা রয়েছে।
হিন্দু-আরবীয় সংখ্যা পদ্ধতির ধারাবাহিক বিকাশ স্বতন্ত্রভাবে স্থানীয় মানের ধারণার এবং স্থানিক অঙ্কপাতনের উদ্ভাবন ঘটিয়েছে, যেখানে এই পদ্ধতিটির সাথে একটি দশমিক ভিত্তির সহজতর গণনা পদ্ধতির এবং ০-এর প্রতিনিধিত্বকারী একটি অঙ্কের প্রয়োগের সমন্বয় ঘটেছে। এর ফলে সুস্পষ্টভাবেই এই পদ্ধতির মাধ্যমে ছোট ও বড় উভয় সংখ্যার প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তৈরি হয়েছিল — এটি এমনই এক অর্জন যা ঘটনাক্রমে অন্যান্য সকল পদ্ধতির জায়গা দখল করে ফেলে। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে, ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট সেই সময়ে এই নিয়মটির একটি প্রচলিত সংস্করণ তার কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন এবং ভিন্ন অঙ্কপাতনের মাধ্যমে পরীক্ষা চালান। ৭ম শতকে ব্রহ্মগুপ্ত ০-কে একটি পৃথক সংখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম শূন্যকে সংখ্যার মর্যাদা দেন। এছাড়া শূন্য এবং অন্যান্য সমস্ত সংখ্যার গুণ, ভাগ, যোগ ও বিয়োগের ফলাফল কী হবে তিনি সেগুলোও নির্ধারণ করেন। তবে শূন্য দ্বারা ভাগের ফলাফল কী হবে তা তিনি সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেন নি। শূন্য দ্বারা ভাগের ব্যাপারে তার দেওয়া মত আধুনিক গণিতের সাথে মিলে না। সে যাই হোক, ব্রহ্মগুপ্তের সমসাময়িক সিরিয়াক বিশপ সেভেরাস সেবোখট (৬৫০ খ্রিস্টাব্দ) বলেছেন, "ভারতীয়দের এমন একটি গণনা পদ্ধতি রয়েছে, কোনো ভাষা দিয়েই যার যথাযথ প্রশংসা করা সম্ভব নয় — তা হলো গণিতে তাদের বুদ্ধিদীপ্ত পদ্ধতি, অর্থাৎ তাদের বুদ্ধিদীপ্ত গণনা পদ্ধতি। আমি বলতে চাচ্ছি তাদের সেই নিয়মটির কথা, যেটাতে নয়টি প্রতীক ব্যবহার করা হয়।"Reference: Revue de l'Orient Chretien by François Nau pp. 327–338. (1929) আরবরাও এই নতুন নিয়মটি শিখে নেয় আর তারা একে হেসাব নামে অভিহিত করে।
thumb|200px|লিবনিজের স্টেপড রেকনার ছিল প্রথম গণনাযন্ত্র (calculator) যা পাটিগণিতের চারটি গাণিতিক প্রক্রিয়ার সবগুলোই করতে পারত।
৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের পূর্বেই কোডেক্স ভিজিল্যানাস ০-কে বাদ দিয়ে আরবীয় অঙ্কবাচক সংখ্যাগুলোর আদি গঠনের ওপর একটি বিবরণ দিলেও, পিসার লিওনার্দোর (ফিবোনাচ্চি) লিবার অ্যাবাসি প্রকাশের পর মূলত তার (ফিবোনাচ্চি) হাত ধরেই সমগ্র ইউরোপে দশভিত্তিক এই সংখ্যা ব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়ে, ইউরোপে এই অঙ্কগুলো ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কৃতিত্ব লিওনার্দোরই। তিনি লিখেছেন, "মোডাস ইন্ডোরাম তথা ভারতীয়দের এই পদ্ধতিটি গণনার অন্য সকল পরিচিত পদ্ধতিকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি বিস্ময়কর একটি পদ্ধতি। তারা নয়টি অঙ্ক এবং শূন্য প্রতীকটি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের গণনার কাজ করে"।Reference: Sigler, L., "Fibonacci's Liber Abaci", Springer, 2003.
মধ্যযুগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সাতটি মুক্ত শিল্পকলার (liberal arts education) শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হতো পাটিগণিত ছিলো সেগুলোর একটি।
মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বে বীজগণিতের বর্ধিষ্ণু উত্থান বা ক্রমবর্ধমান উন্নতি, অধিকন্তু ইউরোপে সংঘটিত রেনেসাঁ এগুলোর সবই ছিল দশমিক অঙ্কপাতনের মাধ্যমে গণনার অসাধারণ সরলীকরণের এক বাড়তি ফসল।
সাংখ্যিক হিসাব-নিকাশে সহায়তার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামের উদ্ভাবন হয়েছে এবং ব্যাপকহারে সেগুলোর প্রয়োগ ঘটেছে। রেনেসাঁর আগে বিভিন্ন ধরনের অ্যাবাকাসের দেখা মিলত। সাম্প্রতিকতম গণনা যন্ত্রের উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্লাইড রুল, নোমোগ্রাম এবং বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর (যেমন: প্যাসকেলের ক্যালকুলেটর)। বর্তমানে, এই সরঞ্জামগুলোর জায়গায় ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটর এবং কম্পিউটার স্থান দখল করে নিয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে পাটিগণিতের ইতিহাস
ভারতীয় উপমহাদেশের বিশিষ্ট গণিতবিদ ছিলেন যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী যিনি সচারচর যাদব বাবু নামে অভিহিত ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে “গণিত সম্রাট” উপাধি দিয়েছিল। ১৮৯০ সালে তিনি প্রকাশ করেন গণিতশাস্ত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বই “Arithmetic”। এটি সাধারণ্যে “যাদবের পাটিগণিত” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয় এবং বিভিন্ন দেশে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গৃহীত হয়।প্রথম আলো
পাটিগাণিতিক ক্রিয়াসমূহ
পাটিগণিতে ব্যবহৃত মৌলিক গাণিতিক ক্রিয়াগুলোর মধ্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগের নাম থাকলেও শতকরা, বর্গমূল, সূচকীকরণ, লগারিদমিক ফাংশনের মতো উচ্চতর গাণিতক প্রক্রিয়াসমূহও এর অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু একইভাবে লগারিদমের মতো (প্রোস্টাফেরেসিস) ত্রিকোণমিতিক ফাংশনও এর অন্তর্ভুক্ত। পাটিগাণিতিক রাশিমালার (যেমন: ৪+৬–১÷৩ একটি পাটিগাণিতিক রাশিমালা) মান বের করতে হলে তাকে অবশ্যই গাণিতিক ক্রিয়াসমূহের কাঙ্ক্ষিত ক্রম অনুসারে নির্ধারিত হতে হবে। একটি রাশিমালায় সংখ্যা এবং ক্রিয়া চিহ্নগুলোর (+, –,×, ÷ ইত্যাদি) অবস্থান নির্ধারণের জন্য বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, যার প্রতিটিই বহুল প্রচলিত। এগুলো মধ্যে রয়েছে ইনফিক্স নোটেশন, প্রিফিক্স নোটেশন বা পোলিশ নোটেশন, পোস্টফিক্স নোটেশন বা বিপরীত পোলিশ নোটেশন ইত্যাদি। ইনফিক্স নোটেশনের মাধ্যমে রাশিমালা লেখার ক্ষেত্রে বন্ধনী চিহ্নকে সুস্পষ্টভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং এই পদ্ধতিটি গাণিতিক ক্রিয়ার ক্রমের নিয়ম মেনে চলে, অর্থাৎ ক্রিয়া চিহ্নের ধারাবাহিকতা মেনে চলতে হয়। মূলত এ নিয়মেই আমরা রাশিমালা লিখে এসেছি। যেমন: ৪ + ৬ – ১ ÷ ৩ রাশিমালাটি ইনফিক্স নোটেশনের মাধ্যমে লেখা হয়েছে। অপরদিকে প্রিফিক্স ও পোস্টফিক্স নোটেশনের ক্ষেত্রে রাশিমালার গাণিতিক ক্রিয়াগুলোর নির্বাহের বেলায় এদের নিজ নিজ ধারাবাহিকতা রয়েছে। যেমন: ইনফিক্স নোটেশনে লেখা (৭ − ৪) × ৩ রাশিমালাটিকে প্রিফিক্স বা পোলিশ নোটেশনে লিখলে হবে: × (− ৭ ৪) ৩ বা × − ৭ ৪ ৩। এবং (৭ − ৪) × ৩ কে পোস্টফিক্স নোটেশনে লিখলে এটি ৭৪ – ৩ × হয়ে যাবে।
যে সেটের ওপর চারটি পাটিগাণিতিক ক্রিয়ার সবগুলোই (শূন্য দ্বারা ভাগ ব্যতীত) প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং যে সেটে এই ক্রিয়াসমূহ বণ্টন বিধিসহ অন্যান্য সাধারণ বিধিগুলো মেনে চলে গণিতের ভাষায় তাকে ক্ষেত্র বলা হয়।
যোগ
যোগ হলো পাটিগণিতের সবচেয়ে মৌলিক গাণিতিক ক্রিয়া যাকে
প্রতীকের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যোগের প্রক্রিয়া এই সাধারণ চিহ্নটির মাধ্যমে দুটি সংখ্যাকে (যোজ্য ও যোজক) একটি একক সংখ্যায় সমন্বিত করে। এই সমন্বিত বা একীভূত সংখ্যাটিকে বলা হয় যোগফল বা সমষ্টি। যেমন: ৫ + ২ = ৭। উল্লেখ্য যে, ৫ + ২ রাশিমালায় যোজ্য ও যোজকের স্থানের পরিবর্তন ঘটলেও যোগফল অপরিবর্তিত থাকবে এবং যোগফল অপরিবর্তিত থাকার এই ব্যাপারটি যেকোনো রাশিমালার ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য হবে।
সসীম সংখ্যক অনেকগুলো পদের যোগকে সাধারণ যোগের (দুটি সংখ্যা বা পদের) পুনরাবৃত্তিরূপে দেখা যেতে পারে এবং অসীম বা সসীম যেকোনো সংখ্যক অনেকগুলো পদের যোগকেও সমষ্টি নামে অভিহিত করা হয়। তবে ধারার ক্ষেত্রে (এর সমষ্টির বেলায়) এর পদগুলোকে সাধারণ অন্তর, সাধারণ অনুপাত অথবা অন্যান্য বাড়তি শর্তও মেনে চলতে হয়। ১ সংখ্যাটির বারংবার যোগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যা বের করার নিয়মটি হলো গণনার আদি ও সবচেয়ে মৌলিক রূপ। ১ সংখ্যাটি যোগ করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তাকে মূল সংখ্যাটির উত্তরসূরি (Successor) বলা হয় এবং এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় উত্তরসূরি ফাংশন (Successor function)। যেমন: স্বাভাবিক সংখ্যা n-এর উত্তরসূরি ফাংশন হলো S(n) = n + ১।
যোগের প্রক্রিয়া বিনিময় ও সংযোগ বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ায় অর্থাৎ যোগের প্রক্রিয়া বিনিময় ও সংযোগ বিধি মেনে চলায় সসীম সংখ্যক অনেকগুলো পদ নিয়ে গঠিত রাশিমালায় পদগুলোর ক্রম কী হলো তা যোগফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
শূন্য (০) সংখ্যাটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর তা হলো, যে সংখ্যার সাথেই শূন্য যোগ করা হোক না কেন সংখ্যাটি একই থাকবে। তাই শূন্য হলো যোগের অভেদ উপাদান বা যোগাত্মক অভেদ। বাস্তব সংখ্যার জন্য গুণের অভেদ উপাদান বা গুণাত্মক অভেদ হলো ১।
প্রতিটি সংখ্যা -এর জন্য দ্বারা চিহ্নিত একটি সংখ্যা রয়েছে যাকে -এর যোগাত্মক বিপরীত সংখ্যা (additive inverse) বলা হয়, যেখানে এবং । সুতরাং, হলো যোগের সাপেক্ষে -এর বিপরীত সংখ্যা। এবং হলো পরস্পরের যোগাত্মক বিপরীত। যোগাত্মক বিপরীতকে সংক্ষেপে শুধু বিপরীত বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৬ এর বিপরীত হল −৬, যেহেতু ৬ + (−৬) = ০।
যোগকে জ্যামিতিক উপায়েও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যেমনটি পরবর্তী উদাহরণটিতে করা হয়েছে। যদি ২ ও ৫ একক দৈর্ঘ্যের দুটি কাঠি নেওয়া হয় এবং একটি কাঠির পর আরেকটি কাঠি সারিবদ্ধ করা হয়, তাহলে তাহলে সম্মিলিতভাবে কাঠিটির দৈর্ঘ্য হবে ৭ একক। কারণ ২ + ৫ = ৭।
বিয়োগ
বিয়োগ হলো যোগের বিপরীত প্রক্রিয়া, যা প্রতীকটির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বিয়োগে দুটি সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য অর্থাৎ বিয়োগফল (D) তথা বিয়োজন (M) বিয়োগ বিয়োজ্য (S) বের করা হয়: । ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত যোগের অলোকে এটা বলতে হয় যে, বিয়োগফল হলো সেই সংখ্যা, যার সাথে বিয়োজ্য যোগ করা হলে বিয়োজন সংখ্যাটি পাওয়া যায়:
ধনাত্মক গাণিতিক যুক্তির ক্ষেত্রে এবং -এর এই বৈশিষ্ট্য থাকবে:
বিয়োজন বিয়োজ্যের চেয়ে বড় হলে বিয়োগফল ধনাত্মক হবে। যদি বিয়োজন বিয়োজ্যের চেয়ে ছোট হয়, তাহলে বিয়োগফল ঋণাত্মক হবে।
কোন ক্ষেত্রে যদি বিয়োজন ও বিয়োজ্য সমান হয়, তাহলে বিয়োগফল শূন্য হবে।
বিয়োগের প্রক্রিয়া বিনিময় ও সংযোগ বৈশিষ্ট্যের কোনোটিই মানে না। এই কারণে, আধুনিক বীজগণিতে যোগের বিপরীত এই প্রক্রিয়া তথা বিয়োগকে বিপরীত উপাদানের ধারণার সূচনার সুবিধার্থে প্রায়ই বাতিল করা হয় এবং -এর অধীনে চিত্রায়িত করা হয়। এক্ষেত্রে, বিয়োগকে বিয়োজনের সাথে বিয়োজ্যের যোগাত্মক বিপরীতের যোগরূপে গণ্য করা হয়, যেখানে, । বিয়োগের দ্বিমিক ক্রিয়া বাতিলের তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে যেকোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার যোগাত্মক বিপরীতের আবির্ভাব ঘটার মাধ্যমে এবং তাৎক্ষণিকভাবে পার্থক্যের ধারণার অ্যাক্সেস হ্রাস পাওয়ার মাধ্যমে "নগণ্য ইউনারি অপারেশনের" সূচনা ঘটে, ঋণাত্মক যুক্তির অন্তর্ভুক্তি করা হলে যা সম্ভাব্যরূপেই একটি বিভ্রান্তিকর বিষয়।
সংখ্যার যেকোনো উপস্থাপনার ক্ষেত্রে ফলাফল গণনার জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে। প্রক্রিয়ার নির্বাহ বা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিশেষরকম জুতসই ও একটি অপারেশনের জন্য সক্রিয়। সামান্য এদিক-সেদিক করলে সেগুলো অন্য অপারেশনগুলোতেও একইরকম। উদাহরণস্বরূপ, ডিজিটাল কম্পিউটার যোগের সক্রিয় সার্কিট ব্যবস্থাকে (adding-circuitry) পুনর্ব্যবহার করতে পারে এবং একটি বিয়োগের বাস্তবায়ন বা সম্পাদনার জন্য অতিরিক্ত সার্কিট সংরক্ষণ করতে পারে। যোগাত্মক বিপরীত-এর উপস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত দুইয়ের পূরক বা two's complement (সেকেন্ড কমপ্লিমেন্ট) পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যম, এই সার্কিট হার্ডওয়্যারে বাস্তবায়ন বা সম্পাদনা করা অত্যন্ত সহজ। নির্দিষ্ট শব্দ-দৈর্ঘ্যের সংখ্যার সীমাকে অর্ধেক করার প্রক্রিয়াকে ট্রেড-অফ বলা হয়।
বকেয়া এবং প্রদানকৃত অর্থের পরিমাণ জেনে সঠিকভাবে এর পরিবর্তনের পরিমাণ বের করার একটি পদ্ধতি হলো কাউন্টিং আপ পদ্ধতি (counting up method), যা অতীতে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। সুস্পষ্টতই, এই পদ্ধতিতে পার্থক্যের পরিমাণ (অর্থাৎ অর্থের পরিবর্তনের পরিমাণ) বের করা হয় না। উদাহরণ হিসেবে ধরাযাক, Q পরিমাণ অর্থ পরিশোধের জন্য P পরিমাণ অর্থ এমনভাবে দেওয়া হলো যেখানে, P-এর পরিমাণ Q-এর চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে, সরাসরি P − Q = C বিয়োগটি না করে এবং C অর্থের পরিবর্তনের কাউন্টিং আউট বের না করে, বরং Q-এর আগের হিসাব দিয়ে অর্থের পরিমাণের কাউন্ট আউট শুরু করা হয় এবং P-এ না পৌঁছানো পর্যন্ত মুদ্রার হিসাব ধাপে ধাপে চালিয়ে যাওয়া হয়। কাউন্ট আউটকৃত অর্থের পরিমাণ অবশ্যই P − Q এর অন্তরফলের সমান হবে। তাসত্ত্বেও এই পদ্ধতিতে P − Q বিয়োগটি কিন্তু একেবারেই করা হয়নি এবং এই পদ্ধতিটা P − Q এর কথাও বলে না।
গুণ
গুণ হলো পাটিগণিতে ব্যবহৃত দ্বিতীয় মৌলিক গাণিতিক ক্রিয়া, যাকে ও প্রতীক দুটির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। যোগের মতো গুণও দুটি সংখ্যাকে একটি একক সংখ্যায় রূপান্তর করে, যাকে বলা হয় গুণফল। যে দুটি সংখ্যার ওপর এই প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ করা হয় তাদেরকে বলা হয় গুণ্য ও গুণক। মূলত গুণ্য ও গুণকের উভয়কেই গুণজ বা উৎপাদক (factors) সাধারণ নামগুলো দিয়েও সম্বোধন করা হয়।
গুণকে একটি স্কেলিং অপারেশনরূপে দেখা যেতে পারে। সংখ্যাকে যদি কোনো রেখা বরাবর স্থাপিত কল্পনা করা হয়, তাহলে ১-এর চেয়ে বড় একটি সংখ্যা (ধরাযাক x) দ্বারা গুণনকে, ০ থেকে সবকিছুর সুষমভাবে সম্প্রসারিত হওয়ার অনুরূপ কল্পনা করা যায়, যেখানে এই সম্প্রসারণ এমনভাবে ঘটে যে, স্বয়ং সংখ্যাটি x-এর অবস্থানের দিকে সম্প্রসারিত হয়। একইভাবে, ১-এর চেয়ে ছোট একটি সংখ্যা দ্বারা গুণ করাকে ০-এর দিকে সংকোচনরূপে কল্পনা করা যেতে পারে, যেখানে এই সংকোচন এমনভাবে সম্পন্ন হয় যেন, ১ সংখ্যাটি গুণজটির দিকে ধাবিত হয়।
পূর্ণসংখ্যার গুণনকে আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে, যেখানে এই ধারণাটি পূর্ণসংখ্যার পাশাপাশি মূলদ সংখ্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, এটি অন্যান্য বাস্তব সংখ্যার বেলায় খুব সহজভাবে ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। এই দৃষ্টিকোণের আলোকে, গুণকে পুনঃপুন যোগ হিসেবে গণ্য করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গুণন প্রক্রিয়াটি একটি -কে বার যোগ করার অনুরূপ অথবা, এটি একটি -কে বার যোগ করার অনুরূপ, যেখানে উভয় ক্ষেত্রেই ফলাফল বের হয় একই। গণিত শিক্ষণের ক্ষেত্রে গুণের এই দৃষ্টান্তগুলোর (paradigm) উপকারিতার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে।
যোগের মতো গুণও বিনিময় ও সংযোগবিধি মেনে চলে, উপরন্তু গুণের প্রক্রিয়া যোগ ও বিয়োগের বণ্টন বিধিও মেনে চলে। এছাড়াও গুণ সূচক বিধিও মেনে চলে। যেকোনো সংখ্যাকে ১ দ্বারা গুণ করলে যেহেতু একই সংখ্যা পাওয়া যায়, তাই গুণাত্মক অভেদ যে সংখ্যাটি হবে তা হলো ১। শূন্য (০) ব্যতীত যেকোনো সংখ্যার গুণাত্মক বিপরীত হলো ঐ সংখ্যারই ব্যাস্তানুপাত, কারণ যেকোনো সংখ্যার ব্যাস্তানুপাতকে ঐ সংখ্যাটি দ্বারা গুণ করলে গুণাত্মক অভেদ ১ পাওয়া যাবে। ০ হলো একমাত্র সংখ্যা যার গুণাত্মক বিপরীত নেই এবং যেকোন সংখ্যাকে ০ দ্বারা গুণ করলে পুনরায় ০ হবে। কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে ০ সংখ্যাটি সংখ্যার গুণাত্মক গ্রুপেরর সদস্য নয়।
a এবং b-এর গুণফলকে আকারে অথবা, আকারে লেখা হয়। a এবং b রাশিদুটি যদি কোনো অঙ্ক না হয়, অর্থাৎ এগুলো শুধু চলককে নির্দেশ করে, সেক্ষেত্রে একটি সাধারণ সংযোজন পদ্ধতিতে অর্থাৎ, রাশিগুলো পাশাপাশি বসিয়ে গুণফলটি লেখা হয়: ab। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষায় এবং সফ্টওয়্যার প্যাকেজগুলোতে (যেক্ষেত্রে কীবোর্ডে সাধারণভাবে উপলব্ধ অক্ষরগুলোই কেবল ব্যবহারের সুযোগ থাকে), গুণকে প্রায়শই একটি তারকাচিহ্ন দিয়ে লেখা হয়: a * b।
বিভিন্ন ধাচের সংখ্যার ক্ষেত্রে গুণ প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়নকারী অ্যালগরিদমগুলো যোগের প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং শ্রমসাধ্য। হাতে-কলমে হিসাব-নিকাশের (manual computation) এসব সহজসাধ্যতা নির্ভর করে গুণজকে একক স্থানীয় মানে ভেঙে ফেলার ওপর ও পুনঃপুনঃ যোগ করার ওপর, অথবা এগুলো নির্ভর করে গাণিতিক সারণী ও স্লাইড স্ক্যালের ব্যবহারের ওপর। এর ফলে, গুণের মানচিত্রায়ন নির্ভর করে যোগের ওপর এবং তদ্বিপরীতভাবে যোগের মানচিত্রায়ন নির্ভর করে গুণের মানচিত্রায়নের ওপর। এই পদ্ধতিগুলো সেকেলে আর বহনযোগ্য যন্ত্রাংশসমূহ (mobile devices) ধীরে ধীরে এগুলোর জায়গা দখল করে নিচ্ছে৷ কম্পিউটার সিস্টেম সংখ্যার যে বিভিন্ন ধাচসমূহ
(number format) সমর্থন করে, কম্পিউটারে সেগুলোর গুণ ও ভাগ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নের জন্য নানাবিধ অত্যাধুনিক, বাস্তবধর্মী ও পরিশীলিত (sophisticated) এবং অত্যন্ত কার্যকরভাবে এবং সুচারুভাবে প্রয়োগকৃত (highly optimized) অ্যালগরিদমসমূহ ব্যবহার করা হয়।
ভাগ
ভাগকে এবং প্রতীকদুটির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। ভাগ আবশ্যিকভাবেই গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া। ভাগের মাধ্যমে ভাগফল তথা ভাজ্য ভাগ ভাজক বের করা হয়। সাধারণ নিয়মাবলির আলোকে ভাজ্যকে শূন্য দ্বারা ভাগ একটি অসংজ্ঞায়িত বিষয়। স্বতন্ত্র ধনাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে যদি ভাজ্য ভাজক অপেক্ষা বড় হয়, তাহলে ভাগফল ১-এর চেয়ে বড় হবে; অন্যথায়, ভাগফল হবে ১-এর চেয়ে ছোট অথবা ১-এর সমান। ঋণাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে এধরনেরই একটি নিয়ম ব্যবহার করা হয়। ভাগফলকে ভাজক দ্বারা গুণ করা হলে সর্বদা ভাজ্য বের হবে।
ভাগের প্রক্রিয়া বিনিময় বিধি ও সংযোগ বিধির কোনোটিই মানে না। একারণে, -এর ক্ষেত্রে যেমনটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেরূপভাবেই আধুনিক বীজগণিতে ভাগের প্রক্রিয়াকে, গুণের বিপরীত উপাদানটির সুবিধার্থে অর্থাৎ গুণের বিপরীত উপাদানের পক্ষে বর্জন করা হয়, যেমনটা -এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। এই কারণে, ভাগ হলো
ভাজকের ব্যাস্তানুপাত তথা গুণাত্মক বিপরীতের সাথে ভাজ্যের গুণ, যেখানে এই গুণাত্মক বিপরীতটি একটি গুণজরূপে ভূমিকা পালন করে। আলোচনা অনুসারে, ভাগের প্রক্রিয়াকে লেখা যায় এভাবে: ।
স্বাভাবিক সংখ্যার ভাগের ক্ষেত্রে, ইউক্লিডীয় ভাগ নামে একটি ভিন্ন কিন্তু সম্পর্কযুক্ত একটি ধারণারও দেখা যায়, যেখানে স্বাভাবিক সংখ্যা -কে (লব) একটি স্বাভাবিক সংখ্যা (হর) দ্বারা "ভাগ করা" হলে দুটি সংখ্যা বের হয়: যার প্রথমটি হবে একটি স্বাভাবিক সংখ্যা (ভাগফল), এবং অপরটি হবে ভিন্ন আরেকটি স্বাভাবিক সংখ্যা (ভাগশেষ), যাতে করে এবং হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে (যার মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং উচ্চতর পাটিগণিতও রয়েছে), ভাগের প্রক্রিয়াকে ভাগশেষের ক্ষেত্রে ভিন্ন আরেকভাবে সম্প্রসারণ করা হয়। এই পদ্ধতিটিকে সচরাচর স্বতন্ত্র একটি প্রক্রিয়ারূপে গণ্য করা হয়, যাকে মডিউলো অপারেশন নামে অভিহিত করা হয় এবং একে চিহ্নিত করা হয় প্রতীকটির দ্বারা অথবা শব্দটির দ্বারা। তবে এই পদ্ধতিটিকে কখনো কখনো "divmod" অপারেশনের একটি দ্বিতীয় আউটপুটরূপেও গণ্য করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই, মডুলার পাটিগণিতের প্রয়োগ-ক্ষেত্রের একটি বৈচিত্র্য রয়েছে। ভাগের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার (যেমন: ফ্লোর ভাগ, ট্রাঙ্কেটেড ভাগ, ইউক্লিডীয় ভাগ ইত্যাদি) বাস্তবায়ন নির্ভর করে মডুলাসের ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবায়নের ওপর।
পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য
পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য হচ্ছে এমন একটি উপপাদ্য যেখানে, একটি পূর্ণ সংখ্যাকে মৌলিক সংখ্যাসমূহের গুণফল আকারে উপস্থাপন করা হয়। এই উপপাদ্য অনুসারে, ১-এর চেয়ে বড় যেকোনো পূর্ণসংখ্যাকে মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা হলে কেবল একটিই (অনন্য) মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে, যদি উৎপাদকে বিশ্লেষণটিতে উৎপাদকগুলোর ক্রমকে অগ্রাহ্য করা হয়। অর্থাৎ, ১-এর চেয়ে বড় যেকোনো পূর্ণসংখ্যার একটি অনন্য মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২৫২-কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা হলে শুধু একটি মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে:
২৫২ = ২ × ৩ × ৭
ইউক্লিডের এলিমেন্টসে প্রথম এই উপপাদ্যটি উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং এতে এর একটি আংশিক প্রমাণও দেওয়া হয়েছে, যাকে ইউক্লিডের লেমা বলা হয়। পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্যটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রমাণ দেন জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রেডরিখ গাউস।
১-কে যেসব কারণে মৌলিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য হলো সেই কারণগুলোর মধ্যে একটি। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরাটোস্থেনসের ছাকনি এবং স্বয়ং মৌলিক সংখ্যার সংজ্ঞা। সংজ্ঞানুসারে, মৌলিক সংখ্যা হলো, ১-এর চেয়ে বড় এমন একটি স্বাভাবিক সংখ্যা যাকে ঐ সংখ্যাটির চেয়ে ছোট দুটি স্বাভাবিক সংখ্যার গুণফল আকারে করে উপস্থাপন করা যায় না।
দশমিক সংখ্যার পাটিগণিত
সাধারণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে, বলতে মূলত আরবি সংখ্যা সহযোগে লিখিত সংখ্যাপদ্ধতিকে বোঝানো হয়, যেখানে এই সংখ্যাগুলো (আরবি সংখ্যা) দশভিত্তিক ("দশমিক") একটি স্থানিক অঙ্কপাতনের (positional notation) অঙ্করূপে ব্যবহার করা হয়। এমনকি, ১০-এর ঘাতভিত্তিক গ্রিক, সিসিলীয়, রোমান অথবা চৈনিক সংখ্যাগুলোকেও ধারণাগতভাবে "দশমিক অঙ্কপাতন" অথবা "দশমিক পদ্ধতিতে সংখ্যার উপস্থাপন" হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
মৌলিক চারটি গাণিতিক ক্রিয়ার (যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ) জন্য আধুনিক পদ্ধতির পরিকল্পনার পেছনে সর্বপ্রথম ভারতীয় গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত তার বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করেন। এটি মধ্যযুগীয় ইউরোপে "মোডাস ইন্ডোরাম" অর্থাৎ ভারতীয়দের পদ্ধতি নামে পরিচিত ছিল। অবস্থানের ভিত্তিতে অঙ্কপাতন তথা স্থানিক অঙ্কপাতন "স্থানীয় মানের মাধ্যমে অঙ্কপাতন" (place-value notation) নামেও পরিচিত। শর্তাধীনে যেকোনো সংখ্যা -কে আকারে প্রকাশ করা হলে -এর মানকে ঐ সংখ্যাটির মানানুক্রম (orders of magnitude) বলা হয়, যা হবে শূন্যসহ যেকোনো পূর্ণ সংখ্যা। পৃথক পৃথক মানানুক্রমের (যেমন: এককের ঘর, দশকের ঘর, শতকের ঘর ইত্যাদি) জন্য একই প্রতীক সহযোগে, উপরন্তু ভগ্নাংশসমূহ (যেমন: দশমাংশের ঘর, শতাংশের ঘর ইত্যাদি) নির্দেশের ক্ষেত্রেও দশমিক বিন্দুসহকারে ঐ প্রতীকগুলোকেই কাজে লাগানোর মাধ্যমে কোনো সংখ্যার উপস্থাপনকেই অর্থাৎ এইভাবে কোনো সংখ্যাকে সংকেতে রূপান্তরকেই (encoding) স্থানিক অঙ্কপাতন নামে নির্দেশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৫০৭.৩৬ সংখ্যাটির অঙ্কপাতনে দেখা যায় এটি ৫ টি শতক (১০২), ০ টি দশ বা দশক (১০১), ৭ টি একক (১০০), ৩ টি দশমাংশ (১০−১) এবং ৬ টি শতাংশের (১০−২) সমষ্টিকে নির্দেশ করছে।
ভারতীয়দের পূর্বে অন্য কোনো সভ্যতার ইতিহাসে স্থানিক অঙ্কপাতনে শূন্যকে ঠাই দেওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায় না। অন্যান্য অঙ্কের ন্যায় শূন্যকেও স্থানিক অঙ্কপাতনে স্থান (যেমন: দশমিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে একক, দশক, শতক ইত্যাদি ঘরে) দিয়ে সংখ্যায় একে প্রয়োগের ধারণা, উপরন্তু কোনো সংখ্যাকে ০ দ্বারা গুণ এবং সংখ্যার সাথে ০ যোগের সংজ্ঞা যেমন অত্যাবশ্যক, তেমনইভাবে এই অঙ্কপাতনে অন্যান্য মৌলিক অঙ্কের মতোই ০-কেও একটি সংখ্যারূপে গণ্য করার ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। সংখ্যায় নির্দিষ্ট স্থানে ০-এর প্রয়োগের অর্থাৎ শূন্য যে স্থান দখল করতে পারে তার এবং এর মাধ্যমে সংখ্যার উপস্থাপনের নিমিত্তে একটি স্থানিক অঙ্কপাতনের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ৪৫৮ খৃস্টাব্দের লোকবিভাগ শিরোনামের একটি ভারতীয় ও জৈন পুস্তকে। আর কেবল ১৩শ শতকের প্রথম ভাগই ছিল সেই সময় যখন এই ধারণাগুলো আরব দুনিয়ার পণ্ডিতদের মাধ্যমে বাহিত হয়ে ফিবোনাচ্চির হাত ধরে ইউরোপে পরিচিতি লাভ করে,Leonardo Pisano – p. 3: "Contributions to number theory" . Encyclopædia Britannica Online, 2006. Retrieved 18 September 2006. যেখানে ফিবোনাচ্চি এই কাজটি করেছিলেন হিন্দু-আরবি সংখ্যা পদ্ধতি প্রয়োগ ঘটানোর মাধ্যমে।
এই ধরনের লিখিত সংখ্যা সহযোগে গাণিতিক হিসাব সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত সকল নিয়ম নিয়েই অ্যালগোরিজম গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, যোগের প্রক্রিয়ায় দুটি অবাধ সংখ্যার যোগফল বা সমষ্টিই বের করা হয়। ডান থেকে বাম দিকে অগ্রসর হয়ে প্রতিটি সংখ্যার একই স্থানে (অর্থাৎ, একক, দশক, শতক ইত্যাদির ঘরে) থাকা প্রতিটি স্বতন্ত্র অঙ্ক যোগ করে, এবং একইভাবে পরবর্তী স্থানের (বাম সারির) অঙ্কগুলো যোগের মাধ্যমে এই ফলাফল গণনা করা হয়। দশটি সারি ও দশটি কলামযুক্ত যোগের সারণী থেকে প্রতিটি যোগফলের জন্য সকল সম্ভাব্য মান পাওয়া যায়। যদি কোন যোগফলের মান ৯-এর চেয়ে বেশি হয়, তবে যোগফলটি দুটি অঙ্ক সহযোগে উপস্থাপন করা হয়। সর্বডানের অঙ্কটি হলো বর্তমান স্থানের মান এবং পরবর্তী ধাপে বামদিকের অঙ্কগুলোর যোগের ফল দ্বিতীয় (সর্ববাম) অঙ্কের মানের সমপরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় অঙ্কটি সর্বদা এক হবে যদি না এটি শূন্য হয়। এই সমন্বয়কে একটি হাতে রাখা ১ বলা হয় ("carry" of the value 1)।
দুটি অবাধ সংখ্যা গুণের প্রক্রিয়াটি যোগের প্রক্রিয়ার অনুরূপ। দশটি সারি ও দশটি কলামযুক্ত একটি গুণের সারণীতে প্রতিটি জোড়া অঙ্কের গুণফলকে তালিকাভুক্ত করা হয়। যদি এক জোড়া অঙ্কের গুণফল ৯-এর বেশি হয়, তাহলে সমন্বয়ের জন্য হাতে রাখা মান পরবর্তী ধাপের বামদিকের অঙ্কগুলোর গুণফলে দ্বিতীয় (সর্ববাম) অঙ্কের মানের সমপরিমাণ বৃদ্ধি ঘটায়, যেখানে দ্বিতীয় অঙ্কটি () পর্যন্ত যেকোনো মানের হবে। আরও কয়েকটি ধাপ অগ্রসর হলে চূড়ান্ত ফল বের হবে।
বিয়োগ ও ভাগের জন্যও একই ধরনের কৌশল বিদ্যমান।
সন্নিহিত অঙ্ক দুটির মানগুলোর মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান, সেই সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে গুণের জন্য সঠিক একটি প্রক্রিয়া তৈরির ব্যাপারটি। অঙ্কবাচক সংখ্যায় বিদ্যমান যেকোনো একটি একক অঙ্কের মান ঐ সংখ্যায় তার অবস্থানের উপর নির্ভর করে। উপরন্তু, বাম দিকের প্রতিটি স্থান এর ডানদিকের সন্নিহিত স্থানের চেয়ে দশগুণ বড় একটি মান উপস্থাপন করে। গাণিতিক ভাষায় বলা যায়, দশমিক সংখ্যার বাম থেকে ডানে গেলে ভিত্তি ১০-এর সূচক এক করে বাড়ে এবং বাম থেকে ডানে গেলে তা এক করে কমে। তাই, সংখ্যায় বিদ্যমান কোনো অবাধ অঙ্কের (স্থানীয়) মান পেতে হলে অঙ্কটিকে 10n আকারের মান দিয়ে গুণ করতে হয়, যেখানে n হলো একটি পূর্ণসংখা। কোনো সংখ্যায় একটি একক অঙ্ক যে সমস্ত সম্ভাব্য স্থান দখল করে তাদের মানগুলোর তালিকাকে } আকারে লেখা যায়, যা শব্দে প্রকাশ করলে হবে {..., হাজার, শতক, দশক, একক, দশমাংশ, শতাংশ, সহস্রাংশ,...}।
এই তালিকার যেকোনো মানকে বারবার ১০ দ্বারা গুণ করা হলে যে পৃথক মানসমূহ পাওয়া যাবে সেগুলোও এই তালিকায় বিদ্যমান। গাণিতিক পরিভাষায় এই বৈশিষ্ট্যটিকে ক্লোজার নামে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং পূর্ববর্তী তালিকাটিকে গুণের অধীনে বদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পূর্ববর্তী কৌশলটি গুণের ফলাফল সঠিকভাবে বের করার ক্ষেত্রে ভিত্তিরূপে কাজ করে। সংখ্যাতত্ত্বের ব্যবহারের একটি উদাহরণ হলো এই ফলাফলটি।
সংযুক্ত এককের গণিত
সংযুক্ত (Compound) একক হলো রাশির পরিমাপের সেই একক যেখানে রাশিটিকে কেবল একটি এককের দ্বারা প্রকাশ না করে একাধিক এককের সমন্বয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন: ২.৫০ টাকা না লিখে যদি ২ টাকা ৫০ পয়সা লেখা হয় তবে এটাকে সংযুক্ত এককে প্রকাশ বলা যায়, পক্ষান্তরে ২.৫০ টাকা হলো একটি অনন্য এককে (single unit) প্রকাশ। ফুট ও ইঞ্চি; গ্যালন ও পিন্ট; পাউন্ড, শিলিং ও পেন্স এবং একইভাবে অন্যান্য মিশ্র ভিত্তিযুক্ত (mixed radix) রাশিসমূহের ওপর পাটিগাণিতিক প্রক্রিয়াদির প্রয়োগই হচ্ছে সংযুক্ত এককের গণিত। অর্থ এবং পরিমাপের এককের দশভিত্তিক অর্থাৎ দশমিক পদ্ধতি চালুর আগে বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে সংযুক্ত এককের হিসাব ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো।
মৌলিক পাটিগাণিতিক ক্রিয়াসমূহ
সংযুক্ত এককের গণনায় ব্যবহৃত কৌশলগুলো বহু শতাব্দী ধরে বিকশিত হয়েছে, বিভিন্ন ভাষার অনেক পাঠ্যপুস্তকে যেগুলো ভালোভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। দশমিক সংখ্যার পাটিগণিত ও সংযুক্ত এককের পাটিগণিতের সংশ্লিষ্ট মৌলিক পাটিগাণিতিক ফাংশনে আরও তিনটি ফাংশনের প্রয়োগ করা হয়। এগুলো হলো:
: এখানে একটি সংযুক্ত রাশিকে একক রাশিতে সংকুচিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গজ, ফুট এবং ইঞ্চি একক তিনটির সমন্বয়ে পরিমাপকৃত দূরত্বকে কেবল ইঞ্চিতে রূপান্তর।
: এটা হলো রিডাকশনের বিপরীত। এখানে পরিমাপের অনন্য একককে (single unit) একটি সংযুক্ত এককে রূপান্তর করা হয়। ৫০ সেরকে রূপান্তর হলো এককের সম্প্রসারণের একটি উদাহরণ।
: সংযুক্ত এককের একটি সেটকে একটি আদর্শ আকারে রূপান্তরই আদর্শীকরণ। উদাহরণস্বরূপ, ""-কে "" লেখা হলো নর্মালাইজেশন।
পরিমাপের বিভিন্ন একক, তাদের গুণিতক এবং তাদের উপগুণিতকগুলোর মধ্যে সম্পর্কজনিত যে জ্ঞান, তা সংযুক্ত এককের গণিতের জন্য একটি অপরিহার্য অংশ গঠন করেছে।
সংযুক্ত এককের গণিতের মূলনীতিসমূহ
সংযুক্ত এককের গণনার জন্য দুটি মৌলিক ধারা রয়েছে:
: এখানে সংযুক্ত এককযুক্ত সমস্ত চলককে অনন্য এককের চলকে সংকোচন করা হয়, এরপর গণনা করা হয় এবং ফলাফলকে পুনরায় সংযুক্ত এককে সম্প্রসারণ করা হয়। এই পদ্ধতিটি স্বয়ংক্রিয় গণনার জন্য উপযুক্ত। এই পদ্ধতির একটি সাধারণ উদাহরণ হিসেবে মাইক্রোসফ্ট এক্সেলের মাধ্যমে সময়ের গণনার কথা বলা যায়, যেখানে সময়ের সকল প্রকার ব্যাপ্তিকে অভ্যন্তরীণভাবে দিনের এবং দিনের দশমিক আকারে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, কিন্ত ফলাফল দেখানো হয় দিন-ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ড ইত্যাদি ব্যাপ্তি সহযোগে বিস্তারিতভাবে।
: এখানে প্রতিটি একককে পৃথক-পৃথকভাবে নির্বাহ করা হয় এবং সমাধানটি এগোনোর সাথে সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে সমস্যাটির আদর্শীকরণ করা হয়। চিয়ারত গ্রন্থগুলোতে বিস্তারিতভাবে আলোচিত এই পদ্ধতিটি হাতে-কলমে অর্থাৎ ম্যানুয়াল পদ্ধতির গণনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। যোগের ক্ষেত্রে অনগোয়িং নর্মালাইজেশন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছে এমন একটি উদাহরণ নীচে দেখানো হলো:
left|thumb
এখানে যোগের প্রক্রিয়াটি ডান থেকে বামে চালনা করা হয়েছে এবং d দ্বারা পেনি, s দ্বারা সিলিং ও £ দ্বারা পাউন্ড নির্দেশ করা হয়েছে। এই যোগে প্রথমে পেনি যোগ করা হয়েছে, তারপরে শিলিং এবং পাউন্ড। "উত্তরের সারি"র নীচের যে সংখ্যাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সামগ্রিক যোগ প্রক্রিয়াটির মধ্যবর্তী ফলাফল নির্দেশ করছে।
পেনির কলামের সংখ্যাগুলো যোগ করা হলে মোট হয় ২৫। এক শিলিংয়ে ১২ পেনি হওয়ায় ২৫-কে ১২ দিয়ে ভাগ দিলে ভাগফল হয় ২, এবং ভাগশেষ হয় ১। ভাগশেষ ১-কে উত্তরের সারিতে লেখা হয়েছে এবং ভাগফল হয় ২-কে (হাতে রাখা মান) শিলিংয়ের কলামে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরপর শিলিংয়ের কলামের মানগুলো যোগ করলে মোট হয় ২৬; এর সঙ্গে পূর্বের হাতে রাখা মানটি (ভাগফল ২) যোগ করা হলে অনাদর্শ মোট হয় ২৮। যেহেতু, ২০ সিলিংয়ে ১ পাউন্ড হয়, তাই আগের মতোই এবার ২৮-কে ২০ দিয়ে ভাগ দিলে বের হয় ১ পাউন্ড (হাতে) এবং অবশিষ্ট থাকে ৮ সিলিং, যা উত্তরের সারিতে সিলিংয়ের কলামে বসেছে। সবশেষে পাউন্ডের কলামের মানগুলো যোগ করলে পাওয়া যায় ১২। এর সঙ্গে হাতে রাখা ১ যোগ করলে অনাদর্শ মোট হয় ১৩ পাউন্ড। যেহেতু, এই গণনাটিতে ব্যবহৃত এককগুলোর মধ্যে পাউন্ড সবচেয়ে বড় একক, তাই এরপর আর হাতে রাখার দরকার হয়নি এবং "অনাদর্শ মোট ১৩"-কে উত্তরের সারিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
উদাহরণরূপে বেছে নেওয়া এই গণনাটিতে সহজবোধ্যতার স্বার্থে ফার্দিংকে (ব্রিটিশ মুদ্রাবিশেষ) বাদ দেওয়া হয়েছে।
পাটিগাণিতিক প্রক্রিয়াসমূহের প্রয়োগ
thumb|পুরাতন ব্রিটিশ ইম্পেরিয়াল এককে ক্রমাঙ্কিত একটি স্কেল। কোনো একটি পরিমাপের ক্ষেত্রে স্কেলটি কী পাঠ দিয়েছে চিত্রে সেটিও দেখানো হয়েছে।
বিভিন্ন কাজে সংযুক্ত এককগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে, বিশেষতঃ এগুলোর বাণিজ্যিক প্রয়োগের নিমিত্তে সহায়তার উদ্দেশ্যে ১৯শ এবং ২০শ শতাব্দীতে বিভিন্ন সহায়ক উপকরণের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছিল। এসব সহায়ক উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ছিল যান্ত্রিক ক্যাশ রেজিস্টারসমূহ, যেগুলো যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে পাউন্ড, শিলিং, পেনি এবং ফার্দিংয়ের সমন্বয়ের জন্য অভিযোজন করা হয়েছিল। সবচেয়ে প্রচলিত সহায়ক উপকরণগুলোর মধ্যে আরেকটি ছিল রেডি রেকনার। রেডি রেকনার আদতে একপ্রকার মুদ্রিত বই, যেখানে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে নিয়মমাফিক বিভিন্ন গণনা যেমন বিভিন্ন অঙ্কের মুদ্রার শতকরা বা গুণিতকের ফলাফল কী হবে সেগুলো তালিকাভুক্ত করা থাকত। ১৫০ পৃষ্ঠার সাধারণ এই পুস্তিকায় "এক ফার্দিং থেকে শুরু করে এক পাউন্ডের বিভিন্ন মূল্যমানেরর এক থেকে দশ হাজার" পর্যন্ত গুণিতক তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।
মানুষ বহু বছর ধরেই সংযুক্ত এককের গণনার জটিল প্রকৃতির কথা জানত। ১৫৮৬ সালে ফ্লেমিশ গণিতবিদ সাইমন স্টিভোন একটি প্যাম্ফলেট প্রকাশ করেছিলেন। ভবিষ্যতে যে দশমিক পদ্ধতির মুদ্রা, পরিমাপ ও ওজন যে চালু হবেই হবে তার সর্বজনীন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ডি থিয়েন্ডে ("দশম") নামের তার এই ছোট পুস্তিকায়। আধুনিক যুগে মাইক্রোসফ্ট উইন্ডোজ সেভেন অপারেটিং সিস্টেম চালিত ক্যালকুলেটরসহ একক রূপান্তরের অনেক প্রোগ্রামেই সংযুক্ত একককে সম্প্রসারিত আকারে না দেখিয়ে বরং দশমিক ব্যবহার করে সংকুচিত আকারে একটি অনন্য একক দিয়ে প্রদর্শন করা হয়। যেমন: না দেখিয়ে বরং "২.৫ ফুট" দেখানো হয়।
সংখ্যাতত্ত্ব
ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত "পাটিগণিত"-এর প্রতিশব্দরূপে সংখ্যাতত্ত্ব শব্দটি ব্যবহৃত হতো। পাটিগণিতের এই সমস্যাগুলো মৌলিক গাণিতিক প্রক্রিয়াগুলোর সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত ছিল। আর এগুলো ছিল মৌলিকত্ব, বিভাজ্যতা এবং ফের্মার শেষ উপপাদ্যের মতো পূর্ণসংখ্যার সমীকরণসমূহের সমাধান বিষয়ক। এটা লক্ষ্য করা গেছে যে, অবস্থার দিক থেকে এই সমস্যাগুলোর বেশিরভাগই খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের হলেও এগুলো খুব কঠিন এবং গণিতের অন্যান্য অনেক শাখার ধারণা এবং পদ্ধতির সাথে জড়িত খুব গভীর গণিত ছাড়া এগুলোর সমাধান করা সম্ভব নয়। এই বিষয়টি সংখ্যাতত্ত্বের নতুন নতুন শাখা যেমন: বিশ্লেষণী সংখ্যাতত্ত্ব, বীজগাণিতিক সংখ্যাতত্ত্ব, ডিওফ্যান্টাইন জ্যামিতি এবং পাটিগাণিতিক বীজগণিতীয় জ্যামিতির উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেয়। ফের্মার শেষ উপপাদ্যের ওপর ওয়াইলসের প্রমাণ হলো অত্যাধুনিক ও বাস্তবধর্মী (sophisticated) পদ্ধতিগুলোর প্রয়োজনীয়তার একটি সাধারণ উদাহরণ, যা প্রাথমিক পাটিগণিতের জন্য উল্লেখ করা যেতে পারে এমন সমস্যাগুলোর সমাধানের ক্ষেত্রে পাটিগণিতের চিরায়ত পদ্ধতিগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।
শিক্ষার অংশরূপে পাটিগণিত
পদ্যে রচিত পাটিগণিতের একটি সমস্যা এ রকম:
চৌবাচ্চা ছিল এক প্রকাণ্ড বিশাল
দুই নলে জল আসে সকাল-বিকাল
এক নলে পূর্ণ হতে বিশ মিনিট লাগে
অন্য নলে পূর্ণ হয় না আধা ঘণ্টার আগে
চৌবাচ্চা পূর্ণের সময় করোগো নির্ণন
দুই নল খুলে দিলে লাগে কতক্ষণ।আনন্দবাজার পত্রিকা
গণিতে হাতেখড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে সচরাচর স্বাভাবিক সংখ্যা, পূর্ণ সংখ্যা ও ভগ্নাংশের পাটিগণিতের অ্যালগরিদমের ওপর এবং দশমিক পদ্ধতির স্থানীয় মানের দ্বারা লিখিত দশমিক সংখ্যার পাটিগণিতের অ্যালগরিদমের ওপর অর্থাৎ উল্লেখিত সংখ্যাগুলো হিসাব করার ওপর ভালভাবে নজর দেওয়া হয়। জ্ঞানের এই শাখা কখনও কখনও অ্যালগরিজম (algorism) নামেও পরিচিতি পেয়ে থাকে।
এই অ্যালগরিদমগুলোর দুঃসাধ্যতা এবং নিরুৎসাহী দৃষ্টিগোচরতা শিক্ষাবিদমহলে এই পাঠ্যক্রমকে নিয়ে প্রশ্ন করার দীর্ঘ এক সুযোগ এনে দেয়। আরও কেন্দ্রীয় এবং স্বজ্ঞাত যে গাণিতিক ধারণাগুলো অতীতে শেখানো হতো সেগুলোর পক্ষে শিক্ষাবিদদের দীর্ঘদিন ওকালতি করার পেছনের কারণও ছিল এই দুঃসাধ্যতা এবং নিরুৎসাহী দৃষ্টিগোচরতা। নিউ ম্যাথমেটিক্স নামের নতুন এক পদ্ধতির উদ্ভাবন ছিল এই ধারাবাহিকতার অন্তর্ভুক্ত একটি উল্লেখযোগ্য আন্দোলন, যা স্পুটনিক সংকটের অল্পকিছুদিন পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা কাঠামোয় পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেট তত্ত্বের স্বতঃসিদ্ধ যে বিকাশ, তার আলোকে পাটিগণিত শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল গণিত শেখানোর নতুন এই নিয়মে, যা আবার ছিল উচ্চতর গণিতের প্রচলিত রীতির অনুরূপ।Mathematically Correct: Glossary of Terms
এছাড়াও, যাকাত ও মুসলিম উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আইনসমূহের প্রয়োগ সংক্রান্ত শিক্ষার কাজেও পাটিগণিতের প্রয়োগ ঘটেছিল মুসলিম পণ্ডিতদের হাত ধরে। আবদুল ফাত্তাহ আল দুমিয়াতি-এর দ্য বেস্ট অফ অ্যারিথমেটিক শিরোনামের একটি বইয়ে এ সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে। বইটির শুরুতে গণিতের ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এর প্রয়োগ দেখানো হয়েছে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে।
বিস্তার
আরও দেখুন
বীজগণিত
যোগাত্মক বিপরীত সংখ্যা
সমান্তর প্রগমন
বিনিময় বৈশিষ্ট্য
পূর্ণ সংখ্যা
সংখ্যারেখা
তথ্যসূত্র
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
Cunnington, Susan, The Story of Arithmetic: A Short History of Its Origin and Development, Swan Sonnenschein, London, 1904
Dickson, Leonard Eugene, History of the Theory of Numbers (3 volumes), reprints: Carnegie Institute of Washington, Washington, 1932; Chelsea, New York, 1952, 1966
Euler, Leonhard, Elements of Algebra, Tarquin Press, 2007
Fine, Henry Burchard (1858–1928), The Number System of Algebra Treated Theoretically and Historically, Leach, Shewell & Sanborn, Boston, 1891
Karpinski, Louis Charles (1878–1956), The History of Arithmetic, Rand McNally, Chicago, 1925; reprint: Russell & Russell, New York, 1965
Ore, Øystein, Number Theory and Its History, McGraw–Hill, New York, 1948
Weil, André, Number Theory: An Approach through History, Birkhauser, Boston, 1984; reviewed: Mathematical Reviews 85c:01004
বিষয়শ্রেণী:গণিত
বিষয়শ্রেণী:পাটিগণিত
বিষয়শ্রেণী:গণিত শিক্ষা
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
জ্যামিতি | https://bn.wikipedia.org/wiki/জ্যামিতি | thumb|
thumb|
জ্যামিতি গণিতের একটি শাখা যেখানে আকার ও আকৃতি এবং পরিমান এতদসম্পর্কিত বিভিন্ন আঙ্গিকের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়। জ্যামিতিকে স্থান বা জগতের বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য করা যায়। পাটিগণিতে যেমন গণনা সংক্রান্ত আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা হয়, তেমনি জ্যামিতিতে স্থান বা জগৎ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়। প্রাথমিক জ্যামিতিকে কাজে লাগিয়ে দ্বি-মাত্রিক বিভিন্ন আকারের ক্ষেত্রফল ও পরিসীমা এবং ত্রিমাত্রিক বস্তুসমূহের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করা সম্ভব।
জ্যামিতিক বিশ্লেষণের পদ্ধতি
জ্যামিতিতে কতগুলি সরল ধারণা ব্যবহার করে যুক্তিভিত্তিক জটিলতর কাঠামো গঠন করা হয়। এই সরল ধারণাগুলিকে মোটামুটি তিনটি বড় শ্রেণীতে ভাগ করা সম্ভব - অসংজ্ঞায়িত পদসমূহ, সংজ্ঞায়িত পদসমূহ এবং স্বতঃসিদ্ধসমূহ।
অসংজ্ঞায়িত পদসমূহ
জ্যামিতির কিছু কেন্দ্রীয় ধারণার কোন সরল সংজ্ঞা নেই। এই অসংজ্ঞায়িত ধারণাগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল বিন্দু, রেখা ও তলের ধারণা।
এই মৌলিক ধারণাগুলি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত। একটি বস্তু কোথায়? - এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট, স্থির অবস্থানের কথা চিন্তা করতে হয়। "বিন্দু" পদটি দিয়ে আমাদের এই স্বজ্ঞাভিত্তিক (intuitive) স্থির, নির্দিষ্ট অবস্থানের ধারণাকেই নির্দেশ করা হয়। অনেক ভৌত বস্তুই বিন্দুর ধারণা নির্দশ করে। যেমন কোন ব্লক আকৃতির বস্তুর কোনা, পেন্সিলের ডগা, কিংবা কাগজের উপর ফুটকি। এই জিনিসগুলিকে বিন্দু নামক মানসিক, বিমূর্ত ধারণাটির বাস্তব, মূর্ত প্রতিরূপ বা মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। একইভাবে একটি টানটান সুতা, টেবিলের ধার, পতাকাবাহী দণ্ড, ইত্যাদি পরপর সাজানো অনেকগুলি বিন্দুকে নির্দেশ করে। যদি কল্পনা করা যায় যে এই বিন্দুসারি দুই দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে আমরা যে মানসিক ধারণাতে উপনীত হই, জ্যামিতিতে তার নাম দেয়া হয়েছে "রেখা"। আর "তল" পদটি কোন চ্যাপ্টা পৃষ্ঠ যেমন- মেঝে, টেবিলের উপরিভাগ, কিংবা ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি ভৌত বস্তু দিয়ে নির্দেশ করা যায়। কিন্তু আমাদেরকে কল্পনা করে নিতে হবে যে এটি চারিদিকে অসীম পর্যন্ত সম্প্রসারিত, অর্থাৎ রেখার যেমন কোন শেষবিন্দু নেই, ঠিক তেমনি তলের কোন ধার নেই।
জ্যামিতির অন্যান্য অসংজ্ঞায়িত পদগুলি বিন্দু, রেখা ও তলের মধ্যে সম্পর্কের বর্ণনা দেয়। যেমন - "একটি রেখার উপর অবস্থিত একটি বিন্দু" বাক্যাংশটি একটি অসংজ্ঞায়িত সম্পর্ক। অর্থাৎ এটিকে আরও কোন সরলতর ধারণার সাহায্য নিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।
সংজ্ঞায়িত পদসমূহ
অসংজ্ঞায়িত পদগুলিকে একত্র করে অন্যান্য পদের সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব, যেগুলিকে বলা হয় সংজ্ঞায়িত পদ। যেমন অসমরেখ বিন্দু বলতে সেইসব বিন্দুকে বোঝায় যারা একই রেখার উপর অবস্থিত নয়। একটি রেখাংশ বলতে বোঝায় কোন দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু ও এদের মধ্যবর্তী সমস্ত বিন্দু নিয়ে গঠিত কোন রেখার অংশ। আবার রশ্মি বলতে বোঝায় একটি আংশিক রেখাকে বোঝায় যার একটিমাত্র শেষবিন্দু আছে এবং বাকি সমস্ত বিন্দু ঐ শেষবিন্দু থেকে কোন এক দিকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত।
সংজ্ঞায়িত পদগুলিকে একে অপরের সাথে এবং অসংজ্ঞায়িত পদের সাথে একত্র করে আরও অনেক পদের সংজ্ঞা দেয়া যায়। যেমন - কোণ বলতে দুইটি রশ্মিকে বোঝায় যাদের একটি সাধারণ শেষবিন্দু আছে। একইভাবে ত্রিভুজ ধারণাটিকে তিনটি অসমরেখ বিন্দু এবং এদের মধ্যে অবস্থানকারী রেখাংশের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
স্বতঃসিদ্ধসমূহ
স্বীকার্য বা স্বতঃসিদ্ধগুলি হচ্ছে অপ্রমাণিত কিন্তু সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত কিছু অনুমান, যেমন - "দুইটি ভিন্ন বিন্দুর মধ্য দিয়ে একটি এবং কেবলমাত্র একটি রেখা গমন করতে পারে"। যে ব্যবস্থা বা সংশ্রয়ে বিন্দু, রেখা ও তল সম্পর্কিত কতগুলি বিরোধিতাহীন স্বতঃসিদ্ধ প্রস্তাব করা হয় এবং এই স্বতঃসিদ্ধগুলি থেকে বিভিন্ন উপপাদ্য প্রমাণ করা হয়, সেই সংশ্রয়কে একটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা (বা সংক্ষেপে জ্যামিতি) বলা হয়। স্বতঃসিদ্ধসমূহের বিভিন্ন সেট ব্যবহার সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন জ্যামিতিক ব্যবস্থায় উপনীত হওয়া সম্ভব।
যদি ভৌত স্থান বা জগতের অভিজ্ঞতার সাথে স্বতঃসিদ্ধগুলির মিল থাকে, তবে যৌক্তিকভাবে আশা করা যায় যে ঐ স্বতঃসিদ্ধগুলি ব্যবহার করে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলিও ভৌত জগতের অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যাবে। তবে যেহেতু যেকোন স্বতঃসিদ্ধের সেটই খণ্ডিত, অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পছন্দ করা হয়, সুতরাং তাদের সিদ্ধান্তগুলিও বাস্তব জগতের সাথে পুরোপুরি মিলে যাবে না। তাই কিছু কিছু জ্যামিতিক ব্যবস্থা বাস্তব জগতে সম্পূর্ণ প্রয়োগ না-ও করা যেতে পারে।
উপপাদ্যসমূহ
উপপাদ্যগুলি স্বতঃসিদ্ধগুলি থেকে যুক্তিভিত্তিক আরোহী পদ্ধতিতে বের করা হয়। আর এই আরোহী পদ্ধতিকে বলা হয় উপপাদ্যটির প্রমাণ। কোন প্রমাণের প্রতিটি ধাপকে হয় কোন স্বতঃসিদ্ধ অথবা কোন পূর্ব-প্রমাণিত উপপাদ্য দিয়ে সমর্থিত হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি উপপাদ্য বলে যে, যদি একটি রেখা কোন সমান্তরাল রেখাজোড়ের যেকোন একটির সাথে সমান্তরাল হয়, তবে সেটি রেখাজোড়ের অপর রেখাটির সাথেও সমান্তরাল। এখানে সমান্তরাল রেখা বলতে সেই সব রেখাকে বোঝায় যারা একে অপরের থেকে তাদের গোটা দৈর্ঘ্য বরাবর সমান দূরত্ব বজায় রাখে।
আমরা যখন জ্যামিতিতে কোন উপপাদ্য প্রমাণ করি, তখন আমরা কতগুলি অনুমানের একটি সেট থেকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই।
ইউক্লিডীয় জ্যামিতি
বিভিন্ন জ্যামিতিক ব্যবস্থার মধ্যে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সাথেই আমরা বেশি পরিচিত। ইউক্লিডীয় জ্যামিতি আমাদের চারপাশের প্রাত্যহিক জগতের বেশির ভাগ অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে পারে। প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদ ইউক্লিডের নামে এই জ্যামিতিক ব্যবস্থার নামকরণ করা হয়েছে, কেননা তিনিই প্রথম এই জ্যামিতিক ব্যবস্থার বিবরণ দেন। যদিও ইউক্লিডীয় জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধগুলির সাথে বাস্তব জগতের অনেক মিল পাওয়া যায়, প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এগুলি পুরোপুরি নিখুঁত নয়।
দ্বি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিকে অনেকসময় সমতলীয় জ্যামিতি এবং ত্রি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিকে অনেক সময় ঘন জ্যামিতি নামে ডাকা হয়। সমতলীয় জ্যামিতিতে কেবল সেইসব জ্যামিতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয় যেগুলি কেবল একটি তলের উপর অবস্থিত। এগুলির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ - এই দুইটি মাত্রা আছে। অন্যদিকে ঘন জ্যামিতিতে সেইসব জ্যামিতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয় যেগুলির তিনটি মাত্রা আছে: দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা।
ত্রিমাত্রিক ফাঁপা কোণককে একটি তল দিয়ে কাটলে যে দ্বিমাত্রিক রেখা পাওয়া যায়, তাকে কনিক ছেদ বলে; এটি জ্যামিতির একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধসমূহ
ইউক্লিড খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের জ্যামিতিবিদ ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন যে তার সময়কার বিভিন্ন জ্যামিতিক উপপাদ্যগুলিকে খুবই অল্প সংখ্যক স্বতঃসিদ্ধের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তিনি নির্ণয় করেন যে নিচের মাত্র পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে সমস্ত উপপাদ্যতে উপনীত হওয়া যায়:
যেকোন দুইটি প্রদত্ত বিন্দুর মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব।
কোন সরলরেখাকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত করা যায় কিংবা যেকোন বিন্দুতে সীমাবদ্ধ করা যায়।
যেকোন বিন্দুকে কেন্দ্র ধরে ও যেকোন ব্যাসার্ধ (বৃত্তের যেকোন বিন্দু থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব) নিয়ে একটিমাত্র বৃত্ত আঁকা সম্ভব।
সব সমকোণ সবসময় সমান।
একটি প্রদত্ত সরলরেখার বহিঃস্থ একটি প্রদত্ত বিন্দু দিয়ে প্রথম সরলরেখার সমান্তরাল কেবলমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব।
উপরের পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধকে অন্যান্য সংজ্ঞায়িত পদের সাথে বিভিন্নভাবে সমন্বিত করে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিক বস্তুর ধর্মগুলি (যেমন ক্ষেত্রফল, পরিধি, ইত্যদি) প্রমাণ করা সম্ভব। এই ধর্মগুলি আবার আরও জটিল জ্যামিতিক উপপাদ্যের প্রমাণে ব্যবহার করা যায়।
দ্বিমাত্রিক ইউক্লিডীয় আকৃতি
দ্বিমাত্রিক জ্যামিতিতে প্রায়শই দেখা যায় এমন জ্যামিতিক আকৃতির মধ্যে আছে বৃত্ত, বহুভুজ, ত্রিভুজ, এবং চতুর্ভুজসমূহ। ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ দুইটি বিশেষ ধরনের বহুভুজ।
বৃত্ত
বৃত্ত একটি সমতলীয় বক্ররেখা যার প্রতিটি বিন্দু একই সমতলের উপর অবস্থিত একটি নিদিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরবর্তী, এই নির্দিষ্ট বিন্দুকে বৃত্তের কেন্দ্র বলে।তিনটি অসমরেখ বিন্দুর মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র একটি বৃত্ত আঁকা সম্ভব। অনেকসময় বৃত্ত বলতে শুধু বক্ররেখাটিকে না বুঝিয়ে রেখাটি দ্বারা সম্পূর্ণ ক্ষেত্রকেও বোঝানো হয়।
যেসব বৃত্তের একটি সাধারণ কেন্দ্র আছে তাদেরকে সমকেন্দ্রিক বৃত্ত বলা হয়। যেসব কোণের শীর্ষবিন্দু বৃত্তের কেন্দ্র এবং দুই বাহু বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ, সেগুলিকে বৃত্তের কেন্দ্রীয় কোণ বলে। বৃত্তের পরিধিকে ৩৬০টি সমান ভাগ বা ডিগ্রিতে ভাগ করা হয় এবং কোন কেন্দ্রীয় কোণের ডিগ্রি পরিমাপ ঐ কোণটি বৃত্ত থেকে যে চাপ ছেদ করে তাতে অন্তর্গত ডিগ্রির সংখ্যার সমান।
বৃত্তের পরিধি (C) ও ব্যাসের (d) গুণফলকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে এর ক্ষেত্রফল A পাওয়া যায় অর্থাৎ । পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতের আসন্ন মান ৩.১৪১৫৯২৬৫। দশমিকের পরে অসীমসংখ্যক অ-পর্যায়বৃত্ত অঙ্কবিশিষ্ট এই ধ্রুবকটিকে পাই নামে ডাকা হয়। বৃত্তের ক্ষেত্রফলকে আকারেও লেখা যায়, যেখানে r হল ব্যাসার্ধ। একইভাবে, বৃত্তের পরিধি হল ব্যাস ও পাই-এর গুণফল ।
বহুভুজ
সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ সমতল যেকোন চিত্রকে বহুভুজ বলা হয়। যদি বহুভুজের সবগুলি বাহু ও কোণ সমান হয়, তবে সেটিকে সুষম বহুভুজ বলে। সুষম বহুভুজের কেন্দ্র থেকে যেকোন বাহুর দূরত্বকে apothem বলে। কোন সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফল হল এর apothem (a) ও পরিসীমার (p) গুণফলের অর্ধেক, অর্থাৎ ।
ত্রিভুজ
ত্রিভুজ হল সমতলের উপর অঙ্কিত একটি চিত্র যা তিনটি সরলরেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ। যদি ত্রিভুজের তিনটি বাহুই অসম হয়, তবে একে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে। আর কেবল দুই বাহু সমান হলে তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ এবং তিনটি বাহুই সমান হলে তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলা হয়। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজে সমান বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণগুলি সমান। আর সমবাহু ত্রিভুজের সবগুলি কোণ সমান।
যে ত্রিভুজের একটি কোন সমকোণ তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে। সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুর নাম অতিভুজ। পিথাগোরাসের বিখ্যাত উপপাদ্য অনুযায়ী সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ত্রিভুজটির সমকোণ-সংলগ্ন দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র দুটির ক্ষেত্রফলের যোগফলের সমান। অর্থাৎ যেখানে c অতিভুজের দৈর্ঘ্য এবং a ও b হলো সমকোণ-সংলগ্ন বাহুদুটির দৈর্ঘ্য৷
ত্রিভুজের ভিতরের কোনগুলিকে অন্তঃস্থ কোণ বলে, আর ত্রিভুজের বাহুগুলিকে বাড়িয়ে দিয়ে যে কোণগুলি পাওয়া যায়, তাদেরকে হলে বহিঃস্থ কোণ। ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃস্থ কোণের সমষ্টি ১৮০°। এছাড়াও, যেকোন বহিঃস্থ এর অন্তঃস্থ বিপরীত কোণদ্বয়ের সমষ্টির সমান।
ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু পর্যন্ত আঁকা রেখাকে বলা হয় ত্রিভুজটির একটি মধ্যমা। ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমা একই বিন্দুতে ছেদ করে এবং এটি প্রতিটি মধ্যমার শীর্ষবিন্দু থেকে দুই-তৃতীয়াংশ দূরত্বে অবস্থিত। ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বকে ঐ ত্রিভুজের উচ্চতা বলে।
দুইটি ত্রিভুজকে সর্বসম বলা হয় যদি এগুলি নিচের তিনটি শর্তের যেকোনটি পূরণ করে: (১) একটি ত্রিভুজের এক বাহু ও দুইটি কোণ অন্যটির অনুরূপ বাহু ও দুইটি কোণের সমান; (২) কোন একটি ত্রিভুজের দুই বাহু এবং এদের অন্তর্ভুক্ত কোণ অন্য ত্রিভুজটির দুই বাহু ও অন্তর্ভুক্ত কোণের সমান; অথবা (৩) একটি ত্রিভুজের তিনটি বাহু অপর ত্রিভুজের তিন বাহুর সমান। যদি একই সমতলে অবস্থিত দুইটি ত্রিভুজকে নিখুঁতভাবে একটির উপর আরেকটিকে বসিয়ে দেয়া যায়, তবে তারা সরাসরি সর্বসম। আর যদি বসানোর আগে একটিকে উল্টে নিতে হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি বিপরীতভাবে সর্বসম।
যদি দুইটি ত্রিভুজের একটির সবগুলি কোণ অন্যটির সবগুলি কোণের সমান হয়, তবে তাদেরকে সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয় এবং এদের অনুরূপ বাহুগুলি সমানুপাতিক হয়।
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর ভূমি (b) ও এই ভূমির উপর অঙ্কিত উচ্চতার (h) গুণফলের অর্ধেক ()। যেকোন বাহুকেই ভূমি ধরা যায়। যদি ত্রিভুজটি সমবাহু হয়, তবে এর ক্ষেত্রফল , যেখানে a যেকোন বাহুর দৈর্ঘ্য। যদি কোন ত্রিভুজের তিনটি বাহু a, b এবং c হয়, তবে গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের দেয়া সূত্র অনুযায়ী এর ক্ষেত্রফল , যেখানে s ত্রিভুজের পরিসীমার অর্ধেক ।
চতুর্ভুজ
চতুর্ভুজ হল চারটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ সমতল ক্ষেত্র। যেসব বিভিন্ন চতুর্ভুজের সাথে আমরা অতিপরিচিত তাদের মধ্যে আছে ট্রাপিজিয়াম, যার দুইটি সমান্তরাল কিন্তু অসমান। সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলি সমান ও সমান্তরাল। রম্বস এক ধরনের সামান্তরিক যার সবগুলি বাহু সমান। আয়তক্ষেত্র এক ধরনের সামান্তরিক যার কোণগুলি সমকোণ। বর্গক্ষেত্র হল সমান বাহুবিশিষ্ট আয়তক্ষেত্র। সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। আয়োতক্ষেত্রের কর্ণদ্বয় সমান। যেসব চতুর্ভুজের বাহুগুলি অসমান ও অসমান্তরাল, তাদেরকে বিষম চতুর্ভুজ বলে।
ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল এর সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের সমষ্টি ও উচ্চতার গুণফলের অর্ধেক: A = [(b1 + b2)/2]h। সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল এর ভূমি ও উচ্চতার গুণফলের সমান: A = bh।
বিষম চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল গণনার জন্য চতুর্ভুজটিকে সাধারণত কর্ণের সাহায্যে দুইটি ত্রিভুজে ভাগ করে নেয়া হয় এবং তারপর ত্রিভুজ দুইটির ক্ষেত্রফল আলাদা করে বের করে যোগ করে সম্পূর্ণ চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল বের করা হয়।
ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় আকৃতিসমূহ
ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে যে বস্তুগুলি প্রায়োই আলোচিত হয় তাদের মধ্যে আছে গোলক, বহুতলক, ত্রিশিরা বা প্রিজম, বেলন বা সিলিন্ডার, ও কোণক। বেলন আসলে প্রিজমেরই একটি বিশেষ রূপ; আর কোণক পিরামিডের বিশেষ রূপ।
গোলক
গোলক একটি তল যার সমস্ত বিন্দু কেন্দ্র নামের একটি বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। গোলককে একটি সমতল দিয়ে ছেদ করলে ছেদবিন্দুগুলি একটি বৃত্ত গঠন করে। তলটি গোলকের কেন্দ্র দিয়ে গেলে এরূপ বৃহত্তম বৃত্তটি পাওয়া যায়। পৃথিবীর বিষুবরেখা এরকম একটি বৃহত্তম বৃত্ত (যদি পৃথিবীকে একটি গোলক কল্পনা করি)। গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল A = 4pr2, এবং আয়তন V = 4/3pr3 সমীকরণ দিয়ে পাওয়া যায়।
বহুতলক
সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা আবদ্ধ যেকোন ঘনবস্তুকে বহুতলক বলে। যদি কোন বহুতলকের পৃষ্ঠগুলির প্রতিটি সর্বসম সুষম বহুভুজ হয়, তবে এটিকে সুষম বহুতলক বলা হয়। প্রমাণ করা হয়েছে যে কেবল পাঁচ রকমের বহুতলকের জন্য সুষম বহুতলক সম্ভব। এগুলি হল চতুস্তলক (চারটি তল), ঘনক (ছয়টি তল), অষ্টতলক (আটটি তল), দ্বাদশতলক (১২টি তল), এবং বিশতলক (২০টি তল)। প্রাচীন গ্রিক জ্যামিতিবিদেরা এই পাঁচটি বহুতলক সম্পর্কে জানতেন। সুষম কিংবা অসম, যেকোন বহুতলকের একটি বিশেষ ধর্ম হচ্ছে এর তলের সংখ্যা ও শীর্ষবিন্দুর সংখ্যা যোগ করে ২ বিয়োগ করলে এর ধারের সংখ্যা পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককাল পর্যন্তও বহুতলকগুলির সাথে প্রকৃতির রহস্যময়তার সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হত।
ত্রিশিরা বা প্রিজম
প্রিজম হচ্ছে এমন এক ধরনের বহুতলক যার দুইটি পৃষ্ঠ পরস্পর সমান্তরাল ও সর্বসম (এদেরকে ভূমি বলে) এবং যার অন্য সব পৃষ্ঠ সামান্তরিক। parallelepiped এক ধরনের প্রিজম যার ভূমিদ্বয় সামান্তরিক। একটি সমকোণী প্রিজমের তলগুলি আয়তাকার(ভূমিগুলি আয়তাকার হতেও পারে নাও হতে পারে)। প্রিজমের আয়তন এর যেকোন ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতার গুণফল: V = bh.
পিরামিড
পিরামিড একটি বহুতলক যার ভূমি একটি বহুভুজ এবং পার্শ্বগুলি একই শীর্ষবিন্দুবিশিষ্ট ত্রিভুজ। যদি কোন পিরামিডের ভূমি সুষম বহুভুজ হয় এবং এর শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রবিন্দুকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হয়, তবে এটিকে সুষম সমকোণী পিরামিড বলে। পিরামিডের ক্ষেত্রফল এর ভূমির ক্ষেত্রফলের এক-তৃতীয়াংশ ও এর উচ্চতার গুণফলের সমান।
বেলন বা সিলিন্ডার ও কোণক
বেলন বা সিলিন্ডার হল বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট প্রিজম। এর আয়তনের সূত্রও তাই প্রিজমের মত ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতার গুণফল দিয়ে বের করা হয়। যদি দুইটি ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমিদ্বয়ের উপর লম্ব হয়, তবে সেই সিলিন্ডারকে সমকোণী সিলিন্ডার বলা হয়। নতুবা একে তির্যক সিলিন্ডার বলে।
কোণক (cone) হল বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট পিরামিড। পিরামিডের শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হলে তাকে সমকোণী কোণক বলে। b ক্ষেত্রফলের ভূমি ও h উচ্চতার কোণকের আয়তনের সূত্র পিরামিডের অনুরূপ: V = bh
কনিক ছেদ
কোণকের পৃষ্ঠতলকে সমতল একটি তল দিয়ে ছেদ করলে যে বক্ররেখা পাওয়া যায়, তাকে কনিক ছেদ বলে (উল্লেখ্য এখানে কোণক বলতে আসলে দুইটি সমকোণী বৃত্তভূমিক কোণকের একটিকে উল্টিয়ে দুই শীর্ষবিন্দু একত্রে স্থাপন করলে যে জ্যামিতিক চিত্রটি তৈরি হয়, তাকে বোঝাচ্ছে)। শীর্ষবিন্দুর দুইপাশের কোণকের যেকোন পৃষ্ঠকে nappe বলে।
যদি কোণকের অক্ষ ও এর পৃষ্ঠের অন্তর্বর্তী কোণ A হয় এবং কোণকটিকে একটি তল A-এর চেয়ে বড় কোণে ছেদ করে, তবে ছেদরেখাটি হয় একটি বদ্ধ বক্ররেখা যার নাম উপবৃত্ত। যদি তলটি কোণককে অক্ষের সাথে লম্বভাবে ছেদ করে, তবে যে আবদ্ধ বক্ররেখাটি পাওয়া যায়, তার নাম বৃত্ত। বৃত্ত তাই উপবৃত্তের একটি বিশেষ রূপ।
যদি তলটি অক্ষের সাথে A কোণের সমান কোণ করে ছেদ করে, অর্থাৎ কোণকের পৃষ্ঠতলের সমান্তরালে ছেদ করে, তবে যে উন্মুক্ত ও অসীমে বিস্তৃত বক্ররেখাটি ছেদরেখা হিসেবে পাওয়া যায়, তাকে পরাবৃত্ত বলে। আর যদি তলটি অক্ষের সমান্তরালে বা A কোণের চেয়ে ক্ষুদ্রতর কোণে ছেদ করে, তবে যে বক্ররেখাটি পাওয়া যায়, তাকে অধিবৃত্ত বলে। এইক্ষেত্রে কোণকটির উভয় nappe-ই ছিন্ন হয়, ফলে অধিবৃত্তের দুইটি শাখা থাকে, যাদের প্রতিটি অসীম পর্যন্ত প্রসারিত।
যেহেতু কনিক ছেদগুলি দ্বিমাত্রিক বক্ররেখা, তাই এদের সংজ্ঞায় ত্রিমাত্রিক কোণকের উল্লেখ না করে অন্য উপায়ে সংজ্ঞা দেয়া হয়। দ্বিমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোণকীয় ছেদ হল সেই সমস্ত বিন্দুর চলনপথ একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে যেগুলির দূরত্ব এবং ঐ নির্দিষ্ট বন্দুর বহিঃস্থ একটি নির্দিষ্ট রেখা থেকে ঐ একই বিন্দুগুলির দূরত্ব একটি ধ্রুব অনুপাত বজায় রাখে। নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বলা হয় ফোকাস বা উপকেন্দ্র, এবং নির্দিষ্ট রেখাটিকে বলা হয় নিয়ামক বা দিগাক্ষ। ধ্রুব অনুপাতটিকে বলা হয় কনিক ছেদের উৎকেন্দ্রিকতা এবং একে e দিয়ে নির্দেশ করা হয়। যদি P একটি বিন্দু হয় এবং Q বিন্দুটি P থেকে দিগাক্ষরেখার উপর অঙ্কিত লম্বের পাদবিন্দু হয়, তবে P বিন্দুটির F ফোকাসবিশিষ্ট একটি কনিক ছেদের উপর অবস্থিত হওয়ার একমাত্র শর্ত হল [FP] = e[QP]। যখন e = ১ তখন কনিকটি একটি পরাবৃত্ত; যখন e > ১, তখন এটি অধিবৃত্ত; এবং যখন e < ১, এটি একটি উপবৃত্ত।
কনিকের অনেক গাণিতিক বৈশিষ্ট্য গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে কাজে আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোন কনিকের আকারে নির্মিত দর্পণে আলো নির্দিষ্ট ধর্ম অনুযায়ী প্রতিফলিত হয়। বৃত্তাকার দর্পণের ফোকাস থেকে উৎসারিত রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে আবার ফোকাসে ফিরে আসে। উপবৃত্তাকার দর্পণের দুইটি ফোকাসের যেকোন একটি থেকে উৎসারিত রশ্মি প্রতিফলনের পর অন্য ফোকাসটি দিয়ে গমন করে। পরাবৃত্তীয় দর্পণে ফোকাস থেকে উৎসারিত আলো প্রতিফলনের পর সমান্তরাল রেখায় গমন করে, এ কারণে স্পটলাইটে পরাবৃত্তীয় দর্পণ ব্যবহার করা হয়, যেন আলো চারপাশে বিক্ষিপ্ত না হয়। অধিবৃত্তের একটি ফোকাস থেকে উৎসারিত আলোকরশ্মি প্রতিফলনের পর এমনভাবে গমন করে যেন মনে হয় এগুলি অন্য ফোকাসটি থেকে উৎসারিত হচ্ছে।
thumb|এই ত্রিমাত্রিক চিত্রটি উত্তর মেরু থেকে গোলকের নিচে একটি সমতলের উপর স্টেরিওগ্রাফিক অভিক্ষেপ প্রদর্শন করে।
বিশ্লেষণী জ্যামিতি
কিছু কিছু সাংখ্যিক ও বীজগাণিতিক সমীকরণ দিয়ে বিন্দু, রেখা এবং অন্যান্য জ্যামিতিক আকৃতি নির্দেশ করা যায়, এই উপলব্ধি থেকেই বিশ্লেষণী জ্যামিতির জন্ম। অক্ষ ও স্থানাঙ্ক ব্যবহার করে সমীকরণগুলির চিত্রলেখ অঙ্কনের মাধ্যমে বিন্দু, রেখা ও অন্যান্য আকৃতি নির্দেশ করা সম্ভব। যেমন, লম্বভাবে অবস্থিত দুইটি অক্ষ থেকে দূরত্ব নির্দেশ করে কোন একটি বিন্দুর অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব। যদি কোনো বিন্দু x-অক্ষ থেকে ৫ একক দূরে এবং y-অক্ষ থেকে ৭ একক দূরে অবস্থিত হয়, তবে এটির অবস্থান x = 7, y = 5, এই সমীকরণ দুইটি দিয়ে নির্দেশ করা সম্ভব। একইভাবে, একটি সরলরেখাকে সবসময় ax + by + c = 0 আকারের একটি সমীকরণ দিয়ে নির্দেশ করা যায়। বৃত্ত, উপবৃত্ত, কোণীয় ছেদ ও অন্যান্য আকৃতির জন্য আরও জটিল সমীকরণ আছে।
বিশ্লেষণী জ্যামিতিতে দুই ধরনের সমস্যা খুবই সাধারণ। প্রথম ধরনের সমস্যাতে কতগুলি বিন্দুর জ্যামিতিক বিবরণ দেয়া থাকে, এবং সেখান থেকে এই বিন্দুগুলিকে সিদ্ধ করে এমন বীজগাণিতিক সমীকরণ করতে হয়। দ্বিতীয় ধরনের সমস্যা এর বিপরীত: প্রদত্ত বীজগাণিতিক সমীকরণ থেকে এমন কোন বিন্দু সমাহার বের করতে হয় যেগুলি একটি জ্যামিতিক বিবৃতি মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ ৩ ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি বৃত্ত যার কেন্দ্র x ও y অক্ষের ছেদবিন্দু তথা মূলবিন্দুতে অবস্থিত, সেটির সমস্ত বিন্দু সমীকরণ মেনে চলবে। এই ধরনের সমীকরণ ব্যবহার করে জ্যামিতিক অন্যান্য সমস্যা যেমন কোন কোণ বা রেখাংশের সমদ্বিখণ্ডক বের করা, বা কোন রেখার নির্দিষ্ট বিন্দুতে লম্ব আঁকা, তিনটি প্রদত্ত অসমরেখ বিন্দুর মধ্য দিয়ে বৃত্ত আঁকা, ইত্যাদি সম্পাদন করা যায়।
একইভাবে তিনটি অক্ষ ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক জগতে বিন্দু, রেখা ও অন্যান্য চিত্র নির্দেশ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তৃতীয় অক্ষ বা z অক্ষটি পর দুইটি অক্ষের উপর লম্বভাবে অবস্থিত থাকে।
গণিতের উন্নয়নে বিশ্লেষণী জ্যামিতি মূল্যবান ভূমিকা রাখে। এটি সংখ্যার সম্পর্ক তথা বিশ্লেষণী গণিতের সাথে জ্যামিতি তথা স্থানিক সম্পর্কের যোগসূত্র স্থাপন করে। বিশ্লেষণী জ্যামিতির কৌশলগুলি সংখ্যা ও বীজগাণিতিক রাশিমালার জ্যামিতিক উপস্থাপন সম্ভব করে। ফলে ক্যালকুলাস, ফাংশনের তত্ত্ব, ও উচ্চতর গণিতের অন্যান্য সমস্যা নতুন আলোকে দেখার সুযোগ হয়। বিশ্লেষণী জ্যামিতি ছাড়া অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ও তিনের অধিক মাত্রার জ্যামিতির আলোচনা সম্ভবপর হত না।
অন্তরক জ্যামিতি
জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রিড্রিশ গাউস ভূমি জরিপ ও প্রভূমিতি (geodesy) সংক্রান্ত ব্যাবহারিক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে অন্তরক জ্যামিতি শাখা শুরু করেন। এতে তিনি অন্তরক ক্যালকুলাস ব্যবহার করে বক্ররেখা ও বক্রতলসমূহের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি গাণিতিকভাবে দেখান যে একটি বেলনের স্বকীয় বক্রতা ও একটি সমতলের স্বকীয় বক্রতা একই, কেননা একটি ফাঁপা বেলনকে অক্ষ বরাবর কেটে চ্যাপ্টা করলে এটি একটি সমতলে পরিণত হয়, কিন্তু গোলকের ক্ষেত্রে রূপবিকার না করে এটি করা যায় না।
অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি
ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ বলে যে কোনো প্রদত্ত রেখার বহিঃস্থ একটি বিন্দু দিয়ে ঐ রেখার সমান্তরাল কেবল একটি রেখা আঁকা সম্ভব এবং এই সমান্তরাল রেখা কখনোই প্রদত্ত রেখাটিকে স্পর্শ করবে না, অসীম পর্যন্ত সমান্তরালে চলতে থাকবে। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে জার্মান গণীতবিদ কার্ল ফ্রিড্রিশ গাউস, রুশ গণিতবিদ নিকলাই ইভানভিচ লোবাচেভ্স্কি এবং হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ ইয়ানোশ বলিয়ই একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে দেখান যে এমন একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্যামিতিক ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব যেখানে ইউক্লিডের এই পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটিকে অন্য একটি স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব যেটি বলে যে কোন প্রদত্ত রেখার বহিঃস্থ কোন বিন্দু দিয়ে রেখাটির সমান্তরাল অসীম সংখ্যক রেখা আঁকা সম্ভব। পরবর্তীতে ১৮৬০ সালে জার্মান গণিতবিদ গেয়র্গ ফ্রিড্রিশ বের্নহার্ট রিমান দেখান যে আরেকটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব যেখানে এরকম কোনো সমান্তরাল রেখাই আঁকা সম্ভব নয়।
উপরের দুই ধরনের অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির বিস্তারিত বিবরণ বেশ জটিল, তবে দুটিকেই সহজ মডেলের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব। বলিয়াই-লোবাচেভ্স্কি জ্যামিতিতে (যাকে অনেক সময় অধিবৃত্তীয় জ্যামিতিও বলা হয়) এমন একটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা আলোচনা করা হয় যার সমস্ত বিন্দু একটি বৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং যার সমস্ত সম্ভাব্য রেখা বৃত্তটির জ্যা। যেহেতু সংজ্ঞা অনুসারে দুইটি সমান্তরাল রেখাকে যতই প্রসারিত করা হোক না কেন, এর কখনোই মিলবে না, এবং অধিবৃত্তীয় জ্যামিতিতে যেহেতু রেখাগুলি বৃত্তের ধারের বাইরে প্রসারিত করা সম্ভব নয়, সে কারণে যেকোন রেখার সমান্তরাল অসীম সংখ্যক রেখা রেখাটির বহিঃস্থ বিন্দু দিয়ে আঁকা সম্ভব।
একইভাবে রিমানীয় বা উপবৃত্তীয় অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে জ্যামিতিক "বিশ্ব" বা "জগত" একটি বিশাল গোলকের পৃষ্ঠ যেখানে সব সরলরেখা একেকটি বৃহত্তম বৃত্ত। এই জ্যামিতিতে এক জোড়া সমান্তরাল রেখা আঁকা অসম্ভব।
অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বের জন্য, অর্থাৎ আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে, ইউক্লিডীয় ও অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে মহাজাগতিক দূরত্ব এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা যেমন আপেক্ষিকতার সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য ইউক্লিডীয় জ্যামিতির চেয়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি পর্যবেক্ষণকৃত ঘটনাবলির আরও সূক্ষ্ম ও সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বক্রতলের একটি রিমানীয় জ্যামিতির উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত।
অভিক্ষেপী জ্যামিতি
বিভিন্ন জ্যামিতিক বস্তু ও এদের অভিক্ষেপের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করতে গিয়ে ১৭শ শতকে জ্যামিতির আরেকটি শাখা শুরু হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কনিকগুলিকে অভিক্ষেপের মাধ্যমে একটি থেকে আরেকটিতে রূপান্তরিত করা যায়। কোন ফ্ল্যাশলাইটকে দেয়ালের সাথে লম্বভাবে ধরলে বৃত্তাকার আলোকপট্টি ফেলে, কিন্তু কোণ করে হেলিয়ে ধরলে দেয়ালে উপবৃত্তাকার আলোকপট্টির সৃষ্টি হয়।
অভিক্ষেপী রূপান্তরের পরেও জ্যামিতিক চিত্রের কিছু কিছু ধর্ম অপরিবর্তনশীল থাকে। এই অপরিবর্তনশীল ধর্মগুলি কী, তাই অভিক্ষেপী জ্যামিতির বিভিন্ন উপপাদ্যের আলোচ্য।
চার বা তার বেশি মাত্রার জ্যামিতি
অভিক্ষেপী ও বিশ্লেষণী জ্যামিতির উন্নয়ন গণিতবিদদেরকে তিনের বেশি মাত্রার জগতের জ্যামিতি অধ্যয়নে উৎসাহী করে। অনেকে মনে করেন এ ধরনের বহুমাত্রিক জগৎ নিয়ে চিন্তা করা খুব কঠিন। কিন্তু আসলে গণিতবিদেরা এগুলি আরও সহজ উপায়ে কল্পনা করেন।
ভৌত বিশ্বের যেকোন বিন্দুর অবস্থান তিনটি অক্ষের (সাধারণত x, y, ও z-অক্ষ নামে পরিচিত) সাপেক্ষে নির্দেশ করা সম্ভব। ভৌত বিশ্বের স্থান বিষয়ক জ্যামিতি তাই ত্রিমাত্রিক।
এই ত্রিমাত্রিক জগতের প্রতিটি বিন্দুকে কল্পনায় যদি একটি গোলক দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে নেওয়া হয়, তবে এটি একটি চতুর্মাত্রিক জগতে পরিণত হয়। কেননা তখন প্রতিটি বিন্দু-গোলকের অবস্থান নির্দেশ করার জন্য চারটি নির্দেশক লাগবে: গোলকের কেন্দ্র নির্দেশকারী x, y, ও z-স্থানাংক এবং গোলকটির ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য।
একইভাবে দ্বিমাত্রিক জগৎ দিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক জগতকে উপস্থাপন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দ্বিমাত্রিক জগতের প্রতিটি বিন্দুকে একটি বৃত্ত দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়, এবং ত্রিমাত্রিক জগতের তিনটি মাত্রা হল বৃত্তের কেন্দ্র নির্দেশক দুইটি স্থানাংক এবং এর ব্যাসার্ধ।
তিনের বেশি মাত্রার জগৎ নিয়ে জ্যামিতিক ধারণাগুলি ভৌত বিজ্ঞানে, বিশেষ করে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চার বা তার বেশি মাত্রার জগতের সুষম জ্যামিতিক বস্তুগুলির অধ্যয়নে বিশ্লেষণী জ্যামিতির পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হয়। এই জ্যামিতিকে বলে সাংগঠনিক জ্যামিতি (structural geometry)। সাংগঠনিক জ্যামিতির একটি সরল উদাহরণ হল শুন্য, এক, দুই, তিন, চার বা তার বেশি মাত্রার জগতের সরলতম জ্যামিতিক বস্তুটির সংজ্ঞা বের করা, যাকে সবচেয়ে কম সংখ্যক শীর্ষ, ধার ও পৃষ্ঠ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এদের মধ্যে শুন্য, এক, দুই ও তিন মাত্রার জন্য বস্তুগুলি হচ্ছে আমাদের পরিচিত বিন্দু, রেখা, ত্রিভুজ ও চতুস্তলক। চার মাত্রার জগতের জন্য দেখানো যায় যে সরলতম জ্যামিতিক বস্তুটির পাঁচটি শীর্ষ, ১০টি ধার এবং ১০টি পৃষ্ঠ আছে।
জ্যামিতিশাস্ত্রের ইতিহাস
প্রাচীন জ্যামিতিবিদেরা ভূমিক্ষেত্রসমূহের ক্ষেত্রফল ও ঘরবাড়ি নির্মাণের সময় সঠিকভাবে সমকোণ নির্ণয়ের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতেন। প্রাচীন মিশরে প্রতি বছর নীল নদের বন্যায় জমিসমূহের সীমানা নষ্ট হয়ে যেত এবং এই সীমানাগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য জ্যামিতির সাহায্য নেয়া হত। এই ধরনের অভিজ্ঞতাভিত্তিক জ্যামিতি প্রাচীন মিশর, সুমের এবং ব্যাবিলনিয়াতে বিকাশ লাভ করে এবং পরবর্তীতে গ্রিকদের হাতে পরিশীলিত ও নিয়মাবদ্ধ হয়।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়া
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে জ্যামিতির প্রথম নথিভুক্ত সূচনা পাওয়া যায়। জ্যামিতির প্রাচীনতম পাঠ্যগুলি হল মিশরীয় রিন্ড প্যাপিরাস (২০০০ খ্রিস্টপূর্ব ),মস্কো প্যাপিরাস (c. ১৮৯০ খ্রিস্টপূর্ব ), এবং ব্যাবিলনীয় মাটির ট্যাবলেট, যেমন Plimpton ৩২২ (১৯০০ খ্রিস্টপূর্ব )। মস্কো প্যাপিরাস ছোট পিরামিড বা ফ্রাস্টামের আয়তন গণনার জন্য একটি সূত্র দেয়।Boyer, C.B. (1991) [1989]. A History of Mathematics (Second edition, revised by Uta C. Merzbach ed.). New York: Wiley. ISBN 978-0-471-54397-8.Egypt" p. 19 মাটির ট্যাবলেটগুলি (৩৫০-৫০ খ্রিস্টপূর্ব ) দেখায় যে ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সময়-বেগ স্থানের মধ্যে বৃহস্পতির অবস্থান এবং গতি গণনা করার জন্য ট্র্যাপিজয়েড পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন।
প্রাচীন গ্রিসের জ্যামিতি
thumb|একজন গ্রীক মহিলা জ্যামিতি শিক্ষা দিচ্ছে
ইতিহাসের সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ জ্যামিতিবিদ হিসেবে যার নাম পাওয়া যায়, তিনি হলেন মিলেতুসের থালেস। থালেস ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে গ্রিসে বাস করতেন। থালেসকে অনেকগুলি সরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্যের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়; এদের মধ্যে অন্যতম হল অর্ধবৃত্তস্থিত কোণ যে সমকোণ, তার প্রমাণ।
থালেসই প্রথম দেখান যে কতগুলি সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত বিবৃতি তথা স্বতঃসিদ্ধ থেকে যৌক্তিকভাবে অগ্রসর হয়ে একটি জ্যামিতিক সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই স্বতঃসিদ্ধগুলিকে থালেস ও তার পরবর্তী গ্রিক জ্যামিতিবিদেরা স্ব-প্রমাণিত সত্য বলে মনে করতেন। তবে আধুনিক গাণিতিক চিন্তাধারায় এগুলিকে কতগুলি সুবিধাজনক কিন্তু যথেচ্ছ অনুমান বলে গণ্য করা হয়। থালেসের এই আরোহী পদ্ধতির ধারণা সমস্ত জ্যামিতিক গবেষণায়, এমনকি সমস্ত গাণিতিক গবেষণায় বর্তমান কাল পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছে।
থালেসের এক বিখ্যাত ছাত্র ছিলেন পিথাগোরাস। পিথাগোরাস ও তার সহযোগীরা ত্রিভুজ, বৃত্ত, অনুপাত, ও কিছু কিছু ঘনবস্তুর জন্য অনেক নতুন নতুন উপপাদ্য প্রমাণ করেন। পিথাগোরাসের সবচেয়ে বিখ্যাত উপপাদ্যটি বর্তমানে তার নামে নামান্বিত এবং বলে যে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ বাকি বাহুদ্বয়ের বর্গের যোগফলের সমষ্টি।
গ্রিকদের প্রস্তাবিত ও স্বীক্রৃত স্বতঃসিদ্ধগুলি ছিল এই জাতীয়: “দুইটি বিন্দুর মধ্যবর্তী ক্ষুদ্রতম পথ সরলরেখা।” এই ধরনের স্বতঃসিদ্ধ থেকে বিন্দু, রেখা, কোণ, বক্ররেখা ও তলসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন উপপাদ্যে যৌক্তিকভাবে উপনীত হওয়া যেত। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে ইউক্লিডই সর্বপ্রথম বিভিন্ন ছড়িয়ে থাকা উপপাদ্য ও স্বতঃসিদ্ধগুলি একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে তার Elements গ্রন্থতে প্রকাশ করেন। ১৩টি পার্চমেন্ট রোল বা পুস্তকে লেখা এই গ্রন্থ মানবমনের চরম উৎকর্ষের একটি নিদর্শন। প্রকাশের প্রায় ১০০০ বছর গণিতবিদের এগুলোতে সামান্যই কোন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন যোগ করতে পেরেছিলেন। বিংশ শতাব্দীতেও জ্যামিতির প্রাথমিক পাঠ্য হিসেবে ইউক্লিডের বইটি অবিকৃতভাবে ব্যবহার করা হত। ইউক্লিডের কাজের গুরুত্ব তার ফলাফলে নয়, বরং তার পদ্ধতিতে। তার প্রমাণিত বেশির ভাগ উপপাদ্যই বহু বছর আগেই জানা ছিল, কিন্তু তার আগে কেউই দেখাতে পারেনি যে এগুলি সব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এবং সামান্য কিছু প্রাথমিক স্বতদঃসিদ্ধ থেকে এগুলিতে উপনীত হওয়া সম্ভব। ইউক্লিড এভাবে তার কাজের মাধ্যমে আরোহী পদ্ধতির গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন।
গ্রিকরা কেবল রুলার ও কাঁটা-কম্পাস ব্যবহার করে জ্যামিতিক চিত্র আঁকার সমস্যা (সমপাদ্য) উদ্ভাবন করেছিল। সরল সমস্যাগুলির মধ্যে আছে কোন প্রদত্ত রেখাংশের দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যের রেখাংশ আঁকা, কোন একটি কোণকে সমদ্বিখণ্ডিত করা, ইত্যাদি। গ্রিকদের এ সংক্রান্ত তিনটি বিখ্যাত সমস্যা বহু বছর ধরে গণিতবিদেরা সমাধান করতে পারেন নি: প্রদত্ত ঘনকের দ্বিগুণ আয়তনের ঘনক আঁকা, প্রদত্ত বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমান ক্ষেত্রফলের বর্গ আঁকা, এবং একটি কোণকে সমত্রিখণ্ডিত করা। এগুলির কোনটিই রুলার ও কাঁটাকম্পাসের সাহায্য নিয়ে আঁকা সম্ভব নয়। এদের মধ্যে বৃত্তের বর্গীকরণের অসম্ভাব্যতা ১৮৮২ সালের আগে প্রমাণিত হয়নি।
গ্রিক গণিতবিদ পের্গার আপোল্লনিয়ুস কনিক ছেদগুলি নিয়ে গবেষণা করেন এবং এগুলির অনেক মৌলিক ধর্ম খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দেই আবিষ্কার করেন। কনিকগুলি ভৌত বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে কাজে আসে। যেমন যেকোন খ-বস্তুর কক্ষপথ, যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এমন গ্রহ বা ধূমকেতুর গতিপথ সবসময় কোন এক ধরনের কনিকের উপর অবস্থান করে। ক্রৃত্রিম উপগ্রহগুলিও পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে।
মহান গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিদিস খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে জ্যামিতিতে অনেকগুলি অবদান রাখেন। তিনি অনেকগুলি বক্ররেখাবদ্ধ আকৃতির ক্ষেত্রফল এবং বক্রতলাবদ্ধ ঘনবস্তুর, যেমন সিলিন্ডারের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করার সূত্র বের করেন। এছাড়াও পাই-এর আসন্ন মান নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি বের করেন এবং বলেন যে এই মান ৩ ১০/৭০ ও ৩ ১০/৭১ এর মধ্যবর্তী।
মধ্যযুগে জ্যামিতি
thumb|১৫শতকে জ্যামিতিচর্চা, একজন আরব ও একজন ইউরোপীয়ান জ্যামিতি গবেষণা করছে
৫ম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৫শ শতক পর্যন্ত ইউরোপে জ্যামিতির তেমন উন্নতিসাধন হয়নি।এসময় ইউরোপ অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে এবং উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানেরা এবং ভারতের হিন্দুরা জ্যামিতির বেশির ভাগ উন্নতি সাধন করেন।গ্রিক গণিতের বেশির ভাগই ছড়িয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। তবে এদের কিছু কিছু, যেমন ইউক্লিডের এলিমেন্টস মুসলমান ও হিন্দুরা অনুবাদ করে সংরক্ষণ করেন ও অধ্যয়ন করেন।
ভারতীয় গণিতবিদরাও জ্যামিতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শতপথ ব্রাহ্মণ (খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক) ও সুল্ব সূত্রে জ্যামিতিক নির্মাণের নিয়ম রয়েছে।সুলবা সূত্রে,পিথাগোরিয়ান থিওরেমের প্রাচীনতম বিদ্যমান মৌখিক অভিব্যক্তি রয়েছে।Staal, Frits (1999). "Greek and Vedic Geometry". Journal of Indian Philosophy. 27 (1–2): 105–127. doi:10.1023/A:1004364417713. S2CID 170894641. তারা পিথাগোরিয়ান ট্রিপলের তালিকা তৈরি করে, যেগুলো মূলত ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ।(Cooke 2005, p. 198): "The arithmetic content of the Śulva Sūtras consists of rules for finding Pythagorean triples such as (3, 4, 5), (5, 12, 13), (8, 15, 17), and (12, 35, 37). It is not certain what practical use these arithmetic rules had. The best conjecture is that they were part of religious ritual. A Hindu home was required to have three fires burning at three different altars. The three altars were to be of different shapes, but all three were to have the same area. These conditions led to certain "Diophantine" problems, a particular case of which is the generation of Pythagorean triples, so as to make one square integer equal to the sum of two others."
আর্যভট্টের “আর্যভটিয়া”(৪৯৯), ক্ষেত্র এবং আয়তনের গণনা অন্তর্ভুক্ত করে। ৬ষ্ঠ শতকের ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র পুনরাবিষ্কার করেন। এছাড়াও তিনি পাই-এর অত্যন্ত সঠিক মানের একটি সূত্র দান করেন; তিনি পাই-এর মান ধরেন ৬২৮৩২/২০০০০, বা ৩.১৪১৬, যা দশমিকের পর চার ঘর পর্যন্ত পাইয়ের সঠিক মান।
ব্রহ্মগুপ্ত তার জ্যোতির্বিদ্যা রচনা ”ব্রহ্মস্ফটসিদ্ধান্ত” লিখেছিলেন ৬২৮সালে যা ১২অধ্যায়, ৬৬টি সংস্কৃত শ্লোক সম্বলিত। এতে চক্রীয় চতুর্ভুজের কর্ণ,চক্রীয় চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র (হেরনের সূত্রের একটি সাধারণীকরণ), মূলদ ত্রিভুজের সম্পূর্ণ বিবরণ অন্তর্ভুক্ত আছে।Hayashi, Takao (2003). "Indian Mathematics". In Grattan-Guinness, Ivor (ed.). Companion Encyclopedia of the History and Philosophy of the Mathematical Sciences. Vol. 1. Baltimore, MD: The Johns Hopkins University Press. pp. 118–130. ISBN 978-0-8018-7396-6. ৪র্থ ও ১৩শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে জ্যামিতির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ত্রিকোণমিতি শাস্ত্রের উন্নতি সাধন করা হয়।
আল-মাহানি (৮৫৩) জ্যামিতিক সমস্যা যেমন বীজগণিতের সমস্যাগুলির সাথে ঘনকের প্রতিলিপি করার ধারণাটি কল্পনা করেছিলেন।O'Connor, John J.; Robertson, Edmund F. "Al-Mahani". MacTutor History of Mathematics Archive. University of St Andrews. থাবিত ইবনে কুররা (ল্যাটিনে থিবিট নামে পরিচিত) (৮৩৬-৭০১) জ্যামিতিক পরিমাণের অনুপাতের উপর পাটিগণিতিক ক্রিয়াকলাপ প্রয়োগ নিয়ে কাজ করেছিলেন এবং বিশ্লেষণাত্মক জ্যামিতির বিকাশে অবদান রেখেছিলেন।O'Connor, John J.; Robertson, Edmund F. "Al-Sabi Thabit ibn Qurra al-Harrani". MacTutor History of Mathematics Archive. University of St Andrews. ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১৩১) ঘন সমীকরণের জ্যামিতিক সমাধান খুঁজে পান। O'Connor, John J.; Robertson, Edmund F. "Omar Khayyam". MacTutor History of Mathematics Archive. University of St Andrews.
১২শ ও ১৩শ শতকে ইউক্লিডের এলিমেন্টস গ্রিক ও আরবি থেকে লাতিনে ও আধুনিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং ধর্মীয় শিক্ষালয়ে জ্যামিতি শিক্ষা যোগ করা হয়।
১৭শ ও ১৮শ শতকের জ্যামিতি
ফরাসি দার্শনিক ও গণিতবিদ রেনে দেকার্তে জ্যামিতিকে সামনের দিকে এগিয়ে দেন। ১৬৩৭ সালে তার প্রভাবশালী রচনা Discourse on Method প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার সাহায্যে জ্যামিতিক আকৃতি প্রকাশের পদ্ধতি উপস্থাপন করেন। তার কাজ জ্যামিতি ও বীজগণিতের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। এই যোগসূত্রই বিশ্লেষণী জ্যামিতি এবং আধুনিক জ্যামিতির ভিত্তি।
১৭শ শতকের জ্যামিতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল অভিক্ষেপী জ্যামিতির উদ্ভাবন। অভিক্ষেপী জ্যামিতিতে কোন জ্যামিতিক বস্তুর এক তল থেকে আরেক তলে অভিক্ষেপ ফেললে এর ধর্মের কী পরিবর্তন ঘটে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। জেরার দ্যজার্গ নামের এক ফরাসি প্রকৌশলী perspective নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অভিক্ষেপী জ্যামিতি উদ্ভাবন করেন। ১৮শ শতকে গাসপার মোঁজ নামের ফরাসি এক গণিতের অধ্যাপক বিবরণমূলক জ্যামিতি নামে জ্যামিতির আরেকটি শাখা উদ্ভাবন করেন। বিবরণমূলক জ্যামিতিতে দ্বি-মাত্রিক চিত্রের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক বস্তুসমূহকে কীভাবে ত্রুটিহীনভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং এর সাহায্যে কীভাবে ত্রিমাত্রিক জ্যামিতির নানা সমস্যা সমাধান করা যায়, তার আলোচনা করা হয়। প্রকৌশল ও স্থাপত্যের অঙ্কনের ভিত্তি হল এই বিবরণমূলক জ্যামিতি।
আধুনিক জ্যামিতি
ইউক্লিডীয় জ্যামিতির কাঠামোর ভেতরেই বিশ্লেষণী, অভিক্ষেপী ও বিবরণমূলক জ্যামিতির আবর্ভাব ঘটে। বহু শতাব্দী ধরে গণিতবিদেরা বিশ্বাস করতেন যে অনন্য সমান্তরাল রেখা সংক্রান্ত ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটি বাকী চারটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে প্রমাণ করা যাবে, কিন্তু এই প্রমাণ বের করার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু ১৯শ শতকে এসে নতুন নতুন জ্যামিতিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হয় যেগুলিতে ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এইসব নতুন ধরনের অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেন কার্ল ফ্রিড্রিশ গাউস, ইয়ানোশ বলিয়ই, নিকলাই লবাচেভ্স্কি এবং গেয়র্গ ফ্রিড্রিশ বের্নহার্ট রিমান।
১৮৭২ সালে জার্মান গণিতবিদ ফেলিক্স ক্লাইন গণিতের একটি অপেক্ষাকৃত নবীন শাখা গ্রুপ তত্ত্ব ব্যবহার করে তার সময়কার সমস্ত জ্যামিতিক ব্যবস্থাগুলিকে এক ব্যবস্থার অধীনে আনেন। ১৮৯৯ সালে আরেকজন জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট তার Foundations of Geometry বইটি প্রকাশ করেন, যাতে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির জন্য স্বতঃসিদ্ধসমূহের একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা প্রদান করা হয় এবং এটি গণিতের অন্যান্য শাখায় গভীর প্রভাব ফেলে।
১৯১৬ সালে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে দেখা যায় অনেক ভৌত ঘটনা জ্যামিতিক মূলনীতি থেকে উপনীত হওয়া সম্ভব। এই তত্ত্বের সাফল্য অন্তরক জ্যামিতি ও টপোগণিতের গবেষণায় জোয়ার আনে।
১৯শ শতকের ব্রিটিশ গণিতবিদ আর্থার কেলি চার বা তারও বেশি মাত্রার জ্যামিতি প্রবর্তন করেন। ১৯শ শতকে ফ্র্যাক্টাল মাত্রার আলোচনা শুরু হয়। ১৯৭০-এর দশকে ফ্র্যাক্টালের ধারণা কাজে লাগিয়ে জ্যামিতির নতুন শাখা ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতির উদ্ভব হয়।
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:জ্যামিতি
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
কম্পিউটার বিজ্ঞান | https://bn.wikipedia.org/wiki/কম্পিউটার_বিজ্ঞান | 144px|alt=large capital lambda|Programming language theory|link=Programming language theory 144px|alt=Plot of a quicksort algorithm|Computational complexity theory|link=Computational complexity theory 144px|alt=Utah teapot representing computer graphics|Computer graphics|link=Computer graphics (computer science) 144px|alt=Microsoft Tastenmaus mouse representing human-computer interaction|Human–computer interaction|link=Human–computer interaction
কম্পিউটার বিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটারে প্রয়োগের জন্য পরিগণনা এবং ব্যবহারিক কৌশলগুলির তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে কাজ করা হয়।
কম্পিউটার বিজ্ঞান (ইংরেজি: Computer Science) জ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তথ্য ও পরিগণনার তাত্ত্বিক ভিত্তির গবেষণা করা হয় এবং পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটার নামক যন্ত্রে এসব পরিগণনা সম্পাদনের ব্যবহারিক পদ্ধতির প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। "Computer science is the study of computation." Computer Science Department, College of Saint Benedict , Saint John's University"Computer Science is the study of all aspects of computer systems, from the theoretical foundations to the very practical aspects of managing large software projects." Massey University কম্পিউটার বিজ্ঞান ক্ষেত্রে গবেষণাকারী বিজ্ঞানীদেরকে কম্পিউটার বিজ্ঞানী বলা হয়। একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী পরিগণনার তত্ত্ব ও সফটওয়্যার পদ্ধতির নকশার ব্যবহার সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন।
কম্পিউটার বিজ্ঞানকে প্রায়শই অ্যালগরিদমীয় পদ্ধতির একটি বিধিবদ্ধ অধ্যয়ন হিসেবে অভিহিত করা হয়, যে পদ্ধতির সাহায্যে তথ্য সৃষ্ট, বর্ণিত ও পরিবর্তিত হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানের অনেক উপশাখা আছে। কিছু শাখা, যেমন কম্পিউটার গ্রাফিক্সে নির্দিষ্ট ফলাফল পরিগণনাই মূল লক্ষ্য। আবার কিছু শাখা, যেমন: পরিগণনামূলক জটিলতা তত্ত্বে বিভিন্ন পরিগণনামূলক সমস্যার বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করাই আলোচ্য। এছাড়াও কিছু শাখা আছে যেখানে বিভিন্ন ভৌত ব্যবস্থায় পরিগণনা বাস্তবায়ন করার পদ্ধতিসমূহ আলোচিত হয়; যেমন: প্রোগ্রামিং ভাষা তত্ত্বে একটি পরিগণনামূলক পদ্ধতিকে কীভাবে কম্পিউটারের ভাষায় প্রকাশ করা যায় তা আলোচনা করা হয়। কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট পরিগণনামূলক সমস্যা সমাধান করে থাকেন। অন্যদিকে, মানুষ-কম্পিউটার মিথস্ক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হলো কম্পিউটার এবং পরিগণনার ফলাফলসমূহ ব্যবহারোপযোগী, কার্যকর এবং মানুষের কাছে সার্বিকভাবে সহজলভ্য করা।
সাধারণ মানুষ অনেক সময় কম্পিউটার বিজ্ঞানকে কম্পিউটার সম্পর্কিত অন্যান্য পেশার (যেমন: তথ্যপ্রযুক্তি) সাথে মিলিয়ে ফেলে, অথবা, তারা মনে করে এটা কম্পিউটার সম্পর্কিত তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা যেমন: গেমিং, ওয়েব ব্রাউজিং এবং ওয়ার্ডপ্রসেসিং ঘরানার কিছু। কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যেসব প্রোগ্রামের সাহায্যে কম্পিউটার গেম, ওয়েব ব্রাউজার ধরনের সফটওয়্যারসমূহ তৈরি করা, তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করা এবং এ থেকে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে এখনকার চেয়ে ভালো নতুন নতুন প্রোগ্রাম সৃষ্টি করা।"Common myths and preconceptions about Cambridge Computer Science" Computer Science Department , University of Cambridge
ইতিহাস
ডানে_উপরে|থাম্ব|পরিগণক যন্ত্র বা কম্পিউটারের জনক হিসেবে খ্যাত চার্লস ব্যাবেজ
ডানে_উপরে|থাম্ব|অ্যাডা লাভলেস, যিনি একটি পরিগণক যন্ত্র বা কম্পিউটারকে কাজ করানোর জন্য প্রথম কলনবিধি বা অ্যালগরিদম প্রদান করেন
কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রাথমিক ভিত্তি আধুনিক দ্বি-আংকিক পরিগণক যন্ত্র তথা ডিজিটাল কম্পিউটারের উদ্ভাবনের অনেক আগেই স্থাপিত হয়। গুণ এবং ভাগের মতো গণনামূলক প্রক্রিয়াগুলিকে সহায়তা করতে অ্যাবাকাসের মতো গণনামূলক যন্ত্রগুলি প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান ছিল। উপরন্তু, পরিগণন বা কম্পিউটিং সম্পাদনের জন্য কলনবিধি বা অ্যালগরিদমগুলি অত্যাধুনিক পরিগণন সরঞ্জামগুলির বিকাশের আগেই প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান ছিল।
১৬২৩ সালে জার্মান উদ্ভাবক ভিলহেল্ম শিকার্ড প্রথম যান্ত্রিক গণনাযন্ত্র বা ক্যালকুলেটর তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়, যদিও এটি পূর্বলেখযোগ্য (প্রোগ্রামযোগ্য) ছিল না। ১৬৭৩ সালে জার্মান গণিতবিদ গটফ্রিড লাইবনিৎস একটি দ্বি-আংকিক যান্ত্রিক গণনাযন্ত্র (ডিজিটাল ক্যালকুলেটর) তৈরি করেন যা "ধাপবিশিষ্ট হিসাবযন্ত্র" নামে পরিচিত ছিল। দ্বি-আংকিক সংখ্যা পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করার জন্য তাঁকে প্রথম কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও তথ্য তাত্ত্বিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১৮২০ সালে চার্লস জেভিয়ার টমাস কার্যালয়ে ব্যবহার করার উপযোগী একটি যান্ত্রিক গণনাযন্ত্র বাজারে ছাড়েন যার নাম ছিল "অ্যারিথোমিটার"।
আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের উৎস হিসেবে ইংরেজ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজের কাজ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ব্যাবেজ ১৮৩৭ সালে একটি পূর্বলেখযোগ্য যান্ত্রিক গণকযন্ত্র তথা প্রোগ্রামযোগ্য যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর প্রস্তাব করেছিলেন। ১৯ শতকে জর্জ বুল উদ্ভাবিত বুলিয়ান বীজগণিত দ্বিমিক বা বাইনারি পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বর্তনী তৈরির গাণিতিক ভিত্তি প্রদান করে।
১৯৪০-এর দশকে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত কম্পিউটার বিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বা প্রকৌশলবিদ্যার চেয়ে একটি আলাদা শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত না। তবে এর পর থেকে এটি অনেক শাখা প্রশাখার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো একান্তই কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্বন্ধীয়।
অ্যালগোরিদম তত্ত্ব, গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান, ও প্রোগ্রাম সংরক্ষণের ক্ষমতাবিশিষ্ট ইলেকট্রনীয় কম্পিউটারের উদ্ভাবন - এই তিনের সম্মিলনে ১৯৪০-এর দশকের শুরুতে কম্পিউটার বিজ্ঞান নামক উচ্চশিক্ষায়তনিক শাস্ত্রটির জন্ম হয়। ১৯৩০-এর দশকে অ্যালান টুরিং, আলোন্জো চার্চ ও কুর্ট গ্যোডেলের কলনবিধি বা অ্যালগোরিদম বিষয়ক তত্ত্বসমূহ ও এগুলি যন্ত্রে বাস্তবায়ন সংক্রান্ত গবেষণা, তারও ৬০ বছর আগে অগাস্টা অ্যাডা কিং (কাউন্টেস অফ লাভলেস)-এর উদ্ভাবিত কলনবিধি, ১৯২০-এর দশকে ভ্যানিভার বুশের উদ্ভাবিত সদৃশ পরিগণক যন্ত্র (অ্যানালগ কম্পিউটার), এবং ১৯৩০-এর দশকে হাওয়ার্ড আইকেন ও কনরাড ৎসুজে কর্তৃক উদ্ভাবিত ইলেকট্রনীয় পরিগণক যন্ত্র (ইলেকট্রনিক কম্পিউটার) - এ সবই কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্মে ভূমিকা রাখে। ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে জন ভন নিউম্যানের রচনাবলি নতুন এই শাস্ত্রের তাত্ত্বিক ভিত্তি সুদৃঢ় করে। মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী জন প্রেস্পার একার্ট ও মার্কিন পদার্থবিদ জন মক্লি ১৯৪৬ সালে বিশ্বের সর্বপ্রথম টুরিং-সম্পূর্ণ সাধারণ ব্যবহারোপযোগী ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার এনিয়াক উদ্ভাবন করেন। তারা ১৯৫১ সালে বিশ্বের সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটার ইউনিভ্যাক-১-ও তৈরি করেন। এর আগে জন প্রেস্পার একার্ট ১৯৪৬ সালে পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা স্তরে ইতিহাসের সর্বপ্রথম একটি কম্পিউটার বিজ্ঞান-বিষয়ক পাঠক্রম পরিচালনা করেন; এটি মুর স্কুল লেকচার্স (মুর বিদ্যালয়ের বক্তৃতামালা) নামে বিখ্যাত।
১৯৪০-এর দশকের শেষে ও ১৯৫০-এর দশকের শুরুর দিকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের আদি পর্যায়ে গবেষণার লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের জন্য ব্যবহৃত পরিগণনা করার প্রক্রিয়াগুলোকে স্বয়ংক্রিয় রূপ দেওয়া। কোন প্রক্রিয়ায় পরিগণনা করলে তাড়াতাড়ি সঠিক ফল পাওয়া যাবে, তা বের করার জন্য বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা পরিগণনার বিভিন্ন তাত্ত্বিক প্রতিমান (মডেল) তৈরি করেন। এসময় কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গণিতের সাংখ্যিক বিশ্লেষণ নামক শাখার মধ্যে বহু মিল ছিল, যে শাখায় পরিগণনার নির্ভুলতা ও যথার্থতা নিয়ে গবেষণা করা হত।
১৯৫০ ও ১৯৭০-এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এসময় কম্পিউটারের ব্যবহার সরল করার উদ্দেশ্যে এক ধরনের কৃত্রিম ভাষা তথা প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহের উদ্ভাবন করেন এবং কম্পিউটার ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী অপারেটিং সিস্টেম প্রোগ্রামের প্রচলন করেন। তারা কম্পিউটারের নতুন ব্যবহারিক ক্ষেত্র সন্ধান ও নতুন ধরনের কম্পিউটার নকশায়ন নিয়েও গবেষণা চালান। এসময় প্রথম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা হয় এবং পরিগণনা ও মনের চিন্তাধারার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার পরীক্ষাগারে পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার বিজ্ঞানে সনদ প্রদানকারী এক বছর মেয়াদী একটি শিক্ষাক্রম চালু হয়। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সনদ এবং ১৯৬৮ সালে স্নাতক পর্যায়ে সনদ প্রদানকারী শিক্ষাক্রম চালু হয়।
১৯৭০-এর দশকে কম্পিউটার চিপ প্রস্তুতকারকেরা ব্যাপকভাবে মাইক্রোপ্রসেসর উৎপাদন করতে শুরু করেন। মাইক্রোপ্রসেসর হল কম্পিউটারের ভেতরে অবস্থিত প্রধান তথ্য প্রক্রিয়াকারী কেন্দ্র। এই নতুন প্রযুক্তি কম্পিউটার শিল্পব্যবস্থায় বিপ্লব আনে; কম্পিউটার তৈরির খরচ বহুলাংশে কমে যায় এবং কম্পিউটার তথ্য প্রক্রিয়াকরণের দ্রুতি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। মাইক্রোপ্রসেসরের ওপর ভিত্তি করেই সৃষ্টি হয় ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা পিসি। পিসি-র আবির্ভাবের পর কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যায়। ১৯৭০-এর শুরু থেকে ১৯৮০-র দশকের পুরোটা জুড়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানের পরিধির ব্যাপক প্রসার ঘটে। কম্পিউটিং শিল্পে উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তি চালনার জন্য এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ব্যবহার্য নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলো তৈরির জন্য এর কোন বিকল্প ছিল না। এভাবে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অতীতের গবেষণাগুলোর ফলাফল ব্যক্তিগত কম্পিউটারের প্রসারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা অনবরত কম্পিউটার ও তথ্য ব্যবস্থাসমূহের উন্নতি সাধন করে চলেছেন। তারা আরও জটিল, নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী কম্পিউটার নকশা করছেন, এমন সব কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন যেগুলো দিয়ে বিপুল পরিমাণ তথ্য দক্ষতার সাথে আদান প্রদান করা যায় এবং কম্পিউটারকে কীভাবে বুদ্ধিমান সত্তার মত আচরণ করানো যায়, তার উপায়গুলো খুঁজে বের করছেন। কম্পিউটার ক্রমে আধুনিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হচ্ছে, ফলে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা বর্তমান সমস্যাগুলোর আরও ভাল সমাধান উদ্ভাবন করছেন এবং নতুন নতুন সমস্যার রসদও পাচ্ছেন।
লক্ষ্য
কম্পিউটার বিজ্ঞানের লক্ষ্য বিচিত্র। জনসাধারণকে বর্তমান কম্পিউটারগুলো চালনা শিক্ষা দেয়া থেকে শুরু করে ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তি, যেগুলো কয়েক দশকেও বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই, সেগুলো নিয়ে গবেষণা – এ সবই কম্পিউটার বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। সব বিশেষ বিশেষ লক্ষ্যেরই মূল লক্ষ্য তথ্যের উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে মানবজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের উন্নতিসাধন।
তত্ত্ব, প্রকৌশল ও পরীক্ষা নিরীক্ষা – এ তিনের সমন্বয়েই কম্পিউটার বিজ্ঞান। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা একটি তত্ত্ব দাঁড় করান, তারপর সেই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে একটি কম্পিউটার ব্যবস্থা তৈরি করেন এবং তারপর সেটি পরীক্ষা করে দেখেন।
অনেকের মনে হতে পারে যে কম্পিউটার পরীক্ষানিরীক্ষার আবার প্রয়োজন কি? কম্পিউটারকে যা আদেশ দেওয়া হয় তা-ই সে পালন করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তব বিশ্বে কম্পিউটারের নানা জটিল ব্যবহারের সময় কম্পিউটারের অনেক অজানা আচরণ পরিলক্ষিত হয় যেগুলোর পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। পরীক্ষা নিরীক্ষা আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ তাই কম্পিউটার বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শাখা
কম্পিউটার বিজ্ঞানকে কতগুলি বৃহত্তর শাখায় ভাগ করা যায়। যেমন - বিচ্ছিন্ন গণিত, অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠন, প্রোগ্রামিং ভাষা, কম্পিউটার স্থাপত্য, অপারেটিং সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, সফটওয়্যার প্রকৌশল, ডাটাবেস ও তথ্য আনয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটবিজ্ঞান, কম্পিউটার গ্রাফিক্স, মানুষ-কম্পিউটার মিথষ্ক্রিয়া, পরিগণনামূলক বিজ্ঞান, প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞান, এবং জৈব-তথ্যবিজ্ঞান। নিচে এগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল।
বিচ্ছিন্ন গণিত
বিচ্ছিন্ন গণিতের ধারণাগুলি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি। খুব কম সংখ্যক কম্পিউটার বিজ্ঞানীই বিচ্ছিন্ন গণিতের উপর বিশেষ জোর দিয়ে গবেষণা করেন, কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞানের বহু এলাকায় বিচ্ছিন্ন গণিতের ধারণাগুলি ঘুরেফিরে আসে। সেট তত্ত্ব, গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান, গ্রাফ তত্ত্ব, এবং গুচ্ছবিন্যাসতত্ত্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা বিচ্ছিন্ন গণিতের আলোচ্য।
উপাত্ত সংগঠন এবং অ্যালগোরিদমের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন গণিতের ধারণাগুলির সর্বাধিক প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায়। তবে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও এর ব্যবহার আছে। যেমন বিধিবদ্ধ সংজ্ঞায়ন, প্রোগ্রামের যাচাইকরণ এবং তথ্যগুপ্তিবিদ্যায় গাণিতিক প্রমাণ সৃষ্টি ও অনুধাবনের ক্ষমতা অত্যন্ত দরকারি একটি দক্ষতা। গ্রাফ তত্ত্বের ধারণাগুলি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, অপারেটিং সিস্টেম এবং কম্পাইলারের গবেষণায় কাজে আসে। সেট তত্ত্বের ধারণাগুলি সফটওয়্যার প্রকৌশল এবং ডাটাবেজের গবেষণায় কাজে লাগে।
বিচ্ছিন্ন গণিতে আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে আছে:
ফাংশন, অন্বয়, সেট, পায়রাখোপ নীতি, উপাদান সংখ্যা, গণনযোগ্যতা
গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান, প্রতিজ্ঞামূলক যুক্তিবিজ্ঞান, যৌক্তিক সংযোগ, সত্যক সারণি, স্বাভাবিক রূপ, বৈধতা, বিধেয় যুক্তিবিজ্ঞান, সার্বজনীন মানকরণ ও অস্তিত্ববাচক মানকরণ, গ্রহণমূলক ধারা, বর্জনমূলক ধারা।
গাণিতিক প্রমাণ, শর্তাবদ্ধতা, আবর্ত, উদ্দেশ্য নিষেধন, ব্যাবর্ত, নিষেধন, স্ববিরোধিতা, প্রত্যক্ষ প্রমাণ, বাধক দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রমাণ, ব্যাবর্তন দ্বারা প্রমাণ, স্ববিরোধিতা দ্বারা প্রমাণ, গাণিতিক আরোহ, শক্তিশালী আরোহ, পুরোগনির্দেশী গাণিতিক সংজ্ঞা, সুবিন্যস্তকরণ।
পরিগণনা, পরিগণনার যুক্তি (যোগ ও গুণন নিয়ম, গ্রহণ-বর্জন নীতি), সমান্তর ও গুণোত্তর ধারা, ফিবোনাচ্চি সংখ্যা, পায়রাখোপ নীতি, বিন্যাস ও সমাবেশ, প্যাসকেলের অভেদ, দ্বিপদী উপপাদ্য, পুনরাবর্তন সম্পর্ক, মাস্টার উপপাদ্য।
ট্রি, অদিকনির্দেশী গ্রাফ, দিকনির্দেশী গ্রাফ, প্রজনন বৃক্ষ, গমন কৌশল।
বিচ্ছিন্ন সম্ভাব্যতা, সসীম সম্ভাব্যতা জগৎ, সম্ভাব্যতা পরিমাপ, ঘটনা, সাপেক্ষ সম্ভাব্যতা, স্বাধীনতা, বেইজের উপপাদ্য, পূর্ণসাংখ্যিক দৈব চলক, প্রত্যাশা]]।
অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনসমূহ
অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনসমূহ ব্যবহার করেই কম্পিউটার প্রোগ্রাম রচনা করা হয়। প্রথীতযশা কম্পিউটার বিজ্ঞানী নিকলাউস ভির্টের একটি সুবিখ্যাত বইয়ের নাম ছিল Algorithms + Data Structures = Programs (১৯৭৫)। অ্যালগোরিদম (algorithm) হল সুনির্দিষ্ট ও সসীম সংখ্যক ধাপবিশিষ্ট পদ্ধতি, যা সসীম সময়ের মধ্যে ও সসীম পরিমাণ কম্পিউটার মেমরি ব্যবহার করে কোন সমস্যার সমাধান করে। অতিব্যবহৃত অ্যালগোরিদমগুলোর মধ্যে আছে কোন উপাত্ত সংগ্রহ অনুসন্ধান (searching), উপাত্ত বিন্যস্তকরণ (sorting), ম্যাট্রিক্স গুণন ও অন্যান্য সাংখ্যিক অপারেশনসমূহ, ইত্যাদি। কোন উপাত্ত সংগঠন (data structure) হল তথ্যের একটি নির্দিষ্ট ধরনের সুবিন্যস্ত রূপ, যা উপাত্তের বিভিন্ন মানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। লিস্ট, অ্যারে, রেকর্ড, স্ট্যাক, কিউ, ট্রি, ইত্যাদি কিছু বহু-ব্যবহৃত উপাত্ত সংগঠন।
অ্যালগোরিদম কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি মৌলিক বিষয়। কোন্ অ্যালগোরিদম পছন্দ করা হয়েছে এবং সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে --- এই দুইটি বিষয় বাস্তব বিশ্বে যেকোন সফটওয়্যার ব্যবস্থার কর্মদক্ষতা নির্ধারণ করে। ভাল অ্যালগোরিদমের নকশায়ন তাই সফটওয়্যারের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাছাড়া অ্যালগোরিদম নিয়ে গবেষণা প্রোগ্রামিং ভাষা, ঘরানা, কিংবা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নির্বিশেষে বিভিন্ন সমস্যার অন্তর্নিহিত প্রকৃতি বুঝতে সহায়তা করে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যতম একটি লক্ষ্য হল কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য কোন্ অ্যালগোরিদমটি সবচেয়ে শক্তিশালী ও উপযোগী, কিংবা এরকম আদৌ কোন অ্যালগোরিদম আছে কি না, তা বের করা। অ্যালগোরিদমের সব ধরনের আলোচনায় তাই দক্ষতার পরিমাপের ব্যাপারটি ঘুরে ফিরে আসে।
অ্যালগোরিদম তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে পরিগণনীয়তার তত্ত্ব, পরিগণনামূলক জটিলতা, তথ্য-ভিত্তিক জটিলতা, সহবর্তমানতা তত্ত্ব, সম্ভাবনাভিত্তিক অ্যালগোরিদম, আরোহী ডাটাবেস তত্ত্ব ও সাম্পর্কিক ডাটাবেস তত্ত্ব, দৈবকৃত অ্যালগোরিদম, বিন্যাস-মিলানো অ্যালগোরিদম, গ্রাফ ও নেটওয়ার্ক অ্যালগোরিদম, বীজগাণিতিক অ্যালগোরিদম, গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক সর্বোচ্চ অনুকূলীকরণ, এবং তথ্যগুপ্তিবিদ্যা। অ্যালগোরিদম তত্ত্ব অন্যান্য যেসব জ্ঞানের শাখার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো হল বিচ্ছিন্ন গণিত (যার মধ্যে পড়ে গ্রাফ তত্ত্ব, পৌনঃপুনিক ফাংশন, পুনর্ঘটন সম্পর্কসমূহ, গুচ্ছবিন্যাস তত্ত্ব), ক্যালকুলাস, আরোহী পদ্ধতি, বিধেয় যুক্তিবিজ্ঞান, সময়ভিত্তিক যুক্তিবিজ্ঞান, অর্থবিজ্ঞান, সম্ভাবনা ও পরিসংখ্যান।
জটিল অ্যালগোরিদম এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সহায়তা নেয়া হয়। অ্যালগোরিদমসমূহকে টেস্ট কেসের সুইট দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। বিভক্তি-ও-বিজয় অ্যালগোরিদম, লোভী অ্যালগোরিদম, ডাইনামিক প্রোগ্রামিং, সসীম অবস্থার যন্ত্র ইন্টারপ্রেটার, স্ট্যাক যন্ত্র ইন্টারপ্রেটার, অভিজ্ঞতাভিত্তিক অনুসন্ধান ও দৈবকৃত অ্যালগোরিদমের আচরণ নির্ধারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যাপক সাহায্য করেছে। এছাড়াও পরীক্ষার মাধ্যমে সমান্তরাল ও বিতরণকৃত অ্যালগোরিদমের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা সম্ভব হয়েছে।
অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠন এলাকায় আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে আছে:
প্রাথমিক অ্যালগোরিদম বিশ্লেষণ: জটিলতার ঊর্ধ্ব ও গড় সীমার অসীমতটীয় বিশ্লেষণ; সর্বোৎকৃষ্ট, গড় ও সর্বনিকৃষ্ট আচরণের পার্থক্য; বৃহৎ ওমেগা, ক্ষুদ্র ওমেগা, ওমেগা ও থেটা লিখনপদ্ধতি, আদর্শ জটিলতা শ্রেণীসমূহ, কর্মদক্ষতার অভিজ্ঞতাবাদী পরিমাপ, অ্যালগোরিদমের সময় ও স্থান-বিষয়ক মূল্য, পুনরাবর্ত অন্বয় ব্যবহার করে পুনরাবৃত্তিমূলক অ্যালগোরিদম বিশ্লেষণ
ব্রুট-ফোর্স অ্যালগোরিদম, লোভী অ্যালগোরিদম, বিভাজন-ও-বিজয়, পশ্চাদপসরণ, শাখায়ন-ও-বন্ধন, অভিজ্ঞতাভিত্তিক নিয়ম, বিন্যাস মিলানো অ্যালগোরিদম, স্ট্রিং অ্যালগোরিদম, সাংখ্যিক আসন্নীকরণ অ্যালগোরিদম।
সাংখ্যিক অ্যালগোরিদম, ধারাবাহিক ও বাইনারি অনুসন্ধান অ্যালগোরিদম, দ্বিঘাত সর্টিং অ্যালগোরিদম (বাছাই, অনুপ্রবেশ), O(NlogN) অ্যালগোরিদম (কুইকসর্ট, হিপসর্ট, মার্জসর্ট), হ্যাশ টেবিল (সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল), বাইনারি অনুসন্ধান বৃক্ষ, গ্রাফের উপস্থাপন (সংলগ্নতা তালিকা, সংলগ্নতা মেট্রিক্স), গভীরতা-ভিত্তিক ও প্রস্থ-ভিত্তিক বিচরণ, ক্ষুদ্রতম পথ অ্যালগোরিদম (ডিয়েকস্ট্রা ও ফ্লয়েডের অ্যালগোরিদসমূহ), অনুবর্তী আবদ্ধতা, সর্বনিম্ন প্রজনন বৃক্ষ (প্রিম ও ক্রুস্কালের অ্যালগোরিদমসমূহ), টপোগাণিতিক সর্ট।
বিতরণকৃত অ্যালগোরিদম, ঐকমত্য এবং নির্বাচন, সমাপ্তি নিরূপন, ত্রুটি সহনশীলতা, স্থিতিশীলকরণ।
গণনীয়তা, সসীম অবস্থা যন্ত্র, প্রসঙ্গমুক্ত ব্যাকরণ, নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা, অগণনীয় ফাংশন, বিরতি সমস্যা।
পি এবং এনপি শ্রেণী, এনপি-সম্পূর্ণতা, আদর্শ এনপি-সম্পূর্ণ সমস্যাসমূহ, লঘূকরণ কৌশল।
স্বয়ংক্রিয়া তত্ত্ব, নিষ্পত্তিমূলক সসীম স্বয়ক্রিয় যন্ত্র, অ-নিষ্পত্তিমূলক সসীম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, নিয়মিত এক্সপ্রেশন, পাম্পিং সহায়িকা, নিম্নগামী স্বয়ংক্রিয়ক, টুরিং যন্ত্র, নিয়মিত ভাষা, চম্স্কি অনুক্রম, চার্চ-টুরিং বিবৃতি।
প্রাগসর অ্যালগোরিদম বিশ্লেষণ: অ্যামর্টাইজ্ড বিশ্লেষণ, অনলাইন ও অফলাইন অ্যালগোরিদম, দৈবকৃত অ্যালগোরিদম, ডায়নামিক প্রোগ্রামিং, গুচ্ছবিন্যাসীয় সর্বানুকূলীকরণ।
তথ্যগুপ্তিবিদ্যা-সংক্রান্ত অ্যালগোরিদম: ব্যক্তিগত-চাবি তথ্যগুপ্তি, চাবি-হস্তান্তর সমস্যা, উন্মুক্ত-চাবি তথ্যগুপ্তি, ডিজিটাল স্বাক্ষর, নিরাপত্তা প্রোটোকল, শূন্য-জ্ঞান প্রমাণ, বৈধতা নির্ণয়।
জ্যামিতিক অ্যালগোরিদম: রেখাংশের ধর্ম, ছেদ, উত্তল হাল অনুসন্ধান অ্যালগোরিদম
সমান্তরাল অ্যালগোরিদম: প্র্যাম প্রতিমান (মডেল), এক্সক্লুসিভ/কনকারেন্ট রিড/রাইট, পয়েন্টার লাফানো, ব্রেন্টের উপপাদ্য।
প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহ
অ্যালগোরিদম ও উপাত্ত সংগঠনগুলো কম্পিউটারে বাস্তবায়িত করার জন্য সফ্টওয়্যার প্রকৌশলীরা প্রোগ্রাম রচনা করেন। এই প্রোগ্রামগুলো লিখতে গিয়ে তারা যেসব কৃত্রিম ভাষার সাহায্য নেন, তাদেরকে প্রোগ্রামিং ভাষা বলা হয়। মানুষের মুখের স্বাভাবিক ভাষা দ্ব্যর্থবোধক এবং এ ভাষার পদসংগঠন ও শব্দার্থ বহুভাবে অনুধাবন করা যায়, তাই এটি প্রোগ্রাম লেখার জন্য উপযুক্ত নয়। এর পরিবর্তে সরল ও দ্ব্যর্থহীন কৃত্রিম প্রোগ্রামিং ভাষার আশ্রয় নেয়া হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এমন প্রোগ্রামিং ভাষা উদ্ভাবনের চেষ্টা করেন, যা দিয়ে সহজে প্রোগ্রাম লেখা যায় এবং প্রোগ্রামে ভুলের পরিমাণ কম হয়। প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোকে যন্ত্রের ভাষায় ভাষান্তরিত করে নিতে হয়, যাতে কম্পিউটার প্রোগ্রামের নির্দেশগুলো পালন করতে পারে। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা আরও ভাল ভাষান্তরকরণ অ্যালগোরিদম বের করার চেষ্টা করেন, যাতে যন্ত্রের ভাষায় ভাষান্তরিত প্রোগ্রামগুলো আরও দক্ষভাবে সম্পাদন করা যায়।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের একেবারে আদি পর্যায়ে বাইনারী সংখ্যাভিত্তিক যান্ত্রিক ভাষায় (machine language) কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে নির্দেশ দেয়া হত। এরপর কাজের সুবিধার জন্য প্রথম যেসব প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করা হয়, তাদের নাম অ্যাসেম্বলি ভাষা। এগুলি যান্ত্রিক ভাষা থেকে খুব একটা বেশি পৃথক ছিল না। ১৯৫০-এর দশক থেকে ব্যবহারকারীরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ী প্রোগ্রামিং ভাষা লেখা শুরু করেন। এদের মধ্যে ফোরট্রান ভাষাটি ছিল অন্যতম। ফোরট্রান প্রোগ্রামারদেরকে গাণিতিক অপারেশন ছাড়াও বীজগাণিতিক এক্সপ্রেশন লেখার সুযোগ দেয়। ১৯৬০-এর দশকে ফোরট্রানের একটি সরলীকৃত সংস্করণ বেসিক তৈরি করা হয়, এবং এটি নতুনদের শেখার জন্য প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে স্কুল-কলেজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফোরট্রান উদ্ভাবনের কাছাকাছি সময়ে আরেকটি ভাষা কোবোল তৈরি করা হয়, যেটি সাধারণ ব্যবসায়িক রেকর্ড, নথিপত্র, ও অন্যান্য ব্যাবসায়িক প্রক্রিয়া দেখাশোনা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
কোবোল ও ফোরট্রান এবং এদের উত্তরসূরী প্যাসকাল ও সি হল নির্দেশমূলক ভাষা (Imperative language)। অর্থাৎ এগুলোতে কম্পিউটারকে কতগুলি প্রত্যক্ষ নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে কাজ করানো হয়; এটা যান্ত্রিক ভাষার সাথে অনেকটাই তুলনীয়। এই ধারার আরও দুটি ভাষা হল অ্যাডা ও অ্যালগল। এছাড়াও আরেক ধরনের ভাষা আছে যেগুলি ফাংশনভিত্তিক (Functional), অর্থাৎ প্রোগ্রামের ভিতরের অংশবিশেষ বা ফাংশন কল করে প্রোগ্রামিং-এর লক্ষ্য পূরণ করা হয়। ফাংশনভিত্তিক ভাষার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হচ্ছে লিস্প; এমএল ও হ্যাস্কেল-ও ফাংশনভিত্তিক ভাষা। পরবর্তীকালে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং (Object Oriented অব্জেক্ট-ওরিয়েন্টেড) ভাষা উদ্ভাবন করা হয় যেখানে উপাত্ত ও মেথড আধারে আবৃত করা হয়, এবং এই আধারকে বলা হয় অবজেক্ট বা বস্তু। এই ধারায় একাধিক অবজেক্টের মধ্যে বার্তা আদানপ্রদান করে প্রোগ্রামিঙের লক্ষ্য পূরণ করা হয়। স্মলটক, সি++, আইফেল, ভিজুয়াল বেসিক, জাভা, ইত্যাদি বস্তু-সংশ্লিষ্ট ভাষার উদাহরণ। এছাড়াও আছে উপাত্ত-প্রবাহ (Dataflow ডাটাফ্লো) ভাষা যেমন সিসাল, ভাল, ইদ নুভো, লজিক প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন প্রোলগ, স্ট্রিং প্রসেসিং ভাষা যেমন - স্নোবল ও আইকন, এবং সহবর্তমানতাভিত্তিক (concurrency-based) প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন - কনকারেন্ট প্যাসকাল, অকাম, এসআর, মডুলা-৩।
প্রোগ্রামিং ভাষার তত্ত্বে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে:
উপাত্ত টাইপ, অপারেশন, অপার্যান্ড, নিয়ন্ত্রণ কাঠামোসমূহ, সম্প্রসারণযোগ্য ভাষাকৌশল যার সাহায্যে নতুন উপাত্ত টাইপ ও অপারেশন সৃষ্টি করা যায়।
উচ্চস্তরের ভাষা থেকে মেশিন ভাষায় অনুবাদ, কম্পাইলার, ভাষা প্রক্রিয়াকারক।
বিমূর্তন, সিনট্যাক্স বা অন্বয়তত্ত্ব, সেমান্টিক্স বা অর্থবিজ্ঞান, প্র্যাগম্যাটিক্স বা প্রয়োগতত্ত্ব।
ব্যাকরণ, বিধিগত ভাষাসমূহ, স্বয়ংক্রিয়ক তত্ত্ব, টুরিং যন্ত্র, ল্যাম্ডা ক্যালকুলাস, পাই ক্যালকুলাস, বিধেয়মূলক যুক্তিবিজ্ঞান।
নিয়মিত এক্সপ্রেশন, টাইপ তত্ত্ব, চম্স্কি স্তরক্রম
স্থির টাইপিং, চলমান টাইপিং
ফাংশনভিত্তিক প্রোগ্রামিং, পদ্ধতিভিত্তিক প্রোগ্রামিং, বস্তু-সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামিং, যুক্তি নির্ধারণ, উপাত্ত ধারা।
কম্পিউটার স্থাপত্য
কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কম্পিউটার নামের যন্ত্র। কম্পিউটার না থাকলে কম্পিউটার বিজ্ঞান গণিতের একটি তাত্ত্বিক শাখা হয়ে থাকত। কম্পিউটার বিজ্ঞানীদেরকে তাই কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ, তাদের কাজ ও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। কম্পিউটার স্থাপত্য সম্পর্কে ধারণা থাকলে কোন প্রোগ্রামের কাঠামো যাতে এটি একটি একটি বাস্তব মেশিনে দ্রুত নির্বাহ করা যায়। কোন কাজের জন্য কম্পিউটার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিপিইউ ক্লকের দ্রুতি, মেমরির আকার, ইত্যাদি ব্যাপার বুঝতেও কম্পিউটার স্থাপত্যের জ্ঞান কাজে আসে।
কম্পিউটার স্থপতিরা নতুন নতুন কম্পিউটার ব্যবস্থা নকশায়ন ও বিশ্লেষণ করেন। তারা কম্পিউটারের গতি, সংরক্ষণ ক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা কীভাবে বাড়ানো যায় এবং খরচ ও শক্তির ব্যবহার কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করেন। এ কাজে তারা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রতিমানের (মডেল) সাহায্য নেন। অনেক ক্ষেত্রেই তারা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার প্রকৌশলীদের সাথে মিলে নতুন কম্পিউটার বানানোয় অংশ নেন, কেননা তাদের স্থাপত্য প্রতিমানগুলি (মডেলগুলি) অনেকাংশেই কম্পিউটারের বর্তনীবিন্যাসের ওপর নির্ভর করে। অনেক কম্পিউটার স্থপতি বিশেষায়িত প্রয়োগ যেমন ছবি প্রক্রিয়াকরণ, সিগনাল প্রক্রিয়াকরণ, ইত্যাদির জন্য কম্পিউটার নকশায়ন করেন, যাতে বেশি কর্মক্ষমতা, নিম্ন দাম কিংবা উভয়ই সম্ভব হয়। কম্পিউটার স্থাপত্যে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে:
ডিজিটাল যুক্তিবিজ্ঞান: বুলিয়ান বীজগণিত, লজিক গেট, ফ্লিপ ফ্লপ, কাউন্টার, রেজিস্টার, পিএলএ, লজিক এক্সপ্রেশন, লঘিষ্ঠকরণ, গুণফলের সমষ্টি রূপ, রেজিস্টার স্থানান্তর লিপিপদ্ধতি, গেট বিলম্ব, ফ্যান-ইন, ফ্যান-আউট।
যান্ত্রিক স্তরে উপাত্তের উপস্থাপন: বিট, বাইট, ওয়ার্ড, সংখ্যার উপস্থাপন (বাইনারি, অক্টাল, হেক্সাডেসিমাল) ও ভিত্তি, স্থিরবিন্দু, ভাসমান বিন্দু, চিহ্নিত উপস্থাপন, ২-এর পূরক উপস্থাপন, ক্যারেক্টার কোড, গ্রাফিকাল উপাত্ত, রেকর্ড, অ্যারে।
অ্যাসেম্বলি স্তর: ভন নিউম্যান যন্ত্র, নিয়ন্ত্রণ ইউনিট, নির্দেশ আনয়ন, বিসংকেতায়ন, এবং নির্বাহকরণ, অ্যাসেম্বলি ভাষা প্রোগ্রামিং, নির্দেশ ফরম্যাট, অ্যাড্রেসিং মোড, সাবরুটিন কল ও রিটার্ন, ইনপুট-আউটপুট, ইন্টেরাপ্ট
মেমরি: স্টোরেজ ব্যবস্থা, কম্পিউটার মেমরি, কোডিং তত্ত্ব, উপাত্ত সংকোচন, উপাত্ত শুদ্ধতা, মেমরি স্তরক্রম, বিলম্ব, চক্রকাল, ব্যান্ডউইডথ, ইন্টারলিভিং, ক্যাশ মেমরি, ভার্চুয়াল মেমরি।
রিস্ক, সিস্ক, ত্রুটি চিহ্নিতকারী ও সংশোধনকারী কোড, কম্পিউটার-সহায়িত নকশায়ন।
পাইপলাইন, বহুপ্রসেসর।
অপারেটিং সিস্টেম
অপারেটিং সিস্টেম হল কম্পিউটারের সার্বিক পরিচালনায় নিয়োজিত বিশেষ প্রোগ্রামসমষ্টি বা সফটওয়্যার। অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের মধ্যকার যোগসূত্র (interface) প্রদান করে, কম্পিউটারের স্মৃতিতে অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম স্থাপন করতে সাহায্য করে, কম্পিউটার কীভাবে অ্যাপ্লিকেশনগুলি চালাবে তা দেখাশোনা করে, কম্পিউটারের বিভিন্ন সম্পদ (resource), যেমন - ডিস্ক পরিসর (disk space) ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে, অননুমোদিত ব্যবহার থেকে কম্পিউটারকে রক্ষা করে, এবং সংরক্ষিত উপাত্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অপারেটিং সিস্টেম ও তাদের সাথে সম্পর্কিত বিমূর্তনগুলি সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের তুলনায় জটিলতর রূপ পেয়েছে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কীভাবে অপারেটিং ব্যবস্থা আরও সহজে ব্যবহার করা যায়, সংবেদনশীল উপাত্তের ব্যবহারাধিকার প্রতিরোধ করে কীভাবে অন্যান্য উপাত্ত অংশীদারযোগ্য করা যায়, কীভাবে কম্পিউটারের স্মৃতি ও সময়ের আরও দক্ষ ব্যবহার করা যায়, তার চেষ্টা করেন।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
একাধিক কম্পিউটার সংযুক্ত হলে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। নেটওয়ার্কের কম্পিউটারগুলি কীভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে ও তথ্যের আদান-প্রদান সম্পাদন করে, তার বিভিন্ন প্রোটোকল নিয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন। এ ব্যাপারে তারা টেলিযোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তি ও হার্ডওয়্যার প্রকৌশল ক্ষেত্রগুলি থেকে অনেক তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক সাহায্য নেন। ল্যান, ওয়্যান, তারহীন (ওয়্যারলেস) নেটওয়ার্ক --- এই তিন ধরনের নেটওয়ার্কই বেশি দেখা যায়। ইন্টারনেট বিশ্বের সর্ববৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।
কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা পুরানো নেটওয়ার্কসমূহ ও ইন্টারনেটের বিবর্তন অধ্যয়ন করেন। তারা বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশন যেমন ইমেইল, টেলনেট, এফটিপি, নিউজগ্রুপ, ওয়েব ব্রাউজার, ইন্সট্যান্ট মেসেজিং, ইত্যাদি কীভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন। তারা নেটওয়ার্ক স্থাপত্যের স্তরক্রমিক গঠন ও বিভিন্ন নেটোওয়ার্ক স্টান্ডার্ড বা মান সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করেন। তারা আধুনিক উদীয়মান নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিগুলির উপযোগিতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সীমা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অধীত বিষয়গুলির মধ্যে আছে:
বিভিন্ন নেটওয়ার্ক আদর্শ ও নেটওয়ার্ক প্রোটোকলসমূহ।
সার্কিট সুইচিং ও প্যাকেট সুইচিং
ট্রান্সমিশন ত্রুটি শনাক্তকরণ ও দূরীকরণ।
রাউটারের মাধ্যমে কীভাবে একটি প্যাকেট নেটওয়ার্কে পরিভ্রমণ করে।
নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন - পাবলিক-কী তথ্যগুপ্তি, প্রাইভেট-কী তথ্যগুপ্তি, এবং এ সংক্রান্ত অ্যালগোরিদমগুলির বাস্তবায়ন।
বিভিন্ন ওয়েব প্রযুক্তি: সার্ভার-সাইড প্রোগ্রাম ও ক্লায়েন্ট-সাইড স্ক্রিপ্ট, ওয়েব প্রোটোকলসমূহ, ওয়েবসাইট ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণ, ডাটাবেস-চালিত ওয়েবসাইট, ইত্যাদি।
নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা: কম্পিউটার ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স, ডিনাইয়াল-অফ-সার্ভিস আক্রমণ, নেটওয়ার্ক ফায়ারওয়াল
বড় আকারের অডিও ও ভিডিও ফাইল সংকোচন ও প্রসারণের কৌশল ও অ্যালগোরিদমসমূহ, নেটওয়ার্ক দিয়ে মাল্টিমিডিয়া আদানপ্রদানের বিভিন্ন স্টান্ডার্ড বা আদর্শ।
ওয়্যারলেস বা তারহীন নেটওয়ার্ক-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রোটোকল, স্ট্যান্ডার্ড ও এগুলির মধ্যে কম্প্যাটিবিলিটি; মোবাইল আইপ ও সাধারণ আইপি-র পার্থক্য, মিডলওয়্যার ও ওয়ারলেস যোগাযোগের জন্য বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের প্রকৃতি।
সফটওয়্যার প্রকৌশল
ব্যবহারকারী ও ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে কীভাবে দক্ষ ও কার্যকরী উপায়ে সফটওয়্যার ব্যবস্থাসমূহ নির্মাণ করা যায়, সফটওয়্যার বিজ্ঞানে সে-সম্পর্কিত তত্ত্ব ও কৌশল আলোচিত হয়। সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও সহজে ভেঙ্গে পড়ে না, এমন প্রোগ্রাম তৈরির পদ্ধতি ও কলাকৌশল নিয়ে গবেষণা করেন। এতে সফটওয়্যারের জীবনচক্রের সমস্ত দশা, যথা - বিধিগত পদ্ধতিতে সমস্যার বিবরণ তৈরি, সমাধানের নকশায়ন, প্রোগ্রাম আকারে সমাধানটির বাস্তবায়ন, প্রোগ্রামটির ভুলত্রুটি পরীক্ষা, ও প্রোগ্রামটির রক্ষণাবেক্ষণ - এই সব কিছু আলোচনা করা হয়। সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা প্রোগ্রামিং পরিবেশ নামের হাতিয়ার-সংগ্রহ বানিয়ে থাকেন, যার সাহায্যে দ্রুত ও উন্নত উপায়ে প্রোগ্রাম লেখা যায়।
সফটওয়্যার বিজ্ঞানীরা প্রকৌশলের বিভিন্ন পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, কলাকৌশল ও পরিমাপ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। সফটওয়্যার উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনা, সফটওয়্যারের বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ ও প্রতিমান (মডেল) নির্মাণ, মান যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ, সফটওয়্যারের বিবর্তন ও পুনর্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জাম ও উপকরণ তারা ব্যবহার করেন। কোন্ শরনের সফটওয়ার উন্নয়নে কোন্ ধরনের সরঞ্জাম, পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য, তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজও করে থাকেন তারা। কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নের যেসব ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব, মান, শিডিউল ও ব্যয়ের গুরুত্ব বেশি, সেসমস্ত ক্ষেত্রে সফটওয়্যার প্রকৌশল অবশ্য-প্রয়োজনীয়।
ডাটাবেস ও তথ্য আনয়ন ব্যবস্থাসমূহ
কীভাবে বিপুল পরিমাণ স্থায়ী ও অংশীদারযোগ্য উপাত্ত সুবিন্যস্ত করা যায়, যাতে এগুলো দক্ষভাবে ব্যবহার করা যায় ও হালনাগাদ করা যায়, তা-ই এই শাখার আলোচ্য। ডাটাবেস (database) হচ্ছে একাধিক রেকর্ডের সমষ্টি যা বিভিন্ন উপায়ে অনুসন্ধান ও হালনাগাদ করা যায়।
তথ্য আনয়ন ব্যবস্থা (information retrieval system) বলতে এক ধরনের ডকুমেন্ট-সমষ্টিকে বোঝায় যে ডকুমেন্টগুলো পরিষ্কারভাবে বিন্যস্ত নয়,অথচ এগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য বা উপাত্ত অনুসন্ধান করা প্রয়োজন,যেমন - কোন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বহু নিবন্ধের সমষ্টি। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এই ডকুমেন্টগুলো থেকে উপাত্তের নির্ঘণ্ট (index) বের করার অ্যালগোরিদম রচনা করেন। নির্ঘণ্ট রচনার পর এগুলো থেকে সহজে উপাত্ত ও তথ্য আনয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা হয়। তথ্য আনয়ন ব্যাবস্থার সাথে সম্পর্কিত আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে উপাত্ত খনন (data mining), যেখানে বিপুল পরিমাণ উপাত্তের মধ্য থেকে বিভিন্ন বিন্যাস (pattern) শনাক্ত করার উপায়গুলো বের করা হয়; এই শনাক্তকৃত বিন্যাসগুলো পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।
ডাটাবেস ও আনয়ন ব্যবস্থাসমূহের গবেষণায় যে সমস্ত তত্ত্ব প্রয়োগ করা হয়, তাদের মধ্যে আছে সাম্পর্কিক বীজগণিত (relational algebra), সাম্পর্কিক ক্যালকুলাস (relational calculus), সহবর্তমানতা তত্ত্ব (concurrency theory), ক্রমায়নযোগ্য আদান-প্রদান (serialiable transaction), ডেডলক প্রতিরোধ (deadlock prevention), সময়-সামঞ্জস্যীকৃত হালনাগাদ (synchronized upadte), নিয়ম-ভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ (rule-based inference), বিন্যস্তকরণ (sorting), অনুসন্ধান (searching), নির্ঘণ্ট তৈরিকরণ (indexing), কর্মদক্ষতা বিশ্লেষণ (performance analysis), তথ্যের গোপনীয়তা (information privacy) ও তথ্য ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাইকরণ (authentication)।
উপাত্তের যৌক্তিক গঠন ও বিভিন্ন উপাত্ত উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য বিভিন্ন উপাত্ত প্রতিমান (মডেল) ব্যবহার করা হয়, যেমন - বস্তুভিত্তিক, রেকর্ডভিত্তিক ও বস্তু-সাম্পর্কিক।
প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানের কর্মপ্রক্রিয়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতায় সহায়তাকারী তথ্যব্যবস্থাসমূহ প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। বিশ্ববাজারে সাফল্য লাভের জন্য যেকোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে তথ্যব্যবস্থার ব্যবহার অপরিহার্য। যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম মানুষেরা করে থাকেন, তাই তথ্যব্যবস্থাসমূহের নকশায়নের সময় মানুষের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব প্রাতিষ্ঠানিক সুবিন্যস্তকরণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে। সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণ, নৃবিজ্ঞান, বোধ বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, প্রাতিষ্ঠানিক গতিবিদ্যা, ইত্যাদি সবই কর্মক্ষেত্রে মানুষের আচরণ অনুধাবনে সহায়তা করে, এবং এই-সংক্রান্ত বেশির ভাগ তত্ত্বই কম্পিউটার প্রতিমান (মডেল), বিমূর্তন ও ছদ্মায়নে ব্যবহার করে পূর্বাভাস বের করতে কাজে লাগানো হয়।
জীব-তথ্যবিজ্ঞান
জীব-তথ্যবিজ্ঞান কম্পিউটার বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রের বিজ্ঞানীরা এমন সব প্রতিমান (মডেল) ও স্থাপত্য নিয়ে কাজ করছেন যেগুলো কম্পিউটিং, জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব আনতে পারে। ডিএনএ রসায়ন ব্যবহার করে গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। স্ট্রিং বিশ্লেষক অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে মনুষ্য জিনোম প্রকল্পের বিরাট ডাটাবেস খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন খণ্ডাংশের সমন্বয়ে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জিনোম পাওয়া গেছে। কম্পিউটার স্থাপত্যবিদ ও চিকিৎসকেরা একসাথে বিভিন্ন কৃত্রিম জীব-যান্ত্রিক বা বায়োনিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করছেন। জিন প্রকৌশলে কম্পিউটার বিশ্লেষণ ব্যবহার করে রোগ প্রতিষেধক এনজাইমের সঠিক রাসায়নিক গঠন বের করা হচ্ছে। এমনকি বর্তমানে কম্পিউটারে ব্যবহৃত স্মৃতির চেয়ে বহুগুণ বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ধরনের জৈব স্মৃতি নিয়েও গবেষণা চলছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও ইন্দ্রিয়ের কার্যপদ্ধতি কীভাবে কম্পিউটার ও যন্ত্রের সাহায্যে অনুকরণ করা যায়, তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার আলোচ্য বিষয়। বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও উন্নত করার জন্য এই শাখায় মানুষের আচরণের কম্পিউটার প্রতিমান (মডেল) তৈরি করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার বিভিন্ন উপশাখার মধ্যে রয়েছে যান্ত্রিক জ্ঞানার্জন (machine learning), সিদ্ধান্ত উপনয়ন (inference), সংজ্ঞান (cognition), জ্ঞান উপস্থাপন (knowledge representation), সমস্যা সমাধান (problem solving), ঘটনাভিত্তিক যুক্তিপ্রদান (case based reasoning), স্বাভাবিক ভাষা অনুধাবন (natural language understanding), বচন শনাক্তকরণ (speech recognition), কম্পিউটার দর্শন (computer vision), কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক (artificial neural network), ইত্যাদি।
রোবটবিজ্ঞান
রোবট বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রসমূহ নকশায়ন ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিদ্যা হল রোবটবিজ্ঞান। খেলনা রোবট কিংবা কারখানায় ব্যবহৃত স্বয়ংক্রিয় পণ্য নির্মাণ ব্যবস্থা - এ সবই রোবটবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত। রোবট বানানোর অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষকে পুনরাবৃত্তিমূলক, বিপজ্জনক ও কঠোর পরিশ্রমের কাজ থেকে রেহাই দেওয়া এবং যেসব কাজে দ্রুতি, নির্ভুলতা ও পরিচ্ছন্নতা জরুরি, সেগুলো রোবটকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া। রোবটবিজ্ঞানীরা রোবটের ভৌত বিশিষ্ট্য নির্ধারণ, রোবটের কাজের পরিবেশের প্রতিমান (মডেল) বানানো, রোবটের কর্মপন্থা নির্ধারণ, রোবটের যান্ত্রিক কর্মকৌশলের দক্ষতা বৃদ্ধি, রোবটের আচরণ ও মানুষের নিরাপত্তা, ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করেন। তারা রোবট নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রাম লেখেন, এই প্রোগ্রাম কীভাবে সরল করা যায় তার চেষ্টা করেন এবং সেন্সরের ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক প্রোগ্রামের কাছে ফিডব্যাক প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তারা রোবটদেরকে দিয়ে কীভাবে মানুষের মত কোন কিছু সুচারুভাবে সম্পাদন করা ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার ক্ষমতা অনুকরণ করানো যায়, তা নিয়েও গবেষণা করেন, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার বিজ্ঞানীদের সাথে এ নিয়ে মিলিতভাবে কাজ করেন।
কম্পিউটার গ্রাফিক্স
ভৌত এবং কাল্পনিক বস্তু ও তাদের গতি দ্বিমাত্রিক পর্দা বা ত্রিমাত্রিক হলোগ্রামে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রদর্শনের গবেষণাকে কম্পিউটার গ্রাফিক্স বলা হয়। কীভাবে দক্ষভাবে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে বস্তুসমূহের ছবি তৈরি করা যায়, কীভাবে বাস্তব সময়ে (real time) জটিল বস্তুসমূহের চলন পর্দায় দেখানো যায়, কীভাবে তথ্যসেটসমূহ প্রদর্শন করা যায় যাতে মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়, কীভাবে এমন ছদ্মায়ন তৈরি করা যায় যাকে বাস্তব থেকে আলাদা করতে কষ্ট করতে হয়, ইত্যাদি এই শাখার আলোচ্য বিষয়।
কম্পিউটার গ্রাফিক্স গণিতের পরিগণনামূলক জ্যামিতি শাখার প্রভূত সহায়তা নিয়ে থাকে। প্রদর্শন পর্দায় কীভাবে বস্তুসমূহের অভিক্ষেপ ফেলা যায়, অভিক্ষেপ থেকে লুকানো রেখাগুলি কী করে সরানো যায়, কীভাবে মসৃণতা, ছায়া, প্রতিফলন ও স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা যায়, ইত্যাদি সংক্রান্ত নতুন নতুন অ্যালগোরিদম এ শাখায় উদ্ভাবন করার চেষ্টা করা হয়। জটিল প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর অনুকরণ করার জন্য বিশৃঙ্খলা তত্ত্বের সাহায্য নেয়া হয়। পর্দায় আলোর রঙের ব্যাপারে রঙ তত্ত্বের সাহায্য নেয়া হয়। নমুনা তত্ত্ব ব্যবহার করে অবাঞ্ছিত কোলাহল দূর করে পরিচ্ছন্ন ছবি তৈরি করা হয়। এছাড়া রৈখিক বীজগণিত, পদার্থবিজ্ঞান, গাণিতিক বিশ্লেষণ, অরৈখিক ব্যবস্থা, এ সবই কম্পিউটার গ্রাফিক্সে কাজে আসে।
মনিটরের পর্দায় ছবি বা বর্ণ-সাংখ্যিক ক্যারেক্টার (Alphanumeric) দুই-ই প্রদর্শিত হতে পারে। কম্পিউটারের মেমরিতে যেকোন ছবি সাধারণত দুইভাবে সংরক্ষিত হতে পারে: র্যাস্টার গ্রাফিক্স ও ভেক্টর গ্রাফিক্স। র্যাস্টার গ্রাফিক্সে যেকোন ছবি অনেকগুলি বিন্দুসমষ্টির একটি মেট্রিক্স হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিটি বিন্দুর রঙ, উজ্জ্বলতা ও অন্যান্য তথ্য মেমরিতে এক বা একাধিক বিট আকারে রক্ষিত থাকে। একেকটি ছবির জন্য এভাবে যে বিপুল সংখ্যক মেমরির প্রয়োজন হয়, তা দক্ষভাবে ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার গ্রাফিক্সের বিশেষায়িত প্রোগ্রামগুলিতে বিশেষ ধরনের অ্যালগোরিদম ব্যবহার করা হয়। ভেক্টর গ্রাফিক্সে একটি ছবি অনেকগুলি রেখার সমষ্টি হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রতিটি রেখা-সংক্রান্ত তথ্য মেমরিতে রক্ষিত থাকে। ৯০-এর দশক থেকে কম্পিউটার মনিটরে র্যাস্টার প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হয়। এমনকি ভেক্টর প্রযুক্তিতে তৈরি ছবিও র্যাস্টারে পরিণত করে নেয়া হয়। র্যাস্টার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা হল এতে কোনাকুনি রেখাগুলি কাছ থেকে খাঁজ-কাটা দেখায়।
কম্পিউটার গ্রাফিক্সের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় বিনোদন শিল্পে। স্পেশাল ইফেক্ট, কম্পিউটার অ্যানিমেশন, ছদ্মায়ন, ইত্যাদি কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই শাখার অবদান। কম্পিউটার গ্রাফিক্সের গবেষণা বেশ কিছু গ্রাফিক্স মান বা স্ট্যান্ডার্ডের জন্ম দিয়েছে যেমন GKS, PHIGS, VDI, ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে মান প্রিন্টার ভাষা যেমন- পোস্টস্ক্রিপ্ট। ওয়েব পেজে অপ্রকৃত বাস্তবতার জন্য মান ভাষা VRML সৃষ্টি করা হয়েছে। চিকিৎসকদের সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ত্রিমাত্রিক ভিজুয়ালাইজার।
মানুষ-কম্পিউটার আন্তঃক্রিয়া
মানুষ কীভাবে ইন্টারঅ্যাকটিভ অর্থাৎ আন্তঃক্রিয়াশীল বস্তুর সাথে আচরণ করে, তার উপর ভিত্তি করে মানুষের দ্বারা সহজে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার নকশায়ন, নির্মাণ ও মূল্যায়নের নীতিগুলি মানুষ-কম্পিউটার আন্তঃক্রিয়া নামের ক্ষেত্রে আলোচিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার ও ব্যবহারকারীর মধ্যবর্তী চিত্রলৈখিক পৃষ্ঠতল (গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস বা গুই) নকশায়ন, মাল্টিমিডিয়া আন্তঃক্রিয়া, উক্তি শনাক্তকরণ ও অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক উপায়সমূহ, কম্পিউটার-জালের (নেটওয়ার্কের) মাধ্যমে যোগাযোগ ও সহযোগিতা, ইত্যাদি ব্যাপারগুলি।
পরিগণনা বিজ্ঞান
কম্পিউটার বিজ্ঞানের আদি যুগ থেকেই বৈজ্ঞানিক কম্পিউটিং-এর বিভিন্ন কলাকৌশল এবং পরিগণনামূলক পদ্ধতিসমূহ কম্পিউটার বিজ্ঞানের গবেষণার একটি বড় অংশ। সময়ের সাথে কম্পিউটারসমূহের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এই ক্ষেত্রটির গুরুত্ব ও প্রসার দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক কম্পিউটিং একটি আলাদা শাস্ত্র হিসেবে স্বীকৃত হলেও কম্পিউটার বিজ্ঞানের সাথে এর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। পরিগণনামূলক বিজ্ঞানে আগ্রহী কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ও কলাকৌশল নিয়ে অধ্যয়ন করেন, যাদের মধ্যে রয়েছে সাংখ্যিক উপস্থাপনের যথার্থতা, ত্রুটি বিশ্লেষণ, সাংখ্যিক কলাকৌশল, সমান্তরাল স্থাপত্য ও অ্যালগোরিদমসমূহ, প্রতিমানির্মাণ ও ছদ্মায়ন, এবং বৈজ্ঞানিক দৃশ্যায়ন (ভিজুয়ালাইজেশন)। তারা এই জ্ঞান বিভিন্ন ব্যবহারিক ক্ষেত্র যেমন - আণবিক গতিবিজ্ঞান, প্রবাহী বলবিজ্ঞান, জ্যোতিষ্কসমূহের বলবিজ্ঞান, অর্থনৈতিক পূর্বাভাস, অপটিমাইজেশন সমস্যা, পদার্থের গাঠনিক বিশ্লেষণ, জীবতথ্যবিদ্যা, পরিগণনামূলক জীববিজ্ঞান, ভূতাত্ত্বিক প্রতিমানির্মাণ, কম্পিউটারায়িত টমোগ্রাফি, ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সুযোগ পান। পরিগণনামূলক বিজ্ঞানে অধীত বিষয়গুলির মধ্যে আছে:
সাংখ্যিক বিশ্লেষণ: ফ্লোটিং-পয়েন্ট বা ভাসমান বিন্দু পাটীগণিত; ত্রুটি, স্থিরতা, অভিসৃতি; টেইলর ধারা, নিউটনের পদ্ধতি; বক্ররেখার ফিটিং, ফাংশনের আসন্নীকরণ; সাংখ্যিক অন্তরকলন ও যোগজকলন, সিম্পসনের নিয়ম; অয়লারের পদ্ধতি; যোগাশ্রয়ী বীজগণিত; সসীম পার্থক্য।
অপারেশন্স গবেষণা: যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামিং, পূর্ণসংখ্যা প্রোগ্রামিং, সিম্পলেক্স পদ্ধতি; সম্ভাবনাভিত্তিক প্রতিমানির্মা; কিউইং তত্ত্ব, পেট্রি নেট, মার্কভ প্রতিমা ও শৃঙ্খল; অপ্টিমাইজেশন; সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ, পূর্বাভাস, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণ; ডায়নামিক প্রোগ্রামিং।
প্রতিমানির্মাণ ও ছদ্মায়ন: দৈব সংখ্যাসমূহ, ছদ্মদৈবসংখ্যা সৃষ্টি ও পরীক্ষা, মন্টি কার্লো পদ্ধতি, বণ্টন ফাংশন; বিচ্ছিন্ন-ঘটনা ছদ্মায়ন, অবিচ্ছিন্ন ছদ্মায়ন; ছদ্মায়নের যাচাইকরণ ও বৈধতা প্রদান।
উচ্চ-দক্ষতার কম্পিউটিং: প্রসেসর স্থাপত্য, মেমরি ব্যবস্থা, পাইপলাইন, সমান্তরাল ভাষা ও স্থাপত্য; বৈজ্ঞানিক ভিজুয়ালাইজেশন, উপাত্ত ফরম্যাট, ফলাফলের উপস্থাপন, ভিজুয়ালাইজেশন টুলস।
আরও দেখুন
কম্পিউটার স্থাপত্য
কম্পিউটার প্রকৌশল
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
কম্পিউটার বিজ্ঞান নির্দেশিকা - কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রতি নিবেদিত অনুসন্ধান যন্ত্র ও নির্দেশিকা।
কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় লেকচারের সংকলন
কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ের সংগ্রহ
বিষয়শ্রেণী:তড়িৎ প্রকৌশল
বিষয়শ্রেণী:ইলেকট্রনিক প্রকৌশল
বিষয়শ্রেণী:কম্পিউটার প্রকৌশল
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
অর্থনীতি | https://bn.wikipedia.org/wiki/অর্থনীতি | অর্থনীতি বা অর্থশাস্ত্র সামাজিক বিজ্ঞান এর একটি শাখা যা পণ্য এবং সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।
থাম্ব|যোগান ও চাহিদা মডেলটি বর্ণনা করে যে পণ্যের প্রাপ্যতা এবং চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যের ফলে পণ্যের দাম কীভাবে পরিবর্তিত হয়
সম্পদ সীমিত কিন্তু চাহিদা অফুরন্ত– এই মৌলিক পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা অর্থনীতির প্রধান উদ্দেশ্য৷ এল.রবিন্স এর প্রদত্ত সংজ্ঞাটি বেশিরভাগ আধুনিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি বলেন, "অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাব ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদের সম্পর্ক বিষয়ক মানব আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।" এল.রবিন্সের সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এটি মানব জীবনের তিনটি মৌলিক বৈশিষ্টের উপর প্রতিষ্ঠিত, যথা অসীম অভাব, সীমিত সম্পদ ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সম্পদ।
অর্থনীতির পরিধিসমূহ বিভিন্ন ভাগে বা শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যেমনঃ
ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতি
নেতিবাচক অর্থনীতি ও ইতিবাচক অর্থনীতি
মেইনস্ট্রীম ও হেটারোডক্স অর্থনীতি
আধুনিক অর্থনীতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, (১) ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও (২) সামষ্টিক অর্থনীতি৷ ব্যষ্টিক অর্থনীতি মূলত ব্যক্তি মানুষ অথবা ব্যবসায়ের চাহিদা ও যোগান নিয়ে আলোচনা করে থাকে৷ অন্যদিকে সামষ্টিক অর্থনীতি একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জাতীয় আয়, কর্মসংস্থান, মুদ্রানীতি, ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে৷ অন্য ভাবে বলা যায় যে, ব্যষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য হলো অর্থনীতির একটি বিশেষ অংশ বা একককে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা এবং সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির সামগ্রিক বিষয়াদি বিশ্লেষণ করে থাকে।
অর্থনীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা
উনিশ শতকের শেষের দিকে আলফ্রেড মার্শাল, 'রাজনৈতিক অর্থনীতি' থেকে অর্থনীতি বিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে 'অর্থনীতি'-কে পুনঃনামকরণ করেন। এই সময়ে এটা শৃঙ্খলাবদ্ধ চিন্তাভাবনার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং গণিতের ব্যবহার ব্যাপকহারে বেড়ে যায়, যা এটাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের বাইরে বিজ্ঞানের আলাদা একটি শাখা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করে।
আধুনিক অর্থনীতির বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা রয়েছে; কিছু এই বিষয়ের বিবর্তিত চেহারা প্রতিফলিত করে এবং বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। আলফ্রেড মার্শাল তার বই Principles of Economics (১৮৯০)-এ অর্থনীতির সবচেয়ে জনপ্রিয় সংজ্ঞা দিয়েছেন। তার মতে, "অর্থনীতি মানুষের জীবনের সাধারণ ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করে। এটা সম্পদ আহরণ এবং এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং একদিক দিয়ে এটা মানুষের সম্পদ নিয়ে আলোচনা করে অন্যদিকে এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটা মানুষের জীবনের একটি অংশ নিয়ে আলোচনা করে।"
অধ্যাপক মার্শাল বলেন,"অর্থনীতি মানবজীবনের সাধারণ কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করে"।
অর্থনীতির প্রারম্ভিক কথা
থাম্ব|ডান|150px| অ্যাডাম স্মিথ, ওয়েলথ অফ নেশনস গ্রন্থের লেখক (১৭৭৬)
উৎপাদন ও বণ্টন আলোচনার দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও অর্থনীতির জনক হিসেবে খ্যাত অ্যাডাম স্মিথ কর্তৃক ১৭৭৬ খ্রীস্টাব্দে রচিত গ্রন্থ An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations নামক গ্রন্থে অর্থনীতিকে সম্পদের বিজ্ঞান আখ্যায়িত করে বলেন, 'Economics is Science of wealth'। তার সংজ্ঞার মূল বিষয়বস্তু হল সম্পদ উৎপাদন ও ভোগ।
অর্থনীতির সাথে উন্নয়ন সরাসরি সম্পর্কিত। ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, "জনসাধারণের সক্ষমতার নামই উন্নয়ন"।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি
ব্যষ্টিক অর্থনীতি মূলত ব্যক্তি এবং ফার্ম এর অর্থনৈতিক আচরণ নিয়ে এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বাজার, বিরাজমান দুষ্প্রাপ্যতা ও সরকারি নিয়মাবলির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির একটি শাখা যা ব্যক্তি, পরিবার ও ফার্ম কীভাবে বাজারে তাদের বণ্টনকৃত সীমিত সম্পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা নিয়ে আলোচনা করে। বাজার বলতে বোঝায় যেখানে দ্রব্য অথবা সেবাসমূহ কেনা-বেচা করা হয়। দ্রব্য অথবা সেবাসমূহের চাহিদা ও যোগান এইসব সিদ্ধান্ত ও আচরণের উপর কী-ভাবে প্রভাব ফেলে ব্যষ্টিক অর্থনীতি তা নিরীক্ষা করে। বাজারে অবশ্যই একটি দ্রব্য বিদ্যমান থাকবে। এই তত্ত্বে প্রতিটি উপাদানকে ক্রেতা সামগ্রিক চাহিদার পরিমাণকে বিবেচনা করে এবং বিক্রেতা সামগ্রিক যোগানের পরিমাণকে বিবেচনা করে। দাম ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে বাজার ভারসাম্য পৌছে। বৃহৎ দৃষ্টিতে একে চাহিদা এবং যোগানের বিশ্লেষণ বলা হয়। বাজার কাঠামো যেমন পূর্ণ প্রতিযোগিতা এবং একচেটিয়া বাজার আচরণ ও অর্থনৈতিক ইফিসিয়েন্সি এর জন্য বাধাস্বরূপ। সাধারণ অনুমিত শর্ত থেকে যখন বিশ্লেষণ আরম্ভ হয় এবং বাজারের আন্যান্য আচরণ অপরিবর্তিত থাকে, তাকে আংশিক ভারসাম্য বিশ্লেষণ বলা হয়। সাধারণ ভারসাম্য তত্ত্বে বিভিন্ন বাজারের পরিবর্তন এবং সকল বাজারের সামগ্রিক পরিবর্তন এবং ভারসাম্যের বিপরীতে তাদের গতিবিধি ও আন্তঃসম্পর্ক বিবেচনা করা হয়।
সামষ্টিক অর্থনীতি
সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির নিয়ামকসমূহকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে। সামগ্রিক বলতে জাতীয় আয় ও জাতীয় উৎপাদন, বেকারত্বের হার ও মূদ্রাষ্ফীতিকে এবং আংশিক সামগ্রিক মোট ভোগ, বিনিয়োগ ব্যয় ও তাদের উপাদানকে বুঝায়। আর্থিক নীতি ও রাজস্ব নীতিকেও ইহা অধ্যয়ন করে। ১৯৬০ সাল থেকে সামষ্টিক অর্থনীতি আরও অনেক ক্ষেত্রে তার বিশ্লেষণ বৃদ্ধি করছে যেমন, বিভিন্ন খাতের ব্যষ্টিকভিত্তিক মডেল, ভোক্তার যৌক্তিকতা, বাজার তথ্যের সঠিক ব্যবহার, অসম্পূর্ণ প্রতিযোগিতা। এছাড়াও সামষ্টিক অর্থনীতি বিবেচনাধীন উপাদানসমূহের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং একটি দেশের ও দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি নিয়েও বিশ্লেষণ করে। উপাদানসমূহের মধ্যে মূলধন, প্রযুক্তি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি সম্পর্কিত অন্যান্য ক্ষেত্র, অন্যান্য পার্থক্য এবং শ্রেণিবিভাগ
ব্যষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কিত সাম্প্রতিক উন্নয়নে আচরণিক অর্থনীতি ও পরীক্ষামূলক অর্থনীতি নামে দুটি শাখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেমন, অর্থনৈতিক ভূগোল, অর্থনৈতিক ইতিহাস, সাধারণ পছন্দ, সাংস্কৃতিক অর্থনীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি।
অন্যভাবে অর্থনীতিকে দুই ভাবে ভাগ করা হয়। নীতিবাচক অর্থনীতি অর্থনৈতিক আচরণকে ব্যাখ্যা করে, অন্য দিকে ইতিবাচক অর্থনীতি পছন্দ এবং মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়।
আবার অর্থনীতিকে মেইনষ্টীম অর্থনীতি ও হেটারোডক্স অর্থনীতি এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
'Journal of Economic Literature' এ প্রকাশিত 'JEL classification codes' প্রবন্ধে অর্থনীতির শ্রেণিবিভাগ ও প্রবন্ধ ভিত্তিক অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং 'The New Palgrave: A Dictionary of Economics' বইটিতে অর্থনীতির বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ ও উপশ্রেণিবিভাগ বিদ্যমান তা উল্লেখ করা হয়েছে।
গাণিতিক অর্থনীতি ও পরিমাণগত অর্থনীতি
অর্থনীতি একটি অধীতব্য বিষয় যা কখনও জ্যামিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে, কখনও সাহিত্যিক পদ্ধতি ব্যবহার করে। পল স্যামুয়েলসন তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'Foundations of Economics Analysis'(১৯৪৭)-এ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি সাধারণ গাণিতিক কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন।
ইকোনোমেট্রিক্স
ইকোনোমেট্রিক্স অর্থনৈতিক মডেলসমূহের উপাত্ত সম্পর্কিত বিশ্লেষনে গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, একটি তত্ত্বে অণুমিত শর্ত ধরা হয় যে অন্যান্য সব কিছু অপরিবর্তিত থেকে একজন বেশি শিক্ষিত ব্যক্তি একজন কম শিক্ষিত ব্যক্তির চাইতে বেশি আয় করবে। অর্থনৈতিক পরিমাপকগুলো বিভিন্ন সম্পর্কের গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে। ইকোনোমেট্রিক্স পরিমাণগত পরিমাপের চিত্র তুলে ধরতে পারে। এগুলো অন্তর্ভুক্ত হয় বিভিন্ন তত্ত্ব পরীক্ষার বা পরিশোধনের জন্য, বিগত চলক গুলোকে বর্ণনা এবং আগামীতে আসবে এ ধরনের চলকের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য।
জাতীয় পরিমাপ
জাতীয় পরিমাপগুলো হচ্ছে একটি জাতির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসমূহের সংক্ষেপে প্রকাশিত করার পদ্ধতি। জাতীয় পরিমাপ হচ্ছে দ্বৈত গণনা পদ্ধতি যাতে কিছু তথ্যের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ থাকে। এগুলো জাতীয় আয় ও দ্রব্য পরিমাপ (NIPA)কে অন্তর্ভুক্ত করে, যা এক বছর বা বছরের একটি অংশে উৎপাদিত দ্রব্য এবং আয়কে অর্থ আকারে পরিমাপ করে। নিপা(NIPA) একটি অর্থনীতির গতিপথের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থাকে এবং বাণিজ্য চক্র বা দীর্ঘ সময় ধরে তা পরিমাপ করে। দ্রব্যমুল্যের তথ্যসমূহ সাধারণ ও প্রকৃত পরিমাপের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, যা অতিরিক্ত সময়ের মূল্যস্তর পরিবর্তনের জন্য মোট অর্থের পরিমাণ সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারে। এই জাতীয় পরিমাপগুলো বিনিয়োগ মজুত, জাতীয় সম্পদ এবং আন্তর্জাতিক মুলধন প্রবাহের হিসাবকেও অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।
অর্থনীতির পরিধি
কৃষি অর্থনীতি
কৃষি অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির একটি সর্বপ্রাচীন এবং সুপ্রতিষ্ঠিত শাখা। ইহা কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী অর্থনৈতিক শক্তিসমূহ এবং অর্থনীতির বাকী অংশে প্রভাব বিস্তারকারী কৃষি ক্ষেত্র সমূহকে নিয়ে আলোচনা করে। ইহা হচ্ছে অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা জটিল বিশ্বের প্রকৃত অবস্থার নিরিখে ব্যষ্টিক অর্থনীতির তত্ত্ব প্রয়োগে প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এবং অনেক সাধারণ আবেদনকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়; ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা, গৃহস্থালি আচরণ এবং সম্পদের অধিকার ও প্রাপ্যতার মধ্যে সম্পর্ক। সম্প্রতি এর পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দ্রব্য বাণিজ্য এবং পরিবেশ নীতি অন্তর্ভুক্তি হয়েছে।
উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্থনীতি
300px|ডান|গত ২০০০ বছরের বিশ্বের মাথাপিছু জিডিপি হারের চিত্র।.|থাম্ব
প্রবৃদ্ধি অর্থনীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপাদানগুলোকে নিয়ে আলোচনা করে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে একটি দীর্ঘকালীন সময়ে একটি দেশের মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধির পরিমাণ। বিভিন্ন দেশের মাথাপিছু উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য দেখানোর জন্য এক ধরনের একক ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ উপাদানই বিনিয়োগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের হারকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই উপাদানগুলো তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ভাবে (নিওক্লাসিক্যাল প্রবৃদ্ধি মডেল অনুসারে) এবং প্রবৃদ্ধি পরিমাপে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। নির্দিষ্ট কিছু স্তরে, উন্নয়ন অর্থনীতি স্বল্প আয়ের দেশসমূহ সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কাঠামোগত পরিবর্তন, দারিদ্রতা এবং অর্থনৈতিক প্রগতিকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক হাতিয়ার সমূহকে বিশ্লেষণ করে। উন্নয়ন অর্থনীতি কর্পোরেটবিহীন সামাজিক ও রাজনৈতিক উপাদানসমূহকে কাজে লাগায়।
অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া
অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া হচ্ছে অর্থনীতির শাখা যা সামাজিক মালিকানা, পরিচালনা এবং অর্থনৈতিক সম্পদ বণ্টনে পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করে। সমাজের একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া হচ্ছে বিশ্লেষনের একক। আধুনিক পদ্ধতিতে সংগঠনকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও পুঁজিবাদ ব্যবস্থা ভাগে ভাগ করা হয়, যাহাতে বেশির ভাগ উৎপাদন হয়ে থাকে যথাক্রমে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ও বেসরকারী এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে। উভয় ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলে তাকে মিশ্র অর্থনীতি বলা হয়। একটি সাধারণ উপাদান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিসমুহকে সংমিশ্রন করে, যাকে রাজনৈতিক অর্থনীতি বলা হয়। তুলনামূলক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া বিভিন্ন অর্থনীতি বা প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্কযুক্ত শক্তি ও আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।
অর্থব্যবস্থাবিষয়ক অর্থনীতি
অর্থব্যবস্থাবিষয়ক অর্থনীতি আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে আর্থিক সম্পদ বণ্টন কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে। তাই অর্থব্যবস্থাবিষয়ক অর্থনীতি অর্থ বাজার, আর্থিক সরঞ্জামসমূহ ও কোম্পানীসমূহের আর্থিক কাঠামো সন্বন্ধে আলোকপাত করে।
ক্রীড়া তত্ত্ব
ক্রীড়া তত্ত্ব ফলিত গণিতের একটি শাখা যা উপাদান সমূহের মধ্যে কৌশলগত প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিশ্লেষণ করে। কৌশলগত ক্রীড়ায় খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের আরোপিত কৌশলসমূহের মধ্যে যেটি তার সুবিধা সর্বোচ্চ করণ করবে সেটি গ্রহণ করবে। ইহা সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী তার প্রতিপক্ষের সহিত ক্রীড়াক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রচলিত নিয়ম ব্যাখ্যা করে থাকে। ক্রীড়া তত্ত্ব বাজার বিশ্লেষণের জন্য সর্বোচ্চ করণ আচরণ উন্নয়নের ধারণা দেয় যেমন চাহিদা ও যোগান মডেল। ১৯৪৪ সালে জন ভন নিউম্যান ও অস্কার মরগেন্সটেরন এর 'Theory of Games and Economic Behavior' এর মাধ্যমে 'ক্রীড়া তত্ত্ব' এর সুত্রপাত হয়। অর্থনীতি ছাড়াও পারমাণবিক কৌশল, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্রীড়া তত্ত্বের প্রয়োগ করা হয়।
শিল্প সংস্থা
শিল্প সংস্থা ফার্মসমূহের কৌশলগত আচরণ, বাজার কাঠামো এবং তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। সাধারণ বাজার কাঠামোসমূহ হচ্ছে পূর্ণ প্রতিযোগিতা বাজার, একচেটিয়া প্রতিযোগিতা, অলিগোপলির বিভিন্ন ধরন এবং একচেটিয়া বাজার।
তথ্য অর্থনীতি
তথ্য অর্থনীতি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তথ্যের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি কীভাবে প্রভাবিত করে তা বিশ্লেষন করে। তথ্য অসংগতি ধারণাটি এক্ষেত্রে গুরুত্ত্বপূর্ন যখন এক পক্ষের অন্য পক্ষের তুলনায় বেশি বা নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকে। তথ্য অসংগতি নৈতিক অবক্ষয়, বিরুপ নির্বাচনের মত সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে, যা চুক্তি মতবাদে বিশ্লেষন করা হয়। তথ্য অর্থনীতি অর্থব্যবস্থা, বীমা, চুক্তি মতবাদ এবং ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতি
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আন্তর্জাতিক সীমান্তসমূহের মধ্যে দ্রব্য ও সেবা প্রবাহ নির্ণয় নিয়ে বিশ্লেষন করে। আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা সামষ্টিক অর্থনীতির একটি অংশ যা আন্তর্জাতিক সীমান্তসমূহের মধ্যে মূলধন প্রবাহ ও এক্সচেঞ্জ রেটের উপর ইহা কি প্রভাব ফেলে তা নিয়ে আলোচনা করে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্রব্য, সেবা ও মূলধনের বাণিজ্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বায়ন।
শ্রম অর্থনীতি
শ্রম অর্থনীতি শ্রম বাজার কার্যক্রম ও শ্রম প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে। শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শ্রম বাজার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। শ্রম অর্থনীতি শ্রম সেবা প্রদানকারী (শ্রমিক), যে ব্যক্তির শ্রমের চাহিদা রয়েছে (মালিক), মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ, কর্মরত ও বেকার শ্রমিক এবং বেকার সমস্যা সমাধান নিয়ে পর্যালোচনা করে।
কল্যাণ অর্থনীতি
কল্যাণ অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির একটি শাখা যা ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে একটি অর্থনীতির বণ্টনকৃত দক্ষতা নির্ধারণ ও ইহা সংশ্লিষ্ট আয় বণ্টন নিয়ে আলোচনা করে। ইহা ব্যক্তি ও সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরীক্ষার মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ পরিমাপের চেষ্টা করে।
পরিবেশ অর্থনীতি
পরিবেশ অর্থনীতি পরিবেশ দূষণ, উৎসাহ প্রদান বা পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করে। বাস্তবিক পক্ষে উৎপাদন বা ভোগের উপর খারাপ প্রভাব যেমন বায়ু দূষণ বাজার ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। পরিবেশ অর্থনীতি মূলতঃ সরকারী নীতি এইসব ব্যর্থতাকে কীভাবে সমাধান করবে তা নিয়ে আলোচনা করে। সরকারী নীতি কিছু নিয়মকে প্রতিফলিত করে যা ব্যয়-মূনাফা বিশ্লেষন নামে পরিচিত বা বাজার এসব সমাধান করে বিভিন্ন ফি পুনঃনির্ধারণের মাধ্যমে বা সম্পদের অধিকারের সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে।
আইন ও অর্থনীতি
আইন ও অর্থনীতি অথবা আইনের অর্থনৈতিক বিশ্লেষন হচ্ছে প্রকৃত তত্ত্বের প্রতিফলন যা আইনে অর্থনৈতিক পদ্ধতিকে প্রয়োগ করে। ইহা প্রকৃত আইনের প্রভাব ব্যাখ্যার অর্থনৈতিক ধারণা, কোন আইন প্রয়োগের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও কোনটি প্রয়োগে কি প্রভাব ফেলে এইসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৬১ সালে রোনাল্ড কজ এর একটি নিবন্ধে পরামর্শ দেয়া হয় যে, সম্পত্তির অধিকার সঙ্গায়িত করা যায় বাহ্যিকতার সমস্যা দিয়ে।
ব্যবস্থাপনা অর্থনীতি
ব্যবস্থাপনা অর্থনীতি সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণে বিশেষ করে ব্যবসায়ী ফার্মসমূহ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। ইহা পরিমাণগত পদ্ধতি যেমন গবেষণা কার্যক্রম ও প্রোগ্রামিং এবং পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি যেমন সংশ্লেষাংক বিশ্লেষণ কোন ঝুঁকি ছাড়াই ও সঠিক প্রক্রিয়ায় তুলে ধরতে পারে। একটি ভাল ধারণা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সফলের সাথে সাথে উৎপাদন খরচ সর্বনিম্নকরণ, মূনাফা সর্বোচ্চকরণ, ফার্মের উদ্দেশ্য এবং প্রযুক্তি ও বাজার পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
সরকারী অর্থব্যবস্থা
সরকারী অর্থব্যবস্থা অর্থনীতির একটি শাখা যা সরকারী বিভিন্ন খাতের রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট নিয়ে আলোচনা করে। এই বিষয়টি করদাতা নির্ধারণ, সরকারী বিভিন্ন কর্মসূচীর ব্যয়-মুনাফা বিশ্লেষন, বিভিন্ন প্রকার ব্যয় ও করের অর্থনৈতিক দক্ষতা ও আয় বণ্টন এবং রাজস্ব নীতি নিয়ে আলোচনা করে। ইহা ছাড়াও সরকারি পছন্দ তত্ত্ব, সরকারী ক্ষেত্রসমূহে ব্যষ্টিক অর্থনীতির আচরণ এবং ভোটার, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।
চাহিদা ও যোগান
ডান|200px|চাহিদা বিধি
চাহিদা ও যোগান তত্ত্ব একটি কাঠামোগত যা দ্রব্যের দাম ও পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করে এবং বাজার অর্থনীতিতে এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। সামষ্টিক অর্থনীতি তত্ত্বসমূহে একটি প্রতিযোগিতামুলক বাজারে দ্রব্যের দাম ও পরিমাণ নির্ণয়ে ইহা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইহা একটি বাজার গঠনে অন্য বাজারের কাঠামো ও তত্ত্বগত আচরণের উপর নির্ভর করে স্তম্ভের মত কাজ করে।
একটি দ্রব্যের বিদ্যমান বাজারে দ্রব্যের পরিমাণ নির্ভর করে তার চাহিদার উপর যেখানে সকল ক্রেতা দ্রব্যটির প্রতিটি একক মূল্যে ক্রয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে। চাহিদা মূলতঃ একটি টেবিল বা একটি চিত্রের প্রতিফলন যা দ্রব্যের দাম ও পরিমাণের সাথে সম্পর্কযুক্ত (চিত্রটি লক্ষ করুন)। চাহিদা তত্ত্ব আলোচনা করে যে, ভোক্তা বিদ্যমান আয়, দাম, পছন্দ ইত্যাদিতে যৌক্তিকভাবে প্রতিটি দ্রব্যের বিভিন্ন পরিমাণ পছন্দ করবে। এক্ষেত্রে 'উপযোগ সর্বোচ্চকরণ প্রতিবন্ধক' শব্দটি ব্যবহৃত হয় (চাহিদার জন্য আয় একটি প্রতিবন্ধক)। এখানে 'উপযোগ' প্রতিটি ভোক্তার পছন্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত। উপযোগ এবং আয় অণুসিদ্ধান্তমূলক বৈশিষ্ট্যের মডেলে দ্রব্যের দামের পরিবর্তনে চাহিদার পরিবর্তন নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়। চাহিদা তত্ত্বে বলা হয় যে, একটি বিদ্যমান বাজারে সাধারণত দাম ও চাহিদা বিপরীত সম্পর্কযুক্ত। অন্যভাবে বলা যায় যে, দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে কম ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা ও ক্রয়ের ইচ্ছা থাকবে (অন্যান্য সব কিছু অপরিবর্তিত থেকে)। দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পায় (আয় প্রভাব) এবং ভোক্তা কম মূল্যের পরিবর্তিত দ্রব্যের দিকে ঝুঁকবে (পরিবর্তক প্রভাব)। অন্যান্য উপাদানও চাহিদার উপর প্রভাব ফেলে; উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, আয় বৃদ্ধি পেলে চাহিদা রেখা মূলবিন্দু থেকে দূরে সরবে।
যোগান হচ্ছে দ্রব্যের দাম ও ঐ দামে বিক্রেতার কাছে থাকা দ্রব্যের পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ক। যোগান মূলতঃ একটি টেবিল বা একটি চিত্রের প্রতিফলন যা দ্রব্যের দাম ও সরবরাহকৃত পরিমাণের সাথে সম্পর্কযুক্ত । উৎপাদক মূনাফা সর্বোচ্চকরণ অণুসিদ্ধান্ত গ্রহণ করে,যার অর্থ উৎপাদক সেই পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করবে যা তার মূনাফা সর্বোচ্চ করবে। যোগান মূলতঃ দাম ও সরবরাহকৃত দ্রব্যের পরিমাণের অণুপাত (অন্যান্য সব কিছু অপরিবর্তিত থেকে)। অন্যভাবে বলা যায় যে, দ্রব্যটির সর্বোচ্চ দামে বিক্রয় করা যাবে, বেশির ভাগ উৎপাদক সেই পরিমাণ দ্রব্য সরবরাহ করে। দাম বৃদ্ধি দ্রব্যের মূনাফা বাড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। ভারসাম্যের কম দামে দ্রব্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহের পরিমাণ কম থাকবে। ইহা দাম বৃদ্ধি করবে। ভারসাম্যের বেশি দামে দ্রব্যের চাহিদার তুলনায় দ্রব্যের সরবরাহের পরিমাণ বেশি থাকবে। ইহা দাম কমাবে। চাহিদা ও যোগান মডেলে চাহিদা ও যোগান রেখায় নির্ধারিত হয়, দাম ও পরিমাণ স্থির হবে একটি দামে যেখানে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগান সমান হবে। ইহা চিত্রে দুটি রেখার পরস্পর ছেদ বিন্দু, যাকে বাজার ভারসাম্য বলা হয়।
একটি দ্রব্যের বিদ্যমান পরিমাণ চাহিদা রেখায় দাম বিন্দুতে দাম নির্দেশিত হবে বা দ্রব্যের সেই পরিমাণে ভোক্তার প্রান্তিক উপযোগ নির্দেশিত হবে। ইহা দ্রব্যটির উল্লিখিত পরিমাণে কি পরিমাণ খরচ করতে প্রস্তুত আছে তা পরিমাপ করে। যোগান রেখায় দাম বিন্দু প্রান্তিক খরচ নির্ণয় করে অর্থাৎ সেই পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদনে উৎপাদকের মোট ব্যয় বৃদ্ধি নির্ণয় করে। চাহিদা ও যোগান ভারসাম্য দাম নির্ধারণ করে। একটি পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাহিদা ও যোগান ভারসাম্য অবস্থায় উৎপাদন খরচ ও দাম সমান করে।
চাহিদা ও যোগান উৎপাদনের উপাদানের মধ্যে আয়ের বণ্টন তত্ত্বে ব্যবহার করা হয়, যেখানে বাজার উপাদানের মাধ্যমে শ্রম ও বিনিয়োগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শ্রম বাজারের উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, নিয়োগকৃত শ্রমিকের পরিমাণ ও শ্রমের দাম শ্রমের চাহিদা (উৎপাদকের ক্ষেত্রে) এবং শ্রমের সরবরাহ (শ্রমিকের ক্ষেত্রে) নির্ধারণ করবে।
চাহিদা ও যোগান পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের আচরণ ব্যাখ্যা করে, কিন্তু বিভিন্ন প্রকার বাজারের কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য ইহার প্রয়োজনীয়তা আদর্শ হিসেবে কাজ করে। চাহিদা ও যোগান বাজার অর্থনীতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির চলকসমূহ ব্যাখ্যাও করে, যেমন দ্রব্যের মোট পরিমাণ ও সাধারণ মূল্যস্তর।
মূল্য ও পরিমাণ
চাহিদা ও যোগান বিশ্লেষনে দাম (দ্রব্য বিনিময়ের হার) উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। দাম ও পরিমাণকে বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সবচাইতে বেশি প্রতক্ষ পর্যবেক্ষণ চলক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যোগান, চাহিদা ও বাজার ভারসাম্য তত্ত্বভাবে দাম ও দ্রব্যের পরিমাণের সহিত সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু দাম ও চাহিদা পরিবর্তনের পরিমাপে উপাদানের প্রভাব নির্ণয় করা হয়—তাদের মাধ্যমে, দাম ও পরিমাণ—ফলিত ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে আদর্শ চলক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অর্থনৈতিক তত্ত্বসমুহ বিদ্যমান পরিমাণে দাম কি হবে তা নির্ধারণ করে। বাস্তবিকপক্ষে, দাম ও পরিমাণের পরিবর্তনের ফলে যোগান ও চাহিদা কতটুকু পরিবর্তন হবে তা নির্ণয় করার চেষ্টা করা হয়।
চাহিদা ও যোগান তত্ত্ব ভারসাম্য নির্ণয় করে কিন্তু চাহিদা ও যোগানের পরিবর্তনে ভারসাম্য কি গতিতে পরিবর্তিত হয়ে তা নির্ধারিত হবে তা পারেনা। অনেক ক্ষেত্রে, 'দামের স্থিরতা' এর বিভিন্ন কাঠামো দামের চাইতে চাহিদা ও যোগানের পরিবর্তনে স্বল্পকালে দ্রব্যের পরিমাণ নির্ধারণে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। ইহা সামষ্টিক অর্থনীতিতে বাণিজ্য চক্র বিশ্লেষনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দাম স্থিরতার প্রভাব সমাধানে কখনও কখনও বিশ্লেষন করা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ভারসাম্যের অনূসিদ্ধান্ত ইহা প্রতিবন্ধকতা হিসাবে ধরা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে,একটি বাজারের দাম স্থিরতা শ্রম বাজারের শ্রম হারকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং পূর্নপ্রতিযোগিতা মূলক বাজার থেকে ঐ বাজারে সরবরাহ করে।
অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে সকল সামাজিক ব্যয় ও মুনাফা গণনা করার জন্য বাজার বিশ্লেষন করা হয়। কখনও কখনও বাহ্যিকতা শব্দটি উৎপাদন ও ভোগ হতে সামাজিক ব্যয় ও মুনাফা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যা বাজার মূল্য থেকে প্রতিফলিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, বায়ু দূষন ঋনাত্বক বাহ্যিকতা সৃষ্টি করে এবং শিক্ষা ধনাত্বক বাহ্যিকতা সৃষ্টি করে। দ্রব্য বিক্রিয়ে সরকারী কর এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধক সমূহ ঋনাত্বক বাহ্যিকতা এবং ভূর্তকি ও অন্যান্য সূবিধা সমুহ দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ধনাত্বক বাহ্যিকতা সৃষ্টি করে সঠিক দাম নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়।
প্রান্তিকতা
প্রান্তিক অর্থনৈতিক তত্ত্বে আয় ও সম্পদকে প্রতিবন্ধক বিষয় ধরে ভোক্তা অধিক পছন্দ অবস্থানে পৌঁছতে চেষ্টা করে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। ইহা উৎপাদক তাদের নিজস্ব প্রতিবন্ধক (ভালো পণ্যের চাহিদা, প্রযুক্তি এবং উপাদান মূল্য)-কে বিষয় ধরে মুনাফা সর্বোচ্চ করতে চেষ্টা করে, তা নিয়েও আলোচনা করে। তাই একজন ভোক্তার একটি দ্রব্যের দামের বিপরীতে প্রান্তিক উপযোগ যখন শূন্য হয়, সেই বিন্দুতে ঐ ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি থেমে যায়। একইভাবে একজন উৎপাদক প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক ব্যয় তুলনা করে, যাকে প্রান্তিক মুনাফা বলা হয়। যে বিন্দুতে প্রান্তিক মুনাফা শূন্য হয় সেখানে উৎপাদন বৃদ্ধি থেমে যায়। ভারসাম্যের দিকে গমন ও ভারসাম্যের মধ্যে পরিবর্তনের ফলে প্রান্তিক বিন্দুসমূহও পরিবর্তিত হয়, তা কখনও কম-বেশি হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
যেকোন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় যেখানে দুষ্প্রাপ্যতা বিদ্যমান সম্পর্কযুক্ত শর্তসমূহ ও বিবেচ্য বিষয়সমূহ সাধারণ ভাবেই প্রয়োগ করা হয়, তা বাজার নির্ভর হোক কিংবা না হোক। দুষ্প্রাপ্যতা বলতে উৎপাদন যোগ্য বা বিনিময় যোগ্য দ্রব্যের পরিমাণ যা প্রয়োজনীয় উৎপাদনে প্রয়োজন কিংবা প্রত্যাশিত। উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা এক ধরনের শর্তের ধরন যা বিদ্যমান নির্দিষ্ট সম্পদের করনে তৈরি হয়। এ ধরনের সম্পদ প্রতিবন্ধকতা গুলো উৎপাদন সম্ভাবনার তালিকা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ভোক্তা বা অন্য প্রতিনিধির ক্ষেত্রে যদি সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করা হয় উৎপাদন সম্ভাবনা ও দুষ্প্রাপ্যতার ব্যবধান কমে আসবে, যেমন আয়ের ক্ষেত্রে বেকার সময়, সরকারী পণ্যের জন্য বেসরকারী পণ্য, ভবিষ্যৎ ভোগের জন্য বর্তমান ভোগ। প্রান্তিকতাবাদীরা বাণিজ্য-বন্ধ অবস্থাকে পরিমাপের ক্ষেত্রে সূযোগ ব্যয় এর কথা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের ব্যয়সমূহ বাজার অর্থনীতিতে দামের প্রতিপফলন ঘটায় এবং বাজার অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক দক্ষতা বিশ্লেষণে বা বণ্টন ব্যবস্থা পূর্বনির্ধারিত করতে ব্যবহার করা হয়। একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণকারী অর্থনীতিতে তুলনামূলক ছায়া-মূল্য সম্পর্ক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে সম্পদের ব্যবহারের দক্ষতা অবশ্যই পরিপূর্ণ করতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রান্তিকতাবাদ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাতিয়ার হিসেবে শুধুমাত্র ভোক্তা বা বাজারের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়না, এমনকি ভিন্ন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া এবং আয়ের বৃহৎ বণ্টন ব্যবস্থায় চলক সমূহের সাথে সম্পর্ক ও তাদের প্রভাব নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়।
অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ
অর্থনীতি হচ্ছে একটি বিষয় যা যুক্তিকে সংশ্লেষাংক পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করে। ইহার লক্ষ্য বস্তুতে তত্ত্ব প্রস্তুতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা অন্যান্য তত্ত্ব থেকে ব্যাখ্যা করা সহজ, অধিক ফলদায়ক এবং দক্ষতাপূর্ন হতে হবে। কখনও কখনও চলক সমূহের সম্পর্ক ব্যাখ্যার জন্য সাধারণ পদ্ধতিতে বিশ্লেষন আরম্ভ করা হয়। জটিলতাকে ceteris paribus (অন্যান্য সবকিছু অপরিবর্তিত থেকে) অণুমিত শর্ত চিহ্নিত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, অর্থ অনূসিদ্ধান্তের পরিমাণ তত্ত্বে অন্যান্য সবকিছু অপরিবর্তিত থেকে মূল্যস্তর ও অর্থের যোগান ধনাত্বক সম্পর্কযুক্ত। এই তত্ত্বে অর্থনৈতিক তথ্য পরীক্ষা করা যায়, যেমন জিডিপির দামের সূচী ও অর্থের যোগান যা নগদ অর্থ ও ব্যাংক ডিপোজিটের যোগফল। অর্থনৈতিক পদ্ধতিসমূহ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার অনূপস্থিতিতে প্রতিযোগিতামূলক ব্যাখ্যার প্রতিক্রিয়া এবং অন্য চলক সৃষ্টি বিশৃংখলা দূরীকরনের চেষ্টাকে অনূমোদন করে। সাম্প্রতিক কালে অর্থনীতিতে পরীক্ষামূলক পদ্ধতিকে বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যা অর্থনীতি হতে কিছু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বৈশিষ্টগত পার্থক্য সৃষ্টিকারী ঐতিহাসিক মতবাদকে চ্যালেঞ্চ ছুঁড়ে দিয়েছে।
অর্থনৈতিক পদ্ধতিসমূহে সমস্যা বলতে তত্ত্বগত সম্পর্কের জন্য এখানে দ্বি-মাত্রা বিশিষ্ট চিত্র ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে উচ্চ স্তরের ক্ষেত্রে পল সামুয়েলশন অর্থনৈতিক বিশ্লেষনের অবকাঠামোর সমালোচনা করে দেখান যে, বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষার জন্য কীভাবে গাণিতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যাকে অর্থনীতিতে পরিচালক অর্থপূর্ন তত্ত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এবং এইসব তত্ত্বসমূহ জটিল তথ্য বিতারন করে।
অষ্ট্রিয়ান স্কুল অব ইকোনোমিক্সের কিছু বাতিলকৃত গাণিতিক অর্থনীতিতে যুক্তি দেখানো হয়েছিল যে, অর্থনৈতিক বিশ্লেষনে যেকোন অপ্রয়োজনীয় ও ঠিক নয় এমন সরল যুক্তি প্রয়োগ করা যায়। এখনও অর্থনীতিতে মতবাদ ও পদ্ধতি গঠনে বাস্তব-বিশ্ব অবস্থা বর্ণনার জন্য অণুসিদ্ধান্ত-বিয়োজন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, পরবর্তী সময়ের ব্যষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষন অর্থনীতি বহির্ভুত বিষয়াদির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়, যাকে অর্থনৈতিক রাজতন্ত্র নামে অভিহিত করা হয়।
ইতিহাস ও অর্থনৈতিক স্কুলসমূহ
প্রারম্ভিক অর্থনৈতিক চিন্তাধারা
প্রাচীন অর্থনীতিতে চিন্তাধারা মেসোপটেমিয়া, গ্রিক, রোমাক, ভারতীয়, চৈনিক, পারস্য এবং আরব সভ্যতার সমসাময়িক। অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনার প্রাচিন লেখকবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন অ্যারিস্টটল, চানক্য, কিন সি হুয়াং, টমাস একুইনাস, ইবনে খালদুন প্রমুখ। জোসেফ সুম্পেটার ১৪শ শতক থেকে ১৭শ শতকের মধ্যে সময়কালকালের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের বিবেচনা করেছেন "আগত অন্যান্য পক্ষের চাইতে বেশি নিকস্থ বৈজ্ঞানিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠাতা" হিসেবে যেমন প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে আর্থিক, সুদের হার এবং মূল্যতত্ত্ব উদ্ভাবন। ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমাহ আবিষ্কারের পরে সুম্পেটার ইবনে খালদুনকে আধুনিক অর্থনীতির সবচাইতে নিকটস্থ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তার অনেকগুলো অর্থনৈতিক তত্ত্ব অদ্যাবধি ইউরোপে অপরিচিত।
অন্য দুটি পক্ষ যাদের পরবর্তীতে 'বাণিজ্যবাদী' ও 'বাস্তববাদী' নামে অভিহিত করা হয় এবং এরা অর্থনীতির অবশিষ্ট উন্নয়নে প্রত্যক্ষ প্রভাব রাখেন। উভয় পক্ষই ইউরোপে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ ও আধুনিক পুঁজিবাদ উত্থানের সাথে একমত প্রকাশ করেন। বাণিজ্যবাদ (মার্কেনটাইলিজম) যা উৎপাদনমূলক নীতিগত সাহিত্যে অর্থনৈতিক মূলনীতি হিসেবে ১৬শ শতক থেকে ১৮শ শতক পর্যন্ত পরিচিত ছিল। এই মতবাদে একটি জাতির সম্পদ নির্ভর করে তাদের সংগৃহীত স্বর্ণ ও রৌপ্যের ওপর। একটি জাতি খনি থেকে না হলেও বিদেশে পণ্য রপ্তানী এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যতীত অন্য পণ্য আমদানীর উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে স্বর্ণ ও রৌপ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই মূলনীতিতে রপ্তানীযোগ্য পণ্য তৈরির জন্য সস্তা কাঁচামাল আমদানী এবং রাষ্ট্রীয় নীতিতে বৈদেশিক পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ ও উপনিবেশগুলোতে উৎপাদন বন্ধ করার নীতিকে উৎসাহিত করা হয়।
১৮ শতকের একদল চিন্তাবিদ ও লেখক আয় এবং উৎপাদনের চক্রাকার প্রবাহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চিন্তাধারার উন্নয়ন ঘটান। অ্যাডাম স্মীথ তাদের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে ভুল বলে ব্যাখ্যা করেন যদিও সেগুলো এখনও অর্থনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের মতে, একমাত্র কৃষি উৎপাদনই খরচের বেশি মুনাফা বয়ে আনতে পারে; সুতরাং কৃষির ওপরই সম্পদের বিষয়টি নির্ভরশীল। তাই, তারা উৎপাদন বৃদ্ধি ও শুল্ক আরোপ মতবাদে বিশ্বাসী বাণিজ্যবাদীদের বিরোধিতা করেন। তারা কর সংগ্রহের প্রশাসনিক ব্যয়বহূল ব্যবস্থা থেকে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহের পরামর্শ দেন। সমসাময়িক অর্থনীতিবিদগণ ভূমি কর-এর প্রকারভেদকে রাজস্ব করের গঠনমূলক উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন। বাণিজ্যবাদীদের বাণিজ্য নীতির প্রতিক্রিয়ায় লেইসেজ-ফেয়ার নীতি সমর্থন করেন, যাকে অর্থনীতিতে ন্যূনতম সরকারি হস্তক্ষেপ বলে গণ্য করা হয়।
বুনিয়াদী অর্থনীতি
১৭৭৬ সালে এ্যাডাম স্মীথের “The Wealth of Nations” গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর অর্থনীতি একটি আলাদা বিষয় হিসেবে কার্যকরী ভাবে প্রচলিত হয় বলে বর্ণনা করা হয়। এই বইটিতে উৎপাদনের উপাদান হিসেবে ভূমি, শ্রম ও পুঁজিকে নির্ধারণ এবং জাতীয় সম্পদের মূল বণ্টন নিয়ে আলোচনা করা হয়।স্মীথের দৃষ্টিতে আদর্শ অর্থনীতি হচ্ছে একটি স্ব-চালিত বাজার প্রক্রিয়া যা সয়ংক্রিয়ভাবে জনগনের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটায়। তিনি বাজার প্রক্রিয়াকে “অদৃশ্য হাত” বলে বর্ণনা করেন যা প্রতিটি চলককে তাদের স্ব-ইচ্ছায় পরিচালিত করে এবং সমাজের জন্য বৃহৎ মূনাফা বয়ে আনে। এ্যাডাম স্মীথ “লেইসেজ ফেয়ার” নীতি সহ আদর্শবাদী ধারণা সমূহের সমন্বয় ঘটান কিন্তু একমাত্র কৃষি উ ৎপাদনশীল ধারণা প্রত্যাখান করেন।
তার বিখ্যাত “অদৃশ্য-হাত” দর্শনে স্মীথ যুক্তি দেখান যে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সামাজিক মূনাফার অগ্রগামী প্রান্তের দিকে ধাবিত হয় যদিও ইহা নিম্নমূখী মূনাফার দিকে ধাবিত করে। সাধারণভাবে স্মীথ একে রাজনৈতিক অর্থনীতি ও পরে বুনিয়াদী অর্থনীতি নামকরণ করেন। ১৭৭০ সাল থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য লেখকগন হচ্ছেন থমাস মালথাস, ডেভিড রিকার্ডো এবং জন ষ্টুয়ার্ট মিল।
যখন এ্যাডাম স্মীথ আয়ের উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তখন ডেভিড রিকার্ডো ভূমি মালিক, শ্রমিক ও পুঁজির মধ্যে আয়ের বণ্টন বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। রিকার্ডো ভূমি মালিক একদিকে এবং অন্যদিকে শ্রম ও পুঁজির মধ্যে বৈপরীত্য লক্ষ্য করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, নির্দিষ্ট ভুমির পরিমাণের বিপরীতে জনসংখ্যা ও পুঁজির বিপরীতে খাজনা বৃদ্ধি পায় এবং শ্রমিকের বেতন ও মূনাফা হ্রাস পায়।
থমাস রবার্ট ম্যালথাস নিম্ন জীবনযাত্রার নিম্নমূখীতার ধারণাকে ব্যবহার করেন। তা যুক্তিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় গাণিতিক হারে। তার মতে, শ্রমিকের প্রাপ্য কমে তার করন নির্দিষ্ট জমির বিপরীতে জনসংখ্যা অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শ্রমিকের বেতন কমতে থাকে যা জনগনের জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণ করে।
ম্যালথাস বাজার অর্থনীতিতে পূর্ননিয়োগের স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি অর্থনৈতিক গতিধারার উপর অপূর্ননিয়োগের প্রভাব কম এবং ১৯৩০ সালের জন মায়নার্ড কেইন্স কর্তৃক ব্যবহৃত একটি ধারণা দেন।
বুনিয়াদী অর্থনীতির শেষের দিকে জন স্টুয়ার্ট মিল বাজার প্রক্রিয়ার সৃষ্ট বণ্টন ব্যবস্থার অত্যাবশকীয় বিষয় সমূহ নিয়ে পূর্ববর্তী বুনিয়াদী অর্থনীতিবিদদের সহিত অংশগ্রহণ করেন। মিল বাজার ব্যবস্থার দুটি মূলনীতির পার্থক্য নিয়ে উল্লেখ করেনঃ সম্পদের শ্রেণিবিভাগ ও আয়ের বণ্টন। বাজারকে অবশ্যই সম্পদের সুসম বণ্টন করতে হবে কিন্তু আয়ের বণ্টন নয়। তিনি বলেন, ইহা সমাজের জন্য সময়োপযোগী হতে হবে।
বুনিয়াদী তত্ত্বসমুহের মধ্যে মূল্য তত্ত্ব গুরুত্ত্বপূর্ন। স্মীথ লেখেন যে, “real price of every thing ... is the toil and trouble of acquiring it" যা দূস্প্রাপ্যতা থেকে সৃষ্ট হয়। স্মীথের মতে, জমির খাজনা ও মূনাফার সাথে শ্রমের মূল্যের মত অন্যান্য খরচও পণ্যের মূল্যের সহিত যুক্ত হয়। অন্যান্য বুনিয়াদী অর্থনীতিবিদ গণ স্মীথের মতামতে বিভিন্নতা লক্ষ্য করে ‘মুল্যের শ্রম তত্ত্ব’ নামে একটি তত্ত্ব দেন। বুনিয়াদী অর্থনীতিতে বাজার দীর্ঘ মেয়াদী ভারসাম্যের দিকে ধাবিত হয় বলে নির্ধারণ করা হয়।
মার্ক্সীয় অর্থনীতি
জার্মান অর্থনীতিবিদ কার্ল মার্ক্স-এর রচনার ভিত্ততে অর্থনৈতিক চিন্তাধারার মার্ক্সীয় চিন্তাভঙ্গির উৎপত্তি হয়। বুনিয়াদী অর্থনীতির চিন্তাধারায় মার্ক্সীয় অর্থনীতির আগমন একটি যুগস্রষ্টা ঘটনা। কার্ল মার্ক্সের কাজের মাধ্যমেই ইহা পরিচালিত হয়। তার মূল্যবান কাজের মধ্যে “Capital” এর প্রথম খন্ড ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দে জার্মানীতে প্রকাশিত হয়। এই খণ্ডে তিনি ‘মূল্যের শ্রম তত্ত্ব’ এবং পুঁজির দ্বারা শ্রম ব্যবহারে তার চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করেন। তাই, পুঁজিবাদী সমাজে শ্রম ব্যবহার পরিমাপে সাধারণ মূল্য তত্ত্ব থেকে ‘মূল্যের শ্রম তত্ত্ব’ বেশি কার্যকরী যদিও রাজনৈতিক অর্থনীতিতে এটি ঊহ্য রাখা হয়।
নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি
১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত কিছু তত্ত্বের সমষ্টি হিসেবে ‘নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি’ বা ‘প্রান্তিক অর্থনীতি’ গড়ে উঠে।নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শালের মাধ্যমে ‘অর্থনীতি’ শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা পূর্বে ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ নামে পরিচিত ছিল। নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি বাজার ভারসাম্যে দাম ও পরিমাণের যুগ্ম নির্নায়ক হিসেবে চাহিদা ও যোগানকে প্রক্রিয়া করন করে, যা উৎপাদিত পণ্য শ্রেণিবিন্যাস ও আয়ের বণ্টনকে প্রভাবিত করে। ইহা চাহিদার ক্ষেত্রে মুল্যের প্রান্তিক উপযোগ তত্ত্বের সমর্থনে বুনিয়াদী অর্থনীতি থেকে মুল্যের শ্রম তত্ত্ব এবং যোগানের দিক হতে আরও সাধারণ ব্যয় তত্ত্ব বিশ্লেষন করে।
ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি মূনাফা ও ব্যয় নির্ধারণ করে বিশাল অবদান রেখেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ব্যক্তিগত চাহিদার ‘ভোগ তত্ত্ব’ কীভাবে দাম এবং আয় পরিমাণগত চাহিদা উপর প্রভাব ফেলে তা পৃথকীকরন করে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইহা তড়িৎ প্রতিফলিত হয় এবং কেন্সীয়ান সামষ্টিক অর্থনীতির সহিৎ নব্য বুনিয়াদী মূলনীতি স্থায়িত্ত্ব হয়।
নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি কখনও কখনও ধর্মীয় অর্থনীতিকে অণুসরন করে যখন ইহা সমালোচনা কিংবা সহানুভুতির সম্মুক্ষীন হয়। আধুনিক ‘মেইনষ্ট্রীম অর্থনীতি’ গঠিত হয় নব্য বুনিয়াদী অর্থনীতি থেকে কিন্তু অনেক বাছাই প্রক্রিয়ায় দেখা যায় যে, ইহা পূর্বের বিশ্লেষনের খন্ড বা উৎঘাটিত যেমন ইকোনোমেট্রিক্স, ক্রীড়া তত্ত্ব, বাজার ব্যর্থতার বিশ্লেষন ও অপূর্ন প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় আয়ের প্রভাবক দীর্ঘমেয়াদী চলক সমূহ বিশ্লেষনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নব্য বুনিয়াদী মডেল।
কেন্সীয় অর্থনীতি
কেন্সীয় অর্থনীতি জন মেনার্ড কেইন্স-এর, বিশেষ করে তার বই ‘The General Theory of Employment, Interest and Money’ (1936), এর মাধ্যমে সৃষ্ট, যা ১৯৩০-এর অর্থনৈতিক মহামন্দা-র প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনীতিকে একটি বিশেষ তত্বের সূচনা করে। কেন্সীয় অর্থনীতি মূল প্রস্তাব অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনার্থে সরকারের তরফে সম্প্রসারণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। বইটি স্বল্প কালে যেখানে মূল্য সম্পর্কযুক্তভাবে অবাধ সেখানে জাতীয় আয়ের নিণায়ক নির্ধারণের উপর বিষয়ের প্রতিফলিত করে। নিম্ন সক্রিয় চাহিদার কারণে শ্রম বাজারে উচ্চ বেকারত্ব অবশ্যই নিবারণ হবেনা এবং কখনও মূল্য গ্রহণযোগ্যতা ও আর্থিক নীতি অকার্যকর হয় কেন কেইন্স তা বৃহৎ আকারে তাত্ত্বিক বিশ্লেষনের চেষ্টা করেছেন। তাই অর্থনৈতিক বিশ্লেষনণ প্রভাবিত করনের ক্ষেত্রে এই বইটিকে বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করা হয়।
কেইন্সিয়ান অর্থনীতির দুইটি সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কেইন্সিয়ান-পরবর্তী অর্থনীতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির চলক সমূহ ও প্রক্রিয়া সমন্বয়ের উপর জোড় দেওয়া হয়। তাদের মডেল গুলোর জন্য ব্যষ্টিক কাঠামোর বিশ্লেষনে সরল সর্বোচ্চকরন মডেল থেকে বাস্তব জীবন অভ্যাস বেশি মূলভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। ইহা সাধারণত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও জন রবিনসনের কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত। নব্য কেইন্সিয়ান অর্থনীতিও কেইন্সিয়ান প্রথা উন্নয়নের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই গ্রুপের গবেষক গণ ব্যষ্টিক কাঠামোতে ব্যবহৃত মডেল সমূহ ও আচরণ উন্নয়নে অন্য অর্থনীতিবিদদের সহিত প্রচেষ্টা ভাগাভাগি করতেন কিন্তু আদর্শ কেইন্সিয়ান প্রতিচ্ছবির নিম্ন প্রতিফলন যেমন দাম ও শ্রমিকের বেতনের অস্থিতিস্থাপকতা ইত্যাদির কারণে তা এগোতে পারেনি। এগুলো স্বাভাবিকভাবে তৈরি করা হয় মডেলসমূহের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্টের জন্য যতটা না কেইন্সিয়ান-অভিব্যক্তির জন্য সাধারণ অণুমিত শর্তের জন্য।
অন্যান্য ঘরানা ও ধারণাস্রোত
অন্যান্য সু-পরিচিত স্কুল বা ধারণার প্রকৃতি সমুহ বিশেষ করে অর্থনীতির বিশেষ ক্ষেত্রে গবেষণা ও যেসব বিশ্বব্যপী পরিচিত ছড়িয়ে থাকা প্রাতিষ্ঠানিক গ্রুপ সমুহ হচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ান স্কুল, শিকাগো স্কুল, ফ্রেইবুর্গ স্কুল, লাউসান্নে স্কুল ও স্টকহম স্কুল।
সামষ্টিক অর্থনীতি প্রতিফলিত হয়েছে যাদের সাহিত্যেঃ বুনিয়াদি অর্থনীতি, কেইন্সিয়ান অর্থনীতি, নব্য কেইন্সিয়ান চিন্তাধারা, কেইন্সিয়ান-পরবর্তী অর্থনীতি, আর্থিক অর্থনীতি, নব্য বুনিয়াদি অর্থনীতি এবং যোগান-ভিত্তিক অর্থনীতি।নতুন বিকল্প উন্নয়ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়ঃ পরিবেশ অর্থনীতি, পরিবর্তন সম্পর্কিত অর্থনীতি, নির্ভরশীলতা অর্থনীতি, কাঠামোগত অর্থনীতি এবং বিশ্ব প্রক্রিয়া তত্ত্ব।
অর্থনীতির ঐতিহাসিক সংজ্ঞার্থসমূহ
এই বিষয়টি প্রবন্ধের প্রথমে আলোচনা করা হয়েছে।
সম্পদের সংজ্ঞা
সম্পদকে বৃহৎ পরিসরে সংজ্ঞায়িত করার সাথে ডেভিড হিউম ও এডাম স্মিথ কর্মের রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রাথমিক আলোচনা সম্পর্কযুক্ত। হিউম যুক্তি দেন যে, উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যতীত অতিরিক্ত স্বর্ণ মূল্য বৃদ্ধি করতে পারে। স্মিথ অবশ্য প্রকৃত সম্পদ বলতে বোঝান যে, অতিরিক্ত স্বর্ণ ও রৌপ্য নয়, সমাজে শ্রম ও ভূমির বার্ষিক উৎপাদনই সম্পদ।
জন স্টুয়ার্ট মিল অর্থনীতিকে সংজ্ঞায়িত করেন এভাবে , "the practical science of production and distribution of wealth" অর্থাৎ অর্থনীতি হচ্ছে উৎপাদন ও সম্পদ বণ্টনের ব্যবহারিক বিজ্ঞান। এই সংজ্ঞাটি Concise Oxford English Dictionary কর্তৃক গৃহীত হয়েছে এমনকি ভোগের মূলনীতিও এর অন্তর্ভুক্ত হয়নি। মিলের কাছে সম্পদ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের ভান্ডার।
সম্পদকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে উৎপাদন ও ভোগের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই গুরুত্বারোপকে সমালোচকরা মানুষকে নেপথ্য ভুমিকায় রেখে সম্পদের উপর বেশি আলোকপাত করা হয়েছে বলে সমালোচনা করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, জন রাস্কিন রাজনৈতিক অর্থনীতিকে ধনীদের বিজ্ঞান ও জারজ বিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কল্যাণ সংজ্ঞা
পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে মানুষ, মানবীয় কার্যাবলী ও মানব কল্যাণের বিষয়টি সংঙ্গার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে, যতটা না সম্পদ অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৯০ সালে আলফ্রেড মার্শাল তার ‘Principles of Economics’ বইয়ে লিখেন যে,
"Political Economy or Economics is a study of mankind in the ordinary business of Life; it examines that part of the individual and social action which is most closely connected with the attainment and with the use of material requisites of well-being." অর্থাৎ রাজনৈতিক অর্থনীতি বা অর্থনীতি হচ্ছে মানবিক জীবন যাপনের অধ্যয়ন; ইহা ব্যক্তি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ বিশেষ অংশ বিশ্লেষন করে যা প্রাপ্য ও বস্তুগত উন্নয়নে ব্যবহৃত জিনিসের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
অর্থনীতি কি একটি বিজ্ঞান?
বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, এর অনুসিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারে যার উপাত্ত সমূহ পরীক্ষা করা যায় এবং যেখানে একই শর্তের বিপরীতে ফলাফল প্রতিবার একই আসবে। অর্থনৈতিক পরীক্ষার বেশ কিছু ফলিত ক্ষেত্র সমুহে পরিচালনায়ঃ পরীক্ষামুলক অর্থনীতি ও ভোক্তার আচরণ, পরীক্ষায় মানবীয় বিষয়ের আলোকপাত; এবং ইকোনোমেট্রিক্সের শাখা সমুহ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার মাধ্যমে অনুপস্থিত উপাত্তের পরীক্ষায় আলোকপাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কখনও কখনও একই বিষয়ে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানে কি বলা হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের জন্য মানবীয় বিষয় সংশ্লিষ্ট আদর্শ ও ব্যবহারিক সংক্রান্ত নিয়মিত পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সামাজিক বিজ্ঞান হচ্ছে পর্যবেক্ষণমুলক বিজ্ঞান বা কখনও বিজ্ঞান, ইহা বিংশ শতাব্দীর একটি বিতর্কের বিষয়। কিছু দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বিশেষ করে কার্ল পপ্পার ঘোষণা করেন যে, পর্যবেক্ষণমূলক অণুসিদ্ধান্ত, অণুপাত বা তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক বলা যাবেনা যতক্ষন ইহা পর্যবেক্ষণে প্রত্যাখান, মিথ্যে প্রমাণিত হবেনা। সমালোচনা কারীরা অভিযোগ করেন যে, অর্থনীতি সবসময় সঠিক ফলাফল ধার্য করতে পারেনা, কিন্তু অর্থনীতিবিদগণ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার অনেক উদাহরণ দেন যে এগুলো পরীক্ষাগার ছাড়াই সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
অর্থনীতিতে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা সামাজিক আচরণের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কযুক্ত এবং অর্থনীতি অ-দৈহিক যুক্তির কারণে প্রাকৃতিক আইন বা চিরন্তন সত্য নয়। এটাই অর্থনীতিকে বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করাকে সমালোচিত করে। সাধারণত অর্থনীতিবিদ
গণ কঠিন পরিস্থিতির বর্তমানে ই ঘটতে পারে তারই উত্তর দেন, ইকোনোমেট্রিক্স এর মত পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি এবং বাস্তব জগতের উপাত্ত ব্যবহার করে অণুসিদ্ধান্ত পরীক্ষা করেননা। পরীক্ষামুলক অর্থনীতি গবেষণাগার কাঠামোয় অর্থনৈতিক তত্ত্ব সমুহের অন্তত কিছু ভবিষ্যদ্বাণী পরীক্ষার প্রচেষ্টা করে- যা ভেরন স্মিথ ও ডানিয়েল কানমানকে ২০০২ সালে Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel পুরস্কার এনে দেয়।
তবুও বিশ্লেষনের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে অর্থনৈতিক মডেলের যোগাযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক ডিরড্রে ম্যকক্লোস্কি ‘ম্যকক্লোস্কি বিশ্লেষন’ এর মাধ্যমে ইকোনোমেট্রিক্সের[ অন্যান্য অধ্যাপকগণের মত মডেলের সারমর্ম প্রয়োগ প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত করার জন্য কিছু উপাত্ত ব্যবহার করতে সমর্থ হন। তিনি যুক্তি দেন যে, বিশ্লেষনধর্মী সমীকরনের সম্প্রসারণে অর্থনীতি বিদদের বৃহৎ প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়ে থাকে। ইকোনোমেট্রিক্সবিদগণ উত্তর দেন যে, এটা শুধুমাত্র অর্থনীতি নয় বিজ্ঞানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ। ম্যকক্লোস্কি জটিল বিশ্লেষনের সমালোচনায় বলা হয় যে, অন্যান্য জিনিসের সাথে অর্থনৈতিক বিশ্লেষন সারমর্ম ধর্মী এ ধরনের উদাহরণ তিনি এড়িয়ে গেছেন এবং তার অভিযোগ অযৌক্তিক।
নোবেল প্রাইজ বিজয়ী ও দার্শনিক ফ্রেডরিক হায়েক বলেন যে, অর্থনীতি হচ্ছে একটি সামাজিক বিজ্ঞান, কিন্তু যুক্তি দেওয়া হচ্ছে দৈহিক বিজ্ঞানের মত পদ্ধতি অর্থনীতিতে ব্যবহার করা হলে তা ভুল ফলাফল বয়ে আনবে এবং একে অবৈজ্ঞানিক মনে করা হয় যখন যান্ত্রিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের চিন্তাধারার আচরণের সরল বিষয় গঠিত হয়।
কৌতুক করে অর্থনীতিকে “দূর্ভাগ্য বিজ্ঞান” বলা হয়। এতদ্বসত্তেও উনিশ শতকে তর্কযুক্তির মাধ্যমে ইহার সঠিক ভিত্তি গড়ে উঠে যদিও অর্থনীতি নামকরণ নিয়ে কটূক্তি করা হয়।
অণুমিত শর্তের সমালোচনা
অর্থনীতিতে অর্থনীতিবিদদের কর্তৃক কতিপয় মডেল ব্যবহৃত হওয়ায়, আবার কখনও অন্যান্য অর্থনীতিবিদ যারা অবাস্তবতার প্রতি বিশ্বস্ত, পর্যবেক্ষণ বিহীন বা পর্যালোচনা বিহীন অণুসিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে, ফলে ইহা সমালোচিত হয়। গুরুত্ত্বপূর্ন নয় এমন বিষয়ের ফলাফল থেকে গৃহীত অবাস্তব অণুসিদ্ধান্ত সমালোচনায় সাড়া মেলে এবং জটিলতা পূর্ণ বিশ্বে ইহার প্রয়োজন রয়েছে যা, অর্থনীতির দার্শনিক মতবাদের সহিৎ সামঞ্জস্যপুর্ন অবাস্তব অণুমিত শর্তের অধিক গ্রহণযোগ্য, কেননা এ ধরনের অণুমিত শর্ত অর্থনৈতিক জ্ঞানের জন্য অপরিহার্য। একটি গবেষণায় ইহাকে “গৃহীত প্রতিরক্ষা” নামে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং সারমর্মে বলা হয়েছে এই “গৃহীত প্রতিরক্ষা” অবাস্তব অণুমানকে সমালোচনার অগ্রহণযোগ্য হয়না। কখনও কখনও ইহা গুরুত্ত্বপূর্ন যে, একটি স্কুলের বিষয়সমুহের মধ্যে ইহা অধিকতর বিবেচ্য, সেখানে সকল অর্থনৈতিক বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং অন্তর্নিহিত সত্য অণুধাবনে পর্যবেক্ষণমুলক-বিবেচনা অধিক বলে বহু সংখ্যক পরিবর্তক ক্ষেত্র অভিযোগ করে।
অণুমিত শর্ত ও পর্যবেক্ষণ
অর্থনীতির সমালোচনার অধিকাংশই এই ধারণার কেন্দ্রবিন্দুতে বিচরন করে যে, অর্থনীতির কাঠামোগত অভিযোগ গুলো পরীক্ষামূলক প্রমাণ ছাড়াই প্রশ্নাতীত অণুমান। অনেক অর্থনীতিবিদ এইসব ধারণার উদাহরণ দিয়ে প্রতিউত্তরে বলেছেন যে, অর্থনীতিতে ব্যবহারের জন্য “গৃহীত মূলনীতি” কে বিবেচনা করা হয়েছে এবং যা পরীক্ষামুলক পর্যবেক্ষণের সহিৎ সামঞ্জস্যপূর্ন ( নিম্নের তিনটি উদাহরণ দেখুন), কখনও কখনও একমত পোষন করেছেন যে, এই পর্যবেক্ষণ গুলোর মূল অণুমিত শর্ত মুলতঃ অধিক সরলতা সমস্যা সংবলিত।
অনেক অর্থনীতিবিদ “অণুমিত শর্ত” থেকে পর্যবেক্ষণ মুলকে পরিবর্তিত হওয়া ধারণার উদাহরণ দিয়েছেন, তা নিম্নরুপঃ
যৌক্তিকতা= নিজস্ব-পছন্দঃ ইহাকে একটি সাধারণ মূলনীতি হিসেবে গণ্য করা যায় এবং অনেক মেইনস্ট্রীম অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন যে, যৌক্তিকতা নিজস্ব-পছন্দ ও এধরনের বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।ইহা কখনও কখনও সুরক্ষিত নিঃস্বার্থপর মুলনীতি হয়না। নিঃস্বার্থপর মুলনীতি দেখা যায় যখন কেউ স্বপ্রনোদিত হয়ে অন্যের উপকার করে। অন্যরা অভিযোগ করে নিঃস্বার্থপর মুলনীতির জন্য অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া যায়না এবং ইহা বিশ্বায়ন বিপদসঙ্কুল-অপরাধী এর চাইতে বেশি নিরুৎসাহিত করে। একজন যুক্তিযুক্ত ব্যক্তি যদি নিঃস্বার্থপর না হন, তাহলে অন্য ব্যক্তি চিরতরে স্বার্থপর হতে পারে। কখনও কখনও এই “গৃহীত মূলনীতি” বিভিন্ন পরীক্ষা এমনকি নিঃস্বার্থপর মুলনীতির বিষয়বস্তু হতে পারে, যখন সকল সামাজিক চাপ বিবেচিত হয়, কিংবা নিজস্ব-পছন্দের ধাঁচে প্রক্রিয়াকরন হয়।
......... আয় বৃদ্ধি প্রবণতা = ভোগঃ ইহাকে একটি গৃহীত মূলনীতি হিসেবে গণ্য করা যায় এবং অনেক মেইনস্ট্রীম অর্থনীতিবিদ ধারণা পোষন করেন যে, মানব জাতি ভোগে সুখী এবং ভোগ ব্যতীত অসুখী। সন্তুষ্ট করতে সমর্থ্য নয় এমন বিষয়ের অন্যান্য সাধারণ অণুমিত শর্ত যোগ করা যায় যা মানুষকে কখনও সূখী করতে পারেনা। যদিও মূল মতাদর্শ অধিক সরলতা সমস্যা যুক্ত ( বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদদের প্রতনিধিগণ আজকের দিনে বিশ্বাস না করতেও পারেন), বর্তমানে পর্যবেক্ষণমুলক পরীক্ষা আয় বৃদ্ধি প্রবনতার ধারণা ও আয়ের এরকম উপাদানের সম্পর্ক নিশ্চিত করে।
......... স্বয়ংক্রিয়তাঃ কিছু মেইনস্ট্রীম অর্থনীতিবিদ ইহা নিয়ে ধারণা পোষন করেন যে, মানব জাতি আদর্শবাদী, তারা স্বাধীনতা পছন্দ করে। ইহা অর্থনীতি ও অর্থনীতিবিদদের বিশেষ কিছু ধারণার অন্য ধরনের সরলতা প্রকাশ করে। প্রতিনিধি নির্ভর মডেল তৈরি ও পরীক্ষামুলক অর্থনীতি ফলাফল দেয় যা এই তত্ত্বকে নির্দেশনা করে।
গৃহীত মূলনীতির সাধারণ প্রতিরক্ষা হচ্ছে যে ইহা সমস্যার সমধান তৈরি করতে পারে। কখনও কখনও নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায় অর্থনৈতিক গবেষণার মাধ্যমে বিশেষ পর্যবেক্ষণের পর মূল অণুমিত শর্ত সমুহ আরও বাছাই করা করা হয় এবং আদর্শবাদী অর্থনীতিতে কৌশলগত ভাবে “গৃহীত মূলনীতি” দীর্ঘস্থায়ী হয়না।
পারস্পরিক বৈপরীত্যের সমালোচনা
অর্থনীতি হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল ও চিন্তাধারা গবেষণার একটি ক্ষেত্র। ফলে ইহাতে বিবেচনাধীন মতামত, আচরণ ও তত্ত্ব বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান লাভ করে। কিছু বিরোধী বিষয়বস্তু বা ভিন্ন অণুমিত শর্তের অংশসমুহের কারণে পারস্পরিক বিরোধিতা হয়ে থকে।
কল্যাণ ও দূস্প্রাপ্যতার অর্থনৈতিক সংজ্ঞার সমালোচনা
অর্থনীতির সংজ্ঞার সমালোচনায় বলা হয়েছে ইহা অতি নিম্ন বস্তুগত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, একজন ডাক্তার বা নৃত্য শিল্পীর সেবা ইহাতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। একটি শ্রমতত্ত্বে অবস্তুগত সেবার পারিশ্রমিকের যোগফলে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায় যা অসম্পূর্ণ। কল্যাণকে সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায়না, কারণ ধনী ও গরিবের কাছে অর্থের প্রান্তিক গুরুত্ত্ব ভিন্ন ( যেমন ১০০ টাকা গরিবের কাছে ধনীর চাইতে অনেক বেশি গুরুত্ত্বপূর্ন)। তারপরও এ্যালকোহল এবং ধূমপানের মত পণ্যের উৎপাদন ও বণ্টন কার্যক্রম মানব কল্যাণে সাহায্য করেনা কিন্তু এইসব অপর্যাপ্ত পণ্য প্রাকৃতিক ভাবে মানুষের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পুরন করে।
মার্ক্সীয় অর্থনীতিতে এখনও কল্যাণ সংজ্ঞার উপর আলকপাত করা হয়। ইহা ছাড়াও আদর্শবাদী অর্থনীতি শুরুতে কিছু সমালোচনায় যুক্তি দেওয়া হয় যে, বর্তমান অর্থনৈতিক চর্চা কল্যাণ পরিমাপে যথোপযুক্ত নয়, কিন্তু একমাত্র মুদ্রাবাদীদের কল্যাণের অপর্যাপ্ত সাফল্য রয়েছে।
নব্য-বুনিয়াদী অর্থনীতিতে চলমান নিয়ন্ত্রণে দুস্প্রাপ্যতার উপর আলোকপাত করা হয় যা বেশির ভাগ প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি বিভাগে প্রচলিত করা হয়। সম্প্রতি বছর গুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি উদ্বৃত্ত অর্থনীতি সহ ইহা বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হচ্ছে।
অর্থনীতি ও রাজনীতি
জন স্টুয়ার্ট মিল বা লিওন ওয়ালার্স এর মত কিছু অর্থনীতিবিদ উল্লেখ করেন যে, সম্পদ উৎপাদনকে ইহার বণ্টনের সহিত আবদ্ধ করা যায়না। “ফলিত অর্থনীতি” এর প্রাথমিক ক্ষেত্রে যা পরবর্তীতে “সামাজিক অর্থনীতি” নামে পরিচিত হয়েছে এবং এতে ক্ষমতা ও রাজনীতি নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থনীতি একটি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে কোন সরকার বা অন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। কখনও কখনও উচ্চপদস্থ নীতি নির্ধারক বা ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে পারে যারা অর্থনৈতিক তত্ত্বের ধারণা অধিক ব্যবহারকারী এবং নীতিগত এজেন্ডা ও মূল্য প্রক্রিয়ার বাহক হিসেবে পরিচিত এবং তাদের দায়িত্ব সম্পর্কিত বিষয় উল্লেখকে সীমিত করেনা। অর্থনৈতিক তত্ত্বের সহিৎ নিবিড় সম্পর্ক ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট চর্চা হচ্ছে একটি যৌক্তিক প্রতিফলন যা অর্থনীতির অধিকাংশ সরল মূলনীতির ছায়া অথবা বিপরীত আকৃতির এবং তা কখনও কখনও বিশেষ সামাজিক এজেন্ডা ও মূল্য পদ্ধতিকে বিভ্রান্তি করে।
স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়ের মত একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারী বিবৃতি বা সামষ্টিক অর্থনীতির মূলনীতি (আর্থিক নীতি ও রাজস্ব নীতি) হচ্ছে যুক্তি এবং সমালোচনার প্রতিফলন।
আদর্শ ও অর্থনীতি
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২১ শতকে ইউএস গনতন্ত্র উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সমন্মিত করতে সম্ভব করে, ১৯ শতকে কার্ল মার্ক্সের অবদান বা পুঁজিবাদ বনাম সমাজবাদ বিতর্ক নিয়ে ঠান্ডা যুদ্ধ অর্থনীতির বিবেচ্য বিষয়। তারপরেও অর্থনীতি কোন ধরনের মূল্য অভিযোগ সৃষ্টি করেনা, ফলে ইহা একটি কারণ হতে পারে যে, অর্থনীতি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা এবং অণুসিদ্ধান্ত পরীক্ষার উপর ভিত্তি না করেই পূর্বাভাস দেয়। একটি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ ফলাফলের উপর এবং একই পদ্ধতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় গঠন ও মূল্য বিচার ছাড়াই অন্যান্য অর্থনৈতিক পদ্ধতির দক্ষতা আলোকপাত করতে চেষ্টা করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, স্বত্বাধিকারী পদ্ধতি, সমঅধিকার পদ্ধতি বা সমাজের উচ্চ শ্রেণীর পদ্ধতির অর্থনীতিতে তাদের যোগ্যতা বাচ-বিচার ছাড়াই প্রয়োগ করা হয়।
নৃবিজ্ঞান ও অর্থনীতি
অর্থনীতি ও দর্শনের সম্পর্ক জটিল। অনেক অর্থনীতিবিদ পছন্দ এবং মূল্য বিচারকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে যেমন অর্থনীতির পরিধির বাইরে প্রয়োজন বা অভাব বা সমাজের জন্য কোনটা উত্তম, রাজনৈতিক হবে না ব্যক্তিগত হবে। কোন সময়ে একজন ব্যক্তি বা সরকার তার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলে অর্জন কতটুকু হওয়া উচিত অর্থনীতি ইহার অন্তর্নিহিত সত্য প্রকাশ করতে পারে।
অন্য দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক ধারণার প্রভাব যেমন, আধুনিক পুঁজিবাদে অন্তর্নিহিত বিষয়াদি, মূল্য প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে পারে যদিও ইহা কাম্য কিংবা অকাম্য হউক ( উদাহরণ দেখুন, ভোগবাদ এবং ক্রয় বিহীন দিবস)। কিছু চিন্তাবিদের মতে, অর্থনীতির একটি তত্ত্ব বা ব্যবহার করা হচ্ছে একটি মানবিক বিচার তত্ত্ব।
মানবিক ভোগবাদের পূর্ব অণুমান হচ্ছে একজন যখন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিবে অবশ্যই মানবিক ও পরিবেশ ধারণাকে বিবেচনায় আনবে, এছাড়াও আর্থিক ও বাণিজ্যিক অর্তনীতি বিবেচনা করবে।
অন্য দিকে, যৌক্তিক সীমিত সম্পদের বণ্টন সাধারণ কল্যাণ ও অর্থনীতির একটি ক্ষেত্রের অভাব পুরন করে। কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে গবেষণার উত্তম পন্থা হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সন্তুষ্ট, পরিবেশ, বিচার বা মহাদূর্যোগে সহায়তার মত লক্ষ্য পুরনে সম্পদের বণ্টন হচ্ছে ঐচ্ছিক লুকায়িত যা, সাধারণ কল্যাণ কিংবা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভোগান্তির চাইতে কম। এই ধারণায় মনে করা হয় যে, ইহা অমানবিক এবং এ ধরনের বিষয় অর্থনীতিতে আসতে পারেনা। এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য প্রতিনিধিগণ নিয়মিত অর্থনৈতিক বিশ্লেষন গবেষণায় মিলিত হন।
সামাজিক প্রভাব
কেউ বলতে পারেন যে, অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী বাজার কাঠামো ও দুস্প্রাপ্য পণ্য বণ্টনের অন্যান্য উপায় সমুহ শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা ও অভাবের উপর প্রভাব ফেলেনা, চাহিদা ও আচরণের উপরও প্রভাব ফেলে। অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্রে বলা হয় যে, পছন্দ হচ্ছে অতীতের ইচ্ছা ব্যতিরেকে বিবেচ্য, কখনও সামাজিক শর্তারোপ করা হয় কারণ মানুষ মানসম্পন্ন জীবন যাপন কামনা করে। অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে ইহা একটি চরম বিতর্কের বিষয় যাকে কল্যাণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ও কাম্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক প্রভাবক সমুহের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তারা যুক্তি দেখান যে, সম্পদের পুনঃবণ্টন মানবিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ভুল। সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিতে সামাজিক ক্ষেত্রে ইহা একটি অর্থনৈতিক ব্যর্থতা। তারা যুক্তি দেখান যে,সম্পদের অসমতা প্রাথমিক আলোচনায় গ্রহণযোগ্য নয়।ইহা উনিশ শতকে শ্রম অর্থনীতি ও বিশ শতকে কল্যাণ অর্থনীতি উভয়কে মানব উন্নয়ন তত্ত্বে প্রবেশের পূর্বে পরিচালিত করে।
অর্থনীতির পুরনো বিষয় ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বিশেষ করে কিছু অর্থনীতিবিদ যেমন মার্ক্সবাদী অর্থনীতিবিদগন দ্বারা অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে। ইহা বাজার অর্থনীতির বিশেষ বিষয়ের বা উদাহরণের সাথে সমোঝতা বিহীন নির্দেশনা প্রকাশ করে। রাজনৈতিক অর্থনীতি অর্থনৈতিক বিশ্লেষনে সামাজিক রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে অন্তভূক্ত করে এবং সেখানে উন্মুক্ত ভাববাদ বিদ্যমান, যদিও আদর্শবাদের অভিযোগ থাকলেও ইহাকে বৃহৎ অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক নির্দেশনা বলা হয়। কিছু মুলবাদী বিশ্ববিদ্যালয়ে ( বেশির ভাগ যুক্তরাজ্যে) ‘অর্থনীতি’ বিভাগের তুলনায় ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বিভাগ বেশি রয়েছে।
মার্ক্সবাদী অর্থনীতি সাধারণত অর্থের বাণিজ্য সময়কে পরিহার করে। মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে, বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সম্পদের বণ্টনের জন্য মুল উৎস উৎপাদনের হাতিয়ারের উপর সম্মিলিত নিয়ন্ত্রণ। কোন নির্দিষ্ট বস্তুগত সম্পদের দুস্প্রাপ্যতা উৎপাদনের হাতিয়ারে শক্তি ভিত্তিক সম্পর্ক তৈরির কেন্দ্রীয় আলোচনায় গৌন বিষয়।
রাজনীতিতে অর্থনীতি
অর্থনীতির বাস্তব ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেয়া হয়, যা আলোচিত হয়ে আসছে “১৯০০ সাল হতে অর্থনীতির মুল পরিবর্তন” নামে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের একটি মূল, বিদ্যালয় বা বিভাগ থাকে যা বিষয়কে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দেয়, যেমন কলা বিভাগ, বাণিজ্য বিভাগ। “Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel” (যাকে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার বলা হয়) হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের জন্য একটি বাৎসরিক পুরস্কার যা এই বিষয়ে জ্ঞান সমৃদ্ধ অবদানের জন্য দেয়া হয়। বেসরকারী খাতে যেমন শিল্প, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে অর্থনীতিবিদগন পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অর্থনীতিবিদগন সরকারি বিভিন্ন বিভাগে এবং প্রকল্পে যেমন রাজস্ব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পরিসংখ্যান ব্যুরো ইত্যাদিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি
মরিয়ম-ওয়েবস্টার অভিধানে ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা বলতে দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যেকার অন্য কোন তৃতীয়পক্ষের অংশগ্রহণে অধিকতর ভালো পণ্য বা সেবার আশ্বাস নিয়ে অগ্রসর হওয়াকে বুঝায়। এ বিষয়ে ১৭৭৬ সালে দি ওয়েলথ অব নেশন্স গ্রন্থে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ উল্লেখ করেছেন।
বাজার অর্থনীতিতেও প্রতিযোগিতা বৃহৎ ভূমিকা পালন করে এবং একই স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদেরকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। অনেক সময় অর্থনীতিতে তা অসুস্থ প্রতিযোগিতা নামে আখ্যায়িত হয়। উন্নয়নশীল দেশে প্রায়শঃই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার কাছে দেশী ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারে না। সভা-সমাবেশ, উন্নততর পণ্য, সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সচেষ্ট হয়।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:অর্থশাস্ত্র
বিষয়শ্রেণী:অর্থনৈতিক তত্ত্ব |
বিজ্ঞান | https://bn.wikipedia.org/wiki/বিজ্ঞান | thumb|ডিএনএ
ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, সুসংবদ্ধ, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা, সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডার এবং তা অর্জনের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিই বিজ্ঞান (Science)। অন্য ভাবে বলা যায় বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে।
ল্যাটিন শব্দ সায়েনটিয়া (scientia) থেকে ইংরেজি সায়েন্স শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ বিশেষ জ্ঞান।মাধ্যমিক বিজ্ঞান নবম ও দশম শ্রেণি, প্রকাশক জাতীয় ও টেক্সটবুক বোর্ড ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে প্রাপ্ত ব্যাপক ও বিশেষ জ্ঞানের সাথে জড়িত ব্যক্তি বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানবিদ কিংবা বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত হয়ে থাকেন।
বিজ্ঞানীরা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জ্ঞান অর্জন করেন এবং প্রকৃতি ও সমাজের নানা মৌলিক বিধি ও সাধারণ সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন।"... modern science is a discovery as well as an invention. It was a discovery that nature generally acts regularly enough to be described by laws and even by mathematics; and required invention to devise the techniques, abstractions, apparatus, and organization for exhibiting the regularities and securing their law-like descriptions." —p.vii, J. L. Heilbron, (2003, editor-in-chief) The Oxford Companion to the History of Modern Science New York: Oxford University Press --> বর্তমান বিশ্ব এবং এর প্রগতি নিয়ন্ত্রিত হয় বিজ্ঞানের মাধ্যমে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যাপক অর্থে যেকোনো জ্ঞানের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণকে বিজ্ঞান বলা হলেও এখানে বিশেষায়িত ক্ষেত্রে শব্দটি ব্যবহার করা হবে।
বিজ্ঞান চর্চার সূত্র সুদূর অতীত ৩০০০ থেকে ১২০০ বিসিই সময়কালে প্রাচীন মিশর এবং মেসোপটেমিয়ায় পাওয়া যায়।"The historian ... requires a very broad definition of "science" – one that ... will help us to understand the modern scientific enterprise. We need to be broad and inclusive, rather than narrow and exclusive ... and we should expect that the farther back we go [in time] the broader we will need to be." p.3— তাদের গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের জ্ঞান পরবর্তীতে গ্রিক ধ্রুপদী সভ্যতার দর্শনশাস্ত্রে প্রভাব রাখে তার পাশাপাশি প্রাকৃতিক কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে বস্তুজগতকে ব্যাখ্যা করার সাধারণ প্রচেষ্টাও ছিল। পশ্চিমা রোমান সম্রাজ্য পতিত হবার পর পশ্চিমা ইউরোপে গ্রিকের পৃথিবী সম্পর্কিত জ্ঞান কমতে থাকে যা মধ্যযুগের ৪০০ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল। পরে ইসলামিক স্বর্ণযুগে তার সংরক্ষিত হয়। ১০ম থেকে ১৩শ শতাব্দিতে গ্রিকদের জ্ঞান এবং পশ্চিম ইউরোপের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান একত্রে পুর্নজাগরিত হয় "প্রাকৃতিক দর্শন" হিসেবে। যা ১৬শ শতকে শুরু হওয়া বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সময় থেকে রূপান্তরিত হতে থাকে। সেই সময় নতুন নতুন আবিষ্কার ও চিন্তাধারার কারনে গ্রিকদের ধারণা এবং চেতনার থেকে তা আলাদা পথে ধাবিত হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে দ্রুতই বড় ধরনের ভূমিকা পেতে লাগল। ১৯শ শতকের মধ্যেই অনেক পেশাগত এবং বিদ্যাগত বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা পরিপূর্ণ রূপ পেতে শুরু করে।The Oxford English Dictionary dates the origin of the word "scientist" to 1834. এরই সাথে সাথে "প্রাকৃতিক দর্শন" রূপান্তরিত হয়ে আর্বিভূত হয় "প্রাকৃতিক বিজ্ঞান" হিসেবে।
আধুনিক বিজ্ঞানকে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়: ১. প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, যা প্রাকৃতিক ঘটনাবলি ব্যাখ্যা প্রদান করে। ২. সামাজিক বিজ্ঞান , যা মানবিক আচরণ ও সমাজের অধ্যয়ন করে, ৩. সাধারণ/বিধিবদ্ধ বিজ্ঞান যা বিজ্ঞানের আদি মৌলিক বিষয় যেমন যুক্তি, গণিত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। তবে সাধারণ বিজ্ঞানের শ্রেণীকে নিয়ে মতভেদ রয়েছে আদৌ এটি কোন বিজ্ঞান হয় কি না তা নিয়ে কেননা এগুলো কোন পরীক্ষামূলক প্রমাণ দিতে পারে না। বর্তমানে স্বীকৃত কোন বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তবিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে তাকে ফলিত বিজ্ঞান বা প্রায়োগিগ বিজ্ঞান বলে যেমন প্রকৌশলবিদ্যা এবং চিকিৎসাশাস্ত্র।
জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ এ ধরনের সকল বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে মানুষের আচার-ব্যবহার এবং সমাজ নিয়ে যে বিজ্ঞান তা সমাজ বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তবে যে ধরনেরই হোক, বিজ্ঞানের আওতায় পড়তে হলে উক্ত জ্ঞানটিকে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে। আর একই শর্তের অধীনে যে গবেষকই পরীক্ষণটি করুন না কেন ফলাফল একই হতে হবে। অর্থাৎ ব্যক্তি চেতনা অনুযায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষণের ফলাফল কখনও পরিবর্তিত হতে পারে না।
বিজ্ঞান গবেষণার উপর নির্ভর করে। গবেষণাগুলো সাধারণত বিজ্ঞানীদের দ্বারা শিক্ষাক্ষেত্রে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং কোম্পানিভিত্তিক উদ্যোগে করা হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার বাস্তবিক প্রভাব বৈজ্ঞানিক নীতি গ্রহনে বাধ্য করেছে। বৈজ্ঞানিক নীতি দ্বারা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনসার্থে ব্যবহৃত পন্য, স্বাস্থ্যসেবা, জন কাঠামো, পরিবেশের সুরক্ষা এবং অস্ত্র তৈরির মত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে নীতিমালা অনুসরন করানো হয়।
গণিতকে অনেকেই আলাদা একটি শ্রেণি হিসেবে দেখেন। অর্থাৎ তাদের মতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান আর গণিত এই তিনটি শ্রেণি মিলে বিজ্ঞান। ঐ দৃষ্টিকোণে গণিত হলো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান আর প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান হলো পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে গণিতের মিল-অমিল উভয়ই রয়েছে। গণিত একদিক থেকে পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, উভয়টিই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পদ্ধতিগত অধ্যয়ন করে। আর পার্থক্য হচ্ছে, পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করা হলেও গণিতে কোনো কিছু প্রতিপাদন করা হয় আগের একটি সূত্রের ওপর নির্ভর করে। এই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান, যার মধ্যে পরিসংখ্যান এবং যুক্তিবিদ্যাও পড়ে, অনেক সময়ই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে উন্নতি করতে হলে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানের প্রসার আবশ্যক। কীভাবে কোনো কিছু কাজ করে (প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) বা কীভাবে মানুষ চিন্তা করে (সামাজিক বিজ্ঞান) তাই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে।
ইতিহাস
thumb|ব্যাবিলনীয়দের প্লিম্পটন ৩২২ ট্যাবলেটটি পিথাগোরাসীয় ত্রয়ী সংরক্ষণ করে , যা প্রায় ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লেখা হয়েছিল
আধুনিক যুগের পূর্বে ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক সভ্যতায় বিজ্ঞান ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হত। আধুনিক বিজ্ঞান পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র এবং ফলাফলের মধ্যে সফল তাই বিজ্ঞান বলতে কি বোঝায় তা এখন পরিষ্কার এবং কঠোরভাবে সংজ্ঞায়ীত ।
বিজ্ঞান শব্দটি উৎপত্তিগতভাবে এক ধরনের জ্ঞান বোঝাতো কিন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন বুঝাতো না । বিশেষ করে, এটি ছিল এক ধরনের জ্ঞান যা মানুষের একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহৃত হত। উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক বিষয়গুলির জ্ঞান লিপিবদ্ধ হবার পূর্বেই এগুলো সংগৃহীত হয়েছিল এবং জটিল বিমূর্ত ধারণাগুলির উন্নয়ন ঘটেছিল । এটি ছাপ দেখা যায় জটিল ক্যালেন্ডার নির্মাণ, কৌশল ব্যবহার করে বিষাক্ত উদ্ভিদকে খাবার উপযোগী করে তোলা, জনমানুষের জন্য জাতীয় পর্যায়ে কাজ করা যেমন প্লাবনভূমি থেকে বাধেঁর মাধম্যে জলাধার নির্মান এবং পিরামিডের মতো ভবন তৈরী করা। যাইহোক, এই ধরনের জিনিসগুলির জ্ঞানের মধ্যে কোন সঙ্গতিপূর্ণ বিশিষ্ট পার্থক্য তৈরি করা হয়নি যা প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্য। সেই সাথে অন্যান্য ধরনের সাম্প্রদায়িক জ্ঞানের মতো বিষয়, যেমন: পৌরাণিক কাহিনী এবং আইনি ব্যবস্থা ইত্যাদির বেলাও তা সত্য।
ধাতুবিদ্যা পূর্বেও জানা ছিল এবং ভিনট্ফাক সংস্কৃতিতে ব্রোঞ্জের মত পদার্থ তৈরির জ্ঞান জানত। মনে করা হয় পূর্বে কোন বস্তু গরম করে গলিয়ে সেটার সাথে অন্যকোন উপাদান, পদার্থ যোগ করে অন্য একটি ধাতু তৈরির যে জ্ঞান সেটাই ধীরে ধীরে "আলকেমি" নামে পরিচিত হয়।
প্রাকাদিকালের বিস্তার যুগ
thumb|প্লেটোর একাডেমি মোজাইক , ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৭৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি,এখানে অনেক গ্রীক দার্শনিক এবং পণ্ডিতদের দেখা যায়
সক্রেটিস পূর্ব দার্শনিকগণ দ্বারা "প্রকৃতি" (প্রাচীন গ্রিক ফোসিস) এর ধারণার উদ্ভাবনের আগে, একই শব্দটি ব্যবহার করা হত একটি প্রাকৃতিক "পথ" বোঝাতে। যেভাবে একটি উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় অথবা একটি উপজাতি যেভাবে একটি নির্দিষ্ট ঈশ্বরকে পূজা করে এমন ধারনাকে বোঝাতে। এই কারণেই এই দাবি করা হত যে, কঠোর অর্থে এই পুরুষরা প্রথম দার্শনিক ছিল। এমনকি ধারণা করা হত প্রথম মানুষটি "প্রকৃতি" এবং "রীতি" প্রভৃতির পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরেছিল । বিজ্ঞান প্রকৃতির জ্ঞান হিসাবে বিশিষ্ট ছিল এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য যা ছিল সত্য জিনিস। আর এই ধরনের বিশেষ জ্ঞান সাধনার নাম ছিল দর্শন - প্রথম দার্শনিক-পদার্থবিজ্ঞানীর আলোচ্য বিষয় । তারা প্রধানত ছিল তত্ত্ববিদ, বিশেষ করে জ্যোতির্বিদ্যাতে আগ্রহী ছিল । এর বিপরীতে, প্রকৃতির জ্ঞানকে ব্যবহার করে প্রকৃতির অনুকরণ করার চেষ্টা, শাস্ত্রীয় বিজ্ঞানীদের দ্বারা নিম্ন শ্রেণির কারিগরদের জন্য আরও উপযুক্ত স্বার্থ হিসাবে দেখা হত । প্রথাগত এবং গবেষণামূলক বিজ্ঞান মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য প্রাক-সক্রেটিস দার্শনিক পার্মিনাইডস (প্রায় ছয় শতকের প্রথম দিকে বা পঞ্চম শতকের প্রথম দিকে ) তৈরি করে ছিলেন । যদিও তার কাজটি ছিল পেরি ফিসুয়েস (প্রকৃতির উপর) একটি কবিতা, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতিতে একে একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রবন্ধ হিসেবে দেখা যেতে পারে। পার্মিনাইডস ' একটি প্রথাগত পদ্ধতি বা ক্যালকুলাসকে নির্দেশ করে যা প্রাকৃতিক ভাষাগুলির তুলনায় প্রকৃতির নিখুঁত বর্ণনা করতে পারে। "ফিজিস" এর অনুরূপ হতে পারে ।
প্রথম দিকে দার্শনিক বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট হল সক্রেটিস কর্তৃক মনুষ্য প্রকৃতি, রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের প্রকৃতি এবং মানব জ্ঞানের সাথে মানবিক বিষয়গুলির গবেষণায় দর্শন প্রয়োগের বিষয় বিতর্কিত কিন্তু সফল প্রচেষ্টা ছিল। তিনি পুরাতন ধরনের পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার সমালোচনা করেছিলেন যেমনটা কেবল বিশ্লেষণেই এবং স্ব-সমালোচনার অভাব ছিল । তিনি বিশেষ করে সচেতন ছিলেন যে কিছু প্রাথমিক পদার্থবিজ্ঞানী প্রকৃতিকে এমনভাবে ব্যবহার করেছিলেন যেখানে এর কোন বুদ্ধিমান শৃঙ্খলা নেই, যা কেবল গতি ও বস্তুর ক্ষেত্রকেই ব্যাখ্যা করে ।
মানবকেন্দ্রিক অধ্যয়ন ছিল পৌরাণিক এবং ঐতিহ্য ভিত্তিক, সক্রেটিস এর বাহিরে গিয়ে জ্ঞানদান করতে চেয়েছিলেন, তাই তাকে হত্যা করা হয়েছিল। অ্যারিস্টটল সক্রেটিসের চেয়ে কম বিতর্কিত পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। তিনি পূর্বের বিজ্ঞানীদের অনেক মীমাংসিত বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন । উদাহরণস্বরূপ, তার পদার্থবিজ্ঞানে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে এবং অনেকগুলো প্রকৃতির অংশ হিসাবে যা ছিল মানুষের জন্য। প্রতিটি জিনিসের একটি আনুষ্ঠানিক কারণ এবং চূড়ান্ত কারণ থাকে এবং তার সাথে যুক্তিসঙ্গত মহাজাগতিক ক্রমের একটি ভূমিকা আছে । গতি এবং পরিবর্তনকে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য বাস্তবায়ন হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল তাদের ধরনটা কেমন তার উপর ভিত্তি করে । সক্রেটিস যখন দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন যে মানুষের জন্য জীবিত থাকার সর্বোত্তম উপায় (একটি অধ্যয়ন অ্যারিস্টটল একে নৈতিকতা ও রাজনৈতিক দর্শনে বিভক্ত করেছিলেন) এর ব্যবহারিক প্রশ্ন বিবেচনা করার জন্য দর্শনের ব্যবহার করা উচিত, তখন তারা অন্য কোনও ধরনের প্রযোজ্য বিজ্ঞানের পক্ষে তর্কবিতর্ক করে না।
অ্যারিস্টটল বিজ্ঞান এবং কারিগরদের ব্যবহারিক জ্ঞানের মধ্যে তীক্ষ্ণ পার্থক্য বজায় রেখেছিলেন । তাত্ত্বিক ধারণাকে মানবীয় ক্রিয়াকলাপের সর্বোচ্চ ধরন হিসাবে তিনি বিবেচনা করতেন । কম জীবনধারা হিসাবে ব্যবহারিক চিন্তাভাবনা ভাল জীবনযাপনের জন্য উঁচুমানের এবং কারিগরদের জ্ঞান নিম্ন শ্রেণির জন্য উপযুক্ত বলে তিনি মনে করতেন ।
মধ্যযুগীয় বিজ্ঞান
thumb|ভিয়েনা ডায়োসকুরাইডসের(গ্রীক বৈজ্ঞানিক পাঠ্য) প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ময়ূর আঁকা হয়েছে, ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে তৈরি
প্রাক-প্রাচীন এবং প্রাথমিক মধ্যযুগে প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির অনুসন্ধানে অ্যারিস্টটলীয় পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছিল । রোমান সাম্রাজ্য পতনের সময় এবং পর্যায়ক্রমিক রাজনৈতিক সংগ্রামের সময় কিছু প্রাচীন জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিল, অথবা কিছুটা অস্পষ্ট অবস্থায় রাখা হয়েছিল। যাইহোক, বিজ্ঞানের সাধারণ ক্ষেত্র (বা "প্রাকৃতিক দর্শন" যেটিকে বলা হয়) এবং প্রাচীন বিশ্বের অধিকাংশ সাধারণ জ্ঞান সেভিলের ইসিডোরের মতো প্রাথমিক ল্যাটিন এনসাইক্লোপিডীয়দের কাজগুলির মাধ্যমে সংরক্ষিত ছিল। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে অনেক গ্রিক বিজ্ঞানের গ্রন্থগুলি নেস্টোরিয়ান্স এবং মনোফিসিটস গোষ্ঠী দ্বারা সম্পন্ন সিরিয়াক অনুবাদগুলিতে সংরক্ষিত ছিল। এইগুলির মধ্যে বেশিরভাগই পরবর্তীতে খলিফাদের অধীনে আরবিতে অনূদিত হয়েছিল, যার মধ্যে অনেক ধরনের শাস্ত্রীয় শিক্ষা সংরক্ষণ করা হয়েছিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়েছিল।
"উইসডম হাউস" আব্বাসীয় যুগে ইরাকের বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । এটি ইসলামিক "স্বর্ণযুগ" এর একটি প্রধান জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র বলে বিবেচিত হয়, যেখানে বাগদাদে আল-কিন্দি এবং ইবনে সাহল এর মত মুসলিম পণ্ডিত এবং কায়রোতে ইবনে আল-হায়তাম নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েছিল বাগদাদ মোঘলদের দ্বারা ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত ॥ ইবনে আল-হায়থাম যিনি পশ্চিমে আলহাজেন হিসেবে পরিচিত, তিনি পরীক্ষামূলক তথ্যের উপর জোর দিয়ে অ্যারিস্টটলীয় দৃষ্টিকোণকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ।
পরে মধ্যযুগীয় সময়ের মধ্যে, অনুবাদের জন্য চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছিল (উদাহরণস্বরূপ, টলেডো অনুবাদকদের বিদ্যালয়), পশ্চিমা ইউরোপীয়রা শুধুমাত্র ল্যাটিন ভাষায় নয় বরং গ্রিক, আরবি এবং হিব্রু থেকে ল্যাটিন অনুবাদ লিখিত সংগ্রহগুলি সংগ্রহ করতে শুরু করেছিল । বিশেষত, অ্যারিস্টটল, টলেমী, এবং ইউক্লিডের গ্রন্থগুলো উইসডম এর ঘরগুলিতে সংরক্ষিত ছিল যা ক্যাথলিক পণ্ডিতদের মধ্যে চাওয়া হয়েছিল । ইউরোপে, আলহাজেনের বুক অফ অপটিকস এর ল্যাটিন অনুবাদ সরাসরি ইংল্যান্ডে রজার বেকনকে (ত্রয়োদশ শতকে) প্রভাবিত করেছিল, যিনি আলহাজেনের দ্বারা প্রকাশিত আরও পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান সম্পর্কে যুক্তি দিয়েছিলেন। মধ্যযুগ যুগ ধরে, পশ্চিমা ইউরোপে ক্যাথলিকবাদ ও আরিস্টোলেটিয়ালিজমের একটি সংশ্লেষণের উদ্ভব হয় যা পশ্চিমা ইউরোপে উদ্দীপ্ত ছিল, যেখানে বিজ্ঞান একটি নতুন ভৌগোলিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল । কিন্তু পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে পণ্ডিতবাদের সকল দিক নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছিল।
রেনেসাঁ এবং আধুনিক বিজ্ঞান
thumb|কোপার্নিকাসের বই ডি রেভোলিউশনীবাস অর্বিয়াম কোয়েলেস্টিয়ামে প্রস্তাবিত সূর্যকেন্দ্রিক মডেলের চিত্র
মধ্যযুগীয় বিজ্ঞান সক্রেটিস, প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের হেলেনিস্ট সভ্যতার মতামত বহন করে, যেমন আলহাজেনের হারানো কর্মের একটি বইয়ে দেখানো হয়েছে যেখানে 'আমি ইউক্লিড ও টলেমীর দুই বই থেকে অপটিক্সের বিজ্ঞান সমন্ধে তুলেছি, যা আমি যোগ করেছি প্রথম বক্তৃতা যা ইবনে আবি যোসেবিয়া এর ক্যাটালগ থেকে টলেমীর বই থেকে হারিয়ে যাওয়া (স্মিথ ২০০১): ৯১ (ভল .১), পি. এক্স. ভি । আলহাজেন নিছক টলেমীর দৃষ্টি তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন, কিন্তু তিনি অ্যারিস্টটলের তত্ত্ববিদ্যা বজায় রেখেছিলেন; রজার বেকন, ভিটেল্লো এবং জন পেখাম প্রত্যেকে আলহাজেনের বুক অফ অপটিক্স-এর উপর একটি তত্ত্ববিদ্যা রচনা করেছিলেন । একটি সংবেদন চিহ্নের শৃঙ্খলে সেন্সেশন, ধারণা এবং শেষ পর্যন্ত অ্যারিস্টটলের ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন ফর্মগুলির স্বীকৃতি দিয়েছিলেন । দৃষ্টি তত্ত্বের এই মডেল Perspectivism হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে, যা রেনেসাঁ শিল্পীদের দ্বারা ব্যবহৃত এবং অধ্যয়ন করা হয়েছিল ।
এ .মার্ক স্মিথ দৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করেছিল যা অ্যারিস্টটলের চারটির মধ্যে তিনটি কারণ আনুষ্ঠানিক, পদার্থ এবং চূড়ান্ত দোষে দায়ী, " যা মূলত অর্থনৈতিক, যুক্তিসঙ্গত এবং সুসঙ্গত।" যদিও আলহাজেন জানতেন যে একটি দৃশ্য একটি অ্যাপারচারের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে যা হল তার বিপরীত । তিনি যুক্তি দেন যে দৃষ্টি হল উপলব্ধি সম্পর্কিত । যা কেপলার দ্বারা উল্টানো হয়েছিল, যিনি প্রবেশপথের ছাত্রকে মডেল করার জন্য এটির সামনে একটি অ্যাপারচার সহ একটি জলভর্তি কাঁচের মতো চোখের মডেল করেছিলেন । তিনি দেখেছিলেন যে, একক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্ত আলো এক গ্লাসে কাচের গোলকের পিছনে চিত্রিত হয়েছিল । অপটিক্যাল শিকল চোখের পেছনে রেটিনাতে শেষ হয় এবং ছবিটি উল্টে যায়।
কোপার্নিকাস টলেমীর আলমাজেস্টের পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের বিপরীতে সৌরজগতের একটি সূর্যকেন্দ্রিক মডেল তৈরি করেছিলেন।
গালিলিও পরীক্ষামূলক ও গণিতের উদ্ভাবনী ব্যবহার করেছিলেন । যাইহোক, তিনি অষ্টম পোপ আরবান দ্বারা কোপার্নিকাসের ব্যবস্থার বিষয়ে লিখতে আশীর্বাদ পুষ্ট হয়েছিলেন । গালিলিও পোপের কাছ থেকে আর্গুমেন্ট ব্যবহার করেছিলেন এবং তাদেরকে "ডায়ালগ কনসার্নিং দ্য টু চিফ ওয়ার্ল্ড সিস্টেম" এ কাজটি সহজবোধ্যতার জন্য দিয়েছিলেন যা তাকে অনেকটা হতাশ করেছিল।
উত্তর ইউরোপে প্রিন্টিং প্রেসের নতুন প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে বহু আর্গুমেন্ট প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃতির সমসাময়িক ধারণাগুলির সাথে ব্যাপকভাবে মতবিরোধে ছিল। রেনি ডেসকার্টেস এবং ফ্রান্সিস বেকন একটি নতুন ধরনের অ-অ্যারিস্টটলীয় বিজ্ঞানের পক্ষে দার্শনিক আর্গুমেন্ট প্রকাশ করেছিলেন । Descartes দাবী করেন যে গ্যালিলিওর মত প্রকৃতির অধ্যয়ন করার জন্য গণিত ব্যবহার করা যেতে পারে এবং বেকন চিন্তার উপর গবেষণার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন । বেকন Aristotelian আনুষ্ঠানিক কারণ এবং চূড়ান্ত কারণের ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং বিজ্ঞানকে "সহজ" প্রকৃতির নিয়মগুলির মাধ্যমে অধ্যয়ন করা উচিত, যেমন- তাপকে কোনও নির্দিষ্ট প্রকৃতি বা "আনুষ্ঠানিক কারণ" বলে অভিহিত করা যায় না। এই নতুন আধুনিক বিজ্ঞান নিজেকে "প্রাকৃতিক আইন" হিসাবে বর্ণনা করতে শুরু করেছিল । প্রকৃতির গবেষণায় এই হালনাগাদ পদ্ধতিটিকে যান্ত্রিক হিসাবে দেখা হয় । বেকন যুক্তি দেন যে বিজ্ঞানের উচিত সমস্ত মানব জীবনের উন্নতির জন্য ব্যবহারিক আবিষ্কারগুলির উপর জোর দেয়া ।
নবজাগরণের যুগ
thumb|আইজ্যাক নিউটনের ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকার প্রচ্ছদ পাতা, প্রথম সংস্করণ (১৬৮৭)
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের মধ্যে আধুনিকতার প্রকল্প বেকন ও রেনে দেকার্তের দ্বারা উন্নত করা হয়েছিল যা দ্রুত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়েছিল এবং একটি নতুন ধরনের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, গাণিতিক, পদ্ধতিগতভাবে পরীক্ষামূলক এবং ইচ্ছাকৃতভাবে উদ্ভাবনী এর সফল উন্নয়নের দিকে পরিচালিত হয়েছিল । নিউটন ও লিবনিজ একটি নতুন পদার্থবিজ্ঞান তৈরিতে সফল হয়েছিলেন যা এখন ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স হিসাবে পরিচিত, যা পরীক্ষা দ্বারা নিশ্চিত করা যায় এবং গণিত ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করা যায় । লিবনিস এরিস্টটলিয়ান পদার্থবিদ্যা থেকে পদটি নিয়েছিলেন, কিন্তু এখন এটি একটি নতুন অ-টেলিওলজিকাল পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, উদাহরণস্বরূপ, "শক্তি" এবং "সম্ভাব্যতা" (Aristotelian "Energeia এবং potentia" এর আধুনিক সংস্করণ) । বেকনের শৈলীতে তিনি ধারণা করেছিলেন যে, বিভিন্ন ধরনের জিনিস প্রকৃতির একই সাধারণ সূত্র অনুযায়ী কাজ করে যার প্রতিটি ধরনের কোন বিশেষ আনুষ্ঠানিক বা চূড়ান্ত কারণ নেই। এই সময়ের মধ্যে "বিজ্ঞান" শব্দটি ধীরে ধীরে এক প্রকারের জ্ঞান বিশেষ করে প্রাকৃতিক জ্ঞানের প্রেক্ষাপট হিসাবে ব্যবহৃত হতে শুরু হয়েছিল যা পুরাতন শব্দ "প্রাকৃতিক দর্শনের" অর্থের কাছাকাছি চলে আসছে।
উনিশ শতক
thumb|১৮৩৭ সালে চার্লস ডারউইনের তৈরি বিবর্তনীয় গাছের প্রথম চিত্র
জন হার্শেল এবং উইলিয়াম হুইয়েল উভয়ে মিলে প্রণালী বিজ্ঞানকে একটি সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন পরে শব্দটি বিজ্ঞানীকে বুঝানো হত । যখন চার্লস ডারউইন 'দ্য অরিজিন অব স্পিসিজ' প্রকাশ করেছিলেন তখন তিনি বিবর্তনকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন প্রচলিত জৈবিক জটিলতার ব্যাখ্যা হিসাবে । তার প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বটি কীভাবে প্রজাতি উৎপন্ন হয়েছিল তার প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছিল । তবে এটি কেবল শত বছর পরে ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছিল । জন ডাল্টন পরমাণুর ধারণাটির উন্নয়ন করেছিলেন । ঊনবিংশ শতাব্দীতে তাপবিদ্যুৎ এবং তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের আইনগুলিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার ফলে নতুন প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়েছিল যা নিউটনের কাঠামো ব্যবহার করার মাধ্যমেও সহজেই উত্তর মেলেনি । উনিশ শতকের শেষ দশকে পরমাণুর বিভাজনকে পুনর্নির্মাণ করার ঘটনাটি আবিষ্কৃত হয়েছিল । এক্স-রশ্মি আবিষ্কার তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। পরের বছর প্রথম উপপারমানবিক কণা ইলেকট্রন আবিষ্কৃত হয়েছিল ।
বিংশ শতাব্দী
thumb|১৯৮৩ সালে একটি স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তোলা ওজোনস্তর ছিদ্রের প্রথম বৈশ্বিক চিত্র
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এর বিকাশের ফলে একটি নতুন পদার্থবিজ্ঞানের সাথে শাস্ত্রীয় বলবিজ্ঞানগুলির প্রতিস্থাপনের সৃষ্টি হয় যার দুটি অংশ রয়েছে।তাদের মাধ্যমে প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের ঘটনা বর্ণনা করা যায়।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কৃত্রিম সারের উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে পরমাণু এবং নিউক্লিয়াস এর গঠন আবিষ্কার করা হয়েছিল, যার ফলে "পারমাণবিক শক্তি" (নিউক্লীয় ক্ষমতা) মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। উপরন্তু, এই শতাব্দীর যুদ্ধ দ্বারা অনুপ্রাণিত বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের ব্যাপক ব্যবহার অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার সহজসাধ্য করেছিল যার ফলে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাছাড়া পরিবহন বিপ্লব (অটোমোবাইল এবং বিমান), ICBM এর বিকাশ, মহাকাশ নিয়ে প্রতিযোগিতা, এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে প্রতিযোগিতা, সবকিছুই আধুনিক বিজ্ঞানের উপহার যা সবাই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে।
বিংশ শতাব্দীর শেষ চতুর্থাংশে যোগাযোগের উপগ্রহগুলির সাথে সংযুক্ত ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটগুলির বিস্তৃত ব্যবহার তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব বয়ে নিয়ে আসে যার ফলে স্মার্টফোন সহ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট এবং মোবাইল কম্পিউটিংয়ের উত্থান ঘটেছে।
একবিংশ শতক
থাম্ব|হিগস বোসন কণার সম্ভাব্য দৃশ্যমান মডেল, যা একটি সিএমএস ডিটেক্টর (লার্জ হাডরন কোলাইডার) দ্বারা তৈরী করা হয়
মানব জিনোম প্রকল্পটি ২০০৩ সালে পূর্ন হয় যাতে সম্পূর্ণভাবে নিওক্লিওটাইড ভিত্তিক জোড় সিকোয়েন্স নির্ধারন করে মানব শরীরস্থ ডিএনএ চিহ্নিত করা হয় সেই সাথে মানব জিনোম এবং জিনের মানচিত্রও চিহ্নিত করা হয়। ইনডিউস প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ আবিষ্কৃত হয় ২০০৬ সালে যা একটি প্রযুক্তি যাকে ব্যবহার করে বয়স্ক কোষগুলিকে স্টেম কোষে রূপান্তর করা যায় যা শরীরস্থ যে কোন কোষের প্রতিস্থাপন সম্ভবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে পুনরুত্পাদনশীল চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়।
২০১৫ সালে মধ্যাকর্ষীয় তরঙ্গ প্রথম পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় যা সাধারণ রিলেটিভিটিতে এক শতাব্দি পূর্বেই অনুমান করা হয়েছিল। ২০২১ সালে হিগস বোসন কনার আবিষ্কারের ফলে প্রমিত মডেলের শেষ কণা হিসেবে বিজ্ঞানিগণ যে কনাটিকে অনুমান করেছিলেন তা পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানের শাখা এবং ক্ষেত্র
thumb|upright=1.3|right|মহাবিশ্বের আকৃতি অনুসারে বিজ্ঞান বিভিন্ন শাখার প্রমাণ্যচিত্র.R. P. Feynman, The Feynman Lectures on Physics, Vol.1, Chaps.1,2,&3.আধুনিক বিজ্ঞানকে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়: প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, যা প্রাকৃতিক ঘটনা (জীববিজ্ঞান সহ), সামাজিক বিজ্ঞান, যা মানবিক আচরণ ও সমাজের অধ্যয়ন করে এবং সাধারণ বিজ্ঞান। প্রথম দুটি বিজ্ঞান গবেষণামূলক বিজ্ঞান, যার মানে তাদের জ্ঞানটি দৃশ্যমান ঘটনা এবং তার অবস্থার জন্য একই অবস্থার অধীনে কাজ করে এমন অন্যান্য গবেষকদের দ্বারা যাচাই করার জন্য সক্ষম হতে হবে ।
এছাড়াও সম্পর্কিত বিষয়গুলি যেমন আন্তঃসম্পর্কিত প্রয়োগ বিজ্ঞান হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান, এগুলোকে প্রায়োগিক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই বিভাগগুলি ছাড়াও আরও বিশেষ বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র রয়েছে যাদেরকে অন্যান্য বৈজ্ঞানিক শাখার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে যদিও প্রায়ই তাদের নিজস্ব নামকরণ এবং দক্ষতা থাকে । নিম্নোক্ত ছক দ্বারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যকার সর্ম্পক তুলে ধরা হল:
বিজ্ঞানগবেষণামূলক বিজ্ঞানসাধারণ বিজ্ঞানপ্রাকৃতিক বিজ্ঞানসামাজিক বিজ্ঞানমূল গবেষণাপদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান,
ভূবিজ্ঞান, এবং মহাকাশ বিজ্ঞাননৃবিজ্ঞান,
অর্থনীতি,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান,
সমাজবিজ্ঞান,
মানবীয় ভূগোল, এবং মনোবিজ্ঞানযুক্তি, গণিত, এবং পরিসংখ্যানপ্রায়োগিক বিজ্ঞানপ্রকৌশল,
কৃষি বিজ্ঞান,
চিকিৎসা বিজ্ঞান, এবং উপাদান বিজ্ঞানব্যবসায় প্রশাসন, জননীতি,
বিপণন,
আইন, শিক্ষাবিজ্ঞান, এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নকম্পিউটার বিজ্ঞান
গণিতকে একটি সাংগঠনিক বিজ্ঞান হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।এর সাথে গবেষণামূলক বিজ্ঞান (প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান) উভয়ের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য আছে। এটি পরীক্ষামূলক অনুষঙ্গের অনুরূপ যেহেতু এটি জ্ঞানের একটি ক্ষেত্রের উদ্দেশ্যমূলক,সতর্ক এবং নিয়মানুগ গবেষণার সাথে জড়িত; অভিজ্ঞতানির্ভর পদ্ধতির পরিবর্তে অগ্রাধিকারের ব্যবহার করে তার জ্ঞান যাচাইয়ের পদ্ধতির কারণে এটি ভিন্ন । সাংগঠনিক বিজ্ঞান যা পরিসংখ্যান এবং যুক্তিবিদ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করে, পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।সাংগঠনিক বিজ্ঞানে বড় বড় অগ্রগতি সবসময় প্রধান পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানকে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় । সাংগঠনিক বিজ্ঞান অনুমান, তত্ত্ব ও সূত্রের গঠনের জন্য অপরিহার্য।তাছাড়া কোন জিনিস কীভাবে কাজ করে (প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) এবং মানুষ কীভাবে চিন্তা করে এবং কাজ করে (সামাজিক বিজ্ঞান) উভয়েরই আবিষ্কার এবং বর্ণনার জন্য সাংগঠনিক বিজ্ঞান অপরিহার্য।
বিজ্ঞানের বিস্তৃত অর্থের বাইরেও,"
বিজ্ঞান" শব্দটি কখনও কখনও বিশেষভাবে মৌলিক বিজ্ঞান (গণিত এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) বোঝাতে । অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান স্কুল বা অেনুষদ চিকিৎসা বা প্রকৌশল বিভাগকে পৃথক করে দেখা হ় । তাদের প্রতিটিকে একটিা প্রিকয়োগ বিজ্ঞান হিসাবে ধরা হয় ।
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান প্রকৃতির গতিধারার বর্ণনা, ভবিষ্যদ্বাণী এবং ব্যাখ্যার জন্য গবেষনামূলক প্রমাণ (পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা) নিয়ে কাজ করে। একে দুটি প্রধানভাগে ভাগ করা যায়: জীব বিজ্ঞান এবং পদার্থ বিজ্ঞান। এ দুটো শ্রেণীকে আরো বিশেষায়িত শ্রেণীতে বিভাজন করা হয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞানকে পদার্থ, রসায়ন, জ্যোর্তিবিদ্যা এবং ভূবিদ্যা ইত্যাদি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। আধুনিক প্রাকৃতিক বিজ্ঞান হল গ্রিক দার্শনিকদের প্রাকৃতিক দর্শনশাস্ত্রের আধুনিক রূপ। প্রাচীন গ্রিকের গ্যালিলিও, বেকন, ডেসকার্টেস এবং নিউটন বির্তক করেছিলেন পরীক্ষার পদ্ধতিগুলো বেশি গাণিতীক করা এবং বেশি বেশি পরীক্ষামূলক করার সুবিধা নিয়ে। তা সত্ত্বেও দার্শনিক দৃষ্টিকোন, অনুমান এবং পূর্বধারণাগুলোকে প্রায়শই অবহেলা করা হয় কিন্তু সেগুলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে আবশ্যক। সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা যার মধ্যে আবিষ্কার বিদ্যাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, বর্তমানে প্রাকৃতিক ইতিহাসে রূপ নিয়েছে। এই বিদ্যার আগমন ঘটে ১৬শ শতকে যখন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা পদ্ধতি ব্যবহার করে গাছ, প্রাণী, খনিজসহ সব ধরনের বস্তুরই সঠিক তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলা হয়। আজ "প্রাকৃতিক ইতিহাস" জনপ্রিয় শ্রোতাদের লক্ষ্য করে পর্যবেক্ষণমূলক বিবরণ প্রস্তাব করে
সামাজিক বিজ্ঞান
ডান|থাম্ব|অর্থনীতিতে যোগান ও চাহিদা মডেলটি ব্যাখ্যা করে কীভাবে একটি বাজারে কোন পন্যের যোগান এবং চাহিদার ওঠানামার ফলে দামের পার্থ্যক হয়
সামাজিক বিজ্ঞান সমাজ এবং সমাজস্থ একক ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করে। এর বিভিন্ন শাখা রয়েছে যেমন: নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, যোগাযোগ বিদ্যা, অর্থনীতি, ইতিহাস, মানবীয় ভূগোল, আইন, ভাষাবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য, এবং সমাজবিজ্ঞান। তবে সামাজিক বিজ্ঞান শুধু এগুলোতেই সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক বিজ্ঞানীগন দার্শনিক তত্ত্বসমূহ ব্যক্তি এবং সমাজ গবেষনার সময় কাজে লাগাতে পারেন। যেমন ইতিবাচক বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সদৃশ পদ্ধতি ব্যবহার করেন সমাজকে বোঝার জন্য এবং এই ভাবে বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞানের কঠোরতম সংজ্ঞাটিকে কাজে লাগান। অনুবাদপ্রধান সামাজিক বিজ্ঞানীগণ সামাজিক বির্তক অথবা প্রতীকী অনুবাদ ব্যবহার করেন পরীক্ষামূলক তত্ত্বের তুলনায় এবং এই ভাবে তারা বিজ্ঞানের বড় পরিসরের যে সংজ্ঞা রয়েছে তার আওতায় পড়েন। আধুনিক পাঠ্যক্রমের ব্যবহারিকক্ষেত্রে, গবেষনাকারীরা একই সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতিগত পরীক্ষণ নিয়ে কাজ করেন যেমন একই সাথে পরিমানগত এবং গুণগত গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা। সামাজিক গবেষনার সংজ্ঞাটিও একক সত্ত্বার হয়ে উঠেছে কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিভিন্ন গবেষনাকারীরা তাদের গবেষনার কাজে সামাজিক গবেষনার উদ্দেশ্য এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।
বিধিবদ্ধ বিজ্ঞান
বিধিবদ্ধ বিজ্ঞান হল সাধারণ পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা, বিশ্লেষন ও গবেষনাজনিত বিজ্ঞান। এর মধ্যে রয়েছে :গণিত, ব্যবস্থা তত্ত্ব, এবং তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞান। বিধিবন্ধ বিজ্ঞান অন্য দুটি বিজ্ঞানের শাখার সাথে মিলে যায় কেননা এখানেও গবেষণা পরবর্তী জ্ঞানার্জনের জন্য পদ্ধতিগত ব্যবস্থা নেয়া হয় যেমন উদ্দেশ্য ঠিক করা, সর্তকভাবে ও পদ্ধতিগতভাবে গবেষণা করা। কিন্তু এগুলো পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের থেকে আলাদা কারন বিধিবদ্ধ বিজ্ঞান বিশেষভাবে ন্যায়িক কারনের উপর নির্ভর করে সারাংশ ধারণাগুলোকে যাচাই করতে, যার ফলে পরীক্ষামূলক প্রমাণের দরকার হয় না। বিধিবদ্ধ বিজ্ঞান হল প্রাথমিক/অগ্রীম পাঠ্য এবং এই বৈশিষ্ট্যের ফলে বিতর্ক রয়েছে যে আসলে এটি কোন বিজ্ঞান কিনা। তবুও বিধিবদ্ধ বিজ্ঞান প্রামানিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্যালকুলাস তৈরি করা হয়েছিল পদার্থের গতি বোঝার জন্য। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের যে ক্ষেত্রগুলো গণিতের উপর নির্ভরশীল তা হল গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান, গাণিতিক রসায়ন, গাণিতিক জীববিজ্ঞান, গাণিতিক অর্থায়ন, এবং গাণিতিক অর্থনীতি।
ফলিত বিজ্ঞান
থাম্ব|লুই পাস্তুরের করা পাস্তুরায়ন পরীক্ষনে দেখা যায় যে তারল্য কমে যাবার কারন হল বাতাসের কমে যাওয়া। তিনি টিকাদান এবং
গাঁজন তত্ত্বের জনক।
ফলিত বিজ্ঞান হল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং জ্ঞান ব্যবহার করে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করা। এর মধ্যে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত যেমন
প্রকৌশল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান. প্রকৌশল বিদ্যা হল বৈজ্ঞানিক নীতিগুলো মেনে "রূপরেখা ও নকশা" করে কোন কিছু তৈরী করা যেমন ব্রীজ, টানেল, রোড, গাড়ি এবং বিল্ডিং ইত্যাদি। প্রকৌশল বিদ্যার মধ্যেই বিশেষ ভাগ রয়েছে যেগুলো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে যেমন ফলিত গণিত। চিকিৎসা হল কোন রোগীর দেহকে পরীক্ষণ, রোগ নির্ণয় এবং আঘাত সারিয়ে তোলা ও রোগ নিরাময় করা। সমসাময়িক চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞান, চিকিৎসা গবেষণা, জেনেটিক্স এবং রোগ বন্ধ করার চিকিৎসা প্রযুক্তি যেমন ঔষধ, চিকিৎসা যন্ত্রের ব্যবহার, সার্জারি এবং ঔষধ সেবার বাইরে অন্যান্য সেবা প্রদান। ফলিত বিজ্ঞানকে সাধারণ বিজ্ঞানের সাথে তুলনা করা হয় কিন্তু সাধারণ বিজ্ঞানের ক্ষেত্র হল প্রাকৃতিক ঘটনাবলির তত্ত্বগত এবং আইনগত উন্মেষজনিত বিষয়গুলি যার মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিশ্বের নানা ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায় এবং পূর্বাভাস প্রদান করা সম্ভব হয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা
বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সাধারণ এবং ফলিত গবেষণা হিসেবে অভিহিত করা যায়। সাধারণ গবেষণা হল জ্ঞানের অন্বেষণ করা এবং ফলিত গবেষণা হল সাধারণ গবেষণা দ্বারা আহরিত জ্ঞান ব্যবহার করে কোন সমস্যার সমাধান খোজা। যদিও কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা নির্দিষ্ট সমস্যাগুলির জন্য ফলিত গবেষণার মাধ্যমে করা হয়। তবুও আমাদের বোঝার বেশিরভাগ বিষয় সাধারণ গবেষণার উদ্দীপনামূলক উদ্যোগ থেকে আসে। এভাবে গবেষণার ফলসরূপ এটি আমাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দিকে নিয়ে যায় যা হয় অপরিকল্পিত হতে পারে আবার কখনও যা কল্পনাপ্রসূত ছিল না এমন ফলাফলের দিকে নিয়ে যায়।
এই বিষয়টি মাইকেল ফ্যারাডে উল্লেখ্য করেছিলেন যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল "মৌলিক গবেষণার ব্যবহার কী?" তিনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে: "স্যার, নতুন জন্মানো শিশুর ব্যবহার কী?"। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের চোখের রড নামক কোষগুলোতে লাল আলোর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণায় মনে হয়েছিল কোন বাস্তব উদ্দেশ্য নেই; অবশেষে, আবিষ্কার হয় যে আমাদের নাইট ভিশনে লাল আলো সমস্যা তৈরি করে না। সেই আবিষ্কার পরে জেট বিমান এবং হেলিকপ্টারের ককপিটে (এগুলো ছাড়াও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় যেমন অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দলের কাজে) লাল আলো ব্যবহার করা হয়। সর্বশেষে বলা যায়, অনেক সময় মৌলিক/সাধারণ গবেষণায় অপ্রত্যাশিত মোড় আসতে পারে এবং এমন কিছু ধারণা রয়েছে যাতে মনে করা হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলো ভাগ্য আহরনের জন্য নির্মিত।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
থাম্ব|বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ধারণাটি আসে এরিস্টটলের ধারণা থেকে যাতে তিনি মনে করতেন "ধারণা/ভাব তৈরি হয় সর্তকমূলক পর্যবেক্ষণ থেকে" আর এই ধারণাকে পরীক্ষামূলক প্রমাণ মডেলের মাধ্যমে আধুনিক রূপ দেন গ্যালিলিও
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যার মাধ্যমে উদ্দেশ্যগতভাবে প্রকৃতির ঘটনাগুলোকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যাতে পরবর্তীতে তা যে কেউ পুনরায় একইভাবে সংগঠিত করতে পারে।"The amazing point is that for the first time since the discovery of mathematics, a method has been introduced, the results of which have an intersubjective value!" (Author's punctuation)}} — ব্যাখ্যাসহ একটি অনুমানকল্প দাড় করানো হয় যেখানে সবচেয়ে সাধারণ ব্যাখ্যাটিই হল সঠিক ব্যাখ্যা এমন নীতি (পার্সিমনি) গ্রহণ করা হয় এবং সাধারণত যে সকল প্রতিষ্ঠিত নীতি, আইন, পদ্ধতি রয়েছে তাদের সাথে অনুমানকল্পটি ভালভাবে খাপ খাবে এমনটা আশা করা হয়। নতুন যে ব্যাখ্যা দাড় করানো হয় তা সব অবস্থাতেই একই ফলাফল দেবে কিনা তা দেখা হয়। পূর্বকল্পিত ধারণাগুলি আগেই ব্যাখ্যা করতে হবে যাতে পরীক্ষার সময় তাতে জালিয়াতি করা হয়নি তা ধরা পড়ে। কোন ভবিষ্যদ্বাণীকে অস্বীকার করা অগ্রগতির প্রমাণ। প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে এটি অর্ধেক করা হয় কিন্তু গবেষনাকৃত বিষয়টির আওতায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তা পরীক্ষা করা যেতে পারে (পর্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞান যেগুলোতে ব্যবহৃত হয় যেমন ভূতত্ত্ব এবং জৌর্তিবিদ্যা সেখানে পূর্বঘোষিত পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে)। বিজ্ঞানের গবেষনায় কারন-প্রভাব সম্পর্ক নির্ণয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ (পারস্পরিক সম্পর্কের ভুলত্রুটি এড়াতে)।
যখন কোন অনুমান অসন্তোষজনক প্রমাণিত হয় তখন এটি সংশোধন বা বাতিল করা হয়। যদি প্রকল্পটি পরীক্ষায় টিকে যায় তবে এটি একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের কাঠামোতে রূপান্তরিত করা হয়। যা নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির আচরণের বর্ণনা দেওয়ার জন্য একটি যৌক্তিক, যুক্তিযুক্ত এবং স্বতন্ত্র মডেল বা কাঠামো হিসাবে বিবেচিত হয়। একটি তত্ত্ব সাধারণত একটি প্রকল্পের চেয়ে অনেক বিস্তৃত আকারের আচরণকে ব্যাখ্যা করে। সাধারণভাবে, একটি তত্ত্ব বৃহৎ পরিসরের অনুমানকল্প নিয়ে গঠিত হতে পারে। সুতরাং একটি তত্ত্ব হল এক ধরনের অনুমানকল্প যা আরও ব্যাপক সংখ্যক অনুমানের/হাইপোথিসিসের ব্যাখ্যা করতে পারে। সেই সূত্রে, তত্ত্বগুলি যে বৈজ্ঞানিক নীতিমালা অনুসারে প্রণয়ন করা হয় অনুমানকল্পও তা অনুসরণ করে চলে। অনুমানকল্প পরীক্ষা করার পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা একটি মডেল তৈরি করতে পারেন - যে মডেলের মাধ্যমে যৌক্তিক, ভৌত বা গাণিতিক দিক থেকে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। এবং সেই মডেল দ্বারা হাইপোথিসিস/অনুমানকল্প তৈরি করা যাবে এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনাগুলির উপর ভিত্তি করে যা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।
হাইপোথিসিস পরীক্ষা করার সময় বিজ্ঞানীদের একটি নিদির্ষ্ট ফলাফল অর্জনের প্রতি দুর্বলতা থাকতে পারে। তাই এটি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ যে বিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে এই পক্ষপাতকে দূর করতে পারে। পক্ষপাত দূরীকরণের জন্য সতর্কভাবে পরীক্ষামূলক নকশা, স্বচ্ছতা, এবং পরীক্ষামূলক ফলাফলগুলির একটি সম্পূর্ণ পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়া চালানো যেতে পারে এবং সবশেষে উপসংহার করা যেতে পারে। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত বা প্রকাশিত হওয়ার পর স্বাধীন গবেষকদের কাজ হল গবেষণাটি কীভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল তা আবার পরীক্ষা করা এবং ফলাফলগুলি নির্ভরযোগ্য কিনা তা নির্ণয় করা। পরীক্ষাগুলো পরিচালনার জন্য সাধারণ অনুশীলন ব্যবস্থা অনুসরণ করা যেতে পারে। তাদেরকে তখনই সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করা হবে যখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দ্বারা পুরোপুরি পক্ষপাতমূলক ফলাফলের প্রভাবকে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
যাচাইযোগ্যতা
জন জিম্যান উল্লেখ্য করেন যে, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান তৈরিতে আন্তঃবিষয়ক যাচাইযোগ্যতা থাকা জরুরী। জিম্যান দেখান কীভাবে যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীরা একে অন্যের নমুনা চিহ্নিত করতে পারেন। তিনি এই চিহ্নিত করার সক্ষমতাকে বলেন "বোধগম্য সম্মতি"। তারপর তিনি বোধগম্য সম্মতিকে সর্বসম্মতিতে পরিচালনা করেন যা সকল নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের মাইলফলক।
বিজ্ঞানে গণিতের ভূমিকা এবং সাংগঠনিক/আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান
ডান|থাম্ব|প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল গণিতের জন্য ব্যবহৃত হয় ক্যালকুলাশ যা অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষনায় ব্যবহৃত হয়
গণিত বিজ্ঞানের জন্য অত্যাবশ্যক । বিজ্ঞান ক্ষেত্রে গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল এটি বৈজ্ঞানিক মডেলকে প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপ সংগ্রহ, পাশাপাশি প্রকল্প রচনা করা এবং পূর্বাভাস প্রদানের ক্ষেত্রে প্রায়ই ব্যাপকভাবে গণিত ব্যবহারের প্রয়োজন হয় । উদাহরণস্বরূপ, পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, এবং ক্যালকুলাস সব পদার্থবিজ্ঞানের জন্য অপরিহার্য । কার্যত বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় গণিতের প্রয়োগ করা হয়, যেমন "বিশুদ্ধ" এলাকা হিসাবে "তত্ত্ব" এবং টপোলজির কথা বলা যায় ।
পরিসংখ্যানগত পদ্ধতিগুলি, যা বিজ্ঞানীদের গাণিতিক কৌশল অবলম্বন করে বিশ্বস্ততার সাথে পরীক্ষামূলক ফলাফলগুলির পরিমাণ মূল্যায়ন করার অনুমতি দেয় । পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে।
কম্পিউটেশনাল বিজ্ঞান বাস্তব বিশ্বে পরিস্থিতি অনুকরণ করার জন্য কম্পিউটিং শক্তি প্রয়োগ করে যা গঠনগত গণিতের তুলনায় বৈজ্ঞানিক সমস্যাজনিত বিষয়গুলো খুব ভালভাবে বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারে । সোসাইটি ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড ম্যাথম্যাটিকসের মতে, গণিতের জ্ঞান বৈজ্ঞানিক প্রবর্তনের তত্ত্ব এবং গবেষণার মতোই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
গণিতবিদ ও দার্শনিকদের মধ্যে বিবর্তিত তত্ত্বের উত্থান এবং গণিতের ভিত্তিগুলির জন্য এটির ব্যবহারের জন্য বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে আনুষ্ঠানিক যুক্তিবিজ্ঞানের গবেষণায় অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল । উল্লেখযোগ্য গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক যারা এই ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন গটলব ফ্রেজ,জিউসেপ পেয়ানো,জর্জ বুল,আর্নেস্ট জেরমেলো, আব্রাহাম ফ্রাংকেল,ডেভিড হিলবার্ট, বারট্রান্ড রাসেল এবং আলফ্রেড হোয়াইটহেড। প্যানানো গণিতের মতো বিভিন্ন স্বতন্ত্র সিস্টেমগুলি, যেমন- জেরেমো-ফেনেকেলের সেটমার্ক পদ্ধতি এবং প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা ব্যবস্থার পাশাপাশি গণিতের ভিত্তি প্রমাণ করার জন্য অনেকের ধারণা ব্যবহার করা হয়েছিল । যাইহোক, ১৯৩১ সালে কার্ট গডেলের অসম্পূর্ণতা তত্ত্বের প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বেশিরভাগ প্রচেষ্টা হ্রাস পেয়েছিল।গণিত,দর্শন ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজও সাংগঠনিক যুক্তিবিদ্যা অধ্যয়ন করে। উদাহরণস্বরূপ, বুলিয়ান বীজগণিত দ্বারা সমস্ত আধুনিক কম্পিউটারগুলি কার্যকরী হয় এবং এই শাখার জ্ঞান প্রোগ্রামারদের জন্য অত্যন্ত দরকারী।
বিজ্ঞানের দর্শন
বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে কিছু মৌলিক ধারণা ধরে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষনার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ঠিক করেন। এগুলো হল: (১) প্রথমত সকল পর্যবেক্ষকদের দ্বারা স্বীকৃত একটি প্রকৃত বাস্তবতা (কোন প্রভাবক ছাড়া) থাকতে হবে ; (২) এই প্রকৃত বাস্তবতা প্রাকৃতিক আইন দ্বারা পরিচালিত হতে হবে; (৩) এই আইনগুলি পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হতে পারে। বিজ্ঞানের দর্শন এই অন্তর্নিহিত অনুমান কি বোঝায় এবং তারা বৈধ কিনা তা গভীরভাবে অনুসন্ধান করে।
যে বিশ্বাসের কারনে মনে করা হয় যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অবশ্যই অধিবিদ্যাকে প্রতিনিধিত্ব করে তাকে বাস্তববাদ বলে। একে অবাস্তববাদ দ্বারা বিপরীতভাবে দেখা যেতে পারে, যেখানে বলা হয় বিজ্ঞানের সাফল্য শুধুমাত্র সঠিকতার উপর নির্ভর করে না বিশেষত সেই সমস্ত বস্তুর ক্ষেত্রে যেগুলো চোখে দেখা যায় না যেমন ইলেকট্রন। অবাস্তববাদীতার আর একটি রূপ হল আদর্শবাদ, যেখানে মনে করা হয় যে মন বা চেতনা হল সবচেয়ে মৌলিক সারমর্ম, এবং প্রতিটি মন তার নিজস্ব বাস্তবতা উৎপন্ন করে।[g] একটি আদর্শবাদী জগতের দৃষ্টিভঙ্গি হল "যা একটি মনের জন্য যা সত্য, তা অন্য মনের জন্য সত্য নাও হতে পারে"।
বিজ্ঞানের দর্শনের মধ্যে চিন্তার বিভিন্ন ধাপ আছে । সবচেয়ে জনপ্রিয় ধাপ হচ্ছে প্রয়োগবাদ[h], যাতে ধারণা করা হয় যে কোন জ্ঞান পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় লব্ধ হয় এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো এই পর্যবেক্ষণ থেকে সাধারণীকরণের ফলাফল হিসাবে তৈরী হয়।[124]
প্রয়োগবাদ সাধারণত inductivism কে অন্তর্ভুক্ত করে, একটি পজিশন যা ব্যাখ্যা করতে পারে যে সাধারণ তত্ত্বগুলি পরিমাপের সংখ্যা দ্বারা মানুষ তাকে যথাযথভাবে যাচাই করতে পারবে এবং সেইজন্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলি নিশ্চিত করার জন্য উপলব্ধ প্রামাণিক প্রমাণগুলির সীমাবদ্ধ পরিমাণ উপলব্ধ করা হয়। এটি অপরিহার্য কারণ এই তত্ত্বগুলির পূর্বাভাসের সংখ্যা অসীম, যার অর্থ হল যে কেবলমাত্র নিখুঁত লজিক ব্যবহার করে প্রমাণের সীমাবদ্ধ পরিমাণ থেকে তা জানা যাবে না । প্রয়োগবাদের অনেক সংস্করণ বিদ্যমান রয়েছে, যার মধ্যে প্রধানত বেইসিয়ানিজম এবং হাইপোথেটিকো ন্যায়ত পদ্ধতি অন্যতম ।
প্রয়োগবাদ যুক্তিবাদের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে, অবস্থানটি মূলত ডেসকার্টেসের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যা এই ধারণাকে ধারণ করে যে মানব বুদ্ধি দ্বারা জ্ঞান তৈরি হয় পর্যবেক্ষণের দ্বারা নয় । বিংশ শতাব্দীর দিকে জটিল যুক্তিবাদ বিজ্ঞানের বৈপরীত্যে অবস্থান নিয়েছিল তা প্রথম সংজ্ঞায়িত হয়েছিল অস্ট্রিয়ান-ব্রিটিশ দার্শনিক কার্ল পপার দ্বারা । পপার তত্ত্ব এবং পর্যবেক্ষণের মধ্যে সংযোগের বিষয়টিকে প্রয়োগবাদ যেভাবে বর্ণনা দেয় তা পরিত্যাগ করেছিলেন । তিনি দাবি করেন যে তত্ত্বগুলি পর্যবেক্ষণ দ্বারা উৎপন্ন হয় না, তবে ঐ পর্যবেক্ষণ তত্ত্বের আলোকে তৈরি করা হয় এবং একমাত্র উপায়টি পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে যখন এটির সাথে বিরোধও একসাথে আসে । পপার প্রস্তাব করেছিলেন যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ল্যান্ডমার্ক হিসাবে মিথ্যাকে যাচাইয়ের সাথে যাচাইযোগ্যতাকে প্রতিস্থাপিত করা দরকার এবং পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হিসাবে জালিয়াতির সঙ্গে ন্যায়তাকে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে ।
নিশ্চয়তা এবং বিজ্ঞান
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হল পরীক্ষামূলক এবং নতুন প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে এটি সর্বদা জালিয়াতিকে উন্মুক্ত করে দেয় । অর্থাৎ কোন তত্ত্বকে কখনোই কঠোরভাবে নির্দিষ্ট বা নিশ্চিত বলে বিবেচিত হয় না কারণ বিজ্ঞান ফ্যালিবিলিজমের ধারণাকে গ্রহণ করে। বিজ্ঞানের দার্শনিক কার্ল পপার সুনির্দিষ্টভাবে সত্যকে থেকে নিশ্চিতকে আলাদা করেছিলেন । তিনি লিখেছেন যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান "সত্যের সন্ধানে গঠিত", কিন্তু এটি "নিশ্চিততার সন্ধান করেনা ...মানুষের সমস্ত জ্ঞান ভ্রমপ্রবণ এবং সেইজন্য তা অনিশ্চিত।"
নতুন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান খুব কমই আমাদের বোঝার মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসে । মনস্তাত্ত্বিক কিথ স্ট্যানোভিচের মতে, "বিপ্লব" শব্দটি মিডিয়াগুলির দ্বারা অত্যধিক ব্যবহৃত হতে পারে যার ফলে জনসাধারণ কল্পনা করে যে বিজ্ঞান ক্রমাগত প্রতিটা মিথ্যাকে বলে সত্য বলে প্রমাণ করে । যদিও বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব যা সম্পূর্ণ পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন বলে মনে করে যাকে চরম ব্যতিক্রম বলা যায় । বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে স্নাতকোত্তর জ্ঞান অর্জন করেন; এটি অনেকটা আরোহণ করার তুলনায় লাফ দেয়া বুঝায় । তত্ত্বগুলি ভালোভাবে পরীক্ষা এবং যাচাই করা হয়েছে কিনা, সেইসাথে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের দ্বারা তারা স্বীকৃতি পেয়েছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে তারা পরিবর্তিত হয় । উদাহরণস্বরূপ, সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব, বিবর্তন তত্ত্ব, আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং জীবাণু তত্ত্ব এখনও "তত্ত্ব" নাম বহন করে যদিও প্রথাগতভাবে এটি বাস্তবিক বলে মনে করা হয় । দর্শনশাস্ত্র ব্যারি স্ট্রাউড যোগ করেন যে, যদিও "জ্ঞান" এর জন্য সর্বোত্তম সংজ্ঞাটি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছে এবং একটি ভুলটি সঠিক হওয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে । তদ্ব্যতীত, বিজ্ঞানীরা সঠিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে এমনকি সত্যের পরেও তারা তা নিয়ে সন্দেহ করবে । ফ্যাল্লিবিলিস্ট সি.এস. পিয়ারস যুক্তি দেন যে তদন্তটি সঠিক সন্দেহ সমাধানের জন্য সংগ্রাম এবং কেবল নিছক দ্বন্দ্বপূর্ণ, মৌখিক বা অতিপ্রাকৃত সন্দেহের ফলশ্রুতি । কিন্তু অনুসন্ধানকারীকে সাধারণ জ্ঞানের পরিবর্তে প্রকৃত সন্দেহ অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে । তিনি মনে করেন যে সফল বিজ্ঞানগুলি কোন একক শৃঙ্খলার অনুভূতিতে বিশ্বাস করে না (তারা দুর্বলতম লিঙ্কের চেয়ে শক্তিশালী নয়) কিন্তু একত্রে সংযুক্ত বহুবিধ এবং বিভিন্ন আর্গুমেন্টের ক্যাবলের সাথে তারা যুক্ত থাকে ।
বৈজ্ঞানিক সাহিত্য
thumb|নেচারের প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ , ৪ নভেম্বর, ১৮৬৯
বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের একটি বিশাল পরিসর প্রকাশিত হয়েছে । বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিচালিত গবেষণার ফলাফলগুলি ডকুমেন্ট আকারে প্রকাশ করে, যা বিজ্ঞানের একটি আর্কাইভ রেকর্ড হিসাবে কাজ করে। প্রথম বৈজ্ঞানিক পত্রিকা জার্নাল দেসভভানস দর্শনশাস্ত্র অনুসরণ করে ১৬৬৫ সালে প্রকাশনা শুরু করেছিল । সেই সময় থেকে সক্রিয় সাময়িকীর মোট সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে । ১৯৮১ সালে প্রকাশ্যে প্রকাশিত বিজ্ঞানী ও কারিগরি জার্নালগুলির সংখ্যা ছিল ১১,৫০০ । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল চিকিৎসা লাইব্রেরি বর্তমানে ৫,৫১৬ জার্নালকে সূচিত করে যা জীবন বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ের উপর নিবন্ধ রয়েছে । যদিও জার্নালগুলি ৩৯ টি ভাষায় হয়, তবুও সূচকের ১১২ শতাংশ নিবন্ধ ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় ।
বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক পত্রিকা একক বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সেই ক্ষেত্রের মধ্যেই গবেষণা প্রকাশ করে; গবেষণা সাধারণত একটি বৈজ্ঞানিক কাগজের আকারে প্রকাশ করা হয় । আধুনিক সমাজে বিজ্ঞানের এত স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে যে সাধারণভাবে বিজ্ঞানীদের কাছে কৃতিত্ব, খবর এবং যোগাযোগ করার জন্য এটি ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
বিজ্ঞানের ম্যাগাজিন যেমন নিউ সায়েন্টিস্ট, সায়েন্স এন্ড ভিই, এবং বৈজ্ঞানিক আমেরিকান অনেক বেশি পাঠকের প্রয়োজনগুলি পূরণ করে এবং গবেষণার কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার এবং অগ্রগতি সহ গবেষণার জনপ্রিয় অঞ্চলের একটি অ-টেকনিকাল সারসংক্ষেপ প্রদান করে ।
ব্যবহারিক প্রভাব
মৌলিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো পৃথিবীর ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত করে। উদাহরণসরূপ:
{| class="wikitable" style="font-size:90%"
|-
! গবেষণার বিষয় !! বাস্তবক্ষেত্রে প্রভাব
|-
| স্থির তড়িৎ,
চুম্বকত্ব (সি ১৬০০)তড়িৎ প্রবাহ (১৮শ শতকে)
| প্রতিটি বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রে, ডায়নামো, বৈদ্যুতিক শক্তির স্টেশনগুলোতে, আধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স যার মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি, টেলিভিশন, তাপ উৎপাদক, চৌম্বকীয় টেপ, উচ্চমাত্রার স্পিকার, কম্পাস, আলোক রড, ব্রেইন সিমুলেশন ইত্যাদি
|-
| অপবর্তন (১৬৬৫) || সব ধরনের অপটিকস: ফাইবার অপটিক ক্যাবল, আধুনিক আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগে, ক্যাবল টিভি এবং ইন্টারনেট সংযোগে।
|-
| রোগের জীবানু তত্ত্ব (১৭০০) || পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যা রোগের বিস্তার রোধ করে, এন্টিবডি, রোগের নির্ণয় এবং ক্যান্সার রোধী থেরাপি সহ নানাবিধ রোগের চিকিৎসা
|-
| টিকা (১৭৯৮) || যা বর্তমানে বহু সংক্রামক ব্যধির প্রকোপ সম্পূর্ণ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। স্মলফক্স, চিকেন ফক্স, হাম, রুবেলা, ধনুস্টংকার ইত্যাদি
|-
| আলোক-বিভব ক্রিয়া (১৮৩৯) || সৌর কোষ (১৮৮৩), যা থেকে বর্তমানে সৌর শক্তি, সৌর শক্তি চালিত ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, বসতবাড়ির বিদ্যুত ব্যবস্থা চালনা করা হয়।
|-
| বিশেষ আপেক্ষিকতা (১৯০৫) এবং সাধারণ আপেক্ষিকতা (১৯১৬) || স্যাটেলাইট ভিত্তিক প্রযুক্তি যেমন
বিশ্বজনীন অবস্থান-নির্ণায়ক ব্যবস্থা (১৯৭৩), স্যাটনেভ এবং কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক যোগাযোগ
|-
| রেডিও কম্পাঙ্ক (১৮৮৭) || রেডিও টেলিফোন ছাড়াও অসংখ্যভাবে ব্যবহৃত হয় রেডিও ও টিভি ইত্যাদিতে। অন্যান্য ব্যবহারগুলো হল জরুরি সেবা, রাডার দিয়ে দিকনির্ণয় এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস, চিকিৎসাসেবায়, জ্যোর্তিবিজ্ঞানে, তারবিহীন যোগাযোগে, ভূপদার্থ এবং নেটওয়ার্কের প্রযুক্তিতে। রেডিওকে আরো মাইক্রোওয়েভে রূপ দেয়া হয় যা বিশ্বব্যপি দৈনন্দিন কাজে যেমন খাদ্য গরম করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
|-
| তেজস্ক্রিয়তা (১৮৯৬) এবং
প্রতিপদার্থ (১৯৩২)
| ক্যান্সার চিকিৎসায় (১৮৯৬), রেডিওমেট্রিক ডেটিং (১৯০৫), নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার ধারকs (১৯৪২) এবং পারমাণবিক অস্ত্র (১৯৪৫), খনিজ অনুসন্ধান, পিইটি স্কেন (১৯৬১), এবং
চিকিৎসা গবেষনায়।
|-
|রঞ্জন রশ্মি (১৮৯৬)|| চিকিৎসাক্ষেত্রের ছবি, যাতে রয়েছে সিটি স্ক্যান.
|-
| কেলাসবিজ্ঞান এবং
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান (১৯০০)
| অর্ধপরিবাহী যন্ত্রসমূহ (১৯০৬) যা থেকে আধুনিক কম্পিউটিং এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, মোবাইল ফোন, এলইডি ল্যাম্প এবং লেজার।
|-
|প্লাস্টিক (১৯০৭)||শিল্প ও দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের রয়েছে বহু ব্যবহার
|-
|অ্যান্টিবায়োটিক (১৮৮০ দশক, ১৯২৮) || সালভারসান, পেনিসিলিন, ডক্সিসাইক্লিন ইত্যাদি
|-
|পারমানবিক চৌম্বকীয় অনুরণন (১৯৩০ দশকে) || পারমানবিক চৌম্বকীয় অনুরণন বর্নালী (১৯৪৬),
চৌম্বকীয় অনুরণন প্রতিচ্ছবি (১৯৭১), কার্যক্ষম চৌম্বকীয় অনুরণন প্রতিচ্ছবি (১৯৯০ দশকে).
|}
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
প্রতিলিপি সংকট
প্রতিলিপি সংকট একটি চলমান পদ্ধতিগত সংকট যা প্রাথমিকভাবে সামাজিক এবং জীব বিজ্ঞানকে প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে অনেক গবেষনার ফলাফলই বাস্তবক্ষেত্রে প্রতিলিপি করা বা পুনরুৎপাদন করা কঠিন তা সে একক কোন গবেষক বা যারা শুরুতে গবেষণা করেছিলেন তারাও হতে পারে। এই সমস্যার সচেতনার থেকে জানা যায় এটি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল প্রায় ২০১০ দশকের শুরু থেকেই। প্রতিলিপি সংকট অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে তা হল মেটাবিজ্ঞান (বিজ্ঞানকেই পরীক্ষার পদ্ধতি)। মেটাবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হল সমস্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার মানোন্নয় করার পাশাপাশি কম বর্জ্য নিঃসরণ করা।
ফ্রিন্জ বিজ্ঞান, ছদ্মবিজ্ঞান, এবং জাঙ্ক বিজ্ঞান
এটি গবেষণায় বা অনুমানমূলক একটি ক্ষেত্র যা বিজ্ঞান হিসাবে বৈধতা দাবি করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তারা বিজ্ঞানের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হবে না কখনও কখনও তাদেরকে ছদ্মবিজ্ঞান, fringe বিজ্ঞান, বা জাঙ্ক বিজ্ঞান হিসাবে উল্লেখ করা হয়। পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান "cargo cult science" শব্দটি ব্যবহার করেছেন তাদের ক্ষেত্রে যে গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে তারা বিজ্ঞানের কাজ করছেন কারণ তাদের কার্যক্রমগুলিতে বিজ্ঞানের বাহ্যিক চেহারা রয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে" নির্গত সততার "অভাব রয়েছে যার ফলে তাদের ফলাফল অক্ষরে অক্ষরে মূল্যায়ন করা যায় । বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন হাইপ থেকে জালিয়াতি পর্যন্ত এই বিভাগগুলির মধ্যে পড়তে পারে ।
বৈজ্ঞানিক বিতর্কে সকল পক্ষের উপর রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত পক্ষপাতের একটি উপাদানও থাকতে পারে। কখনও কখনও গবেষণায় একে "অপবিজ্ঞান" হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, যা গবেষণায় ভালভাবে ধারণা করা যায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আসলেই ভুল, অপ্রচলিত, অসম্পূর্ণ, বা বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলির সরলীকৃত ব্যাখ্যা । "বৈজ্ঞানিক অপব্যবহার" শব্দটি এমন পরিস্থিতিতে বোঝায় যখন গবেষকরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের প্রকাশিত তথ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন বা ভুলভাবে ভুল ব্যক্তির কাছে একটি আবিষ্কারের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন ।
বৈজ্ঞানিক সমাজ
বৈজ্ঞানিক সমাজ হল সকল বিজ্ঞানীদের (নিজ নিজ ক্ষেত্র এবং প্রতিষ্ঠানে থেকেও) পারস্পরিক সহযোগীতা ও যোগাযোগের একটি দল।
বিজ্ঞানীগণ
থাম্ব|জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯–১৯৫৫) আপেক্ষিকতা তত্ত্ব তৈরি করেন। একইসাথে তিনি ১৯২১ সালে আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের একজন।
বিজ্ঞানীগণ হল ব্যক্তিবিশেষ বা দল বিশেষ যারা তার বা তাদের পছন্দের বিষয়ের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করেন। ১৮৩৩ সালে বিজ্ঞানি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন উইলিয়াম হিওয়েল। আধুনিক সময়ে অনেক পেশাদার বিজ্ঞানীকে শিক্ষাদানের আদলে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং প্রশিক্ষণ শেষে তারা একটি শিক্ষাগত ডিগ্রি লাভ করেন যার মধ্যে সবোর্চ্চ হল ডক্টরেট ডিগ্রি যেমন দর্শনশাস্ত্রে ডক্টরেট হল পিএইটডি। অনেক বিজ্ঞানিই তাদের ক্যারিয়ার বেছে নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, শিল্পে, সরকারি খাতে এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে।
বিজ্ঞানীরা বাস্তবতার সম্পর্কে প্রচন্ড আগ্রহী হন। কেউ কেউ বিজ্ঞানের জ্ঞানকে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে, জাতীয় উন্নয়নে, পরিবেশ বা শিল্পের উন্নয়নে ব্যবহার করেন। অন্যরা সম্মান এবং স্বীকৃতির জন্য কাজ করেন। নোবেল পুরস্কার, হল এরূপ সবোর্চ্চ সম্মানজনক পুরস্কার যা সর্বস্বীকৃত। এটি প্রতিবছর দেয়া হয়। যে সব বিজ্ঞানীরা বর্তমান বিজ্ঞানকে গবেষণার মাধ্যমে আরো উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে গেছেন সেই সকল বিজ্ঞানীদের থেকে বাছাই করে সেরা আবিষ্কারগুলোকে পুরুষ্কৃত করা হয়। এটি ঔষধ, পদার্থ, রসায়ন এবং অর্থনীতি খাতে গবেষণা করা বিজ্ঞানীদের দেয়া হয়।.
বিজ্ঞানে নারী
thumb|মেরি কুরিই প্রথম ব্যক্তি যিনি দুটি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন: ১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এবং ১৯১১ সালে রসায়নে
বিজ্ঞানের ইতিহাসে ঐতিহাসিকভাবে একটি পুরুষ-আধিপত্যের ক্ষেত্র রয়েছে যদিও এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম রয়েছে । বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারীরা অনেক বৈষম্যের স্বীকার হয়েছিল । তবে নারীরা সমাজের অন্যান্য অঞ্চলে যেমন পুরুষ-শাসিত সমাজের প্রায় সব কাজই করেছিলেন । তাছাড়া তাদের কাজের কৃতিত্বকে প্রায়ই অস্বীকার করা হত । উদাহরণস্বরূপ, ক্রিস্টিন লেড (১৮৪৭-১৯৩০) পিএইচডি প্রোগ্রামে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন "সি লেড"; ক্রিস্টিন "কিটটি" লেড ১৮৮২ সালে সব প্রয়োজনীয়তা সম্পন্ন করেছিলেন কিন্তু ১৯২৬ সালে ডিগ্রি লাভ করেছিলেন । তার কর্মজীবনের পর তিনি লজিক, বীজগণিত (সত্য সারণি), রঙ দর্শন, এবং মনস্তত্ত্ব নিয়েও গবেষণা করেছিলেন । তার কাজগুলি উল্লেখযোগ্য গবেষক Ludwig Wittgenstein এবং চার্লস স্যান্ডার্স Peirce মত বিখ্যাত হয়েছিল । বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারীদের কৃতিত্বকে গার্হস্থ্য গোলকের মধ্যে শ্রমিক হিসাবে অভিহিত করা হত ।
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নারীর সক্রিয় নিয়োগ এবং লিঙ্গ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য দূর করার ফলে নারী বিজ্ঞানীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । তবে বেশিরভাগ লিঙ্গ বৈষম্য কিছু ক্ষেত্রে থেকেই গেছে ; অর্ধেকের ও বেশি নতুন জীববিজ্ঞানী হচ্ছে নারী, আর যেখানে ৮০% পিএইচডি পুরুষ পদার্থবিদের দেওয়া হয় । নারীবাদীরা দাবি করে যে লিঙ্গ বৈষম্যের পরিবর্তে সংস্কৃতির ফলাফলের পার্থক্যই হল মূল বিষয় । কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে যে বাবা-মা মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করে যার প্রভাব তাদেরকে গভীরভাবে এবং যুক্তিযুক্তভাবে প্রতিফলিত করে। বিংশ শতকের প্রথম দিকে আমেরিকাতে ৫০.৩% স্নাতক ডিগ্রি, ৪৫.৬% মাস্টার ডিগ্রী এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ক্ষেত্রে ৪০.৭% পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে । নারীদের অর্ধেকেরও বেশি তিনটি ক্ষেত্রে ডিগ্রি অর্জন করে, যেমন- মনোবিজ্ঞানে (প্রায় ৭০%), সামাজিক বিজ্ঞানে (প্রায় ৫০%) এবং জীববিজ্ঞানে (প্রায় ৫০-৬০%)। যাইহোক, যখন শারীরিক বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, গণিত, প্রকৌশল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান আসে, তখন মহিলাদের অর্ধেকেরও কম ডিগ্রি অর্জন করে । যাইহোক, লাইফস্টাইল পছন্দের বিষয়টি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে । কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য জনিত সমস্যাগুলির কারণে ছোট শিশুদের সঙ্গে মেয়েদের বয়স ২৮% কম থাকে, এবং গ্র্যাজুয়েট স্কুলের কোর্সে ছাত্রীদের স্নাতক আগ্রহের হার নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়, যদিও তাদের পুরুষ সহকর্মীদের ক্ষেত্রে তা অপরিবর্তিত রয়ে যায় ।
Eisenhart and Finkel, Ch 1 inThe Gender and Science Reader ed. Muriel Lederman and Ingrid Bartsch. New York, Routledge, 2001. (16-17)
প্রতিষ্ঠান
রেনেসাঁসকালীন সময় থেকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা ও গবেষণার প্রচার এবং গবেষণার জন্য শিক্ষিত সমাজগুলি বিদ্যমান ছিল । প্রাচীনতম জীবিত সংস্থাটি ইতালির অ্যাক্রেডেমিয়া দে লিন্সি যা ১৬০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । বিজ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট জাতীয় একাডেমী কয়েকটি দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । যেমন-১৬৬০ সালে ব্রিটিশ রয়্যাল সোসাইটির এবং ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের অ্যাকাডেমি ডি সাইন্স যাত্রা শুরু করেছিল ।
ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সায়েন্সের মতো আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সংগঠনগুলি বিভিন্ন জাতির বিজ্ঞানীদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য গঠিত হয়েছে। অনেক সরকার বৈজ্ঞানিক গবেষণার সমর্থনে সংস্থাগুলিকে উৎসর্গ করেছে । বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক সংস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, আর্জেন্টিনায় ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিকাল রিসার্চ কাউন্সিল, অস্ট্রেলিয়ায় সিএসআইআরও, ফ্রান্সের সেন্ট্রাল ন্যাশনাল দে লা রিচার্স সায়েন্টিফিক, ম্যাক্স প্লাংক সোসাইটি এবং জার্মানিতে ডয়েশ ফোর্শংজেমিনসচফ্ট এবং স্পেনের সিএসআইসি অন্যতম।
বিজ্ঞান এবং জনসাধারণ
বিজ্ঞান নিয়ে জনসচেতনতা, যোগাযোগের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক, বিজ্ঞান উৎসব, নাগরিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান সাংবাদিকতা, বিজ্ঞান আউটরিচ,গণ বিজ্ঞান, এবং জনপ্রিয় বিজ্ঞানের মতো জনসাধারণ এবং বিজ্ঞান/বিজ্ঞানীর মধ্যে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন কর্মকান্ডগুলি উন্নত করা হয়েছে।
বিজ্ঞান নীতি
বিজ্ঞান নীতি হচ্ছে জনসাধারণের নীতির সাথে সম্পর্কিত একটি ক্ষেত্র যা বৈজ্ঞানিক উদ্যোগের আচরণকে প্রভাবিত করে তাছাড়া গবেষণা তহবিল সহ অন্যান্য জাতীয় নীতির লক্ষ্যসমূহ যেমন বাণিজ্যিক পণ্য উন্নয়ন, অস্ত্র উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবেশ উন্নত করার জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন পর্যবেক্ষণ অন্যতম । বিজ্ঞান নীতি জনসাধারণের নীতিগুলি উন্নয়নের জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং ঐক্যমত্য প্রয়োগের আইনটিকেও উল্লেখ করে । এইভাবে বিজ্ঞান নীতি বিষয়গুলি এমন সমস্ত বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত হয় যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে । জনগণের নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞানের নীতিমালার প্রধান লক্ষ্য হল জনগণের কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জনসাধারণের জন্য কীভাবে সর্বোত্তমভাবে সেবা প্রদান করে তা বিবেচনা করা ।
রাষ্ট্রীয় নীতিমালা হাজার হাজার বছর ধরে জনকল্যাণ ও বিজ্ঞানকে আর্থিকভাবে প্রভাবিত করেছে, কমপক্ষে মোহিস্টদের সময় থেকে যারা হান্ড্রেড স্কুল অফ থট দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, এবং চীনে Warring রাজ্যের সময় রক্ষণাত্মক দুর্গসমূহের অধ্যয়ন গবেষণায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন । গ্রেট ব্রিটেনে সপ্তদশ শতাব্দীতে রয়্যাল সোসাইটির সরকারি অনুমোদনটি একটি বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দিয়েছিল যা আজকের দিনেও বিদ্যমান । বিজ্ঞানের পেশাদারিত্ব উনিশ শতকে শুরু হয়েছিল এবং বৈজ্ঞানিক সংস্থার সৃষ্টি দ্বারা আংশিকভাবে সক্রিয় করা হয়েছিল । যেমন-জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী, কাইজার উইলহেম ইন্সটিটিউট, এবং তাদের নিজ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রাষ্ট্রীয় তহবিলের মাধ্যমে পরিচালিত হত । পাবলিক পলিসি শিল্প গবেষণা জন্য পুঁজি সরঞ্জাম এবং বৌদ্ধিক অবকাঠামোর জন্য যে তহবিল দরকার তা গবেষণা ফান্ডের মাধ্যমে বা ঐ সংস্থাকে কর প্ররোচনা প্রদান করার মাধ্যমে প্রভাবিত করতে পারেন । ভানিভার বুশ ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের অগ্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যালয়ের পরিচালক ১৯৪৫ সালের জুলাই লিখেছিলেন যে "বিজ্ঞান সরকারের একটি সঠিক উদ্বেগের বিষয়।
রাজনৈতিক ব্যবহার
অনেক বিষয় বিজ্ঞানের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে মিডিয়া এবং রাজনীতিবিদদের দ্বারা বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক আর্গুমেন্টগুলি ব্যবহার করার ফলে । খুব বিস্তৃত সাধারণীকরণের হিসাবে অনেক রাজনীতিক নিশ্চয়তা এবং সত্য খোঁজেন আর বিজ্ঞানীরা সাধারণত সম্ভাব্যতা এবং caveats অফার করেন । যাইহোক, রাজনীতিবিদদের দ্বারা গণমাধ্যম শোনার সামর্থ্য প্রায়ই জনসাধারণের দ্বারা বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলি বোঝার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে । উদাহরণ হিসাবে যুক্তরাজ্যের এমএমআর ইস্যুতে সৃষ্ট বিতর্ককে অন্তর্ভুক্ত করা যায় । ১৯৮৮ সালে সরকারি মন্ত্রী এডউইন কুরিয়েকে জোর পূর্বক পদত্যাগের জন্য বাদ্য করা হয়েছিল কারণ তিনি প্রকাশ করে দিয়েছিলেন যে ব্যাটারিজাত ডিমকে সালমোনেলা দিয়ে দূষিত করা হয়েছিল ।
জন হরগান, ক্রিস মুনে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার গবেষকগণ বৈজ্ঞানিক সার্টিফিকেট আর্গুমেন্টেশন পদ্ধতি (এসএএনএএম) বর্ণনা করেছেন, যেখানে কোনও প্রতিষ্ঠান বা চিন্তাধারা তাদের সমর্থিত বিজ্ঞাপনের উপর সন্দেহ করার জন্য তাদের একমাত্র লক্ষ্য করে কারণ এটি রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলির সাথে বিরোধিতা করে । হ্যাঙ্গক ক্যাম্পবেল এবং মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স বিয়ারজো রাজনীতিতে ব্যবহৃত বিশেষত বামপন্থী "feel-good fallacies" বর্ণনা করেছেন যেখানে রাজনীতিবিদরা এমন একটি পজিশন তৈরি করেন যা মানুষকে কিছু নীতি সমর্থন করার ব্যাপারে স্বাবাভিক করে তুলে , এমনকি যখন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেখায় যে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই বা বর্তমান কর্মসূচিতে নাটকীয় পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন নেই।
বৈজ্ঞানিক চর্চা
যদিও প্লিনির প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কিত এনসাইক্লোপিডিয়াগুলি (৭৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) গভীর সত্যের প্রমাণ দেয়, তবে তারা অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছিল । একটি সংশয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি, প্রমাণের একটি পদ্ধতির দাবি করে যা অবিশ্বস্ত জ্ঞান মোকাবেলা করার জন্য গৃহীত বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। যেমন ১০০০ বছর আগে আলহাজেন (টলেমীর বিষয়ে সন্দেহ করেছিলেন), রজার বেকন, উইটেলো, জন পেখাম, ফ্রান্সিস বেকন (১৬০৫) এবং সি .এস. পিয়ারস (১৮৩৯-১৯১৪) এর মত পণ্ডিতরা অনিশ্চয়তার এই বিষয়গুলি সম্প্রদায়কে মোকাবেলা করতে দিয়েছিলেন । বিশেষ করে, প্রতারণাপূর্ণ যুক্তি প্রকাশ হতে পারে, যেমন "পরিণাম দৃঢ় করা।"
"যদি একজন মানুষ নিশ্চিতভাবেই শুরু করে তবে সে সন্দেহের মধ্যেই পতিত হবে, কিন্তু যদি সে সন্দেহের সাথে শুরু করতে চায় তবে সে নিশ্চিতভাবেই শেষ করবে।"
- ফ্রান্সিস বেকন, "The Advancement of Learning", বই ১, ভি, ৮
একটি সমস্যা তদন্তের পদ্ধতি হাজার বছর ধরে পরিচিত এবং অনুশীলনের তত্ত্ব অতিক্রম চর্চার দিকে প্রসারিত হয়েছে । উদাহরণস্বরূপ, পরিমাপের ব্যবহার, সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধের নিষ্পত্তি করার একটি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি।
জন জিমান নির্দেশ করে যে আন্তঃবৈচিত্র্যিক প্যাটার্ন শনাক্তকরণটি সকল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সৃষ্টির জন্য মৌলিক বিষয়। জিমান দেখায় যে বিজ্ঞানীরা শত শত শতাব্দী ধরে একে অপরের পরিমাপ কীভাবে চিহ্নিত করতে পারে; তিনি এই ক্ষমতাটিকে "চেতনাগত যৌক্তিকতা" বলে উল্লেখ করেন। তারপর তিনি ঐকমত তৈরি করেন, ঐক্যমত্যের দিকে অগ্রসর হন এবং অবশেষে নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের আশ্রয় নেন ।
পদটিকা
তথ্যসূত্র
উপাত্তসূত্র
আরও পড়ুন
Augros, Robert M., Stanciu, George N., The New Story of Science: mind and the universe, Lake Bluff, Ill.: Regnery Gateway, c1984.
Burguete, Maria, and Lam, Lui, eds.(2014). All About Science: Philosophy, History, Sociology & Communication. World Scientific: Singapore.
Cole, K. C., Things your teacher never told you about science: Nine shocking revelations Newsday, Long Island, New York, March 23, 1986, pp. 21+
Feyerabend, Paul (2005). Science, history of the philosophy, as cited in
Feynman, Richard "Cargo Cult Science"
Gopnik, Alison, "Finding Our Inner Scientist" , Daedalus, Winter 2004.
Krige, John, and Dominique Pestre, eds., Science in the Twentieth Century, Routledge 2003,
Levin, Yuval (2008). Imagining the Future: Science and American Democracy. New York, Encounter Books.
Kuhn, Thomas, The Structure of Scientific Revolutions, 1962.
Papineau, David. (2005). Science, problems of the philosophy of., as cited in
Books I-III (2001 — 91(4)) Vol 1 Commentary and Latin text via JSTOR; — 91(5) Vol 2 English translation, Book I:TOC pp. 339–41, Book II:TOC pp. 415–16, Book III:TOC pp. 559–60, Notes 681ff, Bibl. via JSTOR
বহিঃসংযোগ
প্রকাশনাসমূহ
"GCSE Science textbook". Wikibooks.org
সহায়ক উৎস
Euroscience:
Science Development in the Latin American docta
Classification of the Sciences in Dictionary of the History of Ideas. (Dictionary's new electronic format is badly botched, entries after "Design" are inaccessible. Internet Archive old version).
"Nature of Science" University of California Museum of Paleontology
United States Science Initiative Selected science information provided by US Government agencies, including research & development results
How science works University of California Museum of Paleontology
বিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:বিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:জ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:পর্যবেক্ষণ |
পিংক ফ্লয়েড | https://bn.wikipedia.org/wiki/পিংক_ফ্লয়েড | পিংক ফ্লয়েড ১৯৬৫ সালে গঠিত লন্ডন ভিত্তিক ব্রিটিশ রক ব্যান্ড। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড হিসেবে তাদের দার্শনিক গানের কথা, সম্প্রসারিত সুরারোপ (কম্পোজিশন), ধ্বনিত নিরীক্ষণ এবং বিস্তৃত সরাসরি পরিবেশনার জন্য দলটি ব্রিটিশ সাইকেডেলিক ব্যান্ড হিসেবে শীর্ষস্থানীয় হয়ে উঠে। তারা প্রোগ্রেসিভ রক ঘরানার নেতৃস্থানীয় ব্যান্ড, যাদের কেউ কেউ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রোগ্রেসিভ রক ব্যান্ড হিসেবে উল্লেখ করে।
১৯৬৫ সালে স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী সিড ব্যারেট (গিটার ও মূল কন্ঠ), নিক মেইসন (ড্রাম), রজার ওয়াটার্স (বেস ও কন্ঠ) এবং রিচার্ড রাইট (কিবোর্ড ও কন্ঠ)- এই চারজন তরুণের সমন্বয়ে পিংক ফ্লয়েড গঠিত হয়। ব্যারেটের নেতৃত্বাধীনে দলটি দুটি চার্ট তালিকাভুক্ত একক এবং দ্য পাইপার অ্যাট দ্য গেট্স অব ডউন (১৯৬৭) নামে একটি সফল আত্মপ্রকাশ অ্যালবাম প্রকাশ করে। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরে, পঞ্চম সদস্য হিসেবে গিটারবাদক ডেভিড গিলমোর দলে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় ব্যারেট দল ত্যাগ করেন। ওয়াটার্স, ব্যান্ডের প্রধান গীতিকার এবং ধারণাগত নেতা হয়ে ওঠেন, পাশাপাশি তাদের সমালোচক নন্দিত এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন (১৯৭৩), উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার (১৯৭৫), অ্যানিম্যাল্স (১৯৭৭), দ্য ওয়াল (১৯৭৯) এবং দ্য ফাইনাল কাট (১৯৮৩) অ্যালবামের ধারণা উদ্ভাবন করেন। ১৯৮২ সালের পিংক ফ্লয়েড – দ্য ওয়াল অ্যালবামের উপর ভিত্তি করে নির্মিত সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্রটি দুটি বাফটা পুরস্কার জিতেছে। এছাড়াও ব্যান্ডটি সাতটি চলচ্চিত্রের স্কোর পরিচালনা করেছে।
ব্যক্তিগত দুশ্চিন্তায় থাকার দরুন, ১৯৭৯ সালে রাইট পিংক ফ্লয়েড ত্যাগ করেন; ১৯৮৫ সালে একই পথ অনুসরণ করেন ওয়াটার্স। গিলমোর এবং মেইসন পিংক ফ্লয়েড হিসাবে নিজেদের অব্যাহত রাখেন। পরবর্তীতে সক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রাইট পুনরায় ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর তারা তিনজন তৈরি করেন আরও দুটি অ্যালবাম— অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন (১৯৮৭) ও দ্য ডিভিশন বেল (১৯৯৪)— এবং পরবর্তীতে দীর্ঘকাল নিস্ক্রিয় থাকার আগ পর্যন্ত দলটির সঙ্গীত সফর অব্যাহত রাখেন। প্রায় দুই দশক সময় পরে, ২০০৫ সালে লাইভ এইট নামে বৈশ্বিক সচেতনতা অনুষ্ঠানে পিংক ফ্লয়েড হিসেবে পরিবেশন করতে ব্যারেট ব্যতীত দলের বাকি সদস্যরা সর্বশেষবার একত্রিত হয়েছিলেন। ব্যারেট মারা যান ২০০৬ সালে, এবং রাইট ২০০৮ সালে। পিংক ফ্লয়েডের সর্বশেষ স্টুডিও অ্যালবাম দি এন্ডলেস রিভার (২০১৪), ওয়াটার্সকে ছাড়াই রেকর্ড করা হয়, এবং যা মূলত তাদের অপ্রকাশিত সঙ্গীত উপাদানের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। ২০২২ সালে, গিলমোর এবং মেইসন পিংক ফ্লয়েডকে সংস্কার করে রুশ-ইউক্রেনীয় যুদ্ধের প্রতিবাদে "হেই, হেই, রাইজ আপ!" গানটি প্রকাশ করেন।
২০১৩ সাল নাগাদ, বিশ্বব্যাপী ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি পিংক ফ্লয়েডের রেকর্ড বিক্রি হয়েছিল, যা তাদের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ-বিক্রি হওয়া সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন এবং দ্য ওয়াল গ্র্যামি হল অব ফেমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, এবং এই অ্যালবামগুলিসহ তাদের উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার সর্বকালের সেরা বিক্রিত অ্যালবামগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হ্য়। তাদের চারটি অ্যালবাম ইউএস বিলবোর্ড ২০০-এর শীর্ষে এবং পাঁচটি অ্যালবাম ইউকে অ্যালবাম চার্টের শীর্ষে রয়েছে। পিংক ফ্লয়েডের হিট একক গানগুলির মধ্যে রয়েছে "সি এমিলি প্লে" (১৯৬৭), "মানি" (১৯৭৩), "অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্য ওয়াল (অংশ ২)" (১৯৭৯), "নট নাও জন" (১৯৮৩), "অন দ্য টার্নিং অ্যাওয়ে" (১৯৮৭) এবং "হাই হোপ্স" (১৯৯৪)। ১৯৯৬ সালে ব্যান্ডটি মার্কিন রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমের এবং ২০০৫ সালে ইউকে মিউজিক হল অব ফেমের অর্ন্তভুক্ত হয়। পিংক ফ্লয়েডকে ব্রিটিশ সাইকিডেলিয়ার শীর্ষ দলগুলির একটি বিবেচনা করা হয় এবং প্রোগ্রেসিভ রক ও চারিপার্শ্বিক সঙ্গীতের মতো ধারাগুলির বিকাশে অনুপ্রেরণা সৃষ্টির কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে, সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ আধুনিক সঙ্গীতে অবদানের জন্য পিংক ফ্লয়েডকে পোলার মিউজিক প্রাইজ প্রদান করেন।
ইতিহাস
১৯৬৩–৬৫: গঠন
ব্যান্ড গড়ার আগে
রজার ওয়াটার্স এবং নিক মেইসনের সাক্ষাত ঘটে, যখন তারা দুজনই রিজেন্ট স্ট্রিটে লন্ডন পলিটেকনিকে স্থাপত্যবিদ্যায় অধ্যয়ন করছেন।: লন্ডন পলিটেকনিকে স্থাপত্যবিদ্যায় অধ্যয়নকালে মেইসন ওয়াটার্সের সঙ্গে সাক্ষাত করে; : লন্ডন পলিটেকনিকে স্থাপত্যবিদ্যায় অধ্যয়নকালে ওয়াটার্স মেইসনের সঙ্গে সাক্ষাত করে। তারা প্রথম কিথ নোবল ও ক্লাইভ মেটক্যাফ পরিচালিত একটি দলে নোবলের বোন শেইলাঘের সঙ্গে একসঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পরবর্তী বছর স্থাপত্যবিদ্যার আরেক সতীর্থ ছাত্র, রিচার্ড রাইট তাদের সঙ্গে যুক্ত হন, এবং দলটি হয়ে ওঠে 'সিগমা সিক্স' নামক একটি সেক্সটেট। ওয়াটার্স লিডগিটার বাজান, মেইসন ড্রাম, এবং রাইট রিদম গিটার (যেহেতু তখন পর্যন্ত কিবোর্ডের উপলভ্য সীমিত ছিল)।: সিগমা সিক্স দলে যোগদানের সময় রাইট নিজেও স্থাপত্যের ছাত্র ছিলেন; : সিগমা সিক্স গঠন; : সিগমা সিক্সের ইনস্ট্রুমেন্ট লাইন আপ: ওয়াটার্স (লিডগিটার), রাইট (রিদম গিটার) এবং মেইসন (ড্রাম)। সে সময়ে ব্যান্ডটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে পরিবেশন করতো এবং রিজেন্ট স্ট্রিটে পলিটেকনিকের ভূগর্ভস্থ অংশে বা বেসমেন্টে একটি চাঘরে মহড়া দিতো। সে সময়ে তারা সার্চার্স ব্যান্ড কর্তৃক এবং তাদের ব্যাবস্থাপক ও গীতিকার সহকর্মী কেইন চ্যাপম্যান রচিত উপাদানের মাধ্যমে সঙ্গীত পরিবেশন করতো।
১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বরে, ওয়াটার্স ও মেইসন লন্ডনে ক্রাউচ এন্ডের নিকট ৩৯ স্ট্যানহোপ গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত হন, যেটি ছিল নিকটবর্তী হর্নসি কলেজ অব আর্ট ও রিজেন্ট স্ট্রিট পলিটেকনিকের খণ্ডকালীন শিক্ষক মাইক লিওনার্ডের মালিকানাধীন। ১৯৬৪ সালের শিক্ষাবর্ষ সমাপ্তির পর মেইসন স্থানান্তরিত হন, এবং ১৯৬৪-এর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি যুক্ত হন গিটারবাদক বব ক্লোসা, যিনি ওয়াটার্সকে বেস গিটার বাজাতে প্ররোচনা দিয়েছিলেন। সিগমা সিক্স বিভিন্ন নামের মধ্য দিয়ে, যার মধ্যে মেগাডেথ্স, আব্দাবাস অ্যান্ড দ্য স্কাইমিং আব্দাবাস, লিওনার্ড'স লজার্স, স্পেকট্রাম ফাইভ অন্তর্ভুক্ত, শেষে টি সেট নামে প্রতিষ্ঠাপিত হয়। ১৯৬৪ সালে, মেটকাল্ফ ও নোবল তাদের নিজস্ব ব্যান্ডে চলে যায়, গিটারবাদক সিড ব্যারেট স্ট্যানহোপ গার্ডেনে ক্লোসা ও ওয়াটার্সের সঙ্গে যুক্ত হন। দুই বছরের কনিষ্ঠ, ব্যারেট, ১৯৬২ সালে ক্যাম্বারওয়েল কলেজ অব আর্টসে অধ্যয়নের জন্য লন্ডনে আসেন। ওয়াটার্স ও ব্যারেট ছিল শৈশব বন্ধু। ওয়াটার্স প্রায়ই ব্যারেটর মায়ের বাড়িতে যেতেন এবং সেখানে তাকে গিটার বাজাতে দেখা যেত। ব্যারেট সম্পর্কে মেইসন বলেন: "একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, যখন সকলে ঠান্ডায় আত্মসচেতন উপায়ে শিশুর মতোন হয়ে উঠত, তখন ব্যারেট অবাঞ্ছিতভাবে বাইরে বেরতো; আমাদের প্রথম সাক্ষাতের স্থায়ী স্মৃতি রয়েছে, যখন সে নিজেকে আমার সঙ্গে পরিচিত করে নিতে কিছুটা বিরক্তও হচ্ছিল।"
১৯৬৩ সালের শেষের দিকে নোবল ও মেটকাল্ফ টি সেট ত্যাগ করেন, এবং ক্লোসা, গায়ক ক্রিস ডেনিসের সঙ্গে ব্যান্ডটির পরিচয় করিয়ে দেন। ডেনিস ছিলেন রয়্যাল এয়ার ফোর্সের (আরএএফ) প্রযুক্তিবিদ। ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে, ওয়েস্ট হ্যাম্পস্টেডের একটি স্টুডিওতে তারা দলটির প্রথম রেকর্ডিংয়ের সময় নির্ধারণ করে। সেখানে রাইটের এক বন্ধু তাদেরকে বিনামূল্যে কিছু বাড়তি সময় প্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়েছিল। রাইট সে সময়ে পড়াশোনা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন, এবং সেই অধিবেশনে তিনি অংশগ্রহণ করেন নি। ১৯৬৫ সালের প্রথম দিকে আরএএফ যখন ডেনিসকে বাহরাইনে একটি পদে নিয়োগ দেয়, তখন ব্যারেট ব্যান্ডের মুখপাত্র ছিলেন। পরবর্তী বছর, তারা লন্ডনে কেনসিংটন হাই স্ট্রিটের নিকট কাউন্টডাউন ক্লাবের একটি আবাসিক ব্যান্ড হয়ে ওঠে, যেখানে শেষ রাত থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত তারা ৯০ মিনিটের তিনটি সেট পরিবেশন করতো। এই সময়ের মধ্যে, দলের প্রয়োজনীয়তা স্বত্তে গানের পুনরাবৃত্তি হ্রাস করার লক্ষে তারা তাদের নির্ধারিত সেটসমূহ দীর্ঘ করতে অনুপ্রাণিত হতো। সে সময় ব্যান্ডটি বুঝতে পারে যে, "সুরের মধ্য দিয়েই গান দীর্ঘ হতে পারে", মেইসন বলেন। বাবা-মায়ে চাপ ও কলেজ শিক্ষকের পরামর্শের পর, ক্লোসা ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ড ত্যাগ করেন এবং ব্যারেট লিড গিটারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।: ১৯৬৫-এর মাঝামাঝি ক্লোজ ব্যান্ড ছেড়ে যান এবং ব্যারেট লিড গিটারে অধিষ্ঠিত হন (মাধ্যমিক উৎস); : ক্লোসা ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ড ত্যাগ করেন (প্রাথমিক উৎস)।
১৯৬৫–১৯৬৭: প্রারম্ভিক বছর
পিংক ফ্লয়েড
১৯৬৫ সালের শেষের দিকে ব্যান্ডটি প্রথম নিজেদের 'পিংক ফ্লয়েড সাউন্ড' হিসেবে পরিচিত করে। যদিও ব্যারেট সে সময়ে টি সেট নামের অন্য আরেকটি ব্যান্ডের উপস্থিতি আবিষ্কার করেন, এবং দ্রুততার সঙ্গে ব্যান্ডের নতুন নাম তৈরি করেন। দলের নতুন নামটি পিংক অ্যান্ডারসন ও ফ্লয়েড কাউন্সিল নামে দুজন ব্লুজ সঙ্গীতশিল্পীর নামের প্রথম অংশের সংযোজনের মাধ্যমে তৈরি, যাদের প্যাডমন্ট ব্লুজ রেকর্ড ব্যারেটের সংগ্রহে ছিল।: পিংক ফ্লয়েড ব্যান্ড নামের উৎপত্তি (প্রাথমিক উৎস); : পিংক ফ্লয়েড ব্যান্ড নামের উৎপত্তি (মাধ্যমিক উৎস)। ১৯৬৬ সালের দিকে, দলটি প্রধানত রিদম অ্যান্ড ব্লুজ গান মঞ্চস্থ করবে ঠিক করেছিল এবং এজন্য অগ্রিম বুকিংও পেতে শুরু করে তারা। যার মধ্যে ১৯৬৬-এর মার্চে মার্কি ক্লাবে একটি পরিবেশনা উল্লেখযোগ্য; যেখানে তারা লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রভাষক পিটার জেনারের নজরে আসে। জেনার, ব্যারেট ও রাইটের নির্মিত ধ্বনিত প্রভাবে অভিভূত হন, এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার ও বন্ধু অ্যান্ড্রু কিংয়ের সঙ্গে ব্যান্ডটির ব্যবস্থাপক হয়ে ওঠেন।: ব্যারেট ও রাইট দ্বারা জেনার প্রভাবিত হয়েছিল; : জেনার ও কিং হয়ে ওঠেন পিংক ফ্লয়েডের ব্যবসায়িক পরিচালক। এই জুটির সঙ্গীত শিল্পে সামান্য অভিজ্ঞতা থাকলেও ব্ল্যাকহিল এন্টারপ্রাইজেস প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কিংয়ের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ ব্যয় করেন এবং ব্যান্ডের জন্য প্রায় £১,০০০ () মূল্যের নতুন যন্ত্র-সরঞ্জাম ক্রয় করেন। এই সময়ে জেনার, ব্যান্ডের নাম থেকে "সাউন্ড" অংশটি বাদ দেয়ার পরামর্শ দেন, এইভাবে তারা পিংক ফ্লয়েড হয়ে ওঠে। জেনার ও কিংয়ের নির্দেশনার অধীনে, ব্যান্ডটি লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীত দৃশ্যের অংশ হয়ে ওঠে, পাশাপাশি আর অল সেইন্টস হল এবং মার্ককিউ সহ বিভিন্ন ভেন্যুতে পরিবেশন করতে থাকে। কাউন্টডন ক্লাবে পরিবেশনের সময়, ব্যান্ডটি দীর্ঘ যন্ত্রসঙ্গীত বাজানোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়, এবং প্রাথমিক তবে কার্যকরীভাবে রঙিন স্লাইড ও গার্হস্থ্য আলোর ব্যবহারের মাধ্যমে অভিক্ষিপ্ত আলোক প্রদর্শনীর চর্চাও শুরু করে।: (প্রাথমিক উৎস); : (মাধ্যমিক উৎস)। জেনার ও কিংয়ের সামাজিক সংযোগগুলি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে ব্যান্ডটির অভিক্ষিপ্ত কাভারেজ লাভ করতে সহায়তা করেছিল, এবং সানডে টাইমসের একটি নিবন্ধ যেখানে বলা হয়েছে: "নতুন আইটি ম্যাগাজিনটি চালু করার সময়, আরেকটি পপ দল বলে যে পিংক ফ্লয়েড পরিবশেনকালে তাদের পেছনে বিশাল পর্দায় বিচিত্র রঙের অবয়বগুলি ছড়িয়ে পাড়ার সময় কম্পান্বিত সঙ্গীত বাজিয়েছিল ... যা দৃশ্যত খুবই সাইকেডেলিক"।: জেনার এবং কিংয়ের যোগাযোগে ব্যান্ডটির গুরুত্বপূর্ণ কভারেজ লাভে সাহায্য করেছিল; : "দৃশ্যত খুব সাইকেডেলিক"
১৯৬৬ সালে, ব্যান্ডটি ব্ল্যাকহিল এন্টারপ্রাইজেসের সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক শক্তিশালী করে তোলে। জেনার ও কিংয়ের সঙ্গে ব্যান্ড সদস্যদের প্রত্যেকে ছয় ভাগের এক ভাগ শেয়ারের সমান অংশীদার হয়ে ওঠে। ১৯৬৬ সালের শেষের দিকে, তাদের সেটে আরঅ্যান্ডবি মান হ্রাস পাওয়ায় মূল ব্যারেটের অন্তর্ভুক্তি বাড়তে থাকে, যার বেশিরভাগই পরবর্তীতে তাদের প্রথম অ্যালবামে অন্তর্ভুক্ত হয়। যদিও উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের পরিবেশনায় পৌনঃপুনিকতা বাড়তে থাকা স্বত্ত্বেও ব্যান্ডটি তখনো ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে নি। একটি ক্যাথলিক যুব ক্লাবে পরিবেশনার পর, এর মালিক তাদের অর্থ প্রদান করতে অসম্মতি জানিয়ে দাবি করেন যে তাদের পরিবেশনা কোনো সঙ্গীত-ই ছিল না। ব্যন্ডটির ব্যবস্থাপক যুব প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করার পরও ব্যর্থ হয়, এবং স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট মালিকের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানায়। অন্যদিকে ব্যান্ডটি লন্ডনে ইউএফও ক্লাবে চমৎকারভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে, যেখানে তারা ভক্তদের একটি ভিত নির্মাণ করতে শুরু করে। ব্যারেটের পরিবেশনা উৎসাহী ছিল, "চারপাশে লাফানো ... পাগলামি ... তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন ... [অনুপ্রাণিত] তার বিগত সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে যায় এবং যে স্থানের মধ্যে ছিল ... তা খুবই আগ্রহব্যাঞ্জক। যা অন্যদের মধ্যে কেউ করতে পারে না", লিখেছেন জীবনী লেখক নিকোলাস শ্যাফনার।
ইএমআই-এর সঙ্গে চুক্তি
১৯৬৭ সালের দিকে, পিংক ফ্লয়েড সঙ্গীত শিল্পের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করে।: একটি স্পেস রক ব্যান্ড হিসাবে পিংক ফ্লয়েড : সঙ্গীত রক পিংক ফ্লয়েডকে পর্যবেক্ষণ শুরু করে। রেকর্ড কোম্পানিগুলির সঙ্গে আলোচনার সময়, আইটি সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ইউএফও ক্লাবের ব্যবস্থাপক জো বয়েড এবং পিংক ফ্লয়েডের বুকিং এজেন্ট ব্রায়ান মরিসন লন্ডনের ওয়েস্ট হ্যাম্পস্টেডের সাউন্ড টেকনিক্স স্টুডিওতে একটি রেকর্ডিং অধিবেশনের আয়োজন করে। এর তিন দিন পরে, পিংক ফ্লয়েড ইএমআই রেককর্ডসের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে, এবং অগ্রিম £৫,০০০ ডলার গ্রহণ করে (২০১৮-এর হিসেবে £৮৯,১০০ এর সমতুল্য )। ১৯৬৭ সালের ১০ মার্চ, ইএমআই তাদের কলাম্বিয়া লেবেলের অধীনে ব্যান্ডটির প্রথম একক গান "আরনল্ড লেইন", সঙ্গে বি-পাশে "ক্যান্ডি অ্যান্ড অ্যা কারেন্ট বান" গানের সঙ্গে মুক্তি দেয়।: "আর্নল্ড লেন" গানের মুক্তির তারিখ; : ইএমআই-এর সঙ্গে গাওয়া। দুটি ট্র্যাকই রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ২৯ জানুয়ারি। "আরনল্ড লেইন" গানের বেশান্তর সূত্রসমূহ সে সময়ে বিভিন্ন রেডিও স্টেশন কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিল; যদিও, সঙ্গীত ব্যবসার বিক্রয় পরিসংখ্যান সরবরাহকারী খুচরা বিক্রেতাদের সৃজনশীল কারচুপি থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে জানা যায় যে এই একক গানটি ইউকে চার্টে ২০ নম্বর স্থানে অবস্থান নিয়েছিল।
ইএমআই-কলাম্বিয়া পিংক ফ্লয়েডের দ্বিতীয় একক "সি এমিলি প্লে", প্রকাশ করে ১৯৬৭ সালের ১৬ জুন। এটি "আরনল্ড লেইন" এককের তুলনায় কিছুটা অধিক গ্রহণযোগ্যভাবে ইউকে চার্টে ৬তম স্থান অবস্থান নিয়েছিল। ব্যান্ডটি বিবিসি'র লুক অব দ্য উইক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিল, যেখানে ওয়াটার্স ও ব্যারেট, পাণ্ডিত্যপূর্ণ এবং চিত্তাকর্ষকভাবে, হান্স কেলারের কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন। ব্যান্ডটি এছাড়াও উপস্থিত হয়েছিল বিবিসি'র জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান টপ অব দ্য পপ্স-এ, যেখানে বিতর্কিতভাবে শিল্পীদের নিজেদের গান গেয়ে এবং বাজিয়ে পরিবেশন করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। যদিও পিংক ফ্লয়েড-কে আরও দুটি পরিবেশনার জন্য ফিরে আসতে হয়, আর তৃতীয় পরিবেশনার মধ্য দিয়ে, ব্যারেটের নেতৃত্বের উদ্ভব ঘটতে শুরু করে, এবং প্রায় একই সময়ে প্রথম ব্যান্ডটির সঙ্গীতাচরণেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নজরে আসে। ১৯৬৭ সালের প্রথম দিকে, ব্যারেট নিয়মিত এলএসডি গ্রহণ করতেন, এবং এ-সম্পর্কে মেইসন বর্ণনা করেছিলেন, "সাম্প্রতিক সবকিছু থেকেই সে (ব্যারেট) তখন সম্পূর্ণরূপে দূরে অবস্থান করতো"।: ব্যারেট "সম্পূর্ণরূপে সবকিছু থেকে দূরে অবস্থান করছিলো"; : ১৯৬৭ সালের শুরুতে ব্যারেটের এলএসডি গ্রহণ করতে শুরু করে।
দ্য পাইপার অ্যাট দ্য গেট্স অব ডউন
মরিসন ও ইএমআই-এর প্রযোজক নরম্যান স্মিথ পিংক ফ্লয়েডের প্রথম রেকর্ডিং চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন, এবং চুক্তির অংশ হিসাবে, ব্যান্ডটি লন্ডনে ইএমআই স্টুডিওতে তাদের প্রথম অ্যালবাম রেকর্ড করতে সম্মত হয়।: স্মিথ পিংক ফ্লয়েডের প্রথম রেকর্ড চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন; : মরিসন পিংক ফ্লয়েডের প্রথম চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে এবং এতে তারা ইএমআই স্টুডিওতে তাদের প্রথম অ্যালবাম রেকর্ড করতে সম্মত হয়। মেইসন এই সেশনটিকে ঝামেলাহীন ছিল বলে স্মরণ করেন। স্মিথ মতবিরোধ জানিয়ে উল্লেখ করেন, ব্যারেট সে সময়ে তার পরামর্শ এবং গঠনমূলক সমালোচনায় অপ্রতিক্রিয়াশীল ছিলেন। ১৯৬৭ সালের আগস্টে ইএমআই-কলাম্বিয়া দ্য পাইপার অ্যাট দ্য গেট্স অব ডউন মুক্তি দেয়। অ্যালবামটি ইউকে চার্টে ১৪ সপ্তাহ অতিক্রম করে ৬ নম্বরে অবস্থান নিয়েছিল। এক মাস পর, অ্যালবামটি টাওয়ার রেকর্ডস লেবেলের অধীনে পুনরায় মুক্তি পায়। একই সাথে পিংক ফ্লয়েড ইউএফও ক্লাবে বৃহত্তর জনসাধারণকে আকর্ষণ করে চলেছে; যদিও, ব্যারেটের মানসিক ভাঙ্গন সে সময়ে গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করে। দলটি প্রাথমিকভাবে ভেবেছিল যে ব্যারেটের এই অনিয়মিত আচরণ ক্ষণস্থায়ী হবে, তবে কেউ কেউ এ-ব্যাপারে ক্ষীণ আশাবাদী ছিলেন, যাদের মধ্যে জেনার ও তার সহকারী অন্তর্ভুক্ত, জুন চাইল্ড, মন্তব্য করেন যে: "আমি তাকে [ব্যারেটকে] সাজঘরে খুঁজে পেয়েছি এবং সে তখন প্রায় নেই... এমন অবস্থা। ওয়াটার্স ও আমি তাকে টেনে তুলি, [এবং] মঞ্চের বাইরে নিয়ে যাই;... ব্যান্ডের বাকিরা পুনরায় বাজাতে শুরু করে এবং সিড তখন শুধু সেখানে দাঁড়িয়েই ছিল। তার গলায় গিটার ছিল এবং তার বাহু ছাড়া অবস্থায় ছিল।": "ব্যান্ডটি বাজাতে শুরু করে এবং সিড শুধু সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে"; : জুন চাইল্ড ব্ল্যাকহিলের সহকারী ও সচিব ছিলেন।
ক্রমান্বয়ে জাতীয় জ্যাজ ও ব্লুজ উৎসবে পিংক ফ্লয়েডের উপস্থিতি বাতিল করতে বাধ্য করে, পাশাপাশি অন্যান্য আনুষ্ঠানগুলিও। কিং, সঙ্গীত গগণমাধ্যগুলোয় অবগত করেন যে, ব্যারেট স্নায়বিক অবসাদে ভুগছিলেন। ওয়াটার্স মনোবিজ্ঞানী আর. ডি. লাইংয়ের সঙ্গে সিডের সাক্ষাতের আয়োজন করেন, এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যারেটের সাক্ষাত স্থির করেন, যদিও ব্যারেট তখন গাড়ি থেকেই বের হতে অসম্মতি জানান। ফোরমেন্টেরায় থাকাকালীন, স্যাম হাটের সঙ্গে, একজন চিকিৎসক যিনি আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীত ধারণায় প্রতিষ্ঠিত, ব্যারেটের দৃশ্যত কোনো উন্নতি ঘটে নি। সেপ্টেম্বরে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর ব্যান্ডটি ইউরোপে অক্টোবর মাসের দিকে কয়েকটি কনসার্ট নির্দিষ্ঠ করে। ইউএস সফরের সময়, ব্যারেটের অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হয়ে ওঠে। নভেম্বর মাসে ডিক ক্লার্ক এবং প্যাট বুন অনুষ্ঠানগুলিতে উপস্থাপনের সময়, ব্যারেট তার আয়োজকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সাড়া না দিয়ে তাদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তোলে। বুনয়ের অনুষ্ঠানে "সি এমিলি প্লে" পরিবেশনের সময় ব্যারেট ঠোঁট মিলাতে অসম্মতি জানান। এই হতবুদ্ধিকর পর্বের পর, কিং তাদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে ইতি টানেন এবং অবিলম্বে তাদের লন্ডনে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ফেরার পর শীঘ্রই তারা, ইংল্যান্ড সফরের সময় জিমি হেন্ডরিক্সের সহযোগী ছিল; যদিও, ব্যারেটের বিষণ্ণতা নেতিবাচকভাবে তাদের সফর অব্যাহত রাখতে বিঘ্ন ঘটালে, ডিসেম্বর মাসে দলটি একরকম সঙ্কট মুহূর্তে পৌঁছোয়, যখন ব্যান্ডটি তাদের লাইন-আপে নতুন একজন সদস্য যোগদান করানোর উদ্যোগ নেয়।: ব্যারেটের মানসিক বিপর্যয় এবং পিংক ফ্লয়েডের প্রথম মার্কিন সফর (প্রাথমিক উৎস); : ব্যারেটের মানসিক বিপর্যয় এবং পিংক ফ্লয়েডের প্রথম মার্কিন সফর (মাধ্যমিক উৎস)।
১৯৬৭–১৯৭৮: অবস্থান্তর ও আন্তর্জাতিক সাফল্য
১৯৬৭: গিলমোর দ্বারা ব্যারেটের প্রতিস্থাপন
থাম্ব|ডেভিড গিলমোর, ১৯৭০ সালে
১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরে, দলটি গিটারবাদক ডেভিড গিলমোরকে পিংক ফ্লয়েডের পঞ্চম সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করে। গিলমোর ইতোমধ্যেই ব্যারেটকে জানতেন, ১৯৬০-এর দশকের প্রথম দিকে ক্যামব্রিজ টেকে (টেকনোলজি) তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছিলেন। শিক্ষানবিশকালীন তারা দুইজন একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের সময়ে গিটার ও হারমোনিকার মাধ্যমে পরিবশেন করতেন এবং পরবর্তীতে হিচ-হাইকে আর ফ্রান্সের দক্ষিণ জুড়ে তারা পথ পরিবেশনাও (বাস্কিং) করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে, জোকার্স ওয়াইল্ড ব্যান্ডের সদস্য থাকাকালীন গিলমোর প্রথম টি সেট প্রত্যক্ষ করেছিলেন। মরিসনের সহকারী, স্টিভ ও'রোর্ক, সপ্তাহে £৩০ পাউন্ডের (২০১৮-এর হিসেবে £৫,০০ এর সমতুল্য) বিনিময়ে নিজের বাড়ির উপরে একটি কক্ষে গিলমোরকে নিযুক্ত করেন, এবং ১৯৬৮ সালের জানুযারিতে, ব্ল্যাকহিল এন্টারপ্রাইজেস গিলমোরকে ব্যান্ডের নতুন; দ্বিতীয় গিটারবাদক এবং পঞ্চম সদস্য হিসেবে ঘোষণা করে। আর ব্যান্ডটি একজন অ-কর্মক্ষম গীতিকার হিসেবে ব্যারেটের সঙ্গে দল চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।: "ব্যান্ডটি ব্যারেটের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক"; : ও'রোরকে তার বাড়িতে গিলমোরকে নিযুক্ত করেন; : গিলমোরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পিংক ফ্লয়েডের নতুন সদস্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়। জেনার মন্তব্য করেছেন: "ধারণা ছিল যে ড্যাভ (ডেভিড) ... [ব্যারেটের] খামখেয়ালীর ক্ষতি পুরণ করবে এবং যখন এটি কার্যকর হবে না শুধু তখনই সিডের সাহায্য নেয়া হবে। এটা শুধু সিডকে নামমাত্র দলে জড়িত রাখার চেষ্টা।" ব্যারেট হতাশা প্রকাশ করেন, যিনি "আরনল্ড লেইন" এবং "সি এমিলি প্লে" গানের পর আরও হিট গান লেখার প্রত্যাশা করেছিলেন, তার পরিবর্তে তিনি "হ্যাব ইউ গট ইট ইয়েট?" গানটি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিটি কর্মক্ষমতার উপর এমন কাঠামো পরিবর্তন করেছিলেন যাতে গানটি শেখা এবং অনুকরণ করা দূরহ হয়ে ওঠে। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে পিংক ফ্লয়েডের পাঁচজন সদস্যের আলোকচিত্রে, ব্যারেটকে বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন দেখা যায়।
ব্যারেটের সঙ্গে কাজ করা অবশেষে কঠিন প্রমাণিত হয়, এবং জানুয়ারিতে বিষয়টি উপসংহারে পৌছে, যখন সাউথহ্যাম্পটনে একটি পরিবশেনায় যাত্রা পথে এক ব্যান্ড সদস্য ব্যারেটকে রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছিলেন। গিলমোরের মতে, এর উত্তর ছিল "নাহ, আর বিরক্তি চাই না", যা ছিল পিংক ফ্লয়েডের সঙ্গে ব্যারেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ব সংকেত। ওয়াটার্স পরবর্তীতে এক স্বীকারোক্তিতে জানান যে, "সে আমাদের বন্ধু ছিল, কিন্তু বেশিভাগ সময় আমরা তাকে গলা টিপে ধরতে চেয়েছিলাম"। ১৯৬৮ সালের মার্চের প্রথমদিকে, পিংক ফ্লয়েড, ব্যান্ডের ভবিষ্যত বিষয়ে আলোচনা করবার জন্য ব্যবসা অংশীদার জেনার এবং কিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করে; ব্যারেট দল ছেড়ে যেতে রাজি হয়।: (মাধ্যমিক উৎস); : (প্রাথমিক উৎস)।
জেনার ও কিং, ব্যারেটকে ব্যান্ডের সৃজনশীল প্রতিভা বলে বিশ্বাস করেন, এবং তার প্রতিনিধিত্ব করতে ও পিংক ফ্লয়েডের সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। মরিসন এরপর তার ব্যবসা এনইএমএস এন্টারপ্রাইজেসের নিকট বিক্রি করেন এবং ও'রোর্ক ব্যান্ডের ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপক হয়ে ওঠেন। ১৯৬৮ সালের ৬ এপ্রিল, ব্ল্যাকহিল ব্যারেটের আনুষ্ঠানিক প্রস্থান ঘোষণা করেন। ব্যারেটের প্রস্থানের পর, গান রচনা এবং সৃজনশীল নির্দেশনাদানের ভার অধিকাংশে ওয়াটার্সের উপর বর্তায়। প্রাথমিকভাবে, গিলমোর, দলটির ইউরোপিয় টেলিভিশনে উপস্থিতিতে ব্যারেটের কন্ঠে মুকাভিনয় করেন; যদিও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কিটে বাজানোর সময়, তারা ওয়াটার্স ও রাইটের "ইট উড বি সো নাইস" এবং "কেয়ারফুল উইথ দ্যাট এক্স, ইউজিন" গানের মাধ্যমে ব্যারেটের গানগুলি পরিহার করেছিলেন।
আ সসারফুল অব সিক্রেট্স (১৯৬৮)
থাম্ব|upright=.80|আ সসারফুল অব সিক্রেট্স-এর সাইকেডেলিক শিল্পকর্ম ছিল হিপনোসিস কর্তৃক নকশাকৃত পিংক ফ্লয়েডের বেশিরভাগ অ্যালবামের মধ্যে সর্বপ্রথম। |alt=বেশিরভাগ সবুজ নীলচে রেখা বা টান সম্বলিত একটি সাইকেডেলিক অ্যালবাম প্রচ্ছদ
১৯৬৮ সালে, পিংক ফ্লয়েড তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম আ সসারফুল অব সিক্রেট্স রেকর্ডের জন্য অ্যাবি রোড স্টুডিওসে ফিরে আসে। তাদের ডিস্কোগ্রাফির এই অ্যালবামটিতে ছিল ব্যারেটের চূড়ান্ত অবদান, "জাগব্যান্ড ব্লুস"। ওয়াটার্স তার স্বরচিত গানে উন্নয়ন ঘটাতে শুরু করে, "সেট দ্য কন্ট্রোল্স ফর দ্য হার্ট অব দ্য সান", "লেট দেয়ার বি মোর লাইট" এবং "কর্পোরাল ক্লেগ" গানসমূহ অবদান রাখার মাধ্যমে। রাইট রচনা করেন "সি-স" এবং "রিমেম্বার অ্যা ডে"। নরম্যান স্মিথ দলটিকে তাদের স্ব-উৎপাদিত সঙ্গীত করতে উৎসাহিত করেন, এবং তারা তাদের বাড়িতেই নতুন উপাদান ডেমো রেকর্ড করতো। অ্যাবি রোডে স্মিথের নির্দেশে, তারা নিজেদের শৈল্পিক দৃষ্টি উপলব্ধ করতে রেকর্ডিং স্টুডিওর ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করে। যদিও, স্মিথ তাদের সঙ্গীতে অপ্রত্যয়ী ছিল, এবং যখন মেইসন "রিমেম্বার অ্যা ডে" গানে তার ড্রাম অংশ পরিবেশনে সংগ্রাম করছিল, স্মিথ তখন তার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এগুচ্ছিলেন। রাইট এই সেশন সম্পর্কে স্মিথের মনোভাব স্মরণ করে উল্লেখ করেন, "নরম্যান দ্বিতীয় অ্যালবামের উপর ছেড়ে দিয়েছিল ... তিনি সব সময় এমনটাই ইঙ্গিত করতেন, 'আপনি বিশ মিনিট যাবৎ এই হাস্যকর শব্দ করতে পারেন না'"। কেনোনা ওয়াটার্স কিংবা মেইসন সঙ্গীত পড়তে পারতেন না, অ্যালবামের শিরোনাম ট্র্যাক কাঠামো চিত্রিত করতে, তারা তাদের নিজস্ব স্বরলিপি পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। গিলমোর পরবর্তীতে তাদের পদ্ধতি সম্বন্ধে বর্ণনা করেন, "একটি স্থাপত্য ডায়াগ্রামের মতো"।
জুন ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, অ্যালবামটি হিপনোসিসের স্টর্ম থরগের্সন এবং অউব্রে পাওয়েল কর্তৃক নকশাকৃত একটি সাইকেডেলিক প্রচ্ছদ উপস্থাপন করে। এটি পিংক ফ্লয়েডের বেশিরভাগ অ্যালবামের মধ্যে প্রথম, যেটি হিপনোসিস নকশা করে নি। এবং এটি দ্বিতীয় বারের মতো ইএমআই তাদের একটি দলকে অ্যালবামের মোড়ক পরিকল্পনার জন্য নকশাকারীদের চুক্তিবদ্ধ করতে অনুমতি দিয়েছিল। অ্যালবামটি ইউকে চার্টে ১১ সপ্তাহ অতিক্রম করে ৯ নম্বরে অবস্থান নিয়েছিল। রেকর্ড মিরর অ্যালবামটির সামগ্রিক অনুকূল পর্যালোচনা প্রকাশ করে, যদিও শ্রোতাদের "কোনো পার্টি ব্যাকগ্রাউন্ড সঙ্গীত হিসেবে" এটি না শোনার আহ্বান জানান। জন পিল শিরোনাম ট্র্যাকের সরাসরি পরিবেশনা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, "একটি ধর্মীয় অভিজ্ঞতার মত", যেখানে এনএমই গানটিকে "দীর্ঘ এবং বিরক্তিকর" ... [সাথে] "একঘেঁয়ে" হিসেবে বর্ণনা করেছে। অ্যালবামটির ইউকে মুক্তির পর দিন, পিংক ফ্লয়েড প্রথমবারের মতো বিনামূল্যে হাইড পার্ক কনসার্টে পরিবেশন করে। জুলাই ১৯৬৮ সালে, তারা দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে সফর করে। সফ্ট মেশিন ও দ্য হু ব্যান্ডের সাথে এটি পিংক ফ্লয়েডের প্রথম উল্লেখযোগ্য সফর হিসেবে বিবেচিত। সেই বছরের ডিসেম্বরে, তারা মুক্তি দেয় "পয়েন্ট মি অ্যাট দ্য স্কাই"; যেটি "সি এমিলি প্লে" পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত দুটি এককের তুলনায় খুব একটা সফল ছিলো না, যা ব্যান্ডের "মানি"-এর পর ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ একক।: (মাধ্যমিক উৎস); : (প্রাথমিক উৎস)।
উমাগুমা (১৯৬৯), অ্যাটম হার্ট মাদার (১৯৭০), এবং মেডল (১৯৭১)
থাম্ব|বাম|ওয়াটার্স লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিংক ফ্লয়েডের সঙ্গে পরিবেশন করছেন ১৯৭০ সালে।|alt=A monochrome image of Waters playing bass guitar. He has shoulder-length hair, black attire, and is standing in front of a microphone.
উমাগুমা মূলত তাদের পূর্বের অপ্রকাশিত কাজসমূহের প্রতিনিধিত্ব করেছে। ইএমআইয়ের হার্ভেস্ট লেবেলে একটি যুগল-এলপি (লং প্লে) হিসেবে অ্যালবামটি মুক্তি পেয়েছিল। এর প্রথম দুই সাইডে ম্যানচেস্টার কলেজ অব কমার্স এবং বার্মিংহামের মাদার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত সরাসরি পরিবেশনাগুলি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। দ্বিতীয় এলপিতে ব্যান্ডের প্রতি সদস্যের একটি করে একক গানের পরীক্ষামূলক অবদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে মুক্তির পর উমাগুমা ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে। অ্যালবামটি ইউকে চার্টে ২১ সপ্তাহ অতিক্রম করে ৫ নম্বর স্থানে অবস্থান নিয়েছিল।
১৯৭০ সালের অক্টোবরে, পিংক ফ্লয়েড অ্যাটম হার্ট মাদার মুক্তি দেয়। গানটির একটি প্রাথমিক সংস্করণ জানুয়ারিতে ফ্রান্সে প্রিমিয়ার হয়েছিল, কিন্তু রন গিসিন মতানৈক্যের ভিত্তিতে শব্দ সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানায়। গিসিন স্কোর উন্নতির জন্য খাটতে শুরু করেন, কিন্তু ব্যান্ডের ক্ষুদ্র সৃজনশীল ইনপুটের কারণে উৎপাদন কিছুটা অসুবিধাজনক ছিল। গীসিন, শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেন জন আলদিসের সাহায্যে, যিনি ছিলেন রেকর্ডে কয়ার পরিবেশনের জন্য নিযুক্ত পরিচালক। স্মিথ, নির্বাহী প্রযোজকের কৃতিত্ব অর্জন করেন, এবং অ্যালবামটি ব্যান্ডের ডিস্কোগ্রাফিতে তার চূড়ান্ত প্রাতিষ্ঠানিক অবদান হিসেবে চিহ্নিত হয়। গিলমোর বলেন এটি ছিলো "বলার পরিস্কার উপায় যে তিনি কিছুই ... করেন নি"। ওয়াটার্স অ্যাটম হার্ট মাদার-এর সমালোচনা করেছিলেন, দাবী জানান যে, "এটি ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হলে এবং কখনোই আর কাউকে শুনতে না হলে" তিনি তাই পছন্দ করতেন"। গিলমোরও অ্যালবামটি সম্পর্কে সমধারণা পোষণ করেন এবং একবার এটিকে, "আবর্জনার স্তুব" হিসাবে বর্ণনা করে বলেন: "আমি মনে করি আমরা সে সময়ে কিছুটা নিরূদ্যম ছিলাম।" পিংক ফ্লয়েডের প্রথম নম্বর ১ অ্যালবাম, অ্যাটম হার্ট মাদার ব্রিটেনে ব্যাপকভাবে সফল হয়েছিল, এবং ইউকে চার্টে ১৮ সপ্তাহ অতিক্রম করেছিল। এটি ১৯৭০ সালের ২৭ জুন, বাথ উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল।
পিংক ফ্লয়েড, ১৯৭০ সালের দিকে ব্যাপকভাবে আমেরিকা ও ইউরোপ জুড়ে সঙ্গীত সফর করে। ১৯৭১ সালে, পিংক ফ্লয়েড মেলোডি মেকার নামে পাঠকের একটি জনমত সমীক্ষায় দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছিল, এবং প্রথমবারের মত তারা মুনাফা তৈরি করতে সক্ষম হয়। মেইসন ও রাইট বাবা হন এবং লন্ডনে বাড়ি ক্রয় করেন। অন্যদিকে গিলমোর তখনো একা, যখন এসেক্সে একটি ১৯-শতকের খামারে স্থানান্তরিত হন তিনি। ওয়াটার্স ইজলিংটনে তার বাড়িতে বাগানের পেছনে একটি রূপান্তরিত টুল ছাউনির হোম রেকর্ডিং স্টুডিও স্থাপন করেন।
১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে, তাদের অ্যাটম হার্ট মাদার সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পর পিংক ফ্লয়েড নতুন উপাদান তৈরির জন্য কাজ শুরু করে। একটি কেন্দ্রীয় ভাবনাবিহীন তারা কয়েকটি অনুৎপাদিত পরীক্ষার চেষ্টা চালায়। প্রকৌশলী জন ল্যাকি বর্ণনা করেছেন, যে প্রায়ই এই সেশন বিকালে শুরু হয়ে পরদিন ভোরে সমাপ্ত হত, "যে সময়ে কিছুই পাওয়া [সম্পন্ন করা] যাচ্ছিল না। তখন তাদের লেবেল ব্যবস্থাপককে দুই বোতল ওয়াইন এবং দুইটি জয়েন্ট সহকারে দেখা যাওয়া ব্যতীত তখন তাদের কোনো রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল না"।: "দুয়েক বোতল ওয়াইন এবং দুই-একটি জয়েন্ট"; ব্যান্ডটি প্রাথমিক শব্দ বা গিটার রিফের ওপর কাজ করে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে। এছাড়াও তারা এয়ার স্টুডিওসে কয়েকদিন সময় ব্যয় করেছিল। গৃহস্থ বস্তুর বিভিন্ন সমন্বিত ব্যবহারে সঙ্গীত তৈরি করার প্রচেষ্টা চালায় তারা। একটি প্রকল্প যা দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন (১৯৭৩) এবং উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার (১৯৭৫) অ্যালবামে প্রতিয়মান।
থাম্ব|400px|১৯৭১ সালে পিংক ফ্লয়েড; ছবিটি মেডল অ্যালবামের ভেতরের প্রচ্ছদে ব্যবহৃত।
১৯৭১ সালের অক্টোবরে মুক্তিপ্রাপ্ত, "মেডল শুধুমাত্র দলের সঙ্গে বাস্তব কার্যকরী সংমিশ্রণের মাধ্যমে লিড গিটারবাদক ডেভিড গিলমোরের উত্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি এটি জোরাল এবং সঠিকভাবে দলটিকে পুনরায় সমৃদ্ধ করে তোলে", লিখেছেন রোলিং স্টোন-এর জ্যান-চার্লস কোস্টা।"মেডল শুধুমাত্র সীমিত গিটারবাদী হিসাবে ডেভিড গিলমোরের উত্থান নিশ্চিত করে না" দেখুন: ; : মেডল-এর মুক্তির তারিখ। এনএমই মেডল-কে "একটি অসাধারণ ভাল অ্যালবাম" মন্তব্য করে, "একোস" গাওয়ার জন্য তারা রীতিমত কঠোর পরিশ্রম করেছিল"। যদিও, মেলোডি মেকার'র মাইকেল ওয়াট্স এটিকে অনভিভূত হিসাবে আবিষ্কার করে বলেন, অ্যালবামটি "একটি অস্তিত্বহীন চলচ্চিত্রের সাউন্ডট্র্যাক", এবং পিংক ফ্লয়েডকে তাচ্ছিল্ল সুরে বলেন "অধিক শব্দ এবং উন্মত্ততা, যা কোনো কিছুই প্রকাশ করে না"। মেডল ১৯৬০-এর দশকের শেষে ব্যারেট-প্রভাবশালী দল এবং উদীয়মান পিংক ফ্লয়েডের মধ্যে একটি অর্ন্তবর্তীকালীন অ্যালবাম হিসাবে বিবেচিত। অ্যালবামটি ইউকে চার্টে ৮২ সপ্তাহ অতিক্রম করে ৩ নম্বরে অবস্থান নিয়েছিল।
দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন (১৯৭২)
left|upright=.70|থাম্ব|alt=Original album artwork featuring an almost black cover with a triangular prism in the midddle. A ray of white light enters the prism from the left and is refracted into colours as it comes out the right side.|দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন-এর কিংবদন্তি শিল্পকর্ম হিপনোসিস ও জর্জ হার্ডি কর্তৃক নকশাকৃত।
পিংক ফ্লয়েড ১৯৭২-এর মে থেকে ১৯৭৩-এর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন রেকর্ড করেছিল, অ্যাবি রোডে ইএমআই কর্মচারী প্রকৌশলী অ্যালান পারসন্স সহযোগে। শিরোনামটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিবর্তে বরং খ্যাপামিরর ইঙ্গিত।: ডার্ক সাইড-এর রেকর্ডিং সময়সূচী; : অ্যালান পারসনকে ডার্ক সাইড-এর প্রকৌশলী হিসেবে; : দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিবর্তে বরং খ্যাপামিরর ইঙ্গিত। যুক্তরাজ্য, জাপান, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ সফরের সময় ব্যান্ডটি ডার্ক সাইড-এর উপাদান রচনা এবং পরিমার্জিত করেছিল। প্রযোজক ক্রিস থমাস পারসন্সকে সহায়তা করেন।: (মাধ্যমিক উৎস); : (প্রাথমিক উৎস)। অ্যালবাম মোড়কিকরণনের নকশা করেছিল হিপনোসিস, যেটি জর্জ হার্ডির কিংবদন্তি প্রতিসরণধর্মী প্রিজম নকশা অন্তর্ভুক্ত। থরগের্সনের ডার্ক সাইড অ্যালবাম প্রচ্ছদে একতার প্রতিনিধিত্বকারী সাদা আলোর একটি রশ্মি একটি প্রিজমের ভেতর অতিবাহিত হচ্ছে, যা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে। ফলপ্রসুত রঙিন আলোর প্রতিসৃত রশ্মি একতা বিচ্ছুরিত হয়ে পড়ছে বলে প্রতীয়মান, অর্থাৎ এখানে একতা অনুপস্থিত। ওয়াটারস অ্যালবামের গানের একমাত্র লেখক।
থাম্ব|right|পিংক ফ্লয়েড ১৯৭৩ সালে তাদের প্রথম মার্কিন সফরে পরিবেশন করছে, দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন মুক্তির কিছুদিন পূর্বে।
মার্চ ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, এই এলপি ইউকে এবং সমগ্র ইউরোপ চার্ট জুড়ে তাৎক্ষণিক সাফল্য লাভ করে, এবং সমালোচকদের কাছ থেকে উৎসাহী প্রতিক্রিয়া অর্জন করে। রাইট ব্যতীত পিংক ফ্লয়েডের সকল সদস্য দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন-এর সংবাদ লিপি বর্জন করেছিল, কারণ সে সময় পর্যন্ত তাদের একটি কোয়াড্রোফোনিক মিশ্রণ সম্পন্ন হয় নি বলে, এবং নিম্ন-মানের স্টেরিও পিএ সিস্টেমের মাধ্যমে অ্যালবামের উপস্থাপন অপর্যাপ্ত ছিল বলে তারা মনে করেছিল। মেলোডি মেকারর রায় হোলিংওর্থ অ্যালবামটির প্রথম অংশকে "একচেটিয়া বিভ্রান্তি ... [এবং] অনুসরণ করা জটিল" হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তবে দ্বিতীয অংশের প্রশংসা করে লিখেছেন: "গান, শব্দ ... [এবং] ছন্দ একেবারে নিরেট ... স্যাক্সফোন যেনো বাতাসে আঘাত করেছে, [আর] ব্যান্ডটি- রক অ্যান্ড রোল"। রোলিং স্টোনর লয়েড গ্রসম্যান এটিকে বর্ণনা করেছে, "এটি একটি বিন্যাস্ত এবং ধারণাগত সমৃদ্ধ অ্যালবাম যেটি শুধুমাত্র আমন্ত্রণই জানায় না, বরং এর সঙ্গে একাত্ম হতেই দাবী জানায়।"
১৯৭৩ সালের মার্চ জুড়ে, দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন পিংক ফ্লয়েডের মার্কিন সফরের অংশ হয়ে ওঠে। এটি সর্বকালের সর্বোচ্চ বাণিজ্যিকভাবে সফল রক অ্যালবামের একটি; চৌদ্দ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিলবোর্ড শীর্ষ এলপি ও টেপ চার্টে তালিকাধীন থেকে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪৫ মিলিয়ন কপি বিক্রির সাফল্য অর্জনের মধ্য দিয়ে ইউএস চার্টে ১ নম্বরে অবস্থান নিয়েছিল।বিলবোর্ড চার্ট ইতিহাসের জন্য দেখুন: ; বিক্রয় পরিসংখ্যান দেখতে: ; : একটি ইউএস নাম্বার ১। ব্রিটেনে, অ্যালবামটি ইউকে চার্টে ৩৬৪ সপ্তাহ অতিক্রম করে ২ নম্বরে অবস্থান নিয়েছিল। ডার্ক সাইড বিশ্বের তৃতীয় সেরা-বিক্রিত অ্যালবাম, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ-বিক্রিত অ্যালবামে তালিকায় একুশতম স্থানে অবস্থান করে নেয়। অ্যালবামটির সাফল্য পিংক ফ্লয়ডের সদস্যদের জন্য বিপুল সম্পদ নিয়ে আসে। ওয়াটার্স এবং রাইট বড় কান্ট্রি হাউস ক্রয় করেছিলেন অন্যদিকে মেইসন হয়ে উঠেছিলেন দামি গাড়ি সংগ্রাহক। মার্কিন রেকর্ড কোম্পানি, ক্যাপিটল রেকর্ডসের সঙ্গে তাদের মোহমুক্তির পর, পিংক ফ্লয়েড এবং ও'রুরকে কলাম্বিয়া রেকর্ডসের সঙ্গে নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন, যারা তাদের $১,০০০,০০০ (US$ ডলার) ডলারের অগ্রিম রেকর্ড সম্মানী প্রদান করে। ইউরোপে, তারা হার্ভেস্ট রেকর্ডস কর্তৃক প্রতিনিধিত্ব শুরু করে।
উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার (১৯৭৫)
ডান|থাম্ব|alt=Bordering an asphalt road, receding into the distance, are two rows of large beige coloured buildings. Another beige building blocks the horizon, above which mountains are visible in the distance. The sky is blue with no clouds. Several cars are parked outside the buildings. Near the photographer, at a large open entrance to one building, the word STOP has been painted in white on the road. Next to it, a fire hydrant is visible, in front of which the words FIRE LANE are painted on the road.|ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়ার্নার ব্রস. স্টুডিও কমপ্লেক্সের অংশ, যেখানে উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার-এর প্রচ্ছদের আলোকচিত্র গৃহীত হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে ডার্ক সাইড পরিবেশনার সফর শেষে, ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি পিংক ফ্লয়েড স্টুডিওতে ফিরে আসে তাদের নবম স্টুডিও অ্যালবাম উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার-এর কাজ শুরু করতে। পারসন্স তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, মূলত তার অ্যালান পারসন্স প্রকল্প সফল হয়ে উঠতে শুরু করায়। তাই ব্যান্ডটি ব্রায়ান হ্যামফ্রিসের স্মরণাপন্ন হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে, নতুন উপাদান রচনা তাদের পক্ষে জটিল হয়ে উঠেছিল; দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন-এর সাফল্য পিংক ফ্লয়ডকে কিছুটা শারীরিক ও মানসিকভাবে নিষ্কশিত করে। রাইট পরবর্তীতে এই সেশনটিকে প্রাথমিকভাবে "একটি কঠিন সময়ের মধ্যে পতন" বলে বর্ণনা করেছিলেন, এবং ওয়াটার্স নিজেদেরকে "অসরল" মন্তব্য করেছিলেন। গিলমোর ব্যান্ডের বিদ্যমান উপাদান উন্নয়নে অধিক আগ্রহী ছিলেন। অসমর্থিত বিয়ে মেইসনকে সাধারণ অসুবিধার মধ্যে রেখে তার মধ্যে উদাসীন অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল, উভয় কারণের ফলে তার ড্রাম পরচিালনার ক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটেছিল।
সৃজনশীলতার অভাব সত্ত্বেও, কয়েক সপ্তাহ পরে ওয়াটার্স দলের কাছে একটি নতুন ধারণার দৃষ্টিগোচর করতে শুরু করে। ১৯৭৪ সালের মধ্যে, পিংক ফ্লয়েড তিনটি মূল রচনা সম্পন্ন করে, এবং তাদের ইউরোপে কনসার্টের একটি ধারাবাহিকে সেগুলো পরিবেশন করে। এই রচনাগুলি একটি নতুন অ্যালবাম শুরুর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে, যার উদ্বোধনী চার-নোটের গিটার ফ্রেস, গিলমোর কর্তৃক বিশুদ্ধরূপে রচিত হয়েছিল, যা ওয়াটার্সকে বারেটের স্মরণ করিয়ে দেয়।: এই মোটিফ ওয়াটার্সকে ব্যারেটের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়; : গিলমোর দুর্ঘটনাবশত সম্পূর্ণরূপে এই মোটিফ রচনা করেন। গানগুলি তাদের প্রাক্তন ব্যান্ড সদস্যের উত্থান ও পতনের একটি উপযুক্ত সারসংক্ষেপ প্রদান করে। ওয়াটার্স মন্তব্য করেছেন: "কারণ আমি যতোটা সম্ভব গূঢ়ভাবে সিডের অন্তর্ধান সম্পর্কে অনির্দিষ্ট, অনিবার্য বিষাদ তুলে আনতে চেয়েছিলাম ... [যা] আমি অনুভব করেছি।"
যদিও পিংক ফ্লয়েড যখন অ্যালবামে কাজ করছিল, তখন স্টুডিওতে একবার ব্যারেটের অপ্রত্যাশিত আগমন ঘটে। থরগের্সন সে ঘটনা স্মরণ করে বলেন, "ব্যারেট সেখানে বসেছিল এবং স্বল্প আলাপ করেছিল, তবে সে সত্যিই যেন সেখানে ছিল না।" তার চেহারায় উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন ঘটেছিল, এর মাত্রা এতো অধিক ছিল যে ব্যান্ডটি শুরুতে তাকে চিনতে ব্যার্থ হয়। ওয়াটার্স এই অভিজ্ঞতায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিল বলে জানা যায়। অধিকাংশ উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার ৫ জুলাই ১৯৭৫ সালে, নিবওর্থে একটি মুক্ত-মঞ্চ সঙ্গীত উৎসবে পরিবেশিত হয়। সেপ্টেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবামটি ইউকে এবং ইউএস চার্টে ১ নম্বরে অবস্থান নিয়েছিল।
অ্যানিম্যাল্স (১৯৭৫)
বাম|থাম্ব|ব্যাটারসি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অ্যানিম্যাল্স প্রচ্ছদ চিত্রে বৈশিষ্ঠায়িত হয়েছে।|alt=Colour picture of a power station factory with four tall white chimneys. The image was taken on a sunny day. The sky is blue and the building is brown.
১৯৭৫ সালে, পিংক ফ্লয়েড ইসিলিংটনে ৩৫ ব্রিটানিয়া রো একটি বহৃতলবিশিষ্ঠ গির্জা হলের সমষ্টি ক্রয় করে এবং ভবনটিকে একটি রেকর্ডিং স্টুডিও ও সংরক্ষণাগারে রূপান্তর করে। ১৯৭৬ সালে, তারা তাদের দশম অ্যালবাম অ্যানিম্যাল্স-এর রেকর্ড সমাপ্ত করে, নতুন ২৪-ট্যাক স্টুডিওতে। অ্যানিম্যাল্স-এর ধারণাটি মূলত ওয়াটার্সের সঙ্গে সম্ভূত হয়েছিল, কিছুটা জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম (১৯৪৫) রাজনৈতিক কাহিনির ওপর ভিত্তি করে। অ্যালবামের গানগুলি কুকুর, শূকর ও ভেড়া হিসাবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির বর্ণনা করেছে। হিপনোসিস অ্যানিম্যাল্স-এর মোড়কিকরণের কৃতিত্ব অর্জন করে; যদিও, ওয়াটার্স চূড়ান্ত ধারণার নকশা করেছিলেন, প্রবীণ ব্যাটারসি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ছবি নির্বাচন করেন, যার ওপর তারা একটি উড়ন্ত শূকরের ছবি স্থাপন করেছিল।: (মাধ্যমিক উৎস); : (প্রাথমিক উৎস)।
ব্যান্ড সদস্যদের মধ্যে রয়্যালটি ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্বের উৎস ছিল, যারা প্রতি-গানের ভিত্তিতে রয়্যালটি অর্জন করতো। যদিও, গিলমোর "ডগ্স" গানের জন্য অধিকাংশে দায়বদ্ধ ছিল, যা অ্যালবামের প্রথম দিকে প্রায় সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে। যদিও গিলমোরের প্রাপ্য ওয়াটার্সের চাইতে কম ছিল, যিনি অ্যালবামের বিপরীত পাশে তুলনামূলক ছোটো অংশের "পিগ্স অন দ্য উইং" গানে অবদান রেখেছেন। রাইট মন্তব্য করেন: "এটা আংশিকভাবে আমারই ভুল ছিল যে আমি নিজের উপাদানের জন্য জোড় খাটাই নি ... কিন্তু ডেভের (ডেভিড) প্রস্তাব রাখার কিছু থাকায় সে তা করেছিল, এবং শুধুমাত্র সেখানে দুইটি জিনিসের ব্যবস্থা সে করতে পেরেছিল।" মেইসন স্মরণ করে জানান: "সম্পূর্ণ ধারণা রজারের ছিল, কিন্তু তিনি সত্যিই ডেভকে (ডেভিড) অনেকটা অবমূল্যায়ন করেছিলেন, এবং ভেবেচিন্তে তাকে হতাশ করে তুলেছিলেন।" গিলমোর, তার প্রথম সন্তানের জন্মে বিক্ষিপ্তচিত্ত থাকায় অ্যালবামে সামান্য অবদান রেখেছিলেন। একইভাবে, মেইসন, রাইট কেউই অ্যানিম্যাল্স-এ ব্যাপক অবদান রাখেন নি। রাইট সে সময়ে বৈবাহিক জটিলতায় ভুগছিলেন, এবং এছাড়াও ওয়াটার্সের সঙ্গে তার সম্পর্কেরও ছিল দুর্দশা অবস্থা। অ্যানিম্যাল্স পিংক ফ্লয়েডের প্রথম অ্যালবাম যেখানে রাইটের একটি রচনার কৃতিত্ব অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি, পরবর্তীতে তিনি এ-বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন: "অ্যানিম্যাল্স... নির্মাণ করবার জন্য উপভোগ্য রেকর্ড ছিল না ... যখন রজার সত্যিই বিশ্বাস করতে শুরু করছিলেন যে তিনিই ব্যান্ডের একমাত্র লেখক ... এটি ছিল শুধুমাত্র তার কারণেই যে [আমরা] এখনও চালিয়ে যাচ্ছি ... যখন তিনি তার অহংবোধ চর্চা শুরু করেন, তার শুধু আমারই সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে।"
১৯৭৭ সালের জানুযারিতে মুক্তিপ্রাপ্ত, অ্যালবামটি ইউকে চার্টে ২ নম্বরে এবং ইউএস চার্টে ৩ নম্বরে অবস্থান নিয়েছিল। এনএমই অ্যালবামটির বর্ণনায় উল্লেখ করেছে, "সবচেয়ে চরম, নিরবধি, মর্মভেদী এবং সঙ্গীতের নিতান্ত প্রতিমাচূর্ণকারী", এবং মেলোডি মেকারর কার্ল ডালাস বলেছেন "এটি এমন এক মাধ্যমের মধ্যে বাস্তবতার অস্বাচ্ছন্দ্য স্বাদ যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরিণত হয়ে ক্রমেই ক্রিয়াশীল থাকবে"।
পিংক ফ্লয়েড তাদের "ইন দ্য ফ্লেশ" সফরের সময় অ্যালবামের অনেক উপাদান পরিবেশন করেছে। এটি ছিল কোনো বড় স্টেডিয়ামে তাদের বাজানোর প্রথম অভিজ্ঞতা, যার আকারে প্রায়ই তাদের অস্বস্তি হয়েছিল। ওয়াটার্স প্রতিটি ভেন্যুতে একা পৌঁছাতে শুরু করলেন, পরিবেশনের পর অবিলম্বে আবার প্রস্থান করতেন। এক অনুষ্ঠান থেকে রাইট ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ব্যান্ড ছাড়ার হুমকি দেন। মন্ট্রিয়ল অলিম্পিক স্টেডিয়ামে, শ্রোতাদের সামনের সারিতে উচ্চণ্ড ও উৎসাহী ভক্তদের এক দল ওয়াটার্সকে এত অতিষ্ঠ করেছিল যে তিনি তাদের একজনের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। সফর শেষে গিলমোরের জন্য একটি নিম্ন পয়েন্ট চিহ্নিত হয়েছিল, অনেকেই মনে করেছে যে ব্যান্ডটি তারা কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হলেও, নিজেদের জন্য কিছুই বাকি রাখে নি।
১৯৭৮–১৯৮৫: ওয়াটার্স-নেতৃত্বাধীন যুগ
দ্য ওয়াল (১৯৭৮)
১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে, অবহেলিত বিনিয়োগের ফলে আর্থিক সংকটে আবর্তীত হওয়ায়, ওয়াটার্স তাদের পরবর্তী অ্যালবামের জন্য দুটি মূল ধারণা দলের কাছে উপস্থাপন করেন। প্রথমটি ছিল ৯০-মিনিটের একটি ডেমো যার কাজের শিরোনাম ব্রিক্স ইন দ্য ওয়াল, এবং অন্যটি পরবর্তীতে ওয়াটার্সের প্রথম একক অ্যালবাম দ্য প্রস অ্যান্ড কন্স অব হিচ হাইকিং-এ পরিণত হতে দেখা যায়। যদিও মেইসন ও গিলমোর উভয়ই প্রথমে সচেতন ছিলেন, এবং তারা প্রথম ধারণাটিই তাদের আসন্ন অ্যালবামের জন্য নির্বাচন করেন। বব এজরিন অ্যালবামটির সহ-প্রযোজক, যিনি এই নতুন অ্যালবামের জন্য চল্লিশ-পাতার চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন। এজরিন গল্পটি রচনা করেছেন কেন্দ্রীয় চরিত্র পিংক-এর ওপর ভিত্তি করে— এটি একটি ধাঁচ চরিত্র যা ওয়াটার্সের শৈশব অভিজ্ঞতা থেকে অধিকাংশে অনুপ্রাণিত, যেখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার বাবার মৃত্যু। এই প্রথম রুপকশোভিত ইট আরও সমস্যার নেতৃত্ব দিতে থাকে; পিংক মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে এবং সঙ্গীত শিল্পের প্রতি বিষণ্ণ বোধ করে, অবশেষে একটি মেগালোমিনিয়াক অবস্থার মধ্যে তার রূপান্তর ঘটতে থাকে, যা আরও উন্নতরূপে সিড ব্যারেটের পতনের সঙ্গে আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত। অ্যালবামের শেষে, ক্রমবর্ধমান ফ্যাসিবাদী শ্রোতা হিসেবে দেখানো হয় পিংক প্রাচীরের তল বিদীর্ণ করে দেয়, আরও একবার একজন নিয়মিত এবং যত্নশীল ব্যক্তি হয়ে উঠতে।
দ্য ওয়াল রেকর্ডিংয়ের সময়, অ্যালবামে রাইটের উল্লেখযোগ্য অবদানের অভাবের কারণে ওয়াটার্স, গিলমোর এবং মেইসন ক্রমশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। গিলমোর বলেন যে রাইট "অ্যালবামে কোনো মূল্যের বিশেষে অবদান রাখে নি—সে রেখেছে অতি, অতি সামান্য" এবং এই কারণেই তিনি "বাদ পড়েছিলেন"।: এ কারণেই রাইট "বাদ পড়েছিলেন"; : রাইটের, "কোন মূল্যের অবদানই ছিল না"। মেইসনের মতানুযায়ী, "রিকের অবদান দ্রুত শুরু হয়, এবং কিছু না করা ছাড়াই সেশনে বসে থাকত, শুধু 'একজন প্রযোজক হওয়া ছাড়া'।" ওয়াটার্স মন্তব্য করেছেন: "[রাইট] রেকর্ড তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিল না ... [এবং] এটি সকলের দ্বারা সম্মত ছিল ... [সে] হয়তো একটি দীর্ঘ সংগ্রামী হতে পরতো বা [সে] অ্যালবামটি সম্পন্ন করতে ... সম্মত হতে পারতো, [তার] সম্পূর্ণ ভাগ রাখা হতো ... কিন্তু শেষে [তিনি চাইলেন] শান্তভাবে চলে যেতে। রিক এ-বিষয়ে একমত হয়েছিলেন।"
অ্যালবামটি "অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্য ওয়াল (অংশ ২)" দ্বারা সমর্থিত, এবং "মানি" গানের পর এটি পিংক ফ্লয়েডের প্রথম একক গান যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে চার্টে শীর্ষ স্থানে অবস্থান নিয়েছিল।: "অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্য ওয়াল (অংশ ২)"-এর জন্য শীর্ষ ইউএস চার্টে অবস্থান; : "অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্য ওয়াল (অংশ ২)"-এর জন্য শীর্ষ ইউকে চার্টে অবস্থান। ১৯৭৯ সালের ৩০ নভেম্বর অ্যারমাবটির আনুষ্ঠানিক মুক্তির পর, দ্য ওয়াল ১৫ সপ্তাহ ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ড চার্টে শীর্ষ অবস্থানে, এবং যুক্তরাজ্যে চার্টে তৃতীয় অবস্থানে ছিল।: দ্য ওয়াল-এর জন্য শীর্ষ ইউকে চার্ট অবস্থান; : দ্য ওয়াল-এর জন্য শীর্ষ ইউএস চার্ট অবস্থান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৩ মিলিয়ন প্রত্যয়িত সংখ্যক কপি বিক্রির মাধ্যমে দ্য ওয়াল আরআইএএ-এর সর্বকালের সেরা ১০০টি অ্যালবামের তালিকায় তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছিল। অ্যালবামের প্রচ্ছদ ছিলো তাদের ইতোপূর্বের পরিমিত নকশার মধ্যে একটি, যেটি শুধুমাত্র একটি সাদা ইটের প্রাচীর এবং তাতে কোনও ট্রেডমার্ক বা ব্যান্ডের নামও নেই। এটি ব্যান্ডটির দ্য পাইপার অ্যাট দ্য গেটস্ অব ডউন অ্যালবামের পর আরেকটি অ্যালবাম প্রচ্ছদ যেটি হিপনোসিস নকশা করে নি।
জেরাল্ড স্কার্ফ পরবর্তী সরাসরি অনুষ্ঠান, দ্য ওয়াল সফরের জন্য অ্যানিমেশনের একটি ধারাবাহিক তৈরি করেছিলেন। তিনি "মা", "প্রাক্তন স্ত্রী" এবং "বিদ্যালয় শিক্ষক" সহ কাহিনি থেকে বর্ণিত চরিত্রের প্রতিনিধিত্বকারী বৃহৎ পুতুল নির্মাণ করেছিলেন। পিংক ফ্লয়েড অ্যালবামটির জন্য তাদের পরিবেশনার সময় পুতুলগুলির ব্যবহার করে। ব্যান্ডের মধ্যেকার সম্পর্ক সেখানে সব সময় কম ছিল; তাদের চারটি উইনেবেগোস একটি বৃত্তে পার্ককৃত ছিল, আর সেগুলোর দরজা কেন্দ্র থেকে দূরে মুখোমুখি অবস্থায় ছিল। ওয়াটার্স ভেন্যুতে পৌঁছানোর জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন ও ব্যান্ডের বাকিদের থেকে আলাদা হোটেলে অবস্থান করেন। রাইট একমাত্র শিল্পী হিসাবে মুনাফা লাভ করেন এবং বাকি চারজনের মধ্যে তিনি একমাত্র মুনাফা পান, যেখানে এই উদ্যোগটি প্রায় $৬০০,০০০ ডলার () হারায়।
দ্য ওয়াল ধারণাটি পিংক ফ্লয়েড – দ্য ওয়াল নামে একটি চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছিল। যেটির মূল ধারণা ছিল সরাসরি কনসার্টের ফুটেজ এবং অ্যানিমেটেড দৃশ্যাবলীর সমন্বয়ে তৈরি। তবে, কনসার্টের ফুটেজ চলচ্চিত্রে ব্যবহারের জন্য অবাস্তব হিসাবে প্রমাণিত হয়। অ্যালান পার্কার সরাসরি সম্মত হন এবং একটি ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেন। যেখানে অ্যানিমেটেড ক্রমগুলি থাকবে, কিন্তু দৃশ্যাবলী কোন প্রকার সংলাপ ছাড়াই পেশাদার অভিনেতাদের দ্বারা অভিনীত হবে। ওয়াটার্সের স্ক্রিন পরীক্ষা করা হলেও দ্রুত তাকে বাদ দেয়া হয় এবং তারা বব গেল্ডফকে পিংক চরিত্রের জন্য চূড়ান্ত করেন। গেল্ডফ প্রাথমিকভাবে এটি উড়িয়ে দিয়েছিলেন, এবং দ্য ওয়াল-এর কাহিনিকে "বোললকস" হিসাবে নিন্দা করেছিলেন। অবশেষে একটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণের প্রত্যাশায় এবং তার কাজের জন্য একটি উচ্চ পারিশ্রমিক পাবার কারণে গেল্ডফ কাজ করতে সম্মত হন। ১৯৮২ সালের মে মাসে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনীর পর, পিংক ফ্লয়েড – দ্য ওয়াল জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে মুক্তি পায়।
দ্য ফাইনাল কাট (১৯৮২)
১৯৮২ সালে, ওয়াটার্স স্পেয়ার ব্রিক্স কাজের শিরোনামের সাথে একটি নতুন বাদ্যযন্ত্র প্রকল্পের প্রস্তাব জানায়, যা মূলত পিংক ফ্লয়েড – দ্য ওয়ালের সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম হিসাবে বিবেচিত। ফকল্যান্ডস যুদ্ধের সূত্রপাতের পর ওয়াটার্স দিক পরিবর্তন করে নতুন উপাদান রচনা শুরু করেন। তিনি দেখেন যে, ফকল্যাণ্ডস আক্রমণে মার্গারেট থ্যাচারের প্রতিক্রিয়া মূলত উগ্র দেশপ্রেম ও অপ্রয়োজনীয়। তিনি অ্যালবামটি তার মৃত পিতাকে উৎসর্গ করেছিলেন। ওয়াটার্স এবং গিলমোরের মধ্যে তাৎক্ষণিক বিতর্ক দেখা দেয়, গিলমোর মনে করেন দ্য ওয়াল অ্যালবামের জন্য গৃহীত পুনরাবৃত্তি গানগুলির পরিবর্তে সমস্ত নতুন উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ওয়াটার্স অনুভব করেছিলেন যে গিলমোর ব্যান্ডটির গীতিকার হিসাবে সামান্য অবদান রেখেছিলেন। দ্য ওয়াল-এর অর্কেস্ট্রাল ব্যবস্থাপনার একজন অবদানকারী মাইকেল কামেন দুইজনের মধ্যকার মধ্যস্থতা করেন এবং ঐতিহ্যগতভাবে অনুপস্থিত রাইটের ভূমিকা পালন করেন। ব্যান্ডটির মধ্যে চিন্তার বৃদ্ধি ঘটে। ওয়াটার্স এবং গিলমোর স্বাধীনভাবে কাজ করছেন; যদিও, গিলমোর স্ট্রেন অনুভব করতে শুরু করেছিলেন, মাঝে মাঝে তার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে। চূড়ান্ত সংঘর্ষের পর, গিলমোরের নাম অ্যালবামের কৃতিত্ব তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়, যেহেতু ওয়াটার্সের মনে হয়েছিলো যে গীতিকবিতায় গিলমোরের অবদানের ঘাটতি ছিল।: (মাধ্যমিক উৎস); : (প্রাথমিক উৎস)
যদিও মেইসনের সাঙ্গীতিক অবদান স্বল্প ছিল, তিনি অ্যালবামে ব্যবহারযোগ্য একটি পরীক্ষামূলক হোলোফোনিক পদ্ধতি রেকর্ডিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সে সময়ে মেইসনের বৈবাহিক সমস্যা চলছিলো। এবার পিংক ফ্লয়েড প্রচ্ছদ নকশার জন্য থোরজ্রেসনের সরণাপন্ন হন নি। ওয়াটার্স নিজেই প্রচ্ছদ নকশার পরিকল্পনা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চে মুক্তির পর, দ্য ফাইনাল কাট সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে এক নম্বর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চার্টে ছয় নম্বর স্থানে অবস্থান নেয়।: দ্য ফাইনাল কাট-এর জন্য শীর্ষ মার্কিন চার্ট অবস্থান; : দ্য ফাইনাল কাট-এর জন্য শীর্ষ মার্কিন চার্ট অবস্থান। ওয়াটার্স সমস্ত গান রচনার পাশাপাশি অ্যালবামের সমস্ত সঙ্গীত রচনা করেছিলেন।: (মাধ্যমিক উৎস); : (প্রাথমিক উৎস)। গিলমোরের অ্যালবামের জন্য কোনও উপাদান সে সময়ে প্রস্তুত না থাকায় তিনি ওয়াটার্সকে কিছু গান লিখতে না পারা পর্যন্ত রেকর্ডিং বিলম্ব করতে বলেছিলেন, কিন্তু ওয়াটার্স তা করতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীতে গিলমোর মন্তব্য করেছেন: "অলসতার জন্য আমি অবশ্যই দোষী ছিলাম ... কিন্তু দ্য ফাইনাল কাট-এ কিছু খসরা ট্র্যাক রাখতে চাওয়া তার [ওয়াটার্স] উচিত হয় নি।" রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন অ্যালবামটিকে পাঁচ তারকা প্রদান করে। যেখানে কার্ট লোডার এটি "একটি অসাধারণ অর্জন ... আর্ট রকের চরম মাষ্টারপিস" মন্তব্য করেন। লোডার দ্য ফাইনাল কাট-কে "মূলত রজার ওয়াটার্সের একক অ্যালবাম" হিসাবে বিবেচনা করেন।
ওয়াটার্সের প্রস্থান এবং আইনি যুদ্ধ
১৯৮৪ সালে গিলমোর তার দ্বিতীয় অ্যালবাম, অ্যাবাউট ফেইস রেকর্ড করেন এবং জন লেননের হত্যাকাণ্ড থেকে ওয়াটার্সের সাথে তার সম্পর্ক পর্যন্ত, বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তার অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য এটি ব্যবহার করেছিলেন। পরে বলেছিলেন যে, পিংক ফ্লয়েড থেকে নিজের দূরত্ব তৈরি করতে অ্যালবামটি ব্যবহার করেছেন তিনি। খুব শীঘ্রই, ওয়াটার্স তার প্রথম একক অ্যালবাম দ্য প্রস অ্যান্ড কন্স অব হিচ হাইকিং সফর শুরু করেন। রাইট ডেভ হ্যারিসের সাথে জী গঠন করেছিলেন এবং আইডেন্টিটি অ্যালবাম রেকর্ড করেছিলেন, যা মুক্তির পরে প্রায় অপরিচিতই ছিল। ১৯৮৫ সালে আগস্টে মেইসন তার দ্বিতীয় একক প্রকাশ প্রোফাইল্স প্রকাশ করেছিলেন।
দ্য প্রস অ্যান্ড কন্স অব হিচ হাইকিং অ্যালবাম মুক্তির পর, ওয়াটার্স প্রকাশ্যে জোর দিয়ে বলেন যে পিংক ফ্লয়েড আর পুনর্মিলন করবে না। তিনি ভবিষ্যত রয়্যালটি পারিশ্রমিক নিষ্পত্তি বিষয়ে আলোচনা করতে 'ও'রউরকের সাথে যোগাযোগ করেন। 'ও'রউরকে, মেইসন এবং গিলমোরকে বিষয়টি অবহিত করা আবশ্যক মনে করেন, ফলে ওয়াটার্স রাগ হন এবং ব্যান্ড ব্যবস্থাপক হিসাবে তাকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন। তিনি 'ও'রউরকের সাথে তার ব্যবস্থাপনা চুক্তি বাতিল করেন এবং পিটার রুজকে তার বিষয়গুলি পরিচালনা করার জন্য নিযুক্ত করেন। ওয়াটার্স ইএমআই এবং কলাম্বিয়াকে তার ব্যান্ড ত্যাগ করার ঘোষণা দিতে লিখেছিলেন, এবং তাদেরকে তাদের চুক্তিবদ্ধ বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত করার জন্য বলেছিলেন। গিলমোর বিশ্বাস করেন যে ওয়াটার্স পিংক ফ্লয়েডের ধ্বংসের আগেই দ্রুত চলে গেছেন। ওয়াটার্স পরবর্তীতে বলেছিলেন, নতুন অ্যালবাম তৈরি না করে পিংক ফ্লয়েড চুক্তির লঙ্ঘন করবে—যার ফলে রয়্যালটি পারিশ্রমিক স্থগিত করা হবে—এবং ব্যান্ডের অন্য সদস্যরা দলের কাছ থেকে তাকে মামলা করার হুমকি দিয়ে বাধ্য করেছিল। এরপর তিনি ব্যান্ডের নিষ্পত্তি ঘটাতে এবং পিংক ফ্লয়েড নাম ব্যবহার বন্ধ করার প্রচেষ্টায় উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন, পিংক ফ্লয়েডকে "সৃজনশীলভাবে একটি ব্যয়বহুল শক্তি ঘোষণা করে।": 'ও'রউরকে এই নিষ্পত্তির মধ্যে জড়িত; : "এক ব্যয়বহুল শক্তি"। যখন ওয়াটার্সের আইনজীবী আবিষ্কার করেন যে দলের অংশীদারত্বটি কখনই আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয় নি, তখন তিনি দলের নামের ব্যবহারে কর্তৃত্ববলে নিযেধাজ্ঞা (ভেটো) পাওয়ার চেষ্টা করতে উচ্চ অদালতে ফিরে আসেন। গিলমোর একটি সাবধানবাণীযুক্ত প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানান যে পিংক ফ্লয়েড বিদ্যমান থাকবে। গিলমোর পরে দ্য সানডে টাইমসকে বলেছিলেন: "রজার একজন গর্তের কুকুর এবং আমি তার সঙ্গে লড়তে যাচ্ছি।" ২০১৩ সালে ওয়াটার্স বলেছিলেন যে তিনি পিংক ফ্লয়েড নামের ব্যান্ড সদস্যের বাণিজ্যিক মূল্যের স্বাধীনতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন এবং অন্যদের দ্বারা এর ব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
১৯৮৫–১৯৯৪: গিলমোর-নেতৃত্বাধীন যুগ
অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন (১৯৮৭)
বাম|থাম্ব|অ্যাস্টোরিয়া রেকর্ডিং স্টুডিও|alt=A colour image Gilmour's houseboat and studio the Astoria, anchored in a river. The background is green forest and it is a bright sunny day.
১৯৮৬ সালে, ওয়াটার্স ব্যতীত পিংক ফ্লয়েডের প্রথম অ্যালবাম অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন-এর জন্য গিলমোর সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়োগ করতে শুরু করেছিলেন। রাইটের ব্যান্ডে পুনরায় প্রবেশের আইনি বাধা ছিল, কিন্তু হ্যাম্পস্টেডের একটি বৈঠকের পর, পিংক ফ্লয়েড রাইটকে আসন্ন অধিবেশনগুলিতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানায়। গিলমোর পরে বলেছিলেন যে রাইটের উপস্থিতি "তাদের আইনি ও সাঙ্গীতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলবে", এবং পিংক ফ্লয়েড সাপ্তাহিক $১১,০০০ ডলারের বিনিময়ে রাইটকে নিযুক্ত করেছিল।: পিংক ফ্লয়েড সাপ্তাহিক $১১,০০০ ডলারের বিনিময়ে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে রাইটকে নিযুক্ত করে; : "যা আমাদের আইনগতভাবে এবং সাঙ্গীতিকভাবে শক্তিশালী করবে"। রেকর্ডিং সেশন টেম্স নদীর পাড়ে গিলমোরের অ্যাস্টোরিয়া হাউসবোটে রেকর্ডিং শুরু হয়। গিলমোর এরিক স্টুয়ার্ট এবং রজার ম্যাকগফ সহ বেশকয়েকজন গীতিকারদের নিয়ে কাজ করলেও, অবশেষে অ্যালবামের গানগুলি লেখার জন্য এন্থনি মুরকে নির্বাচন করেছিলনে। পরবর্তীতে গিলমোর স্বীকার করেছিলেন যে প্রকল্পটি ওয়াটার্সের সৃজনশীল দিকনির্দেশনা ব্যতীত কঠিন ছিল। মেইসন, অ্যালবামে পরিবেশনার জন্য খুব-বেশি অনুশীলন করেন নি, তিনি ড্রামের অনেক অংশ সম্পন্ন করার জন্য সেশন সঙ্গীতশিল্পীদের ব্যবহার করেছেন। পরিবর্তে তিনি অ্যালবামের সাউন্ড এফেক্টে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন।
[[চিত্র:Pink Floyd (1989).jpg|thumb|১৯৮৯ সালে অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন]] সফরে পিংক ফ্লয়েড
১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন মুক্তি পায়। অ্যালবামের প্রচ্ছদ নকশা করেছেন স্টর্ম থরগের্সন, যার সৃজনশীল অন্তর্ভুক্তি দ্য ওয়াল এবং দ্য ফাইনাল কাট অ্যালবামের পর থেকে অনুপস্থিত ছিল। ওয়াটার্স ব্যান্ড ছেড়ে চলে যাওয়ায় তাকে ছাড়াই, মেডেল অ্যলবামের এই প্রথম তারা অভ্যন্তরীন প্রচ্ছদে একটি দলগত আলোকচিত্র অন্তর্ভুক্ত করেছিল। অ্যালবামটি ইউকে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি তিন নম্বর অবস্থানে স্থান করে নিয়েছিল। ওয়াটার্স মন্তব্য করেছেন: "আমার মনে হয়েছে এটি বেশ সাবলীল, কিন্তু বেশ চতুর জালিয়াতি ... গানগুলি সাধারণত দরিদ্রমানের ... [এবং] গিলমোরের গানগুলি তৃতীয় স্তরের।" যদিও গিলমোর প্রাথমিকভাবে অ্যালবামটি ব্যান্ডের শীর্ষ ফর্মটিতে ফিরে এসেছে হিসেবে বিবেচনা করেন, রাইট ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, "রজারের সমালোচনাগুলি ন্যায্য। সবমিলিয়ে এটি ব্যান্ডের অ্যালবাম নয়।" কিউ ম্যাগাজিন অ্যালবামটি মূলত গিলমোরের একটি একাক অ্যালবাম হিসাবে বর্ণনা করেছে।
এয়াটার্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবর্তকদের সাথে যোগাযোগ করে অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন সফর বাতির করার চেষ্টা চালিয়েছিল এবং যদি তারা পিংক ফ্লয়েড নামটি ব্যবহার করে তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছিল। মেইসনের জামানতবিহীন ফারারি ২৫০ জিটিও ব্যবহার করে গিলমোর এবং মেইসন দুজনই সমভাবে প্রারম্ভিক খরচগুলি অর্থায়ন যোগাড় করেছিলেন। আসন্ন সফরের প্রাথমিক মহড়াগুলি অনেকটা বিশৃঙ্খল ছিল, মেইসন এবং রাইটের মহড়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিজে অনেক-বেশি দ্বায়িত্ব নিয়েছেন অনুভব করে গিলমোর ইজরিনকে সাহায্য করার জন্য বললেন। পিংক ফ্লয়েড উত্তর আমেরিকা সফর সম্পন্ন করে, ওয়াটার্সের রেডিও কেএএওএসএস সফর আয়োজনও কাছাকাছি ছিল, যদিও প্রাক্তন ব্যান্ডের পারফরম্যান্স আয়োজনের তুলনায় তা অনেক ছোট স্থানে আয়োজিত হয়েছিল। উড়ন্ত শূকর ব্যবহার করায় কপিরাইট ফির জন্য ওয়াটার্স একটি রিট জারি করেন। ওয়াটার্সের নকশা থেকে আলাদা করার জন্য পিংক ফ্লয়েড অন্তর্নিহিত অংশে পুরুষ জননেন্দ্রিয়ের একটি বড় সেট সংযুক্ত করে প্রতিক্রিয়া জানান। ২৩ ডিসেম্বরে দুইপক্ষ একটি আইনি চুক্তিতে পৌঁছেছিল; মেইসন এবং গিলমোর চিরকালের জন্য পিংক ফ্লয়েড নাম ব্যবহার করার অধিকার অর্জন করে এবং ওয়াটার্স অন্যান্য বিষয়ের মধ্যরে দ্য ওয়াল-এর একচেটিয়া অধিকার লাভ করে।
দ্য ডিভিশন বেল (১৯৯৪)
থাম্ব|স্টর্ম থরগের্সন কর্তৃক নকশাকৃত দ্য ডিভিশন বেল অ্যালবামের প্রচ্ছদ শিল্পকর্ম, যা ছিল প্রাথমিকভাবে ব্যান্ড থেকে ব্যারেট এবং ওয়াটার্সের অনুপস্থিতি প্রতিনিধিত্ব করার উদ্দেশ্যে।|alt=A colour photograph of two large silver-grey iron sculptures of opposing silhouetted faces. The sculptures are standing in a brown wheat field with a blue sky behind them.
বেশকয়েক বছর ধরে পিংক ফ্লয়েড তাদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিল, যেমন লা ক্যার্রিয়া পানামেরিকানাতে চিত্রগ্রহণ ও প্রতিযোগিতা এবং ইভেন্টের উপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্রের সাউন্ডট্র্যাক রেকর্ডিং। জানুয়ারি ১৯৯৩ সালে, তারা একটি নতুন অ্যালবামে কাজ শুরু করতে ব্রিটানিয়া রো স্টুডিওসে ফিরে আসে, যেখানে গিলমোর, মেইসন এবং রাইট বেশকিছুদিন ধরে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করেছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ পরে, তারা গান তৈরি শুরু করার জন্য যথেষ্ট ধারণা লাভ করেছিল। এজরিন অ্যালবামের সহ-প্রযোজনা করতে এগিয়ে আসেন এবং প্রযোজনাটি অ্যাস্টোরিয়ায় স্থানান্তরিত হয়, যেখানে ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তারা প্রায় ২৫টি ধারণা নিয়ে কাজ করে।
চুক্তিবদ্ধভাবে, রাইট সে সময়ে ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন না এবং বলেন, "এটি এমন একটি বিন্দুতে পৌছেছিলো যেখানে আমি এই অ্যালবামতে কাজ করছি না।" যাইহোক, তিনি এই অ্যালবামে পাঁচটি সহ-রচনার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন, ১৯৭৫ সালের উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার-এর এটি তার প্রথম পিংক ফ্লয়েড অ্যালবাম। অ্যালবামে আরেকটি গান রচনার কৃতিত্ব পান গিলমোরের ভবিষ্যত স্ত্রী পলি স্যামসন। এজরিনের মতে, "হাই হোপ্স", যা তিনি প্রাথমিকভাবে, "সমগ্র অ্যালবামটি একসঙ্গে টেনে নিয়েছিলেন", বেশকয়েকটি ট্র্যাক লিখতে সাহায্য করেছিলেন। অ্যালবামের অর্কেস্ট্রার অংশগুলি পরিচালনার জন্য তারা মাইকেল কামেনকে নিয়োগ দেয়; ডিক প্যারি এবং ক্রিস টমাসও এতে যুক্ত ছিলেন।: (মাধ্যমিক উৎস); : (প্রাথমিক উৎস)। লেখক ডগলাস অ্যাডামস অ্যালবামের শিরোনাম ঠিক করেন এবং থরগের্সন প্রচ্ছদের শিল্পকর্ম নির্মাণ করেন। থরগের্সন ইস্টার দ্বীপের মোয়াই মোনোলিথ বা একপ্র্রস্তরস্তম্ভগুলি থেকে অ্যালবামেরের প্রচ্ছদ অনুপ্রেরণা অর্জন করেছেন; দুইটি মুখোমুখি মুখ মিলে একটি তৃতীয় মুখ তৈরি করে যার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন: "অনুপস্থিত মুখ—পিংক ফ্লয়েডের অতীত, বাকি দুইটি সিড এবং রজারের মুখ"। অ্যালবাম মুক্তির প্রতিযোগিতা এড়ানোর বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন, যেমনটা অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন অ্যালবামের সময় ঘটেছে। পিংক ফ্লয়েড ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে মুক্তির সময়সীমা নির্ধারণ করে, যে সময়ে তাদের সফর শুরু হবে অ্যালবাম যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ নম্বর স্থানে পৌঁছেছিল। পাশাপাশি এটি ইউকে চার্টে ৫১ সপ্তাহ অতিবাহিত করেছিল।
২০০৯ সালের ২৯ মার্চ মিয়ামিতে সান বার্নার্ডিনো, ক্যালিফোর্নিয়ার নর্টন এয়ার ফোর্স বেসের হ্যাঙ্গারে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মহড়া দেন, মিয়ামিতে প্রায় একই রাস্তার নিযুক্ত কর্মীবৃন্দ তাদের অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন সফরে কাজ করেছিল।; : মিয়ামিতে নর্টন এয়ার ফোর্স বেস খোলার আগে দুই সপ্তাহ ধরে তারা মহড়া দেয়। তারা বিভিন্ন ধরনের পিংক ফ্লয়েড পছন্দ তালিকা থেকে গান পরিবেশ্ন করে এবং পরে দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তাদের সম্পূর্ণ তালিকাটি পরিবর্তন করআ হয়। এটি ছিল পিংক ফ্লয়েডের সর্বশেষ সফর, যা ১৯৯৪ সালের ২৯ অক্টোবর সমাপ্ত হয়।
২০০৫–২০১৬: পুনর্মিলন, মৃত্যু, এবং দি এন্ডলেস রিভার
লাইভ এইট পুনর্মিলন
থাম্ব|ওয়াটার্স (ডানে) লাইভ এইট পুনর্মিলনে প্রাক্তন সদস্যদের সাথে আবার যোগ দেন।|alt=A concert stage lit by purple lighting. Four men are performing on the stage as a crowd stands in front of it. Behind the men are video screens displaying images of vinyl records.
২০০৫ সালের ২ জুলাই, ওয়াটার্স, গিলমোর, মেইসন এবং রাইট লন্ডনের হাইড পার্কে লাইভ এইট কনসার্টে ২৪ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো পিংক ফ্লয়েড হিসাবে একসাথে পরিবেশন করেছেন।: (প্রাথমিক উৎস); : (মাধ্যমিক উৎস)। আয়োজক বব গেলডফ দ্বারা লাইভ এইট পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শুরুতে গিলমোরের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর, গেলডফ মেইসনকে অনুরোধ করলেন, ওয়াটার্সের সাথে যোগাযোগ করতে। প্রায় দুই সপ্তাহ পরে, ওয়াটার্স গিলমোরকে সাক্ষাতের জন্য আহবান জানায়, এবং দুই বছরের বেশি সময় পর সেই প্রথম তাদের কথোপকথন হয়। পরের দিন গিলমোর কনসার্টের বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন। প্রেসের এক বিবৃতিতে, ব্যান্ডটি লাইভ এইট ঘটনার প্রসঙ্গে তাদের সমস্যাগুলির গুরুত্বহীনতার উপর জোর দেয়।
তারা লন্ডনের কনট হোটেলে তাদের সেটতালিকা তালিকাভুক্ত করেন। এরপর ব্ল্যাক আইল্যান্ড স্টুডিওসে তিন দিনের মহড়া দেন। তাদের অনুশীলন করা গানগুলির শৈলী এবং গতির বিষয়ে মতবিরোধ থাকায় সেশনগুলি সমস্যাযুক্ত ছিল; পরিবেশনার প্রাক্কালে চলমান ক্রমধারার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।: (মাধ্যমিক উৎস); : (প্রাথমিক উৎস)। পরিবেশনার শুরুতে ছিল "উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার", ওয়াটার্স দর্শকদের বলেছিলেন: "[এটা] বেশ আবেগপ্রবণ, আনেক বছর পরে এই তিনজনের সঙ্গে এখানে দাঁড়িয়েছি, দাঁড়িয়েছি বাকিদের সাথে নিজেকে গণনা করার জন্য ... আমরা এসব করছি যারা এখানে নেই তাদের এবং বিশেষত সিডের জন্য।" শেষ পর্যন্ত, গিলমোর শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানালেন এবং মঞ্চে ছেড়ে চলে যেতে ঘুরে দাঁড়ালেন। ওয়াটার্স তাকে ফিরে ডাকেন, এবং তারা সকলে আলিঙ্গন করেন। লাইভ এইট কনসার্টের পর সানডে সংবাদপত্রে তাদের এই আলিঙ্গনের ছবিটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ওয়াটার্স তাদের প্রায় ২০ বছরের বিদ্বেষ সম্পর্কে বলেন: "আমার মনে হয় যে ১৯৮৫ সালের পর থেকে আমাদের কেউ কোনও কৃতিত্বের জন্য আজ এখানে আসে নি ... এটি মন্দ ছিল, নেতিবাচক সময়, এবং আমি সেই নেতিবাচকতায় আমার অংশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।"
যদিও চূড়ান্ত সফরের জন্য পিংক ফ্লয়েড £১৩৬ মিলিয়ন মূল্যের চুক্তি স্থগিত করে দেয়। ওয়াটার্স পরিবেশন বাতিল না করে, এটি শুধুমাত্র একটি দাতব্য অনুষ্ঠান হওয়া উচিত বলে মনে করেছেন। তবে, গিলমোর এসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান যে পুনর্মিলন ঘটবে না: "[লাইভ এইট] মগড়া আমাকে বিশ্বাস করিয়েছিল [যে] এটি এমন কিছু ছিল না যে আমি অনেক কিছু করতে চেয়েছিলাম ... মানুষের জীবন এবং কর্মজীবনে বিদায়ের মুহূর্তের সকল প্রকার এখানে ছিল যা তারা পরে অবরুদ্ধ করেছে, কিন্তু আমি মনে করি আমি মোটামুটি পরিষ্কারভাবে বলতে পারি যে কোনও সফর বা অ্যালবামে আমাদের পুনরায় অংশ নিতে হবে না। এটা বিদ্বেষ বা এমন কিছু নয়। এটা শুধুমাত্র ... আমি সেখানে ছিলাম, আমি যা করার করেছি।" ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, গিলমোরের ইটালিয় সংবাদপত্র লা রেপুব্লিকার গিনো কাস্টাল্ডোর এক সাক্ষাৎকারে ঘোষণা করেছেন: "ভক্তদের জন্য শোকের ধৈর্য। সংবাদটি প্রাতিষ্ঠানিক। পিংক ফ্লয়েড ব্র্যান্ড বিলুপ্ত, সমাপ্ত, নিশ্চিতভাবে মৃত।" পিংক ফ্লয়েডের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে গিলমোর প্রতিক্রিয়া জানায়: "এটা শেষ হয়ে গেছে ... আমার যথেষ্ট করেছি। আমি ৬০ বছর বয়সী ... এখন আমার নিজের কাজ করার জন্য এটি বেশি আরামদায়ক।" গিলমোর এবং ওয়াটার্স বার-বার বলেছিলেন যে তাদের পূর্বের সদস্যদের সাথে পুনরায় মিলিত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।;
ব্যারেট এবং রাইটের মৃত্যু
ব্যারেট ২০০৬ সালের ৭ জুলাই কেমব্রিজে তার বাড়িতে ৬০ বছর বয়সে মারা যান। ২০০৬ সালের ১৮ জুলাই কেমব্রিজ ক্রিমেটোরিয়ামে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়; পিংক ফ্লয়েডের কোন সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। রাইট মন্তব্য করেছেন: "সিড ব্যারেটের মৃত্যুতে ব্যান্ড খুব স্বাভাবিকভাবেই মর্মাহত এবং দুঃখিত। সিড গোড়ার দিকে ব্যান্ডের লাইন-আপের পথনির্দেশক আলো ছিল এবং একটি লিগ্যাসি রেখে যান যা অনুপ্রাণিত করা অব্যাহত রেখেছিল।" যদিও ৩৫ বছর ধরে ব্যারেট অস্পষ্টতায় পড়ে গিয়েছিলেন, তবে সঙ্গীততে তার অবদানের জন্য জাতীয় প্রেস তাকে প্রশংসা করেছিল। ২০০৭ সালের ১০ মে, ওয়াটার্স, গিলমোর, রাইট এবং মেইসন লন্ডনের বার্বিনিকান সেন্টারে বারেটের শ্রদ্ধাসূচক কনসার্ট "ময়াডকাপ'স লাস্ট লাফ" এ পরিবেশন করেন। গিলমোর, রাইট এবং মেইসন ব্যারেটের সুরোচিতো "বাইক" এবং "আরনল্ড লেইন" এবং ওয়াটার্স তার "ফ্লিকারিং ফ্লেম"-এর একটি একক সংস্করণ পরিবেশন করেন করেন।
২০০৮ সারের ২৫ সেপ্টেম্বর, ৬৫ বছর বয়সে ক্যান্সারে রাইট মারা যান। তার প্রাক্তন ব্যান্ড সহচারী তার জীবন ও কাজে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল। গিলমোর বলেন: "পিংক ফ্লয়েড কে বা কী ছিল তা নিয়ে বিতর্কের সূচনায়, রিকের (রাইট) বিশাল অর্ন্তভূক্তি প্রায়শই বিস্মৃত। তিনি ছিলেন অমায়িক, নিরভিমান এবং নিভৃত কিন্তু তার গভীর বা উচ্চ ভাবপূর্ন কণ্ঠ এবং বাজানো ছিলো অত্যাবশ্যক, যা আমাদের সবচেয়ে স্বীকৃত পিংক ফ্লয়েড শব্দের ঐন্দ্রজালিক উপাদান ছিল।" রাইটের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর, গিলমোর আ সসারফুল অব সিক্রেট্স অ্যঅলবাম থেকে রাইটের রচিত এবং গাওয়া "রিমেমবার অ্যা ডে" গানটি পরিবেশন করেছিলেন, রাইটের সম্মানে। কিবোর্ডবাদক কিথ এমারসন রাইটকে পিংক ফ্লয়েডের "কশেরুকা" হিসাবে প্রশংসা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।
আরও পরিবেশনা এবং পুন-মুক্তি
২০১০ সালের ১০ জুলাই, ওয়াটার্স এবং গিলমোর হোপিং ফাউন্ডেশনের জন্য একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে একসাথে পরিবেশন করেন। প্যালেস্টাইনের শিশুদের জন্য অর্থোপার্জন করা এই অনুষ্ঠানটি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারের কিডিংটন হলে প্রায় ২০০ জন দর্শকের উপস্থিতি ছিল। এই অনুষ্ঠানে ওয়াটার্সের ফিরে আসার বিনিময়ে, ২০১১ সালের ১২ মে লন্ডনের ওটু এরিনায় ওয়াটার্সের দ্য ওয়াল পরিবেশনায় গিলমোর "কমফোর্টেবলি নাম্ব" পরিবেশনা করেছিলেন, যেখানে তিনি গিটার সলো বাজানোর পাশাপাশি কোরাস গেয়েছিলেন। মেইমেসনও যোগ দেন, গিলমোরের সাথে "আউটসাইড দ্য ওয়াল" গানে ম্যান্ডোলিনের জন্য টাম্বোরিন বাজান।
২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হোয়াই পিংক ফ্লয়েড ...? শিরোনামে পিংক ফ্লয়েড এবং ইএমআই একটি সম্পূর্ণ পুনঃপ্রকাশ প্রচারণা শুরু করেছিল। "এক্সপেরিয়েন্স" এবং "ইমমের্শন" মাল্টি-ডিস্ক মাল্টি-ফর্ম্যাট সংস্করণ সহ তাদের ব্যাক ক্যাটালগুলি পুনরায় নতুন রিমাস্টার করা সংস্করণে প্রকাশ করে। অ্যালবামগুলির রিমাস্টার করেছিলেন দ্য ওয়াল-এর সহ-প্রযোজক জেমস গাথরি। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে, পিংক ফ্লয়েড ১৯৬৫: দেয়ার ফার্স্ট রেকর্ডিং শিরোনামে একটি সীমিত সংস্করণ ইপি প্রকাশ করেছিল, যাতে দ্য পাইপার অ্যাট দ্য গেট্স অব ডউন-এ রেকর্ড করা ছয়টি গান রয়েছে।
দি এন্ডলেস রিভার (২০১৪)
থাম্ব|বাম|লন্ডনের দক্ষিণ তীরে দি এন্ডলেস রিভার-এর বিজ্ঞাপন স্থাপন করা হচ্ছে।
২০১২ সালে, প্রধানত দ্য ডিভিশন বেল অ্যালবামের সেশনগুলির সময়ে গিলমোর এবং মেইসন রাইটের সাথে তৈরি রেকর্ডিং পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেন, একটি নতুন পিংক ফ্লয়েড অ্যালবাম তৈরির জন্য। তারা নতুন অংশ রেকর্ড করতে এবং "সাধারণত হারনেস স্টুডিও প্রযুক্তি"-তে সাহায্য করার জন্য সেশন সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়োগ দেন। ওয়াটার্স একাজে জড়িত ছিলের না। মেইসন অ্যালবামটিকে রাইটের প্রতি শ্রদ্ধা হিসাবে বর্ণনা করেছেন: "আমি মনে করি তিনি [রাইট] যা করেছেন এবং তার কাজ কীভাবে পিংক ফ্লয়েড সাউন্ডের হৃদয়ে স্বীকৃতি প্রদানের এই রেকর্ডটি একটি ভাল উপায়। পারানো সেশনে শুনতে গিয়ে, এটা সত্যিই মনে হয় যে তিনি একজন বিশেষ বাদক চিলেন যা আমাকে ঘরে ফিরিয়ে আনে।"
দি এন্ডলেস রিভার ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর মুক্তি পায়। ২০১৪ সালে দ্য ডিভিশন বেল-এর ২০তম বার্ষিকী সংস্করণ প্রকাশের পর পার্লোফোন কর্তৃক পরিবেশিত এটি পিংক ফ্লয়েডে দ্বিতীয় অ্যালবাম। যদিও এটি মিশ্র পর্যালোচনা লাভ করলেও, এটি অ্যামাজন ইউকে-এর সর্বকালের সর্বাধিক প্রি-অর্ডার অ্যালবাম হয়ে উঠে, এবং বেশ কয়েকটি দেশে এটি প্রথম স্থানে অবস্থান নেয়। এটির ভাইনাল সংস্করণ ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবামের মধ্যে দ্রুততম বিক্রি হওয়া ইউকে ভাইনাল মুক্তি এবং ১৯৯৭ সাল থেকে দ্রুততম বিক্রি হওয়া ভাইনাল সংস্করণ ছিলো। গিলমোর দ্য এন্ডলেস রিভার-কে পিংক ফ্লয়েডের সর্বশেষ অ্যালবাম হিসেবে মন্তব্য করেন: "আমি মনে করি আমরা সফলভাবে যা অর্জন করেছি তার সফলদতার অধিকার আমাদের রয়েছে ... এটি লজ্জাজনক, কিন্তু এটাই শেষ।" অ্যালবামটি সমর্থন করার জন্য এর কোন সফর ছিল না, এ বিষয়ে গিলমোর মনে করেন যে রাইট ছাড়া এটি "এক ধরনের অসম্ভব" বিষয়।</span> ২০১৫ সালের আগস্টে, গিলমোর পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন যে পিংক ফ্লয়েড "সম্পন্ন" হয়েছে এবং রাইট ছাড়া এর পুনর্মিলন করা "ভুল হবে"।
২০১৬ সালের নভেম্বরে, পিংক ফ্লয়েড দ্য আর্লি ইয়ার্স ১৯৬৫–১৯৭২ শিরোনামে একটি বক্সসেট মুক্তি দেয়, যেখানে আউটটেক, সরাসরি রেকর্ডিং, রিমিক্স, এবং তাদের প্রাথমিক কর্মজীবন থেকে চলচ্চিত্র অন্তর্ভুক্ত। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এটির পরবর্তী সংস্করণ দ্য লেটার ইয়ার্স ১৯৮৭–২০১৯ প্রকাশ করা হবে, যেখানে থাকবে ওয়াটার্স পরবর্তী পিংক ফ্লয়েডের কাজের সংকলন, রাইট এবং মেইসনের বিস্তৃত অবদানসহ অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন (১৯৮৭) অ্যালবামের একটি "হালনাগকৃত ও রিমিক্সকৃত" সংস্করণ, এবং মূল প্রকাশ থেকে বাদ দেওয়া ট্র্যাক সহ ১৯৮৮ সালের ডেলিকেট সাউন্ড অব থান্ডার সরাসরি অ্যালবামের একটি বর্ধিত পুনঃপ্রকাশ।
২০১৮ সালে, মেইসন পিংক ফ্লয়েডের প্রাথমিক উপাদান পরিবেশনের উদ্দেশ্যে নিক মেইসন'স সসারফুল অব সিক্রেট্স নামে একটি নতুন ব্যান্ড গঠন করেন। ব্যান্ডটি স্প্যান্ডাউ ব্যালের গ্যারি কেম্প এবং দীর্ঘদিনের পিংক ফ্লয়েড সহযোগি গাই প্র্যাটকে অন্তর্ভুক্ত দলে করে। তারা ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরোপ, এবং ২০১৯ সালে উত্তর আমেরিকা সফর করেছিল, নিউ ইয়র্ক সিটির বীকন থিয়েটারে ওয়াটার্স যখন "সেট দ্য কন্ট্রোল্স ফর দ্য হার্ট অব দ্য সান" পরিবেশনের জন্য ভোকাল হিসেবে ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন।
সদস্য
সিড ব্যারেট – লিড এবং রিদম গিটার, ভোকাল (১৯৬৫–১৯৬৮) (২০০৬-এ মৃত্যু )
ডেভিড গিলমোর – লিড এবং রিদম গিটার, ভোকাল, বেস, কিবোর্ড, সিন্থেজাইজার (১৯৬৭–১৯৯৪, ২০০৫, ২০০৭, ২০১৩–২০১৪, ২০২২)
রজার ওয়াটার্স – বেস, ভোকাল, রিদম গিটার, সিন্থেজাইজার (১৯৬৫–১৯৮৫, ২০০৫)
রিচার্ড রাইট – কিবোর্ড, পিয়ানো, অর্গান, সিন্থেজাইজার, ভোকাল (১৯৬৫–১৯৭৯, ১৯৯০–১৯৯৪, ২০০৫, ২০০৭) (touring/session member ১৯৭৯–১৯৮১ এবং ১৯৮৬–১৯৯০) (২০০৮-এ মৃত্যু)
নিক মেইসন – ড্রাম, পারকাশন, ভোকাল (১৯৬৫–১৯৯৪, ২০০৫, ২০০৭, ২০১৩–২০১৪, ২০২২)
সাঙ্গীতিক দক্ষতা
ধারা
যুক্তরাজ্যের প্রথম দিককার সাইকেডেলিক সঙ্গীত দলগুলির একটি হিসাবে বিবেচিত, পিংক ফ্লয়েড অগ্রদূত হিসাবে তাদের সঙ্গীতজীবন শুরু করেছিল লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীতের মাধ্যমে। কেউ-কেউ তাদের কাজকে স্পেস রক হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করে।: স্পেস রক অ্যাক্ট হিসাবে পিংক ফ্লয়েড; : যুক্তরাজ্যের প্রথম সাইকেডেলিক সঙ্গীত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে পিংক ফ্লয়েড একটি। রোলিং স্টোনের মতে: "১৯৬৭ থেকে, তারা অভ্রান্তচিত্তে সাইকেডেলিক শব্দ বিকাশে অবদান রাখছে, বিস্তৃত পরিবেশনা, উচ্চতর সুটেলাইক রচনা যা হার্ড রক, ব্লুজ, দেশাত্ববোধক, লোক এবং ইলেকট্রনিক সঙ্গীতকে স্পর্শ করেছে।" ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত "কেয়ারফুল উইথ দ্যাট এক্স, ইউজিন" গানটি আর্ট রক দল হিসাবে তাদের খ্যাতি আরও বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেছিল। ব্যান্ডের ক্ষেত্রে বিবেচিত অন্যান্য ধারাগুলির মধ্যে রয়েছে পরীক্ষামূলক রক, অ্যাসিড রক, প্রোটো-প্রোগ, পরীক্ষামূলক পপ (ব্যারেটের অধীনে থাকাকালীন), এবং সাইকেডেলিক পপ। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে, গণমাধ্যমগুলি তাদের সঙ্গীতকে প্রগ্রেসিভ রক লেবেল যুক্ত করতে শুরু করেছিল। ও'নিল সার্বার পিংক ফ্লয়েডের সঙ্গীত সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন:
Rarely will you find Floyd dishing up catchy hooks, tunes short enough for air-play, or predictable three-chord blues progressions; and never will you find them spending much time on the usual pop album of romance, partying, or self-hype. Their sonic universe is expansive, intense, and challenging ... Where most other bands neatly fit the songs to the music, the two forming a sort of autonomous and seamless whole complete with memorable hooks, Pink Floyd tends to set lyrics within a broader soundscape that often seems to have a life of its own ... Pink Floyd employs extended, stand-alone instrumentals which are never mere vehicles for showing off virtuoso but are planned and integral parts of the performance.
১৯৬৮ সালে রাইট পিংক ফ্লয়েডের ধ্বনিত খ্যাতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন: "আমদের প্রথম ব্রিটিশ সাইকিডেলিক দল হিসাবে দেখা মুশকিল। কেনোনা আমরা কখনও নিজেদের সেভাবে দেখিনি ... সবশেষে, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা ছিলাম, কেবল মজা করে বাজিয়েছিলাম ... গানের কোনও বিশেষ রূপের মধ্যে আবদ্ধ ছিলাম না, আমরা যা চেয়েছিলাম তা করতে পারতাম ... দৃঢ়ভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা এবং তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলাম।" ওয়াটার্স ব্যান্ডের প্রাথমিক শাব্দিক উৎপাদন সম্পর্কে কম উৎসাহী মূল্যায়ন জানিয়েছেন: "এ সম্পর্কে 'মহান' কিছুই ছিল না। আমরা হাস্যকর ছিলাম। আমরা অকেজো ছিলাম। আমরা মোটেও বাজাতে পারতাম না তাই আমেদের নির্বোধ এবং 'পরীক্ষামূলক' কিছু করতে হয়েছিল... সিড ছিল প্রতিভাবান, তবে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা "ইন্টারস্টেলার ওভারড্রাইভ" বাজাতে ফিরে যেতে চাই না।" প্রচলিত পপ গঠন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, পিংক ফ্লয়েড ছিল ১৯৭০-এর দশকে প্রোগ্রেসিভ রক এবং ১৯৮০-এর দশকে পরিবেষ্টিত সঙ্গীতের উদ্ভাবক।
গিলমোরের গিটারের কাজ
রোলিং স্টোন-এর সমালোচক অ্যালান ডি পেরনা গিলমোরের গিটারের কাজকে পিংক ফ্লয়েডের শব্দের সাথে অবিচ্ছেদ্য বলে প্রশংসা করেছিলেন, এবং তাকে ১৯৭০-এর দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গিটারবাদক হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন, "হেন্ডরিক্স এবং ভ্যান হ্যালেনের মধ্যে অনুপস্থিত সংযোগ"। রোলিং স্টোন তাকে সর্বকালের ১৪তম শ্রেষ্ঠ গিটারবাদক হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে।: "the missing link"; For Rolling Stone "100 Greatest Guitarists" list see: ২০০৬ সালে, গিলমোর তার কৌশল সম্পর্কে বলেছিলেন: "[আমার] আঙ্গুলগুলি স্বতন্ত্র শব্দ করে ... [তারা] খুব বেগবান নয়, তবে আমি মনে করি আমি তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্তসক্ষম ... আমি যেভাবে সুরগুলি বাজিয়েছি তা হ্যাঙ্ক মারভিন এবং দ্য শ্যাডো-এর সুরের সাথে সংযুক্ত।" গিলমোরের সামর্থ বা সৌন্দর্যের ত্যাগ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করার জন্য সবচেয়ে কম নোট ব্যবহারের ক্ষমতা জ্যাজ ট্রাম্পটার মাইলস ডেভিসের তুলনায় অনুকূল বিবেচিত।
২০০৬ সালে, গিটার ওয়ার্ল্ড-এর লেখক জিমি ব্রাউন গিলমোরের গিটারের শৈলীকে "সরল, হিউজ-সাউন্ডিং রিফস; ঔদরিক, সু-গতিযুক্ত সলো এবং সমৃদ্ধ, পরিবেষ্টিত কর্ডাল টেক্সচারের দ্বারা চিহ্নিত" বলে বর্ণনা করেছিলেন।" ব্রাউনের মতে, "মানি", "টাইম" এবং "কমফোর্টেবলি নাম্ব" গানে গিলমোরের সলো "কুয়াশার মাধ্যমে লেজার রশ্মির মতো মিশ্রণ ভেদ করতে সক্ষম।" ব্রাউন "টাইম" গানটিকে কেবল "বাচনভঙ্গি এবং অনুপ্রেরণা বিকাশের একটি মাস্টারপিস" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন ... গিলমোর তার প্রাথমিক ধারণাটি নিয়ে নিজের গতিতে বাজিয়ে গেছেন।" ব্রাউন গিলমোরের বাচনভঙ্গিকে স্বজ্ঞাত এবং সম্ভবত লিড গিটারবাদক হিসাবে এটিই তার সেরা সম্পদ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। নিজের স্বাতন্ত্র স্বর অর্জন করার প্রসঙ্গে গিলমোর ব্যাখ্যা করেছেন: "আমি সাধারণত একটি ফাজ বাক্স, একটি বিলম্ব এবং একটি উজ্জ্বল ইকিউ সেটিং ব্যবহার করি ... গাওয়ার গতি ধরে রাখতে ... প্রতিক্রিয়া প্রান্তিকের কাছাকাছি—আপনাকে উচ্চস্বরে বাজাতে হবে। এটি বাজানো আরও মজাদার ... যখন বাঁকানো নোটগুলি আপনার কাছে একটি রেজার ব্লেডের মতো ঠিক টুকরো টুকরো হয়ে ওঠে।"
ধ্বনিত নিরীক্ষণ
পুরো কর্মজীবন জুড়ে, পিংক ফ্লয়েড তাদের শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল। তাদের দ্বিতীয় একক, "সি এমিলি প্লে" লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ হলে ১২ মে ১৯৬৭ সালে প্রদর্শিত হয়েছিল। পরিবেশনের সময়, ব্যান্ডটি প্রথমে অ্যাজিমুথ কো-অর্ডিনেটর নামে পরিচিত একটি প্রাথমিক চতুষ্কোণ যন্ত্রের ব্যবহার করেছিল। যন্ত্রটিতে নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিলো, যা সাধারণত রাইটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত এবং ব্যান্ডের প্রশস্ত শব্দ, রেকর্ড কৃত টেপগুলির সাথে মেলাতে, অনুষ্ঠানস্থানের প্রায় ২৭০ ডিগ্রি অংশে শব্দ সৃষ্টি করতে সক্ষম ছিল যা একটি ধ্বনিত ঘূর্ণায়মান প্রভাব সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে, তারা একটি প্রছন্দসই নির্মিত পিএ কিনেছিল যা একটি উন্নততর চার-চ্যানেল এবং ৩৬০-ডিগ্রি ব্যবস্থা সম্পন্ন।
পিংক ফ্লয়েডের "অন দ্য রান", "ওয়েলকাম টু দি মেশিন", এবং "ইন দ্য ফ্লেশ?"-এর মতো অংশে এয়াটার্স ভিসিএস থ্রি সিন্থেসাইজার পরীক্ষা করেছিলেন।: "অন দ্য রান"-এ সিন্থেসাইজার ব্যবহার; : "ওয়েলকাম টু দি মেশিন"-এ সিন্থেসাইজার ব্যবহার; : "ইন দ্য ফ্লেশ?"-এ সিন্থেসাইজার ব্যবহার। "ওয়ান অব দিস ডেস" গানের জন্য তার বেস-গিটার ট্র্যাকের উপর বিনসন ইকোরাক ২ বিলম্বের এফেক্ট ব্যবহার করেছিলেন।
দ্য ফাইনাল কাট অ্যালবাম রেকর্ডিংয়ের সময় পিংক ফ্লয়েড অভিনব সাউন্ড এফেক্ট এবং আর্ট অডিও রেকর্ডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল। অ্যালবামে মেইসনের অবদানগুলি প্রায় সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষামূলক হলোফোনিক ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এটি একটি ত্রি-মাত্রিক প্রভাব অনুকরণ করতে ব্যবহৃত অডিও প্রক্রিয়াকরণ কৌশল। এই ব্যবস্থায় এমন একটি এফেক্ট তৈরি করতে প্রচলিত স্টেরিও টেপ ব্যবহার করা হয়েছিল যার ফলে শব্দ শ্রোতাদের মাথার চারপাশে আবর্তিত হয়েছে যেনো হেডফোন কানে শোনার অনুভূতি। প্রক্রিয়াটিতে একজন প্রকৌশলী শ্রোতার কানের উপরে বা পাশে পিছনে, শব্দটিকে সরাতে সক্ষম ছিল।
চলচ্চিত্রের সুর
পিংক ফ্লয়েড, ১৯৬৮ সাল থেকে শুরু করে, দ্য কমিটি সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রের সুর রচনা করেছে। ১৯৬৯ সালে, তারা বারবেট শ্রোডার পরিচালিত মোর চলচ্চিত্রের সুর রেকর্ড করে। এই সাউন্ডট্র্যাকটি ব্যবসাসফল হয়েছিল; এটি শুধুমাত্র যে ভাল আয় করেছিল তাই নয়, তবে, আ সসারফুল অব সিক্রেট্স-এর পাশাপাশি সরাসরি পরিবেশনার জন্য তৈরি সঙ্গীত উপাদানও এতে সংযোজিত হয়েছে। পরিচালক মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি'র জাব্রিস্কি পয়েন্ট (১৯৭০) চলচ্চিত্রের সাউন্ডট্র্যাক রচনা করার সময়, দলটি প্রায় এক মাস রোমের অভিজাত হোটেলে অবস্থান নিয়েছিল। ওয়াটার্স অভিযোগ করে বলেন, আন্তোনিওনির ক্রমাগত পরিবর্তনের প্রবণতা না থাকলে তারা এক সপ্তাহের কম সময়ে কাজ সমাপ্ত করতে পারতো। অবশেষে আন্তোনিওনি শুধুমাত্র তাদের তিনটি রেকর্ডিং ব্যবহার করেছিলেন। আন্তোনিওনির বাদ দেয়া একটি অংশ, "দ্য ভায়োলেন্ট সিকোয়েন্স", পরবর্তীতে "আস অ্যান্ড দ্যাম", শিরোনামে ১৯৭৩-এর দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন অ্যালবামে সংযোজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে, দলটি দ্বিতীয়বারের মত শ্রোডারের সঙ্গে লা ভ্যালি চলচ্চিত্রে কাজ করে, যার জন্য তারা অব্সকিওর্ড বাই ক্লাউড্স নামে একটি সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল। তারা প্যারিসের কাছাকাছি শ্যাটো ডি'হেরুভিল অঞ্চলে প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী সময়নাগাদ এর সঙ্গীত উপাদান গঠন করে, এবং মুক্তির পর, এটি পিংক ফ্লয়ডের প্রথম অ্যালবাম হিসাবে ইউএস বিলবোর্ড চার্টের শীর্ষ ৫০-এ আবন্থান নেয়।
সরাসরি পরিবেশনা
ডান|থাম্ব|alt=A monochrome image of members of the band. The photograph is taken from a distance, and is bisected horizontally by the forward edge of the stage. Each band member and his equipment is illuminated from above by bright spotlights, also visible. A long-haired man holds a guitar and sings into a microphone on the left of the image. Central, another man is seated behind a large drumkit. Two men on the right of the image hold a saxophone or a bass guitar and appear to be looking in each other's general direction. In the foreground, silhouetted, are the heads of the audience.|১৯৭৩ সালে সালে মুক্তি পাওয়ার কিছু সময় পর, আর্লস কোর্টে দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন -এর সরাসরি পরিবেশনা: (বা-ডা) গিলমোর, মেইসন, ডিক প্যারি এবং ওয়াটার্স।
সরাসরি সঙ্গীত পরিবেশনায় পিংক ফ্লয়েড তাদের বুহুলব্যায়ী মঞ্চ প্রদর্শনীর জন্য খ্যাত, এছাড়াও শব্দ মানের ক্ষেত্রে উচ্চতর মান স্থাপন, উদ্ভাবনী শব্দ এফেক্ট এবং চতুর্ভুজ স্পিকার সিস্টেম ব্যবহারের পথিকৃৎ হিসাবে পরিচিত। দলের শুরুর দিকের সময় থেকেই লন্ডনের ইউএফও ক্লাবের মতো স্থানে পরিবেশন করার সময় তারা তাদের সাইকেডেলিক রক সঙ্গীতের সাথে ভিজ্যুয়াল এফেক্ট ব্যবহার শুরু করেছিল। তাদের স্লাইড-লাইট শো ছিল ব্রিটিশ শৈলীর অন্যতম একটি প্রদর্শনী এবং যটি লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীত জগতে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে তাদের সহায়তা করেছিল।
১৯৬৬ সালে লন্ডন ফ্রি স্কুলের ইন্টারন্যাশনাল টাইমস ম্যাগাজিনের উদ্বোধন উদযাপনের জন্য, তারা রাউন্ডহাউসে উদ্বোধনকালে তারা ২ হাজার মানুষের সামনে পরিবেশন করেছিলেন, যেখানে পল ম্যাককার্টনি এবং মারিয়ান ফেইথফুল সহ খ্যাতিমান ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিল। ১৯৬৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে, রোড ব্যবস্থাপক পিটার ওয়াইন-উইলসন তাদের রোড ক্রুতে যোগ দিয়েছিলেন এবং সমবর্তিত, আয়না এবং প্রসারিত কনডমের ব্যবহার সহ কিছু উদ্ভাবনী ধারণার মাধ্যমে ব্যান্ডের আলোকশৈলী উন্নততর করেছিলেন।: পিটার ওয়াইন-উইলসন; : ওয়াইন-উইলসন কিছু উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে ব্যান্ডের আলোকশৈলী উন্নততর করেছেন। ইএমআই-এর সাথে তাদের রেকর্ড চুক্তির পরে, পিংক ফ্লয়েড একটি ফোর্ড ট্রানজিট ভ্যান কিনেছিল, যা তখন বহির্মুখী ব্যান্ড পরিবহন হিসাবে ব্যবহৃত হতো। ১৯৬৭ সালের ২৯ এপ্রিল তারা লন্ডনের আলেকজান্দ্রা প্রাসাদে দ্য ফর্টিন আওয়ার টেকনিকালার ড্রিম নামে একটি রাতব্যাপী অনুষ্ঠানের তারা শিরোনাম হয়েছিলেন। সূর্য উঠতে শুরু করার সাথে সাথে মঞ্চে উঠার উদ্দেশ্যে নেদারল্যান্ডস থেকে ভ্যান ও ফেরিতে করে দীর্ঘ যাত্রা শেষে শেষরাত তিনটার দিকে পিংক ফ্লয়েড উৎসবে উপস্থিত হয়। ১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে, তাদের মহাকাশ-সম্পর্কিত সঙ্গীত এবং গানের সুরের জন্য তারা অ্যাপোলো ১১ মহাকাশযানের চাঁদে অবতরণের সরাসরি বিবিসি টেলিভিশনের কভারেজে যুক্ত হয়, যেখানে তাদের ইন্সট্রুমেন্টাল "মুনহেড" ব্যবহৃত হয়েছিলো।
১৯৭৮ সালের নভেম্বরে, তারা প্রথমবারের মতো বৃহতাকার বিজ্ঞপ্তি পর্দা নিযুক্ত করেছিল যা তাদের সরাসরি অনুষ্ঠানগুলির চলাকালীন প্রদর্শিত হবে। ১৯৭৭ সালে, তারা "অ্যালজি" নামে একটি বৃহত ফাঁফানো ভাসমান শূকরের বেলুন তৈরি করে। এই হিলিয়াম ও প্রোপেন দিয়ে ভর্তি অ্যালজি ইন দ্য ফ্লেশ সফর চলাকালীন শ্রোতাদের উপরে ভেসে ওঠার সময় উচ্চ শব্দে বিস্ফোরিত হবে। সফরকালীন দর্শকদের আচরণ এবং ভেন্যুগুলির বৃহত আকার তাদের দ্য ওয়াল ধারণা অ্যালবামটিকে শক্তিশালীভাবে প্রভাবিত করেছিল। পরবর্তী দ্য ওয়াল সফরে ব্যান্ড এবং দর্শকদের মাঝে কার্ডবোর্ডের ইট থেকে নির্মিত একটি উচ্চ প্রাচীর বানানো হয়। দর্শকদের গল্পের প্রয়োজনে বিভিন্ন দৃশ্য দেখাতে তারা প্রাচীরের উপরে অ্যানিমেশন প্রদর্শন করেছিল। গল্পের চরিত্রগুলিকে উপস্থাপন করার জন্য তারা বেশ কয়েকটি ফাঁফানো দৈত্য বাানিয়েল। এই সফরের একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল "কমফোর্টেবলি নাম্ব" গানের পরিবেশনা। ওয়াটার্স তার উদ্বোধনী শ্লোক গাওয়ার সময়, অন্ধকারে, গিলমোর প্রাচীরের উপরে তার অংশ বাজানোর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। যখন গিলমোরের বাজানোর সময় এলো, উজ্জ্বল নীল এবং সাদা আলোগুলি হঠাৎ তাকে প্রকাশ করল। গিলমুর ক্যাসেটরগুলির একটি ফ্লাইটকেসের উপর দাঁড়িয়েছিলেন, যেটি ছিল একজন প্রযুক্তিবিদের নিয়ন্ত্রণে পিছনে থেকে বাঁধা একটি অনিরাপদ সেটআপ। একটি বৃহৎ হাইড্রোলিক প্ল্যাটফর্ম গিলমোর এবং প্রযুক্তিবিদ উভয়কেই প্রতিরক্ষা প্রদান করে।
ডিভিশন বেল সফর চলাকালীন, পাব্লিয়াস নাম ব্যবহার করে অজ্ঞাতপরিচয়ধারী ব্যক্তি একটি সংবাদ গ্রুপে অনুরাগীদের নতুন এই অ্যালবামে লুকিয়ে থাকা একটি ধাঁধা সমাধান করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি বার্তা পোস্ট করেন। পূর্ব রাদারফোর্ডের পিংক ফ্লয়েডের কনসার্টে মঞ্চের সামনে সাদা বাতিগুলি একসঙ্গে এনিগমা পাবলিয়াস (Enigma Publius) শব্দটির বানান। ১৯৯৪ সালের ২০ অক্টোবর আর্লস কোর্টে একটি টেলিভিশনের কনসার্ট চলাকালীন, কেউ একজ মঞ্চের পটভূমিতে বড় অক্ষরে "এনিগমা" শব্দটির অনুমান করেছিলেন। মেইসন পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন যে তাদের রেকর্ড সংস্থাটি ব্যান্ডের চাইতে অধিক পাবলিয়াস এনিগমা রহস্যকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
গীতধর্মী বিষয়
ওয়াটার্সের দার্শনিক গীতিকবিতার আঙ্গিকে চিহ্নিত, রোলিং স্টোন পিংক ফ্লয়েডকে "স্বতন্ত্র অন্ধকার দৃষ্টির সীমারেখা" হিসাবে বর্ণনা করেছে। লেখক জেরে ও'নেইল সার্বার লিখেছেন: "তাদের আগ্রহ সত্য এবং মায়া, জীবন এবং মৃত্যু, সময় এবং মহাকাশ, কার্যকারণ এবং সুযোগ, সমবেদনা এবং উদাসীনতা।" পিংক ফ্লয়েডের গানের একটি কেন্দ্রীয় ভাব হিসাবে ওয়াটার্স সমানুভূতি শনাক্ত করেছে। লেখক জর্জ রিশ বর্ণনা করেছেন, মেডল-এর সাইকেডেলিক রচনা, "ইকোস", "সত্যিকারের যোগাযোগ, সহানুভূতি, এবং অন্যদের সাথে সহযোগিতার মূল ধারণাটির সংস্পর্শে নির্মিত।" লেখক ডিনা ওয়েইনস্টাইন, ওয়াটার্সকে একজন অস্তিত্ববাদী হিসাবে উল্লেখ করেন।
মোহমুক্তি, অনুপস্থিতি এবং অনস্তিত্ব
উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার-এর "হ্যাব অ্যা সিগার" গানে ওয়াটার্সের পঙ্ক্তিতে রয়েছে সঙ্গীত ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের আন্তরিকতাবোধহীনতার কথা। গানটি ব্যান্ড এবং একটি রেকর্ড লেবেল নির্বাহীর মধ্যে অকার্যকর গতিশীলতা চিত্রায়ন করেছে যারা তাদের বর্তমান বিক্রয় সাফল্যের জন্য দলটিকে অভিনন্দন জানায়, বোঝায় যে তারা একই দলে রয়েছেন এবং প্রকাশ্যে যে ভুলক্রমে বিশ্বাস করেন যে "পিংক" ব্যান্ডের অন্যতম সদস্যের নাম। লেখক ডেভিড ডেটমারের মতে, অ্যালবামের গানে "বাণিজ্য জগতের অমানবিক দিকগুলি" বিষয়ক কথাগুলি, এমন পরিস্থিতি যেখানে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য শিল্পীদের সহনশীল হতে হয়।
পিংক ফ্লয়েডের স্বভাবত গীতি দর্শনের একটি হলো অনুপস্থিতি। উদাহরণস্বরূপ ১৯৬৮ সালের পরে ব্যারেটের অনুপস্থিতি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ওয়াটার্সের নিহত পিতা। এছাড়াও ওয়াটার্সের গানে অসাধিত রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং ব্যর্থ প্রচেষ্টার কথা পাওয়া যায়। তাদের চলচ্চিত্রের স্কোর, অব্সকিওর্ড বাই ক্লাউড্স, তারুণ্যের প্রফুল্লতা হ্রাসের কথা বলে যা কখনও কখনও বার্ধক্য বা সুপরিণতির ইঙ্গিত করে। পিংক ফ্লয়েডের অ্যালবামের প্রচ্ছদের দীর্ঘকালীন ডিজাইনার, স্টর্ম থরগের্সন, উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার গানের প্রসঙ্গে বলেছেন: এখানে "অস্তির ধারণা প্রতিসংহৃত হয়েছে, যেভাবে লোকেরা নিজেদের উপস্থিতি দেখানোর ভান করে অথচ তাদের মন সত্যিই অন্য কোথাও রয়েছে এবং তাদের উপস্থিতির পুরো শক্তিটি দমন করতে তাদের যন্ত্রাংশ এবং অনুপ্রেরণাগুলি মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রলিপ্ত হয়, অবশেষে ফলাফল দাঁড়াচ্ছে অনুপস্থিতি: অর্থাৎ ব্যক্তির অনুপস্থিতি, তার অনুভূতির অনুপস্থিতি।" ওয়াটার্স মন্তব্য করেছিলেন: "এটা আসলে আমাদের কেউই সেখানে না থাকার কথা... [এটা] উইশ উই ওয়্যার হেয়ার বলা উচিত ছিল"।
ও'নিল সার্বার পিংক ফ্লয়েডের গানের বিশ্চেষণ করে জানিয়েছেন তাদের সঙ্গীতে অনুপস্থিতির বিষয়টি একটি বিশেষ ধারণা। ওয়াটার্স দ্য ওয়াল-এর "কমফোর্টেবলি নাম্ব" গানে অনুপস্থিতি বা অনস্তিত্বের আহ্বান জানিয়েছে: "আমি আমার চোখের কোণ থেকে একটি ক্ষণস্থায়ী আভাস পেয়েছি। আমি তাকালাম, কিন্তু তা চলে গেছে, আমি এখন এতে আমার আঙুল রাখতে পারি না, শিশুটি বড় হয়েছে, স্বপ্নটি চলে গেছে।" ব্যারেট ব্যান্ডের সাথে তার সর্বশেষ দিকের গান "জাগব্যান্ড ব্লুজ"-এ অনুপস্থিতি বিষয়টি উল্লেখ করেছেন: "আমি এখানে নই এটা পরিষ্কার করার জন্য আমি আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি বাধ্য।"
শোষণ ও নিপীড়ন
লেখক প্যাট্রিক ক্রস্কারি, অ্যানিম্যাল্স অ্যালবামটিকে "শক্তিশালী শব্দ এবং পরামর্শমূলক ধারণার" একটি অনন্য মিশ্রণ হিসাবে দ্য ওয়াল-এর সাথে ডার্ক সাইড-এর শৈল্পিক বিচ্ছিন্নতার চিত্রায়নের বর্ণনা করেছেন। তিনি অ্যালবামের রাজনৈতিক ধারণা এবং অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মের মধ্যে একটি সমান্তরাল সদৃশ আঁকেন। একটি চিন্তার পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে অ্যানিম্যাল্স শুরু হয়, যা জিজ্ঞাসা করে: "If you didn't care what happened to me. And I didn't care for you", তারপরে প্রত্যেকের মনের স্বতন্ত্র অবস্থা প্রতিবিম্বিত করতে সঙ্গীত ব্যবহার করে অ্যানথ্রোপমর্ফাইজড চরিত্রগুলির ভিত্তিতে পশুর উপকথার বিকাশ ঘটে। গানের কথাগুলি শেষ পর্যন্ত ডাইস্টোপিয়ায় একটি চিত্র অঙ্কন করে, সমবেদনা এবং করুণাবিহীন একটি পৃথিবীর অনিবার্য পরিণতি, শুরুর পঙ্ক্তিতে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে।
অ্যালবামের অন্তর্ভুক্ত চরিত্রগুলিতে রয়েছে "কুকুর", যারা পুঁজিপতিদের প্রতিনিধিত্ব করে, "শূকর", যারা রাজনৈতিক দুর্নীতির প্রতীক, এবং "ভেড়া", যারা শোষিতদের প্রতিনিধিত্ব করে। ক্রস্ক্যারি "ভেড়া"-কে একটি "বিভ্রান্তিকর সাংস্কৃতিক পরিচয় দ্বারা সৃষ্ট বিভ্রমের অবস্থা" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন, এটি একটি ভ্রান্ত চেতনা। "কুকুর", তার স্বার্থ এবং সাফল্যের অক্লান্ত সাধনায়, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বিশ্বাস করার মতো কাওকে খুঁজে পায় না। শোষণের পরেও পুরোপুরি মানসিক তৃপ্তির অভাব বোধ করে। ওয়াটার্স মেরি হোয়াইটহাউসকে "শূকরের" উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন; তার অনুমান অনুসারে, যারা সরকারের শক্তি প্রয়োগ করে সমাজে নিজের মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়ার ভূমিকা নেয়। অ্যালবামের সমাপ্তিতে ওয়াটার্সের গীতিময় বক্তব্য সহানুভূতিতে ফিরে আসে: "You know that I care what happens to you. And I know that you care for me too."। তবে, তিনি আরও স্বীকার করেছেন যে "শূকরগুলি" একটি অব্যাহত হুমকি স্বরূপ এবং শেষে তারা দেখে যে "কুকুর" যার আশ্রয় প্রয়োজন, যে রাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছিল, তাদের মধ্যেকার চলমান যুদ্ধের বিপরীতে।
বিচ্ছিন্নতা, যুদ্ধ এবং উন্মাদনা
ও'নিল সার্বার দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন-এর "ব্রেইন ড্যামেজ" গানের "there's someone in my head, but it's not me" পঙ্ক্তির সঙ্গে কার্ল মার্কসের স্ব-বিচ্ছিন্নতা তত্ত্বের তুলনা করেছেন। উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার-এর "ওয়েলকাম টু দি মেশিন" গান মার্কসের বস্তুর বিচ্ছিন্নতার সুপারিশ করে; গানের মূল চরিত্র বস্তুগত ভাবের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিল যে, তিনি নিজেকে, নিজ এবং অন্যদের থেকে বিছিন্ন ভাবছেন। মানব প্রজাতির বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে জবানবন্দি পাওয়া যেতে পারে অ্যানিম্যাল্স অ্যালবামের মধ্যে; যেখানে "কুকুর" অ-মানব হিসাবে প্রবৃত্তিগতভাবে বসবাস হ্রাস করে। দিয়েটমার লিখেছেন, "কুকুরেরা" নিজেদের থেকে এই পরিমাণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যে তারা "প্রয়োজনীয় এবং প্রতিরক্ষামূলক" অবস্থান হিসাবে "সহানুভূতি বা নৈতিক নীতির কোনও জায়গা ছাড়াই একটি সাংঘাতিক (কাটথ্রোট) ভুবন" হিসাবে তাদের সত্যতার অভাবকে ন্যায্যতা দেয়। পিংক ফ্লয়েডের গানগুলির মধ্যে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্নতা হচ্ছে একটি ধারাবাহিক ধারণা, এবং যা মূলত দ্য ওয়াল অ্যালবামের প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
যুদ্ধ, অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতা প্রকাশের সবচেয়ে মারাত্মক পরিণতি হিসাবে দেখা, মূলত দ্য ওয়াল-এর মূল উপাদান এবং ব্যান্ডের সঙ্গীতের একটি পুনরাবৃত্ত থিম। ওয়াটার্সের বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন, এবং তার রচনাগুলি প্রায়শই যুদ্ধের ব্যয়কে নির্দেশ করে, যার মধ্যে "কর্পোরাল ক্লেগ" (১৯৬৮), "ফ্রি ফোর" (১৯৭২), "আস অ্যান্ড দেম" (১৯৭৩), "হোয়েন দ্য টাইগার্স ব্রোক ফ্রি" এবং দ্য ফাইনাল কাট (১৯৮৩) থেকে "দ্য ফ্লেচার মেমোরিয়াল হোম", যে অ্যালবামটি তিনি তার বাবাকে উৎসর্গ করেছেন এবং শিরোনামে লিখেছেন অ্যা রেকুয়েম ফর দ্য পোস্টওয়ার ড্রিম।: দ্য ফাইনাল কাট ওয়াটার্সের বাবাকে উৎসর্গ করা হয়; : অ্যা রেকুয়েম ফর দ্য পোস্টওয়ার ড্রিম। দ্য ওয়াল-এর থিম এবং রচনায় প্রকাশ পায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইংরেজ সমাজে পুরুষদের বিচ্ছিন্নতাবস্থায় ওয়াটার্সের বেড়ে ওঠা, এবং এমন একটি অবস্থা যা নারীদের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন-এ ওয়াটার্সের লিরিক আধুনিক জীবনের চাপগুলির সাথে মোকাবিলা করেছিল এবং কীভাবে সেই চাপগুলি মাঝে মধ্যে উন্মাদনার কারণ হতে পারে। তিনি অ্যালবামটির মানসিক অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশকে সর্বজনীন অবস্থা আলোকিত হিসাবে দেখেন। তবে, ওয়াটার্স চেয়েছিলেন অ্যালবামটির ইতিবাচকতা জানাতে, "এর ইতিবাচকতা আলিঙ্গন এবং নেতিবাচকতা প্রত্যাখ্যান করার" আহবান করেন। রিশ "দ্য ওয়াল"-কে "অভ্যাস, প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক কাঠামো যা পাগলামি তৈরি করে বা সৃষ্টি করে তার চেয়ে উন্মাদ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত কম বলে বর্ণনা করেছেন। দ্য ওয়াল-এর নায়ক, পিংক, তার জীবনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে অক্ষম, এবং অপরাধবোধের দ্বারা কাটিয়ে উঠা, ধীরে ধীরে নিজের তৈরি বাধার ভিতরে নিজেকে বাইরের জগত থেকে আবন্ধ করে তোলে। পৃথিবী থেকে তার বিচরণ সম্পন্ন করার পরে, পিংক বুঝতে পারে যে তিনি "উন্মাদ, রংধনুর ওপরে (crazy, over the rainbow)"। তারপরে তিনি (পিংক) এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করেন যে তার এই অবস্থা তার নিজের দোষে হতে পারে: "আমি কি এতক্ষণ অপরাধবোধে ছিলাম? (have I been guilty all this time?)" তার সবচেয়ে বড় ভয় বুঝতে পেরে, পিংক বিশ্বাস করেন যে তিনি সবাইকে হতাশ করেছেন, তার কর্তৃত্বপ্রয়াসী মা বুদ্ধি করে তাকে হতাশার উপায় বেছে নিয়েছে, শিক্ষকরা তার কাব্যিক আকাঙ্ক্ষার যথাযথভাবে সমালোচনা করেছেন এবং তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যাওয়াকে ন্যায়সঙ্গত করেছেন। তারপরে তিনি "প্রায় মানুষের প্রকৃত অনুভূতি দেখানোর" জন্য বিচারের মুখোমুখি হন, আরও প্রজাতির সত্তার বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে তোলেন। রিশের মতে, রিচার মত দার্শনিক মিশেল ফুকোর রচনার মতো, ওয়াটার্সের গানে বোঝা যায় যে পিংক-এর উন্মাদনা আধুনিক জীবনের একটি পণ্য, যার উপাদানগুলি, "পছন্দসই, সহনির্ভরতা এবং সাইকোপ্যাথোলজি", যা তার ক্রোধের সুষ্টি করে।
স্বীকৃতি ও প্রভাব
thumb|পিংক ফ্লয়েডের দ্য ওয়াল রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেইমে প্রদর্শিত
পিংক ফ্লয়েড সর্বকালের সর্বাধিক বাণিজ্যিকভাবে সফল এবং প্রভাবশালী রক ব্যান্ডগুলির একটি। বিশ্বব্যাপী তাদের প্রায় ২৫০ মিলিয়নের অধিক রেকর্ডের বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে ৭৫ মিলিয়ন প্রত্যায়িত একক কেবল যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ৩৭.৯ মিলিয়ন অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে।২৫০ মিলিয়ন রেকর্ড বিক্রির জন্য দেখুন: ; ৭৫ মিলিয়ন আরআইএএ-প্রত্যায়িত একক বিক্রির জন্য দেখুন: ; ১৯৯৩ থেকে ৩৭.৯ মিলিয়ন অ্যালবাম বিক্রির জন্য দেখুন: সানডে টাইমস ধনী তালিকা, সঙ্গীত মিলিয়নিয়ার ২০১৩ (ইউকে), তালিকায় রজার ওয়াটার্সকে আনুমানিক £১৫০ মিলিয়নের (১৫ কোটি) হিসেবে ১২তম, ডেভিড গিলমোরকে £৮৫ মিলিয়নের (৮.৫ কোটি) হিসেবে ২৭তম, এবং নিক মেইসনকে £৫০ মিলিয়নের (৫ কোটি) হিসেবে ৩৭তম স্থানে অর্ন্তভুক্ত করেছে।
২০০৪ সালে, এমএসএনবিসি তাদের "দ্য টেন বেস্ট রক ব্যান্ডস এভার" তালিকায় পিংক ফ্লয়েডকে ৮তম স্থানে অন্তর্ভুক্ত করেছে। রোলিং স্টোন তাদের "দ্য হান্ড্রেড গ্রেটেস্ট আর্টিস্ট অব অল টাইম" তালিকায় ৫১তম স্থানে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিউ তাদের সংকলনে সর্বকালের বৃহত্তম ব্যান্ড হিসেবে পিংক ফ্লয়েডের নাম উল্লেখ করেছে। ভিএইচওয়ান "হান্ড্রেড গ্রেটেস্ট আর্টিস্ট অব অল টাইম" তালিকায় তাদের ১৮তম স্থানে অন্তর্ভুক্ত করেছে।For VH1's "100 Greatest Artists of All Time" see: কলিন লারকিন তার 'টপ ফিফ্টি আর্টিস্ট অব অল টাইম' তালিকায় পিংক ফ্লয়েডকে ৩য় স্থানে অন্তর্ভুক্ত করেছে, এটি তার অল টাইম টপ হান্ড্রেড অ্যালবাম্স তালিকায় প্রতিটি শিল্পীর অ্যালবামের জন্য সংযোজনী ভোটের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত।
পিংক ফ্লয়েড বিভিন্ন পুরস্কার জিতেছে। ১৯৮১ সালে অডিও প্রকৌশলী জেমস গাথরি দ্য ওয়াল গানের জন্য "শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী নন-ক্লাসিক্যাল অ্যালবাম" বিভাগে গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন, এবং ১৯৮৩ সালে রজার ওয়াটার্স দ্য ওয়াল চলচ্চিত্রের "অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্য ওয়াল" গানের জন্য "চলচ্চিত্রের জন্য রচিত শ্রেষ্ঠ মূল গান" বিভাগে ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস পুরস্কার লাভ করেন।: Grammy award for The Wall; For the 1982 BAFTA awards see: ১৯৯৫ সালে, পিংক ফ্লয়েড "মরুন্ড" গানের জন্য শ্রেষ্ঠ রক যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনা বিভাগে গ্র্যামি পুরস্কার লাভ করে। ২০০৮ সালে, সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ আধুনিক সঙ্গীতে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পিংক ফ্লয়েডকে পোলার মিউজিক প্রাইজ প্রদান করেন; ওয়াটার্স এবং মেইসন অনুষ্ঠানে যোগদান পূর্বক পুরস্কার গ্রহণ করেন। পিংক ফ্লয়েড ১৯৯৬ সালে রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম, ২০০৫ সালে ইউকে মিউজিক হল অব ফেমের, এবং ২০১০ সালে হিট পারাডে হল অব ফেম-এর অন্তর্ভুক্ত হয়।: রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেইম ইনডাকশন; : দ্য ইউকে হল অব ফেইম ইনডাকশন; হিট প্যরাডে হল অব ফেইম ইনডাকশনের জন্য দেখুন:
পিংক ফ্লয়েডের সঙ্গীত বহু শিল্পীদের প্রভাবিত করেছে; ডেভিড বোয়ি একটি উল্লেখযোগ্য অনুপ্রেরণার জন্য ব্যারেটর নাম উল্লেখ করেছেন, এবং ইউটু ব্যান্ডের দ্য এজ মূলত অ্যানিম্যাল্স-এর "ডগ্স" গানের শুরুর গিটার কর্ড শোনার পর প্রথম ডিলে প্যাডেলে ক্রয় করেছিলেন।বোয়ি নামকরণের জন্য ব্যারেটের অনুপ্রেরণা দেখুন: ; এজের ক্রয়কৃত প্রথম ডিলে প্যাডেলের জন্য দেখুন: অন্যান্যদের ব্যান্ড যারা তাদের উদ্ধৃত প্রভাবের হিসাবে পিংক ফ্লয়েডের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে, যার মধ্যে কুইন, টুল, রেডিওহেড, ক্রাফ্টরেক, ম্যারিলিয়ন, Queensrÿche, নাইন ইঞ্চ নেইলস, দ্য অর্ব এবং দ্য স্মাশিং পাম্পিনস অর্ন্তভূক্ত।For Queen citing Pink Floyd as an influence see: ; For Kraftwerk see: ; For Marillion see: ; For Tool see: ; : Queensryche, the Orb, Nemrud, the Smashing Pumpkins; 289: Radiohead; : নাইন ইঞ্চি নেইলের পেছনের কভারের জন্য দেখুন। পিংক ফ্লয়েড নব্য-প্রোগ্রেসিভ রক উপশাখার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে যা ১৯৮০-এর দশকে আবির্ভূত হয়েছিল। ইংরেজ রক ব্যান্ড মোস্টলি অটাম তাদের শব্দে "জেনেসিস এবং পিংক ফ্লয়েডের সঙ্গীত একীভূত করেছে"।
পিংক ফ্লয়েড এছাড়াও মন্টি পাইথন কমেডি দলের প্রশংসাকারী ছিল। ফ্লয়েড তাদের ১৯৭৫ সালের মন্টি পাইথন অ্যান্ড দ্য হিল গ্রিল চলচ্চিত্রে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করেছিল।
২০১৬ সালে, ব্যান্ডটির প্রধান একটি কাজ লন্ডনে ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট জাদুঘরে অন্তর্ভূক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়, পরবর্তী বছর দলটির প্রথম একক প্রকাশের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে। মে ২০১৭ সালে, অডিও-ভিজুয়াল প্রদর্শনী, দেয়ার মর্টাল রিমেইন্স, অ্যালবাম প্রচ্ছদ শিল্প বিশ্লেষণ, মঞ্চ শো এবং নিক মেইসনের ব্যক্তিগত সংরক্ষণ থেকে আলোকচিত্রশিল্পের ধারণাগত প্রতিরূপের বৈশিষ্টায়িত করা হয়েছিল; এর জনপ্রিয়তার কারণে, এটি ১ অক্টোবরে বন্ধের তারিখ অতিক্রমের পর দুই সপ্তাহের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
ডিস্কোগ্রাফি
স্টুডিও অ্যালবাম
দ্য পাইপার অ্যাট দ্য গেট্স অব ডউন (১৯৬৭)
আ সসারফুল অব সিক্রেট্স (১৯৬৮)
মোর (১৯৬৯)
উমাগুমা (১৯৬৯)
অ্যাটম হার্ট মাদার (১৯৭০)
মেডল (১৯৭১)
অব্সকিওর্ড বাই ক্লাউড্স (১৯৭২)
দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন (১৯৭৩)
উইশ ইউ ওয়্যার হেয়ার (১৯৭৫)
অ্যানিম্যাল্স (১৯৭৭)
দ্য ওয়াল (১৯৭৯)
দ্য ফাইনাল কাট (১৯৮৩)
অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন (১৯৮৭)
দ্য ডিভিশন বেল (১৯৯৪)
দি এন্ডলেস রিভার (২০১৪)
কনসার্ট সফর
পিংক ফ্লয়েড বিশ্ব সফর (১৯৬৮)
দ্য ম্যান অ্যান্ড দ্য জার্নি সফর (১৯৬৬)
অ্যাটম হার্ট মাদার বিশ্ব সফর (১৯৭০)
মেডল ট্যুর (১৯৭১)
ডার্ক সাইড অব দ্য মুন (১৯৭২–৭৩)
১৯৭৪ (১৯৭৪)
উইস ইউ ওয়্যার হেয়ার সফর (১৯৭৫)
ইন দ্য ফ্লেশ (১৯৭৭)
দ্য ওয়াল সফর (১৯৮০–৮১)
অ্যা মৌমানট্রি ল্যাপ্স অব রিজন সফর (১৯৮৭–৯০)
দ্য ডিভিশন বেল সফর (১৯৯৪)
টিকা
তথ্যসূত্র
উৎস
আরও পড়ুনবইসমূহ'
তথ্যচিত্রসমূহ
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:১৯৬৫-এ প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:১৯৬৫-এ যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত
বিষয়শ্রেণী:১৯৯৫-এ বিলুপ্ত সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:১৯৯৫-এ যুক্তরাজ্যে বিলুপ্ত
বিষয়শ্রেণী:১৯৬০-এর দশকের প্রতিসংস্কৃতি
বিষয়শ্রেণী:রক সঙ্গীত জোড়
বিষয়শ্রেণী:সাইকেডেলিক পপ সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ আর্ট রক দল
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ প্রোগ্রেসিভ রক দল
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ সাইকেডেলিক রক সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ স্পেস রক সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ পরীক্ষামূলক রক দল
বিষয়শ্রেণী:ব্রিটিশ রিদম অ্যান্ড ব্লুজ বুম সঙ্গীতজ্ঞ
বিষয়শ্রেণী:লন্ডনের সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:কলাম্বিয়া রেকর্ডসের শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:হার্ভেস্ট রেকর্ডসের শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:ক্যাপিটল রেকর্ডসের শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:পার্লোফোনের শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:প্রোটো-প্রোগ সঙ্গীতজ্ঞ
বিষয়শ্রেণী:গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:ইকো সঙ্গীত পুরস্কার বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:বছরের শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক অ্যালবামের জন্য জুনো পুরস্কার বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:সিড ব্যারেট
বিষয়শ্রেণী:রজার ওয়াটার্স
বিষয়শ্রেণী:রিচার্ড রাইট (সঙ্গীতজ্ঞ)
বিষয়শ্রেণী:ডেভিড গিলমোর
বিষয়শ্রেণী:নিক মেইসন
বিষয়শ্রেণী:ওপেনকর্পোরেটসের জোট |
সঙ্গীত | https://bn.wikipedia.org/wiki/সঙ্গীত | thumb|১৭৪০ এ ফ্রান্সোইস বাউচারের সংগীতের পরিবেশন কল্পনা চিত্র
সঙ্গীত দ্বারা গীত, বাদ্য, নৃত্য এই তিনটি বিষয়ের সমাবেশকে উল্লেখ করা হয়। গীত এক ধরনের শ্রবণযোগ্য কলা যা সুসংবদ্ধ শব্দ ও নৈশব্দের সমন্বয়ে মানব চিত্তে বিনোদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। স্বর ও ধ্বনির সমন্বয়ে গীতের সৃষ্টি। এই ধ্বনি হতে পারে মানুষের কণ্ঠ নিঃসৃত ধ্বনি, হতে পারে যন্ত্রোৎপাদিত শব্দ অথবা উভয়ের সংমিশ্রণ। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে সুর ধ্বনির প্রধান বাহন। সুর ছাড়াও অন্য যে অনুষঙ্গ সঙ্গীতের নিয়ামক তা হলো তাল।
অর্থযুক্ত কথা, সুর ও তালের সমন্বয়ে গীত প্রকাশিত হয়। সুর ও তালের মিলিত ভাব এ বাদ্য প্রকাশিত হয়। ছন্দের সাথে দেহ ভঙ্গিমার সাহায্যে নৃত্য গঠিত ।
ইতিহাস
thumb|230px|তিন সঙ্গীতজ্ঞ, নাখতের সমাধি, থিবস, মিশর
পাথরযুগের মানুষও সঙ্গীত গাইতো। সম্ভবত প্রথম সঙ্গীত তৈরির চেষ্টা হয়েছিল শব্দ ও ছন্দ দ্বারা প্রকৃতির সাহায্যে।
সঙ্গীতের প্রকারভেদ
প্রাচ্য সঙ্গীত ও পাশ্চাত্য সঙ্গীত
যান্ত্র সঙ্গীত ও কণ্ঠসঙ্গীত
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, লোক সঙ্গীত ও আধুনিক সঙ্গীত
ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুংরী, টপ্পা, গজল, কাওয়ালী, কালোয়াতী
সঙ্গীতের স্বরলিপি
সঙ্গীত বা সুর বা স্বর এর প্রকাশ পদ্ধতিতে সাত (৭) টি চিহ্ন ( সংকেত ) ব্যবহৃত হয়, যথা :
সা রে গা মা পা ধা নি
এই সাতটি চিহ্ন দ্বারা সাতটি কম্পাংক নির্দেশ করা হয় । এছাড়াও আরও ৫টি স্বর রয়েছে ; যাদেরকে বিকৃত স্বর বলা হয় । যথা :
ঋ জ্ঞ হ্ম দ ণ
সঙ্গীতের তাল
সঙ্গীত সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হয় তখনই, যখন তাল, মাত্রা, লয় সহকারে নির্দিষ্ট প্রণালীতে সম্পন্ন হয়। বলা হয়ে থাকে বেসুরো সঙ্গীত তবুও শ্রবনযোগ্য, তবে তাল-হীন গান সহ্য করা সম্ভব নয়। তাল হল সঙ্গীতের কঙ্কাল স্বরুপ। বিভিন্ন রকম তাল এর নাম ও মাত্রাঃ
দাদরা : ৬ মাত্রা
কাহারবা : ৮ মাত্রা
তেওড়া : ৭ মাত্রা
রুপক : ৭ মাত্রা
ঝাঁপতাল : ১০ মাত্রা
ত্রিতাল : ১৬ মাত্রা
যন্ত্র সঙ্গীত
বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রীয় সঙ্গীত:
তত: তার (তন্ত্রী)বিশিষ্ট,
সুষির: বায়ু চালিত,
ঘাতবাদ্য
ঘন (বাদ্য)
আনদ্ধ
সঙ্গীত শিল্পের বাণিজ্যিক প্রসার
প্রাচীনকাল থেকে এ বঙ্গঅঞ্চলে কীর্তন বা ঈশ্বরের নামে গান করার প্রচলন চলে আসছে। চর্যাগীতির পরে বাংলা সঙ্গীতে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে নাথগীতি। যদিও সঙ্গীতকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট হয়েছে এক ধরনের ব্যবসার। এতে সঙ্গীত রচনা করে গ্রাহক কিংবা প্রচার মাধ্যমে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এর সাথে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন রেকর্ড কোম্পানী, ব্রান্ড এবং ট্রেডমার্ক সহযোগে লেবেল এবং বিক্রেতা। ২০০০ সালের পর থেকে গানের শ্রোতার সংখ্যা অসম্ভব আকারে বৃদ্ধি পেয়েছ। শ্রোতারা ডিজিটাল মিউজিক ফাইলগুলোকে এমপি-থ্রী প্লেয়ার, আইপড, কম্পিউটার এবং অন্যান্য বহনযোগ্য আধুনিক যন্ত্রে সংরক্ষণ করছেন। গানগুলো ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে কিংবা ক্রয় করে সংগ্রহ করা যায়। ডিজিটাল মাধ্যমে গান সংগ্রহ ও দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে বর্তমান সঙ্গীত শিল্প প্রসারিত হয়েছে।
তবে ইন্টারনেট থেকে অবাধে বিনামূল্যে গান ডাউনলোড করার ফলে গানের সিডি বিক্রয়ের ব্যবসায় এক ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। এর ফলে বাণিজ্যিক শিল্পীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:শিল্পকলা
বিষয়শ্রেণী:সঙ্গীত
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:পরিবেশন শিল্পকলা
বিষয়শ্রেণী:শব্দ (ধ্বনি) |
সংস্কৃতি | https://bn.wikipedia.org/wiki/সংস্কৃতি | |
ভূগোল | https://bn.wikipedia.org/wiki/ভূগোল | right|thumb|upright=1.2|২০০৪ সালের রাজনৈতিক সীমানাসহ পৃথিবীর প্রাকৃতিক মানচিত্র
ভূগোল (, যেটি এসেছে গ্রীক শব্দ “”, বা, geographia, থেকে; যার শাব্দিক অর্থ: "পৃথিবী সম্পর্কিত বর্ণনা বা আলোচনা") হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে পৃথিবীর ভূমি, এর গঠন বিন্যাস, এর অধিবাসী সম্পর্কিত সমস্ত প্রপঞ্চ (phenomenon / ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচিত হয়। এই শব্দটি খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে গ্রিক জ্ঞানবেত্তা এরাটোসথেনিস (২৭৬–১৯৪ খ্রিস্টপূর্ব) প্রথম ব্যবহার করেন। ভূগোলে মানুষের বসবাসের জগৎ ও তার সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপঃ ভৌত ভূগোলে জলবায়ু, ভূমি ও জল নিয়ে গবেষণা করা হয়; সাংস্কৃতিক ভূগোলে কৃত্রিম, মনুষ্যনির্মিত ধারণা যেমন দেশ, বসতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহন, দালান, ও ভৌগোলিক পরিবেশের অন্যান্য পরিবর্তিত রূপ আলোচনা করা হয়। ভূগোলবিদেরা তাদের গবেষণায় অর্থনীতি, ইতিহাস, জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব এবং গণিতের সহায়তা নেন।
সাধারণতঃ প্রায়শই এটিকে প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানবীয় ভূগোল নামক দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। ভূগোলের চারটি ঐতিহাসিক গবেষণা পদ্ধতি হচ্ছেঃ প্রকৃতি ও মানবজাতি সম্পর্কিত স্থানিক বিশ্লেষণ, স্থান ও অঞ্চল সম্পর্কিত এলাকা পঠন, মানব-ভুমি সম্পর্ক পঠন এবং ভূবিজ্ঞান। ভূগোলকে "পৃথিবী পঠন-বিভাগ" ও "মানুষ এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যকার সেতু-বন্ধন" বলেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত এরাটোসথেনিস (২৭৬-১৯৪ খ্রীস্টপূর্ব) পৃথিবীর বর্ণনা অর্থে সর্বপ্রথম এ Geography শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন। Geography→Geo (পৃথিবী)+ graphos (বর্ণনা বা বিবরণ) অর্থাৎ Geography শব্দের অর্থ হলো পৃথিবীর বর্ণনা । বাংলা ভাষায় প্রাচীন হিন্দু পুরাণে ব্যবহৃত ভূগোল শব্দটি ‘জিওগ্রাফি’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে; যদিও ভূগোল শব্দটি ‘জিওগ্রাফি’ শব্দের মর্মার্থ প্রকাশ করে না। এ ছাড়া বর্তমান জিওগ্রাফির সংজ্ঞা অনুসারে ‘ভূগোল শব্দটি দিয়ে জিওগ্রাফি শব্দটিকে ধারণ করা যায় না। বাংলা একাডেমির ইংরেজি-বাংলা অভিধানে (তৃতীয় সংস্করণ, ২০১৫) জিওগ্রাফির প্রতিশব্দ ‘ভূগোলবিদ্যা’ বা ‘ভূবিজ্ঞান’ করা হয়েছে, ‘ভূগোল’ নয়। এ কারণে বাংলাভাষা সচেতন অনেক ভূগোলবিদ জিওগ্রাফির প্রতিশব্দ হিসেবে ‘ভূবিদ্যা’ শব্দটির ব্যবহারে অধিক আগ্রহী।
মানচিত্রাঙ্কনবিদ এবং বিভিন্ন স্থানের নাম ও সংখ্যা বিষয়ক অধ্যয়নকারীকে ভূগোলবিদদের সাথে মিলিয়ে ফেলা ঠিক নয়; যদিও অনেক ভূগোলবিদ ভূসংস্থান ও মানচিত্রাঙ্কন বিষয়ে অধ্যয়ন করে থাকেন, তবুও প্রকৃতপক্ষে এটা তাদের মূল বিচরণক্ষেত্র নয়।
শাখা সমূহ
ভূগোলের মূল বিষয়বস্তুকে বর্ণনা এবং বিশ্লেষণের সুবিধার্থে:
প্রাকৃতিক ভূগোল এবং
মানবীয় ভূগোল - এই দু'টি শাখায় বিভক্ত করা হয়।
প্রাকৃতিক ভূগোল
প্রাকৃতিক ভূগোল হলো ভূগোলের সেই অংশ যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ ও তাদের গাঠনিক উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়। এটি মূলত: অশ্মমণ্ডল, বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, ভূপৃষ্ঠ, এবং বৈশ্বয়িক উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণী জগত (জীবমণ্ডল) নিয়ে গঠিত এবং তাদের সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করে থাকে। প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন শাখা গুলো নিম্বরুপ:
জ্যোতির্বিদ্যা
ভূতত্ত্ববিদ্যা
জলবায়ু বিজ্ঞান
সমুদ্রবিদ্যা
মৃত্তিকা ভূগোল
উদ্ভিদবিদ্যা
প্রাণীভূগোল
পদার্থবিজ্ঞানপ্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা
ভূত্বকের উপরিভাগের ভৌত পরিবেশ এবং এতে কার্যরত বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহ বিজ্ঞানের যে শাখায় সমীক্ষা করা হয়, তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। অধিকাংশ ভূগোলবিদ ভূগোলকে প্রাকৃতিক ও মানবিক নামক দুই শাখায় বিভক্ত করতে আগ্রহী। আবার অনেকে ভূপৃষ্ঠে জীবমণ্ডলের বাস্তুসংস্থানকে উপেক্ষা করা সমীচীন নয় বিধায় ভূগোলকে প্রাকৃতিক, মানবিক ও জীবভূগোল নামক তিন শাখায় বিভক্ত করে থাকেন। বিগত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা, বিষয়বস্তু এবং পঠনপাঠন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুরুতে প্রাকৃতিক ভূগোল বলতে কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশের (ভূমিবন্ধুরতা, পানি ও বায়ু) অধ্যয়নকে বুঝাতো। যেমন- আর্থার হোমসের (Arther Holmes, 1960) মতে, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠের বন্ধুরতা, সাগর-মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলের বিষয়াদি যা নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত, তার সমীক্ষাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল। কার্ল রিটারের (Carl Ritter, 1779-1859) মতে, ‘প্রাকৃতিক ভূগোল হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যা পৃথিবীর সমস্ত অবয়ব, বৈচিত্র্য ও সম্পর্কসহ একটি স্বতন্ত্র একক হিসেবে বিবেচনা করে।’ হার্টশোর্ন বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের সঠিক, সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা প্রাকৃতিক ভূগোলের কাজ।’
এ দিক থেকে বিবেচনা করলে, প্রাকৃতিক ভূগোল কেবল কতিপয় ভূবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ের একীভবনই নয়, এটি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের কর্মকাণ্ডের আন্তঃক্রিয়ার ধরনও পর্যালোচনা করে। ভূগোলের একটি প্রতিষ্ঠিত শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে পারিসরিক (spatial) ধরন এবং ভূপৃষ্ঠের পরিবেশের উপাদানগুলোর পারিসরিক সম্পর্ক সমীক্ষা করে। এ ছাড়াও এটি আঞ্চলিক ধরনের সাথে পারিসরিক সম্পর্কের কারণ, একই সাথে পরিবেশের উপাদানগুলোর পরিবর্তনের কারণও ব্যাখ্যা করে থাকে। এ থেকে বলা যায়, ভূমি, বায়ু, পানি এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনধারণের সহায়ক যে জীবমণ্ডল, তার বিস্তারিত সমীক্ষাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল।
প্রাকৃতিক ভূগোলের বিকাশ
প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কিত জ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র বোঝাতে প্রাকৃতিক ভূগোল (geography)শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রটি ভূগোল জ্ঞানের পুরো শাখাটির মতোই প্রাচীন। চিরায়ত গ্রিক যুগে বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে ভূগোলের উৎপত্তি এবং উনবিংশ শতকের শেষভাগে নৃভূগোল (Anthropogeography) বা মানবিক ভূগোলের উৎপত্তির পূর্ব পযর্ন্ত ভূগোল ছিলো মূলত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান : অবস্থানের সমীক্ষা ও জ্ঞাত পৃথিবীর সকল স্থানের ধারাবাহিক বর্ণনা।
ভারত
প্রাচীন ভারতে ভূগোল তথা ভূবিদ্যা-র আলোচনা পাওয়া যায় বেদ ও প্রাচীন পুরাণে। বেদ-এর লিখিত-রচনা কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের দ্বিতীয় ভাগ। অথর্ববেদ-এ প্রাচীন পুরাণ-এর উৎস সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। বিদ্বজ্জনদের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ - ১০০০ অব্দে অথর্ববেদ এর স্তোত্র গুলি রচিত হয়েছিল। প্রাচীন পুরাণের রচয়িতাগণ পৃথিবীকে সাতটি মহাদেশীয় দ্বীপে ভাগ করেছিলেন - জম্বু দ্বীপ, ক্রৌঞ্চ দ্বীপ, কুশ দ্বীপ, প্লক্ষ দ্বীপ, পুষ্কর দ্বীপ, শক দ্বীপ ও শাল্মলী দ্বীপ ও সেই সব দ্বীপের জলবায়ু আর ভূ-প্রকৃতির বিবরণ দিয়েছিলেন। বরাহমিহির পৃথিবীতে জল-এর সৃষ্টি, মেঘ ও বৃষ্টিপাত, মহাজাগতিক গ্রহ সম্পর্কিত বস্তু সমূহের অবস্থান আর সঞ্চারণ পথ সম্পর্কে লিখেছিলেন। প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট সেই সময়ে পৃথিবীর পরিধি ২৪৮৩৫ মাইল গণনা করেছিলেন যা প্রকৃত পরিধি থেকে ০.২ % কম ছিল।
চীন (History of geography)
প্রাচীন চীনে ভূবিদ্যা-র আলোচনা পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে। ভৌগোলিক মানচিত্র গঠিত হত তৎকালীন সাম্রাজ্য সমূহের অবস্থান ও বিস্তৃতি, নদী অববাহিকা, নদীপথ ও বাণিজ্য পথের অবস্থান ইত্যাদি সহ। শুই জিং নামে তৃতীয় শতকের এক অজ্ঞাতনামা লেখকের একটি বই পাওয়া গেছে যেখানে চীনের ১৩৭ টি নদীর তৎকালীন বিবরণ পাওয়া যায়।
জিয়া ড্যানের (৭৩০ ৮০৫ খ্রিষ্টাব্দ) মতো চীনা ভৌগোলিকের বিভিন্ন বৈদেশিক অঞ্চলের যথাযথ বর্ণনায় সমুদ্রপথে পারস্য উপসাগরের প্রবেশপথের বিবরণ ও মধ্যযুগীয় ইরানীদের দ্বারা সৃষ্ট সমুদ্রমধ্যে আলংকারিক স্তম্ভের কথা আছে যেগুলো আসলে জাহাজদের পথ দেখানোর বাতিঘর ছিল।
নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সোঙ সাম্রাজ্য এবং ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতক পর্যন্ত মিঙ সাম্রাজ্যের আমলে নিয়মানুগ ভৌগোলিক চর্চা সম্পর্কে জানা যায়। সোঙ সাম্রাজ্যের প্রখ্যাত কবি, পণ্ডিত এবং সরকারি আধিকারিক ফান চেংদা (১১২৬ - ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দ) চীনের দক্ষিণ প্রদেশগুলির বিভিন্ন অঞ্চলের ভূসংস্থান, কৃষি ও আর্থ বাণিজ্যিক পণ্যের উপর ভূ-বিদ্যার সনদ লিখেছিলেন। বহুবিদ্যাজ্ঞ চীনা বৈজ্ঞানিক শেন কুও (১০৩১ - ১০৯৫ খ্রিষ্টাব্দ) দেশের অভ্যন্তরে পাওয়া সামুদ্রিক জীবাশ্ম এবং বাঁশ গাছের এলাকা থেকে বহুদূরে পাওয়া বাঁশ গাছের জীবাশ্ম থেকে ভূমি-র গঠনের উপর আনুমানিক ধারণা সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখে গেছেন। এই সোঙ সাম্রাজ্যের সময়কালে কোরিয়া এবং মধ্যযুগীয় কম্বোডিয়া-ও উপর ভৌগোলিক বিবরণ সমন্বিত বই পাওয়া যায়।
মিঙ সাম্রাজ্যের ভূগোলবিদ, জু জিয়াকে (১৫৮৭ - ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দ) চীনের বহু প্রদেশে ভ্রমণ করেছিলেন (অনেকসময় পদব্রজে)। তিনি একটি বৃহৎ ভৌগোলিক এবং ভূসংস্থানিক সনদ লিখেছিলেন যেখানে ছোটো ছোটো গিরিখাত, অভ্র ও স্ফটিক মিশ্রিত শ্লেটপাথরের মতো খনি গর্ভের অবস্থান ইত্যাদি তথ্য সংবলিত তার ভ্রমণপথের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। চৈনিক লেখাগুলিতে মধ্য প্রাচ্য, ভারতবর্ষ এবং মধ্য এশিয়া-র বিভিন্ন সভ্যতার বর্ণনা আছে যেহেতু খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে পর্যটক ঝ্যাং কিয়ানের সত্যনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা থেকে বৈদেশিক অঞ্চলের ভূসংস্থান ও ভৌগোলিক বিশেষত্ব সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গিয়েছিল।
মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপ
ঈজিপ্ট ও ব্যাবিলনেও প্রাচীন আলোচনা ছিল ভূবিদ্যা সম্পর্কে। ইজিপ্ট-এ নীলনদের অববাহিকা, ভূমধ্যসাগর ও পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের মানচিত্র এবং ব্যাবিলনে পৃথিবীর মানচিত্রের অন্যতম প্রাচীন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে।
গ্রিক-রোমান যুগে ভূবিদ্যা-র আলোচনা অনেক বিস্তার লাভ করে। অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ-উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্য, নগর-পরিকল্পনা চিত্র, ভূমির জরীপ ও প্রকারভেদ, নদী-র দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমাপ ইত্যাদি বিষয়ে উন্নত অনুশীলন ও ব্যবহারবিধি-র প্রচলন ছিল। আনুমানিক ৪০০ খ্রিষ্টাব্দে রোমে পিউটিন্জার টেবিল হিসাবে পরিচিত এক গোটানো মানচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যের সড়কপথগুলি দেখানো আছে এবং রোমান সাম্রাজ্যের বাইরে ব্রিটেন থেকে মধ্য-প্রাচ্য হয়ে আফ্রিকা এবং তারপর ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন দেশের তখনকার জ্ঞাত অংশ সমূহ নিবদ্ধ আছে। একশোটির ও বেশি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছিল এই মানচিত্রটি-তে।
প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত ইরাটোসথেনেস (Eratosthenese, 276-194 BC) প্রাকৃতিক ভূগোলের অগ্রপথিক। তিনি এমন এক সময় এ বিষয়ে অবদান রাখেন যখন পণ্ডিতগণ পৃথিবীর আকার ও আকৃতি সম্পর্কেই অনিশ্চিত ছিলেন। মিশরের বিভিন্ন স্থানের দূরত্বের সাথে সূর্যের আলোক রশ্মির পতনকোণের পার্থক্য হিসাব করে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ের মাধ্যমে ইরাটোসথেনেস প্রাকৃতিক ভূগোলবিদ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় চিরস্তায়ী আসন করে নিয়েছেন। এটিই ছিলো বর্তমানে পরিচিত ভূআকৃতিবিদ্যার (Geodesy) প্রথম গবেষণা। ইরাটোসথেনেসের বহু মূল্যবান ভূগোলবিষয়ক কাজের মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি মানচিত্রের গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করেছিলেন এবং নিজেকে একজন দক্ষ কার্টোগ্রাফার (cartographer) হিসেবে গড়ে তুলেন। যখন পণ্ডিতগণ পৃথিবী গোলাকার না চেপ্টা এ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত, তখন ইরাটোসথেনেস গোলাকার পৃথিবীর কোন কোন স্থান সূর্যালোক দ্বারা অপর মণ্ডল অপেক্ষা অধিক উষ্ণ- এ বিষয়টি উপলব্ধি করেন এবং পৃথিবীকে কতিপয় পরিবেশমণ্ডলে বিভক্ত করে মানচিত্র তৈরি করেন। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে, গোলাকার পৃথিবীতে একটি নিরক্ষীয় বলয়, দুটি মেরু বলয় এবং এদের মাঝে দুটি নাতিশীতোষ্ণ বলয় বিদ্যমান রয়েছে। ইরাটোসথেনেসের মৃত্যুর বহু শতাব্দি পর্যন্ত অনেক পণ্ডিত ইরাটোসথেনেসের জ্ঞানকে যথার্থ বলে মেনে নিতে পারেননি (ব্লিজ, ১৯৯৩)।
বিখ্যাত গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (Herodotus, 485-424 BC) মিসর ভ্রমণের সময় মিসরকে ‘নীল নদের দান’ বলে মন্তব্য করেন এবং নীল নদের মোহনায় পলি সঞ্চয়ের আকৃতির মাঝে গ্রিক অক্ষর ডেল্টার Δ সাদৃশ্য খুঁজে পান এ ধরনের ভূবৈচিত্র্যকে তিনি ডেল্টা (বাংলায় বদ্বীপ) নামকরণ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দে প্লিনি জুনিয়র (প্লিনি সিনিয়র একজন বিজ্ঞানী ছিলেন) নেপলস উপসাগরে একটি নৌকায় দাঁড়িয়ে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত প্রত্যক্ষ করে যে লিপিবদ্ধ করেছেন, তা সত্যই বিষ্ময়কর। তিনি বর্ণনা করেছেন, আগ্নেয়গিরির উপর ব্যাঙের ছাতার আকৃতির মেঘ কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো এবং পম্পেই ও হারকোলিয়াম শহর দুটিকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলো। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে তিনি যখন আগ্নেয়গিরির ধ্বংসযজ্ঞ দেখছিলেন, তখন তিনি জানতেন না তারই মামা/মায়ের বড় ভাই (Pliny The Elder)(যিনি আবার তারই দত্তক পিতা-ও ছিলেন), ভিসুভিয়াসের লাভাস্রোতে পড়ে মারা যাচ্ছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রাচীন ভূগোলবিদদের অধিকাংশ রচনা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান পণ্ডিতদের সামান্য কিছু রচনা যা আমাদের পর্যন্ত এসেছে তা থেকে আমরা জাতে পারি, তখনকার নদীগুলো কত প্রশস্ত আর কত খরস্রোতা ছিলো, বর্তমানে ঘুমিয়ে আছে এরূপ কিছু আগ্নেয়গিরির কর্মকাণ্ড এবং তৎকালীন কিছু উদ্ভিদের কথা, যা বর্তমানে সেসব স্থান থেকে হারিয়ে গেছে। রোমান যুগের অবসানে ইউরোপে দীর্ঘ সময়ব্যাপী অন্ধকার যুগের শুরু হয়। মধ্যযুগে ভূগোল চর্চার দীপশিখা জ্বালিয়ে রেখেছিলো আরব অঞ্চলের মুসলিম এবং চৈনিক পণ্ডিতরা। মধ্যযুগে যুদ্ধ, আগুন এবং অবহেলার কারণে প্রাচীন অনেক মূল্যবান বই, মানচিত্র, রচনা চিরতরে হারিয়ে গেছে।
পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয়দের সামুদ্রিক অভিযান এবং ব্যাপক আবিষ্কারের যুগে প্রাকৃতিক ভূগোলের পুনর্জাগরণ ঘটে। পর্তুগিজরা আফ্রিকার উপকূল ঘুরে এশিয়ার পূর্বপ্রান্তে এবং কলম্বাস আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ফিরে এসে জানায় পশ্চিমের ভূখণ্ডের কথা। মানচিত্রাঙ্কনবিদগণ সংগ্রহকৃত জ্ঞানের ভিত্তিতে সঠিক মানচিত্র তৈরি করতে শুরু করেন। নতুন আবিষ্কৃত দেশগুলো সম্পর্কে ইউরোপের শহরগুলোতে কখন বড় বড় নদী, বরফাবৃত সুউচ্চ পর্বতমালা, বোনো উপকূল, বিস্তীর্ণ সমতলভূমি, ভয়াল ভৃগুতট, সুউচ্চ বৃক্ষপূর্ণ গভীর বনভূমি, অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর বন্যপ্রাণি এবং অজানা সব মানুষের কথা প্রচার হতে শুরু করে। ইউরোপীয় অভিযাত্রী ও ভাগ্যন্বেষীরা সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান খনিজসম্পদ নিয়ে ফিরে আসেন। ভৌগোলিক জ্ঞান সম্পদ লাভের চাবিকাঠিতে পরিণত হয়।
ইউরোপীয়রা যখন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের স্থাপিত উপনিবেশগুলোতে সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নতুন ভূখণ্ডের সন্ধানে ছুটে চলছে, তখন কিছুসংখ্যক বিজ্ঞানী প্রাপ্ত নতুন নতুন তথ্যগুলো যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণে বের হন। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট তাদের মধ্যে অন্যতম, যিনি সম্পদ নয়- জ্ঞান আহরণের জন্য নতুন মহাদেশ আমেরিকায় পাড়ি জমিয়ছিলেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশের ওরিনোকো নদী পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন এবং ইকোয়েডর, পেরুতে মাঠজরিপ করেন। ১৮০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পূর্বে তিনি কিউবা ভ্রমণ করেন এবং মেক্সিকো পাগড় দেন। পরবর্তীতে তিনি সােইবেরিয়াসহ রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। পরবর্তীতে প্যারিসে স্থায়ী হয়ে তিনি আমেরিকা ভ্রমণের ওপর ৩০টি বই লেখেন এবং উনিশ শতকের বংশগতিসংক্রান্ত সেরা বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ হিবে পরিচিত ছয় খণ্ডের ‘কসমস’ সিরিজটি প্রকাশ করেন।
হামবোল্টের রচনা থেকে আমরা তার সময়ের প্রাকৃতিক ভূগোলের রাজ্য সম্পর্কে জানতে পারি। এটি প্রমাণিত হয় যে, প্রাকৃতিক ভূগোল কেবলমাত্র পৃথিবীর পৃষ্ঠসম্পর্কিত বিষয়াদিই অধ্যয়ন করে না, এটি এখন মৃত্তিকা, উদ্ভিজ্জ, প্রাণী, সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডল প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে সমীক্ষা করে। যদিও ‘ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি’ শব্দটি সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছে, তথাপি ব্যাপক বিস্তৃত ক্ষেত্রের জন্য এর নাম ‘ন্যাচারাল জিওগ্রাফি’ হলেই অধিক মানানসই হতো।
রাশিয়া
প্রাকৃতিক ভূগোলের উন্নয়নে তৎকালীন সম্পদশালী রাশিয়ার জারগণ (সম্রাটগণ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অষ্টাদশ শতাব্দির মদ্যভাগে রাশিয়ার শাসকরা অনেক ভূগোলবিদকে মেরুপ্রদেশীয় সাইবেরিয়ার বিভিন্ন সম্ভাব্যতা জরিপের জন্য প্রেরণ করেছিলেন। রাশিয়ান ভূগোলবিদগণের মধ্যে মিখাইল লমোনোসোভ (Mikhail Lomonosov, 1711-1765)-কে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি সাইবেরিয়ার গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণার উল্লেখযোগ্য অবদানগুলো হচ্ছে- মৃত্তিকার জৈবিক উৎস উদ্ঘাটন, বরফখণ্ড বিচলনের একটি সমন্বিত নতির বিকাশসাধন, যা অদ্যাবধি মৌলিক হিসেবে বিবেচিত এবং তদানুযায়ী হিমবিজ্ঞান (Glaciology) নামে ভূগোলের একটি নতুন শাখার গোড়াপত্তন। লমোনোসোভের পথ ধরে উনবিংশ শতকে রাশিয়ার ভাসিলিভিচ ডকোচেভ (Vasily Vasili'evich Dokuchaev, 1846 –1903)-এর মতো বিখ্যাত ভূগোলবিদের জন্ম হয়। তিনি ‘ভূখণ্ড বা অঞ্চলের সমন্বিত নীতি’ (principle of comprehensive analysis of the territory) এবং রাশিয়ান শেরনোজেম (Russian Chernozem)-এর ওপর অবদান রাখেন, যা পরবর্তী সময়ে সহজে চিহ্নিতকরণযোগ্য ভূত্বকীয় স্তর মৃত্তিকা সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক ধারণার সাথে পরিচিত করে| তিনি প্রথম মৃত্তিকার শ্রেণিবিন্যাস এবং মৃত্তিকা গঠনের পাঁচটি উপাদান চিহ্নিত করেন। এভাবে নতুন ভৌগোলিক সমীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে মৃত্তিকাবিজ্ঞান (Pedology) প্রতিষ্ঠিত হয়। একারণে ভিসিলি ডকোচেভকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। রাশিয়ান পণ্ডিতদের অবদানে জলবায়ুবিজ্ঞানও ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হয়। রাশিয়ার জলবায়ুবিজ্ঞানীদের মধ্যে জার্মান বংশোদ্ভুত ভ্লাদিমির কোপেন (Wladimir Köppen) সকলের অগ্রগণ্য। তিনি বিশ্বের জলবায়ু অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ করেন, যা আজও সঠিক হিসেবে সমাদৃত। যাহোক, এ মহান ভূগোলবিদ তার কাজের মাধ্যমে পুরাজলবায়ুবিজ্ঞানে (Paleoclimatology) অবদান রাখেন। ‘ভূতাত্ত্বিক অতীতের জলবায়ু’ (The climates of the geological past) নামে তার গবেষণার জন্য তাকে পুরাভূগোলের (Paleogeography) জনক বলা যায় (আলম, কে. আশলাফুল-২০১৪)।
আমেরিকা
উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের প্রথমভাগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ভূগোলবিদ উইলিয়াম মরিস ডেভিস (W.M. Davis)-এর অবদান। ভূগোলের সাধারণ তত্ত্ব হিসেবে তার প্রদত্ত ‘ভৌগোলিক চক্র’ (geographical cycle) কেবল বিষয় হিসেবে ভূগোলকে তার দেশে প্রতিষ্ঠিত করেনি, বরং প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটি মহামডেল (paradigm) হিসেবে কাজ করে। ডেভিসের মতানুসারে, সময়ের বিবর্তনে ভূগঠন পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যায়। (উইলিয়াম মরিস ডেভিসের এ গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফলে ভূরূপবিজ্ঞান (Geomorphology) নামে ভূগোলের একটি নতুন শাখা বিকাশ লাভ করে।
প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তীত হয়েছে। ১৮৫০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে জ্ঞানের এ শাখায় চারটি প্রধান ধারণা খুবই জোড়ালোভাবে প্রভাববিস্তার করেছিলো; যথা- (১) সমতাবাদ (Uniformitarianism) : এ তত্ত্ব পৃথিবীর বর্তমান অবস্থর জন্য বিপর্যয় শক্তি (catastrophic force) দায়ী এ ধারণা বাতিল করে দেয়। এর পরিবর্তে ধারণা দেয় যে, অবিরত সমতাসাধনের বিদ্যমান প্রক্রিয়াসমূহ আমাদের গ্রহটির অতীত ও বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। (২) বিবর্তনবাদ (Evolution theory) : চার্লস ডারোউনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বে প্রভাবিত হয়ে প্রকৃতিবিজ্ঞানীগণ প্রাকৃতিক প্রপঞ্চের (phenomena) বিভিন্নতার বিবর্তনমূলক ব্যাখ্যা প্রদান শুরু করেন। (৩) তথ্যানুসন্ধান ও জরিপ (Exploration and Survey) : ১৯০০ সালের পূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান আবিষ্কার ও সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধান ও জরিপ কাজে প্রাকৃতিক ভূগোলের সকল ক্ষেত্র সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলো। (৪) সংরক্ষণ (Conservation) : ১৮৫০ সালের প্রথম দিক থেকে একসময়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যবিশিষ্ট এলাকায় মানবিক উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের চিন্তাভাবনা শুরু হয়।
১৯৫০ সালের পর থেকে দুটি শক্তি প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি নির্ধারণে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখে। যথা- (১) সংখ্যাতাত্ত্বিক বিপ্লব (Quantitative Revolution) : এসময়ে প্রাকৃতিক ভূগোলে সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ কেন্দ্রীয় মনোযোগের বিষয়ে পরিণত হয়। মানচিত্রায়ন, মডেলসমূহ, পরিসংখ্যান, গণিত ও প্রকল্প পরীক্ষণ সবকিছু আসে পরিমাপ থেকে। (২) মানব-ভূমি সম্পর্ক (Human/Land Relationships) : পরিবেশের ওপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব ১৯৫০ এর দশকের পর থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক ভূগোলের বহু গবেষক পরিবেশের ওপর মানুষের প্রভাবের বিষয়ে সমীক্ষা শুরু করেন (আলম, কে. আশরাফুল-২০১৫)।
প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্রসমূহ
পৃথিবী সম্পর্কে তথ্য আহরণের মধ্যদিয়ে ভৌগোলিক জ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছিলো। বর্তমান যুগে মানুষের জ্ঞানের পরিধি এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে যে, কোনো একজন ব্যক্তির পক্ষে সমস্ত ভৌগোলিক জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব নয়। ফলে দেখা দিয়েছে বিশেষায়নের ঝোঁক। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের মতো প্রাকৃতিক জগতের বিষয়ে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আজকের দিনে বিরল। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ভৌগোলিক জ্ঞানের সন্ধানে উত্তরোত্তর জটিল-কঠিন পদ্ধতি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশেষায়ন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানে বিশেষায়নের প্রয়োজন আছে। প্রথমে সামগ্রিক জ্ঞানকে কতকগুলো বিষয়ে খণ্ড করা হয়, আবার প্রতিটি বিষয়কে কতিপয় বিশেষীকরণে ভাগ করা হয়। এভাবেই বিজ্ঞানের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। বিগত শতকে প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন বিষয় একটি গুচ্ছ হিসেবে বিকশিত হয়েছে (ব্লিজ-১৯৯৩)।১. ভূরূপবিজ্ঞান (Geomorphology) : ভূদৃশ্যের ভূগোল ‘ভূরূপবিজ্ঞান’ বা ভূমিরূপবিজ্ঞান প্রাকৃতিক ভূগোলের সর্বাপেক্ষা উৎপাদনশীল একটি ক্ষেত্র। মূল ইংরেজি পরিভাষাটি চয়ন করেন জার্মান ভূতত্ত্ববিদ আলবার্ট প্যাঙ্ক (Albert Penck)। গ্রিক তিনটি শব্দ Geo অর্থ পৃথিবী, morph অর্থ গঠন বা আকার এবং logos অর্থ বর্ণনা দিয়ে ভূপৃষ্ঠের গঠনকাঠামো সম্পর্কিত আলোচনার ক্ষেত্রকে বোঝানো হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের অবয়বসমূহের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রকৃতি এবং এগুলোর উদ্ভবের পশ্চাতে ক্রিয়াশীল কার্যকারণ প্রভৃতির বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনাই হচ্ছে ভূরূপবিজ্ঞান। ভূরূপবিজ্ঞান হচ্ছে ভূগোলের সেই শাখা, যাতে অভ্যন্তরীণ অবস্থাসহ পৃথিবীর উপরিভাগের ভূদৃশ্য পরিবর্তনকারী প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে।
ভূরূপবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু মূলত (১) ভূমির বন্ধুরতা বা ভূগঠনের দিক এবং স্কেল, (২) পদ্ধতি- যা ভূপৃষ্ঠের আকৃতি প্রদান করে, এবং (৩) যে দৃষ্টিভঙ্গিতে ভূমিরূপ পর্যালোচনা করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে (আলম, ২০১৪)।২. জলবায়ুবিজ্ঞান (Climatology) : আবহবিদ্যা ও প্রাকৃতিক ভূগোল যৌথভাবে জলবায়ু ও তার বিস্তৃতি আলোচনার জন্য জলবায়ুবিজ্ঞান গঠন করেছে। জলবায়ুবিজ্ঞান কেবলমাত্র জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ বা বিস্তৃতিই পর্যালোচনা করে না, বৃহত্তরভাবে এটি মানব সমাজের সাথে জলবায়ুর সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন, উদ্ভিজ্জের ধরন, মৃত্তিকা গঠনসহ পরিবেশের বিভিন্ন প্রশ্ন ও অন্তর্ভুক্ত করে। পৃথিবীকে বেষ্টনকারী বায়ুমণ্ডলের উপাদন এবং এদের বৈশিষ্ট্যের বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনাই হচ্ছে আবহবিদ্যা ও জলবায়ুবিজ্ঞান। নির্দিষ্ট সময়ে কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলোর সমষ্টিগত অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। অপরদিকে, কোনো স্থানের আবহাওয়ার দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা পর্যালোচনা করলে যে সাধারণ অবস্থা দেখা যায়, তাকে জলবায়ু বলে। জলবায়ুবিজ্ঞানের তিনটি শাখা রয়েছে। এগুলো হলো : (১) প্রাকৃতিক জলবায়ুবিজ্ঞান, (২) আঞ্চলিক জলবায়ুবিজ্ঞান ও (৩) ফলিত জলবায়ুবিজ্ঞান।৩. জীবভূগোল (Biogeography) : জীববিজ্ঞানের দিক থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান, বাস্তুবিদ্যা ও প্রাণিবিজ্ঞান- এ তিনটি উপক্ষেত্র প্রাকৃতিক ভূগোলের সাথে সম্পর্কিত। যখন জীববিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক ভূগোল উপরিস্থাপিত (overlap) হয়, তখন বৃহৎ উপক্ষেত্র জীবভূগোলের সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেখানে জীবভূগোল নিজেই বিশেষায়িত। প্রাকৃতিক ভূগোল উদ্ভিদবিদ্যার সমন্বয়ে উদ্ভিদভূগোল গঠন করে এবং প্রাণিবিদ্যার সাথে সমন্বয়ে প্রাণিভূগোল উপক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। স্মর্তব্য যে, জীবভূগোল নিজেই বাস্তুবিদ্যার সংযোজক, যা এই উপক্ষেত্র দুটির মধ্যে অবস্থান করে; বাস্তবে প্রাণিভূগোল ও উদ্ভিদ ভূগোল উভয়েই জীবভূগোলের অন্তর্ভুক্ত। জীবমণ্ডলের পর্যালোচনাই হচ্ছে জীবভূগোল, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ, মৃত্তিকা, প্রাণী ও উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জীবভূগোল শব্দটি দ্বারা জীববিজ্ঞান ও ভূবিদ্যা উভয়কে একত্রে নির্দেশ করে। অশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও বারিমণ্ডলে জীবের বসবাসের উপযোগী অংশ যা জীবমণ্ডল নামে পরিচিত- এর আলোচনার ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। জীবমণ্ডলের জৈব বিষয়গুলো উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, প্রাণ-রসায়ন প্রভৃতি শাখায় পর্যালোচনা করা হলেও জ্ঞানের পৃথক শাখা হিসেবে ভূগোল এর অর্থ ও বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোকপাত করে থাকে।৪. মৃত্তিকা ভূগোল (Soil Geography) : প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্র মৃত্তিকা ভূগোলের সম্পর্ক রয়েছে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের (Soil Science) বা পেডোলজির (Pedology) সাথে। পেডোলজিস্টরা মৃত্তিকার অভ্যন্তরীণ গুণাবলি এবং মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়ার ওপর আলোকপাত করে থাকেন। মৃত্তিকা ভূগোলে মৃত্তিকার পারিসরিক ধরন, বিস্তৃতি এবং জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ ও মানুষের সাথে সম্পর্কের বিষয় আলোচনা করা হয়।৫. সমুদ্র ভূগোল (Marine Geography) : সমুদ্র ভূগোল সমুদ্রবিজ্ঞানের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি গঠনে সহায়তাকারী অন্যতম উপাদান যেমন মানবীয়, তেমনি প্রাকৃতিক। যে শাস্ত্রে বারিমণ্ডলের সমীক্ষা করা হয়, তাকে সমুদ্রবিজ্ঞান বলে। এটি বারিমণ্ডলের প্রাকৃতিক ও জৈবিক বিষয়গুলো বর্ণনা করে। সমুদ্রবিজ্ঞান অনেকগুলো উপক্ষেত্রে বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র ভূতত্ত্ব, সমুদ্র ভূরূপবিজ্ঞান, প্রাকৃতিক সমুদ্রবিদ্যা, সমুদ্রের জলের রসায়ন, জৈব সমুদ্রবিদ্যা ইত্যাদি (আলম, ২০১৪)।5. জ্যোতির্বিজ্ঞান' আদি বিজ্ঞানের প্রকৃতি গুগলের নিজস্ব শাখা হলো জ্যোতির্বিজ্ঞান। ভূগোলের এই শাখায় সৌরমণ্ডল তথা মহাবিশ্বের সমস্ত গ্রহ নক্ষত্র,ব্ল্যাকহোল,গ্যালাক্সি সম্পর্কে ভূগোলের শাখায় আলোচনা করা হয়। একটি প্রাকৃতিক ভূগোলের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন শাখা।
প্রাকৃতিক ভূগোলের উদ্দেশ্য
বায়ু, জল, জীব, মৃত্তিকা এবং ভূগঠন প্রাকৃতিক ভূগোল আলোচনার প্রধাণ উদ্দেশ্য এবং মানুষ কর্তৃক ভূপৃষ্ঠে এসবের ব্যবহার সাধারণভাবে আলোচনা করা হয়। আবার পৃথিবীকে মানুষের সর্বোত্তম ব্যবহারের স্বার্থে বিজ্ঞানীগণ আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন। প্রাকৃতিক ভূগোল আলোচনার উদ্দেশ্যকে তাদের মাত্রা (dimension) এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভাগ করা যায়।
আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বসবাস ও হাঁটাচলা করি, প্রাকৃতিক ভূগোলে ভূপৃষ্ঠ বলতে তারও থেকে বেশি কিছু বোঝায়। ভূপৃষ্ঠ কেবল একটি আয়তন (volume) নয়, বরং এর সাথে মানুষের সম্পর্ক ও অনুভবের দ্বারা একে চিহ্নিত করতে হবে।
এ আয়তনের কেন্দ্রে রয়েছে ভূপৃষ্ঠ, যেখানে আমরা বসবাস করি। এরসাথে ভূপৃষ্ঠের ঠিক নিচে ভূত্বকের একটি অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভূমিরূপ ভূত্বকের পৃষ্ঠকে সজ্জিত করেছে, যা মূলত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তির কর্মকাণ্ডের ফলাফল। ভূপৃষ্ঠের উপরের বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশ এ আয়তনের অন্তর্ভুক্ত, যা প্রাকৃতিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়। বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়া ও অবস্থা ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন আবহাওয়া ও জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে ভূপৃষ্ঠের উপর ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, ভূত্বকের নিচের কিছু অংশ, জল ও স্থলভাগসহ সমগ্র ভূপুৃষ্ঠ এবং এর উপরের প্রায় ২০ কিমি ব্যাপী বায়ুমণ্ডল এ আয়তনের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে প্রাকৃতিক ভূগোলে স্থলভাগ বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। কারণ এটি হাতের কাছে এবং মানুষের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। যাহোক, খাদ্য, খনিজ, জ্বালানি ইত্যাদির প্রধাণ উৎস এবং ভূপৃষ্ঠে পরিবহনের প্রধাণ মাধ্যম হিসেবে মহাসাগরগুলো ক্রমবর্ধমানহারে মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
অশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল ও জীবমণ্ডলের প্রতিটি পদার্থ কিছুসংখ্যক উপাদান দ্বারা গঠিত। যেমন- বায়ুমণ্ডলকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হয়। শিলা, ভূমিরূপ, মৃত্তিকা ইত্যাদি অশ্মমণ্ডলের উপাদান। নদী, হ্রদ, হিমবাহ, বরফাবরণ, মহাসাগর ইত্যাদি বারিমণ্ডলের অংশ এবং উদ্ভিজ্জ ও প্রণী জীবমণ্ডলের অংশ (জেমস, এস. গার্ডনার, ১৯৭৭)।১০ প্রকৃতপক্ষে, বিভিন্ন উপাদানের সন্বেয়ে প্রাকৃতিক ভূগোলের অনেক প্রপঞ্চ (phenomenon/ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) গঠিত হয়।
প্রাকৃতিক ভূগোলে এরসব উপাদানগুলোর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দ্বারা পৃথিবীর বর্ণনা করা যায়। এগুলো সময়ে বা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রায়শ পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যেমন- তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বর্ষণ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুচাপ হচ্ছে বায়ুমণ্ডীয় চলরাশি বা সূচক, যা কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ও সময়ের আবহাওয়া অবস্থা প্রকাশ করে। এদের প্রকৃতি এবং দীর্ঘ সময়কালে এগুলোর পরিবর্তন জলবায়ুর অবস্থা বর্ণনা করে। তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বর্ষণ ইত্যাদির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়। এসব চলরাশি বা সূচক ভৌগোলিক পার্থক্য প্রদর্শন করে, একই সাথে এর দ্বারা জলবায়ু অঞ্চল নির্ধারণ করা যায় (আলম, ২০১৪)।
যখন একটি চলরাশি বা সূচকের পরিবর্তন অপর একটি চলরাশি বা সূচকের পরিবর্তন ঘটায়, তখন উপাদানগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটে।চলরাশি বা সূচক গুলো কীভাবে একে অপরের ওপর প্রভাববিস্তার করে তা জানা থাকলে প্রপঞ্চ (ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) গুলোর পরিবর্তন ও ভৌগোলিক ব্যাখ্যা করা যায়।
এরূপ মিথস্ক্রিয়া সাধারণত অনেক বেশি জটিল হয়ে থাকে। বাস্তবে অসংখ্য চলরাশি বা সূচক একসাথে মিথস্ক্রিয়া করে। সিস্টেমগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সম্পর্কগুলোকে মডেলরূপে তৈরি করার প্রয়াস চালানো হয়। প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রধাণ উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ বা আয়তনকে বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, অশ্মমণ্ডল, জীবমণ্ডল এবং মানুষের পারস্পরিক মিথস্কিয়াকে একটি পদ্ধতি (system) হিসেবে উপস্থাপন করা (জেমস, এস. গার্ডনার, ১৯৭৭).
প্রাকৃতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি
প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এতে অশ্মমণ্ডল, বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও জীবমণ্ডল- এ চারটি মণ্ডলের উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে ও গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করা হয়।
উল্লেখিত চারটি উপাদান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভের জন্য পৃথিবীর উৎপত্তি, বয়স, ভূঅভ্যন্তরের গঠন এবং সমুদ্রের পর্যঙ্ক প্রভৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ সমীক্ষা করা হয়। ভূআলোড়নের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃজ শক্তির অধ্যয়ন, উভয়বিধ শক্তির মিথস্ক্রিয়া এবং এদের ফলাফল সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করে। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শক্তি ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের উঁচুনিচু ভূমিরূপের সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, বায়ুমণ্ডল থেকে সৃষ্ট বহিঃজ শক্তি ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থানগুলোকে সমুদ্র সমতলে নামিয়ে আনার কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকে।
প্রাকৃতিক ভূগোলে ভূপৃষ্ঠের পর্বতমালা, ভাঁজ, চ্যুতি প্রভৃতি বন্ধুর ভূপ্রকৃতির উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য এবং বিস্তৃতি বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, এদের বিস্তৃতি এবং অগ্ন্যুঃপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ ও বিপর্যয়, যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর প্রভাববিস্তার করে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। বহিঃজ শক্তির দ্বারা (বিচূর্ণীভবন, ক্ষয়ীভবন, নগ্নীভবন) সৃষ্ট ভূপৃষ্ঠের অবয়বগুলোর পর্যালোচনা থেকে ভূমিরূপ পদ্ধতি এবং এর কাজের ধরন (প্রবহমান জলরাশি, ভূগর্ভস্থ জল, সমুদ্র ঢেউ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদি দ্বারা ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ) সম্পর্কে জানা যায় (আলম, ২০১৪)।
বারিমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলোর পর্যালোচনায় সমুদ্র তলের বন্ধুরতা, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, সমুদ্রের সঞ্চয়, জোয়ার-ভাটা, সমুদ্র স্রোত, প্রবাল প্রাচীর, এটল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানগুলোর পর্যালোচনায় বায়ুমণ্ডলের সংমিশ্রণ, গঠন, উপাদান, জলবায়ু ও আবহাওয়ার নিয়ামক, সৌরতাপ, সৌর বিচ্ছুরণ, তাপসমতা, ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বর্ষণ, বায়ুভর, বায়ুপুঞ্জ, ঘূর্ণিঝড়, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, মৃত্তিকা ক্ষয় ও সঞ্চয়ন, পরিবেশ দূষণ, দুর্যোগ ও বিপর্যয় ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশের ধারাবাহিক পর্যালোচনা একই সাথে মানুষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের আন্তঃক্রিয়ার সম্পর্ক প্রাকৃতিক ভূগোলের সমীক্ষার বিষয়। নিম্নলিখিত কারণে প্রাকৃতিক ভূগোলের পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুতে প্রধাণ পরিবর্তনগুলো সূচিত হয়ে থাকে :
১. প্রাকৃতিক ভূগোল মানুষের কল্যাণে অধিকতর অর্থবহ ও প্রায়োগিক এবং মানবীয় ভূগোলের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। জ্ঞানের শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল সংবদ্ধ এবং সমাজের সাথে অধিকতর সম্পর্কিত করার ইচ্ছা সর্বজনীন।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের প্রতি মানুষের অধিকতর মনোযোগ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের বৈরী আচরণের ফলে পরিবেশগত ভরেসাম্য বিনষ্ঠ এবং প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান।
৩. বহিরাঙ্গন ও গবেষণাগারে যান্ত্রিকায়ন ও বিভিন্ন ভূমিরূপ পদ্ধতি পরিমাপের ক্রিয়াপদ্ধতি এবং উপাত্তসমূহের গাণিতিক বিশ্লেষণের প্রতি অধিকতর গুরুত্বারোপ।
৪. কতিপয় বিশেষ অবয়ব, যেমন- বাস্তুপদ্ধতি এবং বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতা, জলবিজ্ঞান, প্লেট টেকটোনিক্স ইত্যাদির প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেওয়া।
৫. সাম্প্রতিক সময়ে ম্যাক্রো-টেম্পোরাল (macro-temporal) স্কেলের পরিবর্তে মাইক্রো-টেম্পোরাল (micro-temporal) স্কেল এবং বৃহৎ ম্যাক্রো-স্পেশিয়াল (macro-spatial) স্কেলের পরিবর্তে ক্ষুদ্র মাইক্রো-স্পেশিয়াল (micro-spatial) স্কেল; ভূমিরূপ ও পারিবেশিক (environmental) পদ্ধতির সমীক্ষায় সমাজের সাথে অধিক সম্পর্কযুক্ত পারিবেশিক সমস্যাসমূহ সমাধনের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে (আলম, ২০১৪)।
প্রাকৃতিক ভূগোলের শাখা
ভূগোল অসংখ্য বৃহত্ উপশাখায় বিভক্ত, যাদের মধ্যে রয়েছে:
{| style="border:1px solid #ddd; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15"
| 96px || 96px || 96px || 96px
|-
| জীবভূগোল || আবহাওয়াবিদ্যা ও জলবায়ুবিদ্যা || উপকূলীয় ভূগোল || পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা
|-
| 96px || 96px || 96px ||96px
|-
| গাণিতিক ভূগোল || ভূতত্ত্ববিদ্যা || হিমবাহবিদ্যা || জলবিদ্যা ও জলবিজ্ঞান
|-
| 96px || 96px || 96px || 96px
|-
| ভূস্থিত বাস্তুসংস্থান || সমুদ্রবিদ্যা || মৃত্তিকাবিদ্যা|| প্রত্নভূগোল
|-
| 96px
|-
| কোয়াটার্নারি বিজ্ঞান
|}
মানবীয় ভূগোল
মানবীয় ভূগোল হল ভূগোলের এমন একটি শাখা যা মানব সমাজের আকৃতিগত পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। এতে মানুষ, তার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, এবং আর্থনৈতিক দিক নিয়ে পর্যালোচনাভূক্ত।
মানবিক ভূগোলে পৃথিবীপৃষ্ঠে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা, স্থানিক পার্থক্য এবং এই পার্থক্যের পেছনে প্রাকৃতিক প্রভাবকের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়।
মানবীয় ভূগোলকে অনেকগুলো বিস্তৃত ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন:
{| style="border:1px solid #ddd; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15"
| 96px || 96px || 96px || 96px
|-
|সাংস্কৃতিক ভূগোল || উন্নয়ন ভূগোল|| অর্থনৈতিক ভূগোল || স্বাস্থ্য ভূগোল
|-
| 96px || 96px || 96px || 96px
|-
| ঐতিহাসিক ভূগোল ও কালীক ভূগোল|| রাজনৈতিক ভূগোল ও ভৌগোলিকবিদ্যা|| জনসংখ্যা ভূগোল বা জনমিতি|| ধর্ম ভূগোল
|-
| 96px || 96px || 96px|||96px
|-
| সামাজিক ভূগোল || পরিবহন ভূগোল || পর্যটন ভূগোল|| নগর ভূগোল
|}
কালে কালে মানবীয় ভূগোল গবেষণা করার বিভিন্ন পন্থা উদ্ভাবিত হয়েছে এবং এর অন্তর্ভুক্ত পদ্ধতিগুলো হচ্ছে:
আচরণিক ভূগোল
নারীবাদী ভূগোল
সংস্কৃতি তত্ত্ব
ভূজ্ঞান
শ্রম বিজ্ঞান
মানচিত্র অংকনবিদ্যা
প্রধান কয়েকজন ভূগোলবিদ
এরাতোস্থেনেস বা এরাটোস্থেনিস (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৬ - ১৯৪ অব্দ) : সর্বপ্রথম "ভূগোল" শব্দটি ব্যবহার করেন ও পৃথিবীর আয়তন নির্ণয় করেন।
স্ট্রাবো (খ্রিষ্টপূর্ব ৬৪/৬৩ - খ্রিষ্টীয় ২৪ অব্দ) : ভূগোল বিষয়ক প্রথম বিশ্বকোষীয় গ্রন্থ "The Geographica" -এর লেখক।
টলেমি (খ্রিস্টীয় ৯০ - ১৬৮ অব্দ) : "Geographia" নামক গ্রন্থে গ্রীক ও রোমানদের আহরিত জ্ঞানকে সুসঙ্গবদ্ধ করেন।
আল-ইদ্রিসি (১১০০ - ১১৬৫/৬৬) : "নুজহাতুল মুসতাক" গ্রন্থের লেখক।
জেরারডাস মারকেটর (১৫১২ - ১৫৯৪) : অন্যতম প্রধান মানচিত্র অঙ্কনবিদ ও "মার্কেটর অভিক্ষেপ"-এর প্রবর্তক।
আলেকজান্ডার ফন হুমবোল্ড্ট্ (১৭৬৯ - ১৮৫৯) : আধুনিক ভূগোলের জনক বলে গন্য করা হয় ও "জীব-ভূগোল"-এর প্রবর্তক।
কার্ল রিটার (১৭৭৯ – ১৮৫৯) : আধুনিক ভূগোলের জনক বলে গন্য করা হয় ও বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা।
প্রকাশন African Geographical ReviewGeographical Review''
আরও দেখুন
জীবভূগোল
মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা
জলবায়ুবিদ্যা
সাংস্কৃতিক ভূগোল
জনসংখ্যাতত্ত্ব
অর্থনৈতিক ভূগোল
ভূগণিত
ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা
ভূমিরূপবিদ্যা
হিমবিদ্যা
জিপিএস
ঐতিহাসিক ভূগোল
জলবিজ্ঞান
ভূদৃশ্য বাস্তুশাস্ত্র
সমুদ্রবিজ্ঞান
প্রত্নভূগোল
প্রাকৃতিক মৃত্তিকাবিজ্ঞান
গ্রহসম্পর্কীয় বিজ্ঞান
দূর অনুধাবন
পরিবহন ভূগোল
নগর ভূগোল
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:ভূগোল
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:ভূবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:সামাজিক বিজ্ঞান |
সমাজ | https://bn.wikipedia.org/wiki/সমাজ | |
প্রকৃতি | https://bn.wikipedia.org/wiki/প্রকৃতি | |
প্রযুক্তি | https://bn.wikipedia.org/wiki/প্রযুক্তি | থাম্ব|upright=1.35|একটি স্টিম টারবাইন। এরকম টারবাইনই আজকাল ব্যবহৃত সর্বাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বিদ্যুতের ব্যবহার ও জীবনযাত্রার মান একে অপরের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
প্রযুক্তি হল কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া-সমষ্টি, যা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে বা উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়; যেমন: বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান। প্রযুক্তি হতে পারে কৌশল ও প্রক্রিয়ার জ্ঞান বা এটি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে শুধুমাত্র যন্ত্রের ধারণা যে, এটি কীভাবে পরিচালিত হয় এগুলো সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান ব্যতীত। কৌশল, ( অর্থাৎ মেশিন বা যন্ত্র) যা প্রযুক্তির ইনপুট ব্যবহার নিয়ে ১টি আউটপুট ফলে পরিণত করে তাকে প্রযুক্তি কৌশল বা প্রযুক্তিগত কৌশল বলে।
প্রযুক্তির সরলতম রূপ হল মৌলিক সরঞ্জামের বিকাশ ও ব্যবহার। প্রাগৈতিহাসিক কালে আগুন নিয়ন্ত্রণের আবিষ্কার ও পরবর্তীকালে নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব খাদ্যের উৎসের বৃদ্ধি করেছে এবং চাকার আবিষ্কার মানুষকে এই পরিবেশে পরিভ্রমণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছে। ক্রমে ক্রমে ছাপাখানা, টেলিফোন, মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের আবিষ্কার যোগাযোগ ক্ষেত্রে মানুষের শারীরিক বাঁধাকে দূর করেছে এবং মানুষকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্তভাবে যোগাযোগে সক্ষম করেছে।
প্রযুক্তির অনেক প্রভাব রয়েছে। এটি অধিক সমৃদ্ধ অর্থনীতি বিকাশে সাহায্য করেছে (বর্তমানের বৈশ্বিক অর্থনীতি সহ) এবং যার ফলে বিলাসী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে।অনেক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত উপজাত উৎপন্ন হয় যা দূষণ হিসেবে পরিচিত এবং যা প্রাকৃতিক সম্পদের অবনতির মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশের ক্ষতি করে। উদ্ভাবন সর্বদাই সমাজের মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে ও সাথে সাথে প্রযুক্তির শিষ্টাচার নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।উদাহরণের মধ্যে রয়েছে দক্ষতার ভিত্তিতে খ্যাতির নির্ধারণ জৈব শিষ্টাচার কে বাধাগ্রস্ত করে।
প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে দার্শনিক যুক্তি তর্ক এখনো একমত নয় যে এটি মানুষের পরিস্থিতির উন্নতি করেছে নাকি অবনতি করছে। নব্য-লুডিজম, অ্যানার্কো-আদিমবাদ এবং অনুরূপ প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন প্রযুক্তির বিস্তারকে সমালোচনা করে যুক্তি দেন যে এটি মানুষের ক্ষতি করে। অন্যদিকে টেকনো-প্রগতিবাদ মতামতের সমর্থকরা প্রযুক্তিকে সমাজের পক্ষে উপকারী মনে করেন।
প্রযুক্তি বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়। নিজের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে প্রজাতিটি কেমন খাপ খাওয়াতে পারছে এবং তাকে কীভাবে ব্যবহার করছে তাও নির্ধারণ করে প্রযুক্তি। মানব সমাজে প্রযুক্তি হল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল। অবশ্য অনেক প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন থেকেই আবার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের অনেক জ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। মানব সমাজের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সংজ্ঞায় বলা যায়, "প্রযুক্তি হল কিছু প্রায়োগিক কৌশল যা মানুষ তার প্রতিবেশের উন্নয়নকার্যে ব্যবহার করে।" যেকোন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তা দক্ষভাবে ব্যবহারের ক্ষমতারকেও প্রযুক্তি বলা হয়।
আমরা যে পৃথিবী তে বাস করি তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। প্রযুক্তি হল জ্ঞান, যন্ত্র এবং তন্ত্রের ব্যবহার কৌশল যা আমরা আমাদের জীবন সহজ করার স্বার্থে ব্যবহার করছি।
সংজ্ঞা ও ব্যবহার
থাম্ব|বাম|upright|পশ্চিমাবিশ্বে কাগজ ও ছাপাখানার বিস্তৃতি বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদদের তাদের মতাদর্শ প্রকাশে সাহায্য করে, যার ফলে আলোকিত যুগের উত্থান ঘটে, যা সাংস্কৃতিক উপাদান হিসেবে প্রযুক্তির উদাহরণ।
‘প্রযুক্তি’ শব্দটির ব্যবহার গত ২০০ বছরের তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর আগে এই শব্দটি ইংরেজিতে অপরিচিত ছিল যা সাধারণত কখনো কখনো প্রয়োজনীয় কলারব্যাখ্যা দিতে ব্যবহৃত হতো আবার কখনো কখনো ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এর কৌশলগত বিদ্যাকে বোঝানো হতো (১৮৬১ সালে তালিকাভুক্ত)।
‘প্রযুক্তি’ শব্দটি প্রাধান্য পায় দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সান্নিধ্যের মাধ্যমে।এই শব্দটির অর্থ বিংশ শতাব্দীতে পরিবর্তিত হয় যখন থর্স্টেইন ভেবলেন থেকে শুরু করে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানীরা জার্মান Technik থেকে ‘প্রযুক্তি’ এর অনুবাদ করা শুরু করেন। জার্মান ও ইউরোপীয় ভাষায় technik এবং technologie দুটি শব্দ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে কিন্তু ইংরেজিতে এ দুটিকেই একই অর্থে ‘Technology’ তে অনুবাদ করা হয়েছে। ১৯৩০ এর দশকে প্রযুক্তি কেবল ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি।
১৯৩৭ সালে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী রেড বাইন লিখেছিলেন ‘ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে সমস্ত মেশিন, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি এবং যোগাযোগ ও পরিবহনের ডিভাইস ও দক্ষতা যা আমরা তৈরি এবং ব্যবহার করি। বাইন এর সংজ্ঞা আজ ও পরিচিত বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছে। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা যেকোনো কিছু তৈরি ও ব্যবহার কে প্রযুক্তির সংজ্ঞা দেওয়ার চাইতে এটিকে ফলিত বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করতে অধিক আগ্রহী। সম্প্রতি বিভিন্ন যান্ত্রিক কারণে অনেক বিজ্ঞানীরা ইউরোপীয় দার্শনিকদের চিন্তা ধারাকে বিবেচনা করেন প্রযুক্তিকে বিশ্লেষণ করতে যেমন করা হয়েছে ফোকল্টসের টেকনোলজিস অফ দ্যা সেলফ।
অভিধান ও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন। মেরিয়ামিয়াম-ওয়েস্টার লার্নার্স ডিকশনারি বিষয়টির এইরকম সংজ্ঞা প্রদান করে ‘প্রযুক্তি হল শিল্প ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার যা প্রয়োজনীয় জিনিস আবিষ্কার ও সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়’ এবং ‘মেশিন বা সরঞ্জাম হল প্রযুক্তির তৈরি ফলাফল’। উরসুলা ফ্রাঙ্কলিন ১৯৮৯ সালে তাঁর ‘রিয়েল ওয়ার্ল্ড অফ টেকনোলজি’ লেকচারে এই ধারণাটির অন্য একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন ‘ এটি হলো আমরা চারপাশের কাজ কীভাবে করি তার কৌশল। এটি প্রায়শই ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি বা উচ্চতর প্রযুক্তিকে বুঝায়’। বার্নার্ড স্টিলগার ‘প্রযুক্তি ও সময়-১’ প্রযুক্তিকে দুইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যেমন - ‘জৈবিক উপায় ছাড়া জৈবিক কার্য সাধন’ এবং ‘সুসংহত অজৈব পদার্থ’ হিসেবে।
বিস্তর পরিসরে প্রযুক্তি হল মানসিক ও শারীরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্ট বস্তুগত ও অবস্তুগত জিনিস বা মাধ্যম যার মাধ্যমে কোনো মূল্য অর্জন করা হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রযুক্তি হল যন্ত্র ও সরঞ্জাম যা বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সুদূরপ্রসারি ধারণা যা সরল যন্ত্র যেমন চামচ থেকে শুরু করে অনেক জটিল যন্ত্র যেমন মহাশূন্য স্টেশন ইত্যাদি কে অন্তর্ভুক্ত করে। যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেবল বস্তুই হতে হবে তা নয় যেমন কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ব্যবসার পদ্ধতি এগুলো প্রযুক্তির সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে। ডব্লিউ ব্রায়ান আর্থার একইভাবে বিস্তর পরিসরে প্রযুক্তিকে সংজ্ঞায়িত করেন, ‘একটি পদ্ধতি হিসেবে যা মানুষের উদ্দেশ্য পূরণ করে’।
থাম্ব|ডান|সমন্বিত বর্তনী ও মাইক্রোপ্রসেসরের আবিষ্কার (এখানে, ১৯৭১ সালের একটি ইনটেল ৪০০৪ চিপ) আধুনিক কম্পিউটার বিপ্লবের দিকে ধাবিত করে।
প্রযুক্তির শব্দটি বিভিন্ন কৌশলের সংগ্রহকে ও বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই পাঠ্য অংশে মানবিক জ্ঞানের প্রচলিত ধারণা উৎসগুলোকে সমন্বিত করে কাঙ্ক্ষিত জিনিস তৈরি, সমস্যা সমাধান, চাহিদা পূরণ করা হয় তা প্রযুক্তি, পদ্ধতি ও এর কাঁচামাল ব্যবহার করে।যখন এটি ‘চিকিৎসা প্রযুক্তি’ ও ‘মহাশূন্য প্রযুক্তি’ এর সাথে জড়িত হয় তখন এটি সেই ক্ষেত্রের সরঞ্জামও জ্ঞানকে বুঝায়। ‘কলা প্রযুক্তি’ মানবিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উন্নত প্রযুক্তিকে বুঝায়।
প্রযুক্তিকে সমাজ পরিবর্তনের কার্যক্রম হিসেবে উল্লেখ করা যায়। তাছাড়া প্রযুক্তি হল গণিত, বিজ্ঞান ও কলার প্রয়োগ যা জীবনে উপকারে আসে। এর আধুনিক উদাহরণ হল যোগাযোগ প্রযুক্তির উদ্ভব যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যকার শারীরিক মিথস্ক্রিয়ার বাধাকে অতিক্রম করে একটি নতুন সংস্কৃতি সাইবার সংস্কৃতির নামে আবির্ভূত হয়েছে যার ভিত্তি হলো কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। একটি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হিসেবে প্রযুক্তি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল কে নির্দেশিত করে কারণ এদের প্রত্যেকটি প্রযুক্তিগত প্রচেষ্টার ধারণা উদ্ভব করে।
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
থাম্ব|অঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে সৌরলোক নিয়ে পরীক্ষা করছেন
বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বই, কলম, টেবিল, বৈদ্যুতিক বাতি, ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে লেখাপড়া করছি। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী? এদের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে?
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য
বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বর্ণনা করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। যার মধ্যে নিম্নোক্ত ধাপগুলো রয়েছে।
+বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিধাপ সমূহবিবরণপর্যবেক্ষণ আমাদের চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করার মধ্যে দিয়ে আমরা প্রাকৃতিক ঘটনা কিংবা নিজের পছন্দের কোনো বিষয় সম্পর্কে কৌতূহল বোধ করি।প্রশ্নকরনযখন আমরা কোনো কিছু দেখি, শুনি বা পড়ি আমাদের মনে এ সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন আসতে পারে। এ সকল প্রশ্ন থেকে এমন একটি প্রশ্ন বেছে নেই যার উত্তর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। অনুমানপূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে প্রশ্নটির সম্ভাব্য উত্তর ঠিক করি এবং খাতায় লিখি। এটিই অনুমান। পরীক্ষণঅনুমানটি সঠিক কিনা তা যাচাই করার জন্য একটি পরীক্ষার পরিকল্পনা করি। পরীক্ষাটি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করি। পরীক্ষাটি সম্পাদন করি।তথ্য সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফলাফল লিপিবদ্ধ করি। সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করি এবং ফলাফলের সারসংক্ষেপ করি। ফলাফলটি অনুমানের সাথে মিলেছে কিনা যাচাই করি।বিনিময়প্রাপ্ত ফলাফল ও গৃহীত সিদ্ধান্ত অন্যদের সাথে বিনিময় করি।
প্রযুক্তি হল আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ।প্রযুক্তি মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে বিভিন্ন পণ্য, যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতির উদ্ভাবন করে। যেমন - বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা করে এ বিষয়ে আমাদের ধারণা বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। এই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবার ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল এবং বৈদ্যুতিক বাতি উদ্ভাবনে কাজে লাগানো হয়েছে।প্রযুক্তি ব্যবহারের নানান ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন - শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, যাতায়াত ইত্যাদি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও আমাদের জীবনে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরা পরস্পরের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত। অতীতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে এত নিবিড় সম্পর্ক ছিল না। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে ব্যবহারিক জীবনের সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্দেশ্যে ছিল না। তারা বিদ্যুৎ ও আলোর মত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবিষ্কার করেছেন। অপরদিকে জীবনকে উন্নত করার লক্ষ্যে বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে।তারা পাথরের হাতিয়ার, আগুন, পোশাক, ধাতব যন্ত্রপাতি এবং চাকার মত সরল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
আঠারো শতকে শিল্প বিপ্লবের সময়কালে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প-কারখানা, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত জলীয় বাষ্পের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছে। এই বাষ্পীয় ইঞ্জিন কল-কারখানা রেল গাড়ি এবং জাহাজ চালাতে ব্যবহার করা হতো।
বিভিন্ন প্রশ্ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মানুষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার সময়ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকেন। যেমন - দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের বিভিন্ন বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। খালি চোখে দেখা যায় না এমন জিনিস অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
প্রযুক্তি ও প্রকৌশল
বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য সর্বদা পরিষ্কার হয় না। বিজ্ঞান হল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক জগতের নিয়মতান্ত্রিক জ্ঞান। প্রকৌশল হল প্রায়শই (তবে সর্বদা নয়) বিজ্ঞানের ফলাফল এবং কৌশল গুলো ব্যবহার করে ব্যবহারিক মানবিক উপায়ে প্রাকৃতিক ঘটনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরঞ্জামগুলি এবং সিস্টেমগুলি ডিজাইন এবং তৈরির লক্ষ্য-ভিত্তিক প্রক্রিয়া।প্রযুক্তি প্রায়শই বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের পরিণতি হয়।
প্রযুক্তি জীবন চক্র
right|thumb|350px|প্রযুক্তি জীবন চক্রপ্রযুক্তির জীবনচক্র (টিএলসি) একটি পণ্যের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পর্ব থেকে বাজারের পরিপক্কতা পর্যন্ত অবশেষে পতন পর্যন্ত ব্যয় এবং লাভের বর্ণনা দেয়। গবেষণা ও উন্নয়নের (আরএন্ডডি) ব্যয়গুলো একবার পণ্য বাজারে আসার পরে অবশ্যই লাভ দ্বারা ভারসাম্য করতে হয়। প্রযুক্তির জীবনচক্র মূলত উন্নয়নের ব্যয় এবং এর থেকে সম্ভাব্য লাভ এর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।
প্রযুক্তির জীবন চক্রের চারটি পর্যায় রয়েছে। পাশের চিত্রে এটি বোঝা যাচ্ছে। ধাপ চারটি হচ্ছে -
গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) - এই পর্যায়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য বিনিয়োগের ঝুঁকি নেওয়া হয় ।সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলো গবেষণা ও উন্নয়নে কৌশলগত দিক নির্দেশনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক সংস্করণে পৌঁছায়।
সমুত্থান ও বাণিজ্যিকীকরণ - এই পর্বে পণ্য আবিষ্কার থেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যয় পুনরুদ্ধার করা সময়সীমার অন্তর্ভুক্ত।এই পর্যায়ে আবিষ্কারের দ্রুত বৃদ্ধি ও বণ্টন দেখা যায় এবং নতুন ও অধিক কার্যকরী পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার দ্বার উন্মোচিত হয়।
ব্যাপন ও পরিপক্কতা - যেহেতু জনসাধারণ নতুন উদ্ভাবন গ্রহণ করে তাই প্রতিযোগিরা বাজারে প্রবেশ করে এবং জোগান চাহিদাকে অতিক্রম করতে শুরু করে। এই পর্যায়ে, ধারণাটি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে বিনিময় ধীর হতে শুরু করে।
পতন ও প্রতিকল্পন - চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন পণ্য সুবিধা ও সম্ভাব্য মূল্য নিয়ন্ত্রিত হয় তখন উৎপাদন ও বিক্রয় কমতে থাকে। এই হ্রাস একসময় পতনে পৌঁছে যায়। তখন সংস্থাগুলো নতুন উদ্ভাবনের দিকে অগ্রসর হয়।
প্রযুক্তির ক্ষেত্রসমূহ
বায়বান্তরীক্ষ প্রযুক্তি: মহাকাশ অভিযানের জন্য ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ যান তৈরি এবং চালনা। নভোযান উৎক্ষেপণ, উচ্চ গতি সম্পন্ন আকাশযান, বিমান , নভোযান নির্দেশনার জন্য ব্যবহৃত ভূ-কেন্দ্রিক উপকরণসময় তৈরি এই প্রযুক্তির কাজ। ভৌগোলিক যোগাযোগ এবং তথ্য চালনা পদ্ধতি এখান থেকেই উন্নয়ন লাভ করে।
কৃষি প্রযুক্তি: এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথাগত ট্রাক্টর এবং চাষের অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাথে আধুনিক ল্যাপটপ এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম-এর সমন্বয় ঘটায়। খাদ্য উৎপাদনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় তলিয়ে দেখা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিই এর মূল কাজ।
জৈব প্রযুক্তি: এটি জীবনের মূল উপাদান এবং একক যেমন, কোষ, জিন এবং ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে অধ্যয়ন করে । এর মাধ্যমে নতুন খাদ্য এবং ওষুধ, মানুষের জিনের নকশা ইত্যাদি তৈরি করা হয় যাতে রোগ প্রতিরোধ এবং জৈবিক ঝুঁকি নির্ণয় করা যায়।
নির্মাণ প্রযুক্তি: নির্মাণ প্রযুক্তি পৌর প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি কে একত্র করে বসবাসের এবং কাজের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি, পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা করে।এটি দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, জন-পরিবহন ব্যবস্থা, টানেল, পানি পরিশোধন, ব্রিজ ইত্যাদির ডিজাইন এবং নির্মাণ নিয়ে কাজ করে।
প্রকৌশল প্রযুক্তি: ইলেকট্রনিক্স এবং বলবিদ্যা থেকে শুরু করে জেট ইঞ্জিন এবং আকাশযান পর্যন্ত প্রকৌশল প্রযুক্তি সমস্ত কিছু তৈরি করে যা আমাদের পৃথিবীকে চালায়। এই বিস্তারিত ক্ষেত্র বস্তু কীভাবে কাজ করে তা বুঝার জন্য এর বিশেষত্ব সহ গণিত, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নীতি গুলো কাজে লাগায়।
পরিবেশগত প্রযুক্তি: পরিবেশগত প্রযুক্তি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুর গুনাগুন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নির্ভরযোগ্যতা বুঝতে সক্ষম করেছে।পরিবেশের উপর মানুষের ক্রিয়া-কলাপ এর প্রভাব ও শক্তির নবায়নযোগ্য উৎস এর সঠিক ব্যবহার পরিদর্শন এবং বুঝতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা: জিআইএস এবং জিপিএস রক্ষণশীল নকশা প্রযুক্তিকে আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। জিপিএস বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্ণয় ও পরিভ্রমণ করতে ভূগোল এবং কৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর অনুষাঙ্গিক প্রযুক্তি জিআইএস কম্পিউটার থেকে উৎপন্ন স্থল ও জল পরিবেশের নকশা তৈরি করে যা অন্য কোন বিকল্প উপায়ে করা সম্ভব নয়।
তথ্য প্রযুক্তি: তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) হলো আজকের কম্পিউটারাইজড ও ওয়্যারলেস দুনিয়ার কেন্দ্র যার মধ্যে আমরা বসবাস করি।এটির যেমন একটি ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে ইলেকট্রনিক্স তত্ত্বের সমন্বয়ে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরি করছে তেমনি একটি প্রযুক্তি হিসেবে বর্তমানে অন্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোকে সচল করছে। আইটি যেকোনো ধরনের তথ্য তৈরি, জমা ও আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয় যেমন - বিজনেস ডাটা, ভয়েস কমিউনিকেশন, ফটোগ্রাফি ও গ্রাফিক্স ইত্যাদি।
উৎপাদন প্রযুক্তি: আমরা যে খাদ্য খাই, যে গাড়ি চালাই, যে কম্পিউটার ও ওষুধ ব্যবহার করি ওদের জীবন নিরাপদ ও সহজ করার জন্য এই সমস্ত কিছু একটি সুনির্দিষ্ট উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলাফল।উৎপাদন প্রযুক্তি কম্পিউটার ও অর্ধপরিবাহী এবং এদের উপাংশ তৈরি করে। এটি যান্ত্রিক এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে যন্ত্র ও উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করে।
নৌ প্রযুক্তি: নৌ প্রযুক্তি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল কে সমন্বয় করে পানির নিচের জগতে বিচরণ করে।নৌ প্রযুক্তিবিদ সাবমারসিবল রোবট, সোনার এবং আন্ডারওয়াটার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে পানির নিচের সামুদ্রিক পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বুঝতে সক্ষম হন।
মাইক্রো প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তি: মাইক্রো প্রযুক্তি প্রচলিত যন্ত্রপাতি কে ক্ষুদ্র লেভেলে পরিচালিত করে। এই প্রযুক্তি এমন ক্যামকর্ডার ও কম্পিউটার তৈরি করেছে যা হাতের মুঠিতে মধ্যে রাখা সম্ভব। ন্যানো প্রযুক্তি আরো এক ধাপ এগিয়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম যন্ত্রের উদ্ভাবন করেছে।
রাসায়নিক প্রযুক্তি: রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল যেমন তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি নিয়ে পরিশোধিত করে প্রচলিত বিভিন্ন জ্বালানি থেকে শুরু করে বর্তমানে বিভিন্ন আধুনিক বহনযোগ্য শক্তির উৎস উৎপন্ন করছে। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন উপাদান বিশুদ্ধকরণ এর ক্ষেত্রে ও ব্যবহৃত হয়।
যাতায়াত প্রযুক্তি: যাতায়াত প্রযুক্তি মানুষ, পণ্য এবং সেবা কে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করে যেমন - কার, ট্রাক, প্লেন, ট্রেন, বাইক।এটি পরিবেশের উপর যাতায়াত ব্যবস্থার প্রভাব নিয়েও আলোচনা করে।
ইতিহাস
পুরা প্রস্তর যুগ (২.৫ মিলিয়ন বছর পূর্ব - ১০ হাজার বছর পূর্ব)
প্রথমদিকে মানুষের দ্বারা সরঞ্জাম এর ব্যবহার আবিষ্কার ও বিবর্তন অংশ ছিল। মানুষ প্রথম দিকে শিম্পাঞ্জির একটি প্রজাতি যা ইতিমধ্যে দ্বিপদী ছিল তা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আসে যার মস্তিষ্কের ওজন ছিল আধুনিক মানুষের আধুনিক মানুষের এক-তৃতীয়াংশ। প্রাক-প্রাথমিক কালে মানুষের সরঞ্জাম ব্যবহারের ইতিহাস অপরিবর্তিত ছিল। প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে সরঞ্জাম ও জটিল ব্যবহারের আবির্ভাব হয় এবং অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এ সময় কে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষার আবির্ভাব বলে মনে করেন।
পাথরের সরঞ্জাম
আদি মানব মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করতেন। সর্বপ্রথম পাথরের হাতিয়ার ছিল ভাঙ্গা শিলা কিন্তু প্রায় ৭৫,০০০ বছর আগে চাপের প্রয়োগ আরো সূক্ষ্ম কাজ করতে সাহায্য করে।
আগুন
শক্তির উৎস হিসেবে আগুনের আবিষ্কার ও ব্যবহার মানবসৃষ্ট প্রযুক্তির আবির্ভাবের অগ্রদূত ছিল। এই আবিষ্কারের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি তবে ‘মানবজাতির ক্র্যাডল’ এ ১ মিলিয়ন বছর আগে গৃহ কাজে আগুনের ব্যবহার নিদর্শন পাওয়া যায়। পরীক্ষিত আদমশুমারি দেখায় যে মানুষ ৫০০ হাজার বছর এবং ৪০০ হাজার বছরের আগের মধ্যবর্তী সময়ে আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। কাঠ ও কয়লার জ্বালানি ব্যবহার করে আগুনের দ্বারা মানুষের রান্না করা তাদেরকে সক্ষম করেছে খাদ্যের হজম যোগ্যতা, পুষ্টি ও উৎস বৃদ্ধি করতে।
পোশাক ও আশ্রয়
প্যালিওলিথিক কালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল পোশাক ও আশ্রয় যার সঠিক তারিখ না জানা থাকলেও এটি মানুষের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্যালিওলিথিক কালের অগ্রসর এর সাথে সাথে মানুষের বাসস্থান আরো সংরক্ষণশীল ও প্রসারিত হতে থাকে এবং ৩৮০ হাজার বছর পূর্বের কাছাকাছি সময়ে মানুষ সর্বপ্রথম কাঠের তৈরি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে। গাছের বাকল ও শিকারকৃত পশুদের চামড়া দ্বারা তৈরিকৃত পোশাক মানুষকে শীতপ্রধান অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে এবং ২০০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা ও ইউরেশিয়া মানুষ অভিবাসন শুরু করে।
শাস্ত্রীয় প্রাচীনতার মাধ্যমে নিওলিথিক (১০ হাজার বছর পূর্ব - ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব)
মানুষের প্রযুক্তির উৎসাহ শুরু হয় যে প্রাক্কালে তাকে বলে নিওলিথিক পর্ব (নিউ স্টোন এজ)। মসৃণ পাথরের দন্ডের আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল যার মাধ্যমে জঙ্গল কেটে চাষাবাদের তৈরি করা হয়। এই মসৃণ পাথরের দন্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় নিওলিথিক কালে কিন্তু যা প্রকৃতপক্ষে আবিষ্কৃত হয় মেসোলিথিক খালে আয়ারল্যান্ডের মত কিছু জায়গায়। কৃষি উল্লেখযোগ্য মানুষের খাদ্যের যোগান দিত যার ফলে একইসাথে স্থানান্তর ও অধিক সন্তান লালন পালন সম্ভব হয় কারণ তখন শিশুদের বহন করতে হত না যা নমাডিকদের জন্য অবশ্য পালনীয় ছিল। তাছাড়া শিকার নির্ভর অর্থনীতির চেয়ে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে সন্তানেরা অধিক সহজে শ্রম দিতে পারছিল।
একই সাথে জনসংখ্যা ও শ্রমের বৃদ্ধির ফলে শ্রমের ধরনের মধ্যে বিশেষত্বের বৃদ্ধি হয়। যা প্রাথমিক নিওলিথিক গ্রাম থেকে প্রথম শহরের উত্তরণের সাহায্য করে যেমন - উরুক এবং প্রথম সভ্যতা যেমন - সুমার। যদিও তা অধিক পরিমাণে পরিচিত ছিল না। পর্যায়ক্রমিক সমাজব্যবস্থার এবং বিশেষায়িত শ্রমের বৃদ্ধির ফলে সংস্কৃতির মধ্যে বাণিজ্য ও যুদ্ধ শুরু হয়। প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সেচ এর প্রয়োজনীয়তা এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে।
ধাতব সরঞ্জাম
প্রযুক্তির চলমান উন্নতির ফলে সোনা, তামা, রুপা, সিসা - বিশুদ্ধ ধাতুসমূহ গলানো ও আকার দেওয়া সম্ভব হয়েছে। পাথর ও কাঠের তৈরি সরঞ্জাম এর তুলনায় তামার তৈরি সরঞ্জাম গুলোর অধিক সুবিধা পরিষ্কারভাবে এগুলো ব্যবহারের তাগিদ শুরু হয় নিওলিথিক কালের শুরুর দিকে (প্রায় ১০ হাজার বছর আগে)। বিশুদ্ধ তামা প্রকৃতিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় না কিন্তু এগুলোর আকরিক খুব সহজে পাওয়া যায় যা কাঠ ও কয়লার আগুনে পুড়িয়ে খুব সহজে বিশুদ্ধ তামা পাওয়া যায়। এর পরিণতি ধাতু নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে আবিষ্কার মিশ্র ধাতু হয় যেমন কাঁসা ও পিতল (প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ দিকে)। লোহার প্রথম মিশ্র ধাতু হিসেবে সর্বপ্রথম স্টিল ব্যবহৃত হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালে।
শক্তি ও পরিবহন
ইতিমধ্যে মানুষ শক্তির অন্যান্য গ্রুপগুলো কাজে লাগাতে শুরু করেছে।বায়ুর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নীল নদে প্রথম নামে পাল তোলা নৌকা চালানোর নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম সহস্রাব্দের দিকে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মিশরীরা নীল নদের বার্ষিক বন্যাকে কাজে লাগিয়ে সেচ কার্য পরিচালনা করত যা পরবর্তীতে তাদের পানি সংরক্ষণ করতে ও সাহায্য করেছিল। মেসোপটেমিয়ায় সুমেরীয়রা জটিল খাল ও নর্দমার মাধ্যমে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর পানিকে তাদের সেচে পরিণত করত।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে চাকা প্রথম আবিষ্কৃত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর পূর্বে একই সাথে কিন্তু পৃথকভাবে মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক), উত্তর ককেশাস (মেকপ সংস্কৃতি) ও মধ্য ইউরোপে। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০০ থেকে ৩০০০ সময়কালে অধিকাংশের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সালে এটি আবিষ্কৃত হয় বলে ধারণা করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ এর দিকে সবচেয়ে পুরনো চাকার চিত্র পাওয়া যায়। যাইহোক এই চিত্র আঁকার সহস্রাব্দ আগে থেকে চাকার ব্যবহার অব্যাহত ছিল। অতি সম্প্রতি কাঠের তৈরি চাকার নিদর্শন পাওয়া যায় লুবলজানা স্লোভেনিয়ার জলাভূমিতে।
চাকার আবিষ্কার বাণিজ্য যুদ্ধে বিপ্লব আনয়ন করে। এটা আবিষ্কার করতে বেশি সময় লাগেনি যে চাকার তৈরি মালগাড়ি অধিক ভার বহন করতে পারে। প্রাচীন সুমেরীয়রা প্রথম কুমোরের চাকা ব্যবহার করেন অথবা আবিষ্কার করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৪২৯ এর দিকে উর শহরে প্রথম কুমোরের চাকার নিদর্শন পাওয়া যায় এবং চাকার অন্যান্য পুরাতন নিদর্শনগুলো ওই একই অঞ্চলে পাওয়া যায়।এই ধরনের দ্রুত চাকা (ঘূর্ণনশীল) শক্তির রূপান্তরক হিসেবে প্রথম ব্যবহৃত হয় (পানিকল, বায়ুকল ও ট্রেডকল এর মাধ্যমে)। এর প্রয়োগ মানুষের শ্রম বিহীন শক্তির উৎস হিসেবে বিপ্লব সাধন করে। প্রথম দুই চাকার গাড়ি তৈরি হয় ট্র্যাভয়েস থেকে যা প্রথম ব্যবহৃত হয় মেসোপটেমিয়া ও ইরানে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ এর দিকে।
প্রথম পাথরের তৈরি রাস্তা নির্মাণ হয় উর শহরে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ এর দিকে এবং কাঠের তৈরি নির্মাণ হয় ইংল্যান্ডের গ্লাস্টনবারির জলাবনে প্রায় একই সময়ের দিকে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ এর দিকে প্রথম দীর্ঘ রাস্তা তৈরি হয় পারস্যের গলফ থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ মাইল যদিও তা বাঁধানো ছিল না। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ এর দিকে ১৫ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দীর্ঘ রাস্তা গ্রিক দ্বীপের ক্রিটের মিনোয়্যানরা নির্মাণ করেন যা দ্বীপের দক্ষিণ দিক গোর্তিন প্যালেস থেকে পর্বতের মধ্য দিয়ে দ্বীপের উত্তর দিক ননোসোস প্যালেস পর্যন্ত লম্বা। পূর্বের রাস্তার ব্যতিক্রম হিসেবে মিনোয়্যানদের তৈরি রাস্তা সম্পূর্ণরূপে বাঁধানো ছিল।
চৌবাচ্চা স্থাপন
মিনোয়্যানদের ব্যক্তিগত বাড়িতে চলমান পানির ধারা ছিল। বর্তমানের বাথটাবের আদি নিদর্শন ননোসোস প্যালেসে পাওয়া যায়। কতিপয় মিনোয়্যানদের ব্যক্তিগত বাড়িতে টয়লেট এর ব্যবস্থাও ছিল যা পানি ঢেলে পরিষ্কার করা হতো।প্রাচীন রোমানদের ফ্লাশ টয়লেট ছিল যা বিস্তর পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতির দ্বারা খালি করা হতো। রোমের প্রথম ও প্রধান নর্দমা ‘ক্লোকা ম্যাক্সিমা’ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে নির্মাণ শুরু হয় যা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাচীন রোমানদের সুগঠিত কৃত্রিম জল-প্রণালী বা নালার ব্যবস্থা যা দূরবর্তী স্থানে পানি স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হতো। রোমানদের প্রথম প্রাচীন জল-প্রণালী খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সালে নির্মিত হয় এবং একাদশতম ও শেষ জল-প্রণালী নির্মিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ২২৬ সালে।একত্রে রোমান জল-প্রণালী প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কিন্তু ৭০ কিলোমিটার এর কম দূরত্ব মাটির উপরে ও খিলান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক ইতিহাস (৩০০ খ্রিস্টপূর্ব - বর্তমান)
মধ্যযুগে রেশম এর উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়ন চলতে থাকে (ইউরোপে এর পরিচিতি এশিয়ার পরিচিতি লাভের শতবর্ষ পর সম্পন্ন হয়)।পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের প্রথম কয়েক শত বছরের মধ্যে ঘোড়ার লাগাম ও ঘোড়ার খুরের নাল এর ব্যবহার শুরু হয়। মধ্যযুগীয় প্রযুক্তি দেখিয়ে দেয় সহজ যন্ত্র সমূহ এর ব্যবহার (যেমন লিভার, স্ক্রু ও পুলি) এর সমন্বয়ে আরো জটিল যন্ত্র যেমন ঠেলাগাড়ি, বায়ুকল ও ঘড়ি তৈরি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা করে উঠে যার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ধারণা ও অনুশীলনগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়। রেনেসাঁ এর সময় প্রিন্টিং প্রেস (যা জ্ঞানের আদান প্রদানকে সহজ করে) সহ নানা আবিষ্কার সম্পন্ন হয় এবং প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সাথে মিলে যৌথ ভাবে উন্নতি লাভ করতে থাকে।প্রযুক্তির উন্নতি খাদ্যের সরবরাহকে আরো নির্ভরশীল করে তুলে সাথে সাথে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকে ও। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্যের শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কৃষি, উৎপাদন, খনন, কঠিন ধাতু ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের উন্নয়ন সাধিত হয়। যা বাষ্প ইঞ্জিন ও ফ্যাক্টরি ব্যবস্থার মাধ্যমে গতি লাভ করে। প্রযুক্তি দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময় (১৮৭০ সাল থেকে ১৯১৪ সাল) আরেকটি পদক্ষেপ নিয়ে বৈদ্যুতিক মোটর, আলোর বাতি ইত্যাদির মত আবিষ্কার এর সুবিধা পাইয়ে দেয়।প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন নতুন আবিষ্কারের ধারণা পরবর্তীতে চিকিৎসা, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যা এর জন্ম দেয়। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়ন আকাশচুম্বী সফলতা লাভ করে এবং বড় বড় নগরের বাসিন্দারা এখন তাদের কাজের জন্য ও খাদ্য সরবরাহের জন্য স্বয়ংক্রিয় মোটর এর উপর নির্ভরশীল। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও ও টেলিভিশনের আবিষ্কার এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন লাভ করে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বিমান ও মোটর গাড়ির আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব এনে দেয়। বিংশ শতাব্দী উদ্ভাবন এর পোষক হিসেবে কাজ করে। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার ফিশন এর আবিষ্কার নিউক্লিয়ার অস্ত্র ও নিউক্লিয়ার শক্তির দিকে ধাবিত করে। কম্পিউটার আবিষ্কারের পর ট্রানজিস্টর ও সমন্বিত বর্তনীর মাধ্যমে এগুলোকে ক্ষুদ্রাকারে নিয়ে আসা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি পর্যায়ক্রমে উনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে ইন্টারনেটের জন্ম দেয় যা বর্তমান তথ্য যুগের ভিত্তি স্থাপন করে। মানুষ কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে মহাশূন্যে বিচরণ (উনবিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে, যা পরবর্তীতে টেলিকমিউনিকেশন এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়) শুরু করে ও সাথে সাথে চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে (উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন ওপেন হার্ট সার্জারি ও পরবর্তীতে স্টেম সেল থেরাপি ইত্যাদি নিয়ে আসে।
জটিল উৎপাদন ও নির্মাণের প্রয়োজনে মানুষের কাজগুলো সহজ করার জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও সংস্থাগুলো জটিল যন্ত্র উদ্ভাবন শুরু করে। আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য এখন ডিজাইনার, নির্মাতা, ব্যবস্থাপক ও এর ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। অধিকন্তু প্রযুক্তির এখন এতটা জটিল হয়ে গেছে যে প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলোকে এখন নির্মাণ, পরিবহন ও স্থাপনা সম্পন্ন করতে সংরক্ষণশীল ভাবে কাজ করতে হয়।
দর্শন
টেকনিসিজম
সাধারণভাবে টেকনিসিজম হল মানব সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মতবাদ। আরেকটু জোরালোভাবে, ‘টেকনিসিজম বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রণ এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ভাবে সকল সমস্যা সমাধানের মৌলিক মনোভাবকে প্রতিফলিত করে’। অন্যভাবে বলা যায় মানুষ একদিন সকল সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে এবং সম্ভবত ভবিষ্যতকেও প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে। যেমন, স্টিফেন ভি মন্সমা এই ধারণাগুলো কে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ও নৈতিকতা বিরোধী হিসেবে গণ্য করেছেন।
অপটিমিজম
অপটিমিস্টিক ধারণা গুলো ট্রান্সহিউম্যানিজম ও একবিন্দুবাদ দার্শনিক মতবাদের প্রবক্তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যা সাধারণত প্রযুক্তিকে মানুষের অবস্থা ও সমাজের জন্য উপকারী মনে করে। এই মতবাদ অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নৈতিকভাবে ও ভালো।
ট্রান্সহিউম্যানিস্টগণ মনে করেন প্রযুক্তিগত ধারণা প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে ও যা সাধারণভাবে মনে করে মানুষের অবস্থা একটি প্রতিবন্ধকতা যা তাকে সব সময় অতিক্রম করতে হবে।
একবিন্দুবাদীগণ মনে করেন একটি ‘ত্বরান্বিত পরিবর্তন’ যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবিষ্কারের মাধ্যমে অসীম উন্নয়নের মধ্য দিয়ে তা এককতায় পরিণত হবে। এককতায় পরিণত হওয়ার সময় এখনও অনুমান করা যায়নি তবে বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী প্রণেতা রে কুর্জওয়েল ধারণা করেন ২০৪৫ সালের মধ্যে এটি সংঘটিত হবে।
কুর্জওয়েল তার মহাবিশ্বের ছয় যুগ ইতিহাসের জন্য পরিচিত - (১) ভৌতিক / রাসায়নিক যুগ, (২) জীব যুগ, (৩) মানব / বুদ্ধিমত্তার যুগ, (৪) প্রযুক্তির যুগ, (৫)কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ এবং (৬) বৈশ্বিক উপনিবেশায়নের যুগ। এক যুগ থেকে অন্য যুগে গমন একতা দ্বারা পরিচালিত ও ত্বরান্বিত হয়। প্রতিটি যুগ স্বল্প সময় নিয়ে গঠিত যার মানে বুঝায় সমগ্র মহাবিশ্বের ইতিহাস একটি প্রকাণ্ড এককতার ঘটনা মাত্র।
কিছু সমালোচকগণ এই মতবাদ গুলো কে বৈজ্ঞানিকতা ও টেকনো-ইউটোপিয়ানিজম এর উদাহরণ হি সেবে গণ্য করেন এবং তারা মানুষের বর্ধন এবং প্রযুক্তিগত এককত্বের ধারণা নিয়ে শঙ্কিত। কিছু লোক কার্ল মার্কস কে টেকনো-অপটিমিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
স্কেপটিসিজম এবং ক্রিটিক্স
কতিপয় সংশয়বাদী দার্শনিকগণ যেমন - হারবার্ট মার্কুস এবং জন জেরজান বিশ্বাস করে প্রযুক্তিগত সমাজ সহজাতভাবে ত্রুটিপূর্ণ।তারা প্রস্তাব করেন অত্যধিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হল স্বাধীনতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষয়।
অনেকে যেমন লুডাইটস এবং প্রখ্যাত দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার গুরুতর ক্ষয়কারী যদিও পুরোপুরি নয় ধারণা পোষন করেন প্রযুক্তি সম্পর্কে। হাইডেগার এর শিক্ষক হুবার্ট ড্রইফাস এবং চার্লস স্পিনোসা এর মতে, “হাইডেগার প্রযুক্তি এর বিরোধিতা করেন না। তিনি শুধু আশা করে প্রযুক্তিকে এমনভাবে প্রকাশ করতে, ‘যে প্রকারে কেউ আমাদেরকে সংশয় সম্পন্ন না করে প্রযুক্তিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে’। যা তাকে প্রযুক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তুলেছে”। প্রকৃতপক্ষে, তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে 'আমরা যখন প্রযুক্তির সারমর্মের কাছে একবার নিজেকে প্রকাশ করি, তখন আমরা নিজেকে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি মুক্ত দাবিতে নিয়ে যেতে দেখি’। প্রযুক্তিগত-আশাবাদী বা টেকনো-হতাশাবাদীরা এর অনুমোদন দেওয়ার চেয়ে প্রযুক্তির সাথে আরও জটিল সম্পর্ককে অন্তর্ভুক্ত করে।
প্রযুক্তির সবচেয়ে কটু সমালোচনা পাওয়া যায় যেমন - আলডাস হাক্সলির ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’, এন্থনি বার্জেস এর ‘এ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’, এবং জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইটি ফোর’ এর মধ্যে যা এখন ডিস্টোপিয়ান ক্লাসিক সাহিত্য বলে মনে করা হয়। গ্যাটের ফাউস্ট এর মধ্যে,ফাউস্ট এর শয়তানের কাছে জড়জগৎ উপর ক্ষমতা বিনিময়ে তার আত্মা বিক্রি প্রায়ই শিল্প প্রযুক্তি গ্রহণ একটি রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। সম্প্রতি, ফিলিপ কে ডিক ও উইলিয়াম গিবসনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আধুনিক কাজগুলো এবং ব্লেড রানার ও গোস্ট ইন দ্য সেল এর মত চলচ্চিত্রগুলো মানব সমাজ ও পরিচয় এর উপর প্রযুক্তির প্রভাবের অত্যন্ত সতর্কতাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে।
প্রয়াত সাংস্কৃতিক সমালোচক নীল পোস্টম্যান সরঞ্জাম-ব্যবহারকারী সমাজগুলোকে প্রযুক্তিগত সমাজগুলো এবং যেটিকে তিনি "টেকনোপলিজ" বলে সম্বোধন করেছেন সেগুলি থেকে আলাদা করেছেন যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির আদর্শের দ্বারা অন্যান্য সাংস্কৃতিক চর্চা, মূল্যবোধ এবং বিশ্ব-মতামত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ডারিন বার্নি নাগরিকত্ব ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চায় প্রযুক্তির প্রভাব সম্পর্কে লিখেছেন এবং প্রস্তাব করেন প্রযুক্তিটিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে, (১) রাজনৈতিক বিতর্কের একটি বিষয় হিসেবে, (২) আলোচনার উপায় বা মাধ্যম হিসেবে, এবং (৩) গণতান্ত্রিক মুক্তি ও নাগরিকত্বের বিন্যাস হিসেবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি বিন্যাস হিসেবে, বার্নি সুপারিশ করেছেন যে প্রযুক্তি একটি ভাল জীবন কী নিয়ে গঠিত এসব প্রশ্ন সহ নীতিগত প্রশ্ন তোলে, যা প্রায় অসম্ভব কারণ তারা ইতিমধ্যে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে: একটি ভাল জীবন হলো যা অধিক থেকে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারকে অন্তর্ভুক্ত করে।
নিকোলাস কমপ্রিডিস নতুন প্রযুক্তি বিপদ নিয়েও লিখেছেন যেমন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানোপ্রযুক্তি, সিন্থেটিক জীববিদ্যা এবং রোবোটিক্স । তিনি সতর্ক করেছেন যে এই প্রযুক্তিগুলি আমাদের জৈবিক প্রকৃতির স্থায়ীভাবে পরিবর্তনের সম্ভাবনা সহ মানুষের কাছে অভূতপূর্ব নতুন চ্যালেঞ্জের পরিচয় দেয়। এই উদ্বেগগুলি অন্যান্য দার্শনিক, বিজ্ঞানী এবং পাবলিক বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ করেছেন যারা অনুরূপ বিষয় সম্পর্কে লিখেছেন (যেমন ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা, জর্জেন হাবেরমাস, উইলিয়াম জয় এবং মাইকেল স্যান্ডেল)।
প্রযুক্তির আর একটি বিশিষ্ট সমালোচক হুবার্ট ড্রেইফাস , যিনি ‘অন দ্যা ইন্টারনেট’ এবং ‘হোয়াট কম্পিউটারস স্টিল ক্যান টু ডো’ এর মতো বই প্রকাশ করেছেন।
আরো কুখ্যাত প্রযুক্তি-বিরোধী গ্রন্থ হল ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি এন্ড ইটস ফিউচার’, আনবমবার টেড ক্যাকজেনস্কি দ্বারা লিখিত এবং অনেকগুলি প্রধান সংবাদপত্র (এবং পরে বইগুলোতে) ছাপানো হয় তার টেকনো-শিল্প পরিকাঠামো বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ অভিযান শেষ করার একটি প্রচেষ্টা অংশ হিসেবে। এছাড়াও এমন উপ-সংস্কৃতি রয়েছে যা কিছু বা বেশিরভাগ প্রযুক্তি অস্বীকার করে যেমন স্ব-চিহ্নিত অফ-গ্রিডারগুলি।
উপযুক্ত প্রযুক্তি
উপযুক্ত প্রযুক্তির ধারণাটি বিকশিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে ই এফ শুমাচর এবং জ্যাক এলুলের মতো চিন্তাবিদদের দ্বারা এমন পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য যেখানে খুব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা বা কাঙ্ক্ষিত কিছু কেন্দ্রীয় অবকাঠামো বা অংশ বা দক্ষতা বা অন্য কোথাও থেকে আমদানি করা দক্ষতাগুলির ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় ছিল না। ইকোভিলেজ আন্দোলন এর অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
একবিংশ শতাব্দীতে অপটিমিজম ও স্কেপটিসিজম
এই বিভাগটি মূলত আমেরিকান উদ্বেগকে কেন্দ্র করে এমনকি অন্য পশ্চিমা দেশগুলিতে যুক্তিসঙ্গতভাবে সাধারণীকরণ করা যেতে পারে।
আমেরিকান চাকরির অপর্যাপ্ত পরিমাণ এবং গুণগত মান হল অন্যতম মৌলিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ যার আমরা সম্মুখীন হই। প্রযুক্তি এবং এই মৌলিক সমস্যার মধ্যে যোগসূত্রটি কী?
বার্নস্টেইন জ্যারেড, "আমেরিকান প্রত্যাশা, অক্টোবর ২০১৪ এ " এটি কোনও দক্ষতার অভাব নয় যা মজুরিকে কমিয়ে রাখে: এটি দুর্বল অর্থনীতি"
জ্যারেড বার্নস্টেন, বাজেট এবং নীতি অগ্রাধিকার সেন্টারের সিনিয়র সহকর্মী তার নিবন্ধটিতে, প্রশ্ন তোলেন যে অটোমেশন এবং আরও ব্যাপকভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রধানত এই ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজার সমস্যা সৃষ্টিতে অবদান রাখে। তার থিসিসটি অপটিমিজম ও স্কেপটিসিজম এর মধ্যে তৃতীয় উপায় হিসেবে আবির্ভূত হয়। মূলত, তিনি বেকারত্ব এবং ক্রমহ্রাসমান মজুরি এর সাথে প্রযুক্তি এবং আমেরিকান ইস্যুগুলির মধ্যে যোগসূত্রের একটি নিরপেক্ষ পদ্ধতির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি তার বক্তব্য রক্ষার জন্য দুটি প্রধান যুক্তি ব্যবহার করেন। প্রথমত, সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে, একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যক শ্রমিক তাদের চাকরি হারাচ্ছেন। তবুও, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে প্রযুক্তি এত বেশি শ্রমিককে বাস্তুচ্যুত করেছে যে এটি সমাধানের চেয়ে আরও বেশি সমস্যা তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে, অটোমেশন পুনরাবৃত্তিমূলক চাকরীর জন্য সুবিধাজনক তবে উচ্চতর কর্মসংস্থানগুলি এখনও প্রয়োজনীয় কারণ তারা প্রযুক্তি এবং ম্যানুয়াল কাজের পরিপূরক যার জন্য "নমনীয়তার বিচার এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োজন" যা মেশিনগুলির দ্বারা প্রতিস্থাপন করা কঠিন হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, অধ্যয়নগুলি সাম্প্রতিক প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গত দশকগুলির মজুরি প্রবণতার মধ্যে সুস্পষ্ট যোগসূত্র দেখায় নি।
সুতরাং, বার্নস্টেইনের মতে, বর্তমান আমেরিকান বর্ধমান বেকারত্ব ও ক্রমহ্রাসমান মজুরির উপর প্রযুক্তি এবং এর অনুমানমূলক প্রভাবগুলিতে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে, "অচল নীতি যা চাহিদা, বাণিজ্য, আয় এবং সুযোগের ভারসাম্যহীনতা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়" সে সম্পর্কে আরও বেশি চিন্তা করা দরকার।
জটিল প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা
টমাস পি হিউজেস বলেছিলেন যে প্রযুক্তি সমস্যা সমাধানের মূল উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে, তাই আরও কার্যকরভাবে এটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের এর জটিল এবং বিচিত্র চরিত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। চাকা বা কম্পাস এবং রান্না করার যন্ত্র যেমন ওভেন বা গ্যাসের চুলার মধ্যে পার্থক্য কী? আমরা কি তাদের সমস্ত কিছু, বা কেবল তাদের একটি অংশ, অথবা না তাদের কোনওটিকেই প্রযুক্তি হিসাবে বিবেচনা করতে পারি?
প্রযুক্তি প্রায়শই খুব সংকীর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়; হিউজেসের মতে, "প্রযুক্তি মানবীয় কৌতূহল জড়িত একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া"। এই সংজ্ঞাটি সৃজনশীলতার উপর জোর সীমাহীন সংজ্ঞাগুলো এড়িয়ে চলে যা ভুলভাবে রান্না করাকে "প্রযুক্তি" এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে; তবে এটি জটিল প্রযুক্তিগত সিস্টেমগুলির ব্যবহারের জন্য মানুষের ভূমিকা এবং তাদের দায়িত্ব এর উপর গুরুত্বারোপও করে।
তবুও, যেহেতু প্রযুক্তি সর্বত্র রয়েছে এবং নাটকীয়ভাবে ভূদৃশ্য এবং সমাজ গুলোকে পরিবর্তন করেছে, হিউজেস যুক্তি দিয়েছিলেন যে প্রকৌশলী , বিজ্ঞানীরা এবং পরিচালকরা প্রায়শই বিশ্বাস করেছেন যে তারা প্রযুক্তিটিকে তারা যেমন চান তেমন রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে্ন। তারা প্রায়শই ধরে নিয়েছে যে প্রযুক্তি সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং এই অনুমানটি যথাযথভাবে প্রশ্ন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাভজেনি মরোজভ বিশেষত দুটি ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন: "ইন্টারনেট কেন্দ্রিক" এবং "সমাধানবাদ"। ইন্টারনেট কেন্দ্রিক ধারণাটি বোঝায় যে আমাদের সমাজ নিশ্চিত যে ইন্টারনেট অন্যতম স্থিতিশীল এবং সুসংহত শক্তি। সমাধানবাদ হল একটি আদর্শ যা বিশ্বাস করে প্রযুক্তির এবং বিশেষত ইন্টারনেটের সুবাদে প্রতিটি সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায়। আসলে, প্রযুক্তির অভ্যন্তরীণভাবে অনিশ্চয়তা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আলেক্সিস মাদ্রিগালের মোরোজভের তত্ত্বের পর্যালোচনা অনুসারে, এটিকে অবহেলা করলে "অপ্রত্যাশিত পরিণতি তারা যে সমস্যার সমাধান করতে চায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে"। বেনজামিন আর কোহেন এবং গেন ওয়েটিংগার প্রযুক্তির বহুল যোজী প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন।
অতএব, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলির নির্ণয় এবং আরও ব্যাপকভাবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োজন - বিশেষত পরিবেশগত বিচার এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে। ওটিঞ্জার এই যুক্তিটি অব্যাহত রেখেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার চলমান স্বীকৃতি বিজ্ঞানীদের এবং ইঞ্জিনিয়ারদের তাদের ভূমিকার নতুন অনুধাবনের সাথে মিশে গেছে। প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের এই ধরনের প্রভাবে প্রযুক্তিগত পেশাদারদের এই প্রক্রিয়াটিতে তাদের ভূমিকা আলাদাভাবে বিবেচনা করা উচিত। কেবলমাত্র তথ্য এবং প্রযুক্তিগত সমাধান সরবরাহকারীদের চেয়ে গবেষণা এবং সমস্যা সমাধানে তাদের নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।
অন্যান্য প্রাণী প্রজাতি
মৌলিক প্রযুক্তির ব্যবহার মানব ছাড়াও অন্যান্য প্রাণী প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। এর মধ্যে শিম্পাঞ্জি, কিছু ডলফিন সম্প্রদায়, এবং কাকের মতো প্রাইমেট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রযুক্তির আরও বৈশিষ্ট্যগত দৃষ্টিভঙ্গিকে সক্রিয় পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রণের নীতিশাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে আমরা প্রাণীর উদাহরণ গুলি যেমন বিভার এবং তাদের বাঁধগুলো, বা মৌমাছি এবং তাদের মধুচক্রগুলিও উল্লেখ করতে পারি।
সরঞ্জাম তৈরি ও ব্যবহারের দক্ষতা একসময় Homo গণ এর একটি সংজ্ঞাযুক্ত বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হত। তবে শিম্পাঞ্জি এবং এদের সম্পর্কিত প্রাইমেটের মধ্যে সরঞ্জাম নির্মাণের আবিষ্কারটি মানুষের একমাত্র প্রযুক্তি ব্যবহারের ধারণাটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন বুনো শিম্পাঞ্জি গুলি চারণের জন্য সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করে: ব্যবহৃত কয়েকটি সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে লিফ স্পঞ্জস , ডাইমেট ফিশিং প্রোব, কীটপতঙ্গ এবং লিভার। পশ্চিম আফ্রিকান শিম্পাঞ্জি পাথরের হাতুড়ি ও নেহাই ব্যবহার করে বাদাম গুঁড়া করার জন্য যেমনটা বোয়া ভিস্তা, ব্রাজিল এর একপ্রকার সন্ন্যাসী বানরও করে থাকে।
ভবিষ্যত প্রযুক্তি
থাম্ব|শ্যাডো ডেক্সটারাস রোবট হাতে একটি লাইট বাল্ব ধরে আছে।
প্রযুক্তির তত্ত্বগুলি প্রায়শই কোনো সময়ের উচ্চ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তির ভবিষ্যতের ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করে। ভবিষ্যতের সমস্ত পূর্বাভাসের মতো, প্রযুক্তিও অনিশ্চিত।
২০০৫ সালে, ভবিষ্যৎ বিদ রে কুর্জওয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে প্রযুক্তির ভবিষ্যতে মূলত জেনেটিক্স, ন্যানো টেকনোলজি ও রোবটিক্স এর একটি ওভারল্যাপিং "জিএনআর রেভোলিউশন" সমন্বয় থাকবে এবং এই তিনটির মধ্যে রোবটিক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
.
বিষয়শ্রেণী:প্রযুক্তি
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:প্রযুক্তি ব্যবস্থা |
সাহিত্য | https://bn.wikipedia.org/wiki/সাহিত্য | thumb|গীতবিতান" সংকলনের ‘স্বদেশ’ পর্যায়ভুক্ত ‘বিধির বাঁধন কাটবে তুমি’ গানটির পাণ্ডুলিপি। এই গানটি একটি জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত।
সাহিত্য বলতে যথাসম্ভব কোনো লিখিত বিষয়বস্তুকে বুঝায়। সাহিত্য শিল্পের একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়, অথবা এমন কোনো লেখনী, যেখানে শিল্পের বা বুদ্ধিমত্তার আঁচ পাওয়া যায়, অথবা যা বিশেষ কোনো প্রকারে সাধারণ লেখনী থেকে আলাদা৷ মোটকথা, ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি হচ্ছে সাহিত্য। ধরন অনুযায়ী সাহিত্যকে কল্পকাহিনি বা বাস্তব কাহিনি কিংবা পদ্য, গদ্য এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। পদ্যের মধ্যে ছড়া, কবিতা ইত্যাদি, গদ্যের মধ্যে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এছাড়াও অনেকে নাটককে আলাদা প্রধান শাখা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেন। নাটকের মধ্যে নাটিকা, মঞ্চনাটক ইত্যাদিকে ভুক্ত করা যায়।
প্রধান ধারা
পদ্য
পদ্য (ইংরেজি: Poetry) হলো সাহিত্যিক ধারার একটি রূপ, যা কোনো অর্থ বা ভাব প্রকাশের জন্য গদ্যছন্দে প্রতীয়মান অর্থ না ব্যবহার করে ভাষার নান্দনিক ও ছন্দোবদ্ধ গুণ ব্যবহার করে থাকে। পদ্যে ছন্দোবদ্ধ বাক্য ব্যবহারের কারণে গদ্য থেকে ভিন্ন। গদ্য বাক্য আকারে লেখা হয়, পদ্য ছত্র আকারে লেখা হয়। গদ্যের পদবিন্যাস এর অর্থের মাধ্যমে বুঝা যায়, যেখানে পদ্যের পদবিন্যাস কবিতার দৃশ্যমান বিষয়বস্তুর উপর নির্ভরশীল।
গদ্য
গদ্য হলো ভাষার একটি রূপ, যা সাধারণ পদবিন্যাস ও স্বাভাবিক বক্তৃতার ছন্দে লেখা হয়। গদ্যের ঐতিহাসিক বিকাশ প্রসঙ্গে রিচার্ড গ্রাফ লিখেন, "প্রাচীন গ্রিসের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে, গদ্য তুলনামূলকভাবে অনেক পরে বিকশিত হয়েছে, এই "আবিষ্কার" ধ্রুপদী যুগের সাথে সম্পর্কিত।"
নাটক
নাটক হলো এমন এক ধরনের সাহিত্য, যার মূল উদ্দেশ্য হলো তা পরিবেশন করা। সাহিত্যের এই ধারায় প্রায়ই সঙ্গীত ও নৃত্যও যুক্ত হয়, যেমন গীতিনাট্য ও গীতিমঞ্চ। মঞ্চনাটক হলো নাটকের একটি উপ-ধরন, যেখানে একজন নাট্যকারের লিখিত নাটকীয় কাজকে মঞ্চে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। এতে চরিত্রগুলোর সংলাপ বিদ্যমান থাকে এবং এতে পড়ার পরিবর্তে নাটকীয় বা মঞ্চ পরিবেশনা হয়ে থাকে।
আরো দেখুন
আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য পরিষদ
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
বহিঃসংযোগ
ডিকশনারী অব দ্য হিস্টোরি অব আইডিয়াস
কার্ণেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বজনীন পাঠাগার
ইংলিশ লিটারেচার ফোরাম
প্রজেক্ট গুটেনবার্গের অনলাইন পাঠাগার
আর্টস, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
বিষয়শ্রেণী:সাহিত্য
বিষয়শ্রেণী:সংস্কৃতি
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
নৃত্য | https://bn.wikipedia.org/wiki/নৃত্য | right|thumb|আধুনিক নৃত্য
নৃত্য শব্দটি সাধারণত শারীরিক নড়াচড়ার প্রকাশভঙ্গীকে বোঝায়। এ প্রকাশভঙ্গী সামাজিক, ধর্মীয় কিংবা মনোরঞ্জন ক্ষেত্রে দেখা যায়। গীতবাদ্যের ছন্দে অঙ্গভঙ্গির দ্বারা মঞ্চে চিত্রকল্প উপস্থাপনের ললিত কলাই নৃত্য বা নাচ।বাংলা অভিধান
নৃত্যকলার সংজ্ঞা নির্ভর করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নন্দনতত্ত্বিক, শৈল্পিক এবং নৈতিক বিষয়ের উপর। এই আন্দোলনের নান্দনিক এবং প্রতীকী মূল্য আছে। নৃত্যকে বিভিন্নভাবে শ্রেনীবিভাগ করা যায়। কোরিওগ্রাফি, আন্দোলনের ধরন, ঐতিহাসিক সময়কাল বা উৎপত্তিস্থল উল্লেখযোগ্য। যদিও থিয়েটার ও সামাজিক নৃত্যকে সবসময় আলাদা শ্রেণীতে ভাগ করা হয় না, তবুও এর উদ্দেশ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে।
পরিবেশনা এবং অংশগ্রহণ
মঞ্চে পরিবেশিত নৃত্য-এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রদর্শনী, একে সঙ্গীতানুষ্ঠানের নৃত্যও বলা যায়। এই নৃত্য সাধারণতঃ গুণী শিল্পীদের মঞ্চে মঞ্চ পরিবেশনার মাধ্যমে মঞ্চস্থ হয়। এই নাচগুলোতে বেশীরভাগ সময়েই কোন না কোন গল্প বলা হয়। আর এই গল্পগুলি বলা হয় মুকাভিনয়, পোশাক ও দৃশ্যপটের সাহায্যে, কখনো কেবল সঙ্গীতের মাধ্যমে এই নৃত্যগুলি পরিবেশন করা হয়। এই সঙ্গীত বিশেষভাবে কেবল মঞ্চে নাচ পরিবেশনের জন্য তৈরী ও পরিবেশন করা হয়, যদিও এই গানের বিষয়টি কোন বাধ্যতামূলক কিছু নয়। পশ্চিমা ব্যালে ও আধুনিক নৃত্য, ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য যেমন, ভরতনাট্যম, চীন ও জাপানের গান এবং নৃত্যনাট্য যেমন ড্রাগন নৃত্য এই ধরনের সঙ্গীতের সাথে নাচের উদাহরণ। বেশীরভাগ শাস্ত্রীয নৃত্য কেবল নাচের জন্য হলেও পরিবেশনার জন্য নৃত্য অপেরা এবং অন্যান্য সঙ্গীতপ্রধান নাট্যে পরিবেশিত হয়।
নৃত্যকলার ইতিহাস
প্রাচীন মানুষের ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন বস্তু নিদর্শনের মতো নৃত্যকলার তেমন কোন বস্তু না পাওয়া গেলেও নৃত্যকলা প্রাচীন মানবের বিভিন্ন আচার উৎসবে নৃত্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে প্রগৈতিহাসিক কালে নৃত্যকলার প্রমাণ পাওয়া যায়। খৃষ্টপূর্ব ৩৩০০ সালে মিশরীয় দেয়াল চিত্রে এবং ভারতের গুহা চিত্রে নৃত্যকলার ভঙ্গী উৎকীর্ণ রয়েছে। দেয়ালচিত্রে খোদিত ভঙ্গীগুলো হতে মনে হয় যে কিংবদন্তির কাহিনী পরিবেশনের জন্যই ঔ চিত্রগুলো উৎকীর্ণ করা হয়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে লিখিত বর্ণমালা প্রচলনের আগে নৃত্যকলার এই পদ্ধতির মাধ্যমেই এই সব গল্প বংশ পরম্পরায় চলে আসতো।Nathalie Comte. "Europe, 1450 to 1789: Encyclopedia of the Early Modern World". Ed. Jonathan Dewald. Vol. 2. New York: Charles Scribner's Sons, 2004. p94-108.
নৃতকলার আরো একটি প্রাচীন প্রকাশ দেখা যায় অতীন্দ্রিয় চেতনায় বিভিন্ন কু-প্রভাব হতে মুক্ত করার আচার অনুষ্ঠানে। আজো নৃত্যকলার এই ব্যবহার ব্রাজিলীয় চিরহরিৎ বনাঞ্চলের সংস্কৃতি হতে কালাহারি মরুভুমির সংস্কৃতি পর্যন্ত বিস্তৃত।Guenther, Mathias Georg. 'The San Trance Dance: Ritual and Revitalization Among the Farm Bushmen of the Ghanzi District, Republic of Botswana.' Journal, South West Africa Scientific Society, v30, 1975-76.
সঙ্গীত
সাধারণতঃ নৃত্য পরিবেশিত হয় সঙ্গীত সহযোগে, যদিও এমনটাই একচেটিয়া কোন নিয়ম নয়। তাছাড়া সঙ্গীতের সাথেই একই সময়ে নৃত্য পরিবেশিত নাও হতে পারে। কিছু নাচ,সঙ্গীতের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে তার নিজের শ্রবণযোগ্য শব্দ যোগ করে নাচের সময়(যেমন ট্যাপ ড্যান্স বা ট্যাপ নৃত্য)। নৃত্যের পূর্বের ধরনগুলোতে নৃত্য ও সঙ্গীত একটি আরেকটির পরিপূরক হিসেবে তৈরী হয়েছিল এবং নিয়মিত পরিবেশিত হত। এই ধরনের সঙ্গীত ও নৃত্যের সম্মিলনে নাচের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো জিগ, ওয়াল্টয, ট্যাংগো, ডিসকো ও সালসা। কিছু সঙ্গীত ঘরাণার আবার সমান্তরাল নৃত্যশৈলী আছে, যেমন বারোকী সঙ্গীত ও বারোকী নৃত্য। অন্য ধরনগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য এক থাকলেও আলাদাভাবে সঙ্গীত ও নৃত্যধারা বিকশিত হয়েছে,শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় ব্যালে নাচের কথা এক্ষেত্রে বলা যায়। নৃত্যবিন্যাস ও নাচের গান যেন একে অন্যের সহচর, যা নৃত্য নির্দেশক ও নৃত্যশিল্পীরা তাদের নাচের মধ্যের গল্প বা কাহিনী বলার জন্য একসাথে মিলিয়ে পরিবেশন করেন।
ছন্দ
ছন্দ ও নৃত্য গভীরভাবে এক অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত, ঐতিহাসিকভাবে এবং প্রচলিত অর্থে। যুক্তরাষ্ট্রের নৃত্যশিল্পী টেড শন লিখেছেন “ছন্দের ধারণা, নৃত্যের সকল পাঠের সাথে মিশে আছেে এমনভাবে যে এই বিষয়ে অনন্তকাল কথা বললেও তা শেষ হবে না।” একটি সঙ্গীতের ছন্দের দুটি প্রধাণ উপকরণ থাকে, প্রথমটি হলো একটি নিয়মিতভাবে পুনরাবৃত্ত স্পন্দন (যাকে তাল বা টাকরাও বলা হয়), যে স্পন্দন গানের লয় বা গতি ঠিক করে দেয়। অপরটি হলো বিরতি ও শব্দাংশের একটি নির্দিষ্ট নমুনা,যা মৌলিক ছন্দের দৈর্ঘ্য ঠিক করে দেয়। সাধারণতঃ মূল ছন্দ সব সময় সমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট সহজ প্রকৃতির হয়ে থাকে। নৃত্যশিল্পীদের সাধারণতঃ গতি ও ছন্দের একটি নির্দিষ্ট ধরন থাকে। উদাহরণস্বরুপ ট্যাংগোর কথা বলা যায়, যেখানে প্রতি মিনিটি মোটামুটিভাবে ৬৬ তালের ৪ ভাগের ২ ভাগ ছন্দের আবর্তনে নাচতে হয়। মৌলিক ধীর পদক্ষেপ, যাকে ‘ধীর’ বলা হয়, তা এক আবর্তন পর্যন্ত স্থায়ী হয়, যার অর্থ হচ্ছে একটি পুরো বাম থেকে ডান পর্যন্ত পদক্ষেপ একটি ছন্দের ৪ ভাগের ২ ভাগ দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে। নাচটির মৌলিক আরেকটি পায়ের কাজ সামনে ও পেছনে চলা একইভাবে “ধীর-ধীর” ছন্দে গণণা করা হয়, যেখানে অনেক অতিরিক্ত হাতের বা পায়ের কাজকে “ধীর-দ্রুত-দ্রুত” ছন্দে গণনা করা হয়। বারবার পুনরাবৃত্ত শারিরীক আন্দোলন প্রায়ই ‘শক্তিশালী’ ও ‘দুর্বল’ পৌরুষচিত নড়াচরার সাথে তুলনীয়, ঠিক যেমন সঙ্গীতের ছন্দকে সবল ও দুর্বল তাল দিয়ে বোঝানো যায়। এটা খুবই প্রাকৃতিক যে, অনেক নাচ ও সঙ্গীতের তালের দৈর্ঘ্য দুই বা চার মাত্রার হয়। এটা অনেকটা মানুষের শরীরের দ্বি প্রতিসাম্যতার মত, যেমন ডান-বাম, সম্মুখ-পশ্চাৎ ও উত্থান-পতন। কিছু নৃত্যের ছন্দ আবার সাধারণভাবেই তিন মাত্রার ছন্দে পড়ে। যেখানে কোন কোন মুদ্রার প্রকাশে অন্য ছন্দের মাত্রার তুলনায় বেশী সময়েরর মাত্রার প্রয়োজন হয়, যেমন একটি হাতুড়ীকে তোলার জন্য হাতুড়ীটি দিয়ে আঘাত তরার চেয়ে বেশী সময় প্রয়োজন। ক্ষেত্রবিশেষে, ঐতিহ্যগতভাবেই জটিল ছন্দের নৃত্যশৈলী দেখা যায়, যেমনটা আমরা দেখি বলকান অঞ্চলের লোক নৃত্যের বেলায়। জটিল মুদ্রা ও তাল বিশিষ্ট নৃত্যের জন্য সর্ব সময় নির্দিষ্ট সুর ও কথার সমন্বয়ে নির্দিষ্ট ক্রমের শারিরীক আন্দোলন ও পদচালনার মিশ্রণে নৃত্যটি নির্মাণ করা হয়। নাচের মুদ্রা, পদসঞ্চালন ছন্দোময় তালের প্রাথমিক কাঠামো তৈরী করে, যেটা যেকোন নেপথ্য সঙ্গীতের তৈরী করার শক্তি নেই। সঙ্গীতের মত নৃত্যেরও সময়কে বেধে রাখার ক্ষমতা প্রয়োজন হয়, দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য। হাঁটা, খনন করা, কিছু টেনে নিয়ে যাওয়া এই সকল বিষয়ের পরিবেশনের পরিশীলিত রূপ নৃত্যের মান তৈরী করে। এই সকল কাজের সঠিক পুনরাবৃত্ত প্রধান উপস্থাপনের চেয়ে নান্দনিক প্রকাশ নাচের জন্য জরুরী। একদম প্রথমদিকের নৃত্যগুলোর মধ্যেই সঙ্গীতের সহযোগ নাচের সাথে দেখা যায়। প্রাচীন মিশরীযরা দেবতা এ্যাথোটাসের থেকে নৃত্যের উৎসকে সম্পর্কিত করে। বলা হয়ে থাকে যে, এই দেবতা ধর্মীয় রীতি পালনের সময় গানের সাথে উপাসকদের ছন্দোবদ্ধ নড়াচড়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেন। এই নড়াচড়ার বিষয়টি আবার নির্দিষ্ট অনুপাতে হয়ে থাকে। নৃত্য যে, সঙ্গীতের ছন্দের থেকে উৎপন্ন হয়েছে, এই ধারণা এখনো ইউরোপীয় রেনেসায় মনে করা হয়। নৃত্য গুরু গুইগিয়েলমো এবরিও ডা পেসারো এর কাজে তা দেখা যায়। পেসারো বলেন যে, নৃত্য একটি শারিরীক আন্দোলনের প্রকাশ, যা কাঠামো তৈরী করে, আন্দেলিত শরীরের সাথে পরিবর্তনশীল মানসিক অবস্থার প্রকাশ করে। সঙ্গীতের সাথে শারিরীক আন্দোলন ও আত্মিক পরিবর্তনের পরিমাপ একটি নিখুত সম্মিলন হিসেবে শ্রোতার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে।
পন্থা
থিয়েটার
সঙ্গীতানুষ্ঠানের নৃত্য, যেমন অপেরায়, সাধারণত বড় আয়োজনের নৃত্য হয়। কারণ অপেরার বর্ণণামূলক নাটকীয় ধরন, যার জন্য বৃহত পরিসরের নাচের প্রয়োজন পড়ে। এই ধরনের নৃত্যের মুদ্রা ও অঙ্গভঙ্গি গুলো অপেরার চরিত্রগুলোর নিজস্বতা ও ব্যক্তিত্বকে অনুসরণ করে এবং চরিত্রগুলোর কাহিনীতে যে ভূমিকা বা গুরুত্ব আছে সেই অনুযায়ী নৃত্যের মু্দ্রা হয়ে থাকে। অপেরার নৃত্যের দীর্ঘ ও অপেক্ষাকৃত ব্যকরণ মুক্ত মুদ্রার কারণ অপেরার চরিত্র অনুযায়ী নৃত্যের উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা। অপরদিকে যে সকল নৃত্যের এই ধরনের বর্ণনাত্মক চরিত্রকে তুলে ধরতে হয় না, তাদের নৃত্যের মুদ্রা অপেক্ষাকৃত ব্যকরণ অনুযায়ী হয়ে থাকে। আবার যে ছন্দোবদ্ধ বিরতিযুক্ত যে ব্যালে নাচের বিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটেছে ১৯ শতক জুড়ে, ২০ শতকে সেই নাচ পরিণত হয়েছে সম্পূর্ণ কাহিনী বিবর্জিত পরিবেশনায়। যার ফলে সম্ভব হয়েছে ব্যালে নৃত্যে দ্রুত ছন্দের পদচালনার অন্তর্ভুক্তি ঘটানো, যার খুব পরিচিত একটি উদাহরণ ‘দি সিগনেট নৃত্য’ যা ‘সোয়ান লেক” এর দ্বিতীয় অঙ্কে দেখা যায়।
অংশগ্রহণমূলক এবং সামাজিক
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
এশিয়া
সকল ভারতীয় নৃত্য জন্ম নিয়েছে নাট্যশাস্ত্র থেকে। যারফলে প্রত্যেকেরই একরকম সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন হাতের ভঙ্গিতে (মৃুদ্রা), আঙ্গিক অবস্থানে, পদ সঞ্চালনে এবং নাটকীয় মুখভঙ্গিতে যাকে অভিনয় বলা হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সহযোগে নৃত্যগুলি পরিবেশিত হয়, প্রায় সকল নৃত্যশৈলীর শিল্পীরা পায়ের গোড়ালীর চারপাশে ঘন্টা বাধেন, এই ঘন্টাগুলোর সংঘর্ষে যে শব্দ হয় তার মাধ্যমে সঙ্গীতের বিপরীতে নৃত্য শিল্পী উত্তর দেন।
আজকাল ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের অনেকগুলো আঞ্চলিক ধরন দেখা যায়।“অদরা মাগাধী” নৃত্যটি দীর্ঘদিনের বিতর্কের পর বর্তমান সময়ের ওড়িশ্যা,মিথিলার আঞ্চলিক নৃত্য ওডিসি(ওড়িশি)র সাথে সম্পর্কিত বলা হচ্ছে। এই ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়ার ফলাফল, যা নৃত্যের প্রভাবে হয়েছে।
ভাংরা নাচের এলাকা হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত পাঞ্জাব। এটি একই সাথে নৃত্য ও সঙ্গীতের ধরন বলে পরিচিত। এটা প্রাচীন ফসল উৎপাদনের উৎসবের সাথে সম্পর্কিত। ভাংরায় এর সাথে আরও দেখা যায় প্রেম, দেশপ্রেম অথবা সামাজিক ঘটনার উপস্থিতি। ঢোল নামের একটি বাদ্যযন্ত্র ভাংরায় ব্যবহুত হয়।
শ্রীলংকার নৃত্যের মধ্যে রয়েছে শয়তান নৃত্য। এই নাচের শিকড় অনেককাল আগের শ্রীলংকান প্রাক বৌদ্ধ সময়কালে। সতর্কতার সাথে এই নৃত্যে ধর্মীয় রীতির পালন করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার নৃত্য ইন্দোনেশিয়ার সমৃদ্ধ নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও বৈচিত্রময়তা তুলে ধরে। ইন্দোনেশিয়ায় ১৩০০ এরও বেশি নৃগোষ্ঠী আছে। এ্যাষ্ট্রোনেশিয়ান ও মেলানিসিয়ান জনগোষ্ঠী হতে এই সংস্কৃতি জন্ম নিয়েছে।
আফ্রিকা
আফ্রিকায় নৃত্য সমাজ ও গোষ্ঠীগুলোর বড় বড় ঘটনার সাথে মিশে আছে। প্রায়ই নৃত্যের মাধ্যমে গোষ্ঠী ও সমাজ তাদের সামাজিক উৎসবের প্রকাশ করে থাকে।
কারো জন্ম হলে নৃত্য পরিবেশিত হয়, কেউ মৃত্যুবরণ করলেও তা নৃত্যের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যুদ্ধের জন্য নৃত্য আছে, আছে বিয়ের নাচও। ঐতিহ্যবাহী নাচগুলোতে সাংস্কৃতিক নীতির প্রকাশ পায়। এরমধ্যে থাকে ধর্মীয় রীতিনীতি ও যৌনতার মানদন্ড। অবদমিত আবেগকে এই নৃত্যের মাধ্যমে মুক্তভাবে প্রকাশ করা হয়, যেমন শোক। সমাজ বা গোষ্ঠীর সদস্যদের পারস্পারিক সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য উদীপ্ত করে এই সকল নৃত্য। অন্যদিকে লড়াই অথবা শস্য মাড়াই জাতীয় নাচের মাধ্যমে ঐশ্বরিক বা ধর্মীয় আচারকে প্রতিষ্ঠিত করা হয় যাতে করে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়।
মহাদেশ জুড়ে প্রচুর ভিন্ন ভিন্ন নৃত্য পরিবেশন করা হয়ে থাকে। এই নাচগুলোকে ঐতিহ্যবাহী, নব্য চর্চাকৃত ঐতিহ্য এবং শাস্ত্রীয় নৃত্য হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়।
শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্যে আছে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর লোক নৃত্য, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য শৈলীর অনুকরণে সাম্প্রতিককালে সৃষ্ট নৃত্যধারা এবং বিদ্যালয় বা ব্যক্তিগতভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অধিক বিধিবদ্ধ নৃত্য। আফ্রিকান নৃত্যশৈলী নানাভাবে বাইরের বিভিন্ন প্রভাবক দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ইউরোপীয় ধর্মপ্রচারক ও ঔপনিবেশিক সরকারের কথা এক্ষেত্রে বলা যায়। যাদের কাছে স্থানীয় নৃত্য যৌনানুভূতিপূর্ন অভব্য ধরনের অথবা মনোযোগ বিক্ষেপণকারী বলে মনে হত। যার ফলে তারা স্থানীয় নৃত্যকে নানাভাবে দমিয়ে রাখতে চাইতো। সমসাময়িক আফ্রিকান সংস্কৃতিতে নৃত্য এখনো তার ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, তবে নতুন অবয়বে। নৃত্য এখন পরিবেশিত হয় হাসপাতালের উদ্বোধনে, গ্রামীন জনগোষ্ঠীর নতুন অপরিচিত শহরে অভিবাসনের পর বা খিষ্ট্রীয়ান উপাসনালয়ের উৎসবে।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা
অঞ্চলভেদে ইউরোপে লোকনৃত্যের ধরনে ভিন্নতা দেখা যায়। কিছু কিছু লোকনৃত্য শত বছর কিংবা হাজার বছরেরও পুরোনো। যদিও এগুলোর মধ্যে সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, যেমন ক্যারলস নৃত্যে একজন আহ্বানকারীর নেতৃত্বে দলগত অংশগ্রহণের ব্যপারটি। যেখানে পরস্পর হাত ধরাধরি তরে অথবা বাহুর সাথে বাহু যুক্ত করে নির্দিষ্ট সঙ্গীতের ধরনের সাথে নৃত্য থাকে। কিছু নৃত্য , যেমন মেপোল, অনেক জাতীর মধ্যে প্রচলিত। আবার পোলকা বা সেলিধ নৃত্য কোন একটি নির্দিষ্ট জাতী বা সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে প্রোথিত। স্কয়ার নৃত্যের মত কিছু ইউরোপিয়ান নৃত্য নতুন বিশ্বের নিকট পরিচিত হয়ে ওঠার সাথে সাথেই যুক্তরাষ্ট্রর সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে।
প্রথমে ইতালী ও তার পরে ফ্রান্সে ব্যালে নাচের প্রসার ঘটে। অভিজাত শ্রেনীর দর্শকদের জন্য সঙ্গীত, কাব্য, নাট্য, গান, পোশাক ও নৃত্যের সমন্বয়ে ব্যালে পরিবেশিত হত। রাজসভার অভিজাত ব্যক্তিরা পরিবেশনায় অংশ নিতেন। চতুর্দশ লুই ছিলেন একজন নর্তক। তার রাজত্বকালে নৃত্য বিধিবদ্ধ নিয়মে আসতে শুরু করে। আনাড়ী অভিজাতদের পরিবর্তে পেশাদার নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশনায অংশ নিতে থাকেন। ব্যালে শিক্ষকদের ফ্রান্স সরকার দ্বারা অনুমোদন প্রদান করা শুরু হয়।
১৬৬১ সালে প্যারিসে প্রথম ব্যালে নৃত্য শেখার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। যার নাম ছিল আকাদেমী রয়্যাল দে দানস ( রাজকীয় নৃত্যচর্চা কেন্দ্র)। এই কেন্দ্র হতে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যালে নাচের দল গঠন করা হয়। এই দল কোন নারী নৃত্য শিল্পী ছিলো না। নারী নৃত্যশিল্পী অন্তর্ভুক্ত শুরু হয় ১৬৮১ সালে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মঞ্চে পরিবেশিত নৃত্য শৈলীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে, তুলনামূলক ব্যকরণমুক্ত নৃত্য পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে। আধুনিক নৃত্য বলতে আমরা যা বুঝি, তারশুরুর দিকের পথপ্রদর্শকরা ছিলের লোয়ী ফুলার, ইসাডোরা ডানকান, ম্যারী উইগম্যান ও রুথ সেইন্ট ডেনিস। এমিল জাকোইস-ডালক্রোজ এমন যন্ত্র তৈরী করেন যেটা সঙ্গীতের সাথে নৃত্যের সম্পর্ককে শিক্ষার্থীদের নিকট সহজভাবে বোধগম্য করে তুলতে পারে। এর নাম হচ্ছে ইয়োরহিথমিকস। এই যন্ত্র আধুনিক নৃত্য ও আধুনিক ব্যালে নৃত্যের প্রসারের জন্য ম্যারী রামবার্ট ও এ ধরনের শিল্পীদের জন্য এক প্রেরণাময় ব্যাপার ছিলো। রুডলফ ষ্টেইনার ও মেরী ষ্টেইনার-ভন সেভার্স ইউরিদমীর পরিবর্ধন করেন, পূর্বের প্রচলিত কেতাবী উপাদানের সাথে মুক্ত প্রকৃতির ধারার মিশ্রণে নৃত্যের পরিবর্তন আনেন। সেইসাথে নৃত্যের নতুন জটিল পরিভাষার প্রচলন ঘটান। ১৯২০ এর দশকে নতুন ধারা ব্যালের গুরুত্বপূর্ন উদ্ভাবক যেমন মার্থা গ্রাহাম ও ডরিস হামফ্রে তাদের কাজ শুরু করেন। এই সময় হতে এক বিস্তৃত ও বৈচিত্রময় নৃত্যশৈলীর বিবর্ধন শুরু হয়। আধুনিক নৃত্য, আফ্রিকান আমেরিকান নৃত্য প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠতে শুরু করে, নৃত্য ষ্টুডিও, পেশাদার নৃত্যদল বা নৃত্য শিক্ষা কেন্দ্রগুলির বাইরে নৃত্য হয়ে ওঠে জীবনাচারের অংশ। ট্যাপ নৃত্য, জ্যজ, সুইং নৃত্য, হিপ-হপ, লিন্ডি হপ, ডিসকো প্রভৃতি নৃত্যগুলির রক-এন-রোল ধারার সঙ্গীতের সাথে মিশ্রণের কারণে রক-এন-রোল নৃত্য পুরো বিশ্বে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। একবিশ্ব শতকে আভির্ভাব হয় হিপলেট নৃত্যের। যেখানে শাস্ত্রীয় ব্যালের নৃত্য পদ্ধতি আফ্রকান-আমেরিকান নৃত্যের সাথে মিলে নতুন নৃত্যধারার সূচনা করে।
লাতিন আমেরিকা
লাতিন আমেরিকার সামাজিক জীবন ও সংস্কৃতিতে নৃত্য একটি কেন্দ্রীয স্থান নিয়ে আছে। ব্রাজিলের সাম্ভা, আর্হেন্টিনার ট্যাঙ্গো, কিউবার সালসা সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয় যুগল নৃত্য। অন্যান্য জাতীয় নৃত্যগুলিও তাদের দেশের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নৃত্যগুলির মধ্যে আছে মেরেনগি, চুকা, জারাবি, জোরোপো, মারিনেরা, কাম্বিয়া, বাছাতা ও আরও কিছু নৃত্য। ঐতিহ্যবাহী উৎসব উদযাপনে এইনব নৃত্যগুলির সংমিশ্রণে উৎসবের আনএন্দর মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
লাতিন আমেরিকার অনেক নৃগোষ্ঠী ও আদিবাসী সংস্কৃতির সমষ্টিগত পরিচিতি বিনির্মাণে নৃত্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অঞ্চলের অনেক আফ্রিকান, ইউরোপীয়ান ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংহতি তৈরীতে নৃত্য ভূমিকা রাখে। লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে নির্দিষ্ট ধারার নৃত্য শৈলী যেমন ক্যাপোইরা, এবং নির্দিষ্ট শারিরীক মুদ্রা যেমন কিউব্রাডাস বা শরীরের নিম্নাংশের আন্দোলন বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ হয়েছে আবার উদযাপিতও হয়েছে।
শিক্ষা
নৃত্যকলা বিষয়ে অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কলা ও মানবিকী বিষয়ক শিক্ষাক্রমের অধীনে পড়ার সুযোগ আছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নৃত্যে কলা বিভাগে স্নাতক হওয়ার এবং আরও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়। নৃত্য বিষয়ে শিক্ষাক্রম বৈচিত্রময় ও বিশাল পরিসরে বিষয় ও পাঠ্যবস্তু নিয়ে তৈরী হয়। এই সকল বিষয়ের মধ্যে যেমন থাকে নৃত্য পরিবেশনা, নৃত্য নির্দেশনা, নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব নৃত্যধারা তেমনি আরও থাকে নৃত্য ও শরীরের সম্পর্ক বিষয়ক জ্ঞান, নৃত্যের গঠন ও নৃত্য ব্যবহার করে চিকিৎসা পদ্ধতি বিষয়ক পাঠক্রম। পাঠ বুঝতে সমস্যা হয় এ ধরনের শিশুদের, আচরণগত/আবেগগত সমস্যা সম্পন্ন শিশুদের এবং মনোযোগ প্রদানে মারাত্মক সমস্যা সম্পন্ন শিশুদের গণিতের পাঠ বোঝাতে নৃত্যের সাহায্যে শরীরকে ব্যবহার করার বিষয়টি খুব সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে।
পেশা
নর্তকী
পেশাদার নৃত্যশিল্পীরা সাধারণতঃ চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকেন। এই চুক্তি নির্দিষ্ট প্রযোজনার জন্যও হতে পারে আবার নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী হতে পারে। পেশাদার নৃত্যশিল্পীদের জীবন মূলত ক্রমাগত পরিবর্তনশীল কার্যপরিবেশের সমষ্টি । যে জীবনে আছে তীব্র প্রতিযোগিতারে চাপ আর নিম্ন পারিশ্রমিক । সঙ্গতকারণে পেশাদার নৃত্যশিল্পীদের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করতে হয়। যুক্তরাস্ট্রে অনেক পেশাদার নৃত্যশিল্পী বিভিন্ন শ্রম সংগঠনের সাথে যুক্ত(যেমন আমেরিকান গিল্ড অব মিউজিক্যাল আর্টিষ্ট, স্ক্রীণ আ্যক্টরস গিল্ড ও আ্যকটরস ইকুয়িটি এসোসিয়েশন)। এই শ্রম সংগঠনগুলো সদস্যদের কাজের নিরাপদ পরিবেশ ও ন্যুনতম মজুরীর নিশ্চয়তা প্রদান করে। পেশাদার নৃত্যশিল্পীদের শারিরীকভাবে সুঠাম ও সবল হতে হয়। সফল কা্যরিয়ারের জন্য নৃত্য শিল্পীদের বিভিন্ন নৃত্যশৈলীতে পারদর্শী হতে হয়। সেই সাথে থাকতে হয় কারিগরী বিষয়ের উপরে ভালো ধারণা। বিভিন্ন শারিরীক কসরতের উপরে প্রশিক্ষণ থাকাটাও জরুরী, যাতে করে স্বাস্থ্যবান ও শারিরীকভাবে যোগ্য থাকা যায়।
শিক্ষক
নৃত্য নির্দেশক
নৃত্য নির্দেশক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি একটি নৃত্যের মধ্যে কি ধরনের নৃত্য হাতের ও পায়ের কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে , তা নির্ধারণ করেন। বেশিরভাগ নৃত্য নির্দেশক বিশ্ববিদ্যালয় বা এধরনের অন্য প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সাধারণত নৃত্য নির্দেশকরা নির্দিষ্ট কোন প্রকল্পের জন্য নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তবে এমনও দেখা যায় যে, কোন কোন নৃত্য নির্দেশক পেশাদার নৃত্য দলের সাথে সার্বক্ষণিক নৃত্য নির্দেশক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করেন।
প্রতিযোগিতা
নৃত্য প্রতিযোগিতায় বা একাধিক বিচারকের সামনে প্রতিযোগিরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এধরনের প্রতিযোগিতায় সাধারণত পুরস্কার দেওয়া হয়, কখনো আর্থিক পুরস্কারও থাকে। বেশ কিছু বড় পরিসরের নৃত্য প্রতিযোগিতা আছে। এ প্রতিযোগিতাগুলোকে সাধারণত নৃত্যের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরিবেশনা করার প্রকৃতি দিয়ে আলাদা করে চেনা যায়। বড় নৃত্য প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে নিচের প্রতিযোগিতাগুলোর কথা বলা যায় -
ড্যান্সস্পোর্ট , বিশেষভাবে বলরুম ও লাতিন নৃত্যের উপরে নজর দেয়।
প্রতিযোগিতামূলক নৃত্য,মিলনায়তনে প্রদর্শন উপযোগী নৃত্যের প্রতিযোগিতা, যেখানে সচরাচরএক্রো, ব্যালে, জ্যাজ, হিপ-হপ, লিরিক্যাল, ট্যাপ প্রভৃতি নৃত্য প্রদর্শন করতে হয়।
একক ধরনের নৃত্য প্রতিযোগিতা, যেমন হাইল্যান্ড নৃত্য, দলীয় নৃত্য এবং আইরিশ নৃত্য, যেখানে কেবল একটি নৃত্যশৈলী দেখানো যায়।
উন্মুক্ত নৃত্য প্রতিযোগিতা, যেকোন ধরনের নৃত্যের প্রতিযোগিতা, এই ধরনের উদাহরণ টেলিভিশন অনুষ্ঠান সুতরাং তুমি মনে কর যে তুমি নাচতে পারো (সো ইউ থিংক ইউ ক্যান ড্যান্স)
অলিম্পিক, নৃত্য অলিম্পিক ক্রীড়া হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে ১৯৩০ সাল হতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এর বাইরে অগুণতি নৃত্য প্রতিযোগিতা আছে যেগুলো টেলিভিশন ও অন্যান্য প্রচারমাধ্যমে প্রচইরত হচ্ছে।
গ্যালারি
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:নৃত্য
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:বিনোদন পেশা
বিষয়শ্রেণী:পরিবেশন শিল্পকলা |
উৎসব | https://bn.wikipedia.org/wiki/উৎসব | |
খেলনা | https://bn.wikipedia.org/wiki/খেলনা | thumb|বাচ্চাদের জন্য তৈরি প্লাষ্টিকের খেলনা
খেলাধূলায় ব্যবহৃত সামগ্রীই খেলনা। সাধারণতঃ শিশুরা আর ঘরে পোষা জীবজন্তুরাই খেলনা নিয়ে খেলে, যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের বা বন্য প্রাণীদের খেলনা নিয়ে খেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। খেলনা হিসেবে প্রচুর কিছু বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হয়। আবার খেলার জন্য তৈরি করা হয়নি এমন যে কোন কিছুকেই খেলনা হিসেবে কল্পনা করে তা নিয়ে কেউ খেলতে পারে — ঘরের যে কোন জিনিসকে এরোপ্লেন ভেবে নিয়ে 'উড়িয়ে' নিয়ে যেতে পারে একটি শিশু, আবার একটা পাইন কোনকে থাপড়ে, চাপড়ে, তাড়া করে, শূন্যে ছুঁড়ে খেলতে পারে কোন প্রাণী। কিছু কিছু খেলনা আবার প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র খেলনা সংগ্রহকারীর জন্যই তৈরি করা হয়, খেলার জন্য নয়।
ইতিহাস
খেলনার সৃষ্টি প্রাগৈতিহাসিক কালে; বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে শিশুদের খেলনার উপকরণ খুঁজে পাওয়া গেছে।A BRIEF HISTORY OF TOYS
আধুনিক খেলনা
খেলনার চাহিদা ও বাণিজ্যিক উৎপাদন
খেলনার ধরণ
খেলনা নানা ধরনের হয়ে থাকে।
শিক্ষামূলক খেলনা
শিক্ষামূলক খেলনা Global Educational Toys Market
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:খেলনা
বিষয়শ্রেণী:খেলা |
শখ | https://bn.wikipedia.org/wiki/শখ | শখ মানুষের চিত্ত-বিনোদনের অন্যতম উপাদান। মানুষ তার পেশা বাদে অন্য যে পেশায় কাজ করে আনন্দ লাভ করে তাই শখ ৷
thumb|শখ: ঝিনুক সংগ্রহ
শখ এমন একটি নিয়মিত ক্রিয়াকলাপ হিসাবে বিবেচিত যা উপভোগের জন্য করা হয়। সাধারণত কারও অবসর সময়ে শখের কাজ গুলো করা হয়ে থাকে। শখের মধ্যে থিমযুক্ত আইটেমগুলি এবং বস্তু সংগ্রহ করা, সৃজনশীল এবং শৈল্পিক কর্মকান্ডে নিযুক্ত হওয়া, খেলাধুলা করা বা অন্যান্য বিনোদনমূলক কর্মকান্ড উপভোগ করা। কারো যদি কোন বিষয়ে শখ থাকে এবং সেই ক্ষেত্রে সে নিয়মিত হয় তবে এর উপর সে যথেষ্ট দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জনে উৎসাহী হয়।
নবীনদের আগ্রহ এবং মনের বিকাশের শখের ধারাগুলো পরিবর্তিত হয়ে থাকে এছাড়া সমাজে দেখা দেখি শখ পরিবর্তিত হয়ে তাকে যেমন স্ট্যাম্প সংগ্রহ। বিংশ শতাব্দীতে ডাকটিকিট সংগ্রহগুলি জনপ্রিয় ছিল কারণ ডাক ব্যবস্থা যোগাযোগের মূল মাধ্যম ছিল, যখন প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অনুসরণে আজকাল ভিডিও গেমগুলি বেশি জনপ্রিয়। উনিশ শতকের অগ্রযাত্রা উৎপাদন এবং প্রযুক্তি শখের সাথে জড়িত থাকার জন্য শ্রমিকদের আরও অবসর সময় দিয়েছিল। এ কারণে, সময়ের সাথে শখগুলিতে বিনিয়োগের মানুষের প্রচেষ্টা বেড়েছে।
বিভিন্ন ধরনের শখের তালিকা
বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ (যেমন বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ডাকটিকেট ইত্যাদি)
প্রাণী পোষা
বাগান করা
মাছ ধরা
বস্তু তৈরি
সৃজনশীল লেখালেখি (যেমনঃ কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি)
চিত্রাঙ্কন
ভ্রমণ
বই পড়া
ছবি তোলা ইত্যাদি
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:শখ
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:চিত্তবিনোদন
বিষয়শ্রেণী:ব্যক্তিগত জীবন |
সংখ্যা | https://bn.wikipedia.org/wiki/সংখ্যা | thumb|জটিল সংখ্যার উপসেট
সংখ্যা হলো পরিমাপের একটি বিমূর্ত ধারণা । সংখ্যা প্রকাশের প্রতীকগুলিকে বলা হয় অঙ্ক ।
এর প্রকৃত উদাহরণগুলি হল স্বাভাবিক সংখ্যা ১, ২, ৩, ৪ এবং আরও অনেক কিছু।
ইতিহাস
সংখ্যা
সংখ্যাগুলিকে সংখ্যা থেকে আলাদা করা উচিত, চিহ্নগুলি সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যবহৃত হয়৷ মিশরীয়রা প্রথম সাইফার্ড সংখ্যা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিল এবং গ্রীকরা তাদের গণনা সংখ্যাকে আয়োনিয়ান এবং ডরিক বর্ণমালায় ম্যাপ করে অনুসরণ করেছিল। রোমান সংখ্যা, একটি সিস্টেম যা রোমান বর্ণমালার অক্ষরগুলির সংমিশ্রণ ব্যবহার করে, 14 শতকের শেষের দিকে উচ্চতর হিন্দু-আরবি সংখ্যা পদ্ধতির প্রসার না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপে প্রভাবশালী ছিল এবং হিন্দু-আরবি সংখ্যা পদ্ধতি প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হিসাবে রয়ে গেছে। আজ বিশ্বের সংখ্যা। সিস্টেমের কার্যকারিতার চাবিকাঠি ছিল শূন্যের প্রতীক, যা 500 খ্রিস্টাব্দের দিকে প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদরা তৈরি করেছিলেন।
সংখ্যা পদ্ধতি
সংখ্যার শ্রেণিবিভাগ
সংখ্যাঃ বাস্তব সংখ্যা ও অবাস্তব সংখ্যা;
বাস্তব সংখ্যাঃ মূলদ সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যা;
মূলদ সংখ্যাঃ পূর্ণ সংখ্যা ও ভগ্নাংশ সংখ্যা;পূর্ণ সংখ্যাঃ ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা বা স্বাভাবিক সংখ্যা, শূন্য ও ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা ;
স্বাভাবিক সংখ্যা
পূর্ণ সংখ্যা
মূলদ সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যা
বাস্তব সংখ্যা
জটিল সংখ্যা
√-1=i জটিল সংখ্যার প্রতীক
সংখ্যা ধারণার উৎপত্তি
প্রস্তর যুগ
বর্তমান গণিতের জন্ম হয়েছে গণনা থেকে। গণনার ধারণা থেকেই প্রথম সংখ্যা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল যদিও সংখ্যার জন্ম হয়েছে অনেক সময়ের ব্যবধানে। প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষ যখন গুহায় বসবাস করতো তখনও এক-দুই পর্যন্ত গণনা চালু ছিল বলে ধারণা করা হয়। তখন পারিবারিক বা সামাজিক জীবন ভালো করে শুরু না হলেও পদার্থের রূপ সম্বন্ধে তারা ওয়াকিবহাল ছিল। নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ খাদ্য আহরণ, উৎপাদন এবং সঞ্চয় করতে শুরু করে। মৃৎ, কাষ্ঠ এবং বয়ন শিল্পের প্রসার ঘটে যার অনেক নমুনা বর্তমানে আবিষ্কৃত হয়েছে। অধিকাংশের মতে এ সময়েই ভাষার বিকাশ ঘটে। তবে ভাষা যতটা বিকশিত হয়েছিল তার তুলনায় সংখ্যার ধারণা ছিল বেশ অস্পষ্ট। সংখ্যাগুলো সর্বদাই বিভিন্ন বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতো। যেমন, পশুটি, দুটি হাত, একজোড়া ফল, এক হাঁড়ি মাছ, অনেক গাছ, সাতটি তারা ইত্যাদি। এমনকি অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং আফ্রিকার অনেক গোত্র আজ থেকে মাত্র দুশো বছর আগেও এ অবস্থায় ছিল।
বিশুদ্ধ সংখ্যার ধারণা
বিশুদ্ধ সংখ্যা বলতে বস্তু নিরপেক্ষ সংখ্যার ধারণাকে বুঝায়। প্রস্তর যুগ পেরিয়ে আরও অনেক পরে এ ধারণার বিকাশ ঘটেছে। এক বা দুইয়ের গণ্ডী পেরিয়ে আরও বড় সংখ্যা নির্দেশ করতে প্রথম কেবল যোগ ব্যবহার করা হতো। পরে ধীরে ধীরে যোগ এবং গুণনের সাহায্যে ছোট থেকে বড় সংখ্যার দিকে যাওয়া শুরু হয়। দুটি অস্ট্রেলীয় গোত্রের উদাহরণ এখানে উল্লেখ্য:
মারে রিভার গোত্র: এনিয়া (এক), পেচেভাল (দুই), পেচেভাল-এনিয়া (তিন), পেচেভাল-পেচেভাল (চার)।
কামিলা রোই গোত্র: মাল (এক), বুলান (দুই), গুলিবা (তিন), বুলান-বুলান (চার), বুলান-গুলিবা (পাঁচ), গুলিবা-গুলিবা (ছয়)।
সংখ্যার ধারণা স্পষ্ট হতে শুরু করে বাণিজ্যের প্রসারের সাথে সাথে। কারণ এ সময় হিসাব সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে এবং এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের তথ্যের আদান প্রদান জরুরি হয়ে উঠে। একটি স্পষ্ট সংখ্যা ধারণার উদাহরণ হিসেবে বাংলা সংখ্যা পদ্ধতির কথা বলা যেতে পারে। দশমিক প্রণালী ব্যবহার করে এখানে সংখ্যা গণনা করা হয়ে থাকে। এক থেকে দশ পর্যন্ত হল মূল সংখ্যা।
সংখ্যাকে বিভিন্ন ব্যবস্থায় প্রকাশ করা সম্ভব:
দশমিক ব্যবস্থা
এই ব্যবস্থায় সংখ্যার একেকটি অঙ্ক দশের এককটি গুণিতক।
অনেক একককে দশের বিভিন্ন গুণিতকে প্রকাশ করার জন্য বিশেষ উপসর্গ আছে:
কিলো (kilo)
মেগা (Mega)
গিগা (Giga)
টেরা (Tera)
পেটা (Peta)
এক্সা (Exa)
জেত্তা (Zetta)
ইয়ত্তা (Yotta)
ডেসি (Deci)
সেন্টি (Centi)
মিলি (Milli)
মাইক্রো (Micro)
ন্যানো (Nano)
পিকো (Pico)
ফেম্টো (Femto)
অ্যাটো (Eto)
জেপ্টো (Zepto)
বাইনারি ব্যবস্থা
বাইনারি সংখ্যা ব্যবস্থায় শুধু দুইটি অঙ্ক, ০ ও ১ ব্যবহার করা হয়। যেমন, দশমিক ৬ সংখ্যাটি বাইনারিতে প্রকাশিত হবে ১১০ হিসাবে। প্রতিটি অবস্থানের গুরুত্ব (weight) ২ করে, অর্থাৎ ৬ = ১* ২২+১* ২১+১* ২০। এই সংখ্যা পদ্ধতির সুবিধা হল ইলেক্ট্রনিক বর্তনীতে খুব সহজেই বাইনারি সংখ্যার হিসাব করা যায়, ফলে কম্পিউটার ও ডিজিটাল বর্তনীতে এই সংখ্যা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।
আরও দেখুন
সংখ্যার তালিকা
জটিল সংখ্যা
ভৌত ধ্রুবক
পাই
মৌলিক সংখ্যা
অদিক রাশি
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:সংখ্যা
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:গ্রুপতত্ত্ব
বিষয়শ্রেণী:গাণিতিক বস্তু |
উপপাদ্য | https://bn.wikipedia.org/wiki/উপপাদ্য | উপপাদ্য হলো এক প্রকারের প্রস্তাবনা, যা কিছু প্রাথমিক ধারণার ভিত্তিতে প্রমাণ করা হয়। গণিতের ভাষায়, উপপাদ্যের দুইটি অংশ রয়েছে -
আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু প্রাক-ধারণা (assumption) এর উল্লেখ।
একটি প্রস্তাবনা, যা উপরিউক্ত প্রাক-ধারণার ভিত্তিতে প্রমাণ করতে হবে।
থাম্ব|পিথাগোরাসের উপপাদ্যের অন্তত ২৭০টি জানা প্রমাণ আছেhttp://www.eric.ed.gov/PDFS/ED037335.pdf
উপপাদ্যকে গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় তবে বাংলা,ইংরেজির মত সাধারণ ভাষাতেও প্রকাশ করা যায়।
বেশিভাগ উপপাদ্যও পূর্বের কোনো হাইপোথিসিসের উপর নির্ভরশীল। যেমন "যদি ক সত্য হয় তবে খ সত্য",এই উপপাদ্যটিতে বলা হয়নি "খ" সত্য,এখানে বলা হয়েছে "খ" সত্য হবেই যদি "ক" সত্য হয়। এখানে ক হলো হাইপোথিসিস এবং খ হলো সিদ্ধান্ত।
উপপাদ্যকে প্রায়ই "তুচ্ছ","কঠিন","গভীর" এমনকি "সুন্দর" উপাধি দেয়া হয়। এ ধরনের উপাধি মানুষ থেকে মানুষে পরিবর্তিত হয়, এমনকি সময়ের সাথে সাথেও পরিবর্তিত হয়। যেমন আরো সহজ প্রমাণ আবিষ্কৃত হলে একটি "কঠিন" উপপাদ্য "তুচ্ছ" উপাধি পেতে পারে। "গভীর" উপপাদ্যগুলো খুব সাধারণ ভাবে বর্ণনা করা হয় কিন্তু সেগুলোর প্রমাণে আশ্চর্যজনক ভাবে গণিতের বিভিন্ন জটিল অংশের সংযোগ থাকতে পারে, "ফের্মার শেষ উপপাদ্য" এধরনের উপপাদ্যের একটি পরিচিত উদাহরণ।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফেইনম্যানের মতে একটি উপপাদ্য প্রমাণ করা যত কঠিনই হোক না কেনো প্রমাণ করার পর সেটা গণিতবিদদের নিকট তুচ্ছ। ফলে গাণিতিক স্বত্ত্বা দুই রকমেরঃ তুচ্ছ এবং অপ্রমাণিত।Feynman, R. P. Surely You're Joking, Mr. Feynman! New York: Bantam Books, 1985.
গণিতবিদ রোনাল্ড গ্রাহাম ধারণা করেন প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার গাণিতিক উপপাদ্য প্রকাশিত হয়।P. The Man Who Loved Only Numbers: The Story of Paul Erdős and the Search for Mathematical Truth. New York: Hyperion, 1998.
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:জ্যামিতি
বিষয়শ্রেণী:যৌক্তিক পরিণাম
বিষয়শ্রেণী:যৌক্তিক রাশি
বিষয়শ্রেণী:গাণিতিক প্রমাণ
বিষয়শ্রেণী:গাণিতিক পরিভাষা
বিষয়শ্রেণী:বিবৃতি
বিষয়শ্রেণী:যুক্তিবিজ্ঞানের ধারণা |
ত্রিকোণমিতি | https://bn.wikipedia.org/wiki/ত্রিকোণমিতি | ত্রিকোণমিতি গণিতের একটি শাখা, যাতে ত্রিভুজের কোণ, বাহু ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়। ত্রিকোণমিতি শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Trigonometry। এই শব্দটি আবার গ্রিক শব্দ trigōnon (ত্রিভুজ) এবং metron (পরিমাপ) থেকে উদ্ভূত।
বিশেষ করে ত্রিভুজের তিনটি কোণের অপেক্ষকগুলো নানা পরিমাপের কাজে লাগানো যায়। ত্রিভুজের প্রতিটি কোণের ছয় প্রকারের অপেক্ষক বা ফাংশন থাকে। যথা সাইন (sine), কোসাইন (cosine), ট্যাঞ্জেন্ট (tangent), কোট্যাঞ্জেণ্ট (cotangent), সেক্যাণ্ট (secant) এবং কোসেক্যাণ্ট (cosecant)। এগুলো ব্যবহার করে ত্রিভুজের কোণ ও বাহুর দৈর্ঘ্য হিসাব করা হয়।
ত্রিকোণমিতির অপেক্ষকগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মানের পাল্লার প্রতিরূপ দেয়া যায় বা বারবার পুনরাবৃত্ত হয়। এগুলো পুনরাবৃত্ত প্রতিভাসের প্রতিরূপে, যেমন সরল দোলকের গতি অথবা পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের বিশ্লেষণে উদ্ভূত হয়। ত্রিকোণমিতির ব্যবহার করে এক বিশাল ক্ষেত্রফলের জালিকা পাওয়া যায় যা সাধারণ পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে মাপা যায় না।
ইতিহাস
ত্রিকোণমিতির জন্ম প্রাচীন মিশরে হলেও এর আদি উদ্ভাবক একজন গ্রিক জ্যোতির্বিদ যার নাম হিপারকাস। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে গ্রিক হিপারকাস গ্রহ-নক্ষত্র ও তাদের মধ্যবর্তী বেগ এবং দুরত্ব নির্ণয় ও বিচার করতে গিয়ে এই বিদ্যার চর্চা শুরু করেন। তিনি কাজ করতেন আলেকজান্দ্রিয়ার একটি জাদুঘরে। তবে আমরা বর্তমান যুগে ‘থেটা’, ‘সাইন’, ‘কস’, ‘কোসাইন’, ‘কোসেক’ ইত্যাদি দিয়ে যে ত্রিকোণমিতি করে থাকি তার উদ্ভাবক মুসলিম গণিতবিদেরা। নবম খ্রিষ্টাব্দে আবু আবদুল্লাহ আল-বাতানি, হাবাস আল-হাসিব ও আবুল ওয়াফা আল-বুজানি নামের তিন গণিতবিদের যৌথ উদ্যোগের ফসল আধুনিক ত্রিকোণমিতি। তবে তারা গ্রিক জ্যোতির্বিদ হিপারকাসের মূল ধারণার ওপর ভিত্তি করেই এ বিষয়টিকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলেছিলেন।
File:Circle cos sin.gif
ত্রিকোণমিতিক অনুপাত
300px|thumbnail|right|একটি কোণ θ-এর যেকোন ত্রিকোণমিতীয় ফাংশনকে "O" কেন্দ্রবিশিষ্ট একটি বৃত্তের মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতে পারে।
যদি ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ হয় এবং অপর কোণের মান জানা থাকে তবে তৃতীয় কোণের পরিমাপ নির্ণয় করা যায়। এবার আমরা জানি ত্রিভুজের তিন কোনের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রি। কাজেই সমকোণ বাদে বাকি কোণদ্বয়ের সমষ্টি ৯০ ডিগ্রি। তিনটি কোণের পরিমাপ জানা থাকলে ত্রিভুজের বাহুত্রয়ের পরিমাপের নির্ণয় করা যায়। আর যে কোনো এক বাহুর দৈর্ঘ্য জানা থাকলে বাকি বাহুর দৈর্ঘ্যও জানা যায়। এই অনুপাতগুলো জানা যায় কোন θ এর ত্রিকোণোমিতীয় অপেক্ষক বা ফাংশন থেকে।
thumb|চিত্রের ত্রিভুজে: এবং
সাইন: এটি ত্রিভুজের লম্ব ও অতিভুজের অনুপাত প্রকাশ করে
কোসাইন: এটি ত্রিভুজের ভূমি ও অতিভুজের অনুপাত প্রকাশ করে
ট্যানজেন্ট: এটি ত্রিভুজের লম্ব ও ভূমির অনুপাত প্রকাশ করে
এই ফাংশনগুলোর গুণোত্তর বিপরীত ফাংশনগুলোকে যথাক্রমে কোসেকেন্ট (cosec বা csc), সেকেন্ট (sec) এবং কোট্যানজেন্ট (cot) বলা হয়।
একক বৃত্ত ও সাধারণ ত্রিকোণমিতিক মানসমূহ
right|thumb|একক বৃত্তের সাহায্যে সংজ্ঞায়িত θ কোণের সাইন ও কোসাইন অনুপাত
ফাংশন 0°(0) 30° 45° 90° 120° 180° 270° 360° সাইন 0 1 0 কোসাইন 1 0 -1 ট্যানজেন্ট 0 অসংজ্ঞায়িত 0 সেকেন্ট 1 অসংজ্ঞায়িত -1 কোসেকেন্ট অসংজ্ঞায়িত 1 অসংজ্ঞায়িত কোট্যানজেন্ট অসংজ্ঞায়িত 0 অসংজ্ঞায়িত
বাস্তব ও জটিল চলকের ত্রিকোণমিতিক ফাংশন
ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের লেখচিত্র
নিচের ছকে ৬টি প্রধান ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের রেখচিত্রের বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো:
ফাংশন পর্যায় ডোমেন রেঞ্জ লেখচিত্র সাইন 200 px কোসাইন 200 px ট্যানজেন্ট 200 px সেকেন্ট 200 px কোসেকেন্ট 200 px কোট্যানজেন্ট 200 px
বিপরীত ত্রিকোণমিতিক ফাংশন
নামরাশিসংজ্ঞা বাস্তব মানের জন্য x-এর ডোমেনরেঞ্জ (রেডিয়ান)রেঞ্জ (ডিগ্রি) arcsine y = বাy = sin(x) x = −১ ≤ x ≤ ১ − ≤ y ≤ −৯০° ≤ y ≤ ৯০° arccosine y = বাy = cos(x) x = −১ ≤ x ≤ ১ ০ ≤ y ≤ ০° ≤ y ≤ ১৮০° arctangent y = বাy = tan(x) x = সকল বাস্তব সংখ্যা − < y < −৯০° < y < ৯০° arccotangent y = বাy = cot(x) x = সকল বাস্তব সংখ্যা ০ < y < ০° < y < ১৮০° arcsecant y = বাy = sec(x) x = x ≤ −১ বা ১ ≤ x ০ ≤ y < বা < y ≤ ০° ≤ y < ৯০° বা ৯০° < y ≤ ১৮০° arccosecant y = বাy = cosec(x) x = x ≤ −১ বা ১ ≤ x − ≤ y < ০ বা ০ < y ≤ −৯০° ≤ y < ০° বা ০° < y ≤ ৯০°
অভেদসমূহ
ত্রিভুজ সম্পর্কিত অভেদ
সাইন সূত্র
সাইন নিয়ম অনুসারে যে কোনো ত্রিভুজে:
যেখানে হচ্ছে ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল এবং R হল ত্রিভুজটির পরিবৃত্তের ব্যাসার্ধ।
কোসাইন সূত্র
কোসাইন নিয়ম (বা কস সূত্র) আসলে পিথাগোরাসের সূত্রের সম্প্রসারিত রূপ। এ সূত্র অনুসারে:
বা,
ট্যাঞ্জেণ্টের সূত্র
ক্ষেত্রফল
দুটি বাহু a ও b এবং এদের মধ্যবর্তী কোণ C হলে ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল কোণের সাইন এবং বাহুদ্বয়ের গুণফলের অর্ধেক।
হিরনের সূত্রের সাহায্যেও ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়। ত্রিভুজের তিন বাহুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে a, b ও c হলে ত্রিভুজের অর্ধপরিসীমা =
সুতরাং ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল =
যেখানে R হল ত্রিভুজটির পরিবৃত্তের ব্যাসার্ধ।
ত্রিকোণমিতিক অভেদ
পিথাগোরাসীয় অভেদ
নিচের ত্রিকোণমিতিক অভেদগুলো পিথাগোরাসের সূত্রের সাথে সম্পর্কিত এবং যে কোনো মান গ্রহণ করতে পারে।
অয়লারের সূত্র
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:ত্রিকোণমিতি |
পরিসংখ্যান | https://bn.wikipedia.org/wiki/পরিসংখ্যান | thumb|upright=1.3|right
পরিসংখ্যান বা রাশিবিজ্ঞান (ইংরেজি ভাষায়: Statistics) এক ধরনের গাণিতিক বিজ্ঞান (Mathematical Science) যা মূলত উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও উপাত্ত সহজে পরিবেশন নিয়ে কাজ করে।https://www.britannica.com/science/statistics বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক এবং আরো নানা শাখায় পরিসংখ্যানের ব্যবহার রয়েছে। উপাত্ত বিশ্লেষন করে তা থেকে তথ্যসমৃদ্ধ সিদ্ধান্ত (informed decision) গ্রহণে পরিসংখ্যানের ভূমিকা অপরিহার্য। যে কোনো ধরনের গবেষণার জন্য পরিসংখ্যান এর মৌলিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তবে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে পরিসংখ্যানের অপব্যবহারও হয়ে থাকে।
কর্মপরিধি
যারা পরিসংখ্যানের চর্চা করেন তাদেরকে সাধারনভাবে পরিসংখ্যানবিদ বলা হয়। পরিসংখ্যানের সমস্যা গুলো সাধারনত কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সমষ্টি নিয়ে আবর্তিত হয়। তথ্যের প্রাপ্যতা বা ব্যবস্থাপনা যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে সেই সমষ্টির প্রত্যেককে নিয়ে অথবা তার একটা অংশকে নিয়ে কোন চয়ন পদ্ধতিতে বিশ্লেষন করা হয়।
উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
পরিসংখ্যানের ইংরেজি 'Statistics' শব্দটি খুব সম্ভবত ল্যাটিন শব্দ statisticum collegium, ইতালীয় শব্দ statista বা জার্মান শব্দ statistik হতে উৎপত্তি হয়েছে। 'Statuss' এবং 'Statistik' শব্দের অর্থ রাষ্ট্র আর 'Statista' শব্দের অর্থ রাষ্ট্রের কার্যাবলী । এ থেকে বুঝা যায় যে রাষ্ট্রের কাজ পরিচালনা থেকেই পরিসংখ্যানের উৎপত্তি হয়েছে । রাষ্ট্রের বিভিন্ন তথ্য যেমন - লোকসংখ্যা, রাজ্যবসের পরিমাণ, জন্মমৃত্যু প্রভৃতি হিসাবের জন্য এটি ব্যবহৃত হত।
বাংলায় ইংরেজি 'Statistics' শব্দের প্রধানত দুইটি পরিভাষা রয়েছে। ভারতে পরিসংখ্যানের জনক বলে খ্যাত প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ ইংরেজি 'Statistics' এর বাংলা করেন ‘রাশিবিজ্ঞান’। অন্যদিকে বাংলাদেশে পরিসংখ্যানের জনক কাজী মোতাহার হোসেন ইংরেজি 'Statistics' এর পরিভাষা হিসেবে বাংলায় ‘পরিসংখ্যান’ নামে একটি নতুন শব্দ সৃষ্টি করেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত তালিকায় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান সংস্থা ‘পরিসংখ্যান’ শব্দটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
পরিসংখ্যানের শাখা
১-গড়
২-মধ্যক
৩-প্রচুরক
৪-আয়তলেখ
৫-অজিভরেখা
৬-গনসংখ্যা
৭-বহুভুজ
পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য
পরিসংখ্যানে সংখ্যাসূচক প্রকাশ আবশ্যক।
পরিসংখ্যানে হচ্ছে তথ্যের সমষ্টি।
পরিসংখ্যানের অনুসন্ধান কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে।
পরিসংখ্যান তথ্য বহুবিধ কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
পরিসংখ্যান তথ্য সু-শৃঙ্খলভাবে সংগ্রহ করতে হবে।
পরিসংখ্যান তুলনাযোগ্য ও সমজাতীয় হতে হবে।
পরিসংখ্যান প্রাক্কলনে যুক্তি-সঙ্গত ও পরিমাণে সঠিকতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
পরিসংখ্যানের গুরুত্ব
প্রাচীণ কালে পরিসংখ্যানের ব্যবহার কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় কার্যাদি পরিচালনার মধ্যে সীমিত থাকলেও বর্তমানে এর ব্যবহার মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তৃত। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি পরিসংখ্যানের বিভিন্ন কলা- কৌশলকে অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহারের দ্বার উন্মোচন করেছে। পরিসংখ্যান আধুনিক মানব সভ্যতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিরুপ ভূমিকা পালন করছে,তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
মানব কল্যাণে পরিসংখ্যান
প্রাতিষ্ঠানিক নীতি নির্ধারণে
পূর্বাভাস প্রদানে
জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও মূল্যায়নে
রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রে
সামাজিক গবেষণায়
ব্যবসা-বাণিজ্যে
অর্থনৈতিক গবেষণায়
রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়নে
বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায়
বিভিন্ন চলকের মধ্যে কার্যকর সম্পর্ক নির্ণয়
অতীত জ্ঞান অভিজ্ঞতা সংরক্ষণে।
রাষ্ট্রের কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে।
একটি পরিসংখ্যান (একবচন) বা নমুনা পরিসংখ্যান হল একটি নমুনার মান থেকে গণনা করা যেকোন পরিমাণ যা পরিসংখ্যানগত উদ্দেশ্যে বিবেচনা করা হয়। পরিসংখ্যানগত উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে একটি জনসংখ্যার প্যারামিটার অনুমান করা, একটি নমুনা বর্ণনা করা, বা একটি অনুমান মূল্যায়ন করা। পরিসংখ্যান হচ্ছে নমুনা মানের গড় (বা গড়)। প্রদত্ত নমুনার ফাংশন এবং ফাংশন এর মান উভয়ের জন্যে পরিসংখ্যান শব্দটি ব্যাবহার করা হয়। যখন একটি পরিসংখ্যান একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তখন এটি এমন একটি নাম দ্বারা নির্দেশ করা যেতে পারে যা তার উদ্দেশ্য নির্দেশ করে।
যখন একটি পরিসংখ্যান একটি জনসংখ্যার প্যারামিটার অনুমান করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন পরিসংখ্যানটিকে একটি অনুমানকারী পরিসংখ্যান বলা হয়। একটি জনসংখ্যার প্যারামিটার হল অধ্যয়নের অধীনে জনসংখ্যার যে কোনও বৈশিষ্ট্য, কিন্তু যখন এটি সরাসরি জনসংখ্যার প্যারামিটারের মান পরিমাপ করা সম্ভব হয় না , তখন পরিসংখ্যানগত পদ্ধতিগুলি একটি নমুনা থেকে গণনা করা হয় যা একটি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্যারামিটারের সম্ভাব্য মান অনুমান করতে ব্যবহৃত হয় যা জনসংখ্যা থেকে নেওয়া। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় , নমুনা গড় হল জনসংখ্যা গড়ের একটি নিরপেক্ষ অনুমানকারী । এ থেকে বুঝা যায় নমুনার প্রত্যাশিত মান প্রকৃত জনসংখ্যা গড়ের সমান।
নমুনা ডেটা সংক্ষিপ্ত করতে একটি বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়। পরিসংখ্যানগত হাইপোথিসিস পরীক্ষাকরার ক্ষেত্রে একটি টেস্ট পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়। মনে রাখবেন যে একটি একক পরিসংখ্যান একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে - উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নমুনা গড় জনসংখ্যার গড় অনুমান করতে, একটি নমুনা ডেটা সেট বর্ণনা করতে বা একটি অনুমান পরীক্ষা করতে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
পরিসংখ্যান পরিচিতি
পরিসংখ্যান পাঠশালা
বিষয়শ্রেণী:পরিসংখ্যান
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:উপাত্ত
বিষয়শ্রেণী:রৌপ বিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:তথ্য
বিষয়শ্রেণী:গাণিতিক ও পরিমাণগত পদ্ধতি (অর্থশাস্ত্র)
বিষয়শ্রেণী:গবেষণা পদ্ধতি
বিষয়শ্রেণী:আরব উদ্ভাবন |
শিক্ষা | https://bn.wikipedia.org/wiki/শিক্ষা | thumb| জৈব চিকিৎসা প্রকৌশল অনুষদ, চেক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাগ, চেক প্রজাতন্ত্র
thumb|একটি ফলের বাগানের ছায়ায় বসা স্কুলের শিশুরা, গার্দেজ, পাক্তিয়া প্রদেশ, আফগানিস্তান
thumb|right|ওয়াশিংটন, ডি.সি. তে প্রথম রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী
thumb|শ্রেণিকক্ষে অনুপ্রেরণা, অধ্যয়নের উপাদানগুলিতে রাজনৈতিক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা বা শিক্ষকরা যারা ছাত্রদের উদ্বুদ্ধকরণে ভূমিকা অবমাননা করে এমন শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলির বিরুদ্ধে যায় যা চিন্তার স্বাধীনতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার চেষ্টা করে।
শিক্ষা হল জ্ঞানলাভের একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া এবং ব্যক্তির সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং তাকে সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যে সব দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলি অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জনই হল শিক্ষা। বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে 'শাস' ধাতু থেকে, যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন এসেছে লাতিন শব্দ এডুকেয়ার বা এডুকাতুম থেকে, যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা।
সক্রেটিসের ভাষায় “শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ।” এরিস্টটল বলেন “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় “শিক্ষা হল তাই, যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না; বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকেও গড়ে তোলে।”
শব্দের উৎপত্তি
শিক্ষা শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত "শাস" শব্দ ধাতু থেকে। সাধারণভাবে বলা যায় মানুষের আচরণের কাঙ্ক্ষিত, বাঞ্চিত এবং ইতিবাচক পরির্বতনই হলো শিক্ষা। যুগে যুগে নানা মনীষী নানাভাবে শিক্ষা সংজ্ঞায়িত করেছেন । আবার সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার সংজ্ঞা বা ধারণা ও পদ্ধতিতে পরির্বতন এসেছে।
ইংরেজিতে ব্যাকরণগতভাবে, "এডুকেশন" শব্দটি লাতিন ēducātiō (যার অর্থ প্রজনন এবং লালন পালন করা), ēducō (যার অর্থ আমি শিক্ষাদান করি, আমি প্রশিক্ষণ দেই) যা হোমোনিম ēdūcō এর সাথে সম্পর্কিত (যার অর্থ আমি এগিয়ে নিয়ে যাই, আমি উত্থাপন করি) এবং Dōcō ( যার অর্থ আমি নেতৃত্ব দেই, আমি পরিচালনা করি ) থেকে উৎপত্তি হয়েছে।educate. Etymonline.com. সংগৃহীত ২০১৭
ইতিহাস
thumb|ঐতিহাসিক মাদ্রাসা, বাকু, আজারবাইজান
thumb| নালন্দা, প্রাচীন ভারতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান
thumb|left|প্লেটোর শিক্ষায়তন
প্রাগৈতিহাসিক কালে শিক্ষা শুরু হয়েছিল বয়স্ক ব্যক্তিদের দ্বারা যুবকদের সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে। প্রাক-শিক্ষিত সমাজ মূলত মৌখিকভাবে এবং অনুকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গল্প-বলার মাধ্যমে জ্ঞান, মূল্যবোধ এবং দক্ষতা এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক দক্ষতা প্রসারিত হতে পারে অনুকরণের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা উন্নত করার মধ্যমে। মিশরে মিডল কিংডম এর সময় স্কুল বিদ্যমান ছিল।
প্লেটো এথেন্সে একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা ছিল ইউরোপের উচ্চতর শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান। ৩৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরে আলেকজান্দ্রিয়া শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এথেন্সের বুদ্ধিবৃত্তিক প্যাড হিসাবে এটি প্রাচীন গ্রিসে বিখ্যাত হয়ে ওঠেছিল। সেখানে, আলেকজান্দ্রিয়ার বৃহত্তর গ্রন্থাগারটি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমের পতনের পর ইউরোপীয় সভ্যতায় সাক্ষরতা এবং সংগঠনের পতন ঘটেছিল।
চীনে কনফুসিয়াস (৫৫১-৪৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), লূ এর রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রাচীন দার্শনিক ছিলেন, যার শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গি চীনের সমাজ এবং কোরিয়া, জাপান ও ভিয়েতনামের মত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কনফুসিয়াস শিষ্যদের একত্রিত করেন এবং একটি শাসককে নিরর্থকভাবে অনুসন্ধান করেন, যিনি সুশাসনের জন্য তার আদর্শগুলি গ্রহণ করবে। তার Analects অনুসরণকারীদের দ্বারা লিখিত হয়েছিল যা পূর্ব এশিয়ায় আধুনিক যুগেও শিক্ষার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
রোমের পতনের পর, ক্যাথলিক চার্চ পশ্চিম ইউরোপে সাক্ষরতার ও স্কলারশিপের একমাত্র রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিল। চার্চ ক্যাথিড্রাল স্কুলকে আধুনিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলি শেষ পর্যন্ত মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের বিভিন্ন আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অগ্রদূত হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। উচ্চ মধ্যযুগে সময় চার্টার্স ক্যাথিড্রাল দ্বারা বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী Chartres ক্যাথিড্রাল স্কুল পরিচালিত হয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে সুসংহত ছিল, যা তদন্তের স্বাধীনতাকে উত্সাহিত করে, এবং একদল পণ্ডিত ও প্রাকৃতিক দার্শনিকদের সৃষ্টি করেছিল , যেমন, নেপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের টমাস অ্যাকুইনাস , অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রবার্ট গ্রোসেটেস্ট এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার পদ্ধতিগত পদ্ধতির প্রারম্ভিক প্রকাশক, এবং জৈবিক গবেষণার অগ্রদূত সেন্ট অ্যালবার্ট গ্রেট ছিলেন অন্যতম। ১০৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বলোনি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম এবং প্রাচীনতম অপারেটিং ইউনিভার্সিটি বলে মনে করা হয়।
মধ্যযুগীয় সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক বিজ্ঞান ও গণিত সমৃদ্ধ হয়েছিল ইসলামিক খলিফার অধীনে, যা পশ্চিম আইবেরিয়ান উপদ্বীপ থেকে পূর্ব সিন্ধু পর্যন্ত এবং দক্ষিণে আলমোরাভিড রাজবংশ ও মালির সাম্রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল।
ইউরোপে রেনেসাঁ প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান সভ্যতার বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক তদন্ত এবং উপলব্ধির নতুন যুগের সূচনা করেছিল। প্রায় ১৪৫০ সালের দিকে জোহানেস গুটেনবার্গ একটি প্রিন্টিং প্রেস তৈরি করেন, যা সাহিত্যের কাজকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের যুগে ইউরোপীয় দর্শন, ধর্ম, শিল্প ও বিজ্ঞান বিষয়ক ধারণাগুলি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। মিশনারি ও পণ্ডিতরা অন্যান্য সভ্যতা থেকে নতুন ধারণা নিয়ে আসছিল - জেসুইট চীন মিশনের সাথে যারা চীন ও ইউরোপের মধ্যে জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইউরোপ থেকে কাজগুলি অনুবাদ করে যেমন চীনের পণ্ডিতদের জন্য ইউক্লিডের এলিমেন্টস অনুবাদ এবং ইউরোপীয় শ্রোতাদের জন্য কনফুসিয়াসের চিন্তা চেতনা কথা বলা যায়। আলোকায়নের যুগের মাধ্যমে ইউরোপ আরও নিরপেক্ষ শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ছিল।
বেশিরভাগ দেশে আজ নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সব শিশুদের জন্য পূর্ণ-সময়ের শিক্ষা স্কুলে বা অন্যত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই কারণে বাধ্যতামূলক শিক্ষার বিস্তার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মিলিতভাবে, ইউনেস্কো গণনা করে লক্ষ্য করেছে যে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে আরও মানুষ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করবে যা মানব ইতিহাসে বিরল ঘটনা হবে এটি।
শিক্ষার ধরন
শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগে মূহুর্ত পর্যন্ত শেখে। তাই শিক্ষার লাভের ধরন বিভিন্ন।যেমন:
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এমন একটি কাঠামোগত পরিবেশে ঘটে থাকে যার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান। সাধারণত, একটি স্কুলের পরিবেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সঞ্চালিত হয় যেখানে শ্রেণীকক্ষে একাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন প্রশিক্ষিত এবং প্রত্যয়িত শিক্ষকের প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য । বেশিরভাগ স্কুলে একটি মানসম্মত আদর্শ ডিজাইন করা হয় যার মাধ্যমে সিস্টেমে সমস্ত শিক্ষাগত পছন্দগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই ধরনের পছন্দগুলি পাঠ্যক্রম, সাংগঠনিক মডেল, শারীরিক শিক্ষার স্থানগুলির (যেমন শ্রেণীকক্ষ) নকশা, ছাত্র-শিক্ষক ইন্টারঅ্যাকশন, মূল্যায়ন পদ্ধতি, শ্রেণীর আকার, শিক্ষাগত কর্মকাণ্ড, এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করে।শিক্ষকদের কাছ বেল বাজাতে পারেন।
প্রাকস্কুল
প্রাকস্কুলগুলি প্রায় তিন থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রদান করে যা দেশের উপর নির্ভর করে যখন শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এইগুলি নার্সারি স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন হিসাবেও পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে কিন্ডারগার্টেন শব্দটি প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত শব্দ। কিন্ডারগার্টেন তিন থেকে সাত বছরের জন্য একটি শিশু-কেন্দ্রিক প্রাক পাঠ্যক্রম প্রদান করে। এখানে মূলত শিশুদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিক প্রকৃতির উদ্ঘাটন করার জন্য চেষ্টা করা হয়।
প্রাথমিক
প্রাথমিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক ও কাঠামোগত যা প্রথম পাঁচ থেকে সাত বছর নিয়ে গঠিত। সাধারণত, প্রাথমিক শিক্ষা পাঁচ থেকে ছয় বছর এবং ছয় থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়ে থাকে, যদিও এর মধ্যে, মাঝে মাঝে দেশ ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী, ছয় থেকে বারো বছর বয়সী প্রায় ৮৯% শিশু প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি হয় এবং এই অনুপাত বেড়েই চলেছে। ইউনেস্কো দ্বারা চালিত ২০১৫ সালের মধ্যে "সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা" বেশিরভাগ দেশ এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এবং অনেক দেশে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে বিভাজন কিছুটা আলাদা, তবে এটি সাধারণত প্রায় এগারো বা বারো বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। কিছু শিক্ষা ব্যবস্থায় পৃথক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থানান্তর করা হয় । প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের স্কুলগুলি প্রাথমিকভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আবার শিশু এবং জুনিয়র স্কুলের মধ্যে বিভক্ত করা হয়।
ভারতে, উদাহরণস্বরূপ, বারো বছর ধরে বাধ্যতামূলক শিক্ষা, আট বছরে প্রাথমিক(elimentary) শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঁচ বছর এবং উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য তিন বছর করা হয়েছে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং দ্বারা পরিকল্পিত একটি জাতীয় পাঠ্যক্রমের কাঠামোর উপর ভিত্তি করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১২ বছরের বাধ্যতামূলক স্কুল শিক্ষা প্রদান করা হয়।
মাধ্যমিক
বিশ্বের বেশিরভাগ সমসাময়িক শিক্ষা ব্যবস্থায়, মাধ্যমিক শিক্ষায় বয়ঃসন্ধির সময় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রসার ঘটে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত "মাধ্যমিক উত্তর" বা "উচ্চতর" শিক্ষা (যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়, বৃত্তিমূলক স্কুল) থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এই সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে এই সময়ের জন্য বিদ্যালয়গুলি, বা এর একটি অংশকে সেকেন্ডারি বা উচ্চ বিদ্যালয়, জিমন্যাশিয়াম, লিসিম, মধ্যম স্কুল, কলেজ বা বৃত্তিমূলক স্কুল বলা যেতে পারে। এই পদগুলির কোনও সঠিক অর্থ এক সিস্টেম থেকে অন্যটিতে পরিবর্তিত হতে পারে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে সঠিক সীমাও দেশ ভেদে আলাদা হতে পারে। তবে সাধারণত সপ্তম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া হয়। মাধ্যমিক শিক্ষার প্রধানত কিশোর বয়সের মধ্যেই ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সাথে কখনও কখনও K-12 নির্দেশ করা হয় , এবং নিউজিল্যান্ডে বছরে ১-১৩ বছর পর্যন্ত ধরা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে সাধারণ জ্ঞান দান, উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা, অথবা সরাসরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে পেশার জন্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলন ছিল না। বড় কর্পোরেশনের উত্থান এবং কারখানায় প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে দক্ষ শ্রমিকদের প্রয়োজন ছিল। এই নতুন চাকরির চাহিদা পূরণের জন্য উচ্চ বিদ্যালয়গুলি তৈরি করা হয়েছিল, কারিকুলামটি বাস্তব পেশাগত কাজের দক্ষতার উপর নিবদ্ধ ছিল যা ছাত্রদেরকে সাদা কলার বা দক্ষ নীল কলারের কাজের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত করবে। এটি নিয়োগকর্তাদের এবং কর্মীদের উভয়ের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে, যেহেতু উন্নত মানবাধিকারের ফলে নিয়োগকর্তার খরচ কম হচ্ছিল, অন্যদিকে দক্ষ শ্রমিকরা উচ্চতর বেতন ও পাচ্ছিল।
ইউরোপে মাধ্যমিক শিক্ষার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যেখানে ষোড়শ শতকের গোঁড়ার দিকে ব্যাকরণ স্কুল বা একাডেমী, পাবলিক স্কুলগুলির আকারে, বিনা বেতনে পড়ার জন্য স্কুল বা দাতব্য শিক্ষাগত ফাউন্ডেশনগুলির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
কমিউনিটি কলেজ পরিবর্তনশীল পর্যায়ে অন্য একটি বিকল্প প্রস্তাব করে। তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের nonresidential জুনিয়র কলেজ কোর্স প্রদান করে।
উচ্চতর
উচ্চশিক্ষা হল তৃতীয় পর্যায়, বা পোষ্টসেকন্ডারি শিক্ষা, এটি একটি অ-বাধ্যতামূলক শিক্ষাগত স্তর যা উচ্চ বিদ্যালয় বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেমন স্কুল সমাপ্তি অনুসরণ করে। তৃতীয়তঃ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা সহ বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত উচ্চ শিক্ষা প্রদান করে। সমষ্টিগতভাবে এইগুলি উচ্চ বিভাগ হিসাবে পরিচিত। উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা ব্যক্তি সাধারণত সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, বা একাডেমিক ডিগ্রী প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
উচ্চ শিক্ষা সাধারণত একটি ডিগ্রী-স্তর বা ডিগ্রী যোগ্যতা জড়িত থাকে। অধিকাংশ উন্নত দেশগুলিতে জনসংখ্যা (৫০% পর্যন্ত) এখন তাদের জীবনের কোন একটা সময় উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করে। জাতীয় অর্থনীতির জন্য উচ্চশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, উভয়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং বাকি প্রশিক্ষিত এবং শিক্ষিত কর্মীরা অর্থনীতির উৎস হিসাবে গণ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শিক্ষাদান, গবেষণা এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে, এবং এটি স্নাতক পর্যায়ে উভয়ই অন্তর্ভুক্ত (কখনও কখনও উচ্চতর বিভাগ হিসাবে উল্লেখ করা হয়) এবং স্নাতক (বা স্নাতকোত্তর) স্তর (কখনও কখনও স্নাতক স্কুল হিসাবে পরিচিত)। বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত বেশ কিছু কলেজ নিয়ে গঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটিগুলি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ব্যক্তিগত এবং স্বাধীন হতে পারে; সরকারি এবং স্টেট নিয়ন্ত্রিত পেনসিলভানিয়া উচ্চ মাধ্যমিকের সিস্টেমের মতো রাজ্য শাসিত; বা স্বাধীন, কিন্তু ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্টেট থেকে তহবিল প্রাপ্ত হতে পারে । এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজলভ্য বেশ কিছু ক্যারিয়ার নির্দিষ্ট কোর্স পাওয়া যায়।
উদার শিল্প শিক্ষা(liberal arts education) নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার একটি কোর্স আছে যাকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যার মূল কাজ হল সাধারণ জ্ঞান প্রদান এবং একটি পেশাদার, বৃত্তিমূলক বা কারিগরি পাঠ্যক্রমের বিপরীতে সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষাদান করা। ইউরোপে উদার শিল্প শিক্ষার (liberal arts education) সূচনা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে liberal arts college শব্দটির সাথে যুক্ত।
বৃত্তিমূলক
বৃত্তিমূলক শিক্ষা হচ্ছে সরাসরি এবং বাস্তব প্রশিক্ষণের উপর নিবদ্ধ শিক্ষার একটি ফর্ম। পেশাগত শিক্ষা একটি শিক্ষানবিশ বা ইন্টার্নশিপের পাশাপাশি চলতে পারে এমন একটি কাঠামো যেমন, কৃষি, প্রকৌশল, ঔষধ, স্থাপত্য এবং কলা এর অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষ
অতীতে অক্ষম ছিল তারা প্রায়ই সরকারি শিক্ষার জন্য যোগ্য ছিল না। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষা বার বার চিকিৎসক বা বিশেষ টিউটর দ্বারা অস্বীকৃত হত। এই প্রারম্ভিক চিকিৎসক (ইটারড, সেগোইন, হাউ, গালাদেডের মত মানুষ) আজকে বিশেষ শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেছে। তারা স্বতন্ত্র এবং কার্যকরী দক্ষতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। তার প্রাথমিক বছরগুলিতে, বিশেষ শিক্ষা শুধুমাত্র গুরুতর অক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি সবার জন্য খোলা হয়েছে।
অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থা
যদিও আজকাল তা "বিকল্প" হিসাবে বিবেচিত, অধিকাংশ বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাচীন কাল থেকেই বিদ্যমান ছিল। উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে পাবলিক স্কুল ব্যবস্থার ব্যাপকভাবে উন্নত হওয়ার পর, কিছু বাবা-মা নতুন ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়। অনুন্নত সীমাবদ্ধতার প্রতিক্রিয়া এবং ঐতিহ্যগত শিক্ষার ব্যর্থতার অংশ হিসেবে বিকল্প শিক্ষাটি উন্নত হয় । বিস্তৃত পরিসরে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে বিকল্প বিদ্যালয় সহ , স্ব-শিক্ষণ, গৃহে শিক্ষাদান এবং বিদ্যালয়ের বাহিরে শিক্ষাদান। বিকল্প স্কুলের মধ্যে মন্টেসরি স্কুল, ওয়াল্ডর্ফ স্কুল (বা স্টেনার স্কুল), ফ্রেন্ডস স্কুল, স্যান্ডস স্কুল, সামারলিল স্কুল, ওয়ালডেনের পথ, পিপল গ্রোভ স্কুল, সডবেরি ভ্যালি স্কুল, কৃষ্ণমূর্তি স্কুল এবং ওপেন ক্লাসরুম স্কুল রয়েছে। চার্টার স্কুল বিকল্প শিক্ষার অন্য একটি উদাহরণ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুক্ত হয়েছে এবং পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থায় তা অধিক গুরুত্ব পেয়েছে।
সময়ের সাথে সাথে, এই পরীক্ষা এবং দৃষ্টান্তের চ্যালেঞ্জ থেকে কিছু ধারণা শিক্ষা ক্ষেত্রে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, ঠিক যেমন উনবিংশ শতকের জার্মানিতে ফ্রেডরিখ ফ্রোবেলের শৈশব শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি সমসাময়িক কিন্ডারগার্টেন শ্রেণীকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । অন্যান্য প্রভাবশালী লেখক ও চিন্তাবিদরা সুইস মানবতাবাদী জোহান হেনরিচ পেস্টলজ্জীকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন; আমেরিকান ট্রানস্যানডেন্টালিস্ট আমোস ব্রোনসন অ্যালকোট, রালফ ওয়াল্ডো এমারসন এবং হেনরি ডেভিড থোরো; প্রগতিশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠাতা, জন ডুয়ি এবং ফ্রান্সিস পার্কার; এবং মারিয়া মন্টেসরি এবং রুডলফ স্টিনারের মত শিক্ষাবিদদের অগ্রদূত, এবং সম্প্রতি জন কেলডওয়েল হোল্ট, পল গুডম্যান, ফ্রেডেরিক মেয়ার, জর্জ ডেনিসন এবং ইভান ইলিচ।
আদিবাসী
আদিবাসী শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আদিবাসী জ্ঞান, মডেল, পদ্ধতি, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে । উপনিবেশ উত্তর প্রেক্ষাপটে, উপনিবেশবাদ প্রক্রিয়ায় আদিবাসী শিক্ষা পদ্ধতির বর্ধিত স্বীকৃতি এবং ব্যবহারের মাধ্যমে আদিবাসী জ্ঞান জ্ঞান চর্চা বেড়ে যেতে পারে। অধিকন্তু, এটি আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিকে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্বিন্যস্ত করতে পারে এবং আদিবাসী ছাত্রদের শিক্ষাগত সাফল্যের উন্নতি সাধন করতে পারে।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা
ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত শিক্ষার তিনটি পদ্ধতির মধ্যে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা অন্যতম । অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিভিন্ন জায়গায় যেমন বাড়িতে, কাজের মধ্যে , এবং দৈনিক ইন্টারঅ্যাকশন যা সমাজের সদস্যদের মধ্যে শেয়ারে মাধ্যমে পরিচালিত হয় । অনেক শিক্ষার্থীর জন্য ভাষা অধিগ্রহণ, সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং আচরণকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় । অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন জায়গায় , যেমন স্কুলের সময়ের বাহিরে , কমিউনিটি সেন্টারে এবং মিডিয়া ল্যাবগুলিতে পরিচালিত হয়ে থাকে।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে ঘটে থাকে যা নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের অনুসরণ করে না । বিশেষ করে বাস্তবের পরিবর্তনের সাথে ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে এর উৎপত্তি ঘটতে পারে । এটা অপরিহার্যভাবে তথাকথিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেনা। শিক্ষণীয়ভাবে সচেতন, নিয়মানুবর্তিতা এবং বিষয় অনুযায়ী, কিন্তু অজ্ঞানভাবে আনুষ্ঠানিক, holistically সমস্যা সম্পর্কিত, এবং পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা এবং জীবনের জন্য ফিটনেস সম্পর্কিত পরিকল্পনা করা হয় না। এটা মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করে।
উনবিংশ শতকে শৈশবের বিকাশে 'বিনোদন দ্বারা শিক্ষা' ধারণার প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ধারণাটি আরও বিস্তৃত করা হয়েছিল কিন্তু বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল শারীরিক কার্যকলাপের উপর । এল.পি জ্যাকস, জীবনযাত্রার শিক্ষার প্রথম প্রবর্তক, বিনোদন দ্বারা শিক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন: "জীবন যাপনের শিল্পে একজন মাস্টার তার কাজের এবং খেলার মধ্যে, তার শ্রম এবং অবসরের মধ্যে , তার মন এবং শরীরের মধ্যে , তার শিক্ষা এবং বিনোদনের মধ্যে কোন পার্থক্য খোঁজেন না । তিনি জানেননা যে তিনি কী কাজ করছেন । এবং অন্য যে কোনও কাজ তিনি করেন বা খেলেন তা ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করার জন্য চেষ্টা করেন। নিজের জন্য তিনি সবসময়ই উভয় কাজ করছেন বলে মনে করেন। যা করছেন তা নিজের জন্য ভাল । বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা একটি সুযোগ যেখানে জীবনের সমস্ত কর্মের মাধ্যমে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের এনাটমি শিক্ষা দেওয়ার জন্য ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর ইউনিভার্সিটি এই ধারণাটি পুনর্বিন্যস্ত করেছে।
স্ব-নির্দেশিত শিক্ষা
অটোডাইডেকটিক্সিজম একটি চিত্তাকর্ষক গ্রহণ প্রক্রিয়া যেখানে "নিজে নিজে শেখা" বা "নিজের দ্বারা" বা স্ব-শিক্ষক হিসাবে ভূমিকা পালন করতে হয় । কিছু অটোডাইডেক্টস( স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত) প্রচুর সময় ব্যয় করে লাইব্রেরী ও শিক্ষাগত ওয়েবসাইটগুলির সম্পদগুলি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে । একজন লোক তার জীবনের প্রায় যেকোনো সময় অটোডাইডেক্ট হতে পারে। যদিও কেউ কেউ একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এবং একটি প্রচলিত পদ্ধতিতে তারা নিজেদেরকে আনরিলেটেড বিষয় অবহিত করতে পারে । উল্লেখযোগ্য অটোডাইডেক্টসের( স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত) মধ্যে আব্রাহাম লিঙ্কন (ইউএস প্রেসিডেন্ট), শ্রীনিবাস রামানুজন (গণিতবিদ), মাইকেল ফ্যারাডে (রসায়নবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী), চার্লস ডারউইন (প্রফেসর), টমাস আলভা এডিসন (আবিষ্কারক), তাদো আন্ডো (স্থপতি), জর্জ বার্নার্ড শ (নাট্যকার), ফ্রাঙ্ক জাপ্পা (সুরকার, রেকর্ডিং প্রকৌশলী, চলচ্চিত্র পরিচালক) এবং লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি(প্রকৌশলী, গণিতবিদ) অন্যতম ।
উন্মুক্ত শিক্ষা ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি
২০১২ সালে ইলেকট্রনিক শিক্ষাগত প্রযুক্তি (ই-লার্নিং নামেও পরিচিত) এর আধুনিক ব্যবহারটি প্রথাগত শিক্ষার হার থেকে ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । ওপেন এডুকেশন ক্রমবর্ধমান শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে পরিণত হয়েছে । ঐতিহ্যগত শিক্ষা পদ্ধতির তুলনায় তার দক্ষতা এবং ফলাফলই তার মূল কারণ । শিক্ষার খরচ সমগ্র ইতিহাস জুড়ে একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, এবং এটি এখন বেশিরভাগ দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক বিষয় । অনলাইন কোর্স প্রায়ই মুখোমুখি ক্লাসের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে। ২০০৯সালে মোট ১৮২ টিরও বেশি কলেজের উপর জরিপ করে দেখা যায় যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক লোকই বলেছে যে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার খরচ ক্যাম্পাস ভিত্তিক শিক্ষার চেয়ে উচ্চতর ছিল । অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলি বর্তমানে হার্ভার্ড, এমআইটি এবং বার্কলে যেমন ফ্রি বা প্রায় বিনামূল্যে বিনামূল্যে কোর্স অফার করছে EDX গঠন করার জন্য । উন্মুক্ত শিক্ষা প্রদানের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হল স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, ডিউক, জনস হপকিন্স, এডিনবার্গ, ইউ. পেন, ইউ.মিশিগান, ইউ ভার্জিনিয়া, ইউ.ওয়াশিংটন, এবং ক্যালটেক । মুদ্রণযন্ত্র প্রকাশ হবার পর থেকে এই ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে । কার্যকারিতার উপর অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্পাসকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে নির্বাচন করতে চায়।
উন্মুক্ত শিক্ষার ডিগ্রী প্রদান প্রচলিত মেধা-পদ্ধতির ডিগ্রী প্রদানের মতো সাধারণ নয় এমনকি এটি ক্যাম্পাস ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ও নয়। যদিও কিছু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ইউনাইটেড কিংডমে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রচলিত ডিগ্রী প্রদান করে আসতেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ উন্মুক্ত শিক্ষা উৎসগুলি তাদের নিজস্ব গঠনের সনদপত্র প্রদান করে। উন্মুক্ত শিক্ষার জনপ্রিয়তার কারণে, এই নতুন ধরনের একাডেমিক সার্টিফিকেটগুলি ঐতিহ্যগত ডিগ্রির মতো আরও সম্মান এবং সমান "একাডেমিক মূল্য" অর্জন করছে। অনেক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য মান সংবলিত পরীক্ষা এবং ঐতিহ্যগত ডিগ্রী প্রদান করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
একটি নতুন সংস্কৃতি শুরু হচ্ছে এমন ব্যক্তিদের জন্য যারা ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্পাসে আসক্ত সামাজিক সংযোগগুলি খুঁজছেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের জন্য গ্রুপ তৈরি করতে পারে, মিলিত হতে পারবে যেমন তারা UnCollege নাম কলেজ তৈরি করতে পারে।
উন্নয়নের লক্ষ্য
১৯০৯ সাল থেকে উন্নয়নশীল বিশ্বের শিশুদের স্কুলে অংশগ্রহণের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়েছে । এর আগে, ছেলেদের একটি ছোট্ট অংশ স্কুলে পড়ত। একবিংশ শতকের শুরুতে বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে অধিকাংশ শিশু স্কুলে যেতে শুরু করে ।
ইউনিভার্সাল প্রাইমারী এডুকেশন আটটি আন্তর্জাতিক মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এর মধ্যে একটি, যা পূর্ববর্তী দশকে যে অগ্রগতি হয়েছে, তারপরেও কিছু বাধা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাব্য দাতাদের কাছ থেকে দাতব্য তহবিল সুরক্ষিত করা একটি স্থায়ী সমস্যা । ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেখিয়েছেন যে শিক্ষার জন্য তহবিলের প্রধান বাধাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমস্যাযুক্ত দাতাদের অগ্রাধিকার দেয়া, সাহায্য প্রদানের অপরিপক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং এই বিষয়ের পক্ষে প্রমাণ সমর্থনের অভাব । এ ছাড়া, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকার সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য একটি প্রধান বাধা হিসেবে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছে । উপরন্তু, উন্নয়নশীল বিশ্বের উন্নততর শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের জন্য বিদেশীরা যা আশা করে চাহিদার তা এখনও অপ্রতুল । আদিবাসী সরকার চলমান শিক্ষার জন্য যে খরচ হয় তার দায়ভার নিতে অনিচ্ছুক । কিছু পিতামাতার কাছ থেকে অর্থনৈতিক চাপও রয়েছে, যারা তাদের সন্তানদের শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদি উপকারের পরিবর্তে স্বল্প মেয়াদী অর্থ উপার্জন করাকে বেশি অগ্রাধিকার দেয় ।
ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর এডুকেশনাল প্ল্যানিং দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় ইঙ্গিত দেয় যে, শিক্ষাগত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী ক্ষমতা শিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে । স্থায়ী ক্ষমতা বিকাশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক, সাংগঠনিক ও স্বতন্ত্র পর্যায়ে জটিল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন যা কিছু মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে হতে পারে:
জাতীয় নেতৃত্ব এবং মালিকানা যেকোনো হস্তক্ষেপের টাচস্টোন হওয়া উচিত;
কৌশলগুলিকে প্রাসঙ্গিক এবং নির্দিষ্ট করা আবশ্যক;
পরিকল্পনাগুলিতে একটি সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন , যদিও পদক্ষেপের মধ্যে বাস্তবায়ন মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে;
অংশীদারদের ক্ষমতা উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা উচিত, স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের জন্য নয়;
বাইরের হস্তক্ষেপের বিভিন্ন স্তরে জাতীয় ক্ষমতার প্রভাব মূল্যায়ন শর্তাধীন হওয়া উচিত;
শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট শতাংশ শিক্ষার সংস্কারের জন্য সরানো উচিত (সাধারণত দশম শ্রেণির তা পরে স্কুলগুলিতে অনুশীলন করা হয়) ।
আন্তর্জাতিকীকরণ
প্রায় সব দেশে এখন সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে।
সমতা-পদ্ধতিতে বা এমনকি ধারণাগুলি-যেগুলি আন্তর্জাতিকভাবে আন্তর্জাতিক স্কুলগুলিতে আন্তর্জাতিক ছাত্র বিনিময় বৃদ্ধি করেছে । ইউরোপীয় সক্রেটিস-ইরাসমাস প্রোগ্রাম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিনিময় সহজতর করে তুলেছে । সোরোস ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করে । International Baccalaureate প্রোগ্রামের মতো প্রোগ্রামগুলি শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণে ব্যাপক অবদান রেখেছে । আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নেতৃত্বে পরিচালিত The global campus online, প্রকৃত ক্লাস চলাকালে ক্লাস সামগ্রী এবং রেকর্ডকৃত বক্তৃতার ফাইলগুলিতে বিনামূল্যে প্রবেশের অনুমতি দেয় ।
উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষা ও প্রযুক্তি
দরিদ্র এলাকায় এবং উন্নয়নশীল দেশের বাসিন্দাদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার উন্নত করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসতেছে । One Laptop per Child এর মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলি অবকাঠামো প্রদানের জন্য নিবেদিত যার মাধ্যমে সুবিধা-বঞ্চিত ছেলেমেয়েরা শিক্ষাগত সামগ্রীগুলি সহজেই হাতের কাছে পেতে পারে ।
OLPC ফাউন্ডেশন MIT Media Lab এর একটি গ্রুপ যা বেশ কয়েকটি বড় কর্পোরেশনের দ্বারা সমর্থিত যাদের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হলো $১০০ ডলারের ল্যাপটপ শিক্ষা সফটওয়্যার জন্য প্রদান করা । ২০০৪ সালে ল্যাপটপগুলি সব জায়গায় পাওয়া যেত । তারা দানের দামের উপর ভিত্তি করে বিক্রি হয় ।
আফ্রিকাতে, দ্য নিউ পার্টনারশিপ ফর আফ্রিকার ডেভেলপমেন্ট (এনইপিএডি) "ই-স্কুল প্রোগ্রাম" চালু করেছে ১০ বছরের মধ্যে ৬০০০০০ প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়কে কম্পিউটার সরঞ্জাম, শেখার সামগ্রী এবং ইন্টারনেট এক্সেস সহ আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে । এনবিইউইউ ডটকম নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্প যা সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সহায়তায় শুরু হয়েছিল , এটি মূলত সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক কাজে যারা জড়িত তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে ।
ভারত প্রযুক্তিগুলিকে বিকশিত করতেছে যা সরাসরি স্থল-ভিত্তিক টেলিফোন এবং ইন্টারনেট অবকাঠামোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষামূলক বিষয়গুলো প্রচার করবে । ২০০৪ সালে ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন এডুসেট নামে একটি সাবস্ক্রিপশন উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে, যা শিক্ষাগত উপকরণগুলি অনেক কম খরচে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পৌঁছাতে পারবে।ফলে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষাগত তত্ত্ব
শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান হচ্ছে কীভাবে মানুষ কীভাবে শিক্ষাগত পদ্ধতিগুলো, শিক্ষামূলক হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা, শিক্ষার মনোবিজ্ঞান এবং স্কুলগুলি সামাজিক মনোবিজ্ঞান হিসাবে কীভাবে সংগঠিত হয় তা শিখে । যদিও "শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান" এবং "স্কুল মনোবিজ্ঞান" শব্দগুলি প্রায়ই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে গবেষকরা এবং থিয়োরিস্টরা শিক্ষামূলক মনোবৈজ্ঞানিক হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে, যদিও স্কুল বা স্কুল-সম্পর্কিত সেটিংসের অনুশীলনকারীদের স্কুল মনোবৈজ্ঞানিক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষাগত অর্জনের প্রক্রিয়ায় এবং উপ-জনসংখ্যার যেমন প্রতিভাধর শিশুদের এবং নির্দিষ্ট অক্ষমতার সাথে যারা সম্পর্কিত তাদেরকে নির্দেশ করে ।
শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান অন্যান্য শাখায় সঙ্গে তার কেমন সম্পর্ক তার মাধ্যমে বোঝা যাবে । এটা মূলত মনোবিজ্ঞান দ্বারা জানানো হয়, এটি এমন একটি সম্পর্ক বহন করে যা চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং জীববিদ্যা মধ্যে যে সম্পর্ক তার অনুরূপ । শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান একটি বিস্তৃত বিশেষত্বকে বুঝায় যা শিক্ষামূলক নকশা, শিক্ষাগত প্রযুক্তি, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, সাংগঠনিক শিক্ষা, বিশেষ শিক্ষা এবং শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা সহ শিক্ষাগত গবেষণার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় । শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান cognitive science এবং learning sciences থেকে উদ্ভূত । বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান বিভাগগুলি সাধারণত শিক্ষার অনুষদগুলির মধ্যেই থাকে, যা সম্ভবত প্রচলিত মনোবিজ্ঞান এর প্রতিনিধিত্ব মূলক যে লেকনেছ আছে তা অনুসন্ধান করে উদাহরণস্বরূপ পরিচিতিমূলক মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত পাঠ্যপুস্তক (লুকা, ব্লেজ, এবং রালে, ২০০৬) এর কথা উল্লেখ করা যায় ।
মন, মস্তিষ্ক এবং শিক্ষা
শিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান একটি উদ্ভূত বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র যা জৈবিক প্রক্রিয়া ও শিক্ষার মধ্যে মিথস্ক্রিয়া খোঁজার জন্য জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান, বিকাশমূলক জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান, শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান, শিক্ষাগত প্রযুক্তি, শিক্ষা তত্ত্ব এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে একত্রিত করে । শিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষকরা স্নায়োবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পড়াশোনা, সংখ্যাসূচক চেতনা, মনোযোগ এবং ডিসলেকসিয়া, ডিসক্যালকুলিয়া এবং এডিএইচডি সহ তাদের সহকারী সমস্যাগুলি অনুসন্ধান করে যা শিক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সারা বিশ্বে বেশ কয়েকটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান শিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে ।
শিক্ষার দর্শন
একটি একাডেমিক ক্ষেত্র হিসাবে, শিক্ষা দর্শন হল "শিক্ষা এবং এর সমস্যাগুলির দার্শনিক অধ্যয়ন । এর কেন্দ্রীয় বিষয় হল শিক্ষা, এবং এর পদ্ধতিগুলো হল দর্শনের বিষয় ।" শিক্ষার দর্শন মূলত শিক্ষার প্রক্রিয়ার দর্শন বা শিক্ষার শৃঙ্খলার দর্শন হতে পারে। শৃঙ্খলা, লক্ষ্য, গঠন, পদ্ধতি বা ফলাফলগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অনুভূতিই হল শিক্ষা দর্শনের আলোচ্য বিষয় । শিক্ষার প্রসার বা শিক্ষিত হওয়া, অথবা শিক্ষার ধারণা, লক্ষ্য ও পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি মেটাডিসিপ্লিনারি হতে পারে। " যেমন, এটি শিক্ষার ক্ষেত্র এবং শিক্ষাদান পদ্ধতির সাথে জড়িত এমনকি শিক্ষা নীতি এবং পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য দর্শনশাস্ত্রের ক্ষেত্র, আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রসমূহ, প্রবন্ধমালা, এবং দার্শনিক পন্থা (অনুমানমূলক, প্রবিধানিক বা বিশ্লেষণাত্মক) থেকে সাহায্য নিতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, এটি কীভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা বেড়ে ওঠে তা পর্যালোচনা করতে পারে যা উন্নত ও শিক্ষামূলক প্রথাগুলির মাধ্যমে শিক্ষার মানদণ্ড এবং শিক্ষার বৈধতা, এবং শিক্ষার তত্ত্ব ও অনুশীলনের মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকাশিত মূল্যবোধ ও নিয়মসমূহকে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে ।
শিক্ষা অর্থনীতি
এটি যুক্তি প্রদান করেছে যে, উচ্চ মাত্রার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য দেশে উচ্চ শিক্ষার হার অপরিহার্য । সমালোচকদের বিশ্লেষণ ও তাত্ত্বিক জ্ঞান পূর্বাভাস দেয় যে, দরিদ্র দেশগুলিকে ধনী দেশগুলির তুলনায় দ্রুততর হওয়া উচিত কারণ তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলি ইতিমধ্যে ধনী দেশগুলির দ্বারা পরীক্ষিত এবং পরিচালিত হয়েছে তা সহজেই গ্রহণ করতে পারে । যাইহোক, প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য নতুন মেশিন বা উৎপাদন পদ্ধতি পরিচালনা করতে সক্ষম এমন জ্ঞানী পরিচালকদের এবং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হয় যার মাধ্যমে অনুকরণ করার ফাঁকটা বন্ধ করা যাবে । অতএব একটি দেশ শিক্ষক থেকে যা শিখতে পারে একে "human capital" বলে মনে করা হয় । সমষ্টিগত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নির্ধারকদের সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে মৌলিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির গুরুত্ব এবং জ্ঞানীয়(cognitive) দক্ষতার ভূমিকার উপর জোর দেয়া হয়েছে ।
ব্যক্তিগত স্তরে, একটি বড় সাহিত্য আছে যা জ্যাকব মিন্সারের কাজের সাথে সম্পর্কিত যা শিক্ষার এবং অন্যান্য মানব মূলধনের সাথে কীভাবে আয়ের সম্পর্ক আছে তা পর্যালোচনা করে । এই কাজটির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি গবেষণা অনুপ্রাণিত হয়েছে, কিন্তু বিতর্কিতও বটে । প্রধান বিতর্কগুলি হচ্ছে কীভাবে শিক্ষার প্রভাব ব্যাখ্যা করতে হয় । কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা উচ্চ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হয়ে থাকে কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের পূর্ণ একাডেমিক সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে না।
অর্থনীতিবিদ শ্যামুয়েল বোলস এবং হরবার্ট গিন্টস ১৯৭৬ সালে যুক্তি দেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সাম্যবাদী লক্ষ্য এবং পুঁজিবাদী উৎপাদন অব্যাহত মুনাফা দ্বারা প্রভাবিত বৈষম্যগুলির মধ্যে একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত আছে ।
প্রতিযোগিতা
শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করে। বৈশ্বিক কিংবা জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতিতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টি করা হয়। এক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদান অন্যতম মানদণ্ডস্বরূপ। ইংল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের ন্যায় উন্নত দেশগুলোয় বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ ছাত্রদেরকে নির্বাচিত করে শিক্ষা ব্যয় থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। শিক্ষাক্রমিক ফলাফলে ছাত্রদের মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে সেরা ছাত্রকে গ্রেডের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।
অনেকক্ষেত্রে কিছুসংখ্যক দেশে অতি উচ্চমাত্রায় চাপ প্রয়োগের ফলে ছাত্রদের মাঝে বুদ্ধি-বৃত্তি চর্চায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকসময় পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার দরুন তা আত্মহত্যার পর্যায়ে এসে পৌঁছে যায়। এক্ষেত্রে জাপানের শিক্ষাপদ্ধতি প্রধান উদাহরণ হিসেবে বিবেচ্য। আলফি কন শিক্ষা ব্যবস্থায় এজাতীয় প্রতিযোগিতার সমালোচনা করেছেন। তার মতে, ‘ছাত্রদের যোগ্যতা নির্ধারণে প্রতিযোগিতা প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এটি আমাদের সবাইকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায়’। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রিচার্ড লেয়ার্ডও প্রতিযোগিতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতার ফলে ছাত্ররা এক ধরনের চাপ উপলদ্ধি করে। তারা মনে করে যে তাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে অন্যান্যদের তুলনায় সেরা হওয়া। তরুণেরা তাদের প্রাত্যহিক বিদ্যালয় জীবনে কি শিখছে তাই মুখ্য বিষয়। এবং এ ধরনের প্রতিযোগিতা সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে না।Group dedicated to happiness launched in UK, BBC video, April 12, 2011
আরও দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শিক্ষা প্রযুক্তি
সাক্ষরতার হার অনুযায়ী রাষ্ট্রসমূহের তালিকা
শিক্ষাতত্ত্ব
বিদ্যালয়
শিক্ষার্থী
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Educational Resources from UCB Libraries GovPubs
UNESCO Institute for Statistics: International comparable statistics on education systems
OECD education statistics
Planipolis: a portal on education plans and policies
IIEP Publications on Education Systems
বিষয়শ্রেণী:শিক্ষা
বিষয়শ্রেণী:জ্ঞানে অংশীদারিত্ব
বিষয়শ্রেণী:শিক্ষার দর্শন
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
পরিবার | https://bn.wikipedia.org/wiki/পরিবার | |
খাদ্য | https://bn.wikipedia.org/wiki/খাদ্য | থাম্ব|বিভিন্ন ধরনের খাবার
আমরা যে সব বস্তু আহার করি তাকে আহার্য সামগ্রী বলে। কিন্তু সকল আহার্য সামগ্রীই খাদ্য নয়। যেমন, থোড় সেলুলোজ দিয়ে গঠিত হওয়ায় আমাদের পরিপাক নালীতে পাচিত হয় না। ফলে এটি পুষ্টি সহায়ক নয়। সুতরাং সেই সব আহার্য সামগ্রীকেই খাদ্য বলা যাবে, যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
জীবদেহে শক্তির প্রধান উৎস হল খাদ্য। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকালে সৌরশক্তি উদ্ভিজ খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় স্থৈতিক শক্তি তাপ শক্তি বা গতিশক্তি রুপে মুক্ত হয়, জীবদেহের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া, যেমন : শ্বসন, রেচন,পুষ্টি গ্রহণ ইত্যাদি এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ, যেমন-বৃদ্ধি, চলন-গমন, জনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং প্রাণ ধারণের জন্য প্রত্যেক জীবকেই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তাই, যে সব আহার্য সামগ্রী গ্রহণ করলে জীবদেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি, শক্তি উৎপাদন,ক্ষয়পূরন হয় ও রোগ প্রতিরোধ করে তাকেই খাদ্য বলে।
thumb|450px|right|দৈনিক গড় ক্যালরি গ্রহণ
প্রকারভেদ
জীবদেহে খাদ্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্য কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-
দেহ-পরিপোষক খাদ্য: যে সব খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে সহায়কারী, তাদের দেহ-পরিপোষক খাদ্য বলে। যেমন : শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, আমিষ বা প্রোটিন এবং স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট বা লিপিড।
দেহ-সংরক্ষক খাদ্য: যে সব খাদ্য দেহকে রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে, শক্তি উৎপাদনে সহায়ক নয়, তাদের দেহ-সংরক্ষক খাদ্য বলে। যেমন : খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বা মিনারালস।
খাদ্যের উপাদান
খাদ্যে ছ'টি উপাদান থাকে, যথা- শর্করা, আমিষ বা প্রোটিন, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ এবং জল।
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট
কার্বোহাইড্রেট যে সকল উপাদান দ্বারা গঠিত তা হল কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। শর্করায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে। শর্করার আণবিক সংকেত ; যেমন গ্লুকোজ , সুক্রোজ ইত্যাদি। বেশিরভাগ খাদ্যে কম বেশি খাদ্য উপাদান থাকে। শর্করা বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন খাদ্যে থাকে যেমন শ্বেতসার হিসেবে শর্করা যে সকল খাদ্যে পাওয়া যায় তা হল ধান বা চাল, গম, ভূট্টা, বাজরা, আলু, ওলকপি, কচু, বীট, গাজর ইত্যাদি। খেজুর, আঙ্গুর, আপেল ইত্যাদিতে শর্করা দ্রাক্ষাশর্করা বা গ্লুকোজ হিসেবে পাওয়া যায়। শাক-সবজি, বেল, তরমুজ, থোড় ইত্যাদিতে সেলুলোজ হিসেবে। আম, কলা, কমলালেবু প্রভৃতি পাকা ফলে ফল শর্করা বা ফুক্টোজ হিসেবে। চিনি, গুড়, মিছরী ইত্যাদিতে ইক্ষু শর্করা বা সুক্রোজ হিসেবে শর্করা উপস্থিত থাকে। দুধে দুগ্ধ শর্করা বা ল্যাক্টোজ হিসেবে এবং পাঁঠার যকৃৎ ও পেশীতে গ্লাইকোজেন বা প্রাণীজ শ্বেতসার হিসেবে শর্করা পাওয়া যায়।
প্রত্যেক অণুতে সরল শর্করার এক বা একাধিক এককের উপস্থিতি অনুসারে কার্বোহাইড্রেটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ছে। এগুলো হল যথা:
মনোস্যাকারাইড:যেসব শর্করা একটি মাত্র অণু দ্বারা গঠিত, তাকে মনোস্যাকারাইড বলে। যথা: গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও গ্যালাকটোজ।
ডাইস্যাকারাইড:যেসব শর্করা দুটি অণু দ্বারা গঠিত, তাকে ডাইস্যাকারাইড বলে। যেমন: সুক্রোজ, ল্যাকটোজ ও মলটোজ।
পলিস্যাকারাইড:যেসব শর্করা অনেক অণু দ্বারা গঠিত, তাকে পলিস্যাকারাইড বলে। যেমন: স্টার্চ, গ্লাইকোজেন ও সেলুলোজ।
শর্করা দেহে পুষ্টি জুগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন করে সেইসাথে খাদ্য হজমে সহায়তা করে কোষ্ঠ দূর করতে (সেলুলোজ) ভূমিকা রাখে। গ্লাইকোজেন যকৃত ও পেশীতে সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনের সময় গ্লুকোজে পরিণত হয়ে দেহে অতিরিক্ত তাপ শক্তি উৎপাদন করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। 1 গ্রাম শর্করা ৪ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন করে। রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ হল প্রতি ১০০ মিলি. রক্তে ৮০-১২০ গ্রাম। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ না করেও শুধুমাত্র প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য খেয়ে মানুষ সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন যাবৎ বেঁচে থাকতে পারে। এই জন্য শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যকে প্রোটিন বাঁচোয়া খাদ্য বলে
আমিষ বা প্রোটিন
প্রোটিন-অণু অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এই পর্যন্ত প্রায় 22 টি অ্যামাইনো এসিড পাওয়া গেছে। এতে রয়েছে [কার্বন]], হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন। অনেক সময় সালফার এবং ফসফরাসও প্রোটিনে থাকে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা ইত্যাদিতে প্রাণিজ প্রোটিন এবং ডাল, সয়াবিন, বীন, গম ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রাণীজ প্রোটিনে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রায় সবগুলিই থাকে বলে প্রাণিজ প্রোটিনকে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন বলা হয়।
প্রোটিনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যে সব প্রোটিন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল প্রোটিন বলে। উদাহরণ হল অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, প্রোটমিন, হিস্টোন, গ্লায়াডিন, গ্লুটেলিন ইত্যাদি। অন্যদিকে সরল প্রোটিন যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন তাদের সংযুক্ত প্রোটিন বলে। যেমন হিমোগ্লোবিন, হিমোসায়ানিন, ফসফোপ্রোটিন, লাইপোপ্রোটিন ইত্যাদি। আরেকটি প্রোটিন রয়েছে যা পরিপাক নালীতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকের সময় উদ্ভূত হয়, তাদের লব্ধ প্রোটিন বলে। যেমন পেপটন, পেপটাইড ইত্যাদি।
প্রোটিন দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে। তাপ শক্তি উৎপাদন করে। দেহস্থ উৎসেচক, হরমোন ইত্যাদি সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখে। অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করা হল প্রোটিনের অন্যতম কাজ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ১ গ্রাম প্রোটিন অণু দহন হলে ৪.১ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ১০০-১৫০ গ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন
স্নেহপদার্থ
কার্বন, হাইড্রোজেন, এবং অক্সিজেন নিয়ে স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট গঠিত হয়। স্নেহ পদার্থে অক্সিজেন অনুপাত শর্করার তুলনায় কম এবং শর্করার মত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে না। ফ্যাট প্রকৃতপক্ষে অ্যাসিড এবং গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত এস্টার বিশেষ। প্রকৃতিতে প্রচুর খাদ্য হতে কম বেশি স্নেহ পদার্থ পাওয়া যায়। যেমন বাদাম, নারিকেল, সরষে, রেড়ী বীজ, তুলা বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট থাকে এবং মাখন, ঘি, চর্বি ইত্যাদিতে প্রাণীজ ফ্যাট থাকে। সাধারণ উত্তাপে যে সমস্ত ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে, তাদের তেল হিসেবে জানি আমরা।
যে সব ফ্যাট অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল ফ্যাট বলে। যথা: ওয়াক্স বা মোম, ল্যানোলিন ইত্যাদি সরল ফ্যাটের উদাহরণ। সরল ফ্যাট যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন তাদের যৌগিক ফ্যাট বলে। যথা: ফসফোলিপিড, গ্লাইকোলিপিড, অ্যামাইনো-লিপিড ইত্যাদি।
প্রানিদেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ ও তাপ শক্তি উৎপন্ন করা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের প্রধান কাজ। ফ্যাট মেদরুপে ভবিষ্যতের খাদ্যের উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে। ফ্যাট ভিটামিনকে দ্রবীভূত রাখে এবং এদের শোষণে সাহায্য করে। ফ্যাট যকৃৎ থেকে পিওরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণে সাহায্য করে। স্নেহপদার্থ মলাশয় ও পায়ু পিচ্ছিল করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে। কোলেস্টেরল নামক ফ্যাট থেকে ভিটামিন-ডি, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরণ নামক হরমোন উৎপন্ন হয়। ১ গ্রাম অণু ফ্যাট দহন হলে ৯.৩ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ৫০ গ্রাম স্নেহপদার্থ প্রয়োজন।
ভিটামিন
যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে। দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিনগুলিকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যে সব ভিটামিন তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়, তাদের স্নেহপদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন বলে। যেমন: ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে। অন্যদিকে যে সব ভিটামিন জলে দ্রবীভূত হয়, তাদের জলে দ্রবণীয় ভিটামিন বলে। যেমন ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন পি।
ভিটামিন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, প্রাণীদের যকৃৎ, মাছের যকৃৎ হতে নিঃসৃত তেল, মাখন, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ছোলা, মুগ, বীট, গাজর, মটরশুঁটি, পালংশাক, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেবু, আম, আমলকি, আপেল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ভিটামিনের এই সব উৎসের মধ্যে দুধ, ডিম, পালংশাক, টমেটো, মটরশুঁটি, কলা, আপেল ইত্যাদিতে বেশীর ভাগ ভিটামিন পাওয়া যায়। ভিটামিন এ এবং ডি এর উৎস মোটামুটি এক, যেমন : কড্, হ্যালিবাট যকৃত নিঃসৃত তেল (লিভার অয়েল), মাখন, দুধ, ডিম,গাজর, বাঁধাকপি, ইত্যাদি।
খনিজ লবণ
খনিজ লবণ হল অজৈব খাদ্য উপাদন। এরা শক্তি সরবরাহ করে না। খনিজ লবণ জীব দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির অভাব পূরণ করে। জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খনিজ লবণের প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও তৈরি করতে খনিজ লবণ অত্যন্ত প্রয়োজন।
পানি
পানি খাদ্যের একটি উপাদান। মানবদেহের জন্য পানি অপরিহার্য। দেহের গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাজ জল ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের দৈহিক ওজনের ৬০-৭০% পানি। আমাদের রক্ত মাংস, স্নায়ু, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানি প্রয়োজন।
খাদ্য উৎস
গ্রামের সব থেকে বেশি লাভজনক চাষের জন্য উপযোগী জমি বীজ জল ব্যবস্থা থাকা দরকার। গ্রামগঞ্জে সব থেকে বেশি ]চাষে গম ধান সবজ্বী ভুট্টা পেঁয়াজ আলু ।
বেশিরভাগ খাবারের উদ্ভব হয় উদ্ভিদ থেকে। কিছু খাবার সরাসরি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়; এমনকি প্রাণীদের খাদ্যের উৎস হিসাবে আমরা গাছপালা থেকে প্রাপ্ত খাবারকেই বিবেচনা করি। সিরিয়াল নামক শস্যটি হ'ল একটি প্রধান খাদ্য যা অন্য যে কোনও ফসলের চেয়ে বিশ্বজুড়ে বেশি খাদ্যশক্তি সরবরাহ করে। বিশ্বব্যাপী সমস্ত শস্য উৎপাদনের ৮৭ ভাগ জুড়ে আছে ভুট্টা, গম এবং চাল (তাদের বিভিন্ন জাত মিলিয়ে)। বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত বেশিরভাগ শস্য প্রাণীসম্পদগুলিকে বৃদ্ধি করতে খাওয়ানো হয়।
প্রাণী বা উদ্ভিদ উৎস নয় এমন উৎস থেকে প্রাপ্ত কিছু খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ভোজ্য ছত্রাক, বিশেষত মাশরুম অন্তর্ভুক্ত । খামিরযুক্ত এবং আচারযুক্ত খাবার যেমন খামিরযুক্ত রুটি, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়, পনির, আচার, কম্বুচা এবং দই তৈরিতে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। আর একটি উদাহরণ হল নীল-সবুজ শেত্তলা যেমন স্পিরুলিনা।McGee, 333–34. অ জৈবজাতীয় পদার্থ যেমন লবণ, বেকিং সোডা এবং টারটার ক্রিম ব্যবহার করে কোনও উপাদান সংরক্ষণ বা রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত করতে ব্যবহৃত হয়।
উদ্ভিদ
থাম্ব|উদ্ভিদ উৎস থেকে খাবার
অনেক গাছপালা এবং উদ্ভিদের অংশ খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয় এবং প্রায় ২,০০০ উদ্ভিদ প্রজাতি খাদ্যের জন্য চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদগুলোর বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন স্বতন্ত্র জাত রয়েছে । McGee, 253.
মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর জন্য গাছের বীজ হ'ল খাবারের একটি উৎস, কারণ এগুলিতে ওমেগা ফ্যাটগুলির মতো অনেক স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সহ উদ্ভিদের প্রাথমিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। আসলে, মানুষের ভোজ্য বেশিরভাগ খাদ্যই বীজভিত্তিক। ভোজ্য বীজের মধ্যে সিরিয়াল ( ভুট্টা, গম, চাল, ইত্যাদি ), বীচি জাতীয় ( শিম, মটরশুটি, মসুর ডাল, ইত্যাদি) এবং বাদাম রয়েছে । তেলবীজগুলিকে প্রায়শই সমৃদ্ধ তেল উৎপাদন করতে পিষে নেওয়া হয় যেমন সূর্যমুখী, ফ্ল্যাকসিড, রেপসিড ( ক্যানোলা তেলসহ), তিল ইত্যাদি। McGee, Chapter 9.
বীজগুলিতে সাধারণত অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে এবং পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে, সমস্ত বীজই ভোজ্য নয়। বড় বীজ, যেমন লেবু থেকে পাওয়া বীজ দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে, অন্যদিকে চেরি এবং আপেলের বীজগুলিতে সায়ানাইড থাকে যা কেবলমাত্র অধিক পরিমাণে খাওয়া হলে তা বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
ফল হল গাছের পূর্ণাঙ্গ পাকাপোক্ত ডিম্বাশয়,এর মধ্যে বীজ আছে। অনেক উদ্ভিদ
বিবর্তিত বেশিরভাগ ফলের মধ্যে মিষ্টি,টক,কষ,স্বাদবিহীন বিভিন্ন স্বাদের ফল হয়ে থাকে,বিভিন্ন ঘ্রানযুক্ত ও ঘ্রানহীন ফলের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। খাদ্যাভ্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল ফল। টমেটো, কুমড়ো এবং বেগুনের মতো কিছু বোটানিকাল ফল সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। McGee, Chapter 7. (আরও তথ্যের জন্য, ফলের তালিকা দেখুন। )
শাকসবজি দ্বিতীয় ধরনের উদ্ভিদজ খাদ্য উৎস যা সাধারণত খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয়। এর মধ্যে আছে শিকড় জাতীয় শাকসবজি ( আলু এবং গাজর ), স্তরজাতীয় ( পেঁয়াজ পরিবার), গাছের পাতা জাতীয় ( শাক এবং লেটুস ), ডাঁটা জাতীয় শাকসবজি ( বাঁশের কাণ্ড এবং শতমূলী), এবং পুষ্পবিন্যাস শাকসবজি ( গ্লোব আর্টিচোক এবং ব্রোকলি এবং অন্যান্য শাকসবজি যেমন বাঁধাকপি বা ফুলকপি)।McGee, Chapter 6.
প্রাণী
ডান|থাম্ব|বিভিন্ন কাঁচা মাংস
উৎপাদিত প্রাণীসম্পদ তাদের দিয়ে তৈরি করা পণ্যে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাণীর কাছ থেকে নেওয়া মাংস হল প্রত্যক্ষ পণ্যের উদাহরণ, যা পেশী সিস্টেমগুলি বা অঙ্গগুলি ( অফাল ) থেকে আসে।
প্রাণীদের দ্বারা উৎপাদিত খাদ্য পণ্যগুলির মধ্যে স্তন্যপায়ী গ্রন্থিগুলির দ্বারা উৎপাদিত দুধও রয়েছে, যা অনেক সংস্কৃতিতে ডুবিয়ে বা ডেইরি প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় যেমন পনির, মাখন ইত্যাদি। এছাড়াও, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী যারা ডিম দেয় তা প্রায়শই খাওয়া যায় এবং মৌমাছিরা মধু উৎপাদন করে (ফুল থেকে একটি আহরিত অমৃত) যা অনেক সংস্কৃতিতে একটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাদ্য। কিছু সংস্কৃতিতে রক্ত খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়। কখনও কখনও রক্ত সসেজ হিসেবে যা সস ঘন করতে ব্যবহৃত হয় বা খাদ্য ঘাটতির সময়ে একটি নিরাময়কৃত, লবণাক্ত আকারে তা খাওয়া হয় এবং অন্যরা স্টিউতে রক্ত ব্যবহার করে যেমন ভাপে সিদ্ধ খরগোশ রান্নায়। Davidson, 81–82.
কিছু রীতি নীতির অনুসারে এবং কোন কোন মানুষ সাংস্কৃতিক কারনে, খাদ্যাভ্যাসের জন্য, স্বাস্থ্য রক্ষায়, নৈতিক কারণে বা আদর্শগত কারণে মাংস বা পশু খাদ্য পণ্য গ্রহণ করেন না। নিরামিষাশীরা প্রাণীজ উৎস থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের খাবার ত্যাগ করতে পছন্দ করেন। নিরামিষবাদীরা কোনও প্রাণীর উৎস থেকে উপাদান নিয়ে বা প্রাণীজ উৎস থাকে এমন কোনও খাবার গ্রহণ করে না।
আরও দেখুন
Bulk foods
বেভারেজ
Food and Bioprocess Technology
খাদ্য প্রকৌশল
ফুড ইনকর্পোরেটেড, ২০০৯ সালে একটি ডকুমেন্টারি
খাদ্য বিজ্ঞান
আগামীর খাদ্য প্রযুক্তি
Industrial crop
খাদ্যের তালিকা
প্রস্তুতকৃত খাবারের তালিকা
Optimal foraging theory
রান্নার রূপরেখা
পুষ্টির রূপরেখা
আরও পড়ুন
কলিংহাম, ইএম (২০১১)। যুদ্ধের স্বাদ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং খাবারের যুদ্ধ
কাটজ, সলোমন (২০০৩) খাদ্য ও সংস্কৃতি এনসাইক্লোপিডিয়া, স্ক্রিবনার
নেসলে, মেরিয়ন (২০০৭)। খাদ্য রাজনীতি: কীভাবে খাদ্য শিল্প পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসস, সংশোধিত এবং প্রসারিত সংস্করণ,
মোবস, মাইকেল (২০১২) টেকসই খাবার সিডনি: নিউ সাউথ পাবলিশিং,
ভবিষ্যতের খাদ্য (২০১৫)। 2015 ডিজিটাল লাইফ ডিজাইন (ডিএলডি) বার্ষিক সম্মেলনে একটি প্যানেল আলোচনা "কীভাবে আমরা বাড়ির নিকটে, ভবিষ্যতে আরও খাদ্য বাড়িয়ে উপভোগ করতে পারি? MIT মিডিয়া ল্যাব এর কেভিন স্লেভিন খাদ্য শিল্পী, শিক্ষাবিদ, এবং MIT মিডিয়া ল্যাব এর CityFarm প্রকল্প, অসভ্য গ্রুপের বেঞ্জামিন পামার, এবং Andras Forgacs, আধুনিক তৃণভূমির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে উদ্যোক্তা এমিলি Baltz,
তথ্যসূত্র
উৎস
Aguilera, Jose Miguel and David W. Stanley. Microstructural Principles of Food Processing and Engineering. Springer, 1999. .
.
Asado Argentina. About Asado Argentina. Retrieved from http://www.asadoargentina.com/about-asado-argentina/ on 2007-05-28.
Campbell, Bernard Grant. Human Evolution: An Introduction to Man's Adaptations. Aldine Transaction: 1998. .
Carpenter, Ruth Ann; Finley, Carrie E. Healthy Eating Every Day. Human Kinetics, 2005. .
Davidson, Alan. The Oxford Companion to Food. 2nd ed. UK: Oxford University Press, 2006.
Food and Agriculture Organization of the United Nations. The State of Food Insecurity in the World 2005. . Retrieved from http://www.fao.org/docrep/008/a0200e/a0200e00.htm on 2006-09-29.
Hannaford, Steve. Oligopoly Watch: Top 20 world food companies. Retrieved from https://web.archive.org/web/20090918101335/http://www.oligopolywatch.com/2005/10/06.html on 2006-09-23.
Howe, P. and S. Devereux. Famine Intensity and Magnitude Scales: A Proposal for an Instrumental Definition of Famine. 2004.
Humphery, Kim. Shelf Life: Supermarkets and the Changing Cultures of Consumption. Cambridge University Press, 1998. .
.
Jango-Cohen, Judith. The History Of Food. Twenty-First Century Books, 2005. .
Jurgens, Marshall H. Animal Feeding and Nutrition. Kendall Hunt, 2001. .
.
Kripke, Gawain. Food aid or hidden dumping?. Oxfam International, March 2005. Retrieved from https://web.archive.org/web/20060714133231/http://www.oxfam.org/en/policy/briefingpapers/bp71_food_aid_240305 on 2007-05-26.
Lawrie, Stephen; R.A. Lawrie. Lawrie's Meat Science. Woodhead Publishing: 1998. .
Magdoff, Fred; Foster, John Bellamy; and Buttel, Frederick H. Hungry for Profit: The Agribusiness Threat to Farmers, Food, and the Environment. September 2000. .
Mason, John. Sustainable Agriculture. Landlinks Press: 2003. .
Merson, Michael H.; Black, Robert E.; Mills, Anne J. International Public Health: Disease, Programs, Systems, and Policies. Jones and Bartlett Publishers, 2005.
McGee, Harold. On Food and Cooking: The Science and Lore of the Kitchen. New York: Simon & Schuster, 2004. .
Mead, Margaret. The Changing Significance of Food. In Carole Counihan and Penny Van Esterik (Ed.), Food and Culture: A Reader. UK: Routledge, 1997. .
Messer, Ellen; Derose, Laurie Fields and Sara Millman. Who's Hungry? and How Do We Know?: Food Shortage, Poverty, and Deprivation. United Nations University Press, 1998. .
National Institute of Health. Food poisoning. MedlinePlus Medical Encyclopedia F. 11 May 2006. Retrieved from https://web.archive.org/web/20060928222906/http://www.niaid.nih.gov/publications/pdf/foodallergy.pdf on 2006-09-29.
Nicklas, Barbara J. Endurance Exercise and Adipose Tissue. CRC Press, 2002. .
Parekh, Sarad R. The Gmo Handbook: Genetically Modified Animals, Microbes, and Plants in Biotechnology. Humana Press,2004. .
Regmi, Anita (editor).Changing Structure of Global Food Consumption and Trade. Market and Trade Economics Division, Economic Research Service, USDA, 30 May 2001. stock #ERSWRS01-1.
Schor, Juliet; Taylor, Betsy (editors). Sustainable Planet: Roadmaps for the Twenty-First Century. Beacon Press, 2003. .
Shah, Anup. Food Dumping (Aid) Maintains Poverty. Causes of Poverty. Retrieved from http://www.globalissues.org/TradeRelated/Poverty/FoodDumping.asp on 2006-09-29.
Simoons, Frederick J. Eat Not This Flesh: Food Avoidances from Prehistory to the Present. .
Smith, Andrew (Editor). “Food Marketing,” in Oxford Encyclopedia of American Food and Drink, New York: Oxford University Press, 2007.
.
The Economic Research Service of the USDA. Global Food Markets: Briefing Rooms. Retrieved from https://web.archive.org/web/20170704104430/https://www.ers.usda.gov/topics/international-markets-trade/global-food-markets.aspx on 2006-09-29.
United Kingdom Office of Public Sector Information. Food Safety Act 1990 (c. 16). Retrieved from http://www.opsi.gov.uk/acts/acts1990/Ukpga_19900016_en_2.htm#mdiv1 on 2006-11-08.
.
.
United States Department of Agriculture, USDA Economic Research Service: The Economics of Food, Farming, Natural Resources, and Rural America. "Briefing Rooms, Food CPI, Prices and Expenditures: Food Expenditure Tables". Retrieved from http://www.ers.usda.gov/data-products/food-price-outlook.aspx on 2007-06-06.
Van den Bossche, Peter. The Law and Policy of the bosanac Trade Organization: Text, Cases and Materials. UK: Cambridge University Press, 2005. .
World Food Programme. Breaking out of the Poverty Trap: How We Use Food Aid. Retrieved from https://web.archive.org/web/20060928075506/http://www.wfp.org/food_aid/introduction/index.asp?section=12&sub_section=1 on 2006-09-29.
World Health Organization. WHO Global Database on Child Growth and Malnutrition. Retrieved from http://www.who.int/nutgrowthdb/en/ on 2006-09-29.
World Trade Organization. The Uruguay Round. Retrieved from https://web.archive.org/web/20060822200650/http://www.wto.org/trade_resources/history/wto/urug_round.htm on 2006-09-29.
.
বহিঃ সংযোগ
খাদ্য টাইমলাইন
উইকিবুকস কুকবুক
বিষয়শ্রেণী:পুষ্টি
বিষয়শ্রেণী:খাদ্য
বিষয়শ্রেণী:খাদ্য ও পানীয় |
স্বাস্থ্য | https://bn.wikipedia.org/wiki/স্বাস্থ্য | থাম্ব|WHO
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিজ্ঞানের জন্য দেখুন স্বাস্থ্য বিজ্ঞান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ১০টি মানদন্ড হল—একঃ কর্মশক্তি-সম্পন্ন, স্বাভাবিকভাবে জীবনের বিভিন্ন কাজ মোকাবেলা করতে পারে। দুইঃ আশাবাদী, সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করতে পারে। তিনঃ নিয়মিত বিশ্রাম নেয়, ঘুম ভাল। চারঃ পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে, বিভিন্ন অবস্থার মোকাবেলা করতে পারে। পাঁচঃ সাধারণ সর্দি ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধক শক্তি আছে। ছয়ঃ ওজন সঠিক, শরীরের সংগঠনিক দিক সঠিক। সাতঃ চোখ উজ্জ্বল, কোনো প্রদাহ রোগ নেই। আটঃ দাঁত পরিষ্কার এবং সতেজ, ব্যাথা নেই, দাঁতের মাঢ়ির রং স্বাভাবিক। নয়ঃ চুলে উজ্জ্বতা আছে, খুশকি নেই। দশঃ হাড় স্বাস্থ্যবান, পেশি ও ত্বক নমনীয়, হাঁটাহাঁটি করলে কোনো অসুবিধা নেই।
বহিঃসংযোগ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ওইসিডি হেলথ্ স্ট্যাটিসটিকস্
'Defying Death' অনলাইন ভিডিও অন ডিজিস (Provided by the Vega Science Trust).
হেলথ্ এণ্ড মেডিক্যাল ইনফরম্যাশন from UCB Libraries GovPubs
বিষয়শ্রেণী:স্বাস্থ্য
বিষয়শ্রেণী:ব্যক্তিগত জীবন
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
ঘর | https://bn.wikipedia.org/wiki/ঘর | |
মন | https://bn.wikipedia.org/wiki/মন | |
নৃতত্ত্ববিদ্যা | https://bn.wikipedia.org/wiki/নৃতত্ত্ববিদ্যা | REDIRECTনৃবিজ্ঞান |
জাদুঘর | https://bn.wikipedia.org/wiki/জাদুঘর | thumb|right|300px|লুভ্র্ জাদুঘর, প্যারিস; বিশ্বের বৃহত্তম ও সর্বাধিক প্রসিদ্ধ জাদুঘরগুলির অন্যতম।
thumb|right|300px|ব্রিটিশ মিউজিয়াম, লন্ডন
thumb|300px|ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, কলকাতার একটি প্রসিদ্ধ স্মারক জাদুঘর
জাদুঘর বা সংগ্রহালয় বলতে বোঝায় এমন একটি ভবন বা প্রতিষ্ঠান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে।Edward Porter Alexander, Mary Alexander;
জাদুঘরে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তুসমূহ সংগ্রহ করে সংরক্ষিত করা হয় এবং সেগুলি প্রদর্শ আধার বা ডিসপ্লে কেসের মধ্যে রেখে স্থায়ী অথবা অস্থায়ীভাবে জনসাধারণের সমক্ষে প্রদর্শন করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ বড় জাদুঘরই প্রধান প্রধান শহরগুলিতে অবস্থিত। অবশ্য ছোটো শহর, মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলেও স্থানীয় জাদুঘর গড়ে উঠতে দেখা যায়।
অতীতকালে জাদুঘরগুলি গড়ে উঠত ধনী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক উদ্যোগে অথবা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে। এই সব জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকত শিল্পকর্ম, দুষ্প্রাপ্য ও আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক বস্তু বা পুরাবস্ত।
সারা বিশ্বেই জাদুঘর দেখা যায়। প্রাচীনকালে গড়ে ওঠা আলেকজান্দ্রিয়ার জাদুঘর ছিল আধুনিককালের স্নাতক প্রতিষ্ঠানগুলির সমরূপ।
ব্যুৎপত্তি
বিশিষ্ট অভিধানকার জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশের মতে, বাংলায় "জাদুঘর" কথাটি আরবি "আজায়ব্ [ঘর/খানা]" শব্দটির সঙ্গে তুলনীয়। বাংলায় "জাদুঘর" কথাটির অর্থ হল, "যে গৃহে অদ্ভুত অদ্ভুত পদার্থসমূহের সংগ্রহ আছে এবং যা দেখিয়া মন্ত্রমুগ্ধবৎ হ’তে হয়।"জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশ, বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, প্রথম ভাগ, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৮৬ সংস্করণ, পৃ. ৮৫০ আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান মতে, "জাদুঘর" শব্দের অর্থ, "যে-ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে।"আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, ২০০৯, পৃ. ৩২৭
ইংরেজি "museum" ("মিউজিয়াম") শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ থেকে। ইংরেজি বহুবচনে এই শব্দের রূপটি হল "museums" (বা অপ্রচলিত শব্দ, "musea")। শব্দটির মূল উৎস গ্রিক শব্দ Μουσεῖον (Mouseion); যার অর্থ গ্রিক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউজদের মন্দির। প্রাচীন গ্রিসে এই জাতীয় মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে পাঠাগার ও শিল্প পুরাকীর্তির সংগ্রহশালাও গড়ে উঠতে দেখা যেত। ২৮০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দ্রিয়ায় টলেমি প্রথম সোটার প্রতিষ্ঠিত দর্শন মিউজিয়াম (প্রতিষ্ঠান) ছিল এই জাতীয় একটি জাদুঘর। অ্যাথেন্সে প্লেটো প্রথম একটি মিউজিয়াম গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছিলেন।Mouseion, def. 3, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexicon, at Perseus যদিও পসেনিয়াসের রচনায় অন্য একটি স্থানকে "মিউজিয়াম" বলে অভিহিত করা হয়েছে। এটি হল ধ্রুপদি অ্যাথেন্সে অ্যাক্রোপোলিশের বিপরীত দিকে অবস্থিত একটি ছোটো পাহাড়। কথিত আছে, মউসিয়াস নামে এক ব্যক্তি এই পাহাড়ে বসে গান গাইতেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি সেখানেই মারা যান এবং সেই পাহাড়েই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার নামানুসারে পাহাড়টির নামকরণ হয়েছিল "মউসিয়ন" ("Mouseion")।Peter Levi, Pausanias Guide to Greece 1: Central Greece, p. 72-73 (Paus. 1.25.2)
thumb|ভারতীয় জাদুঘর,কলকাতা
আরও দেখুন
মাদাম তুসো জাদুঘর
মাদারীপুর মিউজিয়াম
পাদটীকা
অতিরিক্ত পঠন
বহিঃসংযোগ
International Council of Museums (ICOM)
VLmp directory of museums (VLmp)
বিষয়শ্রেণী:জাদুঘর
বিষয়শ্রেণী:জাদুঘর শিক্ষা |
কেনা বেচা | https://bn.wikipedia.org/wiki/কেনা_বেচা | পুনর্নির্দেশ বাণিজ্য (ক্রয়বিক্রয়) |
প্রত্নতত্ত্ব | https://bn.wikipedia.org/wiki/প্রত্নতত্ত্ব | thumb|দুজন প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন বিশ্লেষণ করছেন
বাংলা প্রত্নতত্ত্ব শব্দটি 'প্র+ত্ন= প্রত্ন' অর্থ- পুরাতন ও 'তৎ+ত্ব= তত্ত্ব'অর্থ-বিজ্ঞান। সমষ্টিগত অর্থ হল, পুরাতন বিষয়ক জ্ঞান। প্রচলিত ধারণায়, বস্তুগত নিদর্শনের ভিত্তিতে অতীত পুনঃনির্মাণ করার বিজ্ঞানকেই প্রত্নতত্ত্ব বলে চিহ্নিত করা হয়। অতীতের সংস্কৃতি ও পরিবেশগত নিয়ে চর্চা করে এমন অন্যান্য বিজ্ঞান বা বিষয়গুলোর (যেমন- ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি) মধ্যে প্রত্নতত্ত্বের বিশেষত্ব হলো- এটি কেবল বস্তুগত নিদর্শন অর্থাৎ প্রামাণ্য তথ্য নিয়ে কাজ করে এবং তার সাথে মানুষের জীবনধারার সম্পর্ক নির্ণয় করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ভূমিরূপ ও অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য বিশ্লেষণ করে ইনামগাঁওয়ের কয়েকহাজার বছরের বৃষ্টিপাতের ধরনের একটি উপাত্ত হাজির করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন ভূমিরূপ ও অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য উদ্ধারের এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকলেও ওই বিশেষ বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতিতে মানুষ কীভাবে বসবাস ও জীবনযাপন, এই বিশেষ বিশ্লেষণটি প্রত্নতাত্ত্বিকরা করে থাকেন। ইনামগাওয়ের পরিবৈশিক তথ্য ও গর্তবসতিগুলো এই দুই প্রাচীন উপাদান মিলিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেই সময়ের মানুষের জীবনপ্রণালি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেন। তাই প্রত্নতত্ত্বের অধ্যয়নের মূল বিষয়গুলো হলো- ভৌত ধ্বংসাবশেষ, পরিবেশগত তথ্য, জৈব অবশেষ বা জীবাশ্ম, প্রাকৃতিক-সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যাবলী ইত্যাদি। আর প্রত্নতত্ত্বের কাজ হলো- এইসব বিষয়কে বিশ্লেষণ করে প্রাচীনকালের মানুষ এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির তৎকালীন চিত্র বোঝা এবং তার মাধ্যমে মানুষ এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির পরিবর্তনের ধারা ব্যাখ্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের মানুষ এবং পরিবেশের রূপরেখা নির্মাণ করা। এর ফলে প্রত্নতত্ত্ব প্রধানত ইতিহাস ও পরিবেশ বিজ্ঞানের এক সহযোগী। তবে পরিবৈশিক প্রেক্ষিতের চেয়ে মানুষের সংস্কৃতির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত এমন বিষয়েই দীর্ঘকাল ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকাণ্ড সীমিত ছিল। কাজেই সাধারণত প্রত্নস্থান ও পুরাতন জিনিসপত্র আবিষ্কার, স্থান ও বস্তু চিহ্নিতকরণ ও নথিভুক্তকরণ এবং বস্তু ও কাঠামোর বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ ও তা জনসমক্ষে উপস্থাপন এর মধ্যেই প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চা সীমাবদ্ধ ছিল। প্রাকৃতিক ও পরিবৈশিক প্রেক্ষিত এবং অবস্তুগত ভাবগত নিদর্শন যেমন সামাজিক সম্পর্ক ও মনোস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বর্তমানে প্রত্নতত্ত্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর ফলে প্রত্নতত্ত্ব বর্তমানে মানুষের অতীত ইতিহাসের গৃহবন্দী চর্চার বদলে পরিবেশ, ভূপ্রকৃতি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের অন্যান্য বিষয়ের অতীত অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যত নির্মাণের বিজ্ঞান হিসেবে চর্চিত হচ্ছে।
উদ্ভব ও বিকাশ
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫৬-খ্রিষ্টপূর্ব ৫৩৯ অব্দে বেবিলনের সিপপুরে সামাথ নামক একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের নির্মাতার নাম জানার উদ্দেশ্যে সম্রাট নবনিডাস (Nabonidus) ধ্বংসস্তুপের মধ্যে খননকাজ পরিচালনা করেন। তার এই কীর্তির জন্য তাকে পৃথিবীর প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক বলে অভিহিত করা হয়। সম্রাটের কন্যা এন্নিগালডি নান্না (Ennigaldi Nanna) খননে প্রাপ্ত এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সংগৃহীত নিদর্শনাদি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন।
গ্রিক ঐতিহাসিক থুকিডাইডেস (Thucydides)-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০- খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৬ অব্দে এথেন্সের প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেলস (Delos)-এর ঈজিয়ান দ্বীপের (Aegean Islands) প্রাচীন সমাধিগুলোতে খনন পরিচালনা করে খননে প্রাপ্ত নিদর্শনাদি সম্পর্কে সেই সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। অন্য দিকে, প্রাচীন চীনে পূর্ব-প্রজন্মের নিদর্শনাদি সংরক্ষণের মাধ্যমে পারিবারিক ও মৌখিকভাবে হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস সংরক্ষণের প্রচলন ছিল। রোমান দার্শনিক লুকরেটিয়াস (Lucretius) খ্রিষ্টপূর্ব ৯৯-খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫ অব্দে এবং চীনা দার্শনিক ইউয়ান কং (Yuan K'ang) খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে চীনাদের প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষণের এই চর্চা এবং এই নিদর্শনগুলোর বিশ্লষেণ করে প্রাচীন চীনা সংস্কৃতির রূপরেখা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।
ভারতে সুলতানী শাসনামলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ ও এর ভিত্তিতে ইতিহাস চর্চার সূচনা হয়। মুহম্মদ বিন তুঘলক (১৩২৪-১৩৫১) ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুশীলন করেন। তিনি সারা ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেন এবং এগুলোর আলোকে ইতিহাস রচনার জন্য পেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিক নিয়োগ করেন। অশোকস্তম্ভসমূহের শিলালিপির পাঠোদ্ধারের জন্য তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা পৃথিবীর প্রথম পেশাদারী প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চার গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
চতুদর্শ শতক থেকে ইউরোপের রেনেসাঁ পর্বে অভিজাতদের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়; ফলে প্রত্নতাত্ত্বিক ও প্রত্ন-লুটেরা উভয় সম্প্রদায় মূলত যেকোনো উপায়ে প্রত্ন নিদর্শন সংগ্রহ করার জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠেন। মিশরের পিরামিড ও ইউরোপের প্রাচীন সমাধিগুলোতে প্রত্নতত্ত্ব চর্চার নামে এক ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করা হয়। ইতালিতে (রোম) যাচ্ছেতাই খনন এবং নিদর্শন বাণিজ্য এতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, সেখানে বেশকিছু প্রত্ননিদর্শন বিক্রির বাজার ও বার্ষিক প্রত্ননিদর্শন বিক্রয় মেলা আয়োজন করা হতো।
এই প্রথায় প্রথম বিপরীতমুখী প্রয়াস চালান ইংরেজ গবেষক জন লিল্যান্ড (John Leland)। ১৫৩৩ থেকে ১৫৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি প্রাচীন নথিপত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন। অপর ইংরেজ গবেষক উইলিয়াম কার্ডেন (William Carden) ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইংল্যান্ডের প্রাচীন নিদর্শনসমূহের এক বিস্তারিত তালিকা প্রণয়ন করেন যা "ব্রিটানিয়া" নামে প্রকাশিত হয়। তার গবেষণাকর্মটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, তিনি স্থানিক প্রেক্ষিতের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রাচীন নিদর্শনগুলোর ব্যাখ্যা করেন এবং উদ্ভিদের দেহবৃদ্ধির ধরনের পার্থক্যের ভিত্তিতে মাটির নিচে চাপা পড়া প্রত্নস্থান শনাক্তকরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। প্রত্নস্থান চিহ্নিতকরণ ও বিশ্লেষণের এই এরিয়াল পদ্ধতি (প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের কারণে বিবর্তিত হলেও) আজো অত্যন্ত জনপ্রিয়। অপর ইংরেজ প্রত্নতাত্ত্বিক জন অব্রে (John Aubrey) Stonehenge ও Abebury নামে দুটি প্রত্নস্থানের বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণ করেন। তার বিবরণের ওপর নির্ভর করে ১৭০৯ খ্রিষ্টাব্দে হারকুল্যুনেউম ও পম্পেই অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালিত হয়। ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এখানে একটানা খনন পরিচালিত হয়, এবং প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহের অদ্ভুত ধাঁধায় খনন পরিত্যাক্ত হয় এবং তা থেকে কোনো ইতিহাস ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে খনন আবার শুরু হয়, এখনো সেখানে খনন চলছে।
১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ডেনিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ও কিউরেটর সি জে থমসন "থ্রি এজ সিস্টেম" আবিষ্কার করলে ইতিহাসের অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হয়ে ওঠে। ফলে প্রত্নতত্ত্ব চর্চা এক নতুন গতি পায়। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসকে পাথর যুগ, ব্রোঞ্জের যুগ ও লোহার যুগ - এই তিনটি ভাগে ভাগ করলে, পাথরের হাতিয়ার ও ব্রোঞ্জের হাতিয়ারগুলো আসলে কী তা বোঝা সম্ভব হয়, এবং ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যা প্রদানের হাত থেকে প্রত্নতত্ত্ব রক্ষা পায়। অপর ডেনিশ প্রত্নতাত্ত্বিক জে জে ওয়ারসাই ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে এই গবেষণাকে একটি একক প্রত্নস্থানের স্তরবিন্যাসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হন। একটি প্রত্নস্থানের বিভিন্ন গভীরতায় বিভিন্ন ধরনের প্রত্নসামগ্রী যে একই সময়ের ব্যক্তিরা ব্যবহার করেনি, তা যে মানুষের ইতিহাসের বিকাশের ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা এই তথ্য প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এক অভাবনীয় গতি দেয়।
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে পম্পেই ও হারকুল্যুনেউম-এ প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয় এবং এইবার প্রত্নতাত্ত্বিকরা উক্ত প্রত্নস্থলের মানুষের জীবনপ্রণালি ব্যাখ্যায় অগ্রগতি লাভ করেন। এই সাফল্য দেশ-বিদেশের প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের এক উৎসবের সূচনা করে। কার্টিয়াস গ্রিসের অলিম্পিয়ায়, কোল্ডওয়ে এবং ওয়াল্টার মেসোপটেমিয়ায়, হার্বাট কনসট্যান্টিন্যাপল ও তুরস্কের বিভিন্ন জায়গায়, পিট রিভার্স ইংল্যান্ডে এবং হুইলার ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন সূচনা করেন। এই প্রত্যেকটি খনন পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
আধুনিক প্রত্নতত্ত্ব
আধুনিক প্রত্নতত্ত্ব চর্চা শুরু হয় জার্মানদের হাতে। জার্মান মানবতাবাদী ও প্রাক-ইতিহাসবেত্তা (প্রিহিস্টোরিয়ান) গুস্তাফ কোসিনা ১৮৯৫ হতে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত "বসতি প্রত্নতত্ত্ব" (সেটেলমেন্ট প্রত্নতত্ত্ব) নামে প্রত্নতত্ত্বের এক আধুনিক মতবাদের বিকাশ ঘটান। এর মূল ভিত্তি ছিল, বস্তুনিদর্শনের (আর্টিফ্যাক্ট) ধরনের মাধ্যমে মানব সংস্কৃতি নির্ণয় এবং স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক অঞ্চলকে প্রাচীন ট্রাইব বা এথনিক গ্রুপের বসতি এলাকা বলে চিহ্নিত করা। তার পদ্ধতির সবচে সমস্যাযুক্ত বিষয় হলো বর্তমান মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে অতীত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতাকে সরাসরি বর্ণনা করা। এর মাধ্যমে তিনি বর্তমান জার্মানদেরকেই নর্ডিক, আর্য বা ইন্দো-ইউরোপীয় (ইন্দো-জার্মান)-দের উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন। তিনি অন্য সংস্কৃতি ও মানুষদের ওপরে জার্মানদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের পরাজয়ের পর তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে যুক্তি করতে থাকেন, লৌহ যুগে পোল্যান্ড জার্মানদের বসতির একটি অংশ ছিল। কোসিনার মৃত্যুর পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের উদ্ভব হলে তারাও তার এই ডগমা গ্রহণ করে। থার্ড রাইখের সময় (হিটলারের নাজী শাসনামলকে থার্ড রাইখ বলা হয়) এই মতবাদ পৃষ্ঠপোষকতা পায়। নাজী শাসনে এটি প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা পায়। আলফ্রেড রোজেনবার্গ এবং হাইনরিখ হিমলার এই মতবাদ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণের চেষ্টা করেন। এডলফ হিটলার এদের উভয়কে সরাসরি সাহায্য করেন। হিমলার গড়ে তোলেন Deutsches Ahnenerbe (জার্মান বংশগতির উত্তরাধিকার) নামক একটি সংস্থা। এরা কোসিনার বসতি প্রত্নতত্ত্বের বাধ্যতামূলক ব্যবহার করে (Jones ১৯৯৮:৩)। তারা জার্মানীর পূর্বদিকে বিস্তার আবিষ্কার করে। এই বিস্তার ছিল পোল্যান্ড, দক্ষিণ রাশিয়া এবং ককেশাস অঞ্চলে। প্রত্নতত্ত্বের এই ধারার সঙ্গে আরও যারা এই দলে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে হ্যান্স রাইনার্থ ও হারমান উইর্থের নাম উল্লেখযোগ্য। ইউরোপ বা বৈশ্বিকভাবে ব্যাপারটি যেমন-ই হোক না কেন, এই গবেষণা জার্মানদের জাতীয় চেতনা ও অহমবোধ বিকাশে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
অন্যদিকে, পোলিশ প্রত্নতাত্ত্বিক Konrad Jazdewski ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপের প্রত্নতাত্ত্বিক অ্যাটলাস প্রকাশ করেন, তাতে তিনি ব্রোঞ্জ যুগে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে স্লোবানিক জাতির সম্প্রসারনকে চিত্রিত করেন (Kristiansen ১৯৯২:১৮), অর্থাৎ এক অর্থে তিনি পোলিশ (স্লোবানিক)-দেরকেই ইউরোপের প্রকৃত মালিক হিসেবে উপস্থাপন করেন; এটি পোলিশদের আত্মশ্লাঘার একটি হাতিয়ার হিসেবে আজো ক্রিয়াশীল।
একই ভাবে ফ্রান্সে রোমান সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ প্রতিহতকরণে গলদের প্রতিরোধের প্রত্নতাত্ত্বিক নথিগুলো ফরাসি জাতীয় চেতনা বিকাশে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। আয়ারল্যান্ডের জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটেছে লা টেনে-র ওপরে প্রত্নতত্ত্বের গবেষণালব্ধ তথ্যগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর। যদিও জার্মানদের মতো এখানেও তা একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কারণ ঘটায়, কিন্তু আইরিশ জাতীয় প্রেরণার এক উৎস হিসেবেই থেকে যায়। একই ভাবে ইসরাইলের মাসাদা অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের পর দেখা যায়- সেখানে রোমান সাম্রাজ্যের বিরোধিতাকারী একদল ইহুদি গণ-আত্মহত্যা করেছিল; এই ঘটনা এবং স্থানটি ইসরাইল রাষ্ট্রটির জাতীয় চেতনার প্রতীক হিসেবে তৈরি হয়েছে, স্থানটি সামরিক অনুষ্ঠানাদির কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছে (Zarubavel ১৯৯৪)।
প্রত্নতত্ত্বের এই ধারার বিকাশ উত্তর আফ্রিকা এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম গড়ে তুলতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে (Mattingly ১৯৯৬:৫৬-৯ এবং Paddayya ১৯৯৫:১৪১)। সাম্প্রতিক সময়ে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিতর্কেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রূপে ব্যবহৃত হয়েছে (Rao ১৯৯৪, Pollock ১৯৯৬)।
বসতি প্রত্নতত্ত্বের পর প্রত্নতত্ত্বের যে মতবাদটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব-বিস্তারী ছিল তা হলো সংস্কৃতি-ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব। গর্ডন চাইল্ড এই মতবাদের প্রধান উদ্যোক্তা। প্রত্নতত্ত্ব চর্চায় তার ব্যাপক অবদানের জন্য অনেকে তাকে প্রত্নতত্ত্বের জনক-ও বলে থাকেন। যেসব বিষয় সাধারণভাবে সংস্কৃতির অংশ বলে গণ্য হয় এবং প্রায়ই যা প্রাচীন সামাজিক সত্তার বিভিন্ন খণ্ডাংশের ফল হিসেবে গণ্য হয় তার এককের স্থানিক ও সময়গত কাঠামোর মধ্যে তৈরি বস্তুগত নিদর্শনের অভিজ্ঞতাবাদী সারসংক্ষেপ, বর্ণনা এবং শ্রেণীকরণের (ক্লাসিফিকেশন) বৈশিষ্ট্যকেই সংস্কৃতি-ইতিহাস বলা যেতে পারে। সংস্কৃতি-ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্বের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় ঐতিহ্যের ভিন্নতা (বা বৈচিত্র্য) সত্ত্বেও এটাই ছিল বিশ শতকের ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যত্র প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক মতবাদ। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে অতীত জনগণ বা জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইতিহাস তৈরি করা হয়, যা আসলে নাজি জার্মানীর প্রত্নতাত্ত্বিক কাঠামোর মূলনীতির সঙ্গে একই।
জাপানের ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও কৃষিনির্ভর সংস্কৃতির প্রতি জাতীয় গুরুত্ব আরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রত্নতত্ত্বের এই ঘরানার গবেষণাগুলো অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় তাসকান শহরে ড. উইলিয়াম রাথজে পরিচালিত ফেলনাময়লা প্রকল্প (The Garbage Project) আধুনিক প্রত্নতত্ত্বের এক মাইলস্টোন। শহরের অধিবাসীদের ফেলে দেওয়া ময়লা-আবর্জনা থেকে শহরের মানুষের স্বভাব-চরিত্র-সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করে তিনি প্রাচীন নিদর্শন থেকেও যে প্রাচীন মানুষের সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করা সম্ভব তা প্রমাণ করেন। এর ফলে প্রত্নতত্ত্ব শুধু বিজ্ঞানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তা-ই নয়, বরং পদ্ধতি হিসেবেও প্রত্নতত্ত্ব যে বৈজ্ঞানিক তা প্রমাণিত হয়। এই গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রত্নতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে তথ্য আহরণ করা শুরু হয় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব জনপ্রিয় বিষয় হিসেবে চালু করা হয়। এর ফলে আশির দশক থেকে বিশ্বব্যাপী প্রত্নতত্ত্ব চর্চা ব্যাপক বৃদ্ধি পেলে এর মতাদর্শিক ঘরানারও ব্যাপক বিস্তার ঘটে। কাঠামোবাদী, প্রক্রিয়াবাদী, উত্তর-প্রক্রিয়াবাদী, নির্মাণবাদী ইত্যাদি নানা ঘরানা দ্রুত প্রকাশিত হয়। আপাত অর্থে বিভিন্ন ছোট ছোট ইস্যুতে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে আলাদা আলাদা গ্রুপ সৃষ্টি হয়, পিটার আকো একে বলছেন "ঘেটো"। এই সময় প্রথমবারের মতো মানুষের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াকে পরিস্থিতি (সিচুয়েশন) এবং প্রেক্ষিত (কনটেক্সট) এর নিরিখে গবেষণা করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। আরও পরিষ্কার করে বললে, প্রত্নতত্ত্বের রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়; অতীত মানুষের বিভিন্ন গোষ্ঠী, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক-সূত্র ও সম্পর্কের সামর্থ্য, রাজনৈতিক সংগঠন ও সামাজিক স্তরায়নকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঊনিশশো আশির দশকের বিশ্ব পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করার ও সমাধানের পথনির্দেশের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা তাদের অবস্থান থেকে অবদান রাখার চেষ্টা করেন। গোষ্ঠী, শ্রেণী, সীমানা, আদিবাসী, জাতিত্ব ইত্যাদি প্রকরণগুলো প্রত্নতত্ত্বে আলোচিত হতে থাকে। এই সময় আকো, জোনস ও আরও কিছু লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক প্রত্নতাত্ত্বিকের উদ্যোগে কাজের তত্ত্ব বলে এক তত্ত্বহীন ঘেটো-র উদ্ভব ঘটে, এদের মূল বক্তব্য হলো- কাজ করতে করতেই একজন গবেষক তার তত্ত্ব খুঁজে পাবেন, যার সাথে পৃথিবীতে প্রচলিত অন্য তত্ত্বসমূহের কোনো মিল না-ও থাকতে পারে। কিন্তু অন্য তত্ত্বের প্রতি পূর্ব-ধারণার (প্রি-কনসেপ্ট) ফলে তিনি যদি ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন, সেটি সত্যিই বিপজ্জনক।
প্রত্নতত্ত্বের কাজের পদ্ধতি
জরিপ
উৎখননের সম্ভাব্যতা বা বাস্তবতা যাচাই করার জন্যই জরিপ করা হয়।পদ্ধতিগতভাবে,প্রত্নস্থান বা প্রত্ননির্দশন শনাক্ত করা, খুঁজে বের করা,তা ভূ-পৃষ্ঠে চিহ্নত করা, মানচিত্রে শনাক্ত করা,এবং গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করাকে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বলে।
জরিপ গবেষণা ২ ধরনের হয়ে থাকে।যথাঃ
১.জরিপ-পূর্ব গবেষণা.
২.মাঠ জরিপ গবেষণা.
অনুসন্ধান
কোন প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের পূর্বে প্রাকখনন গবেষণা সম্পাদন করতে হয়। এর জন্য প্রথম Archaeo- book study বা library work কার্য সম্পর্কে ধারণা অর্জন এর পর কোন জায়গায় প্রত্ননিদর্শন আছে কিনা বা ঐ স্থানটি প্রত্নস্থান কিনা তা পায়ে হেটে জরিপ/খুজে বের করার মাধ্যমকে অনুসন্ধান বলে।
উৎখনন
কোনো গবেষণার ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের ঠিক পরের স্থানটি দখল করে আছে উৎখনন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা কোনো পুস্তকে লিপিবদ্ধ নয়। উৎখনন হলো এমন একটি বিষয় যা কোনো প্রত্নতত্ত্ববিদও পুনঃপুন খনন কার্য সম্পাদনের মাধ্যমেও কোনো প্রত্নস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার বিশেষ প্রক্রিয়া। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যেমন; grid পদ্ধতি, এরিয়াল ইমেজ, স্যাটেলাইট ইমেজ ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে উৎখনন কার্য সম্পন্ন করা যায়।
সংরক্ষণ
আমরা যখন কোনো প্রত্নস্থান থেকে কোন প্রকার প্রত্নবস্তুু পাই সেটাকে নানা প্রকার পদার্থ দ্বারা এটিকে তার সাথে মানানসই করে এটিকে কোন একটি জাদুঘর বা প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় জায়গায় রাখি এটাই সংরক্ষণ।আবার যাতে কোনো প্রকার বিলুপ্তির আশংক্ষা না থাকে সে পর্যায়ে রাখাকে সংরক্ষণ বলে।
নথিভুক্তকরণ
আমরা যখন কোনো প্রত্নবস্তু পাই সেটি কীভাবে পেলাম,সেটি কোন সময়ের,তার ওজন কত,তার উচ্চতা,তার রং,তার নাম,কতটুকু মাটির নিচে পেলাম,কোন অঞ্চলের,এভাবে খুঁটিনাটি সব লিখাকেই বলে নথিভুক্তকরন।
প্রত্নতত্ত্বের উপাদান
প্রত্নতত্ত্বের উপাদান হিসেবে সাধারণভাবে ভৌত ধ্বংসাবশেষ, পরিবেশগত তথ্য, জৈব অবশেষ বা জীবাশ্ম, প্রাকৃতিক-সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যাবলী ইত্যাদিকে বিবেচনা করা হয়। তবে ভাবগত নিদর্শন যার আপাত অর্থে কোনো বহনযোগ্য, বাণিজ্যযোগ্য বা দৃশ্যমান অস্তিত্ব নাই এমন কোন বিষয়ও হতে পারে প্রত্নতাত্ত্বিকের প্রধান সূত্র।ক
আরও দেখুন
নৃতত্ত্ব
নৃবিজ্ঞান
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
তথ্যসূত্র
প্রত্নতত্ত্বের ইতিহাস ও নীতিমালা
বিষয়শ্রেণী:প্রত্নতত্ত্ব
বিষয়শ্রেণী:নৃবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:সামাজিক বিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
জ্যোতির্বিজ্ঞান | https://bn.wikipedia.org/wiki/জ্যোতির্বিজ্ঞান | thumb|upright=1.3|অতিনবতারা অবশেষ কর্কট নীহারিকার একটি অতিকায় হাবল মোজাইক
290px|thumb|লা সিলা মানমন্দির থেকে দৃশ্যমান আকাশগঙ্গা ছায়াপথ
জ্যোতির্বিজ্ঞান (ইংরেজি Astronomy প্রতিশব্দটি শব্দটি থেকে উদ্ভূত) হল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা। এই শাখায় গ্রহ, প্রাকৃতিক উপগ্রহ, তারা, ছায়াপথ ও ধূমকেতু ইত্যাদি মহাজাগতিক বস্তু এবং অতিনবতারা বিস্ফোরণ, গামা রশ্মি বিচ্ছুরণ ও মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ প্রভৃতি ঘটনাবলি এবং সেগুলির বিবর্তনের ধারাটিকে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান , রসায়ন ও ভূগোল এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা করা হয়। সাধারণভাবে বললে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে ঘটা সকল ঘটনাই জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। ভৌত বিশ্বতত্ত্ব নামে আরেকটি পৃথক শাখাও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গেই সম্পর্কিত। এই শাখায় সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্ব নিয়ে বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা করা হয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞান হল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখাগুলির অন্যতম। লিপিবদ্ধ ইতিহাসে দেখা যায় প্রাচীন ব্যাবিলনীয়, গ্রিক, ভারতীয়, মিশরীয়, নুবিয়ান, ইরানি, চিনা, মায়া ও বেশ কয়েকটি আমেরিকান আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী নিয়মবদ্ধ প্রণালীতে রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করত। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে জ্যোতির্মিতি, সেলেস্টিয়াল নেভিগেশন, পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং পঞ্জিকা প্রণয়নের মতো নানা রকম বিষয় ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্তর্গত। তবে আজকাল পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানকে প্রায়শই জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের সমার্থক মনে করা হয়।
পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞান দু’টি উপশাখায় বিভক্ত: পর্যবেক্ষণমূলক ও তাত্ত্বিক। জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুগুলিকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেই সব তথ্য পদার্থবিজ্ঞানের মূল সূত্র অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজ। অন্যদিকে তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই সব বস্তু ও মহাজাগতিক ঘটনাগুলি বর্ণনার জন্য কম্পিউটার বা অন্যান্য বিশ্লেষণধর্মী মডেল তৈরির কাজ করা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের এই দু’টি ক্ষেত্র পরস্পরের সম্পূরক। তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের ফলাফলগুলির ব্যাখ্যা অনুসন্ধান করে। অন্যদিকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাত্ত্বিক ফলাফলগুলির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
বিজ্ঞানের অল্প কয়েকটি শাখায় এখনও অপেশাদারেরা প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান এই শাখাগুলির অন্যতম। মূলত অস্থায়ী ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। নতুন ধূমকেতু আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও তাঁদের অবদান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
নাম-ব্যুৎপত্তি
thumb|১৯শ শতাব্দীর সিডনি মানমন্দির, অস্ট্রেলিয়া (১৮৭৩)http://www.sydneyobservatory.com.au/ Official Web Site of the Sydney Observatory
thumb|১৯শ শতাব্দীর কুইটো জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক মানমন্দির; ইকুয়েডরের রাজধানী কিয়োয় নিরক্ষরেখার ১২ মিনিট দক্ষিণে অবস্থিত।http://oaq.epn.edu.ec/ Official Web Site of one of the oldest Observatories in South America, the Quito Astronomical Observatory
ইংরেজি ভাষায় অ্যাস্ট্রোনমি (Astronomy) শব্দটির অর্থ "নক্ষত্রের নিয়ম" (অথবা অনুবাদের তারতম্য অনুযায়ী "নক্ষত্র চর্চা")। অ্যাস্ট্রোনমি শব্দটি প্রাচীন গ্রিক ἀστρονομία শব্দটি থেকে উদ্ভূত। গ্রিক ἄστρον (উচ্চারণ: astron) শব্দটির অর্থ "নক্ষত্র" এবং -νομία (উচ্চারণ: -nomia) শব্দটি গ্রিক νόμος (উচ্চারণ: nomos) শব্দটি থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "নিয়ম" বা "চর্চা"। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্রের উৎস এক হলেও বর্তমানে এই দু’টিকে সম্পূর্ণ পৃথক বিষয় হিসেবেই ধরা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক বস্তু ও ঘটনাবলির বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা অনুসন্ধান করেন। অন্যদিকে জ্যোতিষীগণ দাবি করেন, মহাজাগতিক বস্তুগুলির অবস্থান মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।Losev A., (2012), 'Astronomy' or 'astrology': a brief history of an apparent confusion, Journal of Astronomical History and Heritage, Vol. 15, No. 1, pp. 42–46 .
"জ্যোতির্বিজ্ঞান" ও "জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান" শব্দ দু’টির ব্যবহার
আলোচ্য বিষয়টিকে বোঝাতে পারিভাষিক "জ্যোতির্বিজ্ঞান" বা "জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান" শব্দ দু’টিই ব্যবহার করা যেতে পারে। সুস্পষ্ট আভিধানিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, "জ্যোতির্বিজ্ঞান" হল "পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে অবস্থিত বস্তু ও সংঘটিত ঘটনাবলি এবং সেগুলির প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক গুণাবলির পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা" এবং "জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান" বলতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সেই শাখাটিকে বোঝায়, যেটিতে "মহাজাগতিক বস্তু ও ঘটনাবলির আচরণ, প্রাকৃতিক গুণাবলি ও গতিবিদ্যা-সংক্রান্ত পদ্ধতিগুলি" আলোচিত হয়। ফ্র্যাঙ্ক শু রচিত দ্য ফিজিক্যাল ইউনিভার্স নামক প্রাবেশিক পাঠ্যপুস্তকের ভূমিকা প্রভৃতি কয়েকটি ক্ষেত্রে বলা হয়েছে "জ্যোতির্বিজ্ঞান" শব্দটির দ্বারা বিষয়টির গুণগত পর্যালোচনা বোঝানো যেতে পারে। অন্যদিকে "জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান" শব্দটি ব্যবহা্র করা যেতে পারে বিষয়টির পদার্থবিদ্যা-সংক্রান্ত পর্যালোচনাকে। আধুনিক কালে জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত অধিকাংশ গবেষণা যেহেতু পদার্থবিজ্ঞান-সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে নিয়ে করা হয়। সেই কারণে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানকে বস্তুত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানও বলা যেতে পারে। জ্যোতির্মিতির মতো কয়েকটি বিষয় অবশ্য খানিকটা জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান হলেও বিশুদ্ধভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান। এই বিষয়টির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা যে বিভাগে গবেষণা করছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে "জ্যোতির্বিজ্ঞান" ও "জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান" শব্দ দু’টি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ব্যবহারের নেপথ্যেও দু’টি কারণ থাকে। প্রথমত, যদি বিভাগটি ঐতিহাসিকভাবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শাখা হিসেবে স্বীকৃত হয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টি জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে; এবং দ্বিতীয়ত কোনো পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী যদি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিবর্তে পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করে এই বিভাগে যোগ দেন, সেক্ষেত্রেও বিভাগটিকে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান নামে অভিহিত করা যেতে পারে। এই বিষয়ের কয়েকটি অগ্রণী বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িক পত্রিকা হল দি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নাল, দি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল ও অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স।
ইতিহাস
thumb|ফ্রেডরিক ডে উইট কর্তৃক অঙ্কিত একটি মহাজাগতিক মানচিত্র, ১৭শ শতাব্দী
প্রাচীন যুগ
প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান সীমায়িত ছিল খালি চোখে দৃশ্যমান মহাজাগতিক বস্তুগুলির পর্যবেক্ষণ ও সেগুলির গতিবিধি সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যেই। অনুমিত হয়, একাধিক প্রাচীন সভ্যতার অধিবাসীবৃন্দ জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রচুরি যন্ত্রপাতি জোগাড় করেছিল। প্রথাগত আকাশ পর্যবেক্ষণের কাজ ছাড়াও সেই যুগের মানমন্দিরগুলিতে ঋতুনির্ণয়ের মাধ্যমে শস্যরোপনের সময় নির্ধারণ ও বছরের দৈর্ঘ্য মাপার কাজও চলত। কৃষিকার্যের ক্ষেত্রে এই দু’টি কাজ সেকালে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।Forbes, 1909
টেলিস্কোপ প্রভৃতি যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের কাজটি করা হত খালি চোখে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, গ্রিস, পারস্য, ভারত, মিশর ও মধ্য আমেরিকায় জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার জন্য একাধিক মানমন্দির গড়ে তোলা হয়েছিল এবং মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা নিয়ে পর্যালোচনার কাজ শুরু হয়েছিল। প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার প্রধান উপজীব্য বিষয় ছিল গ্রহ ও নক্ষত্রগুলির অবস্থানগত মানচিত্র অঙ্কন। এই বিজ্ঞানটিই আধুনিক যুগে জ্যোতির্মিতি নামে পরিচিত। এই জাতীয় পর্যবেক্ষণের ফলেই গ্রহগুলির গতি সম্পর্কে মানুষের আদিম ধারণাগুলি গড়ে ওঠে এবং মহাবিশ্বে সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবীর প্রকৃতি দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা শুরু হয়। সেই যুগে মনে করা হত, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং সূর্য, চাঁদ ও তারাগুলি পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে। এই তত্ত্বটি ভূকেন্দ্রিক মডেল বা গ্রিক দার্শনিক টলেমির নামানুসারে টলেমীয় বিশ্বতত্ত্ব নামে পরিচিত।
প্রাচীন কালে গাণিতিক ও বিজ্ঞানসম্মত জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার সূচনা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ব্যাবিলনীয়রা এই ধরনের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অন্যান্য সভ্যতাগুলিতে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার যে প্রথার সূত্রপাত ঘটে, তার ভিত্তিপ্রস্তর ব্যাবিলনীয়েরা স্থাপন করেছিলেন। তারাই প্রথম আবিষ্কার করেন যে, সারোস নামে একটি পুনরাবৃত্ত চক্রে চন্দ্রগ্রহণ ঘটে থাকে।
thumb|upright|গ্রিক বিষুব সূর্যঘড়ি, আলেজান্দ্রিয়া অন দ্য অক্সাস (অধুনা আফগানিস্তানে অবস্থিত), খ্রিস্টপূর্ব ৩য়-২য় শতাব্দী
ব্যাবিলনীয়দের পথ অনুসরণ করে প্রাচীন গ্রিস ও হেলেনীয় বিশ্বেও জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছিল। মহাজাগতিক ঘটনাবলির যুক্তিসংগত বাস্তব ব্যাখ্যার অনুসন্ধানের সূত্রপাত ছিল গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে অ্যারিস্টারকাস অফ সামোস চাঁদ ও সূর্যের আয়তন ও দূরত্ব হিসেব করেন এবং সৌরজগতের সূর্যকেন্দ্রিক রূপের ধারণাটি প্রস্তাব করেন। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে হিপারকাস অয়নচলন আবিষ্কার করেন এবং চাঁদের আয়তন ও দূরত্ব গণনা করেন। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা সংক্রান্ত যে সব যন্ত্রগুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে জানা যায়, তার মধ্যে অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো কয়েকটি যন্ত্র উদ্ভাবনও করেছিলেন হিপারকাস। হিপারকাস ১০২০টি তারার একটি পূর্ণাঙ্গ সুবিন্যস্ত তালিকা প্রস্তুত করেন এবং উত্তর গোলার্ধ থেকে দৃশ্যমান অধিকাংশ তারামণ্ডল গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকেই উদ্ভূত।Thurston, H., Early Astronomy. Springer, 1996. p. 2 অ্যান্টিক্যাথেরা মেকানিজম (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০-৮০ অব্দ) ছিল একটি প্রাচীন অ্যানালগ কম্পিউটার, যা প্রস্তুত করা হয়েছিল নির্দিষ্ট তারিখে সূর্য, চাঁদ ও গ্রহগুলির অবস্থান গণনা করার জন্য। এই ধরনের জটিল প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি খ্রিস্টীয় ১৪শ শতাব্দীতে ইউরোপে যান্ত্রিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘড়ি আবিষ্কারের আগে আসেনি।
মধ্যযুগ
মধ্যযুগের ইউরোপে খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দী পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা থমকে ছিল। অবশ্য এই সময় ইসলামি বিশ্বে এবং অন্যান্য অঞ্চলে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছিল। ৯ম শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইসলামি বিশ্বে প্রথম জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক মানমন্দিরগুলি গড়ে ওঠে। ৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যদেশীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আজোফি তার বুক অফ ফিক্সড স্টারস গ্রন্থে স্থানীয় জোটের বৃহত্তম ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডার বর্ণনা দেন। ১০০৬ খ্রিষ্টাব্দে মিশরীয় আরব জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলি ইবন রিদওয়ান ও চিনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা লিপিবদ্ধ ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অ্যাপারেন্ট ম্যাগনিচিউড তারাজাগতিক ঘটনা এসএন ১০০৬ অতিনবতারা পর্যবেক্ষণ করেন। বিজ্ঞানের এই শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন এমন কয়েকজন বিশিষ্ট ইসলামি (অধিকাংশ স্থলেই পারস্যদেশীয় বা আরব) জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ হলেন আল-বাট্টানি, থেবিট, আজোফি, আলবুমাসার, বিরুনি, আলজাকেল, আল-বিরজন্দি এবং মারাঘেহ ও সমরকন্দ মানমন্দিরের জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ।
সেই যুগের জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ তারাগুলির আরবি নাম রেখেছিলেন। সেগুলি এই যুগে স্বতন্ত্র তারার নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এও মনে করা হয় যে গ্রেট জিম্বাবোয়ে ও টিম্বাকটুর ধ্বংসাবশেষে হয়তো একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত মানমন্দির ছিল। আগে ইউরোপীয়েরা বিশ্বাস করত প্রাক-ঔপনিবেশিক মধ্যযুগে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকায় জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের কাজ চলত না। তবে আধুনিক আবিষ্কারগুলি সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে।Stenger, Richard . CNN. 5 December 2002. Retrieved on 30 December 2011.
ছয় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে রোমান ক্যাথলিক চার্চ জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও সামাজিক সহযোগিতা প্রদান করেছিল। প্রাচীন জ্ঞানচর্চার পুনরুদ্ধারের সময় থেকে মধ্যযুগের শেষভাগে সংঘটিত বৈজ্ঞানিক পুনর্জাগরণের আগে পর্যন্ত অপর কোনো প্রতিষ্ঠান জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এতটা সহযোগিতা করতে পারেনি। চার্চের উদ্দেশ্য অবশ্য ছিল ইস্টারের তারিখটি নির্ণয় করা।J. L. Heilbron, The Sun in the Church: Cathedrals as Solar Observatories (1999) p.3
বৈজ্ঞানিক বিপ্লব
thumb|গ্যালিলিওয়ের স্কেচ এবং চাঁদের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায় যে চাঁদের পৃষ্ঠটি পর্বতময়
thumb|একটি প্রাচীন বৈজ্ঞানিক পাণ্ডুলিপি থেকে প্রাপ্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানের চার্ট, ১০০০ খ্রিস্টাব্দ
রেনেসাঁর সময় নিকোলাস কোপারনিকাস সৌর সিস্টেমের সূর্যকেন্দ্রিক মডেল প্রস্তাব করেছিলেন। গ্যালিলিও গ্যালিলি এবং জোহানেস কেপলারের দ্বারা তার কাজকে প্রসারিত এবং সংশোধন করা হয়েছিল। গ্যালিলিও তার পর্যবেক্ষণকে উন্নত করার জন্য টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছিলেন।
কেপলারই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি সূর্যকে কেন্দ্র করে অন্যান্য গ্রহগুলির গতির বিষয়টি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছিলেন । যাইহোক, কেপলার তার সূত্রগুলো দ্বারা একটি তত্ত্ব প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অবশেষে নিউটন তাঁর সেলেস্টিয়াল গতিবিদ্যা এবং মাধ্যাকর্ষণ সূত্র দ্বারা গ্রহের গতি ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলেন। নিউটন প্রতিফলক দূরবীনের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন ।
দূরবীনের আকার এবং গুণগত মানের উন্নয়নের ফলে আরো আবিষ্কার সম্ভবপর হয়েেছিল।
ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী জন ফ্লামস্টেড ৩০০০ এরও বেশি নক্ষত্রকে তালিকাভুক্ত করেছিলনও বিস্তৃত তারকা ক্যাটালগ লাকাইল দ্বারা তৈরি হয়েছিল । জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেল নেবুলাসিটি এবং ক্লাস্টারগুলির একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করেছিলেন এবং ১৭৮১ সালে তিনি ইউরেনাস গ্রহটি আবিষ্কার করেছিলেন। একটি স্টারের দূরত্ব প্রথম ১৮৩৮ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ৬১ সাইগনি এর প্যারালাক্স ফ্রেডরিক বিসেল দ্বারা পরিমাপ করা হয়েছিল।
আঠারো-উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অয়লার, ক্লায়র্ট এবং ডি'আলেমবারটের তিনটি গঠনগত সমস্যার গবেষণা চন্দ্র এবং গ্রহের গতি সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল । এই কাজটিকে লাগরানজ এবং ল্যাপলেস দ্বারা আরও পরিমার্জিত করা হয়েছিল, যার ফলে গ্রহগুলির এবং চন্দ্রের গতিবিধি তাদের প্রতিক্রিয়া থেকে অনুমান করা যায়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিটি মূলত নতুন প্রযুক্তি স্পেকট্রোস্কোপ এবং ফটোগ্রাফি প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে এসেছিল। ১৮১৪-১৫ সালে সূর্যের বর্ণালীতে ফ্রানহোফার প্রায় ৬০০ ব্যান্ড আবিষ্কার করেছিলেন, যা ১৮৫২ সালে কারশফ বিভিন্ন উপাদানগুলির উপস্থিতিতে এর নামকরণ করেছিলেন । তারা পৃথিবীর নিজস্ব সূর্যের সমতুল্য প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু বিস্তৃত তাপমাত্রা এবং আকারের ভিন্নতা আছে ।
পৃথিবীর ছায়াপথের অস্তিত্ব, নীহারিকা, নক্ষত্রগুলির একটি পৃথক দল হিসেবে "বাইরের" ছায়াপথের অস্তিত্ব বিংশ শতাব্দীতে প্রমাণিত হয়েছিল। ঐ গ্যালাক্সির নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছিল। তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বস্তুর অস্তিত্ব যেমন কালপুরুষ এবং নিউট্রন তারা, তাছাড়া পরিলক্ষিত ঘটনা ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়েছে কোয়াসারস, পালসার, ব্লাজার, এবং রেডিও ছায়াপথ । বিংশ শতাব্দীর সময় মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন, হাবলের সূত্র এবং বিগ ব্যাং এর গঠন, মহাজাগতিক প্রাচুর্য দ্বারা উপলব্ধ প্রমাণ দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থিত, যার ফলে ভৌত কসমোলজিতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়।
অবলোকন/পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদ্যা
মহাকাশগত বিষয় এবং অন্যান্য বস্তু সম্পর্কে আমাদের তথ্যের প্রধান উৎস হল দৃশ্যমান আলো আরও সাধারণভাবে বলা যায় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বর্ণালীর পরিমার্জিত অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে অবলোকন জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ভাগ করা যেতে পারে। মহাকর্ষের কিছু অংশ পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে দেখা যেতে পারে এবং অন্য অংশগুলি উচ্চতর উচ্চতা বা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণযোগ্য। এই উপ-ক্ষেত্রগুলির উপর নির্দিষ্ট তথ্য নিচে দেওয়া হল।
রেডিও জ্যোতির্বিদ্যা
রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞান দৃশ্যমান পরিসীমার বাইরে বিকিরণ ব্যবহার করে যা প্রায় এক মিলিমিটারের চেয়ে বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্য। রেডিও জ্যোতির্বিদ্যা বেশিরভাগ পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে আলাদা, যেটি পর্যবেক্ষণকৃত রেডিও তরঙ্গকে আলাদা ফোটনসের পরিবর্তে তরঙ্গ হিসেবে গণ্য করা যায়। অতএব, রেডিও তরঙ্গের দিক এবং প্রশস্ততা পরিমাপ করা তুলনামূলকভাবে সহজ, যদিও এটি ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে সহজেই করা যায় না।
যদিও কিছু রেডিও তরঙ্গ জ্যোতির্বিদ্যাগত বস্তুর দ্বারা সরাসরি নির্গত হয়, তেজস্ক্রিয় নির্গমনের একটি পণ্য, বেশিরভাগ রেডিও নিঃসরণ দেখা যায় যা হল সিঙ্ক্রোট্রন বিকিরণের ফলাফল, যখন ইলেকট্রন চুম্বক ক্ষেত্রকে অতিক্রম করে তখন এটি উৎপন্ন হয়। উপরন্তু, ২১ সেমি এ হাইড্রোজেন বর্ণালী লাইন হল আন্তঃলেখ গ্যাস দ্বারা উৎপন্ন বর্ণালী লাইনের একটি সংখ্যা যা রেডিও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে পর্যবেক্ষণযোগ্য।
বিভিন্ন ধরনের বস্তু রেডিও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে, যেমন-সুপারনোভা, আন্তঃলেখার গ্যাস, পালসার এবং সক্রিয় গ্যালাক্টিক নিউক্লিয়াস সহ পর্যবেক্ষণযোগ্য।
ইনফ্রারেড জ্যোতির্বিদ্যা
thumb|আলমা মানমন্দির পৃথিবীর সর্বোচ্চ মানমন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম। আতাকামা, চিলি।
ইনফ্রারেড জ্যোতির্বিদ্যা ইনফ্রারেড বিকিরণ শনাক্তকরণ এবং বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাছাড়া তরঙ্গদৈর্ঘ্য যা লাল আলোর চেয়ে ব্যাপক এবং আমাদের দৃষ্টি পরিসীমার বাইরে তা শনাক্ত করার জন্য এই জ্যোতির্বিদ্যা ব্যবহৃত হয় । ইনফ্রারেড বর্ণালী এমন বস্তুগুলি অধ্যয়ন করতে সহায়ক যা এত বেশি ঠাণ্ডা যে দৃশ্যমান আলো বিকিরণ করতে পারেনা, যেমন গ্রহ, পারসেসেলার ডিস্ক বা নিবোলা যার আলোটি ধূলিকণা দ্বারা আটকে যায়। ইনফ্রারেডের দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যটি ধুলোর মেঘকে ভেদ করতে পারে যা দৃশ্যমান আলোকে ব্লক করে, যার ফলে আণবিক মেঘ এবং আকাশে আচ্ছাদিত ছোট বড় ছায়াপথগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ওয়াইড-ফিল্ড ইনফ্রারেড সার্ভে এক্সপ্লোরার (ডব্লিউআইএসই) থেকে পর্যবেক্ষণগুলি অসংখ্য গ্যালাক্টিক প্রোটোস্টার এবং তাদের হোস্ট স্টার ক্লাস্টারগুলির উন্মোচন করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর। দৃশ্যমান আলোর কাছাকাছি ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যতিক্রম ছাড়া, যেমন বিকিরণ বায়ুমণ্ডল দ্বারা ব্যাপকভাবে শোষিত হয় বা মুখোশযুক্ত তাছাড়া বায়ুমণ্ডল নিজেই উল্লেখযোগ্য ইনফ্রারেড নির্গমন উৎপাদন করে। ফলস্বরূপ, ইনফ্রারেড পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে পৃথিবীর মধ্যে শুষ্ক বা উচ্চতর স্থানে বা মহাকাশে অবস্থিত হতে হবে। কিছু অণু ইনফ্রারেড এর মধ্য দিয়ে দৃঢ়ভাবে বিকিরণ ঘটে। এটি মহাকাশ গবেষণা করতে এমনকি আরও বিশেষভাবে এটি ধূমকেতুর মধ্যে জল শনাক্ত করতে পারে।
অপটিক্যাল জ্যোতির্বিদ্যা
thumb|মাউনা কেয়ার উপর সুবারু টেলিস্কোপ (বামে) এবং কেক অবজারভেটরি (মাঝে)। উভয় মানমন্দির নিকট-অবলোহিত এবং দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে। নাসা ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ ফ্যাসিলিটি (ডানদিকে) হলো একটি টেলিস্কোপের উদাহরণ যা শুধুমাত্র নিকট-অবলোহিত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে।
ঐতিহাসিকভাবে অপটিক্যাল জ্যোতির্বিজ্ঞানকে দৃশ্যমান আলো জ্যোতির্বিদ্যা নামেও অভিহিত করা হয়, এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাচীনতম রূপ। পর্যবেক্ষণের ছবিগুলো মূলত হাত দ্বারা অঙ্কিত ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতকের দিকে বেশিরভাগ সময় ছবিগুলি ফোটোগ্রাফিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। আধুনিক চিত্রগুলি ডিজিটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, বিশেষ করে চার্জ-সংযুক্ত ডিভাইস (সিসিডি) ব্যবহার করে এবং আধুনিক মিডিয়ায় রেকর্ড করা হয়। যদিও দৃশ্যমান আলো নিজেই প্রায় ৪০০০ থেকে ৭০০০ Å (৪০০ এনএম থেকে ৭০০ এনএম) পর্যন্ত বিস্তৃত, কিছু কাছাকাছি অতিবেগুনী এবং নিকটবর্তী-ইনফ্রারেড বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করার জন্য একই সরঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
অতিবেগুনী জ্যোতির্বিদ্যা
অতিবেগুনী জ্যোতির্বিদ্যা প্রায় ১০০ এবং ৩২০০ এ (১০ থেকে ৩২০ এনএম) মধ্যে অতিবেগুনী তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে কাজে লাগায়। এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দ্বারা শোষিত হয়, এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যবেক্ষণের জন্য উপরিভাগের বায়ুমণ্ডলে বা মহাকাশ প্রয়োজন। অতিবেগুনী জ্যোতির্বিজ্ঞান তরল বিকিরণ এবং বর্ণালী নির্গমনের বিষয়গুলি নীল নক্ষত্র (ওবি নক্ষত্র) থেকে গবেষণা করা যায় যার তরঙ্গ ব্যান্ড খুব উজ্জ্বল হয় । অন্যান্য ছায়াপথের নীল নক্ষত্রগুলি তার অন্তর্ভুক্ত, যা বিভিন্ন অতিবেগুনী সার্ভের লক্ষ্যমাত্রা হয়েছে। অতিবেগুনী আলোর মাধ্যমে সাধারণত যাদের দেখা যায় তাদের মধ্যে গ্রহীয় নীহারিকা, সুপারনোভা অবশিষ্টাংশ এবং সক্রিয় গ্যালাক্টিক নিউক্লিও অন্যতম। যাইহোক, অতিবেগুনি রশ্মিটি সহজেই মহাজাগতিক ধুলো দ্বারা শোষিত হয়, তাই অতিবেগুনী পরিমাপের একটি সমন্বয় প্রয়োজন।
এক্স-রে জ্যোতির্বিদ্যা
thumb|নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি থেকে প্রাপ্ত একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল থেকে তৈরি এক্স-রে জেট যা প্রারম্ভিক মহাবিশ্বের আলোতে দৃশ্যমান
এক্স-রে জ্যোতির্বিজ্ঞান এক্স-রে তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে। সাধারণত, এক্স-রে বিকিরণটি সিঙ্ক্রোট্রন নির্গমন ( ইলেকট্রনগুলির চৌম্বক ক্ষেত্রের উপর ঘূর্ণনের ফলাফল), ১০৭ (১০ মিলিয়ন) কেলভিনের উপরে পাতলা গ্যাস থেকে তাপ নির্গমন, এবং ১০৭ কেলভিনের উপরে পুরু গ্যাস থেকে তাপ নির্গমন দ্বারা উৎপন্ন হয়। যেহেতু এক্স-রেগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দ্বারা সঞ্চারিত হয়, তাই এক্স-রে পর্যবেক্ষণগুলি উচ্চ-উচ্চতার বেলুন, রকেট বা এক্স-রে জ্যোতির্বিদ্যা উপগ্রহগুলি থেকে সম্পাদিত হবে। উল্লেখযোগ্য এক্স রে উৎসগুলো হল এক্স-রে বাইনারি, পালসার, সুপারনোভার অবশিষ্টাংশ, উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সির ক্লাস্টার এবং সক্রিয় গ্যালাক্টিক নিউক্লিয়াস।
গামা-রে জ্যোতির্বিদ্যা
গামা রশ্মি জ্যোতির্বিজ্ঞান ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বর্ণালীর সংক্ষিপ্ততম তরঙ্গদৈর্ঘ্যে জ্যোতির্বিদ্যাগত বস্তুগুলি পর্যবেক্ষণ করে। গামা রশ্মিগুলি সরাসরি উপগ্রহগুলি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, যেমন কম্পটন গামা রে অবজারভেটরি বা বায়ুমণ্ডলীয় চেরেনকভ টেলিস্কোপ নামে বিশেষ দূরবীন দ্বারা। চেরেনকোভ টেলিস্কোপগুলি গামা রশ্মিকে সরাসরি শনাক্ত করতে পারে না বরং গামা রশ্মি যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দ্বারা নিঃসৃত হয় ঠিক তখনি দৃশ্যমান আলোর আলোকে শনাক্ত করতে পারে ।
সর্বাধিক গামা-রে নির্গত উৎসগুলি আসলে গামা-রে বিস্ফোরণ, বস্তু যা শুধুমাত্র গামা রশ্মি উৎপাদন করে বিকল হয়ে যাওয়ার কয়েক মিলিসেকেন্ডের এবং হাজার হাজার সেকেন্ড আগে। শুধুমাত্র ১০% গামা-রে উৎসগুলি হল অস্থায়ী উৎস। এই স্থির গামা-রে নির্গমনকারীর মধ্যে পালসার, নিউট্রন স্টার এবং ব্ল্যাক হোলের মত প্রার্থী যেমন- সক্রিয় গ্যালাক্টিক নিউক্লিয়িও অন্তর্ভুক্ত।
তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালীর উপর ভিত্তি করে নয় এমন ক্ষেত্রসমূহ
তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ ছাড়াও আরও কিছু ঘটনাগুলি পৃথিবী থেকে দেখা যায়।
নিউট্রিনো জ্যোতির্বিদ্যাতে নিউট্রিনো শনাক্তকরণের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তীব্রভাবে পরিলক্ষিত ভূগর্ভস্থ সুবিধাসমূহ যেমন এসএজিই, গাল্লেক্স এবং কামোকো ২/ ৩ ব্যবহার করে। পৃথিবীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নিউট্রিনোগুলির অধিকাংশই সূর্য থেকে উৎপন্ন হয়, তবে ২৪টি নিউট্রিনোও সুপারনোভা ১৯৮৭এ থেকে পাওয়া গিয়েছিল । মহাজাগতিক রশ্মি, যা খুব উচ্চ শক্তিসম্পন্ন কণা (পারমাণবিক নিউক্লিয়াস) দ্বারা গঠিত যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে ক্ষয় বা শোষিত হতে পারে, এর ফলে দ্বিতীয় কণাগুলির একটি ধারাপ্রবাহ হয় যা বর্তমান পর্যবেক্ষণকারীদের দ্বারা শনাক্ত করা যায়। কসমিক দণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করলে কিছু ভবিষ্যতের নিউট্রিনো ডিটেক্টরগুলিও কণার সংস্পর্শে স্পর্শকাতর হতে পারে।
মহাকর্ষীয়-তরঙ্গ জ্যোতির্বিদ্যা একটি উদীয়মান ক্ষেত্র যা মহাকর্ষীয়-তরঙ্গ ডিটেক্টরগুলি দূরবর্তী বিশাল বস্তুর সম্পর্কে পর্যবেক্ষণীয় তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করে। কিছু পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যেমন লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্ৰাভিটেশনাল অবসার্ভেটরি বা লাইগো (LIGO)। ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে লিগোর প্রথম আবিষ্কারটি বাইনারি ব্ল্যাক হোল থেকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছিল । দ্বিতীয় মহাকর্ষীয় তরঙ্গটি ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে শনাক্ত করা হয়েছিল এবং অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকা দরকার তবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলির জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল যন্ত্রের প্রয়োজন।
তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ, নিউট্রিনো বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং অন্যান্য পরিপূরক তথ্য ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণের সংমিশ্রণটি করা হয়েছে যা মাল্টি-ম্যাসেঞ্জার জ্যোতির্বিজ্ঞান নামে পরিচিত।
অ্যাস্ট্রোমেট্রি এবং মহাকাশ বলবিদ্যা
thumb|একটি নীহারিকা সহ স্টার ক্লাস্টার পিসমিস ২৪
জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাচীনতম ক্ষেত্রগুলির মধ্যে এটি একটি এবং সমস্ত বিজ্ঞানের মধ্যে স্বর্গীয় বস্তুর পরিমাপের জন্য তার প্রয়োজন হয়। ঐতিহাসিকভাবে, সূর্য, চাঁদ, গ্রহ এবং নক্ষত্রগুলির সঠিক অবস্থানের জন্য মহাকাশীয় বস্তু (মহাকাশীয় বস্তুগুলির ব্যবহার নির্দেশিকা পরিচালনা) এবং ক্যালেন্ডার তৈরির ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োজনীয়।
গ্রহের অবস্থানের সঠিক পরিমাপ মাধ্যাকর্ষণ বিষয়ক বিষয়গুলোকে ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করেছে এবং অতীত এবং ভবিষ্যতের নির্ভুল অবস্থান নির্ধারণ করার ক্ষমতা যার আছে তাকে মহাকাশ বলবিদ্যা বলা হয়। সম্প্রতি নিকটবর্তী পৃথিবীর বস্তুর ট্র্যাকিংগুলি বস্তুর সাথে ঘনিষ্ঠ সাক্ষাত বা পৃথিবীর সম্ভাব্য সংঘর্ষের পূর্বাভাস দিবে।
নিকটবর্তী নক্ষত্রপুঞ্জের ঊর্ধ্বগামী র পরিমাপ মহাবিশ্বের স্কেল পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা মহাকাশমুখী দূরত্বের একটি মৌলিক ভিত্তি প্রদান করে। নিকটবর্তী নক্ষত্রগুলির প্যারালাক্স পরিমাপ আরও দূরবর্তী নক্ষত্রগুলির বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বেস-লাইন প্রদান করে কারণ তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি তুলনা করা যায়। রাডিয়াল বেগের পরিমাপ এবং তারার সঠিক গতিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকাশগঙ্গার ছায়াপথের আন্দোলনকে সংগঠিত হতে সহায়তা করে। জ্যোতির্বিদ্যাগত ফলাফলগুলি ছায়াপথের অনুমানকৃত কৃষ্ণ বস্তুর(Dark matter) বণ্টন গণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয় ।
১৯৯০-এর দশকে মাঝামাঝি সময়ে নক্ষত্রপুঞ্জের কাছাকাছি বড় পরিমাপের ঘূর্ণনকারী গ্রহের সন্ধানের জন্য স্টেলার উবল পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিদ্যা
তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণাত্মক মডেল এবং গণনীয় সংখ্যাসূচক সিমুলেশন সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে ; প্রতিটির নিজস্ব বিশেষ সুবিধা আছে। বিশ্লেষণাত্মক মডেল হল একটি প্রক্রিয়া যা সাধারণত যা চলছে তার কেন্দ্রে বৃহত্তর অন্তর্দৃষ্টি প্রদানের জন্য ভাল। সংখ্যাসূচক মডেলগুলি ঘটনার অস্তিত্ব প্রকাশ করে এবং অপর্যবেক্ষিত প্রভাবগুলি প্রকাশ করে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে তত্ত্ববিদরা তাত্ত্বিক মডেল তৈরির চেষ্টা করেন এবং ঐ ফলাফলগুলি থেকে সেই মডেলগুলির পর্যবেক্ষণগত ফলাফলগুলির পূর্বাভাস প্রদান করে । একটি মডেল দ্বারা পূর্বাভাস দেওয়া ঘটনাটির পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ঘটনাটি বর্ণনা করতে বেশ কিছু বিকল্প বা বিবাদমূলক মডেল মধ্যে নির্বাচন করতে পারবেন যা ঘটনাকে ভালভাবে বর্ণনা করতে সক্ষম।
থিয়োরিস্টরা নতুন ডেটা গ্রহণ করার জন্য মডেল তৈরি বা সংশোধন করারও চেষ্টা করে। তথ্য এবং মডেল এর ফলাফলের অসঙ্গতির ক্ষেত্রে, সাধারণ প্রবণতা মডেলের ন্যূনতম পরিবর্তন করতে চেষ্টা করা হয় যাতে করে এটি তথ্য মাপসই ফলাফল উৎপাদন করতে পারে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ উপাত্ত সম্পূর্ণ মডেলটিকে নষ্ট করে দিতে পারে।
তাত্ত্বিক জ্যোতির্বিদদের দ্বারা পরিচালিত ঘটনার অন্তর্ভুক্ত হল: স্টেলার ডাইনামিক্স এবং বিবর্তন; ছায়াপথ গঠন; মহাবিশ্বের বৃহৎ পরিসরে বস্তুর বণ্টন; মহাজাগতিক রশ্মির উৎপত্তি; সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং শারীরিক ব্রহ্মবিদ্যা, স্ট্রিং বিশ্বতত্ত্ব এবং এ্যাস্ট্রোপার্টিকেল পদার্থবিদ্যা । মহাজাগতিক আপেক্ষিকতা একটি বৃহৎ স্কেলে স্ট্রাকচারের বৈশিষ্ট্যগুলি হিসাব করার জন্য একটি হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে, যার জন্য মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে শারীরিক ঘটনাগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ব্ল্যাক হোল (অ্যাস্ট্রো) পদার্থবিদ্যা এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গের গবেষণার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে কিছু ব্যাপকভাবে গৃহীত তত্ত্ব ও গবেষণা এবং মডেলগুলি, এখন লাম্বা-সিডিএম মডেলের মধ্যে রয়েছে বিগ ব্যাং, মহাজাগতিক মুদ্রাস্ফীতি, কৃষ্ণ বস্তু (dark matter) এবং পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক তত্ত্বসমূহ।
এই প্রক্রিয়াটির কয়েকটি উদাহরণ:
ভৌত প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলক টুল তাত্ত্বিক মডেল ব্যাখ্যা / অনুমানমহাকর্ষরেডিও টেলিস্কোপস্বয়ং-মহাকর্ষক সিস্টেমএকটি তারকা সিস্টেমের উত্থান কেন্দ্রকীয় সংযোজন বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র নাক্ষত্রিক বিবর্তন কীভাবে তারা চকমক এবং কীভাবে ধাতু গঠিত হয়বিগ ব্যাংহাবল স্পেস টেলিস্কোপ, সিওবিই মহাবিশ্ব বিস্তৃতকরণ মহাবিশ্বের বয়স কোয়ান্টাম অস্থিরতা মহাজাগতিক মুদ্রাস্ফীতি একঘেয়েমি সমস্যা মহাকর্ষীয় পতন এক্স-রে জ্যোতির্বিদ্যা সাধারণ আপেক্ষিকতা আন্ড্রোমিডা ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলে কৃষ্ণ গহ্বর সিএনও চক্র তারা মধ্যে বৃহদায়তন তারকার প্রভাবশালী শক্তি উতস।
নির্দিষ্ট উপশাখাগুলি
সৌর জ্যোতির্বিদ্যা
thumb|সূর্যের সক্রিয় ফোটোফেরার একটি অতিবেগুনী চিত্র যা ট্রেস স্পেস টেলিস্কোপ দ্বারা দেখা যায়। নাসা ছবির
thumb|১৯৬২ সালে নির্মিত সৌর পর্যবেক্ষণকারী লোমনিকি স্নাতক (স্লোভাকিয়া)
প্রায় আট আলোক মিনিটের দূরত্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অধ্যয়নরত তারাটি হল সূর্য, সাধারণ ধারার বামন তারার শ্রেণী হল জি২ ভি যা প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর (জিওয়াইআর) পুরানো। সূর্য একটি ভ্যারিয়েবল তারকা বলে বিবেচিত হয় না, তবে এটি সূর্য-স্পট চক্র হিসাবে পরিচিত কার্যকলাপের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের দ্বারা পরিচালিত হয়। সূর্য-স্পট সংখ্যাটিতে এটি ১১ বছরের দোলন সম্পন্ন। সূর্য -স্পটগুলি গড় তাপমাত্রার তুলনায় অনেক কম হয় যা তীব্র চুম্বকীয় কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
সূর্য একটি প্রধান-ধারার তারকা হয়ে উঠার পর ধীরে ধীরে তার উজ্জ্বলতা প্রায় ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে । সূর্য এমন উজ্জ্বলতার পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে যা পৃথিবীর উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, মাধ্যাকর্ষণ সর্বনিম্ন হওয়ার ফলে মধ্যযুগের সময় ছোট বরফ যুগের ঘটনাটি ঘটেছিল বলে মনে করা হয়।
সূর্যের দৃশ্যমান বাইরের পৃষ্ঠাকে ফটোস্ফিয়ার বলা হয়। এই স্তরের উপরে পাতলা একটি অঞ্চল যা ক্রোমোস্ফিয়ার নামে পরিচিত । এটি দ্রুত বর্ধনশীল তাপমাত্রার একটি সংক্রমণ অঞ্চল দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং অবশেষে এটি সুপার উত্তাপ করোনা দ্বারা বেষ্টিত।
সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি হল মূল, পারমাণবিক ফিউশনের জন্য যথেষ্ট তাপমাত্রা এবং চাপের একটি ভলিউম এখানে বিদ্যমান । কোরের উপরে হল বিকিরণ রশ্মির জোন, যেখানে শক্তি প্রবাহ প্লাজমা বিকিরণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়য় । উপরে হল পরিচলন জোন যেখানে গ্যাসের উপাদান প্রাথমিক ভাবে গ্যাসের শারীরিক স্থানচ্যুতির মাধ্যমে উত্তোলন করে যাকে বলা হয় পরিচলন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে পরিচলন জোনের মধ্যে ভরের গতির চুম্বকীয় কার্যকলাপ তৈরি করে যা সান-স্পট তৈরি করে।
প্লাজমা পার্টিকেলের একটি সৌর বায়ু ক্রমবর্ধমানভাবে বাষ্পীভূত হতে থাকে সূর্যের বাইরের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত এটি হেলিওপোজ পর্যন্ত পৌঁছায়। সৌর বায়ু পৃথিবী অতিক্রম করে এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে মিথষ্ক্রিয়া ঘটায় এবং সৌর বায়ুকে অগ্রাহ্য করে, কিন্তু ফাঁদ কিছু ভ্যান এলেন বিকিরণ বেল্ট তৈরি করে যা পৃথিবীকে ঢেকে দেয়। অরোরা তৈরি করা হয় তখন যখন সৌর বায়ু কণা চুম্বকীয় প্রবাহ লাইন দ্বারা পরিচালিত হয় পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে যেখানে লাইনগুলি বায়ুমণ্ডলে অবতরণ করে।
গ্রহজনিত বিজ্ঞান
thumb|শীর্ষে কালো স্পট একটি ধুলো শয়তান মঙ্গল উপর একটি খিলান প্রাচীর উপর আরোহণ। এই চলন্ত, মার্টিন বায়ুমণ্ডল (একটি স্থলজ টর্নেডো তুলনীয়) এর ঝুলন্ত কলাম দীর্ঘ, গাঢ় স্ট্রোক তৈরি। নাসা ইমেজ
গ্রহ বিজ্ঞান হল গ্রহ, চাঁদ, বামন গ্রহ, ধূমকেতু, গ্রহাণু, এবং সূর্যের পাশে ঘূর্ণনশীল অন্যান্য বস্তুর সমাহার এবং সেইসাথে এক্সট্রাসোলার গ্রহগুলির সমাহার নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিজ্ঞান। সোলার সিস্টেম অপেক্ষাকৃত ভালভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে টেলিস্কোপের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে মহাকাশযান দ্বারা। এগুলো কীভাবে গ্রহ গঠিত এবং বিবর্তিত হয়েছে সেই ব্যাপারে ধারণা প্রদান করেছে, যদিও অনেক নতুন আবিষ্কার এখনও করা হচ্ছে।
সৌর সিস্টেমকে ভিতরের গ্রহ, গ্রহাণু বেল্ট এবং বাইরের গ্রহগুলি নিয়ে উপবিভাগে বিভক্ত করা হয়। ভূপৃষ্ঠের পার্থিব গ্রহগুলি বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল নিয়ে গঠিত। বাইরের গ্যাসীয় বৃহৎ গ্রহগুলি হল বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন। নেপচুনের বাইরে কুইপার বেল্ট এবং অবশেষে ওর্ট ক্লাউড রয়েছে যা আলোক বর্ষ পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।
সূর্যের চারপাশে প্রোটোপ্লেনেটানারি ডিস্কের মধ্যে ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে গ্রহগুলি গঠিত হয়েছিল। মহাকর্ষীয় আকর্ষণ, সংঘর্ষ এবং সংশ্লেষণের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ডিস্কটি বস্তুর সংমিশ্রণ সৃষ্টি করে যা সময়ের সাথে সাথে প্রোটোপ্লানেট হয়ে ওঠে। সৌর বায়ুর রশ্মির চাপ তখন অসমর্থিত বস্তু ত্যাগ করে, এবং ঐ যথেষ্ট সংখ্যক গ্রহই তাদের গ্যাসীয় বায়ুমণ্ডল বজায় রেখেছিল। চাঁদের উপরিভাগে প্রভাবশালী ক্রুটার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তীব্র বোমা বর্ষণের সময় গ্রহগুলি ক্রমাগত ঝাঁকানি খায় যায় বা বের করে দেয়। এই সময়কালে কিছু প্রোটোপ্ল্যানেট সংঘর্ষের শিকার হতে পারে এবং এই ধরনের সংঘর্ষের ফলে চাঁদের সৃষ্টি হতে পারে।
একটি গ্রহ একবার যথেষ্ট ভরে পৌঁছলে গ্রহের পার্থক্যের সময় বিভিন্ন ঘনত্বের উপাদান বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়াটি একটি পাথুরে বা ধাতব কেন্দ্র গঠন করতে পারে যা একটি আচ্ছাদন এবং বাইরের স্ফীত দ্বারা ঘিরে থাকতে পারে । কোর দৃঢ় এবং তরল অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং কিছু গ্রহের কোরা তাদের নিজস্ব চৌম্বকীয় ক্ষেত্র উৎপন্ন করে, যা তাদের বায়ুমণ্ডলকে সৌর বায়ু প্রবাহ থেকে রক্ষা করতে পারে।
একটি গ্রহ বা চাঁদের অভ্যন্তরে তাপ উৎপন্ন হয় তেজস্ক্রিয় পদার্থসমূহের (যেমন ইউরেনিয়াম, তেজস্ক্রিয় ধাতু, এবং ২৬এল) মিথস্ক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট জোয়ারের তাপ দ্বারা। কিছু গ্রহ এবং চন্দ্র আগ্নেয় অগ্ন্যুৎপাত এবং টেকটনিকস এর ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া চালানোর জন্য যথেষ্ট তাপ জমা করে। যে বায়ুমণ্ডল জমা বা বজায় রাখে তাও বায়ু বা জল থেকে পৃষ্ঠ ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যেতে পারে।
নাক্ষত্রিক জ্যোতির্বিদ্যা
thumb|অ্যান্ট গ্রহের নীহারিকা। মৃত কেন্দ্রীয় তারকা থেকে গ্যাস নির্গত সাধারণ বিস্ফোরণগুলির বিশৃঙ্খল নিদর্শন বিপরীত সীমাবদ্ধ নমুনা দেখায়।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোধগম্যতার জন্য নক্ষত্র এবং বড় বড় বিবর্তনের বিষয় নিয়ে গবেষণা মৌলিক। পর্যবেক্ষণ, তাত্ত্বিক বোধগম্যতা এবং অভ্যন্তর ভাগের কম্পিউটার সিমুলেশন থেকে তারকাগুলির জ্যোতিঃপদার্থ নির্ধারণ করা হয়েছে । চন্দ্র গঠন ধুলো এবং গ্যাসের ঘন অঞ্চলে ঘটে যা দৈত্য আণবিক মেঘ হিসাবে পরিচিত। যখন অস্থিতিশীল হয়ে যায় তখন ক্লাউড টুকরা মাধ্যাকর্ষণ প্রভাবের কারণে একটি প্রোটোস্টার গঠন করতে পারে। যথেষ্ট ঘন, এবং গরম কোর অঞ্চল নিউক্লিয়ার ফিউশন বৃদ্ধি করবে, এইভাবে একটি প্রধান-ধারার তারকা তৈরি করবে।
প্রায় সব উপাদান যা হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের তুলনায় ভারী তারা নক্ষত্রগুলির কোর অঞ্চলে তৈরি হয়েছিল ।
ফলপ্রসূ উপাদানের বৈশিষ্ট্য মূলত তার ভরের শুরুর উপর নির্ভর করে। আরও বৃহৎ তারকা যার উজ্জ্বলতা আরও ব্যাপক, এবং আরও দ্রুতভাবে তার হাইড্রোজেন জ্বালানি তার হিলিয়ামের মধ্যে সঞ্চালন করে। সময়ের সাথে সাথে এই হাইড্রোজেন জ্বালানি সম্পূর্ণ হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয় এবং তারকাটি বিবর্তিত হতে শুরু করে। হিলিয়াম এর ফিউশনের জন্য উচ্চ কোর তাপমাত্রার প্রয়োজন। একটি তারকা খুব বেশি তাপমাত্রার সঙ্গে বাইরের স্তরে ধাক্কা দিবে তার ফলে এর কোরের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। হিলিয়ামের জ্বালানীটি হ্রাসপ্রাপ্ত হওয়ার আগে বাইরের স্তরের দ্বারা গঠিত লাল দৈত্যটি একটি সংক্ষিপ্ত জীবনযাত্রা উপভোগ করে। খুব বড় বড় তারা বিবর্তনীয় পর্যায়েও আসতে পারে কারণ তারা ক্রমবর্ধমান ভারী উপাদানগুলিকে ফিউজ করে।
সূর্যের চূড়ান্ত ভাগ্য তার ভরের উপর নির্ভর করে, সূর্যের মূল কোর সুপারনোভার চেয়ে আট গুন বড় হয় ; যখন ছোট তারা তাদের বাহ্যিক স্তরগুলিকে উড়িয়ে দেয় এবং একটি সাদা রঙের বামন তারার আকারে নিষ্ক্রিয় কোরের পিছনে চলে যায় । বাইরের স্তরের নিক্ষেপ একটি গ্রহের নিবোলা গঠন করে। একটি সুপারনোভার অবশিষ্টাংশ হল একটি ঘন নিউট্রন স্টার, অথবা, তারা কমপক্ষে তিন গুন বড় হতে পারে সূর্য থেকে, একে বলা কালপুরুষ। কাছাকাছি ঘূর্ণায়মান বাইনারি তারাগুলি আরও জটিল বিবর্তনীয় পথ অনুসরণ করতে পারে, যেমন একটি সাদা বামন সহচরের উপর ভর স্থানান্তর যা সম্ভাব্য একটি সুপারনোভা সৃষ্টি করতে পারে। গ্রহের নিবোলা এবং সুপারনোভা ফিউশন সংমিশ্রণে উৎপাদিত "ধাতু" বিতরণ করে; তাদের ছাড়া, সব নতুন তারা (এবং তাদের গ্রহের সিস্টেম) হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম থেকে গঠিত হবে।
গ্যালাক্টিক জ্যোতির্বিদ্যা
right|thumb|আকাশগঙ্গার সর্পিল অস্ত্র পর্যবেক্ষণ মান
আমাদের সোলার সিস্টেম আকাশগঙ্গার মধ্যে আবর্তিত হয় , এই নিষ্ক্রান্ত সর্পিল ছায়াপথটি হল স্থানীয় গ্যালাক্সি গ্রুপের একটি বিশিষ্ট সদস্য। এটা হল পারস্পরিক মহাকর্ষীয় আকর্ষণ দ্বারা একসঙ্গে বিদ্যমান একটি ঘূর্ণন ভর,গ্যাস, ধুলো, তারা এবং অন্যান্য বস্তু। যেহেতু পৃথিবী বাইরের ধূলোযুক্ত বাহুর মধ্যে অবস্থিত, তাই আকাশগঙ্গার বেশির ভাগ অংশগুলি অদৃশ্য মনে হয়।
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থলে বার-আকৃতির একটি বুজ অবস্থিত যাকে অতিবড় কালপুরুষ বলে মনে করা হয় । এটি চারটি প্রাথমিক বাহু দ্বারা আবৃত যা কেন্দ্র থেকে সর্পিল বলে মনে হয়। এটি হল সক্রিয় তারকা গঠনের একটি অঞ্চল যার রয়েছে অনেক ছোট আই তারাগুচছ। এই তারাগুচ্ছ ডিস্কটি আই ২ নক্ষত্রের একটি গোলকধাঁধার অন্ধকার দ্বারা ঘিরে রয়েছে, সেইসাথে গ্লবুলার ক্লাস্টার নামে পরিচিত নক্ষত্রগুলির অপেক্ষাকৃত ঘন ঘনত্ব লক্ষ করা যায়।
আন্ততারাগুচ্ছের লাইনের মধ্যে স্পার্স ক্ষেত্রের একটি অঞ্চল রয়েছে। অপেক্ষাকৃত ঘন অঞ্চলে আণবিক হাইড্রোজেন এবং অন্যান্য উপাদানের আণবিক মেঘগুলি তারকা-গঠন অঞ্চল তৈরি করে। এটি কম্প্যাক্ট প্রাক-সৌর কোর বা গাঢ় নীহারিকা নিয়ে শুরু হয়, যা কম্প্যাক্ট প্রোটোস্টার গঠন (যা জিন্স দৈর্ঘ্য দ্বারা নির্ধারণ করা হয়) এবং পতনে মনোনিবেশ করে ।
বৃহত্তর তারাগুলি প্রদর্শিত হলে, তারা মেঘকে গ্লুইং গ্যাস এবং প্লাজমা এইচ ২ অঞ্চলে (আয়োনাইজড পারমাণবিক হাইড্রোজেন) রূপান্তরিত করে। এই নক্ষত্রগুলির কাছ থেকে উত্তেজনাপূর্ণ বায়ু এবং সুপারনোভা বিস্ফোরণগুলি মেঘকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় এবং প্রায়ই তারা এক বা একাধিক তরুণ মুক্ত বড় ক্লাস্টারের পিছনে চলে যায়। এই ক্লাস্টারগুলি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং তারাগুলি আকাশগঙ্গার সাথে যোগ দেয়।
আকাশগঙ্গার এবং অন্যান্য ছায়াপথের বিষয়বস্তুর কিনেমেটিক অধ্যয়নে প্রমাণিত হয়েছে যে দৃশ্যমান বস্তুর চেয়ে আরও বেশি বস্তু আছে যা হিসাব করা অসম্ভব। অন্ধকার বিষয়টি হালো ভর আয়ত্তে প্রদর্শিত হয়, যদিও এই অন্ধকার বিষয়টির প্রকৃতি এখনও অনির্দিষ্ট রয়ে গেছে।
এক্সট্রাগ্যালাক্টিক জ্যোতির্বিদ্যা
thumb|এই ছবিটি বিভিন্ন নীল, লুপ-আকৃতির বস্তু দেখায় যা একই ছায়াপথের একাধিক চিত্র থাকে, ছবির মধ্যবর্তী কাছাকাছি হলুদ ছায়াপথের ক্লাস্টারের মহাকর্ষীয় লেন্স প্রভাব দ্বারা অনুচিত। লেন্স ক্লাস্টারের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র দ্বারা উৎপাদিত হয় যা আরও দূরবর্তী বস্তুর ছবিটিকে বিবর্ধন ও বিকৃত করতে আলোকে বিদীর্ণ করে।
আমাদের ছায়াপথের বাইরে বস্তুর অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করা হল জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি শাখা যা মূলত গ্যালাক্সির গঠন এবং বিবর্তন , তাদের বর্ণনা পদ্ধতি(বর্ণনা) এবং শ্রেণীবদ্ধকরণ, বৃহত্তর স্কেলে সক্রিয় ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ, ছায়াপথের গ্রুপ এবং ক্লাস্টারগুলির সাথে সম্পর্কিত। অবশেষে, মহাবিশ্বের বৃহৎ-স্তরের কাঠামোটি বোঝার জন্য এটি খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বাধিক ছায়াপথগুলি স্বতন্ত্র আকারে সংগঠিত হয় যা শ্রেণীবদ্ধকরণ স্কিমের জন্য অনুমতি দেয়। তারা সাধারণত সর্পিল, উপবৃত্তাকার এবং অনিয়মিত ছায়াপথগুলিতে বিভক্ত।
নামটি নির্দেশ করে উপবৃত্তাকার ছায়াপথের একটি ক্রস বিভাগীয় উপবৃত্তাকার আকৃতি রয়েছে। কোন প্রারম্ভিক দিকবিন্যাস ছাড়াই নক্ষত্রপুঞ্জ কক্ষপথে বরাবর পরিভ্রমণ করে। এই ছায়াপথগুলি অল্প বা কোন আন্তঃধরীয় ধূলিকণা ছাড়া, কয়েকটি তারকা গঠনকারী অঞ্চল এবং সাধারণত পুরনো তারা নিয়ে গঠিত। উপবৃত্তাকার ছায়াপথগুলিকে সাধারণত গ্যালাকটিক ক্লাস্টারের মূল অংশে পাওয়া যায় এবং তারা বৃহৎ ছায়াপথগুলির মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে থাকতে পারে।
সর্পিল ছায়াপথটি সংগঠিত হয় একটি ফ্ল্যাট, ঘূর্ণায়মান ডিস্ক, সাধারণত একটি বিশিষ্ট বুজ বা কেন্দ্রের বার নিয়ে এবং পিছনে তার বাহ্যিক উজ্জ্বল বাহু প্রদর্শন করে । বাহুগুলি হল স্টার গঠনের ধূলিমলিন অঞ্চল যার মধ্যে বিশাল নক্ষত্ররা একটি নীল রং তৈরি করে। স্পাইরাল ছায়াপথ সাধারণত হালো আকৃতির পুরনো নক্ষত্রপুঞ্জ দ্বারা ঘিরে থাকে। আকাশগঙ্গা এবং আমাদের নিকটবর্তী ছায়াপথের প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি উভয়ই সর্পিল ছায়াপথ।
অনিয়মিত ছায়াপথের চেহারা বিশৃঙ্খল হয় এবং তারা সর্পিল বা উপবৃত্তাকার হয় না। সমস্ত ছায়াপথের প্রায় এক চতুর্থাংশ অনিয়মিত, এবং ছায়াপথের অদ্ভুত আকৃতি মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে হতে পারে।
সক্রিয় ছায়াপথ হল একটি গঠন যা এর নক্ষত্র, ধূলিকণা এবং গ্যাস ব্যতীত অন্য উৎস থেকে তার শক্তির একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নির্গত করে। এটি মূলত একটি কম্প্যাক্ট অঞ্চলের দ্বারা পরিচালিত হয়, একে একটি অতি-বৃহদায়তন কালপুরুষ বলে মনে করা হয় যা ভেতরের অংশ থেকে বেরিয়ে আসা বিকিরণ নির্গত করে।
রেডিও ছায়াপথ হল একটি সক্রিয় ছায়াপথ যা স্পেকট্রামের রেডিও অংশে খুব আলোকিত হয় এবং গ্যাসের বিশাল প্লাম বা লোবগুলি নির্গত করে। সক্রিয় ছায়াপথ ক্ষুদ্র ফ্রিকোয়েন্সি নির্গত করে এবং উচ্চ শক্তি বিকিরণ করে তাদের মধ্যে সেইফার্ট ছায়াপথ, কোয়াসার্স, এবং ব্লাজার অন্যতম । কোয়াসার্সগুলিকে জ্ঞাত মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুদৃঢ় আলোকিত বস্তু বলে মনে করা হয়।
দৈহিক/ভৌত সৃষ্টিতত্ত্ব
সৃষ্টিতত্ত্ব(ইংরেজি ভাষায় Cosmology) (গ্রিক κόσμος (কোসোমস) থেকে "বিশ্ব, মহাবিশ্ব" এবং λόγος (লোগো) "শব্দ, অধ্যয়ন" বা আক্ষরিক অর্থে "যুক্তিবিজ্ঞান") মহাবিশ্ব বিশ্লেষণ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
মহাবিশ্বের বৃহৎ-স্কেল কাঠামো পর্যবেক্ষণ করে যা দৈহিক সৃষ্টিতত্ত্ব হিসাবে পরিচিত, এটি মহাজাগতিক গঠনের এবং বিবর্তনের একটি গভীর উপলব্ধি প্রদান করেছে। আধুনিক কসমোলজির মূল ভিত্তি হল বিগ ব্যাং তত্ত্ব যা খুব ভালোভাবে স্বীকৃত , যেখানে আমাদের মহাবিশ্ব এক সময়ে এক বিন্দু থেকে শুরু হয়েছিল এবং তারপরে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর ধরে প্রসারিত হয়ে এর বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে । ১৯৬৫ সালে মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন আবিষ্কারের পরে বিগ ব্যাং এর ধারণাটি খুঁজে পাওয়া যায়।
এই সম্প্রসারণের সময় মহাবিশ্বকে বিভিন্ন বিবর্তনমূলক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। খুব প্রারম্ভিক মুহূর্তে এটি তাত্ত্বিকভাবে মেনে নেয়া হয় যে মহাবিশ্ব খুব দ্রুত মহাজাগতিক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছিল, যা শুরু হওয়া অবস্থার সমন্বয় সাধন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। তারপরে, নিউক্লিওসিনথেসিস প্রথম বিশ্বজগতের মৌলিক প্রাচুর্য উৎপন্ন করেছিল।
প্রথম নিরপেক্ষ পরমাণু আদিম আয়নগুলির সমুদ্র থেকে গঠিত হয়েছিল, তখন মহাশূন্য বিকিরণের জন্য স্বচ্ছ হয়ে গিয়েছিল, যাকে আজকাল মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ হিসাবে দেখা হয়। ক্রমবর্ধমান ইউনিভার্স তারপর অত্যাবশ্যক সোর শক্তির উৎস অভাবের কারণে একটি অন্ধকার যুগের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।
বস্তুর একটি হায়ারারকিকাল গঠন শুরু হয়েছিল মহাশূন্যের গণ ঘনত্বের মিনিট বৈচিত্র্য থেকে। ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বস্তু জমা হয়েছিল , গ্যাসের মেঘ তৈরি হচ্ছিল এবং নিকটতম নক্ষত্রগুলি যা তৃতীয় নক্ষত্রমণ্ডলি হিসাবে পরিচিত । এই বৃহৎ নক্ষত্রগুলি পুনরাবৃত্তি প্রক্রিয়ার সূত্রপাত করে এবং প্রাথমিক মহাবিশ্ব অনেকগুলি ভারী উপাদানের সৃষ্টি করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়, যা পারমাণবিক ক্ষয় দ্বারা হালকা উপাদান তৈরি করে এবং নিউক্লিওসিনথেসিসের চক্রকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পথ তৈরি করে দেয়।
মহাকর্ষীয় সমষ্টিগুলিকে ফিলামেন্টে ক্লাস্টার করে যার মধ্যে একটি ফাঁক রেখে দেয় । ধীরে ধীরে গ্যাস এবং ধূলিকণা সংস্থাগুলির মধ্যে প্রথম আদিম ছায়াপথ গঠন করা হয়। সময়ের সাথে সাথে এইগুলি আরও বেশি বস্তুকে টানে এবং প্রায়ই গ্যালাক্সির গোষ্ঠী এবং ক্লাস্টারগুলিতে সংগঠিত হয়েছিল, তারপর বৃহত্তর স্কেলে সুপারক্লাস্টারগুলিতে রূপান্তরিত হয়েছিল ।
মহাবিশ্বের মৌলিক কাঠামো মূলত অন্ধকার বিষয় এবং অন্ধকার শক্তির অস্তিত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে । এই মহাবিশ্বের ৯৬% ভর প্রভাবশালী উপাদান দ্বারা গঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই কারণে এই উপাদানগুলির সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য বুঝতে অনেক প্রচেষ্টা ব্যয় করা হচ্ছে।
আন্তঃশিক্ষামূলক অধ্যয়ন
জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিঃপদার্থ অন্যান্য প্রধান বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রগুলির সাথে উল্লেখযোগ্য আন্তঃশিক্ষার সংযোগ তৈরি করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞান হল প্রাচীন বা ঐতিহ্যগত জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যয়ন যা তাদের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ ব্যবহার করে। জ্যোতির্জীববিজ্ঞান হল ইউনিভার্সের জৈবিক পদ্ধতির আবির্ভাব এবং বিবর্তন নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা যা অস্থায়ী জীবনযাপনের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিশেষ জোর দিয়ে। জ্যোতিঃপরিসংখ্যান হল জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার পরিসংখ্যানগত প্রয়োগ যা পর্যবেক্ষণ মহাকাশবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিশাল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে ।
মহাশূন্যে প্রাপ্ত রাসায়নিক উপাদান তাদের গঠন, মিথস্ক্রিয়া এবং ধ্বংস সহ যে বিষয়ে গবেষণা করা হয় তাকে জ্যোতিঃরসায়ন বলা হয়। এই পদার্থগুলো সাধারণত আণবিক মেঘে পাওয়া যায়, যদিও তারা কম তাপমাত্রার নক্ষত্র, বাদামী ড্যাফোর্ড এবং গ্রহগুলিতেও পাওয়া যেতে পারে। কসমোকেমিস্ট্রি হল সৌরজগতের মধ্যে পাওয়া রাসায়নিকের অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা যার মধ্যে রয়েছে উপাদানের উৎস এবং আইসোটোপ অনুপাতের বৈচিত্র্য। এই ক্ষেত্রগুলি উভয় জ্যোতির্বিদ্যা এবং রসায়ন বিষয়গুলির একটি ওভারল্যাপ হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করে। "ফরেনসিক জ্যোতির্বিজ্ঞান" পরিশেষে, জ্যোতির্বিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলি আইন ও ইতিহাসের সমস্যার সমাধান করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিসর
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের যুগোপযোগী চর্চার ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিসর বিংশ শতাব্দীতে ব্যাপক প্রসারিত হয়েছে। মূলত বিংশ শতাব্দীকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের সূচনা, বিকাশ এবং পরিপক্বতার যুগ বলে অভিহিত করা চলে। তার উপর পারমাণবিক বিক্রিয়ার মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে বিভিন্ন নক্ষত্রের অভ্যন্তরে কীভাবে শক্তি উৎপন্ন হচ্ছে তার স্বরূপ বোঝা গেছে। এর অব্যবহিত ফল হিসেবেই মহাবিশ্বের শক্তির উৎস সম্বন্ধে বিস্তারিত গবেষণা করা সম্ভব হয়েছে এবং জন্ম হয়েছে বিশ্বতত্ত্বের (Cosmology)। বিশ্বতত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং বিবর্তন। এ সব কিছুর ফলেই আমরা আজ জানি যে, পৃথিবীতে প্রাপ্ত পরমাণুগুলো মহাবিশ্বের বিবর্তনের এমন একটি সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল যখন ধূলিমেঘ ছাড়া আর কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। আর সেই ধূলিমেঘের মধ্যে প্রথমে কেবল হাইড্রোজেনেরই অস্তিত্ব ছিল। এভাবেই এই বিজ্ঞান অনেকদূর এগিয়ে গেছে যা একই সাথে মানুষকে এগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে; কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের মাধ্যমেই সবচেয়ে সফল ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব।
তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সর্বপ্রধান সীমাবদ্ধতা বা অন্য যাই বলা হোক না কেন তা হল এটি এখনও একটি খাঁটি পর্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞান। অনেক দূরবর্তী বস্তুসমূহ নিয়ে গবেষণা করতে হয় বিধায় এতে পরীক্ষণের সুযোগ খুবই সীমিত। তাছাড়া যে বস্তুসমূহ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয় সেগুলোর তাপমাত্রা, চাপ বা রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে কোনও তথ্যকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ থাকা সম্ভব নয়। তবে বর্তমান যুগে এই বিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরীক্ষণ চালনা সম্ভব হয়েছে; যেমন: ভূপৃষ্ঠে পতিত উল্কাপিণ্ড, পাথর বা চাঁদ থেকে নিয়ে আসা মাটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা সম্ভব হয়েছে। এর সাথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে প্রাপ্ত ধূলিকণা নিয়ে গবেষণাও এর অন্তর্ভুক্ত। এভাবে জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ ক্ষেত্রেও প্রসিদ্ধি লাভ করছে। ভবিষ্যতে হয়তোবা ধূমকেতুর ধূলিকণা বা মঙ্গল গ্রহের মাটি নিয়ে মহাশূন্যযানে বসেই গবেষণা করা যাবে। তবে এসব গবেষণার বেশির ভাগই পৃথিবীকেন্দ্রিক। পর্যবেক্ষণকাজে বিজ্ঞানের অন্য শাখাসমূহের সাহায্য এখানে মুখ্য। সহযোগী শাখাসমূহের মধ্যে আছে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, অণুজীববিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব ইত্যাদি।
আরও দেখুন
তালিকা
জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিবন্ধসমূহের তালিকা
:Category:প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান
:Category:জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক মানমন্দির
:Category:জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থা
:Category:জ্যোতির্বিজ্ঞানের কালপঞ্জি
প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ
জ্যোতিষ শাস্ত্র
জ্যোতির্বিজ্ঞানী
বিশ্বতত্ত্ব
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বর্ষ
মহাশূন্য অভিযান
মহাশূন্য বিজ্ঞান
তথ্যসূত্র
টীকা
Unsöld, Albrecht; Baschek, Bodo (2001). Classical Astronomy and the Solar System - Introduction. p. 1.
Jump up ^ Unsöld, Albrecht; Baschek, Bodo (2001). Classical Astronomy and the Solar System. pp. 6–9.
Jump up ^ https://web.archive.org/web/20030602155203/http://www.sydneyobservatory.com.au/ Official Web Site of the Sydney Observatory
Jump up ^ http://oaq.epn.edu.ec/ Official Web Site of one of the oldest Observatories in South America, the Quito Astronomical Observatory
Jump up ^ Losev A., (2012), 'Astronomy' or 'astrology': a brief history of an apparent confusion, Journal of Astronomical History and Heritage, Vol. 15, No. 1, p. 42-46 .
Jump up ^ Unsöld, Albrecht; Baschek, Bodo (2001). The New Cosmos: An Introduction to Astronomy and Astrophysics. Translated by Brewer, W.D. Berlin, New York: Springer. .
^ Jump up to: a b Scharringhausen, B. "Curious About Astronomy: What is the difference between astronomy and astrophysics?". Archived from the original on 9 June 2007. Retrieved 17 November 2016.
^ Jump up to: a b Odenwald, Sten. "Archive of Astronomy Questions and Answers: What is the difference between astronomy and astrophysics?". astronomycafe.net. The Astronomy Cafe. Archived from the original on 8 July 2007. Retrieved 20 June 2007.
^ Jump up to: a b "Penn State Erie-School of Science-Astronomy and Astrophysics". Archived from the original on 1 November 2007. Retrieved 20 June 2007.
Jump up ^ "Merriam-Webster Online". Results for "astronomy". Archived from the original on 17 June 2007. Retrieved 20 June 2007.
Jump up ^ "Merriam-Webster Online". Results for "astrophysics". Retrieved 20 June 2007.
^ Jump up to: a b c Shu, F. H. (1983). The Physical Universe. Mill Valley, California: University Science Books. .
Jump up ^ Forbes, 1909
Jump up ^ DeWitt, Richard (2010). "The Ptolemaic System". Worldviews: An Introduction to the History and Philosophy of Science. Chichester, England: Wiley. p. 113. .
Jump up ^ Aaboe, A. (1974). "Scientific Astronomy in Antiquity". Philosophical Transactions of the Royal Society. 276 (1257): 21–42. Bibcode:1974RSPTA.276...21A. JSTOR 74272. doi:10.1098/rsta.1974.0007.
Jump up ^ "Eclipses and the Saros". NASA. Archived from the original on 30 October 2007. Retrieved 28 October 2007.
Jump up ^ Krafft, Fritz (2009). "Astronomy". In Cancik, Hubert; Schneider, Helmuth. Brill's New Pauly.
Jump up ^ Berrgren, J.L.; Nathan Sidoli (May 2007). "Aristarchus's On the Sizes and Distances of the Sun and the Moon: Greek and Arabic Texts". Archive for History of Exact Sciences. 61 (3): 213–254. doi:10.1007/s00407-006-0118-4.
Jump up ^ "Hipparchus of Rhodes". School of Mathematics and Statistics, University of St Andrews, Scotland. Archived from the original on 23 October 2007. Retrieved 28 October 2007.
Jump up ^ Thurston, H., Early Astronomy. Springer, 1996. p. 2
Jump up ^ Marchant, Jo (2006). "In search of lost time". Nature. 444 (7119): 534–8. Bibcode:2006Natur.444..534M. PMID 17136067. doi:10.1038/444534a.
Jump up ^ Kennedy, Edward S. (1962). "Review: The Observatory in Islam and Its Place in the General History of the Observatory by Aydin Sayili". Isis. 53 (2): 237–239. doi:10.1086/349558.
Jump up ^ Micheau, Francoise. Rashed, Roshdi; Morelon, Régis, eds. "The Scientific Institutions in the Medieval Near East". Encyclopedia of the History of Arabic Science. 3: 992–3.
Jump up ^ Nas, Peter J (1993). Urban Symbolism. Brill Academic Publishers. p. 350. .
Jump up ^ Kepple, George Robert; Glen W. Sanner (1998). The Night Sky Observer's Guide. 1. Willmann-Bell, Inc. p. 18. .
^ Jump up to: a b Berry, Arthur (1961). A Short History of Astronomy From Earliest Times Through the 19th Century. New York: Dover Publications, Inc. .
Jump up ^ Hoskin, Michael, ed. (1999). The Cambridge Concise History of Astronomy. Cambridge University Press. .
Jump up ^ McKissack, Pat; McKissack, Frederick (1995). The royal kingdoms of Ghana, Mali, and Songhay: life in medieval Africa. H. Holt. .
Jump up ^ Clark, Stuart; Carrington, Damian (2002). "Eclipse brings claim of medieval African observatory". New Scientist. Retrieved 3 February 2010.
Jump up ^ "Cosmic Africa explores Africa's astronomy". Science in Africa. Archived from the original on 3 December 2003. Retrieved 3 February 2002.
Jump up ^ Holbrook, Jarita C.; Medupe, R. Thebe; Urama, Johnson O. (2008). African Cultural Astronomy. Springer. .
Jump up ^ "Africans studied astronomy in medieval times". The Royal Society. 30 January 2006. Archived from the original on 9 June 2008. Retrieved 3 February 2010.
Jump up ^ Stenger, Richard "Star sheds light on African 'Stonehenge'". CNN. 5 December 2002. Archived from the original on 12 May 2011.. CNN. 5 December 2002. Retrieved on 30 December 2011.
Jump up ^ J. L. Heilbron, The Sun in the Church: Cathedrals as Solar Observatories (1999) p. 3
^ Jump up to: a b Forbes, 1909, pp. 58–64
Jump up ^ Forbes, 1909, pp. 49–58
Jump up ^ Chambers, Robert (1864) Chambers Book of Days
Jump up ^ Forbes, 1909, pp. 79–81
Jump up ^ Forbes, 1909, pp. 147–150
Jump up ^ Forbes, 1909, pp. 74–76
Jump up ^ Belkora, Leila (2003). Minding the heavens: the story of our discovery of the Milky Way. CRC Press. pp. 1–14. .
Jump up ^ "Electromagnetic Spectrum". NASA. Archived from the original on 5 September 2006. Retrieved 17 November 2016.
^ Jump up to: a b c d e f g h i j k l m n Cox, A. N., ed. (2000). Allen's Astrophysical Quantities. New York: Springer-Verlag. p. 124. .
Jump up ^ "In Search of Space". Picture of the Week. European Southern Observatory. Retrieved 5 August 2014.
Jump up ^ "Wide-field Infrared Survey Explorer Mission". NASAUniversity of California, Berkeley. 30 September 2014. Retrieved 17 November 2016.
Jump up ^ Majaess, D. (2013). Discovering protostars and their host clusters via WISE, ApSS, 344, 1 (VizieR catalog)
Jump up ^ Staff (11 September 2003). "Why infrared astronomy is a hot topic". ESA. Retrieved 11 August 2008.
Jump up ^ "Infrared Spectroscopy – An Overview". NASA California Institute of Technology. Retrieved 11 August 2008.
^ Jump up to: a b Moore, P. (1997). Philip's Atlas of the Universe. Great Britain: George Philis Limited. .
Jump up ^ Penston, Margaret J. (14 August 2002). "The electromagnetic spectrum". Particle Physics and Astronomy Research Council. Archived from the original on 8 September 2012. Retrieved 17 November 2016.
Jump up ^ Gaisser, Thomas K. (1990). Cosmic Rays and Particle Physics. Cambridge University Press. pp. 1–2. .
Jump up ^ Abbott, Benjamin P.; et al. (LIGO Scientific Collaboration and Virgo Collaboration) (2016). "Observation of Gravitational Waves from a Binary Black Hole Merger". Phys. Rev. Lett. 116 (6): 061102. Bibcode:2016PhRvL.116f1102A. PMID 26918975. arXiv:1602.03837 Freely accessible. doi:10.1103/PhysRevLett.116.061102.
Jump up ^ Tammann, G.A.; Thielemann, F.K.; Trautmann, D. (2003). "Opening new windows in observing the Universe". Europhysics News. Archived from the original on 6 September 2012. Retrieved 17 November 2016.
Jump up ^ LIGO Scientific Collaboration and Virgo Collaboration; Abbott, B. P.; Abbott, R.; Abbott, T. D.; Abernathy, M. R.; Acernese, F.; Ackley, K.; Adams, C.; Adams, T. (2016-06-15). "GW151226: Observation of Gravitational Waves from a 22-Solar-Mass Binary Black Hole Coalescence". Physical Review Letters. 116 (24): 241103. PMID 27367379. doi:10.1103/PhysRevLett.116.241103.
Jump up ^ "Planning for a bright tomorrow: Prospects for gravitational-wave astronomy with Advanced LIGO and Advanced Virgo". LIGO Scientific Collaboration. Retrieved 31 December 2015.
Jump up ^ Xing, Zhizhong; Zhou, Shun (2011). Neutrinos in Particle Physics, Astronomy and Cosmology. Springer. p. 313. . Extract of page 313
Jump up ^ Calvert, James B. (28 March 2003). "Celestial Mechanics". University of Denver. Archived from the original on 7 September 2006. Retrieved 21 August 2006.
Jump up ^ "Hall of Precision Astrometry". University of Virginia Department of Astronomy. Archived from the original on 26 August 2006. Retrieved 17 November 2016.
Jump up ^ Wolszczan, A.; Frail, D. A. (1992). "A planetary system around the millisecond pulsar PSR1257+12". Nature. 355 (6356): 145–147. Bibcode:1992Natur.355..145W. doi:10.1038/355145a0.
Jump up ^ Roth, H. (1932). "A Slowly Contracting or Expanding Fluid Sphere and its Stability". Physical Review. 39 (3): 525–529. Bibcode:1932PhRv...39..525R. doi:10.1103/PhysRev.39.525.
Jump up ^ Eddington, A.S. (1926). Internal Constitution of the Stars. Cambridge University Press. .
Jump up ^ "Dark matter". NASA. 2010. Archived from the original on 30 October 2009. Retrieved 2 November 2009. third paragraph, "There is currently much ongoing research by scientists attempting to discover exactly what this dark matter is"
^ Jump up to: a b Johansson, Sverker (27 July 2003). "The Solar FAQ". Talk.Origins Archive. Archived from the original on 7 September 2006. Retrieved 11 August 2006.
Jump up ^ Lerner, K. Lee; Lerner, Brenda Wilmoth (2006). "Environmental issues : essential primary sources". Thomson Gale. Archived from the original on 10 July 2012. Retrieved 17 November 2016.
Jump up ^ Pogge, Richard W. (1997). "The Once & Future Sun". New Vistas in Astronomy. Archived from the original (lecture notes) on 27 May 2005. Retrieved 3 February 2010.
Jump up ^ Stern, D. P.; Peredo, M. (28 September 2004). "The Exploration of the Earth's Magnetosphere". NASA. Archived from the original on 24 August 2006. Retrieved 22 August 2006.
Jump up ^ Bell III, J. F.; Campbell, B. A.; Robinson, M. S. (2004). Remote Sensing for the Earth Sciences: Manual of Remote Sensing (3rd ed.). John Wiley & Sons. Archived from the original on 11 August 2006. Retrieved 17 November 2016.
Jump up ^ Grayzeck, E.; Williams, D. R. (11 May 2006). "Lunar and Planetary Science". NASA. Archived from the original on 20 August 2006. Retrieved 21 August 2006.
Jump up ^ Montmerle, Thierry; Augereau, Jean-Charles; Chaussidon, Marc; et al. (2006). "Solar System Formation and Early Evolution: the First 100 Million Years". Earth, Moon, and Planets. Springer. 98 (1–4): 39–95. Bibcode:2006EM&P...98...39M. doi:10.1007/s11038-006-9087-5.
Jump up ^ Montmerle, 2006, pp. 87–90
Jump up ^ Beatty, J.K.; Petersen, C.C.; Chaikin, A., eds. (1999). The New Solar System. Cambridge press. p. 70edition = 4th. .
^ Jump up to: a b Harpaz, 1994, pp. 7–18
^ Jump up to: a b Smith, Michael David (2004). "Cloud formation, Evolution and Destruction". The Origin of Stars. Imperial College Press. pp. 53–86. .
Jump up ^ Harpaz, 1994
Jump up ^ Harpaz, 1994, pp. 173–178
Jump up ^ Harpaz, 1994, pp. 111–118
Jump up ^ Audouze, Jean; Israel, Guy, eds. (1994). The Cambridge Atlas of Astronomy (3rd ed.). Cambridge University Press. .
Jump up ^ Harpaz, 1994, pp. 189–210
Jump up ^ Harpaz, 1994, pp. 245–256
Jump up ^ Ott, Thomas (24 August 2006). "The Galactic Centre". Max-Planck-Institut für extraterrestrische Physik. Archived from the original on 4 September 2006. Retrieved 17 November 2016.
Jump up ^ Smith, Michael David (2004). "Massive stars". The Origin of Stars. Imperial College Press. pp. 185–199. .
Jump up ^ Van den Bergh, Sidney (1999). "The Early History of Dark Matter". Publications of the Astronomical Society of the Pacific. 111 (760): 657–660. Bibcode:1999PASP..111..657V. arXiv:astro-ph/9904251 Freely accessible. doi:10.1086/316369.
Jump up ^ Keel, Bill (1 August 2006). "Galaxy Classification". University of Alabama. Archived from the original on 1 September 2006. Retrieved 8 September 2006.
Jump up ^ "Active Galaxies and Quasars". NASA. Archived from the original on 31 August 2006. Retrieved 17 November 2016.
Jump up ^ Zeilik, Michael (2002). Astronomy: The Evolving Universe (8th ed.). Wiley. .
Jump up ^ "Cosmic Detectives". The European Space Agency (ESA). 2013-04-02. Retrieved 2013-04-15.
^ Jump up to: a b c Dodelson, Scott (2003). Modern cosmology. Academic Press. pp. 1–22. .
Jump up ^ Hinshaw, Gary (13 July 2006). "Cosmology 101: The Study of the Universe". NASA WMAP. Archived from the original on 13 August 2006. Retrieved 10 August 2006.
Jump up ^ Dodelson, 2003, pp. 216–261
Jump up ^ "Galaxy Clusters and Large-Scale Structure". University of Cambridge. Archived from the original on 10 October 2006. Retrieved 8 September 2006.
Jump up ^ Preuss, Paul. "Dark Energy Fills the Cosmos". U.S. Department of Energy, Berkeley Lab. Archived from the original on 11 August 2006. Retrieved 8 September 2006.
Jump up ^ Mims III, Forrest M. (1999). "Amateur Science—Strong Tradition, Bright Future". Science. 284 (5411): 55–56. Bibcode:1999Sci...284...55M. doi:10.1126/science.284.5411.55. Astronomy has traditionally been among the most fertile fields for serious amateurs [...]
Jump up ^ "The American Meteor Society". Archived from the original on 22 August 2006. Retrieved 24 August 2006.
Jump up ^ Lodriguss, Jerry. "Catching the Light: Astrophotography". Archived from the original on 1 September 2006. Retrieved 24 August 2006.
Jump up ^ Ghigo, F. (7 February 2006). "Karl Jansky and the Discovery of Cosmic Radio Waves". National Radio Astronomy Observatory. Archived from the original on 31 August 2006. Retrieved 24 August 2006.
Jump up ^ "Cambridge Amateur Radio Astronomers". Retrieved 24 August 2006.
Jump up ^ "The International Occultation Timing Association". Archived from the original on 21 August 2006. Retrieved 24 August 2006.
Jump up ^ "Edgar Wilson Award". IAU Central Bureau for Astronomical Telegrams. Archived from the original on 24 October 2010. Retrieved 24 October 2010.
Jump up ^ "American Association of Variable Star Observers". AAVSO. Archived from the original on 2 February 2010. Retrieved 3 February 2010.
Jump up ^ Kroupa, Pavel (2002). "The Initial Mass Function of Stars: Evidence for Uniformity in Variable Systems". Science. 295 (5552): 82–91. Bibcode:2002Sci...295...82K. PMID 11778039. arXiv:astro-ph/0201098 Freely accessible. doi:10.1126/science.1067524.
Jump up ^ "Rare Earth: Complex Life Elsewhere in the Universe?". Astrobiology Magazine. Archived from the original on 28 June 2011. Retrieved 12 August 2006.
Jump up ^ Sagan, Carl. "The Quest for Extraterrestrial Intelligence". Cosmic Search Magazine. Archived from the original on 18 August 2006. Retrieved 12 August 2006.
Jump up ^ "11 Physics Questions for the New Century". Pacific Northwest National Laboratory. Archived from the original on 3 February 2006. Retrieved 12 August 2006.
Jump up ^ Hinshaw, Gary (15 December 2005). "What is the Ultimate Fate of the Universe?". NASA WMAP. Archived from the original on 29 May 2007. Retrieved 28 May 2007.
Jump up ^ "FAQ - How did galaxies form?". NASA. Retrieved July 28, 2015.
Jump up ^ "Supermassive Black Hole". Swinburne University. Retrieved July 28, 2015.
Jump up ^ Hillas, A. M. (September 1984). "The Origin of Ultra-High-Energy Cosmic Rays". Annual Review of Astronomy and Astrophysics. 22: 425–444. doi:10.1146/annurev.aa.22.090184.002233. This poses a challenge to these models, because [...]
Jump up ^ Howk, J. Christopher; Lehner, Nicolas; Fields, Brian D.; Mathews, Grant J. (6 September 2012). "Observation of interstellar lithium in the low-metallicity Small Magellanic Cloud". Nature. 489 (7414): 121–123. ISSN 0028-0836. PMID 22955622. doi:10.1038/nature11407.
Jump up ^ Orwig, Jessica (15 December 2014). "What Happens When You Enter A Black Hole?". Business Insider International. Retrieved 17 November 2016.
বহিঃসংযোগ
International Year of Astronomy 2009 IYA2009 Main website
Cosmic Journey: A History of Scientific Cosmology from the American Institute of Physics
Astronomy Picture of the Day
Sky & Telescope publishers
Southern Hemisphere Astronomy
Astronomy Magazine
cartomanzia University of Milan research
Search Engine for Astronomy
Universe Today for astronomy and space-related news
Hubblesite.org - home of NASA's Hubble Space Telescope
The New Student's Reference Work/Astronomy
বিষয়শ্রেণী:জ্যোতির্বিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
জীববিদ্যা | https://bn.wikipedia.org/wiki/জীববিদ্যা | redirect জীববিজ্ঞান |
রসায়ন | https://bn.wikipedia.org/wiki/রসায়ন | thumb|right|ফ্লাস্কে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান
thumb|right|রসায়ন পদার্থের নিজেদের মধ্যে এবং শক্তির সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে।
alt=sulphur.|থাম্ব|সালফার যার অপর নাম গন্ধক
রসায়ন পদার্থের উপাদান, কাঠামো, ধর্ম ও পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞান।Chemistry. (n.d.). Merriam-Webster's Medical Dictionary. Retrieved August 19, 2007. রসায়নবিদেরা মনে করেন বিশ্বের যাবতীয় বস্তু পরমাণু দিয়ে গঠিত। দুই বা ততোধিক পরমাণু রাসায়নিক বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ হয়ে অণুর সৃষ্টি করে। এক বা একাধিক ইলেকট্রন পরমাণু বা অণু থেকে সরিয়ে নিলে বা যোগ করলে আধানযুক্ত কণা তথা আয়ন সৃষ্টি হয়। ধনাত্মক আয়ন ও ঋণাত্মক আয়নের সংযোগে সৃষ্টি হয় আধান-নিরপেক্ষ লবণ (মূলত এটি ক্লোরিন বা সালফেটের যৌগ)। রসায়নবিদেরা আণবিক ও পারমাণবিক স্তরে পদার্থ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান দিয়ে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ একে অপরের সাথে ক্রিয়া করে এবং এগুলি কীভাবে বিভিন্ন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়, তা ব্যাখ্যা করতে পারেন। রসায়নবিদেরা পদার্থের পরিবর্তন সাধন করতে পারেন ও নতুন নতুন যৌগ সৃষ্টি করতে পারেন যাদের মধ্যে আছে ঔষধ, বিস্ফোরক, প্রসাধনী ও খাদ্য। রাসায়নিক সংশ্লেষণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন শিল্পে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।
পদার্থের প্রকারভেদ কিংবা গবেষণার সাদৃশ্য বিবেচনা করে রসায়নের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রসায়নের প্রধান শাখাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অজৈব রসায়ন অর্থাৎ রসায়নের যে শাখায় অজৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, জৈব রসায়ন বা যে শাখায় জৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, প্রাণরসায়ন, রসায়নের যে শাখায় জীবদেহের রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়, ভৌত রসায়ন, এই শাখায় আণবিক পর্যায়ে শক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত রাসায়নিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়, বিশ্লেষণী রসায়ন, এক্ষেত্রে পদার্থের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের গঠন, সংযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাম্প্রতিক কালে রসায়নের আরও অনেক নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে, যেমন- স্নায়ু রসায়ন। স্নায়ুতন্ত্রের রাসায়নিক গঠন নিয়ে এই শাখায় আলোচনা করা হয়।Weekley, Ernest (1967). Etymological Dictionary of Modern English. New York: Dover Publications.
তত্ত্ব
ল্যাবরেটরি, ইন্সটিটিউট অফ বায়োকেমিস্ট্রি, ইউনিভার্সিটি অফ কনজ এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী রসায়ন চর্চা শুরু হয়। এখানে মৌলিক উপাদান, পরমাণু, পদার্থ, গলন, ক্রিস্টাল ও পদার্থ একত্র করা, কঠিন পদার্থ, তরল, বায়বীয় পদার্থ, যৌগ তৈরির নীতি, কথাবার্তা, বিক্রিয়া এবং রূপান্তর ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা হয়।
ইতিহাস
রসায়নের ইতিহাস একটি অনেক বড় বিষয়।এটি প্রাচীন ও প্রধান বিজ্ঞানগুলোর অন্যতম। বলা চলে আগুন আবিষ্কারের পর থেকেই মানব সভ্যতার হাত ধরে এগিয়ে চলেছে রসায়ন। ভারতবর্ষে প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বেই কাপড়কে আকর্ষণীয় করে তুলতে রঙের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। রসায়ন '''চর্চায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অবদান অনেক। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রসায়ন চর্চা আল-কেমি (Alchemy) নামে পরিচিত। আল-কেমি আরবি আল-কিমিয়া থেকে উদ্ভূত, যা দিয়ে মিশরীয় সভ্যতাকে বুঝানো হতো। জাবির ইবন হাইয়ানকে রসায়ন শাস্ত্রের ও লাভোয়াজিয়েকেকে আধুনিক রসায়ন শাস্ত্রের জনক বলা হয়ে থাকে। মধ্যযুগে ধাতুকে সোনায় পরিণত করতে পারার পদ্ধতি আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় শুরু হয় আলকেমি বিদ্যা, যা লাভোয়াজিয়ে, মেন্ডেলিফদের হাতে পূর্ণতা লাভ করেছে।
রসায়ন শব্দের উৎপত্তি
রসায়ন শব্দের ইংরেজি Chemistry (কেমিস্ট্রি)। মধ্যযুগে পরশ পাথরের সন্ধানে পরীক্ষারত মুসলিম বিজ্ঞানীরা একটি শাস্ত্র বা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটাকে তারা বলতেন আলকামিস্তা বা আলকেমি। আলকেমি এসেছে আরবী শব্দ আল-কিমিয়া থেকে। আল-কিমিয়া শব্দটি এসেছে 'কিমি' থেকে। কিমি থেকেই chemistry শব্দের উৎপত্তি। আলকেমি আল অর্থ দি(The), এবং কেমি বা কিমি অর্থ ব্লাক সয়েল বা কালো মাটি। এই কালো মাটি আসলে মিশরের নীল নদের তীরের মাটি। প্রাচীন মিশরকে রসায়নের জন্মক্ষেত্র বলা যায়। কারণ, মিশরীয়রা সভ্যতার আদি লগ্নে যে মমি তৈরি করতো তাতেই তারা নানান রকমের রাসায়নিক ব্যবহার করতো। প্রাচীন গ্রীসেও রসায়নের চর্চা শুরু হয়েছে সুপ্রাচীনকাল থেকেই।
তারা চিন্তা করতো এ্যালিক্সির বা জীবন সঞ্জিবনীর কীভাবে তৈরি করা যায়! কারণ, মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকতে চায় অমর হতে চায়। ভারতীয় উপমহাদেশের ঋষিরাও চাইতেন তেমন কিছু তৈরি করার। তারা একে বলতেন পরশ পাথর!
গ্রিসদের এই চিন্তা ভাবনা ও কাজের সাথে পরিচিত ছিলেন জাবির ইব্নে হাইয়ান। তাঁর পিতা ইবনে হাইয়ানও একজন গুপ্তবিদ্যাচর্চাকারী ছিলেন। প্রাচীনকালে রসায়ন গুপ্ত বিদ্যা বলে পরিচিত ছিলো। কারণ রসায়নবিদরা লোক চক্ষুর অন্তরালে তাদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতেন। কারণ সাধারণ মানুষের কৌতুুহল বেশি থাকে এবং তারা কাজে বাঁধা সৃষ্টি করতে তৎপর থাকে।
পরবর্তী সময়ে জাবির ইবনে হাইয়ান তাঁর নিজ বাসভূমি আরবীয় অঞ্চলে ফিরে আসেন এবং রসায়ন শাস্ত্রের উপর ১০৮ খানা গ্রন্থ লেখেন। তাঁর এই মহামূল্য গ্রন্থগুলো রসায়ন গবেষণায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তাকে প্রাচীন রসায়নের জনক বলে অভিহিত করা হয়।
মৌলিক ধারণা
আমরা জানি যে, যার ভর আছে, কোন স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যা স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার বাধা প্রদান করে, তাকে পদার্থ বলে। পদার্থের মধ্যে অণু থাকে যা আবার পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। পরমাণু সমূহ গঠিত হয় ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন এর সমন্বয়ে। এসব ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পদার্থের অনুর সাথে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকে এবং এদের বিক্রিয়ার সময় এরা কি ধরনের আচরণ করে সেসব নিয়ে আলোচনা করা হয় রসায়নে।
সংজ্ঞাসমূহ
রসায়ন শাস্ত্রে অনেক গুলো মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে
পরমাণু
মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা ঐ পদার্থের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে। যাকে বিশ্লেষিত করলে আরো ক্ষুদ্রতম কণা ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পাওয়া যায়। পরমাণুকে দুটি ভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা যায়। একটিকে কেন্দ্র বলা হয়- যে অংশে পরমাণুর সকল ভর ও ধনাত্বক চার্জ পুঞ্জীভূত থাকে। অর্থাৎ নিরপেক্ষ নিউট্রন ও ধনাত্বক প্রোটন একত্রে কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে থাকে আর দ্বিতীয়টিকে বলা হয় বহিঃঅঞ্চল- যে অংশে নির্দিষ্ট শক্তির কতক শক্তিস্তর থাকে আর ঐ শক্তিস্তরে নির্দিষ্ট শক্তির ঋণাত্বক চার্জ যুক্ত ইলেক্ট্রন পরিক্রমণরত অবস্থায় থাকে।
পদার্থ
যার ভর আছে, কোনো স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যা স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার বাধা প্রদান করে, তাকে পদার্থ বলে। পৃথিবীর সমস্ত পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা: কঠিন, তরল ও বায়বীয়। এছাড়াও পদার্থের আরেকটি অবস্থাও হিসাব করা হয়, যাকে প্লাজমা বলে। এটিকে উচ্চ তাপমাত্রায় আয়নিত গ্যাস বলা হয়।
যৌগ
একাধিক মৌলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন পদার্থকে যৌগ বলে। যেমন: সোডিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি।
বস্তু
যেকোন পদার্থের নির্দিষ্ট একটা অংশকে বস্তু বলে। যেমনঃ মৌল, এক অণু বিশিষ্ট যৌগ। অর্থাৎ হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, পানি ইত্যাদি।
অণু
দুই বা ততোধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত ক্ষুদ্র কণাকে বলা হয় অণু।
যেমন: হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু পরস্পর যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে।
হাইড্রোজেনের পরমাণু H এবং
হাইড্রোজেনের অণু H2।
মোল
কোনো পদার্থের পারমাণবিক ভর বা আণবিক ভরকে গ্রাম এককে প্রকাশ করলে যে পরিমাণ পাওয়া যায়, তাকে ঐ পদার্থের এক মোল বলে।
১ mole=৬.০২২x১০ ২৩ টি অণু/পরমাণু/আয়ন।
এই সংখ্যাটিকে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যা বলা হয়। কোন পদার্থের যে পরিমাণের মধ্যে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যার সমান সংখ্যক অণু/পরমাণু/আয়ন বিদ্যমান থাকে তাকে ঐ পদার্থের একমোল বলে।
কার্বনের পারমাণবিক ভর ১২
একে গ্রাম এককে প্রকাশ করলে,
১২ গ্রাম কার্বন = ১ মোল কার্বন
আবার পানির আণবিক ভর ১৮
সুতরাং ১ মোল পানি = ১৮ গ্রাম পানি।
অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব
অম্ল বা ক্ষারের কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে; তার মধ্যে সবচেয়ে চেয়ে সহজতর তত্ত্বটি হচ্ছে 'আরহেনিয়াসের তত্ত্ব'। তার মতে, অম্ল হচ্ছে এমন ধরনের বস্তু যা পানির সাথে দ্রবীভুত হলে হাইড্রনিয়াম আয়ন উৎপন্ন করে এবং ক্ষার হল যা পানির সাথে দ্রবীভূত হলে হাইড্রোক্সাইড আয়ন উৎপন্ন করে। ব্রনস্টেড-লাউরি‘র অম্ল-ক্ষার সূত্রানুসারে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যদি একটি মৌল অন্য একটি মৌলকে ধনাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে তবে তাকে অম্ল বলে; অপরপক্ষে ক্ষার হচ্ছে ঐ বস্তু যা ঐ হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করে। এ সম্বন্ধে লুইস এর অম্ল-ক্ষার তত্ত্ব নামে তৃতীয় একটা তত্ত্ব রয়েছে, যার ভিত্তি হল নতুন রাসায়নিক বন্ধন গঠন করা। লুইসের তত্ত্বানুসারে অম্ল হচ্ছে ঐ মৌল যা বন্ধন গঠনের সময় অন্য মৌল হতে এক জোড়া ইলেক্ট্রন গ্রহণ করতে সক্ষম; অন্যদিকে ক্ষার হচ্ছে ঐ মৌল যা নতুন বন্ধনে এক জোড়া ইলেক্ট্রন দিতে পারে। তাছাড়া আরো অনেক ভাবেও অম্ল এবং ক্ষার কে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে।
অম্লের ক্ষমতা প্রধানত ২ পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হয়ে থাকে।একটা পদ্ধতি হচ্ছে আরহেনিয়াসের অম্লত্বের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, pH, যেটা দ্রবণে ঘণীভূত হাইড্রোনিয়াম আয়ন কে বোঝায়। যেটাকে ঋণাত্মক লগারিদ্মিক স্কেল এ প্রকাশ করা হয়। এভাবে, যে দ্রবণের pH এর মান কম ও উচ্চ ঘণীভূত হাইড্রনিয়াম আয়ন তবে সেটা অধিক অম্লীয়। অন্য পদ্ধতি টা হচ্ছে, ব্রনস্টেড-লাউরি‘র বর্ণনার উপর ভিত্তি করে,যে বস্তুর ka এর মান অধিকতর এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় নিম্নতর ka মানের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে। ব্রনস্টেড-লাউরি‘র অম্ল-ক্ষার সূত্রানুসারে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যদি একটি মৌল অন্য একটি মৌলকে ধনাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে তবে তাকে অম্ল বলে। অপরপক্ষে, ক্ষার হচ্ছে ঐ বস্তু যা ঐ হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করে। এ সম্বন্ধে লুইস এর অম্ল-ক্ষার তত্ত্ব নামে তৃতীয় একটা তত্ত্ব রয়েছে,যার ভিত্তি হল নতুন রাসায়নিক বন্ধন গঠন করা। লুইসের তত্ত্বানূসারে অম্ল হচ্ছে ঐ মৌল যা বন্ধন গঠনের সময় অন্য মৌল হতে এক জোড়া ইলেক্ট্রন গ্রহণ করতে সক্ষম; অন্যদিকে ক্ষার হচ্ছে ঐ মৌল যা নতুন বন্ধনে এক জোড়া ইলেক্ট্রন দিতে পারে। তাছাড়া আরো অনেক ভাবেও অম্ল ও ক্ষার কে সঙ্গায়িত করা হয়ে থাকে।
অম্লের ক্ষমতা প্রধানত ২ পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হয়ে থাকে।একটা পদ্ধতি হচ্ছে আরহেনিয়াসের অম্লত্বের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, pH ,যেটা দ্রবণে ঘণীভূত হাইড্রোনিয়াম আয়ন কে বোঝায়,যেটাকে ঋণাত্মক লগারিদ্মিক স্কেল এ প্রকাশ করা হয়। এভাবে,যে দ্রবণের pH এর মান কম ও উচ্চ ঘণীভূত হাইড্রনিয়াম আয়ন তবে সেটা অধিক অম্লীয়।
অন্য পদ্ধতি টা হচ্ছে, ব্রনস্টেড-লাউরি‘র বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, যে বস্তুর ka এর মান অধিকতর এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় নিম্নতর ka মানের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে।
দশা
পদার্থের নির্দিষ্ট ভৌত অবস্থাকে (কঠিন, তরল,গ্যাসীয় ও প্লাজমা ) নির্দেশ করা হয়।
জারণ-বিজারণ
যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন আদান প্রদান হয় তাকে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া বলে ।
যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন ত্যাগ বা বর্জন করা হয় তাকে জারণ বলে । আবার যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন গ্রহণ করা হয় তাকে বিজারণ বলে ।
জারক ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে নিজে বিজারিত হয় এবং অপরকে জারিত করে আর বিজারক ইলেক্ট্রন ত্যাগ করে নিজে জারিত হয় এবং অপরকে বিজারিত করে ।
বন্ধন
অণুতে পরমাণুসমূহ পরস্পর যেভাবে বন্ধন শক্তিতে যুক্ত থাকে, তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।
বিক্রিয়া
রসায়নের পরিভাষায় যে পদ্ধতিতে দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগ পরস্পর যুক্ত হয়ে এক বা একাধিক নতুন যৌগ উৎপন্ন করে তাকে বিক্রিয়া বলে। যদি একাধিক মৌল বা যৌগ পরস্পর যুক্ত নতুন যৌগ উৎপন্ন না-করে তবে তাকে বিক্রিয়া বলা যাবে না। বিক্রিয়ায় মূলত পরমাণু বা ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটে।এখানে তাপ উৎপন্ন হয়।
রাসায়নিক সমীকরণ
রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করার জন্য রাসায়নিক সমীকরণ ব্যবহার করা হয় ৷ অর্থাৎ সমীকরণ হলো রাসায়নিক শর্টহ্যান্ড (Chemical Shorthand ) ও কোনো রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে রসায়নের ভাষায় প্রকাশ৷ রাসায়নিক সমীকরণ লেখার নিয়ম:
রাসায়নিক বিক্রিয়া যে সকল পদার্থ নিয়ে শুরু হয় তাদেরকে বিক্রিয়ক ( Reactant ) এবং যে সকল পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাদেরকে উৎপাদ (Product) বলে ৷ রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়কসমূহ বামপাশে এবং উৎপাদসমূহ ডানপাশে লিখে মাঝখানে সমান (=) অথবা তীর( → ) চিহ্ন দেয়া হয় ৷
বিক্রিয়ায় একাধিক বিক্রিয়ক এবং একাধিক উৎপাদ থাকলে তাদেরকে (+) চিহ্ন দিয়ে লেখা হয় ৷
সমীকরণের বামপাশে বিভিন্ন মৌলের পরমাণু সংখ্যা এবং ডানপাশে একই মৌলের পরমাণু সংখ্যা সমান করা হয় ৷ বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ ভিন্ন যৌগ হলেও তা অভিন্ন মৌলের পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত হয় ৷ এতে ভরের সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করে ৷
বিক্রিয়ক ও উৎপাদের ভৌত অবস্থা যৌগের ডানপাশে নিচে প্রথম বন্ধনীর মধ্যে লেখা হয় ৷ যৌগের ভৌত অবস্থা কঠিন (Solid)
হলে (s), তরল (Liquid) হলে (l) এবং গ্যাসীয় (Gaseous) হলে (g) লেখা হয় ৷ বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ হিসেবে কোনো যৌগের জলীয় দ্রবণ (Aqueous solution) থাকলে (aq) লেখা হয় ৷
রাসায়নিক সাম্যাবস্থা
উভমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সময়ের সাথে এক সময় বিক্রিয়ার সম্মুখবেগ ও পশ্চাৎবেগ সমান হয়। এ অবস্থাকে রাসায়নিক সাম্যাবস্থা বলে। সাম্যাবস্থা তখনই হয়, যখন কোনো পদার্থের বিভিন্ন ধরনের গঠন সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বিভিন্ন যৌগের একটি মিশ্রণ যারা একজন আরেকজন এর সাথে বিক্রিয়া করতে পারে অথবা যখন একটি যৌগ একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে সেটাই সাম্যাবস্থা।
শক্তি
বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু মোট যতখানি কাজ করতে পারে।
উপবিভাগ
ভৌত রসায়ন
জৈব রসায়ন
অজৈব রসায়ন
পরিবেশ রসায়ন
বিশ্লেষণী রসায়ন
তড়িৎ রসায়ন
রসায়ন বিভাগ
রসায়ন বিজ্ঞানের একটি অন্যতম দিক । রসায়নের অনেক গুলো বিভাগ রয়েছে । যা বিজ্ঞান এর জন্য মঙ্গলজনক
সবুজ রসায়ন
সবুজ রসায়ন হলো রসায়নের একটি শাখা যাতে কম পরিবেশ দূষণ করে এবং ঝুঁকি হ্রাস করে এমন রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা উৎপাদন-পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হয়। কার্যত: 'সবুজ রসায়ন' এমন একটি গবেষণাদর্শন যার উদ্দেশ্য এমন রাসায়নিক পদ্ধতির উদ্ভাবন ও অবলম্বন করা যাতে শিল্পজাত বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়, ঝুকিঁপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস পায় এবং শক্তির অপচয় হ্রাস পায়। এটি রসায়নের একটি নবতর শাখা। এর লক্ষ্য মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান বর্জিত পণ্য ও পদ্ধতি আবিষ্কার। এটি পরিবেশ রসায়ন থেকে ভিন্ন।
রাসায়নিক শিল্প
১. কাচ শিল্প
২. জ্বালানি শিল্প
৩. সিরামিক শিল্প
৪. পেট্রোলিয়াম শিল্প
৫. ঔষধ শিল্প
৬. সিমেন্ট শিল্প
৭. সার শিল্প
৮. পলিমার শিল্প
৯. চিনি শিল্প
১০. কাগজ শিল্প
১১. রং শিল্প
১২. কীটনাশক শিল্প
১৩. তেল শিল্প
১৪. সাবান ও ডিটারজেন্ট শিল্প
১৫. চামড়া শিল্প
১৬. লৌহ শিল্প
১৭. বিস্ফোরক শিল্প
পেশাদার প্রতিষ্ঠান
নিরাপত্তা
কিছু রাসায়নিক উপাদান খুবই ক্ষতিকারক ও বিপজ্জনক। মার্কারী (২) ক্লোরাইড অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। ক্রোমেট ক্যান্সার সৃষ্টি করে। টিন (২) ক্লোরাইড খুব সহজেই পানি দূষণ করে থাকে। হাইড্রোক্লোরিক এসিড শরীরের চামড়া পুড়িয়ে ফেলে। হাইড্রোজেনের মতো পদার্থ বিস্ফোরক কিংবা অগ্নিসংযোগে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই, যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা রসায়ন পরীক্ষাগারে করা উচিত। সেখানে বিশেষ নিরাপত্তামূলক উপকরণ এবং কাপড়ের ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রাসায়নিক উপকরণসমূহ সুবিন্যস্ত আকারে রাখা হয়। ঔষুধাদি তৈরীতে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ব্লিচের ন্যায় পদার্থের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয় যে রাসায়নিক পদার্থটি নিরাপদ।
কিছু রাসায়নিক বস্তু
পদার্থসংকেতমন্তব্য/বৈশিষ্ট্যপানিH2Oসার্বজনীন দ্রাবক সালফিউরিক অ্যাসিড H2SO4 সব চেয়ে ব্যবহিত অ্যাসিডখাবার লবণ NaCl আয়নিক যৌগবেকিং পাউডার/খাবার সোডা/সোডা মিন্ট NaHCO3 ক্ষারহাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড HCl অ্যাসিড চিনিC12H22O11
আরও দেখুন
জৈব রসায়ন
ভৌত রসায়ন
বিশ্লেষণী রসায়ন
রাসায়নিক বন্ধন
রসায়নের ইতিহাস
রসায়ন বিজ্ঞানিদের তালিকা
যৌগের তালিকা
রসায়নশাস্ত্রের রূপরেখা
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:রসায়ন
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
পদার্থ বিজ্ঞান | https://bn.wikipedia.org/wiki/পদার্থ_বিজ্ঞান | REDIRECTপদার্থবিজ্ঞান |
বিজ্ঞানের ইতিহাস | https://bn.wikipedia.org/wiki/বিজ্ঞানের_ইতিহাস | থাম্ব|এটি পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ার চেস্টান্ট স্ট্রিটের বিজ্ঞান ইতিহাস ইনস্টিটিউটের বহিরাগত
বিজ্ঞানের ইতিহাস বলতে আমরা এখানে বুঝব এমন ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন বা ঘটনাসমষ্টি যা যুগে যুগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বিস্তার লাভ করেছে এবং যার ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থেকেছে সবসময়। মূলত বিজ্ঞান কখনোও থেমে থাকেনি, বরং বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার মাধ্যমেই পৃথিবী এগিয়েছে এবং বিভিন্ন যুগ অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে বিজ্ঞানের সূচনা মানব জন্মের শুরু থেকেই, পার্থক্য এই যে সে সময় মানুষ জানত না যে সে কি করেছে বা কোন সভ্যতার সূচনা ঘটতে চলেছে তার দ্বারা। প্রথম যে মানুষটি পাথরে পাথর ঘষে আগুন সৃষ্টি করেছিল সে কষ্মিনকালেও ভাবেনি যে সে একটি নব সভ্যতার জন্ম দিলো। এভাবেই চলেছিল অনেকটা কাল। তারপর একসময় যখন মানুষ তার কর্ম দেখে তার কাজের অর্থ ও গুরুত্ব বুঝতে পারল তখন সে তার কাজগুলোকে গুছিয়ে আনার চেষ্টা করল। আর এভাবেই জন্ম নিলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। তারপরের ইতিহাস হল বিপ্লবের ইতিহাস যার পরে আর মানব সভ্যতাকে আর কখনও পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে যখন বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূচনা হয় তখন মানুষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে জ্ঞানের বিবর্তনকেও পরিচালনা ও প্রত্যক্ষ করার যোগ্যতা অর্জন করে। এধরনের জ্ঞান এতটাই মৌলিক ছিল যে অনেকে (বিশেষত বিজ্ঞানের দার্শনিকরা) মনে করেন এই পরিবর্তনটি প্রাক বৈজ্ঞানিকতাকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ যখন মানব মন বিকশিতই হয়নি তখনকার সময়কেও এটি অন্তর্ভুক্ত করে এবং নিগূঢ় অনুসন্ধান করে।
বিজ্ঞানের ইতিহাস তত্ত্ব
বিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে তার অধিকংশই ছিল কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মধ্যে আবর্তিত। প্রশ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিজ্ঞান কি, বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে, এর মধ্যে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয় ইত্যাদি।
প্রাথমিক সংস্কৃতি
প্রাগৈতিহাসিক যুগে, জ্ঞান এবং কৌশল মৌখিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানান্তরিত হত। উদাহরণস্বরূপ, লিখন পদ্ধতির বিকাশের আগে দক্ষিণ মেক্সিকোয় কৃষিক্ষেত্রে ভুট্টার পোষ্যকরণের তারিখ প্রায় ৯,০০০ বছর পূর্বে ছিল। একইভাবে, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণগুলি পূর্ব-পূর্ববর্তী সমাজগুলিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিকাশকে ইঙ্গিত করে। লিখন পদ্ধতির বিকাশ মানুষকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আহরিত জ্ঞানকে অনেক বেশি যথার্থতার সাথে সংরক্ষণ করতে এবং তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম করে।
বহু প্রাচীন সভ্যতা পদ্ধতিগতভাবে জ্যোতির্বিদ্যার পর্যবেক্ষণ সংগ্রহ করেছিল। পূর্ববর্তীরা বিশাল আকাশের আপেক্ষিক অবস্থানগুলি খোদাই করত, যা প্রায়শই ব্যক্তি এবং মানবজাতিকে প্রভাবিত করত।
মানব দেহবিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্যগুলি কিছু জায়গায় জানা ছিল এবং বিভিন্ন সভ্যতায় আলকেমি অনুশীলন করা হয়েছিল।উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতয়ায় ম্যাক্রোস্কোপিক উদ্ভিদ এবং প্রাণীর পর্যবেক্ষণও করা হয়েছিল।
প্রাচীন সভ্যতায় বিজ্ঞান চর্চা
মেসোপটেমিয়ান
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানদের "যুক্তিবাদী বিজ্ঞান" এবং যাদুবিদ্যার মধ্যে কোনও পার্থক্য ছিল না। যখন কোনও ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ত, তখন চিকিৎসক ঔষধি চিকিৎসার পাশাপাশি আবৃত্তি করার জন্য যাদুকরী সূত্রগুলি নির্ধারণ করত। সর্বাধিক প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলি উমের তৃতীয় রাজবংশের সময় সুমেরিয়ায় প্রদর্শিত হয়েছিল (খ্রিস্টপূর্ব ২১১২ খ্রিস্টপূর্ব - খ্রিস্টপূর্ব ২০০৪)। ব্যাবিলনীয় বাদশাহ আদাদ-অপলা-ইদ্দিনের শাসনামলে (১০৯৬ - ১০৪৬) আমলে বা প্রধান পণ্ডিত, বোর্সিপার এসাগিল-কিন-এপলির লিখিত ডায়াগনস্টিক হ্যান্ডবুকটি অবশ্য বহুল ব্যাবিলিয়ান চিকিৎসার পাঠ্য। পূর্ব সেমেটিক সংস্কৃতিগুলিতে, প্রধান চিকিৎসক হ'ল এক ধরনের বহিরাগত-নিরাময়কারী যা আইপু নামে পরিচিত। পেশাটি সাধারণত বাবা থেকে পুত্রের দিকে চলে যায় এবং অত্যন্ত সম্মানের সাথে পরিচালিত হয়। আশু নামে পরিচিত আর এক ধরনের নিরাময়কারী ছিলেন, যিনি একজন আধুনিক চিকিৎসকের সাথে আরও ঘনিষ্ঠতার সাথে মিল রাখেন এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণীর পণ্য এবং খনিজগুলি, পাশাপাশি প্যাশনস, এনিমা এবং মলম দ্বারা গঠিত মূলত লোক প্রতিকার ব্যবহার করে শারীরিক লক্ষণগুলির সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হন এই চিকিত্সকরা। তারা পুরুষ বা মহিলা উভয়ই হতে পারেন, তারাও ক্ষত পরিষ্কার করতেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থাপন করতেন এবং সহজ সার্জারি করতেন। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানরাও প্রফিল্যাক্সিস অনুশীলন করেছিলেন এবং রোগের বিস্তার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানদের মাটি, বালি, ধাতু আকরিক, বিটুমেন, পাথর এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তৃত জ্ঞান ছিল এবং তারা এই জ্ঞানকে মৃৎশিল্প, বেড়া, কাঁচ, সাবান, ধাতু, চুন প্লাস্টার উৎপাদন এবং ব্যবহারিক প্রয়োগে প্রয়োগ করেছিলেন। জীবের জীববিজ্ঞান সাধারণত মূলধারার একাডেমিক শাখার প্রসঙ্গেই রচিত হত। ভবিষ্যদ্বাণী করার উদ্দেশ্যে অ্যানিম্যাল ফিজিওলজি ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছিল; লিভারের এনাটমি, যা হার্পসিসিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে দেখা হত, বিশেষত নিবিড় বিশদভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছিল। দিব্যমূলক উদ্দেশ্যে পশু আচরণও অধ্যয়ন করা হয়েছিল। প্রাণীদের প্রশিক্ষণ ও গৃহপালনের বিষয়ে বেশিরভাগ তথ্য সম্ভবত লিখিত না হয়ে মৌখিকভাবে প্রেরণ করা হয়েছিল, তবে ঘোড়ার প্রশিক্ষণের সাথে সম্পর্কিত একটি পাঠ্য টিকে আছে। মেসোপটেমিয়ান কিউনিফর্ম ট্যাবলেট প্লিম্পটন ৩২২, খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতাব্দীর সময়কালে, পাইথাগোরিয়ান ট্রিপল্টগুলি (৩,৪,৫) (৫,১২,১৩) রেকর্ড করেছে যা ইঙ্গিত করে যে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানরা পিথাগোরাসের সহস্রাব্দ আগে থেকেই পিথাগোরিয়ান উপপাদ্যটি সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন।
ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ্যায়, নক্ষত্র, গ্রহ এবং চাঁদের গতির রেকর্ডগুলি হাজার হাজার মাটির ট্যাবলেটগুলিতে লেখক দ্বারা তৈরি করা হয়েছে । আজও, মেসোপটেমিয়ান প্রোটো-বিজ্ঞানীদের দ্বারা চিহ্নিত জ্যোতির্বিদ্যার সময়গুলি সৌর বছর এবং চন্দ্র মাসের মতো পশ্চিমা ক্যালেন্ডারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই উপাত্ত ব্যবহার করে তারা বছরের পরিক্রমায় দিবালোকের পরিবর্তিত দৈর্ঘ্য গণনা করতে এবং চাঁদ এবং গ্রহের উপস্থিতি এবং সূর্য ও চাঁদের অন্তর্ধানের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য পাটিগণিত পদ্ধতিগুলি বিকশিত করেছিল। খালিদি জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ কিডিনুর মতো মাত্র কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানের নাম জানা যায়। সৌর বর্ষের জন্য কিডিনুর মান আজকের ক্যালেন্ডারের জন্য ব্যবহৃত হয়। ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল "জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনাগুলির একটি পরিশোধিত গাণিতিক বিবরণ দেওয়ার প্রথম এবং অত্যন্ত সফল প্রচেষ্টা।" ঐতিহাসিক এ. অ্যাবোর মতে, "পরবর্তী হেলেনিস্টিক বিশ্বে, ভারতে, ইসলামে এবং পশ্চিমে সমস্ত বৈজ্ঞানিক জ্যোতির্বিজ্ঞান যদি সত্যিকারের বিজ্ঞানের যথাযথ প্রচেষ্টা না হয় তবে নির্ধারিত এবং মৌলিক উপায়ে ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করে"।
আরও দেখুন
ইতিহাস
গণিতের ইতিহাস
পরিমাপের ইতিহাস
দর্শনের ইতিহাস
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস
জীববিজ্ঞানের ইতিহাস
রসায়নের ইতিহাস
পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস
সামাজিক বিজ্ঞানের ইতিহাস
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাস
ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ইসলামি বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সময়রেখা
প্রযুক্তির ইতিহাস
বিজ্ঞানের ইতিহাস ও দর্শন
বিজ্ঞানের দর্শন
নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা
বিজ্ঞান
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
সামাজিক বিজ্ঞান
বিজ্ঞানে নারী
বহিঃসংযোগ
এ হিস্টরি অফ সাইন্স, ১—৪ খণ্ড
MIT STS.002 – বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের পথে , আইজ্যাক নিউটন সহ তার যুগ পর্যন্ত বিজ্ঞানের ইতিহাস
MIT STS.042 – আইনস্টাইন, ওপেনহেইমার, ফীম্যান: বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞান
বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞানে নারীদের অবদান
নোবেল ফাউন্ডেশনের দাপ্তরিক সাইট
দ্য ইনস্টিটুউট অ্যান্ড মিউসিয়াম অফ দ্য হিস্টরি অফ সাইন্স, ফ্লোরেন্স, ইতালি
বিষয়শ্রেণী:বিজ্ঞানের ইতিহাস
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:বিজ্ঞানবিদ্যা |
রাজনীতি | https://bn.wikipedia.org/wiki/রাজনীতি | রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি বা রাজগতি বা রাজবুদ্ধি হলো হল দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সমষ্টি, উদাহরণস্বরুপ সম্পদের বণ্টন হল এমন একটি কর্মকাণ্ড। রাজনীতি এ্যাকাডেমিক অধ্যয়নকে রাজনীতিবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাজ হলো রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করা।
রাজনীতি একটি বহুমুখী শব্দ। এটি আপোষের ও অহিংস রাজনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে ইতিবাচক অর্থে, অথবা সরকার বিষয়ক বিজ্ঞান বা কলা হিসেবে বিশদভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, কিন্তু পাশাপাশি এটি প্রায়শই একটি নেতিবাচক অর্থও বহন করে। উদাহরণস্বরুপ, উচ্ছেদবাদী উইনডেল ফিলিপস ঘোষণা দেন "আমরা রাজনৈতিক চাল চালি না, দাসপ্রথার বিরোধিতা নিয়ে হাসি তামাশা করা আমাদের স্বভাবে নেই।" রাজনীতিকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, এবং বিভিন্ন পরিসরে মৌলিকভাবে এবিষয় নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা রয়েছে, যেমন এটি কীভাবে ব্যবহার করা উচিত, বিস্তৃতভাবে নাকি সীমিতভাবে, রাজকীয়ভাবে নাকি সাধারণভাবে, এবং কোনটি এক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবীঃ সংঘাত নাকি সমবায়।
রাজনীতিতে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, যার মধ্যে আছে কারও নিজস্ব রাজনৈতিক অভিমত মানুষের মাঝে প্রচার করা, অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময়, আইন প্রনয়ন, এবং বলপ্রয়োগের চর্চা করা, যার মধ্যে আছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা লড়াই। সামাজিক বিভিন্ন স্তরে বিস্তৃত পরিসরে রাজনীতির চর্চা করা হয়, ঐতিহ্যবাহী সমাজব্যবস্থাসমূহের গোত্র ও গোষ্ঠী থেকে শুরু করে আধুনিক স্থানীয় সরকার, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সার্বভৌম রাষ্ট্র, এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত। আধুনিক জাতি রাষ্ট্রগুলোতে, মানুষ প্রায়ই নিজস্ব মতবাদ তুলে ধরতে রাজনৈতিক দল গঠন করে। কোন দলের সদস্যগণ প্রায়শই বিভিন্ন বিষয়ে সহাবস্থানের ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করে এবং আইনের একই পরিবর্তন ও একই নেতার প্রতি সমর্থনে সহমত হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন হল সাধারণত বিভিন্ন দলের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা।
রাজনৈতিক ব্যবস্থা হল কোন কাঠামো যা কোন সমাজের মধ্যকার গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক পদ্ধতিসমূহকে সংজ্ঞায়িত করে। রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় প্রাথমিক প্রাচীন যুগে, যেখানে প্লেটোর রিপাবলিক, এরিস্টটলের রাজনীতি, চাণক্যর অর্থশাস্ত্র ও চাণক্য নীতি (খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী), এবং কনফুসিয়াসের লেখার ন্যায় দিগন্ত উন্মোচনকারী কাজগুলো পাওয়া যায়।
শব্দতত্ত্ব
এর দ্বারা সাধারণত নাগরিক সরকারের অনুরূপ কর্মকাণ্ডকে বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানেও রাজনীতি চর্চা করা হয়। রাজনীতি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত।Painter, Joe; Jeffrey, Alex. "Political Geography". York University Library. উইলিয়াম কেরি তার বাংলা অভিধানে রাজনীতি শব্দের অর্থ করেছেন রাজন্য (the king) + নীতি (justice), অর্থাৎ রাজার ন্যায়বিচার।
ইংরেজি পলিটিক্স শব্দটি এসেছে এরিস্টটল-এর ধ্রুপদী রচনা, পলিটিকা থেকে, যা (). নামক গ্রিক পরিভাষাটিকে ইংরেজিতে প্রবর্তন করে। ১৫ শতকের মাঝামাঝি, অ্যারিস্টটলের রচনাটি প্রাথমিক আধুনিক ইংরেজি ভাষায় পোলেটিকস () হিসাবে ডাকা করা হতো,"The book of " (Bhuler 1961/1941:154).Buhler, C. F., ed. 1961 [1941]. The Dictes and Sayings of the Philosophers. London: Early English Text Society, Original Series No. 211 . যা আধুনিক ইংরেজি এ পলিটিক্স এ পরিণত হয়।
একবচনে পলিটিক্স শব্দটি প্রথম ১৪৩০ সালে ইংরেজিতে প্রযুক্ত হয়, যা মধ্য ফরাসি —এর সমতুল্য যা নেওয়া হয়েছে ল্যাটিন থেকে,. যা গ্রিক () এর একটি লাতিনিকৃত রূপ, যা () ও () থেকে এসেছে।
আরবি ভাষায় নীতি ও রাজনীতি উভয়কে বোঝাতেই সিয়াসাত বা সিয়াসাহ (سياسة) শব্দটি ব্যবহৃত হয়, ব্যকরণবিদদের মতে, এটি আরবি ধাতু সাসা (ساس) থেকে এসেছে যার অর্থ পরিচালনা করা, ব্যবস্থাপনা করা, শাসন করা। শব্দটির ফিল মুদারী বা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্রিয়ারূপ হল ইয়াসুস (يسوس)।الأفعال، للسرقسطي، تحقيق محمد محمد شرف، ومراجعة محمد مهدي علام، القاهرة: الهيئة العامة للكتاب، 1979، ص 3/498
সংজ্ঞা
হ্যারোল্ড ল্যাজওয়েলের মতে, রাজনীতি হল "যে যা, যখন, যেভাবে পায় সেটাই"।
ডেভিড ইস্টনের মতে, "এটি হল কোন সমাজের জন্য মূল্যবান বিষয়গুলোর কর্তৃত্বপূর্ণ সুষম বণ্টন"।
ভ্লাদিমির লেনিনের কাছে, "রাজনীতি হল অর্থনীতির সবচেয়ে ঘণীভূত বহিঃপ্রকাশ"।
বার্নার্ড ক্রিক দাবি করেন যে, "রাজনৈতিক হল নীতিমালার একটি স্বতন্ত্র রূপ, যার দ্বারা মানুষ নিজেদের পার্থক্য মিটিয়ে ফেলার জন্য, বৈচিত্রময় আগ্রহ ও মূল্যবোধ উপভোগ করার জন্য এবং সাধারণ প্রয়োজনের বিষয় পরিচালনায় সরকারি নীতি তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিলেমিশে কাজ করে"।
আড্রিয়ান লেফ্টউইচ সংজ্ঞা দেন যে, "রাজনীতি সমাজে ও সমাজসমূহের মধ্যে সমবায়, মতবিনিময় ও দ্বন্দ্বের সকল কাজের জন্ম দেয়, যার দ্বারা মানুষ তাদের জৈবিক ও সামাজিক জীবনের উৎপাদন ও প্রজননের নিমিত্তে মানবীয়, প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ ব্যবহার, উৎপাদন ও বণ্টনের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে"।
ইবনে সিদার মতে, বিষয়াবলির ব্যবস্থাপনা করাই হল সিয়াসাত বা নীতি বা রাজনীতি।المحكم والمحيط الأعظم في اللغة، لابن سيده، تحقيق مجموعة من المحققين، القاهرة: معهد المخطوطات العربية، ص 8/354
সাহিব ইবনে আব্বাদও একই মত পোষণ করে বলেন, সিয়াসাত বা রাজনীতি হল রাজনীতিবিদ বা শাসকের কাজ, প্রশাসক তার প্রজাদের শাসন করে, আর তার নিম্নস্তরের শাসকেরা তাদের নিম্নস্তরের প্রজাদের শাসন করে, আর এটাই তাদের রাজনৈতিক বা শাসনের নীতি।المحيط في اللغة، للصاحب بن عبَّاد، تحقيق محمد حسن آل ياسين، بيروت عالم الكتب، 1994 م، ص 8/416.
ফায়রুজ আব্বাদী বলেন, রাজনীতিবিদ বা শাসকরাই রাজনীতি বা শাসনতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করেন, তারাই এটি প্রতিষ্ঠা করেন, আবার তারাই এটি ধ্বংস করেন।القاموس المحيط، الفيروز آبادي، مجموعة من المحققين، بيروت: مؤسسة الرسالة، 1987 م، ص 710
রাজনীতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি
বিস্তৃত ও সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি
নৈতিকতাবাদ ও বাস্তবতাবাদ
রাজনীতির কিছু দৃষ্টিকোণ এটিকে অভিজ্ঞতাকে ক্ষমতার অনুশীলন হিসাবে দেখেন, আবার অন্যরা এটিকে আদর্শিক ভিত্তিতে সামাজিক ক্রিয়া হিসাবে দেখেন। এই পার্থক্যকে বলা হয় রাজনৈতিক নৈতিকতাবাদ এবং রাজনৈতিক বাস্তববাদ এর মধ্যে পার্থক্য। নৈতিকতাবাদীদের কাছে, রাজনীতি হল নীতিশাস্ত্রের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত বিষয় এবং অতি আদর্শ চিন্তার ক্ষেত্রে এর অবস্থান সর্বোচ্চ পর্যায়ের। উদাহরণস্বরূপ, হান্নাহ এ্যারেন্ড্টের মতে, এরিস্টোটলের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে "রাজনৈতিক হওয়ার অর্থ হল সবকিছুই কথা ও যুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে, সহিংসতার মাধ্যমে নয়।", যেখানে বার্নার্ড ক্রিকের মতে "রাজনীতি হল উন্মুক্ত সমাজ পরিচালনার পন্থা। রাজনীতি হল রাজনীতি আর অন্য প্রকারের নীতিনিয়মগুলো হল অন্যকিছু।"। অপরদিকে, নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি, থমাস হবস, এবং হ্যারল্ড ল্যাজওয়েলের ন্যায় বাস্তববাদীদের কাছে, রাজনীতির ভিত্তি হল ফলাফল বিবেচনা ছাড়াই ক্ষমতার ব্যবহার করা।
সংঘাত ও সমবায়
ইতিহাস
রাজনীতির ইতিহাসে এর উৎপত্তি, বিকাশ, এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।
রাজনীতির উদ্ভব মানবসভ্যতার বিকাশ এর সাথে সাথে রাজার রাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার মধ্যে দিয়ে ঘটেছে ও পরিপূর্ণতা লাভ করেছে,
রাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা এবং রাজনৈতিক কলা কৌশল ও পরবর্তীকালের আধুনিক রাজনীতির শ্রেণী বিভাজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানমূলক চিন্তাধারার উত্থান ঘটিয়েছে। মেকিয়াভেলী রচিত "The Prince" গ্রন্থটি রাজতন্ত্রের চরিত্র ও স্থায়ীত্ব নিয়ে বলিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেছে । রাজনীতি হলো এককথায় এক বিশেষ রাজত্ব কেন্দ্রিক নীতি বা রাজার নীতি এটি একটা বিশেষ চেতনা বা আদর্শ।
প্রাগৈতিহাসিক
রাষ্ট্র গঠন
প্রারম্ভিক রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে একাধিক বিভিন্ন তত্ত্ব এবং অনুমান রয়েছে, যা শুধু কিছু জায়গায় রাষ্ট্র কেন বিকশিত হয়েছিল, অন্যান্য যায়গায় নয়, তা ব্যাখ্যা করার জন্য সরলীকরণের চেষ্টা করে। অন্যান্য পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে সরলীকরণগুলি কোন কাজে আসে না এবং প্রাথমিক রাষ্ট্র গঠনের প্রতিটি উদাহরণকেই আলাদাভাবে বিচার করা উচিত।
আদি রাষ্ট্র
প্রাচীন ইতিহাসে সভ্যতার আজকের মতো নির্দিষ্ট সীমানা ছিল না এবং তাদের সীমানাকে রাষ্ট্রীয় সীমান্ত হিসাবে আরও সঠিকভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। প্রারম্ভিক রাজবংশীয় সুমের এবং আদি রাজবংশীয় মিশর ছিল তাদের সীমান্ত নির্ধারণ করার জন্য প্রথম সভ্যতা। তদুপরি, বিংশ শতাব্দী অবধি, বহু লোক রাজ্যহীন সমাজে বাস করত। এগুলি তুলনামূলক সমতাবাদী গোত্র এবং উপজাতি থেকে শুরু করে জটিল এবং উচ্চ স্তরীভূত স্তরের ন্যায় দলীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
আধুনিক রাষ্ট্র
thumb|right|upright=1.35|নারী ভোটারের বিস্তৃতি (১৯৩৫)
পিস অব ওয়েস্টফালিয়াকে (১৬৪৮) রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সূচনা বলে মনে করেন, Here: p. 251.Jackson, R.H.; P. Owens (2005) "The Evolution of World Society" in: John Baylis; Steve Smith (eds.). The Globalization of World Politics: An Introduction to International Relations. Oxford: Oxford University Press, p. 53. . যাতে একটি দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ বর্জনীয় বলে বিবেচিত হয়। অন্যদেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতিটি ১৮-শতকের মাঝামাঝি সুইস আইনবিদ এমার ডি ভেটেল কর্তৃক প্রবর্তিত হয়। রাষ্ট্রগুলো একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক-ব্যবস্থায় প্রাথমিক প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধিতে পরিনত হয়। বলা হয়, পিস অব ওয়েস্টফালিয়া ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোতে অতিরাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় ইতি টানে। স্বাধীন প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রের ওয়েস্টফালীয় মতাদর্শ ১৯ শতকের জাতীয়তাবাদী চিন্তা দ্বারা মদদপুষ্ট হয়, যার অধীনে বৈধ রাষ্ট্রগুলো ভাষা ও সংষ্কৃতিভিত্তিক বহুদেশীয় সমবায় সংঘগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে শুরু করে।
ইউরোপে, ১৮ শতকে ধ্রুপদী অ-জাতীয় রাজ্যগুলি ছিল বহুজাতিক সাম্রাজ্য, এরা হলঃ অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য, ফ্রান্স রাজ্য, হাঙ্গেরি রাজ্য, রুশ সাম্রাজ্য, স্পেনীয় সাম্রাজ্য, উসমানীয় সাম্রাজ্য, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকাতেও এ জাতীয় সাম্রাজ্য বিদ্যমান ছিল। মুসলিম বিশ্বে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদের মৃত্যুর পরপরই খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা বহু-জাতিগত রুপান্তরিত-জাতীয় সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। বহুজাতিক সাম্রাজ্য ছিল এক রাজা, সম্রাট বা সুলতান দ্বারা শাসিত নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র। জনগণ ছিল বহু নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, এবং তারা অনেক ভাষায় কথা বলতো। সাম্রাজ্যের একটি জাতিগত গোষ্ঠী দ্বারা আধিপত্য ছিল, এবং তাদের ভাষা সাধারণত জনপ্রশাসনের ভাষা ছিল। ক্ষমতাসীন রাজবংশ সাধারণত এই গোষ্ঠীর থেকেই ছিল, তবে সবসময় নয়। কিছু ছোট ইউরোপীয় রাজ্য জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় ছিল না, তবে রাজপরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রাজবংশীয় রাষ্ট্রও ছিল। কয়েকটি ছোট রাষ্ট্র বেঁচে গিয়েছিল, যেমন লিচটেনস্টাইন, আন্ডোরা, মোনাকো এবং সান মেরিনো প্রজাতন্ত্রের স্বতন্ত্র রাজত্ব।
বিশ্বায়ন
আন্তঃসরকারী সংস্থা এবং বহুরাষ্ট্রীয় সংঘবদ্ধতার মাধ্যমে বিশ শতকে রাজনৈতিক বিশ্বায়নের সূচনা হয়েছিল। লীগ অব নেশনস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটি জাতিসংঘ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। এর মাধ্যমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আঞ্চলিক সংহতকরণের উদ্দেশ্যে তৈরি হয় আফ্রিকান ইউনিয়ন, আসিয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মারকোসু। আন্তর্জাতিক স্তরের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা।
রাজনৈতিক বিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান
সমাজবিজ্ঞানের যে শাখায় রাজনীতি রাষ্ট্র এবং সরকার সম্পর্কীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করা হয় তাকে রাজনীতিবিজ্ঞান (পলিটিকাল সায়েন্স) বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে। এরিস্টটল উক্ত বিজ্ঞানকে রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিজ্ঞান নামে উল্লেখ করেছেন।Oxford Dictionary
of Politics: political science এতে তুলনামূলক রাজনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনৈতিক দর্শন, জনপ্রশাসন, জননীতি এবং রাজনৈতিক পদ্ধতি সহ অসংখ্য উপক্ষেত্র রয়েছে। তদুপরি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অর্থনীতি, আইন, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, মনোবিজ্ঞান বা মনোচিকিৎসা, নৃবিজ্ঞান, এবং স্নায়ুবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত এবং নির্ভরশীল।
রাজনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ
রাষ্ট্রব্যবস্থা
thumb|রাষ্ট্রব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ
রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রব্যবস্থার দ্বারা সরকারের দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
একে সাধারণত আইন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। ডেভিড ইস্টনের মতে, "রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কোন সমাজের জন্য মূল্যবোধসমূহকে কর্তৃত্বপূর্ণ পন্থায় বরাদ্দকারী মিথষ্ক্রিয়ারূপে গণ্য করা যেতে পারে।" প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাই কোন একটি সমাজের অংশ যার নিজস্ব রাজনৈতিক সংষ্কৃতি আছে, এবং ফলশ্রুতিতে তারা সরকারি নীতিমালার মাধ্যমে সমাজ বিনির্মাণ করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যস্থ মিথষ্ক্রিয়া হল বৈশ্বিক রাজনীতির ভিত্তি।
সরকারের প্রকারভেদ
thumb|আইনসভা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। চিত্রে ফিনল্যান্ডের সংসদ।
সরকার হলো কোনো দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ যার মাধ্যমে দেশটির শাসন কার্য পরিচালিত হয়। সরকারের মৌলিক দায়িত্ব জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী দেশের নিরাপত্তা বিধান করা, সমাজের শান্তি বজায় রাখা, মানুষের জান-মাল রক্ষা করা এবং বিবাদের ক্ষেত্রে বিচারকার্য পরিচালনা করা। সরকার তার ওপর আরোপিত দায়িত্বসমূহ পালনের স্বার্থে রাজস্ব আহরণ করে এবং শাসনকার্য পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তা ব্যয় করে থাকে।"government" -- Dictionary.com: cites 3 separate dictionaries
ক্ষমতার উৎস
thumb|
ক্ষমতার উৎসের ভিত্তিতে সরকারে প্রকারভেদ নিম্নে বর্নিত হলঃ
নৈরাজ্যবাদ – এটি এমন একটি রাজনৈতিক দর্শন যা রাষ্ট্রকে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও অবাঞ্ছনীয় মনে করে এবং রাষ্ট্রহীন সমাজের সপক্ষে মতপ্রকাশ করে।
কর্তৃত্ববাদী সরকার – কর্তৃত্ববাদী সরকার কোনো প্রজাতন্ত্র বা যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্বের সপক্ষে মতপ্রকাশ করে। এটি অনির্বাচিত শাসকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থা, যাঁরা কিছুটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন।
সাংবিধানিক রাজতন্ত্র – এই জাতীয় সরকারে একটি রাজতন্ত্র বিদ্যমান; কিন্তু উক্ত রাজতন্ত্রের ক্ষমতা আইন বা ঘোষিত সংবিধানের দ্বারা সীমাবদ্ধ। উদাহরণ: যুক্তরাজ্য।Fotopoulos, Takis, The Multidimensional Crisis and Inclusive Democracy. (Athens: Gordios, 2005).(English translation of the book with the same title published in Greek).
সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র – এই জাতীয় সরকারের ক্ষমতা আইন বা আনুষ্ঠানিক সংবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং এই সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ দ্বারা নির্বাচিত। উল্লেখ্য, প্রাচীন স্পার্টা ঘোষিতভাবে ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র; কিন্তু সেদেশের অধিকাংশ মানুষই ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতেন। আবার প্রথম যুগের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ছিল গণতান্ত্রিক দেশ; কিন্তু ক্রীতদাসদের সেযুগে ভোটদানের অধিকার ছিল না।
গণতন্ত্র – গণতন্ত্র হল এমন একটি সরকার যা দেশের জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশ দ্বারা নির্বাচিত। এই সরকার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বা সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র দুইই হতে পারে। গণতন্ত্রের ব্যক্তির ভোটদানের অধিকার তার সামাজিক মর্যাদা বা সম্পদের উপর নির্ভরশীল নয়।
একনায়কতন্ত্র – একক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় শাসিত দেশের সরকার। স্বৈরাচারী শাসক সাধারণত বলপূর্বক ক্ষমতা দখল করেন।American 503 (আরও দেখুন স্বৈরতন্ত্র ও রাষ্ট্রতন্ত্র)
রাজতন্ত্র – এমন ব্যক্তির শাসন যিনি শাসনক্ষমতা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হন।
সংকীর্ণ গোষ্ঠীতন্ত্র – একই স্বার্থবিশিষ্ট ছোটো ছোটো গোষ্ঠী বা পরিবারের শাসন।American 1225
ধনিকতন্ত্র – ধনবান শ্রেণির শাসন।
দিব্যতন্ত্র – ধর্মীয় নেতাদের শাসনতন্ত্র।American 1793
সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী সরকার – এই জাতীয় সরকার সরকার ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজ কর্তৃত্ব আরোপ করে।
আইনানুগমনবাদী সরকার – এই জাতীয় সরকার আইনের শাসনকে চূড়ান্ত মনে করে; আইনমান্যকারীদের পুরস্কৃত করে ও আইনভঙ্গকারীদের কঠিন শাস্তি দেয়।
রাষ্ট্র
রাষ্ট্র বলতে এমন এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করে। যদিও একথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে, রাষ্ট্র হিসেবে তার উপর প্রভাব রাখা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর।
সংবিধান
thumb|300px|right|এরিস্টোটল কর্তৃক সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন
সংবিধান কোন শাসনব্যবস্থার মূল গ্রন্থ যাতে স্বায়ত্তশাসিত কোন রাজনৈতিক সত্তার কর্তব্য নির্ধারণের মৌলিক নিয়ম ও সূত্রসমূহ লিপিবদ্ধ থাকে।<ref>দ্যা নিউ অক্সফোর্ড আমেরিকান ডিকশনারি, দ্বিতীয় সংস্করণ, </b>Erin McKean</b> (লেখক), ২০৫১ পৃষ্ঠা , মে ২০০৫ , অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস , .</ref> কোন দেশের ক্ষেত্রে এই শব্দ সেই দেশের জাতীয় সংবিধানকে বোঝায় যা রাজনৈতিক মৌলিক নিয়ম ও সরকারের পরিকাঠামো, পদ্ধতি, ক্ষমতা ও কর্তব্যকে প্রতিস্তাপিত করে। সংবিধান দুই ধরনের হতে পারে এক,লিখিত দুই, অলিখিত ৷
রাজনৈতিক সংস্কৃতি
thumb|বিভিন্ন দেশের ইঙ্গলহার্ট-ওয়েলজেল সাংস্কৃতিক মানচিত্র।
সংস্কৃতি কীভাবে রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে, তার বিবরণ দেয় রাজনৈতিক সংষ্কৃতি। প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংষ্কৃতির অন্তর্গত বিষয়। লুসিয়ান পাইয়ের সংজ্ঞা হল "রাজনৈতিক সংস্কৃতি হল মনোভাব, বিশ্বাস এবং অনুভূতিগুলির সমষ্টি, যা একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে এবং অর্থ দেয় এবং যা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এমন অন্তর্নিহিত ধারণা এবং নীতি সরবরাহ করে।"
আস্থা হল রাজনৈতিক সংষ্কৃতিতে একটি মুখ্য উপাদান, কারণ এর মাত্রাই রাষ্ট্রের কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করে। উত্তর-বস্তুবাদ হল এমন একটি পর্যায়, যেখানে একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত যা মানবাধিকার এবং পরিবেশবাদের মত তাৎক্ষণিক শারীরিক বা বৈষয়িক উদ্বেগের বিষয় নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ধর্মেরও প্রভাব রয়েছে।
রাজনৈতিক ত্রুটিবিচ্যুতি
রাজনৈতিক দুর্নীতি
রাজনৈতিক নেতারা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য প্রায়শই বিভিন্ন অনৈতিক ও অমানবিক পথ অবলম্বন করে এবং এতে তাদের আপত্তি বা সংকোচ হয় না। মানুষ হত্যা,নারীদের যৌন নির্যাতন এবং কোন সমস্যা তৈরি করতে তারা সক্রিয় হয় এবং এর জন্য সমাজের অনেক ক্ষতি হয়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত
রাজনৈতিক স্তরবিন্যাস
বৃহৎ রাজনীতি
বিশ্ব রাজনীতি বলতে বিশ্বের রাজনৈতিক ঘটনাবলির একটি বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক চিত্রকে বোঝায় যেখানে কেবলমাত্র বিশ্ব পর্যায় নয়, বরং বৈশ্বিক, জাতীয়, আঞ্চলিক, ইত্যাদি সমস্ত স্তরের রাজনৈতিক ঘটনাবলি ও তাদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্কের বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ব রাজনীতির গবেষণা তাই আন্তর্জাতিক রাজনীতির গবেষণা অপেক্ষা ভিন্ন একটি ক্ষেত্র, এবং এগুলি একে অপরের পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিগত দশকগুলিতে ধীরে ধীরে বৈশ্বিক রাজনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। সনাতনি রাষ্ট্র ও জাতীয় সরকারগুলির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন নতুন অংশগ্রহণকারীর আবির্ভাব ঘটেছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে আন্তঃসংযুক্ততা ও আন্তঃনির্ভরশীলতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সর্বত্র সমভাবে নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নৈরাজ্যমূলক পরিস্থিতিকে প্রতিস্থাপন করে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সুশাসনের একটি পরিকাঠামোর উদ্ভব হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য পর্যায়ে যে জটিল আন্তঃসংযুক্ততার জালিকাব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে, সেই ব্যাপারটিকে বিশ্বায়ন নাম দেওয়া হয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের যেকোনও স্থানের মানুষের দৈনন্দিন জীবন বহুদূরে অবস্থিত ঘটনাবলি বা গৃহীত সিদ্ধান্ত দ্বারা উত্তরোত্তর প্রভাবিত হচ্ছে। বিশ্বায়নকে মূলত অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন, সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন ও রাজনৈতিক বিশ্বায়ন - এই তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করে আলোচনা করা হয়। তবে বিশ্বায়ন বলে আদৌ কিছু আছে কি না, থাকলেও কোনও তাৎপর্যপূর্ণ কিছু কি না এবং বিশ্ব রাজনীতির রূপান্তরে এর ভূমিকা কতটুকু - এসব ব্যাপারে প্রচুর বিতর্ক বিদ্যমান।
বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে দুইটি মূলধারার দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান-- বাস্তববাদ ও উদারপন্থীবাদ। দুইটিতেই বিশ্বায়নকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রসমূহের সম্পর্কের মধ্যে সংঘাত ও সহযোগিতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা করা হয়, যদিও উক্ত ভারসাম্যের প্রকৃতি সম্পর্কে এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। মূলধারার বিপরীতে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বা তত্ত্বসম্ভারও বিদ্যমান। এগুলিতে বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে বিরাজমান স্থিতাবস্থার (status quo)-র নেতিবাচক সমালোচনা করা হয় এবং এই ব্যবস্থাতে প্রান্তিক বা নিপীড়িত দলগুলির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়।
মধ্যবর্তী রাজনীতি
মধ্যবর্তী রাজনীতিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরের মাধ্যমিক অবকাঠামোসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়, যেমন জাতীয় রাজনৈতিক দল বা আন্দোলনসমূহ।
একটি রাজনৈতিক দল হল একটি রাজনৈতিক সংগঠন যা সাধারণত রাজনৈতিক প্রচারণা, শিক্ষা বিস্তার কার্যক্রম অথবা আন্দোলনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকারি রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন ও নিয়ন্ত্রণ হাসিল করতে চায়। দলগুলো প্রায়ই নির্দিষ্ট লক্ষ্য সংবলিত কোন লিখিত কর্মপন্থা দ্বারা সমর্থিত কোন প্রকাশ্য মতাদর্শ বা দর্শনের পক্ষাবলম্বন করে।
কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যস্থ রাজনৈতিক দলগুলো একত্রে দলীয় ব্যবস্থা তৈরি করে। এটি হতে পারে কোন বহুদলীয় ব্যবস্থা, একটি দুই দলীয় ব্যবস্থা, একটি কেন্দ্রীয় দল ব্যবস্থা অথবা একটি একদলীয় ব্যবস্থা, যা দলের সংখ্যার মাত্রার উপর নির্ভর করে। এটি এর নির্বাচনী ব্যবস্থা সহ সকল রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য দ্বারা প্রভাবিত হয়। ডুবার্গারের নীতি অনুযায়ী, ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট ব্যবস্থা সাধারণত দুই দলীয় ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়, অপরদিকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় বহুদলীয় ব্যবস্থা তৈরীর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ক্ষুদ্র রাজনীতি
ক্ষুদ্র রাজনীতি বা মাইক্রোপলিটিক্স দ্বারা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাঝে স্বতন্ত্র কর্মীদের কাজকর্মকে বোঝানো হয়। একে প্রায়শই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। উক্ত রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বিভিন্ন রকমের পারে, যেমন:
আন্দোলন
বয়কট
আইন অমান্য করা
সংহতি প্রদর্শন
পিটিশন
পিকেটিং
ধর্মঘট
কর প্রতিরোধ
ভোটদান (বা এর বিপরীতে, ভোটদানে বিরত থাকা)
রাজনৈতিক মূল্যবোধসমূহ
গণতন্ত্র
গণতন্ত্র বলতে কোনও জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোনও সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সু্যোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। "গণতন্ত্র" পরিভাষাটি সাধারণভাবে একটি রাজনৈতিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হলেও অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠনের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রমিক ইউনিয়ন, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
রাজনৈতিক তত্ববিদদের মতে বর্তমানে তিনটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক মতবাদ আছে। এগুলো হলঃ সামষ্টিক গণতন্ত্র, সুচিন্তিত গণতন্ত্র ও মৌলবাদী গণতন্ত্র।
সামষ্টিক
সুচিন্তিত
মৌলবাদী
সমতা
thumb|অনুভূমিক আর্থ-সামাজিক অক্ষ ও উল্লম্ব আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অক্ষ সমেত আদর্শিক প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক বর্ণ সমেত একটি দ্বি-অক্ষ রাজনৈতিক কম্পাস চার্ট, এটি হল বহুল ব্যবহৃত রাজনৈতিক বর্ণালীসমূহের মডেলের একটি উদাহরণ
thumb|মধ্যপন্থী এবং মৌলবাদী উভয় সংস্করণ এবং তাদের নীতিমালার লক্ষ্য সমেত রাজনৈতিক মতাদর্শসমূহের একটি ত্রি-অক্ষীয় মডেল।
বাম-ডান বর্ণালী
বামপন্থী রাজনীতি হচ্ছে সেই রাজনৈতিক অবস্থান বা কর্মকাণ্ড যা সামাজিক অসাম্য ও সামাজিক ক্রমাধিকারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সামাজিক সাম্যকে গ্রহণ বা সমর্থন করে। এই রাজনীতি বিশেষভাবে জড়িত থাকে সমাজে যারা অন্যের তুলনায় কম পায় বা সুযোগহীন থাকে তাদের ব্যাপারে এবং পূর্বধারনা করে যে অসাম্যের অবিচার কমানো বা বিলুপ্ত করা উচিত।Lukes, Steven. 'Epilogue: The Grand Dichotomy of the Twentieth Century': concluding chapter to T. Ball and R. Bellamy (eds.), The Cambridge History of Twentieth-Century Political Thought.
রাজনীতিতে ডানপন্থা বা ডানপন্থী বিশেষণগুলো ব্যবহৃত হয় এমন মতাদর্শের ক্ষেত্রে, যা মানুষের অর্থনৈতিক বা ঐতিহ্যগত বা সামাজিক শ্রেণীগত বিভেদ বা ধাপবিন্যাসকে সমর্থন করে। ভিন্ন ভিন্ন ডানপন্থী রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মাত্রায় বামপন্থী রাজনীতি সমর্থিত সাম্যবাদের বিরোধিতা করে থাকে, এবং সার্বিক সাম্য চাপিয়ে দেওয়াকে সমাজের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করে থাকে।
স্বাধীনতা
রক্ষণশীল-উদারপন্থী
রক্ষণশীলতাবাদ হল দ্রুত পরিবর্তনের বিরোধিতা, এবং এটি সমাজে ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে। Retrieved on 1 November 2009. গ্র্যাজুয়ালিজম বা পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনবাদ এর একটি প্রকরণ।
উদারপন্থী মতবাদ সাম্য ও মুক্তির উপর নির্ভর করে সৃষ্ট একধরনের বৈশ্বিক রাজনৈতিক দর্শন।; .সাতোশি কানাজাওয়া উদারতাবাদকে রক্ষণশীলতার বিপরীত হিসেবে দেখিয়েছেন। তার মতে, পরস্পর অসম্পৃক্ত সত্ত্বা একে অপরের ভাল করতে চায় এবং তার ফলেই উদারতাবাদের সৃষ্টি হয়। দেখুন. এ দুইটি নীতির উপর ভিত্তি করে উদারতাবাদকে অনেক বিস্তৃত আকার দেওয়া হয়েছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, জনগণের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মুক্তবাণিজ্য, ব্যক্তিগত মালিকানা প্রভৃতি ধারণার উদ্ভব ঘটেছে এ দর্শনের উপর ভিত্তি করে।
আরও দেখুন
কূটনীতি
জননীতি
সরকার
শাসননীতি
রাষ্ট্র
প্রশাসন
বুদ্ধিজীবী
মধ্যপন্থী
কেন্দ্রপন্থী রাজনীতি
ইসলামে রাজনীতি
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
Connolly, William (1981). Appearance and Reality in Politics. Cambridge: Cambridge University Press.
James, Paul; Soguk, Nevzat (2014). Globalization and Politics, Vol. 1: Global Political and Legal Governance. London: Sage Publications.
Ryan, Alan: On Politics: A History of Political Thought from Herodotus to the Present.'' London: Allen Lane, 2012.
বিষয়শ্রেণী:সমাজ
বিষয়শ্রেণী:রাজনীতি
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
মনোবিজ্ঞান | https://bn.wikipedia.org/wiki/মনোবিজ্ঞান | মনোবিজ্ঞান বা মনস্তত্ত্ববিদ্যা হল, মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা ও অধ্যয়ন। এটি বিজ্ঞানের একটি তাত্ত্বিক ও ফলিত শাখা যাতে মানসিক কর্মপ্রক্রিয়া ও আচরণসমূহ নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা হয়।Fernald L.D. 2008. Psychology: six perspectives (pp. 12–15). Thousand Oaks, CA: Sage Publications.Hockenbury & Hockenbury. 2010. Psychology. Worth Publishers.O'Neil, H.F.; cited in Coon D. & Mitterer J.O. 2008. Introduction to psychology: gateways to mind and behavior 12th ed, Stamford, CT: Cengage Learning, pp. 15–16. বিভিন্ন বিজ্ঞানী মনোবিজ্ঞানকে "মানুষ এবং প্রাণী আচরণের বিজ্ঞান" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।Watson, J.B 1913Hilgard, 1972সাধারণ মনোবিজ্ঞান, আফছার উদ্দীন ISBN 984-516-034-4 আবার অনেক বিজ্ঞানী একে সংজ্ঞায়িত করেছেন "আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান" হিসাবে।Crider et al, 1983
মনোবিজ্ঞান মূলত মানুষের সাথে সম্পর্কিত, তবে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়। মনোবিজ্ঞানকে সম্পূর্ণভাবে অধ্যয়ন করা কঠিন হওয়ার কারণে, মনোবিজ্ঞানিগণ প্রায়শই বিভিন্ন সময়ে এর বিভিন্ন অংশের দিকে নজর দেন। বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগসূত্র রয়েছে। এর কিছু ক্ষেত্র হল মেডিসিন, আচরণবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, এবং ভাষাবিজ্ঞান।
মনোবিজ্ঞানের কর্মক্ষেত্রে, একজন পেশাগত প্রশিক্ষণার্থী বা গবেষককে মনোবিজ্ঞানী এবং সামাজিক, আচরণিক ও চেতনাবিজ্ঞানী বলে ডাকা হয়। মনোবিজ্ঞানী ব্যক্তিগত ও সামাজিক আচরণের ক্ষেত্রে মানসিক কর্মপ্রক্রিয়ার ভূমিকাকে বোঝার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি তারা চেতনাগত প্রক্রিয়া ও আচরণের পেছনের মনস্তাত্ত্বিক ও স্নায়বিক প্রক্রিয়াকেও অনুসন্ধান করেন।
মনোবিজ্ঞানের ইতিহাস ও প্রারম্ভিক বিকাশ
উনিশ শতকের আগে মন সম্পর্কীয় সকল অধ্যয়ন দর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। দার্শনিকগণ মানসিক আচার-আচরণ বা ক্রিয়া-কলাপ সম্পর্কে কেবল অনুমান করেছিলেন। মন সম্পর্কে গ্রীক দার্শনিক প্লেটো সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন। তিনি মনকে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন সত্তা হিসাবে গণ্য করেন। আধুনিক যুগে স্নায়ুবিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে মনোবিজ্ঞানেরও নব বিকাশ ঘটে ও আধুনিক বিজ্ঞানের এক অন্যতম শাখা হিসাবে মনোবিজ্ঞানের বিকাশ আরম্ভ হয়। স্নায়ুবিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞানের মধ্যেই যে মনোবিজ্ঞানের প্রাথমিক ভিত্তি নিহিত হয়ে আছে সেই কথা সর্বপ্রথম বলেন জার্মান শরীর বিজ্ঞানী জোহানেস পিটার মুলার। অবশ্য মনোবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্যতম গুরুত্ত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারটি করেছিলেন আরেকজন জার্মান বিজ্ঞানী হারমেন ভন হেল্মল্টজ্। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী টমাস ইয়ঙের প্রস্তাবিত রং সংক্রান্ত নীতি নিয়ে গবেষণা করে তিনি ইয়ং-হেল্মল্টজ্ সূত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সূত্র দ্বারা তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে তিনটে বিভিন্ন রঙের (সবুজ, নীল ও লাল) অনুভূতির সৃষ্টি হয় মানুষের চোখের রেটিনার সাথে সংযুক্ত তিন ধরনের স্নায়ুর কর্ম-তৎপরতার ফলে। এরপর পরবর্তী আধুনিক মনোবিজ্ঞান একের পর আরেক আমাদের মন সম্পর্কীয় রহস্য উদ্ঘাটন করে এর জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন মতবাদ
(১) আচরণবাদ (Behaviorism)
আচরণবাদের জন্ম হয়েছিল বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। আচরণবাদের মুখ্য প্রবক্তা ছিলেন জন বি.ওয়াটসন এবং বি. এফ. স্কীনার। এছাড়া, রাশিয়ার আইভান পাভলভ, বেখটার্ভ ইত্যাদি মনোবিজ্ঞানী আচরণবাদ নিয়ে বহু উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। আচরণবাদীদের মতে, প্রাণীর উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানানোর কার্যই হল আচরণ; এবং যে তত্ত্বের সহায়তায় এই আচরণের অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ করা হয় তাই হল আচরণবাদ।
আচরণবাদী মানুষেরা কাশি, হাঁচি ইত্যাদি সাধারণ শারীরিক কার্যের থেকে আরম্ভ করে মানুষের উচ্চতম বৌদ্ধিক চিন্তা-চর্চা পর্যন্ত সকল কাজই উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে একপ্রকারের সংযোগ স্থাপন করে বলে বিশ্বাস করেন। আচরণবাদের দরুন ওয়াটসন মনোবিজ্ঞানের জগতে এক নতুন জোয়ার আনেন। তিনি মানুষ ও জীবজন্তুর আচরণকে এক জড়বাদী অছিলা হিসাবে মনোবিজ্ঞানের জগতে নিয়ে আসেন।
lang=bn|thumb|upright=1.5
(২) মনোবিশ্লেষণ বা মনঃসমীক্ষণ:
বিংশ শতকের শুরুতেই সমগ্র বিশ্বকে আন্দোলিত করা একটি তত্ত্ব হল মনোবিশ্লেষণ বা মনঃসমীক্ষণ। এই তত্ত্বের প্রভাবেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে সংযোজিত হয়েছিল এক নতুন শাখা; সেটি হল চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বা মনোরোগ বিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানের জনক ছিলেন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের শারীরবিজ্ঞানী ডাঃ সিগমুন্ড ফ্রয়েড। ফ্রয়েডের পরে মনোবিশ্লষণের জগতে অবদান রেখে যাওয়া কয়েকজন জগতবিখ্যাত মনোবিদের ভিতর কার্ল গুষ্টাভ য়ুং, আলফ্রেড এডলার, এরিক এরিকসন উল্লেখযোগ্য। এই তত্ত্ব কেবল মনোবিজ্ঞানের জগতকেই প্রভাবিত করে ক্ষান্ত থাকেনি, এটি মানুষের মন, সমাজ, সাহিত্য, জীবনাদর্শের ওপরেও গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। মানুষ নামক প্রাণীটির সম্পর্কে এই তত্ত্বই মানুষকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছিল। এই তত্ত্বই আমাদেরকে নতুন করে শেখায় যে মানুষ অমৃতের সন্তান নয়, এমনকি আগেকার পণ্ডিতদের ভাবনা-চিন্তা অনুযায়ী মানুষ যুক্তিবাদী প্রাণীও নয়। মানুষ আসলে কিছু জৈবিক প্রবৃত্তি ও আবেগের দ্বারা পরিচালিত হয়; এবং সবচেয়ে জরুরি কথাটি হল দূর-দূরান্তের গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে জানলেও মানুষ কিন্তু বেশিরভাগ নিজের বিষয়েই অন্ধ হয়ে থাকে। মনোবিশ্লেষণ মানুষের মনোজগতের বহু গোপন রহস্য আমাদের কাছে তুলে ধরেছিল। মানুষের মন সম্পর্কে আবিষ্কৃত এই অপ্রিয় কিন্তু সত্যি শোনানো কথাগুলি সেই সময়ের বহু লোক মেনে নিতে পারেনি, যদিও এমনসব কথাই জীবন সম্পর্কে উৎসুক নবপ্রজন্মকে উল্লসিতও করেছিল। যদিও মনোবিশ্লেষণবাদ প্রয়োগিক ক্ষেত্রে সফল ও সর্বগ্রহণযোগ্য, তবুও একে বিজ্ঞান বলে প্রমাণ করতে অনেক যৌক্তিক সীমাবদ্ধতা চলে আসে। এককথায় বলতে গেলে মনোবিশ্লেষণ বা ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞান মানুষের অবচেতন মনের এক দার্শনিক অনুমানভিত্তিক অধ্যয়ন। মানসিক রোগ নিরাময়, মনের অস্বাভাবিক ভাব-অনুভূতির বিশ্লেষণ, স্বপ্ন বিশ্লেষণ, নারী ও শিশুমনের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ফ্রয়েডীয় মনোবিশ্লেষণ আজও প্রভাবশালী ও অপ্রতিদ্বন্দী।
মনোবিজ্ঞানের শাখাসমূহ
শিশু মনোবিজ্ঞান
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান
পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান
উপদেশনা এবং নির্দেশনা মনোবিজ্ঞান
শারীরবৃত্তীয় মনোবিজ্ঞান
শিল্প মনোবিজ্ঞান
শিক্ষা মনোবিজ্ঞান
সমাজ মনোবিজ্ঞান
প্রকৌশল মনোবিজ্ঞান
পরিমাপন মনোবিজ্ঞান
বিকাশ মনোবিজ্ঞান
ব্যক্তিত্ব মনোবিজ্ঞান
মানবতাবাদী মনোবিজ্ঞান
Lockman, 1964Morgan and King, 1966
ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রয়োগ
১৯৫৫ সালে প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানীত্রয় - ভিক্টোরিয়া মেডভেক, স্কট ম্যাদে এবং থমাস গিলোভিচ আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ায় বিপরীতধর্মী চিন্তা-ভাবনা সংবলিত প্রতিক্রিয়া গবেষণা আকারে তুলে ধরেন। তারা দেখিয়েছেন, যে সকল প্রতিযোগী ব্রোঞ্জপদক জয় করে তারা রৌপ্যপদক জয়ী ক্রীড়াবিদের তুলনায় অধিকতর সুখী। রৌপ্যপদক জয়ী ক্রীড়াবিদ মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভোগেন, কেননা তারা অল্পের জন্য স্বর্ণপদক প্রাপ্তি থেকে নিজেকে বিচ্যুত করেছেন। সে তুলনায় ব্রোঞ্জপদক জয়ী খেলোয়াড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে কমপক্ষে একটি পদক জয়ে সক্ষমতা ও পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। চতুর্থ স্থান অধিকারী প্রতিযোগীকে সাধারণত কোন পদক দেয়া হয় না। নক-আউটভিত্তিক প্রতিযোগিতা হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলে পুনরায় ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করতে হয়। চূড়ান্ত খেলায় পরাজিত হবার প্রেক্ষাপটে পরাজিত দলকে রৌপ্যপদক প্রদান করা হয়।
আরও দেখুন
মানসিক ব্যাধি
মনোচিকিৎসা
স্নায়ুতত্ত্ব
মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিদ্যা
স্নায়ুবিজ্ঞান
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Encyclopedia of Psychology A web site with all kinds of information about psychology.
Psychology at the Open Directory Project.
In-Mind, Quarterly Magazine for Social Psychology
Citizen's Commission on Human Rights
বিষয়শ্রেণী:মনোবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:মন
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:আচরণমূলক বিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:সংজ্ঞানাত্মক আচরণীয় চিকিৎসা |
মহাকাশ | https://bn.wikipedia.org/wiki/মহাকাশ | thumb|upright=1.35|পৃথিবীর পৃষ্ঠ এবং বাইরের মহাকাশের মধ্যে ইন্টারফেস। ১০০ কিমি (৬২ মাইল) উচ্চতায় কার্মান রেখা দেখানো হয়েছে।
thumb|upright=1.35|পৃথিবীর আবহমণ্ডল এবং মহাকাশের মধ্যকার আন্তঃপৃষ্ঠতল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত কার্মান রেখাটিকে প্রদর্শন করা হয়েছে। পৃথিবীর আবহমণ্ডলের স্তরগুলিকে সঠিক অনুপাতে আঁকা হলেও এর ভেতরের বস্তুগুলিকে, যেমন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটিকে সঠিক অনুপাতে আঁকা হয়নি।
মহাকাশ বা মহাশূন্য বলতে পৃথিবীর বাইরে অবস্থিত এবং খ-বস্তুসমূহের মধ্যে প্রসারিত স্থানকে বোঝায়। মহাকাশ সম্পূর্ণরূপে ফাঁকা একটি শূন্যস্থান নয়। এটিতে খুবই কম ঘনত্বের কণা থাকে যাদের সিংহভাগই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের প্লাজমা দিয়ে গঠিত। এছাড়াও মহাকাশে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ, চৌম্বক ক্ষেত্রসমূহ, নিউট্রিনো, মহাজাগতিক ধূলি ও মহাজাগতিক রশ্মিসমূহ বিদ্যমান। মহাকাশের ভূমিরেখা তাপমাত্রা , যা মহাবিস্ফোরণের পটভূমি বিকিরণ দ্বারা নির্ধারিত। ছায়াপথসমূহের মধ্যবর্তী প্লাজমা মহাবিশ্বের প্রায় অর্ধেক ব্যারিয়নজাত (সাধারণ) পদার্থ গঠন করেছে; এটির সংখ্যা ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু অপেক্ষাও কম এবং এটির তাপমাত্রা বহু লক্ষ কোটি কেলভিন। পদার্থের স্থানীয় কেন্দ্রীভূত রূপগুলি ঘনীভূত হয়ে নক্ষত্র ও ছায়াপথগুলি গঠন করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে বেশিরভাগ ছায়াপথের ৯০% ভর একটি অজ্ঞাত রূপে বিদ্যমান, যার নাম দেওয়া হয়েছে তমোপদার্থ; এটি অন্যান্য পদার্থের সাথে তড়িৎ-চুম্বকীয় বলসমূহের সাহায্যে নয়, কিন্তু মহাকর্ষীয় বলের মাধ্যমে আন্তঃক্রিয়া সম্পাদন করে। পর্যবেক্ষণ থেকে অনুমান করা হয় যে পর্যবেক্ষণসম্ভব মহাবিশ্বের ভর-শক্তির সিংহভাগই হল তমোশক্তি নামের একপ্রকার শূন্যস্থান শক্তি, যার প্রকৃতি এখনও ভালমতো বোঝা যায়নি। মহাবিশ্বের আয়তনের বেশিরভাগই আন্তঃছায়াপথ স্থান দ্বারা গঠিত, কিন্তু ছায়াপথ ও নক্ষত্রব্যবস্থাগুলি নিজেরাও প্রায় সম্পূর্ণরূপে শূন্যস্থান দিয়েই গঠিত।
মহাকাশ ভূ-পৃষ্ঠের উপরে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে শুরু হয় না। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন মহাকাশ-সংক্রান্ত চুক্তিতে ও বায়বান্তরীক্ষ-সংক্রান্ত নথিপত্র লিপিবদ্ধকরণের জন্য সমুদ্র সমতল থেকে উচ্চতায় অবস্থিত কার্মান রেখাকে মহাকাশের প্রারম্ভ বলে গণ্য করা হয়। ১৯৬৭ সালের ১০ই অক্টোবর বলবৎ হওয়া মহাকাশ চুক্তিটিতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইনের পরিকাঠামোটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী মহাকাশের উপর কোনও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে অসম্ভব ঘোষণা করা হয়েছে এবং সব রাষ্ট্রকে মুক্তভাবে মহাকাশ অনুসন্ধান সম্পাদন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বহুসংখ্যক জাতিসংঘ প্রস্তাব রচিত হয়েছে, তা সত্ত্বেও পৃথিবীর কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ-নিরোধী অস্ত্র পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
খ্রিস্টীয় ২০শ শতকে অধিক-উচ্চতার বেলুন উড্ডয়নের আবির্ভাব হলে মানবজাতি সর্বপ্রথম মহাকাশ অনুসন্ধান শুরু করে। এরপরে মানববাহী রকেট উড্ডয়ন এবং তারও পরে মানব যাত্রীবাহী পৃথিবী আবর্তন (Earth orbit) সম্পন্ন হয়। ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মানব হিসেবে মহাকাশে থেকে পৃথিবী আবর্তন করেন। শূন্যস্থান ও বিকিরণজনিত কারণে রক্তমাংসের মানুষের মাধ্যমে অনুসন্ধানের জন্য মহাকাশ অত্যন্ত প্রতিকূল একটি পরিবেশ। এছাড়া অণু-অভিকর্ষ মানুষের শারীরিক প্রক্রিয়াসমূহের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার ফলে পেশীক্ষয় এবং অস্থিক্ষয় হয়। এইসব স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যা ছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও মহাকাশে মানুষসহ যেকোনও বস্তু প্রেরণ করার খরচও অত্যধিক। মহাকাশে প্রবেশ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে মানব মহাকাশ যাত্রা কেবল নিম্ন কক্ষপথে পৃথিবী আবর্তন এবং চাঁদে গমনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে এর বিপরীতে মানববিহীন মহাকাশযানগুলি সৌরজগতের সবগুলি গ্রহে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
শব্দগত ব্যাখ্যা
বাংলায় নভঃ, ব্যোম ইত্যাদি শব্দেও মহাকাশকে সূচিত করা হয়।
আবিষ্কার
মহাশূন্য সুপ্রাচীনকাল থেকে মানুষের কৌতূহলের বিষয়। প্রত্যেক সভ্যতা ও মানুষ সবসময় মহাকাশকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে দেখেছে। প্রাচীন সভ্যতা সমূহ ও মানুষেরা মহাশূন্যের ব্যাপারে নানা কাল্পনিক ব্যাখ্যা দিত। যথাঃ হাতির উপর উল্টানো থালা, বিশাল চাদর, পবিত্র আত্মা ও দেবতাদের বাসস্থান ইত্যাদি। প্রাচীন গ্রিক, রোমান, মিশরীও, বেবিলনীয়, ভারতীয়, চীনা, মায়া ইত্যাদি সভ্যতা মহাশূন্যকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিন্তু সকল সভ্যতাই মহাকাশকে বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে কম-বেশি গ্রহণ করেছিলো।
প্রাচীনকালের মহাকাশ আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ
প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেছে। প্রাচীন গ্রীসে মহাকাশ কে দর্শনশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তারা নক্ষত্র সমূহকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে নানা রুপ দিয়েছিল এবং এগুলোর অধিকাংশের নাম গ্রিক ও রোমান দেবতাদের নামে রাখা হয়। যা এখনও বিজ্ঞানী ও মহাকাশ পর্যবেক্ষণকারীদের নানা ভাবে সাহায্য করছে। চাঁদ এবং খালি চোখে দৃশ্যমান গ্রহগুলোর গতিপথও এর অন্তর্ভুক্ত। প্রাচীন গ্রিক ও অন্যান্য সভ্যতা সমূহ এর মাধ্যমে রাশিচক্র আবিষ্কার করে। নক্ষত্র, চাঁদ, ধুমকেতু ইত্যাদি প্রাচীনকাল থেকে পর্যবেক্ষণ করে আসছে মানুষ। ঋতুর পরিবর্তন, দিন-রাত, নক্ষত্রের স্থান পরিবর্তন (পরবর্তীতে যা গ্রহ প্রমাণিত হয়) ইত্যাদির হিসাব ও গাণিতিক ব্যাখ্যার সাহায্যে সুপ্রাচীনকাল ও প্রাচীনকালে অনেক সমৃদ্ধি লাভ করে।
মধ্যযুগের মহাকাশ আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ
মধ্যযুগে দূরবীক্ষণ যন্ত্রর আবিষ্কারের ফলে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। হান্স লিপারশে (Hans Lippershey) এবং জাকারিয়াস জেন্সেন (Zacharias Janssen) এর নির্মিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র আরও উন্নত করে তুলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি। গ্যালিলি তার দুরবিনের মাধ্যমে বৃহস্পতি গ্রহর উপগ্রহ এবং শনি গ্রহর বলয় পর্যবেক্ষণ করতেপেরেছিলেন। ১৬১১ সালে ইয়োহানেস কেপলার একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করেন যা দ্বারা জ্যোতির্বিজ্ঞানএ নতুন যুগের সূচনা হয়। এ সময় বুধগ্রহ, শুক্রগ্রহ, মঙ্গলগ্রহ, বৃহস্পতিগ্রহ, শনিগ্রহ সহ অগণিত নক্ষত্র ও ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ এবং আবিষ্কার করা হয়। মধ্যযুগের শেষ পর্যায় ইউরেনাস গ্রহ, নেপচুন গ্রহ, প্লুটো গ্রহ আরও অনেক নক্ষত্র ও ধূমকেতু আবিষ্কার, পর্যবেক্ষণ ও অনুসরণ করা হয়।
মধ্যযুগের শেষ পর্যায় পদার্থ, রাসায়ন ও গণিত ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয় জ্যোতিষশাস্ত্রে। মহাজাগতিক বস্তুর গঠন, আকার-আকৃতি, বায়ু মণ্ডল (গ্যাসীয় পদার্থ সমূহ), কক্ষ পথ, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি ইত্যাদি নির্ণয়র জন্য এসব শাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। এর আগে শুধু গণিতশাস্ত্র ব্যবহার হত।
আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান (মহাকাশ আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ)
১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দের ১৬ই জুলাই জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশ আবিষ্কারের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অভিযান, প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১, যা ২০ জুলাই চাঁদে অবতরণ করে। এই অভিযানে অংশনেন দলপ্রধান নীল আর্মস্ট্রং, চালক মাইকেল কলিন্স, এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র এবং কমান্ড মডিউল। পরবর্তীতে আবিষ্কার হয়েছে প্লুটো সহ অন্যান্য বামন গ্রহ, নেহারিকা, ধূমকেতু, কৃষ্ণগহ্বর।বিজ্ঞান ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী কৃত্রিম উপগ্রহ, দূরবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি। যথাঃ হাবল টেলিস্কোপ। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান মহাবিশ্বকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর কারণে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। তাদের মধ্যে স্টিফেন হকিং (Stephen Hawking) জাম কেনন (Annie Jump Cannon), মারিয়া মিশেল (Maria Mitchell), সি.ডব্লীউ থমবারগ(C.W. Tombaugh) হানরিটা সোয়ান লেভিট (Henrietta Swan Leavitt) প্রমুখ।
উপাদানসমূহ
প্রাথমিক বিবেচনায় মহাকাশূন্যে পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ রয়েছে। তবে বিশদ বিবেচনায় মহাকাশূন্যের উপাদানসমূহ হলো:
তেজস্ক্রীয় পদার্থ (যেমন: তারকা বা তারা বা সূর্য, ধূমকেতু)
অতেজষ্ক্রীয় পদার্থ (যেমন: গ্রহ, উপগ্রহ, বামন গ্রহ, উল্কা)
গ্যাসীয় পদার্থ (যেমন: হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, নাইট্রোজেন, সালফার ইত্যাদি)
প্রতিপদার্থ (যেমন: এন্টিপ্রোটন, এন্টিইলেক্ট্রন)
পরিবেশ
তাপমাত্রা
মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়া
সীমা
আইনত অবস্থান
মহাশূন্য ও অক্ষের মাঝে পার্থক্য
অঞ্চলসমূহ
জিওস্পেস
আন্তঃগ্রহসম্বন্ধী
আন্তঃনাক্ষত্রিক
আন্তঃছায়াপথবর্তী
আরো দেখুন
বহিঃসংযোগ
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:জ্যোতির্বিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:মহাকাশ
বিষয়শ্রেণী:পরিবেশ
বিষয়শ্রেণী:শূন্যস্থান
__নির্ঘণ্ট__
__নতুন_অনুচ্ছেদের_সংযোগ__ |
ব্যবসা | https://bn.wikipedia.org/wiki/ব্যবসা | অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায় ব্যবসায় এক ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড (বিজ্ঞান) যেখানে নির্দিষ্ট সৃষ্টিশীল ও উৎপাদনীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে বৈধভাবে সম্পদ উপার্জন বা লাভের উদ্দেশ্যে লোকজনকে সংগঠিত করা হয় ও তাদের উৎপাদনীয় কর্মকাণ্ড রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ব্যক্তির মুনাফা পাওয়ার আশায় পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদনের মাধ্যমে উপযোগ সৃষ্টি এবং মানুষের বস্তুগত ও অবস্তুগত অভাব পূরণের লক্ষ্যে সেগুলো বণ্টন এবং এর সহায়ক সবরকম বৈধ, ঝুঁকিবহুল ও ধারাবাহিক কার্যকে ব্যবসা বলে।
আইনানুসারে, ব্যবসা বলতে সেই সংগঠনকে বুঝায়, যা অর্থের বিনিময়ে ভোক্তাকে পণ্য বা সেবা কিংবা, দুটো সুবিধাই প্রদান করে। পুঁজিবাদ অর্থনীতিতে ব্যবসায় লক্ষণীয়ভাবে বিদ্যমান এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানে প্রায়, সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হয়, যা গঠন করা হয় মূলত মুনাফা অর্জন করে মালিকের পুঁজি বৃদ্ধির জন্যে। ব্যবসায় মুনাফার জন্য ব্যক্তি মালিকানার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গুলোর মালিক বা পরিচালকবৃন্দের মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হলো, ঝুঁকি গ্রহণ ও কার্যের বিপরীতে বিনিয়োগকৃত পুঁজি ফেরত পাওয়া। মুনাফাবিহীন বা রাষ্ট্র মালিকানার অধীনেও ব্যবসায় করা যায়।
"ব্যবসায়" শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে "ব্যস্ত থাকা" অর্থাৎ হয় ব্যক্তিগতভাবে অথবা সমষ্টিগত ভাবে বাণিজ্যিক ভাবে, সমর্থনযোগ্য ও লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকা। সুবিধামত "ব্যবসায়" শব্দটির কমপক্ষে তিনটি ব্যবহার রয়েছে -
একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝাতে একক ভাবে ব্যবহার হয়।
একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার বাজার ক্ষেত্র বুঝাতে সাধারনত ব্যবহার হয়; যেমন - ফুলের ব্যবসায়
মিশ্র অর্থে, বা বৃহৎ অর্থে পণ্য ও সেবার সরবরাহ করার জন্যে সকলপ্রকার কার্য সম্পাদন করে এমন দল বা গোষ্ঠীকে বুঝায়।
ব্যবসায়ের ধরন
মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় মূলত পাঁচ ধরনের হয়। যথা:
একমালিকানা ব্যবসায়
অংশীদারি ব্যবসায়
যৌথ মূলধনী অথবা কোম্পানি ব্যবসায়
সমবায় সমিতি
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়
আরও দেখুন
হিসাববিজ্ঞান
বিজ্ঞাপন
ব্যাংক
ব্যবসায়ী
পুঁজিবাদ
বাণিজ্য
ক্রয়বিক্রয়
কোম্পানি
ই-বাণিজ্য
অর্থনীতি
ব্যবসায় উদ্যোগ
অর্থসংস্থান
বিক্রয়াধিকার প্রদান
মানব সম্পদ
শিল্প (অর্থশাস্ত্র)
নবীকরণ
বীমা
মেধা সম্পদ
বেকারত্ব
শ্রম অর্থশাস্ত্র
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম
উৎপাদন
বিপণন
অর্থ (টাকা)
কৌশলগত পরিকল্পনা
কর
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:ব্যবসা
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:উদ্যোগ
বিষয়শ্রেণী:ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান |
যোগাযোগ | https://bn.wikipedia.org/wiki/যোগাযোগ | thumb|শ্যানন তরঙ্গ যোগাযোগ মডেল
thumb|যোগাযোগ
যোগাযোগ হল আদান প্রদানের উপায়। মানুষ থেকে মানুষ বা যন্ত্র থেকে যন্ত্রে তথ্য আদান প্রদান হতে পারে। মাধ্যম-ও তথ্য হতে পারে তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ বা রেডিও-ওয়েভ।
এছাড়াও যোগাযোগের মাধ্যমে মনের ভাব আদান প্রদান করা হয়। যোগাযোগ করার জন্য যে ধরনে মিডিয়া ব্যবহার করা হয় তা নিচে দেওয়া হলঃ
ভিজুয়্যাল যোগাযোগ
ধ্বনির সাহায্যে যোগাযোগ
স্পর্শের সাহায্যে যোগাযোগ
গন্ধের সাহায্যে যোগাযোগ
লেখার সাহায্যে যোগাযোগ
যোগাযোগ ভার হতে পারে কথ্য বা অ-কথ্য। অনেকসময় অনেক ভাবে যোগাযোগ হয়। শুধু প্রাণী জগতে মানুষেরা যোগাযোগ করে না। প্রতেক্য পশু পাখি যোগাযোগ করতে পারে।
যোগাযোগ কীভাবে কাজ করে
যোগাযোগ বলতে অনেকেই কথা বলা বা দেখা করাকে বুঝে থাকি। যদি বই থেকে উদৃতি দিতে চাই, তাহলে মনের ভাব প্রকাশের জন্য অন্যের কাছে বার্তার আদান প্রদানকে যোগাযোগের প্রাথমিক পরিচয় হিসেবে বলা যায়।কিন্তু এর বাহিরেও একটু মজার আলাপ রেয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক,
১. কথা না বলেই যোগাযোগ করা
প্রচলিত ধারণামতে মানুষ শুধু কথা বলেই যোগাযোগ করতে পারে বলে জেনে এসেছি। আসলে কথা না বলেই আমরা সবচেয়ে কার্যকর যোগাযোগ করে থাকি।
যোগাযোগ শুধু কথা বলার মত সাংকেতিক মাধ্যমে সিমাবদ্ধ নয়।কথা বলা শুধু একটি মাধ্যম মাত্র। যোগাযোগ বাস্তবায়ন হওয়ার জন্য বিপরীত দিকে অবস্থিত মানুষটির ফিডব্যাকই যথেষ্ট। এই ফিডব্যাক কথার মাধ্যমেও হতে পারে অথবা যোগাযোগকৃতদের মাঝে প্রচলিত সিম্বল দিয়েও হতে পারে। যেমন একজন ছেলে আরেকজন মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের মাঝে কথা না হলেও অনুভূতির আদানপ্রদান পর্যায়ক্রমিকভাবে ঘটেই চলেছে কিন্ত।
২.যোগাযোগ একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম
মোবাইলগুলো টাওয়ারের সাথে যুক্ত থাকতে সবসময় নেটওয়ার্ক বাউন্ডারি বানিয়ে রাখে। আশেপাশের টাওয়ারগুলোর সাথে নিজে নিজে যুক্ত হয়ে যায়।
মানুষের যোগাযোগ সিষ্টেমটাও ঠিক এরকমি। মানুষ সার্বক্ষণিক একটি নেটওয়ার্ক জালের মাঝে বিচরণ করে আর নিজের অজান্তেই বিপরীত দিকের মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ করে থাকে।
গ্রামের রাস্থা দিয়ে হেটে গেলে বলতে হয়না যে আমি শহর থেকে এসেছি। পর্যায়ক্রমিকভাবে যে তরঙ্গের মত বার্তাগুলো ছড়িয়ে পড়ছে এটাই এর কারণ।
৩. সকল যোগাযোগের একটি উদ্দেশ্য থাকে
আমারা প্রচিত ধারণায় শুধু কথা বলেই যোগাযোগ রক্ষা করা যায় বলে জেনে এসেছি। কিন্তু কথা না বলেও যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। আর এই সকল যোগাযোগই একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য হয়ে থাকে। ছোটভাবে বলতে গেলে, যোগাযোগ শুরুই হয় একটি নিদৃষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে। এই উদ্দেশ্যগুলো হতে পারে নিজের অবস্থান বা উপস্থিতি প্রকাশের জন্য।
তবে যোগাযোগের মৌলিক উদ্দেশ্য বিপরীত দিকের (যোগাযোগককৃত) মানুষের বুঝতে পারা। এছাড়াও যোগাযোগের মাধ্যমে চিন্তাধারা, অনুভূতি, এবং জানার পরিধিরর পরিবর্তন করা যায়।
৪. সফল যোগাযোগ
আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ চক্রে সকল যোগাযোগ আবার সফল হয় না। একটি সফল যোগাযোগের জন্য বিপরীত দিকে অবস্থিত ব্যক্তির ফিডব্যাক আবশ্যক। কারণ যোগাযোগ হলো ভাবের আদান প্রোদান। বিপরীত দিক থেকে ফিডব্যাক ছাড়া এই যোগাযোগ সম্ভব নয়। তবে এই ফিডব্যাক শুধুমাত্র বিপরীত দিকের ব্যক্তির বুঝতে পারার মাধ্যমেই সম্পন্ন হতে পারে।
৫.সিম্বল যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে
যোগাযোগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। আর এই চলমান প্রক্রিয়াকে নিয়মিত করতে সিম্বল ব্যবহার করা হয়। যেমন ভাষা, লেখা,অঅঙ্গভঙ্গি এগুলো প্রচলিত সিম্বল। তবে এই সিম্বল আমাদের সামাজিক অবস্থান, চলাফেরা, এলাকাভেদে আলাদা আলাদা অর্থ বহন করতে পারে।যেমন একই সিম্বল এলাকার ভিন্নতার কারণে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে। একটা কথা প্রচলিত আছে, এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি।
আরও দেখুন
একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতা
আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগ
সংকেত (যোগাযোগ ব্যবস্থা)
অতীন্দ্রিয় দূরানুভূতি
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:যোগাযোগ
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
el:Επικοινωνία
eo:Komunikadteĥnikoj
fa:ارتباطات
he:תקשורת
ja:通信
ru:Общение
uk:Комунікація
zh:通信 |
সরকার | https://bn.wikipedia.org/wiki/সরকার | thumb|300px|এলিথু ভেড্ডার, গভর্নমেন্ট (১৮৯৬)। লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস, টমাস জেফারসন বিল্ডিং, ওয়াশিংটন ডি.সি.
সরকার বা শাসনব্যবস্থা (ইং: Government) হলো কোনো দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ যার মাধ্যমে দেশটির শাসন কার্য পরিচালিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি যেমন সংসদ সদস্যদের দ্বারা গঠিত হয়। সরকারের মৌলিক দায়িত্ব জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী দেশের নিরাপত্তা বিধান করা, সমাজের শান্তি বজায় রাখা, মানুষের জান-মাল রক্ষা করা এবং বিবাদের ক্ষেত্রে বিচারকার্য পরিচালনা করা। সরকার তার ওপর আরোপিত দায়িত্বসমূহ পালনের স্বার্থে রাজস্ব আহরণ করে এবং শাসনকার্য পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তা ব্যয় করে থাকে।"government" -- Dictionary.com: cites 3 separate dictionaries
সাধারণত "সরকার" শব্দটির দ্বারা একটি সাধারণ সরকার বা সার্বভৌম রাষ্ট্রকে বোঝায়। সরকার স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক হতে পারে। যদিও বাণিজ্যিক, শিক্ষাগত, ধর্মীয়, বা অন্যান্য বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলিও নিজস্ব পরিচালন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাসিত হয়। এই জাতীয় কর্তৃপক্ষ বোর্ড অফ ডিরেক্টর, ম্যানেজার, গভর্নর নামে পরিচিত; এগুলিকে প্রশাসন (যেমন বিদ্যালয় প্রশাসন) বা কাউন্সিল অফ এল্ডার্স (যেমন খ্রিষ্টান চার্চে) নামেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সরকারের আকার অঞ্চল বা উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়।
সংগঠনের আয়তন বৃদ্ধি হলে সরকারের জটিলতাও বাড়ে। তাই ছোটো শহর বা ছোটো-মাঝারি বেসরকারি সংস্থাগুলিতে আধিকারিকের সংখ্যা বড়ো বড়ো বহুজাতিক কর্পোরেশনের তুলনায় কম রাখা হয়। বড়ো সংস্থায় বহুমুখী দপ্তর ব্যবস্থা ও প্রশাসনের ক্রমপর্যায়ে লক্ষিত হয়। জটিলতা বাড়লে সরকারের কাজ-কর্মের প্রকৃতিও জটিল হয়ে পড়ে। তাই আনুষ্ঠানিক নীতি ও কার্যপদ্ধতি ঘোষণারও প্রয়োজন হয়।
সরকারের ধরন
300px|thumb|right| সরকারের বিভিন্ন ধরন। বিস্তারিত দেখতে মানচিত্রে ক্লিক করুন।
thumb|right|300px|'সকল সংসদের জননী' যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট
নৈরাজ্যবাদ – এটি এমন একটি রাজনৈতিক দর্শন যা রাষ্ট্রকে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও অবাঞ্ছনীয় মনে করে এবং রাষ্ট্রহীন সমাজের সপক্ষে মতপ্রকাশ করে।
কর্তৃত্ববাদী সরকার – কর্তৃত্ববাদী সরকার কোনো প্রজাতন্ত্র বা যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্বের সপক্ষে মতপ্রকাশ করে। এটি অনির্বাচিত শাসকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থা, যাঁরা কিছুটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন।
সাংবিধানিক রাজতন্ত্র – এই জাতীয় সরকারে একটি রাজতন্ত্র বিদ্যমান; কিন্তু উক্ত রাজতন্ত্রের ক্ষমতা আইন বা ঘোষিত সংবিধানের দ্বারা সীমাবদ্ধ। উদাহরণ: যুক্তরাজ্য।Fotopoulos, Takis, The Multidimensional Crisis and Inclusive Democracy. (Athens: Gordios, 2005).(English translation of the book with the same title published in Greek).
সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র – এই জাতীয় সরকারের ক্ষমতা আইন বা আনুষ্ঠানিক সংবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং এই সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ দ্বারা নির্বাচিত। উল্লেখ্য, প্রাচীন স্পার্টা ঘোষিতভাবে ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র; কিন্তু সেদেশের অধিকাংশ মানুষই ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতেন। আবার প্রথম যুগের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ছিল গণতান্ত্রিক দেশ; কিন্তু ক্রীতদাসদের সেযুগে ভোটদানের অধিকার ছিল না।
গণতন্ত্র – গণতন্ত্র হল এমন একটি সরকার যা দেশের জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশ দ্বারা নির্বাচিত। এই সরকার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বা সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র দুইই হতে পারে। গণতন্ত্রের ব্যক্তির ভোটদানের অধিকার তার সামাজিক মর্যাদা বা সম্পদের উপর নির্ভরশীল নয়।
একনায়কতন্ত্র – একক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় শাসিত দেশের সরকার। স্বৈরাচারী শাসক সাধারণত বলপূর্বক ক্ষমতা দখল করেন।American 503 (আরও দেখুন স্বৈরতন্ত্র ও রাষ্ট্রতন্ত্র)
রাজতন্ত্র – এমন ব্যক্তির শাসন যিনি শাসনক্ষমতা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হন।
সংকীর্ণ গোষ্ঠীতন্ত্র – একই স্বার্থবিশিষ্ট ছোটো ছোটো গোষ্ঠী বা পরিবারের শাসন।American 1225
ধনিকতন্ত্র – ধনবান শ্রেণির শাসন।
দিব্যতন্ত্র – ধর্মীয় নেতাদের শাসনতন্ত্র।American 1793
সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী সরকার – এই জাতীয় সরকার সরকার ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজ কর্তৃত্ব আরোপ করে।
আইনানুগমনবাদী সরকার – এই জাতীয় সরকার আইনের শাসনকে চূড়ান্ত মনে করে; আইনমান্যকারীদের পুরস্কৃত করে ও আইনভঙ্গকারীদের কঠিন শাস্তি দেয়।
আরও দেখুন
পৌরনীতি
প্রাকৃতিক এবং আইনগত অধিকার
স্থানীয় সরকার
রাজনৈতিক অর্থনীতি
রাষ্ট্র
নির্বাচনী ব্যবস্থা
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
Kenoyer, J. M. Ancient Cities of the Indus Civilization. Oxford: Oxford University Press, 1998
Possehl, Gregory L. Harappan Civilization: A Recent Perspective. New Delhi: Oxford University Press, 1993
Indus Age: The Writing System. Philadelphia: University of Pennsylvania Press, 1996
“Revolution in the Urban Revolution: The Emergence of Indus Urbanisation,” Annual Review of Anthropology 19 (1990): 261–282.
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:সরকার
বিষয়শ্রেণী:সরকারের রূপ
বিষয়শ্রেণী:সরকার পদ্ধতি
বিষয়শ্রেণী:সরকারি সংস্থা
বিষয়শ্রেণী:রাজনৈতিক পরিভাষা
বিষয়শ্রেণী:রাজনৈতিক মতবাদ
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
রাষ্ট্র | https://bn.wikipedia.org/wiki/রাষ্ট্র | |
যুদ্ধ | https://bn.wikipedia.org/wiki/যুদ্ধ | যুদ্ধ হলো রাজ্য, সরকার, সমাজ বা আধাসামরিক বাহিনী যেমন ভাড়াটে সৈন্য, বিদ্রোহী এবং যে কোনো প্রকারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে একটি তীব্র সশস্ত্র সংঘর্ষ। এক্ষেত্রে সাধারণত নিয়মিত বা অনিয়মিত সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের ফলস্বরুপ চরম হিংস্রতা, আগ্রাসন, ধ্বংসলীলা এবং
বহুসংখ্যক মৃত্যু দেখা যায়। অন্যদিকে, যুদ্ধবিগ্রহ বলতে যুদ্ধের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলিকে বা যুদ্ধ সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপ বা বিভিন্ন প্রকারের যুদ্ধকে বোঝানো হয়ে থাকে। কোনো যুদ্ধ পূর্ণভাবে বৈধ সামরিক লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও হতে পারে এবং এর ফলে প্রচুর অসামরিক এবং সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।
যুদ্ধবিদ্যাকে কখনও কখনও পোলেমোলজি বলা হয়, গ্রীক পোলেমোস থেকে যার অর্থ "যুদ্ধ", এবং-লজি, যার অর্থ "অধ্যয়ন"।
যদিও যুদ্ধবিশারদরা যুদ্ধকে মানব প্রবৃত্তির সার্বজনীন এবং আদিম দিক হিসাবে দেখেন, Šmihula, Daniel (2013): The Use of Force in International Relations, p. 67, . কিছু মানুষ একে নির্দিষ্ট সামাজিক-সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বা পরিবেশগত পরিস্থিতির ফলাফল বলে মনে করেন।
ব্যুৎপত্তি
340px|center
"যুধ্" একটি সংস্কৃত ক্রিয়ামূল যার অর্থ "লড়াই করা বা যুদ্ধ করা"। "যুধ্" ক্রিয়ামূলের সাথে "ক্ত" কৃৎ-প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ "অতীতে সংঘটিত হয়েছে"। অর্থ্যাৎ যুদ্ধ = যুধ্ + ক্ত। প্রত্যয়টি যুক্ত হবার সময় এর "ক্" লুপ্ত হয়ে ক্রিয়ামূলের অন্ত্যে অবস্থিত "ধ্" ও প্রত্যয়ের "ত" একত্রে মিলে "দ্ধ" গঠন করেছে।
ইতিহাস
প্রাগৈতিহাসিক যুদ্ধের প্রাচীনতম প্রমাণটি হলো জেবেল সাহাবাতে অবস্থিত একটি মেসোলিথিক কবরস্থান, যা আনুমানিক প্রায় ১৪,০০০ বছরের পুরোনো। সেখানকার কঙ্কালগুলির প্রায় পঁয়তাল্লিশ শতাংশই ভয়ানক মৃত্যুর চিহ্ন প্রদর্শন করে। প্রায় ৫,০০০ বছর আগে, যখন থেকে রাজ্যগুলির উত্থান শুরু হয়েছে, তখন থেকেই বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে সামরিক ক্রিয়াকলাপ দেখা গেছে। বারুদের আবিষ্কার এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আধুনিক পন্থার যুদ্ধবিগ্রহের পথপ্রদর্শক। কনওয়ে ডব্লিউ. হেনডারসনের মতে, "একটি উৎস অনুসারে, খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ থেকে বিংশ শতাব্দীর শেষের মধ্যে ১৪,৫০০ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যেখানে মাঝের শান্তিপূর্ণ ৩০০ বছর বাদ দিলে ৩.৫ বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।" এই অনুমানের একটি প্রতিকূল পর্যালোচনা এর প্রবক্তাদের নিম্নলিখিত সম্পর্কে উল্লেখ করেছে: "তাছাড়া, হয়তো যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যাটা অসম্ভব বেশি মনে হয়েছিল, তাই তিনি 'প্রায় ৩,৬৪০,০০০,০০০জন লোক যুদ্ধে কিংবা যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট রোগে নিহত হয়েছিল'- পরিবর্তে লিখেছেন 'প্রায় ১,২৪০,০০০,০০০ জন লোক...নিহত হয়েছিল।'" নিম্নসংখ্যার পরিসংখ্যানটি অধিক বিশ্বাসযোগ্য, তবে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮০ অব্দ থেকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সংঘটিত গণহিংসার ১০০টি মারাত্মক ঘটনা (কমপক্ষে ৩০০,০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৬ মিলিয়ন হতাহতের সংখ্যাবিশিষ্ট যুদ্ধ এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগ) বিবেচনা করা হলে, যেখানে সর্বমোট প্রায় ৪৫৫ মিলিয়ন লোকের প্রাণ যায়, উক্ত পরিসংখ্যানটির উচ্চতর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি । আদিম যুদ্ধগুলির ফলস্বরুপ প্রায় ১৫.১% মৃত্যু এবং ৪০০ মিলিয়ন লোক হতাহতের শিকার হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। একে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ থেকে বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত যে ১,২৪০ মিলিয়ন লোক মারা গেছে, তার সাথে যোগ করা হলে, মানবজাতির ঐতিহাসিক ও প্রাগৈতিহাসিক সময়ের যুদ্ধে মোট ১,৬৪০,০০০,০০০ জন লোক নিহত হয়েছে (যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও অন্যান্য দুর্যোগে মৃতের সংখ্যাসহ)। তুলনামুলকভাবে বিংশ শতাব্দীতে সংক্রামক রোগের কারণে আনুািক ১,৬৮০,০০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেন্স এইচ. কিলে তাঁর ওয়ার বিফোর সিভিলাইজেশন বইতে বলেন, ইতিহাসের পরিচিত সমাজগুলোর প্রায় ৯০-৯৫% অনিয়মিত যুদ্ধে লিপ্ত ছিল এবং অনেকে নিয়মিত যুদ্ধও করত।
যুদ্ধের প্রকারভেদ
থাম্ব|প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ইপ্রেসের তৃতীয় যুদ্ধ, ১৯১৭ -এ রাসায়নিক যুদ্ধের জন্য সজ্জিত অস্ট্রেলিয়ান ৪র্থ পদাতিক দলের সৈন্যরা
অসমমিতিক যুদ্ধ হল সামরিক ক্ষমতা বা আকারের যুদ্ধরতদের মধ্যে একটি যুদ্ধ বা প্রতিযোগিতা।
জৈবিক যুদ্ধ বা জীবাণু যুদ্ধ হচ্ছে অস্ত্র হিসেবে জৈবিক বিষ বা সংক্রামক এজেন্ট যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের ব্যবহার।
রাসায়নিক যুদ্ধ হচ্ছে মারণাস্ত্র হিসেবে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার। রাসায়নিক অস্ত্র হিসাবে বিষাক্ত গ্যাস প্রধানত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল, এবং এর ফলে আনুমানিক ১ লক্ষেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক সহ এক মিলিয়নেরও বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।
ঠান্ডা যুদ্ধ বা স্নায়ুযুদ্ধ হল প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘাত ছাড়াই একটি তীব্র আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কিন্তু এটির একটি টেকসই হুমকি সহ, উচ্চ স্তরের সামরিক প্রস্তুতি, ব্যয় এবং উন্নয়ন সহ, এবং পরোক্ষ উপায়ে সক্রিয় সংঘাত জড়িত হতে পারে।যেমন: অর্থনৈতিক যুদ্ধ, রাজনৈতিক যুদ্ধ, গোপন অপারেশন, গুপ্তচরবৃত্তি, সাইবারওয়ারফেয়ার বা প্রক্সি যুদ্ধ।
প্রচলিত যুদ্ধ হয় দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মাঝে তবে পারমাণবিক অস্ত্র, জৈব অস্ত্র অথবা রাসায়নিক অস্ত্র কম ব্যবহৃত হয় বা হয়না।
সাইবারওয়ারফেয়ার একটি জাতি-রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক আক্রমণ এবং অন্য দেশের তথ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে।
বিদ্রোহ হল কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ, এর বাইরে যারা বিদ্রোহে অংশ নিচ্ছে তারা বিদ্রোহী (আইনযুক্ত যোদ্ধা) হিসাবে স্বীকৃত নয়।একটি বিদ্রোহ পাল্টা -অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লড়াই করা যেতে পারে ও জনসংখ্যার সুরক্ষার ব্যবস্থা দ্বারা এবং ক্ষমতাসীন শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের দাবিকে দুর্বল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরোধিতা করা ।
তথ্য যুদ্ধ হল তথ্য সম্পদ এবং সিস্টেমের বিরুদ্ধে, চারটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো (বিদ্যুৎ গ্রিড, যোগাযোগ, আর্থিক এবং পরিবহন) সমর্থনকারী কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্কগুলির বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ধ্বংসাত্মক শক্তি প্রয়োগ করা।
পারমাণবিক যুদ্ধ হল এমন যুদ্ধ যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র হল প্রাথমিক বা প্রধান আত্মসমর্পণ অর্জনের পদ্ধতি।
সর্বাত্মক যুদ্ধ হচ্ছে যুদ্ধ আইন আমান্য করে যুদ্ধ বৈধ সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর কোন সীমাবদ্ধতা না রাখা, অস্ত্র ও কৌশল ব্যবহার করে যার ফলে উল্লেখযোগ্য বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে বা বন্ধুত্বপূর্ণ বেসামরিক জনগণের দ্বারা উল্লেখযোগ্য ত্যাগের প্রয়োজনে যুদ্ধ প্রচেষ্টার দাবি করা।
অপ্রচলিত যুদ্ধ, প্রচলিত যুদ্ধের বিপরীত একটি বিদ্যমান সংঘাতের এক পক্ষের জন্য সম্মতি, আত্মসমর্পণ বা গোপন সমর্থনের মাধ্যমে সামরিক বিজয় অর্জনের একটি প্রচেষ্টা।
লক্ষ্য
অনেক সত্তা যুদ্ধে যাওয়ার কথা ভাবছে এবং যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে কিনা তা বিবেচনা করে সত্তাগুলি একটি প্রচারের হাতিয়ার হিসাবে যুদ্ধের লক্ষ্য প্রণয়ন করতে পারে। যুদ্ধের লক্ষ্য জাতীয় সামরিক বাহিনীর সমস্যা সমাধানের বিকল্প।
সংজ্ঞা:
ফ্রাইড যুদ্ধের লক্ষ্যকে "একটি যুদ্ধের সফল সমাপ্তির শেষে প্রত্যাশিত আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক, সামরিক বা অন্যান্য সুবিধা পাওয়া"
শ্রেণিবিভাগ
স্পষ্ট ও অস্পষ্ট লক্ষ্য
স্পষ্ট যুদ্ধের লক্ষ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে (উদাহরণস্বরূপ) অঞ্চল অধিগ্রহণ (যেমন: ২০ শতকের প্রথমে লেবেনসরামের জার্মান লক্ষ্য ) বা অর্থনৈতিক ছাড়ের স্বীকৃতিসরূপ (যেমন: অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধগুলি)।
অস্পষ্ট যুদ্ধের লক্ষ্য – বিশ্বাসযোগ্যতা বা খ্যাতি সংগ্রহের মতো - আরও স্পষ্ট অভিব্যক্তি থাকতে পারে ("বিজয় প্রতিপত্তি পুনরুদ্ধার করে, সংযুক্তি শক্তি বৃদ্ধি করে")।
প্রভাব
যুদ্ধের ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। যুদ্ধ মানেই মানবতার পরাজয়। যুদ্ধে নিরাপরাধ মানুষের মৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে, নারী নির্যাতন ও শিশু মৃত্যুর ঘটনা বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করে দেয়।
যুদ্ধে প্রাণহানির সাথে সাথে যে বিপুল সম্পদহানি বা, অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয় তা পূরণ করতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। এ কারণে প্রায় প্রতি সময়েই যুদ্ধের পরে অবধারিতভাবে দুর্ভিক্ষ আসে, অনেক সময় দেখা দেয় মহামারী।
এছাড়া, যুদ্ধের ফলে যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষের মাঝে যে বিভেদ-বিদ্বেষ আর, সন্দেহ-অবিশ্বাসের জন্ম হয় তা দূর হতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অনেক সময় যুগ যুগ ধরে এমনকি শতাব্দী ব্যাপী এই হিংসা ও বিদ্বেষ মানুষের সুস্থ-স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।
অনুপ্রেরণামূলক তত্ত্বসমূহ
নৈতিকতা
সমস্ত যুদ্ধই অমানবিক, অগ্রহণযোগ্য ও অনৈতিক। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। যুদ্ধ মানেই মৃত্যু এবং অধিকাংশ মৃত্যুই নিরাপরাধ মানুষের। শান্তিকামী মানুষ যুদ্ধ চায় না।
তাই, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সবার চেষ্টা এটাই হওয়া উচিত, যেন যুদ্ধটা না ঘটে। এখন প্রশ্ন, যুদ্ধ কেন ঘটে?
যুদ্ধ তখনই ঘটে যখন নেগোসিয়েশন বা, আলাপ-আলোচনা ব্যর্থ হয়।
নেগোসিয়েশন কেন ব্যর্থ হয়?
নেগোসিয়েশন তখনই ব্যর্থ হয় যখন কোন ইস্যুতে বা, কোন বিষয়ে একমত হওয়া যায় না।
কোন বিষয়ে কখন একমত হওয়া যায় না?
যখন সেই বিষয় বা, বিষয়গুলোর সাথে কিছু পক্ষ বা, মানুষ যুক্ত থাকে।
বিষয় বা, বিষয়গুলোর সাথে কেন মানুষ যুক্ত হয়?
যখন সেইসব বিষয় বা, বিষয়গুলোর সাথে মানুষের স্বার্থ জড়িত থাকে।
কাজেই, যুদ্ধের রুট কজ্ বা, গোড়ার কারণ হলো স্বার্থপরতা। মানুষ স্বার্থের উর্দ্ধে উঠতে পারলেই সমস্ত যুদ্ধ বন্ধ হওয়া সম্ভব।
এখন তাহলে দেখা উচিত কোন কোন স্বার্থের কারণে মানুষ একত্রিত হয় এবং যুদ্ধের পরিণতি ডেকে আনে। অর্থাৎ, মানুষের ক্ষতিকর সামষ্টিক স্বার্থর বিষয়গুলো কি কি?
অনেকগুলোই হতে পারে। এর মধ্যে প্রথমেই আসবে পাওয়ার বা, ক্ষমতা লিপ্সা। অর্থাৎ, নিজেদেরকে অন্যদের থেকে বেশি ক্ষমতাশালী করতে চাওয়ার বাসনা।
আরেকটা বিষয় হতে পারে, শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা। অর্থাৎ, নিজেদেরকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠজ্ঞান করা।
কাজেই, যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইলে এবং মানুষের নৈতিকতার বিকাশ লাভের স্বার্থে মানুষের ক্ষমতা লিপ্সা ও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার বিষয়কে ত্যাগ করতে হবে |
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:যুদ্ধ
বিষয়শ্রেণী:সহিংসতা
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:বিরোধ নিষ্পত্তি
বিষয়শ্রেণী:সশস্ত্র সংঘাত |
টেলিযোগাযোগ | https://bn.wikipedia.org/wiki/টেলিযোগাযোগ | thumb|এর্ডফুঙ্কশ্টেল রাইস্টিং–জার্মানিস্থ পরাবৃত্তাকার স্যাটেলাইট
thumb|অপটিক প্রজেক্ট থেকে নেয়া ইন্টারনেটের অগণিত পথের একাংশের প্রত্যক্ষীকরণ
টেলিযোগাযোগ বলতে মূলত বোঝায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে দূরবর্তী কোনো স্থানে সংকেত তথা বার্তা পাঠানো। এই যোগাযোগ তারের মাধ্যমে অথবা তারবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করেও হতে পারে। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকে দূর পাল্লার যোগাযোগ প্রচলিত হয়।জামান, তৌফিক; পাপড়ী, নুরুন্নাহার এবং সাহিদুল ইসলাম (২০১৭). বাংলাদেশ ও বিশ্বে মা কিছু প্রথম (চতুর্থ সংস্করণ). পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ঢাকা পরবর্তীতে তারযুক্ত ও তারহীন বার্তা প্রেরণের হরেক মাধ্যম বিবর্তিত হয়েছে। টেলিফোন বা রেডিও যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে তড়িচ্চুম্বক তরঙ্গ পাঠানো হচ্ছে। এ যুগে টেলিযোগাযোগ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এবং এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত যন্ত্র যেমন টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন এবং ওয়াকিটকি সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। এ সকল যন্ত্রকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক রয়েছে। যেমন: পাবলিক টেলিফোন নেটওয়ার্ক, বেতার নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে একটি কম্পিউটারের সাথে আরেকটি কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপনও একপ্রকার টেলিযোগাযোগ।
টেলিযোগাযোগে ব্যবহৃত প্রযুক্তি
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মূল অংশগুলো হলো তিনটি:
ট্রান্সমিটার বা প্রেরণযন্ত্র। এটি বার্তাকে প্রচার উপযোগী সংকেতে পরিণত করে।
ট্রান্সমিশন মিডিয়াম বা প্রচার মাধ্যম: যার মধ্য দিয়ে সংকেত বা সিগনাল পাঠানো হয়। যেমন: বায়ু।
রিসিভার বা গ্রাহকযন্ত্র: এটি সংকেত গ্রহণ করে এবং সংকেতকে ব্যাবহারযোগ্য বার্তায় পরিবর্তন করে।
উদাহরণস্বরূপ, বেতার সম্প্রচারের কথা বলা যায়। এই ক্ষেত্রে, সম্প্রচার টাওয়ারটি হলো ট্রান্সমিটার, রেডিও হলো রিসিভার এবং প্রচার মাধ্যম হলো শূন্যস্থান। অনেক ক্ষেত্রেই টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা উভমুখী যোগাযোগ রক্ষা করে এবং একই যন্ত্র ট্রান্সমিটার ও রিসিভার হিসেবে কাজ করে। এগুলোকে বলা হয় ট্রান্সিভার। যেমন: মোবাইল ফোন একটি ট্রান্সিভার। ফোনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগকে বলা হয় পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট যোগাযোগ, কারণ এ ক্ষেত্রে একটি মাত্র ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ বলা হয় ব্রডকাস্ট (সম্প্রচার) যোগাযোগ, কারণ এ ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ও অসংখ্য রিসিভারের মধ্যে সংযোগ ঘটছে।
সিগনাল অ্যানালগ ও ডিজিটাল দু’ধরনের হতে পারে। অ্যানালগ সিগনালের ক্ষেত্রে তথ্যের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে সংকেতের শক্তি ক্রমাগত পরিবর্তন করা হয়। ডিজিটাল সিগনালের বেলায় তথ্যকে কিছু নির্দিষ্ট মানের (যথা ০ এবং ১) সমন্বয়ে সংকেত এ পরিণত করা হয়।
পরস্পরের সাথে সংযুক্ত এক গুচ্ছ ট্রান্সমিটার, রিসিভার বা ট্রান্সিভারের সমন্বয়ে গঠিত হয় নেটওয়ার্ক। ডিজিটাল নেটওয়ার্কে এক বা একাধিক রাউটার থাকে, যার কাজ হলো একটি নির্দিষ্ট বাবহারকারীর কাছে তথ্য পাঠানো। অ্যানালগ নেটওয়ার্কে এ এক বা একাধিক সুইচ থাকে যা দুই বা ততোধিক ব্যবহারকারীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। দুই ধরনের নেটওয়ার্ক ক্ষেত্রেই বহু দূরে সিগনাল পাঠাতে রিপিটার প্রয়োজন হয়, যাতে দুর্বল অ্যানালগ সিগনালকে বিবর্ধিত করে শক্তিশালী এবং বিকৃত ডিজিটাল সিগনালকে পুনর্গঠন করা যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো শব্দ (যা নয়েজ নামে পরিচিত) যাতে সিগনালকে বিকৃত করতে না পারে, সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।
চ্যানেল হলো এক ধরনের প্রচার মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে একই সময়ে একাধিক তথ্য প্রবাহ পাঠানো যায়। যেমন, একটি বেতার কেন্দ্র ৯৬ মেগাহার্জ বেতার তরঙ্গে, আবার আরেকটি বেতার কেন্দ্র একই সময়ে ৯৪.৫ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমকে তরঙ্গ কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি অনুসারে বিভক্ত করা হয়েছে এবং একেকটি বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য এক একটি ফ্রিকোয়েন্সি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আবার সম্প্রচারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করেও একটি চ্যানেল নির্দিষ্ট করা যায়।
মডুলেশন
তথ্য পাঠানোর উদ্দেশ্যে সিগনালের আকার পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে বলা হয় মডুলেশন (উপযোজন)। মডুলেশন হলো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাণ। একটি সিগনালে উপস্থিত তথ্য আরেকটি সিগনালের উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য সর্বদাই মডুলেশন পদ্ধতি বাবহৃত হয়। মডুলেশন ব্যবহার করা হয় সিগনালের কম্পাঙ্ক বাড়ানোর জন্য। কারণ বায়ু মাধ্যমে নিম্ন কম্পাঙ্কের সিগনাল খুব বেশি দূরে পাঠানো সম্ভব নয়। তাই সিগনাল পাঠানোর পূর্বে একে উচ্চ কম্পাঙ্কের আরেকটি সিগনালের উপর স্থাপন করা হয়। এটি করা হয় মূল সিগনালে বা ইনফরমেশন সিগনালে অবস্থিত তথ্য অনুসারে উচ্চ কম্পাঙ্কের সিগনালের কম্পাঙ্ক, বিস্তার () অথবা দশা (phase) পরিবর্তনের মাধ্যমে। সাধারণত মূল সিগনালের বিস্তারের পরিবর্তনের মধ্যে তথ্য উপস্থিত থাকে। উচ্চ কম্পাঙ্কের সিগনালটিকে বলা হয় বাহক সিগনাল বা ক্যারিয়ার সিগনাল। মিশ্র সিগনালটিকে বলে মডুলেটেড সিগনাল।
মডুলেশন অ্যানালগ ও ডিজিটাল দুই প্রকার হতে পারে। ইনফরমেশন সিগনাল অনুসারে বাহক সিগনালের কোন বৈশিষ্ট্যটি পরিবর্তিত হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে অ্যানালগ মডুলেশন ৩ প্রকার হতে পারে।
১। বিস্তার উপযোজন পদ্ধতি(amplitude modulation): এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তারের পরিবর্তনের সাথে সাথে যদি বাহক সিগনালের বিস্তার পরিবর্তিত হয়।
২। কম্পাঙ্ক উপযোজন পদ্ধতি(frequency modulation): এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তার পরিবর্তনের সাথে সাথে বাহক সিগনালের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়ে যায়।
৩। দশা উপযোজন পদ্ধতি(phase modulation): এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তারের সাথে সাথে বাহক সিগনালের দশা পরিবর্তিত হয়। এটিও এক প্রকার কম্পাঙ্ক উপযোজন পদ্ধতি।
উপরোল্লিখিত তিনটি মডুলেশন প্রক্রিয়াই এনালগ সিগনালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি একটি মূল অ্যানালগ সিগনাল থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং সেই নমুনায় সিগনালের বিস্তারের মান (value)-কে ডিজিটাল সংখ্যায় রূপান্তর করা হয়, তবে তাকে ডিজিটাল সিগনাল বলা হয়।
ডিজিটাল তথ্যকে অ্যানালগ তরঙ্গাকারে উপস্থাপন করতে মডুলেশন করা হয়। একে বলা হয় “কীয়িং”। বিভিন্ন ধরনের কীয়িং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যেমন- ফেজ শিফ্ট কীয়িং, অ্যাম্পলিচ্যুড শিফ্ট কীয়িং, মিনিমাম শিফ্ট কীয়িং। ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে দু’টি যন্ত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ফেজ শিফ্ট কীয়িং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
মডুলেশনের উদাহরণ: মানুষের কণ্ঠস্বরের উপর উপযোজিত কম্পাঙ্ক সাধারণত ৩০০–৩৪০০ হার্জের মাঝে। এই কম্পাঙ্কের শব্দ খুব বেশি দূরে থেকে শুনতে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যদি মানুষের এই কম্পাঙ্কের কথা একটি ৯৬ মেগাহার্টজ কম্পাঙ্কের বাহক সিগনালের তবে তা দূরে প্রেরণ করা সম্ভব হয়। এভাবেই বেতার সম্প্রচারিত হয়ে থাকে।
ইতিহাস
প্রাচীন যুগের যোগাযোগ ব্যবস্থা
প্রাচীন যুগে মানুষ দুরে অবস্থানকারী কোনো মানুষের সাথে ধোঁয়ার সংকেত দিয়ে বা ঢোল বাজিয়ে যোগাযোগ করত। আফ্রিকা, নিউ গিনি এবং দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় উপজাতিরা ঢোল বাজিয়ে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করত। চিন ও উত্তর আমেরিকার অধিবাসীরা ধোঁয়ার সংকেত দিয়ে দূরে খবর পাঠাত।
খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে মেসোপটেমিয়ায় এমনই এক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।জামান, তৌফিক; পাপড়ী, নুরুন্নাহার এবং সাহিদুল ইসলাম (২০১৭). বাংলাদেশ ও বিশ্বে মা কিছু প্রথম (চতুর্থ সংস্করণ). পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ঢাকা ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মালির আক্কাদিয়ান নগরীতে আলোক সংকেতের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করত।
১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি পদার্থবিদ জাঁ-আন্তোয়িন নুলে () বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন উদ্ভাবন করেন।
১৭৯২ সালে ক্লদ শাপে (Claude Chappe) নামে একজন ফরাসি প্রকৌশলী প্রথম দৃশ্যমান টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন যা লিল ও প্যারিস এর মাঝে সংযোগ স্থাপন করে। এ ক্ষেত্রে সেমাফোর পদ্ধতি ব্যবহৃত হত। সেমাফোর পদ্ধতিতে দুটি পতাকার বিভিন্ন অবস্থানের মাধ্যমে বিভিন্ন বর্ণ নির্দেশ করে সংকেত পাঠানো হয়। লিল থেকে প্যারিস পর্যন্ত স্থাপিত প্রথম সংযোগটি পরে স্ট্রাসবার্গ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। ১৭৯৪ সালে সুইডিশ প্রকৌশলী আব্রাহাম এডেলক্রান্টজ সামান্য ভিন্ন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্টকহোম থেকে ড্রটিংহোম পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করেন। শাপে-র যন্ত্রে কপিকলের মাধ্যমে কাঠের তক্তা ঘওরার ব্যবস্থা ছিল। অপরদিকে ক্রান্টজের যন্ত্রে কেবল হালকা শাটার ব্যবহৃত হওয়ায় এর গতি ছিল বেশি। কিন্তু সেমাফোর পদ্ধতি ব্যবহার করে যোগাযোগ করা অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া অসম্ভব ছিল। এছাড়াও অল্প দূরত্ব (১০-৩০ কি.মি.) পরপর টাওয়ার নির্মাণের বিশাল খরচের কারণে ১৮৮০ সালের পর থেকে বাণিজ্যিকভাবে এ যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন
স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং স্যার উইলিয়াম ফদারগিল কুক সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন। এতে একটি নির্দেশক কাঁটার বিক্ষেপের মাধমে বার্তা পাঠানো হতো। ১৮৩৯ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখে গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের ২১ কি.মি. দূরত্বে যোগাযোগ স্থাপন করতে এর ব্যবহার শুরু হয়। একই সময়ে আটলান্টিকের অপর পারে স্যামুয়েল মোর্স আলাদাভাবে একটি বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন এবং ১৮৩৭ সালের ২রা সেপ্টেম্বর জনসমক্ষে উপস্থাপন করেন। কিন্তু যন্ত্রটি সফলভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি আলফ্রেড় ভেইল নামে একজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আরেকটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যেটি টেলিগ্রাফ বার্তাকে কাগজের ফিতায় সংরক্ষণ করতে পারে। ১৮৩৮ সালের ৬ই জানুয়ারি তাদের এই যন্ত্রটি প্রথমে ৫ কিলোমিটার ও পরে ২৪মে,১৮৪৪ তারিখে ওয়াশিংটন ও বাল্টিমোরের মাঝে ৬৪ কি.মি. দূরত্বে সফলভাবে কাজ করে। তারা তাদের এই যন্ত্রটি পেটেন্ট করেন। ১৮৫১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২০,০০০ মাইল দীর্ঘ টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হয়। ১৮৬৬ সালে প্রথম সফলভাবে আটলান্টিকের দু'প্রান্তের মাঝে টেলিগ্রাফ সংযোগ স্থাপিত হয়। এর পুর্বে ১৮৫৭ ও ১৮৫৭ সালেও এ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ পরেই তা অচল হয়ে পড়ে।
thumb|আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল কর্তৃক আবিষ্কৃত প্রথম টেলিফোনযন্ত্রের অনুলিপি
১৮৫৭ সালে আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। অবশ্য এর আগে ১৮৪৯ সামে অ্যান্টোনিও মেউচ্চি একটি যন্ত্র আবিষাক্র করেন যার মাধ্যমে লাইনের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিকভাবে কন্ঠ প্রেরণ করা যেত। এই যন্ত্রটি শব্দবৈদ্যুতিক প্রভাবের উপর নির্ভর করত। কিন্তু এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা অসম্ভব ছিল কারণ ব্যবহারকারীকে গ্রাহক যন্ত্রটি মুখে ঢুকিয়ে কথা শুনতে হত।
১৮৭৮ ও ১৮৭৯ সালে আটলান্টিকের উভয় পারে নিউ হ্যাভেন ও লন্ডোন শহরে বাণিজ্যিক টেলিফোন ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য আলেক্সান্ডার বেল উভয় দেশেই পেটেন্ট লাভ করেন। এরপর অতি দ্রুত প্রযুক্তির প্রসারণ হয়। ১৮৮০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহরগুলোতে এক্সচেঞ্জ এবং আন্তঃশহর টেলিফোন লাইন স্থাপিত হয়। সংযোগ স্থাপন করার জন্য সুইচিং প্রযুক্তিও উন্নত হয়। তা সত্বেও আটলান্টিকের দু'পারের মাঝে কন্ঠ আদান প্রদান করা সম্ভব ছিল না। ১৯২৭ সালের ৭ই জানুয়ারি প্রথম বেতার সংযোগের মাধ্যমে কন্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৫৬ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ট্রান্স-আটলান্টিক-টেলিফোন লাইন স্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই ভুখন্ডের মাঝে কোন তার সংযোগ ছিল না। এই টেলিফোন লাইন্টিতে ৩৬টি টেলিফোন সার্কিট ছিল।
বেতার ও টেলিভিশন
১৮৩২ সালে জেমস লিন্ডসে শ্রেনীকক্ষে তার ছাত্রদের সামনে তারবিহীন টেলিগ্রাফ সংযোগ উপস্থাপন করেন। ১৮৫৪ সালে তিনি পানিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ডান্ডি থেকে উঢ্যাভেন পরযন্ত দুই মাইল দূরত্বে তার বিহীন সংযোগ স্থপন করে দেখান। ১৮৯৩ সালে ফ্রাঙ্কলিন ইন্সটিটিউটে এক বক্তৃতায় নিকোলা টেসলা উদাহরণসহ তারবিহীন টেলিগ্রাফি প্রযুক্তির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। ভ্যাকুয়াম টিউব আবিষ্কারের পুর্বে বেতার ব্যবস্থায় যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হত সে সব উপকরণ ব্যবহার করেই তিনি এ উদাহরণ উপস্থাপন করেন। ১৯০০ সালে রেগিনাল্ড ফেসেন্ডেন প্রথম তার ছাড়া মানুষের কন্ঠস্বর প্রেরণ করতে সক্ষম হন। ১৯০১ সালে গুগলিয়েলমো মার্কোনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তার বিহীন সংযোগ স্থাপন করেন, যা তাকে ১৯০৯ সালে নোবেল পুরস্কার এনে দেয় (তিনি কার্ল ব্রাউন এর এর সাথে যুগ্মভাবে এ পুরস্কার পান)।
১৯২৫ সালের ২৫শে মার্চ, লন্ডনের সেলফ্রিজ নামের একটি মনিহারী দোকানে জন লগি বেয়ার্ড চলন্ত ছবি প্রেরণ করে দেখান। অবশ্য তার যন্ত্রটি সম্পূর্ণ ছবি দেখাবার বদলে ধারণকৃত ছবির একটি অস্পষ্ট ছায়া প্রদর্শন করেছিল কিন্তু অবিলম্বে অক্টোবর মাসেই তিনি এ সমস্যার সমাধান করেন এবং ১৯২৬ সালের ২৬শে জানুয়ারী পুনরায় ঐ সেলফ্রিজ দোকানেই আবার টেলিভিশন উপস্থাপন করেন। বেয়ার্ডের তৈরি টেলিভিশন নিপকও চাকতি(nipkow disk) ব্যবহার করে ছবি গ্রহণ ও প্রদর্শন করা হতো, তাই একে বলা হয় যান্ত্রিক টেলিভিশন। এই যন্ত্রের উপর নির্ভর করেই ১৯২৯ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন বা বিবিসি এর পরীক্ষামুলক সম্প্রচার চালু হয়। বিংশ শতকের অধিকাংশ টেলিভিশনে ব্যবহৃত হয় কার্ল ব্রাউন এর আবিষ্কৃত ক্যাথোড রে টিউব প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফিলো ফার্ন্সওয়র্থ প্রথম একটি কার্যকরী মডেল তৈরি করে তার পরিবারের সদস্যদের দেখান ১৯২৭ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর। একই সময়ে ভলাদিমির যোরিকিনও এই রযুতিতে ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক টেইভিশন আবিষ্কার করেন। পরে আদালতে ফয়সালা করে ফার্ন্সওয়র্থকে এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
ATIS Telecom Glossary
Communications Engineering Tutorials
Federal Communications Commission
IEEE Communications Society
International Telecommunication Union
(Ericsson removed the book from their site in September 2005)
VoIP, Voice over Internet Protocol and Internet telephone calls
Free Telco Dictionary
বিষয়শ্রেণী:টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:পরিবহন ও জন-উপযোগ শিল্পের অর্থশাস্ত্র
বিষয়শ্রেণী:গণমাধ্যম প্রযুক্তি
বিষয়শ্রেণী:টেলিযোগাযোগ |
শব্দ | https://bn.wikipedia.org/wiki/শব্দ | থাম্ব|upright=1.35|ড্রাম একটি কম্পনকারী ঝিল্লির মাধ্যমে শব্দ উৎপাদন করে।
পদার্থবিজ্ঞানে শব্দ হলো একধরনের কম্পন যা গ্যাস, তরল বা কঠিন মাধ্যমের সাহায্যে শব্দ তরঙ্গ হিসাবে সঞ্চালিত হয়।
মানব শারীরতত্ত্ব এবং মনোবিজ্ঞানে শব্দ হলো একধরনের তরঙ্গের শ্রবণ এবং মস্তিষ্ক কর্তৃক এগুলো উপলব্ধি করা। যেসকল শব্দের কম্পাঙ্ক ২০ Hz থেকে ২০ kHz কম্পাঙ্ক সীমার মধ্যে অবস্থিত, কেবল সেই শব্দই মানুষের মধ্যে শ্রবণ অনুভূতি প্রকাশ করে। সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ও বায়ু মাধ্যমে এই শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে । ২০ k Hz উপরের শব্দ তরঙ্গগুলি আল্ট্রাসাউন্ড বা শ্রবণাতীত শব্দ হিসাবে পরিচিত এবং এগুলো মানুষের কাছে শ্রবণীয় নয়। ২০ Hz নিচে শব্দ তরঙ্গগুলি ইনফ্রাসাউন্ড বা অবশ্রাব্য শব্দ হিসাবে পরিচিত। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির শ্রবণসীমা বিভিন্ন হয়ে থাকে।
শব্দবিজ্ঞান
থাম্ব|বায়ুর কনা গুলো কম্পনের মাধ্যমে শব্দ শক্তি আমাদের কানে পৌঁছায়
শব্দবিজ্ঞান হলো আন্তঃশৃঙ্খলা বিজ্ঞান যা কম্পন, শব্দ, শ্রবণাতীত শব্দ এবং অবশ্রাব্য শব্দসহ গ্যাস, তরল এবং কঠিনের মধ্যে যান্ত্রিক তরঙ্গ অধ্যয়নের বিষয়ে আলোচনা করে। যে বিজ্ঞানী শব্দবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন তিনি হলেন একজনশব্দবিজ্ঞানী, অন্যদিকে শাব্দিক প্রকৌশল নিয়ে যিনি কাজ করেন তাকে শব্দ প্রকৌশলী বলা যেতে পারে।ANSI S1.1-1994. American National Standard: Acoustic Terminology. Sec 3.03. অন্যদিকে, একজন অডিও ইঞ্জিনিয়ার শব্দের রেকর্ডিং, ম্যানিপুলেশন, মিশ্রণ এবং অনুকরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন।
শব্দবিজ্ঞানের প্রয়োগ আধুনিক সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়, যার উপশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে বায়ুসংস্থান, অডিও সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্থাপত্য শব্দবিজ্ঞান, জৈবশব্দবিজ্ঞান, বৈদ্যুতিক-শব্দবিজ্ঞান, পরিবেশের কোলাহল, বাদ্যযন্ত্রের শব্দবিজ্ঞান, কোলাহল নিয়ন্ত্রণ, মনোশব্দবিজ্ঞান, বক্তৃতা, আল্ট্রাসাউন্ড, জলের তলদেশীয় শব্দবিজ্ঞান এবং কম্পন।
সংজ্ঞা
শব্দকে সংজ্ঞায়িত করা হয়, "(ক) অভ্যন্তরীণ বলসম্পন্ন মাধ্যমে চাপ, পীড়ন, কণার সরণ, কণার বেগ ইত্যাদির স্পন্দনের সঞ্চালন বা এধরনের সঞ্চালিত দোলনের সুপারপজিশন দ্বারা। (খ) ক তে বর্ণীত স্পন্র্ত শ্রাবণ সংবেদন দ্বারা।"ANSI/ASA S1.1-2013 শব্দকে বায়ু বা অন্যান্য স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে একটি তরঙ্গ গতি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শব্দ একটি উদ্দীপনা। শব্দ শ্রবণ প্রক্রিয়ার উত্তেজনা হিসাবেও দেখা যায় যা শব্দের উপলব্ধির ফলস্বরূপ। এক্ষেত্রে শব্দ একধরনের সংবেদন।
শব্দের পদার্থবিজ্ঞান
thumb|upright=1.2|একই কম্পাঙ্কের দুটি সুরশলাকা ব্যবহার করে পরীক্ষা। একটি শলাকাকে রাবারযুক্ত দণ্ড দ্বারা আঘাত করা হচ্ছে। যদিও কেবল প্রথম সুরশলাকাটিকে আঘাত করা হয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় সুরশলাকাটিও স্পষ্টত উদ্দীপ্ত কারণ প্রথম সুরশলাকাটিকে আঘাত করায় বায়ুর চাপ এবং ঘনত্বের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের ফলে শলাকা দুটির মাঝে একটি ধনাত্মক অনুরণন সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা যদি কোনও কাঁটায় একটি ধাতব টুকরো রাখি তবে দেখা যায় যে কার্যকরভাবে অনুরণন তৈরি না হওয়ায় প্রভাবটি স্তিমিত হয়ে যায় এবং উত্তেজনা কম উচ্চারিত হয়।
শব্দ বায়ু, তরল এবং কঠিনের মধ্য দিয়ে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ হিসাবে এবং কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে আড় তরঙ্গ হিসাবেও প্রচারিত হতে পারে (নীচে অনুদৈর্ঘ্য এবং আড় তরঙ্গ দেখুন)। শব্দ তরঙ্গগুলি একটি স্টেরিও স্পিকারের স্পন্দিত ডায়াফ্রামের মতো শব্দ উৎস দ্বারা উৎপন্ন হয়। শব্দ উৎস আশেপাশের মাধ্যমে কম্পন সৃষ্টি করে। উৎসটি মাধ্যমে কম্পন সৃষ্টি করতে থাকে এবং কম্পনগুলি উৎস থেকে শব্দের গতিতে চারপাশে বিস্তারিত হয়ে থাকে, ফলে শব্দ তরঙ্গ তৈরি হয়। উৎস থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে চাপ, বেগ এবং মাধ্যমের সরণ সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। এক মুহুর্তে, চাপ, বেগ এবং স্থানচ্যুতি স্থানটিতে পৃথক হয় in নোট করুন যে মাঝারি কণাগুলি শব্দ তরঙ্গ নিয়ে ভ্রমণ করে না। কোনো মুহুর্তে চাপ, বেগ এবং সরণ স্থানের সাথে ভিন্ন হতে পারে। লক্ষণীয় যে, মাধ্যমের কণাগুলি শব্দ তরঙ্গের সাথে স্থায়ীভাবে সরে যায় না। এটি কঠিন, তরল এবং গ্যাস সকল মাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (গ্যাস বা তরল পদার্থের কণাগুলি স্পন্দন পরিবহন করে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কণার গড় অবস্থান পরিবর্তন হয় না)। প্রচারের সময় মাধ্যমের মধ্যে তরঙ্গগুলি প্রতিফলিত, প্রতিসরিত এবং শিথিলতাপ্রাপ্ত হতে পারে।
শব্দ সঞ্চারণ সাধারণত তিনটি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়:
মাধ্যমের ঘনত্ব এবং চাপের মধ্যে একটি জটিল সম্পর্কের দ্বারা। তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত এই সম্পর্কটি মাধ্যমের মধ্যে শব্দের গতি নির্ধারণ করে।
মাধ্যমের নিজের গতি। যদি মাধ্যমটি চলমান থাকে তবে এই চলনের দিকের উপর নির্ভর করে শব্দ তরঙ্গের পরম গতি বাড়াতে বা কমতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি শব্দ এবং বায়ু একই দিকে অগ্রসর হয় তবে বাতাসের বেগ এর মধ্য দিয়ে চলমান শব্দের বেগকে বাড়িয়ে তুলবে। আবার, শব্দ এবং বায়ু যদি বিপরীত দিকে চলতে থাকে তবে বাতাসের গতিবেগের কারণে শব্দ তরঙ্গের বেগ হ্রাস পাবে।
মাধ্যমের সান্দ্রতা। মাধ্যমের সান্দ্রতা শব্দের তীক্ষ্ণতা হ্রাসের হার নির্ধারণ করে। বায়ু বা জল হিসাবে অনেক মাধ্যমের সান্দ্রতা কারণে তীক্ষ্ণতার হ্রাস নগণ্য।
যখন শব্দ এমন কোনো মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলাচল করে যার ভৌত বৈশিষ্ট্য ধ্রুবক নয়, তখন এটি প্রতিসরিত হতে পারে (হয় অভিসারী বা অপসারিত)।
thumb|গোলাকার সংকোচন (অনুদৈর্ঘ্য) তরঙ্গ
যান্ত্রিক কম্পন যা শব্দ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায় তা সকল ধরনের পদার্থের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে পারে, যেমন গ্যাস, তরল, কঠিন এবং প্লাজমা। যা শব্দকে ধারণ করে তাকে বলা হয় মাধ্যম। শব্দ শূন্যস্থানের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে না।Is there sound in space? Northwestern University.Can you hear sounds in space? (Beginner) . Cornell University.
অনুদৈর্ঘ্য এবং আড় তরঙ্গ
শব্দ গ্যাস, প্লাজমা এবং তরলের মধ্য দিয়ে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ হিসাবে সঞ্চারিত হয়, যাকে সংক্ষেপণ বা সংকোচন তরঙ্গও বলা হয়। এটির সঞ্চালনের জন্য একটি মাধ্যম প্রয়োজন। কঠিন মাধ্যমে এটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ এবং অনুপ্রস্থ তরঙ্গ উভয় ভাবেই সঞ্চালিত হতে পারে। অনুদৈর্ঘ্য শব্দ তরঙ্গগুলি অসম চাপ থেকে পরিবর্তিত চাপ বিচ্যুতির তরঙ্গ, যা স্থানীয় সংকোচন এবং প্রসারণ অঞ্চল সৃষ্টির কারণ। যেখানে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ (কঠিন পদার্থে) হলো সঞ্চালন দিকের ডান কোণের দিকে পরিবর্তী কৃন্তন পীড়ন।
শব্দ তরঙ্গগুলি পরাবৃত্তীয় আয়না এবং শব্দ তৈরি করে এমন বস্তুসমূহ ব্যবহার করে "দেখা" যেতে পারে।
একটি শব্দ তরঙ্গ দ্বারা বাহিত শক্তি পদার্থের অতিরিক্ত সংকোচন (অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের ক্ষেত্রে) বা সরন বিকৃতির (আড় তরঙ্গের ক্ষেত্রে) বিভব শক্তি এবং মাধ্যমের কণার সরণ বেগের গতিশক্তিকে সামনে পিছনে রুপান্তর করতে থাকে॥
শব্দ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
thumb|২০ মিলিসেকেন্ডের একটি রেকর্ডিং এর "চাপ বনাম সময়" লেখচিত্র শব্দের দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য চাপ ও সময়কে প্রদর্শন করছে।
thumb|শব্দকে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের সাইনুসয়েডাল তরঙ্গের মিশ্রণ হিসাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। নিচের তরঙ্গগুলির উপরের তুলনায় উচ্চ কম্পাঙ্ক রয়েছে। অনুভূমিক অক্ষ সময়কে উপস্থাপন করে।
যদিও শব্দের সঞ্চালন সম্পর্কিত অনেকগুলি জটিলতা রয়েছে, শ্রবণের ক্ষেত্রে (যেমন কান), শব্দ সহজেই দুটি উপাদান চাপ এবং সময়ে বিভাজ্য হয়। এই মৌলিক উপাদান দুটি সমস্ত শব্দ তরঙ্গের ভিত্তি তৈরি করে। এই উপাদান দুটি শ্রাব্য সকল শব্দকে বর্ণনা করতে ব্যবহার করতে পারি।
শব্দকে আরও পুরোপুরি বুঝতে হলে একটি জটিল তরঙ্গকে, যেমন এই পাঠ্যের ডানদিকে নীল পটভূমিতে দেখানো তরঙ্গকে সাধারণত এর উপাদানগুলির মধ্যে বিভক্ত করা হয়, যা বিভিন্ন শব্দ তরঙ্গ কম্পাঙ্কের (এবং কোলাহলের) সংমিশ্রন।Handel, S. (1995). Timbre perception and auditory object identification. Hearing, 425–461.Kendall, R.A. (1986). The role of acoustic signal partitions in listener categorization of musical phrases. Music Perception, 185–213.Matthews, M. (1999). Introduction to timbre. In P.R. Cook (Ed.), Music, cognition, and computerized sound: An introduction to psychoacoustic (pp. 79–88). Cambridge, Massachusetts: The MIT press.
শব্দ তরঙ্গকে প্রায়শই সরলীকৃতভাবে সাইনোসয়েডাল সমতল তরঙ্গ হিসেবে বর্ণনা হয়, যাকে এই সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়:
কম্পাঙ্ক, বা এর বিপরীত তরঙ্গদৈর্ঘ্য
বিস্তার, শব্দের চাপ বা তীব্রতা
শব্দের বেগ
দিক
যে শব্দগুলি মানুষ কর্তৃক উপলব্ধিযোগ্য তা প্রায় ২০ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ কম্পাঙ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে বায়ুতে, এই শব্দ তরঙ্গগুলির তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে পর্যন্ত হয়। কখনও কখনও গতি এবং দিক একটি বেগ ভেক্টর হিসাবে মিলিত হয়; তরঙ্গ সংখ্যা এবং দিক তরঙ্গ ভেক্টর হিসাবে সংযুক্ত হয়।
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ, যা কৃন্তন তরঙ্গ নামেও পরিচিত, এর অতিরিক্ত সমবর্তন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শব্দ তরঙ্গগুলির বৈশিষ্ট্য নয়।
শব্দের বেগ
right|thumb|মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর এফ/এ-১৮ শব্দের গতিতে পৌঁছেছে। বিমানের চারপাশে বায়ুচাপ হ্রাসের ফলে পানির ফোটা ঘনীভূত হয়ে সাদা বলয়টি হলো উৎপন্ন হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
শব্দের বেগ তরঙ্গগুলি যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যায় তার উপর নির্ভর করে এবং এটি উপাদানের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। শব্দের গতি পরিমাপের দিকে প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করেছিলেন আইজাক নিউটন। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে কোনও নির্দিষ্ট পদার্থে শব্দের বেগ তার চাপ এবং ঘনত্বের ভাগফলের বর্গমূলের সমান:
এটি পরবর্তীকালে ভুল প্রমাণিত হয়েছিল এবং ফরাসী গণিতবিদ ল্যাপ্লাস এই সূত্রটি সংশোধন করেছিলেন। নিউটনের বিশ্বাস অনুসারে শব্দ সঞ্চালনের ঘটনাটি সমোষ্ণ, কিন্তু আসলে তা রুদ্ধতাপীয়। তিনি সমীকরণটিতে গামা যুক্ত করে
কে
দ্বারা গুন করেছিলেন এবং
.
সমীকরণ উপস্থাপন করেছিলেন। যেহেতু
,
তাই চূড়ান্ত সমীকরণ দাঁড়ায়
,
যা নিউটন–ল্যাপ্লাস সমীকরণ নামেও পরিচিত। এই সমীকরণে K হলো স্থিতিস্থাপক আয়তন গুণাঙ্ক, c হলো শব্দের বেগ এবং হলো ঘনত্ব। সুতরাং, শব্দের বেগ মাধ্যমের আয়তন গুণাঙ্ক এবং ঘনত্বের অনুপাতের বর্গমূলের সমানুপাতিক।
এই ভৌত বৈশিষ্ট্য এবং শব্দের গতি পরিবেষ্টনকারী অবস্থার সাথে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। সূত্র ব্যবহার করে সমুদ্রপৃষ্ঠে তাপমাত্রায় শব্দের বেগ আনুমানিক ।
পরিষ্কার পানিতে শব্দের বেগ আনুমানিক । ইস্পাতে শব্দের বেগ প্রায় । শব্দের বেগ কঠিন পারমাণবিক হাইড্রোজেনে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ।
শব্দের উপলব্ধি
পদার্থবিজ্ঞানে শব্দের ব্যবহার ছাড়াও শব্দের একটি স্বতন্ত্র ব্যবহার রয়েছে শারীরতত্ত্ব এবং মনোবিজ্ঞানে, যেখানে এটি মস্তিষ্ক দ্বারা শব্দকে উপলব্ধির বিষয়কে বোঝায়। মনোশব্দবিজ্ঞান ক্ষেত্রটি এই জাতীয় গবেষণায় নিবেদিত। ওয়েবস্টারের ১৯৩৬ সালের অভিধানে শব্দকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে: "১. শ্রবণ সংবেদন, যা শোনা যায়; নির্দিষ্ট করে: ক. মনোবিজ্ঞান- কোনও বস্তুগত মাধ্যম, সাধারণত বায়ুতে সঞ্চারিত কম্পন দ্বারা মস্তিষ্কের শ্রবণ স্নায়ু এবং শ্রবণ কেন্দ্রগুলির উদ্দীপনাজনিত কারণে সংবেদন যা শ্রবণের অঙ্গকে প্রভাবিত করে। খ. পদার্থবিজ্ঞান- স্পন্দনশীল শক্তি যা এই জাতীয় সংবেদন ঘটায়। শব্দ সঞ্চালনশীল অনুদৈর্ঘ্য কম্পনযুক্ত উত্তেজনা (শব্দ তরঙ্গ) দ্বারা সঞ্চালিত হয়।" এর অর্থ এই যে, "যদি কোনও গাছ বনের মধ্যে পড়ে যায় যা কেউ শুনতে পায় না, তা কি শব্দ উৎপন্ন করে?" প্রশ্নের সঠিক উত্তর "হ্যাঁ" এবং "না" উভয়ই যথাক্রমে ভৌত এবং মানসদৈহিক সংজ্ঞানুযায়ী সঠিক।
যে কোনও জীবের শ্রবণ অঙ্গে শব্দের ভৌত শ্রাব্যতা কিছু নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের সীমা দ্বারা সীমাবদ্ধ। মানুষ সাধারণত প্রায় ২০ হার্জ এবং ২০,০০০ হার্জ (২০ কিলোহার্জ) কম্পাঙ্কের মধ্যের শব্দ শুনতে পায়। বয়সের সাথে সাথে উপরের সীমা হ্রাস পায়। কখনও কখনও শব্দ দ্বারা কেবলমাত্র মানুষের শ্রবণসীমার মধ্যে অবস্থিত কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দকে বুঝায় বা কখনও কখনও এটি কোনও নির্দিষ্ট প্রাণীর সাথে সম্পর্কিত সীমার মধ্যের শব্দকে বুঝায়। অন্যান্য প্রজাতির শ্রবণসীমার বিভিন্ন ব্যাপ্তি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কুকুরগুলি ২০ কিলোহার্জ এর চেয়ে বেশি কম্পাঙ্কের স্পন্দন বুঝতে পারে।
প্রধান ইন্দ্রিয়গুলির মধ্যে কোনো একটি দ্বারা শব্দকে উপলব্ধি করে অনেক প্রজাতি বিপদ সনাক্ত, দিক নির্ণয়, শিকার এবং যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহার করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, পানি এবং কার্যত যে কোনও ভৌত ঘটনা যেমন আগুন, বৃষ্টি, বাতাস, সার্ফ বা ভূমিকম্প প্রত্যেকে অনন্য (এবং এটির বৈশিষ্ট্যযুক্ত) ধ্বনি উৎপাদন করে। ব্যাঙ, পাখি, সামুদ্রিক এবং স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো অনেক প্রজাতির শব্দ তৈরির জন্য বিশেষ অঙ্গ বিকশিত হয়েছে। কিছু প্রজাতিতে এগুলি গান এবং কথা উৎপন্ন করতে পারে। তদ্ব্যতীত, মানুষ সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন করেছে (যেমন সঙ্গীত, টেলিফোন এবং রেডিও) যা তাদের শব্দ উৎপন্ন, রেকর্ড, প্রেরণ এবং সম্প্রচারের সুযোগ করে দেয়।
কোলাহল দ্বারা প্রায়শই অযাচিত শব্দকে বোঝানো হয়। বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের ক্ষেত্রে কোলাহল একটি অবাঞ্ছিত উপাদান যা একটি আবশ্যক সংকেতকে অস্পষ্ট করে তোলে। যাইহোক, শব্দ উপলব্ধিতে এটি প্রায়শই একটি শব্দের উৎস সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হতে পারে এবং সুর উপলব্ধি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সাউন্ডস্কেপ হলো শাব্দিক পরিবেশের একটি উপাদান যা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে। শাব্দিক পরিবেশ হলো আশেপাশের পরিবেশের প্রেক্ষাপটে পরিবেশ দ্বারা সংশোধিত এবং মানুষের বোঝা প্রদত্ত অঞ্চলে সমস্ত শব্দের (মানুষের শ্রবণযোগ্য হতেও পারে নাও হতে পারে) সংমিশ্রণ।
ঐতিহাসিকভাবে ছয়টি পরীক্ষামূলকভাবে পৃথকযোগ্য উপায় রয়েছে যাতে শব্দ তরঙ্গ বিশ্লেষণ করা হয়। সেগুলি হলো: তীক্ষ্ণতা, সময়কাল, শব্দোচ্চতা, সুর, সোনিক অঙ্গবিন্যাস এবং স্থানিক অবস্থান।Burton, R.L. (2015). The elements of music: what are they, and who cares? In J. Rosevear & S. Harding. (Eds.), ASME XXth National Conference proceedings. Paper presented at: Music: Educating for life: ASME XXth National Conference (pp. 22–28), Parkville, Victoria: The Australian Society for Music Education Inc. এই পদগুলির কয়েকটির একটি আদর্শ সংজ্ঞা রয়েছে (উদাহরণস্বরূপ আনসি অ্যাকোস্টিকাল টার্মিনোলজি ANSI/ASA S1.1-2013)। সাম্প্রতিক পদ্ধতিগুলিতে টেম্পোরাল এনভেলোপ এবং টেম্পোরাল সূক্ষ্ম কাঠামোকে ধারণাগতভাবে প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
তীক্ষ্ণতা
thumb|চিত্র ১: তীক্ষ্ণতা উপলব্ধি
তীক্ষ্ণতার সাহায্যে কোন শব্দ কতটুকু "চড়া" বা "মোটা" তা বোঝা যায় এবং শব্দটি তৈরি করা কম্পনগুলির চাক্রিক, পুনরাবৃত্ত প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। সরল শব্দের ক্ষেত্রে তীক্ষ্ণতা শব্দটির মধ্যে সবচেয়ে ধীর কম্পনের কম্পাঙ্কের সাথে সম্পর্কিত (যাকে মৌলিক সমমেল বলা হয়)। জটিল শব্দের ক্ষেত্রে, তীক্ষ্ণতা উপলব্ধি পৃথক হতে পারে। কখনও কখনও ব্যক্তিরা বিশেষ শব্দ নিদর্শনে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একই শব্দের জন্য আলাদা আলাদা তীক্ষ্ণতা চিহ্নিত করেন। একটি নির্দিষ্ট তীক্ষ্ণতা নির্বাচন এর সাথে সম্পৃক্ত কম্পনের কম্পাঙ্ক এবং এগুলোর মধ্যে ভারসাম্যসহ পূর্ব থেকে সচেতন পরীক্ষণের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। সম্ভাব্য সমমেল চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়।De Cheveigne, A. (2005). Pitch perception models. Pitch, 169-233. প্রতিটি শব্দকে চড়া থেকে মোটা তীক্ষ্ণতার ধারাবাহিকের উপর স্থাপন করা হয়। চিত্র ১ তীক্ষ্ণতা উপলব্ধির উদাহরণ দেখায়। শ্রবণ প্রক্রিয়া চলাকালীন, প্রত্যেক শব্দকে পুনরাবৃত্তি প্যাটার্নের জন্য বিশ্লেষণ করা হয় (চিত্র ১: কমলা তীর দেখুন) এবং ফলাফলগুলি শ্রুতি কর্টেক্সে নির্দিষ্ট উচ্চতা (অষ্টক) এবং ক্রোমা (নোটের নাম) এর একক তীক্ষ্ণতা হিসাবে প্রেরণ করা হয়।
সময়কাল
thumb|চিত্র ২: সময়কাল উপলব্ধি
সময়কাল হলো কোনো একটি শব্দের উপস্থিতি কতটা "স্বল্প" বা "দীর্ঘ" এবং এটি শব্দের স্নায়ু প্রতিক্রিয়া দ্বারা নির্মিত সূচনা এবং সমাপ্তি সংকেতের সাথে সম্পর্কিত। শব্দের প্রথম সনাক্তকরণের পর থেকে শুরু করে শব্দটি পরিবর্তন হওয়া বা বন্ধ হওয়া অবধি শব্দের সময়কাল স্থায়ী হয়। কখনও কখনও এটি কোনও শব্দের ভৌত সময়কালের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে, বিরতিসম্পন্ন শব্দগুলি (যে শব্দগুলি থেমে থেমে উৎপন্ন হয়) একই সাধারণ ব্যান্ডউইথের শব্দগুলির বাধা কারণে সমাপ্তি বার্তাগুলি হারিয়ে যাওয়ায় বিরতিহীন শুনাতে পারে। চিত্র ২ সময়কাল সনাক্তকরণের একটি উদাহরণ দেয়। যখন একটি নতুন শব্দ লক্ষ্য করা হয় (চিত্র ২ এর সবুজ তীরগুলি দেখুন), তখন শ্রুতি কর্টেক্সে একটি শ্রুতি প্রারম্ভিক বার্তা প্রেরণ করা হয়। পুনরাবৃত্তি প্যাটার্নটি মিস হয়ে গেলে তখন শব্দ সমাপ্তির বার্তা প্রেরণ করা হয়।
শব্দোচ্চতা
thumb|চিত্র ৩: শব্দোচ্চতা উপলব্ধি
শব্দোচ্চতা হলো কোনো শব্দ কতো "জোরে" বা "আস্তে" অনুভূত হচ্ছে, এবং এটি থিটা পূর্ণ তরঙ্গের সময়কালে মোট শ্রাবণ স্নায়ু উদ্দীপনা সংখ্যার সাথে সম্পর্কিত। এর অর্থ হলো সংক্ষিপ্ত সময়কালের ক্ষেত্রে একই তীব্রতা স্তরের স্বল্প সময়ের শব্দ দীর্ঘক্ষণ যাবত উপস্থিত শব্দের তুলনায় আস্তে শুনাতে পারে। প্রায় ২০০ মিলিসেকেন্ড এর বেশি সময়ের ক্ষেত্রে এটি হয় না এবং শব্দের সময়কাল শব্দের আপাত উচ্চতাকে প্রভাবিত করে না। চিত্র ৩ শ্রুতি কর্টেক্সে প্রেরণের আগে প্রায় ২০০ মিলিসেকেন্ড সময়কালে কীভাবে শব্দোচ্চতার তথ্য যোগ করা হয় তার একটি ধারণা দেয়। সুউচ্চ সংকেতগুলি বেসিলার ঝিল্লিতে বৃহত্তর 'ধাক্কা' দেয় এবং এর ফলে আরও অধিক স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে আরও জোরে সংকেত তৈরি করে। আরও জটিল সংকেত সাইন তরঙ্গের মতো সাধারণ শব্দের চেয়ে আরও বেশি স্নায়ু উদ্দীপনা তৈরি করে এবং তাই একই বিস্তারের তরঙ্গ আরও জোরে শব্দ করে।
জাতি
thumb|চিত্র ৪: জাতি উপলব্ধি
জাতিকে বিভিন্ন শব্দের (যেমন একটি পতিত শিলার শব্দ, একটি ড্রিলের ঘূর্ণি, একটি বাদ্যযন্ত্রের সুর বা একটি কণ্ঠের গুণমান) গুনমান হিসাবে ধরা হয় এবং এটি একটি শব্দের ধ্বনিত পরিচয়ের প্রাক-সচেতন বরাদ্দকে উপস্থাপন করে (উদাঃ "এটি একজন শ্রোতা!")। এই পরিচয়টি কম্পাঙ্ক স্থানান্তরকারী, কোলাহলমুখরতা, অস্থিরতা, অনুভূত তীক্ষ্ণতা এবং বর্ধিত সময় কাঠামোর উপর শব্দে অতিস্বরের বিস্তার এবং তীব্রতা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে। সময়ের সাথে সাথে একটি শব্দ যেভাবে পরিবর্তিত হয় (চিত্র ৪ দেখুন) তা জাতি সনাক্তকরণের জন্য বেশিরভাগ তথ্য সরবরাহ করে। যদিও প্রতিটি বাদ্যযন্ত্র থেকে নির্গত তরঙ্গরূপের একটি ছোট অংশ প্রায় একই রকম দেখাচ্ছে (চিত্র ৪-এ কমলা তীরগুলি দ্বারা নির্দেশিত প্রসারিত অংশগুলি দেখুন), তবে সানাই এবং পিয়ানোর মধ্যে শব্দোচ্চতা এবং সমমেল উভয় ক্ষেত্রেই সময়ের সাথে পরিবর্তনের পার্থক্য স্পষ্ট। সানাইতে বায়ুর হিস্ হিস ধ্বনি এবং পিয়ানোতে হাতুড়ি আঘাতের ধ্বনিসহ বিভিন্ন হৈচৈ শব্দ কমই লক্ষণীয়।
ধ্বনিতরঙ্গের অঙ্গবিন্যাস
ধ্বনিতরঙ্গের অঙ্গবিন্যাস শব্দ উৎসের সংখ্যা এবং তাদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়তার সাথে সম্পর্কিত।Kamien, R. (1980). Music: an appreciation. New York: McGraw-Hill. p. 62 এই প্রসঙ্গে 'অঙ্গবিন্যাস' শব্দটি শ্রুতি সামগ্রীর প্রত্যক্ষভিত্তিক পৃথকীকরণের সাথে সম্পর্কিত। সংগীতে অঙ্গবিন্যাসকে প্রায়শই সংগতি, পলিফোনি এবং হোমোফোনির মধ্যে পার্থক্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়, তবে এটিকে একটি ব্যস্ত রেস্তোরার (উদাহরণস্বরূপ) শব্দের সাথে তুলনা করা যাতে পারে; যা 'ক্যাকোফনি' হিসাবে পরিচিত। তবে অঙ্গবিন্যাস দ্বারা এর থেকে আরও বেশি বিশয়বস্তুকে বোঝায়। বাদকের সংখ্যার ভিন্নতার কারণে একটি অর্কেস্ট্রালের অঙ্গবিন্যাস পিতল পঞ্চকের অঙ্গবিন্যাস থেকে খুব আলাদা। বিভিন্ন শব্দ উৎসের পার্থক্যের কারণে একটি বাজারে শব্দের অঙ্গবিন্যাস একটি স্কুল হল থেকে খুব আলাদা হয়।
স্থানিক অবস্থান
স্থানিক অবস্থান পরিবেশের প্রেক্ষাপটে শব্দের অবস্থানের নানাবিধ দিক নিয়ে আলোচনা করে। এর মধ্যে রয়েছে আনুভূমিক ও উল্লম্ব তলে শব্দের অবস্থান, উৎস থেকে দূরত্ব এবং সনিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্যাবলী।Levitin, D.J. (1999). Memory for musical attributes. In P.R. Cook (Ed.), Music, cognition, and computerized sound: An introduction to psychoacoustics (pp. 105–127). Cambridge, Massachusetts: The MIT press. পুরু গঠনবিশিষ্ট স্থানেও বিভিন্ন উৎস থেকে আসা শব্দকে স্থানীয়ভাবে পৃথক করা যায় এবং এর সুর চিহ্নিত করা যায়। এর ফলে অর্কেস্ট্রাতে ওবোর সুর আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায় কিংবা কোনো পার্টিতে একজন ব্যক্তির কথা আলাদাভাবে শোনা যায়।
শব্দের চাপের স্তর
শব্দের চাপ হলো একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের মধ্যে সাধারণ গড় চাপ এবং শব্দ তরঙ্গের মধ্যে চাপের মধ্যে পার্থক্য। এই পার্থক্যের বর্গ (অর্থাৎ সাম্যাবস্থার চাপ থেকে বিচ্যুতির বর্গ) সাধারণত সময় এবং/অথবা স্থানের সাথে গড় করা হয় এবং এই গড়ের বর্গমূল একটি গড় বর্গের বর্গমূল (আরএমএস) মান সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ, বায়ুমণ্ডলে ১ প্যাসকেল আরএমএস শব্দের চাপ (৯৪ dBSPL) দ্বারা বুঝায় যে শব্দ তরঙ্গের আসল চাপ (1 atm Pa) এবং (1 atm Pa) বা ১০১৩২৩.৬ থেকে ১০১৩২৬.৪ Pa এর মধ্যে দোদুল্যমান। যেহেতু মানুষের কান বিস্তৃত বিস্তারের শব্দ শনাক্ত করতে পারে তাই শব্দের চাপকে প্রায়শই লগারিদমিক ডেসিবেল স্কেলে স্তর হিসাবে পরিমাপ করা হয়। শব্দের চাপের স্তর (sound pressure level, SPL) বা Lp কে সংজ্ঞায়িত করা যায়,
যেখানে p হলো শব্দের গড় বর্গচাপের বর্গমূল এবং হলো একটি প্রসঙ্গ শব্দ চাপ। আনসি S1.1-1994 এ অনুযায়ী সাধারণভাবে ব্যবহৃত প্রসঙ্গ শব্দের চাপ হলো বায়ুতে ২০ µPa এবং পানিতে ১ µPa। কটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গ শব্দ চাপ ছাড়া ডেসিবেলে প্রকাশিত মান একটি শব্দ চাপ স্তরকে উপস্থাপন করতে পারে না।
শ্রবণাতীত শব্দ
thumb|upright=1.3|কিছু ব্যবহারের মোটামুটি নির্দেশসহ আল্ট্রাসাউন্ডের সাথে সম্পর্কিত আনুমানিক কম্পাঙ্কের ব্যাপ্তি
শ্রবণাতীত শব্দ হলো ২০,০০০ হার্জ (বা ২০ কিলোহার্জ) এর অধিক কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দ। ভৌত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে শ্রবণাতীত শব্দ বা আল্ট্রাসাউন্ড "সাধারণ" (শ্রাব্য) শব্দের থেকে ভিন্ন নয়, এটি কেবল মানুষ শুনতে পায় না। আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্রসমূহ ২০ কিলোহার্জ থেকে কয়েক গিগাহার্জ পর্যন্ত কম্পাঙ্ক নিয়ে কাজ করে।
আল্ট্রাসাউন্ড সাধারণত মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিক যেমন সোনগ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।
অবশ্রাব্য শব্দ
অবশ্রাব্য শব্দ বা ইনফ্রাসাউন্ড হলো ২০ হার্জের চেয়ে কম কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দ তরঙ্গ। যদিও এরকম কম কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দ মানুষের শোনার জন্য খুবই কম, তবে তিমি, হাতি এবং অন্যান্য প্রাণী ইনফ্রাসাউন্ড সনাক্ত করতে পারে এবং যোগাযোগের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারে।
আরও দেখুন
শব্দের উৎস
হেডফোন
বাদ্যযন্ত্র
সোনার
সাউন্ড বক্স
শব্দ পুনরুৎপাদন
</div>
শব্দ পরিমাপ
শব্দের সংরোধ
শব্দের বেগ
গুণগত প্রতিবন্ধকতা
মেল স্কেল
কণার ত্বরণ
কণার বিস্তার
ফন
সোন
শব্দের ক্ষমতা
শব্দের ক্ষমতা স্তর
</div>
সাধারণ
শব্দবিজ্ঞান তত্ত্ব
বীট
ডপলার ক্রিয়া
প্রতিধ্বনি
অবশ্রাব্য শব্দ
অব্যক্ত শব্দের তালিকা
অনুনাদ
</div>
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Sounds Amazing; a KS3/4 learning resource for sound and waves (uses Flash)
HyperPhysics: Sound and Hearing
Introduction to the Physics of Sound
Hearing curves and on-line hearing test
Audio for the 21st Century
Conversion of sound units and levels
Sound calculations
Audio Check: a free collection of audio tests and test tones playable on-line
More Sounds Amazing; a sixth-form learning resource about sound waves
বিষয়শ্রেণী:শব্দ (ধ্বনি)
বিষয়শ্রেণী:শ্রবণ
বিষয়শ্রেণী:তরঙ্গ
বিষয়শ্রেণী:শব্দবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:শ্রবণশক্তি |
আলো | https://bn.wikipedia.org/wiki/আলো | থাম্ব|266x266px|প্রিজম থেকে আলো ৭ টি রঙে বিভক্ত হচ্ছে
আলো এক ধরনের শক্তি বা বাহ্যিক কারণ, যা চোখে প্রবেশ করে দর্শনের অনুভূতি জন্মায়।CIE (1987). International Lighting Vocabulary . Number 17.4. CIE, 4th edition. .By the International Lighting Vocabulary, the definition of light is: "Any radiation capable of causing a visual sensation directly." অথবা বলা যায়, আলো একটি তীর্যক, তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ যা সাধারণ মানুষ দেখতে পারে। আলো বস্তুকে দৃশ্যমান করে, কিন্তু এটি নিজে অদৃশ্য। আমরা আলোকে দেখতে পাই না, কিন্তু আলোকিত বস্তুকে দেখি। আলো এক ধরনের বিকীর্ণ শক্তি। এটি এক ধরনের তরঙ্গ। আলো তীর্যক তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের আকারে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গমন করে। মাধ্যমভেদে আলোর বেগের পরিবর্তন হয়ে থাকে। আলোর বেগ মাধ্যমের ঘনত্বের ব্যস্তানুপাতিক। শুন্য মাধ্যমে আলোর বেগ সবচেয়ে বেশি, আলোর বেগ অসীম নয়। শূন্যস্থানে আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ২৯,৯৭,৯২,৪৫৮ মিটার বা ১,৮৬,০০০ মাইল। কোন ভাবেই আলোর গতিকে স্পর্শ করা সম্ভব নয়। আলোর বেগ ধ্রুব। আলোর কোনো আপেক্ষিক বেগ নেই ।আলোর বেগ সর্বদা সমান। দৃশ্যমান আলো মূলত তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালির ছোট একটি অংশ মাত্র। মানুষ ৪০০ ন্যানোমিটার থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ দেখতে পায় । সাদা আলো সাতটি রঙের মিশ্রণ, প্রিজম এর দ্বারা আলোকে বিভিন্ন রঙে (৭টি রঙ) আলাদা করা যায়। যা আমরা রংধনু দেখতে পাই। আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরন, আপবর্তন, ব্যাতিচার হয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আলোর একই সাথে কণা ধর্ম ও তরঙ্গ ধর্ম বিদ্যমান।
থাম্ব|380px|ডান|তড়িচ্চুম্বকীয় বর্ণালিতে দৃশ্যমান আলোর অবস্থান
দীপ্তমান বস্তু থেকে আলো কীভাবে আমাদের চোখে আসে তা ব্যাখ্যার জন্য বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত চারটি তত্ত্ব প্রদান করেছেন। যথা-
১. স্যার আইজ্যাক নিউটনের কণা তত্ত্ব (Corpuscular Theory)
২. বিজ্ঞানী হাইগেন এর তরঙ্গ তত্ত্ব (Wave Theory)
৩. ম্যাক্সওয়েলের তড়িতচৌম্বক তত্ত্ব (Electromagnetic Theory)
৪. ম্যাক্স প্লাঙ্ক এর কোয়ান্টাম তত্ত্ব (Quantum Theory)
১৯০৫ সালে আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাহায্যে আইন্সটাইন এ ঘটনার ব্যাখ্যা দেন, সেজন্য তাকে ১৯২১ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
আলোকীয় পথ
আলােকীয় পথ : কোনাে মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট (জ্যামিতিক) পথ অতিক্রম করতে আলােকের যে সময় লাগে ঠিক সেই সময়ে শূন্য বা বায়ু মাধ্যমের মধ্যদিয়ে আলােক যে পরিমাণ পথ অতিক্রম করতে পারে, সে পথকে আলােকীয় পথ বলে।
আলোক পথ ও ফার্মাটের নীতি
১৬৫০ সালে পিয়েরে ফার্মাট আলোকপথ সংক্রান্ত একটি নীতি দেন যা ফার্মাটের নীতি নামে পরিচিত। এই নীতি অনুসারে "যখন কোন আলোক রশ্মি প্রতিফলন বা প্রতিসরণের সূত্র মেনে কোন সমতল পৃষ্ঠে প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়, তখন তা সর্বদা ক্ষুদ্রতম পথ অনুসরণ করে।"
আমরা জানি, আলোকরশ্মি কোন একটি বিন্দু হতে চলে সমতল পৃষ্ঠ কর্তৃক প্রতিফলন বা প্রতিসরণের পর অন্য কোন দূরত্বে পৌঁছাতে যদি কম দূরত্ব অতিক্রম করে তবে ঐ দূরত্বে পৌঁছাতে যে সময় লাগে তাও সর্বাপেক্ষা কম সময় হয়। এখন আলোকরশ্মির ক্ষুদ্রতম পথ বা নূন্যতম সময় বিষয়ক যে নীতি তা কেবল সমতল পৃষ্ঠের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। গোলকীয় তলে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়,তখন আলোকরশ্মি হয় ক্ষুদ্রতম না হয় দীর্ঘতম পথ অতিক্রম করবে। তবে আলোকপথ সর্বদা স্থির থাকবে।
আলোর প্রতিফলন
আলো যখন বায়ু বা অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোনো মাধ্যমে বাধা পায় তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে কিছু পরিমাণ আলো প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে, একে আলোর প্রতিফলন বলে।
যে পৃষ্ঠ থেকে বাধা পেয়ে আলোক রশ্মি ফিরে আসে তাকে আলোক পৃষ্ঠ বলে।
আপতিত আলোর কতটুকু প্রতিফলিত হবে তা দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে; যথাঃ-
১. আপতিত আলো প্রতিফলকের উপর কত কোণে আপতিত হচ্ছে; এবং
২. প্রথম ও দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রকৃতি।
আলোর প্রতিফলনের সূত্র—
আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি ও আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব সর্বদা একই সমতলে থাকে।
আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণের মান সর্বদা সমান হয়।
প্রতিফলক পৃষ্ঠের প্রকৃতি অনুসারে প্রতিফলন দুই প্রকারের হতে পারে; যথা–
১. নিয়মিত প্রতিফলন (Regular Reflection)
২. ব্যাপ্ত প্রতিফলন (Diffused Reflection)
আলোর প্রতিসরণ
ভিন্ন ঘনত্বের দুইটি স্বচ্ছ মাধ্যমের বিভেদ তলে আলো যদি তির্যকভাবে আপাতিত হয়, তাহলে দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশের সময় রশ্মির দিক পরিবর্তিত হয়। এ দিক পরিবর্তন হওয়াকে আলোর প্রতিসরণ বলে।
আলোর প্রতিসরণের সূত্র
আপতিত রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি ও আপতন বিন্দুতে দুই মাধ্যমের বিভেদতলের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব সর্বদা একই সমতলে থাকে।
দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের বিভেদতলে, নির্দিষ্ট বর্ণের আলোকরশ্মির প্রতিসরণে, আপতন কোণের sine ও প্রতিসরণ কোণের sine এর অনুপাত (প্রতিসরাঙ্ক) সর্বদা সমান হয়।
সুতরাং, sin i/sin r = μ
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:পদার্থবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:বিকিরণ |
যানবাহন | https://bn.wikipedia.org/wiki/যানবাহন | thumb|upright=1.3|বাস, সর্বজনীন পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত একটি যানবাহন।
যানবাহন ( হতে) হলো এক স্থান হতে অন্য স্থানে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা যান্ত্রিক মাধ্যম। অধিকাংশ যানবাহনই মানুষের তৈরী, যেমন, বাইসাইকেল, গাড়ি, ট্রেন, জাহাজ, এবং উড়োজাহাজ। Halsey, William D. (Editorial Director): MacMillan Contemporary Dictionary, page 1106. MacMillan Publishing, 1979. তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক অনেক বস্তুও পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয় , যেমন হিমবাহ, ভাসমান গাছের গুঁড়ি, ইত্যাদি।
অনেক ক্ষেত্রেই যানবাহন মানুষ বা পশু দ্বারা চালিত হয়। যেমন, রিকশা, গরুর গাড়ি। তবে কেবল পশু যখন যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করা হয় (যেমন ঘোড়া), তখন তাদেরকে যানবাহনের অন্তর্গত হিসাবে ধরা হয় না।
স্থলভাগে চালিত অধিকাংশ যানবাহনেই চাকা থাকে। ব্যতিক্রম হলো হোভারক্রাফট, স্নোমোবাইল, স্লেজ, ইত্যাদি।
ইতিহাস
তথ্যসূত্র
আরো দেখুন
বিষয়শ্রেণী:পরিবহন
বিষয়শ্রেণী:শিল্পজাত পণ্য |
শক্তি | https://bn.wikipedia.org/wiki/শক্তি | thumb|right|350px|বিদ্যুত চমক শক্তিশালী তড়িৎক্ষেত্রের দ্বারা বাতাসের বৈদ্যুতিক ভাঙ্গন এবং শক্তি প্রবাহের সবচেয়ে নাটকীয় উদাহরণ। আবহমন্ডলের তড়িৎ বিভব শক্তি তাপশক্তি, আলোকশক্তি এবং শব্দে রূপান্তরিত হয়।
পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি বলতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে বুঝায়। প্রধানত শক্তি হচ্ছে পদার্থের এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই , এক রূপ থেকে অন্য রূপ নিতে পারে এবং এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে যেতে পারে। বিখ্যাত E=mc² অনুযায়ী শক্তি পদার্থে নিহিত থাকতে পারে । যেমন ফিশন বিক্রিয়া । কাজ বা কার্য হচ্ছে বল ও বলের দিকে সরণের গুণফল। কৃতকাজের পরিমাণ দিয়েই শক্তি পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু মোট যতখানি কাজ করতে পারে। সুতরাং কাজের একক ও শক্তির একক অভিন্ন - জুল। ১ জুল = ১ নিউটনХ ১ মিটার। শক্তি একটি অদিক রাশি।
শক্তির রূপ
শক্তির বিভিন্ন রূপ আছে। মোটামুটিভাবে শক্তির নয়টি রূপ দিয়ে প্রাকৃতিক সব ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়া হয়। শক্তির রূপগুলি হল:
যান্ত্রিক শক্তি
আলোক শক্তি
শব্দ শক্তি
তাপ শক্তি
চৌম্বক শক্তি
তড়িৎ শক্তি
পারমাণবিক শক্তি
রাসায়নিক শক্তি
সৌর শক্তি
শক্তির রূপগুলোর সংজ্ঞাসমূহ
যান্ত্রিক শক্তি : যান্ত্রিক শক্তি হলো সেই শক্তি, যা কোনো বস্তু তার স্থির অবস্থান বা গতিশীল অবস্থার জন্য লাভ করে।
আলোক শক্তি : যে শক্তি আমাদের চোখে প্রবেশ করে দর্শনের অনুভূতি জন্মায় তাই আলোক শক্তি।
শব্দ শক্তি : শব্দ শক্তি হল একধরনের কম্পন যা গ্যাস, তরল বা কঠিন মাধ্যমের সাহায্যে শব্দ তরঙ্গ হিসাবে সঞ্চালিত হয়।
তাপ শক্তি : যে শক্তি আমাদের শরীরে ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি তৈরি করে তাই তাপ শক্তি।
চৌম্বক শক্তি : যে শক্তির ফলে এক পদার্থ কর্তৃক অন্য কোন পদার্থ আকর্ষিত বা বিকর্ষিত হয়।
তড়িৎ শক্তি : বৈদ্যুতিক শক্তি একটি যৌগিক শক্তি যা বৈদ্যুতিক বিভবশক্তি ও গতিশক্তি থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে।
পারমাণবিক শক্তি : পরমাণুকেন্দ্র তথা নিউক্লিয়াসকে ভাঙ্গার পর যে শক্তি পাওয়া যায় বা এর অভ্যন্তরে যে শক্তি সঞ্চিত থাকে তাকে
পারমাণবিক বা নিউক্লীয় শক্তি বলে।
রাসায়নিক শক্তি : সকল জীবদেহে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ সকল রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে রাসায়নিক শক্তি বলা হয়। কোন পদার্থের মধ্যে একটি পরমাণু আর একটি পরমাণুর সাথে বা একটি অনু অন্য একটি অনুর সাথে যে আকর্ষণ শক্তির সাহায্যে যুক্ত থাকে তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে।
সৌরশক্তি : মূলত সূর্য থেকে পাওয়া শক্তি হল সৌরশক্তি। তবে আমরা যখন সূর্য হতে প্রাপ্ত শক্তিকে কাজে লাগাই তখনই এটি সৌরশক্তি হিসেবে গণ্য হয়।
শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি
শক্তির যে কোন রূপকে অন্য যে কোন রূপে রূপান্তরিত করা যায়, কিন্তু মোট শক্তির পরিমাণ একই থাকে। একে শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি বা শক্তির নিত্যতা সূত্র বলা হয়। শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতিকে এভাবে বিবৃত করা যায়ঃ
শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অপর এক বা একাধিকরূপে পরিবর্তিত হতে পারে। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়।
শক্তি একরূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হলে শক্তির কোন ক্ষয় হয় না। একটি বা একাধিক বস্তু যে পরিমাণ শক্তি হারায়, অন্য এক বা একাধিক বস্তু ঠিক একই পরিমাণ শক্তি পায়। নতুন করে কোন শক্তি সৃষ্টি হয় না বা কোন শক্তি ধ্বংসও হয়না। সুতরাং এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির মুহূর্তে যে পরিমাণ শক্তি ছিল, এখনও ঠিক সেই পরিমাণ শক্তিই আছে।
কাজ-শক্তি উপপাদ্য
কোন বস্তুর উপর কৃত কাজ তার গতিশক্তির পরিবর্তনের সমান। অর্থাৎ যেহেতু কোন বস্তুর উপর কাজ করলে তা বস্তুকে গতি দেয়, আবার যেহেতু ঐ গতিকে কাজে রূপান্তর করা সম্ভব (তাকে থামিয়ে দিতে গিয়ে), সেহেতু আমরা বলি ঐ বস্তুতে (গতি)শক্তি এসেছে।
শক্তি ক্ষেত্রে ব্যাপক ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন
২০১৫-১৬ অর্থবছরের ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা’ অনুযায়ী, শক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ব্যাপক পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। শক্তি ক্ষেত্রের এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে –
১)উৎপাদন ক্ষমতায় রেকর্ড পরিমান। ২০১৪-১৫-য় সর্বোচ্চ পরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতা পরিলক্ষিত হয় ২৬.৫ গিগাওয়াট যা বিগত ৫ বছরে বার্ষিক প্রায় ১৯ গিগাওয়াট হারে বৃদ্ধির চেয়ে অনেকটা বেশি।
২)শক্তি ক্ষেত্রে ক্ষমতা বৃদ্ধি তুলনাহীন। এইসব ব্যবস্থা ভারতের বিদ্যুৎ চাহিদার সর্বোচ্চ ঘাটতির পরিমাণ ২.৪ শতাংশে কমিয়ে এনেছে, যা সর্বকালের মধ্যে সর্বনিম্ন।
৩)শক্তি বন্টনকারী সংস্থাগুলি কার্যকলাপ উন্নয়নে একটি ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগগুলি হল- উদয় বা উজ্জ্বল ডিসকম্ অ্যাস্যুরেন্স যোজনা।
৪)ভারতীয় রেল শক্তি সম্পদ ক্রয়ের জন্য একটি ‘ওপেন এক্সেস’ বা ‘উন্মুক্ত পন্থা’য় যাবার জন্য প্রয়াস নিচ্ছে।
৫)পুনর্নবীকরণ একটি বড় ধরনের নীতিগত জোর পেয়েছে। ২০২২-এর মধ্যে উৎপাদন ৩২ গিগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ১৭৫ গিগাওয়াট করার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে।
৬)ন্যাশনাল সোলার মিশন-এর আওতায় সর্বশেষ দফায় নিলামে বিদ্যুৎ মাসুল বা ট্যারিফের পরিমাণ সর্বকালের মধ্যে কমে গিয়ে প্রতি ঘন্টা কিলোওয়াটে ৪.৩৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
৭)‘শক্তি ক্ষেত্রে এক বাজার’-এর দিকে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্মনগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এই সব বড় ধরনের সাফল্যগুলি সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সমীক্ষা এটা লক্ষ্য করেছে যে শক্তি ক্ষেত্রের জটিলতা এতটাই যাতে হতাশাব্যঞ্জক সমস্যা বহাল রয়েছে।বিশেষ করে:
বাজারে মূল্য সংকেতকে যথেষ্টভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ট্যারিফ ব্যবস্থার জটিলতার জন্য অর্থনৈতিক উপাদানগুলি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
বিদ্যুৎ সরবরাহের গড় ব্যয়ের তুলনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে গড় ট্যারিফের পরিমাণ অনেকটাই কম রাখা হয়।
শিল্পক্ষেত্রে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ মাশুল এবং বিদ্যুতের গুণমানে তারতম্য “মেক ইন ইন্ডিয়া”-র উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
উন্মুক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে দেশ জুড়ে একই বিদ্যুৎ মূল্য নির্ধারণের পথে মূল্য ও মূল্য-বহির্ভুত বিষয়গুলি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
গৃহস্থ ভোক্তাদের জন্য ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যারিফ সিডিউল’ নির্ধারণ করা।
এই সমীক্ষায় শক্তিক্ষেত্রের জন্য কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদী নীতি বিষয়ে আলোচনা করেছে যা নিচে উল্লেখ করা হল:
ক) বিদ্যুৎ শুল্ক বা মাশুল ব্যবস্থা বর্তমানে খুবই জটিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কয়েকটি রাজ্যে পোল্ট্রি ফার্ম, মৎস চাষ, জলাভূমিতে চাষ (নির্দিষ্ট আয়তনের উর্দ্ধে ও নিচে), মাশরুম ও খরগোশ ফার্ম ইত্যাদি জন্য পৃথক পৃথক শুল্ক ব্যবস্থা রয়েছে। পক্ষান্তরে, অন্যান্য শক্তি-নির্ভর উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভোক্তার জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য রয়েছে।
খ)শিল্পক্ষেত্রের উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ফলে ফার্মগুলি বিদ্যুৎ ক্রয়ের পথ ছেড়ে নিজেদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে সরে যেতে পারে।
গ) ৪৭ শতাংশ ফার্ম ডিজেল চালিত জেনারেট ব্যবহার করে।
ঘ) ২০০৬-০৭ এবং ২০১৪-১৫-র অন্তর্বতী সময়ে বিভিন্ন ব্যবহারকারী দ্বারা বিদ্যুৎ সংগ্রহের হার বার্ষিক ৪.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যবহারির নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯.৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধির চেয়ে অনেকটাই শ্লথ।
ঙ) ‘ডিসকম’-এর ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতে ক্রস-সাবসিডি সারচার্জ এবং মূল্য-বর্হিভূত নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ সমূহ মুখ্য পদক্ষেপ। কিন্তু এরাও দেশ জুড়ে একটি বৈদ্যুতিক বাজার সৃষ্টির পথে বাধা দিতে পারে।
চ) অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায়, ভারতের অভ্যন্তরীণ শক্তি ক্ষেত্রের শুল্ক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রভূত সুযোগ রয়েছে। ধনী পরিবারগুলির জন্য বিদ্যুৎ শুল্ক বাড়ানো যেতে পারে, সেক্ষেত্রে গরীবদের জন্য শুল্কের পরিমান কমানো যায়।
২০১৫-১৬-র অর্থনৈতিক সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ দেশের শক্তিক্ষেত্রে সংস্কার চালু রাখার মঞ্চ তৈরি করে দেবে যাতে ভারত শক্তি ক্ষেত্রে ‘এক বাজার’ হয়ে উঠতে পারে, শিল্পক্ষেত্র থেকে চাপের বোঝা কমানো যাবে; ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী এটাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামুখী করে তোলা; শুল্ককে সরল ও স্বচ্ছ করে তোলা যেতে পারে; প্রান্তিক অংশের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি এড়ানো, এবং আরো অধিক পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি সহ দরিদ্রের জন্য মূল্যের পরিমাণ কমানোর জন্য যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে সেই লক্ষ্যে সুযোগ গ্রহণ করা।
এই সমস্ত কিছুতে, কেন্দ্রের কাছ থেকে সাহায্যকারী সহায়তা সহ, রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, সহযোগিতামূলক-প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়, যা এখনকার ভারত. পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে কার্যকর করতে শক্তি ক্ষেত্র একটি যথাযথ কঠিন পরীক্ষাস্থল।
আরও দেখুন
কাজ
ক্ষমতা
বল
চাপ
দহন
তথ্যসূত্র
পদার্থবিজ্ঞান,নবম-দশম শ্রেণি,পৃষ্ঠা নং ১০২, এনসিটিবি (http://www.nctb.gov.bd/)
বহিঃসংযোগ
শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি
শক্তি ও জীবন (Energy and Life)
শক্তি বলতে আসলে কী বোঝায়? From Physics World
বিষয়শ্রেণী:পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:শক্তি
বিষয়শ্রেণী:প্রকৃতি
বিষয়শ্রেণী:মহাবিশ্বতত্ত্ব |
ইলেকট্রন বিজ্ঞান | https://bn.wikipedia.org/wiki/ইলেকট্রন_বিজ্ঞান | ডান|250 px| নিউমেটিক সংকেত কন্ডিশনার
ইলেকট্রন বিজ্ঞান ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও তড়িৎ প্রকৌশলের একটি আন্তঃক্ষেত্রীয় শাখা যেখানে বায়ুশূন্য নল (ভ্যাকিউম টিউব), গ্যাস অথবা অর্ধপরিবাহী যন্ত্রাংশের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক সঙ্কেত বহনকারী ইলেক্ট্রনের নিঃসরণ, প্রবাহ, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবহারিক আচরণ ও প্রক্রিয়া আলোচিত হয়। ১৯০৪ সালে জন অ্যামব্রোস ফ্লেমিং দুইটি তড়িৎ ধারক বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ বদ্ধ বায়ুশূন্য কাচের নল (vacuum tube) উদ্ভাবন করেন ও তার মধ্য দিয়ে একমুখী তড়িৎ পাঠাতে সক্ষম হন। তাই সেই সময় থেকে ইলেকট্রন বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছে বলা যায়। ইংরেজি পরিভাষাতে একে ইলেকট্রনিক্স (ইংরেজি Electronics ইলেকট্রনিক্স্) বলা হয়।
ইলেকট্রন বিজ্ঞান ক্ষেত্রে প্রধানত ইলেকট্রনীয় বর্তনীর নকশা প্রণয়ন এবং পরীক্ষণ করা হয়। ইলেকট্রনীয় বর্তনী সাধারণত রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ইন্ডাক্টর, ডায়োড প্রভৃতি দ্বারা কোন নির্দিষ্ট কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য তৈরি করা হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনার যেটি শুধুমাত্র আকাংক্ষিত বেতার স্টেশন ছাড়া অন্যগুলোকে বাতিল করতে সাহায্য করে, সেটি ইলেকট্রনীয় বর্তনীর একটি উদাহরণ। পাশে আরেকটি উদাহরণের (নিউমেটিক সংকেত কন্ডিশনারের ) ছবি দেওয়া হলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইলেকট্রন বিজ্ঞান রেডিও প্রকৌশল বা বেতার প্রকৌশল নামে পরিচিত ছিল। তখন এর কাজের পরিধি রাডার, বাণিজ্যিক বেতার (Radio) এবং আদি টেলিভিশনে সীমাবদ্ধ ছিল। বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন ভোক্তা বা ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক যন্ত্রপাতির উন্নয়ন শুরু হল, তখন থেকে প্রকৌশলের এই শাখা বিস্তৃত হতে শুরু করে এবং আধুনিক টেলিভিশন, অডিও ব্যবস্থা, কম্পিউটার এবং মাইক্রোপ্রসেসর (অণুপ্রক্রিয়াকারক বা সমন্বিত বর্তনী) এই শাখার অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে বেতার প্রকৌশল নামটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে দশকের শেষ নাগাদ ইলেকট্রন বিজ্ঞান (ইলেকট্রনিক্স) নাম ধারণ করে।
উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শকলি, জন বারডিন এবং ওয়াল্টার হাউজার ব্র্যাটেইন একসাথে যৌথভাবে ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন করেন। ১৯৪৮ সালে ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন ও ১৯৫৯ সালে সমন্বিত বর্তনী (integrated circuit or IC) উদ্ভাবনের আগে ইলেকট্রনীয় বর্তনী তৈরি হতো বড় আকারের পৃথক পৃথক বায়ুশূন্য নল যন্ত্রাংশ দিয়ে। এই সব বিশাল আকারের যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি বর্তনীগুলো বিপুল জায়গা দখল করত এবং এগুলো চালাতে অনেক শক্তি লাগত। এই যন্ত্রাংশগুলির গতিও ছিল অনেক কম। অন্যদিকে সমন্বিত বর্তনী বা আইসি অসংখ্য (প্রায়ই ১০ লক্ষেরও বেশি) ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তড়িৎ যন্ত্রাংশ, যাদের বেশিরভাগই মূলত ট্রানজিস্টর দিয়ে গঠিত হয়। এই যন্ত্রাংশগুলোকে একটি ছোট্ট পয়সা আকারের সিলিকন চিলতে বা চিপের উপরে সমন্বিত করে সমন্বিত বর্তনী তৈরি করা হয়। বর্তমানের অত্যাধুনিক কম্পিউটার বা নিত্যপ্রয়োজনীয় ইলেকট্রনীয় যন্ত্রপাতি সবই প্রধানত সমন্বিত বর্তনী বা আই সি দ্বারা নির্মিত।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Definition of electronics, Electronics and You, Retrieved on 2013-07-05.
বিষয়শ্রেণী:ইলেকট্রনিক প্রকৌশল
বিষয়শ্রেণী:তড়িৎ প্রকৌশল
বিষয়শ্রেণী:প্রযুক্তি
বিষয়শ্রেণী:ইলেকট্রনিক্স
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
প্রকৌশলবিদ্যা | https://bn.wikipedia.org/wiki/প্রকৌশলবিদ্যা | REDIRECTপ্রকৌশল |
জলবায়ু | https://bn.wikipedia.org/wiki/জলবায়ু | right|thumb|অ্যপোলো ১৭ হতে তোলা পৃথিবীর ছবি
জলবায়ু (climate) : কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সুদীর্ঘ সময়ের, সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড় বা সামগ্রিক অবস্থার হিসাবকে জলবায়ু বলে। সাধারণত বৃহৎ এলাকাজুড়ে জলবায়ু নির্ণীত হয়ে থাকে। জলবায়ুর পরিবর্তন আবহাওয়ার পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল। কোনো স্থানের আবহাওয়ার পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আবহাওয়ার এ পরিবর্তন সাধারণত ঐ স্থানের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর কোনো স্থানের আবহাওয়ার উপাদানগুলোর স্থায়ী পরিবর্তন হলো জলবায়ু পরিবর্তন। কোনো স্থানের জলবায়ু হঠাৎ পরিবর্তিত হয় না। জলবায়ু পরিবর্তন একটি ধীর ও চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটি উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। মৌসুমি বায়ুর প্রভাব এখানে এত অধিক যে, এ জলবায়ু 'ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু' নামে পরিচিত।
নিয়ামক
জলবায়ু কতিপয় বিষয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে, যেগুলোকে জলবায়ুর নিয়ামক বলা হয়ে থাকে। যথা:
অক্ষাংশ
অক্ষাংশের ভিন্নতা ও পরিবর্তনের সাথে সাথেই জলবায়ুরও তারতম্য ঘটে। সূর্য কিরণ সারা বছর লম্ব ভাবে পরার কারণে নিরক্ষিয় অঞ্চলে উষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করে ।এবং মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্য রশ্মি ক্রমশ তির্যক হতে থাকে এবং জলবায়ু শিতল হয়। ফলে নিরক্ষিয় অঞ্চলে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। নিরক্ষরেখা বরাবর স্থানসমূহে সূর্যরশ্মি খাড়াভাবে পড়ে বিধায় ঐসকল অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে থাকে। ১°সে অক্ষাংশে উষ্ণতা 0.২৮°সে হ্রাস পায় বলেই নিরক্ষরেখা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তি উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে বরফ রয়েছে।
উচ্চতা
উচ্চতার বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতায় ৬.8° সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এমনকি উচ্চতার তারতম্যে একই অক্ষাংশে অবস্থিত দুই অঞ্চলের তাপমাত্রা দুরকম হয়।
সমুদ্র থেকে দূরত্ব
কোনো স্থান সমুদ্র থেকে কতটা দূরে তার প্রেক্ষিতে বাতাসের আর্দ্রতার মাত্রা নির্ভর করে আর আর্দ্রতার প্রেক্ষিতে জলবায়ুর উষ্ণতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। সমুদ্র নিকটবর্তি এলাকার বায়ুতে গরমকালে আর্দ্রতা ও শীতকালে মৃদু উষ্ণতা বিরাজ করে। এধরনের জলবায়ুকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে।⚡
বায়ুপ্রবাহের দিক
সমুদ্র থেকে প্রবাহিত জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যে অঞ্চল দিয়ে বয়ে যায়, সে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। কিন্তু স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত শুষ্ক বায়ু আবার উষ্ণতা বাড়ায়।
বৃষ্টিপাত
কোনো স্থানে বৃষ্টিপাত হলে সেখানকার উত্তাপ কমে আবার বৃষ্টিপাতহীন অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি থাকে। তাই মরুভূমি এলাকায় জলবায়ু উষ্ণ। তাছাড়া বৃষ্টিপাতের মাত্রার উপর আর্দ্রতার মাত্রাও নির্ভরশীল, যা জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সমুদ্রস্রোত
শীতল বা উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের কারণে উপকূলবর্তি এলাকার আবহাওয়ায়ও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। এর উদাহরণ হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ পানির প্রবাহ এল নিনোর কথা উল্লেখ করা যায়, যার প্রভাবে উপকূলবর্তি দেশগুলোতে দীর্ঘ খরা পর্যন্ত দেখা দিয়েছে।
পর্বতের অবস্থান
উঁচু পর্বতে বায়ুপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে আবহাওয়া ও জলবায়ুগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মৌসুমী জলবায়ু বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
বনভূমি
গাছের প্রস্বেদন ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বনভূমির প্রগাঢ়তার কারণে কোনো কোনো স্থানে সূর্যালোক মাটিতে পড়ে না, ফলে ঐসকল এলাকা ঠান্ডা থাকে। তাছাড়া বনভূমি ঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো ইত্যাদির গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার রূপ বদলে দেয়।
ভূমির ঢাল
সূর্যকীরণ উঁচু স্থানের ঢাল বরাবর পড়লে ভূমি উত্তপ্ত হয়ে তাপমাত্রা বাড়ে আবার ঢালের বিপরীত দিকে পড়লে তাপমাত্রা অতোটা বাড়ে না। তাছাড়া ঢাল বরাবর লম্বভাবে সুর্যালোকের পতন, তীর্যকভাবে সূর্যালোক পতনের তুলনায় তুলনামূলক উত্তপ্ত আবহাওয়ার সৃষ্টি করে।
মাটির বিশেষত্ব
বেলেমাটির বিশেষত্ব হলো তা যত দ্রুত গরম হয়, তত দ্রুত ঠান্ডাও হয়। সেই তুলনায় কর্দমযুক্ত পলিমাটি দ্রুত গরমও হয়না, গরম হলে ঠান্ডা হতেও দেরি হয়। তাই কোনো স্থানের মাটির বিশেষত্বের উপর আবহাওয়া ও জলবায়ুর পার্থক্য দেখা দিতে পারে।
শ্রেণিবিভাগ
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু
নিরক্ষীয় জলবায়ু
মৌসুমী জলবায়ু
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু
হীমমণ্ডলীয় জলবায়ু
আরও দেখুন
ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি
গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া
বাস্তুতন্ত্র
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:জলবায়ু
বিষয়শ্রেণী:আবহাওয়াবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:জলবায়ুবিজ্ঞান |
জুলিয়াস সিজার | https://bn.wikipedia.org/wiki/জুলিয়াস_সিজার | |
চার্ল্স্ ডারউইন | https://bn.wikipedia.org/wiki/চার্ল্স্_ডারউইন | REDIRECT চার্লস ডারউইন |
ন্যানোপ্রযুক্তি | https://bn.wikipedia.org/wiki/ন্যানোপ্রযুক্তি | thumb|ন্যানোপ্রযুক্তির সাথে অন্যান্য বিষয়ের তুলনা
ন্যানোপ্রযুক্তি বলতে ন্যানোমাপনীর বস্তুসমূহের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে বোঝায়, যেসব বস্তু সেগুলির গঠনকারী উপাদান পদার্থগুলির বৃহৎ-মাপনীতে এমনকি আণুবীক্ষণিক মাপনীতে প্রদর্শিত ধর্মাবলি অপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণরূপে ভিন্ন ধর্মাবলি প্রদর্শন করে। সাধারণত ন্যানোপ্রযুক্তিতে এমন সব কাঠামো নিয়ে কাজ করা হয় যা অন্তত একটি মাত্রায় ১০০ ন্যানোমিটার থেকে ছোট। কিন্তু এই সংজ্ঞাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। ন্যানোপ্রযুক্তির সারমর্ম শুধুমাত্র মাত্রার পরিমাপেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ক্ষুদ্র মাপনীতে উপাদান পদার্থের ধর্মের পরিবর্তন। তাই একটি ২০০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের বস্তুকেও যথার্থ ন্যানো উপাদান গণ্য করা হতে পারে, যদি সেটি বৃহৎ-মাপনী বা আণুবীক্ষণিক (মাইক্রোমিটার) মাপনীতে প্রদর্শনকৃত ধর্মগুলির পরিবর্তে তাৎপর্যপূর্ণরূপে ভিন্ন ধর্মাবলি প্রদর্শন করে।
ন্যানোপ্রযুক্তি বহুমাত্রিক, এর সীমানা প্রচলিত অর্ধপরিবাহী পদার্থবিজ্ঞান থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক আণবিক স্বয়ং-সংশ্লেষণ প্রযুক্তি পর্যন্ত, কিংবা আণবিক কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ন্যানোপদার্থের উদ্ভাবন পর্যন্ত বিস্তৃত। রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানোপ্রযুক্তির জনক বলা হয়।
ন্যানোপ্রযুক্তির ব্যবহার চিকিৎসাবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স, শক্তি উৎপাদনসহ বহু ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। অপরদিকে পরিবেশের উপর এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব নিয়েও সংশয় রয়েছে। তারপরও পৃথিবীর বহু দেশে ন্যানোপ্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে।
ইতিহাস
right|thumb|আণবিক গিয়ার, নাসার কম্পিউটার সিমুলেশন।
১৯৫৯ সালের ২৯ জানুয়ারি রিচার্ড ফাইনম্যান ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে অনুষ্ঠিত আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির এক সভায় There's Plenty of Room at the Bottom শীর্ষক এক বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতাটিই সর্বপ্রথম ন্যানোপ্রযুক্তির ধারণা দেয়।
১৯৮৯ সনের নভেম্বরের ৯ তারিখ ন্যানোটেকনলজির জন্য একটা অন্যতম স্মরণীয় দিন হিসবে বিবেচিত হবে। এই দিনে ক্যালিফোর্নিয়ার IBM এর Almaden Research Center এ Don Eigler এবং Erhard Schweizer ৩৫ টি Xenon অণু দিয়ে IBM এর লগোটি তৈরি করেছিলেন। সেইদিনই প্রথম অণুকে ইচ্ছেমত সাজিয়ে পছন্দমত কিছু তৈরি করা সম্ভব হয় মানুষের পক্ষে। এইদিনই প্রথম মানুষ প্রকৃতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি অণুর কাঠামোকে ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল। অণুর গঠনকে ইচ্ছেমত তৈরি করে অনেক কিছু করা সম্ভব। এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার মানুষের সামনে উন্মোচিত হল। শুধু মাত্র অণুর কাঠামোগত পার্থক্য হবার কারণেই কয়লা এত সস্তা আর হীরক এত দামী। দুটি জিনিসের মূল উপাদান হল কার্বণ। শুধু মাত্র অণুর গঠনের পার্থক্যের কারণে হীরক পৃথিবীর সবথেকে শক্ত দ্রব্য আর কয়লা কিংবা পেন্সিলের শীষ নরম।
১৯৯৯ সনে Cornell বিশ্ববিদ্যালয়ের Wilson Ho এবং তার ছাত্র Hyojune Lee অণুকে জোড়া লাগানোর প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেন। এতদিন পর্যন্ত অণু-পরমাণুর সংযোগ শুধু মাত্র রাসয়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সংগঠিত হত। কিন্তু ন্যানোটেকনলজির মাধ্যমে অণু-পরমাণুকে ভেঙে কিংবা জোড়া লাগিয়ে অনেক কিছুই করার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিল।
ন্যানোপ্রযুক্তি কী?
ন্যানো একটি মাপার একক। ম্যাট্রিক একক এর শুরুটা হয়েছিল ১৭৯০ সনে ফ্রান্সে। ফ্রান্স জাতীয় পরিষদ এককগুলিকে সাধারণ করবার জন্য কমিটি গঠন করে এবং তারাই প্রথম ডেসিমাল কিংবা দশ একক এর ম্যাট্রিক পদ্ধতির প্রস্তাব করেন। এবং দৈর্ঘ্যের একক এক মিটার এর সূচনা করেন। তারা পৃথিবীর পরিধির ৪০,০০০,০০০ ভাগের এক ভাগকে এক মিটার বলেন। মিটার শব্দটি গ্রিক শব্দ metron থেকে এসেছে যার অর্থ হল, পরিমাপ। এছাড়া মিটার এর ১০০ ভাগের এক ভাগকে সেন্টিমিটার বলা হয়। ১৭৯৩ সনে ফ্রান্সে আইন করে তা প্রচলন করা হয়। ১৯৬০ সনে এই মিটার এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়। ক্রিপটন ৮৬ এর কমলারঙের রেডিয়েশন এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ১,৬৫০,৭৬৩.৭৩ ভাগের এক ভাগকে মিটার বলা হয়। ১৯৮৩ সনে মিটার এর সংজ্ঞা পুনরায় পরিবর্তিত করা হয়, বর্তমান সংজ্ঞা অনুযায়ী, বায়ুশুন্যে আলোর গতির ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ ভাগের এক ভাগকে মিটার বলা হয়। এই মিটার এর ১,০০০,০০০,০০০ (১০০ কোটি) ভাগের এক ভাগকে ন্যানোমিটার বলা হয়। ন্যানো শব্দটি গ্রিক nanos শব্দ থেকে এসেছে যার অভিধানিক অর্থ হল dwarft কিন্তু এটি মাপের একক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি গুলি সর্ম্পকিত সেগুলিকেই বলে ন্যানোপ্রযুক্তি।
মিটার এককটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িত। বাড়িঘর আসবাবপত্র সবই আমরা মাপি এই মিটার এককে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত মিলিমিটার স্কেলে যন্ত্রপাতির সূক্ষতা মাপা হত। মিলিমিটার এর ছোট কোন কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনার অবকাশ ছিলনা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এক নতুন যুগের সূচনা হল। সেমিকণ্ডাকটর তার পথযাত্রা শুরু করল। আর এর শুরুটা হল, ট্রানজিস্টর আবিষ্কার দিয়ে। তখন মাইক্রোমিটার একক দিয়ে আমাদের চিন্তভাবনা শুরু হল। বলা যায় যাত্রা শুরু হল, মাইক্রোটেকনোলজির।
এর পরে টেকনোলজি এগুতে লাগলো প্রচন্ড গতিতে। নানা জিনিসপত্র, যার মধ্যে টেলিভিশন, রেডিও, ফ্রিজ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তা কীভাবে আরও ছোট করা যায় তা নিয়েই প্রচন্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কোন কম্পানি কত ছোট আকারের এই সমস্ত ভোগ্য জিনিস আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারবে, তার প্রতিযোগিতা শুরু হল। আর এই সমস্ত ব্যাপারটা সম্ভব হল, সেমিকণ্ডাকটর সংক্রান্ত প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রথম দিকের রেডিও কিংবা টিভির আকার দেখলে আমাদের এখন হাসি পাবে। এত বড় বড় জিনিস মানুষ ব্যবহার করত কীভাবে? সেই প্রশ্নটি হয়তো এসে দাড়াবে। কিন্তু এখন বাজারে দেয়ালে ঝুলাবার জন্য ক্যালেন্ডারের মত পাতলা টিভি এসেছে। সামনে হয়তো আরও ছোট আসবে।
১৯৮০ সনে IBM এর গবেষকরা প্রথম আবিষ্কার করেন STM(Scanning Tunneling Microscope) এই যন্ত্রটি দিয়ে অণুর গঠন পর্য়ন্ত দেখা সম্ভব। এই যন্ত্রটির আবিষ্কারই ন্যানোপ্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। কীভাবে কাজ করে এই STM। এই যন্ত্রে খুব সূক্ষ পিনের মত সুচাল টিপ আছে এবং তা যখন কোন পরিবাহী বস্তুর খুব কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তা থেকে টানেলিং নামে খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়। এবং এই বিদ্যুৎ এর পরিমাণ দিয়েই সেই বস্তুটির বাহিরের স্তরের অণুর চিত্র তৈরি করা হয়। তবে এই STM এর ক্ষেত্রে যা দেখতে চাইবো তাকে অবশ্যই বিদ্যুৎ পরিবাহী হতে হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ অপরিবাহীর অণুর গঠন কীভাবে দেখা যাবে? না মানুষ বসে থাকেনি। অসম্ভবকে সম্ভব করেই মানুষ যেভাবে এতদূর এসেছে, তেমনি ভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা গেল AFM দিয়ে। STM এর ক্ষেত্রে টানেলিং বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ করা হয় এবং AFM দিয়ে সূক্ষ্ম পিন দিয়ে অণুর গঠন দেখা সম্ভব।
টপ টু ডাউন ও ডাউন টু টপ
ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্র দুটি প্রক্রিয়া আছ। একটি হল উপর থেকে নিচে (Top to Bottom)ও অপরটি হল নীচ থেকে উপর (Bottom to top)। টপডাউন পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়। এই ক্ষেত্র সাধারণত Etching প্রক্রিয়াটি সর্ম্পকিত। আর ডাউনটুটপ হল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিস দিয়ে বড় কোন জিনিস তৈরি করা। আমাদেরর বর্তমান ইলেক্ট্রনিক্স হল, টপডাউন প্রযুক্তি। আর ন্যানোটেকনোলজির হল, বটমটপ প্রযুক্তি। ন্যানোমিটার স্কেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুর উপাদান দিয়ে তৈরি করা হবে এই ন্যানোপ্রযুক্তিতে। সহজে বুঝবার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন, আপনার একটা বিশেষ ধরনের DNA এর প্রয়োজন। সুতরাং বটমটপ প্রযুক্তিতে, সেই DNA এর ছোট ছোট উপাদান গুলিকে মিশ্রণ করে সেই কাঙ্ক্ষিত DNA টি তৈরি করা হবে। তবে নানোপ্রযুক্তিতে শুধু মাত্র বটমটুটপ প্রযুক্তিই নয়, বরং টপটুবটম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই দুটির সংমিশ্রণ করা হবে।
আমরা যারা কম্পিউটার ব্যবহার করছি তারা জানি যে, প্রতি বছরই কম্পিউটার এর মূল্য কমছে। প্রতিবছরই আগের তুলনায় সস্তায় আরও ভাল কার্যক্ষমতার কম্পিউটার পাওয়া যাচ্ছে। আসলে এই কম্পিউটার এর সাথেও ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কিত রয়েছে। কম্পিউটার এর ভিতর যে প্রসেসর আছে, আপনারা প্রায় সবাই ইন্টেল প্রসেসর এর নাম শুনে থাকবেন? এই প্রসেসর এর ভিতরে রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার স্কেলের সার্কিট। আর তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনলজি। ইন্টের প্রসেসরে, সিলিকন এর উপর প্যাটার্ণ করে সার্কিট বানান হয় তার বর্তমান সাইজ হল ১০০ ন্যানোমিটার। সামনের তিন বছরে এর আকার হবে ৭০ ন্যানোমিটার। এবং সাতবছরে এর আকার হবে ৫০ ন্যানোমিটার। ইন্টেল আশা করছে যে ২০১০ সনে তারা ৩০ ন্যানোমিটার সাইজে নিয়ে আনতে পারবে। আর আজকের থেকে তখন এই প্রসেসর এর আকার অর্ধেক হয়ে আসবে। সেই দিনটা খুব বেশি দূরে নয় যেদিন আপনার মোবাইলটি কাজ করবে কম্পিউটারের মত। (বর্তমানেই এই ধরনের কিছু মোবাইল বাজারে এসেছে)। এছাড়া রয়েছে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক। এই হার্ডডিস্কের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা দিন দিন বড়ছে। এই হার্ডডিস্কেও ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনলজি। এখন বাজারে ৪ টেরাবাইটের হার্ডডিস্ক পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এই ব্যাপারটা আজ হতে ১০ বছর আগেও ছিল কল্পনার বাহিরে।
স্থির বিদ্যুৎ ও তার কারসাজি
ন্যানোটেকনলজি দিয়ে সার্কিট বানান যতটা সোজা বলে মনে করা হয়, ব্যাপারটা ততটা সোজা নয়। সেইখানে প্রধান যে বাধা এসে দাড়াবে তা হল, স্থির বিদ্যুৎ। শীতের দিনে বাহির থেক এসে দরজার নবে হাত দিয়েছেন? এমনি সময় হাতে শক লাগল কিংবা অন্ধকারে সুয়েটার খুলতে গেছেন এমনি সময় বিদ্যুৎ এর মত কণা সুয়েটারে দেখা গেল। এইগুলি সবই আমাদের প্রাত্যাহিক দিনে ঘটে, আর এইগুলিই হল স্থির বিদ্যুতের কারসাজি। সাধারণ ইলেক্ট্রিক সার্কিটের মধ্যে এই স্থির বিদ্যুৎ থেকে সার্কিটটিকে রক্ষা করার ব্যবস্থা থাকে। যদি তা না করা হত, তাহলে কোন একটা কারণে স্থির বিদ্যুৎ আপনার বৈদ্যুতিক সারঞ্জামকে নষ্ট করে দিত। কিন্তু ন্যানোটেকনলজির ক্ষেতে বৈদ্যুতিক সার্কিট কল্পনাতিত ছোট হয়ে যায় বলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে রক্ষা করা সম্ভব নয়। কীভাবে ন্যানোস্কেলেও এই সার্কিটগুলিকে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। স্থির বিদ্যুৎ সার্কিটে কীরকম ক্ষতি করতে পারে? প্রকৃতপক্ষে ছোটসার্কিটে স্থিরবিদ্যুত প্রায় ১৫০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর মত তাপ সৃষ্টি করে। এই তাপে সার্কিট এর উপকরণ গলে, সেই সার্কিটটিকে নষ্ট করে দিতে পারে। এই কারণে ১৯৯৭ এর পরে IC সার্কিটে গতানুগতিক ভাবে ব্যবহৃত এলুমিনিয়ামের পরিবর্তে তামা ব্যবহৃত হয়। কেননা তামার গলনাঙ্ক ১০৮৩ যেখানে এলুমিনিয়ামের গলনাঙ্ক ৬৬০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। ফলে অধিক তাপমাত্রাতেও তামা এ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় ভাল কাজ করবে।
ন্যানোপ্রযুক্তির ব্যবসায়
ন্যানোটেকনলজির ভিত্তিতে অনেক অনেক নতুন নতুন টেকনলজির উদ্ভব হচ্ছে। নতুন নতুন দ্রব্য এর সূচনা করছে এবং সেই সাথে ব্যবসায়িক সুযোগের দ্বার উন্মোচন করছে। আশা করা হচ্ছে যে আমেরিকাতে ২০১০ সনের আগে ন্যানোটেকনলজি সম্পর্কিত পণ্যের বাজার ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌছবে এবং ৮ লক্ষ নতুন চাকরির সুযোগ করে দেবে। ন্যানোটেকনলজির গুরুত্বের কথা চিন্তা করে আমেরিকার সরকার বর্তমানে ন্যানোটেকনলজি সংক্রান্ত গবেষণাতে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে ৪২২ মিলিয়ন ডলার এবং ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৭১০ মিলিয়ন ডলার ব্যবহৃত হয়েছিল। শুধু সরকারই নয়, পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ন্যানোটেকনলজি গবেষণায় অর্থ সরবরাহ করছে। তার কারণ হল: ন্যানোটেকনলজি সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করতে যাচ্ছে। যদিও ন্যানোটেকনলজি খুব ক্ষুদ্র টেকনলজি সংক্রান্ত জিনিসগুলি নিয়ে কাজ করে যার ব্যাস একটি চুলের ব্যাসের ৮০ হাজার ভাগের এক ভাগ, কিন্তু এর ক্ষেত্র দিন দিন আরও বর্ধিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সনের নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত রিচার্ড স্মলি বলেছেন,
ন্যানোপ্রযুক্তি সম্পর্কিত বই
The next big thing is really small by Jack Uldrich with Deb Newberry. Publisher: Crown Business,
www.nanotec.org.uk
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
ন্যানোপ্রযুক্তি পরিভাষা
বহিঃসংযোগ
What is Nanotechnology? (A Vega/BBC/OU Video Discussion).
বিষয়শ্রেণী:১৯৮৫-এর নির্দেশনাবলি
বিষয়শ্রেণী:প্রযুক্তিবিদ্যা
বিষয়শ্রেণী:১৯৬০-এ প্রবর্তন
বিষয়শ্রেণী:১৯৮৫-এ প্রবর্তন
বিষয়শ্রেণী:উদীয়মান প্রযুক্তি |
রিচার্ড ফাইনম্যান | https://bn.wikipedia.org/wiki/রিচার্ড_ফাইনম্যান | রিচার্ড ফিলিপ্স ফাইনম্যান (১১ই মে, ১৯১৮ - ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮) একজন নোবেল বিজয়ী মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি তার কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পাথ ইন্টিগ্রাল ফর্মুলেশন, কোয়ান্টাম তড়িৎ-গতিবিজ্ঞান তত্ত্ব এবং অতিশীতলকৃত তরল হিলিয়ামের চরমপ্রবাহমানতা ক্রিয়াকৌশল ব্যাখ্যা করেছেন ও কণা পদার্থবিজ্ঞানে তার কাজের জন্য (তিনি পার্টন মডেল প্রস্তাব করেন।) খ্যাত। কোয়ান্টাম তড়িৎ-গতিবিজ্ঞানে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৫ সালে ফাইনম্যান মার্কিন বিজ্ঞানী জুলিয়ান শুইঙার এবং জাপানি বিজ্ঞানী সিন-ইতিরো তোমোনাগার সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ফাইনম্যান অতিপারমাণবিক কণাসমূহের আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী গাণিতিক প্রকাশের বহুল ব্যবহৃত একটি চিত্ররূপ প্রদান করেন, যা ফাইনম্যান চিত্র নামে পরিচিত। জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও ফাইনম্যান পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ও বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচিত।
ফাইনম্যান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৪২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর অন্যান্য অনেক তরুণ পদার্থবিদের সাথে নিউ মেক্সিকোর লস আলামোসে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সাহায্য করেন। যুদ্ধশেষে প্রথমে তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীকালে ক্যালটেকে শিক্ষকতা করেন। তাকে কোয়ান্টাম গণনা এবং ন্যানোপ্রযুক্তির (আণবিক স্তরে যন্ত্রপাতি তৈরি) ধারণার জনক বলা হয়।..
ফাইনম্যান তার বিভিন্ন বই ও লেকচারের মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজ করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৫৯ সালে ন্যানোপ্রযুক্তির ওপর প্রদত্ত ভাষণ দেয়ার্স প্লেনটি অফ রুম অ্যাট দা বটম, এবং দ্য ফাইনম্যান লেকচার্স অন ফিজিক্স। ফাইনম্যান তার আধা-আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ শিওরলি ইউ আর জোকিং, মি. ফাইনম্যান! এবং হোয়াট ডু ইউ কেয়ার হোয়াট আদার পিপল থিংক? ইত্যাদির জন্যেও খ্যাত। তিনি ছিলেন একজন প্রাঙ্কস্টার, জাগলার, সেফক্রাকার, শখের চিত্রশিল্পী ও বঙ্গোবাদক। তিনি ছিলেন মুক্ত চিন্তার অধিকারী একজন সুরসিক ব্যক্তি। পদার্থবিজ্ঞান ছাড়াও তার জীববিজ্ঞান, চিত্রকলা, মায়ান স্ক্রিপ্ট এবং সেফক্রাকিং-এ আগ্রহ ছিল।
ফাইনম্যানের জীববিজ্ঞানে গভীর আগ্রহ ছিল; তার জিনবিজ্ঞানী ও অণুজীববিজ্ঞানী এস্থার লিডারবার্গের বন্ধুত্ব ছিল, যিনি রেপ্লিকা প্লেটিং ও ব্যাকটেরিওফায ল্যামডা আবিষ্কার করেছিলেন। তাদের বেশ কিছু বিজ্ঞানী সাথে সখ্যতা ছিল, যাঁরা নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানে ক্যারিয়ার শুরু করলেও নৈতিক কারণে জিনতত্ত্বে আগ্রহী হন—তাদের মধ্যে লিও জিলার্ড, গুইদো পনটেকরভো, এরন রোভিক এবং কার্ল সাগান উল্লেখযোগ্য।
জীবনবৃত্তান্ত
রিচার্ড ফিলিপ ফাইনম্যান ১১ মে, ১৯১৮ সালে. নিউ ইয়র্কের ফার রকওয়ে, কুইনসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষরা রাশিয়া ও পোল্যান্ডের আদি অধিবাসী ছিলেন এবং তার পিতামাতা উভয়েই ছিলেন ইহুদি, তবে তারা গোঁড়া ছিলেন না। ফাইনম্যান (দুই বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ও এডওয়ার্ড টেলারের মতো) দেরিতে কথা বলা শুরু করেছিলেন; তিন বছর পূর্ণ হবার আগ পর্যন্ত তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। শৈশবে ফাইনম্যান তার বাবা মেলভিল ভীষণভাবে প্রভাবিত করেন, তিনিই তাকে প্রচলিত চিন্তা-ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করতে শিখিয়েছিলেন। আর মা লুসিলের কাছ থেকে ফাইনম্যান পেয়েছিলেন রসবোধ। ছোটোবেলা থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিল; তিনি রেডিও মেরামত করে আনন্দ পেতেন এবং প্রকৌশলেও তার প্রতিভার কমতি ছিল না। তার বোন জোয়ানও একজন পেশাদার পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন।, An account on Joan Feynman by her son.
শিক্ষা
ফাইনম্যান ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, তার আইকিউ ছিল ১২৫। কলেজে প্রবেশের আগেই তিনি ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস ও ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস জানতেন। গণিতে তার অপার আগ্রহ ছিল, তিনি জুনিয়র স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে স্কুলের গণিত দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন এবং নিত্য নতুন সমস্যা সমাধান করার কৌশল আবিষ্কার করা তার নেশার মত ছিল। এছাড়া গণিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতীকের নিজস্ব রূপ উদ্ভাবন করাটাও তার শখ ছিল, তার আত্মজীবনীতে তিনি বলেছেন ত্রিকোণমিতির সাইন, কোসাইন এবং অন্যান্য অনেক প্রচলিত প্রতীকের নিজস্ব রূপ তিনি ব্যবহার করতেন। অবশ্য পরবর্তীকালে তিনি এ শখটি পরিত্যাগ করেন, কারণ অন্য মানুষজন তার প্রতীকের সাথে পরিচিত ছিল না।
ফাইনম্যান ফার রকওয়ে হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন, যাতে নোবেল বিজয়ী বার্টন রিখটার ও বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ পড়েছিলেন।Schwach, Howard. "Museum Tracks Down FRHS Nobel Laureates" , The Wave (newspaper), April 15, 2005. Accessed October 2, 2007. ফাইনম্যান তার হাই স্কুলে পড়াশোনার শেষ বছরে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ম্যাথ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন; তার প্রাপ্ত নম্বরের সাথে নিকটতম প্রতিযোগীর নম্বরের ব্যবধান বিচারকদের বিস্মিত করেছিল। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ১৯৩৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক অর্জন করেন এবং এরপর তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে যান। প্রিন্সটনে নির্বাচনী পরীক্ষায় তিনি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে পারফেক্ট স্কোর করেন, যা ছিল একটি রেকর্ড - তবে ইতিহাস ও ইংরেজি ভাষা অংশে তিনি অতটা ভালো করতে পারেননি। তিনি ১৯৪২ সালে জন আর্কিবাল্ড হুইলারের অধীনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল প্রিন্সিপাল অফ স্টেশনারি একশান। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার এই কাজই তার পাথ ইন্টিগ্রালের ভিত্তি ছিল, যার মাধ্যমে দ্য প্রিন্সিপাল অফ লিস্ট একশান ইন কোয়ান্টাম মেকানিকস গড়ে ওঠে।
ম্যানহাটন প্রকল্প
thumb|left|ফাইনম্যান (মাঝে) ও রবার্ট ওপেনহেইমার (ডানে), লস আলমসে ম্যানহাটন প্রকল্পের কাজ চলাকালে অবসরে আড্ডায় মশগুল।
প্রিন্সটনে থাকাকালীন সময়ে পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট আর. উইলসন ফাইনম্যানকে ম্যানহাটন প্রকল্পে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান— যা ছিল লস আলামসে যুদ্ধকালীন সময়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রকল্প। জার্মানিতে অ্যাটম বোমা তৈরির পূর্বেই কাজটি সম্পন্ন করার গুরূত্ব অনুধাবন করে ফাইনম্যান এর সাথে যুক্ত হন। তাকে হানস বেথের অধীনে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়, এবং বেথেকে চমৎকৃত করে তিনি একটি দলের নেতা নিযুক্ত হন। রবার্ট সার্বারের কাজের ওপর ভিত্তি করে ফাইনম্যান ও বেথে ফিশন বোমার বিধ্বংসী ফলাফল নির্ণয়ের জন্যে যৌথভাবে বেথে-ফাইনম্যান ফর্মুলা তৈরি করেন। ফাইনম্যান এই প্রকল্পে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করেছেন এবং ট্রিনিটি পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের সময়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন। তার দাবী অনুযায়ী বিস্ফোরণ একমাত্র তিনিই খালি চোখে (সহায়ক কালো গ্লাস না লাগিয়ে) পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি একটি ট্রাকের উইন্ডশিল্ডের মধ্য দিয়ে বিস্ফোরণ অবলোকন করেছিলেন, যার কাচ ক্ষতিকর অতিবেগুনী তেজষ্ক্রিয়তা শুঁষে নেবে বলে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।
তখনকার সময়ে কম্পিউটার ছিল না বলে ম্যানহাটন প্রজেক্টে মানব কম্পিউটার ব্যবহার করা হত, আর ফাইনম্যান গণনার তত্ত্বাবধান করতেন। এছাড়াও তার কাজের মধ্যে ছিল নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর ডিজাইন করা।
কাজটির নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তার কারণে লস আলামস ছিল জনবিরল। ফাইনম্যানের ভাষায়, ওখানে করবার মতো কিছুই ছিল না, বসে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে ফাইনম্যান নানানরকম মজার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। ম্যানহাটন প্রকল্পে কর্মরত বিজ্ঞানীদের সব চিঠিপত্রই কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাভ করার পর (মানে প্রয়োজনীয় সম্পাদনার পর) প্রেরিত হত। ফাইনম্যান প্রায়ই তার সহকর্মীদের সাথে বাজি ধরতেন কোন কথাটা কাচির তলা পড়বে আর কোনটা পড়বে না তা নিয়ে। তিনি এ বিষয়ে একটা নিয়মও আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। আবার একবার তিনি ল্যাবরেটরি আবেষ্টন করা কাঁটাতারের বেড়ায় একটি ফাঁক আবিষ্কার করলেন, যা কর্মচারীরা শর্টকাট হিসাবে ব্যবহার করতো। তিনি তা নিরাপত্তা কর্মীদের নজরে আনবার জন্যে বারবার গেট দিয়ে বের হয়ে বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঢুকে আবার গেট দিয়ে বের হতে লাগলেন। এভাবে নিত্য নতুন ফন্দি আঁটা ফাইনম্যান কম্বিনেশন লক খোলার বিদ্যা শিখতে উঠে পড়ে লাগলেন। তিনি খেয়াল করেছিলেন বিজ্ঞানীরা ও কর্মকর্তারা পারমাণবিক বোমা সংক্রান্ত অতি গোপনীয় কাগজপত্র যেসব স্থানে তালাবন্ধ অবস্থায় রাখেন তা আদৌ নিরাপদ নয়। তিনি প্রায়ই এসব ক্যাবিনেট ও সেফের তালা খুলে সহকর্মীদের সাথে প্র্যাকটিকাল জোক করতেন। একসময় ব্যাপারটা তার নেশায় পরিণত হয় এবং তিনি সেফক্রাকিং এর ওপর রীতিমতো পড়াশোনা করে তালা খোলার বিদ্যা পারদর্শীতা অর্জন করেন। লস আলামসে কম্বিনেশন লকের নিরাপত্তা যাচাই করার জন্যে তার কাছে মতামত চাওয়া হতে শুরু করে। ফাইনম্যান কম্বিনেশন লকের কম্বিনেশন বের করার মজার এক বুদ্ধি বের করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে তালা খুলে নানান হাস্যরসাত্মক ঘটনার জন্ম দিতেন।
কর্মজীবনের সূচনাভাগ
১৯৪২ সালে ডক্টরেট করার পর ফাইনম্যান ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ম্যাডিসনে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ম্যানহাটন প্রজেক্টে যোগদানের কারণে তার নিয়োগের পরপরই তিনি ছুটিতে চলে যান। ১৯৪৫ সালে তিনি ডিন মার্ক ইনগ্রাহামের কাছ থেকে একটি চিঠি পান, যাতে তাকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে পাঠদানের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ফাইনম্যান এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু না বলায় তার নিয়োগ আর বর্ধিত করা হয়নি। পরবর্তীকালে ফাইনম্যান ইউডব্লুতে কয়েকটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি মন্তব্য করেন, "এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে কারণ আমাকে চাকরিচ্যুত করার সুবুদ্ধি বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে।R. March, (May 2003), "Physics at the University of Wisconsin: A History", Physics in Perspective, Vol. 5, 130-149
যুদ্ধের পর ফাইনম্যান প্রিন্সটনের ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডির আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে আলবার্ট আইনস্টাইন, কুর্ট গোডেল, জন ভন নিউম্যান প্রমুখ বাঘা বিজ্ঞানীদের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তিনি সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান পড়ানোর চাকরি গ্রহণ করেন। ফাইনম্যান ১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ পরযন্ত কর্নেলে পদার্থবিজ্ঞানে গাণিতিক পদ্ধতি প্রয়োগের পাঠদান করেন। হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর তার গবেষণায় একটু ভাঁটার টান চলে, তবে তার পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে আনন্দময় গবেষণা করার অভ্যাসটি তিনি শীঘ্রই ফিরে পান। একবার ক্যাফেটেরিয়ায় বসে এক কর্নেলের লোগো আঁকা প্লেট নিয়ে এক দড়াবাজিকরের খেলা দেখতে দেখতে তিনি প্লেট ও লোগোর ঘূর্ণনের সম্পর্কের একটি জটিল হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করেন, যা পরবর্তীকালে তার নোবেল পুরস্কার পাওয়া কাজের ভিত্তি।
ফাইনম্যান অসাধারণ ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। ছাত্রদের কোন কিছু সহজভাবে বোঝানোর ব্যাপারটি তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন এবং পাঠ্য বিষয় ছাত্রদের হৃদয়ঙ্গম করাকে নিজের নৈতিক দায়িত্ব মনে করতেন। তিনি মনে করতেন একজন প্রথম বর্ষের ছাত্রকে যেকোন বিষয় বোঝানো সম্ভব, তা না করতে পারার মানে হল শিক্ষক নিজে বিষটি সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করতে পারেন নি। তার বিভিন্ন লেকচার এবং বক্তৃতায় এ নীতির ছাপ স্পষ্ট লক্ষ করা যায়।.
না বুঝে পদার্থবিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের যে কোন বিষয় পড়াকে ফাইনম্যানের অর্থহীন মনে হত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়েই লক্ষ্য করেছিলেন তার সহপাঠীরা যা শেখে তা অনেকটাই গ্রন্থগত; পরবর্তীকালে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তির মধ্যেও এমন সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করেন। কর্নেলে অধ্যাপনারত অবস্থায় ফাইনম্যান কিছুদিনের জন্যে পরিদর্শক অধ্যাপক হিসেবে ব্রাজিলে যান। সেখনে গিয়ে তিনি খেয়াল করেন সেখানকার বিজ্ঞান শিক্ষার দৈন্যদশা এবং পাঠ্যপুস্তকের দুর্বলতা। তিনি সে দেশের শিক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় কনফারেন্সে অকুন্ঠচিত্তে এ বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি যা ভালো মনে করতেন তা করতে তিনি কখনো দ্বিধাবোধ করতেন না। তিনি নির্বুদ্ধিতা বা ভান করা পছন্দ করতেন না এবং যারা তাকে বোকা বানাতে চাইত তাদের তিনি সহজে ছেড়ে দিতেন না।
পুরস্কার ও সম্মাননা
নোবেল পুরস্কার, (১৯৬৫)
ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স, (১৯৭৯)
উক্তিসমূহ
ফাইনম্যানের উক্তি
"প্রিয় মিসেস. চাউন, আপনাকে পদার্থবিজ্ঞান শেখানোর জন্য আপনার ছেলের প্রচেষ্টাকে আপনি খুব একটা আমলে নেবেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালোবাসা। শুভেচ্ছান্তে, রিচার্ড ফাইনম্যান।"
"হস্তমৈথুনের কাছে যৌনসঙ্গম যেমন, গণিতের কাছে পদার্থবিজ্ঞান সেরকম।"
"পদার্থবিজ্ঞান হলো যৌন-সঙ্গমের মতন: এটা কিছু বাস্তব ফল দিতেই পারে, কিন্তু সেজন্য আমরা এটা চর্চা করি না।"
"গণিত বাস্তব নয়, তবে এটাকে বাস্তব বলে মনে হয়। তাহলে এটা আসলে কি?"
"কোন সমস্যা সমাধান করার সময়টাতে দুশ্চিন্তা করো না। যখন সমাধান করা শেষ হলো তখনই আসলে দুশ্চিন্তা করার উপযুক্ত সময়।"
"বিজ্ঞানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এটি জীবন্ত।"
"সব মৌলিক প্রক্রিয়াকেই উল্টোদিকে চালনা করা সম্ভব।"
"কোন কিছু বোঝা-র অর্থ কি? ... আমি জানি না।"
"যা আমি তৈরি করতে পারি না, তা আমি বুঝি না।" (মৃত্যুর পর তার চকবোর্ড থেকে নেয়া হয়েছে।)
"যে সব সমস্যা সমাধান করা হয়েছে তাদের প্রতিটির সমাধান প্রক্রিয়া জানতে হবে।" (মৃত্যুর পর তার চকবোর্ড থেকে নেয়া হয়েছে।)
"যারা গণিতে অজ্ঞ তাদের জন্য প্রকৃতির নিগূঢ়তম সৌন্দর্যকে সত্যকারভাবে উপলব্ধি করাটা কষ্টকর। ... প্রকৃতিকে জানতে হলে, তার সৌন্দর্যকে অনুধাবন করতে হলে প্রকৃতির ভাষা জানা চাই।"
"সত্যিকার সমস্যাটা আমি সংজ্ঞায়িত করতে পারছি না, তাই আমার সন্দেহ হচ্ছে সত্যিকার কোন সমস্যা আদৌ আছে কি-না, কিন্তু কোন সত্যিকার সমস্যা যে নেই এটাও আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।" (কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সম্পর্কে)
"দুইবার মরতে হলে ব্যাপারটাকে আমি ঘৃণা করতাম। কারণ মৃত্যু খুবই একঘেয়ে ব্যাপার।" (শেষ উক্তি).
ফাইনম্যানের সম্বন্ধে উক্তি
ফাইনম্যানের সহকর্মী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিদ মুরে জেল-ম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ সরসভাবে বর্ণনা করেছেন যে, ফাইনম্যানের সমস্যা সমাধানের এলগরিদম''টি ছিল এরকমঃ
সমস্যাটা লিখে ফেলুন;
খুব করে ভাবুন;
সমাধানটি লিখে ফেলুন।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ ই. পি. উইগনার ফাইনম্যান সম্পর্কে বলেছেন, "তিনি হলেন দ্বিতীয় ডিরাক। পার্থক্য শুধু, এবারের জন একজন মানুষ।"
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী হান্স বিদে বলেছেন, "দুই রকমের জিনিয়াস আছেন। সাধারণ জিনিয়াসেরা মহান সব কাজ করে থাকেন, কিন্তু সবসময়েই এটা চিন্তা করার সুযোগ থেকে যায় যে, যথেষ্ট পরিমাণে খাটলে আপনিও বুঝি ওটা করতে পারতেন। আরেকরকমের জিনিয়াস অনেকটা যাদুকরের মতন, আপনি কিছুতেই ভেবে উঠতে পারবেন না, তারা সেটা কীভাবে করল। ফাইনম্যান ছিলেন একজন যাদুকরী জিনিয়াস। "
তথ্যসূত্র
পাদটীকা
.
.
.
.
, foreword by Timothy Ferris. (Published in the UK under the title: Don't You Have Time to Think?, with additional commentary by Michelle Feynman, Allen Lane, 2005, .)
.
.
.
.
.
.
.
.
গ্রন্থপঞ্জি
Physics Today, American Institute of Physics magazine, February 1989 Issue. (Vol.42, No.2.) Special Feynman memorial issue containing non-technical articles on Feynman's life and work in physics.
Most of the Good Stuff: Memories of Richard Feynman, edited by Laurie M. Brown and John S. Rigden, NY: Simon and Schuster, 1993, . Commentary by Joan Feynman, John Wheeler, Hans Bethe, Julian Schwinger, Murray Gell-Mann, Daniel Hillis, David Goodstein, Freeman Dyson, Laurie Brown.
Disturbing the Universe, Freeman Dyson, Harper and Row, 1979, . Dyson’s autobiography. The chapters “A Scientific Apprenticeship” and “A Ride to Albuquerque” describe his impressions of Feynman in the period 1947-48 when Dyson was a graduate student at Cornell.
QED and the Men Who Made It: Dyson, Feynman, Schwinger, and Tomonaga (Princeton Series in Physics), Silvan S. Schweber, Princeton University Press, 1994, .
Feynman's Rainbow: A Search For Beauty In Physics And In Life, by Leonard Mlodinow, Warner Books, 2003, Published in the United Kingdom as Some Time With Feynman.
The Feynman Processor: Quantum Entanglement and the Computing Revolution, Gerard J. Milburn, Perseus Books, 1998
Genius: The Life and Science of Richard Feynman, James Gleick, Pantheon, 1992,
The Beat of a Different Drum: The Life and Science of Richard Feynman, Jagdish Mehra, Oxford University Press, 1994,
No Ordinary Genius: The Illustrated Richard Feynman, edited by Christopher Sykes, W W Norton & Co Inc, 1994, .
Richard Feynman: A Life in Science, John Gribbin and Mary Gribbin, Dutton Adult, 1997,
Infinity, a movie directed by Matthew Broderick and starring Matthew Broderick as Feynman, depicting Feynman's love affair with his first wife and ending with the Trinity test. 1996.
"Clever Dick", Crispin Whittell, Oberon Books, 2006 (play)
"QED", Peter Parnell (play).
"The Pleasure of Finding Things Out" A film documentary autobiography of Richard Feynman, Nobel laureate and theoretical physicist extraordinary. 1982, BBC TV 'Horizon' and PBS 'Nova' (50 mins film). See Christopher Sykes Productions https://web.archive.org/web/20131101082658/http://www.sykes.easynet.co.uk/
"The Quest for Tannu Tuva", with Richard Feynman and Ralph Leighton. 1987, BBC TV 'Horizon' and PBS 'Nova' (under the title "Last Journey of a Genius") (50 mins film)
"No Ordinary Genius" A two-part documentary about Feynman's life and work, with contributions from colleagues, friends and family. 1993, BBC TV 'Horizon' and PBS 'Nova' (a one-hour version, under the title "The Best Mind Since Einstein") (2 x 50 mins films)
বহিঃসংযোগ
Guide to the Papers of Richard Phillips Feynman, 1933-1988
Feynman at The Caltech Institute Archives
Biography and Bibliographic Resources, from the Office of Scientific and Technical Information, United States Department of Energy
The Feynman Lectures Website
About Richard Feynman
Feynman's Scientific Publications
A Biography of R. P. Feynman as a mathematician
Gallery of Drawings by Richard P. Feynman
The Pleasure of Finding Things Out: A 49-minute BBC Horizon TV programme from the 1980s in which Feynman reminisces about his life and work.
Edge-video: Murray Gell-mann reminisces about Feynman's personal eccentricities
Feynman on the rules of chess
Feynman lecture
Feynman on the nature of physics
Feynman talks about confusion
Feynman's BBC interview on uncertainty
Feynman on disrespect of authority
বিষয়শ্রেণী:১৯১৮-এ জন্ম
বিষয়শ্রেণী:১৯৮৮-এ মৃত্যু
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন নোবেল বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:ম্যানহাটন প্রকল্পের ব্যক্তিত্ব
বিষয়শ্রেণী:ইহুদি নাস্তিক
বিষয়শ্রেণী:ইহুদি মার্কিন বিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:কণা পদার্থবিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
বিষয়শ্রেণী:কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
বিষয়শ্রেণী:ন্যাশনাল মেডেল অফ সাইন্স বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:আলবার্ট আইনস্টাইন পুরস্কার বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর মার্কিন পদার্থবিদ
বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর নাস্তিক
বিষয়শ্রেণী:ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষক
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন নাস্তিক
বিষয়শ্রেণী:বেলারুশীয় ইহুদি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তি
বিষয়শ্রেণী:পোলীয় ইহুদি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তি
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন সংশয়বাদী
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন পাঠ্যপুস্তক লেখক
বিষয়শ্রেণী:ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্যান্সারে মৃত্যু
বিষয়শ্রেণী:আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির বিশিষ্ট সভ্য
বিষয়শ্রেণী:রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য
বিষয়শ্রেণী:কোয়ান্টাম কম্পিউটিং
বিষয়শ্রেণী:রিচার্ড ফাইনম্যান
বিষয়শ্রেণী:ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:নিউ ইয়র্ক (অঙ্গরাজ্য)-এর বিজ্ঞানী
বিষয়শ্রেণী:ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি স্কুল অফ সায়েন্সের প্রাক্তন শিক্ষার্থী |
বেবুন | https://bn.wikipedia.org/wiki/বেবুন | right|thumb|মায়ের সাথে বেবুন, তানজানিয়ার জাতীয় উদ্যান হতে তোলা ছবি
বেবুন বানর জাতীয় একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী।
তথ্য
বিষয়শ্রেণী:স্তন্যপায়ী প্রাণী
বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার প্রাণিকুল |
ইয়োহান জেবাস্টিয়ান বাখ | https://bn.wikipedia.org/wiki/ইয়োহান_জেবাস্টিয়ান_বাখ | ইয়োহান জেবাস্টিয়ান বাখ () or ; English pronunciation: (২১শে মার্চ, ১৬৮৫ পু. প. – ২৮শে জুলাই, ১৭৫০ ন. প.) একজন জার্মান সুরকার ও অর্গানবাদক। তার কাজের পরিমাণ বিপুল। কয়ার, অর্কেস্ট্রা ও একক বাদনের জন্য লেখা তার ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ সঙ্গীতকর্ম বারোক পর্বের বিভিন্ন সাঙ্গীতিক ধারাকে একত্রিত করে ও পূর্ণতা প্রদান করে। বাখ কোন নতুন ধরনের সঙ্গীত উদ্ভাবন করেননি। তবে তিনি কাউন্টারপয়েন্ট, ছোট থেকে বড় স্কেলে সুনিয়ন্ত্রিত প্রগমন, ইতালি ও ফ্রান্সের সঙ্গীত থেকে ঋণ করা ছন্দ ও টেক্সচারের প্রয়োগ, ইত্যাদি কৌশল ব্যবহার করে তার সমকালীন জার্মান সঙ্গীতকে ঋদ্ধ করেন। তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা সুরকার হিসেবে খ্যাত।
জীবিত অবস্থায় একজন দক্ষ অর্গানবাদক হিসেবে প্রচুর খ্যাতি লাভ করলেও সুরকার হিসেবে বাখ তেমন পরিচিতি পান নি। বাখের সমসাময়িক অন্যান্য সুরকাররা বারোক ঘরানার গঠন ও "কনট্র্যাপচুয়াল" ধরনের সঙ্গীতের প্রতি তার অণুরাগকে সেকেলে মনে করতেন- বিশেষ করে তার সঙ্গীতজীবনের শেষের দিকে, যখন মূলধারার সঙ্গীত ক্রমশ "রকোকো", ও আরও পরবর্তীকালে ধ্রুপদী, রূপ গ্রহণ করতে থাকে। বাখের সঙ্গীত সম্পর্কে সঙ্গীতজ্ঞদের সত্যিকারের আগ্রহ দেখা যায় ১৯শ শতকের প্রথম দিকে; অন্যদের হাতে তার সঙ্গীতের চর্চাও শুরু হয় এ সময়েই।Blanning, T. C. W.The Triumph of Music: The Rise of Composers, Musicians and Their Art, 272: "And of course the greatest master of harmony and counterpoint of all time was Johann Sebastian Bach, 'the Homer of music'
বাখের সঙ্গীতকর্ম চিন্তার গভীরতা, কৌশলগত দক্ষতা ও শৈল্পিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। নিচে Weihnachtsoratorium থেকে নেয়া কোরাস Ehre sei Gott in der Höhe শুনুন। এটি বাখ ১৭৩৪-এ রচনা করেন।
জীবনী
শৈশব
থাম্ব| জেবাস্টিয়ানের পিতা
সাংক্ত গেয়র্গেস গির্জার অর্গানবাদক ইয়োহান আমব্রোসেউস বাখ এবং মারিয়া এলিজাবেটা বাখের সবচেয়ে ছোট ছেলে ইয়োহান জেবাস্টিয়ান বাখ জার্মানির টুরিঙেন প্রদেশের আইজেনাখ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার হাতেই বেহালা এবং হারপসিকর্ড বাদনে বাখের হাতেখড়ি হয়। বাখের চাচারা সবাই ছিলেন পেশাদার সঙ্গীতবিদ; চার্চের অর্গানবাদক, রাজসভার বাজিয়ে, সুরকার হিসেবে নানা জায়গায় কর্মরত ছিলেন তারা। এই চাচাদের মধ্যে বিশেষ খ্যাতিমান একজন, ইয়োহান ক্রিস্টফ বাখ (১৬৪৫-১৬৯৩), অর্গানের সাথে জেবাস্টিয়ান বাখের পরিচয় করান। সঙ্গীত বিষয়ে নিজের পরিবারের অর্জন নিয়ে বেশ গর্ব ছিলো বাখের, যার বহিঃপ্রকাশ ১৭৩৫ সালে তার নিজের হাতে করা "বাখ সঙ্গীত পরিবারের উৎস" নামক বংশপঞ্জিকার খসড়া।
বাখের মা ১৬৬৪ সালে মারা যান,এবং তার বাবা এর ৮ মাস পরেই মারা যান।১০ বছর বয়সের এতিম এই শিশু তার ভাইদের মধ্যে সবার বড় johann christopher bach(1671-1721) যিনি ছিলেন Michaeliskirche (Ohrdruf, Sachsen-Gotha-Altenburg এ অবস্থিত) এর একজন অর্গানবাদক।ঐ সময় তিনি তার ভাইয়ের কাছ থেকে সঙ্গীত সম্বন্ধে মূল্যবান জ্ঞান লাভ করেন এবংcalvichord বাজানো শেখেন।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
J.S. Bach Home Page, by Jan Hanford—extensive information on Bach and his works; database of recordings and user reviews
J.S. Bach bibliography , by Yo Tomita of Queen's University Belfast—especially useful to scholars
Bach-Cantatas.com, by Aryeh Oron—information on the cantatas as well as other works
Bach manuscripts – video lectures by Christoph Wolff on the Bach family's hidden manuscripts archive
বিষয়শ্রেণী:১৬৮৫-এ জন্ম
বিষয়শ্রেণী:১৭৫০-এ মৃত্যু
বিষয়শ্রেণী:জার্মান সুরকার
বিষয়শ্রেণী:পুরুষ পিয়ানোবাদক
বিষয়শ্রেণী:জার্মান লুথারান |
দ্য বিটল্স | https://bn.wikipedia.org/wiki/দ্য_বিটল্স | দ্য বিটল্স (ইংরেজি: The Beatles) ছিল ইংল্যান্ডের লিভারপুলের একটি রক সঙ্গীত গ্রুপ। এর চার সদস্য ছিলেন জন লেনন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন এবং রিঙ্গো স্টার। বিটল্স জনপ্রিয় ধারার সঙ্গীতের ইতিহাসে সমালোচক ও শ্রোতা উভয় দিক থেকেই শীর্ষস্থানীয় সঙ্গীত দল ছিল। ১৯৬০ এর দশকের মধ্যভাগে বিটল্স অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬৯ এ বিটল্স ভেঙ্গে যায়, কিন্তু তা সত্ত্বেও সারা পৃথিবীতে বিটল্স এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়।
প্রথম যুগের রক এন্ড রোল এবং পপ সঙ্গীতে তাদের প্রভাবের জন্য তাদের শিল্পসম্মত অর্জন ও বাণিজ্যিক সফলতা একটি মর্যাদাপূর্ণ আসনে আসীন হয়ে আছে। যদিও তাদের প্রাথমিক সাঙ্গীতিক ধরন ১৯৫০-এর রক এ্যান্ড রোল এর মূলে প্রোথিত ছিল, তারপরও বিভিন্ন সাঙ্গীতিক ধরন, যেমন, লোক সঙ্গীত, রকাবেলী সাইকেডেলিক এবং ভারতীয় সঙ্গীতের বিভিন্নতাকে ধারণ করেছিল বিটল্স।
বিটল্স্ এর প্রভাব সঙ্গীতের বাহিরেও ব্যাপ্ত ছিল। তাদের পোশাক-আশাক, কেশবিন্যাস, বক্তব্য, এমনকি তাদের পছন্দের সঙ্গীত যন্ত্রসমূহের প্রভাব ১৯৬০ দশকজুড়ে তাদেরকে দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী হিসেবে তৈরি করে ফেলেছিল। আজ পর্যন্ত বিটল্স অন্য যেকোন ব্যান্ড দলের চেয়ে বেশি অ্যালবাম বিক্রি করেছে। যুক্তরাজ্যে তাদের ৪০টি বিভিন্ন অ্যালবাম বেরিয়েছিল যা সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই বাণিজ্যিক সফলতার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল অন্যান্য অনেক দেশেই। ই.এম.আই. এর অনুমান অনুযায়ী ১৯৮৫ এর মধ্যে বিটল্স্ এর এক বিলিয়নের উপর ডিস্ক ও টেপ বিক্রি হয়েছিল। আমেরিকাতেও একক গান এবং অ্যালবাম বিক্রির ক্ষেত্রে বিটল্স ছিল সর্বকালের সেরা শিল্পী দল।
২০০৪ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন বিটল্সকে সর্বকালের সেরা ১০০ শ্রেষ্ঠ শিল্পীর তালিকার শীর্ষে স্থান দেয়।
thumb|right|মাদাম ত্যুসো যাদুঘরে দ্য বিটল্স এর মোমের মূর্তি
ইতিহাস
১৯৫৭–৬২: গঠন, হামবুর্গ এবং যুক্তরাজ্য জনপ্রিয়তা
১৯৫৭ সালের মার্চে লিভারপুলের কুয়েরি ব্যাংক গ্রামার স্কুলে পড়াকালীন সময়ে জন লেনন দ্য কোয়ারিমেন নামে একটি দল গঠন করেন।AMG biography Retrieved: 29 January 2007 ১৯৫৭ সালের ৬ জুলাই সেইন্ট পিটার্স চার্চের উল্টন গার্ডেনে লেননের সাথে পল ম্যাককার্টনির সাক্ষাৎ হয় এবং এর কিছুদিন পর লেনন তাকে ব্যান্ডে যোগ দেবার আমন্ত্রণ জানান।Spitz 2005. p93 ১৯৫৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তরুণ গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনকে লিভারপুলের উইন্সটন হলে দলটির শো দেখতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।Ray O'Brien, There are Places I'll Remember: Volume 1, 2001 ম্যাককার্টনি ও হ্যারিসন ছিলেন একই এলাকার বাসিন্দা। লিভারপুল ইনস্টিটিউট থেকে ফেরার সময় তারা পরিচিত হন এবং ম্যাককার্টনির অনুরোধে জর্জ হ্যারিসন লিড গিটারিস্ট হিসেবে দ্য কোয়ারিমেন দলে যোগ দেন।Miles 1998. p47 লেনন শুরুতে কম বয়স্ক হবার কারণে হ্যারিসনকে নিতে না চাইলেও ১৯৫৮ সালের মার্চে দলের সাথে মহড়ার পর তিনি সন্তুষ্ট হন।Spitz 2005. pp126–127 সে সময় নিয়মিত সদস্য যোগ দিয়েছেন আবার বেরিয়েও গেছেন। ১৯৬০ সালের জানুয়ারিতে লেননের ক্লেজ জীবনের বন্ধু স্টুয়ার্ট সাটক্লিফ বেজ গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন।Miles 1998. p50 লেনন ও ম্যাককার্টনি উভয়েই রিদম গিটার বাজাতেন। দলে ড্রামারের সঙ্কট ছিল। পরে ১৯৬২ সালে রিঙ্গো স্টার দলটিতে যোগ দান করেন। রিঙ্গোকে সঙ্গে নিয়ে দলটি তাদের নিজস্ব একক গানগুলো বিভিন্ন কনসার্টে পরিবেশন করতে থাকে। ম্যাককার্টনি ও লেনন ম্যাককার্টনি/লেনন গান লেখায় জুটি গড়ে তোলেন। ইতোমধ্যেই তারা বেশ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন।
নামকরণ
কোয়ারিমেন ব্যান্ডের নাম বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়— "জনি অ্যান্ড দ্য মুনডগস", "লং জন অ্যান্ড দ্য বিটল্স", "দ্য সিলভার বিটল্স", এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে "দ্য বিটল্স" নামটি স্বীকৃতি পায়। ব্যান্ডের নাম ও নামের বানান নিয়ে বেশ কয়েকটি মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। তবে সাধারণত লেননকেই নামকরনের কৃতিত্ব দেয়া হয়, যিনি বলেছিলেন নামটি বিটল (beetle) পোকা (বাডি হলির দ্য ক্রিকেটস নামে ব্যান্ড ছিল) ও বিট (beat) এর মিলনে তৈরি করা হয়েছে। সিনথিয়া লেননের মতে বিটল্স নামটি রর্যাাভেনশ হল বারের বিয়ার-পূর্ণ টেবিলে মাথা খাটিয়ে তৈরি করা হয়েছে।Cynthia Lennon – “John” 2006. p65 লেনন যিনি একই ঘটনার বিভিন্ন কাহিনী বলার জন্য বিখ্যাত, ১৯৬১ সালে মার্সি বিট ম্যাগাজিনকে বলেন, স্বপ্নে একটি মানুষ জলন্ত পাই নিয়ে তাদের কাছে আসে এবং বলে যে আজকে থেকে তারা এ বানানের বিটল্স।Davies, Hunter. The Beatles (1981 edition) ২০০১ সালে এক সাক্ষাৎকারে পল ম্যাককার্টনি নামের বিদঘুটের বানানের কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, জন বিটল্স (beetles) নামের প্রস্তাব করেছিল, তখন আমি বলি বিটল্স (beatles) হলে কেমন হয়? কারণ আমি ড্রামের বিট পছন্দ করি। তখন সবাই এটি বেশ পছন্দ করে।Ray O'Brien – There Are Places I'll Remember: The "Beatles" Early Venues in and Around Merseyside London, 2001. p22
আন্তর্জাতিক খ্যাতি
১৯৬৩ সালের ২২ মার্চ দ্য বিটল্স এর প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম প্লিজ প্লিজ মি মুক্তি পায়। ১৯৬২ সালের জনপ্রিয় একক গানগুলোর পাশাপাশি নতুন কিছু গানসহ মোট ১৪টি গান এ অ্যালবামে স্থান পায়। এ অ্যালবামটি ইংল্যান্ডের সঙ্গীতের শীর্ষতালিকায় প্রথম স্থান দখল করে। ফলে দলটি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তারা নিজেদের একটি লোগোও তৈরি করে ফেলে।
thumb|left|দ্য বিটল্স এর লোগো
দ্য বিটল্স এর দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম উইদ দ্য বিটল্স মুক্তি পায় ২২ নভেম্বর ১৯৬৩ সালে। এ অ্যালবামটির রেকর্ডিং চলেছে একই বছরের ১৮ জুলাই থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এতে জর্জ হ্যারিসনের প্রথম কম্পোজিশান করা গানটি রয়েছে।
১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দলটি ইংল্যান্ড ত্যাগ করে আন্তর্জাতিক পরিসরে কনসার্ট করার জন্য। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এক টিভি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে । ৭৩ লক্ষ দর্শক— সে দেশের ৪০% মানুষ এ অনুষ্ঠান দেখেন। এর ফলে তাদের আন্তর্জাতিক খ্যাতি আরও বেড়ে যায়। জন লেনন পরিচিত ছিলেন সুদর্শন বিটল হিসেবে, পল ম্যাককার্টনি মিষ্টি বিটল, জর্জ হ্যারিসন শান্ত বিটল, ও রিঙ্গো স্টার রসাত্নক বিটল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ হার্ড ডে’স নাইট ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায়। এতে ব্যান্ডটি তাদের রক অ্যান্ড রোল ধারা অব্যাহত রাখে। এটি প্রকৃতপক্ষে বিটল্সের সদস্যদের অভিনীত কয়েকদিন আগের মুক্তি পাওয়া একই শিরোনামের একটি হাস্যরসাত্নক চলচিত্রের গানের অ্যালবাম। চলচিত্রটি আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়। এ গানের অ্যালবামের রেকর্ডিং-এ জর্জ হ্যারিসন ব্যবহার করেন ১২ তারের রিকেনবেকার গীটারটি। একই বছরের একেবারে শেষভাগে, বড়দিনের আগে বিটল্স ফর সেল মুক্তি পায়। তারা সর্বমোট ১২ টি স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ করে। তাদের সর্বশেষ অ্যালবাম 'লেট ইট বি' ১৯৭০ সালের মে মাসে মুক্তি পায়। ১৯৬০ দশক পুরটুকুই দ্য বিটল্স বিশ্ব সঙ্গীতজগতে রাজত্ব করেছে।
ভাঙ্গন
দ্য বিটল্স-এর ভাঙ্গনের পেছনে একাধিক কারণ ছিল। মূলত ব্যক্তিগত মতের অমিলের রেশ ধরেই ১৯৬৮ সাল থেকে তাদের দলে ভাঙ্গনের সূত্রপাত হয়। ১৯৭০ সালে 'দ্য বিটল্স-এর আনুষ্ঠানিক ভাঙ্গন হয়। ভাঙ্গনের পর চার বিটল ব্যক্তিগত সঙ্গীত ক্যারিয়ারে প্রবেশ করেন। ১৯৮০ সালে জন লেনন-এর মৃত্যর পর ১৯৯৪ সালে বাকি তিন বিটল একত্রিত হয়েছিলেন।
ডিস্কোগ্রাফি
মূল ক্যাটালগ
প্লিজ প্লিজ মি (১৯৬৩)
উইথ দ্য বিটল্স (১৯৬৩)
এ হার্ড ডে'স নাইট (১৯৬৪)
বিটল্স ফর সেল (১৯৬৪)
হেল্প! (১৯৬৫)
রাবার সোল (১৯৬৫)
রিভলভার (১৯৬৬)
সার্জেন্ট পেপার'স লোনলি হার্টস ক্লাব ব্যান্ড (১৯৬৭)
ম্যাজিকাল মিস্টেরি ট্যুর (১৯৬৭)
দ্য বিটল্স (হোয়াইট অ্যালবাম) (১৯৬৮)
ইয়েলো সাবমেরিন (১৯৬৯)
অ্যাবি রোড (১৯৬৯)
লেট ইট বি (১৯৭০)
টীকা
উদ্ধৃতি
উৎস
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
FBI file on The Beatles
Hugo Keesing Collection on the Beatles - মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা সঞ্চালনার বিশেষ সংগ্রহ
দ্য বিটল্স রোলিং স্টোন এ
দ্য বিটল্সের ইন্টার্ভিউ ডেটাবেস
দ্য বিটল্স - টাইমলাইন
হামবুর্গে দ্য বিটল্স
হওয়াট গোজ অন দ্য বিটল্সের খবর
বিষয়শ্রেণী:১৯৬০-এ প্রতিষ্ঠিত সংগীত দল
বিষয়শ্রেণী:অ্যাপল কর্পস
বিষয়শ্রেণী:অ্যাপল রেকর্ডস শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:পার্লোফোনের শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:ক্যাপিটল রেকর্ডসের শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:ভি-জে রেকর্ডস শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:সোয়ান রেকর্ডস শিল্পীদের
বিষয়শ্রেণী:বিট গোষ্ঠী
বিষয়শ্রেণী:অ্যাকাডেমি পুরস্কার বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:ব্রিট পুরস্কার বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি পপ সংগীত দল
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি রক সংগীত দল
বিষয়শ্রেণী:গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:বিশ্ব সঙ্গীত পুরস্কার বিজয়ী
বিষয়শ্রেণী:রিঙ্গো স্টার
বিষয়শ্রেণী:যুক্তরাজ্যের ব্যান্ড
বিষয়শ্রেণী:ব্রিটিশ আগ্রাসনের শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:গ্র্যামি আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রাপক
বিষয়শ্রেণী:অ্যাটকো রেকর্ডসের শিল্পী
বিষয়শ্রেণী:প্রোটো-প্রোগ সঙ্গীতজ্ঞ
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ সাইকেডেলিক রক সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:১৯৬০-এ ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ রক সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:সাঙ্গীতিক কুয়োটেট
বিষয়শ্রেণী:সাইকেডেলিক পপ সঙ্গীত দল
বিষয়শ্রেণী:বিশ্বরেকর্ডধারী |
লুডভিগ ফান বেটহোফেন | https://bn.wikipedia.org/wiki/লুডভিগ_ফান_বেটহোফেন | লুডভিগ ফান বেটহোফেনএই জার্মান ব্যক্তি বা স্থাননামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় জার্মান শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।() (ডিসেম্বর ১৭, ১৭৭০ – মার্চ ২৬, ১৮২৭) একজন জার্মান সুরকার এবং পিয়ানো বাদক। তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সুরকারদের একজন মনে করা হয়। তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ধ্রুপদী ও রোমান্টিক যুগের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তার খ্যাতি ও প্রতিভা পরবর্তী প্রজন্মের সুরকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও শ্রোতাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
জীবন
বেটহোফেনের জন্ম জার্মানির বন শহরে। তরুণ বয়সে তিনি সেখান থেকে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চলে আসেন ও সেখানেই বাকী জীবন কাটান। এখানে তিনি ইয়োসেফ হেইডন-এর অধীনে দীক্ষা নেন এবং শিঘ্রই অসামান্যকৌশলী পিয়ানোবাদক হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। বয়স ত্রিশ ছোঁয়ার আগেই তিনি ধীরে ধীরে তার শ্রবণশক্তি হারাতে থাকেন, কিন্তু এই ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের মাঝেও তিনি বিশ্বকে বহুদিন ধরে অসাধারণ সব “মাস্টারপিস” উপহার দিয়ে যান। বেইটোভেন ছিলেন প্রথম “ফ্রি-ল্যান্স” সুরকারদের একজন — তিনি ভাড়ায় কনসার্ট পরিচালনা করতেন, তার সুর প্রকাশকদের কাছে বিক্রি করতেন ও কিছু সহৃদয় ধনীর কাছ থেকে ভাতা পেতেন — গির্জা বা কোন রাজকীয় সভায় স্থায়ী চাকরি করা তার স্বভাবে ছিল না।
টীকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Beethoven-Haus Bonn , official website
The Ira F. Brilliant Center for Beethoven Studies, The Beethoven Gateway (San José State University)
বিষয়শ্রেণী:১৭৭০-এ জন্ম
বিষয়শ্রেণী:১৮২৭-এ মৃত্যু
বিষয়শ্রেণী:জার্মান সুরকার
বিষয়শ্রেণী:আলোকিত যুগ
বিষয়শ্রেণী:পুরুষ পিয়ানোবাদক
বিষয়শ্রেণী:রোমান ক্যাথলিক
বিষয়শ্রেণী:জার্মান রোমান ক্যাথলিক
বিষয়শ্রেণী:পিয়ানোর সুর কম্পোজার
বিষয়শ্রেণী:রোমান্টিক সুরকার
বিষয়শ্রেণী:অসম্পূর্ণ জীবনী নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:পুরুষ অপেরা সুরকার
বিষয়শ্রেণী:জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা |
বাইবেল | https://bn.wikipedia.org/wiki/বাইবেল | upright=1.55|thumb|গুটেনবার্গ বাইবেল, প্রথম মুদ্রিত বাইবেল (মধ্য ১৫শ শতাব্দী)
বাইবেল বা ধর্মপুস্তক (; , tà biblía, “পুস্তকসমূহ”) একটি ধর্মগ্রন্থ সংকলন যা খ্রীষ্টান, যিহূদী, শমরীয়, রাস্তাফারি ও অন্যান্যদের নিকট পবিত্র। এটি বিভিন্ন ধরনের পুস্তকের সংকলন (anthology) যা এই বিশ্বাসের দ্বারা সংযুক্ত যে তারা সম্মিলিতভাবে ঈশ্বরের দৈববাণী। এই পুস্তকগুলির মধ্যে রয়েছে ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিনিবদ্ধ, ঐতিহাসিক বিবরণ, স্তব, প্রার্থনা, প্রবাদ-প্রবচন, নীতিগর্ভ রূপক কাহিনী, পত্র, আদিরসাত্মক গল্প, কাব্য ও ভাববাণী। বিশ্বাসীরা সাধারণত বাইবেলকে ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণার একটি সৃষ্টিকর্ম হিসাবে বিবেচনা করে।
একটি ঐতিহ্য বা গোষ্ঠী দ্বারা বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত সেই পুস্তকগুলিকে ধর্মসম্মত বলা হয়, যা সূচিত করে যে সেই ঐতিহ্য বা গোষ্ঠীটি সংকলনটিকে সদাপ্রভুর বাক্য এবং ইচ্ছার প্রকৃত উপস্থাপনা হিসাবে দেখে। বাইবেলের প্রচুর ধর্মপুস্তক মণ্ডলী থেকে মণ্ডলীতে অধিক্রমণ ও অপসৃত বিষয়বস্তুর মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েছে। হিব্রু বাইবেল বা তানাখ গ্রীক সপ্ততি ও খ্রীষ্টান পুরাতন নিয়মের সাথে সমাপতিত হয়। খ্রীষ্টান নূতন নিয়ম হল প্রথম শতাব্দীর কোইনি গ্রীক ভাষায় প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের, যাদের নাসরতীয় যীশুর যিহূদী শিষ্য বলে ধারণা করা হয়, দ্বারা রচিত গ্রন্থের সংকলন। খ্রীষ্টান মণ্ডলীগুলির মধ্যে ধর্মপুস্তকে কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত সে সম্পর্কে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে, মূলত বাইবেলের অপ্রামাণিক অংশসমূহ, একটি রচনা তালিকা যা বিভিন্ন মাত্রার শ্রদ্ধার সাথে বিবেচিত হয়।
বাইবেলের প্রতি মনোভাবের ক্ষেত্রেও খ্রীষ্টীয় দলগুলির মধ্যেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। রোমীয় কাথোলিক, উচ্চমণ্ডলী ইঙ্গবাদী, পদ্ধতিবাদী ও পূর্বদেশীয় অর্থোডক্স খ্রীষ্টানরা বাইবেল ও পবিত্র ঐতিহ্য উভয়ের সঙ্গতি আর গুরুত্বের উপর জোর দেয়, আবার অনেক প্রতিবাদী মণ্ডলী সোলা স্ক্রিপতুরা ধারণার উপর বা কেবল ধর্মগ্রন্থের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। সংস্কারকালে এই ধারণাটি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল এবং বর্তমানে অনেক মণ্ডলী খ্রীষ্টীয় শিক্ষার একমাত্র অভ্রান্ত উৎস হিসাবে বাইবেলের ব্যবহারকে সমর্থন করে। অন্যরা যদিও অনেক জ্ঞানী খ্রিস্টান ব্যক্তিবর্গ বাইবেলে প্রচুর ইতিহাস ও বিজ্ঞান বিষয়ক ভুল-ক্রুটির থাকার দাবী জানান।
সাহিত্য এবং ইতিহাসে বাইবেলের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বে, যেখানে গুটেনবার্গ বাইবেল প্রথম সচল মুদ্রাক্ষর ব্যবহার করে ছাপা হয়েছিল। টাইম ম্যাগাজিনের মার্চ ২০০৭ সংস্করণ অনুসারে, “বাইবেল রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে সাহিত্য, ইতিহাস, বিনোদন এবং সংস্কৃতি গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্ব ইতিহাসে এর প্রভাব অতুলনীয় এবং এর প্রভাব হ্রাসের কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান নয়।” আনুমানিক মোট ৫ বিলিয়নের অধিক কপি বিক্রীত। ২০০০ এর দশক হিসাবে বার্ষিক এটির প্রায় ১০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়।
বাইবেল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বাইবেল শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে কয়িন গ্রীক τὰ βιβλία, tà biblía, "বইগুলো" থেকে; বাইবেল অর্থাৎ ধর্ম শাস্ত্র, লিপি বা পুস্তক, ঈশ্বরের বাক্য।
প্রচলিত প্রোটেস্ট্যান্ট বাইবেল ৬৬টি পুস্তকের একটি সংকলন, যা দুটি প্রধান পর্বে বিভক্ত — ৩৯টি পুস্তক সংবলিত পুরাতন নিয়ম বা ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং ২৭টি পুস্তক সংবলিত নতুন নিয়ম বা নিউ টেস্টামেন্ট। তবে ক্যাথলিক বাইবেলে পুস্তকসংখ্যা প্রোটেস্ট্যান্টদের চেয়ে ৭টি বেশি, অর্থাৎ ৭৩টি। খ্রিস্টধর্ম মতে ১৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৪০জন লেখক বাইবেল লিপিবদ্ধ করেছিলেন এবং বাইবেলের মুখ্য বিষয়বস্তু বা কেন্দ্রমণি হলেন যীশু।
পুরাতন নিয়ম মূলত হিব্রু ভাষায় লিখিত, তবে দানিয়েল ও ইষ্রা পুস্তক দুটির কিছু অংশ আরামীয় ভাষায় লিখিত। নতুন নিয়ম গ্রিক ভাষায় রচিত। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এই বাইবেল লিপিবদ্ধ করেছেন বলা হয়। অনেক খ্রিস্টান বিশ্বাস করেন, এই বাইবেল লিপিবদ্ধ হয়েছিল খ্রিস্টীয় ত্রিত্ববাদের অন্যতম পবিত্র আত্মার সহায়তায়। পৃথিবীর অনেক ভাষায় বাইবেল অনুদিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণের ক্ষেত্রে বাইবেল ও কুরআন-এর ভাষ্য কিছুু ক্ষেত্রে অভিন্ন।
তবে বাইবেলে কুরআনের বিপরীত কথাও পাওয়া যায়।
বাইবেলের একাধিক ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ সমূহ আছে I ইংরেজী ভাষাতে আপনি পেতে পারেন যেমন দি কিং জেমস সংস্করণ, দি নিউ ইন্টারন্যাশনাল সংস্করণ, দি নিউ আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড সংস্করণ, দি নিউ ইংলিশ সংস্করণ এবং ইত্যাদি। যেহেতু বাইবেলের অনেক বিভিন্ন সংস্করণ আছে সেহেতু এটি দেখায় যে বাইবেল (আল কিতাব) বিকৃত হয়েছে, বা কমপক্ষে ‘সত্য’ একটিকে জানি না I হ্যাঁ বাস্তবিকই এই বিভিন্ন সংস্করণগুলো আছে – কিন্তু এর সাথে বাইবেলের বিকৃতির কোনো সম্পর্ক নেই বা এইগুলো সত্যই ভিন্ন ভিন্ন বাইবেল কি না I প্রকৃতপক্ষে সেখানে কেবলমাত্র একটি বাইবেল/কিতাব আছে I
উদাহরণস্বরূপ, যখন দি নিউ ইন্টারন্যাশনাল সংস্করণের কথা বলি, তখন মূল গ্রীক (ইঞ্জিল) এবং হিব্রু (তৌরাত এবং যাবুর) থেকে ইংরেজিতে এক নির্দিষ্ট অনুবাদের কথা বলছি I দি নিউ আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজির আর একটি অনুবাদ কিন্তু সেই একই গ্রীক এবং হিব্রু পাঠ্য থেকে I
বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিকোণ
ইহুদি ধর্ম
আব্রাহামীয় ধর্মের মধ্যে ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্মের বাইবেলকে স্বীকার করে না, যেমনটা স্বীকার করে না 'যীশু' নামক ঈশ্বরের কোনো বাণীবাহককে। তবে খ্রিস্টানগণ যেখানে বাইবেলের পুরাতন নিয়ম বলতে ইহুদি ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলোকে বুঝিয়ে থাকেন, সেখানে ইহুদি ধর্মে এজাতীয় কোনো বিভাজন দেখা যায় না, বরং খ্রিস্টধর্মমতে পুরাতন নিয়মই ইহুদি ধর্মের ঐশ্বিক ধর্মগ্রন্থ তোরাহ।
ইসলাম ধর্ম
ইসলাম ধর্মে পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরিফে "বাইবেল" বলে কোনো ধর্মগ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায় না। উল্লেখ পাওয়া যায়, আল্লাহর বার্তাবাহক নবি ঈসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ "ইঞ্জিল" নামক ধর্মগ্রন্থের। কুরআনে বলা হয়েছে, খ্রিস্টানদের যীশুকেই পবিত্র কুরআনে ঈসা (আ.) বলা হয়েছে। তবে মুসলিমদের মতে খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা আল্লাহর কিতাব "ইঞ্জিল" পরিবর্তন ও বিকৃত করেছে। তাই বর্তমান বাইবেলকে তারা আল্লাহর কিতাব হিসেবে মানে না, বরং আল্লাহর কিতাবের পরিবর্তিত ও বিকৃত রূপ বলে।
বাইবেলের বিষয়ে মুসলিমরা ইযহারুল হকসংক্ষেপিত ইযহারুল হক সহ বিভিন্ন বই লিখেছে।
আরও দেখুন
পুরাতন নিয়ম
নতুন নিয়ম
বাইবেল লেখক
বাইবেল সমালোচনা
মিসকোটিং জিসাস: দ্য স্টোরি বিহাইন্ড হু চেঞ্জড দ্য বাইবেল এন্ড হোয়াই
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
অনলাইনে বাংলা বাইবেল
বিষয়শ্রেণী:বাইবেল
বিষয়শ্রেণী:খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্ম
বিষয়শ্রেণী:ইহুদি-খ্রিস্টীয় বিষয়বস্তু |
মস্তিষ্ক | https://bn.wikipedia.org/wiki/মস্তিষ্ক | thumb|ত্রিমাত্রিক চিত্রে মস্তিষ্ক
মস্তিষ্ক : কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্ফীত, তরল দ্বারা পূর্ণ গহ্বরযুক্ত ও মেনিনজেস নামক আবরণী দ্বারা আবৃত যে অংশটি করোটির ভেতরে অবস্থান করে তাকে মস্তিষ্ক বলে। ভ্রুণ অবস্থায় সুষুম্নাকান্ডের অগ্রবর্তী দন্ডাকার অংশ ভাঁজ হয়ে পর পর ৩টি বিষমাকৃতির স্ফীতি তৈরী করে৷ স্ফীতি ৩টি মিলেই গঠিত হয় মস্তিষ্ক৷ প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মস্তিষ্কের আয়তন ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার, গড় ওজন ১.৩৬ কেজি এবং এতে প্রায় 100 বিলিয়ন নিউরন থাকে। মস্তিষ্ক মেনিনজেস নামক পর্দা দ্বারা আবৃত। মানুষের মস্তিষ্কের প্রধান তিনটি অংশ। যথা- (ক) গুরুমস্তিষ্ক (খ) মধ্যমস্তিষ্ক (গ) লঘুমস্তিষ্ক
(ক) গুরুমস্তিষ্ক: মস্তিষ্কের প্রধান অংশ হলো গুরুমস্তিষ্ক। এটি ডান ও বাম খণ্ডে বিভক্ত। এদের ডান ও বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার বলে। মানব মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অধিকতর উন্নত ও সুগঠিত।
(খ) মধ্যমস্তিষ্ক: গুরুমস্তিষ্ক ও পনস এর মাঝখানে মধ্যমস্তিস্ক অবস্থিত। মধ্যমস্তিষ্ক দৃষ্টিশক্তি,শ্রবণশক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
(গ) লঘুমস্তিষ্ক : লঘুমস্তিষ্ক গুরুমস্তিষ্কের নিচে ও পশ্চাতে অবস্থিত। এটা গুরু মস্তিষ্কের চেয়ে আকারে ছোট। লঘুমস্তিষ্ক কথা বলা ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। এর তিনটি অংশ যথা-
সেরিবেলাম
পনস
মেডুলা
স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুসন্ধি
thumb|250px|alt=drawing showing a neuron with a fiber emanating from it labeled "axon" and making contact with another cell. An inset shows an enlargement of the contact zone.|Neurons generate electrical signals that travel along their axons. When a pulse of electricity reaches a junction called a synapse, it causes a neurotransmitter chemical to be released, which binds to receptors on other cells and thereby alters their electrical activity.
মানবমস্তিষ্কের মূল গঠন-উপাদান হল স্নায়ুকোষ। মস্তিষ্কে মোট ১০০০ কোটি স্নায়ুকোষ বা নিউরন থাকে। এই কোষগুলো বৈদ্যুতিক সংকেতের আকারে অনুভূতি পরিবহন করতে পারে। এদের দুই প্রান্তে যে শাখাপ্রশাখার মত প্রবর্ধক থাকে তারা হল ডেন্ড্রাইট, আর মূল তন্তুর মত অংশের নাম অ্যাক্সন। ডেন্ড্রাইট হল সংকেতগ্রাহক অ্যান্টেনার মত, যা অন্য নিউরন থেকে সংকেত গ্রহণ করে। অ্যাক্সন সেই সংকেত পরিবহন করে অপরপ্রান্তের ডেন্ড্রাইটে নিয়ে যায়। দুটি বা ততোধিক নিউরোনের সংযোগস্থলকে বলে সিন্যাপস, যেখানে এদের সংকেত বিনিময় হয়। মূলত একটি নিউরনের অ্যাক্সন এবং অপর একটি নিউরনের ডেনড্রাইটের মিলনস্থলকে স্নায়ুসন্ধি (সিন্যাপস) বলে। মানুষের করটেক্সে মোটামুটি ১০,০০০ এর মত সিন্যাপস থাকে। মানুষের সেরিব্রামের বাম অংশ তুলনামূকভাবে বেশি উন্নত৷ সেরিব্রামকে গুরুমস্তিষ্কও বলা হয়৷ সেরিব্রামের ভিতরের অংশে স্নায়ুতন্ত থাকে৷ এই অংশটি শ্বেত বর্ণের এবং বাইরের অংশ ধূসর বর্ণের। সেরিব্রামের ডান খণ্ড শরিরের বাম অঞ্চল এবং সেরিব্রামের বাম খণ্ড শরিরের ডান অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে।
মস্তিষ্কের বিভাগ
lang=bn|thumb|মস্তিষ্কের বিভাগ
মানুষের মস্তিষ্ক ৩ ভাগে বিভক্ত ৷
অগ্র মস্তিষ্ক (Fore brain/ Prosencephalon)
"টেলেনসেফালন=সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার"দ্বয় (telencephalon=cerebral hemispheres)
ডায়েনসেফালন (Diencephalon)
থ্যালামাস (thalamus) এবং এপিথ্যালামাস, সাবথ্যালামাস, মেটাথ্যালামাস
হাইপোথ্যালামাস (ও পশ্চাৎ পিটুইটারি গ্রন্থি) এই অগ্র মস্তিষ্ক ২ ভাগে বিভক্ত- ১.ডান সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার ২.বাম সেরাব্রাল হেমিস্ফিয়ার
মধ্য মস্তিষ্ক (Mid brain/ mesencephalon)
"সেরিব্রাল পেডাঙ্কল"দ্বয় (Cerebral peduncles)
সাবস্ট্যানসিয়া নাইগ্রা (Substantia nigra)
পশ্চাৎ মস্তিষ্ক (hindbrain/ rhombencephalon)
মেটেনসেফালন (Metencephalon)
পন্স ও সেরিবেলাম
মেডুলা অবলঙ্গাটা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
The Society for Neuroscience
IBRO (International Brain Research Organization)
The HOPES Brain Tutorial at hopes.stanford.edu
Comparative Mammalian Brain Collection
Brain Research News from ScienceDaily
BrainInfo for Neuroanatomy
Neuroscience for kids
BrainMaps.org, interactive high-resolution digital brain atlas based on scanned images of serial sections of both primate and non-primate brains
The Brain from Top to Bottom
The Department of Neuroscience at Wikiversity
The Secret Life of the Brain : History of the Brain from PBS
University of Washington 3D animations of brain regions - click through from "Click for copyright"
Cell Centered Database
বিষয়শ্রেণী:মস্তিষ্ক
বিষয়শ্রেণী:স্নায়ুতন্ত্র
বিষয়শ্রেণী:অঙ্গ
বিষয়শ্রেণী:অঙ্গ অনুযায়ী মানব শারীরস্থান
বিষয়শ্রেণী:প্রাণি শারীরস্থান |
ক্যাক্টাস | https://bn.wikipedia.org/wiki/ক্যাক্টাস | thumb|সিঙ্গাপুর বটানিক গার্ডেনে চাষ হওয়া কাঁটাগাছ
thumb|Many species of cactus have long, sharp spines, like this Opuntia.
ক্যাক্টাস () হচ্ছে Caryophyllales বর্গের এবং Cactaceae পরিবারের উদ্ভিদ। শব্দটি লাতিন ভাষার κάκτος (kaktos) থেকে এসেছে। এটি সালোকসংশ্লেষের জন্যে ক্যাম (ক্রাসুলেসিয়ান অ্যাসিড মেটাবোলিজম) বিপাক পথ ব্যবহার করে।
ক্যাক্টাস ঘরের ভেতর টবে লাগানো হলে ১০ থেকে ৪০ বছর এবং জমিতে আরও বেশি বছর বেঁচে থাকে পারে।
জাত
প্রায় দুই হাজার জাত আছে। যেমন কোচিনেলিফেরা, মনাকাটা, নাইগ্রিকান্স, ওপানসিয়া ইত্যাদি।
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:উদ্ভিদ
বিষয়শ্রেণী:খরা সহনশীল উদ্ভিদ
বিষয়শ্রেণী:কার্ল লিনিয়াস কর্তৃক নামকরণকৃত ট্যাক্সা |
পঞ্জিকা | https://bn.wikipedia.org/wiki/পঞ্জিকা | thumb|একটি বাংলা পঞ্জিকার প্রচ্ছদ
পঞ্জিকা (বা পাঁজি) হলো বাংলা, ওড়িয়া, মৈথিলী এবং অসমীয়া ভাষায় প্রকাশিত হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় পঞ্জিকা। আড়ম্বরপূর্ণ ভাষায় একে ‘পাঁজি’ বলা হয়। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে একে পঞ্চঙ্গম বলা হয়। এটি ভারতে প্রকাশিত সর্বাধিক জনপ্রিয় বার্ষিক বইগুলির মধ্যে অন্যতম এবং এটি পর্যবেক্ষক হিন্দুদের তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উৎসব, উদ্যাপন এবং বিবাহ, ভ্রমণ, ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রকারের সাধনার জন্য সর্বাধিক শুভ সময় নির্ধারণ করার একটি সহজ রেফারেন্স। কোনও কোনও পুরোহিত বা জ্যোতিষীর কাছে বিশদ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটি কিছুটা প্রস্তুত-গণনাকারী বা প্রথম উৎস। এমনকি হিন্দুদের মধ্যে ‘অবিশ্বাসী’ এবং যারা হিন্দু নন তারা প্রায়শই ব্যবহারিক তথ্যের জন্য একটি পঞ্জিকার প্রকাশিত তথ্যের পরামর্শ নেন। এটিতে মুসলমান, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য উৎসব, অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বের জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ লিপিবদ্ধ করে এবং জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কিত তথ্যমূলক নিবন্ধ থাকে। Bishudhasiddhanta Panjika, 1412 edition, বাঙালিদের মধ্যে বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকাটি হলো অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত পঞ্জিকা। তবে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবর্তিত বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা বিজ্ঞানসম্মত এবং অনেকেই তা অনুসরণ করেন।
ওড়িয়া পাঁজি
ওড়িয়ায় ছয়টি পাঁজি রয়েছে, সেগুলি হলো:
আসালি খাদিরত্ন পাঞ্জিকা,
বিরাজা পাঁজি,
ভাগ্যাদায়া পাঁজি,
কোহিনূর পাঁজি,
গৌড়িয়া বিষ্ণব পাঞ্জিকা
এবং মাদালা পাঁজি।
মাদালাল পাঞ্জি দ্বাদশ শতাব্দী থেকে ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষার প্রথম পঞ্জিকা। এটি ওড়িশার ইতিহাসের মূল উৎস এবং প্রমাণ। পাঠানী সমন্ত চন্দ্র শেখর (১৮৩৫ থেকে ১৯০৪) বৈজ্ঞানিক উপায়ে ওড়িয়া পঞ্জিকা পুনরুদ্ধার করেছেন। এবং গৌড়িয়া বিষ্ণব পাঞ্জিকা।
মাদালা পাঞ্জি (ওড়িয়া - ମାଦଳ ପାଂଜି) উড়িষ্যার পুরী জগন্নাথ মন্দিরের একটি ক্রনিকল। এটি জগন্নাথ এবং জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কিত ওড়িশ্যার ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করে। মাদালা পাঞ্জি দ্বাদশ শতাব্দীর। মাদালা পাঞ্জি ঐতিহ্যগতভাবে বছর-বছর ভিত্তিতে রচিত হয়েছিল। বিজয়া-দশমীর দিন করণাস (ওড়িশ্যার একটি পুরীর পুরির সরকারি ইতিহাস লেখকরা ইতিহাসের ইতিহাস রক্ষায় জড়িত। এই ক্রনিকলটি রাখার ঐতিহ্যটি ওড়িয়া রাজা অনন্তবর্মণ চূড়াগঙ্গা দেব (1078-11150) এর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
ঐতিহ্য অনুসারে,চূড়াগঙ্গা মন্দিরের রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য ক্যারানাসের ২৪টি পরিবার তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে মাদালা পাঞ্জির রচনা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা হলো:
পাঞ্জিয়া করণ - মাদালা পাঞ্জি সংরক্ষণ করে
তাদৌ করণ — লিখেছেন মাদালা পাঞ্জি
দেউলা করণ - মাদালা প্রয়োগ করে
কথা করণ — মূল সংকলক
বৈঁঠি করণ - সহকারী
বাঙালি পঞ্জিকা নির্মাতাদের দুটি স্কুল
বাংলায় পঞ্জিকা নির্মাতাদের দুটি পদ্ধতি রয়েছে – দৃকসিদ্ধান্ত (বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা) এবং অদৃকসিদ্ধান্ত (গুপ্ত প্রেস, পিএম বাগচি ইত্যাদি)। যে দিনগুলিতে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে সেগুলি তারা নির্দেশ করে। কখনও কখনও, তারা বিশেষ উৎসব জন্য বিভিন্ন তারিখ নির্দিষ্ট। ২০০৫ সালে দুর্গাপূজার জন্য, দুটি পৃথক তারিখের মধ্য দিয়ে এসেছিল। কিছু সম্প্রদায় পূজা গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা অনুসরণ করেছিল, এর জনপ্রিয়তার কারণে। এটি সম্মেলনের সম্মানের সাথেই ছিল, বৈদিক পণ্ডিত ও পুরুষোহিত মহামিলন কেন্দ্রের সভাপতি পণ্ডিত নিতাই চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন। বেলুড় মঠ বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রতি অনুগত ছিলেন। স্বামী বিজ্ঞানানন্দ (যিনি ১৯৩৭-৩৮ সালে গণিতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন), তিনি একজন জ্যোতিষী ছিলেন, যিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে রামকৃষ্ণ মিশন আরও বৈজ্ঞানিক হওয়ায় এই পঞ্জিকা অনুসরণ করবেন।
এদের পার্থক্য দুটি স্কুল লুনি-সৌর আন্দোলনের ভিন্ন ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে যার তিথি উপর ভিত্তি করে। যদিও গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা ১৬ শতাব্দীতে অনুসরণ রঘুনন্দন রচিত অষ্টবিংশতিতত্ত্ব ১৫০০ বছর বয়সী জ্যোতির্বিদ্যা গ্রন্থ উপর ভিত্তি করে সূর্যসিদ্ধান্ত। বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা, সূর্যসিদ্ধান্তের দেওয়া গ্রহের অবস্থানের একটি ১৮৯০ সংশোধনীর উপর ভিত্তি করে।
বৈজ্ঞানিক সংস্কার
প্রাচীনতম পঞ্জিকা প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অবধি। এটি সময় বিশ্লেষণ করে তবে গণনাগুলি সব সময় খুব সঠিক হত না। সূর্যসিদ্ধান্ত, যে যুগে উৎপাদিত, সব পরের পঞ্জিকার এর অগ্রদূত ছিল।
ব্রিটিশ শাসনামলে বিশ্বম্ভর আবার হাতে লেখা বই আকারে পঞ্জিকা প্রকাশের কাজ শুরু করেছিলেন। মুদ্রিত সংস্করণটি ১৮৬৯ সালে এসেছিল। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা ১৮৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। গুপ্ত প্রেস সূর্যসিদ্ধান্তকে মূল বিন্যাসের সাথে অনুসরণ করে যখন ‘সংশোধন’ শাস্ত্রের সংস্করণটিকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত বলা হয়।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অস্তিত্ব নিয়েছিলেন কারণ একজন জ্যোতির্বিদ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পঞ্জিকা অধ্যয়ন করার পরে প্রচলিতভাবে গ্রহ-নক্ষত্রের প্রকৃত এবং জ্যোতিষীয় অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে ছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক পাঠ অনুসারে পঞ্জিকা সংশোধন করেছিলেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্যান্য ব্যক্তিরাও ছিলেন যাঁরা পঞ্জিকার বৈজ্ঞানিক পুনর্বিবেচনার পদ্ধতিকে সমর্থন করেছিলেন। এটি উড়িষ্যার মহামহোপাধ্যায় চন্দ্রশেখর সিংহ সামন্ত এবং পুনেতে বাল গঙ্গাধর তিলকের মতো লোককে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। Bishudhasiddhanta Panjika, 1412 edition, p. ka 16,
১৯৫২ সালে পঞ্জিকার একটি বড় সংশোধনী ভারত সরকারের নেতৃত্বে গৃহীত হয়েছিল।
রূপান্তর
গুপ্ত প্রেস, একজন বাঙালি পঞ্জিকা, ২০০৭ সালে একটি সিডি-সংস্করণ প্রকাশ করেছে যা ‘আপনার দিনটি জানুন’, ‘প্রতিদিনের রাশিফল’ এবং ‘কোষ্ঠী বিচার’ (রাশিফল) এর মত ইন্টারেক্টিভ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। পঞ্জিকার মূল রূপান্তর রূপান্তর। সময়ের সাথে সাথে এটি আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটকদের আকর্ষণ, তীর্থস্থানগুলির স্থান, টেলিফোন কোড এবং সাধারণ মানুষ যে সাধারণ তথ্যের সন্ধান করে তার মতো তথ্য যুক্ত করেছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের জন্য এই ফর্ম্যাটটি আরও নমনীয় করা হয়েছে। ‘ডিরেক্টরি পঞ্জিকা’ (ম্যাগনাম ওপাস) ‘পূর্ণ পঞ্জিকা’ (পাতলা সংস্করণ) এবং ‘অর্ধ পঞ্জিকা’ (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ) এবং ‘পকেট পঞ্জিকা’-এর মতো রূপগুলির আলাদা আলাদা দাম রয়েছে। পকেট পঞ্জিকা স্থানীয় ট্রেনগুলিতে হকারদের আনন্দ।
১৯৩০ এর দশকে প্রকাশিত মদন গুপ্তের সম্পূর্ণ পঞ্জিকা বাহ্যিকভাবে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। পুরু গোলাপী কাগজে কভারটি এখনও একইরকম, তবে অভ্যন্তরটি খুব আলাদা। পৃষ্ঠাগুলি মোটা নিউজপ্রিন্ট থেকে মসৃণ সাদা কাগজে পরিবর্তিত হয়েছে, লেটার প্রেসগুলি অফসেট প্রিন্টিংয়ের পথ তৈরি করেছে, কাঠের ব্লকগুলি ধারালো ফটোগ্রাফ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি হলো বিজ্ঞাপন-সম্পাদকীয় অনুপাতের। পূর্বে বিজ্ঞাপনগুলি মুদ্রিত পদার্থের বেশিরভাগ অংশ তৈরি করেছিল - এবং খাঁটি আনন্দ ছিল। "যখন টিভি ছিল না এবং এতগুলি সংবাদপত্র ছিল না, তখন পঞ্জিকা অনেকগুলি পণ্যের বিজ্ঞাপনের জায়গা ছিল। "বিজ্ঞাপনের জন্য অনেকেই পঞ্জিকা কিনেছিলেন," মালিক মহেন্দ্র কুমার গুপ্ত বলেছেন, "তারা অনেকগুলি 'অযোগ্য' রোগের সমাধান দিতে পারে।" 1938 সংস্করণ একটি "বৈদ্যুতিক সমাধান" - এর একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু হয়েছিল, যা মৃত লোকদের পুনরুত্থিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন তারা লন্ডন, ওয়াশিংটন এবং নিউ ইয়র্কে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের ভিত্তিতে দুর্গাপূজার সময় প্রকাশ করে।
গুপ্ত প্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরিজিৎ রায়চৌধুরির মতে, পূর্বের রাজ্যের পূর্ব অংশে বাজারটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভারত বিভাগের পরে পঞ্জিকা বিক্রয় হ্রাস পেয়েছে। যাই হোক, ফর্ম্যাট এবং সামগ্রীর অভিনব রূপান্তরের সাথে সাথে বিক্রয়ও বেড়েছে এবং ২০০৭ এর সামগ্রিক বার্ষিক বাজারটি ২০ লাখ কপি। চিত্রটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিক্রয় অন্তর্ভুক্ত।
পাঞ্জিকরা আধুনিক দিনের শপিংমলগুলিতেও প্রবেশ করেছে। আরপিজি গ্রুপের এক প্রবীণ কর্মকর্তা মণি শঙ্কর মুখোপাধ্যায়, যিনি নিজে একজন খ্যাতিমান লেখক, বলেছেন, “গুড়গাঁয়ে আমাদের স্পেনসারের স্টোর রেকর্ড সংখ্যক পাঞ্জিকা বিক্রি করেছে।” বাংলা পঞ্জিকা অনুসরণ বাংলা ক্যালেন্ডার এবং মাসে আউট সাধারনত চৈত্র, তাই মানুষ এটা আগে ভাল কিনতে পারেন যে পহেলা বৈশাখ।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পাঞ্জিকা সফটওয়্যার আপনার পিসি এবং মোবাইলের জন্য ৫০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৫০০০ খ্রিস্টাব্দ
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পাঞ্জিকা অনুসারে বাংলা ক্যালেন্ডার (ভারতীয় স্ট্যান্ডার্ড সময় অনুসরণ করে)
জগন্নাথ পাঞ্জি / মাদালা পাঞ্জি। পূর্ব ভারতের প্রাচীনতম পানজি
মাদালা পাঞ্জি
ওড়িয়া পাঞ্জি
নতুন ওড়িয়া পাঞ্জিকা 2017-18
বিশুদ্ধ পূর্ণাঙ্গ পাঞ্জিকা - প্রবোধ শর্মা
বিষয়শ্রেণী:বাংলা পঞ্জিকার মাস
বিষয়শ্রেণী:বাঙালি সংস্কৃতি
বিষয়শ্রেণী:আসামের সংস্কৃতি
বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের ইতিহাস
বিষয়শ্রেণী:বাংলার ইতিহাস
বিষয়শ্রেণী:পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস
বিষয়শ্রেণী:কলকাতার সংস্কৃতি
বিষয়শ্রেণী:মিথিলার সংস্কৃতি
বিষয়শ্রেণী:ওড়িশার সংস্কৃতি |
কানাডা | https://bn.wikipedia.org/wiki/কানাডা | কানাডা () উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এর দশটি প্রদেশ ও তিনটি অঞ্চল আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর এবং উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র।
কানাডার অধিকৃত ভূমি প্রথম বসবাসের জন্য চেষ্টা চালায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ। পঞ্চদশ শতকের শুরুতে ইংরেজ এবং ফরাসি অভিযাত্রীরা আটলান্টিক উপকূল আবিষ্কার করে এবং পরে বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ফ্রান্স দীর্ঘ সাত বছরের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলস্বরূপ ১৭৬৩ সালে উত্তর আমেরিকায় তাদের সব উপনিবেশ ব্রিটিশদের কাছে ছেড়ে দেয়। ১৮৬৭ সালে, মিত্রতার মধ্য দিয়ে চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নিয়ে দেশ হিসেবে কানাডা গঠন করা হয়। এর ফলে আরো প্রদেশ এবং অঞ্চল সংযোজনের পথ সুগম,এবং ইংল্যান্ড থেকে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ১৯৮২ সালে জারীকৃত কানাডা অ্যাক্ট অনুসারে, দশটি প্রদেশ এবং তিনটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত কানাডা সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আইনগত রাজ্যতন্ত্র উভয়ই মেনে চলে। রাষ্ট্রের প্রধান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রাষ্ট্রের সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী এবং কানাডার সরকারি ভাষা ইংরেজি ও ফরাসি।
কানাডীয় শিল্ড অঞ্চল
উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্বাংশে যে প্রাচীন শিলা গঠিত ক্ষয়প্রাপ্ত মালভূমি অবস্থান করছে তাকে কানাডীয় শিল্ড অঞ্চল অথবা 'লরেন্সিয় মালভূমি' বলা হয়। বিরাট 'V' আকৃতির এই অঞ্চলটি কানাডার উত্তরাংশে হাডসন উপসাগরকে বেষ্টন করে রয়েছে। পৃথিবীর মোট ১১টি শিল্ড অঞ্চলের মধ্যে এটি বৃহত্তম। 'শিল্ড' কথার অর্থ বর্ম বা ঢাল, তবে এক্ষেত্রে এর অর্থ শক্ত পাথুরে তরঙ্গায়িত ভূমিরূপ।
ব্যুৎপত্তি
"কানাডা" নামটি সম্ভবত এসেছে সেন্ট লরেন্স ইরোকোয়াইয়ান (St. Lawrence Iroquoian) শব্দ "কানাটা" (kanata) থেকে, যার অর্থ "জেলেদের ক্ষুদ্র গ্রাম", "গ্রাম", অথবা "বসতি"। ১৫৩৫ সালের দিকে, বর্তমান ক্যুবেক শহরের বসবাসকারীরা অভিযাত্রী জ্যাক কার্তিয়ারকে (Jacques Cartier) স্টেইডাকোনা (Stadacona) গ্রামের দিকে পথনির্দশনের সুবিধার্থে শব্দটি ব্যবহার করেছিল । কার্তিয়ার 'কানাডা' শব্দটি ব্যবহার করেছিল শুধুমাত্র গ্রামটি চিহ্নিত করতেই নয়, বরং গ্রাম্য-প্রধান ডোন্নাকোনা (Donnacona) সম্পর্কিত সব কিছু নির্দেশ করতে। ১৫৪৫ সাল নাগাদ, ইউরোপের বই এবং মানচিত্রে এই অঞ্চলকে "কানাডা" হিসেবে নির্দেশিত করা শুরু হয়।
কানাডায় ফরাসি উপনিবেশকে "নব্য ফ্রান্স" (New France) বলা হত, যার বিস্তৃতি ছিল সেন্ট লরেন্স নদী থেকে গ্রেইট লেইকসের উত্তর উপকূল পর্যন্ত। পরবর্তীতে, ১৮৪১ সাল পর্যন্ত, এটি যথাক্রমে "উচ্চ কানাডা" এবং "নিম্ন কানাডা" নামক দুটি ইংরেজ উপনিবেশে বিভক্ত থাকে। কানাডা অ্যাক্ট ১৯৮২ অনুসারে, "কানাডা"ই একমাত্র আইনগত এবং দ্বিভাষিক নাম। ১৯৮২ সালে সরকারী ছুটি 'ডোমিনিয়ান ডে' কে পরিবর্তন করে 'কানাডা ডে' করা হয়।
রাজনীতি
কানাডা একটি ফেডারেশন যাতে সংসদীয় গণতন্ত্রভিত্তিক সরকারব্যবস্থা এবং একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রচলিত। কানাডার সরকার দুই ভাগে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকার। প্রশাসনিক অঞ্চলগুলির তুলনায় প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্তশাসনের পরিমাণ বেশি। কানাডার বর্তমান সংবিধান ১৯৮২ সালে রচিত হয়। এই সংবিধানে পূর্বের সাংবিধানিক আদেশগুলি একটিমাত্র কাঠামোয় একত্রিত করা হয় এবং এতে অধিকার ও স্বাধীনতার উপর একটি চার্টার যোগ করা হয়। এই সংবিধানেই প্রথম কানাডার নিজস্ব স্থানীয় সরকারকে তার সংবিধানের উপর পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। পূর্বে কানাডা ১৮৬৭ সালে প্রণীত ব্রিটিশ উত্তর আমেরিকা অধ্যাদেশবলে পরিচালিত হতTHE Constitution Act, 1867 , s. 6. এবং এতে ও এর পরে প্রণীত আইনসমূহে ব্রিটিশ সরকারকে কিছু সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল।
ভূগোল
আয়তনের বিচারে কানাডা বিশ্বের ২য় বৃহত্তম রাষ্ট্র। এটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রায় ৪১% নিয়ে গঠিত। কানাডা হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং শীতলতম দেশ। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে ছয়টি সময় অঞ্চল বিদ্যমান।
এই দেশের জলবায়ুতে গ্রীষ্মকালে হালকা ভ্যাপসা ঠান্ডা, ভিজা কুয়াশা (কিছুসময়ে গরম রৌদ্রসম্পন্ন), শীতকালে ভীষণ ঠান্ডা, বরফাচ্ছন্ন, শুষ্ক এবং তুষারপাত ইত্যাদি দ্বারা থাকে। এ দেশে প্রতিদিন আর্কটিক বরফাচ্ছন্নের দ্বারা শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। এই জলবায়ুটি রাশিয়ার তুলনায় সমতুল্য। এই দেশে রাশিয়ার জলবায়ুর মত শৈত্যপূর্ণ এবং হিমশীতল। এই দেশে বছরে ৮ মাস বরফাচ্ছন্ন থাকে। বরং এদেশে থাকাটা কিছু অনুকূল আবার কিছু প্রতিকুল আছে এবং মানুষ ঠান্ডায় অভ্যস্ত।
থাম্ব|
পেগির কোভ, হ্যালিফ্যাক্স
অর্থনীতি
কানাডা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি। দেশটি অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এবং জি৮ গ্রুপের সদস্য। অন্যান্য উন্নতদেশগুলির মত কানাডার অর্থনীতির সিংহভাগ সেবামূলক শিল্প নিয়ে গঠিত। প্রায় তিন চতুর্থাংশ কানাডাবাসী কোন না কোন সেবা শিল্পের সাথে যুক্ত আছেন। কাঠ ও খনিজ তেল আহরণ শিল্প কানাডার প্রধানতম দুইটি ভারী শিল্প। এছাড়া দক্ষিণ ওন্টারিও-কে কেন্দ্র করে একটি উৎপাদন শিল্পব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এগুলির মধ্যে মোটরযান উৎপাদন শিল্প প্রধানতম।
ভাষা
ইংরেজি ভাষা ও ফরাসি ভাষা যৌথভাবে কানাডার সরকারি ভাষা। কানাডার কেবেক (Quebec) প্রদেশে ফরাসি ভাষা প্রাদেশিক সরকারি ভাষা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাধারণত ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বহু ইউরোপীয় অভিবাসী ভাষার প্রচলন আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি জার্মান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভাষা --- হাটারীয়, মেনোনীয়, এবং পেনসিলভেনীয়। কানাডার প্রায় দেড় লক্ষ আদিবাসী আমেরিকান ৭০টিরও বেশি ভাষাতে কথা বলে। এই স্থানীয় ভাষাগুলির মধ্যে ব্ল্যাকফুট, চিপেউইয়ান, ক্রে, ডাকোটা, এস্কিমো, ওজিবওয়া উল্লেখযোগ্য। এখানকার স্থানীয় প্রধান প্রধান ভাষাপরিবারের মধ্যে আছে আলগোংকিন, আথাবাস্কান, এস্কিমো-আলেউট, ইরোকোইয়ান, সিউয়ান এবং ওয়াকাশান ভাষাপরিবার। এছাড়াও অনেক বিচ্ছিন্ন ভাষাও রয়েছে।
সামরিক বাহিনী
বর্তমান কানাডীয় সামরিক বাহিনী ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিতে এখন প্রায় ৬২ হাজার সদস্য সক্রিয় আছেন। রিজার্ভে আছেন ২৫ হাজার সদস্য, যার মধ্যে ৪ হাজার কানাডীয় রেঞ্জার্সও আছেন।
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি ভাষী দেশ ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:জি২০ সদস্য
বিষয়শ্রেণী:ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ওইসিডি সদস্য
বিষয়শ্রেণী:ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য
বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:১৮৬৭-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল |
ক্যানবেরা | https://bn.wikipedia.org/wiki/ক্যানবেরা | থাম্ব|অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগার, ক্যানবেরা
ক্যানবেরা () অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি অস্ট্রেলীয় রাজধানী অঞ্চলের উত্তর অংশটি গঠন করেছে। ক্যানবেরা একটি আধুনিক ও দ্রুত প্রসারমান শহর। আর্থ-ভৌগোলিকভাবে শহরটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বভাগে, অস্ট্রেলীয় আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে, একটি সমতল কৃষিপ্রধান অঞ্চলে, মোলোংলো নদীর (মারামবিজি নদীর একটি উপনদী) তীরে অবস্থিত। সিডনি শহর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও মেলবোর্ন থেকে ৬৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শহরটি অস্ট্রেলিয়ার এই দুই প্রধানতম নগরীর মধ্যবর্তী একটি জায়গায় অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে এটি অস্ট্রেলিয়ার ৮ম বৃহত্তম শহর ও অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরভাগের বৃহত্তম শহর; এখানে প্রায় ৪ লক্ষ লোক বাস করে।
ক্যানবেরার গ্রীষ্মকালগুলি উষ্ম ও শীতকালগুলি শীতল প্রকৃতির এবং চারপাশ ঘিরে থাকা উচ্চভূমির তুলনায় এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশ কম। শহরটিকে বার্লি গ্রিফিন নামের একটি কৃত্রিম হ্রদের চারপাশ ঘিরে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। মোলোংলো নদীর উপরে বাঁধ ফেলে ১৯৬৩ সালে এই হ্রদটি সৃষ্টি করা হয়। শহরটির আয়তন ও জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র শহরকেন্দ্র ও সংলগ্ন শহরতলীগুলিই মূল পরিকল্পনাকে মেনে চলছে। শহরের চারপাশের উপগ্রহ শহরগুলিতেই মূলত আবাসিক উন্নয়ন হয়েছে; এগুলির মধ্যে আছে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়েস্টন ক্রিক, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বেলকনেন এবং ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত টাগারানং। ন্যাশনাল ক্যাপিটাল প্ল্যানিং নামক একটি সংস্থা শহরের প্রবৃদ্ধি দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত।
ক্যানবেরাতে অবস্থিত প্রধান কিছু দর্শনীয় স্থান হল ক্যাপিটাল হিল নামক এলাকায় অবস্থিত নতুন সংসদ ভবন (Parliament House পার্লামেন্ট হাউস, ১৯৮৮ সালে উন্মোচিত)। পুরাতন সংসদ ভবনটিতে ১৯২৭ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত অধিবেশন বসত, এবং সেটিকে বর্তমানে অস্ট্রেলীয় গণতন্ত্র জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। নতুন সংসদ ভবনের কাছেই অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালত ভবন (High Court of Australia হাই কোর্ট অফ অস্ট্রেলিয়া) ও অস্ট্রেলীয় জাতীয় চিত্রশালা (Australian National Gallery অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল গ্যালারি, ১৯৮২) অবস্থিত। চিত্রশালাটিতে অস্ট্রেলীয় ও অন্যান্য দেশের শিল্পীদের প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি শিল্পকর্ম সুরক্ষিত আছে। শহরের কেন্দ্রে বার্লি গ্রিফিন হ্রদের ভেতরে ক্যাপটেন কুক মেমোরিয়াল ওয়াটার জেট (Captain Cook Memorial Water Jet, ক্যাপ্টেন কুকের স্মরণিকা ফোয়ারা) অবস্থিত। হ্রদের তীরে ১৯৬০ (১৯৬৮?) সালে প্রতিষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগার (National Library of Australia ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ অস্ট্রেলিয়া) এবং জাতীয় রাজধানী প্রদর্শনীকেন্দ্র (National Capital Exhibition) অবস্থিত। ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে ১৮৪০-এর দশকে নির্মিত সন্তু জন দ্য ব্যাপ্টিস্টের গির্জা (Church of Saint John the Baptist চার্চ অফ সেইন্ট জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট) দর্শনীয়। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে আছে অস্ট্রেলীয় জাতীয় যুদ্ধ স্মরণিকা কেন্দ্র (Australian National War Memorial অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল), যেখানে একটি জাদুঘর ও শিল্পকলা প্রদর্শনী কেন্দ্র আছে; রাজকীয় অস্ট্রেলীয় টাকশাল ও অস্ট্রেলিয়া ক্রীড়া ইন্সটিটিউট।
ক্যানবেরার প্রধান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (Australian National University অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি), ক্যানবেরা সঙ্গীত বিদ্যালয় (Canberra School of Music ক্যানবেরা স্কুল অফ মিউজিক, ১৯৬৫), ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Canberra ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানবেরা, প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯০; প্রাক্তন নাম Canberra College of Advanced Education ক্যানবেরা কলেজ অফ অ্যাডভান্সড এডুকেশন, "ক্যানবেরা উচ্চ শিক্ষা মহাবিদ্যালয়"), অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Australian Defence Force Academ অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স অ্যাকাডেমি, ১৯৮১), অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি (Australian Academy of Science, অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সাইয়েন্স, ১৯৫৪) এবং ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত অস্ট্রেলীয় মানববিদ্যা অ্যাকাডেমি (Australian Academy of the Humanities অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাডেমি অফ দ্য হিউম্যানিটিস)। এখানে আরও আছে ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মাউন্ট স্ট্রমলো মানমন্দির (Mount Stromlo Observatory মাউন্ট স্ট্রমলো অবজারভেটরি)। অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কমনওয়েলথ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা সংস্থার (Commonwealth Scientific and Industrial Research Organization, কমনওয়েলথ সাইয়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাসট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন) প্রধান কার্যালয় ক্যানবেরাতে অবস্থিত।
ক্যানবেরা শহরটি নিকটবর্তী ওডেন-ওয়েস্টন ক্রিক, বেলকনেন এবং কুইনবেইয়ান লোকালয়গুলির জন্য অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ক্যানবেরাতে সরকারী প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডই প্রধান। ক্যানবেরার সর্বপ্রধান কর্মসংস্থান প্রদানকারী সংস্থা হল অস্ট্রেলীয় সরকার। তবে পর্যটন ও হালকা শিল্পকারখানা খাত ধীরে ধীরে প্রবৃদ্ধিলাভ করছে। ২১শ শতকের শুরুতে এসে শহরটি উচ্চ-প্রযুক্তি যেমন তথ্য প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তিনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের নির্মাণকাজ শুরু করে।
ইউরোপীয়রা ১৮২৪ সালে বা তারও আগে প্রথম ক্যানবেরা অঞ্চলটিতে বসতি স্থাপন করে। এখানে তখন মেষপালকদের একটি ক্ষুদ্র বসতি ছিল, যার নাম ছিল "ক্যানবেরি"; নামটি সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী অধিবাসীদের মুখের এনগুন্নাওয়াল ভাষার একটি শব্দ "কামবেরা" থেকে এসেছে, যার সম্ভাব্য একটি অর্থ হল "সম্মেলন স্থল"। এই নামটিই পরে বিবর্তিত হয়ে ১৮৩৬ সালে "ক্যানবেরা" নামটির উৎপত্তি হয় বলে ধারণা করা হয়। ১৯০১ সালে অস্ট্রেলিয়া কমনওয়েলথ বা জোটরাষ্ট্রের উদ্বোধন হবার পর ১৯০৮ (মতান্তরে ১৯০৯) সালে তৎকালীন নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ইয়াস-ক্যানবেরা নামের জনবিরল অঞ্চলটিকে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানীর অবস্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং অস্ট্রেলীয় রাজধানী অঞ্চলটির সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ১৯১১ সালে নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্য সরকার অঞ্চলটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। নতুন শহরটির নকশা প্রণয়ন করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যাতে মার্কিন স্থপতি দম্পতি ওয়াল্টার বার্লি গ্রিফিন ও ম্যারিয়ন ম্যাহোনি গ্রিফিন জয়লাভ করেন। তাদের নকশাতে বৃত্ত, ত্রিভুজ ও ষড়ভুজের প্রাধান্য ছিল এবং নকশাটিতে উদ্যান নগরী আন্দোলনের প্রভাবও উল্লেখযোগ্য, যার কারণে শহরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সবুজ ও প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ এলাকা আছে। ১৯১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে "ক্যানবেরা" নামের শহরটির নির্মাণকাজ শুরু হয়, কিন্তু ১ম বিশ্বযুদ্ধের কারণে (১৯১৪-১৯১৮) এই কাজ ব্যাহত হয়। কেবল ১৯২৭ সালের ৯ই মে তারিখে এসে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলবোর্ন থেকে ক্যানবেরা শহরে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ১৯০১ সাল থেকে সংসদ ভবন অস্থায়ীভাবে মেলবোর্ন শহরে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ক্যানবেরার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০০৩ সালের শুরুর দিকে দাবানলের কারণে ক্যানবেরা শহর ও এর শহরতলীগুলির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় ৫০০টি বাসভবন ভস্মীভূত হয় এবং বেশ কয়েকজন লোক মারা যায়। আগুনের কারণে মাউন্ট স্ট্রমলো মানমন্দিরটিরও গুরুতর ক্ষতি হয়।
যোগাযোগ
আকাশপথে
ক্যানবেরা বিমানবন্দর
শিক্ষা
ক্যানবেরাতে দুইটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় হল অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:অস্ট্রেলিয়ার শহর
বিষয়শ্রেণী:ওশেনিয়ার রাজধানী
বিষয়শ্রেণী:অস্ট্রেলীয় রাজধানী শহর
বিষয়শ্রেণী:পরিকল্পিত রাজধানী |
কার্বন | https://bn.wikipedia.org/wiki/কার্বন | কার্বন বা অঙ্গারক (ল্যাটিন ভাষায়ঃ কার্বো "কয়লা")(রাসায়নিক সংকেত C, পারমাণবিক সংখ্যা ৬) একটি মৌলিক পদার্থ। এটি একটি অধাতু এবং যদি চারটি মুক্ত ইলেক্ট্রন পায় তবে যা টেট্রাভেলেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে চারটি সমযোজী রাসায়নিক বন্ধন গঠন করতে সক্ষম। পর্যায় সারণীতে এর অবস্থান গ্রুপ ১৪তে ও এটি একটি পি-ব্লক মৌল এবং C ও C প্রকৃতিতে এটি দুইটি আইসোটোপ স্থায়ী রুপে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু অস্থায়ী C শুধুমাত্র রেডিওনিক্লিড রুপে পাওয়া যায়। এটি ক্ষয়িষ্ণু হওয়ায়, যার অর্ধআয়ু (হাফ-লাইফ) প্রায় ৫,৭৩০ বছর। এটি পৃথিবীর জীবজগতের প্রধান গাঠনিক ও প্রাচীনতম মৌল উপাদানগুলির অন্যতম।
ভূত্বকের প্রাচুর্যতার দিক দিয়ে এটি ১৫তম অবস্থানে রয়েছে, কিন্তু ভরের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, এবং অক্সিজেন-এর পরে চতুর্থতম এর স্থান।
আবিষ্কারের ইতিহাস
কার্বন কবে আবিষ্কৃত হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ আগুন আবিষ্কারের আগে থেকেই মানুষ কার্বনের সাথে পরিচিত ছিল। বজ্রাঘাতের ফলে পুড়ে যাওয়া কাঠের মাধ্যমেই মানুষ প্রথম কার্বনের সাথে পরিচিত হয়। আগুন আবিষ্কারের পর কার্বন হয় মানুষের নিত্যসঙ্গী। কারণ এটি অতিমাত্রায় দাহ্য একটি বস্তু। কার্বন পদার্থটির সাথে পরিচিত থাকলেও এটি যে একটি মৌলিক পদার্থ তা মানুষ বেশিদিন আগে জানতে পারেনি। এমনকি কার্বন নামটির ইতিহাস বেশি প্রাচীন নয়। ১৭৮৯ সালে এন্টনি ল্যাভয়সিয়ে কর্তৃক সংকলিত মৌলিক পদার্থের তালিকায় কার্বন উপস্থিত ছিল। মূলত ল্যাভয়সিয়েই প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রমাণ করেছিলেন কার্বন একটি মৌলিক পদার্থ। কয়লা ও অন্যান্য যৌগের দহন পরীক্ষা করে তিনি এই প্রমাণ পেয়েছিলেন।
প্রকৃতিতে কার্বনের দুইটি বহুরুপ রয়েছে। একটি হীরক এবং অন্যটি গ্রাফাইট। অনেক আগে থেকেই মানুষ এ পদার্থ দুটিকে চিনতো। এমনকি উচ্চ তাপমাত্রায় হীরাকে দহন করালে যে অবশেষ হিসেবে কিছু পাওয়া যায়না তাও মানুষের জানা ছিল। কিন্তু এই পদার্থ দুটিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদার্থ হিসেবে মনে করা হতো। কার্বন ডাই অক্সাইড আবিষ্কারের পর এই সমস্যার সমাধান হয়। ল্যাভয়সিয়ে দেখেন যে, হীরক এবং কাঠকয়লা দুটির দহনেই কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া গিয়েছিল যে এরা অভিন্ন পদার্থ। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে Methods of Chemical Nomenclature নামক গ্রন্থে (ল্যাভয়সিয়ে, এল. গুইটন ডি. মারভিউ, সি. বারথোলেট এবং এ. ফোউরক্রই কর্তৃক লিখিত) প্রথম কার্বনেয়াম (কার্বন) নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ল্যাটিন নাম তথা কার্বনেয়াম আবার সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। সংস্কৃত ভাষায় ক্রা শব্দের অর্থ ফোটা। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে মৌলটির নাম কার্বন দেয়া হয়েছিল।
থাম্ব|263x263পিক্সেল|কার্বনের দৃশ্যমান বর্ণালী
থাম্ব|কার্বন দিয়ে তৈরী কার্বন ফাইবার-পলিমার
১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এস. টেন্যান্ট আবিষ্কার করেন, সম পরিমাণ হীরক ও গ্রাফাইটের দহনে সমআয়তন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। অবশেষে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে এল. গুইটন ডি. মারভিউ নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেন যে হীরক, গ্রাফাইট এবং কোকের একমাত্র উপাদান হচ্ছে কার্বন। এর বিশ বছর পর তিনি সতর্কতার সাথে উত্তপ্ত করে হীরককে গ্রাফাইট এবং গ্রাফাইটকে কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত করতে সমর্থ হন। কিন্তু গ্রাফাইট থেকে হীরক তৈরির মত প্রযুক্তি তখনও ছিলনা। অবশেষে ১৯৫৫ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের একটি দল ৩০০০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং ১০৯ প্যাসকেল চাপে গ্রাফাইট থেকে হীরক সংশ্লেষণ করতে সক্ষম হন। এর কিছুদিন পর সোভিয়েত ইউনিয়নে কার্বন নামে আরেকটি পদার্থ তৈরি করা হয় যাকে কার্বনের তৃতীয় বহুরুপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পদার্থের ক্ষেত্রে কার্বনের পরমাণুগুলো একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত হয়ে লম্বা শিকল তৈরি করে। এটি দেখতে অনেকটা ভূসিকালির মত।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
আরও দেখুন
ব্যক্তি
এন্টনি ল্যাভয়সিয়ে
এল. গুইটন ডি. মারভিউ
সি. বারথোলেট
এ. ফোউরক্রোই
এস. টেন্যান্ট
অন্যান্য
হীরক
গ্রাফাইট
কয়লা
জৈব যৌগ
বিষয়শ্রেণী:মৌলিক পদার্থ
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:কার্বন
বিষয়শ্রেণী:বিজারক |
ক্যাথলিক মণ্ডলী | https://bn.wikipedia.org/wiki/ক্যাথলিক_মণ্ডলী | থাম্ব|243x243পিক্সেল|চার্ট্রেস ক্যাথেড্রাল, ১২২০
thumb|right|upright|পোপ ফ্রান্সিস, রোমীয় ক্যাথলিক মণ্ডলীর বর্তমান নেতা
ক্যাথলিক গির্জা সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী খ্রীষ্টধর্মের বৃহত্তম মণ্ডলী বা শাখা।
২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রায় ১৩০ কোটি লোক রোমান ক্যাথলিক গির্জা দীক্ষিত বলে পরিগণিত হন। রোমীয় ক্যাথলিক গির্জা "বিশ্বের প্রাচীনতম নিরবচ্ছিন্নভাবে অদ্যাবধি সচল আন্তর্জাতিক সংস্থা" হিসেবে পরিচিত।Mark A. Noll. THE NEW SHAPE OF WORLD CHRISTIANITY (Downers Grove, IL: IVP Academic, 2009), 191. নাসরতীয় যীশু ও তাঁর বারোজন প্রেরিত কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথম ও অবিভক্ত খ্রীষ্টান সম্প্রদায় থেকে শুরু করে নিরবচ্ছিন্ন প্রেরিতীয় উত্তরাধিকারের মাধ্যমে এই মণ্ডলী এখন পর্যন্ত টিকে আছে। মণ্ডলীটির সর্বোচ্চ নেতা হলেন রোমের বিশপ, যাঁকে পোপ উপাধি দেওয়া হয়। মণ্ডলীর কেন্দ্রীয় প্রশাসন, যার নাম “পবিত্র পোপরাজ্য”, ইতালির রোম শহরের অভ্যন্তরীণ একটি স্বতন্ত্র নগররাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থিত।
ক্যাথলিক শব্দটি গ্রীক শব্দ কাথোলিকোস () থেকে এসেছে, যার অর্থ সর্বজনীন। খ্রীষ্টধর্মের ইতিহাসের প্রথম দিকে এই অর্থে ব্যবহৃত হলেও ৪র্থ শতকে এসে ক্যাথলিক বলতে রোমের পোপের অনুসারীদের বোঝানো শুরু হয়।
নিকীয় মতবাদটি ক্যাথলিক ভিত্তি। ক্যাথলিক মণ্ডলী দাবি করে যে এটি যীশুখ্রীষ্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অদ্বিতীয়, পবিত্র, সর্বজনীন (ক্যাথলিক) ও আদিপ্রচারকদের (প্রেরিতগণ) গির্জা। এটি আরও দীক্ষা দেয় যে, ক্যাথলিক বিশপরা হলেন যীশুখ্রীষ্টের শিষ্যদের উত্তরসূরী প্রচারক। তারা আরও বলেন যে পোপ হলেন প্রেরিত পৌলের উত্তরসূরী এবং যীশুখ্রীষ্ট নিজে সাধু পৌলকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্পণ করেছিলেন।Holy Bible: ক্যাথলিক গির্জা দাবি করে যে এটি আদি খ্রীষ্টধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করে, তাদের বিশ্বাস অভ্রান্ত এবং পবিত্র ঐতিহ্যের মাধ্যমে এটি পরম্পরাক্রমে অদ্যাবধি চলে এসেছে।
ক্যাথলিক মণ্ডলীর সাতটি প্রধান অনুষ্ঠান আছে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হল যীশুর নিস্তারপর্বের ভোজ উদ্যাপন অনুষ্ঠান। বহু মানুষের উপস্থিতিতে স্ত্রোত্রপাঠের মাধ্যমে এটি সম্পন্ন করা হয়।CCC, 1322–27, Vatican.va: "the Eucharist is the sum and summary of our faith" একজন পাদ্রি মদ ও রুটি উৎসর্গ করেন, যেগুলি যথাক্রমে যীশুর রক্ত ও দেহের প্রতিনিধিত্বমূলক।
ক্যাথলিক মণ্ডলী পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাস ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।O'Collins, p. v (preface). এটি পশ্চিমা দর্শন, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও শিল্পকলার উপর প্রভাব ফেলেছে। ১০৫৪ সালে রোমের পোপের কর্তৃত্ব নিয়ে বিতর্কের ফলে প্রাচ্য অর্থোডক্স মণ্ডলীটি আলাদা হয়ে যায়। ১৬শ শতকে খ্রীষ্টধর্ম সংস্কার আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রীষ্টানেরা ক্যাথলিক মণ্ডলী পরিত্যাগ করে। ২০শ শতাব্দী থেকে বেশিরভাগ ক্যাথলিক খ্রীষ্টান দক্ষিণ গোলার্ধে বাস করছে, যার কারণ ইউরোপে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উত্থান এবং মধ্যপ্রাচ্যে খ্রীষ্টানদের উৎপীড়ন বৃদ্ধি।
২০শ শতাব্দীর শেষদিকে ও ২১শ শতাব্দীর প্রারম্ভে এসে ক্যাথলিক মণ্ডলী যৌনতা সংক্রান্ত মতবাদ, নারী যাজক নিয়োগে অসম্মতি এবং ধর্মীয় নেতাদের যৌন অসদাচরণের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি নিয়ে নিন্দিত হয়েছে।
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Vatican.va – official website of the Holy See
News.va – official news website
Vatican YouTube – official YouTube channel
*
বিষয়শ্রেণী:পশ্চিমা সংস্কৃতি |
চাদ | https://bn.wikipedia.org/wiki/চাদ | চাদ (, ; , ), সরকারি নাম চাদ প্রজাতন্ত্র,(, ) মধ্য আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর উত্তরে লিবিয়া, পূর্বে সুদান, দক্ষিণে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়া, এবং পশ্চিমে নাইজার। সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত বলে এবং মরু জলবায়ুর কারণে চাদকে "আফ্রিকার মৃত হৃদয়" বলেও মাঝে মাঝে অভিহিত করা হয়।
চাদকে বাংলা ভাষা রীতিগত পরিবর্তনের কারণে শাদ বলেও অভিহিত করা হয়। চাদকে তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়: উত্তরের সাহারা মরুভূমি অঞ্চল, মধ্যভাগের ঊষর সহিলীয় বেষ্টনী, এবং দক্ষিণের অপেক্ষাকৃত উর্বর সুদানীয় সাভানা তৃণভূমি অঞ্চল। চাদ হ্রদ দেশটির বৃহত্তম এবং আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয়। এই হ্রদের নামের দেশটির চাদ নামকরণ করা হয়েছে। সাহারা অঞ্চলে অবস্থিত তিবেস্তি পর্বতমালার এমি কৌসি চাদের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। রাজধানী এনজামেনা দেশটির বৃহত্তম শহর। চাদে ২০০ বেশি ধরনের জাতিগত ও ভাষাভিত্তিক গোষ্ঠীর বাস। ফরাসি ও আরবি এখানকার সরকারি ভাষা। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম এখানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।
ইতিহাস
খ্রিস্টপূর্ব ৭ম সহস্রাব্দের শুরুতে চাদ উপত্যকাতে বড় আকারের মনুষ্য বসতি স্থাপিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দ নাগাদ চাদের সহিলীয় অঞ্চলটিতে বহু রাজ্য ও সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ঘটে; চাদের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া আন্তঃসাহারান বাণিজ্যপথটি নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল এগুলির লক্ষ্য। ১৯২০ সাল নাগাদ ফ্রান্স দেশটি দখল করে এবং এটিকে ফরাসি বিষুবীয় আফ্রিকার অংশীভূত করে। ১৯৬০ সালে ফ্রঁসোয়া তোম্বালবাইয়ের নেতৃত্বে চাদ স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু মুসলিম-অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চল তোম্বালবাইয়ের নীতির বিরোধিতা করে এবং ১৯৬৫ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে বিপ্লবীরা রাজধানী দখল করে এবং দক্ষিণের আধিপত্যের অবসান ঘটায়। কিন্তু বিপ্লবী নেতারা অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে; শেষ পর্যন্ত ইসেনে আব্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করেন। ১৯৯০ সালে তারই সামরিক জেনারেল ইদ্রিস দেবি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সুদানের দারফুর সংকট সীমানা পেরিয়ে চাদেও সংক্রমিত হয়েছে এবং যুদ্ধ শুরু হয়ে দেশটিতে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চাদে অনেকগুলি রাজনৈতিক দল থাকলেও রাষ্ট্রপতি দেবি ও তার রাজনৈতিক দল পেট্রিয়টিক স্যালভেশন মুভমেন্ট ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। রাজনৈতিক সহিংসতা ও অভ্যুত্থান বা কু-এর ঘটনা চাদের রাজনীতিকে জর্জরিত করে রেখেছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলির একটি। বেশির চাদীয় নাগরিক দিনমজুরি ও কৃষিকাজ করেন। ঐতিহ্যবাহী তুলা শিল্প একদা দেশের প্রধান রপ্তানিকারী শিল্প হলেও ২০০৩ থেকে খনিজ তেল দেশটির রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস।
রাজনীতি
থাম্ব|281x281পিক্সেল|অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধিতা, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা এবং গৃহযুদ্ধ সত্ত্বেও, ইদ্রিস ডেবি ১৯৯০ থেকে ২০২১ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চাদ শাসন করেছেন।
প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
ভূগোল
অর্থনীতি
জনসংখ্যা
চাদ এর আয়তনের সাথে তাল মিলিয়ে এর জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে ২০১৩ অনুসারে চাদ এর জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩,৬৭০,০৮৪ জন ভাষাসমূহ
চাদ এর অন্যতম সরকারি ভাষা আরবি ও ফরাসি। কিন্তু ১০০টি ভাষা এবং উপভাষা ব্যবহৃত হয়। ভ্রাম্যমাণ আরব ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের বসতি স্থাপন বণিকদের চরিত্রে অভিনয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কারণে চাদীয় আরবি একটি রীতি হয়ে গেছে।
চাদ ধর্ম
চাদ ধর্মীয়ভাবে বিচিত্র দেশ। ১৯৯৩ সালের আদমশুমারী দেখা গেছে যে ৫৪% চাদীয় লোক (একটি সংরক্ষিত আসনের অনুযায়ী এগুলোর মধ্যে প্রতিবেদন ৪৮%, সুন্নি হতে নামেমাত্র ২১% শিয়া, ৪% আহমাদী এবং ২৩% শুধুমাত্র মুসলিম) মুসলিম ছিল। যখন ৩% কোন ধর্মের মুক্তকণ্ঠে করা হয়নি চাদীয় লোক এর মোটামুটিভাবে ২০%, রোমান ক্যাথলিক, ১৪% প্রোটেস্ট্যান্ট, ১০% সর্বপ্রাণবাদী হয়। এই ধর্মীয় ঐতিহ্যের মধ্যে কেউই একশিলা হয়। সর্বপ্রাণবাদ পূর্বপুরুষ এবং স্থান ভিত্তিক ধর্মের যার অভিব্যক্তি খুব নির্দিষ্টভাবে হয় বিভিন্ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইসলাম বিচিত্র উপায়ে প্রকাশ করা হয়; উদাহরণস্বরূপ, উল্লিখিত মুসলিম চাদীয় লোক আগের ৫৫% সংরক্ষিত আসনের রিপোর্ট অনুযায়ী সুফি অন্তর্গত। খ্রীষ্টধর্ম ফরাসি ও আমেরিকান মিশনারি সঙ্গে চাদ আগত; চাদীয় লোক ইসলামের সাথে হিসেবে, এটা প্রাক খৃস্টান ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক সমগোত্রীয়। মুসলমানদের উত্তর ও পূর্ব চাদ মধ্যে মূলত কেন্দ্রীভূত এবং আধ্যাত্ববাদ এবং খ্রিস্টান দক্ষিণ চাদ প্রাথমিকভাবে বাস। সংবিধান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্য উপলব্ধ করা হয় এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চয়তা; বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাধারণত সমস্যা ছাড়াই সহ-বিদ্যমান।
দেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রহস্যময় ইসলাম (সুফিবাদ) একটি মধ্যপন্থী শাখার অনুগামী হয়। তার সবচেয়ে সাধারণ অভিব্যক্তি Tijaniyah, যা স্থানীয় আফ্রিকান ধর্মীয় উপাদানের অন্তর্ভুক্ত Chadian মুসলমানদের 35% দ্বারা অনুসরণ একটি আদেশ হয়। দেশের মুসলমানদের একটি ছোট সংখ্যালঘু আরও মৌলবাদী চর্চা, যা, কিছু ক্ষেত্রে, সৌদি ওরিয়েন্টেড সালাফী আন্দোলন সাথে যুক্ত হতে পারে ধরে রাখুন। [60]
রোমান ক্যাথলিক দেশের সর্ববৃহত খ্রিস্টান আখ্যা প্রতিনিধিত্ব করে। নাইজেরিয়া-ভিত্তিক "উইনার্স চ্যাপেল" সমেত অধিকাংশ প্রোটেস্ট্যান্ট, বিভিন্ন ধর্মপ্রচারক খ্রিস্টান গোষ্ঠীর সাথে জড়িত নই। বাহাই এবং যিহোবার সাক্ষিদের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা দেশের মধ্যে উপস্থিত থাকে। উভয় ধর্মের ১৯৬০ সালে স্বাধীনতার পর চালু হয় এবং এর ফলে দেশে "নতুন" ধর্মের বলে মনে করা হয়।
চাদ উভয় খ্রিস্টান ও ইসলামী দলের প্রতিনিধিত্বমূলক বিদেশী মিশনারীরা হোম। ভ্রাম্যমাণ মুসলিম প্রচারক, সুদান, সৌদি আরব, এবং পাকিস্তান থেকে প্রাথমিকভাবে, এছাড়াও এ যান। সৌদি তহবিল সাধারণত সামাজিক এবং শিক্ষা সংক্রান্ত প্রকল্প এবং ব্যাপক মসজিদ নির্মাণ সমর্থন করে। [60] দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
সরকারী
সরকারী ওয়েবসাইট
Official presidency site
Chad Embassy—Washington DC
রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ
সাধারণ তথ্য
Chad from UCB Libraries GovPubs
বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:মধ্য আফ্রিকার রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:১৯৬০-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:আরবিভাষী দেশ ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:স্থলবেষ্টিত দেশ
বিষয়শ্রেণী:স্বল্পোন্নত দেশ
বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র
বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র |
রাসায়নিক মৌল | https://bn.wikipedia.org/wiki/রাসায়নিক_মৌল | REDIRECTমৌলিক পদার্থ |
চিলি | https://bn.wikipedia.org/wiki/চিলি | থাম্ব|260x260পিক্সেল|সান্তিয়াগো মহানগর, চিলি
চিলি (স্পেনীয় ভাষায়: Chile চিলে) দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের একটি দেশ। দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল ঘেঁষে একটি লম্বা ফিতার মত প্রসারিত একটি ভূখণ্ড। উত্তর-দক্ষিণে চিলির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪,২৭০ কিলোমিটার, কিন্তু এর গড় বিস্তার ১৮০ কিলোমিটারেরও কম। উত্তরের ঊষর মরুভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণের ঝঞ্ঝাপীড়িত হিমবাহ ও ফিয়র্ডসমূহ চিলির ভূ-দৃশ্যাবলির বৈচিত্র্যের স্বাক্ষর বহন করছে। দেশটির মধ্যভাগে একটি উর্বর উপত্যকা অবস্থিত। পূর্বে আন্দেস পর্বতমালা আর্জেন্টিনার সাথে সীমান্ত তৈরি করেছে। চিলির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর সান্তিয়াগো মধ্যভাগের উপত্যকায় অবস্থিত।
চিলির অধিকাংশ জনগণ দেশের মধ্যাঞ্চলের উর্বর কেন্দ্রীয় উপত্যকায় বাস করেন। বেশির ভাগ লোক স্পেনীয় ও আদিবাসী আমেরিকানদের মিশ্র জাতির লোক। রোমান ক্যাথলিক ধর্ম এখানকার প্রধান ধর্ম। স্পেনীয় ভাষা এখানকার সরকারি ভাষা।
চিলি দক্ষিণ আমেরিকার একটি নেতৃস্থানীয় শিল্পোন্নত দেশ। এর অর্থনীতি খনন শিল্প ও কৃষিভিত্তিক। চিলি বিশ্বের বৃহত্তম তামা উৎপাদক ও রপ্তানিকারক। এছাড়াও দেশটি ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানি করে। চিলির ওয়াইন অনেক দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
চিলি ১৬শ শতক থেকে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। গোটা ১৯শ শতক ধরে রপ্তানির মাধ্যমে এটি সমৃদ্ধি লাভ করে, কিন্তু এতে মূলত জমিদার উচ্চ শ্রেণীর লোকেরাই লাভবান হন। এখনও চিলিতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট।
১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চিলিতে কোন সামরিক কু (coup) ঘটেনি, যা ছিল লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় ব্যতিক্রম। ১৯৭৩ সালে এক সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে এবং ১৯৮৯ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চিলি শাসন করে। ২১শ শতকের শুরুতে এসেও চিলি সামরিক শাসনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বাংলাদেশ
মাগী
বহিঃসংযোগ
ThisisChile.cl - Official Chile website - English and Spanish version
বিষয়শ্রেণী:চিলি
বিষয়শ্রেণী:জি১৫ রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ওইসিডি সদস্য
বিষয়শ্রেণী:আন্তঃমহাদেশীয় রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ
বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র
বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র |
ক্রোমোজোম | https://bn.wikipedia.org/wiki/ক্রোমোজোম | thumb|একটি প্রতিলিপিকৃত এবং ঘনীভূত মেটাফেজ ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের চিত্র। (১) ক্রোমাটিড – এস পর্বের পর ক্রোমোজোমের দুটি অভিন্ন অংশের একটি। (২) সেন্ট্রোমিয়ার - সেই বিন্দু যেখানে দুটি ক্রোমাটিড স্পর্শ করে। (৩) ছোট হাত (p)। (৪) লম্বা হাত (q)।
ক্রোমোজোম হল একটি দীর্ঘ ডিএনএ অণু যাতে একটি জীবের জিনগত উপাদানের একটি অংশ বা সমস্ত অংশ বিদ্যমান থাকে। বেশিরভাগ প্রকৃতকোষী (ইউক্যারিওটিক) জীবের ক্রোমোজোমে প্যাকেজিং প্রোটিন থাকে যাকে হিস্টোন বলা হয় যা ক্রোমোজোম অখণ্ডতা বজায় রাখতে চ্যাপেরোন প্রোটিনের সাহায্যে ডিএনএ অণুকে আবদ্ধ করে এবং ঘনীভূত করে। এই ক্রোমোজোমগুলো একটি জটিল ত্রি-মাত্রিক গঠন প্রদর্শন করে, যা ট্রান্সক্রিপশনাল রেগুলেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্রোমোজোমগুলো সাধারণত কেবল কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশাতেই আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দৃশ্যমান হয়। কারণ, এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো সবচেয়ে ঘনীভূত হয়ে কোষের বিষুবীয় অঞ্চলে সজ্জিত থাকে)। এটি ঘটার আগে, প্রতিটি ক্রোমোজোমের অনুলিপি হয়ে (এস ফেজ) উভয় অনুলিপিই একটি সেন্ট্রোমিয়ার দ্বারা যুক্ত হয়। সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মাঝামাঝি অবস্থান করলে একটি X-আকৃতির কাঠামো (উপরে চিত্রিত) তৈরি হয়। অন্যদিকে সেন্ট্রোমিয়ারটি কোনও একদিকে অবস্থান করলে দুই-বাহুবিশিষ্ট কাঠামোর সৃষ্টি হয় এতে সংযুক্ত অনুলিপিগুলোকে সিস্টার ক্রোমাটিড বলা হয়। মেটাফেজের সময় X-আকৃতির কাঠামোটিকে মেটাফেজ ক্রোমোজোম বলা হয়। এই পর্যায়ে ক্রোমোজোম অত্যন্ত ঘনীভূত হয় এবং এদের মধ্যে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা ও পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে সহজ। প্রাণীকোষে ক্রোমোজোমগুলো পৃথকীকরণের সময় অ্যানাফেজ দশায় তাদের সর্বোচ্চ সংকোচনের স্তরে পৌঁছায়।
মিয়োসিস এবং পরবর্তী যৌন প্রজননের সময় ক্রোমোসোমাল পুনর্মিলন জেনেটিক বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্রোমোসোমাল অস্থিরতা এবং ট্রান্সলোকেশন নামে পরিচিত প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে এই কাঠামোগুলোকে যদি ভুলভাবে পরিচালনা করে, তবে কোষটি মাইটোটিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। সাধারণত, এটি কোষটিকে কোষপতন শুরু করবে যা তার নিজের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে, তবে কখনও কখনও কোষের মিউটেশন এই প্রক্রিয়াটিকে বাধা দেয় এবং এইভাবে ক্যান্সারের অগ্রগতি ঘটায়।
কেউ কেউ ক্রোমোজোম শব্দটিকে বিস্তৃত অর্থে ব্যবহার করে, কোষে ক্রোমাটিনের স্বতন্ত্র অংশগুলোকে বোঝাতে, হয় দৃশ্যমান বা হালকা মাইক্রোস্কোপির অধীনে নয়। অন্যরা ধারণাটিকে সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহার করে, কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমাটিনের স্বতন্ত্র অংশগুলোকে বোঝাতে, উচ্চ ঘনীভবনের কারণে হালকা মাইক্রোস্কোপির অধীনে দৃশ্যমান।
বুৎপত্তি
গ্রীক ক্রোমা = রঙ, সোমা = দেহ। ) যেহেতু ক্রোমোজোমকে কিছু বিশেষ রঙ দিয়ে গভীর ভাবে রাঙানো যায়, তাই এই নাম। শব্দটি জার্মান অ্যানাটমিস্ট হেনরিখ উইলহেম ওয়াল্ডেয়ার দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল, ক্রোমাটিন শব্দটিকে উল্লেখ করে, যা কোষ বিভাজনের আবিষ্কারক ওয়ালথার ফ্লেমিং দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল।
প্রারম্ভিক কিছু ক্যারিওলজিক্যাল পদ পুরানো হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্রোমাটিন (ফ্লেমিং ১৮৮o) এবং ক্রোমোসোম (ওয়াল্ডেয়ার ১৮৮৮), উভয়ই একটি অ-রঙিন অবস্থার জন্য রঙকে দায়ী করে।
আবিষ্কারের ইতিহাস
জার্মান বিজ্ঞানী শ্লেইডেন, ভির্চো এবং বুটসলি বিজ্ঞানীগণ ক্রোমোজোম হিসাবে পরিচিত কাঠামোগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
১৮৮o-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটি সিরিজে, থিওডোর বোভেরি ক্রোমোজোমগুলো বংশগতির ভেক্টর, দুটি ধারণার সাথে 'ক্রোমোজোম ধারাবাহিকতা' এবং 'ক্রোমোজোম স্বতন্ত্রতা' নামে পরিচিত হয়ে ওঠে তা ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দিষ্ট অবদান রেখেছিলে।
উইলহেলম রক্স পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, প্রতিটি ক্রোমোজোম আলাদা জেনেটিক কনফিগারেশন বহন করে এবং বোভেরি এই অনুমান পরীক্ষা এবং নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছিল।গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের ১৯oo-এর শুরুতে পুনঃআবিষ্কারের সাহায্যে,বোভেরি উত্তরাধিকারের নিয়ম এবং ক্রোমোজোমের আচরণের মধ্যে সংযোগ নির্দেশ করতে সক্ষম হন। বোভেরি আমেরিকান সাইটোলজিস্টদের দুটি প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছিলেন: এডমন্ড বিচার উইলসন, নেটি স্টিভেনস, ওয়াল্টার সাটন এবং থিওফিলাস পেইন্টার সকলেই বোভেরি দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন (উইলসন, স্টিভেনস এবং পেইন্টার আসলে তাঁর সাথে কাজ করেছিলেন)।
তার বিখ্যাত পাঠ্যপুস্তক দ্য সেল ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হেরিডিটি-তে, উইলসন উত্তরাধিকারের ক্রোমোজোম তত্ত্বকে বোভেরি-সাটন ক্রোমোজোম তত্ত্ব (নামগুলো কখনও কখনও বিপরীত করা হয়) নামকরণ করে বোভেরি এবং সাটনের (উভয়ই প্রায় ১৯o২ সালের দিকে) স্বাধীন কাজকে একত্রে যুক্ত করেছেন।Wilson, E.B. (1925). The Cell in Development and Heredity, Ed. 3. Macmillan, New York. p. 923. আর্নস্ট মেয়ার মন্তব্য করেছেন যে এই তত্ত্বটি কিছু বিখ্যাত জেনেটিস্টদের দ্বারা তীব্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল: উইলিয়াম বেটসন, উইলহেলম জোহানসেন, রিচার্ড গোল্ডশমিড এবং টিএইচ মরগান, সমস্তই একটি বরং গোঁড়ামিপূর্ণ মন। অবশেষে, সম্পূর্ণ প্রমাণ মর্গ্যানের নিজস্ব ল্যাবে ক্রোমোজোম মানচিত্র থেকে এসেছে।Mayr, E. (1982). The growth of biological thought. Harvard. p. 749.
মানব ক্রোমোজোমের সংখ্যা ১৯২৩ সালে থিওফিলাস পেইন্টার প্রথম প্রকাশ করেছিলেন । মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে পরিদর্শন করে, তিনি ২৪ জোড়া গণনা করেছিলেন, যার অর্থ ৪৮টি ক্রোমোজোম। তার ত্রুটি অন্যদের দ্বারা অনুলিপি করা হয়েছিল এবং ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সত্য ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৬টি, ইন্দোনেশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী সাইটোজেনেটিস্ট জো হিন টিজিও দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল।
প্রোক্যারিওটস
প্রোক্যারিওটস : - ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিয়া - সাধারণত একটি একক বৃত্তাকার ক্রোমোজোমে থাকে, তবে অনেক বৈচিত্র বিদ্যমান। বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজোম, যাকে কিছু লেখক জেনোফোর বলতে পছন্দ করেন, এন্ডোসিমবায়োটিকব্যাকটেরিয়া -[[ক্যান্ডিডেটাস হজকিনিয়া সিকাডিকোলা]] এবং ক্যান্ডিডেটাস ট্রেম্বলায়া প্রিন্সেপস,এর মধ্যে মাত্র ১৩o,ooo বেস জোড়া ক্রোমোজোম হতে পারে। মাটিতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া- সোরাঞ্জিয়াম সেলুলসাম। বোরেলিয়া গোত্রের স্পিরোচেটিস এই ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম, বোরেলিয়া বার্গডোরফেরির মতো ব্যাকটেরিয়া লাইম রোগের কারণ এবং এর একটি একক রৈখিক ক্রোমোজোম রয়েছে।
ক্রমানুসারে গঠন
প্রোক্যারিওটিক ক্রোমোজোমগুলোর ইউক্যারিওটসের তুলনায় কম ক্রম-ভিত্তিক গঠন থাকে। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত একক বিন্দুর মতো। প্রোক্যারিওটের জিনগুলো প্রায়শই অপারনগুলোতে সংগঠিত হয় এবং ইউক্যারিওটের বিপরীতে সাধারণত ইন্ট্রোন থাকে না।
ডিএনএ প্যাকেজিং
প্রোক্যারিওটদের নিউক্লিয়াস থাকে না। এর পরিবর্তে, এদের ডিএনএ নিউক্লিয়েড নামে একটি কাঠামো সংগঠিত হয়ে থাকে। নিউক্লিওড একটি স্বতন্ত্র গঠন এবং ব্যাকটেরিয়া কোষের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল দখল করে। এই কাঠামোটি অবশ্য গতিশীল এবং হিস্টোন-সদৃশ প্রোটিনের ক্রিয়া দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ করে, যা ব্যাকটেরিয়া ক্রোমোজোমের সাথে যুক্ত। আর্চিয়ায় ক্রোমোজোমের ডিএনএ আরও বেশি সংগঠিত, ডিএনএ ইউক্যারিওটিক নিউক্লিওসোমের মতো কাঠামোর মধ্যে প্যাকেজযুক্ত।
কিছু ব্যাকটেরিয়াতে প্লাজমিড বা অন্যান্য অতিরিক্ত ক্রোমোসোমাল ডিএনএ ও থাকে। এগুলো সাইটোপ্লাজম নামে পরিচিত। সাইটোপ্লাজম বৃত্তাকার কাঠামো, যা সেলুলার ডিএনএ ধারণ করে এবং এটি আনুভূমিক জিন স্থানান্তরে ভূমিকা পালন করে। প্রোক্যারিওটস ( নিউক্লিওডস।নিউক্লিওডসে দেখুন ) এবং ভাইরাসে ডিএনএ প্রায়ই ঘনবসতিপূর্ণ।আর্কিয়ার ক্ষেত্রে, ইউক্যারিওটিক হিস্টোনের সমতুল্য এবং ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে হিস্টোন-সদৃশ প্রোটিন দ্বারা গঠিত।
ব্যাকটেরিয়া ক্রোমোজোমগুলো ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমা ঝিল্লির সাথে সংযুক্ত থাকে। আণবিক জীববিজ্ঞানের প্রয়োগে, এটি প্লাজমিড ডিএনএ থেকে লাইজড ব্যাকটেরিয়াকে কেন্দ্রীভূত করে এবং ঝিল্লির (এবং সংযুক্ত ডিএনএ) ছিদ্র করে বিচ্ছিন্ন করার অনুমতি দেয়।
প্রোক্যারিওটিক ক্রোমোজোম এবং প্লাজমিডগুলো ইউক্যারিওটিক ডিএনএর মতো। সাধারণত সুপারকোয়েলডট্রান্সক্রিপশন, রেগুলেশন এবং রেপ্লিকেশনের অ্যাক্সেসের জন্য ডিএনএ কে প্রথমে তার শিথিল অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে।
ইউক্যারিওটস
thumb|280px|একটি ইউক্যারিওটিক কোষে ডিএনএর সংগঠন
প্রতিটি ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমে প্রোটিনের সাথে যুক্ত একটি দীর্ঘ রৈখিক ডিএনএ অণু থাকে, যা ক্রোমাটিন নামক প্রোটিন এবং ডিএনএর একটি কমপ্যাক্ট কমপ্লেক্স গঠন করে। ক্রোমাটিন একটি জীবের ডিএনএর বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধারণ করে, তবে মাতৃত্বের উত্তরাধিকারসূত্রে অল্প পরিমাণে মাইটোকন্ড্রিয়াতে পাওয়া যায়। এটি বেশিরভাগ কোষে উপস্থিত থাকে, কয়েকটি ব্যতিক্রম সহ, উদাহরণস্বরূপ, লোহিত রক্তকণিকা।
হিস্টোনগুলো ক্রোমোজোম সংগঠনের প্রথম এবং সবচেয়ে মৌলিক একক এবং নিউক্লিওসোমের জন্য দায়ী।
ইউক্যারিওটস ( নিউক্লিয়াস সহ কোষ যেমন উদ্ভিদ, ছত্রাক এবং প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়) কোষের নিউক্লিয়াসে থাকা একাধিক বড় রৈখিক ক্রোমোজোম ধারণ করে। প্রতিটি ক্রোমোসোমের একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে, যার একটি বা দুটি বাহু যুক্ত সেন্ট্রোমিয়ার থেকে প্রক্ষেপিত হয়, যদিও বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে এই বাহুগুলো তেমন দৃশ্যমান হয় না। উপরন্তু, বেশিরভাগ ইউক্যারিওটের একটি ছোট বৃত্তাকার মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম থাকে এবং কিছু ইউক্যারিওটে অতিরিক্ত ছোট বৃত্তাকার বা রৈখিক সাইটোপ্লাজমিক ক্রোমোজোম থাকতে পারে।
thumb|center|850px|ডিএনএ কমপ্যাকশনের প্রধান কাঠামো: ডিএনএ, নিউক্লিওসোম, ১o এনএম "বিডস-অন-এ-স্ট্রিং" ফাইবার, ৩o এনএম ফাইবার এবং মেটাফেজ ক্রোমোসোম।ইউক্যারিওটের পারমাণবিক ক্রোমোজোমে, অসংকীর্ণ ডিএনএ একটি অর্ধ-ক্রমযুক্ত কাঠামোতে বিদ্যমান, যেখানে এটি হিস্টোন (গঠনগত প্রোটিন ) এর চারপাশে আবৃত থাকে, যা ক্রোমাটিন নামক একটি যৌগিক উপাদান তৈরি করে।
ইন্টারফেজ ক্রোমাটিন
নিউক্লিওসোমে ডিএনএর প্যাকেজিং ১o ন্যানোমিটার ফাইবার সৃষ্টি করে যা আরও ৩o এনএম ফাইবার পর্যন্ত ঘনীভূত হতে পারে ইন্টারফেজ নিউক্লিয়াসের বেশিরভাগ ইউক্রোমাটিন ৩o-এনএম ফাইবার আকারে বলে মনে হয়। ক্রোমাটিন গঠন হল আরও ডিকন্ডেন্সড স্টেট, অর্থাৎ ১o-এনএম কনফর্মেশন ট্রান্সক্রিপশনের অনুমতি দেয়।
thumb|হেটেরোক্রোমাটিন বনাম ইউক্রোমাটিন|398x398px
ইন্টারফেজ চলাকালীন ( কোষ চক্রের সময়কাল যেখানে কোষ বিভাজিত হয় না), দুই ধরনের ক্রোমাটিনকে আলাদা করা যায়:
ইউক্রোমাটিন, যা সক্রিয় ডিএনএ নিয়ে গঠিত, যেমন, প্রোটিন হিসাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।
হেটেরোক্রোমাটিন, যা বেশিরভাগ নিষ্ক্রিয় ডিএনএ নিয়ে গঠিত। এটি ক্রোমোসোমাল পর্যায়ে কাঠামোগত উদ্দেশ্যে পরিবেশন করে বলে মনে হয়।
গঠনমূলক হেটেরোক্রোমাটিন, যা কখনো প্রকাশ করা হয় না। এটি সেন্ট্রোমিয়ারের চারপাশে অবস্থিত এবং সাধারণত পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রম ধারণ করে।
ফ্যাকাল্টেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন, যা কখনও কখনও প্রকাশ করা হয়।
মেটাফেজ ক্রোমাটিন এবং বিভাজন
thumb|200px|left|মেটাফেজের সময় মানুষের ক্রোমোজোম
thumb|right|ক্রোমাটিডের মাইক্রোগ্রাফ সহ একটি মেরুদণ্ডী কোষে প্রাথমিক মাইটোসিসের পর্যায়
মাইটোসিস বা মিয়োসিসের প্রাথমিক পর্যায়ে (কোষ বিভাজন) ক্রোমাটিন ডাবল হেলিক্স আরও ঘনীভূত হয়। তারা অ্যাক্সেসযোগ্য জেনেটিক উপাদান হিসাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয় ( ট্রান্সক্রিপশন বন্ধ হয়ে যায়) এবং একটি কমপ্যাক্ট পরিবহনযোগ্য আকারে পরিণত হয়। ৩onm ক্রোমাটিন ফাইবারের লুপগুলো মাইটোটিক কোষের কমপ্যাক্ট মেটাফেজ ক্রোমোজোম গঠনের জন্য নিজেদের উপর আরও ভাঁজ করে বলে মনে করা হয়। এইভাবে ডিএনএ প্রায় ১o,ooo গুণ ঘনীভূত হয়।
ক্রোমোজোম স্ক্যাফোল্ড, কনডেনসিন, TOP২A এবং KIF4 এর মতো প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ক্রোমাটিন কমপ্যাক্ট ক্রোমোজোমকে ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৩o nm কাঠামোর লুপগুলো উচ্চ ক্রম কাঠামোতে ভারা সহ আরও ঘনীভূত হয়।
এই অত্যন্ত কম্প্যাক্ট ফর্মটি পৃথক ক্রোমোজোমগুলোকে দৃশ্যমান করে তোলে এবং তারা ক্লাসিক চার-বাহু কাঠামো গঠন করে।সেন্ট্রোমিয়ারে একে অপরের সাথে সংযুক্ত বোন ক্রোমাটিডগুলো একটি জোড়া। খাটো বাহুগুলোকে p আর্মস বলা হয় (যা ফরাসি শব্দ পেটিট থেকে এসেছে, যার অর্থ-ছোট) এবং লম্বা বাহুগুলোকে বলা হয় q আর্মস (q ল্যাটিন বর্ণমালায় p অনুসরণ করে। যার অর্থ ফরাসি ভাষায় লেজ) "Chromosome Mapping: Idiograms" Nature Education – 13 August 2013)।এটিই একমাত্র প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপট যেখানে পৃথক ক্রোমোজোমগুলো একটি অপটিক্যাল মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে দৃশ্যমান হয়।
মাইটোটিক মেটাফেজ ক্রোমোজোমগুলোকে পরপর ক্রোমাটিন লুপগুলোর একটি রৈখিকভাবে সংগঠিত অনুদৈর্ঘ্যভাবে সংকুচিত অ্যারের দ্বারা সর্বোত্তমভাবে সক্রিয় করে।
মাইটোসিসের সময় মাইক্রোটিউবুলগুলো কোষের বিপরীত প্রান্তে অবস্থিত সেন্ট্রোসোম থেকে বৃদ্ধি পায় এবং কাইনেটোচোরস নামক বিশেষ কাঠামোতে সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে সংযুক্ত হয়। যার মধ্যে প্রতিটি বোন ক্রোমাটিডে উপস্থিত থাকে। কাইনেটোচোরসঅঞ্চল একটি বিশেষ ডিএনএ বেস ক্রম। এই বিশেষ অঞ্চল প্রোটিনের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সংযুক্তি প্রদান করে।তারপরে মাইক্রোটিউবিউলগুলো ক্রোমাটিডগুলোকে সেন্ট্রোসোমের দিকে টেনে নিয়ে যায়, যাতে প্রতিটি জনন কোষ ক্রোমাটিডগুলোর একটি সেট উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। একবার কোষগুলো বিভক্ত হয়ে গেলে, ক্রোমাটিডগুলো আনকোয়েল করা হয় এবং ডিএনএ আবারও প্রতিলিপি করা শুরু করে। ক্রোমোজোমগুলো গঠনগতভাবে অত্যন্ত ঘনীভূত হয়, যা এই দৈত্যাকার ডিএনএ গঠনগুলোকে কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকতে সক্ষম করে।
মানুষের ক্রোমোজোম
মানুষের ক্রোমোজোম দুটি প্রকারে বিভক্ত করা যেতে পারে: অটোসোম s (শরীরের ক্রোমোজোম(গুলো)) এবং অ্যালোসোম ( X এবং Y ক্রোমোজোম,যৌন ক্রোমোজোম)। কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য একজন ব্যক্তির লিঙ্গের সাথে যুক্ত এবং সেক্স ক্রোমোজোমের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। অটোসোমে বাকি জিনগত বংশগত তথ্য থাকে। কোষ বিভাজনের সময় সবাই একইভাবে কাজ করে।
মানুষের (পুরুষ ও নারী উভয়ের) কোষে ২৩ জোড়া (মোট ৪৬টি) ক্রোমোজোম থাকে। এর ২২ জোড়া অটোসোম এবং ২৩ তম জোড়া হল সেক্স ক্রোমোজোম (X এবং Y ক্রোমোজোম)। মহিলাদের দুটি X ক্রোমোজোম (XX) থাকে,পুরুষদের একটি X এবং একটি Y ক্রোমোজোম (XY) থাকে।
X ক্রোমোজোম, Y ক্রোমোজোমের তুলনায় তিনগুন লম্বা এবং X ক্রোমোজোমে 900টি প্রোটিন কোডিং জিন রয়েছে, Y ক্রোমোজোমে 100 প্রোটিন কোডিং জিন আছে । মহিলারা পিতার কাছ থেকে একটি X ক্রোমোজোম এবং মায়ের কাছ থেকে অন্য X ক্রোমোজোমটি উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। পুরুষ সবসময় পিতার কাছ থেকে Y ক্রোমোজোম,মায়ের কাছ থেকে X ক্রোমোজোম পায় ।
স্ত্রী স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রতিটি কোষে দুটি X ক্রোমোজোম থাকে,যার একটি X ক্রোমোজোমের নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এই ধরনের নিষ্ক্রিয়তা ট্রান্সক্রিপশন ঘটতে বাধা দেয়, X-লিঙ্কযুক্ত জিনের বিষাক্ত ডবল ডোজ না ঘটা নিশ্চিত করে।
এগুলো ছাড়াও, মানব কোষে মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোমের মধ্যে কয়েক শত কপি রয়েছে। মানুষের জিনোমের সিকোয়েন্সিংপ্রতিটি ক্রোমোজোম সম্পর্কে প্রচুর তথ্য প্রদান করেছে। নিচে ক্রোমোজোমের পরিসংখ্যান সংকলন করার একটি টেবিল রয়েছে, যা মেরুদণ্ডী জিনোম অ্যানোটেশন (VEGA) ডাটাবেসে স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের মানব জিনোমের তথ্যের উপর ভিত্তি করে। Vega.sanger.ad.uk, all data in this table was derived from this database, 11 November 2008. জিনের সংখ্যা একটি অনুমান, কারণ এটি আংশিকভাবে জিনের পূর্বাভাস এর উপর ভিত্তি করে। মোট ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্যও একটি অনুমান, অনুক্রমহীন হেটেরোক্রোমাটিন অঞ্চলের আনুমানিক আকারের উপর ভিত্তি করে।
+ ক্রোমোজোম জিন মোট বেস জোড়া % ঘাঁটি ক্রমিক বেস জোড়াSequenced percentages are based on fraction of euchromatin portion, as the Human Genome Project goals called for determination of only the euchromatic portion of the genome. Telomeres, centromeres, and other heterochromatic regions have been left undetermined, as have a small number of unclonable gaps. See https://www.ncbi.nlm.nih.gov/genome/seq/ for more information on the Human Genome Project.% অনুক্রমিক বেস জোড়া ১ ২ooo ২৪৭,১৯৯,৭১৯ ৮.o ২২৪,৯৯৯,৭১৯৯১.o২% ২ ১৩oo ২৪২,৭৫১,১৪৯ ৭.৯ ২৩৭,৭১২,৬৪৯ ৯৭.৯২% ৩ ১ooo ১৯৯,৪৪৬,৮২৭ ৬.৫ ১৯৪,৭o৪,৮২৭ ৯৭.৬২% ৪ ১ooo ১৯১,২৬৩,o৬৩ ৬.২ ১৮৭,২৯৭,o৬৩ ৯৭.৯৩% ৫ ৯oo ১৮o,৮৩৭,৮৬৬ ৫.৯ ১৭৭,৭o২,৭৬৬ ৯৮.২৭% ৬ ১ooo ১৭o,৮৯৬,৯৯৩ ৫.৫ ১৬৭,২৭৩,৯৯৩ ৯৭.৮৮% ৭ ৯oo ১৫৮,৮২১,৪২৪ ৫.২ ১৫৪,৯৫২,৪২৪ ৯৭.৫৬% ৮ ৭oo ১৪৬,২৭৪,৮২৬ ৪.৭ ১৪২,৬১২,৮২৬ ৯৭.৫o% ৯ ৮oo ১৪o,৪২২,২৯৮ ৪.৬ ১২o,৩১২,২৯৮ ৮৫.৬৭% ১o ৭oo ১৩৫,৩৭৪,৭৩৭ ৪.৪ ১৩১,৬২৪,৭৩৭ ৯৭.২৩% ১১ ১৩oo ১৩৪,৪৫২,৩৮৪ ৪.৪ ১৩১,১৩o,৮৫৩ ৯৭.৫৩% ১২ ১১oo ১৩২,২৪৯,৫৩৪ ৪.৩ ১৩o,৩o৩,৫৩৪ ৯৮.৫o% ১৩ ৩oo ১১৪,১২৭,৯৮o ৩.৭ ৯৫,৫৫৯,৯৮o ৮৩.৭৩% ১৪ ৮oo ১o৬,৩৬o,৫৮৫ ৩.৫ ৮৮,২৯o,৫৮৫ ৮৩.o১% ১৫ ৬oo ১oo,৩৩৮,৯১৫ ৩.৩ ৮১,৩৪১,৯১৫ ৮১.o৭% ১৬ ৮oo ৮৮,৮২২,২৫৪ ২.৯ ৭৮,৮৮৪,৭৫৪ ৮৮.৮১% ১৭ ১২oo ৭৮,৬৫৪,৭৪২ ২.৬ ৭৭,৮oo,২২o ৯৮.৯১% ১৮ ২oo ৭৬,১১৭,১৫৩ ২.৫ ৭৪,৬৫৬,১৫৫ ৯৮.o৮% ১৯ ১৫oo ৬৩,৮o৬,৬৫১ ২.১ ৫৫,৭৮৫,৬৫১ ৮৭.৪৩% ২o ৫oo ৬২,৪৩৫,৯৬৫ ২.o ৫৯,৫o৫,২৫৪ ৯৫.৩১% ২১ ২oo ৪৬,৯৪৪,৩২৩ ১.৫ ৩৪,১৭১,৯৯৮ ৭২.৭৯% ২২ ৫oo ৪৯,৫২৮,৯৫৩ ১.৬ ৩৪,৮৯৩,৯৫৩ ৭o.৪৫% X (সেক্স ক্রোমোজোম) ৮oo ১৫৪,৯১৩,৭৫৪ ৫.o ১৫১,o৫৮,৭৫৪ ৯৭.৫১% Y (সেক্স ক্রোমোজোম) ২oo ৫৭,৭৪১,৬৫২ ১.৯ ২৫,১২১,৬৫২৪৩.৫১% মোট ২১,ooo ৩,o৭৯,৮৪৩,৭৪৭ ১oo.o ২,৮৫৭,৬৯৮,৫৬o৯২.৭৯%
বিভিন্ন জীবে সংখ্যা
ইউক্যারিওট
ইউক্যারিওটে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অত্যন্ত পরিবর্তনশীল (টেবিল দেখুন)। প্রকৃতপক্ষে, ক্রোমোজোমগুলো ফিউজ করে বা ভাঙতে পারে এবং এইভাবে অভিনব ক্যারিওটাইপগুলো বিবর্তিত হতে পারে। ক্রোমোজোমগুলোও কৃত্রিমভাবে মিশ্রিত করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, খামিরের ১৬টি ক্রোমোজোম একটি দৈত্যাকার ক্রোমোজোমে মিশ্রিত করা হয়েছে এবং কোষগুলো এখনও কিছুটা কম বৃদ্ধির হারের সাথে কার্যকর থাকে।
নিচের সারণীগুলো একটি কোষের নিউক্লিয়াসে মোট ক্রোমোজোমের (সেক্স ক্রোমোজোম সহ) সংখ্যা নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ-বেশিরভাগ ইউক্যারিওট ডিপ্লয়েড, মানুষের মতো যাদের ২২টি ভিন্ন ধরনের অটোসোম রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি সমজাতীয় জোড়া এবং দুটি সেক্স ক্রোমোজোম রয়েছে। এটি মোট ৪৬টি ক্রোমোজোম নির্দেশকরে।অন্যান্য জীবের ক্রোমোজোমের দুইটিরও বেশি কপি রয়েছে। যেমন ব্রেড হুইট (যা হেক্সাপ্লয়েড) এতে মোট ৪২টি ক্রোমোজোম থাকে।
+ কিছু উদ্ভিদের ক্রোমোজোম সংখ্যা বৃক্ষ প্রজাতি # অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা (ডিপ্লয়েড) ১o রাই (ডিপ্লয়েড) ১৪ Einkorn গম (ডিপ্লয়েড) ১৪ ভুট্টা (ডিপ্লয়েড বা প্যালিওটেট্রাপ্লয়েড) ২o ডুরম গম (টেট্রাপ্লয়েড) ২৮ রুটি গম (হেক্সাপ্লয়েড) ৪২ চাষকৃত তামাক (টেট্রাপ্লয়েড) ৪৮ অ্যাডারের জিহ্বা ফার্ন (পলিপ্লয়েড) প্রায় ১২oo+ কিছু প্রাণীর ক্রোমোজোম সংখ্যা (২n) প্রজাতি # ভারতীয় মুন্টজ্যাক ৭ সাধারণ ফলের মাছি ৮ পিল মিলিপিড ( আর্থোসফেরা ফিউমোসা ) ৩o কেঁচো ( অক্টোড্রিলাস কমপ্লেনাটাস ) ৩৬ তিব্বতি শিয়াল ৩৬ গৃহপালিত বিড়াল ৩৮ গার্হস্থ্য শূকর ৩৮ ল্যাবরেটরি মাউস ৪o ল্যাবরেটরি ইঁদুর ৪২ খরগোশ ( ওর্য়কতলাগাস কানিকালো ) ৪৪ সিরিয়ান হ্যামস্টার ৪৪ গাপ্পি ৪৬ মানুষ ৪৬ শিয়াল ৪৮ গরিলা, chimpanzees ৪৮ গৃহপালিত ভেড়া ৫৪ বাগানের শামুক ৫৪ রেশম পোকা ৫৬ হাতি ৫৬ গরু ৬o গাধা ৬২ গিনিপিগ ৬৪ ঘোড়া ৬৪ কুকুর ৭৮ হেজহগ ৯o গোল্ডফিশ ১oo–১o৪ মাছরাঙ্গা ১৩২+ অন্যান্য জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা প্রজাতি বড়
ক্রোমোজোম মধ্যবর্তী
ক্রোমোজোম ক্ষুদ্র
ক্রোমোজোম ট্রাইপ্যানোসোমা ব্রুসি ১১ ৬ ≈১ooগৃহপালিত কবুতর (কলম্বা লিভিয়া ডমেস্টিকা) ১৮ – ৫৯–৬৩ মুরগি ৮ ২টি সেক্স ক্রোমোজোম ৬o
একটি নির্দিষ্ট ইউক্যারিওটিক প্রজাতির সাধারণ সদস্যদের সকলেরই একই সংখ্যক পারমাণবিক ক্রোমোজোম থাকে (টেবিলটি দেখুন)। অন্যান্য ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম, অর্থাৎ মাইটোকন্ড্রিয়াল এবং প্লাজমিডের মতো ছোট ক্রোমোজোম সংখ্যায় অনেক বেশি পরিবর্তনশীল এবং প্রতি কোষে হাজার হাজার কপি থাকতে পারে।
thumb|200px|left|ফাইব্রোব্লাস্ট কোষে প্রোমেটাফেজ চলাকালীন ২৩টি মানব ক্রোমোজোম অঞ্চল
অযৌনভাবে প্রজননকারী প্রজাতির এক সেট ক্রোমোজোম থাকে যা শরীরের সমস্ত কোষে একই রকম। যাইহোক, অযৌন প্রজাতির হ্যাপ্লয়েড বা ডিপ্লয়েড হতে পারে।
যৌনভাবে প্রজননকারী প্রজাতির সোমাটিক কোষ (দেহের কোষ) আছে, যেগুলো ডিপ্লয়েড [২n] ক্রোমোজোমের দুই সেট (মানুষে ২৩জোড়া)এর মধ্যে এক সেট মায়ের থেকে এবং বাবার কাছ থেকে আর একটি সেট। গেমেটে প্রজনন কোষ, হল হ্যাপ্লয়েড [n], এদের এক সেট ক্রোমোজোম রয়েছে। গেমেটগুলো একটি ডিপ্লয়েড জীবাণু রেখা কোষের মিয়োসিস দ্বারা উৎপাদিত হয়। মিয়োসিসের সময়, পিতা এবং মাতার মিলিত ক্রোমোজোমগুলো নিজেদের ছোট ছোট অংশ (ক্রসওভার) বিনিময় করতে পারে এবং এইভাবে নতুন ক্রোমোজোম তৈরি করতে পারে,যা শুধুমাত্র পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায় না। যখন একটি পুরুষের এবং একটি মহিলার গ্যামেট একত্রিত হয় (নিষিক্তকরণ), তখন একটি নতুন ডিপ্লয়েড জীব গঠিত হয়।
কিছু প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতি হল পলিপ্লয়েড [Xn]: তাদের দুই সেটেরও বেশি সমজাতীয় ক্রোমোজোম আছে। তামাক বা গমের মতো কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদগুলো তাদের পূর্বপুরুষের প্রজাতির তুলনায় প্রায়শই পলিপ্লয়েড হয়। গমের সাতটি ক্রোমোজোমের হ্যাপ্লয়েড সংখ্যা রয়েছে, যা এখনও কিছু কাল্টিভার এবং সেইসাথে বন্য বংশোদ্ভূতদের মধ্যে দেখা যায়। আরও সাধারণ পাস্তা এবং রুটি গমের প্রকারগুলো হল পলিপ্লয়েড, বন্য গমের ১৪টি (ডিপ্লয়েড) ক্রোমোজোমের তুলনায় ২৮টি (টেট্রাপ্লয়েড) এবং ৪২টি (হেক্সাপ্লয়েড) ক্রোমোজোম রয়েছে।
প্রোক্যারিওট
প্রোকারিওট প্রজাতির সাধারণত প্রতিটি প্রধান ক্রোমোজোমের একটি অনুলিপি থাকে, তবে বেশিরভাগ কোষ সহজেই একাধিক অনুলিপি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।Charlebois R.L. (ed) 1999. Organization of the prokaryote genome. ASM Press, Washington DC. উদাহরণ স্বরূপ, বুচনেরা, এফিড এর একটি সিম্বিওন্ট এর ক্রোমোজোমের একাধিক কপি রয়েছে, প্রতি কোষে ১o-৪oo কপি। যাইহোক, কিছু বড় ব্যাকটেরিয়াতে, যেমন ইপুলোপিসিয়াম ফিশেলসনিতে ক্রোমোজোমের ১oo,ooo কপি পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারে। প্লাজমিড এবং প্লাজমিড-সদৃশ ছোট ক্রোমোজোমগুলো, ইউক্যারিওটের মতো, অনুলিপি সংখ্যায় অত্যন্ত পরিবর্তনশীল। কোষে প্লাজমিডের সংখ্যা প্রায় সম্পূর্ণরূপে প্লাজমিডের বিভাজনের হার দ্বারা নির্ধারিত হয় - দ্রুত বিভাজন উচ্চ কপি সংখ্যার কারণ হয়।
ক্যারিওটাইপ
thumb|right|200px| মানব পুরুষের ক্যারিওগ্রাম
সাধারণভাবে, ক্যারিওটাইপ হল একটি ইউক্যারিওট প্রজাতি এর বৈশিষ্ট্যযুক্ত ক্রোমোজোম পরিপূরক। ক্যারিওটাইপগুলোর প্রস্তুতি এবং অধ্যয়ন সাইটোজেনেটিক্স এর অংশ।
যদিও ডিএনএ-এর প্রতিলিপি এবং ট্রান্সক্রিপশন ইউক্যারিওটস-এ অত্যন্ত মানসম্মত, তবে তাদের ক্যারিওটাইপগুলোর জন্য একই কথা বলা যায় না, যা প্রায়শই উচ্চতর হয়। পরিবর্তনশীল ক্রোমোজোম সংখ্যা এবং বিস্তারিত সংগঠনে প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে, প্রজাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। প্রায়শই আছে:
১ দুটি লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য
২। জীবাণু-রেখা এবং সোমা (গেমেটে এবং শরীরের বাকি অংশের মধ্যে পার্থক্য
৩। জনসংখ্যার সদস্যদের মধ্যে পার্থক্য, ভারসাম্য জেনেটিক পলিমরফিজম এর কারণে
৪। অ্যালোপ্যাট্রিক প্রজাতি
৫। মোজাইক বা অন্যথায় অস্বাভাবিক ব্যক্তি।
এছাড়াও, নিষিক্ত ডিম থেকে বিকাশের সময় ক্যারিওটাইপের তারতম্য ঘটতে পারে।
ক্যারিওটাইপ নির্ধারণের কৌশলটিকে সাধারণত ক্যারিওটাইপিং বলা হয়। কোষগুলোকে বিভাজনের মাধ্যমে আংশিকভাবে লক করা যেতে পারে (মেটাফেজে) ইন ভিট্রো (একটি প্রতিক্রিয়া শিশিতে) কোলচিসিন দিয়ে। তারপরে এই কোষগুলোকে দাগ দেওয়া হয়, ফটোগ্রাফ করা হয় এবং একটি ক্যারিওগ্রাম-এ সাজানো হয়, যেখানে ক্রোমোজোমের সেট সাজানো হয়, দৈর্ঘ্যের ক্রম অনুসারে অটোজোম এবং শেষে সেক্স ক্রোমোজোম (এখানে X/Y)।
অনেক যৌন প্রজননকারী প্রজাতির মতো, মানুষের বিশেষ গনসোম (যৌন ক্রোমোজোম, স্বয়ংক্রিয়গুলোর বিপরীতে) রয়েছে। এগুলো মহিলাদের মধ্যে XX এবং পুরুষদের মধ্যে XY।
ইতিহাস এবং বিশ্লেষণ কৌশল
মানব ক্যারিওটাইপের তদন্তে সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্নটি নিষ্পত্তি করতে অনেক বছর লেগেছিল প্রশ্নটি হলো: একটি স্বাভাবিক ডিপ্লয়েড মানব কোষে কতটি ক্রোমোজোম থাকে? ১৯১২ সালে, হ্যান্স ফন উইনিওয়ার্টার ৪৭টি ক্রোমোজোম হওয়ার দাবি করেছিলেন স্পার্মাটোগোনিয়া এবং ওগোনিয়া- ৪৮টি ক্রোমোজোম হওয়ার দাবি করেছিলেন। পেইন্টার ১৯২২ সালে মানুষের ডিপ্লয়েড সংখ্যা ৪৬ নাকি ৪৮, প্রথমে তিনি ৪৬ এর পক্ষে ছিল।কিন্তু তা নিশ্চিত ছিল না। তিনি পরবর্তীতে তার মতামতকে ৪৬ থেকে ৪৮ পর্যন্ত সংশোধন করেন এবং তিনি সঠিকভাবে মানুষের একটি XX/XY সিস্টেমের ওপর জোর দেন।
সমস্যাটি নিশ্চিতভাবে সমাধান করার জন্য এই নতুন কৌশলগুলোর প্রয়োজন ছিল:
কোলচিসিন এর একটি দ্রবণ দ্বারা মেটাফেজ এ আটক করা মাইটোসিস।
একটি হাইপোটোনিক দ্রবণ o.o৭৫ M KCl-এ প্রিট্রিটিং কোষ, যা তাদের ফুলিয়ে দেয় এবং ক্রোমোজোম ছড়িয়ে দেয়।
স্লাইডে প্রস্তুতি স্কোয়াশ করা ক্রোমোজোমগুলোকে একক সমতলে জোর করে।
একটি ফটোমাইক্রোগ্রাফ কাটা এবং ফলাফলটিকে একটি অবিসংবাদিত ক্যারিওগ্রামে সাজানো।
মানব ডিপ্লয়েড সংখ্যা ৪৬টি হিসাবে নিশ্চিত হওয়ার আগে এটি ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত সময় নেয়। উইনিওয়ার্টার এবং পেইন্টারের কৌশলগুলো বিবেচনা করে এবং তাদের ফলাফলগুলো বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল।Hsu T.C. (1979) Human and mammalian cytogenetics: a historical perspective. Springer-Verlag, N.Y. p. 10: "It's amazing that he [Painter] even came close!"শিম্পাঞ্জি, আধুনিক মানুষের সবচেয়ে কাছের জীবিত আত্মীয়, অন্যান্য মহান এপস এর মতো ৪৮টি ক্রোমোজোম রয়েছে: মানুষের মধ্যে দুটি ক্রোমোজোম মিলিত হয়ে গঠন করে ক্রোমোজোম ২।
অ্যাবরেশন
thumb|ডাউন সিনড্রোমে, ক্রোমোজোম ২১ এর তিনটি কপি।
ক্রোমোসোমাল বিচ্যুতি হল, একটি কোষের স্বাভাবিক ক্রোমোসোমাল বিষয়বস্তুতে বাধা হওয়া। এটি মানুষের মধ্যে জেনেটিক অবস্থার একটি প্রধান কারণ, যেমন ডাউন সিনড্রোম। যদিও বেশিরভাগ অ্যাবরেশনের কোনো প্রভাব নেই। কিছু ক্রোমোজোম অস্বাভাবিক বাহকদের মধ্যে রোগ সৃষ্টি করে না, যেমন ট্রান্সলোকেশন, বা ক্রোমোজোম ইনভার্সনস।যদিও তারা ক্রোমোজোম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত একটি শিশুর জন্মের উচ্চ সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিক সংখ্যা বা ক্রোমোজোম সেট যাকে অ্যানিপ্লয়েডি বলা হয়।এটি প্রাণঘাতী হতে পারে বা জেনেটিক ব্যাধির জন্ম দিতে পারে।জেনেটিক কাউন্সেলিং, ক্রোমোজোম পুনর্বিন্যাস বহন করতে পারে এমন পরিবারের জন্য দেয়।
ক্রোমোজোম থেকে ডিএনএ লাভ বা ক্ষতি বিভিন্ন ধরনের জেনেটিক ডিসঅর্ডার হতে পারে। এতে মানুষের উদাহরণ অন্তর্ভুক্ত:
Cri du chat, যা ক্রোমোজোম ৫ এর ছোট হাতের অংশের মোছা দ্বারা সৃষ্ট হয়। "ক্রি ডু চ্যাট" এর অর্থ ফরাসি ভাষায় "বিড়ালের কান্না"; অবস্থার এমন নামকরণ করা হয়েছিল কারণ আক্রান্ত শিশুরা বিড়ালের মতো উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চোখ চওড়া, ছোট মাথা এবং চোয়াল, মাঝারি থেকে গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং খুব ছোট।
ডাউন সিন্ড্রোম, সবচেয়ে সাধারণ ট্রাইসোমি, সাধারণত ক্রোমোজোম ২১ (ট্রাইসমি ২১) এর অতিরিক্ত অনুলিপি দ্বারা সৃষ্ট। বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পেশীর স্বর হ্রাস, স্টকিয়ার বিল্ড, অসমম্যাট্রিকাল মাথার খুলি, তির্যক চোখ এবং হালকা থেকে মাঝারি বিকাশগত অক্ষমতা।
এডওয়ার্ডস সিনড্রোম, বা ট্রাইসোমি-১৮, দ্বিতীয় সবচেয়ে সাধারণ ট্রাইসোমি। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মোটর প্রতিবন্ধকতা, বিকাশজনিত অক্ষমতা এবং অসংখ্য জন্মগত অসঙ্গতি যা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। আক্রান্তদের নব্বই শতাংশ শৈশবেই মারা যায়। তাদের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হাত এবং আঙ্গুলগুলো ওভারল্যাপ করা আছে।
Isodicentric 15, যাকে বলা হয় idic(15), আংশিক টেট্রাসোমি ১৫q, বা ইনভার্টেড ডুপ্লিকেশন ১৫ (inv dup ১৫)।
জ্যাকবসেন সিনড্রোম, যা খুবই বিরল। একে টার্মিনাল ১১q ডিলিট ডিসঅর্ডারও বলা হয়।European Chromosome 11 Network এই রোগে আক্রান্তদের স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা বা মৃদু বিকাশজনিত অক্ষমত হয় এবং দুর্বল অভিব্যক্তিপূর্ণ বেশিরভাগেরই প্যারিস-ট্রাউসেউ সিনড্রোম নামে রক্তপাতের ব্যাধি হতে পারে।
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম (XXY)। ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত পুরুষরা সাধারণত জীবাণুমুক্ত হয় এবং তাদের সমবয়সীদের তুলনায় লম্বা হতে থাকে এবং তাদের হাত ও পা লম্বা হয়। সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছেলেরা প্রায়ই লাজুক এবং শান্ত থাকে এবং তাদের কথার বিলম্ব এবং ডিসলেক্সিয়া এর প্রবণতা বেশি থাকে। টেস্টোস্টেরন চিকিৎসা ছাড়া কিছু মানুষের বয়ঃসন্ধিকালে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
পাটাউ সিনড্রোম, যাকে ডি-সিনড্রোম বা ট্রাইসোমি-১৩ও বলা হয়। লক্ষণগুলো কিছুটা ট্রাইসোমি-১৮-এর মতো, বৈশিষ্ট্যগতভাবে ভাঁজ করা হাত ছাড়াই।
ছোট সুপারনিউমারারি মার্কার ক্রোমোজোম এর মধ্যে একটি অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ক্রোমোজোম আছে। এর বৈশিষ্ট্যগুলো অতিরিক্ত জেনেটিক উপাদানের উৎসের উপর নির্ভর করে। ক্যাট-আই সিন্ড্রোম এবং আইসোডিসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম ১৫ সিন্ড্রোম (বা আইডিক ১৫) উভয়ই একটি সুপারনিউমারারি মার্কার ক্রোমোজোম দ্বারা সৃষ্ট, যেমনটি প্যালিস্টার-কিলিয়ান সিনড্রোম।
ট্রিপল-এক্স সিন্ড্রোম (XXX)। XXX মেয়েরা লম্বা এবং চিকন হয় এবং তাদের ডিসলেক্সিয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
টার্নার সিন্ড্রোম (XX বা XY-এর পরিবর্তে X)। টার্নার সিন্ড্রোমে, মহিলাদের যৌন বৈশিষ্ট্য উপস্থিত কিন্তু অনুন্নত। টার্নার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মহিলাদের প্রায়শই ছোট আকার, চুলের রেখা কম, চোখের অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য এবং হাড়ের বিকাশ এবং বুকে "ক্যাভড-ইন" চেহারা থাকে।
ওল্ফ-হার্শহর্ন সিন্ড্রোম, যা ক্রোমোজোম ৪ এর ছোট হাতের আংশিক মুছে ফেলার কারণে ঘটে। এটি বৃদ্ধি প্রতিবন্ধকতা, বিলম্বিত মোটর দক্ষতা বিকাশ, "গ্রীক হেলমেট" মুখের বৈশিষ্ট্য এবং হালকা থেকে গভীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। .
XYY সিন্ড্রোম। XYY ছেলেরা সাধারণত তাদের ভাইবোনের চেয়ে লম্বা হয়। XXY ছেলে এবং XXX মেয়েদের মত তাদের শেখার অসুবিধা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
স্পার্ম অ্যানিউপ্লয়েডি
নির্দিষ্ট জীবনধারা, পরিবেশগত এবং পেশাগত ঝুঁকি পুরুষদের এক্সপোজার অ্যানিউপ্লয়েড স্পার্মাটোজোয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে, তামাক ধূমপানের ফলে অ্যানিউপ্লয়েডির ঝুঁকি বেড়ে যায়, এবং বেনজিনের পেশাগত এক্সপোজার, কীটনাশক, এবং পারফুলুওরিনেটেড যৌগ বর্ধিত অ্যানিউপ্লয়েডি প্রায়শই শুক্রাণুতে ডিএনএ এর ক্ষতির সাধন করে।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
ডিএনএ
ওয়াই-ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম
বহিঃসংযোগ
An Introduction to DNA and Chromosomes HOPES থেকে: স্ট্যানফোর্ডে শিক্ষার জন্য হান্টিংটনের আউটরিচ প্রকল্প।
Chromosome Abnormalities at AtlasGeneticsOncology
On-line exhibition on chromosomes and genome (SIB)
What Can Our Chromosomes Tell Us?, উটাহ জেনেটিক সায়েন্স লার্নিং সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়।
Try making a karyotype yourself, উটাহ জেনেটিক সায়েন্স লার্নিং সেন্টার ইউনিভার্সিটি
Kimballs Chromosome pages
Chromosome News from Genome News Network
Eurochromnet, ইউরোপীয় নেটওয়ার্ক।
Ensembl.org, Ensembl project, presenting chromosomes, their genes and syntenic loci graphically via the web
Genographic Project
Home reference on Chromosomes ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন।
Visualisation of human chromosomes এবং অন্যান্য প্রজাতির সাথে তুলনা।
Unique – The Rare Chromosome Disorder Support Group ক্রোমোজোম ব্যাধিযুক্ত লোকেদের জন্য সমর্থন
বিষয়শ্রেণী:Nuclear substructures
বিষয়শ্রেণী:Cytogenetics
বিষয়শ্রেণী:বংশাণুবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:প্রাণিবিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:আণবিক জীববিজ্ঞান |
সঞ্চালন ব্যবস্থা | https://bn.wikipedia.org/wiki/সঞ্চালন_ব্যবস্থা | REDIRECTসংবহন তন্ত্র |
কেউটে সাপ | https://bn.wikipedia.org/wiki/কেউটে_সাপ | পদ্ম গোখরা (বৈজ্ঞানিক নাম Naja kaouthia, ইংরেজিতে monocled cobra) হল গোখরা প্রজাতির একটি সাপ যা দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়া দেখা যায়। এটিকে আইইউসিএন কর্তৃক ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ গোখরোর ফণার পিছনে গরুর ক্ষুরের মত দাগ থাকে যার থেকে বাংলা গোক্ষুর নামটি এসেছে। অন্যদিকে ইংরেজিতে মনোকলড অর্থ হল একচোখা। এ সাপটিকে মনোকলড বলার কারন হল এই সাপের ফণার পিছনে গোল দাগ থাকে যা দেখতে একচোখা চশমার মত লাগে তাই এর ইংরেজি নাম মনোকল্ড কোবরা। সকল গোখরা প্রজাতির সাপ উত্তেজিত হলে ফণা মেলে ধরে। সাপের ঘাড়ের লম্বা হাড় স্ফীত হয়ে ওঠে, তাতে চমৎকার ফণাটি বিস্তৃত হয়।
ইংরেজি কোবরার (Cobra) আক্ষরিক অর্থ হল গোখরা। প্রকৃত পক্ষে কোবরা হল নাজা নামক বিস্তৃত ও বৃহৎ সর্পগণ (Genus)। এই গণে (Genus) সকল প্রজাতির কোবরাকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কোবরা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও মিশর, আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, বার্মা, চীন ইত্যাদি দেশ ও অঞ্চলে দেখা যায়।
অনেকে ভুলবশত গোখরা বলতে শুধুমাত্র স্পেকটাকলড কোবরা বা মনোকল্ড কোবরাকে বুঝে থাকে। এটি আসলে একটি বৃহৎ সর্পগোষ্ঠির সাধারণ নাম।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৫০৮
ব্যুৎপত্তি
কেউটে শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ কালকূট থেকে।
শ্রেণিবিন্যাস
বৈজ্ঞানিক নাম নাজা কৌথিয়া ১৮৩১ সালে রেন লেসন প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি মনোকলড কোবরাকে একটি সুন্দর সাপ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন যা খৈয়া গোখরা থেকে পৃথক। এর ১৮৮ ভেন্ট্রাল স্কেল এবং ৫৩ জোড়া শৈলাকার আঁশ বিন্যাস রয়েছে।
সেই থেকে বেশ কয়েকটি মনোকলড কোবরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক নামে বর্ণিত হয়েছিল:
১৮৩৪ সালে জন এডওয়ার্ডসের গ্রে প্রকাশিত টমাস হার্ডউইকস এর অধীনে একটি মনোকলড কেউটের প্রথম চিত্রণ করেন ট্রাইনোমিয়ান নোমেনক্লেচারের ভিত্তিতে নাজা ট্রাইপুডিয়ানস ভার.ফ্যাসিটা (Naja tripudians Var fasciata) ।
১৮৩৯ সালে, থিওডোর এডওয়ার্ড ক্যান্টর বোম্বাই, কলকাতা এবং আসামে ট্রাইনোমিয়ান নোমেনক্লেচারের ভিত্তিতে নাজা লার্ভাতার (Naja larvata) অধীনে সাদা আংটির চিহ্নযুক্ত একটি বাদামী বর্ণের মনোকলড কোবরার বর্ণনা করেছিলেন।
১৮৯৫ এবং ১৯১৩ এর মধ্যে দ্বিপদী নাজা ট্রিপুডিয়ানদের অধীনে বিভিন্ন জাতের মনোকলড কোবরা বর্ণিত হয়েছিল:
এন জে ভার স্কোপিনিচা ১৮৯৫
এন জে ভার একরঙা ১৮৭৬
এন জে ভার ভিরিডিস ১৯১৩
এন জে ভার সগিত্তিফের ১৯১৩
১৯৪০ সালে ম্যালকম আর্থার স্মিথ মনোকলড কোবরাকে ট্রাইনোমিয়াল নাজা নাজা কৌথিয়ার অধীনে স্পেকটাকলড কোবরার উপ-প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেন। ১৯৯০ এর দশকে পুনশ্রেণীকরণের সময়ে Naja kaouthia কে আলাদা করা হয় Naja siamensis প্রজাতি থেকে। নাজা সিয়ামেনসিস নামটি সাধারণভাবে পুরোনো শ্রেণীকরণ অনুযায়ী গবেষণায় ব্যবহৃত একটি কমন নাম ছিল।
থাইল্যান্ডে ফাইলোজেনেটিক গবেষণায় নাজা কৌথিয়া প্রজাতির বিস্ময়কর প্রকরণ প্রদর্শিত হয়েছে। অন্যান্য এশিয়াটিক কোবরার সঙ্গে প্রজাতির বিস্ময়কর প্যারাফাইলেটিক প্রকরণ রয়েছে।
বৈশিষ্ট্য
thumb|left|240px|অল্প বয়েসি গোক্ষুর সাপ
গোক্ষুর গোখরার ইংরেজি ও অক্ষরের মত ফণা রয়েছে যা প্রায় খইয়া বা খড়মপায়া গোখরার কাছাকাছি। ছোট সাপের রং স্থিত থাকে। গায়ে হলুদ, বাদামি, ছাই বা কাল ধরনের রংয়ের সাথে ক্রসব্যান্ড দেখা যায়। ফণার দুই ধারে নিচের দিকে কাল ছোপ দেখতে পাওয়া যায় এবং একটি বা দুটি ক্রস আকারের রেখা কালো ছোপের পেছন থেকে পেটের দিকে নামে। বয়সের সাথে সাথে সাপের গায়ের রং ফিকে হতে শুরু করে। এর দুটি সরু, লম্বা বিষ দাঁত আছে। সবচেয়ে বড় বিষ দাঁতের রেকর্ড হল । বিষদাঁতগুলো বিষছুঁড়ে মারার জন্য কিছুটা উপযুক্ত। পূর্ণ বয়স্ক গোক্ষুর গোখরা প্রায় হয়, লেজ সহ তা দাঁড়ায় প্রায় । আরো অনেক বড় প্রজাতি পাওয়া গেছে তবে তা খুব বিরল। পূর্ণ বয়স্ক হলে এরা লম্বায় প্রায় হয়।Smith, M. A. (1943) Naja naja kaouthia In: The Fauna of British India, Ceylon and Burma, Including the Whole of the Indo-Chinese Sub-Region. Reptilia and Amphibia. Volume III (Serpentes). Taylor and Francis, London. Pages 428–432.
বিস্তৃতি ও আবাস
গোক্ষুর গোখরা পাওয়া যায় ভারত এর পশ্চিম থেকে চীন, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়াতে। মালয় দ্বীপপুঞ্জ, বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, লাওস, নেপাল ও থাইল্যান্ড এদের আদি নিবাস।
আচরণ
এরা নিশাচর। মানুষের বসতবাড়ির আশেপাশে, চাষের জমি, বনাঞ্চল বা ধানক্ষেতের আশেপাশের ইদুরের গর্তে থাকতে ভালবাসে। শিশু গোক্ষুর গোখরা উভচর প্রাণী আর বড়গুলো স্তন্যপায়ী প্রাণি, সাপ বা মাছ শিকার করে। যখন বিরক্ত হয় পালাতে পছন্দ করে। কিন্তু যদি তার কাছে কাউকে প্রাণ সংশয়কারী মনে হয় তাহলে ফণা তুলে জোরে হিস হিস শব্দ করে। আত্মরক্ষার্থে কামড়ও দিতে পারে।
বাস্তুসংস্থান
এগুলোকে গাছের গুঁড়ির গর্ত বা যেখানে ইঁদুর রয়েছে এমন স্থানে পাওয়া যায়।
কিছু কিছু গোক্ষুর গোখরার বিষ নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে।Santra, Vishal & Wolfgang Wüster (2017) Naja kaouthia behavior/spitting. Herpetological Review 48(2):?
আরও দেখুন
সর্পদংশন
তথ্যসূত্র
আরো পড়ুন
Wüster, W. Thorpe, R.S. (1991). Asiatic cobras: Systematics and snakebite. Experientia 47: 205–209
বহিঃসংযোগ
The Asiatic Cobra Systematics Page
Clinical Toxinology Resources : Naja kaouthia
Thailand Snakes : Naja kaouthia
বিষয়শ্রেণী:এলাপিডি
বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের সরীসৃপ
বিষয়শ্রেণী:ভারতের সরীসৃপ
বিষয়শ্রেণী:নাজা
বিষয়শ্রেণী:১৮৩১-এ বর্ণিত সরীসৃপ
বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণিকুল
বিষয়শ্রেণী:ভুটানের সরীসৃপ
বিষয়শ্রেণী:কম্বোডিয়ার সরীসৃপ
বিষয়শ্রেণী:লাওসের সরীসৃপ
বিষয়শ্রেণী:নেপালের সরীসৃপ
বিষয়শ্রেণী:চীনের সাপ
বিষয়শ্রেণী:ভিয়েতনামের সাপ |
কলম্বিয়া | https://bn.wikipedia.org/wiki/কলম্বিয়া | কলম্বিয়া (স্পেনীয় ভাষায়: Colombia কোলোম্বিয়া) বা কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র (República de Colombia রেপুব্লিকা দ়ে কোলোম্বিয়া) দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। কলম্বিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে আছে নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত, পর্বতমালা এবং নিবিড় সবুজ অতিবৃষ্টি অরণ্য। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং শক্তিশালী মাদক চোরাকারবারী চক্রের প্রভাবে দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। যদিও দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার ইতিহাস পুরনো, তা সত্ত্বেও দেশটিতে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রেণীবৈষম্যমূলক একটি সমাজ বিদ্যমান।
কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দেশ যার ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর---উভয় জলভাগেই তটরেখা আছে। কলম্বিয়ার পূর্বে ভেনেজুয়েলা ও ব্রাজিল, দক্ষিণে ইকুয়েডর ও পেরু, এবং উত্তর-পশ্চিমে পানামা। বোগোতা দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
থাম্ব|425x425পিক্সেল|বোগোটা, কলম্বিয়া রাজধানী
আমেরিকা মহাদেশদ্বয়ে ইউরোপীয়দের আগমনের আগে বর্তমান কলম্বিয়া যেখানে অবস্থিত, সেই অঞ্চলটিতে বেশ কিছু আদিবাসী আমেরিকান জাতি বাস করত। এদের মধ্যে চিবচা জাতি অন্যতম। ১৬শ শতক থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত কলম্বিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৮১৯ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পরে এটি একটি নির্বাচিত সরকার-শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
কলম্বীয় সমাজ উচ্চ ও নিম্ন শ্রেণীতে বিভক্ত এবং এদের মধ্যে বর্ধমান শ্রেণীবৈষম্য বিদ্যমান। ২০শ শতকে দেশটির কফিভিত্তিক অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত ভূমিগুলির মালিকানা সম্প্রসারণের ফলে একটি উল্লেখযোগ্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। ১৬শ শতকের স্পেনীয় সমাজব্যবস্থা থেকে কলম্বিয়ার প্রকট শ্রেণীবৈষম্যের বীজ বপিত হয় এবং ঔপনিবেশিক আমলে এটি কলম্বীয় সমাজের সাথে অঙ্গীভূত হয়ে যায়। পারিবারিক বংশপরম্পরা, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ, এবং জাতিগত পটভূমি কলম্বিয়াতে কোন ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ করে। বিগত ১০০ বছরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটলেও রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা একটি ক্ষুদ্র বিত্তশালী শ্রেণীর হাতে কুক্ষিগত।
২০শ শতকের মধ্যভাগে গৃহযুদ্ধ কলম্বিয়ার সমাজব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বামপন্থী গেরিলা ও আধা-সামরিক বাহিনী এবং কলম্বিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে দেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ধনী শিল্পোন্নত দেশগুলিতে মাদকদ্রব্যের, বিশেষত কোকেনের চাহিদার ফলে কলম্বিয়াতে অবৈধ মাদক চোরাচালান ব্যবসা প্রসার লাভ করে। কলম্বীয় সরকার মাদক উৎপাদন সীমিত করার এবং বিরোধী গেরিলা বাহিনীর সাথে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২১শ শতকের শুরুতে এসেও সহিংসতা কলম্বীয় নাগরিকদের জীবনের নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা ছিল।
ইতিহাস
প্রাক কলম্বিয়ান যুগ
এর অবস্থানের কারণে, কলম্বিয়ার বর্তমান অঞ্চলটি মেসোআমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান থেকে আন্দিজ এবং আমাজন অববাহিকা পর্যন্ত প্রাথমিক মানব সভ্যতার একটি করিডোর ছিল। প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলি বোগোটা থেকে ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে ম্যাগডালেনা উপত্যকার পুবেনজা এবং এল টোটুমো সাইটগুলি থেকে পাওয়া যায়। এই সাইটগুলি প্যালিওইন্ডিয়ান সময়কালের (১৮০০০-৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) । পুয়ের্তো হরমিগা এবং অন্যান্য স্থানে, প্রাচীন যুগের (৮০০০-২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ) চিহ্ন পাওয়া গেছে। ভেস্টিজগুলি ইঙ্গিত দেয় যে কুন্দিনামার্কার এল আবরা এবং টেকেন্ডামা অঞ্চলেও প্রাথমিক দখল ছিল। আমেরিকায় আবিষ্কৃত প্রাচীনতম মৃৎপাত্র, সান জাকিন্টোতে পাওয়া যায়, যা ৫০০০-৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের।
১২,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে আদিবাসীরা এখনকার কলম্বিয়া অঞ্চলে বসবাস করত। বর্তমান বোগোটার কাছে এল আবরা, টিবিটো এবং টেকেন্ডামা সাইটে যাযাবর শিকারী-সংগ্রাহক উপজাতিরা একে অপরের সাথে এবং ম্যাগডালেনা নদী উপত্যকার অন্যান্য সংস্কৃতির সাথে ব্যবসা করত। Serranía de la Lindosa-তে অধ্যয়নরত আট মাইল (১৩ কিমি) পিকটোগ্রাফ সহ একটি সাইট নভেম্বর ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। তাদের বয়স ১২,৫০০ বছর (আনুমানিক১০,৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) হিসাবে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর চিত্রিত কারণে সাইটে কাজ করা নৃবিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রস্তাবিত। যেটি এখন কলম্বিয়া নামে পরিচিত এই এলাকার প্রাচীনতম পরিচিত মানুষের দখলের সময় হতো।[উদ্ধৃতি প্রয়োজন]
৫০০০এবং ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে শিকারী-সংগ্রাহক উপজাতিরা কৃষিভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হয়েছিল; স্থায়ী বসতি স্থাপন করা হয়, এবং মৃৎপাত্র আবির্ভূত হয়. খ্রিস্টপূর্ব 1ম সহস্রাব্দের শুরুতে, মুইসকা, জেনু, কুইম্বায়া এবং তাইরোনা সহ আমেরিন্ডিয়ানদের দল ক্যাসিকদের নেতৃত্বে ক্ষমতার একটি পিরামিড কাঠামোর সাথে ক্যাসিকাজগোসের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে। মুইসকা প্রধানত সেই অঞ্চলে বাস করত যা এখন বয়াকা এবং কুন্দিনামার্কা উচ্চ মালভূমি (আল্টিপ্লানো কুন্ডিবোয়াসেনস) বিভাগ যেখানে তারা মুইসকা কনফেডারেশন গঠন করেছিল। তারা ভুট্টা, আলু, কুইনোয়া এবং তুলা চাষ করত এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সোনা, পান্না, কম্বল, সিরামিক হস্তশিল্প, কোকা এবং বিশেষ করে রক লবণের ব্যবসা করত। তাইরোনা উত্তর কলম্বিয়ার সিয়েরা নেভাদা দে সান্তা মার্তার বিচ্ছিন্ন পর্বতশ্রেণীতে বসবাস করত। কলম্বিয়ান আন্দিজের পশ্চিম ও মধ্য রেঞ্জের মধ্যবর্তী কউকা নদী উপত্যকার অঞ্চলে কুইম্বায়া বসবাস করত। বেশিরভাগ আমেরিন্ডিয়ানরা কৃষিকাজ করত এবং প্রতিটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক কাঠামো আলাদা ছিল। আদিবাসীদের কিছু গোষ্ঠী যেমন ক্যারিবরা স্থায়ী যুদ্ধের অবস্থায় বাস করত, কিন্তু অন্যদের মধ্যে ছিল কম বর্বর মনোভাব
ঔপনিবেশিক সময়
আলোনসো ডি ওজেদা (যিনি কলম্বাসের সাথে যাত্রা করেছিলেন) ১৪৯৯ সালে গুয়াজিরা উপদ্বীপে পৌঁছেছিলেন। রদ্রিগো ডি বাস্তিদাসের নেতৃত্বে স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা ১৫০০ সালে ক্যারিবিয়ান উপকূলে প্রথম অনুসন্ধান করেন। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৫০২ সালে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি নেভিগেট করেছিলেন . ১৫০৮ সালে ভাস্কো নুনেজ ডি বালবোয়া উরাবা উপসাগরের অঞ্চলের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে একটি অভিযানের সাথে যান এবং তিনি ১৫১০ সালে সান্তা মারিয়া লা অ্যান্টিগুয়া দেল দারিয়েন শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল এই মহাদেশের প্রথম স্থিতিশীল বসতি। সান্তা মার্টা ১৫২৫ সালে, এবং ১৫৩৩ সালে কার্টেজেনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্প্যানিশ বিজয়ী গঞ্জালো জিমেনেজ দে কুয়েসাদা ১৫৩৬ সালের এপ্রিল মাসে অভ্যন্তরীণ একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন এবং যে জেলার মধ্য দিয়ে তিনি "গ্রানাডার নতুন রাজ্য" অতিক্রম করেন তার নামকরণ করেন। ১৫৩৮ সালের আগস্টে, তিনি অস্থায়ীভাবে এটির রাজধানী মুয়কুইতার মুইসকা ক্যাসিকাজগোর কাছে প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর নাম দেন "সান্তা ফে"। নামটি শীঘ্রই একটি প্রত্যয় অর্জন করে এবং সান্তা ফে দে বোগোটা নামে পরিচিত হয়। প্রারম্ভিক বিজয়ীদের দ্বারা অভ্যন্তরে আরও দুটি উল্লেখযোগ্য যাত্রা একই সময়ে হয়েছিল। কুইটোর বিজয়ী সেবাস্তিয়ান দে বেলালকাজার উত্তর ভ্রমণ করেন এবং ১৫৩৬ সালে ক্যালি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৫৩৭ সালে পোপায়ান প্রতিষ্ঠা করেন; ১৫৩৬ থেকে ১৫৩৯ সাল পর্যন্ত, জার্মান বিজয়ী নিকোলাস ফেডারম্যান ল্লানোস ওরিয়েন্টালস অতিক্রম করেন এবং এলানাস কর্ডিলের সন্ধানে প্রাচ্যের দিকে যান। ডোরাডো, "সোনার শহর"। কিংবদন্তি সোনা ১৫ এবং ১৭ শতকে স্প্যানিশ এবং অন্যান্য ইউরোপীয়দের নিউ গ্রানাডায় প্রলুব্ধ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিজয়ীরা বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের শত্রুদের সাথে ঘন ঘন মিত্রতা তৈরি করেছিল। আদিবাসী মিত্ররা জয়ের পাশাপাশি সাম্রাজ্য তৈরি ও বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নিউ গ্রানাডার আদিবাসীরা বিজয়ের কারণে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এবং সেইসাথে ইউরেশিয়ান রোগ যেমন গুটিবসন্তের কারণে তাদের কোন অনাক্রম্যতা ছিল না। ভূমিকে নির্জন হিসাবে বিবেচনা করে, স্প্যানিশ ক্রাউন ঔপনিবেশিক অঞ্চলে আগ্রহী সকল ব্যক্তির কাছে সম্পত্তি বিক্রি করে, বড় খামার তৈরি করে এবং খনি দখল করে। ১৬ শতকে, কাসা ডি কনট্রাটাসিওনের অসংখ্য বৈজ্ঞানিক পরিসংখ্যানের জন্য স্পেনে নটিক্যাল বিজ্ঞান একটি দুর্দান্ত বিকাশে পৌঁছেছিল এবং নটিক্যাল সায়েন্স ছিল আইবেরিয়ান সম্প্রসারণের একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। ১৫৪২ সালে, দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য সমস্ত স্প্যানিশ সম্পত্তির সাথে নিউ গ্রানাডা অঞ্চলটি পেরুর ভাইসরয়্যালিটির অংশ হয়ে ওঠে, যার রাজধানী ছিল লিমায়। ১৫৪৭ সালে নিউ গ্রানাডা ভাইসরয়্যালিটির মধ্যে একটি পৃথক অধিনায়ক-জেনারেল হয়ে ওঠে, যার রাজধানী সান্তা ফে দে বোগোটা ছিল। ১৫৪৯ সালে, রয়্যাল অডিয়েন্সিয়া একটি রাজকীয় ডিক্রি দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল, এবং নিউ গ্রানাডা সান্তা ফে দে বোগোটার রাজকীয় শ্রোতাদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল, যা সেই সময়ে সান্তা মার্তা, রিও দে সান জুয়ান, পোপায়ান, গুয়ানা এবং কার্টেজেনা প্রদেশগুলি নিয়ে গঠিত ছিল। কিন্তু উপনিবেশ থেকে স্পেন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় কাউন্সিল অফ দ্য ইন্ডিজের মাধ্যমে।
স্বাধীনতা
বিজয় এবং ঔপনিবেশিকতার সময়কালের শুরু থেকে স্প্যানিশ শাসনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট বিদ্রোহী আন্দোলন হয়েছিল, কিন্তু এগুলোর বেশিরভাগই সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে খুব দুর্বল ছিল। সর্বশেষ যেটি স্পেনের কাছ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা চাওয়া হয়েছিল তা ১৮১০ সালের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ২০ জুলাই ১৮১০ তারিখে জারি করা কলম্বিয়ান স্বাধীনতার ঘোষণায় পরিণত হয়, যে দিনটি এখন দেশের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই আন্দোলনটি ১৮০৪ সালে সেন্ট ডোমিংগুয়ের (বর্তমান হাইতি) স্বাধীনতা অনুসরণ করে, যা এই বিদ্রোহের একজন চূড়ান্ত নেতা সিমন বলিভার কে কিছু সমর্থন প্রদান করেছিল:। এক্ষেত্রে ফ্রান্সিসকো ডি পলা স্যান্টান্ডারও একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছিল।
আন্তোনিও নারিনো একটি আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, যিনি স্প্যানিশ কেন্দ্রিকতার বিরোধিতা করেছিলেন এবং ভাইসরয়্যালিটির বিরুদ্ধে বিরোধিতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কার্টেজেনা ১৮১১ সালের নভেম্বরে স্বাধীন হয়। ১৮১১ সালে, ক্যামিলো টরেস টেনোরিওর নেতৃত্বে নিউ গ্রানাডা ইউনাইটেড প্রদেশ ঘোষণা করা হয়। দেশপ্রেমিকদের মধ্যে দুটি স্বতন্ত্র আদর্শিক স্রোতের উত্থান (ফেডারেলিজম এবং কেন্দ্রীয়তা) অস্থিতিশীলতার সময়কালের জন্ম দেয়। নেপোলিয়নিক যুদ্ধ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে, ফার্দিনান্দ সপ্তম, সম্প্রতি স্পেনের সিংহাসনে পুনরুদ্ধার করেন, অপ্রত্যাশিতভাবে উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ অংশ পুনরুদ্ধার করতে সামরিক বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। হুয়ান সামানোর নেতৃত্বে ভাইসরয়্যালিটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, যার শাসনামল জান্তাদের রাজনৈতিক সূক্ষ্মতা উপেক্ষা করে দেশপ্রেমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের শাস্তি দিত। প্রতিশোধের ফলে নতুন করে বিদ্রোহ শুরু হয়, যা একটি দুর্বল স্পেনের সাথে মিলিত হয়ে ভেনেজুয়েলা-জন্মত সিমন বলিভারের নেতৃত্বে একটি সফল বিদ্রোহ সম্ভব করে তোলে, যিনি অবশেষে ১৮১৯ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ১৮২২ সালে স্প্যানিশপন্থী প্রতিরোধ কলম্বিয়ার বর্তমান ভূখণ্ডে এবং ১৮২৩ সালে ভেনেজুয়েলায় পরাজিত হয়।
নিউ গ্রানাডার ভাইসরয়্যালিটির অঞ্চলটি কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়, যা কলম্বিয়া, পানামা, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা, গায়ানা এবং ব্রাজিলের কিছু অংশ এবং মারানন নদীর উত্তরের বর্তমান অঞ্চলগুলির একটি ইউনিয়ন হিসাবে সংগঠিত হয়। ১৮২১ সালে কুকুটার কংগ্রেস নতুন প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি সংবিধান গ্রহণ করে। সিমন বলিভার কলম্বিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন, এবং ফ্রান্সিসকো ডি পলা স্যান্টান্ডারকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়। যাইহোক, নতুন প্রজাতন্ত্র অস্থিতিশীল ছিল এবং গ্রান কলম্বিয়া শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে।
আধুনিক কলম্বিয়া গ্রান কলম্বিয়ার বিলুপ্তির পর উদ্ভূত দেশগুলির একটি থেকে এসেছে, অন্য দুটি হচ্ছে ইকুয়েডর এবং ভেনিজুয়েলা। কলম্বিয়া ছিল দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম সাংবিধানিক সরকার,১৮৪৮ এবং ১৮৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত লিবারেল এবং রক্ষণশীল দলগুলি যথাক্রমে আমেরিকার দুটি প্রাচীনতম টিকে থাকা রাজনৈতিক দল। ১৮৫১ সালে দেশে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়।
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক বিভাজন ১৮৩০ সালে গ্রান কলম্বিয়ার বিলুপ্তির দিকে পরিচালিত করে। তথাকথিত "কুন্ডিনামার্কা বিভাগ" "নতুন গ্রানাডা" নামটি গ্রহণ করে, যা ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত রেখেছিল যখন এটি "কনফেডারেশন গ্রানাডিনা" (গ্রানাডাইন কনফেডারেশন) হয়ে ওঠে। ১৮৬৩ সালে দুই বছরের গৃহযুদ্ধের পর, "ইউনাইটেড স্টেটস অফ কলোম্বিয়া" তৈরি করা হয়েছিল, যা ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল, যখন দেশটি অবশেষে কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র হিসাবে পরিচিত হয়। তবে তখনোও দ্বিদলীয় রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজন রয়ে গেছে, যা মাঝে মাঝেই খুব রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ প্রজ্বলিত করে এবং এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল হাজার দিনের যুদ্ধ (১৮৯৯-১৯০২)।
বিংশ শতাব্দী
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলাকা প্রভাবিত করার অভিপ্রায় (বিশেষ করে পানামা খাল নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ) ১৯০৩ সালে পানামা বিভাগকে বিচ্ছিন্ন করে এবং একটি জাতি হিসাবে এটিকে প্রতিষ্ঠিত করে। পানামা সৃষ্টিতে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের ভূমিকার প্রতিকারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯২১ সালে কলম্বিয়াকে $25,000,000 অর্থ প্রদান করে, এবং খালটি সম্পূর্ণ হওয়ার সাত বছর পরে, এবং কলম্বিয়া থমসন-উরুতিয়া চুক্তির শর্তাবলীর অধীনে পানামাকে স্বীকৃতি দেয়। কলম্বিয়া এবং পেরু আমাজন অববাহিকায় অঞ্চল বিরোধের কারণে যুদ্ধে নেমেছিল। লিগ অফ নেশনস এর মধ্যস্থতায় একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। লীগ অবশেষে ১৯৩৪ সালের জুন মাসে কলম্বিয়াকে বিতর্কিত এলাকা ঘোষনা করে।
১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে মার্কিন সরকার কলম্বিয়ার সামরিক বাহিনীকে গ্রামীণ কলম্বিয়ার বামপন্থী মিলিশিয়াদের উপর আক্রমণ করার জন্য উত্সাহিত করেছিল তখন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে ব্যাপকভাবে জড়িত ছিল। এটি ছিল কমিউনিজমের বিরুদ্ধে মার্কিন লড়াইয়ের অংশ। ভাড়াটে এবং বহুজাতিক কর্পোরেশন যেমন চিকুইটা ব্র্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল হল কিছু আন্তর্জাতিক অভিনেতা যারা সংঘর্ষের সহিংসতায় অবদান রেখেছে।
১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে কলম্বিয়ার ড্রাগ কার্টেলগুলি প্রধানত গাঁজা এবং কোকেনের অবৈধ ওষুধের প্রধান উৎপাদক, প্রসেসর এবং রপ্তানিকারক হয়ে ওঠে।
১৯৯১ সালের ৪ জুলাই একটি নতুন সংবিধান জারি করা হয়। নতুন সংবিধান দ্বারা উত্পন্ন পরিবর্তনগুলি কলম্বিয়ার সমাজ দ্বারা ইতিবাচক হিসাবে দেখা হয়।
একুশ শতক
রাষ্ট্রপতি আলভারো উরিবের প্রশাসন (২০০২-২০১০) গণতান্ত্রিক নিরাপত্তা নীতি গ্রহণ করেছিল যার মধ্যে একটি সমন্বিত সন্ত্রাসবাদ এবং বিদ্রোহ বিরোধী অভিযান অন্তর্ভুক্ত ছিল। সরকারী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা উন্নীত করেছে। একটি বিতর্কিত শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে, AUC (ডানপন্থী আধাসামরিক বাহিনী) একটি সংগঠন হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।
কিউবায় শান্তি আলোচনার পর, প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসের কলম্বিয়ান সরকার এবং FARC-EP-এর গেরিলারা সংঘাতের অবসান ঘটাতে একটি চূড়ান্ত চুক্তি ঘোষণা করে। যাইহোক, চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য একটি গণভোট ব্যর্থ হয়েছিল। পরবর্তীতে, কলম্বিয়ান সরকার এবং FARC নভেম্বর ২০১৬ সালে একটি সংশোধিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা কলম্বিয়ান কংগ্রেস অনুমোদন করে। ২০১৬ সালে, রাষ্ট্রপতি সান্তোস নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। সরকার সংঘাতের শিকারদের জন্য মনোযোগ এবং ব্যাপক ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া শুরু করে। কলম্বিয়া মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রামে পরিমিত অগ্রগতি দেখায়, যেমন HRW দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সশস্ত্র সংঘাতের সময় সংঘটিত আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের তদন্ত, স্পষ্টকরণ, বিচার এবং শাস্তির জন্য শান্তির একটি বিশেষ এখতিয়ার তৈরি করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচারের অধিকারকে সন্তুষ্ট করার জন্য কলম্বিয়া সফরকালে পোপ ফ্রান্সিস সংঘর্ষে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ভূগোল
কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দেশ যার ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর---উভয় জলভাগেই তটরেখা আছে। কলম্বিয়ার পূর্বে ভেনেজুয়েলা ও ব্রাজিল, দক্ষিণে ইকুয়েডর ও পেরু, এবং উত্তর-পশ্চিমে পানামা। বোগোতা দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
সংস্কৃতি
কলম্বিয়ান রেফারি উইলমার রোলদান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল রেফারি হিসেবে গণ্য ।
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ওইসিডি সদস্য
বিষয়শ্রেণী:আন্তঃমহাদেশীয় রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ
বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র
বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র |
রং (বর্ণ) | https://bn.wikipedia.org/wiki/রং_(বর্ণ) | right|300px|thumb|রং পেন্সিল
রং বা বর্ণ () হল মানুষের দৃষ্টি-সংক্রান্ত একটি চিরন্তন ধর্ম। দৃশ্যমান আলোর কম্পাঙ্ক থেকে রং উৎপত্তি লাভ করে। বিভিন্ন কারণে মানুষের কাছে রঙের পার্থক্য হয়ে থাকে। সাধারণত বলা হয়ে থাকে মৌলিক রং তিনটি, যথা - লাল,নীল ও হলুদ। তবে এর মাঝে কিছু পার্থক্যও আছে । কিছু কিছু মুদ্রনের ক্ষেত্রে লাল,নীল ও সবুজ বলা হয়ে থাকে।
রঙের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
+দৃশ্যমান আলোর নানা রংরঙ তরঙ্গদৈর্ঘ্য (ন্যানোমিটার) কম্পাঙ্ক (টেরাহার্জ)লাল~ ৭০০–৬৩৫ ~ ৪৩০–৪৮০ কমলা~ ৬৩৫–৫৯০ ~ ৪৮০–৫১০ হলুদ~ ৫৯০–৫৬০ ~ ৫১০–৫৪০ সবুজ~ ৫৬০–৪৯০ ~ ৫৪০–৬১০ নীল~ ৪৯০–৪৫০ ~ ৬১০–৬৭০ বেগুনী ~ ৪৫০–৪০০ ~ ৬৭০–৭৫০
তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের সাধারণ ধৰ্মসমূহ হচ্ছে তরঙ্গদৈৰ্ঘ্য, কম্পাংক ও এর দ্বীপন প্ৰাবল্য। যত বিকিরণ তরঙ্গদৈৰ্ঘ্য দৃশ্যমান বৰ্ণালীর সীমার ভিতরে থাকে ততটুকু মানব চক্ষুতে বিভিন্ন রং হিসেবে দেখা যায়। দৃশ্যমান বৰ্ণালীর সীমা প্ৰায় ৩৯০ ন্যানোমিটার থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার। একে দৃশ্যমান আলো বলা হয়।
সব আলোর উৎসই সাধারণত একসঙ্গে বিভিন্ন তরঙ্গদৈৰ্ঘ্যের আলো নিৰ্গত করে কোনো একটা উৎসের বৰ্ণালীতে এর পরে নিৰ্গত বিভিন্ন তরঙ্গদৈৰ্ঘ্যের আলোর প্ৰাবল্যের তথ্য দিয়ে।
বৰ্ণালীর রঙ
বর্ণালীর রামধনুর পরিচিত রঙগুলি আইজ্যাক নিউটন ১৬৭১ সালে লাতিন শব্দটির উপস্থিতি বা সংশ্লেষের জন্য ব্যবহার করেছেন যা সেই সমস্ত রঙের অন্তর্ভুক্ত যা কেবলমাত্র একক তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের দৃশ্যমান আলো দ্বারা উৎপাদিত হতে পারে( খাঁটি বর্ণালী বা একরঙা বর্ণগুলি)। ডানদিকে টেবিলটি বিভিন্ন খাঁটি বর্ণালী বর্ণের জন্য আনুমানিক কম্পাঙ্ক (টেরেহার্টজে) এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্য (ন্যানোমিটারে) দেখায়। তালিকাভুক্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলি বায়ু বা ভ্যাকুয়াম হিসাবে পরিমাপ করা হয় (রিফ্রেসিভ সূচক দেখুন)।
রং টেবিলটিকে একটি নির্দিষ্ট তালিকা হিসাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয় — খাঁটি বর্ণালী বর্ণগুলি একটি ধারাবাহিক বর্ণালী গঠন করে এবং ভাষাগতভাবে এটি কীভাবে পৃথক বর্ণগুলিতে বিভক্ত করা হয় তা সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক আক্রমণের বিষয় (যদিও সর্বত্র লোকেরা বর্ণগুলি বর্ণ হিসাবে দেখানো হয়েছে) একইভাবে )। একটি সাধারণ তালিকা ছয়টি প্রধান ব্যান্ড সনাক্ত করে: লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল এবং বেগুনি। নিউটনের ধারণায় নীল এবং বেগুনি রঙের মধ্যে একটি সপ্তম রঙ, নীল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটা সম্ভব যে নিউটন যা নীল হিসাবে উল্লেখ করেছেন তা আজ সায়ান হিসাবে পরিচিত, এবং সেই নীলটি কেবল সেই সময় নীল রঙের আমদানি করা নীল রঙের নীল ছিল।
বর্ণালী বর্ণের তীব্রতা, এটি যে প্রসঙ্গে দেখা হয়েছে তার সাথে তুলনামূলকভাবে তার উপলব্ধিটি যথেষ্ট পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কম-তীব্রতার কমলা-হলুদ হল বাদামী এবং কম-তীব্রতার হলুদ-সবুজ হল জলপাই সবুজ।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
রঙের তালিকা
বিষয়শ্রেণী:রং (বর্ণ)
বিষয়শ্রেণী:দর্শন (দৃষ্টি)
বিষয়শ্রেণী:চিত্র প্রক্রিয়াজাতকরণ
বিষয়শ্রেণী:দৃষ্টি |
ক্রিস্টোফার কলম্বাস | https://bn.wikipedia.org/wiki/ক্রিস্টোফার_কলম্বাস | right|thumb|অ্যালিজও ফার্নান্দেজের আঁকা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের প্রতিকৃতি (সময়কাল:১৫০৫ থেকে ১৫৩৬)
ক্রিস্টোফার কলম্বাস ( ক্রিস্তোফোরুস্ কোলুম্বুস্; ক্রিস্তোফোরো কোলোম্বো; ক্রিস্তোভ়াল্ কোলোন্) (আনু. ১৪৫১-মে ২০, ১৫০৬) ছিলেন ইতালীয় নাবিক ও ঔপনিবেশিক। তার আমেরিকা অভিযাত্রা ঐ অঞ্চলে ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের সূচনা করেছিল।
ইতিহাস
ক্রিস্টোফার কলম্বাসের বাংলা নাম আসে ইংরেজি Christopher Colombus ক্রিস্টফার্ কলাম্বাস্ হতে, যা মূলতঃ লাতিন Christophorus Columbus ক্রিস্তোফোরুস্ কোলুম্বুস্ হতে এসেছে। ইতালির জেনোয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে কলম্বাসের আসল নাম ইতালীয় ভাষায় Cristoforo Colombo ক্রিস্তোফোরো কোলোম্বো ছিল, কিন্তু তিনি যখন তৎকালীন ক্যাস্টিল রাজ্যের (বর্তমান স্পেনে) রাণী ইসাবেলের অনুদানে আমেরিকায় অভিযাত্রা করেন, তিনি তার নামের স্পেনীয় রূপ Cristóbal Colón ক্রিস্তোভ়াল্ কোলোন্ দ্বারা পরিচিত ছিলেন।
ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬) ইতালির বন্দর শহর জেনোয়া থেকে এসেছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি সমুদ্রযাত্রা করেন। ১৪৭৭ সালের দিকে তিনি পর্তুগালের লিসবনে চলে যান। সেখান থেকে তিনি ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক বন্দরগুলোতে নৌ অভিযান পরিচালনা করেন। ১৪৮৩ সালে পর্তুগালের রাজা জন দ্বিতীয়র কাছে কলম্বাস তার পরিকল্পনা জমা দেন। তাতে ছিল আটলান্টিক হয়ে পশ্চিমের দিকে ইন্ডিজে (এশিয়া) যাওয়ার পরিকল্পনা। রাজা যখন তার পরিকল্পনায় রাজি হলেন না, তখন তিনি তা স্পেনের রাজা ও রাণীর কাছে পেশ করেন। স্পেনের রাজদরবার তার অভিযান অনুমোদন করেন এবং তাকে ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জের ভাইসরয় হিসাবে নিযোগ দেন।
আটলান্টিক অভিযান
১৪৯১ সালে আটলান্টিক অভিযানে তিনি ব্যবহার করেছিলেন ‘রহস্যময়’ এক মানচিত্র। অভিযানের শুরু থেকে পুরো সময়টায় তাকে আলোর দিশা দিয়েছে এই মানচিত্রটি। অন্যকথায় বলা যায়, এই মানচিত্রটিকে ঘিরেই পরিকল্পনা নির্ধারণ করতেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস।
এই মানচিত্রটি ছিল জার্মান মানচিত্রকার হেনেরিকাস মারটেলাসের তৈরি করা। অবশ্য এই মানচিত্র প্রস্তুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল আরো কিছু কিংবদন্তীর। বহু পুরনো সেই মানচিত্রটি সময়ের ব্যবধানে এক সময় অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
কলম্বাস কিউবা আবিষ্কার করেন।
আমেরিকা মহাদেশের ঠিক কোথায় কলম্বাস জাহাজ থেকে নেমেছিলেন তা নিয়ে শত শত বছর ধরে বিতর্ক চলেছে।
অন্তত ১০টি স্থানের বাসিন্দারা দাবি করেন যে কলম্বাস তাদের সেই জায়গাগুলিতেই প্রথম পদধূলি দেন।
তবে আমেরিকায় নামার পর কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি ভারতে পৌঁছেছেন।
দ্বিতীয় অভিযাত্রা
কলম্বাস তার দ্বিতীয় অভিযাত্রায় ক্যারিবিয়ান সাগরে ডোমিনিকা আবিষ্কার করেন।
তথ্যসূত্র
http://www.vanderkrogt.net/columbus/texts/portrait.html
বিষয়শ্রেণী:ইতালীয় অভিযাত্রী
বিষয়শ্রেণী:১৪৫১-এ জন্ম
বিষয়শ্রেণী:১৫০৬-এ মৃত্যু
বিষয়শ্রেণী:ভৌগোলিক আবিষ্কারক
বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় ইতিহাস
বিষয়শ্রেণী:ইতালীয় রোমান ক্যাথলিক |
গণকযন্ত্র (কমপিউটার) | https://bn.wikipedia.org/wiki/গণকযন্ত্র_(কমপিউটার) | REDIRECTকম্পিউটার |
কনফিউশিয়াস | https://bn.wikipedia.org/wiki/কনফিউশিয়াস | REDIRECTকনফুসিয়াস |
রন্ধন | https://bn.wikipedia.org/wiki/রন্ধন | REDIRECT রান্না |
কিউবা | https://bn.wikipedia.org/wiki/কিউবা | থাম্ব|265x265পিক্সেল|কিউবার প্রদেশসমূহ
কিউবা (স্পেনীয়: Cuba কুবা) ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম ও সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত দ্বীপ। দ্বীপটি আশেপাশের অনেকগুলি ছোট দ্বীপের সাথে মিলে কিউবা প্রজাতন্ত্র (República de Cuba রেপুব্লিকা দ়ে কুভ়া) গঠন করেছে। কিউবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। ক্যারিবীয় সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে সমস্ত সমুদ্রপথের উপর দেশটি অবস্থিত। কিউবার উত্তরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, পূর্বে টার্ক্স ও কেইকোস দ্বীপ এবং হাইতি, পশ্চিমে মেক্সিকো, আর দক্ষিণে জ্যামাইকা ও কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ। উর্বর ভূমি এবং আখ ও তামাকের ফলনের প্রাচুর্যের ফলে কিউবা ইতিহাসের অধিকাংশ সময় ধরেই ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র।
হাভানা কিউবার রাজধানী।
কিউবা হাইতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপ এবং জ্যামাইকার খুব কাছে অবস্থিত বলে ঐ সব দেশ থেকে কিউবায় প্রচুর লোক যাওয়া-আসা করেন। এই যাতায়াতের ফলে কিউবাতে বহু ধরনের গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির সহাবস্থান ঘটেছে। কৃষিতে সমৃদ্ধ হলেও কিউবা খুব কম কৃষিদ্রব্যই রপ্তানি করে, এর মধ্যে আছে চিনি, তামাক, লেবুজাতীয় ফল এবং বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত দ্রব্য।
উর্বর ভূমি, অসংখ্য পোতাশ্রয় এবং খনিজের ভাণ্ডারের জন্য দেশটিকে স্পেন, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে কিউবার প্রতি বন্ধু হিসাবে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিউবা ৪০০ বছর ধরে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। স্পেনের কনকিস্তাদোরেরা এই দ্বীপকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকাতে আক্রমণ চালাত। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে, স্পেনের অধিকাংশ উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করার বহু দশক পর, কিউবার লোকেরা একটি স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৮৬৮ সাল নাগাদ কিউবার লোকেরা তাদের তিনটি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথমটিতে লড়া শুরু করে। ১৮৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে প্রবেশ করে কিউবার পক্ষ নিয়ে স্পেনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তারা কিউবাকে মার্কিন প্রতিরক্ষার অধীনে স্বাধীন ঘোষণা করে।
১৯০২ সালে কিউবানরা স্বায়ত্তশাসন শুরু করে, যদিও দেশটিতে মার্কিন প্রভাব তখনও প্রবল ছিল। ১৯০৩ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী কিউবার গুয়ান্তানামো উপসাগর এলাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও একটি নৌঘাঁটি চালু রেখেছে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগের অধিকাংশ সময় জুড়ে কিউবার সরকার ধারাবাহিকভাবে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রপতি ও স্বৈরিশাসকের অধীনে শাসিত হয়। ১৯৩৪ সাল থেকে সামরিক অফিসার ফুলগেনসিও বাতিস্তাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কখনো সামরিক স্বৈরশাসক, কখনো বেসামরিক রাষ্ট্রপতি, কখনও পর্দার আড়ালের সামরিক নেতা হিসেবে দেশটি শাসন করা শুরু করেন। ১৯৫০-এর দশকের মধ্যভাগে বহু কিউবান বাতিস্তার স্বৈরশাসন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। বাতিস্তার বিরুদ্ধ প্রতিবাদ পরবর্তীতে কিউবান বিপ্লবে রূপ নেয়।
১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং কিউবায় একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করেন। তখন থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কাস্ত্রো দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান এবং সব রকম নীতিবিষয়ক সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৬০-এর দশকে কাস্ত্রো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিশ্বের প্রধান সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৬১ সালে কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন কিউবা সরকারি ভাবে মার্কসবাদ গ্রহণ করে।
কাস্ত্রো সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এ মার্ক্সবাদের যে রূপটি প্রচলিত ছিল, সেই মডেলটি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি সুসংগঠিত ভাবে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। তখন থেকে কিউবা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নীতি মেনে শাসিত হয়ে আসছে। কিউবা সম্পূর্ণভাবে কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন এবং দেশটির অর্থনীতিও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত। সমাজতন্ত্রে কিউবার জনগণের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়টি বিসর্জন দেওয়া হয়। কমিউনিস্ট আদর্শ অনুসারে ধর্মপালন নিরুৎসাহিত করা হয়, তবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু কিউবার ইতিহাস ও সংস্কৃতি পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির মত না হওয়ায় কিউবার সমাজতন্ত্র সোভিয়েত মডেল পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারেনি। যদিও কিউবার প্রশাসনিক দফতর ও সংস্থাগুলির কাঠামো সোভিয়েত ধাঁচের ছিল, তা সত্ত্বেও কাস্ত্রোই মূল প্রশাসনের মূল পরিচালক।
ইতিহাস
কিউবার প্রথম লিপিবদ্ধ ইতিহাস জানা যায় ১৪৯২ সালের অক্টোবর ২৮ তারিখ থেকে। এই দিন দিগ্বিজয়ী নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার প্রথম অভিযানে কিউবায় পৌঁছে এই অঞ্চলটিকে স্পেনের অধীন বলে দাবি করেন। কলম্বাস যুবরাজ জুয়ানার নামানুসারে এই দ্বীপটির নাম রেখেছিলেন আইলা জুয়ানা। তখন এই দ্বীপে আমেরিকার আদিবাসীরা বসবাস করতো যাদের নাম ছিল টাইনো এবং সিবোনেই। এরা মূলত উত্তর, দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক শতাব্দী পূর্বে জটিল প্রক্রিয়ায় এই দ্বীপে অভিবাসী হয়ে এসেছিল। টাইনোরা মূলত কৃষিকাজ করতো এবং আর সিবোনেইরা কৃষিকাজ এবং পশু শিকার উভয় কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রাথমিক টাইনো সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য তামা ব্যবসা ছিল।
সরকার এবং রাজনীতি
কিউবা একটি একদলীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। এর শাসনযন্ত্র সম্পূর্ণভাবেই কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির অধীন। ১৯৭৬ সালে প্রণীত সংবিধান বাতিল করে কিউবায় ১৯৯২ সালে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়, যা মার্ক্স, এঙ্গেল্স এবং লেনিনের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত। এই নবপ্রণীত সংবিধান অনুসারে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি "রাষ্ট্র এবং সমাজের নেতৃত্বপ্রদানকারী মূল চালিকাশক্তি" হিসেবে অভিহিত হয়েছে।
প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
ভূগোল
কিউবা প্রজাতন্ত্র অনেকগুলি দ্বীপের সমষ্টি। এদের মধ্যে প্রধান দ্বীপটি কিউবা দ্বীপ। ইসলা দে লা হুবেন্তুদ ২য় বৃহত্তম দ্বীপ। এছাড়াও আরও অনেক ছোট ছোট দ্বীপ কিউবার অন্তর্ভুক্ত।
অর্থনীতি
যদিও কিউবা একটি একদলীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। এটি মার্ক্স, এঙ্গেল্স এবং লেনিনের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত ও অর্থনীতিও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তবুও এটি বর্তমানে বাজার অর্থনীতি এর ধারণা এর দিকে যাচ্ছে। এখন বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ এবং পশু পালন এর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষিকাজ কিউবাবাসীদের প্রধান উপজীবিকা। আবাদি জমির দুই তৃতীয়াংশে আখ চাষ। তামাক, কফি, ক্যাকাও, ফল, শাকসবজি, ভুট্টা, আলু, চাল প্রভৃতি প্রধান কৃষিপণ্য। কিউবা বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। মেহগনি, সিডার, বিকলগ্রাম, মাজাগুয়া, টেকা প্রভৃতি কাঠের জন্য বিখ্যাত। খনিজ সম্পদে কিউবা সমৃদ্ধ। প্রধান প্রধান খনিজ সম্পদ হল - তামা, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, নিকেল, গন্ধক, ক্রোমাইট, কোবান্ট সিলিকা, রুপা, কয়লা ও তেল প্রভৃতি। কিউবা শিল্পে মোটামুটি সমৃদ্ধ। প্রধান প্রধান শিল্প হচ্ছে চিনি, সাবান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ভোগ্যপণ্য, ইস্পাত শিল্প প্রভৃতি।
জনসংখ্যা
২০১৪ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী দেশটিতে জনসংখ্যা ১১,২৩৮,৩১৭ জন। অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০২ জন জনসংখ্যা রয়েছে।
সংস্কৃতি
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় দ্বীপ
বিষয়শ্রেণী:কিউবা
বিষয়শ্রেণী:একদলীয় রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:স্পেনীয় ভাষী রাষ্ট্র ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ক্যারিবীয় রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন স্পেনীয় উপনিবেশ
বিষয়শ্রেণী:বৃহত্তর আন্তিলীয় দ্বীপপুঞ্জ
বিষয়শ্রেণী:দ্বীপ রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র
বিষয়শ্রেণী:ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:১৯০২-এ উত্তর আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত |
জর্জ ওয়াশিংটন | https://bn.wikipedia.org/wiki/জর্জ_ওয়াশিংটন | জর্জ ওয়াশিংটন (ফেব্রুয়ারি ২২, ১৭৩২ – ডিসেম্বর ১৪, ১৭৯৯) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ-এ কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রধান বলে উল্লেখ করা হয় এবং তিনি তার জীবদ্দশায় এবং এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত।
ওয়াশিংটন উপনিবেশিক ভার্জিনিয়ার এক ধনাট্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার তামাক চাষ এবং দাস ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিল। তিনি পরবর্তীতে উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করেন। তার যৌবনে তিনি উপনিবেশিক মিলিশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ১৭৭৫ সালে দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস মার্কিন বিপ্লবের সময় তাকে কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়ক পদে পদোন্নতি প্রদান করেন। ওয়াশিংটন ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশদের বোস্টন থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য করে, কিন্তু পরের বছর তিনি ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় ধরা পড়ে যান। শীতকালের মাঝামাঝিতে ডিলাওয়্যার নদী পাড় হয়ে তিনি ট্রেন্টন এবং প্রিন্সটনের যুদ্ধে ব্রিটিশদের পরাজিত করেন এবং নিউ জার্সি পুনঃদখল করেন। তার কৌশলে কন্টিনেন্টাল সৈন্যদল ১৭৭৭ সালে সারাটোগায় এবং ১৭৮১ সালে ইয়র্কটাউনে দুটি প্রধান ব্রিটিশ সৈন্যদলকে বন্দী করতে সমর্থ হয়। ইতিহাসবেত্তাগণ ওয়াশিংটনকে তার জেনারেল নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধান; সেনাদের নির্দেশ প্রদান; কংগ্রেস, রাজ্য সরকার ও তাদের মিলিশিয়ার সাথে সমন্বয়; এবং যুদ্ধের রসদ, সরঞ্জামাদি ও প্রশিক্ষণের জন্য তার উচ্চ-প্রশংসা করেন। যুদ্ধে ওয়াশিংটন
১৭৮৩ সালে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর, ওয়াশিংটন ক্ষমতা দখল না করে সর্বাধিনায়ক পদ থেকে অব্যহতি নেন, যা মার্কিন গনপ্রজাতন্ত্র প্রণয়নে তার অঙ্গীকারের প্রমাণ। ১৭৮৭ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত সাংবিধানিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এই সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। ওয়াশিংটন তার নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য প্রশংসিত ছিলেন এবং ইলেকটোরাল কলেজের প্রথম দুটি নির্বাচনে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৭৮৯ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তিনি বিদ্রোহী অংশসমূহ একত্রিত করার কাজ করেন। তিনি সকল ফেডারেল এবং রাজ্যের সকল ঋণ পরিশোধের জন্য আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের অনুষ্ঠানের সমর্থন দেন, সরকারের একটি স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠা করেন, একটি কার্যকর করব্যবস্থা চালু করেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি থাকার পর তিনি অবসরে যান। দুই মেয়াদে এই অবসরের রীতি ১৯৪০ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলে।
তার মৃত্যুর পর ভার্জিনিয়ার তৃতীয় হেনরি লি ওয়াশিংটনের প্রশংসা করে বলেন, "যুদ্ধে প্রথম, শান্তিতে প্রথম এবং তার জনগণের হৃদয়ে প্রথম।" তিনি জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরও পরম পূজনীয়। সমালোচকদের এবং জনগণের উপর করা জরিপে ফলাফলে তিনি সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সেরা তিন রাষ্ট্রপতির একজন হিসেবে স্থান অধিকার করেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
thumb|left|জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মস্থান
জন্ম ও শিক্ষা (১৭৩২–১৭৫৩)
জর্জ ওয়াশিংটন পোপ্স ক্রিক এস্টেট ওয়েস্টমোরল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, ব্রিটিশ আমেরিকায় (বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অগাস্টিন ওয়াশিংটন (১৬৯৪-১৭৪৩) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী ম্যারি বল ওয়াশিংটন-এর প্রথম সন্তান। জুলীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে তার জন্ম তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৭৩১ খ্রিষ্টাব্দ এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দ।
ওয়াশিংটন মূলত ইংরেজ ভদ্র সম্প্রদায় বংশোদ্ভূত। তার পূর্বপুরুষগণ ইংল্যান্ডের সালগ্রেভ থেকে আমেরিকায় যান। তার প্র-পিতামহ জন ওয়াশিংটন ১৬৫৬ সালে ভার্জিনিয়া গমন করেন এবং জমি ও ক্রীতদাসদের একত্রিত করেন। একই কাজ করেন তার পুত্র লরেন্স ওয়াশিংটন এবং তার নাতী, জর্জের পিতা অগাস্টিন ওয়াশিংটন। অগাস্টিন ছিলেন একজন তামাক চাষী এবং তিনি তার জমিতে লোহা উৎপাদনে বিনিয়োগ করেন। জর্জের বাল্যকালে অগাস্টিন ভার্জিনিয়ার ভদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যবিত্ত সদস্য ছিলেন।Dorothy Twohig in
জর্জ ওয়াশিংটনের ছয়জন ভাইবোন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছিল, যাদের মধ্যে লরেন্স ও অগাস্টিন জুনিয়র - এই দুইজন ছিল তার পিতার প্রথম পক্ষের স্ত্রী জেন বাটলার ওয়াশিংটনের গর্ভের। তার বাকি চার ভাইবোনরা হল স্যামুয়েল, বেটি এলিজাবেথ, জন অগাস্টিন, ও চার্লস। তার তিনজন ভাইবোন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে মারা গিয়েছিল। তাদের মধ্যে তার বোন মিলড্রেড এক বছর বয়সে মারা যায়, তার সৎভাই বাটলার শিশুকালে মারা যায় এবং সৎবোন জেন বার বছর বয়সে মারা যায়, তখন জর্জের বয়স ছিল দুই। তার পিতা ১৭৪৩ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। তখন তার বয়স এগার।
ভূমি জরিপকার্য
ওয়াশিংটনের জরিপকার্যে অংশগ্রহণ শুরু হয় তার জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে স্কুলে চর্চার মাধ্যমে। এই চর্চার মাধ্যমে তিনি ভূমি জরিপ পেশার মূল বিষয়ের শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তার প্রথম জরিপ কাজের অভিজ্ঞতা হয় মাউন্ট ভার্ননের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। জরিপকার্যের তার প্রথম সুযোগ আসে ১৭৪৮ সালে যখন তার প্রতিবেশী এবং বন্ধু জর্জ ফেয়ারফ্যাক্সের নেতৃত্বে একটি জরিপ দলের সাথে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ পান। ফেয়ারফ্যাক্স পশ্চিম ভার্জিনিয়া সীমান্ত বরাবর ভূখণ্ডের বিশাল ভূভাগের জরিপের জন্য একটি পেশাদারী জরিপ সংস্থা গঠন করে। সেখানে তরুণ ওয়াশিংটন অমূল্য অভিজ্ঞতা লাভ করে।
ওয়াশিংটন ১৭৪৯ সালে ১৭ বছর বয়সে একজন পেশাদারী আমিন হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে। তিনি পরবর্তীতে উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে কমিশন লাভ করেন এবং আমিনের লাইসেন্স পান এবং নব্য প্রতিষ্ঠিত কুলপিপার কাউন্টির সরকারি আমিন হন। তার ভাই লরেন্সের বিশিষ্ট ফেয়ারফ্যাক্স পরিবারের সাথে তার যোগাযোগের কারণে তিনি ভালো বেতনের এই সরকারি পদে চাকরি পান। তিনি তার প্রথম জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। এই সময়ে তিনি ৪০০ একর জমির ভূগর্ভস্থ অংশের নকশা তৈরি করেন এবং একটি প্রতিশ্রুতিশীল কর্মজীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে তার অনেক জমি অধিগ্রহণ করেন এবং এই কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে অধিগ্রহণকৃত শেনানডোহ উপত্যকায় জমি ক্রয় করেন।
পরের চার বছর ধরে ওয়াশিংটন পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় এবং ভার্জিনিয়া বিনিয়োগকারীদের দ্বারা পরিচালিত ভূমি বিনিয়োগ সংস্থা ওহাইও কোম্পানির জন্য ভূমি জরিপের কাজ করেন। তিনি ভার্জিনিয়া মিলিশিয়া কমান্ডার হিসেবে লরেন্সের অবস্থানের কারণে ভার্জিনিয়ার নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ররবার্ট ডিনউইডির নজরে আসেন। তিনি নজরে না আসার কোন কারণ ছিল না। তিনি ছিলেন ছয় ফুটের অধিক লম্বা, এবং তার সমসাময়িক অধিকাংশের তুলনায় লম্বা ছিলেন। ১৭৫০ সালের অক্টোবর মাসে ওয়াশিংটন সরকারি আমিন পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যদিও তিনি তার নতুন পেশায় পরবর্তী তিন বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। তিনি দক্ষিণ ভার্জিনিয়া জন্য সেনা বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা হিসাবে সামরিক লাভের পূর্ব পর্যন্ত আরো দুই বছর পেশাগতভাবে তার জরিপকার্য অব্যাহত রাখেন এবং তাকে বেশিরভাগই ফ্রেডেরিক কাউন্টিতে কাজ করতে দেখা যায়। ১৭২৫ সাল নাগাদ ওয়াশিংটন প্রায় ২০০টি জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন এবং ৬০ হাজার একরের বেশি ভূমির জরিপ করেন। তিনি ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত তার জীবনের বিভিন্ন সময়ে জরিপের কাজ চালিয়ে যান।
ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ
thumb|upright|ওয়াশিংটনের মানচিত্র, তার ওহাইওর দিনলিপি (১৭৫৩–১৭৫৪) থেকে।
ওয়াশিংটন ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধে ভার্জিনিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশের মিলিশিয়ার মেজর হিসেবে সেনাবাহিনীতে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৭৫৩ সালে তাকে ব্রিটিশ রাজের দূত হিসেবে দুর-উত্তরে বর্তমান পেনসিলভানিয়ার এরিতে ফরাসি ও ভারতীয় অফিসালদের নিকট পাঠানো হয়। ওহাইও কোম্পানি ছিল ওহাইও উপত্যকায় ব্যবসায় সম্প্রসারণের জন্য ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের অন্যতম মাধ্যম, যার মাধ্যমে ভারতীয় বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।. ১৭৫৩ সালে ফরাসিরা ওহাইও কাউন্টিতে তাদের সেনা মোতায়ন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভানিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশ ওহাইওকে তাদের নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দাবী করে। এ থেকে দুই অঞ্চলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, যা পরে ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ (১৭৫৪-১৭৬২) নামে পরিচিতি লাভ করে এবং এ থেকেই বিশ্বব্যাপী সাত বছরের যুদ্ধ (১৭৫৬-৬৩) শুরু হয়। ওয়াশিংটন শুরু থেকেই এই যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়েন।
যুদ্ধের শুরু
উপনিবেশিক ভার্জিনিয়ার ডেপুটি গভর্নর রবার্ট ডিনউইডিকে ব্রিটিশ সরকার নির্দেশ দেয় ওহাইও নদী অববাহিকাসহ ব্রিটিশ অঞ্চলসমূহ দাবী করছে এমন প্রতিপক্ষকে পাহারা দিতে। ১৭৫৩ সালের শেষের দিকে ডিনউইডি ওয়াশিংটনকে ফরাসিদের ওহাইও উপত্যকা ছাড়ার চিঠি পাঠাতে নির্দেশ দেন। এর এক বছর পূর্বে মিলিশিয়ার নতুন জেনারেল হিসেবে দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর ওয়াশিংটন নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। এই সফরে ওয়াশিংটন মিলিশিয়ার সাথে ফরাসিদের আসন্ন সংঘর্ষে তাদেরকে সমর্থন দেওয়ার জন্য লগ্সটাউনে তানাচারিসন ("হাফ-কিং" নামেও পরিচিত ছিল) এবং ইংল্যান্ডের সাথে সন্ধিকৃত অন্যান্য ইরোকোইস প্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি চিঠিটি স্থানীয় ফরাসি কমান্ডার জাক লেগার্দিয়ো দে সেন্ট-পিঁয়েরের কাছে পাঠান। জাক ভদ্রভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ওয়াশিংটন এই সময়ে একটি দিনলিপি রাখতেন যা ডিনিউডির আদেশে উইলিয়াম হান্টার প্রকাশ করেন এবং এই দিনলিপি তাকে ভার্জিনিয়ার বিখ্যাত করে তুলে। তার এই জনপ্রিয়তা তাকে কমিশন পেতে এবং তার সামরিক জীবন শুরু করতে সাহায্য করে।
thumb|left|ফোর্ট নেসিসিটিতে জর্জ ওয়াশিংটনের ইভেনিং কাউন্সিল।
ডিনউইডি ওয়াশিংটনকে ওহাইও কাউন্টিতে প্রেরণ করে বর্তমান পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে অবস্থিত ওহাইও কোম্পানির নির্মাণাধীন দুর্গ পাহারা দেওয়ার জন্য। তার সেখানে পৌঁছানোর পূর্বে একটি ফরাসি সেনাদল সেখানকার উপনিবেশিক বাণিজ্যকর্মীদের বিতাড়িত করে ডুকোয়েন্স দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। ফরাসি সৈন্যদের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ পরিচালনা করেন জোসেপ কোলোঁ দে জুমনভিয়া। তাদের খোঁজ করেন তানাচারিসন এবং বর্তমান পেনসিলভানিয়ার ইউনিয়নটাউনের কয়েকজন সৈন্য। ১৭৫৪ সালের ২৮ মে ওয়াশিংটন এবং তার কয়েকটি মিলিশিয়া ইউনিট এবং তাদের মিঙ্গো সহযোগীদের সহায়তায় ফরাসিদের অতর্কিত আক্রমণ করে, যা জুমনভিয়া গ্লেনের যুদ্ধ নামে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধে বা যুদ্ধের পরে আসলে কি হয়েছিল এই বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কিন্তু কিছু প্রাথমিক সূত্র এই বিষয়ে একমত হয়েছে যে এই যুদ্ধ ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। জুমনভিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার দলের লোকজনকে হয় মেরে ফেলা হয়েছিল বা বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে জুমনভিয়া তানাচারিসনের হাতে খুন হয়েছিল, বা ওয়াশিংটনের সাথে যখন বসেছিল তখন কেউ বন্দুক দিয়ে গুলি করে হত্যা করে, নাকি অন্য কোন উপায়ে হত্যা করা হয়েছিল এই বিষয় স্পষ্ট নয়। এই যুদ্ধের পর তানাচারিসন ওয়াশিংটনকে 'শহর ধ্বংসকারী' আখ্যা প্রদান করেন।
ফরাসিরা এই আক্রমণের প্রতিবাদে ১৭৫৪ সালের জুলাইয়ে ফোর্ট নেসেসিটিতে আক্রমণ করে এবং ওয়াশিংটনকে বন্দী করে নিয়ে যায়। তারা পরে তাকে ভার্জিনিয়ায় তার দলের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়। ইতিহাসবিদ জোসেফ এলিসের ভাষ্য হল এই সময় ওয়াশিংটনের সাহসিকতা, নতুন পরিকল্পনা, অনভিজ্ঞতা, এবং প্রচন্ডতা লক্ষ্য করা যায়। ভার্জিনিয়ায় ফিরে ওয়াশিংটন ক্যাপ্টেন হিসেবে তার পদ অবনতি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার কমিশন থেকে অব্যহতি নেন। ওয়াশিংটনের ওহাইও কাউন্টিতে আক্রমণের আন্তর্জাতিক প্রভাব দেখা যায়। ফরাসিরা ওয়াশিংটনকে জুমনভিয়াকে গুপ্তহত্যার জন্য অভিযুক্ত করে। তারা জুমনভিয়াকে কূটনৈতিক মিশনের অংশ ছিল বলে দাবী করে। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন উভয়ই এই অঞ্চলের সমন্বয় ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং উভয় দেশ ১৭৫৫ সালে উত্তর আমেরিকায় সৈন্য পাঠায়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭৫৬ সালে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ব্রাডক অভিযান ১৭৫৫
১৭৫৫ সালে ওয়াশিংটন দুর্ভাগ্যজনক ব্রাডক অভিযানে ব্রিটিশ জেনারেল এডওয়ার্ড ব্রাডকের ঊর্ধ্বতন মার্কিন সাহায্য প্রদানকারী হন। ইহা ছিল উপনিবেশসমূহে ব্রিতিশদের সবচেয়ে বড় অভিযান এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ফরাসিদের ওহাইও কাউন্টি থেকে বিতাড়িত করা ও প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ডিউকোয়েন্স দুর্গ দখল করা। ওয়াশিংটন প্রথমে ব্রাডকের কাছ থেকে মেজর হিসেবে নিয়োগ চান, কিন্তু যখন বলা হয় যে লন্ডন থেকে না দেওয়া হলে ক্যাপ্টেনের উপর কোন পদ দেওয়া হবে না তখন তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। অভিযানে যাত্রাপথে ওয়াশিংটন মাথা ব্যথা এবং জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তা সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধযাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং যখন সৈন্যদল ধীরগতিতে চলতে থাকে তিনি ব্রাডককে সৈন্যদলকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করতে পরামর্শ দেন। প্রাথমিক ও তুলনামূলক হালকা অস্ত্রসজ্জিত সৈন্যরা দ্রুত গতিতে চলতে পারে তাই তাদের সামনে রাখতে এবং তাদের পিছনে ভারী অস্ত্রসজ্জিত সৈন্যদের রাখতে বলেন। ব্রাডক তার পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং সামনের ভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মনঙ্গাহেলার যুদ্ধে ফরাসি এবং তাদের মিত্র ভারতীয়রা ব্রাডকের স্বল্প সৈন্যদলে গুপ্ত আক্রমণ চালায় এবং জেনারেল ব্রাডক মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। বিপর্যস্ত ও হতাহতের ঘটনার পর ব্রিটিশরা ভয়ার্ত ও ছত্রভঙ্গ হয়ে যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে আসে। ওয়াশিংটন যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে যায় এবং ব্রিটিশ ও ভার্জিনীয় বিশৃঙ্খল সৈন্যদলকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এই কাজে তিনি তার অসুস্থতা সত্ত্বেও সাহসিকতা ও শক্তির পরিচয় দেন। তার দুটি ঘোড়া গুলিবিদ্ধ হয় এবং তার মাথার টুপি ও কোটে বেশ কয়েকটি গুলি এসে লাগে। যুদ্ধে ৯৭৬ জনের ব্রিটিশ সৈন্যদলের দুই তৃতীয়াংশ মারা যায় এবং আহত হয়। ফোর্ট নেসেসিটির যুদ্ধে ওয়াশিংটনের নির্দেশনার যারা সমালোচনা করেছিলেন তারা এই যুদ্ধে তার কাজের জন্য তাকে পুনরায় বাহবা দেন।
ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের কমান্ডার
লে. গভর্নর ডিনউইডি ১৭৫৫ সালে ওয়াশিংটনকে "ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের কর্নেল এবং সমস্ত বাহিনীর সর্বাধিনায়ক" হিসেবে কমিশন প্রদান করেন এবং তাকে ভার্জিনিয়ের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব প্রদান করেন। ভার্জিনিয়া রেজিমেন্ট উপনিবেশসমূহের মধ্যে প্রথম পূর্ণকালীন মার্কিন সামরিক ইউনিট ছিল, যা পার্ট টাইম মিলিশিয়া এবং ব্রিটিশ নিয়মিত ইউনিটের বিপরীত ছিল। ওয়াশিংটনকে "রক্ষনাত্মক বা আক্রমনাত্মক", যেটা তিনি ভাল মনে করেন সেভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন গ্রহণ করেন, কিন্তু অফিসার পদে পদোন্নতির লাল কোট (এবং বেতন) তাকে এড়িয়ে যেতে থাকে। ব্রিটিশ সেনাদের ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ডিনউইডিও ব্যর্থ হয়েছিলেন।
হাজার সৈন্যের নির্দেশ প্রদানে ওয়াশিংটন একজন কড়াশাসক ছিলেন এবং তিনি প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; তার রেজিমেন্ট ১০ মাসে ২০টি যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং তার এক তৃতীয়াংশ মানুষ হারায়। ওয়াশিংটনের জোরালো প্রচেষ্টায় ভার্জিনিয়ার সীমান্ত জনগণ অন্যান্য উপনিবেশ থেকে কম পীড়িত হয়। ইতিহাসবেত্তা এলিস এই প্রসঙ্গে বলেন যে এই যুদ্ধে "এটি ছিল তার একমাত্র অযোগ্য সাফল্য"।
১৭৫৮ সালে ওয়াশিংটনে ডিউকোয়েন্স দুর্গ দখল করার জন্য ফোর্বস অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ গোলা-বারুদ প্রদর্শনীতে বিব্রত হন। তার দল এবং অন্য ব্রিটিশ সৈন্যদল মনে করে তাদের ফরাসি শত্রুরা এই প্রদর্শনী সংগঠিত করেছে। এতে তারাও পাল্টা গোলা-বারুদ নিক্ষেপ করে এবং এই দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়। ওয়াশিংটন এই অভিযানের অন্য কোনও আক্রমণের সাথে জড়িত ছিলেন না। ব্রিটিশরা এতে কৌশলগত জয়লাভ করে এবং ফরাসিরা দুর্গের ত্যাগ করলে তারা ওহাইও উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। অভিযানের পর তিনি ১৭৫৮ সালের ডিসেম্বরে ভার্জিনিয়া রেজিমেন্ট কমিশন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৭৭৫ সালে বিপ্লব শুরু না হওয়া পর্যন্ত তিনি সামরিক জীবনে ফিরে আসেননি।
যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়: মাউন্ট ভারনন (১৭৫৯-৭৪)
thumb|upright|১৭৫৭ সালে জন ওলাস্টন কর্তৃক অঙ্কিত মার্থা ওয়াশিংটনের মেজোতিন্ত।
ওয়াশিংটন ১৭৫৯ সালের ৬ জানুয়ারি ধনী বিধবা মার্থা ডানড্রিজ কাস্টিসকে বিয়ে করেন। তখন মার্থার বয়স ছিল ২৮। ওয়াশিংটনের প্রাপ্ত চিঠিসমূহ থেকে বলা যায় যে তার বন্ধুের স্ত্রী স্যালি ফেয়ারফ্যাক্সের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে। তবুও জর্জ এবং মার্থার বিবাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, কারণ মার্থা বুদ্ধিমান, করুণাময় এবং প্লান্ট এস্টেট পরিচালনায় অভিজ্ঞ ছিলেন।
একসাথে তারা মার্থার আগের পক্ষের সন্তান, জন পারেক কাস্টিস এবং মার্থা পার্ক (প্যাস্টি) কাস্টিসকে প্রতিপালন করেন। পরে তারা মার্থার নাতি-নাতনী এলিনর পার্ক কাস্টিস এবং জর্জ ওয়াশিংটন পার্ক কাস্টিসকে প্রতিপালন করেছিল। জর্জ এবং মার্থা দম্পতির কোন সন্তানই ছিল না; ১৭৫১ সালে গুটিবসন্ত রোগ তাকে বন্ধ্যা করে দেয়। নব-দম্পতি আলেকজান্দ্রিয়ার কাছাকাছি মাউন্ট ভারননে চলে যান, এবং সেখানে তিনি আবাদকারী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবন গ্রহণ করেন।
thumb|left|ওয়াশিংটন তার বিয়ের পর মাউন্ট ভারননে তার এস্টেট বর্ধিত করেন।
মার্থার সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিবাহের ফলে তার সম্পত্তি এবং সামাজিক অবস্থান উন্নততর হয় এবং তিনি ভার্জিনিয়ার অন্যতম ধনীদের একজন হয়ে ওঠেন। তিনি তার বিয়ের ফলে কাস্টস এস্টেটের এক-তৃতীয়াংশের মালিক হন, যার মূল্য ছিল প্রায় ১০০,০০০ মার্কিন ডলার, এবং মার্থার সন্তানদের প্রতি যত্নবান ছিলেন এবং তাদের পক্ষে বাকি সম্পত্তির দেখাশুনা করেন।
১৭৫৪ সালে রবার্ট ডিনউইডি প্রতিজ্ঞা করেন, যে সকল সেনা এবং কর্মকর্তা ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জমি দান করা হবে। ওয়াশিংটন নতুন গভর্নর লর্ড বোটেটোর্টের কাছ থেকে জমি দখল করে নেন এবং ১৭৬৯-৭০ সালে ডিনউইডির প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন। পাশাপাশি ওয়াশিংটন বর্তমান ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে জমির মালিকানা লাভ করেন, যে স্থানে কানাওহা নদী প্রবাহিত হয়ে ওহাইও নদীতে পতিত হয়েছে। পরে তিনি তার নিজের নামে আরও জমি ক্রয় করেছিলেন। ১৭৭৫ সাল নাগাদ ওয়াশিংটন মাউন্ট ভারননের সীমানা দ্বিগুণ করে পর্যন্ত নিয়ে যান, এবং এর ক্রীতদাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১০০ জনের অধিকে নিয়ে যান।
সম্মানিত সামরিক বীর ও বৃহৎ জমিদার হিসেবে তিনি স্থানীয় অফিস স্থাপন করেন এবং ভার্জিনিয়ার প্রাদেশিক আইন পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৭৫৮ সাল থেকে শুরু ক্রএ সাত বছর হাউজ অব বুরগেসের পক্ষে ফ্রেডেরিক কাউন্টির প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৭৫৮ সালের নির্বাচনে তিনি ভোটারদের ১৭০ গ্যালন চালের গুঁড়ো, বিয়ার, মদ, হার্ড সিডার এবং ব্র্যান্ডি নিয়ে যান, যদিও ফোর্বস অভিযানে তিনি বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত ছিলেন। বেশ কয়েকজন স্থানীয় অভিজাতদের সহায়তায় ওয়াশিংটন আসনটিতে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে বাকি তিনজন প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। আইন পরিষদে তার কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়াশিংটন খুব কম কথা বলতেন, কিন্তু ১৭৬০-এর দশকে তিনি ব্রিটেনের কর ও বাণিজ্য নীতির উল্লেখযোগ্য সমালোচক হয়ে ওঠেন।
মার্কিন বিপ্লব (১৯৭৫-৮৩)
ওয়াশিংটন আমেরিকান বিপ্লবে নেতৃস্থানীয় সামরিক এবং রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করে। ১৭৬৭ সালে যখন তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিভিন্ন কর্মের বিরুদ্ধে প্রথম রাজনৈতিক অবস্থান নেন তখন থেকেই এই বিপ্লবে তার সম্পৃক্ততা শুরু হয়। তিনি উপনিবেশসমূহের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত প্রথম কর আইন ১৭৬৫ সালের স্ট্যাম্প অ্যাক্টের বিরোধিতা করেন। এই অ্যাক্টে উপনিবেশ থেকে কোন প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি ১৭৬৭ সালে প্রণীত টাউনশিড অ্যাক্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তিনি ক্রমবর্ধমান ঔপনিবেশিক প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। তিনি ১৭৬৯ সালের মে মাসে এই অ্যাক্ট বাতিল করা না হলে ভার্জিনিয়ায় ইংরেজদের পণ্য বর্জন করার প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবটি নথিবদ্ধ করেন তার বন্ধু জর্জ ম্যাসন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৭৭০ সালে টাউনশেড অ্যাক্ট বাতিল করে। ১৭৭৪ সালে ওয়াশিংটন ইনটলারেবল অ্যাক্টে এই আইনকে "আমাদের অধিকার ও স্বাধিকারের আগ্রাসন" হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বন্ধু ব্রায়ান ফেয়ারফ্যাক্সকে বলেন, "আমার মনে হয় গ্রেট ব্রিটেনের পার্লামেন্টের আমার অনুমতি ছাড়া আমার পকেটে হাত দেওয়ার অধিকার নেই।" তিনি আরও বলেন যে আমেরিকানরা কোন প্রকার অত্যাচারের নিকট মাথা নত করবে না।
১৭৭৪ সালের জুলাই মাসে তিনি একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন, যেখানে "ফেয়ারফ্যাক্স রিসলভস" গৃহীত হয়েছিল। এই রিসলভটিতে অন্যান্য বিষয়াবলির সাথে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের আহ্বান জানানো হয়। আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন প্রথম ভার্জিনিয়া কনভেনশনে যোগ দেন, যেখানে তিনি প্রথম কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন।
সর্বাধিনায়ক
left|thumbnail|upright|চার্লস উইলসন পিল কর্তৃক তৈল রঙে অঙ্কিত জর্জ ওয়াশিংটন, জুলাই ১৭৭৬, ব্রুকলিন জাদুঘর।
১৭৭৫ সালের এপ্রিল মাসে বোস্টনের নিকটবর্তী সংগঠিত লেক্সিংটন ও কনকর্ডের যুদ্ধের পরে উপনিবেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ওয়াশিংটন দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে সামরিক উর্দিতে হাজির হন, যা তার যুদ্ধের প্রস্তুতি নির্দেশ করে। তার সম্মান, সামরিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ছিল এবং তিনি মিলিটারি প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনী পরিচালক এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভার্জিনিয়া সর্ববৃহৎ উপনিবেশ ছিল এবং স্বীকৃতি লাভের যোগ্য ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে প্রথম যুদ্ধ শুরু হয় এবং তার উপলব্ধি করে যে তাদের দক্ষিণের সমর্থন প্রয়োজন। ওয়াশিংটন সর্বাধিনায়কের দপ্তর লাভের আশা করেনি এবং তিনি মনে করতেন তিনি এই পদের যোগ্য নন, কিন্তু তাতে কোন গুরুতর প্রতিযোগিতা ছিল না। কংগ্রেস ১৭৭৫ সালের ১৪ জুন কন্টিনেন্টাল আর্মি গড়ে তুলে। ম্যাসাচুসেটসের জন অ্যাডামস ওয়াশিংটনকে মনোনীত করেন, এবং পরে তাকে কন্টিনেন্টাল আর্মির পূর্ণ জেনারেল এবং সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।Cont'l Cong., Commission for General Washington, in 2 Journals of the Continental Congress, 1774–1789 96–97 (Library of Cong. eds., 1905).Cont'l Cong., Instructions for General Washington, in 2 Journals of the Continental Congress, 1774–1789 100–01 (Library of Cong. eds., 1905). ওয়াশিংটনের বেতন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান, যার ফলে তিনি "মহৎ এবং উদার" কমান্ডিং অফিসার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
ব্রিটিশরা তখন ওয়াশিংটন এবং তার সেনাবাহিনীর দ্বারা সংগঠিত হতে যাওয়া আসন্ন বিপদ অনুধাবন করে। ১৭৭৫ সালের ২৩ আগস্ট ব্রিটেন মার্কিন দেশপ্রেমিককে রাজদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করে রাজকীয় ফরমান জারি করে। যদি তারা বলপ্রয়োগ করে, তবে তাদের সম্পত্তি জব্দ করা হবে এবং তাদের নেতাদের ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হবে।
জেনারেল ওয়াশিংটন যুদ্ধে তিনটি ভূমিকা পালন করেন। প্রথমত, তিনি ১৭৭৫-৭৭ সালে এবং পুনরায় ১৯৮১ সালে প্রধান ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিপক্ষে সৈন্যদের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি অনেকগুলো যুদ্ধে পরাজিত হন, কিন্তু তিনি যুদ্ধে তার সেনাবাহিনী নিয়ে আত্মসমার্পণ করেন নি। তিনি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অক্লান্তভাবে যুদ্ধ করেন। তিনি কংগ্রেসের সহযোগিতায় যুদ্ধের সামগ্রিক কৌশলের নকশা করেন।
thumb|upright|জন ট্রামবুল অঙ্কিত জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটন অ্যাট ট্রেন্টন, ইয়েল ইউনিভার্সিটি আর্ট গ্যালারি (১৭৯২)।
দ্বিতীয়ত, তিনি সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করতেন এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। তিনি নিয়মিত সৈনিক নিয়োগ করেন এবং অভিজ্ঞ প্রুশীয় সৈনিক ব্যারন ফন স্টেউবেনকে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নিয়োগ দেন। যুদ্ধের প্রচেষ্টা এবং সেনা সরবরাহ কংগ্রেসের আওতায় ছিল, কিন্তু ওয়াশিংটন কংগ্রেসকে অপরিহার্য উপাদানসমূহ প্রদান করার জন্য চাপ প্রদান করতেন। ১৭৭৬ সালের জুন মাসে কংগ্রেসের প্রথম প্রচেষ্টার পাশাপাশি "যুদ্ধ ও অর্ডিন্যান্স বোর্ড" কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৭৭ সালের জুলাই মাসে তা বোর্ড অব ওয়ারের আওতায় চলে যায়, এই কমিটিতে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের কাঠামো ছিল জগাখিচুড়ি ধরনের ছিল, যার তদারকি করত কংগ্রেসনাল নিয়োগকর্তারা (এবং কংগ্রেস মাঝে মাঝে ওয়াশিংটনের মতামত ব্যতীতই নিয়োগ প্রদান করত)।
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
, Pulitzer Prize
বিষয়শ্রেণী:১৭৩২-এ জন্ম
বিষয়শ্রেণী:১৭৯৯-এ মৃত্যু
বিষয়শ্রেণী:১৮শ শতাব্দীর মার্কিন রাজনীতিবিদ
বিষয়শ্রেণী:আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের বিশিষ্ট সভ্য
বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তি
বিষয়শ্রেণী:ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তি
বিষয়শ্রেণী:কন্টিনেন্টাল আর্মির জেনারেল
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা
বিষয়শ্রেণী:১৮শ শতাব্দীর মার্কিন লেখক
বিষয়শ্রেণী:কংগ্রেশনাল স্বর্ণ পদক প্রাপক
বিষয়শ্রেণী:মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য |
জল | https://bn.wikipedia.org/wiki/জল | REDIRECT পানি |
ওজন (দ্ব্যর্থতা নিরসন) | https://bn.wikipedia.org/wiki/ওজন_(দ্ব্যর্থতা_নিরসন) | ওজন বলতে বোঝানো হতে পারে -
ওজন (ভার) - ভরের পরিমাপক;
ওজোন - এক প্রকার গ্যাস (Ozone gas, O3)। |
ডাইনীবিদ্যা | https://bn.wikipedia.org/wiki/ডাইনীবিদ্যা | redirectডাকিনীবিদ্যা |
চীন | https://bn.wikipedia.org/wiki/চীন | চীন ( ঝোংগুও), সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বা সংক্ষেপে গণচীন, পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ১৪২ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ভারতের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনবহুল রাষ্ট্র। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দেশটি শাসন করে। বেইজিং শহর দেশটির রাজধানী। গণচীনের শাসনের আওতায় পড়েছে ২২টি ও ১টি অধীন প্রদেশ (যার মধ্যে তাইওয়ান প্রদেশ অন্তর্ভুক্ত, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তাইওয়ানকে প্রদেশ হিসেবে দাবী করলেও এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে না।), পাঁচটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল, চারটি কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা (বেইজিং, থিয়েনচিন, সাংহাই এবং ছুংছিং), এবং দুইটি প্রায়-স্বায়ত্বশাসিত বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল (হংকং এবং মাকাউ)। এছাড়াও চীন তাইওয়ানের ওপরে সার্বভৌমত্ব দাবী করে আসছে। দেশটির প্রধান প্রধান নগর অঞ্চলের মধ্যে সাংহাই, কুয়াংচৌ, বেইজিং, ছোংছিং, শেনচেন, থিয়েনচিন ও হংকং উল্লেখযোগ্য। চীন বিশ্বের একটি বৃহৎ শক্তি এবং এশিয়ার মহাদেশের একটি প্রধান আঞ্চলিক শক্তি।
চীনের আয়তন প্রায় ৯৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। স্থলভূমির আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ৩য়/৪র্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র (বিতর্কিত)।। সামগ্রিক আয়তনের বিচারে ও পরিমাপের পদ্ধতিভেদে এটি বিশ্বের তৃতীয় বা চতুর্থ বৃহত্তম এলাকা। চীনের ভূমিরূপ বিশাল ও বৈচিত্র্যময়। দেশটির অনুর্বর উত্তরাংশে অরণ্য স্টেপ তৃণভূমি এবং গোবি ও তাকলা মাকান মরুভূমি যেমন আছে, তেমনি এর আর্দ্র দক্ষিণাংশে আছে উপক্রান্তীয় অরণ্যসমূহ। হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালা, পামির মালভূমি ও থিয়েন শান পর্বতমালা চীনকে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়া থেকে ভৌগলিকভাবে আলাদা করেছে। ইয়াংসিকিয়াং নদী (বিশ্বের ৩য় দীর্ঘতম) ও পীত নদী (বিশ্বের ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম) তিব্বতের মালভূমি থেকে উত্সারিত হয়ে পূর্বের জনবহুল অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের তটরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় । বোহাই উপসাগর, পীতসাগর, পূর্ব চীন সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগর এর সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণ করেছে। চীনের উত্তরে রয়েছে মঙ্গোলিয়া; উত্তর পূর্বে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া; পূর্বে চীন সাগর; দক্ষিণে ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার, ভারত, ভুটান, নেপাল; দক্ষিণ পশ্চিমে পাকিস্তান; পশ্চিমে আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কির্গিজিস্তান ও কাজাকিস্তান। এই ১৪টি দেশ বাদে চীনের পূর্বে পীত সাগরের পাশে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান; দক্ষিণ চীন সাগরের উল্টো দিকে আছে ফিলিপাইন।
চীনারা তাদের দেশকে চুংকুও নামে ডাকে, যার অর্থ "মধ্যদেশ" বা "মধ্যবর্তী রাজ্য"। "চীন" নামটি বিদেশীদের দেওয়া; এটি সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের চিন রাজবংশের নামের বিকৃত রূপ। চীনে বিশ্বের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের বাস। এদের ৯০%-এরও বেশি হল চৈনিক হান জাতির লোক। হান জাতি বাদে চীনে আরও ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির বাস। এদের মধ্যে আছে তিব্বতি, মঙ্গোল, উইঘুর, ছুয়াং, মিয়াও, য়ি এবং আরও অনেক ছোট ছোট জাতি। হান জাতির লোকদের মধ্যেও অঞ্চলভেদে ভাষাগত পার্থক্য দেখা যায়। যদিও শিক্ষাব্যবস্থায় ও গণমাধ্যমে পুতোংহুয়া নামের একটি সাধারণ ভাষা ব্যবহার করা হয়, আঞ্চলিক কথ্য ভাষাগুলি প্রায়শ পরস্পর বোধগম্য নয়। তবে চিত্রলিপিভিত্তিক লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করে বলে সব চীনা উপভাষাই একই ভাবে লেখা যায়; এর ফলে গোটা চীন জুড়ে যোগাযোগ সহজ হয়েছে।
উত্তর চীন সমভূমি অঞ্চলে পীত নদীর উর্বর অববাহিকাতে বিশ্বের আদিতম সভ্যতাগুলির একটি হিসেবে চীনের উদয় হয়। হাজার হাজার বছর ধরে রাজারা বংশানুক্রমে চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর মধ্যে প্রথম রাজবংশটির নাম ছিল শিআ রাজবংশ( )। ২২১ চিন রাজবংশ অন্যান্য ৬টি বৃহত্তম রাজ্য করায়ত্ত করে প্রথম একীভূত চৈনিক সাম্রাজ্য গঠন করে। এর পরে বহু হাজার বছর ধরে চীনের বহুবার সম্প্রসারণ, বিভাজন, ও সংস্কার সাধন হয়েছে। ১৯১২ সালে সর্বশেষ রাজবংশ চিন রাজবংশের পতন ঘটে ও এর স্থানে চীন প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়। প্রজাতন্ত্রিটি ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত চীনের মূল ভূখণ্ড শাসন করে। সে বছর চীনের গৃহযুদ্ধে সাম্যবাদী জনগণের মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে এটি পরাজয় বরণ করেন। চীনের সাম্যবাদী দল ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর বেইজিং শহরে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা করে। চীন প্রজাতন্ত্র সরকার তাইওয়ান দ্বীপে স্থানান্তরিত হন এবং সেখানে সাময়িক রাজধানী হিসেবে তাইপেই প্রতিষ্ঠা করেন। চীন প্রজাতন্ত্র সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার উভয়েই সমগ্র চীনের একমাত্র আইনসম্মত সরকার হিসেবে নিজেদের দাবী করে আসছে, তবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার বেশি অঞ্চলের অধিকারী এবং সারা বিশ্বে এর স্বীকৃতিও বেশি।
১৯৭৮ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারের অবতারণার পর থেকে চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান প্রধান অর্থনীতিগুলির একটিতে পরিণত হয়েছে। ২০১৬ সালের প্রাক্কলন অনুসারে এটি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম অর্থনীতি (নামমাত্র মোট দেশজ উৎপাদন অনুযায়ী) এবং সর্ববৃহত্ অর্থনীতি (ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুযায়ী)। এছাড়াও চীন বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক ও দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক রাষ্ট্র। চীন একটি স্বীকৃত পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র এবং বিশ্বের বৃহত্তম সক্রিয় সেনাবাহিনীর অধিকারী। এর প্রতিরক্ষা বাজেট বিশ্বের ২য় বৃহত্তম। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন জাতিসংঘের একটি স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে এটি চীন প্রজাতন্ত্রকে প্রতিস্থাপিত করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে। এছাড়াও চীন বহু আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বহুপাক্ষিক সংগঠনের সদস্য, যার মধ্যে অন্যতম হল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ব্রিক্স, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মায়ানমার ফোরাম এবং জি-২০।
চীনের দুইটি বৃহত্তম নদী হোয়াংহো ও ইয়াংসি।
মর্ম
ইতিহাস
থাম্ব|261x261পিক্সেল|খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে হান রাজবংশের বিস্তার দেখানো মানচিত্র
প্রাচীনকালে চীন ছিল পূর্ব এশিয়ার আধিপত্য বিস্তারকারী সভ্যতা। এ অঞ্চলের অন্যান্য সভ্যতাগুলি, যেমন- জাপানি, কোরীয়, তিব্বতি, ভিয়েতনামীয়, এদের সবাইকে চীন প্রভাবিত করেছিল। তারা চীনের শিল্পকলা, খাদ্য, বস্তুসংস্কৃতি, দর্শন, সরকার ব্যবস্থা, প্রযুক্তি এবং লিখন পদ্ধতি গ্রহণ ও অনুসরণ করত। বহু শতাব্দী ধরে, বিশেষ করে ৭ম শতাব্দী থেকে ১৪শ শতাব্দী পর্যন্ত চীন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর সভ্যতা। কাগজ, ছাপাখানা, বারুদ, চীনামাটি, রেশম এবং দিকনির্ণয়ী কম্পাস সবই চীনে প্রথম উদ্ভাবিত হয় এবং সেখান থেকে বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। যার ব্যবহার পৃথিবীর যেকোন স্থানে দেখতে পাওয়া যায়।
ইউরোপীয় শক্তিগুলি পূর্ব এশিয়ায় আগমন করলে চীনের রাজনৈতিক শক্তি বিপদাপন্ন হয়ে পড়ে। চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের একটি ক্ষুদ্র প্রশাসনিক অঞ্চল মাকাও মধ্য-১৬শ শতকে পর্তুগিজ নিয়ন্ত্রণে এবং কাছেই অবস্থিত হংকং ১৮৪০-এর দশকে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৯শ শতকে অভ্যন্তরীণ বিপ্লব এবং বিদেশী হস্তক্ষেপের ফলে চীনের শেষ রাজবংশ কিং রাজবংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯১১ সালে চীনা জাতীয়তাবাদীরা শেষ পর্যন্ত এই রাজতন্ত্রের পতন ঘটায়। পরবর্তী বেশ কিছু দশক ধরে একাধিক সামরিক নেতার অন্তর্কোন্দল, জাপানি আক্রমণ, এবং সাম্যবাদী ও কুওমিনতাঙের জাতীয়তাবাদী সরকারের মধ্যকার গৃহযুদ্ধ দেশটিকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর আগে ১৯২৮ সালে জাতীয়তাবাদীরা প্রজাতান্ত্রিক চীন প্রতিষ্ঠা করে।
১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করে এবং চীনের মূল ভূখণ্ডে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। কুওমিনতাঙেরা দ্বীপ প্রদেশ তাইওয়ানে পালিয়ে যায় এবং সেখানে একটি জাতীয়তাবাদী সরকার গঠন করে। জাতীয়তাবাদী সরকারটি তাইওয়ান ও পার্শ্ববর্তী কিছু দ্বীপ নিয়ন্ত্রণ করলেও প্রাথমিকভাবে এটিই বহির্বিশ্বে সমগ্র চীনের প্রকৃত সরকার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। তবে বর্তমানে বেশির ভাগ দেশ মূল ভূখণ্ডের গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারকেই চীনের প্রকৃত সরকার হিসেবে গণ্য করে।
১৯৪৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর চীনের কমিউনিস্ট সরকার কৃষি ও শিল্পব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অধীনে নিয়ে আসে। ১৯৭০-এর দশকের শেষ থেকে সরকার অবশ্য অর্থনৈতিক সংস্কার সাধন করে যাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকের আরও সংস্কারের ফলে চীনা অর্থনীতি ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বছরে ১০% হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে ২১শ শতকের শুরুতে এসে চীনা অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়।
১৯৯৭ সালে চীন ব্রিটেনের কাছ থেকে হংকং এর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়, তবে অঞ্চলটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে। ১৯৭০-এর দশকের শেষে এসে পর্তুগাল মাকাওকে চীনের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৯৯ সালে অঞ্চলটি চীনের কাছে হস্তান্তর করে; মাকাওকেও বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়।
সরকার
thumb|right|270px|The 12th ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস held in 2013
ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস হল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ কক্ষ।
স্টেট কাউন্সিল
প্রিমিয়ার - লি খছিয়াং
ভাইস প্রিমিয়ার - হান ঝেং (উন্নয়ন ও সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার), সান চুনলান (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা), হু চুনুয়া (কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়, দারিদ্র্যবিরোধী, জলের সম্পদ, বৈদেশিক বাণিজ্য), লিউ হি (অর্থ, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি, শিল্প ও পরিবহন)
রাজ্য কাউন্সিলর
রাজ্য কাউন্সিলর - ওয়েই ফেংহে (জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী), ওয়াং ইয়ং (রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ তদারকি ও প্রশাসন কমিশন), ওয়াং ইই (বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী), জিয়াও জি (সেক্রেটারি জেনারেল রাজ্য কাউন্সিলের), ঝাও কেজি (জন সুরক্ষা মন্ত্রী)
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
রাজ্য কাউন্সিলের অধীনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী মন্ত্রক। মন্ত্রণালয় পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) উপর কর্তৃত্ব ব্যবহার করে না। সেনা কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) অধীনস্থ। বিদেশি সামরিক বাহিনীর সাথে সামরিক বিনিময় ও সহযোগিতা করার সময় মন্ত্রণালয় কেবল সিএমসি এবং পিএলএর প্রতিনিধিত্বকারী যোগাযোগ সংস্থা হিসাবে কাজ করে। মন্ত্রীর পদটি সর্বদা একজন সক্রিয় সামরিক কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।
লিন পিয়াও ছিলেন উল্লেখযোগ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী , যিনি ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধে প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন। চি হাওটিয়ান ছিলেন অপর উল্লেখযোগ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী , যিনি ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন।
জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
গণপ্রজাতান্ত্রিক চিনের রাজনীতি একটি একদলীয় সমাজতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক কাঠামোয় সংঘটিত হয়। গণচীনের বর্তমান সংবিধানটি ১৯৫৪ সালে প্রথম গৃহীত হয় এবং এতে দেশের শাসনব্যবস্থা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। দেশের ৭ কোটিরও বেশি লোক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ১৯৮০-র দশকের অর্থনৈতিক সংস্কারের পর থেকে চীনে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব হ্রাস পেয়েছে এবং স্থানীয় সরকারের নেতাদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনের মৌলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি গণ কংগ্রেসব্যবস্থা নামে পরিচিত। গণকংগ্রেস ব্যবস্থা পাশ্চাত্য দেশগুলোর মত নির্বাহী, আইনপ্রণয়ন ও বিচার- এই তিন ক্ষমতা পৃথকীকরণ ব্যবস্থা নয়। চীনের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় গণ কংগ্রেস চীনের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ সংস্থা। গণ কংগ্রেসের স্থানীয় পর্যায়ের সদস্যরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। গণকংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চীনের গণ-আদালত নামের বিচার ব্যবস্থাকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
পররাষ্ট্রনীতি
চীন-মার্কিন সম্পর্ক
সামরিক শক্তি
thumb|ছেংদু J-20 ৫ম প্রজন্মের ফাইটার জেট বিমান
পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসাবে বিবেচিত এবং সাম্প্রতিক দশকগুলিতে দ্রুত আধুনিকীকরণ করেছে। এটি গ্রাউন্ড ফোর্স (PLAGF), নৌবাহিনী (PLAN), বিমান বাহিনী (PLAAF), রকেট ফোর্স (PLARF) এবং স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স (PLASSF) নিয়ে গঠিত। এর প্রায় ২.২ মিলিয়ন সক্রিয় ডিউটি কর্মী বিশ্বের যা বিশ্বের ২য় বৃহত্তম। চীনে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে, এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবাহিনী রয়েছে। ২০২২-এর জন্য চীনের সরকারী সামরিক বাজেট ছিল মোট $২৩০ বিলিয়ন (১.৪৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান), যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম, যদিও SIPRI অনুমান করে যে সেই বছর তার প্রকৃত ব্যয় ছিল $২৯২ বিলিয়ন। SIPRI এর মতে, ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এর সামরিক ব্যয় গড়ে প্রতি বছর ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা জিডিপির ১.৭ শতাংশ, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক খাতের পিছনে প্রতি বছর $৭৩৪ বিলিয়ন খরচ করে যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। পিএলএ পার্টি এবং রাজ্যের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন (সিএমসি) দ্বারা পরিচালিত হয়; যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি পৃথক সংস্থা, নেতৃত্বের পরিবর্তনের সময় ব্যতীত দুটি CMC-এর অভিন্ন সদস্যপদ রয়েছে এবং কার্যকরভাবে একটি সংস্থা হিসাবে কাজ করে। CMC-এর চেয়ারম্যান হলেন PLA-এর কমান্ডার-ইন-চিফ, অফিসহোল্ডারও সাধারণত CCP-এর সাধারণ সম্পাদক হন, যা তাদেরকে চীনের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা করে তোলে।
ভূগোল
অবস্থান ও সীমানা
চীন এশিয়া মহদেশের পূর্ব অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। চীনের স্থলভাগের আয়তন প্রায় বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে চীন এশিয়ার বৃহত্তম দেশ এবং রাশিয়া ও কানাডার পর চীন বিশ্বে তৃতীয় অথবা চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। উত্তর-দক্ষিণে চীন মোহো অঞ্চলের উত্তরের হেইলুংচিয়াং নদীর কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ ৫৩.৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে নানসা দ্বীপপুঞ্জের চেনমু-আনসা অর্থাৎ ৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। চীনের সর্বদক্ষিণ আর সর্বউত্তর প্রান্তের মধ্যকার দূরত্ব প্রায় ৫৫০০ কিলোমিটার। পূর্ব-পশ্চিমে চীন পূর্বের হেইলুংচিয়াং নদী আর উসুলিচিয়াং নদীর সঙ্গমস্থল অর্থাৎ ১৩৫.০৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পশ্চিমে পামির মালভূমি অর্থাৎ ৭৩.৪০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির পূর্ব আর পশ্চিম প্রান্তের মধ্যকার দূরত্ব প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার।
চীনের স্থলসীমার দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,৮০০ কিলোমিটার। চীনের পূর্ব দিকে উত্তর কোরিয়া, উত্তর দিকে মঙ্গোলিয়া, উত্তর -পূর্ব দিকে রাশিয়া, উত্তর-পশ্চিম দিকে কাজাকিস্তান, কিরগিজস্তান, ও তাজিকিস্তান, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ও ভুটান, দক্ষিণ দিকে মিয়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনাম। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের সমুদ্র সীমানা রয়েছে।
চীনের মূল ভূভাগের তটরেখা উত্তর দিকের ইয়ালুচিয়াং নদীর মোহনা থেকে দক্ষিণ দিকের কুয়াংসি স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলের পেইলুন হো নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত; এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার। চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমিরূপ সমতল এবং এখানে বহু বিখ্যাত বন্দর অবস্থিত। এই বন্দরগুলির বেশির ভাগই সারা বছর বরফমুক্ত থাকে। চীনের নিকটে পোহাই সাগর, হুয়াংহাই সাগর, পূর্ব সাগর, নানহাই সাগর এবং তাইওয়ানের পূর্ব অঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সহ পাঁচটি সাগর রয়েছে। এগুলির মধ্যে পোহাই সাগর চীনের অভ্যন্তরীণ সাগর। তাইওয়ানের পূর্বদিকের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল পূর্বদিকে জাপানের রিইউকিয়ু দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিমের সাখি সীমা দ্বীপপুঞ্জ থেকে দক্ষিণ দিকের বাস প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত।
চীনের অভ্যন্তরীণ নদী আর সামুদ্রিক জলসীমা নিয়ে গঠিত সামুদ্রিক অঞ্চলের মোট আয়তন ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার। চীনের সামুদ্রিক অঞ্চলে ৫০০০-এরও বেশি দ্বীপ রয়েছে। এগুলির মোট আয়তন প্রায় ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার। দ্বীপগুলির তটরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার। দ্বীপগুলির মধ্যে বৃহত্তম তাইওয়ান দ্বীপের আয়তন ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। দ্বিতীয় বৃহত্তম হাইনান দ্বীপের আয়তন ৩৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। তাইওয়ান দ্বীপের উত্তর-পূর্ব সমুদ্রে অবস্থিত তিয়াও ইয়ু তাও দ্বীপ ও ছিওয়েই ইয়ু দ্বীপ চীনের সবচেয়ে পূর্বাঞ্চলীয় দ্বীপ। দক্ষিণ চীন সমুদ্রে ছড়িয়ে থাকা দ্বীপ ও প্রবাল-প্রাচীরগুলিকে নানহাই দ্বীপপুঞ্জ নামে ডাকা হয়। এটি চীনের সবচেয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপপুঞ্জ। অবস্থান অনুযায়ী এগুলোকে তুঙসা দ্বীপপুঞ্জ, সিসা দ্বীপপুঞ্জ, চুংসা দ্বীপপুঞ্জ এবং নানসা দ্বীপপুঞ্জ নামে ডাকা হয়।
চীনের মূল অঞ্চলটি তিনটি নদীবিধৌত অববাহিকার কৃষিভিত্তিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত। এই তিনটি নদী হল উত্তরের হুয়াং হো, মধ্য চীনের ইয়াং ছি (বা "ছাং চিয়াং"), এবং দক্ষিণের মুক্তা নদী (বা "পার্ল নদী", "চু চিয়াং")। দেশটির ভূপ্রকৃতি বিচিত্র। এখানে আছে বিস্তীর্ণ মরুভূমি, সুউচ্চ পর্বত ও মালভূমি, এবং প্রশস্ত সমভূমি। দেশের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত বেইজিং বা পেইচিং চীনের রাজধানী এবং দেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ কেন্দ্র। ইয়াংছে নদীর কাছে অবস্থিত সাংহাই শহর সবচেয়ে জনবহুল শহর, বৃহত্তম শিল্প ও বাণিজ্য নগরী এবং চীনের প্রধান বন্দর।
জলবায়ু
চীনের বেশিরভাগ উত্তর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত, যা স্বতন্ত্র ঋতু এবং একটি মহাদেশীয় মৌসুমী জলবায়ু দ্বারা চিহ্নিত। বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সাইবেরিয়া এবং মঙ্গোলীয় মালভূমি থেকে শুষ্ক ও ঠান্ডা বর্ষা বয়ে যায়, যার ফলে ঠান্ডা ও শুষ্ক শীত হয় এবং উত্তর ও দক্ষিণ চীনের তাপমাত্রার মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা যায়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উষ্ণ এবং আর্দ্র বর্ষা সাগর থেকে পূর্ব ও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়, যার ফলে সামগ্রিক উচ্চ তাপমাত্রা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং উত্তর ও দক্ষিণ চীনের মধ্যে তাপমাত্রার সামান্য পার্থক্য হয়। তাপমাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে, দেশটিকে দক্ষিণ থেকে উত্তরে নিরক্ষীয়, গ্রীষ্মমণ্ডলীয়, উপক্রান্তীয়, উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ, নাতিশীতোষ্ণ এবং ঠান্ডা-নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ভাগ করা যেতে পারে। বৃষ্টিপাত ধীরে ধীরে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর-পশ্চিম অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে হ্রাস পায়, যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত স্থানভেদে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় এটি ১,৫০০ মিমি; উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এটি ২০০ মিলিমিটারের নিচে নেমে আসে।
ভূমিরূপ
চীন একটি পর্বতময় দেশ। এর মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ পর্বত, ছোট পাহাড় এবং মালভূমি নিয়ে গঠিত। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে চীনের ৩৩% উঁচু পর্বত, ২৬% মালভূমি, ১৯% অববাহিকা, ১২% সমতলভূমি এবং প্রায় ১০% ক্ষুদ্র পাহাড়। কয়েক মিলিয়ন বছর আগে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি সৃষ্টি হয়। আকাশ থেকে দেখলে মনে হবে চীনের ভূভাগ সিঁড়ির মতো পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে ধাপে ধাপে নেমে গেছে। সমুদ্র সমতল থেকে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির গড় উচ্চতা ৪০০০ মিটারের বেশি বলে মালভূমিটি "বিশ্বের ছাদ" নামে পরিচিত; এটি চীনের ভূমিরূপের প্রথম সিঁড়ি গঠন করেছে। মালভূমিটিতে অবস্থিত হিমালয়ের অন্যতম প্রধান পর্বতশৃঙ্গ চুমোলাংমা শৃঙ্গের উচ্চতা ৮৮৪৮.১৩ মিটার। আন্তঃমঙ্গোলিয়া মালভূমি, দো-আঁশ মালভূমি, ইয়ুন্নান-কুইচৌ মালভূমি এবং থালিমু অববাহিকা, চুনগার অববাহিকা ও সিছুয়ান অববাহিকা নিয়ে চীনের ভূগোলের দ্বিতীয় সিড়ি গঠিত। এর গড় উচ্চতা ১০০০-২০০০ মিটার। দ্বিতীয় সিড়ির পূর্বপ্রান্ত অতিক্রম করে বড় সিং আনলিন পর্বত, থাইহান শ্যান পাহাড়, উশ্যান পাহাড়, আরস্যুয়ে ফোং শ্যান পাহাড় পূর্বদিকের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় বিস্তৃত হয়েছ; এটি তৃতীয় সিঁড়ি। তৃতীয় সিঁড়ির ভূখণ্ড ৫০০-১০০০ মিটার নিচে নেমে গেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিক পর্যন্ত বিস্তৃত তৃতীয় সিঁড়িতে উত্তর-পূর্বসমতল-ভূমি, উত্তর চীন সমতল-ভূমি, ইয়াংসি নদীর মধ্য ও নিম্ন অববাহিকা সমতল-ভূমি আর সমতল-ভূমির প্রান্তে নিচু ও ক্ষুদ্র পাহাড় ছড়িয়ে আছে। এরও পূর্বদিকে চীনের মহাদেশীয় সোপান তথা স্বল্প গভীর সাগরীয় এলাকা অর্থাৎ চতুর্থ সিঁড়িটি বিস্তৃত; এর গভীরতা ২০০ মিটারের কিছু কম।
অর্থনীতি
ক্রয়ক্ষমতার সমতার (Purchasing power parity) বিচারে চীনের অর্থনীতি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম। এদেশের জিডিপি (GDP) ৮.১৮৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার। আমেরিকান ডলার বিনিময় হারের (USD exchange-rate) দিক থেকে দেখলে এর অর্থনীতি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম (২০০৫ সালের হিসাব)। তথাপি, বিশাল জনসংখ্যার কারণে, চীনের মাথাপিছু আয় (Purchasing power parity-র মাপকাঠিতে) ৬,২০০ আমেরিকান ডলার যা আমেরিকার এক সপ্তমাংশ।
১৯৫০ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দেশের সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে রাষ্ট্রায়ত্ত করে। তবে ১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া সংষ্কার কর্মসূচীর আওতায় সরকার আস্তে আস্তে সোভিয়েত ধারার কেন্দ্রীভূত অর্থনৈতিক মডেল থেকে বাজারমূখী অর্থনীতির দিকে সরে আসে। এর ফলে ১৯৮০ সালে চীনে ১০.২% অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় এবং ১৯৯০ থেকে ২০০১ পর্যন্ত গড়ে ১০% অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়। ২০০১ সালে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (World Trade Organization) সদস্য পদ লাভ করে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার চীনে এক নতুন গতিপথ সৃষ্টি করেছে।
পরিবহন
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের পরিবহন ব্যবস্থায় ১৯৪৯ সালের পর থেকে, বিশেষত ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকে ব্যাপক উন্নয়ন ও পরিবর্ধন ঘটেছে। নিত্যনতুন বিমানবন্দর, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের প্রকল্পসমূহ আগামী দশকগুলিতেও চীনের শ্রমবাজারে বিপুল পরিমাণে কাজের সৃষ্টি করবে।
রেলপথ চীনের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা। বিংশ শতকের মধ্যভাগের তুলনায় বর্তমান চীনের রেলপথের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ হয়েছে। একটি বিস্তৃত রেলব্যবস্থা বর্তমানে সমগ্র চীন জুড়ে প্রসারিত। বড় বড় শহরগুলিতে পাতাল রেল হয় ইতোমধ্যেই নির্মিত হয়েছে কিংবা নির্মাণাধীন বা পরিকল্পনাধীন অবস্থায় আছে।
চীনের সড়ক ও মহাসড়ক ব্যবস্থাতেও দ্রুত পরিবর্ধন সংঘটিত হয়েছে, যার ফলে চীনে মোটরযান ব্যবহারের পরিমাণ আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে।
বিশালাকার চীনের পরিবহন ব্যবস্থাটিও বহু পরিবহন নোড বা কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত বিশাল একটি নেটওয়ার্ক। তবে এই পরিবহন নোডগুলি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সমুদ্র-উপকূলীয় এলাকা এবং দেশের অভ্যন্তরে বড় বড় নদীগুলির তীরে অবস্থিত।
ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে চীনের পরিবহন অবকাঠামোতে বৈচিত্র্য ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও অযান্ত্রিক উপায়ে মালামাল পরিবহন ঘটতে দেখা যায়। অন্যদিকে আধুনিক সাংহাই শহর ও তার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির মাঝে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক ম্যাগ্লেভ (চৌম্বকীয় উত্তোলন) রেল ব্যবস্থা।
চীনের পরিবহন ব্যবস্থার বেশির ভাগই ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পরে নির্মিত হয়েছে। তার আগে চীনের রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ২১,৮০০ কিমি। বর্তমানে চীনের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৮৬,০০০ কিমি। ১৯৯০-এর দশকে সরকারি উদ্যোগে চীনের সর্বত্র যোগাযোগ রক্ষাকারী মহাসড়কব্যবস্থা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার ফলে ২০০৯ সালে এসে বর্তমানে মহাসড়ক ব্যবস্থার দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছে ৬৫,০০০ কিমি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে এটি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মহাসড়ক ব্যবস্থা।
১৯৯০-এর দশকের শেষে এসে চীনের অভ্যন্তরে বিমান ভ্রমণের পরিমাণও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনও দূরপথে যাত্রার জন্য রেলপথই চীনাদের বেশি পছন্দ।
জনগোষ্ঠী
পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ জনগোষ্ঠী চীনে বাস করে। এদের মধ্যে ৯২% জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত। এছাড়াও চীনে আরো ৫৫ জাতিগোষ্ঠীর লোক বসবাস করে। জুলাই ২০০৬ এ হিসেব অনুযায়ী চীনের মোট জনসংখ্যা হবে ১৩১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭১৩ জন। এর ২০.৮% শতাংশের বয়স ১৪ বছরের নিচে, ৭১.৪% শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে এবং ৭.৭ শতাংশের বয়স ৬৫র উপরে। ২০০৬ সালে চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল .৫৯%।
ভাষা
thumb|left|চীনের ভাষাজাতিগত গোষ্ঠীসমূহের মানচিত্র, ১৯৯০
চীনের সবচেয়ে বেশি কথিত ভাষাগুলি চৈনিক-তিব্বতি ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও চীনা ভাষার ভেতরে একাধিক প্রধান দল আছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কথিত ভাষাদলগুলি হল ম্যান্ডারিন চীনা ভাষা (চীনের জনসংখ্যার ৭০% এই দলের ভাষাগুলিতে কথা বলে)), উ (যার মধ্যে সাংহাই ভাষা পড়েছে), ইউয়ে ভাষা (যার মধ্যে ক্যান্টনীয় ভাষা ও তাইশানীয় ভাষা অন্তর্গত), মিন চীনা ভাষা (যার মধ্যে হোক্কিয়েন ও তেওচিউ উপভাষা অন্তর্গত), সিয়াং চীনা ভাষা, গান চীনা ভাষা, এবং হাক্কা চীনা ভাষা। আদিবাসী সংখ্যালঘু গোষ্ঠীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত অ-চৈনিক ভাষাগুলির মধ্যে রয়েছে চুয়াং ভাষাসমূহ, মঙ্গোলীয় ভাষা, তিব্বতি ভাষা, উইগুর ভাষা, হমং ভাষা এবং কোরীয় ভাষা।"Languages" . 2005. Gov.cn. Retrieved 3 May 2006. আদর্শ বা প্রমিত চীনা ভাষা ম্যান্ডারিন ভাষাদলের বেইজিং উপভাষার উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট হয়েছে। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের জাতীয় ভাষা এবং বিশাল দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভাবে আদানপ্রদানের জন্য লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
হাজার বছর ধরে ধ্রুপদী চীনা ভাষা লিখিত চীনা ভাষার আদর্শ মানদন্ড ছিল। এর ফলে চীনের বিভিন্ন পরস্পর-অবোধগম্য ভাষা ও উপভাষার বক্তারা নিজেদের মধ্যে লিখিত মাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ করতে পারতেন। মিং রাজবংশের আমলে লেখা উপন্যাসগুলিতে ম্যান্ডারিন ভাষার উপর ভিত্তি করে যে লিখিত ভাষার মানদন্ডটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার নাম পাইহুয়া। এই আদর্শটিকেই ব্যাপকভাবে পরিমার্জন করে ২০শ শতকের শুরুতে জাতীয় আদর্শের মর্যাদা দেওয়া হয়। আজও চীনের উচ্চবিদ্যালয়গুলির পাঠ্যক্রমে ধ্রুপদী চীনা ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়, ফলে বহু চীনাভাষী লোক এটি বুঝতে পারে। ১৯৫৬ সালে চীন সরকার সরলীকৃত চীনা অক্ষরের প্রবর্তন করেন। বর্তমানে এটিই চীনা ভাষার আদর্শ সরকারি লিপি, যা চীনের মূল ভূখণ্ডে ব্যবহার করা হয়। ঐতিহ্যবাহী চীনা অক্ষরগুলি আর ব্যবহৃত হয় না।
নগরায়ন
জাতীয় প্রতীকসমূহ
জাতীয় পতাকা
চীনের জাতীয় পতাকাটি পাঁচটি তারকাখচিত একটি লাল পতাকা। এর দৈর্ঘ্য ও উচ্চতার অনুপাত হল ৩:২। চীনের জাতীয় পতাকার লাল রঙ বিপ্লবের নিদর্শন। পতাকাতে পাঁচটি হলুদ রঙের পাঁচ-কোনা তারকা আছে, যাদের মধ্যে একটি বড় ও মূল তারকা। চারটি ছোট তারকার প্রত্যেকটির একটি কোনা মূল তারকার কেন্দ্রস্থলের দিকে মুখ করে আছে। এটি কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী জনগণের ঐক্যের নিদর্শন।
জাতীয় প্রতীক
জাতীয় পতাকা, থিয়েন আনম্যান, চাকা আর ধানের শীষ নিয়ে গণচীনের জাতীয় প্রতীক গঠিত। চীনা সরকারের মতে এটি ৪ঠা মে আন্দোলনের পর চীনা জনগণের চালিত নতুন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী সংগ্রাম আর শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বাধীন শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে গঠিত জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের নয়া চীনের প্রতিষ্ঠা
জাতীয় সঙ্গীত
গণচীনের জাতীয় সঙ্গীত মূলত এক বীরবাহিনীর অগ্রযাত্রার গান। গানটি ১৯৩৫ সালে রচনা করা হয়। গানের কথাগুলো লিখেছেন নাট্যকার থিয়েনহান, আর এটিতে সুর দিয়েছেন চীনের নতুন সংগীত-আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা নিয়ের আর। গানটি প্রকৃতপক্ষে সংগ্রামের অগ্রগামী সন্তানেরা নামক চীনা চলচ্চিত্রের থিম-সঙ্গীত। ১৯৩১ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর জাপান চীনের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের তিনটি প্রদেশ দখল করে। চীনারা জাপানিদের হটাতে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, চলচ্চিত্রটিতে সে কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর এই সঙ্গীতটি সমগ্র চীনে মুক্তিসঙ্গীত হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৪৯ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর চীনা জনগণের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে গণচীনের জাতীয় সঙ্গীত আনুষ্ঠানিকভাবে তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বীরবাহিনীর অগ্রযাত্রার গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গ্রন্থ, রচনা ও ওয়েব উৎসের তালিকা
এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা
মাইক্রোসফট এনকার্টা
ইংরেজি উইকিপিডিয়া
চীন আন্তর্জাতিক বেতার
আমার গণচীন জানুন
তথ্যসূত্র
টীকা
বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:পূর্ব এশিয়া
বিষয়শ্রেণী:একদলীয় রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:১৯৪৯-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল
বিষয়শ্রেণী:চীন
বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ব্রিক্স রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:ই৭ রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:জি২০ সদস্য
বিষয়শ্রেণী:সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:উত্তর-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:গণপ্রজাতন্ত্রী চীন
বিষয়শ্রেণী:সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র
বিষয়শ্রেণী:সীমিত স্বীকৃতির রাষ্ট্র
বিষয়শ্রেণী:সভ্যতার সূতিকাগার
বিষয়শ্রেণী:সার্বভৌম রাষ্ট্র |
পৌত্তলিকতাবাদ | https://bn.wikipedia.org/wiki/পৌত্তলিকতাবাদ | |
প্যাগোডা | https://bn.wikipedia.org/wiki/প্যাগোডা | thumb|জাপানের Hōryū-ji এ কাষ্ঠ র্নিমিত পাচ-তলা প্যাগোডা। নির্মিত হয়েছিল ৭ম শতাব্দীতে।
thumb|চীনের Kaifeng এ অবস্থিত আয়রন প্যাগোডা, স্থাপিত হয় ১০৪৯ সালে।
thumb|জাপানের Mt. Haguro প্যাগোডা
প্যাগোডা (ইংরেজি pagoda) হলো স্তরে স্তরে নির্মিত টাওয়ার জাতীয় ভবন, যা চীন, জাপান, কোরিয়া, নেপালসহ পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশে দেখা যায়। http://www.china.org.cn/english/features/43498.htmhttp://www.webpages.uidaho.edu/arch499/nonwest/nepal/Pagoda.htm অধিকাংশ প্যাগোডাই নির্মিত হয়েছে বৌদ্ধ মন্দির হিসাবে। এবং সাধারনত বৌদ্ধ বিহারের কাছাকাছি অবস্থান করে। অনেক দেশে প্যাগোডা শব্দটি অন্য ধর্মীয় স্থাপনাকে বুঝায়। ফরাসী ভাষার অনুবাদ হিসাবে ভিয়েতনামে এবং কম্বোডিয়ায় প্যাগোডাকে ধর্মীয় উপাসনালয় হিসাবে মনে করা হয় যদিও ’প্যাগোডা’ ’বিহার’ এর সঠিক প্রতিশব্দ নয়। আধুনিক প্যাগোডা হল প্রাচীন নেপালি স্তুপার একটি বিবর্তিত রূপ, অনেকটা সামাধী মন্দিরের মতো যেখানে পবিত্র পুরানিদর্শন রাখা হত।The Columbia Encyclopedia, Sixth Edition. Columbia University Press
মায়ানমারের বৌদ্ধমন্দির গুলি প্যাগোডা নামে পরিচিত ৷ যেমন: সোয়েড্যাগন প্যাগোডা অন্যতম৷ মায়ানমারে এই রকম প্যাগোডা প্রচুর দেখা যায় বলে মায়ানমারকে প্যাগোডার দেশ বলে ৷
ইতিহাস
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে প্রচলিত স্তুপা থেকে প্যাগোডার উৎপত্তি।Pagoda. Encyclopædia Britannica স্তূপ হল একটি গম্বুজ আকৃতির স্মৃতিসৌধ, যেথানে একটি পবিত্র স্মারক সংরক্ষণ করা হত।
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:বৌদ্ধধর্ম
বিষয়শ্রেণী:ধর্মীয় উপাসনালয়
বিষয়শ্রেণী:বৌদ্ধ ভবন
বিষয়শ্রেণী:বৌদ্ধ বিহার
বিষয়শ্রেণী:সুউচ্চ স্থাপনা
বিষয়শ্রেণী:বৌদ্ধ স্থাপত্য
বিষয়শ্রেণী:চৈনিক স্থাপত্য ইতিহাস
বিষয়শ্রেণী:কোরীয় স্থাপত্য
বিষয়শ্রেণী:ভবনের ধরন
বিষয়শ্রেণী:নেপালের স্থাপত্য |
পর্যায় তালিকা | https://bn.wikipedia.org/wiki/পর্যায়_তালিকা | পুনর্নির্দেশ পর্যায় সারণি |
গ্রহ | https://bn.wikipedia.org/wiki/গ্রহ | গ্রহ বলতে জ্যোতির্বিজ্ঞানে মহাবিশ্বের এমন যেকোন বস্তুকে বোঝানো হয় যার কেবলমাত্র নিজের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে গোলাকার রূপ ধারণ করার ক্ষমতা আছে, যা তার নিকটতম নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরে, যার ভর তাপ-নিউক্লিয় বিক্রিয়া শুরু করে সূর্যের মত শক্তি উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট নয়, যে তার একদম নিকটে থাকা নক্ষত্র কে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং যে তার প্রতিবেশের সব ছোট ছোট বস্তুকে সরিয়ে দিয়েছে বা নিজের মধ্যে অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। সাধারণত গ্রহরা কোন না কোন তারা বা নাক্ষত্রিক ধ্বংসাবশেষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তবে এর ব্যতিক্রম থাকার সম্ভাবনাও অনেকে ব্যক্ত করেছেন।This definition is drawn from two separate IAU declarations; a formal definition agreed by the IAU in 2006, and an informal working definition established by the IAU in 2001/2003 for objects outside of the Solar System. The 2006 definition, while official, applies only to the Solar System, while the 2003 definition applies to planets around other stars. The extrasolar planet issue was deemed too complex to resolve at the 2006 IAU conference. গ্রহের ইংরেজি প্রতিশব্দ planet-এর মূল বেশ প্রাচীনকালে প্রোথিত যার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক, পৌরাণিক ও ধর্মীয় বিষয়াদি। প্রাচীনকালের অনেক সংস্কৃতিতেই গ্রহদেরকে স্বর্গীয় বা দেবতাদের দূত ভাবা হতো। মানুষের জ্ঞানের সীমা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এই ধারণারও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে আমরা জানি এরা কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু বৈ অন্য কিছু নয়। ২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন একটি আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সৌরজগতের গ্রহগুলোর সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারিত করে। এই আধুনিক সংজ্ঞা অনুসারে ১৯৫০ সালের পূর্বে আবিষ্কৃত গ্রহগুলোর মধ্যে কেবল ৮টিকে গ্রহের মর্যাদায় বহাল রাখা হয়। কিন্তু সেরেস, পালাস, জুনো, ভেস্তা এবং প্লুটোর মত কিছু বস্তু যাদের কোন কোনটিকে আগে অনেক বিজ্ঞানী গ্রহ বলতেন, তাদের সবগুলোকেই গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
গ্রিক জ্যোতির্বিদ টলেমি মনে করতেন গ্রহরা পৃথিবীর চারদিকে কিছু ডিফারেন্ট এবং এপিসাইকেল-এর মাধ্যমে আবর্তিত হয়। গ্রহরা যে সূর্যকে আবর্তন করছে এই ধারণা আগে বেশ কয়েকবার প্রস্তাবিত হলেও সপ্তদশ শতকে গালিলেও গালিলেই-এর দুরবিন দিয়ে করা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই তা প্রথমবারের মত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। পর্যবেক্ষণকৃত উপাত্ত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে জার্মান জ্যোতির্বিদ ইয়োহানেস কেপলার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন গ্রহদের কক্ষপথ বৃত্তাকার নয়, বরং উপবৃত্তাকার। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের যন্ত্রের দিন দিন উন্নতি হওয়ায় ধীরে ধীরে জানা গেছে যে, অন্য গ্রহগুলোরও ঘূর্ণন অক্ষ খানিকটা আনত এবং অনেকগুলোর পৃথিবীর মতই মেরু বরফ এবং ঋতু পরিবর্তন রয়েছে। খুব সাম্প্রতিক সময়ের কিছু গবেষণা বলছে, অন্য গুহগুলোতে পৃথিবীর মত অগ্ন্যুৎপাত, হারিকেন, প্লেট টেকটোনিক এবং এমনকি পানিও আছে।
গ্রহদেরকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়: বৃহৎ স্বল্প ঘনত্বের গ্যাসীয় দানব এবং পাথুরে ভূসদৃশ গ্রহ। সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আটটি। সূর্য থেকে বাইরের দিকে গেলে প্রথম চারটি গ্রহ হচ্ছে ভূসদৃশ, যথা, বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল। এর পর চারটি গ্যাসীয় দানব: বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন। এর মধ্যে ছয়টি গ্রহেরই এক বা একাধিক উপগ্রহ রয়েছে। এর পাশাপাশি আইএইউ সংজ্ঞা অনুযায়ী রয়েছে ৬টি বামন গ্রহ, এছাড়া আরও অনেকগুলো বামন গ্রহের তালিকাভূক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, আর আছে হাজার হাজার ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তু।
১৯৯২ সাল থেকে আকাশগঙ্গার অন্যান্য তারার চারপাশে অনেক গ্রহ আবিষ্কৃত হয়ে আসছে, যাদেরকে বহির্গ্রহ বলা হয়। ২০১৩ সালের ২২শে মে তারিখ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে আবিষ্কৃত মোট বহির্গ্রহের সংখ্যা হচ্ছে ৮৮৯, মোট গ্রহ জগতের সংখ্যা ৬৯৪ এবং মোট একাধিক গ্রহবিশিষ্ট জগতের সংখ্যা ১৩৩। এদের আকার এবং ভর পৃথিবীর মত থেকে শুরু করে বৃহস্পতির চেয়ে অনেক বেশি পর্যন্ত হতে পারে। ২০১১ সালের ২০শে ডিসেম্বর কেপলার মহাকাশ দুরবিন প্রথম পৃথিবীর সমান আকারের বহির্গ্রহ, কেপলার ২০ই ও কেপলার ২০এফ আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। তারা কেপলার ২০ তারাটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। ২০১২ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে আকাশগঙ্গার প্রতিটি তারার চারপাশে গড়ে ১.৬টি করে গ্রহ থাকতে পারে, এছাড়া থাকতে পারে আরও অনেক নিঃসঙ্গ গ্রহ যারা কোন তারাকে আবর্তন করে না। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে হার্ভার্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন, আকাশগঙ্গায় পৃথিবীর সাথে তুলনীয় আকারের (পৃথিবীর ভরের ০.৮ থেকে ১.২৫ গুণ) অন্তত ১৭০০ কোটি বহির্গ্রহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে যারা তাদের তারাকে ৮৫ দিন বা তার কম সময়ে একবার আবর্তন করে।
ব্যুৎপত্তি
thumb|right|220 px|অলিম্পীয় দেবতাগণ , যাদের নামে প্রাচীন গ্রিকেরা সৌর জগতের গ্রহগুলোর নামকরণ করেছিলেন।
প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে লক্ষ করতেন, কীভাবে নির্দিষ্ট কিছু আলো আকাশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতো যার সাথে অন্যান্য তারার আলোর পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ এই আলোগুলো তারা ছিল না; তারা মনে করতো এগুলো পৃথিবীর চারিদিকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থান করছে এবং স্থির অবস্থায় আছে। এই আলোগুলোকে প্রথম প্রথম প্রাচীনকালের গ্রিকরা πλανήτης (planētēs) নামে অভিহিত করতো। এই গ্রিক শব্দটির অর্থ হল বিক্ষিপ্তভাবে পরিভ্রমনকারী। সকলের ধারণা মতে এই শব্দটি থেকেই planet শব্দ উৎপত্তি লাভ করেছে। আর planet শব্দের বাংলা হিসেবে গ্রহ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
পশ্চিমা বিশ্বে নিকট-মহাবিশ্বের পরিমণ্ডলে তথা সৌর জগতে অবস্থিত এই গ্রহগুলোর নামকরণ করা হয়েছে গ্রিকো-রোমান দেবতাদের নামে। গ্রহের এই নামগুলো গ্রিকরাই রেখেছিল। অবশ্য দেবতাদের নামে গ্রহের নামকরণের সূচনা করেছিল প্রাচীন পশ্চিমের সুমেরীয় সভ্যতার মানুষেরা, প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বর্তমানে ইরাকে এই সভ্যতার উৎপত্তি ঘটেছিল। পরবর্তীতে মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় এই নামগুলো গৃহীত হয়েছিল যদিও নামগুলোকে তারা উচ্চারণের সুবিধার্থে নিজেদের মত করে নিয়েছিল। উদাহরণস্বরুপ: ব্যাবিলনীয়দের নামকরণ পদ্ধতির উল্লেখ করা যায়। গ্রিকরা তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং রাশিচক্রের মূল নামকরণগুলো এই ব্যাবিলনীয়দের কাছ থেকেই ধার করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে গ্রিসে ব্যাবিলনিয়ার তত্ত্ব ও নামগুলোর ব্যবহার শুরু হয়। গ্রিকরা ব্যাবিলনীয় নামের তালিকায় অনেকগুলো নামের পরিবর্তে তাদের নিজেদের দেবতাদের নাম যোগ করে দিয়েছিল। অবশ্য নামের এই অনুবাদে অনেক সন্দেহ রয়ে যায়: যেমন, ব্যাবিলনিয়ার মতে একটি জ্যোতিষ্কের নাম ছিল তাদের যুদ্ধ দেবতা নেরগুল-এর নাম অনুসারে, গ্রিকরা এই জ্যোতিষ্কের নাম রাখে তাদের যুদ্ধ দেবতা এরেসের নামে। কিন্তু এরিস এবং নেরগুলের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে; এরিস শুধু যুদ্ধ দেবতা ছিল, কিনবতু নেরগুল একইসাথে মৃত্যু এবং মহামারীর দেবতা ছিল।The Days of the Week
পরবর্তীতে রোমান সম্রাজ্যের কর্তৃত্ব এবং তারও পরে রোমান ক্যাথলিক চার্চের একাধিপত্যের কারণে কয়েক শতাব্দী জুড়ে গ্রিক নামগুলোর পরিবর্তে রোমান তথা ল্যাটিন নামগুলোই ব্যবহৃত হয়েছে।
সৌর জগৎ
গ্রহসমূহের ও তাদের বৈশিষ্ট্য
নাসার (21 oct, 2019) তথ্য মতে বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা ৭৯ টি এবং শনির সংখ্যা ৮২ টি। তাই শনির উপগ্রহের সংখ্যা বেশি ধরা যায় ।
প্লানেট নাইন
সৌরজগতে আরও একটি গ্রহের সন্ধান মিলেছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। আঁধারে থাকা ও বরফে আচ্ছাদিত এই গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্লানেট নাইন’ বা নবম গ্রহ। বুধবার এক ঘোষণায় ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একদল মহাকাশ বিজ্ঞানী নতুন এ গ্রহের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেন।প্লুটো – একটি বামন গ্রহের গল্প – আদি থেকে অন্ত গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৫ থেকে ১০ গুণ বড়।পৃথিবীর চেয়ে এর ব্যাস দ্বিগুণ থেকে চারগুণ বেশি।এটি সৌরজগতে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ।সূর্য থেকে দূরত্ব খুব বেশি হওয়ার কারণেই গ্রহটিতে খুবই কম আলো পৌঁছায়।
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
বিষয়শ্রেণী:গ্রহ
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ
বিষয়শ্রেণী:পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞান
বিষয়শ্রেণী:গ্রহ বিজ্ঞান |
উদ্ভিদ | https://bn.wikipedia.org/wiki/উদ্ভিদ | উদ্ভিদ জীবজগতের একটি বড় গোষ্ঠী যাদের অধিকাংশই সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যমে শর্করা-জাতীয় খাদ্য তৈরি করতে পারে এবং এরা চলাচল করতে পারে না। বৃক্ষ, গুল্ম, বিরুৎ ইত্যাদি উদ্ভিদ জগতের অন্তর্গত। পৃথিবীতে প্রায় ৩৫০,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৮৭,৬৫৫টি প্রজাতিকে শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে ২৫৮,৬৫০টি হলো সপুষ্পক উদ্ভিদ।
বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। বৃক্ষকে এভাবে সঙ্গায়িত করা হয়: কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ যার মাটি থেকে সুস্পষ্ট শীর্ষ প্রকটতা বিশিষ্ট একটি একক প্রধান কাণ্ড অথবা গুঁড়ি থেকে বহুধাবিভক্ত অপ্রধান শাখা বিকশিত হয়। কিছু লেখকের মতে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায় বৃক্ষের ন্যূনতম উচ্চতা ৩ মিটার[২] থেকে ৬ মিটার হওয়া উচিত।[৩] আবার কিছু লেখক গাছের কাণ্ডের ন্যূনতম ব্যাস নির্ধারণ করেছেন ১০ সেমি। বৃক্ষ
গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বৃক্ষ থেকে ছোট হয় এবং এর কাণ্ড, শাখা প্রশাখা শক্ত হলেও বৃক্ষের কাণ্ড, শাখা প্রশাখা থেকে ছোট ও চিকন হয় গুল্মের মূল মাটির খুব বেশি গভীরে যায় না। এই উদ্ভিদের প্রধান কাণ্ডটির সারা গায়ে শাখা গজায়।
বিরুৎ এর কাণ্ড, শাখা প্রশাখা নরম হয়। আকারে ছোট হয়।
উদ্ভিদের প্রাণ আছে এটা প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু।
আরও দেখুন
জীবমণ্ডল
অঙ্কুরোদ্গম
উদ্ভিদের ছবি
ফলের ছবি
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Answers to several questions from curious kids about plants
Index Nominum Algarum
Interactive Cronquist classification
Plant Photo Gallery of Japan - Flavon's Wild herb and Alpine plants
Plant Picture Gallery
Plant Resources of Tropical Africa
www.prota.org - PROTA’s mission
Tree of Life
উদ্ভিদসংক্রান্ত এবং উদ্ভিদসমূহের ডেটাবেস
African Plants Initiative database
Australia
Chilean plants at Chilebosque
e-Floras (Flora of China, Flora of North America and others)
Flora Europaea
Flora of Central Europe
Flora of North America
List of Japanese Wild Plants Online
Meet the Plants-National Tropical Botanical Garden
Native Plant Information Network
All things Plants Database
United States Department of Agriculture
বিষয়শ্রেণী:জীব
বিষয়শ্রেণী:মূল বিষয়ের নিবন্ধ |
পোপ | https://bn.wikipedia.org/wiki/পোপ | পোপ (লাতিন: papa, গ্রীক থেকে: πάππας, রোমানাইজড: পাপ্পাস, 'ফাদার'), সর্বোচ্চ পোপ (পন্টিফেক্স ম্যাক্সিমাস বা সামাস পন্টিফেক্স), রোমান পোন্টিফ (রোমানাস পন্টিফেক্স) বা সার্বভৌম পোপ নামেও পরিচিত, রোমের বিশপ (বা ঐতিহাসিকভাবে রোমের পিতৃপুরুষ), বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের প্রধান এবং ভ্যাটিকান সিটি স্টেটের রাষ্ট্রপ্রধান বা সার্বভৌম। ক্যাথলিক দৃষ্টিকোণ থেকে, রোমের বিশপের আদিমতা মূলত সেন্ট পিটারের প্রেরিত উত্তরাধিকারী হিসাবে তার ভূমিকা থেকে উদ্ভূত হয়, যাকে যীশু প্রধানতা প্রদান করেছিলেন, যিনি পিটারকে স্বর্গের চাবি এবং "বাঁধা ও হারানোর" ক্ষমতা দিয়েছিলেন। , তাকে "শিলা" হিসাবে নামকরণ করে যার উপর চার্চ নির্মিত হবে। বর্তমান পোপ হলেন ফ্রান্সিস, যিনি ১৩ মার্চ ২০১৩-এ নির্বাচিত হন
যদিও তার অফিসকে প্যাপসি বলা হয়, এপিসকোপাল সী এর এখতিয়ারকে হলি সি বলা হয়। এটি হলি সি যা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সার্বভৌম সত্তা যা স্বতন্ত্রভাবে স্বাধীন ভ্যাটিকান সিটি রাজ্যে অবস্থিত, একটি শহর-রাষ্ট্র যা রোমের সংলগ্ন মধ্যে একটি ভৌগোলিক ছিটমহল গঠন করে, ইতালি এবং হলি সি এর মধ্যে 1929 সালে ল্যাটারান চুক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এর সাময়িক এবং আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে। হলি সি আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন স্তরে আনুগত্য এবং অনেক স্বাধীন রাষ্ট্রের সাথে এর কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে স্বীকৃত। ক্যাথলিক ঐতিহ্য অনুসারে, প্রথম শতাব্দীতে সেন্ট পিটার এবং সেন্ট পল দ্বারা রোমের অ্যাপোস্টোলিক সিজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পোপপদ বিশ্বের সবচেয়ে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি এবং বিশ্বের ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট অংশ রয়েছে। প্রাচীনকালে পোপরা খ্রিস্টধর্মের প্রসারে সাহায্য করতেন এবং বিভিন্ন মতবাদের বিরোধের সমাধানের জন্য হস্তক্ষেপ করতেন। মধ্যযুগে, তারা পশ্চিম ইউরোপে ধর্মনিরপেক্ষ গুরুত্বের ভূমিকা পালন করেছিল, প্রায়ই খ্রিস্টান রাজাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে। এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, দাতব্য কাজ, এবং মানবাধিকার রক্ষা।[12][13] সময়ের সাথে সাথে পোপতন্ত্র ব্যাপক ধর্মনিরপেক্ষ এবং রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করে, শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক শাসকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সাম্প্রতিক শতাব্দীতে পোপতন্ত্রের সাময়িক কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়েছে এবং অফিসটি এখন মূলত ধর্মীয় বিষয়ে মনোনিবেশ করেছে। বিপরীতে, আধ্যাত্মিক কর্তৃত্বের পোপ দাবিগুলি সময়ের সাথে সাথে ক্রমবর্ধমানভাবে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, 1870 সালে পোপ প্রাক্তন ক্যাথেড্রার কথা বলার সময় বিরল অনুষ্ঠানের জন্য পোপ অযোগ্যতার মতবাদের ঘোষণার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয় - আক্ষরিক অর্থে "চেয়ার থেকে (সেন্ট পিটার)"- বিশ্বাস বা নৈতিকতার একটি আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা জারি করা। 1.3 বিলিয়ন ক্যাথলিক এবং ক্যাথলিক বিশ্বাসের বাইরে থাকা উভয়ের উপর তার অবস্থানের ব্যাপক কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক প্রভাবের কারণে পোপকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়,[14][15][16] এবং কারণ তিনি প্রধান। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা।
ক্যথলিক শাখার প্রধান ধর্ম গুরু।
পাদটীকা
বহিঃসংযোগ
Pope Endurance League - Sortable list of Popes
Data Base of more than 23,000 documents of the Popes in latin and modern languages
The Holy See - The Holy Father—website for the past and present Holy Fathers (since Pope Leo XIII)
Origins of Peter as Pope
The Authority of the Pope: Part I
The Authority of the Pope: Part II
বিষয়শ্রেণী:রাষ্ট্রপ্রধান
বিষয়শ্রেণী:ক্যাথলিক ধর্মীয় উপাধি
বিষয়শ্রেণী:ধর্ম ও রাজনীতি |