Title
stringlengths
1
106
Time
stringlengths
28
73
Content
stringlengths
0
42.5k
Tags
stringlengths
0
210
বন্দি আট পরিবার, দেয়াল টপকে বাইরে চলাচল
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:১০
বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই আটটি পরিবারের। মই বেয়ে ৬ ফুট উঁচু দেয়াল টপকে বাইরে যাতায়াত করতে হয় তাদের। তবে দেয়াল টপকানোর কাজে ব্যবহৃত মই ও বালুর বস্তা সরিয়ে ফেলতে বলেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। ২৪ বছর ধরে এমন বন্দি জীবন বলে দাবি তাদের। দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের এলাকাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর টপকে বের হওয়া ছাড়া বাইরে যাতায়াতের পথ নেই আটটি পরিবারের।বন্দি পরিবারের সদস্যরা জানান, এক সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতর দিয়ে তাদের যাতায়াত উন্মুক্ত ছিল। ৩০-৩৫ বছর আগে যখন সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়, তখনও তাদের কথা ভেবে দুটি ফটক রাখা হয়। যেখান দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারতেন তারা। এরপর হঠাৎ করেই ফটক দুটি ভেঙে সেখানেও সীমানা প্রাচীর তুলে দেয় কর্তৃপক্ষ, বন্দি হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। উপায় না পেয়ে বালুর বস্তা ফেলে ও মই দিয়ে দেয়াল টপকে বাইরে যাতায়াত শুরু করেন তারা। কিন্তু সম্প্রতি সেটাও বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।দেয়ালে বন্দি বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ মৃধা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সরকারি হাসপাতালের দেয়াল টপকে বাইরে আসা-যাওয়া করছি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে এসে এখন নিজেই একটা বন্দি জীবন পার করছি। এই এলাকার ছোট ছেলেমেয়েরা নির্বিঘ্নে স্কুলে যেতে পারছে না। আমি নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারছি না। এই বয়সে দেয়াল টপকে আসা-যাওয়া করতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা আটটি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছি।’নিজেদের দুর্ভোগের কথা জানালেন দেয়াল বন্দি বদিউল আলম বাবুল ও অমূল্য চন্দ্র সূত্রধর। তাদের ভাষ্য, তাদের বাড়ির কারও মৃত্যু হলে লাশ বাইরে নিতে হয় হাসপাতালটির দেয়াল টপকে। এখন সেটাও আর পারবেন না। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে এত বছর বালুর বস্তা ও মই দিয়ে দেয়াল টপকে চলাচল করেছেন কিন্তু বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এসে দেয়ালের পাশের মই ও বালুর বস্তা সরিয়ে ফেলতে বলেছেন। বন্দি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আহম্মদ কবীর হাসপাতালের পশ্চিম পাশ হয়ে এসএ সরকারি কলেজ রোড পর্যন্ত একটি নালা নির্মাণের আবেদন করেছিলেন। পৌর কর্তৃপক্ষ নালাটি নির্মাণ করে দিলে তার ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারবেন তারা। হাসপাতালের ভেতরেও বর্ষায় জলাবদ্ধতা থাকবে না।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা আলী এহসান বলেন, দেয়াল টপকে বহিরাগতদের আসা-যাওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটে। বাইরের লোকজন ভেতরে এসে আড্ডা মারে, হট্টগোল করে। মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় এ নিয়ে আলোচনার পর দেয়াল টপকে আসা-যাওয়া বন্ধ করা হয়েছে।আটটি পরিবারের বন্দি থাকার বিষয়ে জানতে কথা হয় দে‌বিদ্বার পৌর মেয়র সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনের বাসিন্দাদের অনেকেই বি‌ল্ডিং কোড না মেনে ইচ্ছামতো আবাসন গড়ে তুলেছেন। যার কারণে রাস্তা নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুতই যাতে তাদের জন্য রাস্তা ‌নির্মাণ করে দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বাসিন্দারা জায়গা ছেড়ে সহযোগিতা করলে কাজ‌টি সহজ হবে। 
দেয়ালে রুদ্ধ পরিবার
আট মাস পর বিদ্যালয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্ধ শিক্ষার্থী
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:১২
সড়ক দুর্ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে যায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার। তবে জীবনের তরে হারায় চোখের আলো। দুর্ঘটনার আট মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে যায় অন্ধ রুবিনা। বিদ্যালয়ে বিষাদময় পরিবেশ তৈরি হয়। তাকে পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে সহপাঠীরা। এ সময় সেও চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হলে কণ্ঠস্বর শুনে বান্ধবীদের নাম ধরে ডেকে কুশল বিনিময় করে রুবিনা আক্তার। এ ঘটনা ঘটে মুশুলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। রুবিনা নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ধরগাঁও গ্রামের রুবেল মিয়ার মেয়ে।জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট ইজিবাইকে চড়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক ধরে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল রুবিনা আক্তার। এ সময় দ্রুতগামী একটি বাস তাদের বহন করা ইজিবাইকটিকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় রুবিনাসহ ইজিবাইকের পাঁচ যাত্রী। পরে দু’জন মারা যায়। রুবিনাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবনের তরে অন্ধ হয়ে যায় সে। তার ডান হাত ও বাম পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাকে বাঁচাতে সহায়-সম্বল বিক্রি করেন দিনমজুর বাবা রুবেল মিয়া।বাড়িতে ফিরে প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠে গিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে তার মনপ্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই বৃহস্পতিবার বাবার সঙ্গে বিদ্যালয়ে যায় রুবিনা। বিদ্যালয়ে গিয়ে দুর্বলতাবশত ফটকের সামনে থাকা একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে পড়ে সে। খবর পেয়ে সহপাঠীরা তাকে ঘিরে ধরে। কিন্তু কাউকে দেখতে পারছিল না সে। দুর্ঘটনার কারণে রুবিনার মুখমণ্ডল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাকে দেখে আঁতকে ওঠে সহপাঠীদের অনেকে। দেখতে না পেলেও সহপাঠীদের কণ্ঠস্বর শুনেই বলে দিচ্ছে কে তার সঙ্গে কথা বলছে, খোঁজ-খবর নিচ্ছে। এমনকি অনেককে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছে।রুবিনা কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে, ‘আল্লাহ আমারে তুমি এমন শাস্তি কেন দিলা? আমি কি আর তোদের দেখতে পারব না। আমি কি আর তোদের মতো লেখাপড়া করতে পারব না। তোরা সকলে মিলে আমার চোখের একটা ব্যবস্থা কর। আমি আবার পড়ালেখা করতে চাই।’রুবিনার বাবা রুবেল মিয়া জানান, দুর্ঘটনায় দায়ী বাসের মালিক তাঁকে কোনো সহায়তা করেনি। স্থানীয়দের উদ্যোগে লাখ দেড়েক টাকার একটা ব্যবস্থা হয়েছিল, যা চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে গেছে। এখন টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার জোগাড় করতে পারছেন না। চিকিৎসক বলেছেন, বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারলে রুবিনা আবার দেখতে পারবে। কিন্তু তাঁর পক্ষে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করা কোনো দিনও সম্ভব হবে না।মুশুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘মেয়েটি শিক্ষার্থী হিসেবে খুব ভালো ছিল। দুর্ঘটনার পর তার চিকিৎসার জন্য বিদ্যালয় থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) বিদ্যালয়ে আসার পর তাকে অফিসে এনে অনেক বুঝিয়েছি, চিকিৎসায় যদি তার চোখ ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক টাকার দরকার, যা তার পরিবারের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব।’ 
সড়ক দুর্ঘটনা
এক দিনে ৫০ বাসের বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:১৪
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকাগামী দ্রুতগতির যানের লেনে বাস থামিয়ে যাত্রী নামানোর ঘটনায় ১০ দিনে ১৫৪টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবারই হয়েছে ৫০টি মামলা। হাইওয়ে পুলিশের এমন পদক্ষেপেও দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানো থামছে না। এদিনও বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে শিমরাইলে নামিয়েছেন বাসচালকের সহকারীরা। তাদের পাঁচ ফুট উঁচু সড়ক বিভাজক পার হতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।বৃহস্পতিবার দুপুরে শিমরাইলে কথা হয় আবদুল আজিজ নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। স্ত্রী রহিমা বেগমকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে আসা এই বৃদ্ধ বললেন, তারা বাসের সুপারভাইজারকে লোকাল লেনে নিয়ে নিরাপদে নামাতে বলেছেন। কিন্তু সেই কথার তোয়াক্কা না করেই দ্রুতগতির লেনে নামিয়ে চলে যায়। আজিজ বলেন, ‘আমরা বুড়া মানুষ। এত উঁচু দেওয়াল পার হবো কীভাবে, বুঝতে পারছি না।’আট লেনের এ মহাসড়কের দুটি করে চারটি লেন দ্রুতগতির। দুই পাশে সার্ভিস রোড হিসেবে পরিচিত লোকাল লেন রয়েছে আরও দুটি করে চার লেন। ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসগুলোর শিমরাইলে যাত্রী নামানোর জন্য কাঁচপুর সেতু পার হয়েই লোকাল লেনে চলে আসার কথা। কিন্তু চালকদের ভাষ্য, ওই লেনে স্থানীয় যানবাহনের কারণে জট লেগে থাকে। এতে সময় নষ্ট হয়। এ কারণে কেউই লোকাল লেনে যেতে চান না।পরিদর্শনে কর্মকর্তারাবৃহস্পতিবার দুপুরে মহাসড়কের শিমরাইল অংশ পরিদর্শনে আসেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি নাবিলা জাফরিন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস, র‍্যাব-১১ সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ তানভীর মাহমুদ পাশা, সদরের ইউএনও দেদারুল ইসলামসহ কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকাগামী দ্রুতগতির লেনে দূরপাল্লার বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়ার বিষয়ে নাবিলা আফরিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জনসাধারণের নিরাপত্তা ও ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে ওই অংশের সড়ক বিভাজকে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের জন্য নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌসের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় শাহানা ফেরদৌস জানান, ঈদুল ফিতরের আগে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর দপ্তরে বরাদ্দের ব্যবস্থা করে কাজ শুরুতে কিছুটা সময় লাগবে।হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ টিআই এ কে এম শরফুদ্দিন বলেন, ‘দ্রুতগতির লেনে কোনো বাস যেন যাত্রী নামাতে না পারে, সে জন্য আমরা সজাগ রয়েছি।’ তিনি জানান, ১১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অভিযানে ১৫৪টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কাগজপত্র না থাকায় আরও ১০টি গাড়ি আটক করা হয়েছে। 
মামলা
প্রকৃতিনির্ভর পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:২৮ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৩৫
সংকট নিরসনে প্রকৃতিনির্ভর পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য লবণাক্ততা, খাদ্য সংকট বাড়ছে। এসব সংকট মোকাবিলায় কৃষি, পানি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশগতভাবেই সব সমস্যার সমাধান করতে হবে।বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার তৃতীয় উপকূলীয় পানি সম্মেলন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খুলনার অ্যাওসেড কার্যালয়ে সম্মেলন কমিটির চেয়ারপারসন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। প্যানেল আলোচক ছিলেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ডর্প’র উপ-নিবার্হী পরিচালক মোহাম্মদ জোবায়ের হাসান, ব্র্যাকের ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের সেক্রেটারিয়েট প্রধান ড. মো. গোলাম রাব্বানী, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ড. মুজিবর রহমান।ওয়েবিনারে অতিথিরা। ছবি: সমকালউপকূলীয় পানি সম্মেলন কমিটির সদস্য সচিব ও অ্যাওসেড নিবার্হী পরিচালক শামীম আরফীনের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আক্তার, খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ, কামাল উদ্দিন আহমেদ, তৌহিদুল ইসলাম, মাধব চন্দ্র দত্ত প্রমুখ।পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলেন, পানির বিষয়টি কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এরই মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনার একটি অংশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অথচ এ দেশে পানি ব্যবস্থাপনায় কোনো নিদিষ্ট কর্তৃপক্ষ গড়ে উঠেনি। ষাটের দশকে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ তৈরি হলেও তা যুগোপযোগী করা হয়নি।তিনি আরও বলেন, পানি ব্যবস্থাপনায় বর্তমান আইনকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি, বৃষ্টি পানি সংরক্ষণ ও মিঠা পানির আধা বৃদ্ধি ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ নেই। 
সাবের হোসেন চৌধুরী, খুলনা
টুপিতে ভাগ্য বদল অর্ধলাখ নারীর
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:২৮ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০৭:১৫
জেলার মহাদেবপুরের কয়েকটি গ্রাম ‘টুপির গ্রাম’ বলে পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামে গ্রামে নারীদের বানানো নকশি টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। টুপি তৈরির আয় থেকে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। এসেছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। জানা গেছে, ওমানের জাতীয় টুপি ‘কুপিয়া’ তৈরি হচ্ছে মহাদেবপুরের নারীদের নিপুণ হাতে। এ ছাড়া সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে এসব টুপি। মানভেদে একেকটি ‘কুপিয়া’ এক থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়। গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে নারীরা সুই-সুতা ও কাপড় দিয়ে এসব টুপি তৈরি করেন।  সুইয়ের ফোঁড়ে নান্দনিক নকশা ফুটিয়ে তোলেন তারা। বিশেষ কায়দায় সেলাই ও ভাঁজ করে বানানো হচ্ছে এসব টুপি।জেলার তিনটি উপজেলা নওগাঁ সদর, মান্দা ও মহাদেবপুরের প্রায় ৯০টি গ্রামের বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৫০ হাজার নারী কারিগর বিশেষ ধরনের টুপি তৈরিতে সংশ্লিষ্ট। তবে মহাদেবপুরের খোসালপুর, রনাইল, ভালাইন, সুলতানপুর, কুঞ্জবন, মধুবন, হরমনগর, খাজুর, শিবগঞ্জ, তাতারপুর, উত্তরগ্রাম শিবগঞ্জ, গোয়ালবাড়ীসহ ৬০-৭০ গ্রামের নারী মূলত এসব টুপি তৈরি করছেন। ঈদ সামনে রেখে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। কেউ বাড়ির উঠানে, কেউ দলবদ্ধভাবে টুপি তৈরি করছেন।সরেজমিন দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা বিদেশি ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নকশার ছাপ দেওয়া সাদা রংয়ের টুপির কাপড় ও সুতা কারিগরদের কাছে পৌঁছে দেন। এসব কাপড়ে সুই-সুতা দিয়ে সুন্দর নকশা ফুটিয়ে তোলেন নারী কারিগররা। বোতাম, চেন, দানা ও মাছকাটা নামে চার ধরনের টুপি সেলাই করা হয়। কোনো টুপিতে নকশা তুলতে ২০-২৫ টাকা, কোনোটিতে ছয়-সাতশ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। এ কাজে একজন নারী কারিগরের মাসে তিন-চার হাজার টাকা আয় হয়।মহাদেবপুরে প্রায় ১৫ বছর আগে শুরু হয়েছিল টুপি তৈরির কাজ। সারাবছর এসব টুপি তৈরি হলেও রমজানে বেড়ে যায় চাহিদা। জেলার ১১ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এ টুপি তৈরির কাজ। তবে এতে কারিগররা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। দেড় দশক আগে মহাদেবপুরে টুপির ব্যবসা শুরু করেছিলেন ভোলা এবং ফেনী জেলার এক দল ব্যবসায়ী। তখন টুপি তৈরির পর ঢাকার চকবাজার, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো। ঢাকার ব্যবসায়ীরাই মধ্যপ্রাচ্যে এগুলো রপ্তানি করতেন।শিবগঞ্জ গ্রামের সুফিয়া বেগম জানান, স্বামী দিনমজুরের কাজ করে। তার একার আয় দিয়ে আগে কষ্ট করে সংসার চলত। অনেক সময় আধপেটা খেয়ে থাকতে হতো। তবে গত চার-পাঁচ বছর টুপিতে নকশা তোলার কাজ করে এখন সংসার ভালোই চলছে। বাড়িতে হাঁস-মুরগি, ছাগল ও গরু পালন করছে তারা। কুঞ্জবন গ্রামের সীমা বেগম জানিয়েছেন, প্রতিটি টুপি থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা পেয়ে থাকেন তিনি। প্রায় ১০ বছর আগে প্রতিবেশীর উৎসাহে শুরু করেন টুপিতে নকশা তোলার কাজ। স্বামী ও নিজের আয় দিয়ে এখন সংসার চলছে স্বাচ্ছন্দ্যে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জেলায় প্রায় সাতজন মহাজন রয়েছেন। এ মৌসুমে জেলা থেকে প্রায় ৫০ হাজার পিস টুপি তৈরি করা হবে। যার উৎপাদন খরচ প্রায় ৮ কোটি টাকা। তবে বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এর সবই রপ্তানি করা হবে। তবে সরাসরি নিজেরা রপ্তানি করতে পারলে বাড়তি দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারতেন।ভোলার পাইকারী ব্যবসায়ী জহির আব্দুল্লাহ জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টুপি কিনে তা সরাসরি ওমানে রপ্তানি করেন। ওমানেও তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। সেখান থেকে তিনি এই টুপি রপ্তানি করেন মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ওমানে তিনি প্রতিটি টুপি বিক্রি করেন ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়। তিনি মনে করেন, কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে টুপির মান বৃদ্ধির পাশাপাশি এর চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পাবে।নওগাঁ জেলা বিসিকের উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন সমকালকে জানান, এ হস্তশিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করতে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ সুদে ক্ষুদ্রঋণ চালু রয়েছে। এ খাতের কারিগররা আগ্রহী হলে দেশে ও দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ এবং বিপণনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। 
সংসার, ব্যবসা, উদ্যোক্তা
কীসে আটকে আছে গাজার যুদ্ধবিরতি
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৩০ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ১০:৪৭
ছয় বছরের ফাদি আল-জানত খাদ্যাভাবে হাড্ডিসার হয়ে উত্তর গাজার একটি হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছে। তার পাতলা চামড়া ভেদ করে বুকের হাড়গুলো স্পষ্ট। কাতর চোখ, নড়াচড়ায় ধীরগতি; যেন ক্ষুধার বিষ তার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। ছোট্ট ফাদির পা দুটি এখন আর তার শরীর বহনে সক্ষম নয়। সে এতটাই দুর্বল, আওয়াজ পর্যন্ত অস্ফুট হয়ে গেছে। অথচ গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতা শুরুর আগেও সে ছিল চঞ্চল, সুস্বাস্থ্যের প্রণোচ্ছল বালক। পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখত আনন্দ, হাসি-গানে। এক ভিডিওতে তাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে সমবয়সী একটি মেয়ের সঙ্গে নাচ-গান করতেও দেখা যায়।ফাদি গাজার লাখো হতভাগ্য শিশুর একজন, যাদের কাছে খাবার, বিশুদ্ধ পানি বা ওষুধ পৌঁছাচ্ছে না। ক্রমেই অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় তারা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ মৃত্যু ঠেকাতে পারছে না জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) গাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ওপর জোর দিয়ে আদেশ জারি করেছিলেন। তবে তার তোয়াক্কা করছে না ইসরায়েল। কার্যত কাউকেই মানছে না ইহুদিবাদী দেশটি। ক্ষুধার্তদের মুখে খাবার তুলে দিতে যারা ত্রাণের জন্য জড়ো হচ্ছেন; দখলদাররা তাদের গুলি করে হত্যা করছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে বোমা, অনাহার ও অপুষ্টিতে। গত সোমবার ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কবরস্থানে পরিণত করেছে। সেখানে শুধু লাখো মানুষকে কবরই দেওয়া হচ্ছে না; কবর দেওয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের অনেক নীতিকেও। ইসরায়েল দুর্ভিক্ষকে ত্বরান্বিত করছে। ছোট্ট ফাদি যেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে, গাজার সেই কামাল আদওয়ান হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় সম্প্রতি মারা যাওয়া ২৭ শিশুর অনেকে। বাকিরা মারা গেছে গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালে। চলমান পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্ব একটি যুদ্ধবিরতির দিকে তাকিয়ে আছে, যা বিধ্বস্ত গাজার ২২ লাখ নিরপরাধ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, গাজার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রই এবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব তুলতে যাচ্ছে। এর আগে একাধিকবার তারা ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ভেটো দিয়েছিল।  এরই মধ্যে কাতারের মধ্যস্থতায় একাধিকবার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে ইউরোপের বিভিন্ন শহরেও এ  নিয়ে সম্প্রতি দেনদরবার হয়। কিন্তু সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। আসেনি কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি।কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছতে নতুন আলোচনার জন্য গত সোমবার ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বেনেরা দোহায় পৌঁছেন। পরে তিনি অন্যত্র চলে গেলেও এ প্রক্রিয়া চলমান। পবিত্র রমজান শুরুর আগে বেশ কয়েক দফা আলোচনা ব্যর্থ হয়। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও চুক্তির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন।চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, তারা যুদ্ধবিরতি বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। তবে সফলতার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। বার্তা সংস্থা আনাদলু জানায়, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছেন। সেখান থেকে পরদিন তিনি মিসর যান। কায়রোতে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর আলোচনা হয়েছে। এ বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথ্যু মিলার বলেন, ব্লিংকেন স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথা বলেছেন, যার নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে ইসরায়েলের হাতে। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্য সফরে সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে অতি দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতির জন্য চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাবেন ব্লিংকেন। পাশাপাশি তিনি গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর ওপরেও জোর দেবেন। সর্বশেষ হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কয়েকটি ধারা আলজাজিরা প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে আছে– সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা যাজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করতে হবে। তিনটি পর্যায়ে কার্যকর হবে এ যুদ্ধবিরতি। প্রথম পর্যায়ে গাজার প্রধান দুই মহাসড়ক থেকে সেনাদের সরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে এবং তৃতীয় পর্যায়ে গাজা থেকে সব সেনাকে সরিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি পর্যায়ে নির্দিষ্ট সংখ্যককে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে সব জিম্মিকে মুক্ত করা হবে। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনের এ প্রস্তাবে সম্মত নন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল রাফায় স্থল অভিযান চালানোর বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। মিসর সীমান্তের কাছে এ অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী অবস্থান করছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রই সেখানে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে ইসরায়েলকে তাগিদ দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কার্যত যুদ্ধবিরতি আটকে আছে দুটি কারণে– হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়; অপরদিকে ইসরায়েল হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে চায়।যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে প্যালস্টিনিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের সেক্রেটারি জেনারেল মুস্তফা বারগৌতি বলেন, হামাসের প্রস্তাবটি বেশ নমনীয়। এ প্রস্তাব বাস্তবায়নে মূল অন্তরায় নেতানিয়াহু। কারণ তিনি জানেন, যুদ্ধ থামলে তাঁকে কারাগারে যেতে হবে। ৭ অক্টোবরের ঘটনা তো তাঁর ব্যর্থতাতেই হয়েছে।ব্রিটেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলিভার ডউডেন বলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে তিনি সমর্থন করেন। তবে গাজায় অতি দ্রুত যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। প্রভাবশালী ইহুদি ও মার্কিন সিনেটের নেতা চাক শ্যুমার ইসরায়েলে নতুন নির্বাচন চেয়েছেন এবং নেতানিয়াহুকে শান্তির পথে অন্তরায় বলে মন্তব্য করেছেন।  এ পরিস্থিতিতে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকায় আরও ৬৫ জন নিহত হয়েছে। আহত ৯২ জন। এতে মোট মৃত্যু ৩১ হাজার ৯৮৮তে পৌঁছেছে। আহত ৭৪ হাজার ১৮৮ জন। বিশ্ব ক্ষুধাবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিট ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) বলছে, উত্তরে আটকে আছে তিন লাখ ফিলিস্তিনি। কোনো পদক্ষেপ না নিলে মে মাসের মধ্যে তাদের ওপর আঘাত হানবে চরম দুর্ভিক্ষ। শুধু উত্তর গাজাই নয়, মিসর সীমান্তের কাছে দক্ষিণের রাফাতেও একই অবস্থা। গত সপ্তাহে রাফার আল-আওদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়টার্স অন্তত ১০টি চরম পুষ্টিহীন শিশশুকে দেখতে পেয়েছে।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, গাজায় এখন প্রত্যেকেরই মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার প্রধান ভলকার তুর্ক এ সংকটের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, তারা ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে এবং ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মনে হচ্ছে।গাজার ৩৫ শতাংশ ভবন ধূলিসাৎগাজার মোট ভবনে ৩৫ শতাংশ একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এক স্যাটেলাইট ছবির বরাত দিয়ে জাতিসংঘ এ তথ্য জানায়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ছবিটি সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা গেছে, বোমা মেরে ৮৮ হাজার ৮৮৬টি স্থাপনা ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।  
গাজায় হামলা, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল
ওরা আমার মেয়ের জীবন বিষিয়ে তুলেছিল
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৩৪ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ১০:৫১
গত ১৪ মার্চ আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লিখেছেন তিনি। পরে এ ঘটনায় দ্বীন ইসলাম ও আম্মানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেছেন, ‘ওরা আমার মেয়ের জীবন বিষিয়ে তুলেছিল।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সমমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কুমিল্লা প্রতিনিধি কামাল উদ্দিন।  সমকাল: আম্মানের সঙ্গে ঝামেলা শুরু কবে? শবনম: ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে জবিতে ভর্তির পরপরই আম্মান ও তার চক্রের ১০-১২ জনের টার্গেট হয় অবন্তিকা। ক্লাসে প্রথম হওয়া এর অন্যতম কারণ। নানাভাবে তাকে উত্ত্যক্ত করত। মেয়েকে বলতাম– একটু সহ্য করো, ঠিক হয়ে যাবে। প্রথমবর্ষে থাকতেই বিমানবাহিনীতে ওর চাকরি হয়। এক বছর পর জবিতে ফিরে এলে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। সমকাল: অবন্তিকা হোস্টেল ছেড়ে কেন ভাড়া বাসায় উঠলেন?শনবম: হোস্টেলে আম্মানের সহযোগী কয়েক মেয়ে অবন্তিকাকে পড়তে দিত না। কাপড়চোপড় ডাস্টবিনে ফেলে দিত। বিছানায় চিনি ঢেলে রাখত। পরীক্ষার আগে বই সরিয়ে নিত। রুমে ডিজে পার্টি করত। এক পরীক্ষার আগে রাত ১১টায় ওর মামা হোস্টেল থেকে ওকে বাসায় নিয়ে যায়। সমকাল : অবন্তিকার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছিল...শবনম: সেটি ছিল আম্মান চক্রের সাজানো নাটক। জিডিতে কী ছিল ওরা জানতে দেয়নি। আম্মানের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তারা অবন্তিকাকে ফাঁসাতে জিডি করে। ওর বাবাকে নিয়ে ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে বসি। কিন্তু আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। অবন্তিকা কথা বললে ওর একাডেমিক বছর ৬ মাস পিছিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অনেকটা বাধ্য করে ওর বাবার কাছে অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়। সমকাল: অবন্তিকার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেন?শবনম: আম্মানসহ ৮-১০ জন সবসময় ওর পিছে লেগে থাকত, অবন্তিকা প্রায়ই সে কথা বলত। এই চক্রে আছে রাগিব হাসান রাফি, রেজাউল, লাকি আক্তার, বন্যা, আঁখি, রিমি, সামিরা, গীতা মণ্ডল, মহিম ও সুমাইয়া। এ ছাড়া আইন বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর কেউই এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারেন না। সমকাল:  আম্মান ফুসবুকে লিখেছেন, অবন্তিকা বাবার শোকে আত্মহত্যা করেছেন... শবনম: এসব মিথ্যাচার। কারণ অবন্তিকার বাবা মারা গেছেন গত বছরের ১২ এপ্রিল। প্রায় এক বছর পর সে বাবার শোকে মারা যাবে কেন? কেউ কি শখ করে আত্মহত্যা করে? সমকাল: অবন্তিকা তো প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন...শবনম: প্রক্টর অফিসের সব নিয়ন্ত্রণ করত আম্মান। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমার মেয়েটাকে জীবন দিতে হতো না। সমকাল: আম্মানের দাপটের নেপথ্যে তাহলে কী?  শবনম: রাজনৈতিক প্রশ্রয় ছাড়া কেউ এমন হতে পারে না। সে (আম্মান) নিজেকে কখনও কখনও সাংবাদিক পরিচয় দিত। পুলিশও নাকি তার কথা শুনত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন জানি তার কাছে জিম্মি ছিল।সমকাল: গ্রেপ্তার দ্বীন ইসলাম পুলিশকে বলেছেন, তাঁর কোনো দায় নেই... শবনম: আমার মেয়ে তো বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আর মৃত্যুর আগে কেউ কারও নামে মিথ্যা লিখে যায় না। শুধু আম্মান আর দ্বীন ইসলাম তো নয়, আরও ৮-১০ জন অবন্তিকাকে জ্বালাত। ওরা আমার মেয়ের জীবন বিষিয়ে তুলেছিল। তারা কি দায় এড়াতে পারে? তদন্ত কমিটিকে সবার নাম বলব। সমকাল: বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন?শবনম: বিভাগীয় চেয়ারম্যান, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর সবাই জানতেন। যখনই ঢাকায় গেছি, তখনই তাদের সহায়তা চেয়েছি। শুধু ভিসির রুমে যাওয়া হয়নি। কেউ কথা রাখেনি। সমকাল: অবন্তিকার সঙ্গে আপনার শেষ কথা কী?শবনম: ইফতারের আগে ওর মন খারাপ দেখে জানতে চাই– কী হয়েছে? উত্তরে বলে– মা, ওরা মনে হয় আমাকে বাঁচতে দেবে না। সারাক্ষণ পিছে লেগে থাকে। বাসায় এসেও শান্তি পাই না। আম্মান নাকি প্রতিশোধ নেবে। আমি মরে না যাওয়া পর্যন্ত ওরা শান্তি পাবে না। সমকাল: বিচার পাওয়ার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?শবনম: শিক্ষার্থীরা তো আন্দোলন করে যাচ্ছে। উপাচার্যকেও আন্তরিক দেখছি। ভয় হয়, যদি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বা সাক্ষী না পাওয়ায় বিচারটা থমকে যায়!  সমকাল: বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকসভায় আমন্ত্রণ জানানোর পরও গেলেন না? শবনম: শুনেছি শোকসভায় অবন্তিকার গুণের প্রশংসা হয়েছে, তাকে মেধাবী বলা হয়েছে। কী লাভ এখন এসব শুনে! জীবিত থাকতে তো মেয়েটা বিচার পেলে না! তাই যাইনি। সমকাল: সরকারের কাছে কোনো প্রত্যাশা?শবনম: অবন্তিকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জেনেছি। উপাচার্যও বিচারের পক্ষে। দু’জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আমার মেয়ে তো আর ফিরবে না। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো মেয়ে যেন আর এমন নিপীড়নের শিকার না হয়। অনেকে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। তাই অবন্তিকার ঘটনার বিচার হলে সেটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটাই চাওয়া। 
শিক্ষার্থীর লাশ, আত্মহত্যা, অবন্তিকার আত্মহত্যা, সাক্ষাৎকার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ চায় সরকার
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৩৬ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০৭:০৪
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশে বিশ্বজুড়ে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এআইনির্ভর প্রযুক্তিই আগামীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে উন্নত এই প্রযুক্তিকে মানুষের পেশা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন অনেকেই। বিভিন্ন দেশ তাই এআইয়ের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে আইন ও নীতিমালা করছে। বাংলাদেশও এআই নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এটুআই ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মানুষের অধিকার সংরক্ষণ ও সুবিধার জন্য এআই ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। অন্যান্য দেশে এই আইনের ব্যবহার পরীক্ষা করে দেখতে সময় নিচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এআই আইনের খসড়া তৈরি হবে।ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এআইকে বাইপাস করে কিছু করা সম্ভব নয়। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমরা কতটুকু উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করব এবং কতটুকু অপপ্রয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করব। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত পরামর্শ ও মতবিনিময় সভা শেষে এসব কথা বলেন দুই মন্ত্রী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছিলেন বিজ্ঞানীরা। গত বছর চ্যাটজিপিটির আত্মপ্রকাশ এই খাতে বড় ধরনের আলোড়ন তৈরি করে। এআইয়ের প্রয়োগ নিয়ে একদিকে যেমন উৎফুল্লতা দেখা দেয়, অন্যদিকে এর অপপ্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন অনেকেই। বিভিন্ন দেশ, প্রতিষ্ঠান এআইয়ের জন্য নীতিমালা আইন প্রণয়ন করা শুরু করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন চাকরির প্রায় ৪০ শতাংশ কেড়ে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তরফ থেকে এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এআই চ্যাটবট বা এই জাতীয় পণ্য জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার আগে সরকারের নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটির কাছে জমা দিতে হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকি ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য এআই কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। পারমাণবিক অস্ত্রের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ যাতে সর্বদা মানুষের হাতে থাকে, তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হতে পারে। অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন প্যানেলে অংশ নেওয়া গুগলের সুন্দর পিচাই এবং ওপেনএআইর স্যাম অল্টম্যানসহ প্রযুক্তি নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক স্তরে এআই নিয়ন্ত্রণের ধারণাকে সমর্থন করেছেন। গত অক্টোবরে মার্কিন সরকার এই ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করে। এই আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্য জোটগুলোও এআই ব্যবহারের নীতিমালা করেছে।জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির সমকালকে বলেন, এআই আগামী দিনের অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে। এর প্রয়োগে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি হবে। তেমনি এর অপপ্রয়োগ ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সংকট তৈরি করতে পারে। তাই এআই নিয়ে নীতিমালা জরুরি। তিনি বলেন, নীতিমালা বা আইন যাই হোক, তা প্রণয়নে একটি বিষয়ে জোর দিতে হবে। আর তা হলো, আইনকানুন যেন প্রযুক্তির বিকাশে অন্তরায় না হয়।সফটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইন, এটুআই আইনসহ সম্প্রতি প্রণীত বিভিন্ন আইনের সময় অংশীজনের মতামতের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। এআই পুরোটাই তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক। এ-সংক্রান্ত আইন করতে অবশ্যই অংশীজনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।আইনে কী কী থাকছে– জানতে চাইলে গতকালের বৈঠকের আইনমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে সেটা আমরা বলতে চাই না। কারণ, এটাও পরিবর্তনশীল। ‌বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, অন্যান্য জায়গায় কী আইন হচ্ছে সেটা একটু পরীক্ষা করার জন্য এই সময়টুকু নিয়েছি। জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে আইনমন্ত্রী নির্দেশনা দেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমরা কী ভাবছি ও আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আমরা কতটা প্রস্তুত। তাঁর নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করি এবং যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করি। তিনি বলেন, এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ ও বড় একটা বিতর্ক হচ্ছে, আমরা কতটুকু উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করব, কতটুকু অপপ্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ করব। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন দেখেছি, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিকিউটিভ অর্ডার দেখেছি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ যেসব দেশ ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন পলিসি, গাইডলাইন, আইন করেছে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সবার মতামত নিয়ে এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে মন্ত্রীর কাছে আবার আসব। এর পর অংশীজন হিসেবে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।  
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সরকার, আইন
অনলাইন সেবায় আগ্রহ নেই, মন্ত্রীর দপ্তরে ‘সমাধান’
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৩৮ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০৬:৫৮
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী করিমুননেছার বয়স ৫৭ বছর। সকাল থেকে এক নাতিকে নিয়ে তিনি ঢাকায় সচিবালয়সংলগ্ন পরিবহন পুল ভবনের ছয়তলায় ঘুরছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দপ্তরের সামনে। নাতিকে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিশেষ ছাড়ের সুপারিশ নেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য। আরও ৫/৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং দর্শনার্থী রয়েছেন মন্ত্রীর অপেক্ষায়।বেলা গড়িয়ে সাড়ে ১১টা। হঠাৎ মন্ত্রী এলেন এবং তাঁর দপ্তরে প্রবেশ করলেন। তখনই হুড়মুড় করে মন্ত্রীর দপ্তরে প্রবেশ করেন অপেক্ষমাণ মুক্তিযোদ্ধা ও দর্শনার্থীরা। ভেতরে গিয়ে বিস্মিত করিমুননেছা। অপর দরজা দিয়ে তাদের মতো আরও অন্তত ২০ জন প্রবেশ করেছেন মন্ত্রীর কক্ষে। মন্ত্রী চেয়ারে বসলেন; তাঁর সহায়ককর্মীরা চুপ থাকতে বললেন সবাইকে। মন্ত্রীর সামনে উপস্থাপনের জন্য আগতদের দরখাস্ত বা সংশ্লিষ্ট কাগজ চেয়ে নেন সহায়ককর্মীরা। এরপর কাগজে উল্লিখিত নাম ধরে ডাক দিয়ে তাদের বক্তব্য শুনে সমাধান দিতে থাকেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গত ১১ মার্চ সরেজমিন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।ঢাকাসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্টদের এমন ভিড় প্রতি কার্যদিবসেই লেগে থাকে মন্ত্রণালয়ে। চাইলেই দেখা মেলে মন্ত্রীর। হাজারো সমস্যা মুক্তিযোদ্ধাদের; কারও নিজের বা বাবার নামে ভুল বা ঠিকানা ভুল, কারও পুরোটাই ভুল। নয়তো মুক্তিযোদ্ধার ভাতা এলাকা পরিবর্তন, কারও নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তির আবেদন, সন্তানসন্ততি বা পোষ্যদের চাকরির সুপারিশ, শিক্ষাবৃত্তি, বিদেশে চিকিৎসা, কেউ বা অনলাইনে নাম ওঠানো, কারও আবার ভাতা বন্ধের আদেশ বাতিলের আবেদন থাকে। জেনেবুঝে বা ভুল করেও নানা ধরনের আবেদন নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আসছেন তারা। নানা ইস্যুতে দালালদের খপ্পরেও পড়েন কেউ কেউ। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের ভোগান্তি কমাতে ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট অনলাইনে ৩৮ ধরনের সেবা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেছে মন্ত্রণালয়।মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্তকরণ, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতাপ্রাপ্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও তথ্য সংশোধনসহ ৩৮ ধরনের সেবা ‘মাইগভ’ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পাওয়া যায়। আরও থাকছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পুস্তকপ্রাপ্তি, মুক্তিযুদ্ধের সাময়িক সনদ প্রদান, রেজিস্টার সংশোধন, চিকিৎসাসেবা দান স্কিমের আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে চিকিৎসাসেবা প্রদান, পিআরএল এবং ল্যাম্পগ্রান্ট অনুমোদন, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান স্কলারশিপ স্কিমের আওতায় ছাত্রবৃত্তি সেবাসহ অন্যান্য বিষয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় এই কার্যক্রম চালু করা হয়।খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সময়ের পরিক্রমায় অনলাইন সেবা কার্যক্রম থমকে গেছে। প্রচার না থাকার পাশাপাশি অনলাইন সেবায় গতি না থাকায় ফের মন্ত্রণালয়মুখী হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্টরা। এ-সংক্রান্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট অনলাইন সেবা চালু হওয়ার পর থেকে গত ১২ মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩১ জন এই সেবা গ্রহণ করেছেন, যাদের অধিকাংশই করোনাকালে (২০২০-২২) সেবা নিয়েছেন। এরপর গত দেড় বছরে এই সেবা গ্রহণের হার মুখ থুবড়ে পড়েছে। চাহিদা না থাকায় অনলাইন সেবা কার্যক্রমও সংকুচিত হয়েছে। আগে অনলাইনে ৩৮ ধরনের সেবা গ্রহণের সুযোগ থাকলেও সেটি এখন ১৮টি। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যয়ন লাগছে নাঅনলাইন সেবাগুলোর মধ্যে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চালু হওয়া ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) কার্যক্রমের ব্যবহার শতভাগ হচ্ছে। সমন্বিত তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যাদি অন্তর্ভুক্তির পুরো বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সোনালী ব্যাংক এখন অনলাইনে এমআইএসের মাধ্যমে করে। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এমআইএসের তথ্যাদি দেখার পাশাপাশি যাচাইয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের সদস্যদের যে কোনো বিষয়ে সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রত্যয়নপত্র বা সনদ বা অন্য কোনো ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি নেই বললেই চলে। যদিও ভুলে ভরা গেজেট ও অন্যান্য নথিপত্রের কারণে এমআইএসে মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্তিসহ সার্ভার ডাউনের কারণে কখনও ভোগান্তি পোহাতে হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, নানা ধরনের ভুলের কারণে তাদের অনেকেই সরকারি স্বীকৃতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সমন্বিত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধার লাল মুক্তিবার্তা, ভারতীয় তালিকা ও গেজেট প্রয়োজন হয়। বর্তমানে এই সমন্বিত তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৫৪৮। আছে ভোগান্তিমুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জামুকার কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে। এ পর্যন্ত জামুকার ৮৮টি সভা হয়েছে। গত আড়াই বছরে অনুষ্ঠিত ১৩টি সভার কার্যপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দুই শতাধিক নাম বা ঠিকানা-সংক্রান্ত গেজেট সংশোধনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। সিলেটের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরমান আলী জানান, তাঁর নাম ভুলবশত ‘কোরমান আলী’ নামে গেজেটভুক্ত হয়েছিল। এটি সংশোধনের জন্য তাঁকে প্রায় দেড় বছর অপেক্ষা করতে হয়। সংশোধিত গেজেট আসার পর তাতে বাবার নামে ভুল ধরা পড়ে। মূল নথিতে বাবার নামের তথ্য সঠিক থাকায় বিষয়টি ফের গেজেটের জন্য পাঠানো হয়েছে। এসব কারণে তাঁর তথ্যাদি এমআইএসে নথিভুক্ত হচ্ছে না। ভাতাও পাচ্ছেন না।ঢাকার লালবাগের মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গেজেট সংশোধনের বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর তিনি নথিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখে দিয়েছেন। এরপরও ১০ মাসে সমস্যার সমাধান হয়নি। সেখানে অনলাইনে আবেদন করলে কী হতে পারে, সেটা কি আর বলার দরকার আছে?’সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য নিয়েছেন, তাতে সাড়া অনেক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকঢোল পিটিয়ে অনেক সেবা চালু করলেও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারছে না। মুক্তিযোদ্ধাদের ভোগান্তি অনেক। এখনও হাসপাতালে একটি কেবিন বেড পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ অনলাইন সিস্টেমেই এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। এ জন্য সদিচ্ছা জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তাঁর কাছে সমস্যা নিয়ে যাওয়া সহজ। কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যারা রয়েছেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, তাদের মানসিকতায় মুক্তিযোদ্ধারা নিগৃহীত হন। অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ দায়েরের সুযোগ থাকা উচিত। এর আলোকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।’মন্ত্রণালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স এখন ৬৫ বছরের বেশি। তারা অনলাইন সিস্টেমে অভ্যস্ত নন। এই অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কেউ কেউ সন্তান বা অন্য কারও মাধ্যমে অনলাইনে সেবা নেন। তবে অধিকাংশ সেটাও নেন না। আমরা চাই, তাদের কষ্ট না হোক, অনলাইনে সেবা নিক।’ তাঁর মতে, অভ্যাসবশত মুক্তিযোদ্ধারা সমস্যা সামাধনের জন্য সরাসরি মন্ত্রণালয়ে চলে আসেন। কারণ, তাঁর এখানে (দপ্তর) আসা সহজ। তারা নিজেরা দেখেশুনে সরাসরি সমস্যার সমাধান পান বলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।’ তথ্যগত ভুলভ্রান্তির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ভুল নানাভাবে হচ্ছে। এটি অস্বীকার করা যাবে না। তবে সেই ভুলগুলো মন্ত্রণালয় বা জামুকার নজরে আনা হলে তা দ্রুতই সমাধান করা হয়। এ ক্ষেত্রে আইনি কিছু বিষয় আছে, অর্থাৎ ব্যক্তির পরিচয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় রয়েছে; যেগুলো উপজেলা পর্যায়ে তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হয়। এগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গেজেট সংশোধন হয় না। তাই কিছু ক্ষেত্রে সময় লাগছে।’  
অনলাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেবামুলক উদ্যোগ, আ ক ম মোজাম্মেল হক
দুবাই বসে চীনাদের প্রতারণার ফাঁদ
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৪৪ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ১০:৪৩
একটি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করলে ১০০ টাকা। দুটি করলে ২০০। প্রথমে এমন প্রস্তাব আসে প্রতারক চক্রের কাছ থেকে। ঘরে বসে এমন কাজের লোভনীয় প্রস্তাব পেয়ে কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদি হাসান রাসেল রাজি হন। সাবসস্ক্রাইব করে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৬০০ টাকা পান তিনি। আস্থা অর্জন করতে প্রথম পর্যায়ে চক্রের বিনিয়োগ এটি, তা বুঝতে পারেননি তিনি। পরে তাঁকে অনলাইনে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ৪০ মিনিট পরই ৬০০ টাকা লভ্যাংশসহ মূলধন ফেরত পান তিনি। কিন্তু আরও বিনিয়োগের পর চক্রের কাছে আটকে যান। ফাঁদে পড়ে তিন দিনে ৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন মেহেদি। এভাবে অনলাইনে বিনিয়োগের নামে দেশ থেকে গত তিন মাসে ২৭০ কোটি টাকা পাচার হওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ১২টি ব্যাংক হিসাব নম্বর থেকে এই অর্থ পাচার হয়েছে। বাইন্যান্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টাকা ডলারে রূপান্তরিত করে দুবাইয়ে পাচার করা হয়। এই চক্রটির হোতা চীনা নাগরিকরা। তারা প্রতারণার জন্য দুবাইয়ে প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে বলে জানতে পেরেছে সিআইডি। তাদের সহযোগী হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে কাজ করে নেপালের নাগরিক। তৃতীয় ধাপে দুবাইয়ে প্রতারণার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বাংলাদেশিরা রয়েছে। চতুর্থ ধাপে কাজ করে বাংলাদেশে থাকা তাদের সদস্যরা। দুবাইয়ে প্রতারকদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোহাম্মদ মেজবাউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন সুলতানা দেশে আসার পর সম্প্রতি সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার উত্তর কামারগাঁওয়ে। মেজবাউদ্দিন দেড় লাখ টাকা বেতনে আর তাঁর স্ত্রী ১ লাখ টাকা বেতনে দুবাইয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৪০০ মোবাইল ফোন নম্বর রোমিং করে দুবাইয়ে নিয়ে গেছেন এই দম্পতিসহ চক্রের সদস্যরা। এই দম্পতির কাজ ছিল রোমিং করা নম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিকে কল করে ঘরে বসে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া। একই সঙ্গে কোনো কোনো ব্যক্তিকে ব্যাংক হিসাব নম্বর খোলার প্রস্তাব দিতেন। ওই ব্যাংক হিসাবে যত টাকা লেনদেন হতো তার ১ শতাংশ হিসাব নম্বরধারী কমিশন পেতেন। সাধারণ মানুষ অনলাইনে বিনিয়োগের নামে ওইসব ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা জমা দিতেন। এসব ব্যাংক হিসাব নম্বর পরিচালনা করে চীনারা। তদন্তে নেমে সিআইডি ১২টি ব্যাংক হিসাব নম্বর পেয়েছে, যাতে তিন মাসে ২৭০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই টাকা বাইন্যান্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডলারে রূপান্তরিত করে দুবাইয়ে পাচার হয়।সিআইডি বলছে, এই ১২টি ছাড়াও অসংখ্য ব্যাংক হিসাব রয়েছে চক্রের। পাচার হওয়া টাকার পরিমাণও অনেক বেশি হতে পারে। প্রায় প্রতিদিনই ভুক্তভোগীরা সিআইডিতে যোগাযোগ করছে।প্রথমে প্রতারক চক্রের সদস্যরা  রোমিং করা মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে অনলাইনে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। নম্বর দেখে মনে হবে, কল দেশ থেকেই দেওয়া হয়েছে। কেউ রাজি হলে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে তাদের আরেকজন সদস্য যোগাযোগ করবে। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করে ইউটিউবের দুটি লিংক পাঠানো হয়। দুটি সাবস্ক্রাইব করে তাৎক্ষণিকভাবে বিকাশ নম্বরে ২০০ টাকা পেয়ে যান সেই ব্যক্তি। ঘরে বসে এবং কোনো ঝামেলা ছাড়াই টাকা আয় হওয়ায় কারও সাধারণত সন্দেহ হয় না। সাবস্ক্রাইবের ফাঁকে টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। পরে চক্রটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে নেয়। সেই সঙ্গে তাদের তৈরি করা ও নিয়ন্ত্রিত ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করিয়ে নেওয়া হয়। এর পর অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় তারা। ২ হাজার টাকা বিনিয়োগে ২ হাজার ৬০০ টাকা, ৫ হাজারে ৭ হাজার, ১০ হাজারে ১৪ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। এভাবে ৮-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। প্রথম বিনিয়োগের পর লভ্যাংশসহ মূলধন ফেরত দেয় চক্র। পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ করলে সেই টাকা উত্তোলনের জন্য নানা কারণ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। গত জানুয়ারিতে রাজধানীর দক্ষিণখানের আমেনা বেগম নামে এক নারীর কাছ থেকে ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। মাটিকাটা এলাকার মোতাসিম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা, নুর আলম জিকুর ২ লাখ ১১ হাজার, হাতিরপুলের অলোক সাহার কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ১৪ লাখ টাকা, আব্দুর রহমান ৩২ লাখ টাকা, আবু শোয়েব ৩০ লাখ টাকা, সাভারের রেপোনা খানম ৪ লাখ টাকা, কুষ্টিয়ার মেহেদি হাসান রাসেল নামে এক ব্যক্তি ৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন। ভুক্তভোগী মেহেদি হাসান রাসেল সমকালকে বলেন, ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে ৩-৪ ঘণ্টায় ৬০০ টাকা বিকাশে পেয়েছিলেন তিনি। পরে তাদের কথা মতো ২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ২৬শ টাকা পান। এর পর ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। তাদের দেওয়া সিটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা জমা দেন তিনি। হিসাব নম্বরটি কুমিল্লার মোশারফ এগ্রো ফার্ম নামে খোলা। ৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর তারা আরও ১২ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করতে বলে। এই টাকা না দিলে আগের ৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে না বলে জানানো হয়। পরে বলে, ঝামেলা হয়েছে। আরও ২৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে লভ্যাংশসহ মূলধন ফেরত পাওয়া যাবে বলা হয়। এভাবে তিন দিনে তাঁর কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। প্রতারণার শিকার হয়ে ঢাকার দক্ষিণখান থানা ও নিউমার্কেট থানায় দু’জন ভুক্তভোগী সম্প্রতি মামলা করেন। দক্ষিণখান থানায় দায়ের করা মামলাটির বাদি আমেনা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেন– গত ২৪ জানুয়ারি অচেনা এক নারী তাঁর ফোনে কল করে ঘরে বসে অনলাইনে কাজের প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি হলে আরেক ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে এবং ইউটিউব চ্যানেলের লিংক দিয়ে সাবসক্রাইব করতে বলে। সাবসক্রাইব করে তিন দিনে তিনি সাড়ে ৪ হাজার টাকা আয় করেন চক্রের কাছ থেকে। এরই মধ্যে টেলিগ্রামে আরেকজন কথা বলে তাঁর সঙ্গে। পরে ওয়েবসাইটে বিনিয়োগের কথা বলে। প্রথম ধাপে লভ্যাংসসহ মূলধন ফেরত পেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের মূলধন আটকে দেয় চক্রটি। এর পর সেটি উত্তোলনের নামে পর্যায়ক্রমে ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলার বাদী আমিরুল মোস্তফা মোহাম্মদ ফজলুর রশিদ এজাহারে উল্লেখ করেন– প্রতারক চক্র তাঁর কাছ থেকে ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৮ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার মামলা দুটির তদন্ত করছে। তদন্তে নেমে মেজবাউদ্দিন ও ইয়াসমিন সুলতানা ছাড়াও অন্য পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তারা  হলেন– পঞ্চগড় জেলার ইসলামবাগ গ্রামের মোসাদ্দেকুর রহমান ওরফে নীড়, কায়েতপাড়ার আনোয়ার হোসেন ও চন্দনপাড়ার শাহিন ইসলাম, চাঁদপুরের উত্তর মতলব এলাকার মুক্তিরকান্দি গ্রামের সাদ্দাম হোসেন এবং যশোরের বেজপাড়ার আশিকুর রহমান। তাদের কেউ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট, কেউ ব্যাংক হিসাব নম্বরধারী। তারা চক্রের হোতাদের সহযোগী। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রাজীবুল হাসান সমকালকে বলেন, প্রতারণা চক্রের আরও সদস্য রয়েছে দেশে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 
প্রতারণা, দুবাই, চীন
ডেমরায় কাপড়ের গোডাউনে আগুন
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৪৫ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০৫:২৫
রাজধানীর ডেমরায় চারতলা ভবনের তিনতলায় একটি কাপড়ের গোডাউনে আগুন লেগেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ডেমরার ভাঙ্গাপ্রেস এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম। তিনি বলেন, ডেমরার ভাঙ্গাপ্রেস এলাকায় চারতলা ভবনটির তিনতলায় কাপড়ের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে চার তলাসহ অন্যান্য ফ্লোরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে একে একে ডেমরা, পোস্তগোলা ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ  শুরু করে।তালহা বিন জসিম বলেন, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ ছাড়া আগুনে হতাহতের কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, গুদাম হওয়ায় সেখানে কেউ থাকার কথা নয়।
আগুন, রাজধানী, ফায়ার সার্ভিস
নাশকতার কথা বলা প্রত্যক্ষদর্শী ‘নিখোঁজ’
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৪৮ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০৭:০১
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে গত রোববার বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর স্থানীয় এক ব্যক্তি দাবি করেছিলেন, দুর্ঘটনার আগে কয়েক কিশোর সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করছিল। ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। তাদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ এবং রেললাইনের তিনটি বিয়ারিং প্লেট পাওয়া যায়। দুই দিন পর দুর্ঘটনাস্থলের তিন কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে দাবি করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার কিশোররা বিয়ারিং প্লেট খুলে ফেলায় বিজয় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়েছে, সেই ব্যক্তির খোঁজ মিলছে না। জানা গেছে, সেই ব্যক্তির নাম কামাল হোসেন। তিনি রেললাইন-সংলগ্ন উরকুটি গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। দুর্ঘটনার ৮ ঘণ্টা পর একটি ভিডিওতে কামাল সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করা কিশোরদের ধাওয়া দেওয়ার দাবি করেন। এরপর দুর্ঘটনাস্থল থেকে ব্যাগ পাওয়ার দাবি করেন স্থানীয় রেলকর্মীরা। কামালের বক্তব্যের বরাতে দুর্ঘটনার পরদিন রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম দাবি করেন, বিজয় এক্সপ্রেস নাশকতার শিকার হয়েছে। টাকার বিনিময়ে কয়েকজন রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে নেয়। আগের দিনগুলোর মতো গত বুধবারও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য ছিল– তদন্তে জানা যাবে দুর্ঘটনার কারণ।আসলে কী ঘটেছিল– তা জানতে কামালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। মঙ্গল ও বুধবার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের উরকুটি গ্রামে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। কামালের বাড়ি তালাবদ্ধ ছিল। প্রতিবেশীরা জানান, ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তিনি সপরিবারে নিখোঁজ; বাড়িতে তালা দিয়ে চলে গেছেন। যে চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামি করেছে রেলওয়ে, তারা দৌড়কড়া কাদেরিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছর। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শফি উল্লাহ বলেন, সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের জন্য পাঠদান বন্ধ ছিল। সে কারণে ওই চার শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় এসেছিল কিনা, জানি না।গ্রেপ্তার কিশোরদের বাড়ি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের সদস্য কাজী জাবেদ সমকালকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই কিশোরদের পরিবার যোগাযোগ করেনি। তাই আসলে কী ঘটেছে তা স্পষ্ট নয়।চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করে লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশ। এই থানার ওসি মুরাদ উল্লাহ বাহার জানান, ওই কিশোররা বিয়ারিং প্লেট খোলার কথা স্বীকার করেছে। আদালত তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠিয়েছেন। কিশোররা স্বীকারোক্তিতে কী বলেছে, কীভাবে বিয়ারিং প্লেট খুলেছে– এসব প্রশ্নে ওসি বলেন, তাদের কাছে প্লেট খোলার কোনো যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়নি। তাহলে কীভাবে খুলেছে– জানতে চাইলে মুরাদ উল্লাহ বলেন, হাতেই খুলেছে মনে হয়। কিশোরদের পক্ষে হাতে লোহার রেললাইন থেকে বিয়ারিং প্লেট খোলা সম্ভব কিনা– প্রশ্নে ওসি বলেন, বিষয়টি রেলওয়ে তদন্ত করছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে। দুর্ঘটনাস্থল এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী শিপন বলেন, রেলপথের পাশেই আমার বাড়ি। ঘটনার দিন মসজিদ থেকে বেরিয়ে বিকট শব্দ শুনতে পাই। দুর্ঘটনাটি রেললাইনের যে ২০৮ নম্বর সেতুতে ঘটেছে, সেটি দীর্ঘদিন নড়বড়ে। কাঠের স্লিপারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। নাটবোল্ট ও ক্লিপ ঝরে পড়ে যাচ্ছে। আমার ধারণা, এখানে নাশকতার কোনো বিষয় নেই; সেতু মেরামত না করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রেলের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা। বিয়ারিং প্লেট কিংবা ফিশপ্লেট খোলা পেয়েছিলেন কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত চলা অবস্থায় মন্তব্য করা ঠিক হবে না। দু-একদিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। তখনই বিস্তারিত বলা যাবে। রেলের সূত্রগুলোরও ভাষ্য, লাইনে ত্রুটি ছিল। সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুরের উদ্দেশে যাত্রার কথা ছিল বিজয় এক্সপ্রেসের। কিন্তু ট্রেনটি রোববার ১১টা ৪০ মিনিটে যাত্রা করে। এর দুই ঘণ্টা ৫ মিনিট পর ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এই ট্রেনের ঘণ্টা দুই আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে কর্ণফুলী মেইল। মেইল হওয়ায় ট্রেনটির গতি কম ছিল; পথে কয়েক জায়গায় যাত্রাবিরতিও করে। এ কারণে বিজয়ের ঘণ্টাখানেক আগে নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনসংলগ্ন তেজেরবাজার অতিক্রম করে কর্ণফুলী। রেল সূত্র বলছে, বিয়ারিং বা ফিশপ্লেট খোলা থাকলে কর্ণফুলীও দুর্ঘটনায় পড়ত। অর্থাৎ কর্ণফুলীর যাওয়া এবং বিজয় আসার মধ্যে যে এক ঘণ্টা পার হয়েছে, এই সময়ে বিয়ারিং প্লেট কিংবা ফিশপ্লেট খোলা হয়েছে। দিনের বেলায় জনবহুল এলাকায় কিশোরদের পক্ষে তা করা সম্ভব কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গ্রেপ্তার কিশোরদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি সমকাল। দুর্ঘটনার পরপরই রেলের কর্মীরা দাবি করেছিলেন, গরমের কারণে লাইন বেঁকে বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। পরে বলা হয়, স্লিপার ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মন্ত্রীর বক্তব্যের পর রেল এ অবস্থান থেকে সরে আসে।বিজয় এক্স‌প্রেস প‌রিচালনার দা‌য়ি‌ত্বে থাকা কর্মী‌দের সূত্র সমকালকে জানি‌য়ে‌ছে, হাসানপুর স্টেশ‌নের দুই কি‌লো‌মিটার আগের ট্রেনের লো‌কোমাস্টার (চালক) দে‌খেন, ২০৮ নম্বর সেতু‌র রেললাইনে বাকলিং (আঁকাবাঁকা) রয়েছে। সেই সম‌য়ে ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ৭০ কি‌লো‌মিটার। বাকলিং দে‌খে চালক গ‌তি কমান। তখন ট্রেন ইঞ্জিনের সঙ্গে বগির সংযোগ বাফার (কাপ‌লিং) ভেঙে যায় এবং ইঞ্জিনের হোস পাইপ খুলে যায়। এতে ইঞ্জিন থেমে গেলে পেছন থেকে বগি এসে ধাক্কা দেয়। এতে বগিগুলো লাইনচ‌্যুত হয়। কাপ‌লিং কেন ভে‌ঙে‌ছে, তা জানা‌তে পা‌রে‌নি রেল সূত্র।বগি লাইনচ্যুতিকে নাশকতা দাবি করা হলেও রেলে লাইনচ্যুতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিজয়ের পরদিন টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশনে লাইনচ্যুত হয় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। গত দেড় দশকে সরকার রেলের উন্নয়নে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেও, রেললাইনে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। ২০২০-২১ সালে মূল লাইনে ৫৩ দুর্ঘটনার মধ্যে ৩৬টি ছিল লাইনচ্যুতি। ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল লাইনে ৫২টি দুর্ঘটনার মধ্যে ২৫টি লাইনচ্যুতি। ওইসব বছরে লুপ এবং সাইড লাইনসহ ১২৯ দুর্ঘটনার ৮৩টি ছিল লাইনচ্যুতি। লাইনে পাথর ক্লিপ না থাকা, স্লিপার ত্রুটিপূর্ণ হলে ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১১ দুর্ঘটনার ৯২টির কারণ ছিল লাইনচ্যুতি। এর আগের বছরে ৮০টি দুর্ঘটনার ৭২টিই ঘটেছে লাইনচ্যুতিতে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, নাঙ্গলকোটে দুর্ঘটনাস্থলে সেতুর কয়েকটি বিয়ারিং প্লেট খুঁজে পাইনি। বগি লাইনচ্যুতির ঘটনা নাশকতা নাকি অন্যকিছু, তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন কুমিল্লা ও নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি] 
ট্রেন লাইনচ্যুত, ট্রেন দুর্ঘটনা, পুলিশ, ট্রেন
মহাসড়কের অবস্থা ভালো, ঈদে তবু ভোগান্তির ভয়
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৫০ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০৮:৩২
সড়ক-মহাসড়কের ৭৫ ভাগের অবস্থাই ভালো, তার পরও ঈদযাত্রায় ১৫৫ স্থানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। এবারের ঈদে মাঝে একদিন বাদে ১০ দিন ছুটি মিলতে পারে। ফলে ধাপে ধাপে যাত্রীরা যাবেন, এতে স্বস্তির হতে পারে ঈদযাত্রা। তবে ভয় জাগাচ্ছে সেতুর টোলপ্লাজার জট। এলেঙ্গা এবং গাজীপুরের সড়ক আগের বছরগুলোর মতো দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। ঢাকা ছাড়তে হানিফ ফ্লাইওভারেও যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সদর কার্যালয়ে ঈদ প্রস্তুতি সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগ জানান কয়েকজন। এর জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব নয়, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দুর্নীতি পৃথিবীর কোথায় হচ্ছে না? আমেরিকায়ও হচ্ছে। চাঁদাবাজি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে, আজ প্রধানমন্ত্রীকেও এ নিয়ে বলতে হচ্ছে। চাঁদাবাজির প্রভাব দ্রব্যমূল্যে পড়ে। গত বছরের ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রা স্বস্তির ছিল। সেবার টানা ৮ দিনের ছুটি ছিল। ফলে ধাপে ধাপে যাত্রীরা ঘরে ফেরায় মহাসড়কে খুব একটা চাপ ছিল না। কিন্তু ২৮ রমজানের রাত থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত যানজটে অচল ছিল ঢাকা-উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের অংশগুলো। যানজট ছিল যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুতেও। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১১ এপ্রিল ঈদ উদযাপিত হবে। ৮ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরু। এর আগের দিন ৭ এপ্রিল শবেকদরের ছুটি। তার আগের দুই দিন শুক্র এবং শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৮ এপ্রিল ছুটি নিলে ঈদের আগে ৬ দিন ছুটি মিলবে ধীরেসুস্থে ঘরে ফেরার। গত বছরের ঈদুল আজহায় ছুটি কম থাকায় তীব্র যানজট ছিল। একসঙ্গে সব যাত্রীর চাপ পড়লে মহাসড়কের সেতুগুলোতে কী অবস্থা হয়, সভায় এর পরিসংখ্যান দিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরদির্শক মো. শাহাবুদ্দিন খান সমকালকে বলেন, সড়ক-মহাসড়ক প্রশস্ত এবং উন্নত হলেও গাড়ি সেতুতে আটকে যাচ্ছে। গাড়ি কতবার বন্ধ হয়, তার ধারণা পেতে যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিসংখ্যান নেওয়া হয়।  গত বছর ঈদুল আজহার  আগের ৪ দিনে সেতুতে ৫৭ বার টোল আদায় বন্ধ হয়েছিল। ফলে সেতুতে গাড়ি প্রবেশ বন্ধ ছিল। এতে ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা ১৬ মিনিট টোল আদায় বন্ধ ছিল, যা মোট সময়ে ১৮ শতাংশ। গাড়ির চাপের কারণে ২১ বার গাড়ি বন্ধ ছিল। এতে টোল আদায় বন্ধ থাকে ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট। সেতুর পূর্ব প্রান্তে রেললাইনের কারণে এলেঙ্গা প্রান্তে গাড়ি বাইপাস করা হয়। কিন্তু ট্রেন গেলে সেতুতে গাড়ি প্রবেশ বন্ধ রাখতে হয়। এতে ১৪ বারে ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট গাড়ি বন্ধ ছিল। সেতুতে ১০ দুর্ঘটনায় বন্ধ ছিল ৩ ঘণ্টা ১৪ মিনিট। ৮ বার গাড়ি বিকল হয়ে টোল আদায় বন্ধ ছিল ৩ ঘন্টা ৯ মিনিট। অন্যান্য কারণে ৪ বারে ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট টোল আদায় বন্ধ তথা সেতুতে গাড়ি প্রবেশ করেনি। বিকল ১৩ গাড়ির ১০টির কাগজপত্র ঠিক ছিল না এবং তিনটির ফিটনেস নেই। সুতরাং ফিটনেসবিহীন গাড়িই যানজটের মূল কারণ, এ ধারণা সঠিক নয়। সভায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর  জানায়, সারাদেশে ১৫৫টি স্থানকে তীব্র যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪১ এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের ৮ স্থানকে যানজটপূর্ণ বলা হয়েছে। গাড়ির ইউটার্ন, সড়কে বাজার, অবৈধ দখল, চলমান নির্মাণকাজ, বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা, বাস কাউন্টারকে যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ঈদের আগেপরে কয়েকদিন নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন সেতুমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদে কিছুটা যানজট হবে। একদম যানজটমুক্ত দাবি করা সমীচীন নয়। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে কোনো ভালো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ এবং গাজীপুর ঠিক থাকলে, ঈদযাত্রার সব ঠিক থাকবে। হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ঢাকায় নির্বিঘ্নে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা না বাড়ালে যত আলোচনা করা হোক, সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, কিছুই কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশ ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সরদার’। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম সভায় বলেন, এলেঙ্গায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। এতে যানজট হতে পারে। চন্দ্রা এলাকায় গাড়ির তীব্র চাপ সৃষ্টি হয় ঈদের আগে। কলকারখানা ধাপে ধাপে ছুটি হলে চাপ কমানো সম্ভব। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, বিভিন্ন জেলার লোকাল বাস যাত্রী পেতে ঈদে ঢাকায় চলে আসে। এসব লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি বিকল হয়ে যানজট হয়। এসব গাড়ির ঢাকায় প্রবেশ ঠেকাতে হবে। চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, চাঁদা আর চাঁদাবাজি এক নয়। চাঁদাবাজি বন্ধ করা পুলিশের কাজ। এর জবাবে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, সড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তোলা যাবে না।বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, উত্তরবঙ্গের হাটিরকুমরুলে কয়েক বছর ধরেই নির্মাণকাজ চলছে। এতে এবারও যানজট হতে পারে। পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশ ঠিক থাকলে, সব ঠিক থাকবে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যান, মোটরসাইকেল ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো– সব মিলিয়ে দুর্ঘটনা হয়। সড়কে সবচেয়ে বড় উপদ্রব তিন চাকার গাড়ি ও মোটরসাইকেল। হাইওয়ে পুলিশকে ২২ জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন বন্ধ করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই সেক্টরের মন্ত্রী। প্রতিবছর ঈদযাত্রার সভা হয়। তবে সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা ঠিকভাবে পালন হচ্ছে কিনা, তা আর পরে মূল্যায়ন করা হয় না। ঢাকার যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফেনী থেকে হানিফ ফ্লাইওভারে আসতে যত সময় লাগে, তার চেয়ে বেশি সময় লাগে ফ্লাইওভার থেকে ঢাকায় ঢুকতে। এখন মাঝে মাঝে এমন অবস্থা হয় যে, দুই ঘণ্টা লাগে। ঈদযাত্রায় যাত্রাবাড়ীর যানজট, উত্তরবঙ্গের মহাসড়কের কাজ, গাজীপুরে বিভিন্ন মহাসড়ক, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাশের যানজট, এলেঙ্গার যানজট নিরসনে দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারে প্রচণ্ড যানজট হয় টোলপ্লাজার কারণে। ঈদের আগে ও পরে কিছুদিন এখানে টোল বন্ধ রাখা উচিত। এর ভর্তুকি সরকার দেবে। প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের আগে ও পরে তিন দিন করে মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রাখা, ঈদের সাত দিন আগে থেকে সিএনজি স্টেশন এবং পেট্রোল পাম্প ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা, ঈদের সাত দিন আগে মেরামতকাজ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয় সভায়। এ ছাড়া কলকারখানা ধাপে ধাপে ছুটি দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, সেতু সচিব মনজুর হোসেন, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুরু মোহাম্মদ মজুমদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পরিবহন নেতারা।  
মহাসড়ক
চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারের কবলে এনআরবিসি ব্যাংক
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৫৪ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ১১:২৭
পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন পরিচালক মিলে কোম্পানি খুলে তার মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। পর্ষদের বৈঠকে খাবার কেনায় অস্বাভাবিক ব্যয়ের তথ্য মিলেছে। একই দিন সকালে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে বিকেলে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বাজেয়াপ্তযোগ্য শেয়ারের মালিকানা নেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানের ব্যবসায়িক অংশীদারের নামে। প্রবাসীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি এনআরবিসি ব্যাংকে এভাবে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চলছে যথেচ্ছাচার। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক পরিদর্শনে ব্যাংকটিতে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি ব্যাংকের সাত উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। এর আলোকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা এনআরবিসি ব্যাংকে এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা সাত সহস্রাধিক। দেশের অন্য কোনো ব্যাংকে এত দ্রুত কর্মীর সংখ্যা বাড়েনি। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বেশির ভাগ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জনপ্রতি ৬ থেকে ৯ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে– এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন করে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে, ১০৫ জন ট্রেইনি অফিসার নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল পরীক্ষার জন্য মোট ৩০৪ প্রার্থীকে আমন্ত্রণ জানায় ব্যাংক।সকালে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে অস্বাভাবিক দ্রুততায় একই দিন বিকেলে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ৯৬ জনের চাকরির বয়স শেষ পর্যায় তথা ২৯ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। চারজনের বয়স-সংক্রান্ত কোনো তথ্য ছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল বলেছে, নির্বাচিত অধিকাংশের বয়স ২৯ বছরের বেশি হওয়া অস্বাভাবিক। এতে প্রমাণিত হয়, পূর্বনির্ধারিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতেই এমন পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৫ জনের অনলাইন আবেদনও পাওয়া যায়নি। যদিও চেয়ারম্যানের টাকা নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি, তবে পরীক্ষা নেওয়ার অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও অপেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রার্থী নির্বাচন করায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়। জানতে চাইলে পারভেজ তমাল গতকাল সমকালকে বলেন, করোনার কারণে তখন তড়িঘড়ি করে একই দিন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওই নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আপত্তি জানানোর পর তা বাতিল করা হয়। এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতির বিষয় সঠিক নয়।এনআরবিসি ব্যাংকের মানবসম্পদ নীতিমালা অনুযায়ী, কর্মমূল্যায়নের ভিত্তিতে একজন কর্মকর্তাকে একবারে সর্বোচ্চ তিনটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া যাবে। আবার পদোন্নতির জন্য অন্তত দুই বছরের এসিআর থাকতে হবে। কাজী মো. সাফায়েত কবির, মো. জাফর ইকবাল হাওলাদারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন ২৭ কর্মকর্তাকে চার থেকে ১৩টি পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যাংকের বোর্ড সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের অপছন্দের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নানা উপায়ে চাপ প্রয়োগ করে ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।এ বিষয়ে চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল সমকালকে বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওই ইনক্রিমেন্ট দিয়েছিলেন। এটা নিয়মবহির্ভূত জানার পর পরিচালনা পর্ষদ তা বাতিল করে। অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়োগ কিংবা চাপ প্রয়োগ করে কাউকে বের করে দেওয়ার তথ্য সঠিক নয়।বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের জন্য একটি অফিস বরাদ্দ দিতে পারে ব্যাংক। অথচ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের মতিঝিলে প্রধান কার্যালয়ে এবং ব্যাংকটির গুলশান শাখায় একটি করে অফিস ব্যবহার করার তথ্য পেয়েছে পরিদর্শক দল। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে পরিচালনা পর্ষদের উচ্চ ব্যয়ের কিছু উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। একটি সভায় তিনজন পরিচালকের জন্য ২০ বাস্কেট ফল কিনে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়। আবার নির্বাহী কমিটির এক সভায় তিনজনের দুপুরের খাবার বাবদ ২০ পিস ইলিশ, ২০ পিস চিংড়ি ভুনা, ২০ পিস চিতল, ২০ পিস রূপচাঁদা কিনে খরচ দেখানো হয় ৫৮ হাজার ৬৫০ টাকা। এভাবে পর্ষদের প্রতি সভায় সম্মানী বাদে প্রত্যেক পরিচালকের পেছনে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ের তথ্য পেয়েছে পরিদর্শক দল, যা অস্বাভাবিক বলা হয়েছে।নিজেরাই প্রতিষ্ঠান খুলে কর্মী নিয়োগব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা, অফিস সহায়ক ও পুলের গাড়ি সরবরাহকারী নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালে চেয়ারম্যানসহ ৯ জন পরিচালক মিলে ‘এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি কোম্পানি খোলেন, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২১ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭১৪ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বান এবং অভিজ্ঞতা যাচাই ছাড়াই এসব নিয়োগের বিপরীতে সার্ভিস চার্জ বাবদ ব্যাংক থেকে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন তারা। এ ছাড়া ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজের ১০ শতাংশ শেয়ার কয়েকজন পরিচালক নিজেদের নামে নেন। এ দুটি ঘটনাকে নিয়মের পরিপন্থি ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব হিসেবে উল্লেখ করে দণ্ডনীয় অপরাধ বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, কোনো জবাবদিহি না থাকায় এ কোম্পানির মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ইচ্ছামাফিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৪ সাল ও ২০২২ সালের জুনের নির্দেশনায় পরিচালক বা তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকের কোনো পণ্য, সেবা ও সংগ্রহ বা কেনার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির পর সম্প্রতি তারা কোম্পানির শেয়ার অন্যদের নামে হস্তান্তর করেছেন। যদিও এসব শেয়ারের সুবিধাভোগী বর্তমান চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন পরিচালকই আছেন। এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের নামে বিভিন্ন সময়ে ঋণও দিয়েছে ব্যাংক। সেই ঋণের টাকা বেশির ভাগ সময় নামসর্বস্ব কোম্পানি লানতা সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে।জানা গেছে, এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট ও স্টারলিংকস হোল্ডিংস বনানীর এডব্লিউআর এনআইবি টাওয়ারে অবস্থিত। এ ভবনের মালিকানায় রয়েছে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আদনান ইমামের এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্ট। পারভেজ তমালের সব শেয়ার তাঁরই ব্যবসায়িক সহযোগী স্টারলিংকস হোল্ডিংসের মালিক শফিকুল আলমের নামে হস্তান্তর করে তাঁকেই এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে। শফিকুল আলমের প্রতিষ্ঠান রিলায়েবল বিল্ডার্সের নামে এনআরবিসি ব্যাংকের হাতিরপুল শাখায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে রয়েছে বরিশালের আলেকান্দা মৌজায় অবস্থিত ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ জমি।এসব বিষয়ে এস এম পারভেজ তমাল সমকালকে বলেন, সব পরিচালক মিলে একটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার জারির পর শেয়ার অন্যদের নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।বাজেয়াপ্তযোগ্য শেয়ার হস্তান্তরপ্রবাসী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ২০১৩ সালে তিনটি এনআরবি ব্যাংক অনুমোদনের অন্যতম শর্ত ছিল– বিদেশে কর পরিশোধিত অর্থে উদ্যোক্তা মূলধনের জোগান দিতে হবে। তবে তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচারের টাকা বিদেশে নিয়ে এবিএম আব্দুল মান্নান ও কামরুন নাহার সাখীর নামে শেয়ার কেনেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শহীদুল আহসান। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে এ বেনামি শেয়ার চিহ্নিত করে তা বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ বাজেয়াপ্ত না করে বিভিন্ন উপায়ে এতদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। গত অক্টোবরে আব্দুল মান্নানের নামে থাকা ৪ কোটি ৭০ লাখ ১ হাজার ৮৮৬টি শেয়ারের (পরিশোধিত মূলধনের ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ) মধ্যে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫১১টি শেয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমামের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর কামরুন নাহার সাখীর শেয়ার মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ঋণ সমন্বয়ের জন্য দেওয়া হচ্ছে।এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ার চলতি মার্চ পর্যন্ত লক-ইন তথা বিক্রি বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার ২০২১ ও ২০২২ সালের জন্য ঘোষিত বোনাস শেয়ারও ২০২৫ ও ২০২৬ সালের আগে বিক্রি করা যাবে না। অথচ নিয়ম অমান্য করে বিশেষ বিবেচনায় ব্লক মার্কেটে এই শেয়ার কেনাবেচার অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে গত ৩১ অক্টোবর ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের ব্যবসায়িক অংশীদার শফিকুল আলমের অনুকূলে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৯৯২টি এবং নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমামের স্ত্রী নাদিয়া মোমিন ইমামের কাছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৪টি শেয়ার বিক্রি করা হয়। আর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আহসানের মেয়ে রেহনুমা আহসানের অনুকূলে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১৫টি শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে।এ বিষয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান সমকালকে বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এখন যে কেউ শেয়ার বেচতে ও কিনতে পারেন। আব্দুল মান্নানের কিছু শেয়ার আদনান ইমামের স্ত্রী কিনেছেন। আর আব্দুল মান্নান শহীদুল আহসানের মেয়েকে কিছু শেয়ার গিফট করেছেন। নিয়ম মেনেই সব কিছু করা হয়েছে।
জালিয়াতি, ব্যাংক
মাগফেরাতের দ্বিতীয় দশক
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৫৭
পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দশক পেরিয়ে দ্বিতীয় দশকে আমরা উপনীত। রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই দশক। এ দশকেই মোমিনের পরম কাঙ্ক্ষিত মাগফেরাত বা ক্ষমা অর্জিত হয়। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘এটা এমন এক মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতের ঝরনাধারায় পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফেরাতের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের (সহিহ ইবনে খুজাইমা)।’রমজানের প্রতি রাত ও দিনে অগণিত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং মোমিনের দোয়া কবুল হয়। এই মাসে পারলৌকিক মুক্তি অর্জনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি বলেন, ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন– হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো। তিনি আবার ঘোষণা করেন, ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে (তিরমিজি)।’যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা, অন্যায়, অপরাধমূলক চিন্তাভাবনা ও অসৎকাজ থেকে বিরত থেকে রমজান মাসে রোজাদার যখন রোজা রেখে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সৎপথে পরিচালিত হন, তখন প্রথম ১০ দিন তিনি রাব্বুল আলামিনের রহমত ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হন। এর পর যখন এমনিভাবে রমজান মাসের আরও ১০ দিন অতিবাহিত করেন, তখন আল্লাহতায়ালা তাঁর পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। এভাবে যখন তিনি শেষ ১০টি দিন সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেন, তখন রোজাদার জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তির নিশ্চয়তা লাভে ধন্য হন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয় (সহিহ বুখারি)।’ অপর হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, রমজান শেষে রোজাদার গোনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয়, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)।বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন উপলক্ষ খোঁজেন। রমজান সে ধরনের একটি বড় উপলক্ষ। এ মাস উপলক্ষে অগণিত পাপী-তাপী বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহর ক্ষমার সেই ভান্ডার পুরোপুরি খুলে দেন রমজানের মধ্য দশক বা মাগফেরাত পর্বে। আমাদের জীবনে পাপের কোনো শেষ নেই। একমাত্র আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া আমরা কেউই মুক্তির আশা করতে পারি না। রমজান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের বিশেষ উপলক্ষ। এ মাসে কেউ আল্লাহর কাছে প্রকৃত অর্থে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন বলে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর দেওয়া এই মহাসুযোগকে হেলাফেলায় নষ্ট করা কারও উচিত নয়। এই রমজানে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে আমরা সহজেই পারি আমাদের বিগত দিনের পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে। আলেম, ইসলামবিষয়ক লেখক  
রমজান