label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
fe
কবির আত্মকথন ,কবিতার সুষম সাম্রাজ্য কবির আত্মকথন, কবিতার সুষম সাম্রাজ্য ফকির ইলিয়াস ==================================== আমি বুঝতে পারি কিছু কথা আমার মননে দানা বাঁধে। আমি বলতে চাই। লিখতে চাই। প্রকাশিত হতে চাই। কখনো ছন্দোবদ্ধ। কখনো মুক্ত নদীর মতো প্রবাহিত হয়ে যেতে চাই। মনে পড়ে যায় শামসুর রাহমানকে। তিনি বলতেন, আমি তো আর কোনো কাজ করতে পারি না। তাই লিখে যাই। কবির কথায় এক ধরনের আর্তনাদ লক্ষ্য করি। ‘আমি তো আর কিছুই পারি না।’ আর কী হতে পারলে শামসুর রাহমান কবিতা কিংবা গদ্য লিখতেন না, সে সব বিষয়ে অনেক খোলামেলা কথাও বলেছেন তিনি। তাহলে কি ‘আর কোনো কিছু করতে না পারা’ মানুষরাই লেখক হয়ে যায়? কিংবা যেতে পারে? নিউইয়র্কের পঞ্চম এভিন্যু আর সাইত্রিশ নম্বর সড়কের কোণা ধরে হাঁটতে হাঁটতে এ সব কথা ভাবি। আর কয়েকটি সড়ক পরেই ব্রায়ান্ট পার্ক। হঠাৎ কে যেন আমার পিছু পিছু, কিছু বলতে থাকে। খুব নিচু স্বরে। ‘স্মোক’ ‘স্মোক’। আমি সম্বিৎ ফিরে পাই। একজন মধ্যবয়সী কৃষ্ণাঙ্গ। গোপনে গাঁজা, আফিম ধরনের কিছু বিক্রি করছে। আমাকে দেখে তাই হাঁকছে, ‘স্মোক’। স্মোক করার অভ্যেস নেই আমার। কোনোদিন চেষ্টা করেও দেখিনি। পঞ্চম এভিন্যু, বাণিজ্য এলাকা বলেই পরিচিত। এখানে অবৈধ দ্রব্য বিক্রি করছে তা ভেবেই কিছুটা হোঁচট খাই। নিজমনে পথ চলতে থাকি। এই উচ্চবিত্তের এলাকায় নেশা বিক্রি করা হচ্ছে! এর সঙ্গে কারা? যারা এখানে লক্ষ ডলার বেতন পায় বছরে, তারাও এসব নেশা গ্রহণ করে? মানুষ কেন নেশাগ্রস্ত হয়? লেখালেখিও কি এক ধরনের নেশা? লেখালেখি করে জীবনে কি কিছু পাওয়া যায়? এমন অনেক কথার জিজ্ঞাসা উড়িয়ে দিয়ে বাতাসের ওজন ভারী করি। নিজেকে প্রকাশের প্রখরতা নিয়ে সেই কৈশোরকে ঢেলে দিয়েছিলাম উত্তাল বর্ষার শরীরে। বসন্তের কৃষ্ণচূড়া দেখে দেখে যখন পার হতাম সুরমার ক্বীন ব্রিজ, তখন মনে হতো এই শহরে ভোর হয় জীবনের স্বপ্ন নিয়ে। রিকশাঅলার ক্রিং ক্রিং আওয়াজ আর লাল ইট বহরকারী হলুদ ট্রাকগুলোর হর্ন যেন ফাটিয়ে দিতে চাইতো কর্ণযুগল। ''পাবলিক কেরিয়ার সিলেট এরিয়া'', কিংবা ''পাঁচশ গজ দূরে থাকুক''- সাইনগুলো পড়া হয়ে যেতো হাঁটতে হাঁটতে। বেদের নৌকোগুলো বাঁধা পড়তো চৈত্রের খরায় যে নদীতে, সেই নদী সুরমার খেয়া পার হতে হতেই তাকিয়ে দেখতাম নদীটির একপাড় ভাঙছে। তবে কি খুব শিগগির গড়ে উঠবে অন্য পাড়? এমন প্রশ্নও জাগতো মনে অনেকটা পশ্চিমে হেলে পড়ার সূর্যের মতো। আমি সব সময় সূর্যাস্তকে মনের শেষ প্রশ্ন করতাম কেন? একটি দিন কি তবে কয়েক টুকরো স্মৃতি নিয়েই ক্রমশ ডুবে যায়। আজ মনে পড়ছে সেই কবিতাটির কথা। যা লিখেছিলাম সতেরো বছর বয়সে। আমার কোনো বাল্যভাগ্য ছিল না শিশির ঢেকে দিয়েছিল সবুজ সূর্যাস্তের স্মৃতি। তাই বলেই বোধ হয় হারানো সূর্যকে আমি খুঁজি অবিনাশী আত্মার ঘ্রাণে। বনে এবং বীমাহীন জীবনে। যেখানে সূর্য এবং ভাগ্য হাঁটে ঈশানের সমান্তরাল বিভায়। ‘বাল্যভাগ্য’ কবিতাটি দীর্ঘদিন পর কাঁচা হাতে লেখা ডায়েরির পাতা থেকে কুড়িয়ে তুলি। সেসময় জীবনকে বীমাহীন ভেবেছিলাম। আজ কি জীবন হতে পেরেছে কবিতায় বীমাকৃত? দুই. কবিতা, চিত্রকলা, শিল্পচারুকে খুঁজে খুঁজে পথ চলতাম পীচঢালা কালো দাগগুলো গোনে গোনে। সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে প্রথম যেদিন ঢুঁ মারি সেদিন আমার গভীর দৃষ্টি কাড়েন একজন ত্যাগী পুরুষ। খুব প্রখর ধ্যানী মনে হয়েছিল তাকে প্রথম দেখায়। মুহম্মদ নুরুল হক। উপমহাদেশের এক অন্যতম গ্রন্থগারিক। কথা বলে মনে হয়েছিল এক জীবন্ত গ্রন্থকোষ তিনি। তাঁর হাত ধরেই সাহিত্য সংসদে এসে বই পড়ার অভ্যেস গড়ে উঠে আমার। তিনিই শিখিয়ে দেন গদ্যের, কবিতার ভেতরে কিভাবে ঢুকে যেতে হয়। অনেক সময় কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়েও তাই ছুটে যাওয়া হতো অসমাপ্ত গ্রন্থটির পাঠ শেষ করার জন্য। এতে লাভ এবং ক্ষতি দুটোই যে হয়েছে, তা এখন খুব ভালো করে বুঝতে পারি। কিন্তু সব লাভও কি জীবনকে তুষ্ট করতে পারে সমানভাবে? কোনো অতৃপ্ত আত্মার স্বপ্নকথা বলতে-বলতে-বলতে কিংবা উপন্যাসের কোনো চরিত্রের মাঝে ডুবে যেতে যেতে মনে হয়েছে আমিই সেই চরিত্র। লেখক কিংবা লেখিকা যা বলতে চেয়েছেন, আমি যেন তারই প্রতিচ্ছায়া। একজন কবি তার ছায়া দেখা কখন শিখেন? কোনো মূর্ত প্রতীক কবিকে নিয়ে যায় প্রেমের নিখিল বাগানে? জীবনানন্দ দাশের ‘কবিতার কথা’ পড়তে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি অনেকবার। বুঝা হয়ে ওঠেনি। তাই পড়েছি, ভেবেছি, পড়েছি। রাতের আলোতে ডুবে গিয়ে সমৃদ্ধ করেছি নিজেকে। মনে মনে আওড়িয়েছি-- এসো আজ কিছুক্ষণ স্বপ্ন দেখা যাক! পথে ঘাটে মাঠে বনে কেমন জোনাক জোনাকি, তোমার হাতে কাজ থাকে যদি, পুরনো সে নদী খানিক পেরিয়ে এসো, এইটুকু পথ পাঁচিলের এপাশেই সোনালি শপথ! [জোনাকি /আহসান হাবীব] জীবনে কতোবার শপথ ভঙ্গ করেছি, এর হিসাব নিজের কাছ থেকে গেলে হাসিই পায়। কারণ শপথ তো কেবল উন্মাদেরাই করে! তবে কি আমি উন্মাদ ছিলাম, কবিতার জন্য? সুরের জন্য? ছন্দের বিদীর্ণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি কি প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম সেই প্রথম উন্মাদনা! এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাসিয়া নদীর তীরে বসে থেকেছি অনেকগুলো বিকেল। মাথায় দীর্ঘ চুলের ঢেউ। পাছে কে ফিসফিসিয়ে বলেছে- ‘হবে না কিছুই’। কেউ বলেছে''ওহ !তারে আবার নতুন সমাজতন্ত্রে পেয়েছে।’ কবিতা, সমাজতন্ত্রের সাক্ষী হয়ে থাকে কি না - সে প্রশ্নের জবাব আমি খুঁজিনি কখনো। তবে কবিতা মানবতাবাদের দোসর এবং হাতিয়ার দুটোই হয়, তা আমি জেনেছি বহু আগেই। ‘তুমি পর্বতের পাশে বসে আছো: তোমাকে পর্বত থেকে আরো যেন উঁচু মনে হয়, তুমি মেঘে মেঘে উড়ে যাও, তোমাকে উড়িয়ে দ্রুত বাতাস বইতে থাকে লোকালয়ে, তুমি স্তনের কাছে কোমল হরিণ পোষ, সে-হরিণ একটি হৃদয়।’ [হরিণ/আবুল হাসান] কবিতাকে ভালোবেসে আমি তাহলে আজীবন কি পুষেছি? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই ফিরে যাই প্রাণে ঘেরা সিলেট শহরে। জেলা শিল্পকলা একাডেমী ভবনটি সুরমার তীরেই অবস্থিত। সেখানে বসে আপন মনে গান শিখাচ্ছেন কবি-গীতিকার সৈয়দ মুফাজ্জিল আলী। ভরাট কণ্ঠ তার। আমি একজন বিবাগী কিশোর। গেয়েই চলেছেন... আমি যাইমু ও যাইমু আল্লাহরও সঙ্গে আল্লাহ বিনে হাসন রাজা কিছুই নাহি সঙ্গে তাঁর সঙ্গে কোরাস গাইছেন একদল ছাত্রছাত্রী। শিল্পকলা একাডেমীর পাশেই সারদা স্মৃতি ভবন। সেখানে চলছে হয়তো কোনো রাজনৈতিক সেমিনার। কিন্তু শিক্ষানবিশ শিল্পীদলের রেওয়াজ থামছে না। এই না থামার দৃশ্য দেখতে দেখতেই চোখ রেখেছি শ্রাবণের সুরমা নদীতে। তিন. বানের পানিতে কলাগাছের ভেলা ভাসিয়ে ভাদ্রের পাকা ধান তুলে আনছে কৃষক । সে দৃশ্য দেখে আমি আপ্লুত হয়েছি বারবার। বন্যা এসেছে তো কি হয়েছে, - বানের পানি নেমে গেলে আবার শুকাবে ধান। ফসলের ঘ্রাণ মাতোয়ারা করবে কিষাণীর মন। একজন বাউল দার্শনিক কবি, আমার পিতামহ ফকির ওমর শাহ সে কথা লিখে গেছেন শত বছর আগে। বানের পানি ধান নিলো মোর সুখ নিতে তো পারলো না তোমার লাগি রাখছি সখী বাঁশের বাক্সে ছয় আনা। মানুষ একসময় প্রেমের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে বাঁশের বাক্সে ছয়আনা জমা রেখেছে তার প্রেমিকার জন্য। তাতেই সুখ ছিল। তৃপ্তি ছিল। এখন হীরের আংটিও সুখ এনে দিতে পারছে না। এর কারণ কি? কারণ হচ্ছে অনেক কৃত্রিম মুখোশ পরে আছে বর্তমান সমাজ। এখানে কবিও প্রাণ খুলে লিখতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হন। কবিতার নায়িকার জন্য, কবিকে ত্যাগ করে যায় তার ব্যক্তিগত জীবনের ঐশ্বর্য। বিভিন্ন ভাষাভাষি কবির কথা, জীবন ধারা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাদের কথা শুনি। মিলাই বাংলার সবুজ সীমানার সাথে অন্যকোনো ভূখণ্ডের সবুজের সজীবতা। নিউইয়র্কের কবিদের আড্ডাভূমি গ্রীনিচ ভিলেজের ‘গ্রীনিচ ক্যাফেতে’ বসে শুনে যাই কোনো তরুণ কবির সদ্য রচিত পঙক্তিমালা। যেখানে লব্ধ অভিজ্ঞতার অনেক আলোই আমাকে ঝলক দিয়েছে মাঝে মাঝে। আমার পরিচিত এক কবি রিয়েন রবস। একদিন দেখি তিনি খুব বেদনাগ্রস্ত মনে বসে আছেন ক্যাফের এক কোণে। জিজ্ঞাসা করি, কি হয়েছে? রিয়েন খুব দুঃখ করে বলেন, গতকাল তার মেয়ে বান্ধবী তাকে ত্যাগ করে গেছেন। কারণ কি জানতে চাই আমি। কবি বলেন, টানাপড়েন চলছিল আমার কবিতা লেখাকে কেন্দ্র করে। আমার কবিতার এক‘নামনায়িকা' নিয়ে ঘটে বিপত্তি। আমার মেয়ে বান্ধবী মনে করছিলেন আমি ঐ নামের মেয়েটির প্রেমে পড়েই তাকে নিয়ে কবিতা লিখছি।’ কবিরা লিখতে গিয়ে মাঝে মাঝে এভাবেই ফেরারি হয়ে যান। কে খোঁজ রাখে কার? এই বিশাল বিশ্বে কার এতো সময় আছে খোঁজ করার। তন্ন তন্ন করে তাকিয়ে দেখার। এখানে সূর্য ওঠে সহসা বৃষ্টি পড়ে এখানে ফসল ফলে শিশুরা ক্ষুধায় মরে। এখানে অনেক নদী মেঘেরা রঙিন শাড়ি এখানে ফুলের পাখি ফেরারি কবির খোঁজে। এখানে নবীন সারি শিশুরা ক্ষুধায় কাঁদে এখানে শোভন সবি কবিরা দ্বীপান্তরে। [ফেরারি কবির খোঁজে/আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ] যে শব্দলগ্ন মন বিচ্ছন্নতার সঙ্গে ঘর বাঁধে- সেই মন কি প্রকৃত ঘরের দেখা পায় কোনোদিন? বিভিন্ন ভাষাভাষি অনেক কবির আত্মদহনের ঘটনাবলী আমাকে কাতর করে তোলে। একজন প্রতিভাবান কবি তার পঙক্তিমালা নিয়ে প্রকাশকের পিছু পিছু ছুটছেন। প্রকাশক কবিকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। কিংবা ‘আরো লিখুন- লিখে যান’ মার্কা উপদেশমালা প্রকাশক ঝুলিয়ে দিচ্ছেন কবির গলায়। ভেবে অবাক হই বাংলা সাহিত্য প্রেমিকরা, বাংলা কবিতামোদীরা জীবনানন্দ দাশের মতো তেজী কবিকে তার জীবদ্দশায় যথার্থ সম্মান দেখাতে পারেনি। কেন পারেনি? এই জিজ্ঞাসা এখানো আমার পাঁজর ভাঙে মাঝে মাঝে। পিঁপড়ারা সারিবদ্ধ হয়ে খুদ্ দানা সংগ্রহ করার জন্য এগিয়ে যায়। পাখিরা ঝাঁক বেঁধে একে অপরের ডানা মিলিয়ে উড়ে যায় আকাশে। মানুষ তেমনটি পারে না কেন? মানুষ তো শ্রেষ্ঠ জীবের দাবিদার। তবে কেন এই রক্তের ফোয়ারায় দাঁড়িয়ে মানুষ বার বার বলে- আরো আধিপত্য চাই! এ এক ভারি অদ্ভুত সময় কে কার আস্তিনের তলায় কার জন্যে কোন হিংস্রতা লুকিয়ে রেখেছে আমরা জানি না। কাঁধে হাত রাখতেও এখন আমাদের ভয়। [অদ্ভুত সময়/সুভাষ মুখোপাধ্যায়] সেসময় ঘিরে ধরছে আমাদের চারপাশ। আমরা ভেসে যাচ্ছি। ঠাঁই পাচ্ছি না। চার. প্রতিদিনই আমরা ভিন্ন কবিতার ছায়ামাত্রা মাড়িয়ে পথ চলি। কেউ চলে গেল বলে আমারা যতোটা শোকগ্রস্ত হই না, তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দিত হই কারো আগমনে। বিস্মৃতপ্রায় নদীদের কংকাল খুঁজে আমরা খুব কমই ফিরি গ্রামীণ প্রান্তরে। আমলকী গাছে ঠেস দিয়ে আসে শীত উড়ে গেল তিনটে প্রজাপতি একটি কিশোরী তার করমচা রঙের হাত মেলে দিলে বিকেলের দিকে সূর্য খুশী হয়ে উঠলেন তাঁর পুনরায় যুবা হতে সাধ হলো। [নিসর্গ/সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়] জীবনের রূপান্তর হয়। রূপান্তর হয় কবিতারও। সেই সত্যকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যায় প্রজন্ম। কলম হচ্ছে একটি চেতনার প্রতীক। শক্তির উৎস। কলমই পারে তার নিজের সুষম সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্টি করে যেতে। পারে নির্মাণ করে যেতে আঁচড়ের সৌরভূগোল। মনের সঞ্চিত দানা ভেঙে পলি সৃষ্টির মানসেই কলম হাতে তুলে নিয়েছিলাম। যারা ভাবতে জানে, তারা বিরহেও ভাসতে জানে। এ বুঝি কবিতার সহাবস্থান বিশ্বের সমকালকে সমানভাবেই আলোকিত করে যায়। কারণ একটি সূর্যই আলো দেয় সবাইকে। দেশে দেশে শুধুমাত্র পরিবেশ-প্রতিবেশ ভিন্ন। কিন্তু প্রকাশের প্রাণরসায়ন সবারই এক। কবিতা যে সব আত্মকথন লিখে যায়, তা জীবনেরই প্রবচনপর্ব। ভাষা এবং চিন্তাভেদে এতে বিশেষ কোনো পার্থক্য আছে বলে এখন আর মনে হয় না। ---------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ। সাহিত্য সাময়িকী । ১৮ জুলাই ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০০৮ সকাল ৮:৫৯
false
fe
সার্কের ব্যর্থতা ও প্রয়োজনীয়তার দিকচিহ্ন সার্কের ব্যর্থতা ও প্রয়োজনীয়তার দিকচিহ্নফকির ইলিয়াস===============================শেষ পর্যন্ত সার্ক সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ চারটি দেশ ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান না করার কথা জানানোর পর এটি স্থগিত করা হয়েছে। এ বছর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকর করা নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে পাকিস্তানের বারবার হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানে আসন্ন সম্মেলনে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, আফগানিস্তান ও ভুটানও এবারের সার্ক সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ টুইট করে বলেছেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত। সার্কের সভাপতি দেশ নেপালকে ভারত জানিয়েছে এ অঞ্চলে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাওয়ায় এবং সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি দেশের হস্তক্ষেপ বেড়ে যাওয়ায় এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে যা নভেম্বরে ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য সহায়ক নয়। আঞ্চলিক সহযোগিতা, কানেকটিভিটি ও যোগাযোগের ব্যাপারে ভারত তার অঙ্গীকারের ব্যাপারে অবিচল আছে। ভারত বিশ্বাস করে, শুধু সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশেই এসব এগিয়ে নেয়া সম্ভব। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভারতের পক্ষে ইসলামাবাদে প্রস্তাবিত শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়া সম্ভব নয়। বিকাশ আরো বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি সার্কের আরো কয়েকটি দেশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে।’একটি বিষয় না বললেই নয়- সার্ক আসলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আদৌ কিছু করতে পেরেছে কি? কেন পারেনি? আমরা অদূর অতীতে তাকালে দেখব- সার্ক প্রতিষ্ঠার তিরিশ বছর পর ২০১৪ সালে ৩০ বছরের ব্যর্থতা কাটাতে ৩৬ দফা কাঠমান্ডু ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) নেতারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, সার্ককে কার্যকর করার সময় এসেছে। কারণ, গত তিন দশকেও এ অঞ্চলের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল সংস্থাটি। তাই সার্ককে আরো জোরদার, গতিশীল ও দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে ৩৬ দফা কাঠমান্ডু ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ২৭ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে। ঘোষণায় ‘সময়ভিত্তিক’ ও ‘ফলভিত্তিক’ শক্তিশালী সার্ক গড়া, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের ১৭০ কোটি মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সংযোগ (কানেক্টিভিটি) উৎসাহিত করা, অর্থনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাসহ সার্ক সচিবালয় শক্তিশালীকরণ ও সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ স্থান পেয়েছিল। শীর্ষ সম্মেলনে সার্ক নেতারা তিন দশকের ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছিলেন।১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আশরাফ ঘানি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে উপস্থিত ছিলেন।কাঠমান্ডু ঘোষণার প্রথম দফায় আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা সময়, ফল ও অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প ও কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থায়ন, বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা, অবকাঠামো, কানেক্টিভিটি ও সংস্কৃতি খাতে সহযোগিতা জোরদার করে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক সমন্বয় জোরদারে জোরালো আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন (এসএইইউ) প্রসঙ্গে পরিকল্পিত উপায়ে ও পর্যায়ক্রমে মুক্তবাণিজ্য এলাকা, কাস্টমস ইউনিয়ন, অভিন্ন বাজার এবং একটি অভিন্ন অর্থনৈতিক ও আর্থিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন (এসএইইউ) অর্জনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন নেতারা। এভাবে প্রায় প্রতিটি দফা নিয়েই আলোচনা করা যাবে। তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, সার্ক নেতারা স্বীকার করেছিলেন যে, সার্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও স্থলবেষ্টিত সদস্য রাষ্ট্রগুলো অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এর ফলে তাদের উৎপাদন সামর্থ্যরে দুর্বলতায় উচ্চ বাণিজ্য ও ট্রানজিট খরচসহ অন্যান্য কারণ বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতাকে প্রভাবিত করছে। মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থাগুলোর ন্যায্য সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বল্পোন্নত ও স্থলবেষ্টিত সদস্যদের জন্য সহযোগিতা জোরদারে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। এই প্রেক্ষাপটে তারা সাফটা ও সাটিসের আওতায় বিদ্যমান অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা কার্যকরে সম্মত হয়েছেন। চতুর্থ দফায় সাফটা ও বাণিজ্য সুবিধার প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, সার্ক নেতারা সরলীকৃত স্বচ্ছ রুলস অব অরিজিন, বাণিজ্য সুবিধার জন্য নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়ন, স্যানিটারি ও ফাইটো-স্যানিটারি উদ্যোগ, বাণিজ্যে কারিগরি বাধাগুলো (টিবিটি) দূর করা, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করা, অশুল্ক ও আধাশুল্ক বাধাগুলো দূর করা এবং দক্ষ ট্রানজিট ও পরিবহন সুবিধার উদ্যোগ নিতে সাফটা মিনিস্টারিয়াল কাউন্সিল ও সাফটা এক্সপার্ট কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছেন। অঙ্গীকারের তফসিল চূড়ান্ত করার মাধ্যমে দ্রুত সেবা খাতের বাণিজ্য চুক্তি (সাটিস) কার্যকর করতেও তারা আহ্বান জানিয়েছিলেন।আঠারোতম দফায় তরুণ জনগোষ্ঠীর ফলপ্রসূ আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের জন্য যথার্থ জাতীয় নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের ওপর সার্ক নেতারা জোর দিয়েছিলেন। উনিশতম দফায় নারী ও শিশুপাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সার্ক নেতারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।‘সামাজিক সুরক্ষা’ শিরোনামে বিশতম দফায় বলা হয়েছে, প্রবীণ, নারী, শিশু, ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তি, বেকার, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কাজ করা ব্যক্তিদের বিশেষ প্রয়োজনের কথা স্বীকার করে শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সার্ক নেতারা রাজি হয়েছিলেন। একুশতম দফায় এই অঞ্চলের বাইরে অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা চালুর বিষয়ে সার্ক নেতারা একমত হয়েছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বাইশতম দফায় সার্ক দেশগুলোর জন্য আলাদা স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠা ও চালু করতে ভারতের প্রস্তাবকে সার্ক নেতারা স্বাগত জানিয়েছিলেন। জনগণের কল্যাণে মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহারে সদস্য দেশগুলোর সক্ষমতা অর্জনের বিষয়ে নেতারা সম্মত হয়েছিলেন।ত্রিশ থেকে চৌত্রিশতম দফায় সার্ককে শক্তিশালীকরণ প্রসঙ্গ তুলে সার্ক নেতারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই সংস্থার কার্যক্রম দৃশ্যমান করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। নেতারা সার্ককে আরো গতিশীল ও কার্যকর করতে বিভিন্ন বহুপক্ষীয় সংস্থায় অভিন্ন অবস্থান নেয়া, ফলাফলভিত্তিক নীতি, কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রতি তিন বছর পর পর সার্কের বিভিন্ন কাঠামোর পর্যালোচনার জন্য কাজের অগ্রগতি ও বাধা থাকলে তা মূল্যায়ন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মোট ছত্রিশটি প্রস্তাবনার শেষে, পাকিস্তানকে ২০১৬ সালের স্বাগতিকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এখন কথা হচ্ছে, এই ছত্রিশটির কয়টি গেল দুই বছরে সফল করা সম্ভব হয়েছে, কিংবা কেন করা যায়নি?বলার অপেক্ষা রাখে না পাকিস্তান এককভাবেই সার্কের ভাঙনের জন্য দায়ী। কারণ দেশটি মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের প্রত্যক্ষ মদতদাতা হিসেবে বিশ্বে গত দুই বছরে অনেক বেশি দুর্নাম কুড়িয়েছে। সার্ক ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে বার বার নাক গলিয়েছে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলেছে এমনকি তাদের নিজ পার্লামেন্টে। যা আন্তর্জাতিকভাবে খুবই গর্হিত কাজ।পাকিস্তানিরা নিজেরাই এখন নিজেদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। বেলুচিস্তানে, সিন্ধু প্রদেশে সহিংসতা কাঁপিয়ে তুলছে বিশ্বমানবতার ভিত। সেই নিরিখে তারা যে ‘সার্ক’ নীতিমালা মানবে- তা আশা করা বোকার স্বর্গে বসবাসের শামিল। এর মধ্যে আবার কাশ্মির ইস্যু নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দেখাচ্ছে তাদের যুদ্ধংদেহী মনোভাব। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির নিয়ে চলমান বিরোধের অবসান ঘটাতে পাকিস্তান ও ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর পাক-ভারত উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় চীন এই আহ্বান জানিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, বেইজিংয়ে নিযুক্ত কাশ্মিরের বিশেষ দূতকে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ ঝেনমিন বলেছেন, ‘চীন আশা করছে পাকিস্তান ও ভারত দুপক্ষই সংলাপের জন্য তাদের চ্যানেলকে আরো শক্তিশালী করবে; যেকোনো মতপার্থক্য যথাযথভাবে সামাল দেবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ও এ অঞ্চলের শান্তি-স্থিতিশীলতা ঐক্যবদ্ধভাবে রক্ষা করবে।’ কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থানকেও চীন মূল্যায়ন করে বলে জানান তিনি।এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দেয়ায় ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এর পরে ভারত যদি পানি চুক্তি বাতিল করে তবে ইসলামাবাদ একে ‘যুদ্ধের আচরণ’ হিসেবে বিবেচনা করবে বলে হুঁশিয়ার করেছে।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের লক্ষ্যে সার্ককে ‘জনগণের সার্ক’-এ পরিণত করার আহ্বান সব সময় জানিয়ে আসছেন। পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তাগিদ দিয়েছেন। হাসিনা সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য সড়ক, রেল, ও আকাশপথসহ জ্ঞানবিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক কানেক্টিভিটি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন বার বারই। এ ছাড়া সৃজনশীল উদ্ভাবনীমূলক শিক্ষা ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য পারস্পরিক আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন আলোচনায়। দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণের মাধ্যমে একটি দারিদ্র্যমুক্ত নিরাপদ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন শেখ হাসিনা গত সার্ক সামিটেও।আমাদের মনে আছে, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার এই আন্তঃরাষ্ট্রিক প্লাটফর্মটি যাত্রা শুরু করেছিল ঢাকা থেকেই ১৯৮৫ সালে। সেই সার্কের আজকের অবস্থান কি? কেন এমন হয়েছে? তা ভেবে দেখা দরকার সকলের। মনে রাখতে হবে, চিরকালীন শত্রু ভারত-পাকিস্তান এখন পরমাণু শক্তির অধিকারী। এই দু’দেশের যুদ্ধ লাগলেই কোটি কোটি প্রাণহানি হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে রাজনৈতিক আলোচনা ফলপ্রসূ করতে হবে। কেন ঘোষণাগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না- তা খুঁজে দেখতে হবে। বিশেষ করে পাকিস্তানকে জঙ্গিবাদের পথ থেকে সরে আসতে হবে। বিশ্ব এগোচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াও এগিয়ে যাক। কিন্তু এ জন্য ছাড় দিতে হবে তাদেরকেই যারা এখনো গুহাবাসকেই তাদের মূল আবাস মনে করছে।--------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১ অক্টোবর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:১৮
false
rg
বাড়িওয়ালা আংকেল যেখানে থাকেন ভালো থাকেন___ আমরা তখন গ্রিন রোডে থাকি। পুরাতন সমরিতা হাসপাতাল যেখানে ছিল, ঠিক তার পাশের বাড়িতে। আমরা ছয় তলা বিল্ডিংয়ের ছয়তার উত্তরপাশের ব্যাচেলর সাইডে। তখনো ওই বাড়ির সাত তলা'র কাজ শুরু হয় নি। কিন্তু ছাদের একটা কক্ষে বাড়ির দারোয়ান করিম থাকে। একেবারে নিচতলায় থাকেন বাড়িওয়ালা। উভয় পাশের ইউনিটেই বাড়িওয়ালা'র পরিবার। পাঁচতলা পর্যন্ত উভয় পাশেই ফ্যামিলি বাসা। আর ছয় তলায় উভয় পাশেই ব্যাচেলর থাকে। তিন তলায় তখন থাকতেন জাতীয় সঙ্গীত শিল্পী আবদুল জব্বার। ওনার দরজার সামনে একটা সাইনবোর্ড ছিল। সেখানে লেখা ছিল, জাতীয় কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার। পাঁচ তলায় থাকতেন একজন বিশিষ্ট গীতিকার। তো রোজ রাতে একটা মজার কাণ্ড ঘটতো ওই বাড়িতে। রাত বারোটা থেকে একটার মধ্যে শুরু হত সেই চিৎকার আর গালাগালি। অনেক সময় হাতাহাতি পর্যায়েও যেতো। কি নিয়ে কাহিনী? বাড়িওয়ালা আবুল কালাম আংকেল আর সঙ্গীত শিল্পী আবদুল জব্বার দু'জনেই মদ্যপ। দু'জনে প্রায় রোজ একসঙ্গে মদ থেতেন। খেতেন কোনো বারে বসে। অথবা বাড়িওয়ালা আংকেলের টঙ্গি'র ফ্যাক্টরি অফিসে বসে। কোথায় বসে তারা খাবেন, তা আগেই ঠিক করতেন। তারপর দু'জনে অনেক রাত পর্যন্ত গলা ভেজাতেন। সমস্যা শুরু হত বাসার সামনে আসার পর। বাড়িওয়ালা আংকেল বলতেন, তোর মত জাতীয় সঙ্গীত শিল্পী আমার অনেক দেখা আছে, হু? জবাবে আবদুল জব্বার হয়তো বলতেন, তোর মত বাড়িওয়ালাও আমার দেখা আছে। এই নিয়ে মহাক্যাচাল শুরু হত। বাড়িওয়ালা হয়তো বলতেন, তুই আমার বাড়িতে সাইনবোর্ড লাগাইছিস, ওটা আমি ভেঙে দেব। জবাবে আবদুল জব্বার বলতেন, সাইনবোর্ড ভাঙতে আসলে আমি তোর হাত ভেঙে দেব। তারপর সেই ঝগড়ার এক পর্যায়ে হয়তো দারোয়ান করিম এসে বাড়িওয়ালা আংকেলকে ধরে নিয়ে ভেতরে যেত। অথবা তিন তলা থেকে কবি জোহরা জব্বার নিচে নেমে মদ্যম স্বামীকে ধরে তিন তলায় ওঠাতেন। তখন সিড়িতে বসে চলতো ঝগড়ার বাকি অংশ। এটা ছিল প্রায় রোজ রাতের কমন দৃশ্য।দারোয়ান করিম ছিল বাড়িওয়ালা আংকেলের সার্বক্ষণিক খাদেম। আংকেলের কখন কি লাগবে, কিভাবে কখন তা জোগাড় করতে হবে, সবই করিম সামলাতো। আংকেল যেদিন রাতে বাইরে না যেতেন, সেদিন ঘরে বসে বিয়ার খেতেন। করিম বিয়ারের কেচ আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখতো। করিমকে সিগারেট ঘুষ দিয়ে আমরা মাঝে মাঝে সেই বিয়ারে ভাগ বসাতাম। কখনো আংকেল বিয়ারের ক্যান শেষ না করে করিমকে দিয়ে দিত, তুই খা। করিম ইচ্ছে হল খেত। ইচ্ছে না হলে উপরে এসে আমাদের ডেকে ছাদে নিয়ে যেত। তাছাড়া আমরা রাতে দেরি করে ফিরলে, করিমের সঙ্গে একটা এক্সট্রা সম্পর্ক ছিল, রাস্তায় এসে একটা শব্দ করলে, করিম উপর থেকে উকি দিত। পরের শব্দে করিম ম্যাচের আগুন জ্বালিয়ে সংকেত দিত। ওয়েট করেন, আসতেছি। অথবা করিম আংকেলের সেবায় ব্যস্ত থাকলে আমরা দোকানের সামনে আড্ডা দিতে থাকতাম। করিম এসে আমাদের গেইট খুলে নিয়ে যেত। বাড়িওয়ালা আংকেলের একটা সেরমখানা ছিল। যেখানে বাড়িওয়ালী আন্টি'র পর্যন্ত প্রবেশাধীকার ছিল না। একমাত্র করিম সেই ঘরের সবকিছু গুছগাছ করে রাখত। সেখানে বসে আংকেল পান করতেন। কখনো আবদুল জব্বারের সেখানে গানের আসর বসতো। কখনো সেখানে আংকেল বমি করতেন। কখনো কখনো আংকেল নিচের বারান্দায় পায়চারি করতেন। যেদিন আংকেল পায়চারী করবেন, তার আগে করিম সেই বারান্দা ধুয়ে মুছে চকচকা করে রাখতো। আর আমাদের সংকেত দিত, না আসার জন্য। হয়তো কোনো রাতে আমরা বাসায় ফুকতে পারছি না। কারণ, আংকেল বাসায় ঢোকার সেই বারান্দা পথে পায়চারি করছেন। ঢুকলেই ধরবেন। আর পরদিন সকালে নির্ঘাত বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। সেরকম হলে রাতে আর আমরা বাসায় ঢুকতাম না। আমাদের এক বন্ধু ধানমন্ডি'র জাহাজ বাড়ির সামনে একটা সাইবার ক্যাফে দিয়েছে। সেখানে সারারাত তখন আমাদের সাইবারে কাটানোর নিয়ম। বাড়িওয়ালা আংকেলের পাঁচ মেয়ে এক ছেলে। সবার ছোট ছেলে। বয়স বারো তেরো। তারপর দুই আড়াই বছর করে প্রত্যেকটা মেয়ে সেই ছেলের চেয়ে বড়। একেবারে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে আমরা ওই বাড়িতে যাবার আগেই। বাকি চারজনই মোটামুটি সেইরাম দুষ্টু। একেবারে ছোট দুইটা সবচেয়ে বেশি দুষ্টু। তার চেয়ে বড় দুইটা একটু রিজার্ভ কিন্তু তলে তলে শয়তান। আমরা ব্যাচেলররা কে কি করি, আমাদের সবার সব কর্ম হিস্ট্রি তাদের মুখস্থ। অথচ ওদের কারো সাথেই আমরা কেউ কথা বলিনা। কথা বলার প্রশ্নও ওঠে না। কারণ, আংকেল টের পেলে অবশ্যই বাসা ছাড়তে হবে। করিমের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমরা দরজায় একটা মিউজিক্যাল কলিংবেল লাগালাম। আংকেলের ছোট দুই মেয়ে সেই কলিংবেল নিয়ে রোজ দুপুরে শুরু করলো উৎপাত। কলিংবেল চেপেই হয় তারা দৌড়ে ছাদে চলে যায়। নতুবা দৌড়ে নিচে নেমে যায়। দরজা খুলে কাউরে আর পাওয়া যায় না। উৎপাত হাতে নাতে ধরার জন্য একবার দরজার আড়ালে চুপ করেই দাড়িয়ে রইলাম। লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলাম, ছোট দুই মেয়ের বড়টা এসে কলিংবেল চাপছে, আর দু'জনেই দৌড়ে ছাদে চলে গেল। দশ মিনিট পরে আবার ছোট মেয়ে কলিংবেল চেপে দৌড়ে নিচে নেমে গেল। পনের মিনিট পরে আবার ছোটটার বড়টা কলিংবেল চেপে দৌড়ে নিচে নেমে গেল। দশ মিনিট পরে আবার কলিংবেল চেপে দু'জনেই দৌড়ে সরাসরি ছাদে। বুঝলাম, এই কলিংবেল চাপাটা তাদের দুষ্টামি আর খেলার অংশ হয়ে গেছে। নালিশে কাজ হবে না। উল্টো উৎকো ঝামেলা হতে পারে। যা করার সরাসরি করতে হবে। ভেতর থেকে ছিটকানি খুলেই রেখেছিলাম। ছোটটার বড়টা কলিংবেলে চাপ দেওয়ার আগেই হাতেনাতে ধরে ফেললাম। তারপর জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেল আমার যতো চিঠি মুখ খোলা বা ছেড়া পাই, সেসব চিঠি'র পাঠিকা ওরা চার বোন। কখনো কখনো চিঠির মধ্যে বেনামে চিঠিও থাকে। সেই চিঠি'র প্রেরকের নাম থাকে না। ভূতের চিঠি! জানতে চাইলাম, চিঠি'র মধ্যে চিঠি কে লেখে বল, নইলে আজ আর ছাড়ব না। নিজেকে বাঁচাতে বড় বোনের নাম করে ছাড়া পেয়েই ভো দৌড়। এরপর কলিংবেল বিড়ম্বনা বন্ধ হলেও শুরু হল আরেক উৎপাত। আমরা যখন বাসায় না থাকি, দরজায় নানা কার্টুন একে লাগিয়ে রাখে। কার্টুনিস্টের কোনো নাম থাকে না। কিন্তু কার্টুনে আমাদের নামে নানান ঢঙের ডায়লগ থাকে। কি করা যায়? আমরা বুদ্ধি পাকিয়ে একবার করিমকে হালকা করে একটু নালিশ দিলাম। করিম ভাই, কার্টুনের জ্বালায় তো আমরা অস্থির। কি করা যায়, বুদ্ধি দেন? দারোয়ান করিম কইলো, খবরদার, ওইগুলঅ বজ্জাতের হাড্ডি। লেখাপড়ায় এক্কেরে বিচ্ছিড়ি। যেনোতেনো কইরা কারোর গলায় ঝুলতে পারলেই বাঁচে। বড়ুগ্গা কিন্তু এই কইরাই একজনের গলায় ঝুলছে। সাবধান থাইকেন! আর আংকেল শুনলে কিন্তু ঘটিবাটি সব হারাইবেন!!করিমের কথা খুব গুরুত্ব দিয়েই আমরা বিবেচনায় নিলাম। বিপদ-আপদ থেকে দূরে থাকাই ভালো। আর ইমান ধরে রাখা যে কোনো মুসলমানের জন্য উত্তম। আমরা একেবারে আর ওই দুষ্টুদের পাত্তা দিলাম না। এরমধ্যে এক রাতে আংকেল মদ্যপ অবস্থায় মেইন গেইটের সামনে পেড়ে গেছেন। গেইটের বাইরে দেহের পেছনের অংশ আর গেইটের ভেতরে দেহের সামনের অংশ। এই অবস্থায় আংকেল সারারাত সেখানে ঘুমিয়েছিলেন। করিমকে বাড়িওয়ালী আন্টি বড় মেয়ের বাড়িতে পাঠায়েছিলেন। করিম আর রাতে ফেরে নাই। সকালে প্রতিবেশীদের চিৎকারে সবার সেদিকে দৃষ্টি যায়। তারপর আংকেল খুব লজ্বা পেলেন। সারাদিন আর বাইরে বের হন না। আন্টি বললেন, তুমি ঢাকার বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসো। আংকেল এক মাসের জন্য ভারত গেলেন। করিমের কাছে আমরা প্রায়ই আংকেলের খবর নেই। করিম জানায়, আংকেল দেশে আইছেন। নোয়াখালীতে আংকেলের গ্রামের বাড়িতে আছেন। আমরা আংকেল আর আবদুল জব্বারের সেই রাতের ঝগড়া শুনতে না পেয়ে কেমন একঘেয়ে হয়ে উঠেছি প্রায়। হঠাৎ একদিন সকালবেলায় শুনলাম নিচে খুব চিৎকার চেচামেছি কান্নাকাটি। করিম-ই আমাদের খবরটি পৌছায়। আংকেলের গ্রামের বাড়িতে কে বা কারা যেনো সম্পত্তির লোভে আংকেলকে খুন করেছে। গ্রামের বাড়ির পুকুরের কচুরিপানার মধ্যে আংকেলের লাশ পাওয়া গেছে। গোটা বাড়িতে যেনো অন্ধকার নেমে আসলো। করিম গেইটের দায়িত্ব আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে আন্টি ও সেই দুষ্টু মেয়েদের নিয়ে একটা মাইক্রোবাসে নোয়াখালী রওনা হল। তিনদিন পর আংকেলের মিলাদে করিমের সঙ্গে বাড়িওয়ালী আন্টি উপরে এসে আমাদের নিমন্ত্রণ করে গেলেন। দুপুরে যেনো আমরা সবাই মিলাদে অংশগ্রহন করি। আমার ঢাকার মাইগ্রেশান জীবনে সেই একবার মাত্র কোনো বাড়িওয়ালার পক্ষ থেকে মিলাদের নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। আমরা সবাই মিলাদে অংশও নিয়েছিলাম। আর আবুল কালাম আংকেলের জন্য মন থেকে দোয়া করেছিলাম...পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে আমাদের সেই ব্যাচেলর সাইড উঠিয়ে দিলেন বাড়িওয়ালী আন্টি। তারপর থেকে আর আমরা কেউ আংকেলের সেই দুষ্টু মেয়েগুলোর খবর জানি না...
false
rn
ইংরেজ ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর ধরে এ দেশ শাসন করে।ইংরেজরা বাংলায় আসার কারণে বাংলার রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারায় এবং সমাজ ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।ইংরেজ বণিকদের বাণিজ্য সংস্থার নাম ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।ইংরেজ শাসনের নীতি ছিল ‘ভাগ করো শাসন করো’।১৯১১ সালে ইংরেজরা বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়।ইংরেজরা ক্ষুদিরাম ও মাস্টারদা সূর্য সেনকে ফাঁসি দিয়েছিল। ব্রিটিশরা কলিকাতাকে ‘ক্যালকাটা’ নামে অভিহিত করত।ইংরেজরা শর্ত ভংগ করে কলকাতা আক্রমণ করে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে সিরাজদ্দৌল্লার পরাজয় ঘটলে বাংলায় ব্রিটিশ প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয় ।লর্ড ক্লাইভ ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠায় মূল ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি। বর্তমান ভারতের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম আর ভাগলপুরের বিশাল অঞ্চল দিলো, যার প্রায় পুরোটাই ছিলো পাহাড়ি বনাঞ্চল। কথা ছিলো সেখানে চাষবাস করলে সাঁওতালদের খাজনা দিতে হবে না। তাই সাঁওতালরা ক্রমশ বনভূমিতে জঙ্গল কেটে সাফ করে গ্রাম প্রতিষ্ঠা করলো। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই ইংরেজরা তাদের প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করে খাজনা আদায় করা শুরু করলো। শুধু তাই না, তারা ধীরে ধীরে খাজনার পরিমাণও বাড়াতে শুরু করলো। ১৮৫৪-৫৫ সালে খাজনার পরিমাণও যেমন বেড়ে গেলো অনেক, তেমনি বেড়ে গেলো খাজনা আদায়ের জন্য সাঁওতাল কৃষকদের উপর অত্যাচারও।১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকে বোঝায়।১৮৫৮ সালে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তির হাতে স্থানান্তরিত হন। রানি ভিক্টোরিয়া নিজ হস্তে ভারতের শাসনভার তুলে নেন।ব্রিটিশের ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনে মুসলিম জনসংখ্যায় খুব কমই বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি ঘটেছে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর। বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যরা তাদের সাহিত্যে যে মুসলিম বিরোধী বিষ উদগিরণ করেছেন সেটি বাংলার সমাজ ও আলোবাতাস থেকে উদ্ভুত হলে তার নমুনা মধ্য যুগের বা আদি যুগের সাহিত্যেও পাওয়া যেত। কিন্তু তা নেই। তাদের মগজে ঘৃনাপূর্ণ মিথ্যার বিষটি ঢুকিয়েছিল বস্তুত ইংরেজগণ। তারাই প্রথম আবিস্কার করে, ভারতের মুসলিম শাসন শুধু ধ্বংস, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও শোষণ ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। বলেছে, মন্দির ভেঙ্গে তার উপর মসজিদ গড়েছে। তাদের লেখনিতে শিবাজীর চরিত্র অংকিত হয়েছে হিন্দু জাগরনের এক মহান ও আদর্শনীয় বীর রূপে, আর মোঘল বাদশা আওরঙ্গজীব চিত্রিত হয়েছেন কুৎসিত ভিলেন রূপে। বাংলায় হিন্দুদের বাস মুসলমানদের চেয়ে অধিক কাল ধরে। অথচ তাদের ব্যর্থতা হল, সমগ্র ইতিহাস ঘেঁটে একজন হিন্দুকেও বের করতে পারে যিনি স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাংলার মানুষের সামনে আদর্শ হিসাবে চিত্রিত হতে পারেন। তেমন চরিত্রের তালাশে বঙ্কিম ও মাইকেল মধুসূদন যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, রবীন্দ্রনাথও ব্যর্থ হয়েছেন। সে এক বিশাল শূন্যতা। ব্রিটিশ আমলে কৃষকদের কাছে নীল চাষ ছিল আতঙ্ক। নীল চাষে ইংরেজদের শাসন, শোষন ও কৃষক নির্যাতনের কথা এখন ইতিহাস।
false
fe
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ফকির ইলিয়াস========================================= যে প্রত্যয় নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন, তা দ্বিগুণ হয়েছিল স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর। পাকিস্তানি হায়েনাদের জল্লাদখানা থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলার মাটিতে পৌঁছার পরপরই তার চিত্তের উদারতা আরও বিশালতায় রূপ নিয়েছিল। তিনি তার মহানুভবতা দিয়ে দেখেছিলেন চারপাশ। বঙ্গবন্ধু কখনোই ভাবেননি, এই বাংলার মাটিতে কেউ তার শক্র হতে পারে। এমনকি সেই পরাজিত রাজাকার চক্রও আবার ফুঁসে উঠতে পারে সেটা ছিল তার কল্পনার বাইরে।বঙ্গবন্ধু কেমন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন? তার কিছু পরিকল্পনা সে সময়ই প্রণয়ন করেছিল তার দল, তার মন্ত্রী পরিষদ। নয় মাসে ধ্বংস স্তূপে পরিণত বাংলাদেশকে তুলে দাঁড় করানো সে সময় কোন মতেই সহজ-সাধ্য ছিল না। তার ওপর রয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের সমর্থনের অভাব।একথাটি অস্বীকার করার উপায় নেই বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণেই ভারত বাংলাদেশের মাটি থেকে দ্রুত সরিয়ে নেয় মিত্রবাহিনী এবং তা সম্ভব হয়েছিল ইন্দিরা-মুজিব পারস্পপরিক গভীর শ্রদ্ধাবোধের কারণেই। মার্কিন কবি অ্যালেন গিনসবার্গ তার জীবদ্দশায় একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যদি সেসময় ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী না থাকতেন, তবে ভারত এতটা সমর্থন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে দিত কি না -তা নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’-অমর কবিতার জনক কবি অ্যালেন গিনসবার্গের মতে, ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন জননন্দিত নেত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল। আর এর নেপথ্যের কারণ ছিল ইন্দিরা-মুজিবের রাজনৈতিক মনন।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঠিক পূর্ববর্তী সময়ে একটি গোপন ছক এঁকে রেখেছিলেন শেখ মুজিব। তিনি নিজে বন্দি হয়ে গেলে নেতারা ভারতে কোথায় যাবেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হবে তার পুরো নকশাই ছিল তার নখদর্পণে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা তাদের সেসব কথা এখন বলছেনও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। এসব কিছুরই প্রধান শক্তি ছিল শেখ মুজিবের বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্ব। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ যখন চলছিল, তখন বন্দি মুজিবও ছিলেন ইয়াহিয়া-ভুট্টো-টিক্কাদের আতঙ্ক।স্বাধীন বাংলাদেশের অবকাঠামো পুনর্গঠনে শেখ মুজিবকে কাজ করতে হয়েছিল ঘরে-বাইরে। দেশ গঠনে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহে তাকে কম বেগ পেতে হয়নি; কিন্তু সেসব দুরূহ কাজ তিনি সাধন করতে পেরেছিলেন গণমানুষের ভালবাসার কারণেই। তিনি বিশ্বের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন বাঙালির পরিচয়।১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ তারিখে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এর পরপরই সরকারপ্রধান হিসেবে ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন জাতির জনক বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা ভাষায় দেয়া সে ভাষণে তিনি বাংলাদেশে রক্তাক্ত, নৃশংস গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি পেশ করেন বাঙালি জাতি এবং বিশ্ব মানবের কল্যাণে তার চিন্তা-চেতনার রূপরেখা। তিনি তার ভাষণে বিশ্বে নারী সমাজের অগ্রগতি, শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্খ্য, পানি, বিদ্যুৎ বিষয়াদিসহ তার সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু, কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অধিক ফসল ফলানোর প্রয়োজনীয় সাহায্যও চান বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে। ডাক দেন সজুব বিপ্লবের।বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে ভাষণ দৃষ্টি কাড়ে গোটা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের। ফিলিস্তিনের কিংবদন্তি নেতা ইয়াসির আরাফাত শেখ মুজিবকে গণমানুষের মহানায়ক উল্লেখ করে বলেন, মেহনতী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে মুজিবকে সর্বতোভাবে সাহায্য করবেন তিনি। একই সহযোগিতার কথা ব্যক্ত হয় সমাজতন্ত্রী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর পক্ষ থেকেও।শেখ মুজিব বাংলাদেশকে, বাঙালি জাতিকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করতে চেয়েছিলেন। কৃষি খাতে বিপ্লবী ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছিলেন তিনি। তার এই অদম্য কর্মযজ্ঞ কারও কারও হিংসার কারণ হয়েছিল বৈকি। বিশ্বের ইতিহাস প্রমাণ করে যারা ফন্দি-ফিকির করে মহামানব নেলসন ম্যান্ডেলাকে কারাগারে পুরে রেখেছিল, পরবর্তী সময়ে তারাই ম্যান্ডেলার ভক্ত-অনুরাগী বলে বিশ্বে পরিচিত হয়েছে। কিংবা যারা মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিংকে হত্যার ইন্ধন যুগিয়েছিল, তারাই পরবর্তী সময়ে কিং-কে বিশেষভাবে সম্মানিত করতে চেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মোড়ল মনোভাবাপন্নদের জন্য আতঙ্কের কারণ ছিল ঠিক একইভাবে। তা না হলে যারা মানবতার ধ্বজাধারী বলে নিজেদের ঢোল নিজেরা পেটায়, সেই মার্কিন প্রশাসন একাত্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার নিন্দা জানায়নি কেন? কেন রক্তবন্যায় মদদ দিয়েছিল তারা?আমার স্পষ্ট করেই বলতে পারি, পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা­ এই চার মলনীতির সমাধিই শুধু রচিত হয়নি, একটি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। আর তা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। যারা একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি, যারা দায়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিল, মুজিব হত্যায় তাদের নেপথ্য ইন্ধন ছিল। পরবর্তীতে তারাই রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নেয়।ভাবতে অবাক লাগে আজ যারা বঙ্গবন্ধুর বাকশাল পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনায় পঞ্চমুখ হন তারাই সেদিন বাকশালের সদস্য হওয়ার জন্য প্রথম সারিতে থেকে আবেদন করেছিলেন। জাতির জনককে সপরিবারে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়। ‘চুয়াত্তরের মন্বন্তর’­ নাম দিয়ে মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করা হয়। অথচ এর চেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ মুজিবের তিরোধানের পর বাংলাদেশে ওপর দিয়ে কয়েকবারই গেছে। এখনও যাচ্ছে বলা যায়। সব চেয়ে মর্মান্তিক কথা হচ্ছে, খুনিদের বাঁচাতে যে দেশে অধ্যাদেশ পর্যন্ত জারি করা হয়, সে দেশে গণঅধিকার কতটা কিভাবে সংরক্ষিত হতে পারে? সেসব খুনির বিচারের রায় এখনও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে নানা টালবাহানার মাধ্যমে।শেখ মুজিব কখনই মৃত্যুকে ভয় পেতেন না। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। তার অগ্রজ কিংবা সমসাময়িক অন্য কোন নেতা যা পারেননি তিনি সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন। যে গোষ্ঠী এখনও শেখ মুজিব নামটিকে ভয় পায়, তারা কারা? সেসব বিষধরের পরিচয় জানাতে হবে এই প্রজন্মকে। শিকড়সন্ধানী বাঙালির আত্মপরিচয়ের স্তম্ভ শেখ মুজিব। তার নাম কোনভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। ১২ আগষ্ট ২০০০৮--------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ। ১৫ আগষ্ট ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
ij
ডাডাবাদ থেকে সুররিয়ালিজম_ অবিস্মরণীয় সেই শৈল্পিক উত্তোরণ ডাডাবাদ। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভের ইউরোপীয় একটি শিল্প আন্দোলন; একই সঙ্গে এটি একটি শিল্পতত্ত্বও বটে। ডাডাবাদী চিন্তাধারা সূত্রপাত হয়েছিল পূর্ব ইউরোপে-বিশেষ করে রুমানিয়ায়। রুমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেই ডাডাবাদী কবিতা ও গদ্যের স্ফূরণ লক্ষ করা গিয়েছিল। অতিরিক্ত যৌক্তিক চিন্তা ও বুর্জোয়া মূল্যবোধ মানবসভ্যতার অমঙ্গল করে; কাজেই যৌক্তিকতাবিরোধী ও শিল্পবিরোধী অবস্থান নেওয়া অনিবার্য হয়ে উঠেছে-এই বিশ্বাসই ডাডাবাদী চিন্তাচেতনা । এমনটা ভাবার কারণ? তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) ঘনিয়ে এসেছিল। কয়েকজন রুমানিয় শিল্পী প্রথম মহাযুদ্ধের প্রারম্ভে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে সেটেল করে। এদের মধ্যে হুগো বেল, এমি হেমিংস্, ট্রিসটান জারা, জ্যাঁ আর্প, মার্সেল জানকো, রিচার্ড হিউয়েলসেনবেক, সোফি টাওবের উল্লেখযোগ্য । এদের সবাই যে রুমানিয়-তাও না। ১৯১৬ সাল। প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। জুরিখের এক ক্যাফেতে বসে এরাই এক নতুন শিল্পবিরোধী শিল্পরীতির ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। সেই কাফের কাছেই একটি অ্যাপার্টম্যান্টে রাশিয়ার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করছিলেন ভ­াদিমির ইলিচ লেলিন । ডাডা শব্দের উদ্ভবও রুমানিয় ভাষার সঙ্গে জড়িত। দুজন রুমানিয় শিল্পী - ট্রিসটান জারা ও মার্সেল জানকো- এরা প্রায়ই ‘ডা’, ‘ডা’ করতেন। রুমানিয় ভাষায় ‘ডা’ হচ্ছে: ঠিক। ইংরেজি ইয়ে ইয়ে বা হ্যাঁ হ্যাঁ। কারও কারও মতে অবশ্য ডাডাবাদের উদক্তোরা জুরিখের সেই ক্যাফেতে বসে নতুন শিল্প আন্দোলনের জন্য যুৎসই একটি নাম খুঁজছিল। কার হাতে ছিল একটি ফরাসি-জার্মান অভিধান । সেখানেই ডাডা শব্দটি ছিল। ফরাসি ভাষায় ডাডা মানে: খেলনা ঘোড়া। যা হোক। এভাবেই সুইজারল্যান্ডের জুরিখের একটি কাফেতে ডাডাবাদের সূচনা হল; যা ১৯১৬ থেকে ১৯২২ সাল অবধি তুঙ্গে ছিল। মূলত যুদ্ধ বিরোধী আর প্রচলিত শিল্পধারনার বিমূখ এই শিল্প আন্দোলনটি তৎকালীন শিল্পসাহিত্য কবিতা শিল্পতত্ত্ব মঞ্চ গ্রাফিক ডিজাইন-প্রভৃতি শিল্পমাধ্যমে ছাপিয়ে যায় । দাদাবাদকে এক ধরনের প্রতিশিল্পও বলা যায়। বিরাজমান সংস্কতি যুদ্ধের জন্ম দেয়; কাজেই এর বিরোধীতা করা উচিত। শিল্পকে হতে হবে বিমূর্ত । কেননা, এটি পরিকল্পনা ও যৌক্তিক চিন্তাধারার বিপরীত। পরিকল্পনা ও যৌক্তিক চিন্তাধারা জন্ম দেয় যুদ্ধের আবহ। রিচার্ড হিউয়েলসেনবেক বলেছেন-""[A]bstract art signified absolute honesty for us." এ কারণেই ডাডাবাদকে বলা যায় উত্তরাধুনিক শিল্পের জনক। ডাডাবাদী ধ্যান ধারনা তারপর জুরিখ থেকে অপরাপর ইউরোপীয় শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়।এর কর্মীসমর্থকরা মিছিল মিটিং বিক্ষোভ করে। নিয়মিত বইপত্র-জার্নাল প্রকাশ করে । ডাডাবাদ পরের শিল্পান্দোলনকেও প্রভাবিত করেছিল। আজ যে আমরা বিমূর্ত (যা মূর্ত নয়) কবিতা ও চিত্রকলার কথা বলি -ডাডাবাদ তারই পথ তৈরি করে দিয়েছিল। উত্তরাধুনিক শিল্পের সূচনা করেছিল। পরাবাস্তববাদের ভিত্তিপ্রস্তর রচনা করেছিল। ১৯২৪ এর দিকে ডাডাবাদী আন্দোলনটি কেমন থিতিয়ে আসে। যুদ্ধ শেষ সেই ১৯১৮ সালেই। প্যারিসে ডাডাবাদ পরাবাস্তববাদ শিল্প আন্দোলনে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। ডাডাবাদী শিল্পীরা ক্রমশ অন্যান্য আধুনিক শিল্পরীতির দিকে ঝুঁকে পড়ছিলেন। যেমন: সুররিয়ালিজম, সমাজবাস্তবতা। তিরিশ-চল্লিশের দশকের প্রাক্কালে অনেক ইউরোপীয় ডাডাবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। অনেকেই হিটলারের মৃত্যুশিবিরে প্রাণ দেন শিল্পকে বিকৃত করার অজুহাতে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ডাডাবাদ ঝিমিয়ে আসে। আরও কিছু নতুন শিল্প আন্দোলনের জন্ম হয়। যেমন, সিচুয়াশনিষ্ট এবং কাকোফনি সোসাইটি। তবে সুররিয়ালিজম বা পরাবাস্তববাদই ডাডাবাদের সার্থক ও সফল উত্তরসূরী। ২ দিনক্ষণ গুণে কোনও নতুন শিল্পআন্দোলনের সূচনা হয় না। ফরাসী কবি গিয়োম অ্যাপোলিনিয়ার (১৮৮০ ১৯১৮) লেখায় বদলে যাচ্ছিল প্রকাশের বৈশিষ্ট্য। তাঁর লেখা কবিতা আদি-সুলিয়ালিস্ট কাব্যের নির্দশন হয়ে রয়েছে। শ্বেত তুষার আকাশে দেবদূতগন একজন পরেছে অফিসারের পোশাক একজন আজ পরেছে রাধুঁনির পোশাক অন্যরা গান গাইছে চমৎকার আকাশ-রঙা অফিসার ক্রিসমাসের পরের বসন্ত তোমাকে সুন্দর সূর্যে সাজাবে চমৎকার সূর্য রাঁধুনি হাঁস বাছছে আহ! তুষার পতনের শব্দ পতন এবং আমি আমার আলিঙ্গনে তোমাকে পাচ্ছি না ... ডাডাবাদী আন্দোলনের গোঁড়ায় একাধিক শিল্পী জড়িত ছিল;- পরাবাস্তববাদের শুরুতে অবশ্য একজন ব্যাক্তির উদ্যেগ ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ন। তিনি হলেন ফরাসি লেখক ও কবি আন্দ্রে ব্রেঁতো (১৮৯৬-১৯৬৬)। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানও চর্চা করেছিলেন ব্রেঁতে। ১৯২৪ সালে 'দ্য সুরলিয়ালিস্ট মেনোফ্যাস্টো’ প্রকাশ করলেন। এভাবেই পরাবাস্তবাদের উত্থান ও বিকাশ ঘটল প্রথম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে। পরাবাস্তববাদের উত্থান হয়েছিল ডাডাবাদ থেকে। ডাডাবাদ ছিল যুক্তি ও শিল্পবিরোধী। পরাবাস্তববাদ জোর দিল সদর্থক প্রকাশের ওপর। তবে এর অবস্থানও যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে। পরাবাস্তবাদের সমর্থকরাও বললেন: যৌক্তিকতাবাদ ইউরোপীয় সংস্কৃতির কেন্দ্রে থাকায় মহাযুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। আন্দ্রে ব্রেঁতো বললেন : অভিজ্ঞতার চেতনাচেতনে পরিভ্রম করে পরাবাস্তববাদ এক ধরনের স্বপ্নময় ফ্যান্টাসির জন্ম দেয়-যা পরিপূর্ন বাস্তবতা বা পরাবাস্তবাদ সৃষ্টি করে। ফ্রয়েড নির্জ্ঞান মনের তত্ত্ব জানতেন ব্রেঁতো। বললেন: অবচেতন মন হতে পারে কল্পনায় অশেষ উৎস। এই অধরা প্রদেশে অবগাহন করার জন্য তিনি শিল্পীসাহিত্যিকদের আহবান জানালেন। এই ঘোষনার পর শুরু হল এক বিস্ময়কর যাত্রা। কেবল অবচেতন মনের আবিস্কারই নয়-পরাবাস্তববাদে আরও বহু উপাদান সংযুক্ত হল। যেমন, সারপ্রাইজ, অভাবিত উদ্ভট পরিবেশনা, যুক্তির শিথিলতা। পরাবাস্তববাদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল প্যারিস। পরে, গোলার্ধের সর্বত্রই অভিনব ধারনাটি ছড়িয়ে যায়। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অটোমেটিক রাইটিং। স্বপ্নের আর বিবরণ। ফ্রয়েড ছাড়াও মার্কস ও হেগেলও প্রভাব রেখেছিলেন পরাবাস্তব ধ্যানধারণায়। এভাবে শুরু হল উত্তরাধুনিক এক শিল্প ঘরানার। উত্তরাধুনিক শিল্পের অনেক কলাকৌশলই পরাবাস্তববাদে প্রয়োগ করা হয়েছিল। ডাডাবাদ ও পরাবাস্তব বাদ উভয়ই যুদ্ধ বিরোধী। ডাডাবাদে অবচেতন মনের গুরুত্ব না থাকলেও এই আন্দোলনটির অবস্থান ছিল প্রথম মহাযুদ্ধের বিরুদ্ধে- যে কারণে মানবিক। একই সঙ্গে জাতীয় বুর্জোয়া ভাবধারা ও ঔপনেবেশিক শাসনশোষনের বিরোধী ছিল ডাডাবাদী চিন্তাচেতনা। কেননা, তারা বিশ্বাস করতেন যুদ্ধের মূল কারণ জাতীয় বুর্জোয়া মূল্যবোধ। যে শিল্পকলা যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট -ডাডাবাদীরা সেই শিল্পকলার বিরোধী ছিল। পরাবাস্তববাদও তাই মনে করে: পুঁজিবাদী সমাজের যুক্তিবাদ মানুষকে আলটিমেটলি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। সে কারণে সুরিয়ালিস্ট শিল্পীরা সচেতন ভাবে যৌক্তিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাস্তবতা বা রিয়ালিটির বিকৃতি সাধন করেন মানবজাতির কল্যানে। মনে থাকার কথা ডাডাবাদী শিল্পী রিচার্ড হিউয়েলসেনবেক বলেছিলেন-"[A]bstract art signified absolute honesty for us." সব কটি ছবিই ডাডাবাদী ও সুরিয়ালিষ্ট শিল্পী মার্সেল ডুকাম্পের তথ্যসূত্র: ড. বিমলকুমার মুখোপাধ্যায়। সাহিত্য-বিবেক। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৫৭
false
hm
এমন যদি হতো ... ইকবাল আর মুনিরা খানিকটা দেরি করে ফেলেছে। ট্রেন ধরতে গেলে শেষ মূহুর্তে একটু দেরি হয়েই যায়, স্বাভাবিকভাবেই, কাজেই বগিতে শেষ যে সীটদু’টো খালি ছিলো, সে দু’টোতেই বসতে হলো দু’জনকে। ওদের সীটদু’টো পাশাপাশি, এবং আরেকজোড়া সীটের মুখোমুখি। ইকবাল স্যুটকেসটাকে ওপরের রযাকেকে ঠেসে ঢোকাতে লাগলো, আর মুনিরা নিজের মধ্যে আবিষ্কার করলো হালকা একটা অস্বস্তি। ওদের মুখোমুখি সীট জোড়ায় যদি অন্য আরেকটা জুটি বসে, তাহলে ঢাকায় পৌঁছোনোর আগ পর্যন্ত সময়টা তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে পার করতে হবে। অথবা, যেটা করা যেতে পারে, খবরের কাগজের একটা ভদ্র আড়াল তোলা যেতে পারে। তবে এখন আর জায়গা পাল্টানোর চেষ্টা করে লাভ নেই, ট্রেনে আর সীট খালি না-ও থাকতে পারে। ইকবালকে দেখে অবশ্য মনে হলো না সে এই ব্যাপারে খুব একটা চিন্তিত, আর এজন্যেই মুনিরা আরেকটু হতাশ হলো। সাধারণত ওদের দু’জনের ভাবনা একই পথে চলে। এ জন্যেই, ইকবাল দাবি করে, সে নিশ্চিত যে সে ঠিক মেয়েটাকে বিয়ে করেছে। ইকবাল আগে প্রায়ই বলতো, ‘আমরা একজন আরেকজনের জন্যে তৈরি, বুঝলে মুনিরা? এটাই আসল কথা। জিগ’স পাজল খেলতে গিয়ে কী হয়? একটা টুকরোর সাথে কেবল আরেকটা টুকরোই মেলে। অন্য কোনো টুকরো দিয়ে খেলা মেলানো যায় না, আর আমার অবশ্যই অন্য কোন মেয়েকে দিয়ে চলতো না।’ মুনিরা হাসতো সবসময়। ‘দেখো ইকবাল, তুমি যদি সেদিন বাসে না চড়তে, তাহলে হয়তো জীবনে আমার সাথে দেখা-ই হতো না। কী করতে তখন?’ ‘বিয়েই করতাম না। সোজা হিসেব। তাছাড়া, তোমার সাথে হয়তো শারমিনের মাধ্যমে আরেকদিন পরিচয় হতো।’ ‘তাহলে নিশ্চয়ই ব্যাপারটা একই রকম হতো না।’ ‘অবশ্যই হতো।’ ‘উঁহু, হতো না। আর তাছাড়া শারমিন আমাকে কোনদিনই তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতো না। ও নিজেই অনেকটা আগ্রহী ছিলো তোমার ব্যাপারে। আমাকে ওর নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বানানোর মতো বোকা ও কখনোই ছিলো না।’ ‘কী যে বলো!’ মুনিরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওর প্রিয় প্রশ্নটা করতো, ‘ইকবাল, মনে করো, কেমন হতো যদি তুমি সেদিন বাস স্টপে এক মিনিট পর গিয়ে অন্য আরেকটা বাসে চড়ে যেতে? তোমার কী মনে হয়, কী ঘটতে পারতো?’ ‘ধরো, মুনিরা, কেমন হতো যদি চিংড়ি মাছগুলোর দু’টো করে ডানা থাকতো, আর তারা উড়ে গিয়ে সব গাছে চড়ে বসে থাকতো? তাহলে রোজ রোববার আমরা কী খেতে পেতাম?’ কিন্তু ওরা দু’জন সেদিন একই বাসে ছিলো, চিংড়ি মাছগুলোর দু’টো করে ডানা নেই, পাঁচ বছর হয়ে গেলো ওরা দু’জন বিয়ে করেছে আর প্রতি রোববার চিংড়ি মাছের নানারকম অপভ্রংশ খাচ্ছে। এখন ওরা দু’জন ঢাকা যাচ্ছে বিয়ের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক হপ্তার ছুটি কাটাতে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মুনিরা আবার বাস্তবে ফিরে এলো। ‘আমার মনে হয় অন্য কোন সীট পেলে ভালো হতো।’ ‘হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হচ্ছে। তবে এখনো সীট দু’টো খালি আছে, কাজেই কিছু সময় নিরিবিলি কাটানো যাবে।’ বললো ইকবাল। মুনিরা তবুও সন্তুষ্ট হতে পারলো না। আর এ সময়ই ছোটখাটো, মোটাসোটা লোকটাকে বগির মাঝখানটা ধরে হেঁটে আসতে দেখলো সে। এহহে, এই লোকটা আবার কোত্থেকে এলো? ট্রেন তো এখন সিলেট আর শ্রীমঙ্গলের মাঝামাঝি। এই লোক যদি এই সীটটাই নিয়ে থাকে, তাহলে ফাঁকা রেখে গিয়ে এতক্ষণ কোথায় ছিলো? মুনিরা ব্যাগ থেকে আয়না বের করে নিজের ছায়ার দিকে চোখ রাখলো। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে, লোকটার দিকে আর না তাকালে সে ওদের পার হয়ে চলে যাবে। কাজেই মুনিরা নিজের কালো চুল, ট্রেন ধরার তাড়াহুড়োয় যা অনেকটা অগোছালো হয়ে আছে, তারপর কালো চোখ, আর ছোট্ট পেলব ঠোঁট, যে দু’টোকে ইকবাল “কেবল চুমোর জন্যে তৈরি” বলে রায় দিয়েছে, সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিলো। খারাপ না, ভাবলো মুনিরা। এরপর মুনিরা মাথা তুলেই ছোটখাটো মানুষটাকে নিজের সামনের সীটে দেখতে পেলো। চোখাচোখি হতেই লোকটা বিশাল একটা হাসি উপহার দিলো। হাসির সাথে লোকটার মুখে একগাদা ভাঁজ পড়লো। তাড়াহুড়ো করে মাথার টুপি খুলে পাশে ছোট্ট কালো বাক্সটার ওপর রাখলো সে, যেটা সে বয়ে বেড়াচ্ছিলো। সেই সাথে তার মাথার চকচকে টাকটার চারপাশে সাদা চুলগুলো সটান খাড়া হয়ে দাঁড়ালো। মুনিরা হাসির উত্তরে অল্প না হেসে পারলো না। একই সাথে ওর চোখ পড়লো লোকটার কালো বাক্সটার ওপরে। মুনিরার হাসি আস্তে আস্তে মুছে গেলো, ইকবালের কনুই ধরে টান দিলো সে। ইকবাল খবরের কাগজ থেকে চোখ তুললো। তার ঘন, পুরু, কালো ভুরূ জোড়া প্রায় মিশে গেছে, প্রথম দর্শনেই তাকে কঠোর বলে মনে হয়। কিন্তু ভুরূর নিচে চোখ দু’টোতে আপাতত সন্তুষ্টি আর হালকা চমকে যাওয়া ভাব ছাড়া কিছুই নেই। ‘কী হলো?’ জিজ্ঞেস করলো সে। মোটাসোটা লোকটাকে সে অতটা খেয়াল করে দেখেনি। মুনিরা নিজে যা দেখেছে, ইকবালকে সেটা দেখানোর জন্যে হাত আর মাথার সাহায্য নিয়ে যতটুকু সম্ভব আবছাভাবে ইঙ্গিত করলো। কিন্তু ছোটখাটো লোকটা সবকিছুই লক্ষ্য করছে। মুনিরা নিজের কাছে বোকা বনে গেলো, কারণ ইকবাল বুঝতে না পেরে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। শেষ পর্যন্ত মুনিরা ইকবালকে কাছে টেনে এনে ফিসফিস করে বললো, ‘তুমি দেখছো না, ঐ বাক্সের ওপর কী লেখা আছে?’ বলতে বলতেই মুনিরা আবার তাকালো বাক্সটার দিকে। উঁহু, কোন ভুল নেই। খুব স্পষ্টভাবে বোঝার উপায় নেই, কিন্তু বাক্সটার ওপর আলো কাত হয়ে পড়েছে, কালো পটভূমির ওপর লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। গোটা গোটা হরফে লেখা, “এমন যদি হতো”। খর্বকায় মানুষটা হাসছে আবার। সে দ্রত মাথা ঝাঁকিয়ে কয়েকবার আঙুল তুলে লেখাটা দেখালো, তারপর নিজেকে দেখালো। ইকবাল নিচু গলায় বললো, ‘নিশ্চয়ই ওর নাম।’ মুনিরা উত্তর দিলো প্রশ্নে, ‘আচ্ছা, এটা কিভাবে একজন মানুষের নাম হয়?’ ইকবাল খবরের কাগজটা নামিয়ে রাখলো। ‘দাঁড়াও, দেখাচ্ছি তোমাকে।’ সামনে ঝুঁকে বললো সে, ‘হতো সাহেব?’ লোকটা আগ্রহী চোখে তাকালো ইকবালের দিকে। ‘হতো সাহেব .. .. কয়টা বাজে বলতে পারেন?’ এবার লোকটা কোটের পকেট থেকে বড় একটা ঘড়ি বের করে ডায়ালটা দেখালো। ‘ধন্যবাদ, হতো সাহেব।’ ইকবাল তারপর ফিসফিস করে বললো, ‘মুনিরা, দেখলে?’ ইকবাল আবারের খবরের কাগজে মন দিতো, কিন্তু ছোটখাটো লোকটা তার বাক্স খুলে ফেলেছে। শুধু তাই না, ওদের মনোযোগ আকর্ষণের পর একটু পর পর আঙুল তুলে দেখাচ্ছে। বাক্স খুলে একটা ভাপসা কাঁচের টুকরো বের করলো সে। মোটামুটি ছয় ইঞ্চি লম্বা, নয় ইঞ্চি চরড়া, আর মোটামুটি এক ইঞ্চি পুরু হবে জিনিসটা। কাঁচের টুকরোটার কিনারাগুলো উঁচু, কোণগুলো মসৃণ গোলাকৃতি, কিন্তু আর কোন বৈশিষ্ট্য এর নেই। লোকটা বাক্স থেকে একটা তারের কাঠামোও বের করে ফেলেছে, এবং সেটার মধ্যে কাঁচের টুকরোটা নিখুঁতভাবে বসে গেছে। গোটা জিনিসটাকে সে নিজেরহাঁটুর ওপর দাঁড় করিয়ে খুব গর্বিতভাবে তাকালো ওদের দিকে। মুনিরা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললো, ‘ইয়াল্লা, ইকবাল, এটা কোনো একটা ছবি!’ ইকবাল ঝুঁকে বসলো। তারপর লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কি এটা? নূতন কোন টেলিভিশন?’ লোকটা এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লো। মুনিরা বললো, ‘না, ইকবাল, এটা আমাদের ছবি।’ ‘মানে?’ ‘দেখছো না? ঐ যে বাসটা, যেটাতে আমাদের দেখা হয়েছিলো। ঐ দ্যাখো তুমি নিজে, কালো সীটটাতে বসে আছো, ঐ যে তোমার পরনে ঐ পুরনো সোয়েটারটা, যেটা আমি তিন বছর আগে ফেলে দিয়েছি। আর ঐ যে, আমি আর শারমিন উঠছি বাসে। ঐ যে, সামনে সেই মোটা মহিলাটা। দ্যাখো! দেখছো না?’ ইকবাল বিড় বিড় করে বললো, ‘নিশ্চয়ই কোন কৌশল .. ..।’ ‘কিন্তু তুমিও তো দেখতে পাচ্ছো, তাই না? এর জন্যেই এটার নাম “এমন যদি হতো”। এটা আমাদের দেখাবে, কেমন হতো যদি সব কিছু অন্যরকম হতো। কেমন হতো, যদি বাসটা মোড় না ঘুরতো .. ..।’ মুনিরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত। এবং সে খুবই চঞ্চল হয়ে উঠেছে। কাঁচের টুকরোটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শেষ বিকেলের রোদটুকু আস্তে আস্তে মলিন হয়ে এলো, আশেপাশে যাত্রীদের অস্পষ্ট গুঞ্জন আরো অস্পষ্ট হতে লাগলো .. ..। সেই দিনটা মুনিরার চোখে এখনো ভাসে। ইকবাল শারমিনকে চিনতো, সে নিজে সীট থেকে উঠে শারমিনকে বসতে দিতে চাচ্ছিলো, এমন সময় বাসটা জোরে মোড় ঘুরলো, আর মুনিরা ছিটকে গিয়ে সোজা ইকবালের কোলের ওপর পড়লো। ছি, এমন একটা হাস্যকর আর লজ্জাজনক পরিস্থিতি, কিন্তু সেটা কাজে লেগেছিলো। মুনিরা এতো লজ্জা পেয়েছিলো যে ইকবাল নিজে থেকেই সাহস করে আলাপ শুরু করলো। এমনকি শারমিনকে পর্যন্ত কোন ভূমিকা রাখতে হয়নি। বাস থেকে নামার আগে ইকবাল জেনে গিয়েছিলো মুনিরাকে এরপর কোথায় পাওয়া যাবে। মুনিরার এখনো মনে পড়ে, শারমিন কেমন কটমট করে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে। বিদায় নেয়ার আগে সে অনেক কষ্টে একটা অভিমানী হাসি দিয়ে বলেছিলো, ‘ইকবাল মনে হচ্ছে বেশ পছন্দ করে ফেলেছে তোমাকে।’ মুনিরা বলেছিলো, ‘কী যে বোকার মতো কথা বলো! ও সামান্য ভদ্রতার খাতিরে .. .. কিন্তু লোকটা দেখতে ভালো, কী বলো?’ এর মাত্র ছয় মাস পরই ওদের বিয়েটা হয়ে যায়। এখন ওরা তিনজন আবার সেই বাসের ভেতর। ভাবতেই ট্রেনের ঝুকঝুক শব্দটা একদম থেমে গেলো, তার বদলে মুনিরা নিজেকে বাসের গুমোট ভিড়ের মধ্যে খুঁজে পেলো। আগের স্টপেই ও আর শারমিন উঠেছে বাসটায়। বাসের দোলার সাথে তাল মিলিয়ে মুনিরা নিজের ওজন এক পা থেকে অন্য পায়ে নিচ্ছিলো, যেমনটা করছিলো অন্যান্যরা, বসে কিংবা দাঁড়িয়ে, একই একঘেয়ে আর খানিকটা হাস্যকর ছন্দে। মুনিরা হঠাৎ বললো, ‘শারমিন, কে যেন তোমাকে ইশারায় ডাকছে। চেনো নাকি?’ ‘আমাকে?’ শারমিন খানিকটা ইচ্ছাকৃত আলস্যে ঘাড় ফেরালো। তার চোখের আলগা দীর্ঘ পাঁপড়িগুলো নড়ে উঠলো হঠাৎ। ‘এই তো, চিনি আর কি .. .. কী চায় বলো তো?’ ‘চলো দেখি কী চায়।’ মুনিরা খানিকটা খুশি হলো দুষ্টুমি করার সুযোগ পেয়ে। সবাই জানে, নিজের পুরুষ বন্ধুদের অন্যান্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা শারমিনের একটা উদ্ভট স্বভাব। আর ওকে খানিকটা জ্বালানোর এই মজার সুযোগ মুনিরা হারাতে রাজি নয়। আর তাছাড়া, এই লোকটা .. .. দেখে বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। মুনিরা এঁকেবেঁকে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়টাকে পার হলো, আর শারমিন নিতান্ত নিমরাজি ভঙ্গিতে তার পিছু নিলো। মুনিরা এই অপরিচিত যুবকের সীটের সামনে এসে দাঁড়ালো, আর সাথে সাথে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বাসটা মোড় ঘুরলো। মুনিরা প্রাণপণে হাত বাড়িয়ে একটা হ্যান্ডেল ধরার চেষ্টা করলো। একটা কিছুতে আঙুল বেধে যাওয়া মাত্রই সে সেটাকে আঁকড়ে ধরলো। কিছুটা সময় যাওয়ার পর মুনিরা টের পেলো সে শ্বাস বন্ধ করে রেখেছে। ওর মনে হচ্ছিলো, কিছুতেই যেন কোনোকিছুর নাগাল পাওয়া যাবে না, প্রকৃতির সব নিয়ম যেন যুক্তি করে ওকে ফেলে দেবে। লোকটা ওর দিকে তাকিয়েও দেখলো না। সে শারমিনের দিকে তাকিয়ে হাসলো, তারপর সীট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ঘন ভুরূতে তাকে মানিয়েছে, বেশ আত্মবিশ্বাসী একটা ভাব আছে চেহারায়। মুনিরা সিদ্ধান্তে পৌঁছালো, লোকটাকে তার ভালো লেগেছে। শারমিন বললো, ‘আরে না, সে কি! আমরা তো এই পরের স্টপেজেই নেমে যাবো।’ ওরা নামলোও। মুনিরা বললো, ‘আমি ভেবেছিলাম আমরা শাহবাগ নামবো।’ শারমিন বললো, ‘হ্যাঁ, কিন্তু আমার একটু কেনাকাটা করতে হবে। বেশি সময় লাগবে না, চলো।’ ‘শ্রীমঙ্গল!’ ট্রেনের ভেতরে জোরেসোরে ঘোষণা করা হলো। ট্রেন এখন ধীর গতিতে চলছে, আর অতীতের দৃশ্যগুলো ধীরে ধীরে কাঁচের টুকরোটার মধ্যে হারিয়ে গেছে। আর ছোটখাটো লোকটা এখনো ওদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। মুনিরা ইকবালের দিকে ফিরলো। একটু ভয় ভয় লাগছে তার। ‘দেখলে কী হলো?’ ইকবাল বললো, ‘বাজে কয়টা এখন? এরই মধ্যে শ্রীমঙ্গল পৌঁছে গেলাম?’ ঘড়ি দেখলো সে। ‘হুঁ, মনে হচ্ছে তাই।’ মুনিরার দিকে ঘুরলো সে। ‘তুমি পড়ে যাও নি।’ ‘ওহ, দেখেছো তাহলে।’ মুনিরা ভেংচি কাটলো। ‘দেখেছো তো, এটাই হচ্ছে শারমিন। আগেভাগে বাস থেকে নেমে পড়ার কোন কারণই ছিলো না। যাতে তোমার সাথে আমার আলাপ না হয়, সেজন্যেই ও এমনটা করলো। তুমি শারমিনকে কতদিন ধরে চিনতে, ইকবাল?’ ‘খুব বেশিদিন না। যতদিন ধরে চিনলে ওকে দেখে চেনা যায়, আর সীট ছেড়ে দেয়ার মতো ভদ্রতা করা যায়, ততদিন।’ মুনিরা ঠোঁট বাঁকালো। ইকবাল হাসলো। ‘কী হতো না হতো সেটা ভেবে হিংসে করার কী দরকার? আর তাছাড়া, কী-ই বা এমন ঊনিশ-বিশ হতো? আমি নিশ্চয়ই পরে কোন ছুতোনাতা ধরে তোমার সাথে পরিচিত হতাম।’ ‘তুমি আমার দিকে ফিরেও তাকাওনি।’ ‘বাহ, সে সময়টাই বা পেলাম কখন?’ ‘তাহলে কিভাবে আমার সাথে পরিচিত হতে?’ ‘কোনো না কোনো ভাবে। আমি জানি না। .. .. আর, আমরা বোকার মতো এটা নিয়ে কেন তর্ক করছি?’ ট্রেন শ্রীমঙ্গল ছেড়ে আবার আস্তে আস্তে চলা শুরু করেছে। মুনিরার মনের ভেতর একটা কিছু খচখচ করতে লাগলো। সেই ছোটখাটো লোকটা এতক্ষণ ওদের ফিসফিস আলাপ শুনছিলো, তবে তার মুখে এখন আর সেই হাসিটা নেই। মুনিরা জিজ্ঞেস করলো, ‘ভাই, আপনি কি আমাদের আরো দেখাতে পারবেন?’ ইকবাল বাধা দিলো, ‘আহ, মুনিরা। কী করতে চাইছো, বলো তো?’ ‘আমাদের বিয়ের দিনটা দেখতে চাই। কী হতো যদি আমি সেদিন বাসের হ্যান্ডেলটা ধরে ফেলতাম .. ..।’ ইকবালের চেহারায় বিরক্তি ফুটে উঠলো। ‘কী হচ্ছে এসব, মুনিরা? আমরা যে সেই একই তারিখে বিয়ে করেছি, এমনটা না-ও হতে পারতো।’ মুনিরা তবুও বললো, ‘“এমন যদি হতো” ভাই, একটু দেখাবেন?’ ছোট্ট মানুষটা মাথা ঝোঁকালো। কাঁচের টুকরোটা আবার প্রাণ ফিরে পেলো, আস্তে আস্তে আলো আর ছায়া মিলে আকৃতি তৈরি করলো তাতে। মুনিরার কানে বিয়েবাড়ির হৈচৈ ভেসে এলো, যদিও বাস্তবে কোন শব্দ এখন নেই। ইকবাল খানিকটা স্বস্তি নিয়ে বললো, ‘ঐ তো আমি। আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। খুশি এখন?’ ট্রেনের শব্দ আবার আস্তে আস্তে মুছে যেতে লাগলো, মুনিরা শেষ যা শুনলো তা ওর নিজের কন্ঠস্বর, ‘হ্যাঁ, তুমি তো আছো দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমি কোথায়?’ মুনিরা বিয়ের মঞ্চ থেকে অনেক দূরে বসে। আসার ইচ্ছে ছিলো না ওর। গত কয়েক মাসে ওর আর শারমিনের মাঝে দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছে কেবল, কেন তা মুনিরা জানে না। ইকবাল আর শারমিনের বাগদানের খবরটাও মুনিরা পেয়েছে আরেক বন্ধুর কাছ থেকে। ছয় মাস আগে সেই দিনটার কথা মুনিরার স্পষ্ট মনে আছে, যেদিন বাসে ইকবালকে সে প্রথম দেখেছিলো। সেদিন শারমিন কেমন তাড়াহুড়ো করে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো ওকে। পরে আরো কয়েকবার বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ইকবালের সাথে মুনিরার দেখা হয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকবারই শারমিন ছিলো ইকবালের সাথে, ওকে আড়াল করে। না, মুনিরার আফসোস করার কিছু নেই, লোকটা তো আর ওর কেউ নয়। এমনিতে যতটা নয়, শারমিনকে আজকে বিয়ের সাজে তারচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে দেখতে, আর ইকবাল, নিঃসন্দেহে যথেষ্ঠ সুপুরুষ। কেন যেন মুনিরার ভেতরটা ফাঁকা লাগছিলো, আর খানিকটা বিষণ্ন, কোথায় যেন কোনো বড় ভুল হয়ে গেছে, কিন্তু সেটা সে ভেবে বের করতে পারছে না। শারমিন বসে আছে বিয়ের মঞ্চে, ভুলেও তাকাচ্ছে না ওর দিকে। তবে ইকবালের সাথে চোখাচোখি হয়েছে মুনিরার, একটু হাসিও সে উপহার দিয়েছে শারমিনের বরকে। ইকবাল কি তার উত্তরে পাল্টা হাসলো? তা-ই মনে হয়েছে মুনিরার। কাজী সাহেবের গৎ বাঁধা গম্ভীর গলা খুব দূর থেকে ভেসে এলো মুনিরার কানে, ‘বলেন কবুল .. ..।’ ট্রেনের গর্জন আবার ফিরে এসেছে। দু’সারি চেয়ারের মাঝে পথ ধরে হেঁটে আসছেন এক মহিলা, ছোট্ট একটা ছেলের হাত শক্ত করে ধরে রেখে, নিজেদের সীটে ফিরে চলেছে তারা। কিছুদূরে কয়েকজন কিশোরী বসে আছে, একটু পর পর তাদের খিলখিল হাসি ভেসে আসছে। কী কারণে কে জানে, একজন কন্ডাকটর ব্যস্ত সমস্ত হয়ে হেঁটে গেলো মুনিরাদের পাশ দিয়ে। মুনিরা গম্ভীর হয়ে সব কিছু লক্ষ্য করছে। ট্রেনের পাশে গাছগুলো ঝাপসা সবুজের পোঁচ হয়ে ছুটে চলছে উল্টোদিকে, একটু পর পর টসবগিয়ে তেড়ে যাচ্ছে একেকটা টেলিফোনের পোস্ট। মুনিরা নিজের সীটে শক্ত হয়ে বসে সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। ‘তুমি ওকে বিয়ে করেছো।’ মুখ খুললো ও শেষ পর্যন্ত। ইকবাল কিছুক্ষণ মুনিরার দিকে চেয়ে থেকে হালকা একটা হাসি নিজের মুখে ছড়িয়ে পড়তে দিলো। ‘উঁহু, মুনিরা, করিনি। আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। ভেবে দ্যাখো।’ মুনিরা ইকবালের দিকে ফিরলো। ‘হ্যাঁ, তুমি আমাকে বিয়ে করেছো, কারণ আমি আকাশ থেকে তোমার কোলের ওপর পড়েছিলাম। যদি না পড়তাম, তুমি শারমিনকেই বিয়ে করতে। যদি শারমিন রাজি না হতো, তাহলে অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে। তুমি যে কোন মেয়েকেই বিয়ে করতে! তোমার জিগ’স পাজলের টুকরোগুলোর নিকুচি করি আমি।’ ইকবাল খুব ধীরে ধীরে বললো, ‘আরে .. .. দূরো .. জ্বালা!’ ওর দু’টো হাতই মাথার পাশে উঠে গেছে, সেখানে ইকবালের চুল প্রায়ই সটান দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু ক্ষণিকের জন্যে মনে হলো, ইকবাল নিজের মাথা ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। সে বললো, ‘দ্যাখো মুনিরা, তুমি একটা সামান্য ভোজবাজি নিয়ে খামোকা ঝগড়া করছো। আমি যা করিনি, তার জন্যে তুমি আমাকে দোষ দিতে পারো না।’ ‘কিন্তু তুমি তা-ই করতে।’ ‘কীভাবে জানো?’ ‘দেখলাম-ই তো।’ ‘কী দেখলে? এটা তো একটা ফালতু .. .. চোখে ধাঁধা লাগানো জিনিস!’ হঠাৎ ইকবালের গলা উঁচুতে উঠে গেলো, সে সামনে বসা ছোটখাটো মানুষটার দিকে ফিরলো ঝট করে, ‘হতো সাহেব, কিংবা যা-ই হোক আপনার নাম, আপনি দূর হন। চলে যান এখান থেকে! আপনাকে এখানে দেখতে চাই না আমরা। জলদি যান, নইলে আপনার এই রংতামাশার জিনিসটা আমি ছুঁড়ে ফেলবো জানালা দিয়ে .. .. আপনাকে সহ!’ মুনিরা ইকবালের কনুই ধরে ঝাঁকি দিলো, ‘অ্যাই, থামো! থামো বলছি। এখানে আমরা একগাদা লোকের সামনে .. .. ছি ছি!’ ছোটখাটো মানুষটা গুটিসুটি হয়ে সীটের একেবারে কোণায়, ইকবাল থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে বসলো, কালো বাক্সটা নিজের পেছনে আড়াল করে রেখেছে সে। ইকবাল তার দিকে তাকালো, তারপর মুনিরার দিকে, তারপর ওপাশে কিছুদূরে এক বয়স্কা মহিলার অসন্তুষ্ট চেহারার দিকে। ইকবালের মুখ লালচে হয়ে উঠলো, ঝাঁঝালো কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো সে। আখাউড়া পার হয়েও একটা শীতল নৈঃশব্দ্য ঘিরে রইলো তিনজনকে। ট্রেন ছাড়ার মিনিট পনেরো পর ইকবাল ডাকলো, ‘মুনিরা!’ মুনিরা চুপ করে রইলো। জানালা বন্ধ করা, তবুও সে সেদিকেই চেয়ে আছে। ইকবাল আবার বললো, ‘মুনিরা, অ্যাই মুনিরা! কথা বলো!’ মুনিরা গোমড়া মুখে বললো, ‘কী চাও তুমি?’ ইকবাল বললো, ‘দ্যাখো, এটা পুরোটাই ফালতু একটা ব্যাপার। আমি জানি না এই ভদ্রলোক কিভাবে এই কান্ড ঘটাচ্ছেন, কিন্তু এটাকে জায়েজ ধরে নিলেও .. .. তুমি কাজটা ঠিক করছো না। আমরা এটুকু দেখেই থামবো কেন? ধরে নিচ্ছি, আমি শারমিনকে বিয়ে করেছি, কিন্তু তুমি কি মনে করো তুমি একা রয়ে যাবে? আমার তো মনে হয়, তোমার অন্য কারো সাথে এর মধ্যেই বিয়ে হয়ে গেছে। হয়তো এ কারণেই আমি শারমিনকে বিয়ে করে ফেলেছি।’ ‘আমি বিয়ে করিনি।’ ‘তুমি কীভাবে জানো?’ ‘বাহ, আমি বুঝবো না? আমি কী ভাবছিলাম আমি জানি।’ ‘তাহলে এর পরের বছরই তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।’ মুনিরা চটে উঠলো। ওর মনের মধ্যে একটা অংশ যদিও এই অকারণ রাগকে শাসন করতে চাইছে, কিন্তু তাতে করে মুনিরার অশান্তি আরো বেড়ে চলেছে। সে বললো, ‘আমি বিয়ে করলেই তোমার কী?’ ‘হুঁ, আমার আর কী? কিন্তু তাতে করে অন্তত একটা জিনিস পরিষ্কার হবে যে আমাদের এই বাস্তব জীবনে .. .. কী হতে পারতো সেটা নিয়ে কারো ঘাড়ে দোষ চাপানো ঠিক না।’ মুনিরার নাকের পাতা ফুলে উঠলো, সে কিছু বললো না। ইকবাল হঠাৎ বললো, ‘আচ্ছা! মনে আছে, আমরা যে গত বছরের আগের বছর যে আমরা তিন্নিদের বাড়িতে পহেলা বৈশাখের জন্যে সবাই একসাথে গিয়েছিলাম?’ ‘হ্যাঁ, মনে আছে। তুমি পুরো এক বালতি বোরহানি আমার গায়ে উপুড় করে দিয়েছিলে।’ ‘ওটা বড় কথা নয়, আর তাছাড়া মোটেও পুরো এক বালতি না, এক জগ। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে, তিন্নি তোমার খুব ভালো বন্ধু। আমার সাথে বিয়ে হওয়ার বহু আগে থেকেই।’ ‘হ্যাঁ, তো কী হয়েছে?’ ‘শারমিনও তো তিন্নির ভালো বন্ধু?’ ‘হ্যাঁ।’ ‘ঠিক আছে, শোনো তাহলে। তুমি আর শারমিন, দু’জনই সেদিন তিন্নির বাসায় যেতে, যার সাথেই আমার বিয়ে হোক না কেন। এখন চলো ইনাকে আমাদের সেই পার্টিটা দেখাতে বলি। আমার তো শারমিনের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে, কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি, ঐ পার্টিতে তুমি তোমার ফিয়াঁসে বা বর, এমন গোছের কাউকে নিয়ে হাজির হবে।’ মুনিরা দ্বিধায় পড়ে গেলো। ওর পরিষ্কার ভয় লাগছে কাজটা করতে। ইকবাল বললো, ‘কী, ভয় লাগছে নাকি?’ ব্যস, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো মুনিরা। ঝট করে ইকবালের দিকে ফিরলো সে, ‘না! মোটেও না! আর আমার বিয়ে হলেই ভালো! তোমার জন্যে হাহুতাশ করে নিশ্চয়ই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবো না? আর হ্যাঁ, আমি দেখতে চাই, এক বালতি বোরহানি শারমিনের গায়ে উল্টে দিলে ও তোমার কী দশা করে। সবার সামনে চেঁচামেচি করে তোমার কান দু’টো পঁচিয়ে ফেলবে ও। আমি ওকে হাড়েমজ্জায় চিনি! তোমার সাধের জিগ’স পাজলের টুকরোর কাজকারবারগুলো দেখো তখন!’ মুনিরা সামনের দিকে ঘুরে বসলো, হাত দু’টো শক্ত করে বুকের ওপর বাঁধা। ইকবাল সামনের মানুষটার দিকে তাকালো, কিন্তু কোন কিছু বলার প্রয়োজন পড়লো না। কাঁচের টুকরোটা ইতিমধ্যে কোলের ওপর রেখে বসেছে সে। পশ্চিম দিকে থেকে সন্ধ্যের আলো এসে পড়েছে, তার মাথার সাদা চুলের কিনারাগুলো এখন গোলাপি দেখাচ্ছে। ইকবাল খানিকটা উৎকন্ঠিত হয়ে বললো, ‘রেডি?’ মুনিরা মাথা নাড়লো। ট্রেনের শব্দ আবার ফুরিয়ে যেতে শুরু করলো। মুনিরা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, সর্দি লেগেছে বেচারির। ছাতাটা মাত্র নামিয়ে রেখেছে সে, মুক্তোর মতো কিছু জলকণা সেটাতে লেগে আছে এখনো। ভেজা ভেজা বাতাসে এই পহেলা বৈশাখেও শীত করছে ওর। ভেতরে রবীন্দ্র সঙ্গীত চলছে, মুনিরাকে দেখে সবাই শুভ নববর্ষের হুল্লোড় তুললো, জবাব দিতে গিয়ে তাদের সাথে মুনিরাকেও গলা চড়াতে হলো। শারমিনের তীক্ষè গলা বাড়িতে পা রেখেই শুনতে পেয়েছে মুনিরা, ওর দিকেই এগিয়ে গেলো সে। শারমিন, কিংবা ইকবালের সাথে বেশ অনেকদিন ধরে দেখা নেই তার। শারমিন ওকে দেখে একটা ভুরু ওপরে তুললো, এ জিনিসটা সে ইদানীং রপ্ত করেছে। ‘তোমার সাথে কেউ এসেছে, মুনিরা?’ চারপাশটায় একবার চোখ বুলিয়ে আবার মুনিরার দিকে ফিরলো সে। মুনিরা খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে বললো, ‘আমার মনে হয় মুনতাসির কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়বে। ওর কী যেন একটা কাজ পড়েছে, সেটা করতে গেছে।’ এ ব্যাপারে তাচ্ছিল্য শুধু কথনে নয়, মুনিরার ভাবনাতেও। শারমিন মুখ শক্ত রেখেই হাসলো। ‘ওহ, ইকবাল এসেছে এখানে। তোমার তো তাহলে অতটা একলা লাগবে না, কী বলো? আগেও তো এমন দেখেছি।’ বলতে না বলতেই ইকবাল রান্নাঘর থেকে হেলতে দুলতে বেরিয়ে এলো। তার হাতে একটা জগ, ভেতরের যা-ই থাক সেটাকে সে একটা চামচ দিয়ে ঘুঁটছে। সেটার তালে তালে সে বললো, ‘আসিতেছেএএএএ! হে তৃষ্ণার্ত ভুখা নাঙ্গা জনতা, লাইনে দাঁড়াও। তোমাদের পিপাসা মেটাবে আমার এই স্পেশাল মামা মার্কা বোরহানি .. .. আরে, মুনিরা যে!’ ইকবাল হাসিমুখে স্বাগত জানাতে এগিয়ে এলো মুনিরার দিকে। ‘অ্যাদ্দিন কোথায় লুকিয়ে ছিলে? তোমার সাথে তো দশ বারো বছর ধরে দেখা হয়নি মনে হচ্ছে। ঘটনা কী বলো তো? মুনতাসির কি চায় না অন্যরা তোমাকে দেখুক?’ ‘এই, আমার গ্লাসে আরেকটু ঢেলে দাও তো!’ শারমিন কড়া গলায় বললো। ‘এই তো, দিচ্ছি .. ..।’ ইকবাল শারমিনের দিকে তাকালো না। ‘কী মুনিরা, তোমারও চাই নাকি? দাঁড়াও, একটা গ্লাস নিয়ে আসি।’ ইকবাল ঘুরলো, আর চোখের পলকে যা ঘটার ঘটে গেলো। মুনিরা চেঁচিয়ে উঠলো, ‘সাবধান .. ..।’ ও বুঝতে পারলো কী ঘটতে যাচ্ছে, আর কেন যেন মনে হচ্ছিলো এমনটা আগেও ঘটেছে, আর ঘটলোও তাই। কার্পেটে পা বেঁধে হোঁচট খেয়েছে ইকবাল, নিজেকে সামলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে গিয়ে জগটা তার হাত থেকে ফসকে গেছে, আর জগের ভেতরে ঠান্ডা মামা মার্কা বোরহানি পুরোটা ছলকে পড়ে মুনিরার কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত ভিজিয়ে দিয়েছে। মুনিরা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো, তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। চারপাশের গুঞ্জন থেমে গেছে, মুনিরা অসহনীয় কয়েক সেকেন্ড নিজের শাড়ি থেকে বোরহানি ঝেড়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করলো। ইকবাল ক্রমাগত বলে যাচ্ছে, ‘ইশ, কী অবস্থা, দুঃখিত, ধ্যত্তেরি .. ..,’ ক্রমশ তার গলা চড়ছে। শারমিন ঠান্ডা গলায় বললো, ‘ইশ, কী বাজে ব্যাপার। থাক মুনিরা, এমনটা মাঝে মাঝে হয় .. .. আর, শাড়িটা তো খুব একটা দামী না .. ..।’ মুনিরা ঘুরে ছুটলো। তিন্নির শোবার ঘরটায় কেউ নেই, ওদিকটায় কোন হৈচৈ-ও পৌঁছোয় না। ম্লান একটা আলো জ্বেলে তিন্নির আলমারি খুলে ওর একটা শাড়ি খুঁজতে লাগলো মুনিরা। ইকবাল ওর পেছনে এসে দাঁড়ালো। ‘ইয়ে, মুনিরা, শারমিনের কথায় কিছু মনে করো না .. .. আমি সত্যি খুব লজ্জিত .. .. আমি শাড়িটার জন্যে ক্ষতিপূরণ ..।’ ‘না, ঠিক আছে। তোমার কোনো দোষ নেই।’ মুনিরা ইকবালের দিকে ফিরলো না। ‘আমি বাড়ি গিয়ে পাল্টে নেবো।’ ‘তুমি আসছো তাহলে ফিরে?’ ‘জানি না। মনে হয় না।’ ‘মুনিরা, দ্যাখো ...।’ ইকবালের উষ্ণ হাত মুনিরার কাঁধ স্পর্শ করলো। মুনিরা নিজের ভেতর কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করলো, যেন একটা মাকড়সার জালে আটকা পড়ে হাত পা ছুঁড়ছে সে, আর ...। ... আর ট্রেনের শব্দ ফিরে এলো আবার। ইতিমধ্যে একটা গোলমাল অবশ্যই হয়েছে। চারদিকে এখন সন্ধ্যের অন্ধকার। ট্রেনের ভেতরে আলো জ্বলে উঠেছে। তাতে কিছ যায় আসে না, মুনিরা ওর ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ কাটিয়ে উঠছে। ইকবাল দু’হাতে চোখ ডলছে। ‘কী হলো?’ ‘থেমে গেলো, হঠাৎ করেই।’ মুনিরা বললো। ইকবাল অস্বস্তি নিয়ে বললো, ‘আমরা বোধহয় কিছুক্ষণের মধ্যেই টঙ্গী পার হবো।’ সে নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালো। মুনিরা খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বললো, ‘তুমি আমার ওপরেই বোরহানি ফেলেছো।’ ‘হ্যাঁ, তাই তো। তোমার ওপরেই তো ফেলেছিলাম।’ ‘কিন্তু আমি তো তোমার বউ ছিলাম। আর এখানে তোমার বউ .. .. তোমার তো বোরহানিটা শারমিনের ওপর ফেলা উচিত ছিলো। ব্যাপারটা কেমন যেন ইয়ে না?’ কিন্তু মুনিরা ভাবছিলো, ইকবাল ওকে বোঝাতে এসেছিলো, কাঁধের ওপর হাত রেখে .. ..। মুনিরা ইকবালের দিকে তাকিয়ে উষ্ণ সন্তুষ্টি নিয়ে বললো, ‘আমি বিয়ে করিনি।’ ‘হুম, তুমি বিয়ে করো নি। কিন্তু এটা কি মুনতাসির আলি, যার সাথে তুমি ঘুরছিলে?’ ‘হ্যাঁ।’ ‘তুমি নিশ্চয়ই ওকে বিয়ে করার কথা ভাবছিলে না, কী বলো?’ ‘হিংসা হচ্ছে, ইকবাল?’ ইকবাল খানিকটা বিমূঢ় ভাব নিয়ে বললো, ‘কীসের জন্যে? একটা কাঁচের টুকরোর জন্যে? অবশ্যই না।’ ‘আমার মনে হয় না আমি মুনতাসিরকে বিয়ে করতাম।’ ইকবাল বললো, ‘আমার মনে হয় কী জানো? এটা এখানে শেষ হওয়াটা ঠিক হয় নি। আমার ধারণা, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছিলো।’ একটু থেমে ইকবাল ধীরে ধীরে বললো, ‘ব্যাপারটা এমন যে ঐ ঘরে কারো ওপরেই বোরহানি ফেলতে পারতাম।’ ‘এমনকি শারমিনের ওপরেও।’ ‘দ্যাখো, শারমিনকে নিয়ে আমি অতটা মাথা ঘামাইনি। তুমি আমাকে তো বোধহয় বিশ্বাস করবে না।’ ‘করতেও পারি।’ মুনিরা ফিরলো ইকবালের দিকে। ‘একটু বেশিই ছেলেমানুষি করে ফেলেছি ইকবাল। চলো ... আমরা আমাদের সত্যিকারের জীবনটা নিয়ে থাকি। কী কী সব জিনিস হতে পারতো সেটা নিয়ে আর এমন বাচ্চাদের মতো করবো না।’ কিন্তু ইকবাল মুনিরার হাত ধরলো। ‘উঁহু, মুনিরা, শেষবারের মতো .. .. চলো দেখি আমরা এখন, এই মূহুর্তে কী করতাম! এই মূহুর্তে, যদি আমি শারমিনকে বিয়ে করতাম।’ মুনিরা একটু ভয় পেলো, ‘থাক না, ইকবাল ... বাদ দাও।’ ওর মনে পড়লো, ইকবালের প্রশস্ত হাসিমুখ, ওর দিকে আগ্রহী ভঙ্গিতে চেয়ে থাকা, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শারমিন, কিন্তু ইকবাল শারমিনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না। মুনিরা এর পর কী ঘটতে পারতো তা জানতে চায় না। সে এখন শুধু এই জীবনটাই চায়, এই সুখী জীবনটা। টঙ্গী পার হয়ে গেলো ট্রেন। ইকবাল আবার বললো, ‘মুনিরা, আমি চেষ্টা করে দেখতে চাই।’ মুনিরা বললো, ‘ঠিক আছে, তুমি চাইছো যখন।’ কী আসে যায়, ভাবলো সে। কোন কিছুই আসে যায় না। মুনিরা হাত বাড়িয়ে ইকবালের বাহু জড়িয়ে ধরলো। শক্ত করে ইকবালকে ধরে রেখে ভাবলো, ‘এই সব যাদুটোনা কিছুই ওকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে পারবে না।’ ইকবাল ছোট্ট মানুষটাকে বললো, ‘আরেকবার দেখবো।’ ট্রেনের হলদেটে আলোয় দৃশ্য ফুটে ওঠার ব্যাপারটা আরো ধীর হয়ে এলো। ধীরে ধীরে ঝাপসা কাঁচটা পরিষ্কার হলো, যেভাবে বাতাসের ছোঁয়ায় আকাশ থেকে মেঘ সরে যায়। ইকবাল বললো, ‘উঁহু, সমস্যা আছে। এই তো, আমরা দু’জন, এখন যেভাবে আছি।’ ইকবালের কথাই ঠিক। একই সীট জোড়ার ওপরে ওরা দু’জন বসে আছে। আস্তে আস্তে ইকবালের কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসতে লাগলো, ‘ঠিক এই ট্রেনটাই। এই যে, পেছনের জানালাটার কাঁচে ফাটল ধরা ...।’ মুনিরা খুশিতে বাকবাকুম। ‘ইশ, এতক্ষণে যদি ঢাকায় পৌঁছে যেতাম!’ ইকবাল বললো, ‘এই তো সোনা, ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবো। দেখি, একটু আদর সোহাগ করি .. ..,’ মুনিরার দিকে এগিয়ে যাবার উদ্যোগ নিলো সে। ‘এখানে? কক্ষণো না! চারদিকে সবাই তাকাচ্ছে!’ ইকবাল পিছিয়ে এলো। ‘আমাদের একটা ক্যাব নেয়া উচিত ছিলো।’ ‘সিলেট থেকে ঢাকা, ক্যাবে চড়ে?’ ‘আলবাৎ! পয়সা যা লাগতো তা উসুল হয়ে যেতো।’ মুনিরা হাসলো। ‘তুমি যখন এমন ঢং করো, খুব হাসি পায় আমার।’ ‘ঢং না।’ হঠাৎ ইকবালের স্বর একটু ভারি হয়ে উঠলো। ‘এটা শুধু আর এক ঘন্টার ব্যাপার না মুনিরা। আমার মনে হচ্ছে আমি তোমার জন্যে পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছি।’ ‘আমিও করেছি।’ ‘কেন শুরুতেই তোমার সাথে আমার দেখা হলো না? মাঝখানের সময়টা মিছিমিছি নষ্ট হলো।’ ‘বেচারা শারমিন।’ মুনিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ইকবাল অস্বস্তিভরে নড়েচড়ে বসলো। ‘ওর জন্যে দুঃখ করতে যেও না মুনিরা। আমরা কখনোই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারিনি। ও বরং কিছুটা খুশিই হয়েছে আমি চলে যাওয়ায়।’ ‘জানি তো। সে জন্যেই বললাম, বেচারা শারমিন। যা পেয়েছিলো, তার মূল্য বুঝলো না।’ ‘হুম। দেখো, তুমি বুঝতে পারো কি না। ভালো করে মূল্যায়ন করো আমাকে, খুব ভালো করে। অন্তত আমি যা পেয়েছি, তার যতখানি মূল্য দিই, তার অর্ধেকটা করো।’ ‘নাহলে? আমাকেও ডিভোর্স দিয়ে দেবে?’ ‘জিন্দেগীতেও না।’ বললো ইকবাল। মুনিরা বললো, ‘ব্যাপারটা কেমন যেন আজব, বুঝলে? আমি সবসময় ভাবি, কেমন হতো যদি তুমি সেদিন তিন্নির বাড়িতে পহেলা বৈশাখের পার্টিতে আমার গায়ে বোরহানি ঢেলে না দিতে? তা না হলে তুমি আমার পিছু পিছু আসতে না, আমাকে কখনো কিছু বলতে না, আমি জানতামও না। সবকিছুই তখন অন্যরকম হতো ... সবকিছু।’ ‘কী যে বলো! সবকিছু একই রকম হতো। হয়তো অন্য আরেক সময় হতো।’ ‘কী জানি!’ মুনিরা নরম গলায় বললো। ট্রেনের গর্জন ট্রেনের গর্জনের সাথে মিশে গেলো। বাইরে শহরের আলো ঝিকমিক করছে, ঢাকার উপকন্ঠে চলে এসেছে ট্রেন। বগির ভেতরে সবার মধ্যে লাগেজ নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া চলছে। এতসব গোলমালের মধ্যে দ্বীপের মতো একা হয়ে বসে আছে মুনিরা। ইকবাল তার হাত ধরে ঝাঁকি দিলো। মুনিরা ওর দিকে ঘুরলো, ‘জিগ’স পাজলের টুকরোগুলো তাহলে শেষ পর্যন্ত মিলে গেলো, কী বলো?’ ইকবাল বললো, ‘হ্যাঁ।’ মুনিরা ইকবালের হাতের ওপর একটা হাত রাখলো। ‘কিন্তু যাই বলো, ভালো লাগেনি। আমি খুব ভুল ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমরা যখন একজন আরেকজনকে পেয়ে গেছি, হয়তো এমন সম্ভাব্য আরো অনেক জুটি হতে পারতো। কিন্তু এখন আর সেসব সম্ভাবনা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাবো না। আমাদের এই সত্যি জীবনটাই ভালো। তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কী বলতে চাইছি?’ ইকবাল মাথা ঝাঁকালো। ‘এমন আরো লক্ষ লক্ষ “এমন যদি হতো” থাকতে পারে। কিন্তু সেগুলোতে কী হলো আমি আর জানতে চাই না। আমি আর কখনো “এমন যদি হতো” কথাটাই উচ্চারণ করবো না।’ ইকবাল বললো, ‘ঠিক আছে, মাথা ঠান্ডা করো। এই যে ধরো, তোমার সোয়েটার।’ র‌্যাক থেকে স্যুটকেস নামাতে গেলো সে। মুনিরা হঠাৎ তীক্ষ্ণ গলায় বললো, ‘সেই লোকটা কোথায়? “এমন যদি হতো” সাহেব?’ ইকবাল আস্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের সামনে ফাঁকা সীট দেখতে পেলো। তারপর দু’জন মিলে বগির বাকি অংশ খুঁটিয়ে দেখলো। ‘কে জানে, হয়তো পাশের বগিতে চলে গেছে।’ সিদ্ধান্তে আসলো ইকবাল। ‘কিন্তু কেন? আর গেলে তো সে টুপি ফেলে রেখে যেতো না।’ মুনিরা টুপিটা তুলতে নিচে ঝুঁকলো। ‘কিসের টুপি?’ জিজ্ঞেস করলো ইকবাল। আর মুনিরা থেমে গেলো, কারণ তার আঙুলের নিচে কিছুই নেই। ‘ছিলো তো এখানেই .. .. আমি আরেকটু হলেই .. ..।’ মুনিরা সোজা হয়ে দাঁড়ালো, ‘ওহ ইকবাল, এমন যদি হতো ...।’ ইকবাল মুনিরার ঠোঁটের ওপর একটা আঙুল রাখলো। ‘সোনা ...।’ মুনিরা বললো, ‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা, মাফ চাই। চলো দেখি, স্যুটকেসটা নামানো যাক।’ ট্রেন কমলাপুরের দিকে এগিয়ে চললো, চাকার ঝুক ঝুক ঝুক ঝুক আওয়াজটাই শুধু শোনা যাচ্ছে চারপাশে। আইজ্যাক আসিমভের "হোয়াট ইফ" গল্পের ছায়াবলম্বনে। অনুবাদকাল ২০০৩।
false
rn
লেখাটি নকল করেছি অনেকদিন আগে এক মেঘলা দুপুরে এক ক্ষিপ্ত মিসিলের ওপর পুলিশ লাঠি চার্জ করছিল। শাহবাগে। যাদু ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে একজন ফ্রি লান্স ফটোগ্রাফার দৃশ্যটা তুলছিল।একজন পুলিশ হঠাৎ তেড়ে এল তার দিকে। হাটুতে খটাং করে এসে পড়ল লাঠি। ফটোগ্রাফারটি ব্যথায় চিৎকার করে পড়ে গেল, তারপর অন্যপায়ে পুলিশটাকে একটা লাথি কষিয়ে দিল। খুবই সাহসের কাজ। পুলিশয়া পিস্তলে হাত দিয়েছিল।হয়তো মেরে ফেলত। কিন্তু সেই সময়ে মিসিলে মার-খাওয়া কিছু লোক ছিটকে এলো এদিকে ।তাদের বেপরোয়া হতচকিত ধাক্কায় পুলিশটা সরে গেল। ফটোগ্রাফারটি উঠে দাঁড়াল। হাঁটুতে খুব ব্যথা, চোখে পানি এসে পড়েছে, ঠিক সেই সময়ে দু'টি গুলির আওয়াজ। আর্ত চিৎকার। সে দুপুরে পুলিশ ঠিক তিন রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল। তাতে চলন্ত বাসের মধ্যে বসে-থাকা একটি লোক মারা যায়। ফটোগ্রাফারটি তার জল-ভরা চোখেও দৃশ্যটা দেখতে পেয়েছিল।অন্য ফটোগ্রাফাররা দেখেছিল একটু দেরীতে। ফটোগ্রাফারটি তার জখম পা নিয়েই কাছ-ঘেষা বাসটায় উঠে পড়ল। তখন হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা নামছে।আর গুলি খাওয়া লোকটা গোঙাচ্ছে, পানি-পানি। তখনও মরেনি তবে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল বাসের সীট, মেঝে। চকাচক দু-তিনটে ছবি তুলে নিল সে।আর দেখতে পেল,লেডীজ সীটে সাদা মুখে একটি মেয়ে বসে আছে।এত ভয় পেয়েছে যে, পালাতে অবধি পারেনি। আরে! পালান ! পালান ! নামুন শিগগির ! বলে ফটগ্রাফার গিয়ে মেয়েটির হাত ধরে টেনে নামিয়ে নিয়েছিল বাস থেকে। বাইরে টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়া, লোকজন পালাচ্ছে, পুলিশ তেড়ে যাচ্ছে যাকে পাচ্ছে সামনে তার দিকে । দমাস দমাস করে লাঠি পড়ছে। অন্তত তিনজন পুলিশ লাঠি তুলেছিল। সঙ্গে মেয়েটি ছিল বলে বেঁচে গেল ফটোগ্রাফারটি।পুলিশ মেয়ে দেখে মারেনি। তীব্র টিয়ার গ্যাসে প্রায় অন্ধ চোখে ছুটতে ছুটতে তারা কাটাবনের দিকে চলে যেতে পেরেছিল। কোথায় থাকেন আপনি ? মেয়েটি কোনো জবাব দিতে পারেনি। শুধু কাঁপছিল। ভয়ে, অবিশ্বাসে। নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে ঘাসে বসাল ফটোগ্রাফারটি। জিরোতে দিল।দুজনেই চোখ ফুলে ঢোল। দুজনেই হাপাচ্ছে । অনেকক্ষন পরে মেয়েটি তার ঠিকানা বলতে পারল। একা যেতে পারবেন ? না । ভীষণ ভয় করছে । কিন্তু আমাকে যে পত্রিকা অফিসে যেতে হবে। এই ফটো কাল কাগজে বেরোবে। মেয়েটি কাদছিলো। কিছু বলল না । ঠিক সেই সময়ে আকাশ ফুঁড়ে বৃষ্টি নেমেছিল।খুব বৃষ্টি। সাংঘাতিক বৃষ্টি। আরে, ভিজবেন যে! উঠুন! কোনো বাসার বারান্দায় দাড়াতে হবে । মেয়েটি ওঠেনি। বসে রইল মুখ নিচু করে। ক্যামেরা ভিজছিল। ফটোগ্রাফারটি চলে যেতে পারত। যায়নি শেষ পর্যন্ত। মেয়েটির সঙ্গে সেও ভিজেছিল ক্যামেরা সমেত। সেই বিকেলে বৃষ্টি আর থামেনি।প্রচন্ড বৃষ্টিতে আন্দোলন থেমে গেল, পুলিশের হামলা বন্ধ হলো, জনসাধারণ পালালো নিরাপদ আশ্রয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই মেয়েটিকে তার বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিল তরুণ ফটোগ্রাফার। খানিকটা রিকশায়, খানিকটা হেঁটে। তার ফটো পরদিন বেরিয়েছিল কাগজে। নাম সমেত।আরো অনেকেই ফতো তুলেছিল সেদিনের হাঙ্গামার। তবে গুলি-খাওয়া লোকটার অমন নিখুঁত ছবি আর কেউ পায়নি । বেশ নাম হয়েছিল তার। পায়ের যখন সারতে কয়েকদিন সময় লেগেছিল। অফিসের ঠিকানায় প্রায় সাত দিন পর চিঠিটা আসে। মেয়েলি হস্তাক্ষর, আমি সেই মেয়েটি, যে সেদিন চোখের সামনে লোকটাকে মরতে দেখে পাথর হয়ে গিয়েছিল। বোধ হয় আমার হার্টফেল হয়ে যেত, আপনি আমাকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে না আনলে। আমার বোধ হয় জ্ঞানও ছিল না । কি রকম যে হয়ে গিয়েছিলাম! বৃষ্টিতে ভিজে আমার জ্বর হয়েছিল, জানেন ? তবু এই বৃষ্টিটাও বোধ হয় দরকার ছিল।ভিজে ভিজে মাথা ঠান্ডা হয়েছিল, শরীরে শক্তি ফিরে এসেছিল। আপনার সঙ্গে আর একবার দেখা হতে পারে কি ? আমার যে মুখোমুখি একবার ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানানো দরকার আপনাকে! আর কী অভদ্র আমি! সেদিন তো এক কাপ চাও অফার করা হয়নি আপনাকে ? ফটোগ্রাফারের সময় হয়েছিল আরও সাত দিন পর । তারপর আর সময়ের অভাব হয়নি। ( বলুন লেখাটি কোন লেখা থেকে নকল করেছি ?) সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৫
false
ij
গল্প_ জীবনের রঙিন চাদর পেট্রোলের পোড়া গন্ধ ছাপিয়ে আতরের কড়া গন্ধ পেল রনি। তখন কে একজন, মাথায় পাগড়ী, লম্বা দাড়িওলা, জোব্বা পরা, দীর্ঘকায়, পাশে এসে বসেছে। আতরের গন্ধটা সেখান থেকেই আসছিল। কিছুদিন হল আতরের গন্ধ আর ভালো লাগে না রনির- বমি পায়। বাসে উঠলেও বমি পায় রনির। তবে ও জানে এখন ওর বমি হবে না। বাসটা হু হু করে ছুটছে। কোন্ দিকে কে জানে। রনি জানতেও চায় না। মধ্য জানুয়ারির শীতের রাত। জানালা বন্ধ। দশটার মতো বাজে বোধহয়। ওপরে ম্লান আলোর লাইট জ্বলে আছে। আতরের গন্ধটার সঙ্গে পোড়া পেট্রলের গন্ধে সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। বাবজান। কোনদিকে যান? জোব্বা পরা লোকটা জিজ্ঞেস করল। গম্ভীর মিষ্টি কন্ঠস্বর। রনি চুপ করে থাকল। এই বুড়া লোকগুলি যে কী! এত কিউরিয়াস। খালি পরের ব্যাপারে নাক গলায়। অদ্ভুত একটা দেশ! এ লেবেল দিয়েই স্টেটস চলে যাবে রনি। জোব্বা পরা লোকটা বলল, আমি নামব ঘিওর বাপজান। কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে আমার মোকাম। শিট! আমি এসব কিছুই জানতে চাই না। প্লিজ লিভ মি অ্যালোন। রনি মনে মনে বলল। পাগড়ী পরা লোকটাকে ইগনোর করার চেস্টা করে। অল্প অল্প খিদে টের পাচ্ছিল ও। অন্যদিন নটা সাড়ে নটার দিকে খেয়ে নেয় ও। আজ সন্ধ্যার পর পরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। তারপর অনেকক্ষণ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করল। তারপর বাসে উঠল। কেক খান বাপজান। নেন। দরবেশ লোকটা বলল। একটা প্লাস্টিকের বক্স বাড়িয়ে দিয়েছে। না। আমি কেক খাব না। কেকের সঙ্গে কী মিশিয়ে দেবে। পরক্ষণেই ভাবল-আমি মরে গেলে কী। আমার তো মরে যাওয়াই ভালো। কথাটা ভাবতেই নুজহাতের মুখটা মনে পড়ল। ইফ আই ডাই-নুজহাত কষ্ট পাবে। একা হয়ে যাবে নুজহাত- ওর ফ্যামেলিটা ডিসটার্বড। আঙ্কেল-আন্টির বনিবনা হয় না। সারাক্ষণ ঝগড়া। একে অন্যকে ডির্ভোসের থ্রেট দেয়। এসবের মধ্যেই রনিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে নুজহাতের । পাগড়ী পরা লোকটা বলল, আরে খান বাবা । মুশকিল হইব না, আমি ফকির মানুষ বাবা, লোকে কয় শাহবাবা। তা আপনের কী নাম বাবাজ? আরিফুর রহমান রনি। বেশ, বেশ। নেন কেক খান, রনিবাবা । পেটের ভিতরে তখন থেকে বলক উঠছিল। বাস কখন থামে কে জানে। একেবারে খালি পেটে থাকলে বমিও হতে পারে। রনি হাত বাড়িয়ে প্লাস্টিকের বক্সটা নিল। আশ্চর্য! ব্ল্যাক ফরেস্ট! বেইলি রোড-মানে, ঢাকার পশ দোকান ছাড়া পাওয়া যায় না। একজন ফকিরের কাছে এই রকম কস্টলি কেক! ও টের পায় আতরের গন্ধটা আরও ঘন হয়ে উঠেছে । আর, ঠিক তখনই বাসটা ব্রেক কষল। হর্নের আওয়াজ। পেট্রোলের পোড়া গন্ধ । কেক-এ কামড় দেয় রনি। বাসটা প্রায় ফাঁকা। ওরা পিছনের দিকে বসেছে। শাহবাবা নীচুস্বরে গুনগুন করে গান ধরলেন- ভয় পেয়ে জন্মবিধি/সে পথে না যাও যদি/হবে না সাধন সিদ্ধি/তা শুনে মন ঝুরে/ও লালন বলে যা কর হে/ থাকতে হবে পথ ধরে। গানের কথাগুলি সবটা না-বুঝলেও ‘লালন’ শব্দটা কানে খট করে বাজল রনির। লালন শব্দটা ওর পরিচিত। সুফি মিউজিশিয়ান। মিস্টিক জনরা। শাহবাবা বললেন, কালীগঙ্গা নদীর ধারে আমার মোকাম। চল, বেড়াইবা। কোথায়? রনি অবাক। আমার কালীগঙ্গার মোকামে। রনি আপত্তি করল না। ওতো পথেই নেমেছে। ও তো আর কোনওদিনই বাড়ি ফিরে যাবে না। আজ থেকে ও ওর কনট্রোভার্সিয়াল পরিবারের কেউ না। শাহবাবা খুশি হয়ে বললেন, আল্লার কালা ঝুলিতে আরও অনেক রঙিলা জগৎ আছে রনিবাবা-একটা দুইটা না, বেশুমার। যা দেখতেছ-এইটাই সব না। রনি থতমত খেল। ওর বুক ধড়ফড় করে। বাস চলছে। বাসের ভিতরে পোড়া পেট্রলের গন্ধ ছাপিয়ে আতরের গন্ধ ভারী হয়ে ওঠে। আর রনিবাবা, তোমার একখান নতুন নাম দিব ভাবতেছি। নাম? কী। কৃষ্ণমোহাম্মদ। কৃষ্ণমোহাম্মদ? রনি থতমত খেল। খ দরজার দিকে পা দিয়ে পাথরের মেঝের ওপর টানটান হয়ে শুয়েছিল শুভ্র তুষার । ঘরের জানালাগুলো বন্ধ। দরজাটা খোলা। বাইরের চাতালে মধ্য জানুয়ারির ঘন জ্যোস্না। মাঝে মাঝে মধ্যরাত্রির হিম বাতাসে নাড়কেল পাতারা সরসর করে ওঠে। ঘরময় ঈষৎ অন্ধকার, সেই অন্ধকারে আতরের গন্ধ। শুভ্র তুষার শীত টের পায়। শীত পাথরের ভেদ করে উঠছে -লেদারের জ্যাকেট, পুলওভার, সার্ট, গেঞ্জি ফুঁড়ে শ্যামলা ত্বকে দাঁত বসাচ্ছে। পিঠের নিচেটা অবশ অবশ লাগে। জিন্সের প্যান্টটা ভিজে ভিজে। জুতা বাইরে খুলে এসেছে। (এ ঘরে কেউই জুতা নিয়ে ঢুকে না) মোজা থেকে বিশ্রী গন্ধ ছড়িয়ে আতরের গন্ধের সঙ্গে মিশেছে। সে উৎকট গন্ধটা ভুলে যেতেই কান পাতল শুভ্র তুষার। শাহবাবার মোকামটি কালিগঙ্গার এত কাছে যে জলের পাড়ের ক্ষীণ ছলাৎ আওয়াজও কানে আসে তার। মাঝরাতের শীতনদীটির কোষা নৌকার বৈঠার আওয়াজ অবধি স্পস্ট শোনা যায়। অথবা, এসবই নিছক স্বপ্ন। কালীগঙ্গা তীরে তীরে নাড়কেল গাছ। সে সমস্ত নাড়কেল গাছগুলি অবশ্য বাস্তব। মধ্যরাত্রির শীত শীত বাতাস সে গাছগুলির পাতা এলোমেলো করে দিলে সরসর শব্দ উঠছিল। এবং সেই সরসর শব্দে আবছা অন্ধকারে মৌরির ফরসা মুখটা ভেসে উঠল। ওর সমস্ত অস্তিত্ব নাড়া খেল। সিগারেট খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা হল শুভ্র তুষারের। না, তা সম্ভব না। এ ঘরে কেউ সিগারেট খায় না। সিগারেট ধরালে জ্বিনের থাপ্পড় খেতে হবে। একবার সেতু মাজি ও সখিনা তাজ এ ঘরে সিগারেট ধরাতেই জিনের থাপ্পড় খেয়েছিল। শাহবাবার এই ঘরে জ্বিন আছে ঠিকই। জ্বিনটা কখনও কখনও সাপের রুপ ধরে। সেই সাপটা এরই মধ্যে একবার এসে ঘুরে গেছে । ওটা দরজা দিয়েই ঢুকেছিল নাকি অন্য কোনও খান থেকে এসেছিল ঠিক ঠিক ঠাওর করতে পারেনি শুভ্র তুষার। আগেও দেখেছে সাপটা- দিনের বেলায়। সবজে রঙের একটা বালুবোড়া; জুবেরী সাপ চেনে, ওই বলল। আদর করে শাহবাবা বালুবোড়াটির নাম রেখেছেন ‘জালাল’। একবার ঝকঝকে রোদে সবাই চাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে ছিল। তখন মসজিদের পিছন থেকে এঁকেবেঁকে ‘জালাল’ এল। শূন্যতা ঋদ্ধির কী লাফ। সখিনা তাজ ও ছিল। তবে সাপ নিয়ে ওর ইনিবিশনস্ নেই বলেই মনে হল। ঋজু বিল্লাহ, চারুকলার তরুণ প্রভাষক, থ্রি মেগার সেলফোনে জালালের ছবিটা তুলে নিয়েছিল। জুবেরী বসেছিল গিটার নিয়ে। ও বালুবেড়া দেখে নির্বিকারই ছিল। দক্ষিণের বাঁশঝাড়ের দিকে চলে গিয়েছিল জালাল। চাতালে কড়–ই গাছের নিচে একটা বড় ডেকচিতে পানি চড়িয়েছেন শাহবাবা । পাঞ্জাবি স্টাইলে খিচুরি রেঁধে খাওয়াবেন। চাতাল থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে কালীগঙ্গায়। পুরনো দিনের ঘাট, তার পুরনো ইট। কালে কালে ক্ষয়ে গিয়েছে। এককালে জমজমাট মোকাম ছিল; বজরা নৌকা ভিড়ত। ঘাটের পাশে একটা শিরিষ গাছ। দক্ষিণে বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়ে কবর। লোকে বলে তল্লা শার কবর। মসজিদটা উত্তরে। খেতে বসে সখিনা তাজ বলে, শাহবাবা, মোকাম মানে তো গঞ্জ, হাট। তাই না? শাহবাবা বললেন, হ, মা। এখন তোমাদের নিয়া আমি কালীগঙ্গার মোকামে হাট বসাইছি। নিকুঞ্জু কইতে পার। কিংবা, কুঞ্জ। বছর দুয়েক আগে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে শাহবাবার সঙ্গে শুভ্র তুষারদের পরিচয় । সময়টা সন্ধ্যা। সেতু মাজির বইয়ের দোকানে বসেছিল সব। সখিনা তাজ, ঋজু বিল্লাহ, নাঈম রিজভী। শুভ্র তুষারের ‘পূর্বাহ্ণ’ পত্রিকার জন্য লেখা ঋজু বিল্লাহর একটা কবিতার সূত্র ধরে ‘তাসাউফ’ শব্দের মানে নিয়ে দারুণ তর্ক জমে উঠেছিল । সেতু মাজির ‘গ্রন্থকীট’-এর ঠিক উল্টোদিকে রঞ্জুর খানের পাঞ্জাবির দোকান:‘পরান”। সবুজ পাগড়ী আর কালো পাঞ্জাবি পরা দীর্ঘদেহী ওলি ওলি দেখতে একজন তখন ‘পরান’-এ পাঞ্জাবি দেখছিলেন। সখিনা তাজ তখন নাঈম রিজভীকে বলল, নাঈম, আপনি যান তো ওই দরবেশকে তাসাউফ শব্দের মানে জিজ্ঞেস করে আসেন। নাঈম রিজভী যায়। যা বলার বলে। শাহবাবা তারপর নিজেই এসে তাসাউফ শব্দের মানে বুঝিয়ে দিলেন। তারপর কথায় কথায় আড্ডা জমে উঠল। শাহবাবা আগে আর্মিতে ছিলেন। নাইনটিন সেভেনটি থ্রি-র এক মধ্যরাত্রিতে স্বপ্ন দেখার পর থেকেই ওলি হওয়ার সাধনা করছেন। বাংলা ছাড়াও অনর্গল ইংরেজি হিন্দি উর্দু বলতে পারঙ্গম শাহবাবা। শাহবাগ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জ্ঞানপীঠ- কাজেই তুমুল জ্ঞানবান শাহবাবার সঙ্গে কবিদের সখ্য গড়ে উঠতে সময় লাগেনি। শাহবাবা তাঁর কাঁধের ঝুলিটি থেকে শুকনো খেজুর কাজু বাদাম ক্যাডবেরি চকোলেট মায় ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক অবধি বার করে সবাই কে দেদারসে বিলিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন। কথার পর গান। লালনের গান। শূন্যতা ঋদ্ধিই ধরল- যে পথে সাঁই চলে ফিরে/ও তার খবর কে করে?/যে পথে আছে সদায়/ভীষণ কালনাগিনীর ভয়/ওমনি উঠে ছোঁ মারে। গান শেষে সখিনা তাজ ধরে বসল: জ্বিন দেখব। শাহবাবা বললেন, আচ্ছা, তয় এইখানে না। আমার মোকামে আইস। তারপর শূন্যতা ঋদ্ধির গানের উচ্চারণ মানে ও তালের ভুল ধরিয়ে দিয়ে ঘিওরের কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে মোকামের ঠিকানা দিলেন। তারপর থেকে শুভ্র তুষারদের কালীগঙ্গার মোকামে আসা শুরু। মৌরি আজ আযম ইশতিয়াকের গুলশানের ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠল বলে আজ শুভ্র তুষার শাহবাবার কালীগঙ্গার মোকামে একাই এসেছে।। মৌরির সঙ্গে গত এক বছর ধরে খুব কথা কাটাকাটি হচ্ছিল । প্রায় দিনই -আমি কী যে ভুল করলাম, আমি তোমাকে ডির্ভোস দিব। ইত্যাদি। একটা রিয়েল স্টেট ফার্মে উচুঁদরের চাকরি করে মৌরি। আইবিএর তুখোর ছাত্রী ছিল। ২০০৮ এর গোড়ায় গেটওয়ে পোপার্টিজ-এর মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব পেয়েছে । স্যালারি আগের তুলনায় থ্রি টাইমস বেড়েছে- প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। সংসার আর টানবে না মৌরি-২০০৮ এর মাঝামাঝি সাফ জানিয়ে দিয়েছিল । খিলগাঁওয়ে আর থাকবে না। ধানমন্ডির কাছে ফ্ল্যাট ভাড়া নেবে। অফিসটা তা হলে কাছে হয়। গত বছর অক্টোবরে মাঝামাঝি বাংলা মোটরের মোড়ে মৌরিকে একটা নীল রঙের ঝকঝকে জিপে বসে থাকতে দেখেছে শুভ্র তুষার। জিপটা জ্যামে আটকে ছিল। মৌরির পাশে গেটওয়ে পোপার্টিজ-এর জি এম আজম ইশতিয়াক। লোকটা জুবেরীর সঙ্গে পড়ত। বত্রিশেই লোকটার মাথায় টাক গজালেও লোকটার ব্যাঙ্কব্যালেন্স নাকি প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। যা হয়-জুবেরী বলে, উঠতি মডেলদের মাসে দু’বার নিয়ে পেনাং-কাটমুন্ডু যায় আজম। মৌরির পাশে পাজেরোতে আজম ইশতিয়াককে দেখে তুষার শুভ্র মুহূর্তে জমে গিয়েছিল। যে ও এমন এক পরম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিল দীর্ঘদিন ধরে। প্রকট দুঃখ আর অভিমানে ওর তামাটে শরীর পলকে পুড়ে গিয়েছিল সেদিনের অক্টোবরের রোদে। আযম ইশতিয়াকের কাছে ভালোবাসার মূল্য নেই-যেদিন মৌরি এই সত্যটা আবিস্কার করবে-ততদিনে মৌরিও মদ খেতে শিখে যাবে। লোকটা ওকে ভালো না বাসলে মৌরি কাঁধও ঝাঁকাবে না। মদের ছোবলে ওর অবশ নার্ভ ওকে কষ্টও দেবে না। মৌরি তো কখনও অপরিচিত পথে হাঁটতে শেখেনি। নতুন কাউকে খুঁজবে-যে শুভ্র তুষারের চেয়ে অনেকই ওপরের স্তরের, ঝকঝকে, অমলিন। যে লালনের গানের মানে খোঁজে না। ভ্রুনটা জমাট বাধার আগেই মৌরি চলে যাবে-এই দুঃখ। লোকে আঙুল তুলে বলবে নপুংসক কবি- এই কষ্ট। শুভ্র তুষার বছর দেড়েক দৈনিক সমকাল-এ ছিল। হঠাৎই সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মীসঙ্কোচনের পর ২০০৭ সালে জুনের পর থেকে এখন বেকার। গ খোলা দরজার বাইরে ২০০৯ সালের মধ্য জানুয়ারির জ্যোস্না। জ্যোস্নায় একটি দীর্ঘ ছায়া ভেসে ওঠে । শাহবাবা? শুভ্র তুষার মুহূর্তেই উঠে দাঁড়াল। শাহবাবার পাশে কে? অল্পবয়েসি ছেলে বলে মনে হল। উবু হয়ে জুতা খুলছে। ছেলেটি কে? তুষারে আসছো নাকি? জ্বী। বাবা। ঘরটায় আতরের গন্ধ গাঢ় হল। ভালো। এই দেখ, আউক্কা নাদান মেহেমান নিয়া আসলাম। বলে কাঁধের ঝুলিটা কাঁধ থেকে পাশে নামিয়ে রাখলেন। বাতি জ্বালাও নাই তুষার? বলে শাহবাবা দরজার পাশে উবু হয়ে বসলেন। নাহ্, অন্ধকারেই ভাল লাগছিল। মাঝে মইধ্যে আমারও আন্ধার ভালো লাগে। কব্বরের অন্ধারের আগাম পিপারেশন হইয়া যায়। তয় জালালে আইছিল নাকি তুষার? মনে হয় ...হ্যাঁ। হারিকেন জ্বালাতে জ্বালাতে শাহবাবা বললেন, জালালে দুধ চায়। শীতকালে তাগো খড়া লাগে। কথাট শুনে শুভ্র তুষারের শরীর শিরশির করে ওঠে। হারিকেনের আলোয় অন্ধকার তেমন দূর হল না। শাহবাবার ‘ আউক্কা নাদান’ মেহমানের দিকে তাকালো শুভ্র তুষার। পনেরো ষোল বছরের বেশি বয়েস হবে না ছেলেটার। কালো জ্যাকেট পরেছে। প্যান্টের রংটা বোঝা গেল না। গায়ের রংটাও। তবে শ্যামলাই মনে হল। চুল উশখোখুশকো। চোখে চশমা। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তোমরা কথা কও। আমি অজু কইরা আসি। দেখি সাপের ছাওরে পাই নাকি। বলে পাশে একটা পিঁড়িটা দেখিয়ে বললেন, রনি তুমি বস? এ হইল শুভ্র তুষার । মস্ত বড় কবি। শাহবাগের তুরুপ। ‘পূর্বাহ্ণ’ পত্রিকার এডিটর। রনি বাড়ি থিকা পালাইসে তুষার। আমিও একবার পলায়ছিলাম, পঞ্চাশ বছর আগে -আব্বায় তখন রংপুর ছিল। বাঙালির পোলা নাদান বয়েসে সবাই একবার পালায়। কথাটা ঠিক। শিবালয় থাকার সময় শুভ্র তুষারও একবার পালিয়েছিল। ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন শাহবাবা। শুভ্র তুষার জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথায় পড় রনি? মাস্টারমাইন্ড। এবার এ-লেভেল দিব। রনির বাবা যে রনিকে প্রথমে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছিল সে কথা অবশ্য রনি বলল না । শাহবাবার সঙ্গে কোথায় পরিচয়? বাসে। একা কই যাচ্ছিলে? জানি না। বাসে উঠলাম। আমিও ছেলেবেলায় ঘর ছেড়ে পালিয়ে বাসেই উঠেছিলাম। নামলাম, আরিচা ঘাটে। সে আরেক কাহিনী। অন্যদিন বলব। তা তোমার বাড়ি ছেড়ে পালাবার কী কারণ? রনি ক্ষাণিক ক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলল, বাসায় আমার ভালো লাগে না। শুভ্র তুষার কৌতূহলী হয়ে ওঠে। কেন? রনি আবারও ক্ষাণিকক্ষণ চুপ করে থাকে। শুভ্র তুষার বলল, প্রোবলেমটা আমাকে বলতে পার। আই অ্যাম আ পোয়েট। এনি ওয়ান কেন ট্রাস্ট আ পোয়েট। আমার আব্বা আমার আব্বা ...থেমে গেল রনি। তোমার আব্বার কী নাম? রনি নাম বলল। শুভ্র তুষার যা বোঝার বুঝল। সেও শাহবাগের অন্যদের মত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে স্বোচ্চার । রনি বলল, বন্ধুদের সামনে লজ্জা করে। সবাই জানে সেভেনটি ওয়ানে কী হয়েছিল। মিডিয়া এখন সো স্ট্রং- শুভ্র তুষার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, হ্যাঁ। আগে যা অল্প ক’জন জানত, এখন মিডিয়ার কল্যাণে সবাই সবই জেনে যাচ্ছে। ওয়ার ক্রিমিনালদের বিচার আজ হোক, কাল হোক, হবেই। কাতর স্বরে রনি বলল, আমার জন্ম সেভেনটি ওয়ানের আগে তুষার ভাই। আই নো। ইউ মাস্ট নট বি ওরিড । কথাটা যেন শুভ্র তুষার নিজেকেই বলল। সহসা মৌরির মুখটা মনে পড়ে গেল তার। আই বি এ-তে পড়ত মৌরি; শুভ্র তুষার পাবলিক অ্যাড-এ। পরীক্ষা আগে আগে জ্বর হত। শুভ্র তুষারের চেয়ে মৌরি এগিয়ে গিয়েছিল। তখন, শুভ্র তুষার নিজেকে বলত, ইউ মাস্ট নট বি ওরিড । মাঝে মাঝে মধুর ক্যান্টিনে বসত ওরা দুজন । কখনও রেজিস্টার বিল্ডিং-এর মল-এ। মৌরি বলত, শুভ্র, আমরা কিন্তু এখন প্রবলেমগুলো ক্যাটাগোরাইজ করতে পারি। কাজেই, আমাদের সুখি হওয়াই উচিত। আমি কিছু চাই না। অনলি আই নিড ইয়োর ট্রাস্ট। সেই মৌরি আজ আজম ইশতিয়াকের কেপ্ট। ইউ মাস্ট নট বি ওরিড শুভ্র তুষার। তোমার রয়েছে জীবনের রঙিন চাদর। রনি বলল, কিন্তু, আমার আমার আব্বা ... আমার আব্বা ... শুভ্র তুষার শীতল কন্ঠে বলল, এই ঘরে সাপ আছে রনি। সবুজ রঙের বালুবোড়া। মানে? রনি এদিকওদিক তাকায়। শুভ্র তুষার তীক্ষ্ম স্বরে বলল, মানে তুমি একা নও। আর আজ তুমি বাসে জীবনের রঙিন চাদর পেয়ে গেছ। আর মা-বাবা? মা-বাপ কিছু না। এই জগতে আমরা সবাই লোনলি ট্রাভেলার। কারও সঙ্গে দেখা হবে, কারও সঙ্গে না। তোমার বাবার অপরাধের জন্য কেউ তোমাকে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসাবে না রনি যদি তুমি তোমার বাবার পথে না হাঁটো। শোন, রনি। শাহবাবা আর্মিতে ছিলেন। একদিন কী হল জান। এরকম শীতের মাঝরাত। শাহবাবা ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। অন্ধকার ঘরে আতরের গন্ধ। শরীর ঘেমে উঠল। ঘরের অন্ধকারে এক হোলি ভয়েস। সেই হোলি ভয়েস বললেন, চাকরি ছেড়ে পথে পথে ঘুরে ওলিগিরি। সেটা সেভেনটি থ্রি। শাহবাবা তাই করলেন। তার পর অনেক পথ ঘুরে এই কালীগঙ্গার মোকামে। তোমার বাবারা হার্ডকোর শরিয়তপন্থি হওয়ায় পীর-ফকির অপছন্দ করেন। সাদা রঙের চাদর যেমন সব কাছে লাগে না, চাদর রঙীন করার দরকার হয়, পীরফকিরা তেমনি- জীবনের রঙীন চাদর। কথাটার মানে আবছা বুঝল রনি। তার কেবল মনে পড়ল বাসের ভিতরে তখন খিদে পেয়েছিল। শাহবাবা ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক খেতে দিলেন। একজন ফকিরের কাছে এই রকম কস্টলি কেক! ঠিক তখনই আতরের গন্ধটা আরও ঘন হয়ে উঠেছিল। অজু সেরে শাহবাবা ঘরে ঢুললেন। মায়েরে ফোন কর রনি। তোমার মায়ে টেনসন করতেছে। আমি মোবাইল আনি নাই আঙ্কেল। তুষারমিঞা। তুমি রনিরে তুমার মোবাইলডা দেও। চার্জ আছে কি না কে জানে- দেখি। বলে তুষার শুভ্র কোটের পকেট থেকে মোটরলাটা বার করল। হ্যালো, আম্মা?...কাল সকালে চলে আসব। না, আমি যাব না। তোমরা যাও। না, আমি যাব না। শাহবাবা জায়নামাজ পেতে বসলেন। বললেন, তুমি এতবড় দুঃখ পাইলা তুষার। মাইয়াডারে একবার আনলা না মোকামে। মাইয়াডা মোকামে আইলে তুমি আর দুক্ষু পাইতা না। মৌরি কখনও আসতে চায় নি। শুভ্র তুষারের কন্ঠে বিষন্নতা ঝরে। থাক। মাইয়াডা ভালা থাকব। মরণের আগে তেমন কোনও কষ্ট হইব না। বহুৎ দেশবিদেশ ঘুরব। বিদেশে মরব। শাহবাবার কথায় শুভ্র তুষার অবাক হয় না। শাহবাবার মোরাকাবার কথা সবাই জানে। মৌরির ভবিষ্যৎ জানতেই আজ মোকামে এসেছে শুভ্র তুষার। ভবিষ্যৎ জানা হল। বিদেশে মরবে মৌরি। আর আমি বাংলা ঘাস হয়ে রব ...শুভ্র তুষার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। তারপর কথায় কথায় কখন যে রাত ফুরিয়ে যায়। ঘরে ভোরের ম্লান আলো ঢোকে। শাহবাবা উঠতে উঠতে বললেন, তুমরা এখন রওনা দাও তুষার। ঘিওর পৌঁছতে পৌঁছতে রোদ উঠে যাবে। আমি এখন মোরাকাবায় বসব। তুমি রনিরে ওগো বাসার সামানে নামায়া দিও তুষার। তারপর যেন শূন্য থেকে একটি ঠোঙা পেরে ঠোঙাটা রনিকে দিয়ে বললেন, রনিমিঞা এইটা ধর। রনি উঠে দাঁড়িয়েছে। ও হাত বাড়ায়। কি এটা? ওর মুখটা দেখে মনে হল রীতিমতো থতমত খেয়েছে। সামান্য তালমিছরি দিলাম। তোমার মায়েরে দিও। আচ্ছা, দেব। ঘ ঘর থেকে বেরিয়ে ওরা দুজন চাতালে এসে দাঁড়াল। শাহবাবা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন। চাতালে কুয়াশা আর শীত । নদী দেখা যায় না। বাঁশঝাড় দেখা যায় না। কেবল বাঁশঝাড়ের দিকে কাকের কলরব। ওরা দুজন সেদিকেই হাঁটে। একটু পর শাহবাবাও কুয়াশায় মিলিয়ে গেলেন। কুয়াশার ভোর হলেও সময়টা সুবেহ সাদিক। একটু পর শাহবাবার কন্ঠে আজান শোনা গেল । শুভ্র তুষার বলল, ফজরের ওয়াক্তে কালীগঙ্গার মোকামের মসজিদে কেউ নামাজ পড়তে আসে না রনি। জ্বিনরা ছাড়া। রনি বলল, বলেন কী! আপনি জ্বিন দেখছেন? মনে হয় তো দেখছি। মনে হয় মানে? মানেটা সময় হলে বুঝবা। তখন বললাম না- শাহবাবার ঘরে সাপ আছে। সবুজ রঙের বালুবোড়া। ওটাই জ্বিন। রনি কী বলতে যাবে -বলল না। মধ্য জানুয়ারির ঘন কুয়াশায় বাঁশঝাড়ের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে নুজহাতের মুখটা মনে পড়ল রনির। নুজহাত এখন কী করছে। কাল রাতে হয়তো ফোন করেছিল । না পেয়ে টেনশন করছে হয়তো। ফ্যাকাশে মুখ নুজহাতের। এই বয়েসেই মারাত্মক ফ্যামেলি প্রবলেমের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। নুজহাতের মা এয়ারহোস্টেস। বাবা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার। বাবা-মা বেশির ভাগ সময়ই বাড়ি থাকে না। থাকলেও ঝগড়া করে। তুষার ভাই, আপনার ফোনে চার্জ আছে? দেখ। ওপ্রান্তে রিং বাজাল। হোয়ার আর ইউ? আমি এখন ঘিওর। ঘিওর? হ্যাঁ, ঘিওর। এক বন্ধুর বাড়ি। নুজহাত বলল, মা কাল ডিক্লেয়ার করেছে, বাবাকে ডিভোর্স দেবে। রনি বলল, নো প্রোবলেম। নুজহাত আতকে উঠল, হোয়াট! রনি বলল, উই হ্যাভ ফ্রেন্ডস নাও। বিট পাওয়ারফুল। নুজহাত বলল, হু। রনি বলল, দি বাউলস। আই হ্যাড মেট সাম অভ দেম। নুজহাত খেপে উঠে বলল, হোয়াট দ্য হেল রনি! হোয়াট দ্য বাউলস ডু ইন আওয়ার লাইফ! উই লিভ ইন আ রিয়েল ওয়াল্ড হ্যাভিং রিয়েল প্রবলেমস রনি। আমার ...আমার মা-বাবার ডির্ভোস হয়ে যাচ্ছে। রনি বলল, কুল ডাউন, প্লিজ, নুজ। দিস ওয়ার্ল্ড ইজ অ্যান ইলুশন- হেয়ার দি ইলুজারি গ্রিন কালাড স্নেইক ক্রলস। অ্যান্ড উই থিঙ্ক ইটস রিয়েল। দ্যাট ক্রিয়েটস প্রবলেম। উই নিড ইলুজারি পিপল, দি বাউলস। দি ড্রিমার। নাও, ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? কথাগুলি শুনে নুজহাত চুপসে গেল। মিনমিন করে বলল, এখন আমি কি করব রনি? রনি বলল, কী আর করবে। তুমি একজন ট্যাভেলার। লোনলি ট্যাভেলার । আঙ্কেল-আন্টি একসঙ্গে থাকল কি থাকল না-দেট ডাজ নট ম্যাটার। ম্যাটার ইজ- তুমি তোমার গিভেন লাইফকে বোঝার চেষ্টা করছ কি না। আর আমার নাম রনি না নুজহাত। তা হলে? সুফি আঙ্কেল আমার নাম দিয়েন কৃষ্ণমোহাম্মদ। ও প্রান্তে নিরবতা। একটুপর নুজহাত বলল, ক্যান আই কাম টু মিট দ্য সেইজ? রনি হাসল। বলল, আমি তোমাকে পরে গিয়ে পরে এখানে নিয়ে আসব। বাই। রনি ফোনটা অফ করে শুভ্র তুষারকে ফেরত দিল। শুভ্র তুষার ফোনটা নিয়ে গুনগুন করে লালনের একটা গান ধরল। মানুষ গুরু কল্পতরু ভজ মন/ মানুষ হইয়া মানুষ ভজ/ পাবা মানুষে মানুষ রতন। শূন্যতা ঋদ্ধি লালনের এই গানটা প্রায়ই গায়। শূন্যতা ঋদ্ধি শিবালয়ের মেয়ে। আসল নাম খোদেজা আখতার। বিদ্রোহবশত নাম বদলে নিয়েছে। ছেলেবেলায় শিবালয়ে বেশ কয়েক বছর ছিল শুভ্র তুষার। বাবার বদলির চাকরি। উথলি হাই স্কুলে পড়ত শাহআলম। সে সময় রমেন বসাক বাংলা পড়াতেন। ভারি ছিলেন রবীন্দ্রভক্ত রমেন স্যার। তিনিই শাহআলমকে কবিকে শুভ্র তুষারে বদলে দিয়েছিলেন। বলতেন, রাত্রি বস্তুটাকে উপলব্দি করার জন্য জীবনের একটি রাত জেগে থেকো তুষার। একদিন নগ্ন থেকো। একদিন অসামাজিক হয়ো। একদিন অধার্মিক হয়ো। কবি শুভ্র তুষার শুভ্র এখন আরেক কিশোরকে বদলে দিচ্ছে। এই রিসাসত। চল, রনি। এদ্দুর যখন এসেছি তখন শিবালয়ের উথলি ঘুরেই যাই। শিবালয় কোথায়? রনি অবাক। এখান থেকে পশ্চিমে। কার কাছে যাবেন? কে আছে ওখানে? আমার এক বন্ধু। আশির মতন বয়েস। শিবালয়ের উথলিতে থাকেন। উথলির খুব কাছেই যমুনা। আমার সেই বন্ধুটি গত ষাট বছর ধরে অল্প অল্প করে যমুনা নদীর ইতিহাস লিখছেন। চল আমরা সেই অসমাপ্ত পান্ডুলিপি নিয়ে আসি। যমুনা নদীর ইতিহাস লিখছেন। গ্রেট। চলেন যাই। রনি খুশি হয়ে উঠল। শীতের শীর্ণ কালীগঙ্গা পিছনে রেখে ভোরের কুয়াশার ভিতর হাঁটতে হাঁটতে রমেন বসাকের মতন ভোরকে ব্যাখ্যা করতে থাকে রনির কাছে। রনি ভোর দেখেনি। ওর ঘরটা এসি। এখন ভোর দেখছে। এখনও রোদ উঠেনি। কুয়াশা কাটেনি। কুয়াশায় গাছগুলি ডুবে আছে। ডুবে আছে পথের দুপাশের কৃষকের ঘরদোরগুলো। রনি ভিজে ভিজে সবুজ গন্ধ পায়। আরও পরে, ঘিওর বাসষ্ট্যান্ডের লাগোয়া একটি রেস্টুরেন্টে পরোটা আর বুটের ডাল খেতে খেতে শুভ্র তুষার রনিকে বোঝাল - ধর্ম না, মূল হল ঈশ্বরবোধ। ঈশ্বরবোধ সব মানুষের ভিতরে অভিন্ন। ধর্মের বিধান সংঘাতে সৃষ্টি করে। আর, সব সময় বুকের ভিতর একটা মিষ্টিক মিষ্টিক ফিলিংস যেন থাকে। তা হলে সবুজ রঙের বালুবোড়াকে অর্থহীন মনে হবে না। কোন্ ধর্মগ্রন্থে কী বলেছে- সেসব গুরুত্বপূর্ন নয় রনি। কর্মকান্ডের কোনোই প্রয়োজন নেই। কর্মকান্ড হাস্যকর বিষয়। তার বদলে একটা গাছ দেখ, সবুজ রঙের বালুবোড়াকে দেখ, নদী দেখ- কালীগঙ্গা কি বুড়িগঙ্গা। তোমার দুঃখসুখের অস্তিত্বই তোমার ধর্ম। তোমার বেঁচে থাকাই তোমার প্রার্থনা। আর কিছুর প্রয়োজন নেই। কর্মকান্ড এড়িয়ে চলবে। রনি মন দিয়ে শোনে। ঘিওর বাস্টষ্ট্যান্ডের চুমকি রেস্টুরেন্টের বুটের ডাল এত টেস্টি। নুজহাতকে নিয়ে এসে খাওয়াবে। নুজহাত তো এখন স্বাধীন। ফ্রি ট্রাভেলার। রনির পরিবর্তন উপভোগ করছে শুভ্র তুষার। সে এখন রমেন বসাকের ভূমিকায়। রমেন স্যার প্রায়ই একটি গানের কথা বলতেন। লালনের গান। ভয় পেয়ে জন্মবিধি/সে পথে না যাও যদি/হবে না সাধন সিদ্ধি/তা শুনে মন ঝুরে/ও লালন বলে যা কর হে/ থাকতে হবে পথ ধরে। এই কথাগুলি মৌরিকে কখনোই বোঝাতে পারেনি শুভ্র তুষার। কতকাল আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার ভবনের মলের ঘাসের ওপর বসে মৌরি বলেছিল, শুভ্র, আমরা কিন্তু এখন প্রবলেমগুলো ক্যাটাগোরাইজ করতে পারি। কাজেই আমরা সুখি হবই। আমি কিছু চাই না। বিশ্বাস করো। আই অনলি নিড ইয়োর ট্রাস্ট। আমি ... আমি তোমার বুকে মাথা রেখে মরতে চাই শুভ্র। ইত্যাদি। তখন শাহবাবা বললেন, তুমি এতবড় দুঃখ পাইলা তুষার। মাইয়াডারে একবার আনলা না মোকামে। মাইয়াডা মোকামে আইলে তুমি আর দুক্ষু পাইতা না। শুভ্র তুষার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মৌরির মেয়েবেলায় ও কোনও কবিকে কাছে পায়নি পায়নি। এই আক্ষেপ। ওর কবির মন নেই -সেটি দোষের কিছু না, আধুনিক সময়ে জেনেটিক্স মানতেই হবে। তবে মানুষের জীবনে শিক্ষার গুরুত্বও কম নয়। আত্মঘাতি জঙ্গিরা তো শান্তিনিকেতন থেকে পয়দা হয় না। বিল মিটিয়ে বাইরে এসে রেস্টুরেন্টের বাইরে এসে দাঁড়াল। রোদ উঠেছে। একশ টাকা ভাঙ্গিয়ে পাঁচটা বেনসন কিনল। রনির জন্য দুটো মিল্ক ক্যান্ডি । একটা বাস ছাড়ছে। ওরা বাসের দিকে হাঁটে। মৌরির পরিবারের অনেকই দেশেবিদেশে ষ্টাবলিশ। অথচ ওর পরিবারে রমেন বসাক-এর মতন সেরকম আলোকময় মানুষ একজনই নেই। যে কারণে মৌরি রঙিন চাদর বুনতে শেখেনি-ওর দুভার্গ্য। কী সহজে বদলে গেল মৌরি। সস্তা স্রোতের মোহে বদলাব না, ভাঙ্গব না-এই জন্যই তো মানবজীবন। একজন বাঙালি কবির ভালোবাসাকে তুচ্ছ করল ঘন ঘন মোবাইল ফোনের মডেল বদলানো একটা মেয়ে। কী সহজে আজম ইশতিয়াকের কেপ্ট হয়ে গেল! লোকটার গুলশানের ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠল। শুভ্র তুষার দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মাঝে মাঝে জীবনে রঙিন চাদর জড়ানো দরকার হয় । মৌরির অবর্তমানে প্রতি মুহূর্তে পুড়ছে শুভ্র তুষার। তবে সে একেবারেই পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবে না। যেহেতু তার একটি রঙিন চাদর রয়েছে। যে রঙিন চাদরের সন্ধান মৌরি কখনও পায়নি। মৌরি কখনও পুড়লে বোতল বোতল মদ খাবে। মদ খাবে-কেননা, জীবনের অনিবার্য দহনকে এড়ানোর আনন্দজনক উপায়ের পথ জানা নেই মৌরির। ওরা বাসে উঠল। রনি জানলার পাশে বসল। কী ঝলমলে রোদ। পুকুর। কলাগাছ। টিচার্স ট্রেইনিং কলেজের দেওয়াল। সেই দেওয়ালে খয়েরি রঙে লেখা- জামাতশিবির রাজাকার-এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়। রনি মুচকি হাসে। জামাতিদের বাংলা ছাড়ার দরকার কী। তারা বদলে গেলেই হল। ও তুষার শুভ্র কে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, আপনার আসল নাম কি? মো: শাহ্ আলম মজুমদার। ধোঁওয়া ছেড়ে শুভ্র তুষার বলল। মাথা সামান্য টলছে। আজকাল দিনের প্রথম সিগারেটে মাথা টলে ওঠে। শুভ্র তুষার লালনের সেই গানটা ধরল। মানুষ গুরু কল্পতরু ভজ মন/ মানুষ হইয়া মানুষ ভজ/ পাবা মানুষে মানুষ রতন। কৃষ্ণমোহাম্মদ রনিও একটা নতুন নিক নেবে ভাবল। কী নিক নেওয়া যায়? মানুষ রতন। তখন তুষার ভাই বলছিলেন, তোমার বাবারা হার্ডকোর শরিয়তপন্থি হওয়ায় পীর-ফকির অপছন্দ করেন। সাদা রঙের চাদর যেমন সব কাছে লাগে না, চাদর রঙীন করার দরকার হয়, পীরফকিরা তেমনি- জীবনের রঙীন চাদর। জীবনের রঙির চাদর পেয়ে গেছে রনি। তবে ভয়ও আছে। ওর আব্বার পার্টির লোকেরা নিশ্চয়ই ওকে খুঁজছে। খুঁজুক। কাল শেখ ইবনে আল জাওয়ারি আল আসাদ আল মুখতাদিরের জন্মদিন। আজ দুপুরের ফ্লাইটে সৌদি আরব যাওয়ার কথা রনিদের ফ্যামেলির সবাই। ঐ পাথর-পাথর দেশটা ভালো লাগে না রনির। পালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না ওর। পালিয়ে গেল বলেই তো সব পেল। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৭
false
hm
পদ্মা সেতু ঘিরে একটি চিন্তা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলছে। এমন পরিসরের নির্মাণ প্রকল্প বাংলাদেশে নিকট অতীতে দ্বিতীয়টি নেই। যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু আর পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে কর্মযজ্ঞকে ছাড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতুর কাজ। এমন প্রকল্প ভবিষ্যতে হয়তো আরো হবে। সে সব প্রকল্পে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা যাতে আরো বেশি দক্ষতা ও জ্ঞান নিয়ে সম্পৃক্ত হতে পারেন, সে জন‌্য পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞটি সম্পর্কে তাদের একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রকল্পে যারা অংশ নিচ্ছেন, তারা অভিজ্ঞতার বিচারে প্রবীণ। কিন্তু এই প্রকল্প থেকে আহরিত জ্ঞান বাংলাদেশের নবীন প্রকৌশলীদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে হবে। নইলে হাতে গোণা কিছু লোকের কাছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জ্ঞান, আরো ভালো কোনো শব্দের অভাবে, "বন্দী" হয়ে থাকবে। এই নির্মাণযজ্ঞের ওপর একটি ধারাবাহিক অডিওভিজুয়াল ডকুমেন্টারি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে করা যেতে পারে। সেতু ব্যবস্থাপনা বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সেতু প্রকল্পের নানা খুঁটিনাটি কাজের ভিডিও বিবরণ সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল অনুষদে পাঠানো যেতে পারে। সরাসরি নির্মাণস্থলের অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প হয় না, কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে দেশের সব প্রকৌশল ছাত্রকে সরাসরি নির্মাণস্থলে এক্সকারশনের সুযোগ করে দেওয়া স্বাভাবিকভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তাদের বঞ্চিত করাও ঠিক হবে না, যেহেতু ডকুমেন্টারির মাধ্যমে প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। পদ্মা সেতু আমাদের আত্মশক্তি অনুধাবনের ক্ষেত্রে একটি দৃশ্যমান কাঠামো। কিন্তু এই আত্মশক্তি কেবল এই সেতুর ব্যয় যোগানোর সামর্থ্যের ক্ষেত্রেই খাটে। আমাদের কারিগরি যোগ্যতা ও দক্ষতা যদি আনুপাতিক হারে না বাড়ে, তাহলে অনাগত ভবিষ্যতেও চীন থেকেই আমাদের বড় বড় প্রকল্পের নির্মাণকৌশলীরা আসবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে আহরিত জ্ঞানের মালিকানাও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিকদের হওয়া উচিত, আর সেই জ্ঞান আমাদের ভাবীকালের প্রকৌশলীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বটুকুও সরকারেরই পালন করা উচিত। তথ্য মন্ত্রক ও সেতু বিভাগ যদি নিজেদের মাঝে সমন্বয় করে এ দায়িত্বটুকু বহন ও পালন করে, তাহলে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশনের সুদক্ষ কর্মীরাই পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ভিডিও ডকুমেন্টারিটি তৈরি করতে পারবেন। এটি আমাদের ভবিষ্যত দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে একটি সহায়ক দলিল হিসেবে যেমন কাজ করবে, তেমনি আমাদের প্রকৌশলবিদ্যার ছাত্রদের মনে আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানের জায়গাটুকুর ভিত্তি আরো মজবুত করবে। শিক্ষাকালে চিকিৎসককে যেমন ফিরে যেতে হয় মানুষের কঙ্কালের কাছে, তেমনি নির্মাণ প্রকল্পও কঙ্কালপর্বেই প্রকৌশল শিক্ষার্থীর জন্যে সবচেয়ে বেশি তথ্যবহ। পদ্মা সেতু কঙ্কালপর্বে থাকা অবস্থাতেই এই প্রামাণ্যচিত্র প্রকল্পটি শুরু হোক।
false
hm
ভারত বনধ: আমরা কতদূর দাগ কাটতে পারলাম? ভারত বনধ কর্মসূচির নামটি সম্ভবত এই পোস্টের পাঠকের কাছে ইতিমধ্যে পরিচিত। পরিচিত হয়ে না থাকলে, অনুগ্রহ করে লিঙ্কটিতে ক্লিক করে আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনা দেখে আসতে পারেন। ভারত বনধের প্রস্তাবে আমরা যারা ঐকমত্য পোষণ করেছিলাম, তারা গতকাল ১ মার্চ, ২০১২ তারিখে যে যেখানে রয়েছি, চব্বিশ ঘন্টার জন্য ভারতীয় পণ্য, সেবা ও বিনোদন বর্জন করেছিলাম। এই কর্মসূচিটির কোনো কেন্দ্রীয় সমন্বয় ব্যবস্থা ছিলো না, একটি শিথিল প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা সকলে নিজের মতো করে এটি পালন করেছেন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী কর্তৃক নির্বিচার হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিবাদে আমরা নিজেদের পরিসরে যতটুকু সম্ভব, ভারতীয় বাণিজ্যযন্ত্রকে একদিনের জন্য 'না' বলতে চেয়েছি। এই কাজটি আমরা কতটুকু সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারলাম, তা একে অন্যের কাছ থেকে জেনে নিই আসুন। মন্তব্যের পাতায় অনুগ্রহ করে আপনার পর্যবেক্ষণ আর পরামর্শ জানিয়ে যান। কে কীভাবে বর্জন করলেন, তা কেন আমাদের জানতে হবে? জানতে হবে ভবিষ্যতে আবারও ভারত বনধের কর্মসূচিটি আরো ব্যাপ্তি, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে পালনের জন্যে। সীমান্তে বিএসএফের হাতে প্রতিটি মৃত্যু, প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনার জবাব আমরা দেবো ভারত বনধ করে। আমরা হয়তো গতকাল অল্প কিছু মানুষ এই বর্জনে অংশ নিয়েছি, কিন্তু আমাদের যূথবদ্ধতায় কাজ দিয়েছে, বর্জনের অন্যতম উদ্দিষ্ট ভারতীয় পরিষেবা প্রতিষ্ঠান এয়ারটেল নড়েচড়ে বসেছে, দৈনিক প্রথম আলোর দ্বিতীয় পাতায় পুরো দৈর্ঘ্য জুড়ে তারা গতকালের জন্যে বিপুল পরিমাণ বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে। আমরা নিজেদের মধ্যে তুচ্ছ বিষয়ে তর্কবিবাদে লিপ্ত থাকি বলে ঐক্যের শক্তি অনুভব করতে পারি না। আমাদের ঐক্যের শক্তি তাই আমরা নিজেদের মুখের দিকে তাকিয়ে আঁচ করতে পারি না, সেটা বুঝে নিতে হয় প্রতিপক্ষের মুখ দেখে। তাই আসুন, আমরা এই প্রতিবাদের শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর পদ্ধতিটিকে কীভাবে আরো শাণিত করা যায়, তা নিয়ে ভাবি, এবং বিএসএফের নির্বিচার অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠস্বরকে শ্রুত করে তুলি। এই প্রতিবাদ, প্রতিরোধের ক্ষেত্র আপনার ঘর, আপনার অফিস, আপনার দোকান-বাজার, আর আপনি একাই বালক ডেভিডের মতো মুখোমুখি হচ্ছেন এক নির্লিপ্ত নিষ্ঠুর গলাইয়াথের। আমরা ওজন মাপি, রক্তচাপ মাপি, খাবারের ক্যালরি মাপি, মাপি কোরবানির গরুর উচ্চতা, গাড়ির দাম, শেয়ার বাজারের লাভ, আমরা কি নিজেদের আত্মসম্মানবোধকে মাঝে মাঝে পাল্লায় তুলে মাপতে পারি না? ভারত বনধকে আমরা একদিন পালন করে ফুরিয়ে যাওয়া হুজুগের পরিবর্তে যাপিত জীবনে প্রতিবাদের অস্ত্র করে তুলি, আসুন। এবারের সংগ্রাম, আত্মসম্মানের সংগ্রাম। আপনার অভিজ্ঞতা আর পরামর্শ জানাবেন। ধন্যবাদ। সংযোজন ১. ফেসবুকের এই পেইজটি খোলা হলো ভবিষ্যৎ ভারত বন্ধ কর্মসূচি ফেসবুকে সমন্বয়ের জন্যে।
false
ij
আজকের বই_ আনিসুল হক-এর ‘মা’ নিটোল গল্প ক’জন লিখতে পারে? আমি স্টোরি টেলিং-এর কথা বলছি। গল্পের নামে আধা-নিবন্ধ. আধা-প্রবন্ধ নয়। গল্প মানে স্টোরি। যিনি মুখে বা লিখে গল্পটা বলেন-তিনি স্টোরি টেলার। মনের নানাবিধ জঞ্জাল সরিয়ে নির্মেদ টানটান একটা গল্প লেখা অত সহজ নয়; দীর্ঘকালীন সাধনার প্রয়োজন; সেই সঙ্গে আবশ্যক হয় গভীর চিন্তাভাবনার। গানের মেলোডির মতোই নিটোল একটা গল্প বলাও মানবসভ্যতার প্রধানতম আর্ট। যে আর্ট আয়ত্বে আনার লক্ষ্যে কখনও কখনও নিরাপদ সড়ক ছেড়ে অচেনা বন্ধুর পথেও হাঁটার ঝুঁকি নিয়ে হয় কারও কারও। আমার অটল বিশ্বাস- আনিসুল হক তাদের মধ্যে একজন। ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। আমাদের বসার ঘরে লম্বা একটা সোফা ছিল। সন্ধ্যার পর মিঠুন ভাই ওখানে টানটান হয়ে শুয়ে পড়তেন। নীলক্ষেত হয়েই আসতেন। সঙ্গে থাকত হুমায়ুন রেজা কি আদিত্য কবির কি ব্রাত্য রাইসু। তখন বিশ্ববিদ্যায়ে পড়ি। আমাদের বসার ঘরে প্রত্যেহ সন্ধ্যার আড্ডা জমজমাট ছিল। হয়তো সাজ্জাদ শরীফ লুকিয়ে একটা 'নিষিদ্ধ' বই এনেছেন। অল্প অল্প পাঠ করে তারই ব্যাখ্যা-বয়ান করতেন। তসলিমা তখন দুবাংলার মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছেন;তাকেও গালাগালি করা হত সমানে। তা ছাড়া আলোচনায় একে একে উঠে আসতেন জয় গোস্বামী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, টেড হিউজেস, জাঁ লাকা কি দেরিদা; শঙ্খ ঘোষ কি বিনয় মজুমদার প্রমূখ। তো, কে মিঠুন ভাই ? মিঠুন ভাই হচ্ছেন আপনাদের আনিসুল হক। আপনাদের আনিসুল হকই আমার কাছে মিঠুন ভাই। যদিও বহুবছর আমাদের দেখা হয় না- তাঁর জীবনের এক বিশেষ পর্বে আমি অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছিলাম তাঁর সঙ্গে। আমাদের আড্ডায় অন্যতম আকর্ষন ছিলেন মিঠুন ভাই। মিঠুন ভাইয়ের জন্ম: ১৯৬৫, ৪ মার্চ। রংপুরে বাবা মোফাজ্জল হক। মা আনোয়ারা বেগম। শৈশবে পড়াশোনা করেছেন প্রথমে রংপুরের পি টি আই প্রাইমারী স্কুলে, তারপর রংপুর জেলা স্কুলে। ম্যট্রিক পাশ করে পড়েছেন কারমাইকেল কলেজ। তারপর ঢাকার জীবন শুরু। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কতকটা পরিবারের চাপেই বুয়েট-এ ভর্তি হলেন; সিভিল ইঞ্জিনীয়ারিং-এ। আসলে মিঠুন ভাই হতে চেয়েছিলেন একজন পথিক কিংবা ভবঘুরে কিংবা কবি। সুন্দরের অন্বেষায় কাটাতে চেয়েছিলেন এই অপার্থিব জীবন। তেমন ঠিক হল না। আবার হলও। পাশ করলেন বুয়েট থেকে। এখন কি করবেন? সেই দোলাচল। ঠিক এই সময়টায় আমার সঙ্গে পরিচয়। তখন বলছিলাম না-গানের মেলোডির মতোই নিটোল একটা গল্প বলাও মানবসভ্যতার প্রধানতম আর্ট। যে আর্ট আয়ত্বে আনার লক্ষ্যে কখনও কখনও নিরাপদ সড়ক ছেড়ে অচেনা বন্ধুর পথেও হাঁটতে হয়। আনিসুল হক তাদের মধ্যে একজন। বুয়েট থেকে পাশ করার পর পরিস্থিতির চাপে একটা সরকারী চাকরি নিলেন। বিবেকের দংশনে ১৫ দিন পরে সে চাকরি ছেড়েও দেন মিঠুন ভাই। কেননা, মিঠুন ভাই কবিতার আরাধনায় ডুবে থাকতে চাইতেন; লিখতে চাইতেন গল্প চাইতেন। চাকরিবাকরি ভাল লাগত না। কবিতায় সুন্দরকে খুঁজছেন। ততদিনে কবির জীবনে এক নারী এসে গিয়েছে। (মিঠুন ভাই কি হ্যান্ডসামই না ছিলেন!) মেরিনা আপাকে অল্প অল্প ভালো লাগছে। মেরিনা আপা তখন একটা খবরের কাগজে চাকরি করতেন। হাত ছুঁতে ইচ্ছে করে-কিন্তু, সংসারের দায়দায়িত্ব? আমি কি আজন্ম পথিক নই? নই রেললাইনের পাশে বেঁকে যাওয়া ভেজা পথটি ছায়াহীন কায়াশূন্য এক হেঁটে যাওয়া ঘোর লাগা সুন্দরের সর্বশেষ পুরোহিত? সংসার? আমি কি নই ত্যাগী? শিকড়ে লিপ্ত জল? যে জলে ঈশ্বর আছে মীনরুপে ... মনের ভিতরে তখন এমনই কলরোল। আমি কি ছোঁব মেরিনার হাত? তখন কি মিঠুন ভাই জানতেন যে-একদিন ‘মা’ নামে একটা উপন্যাস লিখবেন, ওটা ওড়িয়া ভাষায় অনুদিত হবে, তিনি উড়িষ্যা যাবেন সে বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্টানে। সঙ্গে স্ত্রী। মেরিনা হক। কবির স্বপ্নের নারী। আমি সেই ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা বলছিলাম। সন্ধ্যার পর আমাদের বসার ঘরের লম্বা সোফায় মিঠুন ভাই টানটান হয়ে শুয়ে থাকতেন। মুখের উপর হাত। আমি পায়ের কাছে বসে। সিগারেট টানছি। মোজার গন্ধ পাচ্ছি। হুমায়ুন রেখা খাতার উপর স্কেচ করছে ...কার যেন ...আজ আর মনে নাই .... নীলক্ষেত হয়েই এসেছে ওরা। কাজেই, ইষৎ এলোমেলোই ছিল দুজন। মিটন ভাইয়ের মুখে কদিনের না-কাটা দাড়ি জন্মেছে। নারী ও কবির অনিবার্য টানাপোড়েন চলছে। এক ভবঘুরেকে যখন নিরুপায় হয়ে নিছক চাকরির সন্ধান করতে হয় তখন নেশাই হয়ে ওঠে অন্যতম আশ্রয় । আমি ছিলাম স্পর্শকাতর হৃদয়ের অধিকারী। কবির মানসিক উদ্বেগ আমি বুঝতাম। চাকরি না লেখালেখি? সেই সময় বাংলাদেশে সংবাদপত্রের ইতিহাসে এক কল্যাণকর বিপ্লব ঘটে যাচ্ছিল। পুরনো সংবাদপত্রের কবরের উপর নতুন কটি সংবাদ পত্র দৃঢ় পায়ে উঠে দাঁড়াচ্ছিল। তারই একটিতে জয়েন করলেন মিঠুন ভাই। মেরিনা আপাও খবরের কাগজের জগতেরই একজন। সুতরাং, ... বলছিলাম যে, আমি মিঠুন ভাইয়ের মানসিক উদ্বেগটা বুঝতাম। গল্প লেখার উদ্বেগ। আড্ডায় আমরা গল্প লেখার কৌশল নিয়ে আলোচনা করতাম। মিঠুন ভাইয়ের হাতে হুমায়ুন আহমেদের বই। বলতেন, দেখ ইমন, হুমায়ুন আহমেরে বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় একটা গল্প থাকে । তারপর সেই গল্পটাই তরতর করে এগিয়ে যায়। হু। আমি একমত হই। এই গল্পের শুরুতে মশারির ভিতর এক মশা ঢুকে গেছে। চরিত্র ভাবছে মশাটা স্ত্রী না পুরুষ। লেখাটা এভাবে তরতর করে এগিয়ে যায়। মিঠুন ভাই বললেন। তাই তো। এবার হুমায়ুন রেজা সহমত হয়। গল্প লেখা নিয়ে কী ভীষন উদ্বেগ ছিল মিঠুন ভাইয়ের মধ্যে। তখন কি আমরা জানতাম- একদিন ‘মা’-এর মতন উপন্যাস লিখবেন তিনি। লিখে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। অজস্র কবিতাও লিখেছিলেন মিঠুন ভাই।ওই সময়ে লেখা এই কবিতাটি আজও মনে পড়ে। বুকের মধ্যে অই মেয়েটির ছায়া ছায়ার ভিতর অই মেয়েটি নেই। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সামনে কতবার যে কোট করেছি এ দুটি চরণ। আমার কাছে আজও আনিসুল হক আপাদমস্তক কবি। সুন্দরের অন্বেষক এক কবি। আপনাদের কাছেও তিনি যেন তেমনই প্রতিভাত হন। চিরকাল। Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৭
false
rg
ছোটগল্প_ সদানন্দ আচার্য সমাচার!!! সদানন্দ আচার্য সারা জীবন কেবল আকাশ মুখস্থ করেছে। তবু আকাশের অসীম রহস্যের কোনো কূল কিনারা করতে পারেনি। বুড়িশ্বরী নদীর যেখানটা বিষখালী নদীর সঙ্গে মিশে যুগল ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলেছে, সেই মোহনার ঠিক কোল ঘেঁষে ত্রিভূজ আকৃতি'র স্থলভাগের এক শীর্ণ কুটিরে সদানন্দ আচার্যের নিবাস। বুড়িশ্বরী নদী বঙ্গাপসাগরের খুব নিকটে হলেও ভারী শান্ত নদী। নদীর এই শান্ত আচরণের কারণে স্থানীয় মানুষেরা একে পায়রা নামেই ডাকতে অভ্যস্থ। তবু সেই শান্ত পায়রা বা বুড়িশ্বরী নদী ঝড় জলোচ্ছাসে কখনো কখনো ভারী অশান্ত হয়ে ওঠে। তখন তার রুদ্রমুর্তি নিয়ে সদানন্দ আচার্যেরও ভারী উৎকণ্ঠা কাজ করে। আকাশের বিমুর্ত রূপের সঙ্গে বুড়িশ্বরী নদীর এই রুদ্রমুর্তির একটা যোগসাজস খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আবিস্কার করেছে সদানন্দ আচার্য। আকাশের মতিগতি আর উচ্চারিত ভাষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বুড়িশ্বরী বা বিষখালী নদীও বঙ্গোপসাগরের অশান্ত দানবীয় আচরণের সঙ্গে একই সুরে নাচে। ভারী আশ্চার্য এক রহস্যময় সংকেত বিনিময়ের মাধ্যমে তারা একত্রে রুদ্রনিত্য করে। তখন সদানন্দ আশ্চার্য জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে বিশ্বশ্রষ্ঠাকে নানান নামে ডাকতে থাকে। দিনের বেলায় আকাশ নীল, রাতের বেলায় কালো, ভোরবেলায় পূবাকাশ আর গোধূলী বেলায় পশ্চিমাকাশের রঙ গাঢ় লাল। জন্মের পর থেকেই সদানন্দ আচার্য আকাশের এই তিনটি রঙের সঙ্গেই পরিচিত। কিন্তু যখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, বিশেষ করে ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, তাইফুন বা হেরিকেন তখন এই আকাশের রঙ বদলায়। তখন আকাশের রঙ হয়ে যায় ঘোলাজলের মত নিদারুন ঘোলাটে। তখন আর আকাশের দুর্বোদ্ধ ভাষা বোঝা যায় না। তখণ আকাশের রঙ হয়ে যায় ফ্যাকাশে, কখনো হালকা হলদেটে, কখনো কালচে অফ হোয়াইট, কখনো বা কঠিন গাঢ় নীলচে। দুর্যোগের সময় আকাশের গায়ে যেনো তারই পূর্বাভাস লেখা থাকে। আকাশের এই রঙ বদলের খেলা সদানন্দ আচার্য বুঝতে পারে না। কিন্তু বুড়িশ্বর বা বিষখালী বা বঙ্গোপসাগর ঠিকই বুঝতে পারে আর ওরাও তখন সেরকম অদ্ভূত সব মাতলামি শুরু করে। দুইয়ের ঘরের নামতা পড়ার সময় সদানন্দ আচার্য খুব অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করেছে পৃথিবীতে অসংখ্য দুইয়ের উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে একসঙ্গে আছে। চন্দ্র-সূর্য, আলো-অন্ধকার, দিন-রাত, মা-বাবা, জোয়ার-ভাটা, জল-স্থল, যুবক-যুবতী, খোকা-খুকি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, আকাশ-পাতাল, স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণ, কুহক-কুহকি, রাজা-রানী, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, ময়ূর-ময়ূরী, গরম-শীতল, নরম-শক্ত, যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগ, জন্ম-মৃত্যু, ইত্যাদি ইত্যাদি। দুইয়ের এই রহস্যময় সহ-অবস্থানও সদানন্দ আচার্যের কাছে ভারী বিস্ময়ের! তবু ঘুম থেকে ওঠার পর আকাশে সূর্যের রোজ একই দিকে পূর্বাকাশে উকি মারা আর বিপরীত দিকে পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়ার রহস্য সদানন্দ আচার্য ঠিক বুঝতে পারে না। এই রহস্যের পেছনে কে কলকাঠি নাড়ছে সেই বিস্ময় সদানন্দ আচার্যকে ভারী চিন্তায় ফেলে দেয়। দিনের বেলায় সূর্য আকাশের একমাত্র রাজা। রাতের বেলায় চাঁদ ওই আকাশের রানী। এছাড়া অসংখ্য তারা-নক্ষত্র রাতের বেলায় আকাশে মিটমিট করে। তখণ অন্ধকার আকাশের মধ্যেও এক ভারী অপূর্ব সৌন্দর্য খেলা করে। সেই সৌন্দর্য নির্মাণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মেঘদল। সাদা মেঘ উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে নানান আকৃতির নানান খেলা দেখায়। সূর্যের আলো'র সঙ্গে সেই সাদা মেঘের রঙেও আসে নানান জ্যোতি। মেঘের সৌন্দর্য কোনো ভাষায় লিখে ঠিক ফুটিয়ে তোলা যায় না বলেই সদানন্দ আচার্যের ধারণা। সেই অপরূপ সৌন্দর্য কেবল দুই চোখ ভরে উপভোগ করার নিয়ম। সদানন্দ আচার্য আকাশ মুখস্থ করতে গিয়ে সেই মেঘের হরেক কিসিমের রঙ বদলানো দেখে ভারী মুগ্ধ হয়। কখনো পাখির মত উড়ে উড়ে সেই মেঘ ছুঁয়ে দেখতে মন চায় সদানন্দ আচার্যের। তখন সদানন্দ আচার্য ভাবে পাখিরাই বুঝি পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন প্রাণী। আমি কেন পাখি হলাম না!পাখি আকাশে উড়তে পারে মানুষ কেন পারে না সেটাও সদানন্দ আচার্যের কাছে এক অপার বিস্ময়। মানুষ তবু আকাশে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে ঘুড়ি উড়ায়। বেলুন উড়ায়। উড়োজাহাজ উড়ায়। জঙ্গিবিমান উড়ায়। মিসাইল উড়ায়। গুলি ফুটায়। ধোয়া উড়ায়। কিন্তু মানুষ কি এই আকাশের অসীম সীমার সীমানা নির্ধারণ করতে পেরেছে? সদানন্দ আচার্যের সেই ঘোর কিছুতেই কাটে না। আকাশ তার কাছে এক ভারী বিস্ময়। এ কারণেই বুঝি মহামণিষীগণ আকাশকে বলেছেন মহাকাশ। আর সেই মহাকাশ ভারী মহাবিস্ময়। বাবা'র মৃত্যুর পর শ্বশান থেকে ফিরে বুড়িশ্বরীর পারে বসে গোধূলীলগ্নে সদানন্দ আচার্য প্রথম বুঝেছিল অনুভূতি কি জিনিস। তেমনি ছোটবেলায় বুড়িশ্বরীর ওপারে আমতলী'র হরিসভায় মায়ের সঙ্গে কীর্তন শুনতে গিয়ে হারিয়ে যাবার পরদিন যখন মা তাকে খুঁজে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেছিল, সেদিন বুঝেছিল মায়ের স্নেহ কাকে বলে। তখন কৈশোর অতিক্রমকাল। তখন যৌবনের হাতছানি। গৌরাঙ্গদের ঘাটে সূর্যাস্তের কালে নীলিমাদি'র স্নানরত খোলা বুক লুকিয়ে দেখে সদানন্দ আচার্য টের পেয়েছিল এরই নাম বুঝিবা শিহরণ। শিহরণ বুঝিবা শরীরে উত্তাপ ছড়িয়ে জ্বর নিয়ে আসে। শিহরণ কি শরীরের কোষের ভেতর খুব গোপনে লুকিয়ে থাকে? শিহরণ কেন শিড়দাঁড়া বেয়ে ধাই ধাই করে সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়? সেই থেকে রোজ সকালে নীলিমাদি'র ফুল কুড়ানি'র সময়টার জন্য সদানন্দ আচার্য উজবুকের মত অপেক্ষা করে। খালি পায়ে নগ্ন ঘাসের উপর নীলিমাদি যখন আলতো পা ফেলে ফেলে ফুল কুড়ায়, সেই দৃশ্য সদানন্দ আচার্যের ভারী ভালো লাগে। কিন্তু সেই ভালো লাগার কথা আকাশ আর বুড়িশ্বরী ছাড়া আর কাউকে বলার সাহস পায় না সদানন্দ আচার্য।
false
ij
রবীন্দ্রনাথের কালো মেয়েরা ___ রবীন্দ্রনাথই বুঝি প্রথম বাংলার ইতিহাসে বাংলারই অজ পাড়াগাঁয়ের এক কালো মেয়ে কে তার প্রাপ্য মূল্য দিলেন, অভূতপূর্ব মান-মর্যাদা দিলেন; যে রকম ইতিপূর্বে আর কখনও দেখা যায়নি। ক্ষণিকা কাব্যগ্রন্থে ‘ কৃষ্ণকলি’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি , কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক । মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ - চোখ । কবিটি কিন্তু যেন তেন লোক নয়, খোদ গ্রামের জমিদার, বাংলার অন্যতম ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তা সত্ত্বেও তিনি অজ পাড়াগাঁয়ের এক সামান্য কালো মেয়ে কে অপরিসীম মূল্য দিলেন, অঢেল মান-মর্যাদা দিলেন ... এখানেই আমাদের আগ্রহ। এই যে বাংলার পাড়াগাঁর কালো মেয়ে, কি তার সামাজিক ইতিহাস? সামাজিক ইতিহাস আর কি - কেবল বহিরাগত জাতিগোষ্ঠী দ্বারা দীর্ঘকালীন বঞ্চনা আর শোষনের দীর্ঘ ইতিহাস ছাড়া। একই সঙ্গে কালো মেয়েটির ব্যক্তিইতিহাসও অতি সঙ্কটাপন্ন। কেননা,‘ কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক ।’ অথচ কবি বললেন, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি ’। অনাগত ফুলের সঙ্গে কালো মেয়েটির তুলনা করলেন কবি। বললেন, মেয়েটি কেবল কালো নয়, সে কালো রঙের ফুলের কুঁড়ি। প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ নাথ বিশী একবার বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ববাংলা) না এলে তিনি নাগরিক কবিই রয়ে যেতেন। এই মন্তব্য হয়ত খানিক অতিরঞ্জিত -তবে এতে একেবারেই যে সত্যি নেই তাও নয়। আমরা জানি উনিশ শতকের শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথ পারিবারিক জমিদারি দেখভালের জন্য তৎকালীন পূর্ববাংলায় এসেছিলেন। এসে শুধু জমিদারি নয় পূর্ববাংলার নদীমাটিপ্রকৃতি, প্রাকৃতজন ও এর লোকজ দর্শনের সঙ্গে নিজের প্রাণের ছন্দটি খুঁজে পেলেন । পূর্ব বাংলার বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতি তাঁকে সম্পূর্নরূপে গ্রাস করেছিল। ‘বর্ষাকাল আসিল। ক্ষুধিত পদ্মা উদ্যান গ্রাম শস্যক্ষেত্র এক-এক গ্রাসে মুখে পুরিতে লাগিল। বালুকাচরের কাশবন এবং বনঝাউ জলে ডুবিয়া গেল। পাড় ভাঙার অবিরাম ঝুপঝাপ শব্দ এবং জলের গর্জনে দশদিক মুখরিত হইয়া উঠিল এবং দ্রুতবেগে ধাবমান ফেনরাশি নদীর তীব্র গতিকে প্রত্যক্ষগোচর করিয়া তুলিল।... একবার ঝপ করিয়া একটি শব্দ হইল।... পদ্মা পূর্ববত্ ছল্ছল্ করিয়া ছুটিয়া চলিতে লাগিল, যেন সে কিছুই জানে না...।’ এই সমাজের মানুষ তাকে মুগ্ধ করেছিল। পুবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে , ধানের খেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ । আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা , মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ । আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে আমিই জানি আর জানে সে মেয়ে । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । এই গ্রামীন সমাজের হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা লোকজ দর্শন কবিকে বদলে দিল আমূল । কবি পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন রবীন্দ্র-বাউল ... খাঁচার ভিতর অচিনপাখি কেমনে আসে যায়? তারে ধরতে পারলে মনবেড়ি দিতাম পাখির পায়। এ গান শুনে, এই গানের ইতিহাস শুনে, এই গানের কর্তার কথা শুনে কবি বদলে গেলেন, বদলে গেল তাঁর চিন্তাধারা, এমন কী পোশাক-আশাক। তাঁকে আর আমরা ঘনঘন ইউরোপ যেতে দেখি না। অবশ্য পরিনত বয়সে যখন ইউরোপ আর অন্যত্র গেলেন, বললেন, বাংলা দেশে বাউল বলে এক দল আছে যারা নিজের অন্তরের ভিতর সদূরের অলীক অশ্র“ত ধ্বনি টের পায় ... আর, হরিণ চোখের কালো মেয়েটি তো বাংলার বাউলসমাজ থেকেই উঠে এসেছে। যে কারণে কালো মেয়েটির এত সম্মান জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিটির কাছে। রবীন্দ্রনাথ পূর্ববাংলায় এসে পূর্ববাংলাকে আপন করে নিয়েছিলেন। এর সবকিছু । এমন কী পূর্ব বাংলার বিশিষ্ট বাগবিধিও। পাঠ করুন- ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই, ডাকতেছিল ক্রিয়াপদটি হয়তো ছন্দের কারণেই এসেছে, তারপরও বলব যে কবিতার আপন আবহে কবি একাকার না হলে সার্থক কাব্যের সৃষ্টি কি করে সম্ভব। জীবনানন্দের কবিতায় যেমন অনিবার্যভাবেই কখনও কখনও বরিশালের বাগবিধি উঠে এসেছে... কে মোরে ব্যথা দেছে কে বা ভালোবাসে শুধু মোর দেহের তালাশে ... বরিশালের মানুষ মাত্রেই জানেন ‘ব্যথা দেছে’ বলতে কি বোঝায় ... আমরা বলছিলাম তৎকালীন পূর্ববাংলার গ্রামের এক শ্যামল কিশোরীর কথা, যাকে দেখে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি , কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক । মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ - চোখ । ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে , মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই , শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই । আকাশ - পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । পুবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে , ধানের খেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ । আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা , মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ । আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে আমিই জানি আর জানে সে মেয়ে । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । এমনি করে কালো কাজল মেঘ জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে । এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ় মাসে নামে তমাল - বনে । এমনি করে শ্রাবণ - রজনীতে হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি , আর যা বলে বলুক অন্য লোক । দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ - চোখ । মাথার ' পরে দেয় নি তুলে বাস , লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । হয়তো মেয়েটি ছিল কবির প্রজা। মুসলিম প্রজা কি? যাই হোক। প্রজা তো কি? (আসলে সেই কালো মেয়েটি তো বাংলার বাউল সমাজ থেকেই উঠে এসেছিল) ... সেই শ্যাম বর্ণের প্রজা মেয়ের নির্মল রূপে মুগ্ধ হয়েছেন তরুণ কবি। শ্রাবণ রজনীতে মেয়েটির কথা ভেবেছেনও। এমনি করে কালো কাজল মেঘ জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে । এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ় মাসে নামে তমাল - বনে । এমনি করে শ্রাবণ - রজনীতে হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । কবি এভাবেই শ্রেণির উর্দ্ধে উঠতে পেরেছিলেন, যা অত্যন্ত জরুরি। যে শ্রেণি অনঢ় পাথর-দেওয়াল নির্মান করে মানুষে- মানুষে সৃষ্টি করে বিভেদ, দূরত্ব। রবীন্দ্রনাথ সেসব অনভিপ্রেত বাধা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। লালনের মতোই যেন বলতে চেয়েছেন ... বেদ বিধির পর শাস্ত্র কানা ... যা হোক। এখন এই সময়টা একুশ শতক। রবীন্দ্রনাথের সেই কালো মেয়েরা আজ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যায়, পাচার হয়ে যায় সীমান্তের ওপারে (স্বাধীনতার পরে সংখ্যাটি ভীতিকর) বড় শহরে এসে স্বল্প মূল্যে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হয় গৃহ পরিচারিকা হিসেবে কিংবা যৌনকর্মী হিসেবে কিংবা ভাগ্য ভালো হলে পোশাক শিল্পে। এই তিনটি ক্ষেত্রেই কৃষ্ণকলিরা, আমরা জানি, পদে পদে শিকার হয় নানা অপমান নির্যাতন আর বঞ্চনার .... এই নির্যাতন আর বঞ্চনা চলে ... কেননা আমরা পাড়াগাঁর মেয়েদের প্রতি সচেতন নই, আমরা কবির চোখে ওদের দেখতে শিখিনি ... কেননা আমরা কবিতা থেকে দূরে সরে গেছি ...আমরা জানিনা যে পোশাক শিল্পে শ্রম বেচা ঐ বিপর্যস্ত মেয়েটিই কবিতা কিংবা কালো রঙের ফুলের কুঁড়ি ... যাকে উদ্দেশ্য করে কবি বলেছিলেন: আকাশ - পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । রবীন্দ্রাথের কালো মেয়েরা এখন পোশাক শিল্পের উচ্চ মুনাফার বলি । আমরা এদের দেখে রবীন্দ্রনাথের মতো বলতে পারি না। কালো ? তা সে যতই কালো হোক/ দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । তখন বলেছি যে রবীন্দ্রনাথের সেই কালো মেয়েরা আজ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যায় ... গ্রাম ও শহরের ভূমিকা সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ সচেতন ছিলেন। লিখেছেন, ‘অন্যান্য সকল রিপুর মতোই লোভটা সমাজবিরোধী প্রবৃত্তি। এইজন্যেই মানুষ তাকে রিপু বলেছে। বাইরে থেকে ডাকাত যেমন লোকালয়ের রিপু, ভিতর থেকে লোভটা তেমনি। যতক্ষণ এই রিপু পরিমিত থাকে ততক্ষণ এতে করে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কর্মোদ্যম বাড়িয়ে তোলে, অথচ সমাজনীতিকে সেটা ছাপিয়ে যায় না। কিন্তু লোভের কারণটা যদি অত্যন্ত প্রবল ও তার চরিতার্থতার উপায় অত্যন্ত বিপুল শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তবে সমাজনীতি আর তাকে সহজে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। আধুনিক কালে যন্ত্রের সহযোগে কর্মের শক্তি যেমন বহুগুণিত, তেমনি তার লাভ বহু অঙ্কের, আর সেই সঙ্গে সঙ্গে তার লোভ। এতে করেই ব্যক্তিস্বার্থের সঙ্গে সমাজস্বার্থের সামঞ্জস্য টলমল করে উঠছে। দেখতে দেখতে চারি দিকে কেবল লড়াই ব্যাপ্ত হয়ে চলেছে। এইরকম অবস্থায় গ্রামের সঙ্গে শহরের একান্নবর্তিতা চলে যায়, শহর গ্রামকে কেবল শোষণ করে, কিছু ফিরিয়ে দেয় না।(পল্লীপ্রকৃতি) কি গ্রাম, কি শহর- আজ সমগ্র বাংলাদেশজুড়েই রবীন্দ্রনাথের কালো রঙের ফুলের কুঁড়িরা বিপর্যস্ত। তাদের কেউ কেউ ইভ টিজিংয়েরও শিকার। এরা কি পুঁজির দাপটে আর পুরুষের লালসার শিকার হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে? গত কয়েক মাসে পয়ত্রিশ কিশোরীর আত্মহনন সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের বেঁচে থাকাকে নিরর্থক করে দেয় না কি? আমরা উদ্ধারের পথ খুঁজি...মনে হয় দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ছাড়া উদ্ধারের উপায় নেই ... যে কারণে আমাদের অতি অবশ্যই ফিরে যেতে হবে কবিতার কাছে । পর্নগ্রাফি নয়, কবিতা ... যে কবিতা গ্রামের এক কিশোরী মেয়েকে দেখে কামতাড়িত না হয়ে বরং অত্যন্ত মানবিক ভাবেই বলে: মাথার ' পরে দেয় নি তুলে বাস , লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । এই ‘ কালো হরিণ - চোখ’-এর দিকে তাকানোর নিষ্কাম শিক্ষাই কবিগুরুর শিক্ষা ... আর একটা কথা। ময়নাপাড়ার মাঠে কবি আর কৃষ্ণকলি একাই ছিল। ‘কৃষ্ণকলি’ কবিতায় সে প্রমাণ রয়েছে। পুবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে , ধানের খেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ । আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা , মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ । আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে আমিই জানি আর জানে সে মেয়ে । কালো ? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । আর ... আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে আমিই জানি আর জানে সে মেয়ে । এ হল নির্মল মানবিক প্রেম, যা কোনওমতেই জবরদস্তি নয়, বরং এতে প্রত্যেকেরই অধিকার রয়েছে ... এবং এর অবস্থান ইভ টিজিংয়ের একেবারেই বিপরীতে ...বাঙালি শিল্পপতির হৃদয়ে এই মানবিক বোধের সঞ্চার পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্যামলা রঙের গ্রামীণ মেয়েদের কখনোই উচ্চ মুনাফার বলি করে তুলবে না আশা করা যায়... সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৩
false
rn
প্রেমের বংশীয়াল নাম মোহাম্মদ মোস্তফা। বয়স পঞ্চাশ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। হাস্যমুখী এবং আলাপী। গ্রামের বাড়ি বরিশাল। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। সব সম্পত্তি ভাই-বোনদের বিলিয়ে দিয়ে তিনি নিঃস্ব অবস্থায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এখন কারো সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সব কিছু মিলিয়ে আলাভোলা ধরনের একজন মানুষ। সারা ঢাকা শহর ঘুরে বাঁশি বাজান। বাঁশি দিয়ে তিনি যেকোনো সুর তুলতে পারেন। পথচারীরা তার বাঁশি শুনে মুগ্ধ হয়, কেউ কেউ খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয় কিংবা চা-দোকান থেকে রুটি-কলা খাওয়ায়। মোস্তফা এক সময় বাঁশি শেখার জন্য অনেকের কাছে ছুটে গিয়েছেন, কিন্তু টাকা ছাড়া কেউ তাকে বাঁশি বাজানো শেখাতে রাজি হয়নি। দীর্ঘ দুই বছর সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় বাঁশি বাজানো শেখেন তিনি। মোস্তফার সঙ্গে সেদিন দেখা হয় ইস্কাটন গার্ডেনে। তিনি বলেন, ‘আমার বাঁশির করুণ সুর শুনে মানুষের চোখে পানি এসে পড়ে।’ এক প্রফেসর একবার তাকে বলেছিলেন, ‘হে বাদক তোমার বাঁশির সুরে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ঝরে পড়ে।’হাতে বাঁশি নিয়ে হেঁটে হেঁটে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান তিনি। যেখানেই ওরস অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই চলে যান। সারা রাত জেগে গান শোনেন। এভাবে তিনি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল ঘুরেছেন। লালনের গান তার বিশেষ প্রিয়। বেশির ভাগ সময়ই তার বাঁশিতে লালনের গানের সুর তোলেন। বাঁশিতে লম্বা একটা টান দিয়ে তিনি হাসি মুখে বললেন, ‘কম করে বিশবার বর্ডার পার হয়ে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছি, আজমীর শরীফে। এখন পাসপোর্ট বানিয়েছি। আর লুকিয়ে যেতে হয় না।’তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?’ বললেন, ‘দেশ নিয়ে ভাববার লোকের অভাব নেই। আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।’হাঁটতে হাঁটতে দিনের শেষে যেখানে রাত হয় সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন মোস্তফা। ঘুম নিয়ে তার কোনো সমস্যা নেই। শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়েন। খাওয়া নিয়েও তার কোনো চিন্তা নেই। কোনোদিন ভিক্ষা করেননি। তার বাঁশি শুনে মানুষ খুশি হয়ে তার হাতে টাকা গুঁজে দেয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সারা দিন ঘুরে বাঁশি বাজান, কিন্তু কোনো কাজকর্ম করছেন না কেন?’ হাসি মুখে বললেন, ‘আমি বাঁশি হাতে নিয়ে ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়াই। খুজতে খুঁজতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন বাঁশি বাজাই।হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের রাস্তার ফুটপাতে বসিয়ে তিনি তার বাঁশি দিয়ে তিনটা বিখ্যাত গানের সুর তুলে শোনালেন : ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময়…’, ‘মাটির পিঞ্জরার মাঝে বন্দি হইয়ারে/ কান্দে হাসন রাজার মন মুনিয়ারে’ এবং ‘বাড়ির পাশে আরশি নগর…।’ তার বাঁশি শুনে ফুটপাত ভরে গেছে মানুষে।বংশীয়াল মোস্তফার সঙ্গে আলাপ শেষ করে তাকে প্রস্তাব দেওয়া হলো, ‘আসুন চা-নাস্তা খাই।’ হাসি মুখে বললেন, ‘আমি তিনবেলা খাই না, একবেলা খাই। তাই আমার শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক আছে। কোনো অসুখ-বিসুখ নেই। খুব ভালো আছি। তিনি বলেন, যে পর্যন্ত ঈশ্বরকে খুঁজে না পাব, সে পর্যন্ত আমার মৃত্যু নেই।’
false
ij
মৌদগল্যায়ন গৌতম বুদ্ধের একজন শিষ্য ছিলেন মৌদগল্যায়ন । পালি ভাষায় অবশ্যি ‘মৌদগল্যায়ন’ শব্দটি উচ্চারিত হয়: ‘মহামো¹ল্লান’ । যা হোক। ইতিহাসে ধর্মের অজুহাতে হত্যাকান্ড নতুন কিছু না, বৌদ্ধযুগের উগ্র বুদ্ধবিরোধীদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হয়েছিলেন মৌদগল্যায়ন । এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছিল বুদ্ধের জীবনের একেবারে শেষের দিকে । অনুমান করতে পারি ... প্রিয় শিষ্যের মর্মান্তিক মৃত্যু বুদ্ধকে কাতর করে তুলেছিল । মৌদগল্যায়ন এর মৃত্যুর পটভূমিই এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু। মানচিত্রে প্রাচীন ভারত। প্রাচীন ভারতের মানচিত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতকে প্রাচীন ভারতে ট্রাইবাল সমাজ ভেঙে ১৬টি বৃহদাকার জনপদ বা রাজ্য গড়ে উঠেছিল। বৌদ্ধ সাহিত্যে এদেরকে সম্মিলিতভাবে ‘ষোড়শ মহাজনপদ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ষোড়শ মহাজনপদ- এর মধ্যে অন্যতম ছিল মগধ। মগধের রাজধানী ছিল রাজগৃহ। বর্তমানে বিহারের নালন্দা জেলায় প্রাচীন ওই নগরটির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে । আমরা জানি যে, বৌদ্ধধর্মের প্রসারের পর পর প্রাচীন ভারতে অনেকগুলি বৌদ্ধ বিহার গড়ে উঠেছিল, যে বিহার ঘিরে বৌদ্ধসংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত ছিল। প্রাচীন মগধের নালন্দায় গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধশিক্ষা কেন্দ্র বা বিহার । বর্তমান বিহারের রাজধানী পাটনার ৫৫ মাইল দক্ষিণ পুবে নালন্দায় এই বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছিল । বিহারের নালন্দা জেলায় অবস্থিত নালন্দা বিদ্যাপীঠের ধ্বংসাবশেষ। ৪২৭ থেকে ১১৯৭ খিস্টাব্দ অবধি এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল। তৎকালে, অর্থাৎ বৌদ্ধযুগে নালন্দার কাছে ছিল উপতিষ্য নামে একটি গ্রাম। সেই গ্রামে বাস করত উপতিষ্য এবং কৌলিত নামে দুই কিশোর। এরা ছিল পরস্পরের বন্ধু । এরা দুজনেই ছিল ধনবান ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। তবে তারা অর্থহীন ভোগবিলাসে মত্ত হয়নি বলেই মনে হয়, উপতিষ্য এবং কৌলিত ... এর দু’জনেই ছিল জিজ্ঞাসু, পড়–য়া ও তত্ত্বদর্শী। এই ডিজিটার যুগেও বিমর্ষ ভাবিত তরুণ-তরুণীর অভাব নেই ...এরা সুন্দর বিশ্বের কামনায় দিশেহারা ... বর্তমান নালন্দা জেলার মানচিত্র। সে কালের মগধের রাজধানী রাজগৃহ বর্তমানে রাজগীর । যা হোক। সে কালে তরুণ-যুবাদের সংসার ত্যাগের প্রথা ছিল। তরুণ বয়েসে উপতিষ্য এবং কৌলিত সংসারের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল; কাজেই তারা সংসার ত্যাগ করল। গৃহত্যাগের আগে তারা বদলে ফেলল নাম । উপতিষ্যর মায়ের নাম ছিল সারী। যে কারণে উপতিষ্য ‘সারীপুত্র’ নাম ধারণ করে। পালি ভাষায় সারীপুত্র শব্দটি উচ্চারিত হয়: ‘সারীপুত্ত।’ পরবর্তীকালে বুদ্ধের অন্যতম শিষ্য হয়ে উঠেছিল সারীপুত্ত। তাঁকেই উদ্দেশ্য করেই বুদ্ধ বলেছিলেন, 'Oh,Sariputra, form is no other than emptiness, emptiness no other than form; form is precisely emptiness, emptiness precisely form.” (Jean Smith সম্পাদিত Radiant Mind) যা হোক। কৌলিত নিল ‘মৌদগল্যায়ন’ নাম । আমি আগেই লিখেছি, মৌদগল্যায়ন শব্দটি পালি ভাষায় উচ্চারিত হয় মহামো¹ল্লান । ‘মৌদগল্যায়ন’ নামের অর্থ অবশ্যি জানতে পারিনি। সারীপুত্ত ও মৌদগল্যায়ন সংসার ত্যাগ করে উত্তর ভারতে ঘুরে বেড়াতে লাগল। রাজগীর (অতীত রাজগৃহ)। প্রাকৃতিক ভাবে সুরক্ষিত ছিল বলেই রাজগৃহ হয়ে উঠেছিল মগধের রাজধানী। উত্তর পশ্চিমে শোন ও গঙ্গা নদীর অবস্থান এবং দক্ষিণ পুবে ছিল পবর্ত শ্রেণি। বৌদ্ধযুগে মগধ শাসন করতেন সম্রাট বিম্বিসার। এবং বিম্বিসার শব্দটি আমাদের কাছে মোটেও অপরিচিত নয়। কেননা... বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে ...এই বাক্যটি আমাদের অতি পরিচিত। সম্রাট বিম্বিসারের রাজপ্রাসাদটি ছিল মগধের রাজধানী রাজগৃহে। শিল্পীর চোখে সম্রাট বিম্বিসার । মানুষ হিসেবে সম্রাট বিম্বিসার অত্যন্ত উদার ছিলেন। রাজগৃহ নগরে গৌতম বুদ্ধসহ নানা ধর্মমতের সাধুসন্ন্যাসীরা নিজ নিজ ধর্ম প্রচার করতেন। এদের প্রত্যেকের ধর্মমতের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন সম্রাট বিম্বিসার । মগধের রাজধানী রাজগৃহ নগরে যে সব দার্শনিক মত কিংবা ধর্মমত প্রচারিত হত তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল জৈন ধর্ম। জৈন ধর্মটি সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষে প্রচারিত হয়ে আসছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে জৈনধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীর এই ধর্মটির চূড়ান্ত রূপ দান করেন। জৈন ধর্মের অনুসারীদের বলা হত নিগ্রর্ন্থ কিংবা তীর্থক। রাজগৃহ নগরে জৈন ধর্মের একজন বিখ্যাত তীর্থক সঞ্জয় বাস করতেন । সারিপুত্ত ও মৌদগল্যায়ন ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে রাজগৃহ নগরে এসে উপস্থিত হয়েছিল। তারা তীর্থক সঞ্জয়ের কাছে জৈনধর্মে দীক্ষিত হয়। তবে তারা সন্তুষ্ট হয়নি। এর কারণ জৈনধর্ম না তীর্থক সঞ্জয় কর্তৃক জৈনধর্মের ব্যাখ্যা তা বলতে পারি না। জৈনধর্মে অতিরিক্ত সংযমের কথা বলা হয়, যা অনুসরণ করা কষ্টসাধ্য। ঠিক ওই সময়ে বুদ্ধ রাজগৃহ নগরে ধর্ম প্রচার করছিলেন। অশ্বজিত নামে এক বৌদ্ধভিক্ষুর সঙ্গে সারীপুত্রের সাক্ষাৎ হয়। অশ্বজিতের কাছে বুদ্ধের চিন্তাভাবনার কথা শুনে সারীপুত্র বুদ্ধের সম্বন্ধে আগ্রহী হয়ে ওঠে । তখন অশ্বজিত বুদ্ধের সঙ্গে দেখা করার উপদেশে দিল। সারীপুত্র মৌদগল্যায়ন কে বুদ্ধের সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবল। বুদ্ধের সঙ্গে দেখা করার জন্য সারিপুত্ত ও মৌদগল্যায়ন তীর্থক সঞ্জয়ের কাছে অনুমতি চাইলঅ তীর্থক সঞ্জয় ক্ষেপে উঠল! বুদ্ধের সর্ম্পকে কটূ কথা বললেন। প্রায়ই এই ঈর্ষাকাতর ধর্মীয় গুরুটি বুদ্ধের বিরুদ্ধে অমূলক কুৎসা রটান ও বুদ্ধের চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করেন এবং যে মিথ্যা অভিযোগ ক্রমশ ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং যার ফলশ্র“তিতে মৌদগল্যায়ন-এর অপমৃত্যু ঘটে। মৌদগল্যায়ন-এর মৃত্যুর প্রত্যক্ষ কারণ অবশ্য ভিন্ন। বুদ্ধ। জীবনভর শান্তি ও কল্যাণের বাণী প্রচার করলেও ... অপবাদ ও কুৎসা পিছু ছাড়েনি ... তীর্থক সঞ্জয় এর সংকীর্ণ মনের পরিচয় পেয়ে সারিপুত্ত ও মৌদগল্যায়ন বিস্মিত ও ব্যথিত হয়। ধর্মগুরু এত সংকীর্ণমনা হয়! তারা অবিলম্বে তীর্থক সঞ্জয় কে উপেক্ষা করে বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বুদ্ধের ব্যক্তিমায়া ছিল প্রবল, বাচন ভঙ্গি ছিল মনোরম, কথায় ছিল যুক্তি, মনোভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। যে কারণে সারিপুত্ত ও মৌদগল্যায়ন হৃদয়ে ভক্তি অনুভব করে। এবং কাল বিলম্ব না-করে বুদ্ধের কাছে দীক্ষা নেয়। উচ্চারণ করে ...আমি বুদ্ধের শরণ নিলাম, আমি ধর্মের শরণ নিলাম, আমি সংঘের শরণ নিলাম ... বুদ্ধের ব্যক্তিমায়া ছিল বড় তীব্র। আজও তাঁর মৃত্যুর ২৫০০ বছর পরও তিনি বিশ্বজড়ে জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে মানুষের মনে শ্রদ্ধার আসনে আসীন। তাঁর বাণী এতই মহৎ আর মানবিক যে স্বয়ং আইনস্টাইন একবার বলতে বাধ্য হয়েছন, আমি ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাই না ... তবে কখনও কোনও ধর্ম গ্রহন করার কথা ভাবলে বৌদ্ধধর্মের কথাই ভাবব। বুদ্ধ নারীর প্রতি অত্যন্ত সহানভূতিশীল ছিলেন, তাঁর জীবদ্দশায় গৃহস্থ বধূরা তো বটেই -বৌদ্ধসাহিত্য থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের গণিকারা অবধি প্রত্যহ প্রভাতে বুদ্ধকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করত। অল্প সময়ের মধ্যে সারীপুত্রের বাগ্মীতা ও মৌদগল্যায়ন এর কর্মদক্ষতা বুদ্ধকে সন্তুষ্ট করে। মৌদগল্যায়ন এর সাংগঠনিক গুলাবলী বৌদ্ধধর্মকে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এবং এই কারণেই বুদ্ধবিরোধীদের টার্গেট পরিনত হন মৌদগল্যায়ন । বুদ্ধের দর্শন অত্যন্ত মানবিক। সমস্ত রকম হিংসাবিদ্বেষসহ প্রাণী হত্যার বিরোধী ছিলেন বুদ্ধ। সেকালে বৈদিক ব্রাহ্মণরা ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশুযজ্ঞের আয়োজন করত। বুদ্ধের কাছে যজ্ঞ ও ব্রহ্মার সন্তুষ্টির ব্যাপারটিই ছিল একাধারে কুসংস্কার ও নির্মমতা। তিনি যজ্ঞের পশুবলির তীব্র বিরোধীতা করেছিলেন। ফলে ব্রাহ্মণরা বুদ্ধ ও বুদ্ধের অনুসারীদের ওপর ভয়নাক ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েছিল। উগ্র ব্রাহ্মণদের কয়েকজন মৌদগল্যায়ন কে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা আঁটে। কারণ, মৌদগল্যায়ন এর সাংগঠনিক গুলাবলী বৌদ্ধধর্মকে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছিল। প্রাচীন ভারতের প্রাত্যহিক জীবনে গরুর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ন। গোসম্পদ রক্ষার্থে বুদ্ধের পাশে সেকালের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছিল। এর কারণ ছিল। ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বৈদিক ব্রাহ্মণরা যে পশুযজ্ঞের আয়োজন করত তাতে গোসঙ্কট দেখা দিয়েছিল। এ লেখার সূচনায় বৌদ্ধযুগের ষোড়শ মহাজনপদের কথা বলেছি। প্রাচীন ভারতের আর্ন্তঃবানিজ্যে গো-শটক এর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ন। হাজার হাজার গো-শকট অর্থাৎ গরুর গাড়ি নিয়ে স্বার্থবাহ বণিকের দল এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে বানিজ্যের উদ্দেশে পাড়ি জমাত। অনিবার্য কারণে বাণিজ্যের স¤প্রসারণ হয়েছিল, আরও গোসম্পদ প্রয়োজন হয়ে পড়েছি। বুদ্ধ পশুযজ্ঞের বিরোধী ছিলেন বলেই বুদ্ধের পাশে সে কালের ব্যবসায়ীরা এসে দাঁড়িয়েছিল। এই তত্ত্বের প্রবক্তা প্রখ্যাত পাঞ্জাবী ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার। অনেক মাকর্সবাদী ঐতিহাসিকও তত্ত্বটির সমর্থন করেন। যেমন ডি.ডি কোসাম্বী প্রমূখ। সে যাই হোক। বণিক-শ্রেষ্ঠীরা বুদ্ধের ধর্মের সমর্থন করলেও তারা মৌদগল্যায়ন এর হত্যাকান্ড রোধ করতে পারেনি। তখন বুদ্ধের ঊনআশি বছর। বৌদ্ধসংঘের ভিক্ষুদের মধ্যে নানা রকম অবনতি দেখা দিয়েছে। আট বছর আগে কারাগারে মৃত্যুর হয়েছে উদারপন্থী সম্রাট বিম্মিসারের। মগধের সম্রাট এখন বিম্মিসারের পুত্র অজাতশত্র“ ; কট্টর লোক তিনি ... গঙ্গার উত্তরে কয়েকটি ট্রাইবাল রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করছেন। ওই সময়ে সারীপুত্র মারা গেলেন। বুদ্ধের হৃদয় ভেঙে যায়। কার্তিকী অমাবস্যায় নিহত হলেন মৌদগল্যায়ন। বুদ্ধের হৃদয় ভেঙে যায়। জঙ্গি ব্রাহ্মণদের কয়েকজন মৌদগল্যায়ন কে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল! এই নির্মম ঘটনার এক বছর পর আশি বছর বয়েসে বুদ্ধ মহাপরিনির্বান লাভ করেন। তথ্য নির্দেশ: ১. করুণা দত্ত: মৌদগল্যায়ন ২. শ্রী শান্তিকুসুম দাশ গুপ্ত : বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম এবং প্রাচীন বৌদ্ধসমাজ সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১০ দুপুর ২:২৪
false
mk
২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্রশূন্য হবে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্রশূন্য হবে বাংলাদেশ। এ উদ্দেশ্যে 'একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প' নামে রোডম্যাপ তৈরি করে সরকারের শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ওই রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২১ সালের পর বাংলাদেশে একটিও গরিব পরিবার থাকবে না। এখন যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে, তাদের দারিদ্র্য বিমোচন করাই শুধু নয়, নতুন করে কেউ দারিদ্র্যসীমার নিচে নামলে তাকেও ওপরে তুলে আনা হবে। এ জন্য ব্যয় হবে ৫১৬২ কোটি টাকা।গত ১২ মার্চ মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়সচিব এম এ কাদের সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সামনে ওই রোডম্যাপ তুলে ধরেন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. প্রশান্ত কুমার রায়।বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে কত শত উদ্যোগ যে এর আগে নেওয়া হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। ওই সব কর্মসূচির ফলে দারিদ্র্য কতটা কমেছে, তা নিয়ে বিতর্কও আছে। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য হটানোর ঘোষণা প্রথম দিয়েছিলেন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি প্রায়ই বলতেন, ২০৩০ সালের পরে বাংলাদেশে গরিব মানুষ খুঁজতে জাদুঘরে যেতে হবে। অবশ্য সরকারের তরফ থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করার কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হচ্ছে। যার বাস্তবায়ন শুরু হবে আগামী অর্থবছর থেকে।রোডম্যাপ প্রসঙ্গে প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, গত ৪০ বছরে দারিদ্র্য নিরসনে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বর্তমানে দেশের ২৪ ভাগ অর্থাৎ চার কোটির কম জনগণ বা কম-বেশি ৮০ লাখ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। প্রকল্পের আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আনা ২৫ লাখ পরিবার ছাড়াও দেশের বাকি ৫৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে পর্যায়ক্রমে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমে নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের আগেই দারিদ্র্যশূন্য বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।'একটি বাড়ি একটি খামারের আওতায় জাতীয় দারিদ্র্য নিরসন রোডম্যাপ (২০১০-২০২০)' শিরোনামের ওই পরিকল্পনায় উপকৃত পরিবারের সংখ্যা ধরা হয়েছে এক কোটিরও বেশি (সর্বশেষ দরিদ্র পরিবারের দারিদ্র্য নিরসন না হওয়া পর্যন্ত)। ২০১০-২০১৪ সালকে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় উল্লেখ করে রোডম্যাপে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার ৫২৭টি গ্রামের ২৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের দেওয়া তথ্যমতে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তারা ২৪ লাখ ২৬ হাজার গরিব পরিবারের দারিদ্র্য নিরসন করেছে।তৃতীয় পর্যায়ে ২০১৫-২০১৭ সালের মধ্যে ৪১ হাজার গ্রামের ২৫ লাখ পরিবারকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। তাতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলেছেন প্রকল্প পরিচালক। চতুর্থ পর্যায়ে ২০১৬-২০১৮ সালের মধ্যে সমপরিমাণ অর্থ ব্যয়ে আরো ৪১ হাজার গ্রামের ২৫ লাখ পরিবারের দারিদ্র্য দূর করার কথা বলা হয়েছে এতে। আর পঞ্চম পর্যায়ে সর্বশেষ দরিদ্র পরিবারসহ দেশের এক লাখ ২০ হাজার গ্রামের অবশিষ্ট দরিদ্র পরিবারগুলোকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের বাইরেও মাঠ পর্যায়ে আরো বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি রয়েছে। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের কাজ সফলভাবে করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এ প্রকল্পের কাজকে চলমান রাখা ও এই কার্যক্রমকে স্থায়ীরূপ দিতে এরই মধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যাতে এ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশব্যাপী একটি বাড়ি একটি খামার মডেলে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সব বিভাগ সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করলেই এ কার্যক্রমে সফলতা আসতে পারে। প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের নেতৃত্বে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কাজের সমন্বয়ের জন্য একটি ন্যাশনাল ওয়ার্কিং টিম গঠন করা যেতে পারে।
false
fe
প্রকৃতি হত্যার অপরাধ প্রকৃতি হত্যার অপরাধ ফকির ইলিয়াস ======================================== বাংলাদেশে এখন শীত মৌসুম চলছে। শীতের চাদরে মোড়া গ্রামবাংলা। সদ্য কেটে তোলা ফসলের ধূসর মাঠ। কিছুটা শুষ্ক আবহাওয়া আর শিমুল-বকুল ফুলে সুশোভিত ফুটপাত। পৌষ-মাঘে বাংলাদেশের যে নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করা যায় তা সত্যি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক এক অপহৃর্ব সমাহার। এ সময়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বিল-ঝিলগুলোকে আরো মুখরিত করে তোলে বিদেশি অতিথি পাখিগুলো। বাংলাদেশে এসব পাখির দলগুলো আসে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চীন, সাইবেরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। ওসব দেশে প্রচ- ঠান্ডা পড়ায় পাখিগুলো দল বেঁধে অবকাশ কাটাতে অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশে চলে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে এসে এসব পাখি নিরাপদ থাকতে পারে না। শিকারিদের জাল তাদের বন্দি করে। তারপর পাখিগুলো পণ্য হয় বাজারে বাজারে। শিকারিরা শিকার শিকার বলে চিৎকার দিতে দিতে পাখিগুলো বিত্রিক্র করে দেশের শহরে শহরে। উচ্চবিত্ত ধনীরা চড়া দামে পাখিগুলো কিনে নিয়ে তাদের রসনা তৃপ্তি জোগান। বাংলাদেশে অতিথি পাখি নিধন চলছে গেল প্রায় দুই যুগ থেকেই। পাকিস্তান আমলে বড় ধনীরা বন্দুকের লাইসেন্স নিতেন। তারপর তারা দলবল নিয়ে বেরুতেন পাখি শিকারে। ঝাঁক ঝাঁক পাখির ওপর চলত তাদের কার্তুজ। তা ছিল এক ধরনের সামন্তবাদী মানসিকতার বিকৃত সুখ। পাখির মাংস বড় জমিদারদের ভোজনবিলাসে রকমারি আইটেম হতো। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বন্দুকের লাইসেন্সের ওপর কিছুটা কড়াকড়ি করার পর দলবেঁধে পাখি শিকারের প্রবণতা কিছুটা কমতে থাকে। তাছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিবেকবান মানুষের জাগ্রত বিবেকের কাছে হার মানতে থাকে সনাতনী মানসিকতা। বন্দুক বা এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকারের প্রবণতা অনেকটা কমে আসে; কিন্তু বেড়ে যায় বাণিজ্যিকভাবে জাল ফেলে পাখি ধরার কার্যত্রক্রম। সরকার এ ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেও কোনো কার্যকর ভহৃমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। এ বছরের শীতের শুরুতেই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গ, যশোর সীমান্তবর্তী এলাকা এবং সিলেটের জাফলং, তামাবিল, ভোলাগঞ্জ সীমান্ত অঞ্চলে পাখি ধরার ব্যাপক হিড়িক পড়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নাকের ডগার ওপর দিয়েই চলছে এসব শিকার। সুযোগে এসব সংস্থার সদস্যরাও কামিয়ে নিচ্ছে টু-পাইস। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে গেল কয়েক বছর ধরে ইলিশ উৎপাদন অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বাজারে গত বছর ইলিশ মাছ ছিল দুষ্প্রাপ্য। যা পাওয়া গেছে তাও বিক্রি হয়েছে অত্যন্ত চড়া মূল্যে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রাণী বিজ্ঞানীরা গত ১০ বছর ধরেই সে আশংকা প্রকাশ করে আসছিলেন। বিশেষ কাজে জাটকা মাছ ধরার প্রবণতা থেকে সে আশংকা প্রকট হয়ে উঠেছিল। জাটকা নিধন বল্পব্দ করার জন্য সরকারি প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী জাটকা নিধন করে টাকা বানাতে ছিল তৎপর। সেই কুফল এখন দেশের জনগণ ভুগতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশের সুস্বাদু ইলিশ মাছের একটি ভালো বাজার ছিল বিদেশেও। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালি গ্রোসারিগুলোতে বাংলাদেশের ইলিশ মাছের ভালো কাটতি ছিল। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ২০০৭ সালের শেষদিকে নিউইয়র্কের বাঙালি গ্রোসারিগুলোতে বাংলাদেশের ইলিশ মোটেই পাওয়া যায়নি। সে স্থানটি এখন দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের তুলনামহৃলক কম সুস্বাদু অপুষ্ট ইলিশ। বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকেও। এটা দুর্ভাগ্যজনক, প্রকৃতির ভারসাম্যতা রক্ষায় বাংলাদেশের সরকার ও সিংহভাগ জনগণ উদাসীন ভহৃমিকা পালন করছে। বৃক্ষ নিধন করে ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে। প্রকৃতি হত্যার অপরাধটুকু কেউ অনুধাবনই যেন করতে পারছেন না। উজাড় হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বনাঞ্চল। কমে যাচ্ছে ত্রক্রমেই সবুজ আবহ। পাখি, বাঘ, হরিণসহ প্রভৃতি প্রাণী নিধনের ব্যাপারে বন ও পশুপালন অধিদফতরের নিজস্ব আদেশ ক্রম রয়েছে। কিন্তু খোঁজ করলে দেখা যাবে অনেক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী, আমলাই অতিথি পাখির প্রধান ক্রেতা। হরিণের সুস্বাদু মাংস দিয়ে ভূরিভোজন তাদের প্রিয় সখের অন্যতম। বাংলাদেশে দুর্লভ জাতের গুই, গোখরা সাপ মেরে এর চামড়া বিত্রিক্র করা হচ্ছে চড়া মহৃল্যে বিদেশে। তা করছে একটি সংঘবদ্ধ দল। মাছ, পাখি, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য পশু-পাখি ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশেও এখন ইলিশ মাছ আমদানি করা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে। আমদানি হচ্ছে অন্যান্য মাছও। পশু-পাখি সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের এগিয়ে আসা উচিত। কারণ এ সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হলে তার ভুক্তভোগী হতে হবে সারাদেশের মানুষকে। বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কি একটু দায়িত্বশীল হবে? -------------------------------------------------------------------------- উপসম্পাদকীয় । দৈনিক সমকাল,ঢাকা। ৭ জানুয়ারী ২০০৯ সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৯:০২
false
rn
গত ৯ দিন আমি ব্লগে আসতে পারিনি আপনারা সবাই কেমন আছেন? অফিসের কাজে ফরিদপুর গিয়েছিলাম- আমার সম্পাদকের সাথে। খুব ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। ব্লগে আসতে পারিনি। আর মোবাইল দিয়ে ব্লগ চালিয়ে আরাম পাই না। সামু এবং সামুর ব্লগারদের জন্য বেশ অস্থির হয়েছিলাম। হয়তো অনেক কিছুই মিস করেছি। কয়েকদিন পর আবারও যেতে হবে। আমরা জানি, গ্রাম বলতে এমন একটি এলাকাকে বোঝায় যেখানে অধিকাংশ মানুষ কৃষিজ পেশায় সম্পৃক্ত এবং মানুষ প্রথাগত সম্পর্কে অভ্যস্থ। কৃষিকাজকে কেন্দ্র করে যে মানববসতি গড়ে ওঠে, তা-ই গ্রাম। একদিকে মানুষ বাধ্য হয়ে শহরে আসছে, অন্যদিকে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেতেও শহরে আসছে। গ্রামের মানুষ নগরের মানুষের তুলনায় ধর্মপ্রাণ হয়ে থাকে। গ্রামীণ জীবনে ধর্মের প্রভাব অত্যধিক। ইদানিং গ্রাম আমাকে খুব বেশি টানে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ঢাকা শহর ছেড়ে একেবারে চলে যাই গ্রামে। ফরিদপুর আমি অনেকবার গিয়েছি। ভাঙ্গা, আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারি এবং মধুখালি। এবার আলফাডাঙ্গার অনেক গ্রাম ঘুরেছি। বাংলাদেশের নদীর নাম গুলোর মতো- গ্রামের নাম গুলোও অদ্ভুত সুন্দর। হেলেঞ্চা, কুচিয়া, বাকাইল, সাতৈর, বুড়াইচ ইত্যাদি। আমার ইচ্ছা আছে বাংলাদেশের সব গ্রাম গুলোর নাম এর ইতিহাস নিয়ে কাজ করবো। পুরো ফরিদপুরে গ্রাম আছে ১৮৫৯টি। এর মধ্যে আমি ১০০টি গ্রাম ঘুরে দেখেছি। বিশেষ করে গ্রামের বাজার গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে খুবই ভালো লাগে। বেশির ভাগ গ্রামেই সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। প্রতিটা গ্রামের বাজারে খাঁটি দুধের চা পাওয়া যায়। যা আমার খুব প্রিয়। ফরিদপুর জেলার প্রতিষ্ঠা ১৭৮৬ সালে। বর্তমান জন্যসংখ্যা প্রায় ২৮ লক্ষ। সবচেয়ে ছোট উপজেলা আলফাডাঙ্গা (১৩৬ বর্গ কিমি)। ১৯৬০ সালে আলফাডাঙ্গা থানাকে ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পূর্বে এটি ছিল যশোর জেলার নড়াইল মহাকুমার আওতাধীন। আলফাডাঙ্গার আয়তন ১২৮ বর্গ কিলোমিটার। এবার গ্রামে গিয়ে নানান রকম মিষ্টি, দই আর রসমালাই খেয়েছি। খুব'ই ভালো আর টেস্টি। ঢাকার থেকে দামও অনেক কম। গ্রামের প্রধান আকর্ষন তার নয়নাভিরাম সতেজ প্রকৃতি। কবি জসিম উদ্দিনের কবিতায় বাংলাদেশের গ্রাম প্রকৃতির যে ছবি অংকিত হয়েছে তা গ্রামের দিকে তাকালে সহজেই অনুধাবন করা যায়। পল্লী কবির বাড়ি এই ফরিদপুরে'ই। গ্রাম আমাকে দেয় মুক্তি; মনের আনন্দে আমি ঘুরে বেড়াই। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭০ হাজার গ্রাম রয়েছে। এবং প্রতি গ্রামে পরিবারের সংখ্যা গড়ে প্রায় ৩২০ টি। এক জীবনে এই সব গুলো গ্রাম কি ঘুরে দেখা সম্ভব? গ্রামই হলো মানুষের আদি বাসস্থান। আপনি যদি ইচ্ছে করেন টাটকা দুধ, মাছ, মাংস শাক সব্জী খাবেন সেটা সম্ভব একমাত্র গ্রামেই। আপনি বুক ভরে শ্বাষ নিবেন সে শ্বাষে থাকবে না কোন বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। পথ চলতে ভয় থাকবেনা কোন ছিনতাইকারির। শহরের মানুষগুলো যেমন ব্যস্ততার জন্য আন্তরিকতা হীন হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে মনে হয় এখনও গ্রামের মানুষের মধ্য যথেষ্ট আন্তরিকতা আছে। তবে অনেক গ্রামে ভাল রাস্তা নাই, বৃষ্টি হলেই এক হাঁটু কাঁদা। জন্মের পর থেকেই শহরে আছে তাই স্বাভাবিকভাবে শহরের প্রতি একটা টান কাজ করে। কিন্তু কেন জানি আমার গ্রামও খুব ভাল লাগে। নানান কারনে শহরের অনেক কিছুই এখন আমার অপছন্দ হতে শুরু করেছে। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা মুক্ত পরিবেশে মধ্যে বেড়ে উঠছে এটা খুব ভাল লাগে। আর শহরে ছেলে-মেয়েরা একেকটা যেন ফার্মের মুরগীর মত বড় হচ্ছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়র 'পথের পাঁচালী' যেন গ্রামবাংলার চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাঁশঝাড় নুয়ে পড়েছে মেঠোপথে। সেই পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি। সবুজ ধানক্ষেতের বুক চিড়ে যে মেঠোপথ, সেই পথ বেয়ে আমি হেঁটে চলি দূর দিগন্তের দিকে। গ্রামের সব মানুষ এখন নগরমুখী। কেউ আর গ্রামোন্নয়নের কথা বলে না। কর্মের কারনে অনেক মানুষ শহরে পড়ে থাকে। কিন্তু মন পড়ে থাকে গ্রামে। এবার আমি সাইকেল দিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেছি। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৩
false
fe
আত্মঘাতী রাজনীতি ও বিরুদ্ধাচারণের কূটকৌশল আত্মঘাতী রাজনীতি ও বিরুদ্ধাচারণের কূটকৌশলফকির ইলিয়াস_________________________________________________রাজনীতি কিছু বিষয়কে সুনির্দিষ্ট করে দেয়। মানবতার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। রাজনৈতিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলা যাবে না। গণমানুষের স্বার্থ কুক্ষিগত করা যাবে না। জাতিসত্তার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। এমন অনেক কিছুই। রাজনীতি মানেই সৃজনশীলতা। রাজনীতি মানেই গণমানুষের অধিকারকে মর্যাদা দেয়ার সংগ্রাম।বাংলাদেশে কি এমনটি হচ্ছে? না- খুব বেশি হচ্ছে না। হলে দেশের অবস্থা অন্যরকম হতো। বর্তমান সরকারি দলের কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতা লাগামহীনভাবে কথাবার্তা বলে আমাদের আস্থায় বারবার ফাটল ধরাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম কী বলেছেন- তা ইউটিউবে আছে। তারপরও তিনি তা অস্বীকার করছেন! কেন করছেন? সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী যা বলেছিলেন- তা মারাত্মক গর্হিত কাজ। তিনি তার শাস্তি পেয়েছেন। জীবনে আরো পাবেন। হঠাৎ করেই ‘শুনে’ লেখা ইতিহাসবেত্তা হয়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী এ কে খন্দকার। তিনিও ছিটকে পড়েছেন রিং থেকে। এর কারণ হলো- মিথ্যা বলে একদল মূর্খ, অর্ধমূর্খের সাপোর্ট পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু আপামর মানুষের সমর্থন পাওয়া যায় না।অতি সম্প্রতি নিউইয়র্কে একটি সমাবেশে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখিকা শারমিন আহমদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কারো কথা পছন্দ না হলেই বা কেউ সত্য উচ্চারণ করলেই তাকে রাজাকার আলবদর কিংবা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করার এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা দেশকে মারাত্মক বিপদের জায়গায় নিয়ে যাবে।’ তার এসব কথার জবাব দেয়া দরকার। কী বলতে চাইছেন তিনি। বলে রাখি- শারমিন আহমদ আজ যা বলতে চাইছেন, তাজউদ্দীন আহমদ আজ বেঁচে থাকলে এমন ‘তথাকথিত ইতিহাস’ লিখতেন না। শারমিন আহমদ নিজে কিছুটা লেখালেখি করেন। সেই সুবাদে লাইমলাইটে আসতে চাইছেন। এ জন্য তিনি বানিয়ে বানিয়ে মনগড়া ইতিহাস লিখছেন। এবং ‘পাবলিক খাবে’ এই লোভে বাজারে ছাড়ছেন। তিনি কি ভেবেছেন তিনি রাজাকার-আলবদর-স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতে কোদাল তুলে দিচ্ছেন। যেমন কোদাল শাহ আজিজ-খান এ সবুরদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।শারমিন আহমদ বলেছেন, ‘অজ্ঞাত এক ভীতির কারণে বাংলাদেশে সত্য উচ্চারণ করতে না দেয়ার একটা সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থে খণ্ডিত ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি। অথচ একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অখণ্ড ইতিহাস জানার সুযোগ সৃষ্টি করাটা সবচেয়ে জরুরি। সত্য প্রশ্ন উচ্চারণের সুযোগ থাকতে হবে।’ আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একাত্তরে শারমিনের বয়স কত ছিল? তিনি কোন বিবেক দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিচার করছেন? শারমিন বলেছেন, ‘কোনো দেশে যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার অবাধ সুযোগ না থাকে, তাহলে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কখনো টেকসই হয় না। টেকসই উন্নয়নের জন্য অবশ্যই মুক্তিবুদ্ধি চর্চার অবারিত সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’ আমরা জানি আজ রাজাকার পোষ্যরা বলছে, এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হননি। ২ লাখ (মতান্তরে আরো বেশি) নারী সম্ভ্রম হারাননি। এটাকেও আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলব? মৌলবাদী রাজাকাররা তো প্রতিদিনই নতুন নতুন পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে। এগুলো আমরা ইতিহাস বলে মেনে নেব?জেলহত্যার বিচার নিয়ে নিজের অসন্তোষ ও হতাশা ব্যক্ত করে শারমিন আহমদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় একই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ জেলহত্যার কথিত বিচারে এমন কয়েক ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো, যারা কেউই দেশে নেই। এ ছাড়া তারা খুবই অপরিচিত এবং সেনাবাহিনীর নিম্ন পর্যায়ের সদস্য। এই হত্যার সঠিক বিচার করতে হলে তৎকালীন আইজি প্রিজন ও ডিআইজি প্রিজনকেও আসামি করা উচিত ছিল। কারণ কারাগারের প্রত্যেক বাসিন্দার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত ছিল।’একটি কথা বলা দরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সোহেল তাজ নানা অজুহাত দেখিয়ে বিদেশে চলে আসেন। তিনি দেশে থেকে অনেক কিছুই করতে পারতেন। কেন করেননি? এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?শারমিন আহমদ তার বইয়ে যা লিখেছেন তা কিছুটা পাঠ করা যাক। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তাজউদ্দীন-কন্যা লিখেছেন: ‘পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ শে মার্চের ভয়াল কালোরাতে আব্বু গেলেন মুজিব কাকুকে নিতে। মুজিব কাকু আব্বুর সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন সেই ব্যাপারে আব্বু মুজিব কাকুর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। মুজিব কাকু সে ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী আত্মগোপনের জন্য পুরান ঢাকায় একটি বাসাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। বড় কোনো সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আব্বুর উপদেশ গ্রহণে মুজিব কাকু এর আগে দ্বিধা করেননি। আব্বুর সে কারণে বিশ্বাস ছিল যে, ইতিহাসের এই যুগসন্ধিক্ষণে মুজিব কাকু কথা রাখবেন। মুজিব কাকু আব্বুর সাথেই যাবেন। অথচ শেষমুহূর্তে মুজিব কাকু অনড় রয়ে গেলেন। তিনি আব্বুকে বললেন, বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশুদিন (২৭ মার্চ) হরতাল ডেকেছি। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আব্বু স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন এবং টেপ রেকর্ডারও নিয়ে এসেছিলেন। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান। কথা ছিল যে, মুজিব কাকুর স্বাক্ষরকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (পরবর্তীতে ঢাকা শেরাটন, বর্তমানে রূপসী বাংলা) অবস্থিত বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে এবং তারা গিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ পরিচালনা করবেন।’এ প্রসঙ্গে শারমিন আহমদ আরো লিখেছেন : ‘মুজিব কাকুর তাৎক্ষণিক এই উক্তিতে (বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা প্রসঙ্গে) আব্বু বিস্ময় ও বেদনায় বিমূঢ় হয়ে পড়লেন। এদিকে বেগম মুজিব ওই শোবার ঘরেই স্যুটকেসে মুজিব কাকুর জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখতে শুরু করলেন। পাকিস্তানি সেনার হাতে মুজিব কাকুর স্বেচ্ছাবন্দি হওয়ার এইসব প্রস্তুতি দেখার পরও আব্বু হাল না ছেড়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে মুজিব কাকুকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। তিনি কিংবদন্তি সমতুল্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদাহরণ তুলে ধরলেন, যারা আত্মগোপন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু মুজিব কাকু তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে রইলেন।’স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে শেখ মুজিবুর রহমানের অস্বীকৃতি প্রসঙ্গে তাজউদ্দীন-কন্যা আরো লিখেছেন: ‘আব্বু বললেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য হলো, পূর্ববাংলাকে সম্পূর্ণরূপেই নেতৃত্বশূন্য করে দেয়া। এই অবস্থায় মুজিব কাকুর ধরা দেয়ার অর্থ হলো আত্মহত্যার শামিল। তিনি বললেন, মুজিব ভাই, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হলেন আপনি। আপনার নেতৃত্বের ওপরই তারা সম্পূর্ণ ভরসা করে রয়েছে। মুজিব কাকু বললেন, তোমরা যা করার কর। আমি কোথাও যাবো না। আব্বু বললেন, আপনার অবর্তমানে দ্বিতীয় কে নেতৃত্ব দেবে- এমন ঘোষণা তো আপনি দিয়ে যাননি। নেতার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে, দলকে তো তা জানানো হয়নি। ফলে দ্বিতীয় কারো নেতৃত্ব প্রদান দুরূহ হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে এক অনিশ্চিত ও জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হবে।’এ প্রসঙ্গে পরবর্তী সময়ে বিশ্ব নেতারা কী বলেছিলেন, তা আমাদের জানা দরকার। মুজিব ঐ সময়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা যে সঠিক ছিল, তা বলেছেন ইন্দিরা গান্ধী, ইয়াসির আরাফাতের মতো বিশ্ব নেতারা। ইতিহাসবেত্তা ও পর্যবেক্ষক সাংবাদিকরাও মনে করেছিলেন মুজিব কৌশলগত কারণেই সে সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মনে রাখা দরকার ঐ সময়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক আহমদ কিংবা আব্দুস সামাদ আজাদের মতো নেতারা ছিলেন সহযোগী শক্তি। মূল সিদ্ধান্ত শেখ মুজিবকেই নিতে হয়েছিল। তিনি নিয়েছিলেনও। মুজিব আত্মগোপন করে ভারতে যেতে পারতেন। তিনি যাননি। তিনি বিশ্বকে দেখিয়েই পাক হানাদারদের হাতে বন্দিত্ব বরণ করেছিলেন। যা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছিল। এবং বীরের বেশেই পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ী শেখ মুজিব। এ রকম তথ্যপ্রমাণ আর্কাইভে অনেক আছে। কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের যারা এখন নব্য ইতিহাস লিখতে বসেছেন- তার কি ওগুলো পড়ছেন না?এ বিষয়ে কিছু দরকারি কথা বলেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন- বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা অপপ্রচার, মিথ্যাচার চলছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। স্কুলের বইকে পর্যন্ত বিকৃত করা হয়েছে। এটা অনেক বড় পরিকল্পনার অংশ। এটা তারা করেছে, যারা মিথ্যা দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। একে মোকাবেলা করতে হবে।প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এ দেশে হবে। যারা রাজাকার, ’৭১-এ খুন, হত্যা, নির্যাতন চালিয়েছে তাদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। যারা তাদের সমর্থক তারা কি স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতে পারে? বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম না উল্লেখ না করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এরা কি পাগল হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোয়েবলস ছিল হিটলারের প্রচারমন্ত্রী। তার নীতি ছিল একটা মিথ্যা কথা যদি বারবার বলতে থাকা হয়, তাহলে এক সময় মানুষ ওটাই বিশ্বাস করবে। তাদের উদ্দেশেও এটাই। মিথ্যাচার চলতে থাকলে মানুষ এক সময় বিশ্বাস করবে।দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেছেন তরুণ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশের ইতিহাসে অনেক কালো দিন গেছে, অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা এ পর্যন্ত এসেছি। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। একাত্তর সালে বিশ্বের মহান একটি দেশ সেই পাকিস্তানিদের অস্ত্র দিয়ে, প্লেন দিয়ে, ট্যাংক দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে দাবানোর চেষ্টা করেছিল। আমাদের ঠেকাতে পারেনি।’তিনি বলেছেন, ‘এখন আমাদের কোনো দেশকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছি, নিজেদের উন্নয়ন আমরা নিজেরা করছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। আমরা বাঙালি, আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আর অন্যান্য দেশ কি বলে না বলে তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না।’ জয় বলেছেন, ‘যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল তখন হতাশ হয়ে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করত, এই যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এগিয়ে গেছে আমরা কেন পারি না? কারণ সে সব দেশে যে দল স্বাধীনতা দিয়েছে, যে দল আসলেই সেই দেশের ওপর বিশ্বাস রাখে, সেই দেশের মানুষ সেই দলকে ক্ষমতায় রেখেছে ২০ বছর, ৩০ বছর, ৪০ বছর। সেই দল দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে।’এসব কথা তুলনামূলক আলোচনা দরকার। মানুষকে বিষয়গুলো বুঝানো দরকার। এ কাজটি করতে হবে সরকারের লোকজন, সরকারের সমর্থকগোষ্ঠীকে। তা না করে নিজেদের মাঝে হানাহানি, ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মারামারি করে মিথ্যাচার করলে কারা উপকৃত হবে সে কথা কি সরকারের নীতিনির্ধারকরা ভুলে যাচ্ছেন?----------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত
false
ij
সাধু ফ্রান্সিস_ জীবে প্রেম করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর ___ সাধু ফ্রান্সিস (১১৮১-১২২৬ ) ইনি পাখিদের বোন ভাবতেন। এবং আমি বিশ্বাস করি তাঁর এই ভাবনাটি অতি পবিত্র এবং আমাদের সময়ের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক । সাধু ফ্রান্সিস ছিলেন কবি, সূর্যকে স্তব করে কবিতা লিখেছেন-হেঁটেছিলেন প্রেমময় বিকল্প পথে-যার জন্য ফ্রান্সিস-এর বিষয়ী পিতা ত্যজ্যপুত্র করেছিলেন তার ঘোর লাগা পুত্রটিকে। সাধু ফ্রান্সিস যে সাধুসংঘটি গড়ে তুলেছিলেন তার নাম ফ্রানসিসকান সংঘ- সংঘটি ছিল অনিবার্যভাবেই পোততন্ত্রের ভোগবিলাসের বিরোধী । ইউরোপে যে কটি স¤প্রদায় স্পেনের মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদের উদারনৈতিক দর্শনকে গ্রহন করেছিল- ফ্রানসিসকান সংঘটি তার মধ্যে অন্যতম। ব্রার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর ‘হিস্টরি অভ ওয়েষ্টার্ন ফিলোসফি’ গ্রন্থে লিখেছেন: সেন্ট ফ্রান্সিস অভ আসিসি ওয়াজ ওয়ান অভ দ্য মোস্ট লাভাবল ম্যান নোন টু হিস্টরি।’ (পৃষ্টা, ৪৪১) এই কথার বাংলা অর্থাৎ হল: সাধু ফ্রান্সিস এর ন্যায় প্রেমময় হৃদয় মানব ইতিহাসে বিরল। কেন? সেটিই এই নিবন্ধের বিবেচ্য। সাধু ফ্রান্সিসকে মনে করা হয় ইতালির পরিবেশ ও পশুপাখির অভিবাবক সাধু বা প্যাট্রন সেইন্ট। পশুপাখির প্রতি সাধু ফ্রান্সিস এর ভালোবাসা নিয়ে অনেক গল্পকথা ইউরোপে ছড়িয়ে রয়েছে । একদিন। সঙ্গীদের নিয়ে সাধু ফ্রান্সিস কই যেন যাচ্ছিলেন। দিনটি ঝলমলে। রাস্তার পাশে একটি আপেল গাছ। সেই আপেল গাছে অনেক পাখি। শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে সাধু ফ্রান্সিস বললেন, তোমরা এখানে একটু অপেক্ষা কর। আমি আমার বোনদের সঙ্গে কথা বলে আসি। জনৈক সঙ্গী আশ্চর্য হয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল: আপনার বোন মানে? হ্যাঁ। ঐ পাখিরাই তো আমার বোন। সাধু ফ্রান্সিস পাখিদের বোন ভাবতেন। তাঁর এই পবিত্র ভাবনাটি সভ্যতার জন্য জরুরি। গাছের কাছে যেতেই পাখিরা ঘিরে ফেলল সাধুটিকে। সাধু ফ্রান্সিস তখন পাখিদের উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আমার বোন পাখিরা, ঈশ্বরের প্রতি তোমাদিগের প্রভূত ঋন। এই জন্যে সর্বত্র এবং সর্বদা ঈশ্বরের প্রশংসা করবে। কেননা, তিনি আকাশে ওড়ার জন্য দিয়েছেন মুক্তির ডানা, দিয়েছেন পোশাক-পরিচ্ছদ । তোমরা রোপন কিংবা বোপান কর না। ঈশ্বর খাদ্য দিয়েছেন, তৃষ্ণা নিবারণের জন্য নদী ও ঝর্না দিয়েছেন, আশ্রয় নেবার জন্য দিয়েছেন পাহাড় ও উপত্যকা । নীড় তৈরি করবার জন্য দীর্ঘবৃক্ষ ...তোমরা সুতো তৈরি করতে কিংবা তাঁত বুনতে না জানলেও ঈশ্বর তোমাদের আর তোমাদের সন্তানাদির জন্য কাপড় দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা তোমাদের গভীরভাবে ভালোবাসেন। তিনি অনেক আর্শীবাদ করেন। যে কারণে সবর্দা ঈশ্বরের প্রশংসায় মগ্ন থাকবে ... ইতালির মানচিত্র। ভাবলে অবাক হতে হয়-এখানেই জন্মেছিল নিরো ও ক্যালিগুলার মতন উন্মাদ শাসক, এখানেই জন্মেছিলেন সাধু ফ্রান্সিস এর মতন মহৎ হৃদয়ের মানুষ। ১১৮১ খ্রিস্টাব্দে ইতালির আসিসি তে সাধু ফ্রান্সিস এর জন্ম । মায়ের নাম পিকা; ইনি ছিলেন ফরাসি। বাবা পিয়েত্রো- কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ফ্রান্সিস জন্মাবার সময় পিয়েত্রো ছিলেন ফ্রান্সে । সাধু জন দ্য বেপ্টিস্ট এর সম্মানে পিকা তাঁর ছেলের নাম রাখলেন গিয়োভান্নি ফ্রানসেসকো দি বেরনারদোন । মায়ের আশা বড় হয়ে ছেলে ধর্মীয় নেতা হবে। ঈশ্বর সেই ফরাসি নারীর মনোবাসনা পূর্ন করেছিলেন। পিয়েত্রো ছেলেকে ফ্রানসেসকো বলে ডাকতেন । ফ্রানসেসকো থেকেই ফ্রান্সিস। ফ্রান্সিস এর শৈশব ও কৈশর কাটল গভীর প্রাণ উচ্ছ্বলতায়। সে ফ্রান্স ও ইটালির দ্বিবিধ ঐতিহ্যের ধারক। কাজেই তাকে ঘিরে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান। ফরাসি চারণ কবিদের বলা হয় ত্র্যুবাদুর। চারণ কবিদের গানে ফ্রান্সিস নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ধনী পরিবারে জন্ম তার, তার পরনে উজ্জ্বল পোশাক, তার বন্ধুরাও সব ধনী পরিবারের সন্তান; তাদের সঙ্গে রাস্তায় হাতাহাতি করে, মারামারি করে, গলির বাসাবাড়িতে সস্তা সুখের সন্ধান করে। আসিসি নগরের পাথর বিছানো সরু গলি তো, একদিন একটি ঘটনা ঘটল। বাজারে বাবার দোকানে বসে কাপড় বিক্রি করছিল ফ্রান্সিস । একটি ভিক্ষুক এল। ব্যস্ত ছিল বলে কোনওমতে ভিক্ষে দিয়ে বিদায় করল। এরপর কিছুটা সময় কেটে গেল। তারপর কী যে হল- ব্যবসা ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ফ্রান্সিস । আসিসি নগরের পাথর বিছানো সরু গলিতে ভিক্ষুকের খোঁজ করতে লাগল । পেয়ে গেল ভাগ্যক্রমে। পকেটে টাকাপয়সা যা ছিল ভিক্ষুককে দিয়ে দিল। দানের কথা শুনে বন্ধুরা র্ভৎসনা করল । বাড়ি ফিরে বাবা সব শুনে ক্ষেপে উঠে যাতা বললেন, ‘সাধু হইছ, না? পাগলামীর আর জায়গা পাও না! নির্বোধ কুলঙ্গার কোথাকার! ফ্রান্সিস এর বাবার মতো এই চরিত্ররাই সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে সভ্যতার সর্বনাশ করে আসছে। এদের উপলব্দির তেমন গভীরতা নেই। অথচ, এরাই ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকে, যুদ্ধের মন্ত্রণা দেয়; ভবিষ্যতের দিকে তাকায় না। এদের সম্বন্ধে জীবননানন্দ লিখেছেন- যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই প্রীতি নেই করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া। সে যাই হোক। বাবার সামনে নতশিরে দাঁড়িয়ে ফ্রান্সিস । ঘরে বড় জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়েছে। বাগানের গাছের অজস্র পাখির ডাক। এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন পিকা । স্বামীকে ভয় করেন তিনি, স্বামীর অগ্নিমূর্তি দেখে অল্প অল্প কাঁপছিলেন। তবে তিনি ছেলের দানের সংবাদ শুনে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। সাধু জন দ্য বেপ্টিস্ট এর সম্মানে ছেলের নাম রেখেছেন গিয়োভান্নি ফ্রানসেসকো দি বেরনারদোন । মনের আশা, ছেলে বড় হয়ে উদারমনা ধর্মীয় নেতা হবে। ঈশ্বর আমার মনোবাসনা পূর্ন করবেন নিশ্চয়। পিকা শ্বাস টানলেন। সাধু হওয়ার প্রথম লক্ষণ সমাজের বঞ্চিতদের জন্য গভীর মমত্ববোধ। পিকা আগেই লক্ষ করেছেন ছেলে সূর্যের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলে-বাগানের পাখিদের সঙ্গে একা একা কথা কয়। পশুপাখিদের প্রতি প্রেম সাধু হৃদয়ের আরেকটি লক্ষণ। পিকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ছেলে বাবার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরে বড় জানালা দিয়ে রোদ এসে পড়েছে। বাগানের গাছের অজস্র পাখির ডাক। ইতিহাসের এটি একটি ডিসাইসিভ মূহূর্ত। পিতা-পুত্র মুখোমুখি। বাবা কনর্ফামিস্ট ; ছেলে নন- কনর্ফামিস্ট। বাবা রাজতন্ত্রের প্রতীক; আর ছেলে বলতে চায়- মিলন হবে অন্ধকারে জাত অজাতের কাজ কি রে তোর ল্যাম্ফোর আলোতে। অন্ধকারে রুপের পুরী মিলসে তার কারিকুরি যে দেখেছে ঐ মাধুরি /সবুরীতে কাজ কি রে তোর ল্যাম্ফোর আলোতে। (মহসিন বাউল) বাবা আর ছেলের মাঝখানে মা। স্বামীর দিকে কড়া চোখে তাকালেন পিকা। স্বামীকে ভয় করলেও ইদানিং স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছেন তিনি। পোপের সঙ্গে স্বামীর ভালো সম্পর্ক। পিকা জানেন : সমকালীন পোপ খ্রিষ্টের বাণী উপেক্ষা করে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে রয়েছেন। পোপের জায়গায় আমার ছেলে থাকলে ফ্রানসেসকো নিশ্চয়ই ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে যেত না। হ্যাঁ, আমার ফ্রানসেসকো সাধুই হবে, ও যেন পোপের বিরোধীতা করে, অনেককাল আগে যেমন স্থানীয় রোমান শাসকদের ভোগবিলাসের বিরোধীতা করেছিলেন নাজারাথের যিশু। ফিলিস্তিনের দরিদ্র মানুষের দুঃখকষ্ঠ ঘোচাতেই তো মা মেরি তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানকে উৎসর্গ করেছিলেন বিপ্লবের আগুনে । হ্যাঁ, আমার ফ্রানসেসকো পোপের বিরোধীতা করবে ...মানুষ ও পশু-পাখিকে ভালোবাসবে ... ওর সামনে ...ওর সামনে এখন অনেক তীব্র মানসিক যন্ত্রনা, রোগব্যাধি অনাহার আর দুঃখ কষ্টের পথ। ওকে ভিন রাজ্যের কারাগারে যেতে হবে, ওর অসুখ হবে; আর ... আর ... শেষ জীবনে ফ্রানসেসকো অন্ধ হয়ে যাবে। যাদের অন্তরে ঈশ্বরপ্রেম ও জীবপ্রেম তীব্র তারা ...তারা শেষ জীবনে অন্ধ হয়ে যায়। কেন এই স্বর্গীয় বদান্যতা? জীবদ্দশায় ঈশ্বর দেখা দেবেন বলে? পিকা জানেন, জীবনের এই স্তরে চক্ষুষ্মান অবস্থায় ঈশ্বরকে দেখা যায় না। ফ্রানসেসকো ঈশ্বরকে দেখবে? পিকা শিউরে উঠলেন। ফ্রান্সিস-এর আত্মিক উত্তোরণের বিষয়টি অবশ্য ব্রার্ট্রান্ড রাসেল অন্যভাবে লিখেছেন। একবার ঘোড়ায় চড়ে ফ্রান্সিস যাচ্ছিল। পথিপার্শ্বে কুষ্ঠরোগী দেখল। আ সাডেন ইমপালস অভ পিটি লেড হিম টু ডিসমাউন্ট অ্যান্ড কিস দ্য মেন ...সহসা একটি আবেগের তাড়নায় ঘোড়া থেকে নেমে কুষ্ঠরোগী কে চুম্বন করে। এর পরপরই পার্থিব বিষয় ত্যাগ করে দরিদ্রদের সঙ্গে মিশতে থাকে ফ্রান্সিস । ওই সময়ে একটি ঘটনা ঘটল। যা ফ্রান্সিস-এর জীবনের মোড় একেবারেই ঘুরিয়ে দিল। উমব্রিয়া জায়গাটি মধ্য ইতালিতে। রাজধানী পেরুজিয়া। জায়গাটা আসিসির কাছেই। সামন্ত শ্রেণির স্বার্থের সংঘাত চলছিল। প্রায়ই দুপক্ষের যুদ্ধ লাগত। যারা ছিল যুদ্ধের হোতা- তাদের সঙ্গে ফ্রান্সিস এর পিতার মনের গড়নের আশ্চর্য মিল। এরা শিল্পসাহিত্য বুঝতে অক্ষম, সর্বক্ষণ সস্তা আমোদ ও ব্যবসায়িক লাভের ধান্ধায় আচ্ছন্ন। তবে গির্জেয় দান করত, বিরবির করে বাইবেলের মুখস্ত বাণী আওড়াত, ফেরার পথে রাস্তা থেকে অর্থের বিনিময়ে রমনীদের ঘোড়া গাড়িতে তুলে নিত! যেন সে স্বর্গীয় নিয়মের ব্যতয় ঘটাচ্ছে না, যেন সাধুদের নিষ্কাম জীবন হাস্যকর, যেন সাধুদের নিষ্কাম জীবনটি অস্বাভাবিক! যুদ্ধকালীন সময়ে ফ্রান্সিস কে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হল পেরুজিয়ায় । কারাগারে ভীষণ অসুখ হল তার। মনের তখন ভয়ানক অবস্থা ...কাছেপিঠে নিকটআত্মীয়স্বজন কেউ নেই। খালি মায়ের কথা মনে পড়ত, খালি যিশুর কথা মনে পড়ত। ১২০৫। আসিসি ফিরে এল ফ্রান্সিস। কুষ্ঠরোগীদের মধ্যে কাজ করতে লাগল। দরিদ্রদের জন্য খরচ করাতে বিষয়ী ব্যবসায়ী বাবা ক্ষেপে উঠলেন। তিনি ফ্রান্সিস কে আইনগত ভাবে ত্যাজ্য করলেন। সভ্যতা আজও এদেরই হাতের মুঠোয় বন্দি; সভ্যতা আজও নন- কনর্ফামিস্ট সাধুদের অধিকৃত হয়নি। ফ্রান্সিস দামী পোশাক ফেলে দিয়ে বিশপের পোশাক পরলেন। ততদিনে শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। সুবাসিও পাহাড়টি উমব্রিয়ায়। সে পাহাড়ে সানতা মারিয়া দেঘলি অ্যানজেলির একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত চ্যাপেল (ছোট গির্জা) ছিল। ফ্রান্সিস সেটি সংস্কার করেন। এরপর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটানা তিন বছর নানা সেবামূলক কাজ করলেন। ১২০৮। একদিন সমবেত প্রার্থনার সময়ে যেন তিনি অদৃশ্য কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন। সেই অদৃশ্য কন্ঠস্বরটি যেন বলল: কোনও কিছু না নিয়ে সর্বত্র সেবা করার জন্য বিশ্বকে আলিঙ্গন কর। ঐ বছরই আসিসি ফিরে এলেন ফ্রান্সিস । জনতার মাঝে খ্রিষ্টের বাণী ছড়িয়ে দিতে লাগলেন। ১২ জন শিষ্য তাঁকে ঘিরে রইল। তাঁর দলটি ক্রমে ক্রমে সংঘের রুপ নিচ্ছিল- পরে যার নাম হয়েছিল ফ্রানসিসকান সংঘ। ১২ জন শিষ্যই সংঘের আদি ভ্রাতা। পরে যাদের বলা হল, ফাস্ট ওডার। ১২ জন শিষ তাঁকে সুপিরিয়র নিযুক্ত করে। ১২১২ খ্রিস্টাব্দে সংঘে আসিসির তরুণী সন্ন্যাসিনী (নান) যোগ দেয়। তরুণী সন্ন্যাসিনীর নাম ক্লারি। ( যেনবা বুদ্ধের জীবন পাঠ করছি ইটালির প্রেক্ষাপটে।) সংঘের অভ্যন্তরে “অডার অভ দি পুওর লেডিস" প্রতিষ্ঠা করেন ক্লারি । পরে এটি হয়ে ওঠে ২য় অডার । সাধু ফ্রান্সিস এবার তীর্থযাত্রার করার সিদ্ধান্ত নিলেন। শিষ্যদের নিয়ে পবিত্রভূমি (জেরুজালেম) উদ্দেশে যাত্রা করেন। অবশ্য জাহাজডুবি হলে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এরপর যান স্পেন । ১২১৯ খ্রিষ্টাব্দে যান মিশর। মিশরের সুলতান ধৈয্য ধরে সাধু ফ্রান্সিস এর বক্তব্য শুনলেও ধর্মান্ত করণের বিষয়ে নিরব থাকলেন। সাধু ফ্রান্সিস এরপর পবিত্রভূমি গেলেন। রইলেন ১২২০ খ্রিস্টাব্দ অবধি। এরপর ইতালি ফিরে এলেন তিনি। সংঘে পদ নিয়ে মতবিরোধ হচ্ছিল। তিনি সুপিরিয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর খবর এল: ৫ জন সংঘ-সদস্য মরক্কোয় নিহত হয়েছে। সাধু ফ্রান্সিস উৎফুল্ল হলেন আর নিজেও শহীদ হওয়ার বাসনা প্রকাশ করলেন। কবিতা লিখতেন সাধু ফ্রান্সিস । সে কবিতা ইতালির সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তিনি বিশ্বাস করতেন: প্রার্থনা করার জন্য লাতিন শেখার দরকার নেই, যে কোনও ভাষাতেই প্রার্থনা করা যায়। এমনকী স্থানীয় উমব্রিয়া ভাষাতেও করা প্রার্থনা গৃহিত হয়। সাধু ফ্রান্সিস এর ভাষা ছিল স্থানীয় উমব্রিয়া ভাষা। স্থানীয় উমব্রিয়া ভাষাতেই তিনি কবিতা লিখেছেন । সূর্যের প্রতি তাঁর লেখা ‘সূর্যস্তব’ কবিতাটিও স্থানীয় উমব্রিয়া ভাষায় লেখা। অতি উচ্চ, সর্বশক্তিমান, সর্ব উত্তম প্রভূ! সকল প্রশংসা তোমার, সমস্ত গৌরব, সমস্ত সম্মান এবং সমস্ত আর্শীবাদ। কেবল তোমার প্রতি, হে অতি উচ্চ, তারা আনুগত্য স্বীকার করে। কোনও মরণশীল ঠোঁট তোমার নাম উচ্চারণের যোগ্য নয়। সকল সৃষ্টির দ্বারা, হে প্রভূ, প্রশংসা গ্রহন কর। বিশেষ করে আমার ভ্রাতা সূর্যর প্রশংসা যে আনে দিন আর তুমি আলো দান কর তার মাধ্যমে। আর সে সুন্দর উজ্জ্বল আর জ্যোর্তিময়! ১২২৪। সেপ্টেম্বর। ৪০ দিন উপবাসের পর সাধু ফ্রান্সিস মন্তে আলভেরনো প্রার্থনারত। ক্রশবিদ্ধকালীর যিশুর শরীরে যে লজ্জ্বা বা কলঙ্কের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল তাকে বলে স্টিগমাটা। সেরকম ফুটে উঠল সাধু ফ্রান্সিস এর শরীরে। শরীরে পেরেকচিহ্ন (দিব্য চিহ্ন?) ফুটে উঠেছিল বলে শরীরে যন্ত্রণা ও সুখ বোধ করলেন। সঙ্গে চোখের অসুখ। শিষ্যরা কত সেবাযত্ন করল। লাভ হয়নি। অন্ধ হয়ে গেলেন হৃদয়বান কবিটি। বুঝতে পারলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে। প্রার্থনায় দিন কাটতে লাগল। ১২২৬। অক্টোবর,৩। অনন্তের উদ্দেশে যাত্রা করলেন সাধু ফ্রান্সিস । সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:২৮
false
hm
মন্ত্রীর এপিএসের কাজ আসলে কী? মিনিস্ট্রির সঠিক বাংলা মন্ত্রণালয় না হয়ে মন্ত্রক হওয়া উচিত, এমন একটা কথা পড়েছিলাম কোথাও। মন্ত্রণালয় শুধু একটি বাড়িকে নির্দেশ করে, প্রতিষ্ঠানটিকে নয়। আমাদের মন্ত্রকগুলো কমবেশি বড়সড়, এগুলোর অধীনে অনেক লোকে কাজ ও অকাজ করে। এই কাজ ও অকাজের দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ওপর যেমন চাপে, তেমনি চাপে তাদের ঊর্ধ্বতনদের ওপরও। সরকারি কাজকর্মের কিসিম সম্পর্কে আমার ধারণা তেমন স্বচ্ছ নয়, তাই রেল মন্ত্রকের (বা যে কোনো মন্ত্রকের) মন্ত্রীর এপিএসের কাজ কী, জানার জন্যে গুগলের শরণাপন্ন হলাম। সরকার ডিজিটাল ডিজিটাল বলে আলজিহ্বা ক্ষয় করে ফেললেও রেল মন্ত্রকের কোনো ওয়েবসাইট এখনও নেটস্থ হয়নি, তাই তার আদিরূপ যোগাযোগ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে গেলাম। সেটি মোটামুটি গোছানো, যদিও কোনো লিঙ্কে ক্লিক করলে বিচিত্র প্রাগৈতিহাসিক চেহারার সব পেইজ খোলে। এক জায়গায় যোগাযোগ মন্ত্রকের মন্ত্রীর এপিএসের হদিশ পেয়ে আগ্রহভরে তার জব ডেসক্রিপশনে ক্লিক করে একটা খালি পেইজ পেলাম। মন্ত্রী বা তার পিএস, এপিএস কারোই জব ডেসক্রিপশনের কোনো বালাই নেই, সেই পেইজগুলো ফাঁকা। যোগাযোগ সচিবের জব ডেসক্রিপশন আছে, কিন্তু তার পিএসের আবার সেই দীনহীন দশা, বেচারার জব আছে, ডেসক্রিপশন নাই। তবে যোগাযোগ সচিবের পিএস একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। আমি যতদূর জানি, মন্ত্রীর পিএস একজন সরকারী কর্মকর্তা, কিন্তু এপিএস রাজনৈতিক চ্যানেলে নিযুক্ত কর্মকর্তা। আমার কৌতূহল, মন্ত্রীর এপিএসদের কাজ কী? বিশাল মন্ত্রকের নানা দিক সামলাতে মন্ত্রীর লোকবলের প্রয়োজন হতেই পারে, কিন্তু কেন একজন একান্ত সচিব ও একজন জনসংযোগ কর্মকর্তার পরও মন্ত্রীছাহেবের আরো একজন সহকারী একান্ত সচিব প্রয়োজন হয়? কী সেই অতিরিক্ত কাজ? আবারও গুগলের শরণাপন্ন হলাম। এপিএস লিখে প্রথমে খোঁজ করলাম দায়িত্বশীল খালুপেপারে। ও মা, গুগল দেখি শুধু বদনাম করে! কোনো ভালো খবর বের হয় না মন্ত্রীর এপিএসদের নামে। তারা প্যান্টের ওপর জাঙ্গিয়া পরে ক্রাইমফাইটিং করবে, কিংবা অগ্নিনিমজ্জিত সুউচ্চ ভবন থেকে কোনো সুন্দরী তরুণীকে ঘাড়ে করে নামিয়ে আনবে, এমন কোনো অভ্রংলিহ প্রত্যাশা আমার ছিল না। তারা মন্ত্রকের কাজ করছেন, এমন স্বাভাবিক উল্লেখ দেখলেই আমি খুশি হয়ে উঠতাম বোধহয়। কিন্তু দায়িত্বশীল খালুপেপারের পাল্লায় পড়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর এপিএসবৃন্দ শুধু মুন্নির মতোই বদনাম হয়ে আছে দেখলাম। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। ১. লোকমান হত্যা: আত্মসমর্পণের পর রিমান্ডে মন্ত্রীর এপিএস নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলায় টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর এপিএস মাসুদুর রহমান মুরাদ আদালতে আত্মসমর্পণের পর তাকে দুদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। ... ২. রংপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর এপিএস গ্রেপ্তার রংপুরে টেন্ডারবাজির ঘটনায় গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাজ্জাদ হোসেন সাগরসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ... ৩. রেলমন্ত্রীর সহকারীর গাড়িতে ‘বিপুল’ টাকা রেলওয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর সহকারীকে বহনকারী একটি গাড়ি থেকে সোমবার রাতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার খবরের পর রেলপথ মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত কমিটি করেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ... ৪. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার দুই আসামির জামিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি দুই জন জামিন পেয়েছেন। তারা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর এপিএস জিয়াউল ইসলাম (মুন্না) এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম খান। ... ৫. দিনাজপুর প্রেসক্লাব দখল: পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিনাজপুর প্রেসক্লাব ভবন দখলের অভিযোগে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর এপিএস মির্জা আশফাক হোসেনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। ... ৬. ধামরাইয়ে জ্বালানি উপদেষ্টার এপিএসের বিরুদ্ধে মামলা ঢাকার ধামরাইয়ের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরীর এপিএস মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ... ৭. সহকারী কমিশনারকে সাংসদের এপিএসের হুমকি গোবিন্দগঞ্জ সদর আসনের সাংসদের এপিএস মতলুবর রহমান নান্না সাংসদকে না জানিয়ে নোটিশ টানানোয় বিকালে মোবাইল ফোনে তাকে (ফেরদৌস) গালাগাল এবং অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। ... ৮. এমপির সচিব খুন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের সহকারীকে গুলি চালানোর পর গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের নাম সারোয়ার হোসেন মোফাজ্জেল (৪০)। তিনি ময়মনসিংহ-১০ আসনের সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) ছিলেন। ... ৯. দুর্নীতির জন্য প্রধানমন্ত্রী খালেদার সহকারী শামসুলের ১৩ বছরের কারাদণ্ড দুর্নীতির দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) মো: শামসুল আলমকে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৮৮ লাখ টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে স্বামীর দুর্নীতিতে সহযোগিতা করায় শামসুল আলমের স্ত্রী খাদিজা আনামকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। ... ১০. সাঁথিয়ায় নিজামীর সাবেক এপিএসসহ ৮ জন গ্রেপ্তার ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সাবেক এপিএস শফিকুল ইসলাম রতনসহ ৪ জামায়াত কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ... এই দশটি খবর আপাতত দায়িত্বশীল খালুপেপারের ভাঁড়ারে পাওয়া গেলো। দলমত নির্বিশেষে এপিএসবৃন্দ যে নানা অকাজে জড়িত থাকেন, সেটা পরিষ্কার। তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। এপিএসের এই দাপটের উৎস খুঁজতে আমাদের চীন দেশে গমনের প্রয়োজন নেই। এপিএস মন্ত্রী-পাতিমন্ত্রী-টুনিমন্ত্রীর সারোগেট মাত্র। মন্ত্রী নিজে যে সব ডার্টি জব ভাবমূর্তির খাতিরে সশরীরের গিয়ে করতে পারে না, সেইসব ছাই ফেলতে ভাঙা কুলার কাজ করে এইসব এপিএসের দল। এরা হয় মন্ত্রীর আত্মীয়, এবং/অথবা দলের ছাত্র শাখার প্রাক্তন নেতা। মন্ত্রী নিজে ঘুষের বখরা নিতে অধস্তন চোর আমলার কাছে যেতে পারেন না (আরে ওনার একটা মান ইজ্জত আছে না?), তাই তার হয়ে সেখানে যায় এপিএস। মন্ত্রী নিজে স্থানীয় বেয়াদব আমলা-সাংবাদিক-পাবলিককে দুইটা চটকানা দিতে পারেন না, তাই সেই ময়লা কাজটা করে এপিএস হাত গন্ধ করে। কারো লাশ পড়লেও পেছনে মন্ত্রীর জায়গায় মন্ত্রীর এপিএসকে পাওয়া যায়, আবার পাল্টা লাশ পড়লেও মন্ত্রীরটা না পড়ে এপিএসেরটাই পড়ে। এপিএস তাই কার্যত মন্ত্রীর সক পাপেট। বাটে পড়লে "এপিএস পচা ওকে বকে দেবো" বলে নিজে সটকে পড়ার একটা উপায়ও থাকে। এপিএস নিয়োগ করে মন্ত্রীরা কী কাজ উদ্ধার করেন, ওপরের দশটা খবর থেকে পড়ে ধারণা করা যায়। আমার প্রশ্ন, মন্ত্রী-পাতিমন্ত্রীদের এই রাজনৈতিক ডালকুকুরদের বেতন কি জনগণের ট্যাক্সের পয়সা থেকে আসে? যদি এপিএসদের কাজই হয় টেন্ডার নিয়ে মস্তানি, আততায়ী ভাড়া, বখরা পরিবহন, বেয়াদব শাসন ও প্রহার, জমি দখল, ইত্যাদি, তাহলে সেসব মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও জব ডেসক্রিপশন পেইজে লিপিবদ্ধ করা হোক। যদি করা না যায়, তাহলে মন্ত্রীর এপিএস পদটি বিলোপ করা হোক। যদি এপিএসের বেতন পাবলিকের পয়সায় দেয়া হয়, তাহলে সেই পয়সা বাঁচিয়ে মন্ত্রীকে নিজেই কষ্ট করে ওপরোক্ত কাজগুলো সশরীরে করতে দেয়া হোক। পাবলিক এতকিছু সহ্য করে নিচ্ছে যখন, ঐটুকুও পারবে। আর মন্ত্রীরাও সশরীরে মাঠে নেমে করে কর্মে খেতে পারবেন। উল্লেখের অযোগ্য প্রত্যঙ্গে চর্বি কম জমবে, কাজেকর্মে গতি আসবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই ৭০ লক্ষ টাকার কিচ্ছা কীভাবে ডিল করে, দেখার জন্যে আগ্রহ ও পপকর্ন নিয়ে বসলাম। শুধু একটাই কথা, আপনার এপিএস চোর, আপনার রেলওয়ের জিএম ঘুষখোর, আর আপনি একা সাধু, এই কথা বিশ্বাস করার মতো কাঠবলদ দয়া করে আমাদের ভাববেন না। তারচেয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে একটা হাসি দিয়ে বলুন, ম্যাঁও!
false
rn
কষ্টে বুক ফেটে যায় আমার চোখের সামনে, আমার স্ত্রী এবং বাচ্চা মারা গেল।আমি কিছুই করতে পারলাম না।স্ত্রীর হাত ধরে বসে থাকলাম, স্ত্রীর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।ডাক্তার বলল- যে কোনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এক মিনিটের মধ্যে ভেবে বলুন- আপনি কাকে চান? আমি বললাম- আমি দু'জনকেই চাই। একটুপর ডাক্তার বললেন- দুঃখিত আমরা কাউকেই বাঁচাতে পারব না।ঈশ্বরকে ডাকুন।প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে।রক্তে ভেসে যাচ্ছে।পেটের মধ্যে বাচ্চা দু'টি মরে গেল। তার দুই মিনিট পর মরে গেল আমার স্ত্রী। এমন সময় যেন আল্লাহ কাউকে না দেন।আমি কাঁদছি কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।বুকের মধ্যে আর গলার মধ্যে কি যেন দলা পাকিয়ে উঠছে বারবার।সতের মিনিটের মধ্যে সব শেষ। আমার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর আমি নিয়মিত ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার বলেছেন- আপনার স্ত্রী খুব ভালো আছেন। কোনো প্রকার সমস্যা নেই। ডাক্তার জেরিন খান, আমার স্ত্রীকে সব সময় বলতেন- আপনার স্বামী আপনার অনেক টেককেয়ার করেন।আপনি অনেক ভাগ্যবতী।আমি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী- দশ মাস আমার স্ত্রীকে ডাবের পানি খাইয়েছি।চুলে তেল দিয়ে আঁচড়ে দিয়েছি।রাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতাম।সময় মত ওষুধ খাওয়াতাম। আমার স্ত্রী বারবার একটা কথা বলত- আমার খুব ভয় করে, আমি যদি মরে যাই। তুমি একা কিভাবে বাচ্চাকে পালবে? আমি বলতাম- দূর বোকা মেয়ে, কিচ্ছু হবে না।কোনো ভয় নেই। আমি আছি না! আমার স্ত্রী ছিল একদম সহজ সরল একটি মেয়ে।তার চোখে মুখে সারাক্ষণ খেলা করত- এক আকাশ মায়া।মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে কেঁদে ফেলত।আমি আমার স্ত্রীকে আদর করে- বাবু বলে ডাকতাম। আর আমাকে বাবুই বলে ডাকতো। তিন বছর প্রেম করেছি আমরা। তারপর বিয়ে।লঞ্চে করে বরিশাল যাওয়ার পথে প্রথম পরিচয়। তখন রাত আড়াইটা। শীতকাল।তিনতলা লঞ্চের ছাদে আমি অন্ধকারে বসে ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম একটি মেয়ে একা একা হাঁটছে। বাতাসে তার চুল-ওড়না পতাকার মতন উড়ছে। মেয়েটি পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময়- আমি বাংলা সিনেমার নায়কের মতন করে মেয়েটিকে ধরে ফেলি। সময় মত না ধরতে পারলে- মেয়েটি করতোয়া নদীতে পড়ে যেত। আমরা দু'জন মিলে আমাদের বাচ্চার জন্য অনেক কেনাকাটা করেছি-গুলশানের একটা মার্কেট থেকে। এই মার্কেটে শুধু বাচ্চাদের নানান জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সাত মাসের সময় জানতে পারি যমজ বাচ্চা হবে। আমরা দু'জন অনেক চিন্তা ভাবনা করে- দু'টি নাম ঠিক করি। টাপুর-টুপুর। টাপুর-টুপুরকে নিয়ে আমরা দু'জন অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। আমার স্ত্রীর অনুরোধেই আমি অপরেশন থিয়েটারে যাই। 'ও' শুধু বলতো- তুমি আমার হাত শক্ত করে ধরে থাকবে, তাহলে আমার কোনো ভয় লাগবে না। হাসপাতালে ভরতি হওয়ার দু'দিন আগেও আমি আমার স্ত্রীর পেটে কান রেখে শুনেছি- টাপুর-টপুরের নড়াচড়ার শব্দ। আমাদের পরিবার আমাদের প্রেমের বিয়ে মেনে নেয়নি। আমরা আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকতাম। দুই রুমের ছোট্র একটা ফ্লাট। আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা মারা গেল আজ প্রায় দুই বছর হলো। আমি ভাবি- আমি কেন মরলাম না? এই কষ্টটাই আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। গত দুই বছরে আমার সমস্ত আত্মীয় স্বজন আর বন্ধু বান্ধব অনেক শান্তনার কথা বলেছে। দুই বন্ধু মিলে- আমার মনের অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য আমাকে নিয়ে গেল ঈন্দিরা রোডের এক বাসায়। সেখানে গিয়ে দেখি- বেশ কয়েকটা আধুনিক সুন্দরী মেয়ে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমার এক মুহূর্তের জন্যও ইচ্ছা করে নি- কোনো মেয়েকে জড়িয়ে ধরি অথবা একটি চুমু দেই।আমি কিছুতেই আমার স্ত্রী আর বাচ্চা দু'টার কথা ভুলতে পারছি না। প্রায়-ই স্বপ্নে দেখি- বাচ্চা এবং বাচ্চার মাকে। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারপর সারারাত ব্যালকনিতে কাটিয়ে দেই।চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ে। এরপর থেকে আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি না। বরং ঈশ্বরকে ঘৃনা করি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি ঈশ্বরকে ঘৃনা করেই যাবো। মূর্খ ঈশ্বর মানুষের সুখ কেড়ে নিয়ে কি শান্তি পায়? কি সুন্দর সুখের সংসার ছিল আমার। বেঁচে থাকলে এই দুই বছরে আমার বাচ্চা দু'টা অনেক বড় হয়ে যেত । তারা সারা ঘর ছোট ছোট পায়ে হেঁটে বেড়াত। আমাকে বাবা-বাবা বোলে ডাকতো। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতাম। পড়াতে বসাতাম। বোকা ভূতের গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতাম। গোছল করিয়ে দিতাম। ছুটির দিন গুলোতে আমরা সবাই মিলে বেড়াতে যেতাম। বাচ্চার মা বাচ্চাদের বকা দিলে- আমি বাচ্চার মাকে আচ্ছা করে বকে দিতাম।সুখে- আনন্দে দিন চলে যেত।আসলে কিছু কিছু মানুষের জীবনে সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
false
fe
তাঁর স্বপ্ন নিয়ে আমাদের পথচলা তাঁর স্বপ্ন নিয়ে আমাদের পথচলা ফকির ইলিয়াস ------------------------------------ চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন ‘সংবাদ’ সম্পাদক বজলুর রহমান। খুব মর্মান্তিক তার প্রয়াণ। এ সমাজ থেকে, এ দেশ থেকে আরেকজন পরিশুদ্ধ মানুষকে আমরা হারালাম। তার মতো মানুষ, আমাদের চারপাশে খুবই বিরল। লোভ-লালসা কিংবা অন্যায়ভাবে কিছু পাওয়ার ইচ্ছা যাদের থাকে না তারাই জীবনে হয়ে উঠতে পারেন প্রকৃত মানবদরদি। একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে বজলুর রহমান সে কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে। বজলুর রহমান সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান আমার জন্মের আগেই। কিন্তু তারপরও একজন তরুণতম মানুষ। তার সঙ্গে কথা বললে যেন মনে হতো, তিনি চিরতরুণ। মনে পড়ছে, নিউইয়র্কে একটি রেস্টুরেন্টে তাকে নিয়ে বেশ কয়েক ঘন্টা আড্ডা দিয়েছিলাম আমরা ক’তরুণ। আপ্লুত বজলুর রহমানকে মনে হয়েছে তিনি যেন প্রতিদিন ভোরেই আধুনিক সমসাময়িকতার সঙ্গে নিজেকে একবার সাজিয়ে নেন। প্রতিদিন ভূষিত হন নতুনের আবরণে। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, লক্ষ শহীদের রক্তে গড়া বাংলাদেশ কি তবে মৌলবাদীদের দখলে চলে যাবে? জঙ্গিবাদ কি হরণ করে নেবে আমাদের স্বপ্ন? তিনি হেসে জবাব দিয়েছিলেন, না­ তা কখনোই হবে না। কারণ বাংলাদেশের সাধারণ মেহনতি মানুষ মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেন না। তিনি বলেছিলেন, এই প্রজন্ম একদিন রুখে দেবেই সব আঁধারের কালো হাত। মানুষ জয়ী হবেই। তরুণদের প্রতি তার ছিল প্রগাঢ় প্রীতি ও আস্খা। তিনি বলতেন, মানুষ সত্যকেই অনুসন্ধান করে। আর মিথ্যা কখনোই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে না। যদিও-বা দাঁড়ায় তবে তা হারিয়ে যায় ক্ষণিকের মাঝেই। বজলুর রহমান চাইলে যে কোনভাবে ভোগবাদী হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার নীতি এবং আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। ‘সংবাদ’-এর হাল ধরে রেখেছেন শক্ত হাতে। এদেশে মুক্তচিন্তার বিকাশের পথকে, বিশুদ্ধ চেতনাপন্থি মানুষের শক্তিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন দু’হাত ধরে। আমরা দেখেছি রাষ্ট্র ও শাসকদের আনুকল্য নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক ফুলে, ফেঁপে উঠলেও বজলুর রহমান সেদিকে কখনও ভ্রূক্ষেপও করেননি। আলিশান ভবন বানিয়ে, সেসব মিডিয়া কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী হতে চাননি। সুযোগ তো তারও কম ছিল না। কিন্তু তিনি কখনই কোন অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। দুই সম্পাদক বজলুর রহমান ছিলেন এমন এক বাংলাদেশের উজ্জ্বল মানুষ, যে দেশে প্রতিদিন আমরা চরিত্রের স্খলন দেখতে পাই। দেখি সামান্য কিছু বিত্ত কিংবা একটু যশ লাভের আশায় অনেক ‘নীতিবান’ তাদের নীতি বিসর্জন দেন মুহর্তেই। মনে পড়ছে, আশির দশকে একবার সিলেটে গিয়েছিলেন ‘সংবাদ’ পত্রিকার সিলেট ব্যুরোর আয়োজনে বজলুর রহমান। সেখানে এক মতবিনিময় সভায় তিনি কথা বলছিলেন, সমাজ নির্মাণে সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়ে। তিনি খুব গোছালো যুক্তি উথাপন করে সেদিন বলেছিলেন, একটি গসিপ কাগজের সার্কুলেশন বেশি থাকতেই পারে। একটি সৃজনশীল কাগজের সার্কুলেশন কম হতেই পারে; কিন্তু তারপরও কোন গসিপ কাগজ সমাজে আদৃত হয় না। মননে বেঁচেও থাকে না। সৃজনশীল কাগজটিই বেঁচে থাকে যুগে যুগে, আলোকবর্তিকা হয়ে। দৈনিক ‘সংবাদ’ বাংলাদেশে, বাংলা ভাষাভাষীদের মননে টিকে আছে একটি ধ্রুব হয়েই। সেই ধ্রুবতারা তৈরির পেছনে বজলুর রহমান অন্যতম কারিগর হয়েই বেঁচে আছেন এবং থাকবেন। আমার ভাবতে খুব কষ্ট হয়, যারা এ সমাজ বদলের কঠিন প্রত্যয় নিয়ে বাঙালি তরুণ প্রজন্মকে একদিন উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, আজ যখন দেখি তারা মত বদল করে কোন কোন পতিতদের সঙ্গে মতলব হাসিলে ব্যস্ত। আমার খুবই দু:খ হয় যখন দেখি এখনও বুর্জোয়া শ্রেণীর পেশিবাজরা সৃজনশীল মানুষদের ধমক দেয়। বজলুর রহমান সেসব হুমকি-ধমকিকে পরোয়া না করেই সমাজকে এগিয়ে নেয়ার সাহস জুগিয়ে গেছেন নিরন্তর। তার মৃত্যু খবরটি টিভির পর্দায় সচিত্র প্রতিবেদনে জানার পরপরই মুষড়ে পড়েছিলাম ভীষণভাবে। চ্যানেল আই, নিয়মিতভাবে প্রচার করছিল সংবাদটি আপডেটসহ। চ্যানেল আইয়ের আর্কাইভ থেকে বজলুর রহমানের দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার প্রচার করা হচ্ছিল। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন দেশের কৃতী নাট্যজন আলী যাকের। বজলুর রহমান সেখানেও তার জীবনের নানা উত্থান-পতন, সুখ-দু:খের কথা বলছিলেন সহাস্যে। বলছিলেন, তার বেড়ে ওঠার কথা। তার মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি। জানিয়েছিলেন সমাজ বদলে তার সুদৃঢ় প্রত্যয়ের কথাও। তার অনেক স্বপ্নই এখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ থেকে গেছে ছয়ত্রিশ বছর বয়সী বাংলাদেশে। তিনি এমনি এক সময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, যখন আমরা দেখছি এ ২০০৮ সালেও টেলিফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মতো আরেকজন গুণী মানুষকে। আনু মুহাম্মদকে ফোনে ধমক দিয়ে বলা হচ্ছে তিনি যেন তেল-গ্যাস বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ সম্পর্কে কোন বক্তব্য না দেন। কিছু যেন না লেখেন। সৎ, সাহসী সম্পাদক বজলুর রহমানকে আমরা হারিয়েছি এমন এক সময়, যখন দেখছি সংস্কারের নামে চলছে মাইনাস-টু, প্লাস-থ্রির দৌরাত্ম্য, যখন দেখছি সমাজতন্ত্রী তাত্ত্বিক ‘জাতীয়তাবাদী’ নেতা ও দল নিয়ে মোর্চা গঠনের তত্ত্ব বিতরণ করছেন রাজনীতিকে অরাজনীতিকরণের ছদ্ম প্রচেষ্টায়। এসব ধমক, এসব ফন্দি-ফিকির বাংলাদেশের জন্য, বাঙালি জাতির জন্য কোন শুভ সংবাদই বহন করছে না। আর এসব অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে এ সমাজের মানুষকে জাগ্রত রাখতে তার মতো একজন সম্পাদকের বেঁচে থাকার খুব প্রয়োজন ছিল। আমরা জানি, তার সংসারের চিরসাথী বেগম মতিয়া চৌধুরী আজ চরম ব্যথিত। একজন শব্দসৈনিক হিসেবে শুধু এ কথাই বলতে চাই আমরা সম্মিলিতভাবে যদি তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি, তবেই চিরশান্তি পাবে তার আত্মা। নিউইয়র্ক, ৪ মার্চ ২০০৮। -------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ। ঢাকা। ৭মার্চ২০০৮, শুক্রবার প্রকাশিত। সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:৫১
false
ij
None কবি অ্যান্তোনিও আগোসটিনহো নেটো। আঙ্গোলার একজন কবি, চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ। আমাদের বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কবি আগোসটিনহো নেটো-র জীবনের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। আগোসটিনহো নেটো ছিলেন তুমুল দেশপ্রেমিক-অ্যাঙ্গোলার স্বাধীকার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন জীবন তুচ্ছ করে। দেশমাতৃকাকে বড় ভালোবাসতেন সমাজতান্ত্রিকমনস্ক এই মহান কবি কবি অ্যান্তোনিও আগোসটিনহো নেটো -র জন্ম অ্যাঙ্গোলায়। অ্যাঙ্গোলা দেশটি আফ্রিকায়। অ্যাঙ্গোলার মানচিত্র। ষোড়শ শতক থেকে ১৯৭৫ সাল অবধি পর্তুগালের ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে ছিল অ্যাঙ্গোলা । পর্তুগালের মানচিত্র। অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডা লুয়ান্ডার ছবি ১৯২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অ্যাঙ্গোলার বেনগো প্রদেশের কিনাক্সিজি নামে একটি গ্রামে কবি আগোসটিনহো নেটোর জন্ম । অ্যাঙ্গোলার গ্রাম ও গ্রামের মানুষ গ্রামের মানুষ কিনাক্সিজি জায়গাটা লুয়ান্ডা থেকে চল্লিশ মাইল। আগোসটিনহো প্রথমে দেশেই পড়ালেখা চুকালেন। তারপর পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে যান চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে। তারপর, মেডিকেলের পড়া শেষ করে দেশে ফিরে আসেন; এসে প্র্যাকটিশ শুরু করেন । অ্যাঙ্গোলার নিজস্ব শিল্পসংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে ভীষণ স্পর্শকাতর ছিলেন আগোসটিনহো । অথচ, দেশ পরাধীন-পর্তুগালের থাবায়। অ্যাঙ্গোলাকে স্বাধীন করার লক্ষে গড়ে উঠেছিল ‘পপুলার মুভমেন্ট ফর দ্য লিবারেশন অভ অ্যাঙ্গোলা বা এম পি এল এ। আগোসটিনহো এম পি এল এ-র নেতৃত্ব গ্রহন করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনবার গেরেপতার হন। ১৯৬২ সালে নিয়ে যাওয়া হয় পর্তুগাল । জেলে পুরে রাখা হয়-করা হয় নির্যাতন। কবিতা লিখেছেন কারাগারে বসেই। এক বছর পর পালিয়ে আসেন অ্যাঙ্গোলায়। তারপর বহু ঘটনা ... অ্যাঙ্গোলা স্বাধীন হলে অ্যাঙ্গোলার প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আগোসটিনহো । তাই তখন আমি বলছিলাম- আমাদের বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কবি আগোসটিনহো নেটো-র জীবনের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। রাজনীতিবিদ হলেও কবি হিসেবে আগোসটিনহো নেটো-র খ্যাতি সমধিক। আগোসটিনহো নেটো-র মৃত্যু মস্কোয়-১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯। তাঁর কবিতা নানা ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এমনকী পর্তুগালেও তিনি কবি হিসেবে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁর কবিতায় জাতি ও শ্রেণিবৈষম্য বিরোধী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। নিচের কবিতাটি সেই চিহ্ন বহন করে। কিনাক্সিজি আমার কিনাক্সিজির একটা বেঞ্চে বসে থাকতে ভালো লাগে। সন্ধ্যা ছয়টায় গুমোট এই-বসে থাকা আর কী। কেউ এসে হয়তো আমার পাশে বসবে। আমি দেখব কালো মানুষের কালো কালো মুখ; উদ্ভট কিমবানদু ভাষায় কথা বলতে বলতে ধীরেসুস্থে শহরে যাচ্ছে তারা আমি দেখব ক্লান্ত পদশব্দ অনুগতদের-যাদের পূর্বপুরুষও ছিল অনুগত এখানে ভালোবাসা খুঁজছে, ওখানে সম্মান -খুঁজছেই মদের চেয়েও তীব্র আচ্ছন্নতায় প্রেম কি ঘৃনা- কিছুই না সূর্য ডুববার পর আলো জ্বলে উঠবে আর আমি হাঁটব এলোমেলো ভাবতে থাকব-জীবন আসলে সহজ ভীষন সহজ তার জন্য- যার এখন অনেক ক্লান্তি এখনও যার অনেক কাজ বাকি। অ্যান্তোনিও আগোসটিনহো নেটো: আঙ্গোলার একজন কবি স্ত্রী মারিয়া ইউজেনিয়া দ্য সিলভার সঙ্গে কবিতাসূত্র: Willis Barnstone এবং Tony Barnstone সম্পাদিত Literatures of Asia, Africa, and Latin America. (From Antiquity to the Present) সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০১
false
fe
সরকারি আখ্যানে উপলব্ধির বিবর্তন সরকারি আখ্যানে উপলব্ধির বিবর্তন ফকির ইলিয়াস=========================================একটা পরিকল্পিত আপসরফা চলছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। রাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতি তাদের কোন খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। পুলিশ বলছে, তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। তিনি ‘সংলাপ’ করছেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে, উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। সে ছবি দেশ-বিদেশের মানুষ টিভিতে দেখছে। কি আজব দেশ! কি অদ্ভুত সার্কাস! কবি শামসুর রাহমান বেঁচে নেই। না হয় তাকে হয়তো আরেকটি কবিতা লিখতে হতো। ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। দেশ যাচ্ছে কোথায়? কেন এভাবে বিবেক বন্ধক রেখে নির্বাচনের ডঙ্কা বাজানোর খেল পাতা হয়েছে? রাষ্ট্র এবং আইনের শাসনের মাঝে সম্পর্ক কি? এসব অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই, সরকারি নীতি-নির্ধারকদের কাছে।উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান চমৎকার কথা বলেন। তিনি পাশ্চাত্য থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা তিনি জানেন, বোঝেন। জানেন আধুনিক মানুষের চাওয়া পাওয়াও। তার অনেক কথায় আমি বেশ নান্দনিকতার ছোঁয়া পাই। যেমন- ‘নির্বাচন থেকে অযোগ্য করে রাখা; ‘সংস্কারের সড়ক’ ইত্যাদি। সম্প্রতি তার বচনভাণ্ডারে নতুন একটি বাক্য যুক্ত হয়েছে। ‘উপলব্ধির বিবর্তন’। কাব্যিক শব্দগুলো শুনতে আমার খুব ভাল লেগেছে। তার ভাষায়, এদেশে মানুষের উপলব্ধির বিবর্তন হচ্ছে। বিবর্তন হতেই পারে। বিবর্তন ধারাটি হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া। মানুষ কালে কালে গ্রহণ-বর্জন দুটোই করেছে। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মানুষ ক্রমেই বিয়োগাত্মক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে যোগাত্মক কর্মকাণ্ডের দিকেই ঝুঁকেছে বেশি। গ্রহণ করেছে আধুনিকতা। সৃজনশীলতা, ক্রিয়েটিভ আউটলুক যে কোন মানুষ, সমাজকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।কোন সৃজনশীলতার দর্শন নিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ওয়ান-ইলেভেনের রণভেরি ভাসিয়েছিল, তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। স্পষ্ট নয় এজন্য, তারা যা করতে চেয়ে শুরু করেছিল­ তা শুধু অসম্পূর্ণ নয়, জটিল হয়ে থেকে যাচ্ছে। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা মদদপুষ্ট হয়েছে­ ভিন্ন মেরুতে। যেমন বেশকিছু দুর্নীতির বিচার অসমাপ্ত থাকার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতিবাজরাই পালে হাওয়া পেয়েছে। বহুল আলোচিত সেই ঘাতক রাজাকাররা দেশে ময়রপুচ্ছ মেলে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ খুঁজতে সাহসের দাপট দেখাচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে সেই খুনি-রাজাকাররা এখন তাদের গঠনতন্ত্রে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি যোগ করে জাতিকে নতুনভাবে আইওয়াসের সুযোগ নিচ্ছে। বলা যায়, এটা ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। কারণ এই রাজাকাররা কখনই মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে- তা বাংলাদেশে কোন পাগলও বিশ্বাস করবে না। তাহলে কি নির্বাচনী নিবন্ধনের জন্য তারা পার পেতে চাইছে, এটাই কি উদ্দেশ্য? জানতে ইচ্ছে হয়­ এটাই কি উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের ভাষায় ‘উপলব্ধির বিবর্তন’?সরকার কর্তৃক এই বিবর্তনে সঙ্গে হাঁটছে প্রধান দুই দলও। বিএনপি ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তা তাদের টাস্কফোর্স গঠনের ধরন ও প্রচেষ্টা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও দর কষাকষি শেষে নির্বাচনে যাবে­ তাও প্রায় নিশ্চিত। যদিও শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং তা রাখছে দু’পক্ষই। সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো।দুইবাংলাদেশে অনেক হালকা ঘটনাও মানুষের হাসির খোরাক হয়। ‘ডেমোক্রেসি ওয়াচের’ প্রধান তালেয়া রেহমানের একটি ক্ষুদ্র সাক্ষাৎকার দেখলাম চ্যানেল আইতে। তাতে তিনি বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য তার স্বামী শফিক রেহমানকে দায়ী করলেন! বিষয়টি হাসির উপপাদ্য বিষয় তো বটেই! আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ‘ডেমোক্রেসি ওয়াচের’ নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তালেয়া রহমান শুধু শফিক রেহমানের পত্নীই নন, এই সেদিনও খালেদা জিয়াকে সভা করতে দিয়েছেন তার বাসায়। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তালেয়া, খালেদাকে। এটা তো কোন নিরপেক্ষতার নিদর্শন নয়। এখন দেশবাসী দেখছে তালেয়া রেহমান দুই নারী নেত্রীর পক্ষে সমানতালে বক্তব্য দিয়ে সমতা রক্ষার চেষ্টা করছেন।এই যে সমতা রক্ষার চেষ্টা, তা করছেন বর্তমান উপদেষ্টামণ্ডলী ও। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির যেসব উপকরণ ফিল্ডে ছাড়া হয়েছে তা আদৌ নিরপেক্ষতার বীজ বপন করছে না­ বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে তা খুব কম সময়ের মধ্যেই অনুধাবন করতে পারবে দেশের মানুষ। এটা রাজনীতিকরাও জানেন এবং বোঝেন, এই দেশের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এবং গুরুত্ব দেশের মানুষের ওপরই ছেড়ে দেয়া উচিত। এবং দিতেই হয়। আর সে প্রক্রিয়াই ঐক্যবদ্ধ করতে পারে বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষের হাতকে। কিন্তু অবাক হয়ে আমরা দেখছি ভিন্ন চিত্র। বর্তমান সরকার তাদের কাজের আগাম বৈধতা চাইছে। তা নিয়ে তারা দর কষাকষিও করছে বিভিন্ন দলের সঙ্গে।বাংলাদেশের রাজনীতি বিদেশনির্ভর করতে রাজনীতিকরা কি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে? আমরা প্রায়ই দেখি বিদেশের বিভিন্ন দেশে (বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায়) বাংলাদেশ বিষয়ে শুনানি হয়। তাতে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনাও হয়। সম্প্রতি লন্ডনে হাউস অব লর্ডসে তেমনি একটি সেমিনার হয়েছে। এতে শেখ হাসিনা নিজে উপস্খিত থেকে বলছেন, বাংলাদেশে আদালতকে প্রভাবিত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করা হচ্ছে।নেপথ্যের এই মতলব যদি সত্য হয় তবে দেশের ভাগ্যে আরও দুর্ভোগ আছে তা নি:সন্দেহে বলা যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কি কখনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়? বিশ্বের কোথাও হয়েছে­ এমন নজির আছে? পাকিস্তানের দিকে দেখুন চোখ মেলে। যে আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ ছিল তিনিই এখন সে দেশের প্রেসিডেন্ট। দেশের জনগণ কি তাকে ক্ষমা করে দিল? তার সব অবৈধ কর্ম (!) জায়েজ হয়ে গেল? উপমহাদেশ সেই বলয় থেকে এখনও বেরুতে পারেনি তা অস্বীকার করবে কে? কোন উপায় নেই অস্বীকার করার।আমরা আবারও দেখছি বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের ঢাকাস্খ রাষ্ট্রদূতরা তাদের কুটনৈতিক চাল চেলেই যাচ্ছে না, তারা কথা বলছেন গা বাঁচিয়ে। সিলেটী ভাষায় একটি প্রবাদ আছে­ ‘নল তল বর্ষা’। অর্থাৎ বর্ষার পানি বাঁশের খুঁটির ওপর দিয়েও যেতে পারে­ আবার খুঁটি স্পর্শ করে নিচ দিয়েও চলে যেতে পারে। নলটি তলিয়ে যেতে পারে অথবা নলের তলার স্পর্শ করতে পারে বর্ষার পানি।এভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বানের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন আমাদের বিদেশী প্রভুরা। আমরা বুঝে গেছি, এদেশের রাজনীতি বিদেশনির্ভর। আমরা জেনে গেছি, সামন্তবাদী বলয় থেকে বের হওয়ার সাধ্য বাংলাদেশের মানুষের নেই। ড. হোসেন জিল্লুর এবং তার পরিষদ কিছু আপ্তবাক্যই শুনিয়ে যাচ্ছেন। যা শুনতে খুব ভাল লাগছে। মানুষের কোন উপকারে আসছে বলে মনে হয় না।নিউইয়র্ক, ১৫ অক্টোবর-------------------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ১৭ অক্টোবর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
rn
হে বন্ধু বিদায় !! আমি মনে হয়- তোমার গলার কাঁটা হয়ে গেছি । আমাকে সহ্য করতে পারছো না। কিন্তু এই কথাটা বলতে পারছো না !আবারও ধরে নিলাম পরীক্ষা ভালো হয়েছে। ভালো থাকো। সুন্দর থাকো । তুমি তোমার স্বপ্ন সত্য করো- তাহলে খুশি হবো । হয়তো একদিন তোমার আশ্রম এ চলে যাব। বাকি জীবনটা সেখানেই কাটিয়ে দিতে পারি । থাকতে দিবে তো ? তোমার জন্য চিন্তা হয়, চাচার কথা ভাবি, মা, সবার কথা ভাবি । আসলে হাতে কোনো কাজ নাই তো- তাই সারাদিন নানান বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি ।শুধু যে তাদের কথা ভাবি, তা কিন্তু না। আমি দেশের কথা ও খুব ভাবি । ভাবতে ভাবতে প্রেশার বেড়ে যায়, গাড় ব্যাথা করে- তখন রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ি। হাঁটতে থাকি । ক্ষুধা পেলে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা-বিস্কুট খাই । নানান সমস্যা নিয়ে ভেবে যাই কিন্তু কোনো সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা নাই ।এখন বিকেল হয়ে গেছে, ভাত খাইনি । গোছল করিনি । তোমার পরীক্ষা কি শেষ ? বাসায় ফিরেছো ? আমি কিন্তু এখন বলনি- ব্রীজ টা কই ? তূরাগ নদীর কাছে। যাই, এখন আমি । বন্ধু হতে চেয়েছিলাম। খুব ভালো বন্ধু । গলার কাঁটা নয় । ভালো থাকো ।জানো, এক সময় আমার অনেক বন্ধু ছিল- অনেক । আমি নিজে একটু একটু করে সবাইকে বাদ দিয়েছি । আজ দুই বছর ধরে- আমি একা চলাচল করি । আড্ডা দেইনা। কোনো বন্ধুর সাথে দেখা করি না। কেউ বাসায় আসলে-ও দুই এক কথা বলে বিদায় করে দেই । সারা জীবনই তোমার জন্য আমার শুভ কামনা থাকবে। থাকবে । থাকবে। তুমি ম্যাজিস্টেট হতে পারলে- আমি অনেক খূশি হবো।ছোট ভাই বোন আর মার প্রতি খুব বেশী দায়িত্ববান হও । তাড়াতাড়ি লেখা পড়া শেষ করে- পরিবারের সব দায়িত্ব হাতে নাও । মাকে বিশ্রাম দাও । শক্ত হাতে তোমাকে সব করতে হবে, কেউ এসে এই দায়িত্ব নিবে না। চার পাশে দেখবে সবাই আশার বানী দিবে- তাদের সেই আশার বানীতে আশ্বস্ত হবে না। শুধু মনে রাখবে- যা করার, তা তোমাকেই করতে হবে। কেউ এসে করে দিবে না।ভালো থাকো । সুন্দর থাকো । আমার জন্য কোনো চিন্তা করো না। আমি ভালো থাকব। সুন্দর থাকব । আমার বন্ধু ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকব । কাজেই যদি চাও আমি ভালো থাকি, তাহলে তোমাকে ভালো থাকতে হবে। আমি কি তোমার গলার কাঁটা হয়ে গেছি ? আমাকে ফেলে দিতে চাচ্ছো ? আমার জন্য তোমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ?দাও, ফেলে দাও আমাকে । কোনো প্রশ্ন করবো না তোমাকে । অভাবের জীবন তোমার পছন্দ না। এখন, তোমার চোখে সারাক্ষন ভাসে- আমার সমস্যা গুলো। তুমি চাও না এই সমস্যায় জড়াতে।তুমি চাও বিলাসিতা। আর এদিকে আমার নূনতম চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা নেই। এই নাই নাই, আর অভাবের মধ্যে বাকিটা জীবন তোমাকে পার করতে হবে।কে নতুন গাড়ি কিনল, কে নতুন ফ্লাট কিনল- সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করতে হবে।রিমার স্বামী রিমাকে নিয়ে নেপাল বেড়াতে গিয়েছে, শাম্মির স্বামী শাম্মীকে নতুন গাড়ি কিনে দিয়েছে। এই রকম কিছু করার সামর্থ্য আমার নাই। কাজেই কোরো উদাহরন কখন আমাকে দিবে না।এইসব কথা তো তোমাকে নতুন বলছি না। সেই প্রথম দিন থেকেই বলছি। আর তোমাকে এইসব কথা বলতে হবে কেন ? তোমার তো নিজেরই বোঝা উচিত ছিল।এক কোটি আদর ।
false
fe
সংঘাত নয়, শান্তি চাই সংঘাত নয়, শান্তি চাইফকির ইলিয়াস=================================== ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে জাতি হতবাক! তিনিও নাকি হাত ভেঙে দেবেন! কার হাত? কোন হাত? কী বুঝাতে চাইলেন তিনি? এই মানসিকতার ইউনূস নোবেল পেয়েছিলেন! ভাবতে অবাক হতে হয়। দেশ এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে। প্রস্তাব আর পাল্টা প্রস্তাব সর্বত্র। কোনটা কাজে লাগবে, কোনটা লাগবে না- তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটা বিশেষ মহল পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে ব্যস্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খবর বেরিয়েছে, দেশে অক্টোবরের শেষেই নাশকতা চালাতে পারে বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠন। আনসারুল্লাহ বাঙলা টিম, হরকাতুল জেহাদ, হিযবুত তাহরীরসহ ৬টি জঙ্গি গ্রুপ এবং হেফাজত ইসলাম, জামাতে ইসলামীসহ উগ্র মৌলবাদী আরো ১০টি সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আর এতে মুখ্য ভূমিকায় থাকছে বরাবরের মত জামাত-শিবির। বিভিন্ন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইতোমধ্যে শিবিরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডাররা, জঙ্গি সদস্যরা রাজধানীতে ঢুকে পড়েছে। তারা নামে-বেনামে বিএনপি এবং জামাতে ইসলামীর অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থান করছে। তবে তাদের এই পরিকল্পনা গোয়েন্দারা টের পেয়ে যাওয়ায় কেউ আবার রাজধানী ছেড়ে তার পার্শ্ববর্তী জেলা বা থানা শহরে আশ্রয় নিয়েছে। আরো ভয়াবহ সংবাদ হচ্ছে, টার্গেট করা হতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও বিচারের রায় বানচাল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কাঁধে বন্দুক রেখে তারা নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এটা কে না জানে, সন্ত্রাসীরা সবসময়ই রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকে। তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। এরা বোমাবাজি ও ভাড়ায় অস্ত্র ব্যবহার করায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মাঠে নেমে থাকে। রাজনৈতিক মদদে জঙ্গিদের মাঠে নামানোর নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে বলেও জানাচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়া। এদিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে কিছু কথা বলেছেন। খালেদা জিয়া বলেন, যারা আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতীতে নানারকম অন্যায়-অবিচার করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন। আমি তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করছি। আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। এই বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসামুল হক ইনু। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে বলতে চাচ্ছেন, যারা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তারা অপরাধী। উনার পুত্রদের দুর্নীতির সম্পর্কে, উনার বাড়ি সম্পর্কে, উনার এতিমখানা ট্রাস্ট সম্পর্কে যে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তথ্যপ্রমাণ দিয়ে মামলা করেছেন, তারা কি অপরাধী? যারা কষ্ট করে উনার দুই পুত্রকে লুকিয়ে রাখা টাকা বিদেশ থেকে ফেরত এনেছেন, তারা কি অপরাধী? এই প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন বর্তমান তথ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হু মু এরশাদ একেক সময় বলছেন একেক কথা। তিনি মহাজোটের সঙ্গে থাকবেন- নাকি থাকবেন না তাও স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরও তার মুখ থেকে ভিন্ন কথা আসছে মিডিয়ায়। বিএনপি না এলে এরশাদ নির্বাচন করবেন কী না- সেটা খোলাশা হচ্ছে না কোনো মতেই। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বিরোধী দল বিএনপির ওপর নির্ভর করছে জাতীয় পার্টি মহাজোট থাকবে কি থাকবে না। কারণ বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে। এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন আশরাফ। সৈয়দ আশরাফ আরো বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে অন্য কিছু হতে পারে। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। সৈয়দ আশরাফ আশা প্রকাশ করেন, বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবে। যদি তারা নির্বাচনে না আসেন তাহলে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে। নির্বাচনে যাবে জাতীয় পার্টি। এরপরই ভিন্নকথা বলেন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিং-এ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বনানীতে এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয় সুগন্ধায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ আলাদাভাবে নির্বাচন করবে। এরশাদ বলেন, কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে না। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। আর বিএনপি যদি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে জোটবদ্ধ নির্বাচন করবেন না বলেও ঘোষণা দেন এরশাদ। বাংলাদেশের রাজনীতি আসলেই ভানুমতির খেল। এই খেলায় আর কতো বলি হবে সাধারণ মানুষ? এদেশের মানুষ দেশটিকে মনেপ্রাণে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন অভিবাসী বাংলাদেশীরাও। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন মাত্রা ছুয়েছে। গেলো মঙ্গলবার দিন শেষে এর পরিমাণ এক হাজার ৭শ কোটি (১৭ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত আগস্ট মাসে রিজার্ভের পরিমাণ এক হাজার ৬শ কোটি ডলার ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়ে। এছাড়া মে মাসেও রিজার্ভ দেড় হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে আগের রেকর্ড ভেঙেছিল। রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈধপথে প্রবাসীদের আয় ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রিজার্ভ রয়েছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভারতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রায় সোয়া তিনশ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। কথা একটাই, সংঘাত নয়- শান্তি চাই। দেশের মানুষ রাজনৈতিক হানাহানি চান না। দেশ তার রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনেই চলুক। আর হ্যাঁ- মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এই সরম সংকটকালীন দেশের জাগ্রত মানুষ প্রহরীর ভূমিকা পালন করবেন- সেটাই একমাত্র আশাবাদ।------------------------------------------------------------------ দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৩
false
fe
যেভাবে স্বপ্নগুলো তামাদি হয়ে যায় যেভাবে স্বপ্নগুলো তামাদি হয়ে যায় ফকির ইলিয়াস -------------------------------------------------------------------------------মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখে তার স্বপ্নের ডিঙাটি মাঝ নদীতে ডুবে যাচ্ছে। বাঁচতে চেষ্টা করে। বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। কারণ ডিঙাটির রক্ষকরা চায় না তরণীটি বাঁচুক। এভাবে অনেক স্বপ্নের সলিল সমাধি হয়ে যায়। মানুষ স্বপ্নের ওপর বিরক্ত হয়ে পড়ে। বাড়ে হতাশা। বাড়ে সামাজিক উৎপীড়ন। দুর্বৃত্তরা হাসে উল্লাসের হাসি।বাংলাদেশে শেষ পর্যন্ত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক। দেশ নির্বাচনের মহাসড়কে। এমন প্রত্যয় বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। ইতোমধ্যে সরকার বনাম বিএনপির বিতণ্ডা হয়ে গেছে এক দফা। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, ইলেকশন কমিশন যেন সরে দাঁড়ায়। এর জবাবে উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর বলেছেন, বিএনপি নেত্রী তার হতাশা থেকে এমনটি বলছেন।বিএনপি হতাশ কি না তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে দেশবাসী যে চরম হতাশ তা খুব স্পষ্ট। দেশবাসী যা চেয়েছিল, এর সিকি ভাগও পূরণ হয়নি। পূরণ না করেই বিদায় নিচ্ছে ওয়ান ইলেভেন খ্যাত তদারকি সরকার। নিজেদের অর্জন নিয়ে তারা খুবই তুষ্ট। কিন্তু জনগণ তুষ্ট নয় মোটেও। কারণ চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা এখনও নানাভাবে সচল। এরা কেউ কেউ কারাগারে থেকেই কলকাঠি নাড়ছে। তারা ভুয়া মেডিকেল রেকর্ড দেখিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। খবর বেরিয়েছে, অনেকেই ভুয়া চিকিৎসার কথা বলে জামিন নেয়ার জন্য লাইনে আছে।এসব চিহ্নিত দুর্নীতিবাজের এখন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পালা! তাদের আইনজীবীরা বলছেন, প্রার্থী হওয়ার পক্ষে আইনি চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা তারা করবেন। রায় কি হবে তা জনগণ জানেন না। তবে জনগণ এটা জানেন অনেক রাষ্ট্রীয় পুকুর চুরির সঙ্গে এদের অনেকেই জড়িত। সরাসরি খুনের মদদও দিয়েছে কোন কোন নেতা। মন্ত্রিত্বে থেকে খুনিদের পুষেছে। মামলা না নেয়ার জন্য কোটি টাকা ঘুষ খেয়েছে। জনসমাবেশে বোমা হামলার মদদ দিয়েছে। বোমা সাপ্লাই দিয়েছে। প্রতিপক্ষ রাজনীতিককে হত্যা করিয়েছে। এরা কারা, নাম বলার দরকার নেই। তারাও প্রার্থী হওয়ার জন্য মল্লযুদ্ধে নামছে! ভাবখানা এমন, তারা কিছুই করেনি!নির্বাচনী হাওয়া আসার সঙ্গে সঙ্গেই সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করার বিভিন্ন দাবি উথাপিত হচ্ছে। এসব দাবি যারা করছেন তারা সমাজের উচ্চবিত্তের মানুষ। এরা সুশীল সমাজ। কিন্তু এই সমাজকে রাজনীতিকরা কি অতীতে তোয়াক্কা করেছে? না করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। যে দেশে সিংহভাগ মানুষের ভোট টাকায় বিক্রি হয় সে দেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটানোর স্বপ্ন খুবই কঠিন। মানুষ খেতে পারছে না। একটা মোটা কাপড় গায়ে দিতে পারছে না। তাই সামান্য টাকা পেলে বিবেক বিক্রি তো করবেই। দোষ দিয়ে লাভ কী?দোষ তাদেরই যারা পরিকল্পিতভাবে মানুষকে এগুতে দেয়নি। দিচ্ছে না। দেবেও না। তেমনি ফাঁদ তৈরি করে বর্তমান সরকারও বিদায় নিচ্ছে। এটা খুবই নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় গেলে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের কোন বিচারই সম্পন্ন করবে না। তেমনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলেও বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে না। ক্রমশ সবকিছু হিমাগারে যাবে। তামাদি হয়ে যাবে গণমানুষের স্বপ্ন। চাওয়ার আলো ঢেকে দেবে ঘন অকার। মানুষ নিমজ্জিত হবে আরও হতাশায়। আরও দুর্ভোগে। দুই.সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে গেছে। জরুরি অবস্খা শিথিল হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম মতপ্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠেছে। বেশ ভাল সংবাদ। সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বলেছেন, সেনাবাহিনী যে কোন প্রয়োজনে দেশের মানুষের পাশে থাকবে। হ্যাঁ, তা তো থাকবেই। থাকা উচিত। এই বাহিনী রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনেই ব্রতী। তারা মানুষের সুখ-দু:খে পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোগুলোতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। ওয়ান ইলেভেনের অî-মধুর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রাজনীতিকরা নতুন করে ভাবার সুযোগ পেতে পারেন। তা ভবিষ্যৎ সার্বিক পরিস্খিতির ওপর কি প্রভাব ফেলে বা আদৌ কোন প্রভাব ফেলবে কিনা তাও দেখার বিষয়। তা হতে পারে পজেটিভ, বা নেগেটিভ।তবে প্রধান দুটি দল বর্তমান তদারকি সরকারের সঙ্গে একটি গোপন সমঝোতার যে খতিয়ান সই করেছে, তাও দেখার পালা শুরু হবে দেশের মানুষের। যদি সেই সমঝোতার আলোকেই প্রধান দুই দলের বেশকিছু চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ‘অস্পর্শ’ থেকে যাওয়ার সুযোগ নেন, তবে বুঝতে হবে ওয়ান ইলেভেনের চেতনা খুবই ক্ষণস্খায়ী হবে। বিদেশে অবস্খানরত দুই প্রধান দলের শীর্ষ নেতারা দেশে ফিরে এক বছরের মধ্যেই নিজ নিজ আসনে জেঁকে বসবে।বাংলাদেশে গণতন্ত্র অতীতে যেমন সঙ্কটের ছিল, ঠিক তেমনটি থেকেই যাচ্ছে। কারণ, বর্তমান তদারকি সরকার কোন দৃষ্টান্তমলক নজিরই স্খাপন সম্পন্ন করে যেতে পারল না। মনে রাখতে হবে শুরু করা মানেই শেষ করা নয়। আমার মতে, বাংলাদেশে গেল দু’বছরে যা ঘটে গেল তা ‘দুদক বিষয়ক ঝড়ো হাওয়া’। এই ঝড়ো হাওয়া বরং জনমনে হতাশা দ্বিগুণ করেছে। কারণ সাজাপ্রাপ্ত আসামিরাও বেরিয়ে এসে প্রমাণ করেছে তারা কিছুই করেনি! যারা বাকি আছে তাদেরও বেরুনোর পালা!নতুন জোটবদ্ধ নির্বাচন, নিবন, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে পার পাওয়া এর সবক’টি কাজেই সিদ্ধ বাংলাদেশের রাজনীতিকরা। ধর্মীয় মৌলবাদী দলগুলো নিবনের মাধ্যমে শুধু নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহসই খুঁজছে না, দেশের অস্তিত্বের খুঁটিতে আঘাত হানতে চাইছে। এটা ভীষণ পরিতাপের বিষয়, ওয়ান ইলেভেনের চেতনা নিয়ে যারা এসেছিলেন তারা মুখে বড় বড় কথা বললেও ঘাতক রাজাকারদের স্বার্থ বাঁচিয়ে গেলেন। যার ফলে বদর বাহিনীর কমান্ডার এখন বলার সাহস পাচ্ছে, অতীতের চেয়ে তারা সংগঠিত।জনগণ হারছে। দেশ হেরে যাচ্ছে। কোন স্বার্থবাদী রাজনীতিকরা জিতল কিনা, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। যদি সব প্রধান দল নির্বাচনে অংশ নেয় তবুও একটি সংঘাতময় ভবিষ্যৎই অনিবার্য হবে­ তাই মনে হচ্ছে।নিউইয়র্ক, ৪ নভেম্বর ২০০৮--------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ৭ নভেম্বর ২০০৮ শুক্রবার প্রকাশিত
false
fe
রাজাকারনামা ও বিচারের প্রহর প্রহর গোনছেন দেশের মানুষ। প্রতিবেদন গুলো যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।তিনি দেখবেন । কিন্তু কি দেখবেন তিনি ? এই যে রাজাকার , এই যে রাজাকারনামা - তা এখন অস্বীকার করছে খোদ রাজাকার রা ই । তারা বলছে , জামাতের কাউকে যুদ্ধাপরাধী প্রমাণ করা যাবে না !জামাত নেতা মীর কাশেম আলী সৌদী আরব থেকে এখন আমেরিকায়।তিনি দেনদরবার করছেন , বিভিন্ন মহলে। ফল কী হয় , তা দেখার জন্য সময় দরকার।শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বলতেন, এই বিচার জনগণ ই করবে।তারাই তো মহাজোটকে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে।কিন্তু বিচারটা ওরা করবে কী ?নিজামীর আমলনামাশাহজাহান আকন্দ শুভ--------------------------------------------------------------- প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাখিল করা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনার সাথিয়ায় জন্ম নেন। তার বাবা লুৎফর রহমান ফকির পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। নিজামী গ্রামের মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকায় আসার পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন ইসলামী ছাত্র সংঘের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন এবং হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে পাবনার হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় মতিউর রহমান নিজামীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি জামায়াতের ঢাকা মহানগর শাখার আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে পাবনা-১ (বেড়া-সাথিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাঈদকে পরাজিত করে নির্বাচিত হওয়ার পর চারদলীয় জোট সরকার তাকে প্রথমে কৃষিমন্ত্রী করেন। এ সময় তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনে সবখানে জামায়াতের লোক বসাতে শুরু করেন। মন্ত্রণালয়ের সব নিয়োগে অগ্রধিকার পায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের। সেখানেও চলে একই অবস্থা।প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জোট সরকারের পাঁচ বছর তার আসনে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হাতে খুন হন ৫৮ জন। সেখানে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন তার স্ত্রী শামসুন্নাহার ও ভাগ্নে মাহবুবুল আলম মুকুল, মামা শুকুর ফকির, মামাত ভাই ফারুকসহ জামায়াত নেতা কুদ্দুস, জাবেদ ফকির, টিপু, শহীদুল ও বাসেত ফকির। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নিজামী প্রভাব খাটিয়ে চাতুর হাট নামে পাবনার সবচেয়ে বড় হাটটি নামমাত্র মূল্যে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সিনেট সদস্য রফিকুল নবীর নামে লিজ নিয়ে দেন। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেড়া উপজেলার তিন একর মাঠ ও জলাশয় মাত্র ৬০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে দেন একই ব্যক্তির নামে। ওই ব্যক্তিকে দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের পাশে সরকারের খাস জমি দখল করে পরে তা প্লট হিসেবে বিক্রি করেন। এ প্লটগুলো বিক্রি করা হয় রিয়েল হোল্ডিং নামে একটি হাউজিং প্রতিষ্ঠানের নামে। নিজামীর নির্দেশে সাথিয়ার করমজ এলাকার পুরাতন বাজারের প্রায় দুইশত বছরের পুরোনো কালি মন্দিরের এক দশমিক ২৩ একর জমি তিন লাখ ২৩ হাজার ৪৬৩ টাকায় করমজা দাখিল মাদ্রাসার কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও তার নির্দেশে বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি দখল করা হয় জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইমাম গাযযালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে। প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের পাবনা চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী কোয়ার্টারটি (পরিত্যক্ত) ২০০৩ সালে নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হয় জামায়াত নেতাদের। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষিমন্ত্রী থাকাকালে মতিউর রহমান নিজামী সারা দেশে পাঁচ হাজার ব্লক সুপারভাইজার নিয়োগে ব্যাপক দূর্নীতির আশ্রয় নেন। এ বিষয়ে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও প্রতিবেদনটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন চামড়া শিল্পের ১৭৫ কোটি টাকা লুটপাটের তদন্ত ও সাভারে দুই কোটি টাকার মাটি ফেলে ১৫ কোটি টাকা খরচ করার তদন্ত প্রতিবেদনটিও আলোর মুখ দেখেনি। রিপোর্ট- দৈনিক আমাদের সময় / ১৮ এপ্রিল ২০১০
false
hm
উদ্ধারকাজে নিজস্ব প্রযুক্তি ও কৌশল উদ্ভাবন আশু প্রয়োজন রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনা আমাদের মনে একটি স্থায়ী ছাপ ফেলে রেখে গেলেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কী আর কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই নীতিনির্ধারকদের জরুরি ভিত্তিতে হোমওয়ার্ক করা প্রয়োজন। আর এ ব্যাপারে উদ্ধারকাজে জড়িত পেশাদার ও স্বেচ্ছাসেবীদের ডেকে একটি গণশুনানি করা হলে তারা উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা আর অভাবের মুখোমুখি হয়েছেন, সেগুলোও সমন্বিত হবে। রানা প্লাজা ধ্বস নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে, এবং অতীতের আর সব প্রতিবেদনের মতোই সেগুলোর ওপর ধূলোর স্তর পুরু হবে। যেহেতু এই গোটা ঘটনাটিই ঘটেছে কর্তৃপক্ষীয় গাফিলতি আর দুর্নীতির কারণে, এই একই কর্তৃপক্ষকে তাই আর জনচক্ষুর অন্তরালে কোনো নীতি নির্ধারণের সুযোগ দেওয়ার কোনো অর্থ নেই। কী করা হবে সামনে, তা সারা বাংলাদেশের মানুষকে দফায় দফায় জানিয়ে স্থির করতে হবে। উদ্ধার কার্যক্রমে প্রযুক্তি ও কৌশলের অভাব বা যথাযথ প্রয়োগের অভাব আমরা একাধিকবার প্রত্যক্ষ করেছি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কিছু ভুল ঘটবে না, এমন প্রত্যাশাও করা উচিত নয়। কিন্তু সেসব ত্রুটি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতের প্রয়োগে সেগুলোর অনুপস্থিতি নিশ্চিত করাও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিছু বিষয় আমার নজরে এসেছে বলে সেগুলোকে উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করছি। আমি নিশ্চিত, পাঠকও এমন আরো অনেক কিছু লক্ষ্য করেছেন, যা ‌এক জায়গায় তালিকাবদ্ধ হওয়া জরুরি। মন্তব্যের মাঠে অনুগ্রহ করে আপনার পর্যবেক্ষণ যোগ করুন। ১. একটি গার্মেন্টস কারখানায় বিপদজনক একাধিক যন্ত্র চলমান থাকে। জেনারেটর আর বয়লারের মতো ভারি, তাপোৎপাদী যন্ত্রের পাশাপাশি সেখানে থাকে গরম পানির পাইপ, স্টিম পাইপ, এবং গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে অসংখ্য সহজদাহ্য কাপড়। তাই চলমান অবস্থায় একটি কারখানা ভবন ধ্বসে পড়লে তার ভেতরে অগ্নিকাণ্ডের সমূহ রসদ মজুদ থাকে, যা আক্রান্ত ও উদ্ধারকর্মীদের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ধ্বংসস্তুপের ভেতরে শতভাগ বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাম্প করা হলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও বাড়ে, যেহেতু অক্সিজেন দহনে সহায়তা করে। একবার আগুন লেগে গেলে ধ্বংসস্তুপের ভেতরে বিভিন্ন পকেটে সঞ্চিত সামান্য অক্সিজেনও আগুনের কবলে পড়ে নিঃশেষিত হয়ে যাবে, এবং আক্রান্তরা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাবেন ৪ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে। স্বল্প অক্সিজেনবহ পরিবেশে দহনের কারণে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইডও আটক ব্যক্তিদের মৃত্যু ত্বরান্বিত করবে। এরকম পরিস্থিতিতে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাম্প না করে ব্লোয়ারের সাহায্যে বাইরে থেকে বাতাস এয়ার ফিল্টারের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করে ভেতরে পাম্প করা যেতে পারে। পাম্প করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, ব্লোয়ারের ডেলিভারি প্রেশারটি যেন খুব বেশি না হয়, অন্যথায় ভেতরে ধ্বংসস্তুপে জমা হওয়া সব ধূলা উড়তে শুরু করবে। ২. ভেতরে আটকদের অবস্থান শনাক্তকরণের জন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তি এই মুহূর্তে আমাদের উদ্ধারকর্মীদের হাতে নেই। তারা যেভাবে কাজ করেছেন, তা হচ্ছে নিজেরা যতদূর পর্যন্ত ঢুকতে পেরেছেন, ঢুকে চিৎকার করে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছেন। যারা সাড়া দিতে পেরেছেন তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর চেষ্টা করে প্রাণ রক্ষার কাজ করেছেন। কিন্তু প্রক্রিয়াটি যেহেতু মন্থর, এবং আহতরা সবসময় উদ্ধারকর্মীদের মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো যথেষ্ট জোরে শব্দ করতে পারেন না, তাই এ ব্যাপারে প্রযুক্তি ও কৌশলের সাহায্য নেওয়া জরুরি। আর এ কাজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে আসতে পারে। মানুষের শরীরের তাপ দূর থেকে শনাক্ত করা সম্ভব, কিন্তু ধ্বসে পড়া ভবনে প্রচুর তাপবাহী উপকরণ থাকায় এবং দিনের বেলা কংক্রিটও তাপ সঞ্চয় করে বলে সঠিকভাবে এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো একটু কঠিন। তা ছাড়া হিট সিগনেচার স্ক্যানার বেশ ব্যয়বহুল। তারপরও স্বল্প ব্যয়ে যদি হিট সিগনেচার স্ক্যানার নির্মাণ করার একটি অ্যাসাইনমেন্ট বিভিন্ন প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে বন্টন করা যেতে পারে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছে প্যাসিভ ট্র্যান্সপন্ডারবিশিষ্ট আরএফআইডি চিপ ব্যাজ আকারে গার্মেন্টস কর্মীদের পোশাকের সাথে পরিধান করা। এটি তুলনামূলকভাবে অনেক সস্তা, এবং উদ্ধারকর্মীদের হাতে আরএফআইডি রিডার থাকলে তারা আশেপাশে কয়েক মিটারের মধ্যে আটকে পড়া কর্মীদের (জীবিত বা মৃত) অবস্থান শনাক্ত করতে পারবেন। এই পদ্ধতির মুশকিল হচ্ছে, এটি আহত আর নিহতের মাঝে পার্থক্য করতে পারবে না, আর কংক্রিটের স্তুপের কারণে এর স্বল্প মাত্রার তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ বেশ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হবে। তৃতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছে, প্রত্যেক গার্মেন্টস কর্মীকে নিজের সাথে একটি হুইসল রাখতে বলা। আটকে পড়লে তারা ক্রমাগত চিৎকার না করে কিছুক্ষণ পর পর হুইসল বাজাতে পারেন। সেই সাথে এ ধরনের হুইসলের শব্দ ও রেঞ্জ শনাক্ত করার জন্যে একটি স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ শনাক্তকরণ যন্ত্রের প্রোটোটাইপ তৈরি করার জন্যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চিন্তা করে দেখতে পারে। সরকার যদি এ ব্যাপারে গবেষণার জন্যে কিছু অর্থ বরাদ্দ করে, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে প্রাণহানি আরও কমানো সম্ভব হবে।
false
rn
৭১ যেন নেমে এসছে শাহবাগে কিছু বদমাশ শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে বেনামে নানান রকম মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছে ফেসবুকে, অনলাইন পত্রিকা এবং ব্লগে । এই অপকর্মের জন্য একদিন আপনাকে শাস্তি পেতে হবে । হবেই । কাউকে ক্ষমা করা হবে না । মানুষ এখন আর বোকা নেই । তারা এখন আর রসিকে সাপ মনে করে না । মিথ্যা চিলের পেছনে ছুটে না ।চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে শাহবাগের জনসমাবেশ।শাহবাগ তুমি কোন জায়গা ?যেখানে নেই কোন ধর্মের দোহাই, রজনৈতিক নেড়ি কুত্তার চিৎকার ।কসাই কাদের মোল্যার জেল হয়েছে ৩০ বছর আর শাস্তি ভোগ করতে হবে ২৩ বছর। খুন করেছে ৩৪৪টা। তাহলে ১টা খুনের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে ২৪ দিন।বাংলার আকাশে বাতাসে একটাই ধ্বনি রাজাকারের ফাঁসি চাই।।লক্ষ লক্ষ তরুণের এই আন্দোলনে মুখরিত শাহবাগ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তরুণ সমাজ নেমে এসেছিল রাজপথে, একটাই দাবি রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।বেসরকারি শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ঢাকার মানারত বিশ্ববিদ্যালয়, এর বাইরে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলোর মুল বা সিংহভাগ মালিক জামাতীরা। যেমন, নর্দান ইউনিভার্সিটি ও ইষ্টার্ণ ইউনিভার্সিটি। পাশাপাশি আছে গ্রীন ইউনিভার্সিটি । ‘রাজাকারের ফাঁসি চাই, ফাঁসি ছাড়া ঘরে ফিরবো না’ এমন স্লোগান লেখা ফেস্টুন গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন আলেয়া। পাশে এক টুকরো ছিন্ন পাউরুটি।মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি যদি নিজ ক্ষমতা বলে ফাঁসির আসামীকে মুক্তি দিতে পারেন, তার পরিবারের আবেদনে, তাহলে এত গুলো মানুষের আবেদনে কেন, রাজাকারদের ফাঁসি দেওয়া যাবে না? যে কুত্তাগুলো আমার দেশের মাটিতে তান্ডব চালিয়েছিল সেই কুত্তাগুলোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই।চট্টগ্রামে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দাবিতে গণজাগরণের মুখে ভেস্তে গেছে জামায়াতের ডাকা হরতাল।রাজাকারের ফাঁসি চাই, আর কোনো দাবী নাই।জামাত শিবিরের বিনাশ চাই, আর কোনো কথা নাই। দেশের রাজনীতিবিদরা যে সাহস এবং নিষ্ঠার সহিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে পারেনি সেখানে আমরা তরুণ, তরুণীরা আবারো প্রমান করলাম আমরা ও পারি সে সাহস দেখিয়ে দিতে।কোথায় যেন ইন্দিরা গান্ধির একটা কথা পড়েছিলাম- “একটা জাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে হলে কমপক্ষে একটা প্রজন্মকে স্যাক্রিফাইস করতে হয়”।গণজাগরণে চত্বরে যোগ দিয়েছেন ১০ বিদেশি। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার এই নাগরিকরা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।আগত এইসব বিদেশিদের হাতে ছিল লাল সবুজ পতাকা। কাশিমপুর কারাগারে কি সুইপারের কাজ নাই ?যদি থাকে, তবে কাদের মোল্লাকে কারা কর্তৃপক্ষ বাগানে মালির কাজ দিলেন কোন আক্কেলে ?একজন মহিলা ভিক্ষুক আজকে সারাদিন মিতিঝিল ও রাইতুল মোকারম এলাকায় ভিক্ষা করে ৩৪৫ টাকা ভিক্ষা পায় আর সেই টাকা নিজের জন্য খরচ না করে নিজে না খেয়ে শাহবাগে যারা আন্দোলন করছে তাদের জন্য ৩৪৫ টাকার চিড়া ও মিঠাই কিনে নিয়ে আসে আর তা ঘোষনা মঞ্চে জমা দেয়....।কাদের মোল্লারে জেলখানায় কেউ পিটায়া মাইরা ফালাইত! একটা ঝামেলা মিটে যেত ।দেশের সব রাজাকারের তালিকা তৈরি করে ছবি সহ শাহবাগে টানিয়ে দেওয়া হোক।তারুনের এই জাগরন জামাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।শাহবাগের এই রাজাকার বিরোধী জাগরন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ফেইসবুক এর পাশাপাশি সামহোয়্যার ইন ব্লগ এর ও দারুন ভুমিকা। সত্যি বলতে, সামহোয়্যার ইন ব্লগ খুবই অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে।রাজধানীর শাহবাগে কাদের মোল্লাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলা প্রতিবাদ আর আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলনরত তরুণ প্রজন্মকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনে হয়েছে এ এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ। তিনি বলেন, ‘আমার মনও শাহবাগের আন্দোলনে ছুটে যেতে চায়।’
false
hm
রামপালে বামপাল: ০১ ২০১৬ সালের ১২ জুলাই বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) সাথে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেডের (বিএইচইএল) একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় [১]। এ চুক্তির আওতায় বাগেরহাটের রামপালে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি কয়লাচালিত ইউনিটের মাধ্যমে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে চলনতৈরি অবস্থায় বিআইএফপিসিএলের কাছে হস্তান্তর করবে বিএইচইএল। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের উত্তর সীমান্ত থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় দেশের অন্যতম বৃহৎ বনাঞ্চল এবং বহু বিপন্ন প্রজাতির একমাত্র আবাসভূমি সুন্দরবনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন বিভিন্ন মহল। সুন্দরবন নিয়ে দেশের নাগরিকদের উদ্বেগকে তাচ্ছিল্য করার কিংবা ক্ষতির সম্ভাবনাকে অস্বীকার করার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। সুন্দরবনের ওপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্লেষণও এই লেখার আধেয় নয়। আমি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি মহলের প্রচারণার পেছনে কয়েকটি ভুল ধারণা এবং/অথবা মিথ্যাকে ধরিয়ে দিতে চাই কেবল। সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম সুরক্ষাপ্রাচীর। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছর যে অমিত শক্তিশালী ঝড় ভূখণ্ডের দিকে ধেয়ে আসে, তার একটি বড় অংশ কাবু হয়ে পড়ে সুন্দরবনের কারণে। সুন্দরবনের ক্ষতি তাই কেবল এর একক জৈবমণ্ডলের জন্যেই নয়, বাংলাদেশের মানুষের জন্যেও এক বড় ও সরাসরি হুমকি। তাই সুন্দরবন প্রসঙ্গে কারোই শৈথিল্য প্রদর্শনের অবকাশ নেই। কোনো নাগরিক যদি সুন্দরবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, সরকারকে সে উদ্বেগ প্রশমনের জন্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। রামপাল নিয়ে সরকারের তরফ থেকে নাগরিক উদ্বেগ প্রশমনের জন্যে কোনো সমন্বিত পদক্ষেপ দেখা যায় নি। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কিছু মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কেবল, যা প্রমাণ করে, সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশ তার নিজের দায়িত্ব পালনে উদাসীন বা অপারগ। কিন্তু এর বিপরীতে জনমনে উদ্বেগ ছড়ানোর জন্যে প্রচুর লেখালেখি চলছে। সেগুলোর বেশির ভাগই যৌক্তিক। কিন্তু একটি অংশ সুন্দরবনের আশু ধ্বংসের চিত্র এঁকে যাচ্ছে ক্রমাগত, যার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সুন্দরবন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে নাগরিকদের অজ্ঞতা বা অস্বচ্ছ ধারণা, সেইসাথে কিছু অসত্য আর অপ্রযোজ্য যুক্তি। সেগুলোর খানিক ব্যবচ্ছেদ করাই আমার প্রয়াস। সুন্দরবন নিয়ে আমরা প্রতিটি মুহূর্তে সজাগ আর উদ্বিগ্ন থাকতে চাই, কিন্তু ভুল বা মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে নয়। সচলায়তনে প্রকাশিত একটি পোস্টে জনৈক অতিথি লেখক সুন্দরবনের ওপর রামপালের কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে গবেষণালব্ধ সূত্রসহ আলোচনা করেছেন [২]। পাঠকের আলোচনায় প্রসঙ্গটির কয়েকটি দিক আমাদের সামনে প্রসারিত হয়েছে। এর মাঝে একটি আগ্রহোদ্দীপক দিক হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতীয় কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা থাকায় জনমনে বিরূপ ধারণা। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের একটি বড় অংশ বৈরী মনোভাব পোষণ করে, যার পেছনে সঙ্গত ও অসঙ্গত কারণ রয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যে দরপত্রে অংশ নেয় দুটি কনসোর্শিয়াম ও একটি কোম্পানি [৩], যথাক্রমে: (১) জাপানের মারুবেনী করপোরেশন ও ভারতের লারসেন এন্ড টুবরো লিমিটেড কনসোর্টিয়াম, (২) চীনের হারবিন ইলেক্ট্রিক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড ও ইটিইআরএন এবং ফ্রান্সের আলসটম কনসোর্টিয়াম (৩) ভারতের কোম্পানি ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল)। দরপত্রের বিচারে চীনের হারবিনগোষ্ঠী ভারতের বিএইচইএলের কাছে হেরে যায়। রামপালে চীনের উদ্যোগে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে একটি মহলের তরফ থেকে সুন্দরবন নিয়ে এখন যে অ্যাপোক্যালিপ্সু প্রচার চালানো হচ্ছে, সেটা দেখা যেতো না বলেও অনেকে মনে করেন। চীনের প্রতি তাত্ত্বিক ও আর্থিক কারণে দুর্বল এই গোষ্ঠীটি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের সম্ভাব্য ক্ষতির ওপর ভারতবিদ্বেষের প্রলেপটি সুচারুভাবে মাখিয়ে জনসমক্ষে উপস্থাপন করায় বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে জনমানসে সুন্দরবনকে ইতিমধ্যে খরচের খাতায় ধরে নেওয়ার একটি প্রবণতা দৃশ্যমান হয়েছে। সুন্দরবনের সাথে ভারতবিদ্বেষের সেতু হিসেবে একটি কথা এই গোষ্ঠীটি প্রবলভাবে প্রচার করছে। সেটি শুনতে অনেকটা এমন: ভারতের আদালত (প্রচারান্তরে সুপ্রিম কোর্ট) তো সুন্দরবনে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেয় নি। তাহলে ভারত কেন বাংলাদেশের সুন্দরবনে এই কেন্দ্র বানাচ্ছে? খোঁজ-না-রাখা শ্রোতা/পাঠকের কাছে এ প্রশ্নটির সাথে প্রশ্নের আড়ালে উত্তর আকারে থাকা এক গোপন গভীর ষড়যন্ত্রও উন্মোচিত হয়। নিশ্চয়ই ভারত বাংলাদেশের সুন্দরবন ছারখার করার জন্য এই কাজ করেছে, যেভাবে তারা সানি লিওনকে দিয়ে আমাদের তরুণ সমাজের বাম হাতের পেশী ছারখার করে যাচ্ছে। কারণ দুশ্চরিত্র ভারত তো সারাক্ষণ এগুলোই করে, তাই না? যদিও "সুন্দরবন ধ্বংস করার এই হীন চক্রান্তে" শামিল হওয়ার জন্য কেন "জাপান", "চীন" ও "ফ্রান্স"ও দরপত্রে অংশ নিয়েছিলো, সে ব্যাপারে (বিশেষ করে চীনের ব্যাপারে) মহলটি চুপ থাকে। "সুন্দরবনে" কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানোর ব্যাপারে ভারতের আদালতের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি নিয়ে আরো খোঁজ করলে আমরা একটা সাধারণ, আটপৌরে গল্প জানতে পারবো। এই পোস্টের সেটিই উপজীব্য। ইউনিভার্সাল ক্রিসেন্ট পাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড (ইউসিপিপিএল) নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি, যেটি ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজ [৪] নামে একটি ব্যবসাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় হুগলি নদীব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হলদি নদীর মোহনায় অবস্থিত নয়াচর নামের একটি দ্বীপে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্যে পরিবেশ ছাড়পত্র চেয়ে ভারত সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাছে ধর্ণা দেয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্রমান্বয়ে মোট ১০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্যে ইউসিপিপিএলের একটি বোঝাপড়া হয়, এটি তারই প্রথম ধাপ। পরিবেশ ছাড়পত্রের প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গণশুনানির আয়োজন করে ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রক বরাবর যাবতীয় তথ্য ও দলিল পাঠায়। সেখানে ২০১২ সালের ৫-৬ মার্চ বিশেষজ্ঞ কমিটি শুনানির তথ্য যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্তে আসেন, প্রস্তাবিত স্থানটি পরিবেশগত দিক থেকে সংবেদনশীল, তাই সরজমিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে, নয়াচরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে কি না। ২০১২ সালের ১০-১২ এপ্রিল তাঁরা নয়াচরে গিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন, যাতে বলা হয়, নয়াচর হুগলি নদীর মোহনায় গড়ে উঠেছে বলে এটি একাধারে মোহনার পরিবেশ ও হুগলি চ্যানেলের নাব্যতার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। এখানে কোনো ধরনের নির্মাণকাজ করলে হুগলির মোহনার পরিবেশ ও নাব্যতা দুটিই ব্যাহত হবে। সেই সাথে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্গমন এই নয়াচরে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদবলয়ের ক্ষতি করলে নয়াচরের গাঠনিক ভারসাম্য পরিবর্তিত হতে পারে (পোস্টলেখকের নোট: যা আবার ঘুরে ফিরে হুগলি চ্যানেলের নাব্যতাকে প্রভাবিত করবে)। মোদ্দা কথা, নয়াচরে বিদ্যুৎকেন্দ্র করলে কলকাতা বন্দরে জাহাজ ঢুকতে সমস্যা হবে। ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির এই প্রতিবেদনে নয়াচরের সাথে সুন্দরবনের কোনো সম্পর্ক নেই। মাতলা নদীকে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের পশ্চিম সীমান্ত ধরলে সেখান থেকে নয়াচর প্রায় ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। পাঠকের জন্যে গুগল ম্যাপে নয়াচর ও সুন্দরবনের অবস্থান পরিবেশন করা হলো। নয়াচরের সাথে সুন্দরবনের সম্পর্কের একটি (প্রথম) সূত্র এখানে প্রাসঙ্গিক। সেটি হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। ম্যানগ্রোভ বা গরানজাতীয় উদ্ভিদ ক্রান্তীয় সকল উপকূলেই দেখা যায়। নয়াচরে যেমন ম্যানগ্রোভ রয়েছে, তেমনই রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে, তেমনই রয়েছে মহেশখালীতে। সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেসব ভূভাগ জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় আর ভাটার পানিতে জেগে ওঠে, তার সবটুকুই ম্যানগ্রোভের দখলে। পাঠক, এই সূত্রটা একটু স্মরণে রাখুন। এদিকে সরজমিন হন্তদন্ত তদন্ত শেষে ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিবেদনের সিদ্ধান্তে জানালেন, মোহনায় গড়ে ওঠা চরে কোনো ধরনের ভারি শিল্প স্থাপন চলবে না। নয়াচর যেমন ছিলো তেমন রেখে দিতে হবে। এটাকে ম্যানগ্রোভের বিস্তার সম্পর্কে জানার জন্যে এক প্রাকৃতিক গবেষণাগার হিসেবে দেখতে হবে। বড়জোর এখানে পরিবেশপর্যটন করা যেতে পারে, নয়তো নোনাপানির ঘের। সেইসাথে তারা উল্লেখ করেন, এই প্রকল্পের প্রস্তাবে কোথাও বলা নেই যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মোহনায় অবস্থিত এমন একটি চরে স্থাপন করা হবে। অর্থাৎ, ইউসিপিপিএল গোড়াতেই ব্যাপারটা চেপে রেখে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি এই প্রতিবেদন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আমলাদের সামনে ইউসিপিপিএলের প্রতিনিধিদের কাছে উপস্থাপন করে বলেন, আপনারা এটা ভালোমতো পড়েশুনে আবার আমাদের কাছে আসবেন। ইউসিপিপিএলকে বিকল্প জায়গা খোঁজার পরামর্শও তারা দেন। কিন্তু অচিরেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার একটি পাল্টা কমিটি গঠন করে ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির এই প্রতিবেদনকে নাকচ করে দেন। পাল্টাকমিটি বলে, সবকিছু ঠিকাছে। নয়াচর মোটেও সিআরজেড বা উপকূলীয় নিয়ন্ত্রণ এলাকা নয়। আলবাত বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো চলবে। পাঠক, এখানে আলগোছে বলে রাখি, উপকূলীয় নিয়ন্ত্রণ এলাকা হচ্ছে ভারতের পরিবেশ (সুরক্ষা) আইন, ১৯৮৬তে বর্ণিত এলাকা, যা মূলত জোয়ারের সময় ডুবে যায়, আবার ভাটার সময় জেগে ওঠে [৫ এবং ৬]। জোয়ারসীমা থেকে দূরত্ব হিসাব করে এই এলাকাকে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রথম ভাগ সিআরজেড ১ সবচেয়ে নাজুক। প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ গুতাগুতির সাথে সামান্য হলেও পরিচিত, তারা জানেন, সরকারের এক অংশের কমিটির সাথে সরকারের অন্য অংশের কমিটির লড়াইকে সংক্ষেপে "লালফিতা পর্ন" বলা যেতে পারে। তার ওপর ভারতে এ ঘটনায় লড়াই আবার কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে রাজ্য সরকারের। তাই একটা পর্যায়ে এসে ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি বললো, সবই তো বুঝলাম, এইবার তিনমাসের মধ্যে আটখান দলিল দাখিল করেন দেখি। এই আট দলিলে তারা সাত ধরনের বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন আর মামলার বৃত্তান্ত চেয়ে বসেন। এরপর দিন গেলো, মাস গেলো, কিন্তু প্রকল্পের প্রস্তাবকদের আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। তারা বিবেকের মতো, ঈশ্বরের মতো, তথ্যসূত্রের দাবির মুখে বামাতি বিপ্লবী ভাইদের মতো নির্বাক, মৌন মেরে রইলো। ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রক তিন মাসের মধ্যে জিনিসপাতি না পেয়ে এই প্রকল্পের প্রস্তাব তাদের নথি থেকে ডি-লিস্ট করে দেয়। যদিও তারা ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারিতে একটা চিঠি আর ২১ অগাস্ট একটা তাড়া দিয়ে প্রকল্পের বাপমাদের তাগাদা দিয়েছিলেন, কিন্তু ঐ আট দলিলের ঘায়ে ঘায়েল ইউসিপিপিএল আর সাড়াশব্দ করে নি। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য উপকূলীয় এলাকা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এসসিজেডএমএ) সেই ২০০৮ সালে ২৮ জানুয়ারি নয়াচরের কিসিম পাল্টে সিআরজেড-১ থেকে সিআরজেড-৩ করার প্রস্তাব করেছিলো, কিন্তু পরিবেশ ও বন মন্ত্রক সেখানেও দুটো খাটনি ধরিয়ে দেয়। বলা হয়, এসসিজেডএমএ তাহলে নতুন করে নয়াচরের জন্য উপকূলীয় এলাকা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করবে, আর নয়াচরে তীরসুরক্ষা কাঠামো নির্মাণ করতে গেলে তার জন্যে মন্ত্রকের অনুমোদন নিতে হবে। এই হচ্ছে নয়াচর নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে ভারতের রাজ্য সরকারের (যারা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করাতে চেয়েছিলো) মধুর লালফিতা-পূর্বরাগ। এ একটা ফাইল দিয়ে মারে, তো ও আরেকটা ফাইল দিয়ে মারে। এদিকে নয়াচরে যেসব জেলেরা মাছ ধরে খান, তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন নি। নয়াচরে তাদের লোনাপানির ঘের রয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়লে সেটা পয়মাল হবে। তাই তারা সোজা চলে গেছেন কলকাতা উচ্চ আদালতে, রিট ঠুকে দিয়েছেন। পাঠক, ম্যানগ্রোভের পর নয়াচরের সাথে সুন্দরবনের দ্বিতীয় সম্পর্ক এই রিটে রয়েছে। রিটে এই জেলেরা বলেছিলেন, নয়াচরে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়লে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লক্ষ্য করুন, এটা রিটের ভাষ্য, আদালতের বক্তব্য নয়, বা কোনো বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন নয়। রিটের জের ধরে ভারতের জাতীয় পরিবেশ ট্রাইবুনাল নয়াচরের জেলে সমবায় সমিতির দাবি পূরণ করে রায় দেন এবং বলেন, যেহেতু নয়াচর নাজুক সিআরজেড ১ এলাকা হিসেবে শ্রেণিকৃত, কাজেই এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চলবে না। ঘটনা এতটুকুই [৭]। চীনের হারবিনগোষ্ঠী যখন রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো, দেশে ময়দানে নামলো বামপাল গোষ্ঠী। তারা গলা ফাটিয়ে বলে যেতে লাগলো, এবং এখনো বলে যাচ্ছে, ভারতের আদালত সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেয় নাই আর ভারত আমাগো সুন্দরবনে আইসা বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাইতেছে, সুন্দরবনটারে জ্বালাইয়া কালা বানাইবো, আমি দ্যাশের মালিক আমি এইসব চাই না, হ্যানোত্যানো। তাদের কল্যাণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গরু আদালতের গাছে উঠে যাচ্ছে প্রতিদিন। কেন সুন্দরবন জ্বালিয়ে কালো বানানোর জন্যে চীনা হারবিন দরপত্রে অংশ নিয়েছিলো, সে প্রশ্নটা আপাতত চাপা আছে। ফ্যাক্ট হচ্ছে: ১. ভারতে কেউ "সুন্দরবনে" বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চায় নি, করতে চেয়েছে নয়াচরে, যেটা সুন্দরবন থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। ২. আমাদের দেশেও কেউ "সুন্দরবনে" বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে না, করছে রামপালে, যেটা মংলা বন্দরেরও উত্তরে, সুন্দরবনের উত্তর সীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে (ক্ষয়ক্ষতি হবে কি হবে না, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মত কাম্য)। ৩. নয়াচরে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল হয়েছে কলকাতা বন্দরের হুগলি চ্যানেলে নাব্যতা হারানোর আশঙ্কা থেকে, সুন্দরবনের ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে নয়। ৪. সুন্দরবনের সাথে এই পরিবেশ ট্রাইবুনালের রায়ে নিষিদ্ধ নয়াচর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির সাথে কেবল দুটো সূত্র জড়িত, এক, "ম্যানগ্রোভ" শব্দটি, দুই, মামলার বাদী জেলেদের রিটে বর্ণিত আশঙ্কা (আমাদের দেশেও রিট ঘাঁটলে "তরুণ সমাজ ধ্বংস" হওয়ার কথা পাওয়া যায়)। আদালতের রায়ে বা বিশেষজ্ঞদের মতামতে নয়াচরের প্রকল্পের সাথে সুন্দরবনের কোনো সংযোগ নেই। ৫. নয়াচরের সাথে একই কষ্টিপাথরে রামপালকে যাচাই করলে দেখা যাবে, রামপাল কোনোভাবেই সিআরজেড ১ বা এমন নাজুক কোনো এলাকা নয়। রামপাল জোয়ারের সময় পানির নিচে তলায় না, ভাটার সময় জেগে ওঠে না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে কি তাহলে সুন্দরবনে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না? আমরা কি সুন্দরবন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকবো না? পান থেকে চুন খসলেই কৈফিয়ত চাইবো না সরকারের কাছে? নিশ্চয়ই আমরা উদ্বিগ্ন থাকবো, সরকারকে এই প্রসঙ্গে দৌড়ের ওপরে রাখবো, সুন্দরবনের ওপর রামপালের প্রভাব নিয়ে সরকারকে সম্ভাব্য সব রকমের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে মত জানাতে চাপ দেবো, সেগুলো নিয়ে নিত্য কথা বলবো, চিৎকার করবো, প্রয়োজনে রাস্তায় নামবো। কিন্তু ধান্ধাবাজদের ছড়ানো অসত্যের ওপর ভিত্তি করে নয়। সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্যে মিথ্যুক বামপালের ছাতার নিচে আমাদের মাথা ঢোকাতে হবে কেন? তথ্যসূত্র: [১] বিডিনিউজ২৪.ডম: রামপালে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি [২] সচলায়তন.কম: আসেন সুন্দরবনকে ধ্বংস করি [৩] দৈনিক ইত্তেফাক: রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভেল-এর সাথে চুক্তি মার্চে [৪] www.usel.biz [৫] ভারতের পরিবেশ (সুরক্ষা) আইন, ১৯৮৬ [৬] উপকূলীয় নিয়ন্ত্রণ এলাকা প্রজ্ঞাপন, ১৯৯১ [৭] নয়াচরে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নিয়ে ভারতের জাতীয় পরিবেশ ট্রাইবুনালের পূর্ণাঙ্গ রায়
false
ij
গল্প_ অন্ধ দিন, অন্ধ রাত চৈত্র মাস বলেই আজকাল সকালের দিকে জানালা দিয়ে ঢোকা রোদের আলোয় ঘরজুড়ে আলোর মেলা বসে। ঘরটা তখন হলুদ রঙের ঝলমলে আলোয় ভরে ওঠে । বহুদিন হল এ শহর থেকে প্রজাপতিরা লুপ্ত হয়ে গেছে, নইলে প্রজাপতিরা ঠিকই এ ঘরের আলোর মেলায় ঢুকত । হঠাৎ চৈত্রের বাতাসে ওদের হলদে ডানাগুলো হেলে পড়ত। সকালের দিকে চোখ বুজে জানালার দিকে মুখ করে একটা চেয়ারে বসে থাকেন আবু জাফর। তার শৈশব জুড়ে হলুদ রঙের প্রচুর প্রজাপতি ছিল; সে প্রজাপতির দলও আজও তার স্বপ্নে জীবন্ত হয়ে ওঠে। কখনও জাগরণ মুহূর্তে তিনি জানালার দিকে তাকান। তার মুখে চোখে তখন চৈত্রের রোদের তাপ লাগে। চোখ বুজে থাকা সত্ত্বেও আলোর হলুদ আভা টের পান। সেই সঙ্গে পান অনাগত আমের মুকুলের কড়া গন্ধ । দোতলার জানালা ঘেঁষে একটা আম গাছ দাঁড়িয়ে। সে গাছে এখন অনাগত মুকুলের সমারোহ। আর ... সকালবেলার কাকেদের ঐক্যতান। হঠাৎ ঘরের সুগন্ধ বদলে যায়। আবু জাফর টের পেলেন তার স্ত্রী ঘরে ঢুকেছে। মমতাজের শরীরে এক ধরনের ভারি মিষ্টি গন্ধ লেপা থাকে-যে মিষ্টি গন্ধ টির অস্তিত্ব আবু জাফর আজ থেকে বাইশ বছর আগেই টের পেয়েছিলেন। মমতাজ কাছে এলে অন্যসব গন্ধ ছাপিয়ে কেবলই মমতাজের শরীরে মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে আজ থেকে বাইশ বছর আগে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভেবেছিলেন । তা আবু জাফর সৌভাগ্য শালী ঠিকই; পাস করে বিদেশি অষুধ কোম্পানীতে ভালো চাকরি পেলেন, লক্ষ্মী স্ত্রী পেলেন, পর পর তিন ছেলের বাবা হলেন। কিন্তু ... জীবন যে এমন ছলনা করবে কে জানত। আজকাল মমতাজের মায়াভরা মুখটিও ঝাপসা লাগে ... চারিপাশের সব কেমন আবছা হয় আসছে ...মমতাজ বলল, বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলছেন ।আবু জাফর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। মমতাজকে আজ বাড়িঅলা ডেকেছিলেন। আবু জাফর ক্ষীন উদ্বেগ বোধ করেন। তিন মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি। এমন হওয়ার কথা ছিল না। বছর তিনেক আগেও মধ্যপ্রাচ্যে ভালো চাকরি ছিল। ফার্মাসিস্ট। ভালো বেতন ছিল। তখন অনেককে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন। এখন সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ড্রপটা কই?ড্রয়ারে দেখ।দেখি-তিনি চোখ খোলেন। চোখের পাতা আঠা আঠা হয়ে থাকে। ঠান্ডা বিন্দু গড়িয়ে পড়ে, ছড়িয়ে যায়। আরাম লাগে। না পুরোপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে যান নি তিনি। তারপরও মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি টা থাকল না। প্রাইভেট ফার্ম। ম্যাজেনমেন্ট বলল, ফার্মাসিস্ট এর চোখ ভালো হতে হয়। অণুবীক্ষণযন্ত্রে কত কী দেখতে হয়। আপনি বরং দেশে ফিরে যান। আমরা এককালীন থোক টাকা দিয়ে দিচ্ছি। মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার আগেই এ বাড়িতেই ছিলেন। বাড়িঅলা ভালো মানুষ। তখন ভাড়া আটকাত না। এককালীন থোক টাকা কবে শেষ। বেশির ভাগ টাকা বেরিয়ে গেল চিকিৎসায়। ড. আহমেদ নিজাম বললেন, আপনার কেসটা রেয়ার। এক কাজ করুন। আপনি বরং একবার কিউবা যান। ওরা অনেক উন্নতি করেছে এ ফিল্ডে। তাই কি হয়। কিউবা গেলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে। ছেলেদের পড়াশোনা আছে ... এখন কয়টা বাজে। বাড়িটা এই সকালে সুনসান করছে। আবু জাফরের তিন ছেলের সবাই পড়ছে। ছোটটি এবার ক্লাস টেনে উঠল। বড় দুটি প্রাইভেট ইউনিভারসিটি পড়ছে। তারা হাত খরচের টাকা যোগাতে টিউশনি করছে-তবে মূল টাকাটা আবু জাফরকেই দিতে হয়। সেই মূলে টান পড়েছে অনেক আগেই ... কলিং বেল বাজল।মর্জিনা এল মনে হয়। খবর কাগজ গুটিয়ে মমতাজ উঠে চলে গেল। ঘরে রইল কেবল অনাগত মুকুলের কড়া ঘ্রান আর বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্বেগ। ঘরটায় মমতাজের শরীরের সুগন্ধ আর নেই। জানালা দিয়ে ঢোকা ঘরের রোদ অনেকটা সরে গেছে। আবু জাফর তবু পায়ের কাছে তাপ টের পান। নিচের গলিতে রিকশার টুংটাং। রিকশা চলে গেলে গলি আবার নির্জন। আজকাল বোধশক্তি প্রখর হয়ে উঠছে। অনেক দূর থেকে বিড়ালের পায়ের শব্দও যেন শুনতে পান। আজকাল রাতে ঘুম হয় না তেমন। তখন জেগে নানারকম শব্দ শোনেন। কত বিচিত্র রকম শব্দ। অন্ধত্বের কাছাকাছি না-এলে হয়তো-বা শোনা যায় না ...মাথার ওপর ফুল স্পীডে পাখা ঘুরছে। এক্ষুনি কারেন্ট চলে যাবে। দশটা বাজল কি? কাল সারারাত কারেন্ট ছিল না। ... চৈত্রের শেষ দিকে দেশে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ। খরতাপে পুড়ছে সারাদেশ। এসব অবশ্য আবু জাফরের সমস্যা নয়। বাড়িওয়ালা বলছেন বাড়ি ছেড়ে দিতে। কোথাও যাওয়ার নেই। কুমিল্লার জায়গা-জমি মেজ ভাই ভোগ দখল করছেন। ( আবু জাফরের বড় ভাই অনেক আগেই মারা গেছেন। ) মাস কয়েক আগে মমতাজকে নিয়ে গিয়েছিলেন বরুড়া। চোখে রোদ লাগানো নিষেধ-তা সত্ত্বেও বাসে চেপে গিয়েছিলেন- যদি পৈত্রিক সম্পত্তি বেচে কিছু টাকা পাওয়া যায়। তিন ভাইয়ের ভাগে পাঁচ কানি করে সম্পত্তি। মেজ ভাই মিজান মির্দা অতি ধুরন্ধর লোক। সব জমি বর্গা দিয়ে রেখেছেন। জমি বিক্রির কথা উঠতেই মেজ ভাই মিজান মির্দা বললেন, হায়, হায় কস কি জাফর... বাপ-দাদার জমি বেইচবি? বাপ-দাদার মানইজ্জ্বত আছে না, মির্দা বাড়ির ইজ্জ্বত আছে না ...জমি বেচবি শুইনা লোকে কইব কি? বরুড়া থেকে ভগ্ন মনোরথে ফিরে এসেছেন। বরুড়ায় এখন কানি কত করে - তাও জানা যায়নি। না, কুমিল্লায় পৈত্রিক ভিটায় ফিরে যাওয়া সম্ভব না। গত মাসে মেজ ভাই একবার ঢাকায় এসেছিলেন। আলগা দরদ দেখিয়ে বললেন, লও, যা হইবার হইছে। লও আমাদের লগে থাকবা চল। আবু জাফর রাজী হননি। মেজ ভাইকে দুদিন বাড়িতে রেখে যত্নআত্বি করে বিদায় করেছেন। আজ আদর করে ডেকে নেবে- দু’দিন পর এমন তিক্ত পরিবেশ তৈরি করবেন যেন পৈত্রিক ভিটায় থাকা না যায়। আবু জাফর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তিনি ছাপা লুঙ্গি আর সাদা ফতুয়া পরে আছেন। ফরসা ভরাট মুখে ঘাম জমেছে। মুখ ভরতি কাঁচাপাকা দাড়ি। দীর্ঘ স্বাস্থবান শরীর- দেখলেই বোঝা যায় এ মানুষটির শরীরে পুরোপুরি বাঙালি রক্ত বইছে না; পশ্চিমা মুসলমানী রক্তের মিশেল আছে। আবু জাফরের মাথায় টুপি, হাতে তসবিহ্ । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও আজকাল সারাক্ষণই জিকির করেন। ছাত্রজীবনে তেমন রিলিজিয়াস ছিলেন না। মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি হওয়ার পরই ধর্মেকর্মে মতি ফিরেছিল। তারপর সে বিশ্বাস দিনদিন আরও গভীর হয়ে ওঠে। আজকাল এমন ভাবে জিকির করেন যেন আল্লাহতালা ফেরেস্তা পাঠাবেনই। দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবেন কিংবা ... অশেষ রহমত বর্ষন করবেন। হ্যাঁ, সে রকম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বৈ কী। আবু জাফরের শ্বশুরের বয়স হলেও আজও বেঁচে আছেন। চাকরি জীবনে মোহম্মদপুর দোতলা বাড়ি করেছেন সৈয়দ ইসমাইল লতিফ। বড় মেয়ের দুর্দশার কথা জানেন। আরও দুটি তলা বাড়ানোর জন্য হাউস বিল্ডিংয়ে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সৈয়দ ইসমাইল লতিফ তিন মেয়ে এক ছেলে। মমতাজ বড়, বড় কন্যার জন্য অসম্ভব টান। তাছাড়া এ দেশের আইনে মেয়েরা বাবার সম্পত্তি পায়। তিন তলা কমপ্লিট হলে একটা ফ্ল্যাটে উঠে চলে যেতে পারবেন। বাড়িঅলার সঙ্গে শীতল যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে না। এইটুকু না মালিক ... তোমার আরও আরও করুণার বর্ষন লাগবে মালিক ...এত অল্পে পাড়ি দেওয়া যাবে না অন্ধ দিন ও রাত ...আমি তোমার করুণার অপেক্ষায় রয়েছি মালিক ...বাড়িওয়ালা যথেষ্ট ভদ্র, এখনও অনেক মোলায়েম আচরণ করেন। তারপরও যখন বাড়ি ছেড়ে দিতে বলছেন তখন তো আর থাকা যায় না ...কিন্তু, কোথাও যাওয়ার নেই মালিক।আবু জাফর টের পেলেন চোখে আরাম লাগছে। চোখের ড্রপটা আরাম দেয়। অল্প ঘুমও পায়। দিনের বেলায় ঘুমানোর পক্ষপাতী তিনি নন। আজকাল যখনক্ষণ জেগে থাকেন দোজাহানের মালিকের কাছে প্রার্থনায় ডুবে থাকেন। মমতাজ ফিরে এসে আরেকটি দুঃসংবাদ দেয়। মর্জিনা আর সামনে মাস থেকে কাজ করবে না বলল।কেন?দেশে চলে যাবে বলল। ওর বিয়ের কথাবার্তা চলছে।ও। আবু জাফর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেয়েটি ভালো ছিল। ঠিক কর্মাশিয়াল না, আন্তরিক। ‘মামা’, ‘মামা’ করে। মমতাজ বাড়ি না-থাকলে পরম যত্নে চোখের ড্রপ দিয়ে দেয়। একটা মেয়ের অভাব বোধ করেন আবু জাফর। আবার ভাবেন মেয়ে নেই ভালো হয়েছে।এই দুর্যোগে মেয়েটার মুখ শুকিয়ে থাকত। ...মর্জিনা চলে যাচ্ছে। আবু জাফর শিউরে উঠলেন। এ বাড়ির পাট কি চুকল। ... মনে মনে বেহেস্তের ফেরেস্তার আগমনের প্রতীক্ষা করছেন। মমতাজ বলল, বাবা যদি বাড়িটা এরই মধ্যে শেষ করে ফেলেন তো মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলবে। বাড়িঅলা যতই ভালো হোক -অভদ্র আচরণ না করলেও শীতল আচরণ করলে কার ভালো লাগে। হুমম। আবু জাফরের দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে পড়ে । মমতাজ বলে, তিন তলা কমপ্লিট হলে একটা ফ্ল্যাটে উঠে চলে যেতে পারতাম। আবু জাফর চুপ করে থাকেন। তিনি জানেন অত সহজ না। মমতাজের একটাই ভাই। আতিক-বড় একটা প্রাইভেট ফার্মে আছে; আতিকের বউ জিনাত, জিনাত ডাক্তার। ভারি অহঙ্কারী জিনাত । অহঙ্কারী আর জেদি। দিনরাত বুড়ো শ্বশুর-শাশুড়িকে কথায় কথায় শাঁশায়। মোহম্মদপুরের বাড়িটা একাই দখল করার পায়তাঁরা করছে। আতিক একটা ভাম ...যাক, ওসব পরের কথা। আপাতত তিন মাসের ভাড়া শোধ করতে হবে। তিন চৌদ্দ বিয়াল্লিশ হাজার টাকা এখুনি লাগবে। টিঙ্কুর সেমিষ্টারের ফিটা এ মাসেই দিতে হবে। মমতাজ টাকাটা সংসারের খরচ ছাঁটাই করে এত কষ্ট করে জমাল। এখন বাড়ি ভাড়া দিই না টিঙ্কুর সেমিষ্টারের ফি দিই ...এমন দিশেহারা অবস্থা। কলিং বেল বাজল।কে এল এ সময়ে? দুধঅলার তো আসার কথা না, গতমাসে তাকে বিদায় করা হয়েছে। পেপারঅলা কি? মর্জিনা রান্নাঘরে বাসন মাজতে বসেছে। ওর এঁটো হাত। মমতাজ উঠে যান।আবু জাফর অপেক্ষা করেন। ঘরের ভিতরে এখন গভীর ছায়া। কেবল জানালার কাছে চৈত্রের ঝকঝকে রোদ। রোদলাগা আমপাতা ; নিচে গলি। রিকশার টুংটাং শব্দ। রিকশাটা চলে যেতেই আবার গভীর নির্জনতা। ফ্রক পরা ছোট্ট একটি মেয়ে মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে ফিরছে। না, এই দৃশ্যটা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। অথচ তার মনে হচ্ছে রোদময় গলিতে ফ্রক পরা ছোট্ট একটি মেয়ে মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে ফিরছে। কাছেই অঙ্কুর নামে একটি ছোটদের কিন্ডারগার্ডেন। সে স্কুলের রোদেলা প্রাঙ্গন ঘিরে উড়ছে অনেক হলুদ প্রজাপতি। স্কুলের চারিদিকে চারতলা-পাঁচতলা দালান। এসব দরদালান আর তার ভিতরের জনমানুষের সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক? আমি কি এসবের সঙ্গে সর্ম্পকিত? যদি তাই হয় তো আমার নিজেকে এত দূরের মনে হয় কেন? রোদময় একটা শহরে আমি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। কই, আমার পাশে এসে কেউ তো দাঁড়াচ্ছে না? তিন মাসের বাড়িভাড়া বাকি পড়ল। এখন ...মমতাজ ফিরে এসে বলল, দেখ কে এসেছে।কে? মিঠু। মিঠু? কোন মিঠু?আহা, রোকেয়ার ছেলে মিঠু। তোমার ফুপাতো বোন রোকেয়া, কেন তোমার মনে নেই?ও হ্যাঁ, মনে আছে । মিঠু এসেছে?হ্যাঁ।এস, বাবা, এস। মামা ভালো আছেন? ঝকঝকে তরুণ কন্ঠ। মিঠুর মুখটা মনে করার চেষ্টা করলেন। অনেকদিন আগে দেখেছেন। মনে পড়ল না। টের পেলেন- একজন কেউ সালাম করল। কড়া অপরিচিত পারফিউমের গন্ধে ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মমতাজের শরীরের মিষ্টি গন্ধ বুঝি ম্লান হয়ে এল। বস বাবা, বস। চেয়ার টানার শব্দ হল। মিঠু মনে হয় বসল। মর্জিনা! মর্জিনা! আমাদের চা দে তো। খানিকটা উচুঁ গলায় মমতাজকে বলতে শুনলেন। জানত তো মিঠু জাপানে থাকে, ওসাকায়। ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়। ও। আবু জাফরের মনে পড়ল জাপান যাওয়ার আগে মিঠুর মা রোকেয়া এসে ২ লাখ টাকা ধার নিয়েছিল। রোকেয়ারা তখন নাখালপাড়ায় থাকত, রোকেয়ার স্বামীর কিডনি বিকল হয়েছিল ...আর লিভার সিরোসি ... রোকেয়া গত বছর মারা গেছে ... রোকেয়ার স্বামী মিঠুর বাবাও বেশি দিন বাঁচেন নি। মিঠু বেশিক্ষণ বসল না। তাড়া আছে, কোন্ সেমিনার না সিম্পোজিয়ামে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ বিষয়ে ‘স্পিচ’ দেবে। চা খেয়ে যাওয়ার আগে বলল, মামা এটা রাখেন।কি রে মিঠু?মিঠু চুপ করে থাকে। আবু জাফর টের পেলেন তার হাতে মিঠু কি একটা গুঁজে দিয়েছে। একটা খাম মনে হল।মিঠু চলে যাওয়ার পর মমতাজ বলল, ২ লাখই আছে । কী ভালো ছেলে দেখ!আবু জাফর শ্বাস টানলেন। হাতের তসবিহ্টা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেন। বিড়বিড় করে বলেন, এইটুকু না মালিক ... আমার জীবনের ডুবন্ত নৌকা উদ্ধার করতে তোমার আরও আরও করুণার বর্ষন লাগবে মালিক ...এত অল্প করুণায় এইসব অন্ধ দিন ও রাত পাড়ি দেওয়া যাবে না মালিক...আমি তোমার করুণার অপেক্ষায় রয়েছি মালিক ...
false
hm
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও আড়ড়ড়ড়জে অপহরণ রহস্য ১. দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি, যিনি স্বাভাবিক অবস্থায় চতুর্দিকেই বেশ ধারালো, কিন্তু বিপদে পড়ে ঘাবড়ে গেলে নিতান্তই ভোঁতা হয়ে যান, উদভ্রান্ত মুখে বললেন, "স্যার, এখন আমার কী হবে?" গোয়েন্দা ঝাকানাকা আনমনে একটা কানকাঠি দিয়ে কান চুলকাচ্ছিলেন, তিনি নিমীলিত চোখে উদাস গলায় বলেন, "একটা এমপিথ্রি প্লেয়ার কিনে ফেলুন। কিংবা আইপড।" কিংকু চৌধারি ফোঁসফোঁস করে বলেন, "না স্যার! তা হয় না! দুধের স্বাদ মাঠাতে মেলে না!" ঝাকানাকা বলেন, "মাঠা খারাপ কী? দুধের মধ্যেই তো মাঠা থাকে। আর যেসব বাড়তি জিনিসপত্র দুধে থাকে, সেগুলো নিতান্তই বাহুল্য।" কিংকু চৌধারি ফুঁপিয়ে ওঠেন, "না স্যার! বাহুল্য নয়! এফএম রেডিও না শুনলে আমার শরীর চাবায় স্যার!" ঝাকানাকা এবার কানকাঠির অন্য প্রান্ত দিয়ে অপর কান চুলকাতে থাকেন, আরামে তাঁর চোখ বুঁজে আসে। "তারা কি সব এফএম রেডিওর দোকান গুটিয়ে বাড়ি বসে আছে নাকি? রেডিও তো শুনলাম দিব্যি চলছে। একটু আগেও শুনছিলাম "জাম নিয়ে গিয়ানজাম" ...।" কিংকু চৌধারি চোখের জল মোছেন ইউনিফর্মের হাতায়। "বাছা বাছা সব আরজেগুলিকে তুলে নিয়ে গেছে স্যার! ওরা না থাকলে এফএম রেডিও শুনে লাভ কী?" ঝাকানাকা বললেন, "কাদের?" কিংকু চৌধারি এবার উঠে দাঁড়িয়ে পকেট হাতড়ে একটা কাগজ বার করেন। "রেডিও ঝাঞ্জাইলের আরজে ছোলায়মান, রেডিও তুলকালামের আরজে নূরজাহান, রেডিও পটাশিয়ামের আরজে আবুল লেইছ, রেডিও গিলগামেশের আরজে গুলবদন ... আর," গলাটা ধরে আসে কিংকু দারোগার, "রেডিও হুটোপুটির আরজে মুনমুনমুন!" ঝাকানাকার হাত থেমে যায় হঠাৎ। কানকাঠিটা কান থেকে বার করে নিয়ে তিনি ঘাড় ফেরান, মানে কান ফেরান আর কি। "কাম অ্যাগেন?" কিংকু চৌধারি বিরসমুখে আবার বলতে শুরু করেন, "রেডিও ঝাঞ্জাইলের আরজে ছোলায়মান ...।" ঝাকানাকা বাধা দেন। "উঁহু। উঁহুহু। ওসব না। শেষ নামটা আবার বলুন।" কিংকু চৌধুরির চোখ ছলছল হয়ে আসে সদ্যোজাত বাছুরের মতো। "রেডিও হুটোপুটির আরজে মুনমুনমুন স্যার!" ঝাকানাকা একটি ভুরু ওপরে তুলে শুধান, "মুনমুনমুন? একটা মুন বেশি হয়ে গেলো না?" কিংকু চৌধারি সটান দাঁড়িয়ে বলে, "নো স্যার! ঠিকই শুনেছেন! মুনমুনমুন! ওর ফ্যানরাও হরদম এই ভুলটাই করে স্যার! রায়েরবাজার থেকে ঝুমা, তৃষা, দীপ্তি, লিটন, সদরুল আর বেবি এসেমেস পাঠিয়ে বলে, ডিয়ার মুনমুন আপু আমরা তোমাকে অনেক লাভ করি! তখন মুনমুনমুন হেসে শুধরে দেয় স্যার! বলে, আমিও তোমাদের অনেক লাভ কড়ি ড়ায়েড়বাজাড়েড় ঝুমা, তৃষা, দীপ্তি, লিটন, সদড়ুল আড় বেবি! কিন্তু আমাড় নাম মুনমুন নয়, মুনমুনমুন! ডোন্ট মিস দ্য লাস্ট মুন, দ্যাটস হোয়াট মেইক্স মি মুনমুনমুন, অন ইওর ডিয়াড়েস্ট মিউজিক প্রোগ্রাম, গুনগুনগুন উইথ মুনমুনমুউন, ঔনলি অন ড়েডিও হুটোপুটিইইইই!" ঝাকানাকা রক্তিম চোখে কিংকু চৌধারিকে আপাদমস্তক মাপেন একবার, মুখে কিছু বলেন না। কিংকু দারোগা রুমাল বার করে চোখ মোছেন। ঝাকানাকা আবার কানকাঠিটা ঢোকান ভালো করে না চুলকানো কানটায়। "তা কিংকর্তব্য স্থির করেছেন কিছু?" কিংকু চৌধারি মাথা নাড়েন বিহ্বল মুখে। "আমি তো বিমূঢ় হয়ে পড়েছি স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "তা এই ঘটনা ঘটলো কীভাবে, খোঁজ নিয়েছেন?" কিংকু চৌধারি বসে পড়েন সোফায়। "গতকাল সকালে এরা কেউ কাজে রিপোর্ট করেনি স্যার! অফিসের লোকজন বাড়িতে ফোন করে শুনেছে, তার আগেরদিন নাকি কেউ কাজ সেরে বাড়ি ফেরেনি!" ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম, তার মানে পরশুর ঘটনা।" কিংকু চৌধারি বলেন, "জ্বি স্যার! এরপর অফিসের লোক আর বাড়ির লোক, সকলে চিলুবিলু করে থানায় ফোন করেছে। সাথে হানা দিয়েছে পত্রিকা অফিসে। তারা একখান করে রিপোর্ট ঠুকে দিয়েছে পুলিশের নামে।" ঝাকানাকা ঢুলুঢুলু চোখে বললেন, "দেখেছি। দৈনিক আমোদী রসময়ে পড়েছি। আরজে উধাও, পুলিশ কান চুলকায়। আপনাদের এক বড়কর্তার ছবিশুদ্ধু ছাপিয়েছে। কানখুষ্কি দিয়ে কান চুলকাচ্ছেন ডেস্কের ওপর পা তুলে, নবাবের ব্যাটা।" কিংকু দারোগা বলেন, "ওপর থেকে জোর চাপ এসেছে স্যার, দুইদিনের মধ্যে নিখোঁজ আরজেদের খুঁজে বার করে কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বড়কর্তাদের ছেলেমেয়েরা রাতে ভাত খেতে পাচ্ছে না।" ঝাকানাকা বললেন, "তাদেরও শরীর চাবায়?" কিংকু দারোগা বললেন, "জ্বি স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "তা আপনি কী করলেন এই বিকেল পর্যন্ত?" কিংকু দারোগা দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, "রায়েরবাজার এলাকায় জোর হুড়ো লাগিয়েছি স্যার! যতগুলি ঝুমা, তৃষা, দীপ্তি, লিটন, সদরুল আর বেবি পাওয়া যাবে, সবগুলিকে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় জমা করা হবে!" ঝাকানাকা অসন্তুষ্ট গলায় বললেন, "আপনি দেখছি এই রেডিও হুটোপুটির মুনমুনমুনের প্রতি কিঞ্চিৎ পক্ষপাতদুষ্ট!" কিংকু চৌধারি রুমাল বার করে চোখ মোছেন। "আমার কতগুলি এসেমেস রিড আউট করেছে সে, জানেন স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "না। কতগুলি?" কিংকু চৌধারি বলেন, "বাহাত্তরটা! রেজিস্টার করার পর বাহাত্তরটা এসেমেস পাঠিয়েছিলাম, বাহাত্তরটাই পড়ে শুনিয়েছে স্যার! ... এমন ভালো আরজে আর নেই ঢাকায়!" ঝাকানাকা বললেন, "আপনি এত এসেমেস লেখার সময় পান কোত্থেকে? আপনার তো কাজের ঠ্যালায় দম বের হয়ে যাবার কথা! পুলিশের চাকরি করেও এসব লেখার সময় পান?" কিংকু চৌধারি বললেন, "এ তো আর সচলায়তনের পোস্ট না স্যার। দুই তিনটা করে শব্দ, তাও আবার ভেঙেচুরে। মোবাইলে তো স্যার সবকিছু লিখতে হয় না, ভাওয়েলগুলি বাদ দিয়ে শুধু কনসোন্যান্ট লিখলেও চলে!" ঝাকানাকা মুখ কুঁচকে বললেন, "বেশ। আপনার মেসেজগুলি পরে দেখাবেন নাহয়। এখন চলুন দেখি, রেডিও স্টেশনগুলিতে একবার করে চক্কর মেরে আসি।" ২. রেডিও ঝাঞ্জাইলে একটা শোকস্তব্ধ ভাব। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আবুল মক্সুদ শেখ বসে ছিলেন নিজের অফিসে। তাঁর চোখ দু'টি ভেজা ভেজা। ঝাকানাকা বাজখাঁই গলায় বললেন, "এই ছোলায়মানের স্বভাব চরিত্র কেমন ছিলো?" মক্সুদ শেখ ধরা গলায় বললেন, "রেডিও স্টেশনে দিনরাত ডিউটি দিতো বেচারা, স্বভাব চরিত্র খারাপ হবার সময় কই?" কিংকু চৌধারি চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, "ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবেন না জনাব শেখ! সোজা উত্তর দিন, ছোলায়মানের স্বভাব চরিত্র কেমন ছিলো?" মক্সুদ শেখ আড়চোখে কিংকু চৌধারিকে আগাপাস্তলা দেখে নিয়ে গলা খাঁকরে বললেন, "আমি যতদূর জানি, ভালোই ছিলো। কিন্তু ...।" ঝাকানাকা মিটিমিটি হাসেন। "কিন্তু?" মক্সুদ শেখ বললেন, "ছেলেমেয়েরা বড় বিরক্ত করতো তাকে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "ছেলেমেয়েরা মানে? ছেলেরাও তাকে বিরক্ত করতো নাকি!" মক্সুদ শেখ বিব্রত কণ্ঠে বললেন, "ইয়ে, আমাদের স্টেশনে মেয়ে আরজে টেকে না বেশিদিন। ছোলায়মান মাঝে মাঝে সকালের শিফটে আরজে আনারকলি সেজে কাজ চালিয়ে নিতো ...।" কিংকু চৌধারি সটান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। "মাই গড!" হুঙ্কার ছাড়েন তিনি। "আপনি বলতে চান, আরজে আনারকলি আর আরজে ছোলায়মান একই ব্যক্তি?" মক্সুদ শেখ হাত নেড়ে বলেন, "আরে আস্তে বলুন! এত চেঁচাচ্ছেন কেন? সংবাদঅলারা শুনলে আমার ব্যবসা লাটে উঠবে!" কিংকু চৌধারি বলেন, "ইয়ু ড্যাম ফুল! ধোঁকাবাজির আর জায়গা পান না? জনগণের সাথে প্রতারণা! চারশো বিশ ধারায় ফাঁসিয়ে কাস্টডিতে নিয়ে গিয়ে অ্যায়সা কোঁৎকা লাগাবো যে ...।" ঝাকানাকা বাধা দেন তাকে। "আরে থামুন তো! তখন থেকে হাউমাউ করছেন! ছোলায়মান আনারকলি সাজলে আপনার সমস্যা কী?" কিংকু চৌধারি সগর্জনে বলেন, "এটা একটা কথা নাকি স্যার! দেখাবে মুরগি খাওয়াবে ডাইল!" মক্সুদ শেখ একটি ভুরু তির্যক করে কেবল অপাঙ্গে দেখেন কিংকু চৌধারিকে। ঝাকানাকা নিচু গলায় বলেন, "আপনি কি আনারকলিকেও এসেমেস পাঠাতেন নাকি?" কিংকু চৌধারি সরোষে বলেন, "কক্ষণো না! এতগুলি বছর পুলিশে চাকরি কি খামাখা করেছি নাকি? আরজে আনারকলির ঐ নাকি গলায় আদিখ্যেতা শুনেই আমি বুঝে গেস্লাম, এ ছোলায়মান না হয়েই যায় না!" মক্সুদ শেখ মিটিমিটি হাসেন এতক্ষণে। বলেন, "স্টেশনে তো আমরা একটা ডাটাবেজ রাখি। সেটা পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে, আনারকলির বড় ফ্যান কারা! কারা তাকে নানারকম গদোগদো এসেমেস পাঠাতো! কারা তাকে রোজ রোজ শুভসকাল জানাতো! কারা তাকে মেঘলা দিনে একলা হৃদয়ের হুলুলুলু ডাক শোনাতো!" ঝাকানাকা সোজা হয়ে বসেন চেয়ারে, তীক্ষ্ণ চোখে তাকান মক্সুদ শেখের দিকে। "বলেন কী? এমন ডেটাবেজ রাখেন, সে কথা পুলিশকে জানিয়েছেন?" মক্সুদ শেখ ডানেবামে মাথা নাড়েন। "না স্যার!" কিংকু চৌধারি বজ্রকণ্ঠে বলেন, "কেন? এমন জনগুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশকে না জানানোর অপরাধে আপনাকে কাস্টডিতে নিয়ে অ্যায়সা কোঁৎকা লাগাবো যে ...!" ঝাকানাকা আবারও বাধা দেন তাকে। "জানাননি কেন?" মক্সুদ শেখ বলেন, "আমার কী ঠ্যাকা পড়েছে পুলিশকে আগ বাড়িয়ে এত কিছু জানানোর? প্রসঙ্গ উঠলো দেখে বললাম। আপনারা কী জানতে চান বলুন, উত্তর জানলে সব বলবো। কিন্তু হড়বড়িয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলে আমার আরজেরা, আমি না।" কিংকু চৌধারি সরোষে মক্সুদ শেখকে অগ্নিদৃষ্টিতে বারবিকিউ করতে করতে বলেন, "স্যার, এই লোকের আচরণ খুবই সন্দেহজনক! একে তো ছোলায়মান ছোকরাটাকে আনারকলি সাজিয়ে জাতির সাথে প্রতারণা করছেই, আবার ছোলায়মান অপহরণের সাথে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ সব আলামত গোপন করার তালে আছে ব্যাটা! বলেন তো ওকে থানায় নিয়ে একটু পুলিশি সিরাপ খাইয়ে দিই। কোঁৎকা লাগালেই হড়বড়িয়ে বলে দেবে মুনমুনমুন কোথায়!" মক্সুদ শেখ বললেন, "মুনমুনমুনের আমি কী জানি!" ঝাকানাকা বললেন, "আহ কিংকু সাহেব! হচ্ছে কী?" মক্সুদ শেখের দিকে ফিরে তিনি বলেন, "আপনাদের ডেটাবেজখানা প্রিন্ট করে দিন আমাকে এক কপি। গত এক মাসে কারা আপনাদের স্টেশনে এসেমেস পাঠিয়ে আরজে আনারকলি আর আরজে ছোলায়মানকে কী বলেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ চাই। কোনো কিছু যেন বাদ না পড়ে।" কিংকু চৌধারি ফুঁসতে থাকেন। মক্সুদ শেখ ফোন তুলে ডায়াল করেন। ঝাকানাকা নিচু গলায় জানতে চান, "এই মেঘলা দিনের একলা হৃদয়ের হুলুলুলু ডাক ... ব্যাপারটা কী?" কিংকু চৌধারি আবারও ক্ষেপে ওঠেন, "জানিনা স্যার! এই ব্যাটা পুলিশের ভাবমূর্তিতে কালিমালেপনের অপপ্রচেষ্টায় লিপ্ত! রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ফাঁসিয়ে অ্যায়সা হুড়কো দেবো না ...!" মক্সুদ শেখ বললেন, "পুলিশকে আমি আবার কী করলাম? আপনাকে ডেটাবেজ ছাপিয়ে এনে দিচ্ছি স্যার, ওতে আপনি নিবন্ধিত শ্রোতাদের নাম ফোন নাম্বার মেসেজ সব পাবেন! আপনিই পরখ করে দেখবেন, আনারকলির আশেকান কারা ছিলো!" ঝাকানাকা বললেন, "তা ছোলায়মানকে কি সরাসরি বিরক্ত করতো নাকি ছেলেমেয়েরা?" মক্সুদ শেখ ডানেবামে তাকিয়ে একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললেন, "এক মেয়ে বড় জ্বালাতন করতো তাকে!" কিংকু চৌধারি বললেন, "রাস্কেল! লম্পট!" ঝাকানাকা বললেন, "কীরকম জ্বালাতন করতো?" মক্সুদ শেখ বললেন, "রিসেস টাইমে অফিসে ফোন করে নখড়ামো করতো স্যার। বলতো, ছলু ভাইকে দিন, আমি লাবণী বলছি!" ঝাকানাকা বললেন, "ইন্টারেস্টিং! লাবণী, য়্যাঁ? কিংকু সাহেব, নোট করে ফেলুন।" মক্সুদ শেখ নিচু গলায় বললেন, "নারীঘটিত ব্যাপার হতে পারে স্যার! আজকালকার ছেলেছোকরাগুলি অত্যন্ত খতরনাক! উঠতে বসতে মেয়ে নিয়ে হট্টগোল!" ঝাকানাকা বললেন, "তা এই লাবণীর ফোন নাম্বারখানা আছে আপনাদের কাছে?" মক্সুদ শেখ বললেন, "আপনি ছোলায়মানের ডেস্ক হাঁটকে দেখতে পারেন স্যার, কোনো ডায়রিটায়রি পান কি না। আমার কি সময় সুযোগ আছে এইসব দেখার? আমি ব্যস্ত থাকি আমার কাজে।" কিংকু চৌধারি ঘোঁৎ করে একটা শব্দ করেন শুধু, কিন্তু কিছু বলেন না। ঝাকানাকা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "আরেকটা কথা। আপনার স্টেশনে মেয়ে আরজে টেকে না বলছিলেন। টেকে না কেন?" কিংকু চৌধারি গর্জে উঠলেন, "আবার কেন স্যার! তাকিয়ে দেখুন ব্যাটার দিকে। আস্ত লুল্পুরুষ! চেহারাতেই দেখুন লাম্পট্য ফেটে পড়ছে! এর কবলে পড়লে দুনিয়ার কোনো মেয়েই টিকতে পারবে না কোথাও! আর মেয়ে না টিকলেই বা লস কোথায় ওর? ছোলায়মানকে আনারকলি সাজিয়ে খুব তো ব্যবসা করেই যাচ্ছে ব্যাটা। বাটপার!" মক্সুদ শেখের চেহারা লালচে হয়ে ওঠে। "দেখুন দারোগা সাহেব, না জেনে উল্টাপাল্টা কথা বলা ঠিক না! মুরোদ থাকলে ছোলায়মানকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞেস করে দেখুন, কেন রেডিও ঝাঞ্জাইলে মেয়ে আরজে টেকে না! আর কে লম্পট, সেটা আমাদের ছাপানো ডেটাবেজ ঘাঁটলেই গোয়েন্দা সাহেব সব রগে রগে টের পাবেন!" কিংকু চৌধারি ফোঁসফোঁস করেন শুধু। ঝাকানাকা বলেন, "বটে? আপনি বলতে চাইছেন, ছোলায়মানের কারণেই আপনার স্টেশনে মেয়ে আরজে টেকে না?" মক্সুদ শেখ গর্জে ওঠেন, "আবার কেন! ছোকরা আস্ত একটি ইয়ে! কলিগদের সাথে ছোঁকছোঁকছোঁকছোঁক ...!" কিংকু চৌধারি গজগজ করতে করতে সব নোট করে রাখেন। ঝাকানাকা বললেন, "তা এখন কি কোনও মেয়ে আরজে নেই আপনাদের স্টেশনে?" মক্সুদ শেখ বললেন, "তা কেন হবে? অবশ্যই আছে। আরজে কুহু আর আরজে বাম্বি তো নিয়মিত একটা প্রোগ্রাম করে, শোনেন না?" কিংকু চৌধারি বললেন, "আপনার এই ফালতু স্টেশনে লোকে টিউন করলে তো! ঐ আরজে কুহু তো ঠিকমতো ড় বলতেই পারে না! পুরাই ক্ষ্যাত। আর আরজে বাম্বিকে এক পাতা হিস্টাসিন কিনে দ্যান না কেন? সর্দিবসা নাক নিয়ে নাকি গলায় খাটতে খাটতে হয়রান বেচারা!" মক্সুদ শেখের মুখটা কালো হয়ে যায়। ঝাকানাকা বললেন, "স্ট্রেইঞ্জ! এই দু'জন কাজ করতো কী করে ছোলায়মানের সাথে?" মক্সুদ শেখ বললেন, "আরজে কুহু ঠিকমতো ডয়ে শূন্য দিতে না পারলেও কারাতে শেখে, হলুদ না লাল কী রঙের বেল্টও নাকি বাগিয়েছে। ছোলায়মান তার সাথে লুলামো করতে গিয়ে গোড়াতেই কারাতের কিল খেয়ে ঠাণ্ডা হয়েছে। আর আরজে বাম্বির সাথে নষ্টামি করার মতো বুকের পাটা মনে হয় না ছোলায়মানের আছে, তার বয়ফ্রেন্ড বিশাল মস্তান, আপনারা চিনবেন হয়তো, বাট্টু দিলদার।" ঝাকানাকা বললেন, "বটে? তা বাট্টু দিলদারের হাত নেই তো ছোলায়মানের উধাও হওয়ার পেছনে?" মক্সুদ শেখ বললেন, "আমি কিছু জানি না! আপনি ওদের জেরা করে দেখুন না?" ঝাকানাকা বললেন, "তা তারা কোথায় এখন?" মক্সুদ শেখ বললেন, "তারা এখন অন এয়ার। একজন একজন করে ডাকিয়ে আনি, কথা বলে দেখুন।" ঝাকানাকা বললেন, "বেশ! কিংকু সাহেব, আপনি বরং ছোলায়মানের ডেস্ক থেকে যাবতীয় জিনিস আলামত হিসেবে বাজেয়াপ্ত করে আনুন। আমি আরজে কুহু আর আরজে বাম্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করি।" কিংকু চৌধারি ক্ষুণ্ণ মনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। মক্সুদ শেখ ফোন ঘুরিয়ে কাকে যেন নিচু গলায় বলেন আরজে কুহুকে অফিসে পাঠাতে। একটু বাদেই আরজে কুহু এসে ঢোকে ঘরে। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে কারাতেকুশলী মেয়ে, সাধারণ আটপৌরে চেহারা। ঝাকানাকা বাজখাঁই গলায় বলেন, "মিস কুহু! আপনি নিখোঁজ ছোলায়মানকে অফিসে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন, ঠিক?" কুহুর কারাতেশিক্ষিত চোখ জ্বলে ওঠে। "একদম ঠিক! ছলু ভাই অতি দুষ্ট লোক ছিলো স্যার! মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে হাত ধরতে চাইতো! প্রথম প্রথম কিছু বলিনি, কিন্তু একদিন হাত ছেড়ে পা ধরতে গেলো, অমনি ঘাড়ে দিয়েছি বসিয়ে এক শুতো-উচি!" ঝাকানাকা সন্তুষ্ট মুখে মাথা নাড়েন। "বেশ করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সে কি পরে আর আপনাকে জ্বালাতন করেছিলো?" কুহু গর্বিত মুখে মাথা নাড়ে। "না স্যার! তার সেই সাহসই নেই!" ঝাকানাকা কঠোর মুখে বলেন, "এবার বলুন, আপনি কেন তাকে মস্তান লাগিয়ে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন?" কুহু কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, "আমি তাকে কোন দুঃখে উঠিয়ে নিয়ে যাবো? আর তাকে উঠিয়ে নিতে হলে মস্তান লাগবে না আমার! আমি নিজেই তাকে অজ্ঞান করে ঘাড়ে তুলে নিয়ে যেতে পারি!" ঝাকানাকা বলেন, "বটে? তাহলে ছোলায়মান নিরুদ্দেশ হলো কী করে?" কুহু বলে, "তার আমি কিছু জানি না স্যার! সে মনে হয় ঐ লাবণীর সাথে ভেগেছে!" ঝাকানাকা ঝুঁকে পড়ে বলেন, "কে এই লাবণী?" কুহু বলে, "আমি চিনি না স্যার। ছলু ভাইকে খুব ফোনটোন করতো। ছলু ভাইও খুব গদোগদো হয়ে কথা বলতো। পরশু দিন ঐ মেয়ে একটা গাড়িতে করে এসে ছলু ভাইকে বিকেলে অফিসের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেলো!" ঝাকানাকা বলেন, "সে কী! মেয়েটা দেখতে কেমন?" কুহু বলে, "আমি বলতে পারি না স্যার, অন এয়ারে ছিলাম তখন। বাম্বি জানে, সে দেখেছে।" ঝাকানাকা বলেন, "ঠিকাছে, তাহলে আরজে বাম্বির সাথেই কথা বলি। আপনি আসুন এখন।" মক্সুদ শেখ শুকনো গলায় বলেন, "বদমাশ ছোকরা, কোথায় মেয়ে নিয়ে ফূর্তি লুটতে গেছে কে জানে! এদিকে আমার নাভিশ্বাস! আর মিডিয়ার লোকজন উঠতে বসতে ফোন করে জ্বালাতন করছে!" ঝাকানাকা গোঁফে তা দিয়ে বলে, "না জনাব মক্সুদ! আমার সন্দেহ, এ কোনো ফূর্তিলুণ্ঠন কেস নয়। এর পেছনে কোনো ঘোরালো রহস্য আছে!" ৩. গাড়িতে বসে গোমড়া মুখে কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আরজে কুহু আর আরজে বাম্বিকে জেরা করার সময় আমি সাথে থাকলে ভালো হতো না?" ঝাকানাকা আনমনে গোঁফে তা দিতে দিতে বললেন, "না! আমি লক্ষ্য করেছি, আপনার ওপর এই মেয়ে আরজেদের প্রভাব অত্যন্ত গভীর! সেটা আবার তদন্তের স্বাস্থ্যের জন্যে হানিকর। আপনি এই কেসে একটু ডালে ডালে থাকুন, আমি পাতায় পাতায় এগোচ্ছি।" কিংকু চৌধারি গোমড়া মুখে বললেন, "এই যে স্যার, এই বস্তায় করে হতভাগাটার ডেস্কের সবকিছু নিয়ে এসেছি।" সামনের সিটে রাখা প্লাস্টিকের ব্যাগটা দেখান তিনি আঙুল তুলে। ঝাকানাকা বললেন, "বেশ! ওরকম আরো চারখানা ব্যাগ জমবে গাড়িতে। চিরকুট সেঁটে রাখুন কোনটা কার, তা না হলে আবার পরে জড়িয়ে পেঁচিয়ে বিশ্রী দশা হবে।" কিংকু চৌধারি বললেন, "আমি শুরুতেই লম্পট ছোলায়মান লেখা স্টিকি লাগিয়ে দিয়েছি স্যার! ... ইয়ে, আরজে কুহু আর আরজে বাম্বি কী বললো স্যার?" ঝাকানাকা বললেন, "আরজে বাম্বির কাছ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। একটা মাইক্রোবাসে চড়ে সেই লাবণী এসে ছোলায়মানকে অফিসের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেছে। লাবণীর পরনে ছিলো গোলাপি সালওয়ার কামিজ। লাবণী দেখতে ফর্সা, উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুটের মতো। ছোলায়মান দাঁত বার করে হাসতে হাসতে লাবণীর সাথে গাড়িতে ওঠে। মাইক্রোবাসের রং সাদা। ছোলায়মানের দাঁতের রং হলুদ। গাড়ি চালাচ্ছিলো লাবণী নিজেই। ঘটনা ঘটে বিকেল পাঁচটায়।" কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, আমার মনে হয় আমাদের রেডিও হুটোপুটিতে যাওয়া উচিত। মুনমুনমুনের ব্যাপারটা ...।" ঝাকানাকা আড়চোখে কিংকু চৌধারিকে এক নজর দেখে নিয়ে বলেন, "তাড়াহুড়ো করা যাবে না চৌধারি সাহেব! পাঁচ পাঁচজন আরজে কেন একই সাথে গায়েব হয়ে গেলো, বুঝতে হবে। বুঝে ইজি থাকতে হবে!" কিংকু চৌধারি রুমালে চোখ মোছেন। গাড়ি গিয়ে থামে রেডিও তুলকালামের অফিসের সামনে। রেডিও তুলকালামের পরিবেশও থমথমে। প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আবুল কালাম উদাস বিষণ্ণ মুখে অফিসে বসে জগন্ময় মিত্রের গান শুনছিলেন, "তুমি আজ কত দূরে", ঝাকানাকার পরিচয় পেয়ে গান থামিয়ে সোজা হয়ে বসলেন। "গোয়েন্দা সাহেব!" ধরা গলায় বলেন তিনি। "যেখান থেকে পারুন আমাদের নূরজিকে খুঁজে এনে দিন!" ঝাকানাকা বলেন, "নূরজি? মানে আরজে নূরজাহানের কথা বলছেন?" কালাম সাহেব বিহ্বল মুখে মাথা নাড়েন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি গর্জে ওঠেন, "এই নূরজাহানের স্বভাব চরিত্র কেমন ছিলো?" আবুল কালাম ধরা গলায় বলেন, "ফুলের মতো স্যার! একটা টগর ফুলের মতো নিষ্পাপ ছিলো আমাদের নূরজাহান। কারো কোনো ক্ষতি করেনি সে! বদ লোকজন তাকে জ্বালিয়ে মারতো শুধু ...।" ঝাকানাকা বললেন, "কোন বদ লোকজন?" আবুল কালাম বললেন, "যত রাজ্যের ইষ্টুপিট স্যার! উল্টাপাল্টা এসেমেস করতো প্রোগ্রামে, অফ ডিউটির সময় মোবাইলে কল দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি বাজে কথা বলতো!" ঝাকানাকা বললেন, "আই সি! তা আপনারা তো একটা ডেটাবেজ রাখেন এইসব কলের, নাকি?" আবুল কালাম বললেন, "রাখি বৈকি! আপনাকে দেবো নাকি এক কপি প্রিন্ট করে?" ঝাকানাকা বললেন, "নিশ্চয়ই!" আড়চোখে কিংকু চৌধারির দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, "আচ্ছা, এই মেঘলা দিনে একলা হৃদয়ের হুলুলুলু ডাক ... এমন কিছুর কথা জানেন কি?" আবুল কালাম গর্জে ওঠেন, "জানি না আবার! এক নচ্ছাড় লম্পট রোজ নূরজিকে ঐসব এসেমেস পাঠিয়ে ত্যক্ত করতো! সব ডেটাবেজে টোকা আছে স্যার! আমি এক্ষুণি আপনাকে ছাপিয়ে দিচ্ছি।" কিংকু চৌধারি ফোঁসফোঁস করেন শুধু। ঝাকানাকা বললেন, "তা আপনার কি মনে হয় ... নূরজাহানের এই অন্তর্ধানের কারণ কী হতে পারে? তার কোনো ব্যক্তিগত শত্রু? অফিসে কোনো ঝামেলা? বহিরাগতদের উৎপাত?" আবুল কালাম নিচু গলায় বললেন, "বেশ কিছুদিন ধরেই সুন্দর খান নামে এক ছোকরা নূরজিকে ফোন করে জ্বালাতো। নূরজিও বেশ হেসে কথাটথা বলতো তার সাথে। পরশুদিন বিকেল চারটার দিকে সে এসে হাজির হয়। নূরজাহান তার সাথে নাকি গাড়িতে ওঠে। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই মেয়েটার!" ঝাকানাকা ঝট করে সোজা হয়ে বসেন। বলেন, "এ ঘটনা কে দেখেছে?" আবুল কালাম ধরা গলায় বললেন, "আমিই দেখেছি গোয়েন্দা সাহেব! অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, নূরজি হেসে গড়িয়ে পড়ছে হতভাগাটার গায়ে। তারপর তারা গাড়িতে চড়ে কোথায় যেন চলে গেলো!" ঝাকানাকা বললেন, "তা এই সুন্দর খান দেখতে কেমন?" কালাম নাক সিঁটকে বললেন, "লাল্টু চেহারা। দেখে মনে হয় বড়লোকের বখে যাওয়া দুলাল। লম্বাচওড়া, কিন্তু রুচি বলতে কিচ্ছু নেই, একটা গোলাপি গেঞ্জি গায়ে দিয়ে এসেছিলো!" ঝাকানাকার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, "গাড়িটার বর্ণনা দিতে পারেন?" কালাম বলেন, "সাদামাটা একটা সাদা রঙের মাইক্রোবাস স্যার!" ঝাকানাকা বললেন, "গাড়ি কি সুন্দর খান নিজেই চালাচ্ছিলো?" কালাম বললেন, "হ্যাঁ ... কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?" কিংকু চৌধারি টেবিলে চাপড় মেরে গর্জে ওঠেন, "এবার জনাব আবুল কালাম ... বলুন দেখি আসল কথা! আপনি কী করে বুঝলেন ঐ লোকটিই সুন্দর খান, যদি আপনি তাকে আগেভাগেই চিনে না থাকেন? আমার তো মনে হয় এর পেছনে আপনারও হাত আছে!" আবুল কালাম বললেন, "কী আপদ! সুন্দর খানের পেছনে আমি হাত দিতে যাবো কেন? আর নূরজিই তো লাফাতে লাফাতে এসে আগেভাগে ছুটি চাইলো, বললো সুন্দর খানের সাথে তার ডেট আছে ...!" গলাটা বুঁজে আসে তার। ঝাকানাকার মুখে মৃদু একটা হাসি ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, "আমার মনে হয় ঘটনা আমি বুঝতে পারছি! তা জনাব কালাম, নূরজাহানের ডেস্কের যাবতীয় জিনিসপত্র ক্লু হিসাবে জব্দ করছি আমরা। আশা করি আপনার আপত্তি নেই!" কালাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "সব নিয়ে যান! বদলে নূরজাহানকে ফিরিয়ে আনুন!" ঝাকানাকা উঠে পড়লেন, কালাম এবার নতুন গান ছেড়ে উদাস মুখে শুনতে লাগলেন, "সখী কেমনে ধরিব হিয়া, আমার বধূয়া আনবাড়ি যায় আমারই আঙিনা দিয়া ...।" ... [এই গল্পটা আপাতত প্রথম খণ্ড ধরে নিন। চা খাচ্ছি না, বাকিটুকু পরে শেষ করবো। চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, রংপুর আর কুষ্টিয়ার সংলাপ লাগবে, সৌরভ রংপুর আর মুর্শেদ কুষ্টিয়ার ভাষা খানিক জানে বলে জানিয়েছে, কিন্তু আরো পাকনা কেউ থাকলে আরো ভালো। এই চার আঞ্চলিক ভাষায় পরিপক্ক কেউ থাকলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।]
false
hm
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে কিছু কথা এবং সেগুলোর প্রত্যুত্তর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর সদ্য ক্ষমতায় আগত মহাজোট সরকারের মুখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ কয়েক ডেসিবেল নিচে নেমে বাজতে থাকে। এ কথা খুব দূর অতীতের নয় যে মহাজোট যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের জনগণকে দিয়ে বিপুল ভোটে জিতে সরকার গঠন করেছে। ক্ষমতায় আসতে না আসতেই সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসার [মেজর জেনারেল থেকে শুরু করে ক্যাপ্টেন পর্যন্ত]সহ ৭৪ জনের মৃত্যু এবং পিলখানায় বিডিআর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অন্যান্য অপরাধ সরকারের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিতে বাধ্য করে। কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায়, এ হত্যাযজ্ঞে বেনিফিশিয়ারিদের তালিকায় যুদ্ধাপরাধীরা রয়েছে। পুনরায় মানুষের মুখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি গুঞ্জরিত হতে শুরু করে যখন, তখন আমরা লক্ষ করি, পাকিস্তান থেকে তাদের দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও অতীতে সাজা খাটা প্রেসিডেন্টটির এক বিশেষ দূত মির্জা জিয়া আনসারি ঢাকায় এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি বার্তা জানায়, যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রকৃষ্ট সময় নাকি এখন নয়। এই অভব্য অনুরোধ করেই পাকিস্তান ক্ষান্ত হয়নি, আন্তর্জাতিক মহলেও তারা জোর লবিইং করে এই বিচারকে বন্ধ বা বাধাপ্রাপ্ত করার জন্যে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারপর সৌদি আরব সফরে গেলে একটি গুজব বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয় যে সৌদি আরব এই বিচারের বিরুদ্ধে। যদিও সৌদি সরকার কোনো বিবৃতি দেয়নি, এবং বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জোর গলায় এ কথা অস্বীকার করেছেন। আমরা ওয়ার্স্ট পসিবল কেইস হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে অপরাধী পক্ষ পাকিস্তান ও তার সহমর্মী পক্ষ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রাষ্ট্রকে এই বিচারের বিপক্ষে অত্যন্ত বিরোধী থেকে শুরু করে মৃদু বিরোধী, এই স্পেকট্রামে সাজাতে পারি। পাকিস্তানের তৎকালীন সহযোগী পক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিচারের প্রশ্নে কোনো প্রকাশ্য বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেনি, এবং তাদের ভাষ্যমতে তারা এ বিচারকার্যে সহযোগিতায় আগ্রহী। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ তার মাটিতে সংঘটিত হওয়া অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার সকল ক্ষমতা রাখে। এ বিচারের প্রকৃতি অনন্য এবং অভূতপূর্ব বলে এর প্রবাহের পথে সকল বিঘ্ন দূর করার জন্যে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সমমানের আন্তর্জাতিক কেইসগুলি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সহায়তা নিতে পারে। আমি নিচে কিছু ছাগুপ্রিয়, বরাহপ্রিয় মিথ, প্রশ্ন ও যুক্তি তুলে ধরে সেগুলো খণ্ডন করবো। পাঠকদের কাছে অনুরোধ থাকবে, ফেসবুকে, মেইলগ্রুপে, পথেঘাটে, জলেস্থলেঅন্তরীক্ষে যখন কাছাকাছি ধরনের তর্ক হবে, তখন এই টেমপ্লেটটি উপস্থাপন বা রেপ্লিকেট করার। আপনাদের সংযোজন, বিশ্লেষণ আর সংশ্লেষণ আমি সম্পাদনা করে পোস্টে যোগ করার অভিলাষ জানাই এবং অনুমতি চাই। ধন্যবাদ। মিথ ০*: দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। স্পষ্টভাবেই আছে। ১৯৭৩ সালে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় অনেক পাতি রাজাকার, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সেই সময়ে আনীত হয়নি, তারা ছাড়া পেলেও ১১ হাজারের বেশি রাজাকার আলবদর যুদ্ধাপরাধী দালাল আইনের আওতায় কারাবন্দী ছিলো। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর যারা ক্ষমতায় আসে, তারা এক পর্যায়ে আইনের চোখে অবৈধ ঘোষিত অধ্যাদেশ জারি করে দালাল আইন বাতিল ঘোষণা করার ফলে এই ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী মুক্তি পায়। এদের অধিকাংশই এখনো বহাল তবিয়তে দেশে বিরাজ করছে এবং তারা যুদ্ধাপরাধী। ফলে দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই, এই দাবী মিথ্যা। মিথ ১: ৩৮ বছর আগে কী হয়েছে না হয়েছে, তা নিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার কোনো মানে হয় না ৩৮ বছর আগে, ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে যা ঘটে গেছে, তা একটি নৃশংস অপরাধ। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তার এ দেশীয় সহযোগী, যথাক্রমে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নেতৃ- ও কর্মীবৃন্দ এবং তাদের নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় পরিচালিত রাজাকার বাহিনী, আল বদর ও আল শামস, বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনতার ওপর গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, জেণ্ডারসাইড, পরিকল্পিত জাতিধর্ষণ, পরিকল্পিত জাতিনিধনের মতো অপরাধ করেছে। এসব অপরাধ আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃত, এবং ফৌজদারি অপরাধ তামাদি হয় না বলে এখনও বিচারযোগ্য। জাতি এই অপরাধের বিচার নিয়ে ঐক্যবদ্ধ, যার প্রমাণ সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রতিশ্রুতির পক্ষে প্রদত্ত ভোটের অনুপাতে মেলে। অল্প কিছু সংখ্যক শুয়োরের বাচ্চা এই বিচারের বিরুদ্ধে। মিথ ২: শেখ মুজিবর রহমান তো যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, এখন আবার কথা কীসের? শেখ মুজিবর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেননি। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি "দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ" জারি করা হয়। একই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারী, ১ জুন ও ২৯ আগস্ট তারিখে তিন দফা সংশোধনীর পর আইনটি চূড়ান্ত হয়। দালাল আইন জারির পর ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭ হাজার ৪৭১ দালালকে গ্রেফতার করা হয়। ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এদের বিচার কাজ চললেও ২২ মাসে মাত্র ২ হাজার ৮৪৮টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়। এ-রায়ের মাধ্যমে ৭৫২ জন বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত হন। ১৯৭৩ এর ৩০ নভেম্বর বহুল আলোচিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এ-ঘোষণার মাধ্যমে ২৬ হাজার ব্যক্তি মুক্তি পান। বাকীদের বিচার অব্যাহত থাকে। সাধারণ ক্ষমার প্রেস-নোটে বলা হয়, ধর্ষণ. খুন, খুনের চেষ্টা, ঘর-বাড়ী অথবা জাহাজে অগ্নি সংযোগের দায়ে দণ্ডিত ও অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে ক্ষমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হবে না। মিথ ৩: ৩৮ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার এখন সম্ভব নয় ভুল। অবশ্যই সম্ভব। প্রথমত, ফৌজদারি অপরাধ তামাদি হয় না। দ্বিতীয়ত, এই অপরাধের ভিক্টিমরা এখনও অনেকে জীবিত ও সাক্ষ্যের জন্যে প্রস্তুত রয়েছেন। তৃতীয়ত, এই অপরাধ সংক্রান্ত বহু দলিলপত্র বর্তমানে অবমুক্ত করা হয়েছে [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সরকার]। চতুর্থত, পৃথিবীতে এখনও প্রায় ৭০ বছর আগে ঘটে যাওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। আমাদের আলোচ্য অপরাধ মাত্র ৩৮ বছর আগে ঘটা। মিথ ৪: এই বিচারের দাবি মূলত রাজনৈতিক বিদ্বেষ প্রসূত এবং জামায়াতে ইসলামিকে বিপন্ন করার বাকশালী পাঁয়তাড়া জামায়াতে ইসলামি দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলো, এবং এর তৎকালীন নেতৃবৃন্দের সকলে যুদ্ধাপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তাদের বর্তমান নেতৃত্বেও যুদ্ধাপরাধের অপরাধে অভিযুক্তরাই রয়েছে। তারা যদি বিপন্ন হয়, তাহলে এই বিপদের পেছনে তাদের অতীত ইতিহাসই দায়ী। মিথ ৫: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি সেখানে কর্মরত বাংলাদেশীদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে জামায়াতে ইসলামির নেতৃবৃন্দের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির হৃদ্যতা রয়েছে, এবং এমন একটি গুজব তাদের উৎসাহেই ছড়ানো হয়েছে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গেলে মধ্যপ্রাচ্য আমাদের ওপর গজব নাজিল করবে। তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাংলাদেশ বর্তমান সরকারেরও জোরালো সম্পর্ক রয়েছে, এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এমন অশুভ উদ্যোগ ঠেকানোর ক্ষমতা বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে। প্রশ্ন ১: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হলে কি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়বে? অপরাধ কমবে? দুর্নীতি কমবে? বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমবে? ওয়াসার পানিতে গুয়ের গন্ধ দূর হবে? পাল্টা প্রশ্ন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা না হলে কি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়বে? অপরাধ কমবে? দুর্নীতি কমবে? বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমবে? ওয়াসার পানিতে গুয়ের গন্ধ দূর হবে? উভয় ক্ষেত্রেই একই উত্তর। প্রকৃতপক্ষে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম আমাদের প্রাত্যহিক জনজীবনের ওপর কোনো নেতিবাচক বা তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। অপরাধের বিচার কেবল তাৎক্ষণিক প্রভাবের কথা ভেবে করা হয় না, করা হয় সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে। এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে, সার্বভৌম বাংলাদেশে এ ধরনের অপরাধের বিচার নিষ্পত্তি করার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার উত্তরণ লাভ এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অন্যান্য অপরাধের বিচারের সাথে এ অর্থে তুলনীয়, যদি তাদের বিচারের বিরোধিতা করা হয়, তাহলে আজ প্রতিটি খুনী, ধর্ষণকারী, লুণ্ঠনকারী ও অগ্নিসংযোগকারী এই একই ছাড় পাবার দাবিদার। প্রশ্ন ২*: আওয়ামী লীগ তো আগে একবার ক্ষমতায় এসেছিল। তারা তখন বিচার করে নাই কেন? শেখ হাসিনা একটা সময় জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়েও রাজনীতি করেছিল। তখন যুদ্ধাপরাধী বিচারের ইস্যু কোথায় ছিল? প্রশ্নটির মধ্যে একটি ভুল তথ্য রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আওয়ামী লীগ দুইবার ক্ষমতায় আসে। প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর তখনকার সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়, এ লক্ষে আইন প্রণয়ন করে এবং তার ভগ্নাংশ পরিমাণ বাস্তবায়নও করে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশ করে, তারা যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতা পোক্ত করার আশায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণয়ন করা আইনগুলি বাতিল করে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়নি, এর পেছনে প্রধান কারণ হতে পারে তাদের তৎকালীন নেতৃত্বে দূরদর্শিতার অভাব। এ দূরদর্শিতার অভাবের মূল্য আওয়ামী লীগকে শোধ করতে হয়েছে ২০০২-২০০৭ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শাসনামলে বারবার আক্রান্ত হয়ে। দেশের মানুষ দুই ভূতপূর্ব আলবদর নেতাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখে অপমানিত বোধ করে, এবং সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে, এ প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে পুনরায় আরেকটি সুযোগ দেয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্যে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা না করা আওয়ামী লীগের একান্ত এখতিয়ার নয়। এটি বাংলাদেশের মানুষের দাবি। অতীতে এ দাবি পূরণে ব্যর্থতার অর্থ এই নয় যে বর্তমানে তা পূরণ করা যাবে না। প্রশ্ন ৩*. স্বাধীনতার পর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো সঠিক ভাবে হয়নি, চুনোপুঁটির বিচার হয়েছে, কিন্তু রাঘব-বোয়াল ছাড়া পেয়েছে। এবারও কি তা হবে না? স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা উভয়ই সদ্য স্বাধীন দেশকে প্রায় ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলো। তারপরও দু'টি অত্যন্ত শক্তিশালী আইন প্রণীত হয়েছিলো এবং তার আওতায় বিচারও শুরু হয়েছিলো। ১৯৭৩ সালে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমায় যে সকল রাজাকার ছাড়া পেয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ আনীত হয়নি। কিন্তু রাঘব-বোয়ালদের ছাড়ার প্রশ্ন আসে না, কারণ রাঘব-বোয়ালরা তখন পলাতক ছিলো এবং তাদের নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগও ছিলো। তখন স্বল্প লোকবল ও পরিকাঠামো নিয়ে বিচারে যে অসামঞ্জস্য ছিলো, এখন তা অনায়াসে দূর করা সম্ভব, কারণ ৩৮ বছরে বাংলাদেশের বিচার ও প্রশাসন কাঠামো এখন অনেক সংগঠিত। তাই যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদাদেরও ধরা যাবে এবং ধরা হবে। প্রশ্ন ৪*. বিচারের দাবী শুধু প্রাকনির্বাচন আর আওয়ামী রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ কেন? এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগকে এবার যত মানুষ ভোট দিয়েছে, তারা সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমর্থক নয়। নির্দলীয় বা অন্যদলীয় সবাই এই বিচারের দাবী জানাচ্ছে। বরং নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন বিচারের দাবীতে আপনিও সরব হচ্ছেন না। প্রাকনির্বাচনী প্রচারণা এক দিকে যেমন রাজনৈতিক দলকে বাধ্য করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিতে, অন্যদিকে সংসদকে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত রাখতেও সহায়তা করে। এতে ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দেবার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোও নিরুৎসাহী হবে। প্রশ্ন ৫*. এত বছর পর দেশকে এটা নিয়ে ভাগ করার দরকার কী? ভাগ হচ্ছে না তো, দেশের লোক একাট্টা হচ্ছে কতিপয় খুনি-ধর্ষকের বিচারের দাবীতে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার মানে তো আর দেশের জনগণকে ভাগ করা নয়। খুনির বিচার, ধর্ষকের বিচার মানে যদি দেশ ভাগ করা হতো তাহলে তো দেশে আইন-আদালত দরকার হতো না। জেলখানা তুলে দিয়ে খুনি-ধর্ষককে বাসার লজিং মাস্টার নিয়োগ করা হতো। প্রশ্ন ৬*. হাসিনার বেয়াই তো যুদ্ধাপরাধী। তারপর আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বদরুল হায়দার চৌধুরী ১৯৯১ সালে গোআ'র কাছে দুআ চাইতে গিয়েছিলেন। সুতরাং আওয়ামী লীগের এই বিচারের ব্যাপারে সততা কতটুকু? যেমনটা আগে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো আর আওয়ামী লীগের একান্ত এখতিয়ারের বিষয় নয়। এটি বাংলাদেশের মানুষের দাবি। যুদ্ধাপরাধীর দলীয় পরিচয় বিবেচ্য নয়, কৃত কুকর্মই বিবেচ্য। যুদ্ধাপরাধ যে আইনের অধীনে বিচার করা হবে, সে আইনের আওতায় আপনি স্বচ্ছন্দে আওয়ামী লীগের কোনো ব্যক্তির নামেও অভিযোগ তুলতে পারেন। আপনারাও প্রচলিত মিথ, প্রশ্ন ও যুক্তি যোগ করতে পারেন, আমি নির্বাচিত অংশ সংযোজন করে পোস্ট সাম্প্রতিকীকরণে আগ্রহী। ধন্যবাদ। * চিহ্নিত অংশগুলি মন্তব্য থেকে গৃহীত এবং ঈষৎ সম্পাদিত। প্রায়প্রাসঙ্গিকঃ বরাহশিকারের গান
false
hm
গল্প লেখা কী যেন একটা লিখতে চাইছিলাম, এমনই মনে হয় ভোরে ঘুম ভেঙে উঠে। নিজের ভেতরটাকে বাইরের অন্ধকারের মতোই নিকষ মনে হয়, কী যেন পড়তে চাই নিজের মনের মধ্যেই, কোন অক্ষর মেলে না। বুকের ভেতর চেপে বসা নিরক্ষর শূন্যতা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়ি কম্বলের নিচের গরমটুকু সম্বল করে। ছুটির দিন বলেই ঘড়িটাকে চড়িয়ে রেখেছিলাম বেলা দশটার দিকে। ঘড়িটা বোকাসোকা, ব্যাটারি পেয়ে খুশি, কখনো কাজে ফাঁকি দেয় না, দশটা বাজেই সে মুখ খোলে বিশ্বস্ত ঘোড়ার মতো। ওর চেয়ে উপকারী বন্ধু আমার ঘরে আর কিছু নেই, তবুও গিয়ে একটা থাবা বাড়িয়ে দিই ভালুকের মতো। চড় খেয়ে চুপ করে যায় ঘড়িটা, সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর মতোই। আমি বিছানায় বসে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। এখনও কি সময় হয়নি, এতো চড় খাবার পরও? আমারও কি চুপ করে যাবার সময় হয়নি? টয়লেটে ঠান্ডা পানির ঝাপটা চোখে দিতেই মনে পড়ে, কী লিখতে চাইছিলাম। একটা গল্প। বেশ ফাঁদালো করে। রসিয়ে রসিয়ে অনেক কথা বলতে চাই ঐ গল্পটাতে। আয়নায় তাকিয়ে দেখি একটা বেণী পাকানো ক্লান্তিকে। গল্পটা আমি চাইলেও এখন আর কাগজেকলমে লিখতে পারবো না। ওভাবে লিখি না বহুদিন ধরে। লিখতে চাইলে এখন কম্পিউটারের সামনে বসতে হবে। কম্পিউটার খুললে আর আমার গল্প লেখা হবে না। এক টুকরো রুটির ওপরে মধু মাখাতে মাখাতে মনে হলো, গল্পটা যেভাবে লিখতে চাইছি, সেভাবে না লিখলেও চলে। মনে মনেও লেখা যায়, ইচ্ছে করলেই। চরিত্রগুলো এক লাফে চলে আসে তখন দ্বিতীয় পাঁউরুটির টুকরোটার ওপরে। সবাই অনেক চেনা, কয়েকজনকে চিনি বলে জানতাম, কিন্তু তারা ঠিক চেনা নয়। দুয়েকজনকে চিনি না একদমই, ওরা আমার হাতের পুতুল। আমি ইচ্ছে মতো ওদের টুপির নিচে শিং আর পাৎলুনের নিচে লেজ বসিয়ে দিতে পারি, ওরা Zানতি পারবে না। আমি হাসিমুখে ওদের সরিয়ে দিয়ে পাঁউরুটির টুকরোটাকে বসিয়ে দিই প্রথম টুকরোটার ওপর। আজকে বাতাসে পরিষ্কার বসন্তের প্রতিশ্রুতি ভেসে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন রং আর আকারের পাখি নেচে বেড়াচ্ছে সামনের ন্যাড়া হয়ে যাওয়া গাছটায়। সেদিকে তাকিয়ে আমি স্যান্ডউইচ চিবাতে থাকি গরুর মতো করে। মনে পড়ে, গল্পটায় আমিও একজন চরিত্র। কিভাবে লিখি? শরীর থেকে বেরিয়ে একবার তাকাই নিজের দিকে। একটা লোক, হাফপ্যান্ট পরা, লাল একটা গেঞ্জি পরা, সে মন দিয়ে চোখ বুঁজে মধুর স্যান্ডউইচ খাচ্ছে। গল্পের লোকটা মোটেও এমন ছিলো না। হতাশ হয়ে ফিরে আসি শরীরে আবার। গল্পের আমিটা অন্যরকম, অনেক অন্যরকম। চায়ের পানি চড়িয়ে টেবিলের ওপর জমে থাকা পিৎজার বাক্সগুলোকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে বসি আলগোছে। রান্না করতে বড় আলসেমি লাগে মাঝে মাঝে, তখন পিৎজাই বিপদে বড় বন্ধু। দেয়ালে হেলান দিয়ে ভাবি, গল্পের আমিটার কথা কি আমার আসলেই মনে আছে? অন্যদিন পানি গরম করার কেটলিটা সময়মতো পানি ফোটার আগেই ফটাস করে বন্ধ হয়ে যায়, সস্তার তিন অবস্থা যাকে বলে। আজ দেখলাম সে-ও আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগে এই সহযোগিতাটুকু, স্নেহ নিয়ে তাকাই ওর দিকে। সে গ্যাস নেয় একটু, ফোঁস করে সাদা জলকণা বেরিয়ে আসে খানিকটা। নাকি ফোন করবো ঢাকায়? ফোন করে জিজ্ঞেস করি আমার স্মৃতিমান বন্ধুদের, গল্পের আমিটা আসলে কেমন ছিলো? আমি তো ভুলে গেছি, ওদের নিশ্চয়ই মনে আছে? নাকি ওদেরও এই মনে রাখার জায়গাটুকুতে টান পড়েছে? কিভাবে জানতে চাওয়া যায়? কেটলি এবার ভোঁসভোঁস করে ধোঁয়া ছাড়ে, আমি কথা গোছানোর চেষ্টা করি। বলতে চাই জ্যারেড ডায়মন্ডের হরাইজন অ্যামনেশিয়ার কথা। "দিগন্ত বিস্মৃতি বুঝিস? বুঝিস না? বোঝাই, শোন। ধর তুই তোর বাড়ির ছাদে উঠে রোজ হাঁটিস, গত দশ বছর ধরে। এই দশ বছর ধরে তোর সামনের দিগন্ত তো অনেক পাল্টেছে, নাকি?" কোন জবাব শুনতে পাই না। "পাল্টেছে। দশ বছর আগে কেমন ছিলো, তোর মনে আছে? কিংবা আট বছর আগে কোন এক দিনে? কিংবা, পাঁচ বছর আগে? শুয়োরের বাচ্চা, এক বছর আগে কেমন ছিলো বলতে পারবি?" আমি ক্ষেপে উঠি, ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যায় কেটলিটা, শব্দ হয়, খট করে। জবাব না পেয়ে আমার রাগটাও কেটলির মতোই পড়ে যায়। একটু গরম পানি ঢালি বিয়ার খাওয়ার মগটায়। ওতে আর বিয়ার খাই না, চা বানাই। বিয়ারের জন্য পেল্লায় দু'টো গ্লাস আছে। কেউ শুনতে চায় না দিগন্ত-বিস্মৃতির কথা। সবাই চায় নিজের দিগন্তুটুকু মুখস্থ করে বসে থাকতে। সবাই দাবি করে, প্রত্যেকটা দিনের দিগন্তই সে চেনে জানে। আঁকতে পারলে এখনই এঁকে দেখাতো। তবুও তর্ক করি। বলি, অত সহজ না। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি তাই ভুলে গেছি। আমার তোকে মনে আছে। নিজেকে ঠিক ঠাহর করতে পারছি না। কেমন, গল্পের আমিটা কেমন? চায়ের কাপে ঘুরতে থাকে গল্পের চরিত্রগুলো আবার। ওদের তো মনে আছে স্পষ্ট। যাদের চিনি না তাদেরও আন্দাজে আবছামতো আঁকতে পারবো। আমি, আমি কেমন? গল্পের আমিটা কেমন? উত্তর খুঁজে না পেয়ে অস্থির লাগে, গিলে ফেলি চা-টুকু ফড়াৎ করে। কেটলিটার দিকে তাকাই একবার, ও কিছু বলে না, চুপ করে থাকে বুদ্ধিমানের মতো। নাস্তা খেয়ে বসি কম্পিউটার খুলে। গল্পটা লিখতে পারলে বেশ হতো। গল্প লেখার জায়গা তো একটা আছে। গল্প শোনার মানুষও আছে কয়েকজন। এখন শুধু বলতে হবে গুছিয়ে। এ তো আর সত্যি নয়, গল্প। তা-ও ঠ্যাটামো করতে ছাড়ে না চরিত্রগুলো। একজন এমএসএন মেসেঞ্জারের উইন্ডো হয়ে আসে। চোখ টিপে বলে, "কতদূর?" বিরক্ত লাগে। অস্ফূটে বলি, "হবে, হবে। একদিন ঠিক লিখবো। লিখে ফেলবো সব কিছু। সব চুৎমারানিদের আমি চিনি। শুধু একটু সময় লাগবে।" উইন্ডোটা হাসে। বলে, "বটে?" ইচ্ছা করে ধরে একটা থাবড়া মারি। মারি না অবশ্য। লগ ইন করি ইন্টারনেটে। গল্প লেখার আগে মেইল চেক করা জরুরি। সুসংবাদ ... দুঃসংবাদ ... দুঃসংবাদ ... আমার কিছু যায় আসে না ... আররে কস কী? ... সুসংবাদ ... কেমন ছিলাম গল্পের আমিটা? মেইল করবো নাকি একটা? জবাব কি পাবো? সব শালা শুয়োরের বাচ্চা যদি সুশীল সেজে চুপ করে থাকে? যদি বলে, আমাদেরও হরাইজন অ্যামনেশিয়া আছে, তুই ফোট? নাকি সামনাসামনি ধরবো কাউকে? গিয়ে দরজায় ঘন্টা বাজাই, দরজা খোলা মাত্র, কোন সময় না দিয়েই অ্যাকশন, বলো, গল্পের আমিটা আসলে কেমন? অসহযোগ, অসহযোগ। গান্ধী স্ট্র্যাটেজি। সবাই গান্ধী হয়ে আমার গল্পটাকে চুদে দিতে চায়। বিরক্ত লাগে খুব। একটা মাত্র চরিত্রকে নিয়ে এতো ঝামেলা। বাকিরা তো তৈরিই আছে। এই বালের আমিটাকে একটা চিমটা দিয়ে ধরে দূর করে দিলে কেমন হয়? গল্পটা কি আদৌ গল্পের আমির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি না, টেবিলের নিচে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। বোঝা যায় না, বড্ড ঝাপসা, আর টেবিলের নিচে অনেক ধূলোবালি। একটা টান দিয়ে সরিয়ে দিই অচেনা লোকটাকে, কী এমন সমস্যা? বাকিদের দিয়েও গল্পটা হয়, অনেকখানিই। শুধু কী যেন হয় না, ধরতে পারি না। কম্পিউটার চলতে থাকে, আমি উঠে গিয়ে জানালা খুলে দিই। বাকিদের দিয়েও হয়। বাকিদের দিয়েই হয়। গল্পের আমিটা গল্পের জন্যে জরুরি নয়। কিন্তু কিছু কথা খুব লিখতে ইচ্ছে করছে আমার, সেগুলো লেখা হবে না ওকে বাদ দিলে। গল্পটা কম্পিউটারেই লিখি, আর মনে মনে, ঐ কথাগুলো লেখা বড় প্রয়োজন।
false
ij
বহুমিল হাব্রাল_ চেক ভাষার একজন শক্তিশালী লেখক। ইনি বহুমিল হাব্রাল। চেক ভাষার এক তুমুল জনপ্রিয় লেখক। তুমুল জনপ্রিয় কেন? যেহেতু তাঁর লেখায় রস রয়েছে লেখায়। স¤প্রতি ওঁর দুটো উপন্যাসের চলচ্চিত্র রুপায়ন দেখলাম। কোনওই সন্দেহ নেই যে -হাব্রাল একজন শক্তিমান গল্প বলিয়ে । তাঁর চরিত্ররা একেকজন বিজ্ঞ গাধা। বহুমিল হাব্রালের জন্ম চেকশ্লাভাকিয়ার মোরাভিয়ায়। মার্চ ২৮। ১৯১৪। মোরাভিয়া জায়গাটি চেক প্রজাতন্ত্রের পুবে। হাব্রালের (সৎ) বাবা ছিলেন বিয়ার কারখানার ম্যানেজার। চেকশ্লাভাকিয়ার রাজধানী -আমরা জানি প্রাগ। প্রাগে রয়েছে চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেই আইন নিয়ে কিছুকাল পড়েছেন হাব্রাল। ১৯৪০ সাল থেকে আমৃত্যু বাস করছিলেন প্রাগ শহরেই। পঞ্চাশের দশকে ছিলেন লৌহ কারখানায় শ্রমিক। ঐ সময়কার পরিবেশ নিয়ে লিখেছিলেন "হাইপার টেক্সট"। প্রাগে রয়েছে হুসভা নামে একটি সড়ক। সেই হুসাভা সড়কে রয়েছে একটা পাব। পাবের নাম: "গোল্ডেন টাইগার।" এই পাবেই আড্ডা দিতেন হাব্রাল। এখানেই অনেকের সঙ্গে পরিচয়। যেমন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জাতিসংঘে আমেরিকার প্রতিনিধি ম্যাডেলিন অলব্রাইট । মজার মানুষ ছিলেন হাব্রাল । যেমন-কবুতরকে দানা খাওয়াতে ভালোবাসতেন। প্রাগে ৫তলা বাড়িতে থাকতেন হাব্রাল। তাঁর অনেক লেখাতেই ৫তলা থেকে পড়ে আত্মহত্যার কথা রয়েছে। শেষ বয়েসে (১৯৯৭। ফেব্র“য়ারি ৩।) হাসপাতালে থাকার সময় কবুতরকে খাওয়ানোর সময় ৫ তলা থেকে পড়ে মারা যান হাব্রাল। ১৯৬৫ সালে ক্রেসকোতে (জায়গাটি প্রাগ শহরের কাছে) একটি কাঠের বাড়ি কেনেন হাব্রাল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাঝে মাঝে সেই বাড়িতে যেয়ে থাকতেন । একটা পন্টিয়াক গাড়ি ছিল হাব্রালের। তখন চেক প্রজাতন্ত্র সোভিয়েত শাসনের অধীন। সারা চেকশ্লাভিকিয়ায় সব মিলিয়ে ৪টি কি ৫টি পন্টিয়াক ছিল। তার মধ্যে হাব্রালের একটি। ক্রেসকোর সেই কাঠের বাড়ি ভরতি কবুতর। বিড়াল। ছাগল। একটা টেলিভিশন। হাব্রাল পা তুলে বিয়ার খাচ্ছেন-চুরুট টানছেন। হাব্রালের একটি অসাধাণ লেখা আছে। “স্যাড স্টোরিজ অভ হ্যাপি পিপলস।” এক কথায় অসাধারণ। দিন কয়েক আগে মুভিটা দেখলাম। এই ছবিতে রয়েছে ক্রেসকোর নির্জন মফসসল জীবন । হাব্রাল নিজেও রয়েছেন ছবিটায়। ছাগলগুলো পন্টিয়াকে তুলে সকাল বেলায় বেড়িয়ে পড়েন। গাড়ি চালাতে চালাতে দানাপানি খাওয়াচ্ছেন ছাগলদের। তা ছাড়া ছবিতে রয়েছে ক্রেসকোর গাছপালা, লোকজন। একেকজন কমিক ক্যারেকটার ...বিজ্ঞ গাধা। তখন বলেছি তুখোর গল্প বলিয়ে ছিলেন হাব্রাল। অবশ্য তাঁর প্রথম দিককার লেখাগুলি ছিল নিরীক্ষাধর্মী। যেমন, ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম লেখা “ড্যান্সিং লেসনস ফর দ্য অ্যাডভান্স ইন এজ” মাত্র একটি লাইন। তাঁর সবচে বিখ্যাত উপন্যাস: ক্লোজলি ওয়াচড ট্রেইনস। বিষয়: এক হাবাগোবা তরুণ ও জার্মান দখলে থাকার সময় একটি চেকশ্লাভাকিয়ার একটি রেলষ্টেশন। এই উপন্যাসটির চলচ্চিত্র রুপটি দেখলাম সম্প্রতি।ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। এক কথায় অসাধারণ। হাব্রালের অন্য একটি লেখার নাম: “আই সার্ভড দ্য কিং অভ ইংল্যান্ড।” এখনও দেখা হয়নি। দেখা হলে লিখব। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১০
false
mk
পুরোনো লেখা, ফিরে দেখা_ ক্ষমা করবেন ড_ শাহদীন মালিক ড. শাহদীন মালিককে নানা কারণে শ্রদ্ধা করি। আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে তিনি একজন। নানা ভাবে বিভিন্ন নমস্য ব্যক্তিদের কাছে তা প্রকাশও করেছি।আমার পুত্র সানজীব যখন হঠাৎ করেই স্থির করল আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করবে, তখন তাকে সঙ্গে নিয়ে সেগুনবাগিচায় ড. মালিকের চেম্বারে গিয়েছিলাম। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ খুলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পোষ্য কোটায় বিজ্ঞান, প্রাণবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে সানজীবের ভর্তির সুযোগ ছিল। সে অনুযায়ী ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল করেছিল সানবীমস ও মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে।কিন্তু আইন বিষয়ে পড়বার তার হঠাৎ সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়লাম আমি ও আমার স্ত্রী। মূল সমস্যা অর্থনৈতিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে অনেকটা বিনা খরচেই তার পড়া হত। আর আমি প্রাণবিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় এবং বর্তমান শতাব্দীর সবচাইতে অগ্রসর বিষয় হিসেবে প্রাণবিজ্ঞানকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে বলে, আমার ছেলে এ বিষয়ে পড়বে — তাই ছিল গভীর প্রত্যাশা।বড় চিন্তায় পড়লাম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার খরচ যোগানো কঠিন হবে। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে গবেষণা করবার কারণে সানজীবের প্রাথমিক পড়াশুনা সেখানকার খুবই উঁচুমানের স্কুলে সম্পন্ন হয়েছিল। তাই দেশে ফিরে সানবীমস এবং পরে মাস্টারমাইন্ড স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে তাকে পড়াতে গিয়ে আমাদের অর্থকষ্টে পড়তে হয়েছে।যাই হোক, সানজীবের কাছ থেকে যখন আইন বিষয়ে পড়বার মূল কারণটি জানলাম, তখন আমার স্ত্রী এবং আমি সকল দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে তার ইচ্ছাই ফলবতী হোক– এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এবারে তার ইচ্ছার কথাটি বলি। সে ঠিক করেছে আইন বিষয়ে পড়ে সে তার চাচা কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমকে গোপন বিচারে যে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাবে।ড. শাহদীন মালিক সানজীবের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং তাকে তাঁর আইন স্কুলে ভর্তিপরীক্ষা দেবার সুযোগ দিলেন। সানজীব ভালো ফলাফল করেছিল। তার জন্য টিউশন ওয়েভারও পেয়েছিল প্রায় প্রতি সেমিস্টারে। ইতোমধ্যে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল হওয়ার কারণে জিয়া-এরশাদ সামরিক শাসকদের আমলে প্রদত্ত শাস্তির বিরুদ্ধে উচ্চতর কোর্টে আপিল করবার সুযোগও সৃষ্টি হয়ে গেছে।এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনাও ঘটেছে। ১/১১-এর সেনাচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছে ক্ষমতায়। ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাতে আমাকে ও আমার সহকর্মী ড. হারুন-অর-রশীদকে চোখ বেঁধে নিযে যায়। প্রথমে মোট বার দিনের রিমান্ড ও পরে পাঁচ মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। সানজীবের ছোট জীবনে বড় পরিবর্তন হয়ে গেছে। সময় ও পরিস্থিতি যেভাবে ছোটদের বড় করে দেয়, তেমনটা হয়েছে তার জীবনে। অনমনীয় থেকে এবং বিজয়ী হয়েই ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারি কারাগার থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি, যার পেছনে সানজীবের সুপরামর্শ ও দৃঢ়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়ে সানজীবের নেতৃত্বে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহী ঘটনাও ঘটেছে। তাতে আমার পূর্ণ সায়ই ছিল। একটু খুলে বলি।বিষয়টি ড. শাহদীন মালিককে নিয়ে বলে। ব্রাক প্রশাসন ঠিক করেছে ড. শাহদীন মালিককে বিভাগ থেকে সরে যেতে হবে। সানজীবদের প্রতিবাদী বিদ্রোহ হল সে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু কষ্টের উপার্জিত পয়সায় তাকে পড়াচ্ছি। সে নিতে যাচ্ছে এমন বিদ্রোহী সিদ্ধান্ত। জানি না অন্য কোনো অভিভাবক তাতে সায় দিতেন কিনা। কিন্তু যখন সানজীবের প্রত্যয়দীপ্ত সিদ্ধান্তের কথা শুনলাম, তখন সায় দিতে বিন্দুমাত্র সময় নিইনি।একথা জোর দিয়ে বলতে পারি, সে বিদ্রোহের কারণে ড. শাহদীন মালিক তার প্রিয় বিভাগে থাকতে পেরেছিলেন। এ প্রসঙ্গে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করতে হবে। সানজীবের ব্যতিক্রমী বিদ্রোহে প্রচ্ছন্ন সায় তিনিও নিশ্চয়ই দিয়েছিলেন। সানজীবের এটা বড়ই সৌভাগ্য যে সে ড. শাহদীন মালিক এবং ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নীতিনিষ্ঠতা লাভের সুযোগ পেয়েছিল। একজন ছাত্রের জীবনে ভালো শিক্ষকের পরিচর্যা পাওয়ার চেয়ে আর বড় কোনো সৌভাগ্য হতে পারে না।পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী রদের কথায় আবার ফিরে আসি। যে পবিত্র ইচ্ছা হৃদয়ে ধারণ করে সানজীব আইন পড়েছে, তা ফলবতী হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাকে নিয়ে ড. শাহদীন মালিকের বাসার চেম্বারে গেলাম। ভর্তির সময়ে সানজীবের ইচ্ছার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁকে অনুরোধ করলাম কর্নেল তাহেরকে যে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গোপন বিচারে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে রিট পিটিশনে আমাদের আইনজীবী হতে।খুব সময় তিনি নেননি। বলতে কী, তেমন কোনো ফি ছাড়াই তিনি রিট মামলাটি করেন। প্রস্তুতির জন্য সময় নেওয়া হয় প্রায় তিন মাস। সে কাজের জন্য তো প্রস্তুত হয়েই ছিল সানজীব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, জাতীয় আর্কাইভ, বিভিন্ন সংবাদপত্রের অফিস সাহায্যে এগিয়ে এল। ড. শাহদীন মালিকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ৬৪ পৃষ্ঠার রিটটি লিখে ফেলল সানজীব।আগস্ট ২৩, ২০১০ মহামান্য বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চে রিট পিটিশনটি দায়ের করা হয়। প্রধান বাদী হিসেবে আমি ও আমার সঙ্গে আমার দুজন ভাবী, মিসেস লুৎফা তাহের ও মিসেস ফাতেমা ইউসুফের পক্ষ থেকে। সেদিনই রুল ইস্যু হয় এই মর্মে যে কেন মার্শাল ল’ রেগুলেশন নং ১৬ ও একই সঙ্গে সেই রেগুলেশনের অধীনে তাহরের বিচার অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না। তারই ধারাবাহিকতায় র্পূণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় মে ২০, ২০১৩।সানজীবের প্রজন্ম জয়ী হল। এ জয়ের পেছনে বহু বছরের অশ্রু, বেদনা, সাহস ও দৃঢ়তা এবং সর্বোপরি বিচারকের কঠিন, নির্মোহ এবং সাহসী আইনি প্রজ্ঞা, দেশের প্রায় সকল প্রথিতযশা এমিকাস কিউরিদের বিজ্ঞ অভিমত এবং সরকারের সদিচ্ছা– এ সব কিছু যুক্ত হয়েই ফাঁসির ৩৭ বছর পর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হল। একজন শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক তাহেরকে জেনারেল জিয়াউর রহমান যে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছেন, তা উচ্চারিত হল রায়ে। তাহেরকে শহীদী মর্যাদা দিতে অনুরোধ জানানো হল সরকারকে।ড. শাহদীন মালিক, আপনি এই ঐতিহাসিক আইনি বিজয়ের পর আরও দুটো আইনি লড়াইয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। তা ছিল বাংলাদেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরকে অসুস্থতার ধারা থেকে রক্ষা করবার কাজে। দুটো রিট যার একটির মাধ্যমে সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল এবং অপরটি যার ফলে ৪৩ দিন পর প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ড. শাহদীন মালিক, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩, বিজয় দিবসের আগের দিন– যে দিনে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী হরতাল ডেকেছে, কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবার পর– ঠিক সেই দিনে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় আপনার লেখা ‘‘শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন’’ শীর্ষক প্রবন্ধটি সম্পর্কে কিছু প্রাণের আকুতি জানাব বলে বড়ই কুণ্ঠিতভাবে পূর্বের দীর্ঘ বয়ানটি দিয়েছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। অমর্ত্য সেনের সেই বিখ্যাত উক্তি যা তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন সভায় স্মরণ করেছিলেন– “বলতে পার মৃত্যু কী ভয়ঙ্কর, সবাই যখন কথা কইবে, রইবে তুমি নিরুত্তর”।একটি উন্নত, উদার, যুক্তিবাদী সমাজে যে আমাদের বিতর্ক করা দোষের নয়, সে কথাটির ভরসায় এবারে আপনার প্রবন্ধ সম্পর্কে আমার অভিমত বলব।একটু হলফ করেই বলি। আপনার লেখার শিরোনাম দেখেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল। ভাবলাম ড. শাহদীন মালিকের তো এমন শিরোনামের লেখাই লিখা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাক্রমশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, যিনি নিজেও ইতোপূর্বে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁর অনুরোধ (আমাদের দেশের সরকার প্রধানদের কাছে যা নির্দেশ সমতুল্য), তাকে উপেক্ষা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শত ষড়যন্ত্রে পরোয়া না করে (যাতে আমাদের আলোকিত মানুষদের সরব ও নৈঃশব্দের ষড়যন্ত্র যুক্ত আছে) শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ’ কাদের মোল্লার নয়, একাত্তরের কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করতে যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন– শুধুমাত্র তার জন্যই তো উদার, যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল বলে পরিচিত ড. শাহদীন মালিক তাঁর হৃদয়ের গভীর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাতে পারতেন।এ বিষয়ে ডেইলি স্টার পত্রিকায় ১২ ডিসেম্বরে সৈয়দ বদরুল আহসানের লেখা, War crimes, Kerry & history শীর্ষক প্রবন্ধটি ড. শাহদীন মালিককে পড়তে অনুরোধ করি। এক গভীর আনন্দ থেকে যখন ড. শাহদীন মালিকের প্রবন্ধটি পড়তে শুরু করলাম, তখনই খেলাম প্রচণ্ড ধাক্কা।আমরা জানি, দেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সবার মনেই গভীর শঙ্কা আছে। তা নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে অনেকের মধ্যে ড. শাহদীন মালিকও প্রায়ই মতামত দিচ্ছেন। অনেক সময় যুক্তিপূর্ণ মন্তব্য করলেও ইদানিং লক্ষ্য করছি, তিনি যেন অনেকটা ভবিষ্যদ্বাণী দেবার মতো করেই তাঁর বক্তব্য হাজির করছেন। যেমন তাঁকে বলতে শুনছি, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কতটি আসন পাবে তাও তিনি বলে দিচ্ছেন। তা কীসের ভিত্তিতে?‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় সারাদেশের মাত্র পাঁচ হাজার মানুষের মতামতের উপর ভিত্তি করে নির্বাচনী যে চিত্রটি দেওয়া হয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে। তার সঙ্গে ছিল পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজয়ের পরের আবহ। সে নির্বাচনের পরের কয়েকটি মাসে বাংলাদেশের রাজনীতির দৃশ্যপট যে দ্রুত পালটে যেতে শুরু করেছে, তা হয়েতো গ্রহণে তাঁর বিভ্রম হচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তমান এসব বাস্তবতার প্রতিফলন ‘প্রথম আলো’ এবং ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকায় আমরা দেখতে পাচ্ছি।এ প্রসঙ্গে গত ৬ ডিসেম্বরের ‘প্রথম আলো’র ১৩ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত দুটো প্রবন্ধের প্রতি ড. শাহদীন মালিকের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। খোলা চোখে হাসান ফেরদৌস লিখেছেন “মুক্তিযুদ্ধ না গণতন্ত্র”। ঠিক তার নিচে “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়– এ কোন নিরপেক্ষতায় সুশীল সমাজ’’ শীর্ষক প্রবন্ধটি লিখেছেন, কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের সহধর্মিনী লুৎফা তাহের। হাসান ফেরদৌস লিখছেন–“সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলসমূহের এই আন্দোলন ভয়াবহ রক্তপাতের কারণ হয়ে উঠেছে। সম্পূর্ন নিরীহ, রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়, এমন নারী-পুরুষ ও শিশু হতাহত হয়েছে। যারা এই রক্তপাতের জন্য দায়ী, তারাই যদি ক্ষমতা দখল করে, ভাবা অযৌক্তিক নয়, তারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই বিসর্জন দেবে না, সম্ভবত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও কার্পেটের নিচে লাথি মেরে ঢোকাবে। যারা এই যুক্তিতে বিশ্বাস করেন, তাদের প্রস্তাব, এই মুহুর্তে গণতন্ত্র রক্ষার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ধরে রাখা। আর সে জন্য যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও প্রাতিষ্ঠানিকতা নিয়ে কিছু ‘আপোস’ করতে হয় তাও ভালো।’’“এ কোন নিরপেক্ষতায় সুশীল সমাজ”? এই শিরোনামের প্রবন্ধে লুৎফা তাহের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমানের মতো সুশীল সমাজের স্বনামধন্য ব্যক্তির বক্তব্য শুনে তার বিচলিত বোধ থেকে একই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন–“কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী সংসদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি আন্দোলন সম্পর্কে বললেন, এভাবে আইন অমান্য করতে থাকলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। সে কথা শুধু কথা হিসেবেই রয়ে গেছে।’’ দেশের সুশীলদের প্রতি লুৎফা তাহের প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আপনারা অধ্যাপক আনোয়ারের পক্ষ না নিন, অন্তত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে তদন্ত কমিশনের (যা গঠনের দাবি করেছিলেন উপাচার্য আনোয়ার হোসেন নিজেই) প্রতিবেদন প্রকাশিত হোক, সেই দাবিটি করতে এত কুণ্ঠিত বোধ করছেন কেন?’’ড. শাহদীন মালিককে নিশ্চয়ই লুৎফা তাহেরের লেখাটি বিচলিত করবে। কারণ তারই মক্কেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক এবং একজন ছাত্রের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের অরাজকতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি রক্ষা করবার রিট আবেদন তিনিই করেছিলেন। এরপর যখন আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টের নির্দেশনার চরম অবমাননা করেছেন, তখন উপর্যুপরি আবেদনের পরও তিনি আদালত অবমাননার আর্জিটি পেশ করেননি। হয়তো তিনি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের মতো নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েছেন।শেখ হাসিনাকে ‘বিকট’ প্রাণঢালা অভিনন্দন জ্ঞাপনের অনুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন ড. মালিক। তা একটি সংখ্যা নিয়ে– ‘ফাঁকা মাঠে ১২৭’। প্রধানমন্ত্রীকে সত্যিকার প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাবার আর কোনো কারণ তিনি খুঁজে পেলেন না। ব্যঙ্গোক্তি করার এক পর্যায়ে তিনি এও বলেছেন, “আশা করি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাননীয় উপাচার্যরাও অভিনন্দন-বিজ্ঞাপনের মিছিলে অগ্রদূতের ভূমিকায় নামবেন।’’তা তিনি করুন, তবে তাঁকেসহ সুশীলদের জানাই– শিক্ষার্থী এবং দেশবাসীর প্রবল প্রত্যাশা অনুযায়ী আমি যখন জাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলাম, তখন তার বিরোধিতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে আসেনি। এসেছিল শিক্ষামন্ত্রী ও তার সচিব মহোদয়ের পক্ষ থেকে। ড. শাহদীন মালিক সেই শিক্ষামন্ত্রীর প্রশস্তি গেয়েছেন। বলেছেন–“ ‘প্রথম আলো’র জনমত জরিপে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আর শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাপারে ইতিবাচক মূল্যায়ন ছিল যতদূর মনে পড়ে, ৯০ শতাংশের বেশি জরিপে অংশগ্রহণকারীর।’’আমি শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়ে দিয়েছিলাম তাঁর মন্ত্রণালয়ের মতো এত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের মন্ত্রীর বা তার সচিবের কাছ থেকে জাকসু নির্বাচন বিষয়ে এমন উক্তি ছাড়া আর কী-ই-বা আশা করতে পারি। এও বলেছি, This is none of your business, আমার আছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ফসল বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ১৯৭৩ সালের আইন, আমি তা অনুসরণ করব। সিনেটকে হালনাগাদ করব, সেখানে নিয়মমাফিক সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে শুধুমাত্র তেমন সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দেব। যেখানে আমি নিজে কোনো প্রার্থী হব না, নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে আমি অপর একজন নির্বাচিত উপাচার্যের হাতে দায়িত্বভার হস্তান্তর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাব। সেটাই ছিল মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলার মহোদয়ের নির্দেশনা।গভীর পরিতাপের এবং শঙ্কার আরও কথা আছে ড. শাহদীন মালিকের অভিনন্দনে। তিনি বলছেন, “[...] ২০-২৫ বছর পর যখন ঘটনার অনেক দিন পর নির্মোহভাবে এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা হবে, তখন স্বাধীনতার চার দশক পর এ দেশে জঙ্গি-মৌলবাদের উত্থানের পেছনে কার কত অবদান সেই বিশ্লেষণেও শেখ হাসিনার নাম কী অক্ষরে অর্থাৎ তামা, রুপা, সোনা না হীরা দিয়ে লেখা হবে, তা-ই বিশ্লেষণের বিষয়।”অবাক না হয়ে পারি না। যেখানে বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের বিচার করছে সেখানে ড. শাহদীন মালিক বাংলাদেশে জঙ্গি-মৌলবাদের উত্থানের জন্য শেখ হাসিনাকে কিছুটা হলেও দায়ী করছেন। অথচ জেনারেল জিয়ার আমল থেকে শুরু করে জেনারেল এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়ার আমলের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রতক্ষ সহায়তায় যেভাবে বাংলাদেশে জঙ্গি-মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে, সে সম্পর্কে ড. মালিক কিছুই বললেন না।একেবারে ভবিষ্যতদ্রষ্টার মতো তিনি নির্দ্বিধায় লিখে দিচ্ছেন, “আগামী অন্তত দুই যুগেও দেশের বেশ কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগ একটি আসনও জিততে পারবে না।’’বিএনপি-জামাতীদের হয়ে হুমকি দিচ্ছেন তিনি, ‘‘আগামী দুই সপ্তাহে লক্ষীপুর আর সাতক্ষীরা চলে আসবে ঢাকায়। চলে যাবে সিলেটে, টাঙ্গাইলে, বরগুনায়, অর্থাৎ দেশের আনাচে-কানাচে। সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি এক সপ্তাহ।’’এরপর তাঁর কিছু পরামর্শ আছে, বিজ্ঞজনেরা পড়ে নেবেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি কোথাও তাঁর পরামর্শ নেই। সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক আচরণ করতে তাঁর প্রতি ড. শাহদীন মালিকের কোনো আহবান নেই।ড. মালিক, বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াত-শিবির ছাড়ার ঘোষণা দিতে বলুন। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার দৃঢ়তা দেখাবার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে বলুন।বন্ধু আমার, বড়ই রহস্যের দেশ এই প্রিয় বংলাদেশ। এই দেশের সামর্থ ও সম্ভাবনা আপনি বুঝতে পারেননি। বুঝতে পারেননি নতুন প্রজন্মের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শক্তির কথা। বড়ই কষ্ট পাচ্ছি।ক্ষমা করবেন ড. শাহদীন মালিক, অধমের এই বেদনাবোধের জন্য। তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ২৪.কম, লেখক ড.মো. আনোয়ার হোসেন
false
rn
Right Words at the right time আজ মধ্য রাত্রে হিমিকে ফোন করে একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করবো। হিমির অনেক বুদ্ধি।আমার কোনো কিছুই হিমির কাছে গোপন থাকে না।মেয়েটা কিভাবে কিভাবে যেন সব বের করে ফেলে।ধাঁধা টা হবে এই রকম- "এক বৃদ্ধা আজরাইলের হাত থেকে বাঁচতে চায়।সে একটা কৌশল বের করলো যেন আজরাইল তাকে খুঁজে না পায়।কৌশল কাজ করলো।আজরাইল তাকে খুঁজে পেল না।কৌশল টা কি"? "Since there is no help,Come let uskiss and part.Nay,I have done,you get no moreof me.And I am glad,yes glad with all myheart,That thus so cleanly I myself can befree." মহিষের মাংসকে কসাই গরু বলে চালিয়ে দেয়।আমি কি করে বুঝি কোনটা গরু?খুব ঘটনাহীন আমার জীবনযাপন।সারারাত জেগে থাকি,রাস্তায় রাস্তায় হাঁটা হাঁটি করি,রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খাই,বই পড়ি,না ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি,মানুষের দুঃখের কথা শুনি,আড্ডাতে চুপ করে বসে থাকি।আড্ডাতে দু-তিন ঘন্টা সময় চলে যায়।আমার বিনোদন শুধু এক টাই।খুব মনোযোগ দিয়ে বন্ধুদের কথা শুনি।এমন অদ্ভুত সব বিষয় নিয়ে কতকিছু বলে এরা,আমি চুপচাপ শুনি।ভেতরে শিহরন জাগে।নতুন সব তথ্য জেনে কি যে আনন্দ পাই।ভালোবাসা বুঝতে সময় লাগলেও অপছন্দ বোঝা যায় সহজেই।কিন্তু অপছন্দের কোনো কারন খুঁজে পাই না।কিছু মানুষ আমাকে দারুন অপছন্দ করে!যা আমার জন্য অনেক কষ্ট কর! আমি দেখেছি,মনোজগতে মানুষের কত রকম বিকৃতি থাকে।আমার ভাবতে কষ্ট লাগে মাত্র কিছু টাকার বিনিময়ে একটা মেয়ে....! আর ছেলেদের চরিত্র মানে সুযোগের অভাব,তা আমি খুব ভালো করেই বুঝি।তবে আমার ভাবতে ভালো লাগে- আমার বুকের বাম পাশে হিমির মসৃন স্পর্শ।যেন অলৌকিক কিছু!আর চুমু'র কথা কি বলব?আচ্ছা হিমি কি জানে চুমু দেওয়ার আগে বলতে হয় ভালোবাসি।আমি হিমির চোখে মুখে দেখতে পাই,শ্যামলা রঙের মুখে পুকুরের শান্ত জলের মতো স্থির এক সৌন্দর্য।একটাই দোষ,রুপের ফরসা আগুন নেই,যা ছেলেদের তাৎক্ষনিক পোড়ায়।মাঝে মাঝে শান্ত পুকুরের জল নড়ে উঠে।আমি তো ইনোভেটিভ এন্টারপ্রেইনার।অন্যসব মেয়ের মতো হিমি 'না' দিয়ে কথা শুরু করে না।এমন কি ইতিবাচক বিষয়েও। একদিন বিকেলে এক মেয়ে এসে আমাকে বললো,ধরে নেই মেয়েটার নাম নীলাঞ্জনা- আমার সাথে আজ বিকেলে বাইরে যাবে?আমি বললাম বিকেলে সম্ভব না,আমার কাজ আছে।নীলাঞ্জনা বললো কখন সময় হবে?নীলাঞ্জনার মুখে এক আকাশ বিস্ময়!আমি বললাম সন্ধ্যায়।মেয়েটা বললো কোথায়?আমি বললাম তুমি'ই ঠিক করো।ফুলার রোড?একটু রহস্য নীলাঞ্জনার কন্ঠে।আচ্ছা ঠিক আছে,আমি বললাম।এতক্ষনে হিমির কথা একবারও মনে পড়েনি।সব পুরুষ কি আমার মতোই?নিজের নিশ্চিত ঠিকানা বিস্মৃত হয়ে অহেতুক হাঁটতে যাই ভুল ঠিকানায় !আসলে পুরুষ হলো কুত্তার জাত,ঘরে পোলাও মাংস পেয়েও বাইরের গু'তে মুখ দিবেই।আমার চোখের সামনে ভাসে নীলাঞ্জনার হাত ধরে ফুলার রোডে হাঁটছি।কেমন একটা নিষিদ্ধের হাত ছানি।কোনো কিছুতেই হিমিকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব।কথার মধ্যবর্তী ফাঁক,খপ করে ধরে বসে তাৎক্ষনিক।নিরাপদ হলো স্বীকার করে সব খুলে বলা। পাহাড়ে যেতে হবে।তার চূড়ায় আছে জনমানবহীন নিঃসীম নীরবতা।খুব দুঃখী প্রয়োজন তেমন বিশাল এক ধু-ধু প্রান্তর।যাতে কেউ শুনতে না পায়।বলতে না পারে,আর কান্না নয় রাজীব নয়।আমার হাত ধরো।আর কোনো ভয় নেই।ভালোবাসি।(কেউ যদি প্রবলভাবে বিশ্বাস করে তার ভালোবাসা'র ক্ষমতা আছে তাহলে প্রকৃতি তাকে সেই ক্ষমতা দিয়ে দেয়।কেউ যদি মনে করে তার অনেক কিছু করার ক্ষমতা আছে তাহলে প্রকৃতি তাকে সেই ক্ষমতাও দিয়ে দেয়।শুধু বিশেষ একজনের এক আকাশ সুন্দর পবিত্র ভালোবাসা ছাড়া সম্ভব না।)
false
rn
আসুন ইন্দোনেশিয়া দেশটি সম্পর্কে জানি ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। প্রায় ৫,০০০ দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম জাকার্তা। ১২শ শতকের দিকে ইন্দোনেশিয়াতে ইসলামের আগমন ঘটে এবং ১৬শ শতক নাগাদ জাভা ও সুমাত্রার লোকেরা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। তবে বালি দ্বীপের লোকেরা আজও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু রয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর জাপানিরা ইন্দোনেশিয়া দখল করে। ১৯৫০ সালে ইন্দোনেশিয়া জাতিসংঘে ৬০তম সদস্য হিসেবে যোগদান করে। ইন্দোনেশিয়াতে প্রায় সাড়ে সতের হাজার দ্বীপ রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৬ হাজার দ্বীপে মনুষ্য বসতি আছে। সুমাত্রা, জাভা, সুলাওয়েসি, বোর্নিও ও নিউ গিনি পাঁচটি প্রধান দ্বীপ। বৈচিত্রপূর্ণ দেশ ইন্দোনেশিয়া। পর্যটন ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস। ইন্দোনেশিয়াতে ৭৪২টি ভাষা আছে। এদের মধ্যে ৭৩৭টি জীবিত। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদের নাম ‘ইসতিকলাল মসজিদ’। ‘ইসতিকলাল’ শব্দের অর্থ স্বাধীনতা। জাকার্তা নগরীতে অবস্থিত ইসতিকলাল মসজিদ মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ। ইসতিকলাল মসজিদের নির্মাণ কার্যক্রম ১৯৫৫ সালেই শুরু হয় এবং ২৯ বছর পর ১৯৮৪ সালে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের মতো ইন্দোনেশিয়ার বহু অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ। এর মধ্যে জাভা প্রদেশ ও জাকার্তা নগরী অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। ইসতিকলাল মসজিদটি সাত তলাবিশিষ্ট। মসজিদের পার্কিং এরিয়ায় একসঙ্গে ৮০০ গাড়ি রাখা যায়। মসজিদে রয়েছে অতি উচ্চ সুদর্শন একটি মিনার। আশপাশে রয়েছে প্রশস্ত উদ্যান।অপরূপ সৌন্দর্যের দ্বীপ ইন্দোনেশিয়ার বালি। পর্যটক শহর। সমস্ত দ্বীপের মানুষ পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আন্তরিক। জনগন রাস্তায় পরে থাকা গাছের পাতা পর্যন্ত কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলেন। পর্যটকদের অগ্রাধিকার এখানে সবকিছুতে। বসবাসের হোটেল এলাকা্য কোন বানিজ্যিক দোকান পর্যন্ত নেই। সৈকত এলাকা খুবই পরিচ্ছন্ন। কচ্ছপ এর দ্বীপ এ আছে বিশাল বিশাল কচ্ছপ। ইন্দোনেশিয়ারাও প্রধানত ভাত আর মাছ খেয়ে থাকে এবং প্রচুর সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়ান রিকশাগুলো আমাদের রিকশার মতো নয়। আমাদের রিকশাগুলো বড় ও সাধারণত ড্রাইভার সামনে থাকেন। উল্টো দিকে ইন্দোনেশিয়ান রিকশাগুলো অনেক ছোট আকৃতির এবং দুই সিটের হয়। তার চেয়েও অদ্ভুত হলো, তাদের রিকশায় যাত্রীদের সিট থাকে সামনে আর ড্রাইভার চালান পেছনে বসে।১৯৪৫ সালে ইন্দোনেশিয়া নেদারল্যান্ড্‌সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করলে ইন্দোনেশীয় ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়ার রেলে ভ্রমণ অনেক সুবিধাজনক ও আরামদায়ক। জাকার্তা শহরে গাড়ির পরিমাণ অনেক বেশি ও যারা গিয়েছেন এই শহরটিতে তারাও একে গাড়ির শহর হিসেবে গণ্য করবেন। তবে কোথাও দেখবেন না ফুটপাথে গাড়ি অযথা দাঁড় করানো আছে। তাই গাড়ি যতই থাকুক না কেন, এক এক গন্তব্যের গাড়ি থাকে সাধারণত এক একটি নির্দিষ্ট স্থানে। আর তাদের সাধারণ পাবলিক বাসগুলো সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং ব্যবস্থাপনা অনেক ভাল। ইন্দোনেশিয়াতে মেয়েরা সবাই স্কার্ফ পরে থাকে আর বয়স্কদের বেশ পরিমাণে বোরখা পরতে দেখা যায়। ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রবৃদ্ধি আসে ৫.৭৮ শতাংশ, যা ২০০৯ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন।“আর্থিকভাবে ইন্দোনেশিয়া এখন বিশ্বের ১৬তম শক্তিশালী রাষ্ট্র। ঢাকার মতো এত ঘন ঘন বহুতল ভবন নেই। তবে ঢাকার মতো বৃক্ষহীন নয়। সবুজের ছোঁয়া আছে রাস্তার পরতে পরতে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঢাকার রাস্তার মতো কোথাও ময়লা-নর্দমা দেখা যায়নি। গাড়ি কখনও হর্ন বাজায় না।চালকরা ট্রাফিক সিগন্যালের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সিগন্যালে লালবাতি জ্বলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সব গাড়ি থেমে যায়। ইন্দোনেশিয়ানরা অন্তত আমাদের চেয়ে অনেকটা সভ্য জাতি। নিয়মকানুনের প্রতি আমাদের চেয়ে বেশি শ্রদ্ধাশীল। একটি প্রথা তারা মেনে চলেন, হজ না করা পর্যন্ত ছেলে বা মেয়ে কারও সহজে বিয়ে হয় না। বিয়ের অন্যতম শর্ত থাকে হজব্রত পালন করা হয়েছে কি না। ইন্দোনেশিয়ার বাটিক খুবই প্রসিদ্ধ। ইন্দোনেশিয়ান বাটিকের শার্ট সবারই পছন্দ। পৃথিবীর বহু দেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা আসে বালি দ্বীপের প্রাকৃতিক রূপে নিজেদের সিক্ত করতে। বালি দ্বীপটি আসলে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখানে প্রধানত শুষ্ক ও আদ্র এই দুটি মৌসুম রয়েছে। তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করে। ইন্দোনেশিয়া মুসলমান প্রধান দেশ হলেও বালি দ্বীপটি হিন্দুপ্রধান। বালি দ্বীপটিতে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে প্রচুর পাব, ডিসকো আর নাইট ক্লাব। দ্বীপটি খুবই নিরাপদ। চুরি, ছিনতাই বা কোন কিছু হারাবার ভয়ই নেই। ইন্দোনেশিয়ার এই দ্বীপে আগে একবার এই অগ্নিগিরি থেকে অগ্নি উৎপাত হয়ে বহু মানুষ আর গ্রাম ধ্বংস হয়েছে। বালি দ্বীপের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি বনে বহু বানরের বাস। দেনপাসার থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই বনের আয়তন ৬ হেক্টর। এখানকার উদ্ভিদ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বনে শুধু বানর বাস করে। বালি দ্বীপের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে, হনুমান হচ্ছে দেবতা। তাই তারা বানরের কদর করে। বনের বাইরে একটি মন্দির আছে। সেখানেও অনেক বানরের বাস। মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল সপ্তাদশ শতাব্দীতে। এ মন্দিরে পর্যটকরা যেতে পারেন না। এটি শুধু বানরদের জন্য।চীনারা বালি দ্বীপে বেড়াতে গেলে হংকং হয়ে যায়। হংকং থেকে বিমানে বালি দ্বীপে পৌঁছাতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা। আপনি যদি রাজধানী জাকার্তা হয়ে যেতে চান, তাহলে জাকার্তা থেকে বালি পৌঁছাতে আপনাকে বিমানে দেড় ঘন্টা ভ্রমণ করতে হবে।
false
rg
পাঁচ সিটি কর্পোরেশানে আওয়ামী লীগের হারার প্রধান কারণসমূহ।। রেজা ঘটক ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৪ দলের মহাজোটের সমন্বয়ে ভোটারদের এই কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, ক্ষমতায় গেলে তারা দিন বদল করবেন। যে সকল বিষয় নির্বাচনী ওয়াদার শীর্ষে ছিল সেগুলো নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনের পর ধীরে ধীরে ভুলতে লাগল আওয়ামী লীগ। সঙ্গে কিছু নতুন কুখ্যাতি যুক্ত হল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রায় সাড়ে চার বছর নানান তাল বাহানা করছে। আগামী নির্বাচনেও এটাকে ইস্যু বানাতে চায় আওয়ামী লীগ। ইস্যুটা কি? আওয়ামী লীগকে ভোট না দিলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে না। কিন্তু আপনারা মিঞারা এই সাড়ে চার বছর কি করেছেন? এটা আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ ভুল একটা দলীয় অবস্থান। বিচারের ইচ্ছা থাকলে অনেক আগেই তা অনেকটাই সম্পন্ন করা সম্ভব হত। কেবল ভোট যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাতিয়ার হয়ে থাকে তাহলে জনগণ খুব ঠাণ্ডা মাথায় তাতে আমল দেয়নি। ভবিষ্যতেও এই বাহানায় ভোট চাওয়া যাবে না। কারণ, এটা ক্ষমতায় যাবার সিড়ি, আওয়ামী লীগের গোপন মনের ইচ্ছায় তার কোনো প্রতিফলন বিগত সাড়ে চার বছরে দেখা যায় নি। আইন হয়েছে। আইনের বাস্তবায়ন নেই। যে আইন হয়েছে, তাতেও একশো গণ্ডা ভুল আর ফাঁক ফোকরে ভরা। জামায়াতে ইসলাম ও শিবিরের রাজনীতি আওয়ামী লীগ বন্ধ করেনি। শাহবাগের স্বতস্ফূর্ত গণ-জাগরণ মঞ্চের আন্দোলন ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী। সেই আন্দোলনটিকে দলে টানার বা তা থেকে মধু খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে নি আওয়ামী লীগের মত একটি পুরানো রাজনৈতিক দল। সেই মধু খাওয়ার লোভ দেখে বিরোধীরা তো আর বসে থাকবে না। তারা নানান কুৎসা রটিয়ে গুজব ছড়িয়ে একটি পাল্টা হেফাজতে ইসলাম দাঁড় করালেন। আওয়ামী লীগের নের্তৃত্বের আশে পাশে যারা পরামর্শ দেবার জন্য দালালি করেন, তাদের ভুল পরামর্শেই এটি সৃষ্টি হয়েছে। শাহবাগের আন্দোলনকে পুলিশ প্রটেকশান দেওয়ায় আন্দোলনটি আর শেষ পর্যন্ত আন্দোলন থাকে নি। ওটি শেষ পর্যন্ত দলীয় পাণ্ডাদের অঙুলি নির্দেশে একটি ব্যর্থ আস্ফালন হয়ে গেছে। আন্দোলন কখনো পুলিশি প্রটেকশানে করা যায় না। আন্দোলনে কখনো দলীয় সহানভূতি প্রয়োজন পরলেই তা নস্যাৎ আস্ফালনে রূপ নেয়। পাল্টা বিরোধী পক্ষের জোড়ালো মিথ্যাচার, গুজব ছড়ানো আর সক্রিয় খবরাখবরে শেষ পর্যন্ত একটি হেফাজতে ইসলাম সৃষ্টি হল। শাহবাগের সবাই নাকি নাস্তিক? আরে দেশে এতো নাস্তিক থাকলে তো তারাই দেশ চালাতো। আওয়ামী লীগের মতো দেউলিয়া নের্তৃত্ব দিয়ে দেশ চলতো না। আওয়ামী লীগ আরেকটি বড় ভুল করলো, হেফাজতকে দলে টানার কৌশলে। হেফাজত নেতাকে গ্রেফতার না করে তাকে বিমানে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে যে নাটক করলো, এটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পড়ে। বরং গ্রেফতার করলে হেফাজত আরো চাপে থাকতো। যদি দেশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে খবর থাকে যে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবর্তে সহিংস হয়ে উঠবে। তাহলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কি করেছে? তারা এতো গাছ কাটার সুযোগ পেল কিভাবে? এতো জ্বালাও পোড়াও করলো কিভাবে? অভিযান টা তো দিনে করলেই ক্যা্চাল চুকে যেতো। রাতের আঁধারের অভিযানকে বিরোধী পক্ষ মোক্ষম মওকা বানিয়েছে। সাধারণ মানুষ যারা ফটোশপ কি বোঝে না। তাদের কাছে একটা ছবি অনেক কথা বলে। তারা সেই কথা মিথ্যা হলেও বিশ্বাস করেছে। কারণ, বিগত ৪২ বছর দেশের সাধারণ মানুষকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছে করেই অশিক্ষিত রাখার ছলনা করছে। সেই অশিক্ষিত জনগণ ছবির কারসাজি বোঝার সময় পায় না। তারা সেটা বোঝেও না। ফলে ধর্মের নামে গুজবটি তারা হারে হারে বিশ্বাস করেছে। হেফাজতকে খুশি করতে কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করার নাটক করা হল। এটি কেবল দুর্বল মস্তিস্ক থেকেই এমন বুদ্ধি বের হয়। আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের সাংসদরা চুরি চামারি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, দলাদলি, খুন, গুম, দখল ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। নিজের এলাকার সাধারণ মানুষের কথা শোনার সময় নেই তাদের। এমন কি জাতীয় সংসদে ১০ মিনিটের জন্য মাইক পেলে ৭ মিনিট ব্যয় করেন ইতিহাস আর গুনকীর্তনে। যখন মাইক বন্ধ হবে তখন এলাকার ভাঙা কালভার্টের কথা মনে পড়ে। তাদের কথায় জনগণ আবার ভোট দেবে তারা কি এতোই মুর্খ? ছাত্রলীগ কি করেছে? বিশ্বজিৎ হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এসব করে বেড়াছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়া মানে আরো কিছু ছাত্রলীগের ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া। এটা কেন হবে? জনগণ তো ছাত্রলীগকে ভোট দেয় নি দেশ শাসনের জন্য। আওয়ামী লীগ কেন ছাত্রলীগকে কন্ট্রোল করতে পারে না? ক্যাডার তৈরি করা আর সাধারণ মানুষের মন জয় করা মোটেও এক জিনিস নয়। যা পাবি তাই খাবি। যেখানে লুট করা যায় লুট কর। যেখানে টেন্ডারবাজি করা যায় টেন্ডারবাজি কর। যেখানে চাঁদা তোলা যায় চাঁদা তোল। যেখানে সহপাঠীকে ধর্ষণ করা যায় ধর্ষণ কর। এসবের দায় দায়িত্ব কেন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে যায়? কারণ. এসব আওয়ামী লীগের কন্ট্রোলের বাইরেই ঘটছে। যা সাধারণ মানুষ ভালো চোখে নেয় নি। পদ্মা সেতু এখন একটি তামাশার নাম। আরে এক আবুল হোসেনের কারণে আমরা একটা পদ্মা সেতু পাব না? এটা মানা যায় না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আবার সেই আবুলের পক্ষে দেশপ্রেমের ওকালতি করলেন। কি হল? পদ্মা সেতু হল না। আওয়ামী লীগের আমলে তা আর হচ্ছেও না। যদি কোনো দুর্নীতি নাও হয়, আবুলের নাম আসামাত্র তাকে কেন মন্ত্রীসভা থেকে বাদ দেওয়া হল না? কয়েকজন আবুল মন্ত্রী দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না। মন্ত্রীসভায় কাজীর ব্যাটা লাগে। যারা কাজ পারে, যারা কাজ জানে, যারা অভিজ্ঞ তাদের উপর গোস্যা করে এক পাল ছাগল পাগল নিয়ে মন্ত্রীসভা বানালেন প্রধানমন্ত্রী। ফলটা কি হল? সাড়ে চার বছরের মাথায়ই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের শক্তি ঝুরমুর করতে শুরু করেছে। আগামী নির্বাচনে এই হুহু যে থাকবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? রেলওয়ে কেলেংকারী কি মেনে নেবার মতো কোনো ঘটনা? সুরঞ্জিত বাবু যতোই তুলশি ধোয়া হোক না কেন, তাকে কেন মন্ত্রীসভা থেকে বরখাস্ত করা হবে না? জনগণ হল ভোদাই না আর আপনেরা সবাই চালাক চতুর? রেলওয়ের দুর্নীতি তো এখনো বন্ধ হয় নি। বরং ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজিতে নিরীহ কয়েকজনের প্রাণ গেল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নের্তৃত্বাধীন চারদলীয় জোট যে সব আকাম কুমাম দুর্নীতি চুরি চামারি করেছে, তার পাল্টা রেশ ছিল আওয়ামী লীগের সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন। আওয়ামী লীগের আসল ভোটের চেয়ে তরুণ সমাজ বিএনপি'র সেই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ভোটের সময়। দিন বদল হবে বলে নতুন আশায় বুক বেধে ছিল। কিন্তু এ তো দেখছি যে রাম সে-ই কানাই। যে যায় লঙ্কায় সেই হয় হনুরে। সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেংকারী কি কোনো ছোট ঘটনা? বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটা গরিব রাষ্ট্রে কেবল দলীয় পরিচয়ে সরকারি ব্যাংক থেকে এতো টাকা লুটপাট করা যায়? এটাও বাংলাদেশে সম্ভব? দলীয় লোকদের চামচাদের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব দেবার পরামর্শ যারা দিয়েছেন তারাই আওয়ামী লীগের ভেতরে থেকেও সবচেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের ক্ষতি করছে। ভবিষ্যতেও করবে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এটা তো আরো বাড়বে। কারণ, আওয়ামী লীগ এই চুরির পথের পথ প্রদর্শক। বিএনপি'র কি দলীয় লোকজন নেই? তারা কি ব্যাংক থেকে দল ক্ষমতায় থাকলে লোন নেবার চেষ্টা করবে না? যে আইডিয়া দিয়ে মানুষ রাতারাতি কোটি পতি হতে পারে সেটা তো আগামীতে আরো ফলন দেবে। দুর্নীতি বন্ধ হবে না। কারণ, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সেই সদ্দিচ্ছা নেই। সেই রকম দেশপ্রেম নেই। দেশপ্রেম কারে কয় তা তারা জানে না। উল্টো দুদককে আরো দলীয় লেজুর গিরির জি হুজুরে পরিনত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল এতো বেশি কেন? কারণ লুটপাটের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কলহ। এটা চুরি চামারির ফসল। লুটপাটের ফসল। এই কোন্দল আগামী সাধারণ নির্বাচনে আরো জোড়ালো হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। দল ক্ষমতায়। চুরির টাকা দখলের ভাগাভাগি নিয়ে একটু এধার ওধার হলেই তো কলহ হবে। তাই হচ্ছে। প্রতিদিন কোন না কোন অযুহাতে বিএনপি যেখানে প্রেসক্লাবে নানান ফকিরি কেরামতি উসকানি দিচ্ছে, দল গোছানোর চেষ্টা করছে। সেখানে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ চুরি চামারে ভাগাভাগিতে ব্যস্ত। সাংগঠনিক কাজ কি বাইরে থেকে কেউ এসে করে দেবে? জাতীর উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দিয়ে সবাইকে দলে পাওয়া যাবে বা সাংগঠনিকভাবে সবাইকে একত্র করা যাবে সেই দিন আর নেই। কারণ, আপনাদের নের্তৃত্বের মধ্যে সেই প্রজ্ঞা নেই যে, এক কথায় সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। সো, যা হবার তাই হচ্ছে। যে শিল্পপতিদের দলে ভাগিয়ে নমিনেশান দিয়ে টাকা খরচ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেন, আগামী নির্বাচনে সেই সব শিল্পপতিদের অনেকেই তাদের ব্যবসা পাতি ঠিক রাখতে বিএনপি'র সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেখান থেকে আবার নমিনেশান ভাগাবেন। কারণ, তারা তো আওয়ামী লীগ করেন না। তারা উড়ে এসে খই খাচ্ছে। খাওয়া শেষে আবার উড়ে যাবে যেখানে খই পাওয়া যায়। চার সিটিতে গো হারা হারার পরেও আওয়ামী লীগ গায়ে বাতাস লাগিয়ে বেড়াচ্ছে। গাজীপুরেও সেই গো হারা হার। কারণ? অহংকার। অহংকার মানুষকে ধ্বংস করে। আর দলীয় অহংকার দলকে ধ্বংস করে। মুসলিম লীগের এই অহংকার ছিল। কোথায় আজ মুসলিম লীগ? অস্তিত্ব আছে মুসলিম লীগের কোনো? এতো বিপরীত নিমিত্ত মাথায় নিয়ে আজমত খান সাহেব যে এতোগুলো ভোট পেলেন, সেটা মনে হয় ব্যক্তি আজমত সাহবের চারিত্রিক গুনাবলীর কারণে। নইলে তার ভোট আরো কম পাওয়ার কথা। আওয়ামী লীঘের যা অর্জন তা সঙ্গে নিয়ে বরং আজমত সাহেবের ভরাডুবি হয়েছে। কারণ নব নির্বাচিত মেয়র মান্নান সাহেবের তুলনায় আজমত সাহেব অনেক নিরেট ভদ্রলোক। প্রোপাগান্ডা পুঁজি করে মান্নান সাহেব আজ বিজয়ী। মান্নান সাহেবের এখন উচিত বরং আজমত সাহেবকে বুকে নিয়ে কোলাকুলি করা। নইলে বেচারার যে কোনো সময় হার্ট এ্যাটাক হতে পারে। আওয়ামী লীগের দলীয় অন্য যে প্রার্থী প্রেসের সামনে কান্নাকাটি করলেন, তার কর্মীরা নিশ্চয়ই আজমত সাহেবকে ভোট দেয়নি। এরশাদ সাহেব যে তামাশা করেছেন, তার কর্মীরাও নিশ্চয়ই কেন্দ্রের অর্ডার ফলো করেনি। কারণ, মান্নান সাহেবের সঙ্গে তাদের আগেই একটা বোঝাপড়া হয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তে দলীয় কমান্ড মানতে তারা বাধ্য নয়। ভোট ভূতে তো আর দলীয় কমান্ডের কোনো তোয়াক্কা নেই রে ভাই। লাগাও ছিল মারা অমুক মার্কায়। এটাই সেখানে গতি। রাজনীতিতে ধর্মীয় অনুভূতি এখন সবচেয়ে বড় তকমা। এজন্য ভোটের আগে দুই নেত্রী ওমরা হজ্বে যান। মাজার জিয়ারত করেন। তজবি হাতে নেন। আর কতো তামাশা করবেন আপনারা? লোক দেখানো ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এক হেফাজত-ই দেখছি এখন আগামী সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ। যারা হেফাজতকে পাশে পাবে বিজয় তাদের সুনিশ্চিত। শাহবাগের গণ-জাগরণ মঞ্চের কেউ কিন্তু ভোটের জন্য মানুষের বাড়ি বাড়ি যায় না। তাদের সেই কাজে কেউ কোনো দিন ব্যবহার করতে পারবেও না। কারণ তারা সমাজের একটি সচেতন অংশ মাত্র। নিজেদের কাজ কর্ম ফেলে তাদের ভোটের রাজনীতিতে অংশ্রগ্রহনের সময় কোথায়? আর উল্টো হেফাজতের সবাই কিন্তু মাঠে। ভোটের জন্য মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে, খেয়ে না খেয়ে পরিশ্রম করেছে। মানুষকে বুঝিয়েছে। গুজব হোক আর সত্যি হোক মানুষ তাই গিলেছে। ভোটে সেই প্রতিফলন সুস্পষ্ট। বিএনপি'র নিজেদের ঘর এখনো গুছানো নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের পাপের ফসলের পুরষ্কার হল তাদের এই বিজয়। এখন তাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আরো জনগণের কাছে সুস্পষ্ট দাবি হিসেবে হাজির হবে। কারণ, চার সিটি প্লাস গাজীপুর মিলে তাদের সেই দাবি এখন বরং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবিতে পরিনত হবে। আর সংখ্যা গরিষ্ঠ জন দাবিকে অগ্রাহ্য করে কোনো শক্তিশালী সরকারই ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ নেই। আওয়ামী লীগ নিজেদের ভুল নিজেরাই যদি সংশোধন না করে তা দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো বাড়িয়ে দেবে। বল এখন বিএনপি'র দখলে। যে কোনো সময় গোল হবে। সাধারণ মানুষ কিছু বুঝুক আর না বুঝুক গোল হলে হাততালি দেবে। অফসাইড গোল নিয়ে তর্ক করার সময় তাদের নেই। দেশের অন্যসব জরুরী কাজ ফেলে সংবিধান সংশোধন করাটা কি আওয়ামী লীগের জন্য খুব জরুরী ছিল? সংশোধন করে সেখানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করা কি খুব জরুরী ছিল? কোনো রাষ্ট্রে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ যে ধর্মের সেই রাষ্ট্রে তাদের নামেই পরিচিতি পায়। বাংলাদেশে শতকরা ৮৮ ভাগ মানুষ মুসলমান। অতএব এটা মুসলিম রাষ্ট্র। এটা সংবিধানে উল্লেখ থাকুক আর না থাকুক। কোনো রাষ্ট্রের ধর্ম কি হবে তা সংবিধান বলে দেবার ক্ষমতা রাখে না। এই বুদ্ধি যার মাথা থেকেই আসুক না কেন, সে একটা বড় ধরনের পিচাশ। আওয়ামী লীগ সেই পিচাশের কথা গিলেছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশান দু'ভাগ করা কি কোনো জরুরী কাজ ছিল? এখন তো বিরোধী দলের কথাই সত্য মানতে হয় । ইলেকশান দিলে ঢাকায়ও গো হারা হারবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে হারার কারণ কি? হারার কারণ কিন্তু বিএনপি'র জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি নয়। নিজেদের আকাম কুকাম চুরি চামারি, লুটপাট, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি। হত্যা, খুন গুম। দলীয় কোন্দল। আর তামাশার দেশপ্রেম। শেয়ার বাজারের কথাও কি আবার বলতে হবে? গ্রামীণ ব্যাংক বা ডক্টর ইউনুসকে নিয়ে আওয়ামী লীগের এতো জ্বর ওঠে কেন? নিজেদের একটা নোবেল লাগবে? অন্যকে সম্মান না দিলে নিজেও সম্মান পাওয়া যায় না। এটাই জগতের রীতি। ডক্টর ইউনুসের সুনাম বরং আওয়ামী লীগ কাজে লাগাতে পারতো। ডক্টর ইউনুসকে বিশেষ দূত বানিয়ে বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক সুনাম দেশে আনা যেতো। শুধু হীনমন্যতার কারণেই সেটা বাদ দিয়ে উল্টো আকাম করছে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ করার প্রচেষ্টা মনে হয় একেই বলে। এই সরকারের অধীনে এখন জাতীয় নির্বাচন বরং নিরপেক্ষতা না পাবার আশংকা রয়ে যাবে। কারণ, সরকার ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫-০ গোলে হেরে গেছে। এখন আগামী দুই টার্ম নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগ বাধ্য হবে। যদি বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপোষ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায়, তাহলে বরং সেই আশংকার ভয়াবহ খেলাটি আরো জমে উঠবে। হেফাজত ফ্যাক্টর তো এখন আওয়ামী লীগ বিএনপি'র চেয়েও বড় ফ্যাক্টর। মুখে উন্নয়নের বুলি আর কাজকর্মে লুটপাট ভাগাভাগি এসব কি জনগণ দেখে না? আম জনতা তো আর অন্ধ না? মুক্তিযুদ্ধ বেচে, প্রগতির কথা বলে, নানান ভেলকি দেখিয়ে আর সাধারণ আম পাবলিকরে ধোকা দেবার দিন শেষ। মানুষ অতি সাম্প্রতিক ঘটনাবলীই সবচেয়ে বেশি মনে রাখে। সুদূর অতীতের কথা মনে রাখার তার সময় নেই। এমন কি পাঁচ বছর আগে মঈনদ্দিন-ফকরুদ্দিন সাহেবরা কি করেছিলেন বা ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সারা দেশে সংখ্যা লঘুদের উপর যে হামলা করেছিল, তা মানুষ ভুলতে বসেছে। মানুষের তাজা স্মৃতিতে বরং রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, বিশ্বজিৎ হত্যা, পদ্মা সেতু, রেলওয়ের কালো বিড়াল, শাহবাগের গণ-জাগরণ মঞ্চ, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও সহিংস হয়ে ওঠা, এগুলো বেশি সক্রিয়। আগামী অক্টোবরে যদি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়, সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একটি দূর অতীতের সাফল্য। বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা একটা দফা করতে পারলে সেটা একটা প্লাস পয়েন্ট হত আওয়ামী লীগের। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভেতরেই যে পরিমাণ যুদ্ধপরাধী আছে তার বিচার হবে না কেন? মানুষ তো আর একচোখা বিচার দেখতে চায় না। মানুষ সব সময় সকল যুগেই ন্যায় বিচারের পক্ষে থেকেছে। আওয়ামী লীগ মাত্র তিন মাসে কতোটুকু সংশোধন করতে পারবে তার উপর নির্ভর করবে ভোটের হিরিক। নইলে জামানত হারাবেন বড় বড় মন্ত্রী মহোদয়রা। সবশেষে গাজীপুরের নব নির্বাচিত মেয়র মান্নান সাহেব ও পরাজিত প্রার্থী আজমত সাহেবকে লড়াই করার জন্য ধন্যবাদ জানাই। গাজীপুর বাসী সরকারকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। এই বার্তার অর্থ আওয়ামী লীগ না বুঝলে আগামী নির্বাচনে তারা নিশ্চিত ধরাশাই হবে। এই লেখাটি সম্পূর্ণ আমার নিজের মনে হওয়া না হওয়ার ব্যাপার। দয়া করে এখানে কেউ রাজনৈতিক দুর্গন্ধ খুঁজবেন না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের ছাত্রজীবনের চার বছর নষ্ট হয়েছে। আমার মাস্টার্স পাস করার কথা ছিল ১৯৯২ সালে। পাস করলাম ১৯৯৬ সালে। আমার জীবনের এই চার বছরের ক্ষতিপূরণ তো আওয়ামী লীগ বিএনপি দেয় নি। ১৭তম, ১৮তম ও ২০তম বিসিএস ভাইবা পর্যন্ত আমি তিনবার গিয়েছি। কোনো দলীয় পরিচয় বা আইডেনটিটি ছিল না বলে আমাকে এখনো বেকার থাকতে হল। অথচ আমার অনেক বন্ধু আমার লেখা বিসিএস লিখিত গাইড পড়ে এখন এসপি, টিএনও, এডিসি। বিগত ২৩ বছর গণতন্ত্রের চর্চার নামে হরতাল করে আপনারা অনেক ক্ষতি করেছেন বাংলাদেশের। আমার জন্মভূমিকে আপনারা লুটের স্বর্গ রাজ্যে পরিনত করেছেন। শুধুমাত্র হরতালের নামে আপনারা রাষ্ট্রের যে পরিমাণ ক্ষতি করেছেন, সাধারণ মানুষের জীব বদলের যে ক্ষতি করেছেন তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? বাংলাদেশের পরিবর্তন আপনারা কেউ করবেন না এটা এখন প্রমাণিত। আপনারা চুরি চামারি দখল লুটপাট করার জন্যে ৫ বছর পর পর নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে আবার চুরি করবেন। দেশের উন্নয়ন যা করার তা করবে সাধারণ মানুষ। তারা সেটি করতে পারে না আপনাদের হরতাল চ্বালঅও পোড়াও এর কারণে। দিন বদল করবে বাংলার সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক। দিন আনে দিন খায় সেই শ্রমিকরা। আপনারা চুরি চামারি করে গাড়ি বদল করবেন। নতুন মডেল কোথায় পাওয়া যায় সেজন্য হন্যে হয়ে লাল পাসপোর্ট নিয়ে সারা বিশ্ব চষে বেড়াবেন। আপনাদের কতো টাকা হলে আপনারা আর চুরি করবেন না, সেই বাজেট টা যদি আপনারা জনগণের সামনে তুলে ধরতেন, বাংলার সাধারণ মানুষ আপনাদের সেই টাকা একসঙ্গে দিয়ে আপনাদের জুলুম থেকে রেহাই পাবার একটা উপায় খুঁজতো। বন্ধ করুন আপনাদের রাজনৈতিক ব্যবসা। নইলে এক সময় কৃষকরা হরতাল ডেকে দেবে। তখন আর কোনো বাহাদুরিতে কুলঅবে না। গার্মেন্টস মালিকদের জিএসপি সুবিধা নিয়ে আপনারা সারা বিশ্বে ঝগড়া করতেছেন, আর শ্রমিকদের প্রাপ‌্য নিয়ে তো আপনারা কেউ টু শব্দটি করেন না। বরং শ্রমিকরা পাওনা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামলে শিল্প পুলিশ দিয়ে ধাওয়া করান! বিগত ৪২ বছরে আপনারা অনেক ভেলকি দেখিয়েছেন। এবার দয়া করে থামুন। নইলে আম জনতা এক সময় এই সব ভণ্ডামি থামিয়ে দেবে। জয় হোক মেহনতি মানুষের। রাজনৈতিক ব্যবসা নিপাত যাক। সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫
false
ij
রোমান সভ্যতায় দাসপ্রথা রোমান সভ্যতার প্রসঙ্গে উঠলে সভ্যতাটির উজ্জ্বল কীর্তিসমূহই আলোচিত হয়, সচরাচর নিষ্পেষিত পদদলিত দাসদের অসহনীয় জীবনযাপনের কথা উঠে আসে না। অথচ দাস শোষন ছিল রোমান সভ্যতার অন্ধকার এক দিক। রোমান সমাজে দাসব্যবস্থা কেন টিকে আছে, তা নিয়ে কেউই প্রশ্ন তোলেনি। সেনেকা, রোমান ষ্টোয়িক দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ একবার ভারিক্কি চালে বলেছিলেন কাউকে পুরোপুরি দাস করা যায় না। শরীর প্রভুর; মন তার নিজের। হোরাস, রোমান কবি, বলেছিলেন: সত্যিকার অর্থে কে স্বাধীন? জ্ঞানী মানুষ ছাড়া। জ্ঞানী মানুষ নিজের প্রভু বলেই স্বাধীন। রোমান সভ্যতার অধিকাংশ দাসই যুদ্ধের মাধ্যমে প্রাপ্ত। যুদ্ধজয়ের পুরস্কার হিসেবে রোমান সৈন্যরা বন্দিদের ধরে আনত । পরাজিত সৈন্যদের দাসে পরিনত করত। কখনও বন্দি করে রাখত, কখনও -বা হত্যা করত। উপরোন্ত লোকে সন্তান বিক্রি করতে পারত। পাওনাদার ঋনগ্রস্থকে দাস হিসেবে গ্রহন করতে পারত। অবশ্য কেউই নিজেকে দাস হিসেবে বিক্রি করতে পারত না! একে রোমান সমাজে প্রবঞ্চনা মনে করা হত। খ্রিস্টীয় ২য় শতকে অর্থাৎ রোমান সম্রাট হাদ্রিয়ানের (১১৭-১৩৮) সময়কালে রোম এর জনসংখ্যা ছিল বিপুল। প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ এর মতো। এর অর্ধেকই ছিল দাস। রোমান সমাজে ৬টি স্তর ছিল। ১. দাস। ২. মুক্তমানুষ। ৩. মুক্ত মফস্ সলের লোক।৪.সাধারন রোমান জনগন অথবা প্লেবিয়ানস। ৫. ইকুয়েটেস (অভিজাত অশ্বারোহী) এবং ৬. সিনেটর। বলাবাহুল দাসদের অবস্থান ছিল সমাজের সর্বনিু পর্যায়ে। এদের আলাদা পোশাক ছিল না। অন্যান্য সাধারন রোমানদের মতোই দাসেরা বিবর্ণ রঙের টিউনিক পরত। একবার দাসদের স্বতন্ত্র পোশাকের কথা উঠেছিল রোমান সিনেটে, অর্থাৎ রোমান আইনসভায়। একজন চতুর সিনেটর প্রতিবাদ করে বলেছিল,‘দুরাত্মারা তাহলে জেনে যাবে তারা সংখ্যায় কত ভারী’! দাসদের প্রতি এই ছিল তৎকালীন রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি। রোমান সভ্যতা; লাল রঙের ...রোমান সভ্যতার কেন্দ্রে রোম ... দাসদের অধিকাংশই অ-রোমান; অল্প সংখ্যকই ইতালিয় এবং লাতিন বলতে পারত। একটি ঘোড়ার যতটা আইনি প্রতিরক্ষা ছিল খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের পূর্বে একজন দাসের রোমান সভ্যতায় তাও ছিল না। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের পরে সম্রাট হাদ্রিয়ান ঘোষনা করলেন যে ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মতি ব্যতীত প্রভু তার দাসকে হত্যা করতে পারবে না। মনে রাখতে হবে এই ম্যাজিষ্ট্রেটও প্রভুরই সমগোত্রীয়। কাজেই, ‘হাফ অভ রোম, দেয়ারফর, কনটিনিউজ ইন দ্য অ্যাবসুলুট পাওয়ার অ্যান্ড পজেশন অভ দি আদার হাফ।’ (উইলিয়াম স্টারনস ডাভিস; আ ডে ইন ওল্ড রোম) প্রাচীন রোম এর একটি ভবনের কক্ষ প্রাচীন রোম; এই বিস্ময়কর স্থাপত্যে নেপথ্যে ছিল দাসশ্রম খ্রিস্টীয় ২য় শতকের রোম শহরে কর্মবিমূখ অলস ধনীদের প্রাচুর্য আর অপচয় চোখে পড়ত। এদের কারও কার অধীনে ছিল দেড়শতাধিক দাস। গ্রামেও এদের বিষয়সম্পত্তি ছিল। দাসরা সেখানেও খেটে মরত। একটি রোমান কৃষিখামারে সাধারনত তিন ধরনের যন্ত্রপাতি থাকত। ১. মূকযন্ত্র; লাঙল, কাস্তে, কোদাল; ২.অর্ধ-মূকযন্ত্র; ষাঁড়, গাধা ইত্যাদি। এবং ৩. কথা বলতে পারে এমন যন্ত্র; দাস। শহরের দাসরা অপেক্ষাকৃত ভাগ্যবান। তারা প্রভুর বিলাসব্যসনের দেখভাল করত। গ্রামীন দাসদের জীবন ছিল কঠোর। তারা জমি চাষ করত। শহরের দাসদাসীর কাজের অবহেলা হলে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হত। অভিজাত রোমান দাসের মৃত্যু হলে নতুন দাস কেনা হত। রোম শহরে বসত দাসবাজার। সেপটা জুলিয়া, ফোরা এবং ভিটা লাটার পোর্টিকো ছিল বিখ্যাত দাসবাজার। এখানে সাদা বোর্ডের ওপর লাল চক দিয়ে ‘দ্বিপদী প্রাণীর’ বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত লেখা থাকত, লেখা থাকত কখন নিলাম ডাকা হবে ইত্যাদি । গরু-ভেড়ার হাটের মতন দ্বিপদী প্রাণী কেনাবেচা হত দাসবাজারে। দাসবাজারে ভিড়, দাসের গায়ের ঘাম, ক্রেতাদের কনুয়ের গুঁতোগুঁতি লেগেই থাকত। ভিড়ে নানা দেশের লোক দেখা যেত: মিশরীয় তুর্কি আরব সিসিলিও থ্রাসিয় কাপ্পাডোসিয়ানস গ্রিক কেল্ট গল (ফরাসি) ব্রিট (ইংল্যান্ড) ও রাইন নদীর ওপাশের শ্বেতচুলো লোক দাসবাজারের ভিড়ে গিজগিজ করত। ভিড়ে নারীপুরুষ থাকত। তবে কিশোর- কিশোরীর আগমন দাসবাজারে ছিল নিষিদ্ধ । ফিলিস্তিনে তখন ইহুদিরা বিদ্রোহ করত। সম্রাট হাদ্রিয়ান সমর অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ইহুদিদের ধরে এনে দাসবাজারে বিক্রি করা হত। দাসেরা লাইন করে দাঁড়াত পাথরের ওপর । নগ্নপ্রায়, পায়ে সাদা চক-এর মানে-এখুনি বিক্রি হবে। ক্রেতারা মাংসপেশি টিপেটুপে দেখত। হয়তো দাসেরা বালক। হয়তো এদের কারও বাড়ি ছিল কৃষ্ণসাগরের তীরে। হয়তো ওদের বর্বর অভিবাবকগন বিক্রি করে দিয়েছে। তেমনটাই হত সেই খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের রোমান সাম্রাজ্যে ... রোমকেন্দ্রিক রোমান সভ্যতায় দাস নির্যাতনের তথ্যপ্রমাণ ঐতিহাসিকের কাছে আছে। তবে দাস নির্যাতন কতটা ব্যাপক ছিল সে সম্বন্ধে কিছু বলা যায় না। অসুস্থ বৃদ্ধ দাসদের ক্যাটো দি এলডার -রোমান রাজনীতিবিদ-বাড়ি থেকে বার করে দিতেন। ক্যাটো দি এলডার-এর কয়েকটি স্মরণীয় বাণী পাঠ করা যাক। 1. Anger so clouds the mind, that it cannot perceive the truth.2. From lightest words sometimes the direst quarrel springs.3. I think the first virtue is to restrain the tongue; he approaches nearest to gods who knows how to be silent, even though he is in the right.4. Patience is the greatest of all virtues.5 We cannot control the evil tongues of others; but a good life enables us to disregard them. ক্যাটো দি এলডার-এর কথা যত ভালো হোক; মনে রাখতে হবে ইনি অসুস্থ বৃদ্ধ দাসদের বাড়ি থেকে বার করে দিতেন। দাসপ্রথা। সভ্যতার অভিশাপ! সম্রাট হাদ্রিয়ান। ইনি নাকি সবচে মানবিক ছিলেন রোমান সম্রাটদের মধ্যে। তো তিনি একবার লোহার সরু পাত দিয়ে এক দাসের চোখ ... আর মহিলারা? নির্যাতনের জন্য রোমান রমনীগন শার্প আয়রন ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করত যৎসামান্য ভুলের জন্য ...রোমের শক্র পরাজিত সৈন্যরা আত্মহত্যা করত রোমানদের দাস হওয়ার চেয়ে। দাসদের নেতা স্পার্তাকাস (খ্রিস্টপূর্ব ১০৯/৭১) এর নেতৃত্বে দাসবিদ্রোহ রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক অবিস্মরনীয় ঘটনা। অতিরিক্ত দাস থেকে বিদ্রোহের আশঙ্কা বিরাজ করত রোমে। কঠোর আইন প্রনয়ন করা হয়েছিল। যদি কোনও দাস প্রভুকে হত্যা করে তো সে বাড়ির সব দাসকে হত্যা করা হত। একে বলা হত ল অভ কালেকটিভ রেসপনসিবিলিটি। অশোভন আচরণ করলে পিটানো হত, লোহা গরম করে পোড়ানো হত, কখনও হত্যা করা হত। রোম নগরের বাড়ির বাইরে লেখা থাকত: “অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। শাস্তি বেত্রাঘাত।” অনেক দাসই পালিয়ে যেত। ফেরারী দাস এর আশ্রয় দেওয়া ছিল বেআইনি। সে সময় রোমান সমাজে পেশাদার দাসপাকড়াওকারী ছিল। তারা পলাতক দাসদের ধরে আনত। তাছাড়া বিজ্ঞাপন বিলি করা হত। ফেরারি দাসদের ধরে দিতে পারলে মোটা অঙ্কের পুরস্কার জুটত। ধরা পড়লে ভয়ানক নির্যাতন চলত দাসদের ওপর। কপালে গনগনে লোহা পুড়িয়ে ‘ফ’ অক্ষর লেখা হত। ফ= ফেরারি। কখনও গলায় ধাতুর কলার আটকানো থাকত। তাতে লেখা থাকত: “আমি পালিয়ে এসেছি। আমাকে ধর। আমাকে আমার প্রভুর কাছে নিয়ে গেলে পুরস্কার পাবে।” রোমান দার্শনিক সেনেকা মনে করতেন দাসদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে দাসেরা ভালোভাবে কাজ করবে আর মন্দ ব্যবহার করলে মন্দ কাজ করবে। আর যেন প্রভুরা ভোজসভায় দাসদের না ডাকে। কেন? দাসদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয় বলে! উইলিয়াম স্টারনস ডাভিস এর "আ ডে ইন ওল্ড রোম" অবলম্বনে সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৪১
false
ij
চেক কবি জারোস্লাফ সেইফার্ট এবং তাঁর কবিতার জগৎ চেক কবি জারোস্লাফ সেইফার্ট। ইনি নজরুল ও জীবনানন্দের সমসাময়িক। সেইফার্ট অবশ্য জন্মেছেন ১৯০১ সালে এবং নজরুল ও জীবনানন্দের উভয়ই ১৮৯৯ সালে। সেইফার্ট ১৯৮৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন-এটি বিস্ময়ের নয়; সেইফার্ট চেক কমিউনিষ্ট পার্টির মেম্বার ছিলেন -আমার খটকা এখানেই। কবি জারোস্লাফ সেইফার্ট চেক কমিউনিষ্ট পার্টির মেম্বার ছিলেন এবং পার্টির পত্রপত্রিকা সম্পাদনা করতেন; কবিরা মেহনতি মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতেই পারে, কাজেই এই তথ্যটিও বিস্ময়কর নয়; সেইফার্ট ১৯৮৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন-আমার খটকা এখানেই ... চেক প্রজাতন্ত্র। মানচিত্র। লাল রঙের অংশটুকু। ১৯০১ সালের এই চেক দেশেই কবি জারোস্লাফ সেইফার্ট জন্মগ্রহন করেন। প্রাগ হল চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। স্থানীয়রা বলে প্রাহা। প্রাহার কাছেই শহরতলি যিযকভ। ঢাকার কাছে যেমন উত্তরা-তেমনি প্রাহার কাছে যিযকভ। যিযকভ। সেইফার্ট ১৯০১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যিযকভ-এ জন্মগ্রহন করেন। সেইফার্ট বিংশ শতকের কুড়ির দশকে অর্থাৎ তরুণ বয়েসে লেখালেখি শুরু করেন। ঐ সময়ই কাব্যগ্রন্থ বেরোয়। ভিতরকার আগুনহেতু নিজ দেশে পরিচিতি পেতে দেরি হয়নি তরুণ কবিটির। তাঁকে অচিরেই চেক সাহিত্যের নবযুগের অগ্রদূত বলে চিহ্নিত করা হল। যেকোনও দেশেরই সাহিত্য আন্দোলনের মাঝখানে দীপশিখার মতন জ্বলজ্বল করতে থাকে একটি সাহিত্যপত্রিকা। সেইফার্টও অন্যদের সঙ্গে একটি সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সেই সাহিত্যপত্রিকার নাম: Devětsil ; এটি উদ্ভিদের নাম। Devětsil; এর ইংরেজি নাম বাটারবুর; অর্ন্তনিহিত অর্থ নয়টি শক্তি। কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন তরুণ সেইফার্ট; পদত্যগ করতেও বিলম্ব হয়নি। ১৯২৯ এর মার্চ মাসে পদত্যাগ করলেন। কারণ? চেকোশ্লাভাকিয়ার কমিউনিষ্ট পার্টির নয়া নেতৃত্বে রুশ বলশেভিকদের অশুভ প্রভাব। যা হোক, সেইফার্ট ১৯৪০ অবধি সাংবাদিকতা করে কালাতিপাত করেন। কবিতাও লিখছিলেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থ কতগুলি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও লাভ করে। দীর্ঘকাল চেক লেখক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। ছিলেন চেক দেশে কমিউনিষ্ট অপশাসনের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার। তরুণ জীবনে কমিউনিষ্ট পার্টি করলেও পরিনত বয়েসে চেক প্রজাতন্ত্রে কমিউনিষ্ট শাসন মেনে নেননি। ১৯৭৭ সালে সরকারি নির্যাতরে বিরুদ্ধে যে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাতে নির্ভয়ে সই করেছিলেন কবি। ১৯৮৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন; তখনও কমিউনিস্ট শাসন। মিডিয়ামূখর ছিল না। শীতল ছিল। কবি ১৯৮৬ সালে মারা যান। কবির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় চেক গুপ্ত পুলিশ ছিল। তারা নাকি শোকার্তদের বেদনা রোধ করার জন্য ওখানে উপস্থিত ছিল! সেইফার্ট সম্বন্ধে এই কথাগুলি লিখলাম কবির জীবন ও কাল সম্বন্ধে সামান্যতম ধারনা দেওয়ার জন্যই । আসুন এবার কবিতার ভিতর দিয়ে সেইফার্ট - এর চিন্তারজগৎটি উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। তার আগে বলি: সেইফার্ট এর কবিতায় নারীপ্রেমের প্রাধান্য আছে। দি স্মোক অভ মারিজুয়ানা কবিতায় লিখেছেন: But no sooner had I written a few happy lines about love than my eyes would seek the eyes of women, my hands their hands and my lips their startled lips. God knows, in this country women like poetry. Maybe that's why the poet's sighs don't make them press their hands so frantically upon their breasts. গাছের ওপর পাখির ডাক শুধু একটি ছোট রট-আয়রনের গেট, ওটা সব সময় খোলাই থাকে আনন্দিত উদ্যানে প্রবেশ রোধ করে আর সাদা ঢাকা বারান্দা প্রাচীন লেবু গাছময় রাজপথের শেষে। আমি ওখানে প্রায়ই যেতাম ওপরে ও চতুর্দিকে আনন্দে চিৎকাররত সুগন্ধী সংগীতের মাঝে সেঁতসেঁতে ফুটপাতের ওপর দীর্ঘকাল আগে মৃত কবি মাচা-র পায়ের শব্দ শোনার জন্য। আমি জানি পাখিরা অনেক কিছু নোংরা করে দেয়, এমন কী ফরগেট মি নট ফুলের বিশুদ্ধ চোখ, আর ওদের কেউ কেউ মৌচাকের আশেপাশে ওত পেতে থেকে নিপুন ভাবে ওদের হুল সরিয়ে খুন করে মৌমাছি। এই ওদের রাজ্য। আর যখন মার্চ মাসে আমাদের জানালার প্রথম গায়ক পাখিটি গাইতে শুরু করে, যেন মনে হয় গ্রামীণ স্টেশনের ঘন্টার সঙ্কেত ধ্বনি পরের স্টেশন অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে ট্রেনটি । আনন্দিত উদ্যানের ওপরে যেবিন পাহাড় এর শীর্ষে বিচ্যুত কম্পাসের কাঁটা আমার হৃদয়ের মতো করে কাঁপে যখন ঢাকা বারান্দার সিঁড়িতে দেখি তোমার পা। একটি শূন্য ঘরে এমন কী দাঁড় কাকও গায়ক পাখিদের একজন আর সে আমায় শক্তি দেয়, যখন আমার জীবনে অনঢ় কুয়াশার মতো ছড়ায় বিষন্নতা । বুড়ো মানুষের কাছে মধুর গদ্যের কী এমন মূল্য বল? তখন তো তুষারের রংও তার বিরুদ্ধে করে বিদ্রেহ। সে যাই হোক। কিন্তু আমি তোমার জন্য একটা ছোট্ট ঘুঘু পাখি এনে দেব। যদি তুমি ওকে ধর তো ওটি তোমার আঙুলে আলত করে ঠোকরাবে। আমি ওকে রাস্তার ওপারের একটি ছাদের ওপরে দেখি আর ওকে ডাকলেই কাছে আসে। দূরের দেশ থেকে পাখিটা এসেছে রাজা সলোমনের প্রেমগীত থেকে। ওকে বুকে চাপ দিয়ে ধরে রাখ ওখানেই ওর স্থান। কিন্তু যদি ও অন্যদের সঙ্গে উড়ে যায় তা হবে ক্ষণিকের ঝলক যেনবা আয়নায় বিম্বিত সূর্যালোক। কথা বলতে ইচ্ছে না করলে চুপ করেই থেকো আর দয়া করে হেসো আর যখন তুমি আমাকে দেবে চুমু কেবল গালে নয়, ঠোঁটেও, আমি তোমার উষ্ণ নিঃশ্বাস অনুভব করতে চাই। আমি কী লোভী! সেইসব দিনগুলির কথা আজও মনে আছে আজকালকার দিনের তুলনায় সিনেমা হলগুলি ছিল কেমন অন্ধকার অন্ধকার । তাছাড়া সিনেমার দৃশ্যগুলি কেমন ভিজে ভিজে। কেবল দরজার ওপরের জ্বলত ম্লান লাল বাতি আতঙ্কের তৈরি হলে। সেসব দিনে তরুণতরুণীরা চুমু খেত কেবল অন্ধকারে লুকোন বাকশোয় নয় স্টল-এর পিছনের সারিতে। পিপাসা পেলে পানের রসের মতন উত্তেজক পান করতাম মেয়েদের মুখের লালা । হায়, ওই গভীর লাল লালায় জ্বালা পোড়া করত জিভ । THE BIRD'S VOICES IN THE TREE TOPS Only a small wrought-iron gate that's always open bars entry to the Pleasure Garden and the white loggia at the end of the avenue of ancient limes. I used to go there and to listen for the long-dead footfall of the poet Macha on the damp flagstones amidst the jubilant amorous songs above and all around. I know, birds foul a lot of things, even the pure eyes of forget-me-nots, and some of them even lurk by the hives and murder bees, adroitly removing their stings. But this is their kingdom. And when on our window-sill in March the first blackbird sings out it is like the voice of the signal bell on a rural platform, with the train already pulling out of the next station. Above the Pleasure Garden is Zebín Hill. On its summit the compass needle is deflected and flickers like my heart when on the loggia steps I see your legs. IN AN EMPTY ROOM Even the raven belongs to the song bird family and that gives me courage when sadness like a stifling smog falls on my life. What price sweet verses when a man is old. Even the whiteness of the snow revolts him. But for you, nonetheless, I'd like to bring along a little white dove. If you held it in your hands it would softly peck your finger. I see it often on the roof across the road and could invite it over. It has come from afar, from King Solomon's love songs. Gently press it to your breast, that's where it belongs. But if it flies up with the others it is a momentary flash of glitter like a mirror caught in the sun. You can stay silent if you don't feel like talking, only please smile, and when you give me a kiss not only on my cheek but also on my lips, I want to feel your hot breath. How greedy I am. I remember the days when it was much darker in the cinemas than today. The films were darker and moreover the screen always looked as if it were raining. Only above the doors glowed dim red bulbs in case of panic. In those days young people kissed not only hidden in dark boxes but also in the back row of the stalls. In thirst I drank saliva from the mouths of girls. It was intoxicating like chewed betel juice but that is a deep red and burns on the tongue. সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:২৪
false
mk
জন কেরির সফর ও বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বাংলাদেশ সফর নানা দিক থেকেই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সফর সংক্ষিপ্ত হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি ঢাকার এডওয়ার্ড কেনেডি সেন্টারে তিনি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনও করেছেন তিনি, যা ছিল অনন্য একটি ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দূরদর্শিতার কারণেই যে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে সেটি উঠে আসে তাঁর মন্তব্যে। এবং ৩২ নম্বরের বাড়িটিই যে একসময় বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেটিও তিনি বলেছেন।নানা কারণেই কেরির সফর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে নাইন-ইলেভেনের পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান, তা আরো জোরদার হয়েছে সাম্প্রতিক ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশও উগ্রবাদের সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। এ কারণে সন্ত্রাসবাদের মতো অভিন্ন ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে চায় দুটি দেশ। এ নিয়ে কেরির সফরকালেও আলোচনা হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কেরির সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ কথা সাংবাদিকদের জানান। সাম্প্রতিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জন কেরি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার নানা দিক নিয়েও কথা হয়েছে।জন কেরির এই সফরে অনেক বিষয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ বাংলাদেশকে যে অনেক আগ্রহের সঙ্গে দেখে—সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায়ও সাফল্য দেখাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, পোশাকশিল্পে কর্মপরিবেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে আরো নতুন মাত্রা যোগ হবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।জন কেরির সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে তাঁকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে তাঁর কাছে। তিনি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দিলেও ইশারা-ইঙ্গিতে কিছু শর্তের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। সেগুলো পূরণ হলে আবারও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পাবে—এমন আশ্বাসও পাওয়া গেছে তাঁর কথায়।আশির দশকে বাসাবাড়িতে ছোট পরিসরে যে পোশাকশিল্পের সূচনা হয়েছিল, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সেটিই এখন সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিচ্ছে। চীনের পর বাংলাদেশই হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। পাঁচ হাজারেরও বেশি কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে।এ কথা ঠিক, বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের একের পর সমৃদ্ধি ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু সে অনুযায়ী বাড়েনি শ্রমিকের জীবনমান। উল্টো একের পর এক দুর্ঘটনায় শ্রমিকের জীবন যাচ্ছে অকাতরে। যার বড় উদাহরণ হচ্ছে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের করুণ মৃত্যু। জন কেরি বাংলাদেশ সফরের সময় রানা প্লাজার প্রসঙ্গ তুলতে কিন্তু ভুল করেননি।এ ছাড়া ২০০৫ সালের পর শুধু অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনায়ই প্রাণ হারিয়েছে ছয় শতাধিক শ্রমিক। এসব ঘটনায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে সারা বিশ্বে একটি নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। বহুদিন থেকেই এ ব্যাপারে ট্রেড ইউনিয়নগুলো সোচ্চার। কিন্তু যে তুলনায় পোশাকশিল্পের উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় শ্রমিকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। পরিস্থিতির যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে তাও বিদেশি বায়ারদের নানা শর্ত পূরণ করতে গিয়ে। অর্থাৎ বিদেশি ক্রেতারা শ্রমিকের জীবনমান নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন না তুলতেন, তাহলে মালিকপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ভূমিকা নিত কি না সন্দেহ।সত্যিকার অর্থে শ্রমিকের ইতিহাস হচ্ছে বঞ্চনার ইতিহাস। শ্রমিকের জীবনমান নিয়ে অনেক ভালো কথা উচ্চারিত হয় সভা-সেমিনারে। কিন্তু শ্রমিকদের ঘামে মালিকদের প্রাসাদোপম অট্টালিকা তৈরি হলেও অনেক শ্রমিককে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়। দিনরাত শ্রম দিয়েও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা তাঁরা পূরণ করতে পারেন না। অনেক সময় শ্রমিকরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য পথে নামতে বাধ্য হন। দেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরাও বঞ্চনার শিকার। দৈনিক ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে অনেক শ্রমিকই ন্যায্য মজুরি পান না। তার ওপর বেতন বকেয়া, কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই, লকআউট ইত্যাদি কারণেও শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত থাকে না। আবার অনেক ফ্যাক্টরির কাজের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার দরুন অনেক শ্রমিককে দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়েছে। দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য কারখানাগুলোয় আলাদা সিঁড়ি থাকার কথা থাকলেও কোনো কোনো কারখানায় তা নেই। একটা কথা সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে, শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ ব্যতীত শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। এ জন্য শ্রমনীতির যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। শ্রমিক ঠকানোর মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একবিংশ শতাব্দীতে শিল্পের চরম উত্কর্ষের যুগে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত হবে—এটাই তো স্বাভাবিক।পোশাকশিল্পের অমিত সম্ভাবনার কারণে এ খাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন মালিকরা। এমনকি শুল্ক সুবিধা দেওয়া ছাড়াও নানা সময় নানা প্রণোদনা দেওয়া হয়। এসবের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তা যেন শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে পোশাকশিল্পের মতো শ্রমঘন একটি শিল্পে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক অনেক প্রকট।পোশাকশিল্পের মালিকরা অনেক সময় বলে থাকেন যে তাঁদের একতরফা দোষারোপ করা হয়। শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে তাঁদের পক্ষ থেকে সম্ভব সব কিছুই করা হচ্ছে। এমনকি তাঁরা দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় অবদান রেখে চলেছেন—সে কথা স্মরণ করিয়ে দিতেও তাঁরা ভোলেন না। আমরা গার্মেন্ট মালিকদের অবদানের কথা অস্বীকার করছি না। কিন্তু এটাও স্বীকার করতে হবে যে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছেনি। এর আগে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবনমানের কথা শুনে পোপ সেটিকে ক্রীতদাস প্রথার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, যদি ক্রেতারা সামান্য বেশি মূল্যে পোশাক কেনেন, তাহলে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে তা যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বলছেন, ক্রেতারা শুধু অভিযোগ তুলেই তাঁদের দায়িত্ব সারছেন।এ কথা ঠিক, জনসংখ্যাধিক্যের এ দেশে সস্তা শ্রমের কারণেই বিদেশি ক্রেতারা এ দেশের পোশাকশিল্পের দিকে ঝুঁকেছেন। যে কারণে চীনের পর বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এ সাফল্য ধরে রাখতে হলে সব পক্ষেরই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যার যে দায়িত্ব সেটি পালন করতে হবে নিষ্ঠার সঙ্গে। শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নের ব্যাপারে সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। যখন-তখন কারখানায় ভাঙচুর-ধর্মঘট করার মতো হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল হতে হবে।মনে রাখা জরুরি যে কোনো কোটা বা বিশেষ সুবিধা চিরকালীন কোনো ব্যবস্থা নয়। এ জন্য একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থায় যাতে টিকে থাকা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। কেউ অভিযোগ করার পর শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হবে—এটা কেন? আমাদের পোশাকশিল্প রক্ষায় ও এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিতে যা করণীয় তা নিজেদেরই করতে হবে। জন কেরিরা যাতে কোনো অভিযোগ করার সুযোগই না পান সেই সুবিধাও আমাদের নিতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫০
false
rg
বাংলা একাডেমি'র কেবল মোসলমানিটা বাকি আছে!!! এ বছর নাটক, গবেষণা এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিষয়ে কাউকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়া হয়নি। বাংলা একাডেমি মিডিয়াকে পুরস্কারপ্রাপ্তদের যে তালিকা সরবরাহ করেছে, সেখানে অবশ্য ২০০৭ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ইব্রাহীমের নাম রয়েছে। যদিও পরে একাডেমি এটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাংলা একাডেমি'র তামাশার কোনো শেষ নাই! মিডিয়াকে পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা যোগান দেওয়ার পর প্রত্যাহার করাটা যে বাংলা একাডেমির কর্মীবাহিনীর বড় ধরনের একটা অযোগ্যতা, এটা এখনো কেউ অবশ্য স্বীকার করনি, সেটা স্বীকার করছে না কেন? পুরস্কার বিষয়ক নীতিমালাটি কী বাংলা একাডেমির দায়িত্ববান কেউ নিজেরা একবারও চোখে দেখেননি? একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান আর কত গরু-ছাগল দিয়ে চালাবে!!!নাটক আর বিজ্ঞান বাদ দিয়ে গবেষণা নিয়ে আমার একটা প্রস্তাব আছে বটে। যদিও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা করা প্রতিষ্ঠানটি গবেষণায় যোগ্য কাউকে খুঁজে পায়নি। এবার বোঝেন এখানে কত উচ্চমার্গের গবেষণা চলছে! আরে গত কয়েক বছর ধরে খোদ বাংলা একাডেমি কেবল অমর একুশে বইমেলা নিয়ে নিজেরা যতটা ব্যস্ত (এখানে টাকা-পয়সার বেশ রমরমা ব্যাপার স্যাপার আছে বটে) সময় কাটিয়েছে, একাডেমির সেই ব্যস্ততার স্বীকৃতি স্বরূপ, গবেষণায় তো চোখ বন্ধ করেই বাংলা একাডেমিকে এই পুরস্কারটি দেয়া যেত! এইটা কারো মাথায় আসে নাই কেন?একাডেমির মহাপরিচালক সাহেব বলেছেন, পুরস্কারের সংখ্যা কমিয়ে পুরস্কারের অর্থ মিনিমাম পাঁচ লাখ টাকা করা উচিত। খুব ভালো প্রস্তাব, সাধু সাধু। কিন্তু পুরস্কারের সংখ্যা কমানোর যুক্তি কী, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি। আমি তো মনে করি, পুরস্কারের সংখ্যা আরো বাড়ানো উচিত। কারণ, বাংলা ভাষার সাহিত্য এখন আর কেবল কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ, গবেষণা, অনুবাদ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী, নাটক, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ এবং শিশু সাহিত্য- এই দশটি বিষয়ের মধ্যে আটকে নেই। বাংলা ভাষায় এখন চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রচুর বই লেখা হচ্ছে। এটাকে চলচ্চিত্র সাহিত্য বিবেচনায় পুরস্কারের আওতায় নেওয়া যেতে পারে। এখন প্রতি বছর ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিষয়ক প্রচুর বই প্রকাশ পাচ্ছে। সেখানেও সাহিত্য রয়েছে। গবেষণা রয়েছে। প্রবন্ধ বা নিবন্ধ রয়েছে। এগুলোকে তাহলে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলা হবে? চলচ্চিত্র কী সাহিত্যের বাইরে কিছু?আর্টের বইকে কেন সাহিত্য বলা হবে না? আর্ট আলোচনার বইকে? বই আলোচনার বইকে? ক্যামরায় তোলা ছবি'র আলোচনার বইকে? বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য বরং একটা 'সমালোচনা সাহিত্য' ক্যাটাগরি থাকাটা খুব জরুরি। তাহলে এ বিষয়ে আগ্রহীরা ভবিষ্যতে আরো ভালো কাজ করার উৎসাহ পাবেন। আরেকটি বিষয় এখানে বলতে চাই, বাংলা একাডেমি থেকে কেন জীবিত লেখকদের উপন্যাস, গল্পের বই প্রকাশ করা হয় না? অথচ প্রতিবছর দেখা যায়- অমুকের টয়লেটে যাবার ঘটনা পরম্পরা, অমুকের সাহিত্যে নারী, তুমকের সাহিত্যে সেক্স, অমুকের সাহিত্যে গ্রাম্যতা ইত্যাদি অখাদ্য কুখাদ্য বাংলা একাডেমি থেকে খুব সহজেই প্রকাশ পায়। তরুণ কবি লেখকদের বই বাংলা একাডেমি প্রকাশ করতে ভয় পায় কেন? আপনাদের বিদ্যা-বুদ্ধি প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, তাইতো?২০১৭ সালের অমর একুশে বইমেলায় ৪৫০টি প্রকাশনা সংস্থা স্টল পাবার জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে ৩২২টি প্রকাশনা সংস্থাকে নিয়ে হয়েছে লটারি। এবার প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে লটারি করা হয়েছে। একাডেমি বলছে- দুর্নীতি ও অসদুপায় রোধ করার জন্য ডিজিটাল লটারি পদ্ধতি একশোভাগ সৎ ও হালাল। এবারের বইমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনার থাকছে ৬৪৪টি স্টল। তবে গত বছর বইমেলায় নিষিদ্ধ প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে এবার বইমেলার বাইরে রেখেছে একাডেমি। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সাহেব বলেছেন, কোনো প্রকাশনা সংস্থাকে এক ইউনিট পেতে হলেও মিনিমাম ১০০টি বই থাকতে হবে। আর যে বছর বইমেলা, তার আগের বছরে সেই প্রকাশনা সংস্থার মিনিমাম ২০টি বই থাকতে হবে। আর এই ২০টি বইয়ের মধ্যে অন্তত ৫টি পুরস্কারপ্রাপ্ত বই থাকতে হবে। এসব করলেই মানসম্পন্ন বইমেলা হবে বলে তিনি দাবি করেছেন। এবার ঘটনার পেছনে যাই- গোটা বাংলাদেশে অসংখ্য অখাদ্য কুখাদ্য সাহিত্য পুরস্কারের ছড়াছড়ি। আপনার বইটি মানসম্মত কিনা, সেটা কোনো বিষয় না, বইটি পুরস্কার পেল কিনা- সেটাই বাংলা একাডেমি যেহেতু প্রকাশকদের এভাবে কৌশলে শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। তাহলে এদেশে মানসম্মত বই এবং লেখক তৈরি হবে কীভাবে? পুরস্কারপ্রাপ্ত ৫টি বই না থাকলে বইমেলায় স্টল পাওয়া যাবে না। এইটা কোন ধরনের শর্ত? আমরা কী পুরস্কারপ্রাপ্ত বইগুলো সম্পর্কে জানি না? আমরা কী পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের সম্পর্কে জানি না? প্রকাশকদের কী কাজে উৎসাহ যোগাচ্ছে একাডেমি?বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন নানান কিসিমের গরু-ছাগলদের দিয়ে, যারা নিজেরা নতুন চিন্তা করতেই জানে না, যাদের মাথায় কেবল এমন সব ভ্যারান্ডাভাজির মত আজব বুদ্ধি ঘুরপাক খায়, এরা নিয়েছে বাংলা একাডেমির দায়িত্ব। আর অন্য সকল কাজ বাদ দিয়ে অমর একুশের বইমেলা আয়োজন যেন এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাকি এগারো মাস বাংলা একাডেমি জাবর কাটে! অথচ বইমেলা বিষয়টি পুরোপুরি প্রকাশকদের কাজ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এটা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র দিয়ে প্রকাশকদের সহযোগিতায় পরিচালনা করার কথা। সেখানে বাংলা একাডেমি বড় মাতবর সেজে বসে আছে!দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের সম্পত্তি ও অর্থব্যয়ের উপর কঠিন নজরদারি রাখা। প্রত্যেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চেক করা হোক। বাংলা ভাষার গবেষণা ও উন্নয়ন বাদ দিয়ে এরা দুনিয়ার আকাম করে যাচ্ছে। তাই নিয়ে আর তেল মর্দন পেয়ে সরকার বাহাদুরও বেজায় খুশি। মাভৈ মাভৈ! কয়েকদিন আগে কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর প্রতিষ্ঠিত কাশবন স্কুলের জন্য বাংলা একাডেমিতে বই কিনতে গিয়ে আরো একটি তামাশার চিত্র আবিস্কার করেছিলেন। গুণদার কাছে আমি সেই দুঃখের গল্প শুনেছি। বাংলা একাডেমিতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও কবি জীবনানন্দ দাশের কোনো বই নাই! চিন্তা করে দেখেন, খোদ বাংলা একাডেমি বাংলা সাহিত্যের অমর দুই দিকপালকে বাদ দিয়ে কেবল ভবনের উচ্চতা বাড়িয়েছে! সেখানে মাইকেল আর জীবনানন্দ নেই! হায় জাতীর মননের প্রতীক, আর কত অধপতন হলে এদের হুশ হবে? অথচ সেদিন আমার এক বন্ধু'র হাতে দেখলাম আবুল বাসার রচনাবলী, যার প্রকাশক বাংলা একাডেমি। এই লেখকের আমি সেদিন মাত্র নাম শুনেছি। বইটি উলটে পালটে দেখলাম, ভেতরে একটা নাটক, একটা উপন্যাস, কিছু ছড়া, কিছু কবিতা, কিছু স্মৃতিচারণ এসব দিয়ে ভরপুর। হতে পারে এই লেখকের লেখা অনেক বিখ্যাত, কিন্তু আমি ওনার নাম শুনেছি মাত্র ওইদিন। এটা আমার অপারগতা ও নির্বুদ্ধিতা। পরে লেখক পরিচিতি পড়ে দেখলাম- উনি বিটিভির একসময় বড় কর্মকর্তা ছিলেন। বাংলা একাডেমি থেকে এখন এসব বই খুব অনায়াসে বের হয়। এটি গত বছরের (২০১৬) বই। কিন্তু একাডেমিতে মাইকেল বা জীবনানন্দের বই নাই! ভাবুন একবার? কোথায় নেমেছে এটা?আগামীতে বাংলা একাডেমি থেকে কেবলমাত্র মোকসেদুল মোমেনিন প্রকাশ পেলে আমি অন্তত অবাক হব না। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানটির গতিবিধি ধীরে ধীরে সেদিকেই যাচ্ছে। একদিকে সরকার হেফাজতের পরামর্শে পাঠ্যপুস্তক পাঠ্যক্রম ঠিক করছে। আর অন্যদিকে বাংলা একাডেমি নাটক, গবেষণা আর বিজ্ঞানের বই খুঁজে পায় না। চলতি বছর স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে যা করা হয়েছে, আগামী বছর আমি গবেষণায় এদেরকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেবার অ্যাডভান্স প্রস্তাব করছি। কারণ বাংলা একাডেমির পুরস্কার নীতিমালায় নাম প্রস্তাব করার সুযোগ আছে। মনে রাখবেন, দেশে হেফাজতের পরামর্শে যত কাণ্ড করবেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিষয়ে বই পাওয়ার চিত্র তত অসম্ভব আকার ধারণ করবে। কারণ বিজ্ঞানের বই ওরা বরদাশত করে না। অথচ বিজ্ঞান ও দর্শনের বই হিসেবে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের যে কোনো বই, বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাবার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু সেই বই পড়ার মত মেধাবী কেউ কী পুরস্কার প্রদান কমিটি বা একাডেমির সার্স কমিটিতে আছে? বিজ্ঞান বিভাগের জন্য বই বাংলা একাডেমি খুঁজে পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। এই চিত্র আগামীতে আরো কঠিন হবে। বাস্তবতা সেদিকেই যাচ্ছে!তবে বাংলা একাডেমিকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই সত্যটি স্বীকার করার জন্য যে, দেশে ২০১৬ সালে নাটক, গবেষণা এবং বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো বই বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ওনারা খুঁজে পাননি। এই চরম সত্যটির মধ্যেই রাষ্ট্রীয় অধপতনের সুস্পষ্ট সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। এই স্বীকারোক্তির ভেতরেই বাংলা একাডেমি তাদের নিজেদের অযোগ্যতা হাতেনাতে প্রমাণ করেছে। আর ২০০৭ সালে বিজ্ঞান বিষয়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত মুহ্ম্মদ ইব্রাহীমের নামসহ মিডিয়ার কাছে সেই তালিকা সরবরাহ করে, বাংলা একাডেমি নিজেদের অযোগ্যতাকে আর আড়াল করতে পারেনি। অথচ বাংলা একাডেমি পুরস্কার নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, 'কাউকে এই পুরস্কার দ্বিতীয়বার দেওয়া যাবে না'। তাহলে মুহম্মদ ইব্রাহীমের নাম বাংলা একাডেমি মিডিয়ায় সরবরাহ করলো আবার প্রত্যাখ্যান করলো- কীসের নাটক করার জন্য। তাহলে তো নাটকের জন্যও বাংলা একাডেমি নিজেই আগামীতে পুরস্কার পেতে পারে। নাটকের জন্য বাংলা একাডেমি, একুশের বইমেলার গবেষণা প্রস্তুতির জন্য বাংলা একাডেমি চলতি বছর দিব্যি দুটো পুরস্কার যোগ্যতা থাকা স্বত্তেও হাতছাড়া করল। আর সুন্দরবন ধ্বংস করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়কেই তো বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কারটি অনায়াসে দেওয়া যেত। চোখের সামনে এত কিছু থাকতে বাংলা একাডেমি তিনটি পুরস্কার দিতে ব্যর্থ হলো। অথচ এই ব্যর্থতার জন্য একাডেমি দুঃখপ্রকাশ পর্যন্ত করলো না! হায় মরি মরি। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় হলো, জাতি এমন অধপতনশীল মরণাপন্ন বাংলা একাডেমিকে দেখতে চায় না। বাংলা একাডেমিকে বরং একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের কাছে দায়িত্ব দিলে, পঞ্চাশের নিচে যাদের বয়স, এমন চৌকশ ও অভিজ্ঞ তারুণ্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। যে প্রতিষ্ঠানের বয়স গত ডিসেম্বরে ৬১ পূর্ণ হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের এমন অধপতন মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হয়। সত্যি সত্যিই কষ্ট হয়। চোখের সামনে শিঘ্রই এই প্রতিষ্ঠানের মোসলমানি করানো হবে, জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি। তখন টের পাবেন কত ধানে কত চাল। প্রমথ চৌধুরী একবার চট্টগ্রামের ভাষায় বলেছিলেন, 'পুন্দত নাই তেনা, মিডা দি ভাত হানা' (পাছায় কাপড় নেই, তবুও মিঠাই দিয়ে ভাত খেতে চায়)। বর্তমান একাডেমির অযোগ্যতাকে এর চেয়ে সুন্দর ও ভদ্রভাষায় বলা ছাড়া আর কী বলতে পারি! নাটক, গবেষণা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিষয়ে এবার মানসম্মত লেখক না পাওয়ায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়নি। সাধু সাধু!................................২৪ জানুয়ারি ২০১৭ সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৩৮
false
ij
গল্প_ মাঘের শেষে আমি কাল সকালের ট্রেনে ঐশীকে নিয়ে ওসমানপুর যাচ্ছি। সালমা বলল। সময়টা মাঘের শেষ। আশরাফের ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে ওঠে। প্রতিবছর মাঘের শেষে সালমা ওসমানপুর যায় । ওসমানপুর সালমার বাবার বাড়ি। জায়গাটা মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে। অফুরন্ত ধানের ক্ষেত আর সেই অফুরন্ত ধানের ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে একটি উত্তরমুখি রেললাইন । আশরাফের শ্বশুড়বাড়ির আঙিনা থেকে দেখা যায় সে অফুরন্ত সোনালি শষ্যক্ষেত্র। সাত বছর বিয়ে হয়েছে, আশরাফ জানে না, ওসমানপুরে বিল আছে কি না; প্রশ্নটি কখনও সে সালমাকে জিজ্ঞেস করেনি। ওসমানপুর গ্রামটি যদিও শ্যামল। শ্যামল আর সবুজ। আজ সকালের ট্রেনে ঐশীকে নিয়ে ওসমানপুর চলে গেল সালমা। অফিস থেকে ফিরে ফাঁকা ঘরদোর। বুকের ভিতরে জমে ওঠা ক্রস্ত শূন্যতা টের পায় আশরাফ। পুরনো কিছু অভ্যেস ফিরিয়ে আনে সে। একটার পর একটা সিগারেট টানে। সিগারেটের ধোঁওয়া সালমা সহ্য করতে পারে না। ওদের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ নয় বলেই বিয়ের আগে দু-পক্ষই অচেনা ছিল দু’পক্ষের কাছে। বিয়ের পর জানা গেল সিগারেট বস্তুটি সালমার দুচক্ষের বিষ। তবে সালমার রান্নার হাত ভালো। কিশোরগঞ্জের মেয়ে বলেই হয়তো। মফস্সল থেকে আসা সংগ্রামী মানুষ আশরাফ; মেসের রান্না খেয়ে খেয়ে পেটে চার পড়ে গেছে, যে কারণে সিগারেট একেবারে ছেড়ে দিতে না পারলেও কমিয়ে দিতে থাকে । সংসারে দু-পক্ষ সম্ভবত এভাবেই ব্যালেন্স করে ; বিয়ে হয়েছে বছর সাতেক, একটাই মেয়ে, ঐশী; ঐশী ক্লাস ওয়ানে পড়ে। ফাঁকা ঘরদোরে ভাববার অবসর মেলে। ব্যাঙ্কের কাজ আর ঘর-সংসার ভালো লাগার কথা না আশরাফের। মাঘের শুনশান অটুট নীরবতায় ফাঁকা ঘরদোরে মূলত ঝুমুরের স্মৃতিই মনে হয় তার। ধোঁওয়ার কুন্ডলীতে পাক খায় একটি শ্যামলা কিশোরী মুখ। ঘটনা সামান্য। সম্ভবত মহাকাল মনে রাখেনি। ঘটনা এই- আশরাফের চাচাতো বোন ছিল ঝুমুর। দু’জনই কিশোরগঞ্জ জেলার মিটামইন উপজেলার কেওড়জরি গ্রামে বেড়ে উঠছিল। বালক বয়েসের শেষে পৌঁছে একটা সময়ে সচেতন হয়ে উঠেছিল কিশোর আশরাফ-ঝুমুর অন্যরকম। ঝুমুরকে নিয়ে সবার চোখের আড়ালে গেলে সমস্ত শরীর ঝমঝম করে বাজতে থাকে । কানের লতি উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকে, ঠোঁট দুটি স্ফুরিত হয়ে উঠতে থাকে একটি দীর্ঘ চুম্বনের তৃষ্ণায়। এবং কেওড়জরি গ্রামটি শ্যামল। শ্যামল আর সবুজ। সেই সবুজে শ্যামলে জড়াজড়ি করে বেড়ে উঠছিল দুটি কিশোর-কিশোরী- সবার চোখের আড়াল হলেই যাদের শরীর দুটি ঝমঝম করে বাজত। মিটামইন উপজেলাটি আসলে বিলময় একটি স্থান। সে বিল আবার শীতকালীন পাখিদের আবাস। ভোরবেলা বিলের চরে দৌড়ে যেত দুটি বালক-বালিকা আর চুরি করে আনা বড় আব্বার ইয়ারগানের গুলিতে নিরীহ বালিহাঁস হত্যার গভীর গ্লানী পরস্পরকে পরস্পরের আরও কাছাকাছি করে তুলছিল ...আর, সে সবের ওপর ঝরেছিল মাঘ শেষের বিস্ময়কর রোদ । কিশোর আশরাফের বিস্ময় ও বেদনা সৃষ্টি করে কিশোরী ঝুমুর মাত্র দু-দিনের জ্বরে আচ্ছন্ন হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিল ; বিস্ময় ও বেদনা এই কারণে যে, তখনও মাঘের ঝলমলে ক’টা দিন বাকি, শীত শেষ হয়ে আসছে যদিও।এখনও মাঘের দিনে সেসব কথা মনে হয়। ফাঁকা ঘরে ঝুমুরের সঙ্গে কত কথা হয়।আরেকবার।না।এই শেষ।না।মাঘ শেষে এলোমেলো হয়ে যায় আশরাফ।সালমা ওসমানপুর গেলে সাধারনত ২/১ দিনের বেশি থাকে না। থাকা যায় না। সম্পত্তি নিয়ে তিন ভাইয়ের নিত্য লাঠালাঠি; বোনেরা গেলে সন্দেহ করে। আশরাফের অন্ধ শ্বশুর দাওয়ায় বসে ঝিমোন । কখনও আশরাফ যায় ওসমানপুর, সালমা-ঐশীদের নিয়ে আসতে । বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেন ধরে। ট্রেন থেকে নেমে একটি অমলিন ভোর। স্টেশন-সংলগ্ন চাস্টলে চা খেয়ে সিগারেট ধরায় আশরাফ। রিকশায় ওঠে। প্রচন্ড শীতবোধ হয় তার। আর, ধূসর কুয়াশা। নির্জন গ্রাম্যপথ। রিকশার টুংটাং। সারা পথে একটি প্রশ্নই ওকে তাড়া করে ফেরে। প্রতিবছর মাঘের শেষে সালমাকে ওসমানপুর আসতেই হয় । কেন? সাত বছর বিয়ে হয়েছে, আশরাফ এখনও জানে না, ওসমানপুরে বিল আছে কি না; ওসমানপুর গ্রামটি যদিও শ্যামল। শ্যামল আর সবুজ। সেই শ্যামলে সবুজে জড়াজড়ি করে দুটি কিশোর-কিশোরী বেড়ে উঠছিল কি? যাদের শরীর দুটি সবার চোখের আড়াল হলেই ঝমঝম করে বাজত? আর, সে সবের ওপর ঝরত মাঘ শেষের বিস্ময়কর রোদ? ওসমানপুর থেকে ফেরার পথে হয়তো শেষ মাঘের ঝকঝকে রোদ। সালমার করুন মুখ ট্রেনের জানালায়- বাইরে তাকিয়ে থাকে। ঐশী বসেছে মায়ের কোলে। আশরাফের চোখ পত্রিকায় । হয়তো একটি ছোট্ট শিরোনামে চোখ আটকে যায়: কিশোরগঞ্জ জেলার মিটামইন উপজেলায় বাস- ট্রাকের সংঘর্ষে তিন জন নিহত। কতকাল আগে দেখা ঝুমুরের মুখটা চকিতে ভেসে ওঠে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে আশরাফ।
false
rg
আমাদের জাতীয় পতাকার ইতিহাস বিভ্রান্তি দূর করার আহবান!! স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকার পরিকল্পনাকারীদের অনেকে এখনো জীবিত আছেন। তাঁদের প্রত্যেকের ইন্টারভিউ নিলেই ইতিহাসের সেই স্বর্ণালী অধ্যায়ের পুরো ইতিহাস এখনো উদ্ধার করা সম্ভব। ৭ জুন ১৯৭০ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত, এমনকি গোটা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে পতাকা ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই পতাকার ডিজাইন করেছিলেন শিবনারায়ণ দাশ। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রনেতা আসম আবদুর রব প্রথম যে পতাকা উত্তোলোন করেছিলেন, সেটিও ছিল শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা পতাকা। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ 'পাকিস্তান দিবস'-এ সারা বাংলায় পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা পতাকা উত্তেলোন করা হয়েছিল। পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে পতাকা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ছিল শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা পতাকা। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইনকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা জাতীয় পতাকাটি কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপে সরকারের কাছে জমা হয়। এটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। অর্থ্যাৎ ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে শিবনারায়ণ দাশ কর্তৃক ডিজাইনকৃত জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপ দেন পটুয়া কামরুল হাসান।ইতিহাসে আমাদের জাতীয় পতাকার এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি এখনো চূড়ান্তভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সংরক্ষণ করা হয়নি। বইপত্রে কেবল জাতীয় পতাকার ডিজাইনার হিসেবে পটুয়া কামরুল হাসানের নাম দেওয়া হয়েছে। অথচ জাতীয় পতাকার ডিজাইন ও পরিকল্পনার সঙ্গে অনেকগুলো নাম জড়িত। ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ের সেই অংশটির বিস্তারিত আসা উচিত। তাহলে মানুষ আসল ইতিহাস জানার সুযোগ পাবে। জাতীয় পতাকার পরিকল্পনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁরা হলেন ছাত্রলীগ নেতা আসম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মনিরুল ইসলাম ওরফে মার্শাল মনি, স্বপন কুমার চৌধুরী, নজরুল ইসলাম (জগন্নাথ কলেজ), শিবনারায়ণ দাশ (কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা), হাসানুল হক ইনু ও ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ (প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৬ নং কক্ষে (আসম আবদুর রবের কক্ষ) জাতীয় পতাকা নিয়ে সেই সভা হয়। ওই সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০১ নং কক্ষে (উত্তর) রাত এগারটার পর শিবনারায়ণ দাশ পুরো পতাকা ডিজাইন সম্পন্ন করেন। তার আগে ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হল (বর্তমানে তিতুমীর হল)-এর ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে মানচিত্রের বই নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকেন পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ পরিশেষে তাঁর নিপুন হাতে মানচিত্রটি লাল বৃত্তের মাঝে আঁকেন। (প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এখানে আমার কাছে বিভ্রান্ত যেটি লেগেছে সেটি হলো শিবনারায়ণ দাশ ডিজাইন করলেন কোন হলে বসে? বুয়েটের শেরে বাংলা হলে না তিতুমীর হলে? আরেকটি বিভ্রান্ত হলো, অনেকে বলেন সেই রাতে (৬ জুন ১৯৭০) সভা বসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৮ নং কক্ষে ( শাহজাহান সিরাজের কক্ষ)! অনেকে বলেন ১১৬ নং কক্ষে (আসম আবদুর রবের কক্ষে)। আসলে কোন কক্ষে? ১১৬ না ১১৮? আমার ধারণা আসম আবদুর রবের কক্ষে, আর সেটি ১১৬।) সেই রাতেই নিউমার্কেট এলাকার বলাকা বিল্ডিংয়ের ৩ তলার ছাত্রলীগ অফিসের পাশে 'নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্স'-এর টেইলার্স মাস্টার খালেক মোহাম্মদী পতাকার নকশা বুঝে কাজ শুরু করেন। ভোরের মধ্যেই তাঁরা কয়েকটি পতাকা তৈরি করে দেন। কামরুল আলম খান (খসরু) গিয়েছিলেন টেইলার্স খালেক মোহাম্মদীর কাছে। প্রথম জাতীয় পতাকার জন্য কাপড় দিয়েছিলেন কে?বর্তমান মন্ত্রীসভায় হাসানুল হক ইনু আছেন। শিবনারায়ণ দাস এখনো জীবিত। আসম আবদুর রব এখনো জীবিত। কাজী আরেফ আহমদ, শাহজাহান সিরাজ ও স্বপন কুমার চৌধুরী মারা গেছেন। অন্যদের খবর আমি জানি না। যাঁরা এখনো জীবিত আছেন, তাঁদের কাছ থেকে জাতীয় পতাকার সেই সোনালী অধ্যায়ের ইতিহাস উদ্ধার করা কোনো কঠিন কাজ নয়। আমাদের উচিত এঁদের প্রত্যেকের সাথে কথা বলে জাতীয় পতাকার সেই ইতিহাস খুঁড়ে আনা। আশা করি, একটু উদ্যোগ নিলেই আমাদের জাতীয় পতাকার সেই ইতিহাস আমরা এখনো সঠিকভাবে উদ্ধার করতে পারবো। এই বিষয়ে আপনাদের আর কী কী জানা আছে তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে খুব উপকার হয়।বিনীত নিবেদকরেজা ঘটক২১ ডিসেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২২
false
ij
আজকের বই_ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল-এর _আমার বন্ধু রাশেদ।_ (ইংরেজি অনুবাদ) স্ত্রী ইয়াসমিন হকের সঙ্গে ১৯৫২। ভাষা আন্দোলনের বছর। ডিসেম্বর মাস। রফিক বরকত সালামের জন্য বাঙালির চোখের জল তখনও শুকোয়নি। ২৩ ডিসেম্বর। সিলেট। জন্ম হল জাফর ইকবালের। বাবা ফয়জুর রহমান ছিলেন পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা। কাজেই বাবার বদলীর চাকরির সুবাদে ছেলেবেলাতেই বাংলাদেশের নানা জায়গায় ঘোরার সুযোগ হয়েছিল। আর এভাবেই ভিত রচিত হয়েছিল জাফরের লেখকমননের। জাফরের বাবা ছিলেন অসম্ভব একজন ভালো মানুষ। উদার, দিলখোলা। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুর মতন মিশতেন। ছেলেমেয়েদের লেখালেখির প্রেরণা দিতেন। না-ছাপালেও নিজেও টুকটাক লিখতেন ফয়জুর রহমান। ছেলেদেরও লিখতে বলতেন। বলতেন," বুঝলি হুমায়ূন, মনের দুঃখ ভোলার একমাত্র উপায় হইল লিখা। জাফরের বড় ভাইয়ের নাম হূমায়ূন। সে মাথা নাড়ে। বাবার কথা শুনে সেও লিখত। জাফরও লিখত। জাফরের আর এক ভাই হাবীব-সে ভারি চমৎকার ছবি আঁকত। ফয়জুর রহমানের বুকটা সব সময় আনন্দে ভরে থাকত। ভাবতেন-আমি তো চিরকাল এই ভবের মাঝারে থাকব না, একদিন চলে যাব। তখন আমার ছেলেরা ছবি এঁকে বই লিখে দেশের মানুষের মনে কত যে আনন্দ দেবে। আজ প্রতিটি বাঙালিই জানে-ফয়জুর রহমানের সেই স্বপ্নটি সার্থক হয়েছে সাত বছর বয়েসেই নাকি জাফর প্রথম সাইন্সফিকশানটি লিখে ফেলেছিল। আর, সেটি দেখে বাবার কী খুশি। হূমায়ূনও অবাক। ছোটভাইয়ের জন্য কি গর্বের এক অনুভূতি হচ্ছিল হুমায়ূনের বুকে। হাবীব আদুরে গলায় বলল, ভাইয়া, তোমার বইয়ের ছবিগুলো কিন্তু আমি আঁকব। আচ্ছা, আঁকিস। জাফর খুশি হয়ে বলল। আমার বইয়ের ছবি আকঁবি না? হুমায়ূন ছোট ভাইকে মৃদু খোঁচা মারল। আঁকব না আবার? তখন রাঙামাটির পুলিশ কোয়ার্টারের উঠানে ফুটফুটে জ্যোস্না। অক্টোবরের শেষ। কী শীত আর ঝিঁঝি পোকার ডাক। গোয়াল ঘর থেকে গোবরের গন্ধ ভেসে আসছে। রাতে খাওয়ার পর ছেলেমেয়েদের পার্বত্য এলাকার শীত সম্বন্ধে ধারনা দিতে উঠানে এসে বসেছেন ফয়জুর রহমান। সদ্য রাঙামাটিতে বদলী হয়ে এসেছেন। বদলীর চাকরি। আবার কখন চলে যেতে হবে। যেখানেই যান তিনি- সেই অঞ্চলের মায়ায় পড়ে যান। মায়া এমনি জিনিস। হায়রে, কে বানায় লো এমন মায়ার জগৎ? ফয়জুর রহমান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন। ১৯৬৮। ফয়জুর রহমান তখন বগুরায়। ম্যাট্রিক পাশ করল জাফর বগুরা জেলা স্কুল থেকে। তারপর ঢাকা কলেজে পড়াশোনা আরম্ভ হল। ১৯৭০ সাল। ঢাকা কলেজ থেকেই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করল জাফর। পূর্ব পাকিস্থান তখন উত্তাল। পাকিস্থানী শাসনশোষনের বিরুদ্ধে বাঙালি জেগে উঠেছে। স্বাধীকারের কথা ভাবছে। বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্নের রুপ দিচ্ছেন। যে স্বপ্নের ভূমিতে পৌঁছতে অনেক আত্মত্যাগ, অনেক রক্তস্রোত তখনও বাকি। ১৯৭১ সালের ৫ মে। পাকিস্থানী সৈন্যরা একটি নদীর সামনে ফয়জুর রহমানকে হত্যা করল। মাকে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বাবার কবর খুঁড়তে হয়েছিল জাফরকেই। যুদ্ধ শেষ। ’৭২এ জাফর যোগ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে। ভীষন গম্ভীর। কী যেন ভাবে সারাক্ষণ। জীবনজগতের মানে বদলে গিয়েছে। বাবার মুখটা মনে পড়ে। বাবা লিখতে বলতেন। জাফর লিখত। তারপরও বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রনা। কেন সভ্যতায় এত মৃত্যু-এত রক্তপাত! ইয়াসমিন নামে একটি মিস্টি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হল পদার্থবিদ্যা বিভাগে। জাফরকে প্রথম দেখে ইয়াসমিন মুগ্ধ। এমন শান্তশিষ্ট পড়ুয়া ছেলেই ইয়াসমিনের পছন্দ। তার ওপর জাফর আবার লেখে। লেখকদের সঙ্গে ঘর করতে না চাইলেও লেখকদের প্রতি নারীদের এক ধরনের কৌতূহল থাকে-যা ব্যাখ্যা করা যায় না। তখনই প্রথম লেখা বেরয় বিচিত্রায়। (আমি গল্পের মতন করে লিখছি। কাজেই তথ্যের বিভ্রাট ঘটতে পারে।) জাফরের প্রথম লেখার নাম “কপোট্রনিক ভালোবাসা।” কুম্ভীলকবৃত্তির অভিযোগ উঠল। জাফরের দিনগুলি অস্থির নির্ঘুম হয়ে উঠল। ইয়াসমিন তখন বলল, আচ্ছা, এক কাজ কর তুমি। তুমি কপোট্রনিক নিয়ে অনেকটা সিরিজ লেখ। তাহলে পাঠকের মন থেকে সন্দেহ দূর হবে। জাফর তাই করল। সে কপোট্রনিক নিয়ে অনেক কটা সিরিজ লিখল। পাঠক বুঝল: প্রতিভাবান জাফর এক প্রচন্ড সম্ভাবনা। বাংলা সাহিত্যের প্রায় নতুন এক অধ্যায়ের অপ্রতিরোধ্য কর্মকার হবেন তিনি। ১৯৭৬। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট বদলে গেছে। জাফরের মন খারাপ। বঙ্গবন্ধু কি এমন দোষ করলেন যে বিচার পেলেন না-ঘাতকের গুলিতে নিহত হতে হল!!! পি এইচ ডি করতে গেলেন মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবার শোক, বঙ্গবন্ধুর শোক খানিকটা স্তিমিত হয়ে এল। ওখানে আবার ইয়াসমিনের সঙ্গে আবার দেখা। প্রনয় এবার রুপ নিল পরিনয়ে। ’৭৭ এ বিয়ে। একাত্তরে বাবার কবর খুঁড়লেও নানা দিক থেকে জাফর ইকবাল ছিলেন সৌভাগ্যের বরপুত্র। কেননা, তিনি পোস্ট-ডকটরাল ট্রেনিং করলেন বিশ্বখ্যাত ক্যালট্যাক -এ ( ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি); ওখানেই রবার্ট পেনরোজসহ অনেক বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদের সান্নিধ্যে এসেছেন। আমরা জানি, স্টিফেন হকিং, ক্যালট্যাক আর সমকালীন মহাকাশবিদ্যা (অ্যাস্ট্রো-ফিজিকস্)-সবই একাকার হয়ে আছে। তাই বলছিলাম, ক্যালট্যাকে পা রাখা যে কোনও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের জন্য মহাতীর্থে পা রাখারই সমান। জাফর ইচ্ছে করলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে সেটল করতে পারতেন। বাবা ডাকছিল; দেশটা টানছিল। তখন ভীষন ছটফট করতেন জাফর। একাত্তরে শহীদ বাবা কিছু স্বপ্নে বীজ বপন করে দিয়েছিলেন। ইয়াসমিনেরও ইচ্ছে ছেলেমেয়েরা দেশের মাটিতে বেড়ে উঠুক। শ্বশুরের কথা স্বামীর মুখে, ভাসুরের মুখে, দেওরের মুখে এত শুনেছে যে - কাজেই ওরা দেশে ফিরে এলেন ’৯২ তে। ১৯৯৪ সালে শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স যোগ দিলেন জাফর। সদ্য গড়ে ওঠা দেশের অন্যতম স্বপ্নের বিজ্ঞানমন্দিরের প্রধান পুরোহিত হলেন জাফর। জাফরের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে নাবিল। মেয়ে য়েষহিম। "আমার বন্ধু জাফর" অনুবাদ করেছে য়েষহিম। য়েষহিম-এর জন্য শুভ কামনা রইল। আজ, তাহমিমা আনাম বিদেশি ভাষায় সাহিত্যরচনা করে যে পথ খুলে দিলেন- সেই পথ ধরেই য়েষহিমও একদিন বুকার-নোবেলসহ সব পুরস্কার নিয়ে আসবে ওর শহীদ দাদুর স্বপ্নের মায়াময় বাংলাদেশে: আজ এই কামনাই করি। Click This Link সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:০৬
false
mk
সন্ত্রাসদমন ও সরকারের সাফল্য আন্তর্জাতিক বিশ্বে আমেরিকা একটি শক্তিধর রাষ্ট্র এটা সবার জানা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার অবস্থান আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না। নিক্সন প্রশাসন মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিপক্ষে ছিল। '৭৪ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ঢাকা সফর করে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। সেই আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করেন। দু'দেশের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল সফরের প্রধান লক্ষ্য। আমেরিকার একমাত্র রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফর করেন। বিগত ২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন সে সময় শেখ হাসিনা দীর্ঘ ২১ বছর পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার সরকারের সে সময়ে বিল ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসেন। সে থেকেই বাংলাদেশ আমেরিকা তো বটেই বহির্বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে। ইতোমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সফর করে গেছেন। মাত্র একদিনের সফরে জন কেরি গত ২৯ আগস্ট ঢাকা আসেন। ওবামা প্রশাসনের একেবারে শেষ মেয়াদে জন কেরির এ সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন ব্যক্তির বাংলাদেশ সফর অবশ্যই অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ সফরের অন্যতম প্রধান দিক ছিল সামাজিক নিরাপত্তা, জঙ্গিবাদ মোকাবেলা। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সমস্যা কোনো একক রাষ্ট্রের নয় বৈশ্বিক সমস্যা। এ দুটি সমস্যা মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থেকে এক সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যে সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা প্রকৃত অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে জঙ্গি মোকাবেলায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের সহযোগিতাও জরুরি। তাই আমরা আশা করতে পারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তায় জঙ্গি দমন সম্ভব হবে। এ ভূখ-ে জঙ্গিবাদ তার অশুভ তৎপরতা চালাতে পারবে না। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ শুধু রক্ত ঝরায় সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। তবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কিভাবে, কোন পথে, কোন পদ্ধতিতে দমন করা হবে সর্বোপরি সহযোগিতার ধরন কেমন হবে সে বিষয়ে স্পষ্টতা না থাকলেও দুদেশের মনোভাবের ওপর তা অনেকটা নির্ভর করবে। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট দেশ হলেও দেশটির গুরুত্ব যে, কোনো অংশেই কম নয় তা বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার নিজস্ব গতিতে। এ অগ্রগতি উন্নয়নে যাত্রা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সহযোদ্ধা এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। দীর্ঘ ২১ বছর পর অনেক চড়াই উৎরাই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ৭৫'র রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ যে পেছনে যেতে শুরু করে তার গতি রোধ করে শেষ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই তিনি বহির্বিশ্বে বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি যে সাফল্য অর্জন করেন তাতে তুষ্ট হয়ে বাংলাদেশে সফরে আসেন বিশ্বের অনেক বরেণ্য নেতা। তাই শুধু ক্লিনটন নয়, তার সরকারের প্রথম মেয়াদে সফর করেন দক্ষিণ আফ্রিকার মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিন নেতা ইয়াসির আরাফাত, জাপান, ভারত, ব্রিটেন প্রধানমন্ত্রীসহ সারা বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেন। বর্তমানে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে; বিশ্ববরেণ্য নেতাদের সফরই তা প্রমাণ করে। বাংলাদেশ এখন আর মঙ্গা বা তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কারিগরি দক্ষতা, তথ্য-প্রযুক্তির দিক থেকেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। শেখ হাসিনার গতিশীল ও দক্ষ নেতৃত্বে দেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং মধ্যম আয়ের দ্বারপ্রান্তে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে স্বীকৃতি ও সাফল্যের পাল্লা দিনে দিনে ভারি হচ্ছে। শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ভারত, চীন, জাপান এখন বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। একই সঙ্গে এ দেশগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের অংশিদার। যা হোক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তবে এ সফরকে কেন্দ্র করে বিরোধী রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী মহলে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, গত নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে নেতিবাচক মনোভাব ছিল তাতে আগাম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু না হয়নি। তবে এ কথা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় গণতন্ত্র, উন্নয়ন, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে। আমি মনে করি এটা যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের সহজাত প্রবৃত্তি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। আর সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বর্তমানে কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। এ বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে এক জোটে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে গুলশানের ঘটনাসহ কয়েকটি ঘটনা নিজেদের মতো করে মোকাবেলা করেছে। এদেশের তরুণরা কেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে এর পেছনে অন্যান্য কারণের মধ্যে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে, মূলত এক ধরনের হতাশা থেকেই তরুণরা জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ছে। তবে হতাশা দূর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। জন কেরির সফরের অন্যতম কারণ ছিল সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে যে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে তা পরিষ্কার করা। তার আলাপ আলোচনায় উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সঙ্গে এদেশের জঙ্গিদের যোগসূত্র রয়েছে। বাংলাদেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের অপকর্মের সঙ্গে বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী বিশেষ করে আইএসের মিল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সব সময় তা অস্বীকার করার চেষ্টা করেছে। বলা হয়েছে এগুলো দেশীয় জঙ্গিদের কাজ। সন্ত্রাস, জঙ্গি দমনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জন কেরির আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত এবং দু'দেশ এ ব্যাপারে তাদের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনী কাজের সমন্বয় করতে আগ্রহী। যদি দেশীয় সন্ত্রাসী জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের কোনো সম্পর্ক নাই থাকবে তাহলে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমনে কেন বাংলাদেশের সমন্বয়ের কথা বলা হচ্ছে। সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ দমন করতে যা দরকার তার মধ্যে একটি হচ্ছে_ সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের কারণ, ইন্ধনদাতা কারা। পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদকে নিয়ে রাজনীতি না করা। একে অপরকে দোষারোপ না করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা।আশার কথা, দেশের সর্বমহলে এমনকি তৃণমূল পর্যায়েও সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যানলি, মানববন্ধন করে কোটি কণ্ঠে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে তা দেশ জাতির জন্য শুভ। বহির্বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও মর্যাদাসম্পন্ন একজন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি অর্জনের অন্যতম কারণ হচ্ছে তিনি জাতির জনকের কন্যা। মূলত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, বহির্বিশ্বে তার ভাবমূতিকে আরও উজ্জ্বল করেছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে '৭১র মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সনপ্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও সময়ের বিবর্তনে পরবর্তী প্রশাসনের পরিবর্তন ঘটে। বর্তমান আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমেরিকার নেতিবাচক মনোভাবেরও পরিবর্তন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই বুঝতে পারছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভারত, চীন, জাপানসহ অনেক রাষ্ট্রের সঙ্গে শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক রয়েছে। জন কেরি ঢাকায় এসেই তিনি চলে যান ধানম-ির ৩২ নাম্বার বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে_ যেটা এখন জাতীয় জাদুঘর। সেখানে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ঘুরে দেখে পরিদর্শক বইয়ে যা লিখলেন তা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা ও তার প্রতি শ্রদ্ধার শামিল। তিনি লিখেছেন, এক সহিংস ও কাপুরুষোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে সাহসী ও উজ্জ্বল এক নেতৃত্বকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। জন কেরির এ সফরকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী মহল যে, উচ্ছসিত ছিল বিশেষ করে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার ক্ষেত্রে ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে জন কেরির কাছ থেকে স্পষ্টত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক বিশ্ববাজারে সমাদৃত। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। ভবিষ্যতে এ বাজার আরও সম্প্রসারিত করতে জিএসপি ও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার দরকার। দুদেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ককে আরও গতিশীল করতে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে। গোটা বিশ্বের মানুষ বিভিন্ন ধর্মে-বর্ণে বিভক্ত, কেউ মুসলিম, কেউ হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ, কেউ বা খ্রিস্টান। ধর্মে বিভক্ত থাকলেও মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা সব ধর্মে রয়েছে। কোনো হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, রক্তপাত কোনো ধর্মে নেই। এক ধর্মের মানুষের সঙ্গে অন্য ধর্মের মানুষের দ্বন্দ্ব-সংঘাত কোনো ধর্মই অনুমোদন করে না। আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ ভূখ-ের মানুষ যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। যুগ যুগ ধরে হিন্দু মুসলমান বা অন্য ধর্মের মানুষ সুখে-দুঃখে মিলে মিশে বসবাস করে আসছে। পবিত্র ইসলাম মানবতার ধর্ম কোনো প্রকার সহিংসতার স্থান ইসলামে নেই। কোনো ধরনের দাঙ্গা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা পবিত্র ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ। এমনকি অন্য ধর্মের মানুষের ওপর কোনো অন্যায় আচরণ ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলামের সুমহান আদর্শ, ঐতিহ্য মহানবী (সা.) অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি যে আচরণ করেছেন তা নিঃসন্দেহে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিই হচ্ছে সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি। তাই রাষ্ট্রে বসবাসরত সব ধর্মের মানুষের প্রতি আমাদের আচরণ হওয়া উচিত সংযত, সংহত। তা না হলে রাষ্ট্রে নানা ধরনের বিপত্তি দেখা দেবে_ যা রাষ্ট্রের উন্নয়ন সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বড় বাধা। তাই আবহমানকাল থেকে এদেশের মানুষ ধর্মীয় সমপ্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। যে আদর্শ ও ঐতিহ্যে এ ভূখ-ের মানুষ যুগ যুগ ধরে লালন করেছে সেখানে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের মাধ্যমে বাংলার মানুষ নতুন কোনো আদর্শ মেনে নিতে পারে না। চাপিয়ে দেয়া এ আদর্শ বাংলার মানুষ ঘৃণাভরে যেমন প্রত্যাখ্যান করেছে তেমনি সর্বস্তরের জনগণ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই জনসমর্থন প্রয়োজন। হত্যা, খুন, বোমা হামলা, আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। সন্ত্রাসী বা জঙ্গিরাও মরছে আত্মঘাতী হামলায়। শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করলে এটি যে একটি বৈশ্বিক সমস্যা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এ কারণেও জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, গর্জে উঠেছে তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কখনো জঙ্গিরা তাদের অশুভ তৎপরতা চালাতে সক্ষম হবে না। আমরা মনে করি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে। তবুও জন কেরির এ সফরে শুধু সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন নয়, দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্যের যে প্রবেশাধিকার চেয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমরা আশা করব যুক্তরাষ্ট্র তা বিবেচনা করবেন। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৩৯ ১. কেমন একটা থমথমে ভাব চারদিকে। মনে হচ্ছে দাঁতের ফাঁকে পিন কামড়ে ধরে আছি, গ্রেনেডটা বুকের সাথে চেপে ধরা, একটু পরেই দারুণ বিস্ফোরণে সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। সকালে ঘুম ভাঙার পর অনেকক্ষণ ধরে ধুকধুক করতে থাকে বুক। হৃৎপিন্ডটাও হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটছে আমার সাথে, হাঁসফাঁস করে একটা কিছু বলার চেষ্টা করছে, বুঝে উঠতে পারছি না। আগামী সেমেস্টারে থিসিস, যাকে এখানে বলা হয় ডিপ্লোমআরবাইট, লিখতে হবে। আমার ব্যাচেলর ডিপ্লোম-আইন্স (আইন্স = ১) এর সমকক্ষ, মাস্টার্স করার পর সেটা ডিপ্লোম-ৎস্বাই (ৎস্বাই = ২) হবে। জার্মানীতে প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখা করলে ডিগ্রীটাকে লেখা হয় Dipl.-Ing., অর্থাৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমপ্রাপ্ত। ডক্টরেট করলে কপালে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার দুই খেতাবই জোটে, অর্থাৎ লেখা হয় Dr.-Ing.। এ নিয়েও কিছু কালা কানুন আছে, যেমন হিটলুর আমলের একটা আইন ছিলো, জার্মানির বাইরে কেউ যদি ডক্টরেট করেন, তাহলে জার্মানির ভেতরে সে পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন না, করলে সেটা অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত হবে, এবং জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাভোগ জাতীয় ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। কয়েক বছর আগে এই হুজ্জতের সীমা একটু কমানো হয়েছে, এখন ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে কেউ যদি ডক্টরেট করেন, তাহলে জার্মানিতে সে পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, অন্যথায় নয়। কিছুদিন আগে এক মার্কিন বিজ্ঞানীকে এ নিয়ে পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের একটা লিঙ্ক ছিলো, সংরক্ষণ করতে ভুলে গেছি, নইলে শেয়ার করা যেতো। আরো হ্যাপা নাকি আছে। প্রকৌশলে পোস্ট ডক্টরেট, এখানে যাকে বলে হাবিলিটাৎসিওন, করলে কেবল পুরনো পূর্ব জার্মানীর লোকজনই তা ব্যবহার করেন, পশ্চিম জার্মানীতে প্রকৌশলশাস্ত্রের লোকেরা নামের গোড়ায় Dr.-Ing. Habil. লিখতে পারবেন না। তবে নাটুওরভিসেনশাফট, অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের লোক হলে ভিন্ন কথা। আগামী সেমেস্টারে ডিপ্লোমআরবাইট নিয়ে প্রফেসরদের কাছে ঘোরাফেরা করছি। আমার আগ্রহ সৌর আর বায়ুশক্তিক্ষেত্রে, যদিও বাংলাদেশে এই দুয়ের প্রয়োগই কিছুটা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি। বাংলাদেশে এই দুই নবায়নযোগ্য শক্তির প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে একটা ছোট সিরিজ লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি আপাতত। প্রফেসর আর তাঁদের ডক্টোরান্ডদের কাছে আনাগোনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী নিয়ে কাজ করবো। এ নিয়ে একটা চাপা টেনশন কাজ করছে কেন যেন। প্রফেসররা দেখলাম এই আগেভাগে খোঁজ নেয়ার ব্যাপারটাকে বেশ ভালো চোখেই দেখেন। আমার পরামর্শক প্রফেসর কাজ করেন উচ্চবিভব নিয়ে, আমার আগ্রহের কথা শুনে তিনি সরাসরি জানালেন, ওরকম কোন কাজ তিনি আপাতত করছেন না, তবে ইনসুলেশন নিয়ে টাটকা কিছু কাজ হচ্ছে, আমার আগ্রহ থাকলে করতে পারি। কাজের কিছু নমুনা দেখালেন তিনি, বেশ ইন্টারেস্টিং, কিন্তু ঐ পথে হাঁটবো না হয়তো। সৌর আর বায়ুশক্তি নিয়েও প্রচুর কাজ হচ্ছে, এই দুই ক্ষেত্রের তিন প্রফেসরকে জ্বালিয়ে মারবো আপাতত কয়েক সপ্তাহ। যে প্রফেসরের অধীনে কাজ করার খুব ইচ্ছা ছিলো, তিনি আপাতত দূরদূরান্তের সব কাজ গছিয়ে দিচ্ছেন ছাত্রদের, আর কাজ করছেন জৈববস্তু নিয়ে, যে ব্যাপারে আমার আগ্রহ থাকলেও রসায়নে আক্কেলগত শৈথিল্যের কারণে ঐ পথে যাওয়া হবে না। গত সেমেস্টারের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো লিখতে লিখতে। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাপগতিবিদ্যার দুঁদে প্রফেসর হচ্ছেন ক্লোজে। বেশ বদমেজাজি লোক, কিন্তু খুব খেটে পড়ান। বয়স হয়ে গেছে, অঙ্ক করাতে গিয়ে মাঝে মাঝেই ভুলভাল হয়ে যায়, পিএইচডির ছাত্ররা তড়িঘড়ি করে আবার ঠিক করে দেয় বোর্ডে গিয়ে। এক রাতে আড্ডা সেরে আমি আর হের রেহমান যাচ্ছি যে যার বাড়ি, এক বিপন্নমুখো ছোকরা কোত্থেকে এসে হাল্টেষ্টেলেতে পথ আগলে দাঁড়ালো। "ক্ষমা কোরো ... কিন্তু তুমি কি জানো, কিভাবে কোন সংখ্যার ঘাত বার করতে হয়?" ছোকরার উচ্চারণ আর চেহারা দেখে মনে হলো সে জাতিতে আরব, বললাম, "হুমম, জানি! ক্যালকুলেটর দিয়ে!" ছোকরা হেসে ফেলে বললো, "ক্যালকুলেটর ছাড়া কিভাবে করতে হয় তা-ই বলো!" থতমত খেয়ে বললাম, "টেইলর সিরিজে ভেঙে করা যায়। কিন্তু ক্যালকুলেটর ব্যবহার করছো না কেন?" ছোকরা এবার জানালো তার দুঃখের কাহিনী। ক্লোজের পরীক্ষা সামনে, যন্ত্রকৌশলের ছাত্রদের জন্যে তাপগতিবিদ্যার প্রথম পাঠ, সে পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ। ঐ যন্ত্রটি ছাড়াই এক দশমিক ছয় তিন দুই ঘাত শূন্য দশমিক পাঁচ তিন দুই আট এর মান বার করতে হবে। হের রেহমান চুপচাপ শুনছিলেন, এবার তিনি ধীরে ধীরে কিভাবে টেইলর ধারা দিয়ে এইসব হাবিজাবি বার করতে হয়, কিভাবে তৃতীয় ও পরবর্তী ঘাত অগ্রাহ্য করে সংক্ষেপে কাছাকাছি মান বার করা যায়, তা বিশদ বুঝিয়ে বললেন। ছোকরা সব নোট করে নিলো। মনে মনে ভাবলাম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্র্যামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ছিলো, কিন্তু কোন ক্যালকুলেটর ছাড়া তাপগতিবিদ্যার পরীক্ষা নেয়াকে ভোগলামি ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। জৈববস্তু নিয়ে কাজ করতে গেলে ক্লোজের মুখোমুখি হতে হবে অনেকবার। দূর থেকেই নমস্কার জানিয়ে তাই কেটে পড়ি। ২. এই রেনেট ছোকরাটাকে ধরে প্যাঁদানো উচিত। কী একটা মুভি স্ট্রীমিং সাইটের ঠিকানা দিলো, এখন শুধু প্রাণ ভরে মুভি দেখি। খুব খুব খুব ভালো লাগলো রাতাতুয়ি (Ratatouille) দেখে। ভোজনরসিক এক ইঁদুর রেমি, যে কি না বাড়ির রান্নাঘরে লুকিয়ে চুরিয়ে টেলিভিশনে দেখে দুঁদে শেফ গুস্তো-র রান্নাবান্নার কলাকৌশল। গুস্তো-র মোটো হচ্ছে, যে কেউই রান্না করতে পারে। রেমির বাপ রেমির ওপর একটু চটা, কারণ রেমির চালচলন অন্য ইঁদুরদের মতো নয়। যেমন, রেমির নাক অন্যদের চেয়ে একটু বেশি স্পর্শকাতর, তাই সব ইঁদুরদের যোগাড় করে আনা খাবার শুঁকে দেখে রেমি রায় দেয়, কোনটা বিষ মাখানো আর কোনটা নিরাপদ। কিন্তু রেমি আবার সব খাবার মুখে দেয় না, বেছে বেছে সবচেয়ে ভালো এক চিমটি খায়। রেমি কুড়িয়ে খেতে ভালোবাসে না, খাবার চুরি করে খাওয়া তার পছন্দ নয়, সে চায় রান্না করে খেতে। ছবির শুরুতেই দেখা যায় রেমি এক টুকরো ফরাসী পনির পেয়ে খুঁজে বার করেছে মাশরুম, তারপর বাড়ির ছাদে চড়ে সেই চীজ আর মাশরুম সেঁকে নিচ্ছে চিমনির ধোঁয়ায়। এই দৃশ্যটিই রাতাতুয়িকে অনেক ওপরে ঠেলে নিয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে। ছোট্ট রেমি, ছোট্ট তার ইচ্ছা, কিন্তু কী অসামান্য তার চেষ্টা! এরপরে ঘটনা আরো অনেক গড়ায়, সম্ভাব্য দর্শকের মজা মাটি করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। সিনেমা রিভিউ করতে গিয়ে অনেকেই গোটা সিনেমার গল্প বলে দ্যান, যা অতিশয় বিরক্তিকর ব্যাপার, তাই ও পথে পা বাড়াচ্ছি না। গুস্তো, তার রান্নার সমালোচক আন্তন ইগো, কিংবা ঝাড়ুদার থেকে শেফ বনে যাওয়া লিঙ্গুয়িনি, এদের সবার কাহিনী সুযোগ পেলে দয়া করে দেখে নেবেন রাতাতুয়িতে। শুধু বলি, রাতাতুয়ির সুরের কাজ অসাধারণ হয়েছে। আমি সারা জীবনে কখনো রেঁধে খাইনি, এমনকি চা বানিয়েও খাইনি খুব বেশি, এখন বাটে পড়ে রান্না করে খাই। যা নিজে রান্নার সাহস করি না, তা খাবার ইচ্ছে হল চৌধুরীর ঘাড়ে হামলা করি। চৌধুরীও আমার পথেরই পথিক, কিন্তু তাঁর তেহারি খাওয়ার বাসনা অনেক বেশি সলিড, তাই তিনি নিজেই রান্না করে ফ্যালেন, আমি খানিকটা জবরদস্তি করেই হামখোরাক হই। রাতাতুয়ির মূলমন্ত্র, এনিওয়ন ক্যান কুক দেখে তাই আমি খুবই স্পৃষ্ট। ঠিক করেছি, নতুন কিছু রান্না করে সবাইকে চমকে দেবো। এমন কিছু, যা খেয়ে লোকজন হয় মরে যাবে, নয়তো আর জবান নড়াতে পারবে না। কিন্তু ছবিটা দেখতে দেখতেই গভীর একটা বিষাদ আমাকে গ্রস্ত করে। শেষ পর্যন্ত, একটা ইঁদুরই তো আমি, রেমির চেয়ে একটু বড়, রেমির চেয়ে আরো অলস। রেমির মতো আমিও তো স্বজনদের ছেড়ে পড়ে আছি দূর প্রবাসে, নিজের ধান্ধায়। নিজেকে ডুবন্ত জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়া ইঁদুরের মতো মনে হয়, যে ঢেউয়ের মাথায় চড়ে জাহাজের দিকে তাকিয়ে চোখ মোছে। খুব শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছা হয়, অন্য অনেক ইচ্ছার মতোই অপূর্ণ থেকে যায় এটাও।
false
rn
কাঁচ মানুষ "ফুলের পাপড়িরা ঝলছে গেছে।স্বপ্নের কথা বলি কী করে-অগ্নিগিরির,শিখরে বসে?"পৃথিবীতে নিজের ইচ্ছে মতো সব হয় না,বেশির ভাগ সময় বৈরী পরিবেশে মানুষ কে দৈনন্দিন জীবন কাটিয়ে যেতে হয়।বয়স বাড়ে,হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়,শরীরের কলকজ্বা আর আগের মতো থাকে না।এই-ই নিয়ম কিন্তু এসব কথা কাউকে বলে বুঝানো যায় না।আমি কতোটূকু আনন্দ পেলাম,কতোটুকু দুঃখ পেলাম বা কতোটুকু আঘাত পেলাম তা কি স্কেল দিয়ে মাপা যাবে?নাকি ওজন করা যাবে?ধোঁকা ফাঁকি বাজির মাঝে একসাথে বসবাসের ভান করার চেয়ে সম্পর্ক ভাঙ্গা অনেক ভালো।মানুষের মন বহু বিচিত্র।একজন মানূষের সাথে আরেক জন মানুষের কোনো মিল থাকে না।হিমি হাজারো সমস্যা কিভাবে যে সামাল দেয়!আমি ঠিক করেছি হিমিকে বিয়ে করবো,সংসার জীবনে প্রবেশ করবো।অনেক কাছ থেকে হিমির ভালোবাসা পাবো,শত অসুবিধের মাঝেও হিমি যত্ন করে গরম ভাত আর ডিম তো অন্তত রেঁধে দিবে।হিমি শুধু চায় আমি ভালো হয়ে উঠি।কিন্তু বাইরের পৃথিবীটা কত নিষ্ঠুর তা জানে না।ভালো হওয়া মানে স্বার্থপর হওয়া।যখন আমি কোন সমস্যার উত্তর খুঁজে পাই না,খুব কষ্ট হয়।হিমি কষ্ট পেলে কেঁদে নিজেকে খানিকটা হালকা করে,আমিও তো কাঁদতে পারি না।যতদিন যাচ্ছে হতাশ হয়ে পড়ছি এই আমি।চাকরি নেই,তুমি থেকেও নেই।আর তাই লেখালেখি নিয়ে থাকতেও আজকাল আর ভালো লাগে না।মনে হয় সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে হিমির কাছে যাই।পরক্ষনেই মনে হয়,না যাবো না।হিমির কাছে যাবো না।হিমির কাছে যাবার এখনো সময় হয়নি।খুব বুঝতে পারি- পুরুষের জীবনযাপন নিশ্চিত নয়,তার আশ্রয় কাম্য নয় কোনো নারীরই।"তাকে দেখে মনে হয়,ফালি ফালি করে কাঁটা অভিমানী চাঁদ/হুটহাট ডুবে যায়,চুপচাপ দিয়ে আসে খেয়ালি নিষাদ/কতখানি নিতে পারো,নাকি আজ একটুও/তোমার মন ফাঁকা নেই.../একটু আধটু করে চলে যেতে যেতে/তুমি আর কোথাও যে থাকা নেই/তুমি আর কোথাও যে রাখা নেই।"কোনো এক মঞ্চ নাটকে নায়িকা বলেছিল- সেই তত সুখী,যারা অভিনয় করে মিথ্যা কথা বলতে পারে।(মানুষ নিজেই বোধ হয় অতলে তলিয়ে যাবার পথটি বোকার মতো তৈরী করে নেয়)পৃথিবীটা কী চমৎকার।লাইফ ইজ সো বিউটিফুল!এখানে ভালোবাসার রং বদল হতেই থাকে।একদিন ফুরিয়ে আসবে আমাদের জীবনের।চক্র মানুষের একদিন ফুরাবেই,এই তো নিয়ম!তবু সারাটা জীবন কি অবহেলায়,কী হেলাফেলায় জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি!আমি কেন জানি অনেক কিছু আগে থেকেই বুঝতে পারি।আমি বুঝতে পারি আমার প্রিয় মানুষদের সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে।বুঝতে পারি জীবনে আমি উন্নতি করতে পারবো না।কিন্তু তাতে কারো কোনো ক্ষতি হবে না।শুধু আমার নিজের ছাড়া।আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি কারো সাথেই আমার মিলে না,তাই আমি নিজের মতোই একলা একলা ঘুরে বেড়াই।আমি বুঝতে পারছি না,আমি কার জন্য,ঠিক কিসের জন্য বাঁচব।সারাদিন ভেবেছিলাম কোথাও আমার কোনো পথ নেই,কোথাও শান্তি নেই,অপমানের শেষ নেই,দুঃখের কমতি নেই এই সব চিন্তা এক মুহুর্তেই মিথ্যা হয়ে গেল।আমার আছে অনন্ত আকাশ।আমাকে কেউ বেদনা,অপমান,অন্যায়ের মধ্যে বন্দি করে রাখতে পারে এমন শক্তি বিশ্বব্রহ্মান্ডের কোনো রাজা মহারাজার নেই।"আমার কঠিন হৃদয়টারে ফেলে দিলেম পথের পাশেতোমার চরন দেবে তারে মধুর পরশ পাষান ঢালাআমার অভিমানের বদলে আজ নেব তোমার মালাআজ নিশিশেষে শেষ করে দিই চোখের জলের পালা।"
false
rg
বইমেলার ডায়েরি (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) !!! রেজা ঘটক ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বৃহস্পতিবার। আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিন। দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলার ১৯ দিন দেখতে দেখতে চলে গেল। আর মাত্র ৯ দিন আছে বইমেলা। আজ বইমেলায় প্রচুর বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল। গত রাতে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় মেলার মাঠে অনেক বই বৃষ্টিতে ভিজেছে। অনেকে রাতে আবার বইমেলার মাঠে গিয়ে বৃষ্টির হাত থেকে বই রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। যারা ফাল্গুনের ঝড়-বৃষ্টিকে তোয়াক্কা করেননি, তাদের যা একটু ক্ষতি হয়েছে। এবার হয়তো প্রকাশকরা মেলা শেষে স্টল বন্ধ করার সময় ঝড়-বৃষ্টিকে আরো কলকে দিয়ে মনে রাখবেন। আজকের আবহাওয়া ছিল চমৎকার রোমান্তিক। সন্ধ্যায় বইমেলা খুব জমে উঠেছিল। কপোত কপোতি, প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলরা দল বেধে মেলায় ঘুরেছে। অনেকে বই কিনেছে। অনেকে গাল-গপ্প করে সময় কাটিয়েছে। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে মেলায় গিয়েছে। অনেকে নতুন বই দেখতে গিয়েছে। অনেকে নিজের বইয়ের বাজার যাচাই করেছে। এক প্রবাসী কবি তো বিভিন্ন স্টলে স্টলে নিজের বই খোঁজাতে লোক ভাড়া করেছিলেন। তারা দল বেধে প্রত্যেক স্টলে গিয়ে সেই কবি'র কি কি বই আছে, তা খোঁজ খবর করেছেন। ফলে ওইসব স্টলে সেই কবি'র নামটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। বেশ চমৎকার বইয়ের মার্কেটিং। অনেকে মেলার গেটে নিজেদের বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন। যাতে পাঠকরা তাদের বই সহজে খুঁজে নিতে পারেন। আজ বইমেলায় গেছি বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আর থেকেছি একেবারে মেলায় ছুটির ঘণ্টা পড়া পর্যন্ত। মেলায় এসেছে কবি বিদ্রোহী কৃষকের কবিতার বই 'পাইপ'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। প্রকাশ করেছে ‘শব্দ প্রকাশ’। কৃষক বলছিল, ইচ্ছে ছিল একটা বড় পাইপের মধ্যে একজন একজন করে ঢুকবে আর আমার বই হাতে বের হবে। তারপর নতুন বই নিয়ে বন্ধুরা আড্ডা দেব। এভাবে আমার বইটার মোড়ক উন্মোচন বা পাঠ উন্মোচন হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বড় পাইপ এলাউ করবে কিনা, তাই ভেবে ভেবে শেষে এই চিন্তা বাদ দিয়েছি। বইয়ের আরেকটি চমৎকার মার্কেটিং আইডিয়ার কথা আজ আড্ডায় বলছিল কামু আর পদ্ম। বাঁশের লাঠিতে ভর দিয়ে গোটা মেলায় একটা লোক হাঁটবে। যার বুকে আর পিঠে বইয়ের বিজ্ঞাপন বা ছবি থাকবে। লোকটি শুধু মেলায় হাঁটবে। আর তার বুক ও পিঠে বইয়ের খবর দেখে সবাই স্টলে গিয়ে সেই বইটি কিনবে। বইয়ের মার্কেটিংয়ের পক্ষেই সবার মতামত ছিল। বিকালে একাডেমির মূল মঞ্চে দেখলাম, এক মহিলা আলোচক ইংরেজি লেকচার দিচ্ছেন। ক্লাস ফাইভ সিক্সে পড়ার সময় ছেলেমেয়েরা যেমন খুটিয়ে খুটিয়ে ইংরেজি পড়ে, তেমন একটা সারল্য নিয়ে তিনি লিখিত বক্তৃতা আমতা আমতা করে বকবক করছেন। বক্তার সামনের সারি সারি ফাঁকা চেয়ার চুপচাপ তা শুনছে। সেই শব্দের মধ্যেই একাডেমির কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেল থেকে একটি প্রাপ্তি সংবাদ প্রচার করা হল। আমাদের আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যদের কারো একজনের একটি আইডি কার্ড বইমেলার মাঠে পাওয়া গেছে। উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে আইডি কার্ডটি বাংলা একাডেমি'র নিরাপত্তা সেল থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বইমেলায় আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে আমাদের প্রকাশকদের উচিত প্রতিবছরই তাদের একটি বা দুইটি করে বই উপহার দেওয়া। যা আমাদের আগ্রহী পুলিশ বন্ধুদের বই পড়ায় নতুন ধরনের উৎসাহ যোগাবে। তারাও তখন দু-একটি বই কিনবে। আমাদের পুলিশ যদি বই পড়ে, সেটা দেখলে আমাদের ভালো লাগবে। একাডেমি চত্বরে দেখলাম, আমাদের পুলিশ বিভাগের যারা লেখক আছেন, তাদের লেখা বই নিয়ে একটি স্টল আছে এবার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওই স্টলটি বেশ সমৃদ্ধ। ভ্রমণকাহিনী লেখক মোসলেউদ্দিন আমার বেশ প্রিয় একজন লেখক। আমাদের পুলিশের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তাদের জীবনে নানান অভিজ্ঞতার গল্প জমে। সেসব গল্প যদি তারা লেখেন, আর তা বই আকারে প্রকাশ পায়, তাহলে সেই সাহিত্য আমাদের সামষ্টিক সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক শুভ ফল বয়ে আনবে। বইমেলায় আজ শুধু আড্ডা হয়েছে। কোনো বই বিক্রি করতে পারিনি। তবু ধীরে ধীরে এই আড্ডার দিন কমে আসছে মনে পড়তেই, ক্ষণে ক্ষণে হৃদয়ের গভীরে একটা হাহাকার বা শূন্যতা ঝাপটা মেরে গেছে। আবার এক বছরের অপেক্ষার পর বইমেলা। কেমন দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যাচ্ছে বইমেলা। অথচ এখনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়নি, আড্ডা হয়নি। রোদেলা প্রকাশনীর পর আজ অমর একুশে বইমেলায় হেফাজতে ইসলামের চোখ রাঙানি ছিল তসলিমা নাসরিনের বইয়ের দিকে। আগামী প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে তসলিমা নাসরিনের উপন্যাস সমগ্র। হেফাজতে ইসলাম তসলিমা নাসরিনের সেই বই নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য বাংলা একাডেমি এখন পর্যন্ত তাদের সেই দাবিতে সাড়া দেয়নি। অথচ সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে মেলা থেকে রোদেলা প্রকাশনী বিতর্কিত বইটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও তার উপর বাংলা একাডেমির নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবত আছে। আর আগামী প্রকাশনী বড় প্রকাশনা হওয়ায় এবং গণি ভাই (ওসমান গণি) জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি হওয়ায়, হেফাজতের দাবিকে স্বয়ং আগামী প্রকাশনী তেমন কোনো পাত্তা দেয়নি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, রোদেলা প্রকাশনী অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশনা এবং নিরীহ হওয়ায়, বাংলা একাডেমি কত সহজে তা আমলে নিয়ে সাজার ব্যবস্থা করেছে।এভাবে হেফাজতের দাবি মানতে গিয়ে বাংলা একাডেমি একদিকে ধর্মান্ধ গোষ্ঠির অযৌক্তিক দাবির প্রতি নতি স্বীকার করেছে। যা নতুন করে সেই গোষ্ঠিকে আবার তসলিমা নাসরিনের বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহী করেছে। এমন কি ভবিষ্যতে আরো প্রগতিশীল লেখকদের বিভিন্ন রচনাকে নিষিদ্ধ করার দিকে যে হেফাজতের নজরদারি চলছে, তা সুস্পষ্ট ভাবেই বোঝা গেল। যা মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। বাংলা একাডেমি যত শিঘ্র সম্ভব রোদেলা প্রকাশনীর স্টুল খুলে দেবে, তত দ্রুত বইপ্রেমীরা রোদেলা থেকে প্রকাশিত অন্যান্য প্রিয় লেখকদের বই কেনার সুযোগ পাবে। রোদেলা প্রকাশনীর উপর বাংলা একাডেমির নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকায় অন্তত কুঁড়িটি পরিবার, যারা সরাসরি নানাভাবে নানান কর্মযজ্ঞে এই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া এই প্রকাশনার সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মজীবী যেমন বাইন্ডার ও পেস্টারগণ অনেক অর্ডার কাজের প্রাপ্ত অর্থ থেকে বঞ্চিত হলেন। যা তাদের জীবনযাত্রায় ব্যয়ে আগামীতে নানাভাবে প্রভাব ফেলবে। আজ বইমেলায় যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে তারা হলেন- কবি কামরুজ্জামান কামু, শিল্পী পদ্ম, কবি কবির হুমায়ুন, কবি সাফি সমুদ্র, কবি কাজী টিটো, শিল্পী চারু পিন্টু, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি বিদ্রোহী কৃষক, কবি নীলসাধু, লেখক ও গবেষক জয়শ্রী বীথি, সিফটি, কবি সরসিজ আলীম, বন্ধু নির্মাতা মেহিদী হাসান, কবি জেবুননাহার জনি, শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য, কবি তানিম কবির, পুঁথি কবি কাব্য কামরুল, ত্রয়ী প্রকাশনের প্রকাশক মাধবদা, জাগৃতি প্রকাশনের প্রকাশক দীপন ভাই, শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবীন আহসান, ছায়াবীথি'র প্রকাশক জাহাঙ্গীর আলম সূজন, কবি ও নির্মাতা ঈয়ন, কবি জ্যোতির্য়য় চক্রবর্তী, কবি সোহেল হাসান গালিব প্রমুখ। বইমেলা থেকে বের হবার আগে শ্রাবণের প্রকাশক বন্ধু রবীন গরম গরম পিয়াজু-পুরি আর দিনাজপুরের লাড্ডু খাওয়ালো। আবার মেলা শেষে বন্ধু কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর সহ ধ্রুবদার বাসায় যাবার পর, ধ্রুবদা খাওয়ালেন রসের মিষ্টি আর চা। ধ্রুবদার বাসা থেকে ফেরার পথে বাকি ভাই দিলেন আরেক চমক। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনের পাশে বাকি ভাই আয়োজন করেছেন গরম গরম খিচুরি খাবার ব্যবস্থা। পছন্দের কবি-সাহিত্যিক-প্রকাশক বন্ধুদের ফোন করে এনে গরম খিচুরি খাওয়াচ্ছেন। বাকি ভাইয়ের এই খিচুরি প্রকল্পের ব্যাপার নিয়ে একটা মজার গল্পের আইডিয়া সেই আলো অন্ধকার ঘোর লাগা সময় থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শিঘ্রই সেই গল্পটি লিখে ফেলব। তার আগে বন্ধুদের বলে রাখি, আগামীকাল ফেব্রুয়ারির তৃতীয় শুক্রবার বইমেলা শুরু হবে সকাল এগারোটায় আর শেষ হবে রাত সাড়ে আটটায়। আর সকালে মেলায় আসবে আমার লেখা 'বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী মুজিব দ্য গ্রেট' বইটি। বইটি প্রকাশ করেছে ত্রয়ী প্রকাশন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় স্টল নং ১৩৯-১৪০। ...................................২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ঢাকা
false
rn
জীবন যাপন সেদিন দীপন বলল- দোস্ত, সব অফিসে একটা করে শুয়োরের বাচ্চা থাকে। থাকবেই। এইসব শুয়োরের বাচ্চা গুলা মানুষ না অমানুষ। আমার বন্ধু দীপন একটা বেসরকারী ব্যাংকে চাকরী করে। বিয়ে করেছে চার বছর আগে। খুব ভদ্র ছেলে। কথাও বলেও খুব সুন্দর করে। প্রতি শুক্রবার দীপনের সাথে আমার দেখা হয়- রেল লাইনের সামনে একটা চায়ের দোকানে। আমরা বিকেল থেকে রাত আট টা পর্যন্ত নানান বিষয় নিয়ে গল্প করি। দীপন সহজ সরল ভালো ছেলে। প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে। যে যা বলে তাই-ই করে। অফিসের সময় পার হয়ে গেলেও অন্যদের নানান কাজ করে দেয়। এদিকে তাঁর বউ সারাদিন বাসায় একা থাকে। অপেক্ষায় থাকে কখন তাঁর স্বামী ফিরবে। বিকেল পাঁচটা বাজলেই বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু তাঁর স্বামী বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা দশটা বাজায়। দীপন বাসায় ফিরলে বউ জিজ্জেস করে এত দেরী কেন? দীপন মিথ্যা করে বলে- অফিসে অনেক কাজ। বউ বলে অফিস তো পাঁচ টায় ছুটি হয়। আর এখন তো রাত দশটা বাজে। দীপন তো আর বলতে পারে না- সিনিয়র কলিগ মোস্তফা তাকে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর ব্যাক্তিগত কাজে। আর তাঁর সাথে না গেলে হয়তো তাঁর চাকরী চলে যাবে। চেয়ারম্যান স্যারের সাথে মোস্তফা সাহেবের অন্তরঙ্গতা খুব বেশি। অফিস নিয়মিত পাঁচ টায় ছুটি হলেও দীপনকে বাসায় ফিরতে হয় রাত নয়টা দশটায়। এটা মাসে কম করে হলেও পনের থেকে বিশ দিন। যে শুয়োরের বাচ্চা ( দীপনের ভাষায়) জানে দীপনের বউ একা বাসায় থাকে। অপেক্ষায় থাকে তাঁর স্বামীর। তারপরও কেন নিজের ব্যাক্তিগত কাজে দীপনকে নিয়ে যায়? যতসব ফালতু কাজে। আসলে আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে- তারা বাইরে সবার কাছে মহৎ সাজতে চায়। সৎ সাজতে চায়। সত্যিকার অর্থে তাদের মন মানসিকতা ভয়াবহ নোংরা। আমি নিজেই এই রকম অনেক মানুষ দেখেছি। ফেসবুকে কবিতা লিখে, দারুন সব স্ট্যাটাস দেয়। ঘরে বউকে মেরে, বাইরে এসে নারী আন্দোলনের কথা বলে চিৎকার করে। ভিক্ষুককে পাঁচ টাকা ভিক্ষা দিয়ে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসে, মন খারাপের ভাব নিয়ে বলে, সেদিন এক ভিক্ষুককে দেখে খুব মন খারাপ হলো, পকেটে পাঁচ শো টাকা ছিল। দিয়ে দিলাম। বেচারির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল- ইনহিলাম কেনার জন্য পাঁচ শো টাকা দিয়ে দিলাম। আমি আমার বন্ধু দীপনকে বুঝাই- এই সমাজে বাঁচতে হলে শুয়োর হয়ে বাঁচাই ভালো। সুন্দর ভাবে বাঁচতে হলে শুয়োর হয়ে যা। ভালো মানুষের ভাত নেই। প্রচুর মিথ্যা বলবি প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে। মুহূর্তের মধ্যে চোখ পাল্টি নিবি। একটু আগে যার সাথে বসে চা খাবি, গল্প করবি একটু পরেই তাঁর বুকে ছুরি বসিয়ে দিবি। তাহলেই এই সমাজে ভালো থাকতে পারবি। সহজ সরল সত্য কথা হলো, আমরা কেউ ভালো নেই। শুধু ভালো থাকার অভিনয় করি। আইয়ূব বাচ্চুর গানের কথাটা মনে পড়ে গেল- 'সুখের'ই অভিনয়, আসলে কেউ সুখি নয়।' আমার বন্ধু দীপনের কলিগ মোস্তফার মতো কিছু মহিলাও আছে, তাদের কথা বার্তা শুনলে যে কারো মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে। বাচ্চাকে ক্লাশে ঢুকিয়ে তারা আলাপে বসেন। তাদের কথা বার্তা শুনলে, তাদের রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। আজ একটু আগে দীপন আমাকে ফোনে জানাল, সে এই দেশে আর থাকবে না। কিছুতেই না। আমি মনে মনে বললাম- দীপনের আর তাঁর বউ এর মতোন মানুষ আমাদের দেশে থাকুক, শয়তান গুলো অন্য কোথাও চলে যাক। সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫১
false
rg
বন্ধুদের আমলনামা-৪ _ _ পুরোপুরি কানাডার নাগরিক প্রকাশ চন্দ্র মণ্ডল ।। রেজা ঘটক প্রকাশ আমার পাঠশালা থেকে বন্ধু। তারপর একসাথে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা। তারপর আমি ভর্তি হলাম অর্থনীতিতে অনার্স আর প্রকাশ সিটি কলেজে বি.কম. ভর্তি হল। বিকম শেষ করে প্রকাশ আবার সিএ ভর্তি হল। সিএ প্রিলিমিনারি শেষ করে আবার ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স শেষ করলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৯৬ সালের ঘটনা। আমার মাস্টার্স পরীক্ষা তখন শেষ। আমি, কমল, আমার কাজিন সালাউদ্দিন আল মামুন আর সাংবাদিক অভি চৌধুরী থাকি কাঁটাবন ঢালে এক ব্যাচেলর বাসায়। অভি চৌধুরীর আবার একজন এসিট্যান্ট আছে সুমন। সুমনও আমাদের সঙ্গে থাকে। তখন অভি চৌধুরীর সঙ্গে প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো সঞ্জীব চৌধুরী, কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল সহ অনেকেই। অভি ভাই বাসায় ঢুকলেই আমি কমল আর মামুন টিএসসিতে চলে যেতাম আড্ডা মারতে। কারণ, ওনারা তখন বাসায় নিজেদের মতো পান করবেন। আজিজ সুপার মার্কেটে অভি 'দার একটা ছোট্ট অফিস ছিল। সেই অফিসে বসতো হাসান। হাসানও ধীরে ধীরে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠলো। আমাদের বাসার পাশের বাসায় তখন থাকতেন লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভিন। আপাকে রোজ আমরা দেখতাম বাচ্চাদের স্কুল থেকে নিয়ে আসতে নিয়ে যেতে। আমাদের বাসার সামনে একটা চায়ের দোকান। তার ঠিক উল্টোপাশেই একটা মুদি দোকান। মুদি দোকানি'র বাড়ি চট্টগ্রাম। আমরা ডাকতাম বদ্দা। বদ্দাও আমাদের খুব ভালো জানতেন। একদিন রাতে চাল আর ডিম কেনার সময় বদ্দা জানতে চাইলেন, আপনাদের মধ্যে কেউ কি একাউন্টিংয়ে মাস্টার্স করা আছে? জানতে চাইলাম কেন? বদ্দা বললেন, দুবাইতে তার শ্যালক শাহজাহান থাকেন। বদ্দাও সেখানে ৩৮ বছর ছিলেন। তো শাহজাহান সাহেব আগামী মাসে দেশে আসবেন। সঙ্গে কিছু ভিসা আনবেন। শাহজাহান সাহেবের নিজের অফিসে একাউন্টিংয়ে পারদর্শী একটা ভালো ছেলে লাগবে। চাল ডিম নিয়ে বদ্দাকে বললাম, কাল জানাব। প্রকাশ তখন চাকরি করে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে নোরাডের অর্থায়নে একটি এনজিওতে। সেখানে প্রকাশের কলিগ ফয়েজ নূর আর লেনীনও আমাদের বন্ধু। আমি তখনো বেকার। তাই প্রায়ই প্রকাশের ইকবাল রোডের মাঠের পাশের সেই অফিসে গিয়ে আড্ডা পিটাই। বিশেষ করে ফয়েজ নূর তো আমার তখন রীতিমত বস। ডেইলি সন্ধ্যায় বিয়ার খায় ফয়েজ নূর। মাঝে মধ্যে আমারেও ডাকেন। এই ফাঁকে বলে রাখি আমিও ফয়েজ নূরের মতো বিয়ারের একনিষ্ঠ ভক্ত। আমার বন্ধু শ্যামল মিত্রও বিয়ারের ভক্ত। তো প্রায়ই আমরা লেনীন আর প্রকাশকে বাদ দিয়ে ফয়েজ নূর, শ্যামল আর আমার সান্ধ্য-বৈঠক হতো ফার্ম গেইটের হোটেল সালিমারে। প্রকাশকে সকালে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, দুবাই যাবি নাকি? বেতন ভালো দেবে। পরিচিত লোক। লাঞ্চের সময় লেনীন আর প্রকাশ আমাদের ব্যাচেলর কোয়ার্টারে হাজির। লেনীনের বক্তব্য, বস, আমারেও পাঠান। এই চাকরি আর ভালো লাগে না। ততোদিনে প্রকাশ, লেনীন আর ফয়েজ নূর কানাডায় ইমিগ্র্যান্টের জন্য আবেদন করেছে একসাথে। লেনীন ভাইভা'র জন্য সিঙ্গাপুর আর ফয়েজ নূর আর প্রকাশ দিল্লী অফিসে পছন্দ দিয়েছে। ওরা লেনীনের মামার মাধ্যমে একজন কানাডিয়ান আইন উপদেষ্টাও নিয়োগ করেছে। তাকে ওদের তিনজনের কানাডায় ইমিগ্র্যান্ট হয়ে গেলে তিন কিস্তিতে তিন হাজার করে মোট নয় হাজার কানাডিয়ান ডলার পে করতে হবে। ইমিগ্রেশান গতে দুই তিন বছর সময় লাগবে। প্রকাশকে বললাম, তুই দুবাই গিয়ে ইন দ্য মিন টাইম এই টাকাটা আয় করে নিয়ে আয়। তাহলে আমি, বন্ধু মামুন আর শ্যামলও আবেদন করতে পারবো। প্রকাশ বিনাবাক্যে রাজী হল। এর মধ্যে বদ্দা'র শ্যালক শাহজাহান সাহেব দেশে আসলেন। প্রকাশের পাসপোর্ট দেখলেন। ঠিক হল আপাততঃ ৩৫ হাজার টাকা বেতন দেবেন। ছয় মাস পরে ৪৫ হাজার দেওয়া যাবে। শুরু হল আমার আর প্রকাশের দৌড় ছাপ। সোনারগাঁও রোডে এক টাইলসের দোকানে শাহজাহান সাহেবের এক প্রতিনিধি প্রকাশের ভিসা আর কাগজপত্র সব ঠিক করে দেবেন। ইতোমধ্যে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশের কাগজপত্র সত্যায়িত করাতে গেলাম। সেখান থেকে বলা হল আগে কাউকে দিয়ে সত্যায়িত করাতে হবে। সময় বাঁচাতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ডিপার্টমেন্টে ঢু মারলাম। ইকোনমিক্সের নাসরিন ম্যাডামকে সামনে পেয়ে বললাম, ম্যাডাম, আমার বন্ধুর সার্টিফিকেট গুলো একটু সত্যায়িত করে দেন। আপা কেমুন মুডে ছিলেন বুঝলাম না। বললেন, ইকোনমিক্স ছাড়া অন্য কোনো সাবজেক্টের সত্যায়িত তিনি করান না। আমরা কমার্স ফ্যাকাল্টিতে গেলাম। যে স্যারকে পাই, তিনি কোনো না কোন অজুহাত দেখান। মেইন সার্টিফিকেট সঙ্গে আছে। তা দেখে সত্যায়িত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেদিন ১৪ হাত দেখাল। শেষে মেজাজ খারাপ করে সিদ্ধান্ত নিলাম নীলক্ষেত গিয়ে নিজেরা সিল বানিয়ে নিজেরাই সত্যায়িত করে পররাষ্ট্র সন্ত্রণালয়ে যাব। ওই সময় ম্যানেজমেন্টের মান্নান স্যার কি মনে করে আমাদের কাঁর রুমে ডাকলেন। কাগজপত্র দেখলেন। কেন সত্যায়িত করতে হবে তা জানতে চাইলেন। আমরা সত্য কথাই বললাম। মান্নান স্যার বললেন, আমার ব্যাগে তো মনে হয় আমার সিল নেই। তোমরা কষ্ট করে ডিপার্টমেন্ট থেকে সিল মেরে নিও। আমি সত্যায়িত করে দিচ্ছি। মান্নান স্যারকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে আমরা ডিপার্টমেন্ট থেকে সিল মেরে আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলাম। তারা কাগজপত্র রেখে দিল। বললো, আড়াইটার পর আসেন। ওদিকে শাহজাহান ভাইয়ের প্রতিনিধি জানালেন আগামীকাল সবার ফ্লাইট। রাত আট টায়। রাত বারোটায় যেনো আমরা নাখালপাড়া এমপি হোস্টেলের গেইটে যাই। মুরাদ ভাই ভিসা আমাদের হাতে দিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দেবেন। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র নিয়ে গেলাম তেজগাঁও থানায়। পুলিশ সার্টিফিকেট নিতে। পাঁচশো টাকার বিনিময়ে মাগরিবের পর পুলিশ সার্টিফিকেট হাতে পেলাম। মামুন আর শ্যামল গেল বঙ্গবাজার। প্রকাশের জন্য কিছু জামা বাপড় কিনতে। প্রকাশরা পাঁচ ভাই। প্রকাশের বড় ভাই অজিত কুমার মণ্ডল লালবাগ কেমিক্যালের জিএম। দ্বিতীয় রনজিৎ মন্ডল গ্রামের বাড়ির ম্যানেজার। তিন নাম্বার জন রেবতী কুমার মন্ডল তখন আসাদে গেইটে হাজী মকবুলের অক্সফোর্ড কলেজে ইংরেজি পড়ায়। চার নাম্বার জন প্রভাস মন্ডল রাশিয়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্য আট বছর ধরে আছে তখন। একমাত্র বোন শোভা নাজিরপুরের পরিবার পরিকল্পনা অফিসার। মামুন আর শ্যামল কেনা কাটা শেষ করে অজিত মন্ডলের ইন্দিরা রোডের বাসায় ফিরলো। সেখানে গ্রাম থেকে রনজিৎ মন্ডল আর শোভা প্রকাশের মা সহ আগেই এসেছে। প্রকাশের বাবা আমার বাবার বাল্যবন্ধু। প্রকাশের বাবা মারা যায় আমরা যখন ক্লাশ টুতে পড়ি তখন। সেই থেকে প্রকাশদের পরিবারের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেন আমার বাবা। বলতে গেলে বাবাই প্রকাশদের তখন অভিভাবক। রনজিৎ মন্ডল আমাকে বাইরে ডেকে কইলো, ভাতিজা, দাদা তো তোমার উপর খুব রেগে আছেন। ভিসা না দেখে প্রকাশকে দুবাই যাবার অনুমতি দাদা দেবেন না বলে দিয়েছেন। রনজিৎ আর রেবতী আমার আর প্রকাশের সঙ্গে সিগারেট খায়। রেবতী তখন থাকে মিরপুর দশ নাম্বারে। রেবতীকে অজিত মন্ডল জরুরী তলোপ করেছেন প্রকাশের ভিসা কাগজপত্র চেক করার জন্য। পরিবারের কেউ প্রকাশকে দুবাই পাঠাতে রাজী নয়। কেবল রেবতী কইলো, ভালো না লাগলে চলে আসবি। যা দেখে আয়। কি হয়। আর রনজিৎ আমাকে কানে কানে বললো, পাঠাতে পারলে পাঠাও। ঢাকায় প্রকাশকে এতো টাকা কে দেবে শুনি? প্রকাশের মাকে আমি ডাকি দিদি। দিদি বললো, আমি এসবের তো কিছু বুঝি না। তোরা কোন ঝামেলা বাধাইস কে জানে। অজিত তো রাজী না। যাক শেষ পর্যন্ত পরদিন সন্ধ্যায় অজিত মন্ডল একটু নরম হল। রেবতী'র দুতিয়ালীতে। এয়ারপোর্ট যাবার জন্য অফিস থেকে গাড়ি পাঠালেন। আর ঘোষণা দিলেন, তোমরা এয়ারপোর্ট যাও। আমি যাচ্ছি না। আর ওই বান্দরটারে আটকাই রাখো। আগামীকাল আবার এয়ারপোর্ট থেকে প্রকাশকে যেনো রিসিফ করে। তখন শোভা পিসি'র হুংকারে কাজ হল। আমরা সবাই প্রকাশকে নিয়ে এয়ারপোর্টে গেলাম। সেখানে অনেক কান্নাকাটি হল। ইমিগ্রেশান হবার পর অজিত কাকু আর আমি তার পরিচিত লোকের মাধ্যমে প্রকাশের ইমিগ্র্যান্ট পর্যন্ত গেলাম। প্রকাশকে বিদায় দিয়ে আমরা সংসদ ভবনের পূর্ব পাশে আমাদের একটা আড্ডার জায়গায় আড্ডা দিতে লাগলাম। রাতে অজিত মন্ডলের বাসায় সবাইকে থাকতে হবে। বিশেষ করে আমাদের তিনজনের। শ্যামল, মামুন আর আমার। আমরা রনজিৎকে বললাম, কাগু তোমরা যাও, আমরা আড্ডা শেষে খাবার সময় ফিরবো। সংসদ ভবনের পূর্ব পাশে আমাদের তিন বন্ধুর তখন একটি এডিটিং প‌্যানেল ছিল। নাম সাউন্ড এ্যান্ড ভিশন। রফিক, শাহেদ আর ইফতেখার ডন সেই এডিটিং প‌্যানেলের মালিক। আমরা ডনদের সঙ্গে রাত এগারোটা পর্যন্ত আড্ডা মারলাম। তারপর অজিত বাবুর ইন্দিরা রোডের বাসায় গেলাম। কথা ছিল প্রকাশ দুবাই পৌঁছে এয়ারপোর্ট থেকে ফোন করবে। বিমানের হিসাব সৌদি এয়ার লাইন্সের হিসেব অনুযায়ী, রাত আড়াইটা তিনটার দিকে প্রকাশ ফোন করবে ল্যান্ড ফোনে। আমরা ফোন সামনে নিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছি। প্রকাশের ফোন আসে না। রাত যতো বাড়ে আমার আর রনজিৎকে ততোই ক্ষেপানো শুরু করলো রেবতী, শ্যামল আর মামুন। কারণ, ওরা সবাই এখন রনজিৎ আর আমাকে বানালো প্রকাশের দুবাই যাবার জন্য একমাত্র সমর্থক। সকাল নাগাদ সবাই অজিত মন্ডলের দলে ভিড়লো। রনজিৎ মন্ডল আর আমি তখন বাসা থেকে পালানোর পথ খুঁজতে লাগলাম। সকাল সাড়ে ছয়টায় অজিত মন্ডল অফিসে যাবার সময় মুনমুনের মা (অজিত মন্ডলের স্ত্রী)কে বললেন, রেজা আর রনজিৎরে এয়ারপোর্ট গিয়ে প্রকাশের খবর নিতে বলো। তখনকার দিনে রাম শ্যাম যদু মধু সবার হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। কেবল এক্সিকিউটিবদের হাতেই থাকতো মোবাইল ফোন। অজিত মন্ডল তেজগাঁও লালবাগ কেমিক্যালের অফিসে ঢোকার মুহূর্তে তার মোবাইল বেজে উঠল। বাইরের কোড দেখে খুব আতংকিত ভাবেই অজিত মন্ডল ফোন রিসিপ করলেন। ওপাশে প্রকাশ। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে- হ্যালো, দাদা। আমি পৌঁছাইছি। অফিসের গাড়ি এসেছে আমাকে নিতে। ওরা জানালো, আমার থাকার জায়গা ওেরা ঠিক করেছে। আপাতত এক ইন্ডিয়ান মিস্টার রোনাল্ডের সঙ্গে আমার থাকতে হবে। আগামী মাসে আমার আলাদা রুম হয়ে যাবে। বাসার ফোনে চেষ্টা করেও লাইন পাচ্ছিলাম না। কলম্বো এয়ারপোর্টে আমাদের ফ্লাইট তিন ঘণ্টা লেইট ছিল। পরে একটি কুয়েত এয়ারওয়েজের বিমানে আমাদের দুবাই যাবার ব্যবস্থা করেছে। যে কারণে আমি আর ফোন করার সুযোগও পাইনি। মাকে জানাও। যেনো টেনশান না করে। আর রেজা, শ্যামল, মামুন ওরা যেনো মা যতোদিন ঢাকায় থাকে একটু মাকে সময় দেয়। সাড়ে সাতটায় অজিত মন্ডল বাসায় ফোন করলেন। মুনমুনের মা আমাকে ডেকে বললেন, তোমার কাকু ফোন করেছে। আমি ভয়ে ভয়ে রিসিভার কানে ধরলাম। কাকু বললেন, প্রকাশ ফোন করেছিল। ল্যান্ড ফোনে ট্রাই করে পায় নাই। পরে আমার মোবাইলে করেছিল। ভালো ভাবে পৌঁছেছে। প্রকাশের থাকার ব্যবস্থাও ফাইনাল হয়েছে। রোনাল্ড নামে এক ইন্ডিয়ানের সঙ্গে এখন এক রুমে থাকবে। আগামী মাসে আলাদা রুম পাবে। আগামীকাল অফিসে জয়েন করবে। তোমরা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে যেও। আর শোনো, বৃহস্পতিবার চলো, কুমিল্লা মাছ ধরতে যাচ্ছি। অনেক বড় পুকুর। আমরা মাইক্রো নিয়ে যাবো। এক হাজার টাকা টিকেট। তুমি, মামুন আর শ্যামল গেলে খুব এনজয় করবা। শুনেছি. অনেক বড় বড় মাছ আছে ওই পুকুরে। ছয় মাস পর প্রকাশ ঈদের ছুটিতে দেশে আসলো। প্রকাশের মালিক প্রকাশকে বাংলাদেশী টাকায় ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার খরচ। আর বাংলাদেশে আসা যাওয়ার এয়ার টিকেট। আসার সময় প্রকাশ আমাদের জন্য আবদুল্লাহ সিগারেট, বিয়ার, ব্রান্ডি, বন্ধুদের সবার জন্য রিস্ট-ওয়াচ, আর গান শোনার জন্যে বিশাল সাইজের একটা ডিভিডি প্লেয়ার নিয়ে এল। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...। এক মাস ছুটি কাটিয়ে প্রকাশ আবার দেশে আসলো। তখন প্রকাশের কানাডা ইমিগ্র্যান্টের ভাইভার জন্য দিল্লী যেতে হবে। আমরা কানাডিয়ান সেই আইন উপদেষ্টাকে অনুরোধ করে দিল্লীর পরিবর্তে কলকাতা বানালাম ভেনু। প্রকাশ কলকাতা গেল ভাইভা দিতে। সঙ্গে গেল শ্যামল। ফয়েজ নূরকে পরিবার সহ যেতে হল। ফয়েজ নূর আর প্রকাশ দু'জনেরই কানাডায় ইমিগ্র্যান্ট হয়ে গেল। আমরা সবাই খুশি। লেনীনকে যেতে হল সিঙ্গাপুর। লেনীনেরও হয়ে গেল। সবার আগে কানাডা গেল ফয়েজ নূর। গিয়ে ওখানের অবস্থা সব জানালো আমাদের। তারপর প্রকাশ গেল। তারপর প্রায় এক বছর বা নয় মাস পর লেনীন গেল। পরে লেনীন অবশ্য কানাডায় আর থাকেনি। তিন বছর থাকার পর লেনীন আমেরিকা সেটেলড হয়েছে। আর ফয়েজ নূর আর প্রকাশ টরেন্টোতে সেটেলড হয়েছে। কানাডায় যাবার আগে প্রকাশ আর অজিত মন্ডলের সম্পর্কের অবনতি ঘটল। আমরা বন্ধুরা একটা উদ্দ্যোগ নিলাম। অজিত মন্ডল পাত্তা দিলেন না। অজিত মন্ডলের ছোটবেলার শিক্ষক ফনি মাস্টার। ফনি বাবু কলকাতায় থাকেন। ফনি বাবু অজিত বাবু খুব শ্রদ্ধা ভক্তি করেন। আমরা বুদ্ধি পাকালাম ফনি বাবুকে ঢাকায় নিয়ে আসার। ফনি বাবু ঢাকায় আসলেন, রনজিৎ মন্ডল, প্রকাশের মা সবাই ঢাকায় আসলেন। অজিত মন্ডলের ইন্দিরা রোডের বাসায় বিশাল মিটিং। অজিত মন্ডল আমাদের প্রস্তাব মানলেন না। আমরা মিটিং থেকে বেরিয়ে প্রকাশকে কানাডায় দ্রুত পাঠানোর জন্য উদ্দ্যোগ নিলাম। আমাদের সাত বন্ধ'র একটা সমিতি ছিল। আমার নামের টাকা পয়সা প্রকাশ জমা দিত। আমি, প্রকাশ, শ্যামল, মামুন, হেলাল, বনা আর উমাদি মিলে সেই সমিতি। আমরা সমিতিতে জমা হওয়া ৪০ হাজার টাকা প্রকাশের জন্য খরচ করলাম। আমাদের এক বন্ধু শিউলি কানাডায় যাবে। শিউলি'রও ইমিগ্র্যান্ট হয়ে গেছে। শিউলি'র হাজব্যান্ড ওন্টারিও থাকে। ঠিক হল প্রকাশ আর শিউলি একসঙ্গে ফ্লাই করবে। শিউলি আমাকে টাকা দিল বিমান টিকেট করার জন্য। প্রকাশ আর শিউলি'র পাসপোর্ট নিয়ে ধানমন্ডির বেল টাওয়ারে গেলাম। সেখানে আমাদের বন্ধু শিমুলের আরেক বন্ধু ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এজেন্ট। টিকিট বুকিং দিলাম দুইটা। ৩ অক্টোবর ১৯৯৭। টাকা দিলাম একটার নগদ। প্রকাশের টিকেটের টাকা পরিশোধ। শিউলি'র টা বাকী। পরদিন শিউলিকে গ্রিন রোডের ভোজন বিলাসে নাস্তা খেতে বললাম, শিউলি এই নাও তোমার পাসপোর্ট। আর একটা ভুল হয়ে গেছে। প্রকাশের টিকেটের টাকা পরিশোধ হয়েছে। তোমারটি বাকী আছে। কালকের মধ্যে টাকা দিতে হবে। শিউলি'র মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। প্রকাশ আর আমি বুঝালাম যে, ভুলটা আমি করেছি। এখন তুমি আবার টাকা ম্যানেজ করে দাও। শিউলি খুব রাগ হল। বললো, একথা পিন্টুকে জানানো যাবে না। পিন্টু শিউলি'র স্বামী। পরে শিউলির সোনার গহনা বিক্রি করে শিউলির বিমানের টিকেটের টাকা জোগার করা হয়েছিল। কারণ, বিষয়টা শিউলি আর পরিবারের কাউকে জানাতে চায়নি। শিউলি আর প্রকাশ ঢাকা থেকে ৩ অক্টোবর ১৯৯৭ একসঙ্গে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানে ফ্লাই করেছিল। কানাডা যাবার পর শিউলি আর একবারের জন্যও আমাকে হ্যালো বলেনি। হয়তো প্রকাশের জন্য করা আমার সেই অপরাধের কথা সে এখনো মনে রেখেছে। যাবার আগের দিন প্রকাশের যাবতীয় জিনিসপত্র আমরা মিরপুর দশ নাম্বারে রেবতীর বাসায় জড়ো করলাম। প্রকাশের মা রেবতীর বাসায় উঠলেন। অজিত মন্ডলের বউকে আমি ডাকি কাকী। কাকীকে আমি একটা অনুরোধ করলাম। প্রকাশ যাবার আগে আপনি আমার শেখানো একটা উদ্ধোগ নেবেন। না পারলে প্রকাশ আর অজিত মন্ডলের সম্পর্ক তখনই শেষ। বিকালে কাকী মুনমুন আর মুমুকে নিয়ে (অজিত মন্ডলের দুই মেয়ে) রেবতীর বাসায় যাবে। আমরা তখন থাকবো টিএসসিতে। প্রকাশের শেষ আড্ডা বন্ধুদের সঙ্গে। আমার শেখানো বুদ্ধিতে মুনমুনের মা রেবতীর বাসা থেকে ফেরার পথে প্রকাশের সব জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে ইন্দিরা রোডের বাসায় আসল। আমরা রাতে সবাই প্রকাশকে নিয়ে গ্রিন কর্নারে শ্যামলদের বাসায় থাকবো। রাত এগারোটায় প্রকাশ আর আমি গেলাম মিরপুর রেবতীর বাসায় আরো কিছু জিনিস রাখতে। গিয়ে প্রকাশের মাথা নষ্ট। মুনমুনের মা সকল লাগেজ নিয়ে গেছে। রেবতী, রেবতীর বউ সোমা, আর প্রকাশের মায়ের উপর প্রকাশ ক্ষোভ ঝাড়লো। আমি রেবতীকে বললাম, ভিসার কাগজপত্র কই? রেবতী আলমারী খুলে আমার হাতে ফাইল দিল। বললাম, এটাও এখন মুনমুনের মায়ের কাছে দিয়া আসব। আসল জিনিস তো সে নেয় নাই। প্রকাশের পাসপোর্ট, টিকেট, ভিসা, সনদ সব ওই ফাইলে। রেবতী বললো, সাবধানে যাও। গিয়া আমারে জানাও। পথে কি একটু রিক্স হবে? আমি বললাম, লোকাল বাসে যাবো। বোনো অসুবিধা হবে না। তারপর প্রকাশের উপর আমি চড়াও হলাম। প্রকাশের মাকে বললাম, দিদি তুমি জীবিত থাকতে দুই পোলার ঝামেলা মেটাতে পারলা না। এখন আমি কি করি দেখো? প্রকাশকে বললাম, এই তোর সব কাগজপত্রের ফাইল। এটা আমি মুনমুনের মায়ের কাছে দিতে যাচ্ছি। তুই আমার কথা না শুনলে তোর কানাডা যাওয়া আর হবে না। আর আমি তোর সবকিছু নষ্ট করে ফেলব। আমার অমন অভিনয় বন্ধু আমার কোনো দিন দেখেনি। একটু ভরকে গেল। আমার পেছন পেছন প্রকাশও আসল। ইন্দিরা রোডে এসে মুনমুনের মায়ের হাতে ফাইল দিয়ে বললাম, সিংহ মশাইয়ের মেয়ে, আসল ফাইল না নিয়া অভিযান করেছেন। নেন এটা। কাজগপত্র যেনো কেউ না উল্টায়। আর অজিত কাকুকে একটু ইমিগ্র্যান্ট কাগজটা দেখাবেন। আর স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পনের পর বললাম, প্রকাশের তিন হাজার ডলার লাগবে। ডলার না হলেও ওকে আমরা পাঠিয়ে দেব। গেলাম। মুনমুনের মা গেইটের বাইরে এসে প্রকাশকে নিয়ে রাতে খেয়ে যাবার অনুরোধ করলেন। আমরা শ্যামলের বাসায় রিক্সা নিলাম। সকালে মুনমুনের মায়ের ফোন। আমাদের সকল প্রস্তাব অজিত মন্ডলের সংসদে পাস হয়েছে। আমরা যেনো সকালের নাস্তা করতে ইন্দিরা রোডে যাই। আর আমি যেনো অজিত কাকুকে একটা ফোন করি। আমরা হৈ হৈ করে উঠলাম। শ্যামলের বউদিও খুব খুশি। আমরা সবাই মিলে ইন্দিরা রোডে আসলাম। প্রকাশ আর মামুনেক লাগেজ গোছানোর দায়িত্ব দিয়ে আমি আর শ্যামল অজিত কাকুর তেজগাঁও অফিসে গেলাম। আমাদের জন্য আরো সুখবর। অজিত মন্ডল চার হাজার ইউএস ডলার রেডি করেছেন। আমরা ডলার নিয়ে কাকুকে বললাম, চারটার মধ্যে আপনি বাসায় আসবেন। কাকু বললেন, ডন, রফিক, শাহেদ ওদেরও দুপুরে বাসায় ডাকো তোমরা। আর আমাদের বন্ধু খোকন অজিত মন্ডলের অফিসের একাউন্ট্যান্ট। কাকু বললেন, খোকনকে লাঞ্চের আগে পাঠিয়ে দেব। সন্ধ্যায় আমরা চার গাড়ি আর এক কারে করে সবাই এয়ারপোর্ট গেলাম। রাত আটটায় প্রকাশ আর শিউলি ঢাকা ত্যাগ করলো। ২০০৩ সালে প্রকাশ দেশে ফিরে বিয়ে করলো। প্রকাশের বউয়ের নাম টপি সাহা। রাজবাড়ির মেয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স। প্রকাশ-টপি'র এক ছেলে। ছেলের নাম নীল প্রকাশ। নীলের বয়স এখন সাত বছর। এ বছর প্রকাশ ঢাকায় এসেছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। আমি ব্যস্ত ছিলাম আমার চতুর্থ গল্পগ্রন্থ 'ভূমিপুত্র' প্রকাশনা নিয়ে। বন্ধু আমার ফোনে কথা বললো। দেখা করার সময় পেল না। আমার বাসায়ও আসলো না। আমাকেও বাসায় যেতে বললো না। আহা বন্ধু আমার। মাত্র ১৪ বছরে এভাবে কানাডিয়ান হয়ে গেলি। আর আগে বাথরুমেও একসাথে যেতাম। একসাথে একই ঝর্নায় গোসল করতে দু'জনের কারোরই কোনো সমস্যা হতো না। আর এখন? দুনিয়া কি সত্যি এভাবে বদলে যায়? আমি বিশ্বাস করতে চাই না.... সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৫০
false
hm
কাবার্ডের ভেতরে কঙ্কালগুলো (এক) বয়স তো কম হলো না। ৭০-৮০ তো হবেই। কত পাপ করেছি এ জীবনে। প্রায়শ্চিত্তও করতে হবে। প্রায়শ্চিত্ত করতে বেরিয়ে পাপ করে এসেছি এমন ঘটনাও কম নয়। তাই ঠিক করেছি কাবার্ডের কিছু বাছাই করা কঙ্কালকে আলোবাতাস দেখাবো। এলোমেলো, হাতে যেটা ঠ্যাকে সেটা। প্রথম কঙ্কাল ছয়জন যাচ্ছি কক্সবাজার। ট্রেনে চিটাগং, সেখানে পতেঙ্গায় কিছুক্ষণ, তারপরে বিকালে কক্সবাজার পৌঁছাবো। সেদিন চিটাগঙে হাফবেলা হরতাল, বেশ নিরিবিলি হবে, আমরা রাতের ট্রেনে চেপে বসেছি। শীতের রাত, আমরা চারজন বামপাশে, আর দু'জন ডানে। হঠাৎ আমার চোখ গেলো সেই ডানপন্থী এক ভদ্রলোকের দিকে। তিনি ট্রেনের মনোরম ঝাঁকুনির তালে তালে ঢুলছেন, দুলছেন আর হঠাৎ চমকে চমকে জেগে এদিক ওদিক তাকিয়ে চেয়ারের পেছনে একটা খাপ আছে, সেখান থেকে পরম মমতায় একটা কমলা বার বার বার করে শুঁকছেন, নেড়েচেড়ে দেখছেন, তারপর আবার রেখে দিচ্ছেন। তারপর আবারও দোল দোল ঢুলুনি। কমলা হচ্ছে খোসা ছাড়িয়ে খেয়ে ফেলার জিনিস, আতরের মতো শোঁকার কিছু না, আমার উদ্ধত তরুণ চিত্ত আমাকে তেমনই জানালো। আমি আমার বন্ধু রাশেদকে বললাম, কমলাটা বার করে খেয়ে ফেল। রাশেদ আবার সম্পূরক কুবুদ্ধি দিলো, কমলার বর্তমান বাজার দর যাচাই করে একটা সিগারেট সেটার ক্ষতিপূরণ হিসেবে রেখে দেওয়ার। উত্তম প্রস্তাব। রাশেদ সিগারেট রেখে কমলা এনে সীটে বসেই খাওয়ার প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু কমলার আগ্রাসী ঘ্রাণ সম্পর্কে সাবধান করে দিলাম। দুটি কোয়া কনসালটেন্সি ফি দিয়ে সে চলে গেলো দূরে। পিছু পিছু আমার বন্ধু মুস্তাকিম আর সাদিক। যথারীতি সেই ভদ্রলোক চমকে জেগে উঠলেন, তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে হাত ঢোকালেন চেয়ারের ঝোলায়। তারপর রীতিমতো আঁতকে উঠে বার করলেন সিগারেটটা। তারপর সেটা হাতে নিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলেন, "আমার অরেঞ্জ? অরেঞ্জ কোথায় গেলো যে?" আমার মুখে তখন সদ্যভুক্ত কমলার সুঘ্রাণ। ভদ্রলোক নাকমুখ কুঁচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা আমাকেই পাকড়াও করলেন। আমার তখন বয়স কম, কাঁধ পর্যন্ত গজগজে চুল, মুখে অযত্নসম্ভূত দাড়িদুড়ি রেখে চে গেভারার একটা অপভ্রংশ হবার অপচেষ্টায় রত, কিন্তু তিনিও মুশকো রীতিমতো, আমার বিপ্লবী মুখচ্ছবিকে দুটাকা দামও দিলেন না। বললেন, "ব্রাদার, এইখানে যে অরেঞ্জ ছিলো, কোথায় গেলো?" রিপ ভ্যান উইঙ্কলের মতো আমি যেন জেগে উঠলাম বিশ বছর পর। বললাম, "জ্বি, আমাকে কিছু বলছেন?" এবার ভদ্রলোক চটে উঠলেন, কারণ বাতাসে তখনও ভেসে বেড়াচ্ছে কমলার গন্ধ। উৎস আমার মুখ। তিনি ফাক ইউ ভঙ্গিমায় সিগারেট উঁচিয়ে গর্জে উঠলেন, "এইখানে একটা অরেঞ্জ ছিলো। কে যেন নিয়ে গেছে, আর তার বদলে একটা সিগারেট রেখে গেছে! কে সে?" আমি খুবই দৃঢ়তার সাথে বললাম, "আচ্ছা!" এরই মধ্যে রাশেদ-মুস্তাকিম-সাদিক ফিরে এসেছে। গা দিয়ে ভকভক করে কমলার গন্ধ বেরোচ্ছে। অসভ্যের মতো কমলা খেয়েছে শালারা। ভদ্রলোক তড়পে উঠে ওদের ধরলেন। সেই একই জিজ্ঞাসা। রাশেদ একটা সিগারেট ধরিয়ে সিগারেটটা উল্টেপাল্টে দেখলো, তারপর বললো, "রহস্যজনক।" এবার ভদ্রলোক পুরো ফেটে পড়লেন। তিনি ফিরে গেলেন চিটাগঙের প্রসিদ্ধ ভাষায়, যা আমি বুঝি না। তবে অরেঞ্জ আর *ুদানি শব্দ দুটি বুঝলাম, চেনা চেনা লাগলো বলে। মিনিট পাঁচেক অনর্গল ভারতীপূজার পর তিনি আবার আমাদের দিকে ফিরলেন। চোখে আগুন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কমলাটার রং কী ছিলো?" ভদ্রলোক থতমত খেয়ে বললেন, "জ্বি?" আমি আবারও জানতে চাইলাম, কমলাটার রং কী ছিলো। নিখোঁজ কমলা সম্পর্কে কিছু তথ্য পেলে যে তার একটা হদিশ বার করা যায়, সেটাও জানালাম। ভদ্রলোক আবারও শুরু করলেন চিটাগঙের ভাষায় আপনমনে কথা বলা। বিড়বিড়বিড়। এক পর্যায়ে সামনের সীটে বসা এক ভদ্রলোক বললেন, "ভাই, আপনার কমলা গ্যাছে গ্যাছে আর পাইবেন না। আর সিগারেট যেইটা পাওয়া গ্যাছে ঐটা আপনি না খাইলে আমারে দিয়া দ্যান।" আবার গালি। বিড়বিড়বিড়। কাঁহাতক আর গালাগাল করা যায়? ক্লান্ত হয়ে আবার ঢুলতে লাগলেন বেচারা। হাতে ধরা না ধরানো সিগারেট। একটু পর পর চমকে চমকে ওঠেন, আর রোষকষায়িতলোচনে আমাদের আগাপাশতলা মাপেন। আমরা নিজেদের মধ্যে কমলার গন্ধ দূর করার জন্য যার যা আছে জ্বালিয়ে নিয়ে বসলাম। আমি ধূমপান করি না, তামাকের গন্ধ অসহ্য লাগে, কিন্তু কমলার গন্ধ ঢাকা পড়বে এই আশায় বসে রইলাম ধোঁয়াখোরদের পাশে। ঘন্টাখানেক পর রাশেদ প্রস্তাব করলো, একটা কমলা কোন স্টেশন থেকে কিনে আবার ঐ ঝোলায় রেখে দেয়া হোক। কিন্তু আমরা ভেটো দিলাম। ভাই, আবারও যদি কোনদিন দেখা হয়, আপনাকে আমি দুইটা কমলা কিনে খাওয়াবো। সালাম। পুনশ্চঃ বহু আগে অন্যত্র প্রকাশিত। সচলরা চাইলে আপনাদেরও কিছু কঙ্কাল মন্তব্যের খাতায় যোগ করতে পারেন।
false
fe
এগিয়ে আসুক ভারত, সুদৃঢ় হোক বাংলাদেশ-ভারত সৌহার্দ্য এগিয়ে আসুক ভারত, সুদৃঢ় হোক বাংলাদেশ-ভারত সৌহার্দ্য ফকির ইলিয়াস=======================================বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুল প্রতীক্ষিত ভারত সফর সম্পন্ন হয়েছে। এ সফরকে ঘিরে নানা জল্পনা ছিল। কথা ছিল পক্ষে-বিপক্ষে। শেখ হাসিনা ভারত সফরের প্রাক্কালে বলে গিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের, বাংলাভূমির সব চাওয়া, ন্যায্য পাওনা তুলে ধরবেন। তার সফরের সময় তা তিনি তুলে ধরেছেনও। যা প্রধানত আশা জাগানিয়া যাত্রার সূত্রপাত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সময়ে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আলোচনা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় অনেক স্বার্থ নিয়ে। একটা কথা আমরা সবাই জানি ও মানি, স্বার্থ রক্ষা এক পক্ষের হয় না। স্বার্থ রক্ষা করতে হয় দুই পক্ষের। আর এজন্য উদার হতে হয় সেই পক্ষকে যারা বেশি সচ্ছল, যারা বেশি শক্তিশালী। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিবেশী সম্পর্কটা খুবই ঘনিষ্ঠ। কারণ তিন দিকেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। শক্তি, সামর্থ্যের দিক দিয়ে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে। এটি বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ জানেন এবং মানেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সার্বিক সহযোগিতা করেছিল। এই সত্যের দ্যুতিও বাঙালি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত ছড়াবে, সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন। ভারত বাংলাদেশকে কেন একাত্তরে সশস্ত্র সহযোগিতা করেছিল, তা নিয়ে কিছু ক্ষোভ এখনও আমরা লক্ষ্য করি। এই যে ক্ষোভ প্রকাশকারী- তারা কারা? কী তাদের প্রকৃত পরিচয়? হ্যাঁ, এরা তারাই, যারা এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে পারেনি। যারা এখন 'মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা'র নামে মূলত কিছু মৌলবাদী মতাবলম্বীদের টাকা, ক্রেস্ট তুলে দেয়। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তৎপর হয়। শেখ হাসিনার এ সফরের সময়ে ভারত বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুদান দিয়েছে। এটি ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে একটি বড় ধরনের অনুদান। তারপরও বাংলাদেশের কিছু 'পাকতোষামোদকারী' বুদ্ধিসেবীরা বলছে- এটি নাকি ভারত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ঘুষ দিয়েছে। কতটা হীনমন্য হলে এমনটি বলা যায়। তারা অন্ধ না হয়েও অন্ধেত্বের ভান কেন করে? বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত গিয়েছিলেন। সেখানে থেকে ফিরে ঢাকা আসার পর সাংবাদিকরা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন। এর জবাবে তিস্তা পানি বণ্টনের ইস্যুতে খালেদা জিয়া বলেছিলেন-'বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলাম।' একজন প্রধানমন্ত্রী এমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কি করে ভুলে যান? কেন ভুলে যান? নাকি এর নেপথ্য কোন উদ্দেশ্য ছিল? না, শেখ হাসিনা দেশে থাকতেই বলে গেছেন, এসব ইস্যু তিনি ভুলে যাবেন না। ভুলে যানও নি। আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং স্পষ্টই বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না ভারত। আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কৃষ্ণা, রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ইতিবাচক কথা দিয়েছেন। যা বাংলাদেশের জন্য আনন্দ সংবাদ তো বটেই। অথচ এই সফরকে 'শূন্য', 'গতানুগতিক' বিভিন্ন অভিধায় অভিষিক্ত করছে দেশের প্রো-মৌলবাদী শক্তি। তারা পারলে যেন ভারতের নাম-নিশানা পর্যন্ত মুছে দেয়। কিন্তু কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে তো বিজেপি, লোকসভার সম্মিলিত বিরোধীদল সবাই স্বাগত জানিয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিজেপি নেতার সঙ্গে একান্ত বৈঠকও হয়েছে। তারা সে আলোচনাগুলোকে ইতিবাচক, ফলপ্রসূ বলেই আখ্যা দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিরোধীদলীয়রা এই শিক্ষাও তো ভারতের বিরোধীদলীয়দের কাছ থেকে নিতে পারেন। তা তারা নিচ্ছেন না কেন? গঠনমূলক সমালোচনা না করে, অহেতুক হুমকি-ধমকি দেয়া, আন্দোলনের ভয় দেখানোরই-বা কারণ কি?শেখ হাসিনার ভারত সফর কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, তা নির্ভর করছে চুক্তি এবং ওয়াদাগুলো বাস্তবায়নের ওপর। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিকামী। তারা ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু কট্টরবাদিতাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করেন। তা বাংলাদেশে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনেও বাংলাদেশের আপামর মানুষ ঐক্যবদ্ধ। এসব বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে গণতান্ত্রিক, উন্নয়নকামী দেশ ভারতকে মুক্ত হস্তে এগিয়ে আসতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন এবং সৌহার্দ্যের বিশ্বাস স্থাপনে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার তার মাঝে সীমান্ত সমস্যা সমাধান, সমানুপাতিক আমদানি-রপ্তানি নিশ্চিতকরণ, বাণিজ্যে বিশ্বস্ততা স্থাপন, নদীগুলোর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান অন্যতম। বাঁধ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের যাতে কোন ক্ষতি সাধিত না হয়- তা লক্ষ্য রাখা দরকার মানবিক কারণেই। এখানে আরেকটি বিষয় যুক্ত হওয়া দরকার- তা হচ্ছে তথ্য-সংস্কৃতির আদান-প্রদান। স্যাটেলাইট টিভি, বই-পত্রপত্রিকার আদান-প্রদান এবং বিপণনেও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণীত হওয়া জরুরি। আমি আগেই বলেছি, ভারত বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিবেশী। তাই বলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিবেশী বাংলাদেশকে হেলা করা কোন মতেই কাম্য নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদারতার যে মুক্ত হস্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ভারতের উচিত উন্নয়নশীল প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের গণমানুষের কল্যাণের কথা ভেবে সেই উদারতার পথকে প্রশস্ত করা। ইতিহাসবিদ, রাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। দুর্মুখেরা যাই বলুক না কেন, মহাজোটের নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের এটি একটি অন্যতম সাফল্য। এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ ভারত মুক্ত মন নিয়ে এগিয়ে এসে এই অঞ্চলে যৌথ বাণিজ্যের সম্ভাবনা উন্মোচনে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারে। ড. মাহাথির মোহাম্মদ খুব স্পষ্টভাবেই বলেছেন, বাংলাদেশের জনসম্পদ রাষ্ট্রটির অন্যতম প্রাণশক্তি। শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ দেশের মানুষ সর্বদাই সতর্ক এবং তৎপর সেটাও কারও অজানা নয়। নিউইয়র্ক, ১৩ জানুয়ারি ২০১০। -----------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ১৫ জানুয়ারি ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
false
hm
জার্মানির ঠোলা ১. আমার পৌলিশিক অভিজ্ঞতা অপ্রতুল। পুলিশের সাথে আমার সম্পর্ক লাজুক প্রেমার্থীর মতো, যে মানসপ্রিয়াকে দূর থেকে নির্ণিমেষ নয়নে চোখ দিয়ে গেলে, আর কাছে এলে চোখ সরিয়ে অন্য কিছু দেখতে থাকে বুক ঢিপঢিপ নিয়ে। প্রথম পুলিশের পাল্লায় পড়ি ক্লাস সিক্সে থাকতে। আমি আর আমার বন্ধু ডাক্তার মোস্তফা (সেও ল্যাদাপ্যাদাগ্যাদা ছিলো তখন) স্কুল থেকে ফিরছি। স্কুলে আমাদের আরেক বন্ধু ইকবাল একটা সুইস নাইফ নিয়ে এসেছে আমাদের দেখাতে। আমরা এরকম একই অঙ্গে এত রূপ অলা ছুরি দেখে মহামুগ্ধ। ইকবালকে বলে মোস্তফা সেই ছুরিখানা আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার জন্যে দিন কয়েকের জন্যে রিমান্ডে নিলো। স্কুল থেকে ফেরার পথে রিকশা পাই না, পাই না, পাই না, যে রিকশাঅলাকে জিজ্ঞাসা করি সে-ই অহঙ্কারভরে ফিরিয়ে দেয় রূপবতী রমণীর মতো। আমি হাঁটছি আর প্রশ্ন করছি, ওবা ড্রাইভার, যাইতায়নি বা (সিলেটে তখন রিকশাঅলাকে ড্রাইভার না বললে তারা মনক্ষুণ্ণ হতো, এখন পরিস্থিতি কী জানি না), আর মোস্তফা হারামীটা পেছনে সেই সুইস নাইফ পকেট থেকে বের করে সব ক'টা ফলা পদ্মকোরকের মতো ছাড়িয়ে মুগ্ধচোখে গিলতে গিলতে হাঁটছে। এক পর্যায়ে সে সেটা বাগিয়ে ধরে এক মহামহিমকে নিবেদন করে বসলো। আর যায় কোথায়, এক পুলিশ এসে পাকড়ে ধরলো আমাদের দু'জনকে। সে আবার ভূমিপুত্র নয়, প্রমিত ভাষায় প্রশ্ন করলো, "কী করছো তোমরা?" আমি কাঁচুমাচু হয়ে বললাম, "রিকশা ঠিক করি।" "ছুরি হাতে রিকশা ঠিক করো? কোন ক্লাসে পড়ো?" আমাদের ইউনিফর্মেই আজান দিয়ে বলা আছে কোন স্কুলে পড়ি আমরা, কাজেই সে প্রশ্নে আর গেলো না সে। আমরা ভয় পেলাম। নিজেদের কী হবে সেটা নিয়ে নয়। ছুরিখানা বাজেয়াপ্ত হলে ইকবালকে কী জবাব দেবো সেটা নিয়ে, বালকবয়সে প্রায়োরিটিগুলি অন্যরকম ছিলো, সবারই থাকে। সৌভাগ্যক্রমে পুলিশের সেই সদস্য হৃদয়হীন ছিলেন না, তিনি ছুরিটা উল্টেপাল্টে দেখে সব ক'টা ফলা বুঁজিয়ে জানতে চাইলেন, কোত্থেকে পেয়েছি, কেন এটা হাতে নিয়ে ঘুরছি, আমরা কে কোথায় থাকি, বাবা কী করেন, ইত্যাদি। আমাদের স্কুলের সুনামের জোরে, কিংবা আমাদের নিষ্কলুষ হাবভাবের জোরে, কিংবা স্রেফ ভাগ্যের জোরেই ছুরিটা আর বাজেয়াপ্ত হলো না, তিনি সেটা হুকুম দিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে আমাদের ছেড়ে দিলেন। সিলেটে পুলিশের কথ্য নাম ছিলো "খনাই"। সেটার উৎপত্তি "ঠোলা"র মতোই রহস্যঘেরা। সেই খনাই ভদ্রলোক বাস্তবিক একজন ভালো পুলিশ ছিলেন। হয়রানি করেননি, সাবধান করে ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর দীর্ঘদিন বিরহের পর পুলিশের সাথে সাক্ষাৎ পাসপোর্টের তথ্য যাচায়ের সময়। এক কড়া ভদ্রলোক এসে অনেক প্রশ্ন করলেন। পুলিশের "জিজ্ঞাসাবাদ" এর কায়দাটা অন্যরকম, টের পাই সেদিন। অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় পুলিশ আমাকে উঠতে বসতে চেক করতো। আমার মাথায় কয়েক কেজি চুল ছিলো, মুখে গোঁফদাড়িও থাকতো মাঝে মাঝে, তারা পারলে আমাকে পথেঘাটে ন্যাংটা করে সার্চ করে। বুয়েটের আইডি দেখাই এফবিআইয়ের মতো করে, তারপরও তারা আগাপাস্তলা চেক করে। তবে যেদিন ব্যাগে বইপত্র থাকে, সেদিনই আমি ধরা পড়ি। একদিন মদের বোতল নিয়ে ফিরছিলাম, সেদিন তারা আমায় কিছু বলেনি। অপর্যাপ্ত পরিমাণে নেংটুশ চলচ্চিত্র লেনদেন হচ্ছিলো একদিন, ধরা পড়লে হয়তো আমাকে আর আমার সেই বন্ধুকে নেংটু ইন্ডাস্ট্রির ঢাকা রিজিওনাল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবেই চালান করে দেয়া যেতো, পেপারে গলায় নামাঙ্কিত কার্ড নিয়ে আমাদের বিপ্লবী মুখচ্ছবি ছাপা হতো, কিন্তু না, সেদিনও পুলিশ আমাদের দেখে স্কুলবালিকার মতো অহঙ্কারী গ্রীবা ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো। সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম, ব্যাগের মধ্যে মীরমদনের কামান নিয়ে ঘোরাফেরা করলেও ঢাকার নাগরিক পুলিশ আমাকে কিছু বলবে না, কাক দেখবে, নক্ষত্র দেখবে, ভালোবাসবে চলিষ্ণু মেঘ আর আশ্চর্য মেঘদল। সে তালাশ করবে আর ঘাঁটবে আর হাঁটকাবে যখন ব্যাগে থাকবে নোটস, বই, প্রেমিকার জন্যে ছোট্ট তুলোট পাণ্ডা-ছানা। পুলিশের সাথে আরো টুকিটাকি অভিজ্ঞতা আমার আছে, যেমনটা আছে ড়্যাব, মিলিটারি পুলিশ, সেনাবাহিনীর পার্বত্য ইউনিট, বিডিআর আর ডিজিএফআই নিয়ে, কিন্তু অলমিতি বিস্তারেণ। ২. জার্মানিতে প্রথম পা দিয়েই ইমিগ্রেশন ঠোলার পাল্লায় পড়েছিলাম। শালা আমাকে দিয়ে দোভাষীর কাজ করিয়ে নিয়েছিলো। দ্বিতীয় যাত্রায় পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়নি বছর দুয়েক। এই গত অক্টোবরফেস্ট শেষে তীরন্দাজ পরিবার আর পুতুল পরিবারকে জ্বালিয়ে একশেষ করে এক দুপুরে উশি ভাবীর রান্না করা মুরগির ঝোল আর গরম ভাত দিয়ে ঠেসে খেয়ে ফিরছি মিউনিখ থেকে, আমি-বদ্দা-হাছিব্বাই-মনিরোশেন, স্টেশনে দুই পাহাড়ের মতো সবুজ জামা পরা ঠোলা আমাদের পথরোধ করলো। হতভাগা মনির এমন ভাব করলো যেন সে শুনতেই পায়নি, দুই ঠোলা তাকে প্রায় কানে ধরে দাঁড় করায় আর কি! মিউনিখে আমি দুই হাজার তিন সালে বাহান্ন দিন ছিলাম। স্টেশনে গিয়েছি কম করে হলেও কুড়িবার। পথেঘাটে একটিবারও কোনো পুলিশ আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। অক্টোবরফেস্টর সময় সেদিন আবার ফেডারেল নির্বাচন, সে উপলক্ষ্যেই বোধহয় নিরাপত্তার কড়াকড়ি, আর আমরাও দেখতে সমর্থ দুষ্কৃতীর মতোই, অতএব থামাও ব্যাটাদের। পাসপোর্ট নিয়ে এক ধলাপাহাড় চলে গেলো তথ্য যাচাই করতে, আরেকটা একাই আমাদের চারজনকে পাহারা দিতে লাগলো। সাথে টুকিটাকি আলাপ। কে কী করি, কই থাকি, কেন মিউনিখ এলাম, কেনই বা চলে যাচ্ছি, অক্টোবরফেস্ট কেমন লাগলো, সময় যখন আছে তখন আপনারা কি আপনাদের ব্যাগ খুলে দেখাবেন, ইত্যাদি। আমাদের চোখের সামনেই পেরিয়ে গেলো ঘরে ফেরার শেষ ট্রেনের সময়। তার মিনিট দশেক পর পাসপোর্ট ফেরত পেলাম, বাজখাঁই দুঃখ প্রকাশ আর বাকিটা দিন ভালো কাটার শুভকামনা জানিয়ে দুই ঠোলা আরেক অভাগার দিকে তেড়ে গেলো। আমরা অন্য আরেক ট্রেনে চড়ে মাঝামাঝি এক শহরের দিকে রওনা দিলাম, সেখান থেকে গাড়িতে লিফট নেয়ার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেলো বলাইয়ের ইন্টারনেট পরিষেবার কল্যাণে। গতকাল ভুয়র্তসবুর্গে এক পশলা সচলাড্ডা হয়ে গেলো। এবার আর সাথে পাসপোর্ট আনিনি, সম্বল শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র, ছবিছাড়া। ভুয়র্তসবুর্গ স্টেশনে নেমে নিচে নেমে আসছি আমি, বদ্দা, বলাই-বলাইনী, এক ভীষণদর্শন মুখে-কাপাই-পরানো কুকুরের বল্গা হাতে এক পুলিশ পথরোধ করলেন। "জার্মান বলতে পারেন কি?" "পারি।" "বাহ, বেশ! কোত্থেকে আসছেন?" চলতে লাগলো জেরা। কোত্থেকে আসছি, কেন আসছি, কোথায় যাবো, কবে ফিরবো, বাহ এবার একটু পরিচয়পত্র দেখান দেখি, আচ্ছা আচ্ছা, আপনি নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে পড়েন? তো দেশে ফিরে গিয়ে কিছু করবেন এ ব্যাপারে? আপনাদের ওদিকে এই শক্তি নিয়ে কেমন কাজ হচ্ছে? আমাদের ভুয়র্তসবুর্গে কিন্তু আপনাদের দেশ থেকে অনেক লোকে আসে পড়তে (কে জানে সত্যি কি না!), উঁহুহু ম্যাডাম, কুকুর দেখে ওরকম সিঁটিয়ে যাবেন না, তাহলে কিন্তু ও ভুল বুঝবে, সবাই শান্ত থাকুন ... । ভ্যাজর ভ্যাজর চলতেই লাগলো, ওয়্যারলেসে কেন্দ্রীয় তথ্য পরিষেবায় আমাদের নাম আর জন্মতারিখ জানিয়ে জানতে চাওয়া হলো আমরা কি ঠিকঠাক নাকি। একটু দেরি হচ্ছিলো, আরেক মহিলা পুলিশ বিকট হাসি দিয়ে বললেন, "কম্পিউটারও তো মানুষ!" আমি একটু ঝুঁকে জানতে চাইছিলাম, কুকুরটার জাতের নাম কী, অমনি ব্যাটা দুই পা পিছিয়ে গিয়ে ঝুঁকে ওঁত পাতলো। পুলিশ মহিলাটি বিরক্ত হয়ে বললেন, হঠাৎ নড়াচড়া করবেন না, ও ঝামেলা করবে। আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম তারপর, ডয়চার শেফারহুণ্ড (জার্মান শেপার্ড)। দারুণ একটা কুকুর, এক কামড়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারবে যে কাউকে। ছবি তুলতাম, কিন্তু জার্মান পুলিশ ফোটোবান্ধব নয়, আর কুকুরটাও পুলিশ। হাছিব্বাই যোগ দিলেন এর মধ্যে এসে, তিনিও পাসপোর্ট দেখিয়ে খালাস হলেন। আমাদের আশপাশ দিয়ে যারা যাচ্ছিলো, তাদের অভিব্যক্তি দেখছিলাম মন দিয়ে, সবারই চোখেমুখে একটা ভয় পাওয়া ভাব, কারো কারো মুখে পাশাপাশি ক্ষীণ গর্ব, "হুঁ হুঁ বাবা, খুব তো চেষ্টা করছিলে, পড়লে তো ধরা" গোছের হাসি। আমাদের আটকে রেখে মহিলা পুলিশ সেই ভিড়ও মনোযোগ দিয়ে দেখছে, তবে অন্য কাউকে আটকায়নি। কেন্দ্রীয় তথ্য পরিষেবায় কোনো খারাপ খবর ছিলো না আমাদের জন্যে, মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে এলাম বালছাল কুশল বিনিময় করে। ফেরার পথে ট্রেনে আবার আরেক দফা চেক, তবে ভাগ্যভালো ট্রেনে চড়ার পর। ট্রেন মিস করে নিজেকে নিষ্পাপ প্রমাণ করার মতো ভোগান্তি আর হয় না। ভাগ্য খুব খারাপ থাকলে ট্রেন বদলানোর পথে কোনো স্টেশনে এই গিয়ানজামে পড়তে হতে পারে। ট্রেনে বদ্দা আর মনিরোশেনকে এমন বাঘা নজরে ছবি মিলিয়ে দেখতে লাগলো পুলিশ, যেন তারা পাসপোর্টে নিজের ছবির বদলে কোনো ইমোটিকন বসিয়ে এনেছে। এর দরকার ছিলো না হয়তো। আমাদের পাশে বসার কারণে তিন ধলা আদমীকেও তাদের পরিচয়পত্র দাখিল করতে হলো। তারা তাদের কাগজ ফেরত পেলো তৎক্ষণাৎ, আমাদের নামধামজন্মতারিখ আবার ওয়্যারলেস মারফত ভেসে গেলো কেন্দ্রীয় তথ্য পরিষেবা বরাবর, ডের ফোরনামে ইস্ট মিশায়েল আন্দ্রে হেক্টর বেয়ারলিন উনফাল বেয়ারলিন ... গেবোরেন আম ফুয়ন্ফ উন্ড ৎসোয়ানসিখটেন, নুল আখট ... । টুকটাক রসিকতা বিনিময়ও হলো। আমরা নিঃসন্দেহ হলাম, মনিরোশেনের কারণেই আমাদের এই দুর্ভোগ, কারণ আমরা আগেও বাভারিয়ায় এসেছি তাকে ছাড়া, তখন এমনটা ঘটেনি। ব্যাটার হাবভাব এমনই সন্দেহজনক, এমনই পুলিশাকর্ষী, যে পরবর্তীতে তার সাথে এলে পথেঘাটে একসাথে না চলার প্রস্তাবও বাতাসে ঝুলে রইলো অনেকক্ষণ। বগির বাকি যাত্রীদের সবাই জার্মান, সন্দেহের ঊর্ধ্বে রয়ে গেলো তারা, আমরা কাগজপত্র ফেরত পেলাম। না, কোনো ঝামেলা নাই। জার্মানির আরো চারটা প্রদেশে ঘুরিফিরি প্রায়শ, সেখানেও এমন অভিজ্ঞতা হয়নি, কেবল বাভারিয়াতেই এমন অবস্থা। এই হুজ্জতটা যে গায়ের কালাচামড়ার জন্যে হয়েছে, এমনটা হয়তো নয়, কিংবা কে জানে, হয়তো তার জন্যেই। অনেকবার শুনেছি এবং একবার দেখেছি, বাভারিয়ার পুলিশ ধলাচামড়ার স্বদেশীদেরও উঠতে বসতেই চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু তারপরও, বিদেশের পুলিশ পথরোধ করলে মনটা খারাপ হয়। কেবলই মনে হয়, আমাকে নয়, চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে আমার গায়ের রঙটুকুকে, আমার জাতীয়তাকে, আমার গরীব দেশকে, যার সবুজ পাসপোর্ট দেখে দেখে দেশে দেশে পুলিশদের আঁখি না ভরে।
false
mk
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরের মধ্যদিয়ে দুদেশের মৈত্রীর বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়েছে_ এমনটি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২১ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফরে এসে গত শনিবার তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও শিল্পপতিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন; যা গতকাল বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বাধীনতার পর থেকেই শিল্পোন্নত জাপান বাংলাদেশের পাশে বন্ধুর মতো থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-শিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশের যেসব বন্ধুরাষ্ট্র রয়েছে তার মধ্যে জাপানকে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সাম্প্রতিক বক্তব্যের মধ্যদিয়েও তার প্রতিফলন বেশ স্পষ্ট। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ-জাপানের সম্পর্ককে ভাইবোনের দৃঢ় বন্ধন হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে সব সময় পাশে থাকার জন্য আমরা জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই।বাংলাদেশে বর্তমানে বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। সরকারও বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইতোমধ্যে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের প্রণোদনায় রয়েছে এসব উদ্যোগের মধ্যে। অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশে সহজলভ্য শ্রমের কারণে এদেশ বিনিয়োগকারী স্বল্প সময়ের মধ্যেই লাভবান হয়ে থাকেন। বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে জাপানের বিনিয়োগও রয়েছে এরপর সেদেশের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ কথা বিবেচনায় নেয়া সঙ্গত এ কারণে যে, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রবিজয়ের পর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্মুক্ত হয়েছে। সুতরাং বিগ-বি অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে শিল্প প্রবৃদ্ধির বলয় গঠনের উদ্যোগ জাপানের কাছেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে তিনি জাপানি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করারও ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শিনবো আবেরের এ ঘোষণা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক এবং এতে দুদেশের সম্পর্ক আরো নিবিড় হবে বলেই প্রত্যাশা করা যায়।জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে জাপান-বাংলাদেশ 'সমন্বিত অংশীদারিত্ব কর্মসূচি' উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন এবং জাপানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। জাপানের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ তার উদারতাই প্রকাশ করল। যা দুদেশের সম্পর্ককে আরো মজবুত করবে বলে ধারণা জন্মায়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল থেকেই জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় জাপান এখনো বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে নানামুখী সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। চলতি বছরের মে মাসে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালেও আমরা এর নমুনা লক্ষ করেছি। সে সময় জাপান বাংলাদেশে শান্তিকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দেয়। ওই কেন্দ্রের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। জাপান বাংলাদেশকে এসব খাতেও সহায়তা দেবে বলে আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই।সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। এদেশের প্রাকৃতিক সম্পদও মজুদ রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। এখন সেসব সম্পদ ব্যবহার উপযোগী করে দেশকে আরো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে জাপানের কারিগরি সহায়তা আমাদের যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে। এছাড়া অবকাঠামো খাতসহ টেক্সটাইল, চামড়া, পেট্রোকেমিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ খাতসহ বিভিন্ন খাতে জাপানের দক্ষতা কাজে লাগানো সম্ভব হলে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এজন্য সরকারের কর্তব্য হওয়া দরকার সেদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদারের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ককে আরো নিবিড় ও উষ্ণ করা। বাংলাদেশ-জাপানের বন্ধুত্বের সম্পর্ক দৃঢ় ভিত্তি পাবে এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
false
mk
হরতাল অকার্যকর মানুষের চলাচল কোথাও কম কোথাও বেশি। আবার হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণে জনশূন্য, পর মুহূর্তে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য। কখনো যানজট, কখনো ফাঁকা।বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের হরতালে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে রাজধানী ঢাকায়। কেবল রাস্তা নয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান—সবই খোলা। কিন্তু কোথায় যেন একটা আতঙ্ক। যে দোকানে দুটি ঝাঁপ রয়েছে, সেখানে একটি খোলা, অন্যটা বন্ধ। পেট্রলবোমার ভয়ে অনেক বাসে স্থান পেয়েছে বালুর বস্তা, জানালাও বন্ধ। অনেকটাই বন্ধ মানুষের কেনাকাটা, বেড়ানো। কেবল একান্ত প্রয়োজনেই ঘরের বাইরে পা রাখছেন মানুষ।গতকাল সোমবার মিরপুর, গাবতলী, মিরপুর রোড, মতিঝিল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকায় ঘুরে জানা গেল হরতালের বাস্তব চিত্র। আতঙ্ক নিয়ে পথচলার কথা জানালেন অনেকেই। তাঁরা বলেছেন, ‘ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ’ হরতাল। অকার্যকর হরতালে আছে বোমাতঙ্ক।তবে দূরপাল্লার পথে যান চলাচল কম বলে ঢাকায় প্রতিদিন যে ভাসমান মানুষের আগমন ঘটে, তা কম ছিল। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক কম। স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ মানুষের যাতায়াত, কেনাকাটা, পারিবারিক ভ্রমণ হওয়ার কথা, তা ছিল না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবহনমালিক-শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের দোকানিদের ওপর।পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাজধানী ও এর আশপাশে স্বাভাবিক সময়ে প্রায় পাঁচ হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করে। হরতালের দিনে এর অন্তত ৭০ শতাংশই চলাচল করছে। তবে সন্ধ্যার পর বাস-মিনিবাস চলাচল ৪০ শতাংশে নেমে আসে। তখন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও একেবারেই কমে যায়। সবচেয়ে বেশি বাস-মিনিবাস চলাচল করছে মিরপুর-গুলিস্তান ও মিরপুর-মতিঝিল পথে।পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, যেসব বাসের গ্লাস ভাঙা, সেগুলো মেরামত করে এবং জানালা বন্ধ রেখে চালানো এবং কোনো স্ট্যান্ডে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে যাত্রী না তুলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব বাসে সামনে-পেছনে দরজা রয়েছে, তা খোলা রাখতে বলেছে পুলিশ।রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরের পথে বাস ও যাত্রী—দুটোই কম। গড়ে প্রতিটি বাসে ১২-১৫ জনের বেশি যাত্রী দেখা যায়নি। অনেক পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার শূন্য, কর্মীরা বন্ধ করে চলে গেছেন।গাবতলীতে সকালে বাগেরহাটের উদ্দেশে ছাড়ার অপেক্ষায় ছিল ঈগল পরিবহনের একটি বাস। বাসটির শ্রমিক আবদুর রহিম যাত্রীর জন্য হাঁকডাক দিলেও তেমন সাড়া পাচ্ছিলেন না। বললেন, ‘গত মাসের বাসা ভাড়া দিয়েছি হাওলাতু (ধার) করে। এই মাসের কী হইবো বুঝতাছি না। আগে মালিক দৈনিক ৪০০ টাকা দিত, এখন ২০০ দিতাছে।’দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ৩০ থেকে ৪০টি লঞ্চ অবস্থান করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদীবন্দরের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন জানালেন, স্বাভাবিক সময়ের মতোই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলাচল করছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম।অফিস-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবই খোলা, আছে আতঙ্ক: রাজধানীর অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিল এবং এর আশপাশে গতকাল সকাল থেকে মানুষের চাপ ছিল। কয়েকটি ব্যাংকে গিয়ে গ্রাহকদের ভিড় দেখা যায়। কর্মকর্তারা জানালেন, লেনদেন হচ্ছে।বেলা পৌনে একটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকের সড়কে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটলে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়। পর মুহূর্তে সবকিছুই যেন স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তবে আতঙ্কের কথা জানালেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তবিবুর রহমান। তিনি দুপুরের খাবার খেতে অফিস থেকে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, কখন গায়ে পেট্রলবোমা বা ককটেল এসে পড়ে ঠিক নেই। প্রতিদিনই জীবনটা হাতে নিয়ে অফিস করতে হয়। পরিবারের সদস্যরাও দুশ্চিন্তায় থাকে।ঘটনাস্থলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবেরা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাদের কেউ বলছেন, রাজনৈতিক সংকট আছে। আবার কেউ বলছেন, কোনো সংকটই নেই। কিন্তু বাস্তবে সংকটে রয়েছি আমরাই, সাধারণ জনগণ।’ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাসিমুল করিম বলেন, ‘বিবৃতিনির্ভর হরতালের’ কারণে তাঁদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও পরক্ষণেই সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।রায়েরবাগ এলাকায় রয়েছে পাসপোর্ট বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়। সেখানে মানুষের ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই, ৭২ ঘণ্টার টানা হরতাল চলছে। একই অবস্থা দেখা গেছে আগারগাঁওয়ের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়েও।যাত্রাবাড়ী থানার কাছে পান-সিগারেট বিক্রেতা রাশেদ বলেন, এখনকার সবই ঠিক আছে। তবে গত শনিবার সন্ধ্যায় মোড়ের কাছে বোমা ফাটায় দুর্বৃত্তরা। এর পর থেকে কিছুটা আতঙ্ক আছে।বিপণিবিতান আধা খোলা, ক্রেতা নেই: মিরপুর ১ ও মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় অধিকাংশ বিপণিবিতান খোলা ছিল। তবে সামনের ঝাঁপ নামিয়ে শুধু ঢোকার পথটুকু খোলা। পান্থপথ, গ্রিন রোড ও হাতিরপুলেও অনেকেই ঝাঁপের একাংশ নামিয়ে রেখে দোকান চালু রেখেছেন।মিরপুরে ক্যাপিটাল শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ছোট শামিয়ানা টানিয়ে চারজন পুলিশ সদস্যকে পাহারা দিতে দেখা যায়। প্রসাধনসামগ্রীর দোকানি মো. রাহাত বলেন, ‘আর কত দিন এমন চলবে। প্রতিদিন দোকান খুলি, কাস্টমার নাই। এমনে চললে পেটে ভাত জুটবো না।’পুরান ঢাকার ইসলামপুরে অধিকাংশ দোকান খোলা পাওয়া যায়। তবে ক্রেতা খুবই কম। সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক এমদাদুল আলম বলেন, আগে দিনে কাপড় বিক্রি হতো প্রায় দেড় লাখ টাকা, এখন মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।বাদামতলীর ফ্রেশ ফল বিতানের ব্যবস্থাপক মো. রাসেল বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা আসত। হরতালে দূরের ক্রেতা নেই বললেই চলে।সকাল নয়টার মধ্যেই যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। বিকেল চারটার দিকে মনিহারি দোকানের মালিক আকবর হোসেন জানান, বিক্রি হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এই দোকানে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি হতো।শহীদ ফারুক সড়কে ৩০ বছর ধরে চশমার ব্যবসা করছেন খায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে হরতালে যাত্রাবাড়ীতে মিছিল-সমাবেশ এবং প্রকাশ্যে বোমাবাজি হতো। এখন হয় চোরাগোপ্তা হামলা।হরতালেও যানজট: সকাল সাড়ে নয়টায় পল্টন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকেই গাড়ির লম্বা লাইন। বাসগুলোতে বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন মানুষ। ঘণ্টা খানেক পর গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার মোড়ের সিগন্যালের যানবাহনের সারি পীর ইয়ামেনী মার্কেট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বেলা ১১টায় শাপলা চত্বরেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী শিশুমেলা পর্যন্ত প্রকট না হলেও যানবাহনের সারি দেখা যায়। কল্যাণপুর থেকে কাকরাইলে নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গণপরিবহনের অপেক্ষায় থাকা আসলাম খন্দকার বলেন, জীবন তো আর থেমে থাকে না। দিনে ভয় কম লাগলেও সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক শুরু হয়। সারাক্ষণ মনে হয়, এই বুঝি বোমা মারল! অবশ্য বেলা একটার দিকে ওই পথে যানবাহন কমে যেতে দেখা যায়।বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের চারদিকেই যানবাহনের সারি ছিল। তবে বেশির ভাগ বাসই এলোমেলো দাঁড় করিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় জটলা তৈরি করেছে। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার, ধোলাইখাল, তাঁতীবাজার, বংশাল ও ফুলবাড়িয়া এলাকায় যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। স্থানে স্থানে ছিল যানজটও।গতকাল তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় বলা হয়, হরতালে ‘যানজট এড়াতে পারেননি’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীদের চেষ্টার পরও একাধিক জায়গায় তাঁর গাড়িবহরের গতি কমাতে হয়। সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নিতে সচিবালয়ে যাওয়ার পথে এই অবস্থা হয়।ফুটপাতের ব্যবসায় মন্দা: দুপুর ১২টা। পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী। ফুটপাতে ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখা সবুজ কুলের (বরই) রং হয়ে গেছে লাল। দোকানি আজিজুল ইসলাম বলেন, সময়মতো বিক্রি না হওয়ায় এই অবস্থা। পাশেই শিশুদের খেলনার বিভিন্ন ধরনের গাড়ি, পুতুল ও পাখি নিয়ে বসে রয়েছেন আবদুল কাদের। তাঁর দোকানেও ক্রেতা আসছে না বলে জানান।গাবতলী বাস টার্মিনালের প্রবেশমুখে ফলের দোকানের মালিক বাতেন মিয়া বলেন, ‘মাল আনি, কিন্তু ব্যাচা হয় না। আগে দুই দিন পরে পরে আনতাম। এহন কম আনলেও সাত দিনে শেষ হয় না। পইচ্চা যায়।’
false
hm
তেজোসৃপ ও তিলোত্তমা (এবং ...) সর্পঘ্ন বীর সন্তর্পণে হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছিলেন, আচমকা ঝোপের মাঝে একটা পোড়া কঙ্কাল দেখে তিনি থমকে গেলেন। ঘোড়াটিকে তিনি রেখে এসেছেন এখান থেকে দুই ক্রোশ দূরে গহীন বনের মাঝে। ঘোড়াসহ এই অভিযানে আসা যে এক বিরাট মূর্খামি, তা তিনি অনুধাবন করেছেন একেবারে শুরুতেই। এ পর্যন্ত যত বীর তেজোসৃপের হাত থেকে তিলোত্তমাকে উদ্ধার করতে এসেছে, সকলেই এই ভুলটি করেছে। ঘোড়ায় চড়ে নবাবের ব্যাটার মতো (যদিও তারা বেশিরভাগ নবাবের ব্যাটাই ছিলো) খটখটিয়ে মূল রাস্তা ধরে গিয়ে যে তেজোসৃপের মনোযোগ এড়িয়ে তিলোত্তমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে না, তা তিনি বুঝতে পেরেছেন শুরুতেই। সর্পঘ্ন বীর এর আগে দুয়েকটা ছোটোখাটো তেজোসৃপ বধ করেছেন বটে। কিন্তু তারা নিতান্তই পাতি প্রজাতির। হয়তো খুব কষ্টেসৃষ্টে মেরেকেটে একগজি একটা আগুন ফুঁ দিয়েই তারা একেবারে হেদিয়ে পড়ে, তারপর পাঁচ মিনিট চেরা জিভ বার করে হাঁপায়। এক গজের বাইরে দাঁড়িয়ে ঐ গরিব আগুনের ওম নিয়ে তনুমন চাঙা করে তারপর তরবারির এক কোপে তাদের মুণ্ডুখানা নামিয়ে দিলেই খেল খতম। কিন্তু তিলোত্তমা যার হাতে বন্দী, সে যেন তেন তেজোসৃপ নয়। সর্পকোষ পুঁথি খুলে দেখে এসেছেন তিনি, এই হতচ্ছাড়া তিরিশগজি অনলমুদ্গর প্রজাতির তেজোসৃপ। শুধু যে তিরিশ গজ পর্যন্ত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিতে পারে, তা-ই নয়, ওরকম ফুঁ দিতে পারে পর পর কুড়িখানা। মিচকে তেজোসৃপের হাতে তিলোত্তমার মতো সর্বাঙ্গসুন্দরী ঝাড়া আটটি বছর ধরে বন্দী থাকবে নাকি? বললেই হলো? সর্পঘ্ন বীরের চোখে ভেসে উঠলো তিলোত্তমার অগ্রজা তালোত্তমার তনুশ্রী। অহো! বিম্ব ক্ষীণ, কুচ পীন, শশধর শশী। তিনি কানাঘুষা শুনেছেন, তিলোত্তমার পাশে তালোত্তমা নেহায়েতই তুশ্চু। তিলোত্তমা নাকি আট বছর আগেই একেবারে সঞ্চারিণীপল্লবিনীলতা ছিলো। এই আট বছরে সে নিশ্চয়ই পরিমিত পরিমাণে শ্রোণীভারাদলসগমনা আর স্তোকনম্রাস্তনাভ্যাং হয়েছে। সেই কল্পচ্ছবি মনের মুকুরে ভেসে উঠতেই বীর চঞ্চল হয়ে উঠলেন, যোগবলে মমিন দমন করে সেই পোড়া কঙ্কালটির ওপর দিয়েই তিনি হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলেন। অস্ফূটে বললেন, তেজোসৃপের জননীকে তিনি রমণ করেন। তিলোত্তমার জন্য ওরকম দশ বারোটা তেজোসৃপকে তিনি বাবলার ডালের আগুনে পুড়িয়ে শামীকাবাব বানিয়ে খেতে পারেন। পোড়া কঙ্কাল অবশ্য একটি নয়, তেজোসৃপের জবরদখল করা কেল্লার চারপাশেই নানা আকারের দগ্ধ অস্থিসম্ভার ছড়ানো। একেকটির দহনের মাত্রা একেক রকম। বেশিরভাগই একেবারে অঙ্গারীভূত। তবে মাটিতে দহনের কোনো আভাস নেই। বোঝা যায়, বীর পোড়ানোর কাজটি অন্য কোথাও সম্পন্ন হয়েছে, পরে সেই বীরের কাবাব ভক্ষণের পর দগ্ধ কাঁটাকুটা ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে এখানটায়, কেল্লার পেছনের জঙ্গলে। সর্পঘ্ন বীর জঙ্গি আঙরাখার পকেট থেকে একটি নোটবই বের করে পেনসিল দিয়ে গুটি গুটি হরফে লিখলেন, আশেপাশে ছড়ানো ভূতপূর্ব বীরদের অস্থির প্রাচুর্য দেখে প্রতীয়মান হয় যে অনলমুদ্গর প্রজাতির তেজোসৃপ হাড্ডি খায় না। এদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকা তাই স্বাভাবিক। যদি ক্যালসিয়ামের বিকল্প উৎস না থাকে, অনলমুদ্গর প্রজাতির তেজোসৃপের গর্দানের অস্থি তুলনামূলকভাবে পেলব ও কর্তনবান্ধব হওয়ার কথা। সুখবর। নোটবইখানা পুনরায় পকেটে গুঁজে সর্পঘ্ন বীর মনে মনে ভাবলেন, ভালোই হয়েছে। সব ব্যাটা মুরুক্ষু সদর দরজা দিয়ে কেল্লায় ঢুকে তেজোসৃপ বধ করতে যায়, কেউ একটু কষ্ট করে কেল্লার পেছনের পাহাড়ি জঙ্গল পেরিয়ে খিড়কি দিয়ে ঢোকে না। এতে করে তেজোসৃপের অভ্যাসটিও খারাপ হওয়ার কথা। খিড়কি পথে পাহারাও তাহলে শিথিল হবে। হাড্ডির প্রতুলতা দেখে তো মনে হয়, তিলোত্তমা উদ্ধারের অভিলাষে আসা আহাম্মক বীরের কাবাব খেয়েই টিকে আছে ব্যাটা। সর্পঘ্ন বীর একটি মফস্বলের আখড়ায় কমাণ্ডো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন স্থানীয় শস্ত্রাচার্যের কাছে। দেশ বিদেশের রাজধানী আর বড় বড় নগরের নবাবজাদারা যেখানে খ্যাতিমান আচার্যদের কাছ থেকে মল্লবিদ্যা আর শস্ত্রচালনা শেখে, সেখানে তার মতো এক গোবেচারা পাড়াগেঁয়ে বীরকে দেখে তিলোত্তমার পিতা কিছুটা মুষড়ে পড়লেও চুক্তিতে সই করতে তেমন সংকোচ করেননি। কেবল পাশে খাজাঞ্চির সাথে অনুচ্চ কণ্ঠে হাতি আর ঘোড়া তলিয়ে যাওয়া নিয়ে কী যেন আলাপ করেছেন। চুক্তিপত্রে মোম গলিয়ে সীলমোহর লাগানোর পর সর্পঘ্ন বীর সেটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখেছেন। নতুন করে কিছু মুসাবিদা করা হয়নি, নগরীর নামী ছাপাখানায় ছাপানো চুক্তিপত্রের একটা প্যাড থেকে একটি পাতা ছিঁড়ে নেয়া। রোজই কোনো না কোনো বীর এসে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, তাই রোজ রোজ চুক্তিপত্র না লিখে একেবারে প্যাড ছাপিয়ে এনেছেন তিলোত্তমার পিতা। তাতে লেখা, এতদ্বারা জানানো যাইতেছে যে আমি আলহাজ্জ্ব অমুক আহমদ সিদ্দিকী, বিয়ে এমে এলেলেম পিএইচডি, মোকাম তমুক, তিলোত্তমার পিতা হিসেবে বীর ________, পিতা ______, মোকাম _______এর সাথে আমার প্রাণাধিক প্রিয় কন্যা তিলোত্তমাকে তেজোসৃপের কবল থেকে মুক্ত করতে চুক্তিবদ্ধ হলাম। যদি প্রাগুক্ত বীর তিলোত্তমাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে আমার হস্তে সমর্পণ করতে পারে, তাহলে কন্যার পাণি আমি এই বীরের নিকট সম্প্রদান করবো। সঙ্গে দশটি গ্রাম লাখেরাজ দিব। সর্পঘ্ন বীর সযত্নে একটি তামার খোলে সেই চুক্তিপত্র ভরে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। আহা, তিলোত্তমাকে উদ্ধার করতে পারলে আর শস্ত্রচালনা করতে হবে না, জায়গায় বিজায়গায় সাপখোপ মেরেও কাটাতে হবে না। নিরিবিলি আপন জমিন চাষ করে যাবেন তিনি। আর জমিনটিও সিরাম অপূর্ব রে শালা! ওফফফফফফ! সর্পঘ্ন বীর পুনরায় নিজের কল্পনাকে শাসন করে মমিন দমন করে গুড়ি মেরে এগিয়ে চলেন। কাজে নেমে স্বপ্ন দেখলে কী ঘটে, তার নিদর্শন আশেপাশে এন্তার ছড়ানো। তেজোসৃপের কেল্লাটি প্রকাণ্ড। এই কেল্লাটি নিশ্চয়ই কোনো বড় ভূস্বামীর নির্মাণ করা। বদমাশ তেজোসৃপটি এক দশক আগে উড়ে এসে জুড়ে বসে সেটি দখল করেছে। সেই ভূস্বামীকে নিশ্চয়ই জ্ঞাতিগুষ্টিশুদ্ধু তেলেভাজা করে খেয়েছে। আশেপাশের জমিদার আর রাজারাজড়ারা ভেবেছিলেন, বিটকেল তেজোসৃপ বোধহয় এবার কেল্লাটি ভেঙে জমিটি কোনো ভূমিদস্যু কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করবে, সেখানে আবাসন প্রকল্প খোলা হবে। দুয়েকজন লোক পাঠিয়েছিলেন দরদস্তুর করার জন্য। সেই লোকেরা আর ফিরে গিয়ে খবর জানাতে পারেনি। অনলমুদ্গর প্রজাতির তেজোসৃপের ব্যবসাবুদ্ধি তেমন নেই, তারা কেল্লা দখল করে আর নারীহরণ করে আর দুদিন পর পর বীরপোড়া খেয়েই খুশি। সর্পঘ্ন বীর কেল্লার খিড়কির প্রান্তে একটি ঝোপের ভেতরে ঘাপটি মেরে পড়ে রইলেন কিছুক্ষণ। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। ঝোপেঝাড়ে পতঙ্গ পর্যন্ত নীরব। গাছের ডালে কোনো পাখপাখালির আভাস নাই। কেবল কিছু মাছি নিরুদ্বেগ ভনভন করে চলছে। আর মাঝে মাঝে শনশন করে হাওয়া এসে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, ওরে কেহেরমান, তোর আজ খবরই আছে রে। সর্পঘ্ন বীর নিজের কোষবদ্ধ অসিটি দাঁতে কামড়ে ধরে একটা ঝোপের আড়ালে পুড়ে কয়লা হয়ে থাকা একটি করোটি টেনে নিলেন কাছে। তারপর সেটির ছাই ভালোমতো হাতে মেখে নিজের মুখে আচ্ছা করে ঘষলেন। আঁধার ঘনিয়ে আসছে। চারিদিক যখন একেবারে ঘুটঘুটে কালো হয়ে যাবে, তখন তিনি স্টেলথ মোডে ঢুকে পড়বেন কেল্লার ভেতরে। এ যাবৎ যত বীর তিলোত্তমাকে উদ্ধার করতে এসে তেজোসৃপের কাবাবে পরিণত হয়েছেন, তাদের অনেকের ভৃত্যস্যাঙ্গাতের সাথে আলোচনা করেছেন সর্পঘ্ন বীর। জেনেছেন, প্রত্যেক বীরই সবচেয়ে দামী রঙিন জবরজং আলখাল্লা গায়ে চাপিয়ে ঘোড়া খটখটিয়ে কেল্লার সদর দরজায় ঘা মেরে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন, "যুদ্ধং দেহি!" জবাবে তেজোসৃপ কেবল কেল্লার একটা জানালা খুলে গলা বাড়িয়ে ফোঁসফোঁস করে মাঝারি পাল্লার গোটা দুই তিন আগুন ফুঁ মেরে ঘোড়াশুদ্ধু বেগুনপোড়া করে দিয়েছে তাদের। সব শালা নায়ক জসিম হতে চায়। নিজের আখড়ার প্রশিক্ষণের কথা স্মরণ করে সর্পঘ্ন বীর চক্ষু মোদেন। গুরুজি সবসময় শিখিয়েছেন, কখনও শত্রুপক্ষকে তুচ্ছজ্ঞান করবি না। সবসময় সাবধানে থাকবি। ফুটানি করবি না। তোর চেয়ে যে গায়ে গতরে বড়, তার সাথে ফুটানি করা একেবারেই মানা। যাকে সামনে থেকে পেঁদিয়ে কাবু করতে পারবি না, তাকে পেছন থেকে মেরে ঘায়েল করবি। সবচে ভালো হয় মারপিট না করে চুপেচাপে মক্সদ হাছিল করলে। গুরুর উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন সর্পঘ্ন বীর। রাতের আঁধারে চোরের মতো চুপিচুপি কেল্লায় ঢুকবেন বলে কালো একটা আঙরাখা চাপিয়ে এসেছেন, পায়ে মখমলের পট্টি লাগানো নাগরা। অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে বেশি এনে লাভ নেই, তিনি জানেন, তাই কেবল একটি অসি সম্বল করেই এসেছেন। তেজোসৃপের সাথে তো আর গদাযুদ্ধ চলবে না। এমনকি তরবারি দিয়েও ঐ গোবদাটার সঙ্গে লড়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। দড়ি শিকল কাটার কাজে তলোয়ারটা কাজে আসবে বলেই সঙ্গে এনেছেন তিনি, নইলে খালি হাতেই আসতেন। সূর্যটা টপাস করে পাহাড়ের ওপাশে ঘাপটি মারতেই কেল্লার চারদিক একেবারে যমপুরীর মতো অন্ধকার হয়ে উঠলো। ঝোপের আড়াল থেকে সর্পঘ্ন বীর চুপি চুপি বেরিয়ে কেল্লার খিড়কি দরজা বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলেন। একেবারে নিঃশব্দে। কেল্লার মাস্টার প্ল্যানটা কোতোয়ালের আপিস থেকে নকল করিয়ে নিয়েছেন তিনি কয়েকদিন আগেই। আর দশটা কেল্লা যেমন হয়, এটাও তেমনি। চারদিকে একটু উঠান, সামনের দিকে সে উঠান একটু বেশি প্রশস্ত। কেল্লার ভেতর পাইকলস্কর থাকার জন্য বড় বড় কয়েকটা ঘর, ভোজের জন্য দরবার, রইস লোকজনের থাকার জন্য কেল্লার ওপরতলায় ঘরদোর, আর পাজিবদমাশদের আটকে রাখার জন্যে মাটির নিচে অন্ধকূপ। রসুই-ভাঁড়ার-হাম্মাম এসবও আছে কয়েকটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে, সব নিচতলায়। কেল্লার একটা মিনারের ঘরে তিলোত্তমা বন্দী, এটা বুঝতে হাউইকর হতে হয় না। কেল্লার সব ঘরদোরেই ছোটো বড় জানালা আছে। নেই শুধু ঐ একটি ঘরে। সেটাতে আছে কেবল একটা ছোট্টো ঘুলঘুলি। অন্য যে কোনো ঘরে রাখলেই তিলোত্তমা কয়েকটা শাড়ি ওড়না গিঁট মেরে ঝুলিয়ে সেটা বেয়ে নেমে চম্পট দিতে পারবে। কিন্তু মিনারের ঘর থেকে পলায়ন অসম্ভব। তাছাড়া সে ঘরে একটি মাত্র দরজা। সেটা বাইরে থেকে বন্ধ করার ব্যবস্থা। সেই দরজার সামনে পৌঁছুতে গেলে আগে পার হতে হবে সদর দরবার, তারপর একটি দীর্ঘ দরদালান, তারপর কয়েক তলা প্যাঁচালো সিঁড়ি। হতভাগা তেজসৃপটা নিশ্চয়ই একেবারে গোড়াতেই পাট্টা গেড়ে বসে পাহারা দেয় দিনমান। আহারে তিলোত্তমা, একটা জানালা থাকলেই তুমি তোমার ফিনফিনে শাড়ি আর ওড়না গিট্টু মেরে বাঁদরঝোলা হয়ে নেমে পড়তে পারতে। অহো, কী অপূর্ব তোমার সেই স্বচ্ছ নজরমোহন শাড়ি আর ওড়না। তার চেয়েও অপূর্ব সেই শাড়ি ওড়নার ওপারমহল রে শালা! উফফফফফফফ! খিড়কি দোর টপকে সর্পঘ্ন বীর কিছুক্ষণ গুড়ি মেরে বসে মমিন দমন করেন। মনুষ্যের শরীরে রক্ত সীমিত পরিমাণ থাকে। আপাতত সেই বহুমূল্য সম্পদ দিয়ে মস্তিষ্কটিকে সচল রাখাই জরুরি। সহি সালামতে সব সাঙ্গ হয়ে গেলে মস্তিষ্কটিকে অফ করে বাকি রক্ত নাহয় জমিনে হালচাষে এস্তেমাল করা যাবে। খাটো অসিখানা কোষমুক্ত করে পা টিপে টিপে সর্পঘ্ন বীর এগিয়ে চলেন। অনলমুদ্গর প্রজাতির তেজোসৃপের সাথে লড়াই যদি নিতান্ত করতেই হয়, তার মুখোমুখি হওয়া যাবে না। আক্রমণ যা করার করতে হবে পেছন থেকে। তেজোসৃপের পেছনে তার মস্ত বড় বড় আঁশ কেবল, তার ওপর তরবারির হামলা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পেছন থেকে আক্রমণ করলে দুর্বল জায়গা দু'টি, ঘাড় আর গাঁড়। গাঁড়ে আঘাত করলে ফলাফল কী হবে বলা মুশকিল, তাই ঘাড়ে একটি চরম আঘাত করাই সমীচীন। সর্পঘ্ন বীর কেল্লার মূল দালানের কাছে পৌঁছে মাটিতে শুয়ে পড়ে ঊরগ ভঙ্গিমায় এগিয়ে চললেন। শব্দ করা চলবে না একদম। নচ্ছাড় তেজোসৃপটার কান তেমন বড় না হলেও, গোটা শরীর নিয়ে মাটিতে শুয়েবসে থাকে শালা। মাটিতে অতি মৃদু কম্পনও তার শরীরে ধরা পড়বে। আর ধরা পড়ে গেলে পরিণতি একটাই, বেগুনপোড়া। কেল্লার কাছে পৌঁছে একাধিক কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন সর্পঘ্ন বীর। কান পেতে কিছুক্ষণ সেই শব্দ শুনলেন তিনি। দু'টি কণ্ঠস্বর বেদম ঝগড়া করছে বলে মনে হলো তাঁর। ভাষাটা অচেনা। সর্পঘ্ন বীর খুব সাবধানে এগিয়ে পকেট থেকে এক শিশি মাসুদ্রানার তেল বের করে কেল্লার খিড়কি দরজার কব্জাগুলোতে ঢেলে দিলেন। এই তেলের কোনো গন্ধ নেই, তাই তেজোসৃপের নাকে যাবে না, কিন্তু দরজা খোলার সময় ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দ হবে না আর। তেল ঢেলে কব্জাগুলোকে মজিয়ে নরম করে আলগোছে হাতল ধরে টান দিলেন তিনি। দরজার একটা পাল্লা এক বিঘত পরিমাণ খুলে গেলো। যা ভেবেছিলেন, তা-ই। খিড়কিতে পাহারার ব্যবস্থা নেই। তাবৎ বীর সদর দরজায় ঘা মেরে চ্যাঁচামেচি করে, তেজোসৃপ খিড়কিতে পাহারা দেবেই বা কোন দুঃখে? সর্পঘ্ন বীর অতি সন্তর্পণে দরজা আরো বিঘত দুয়েক খুলে সুড়ুৎ করে ভেতরে ঢুকে পড়লেন। কেল্লার ভেতরে নিকষ কালো অন্ধকার। এমনই হওয়ার কথা। বীর আঙরাখার পকেট থেকে একটা নিশিনজর চশমা বার করে চোখে আঁটলেন। তেজোসৃপ নাকি রাতের অন্ধকারেও মোটামুটি ভালো দেখতে পায়, সর্পকোষ আর উরগমঙ্গল, দুই পুঁথিতেই পড়েছেন তিনি। কিন্তু মানুষও পিছিয়ে নেই, যন্তরমন্তরী সাধকেরা নিত্যনতুন সব জাদুবস্তু নির্মাণ করেই চলছে। নিশিনজর চশমায় রাতের আঁধারেও চাঁদনি রাতের মতো পরিষ্কার দেখায় যায় সব। অতি সন্তর্পণে কিছুদূর গিয়ে সর্পঘ্ন বীর শুনতে পেলেন, সেই দুটো কণ্ঠস্বর আবার ঝগড়া শুরু করেছে। সামনে সদর দরবার থেকেই আসছে সেই বাহাসের শব্দ। এক পা এক পা করে এগিয়ে খুউব হুঁশিয়ার হয়ে সদর দরবারের ভেতরে উঁকি দিলেন বীর। সদর দরবারের এক প্রান্তের দেয়ালে একটা টেলিভীষণ চলমান, তাতে বিচিত্র এক অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে। একটি টেবিলের দুই পাশে বসে আছে দুটি তেজোসৃপ, তারা নিজেদের মধ্যে সমানে কাউকাউ করে যাচ্ছে, আর মাঝখানে একটি গোবেচারা তেজোসৃপ বসে দু'জনের কথা শুনছে। কথা বলতে বলতে মাঝেমধ্যেই এক তেজোসৃপ আরেক তেজোসৃপের দিকে হ্রস্ব পাল্লার আগুন ফুঁ ছুড়ে দিচ্ছে। টেলিভীষণ থেকে একটু দূরে মেঝেতে আধশোয়া হয়ে সেই অনুষ্ঠান দেখে মিটিমিটি হাসছে একটি পেল্লায় তেজোসৃপ। তার হাতে একটি বড়সড় গামলা, সেই গামলায় অনেকগুলো আলু। একটু পর পর একটা আলু নখে গেঁথে মুখ থেকে আগুন ফুঁ মেরে পুড়িয়ে খাচ্ছে তেজোসৃপটি। সর্পঘ্ন বীর বুঝলেন, আলুপোড়া খেতে খেতে টক শো দেখছে হতভাগা। পা টিপে টিপে সদর দরবারের দরজা পেরোতে গিয়ে সর্পঘ্ন বীর দেখলেন, দরবারের দরজার কাছে ছোটো একটা খড়ের গাদার ওপর একটি ডিম যত্ন করে রাখা। আকারে সেটি উটপাখির ডিমের মত। সর্পঘ্ন বীর সেই ডিমের গায়ে লাল নীল ফুটকি দেখে বুঝলেন, এটি একটি তেজোসৃপের ডিম। সম্ভবত এই নচ্ছাড়টিরই হবে। সর্পঘ্ন বীর মনে মনে গুরুর শিক্ষা স্মরণ করলেন। যে কাজ করতে এসেছিস, সে কাজের ওপর অভিনিবেশ কর। এক কাজ করতে গিয়ে অন্য কাজে জড়াবি না। ফোকাস, মাই বয়, ফোকাস। সর্পঘ্ন বীর নিজের মাথায় হিসেব কষতে লাগলেন। যদি তিনি ডিমটা চুপচাপ তুলে নিয়ে সঙ্গে রাখেন, এটা একটা বীমা হতে পারে। যদি দুর্ভাগ্যক্রমে বিটকেলটার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে, তখন এই ডিমটা ঢাল হিসেবে কাজ করবে। তাঁর হাতে ডিমটা দেখলে আর যা-ই করুক, তেজোসৃপ অন্তত আগুন ফুঁ দেবে না। আর যদি ডিমটা যোগাড় করতে গিয়েই তিনি ধরা পড়েন, তাহলে? তাহলে তো আম ছালা দুটোই যাবে! সাত পাঁচ ভেবে সর্পঘ্ন বীর একটা লম্বা শ্বাস নিলেন। তারপর অতি সাবধানে পা টিপে টিপে ঢুকলেন সদর দরবারে। দরজার দিকে পেছন ফিরে শুয়ে তেজোসৃপ টক শো দেখছে আর হাসছে খিলখিল করে। আর একটু পর পর ফোঁসফোঁস করে আলু পুড়িয়ে খাচ্ছে কচরমচর। সর্পঘ্ন বীর নিঃশব্দে ডিমটি তুলে নিলেন হাতে। ঠাণ্ডা, খসখসে, মোটামুটি ওজনদার একটা ডিম। ডিমটি পাছপুঁটুলিতে ঢুকিয়ে সর্পঘ্ন বীর আবারও গুরবিকদমে বেরিয়ে এলেন। সদর দরবার পার হওয়ার পর একটি টানা দরদালান চলে গেছে মিনারের সিঁড়ির দিকে। সেটির সামনে এসে সর্পঘ্ন বীর থমকে দাঁড়ালেন। তিনি জানেন, অদৃশ্য রশ্মি দিয়ে এই দরদালানের ভেতরে কিছু গুপ্তঘন্টি বাজানোর ব্যবস্থা রয়েছে। অদৃশ্য রশ্মিতে পা বাঁধলেই সেই পাগলা ঘন্টি বেজে উঠবে, আর দানোটা টেলিভীষণ দেখা ফেলে উঠে এসে আলুর বদলে তাকেই পুড়িয়ে জলযোগ করবে। তিনি পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে মাসুদ্রানার মশলা বার করে বাতাসে ছড়িয়ে দিলেন। এই মশলায় কোনো গন্ধ নেই, শুধু বাতাসে ছড়িয়ে দিলে একটা সাদাটে ধোঁয়া তৈরি হয়। সেই ধোঁয়ায় অদৃশ্য রশ্মিও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সর্পঘ্ন বীরের অনুমান নির্ভুল, মাসুদ্রানার মশলার ধোঁয়া দরদালানের বাতাসে ছড়িয়ে পড়তেই ফুটে উঠলো এক কাটাকুটি রশ্মির নকশা। তিনি খুব সাবধানে সেসব রশ্মি এড়িয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন মিনারের সিঁড়ির দিকে। দরদালানের শেষ মাথার দরজা পেরিয়ে তিনি আবারও পকেট থেকে মাসুদ্রানার তেল বার করে কব্জাতে ঢেলে দিলেন, তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেই দরজা আলগোছে টেনে লাগিয়ে দিলেন। তারপর দরজার হাতলের ভেতর দিয়ে নিজের তলোয়ারখানা গুঁজে দিলেন। যদি তেজোসৃপ চলেও আসে, এই দরজা সহজে খুলতে পারবে না। সাবধানের মার নেই বলে সেই প্যাঁচানো সিড়িতেও এক দফা মাসুদ্রানারা মশলা ছড়িয়ে দিলেন সর্পঘ্ন বীর। কিন্তু সিঁড়িতে এত পাহারাদারি বসায়নি তেজোসৃপ। তাই বাকি পথটুকু তিনি কোনো শব্দ না করে উঠে গেলেন। সিঁড়ির শেষ মাথায় একটা দরজা, তার বাইরে একটা ছোটো মশাল জ্বলছে। দরজার ওপর ভারি লোহার খিল বসানো। সর্পঘ্ন বীর লম্বা শ্বাস নিয়ে কাঁপা হাতে সেই খিল নামিয়ে আনলেন। দরজা খুললেই এখন তিলোত্তমা। নিজের উথালপাথাল মনকে শান্ত করে সর্পঘ্ন বীর পকেট থেকে আবার বার করলেন মাসুদ্রানার তেল। তারপর তিলোত্তমার ঘরের দরজার কব্জায় সাবধানে ঢাললেন। কোনো শব্দ করা চলবে না। কিছুক্ষণ পর আলগোছে ঘরের দরজার কপাট টেনে খুললেন সর্পঘ্ন বীর। তারপর ঢুকে পড়লেন ঘরে। একটা গোলাপি মোমবাতি জ্বলছে ঘরের ভেতর। একটা গোলাপি পালঙ্কে গোলাপি চাদর গায়ে জড়িয়ে গোলাপি বালিশের ওপর দীঘল কালো ঘন চুল ছড়িয়ে শুয়ে আছে শ্যামাঙ্গী এক তরুণী। সর্পঘ্ন বীর দুই হাতে নিজের চোখ ডলে আবার ভালো করে মোমের নরম আলোয় সেই ঘুমন্ত তরুণীকে দেখলেন। আহা, কী তনুশ্রী! চাদরের নিচে সেই তরুণীর দেহবল্লরী অনেকটাই আভাসিত। অহো, কী অপূর্ব জঙ্ঘাস্তবক! অহো, কী মোহনীয় ঊরুস্তম্ভ! অহো, কী কল্লোলিনী কটিপ্রদেশ! অহো, কী যুগলসংসর্গী বক্ষপুষ্প! অহো, মরালের মনেও ঈর্ষা জাগ্রত হবে এই গ্রীবাদেশ দেখে! সর্পঘ্ন বীর বিড়বিড় করে বলেন, খুল ডাউন বয়, খুল ডাউন। তারপর প্রাণপণে মমিন দমনের চেষ্টা করতে থাকেন। আসল কাজই বাকি এখন, তিলোত্তমাকে সঙ্গে নিয়ে শব্দ না করে খিড়কি দিয়ে বেরিয়ে ঝেড়ে দৌড় লাগানো। এই বন্দিনী কি পারবে ঐ এবড়ো ঘেবড়ো কণ্টকাকীর্ণ ঝোপঝাড় ঠেলে ছুটতে? তার কি মজবুত সোলবিশিষ্ট পয়জার আছে? নাকি সর্পঘ্ন বীরের স্কন্ধলগ্না হয়েই তাকে পথ পেরোতে হবে? কত ওজন হবে তিলোত্তমার? পঞ্চাশ কেজির বেশি হলে খবরই আছে ...। এমন সময় সংলগ্ন টাট্টিকক্ষ থেকে ফ্লাশ করার শব্দ ভেসে আসে। সর্পঘ্ন বীরকে চমকে দিয়ে টা্ট্টিঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে এক যুবক। তার পায়ে ফ্লিপার, পরনে তোয়ালে, মুখে স্নরকেল টিউব, চোখে চশমা। সর্পঘ্ন বীর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন সেই যুবকের দিকে। যুবকও একটু চমকে ওঠে সর্পঘ্ন বীরকে দেখে, তারপর নিজেকে সামলে নেয়। তারপর একটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "হ্যাল্লো ভাই! আমি তারেক অণু। আছেন কীরাম?" সর্পঘ্ন বীর যন্ত্রের মতো করমর্দন করে বলেন, "হ্যালো!" তারেক অণু তোয়ালের নিচ থেকে একটা ক্যামেরা বের করে বলে, "খুব ভালো হলো ভাই, আপনি এসেছেন। তিলোত্তমার সাথে আমার কয়েকটা ছবি তুলে দ্যান। টাইমার দিয়ে তুললে সবকিছু ঠিকমতো আসে না।" সর্পঘ্ন বীর ক্যামেরা হাতে নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। তারেক অণু তিলোত্তমার চাদরের নিচে ঢুকে তাকে জাপটে ধরে, তিলোত্তমা ঘুমের ঘোরেই একটা পা তুলে দেয় তার ওপর। তারেক অণু হাসিমুখে বলে, "হ্যাঁ, এইভাবে তোলেন কয়েকটা। বিছানা পুরাটা আসে তো? তিলোত্তমাকে দেখায় যায় তো? দেইখেন আবার আমারে বাদ দিয়েন না! সচলে পোস্ট দিবো, ভালো কয়েকটা ছবি তুলে দেন।" সর্পঘ্ন বীর চুপচাপ খচাখচ কয়েকটা ছবি তুলে দেন। তারেক অণু বলে, "এইবার তাহলে আপনি চাদরের নিচে ঢুকেন, আমি আপনার কয়েকটা ছবি তুলে দেই! আপনিও সচলে পোস্ট দিতে পারবেন।" সর্পঘ্ন বীর আর সহ্য করতে পারেন না, তিনি কলারের অভাবে তারেক অণুর তোয়ালের গিট্টু পাকড়ে ফিসফিস করে গর্জে ওঠেন, "পাইছেনটা কী মিয়া? তিলোত্তমার ঘরে আপনে করেন কী? বিটলামির জায়গা পান না, না? আমার আগে আপনে ঢুকলেন ক্যামনে? আপনের মতলব কী?" তারেক অণু হাসিমুখে বলে, "আপনি এরকম ফিসফিস করছেন কেন?" সর্পঘ্ন বীর ফিসফিসিয়ে গর্জে ওঠেন, "কারণ ফিসফিস না করলে ঐ ব্যাটা তেজোসৃপ শুনতে পাবে। তারপর এসে দিবেনে বেগুনপোড়া বানায়ে! তখন টের পাবেন ক্যান ফিসফিস করছি!" তারেক অণু খিলখিল করে হেসে বলে, "আরে দূর, কী যে বলেন! আমরা দুইটা কত শব্দ করলাম সারাদিন!" তোয়ালের নিচ থেকে মাসুদ্রানার তেলের শিশি বার করে দেখায় সে। "এটা না থাকলে আরো শব্দ হতো অবশ্য।" সর্পঘ্ন বীর রক্তচক্ষু মেলে কিছুক্ষণ শায়িতা তিলোত্তমাকে দেখেন, তারপর কিছুক্ষণ তারেক অণুকে আপাদমস্তক দেখে তার তোয়ালের গিট্টু ছেড়ে দেন। তারেক অণু তোয়ালের নিচ থেকে একটা ছবির অ্যালবাম বার করে বলে, "এমন চরম উদাস হয়ে আছেন কেন? আসেন, কিছু ছবি দেখি। এই যে দেখুন, ভেনিসের খালে গণ্ডোলা। এই দেখুন, মিশরের মরুভূমিতে উট। এই দেখুন, সাইবেরিয়ার তুন্দ্রাতে বল্গা হরিণ। এই দেখুন, আমাজন নদীতে কুমীর। এই দেখুন, তানজানিয়ার সাভানায় জিরাফ। এই দেখুন ...।" সর্পঘ্ন বীর হাত বাড়িয়ে কোষ থেকে তলোয়ার বার করতে গিয়ে দেখলেন, তলোয়ার তিনি সিঁড়ির গোড়ার দরজায় ফেলে এসেছেন। হাতে এখন তার একটাই অস্ত্র। তেজসৃপের ডিম। নোট ১: ড্রাগনের বাংলা করলাম তেজোসৃপ। কেমন শোনায়? নোট ২: এই গল্পটা উৎসর্গ করলাম আমাদের সবার প্রিয় বিশ্বব্রাজক তারেক অণুকে, পৃথিবীর অন্দর কন্দরে ঘুরে বেরিয়ে এসে বর্ণিল সব পোস্ট দিয়ে যে আমাদের সবার ঘরকাতুরে মনে বাহিরবেদনা জাগিয়ে তোলে দুইদিন পর পর। কয়েকদিন আগে তার জন্মদিন গেছে, এই গল্পটা বিলম্বে উপহার।
false
fe
সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের ফলে __________ ৫ম সংশোধনী বাতিলের জন্য মামলা হয়েছিল । মামলায় রায় হয়, তা বাতিল করার। এই সংশোধনীটি ছিল , মূলতঃ বাংলাদেশের মৌলিক রাজনৈতিক চেতনাটিকে কবর দেবার। সেইসব চক্রান্তকারীরা তা করেছিল খুব কৌশলে। দেখা যাক কীভাবে কী সংশোধনী আনা হয় বাংলাদেশের সংবিধানে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের যেসব বিষয় বদলে ফেলা হয়েছিলো তার মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্রীয় চার মূল নীতি ও সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশ। সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় সংশোধনী এনে পঞ্চম সংশোধনীতে বলা হয় ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।’ ’৭২-এর মূল প্রস্তাবনায় জাতীয় স্বাধীনতার জায়গায় ছিল জাতীয় মুক্তি কথাটি। প্রস্তাবনায় পরিবর্তন এনে ওই সংশোধনীতে আরো বলা হয়, ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদগণকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ সামাজিক সুবিচারের সেইসব আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হবে। মূল সংবিধানে ছিল- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ সংবিধানের মূলনীতি হবে। অনুচ্ছেদ ৬-এ পরিবর্তন এনে সংশোধনীটিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে।’ মূল সংবিধানে এই কথার সঙ্গে আরো যুক্ত ছিল যে, এই দেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলে গণ্য হবেন। মূল সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৮-এ ছিল- ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই নীতিসমূহ এবং এই নীতিসমূহ থেকে উদ্ভূত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হবে এবং বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রে এটা নির্দেশক হবে।’ ৫ম সংশোধনীতে রাষ্ট্রপরিচালনার এসব মূলনীতিতে পরিবর্তন এনে বলা হয়, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি।’ মূল সংবিধানে ৯ অনুচ্ছেদে ছিল- ‘ভাষা ও সংস্কৃতিগতভাবে একক সত্তা বিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’ কিন্তু সংশাধনীটিতে অনুচ্ছেদটির এই কথাগুলো বিলুপ্ত করে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র স্থানীয় সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎসাহ দেবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কৃষক, শ্রমিক ও নারীদের যথাসম্ভব বিশেষ প্রতিনিধিত্ব দেয়া হবে।’ পঞ্চম সংশোধনীর আগে ১০ অনুচ্ছেদে ছিল- ‘মানুষের ওপর মানুষের শোষণ হতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করতে সামজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ সংশোধনীতে এ জায়গায় বলা হয়, ‘জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে।’ মূল সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে ছিল- ‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, কোনো বিশেষ ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার ও কোনো বিশেষ ধর্মপালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।’ ৫ম সংশোধনীতে পুরো অনুচ্ছেদটিই বাতিল করে দেয়া হয়। এছাড়া ওই সংশোধনীতে ২৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব জোরদার করতে সচেষ্ট হবে।’ মূল সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে ছিল- ‘কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন, ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠন করা যাবে না।’ ৫ম সংশোধনীতে এই অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা হয়। দুই আমার প্রশ্ন হচ্ছে , এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল তৎকালীন বিএনপি-জামাতী জোট সরকার। বর্তমান সরকার তা তুলে নিয়েছে। ফলে ঐ সংশোধনী বাতিল হয়ে যাবার কথা, তাহলে কী অন্যান্য ধারাগুলো বলবৎ হবে? 'কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন, ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠন করা যাবে না।’ ----এই ধারাটি কী কার্যকরী হবে ? সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:১৪
false
mk
বাঁশখালী হত্যাকাণ্ড নেপথ্যে বিএনপি জামায়াত! এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের অবস্থান সুসংহত করার প্রতিযোগিতার কারণেই বাঁশখালী হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর সঙ্গে ছিল আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী একটি পক্ষ। আর এতে ‘আগুনে ঘি ঢালা’র মতো পরিস্থিতি তৈরি করে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি প্রস্তুতি। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে কিংবা ভূমিহারাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া না দেওয়ার গুজব, উসকানি ও দ্রোহের নেপথ্যে এসব কারণই রয়েছে।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ৬০০ একর জমির ওপর ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাক্কলিত এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অনেক আগে থেকেই এস আলম গ্রুপ জমি কিনতে থাকে। শুরু থেকেই বিবাদ তেমন দৃশ্যমান না হলেও ইউপি নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই ক্রমে এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। এর নেপথ্যে সরকারি ও বিরোধী দলের দুই পক্ষেরই দুটি অংশ জড়িত বলে স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগে উঠে এসেছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানেও বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।গণ্ডামারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিপক্ষে স্থানীয়দের প্রকাশ্যেই সংঘবদ্ধ করে সমাবেশের উদ্যোক্তা ছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী। ঘটনার পর দায়ের করা তিন মামলার একটিতে তাঁকেই প্রধান আসামি করা হয়।জেলা প্রশাসক মেসবাহ উদ্দিন বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ মাঠ বাজিমাত করতে চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় থাকবে। আর কোনো ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না।বাঁশখালীর সাবেক এমপি ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও বলেন, ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে কথিত আন্দোলনকারী বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী এলাকায় নিজের অবস্থান সুসংহত করতে বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়টি এজেন্ডা হিসেবে নিয়েছেন। গত রাতে মাহমুদুল ইসলাম জানান, কথিত আন্দোলনকারী ‘একলা চলো’ নীতিতে কোনো কমিটি ছাড়াই আন্দোলনের নামে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চেয়েছেন। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এলাকাবাসী গণ্ডামারা বাঁচানোর লক্ষ্যে কমিটি করতে চাইলে ওই বিএনপি নেতা বাধা দেন। অবশ্য গতকাল রবিবার গণ্ডামারা বাঁচাও আন্দোলন নামে এলাকাবাসী একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানান সাবেক এই এমপি।প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দাপ্তরিক ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।এদিকে এলাকাজুড়ে সরকারবিরোধী একটি পক্ষের জোর অবস্থানের বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাংশের পাল্টা অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা আদৌ ছিল কি না কিংবা এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থান পুলিশ প্রশাসনকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ করেছে কি না, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের একটি অংশ এলাকায় এবং ফেসবুকে এ নিয়ে ব্যাপক সক্রিয় ছিল। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিসহ দায়িত্বশীলরা প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষুব্ধদের ঘেরাওয়ে কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পুলিশ এই জিম্মিকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কঠোর হতে বাধ্য হয় বলে ঘটনার দিনই জানান বাঁশখালী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার। ঘটনাটির সঙ্গে আসন্ন ইউপি নির্বাচনী যোগসূত্র থাকার কথাও স্বীকার করেন ওসি।বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে এই হতাহতের ঘটনার সম্পৃক্ততার অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে। বাঁশখালী থেকে ইতিপূর্বে একাধিকবার নির্বাচিত এমপি এবং সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘ঘটনাটির সঙ্গে কোনো দলীয় রাজনৈতিক বিরোধিতার যোগসূত্র নেই।’স্থানীয়রা জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন বিষয়ে ওই বিএনপি নেতার সঙ্গে একটি পক্ষের এক কোটি ৩০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে একটি লিফলেটও প্রায় এক মাস আগে থেকেই বিলি হয় এলাকায়।অভিযুক্ত বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী অবশ্য বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক বা নির্বাচনী উদ্দেশ্য নয়, জনগণের ন্যায্য আন্দোলনে শরিক হয়েছি।’ সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:০৪
false
hm
ঝাকানাকা ধরা খেলেন বহুদিন গল্প লিখি না। বহু পুরনো এক অসমাপ্ত গল্প পালিশ করতে গিয়ে দেখলাম কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে ভেতরে। পাঠকপাঠিকারা নিশ্চয়ই ভারি উৎসুক, কিভাবে ঝাকানাকা ধরা খেলেন জানার জন্যে? আর উৎসুক হবেন না-ই বা কেন, আপনাদের উৎসাহ আছে কী করতে তাহলে? কিন্তু একটা ব্যাপার আপনাদের এখনই ভালোমতো বুঝতে হবে। নায়কেরা সহজে ধরা খায় না, আর দুর্ভাগ্যের চক্রান্তে খেয়ে ফেললেও তা হজম করতে চায় না। তাই সেই বদহজমির ছাপ পড়ে কাহিনীর ওপর। এই গল্পের কথাই ধরুন। বহুকষ্টে এর বর্ণনা যোগাড় করতে হয়েছে, তা-ও একজনের কাছ থেকে নয়, তিন তিনজনের কাছ থেকে। কাজেই মূল গল্পটাকে তিন টুকরো করেই আপনাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে। এতে করে অনেকে নাখোশ হতে পারেন, তাতে আমার বয়েই গেলো, কিন্তু আমার মতে, আস্ত পাঁঠার চেয়ে কাটা পাঁঠা অনেকগুণে ভালো। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, গল্পের সাথে পাঁঠার তুলনা কেন দেয়া হচ্ছে? এর জবাব হচ্ছে, আমার গল্প আমি দরকার হলে লেজে কাটবো, দরকার হলে মুড়োয় কাটবো, আপনার তাতে কী আসে যায় ---? প্রথম টুকরো: দৈনিক “পড়ুন, নইলে মরুন” পত্রিকার জুন ৮, ২০০৪ থেকে উদ্ধৃতি অভাবনীয় কান্ড: বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দার হাতে একই পরিবারের সকলে আগাপাশতলা প্রহৃত! নিজস্ব সংবাদদাতা। গতকাল ভোরবেলা বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা জনাব ঝাকানাকার হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন দেশের খ্যাতনামা ব্যবসায়ী, মোহাব্বত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর স্বত্বাধিকারী, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবী, আলহাজ্ব মোহাব্বত আলি কালু ওরফে কাল্লু শেখ (৭০)। তাঁর দিলশানস্থ প্রাসাদোপম বাসভবন থেকে সকাল নটায় অ্যামবুলেন্স সহযোগে পরিবারের সবাইকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রহৃত অন্যরা হচ্ছেন কাল্লু শেখের স্ত্রী দুলারি শেখ (২৪), তাঁর পরিচারিকা বিজলি বানু (২৫), জনাব কাল্লু শেখের সেক্রেটারি মদন মাহবুব (২৬), তাঁর বাড়ির গভর্নেস গুলবদন আরা (৪০), তাঁর খানসামা ইলতুতমিশ খাঁ (৪০), খানসামার স্ত্রী ও বাবুর্চি সোহাগী বেগম (৩০) এবং কাল্লু শেখের দেহরক্ষী দিলদার বেগ (৩৫)। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দিলদার বেগের অবস্থা আশঙ্কাজনক, কিন্তু আহত অন্যেরা তুলনামূলকভাবে বিপদের শঙ্কামুক্ত। গোয়েন্দাপ্রবরের পাকা হাতের মার খেয়ে সকলে এখনো অচেতন। গোয়েন্দা ঝাকানাকার একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হলো ছয়ের পৃষ্ঠায় তিনের কলামে। উদ্ধৃতি সাক্ষাৎকার: গোয়েন্দা ঝাকানাকা প,নম: জনাব ঝাকানাকা, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার কী ব্যাখ্যা আপনি দেবেন? গোঝা: কোন ন্যাক্কারজনক ঘটনা? প,নম: এই যে, কাল্লু শেখকে সপরিবারে মারধর করা ---। গোঝা: ওহ, তাই বলুন। আমি ভাবছিলাম আপনি আমার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলির সাথে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারির গোপন-আপত্তিকর-কিন্তু-প্লেটোনিক প্রেমের কথা বলছেন --- কাল্লু শেখের ব্যাপারটার কী ব্যাখ্যা দেবো? আর ব্যাখ্যা আমি আদৌ দেবো কি না সেটাও একটা প্রশ্ন হতে পারে। প,নম: ঠিক বুঝলাম না। গোঝা: আপনি আবার বুঝবেন কী? আপনারই যদি সব বুঝে ফেলতেন তাহলে তো কথাই ছিলো না --- আরে মিয়া, জানেন ঐ কাল্লু শেখের পরিবার কী ভীষণ বিপদের মধ্যে আছে? প,নম: থাকবে না আবার? যেভাবে পেঁদিয়ে গুষ্টিসুদ্ধু লাট করে দিয়ে এসেছেন ---। গোঝা: খামোশ! না বুঝে খামাখা কথা বলবেন না। সময়মতো না প্যাঁদালে যে কী ভয়ানক বিপদে তারা পড়তেন, তা সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা আছে? প,নম: ধারণা নেই বলেই তো আপনার কাছে জানতে চাওয়া। গোঝা: আপনার মতো একটা মুখ্যুকে জানিয়ে আমি তাঁদের আরো বড় কোন বিপদে ফেলতে চাই না। সব কিছু পত্রিকায় বেরিয়ে গেলে তাঁরাই সমস্যায় পড়বেন। আর সবুর করুন, সময়ই আপনাকে সব জানিয়ে আর বুঝিয়ে দেবে, কত ধানে কত চাল! প,নম: তবুও যদি একটু আভাস দিতেন ---? গোঝা: শুধু এটুকু বলতে পারি যে, কোন সাধারণ ঠ্যাঙানি আমি তাদের দিইনি, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পন্থায় প্রাচীন তিব্বতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি গোপন পদ্ধতিতে তাদের ওপর একটি চিকিৎসামূলক ইয়ে, মানে ধোলাই, প্রয়োগ করেছি। প,নম: অর্থাৎ, আপনি তাঁদের চিকিৎসা করার জন্যে ঠেঙিয়েছেন বলছেন? গোঝা: ঠিক তাই। আই হ্যাড টু বি খ্রুয়েল ঔনলি ঠু বি ক্ষাইন্ড। প,নম: তিব্বতী পদ্ধতিটি সম্পর্কে ---। গোঝা: দুঃখিত, এ সম্পর্কে কোন তথ্য আমি ফাঁস করতে পারবো না, এ ব্যাপারে ঝালাই লামার কঠোর নিষেধ আছে। শুধু এটুকু বলতে পারি যে একটি তিব্বতী গুম্ফায় পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই ঝাড়া ছয়মাস কঠোর পরিশ্রম ও ধ্যানের ফলেই এই বিদ্যা আমার আয়ত্ত্বে এসেছে। প,নম: ডাক্তাররা বলেছেন, কাল্লু শেখের দেহরক্ষী দিলদার বেগের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আপনি তাঁকে ওভাবে কেন ঠেঙালেন? মানে, বলতে চাইছি যে চিকিৎসামূলক ঠ্যাঙানি অত গুরুতর কেন হবে, যে চিকিৎসিত ব্যক্তি সকল চিকিৎসার ঊর্ধ্বে উঠে যাবেন? গোঝা: দেখুন, অত দেখে শুনে নামগোত্র বিচার করে ঠেঙাইনি, অত সময়ও ছিলো না, তবে অত্যন্ত কাহিল চেহারার একজন ভদ্রলোক ভারি অভব্য আচরণ করছিলেন, তাঁর প্রতি একটু কঠোরই হতে হয়েছিলো, তিনিই যদি দিলদার বেগ হয়ে থাকেন, তাহলে কিছু বলার নেই। প,নম: আপনি কি জনাব কাল্লু শেখের বাড়িতে গায়ে পড়ে এই চিকিৎসামূলক তিব্বতী ধোলাইটি প্রয়োগ করতে গিয়েছিলেন? গোঝা: পাগল না ছাগল আপনি? আমার অতো সময় কোথায় যে গায়ে পড়ে এসব করতে যাবো? আমাকে দস্তুরমতো ফোন করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো ---। প,নম: চিকিৎসার জন্যে? গোঝা: বেকুবের মতো কথা বলবেন না ভাইসাহেব, মেজাজ কিন্তু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দাকে লোকে কেন ডাকে, বিশেষ করে আমার মতো গোয়েন্দাকে? --- ঐ চিকিৎসামূলক মারপিট করেছি, যাকে বলে, ঐ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণের মতো। প,নম: অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন ---। গোঝা: আমি আর কিছুই বলতে চাচ্ছি না। এখন আমার গোসলের সময় হয়ে গেছে, আপনি আসুন। মেলা বকালেন আমাকে দিয়ে। অ্যাই আবুল, আমার গরম পানি দিয়ে যা ---। প,নম: আপনাকে ধন্যবাদ। গোঝা: এখনও ওঠেননি চেয়ার ছেড়ে? বটে? দেখতে চান নাকি, সেই সুদূর দাগেস্তানের নামকরা কুস্তিগীর রোস্তাম জুলুমভের কাছে কী আলুভর্তা প্যাঁচ শিখে এসেছি? তৃতীয় টুকরো: কাল্লু শেখের প্রাসাদ, ৬ই জুন, রাত সাড়ে এগারোটা বদরু খাঁ হাই তোলে, তারপর আড়মোড়া ভাঙে। তারপর ডানে বামে তাকায়। ছ’ছ’জন তাগড়া দারোয়ান আশেপাশে হাত পা ছড়িয়ে চিৎপাত হয়ে শুয়ে নাক ডাকাচ্ছে। দুটো ভয়ঙ্কর দাঁতালো কুকুর দাঁত বার করে পড়ে আছে অদূরে, এ জীবনে আর উঠবে কি না সন্দেহ। উঁহু, কোন ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির ফুসমন্তরে নয়, খোদ দস্যুসম্রাট বদরু খাঁর নির্মম জংলি মার খেয়েই এদের এই দশা। মারতে চায়নি বদরু খাঁ, মারপিট করতে তার ভালোও লাগে না। কিন্তু দারোয়ানগুলো অত্যন্ত গোঁয়ার ও অশিক্ষিত, এতো রাতে তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়ার ব্যাপারে তারা প্রবল আপত্তি জানিয়েছে, তা-ও কী বর্বর অসংস্কৃত ভাষায়! আদব কায়দা এরা একেবারেই শেখেনি, অথবা শিখলেও বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সঙ্গে রাখতে ভুলে গেছে। সব কিছুর পরও ক্ষমা করে দেয়া যেতো নরাধমদের, কিন্তু দু’জন তাকে চড় উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছে, দু’জন উঁচিয়েছে শটগান, আর বাকি দু’জন কুকুর উঁচিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। বদরু খাঁ রীতিমতো ভদ্রলোকের সন্তান, এ ধরনের দুর্ব্যবহার তার পক্ষে সহ্য করা কঠিন, তাই চটেমটে কয়েক ঘা জুলুমসই জুলু মার, যা সে দক্ষিণ আফ্রিকায় সোনা লুট করতে গিয়ে শিখে এসেছিলো, লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। যারা চড় উঁচিয়েছে, তারা নুলো হয়ে থাকবে অন্তত আগামী দু’মাস, যারা শটগান দেখিয়েছে, তারা আগামী তিনমাস একটা কুটোও এখান থেকে সরিয়ে ওখানে রাখতে পারবে না, আর কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে যারা, তাদের কুকুরপেটাই করেছে বদরু খাঁ, কুকুর দুটোর সাথেই। বদরু খাঁ কোন খরগোশ নয় যে তার ওপর কুকুর ছেড়ে দেয়া সে বরদাশত করবে। বদরু খাঁ এবার ধীরেসুস্থে শিস দিতে দিতে লনের ওপর দিয়ে এগিয়ে যায়। গত কয়েকদিন ধরে বদরু খাঁ নজর রাখছে এ বাড়িটার দিকে। বাড়িতে কে কী করে, কে কখন ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজে আর কে কখন দাঁত মেজে ঘুমোতে যায়, সব সে একটা নোটবুকে টুকে রেখেছে। বাড়ির কোন জানালা, কোন দরজা, কোন ঘুলঘুলি কখন খোলা থাকে, সঅব এখন তার মুখস্থ। কখনো নারকেল গাছের মাথায় চড়ে, কখনো উল্টোদিকের বাড়ির ছাদে উঠে বদরু খাঁ দূরবীণ বাগিয়ে এ বাড়ির সবার চালচলন পর্যবেক্ষণ করেছে ভালোমতো। বদরু খাঁ কিছুদিন ডিসকভারি চ্যানেল দেখে দেখে কুমীরের শিকার ধরার পদ্ধতি মকশো করেছে, যাতে কাজে কোন খুঁত না থাকে। বাড়ির তিনতলার বারান্দার নিচে এসে বদরু খাঁ সুদক্ষ বানরের মতো এটা-ওটা খামচে ধরে উঠে পড়ে। আগে সে দড়ির মাথায় রবারের আংটা লাগিয়ে ছুঁড়ে মেরে দড়ি বেয়ে উঠতো, কিন্তু মাস দুয়েক ডিসকভারি চ্যানেলে বাঁদরের বাঁদরামো দেখে দেখে সে অনেক গুহ্যবিদ্যা আয়ত্ব করে ফেলেছে। বারান্দায় উঠে বদরু খাঁ কান পাতে। ভেতরের ঘরে বেশ শোরগোল হচ্ছে। খনখনে গলায় কে যেন খুব ধমকাধমকি করছে। বদরু খাঁ এবার বারান্দার দরজা লাথি মেরে খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঘরের সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বদরু খাঁর দিকে। এত রাতে কার এত বড় সাহস? কে এই ব্যাটা রোমশ পাঁঠা, যে কি না এই হিমহিম হাওয়ার রাতে কেবল একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরে, কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী বোঁচকা ঝুলিয়ে, মুখের ওরকম খাট্টাসমার্কা গোঁফে তা দিতে দিতে এমন বিটকেল ভঙ্গিতে হাসে? দিলদার বেগ গর্জে ওঠে, সিনেমার ভিলেনের মতো, ‘তবে রে শয়তান! হতচ্ছাড়া ইডিয়েট! কে রে তুই? কী চাস তুই এখানে, এই রাতবিরাতে?’ একটি ভুরু উত্তোলন করে একবার ঘড়ির দিকে তাকায় সে, জবাবে ঘড়িটা বলে, ঢং। রাত একটা বাজে। বদরু খাঁ ব্যথিতচিত্তে চুকচুক করে ওঠে। ‘ভেরি ব্যাড। ছেলেবেলায় এর বাবা মা আদব লেহাজ একদম শেখায়নি। আর জন্মের পর মুখে যে মধুটা দিয়েছিলো, তাতে নিশ্চয়ই বিস্তর ভেজাল পঁচা তালের গুড়ের সিরাপ ছিলো। কী ভাষা! ছিহ! --- ওহে ছোকরা, এভাবেই অতিথিদের আপ্যায়ন করো নাকি তুমি?’ ‘অতিথি? এ বাড়ির অতিথি হবার যোগ্যতা আছে তোর?’ দিলদার বেগ এবার পকেট থেকে একটা পিস্তল বার করে। ‘আর ছোকরা বলছিস কাকে? য়্যাঁ? এটা দেখেছিস? চোখ মেলে তাকিয়ে দেখ! ভালথার পিপিকে, খোদ মাসুদরানা পর্যন্ত এটা ব্যবহার করে ---!’ বাধা পেয়ে থেমে যায় সে। ‘করতো।’ শুধরে দেয় বদরু খাঁ। ‘অনেক আগে করতো, যখন তুমি ক্লাস ফাইভে পড়তে। এখন আর মাসুদরানা ওসব ছুঁয়েও দেখে না। আর এখনও মাসুদরানা পড়ো নাকি তুমি? ছোহ! ওসব ছাইপাঁশ ফেলে যদি আলোছায়া প্রকাশনীর নিঝুমপুরীর “ঝাকানাকা” সিরিজের বইপত্র পড়তে, তাহলে এখন এমন উজবুকের মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে বোলচাল ঝাড়তে না!’ দিলদার বেগ পিস্তল আর ভুরু নব্বই ডিগ্রী ফেজ রেখে ঝাঁকায়। ‘বটে? কে রে তুই, ব্যাটা ভুঁইফোঁড়?’ বদরু খাঁ এবার খানিকটা চটে ওঠে। ‘দ্যাখো ছেলে, তখন থেকে তুই তোকারি তো করছোই, আজেবাজে গালিগালাজও চালিয়ে যাচ্ছো সমানে। তোমার মক্তবের মৌলানাও যে তোমাকে কোন আদব শিক্ষা দেননি, বুঝতে পারছি। আমাকেই আজ এসব শেখানোর দায়িত্ব নিতে হবে।’ দিলদার বেগ এবার ঢাকাই সিনেমার খলনায়কের মতো খলখল করে হেসে ওঠে, কী যেন বলতে চায়, কিন্তু তার আগেই বদরু খাঁ নড়তে থাকে। প্রথমে ক্ষুদে পিস্তলটা দিলদার বেগের হস্তচ্যুত হয়, তারপর তার চোয়ালের গন্ডাখানেক দাঁত নড়ে যায়, দুয়েকটা পড়েও যায়, সে নিজে অজ্ঞান হয়ে ছিটকে পড়ে এক কোণায়, কিন্তু বদরু খাঁ তাকে নিস্তার দেয় না, ছুটে গিয়ে কষে একটা গোলকিক করে দিলদারে প্রশস্ত অংশে। ধুপধাপ শব্দে পাড়া কেঁপে ওঠে, ইলতুতমিশের বউ সোহাগী আঁতকে উঠে মুখে আঁচল চাপা দেয়, গুলবদন আড়চোখে তাকায় সোহাগীর দিকে। বদরু খাঁ এবার তার ঝোলা হাতড়ে একটা বিকট চেহারার বিশাল পিস্তল বার করে সবাইকে দেখায়। ‘দেখুন সবাই। এই না হলে পিস্তল?’ পিস্তলটা ডানে বামে নেড়ে বলে সে। ‘এর চেহারা দেখেই অনেক ঘাগু পুলিশ খাকি ভিজিয়ে ফেলেছে। এর গুলির বারূদের গন্ধ নাকে যাওয়ায় ফিট হয়ে গেছে এক প্লাটুন এলটিটিইর গেরিলা। এই পিস্তলের শব্দ শুনে হার্টফেল করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মেডেল পাওয়া কম্যান্ডো। আর এর গুলি খেয়ে যে কত তাবড় তাবড় লোক ঘায়েল হয়েছে, সেটা খামাখা আর গুনে রাখিনি। আর লোক তো লোক, লড়াকু বিমান পর্যন্ত এর গুলি খেয়ে গোঁৎ খেয়ে পড়েছে --- কাজেই সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি, তুই তোকারি বা গালিগালাজ তো চলবেই না, একটু বেচাল বেয়াদবি দেখলেই একেবারে ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দেবো! কোন নড়াচড়া চলবে না!’ এবার সেই থুত্থুড়ে বুড়োটা ফোকলা মাড়ি খিঁচিয়ে বলে, ‘মদন, নোট করো, এই গুড ফর নাথিং দিলদার বেগকে কালই চাকরি থেকে খেদিয়ে দিতে হবে!’ মদন পকেট থেকে নোটবই বার করার জন্যে নড়ে উঠেছিলো, বদরু খাঁ ভারি কুটিল চোখে তাকায় তার দিকে, ঘাবড়ে গিয়ে থেমে যায় মদন। বুড়োটা আবার চেঁচায়, ‘কী হলো মদনা?’ মদন কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ‘কিন্তু --- এই লোকটা নড়তে মানা করছে তো!’ বুড়ো এবার ইজিচেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে খোনা গলায় গর্জে ওঠে, ‘তুই ব্যাটা ফাজিল আমার পয়সায় বেতন খাস, নাকি এই কেলে ডাকাতটার? য়্যাঁ? --- কদিন ধরেই দেখছি আমি, আমার কথাবার্তা তুই একদম কানে নিচ্ছিস না! পাখা গজিয়েছে তোর? দাঁড়া, তোকেও কালকে খেদিয়ে দেবো --- বেল্লিক কোথাকার ---!’ বদরু খাঁ আর বসে থাকতে পারে না, চটেমটে এগিয়ে গিয়ে কষে সেই পেল্লায় পিস্তলের বাঁট দিয়ে এক ঘা বসায় বুড়োর মাথার ওপর। বুড়ো দাঁত ছরকুটে বিশুদ্ধ কায়দায় এলিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ইজিচেয়ারের ওপর। দুলারির মুখে পাতলা একটা হাসির ছায়া খেলে যায়। গুলবদন চেঁচিয়ে ওঠে, ‘জানোয়ার কোথাকার, এ কী করলে তুমি?’ বদরু খাঁ মুহাহাহাহা করে ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে, ‘চোপ! ঐ বিটকেল বুড়োটা জেগে থাকলেই বরং ওর বিপদ বাড়তো। আমার পাকা হাতের নৃশংস কাজকারবার দেখে ঐ কাঁচা হার্ট ফেল করে মরতো ব্যাটা! তারচেয়ে ঘন্টা পাঁচেক ফিট হয়ে পড়ে থাকুক, নিরাপদে থাকবে। ল্যাংটার নাই বাটপারের ভয়!’ মদন উসখুস করছিলো, তার চেহারায় ছাইচাপা আগুনের মতোই একটা ভয়চাপা আনন্দের ভাব, কাল্লু শেখের পরিণতি দেখে তাকে মোটেও দুঃখিত মনে হচ্ছে না। বদরু খাঁ এবার তার দিকে ফেরে। ‘বলো, মোহাব্বত আলি কালু, ওরফে কাল্লু শেখ,’ নাটুকে সুরে বলে বদরু, ‘তোমার গোপন সিন্দুকটা কোথায়?’ মদন খুব ঘাবড়ে যায়, ডানে বামে তাকায়। ‘কী হলো কাল্লু?’ পৈশাচিক হাসে বদরু খাঁ। ‘তোমার দাদুর পরিণতি দেখেও তোমার মনে ভয়ডর জাগেনি? দেবো নাকি কানের পেছনে আলু তুলে?’ মদন গলা খাঁকরায়, ‘দেখুন, আপনি ভুল করছেন ---।’ বদরু খাঁ গর্জে ওঠে, চোখ পাকিয়ে বলে, ‘আমি? ভুল?’ মদন খুব ঘাবড়ে গিয়ে গুলবদনের দিকে তাকায়। বদরু খাঁ গর্জে ওঠে, ‘এ কি লসাগু গসাগু পেয়েছো যে ভুল করবো?’ মদন সিঁটিয়ে গিয়ে বলে, ‘ইয়ে ... হ্যাঁ, ভুল একটা হচ্ছে তো ... মানে উনি আমার দাদু নন ----!’ বদরু খাঁ তাচ্ছিল্যের সাথে বলে, ‘উনি তোমার দাদু না হলে নানা, নানা না হলে ফুপা, ফুপা না হলে তালুই, একটা কিছু হবেন, তাতে আমার কিসসু যায় আসে না হে ছোকরা, তোমার বুড়ো হাবড়া আত্মীয়স্বজন নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। --- কিন্তু এখন আবার বলে বসো না যে তুমি কাল্লু শেখ নও! আমার কাছে অকাট্য চাক্ষুষ প্রমাণ আছে যে তুমিই কাল্লু শেখ!’ মদন খুব ঘাবড়ে যায়, গুলবদনের দিকে তাকায় সাহায্যের জন্যে, তারপর আমতা আমতা করে কিছু বলতে যায়, কিন্তু বদরু খাঁ পিস্তল নাচিয়ে গর্জে ওঠে, ‘চোপ বেওকুফ! কথা কম! কাজ বেশি! কাজের আগে কাজের কথা বলো, তোমার গোপন সিন্দুক কোথায়?’ গুলবদন ঝাঁঝিয়ে ওঠে, ‘গরু কোথাকার!’ বদরু খাঁ গুলবদনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়, ‘ঠিক! এটা আসলেই একটা গরু!’ মদন গলা খাঁকরে বলে, ‘না, মানে ... উনি আপনাকেই গরু বলেছেন ---!’ থেমে যায় সে। বদরু খাঁ যেন বাজ ফেলে গলায়। ‘কী? অ্যাতোবড় সাহস!’ গুলবদনের দিকে ফেরে সে। গুলবদন নির্বিকার মুখে বলে, ‘ঐ ছোকরা কাল্লু শেখ হতে যাবে কেন?’ বদরু খাঁ হাসে ঠা ঠা করে। ‘বটে? এখন সবাই মিলে অস্বীকারের চেষ্টা? আমাকে কী এমনই যদুমধু পেয়েছো যে দুগগি দিয়ে যা খুশি চালিয়ে দেবে? আমি আঁটঘাট বেঁধেই কাজে নামি! --- শোন তাহলে!’ দুলারি শেখের দিকে তার সেই দেখতেভয়ানকশুঁকতেভয়ানকশুনলেপরেআরোভয়ানক বারো ছররার সাইলেন্সার আঁটা দোয়াজদাহাম পিস্তল তাক করে সে। ‘এই মহিলা হচ্ছে দুলারি শেখ, এককালের বিখ্যাত মডেল, প্রাক্তন চাক্কা সাবান ফটোসুন্দরী, কাল্লু শেখের চতুর্থ স্ত্রী? --- অস্বীকার করে কোন লাভ নেই, পেপারে আমি ওর বিস্তর বিকিনি পরা ছবি দেখেছি, এখনও আমার আলমারির দরজায় ওর একটা ওরকম পোস্টার টাঙানো আছে!’ ঘরে উপস্থিত সবাই মাথা ঝাঁকায়, শুধু গুলবদন রোষকষায়িত চোখে একবার দুলারিকে দেখে নিয়ে বলে, ‘এমন কোন বিখ্যাত মডেল ও ছিলো না! জামাকাপড় কম পরলেই বিখ্যাত হওয়া যায় না!’ দুলারি জিঘাংসু দৃষ্টিতে গুলবদনকে আপাদমস্তক দেখে, কিন্তু কিছু বলে না, তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে, যার অর্থ হচ্ছে, সবাই জামাকাপড় কম পরে বিখ্যাত হতে পারে না। ‘আর এ বাড়িতে ঢোকার আগে আমি দেখেছি, এই লোকটা ---,’ মদনের দিকে পিস্তল ফেরায় সে, ‘বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই দুলারি শেখকে রীতিমতো শব্দ করে চুমো খাচ্ছে!’ বিজয়ীর ভঙ্গিতে বলে বদরু খাঁ, আর সারা ঘরে একটা গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। ‘তাহলে এখন আমাকে বলো, ও কাল্লু শেখ না তো কী?’ মদন আর দুলারি ফ্যাকাসে হয়ে যায়, গুলবদন চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, ‘আচ্ছা? তবে এই কান্ড? বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা, অ্যাঁ?’ দুলারি চেঁচিয়ে বলে, ‘মিথ্যা কথা! সব মিথ্যা কথা! এই ... এই গুন্ডাটা,’ বদরু খাঁর দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলে সে, ‘ডাঁহা মিথ্যা কথা বলছে!’ মদনও মাথা ঝাঁকায়। ‘ইয়ে --- মিথ্যা কথা, আমি কখনোই শব্দ করে --- ইয়ে, মানে চুমো খাই না। আমার চুমোগুলি নিঃশব্দ, নির্বাক!" বদরু খাঁ কিন্তু হাসে মিটিমিটি। ‘আচ্ছা? মিথ্যা কথা?’ নিজের ঝোলা হাতড়ে একগাদা ছবি বার করে সে। ‘কিন্তু আমার টেলিফোটো লেন্স লাগানো পোলারয়েড ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোও কি মিথ্যাবাদী?’ ছবিগুলো সে ছুঁড়ে দেয় গুলবদনের দিকে। গুলবদন ছবিগুলো পাকড়ে ধরে উল্টেপাল্টে দেখতে থাকে। প্রথম ছবিটায় দুলারি আর মদন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। দ্বিতীয় ছবিটায় একজন আরেকজনের আলিঙ্গনে। তৃতীয় ছবিটায় তারা চুমো খাচ্ছে। চতুর্থ ছবিটার অবস্থা অতি ন্যাক্কারজনক, কহতব্য নয়! দুলারি ফ্যাকাসে মুখে পাগলের মতো ছুটে যায় গুলবদনের হাত থেকে ছবিগুলো কেড়ে নিতে, কিন্তু তার আগেই বদরু খাঁ গর্জে ওঠে, ‘খবরদার! অ্যাকেবারে গুলি করে চালুনি বানিয়ে দেবো কিন্তু!’ গুলবদন ক্রুর হাসে। ‘আমার হাত থেকে এই ছবি এখন কেউ কেড়ে নিতে পারবে না!’ দুলারির দিকে তাকিয়ে চোখ টেপে সে। দুলারি ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। বাড়ির অন্যেরা একে একে ছবিগুলোর দিকে হাত বাড়ায়। ইলতুতমিশ খাঁ ছবিগুলো হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখে, বিশেষ করে চতুর্থ ছবিটা, তারপর বদরু খাঁর দিকে ফিরে গদগদ গলায় বলে, ‘আপনার হাতটা স্যার সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখা উচিত! কী চমৎকার সব ছবি উঠেছে! বিশেষ করে এই রাতের বেলায় এতো চমৎকার এক্সপোজার আর শাটার স্পিড সেট করে ছবি তোলা তো বাহাদুরের হাতের কাজ! মারহাবা!’ সবাই কড়া চোখে তাকায় ইলতুতমিশের দিকে। কিন্তু গুলবদন দুলারির দিকে ফিরে খ্যাঁক করে ওঠে, ‘আচ্ছা! তাই তো বলি, এর আগের সেক্রেটারি মিস চপলা চর্মকারকে খেদিয়ে দেয়ার জন্যে আমাদের বেগম সাহেবা এতো উদগ্রীব কেন ছিলেন? --- যাতে সেই বেচারা মেয়েটার জায়গায় এই কঅক্ষরগোমাংস, বকলম, আমড়া কাঠের ঢেঁকি, উদখুল মদনটা স্যারের সেক্রেটারি সেজে ওনার সাথে নিয়মিত অবৈধ অশালীন শারীরিক প্রেম চালিয়ে যেতে পারে!’ মদন তেড়ে ওঠে, ‘খবরদার গুলবদন! প্রেম তুলে কথা বলবা না!’ দুলারি তিক্ত গলায় বলে, ‘চপলা মেয়েটা ছিলো একটা নষ্ট বেলেল্লা দুই নাম্বার --- কাল্লুর সাথে প্রেম করার জন্যে হেন কাজ নেই যে সে করেনি! খাটো খাটো টাইট জামাকাপড় পরে থাকতো, সেজে থাকতো শাকচুন্নির মতো, সুযোগ পেলেই গায়ে ঢলে ঢলে পড়তো --- আর সেক্রেটারি হবার কোন যোগ্যতাই তার ছিলো না, আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, সে ইন্টারমিডিয়েটে প্রাণীবিদ্যা আর ভৌত রসায়নে ফেল করেছিলো!’ গুলবদন দাঁতে দাঁত ঘষে। ‘বটে? তাহলে এই উজবুক মদনটা সেক্রেটারি হয় কী যুক্তিতে? --- আমিও তো খোঁজ নিয়েছি ওর সম্পর্কে, ও তো এসএসসি-টাই ঠিকমতো টপকাতে পারেনি, একবার পাটীগণিত আরেকবার ধর্মশিক্ষায় লাড্ডা মেরে পড়াশোনার পাটই চুকিয়ে দিয়েছে! চপলা চর্মকার বরং মদনের চেয়ে অনেক বেশি কোয়ালিফায়েড ছিলো! --- আর খাটো টাইট জামা আর শাকচুন্নির মতো সাজগোজের কথা বলছেন? আপনি যে এর বিরূদ্ধে কথা বলবেন তা কখনো ভাবতে পারিনি! --- আর ওসব তো স্যারই তাকে পরার পরামর্শ দিয়েছিলেন, বেচারির কী দোষ?’ মদন একটা কিছু বলতে গিয়ে চুপ করে যায়। কিন্তু দুলারি হাল ছাড়ে না, দিশেহারার মতো বলে, ‘আর --- আর স্ত্রী হিসেবে আমার কর্তব্য ছিলো ওরকম নষ্ট একটা মেয়েমানুষের হাত থেকে আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখা, ওই ধিঙ্গি ছেমরির সাথে পাল্লা দিয়ে প্রেম করতে গেলে কাল্লু কবে হার্টফেল করে মরতো!’ এবার কথা বলে ওঠে ইলতুতমিশ, ‘কিন্তু ম্যাডাম, ছবিগুলো দেখে তো মনে হচ্ছে স্ত্রী হিসেবে আপনি কিছু অকর্তব্যও পালন করছেন ইদানীং, এই চার নাম্বার ছবিটার কথাই ধরুন না,’ ছবিটা বাড়িয়ে দেয় সে, ‘যদিও স্যারের হার্ট খুবই চালু জিনিস, আপনার জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে অনেক অ্যাডভেঞ্চারমূলক কার্যকলাপের সাথেই তিনি জড়িত --- কিন্তু এটা দেখলে তো স্যারের হার্ট তো হার্ট, কাঠের গোড়ালিটা পর্যন্ত ফেল করবে!’ ছবিটা দেখে দুলারির মুখ সাদা হয়ে যায়, সে কুচি কুচি করে সেটাকে ছিঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে ওঠে, ‘মিথ্যা! এই ছবি মিথ্যা! কম্পিউটারে বানানো! ইন্টারনেট থেকে নামানো! ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ ডট দুষ্টুমেয়ে ডট কম থেকে কপি করা! এই --- এই গুন্ডাটা,’ বদরু খাঁকে দেখিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে সে, ‘সব সাজিয়ে এনেছে আমাকে হেনস্থা করার জন্যে! বদরু খাঁ এতক্ষণ একটা সোফায় বসে সব শুনছিলো মনোযোগ দিয়ে, কী ঘটছে, কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। কিন্তু মিথ্যার অভিযোগ শুনে সে আর চুপ করে থাকতে পারে না --- আর যাই হোক না কেন, সে ভদ্রবংশের ছেলে --- ক্ষেপে উঠে ঝোলা হাতড়ে একটা ক্যাসেট রেকর্ডার বের করে। ‘এটাও তাহলে মিথ্যা? --- শুনুক সবাই!’ বোতামে চাপ দিতেই শোনা যায়, শব্দ, শুনে মনে হতে পারে গাছ থেকে পুকুরে তাল পড়ছে, ঝপাস চকাস ফটাস, কিন্তু উপস্থিত সবাই বুঝে ফেলে, এটা সেই পূর্বোল্লেখিত চুমোর বজ্রাদপি কঠোর আওয়াজ ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। এবং সুধীজনের ধারণাকে সমর্থন যোগায় একটা নারী কন্ঠস্বর, ‘ওহ, মদন, কী যে করো না, দুষ্টু!’ মদনের পৈশাচিক হাসি শোনা যায়, ‘কী যে করি মানে? মুহাহাহাহা!’ তারপর শোনা যায় নারীকন্ঠের আদুরে ধমক, ‘হচ্ছেটা কী, অ্যাঁ? জানোয়ার!’ মদন খ্যাক খ্যাক করে হাসে আর খেঁকশিয়ালের ডাক নকল করে ডাকতে থাকে, ‘হুক্কা হুয়া ---।’ বদরু খাঁও সেভাবেই হেসে ক্যাসেট প্লেয়ারটা বন্ধ করে ঝোলায় পুরে রাখে, তারপর ইলতুতমিশের হাত থেকে ছবিগুলো ছিনিয়ে নেয়। ‘কী বোঝা গেলো এবার? এই ছোকরা হচ্ছে দুলারি শেখের স্বামী, কাল্লু শেখ!’ কিন্তু তার এই সরল অনুসিদ্ধান্তকে কেউ পাত্তা দেয় না, সবাই চোখ পাকিয়ে তাকায় দুলারির দিকে। দুলারি ফুঁপিয়ে ওঠে, ‘এটা মোটেও আমার গলার স্বর নয়! এটা --- এটা এই সোহাগীর গলার আওয়াজ!’ ইলতুতমিশের বউয়ের দিকে আঙুল তুলে দেখায় সে। ‘এত বড় সাহস, লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির সেক্রেটারির সাথে প্রেম করো!’ সোহাগী ফুঁসে ওঠে, ‘ছবিগুলোও তো আমার, তাই না?’ ওদিকে গুলবদন নিষ্ঠুর হাসে। ‘আর মদনের মতো একটা মদনের সাথে সোহাগী কেন প্রেম করতে যাবে, যেখানে দিলদার বেগের মতো একটা শক্ত সমর্থ জোয়ান ধারেকাছে আছে?’ ইলতুতমিশ খাঁ আঁতকে উঠে সোহাগীর দিকে তাকায়। সোহাগী ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও সামলে ওঠে, বলে, ‘অন্যের নামে মিথ্যা কলঙ্ক রটানোর আগে হাটে নিজের হাঁড়িটাই ভাঙেন, ম্যাডাম গুলবদন! আপনি যে বামন হয়ে প্রায়ই চাঁদে হাত দিয়ে বসেন, খোদ স্যারের সাথেই ইঙ্কিলিঙ্কি করেন, তা এই বাড়ির সবাই জানে!’ ইলতুতমিশ খাঁ সমর্থন যোগায় তার বউকে, ‘ঠিক ঠিক!’ দুলারি চোখ পাকায়, ‘আচ্ছা, তাই নাকি?’ গুলবদন একটুও ঘাবড়ায় না। ‘বাড়ির সবাই ঘোড়ার ডিম জানে। আমার নামে এইসব উদ্ভট গুজব কেউ বিশ্বাস করবে না, কারণ আমার কাজ তো স্যারের ধারেকাছে নয়। তাছাড়া বিজলি বানুর মতো এমন একটা শাঁসালো ছেমরি হাতের নাগালে থাকতে আমার মতো এক পড়ন্তযৌবনার সাথে স্যার ইঙ্কিলিঙ্কি করবেন, সেটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়!’ বিজলি বানু ফুঁপিয়ে ওঠে, ‘মিথ্যা কথা! আমি কখনো ওনার হাতের নাগালে যাই না --- উনি খুব খাচ্চর প্রকৃতির লোক!’ এদিকে দুলারি বড় গলায় চোখ লাল করে বলে, ‘হাতের নাগালে না গিয়ে তুই বুঝলি কিভাবে যে ও খাচ্চর প্রকৃতির লোক?’ বিজলি বানু মদনের দিকে আঙুল তুলে বলে, ‘ঐ যে, মদন ভাই সাবধান করে দিয়েছেন!’ সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মদনের এহেন পরোপকারে। কিন্তু পুরনো কথার খেই ধরে ইলতুতমিশ হাসে, ‘পড়ন্তযৌবনা? পড়ন্ত? আর কদ্দিন ধরে পড়তে থাকবে, য়্যাঁ? মাধ্যাকর্ষণটর্ষণ কী সব উঠে গেলো দুনিয়া থেকে? নাকি আপনি ভাবেন, আপনার আকর্ষণ মাধ্যাকর্ষণের চেয়েও বেশি কাবিলি? --- হে হে হে গুলবদন, পড়ন্ত নয়, বলুন পতিতযৌবনা --- অথবা গতযৌবনা! আর কতদিন ছুকরি সেজে স্যারের সাথে এইসব অসামাজিক কারবার চালিয়ে যেতে চান?’ গুলবদন এবার ক্ষেপে ওঠে, দাঁত খিঁচিয়ে বলে, ‘খবরদার ইলতু! বাংলায় এম এ পাশ করেছো বলে বেশি ব্যকরণ ফলাতে এসো না আমার সাথে, যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা? ইন্টারমিডিয়েটে ফেল করা মিস চপলা চর্মকারকে চাকরি দেয়ার জন্যে সুপারিশ কে করেছিলো, শুনি? আর তাকে খেদিয়ে দেয়ার সময় কে সবচে বড় গলায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলো? --- শোনো লম্পট ইলতুতমিশ খাঁ, তোমার কান্ডকারখানাও আমার সব জানা!’ সোহাগী এবার কড়া চোখে ইলতুতমিশের দিকে তাকায়। চাপা গলায় বলে, ‘আচ্ছা, তাহলে তলে তলে এইসব করা হয়?’ ইলতুতমিশ উদাস চোখে তাকায় দাঁত বের করে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা দিলদার বেগের দিকে, তারপর বলে, ‘গুলবদন ম্যাডাম এই দিলদারের কথা কী যেন বলছিলেন ---?’ অমনি সোহাগী বলে, ‘থাক, এই গুলবদনের বাজে কথায় কান দিয়ে কোন ফায়দা নেই, বুড়ি বেটি, যা মুখে আসে বলে যায় ---।’ ইলতুতমিশ মাথা ঝাঁকায়, ‘হ্যাঁ, আমিও তো তা-ই বলি!’ দুলারী শেখ রোষকষায়িত চোখে তাকায় বিজলি বানুর দিকে, চাপা গলায় বলে, "বটে?" গুলবদন মদনের দিকে তাকিয়ে গর্জন ছাড়ে, "খালি মনিবের পাতে হাত, য়্যাঁ?" ইলতুতমিশ কী যেন বলতে যাচ্ছিলো, এমন সময় বদরু খাঁ এক হাঁক ছাড়ে নীলনদের জলহস্তির মতো, ডিসকভারি দেখে বহুকষ্টে রপ্ত করা সে হাঁক, যা শুনলে যে কোন মানুষের রক্ত জল হয়ে যেতে বাধ্য। এই হাঁকডাকে কাজ হয়। ঘরের সবাই চুপ করে একে অপরের দিকে তাকায়। বদরু খাঁ হুঙ্কার ছেড়ে মদনকে বলে, ‘বলো কাল্লু শেখ, কোথায় তোমার গোপন সিন্দুক?’ মদন ফ্যাকাসে মুখে অজ্ঞান কাল্লু শেখকে দেখিয়ে বলে, ‘উনি জানেন!’ বদরু খাঁ দাঁত কিড়মিড় করে। বলে, "দ্যাখো, টাইগারের লেজ দিয়ে কান চুলকাচ্ছো কিন্তু! আমি কিন্তু রেগে গেলে চেতে যাই! ভালোয় ভালোয় বলো, সিন্দুক কোথায়, নয়তো," সে পিস্তল তাগ করে ভূপাতিত কাল্লু শেখের দিকে, "তোমার এই বুড়ো মুরুব্বির তালুতে আরো একটা আলু তুলে দেবো কিন্তু!" মদন হাতজোড় করে বলে, "ভাই, আমি কাল্লু শেখ না! কাল্লু শেখ হতে চাইও না। আমি শুধু প্রেমপিয়াসী এক আত্মা, যে শুধু সন্ধান করে ভালোবাসার অমৃত ধারা ...।" ইলতুতমিশ তেড়ে আসে, তর্জনী উঁচিয়ে গর্জন করে ওঠে, "খবরদার! ভালো হবে না বলে দিচ্ছি! ওটা তুমি আমার কবিতা থেকে চোথা মেরেছো!" মদন ভাবুক চোখে তাকায় ইলতুতমিশের দিকে, বলে, "ও হ্যাঁ, তাই তো, চপলাকে উৎসর্গ করে লেখা তোমার সেই কবিতা, "গুপ্ত ভালোবাসার দুয়েন্দে" না কী যেন ...।" বদরু খাঁ মহা ক্ষেপে গিয়ে দোয়াজদাহাম পিস্তল বাগিয়ে ধরে। "অনেক হয়েছে, আর না! এইবার গুল্লি চলবে গুল্লি!" সবাই ঘাবড়ে গিয়ে চুপ করে যায়। (চলবে শিগগীরই)
false
rn
টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা-৫ "তোমাকে নিয়ে যে ছোট খাটো তামাশা করেছি ক্ষমা করো,হে বিধাতা,আমাকে নিয়ে যে তোমার বিরাট ঠাট্রা ক্ষমা করে দেবো আমিও তা"।(ভালোবাসা নিয়ে আমার ধারনা,এটা একটা অদ্ভুত জিনিস।ভালোবাসা টা বিষন ভাবে পরির্বতনশীল।)আমি তাকালাম আয়নার দিকে।আয়নায় আমাকে কি সুন্দর দেখাচ্ছে!শান্ত সরল বিনয়ী চেহারার একটা ছেলের মুখ।প্রতিটি মানুষের আসলে নিজের সঙ্গে নিজের একটা সময়ের দরকার আছে।জীবনের অনেক বাঁক থাকে নদীর মতো।আমাদের এই দেশটা খুব ছোট।এখানকার মিডিয়া আরো ছোট।এই ছোট মিডিয়াতে মধ্যম মানের লোকজন এতো বেশী দাপটের সঙ্গে কাজ করছে যে তাতে সাহিত্য হোক,নাটক হোক,সেখানে রিয়েল ট্যালেন্ট'রা মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়াতে পারছে না।ইয়েলো জার্নালিজম মানুষের জীবনের টোটাল প্রাইভেসি কেড়ে নিচ্ছে।এটা ঠিক নয়।প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে একাকিত্ব থাকে।একজন পুরুষ কিন্তু একজন নারী'র জীবনের সব নয়।বা একজন নারী একজন পুরুষের জীবনের সব সমস্যা'র সমাধান নয়। যার যার নিজস্ব জীবনের দায়বব্দতা তার নিজের'ই।আমি বিশ্বাস করি ভালো মানুষ জীবনে ঠকে না।হোচট খায় হয়তো কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় তার হবেই।আমাকে দুঃখের শ্লোক কে শোনাবে?কে দেখাবে আমাকে দুঃখের চিহ্ন কী এমন,দুঃখ তো আমার সেই জন্ম থেকে জীবনেরএকমাত্র মৌলিক কাহিনী।আমার শৈশব বলে কিছু নেইআমার কৈশোর বলে কিছু নেই,আছে শুধু বিষাদের গহীন বিস্তার।দুঃখ তো আমার হাত–হাতের আঙুন–আঙুলের নখদুঃখের নিখুঁত চিত্র এ কবির আপাদমস্তক।আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুখী নই,দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয়, যে আমাকে দুঃখ দেবে।আমার একেকটি দুঃখ একেকটি দেশলাই কাঠির মতন,অবয়ব সাজিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দরের কালো কালো অগ্নিতিলকে,পাঁজরের নাম করে ওসব সংগোপনেসাজিয়ে রেখেছি আমি সেফ্‌টি-ম্যাচের মতো বুকে।লেখার কোনো স্বতঃস্ফূত বিষয় খুঁজে পাচ্ছি না।তার চেয়ে বরং নিজের কথা নিজে খানিকটা বলে যাওয়াই নিরাপদ মনে করি।'এমন চাঁদের আলো/মরি যদি সেও ভালো/সে মরন স্বর্গ সমান।'একবার আরিচা ফেরী ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছি,এমন সময় এক বাউল আমার দিকে তাকিয়ে বললো,'দেখো খুঁজে পাও কিনা'।বাউল ফকিরের সেই কথাটি আমার আজও মনে আছে।একদিন বিকেলে 'হিমি' আমাকে বলে শিল্পী ও কবি মন নিয়ে আজ পৃথিবীকে ঢেলে সাজানো দরকার আমাদের সমস্ত বুদ্ধি,অনুভূতি,স্বপ্ন দিয়ে।আমার ঘর থেকে আকাশ দেখা যায়।বাইরে বেড়িয়ে আমি প্রথমে আকাশের দিকে তাকাই।'হিমি'র কথা ভেবে আমি আকাশ দেখি।বিশাল রহস্যময় নীল আকাশ,'হিমি' আমার বন্ধ ঘরের দরজা খুলে দিয়েছে।আমার মতো অখ্যাত লোকের মস্ত সুবিধে এই যে,আমার লেখা কোনো পএ পএিকায় ছাপা হবে না,খ্যাতি যেমন আমার নেই,তেমন পাড়া মহল্লার গন্ডমূর্খদের আমাকে সমালোচনা করার অধিকার ও আমি দেইনি।বিখ্যাত লোকের বিচারক সকলেই তাদের সে বিচারের যোগ্যতা থাক আর নাই-ই থাক।আমার বিচারের ভার রইল শুধু 'হিমি'র হাতে।আমার 'হিমি'র হাতে।একসঙ্গে এত কথা মনের মধ্যে ভীড় করে আসছে যে,গুছিয়ে লিখতে পারছি না।ভালো থেকো হিমি,সব সময় ভালো থেকো।নিঃস্বার্থভাবে মঙ্গল কামনা করার অন্তত একজন লোকও তোমার রইল,বড় কম পাওয়া বলে ভেব না।বিশ্বাস করো।মানুষ যাকে কাছে রাখতে চায়,তাকে দূরে দূরে রাখাই বুঝি কাছে রাখার একমাএ উপায়।বড় বেশী কাছাকাছি ঘেঁষাঘেঁষি বেশীদিন থাকলে ভালো লাগার,ভালোবাসার রঙ টা হালকা হয়ে যায়।হিমি,সব সময় আমাকে মনে পড়ার দরকার নেই।পড়বে যে না সেও জানি।মাসে কি বছরে কোনো বৃষ্টির রাতে অবসর মুহূর্তে হঠাৎ অচেনা ফুলের গন্ধের মতোন,আমার কথা যদি মনে পড়ে তোমার,তাহলেই আমি ধন্য বলে জানবো নিজেকে।আমার স্বপ্ন আর ভাবনা টুকু ছাড়া নিজের বলতে আর কিছুই নেই।হিমি,আমরা সকলেই হয় ভবিষ্যতের জন্য বাঁচি অথবা অতীতের সৃস্তি মন্থন করে,কিন্তু বাঁচা উচিত শুধু বর্তমানে।কারন,বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তের মালা গেঁথেই জীবন।হিমি'র অল্পতেই চোখে জল আসে।তাই তো আমি নিঃশেষ হতে গিয়েও হই না।অটল বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে থাকি অফুরন্ত প্রান শক্তি নিয়ে।'হিমি' আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করে-আচ্ছা,তুমি কেমন মানুষ বলতো?পৃথিবীর সব কিছুর ভেতর শুধু ইভিল,নষ্টামি,বীভৎসতা চোখে দেখ।আবার আবেগ প্রবনও।আমি একটু হেসে হিমি'কে বলি-"আমরা যতটা দূরে চলে যাই-চেয়ে দেখি আরো কিছু,আছে তার পরে।(লেখাটিতে হেলাল হাফিজ এর একটি কবিতা ব্যবহার করেছি।)
false
rg
নতুন স্পিকার নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতির প্রতি চরম উপহাস কোনো একটি দেশের জাতীয় সংসদ সেই দেশের জাতির প্রতীক। আর স্পিকার হলেন সেই সংসদের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জনগণের সরাসরি ভোটে ৩০০ জন সাংসদ নির্বাচিত হন। বর্তমানে জাতীয় সংসদে ৫০ জন সংরক্ষিত মহিলা সাংসদের আসন রয়েছে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন বাস্তবে সংসদের ৩০০ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের দল বা দলসমূহের জন্য একটি বোনাস। সুতরাং সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে স্পিকার নির্বাচন করার অর্থ হল সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ‘বোনাসের’ অপব্যবহার। এরই ধারাবাহিকতায় এখন এটা কী বলা যায় যে, ভবিষ্যতে সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে জাতি ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীকেও বেছে নিতে পারবে? তার মানে এই প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত না হয়েও বাংলাদেশে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা সম্ভব! স্পিকারকে বলা হয় দেশের ছায়া রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি'র অনুপস্থিতি বা অকালপ্রয়ান বা যেকোনো কারণে যে কোনো সময় তিনি হয়ে উঠতে পারেন জাতির অভিভাবক। প্রতিবেশী ভারত আর পাকিস্তানের বর্তমান স্পিকার দুইজনই নারী। ২০০৮ সালে পাকিস্তানে প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন ফাহমিদা মির্জা। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। ৫২ বছর বয়স্কা মির্জা একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবেও স্বীকৃত। স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার সময়ে তিনি ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে ২৪৯ ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৯ সালে ভারত সর্বসম্মতিক্রমে অস্পৃশ্য সমাজ থেকে স্পিকার হিসেবে যাঁকে তুলে আনেন তিনি শুধু একজন নারী নন, তিনি একজন দলিত, মীরা কুমার। মীরা কুমার ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রী জগজীবন রামের মেয়ে। মীরা কুমার ভারতের লোকসভায় পাঁচবারের নির্বাচিত সাংসদ। স্পিকার হওয়ার আগে মীরা কুমার পাঁচ বছর পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া ১৪ জানুয়ারি ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরে প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত হালিমা ইয়াকুব। হালিমা ইয়াকুব প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়ে স্পিকার হয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর কোথায় পার্থক্য? হালিমা ইয়াকুব একজন নন্দিত শ্রমিকনেত্রী। স্পিকার হওয়ার আগে তিনি টানা এক যুগ ছিলেন একজন নির্বাচিত এমপি। আর আমাদের নব নির্বাচিত স্পকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৩১ নং সাংসদ ছিলেন। পরে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। জীবনে কখনোই জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হননি। এখন আমাদের এই নতুন নির্বাচিত স্পিকারকে কী ভারত, পাকিস্তান বা সিঙ্গাপুরের মহিলা স্পিকারদের সঙ্গে তুলনা করা সস্ভব? বুঝলাম বাংলাদেশ এই প্রথম একজন নারী স্পিকার বানালো। কিন্তু সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে স্পিকার বানানোর এটিই দেশে প্রথম রেওয়াজ। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কী ৩০০ জন নির্বাচিত সাংসদের কেউ স্পিকার হবার মত যোগ্য নন? বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র কাছে আস্থা সংকটে ভোগেন? বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যাঁরা স্পিকার হয়েছেন তাঁরা হলেন-১. শাহ আবদুল হামিদ (মেয়াদ: ১০ এপ্রিল ১৯৭২ থেকে ১ মে ১৯৭২)২. মোহাম্মদ মোহাম্মদুল্লাহ (মেয়াদ: ৭ এপ্রিল ১৯৭৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি ১৯৭৪) ৩. আবদুল মালেক (মেয়াদ: ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৪ থেকে ৫ নভেম্বর ১৯৭৫) ৪. মির্জা গোলাম হাফিজ (মেয়াদ: ২ এপ্রিল ১৯৭৯ থেকে ২৩ মার্চ ১৯৮২)৫. শামসুল হুদা চৌধুরী (মেয়াদ: ১০ জুলাই ১৯৮৬ থেকে ২৪ এপ্রিল ১৯৮৮)৬. শামসুল হুদা চৌধুরী (মেয়াদ: ২৫ এপ্রিল ১৯৮৮ থেকে ৫ এপ্রিল ১৯৯১)৭. আবদুর রহমান বিশ্বাস (মেয়াদ: ৫ এপ্রিল ১৯৯১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১)৮. শেখ রাজ্জাক আলী (মেয়াদ: ১২ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে ১৯ মার্চ ১৯৯৬)৯. শেখ রাজ্জাক আলী (মেয়াদ: ১৯ মার্চ ১৯৯৬ থেকে ১৪ জুলাই ১৯৯৬)১০. হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (মেয়াদ: ১৪ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১)১১. অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ (মেয়াদ: ১২ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১)১২. ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার (মেয়াদ: ২৮ অক্টোবর ২০০১ থেকে ২৫ জানুয়ারি ২০০৯)১৩. অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ (মেয়াদ: ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০১৩)১৪. শওকত আলী (ভারপ্রাপ্ত স্পিকার, মেয়াদ: ২৪ এপ্রিল ২০১৩ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০১৩)১৫. ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী (মেয়াদ: ৩০ এপ্রিল ২০১৩ থেকে বর্তমান)বর্তমান স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী এখন রাষ্ট্রের তিন নম্বর গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্নীত হলেন। কিন্তু যে অরাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে বাছাই করা হল তা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সাংসদ এবং জাতীয় রাজনীতির জন্য একটি ভয়ংকর লজ্জা। সংসদীয় গণতন্ত্রের আলোকে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চায় এটি একটি প্রতিষ্ঠানগত বিপর্যয়ের উদাহরণ হয়ে থাকবে। অর্থাৎ তৃণমূল জনগণের সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকলেও শুধুমাত্র ব্যক্তির প্রতি আনুগত্যের মানদণ্ডে ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হলেন। এটা গোটা সংসদীয় রাজনীতিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার দেউলিয়াত্বই কেবল প্রমাণ করে না, বাংলাদেশকে এর জন্যে হয়তো কোনো মহাসংকটের সময়ে কড়ায় গণ্ডায় চড়া মূল্যই দিতে হবে।
false
mk
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনই ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র সংবিধান স্বীকৃত পথ এশিয়ার দেশগুলোতে বর্তমানে অর্থনৈতিক উত্থান ঘটছে। এর মধ্যে চীন ও ভারতের অর্থনীতি সুপারসনিক গতিতে এগোচ্ছে। এভাবে এগোতে থাকলে আগামী এক দশকে বিশ্ব অর্থনীতির মূল কেন্দ্রস্থল হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতিও সন্তোষজনক। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে, কার অধীনে হবেÑ এ নিয়ে এখনো কোনো যৌক্তিক মীমাংসায় আসতে পারেনি দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন আর প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে উল্টো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এখনো দেশের প্রধান দুটি দল বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। এই অবস্থায় দেশের কয়েক কোটি অভিভাবককে আতঙ্কিত করেছে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংঘাত। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের রূপরেখার বিষয়ে এখনো দুই রাজনৈতিক দল একমত হতে পারেনি। আর এ সংকট রাতারাতি দূর হওয়ার কোনো আভাসও পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং সংবিধান ঠিক রেখে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই জটিল। প্রায় একই ধরনের জটিলতা ছিল ২০০৬ সালের নির্বাচনকে ঘিরে। তাই প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়, দেশে আবারো ১/১১ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কিনা? একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনই ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র সংবিধান স্বীকৃত পথ। এর ব্যত্যয় হলে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি খুশি হবে। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে না। রাজনীতিবিদদের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না, যাতে অন্য কোনো অগণতান্ত্রিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। সিভিল সোসাইটি এবং মিডিয়ার এমন কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না, যাতে গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হয়। তাই নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। গত ৪২ বছরে আমাদের রাজনীতিবিদরা নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করতে পারলেন না। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। নির্বাচন পদ্ধতি রাজনীতিবিদদেরই সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আর আগামী নির্বাচন অবশ্যই যথাসময়ে হতে হবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে সব বলা আছে। কীভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে তাও বলা আছে। কেউ সংবিধান সংশোধন করতে চাইলে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসুন। জনগণের ন্যায্য অধিকার গণতন্ত্রই দিতে পারে।
false
fe
ক্রান্তিকালের রাষ্ট্রপতি ও রাজনীতিকদের দেশপ্রেম ক্রান্তিকালের রাষ্ট্রপতি ও রাজনীতিকদের দেশপ্রেমফকির ইলিয়াস===========================================সম্মানিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন জনাব আব্দুল হামিদ এডভোকেট। দেশের কৃতী স্পিকার ছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে। তিনি যে রাষ্ট্রপতি হবেন, তা আমি আগেই অনুমান করেছিলাম। আরো কয়েকটি নাম উচ্চারিত হলেও তিনিই যে বেশি গ্রহণযোগ্য, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। আব্দুল হামিদ গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষ। তৃণমূল রাজনীতিক বলতে যা বোঝায়, তিনি তার প্রতিকৃতি। তার এলাকার মানুষের কাছে তিনি কিংবদন্তিতুল্য। বারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। মাননীয় স্পিকার হয়েছেন। এটা তার দেশপ্রেমের প্রতিদান। আমি খুব সুদৃঢ়ভাবে বলতে পারি, তিনি এদেশের একজন পরিশীলিত, পরীক্ষিত রাজনীতিক। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সরকার চলতি বছর আবদুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। এ উপলক্ষেই জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার শুরুতে আবেগাপ্লুত আব্দুল হামিদ রুমালে চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘এই সংসদে আমি ৪২ বছর কাটিয়েছি। আজকের দিনটা আমার জন্য বিষাদের। যেখানেই থাকি মন এখানেই থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো বঙ্গভবনেই থাকবো। তবে অন্য রাষ্ট্রপতির চেয়ে আমি বেশি সংসদে আসবো।’ আব্দুল হামিদ বলেছেন- ‘এমন এক সময়ে আমি দায়িত্ব পাচ্ছি, যখন রাষ্ট্রের জন্য ক্রান্তিকাল। আল্লাহ জানে কী করে ইজ্জতের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবো।’ হ্যাঁ, দেশ এখন চরম ক্রান্তিকালের মুখোমুখি। যারা খোলস পরে ছিল- তাদের মুখোশ খসে পড়তে শুরু করেছে। খবর বেরিয়েছে, আমার দেশের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অনশন ভাঙার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী। চিঠিতে মাহমুদুর রহমানকে উদ্দেশ করে আল্লামা শফী বলেন, ‘সরকার আপনাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। আপনার পত্রিকা অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। আপনি পত্রিকা চালু, গ্রেপ্তারকৃত ১৯ জনকে মুক্তি ও আপনার মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যে অনশন শুরু করেছেন এটা অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে।’ তিনি বলেন, ‘আপনি নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। এখন আপনি জেলে থেকে এই সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন। এর জন্য আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।’ আল্লামা শফী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই আপনাকে গ্রেপ্তারে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। আবারো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আপনি এই অনশনের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। আপনার এই প্রতিবাদ ইতিহাস হয়ে থাকবে।’ এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বুঝা যাচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের মূল চাল কোথা থেকে এসেছে। এ বিষয়ে এটিএন নিউজে কিছু চমৎকার কথা বলেছেন দেশের বিশিষ্ট লেখক বুদ্ধিজীবী ড. সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, এসব ঘটনার মূল নেপথ্য নায়ক ফরহাদ মজহার ও মাহমুদুর রহমান। যারা ‘ইসলামি যোশের’ কথা মিথ্যা ভরপুর করে কাগজে ছাপিয়ে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করেছে। এরাই হেফাজতের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে। আর ম্যাডাম জিয়া এটাকে ‘গণহত্যা’ বলতেও কসুর করছেন না। হেফাজতে ইসলাম যে জামাতের পারপাস সার্ভ করছে, তা এখন আর লুকানো বিষয় নয়। আর সরকার চাইছে ডিভাইড এন্ড রুল। তারা চাইছে ‘কিছু ভোটও যদি হেফাজতের কাছ থেকে পাওয়া যায়!’ খবর বেরিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে দলটি আগের অবস্থানেই রয়েছে। পাশাপশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা হবে বলে আওয়ামী লীগ। যদি তাই হয়, তাহলে এদেশের রাজনীতির ভবিষ্যত কী? সে প্রশ্নও আসছে। এটা নিশ্চিত, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন বিশ্বমহলে গৃহীত হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যদি নাও আসে, সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতেই হতে পারে নির্বাচন। এটা করার জন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। আমরা অতীতে দেখেছি, বিএনপিও সংবিধান রক্ষার নামে নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে চেয়েছে। যা এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। মেনে নেয়নি আওয়ামী লীগও। তাহলে আজ বিএনপি একতরফা আওয়ামী লীগের ‘সংবিধানের দোহাই’ মেনে নেবে কেন? দেশের মানুষের স্বার্থ দেখার নামই রাজনীতি। খুবই দুঃখের কথা এদেশে সেই পলিটিক্যাল কালচার চালু হয়নি। আর হয়নি বলেই এই চরম দুর্গতি অতিক্রম করছে গোটা জাতি। সেই সুযোগে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তি ঢুকে পড়ছে ‘প্রগতিবাদী’ দাবিদার রাজনীতিকদের পকেটে। বাংলাদেশ একটি চরম সংকটকালের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। অনেক দুঃসংবাদ এখন বাংলাদেশের ভাগ্যে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে পোশাক শিল্পের বিদেশী ক্রেতারা। নতুন ক্রেতা তো আসছেই না, পুরোনোরাও খুঁজছেন নতুন বাজার। হরতালসহ রাজনৈতিক নানা অস্থিরতায় পোশাক শিল্পের বিদেশী ক্রেতারা নতুন বাজার হিসেবে কম্বোডিয়া, ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে ইতোমধ্যেই যোগাযোগ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বছর খানেক আগে বিদেশী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ব্যবসায়ী মহল থেকে। বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম বলেছেন, ‘পোশাক শিল্পের ক্রেতা তৈরি করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে মালিক ও শ্রমিকদের। অথচ এতো কষ্টের পর যখন অর্ডার পাওয়ার সময়, তখনই পিছিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলের ক্রেতারা। চলতি মৌসুমই ছিল ওসব দেশের সিজন। কিন্তু তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। সুতরাং অর্ডারও সেভাবে পাওয়া যাবে না।’ দেশের পোশাক শিল্পের কর্ণধাররা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত, দেশের অর্থনীতির ওপর আঘাত আসা মানে পরোক্ষভাবে দেশের জনগণের ওপরই আঘাত আসা। আর তাদের এমন কোনো কর্মসূচি দেয়া উচিত না যাতে করে দেশের অর্থনীতি ও মানুষ বিপদে পড়ে। কারণ পোশাক শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ৪০ লাখ কর্মী ও তাদের পরিবারের জীবন জড়িত। এভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশের কোটি কোটি মানুষই বিপদে পড়বে। দেশ যে এভাবে বিপন্ন হচ্ছে, তা কী অনুধাবন করছেন রাজনীতিকরা ? না করছেন না। কারণ তাদের বিশেষ কোনো গরজ নেই। তাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশগামী। আর দেশের গরিব মানুষরা প্রতিদিন যুদ্ধ করছে অনেকগুলো অনিশ্চয়তার মাঝে। দেশের আজ প্রধান সমস্যা হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগের লালসা। ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের ভারসাম্যতা রক্ষা প্রসঙ্গে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী, প্রয়াত শিবনারায়ণ রায়ের একটি কথা এখানে প্রণিধানযোগ্য। শ্রী রায় নিউইয়র্কে এলে তার সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। প্রখর মানবতাবাদী শিরনারায়ণ রায় খুব তীক্ষè কথাবার্তা বলতেন। বিশ্ব রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘বুর্জোয়া শ্রেণীর কাজই হচ্ছে চোরাগোপ্তা রক্ত ঝরিয়ে তা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে ক্ষমতা ধরে রাখা কিংবা প্রতিষ্ঠা অর্জনের জন্য তারা যে কোনো মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং উসকানিকে নিজের দরকার মতো প্রশ্রয় দেয়।’ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য উদার কিছু মানুষের দরকার। জিল্লুর রহমান কিংবা আব্দুল হামিদ এই আওয়ামী লীগ থেকেই উঠে আসা মানুষ। জাতির জনকের চেতনায় বলীয়ান শক্তি এরা। এদেশে এমন রাজনীতিকের জন্ম যতো বেশি হবে ততোই মঙ্গল হবে দেশ ও জাতির। আমি খুব সুদৃঢ়ভাবেই মনে করি রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবতার সৌন্দর্য নির্মাণ। আর তা নির্মাণ করার প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে ভোগহীন মানসিকতা গড়ে তোলা। মনে পড়ছে, ২০০৫ সালের এক গ্রীষ্মে নিউইয়র্কের পঞ্চম এভিনিউ দিয়ে গ্রিক ডে প্যারেডের মার্শাল হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রভাবশালী সিনেটর চার্লস শুমার। নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে তার সঙ্গে খোলা প্যারেডে আমিও হেঁটে গিয়েছিলাম প্রায় দুমাইল। এ সময় তিনি নিউইয়র্কের প্রাচীন ল্যান্ডমার্ক ভবনগুলোর সামনে দিয়ে যেতে যেতে নানা স্মৃতিচারণ করছিলেন। বলেছিলেন, তার কৈশোরে দেখা নিউইয়র্ক মহানগরীর কথা। সিনেটর শুমার বলেছিলেন, স্টেটের আইন অনুযায়ী এসব ল্যান্ডমার্ক ভবন ভাঙা যাবে না বলে আইন রয়েছে। এসব ভবন সংস্কার, পুনর্নির্মাণ করতে হলেও ল্যান্ডমার্ক চিহ্নগুলো রেখে সরকার পক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে। শুমার বলেছিলেন, রাজনীতিকরা শুধু আইন প্রণয়নই করেন না রাষ্ট্র সম্পত্তির চৌকিদারিও তাদের করতে হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন নিসর্গ পাহারাদার কবে পাবো আমরা? শুরুতেই বলেছি, চরম সংকটের মাঝেই দায়িত্ব নিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তার পাঁচ বছর এই পদে থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু যদি তার দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে জিততে না পারে, তাহলে তার পথ খুব কুসুমাস্তীর্ণ হবে না। তাকে অন্য পক্ষ ইমপিচও করতে পারে। সব মিলিয়ে একটা দ্বিধার সমুদ্র সামনে রেখেই তিনি বঙ্গভবনে যাচ্ছেন। তবুও কামনা- তার চলার পথ আলোকিত হোক। তিনি এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি। আর সেই মানুষদের আশাই হোক তার মননের প্রতিভূ। অভিনন্দন আপনাকে, প্রিয় রাষ্ট্রপতি।-----------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৩
false
rn
চরিত্রহীন সহজ সরল সত্য হলো আমি চরিত্রহীন। কেউ জানে না, কেউ টের পায় না। সবাই আমাকে ভালো ছেলে বলিয়া জানে। স্নেহ করে। ফালতু কথা না বলে আসল কথায় আসি। সেদিন বাসে করে যাচ্ছিলাম কক্সবাজার। আমার ভাগ্যটা অনেক ভালো, আমার পাশে বসে ছিল সুন্দর এক নারী। রাতের অন্ধকার কেটে শাঁ-সাঁ করে বাস চলছে। আমাদের বাস কাচপুর ব্রীজ পার হতেই-মেয়েটি আমার দিকে আর আমি মেয়েটির দিকে তাকাই। অস্থির সুন্দর মেয়ে! মুখটা যে কি সুন্দর! ইচ্ছা করলো মেয়েটাকে বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। মনে মনে ভাবলাম এই মেয়েটির সাথে অবশ্যই কিছু আনন্দময় সময় পার করতে হবেই।মেয়েটি আমার মুখের দিকে তাকাতেই আমি বললাম, কোথায় যাচ্ছেন? একা কেন? বিয়ে করেছেন? থাকেন কোথায়? কি করেন? আপনি দেখতে এত সুন্দর কেন? আমার কথা শুনে মেয়েটি হেসে ফেলল। কি যে সুন্দর মেয়েটির হাসি! একদম বুকে এসে ধাক্কা লাগে। মনে হলো যেন একটা জীবন এই হাসি দেখে পার করে দিতে পারব। এরপর মেয়েটির সাথে আলাপ জমাতে আমার আর বেগ পেতে হয়নি। জানতে পারলাম, মেয়েটি কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছে। তার নাকি একা একা ঘুরে বেড়াতেই বেশি ভালো লাগে। মনে মনে ঈশ্বর কে ধন্যবাদ দিলাম। যেন ঈশ্বর আমার হাত ধরে আমার মনের সব গোপন ইচ্ছা পূরন করে দিচ্ছেন। আমার মত অভাজনকে ঈশ্বর এত দয়া কেন দেখাচ্ছেন?আমাদের বাস কুমিল্লা থামল বিশ মিনিটের জন্য। তখন রাত দুইটা। আমরা দুইজন একসাথে চা বিস্কুট খেয়ে নিলাম। মেয়েটি তার মোবাইল বের করে আমাকে সাথে নিয়ে বেশ কিছু সেলফি নিলো। আমার গলা জড়িয়ে ধরে ছবি তুলল। কোনো রকম জড়তা নেই। যেন আমাদের দীর্ঘদিনের চেনা-জানা। এই রকম মেয়েই আমার ভালো লাগে। মেয়েটির সঙ্গ পেয়ে নিজেকে সমাট্র মনে হলো। বাস ফেনী পার হতেই মেয়েটি আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল আর আমি আগামী বারো ঘন্টা মেয়েটির সাথে কি কি করবো সেটা সাজিয়ে নিলাম। আমার সারা শরীর অন্য রকম একটা শিহরন বয়ে গেল। নিজের অজান্তেই আমি মেয়েটির বুকের কাছে মাথা রাখলাম। হোটেল সাগরিকায় আমরা উঠলাম। ৩০৫ নম্বর রুম। কি সুন্দর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন গুছানো, রুমে পা দেওয়া মাত্রই কেমন শান্তি শান্তি লাগল। ব্যালকনির দরজা খুলতেই সমুদ্রের গর্জন শুনে মনটা শীতল হয়ে গেল। আমরা দুইজন ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা খেয়ে অনেকক্ষন সমুদ্রের পাড়ে হাটলাম। যেন একটা ইংলীশ মুভির দৃশ্য। বাস্তব জীবন কি এত সরজ সরল হতে পারে? মেয়েটি সিল্ক শাড়ি পরেছে। শাড়িটা আকাশি রঙের, মাঝে মাঝে একটু একটু সাদা, যেন এক টুকরো আকাশ মেয়েটির সারা শরীর ঢেকে রেখেছে। মেয়েটি যখন হাত নেড়ে-নেড়ে কথা বলে তখন তার দুই হাত ভর্তি কাচের চুড়ি গুলো সুন্দর করে বেজে ওঠে। আর চুল তো বাতাসে উড়ে উড়ে আমার চোখে মুখে লাগছেই। চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে, কপালে বড় একটা টিপ পড়েছে। আহ কি যে সুন্দর লাগছে!রুমে ফিরে এসে যা হওয়ার তাই হলো। পরপর তিনবার হলো। তবু যেন স্বাধ মিটে না। একটা সত্য কথা বলি- এর আগে অন্য কোনো মেয়ে আমাকে এত আনন্দ দিতে পারেনি। আমি মুগ্ধ! অনেক আনন্দ নিয়ে আমি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে এক আকাশ আনন্দ নিয়ে আমরা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। আহ কি শান্তির ঘুম। ঘুম থেকে উঠে দেখি, আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে। ব্যালকনিতে গিয়ে অনেকক্ষন সমুদ্রের গর্জন শুনলাম, বিশাল বিশাল ঢেউ দেখলাম। সমুদ্র পাড়ের ঠান্ডা বাতাস অনেকক্ষন গায়ে মাখলাম। হঠাত আমার মেয়েটির কথা মনে পড়ল, ব্যালকনি থেকে দৌড়ে ঘরে গিয়ে দেখি মেয়েটি নেই, কোথাও নেই। টেবিলের উপর শুধু একখানা চিঠি পড়ে আছে। মেয়েটি যে চলে গেছে এটা বুঝতে আমার অনেক সময় লাগল।মেয়েটির হাতের লেখা অনেক সুন্দর। চিঠিতে লিখেছে, চিঠিতে কি লিখেছে সেটা আর বলতে চাই না। তবে যা লিখেছে তার সারমর্ম হলো- মেয়েটি একটা বেশ্যা। তার অনেক গুলো যৌন রোগ আছে, সে তার রোগ গুলো আমার শরীরে দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটি ভোরে চলে যাওয়ার সময়- আমার ম্যানিব্যাগ, হাত ঘড়ি, মোবাইল এবং ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। এটাই নাকি মেয়েটার পেশা। সে দীর্ঘদিন এই কাজ করে আসছে। আমি যে জামা কাপড় পরে নিচে নামবো সেই উপায়ও নেই। আমার পরনে হাফ প্যান্ট ছাড়া সে সব কিছু নিয়ে গেছে। আমি কপালে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লাম।
false
mk
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠুক প্রজন্ম ‘রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, আর্থিক বিন্যাস প্রভৃতি সমস্ত কিছুই গড়িয়া তোলে মানুষ; এই মানুষের ইতিহাসই যথার্থ ইতিহাস। এই মানুষ সম্পূর্ণ মানুষ; তাহার একটি কর্ম অন্য আর-একটি কর্ম হইতে বিচ্ছিন্ন নয় এবং বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখিলে দেখা ও পরিচয় সম্পূর্ণ হয় না ...’- এমন সত্যে পরিচয় পাওয়া যায়, কীভাবে বাঙালি একটি জাতি হয়ে উঠল- এই নির্ধারিত ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে। ভাষাই তো সংস্কৃতি, মর্যাদা ও পরিণতিও। সেটি শুধু প্রকাশভঙ্গি নয়, ব্যক্তিত্বও বটে। সমস্ত সাধ, আহ্লাদ আর আবেগ তাতে জড়িত। সকলেই চিনে নেয়, অস্তিত্বের প্রশ্নটি- বাঁচার প্রশ্নটি; সংগ্রামের ক্ষেত্রটি। তাই পূর্ব-পাকিস্তানে অনিবার্য হয়ে উঠেছিল মুসলিম লীগের বিপরীতে যুক্তফ্রন্টের জয়। ভাষার প্রশ্নটিতে বাঙালি মুসলমান আত্মপরিচয়ের সিদ্ধান্তটি তখনই নিতে পেরেছিল। তার সাথে সাথে আরও একটি ব্যাপার যুক্ত হয়, সেটি হলো অসাম্প্রদায়িক ও মানবাধিকারের মতো আদর্শের সচেতনতা।তাই বলা যায়, ভাষা আন্দোলন শুধুই ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ বললে শেষ হয় না। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে একটি জাতি গঠন, তার আত্মপরিচয়, আধুনিকতা, সাম্যের পক্ষে লড়াই, সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। বলা যায়, সংস্কৃতির রক্ষাকবচ ওই ভাষাআন্দোলন। যেখান থেকে বাঙালি চিনে ফেলেছিল নিজেকে, তার ভাষা ও ভূখণ্ডকে। তাই পরের পর্বটি হয় আরও জোরালো, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। হাজার হাজার বছরের সাধনাপ্রসূত কাঙ্খিত কাব্যময় সে বাণীভাষ্য। যেটি শুধু অপেক্ষার ছিল, তাই একটি নির্ধারিত ঐক্যের কেন্দ্রে পৌঁছাল। ইতিহাসেরও সত্যটি তাই। এই জন্যই স্বাধীন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির তীব্রতর ও আকুল প্রত্যাশা ছিল এর জন্য। তাই স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা এবং মুক্তি। অর্থনৈতিক-শাসনতান্ত্রিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সবরকম অপ-সবকিছুর কবল থেকে মুক্তি। সেটি ঘটে যায়, ওই মুক্তিমন্দ্র উচ্চারণে। প্রকৃত অর্থে, এটিই নিশিভোরের ডাক। যে ডাকে অবারিত-উদ্বাহু হয়ে পড়ে সকলেই। ছড়ায়ও সর্বত্র। মফঃস্বল-গ্রাম-চর-নদী-বিল পর্যন্ত পৌঁছায়। কারণ, প্রস্তুতিটা অনেককালের এবং তা ছিল সর্বরকমের কর্মসংগ্রামের ভেতর দিয়ে। সকলের মনে তা গেঁথে যায়, সব ধর্মের মানুষের মনে জায়গা পায়। কারণ, তাতে ছিল না কোনো চাতুরি-দ্বিধা-স্বার্থ-সন্দেহ। বঙ্গবন্ধু জনতার নেতৃত্ব চলে আসেন। তারপর মরণজয়ী একাগ্রতা আর গর্ভযন্ত্রণার ঝড়ো রূপে অতঃপর এই ভূখণ্ডের বাংলাদেশ, আর জাতি বাঙালি।২.মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের বার্তায় তখন আমরা বেহুশ। হুশহারা হয়ে পড়লে তখন সুযোগ বুঝে নির্বিচারে ঢুকে পড়ে শত্রুরা, সুযোগসন্ধানীরা। ভেতরে ভেতরে তারা নস্যাৎ করতে থাকে সবকিছু। আত্মসাৎ করতে থাকে আমাদের জীবনের অনেকরকম বার্তা। বিপরীতে জমে ওঠে কালোমেঘ। পরাজিতরা মাথা চাড়া দেয়। প্রত্যাঘাত হয়ে আসার প্রস্তুতি নেয়। সে আঘাতে প্রতিশোধ চরমে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী আমরা ওসব গোপন ষড়যন্ত্র বুঝে উঠতে পারি না। তখন দেশ-রাষ্ট্র-পতাকা-সংবিধান-সোনার বাংলা বলে আমরা আনন্দিত, মাতোয়ারা, দিশেহারা, প্রাণবন্ত, অহংতাড়িত। তখনই হঠাৎ জাতির পিতা সপরিবারে ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়েন। তারপর অনেককাল ঘোলা জলে নিপতিত। ঐক্যে আসে দ্বিখণ্ডন। ফিরে আসে পরাজিত শত্রুরা আরও বিশালরূপে। সামাজ্যবাদী গংরা তাদের প্রভূত সহায়তা ও সমর্থন দেয়, সাহস যোগায়। যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভেতর থেকে আমরা বেরিয়ে হয়েছিলাম ঐক্য, আবার সে রাষ্ট্রের ভেতরে ধর্মের লেবাসে ঢুকে যায় সবকিছু। দৃঢ়তরভাবে স্বাধীন দেশকে নিয়ন্ত্রণে নিতে দেখা যায় উর্দি পরিহিত শাসকদের। তোষামোদকারীরা জুটে যায়, ঐক্য ভাঙতে চায়- পুরনো আমলা, পুরনো সামরিক অফিসার, পুরনো মুসলিম লীগের আর প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থান্বেষী ও প্রভূত অপশক্তির দোসরকুল একত্রিত হয়ে জাতির জনকের হত্যার আস্ফালনের ওপর বাণীমন্ত্র শোনায়, রাষ্ট্রীয় বেতারযন্ত্রে। মূলত মুক্তিযুদ্ধের বিজয়টি নস্যাৎ করাই মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। ইতিহাসের চাকাকে দেয় পিছিয়ে। এরূপে চলে বেশ অনেককাল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আইন-আদালত-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর বিভ্রান্তির জাল বুনিয়ে অপ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের বহুপরিব্যাপ্ত চারা রোপন হতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐক্য ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে সামরিক শাসনের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা যেমন থাকে পরাহত তেমনি জীবনের মূল্যবোধ কিংবা খাওয়া-থাকা-পরার নিরাপত্তাও ক্রমশ দূরে সরে যায়। এরপর একটি দীর্ঘ সময়ের পরে আবার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ রচিত হয়। ক্রমশ গণতন্ত্রের চর্চার ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি একপ্রকার নিশানা পেতে শুরু করে। নতুন প্রজন্ম উঠে আসে, তারা জিজ্ঞাসা করে- জানতে চায়। তার ফলে আজকের প্রজন্ম আবার সত্য ইতিহাসের পথ খুঁজে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তাই তার স্বপ্ন অনেক ভ্রান্তি-বিভ্রান্তিতে থাকলেও মেধা ও কর্মপ্রয়াসে সম্মুখ দিকেই অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হয়।৩.এই বাংলাদেশ এখন যে কোনো রাষ্ট্রের মতোই ইনফরমেশন টেকনোলজির সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল বাংলাদেশ কিংবা ডিজিটাল জীবন-যাপনে সকলেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। কিংবা বলা চলে বাধ্যও হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এখন সচেতনতা অনেক তুঙ্গে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে একমত। কেউ চায় না এদেশে জঙ্গিদের উত্থান হোক, চেপে বসুক কোনো অপশক্তি। এখন অনেকেই লেখাপড়ায় আগ্রহী, চাকরির জন্য উন্মুখ। দেশ গড়তে চায় সকলেই। দেশাত্মবোধেও তারা উজ্জীবিত। বিশাল জনশক্তি দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে চায়। প্রতিযোগিতায় দেশকে ঊর্ধ্বে দেখতে চায়, দুর্নীতিমুক্ত-স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ চায়। এই ভূখণ্ডকে বড় করে তুলতে চায়। ইতিহাসের স্বপ্নকে বড় করে দেখে। দেশে মানুষ সুস্থভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে খেয়ে পরে বাঁচতে পারুক- সকলেরই তাই স্বপ্ন। দেশের অনেক মেধাবী মানুষ আছেন তারা মেধা বা যোগ্যতাবলে বিদেশে ভালো কাজ করছেন, দেশের হয়ে সুনাম কুড়াচ্ছেন। দেশকে নিয়ে গর্বও বোধ করেন তারা। এই মুক্তির স্বপ্নও তো ছিল- ওই মুক্তিযুদ্ধের সময়ও। এখন স্বাধীনতার পর গত কয়েক দশকে আমরা এগিয়েছি। হয়তো কাঙ্খিত সাফল্য আসেনি। কিন্তু উন্নতি ও উত্থান হচ্ছে স্বীয় উদ্যোগে, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়। গ্লোবাল বিশ্ব, কর্পোরেট বাণিজ্য বা পুঁজি এখন বিচিত্রভাবে আমাদের মুখোমুখি। এটা মোকাবিলা করা একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ, সবকিছুই উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত। উপযোগিতা থেকেই মানুষ তার ক্ষেত্রকে বেছে নেয়। কর্মচাঞ্চল্যের প্রবাহও তাতে তৈরি হয়। বিপুল জনশক্তির বাজার যে ধরতে পারবে সেই প্রতিষ্ঠা পাবে। ফলে, মানবিক মূল্যবোধগুলোর সেভাবেই তৈরি হয়। চিন্তার স্বাধীনতা বা স্বাতন্ত্র্যও সেভাবেই প্রস্তুত থাকে। কিন্তু এখনও বৈষম্য আছে। একদিকে বিপুল পরিমাণে চলছে ভোগবাদের উল্লাস অপরদিকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-ত্রাস-নিরাপত্তহীনতা কম নয়। পুঁজিবাজারে মানুষের বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য থেকে ক্ষোভ-ক্রোধ-উষ্মা বাড়ছে। বৈধতার বদলে অবৈধ চিন্তা বাড়ছে, নিজের স্বার্থ কিংবা নিজের আখেরে লাভের হিসেবে সবাই ব্যস্ত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব নির্বিশেষে অনেকটা মোহাচ্ছন্ন মানুষ। বোধ করি এটা কালেরও স্রোত। জীবনবোধ সম্পর্কে ধারণা তাই অপ্রতুল। সুতরাং গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে স্বাধীনতার স্বপ্ন এখনও পূর্ণাঙ্গ নয়, পূর্ণতা পায়নি। তাই আমাদের মুক্তিসংগ্রামও শেষ হয়নি।এরূপ পরিপ্রেক্ষিতে জানাতে চাই, আমাদের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের কথাটিও। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যেমন আছে তেমনি প্রতিরোধের বিষয়টিও আমাদের রপ্ত করা জরুরি। অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে মিডিয়া প্রীতি বেড়েছে, যোগ্য-অযোগ্য তফাৎ করা দুরূহ। জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সস্তা-স্থূল কিছু ক্রিয়াকর্ম। চিন্তাহীন বিনোদন সর্বব্যাপৃত। মিডিয়ার খাদ্য এখন অকেজো অনেককিছু। কালের অনিবার্য প্রবাহেই মানুষ ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু সুস্থ সাংস্কৃতিক উন্নতি জরুরি। মেধাশূন্য জাতি তৈরি নয়। এজন্য বিচিত্রমুখী জ্ঞানের পরিবেশ দরকার। নিম্নশ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মননশীল বা সৃজনশীল শিক্ষার বিস্তার জরুরি। বলতে চাই, আরও অতীতের মূল্যবোধগুলোর দিকে ফিরে তাকাতে। প্রস্তুত হতে হবে অতীতকে নিয়েই। সতর্ক থাকতে হবে তাঁদের প্রতি যারা অতীতকে অস্বীকার করতে চায়। কেননা বিভ্রান্তির ভেতর দিয়ে তাঁরা আসলে সম্মুখের পথকে অবরুদ্ধ করতে চায়, পেছনে ঠেলতে চায়, রুদ্ধ করতে চায় অগ্রবর্তী চিন্তাকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সমাজ কখনও পশ্চাৎমুখী নয়। প্রত্যেকটি সূর্যোদয়ই অরুণ আলোর যাত্রী, এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য-অনুগামী। সুতরাং প্রেরণাদায়ী, প্রতিশ্রুতিশীল মানুষ চাই; জাগানোর জন্য অনেককে একত্রিত করতে চাই, সবকিছুকে পেছনে ফেলে সামনে এগুতে চাই। এর জন্যই আমাদের অতীতের উন্মাতাল সময়গুলোর নবায়ন এবং তার দীক্ষা জরুরি। আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নের জন্য, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগী ক্ষেত্র চিহ্নিত করা দরকার। সেখানে এক্সপার্টদের কাজে লাগিয়ে দশশালা বিশশালা পরিকল্পনার আওতায় গোটা দেশের কর্মপদ্ধতিকে বিকেন্দ্রীকরণ করে সুষম উন্নয়নের পথ সৃষ্টি করা যেতে পারে। লুটতরাজ, সন্ত্রাস, ছিনতাই, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি বন্ধ করতে হবে। এর বিকল্প নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে সমস্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ভুল বা খারাপ উদাহরণ কোন দৃষ্টান্ত নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কি ছিল তা স্মরণে আনা শুধু নয়, বা স্লোগানসর্বস্ব বক্তৃতা শুধু নয়- কাজ করতে হবে। যে বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজের কথা আমরা জানি বা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দেশগড়ার কথা জানি তার মূল লক্ষ্য সুষম উন্নয়ন। এজন্য সন্ত্রাস নির্মূল শুধু নয় কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। একটি উন্নত সমাজ গঠনের জন্য সর্বরকম কঠোর এবং নিরপেক্ষ পদক্ষেপকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য একটি জন-সাংস্কৃতিক বলয়টি জরুরি। বিশেষ করে তরুণদের। তাদেরই সজাগ ও সৃষ্টিশীল হতে হবে। নেতৃত্ব দেওয়ার শক্তি অর্জন করতে হবে। এজন্য সংস্কৃতিবান হওয়ার বিকল্প কী? কারণ, আমরা সবাই জানি সংস্কৃতিই সবচেয়ে বড় শক্তি। সংস্কৃতিই সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে। জাতিভিত্তিক স্বপ্নের ভূখণ্ডটি যেন সেই শক্তিতেই বলীয়ান হয়। কাজটিতে অবশ্যই নতুনদের শামিল করতে হবে। তবে তারা যেন কারো দাস না হয়, মেরুদণ্ড সোজা করুক। উচ্চশিরে দাঁড়াক। তবেই আশা ও সাফল্য।লেখক : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৫
false
ij
গল্প_ স্বপ্নের কুয়াশায় দূর থেকে বুড়িমাকে আসতে দেখল দীপা । থুত্থুরে বুড়িমা লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটছে। বুড়িমার শনের মতন চুল, চোখের মনির রং বাদামী, ধবধবে ফরসা গায়ের রং। বুড়িমার বাড়ি যে ঠিক কোথাও তা কেউ জানে না। রূপনগরে বছরে অন্তত একবার আসে বুড়িমা । লোকে বলে বুড়িমা নাকি যন্ত্ররমন্তর জানে। যন্ত্ররমন্তর যে ঠিক কী জিনিস-দীপা জানে না। দীপার সঙ্গে বুড়িমার বেশ খাতির। বুড়িমার জীবন ভারি অদ্ভূত। এককালে বুড়িমার ঘরবাড়ি ছিল, সুখের সংসার ছিল; স্বামী ছিল, ছেলেমেয়ে ছিল। বুড়িমার ১২ বছর বয়েসী এক ছেলে একবার হারিয়ে গেল। বুড়িমা সেই ছেলের খোঁজে সেই যে বাড়ি ছাড়ল আর ফিরল না। সেই ছেলেকে আজও খুঁজে পায়নি বুড়িমা। বুড়িমা কাছাকাছি চলে এসেছে। দীপা জিগ্যেস করল, শুনলাম তুমি নাকি আজই রূপনগর থেকে চলে যাচ্ছ বুড়িমা? বুড়িমা মুখ তুলে চাইল। খনখনে কন্ঠে বলল, আমার কি আর এক জায়গায় থাকলে চলে রে মা? এবার যাচ্ছি দূরের এক অচিন দেশে। যদি ছেলের সন্ধান পাই।এত বছরের ছেলের খোঁজ পেলে না বুড়িমা?পেলাম আর কই। এবার যাচ্ছি দূরে অচিন দেশে। যদি ছেলের সন্ধান পাই।আচ্ছা যাও। ভালো থেকো। বলে দীপা হাঁটতে থাকে। তালপুকুরের পাশ দিয়ে পথ। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। দীপা দ্রুত হাঁটে। দীপা ওর সই চৈতির বাড়ি গিয়েছিল। চৈতিরা রূপনগর স্টেশনের কাছে থাকে। একই ক্লাসে ওঠে। দীপারা এবার এইটে উঠল। চৈতির মা নেই। চৈতির বাবা জীবন কাকা রূপনগর স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার; তিনিও দীপাকে কন্যাসম স্নেহ করেন।বাড়ির সামনে ছোট বাগানে জোছনার ঢল। ঘর অন্ধকার। বাবা অফিস থেকে এখনও ফেরেনি হয়তো। সন্ধ্যের আগেই ঘরে ঘরে ধূপের ধোঁয়া ছড়ায় রাধা। আজ সে রকম সুগন্ধ পেল না দীপা। রাধা বাড়ি নেই। ক’দিন হল দেশের বাড়িতে গেছে রাধা। মা কই? দীপার বুক ধক করে ওঠে। ও রান্নাঘরের দিকে চলে আসে। উঠানে জোছনা। উথালপাথাল হাওয়া। কাঁঠাল পাতায় বাতাসের খসখসানি। মা আধোঅন্ধকার বারান্দায় চুল এলো করে বসে আছে। কি হয়েছে মা?মা কান্না ভেজা কন্ঠে বললে, দুপুরে তোর শ্যামলদা এসেছিল। শ্যামল বলল, কাকি, রাজনগরে আষাঢ়ী পূর্ণিমার মেলায় বসেছে । ছোটনকে নিয়ে যাই। আমি বললাম, যাও। শ্যামলের সঙ্গে ছোটন সেই যে গেল এখনও ফেরেনি।বল কি মা! দীপার মুখচোখে অন্ধকার ছড়িয়ে যায়। বুকের ভিতরে হিম। কোনওমতে বলতে পারল, তুমি ভেব না মা। দেখ, শ্যামলদারা ঠিকই ফিরে আসবে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামল। আষাঢ়ী জোছনা আরও ঘন হয়ে উঠল। ছোটন ফিরল না। মায়ের মুখ থমথমে হয়ে উঠল। দীপা বুকের ভিতর যন্ত্রণা টের পায়। রাত ৮টার দিকে বাবা ফিরে এল। সব শুনে বাবার মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল। অফিসের কাপড় না-ছেড়ে আবার বেরিয়ে গেল। বাবার পিছন পিছন সদর দরজা পর্যন্ত গেল দীপা । জিগ্যেস করল, বাবা তুমি কই যাচ্ছ?বাবা গম্ভীর কন্ঠে বলল, থানায়। দীপা শ্বাস টানল।অনেক রাতে বাবা ফিরে এল।ছোটন তখনও ফেরেনি।মা পাথরের মূর্তির মতন পিছনের বারান্দায় বসে ছিল। বাবা মায়ের পাশে বসল। বলল, রাজনগরে যেতে আসতে এক ঘন্টা লাগে। ওদের এত সময় লাগছে কেন। মা বলল, তুমি একবার বালাগঞ্জ যাও। শ্যামল ছোটন কে ওখানে নিয়ে যেতে পারে।বাবা উঠে দাঁড়ালেন। তারপর সদর দরজার দিকে চলে গেলেন। স্টেশনে যাবেন।। রাত দশটায় বালাগঞ্জ যাওয়ার ট্রেন। দীপা মার পাশে বসল। মা দীপাকে জড়িয়ে ধরল। হুহু করে কাঁদল। খানিক বাদে দীপা ঘরে গেল। ঘরটা অন্ধকার। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ঘরে ঢুকেছে। টেবিলে ছোটন-এর বই। ছোটন ক্লাস সিক্সে পড়ে। দীপা ছোটনকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকত। গল্প বলত। সেই ছোটন হারিয়ে গেল। দীপা কাঁদতে শুরু করে। ক্লান্তিতে দীপার শরীর ভেঙে আসতে চায়। ও বিছানার ওপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে পড়ল। অদ্ভূত এক স্বপ্ন দেখল। দেখল চারিদিকে হিম আর গভীর কুয়াশার ভিতর রেললাইন। আবছা আলো। দু’পাশে উচুঁ উচুঁ গাছ। দুটি মূর্তি। হেঁটে এদিকে আসছে। কারা ওরা ...পর দিন দুপুরের আগে আগে বাবা ফিরে এল । হতাশার সুরে বললে, নাহ্ । শ্যামল এখনও বাড়ি ফিরেনি । বলে বাবা ঘর ছেড়ে উদভ্রান্তের মতো বেরিয়ে গেল। দীপা বাবার পিছু পিছু । হন হন করে হাঁটছে বাবা। স্টেশনের কাছাকাছি এসে থামল ব । পিছু ফিরে দীপাকে বলল, তুই ঘরে যা দীপা। আমি একবার রাজনগরের দিকে যাই। শুনেছি মেলা এখনও ভাঙেনি। এখনও ওরা ওখানে থাকতে পারে। রাজনগরে কোথায় উঠবে?ও নিয়ে তুই ভাবিস না। তোর রাঙা মাসী থাকেন রাজনগরে। ও।রাঙা মাসী মায়ের কী রকম বোন-ধবধবে ফরসা অপূর্ব সুন্দরী থলথলে মধ্যবয়েসী বিধবা। রাঙা মাসীর কড়া মেজাজ। যাক। কথাটা শুনে দীপা আশ্বস্ত হল। বাবা স্টেশনের দিকে চলে গেল।কাছেই চৈতিদের বাড়ি । দীপা চৈতিদের বাড়ীর দিকে হাঁটতে থাকে। কড়া রোদে দরদর করে ঘামছে। জীবনকাকা বাড়ি ছিলেন না। চৈতিকে সব খুলে বলল। বলে চৈতিকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কাঁদল দীপা। চৈতিও অঝোরে কাঁদল।দুপুর ফুরোবার আগেই দীপা ফিরে এল। মাকে ঘরে পেল না । মা গেল কই? দীপার কান্না পায়। খাওয়ার টেবিলের ওপর ভাঁজ করা একটা সাদা কাগজ। কাগজে মায়ের হাতে লেখা .... ছোটনকে কে খুঁজতে গেলাম। ওকে খুঁজে না পেলে ফিরব না। তোরা ভালো থাকিস। দীপা যা বোঝার বুঝল। মা ছোটন কে ভীষণ ভালোবাসতেন। দীপা হুহু করে কাঁদতে শুরু করে। এরপর সংসারে অন্ধকার নেমে এল। বাবা আধ পাগল হয়ে গেলেন। ঠিক মতো নাওয়া-খাওয়া নেই ... অফিসও যান না। রাজনগর থেকে বাবার সঙ্গে রাঙা মাসী এসেছিল। সারাক্ষণ দীপাকে ধমকের ওপর রাখে রাঙে। তার নানা যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। বাবা অবশ্যি স্বাভাবিক হয়ে এল। নিয়মিত অফিস যেতে শুরু করলেন। রাঙা মাসী বাবার ঘরেই শোয়। আড়াল থেকে গা শিরশিরে সব দৃশ্য দেখে দীপা। মাকে বাবা এত সহজে ভুলে গেল কি করে? আশ্চর্য! বছর খানেক কাটল। না, তারও বেশি কাটল। মা ফিরে এল না। দেখতে দেখতে শীতকালও চলে এল। রূপনগর সকাল বিকাল ঘন কুয়াশায় ডুবে যায়। দুপুরে কেবল ঝলমল করে রোদ। আকাশটা আর দূরের পাহাড় নীল হয়ে থাকে। স্কুলের জানালা দিয়ে সেই নীলাকাশের দিকে সেই নীল পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে দীপা। তাকিয়ে থাকে দূরের পাহাড়ে দিকে। ওর হৃদয়ের মাঝারে গুঞ্জরিয়া ওঠে এক বিষন্ন গান: ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলাআন্মনা যেন দিক্বালিকার ভাসানো মেঘের ভেলা।।একদিন বিকেল। দীপা চৈতিদের বাড়ি থেকে ফিরছিল । চৈতিই তো এখন ওর সুখ-দুঃখের সাথী। বাবা আর রাঙা মাসী অজাচার করছেন-এই কথাটা জীবন কাকা কীভাবে যেন টের পেয়েছিলেন ব্যাপারটা। একদিন তিনি দীপাকে বললেন, মা, দেখ, জীবন যেমন সুন্দর ... তেমনি কুৎসিত । তুমি শুধু জীবনের সুন্দর দিকটিই গুরুত্ত দিয়ো। তাহলে বেঁচে থাকা সহজ হবে। ঐ দেখ মা ... বলে তিনি জানলা দিয়ে দূরের অপরাহ্নের ঝলমলে আলোয় ডুবে থাকা পাহাড় ও নীলাকাশ দেখিয়েছিলেন। তারপর, দীপার কপালে আলতো করে চুমু খেয়েছিলেন। দীপা শিউরে উঠেছিল। সেই জীবন কাকা আজ বাড়ি ছিলেন। মুড়ি মাখা খেতে খেতে বললেন, জান মা, আমিও না একবার ছেলেবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। চৈতি অবাক হয়ে জিগ্যেস করল, তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে বাবা? প্রতিবছর আষাঢ় মাসে ঈশ্বরপুরের ভবের হাটে চরণ ঠাকুরের মেলা বসে। সেই মেলায়।এক মুঠ মুড়ি মুখে ফেলে দীপা বলল, ভবের হাট কোথায় কাকু? ঈশ্বরপুর স্টেশন রূপনগরের দু’ স্টেশন পর। সেই ঈশ্বরপুর রেলস্টেশনের খুব কাছেই ভবের হাট । রেললাইনের পাশ দিয়ে পথ। দু’পাশে উচুঁ উচুঁ কড়–ই গাছ, ইউক্যালিপটাস গাছ। চৈতি বলল, বাবা তুমি হারিয়ে গেলে। তারপর কী হল?তারপর সন্ধ্যাবেলা বাবাকে দেখলাম ঈশ্বরপুর রেলস্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে। পরে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কী কাঁদাই না কাঁদল ... চৈতিদের বাড়ি থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যা প্রায় হয় হয়। তালপুকুরের ধার দিয়ে হাঁটছিল দীপা। চারিদিকে কুয়াশা ঘনিয়ে উঠছে। ভেজা ঘাস পাতার গন্ধ পেল ও। আর শীত লাগছিল। দীপা কামিজের ওপর সোয়েটার পরে ছিল। তার ওপর চাদর জড়িয়েছে। ভালো করে চাদর জড়িয়ে নিল দীপা।হঠাৎ মুখ তুলল দীপা। চমকে উঠল। বুড়িমা। এদিকেই আসছে । ওর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। বুড়িমা একই রকম আছে। বুড়িমার বয়স বাড়ে না। বুড়িমা কাছাকাছি এসে থমকে দাঁড়াল। কেমন আছিস রে?দীপা চুপ করে থাকল। তারপর বলল, ভালো না বুড়িমা।কেন রে? তোর আবার কি হল? নাগর তর বুকের মধু খেয়ে পালিয়েছে?ধ্যাত।তাহলে?কেন তুমি জান না বুড়িমা?আমি কী জানব রে? আমি আজই ফিরলাম ঈশ্বরপুরের ভবের হাট থেকে।ঈশ্বরপুরের ভবের হাট ? দীপা কেমন অন্যমনস্ক হয়ে উঠল কয়েক মুহূর্তের জন্য। দ্রুত সামলে নিয়ে দীপা বলল, আমার ছোট ভাই ছোটন-কে তোমার মনে আছে বুড়িমা ?হ্যাঁ রে। খুব মনে আছে। একবার ওর দাঁতে পোক হল, তখন আমিই পোক ফেলে দিলাম, কেন তোর মনে নেই?হ্যাঁ। আমার মনে আছে বুড়িমা। সেই ছোটন শ্যামলদার সঙ্গে সেই যে রাজনগরে আষাঢ়ী মেলায় গেল ... আর ফিরে এল না। আমরা কত খুঁজলাম ছোটনকে। পেলাম না। তারপর ছোটন কে খুঁজতে বেরুল মা । মা আর ফিরল না। বলিস কী রে! এযে বড় সর্বনেশে কথা। বুড়িমার কন্ঠস্বর কেমন কর্কস শোনাল। দীপা চুপ করে থাকে। বুড়িমা কি জানে-মায়ের নিরুদ্দেশের পর কতবড় সর্বনাশ হয়ে গেছে। সাজানো সুখের সংসার এলোমেলো হয়ে গেল। আজও রাঙা মাসী বিশ্রী ব্যবহার করেছে দীপার সঙ্গে। মহিলার মেজাজ বড্ড খিটখিটে। রাঙা মাসী দীপাকে বকাঝকা করলে বাবা কিছু বলে না। দীপার খুব কান্না পায়। রাধা কেও রাঙা মাসী বকত। যে কারণে রাধা আর থাকল না- কাজ ছেড়ে বড়লেখায় চলে গেল। সংসারের সব কাজ এখন দীপাকেই করতে হয়। দীপা আর পারছে না। বাড়ি ছেড়ে দীপা পালিয়ে যাবে ঠিক করেছে। ইচ্ছে করে রূপনগর স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠে। তারপর ইচ্ছেমতন কোনও স্টেশনে নেমে দু’চোখ চোখ যে দিক যায় চলে যায়। তারপর যা হবার হবে ... কিংবা মা আর ছোটনের সন্ধাবে বেরুবে দীপা। ওদের সন্ধানে এক জীবন পাড় করে দেবে। বুড়িমার মতো। সংসারে অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা । বাবা আর রাঙা মাসী অজাচার করছেন। খিদে সহ্য করা যায়, অজাচার সহ্য করা বড় কঠিন। বুড়িমা খনখনে গলায় বলল, ভবের হাটের চরণ ঠাকুরের মেলায় তোমার মায়ের মতো একজনকে দেখলাম মনে হল যেন। আমার চোখের ভুলও হতে পারে। তবে মেয়েটা যেন তোমার মায়ের মতই দেখতে। দীপার বুক ধক করে ওঠে। কোথায় বললে বুড়িমা?ঈশ্বরপুরে। ভবের হাটের চরণ ঠাকুরের মেলায় । কবে দেখলে? দীপার বুক ভীষন কাঁপছে।গতকাল।দীপার আর শীত লাগছিল না। বরং ও সারা শরীর জুড়ে তাপ টের পায়। দরদর করে কাঁপছিল। মা কি তাহলে ...বুড়িমার ভুলও তো হতে পারে। হোক ভুল। তবু একবার ঈশ্বরপুরের ভবের হাটে যেতেই হবে।বুড়িমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চট জলদি বাড়ি ফিরে এল। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। ঘরদোর অন্ধকার হয়ে ছিল। আর ফাঁকা লাগছিল। বাবা অফিস থেকে ফেরেনি। রাঙা মাসী কি ঘুমাচ্ছে ? অলক্ষুনে মাগী সন্ধ্যাবেলায় বাতি নিভিয়ে ঘুমায়। রাধা থাকলে আলো জ্বালাত, ধূপ জ্বালাত। আজ ঘরদোর সুগন্ধীহীন পড়ে আছে। একটি সুখের সংসার কী ভাবে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। দীপার কান্না পায়। তবে ও সামলে নিল। খালি হাতে কি ঘর ছেড়ে বেরুনো যায়? দীপার কিছু জমানো টাকা ছিল; টাকাগুলি নিল। তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে এল।চারিদিকে কুয়াশার চাদরের সঙ্গে জোছনা মিশে আছে। স্টেশনে পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না। ফাঁকা প্ল্যাটফর্ম। টিকেট কিনে এনে। রূপনগর স্টেশনে টিকেট বিক্রি করেন বিজয় কাকা । চোখে কম দেখেন বিজয় কাকা। দীপাকে চিনতে পারল না। প্ল্যাটফর্মে হলুদ আলো জ্বলে ছিল। ট্রেন না আসা অবধি বেঞ্চিতে বসে থাকল দীপা। ভিতরে ক্ষীন উত্তেজনা টের পাচ্ছে; জীবন কাকার সঙ্গে যদি দেখা হয়ে যায়। দেখা হলে দীপা কি বলবে? বলবে মা আর ছোট ভাইকে খুঁজতে ঈশ্বরপুরের ভবের হাটে যাচ্ছি? স্টেশন কাঁপিয়ে ট্রেন এসে থামল। যখন আবার ছাড়ল তখন ৮টা বেজে গেছে । ফাঁকা কামরা। একজন যাত্রীও নেই। দীপা অবাক হয়ে যায়। একজন যাত্রীও নেই কেন। ওর শীত করে। জানালার বাইরে ম্লান জোছনা। তবে হুহু করে শীতের বাতাস ঢুকছিল। ও জানালা বন্ধ করে দেয়। অন্য জানালা দিয়ে অবশ্য শীতের বাতাস ঢুকছিল। সবগুলি জানালা বন্ধ করা সম্ভব না। কামিজের ওপর সোয়েটার পরে ছিল। তার ওপর চাদর। ভালো করে চাদর টেনে নিল ।ঘন্টা দুয়েক পর ঈশ্বরপুর স্টেশনে ট্রেন থামল। ততক্ষণে কুয়াশা আরও ঘন হয়ে উঠেছে। দীপা এক বুক শূন্যতা নিয়ে প্ল্যাটফর্মে নামল। নির্জন কুয়াশাময় স্টেশন । কেমন থমথম করছে। প্ল্যাটফর্মে কাউকে চোখে পড়ল না। দীপা হাঁটতে থাকে। চারিদিকে কুয়াশা ঘনিয়ে উঠছে। ভবের হাটে যেতে হবে। কিন্তু কোথায় ভবের হাট? মনে পড়ল: আজই জীবন কাকা বলেছিলেন ... ঈশ্বরপুর রেলস্টেশনের খুব কাছেই ভবের হাট । রেললাইনের পাশ দিয়ে পথ। দু’পাশে উচুঁ উচুঁ কড়–ই গাছ। ইউক্যালিপটাস গাছ। দীপা রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে ভেজা ঘাস পাতার গন্ধ পেল ও। পায়ের শিশির জড়ায়। মাথা ভিজে যাচ্ছে শিশিরে। চাদর দিয়ে মাথা ঢেকে নিল। ঘন কুয়াশারা ওকে ঘিরে রেখেছে। বাঁ পাশে রেল লাইন। কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে চাঁদ। বহুদিন আগে দেখা একটি স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায় ওর । দীপা মুখ তুলে দেখে কুয়াশা ফুঁড়ে দুটি মূর্তি এগিয়ে আসছে...দীপার বুক ধক করে ওঠে। মা! মায়ের পাশে কে যেন। ছোটন? দীপার ঘুম ভেঙে যায় ...
false
ij
গল্প _ সম্মুখ সমর মধ্যাহ্ন। গ্রীষ্মকালীন রোদ পড়ে ঝকঝক করছে গাজা শহর । গতকালও শহরটির ওপরের আকাশে মেঘ জমেছিল। আজ আর মেঘ-টেঘ নেই; আজ মেঘশূন্য ঝকঝকে একটি দিন। মেঘহীন একটি দিনে গাজা শহরটি কে ঝলমলে উজ্জ্বল দেখায়। গ্রীষ্মকালীন রোদে ঝকঝক করছে শহরটির দালানকোঠা, দেওয়াল ও ছাদ; জামে মসজিদের সোনালি গম্বুজ, ফুটপাত, ফুটপাত ঘেঁষা দেওয়াল। দেওয়ালে কালো কালিতে আরবিতে লেখা: ‘ইজরাইল নিপাত যাক।’ শ্লোগানটির ঠিক নিচেই মাহমুদ আব্বাসের একটি পোস্টার। পোস্টারটি ছেঁড়া। সম্ভবত হামাস এর কোনও রাগী সদস্য ছিঁড়ে ফেলেছে । কেননা, মাহমুদ আব্বাস এর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নমনীয়। অথচ, আব্বাস শব্দটির অর্থ সিংহ! আরবি শব্দ ‘হামাস’-এর মানে, উদ্দীপনা। জামে মসজিদের উলটো দিকে আল জাহরা হাসপাতাল। ঝকঝকে কাঁচের চারতলা ভবন। তীব্র সাইরেন বাজিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের মেইন গেট দিয়ে ঢুকে যায়। আজ সকাল থেকে সাইরেনের কর্কস শব্দে গাজা শহরটি বিপর্যস্ত। আল জাহরা হাসপাতালের পাশে একটি দৈনিক পত্রিকার অফিস। আল আওয়াব। হলুদ রংকরা পুরনো একটি দোতলা দালান। দুটি ভবনের মাঝখানে একটা গলি । গলিমুখে কালো পোশাক ও কালো মুখোশ পরা ক’জনকে দেখা যায়। হামাস । হাতে অটোমেটিক কারবাইন ছাড়াও ওদের কারও কারও কাঁধে রকেট লাঞ্চার। এরা ইজরাইলকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চায়। কাজটা সহজ নয়। কেননা, পশ্চিমদিকের রাস্তায় ব্যারিকেড। তার ওপাশে ইজরাইলি সৈন্য। সৈন্যদের পিছনে একটি খাকি রঙের মেরকাভা ট্যাঙ্ক; মৃত্যুর আতঙ্ক ছড়িয়ে থেমে আছে। মেরকাভা ট্যাঙ্ক;এখন সময়টা মধ্যাহ্ন। গ্রীষ্মকালীন রোদে গাজা শহরটি ঝকঝক করছে। বাতাসে বারুদের গন্ধ। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের তীক্ষ্ম শব্দ। ৭২ বছর বয়েসী ইসাম হামদি এই মুহূর্তে হাসপাতালের উলটো দিকের জামে মসজিদের সামনে ৯ বছর বয়েসি নাতনী আসমাকে পাজঁকোলা করে দাঁড়িয়ে আছেন; ইজরাইলি সৈন্যরা গলিমুখে দাঁড়িয়ে থাকা হামাস সদস্যদের লক্ষ করে গুলি ছুঁড়েছিল। গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে আসমার কপালে লেগেছে। ছটফট করে ওঠেছিল মেয়েটি। রক্ত গড়াচ্ছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ইসাম হামদি; তিনি হতভম্বের মতন দাঁড়িয়ে আছেন। ফুটপাতে কালো রঙের বোরখা পরা একটি মহিলা চিৎকার করছে। অ্যাম্বুলেন্সের কর্কস সাইরেন। হামাস সদস্যের ছোঁড়া ফাঁকা গুলির আওয়াজ। বারুদের গন্ধ, দূরে বাব আল খালিলের দিক থেকে ভেসে আসে বিস্ফোরনের শব্দ, ... এবং এই মুহূর্তে ইসাম হামদি অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন । একটি বুলেট আটকানোর ক্ষমতা যেহেতু সর্বশক্তিমান আল্লাতালার নেই! মুমূর্ষ নাতনীকে পাজকোলা করে দাঁড়িয়ে আছেন ৭২ বছর বয়েসী ইসাম হামদি । যেহেতু আসমা গুলিবিদ্ধ! হঠাৎ বৃদ্ধের কী হল-রাস্তায় ব্যারিকেড তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ইজরাইলি সৈন্যদের দিকে প্রতি দৌড়ে যেতে থাকেন ... যেখানে সৈন্যদের পিছনে মৃত্যুর আতঙ্ক ছড়িয়ে একটি খাকি রঙের মেরকাভা ট্যাঙ্ক থেমে আছে। সকলই যখন অর্থহীন, তখন আর বেঁচে থেকে কী লাভ। রাস্তায় গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। আসমার রক্ত। বাতাসে বারুদের গন্ধ। ঝকঝকে একটি দিন; গ্রীষ্মকালীন দিন। মহিলার চিৎকার ... অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ... ফুটপাতের দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা তরমুজ বিক্রেতার চোখে আতঙ্ক ... সবুজ ফিলিস্তিনি পতাকা ... মাহমুদ আব্বাসের ছেঁড়া পোস্টারের পাশে দাঁড়িয়ে সাদা স্কার্ফ পরা মাঝবয়েসি একজন মহিলা কোরান তুলে দেখাচ্ছে ইজরাইলি সৈন্যদের ...যদিও এই মুহূর্তে ইসাম হামদি অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন । আল আওয়াব পত্রিকার দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন মাহমুদ দারবিশ; চোখ রাস্তার দিকে নিবদ্ধ । ওপাশের রাস্তায় অনেকটা ইয়াসের আরাফাতের মতন দেখতে মাথায় সাদাকালো কেফফিয়ে জড়ানো একজন বৃদ্ধ। বৃদ্ধের পরনে সাদা জোব্বা। জোব্বায় রক্তের ছোপ। পাজকোলা করে একটি বালিকাকে ধরে রেখেছেন। বালিকার সোনালি চুল। মেয়েটি কি মারা গেছে? মাহমুদ দারবিশ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মাহমুদ দারবিশ কবি। আল আওয়াব পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর কবিতা ছাপা হয়। কখনও গাজায় এলে দৈনিক আল আওয়াব পত্রিকার অফিস আসেন। সম্পাদকের সঙ্গে আড্ডা মারেন। সম্মানী বুঝে নেন। মাহমুদ দারবিশ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।চোখ রাস্তার দিকে নিবদ্ধ । সোনালি চুলের বালিকাটি সম্ভবত মারা গেছে । জন্মাবধি মাহমুদ দারবিশ এ রকম নির্মম দৃশ্য অনেকবারই দেখেছেন। মাহমুদ দারবিশ এর জন্ম ফিলিস্তিনের গালিলি প্রদেশ । এর পশ্চিমে আল বিরওয়া নামে একটি গ্রাম; সে গ্রামেই ১৩ মার্চ ১৯৪১ সালে মাহমুদ দারবিশ এর জন্ম। বাবার নাম সালিম দারবিশ। ছিলেন মুসলিম ভূস্বামী। মুসলিম বলার কারণ? তৎকালে ফিলিস্তিনের পশ্চিম গালিলি প্রদেশে খ্রিস্টানসহ অন্য অনেক জাতও বাস করত। কবির মায়ের নাম হওরিয়া। কবির মায়ের নাকি তেমন শিক্ষাদীক্ষা ছিল না। পিতামহের কাছে হাতেখড়ি বালক দারবিশ এর । সে কথা ‘আইডেন্টটিটি কার্ড’ নামে বিশ্ববিখ্যাত কবিতা পাঠে জানা যায়।আমার পিতামহ ছিলেন চাষী,নীল রক্তের উচ্চবংশের নন।বই পড়তে শেখার আগেইযিনি আমাকে সূর্যের অহংকার শিক্ষা দিয়েছিলেন।ইজরাইল রাষ্ট্রটি স্বাধীন ফিলিস্তিনের মাটিতে প্রোথিত হলে দারবিশ পরিবারটি চলে আসে লেবানন । ১ বছর পর আবার ফিলিস্তিনের আক্কায় চলে আসে। আক্কা জায়গাটি পূর্বে ফিলিস্তিনের অর্ন্তভূক্ত হলেও বর্তমানে উত্তর ইজরাইলে। জায়গাটির অবস্থান পশ্চিম গালিলি প্রদেশে। ওখানকারই আল বিরওয়া নামে একটি গ্রামে জন্মেছিলেন দারবিশ। এখানকারই একটি জায়গার নাম দেইর আল আসাদ। সেখানেই সেটল করে দারবিশ পরিবার। হাই স্কুলে ভরতি হয় বালক। পিতামহ শেখান সূর্যের অহঙ্কার। দিন যায়। ফিলিস্তিনের আদিবাসীদের ওপর ভূঁইফোড় ইহুদিদের লাঞ্ছনা প্রত্যক্ষ করে কিশোর। কিশোরের কবিতায় সেসব উঠে আসে। কিশোরের বয়স এখন উনিশ। হাইফায় চলে যায় সে। তো, হাইফা কোথায়? উত্তর ইজরাইলের সর্ববৃহৎ নগর হাইফা। নগরটিকে ইজরাইলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বন্দরনগীরও বলা চলে। যা হোক। কবিতা লেখা চলছিল। ‘ডানাশূন্য চড়ুই’ (আসাফির বিলা আজনিহা) কাব্যগ্রন্থটি ছেপে বার করল তরুণ কবি।... এখন বহুকাল পরে গাজার বারুদগন্ধী একটি ঝলমলে দিনে রাস্তায় সোনালি চুলের মুমূর্ষ বালিকা আর উদভ্রান্ত বৃদ্ধকে দেখে দারবিশের মনে কতগুলি কথা গুনগুনিয়ে উঠল। মনে মনে লিখলেন-রাস্তাগুলি আমাদের ঘিরে ধরেযখন আমরা বিস্ফোরনের ভিতর দিয়ে যেতে থাকি।তোমার কি মৃত্যুর সঙ্গে জানাশোনা আছে?অসংখ্য আকাঙ্খাসহ আমি জীবন ভালোবাসিতুমি কি কোনও মৃতকে চেন?আমি একজন প্রেমিককে চিনি। রাস্তায় ব্যারিকেডের সামনে ইজরাইলি সৈন্যদের লক্ষ করে কতগুলি কিশোর পাথর ছুঁড়ছে । সৈন্যরা ফাঁকা আওয়াজ করে। কিশোররা হটে যায় না। ওরা কেউ পিতা হত্যার কেউ-বা মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চায়। গলির মুখ থেকে গুলির শব্দ শোনা গেল। হামাস! ইসাম হামদির সেদিকে লক্ষ নেই। তিনি পাঁজকোলা করে আসমাকে ধরে রেখেছেন । রক্তে ভিজে যাচ্ছেন। আকিফ এর রক্ত। কারিমার রক্ত। তাঁর নিজের রক্ত। ইসাম হামদির একটিই ছেলে ছিল। আকিফ। ব্যবসা করত। বাব আল খালিলের কাছে কার্পেটের দোকান ছিল। গত বছর এই সময় ইজরাইলি সৈন্যদের গুলিতে আকিফ নিহত হয়। ইসাম হামদির পুত্রবধূ কারিমা। রামাল্লার মেয়ে। বিধবা কারিমার একটাই মেয়ে । আসমা। তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছিল আসমা। কাল বিকেলে পাড়ার হাদী ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। জ্বর কমেনি। আজ করিমাই বলল, আব্বা, আসমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সকাল থেকেই শহর উত্তাল। সকাল থেকেই দুপক্ষের গুলি বিনিময়। আসমার ফরসা মুখটি নীল হয়ে যাচ্ছিল। যানবাহন নেই। নিজেই পাঁজকোলা করে অসুস্থ নাতনীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইসাম হামদি। মসজিদের পাশের গলি ছেড়ে রাস্তায় উঠতেই গুলি লাগে। কপালে। কীভাবে বেঁচে গেলাম আমি!আসমাকে কোলে নিয়ে ইসাম হামদি ইজরাইলি সৈন্যদের রাস্তায় ব্যারিকেড দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। যেখানে মৃত্যুর শীতল অনুভূতি নিয়ে খাকি রঙের একটি মেরকাভা ট্যাঙ্ক দাঁড়িয়ে... ইসাম হামদি ইজরাইলি সৈন্যদের রাস্তায় ব্যারিকেড দিকে প্রায় দৌড়ে যেতে থাকেন কেননা, কারিমার রাতে ঘুম হয় না। ইসাম হামদি জানেন। মাঝেমাঝে রাতভর কাঁদে কারিমা; কাঁদে যখন ওর শরীরে তৃষ্ণা জাগে; যখন আকিফ-এর সুদর্শন বলিষ্ট শরীরটি মনে পড়ে যায় । কারিমার কান্নার জন্য ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের এক ভোট গ্রহন দায়ী! এসব ভেবে বৃদ্ধ ইসাম হামদিরও রাতে ভালো ঘুম হয় না। হাইফা শহরের কথা মনে পড়ে তার, যেখানে জন্মেছিলেন তিনি । মনে পড়ে মা-বাবা ভাইবোনের মুখ। কে কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল! হায়! ৪০ বছর হল জন্ম-শহর হাইফা থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। বন্দরনগরী হাইফা ভূমধ্যসাগর ঘেঁষে। পূবে নাজারাথ। উত্তরে হ্রদ টাইবেরিয়াস। হাইফা বন্দরে রোজ কতশত জাহাজ ভিড়ত। উড়ত গাঙচিল। গাজা শহরের পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর বলেই গাজা শহরের আকাশেও মাঝেমাঝেই গাঙচিলেরা উড়ে যায় । হায়, তারা তবু হাইফার মতো নয়। সারাদিন হাইফা শহরে ভাসত বিচিত্র এক লোনা গন্ধ; সেই গন্ধ আজও পান ইসাম হামদি। মাঝেমাঝে রাতের ঘুম বরবাদ করে দেয়। ভালো ঘুম হয় না। বাবার মুখটি স্মরণ হয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ইসাম হামদির বাবা আজাম বাদরি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ঠিক ঐ দিনই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে ভাগ করা হবে কি না তা নির্ধারণ করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রদের মধ্যে ভোটের আয়োজন করে। ফিলিস্তিনে পৃথক রাষ্ট ইহুদিদের দাবী। ভোটের ফলাফল নিয়ে হাইফা শহরের বিরাজ করছিল গভীর উদ্বেগ। হাইফা শহরের কবরখানাটি ছিল ভূমধ্যসাগরের তীরে একটি পাইনবনের ভিতরে; নভেম্বর মাসের শেষ বলেই ভূমধ্যসাগরের শীতার্ত বাতাস দাঁত বসাচ্ছিল শোকার্ত ইসাম হামদির কপালে, চোখে। বাবাকে দাফন করে হু হু করে কাঁদছিল ইসাম হামদি। পাশে চাচা হারিত আল হাসান দাঁড়িয়ে। তিনিও হু হু করে কাঁদছিলেন। কাঁদছিলেন পিতৃব্য আবদুল ওয়ালি। কান্নার সঙ্গে মিশেছিল উদ্বেগ। কেননা, জাতিসংঘ বলছে যে, ফিলিস্তিন ভাগ হলেও বেথেলহেমসহ বৃহত্তর জেরুজালেম থাকবে আর্ন্তজাতিক নিয়ন্ত্রনে। ইহুদি নেতারা মেনে নিয়েছে। ফিলিস্তিনের আরব নেতারা মেনে নেয়নি। যে কারণে ভোটের আয়োজন। স্বাধীন মুসলিম দেশগুলি ফিলিস্তিন ভাগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে নাকি। গোরস্থান থেকে বেরিয়ে খবর এল: ৩৩ /১৩ ভোটে ফিলিস্তিনকে দ্বিখন্ডিত করার প্রস্তাব পাস হয়ে গেছে। ১০টি দেশ ভোট দেয়নি। সমগ্র ফিলিস্তিনজুড়ে বিক্ষোভ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। জলদি বাড়ি ফেরা ভালো। ১৯৪৭ সালের দিকে ফিলিস্তিনে আরব ও ইহুদি ছাড়াও ব্রিটিশরা ছিল । তারাও নিহত হচ্ছে। একদল আরব যুবক ব্রিটিশ সৈন্যদের তাড়া করছিল। রাস্তায় আবদুল ওয়ালি ও হারিত আল হাসান ব্রিটিশদের গুলিতে নিহত হয়।কীভাবে বেঁচে গেলাম আমি!পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে সংঘটিত হয় আরব-ইজরাইল যুদ্ধ। যুদ্ধের পর ক্রমশ ফিলিস্তিন অধিকার করে নিতে থাকে ইজরাইল । ইসাম হামদিদের হাইফা থেকে ট্রাকে তুলে দক্ষিণে গাজা স্ট্রিপের রিফ্যুজি ক্যাম্প ঠেলে দেওয়া হয়। গাজা স্ট্রিপে সর্বমোট ৮টি ক্যাম্প। অন্যতম রাফা ক্যাম্প। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে শেষ অবধি আশ্রয় জুটল রাফা ক্যাম্পে । সদ্য বিয়ে করেছেন ইসাম হামদি। স্ত্রী আলিমাও হাইফার মেয়ে। তখনও আকিফ হয়নি। রাফা ক্যাম্পের দুঃসহ জীবনে আলিমার সুন্দর মুখটিতে কে যেন কালি লেপে দিয়েছিল। রাফা ক্যাম্পে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই । পায়খানার সামনে ভোরে উঠে লাইন দিতে হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে খিস্তিখেউড় করতে হত আপন জাতভাইকে। তখন খারাপ লাগত। কেননা, নির্বাসিত আশ্রয়কেন্দ্রে স্বজাত্যবন্ধন দৃঢ় হয়ে উঠেছিল। কুকুর বেড়ালের জীবন আশ্রয়কেন্দ্রে- তার ওপর আতঙ্ক। মাঝেমধ্যে ইজরাইলি সৈন্যরা এসে বাছাই করে ফিলিস্তিনি যুবকদের ট্রাকে তুলে নিয়ে যেত জাতিসংঘের কর্মীদের চোখের সামনে । তারা আর ফিরে আসত না। একবার ইসাম হামদিকে ট্রাকে তুলেছিল তারা। আলিমা ট্রাকের পিছন পিছন দৌড়ে আসছিল ... মাঝপথে কি মনে করে নামিয়ে দিয়েছিল। ... জ্ঞান হারিয়েছিল আলিমা... রাস্তার ওপর ঢলে পড়েছিল ... আকিফ তখন পেটে ... রিলিফের জন্য সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত আলিমা, রাতে ঘুম হত না ...এখন অনেক বছর পর আলিমার পুত্রসন্তানের মৃত্যুর পর কারিমার রাতে ঘুম হয় না। মাঝেমধ্যে রাতভর কাঁদে কারিমা। না, কারিমার মুখ দেখে যায়নি আলিমা । আকিফ এর জন্মের পর আলিমা মারা যায়। ইসাম হামদি আর বিবাহ করেননি। রাফা ক্যাম্পের এক ধাইয়ের দুধ খেয়েছে আকিফ । এক বছর হল আকিফ বেঁচে নেই। ইজরাইলি সৈন্যের গুলিতে নিহত হয়েছিল আকিফ। আজ আকিফ এর মেয়ে আসমা ...৭২ বছর বয়েসী ইসাম হামদি আজ অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন । না, করিমার সামনে দাঁড়ানো যাবে না। জামে মসজিদের উলটো দিকে আল জাহরা হাসপাতাল। হাসপাতালের দিকে না গিয়ে মুমুর্ষ নাতনীকে পাজকোলা করে ইসাম হামদি রাস্তায় ব্যারিকেড তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ইজরাইলি সৈন্যদের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন যেখানে সৈন্যদের পিছনে একটি খাকি রঙের মেরকাভা ট্যাঙ্ক মৃত্যুর আতঙ্ক ছড়িয়ে থেমে আছে। হায়েনা! বেজম্মা! আফসোস! ওদের বিরুদ্ধে এই দীর্ঘজীবনে সম্মুখ সমর করা হল না।এখন ৭২ বছর বয়েসে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হবেন ইসাম হামদি। আল আওয়াব পত্রিকা অফিসের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাহমুদ দারবিশ দৃশ্যটি দেখছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কবি । তিনি কবি বলেই জানেন- বৃদ্ধটি মৃত বালিকাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে না গিয়ে কেন রাস্তায় ব্যারিকেড তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ইজরাইলি সৈন্যদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। উৎসর্গ: ভাঙ্গন।
false
hm
কী মতি, ডরাইলা? Happy families are all alike; every unhappy family is unhappy in its own way. Leo Tolstoy, Anna Karenina, Chapter 1, first line. শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে গণমাধ্যমের একাংশের প্রতিক্রিয়া ও আচরণ বুঝতে গেলে আরেকটু পেছনে যেতে হবে আমাদের। একাধিক বিবেচনায় দেশ পেছন দিকে হাঁটছে, সে যাত্রায় ক্ষণিকের জন্যে সঙ্গী হলাম নাহয় আমরাও। 'তৃতীয় শক্তি'র ব্যাপারে গণমাধ্যমের একাংশের উচ্চাশাসঞ্জাত প্রশ্রয় শাহবাগ আন্দোলনের ব্যাপারে এর প্রতিক্রিয়া বা আচরণকে বহুলাংশে ব্যাখ্যা করতে পারে। কাদের মোল্লার রায়ের আগে মতিঝিলে পুলিশের মৌন সম্মতিতে আয়োজিত শোডাউনে জামায়াতের পাণ্ডাদের প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারার্থে গঠিত ট্রাইব্যুনালকে দেওয়া হুমকি আর কাদের মোল্লার অপরাধের সঙ্গে বেমানান সাজা ও সাজা পরবর্তী বিজয়চিহ্ন প্রদর্শন, এ দুটিই প্রকৃতপক্ষে শাহবাগে মানুষকে সমাগত হতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু প্রথম দিনের জড়ো হওয়া বিচ্ছিন্ন কিছু তরুণ-তরুণীর ভিড় যে শ্রেণী-পেশা-লিঙ্গ-বয়স নির্বিশেষে মানুষকে শাহবাগে ডেকে আনতে পারবে, তা সম্ভবত সবার হিসাবে ছিলো না। ঐ ভিড়টুকু হঠাৎ একটি মিশ্র বার্তা দিয়েছে মানুষ ও মিডিয়ার কাছে। আরাধ্য যে তৃতীয় শক্তি নিয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নোবেলজয়ের পর দৈনিক প্রথম আলোর নেতৃত্বে আরো কিছু পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম নিরলস প্রচার চালিয়েছে, এ ধারণাটিকে "খাওয়াতে" চেয়েছে মানুষকে, সেই তৃতীয় শক্তির কল্পিত ছবিটিকে মাড়িয়ে দলে মুচড়ে একাকার করে এক ভিন্ন তৃতীয় শক্তি শাহবাগে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। এ যেন মঞ্চে বাঘের ছাল গায়ে অভিনেতার বদলে সুন্দরবনের বাঘেরই উপস্থিতি। অনভিজ্ঞের কাছে, ভুক্তভোগীর কাছে, বহুলপ্রত্যাশীর কাছে, রূপমুগ্ধের কাছে, বা ধান্দাবাজের কাছে বাঘছালে ঢাকা মানুষ আর আসল বাঘের মধ্যে পার্থক্য না-ও থাকতে পারে, কিন্তু সে বাঘ যার মুখোমুখি হবে, সে জানে, পার্থক্য কোথায়। তাই শাহবাগ নিয়ে মিডিয়ার উদ্বেগও যথেষ্ট স্পষ্টই ছিলো। দৈনিক প্রথম আলোসহ কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল প্রথম কিছুদিন চেষ্টা করেছে, শাহবাগের বাঘটির মুখে নিজেদের কথা বায়ুস্বননের। মাহবুব রশীদ বা ফারুক গুয়েবাড়ার মতো উটকো লোকজনকে তাই আমরা শাহবাগের প্রতিনিধি হিসেবে পত্রিকা ও টিভিতে প্রলাপ বকতে দেখেছি। কিন্তু এরা সময়ের সঙ্গে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যদি তলস্তয়ের সুখী পরিবারের মতো হয়, মিডিয়ার আঁকা 'তৃতীয় শক্তি' মূলত অসুখী পরিবারের একটি জোট, কিংবা সুখী পরিবারের ঘরছাড়া অসুখী ছেলেমেয়েদের সমাবেশ। ঝানু ব্যবসায়ী ইউনূস যখন রাজনীতিকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কায়দায় চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে রাজনীতির ময়দান থেকে সটকে পড়লেন, তার সঙ্গে তাল দিয়ে হুক্কাৎকার তোলা প্রথম ও দ্বিতীয় সারির অসুখীরা সমস্যায় পড়েন। একদিকে দলের রুষ্ট লোক, অন্যদিকে বিমুখ হাঁটুবাহিনীর চাপে পড়ে তারা উপলব্ধি করেন, গাছে অনেকদূর চড়ার পর মইবাহীরা নীরবে মই গুটিয়ে বাড়ি চলে গেছে। রাজনীতির ফুটবলে ইনজুরি-আক্রান্ত এই বিপন্ন খেলুড়েদের পরবর্তীতে রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর একটি সম্মানজনক লুঙ্গি প্রয়োজন ছিলো ঝড়-ঝঞ্ঝায় লাল হয়ে থাকা পাছা একটু আবৃত করার জন্যে। মইবাহী মিডিয়ামোগলের সভারত্ন মানসিংহেরা, যাদের সংক্ষেপে মই-মানসিংহ ডাকা যায়, অকাল মইচুরির কথা স্মরণ করে এ লুঙ্গি তাদের সরবরাহ করেন। লুঙ্গিটিতে প্রাকৃতিক হলুদের ওপর দহনের পোড়া কালিতে 'তৃতীয় শক্তি' লেখা আছে। টিভিতে রাতের টক শো ও পত্রিকার উপসম্পাদকীয় পাতায় মিডিয়ার এই হালুমরূপী পোষ্য ম্যাওয়ের প্রাদুর্ভাব গত পাঁচ বা সাড়ে পাঁচ বছর ধরেই দৃশ্যমান। নিতম্বে হাই কমাণ্ডের সুখতলার সাথে বিস্ময়কর সাদৃশ্যপূর্ণ নকশার কালসিটে নিয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনারে সুখী পরিবারের অসুখী ভাগ্নে-ভাতিজারা দুই দলকেই সশব্দ সমান চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করে অনেক গরম গরম কথা বলেন। সেখানে লীগভাবাপন্ন মাহমুদুর রহমান মান্না, বিম্পিভাবাপন্ন মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বা জামাতভাবাপন্ন আসিফ নজরুল নয়নমনোহর ঘনিষ্টতা নিয়ে পাশাপাশি বসেন, নানা কথা বলেন। রাস্তায় বড় গর্তের জন্যে স্বীয় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় আনমনা হয়ে থাকা চামচিকারা হাতিদের সমালোচনা করছে, এর বাইরে এই তৃতীয় শক্তির কোনো মুখ্য, সর্বজনগ্রাহ্য কার্যক্রম বা আবেদন মানুষের চোখে পড়েনি। এমন কোনো ডাক তারা গত পাঁচ বা সাড়ে পাঁচ বছরে দিতে পারেননি, যা মানুষকে তাদের পাশে উপস্থিত করতে পারবে। ময়দানের ময়দানব হয়ে নয়, বরং মিডিয়ার মিডিয়াম আঁচের বারবিকিউ খাসি হয়ে তারা জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদ দূরত্বে ঘূর্ণায়মান অক্ষে ঘুরপাক খেয়ে পুষ্পের হাসি হেসে গিয়েছেন। কিন্তু রাজনীতি শেষ পর্যন্ত ময়দানেরই ব্যাপার। অন্তত, এখন পর্যন্ত। আর এখানেই শাহবাগ চড় মেরেছে তৃতীয় শক্তির পাইকারদের গালে। শাহবাগ জেগে উঠেছে বিকল্প মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের নেতৃত্ববিহীন আবাহনে। এবং স্বল্প সময়ের মাঝে এক বিপুল কলেবর নিয়ে সগর্জনে সে তার চরিত্র স্পষ্ট করেছে, যা মিডিয়ার মই-মানসিংহদের আকাঙ্খিত রূপটি থেকে ভিন্ন। শাহবাগের শক্তির দিকটি কেবল তার সংখ্যায় নয়, বরং উপাদানে। শাহবাগে সমাজের প্রায় প্রতিটি প্রস্থচ্ছেদের মানুষ এসে যোগ দিয়েছেন বলেই সেটি অশ্রুত বাঘের মতো আচমকা এসে গর্জন করে ছোট্টো বাংলাদেশ হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে পেরেছে। বাংলাদেশের ওপর সারির প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই সামর্থ্য আছে নিজেদের কর্মীদের বিপুল সংখ্যায় সমাবিষ্ট করার। কিন্তু শাহবাগ ভিন্ন তার স্বতস্ফূর্ততায়, তার সংযুক্তির প্রকৃতিতে, তার প্রাণভ্রমরটির দীর্ঘায়ুর কারণে। আর তাই শাহবাগকে জাগরিত রাখার কাজটি নিজের কাঁধে তুলে নেয়া নারীরা শুরু থেকেই আক্রান্ত। কারণ বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক সমাবেশের চেয়ে শাহবাগ ভিন্ন নারীদের মুখ্য অংশগ্রহণের কারণেই। এই নেতৃত্ব কেবল মঞ্চে মাইক হাতে স্লোগানেই নয়, এই নেতৃত্ব টুকরো টুকরো করে হাতে নিয়েছেন তাঁরা। ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ থেকে যখন শাহবাগে হামলা হলো, ফুলের দোকান থেকে লাঠি নিয়ে তাই অসমসাহসিনী নারীরা শাড়ি কোমরে বেঁধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়েছেন। এই নারীরা সংরক্ষিত মহিলা আসনের ঘাড়েগর্দানে সংসদ সদস্যা নন, নিরীহ গৃহিণী আর কোমলস্বভাবা ছাত্রী। আক্রমণ তাই শুরু হয়েছে একদম শুরু থেকেই, নারীদের লক্ষ্য করে। জামায়াতের সমর্থক ব্লগ, ফেসবুক পেজ ও মিডিয়া শাহবাগে উপস্থিত নারীদের নিয়ে যথেচ্ছ গুজব ছড়িয়েছে। ফটোশপ নামের সফটওয়্যারটি তারা যে উৎসাহে ব্যবহার করেছে, শাহবাগের ছেলেমেয়েরা একই উৎসাহে গুগলের ইমেজ সার্চের মাধ্যমে তাদের সকল নোংরামি উন্মোচন করে দেখিয়েছে। শাহবাগে নারীরা তাই এখন সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছেন কুলীন দৈনিকের কুলীনতর সাহিত্যপাতায়। দৈনিক প্রথম আলো তার সাহিত্য পাতায় গতকাল প্রকাশ করেছে তৃতীয় শ্রেণীর সাহিত্যকর্মের জন্যে প্রথম শ্রেণীর পুরস্কারপ্রাপ্ত আমলা হাসনাত আবদুল হাই ও প্রথম আলোর নিজস্ব পুরস্কারপ্রাপ্ত অদিতি ফাল্গুনীর দুটি লেখা। পাশাপাশি প্রকাশিত এই দুটি লেখার কাঠামো ও বক্তব্যে বিস্ময়কর মিল রয়েছে, এবং দুটিতেই শাহবাগের সমাগতা তরুণীদের উপস্থাপন করা হয়েছে "মফস্বল" এর "ব্যবহৃতা" মানুষ হিসেবে, যারা রাজনীতির বোর্ডগেমে কিছুটা ঊনমানের গুটি। গল্প দুটিতে তাদের পরিণতি যথাক্রমে স্বেচ্ছায় সম্ভুক্ত ও ধর্ষিত হওয়া। এই সম্ভোগ ও ধর্ষণ করে আবার একটি রহস্যময় রাজনৈতিক পক্ষের লোক, যাদের সঙ্গে ঘুরেফিরে শাহবাগে আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোরই সাদৃশ্য চোখে পড়ে। মফস্বলের মেয়েদের ঢাকায় গিয়ে রাজনীতিকদের শয্যাশায়িনী বা শিকার হওয়ার এই গল্পগুলো পূর্বে বর্ণিত জামাতি পত্রিকা ও ফেসবুক পেজের কদর্য ছবিগুলোর লৈখিক রূপমাত্র। মফস্বলের যে বিপুল সংখ্যক মানুষ দৈনিক প্রথম আলোর পাঠক, তারা অনেকেই আমার দেশ বা বাঁশের কেল্লার সাবস্ক্রাইবার নন, পত্রিকার মার্কেটিং কৌশল, রাজনৈতিক রুচি বা প্রযুক্তিগত কারণে তারা শাহবাগ নিয়ে জামায়াতের কদর্য প্রোপাগাণ্ডার প্রকোপের বাইরে হয়তো অবস্থান করছিলেন, এবার এ গল্প, এবং এ গল্পের মাধ্যমে একটি বিকৃত সন্দেহ তাদের কাছে পৌঁছে গেলো দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাহিত্যপাতার বিভাগীয় সম্পাদক সাজ্জাদ শরীসৃপের কল্যাণে। এ গল্পের চরিত্র তাদের মফস্বলেরই কোনো তেজস্বিনী, যে রাজধানীতে গিয়ে "বরবাদ" হয়ে যাচ্ছে। এই পয়মাল হওয়া মফস্বলের রক্ষণশীল সমাজের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য উপায়েই, অর্থাৎ নাভির নিচে নষ্ট হওয়া। এর অভিঘাত কতদূর, তা পরে বোঝা যাবে, এখন অনুমান করা বা করানো আমার অভিপ্রায় নয়। এখানে স্মর্তব্য, মেহেরজান নামের একটি গুহ্যদ্বার থেকে টেনে বার করা স্ক্রিপ্টে ঘূর্ণায়িত অখাদ্য বটতলার সিনেমা নিয়ে প্রথম আলোতে অনেক রথী লেখক কীবোর্ড কলম ক্ষয় করেছিলেন। হাসান ফেরদৌস নামে এক পাছাভারি বিজ্ঞ কেষ্টুবিষ্টু নিজের গুহ্যদ্বার থেকে একাত্তরের ধর্ষিতা নারীদের মেহেরজানে উপস্থাপনকে "নারীর কামজ প্রয়োজন" এর দৃশ্যায়নের থিওরি বের করে কলাম চুদিয়েছিলেন, ফারুক গুয়েবাড়া তার মৌসুমী বিপ্লবদগ্ধ রেক্টাম থেকে বার করে ফেঁদেছিলেন "রিকনসিলিয়েশন" তত্ত্ব। কিন্তু যখন শাহবাগের নারীদের মফস্বলের পাঠকের চোখে লয়ের পথে যাত্রী হিসেবে আঁকার প্রয়োজন হয়, তখন "নারীর কামজ প্রয়োজন"-এর অস্তিত্ব বিস্মৃত হন সাহিত্যপাতার কেরানী ও দারোয়ানবৃন্দ। শাহবাগের নারীদের কল্পিত যৌনতার বর্ণনা তাই অতি অবশ্যই অনিচ্ছাসম্ভোগ বা ধর্ষণমুখী, যা মফস্বলের চোখে ঘৃণার্হ ও পরিত্যাজ্য। মেহেরজানে একাত্তরের নারীরা যেখানে পাকিস্তানী সেনার প্রেমপুষ্করিণীতে সীসার গোলকের মতো নিমজ্জিত হয়, হাসনাত আবদুল হাই বা অদিতি ফাল্গুনীর গল্পে শাহবাগের নারীরা সম্ভুক্তা বা ধর্ষিতা হয় তাদেরই সহযোদ্ধাদের হাতে। তাহরির স্কোয়্যারে অসভ্য মিশরীয়রা যেখানে সহস্রাধিক ধর্ষণের অন্ধকার উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করেছে, শাহবাগে তার অনুপস্থিতি মোচনের দায়িত্ব তুলে নেয় দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্যপাতা। যা খবরের পাতায় তারা আনতে পারেনি, তা তারা নোংরা গ্রাফিতির মতো আঁকে সাহিত্যপাতায়। আরও বিচিত্র, সম্প্রতি ফাঁস হওয়া সাঈদী রাজাকারের ফোনালাপে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার যে মফস্বলবাসিনী তরুণীটি "দাদু" সম্বোধন করে সাঈদীর সঙ্গে কথামৈথুন চালিয়ে যাচ্ছে, বা প্রবাসী জামায়াত কর্মীর যে মফস্বলবাসিনী স্ত্রী সাঈদীর সঙ্গে সূক্ষ্ম যৌন ইঙ্গিতবহ আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, সমাজের সে নারীদের নিয়ে গল্পকারদ্বয় বা সম্পাদক-পাতিসম্পাদকের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। রাজনীতি ও মফস্বলের তরুণী-যুবতীদের রাজনীতিকদের হাতে ব্যবহৃত হওয়ার উদাহরণটি কেবল শাহবাগের নারীদের দিয়েই চরিতার্থ করার ব্যাপারে এই বাটপারচতুষ্টয়ের সকল আগ্রহ নিহিত। অবশ্য, সেরকম গল্পকেও আমরা স্বাগত জানাবো বলে মনে করি না। পাঠকের সশব্দ প্রতিক্রিয়ার মুখে পিছু হটে মতিউর রহমান আজ হাসনাত আবদুল হাইয়ের বিষ্ঠার গন্ধমাখা লেখাটি প্রত্যাহার করেছে নিজেদের অনলাইন আর্কাইভ থেকে। অদিতি ফাল্গুনীর মলখণ্ডটি বহাল তবিয়তে আছে। দুটি গল্পই বিপুল সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছে, সে বিষটুকু যে প্রত্যাহার করা যায় না, তা মতিউর রহমান ভালো করেই জানে। প্রথম আলোর সাহিত্য পাতার এই ছোটলোকামি অবশ্য নতুন নয়। রাজু আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রীকে আক্রমণ করে সাহিত্যপাতায় অপাঙক্তেয় একটি রচনার কারণে আলিম আজিজ নামে একজন কর্মীকে তারা অতীতে বহিষ্কারও করেছে। হয়তো এবারও তারা কোনো বলির পাঁঠা খুঁজে বার করবে। নিরাপদে রয়ে যাবে সাজ্জাদ শরীসৃপ নামে সাহিত্যপাতার মাসীটি, এ কথা অবশ্য অনায়াসানুমেয়। শাহবাগ থেকে নারীদের হাতে মেরে দূর করা না করা গেলে, জাতে মেরে বের করার চেষ্টায় মরিয়া দৈনিক প্রথম আলো কী চায়, তা নিয়ে নানা অনুমান রয়েছে। শাহবাগ থেকে উচ্চারিত ইসলামী ব্যাঙ্ক বর্জনের দাবি মই-মানসিংহদের সরাসরি লাভবান করেছে, বিডিনিউজ২৪.কম বাদে সকল পত্রিকাই ইসলামী ব্যাঙ্কের বিজ্ঞাপনশিশ্নটিকে সাদরে লুঙ্গি তুলে নিজেদের পেছনে গুঁজে নিয়েছে। কিন্তু চলমান অনেক গুজবের একটি হচ্ছে, শাহবাগকে "সমর্থন" দেওয়ার কারণে প্রথম আলোর সার্কুলেশন নাকি হ্রাস পেয়েছে। আবার 'আমার দেশ' বন্ধের মুখে পড়ায় এর মার্কেট শেয়ারের একাংশ নাকি প্রথম আলো হস্তগত করতে চায়। মতিউর রহমান নাকি পানি কতোটুকু ঠাণ্ডা, তা মাপতেই হাসনাত আবদুল হাই আর অদিতি ফাল্গুনীর মতো খরচের খাতায় রাখা বটতলার সাহিত্যিকদের ওপর দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলে আলপিন সম্পাদক সুমন্ত আসলাম, আলপিন কার্টুনিস্ট আরিফ বা সাহিত্যপাতাকর্মী আলিম আজিজের মতো কেউ চাকরি খোয়াবে, বা হাই-ফাল্গুনীকে প্রথম আলোতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে, এ-ই তো। শাহবাগে নারীদের অংশগ্রহণ কমে গেলে বা দূর হলে শাহবাগকে আর দশটি রাজনৈতিক দলের মামুলি সমাবেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজটি সহজ হয়। হঠাৎ শাহবাগের চরিত্র বদলে গেলে মনস্তাত্ত্বিক চাপের ব্যাপার তো রয়েছেই। অমিতবল শিমশোন যখন নিদ্রিত ছিলো, তার প্রেমাস্পদা দেলাইলাই কিন্তু শিমশোনের শক্তির উৎস লম্বা চুল কেটে নিয়েছিলো। শাহবাগের নারীরাও যেন শিমশোনের দীর্ঘকেশের মতোই এ আন্দোলনের গোপন বলকেন্দ্র। 'তৃতীয় শক্তি'র প্রস্তাবকরা জানে, শাহবাগকে শুধু দুর্বল করলে হবে না, তাকে করতে হবে অগ্রহণযোগ্য ও পঙ্গু, যাতে প্রকৃতপক্ষেই সাধারণ মানুষের আকাঙ্খার উপস্থাপনের জন্যে কেউ আর মাঠে না থাকে, বলখেলাটি ফিরে যায় সুখী পরিবারের সুখী সদস্যদের পায়ে। পরিশেষ, ক্ষমা প্রার্থনার পালা। গতকাল হাইয়ের লেখাটি পড়ে টয়লেটে সশব্দে প্রস্রাব করতে করতে এক সম্পাদক ও এক সাহিত্যপাতার বিভাগীয় সম্পাদককে যথাক্রমে কুত্তার বাচ্চা ও খানকির ছেলে বলে বিড়বিড় করে গালি দিচ্ছিলাম। আজ দেখলাম মতিউর রহমান ক্ষমা চেয়ে হাইয়ের লেখা প্রত্যাহার করেছে। সেখানে সে লিখেছে, ২৯০১ শব্দবিশিষ্ট হাইয়ের রচনাটি নাকি তারা "অসাবধানতাবশত" প্রকাশ করেছে ও পাঠকের কাছে সে কারণে ক্ষমা চেয়েছে। আমার ক্ষোভ তাই প্রশমিত হয়েছে। আমিও অনবধানতাবশত গালি দেওয়ার কারণে আমার টয়লেটে প্রস্রাবের ফেনার কাছে ক্ষমা চেয়ে গালি দুটি প্রত্যাহার করে নিলাম।
false
ij
জরথুশত্র_ প্রাক-খ্রিস্টীয় যুগের পারসিক ধর্মপ্রচারক জরথুশত্র। প্রাচীন ইরানের (পারস্যের) ঋষি। গ্রিকরা এঁকে বলত জোরোএসটার। জরথুশত্র ছিলেন সভ্যতার প্রাচীনতম ধর্মের প্রবক্তাদের অন্যতম; তাঁর সময়কালকে সাধারনত খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ বলে চিহ্নিত করা হয়। অনুমান করা হয় জরথুশত্র তৎকালীন প্রচলিত ধর্মের পুরোহিত ছিলেন। মৌলিক চিন্তাবিদ এবং সাহসী সংস্কারক হিসেবে তিনি চিহ্নিত হয়ে আছেন। তাঁর বাণীতে প্রতিফলিত হয়েছে প্রাচ্যের শুভবোধ । বহু ঈশ্বরবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একেশ্বরবাদ কেননা প্রাচীন পারস্যে সে সময় ট্রাইবাল সমাজ ভেঙে গড়ে উঠছিল রাষ্ট্র; আজ তাঁর জীবনদর্শন সহজ সরল মনে হতে পারে; কিন্তু তৎকালে তাঁর শিক্ষা ছিল যুগান্তকারী ও বিপ্লবী। মানচিত্র ইরান মুহাম্মদ ইকবাল তাঁর “দি ডেভেলাপমেন্ট অভ মেটাফিজিক্স ইন পারসিয়া” বইতে জরথুশত্র সম্বন্ধে লিখেছেন,‘ জরথুশত্র হইলেন ইরানের এমন একজন প্রাচীন ঋষি; ইরানি আর্যদিগের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসে যাঁহার অবস্থান সর্বাগ্রে।” এবং জরথুশত্রর সময়কাল সম্বন্ধে লিখেছেন, “ ... ভ্রমনশীল ইরানি আর্যগন মধ্য এশিয়ায় স্থায়ী আবাস গড়িয়া তুলিল যখন বৈদিক স্তোত্রসমূহ রচিত হইতেছিল।’(পৃষ্ঠা,৮) ...ইরান শব্দটি ‘আর্য’ শব্দ থেকে উদ্ভুত; এবং কালক্রমে ‘ভ্রমনশীল ইরানি আর্যগন’ পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে ভারতবর্ষের পশ্চিম সীমান্তে উপনীত হয়েছিল। জুডিথ ই. ওয়ালশ ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অভ ইন্ডিয়া’ বইতে লিখেছেন:Around 1700 B.C., 200 years after many Harappan cities had been abandoned, a tribal community living in southern Afghanistan began to compose hymns in praise of their gods. This community called themselves Aryans (a term that later meant “civilized” or “noble”). By 1400B.C. these peoples had migrated into the Punjab and completed their collection of hymns. These hymns eventually became the Rig-Veda, a sacred text in the modern Hindu religion, the oldest source for ancient Indian history and the only source of information about the origins of the community that composed it.(পৃষ্ঠা,৩৭) এ থেকে বোঝা যায় প্রাচীন পারস্য ও বৈদিক ভারতের মধ্যে সম্পর্ক গভীর এবং ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বে দক্ষিণ আফগানিস্তানে যে ট্রাইবাল কমিউনিটি বাস করত তার সঙ্গে জরথুশত্রর গোত্রের সম্পর্ক ঘনিষ্ট। বর্তমান আফগানিস্তান প্রাচীনকালে পারস্য সাম্রাজ্যের অর্ন্তভূক্ত ছিল। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের মানচিত্র ; প্রাক-খ্রিস্টীয় যুগে এখানেই বিকাশ লাভ করেছিল জরথুশত্রীয় মতবাদ। জরথুশত্রর সময়কালে নথিপত্র লিখিত হত না বলে তাঁর সম্বন্ধে জানার প্রত্যক্ষ কোনও উৎস নেই। তাঁর জন্মস্থানও এ কারণেই নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা যায়নি। গ্রিকরা যখন তাঁর কথা প্রথম জানতে পারল -ততদিনে জরথুশত্র পারস্যে শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যে পরিনত হয়েছেন। গ্রিকদের মতে জরথুশত্রর সময়কাল দার্শনিক প্লেটোর (৪২৯/৩৪৭ খ্রিষ্টপূর্ব) ৬০০০ বছর পূর্বে। পরের যুগের ঐতিহাসিকরা অবশ্য বল্লেন জরথুশত্র বেঁচে ছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ শতকে-অর্থাৎ হিব্রুভাষী নবীদের আমলে। অবশ্য আধুনিক ঐতিহাসিকগন বিস্তর গবেষণা করে বলছেন, জরথুশত্রর সময়কাল ১৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব। এই মতটিই আমরা গ্রহন করতে পারি। আসলে জরথুশত্রর জীবন-কাহিনী প্রাচীন ইরানবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। এবং এর হাজার বছর পর জরথুশত্রর জীবন-কাহিনী লেখা হয় এবং তাতে জরথুশত্রর জীবন ও দর্শন সর্ম্পকে গুরুত্বপূর্ন তথ্যাদি পাওয়া যায়। ইরানের দুর্গম পাহাড়ে জরথুশত্রর উপাসনালয় জরথুশত্রর জন্মস্থান নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা না গেলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিক একমত যে প্রাচীন পারস্যের উত্তরপূর্বে জন্মগ্রহন করেছিলেন জরথুশত্র । আভেস্তা (জরথুশত্র প্রণীত ধর্মপুস্তক) থেকে জানা যায় জরথুশত্রর মায়ের নাম দুগ্ধা এবং বাবার নাম পুরুষাসস্প। এবং এই আর্য গোত্রটির নাম ছিল স্পিটামা। আভেস্তা অনুযায়ী দারাজা নদীর তীরে জরথুশত্রর জন্ম। জরথুশত্রীয় বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী প্রথম মাস হল ফারভাদিন (মার্চ-এপ্রিল) দারাজা নদীর তীরে প্রথম মাসের ৬ষ্ট দিনে জরথুশত্রর অনুসারীরা জন্মতিথি পালন করে । স্পিটামা গোত্র সম্ভবত চারণ-জীবন যাপন করত-যারা ঘোড়া প্রতিপালন করত। মুহাম্মদ ইকবাল তাঁর “দি ডেভেলাপমেন্ট অভ মেটাফিজিক্স ইন পারসিয়া” বইতে লিখেছেন,‘This new mode of life (আর্যদের স্থায়ী জীবন) and the consequent stability of the institution of property among the settlers, made them hated by other Aryan tribes who had not yet shaken off their original nomadic habits, and occasionally plundered their more civilised kinsmen. Thus grew up the conflict between the two modes of life which found its earliest expression in the denunciation of the deities of each other - the Devas and the Ahuras. (পৃষ্ঠা, ৮) জরথুশত্রর জীবনে এই কথাগুলি প্রতিফলিত হতে দেখি। যা হোক। জরথুশত্রর জন্মের পূর্বেই নাকি ভবিষৎবানী হয়েছিল। চন্দ্র-তারকা নাকি সেকথা জানত এবং তারা আর্য-নারী দুগ্ধাকে জানিয়েছিল সে কথা; এমন কী দুগ্ধার জন্মের সময়ও নাকি তাঁর দেহ থেকে জ্যোতি বিচ্ছুরিত হতে দেখা যায়। এসব কথা থাক। বলছিলাম জরথুশত্রর জন্মস্থানও নির্দিষ্ট হয়নি বটে তবে প্রাচীন পারস্যের উত্তরপূর্বে জন্মগ্রহন করেছিলেন জরথুশত্র । আরও নির্দিষ্ট করে বললে স্থানটি ব্যাকট্রা । প্রাক-খ্রিস্টীয় যুগের পুর্ব-পারস্যের এক সমৃদ্ধশালী নগর। প্রাচীন ব্যাকট্রা প্রদেশের মানচিত্র। এখানেই জরথুশত্রর জন্মস্থান বলে অনুমিত। প্রাচীন ব্যাকট্রা বর্তমানে আফগানিস্তানের বলখ প্রদেশ বলখ এর বর্তমান চিত্র আগেই একবার বলেছি যে জরথুশত্র প্রচারিত ধর্মটির ধর্মগ্রন্থের নাম আভেস্তা। দীর্ঘকাল ধরে আভেস্তা রচিত হয়েছে। এর পুরনো অংশটি ‘গাথিক আবেস্তা’ ভাষায় রচিত; যা ছিল জরথুশত্রর মাতৃভাষা। এতে রয়েছে জরথুশত্রর স্বরচিত ১৭টি স্তোত্রগীত বা স্তুতিগান। আভেস্তার পরের অংশটি পরে রচিত হলেও জরথুশত্রর অনুসারীদের কাছে এর গুরুত্বও কিন্তু কম নয়। পন্ডিতগন একে “তরুণ আবেস্তা” বলে অবহিত করেন। আভেস্তা। জীবন ও বিশ্বজগৎ সম্বন্ধে জরথুশত্র নিজস্ব ধ্যানধারণা পাওয়া গেছে গাথা নামে প্রাচীন গ্রন্থে। প্রাচীন ইরানি ভাষায় লেখা স্তোত্রগীত বা স্তুতিগান কে গাথা বলা হয়। গাথার ভাষাও ছিল গাথিক আবেস্তান। জরথুশত্র এই গাথিক আবেস্তান ভাষায় দেবতা আহুর মাযদার গৌরব বর্ণনা করে প্রার্থনাসংগীত রচনা করে গেছেন। গাথা আসলে ছন্দোবদ্ধ বাণী বা প্রার্থনাসংগীত। গীতাঞ্জলি রচনায় রবীন্দ্রনাথের যে ভূমিকা ছিল,-গাথাসমূহ রচনাতে জরথুশত্রর ঠিক একই ভূমিকা ছিল। জরথুশত্রর জীবনদেবতার নাম আহুর মাযদা বা আলোর দেবতা। জরথুশত্র যে পুরোহিত ছিল তা অনুমান করা যায়। কেননা, গাথার মতন সংগীতধর্মী কাব্য রচনায় সে কালে মুষ্টিমেয়র আয়ত্বে ছিল। জরথুশত্র কেবল ধর্মীয় চিন্তাবিদই নন-পারস্যের আদিকবিও ছিলেন। জরথুশত্র তাঁর নিজস্ব জীবনদর্শন গাথায় লিখে প্রকাশ করেছেন। আহুর মাযদার ওপর জরথুশত্রর অপার বিশ্বাস এবং তাঁর সঙ্গে কথোপকথন গাথার মূল উপজীব্য। জরথুশত্র প্রণীত ধর্মে উপাসনার আরও পুস্তক ছিল। যেমন: ইয়াসনা-বলিদানের নিয়মাবলী; ভিসপেরাড-এটি জরথুশত্র-সহ অন্যান্য আধাত্মিক নেতৃবৃন্দের প্রতি স্তুতি; বিদেভদাদ- জরথুশত্রীয় সৃষ্টিতত্ত্ব ও জরথুশত্রীয় বিধিবিধানসমূহ। আস্তথ-স্বর্গীয় দেবদূত ও বীরদের প্রতি স্তুতি এবং খোরদা আভেস্তা-ক্ষুদ্র আবেস্তা; এটি সাধারন প্রার্থনাসংগীতের পুস্তক। জরথুশত্রীয় ধর্মের কৃত্যাদি এসব পুস্তক ও গাথার ওপর গড়ে উঠেছে। এই ছবির মাঝখানে আহুর মাযদা। তিনি রাজা খসরু পারভেজকে রাজার অধিকার দান করছেন। নারীটি অনাহিতা; পারস্যের দেবী। তিনটি প্রধান নীতির ওপর জরথুশত্রীয় ধর্মটি প্রতিষ্ঠিত। প্রথমত: একেশ্বরবাদ। জরথুশত্রীয় শিক্ষার মূল হল একেশ্বরবাদ। আহুর মাযদাই একক ঈশ্বর, তার কোনও অংশীদার নেই। আহুর মাযদা অর্থ জ্ঞানী প্রভু। ইনিই বিশ্বজগতের সৃষ্টা; এবং মানবজাতি ও সকল বস্তু ইনিই সৃষ্টি করেছেন। জরথুশত্রর মতে আহুর মাযদা ঈশ্বরের ঈশ্বর, জ্ঞানীর জ্ঞানী। সত্য ও পূণ্যের পিতা; তিনি প্রেম ও সুখের কারক; তাঁকে ভালোবাসতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে। কখনোই তাঁকে ভয় করা চলবে না। দ্বিতীয়ত: দ্বৈত আত্মা; সত্য ও মিথ্যা: জরথুশত্রর মতে আহুর মাযদা প্রথমে সৃষ্টি করেছেন চেতনা এবং বিশুদ্ধ ঈশ্বরের জ্ঞান। এই হল স্পেনটা মাইনয়ু বা সত্যের স্পিরিট বা উচ্ছ্বাস। এরপর আহুর মাযদা সৃষ্টি করলেন ভৌত জগৎ। সৃষ্ট সময়ের প্রারম্ভ থেকেই শুভ ও অশুভ আত্মার অস্তিত্ব ছিল। জরথুশত্রর মতে অশুভ আত্মা হল “মিথ্যা”। এবং এই অশুভ আত্মা পরে আহরিমান নামে পরিচিত হয়। শুভ ও অশুভ আত্মার পরস্পর সংগ্রাম এবং দ্বন্দই মানুষের চিন্তা ও কর্মপ্রনালীকে নিয়ন্ত্রন করে। তৃতীয়ত: স্বাধীন চিন্তা (ফ্রি উইল) ...আহুর মাযদা মানবজীবনের প্রতিটি স্তরকে প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রন করেন না। সৃষ্টির সময়ে মানবজাতিকে ফ্রি উইল পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। জোরোআসট্রিয়ানিজম বইতে পলা আর. হাটৎস লিখেছেন, ‘As Zoroastrians, men and women must think and reason for themselves. They have the freedom to choose good over evil. Free will and intellect give them the choice to do the will of Ahura Mazda—to live according to the Spirit of Truth.' আধুনিক জরথুশত্রীয় উপাসনালয় জরথুশত্রীয় ধর্মটিতে আরও তিনটি প্রধান নীতি রয়েছে । ক) শুভ চিন্তা বা হুমাতা; খ) শুভ শব্দ বা হুকতা; গ) শুভ কাজ বা হুভারশতা। জরথুশত্রীয় ধর্মটি আশাবাদী ধর্ম; নিরাশা পাপ হিসেবে গন্য হয়। এবং অশুভর বিরুদ্ধে আহরু মাযদার যুদ্ধে সাহায্য করবে আমেশা স্পেনটাস। এ ই শক্তির এক রুপ। মানুষকে সত্য পথ দেখানোর জন্য প্রতিটি মানুষ ফ্রাভাশি নিয়ে জন্ম গ্রহন করে। এটি পথপদর্শক আত্ম ভালোমন্দ চিনতে শেখায়। মানুষ বিবেকের নির্দেশ মেনে চললে ফ্রাভাশি চিনতে পারে। মানুষের মৃত্যু হলে ফ্রাভাশি দেহখাঁচা ছেড়ে অন্য ফ্রাভাশির কাছে চলে যায় এবং এভাবে জীবনমৃত্যুর মাঝে যোগসূত্র হিসেবে থাকে। ফ্রাভাশি হল আহরু মাযদার স্পর্শ যা প্রতিটি জীবিত বস্তুতে থাকে। আহরু মাযদার প্রতীক হল আগুন বা অগ্নি। অগ্নিতে অন্যান্য স্বর্গীয় বস্তু ও সূর্যের উজ্জ্বল্য নিহিত থাকে এবং অগ্নি থেকে সত্যের আত্মশক্তি ক্ষমতা বিচ্ছুরিত হয়। জরথুশত্রীয় পুরোহিত ও অগ্নি এ কারণে অভিন্ন। অগ্নি আহরু মাযদার উপস্থিতি ঘোষনা করে । জরথুশত্রীয় উপাসনালয়কে বলে ফায়ার টেম্পল বা আতাশ বেহরাম। আগুনের মতো পানিও আহরু মাযদার পবিত্রসৃষ্টি। অগ্নি উপাসনালয়ে থাকে জলাধার। প্রার্থনার পূর্বে শুদ্ধ হয়। উপাসনালয় ভবনের মাঝখানে থাকে অগ্নিকক্ষ। অগ্নিকক্ষের মাঝখানে থাকে আফারগান-কড়াই। তাতে সর্বক্ষণ আগুন জ্বলে। জরথুশত্র; একালের শিল্পীর আাঁকা জরথুশত্রীয় ধর্মে পরকাল এর ধারণা রয়েছে।। পরকালে হয় লোকে আহরু মাযদার গৌরবে বিলীন হবে অথবা নরকের অতল গহব্বরে পতিত হবে। জীবিত অবস্থায় কর্মফল অনুযায়ী এমনটা ঘটবে। শয়তানের ধারণাও জরথুশত্রীয় ধর্মে রয়েছে। জরথুশত্রীয় ধর্মে শয়তানের নাম-আনগ্রা মাইনু। শয়তান পাতালের শাসক! শেষ বিচারের পর জগৎ ধ্বংস হবে এবং নতুন বিশুদ্ধ জগৎ সৃষ্টি হবে। শেষ সময়ে একজন উদ্ধারকর্তা আসবে এবং সৎলোককে উদ্ধার করবে -এই ধারণাও জরথুশত্রীয় ধর্মেরই। তথ্যনির্দেশ: মুহাম্মদ ইকবাল; দি ডেভেলাপমেন্ট অভ মেটাফিজিক্স ইন পারসিয়া। মানেকজি নুসেরভানজি দাহলা; জোরোআসট্রিয়ান থিওলজি ফ্রম দি আরলিয়েস্ট টাইমস টু দি প্রেজেন্ট ডে পলা আর. হাটৎস; জোরোআসট্রিয়ানিজম । জুডিথ ই. ওয়ালশ; আ ব্রিফ হিস্ট্রি অভ ইন্ডিয়া। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৩
false
rg
প্রসঙ্গ তিন সিটি করপোরেশান নির্বাচন _ টক ঝাল মিষ্টি পর্ব এক!!! গতকাল তিন সিটি করপোরেশানে নির্বাচন হয়ে গেল। ইতোমধ্যে নির্বাচনের রেজাল্টও বেসরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়ে গেছে। তো নতুন কথা বলার আগে কিছু পরিসংখ্যানে একটু নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক। ঢাকা সিটি করপোরেশান উত্তর: ★ আয়তন প্রায় ৬২.৬৩৮ বর্গ কিলোমিটার। ★ প্রশাসনিক জোন ৫ টি ★ মোট প্রশাসনিক ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৬ টি। ★ মেয়র প্রার্থী ১৬ জন। ★ কাউন্সিলর সাধারণ আসনে ২৭৭ জন। ★ কাউন্সিলর সংরক্ষিত আসনে ৮৮ জন। ★ সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩৬টি। ★ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২টি। ★ মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০৯৩টি। ★ কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫৮৯২টি। ★ কোন অস্থায়ী ভোট কেন্দ্র নেই । ★ অস্থায়ী ভোট কক্ষ আছে ২৭৭টি । ★ মোট ভোটার সংখ্যা ২৩,৪৫,৩৭৪ জন। ★ পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১২,২৪ ৭০১ জন। ★ নারী ভোটার সংখ্যা ১১ ২০,৬৭৩ জন। ঢাকা উত্তরের ১৬ জন মেয়র প্রার্থীরা হলেন: ১. আনিসুল হক ২. মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী ৩. তাবিথ আউয়াল ৪. শামছুল আলম চৌধুরী ৫. চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী ৬. আব্দুল্লাহ আল ক্কাফী ৭. এওয়াইএম কামরুল হাসান ৮. বাহাউদ্দিন আহমেদ ৯. নাদের চৌধুরী ১০. কাজী শহীদুল্লাহ ১১. মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ ১২. আনিসুজ্জামান খোকন ১৩. জামান ভূঞা ১৪. শেখ শহিদুজ্জামান ১৫. জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি (গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক) ১৬. শেখ ফজলে বারী মাসউদ। প্রশ্ন: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশানে ১৬ জন মেয়র প্রার্থীর ১০৯৩টি ভোটকেন্দ্রের ৫৮৯২টি ভোটকক্ষে কতজন মেয়র প্রার্থী পুলিং এজেন্ট দেবার সামর্থ রাখেন? মন্তব্য: আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক এবং বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ছাড়া আর কোনো মেয়র প্রার্থীর প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন করে পুলিং এজেন্ট দেবার মত সামর্থ্যই ছিল না। অন্য মেয়র প্রার্থীরা যতই হেভিওয়েট হোক না কেন, এটাই হল আসল কথা। কারণ অন্য অনেক মেয়র প্রার্থীর ৫৮৯২ জন সমর্থকই ছিল না যাদের পুলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেবেন। অনেক মেয়র প্রার্থী ৫৮৯২টি ভোট পর্যন্ত পায়নি। প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন করে পুলিং এজেন্ট দেবার মত যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া এক ধরনের ধৃষ্টতা। রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল। ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাননি। বরং বিএনপি'র রাজনৈতিক কৌশলের কাছেই বলি হয়ে তিনি ভোট থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন। নইলে সবগুলো ভোটকেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পুলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। বিএনপি'র সকল পুলিং এজেন্টদের প্রতি মওদুদীয় সুত্রে একটি অদৃশ্য নির্দেশ ছিল, আগের রাতের অবস্থা বুঝে যেন তারা ভোটকেন্দ্রে যায়। বিএনপি'র স্থানীয় নেতারা পুলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছিল। যার প্রমাণ সংবাদপত্রেই খবর আকারে এসেছে। যে সকল এজেন্ট সেই খবর পায়নি, তারা অটোমেটিক ভোটকেন্দ্রে গেছেন। এবং বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে ছিলেন। অনেক এজেন্ট ভোট বর্জনের পরেও ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপি'র কৌশলটি ছিল, ভোট শুরু হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজেদের সমর্থকদের ভোট দ্রুত কাস্ট করা। সবাই যাতে বেলা এগারোটার মধ্যে ভোট কাস্ট করে এমন নির্দেশ ছিল। বিএনপি হাইকমান্ডের সেই নির্দেশ অনুযায়ী, সমর্থকরা নিজেদের ভোট কাস্ট করেছেন। তারপর যখন ভোট বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসল, তখন স্বাভাবিক কারণে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রাথীর ভোটারদের মধ্যে একধরনের উদাসীনতা আসবে। দুপুর বারোটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত তারা নিজেদের ভোট কাস্ট করায় এক ধরনের গাছাড়া ভাব দেখাবে। এই সুযোগে বিএনপি'র প্রার্থী কাস্টিং ভোটে এগিয়ে যাবে। বিএনপি'র এই কৌশলটি বরিশাল ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনে সফল হয়েছিল। যেটি ঢাকা উত্তর সিটিতে ব্যর্থ হয়েছে। এবার আসুন, নির্বাচনী ফলাফলটা দেখি: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক। ১০৯৩ কেন্দ্রের ঘোষিত ফলে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে আনিসুল হক পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল বাস প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ (কমলা লেবু) ১৮০৫০, মাহী বি চৌধুরী (ঈগল) ১৩৪০৭, জোনায়েদ সাকি (টেলিস্কোপ) ৭৩৭০, কাজী মো. শহীদুল্লাহ (ইলিশ) ২৯৬৮, বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল (চরকা) ২৯৫০, কাফি রতন (হাতি ) ২৪৭৫, নাদের চৌধুরী (ময়ূর) ১৪১২, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম (ক্রিকেট ব্যাট) ১২১৬, মো. জামান ভূঞা (টেবিল) ১১৪০, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ (ফ্লাক্স) ১০৯৫, শামছুল আলম চৌধুরী (চিতাবাঘ) ৯৮২, শেখ শহিদুজ্জামান (দিয়াশলাই) ৯২৩ ভোট, চৌধুরী ইরাদ আহম্মদ সিদ্দিকী (লাউ) ৯১৫ ও মো. আনিসুজ্জামান খোকন (ডিশ এন্টেনা) ৯০০ ভোট পেয়েছেন। মোট ১৬ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা দেখা গেছে আনিসুল হক ও তাবিথ আউয়ালের মধ্যে। বিএনপি ভোট বর্জন না করলে তাবিথ আউয়ালের ভোট সংখ্যা হয়তো সামান্য কিছু বাড়তো। কিন্তু সেক্ষেত্রে আনিসুল হকের ভোট আরো বেশি বাড়তো। কারণ, তখন আওয়ামীলীগের যারা ইচ্ছে করে আর দুপুর বারোটার পর ভোট দিতে যায়নি, তারাও ভোট দিতে যেত। সেক্ষেত্রে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান আরো বাড়তো। বাংলাদেশে যে কোনো নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট ছিনতাই, মারামারি, হামলা, জোর করে ব্যালটপেপারে সিল মারা, এসব বিষয় আমলে নিলেও মেয়র নির্বাচনে এই ফলাফলের কোনো পরিবর্তন হতো না। কারণ, হু ইজ তাবিথ আউয়াল? বিএনপি'র আসল মেয়র প্রার্থী ছিল আবদুল আউয়াল মিন্টু। যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নমিনেশান পেপার বাতিল করার কৌশল নিয়েছিলেন। যাতে তার ছেলে লাইমলাইটে আসে। তাবিথ আউয়ালের নাম আমি সিটি নির্বাচনের আগে পর্যন্ত শুনিনি। এছাড়া বিএনপি'র থিংক ট্যাংক খ্যাত প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ যার নেতৃত্বে বিএনপি মূলত সিটি নির্বাচনে আসল, আবদুল আউয়াল মিন্টুর নমিনেশান বাতিল হবার পর তিনি সমর্থন করেছিলেন বিকল্পধারার প্রার্থী মাহী বি চৌধুরীকে। মানে বিএনপি'র পুরো সমর্থন তাবিথ আউয়াল শুরু থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত পায়নি। বাংলাদেশে নির্বাচন হবে আর কোনো ভোটকেন্দ্রেই হামলা, মারামারি, কেন্দ্রদখল এসব ঘটবে না, এটা যারা আশা করেন, তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কেই ধারণা নেই। বিএনপি ভোটে না আসলেও আওয়ামীলীগ সমর্থক ও তাদের বিদ্রোহী প্রাথীদের সমর্থকদের মধ্যেও এই ঘটনা ঘটত। যা সামাল দেবার মত সক্ষমতা এখনো বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রার্থী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিএনপি'র তুলনায় শুরু থেকেই এগিয়ে ছিল, যা ভোটের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আনিসুল হককে এগিয়ে রেখেছে। বিএনপি যে কোনো সময় এভাবে নির্বাচন যে বর্জন করবে এটা খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র নেতারা সবাই শুরু থেকেই জানতেন। এবারের সিটি নির্বাচনে তাদের এই কৌশলই ছিল। পরাজয় হচ্ছে বুঝতে পারলে একটি মওদুদীয় সূত্র তাদের আগে থেকেই তৈরি করা ছিল। ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার হরতাল অবরোধ দিয়ে, সাধারণ মানুষকে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মেরে যে দলটি জনগণ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেই দলের একমাত্র হার্টকোর্ড কর্মী ছাড়া তাবিথ আউয়ালের এরচেয়ে বেশি ভোট পাওয়াটাই বরং আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হতো। তাবিথ আউয়ালের পরিচয় আমার মত গোটা ঢাকাবাসীই জেনেছে এবার এই নির্বাচনের সময়। শুধুমাত্র দলকানা বিএনপি সমর্থকরাই এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। আমার মত যারা সাধারণ নাগরিক, যারা আওয়ামীলীগ বা বিএনপি বা কোনো দল করে না, তারা কেউ তাবিথকে ভোট দেয়নি। বরং তাদের অনেকের ভোট আনিসুল হক যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবেই পেয়েছেন। রাজনীতিতে এখন ইনিয় বিনিয়ে যাই বলা হোক, ঢাকা সিটি উত্তরে আনিসুল হক বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয়ী হতেন। বরং সিটি নির্বাচন উপলক্ষ্যে খালেদা জিয়া স্বয়ং রাস্তায় বের হবার একটি এক্সিট পেয়েছেন। সরকার সেই পথটি করে দিয়েছে। নইলে তাকে জেলেই থাকতে হতো। আমরা দেখেছি জিয়া অরফানেজ মামলায় কোর্টের গ্রেফতারি পরোয়ানা গুলশানে যেতে কত সময় লেগেছে। সেই হিসেবে খালেদা জিয়ার উচিত এখন জনাব এম মঞ্জুর আলমের মত রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া। সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন দল হয়েও যেভাবে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছে, যা আমার মত সাধারণ নাগরিকের পছন্দ হবার কথা নয়। বিএনপি তাদের আচরণের কারণেই নির্বাচনে পরাজিত হতো। তেমন একটি ধ্বজভাঙ্গা বিএনপি'র বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ যেভাবে ক্ষমতার মহড়া দেখিয়েছে, সেটি গণতন্ত্রের জন্য মোটেও শুভ ইঙ্গিত করে না। নির্বাচন কমিশন যে এখনো ঢাল নাই তলোয়াড় নেই নিধিরাম সর্দার, সেটি আর নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কোনো ক্ষমতাসীন দলই এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে এরকম ঠুটু জগন্নাথ হিসেবেই কামনা করে। আর যতদিন নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে না, ততদিন বাংলাদেশে ভোটের এই বিদ্যমান কালচারের কোনো পরিবর্তন আশা করা একেবারেই যায় না। ভোটে জামানত হারানো প্রার্থীরা যাদের পুলিং এজেন্ট দেবার মতও এখনো সামর্থ্য তৈরি হয়নি, তাদের থেকে এখন নির্বাচন শেষে বড় বড় বাণী বা টকশোতে ক্যারিকাচা শোনার মত সময় হয়তো কোনো সুস্থ মানুষ মন থেকে গ্রহন করবে না। তাদের জন্য একটা ছোট্ট উপদেশ, আগে ৫৮৯২ জন পুলিং এজেন্ট দেবার মত সামর্থ অর্জন করেন, তারপর নির্বাচনে প্রার্থী হন। তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো জামানত বাজেয়াপ্ত হবে না। ঢাকা সিটি উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র জনাব আনিসুল হক, আপনাকে অভিনন্দন। আশা করি, নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপনি ঢাকাকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন। নইলে পাঁচ বছর পর আপনাকে চট্টগ্রামের প্রাক্তন মেয়র জনাব এম মঞ্জুর আলমের মত রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে হতে পারে। সো সাধু সাবধান। ..................................... ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ঢাকা তথ্যসূত্র: বিভিন্ন পত্রিকা, ব্লগ, নির্বাচন কমিশন ও টেলিভিশনের খবর সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:০৫
false
fe
নির্বাচন, রাষ্ট্রশাসন ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নির্বাচন, রাষ্ট্রশাসন ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশফকির ইলিয়াস===========================================নির্বাচন কি হচ্ছে? বিএনপি কি নির্বাচন করবে? কেমন হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার? এমন অনেক প্রশ্ন। আবার ষাট ঘণ্টার হরতাল। মওলানা শফীর দাম্ভোক্তি, কওমি মাদ্রাসায় হাত দিলে হাত আগুনে পুড়ে যাবে! সব মিলিয়ে আরেকটি চরম সংকটময় সময়ের মুখোমুখি বাংলাদেশ। যে কাজটি আজ আওয়ামী লীগ করছে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তেমনটিই করতো। যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায়, তারা যখন নির্বাচন করবেÑ তখন আওয়ামী লীগ কি মানবে? আসছে এমন কথাও। এই যে চরম শঙ্কা, এই যে ভীষণ হতাশা তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? সেই প্রশ্নটি বারবার উঠছে প্রজন্মের মনে। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বাণী ধার করে বলি, ‘একটি জাতির আত্মপরিচয়ই সেই জাতিকে বলীয়ান করে তোলে।’ বাঙালি কি সে কথাটি ভুলতে বসেছে? বাঙালি প্রজন্ম কি সেই চেতনা হারাতে চলেছে? বাংলাদেশজুড়ে মৌলবাদ ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে আরব মুল্লুকের ১৮টি ইসলামি ব্যাংক বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। এ নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন বলেও বাংলাদেশকে জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন যতো এগিয়ে আসছে, আরব দেশগুলোর সক্রিয়তাও ততো বাড়ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট হাতে এসেছে নয়াদিল্লির। গোটা ঘটনাটির পেছনে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে ভারত। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে নিজেদের আশঙ্কার কথা হাসিনা সরকারকেও ঘরোয়াভাবে জানিয়েছে ভারত। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের পাওয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জামাতপন্থী মৌলবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন খাতে ঢালাও ঋণ দিচ্ছে ইসলামি ব্যাংকগুলো। গোয়েন্দারা অনুমান করছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো তৈরি এবং অস্ত্র কেনার কাজেই এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্ত অঞ্চলে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে এই পুঁজি লাগানো হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে দেশটির সরকার। রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আর্থিক ম“ দেয়া ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই সৌদি আরবের। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং কাতারের কিছু ব্যাংকের কার্যকলাপও খুবই সন্দেহজনক। রিপোর্টে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ (আইবিবিএল) ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংককে (এসআইবিএল)। ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় দেখে অবাক হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রচুর প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমের কিছু দেশ অকাতরে ডলার ঢালছে ওই দুটি ব্যাংকে। সৌদি আরবের আল রাজি ব্যাংকও বাংলাদেশে টাকা ঢালতে সক্রিয়। আইবিবিএলের ৩৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে আল রাজির হাতে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সাবেক নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং তার সহযোগী সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইও এক সময় পুঁজির জন্য এই ব্যাংকটির ওপর নির্ভরশীল ছিল। খবর বেরিয়েছে, বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত জোটের মৌলবাদী রাজনীতি, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও প্রকাশ্য- গোপনে ভারতবিরোধী প্রচার যথেষ্টই অস্বস্তিতে রেখেছে দিল্লিকে। নির্বাচন পর্যন্ত এই অরাজক পরিস্থিতি চলবে বলে মনে করছে দিল্লি। সরকারিভাবে দিল্লির অবস্থান, বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ সরকার বদলায় কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির অভিমুখ একই থাকে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ও রাজনীতি এখন বিদেশমুখী। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা থেকে নয়াদিল্লি গেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। রাষ্ট্রদূত মজিনা সেখানে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর ডাকা হরতালসহ সহিংস আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করেন বলে দ্য ইকোনমিস্ট টাইমস পত্রিকায় জানানো হয়েছে। ঐ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, মজিনা নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন এবং বিরোধী দলগুলোর তিন দিনের একটানা হরতালসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার পক্ষে মতামত প্রকাশ করেন। বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা পত্রিকার প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভারত আর বাংলাদেশে এখন একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’ বাংলাদেশের এই ঘোর সংকটে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা একটা ভূমিকা রাখছে, তা না বুঝার কোনো কারণ নাই। কারণ পাকিস্তান অনেক কিছুই পারেনি। তারা চায় না বাংলাদেশও পারুক। দুঃখের কথা হচ্ছে, পাকিস্তানি হায়েনাদের প্রেতাত্মাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই বিএনপিই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আটকাতে চেয়েছে শুরু থেকেই। এখন বেগম খালেদা জিয়া বলছেন, বিচার সুষ্ঠু হলে তারাও সমর্থন দিতেন। পেছন ফিরে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই? আমাদের মনে আছে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় ঘাতক রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ‘গণআদালত’ আয়োজনের তথাকথিত অপরাধে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে ‘দেশদ্রোহী’ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। সরকারি এ ঘোষণার পর আমার ফোনে কথা হয়েছিল শহীদ জননীর সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সদস্য সচিব হিসেবে শহীদ জননীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে আমি ফোন করার পর, মা জাহানারা ইমাম হেসে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বাপু, একটা কথা তোমরা বুঝছো না কেন। আমি যদি দেশদ্রোহী হই তবে সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানও দেশদ্রোহী। কারণ তিনি সেই সময়ের রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া সেই মুক্তিযুদ্ধেরই অসমাপ্ত কাজ। আমরা সেটাই চাইছি। তাতে যদি খালেদা জিয়ার সরকার আমাদের দেশদ্রোহী বলে তবে তা তো হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।’ দেশে এখন চিহ্নিত আল-বদরদের সর্বোচ্চ সাজা হচ্ছে। যে মঈনুদ্দিন বিলাতে ও যে আশরাফুজ্জামান খান আমেরিকায় পালিয়ে এসেছিল- তাদেরও ফাঁসির রায় হয়েছে। এরা বাংলাদেশে হয়তো কোনোদিনই আর যাবে না। কিন্তু বিচার হয়েছেÑ এটা একটি রাষ্ট্রের জন্য পরম গৌরবের বিষয়। যে সংশয়টি সবার মনে, তা হলো আওয়ামী লীগ যদি একাই নির্বাচন করে, যদি আবার ক্ষমতা গ্রহণ করে তবে কতোদিন থাকতে পারবে? তারা কি রাষ্ট্রশাসন করতে পারবে? দেশের জনজরিপগুলো আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাচ্ছে। তারপরও বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার একশতভাগ গ্যারান্টি না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে ক্ষমতা থেকে নেমে গেলেই দেশে একটা চরম নৈরাজ্য যে শুরু হবেÑ তা ভালোই বুঝতে পারছে আওয়ামী লীগ। এদিকে ঢাকায় সমাবেশে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের কথা আবার বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেনÑ ‘সময়মতো নির্বাচন হবে। ইনশাল্লাহ, জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবে।’ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ফলে সরকারের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারির আগেই নির্বাচন হবে। এটাই আপাতত সকলের প্রত্যাশা। অন্যদিকে বিএনপি-জামাত-হেফাজত দেশে একটা গণঅভ্যুত্থান করে সরকার বদলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতা। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে, নির্বাচনের দিন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারলে, ঐ সময়ে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে গেলে তা কি বহির্বিশ্ব মানবে? কথা এখন একটাই- আওয়ামী লীগ কি রক্তপাতহীন ক্ষমতা পরিবর্তন করতে পারবে? আগ্রহী হবে? গদিতে টিকে থাকা আর রাষ্ট্রশাসন করা নিজের ইচ্ছায় হয় না। এর জন্য গণমানুষের সমর্থন লাগে। আর সে জন্যই পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে। আমরা যারা একটি সোনার বাংলাদেশ চাই, তারা অবশ্যই চাই- রাজনৈতিক বুঝাপড়া করেই এগিয়ে যাক এদেশের আপামর মানুষ।-------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৩
false
fe
বাঙালির দেশপ্রেম , বাঙালির রাজনীতি বাঙালির দেশপ্রেম , বাঙালির রাজনীতি --------------------------------------------- একটি ছোট্ট ঘটনা দিয়ে লেখাটি শুরু করছি। নিউইয়র্কের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ একজনের ডাকে থমকে দাঁড়ালাম। একটি আঞ্চলিক সংগঠনের নেতা তিনি। আমাকে পেয়ে যেন তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। বললেন, তিনি আমাকে খুঁজছিলেন। বললাম, ফোন করলেই পারতেন। তিনি বললেন, না সরাসরি সাক্ষাতে আপনাকে সংবাদটি দিতে চাই। আমি মনে করলাম বিয়েশাদির কোনো দাওয়াত হবে বোধহয়। তিনি বলতে থাকলেন, 'আপনি শুনেছেন কিনা জানি না। আমি তো একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছি।' শুনে কিছুটা থমকে গেলাম আমি। বাংলাদেশে হলে তো থমকে যেতাম না। এটা তো আমেরিকা। ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান দুটি দলই নিয়ন্ত্রণ করছে এদেশের রাজনীতি। নামসর্বস্ব দল আছে আরো দুটি। ওগুলোর নামও জানেন না সিংহভাগ মার্কিনিরা। ভদ্রলোক আমার ভুল ভাঙালেন। বললেন, বাংলাদেশের রাজনীতির মৌলিক পরিবর্তন সাধনের জন্যই দলটি গঠন করেছি। দেশে চলে যাবো। গিয়ে গণমানুষকে সুসংহত করে রাজনীতি করবো। আমার বিস্ময়তা মিনিটেই কেটে গেলো। বাংলাদেশ থেকে তিনি অভিবাসী হয়ে ভাগ্যান্বেষণে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। এখন আবার রাজনীতি করার জন্য বাংলাদেশে চলে যাবেন। রাজনৈতিক দলও গঠন করে ফেলেছেন। তা আর নতুন কি!২০০৬ সালের ঘটনা এটি। প্রবাসের আরেকজন ব্যক্তিকে জানি। তিনি এক সময় বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তিনি তার একটি ফর্মুলার কথা আমাকে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনিও বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। তার আইডিয়া হচ্ছে, তিনি একশত জন প্রার্থীকে তার দল থেকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন। এ জন্য তিনি প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে নেবেন এক লাখ টাকা করে। সেই হিসেবে একশত জনের কাছ থেকে তার আয় হবে এক কোটি টাকা। তিনি বলেছিলেন, এর চেয়ে সহজ আয়ের পথ আর কী হতে পারে? তাই এই সহজ আয়টি আমি করবোই ভাবছি। সেই নেতা দেশে গিয়েছিলেন। দলও গঠন করেছেন শুনেছি। তবে কতোজন প্রার্থীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে নিয়েছেন সেই হিসাব আমি জানি না। জানার চেষ্টাও করিনি কখনো। দুই. সিলেটের এক রাজনৈতিক নেতা ছক্কা ছয়ফুর রহমানের কথা দেশবাসীর মনে আছে। তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী থেকে উপজেলার চেয়ারম্যান পর্যন্ত হয়েছিলেন। তারও নিজস্ব একটি দল ছিল। এই বাংলাদেশে সবই সম্ভব এবং সবচেয়ে সহজ কাজটি হচ্ছে রাজনীতি করা। প্রবাদ আছে, দুজন আমেরিকান একত্রে মিলিত হলে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে। দুজন ব্রিটিশ একত্র হলে শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করে। দুজন চীনা একত্র হলে ব্যবসা নিয়ে মতবিনিময় করে আর দুজন বাঙালি একত্র হলে গঠন করে একটি রাজনৈতিক দল! ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ঘুরে এবং লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে যে ধারণাটি আমার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা হচ্ছে রাজনীতি হচ্ছে রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণে নিবেদিত করার একটি অন্যতম ধারা। ইউরোপে কিংবা আমেরিকায় যারা রাজনীতি করেন কিংবা করতে চান তারা উঠে আসেন রাজনীতির তৃণমূল থেকে। খুব কাছে থেকে বছরের পর বছর তারা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কাজে আত্মনিয়োগ করেন। করেন রাজনীতি বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা। আর দলে যোগ দিলে অনেকগুলো প্রাইমারিতে নির্বাচিত হওয়ার পর, অনেকগুলো সিলেকশন বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার পরই কোনো পদে দলীয় প্রার্থী মনোনীত হতে পারেন। সুসভ্য রাজনৈতিক ধারায় এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটে না। ঘটার কোনো সম্ভাবনাও থাকে না। তীব্র প্রতিযোগিতাকে অতিক্রম করেই তারপর রাজনীতির পিঁড়িতে শুভ মহরত হয় একজন রাজনীতিকের। নিউইয়র্কে আমার এলাকার কংগ্রেসওম্যান হচ্ছেন মিস ক্যারোলিন বি. মেলোনি। ক্যারোলিন মেলোনির একটি বিশেষ সুখ্যাতি আছে। তিনি বিভিন্ন অভিবাসী কমিউনিটির মানুষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সহযোগী। যেকোনো লিগ্যাল প্রয়োজনে মার্কিন কংগ্রেসওম্যান ক্যারোলিন মেলোনির অফিসের দ্বারস্খ হলে সাহায্য পাওয়া যাবে। এমন ভরসা খুব সহজে করা যায়। একটি রাজনৈতিক সভায় ক্যারোলিন একটি কথা বলেছিলেন। কথাটি আজীবন মনে রাখার মতো। তিনি বলেছিলেন, 'সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। আর রাজনীতি পরিচালিত হয় গণবিধান দ্বারা। জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটিয়ে বিধান প্রণয়ন করার নামই গণবিধান। যে দল বা রাজনৈতিক শক্তি গণমানুষের প্রয়োজন-স্বপ্নকে ধারণ করে নীতি প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করতে পারে­ তারাই সার্থক রাজনীতিবিদ।' মিস মেলোনি প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের সেই অমর বাণী­ 'জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার এবং জনগণই সরকার' উচ্চারণ করেছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। বলেছিলেন, আমি শুধু মার্কিনি জনগণ নয়­ গোটা বিশ্বের মানবসমাজের আত্মার স্বপ্নের কথা অনুধাবন করতে পারি। আর পারি বলেই 'ইমিগ্র্যান্টস আমেরিকান'দের পাশে এসে দাঁড়াই তাদের প্রাথমিক সাহায্যের জন্য। মার্কিন কংগ্রেসওম্যান মিস মেলোনির ভাষায় এই যে 'গণবিধান'­ তা কি বাংলাদেশের ওই শতাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা জানেন কিংবা বুঝেন? যদি বুঝতেন তবে নিজেরা একেকটি দল গঠন করে সিল,প্যাড সর্বস্ব রাজনীতি করতেন না। দেশেরও এমন দুরবস্খা হতো না। বরং তারা বাংলাদেশের বাঙালি জাতি সত্তার স্বপক্ষের রাজনীতি করতেন। তারা এই সহজ-সরল জনগণের স্বপ্ন সম্ভারকে পকেটবন্দী করে বাজারে বিক্রি করার পাঁয়তারা করতেন না। তারা জিম্মি করে রাখতে চাইতেন না দেশের রাজনীতি। তিন. রাজনীতিতে সংলাপ হতেই পারে। সেপ্টেম্বর ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানরা কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মিলিত হয়েছিলেন জাতীয় সংলাপে। বলা হয়েছিল, এই জাতীয় সংকটে আমরা ঐক্যবদ্ধ। যেকোনো পরিস্খিতি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্টকে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ দায়িত্ব। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তেমনি আলোচনা করে জাতির কল্যাণে ব্রত হওয়া খুব জরুরি। আমি খুব স্পষ্ট মনে করি একটি ''হাওয়া ভবন'' বাংলাদেশে জন্ম না নিলে আজ এমন পরিস্থিতি হতোনা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তো এক সময় বলেছিলেন 'শিশু' ও 'পাগল' ছাড়া কেউ নাকি নিরপেক্ষ হতে পারে না। আজ সেই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিই তো চালু হয়েছে বাংলাদেশে। তাহলে আজ জাতীয় প্রয়োজনে সংলাপে আপত্তি কোথায়? চাঁদাবজি মামলা্য় শেখ হাসিনার প্রাথমিক ভাবে জয় হয়েছে বলা যায়। কিন্তু সরকার যদি প্রভাব খাটাতে চায় ? একটি কথা মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলো এখনো দেশে বড় ফ্যাক্টর। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যে প্রক্রিয়ায় এক্সিট চাইছেন ,তা তাদের দেশপ্রেম কে বুমেরাং করে ফেলতে পারে। ######## সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৯:৩৬
false
fe
জাস্ট লেট ইউ নো ,আই এ্যাম দ্যা সান অব জাহানারা ইমাম আমি আবার রিপোস্ট করছি ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:৫১ comment by: রাশেদ বলেছেন: নেকাব সরান কর্তৃপক্ষ : আসলে আপনারা কি চান? অমি রহমান পিয়াল ধৈর্য্যের শেষ সীমা কিভাবে মাপে আমার জানা নেই। শুধু বুঝতে পারছি আমি সেখানে পৌছে গেছি। সমচেতনার ব্লগারদের কেমন লাগছে জানি না, কিন্তু আমি আর পারছি না। এই ইদুর বেড়াল খেলা আর কতদিন চলবে মাননীয় কর্তৃপক্ষ? আমাদের তো একটাই দাবি ছিলো : নীতিমালা সংশোধন করে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোনো পোস্ট ছাপা হবে না এমন একটা ধারা যোগ করতে হবে খুব কি বেশী ছিলো সে চাওয়া? এ ব্যাপারে গত কমাসে আন্দোলন কম হয়নি। প্রতিবাদে ছাকা ছাকা ব্লগাররা আর লিখছেন না। শুরুর ধাক্কার পর এরাই তো ছিলেন সম্পদ। কিন্তু আপনারা অনড়। আপনাদের কাছে কেউই অপরিহার্য নয়। কলম বিরতির সময় স্বাধীনতা বিরোধী বলে চিহ্নিত ব্লগারদের তিন-চারটে করে নিকে লগ ইন করার সুবিধা দিয়েছেন (তার প্রমাণও আছে) সব কিছু স্বাভাবিক আছে দেখাতে। কিন্তু আলেক্সা রেটিং বলছে অন্য কথা। সব কিছু স্বাভাবিক নেই। তারপরও আপনাদের কেনো বোধোদয় হচ্ছে না। নইলে আমাদের বলে দিচ্ছেন না কেনো যে স্বাধীনতা বিরোধী চর্চাকে প্রমোট করতেই আসলে এই প্লাটফর্ম আর আমরাই এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছি। এই সরল স্বীকারোক্তিটুকু করলেই তো বর্তে যাই। সময় বাচে, কাজ ফেলে সংসার ফেলে পড়াশোনা ফেলে ব্যবসা ফেলে কার এত ঠ্যাকা যে দেশপ্রেমের ধ্বজা উড়িয়ে সামহোয়ারের হিট বাড়াবে। রাজাকার শিরোমনি গোলাম আজমের পোস্ট পড়লে আপনারা বোধহয় তালি বাজান। মু্ক্তিযুদ্ধ নিয়ে অপমানজনক পোস্ট পড়লে বুঝি আপনাদের উৎসব শুরু হয়। অবিশ্বাস্য এই কথাগুলিই এখন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। আপনারা সত্যি আমাদের লেখালেখির প্লাটফর্ম করে দিয়েছেন নাকি আমাদের সবার সৃজনশীলতাকে হত্যা করার পরিকল্পিত নীলনক্সা বাস্তবায়ন করছেন সেটা এখন বিশাল এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে উকি দিচ্ছে সবার মনে। নইলে কেনো বারবার আন্দোলন ও প্রতিবাদের পরও আপনারা বাংলাদেশের চেতনা ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে নগ্নভাবে সমর্থন দিচ্ছেন? দয়া করে আপনাদের অবস্থান আমাদের জানান। আপনারা কি চান? এখানে সব ধরণের বাকস্বাধীনতা দেওয়া হবে এই ধরণের অপযুক্তি বাদে আর কিছু বলুন। আমার পতাকা ও স্বাধীনতার আব্রু নিয়ে টানাটানি যদি বাকস্বাধীনতার চর্চা হয় তাহলে ঘরের মা বোনকে নিয়ে টানাটানিও সেই যুক্তিতে সিদ্ধ। আর এই অপচর্চার অবসান চাই। বহুত করেছেন, আর না। এবার ক্ষান্ত দিন। বাংলাদেশের বুকে বসে বাংলা ভাষা চর্চার মঞ্চ খুলেছেন বলে যে সাধুবাদ পেয়েছেন এতদিন, তা ক্রমেই বিপরীতমুখী হচ্ছে আপনাদের সন্দেহজনক পক্ষপাতদুষ্টতায়। এখানে স্বাধীনতা বিরোধী পোস্টের প্রতিবাদ করলে ব্যান খেতে হয়, ঘরের বউ নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্টের প্রতিবাদে ব্যান খেতে হয়। আর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের জীবনি আপনারা প্রমোট করেন। হুসেইন তার এক কবিতায় শুয়োরের সঙ্গে সহবাসে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সে পোস্টে সহমত বলে মন্তব্য করেছিলাম। এবার নিজের মুখে সক্রোধে উচ্চারণ করছি- শুয়োরের সঙ্গে সহবাস চাই না, করব না। হয় নীতিমালায় সংশোধন আনুন। নয়তো আমাদের অপমান নিপীড়ন না করে সরাসরি জানিয়েদিন আপনাদের অভিপ্রায়। নাটক করে নয়, সরাসরি। তারপর স্বাধীনতার মর্যাদা রাখতে ব্লগাররা কি করবেন তারাই ঠিক করবেন। আমি আমার আগের সব পোস্ট ড্রাফট করেছিলাম আপনাদের অনৈতিকতার প্রতিবাদে। এবার বাকিগুলোও করবো। সামহোয়ারে যতদিন না স্বাধীনতা বিরোধী পোস্টের ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা আসে। আমার ব্লগে কোনো পোস্টই থাকবে না। কলম বিরতি, লগ অফ থাকা- এ জাতীয় প্রতিবাদমূলক পদক্ষেপ আমি সহব্লগারদের উপর চাপিয়ে দিতে চাই না। আমি শুধু আমারটাই বললাম। এত অপমানের পর আপনারাই ঠিক করুন কি করবেন। এইটা পিয়াল ভাইয়ের লেখা। ওনারটা সরাইছে দেখে আমি রিপোস্ট করছি। *আমাদের বর্তমান দাবী সমূহ ১। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোনো পোস্ট ছাপা হবে না । ২। ৭১ র স্বাধিনতা যুদ্ধের কোন বিপক্ষ শক্তির বানী পোষ্ট করা যাবেনা । ৩।রাজাকার বিরোধী পোষ্ট লিখে ব্যান হওয়াদের ব্যান মুক্ত করতে হবে। সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:১৯
false
fe
সিলেটে সাংবাদিক ফতেহ ওসমানী হত্যাকান্ড ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সিলেটে সাংবাদিক ফতেহ ওসমানী হত্যাকান্ড ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফকির ইলিয়াস ========================================= সিলেটে বিশিষ্ট সাংবাদিক ফতেহ ওসমানীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিজ মোটরসাইকেলে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তার ওপর আক্রমণ চালায়। ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গেল ২৮ এপ্রিল ২০১০ বুধবার রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ফতেহ ওসমানী ছিলেন আমাদের দীর্ঘদিনের সুহৃদ। সিলেটের সাংবাদিকতা ও ছড়া-সাহিত্যের জগতে তার পদচারণা ছিল উজ্জ্বল। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দেশের বহুল জনপ্রিয় 'সাপ্তাহিক ২০০০'-এর সিলেট ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ফতেহ ওসমানী ছিলেন আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের মধ্যে অত্যন্ত সাহসী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্রণী সৈনিক। প্রাণবন্ত আড্ডাবাজ এই সাংবাদিক যে কোন দুঃখী মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতেন অত্যন্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে। বৃহত্তর সিলেটের প্রতিটি প্রগতিবাদী আন্দোলনে তিনি ছিলেন পুরোধা স্বজন। আমার দেখা-জানা মতে তার কোন মোহ ছিল না। যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসত তার শাণিত হাত। সেই ব্যক্তিটিকে নির্মমভাবে কুপিয়েছে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা। সংবাদটি শোনার পরই বিচলিত হয়েছিলাম। কেন তার ওপর আঘাত আসবে? যে মানুষটি বেশ ক'বছর বিলেতে থাকার পরও স্থায়ীভাবে থাকার চেষ্টা-তদবির করেননি। বরং স্বদেশ, স্বজাতির টানে ফিরে গিয়েছিলেন সিলেটে। তার ওপর এমন বর্বর আক্রমণ হবে কেন? এসব প্রশ্ন মনে যখন খুব বেদনার ঝড় তুলছিল, তখনই খবর পেলাম তিনি আর নেই। যে মানুষটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন আজন্ম আপসহীন, শেষ পর্যন্ত তাকেই প্রাণ দিতে হলো ঘাতকদের হাতে! বিষয়টি কোন মতেই মেনে নেয়া যায় না। মেনে নেয়া উচিতও নয়। এই সেই বাংলাদেশ, যেখানে নিজ অফিসে ঢুকে ঘাতকরা হত্যা করেছিল যশোরের বিশিষ্ট সাংবাদিক, দৈনিক জনকণ্ঠের সেই সময়ের বহুল নন্দিত প্রতিনিধি শামছুর রহমানকে। বোমা মেরে হত্যা করেছিল 'সংবাদ' এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মানিক সাহাকে। আরও অনেক সাংবাদিককে এভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে ঘাতকদের হাতে। সেসব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার বাংলার মাটিতে এখনও হয়নি। আর হয়নি বলেই ঘাতকচক্র একের পর এক প্রতিবাদী, সত্যান্বেষী সাংবাদিকদের ওপর হামলে পড়ার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। খুবই হতাশা এবং বেদনার কথা, এ জঘন্য ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহের কাছাকাছি সময় পেরিয়ে গেলেও সিলেটের পুলিশ, গোয়েন্দাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভাগ হত্যাকান্ডের মোটিভ উদ্ধার করতে পারেনি। কোন গ্রেফতারও সম্ভব হয়নি। অথচ এ মর্মান্তিক ঘটনার পরপরই প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযান শুরু করার কথা এবং প্রত্যাশা ছিল। সাহিত্যিক, সাংবাদিক ফতেহ ওসমানীকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চোখের জলে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তার সতীর্থরা। এ বিদায় চিরদিনের জন্য। সাংবাদিকরা শপথ নিয়ে বলেছেন, তারা এ নারকীয় ঘটনার সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবেনই। এ আশাবাদ এবং প্রত্যয় দেশে-বিদেশের গোটা বাঙালি সমাজের। কারণ নরকের কীটের মতো সমাজে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসীরা এমন দুঃসাহস দেখাতেই থাকবে, তা কোন মতেই মেনে নেয়া যায় না। ফতেহ ওসমানীর নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের মেয়র বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি ঘোষণা করেছেন, এ হত্যাকান্ডের সুবিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর। আমরা এ ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। হত্যাকারীচক্র যতই ক্ষমতাবানই হোক না কেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে। গোটা বাংলাদেশের সহযোদ্ধা সাংবাদিক বন্ধুদের সবিনয়ে বলি, কলমসৈনিকরা কোন দানব শক্তির কাছে পরাজিত হতে পারে না। কোন সমাজ, সভ্যতা বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে কোন অপশক্তির সহযোগী হয় না। তাই এ ঘাতক শক্তির বিষদাঁত ভেঙে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ হত্যাকান্ডের সুবিচার না হওয়া পর্যন্ত সব প্রকার কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। না হলে ফতেহ ওসমানীর আত্মার কাছে আমরা দায়বদ্ধ থেকে যাব। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে, তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। স্বরাষ্ট্রবিষয়ক দুই মন্ত্রী নানা 'মধুর বাণী' জনগণকে শোনালেও জনগণ তাতে মোটেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। টিভিতে দেখলাম, দেশে র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে কিছু ভুয়া ব্যক্তি নানা স্থানে অপহরণ, গুম, হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক স্বয়ং নিজে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এসব 'ভুয়া র‌্যাব'কে গ্রেফতারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও তিনি মিডিয়াতে বলেছেন। বিষয়টি একটি রাষ্ট্রের জনগণের জন্য মারাত্মক দুঃসংবাদ। কারণ কোন রাষ্ট্রে একটি সংঘবদ্ধচক্র যখন একটি শৃঙ্খলিত বাহিনীর ইমেজ ছিনতাই করে অপকর্মে নামে, তখন গোটা রাষ্ট্রের ভীতই নড়বড়ে হয়ে ওঠে। একটি সরকারি বাহিনীকে যারা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়, তাদের তো 'কম শক্তিশালী' বলার কোন অবকাশ নেই। তারা এত শক্তি পেল কোত্থেকে? বিভিন্ন স্থানে র‌্যাবের নাম করে ধরে নিয়ে গেছে, এমন অভিযোগ দিনে দিনে বাড়ছে। যা একটি সরকার ব্যবস্থার জন্য অশনি সঙ্কেত বহন করছে। এরপরও কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় নড়েচড়ে বসবেন না? বিভিন্ন শহরে ব্যবসায়ী, ছাত্র, রাজনীতিক, সাধারণ মানুষ খুন হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে আসছে। এরপরও সরকারি শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা যে খুব বিচলিত তা অনুধাবিত হচ্ছে না। এর কারণ কী? কেন সরকার এত কিছু দেখেও না দেখার ভান করছে? দেশের বিভিন্ন স্থানে বখাটেদের উৎপাত মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ইভটিজিংয়ের মতো আদিম, বন্য মানসিকতা কাজটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে শক্ত কোন আইন প্রণীত হয়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, যারা ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করছে, তারা আক্রান্ত হচ্ছে। এমন কি প্রতিবাদ করায় খুনের ঘটনাও ঘটেছে। মামুন হাওলাদার নামে একজন তরুণ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনা রাষ্ট্রকে জানান দিয়ে গেছে একটি পাশব শক্তি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনও সক্রিয়। একটি পরিশুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের পূর্ব শর্ত হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা না পেলে শুদ্ধ চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। মননশীল কর্মের প্রেরণা পায় না উত্তর প্রজন্ম। বাংলাদেশে নানা ভাবে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। তার ওপর সরকার যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়, তাহলে গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এই সেই বাংলাদেশ যে বাংলাদেশে আমরা দেখি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা তাদের প্রয়োজনে পেটোয়া বাহিনী পোষেন। বিশ্বের কোন সভ্য-গণতান্ত্রিক দেশেই কোন ক্ষমতাবান রাজনীতিকের নিজস্ব পেশিশক্তি নেই। আমরা শুদ্ধ সমাজ গঠনের কথা মুখে বলব আর নেপথ্যে পেটোয়া বাহিনী লালন করব, তা তো হতে পারে না। দ্রব্যমূল্য, গ্যাস ও পানি সঙ্কটের চেয়েও ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হলে জনরোষ সরকারের বিপক্ষে যেতে পারে। এ বিষয়টি রাষ্ট্রশাসকদের ভুলে গেলে চলবে না, অঙ্গীকার করেও তারা ব্যর্থ হলে জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না। নিউইয়র্ক , ৫ মে ২০১০ ========================================= দৈনিক সংবাদ। ঢাকা। ৭ মে ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১০ ভোর ৬:২৯
false
fe
ভোটের রাজনীতি ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ভোটের রাজনীতি ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশফকির ইলিয়াস=================================আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিন বছর পূর্ণ করেছে। এই তিন বছরে তিনজনের বিচারের রায় দেয়া হয়েছে। বাকি যারা আছে, তাদের রায় কবে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধীরই বিচার শেষ হয়নি। একজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। অন্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি চলছে। কবে নাগাদ বিচার শেষ হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। অমার্জনীয় অপরাধগুলোর বিচার প্রক্রিয়ার এই ধীরগতির জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অনেকটা দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে গাফিলতি, আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র যথাযথ না হওয়া, নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারা, মামলার সাক্ষী হাজির করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার মতো ঘটনাগুলোর কারণেই এসব অভিযোগ উঠছে। আর ওই সব ঘটনার কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা পর্যন্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশনের গাফিলতির কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে- এ অভিযোগের কথা তুললে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, উপমহাদেশে এ ধরনের বিচার এই প্রথম হচ্ছে। এই বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিচারক, তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনের সদস্যরা এ ধরনের কাজে নতুন। তারপরও সবাই যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মামলার শুনানির সময় বিচারকরা আইনজীবীদের নানা ধরনের কোয়ারি করে থাকেন, এটা নিয়ম। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরাও প্রসিকিউশনের কাছে সে ধরনের কোয়ারিই করছেন। এতে মামলার ক্ষতি হবেÑ এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এই মামলায় কারাগারে আটক বন্দীদের বিচার এ বছরই শেষ হবে বলে প্রতিমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বিলম্বের জন্য গাফিলতির চেয়ে অনভিজ্ঞতাই প্রধান কারণ। সংশ্লিষ্টদের অনভিজ্ঞতার কারণেই বিচারকাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তাই সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে অপরাধীরা। তিনি আরো বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা বা প্রসিকিউশনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের গাফিলতি বা অনভিজ্ঞতার চেয়ে আবার সরকারের নীতিনির্ধারকদের সীমাবদ্ধতা দায়ী অনেক বেশি। অপরাধীদের বিচারে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু এই বিচার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, সে সম্পর্কে সরকারের ধারণা স্পষ্ট নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এটা। তাই এটা একটা বিশাল যজ্ঞ বলা যায়। এ জন্য গবেষণা প্রয়োজন। আমরা প্রথম থেকেই গবেষণার বিষয়ে বলে আসছি, কিন্তু সরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না। এর পরিণতি এখন টের পাওয়া যাচ্ছে। সাত-আটজন অপরাধীর বিচার করার জন্য কমপক্ষে ২৫ জন আইনজীবী প্রয়োজন। সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মাত্র ১৩ জন। তাদের সবাই আবার অফিস করেন না। এর পাশাপাশি আইনজীবীদের নিরাপত্তা নেই, সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে না। সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা আইন করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা তৈরি করা হয়নি, যে কারণে সাক্ষীরা ভয় পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সংশ্লিষ্ট সবার ষোল আনা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা দেখেছি একজন অন্যতম সাক্ষী বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক সাক্ষীই এখন অত্যন্ত শঙ্কায় দিনযাপন করছেন। এই অবস্থায় গোটা দেশজুড়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা নানা নামে, নানা লেবাসে ফণা তুলছে। আর প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী চাইছেন শর্টকাট রাস্তা। তিনি বগুড়ায় একটি জনসভায় খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, সেনাবাহিনী সময়মতো তাদের কাজ করবে। মহাজোট সরকারকে ‘খুনি’ অভিহিত করে জনগণকে সরকার পতনের কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, প্রয়োজনে আপনাদের ঢাকা যেতে হতে পারে। এবার ঢাকায় গেলে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আপনারা ঘরে ফিরবেন না। এ সময় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলে চলবে না। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীরও দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সেনাবাহিনী সময়মতো তাদের কাজ করবে। খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে দেশে-বিদেশে। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, তিনি পরোক্ষভাবে সেনাবহিনীকে উসকে দেয়ার চেষ্টা করছেন। তার মতো নেতার কাছে জাতি এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাশা করে না। তারা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার ওই বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, দায়িত্বজ্ঞানহীন। সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সংবাদকে বলেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে রাজনীতিকরণের চেষ্টা চলছে। অতীতেও করা হয়েছে, এখনো সেই ধারাতেই রাজনীতিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিরোধী দল ও সরকারি দল উভয়কেই এই নষ্ট রাজনীতিকরণের পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। টিআইবির নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, একজন দায়িত্বশীল ও প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে মোটেই এ ধরনের বক্তব্য জাতির কাছে কাম্য ছিল না। বিরোধীদলীয় নেত্রীর এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার লক্ষণ বলেও মনে করেন তিনি। খালেদার বক্তব্য পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের শামিল বলেও মনে করেন তিনি। প্রকারান্তরে সেনাবাহিনীকে রাজনীতিকরণের এক অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এমনিতেই বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনমনে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে, এই সময় তার এ ধরনের বক্তব্য আরো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ ধরনের বক্তব্য থেকে তাকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। খালেদা জিয়া এই যে ‘সামরিক শাসন’-কে স্বাগত জানাচ্ছেন, তার প্রধান কারণ হচ্ছে তিনি আর গণমানুষের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না ও তাছাড়া তার দুই পুত্রকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনাটাই এখন তার প্রধান উদ্দেশ্য। যতো বেশি রক্তের প্রয়োজনই হোক না কেন- এর বিনিময়ে ‘হাওয়া ভবন’ খ্যাত তারেক রহমানকে ক্ষমতায় দেখে যেতে চান খালেদা জিয়া। আর এটাই এখন তার অন্যতম লক্ষ্য। দেশে অনবরত হরতাল দিয়েই যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। হরতাল ছাড়া তার হাতে আর কোনো শক্তি নেই। হরতালের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায় হয় কিনা, তা তার অজানা নয়। যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তিনি হরতালকারীদের সকল দাবি মেনে নেননি। তাহলে আজ তিনি তার সকল দাবি পূরণের আশা করছেন কেন? আমরা দেখেছি, সাঈদীর রায় ঘোষিত হবার পর, যারা প্রাণ দিয়েছেন তারা খুবই সাধারণ মানুষ। পুলিশকে হত্যা করতে গিয়ে তাদের প্রাণ দিতে হয়েছে। আবার গুপ্তহত্যাকে হাতিয়ার করেছে কেউ কেউ। দেশে কী হতে পারে, কী হবে তা নিয়ে অনেক কথাই এখন চাউর হচ্ছে। একটি মহল বলছে তারা দেশকে গৃহযুদ্ধের পরিণতির দিকে ঠেলে দেবে। যদি তাই হয়, তবে কি বাংলাদেশ আরেকটি রক্তাক্ত সিরিয়ার মতোই আঁধারের দিকে ধাবিত হচ্ছে? বাংলাদেশের সামনে নির্বাচন। তাই ভোটের রাজনীতির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট ভোটের রাজনীতি ভালো বুঝে, তা সকলেই মানেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছে আসছে ডিসেম্বরের মধ্যেই সকল চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হবে। আমার কথা হচ্ছে, তা হলে রায় কার্যকর কবে হবে? আপিল, অন্যান্য প্রক্রিয়া নিয়ে যে সময় দরকার তার মেয়াদ তাহলে কার ক্ষমতাসীন আমলে গিয়ে পড়বে? আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি আওয়ামী লীগ যদি এই মামলাসমূহ ঝুলিয়ে রেখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়, তাহলে নিমিষেই পটপরিবর্তন সম্পন্ন হবে। সকল যুদ্ধাপরাধীই বিএনপি নেত্রীর ‘সাধারণ ক্ষমা’ পাবে। যেটা জামাত-বিএনপিও চাইছে। আর আওয়ামী লীগ এই ইস্যুকে সামনে রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার মওকা যদি খুঁজে তা কতোটা সফল হবে, আদৌ সফল হয় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। এবারো বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়েছে। এই শপথ বাঙালির দীর্ঘদিনের। যা বাস্তবায়িত এখনো হয়নি। হবার যে স্বপ্ন প্রজন্ম দেখছে- তাও নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখনো পড়ছে। বরং দেশে মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের দাপট বেড়েছে। এই কঠিন সময়ের মাঝেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ টিকিয়ে রাখবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। তা মোকাবেলা করতে হবে সাহসের সঙ্গে। আওয়ামী লীগকে অতীতেও নানা ছলছুতোয় রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আগামীতেও হবে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এদেশের মানুষকে নানাভাবে প্রতারিত করা হয়েছে। অনেক সত্য ঘটনাই প্রজন্মের জানা দরকার। স্বাধীনতার মাসে শুধু সভা-সমাবেশের মাঝে ব্যস্ত না থেকে এই জেনারেশনের উচিত সত্যনিষ্ঠ গ্রন্থগুলো পড়া। তেমনি একটি বইয়ের কিছু উদ্বৃতি এখানে দিতে চাই। মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। মহান স্বাধীনতার প্রথম দশক নিয়ে তার একটি বিশ্লেষণধর্মী বই আছে। ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক’Ñ শিরোনামের বইটি ২০০০ সালে বের করে মাওলা ব্রাদার্স। তার গ্রন্থটি আমার কালেকশনে আছে। মে. জে. মইনুল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন স্বাধীনতার প্রথম দশক নিয়ে। তিনি জানাচ্ছেনৃ। ক. ‘ডিসেম্বর মাসেরই শেষের দিকে মেজর জলিলকে খুলনা থেকে ধরে এনে বন্দী করার জন্য আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তৎকালীন ক্যাপ্টেন কে এস হুদা (পরে কর্নেল ’৭৫-এর সাত নভেম্বর অভ্যুথানে নিহত) তাকে ধরে নিয়ে আসেন। মেজর জলিলের বিরুদ্ধে উচ্ছৃঙ্খলতা ও অন্যান্য সামরিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ছিল। খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক জলিলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও গ্রেপ্তার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। যদিও প্রচার করা হয় যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক অস্ত্রশস্ত্র লুটতরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। (পৃষ্ঠা ২২- মেজর জলিলের গ্রেপ্তার)। খ. ওই রাতেই প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, যিনি একজন ছাত্রনেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতে প্রথম সামরিক অফিসার্স কোর্সে (শর্ট সার্ভিস-১) সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। ও যুদ্ধের সময় কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেন। তিনি ধানম-ি এলাকায় তার সাতজন সমবয়সী বন্ধুকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে শহরে টহলে বের হন। এক পর্যায়ে সিরাজ সিকদারের খোঁজে টহলরত স্পেশাল পুলিশ তাদের মাইক্রোবাসটি দেখতে পায় এবং সন্দেহ ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কোনো সতর্ক সংকেত না দিয়েই অতর্কিতে মাইক্রোবাসের ওপর গুলি চালায়। এতে কামালসহ তার ছয় সঙ্গী আহত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব, কামালের ওই রাতের অবাঞ্ছিত ঘোরাফেরায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মনঃক্ষুণœ হন। এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষীরা এ ঘটনাকে ভিন্নরূপে প্রচার করে। ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে কামাল পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে তারা প্রচারণা চালায়। এবং দেশে-বিদেশে ভুল তথ্য ছড়াতে থাকে। যদিও এসব প্রচারণায় সত্যের লেশমাত্র ছিল না। (পৃষ্ঠা-৬৫, ৬৬, গুলিবিদ্ধ শেখ কামাল)। এরকম অনেক কথাই আছে, যা মৌলবাদী ডানপন্থীরা বারবার মিথ্যার বেসাতি করে বাজারে ছড়িয়েছে, ছড়াচ্ছে এবং ছড়াবে। ভোটের রাজনীতি যতোই ঘনিয়ে আসবে, এদের মিথ্যাবাদিতাও ততো বাড়বে। তাই এই প্রজন্মকে সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই এগোতে। আর তবেই আলোকিত হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।-------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ : // ঢাকা // শনিবার, ৩০ মার্চ ২০১৩
false
rn
বৃষ্টি অথবা নীল শাড়ি (মান্নান রানা খুব ভালো একটা ছেলে।সহজ সরল।কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষ তার মতো না।তার জীবন আনন্দময় হোক।তার ভালোবাসার মানুষ আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দিক।মান্নান রানা(ভাই)আপনার জন্য এক আকাশ শুভকামনা রইল।এই লেখাটা আপনার জন্য।যথা সময়ে আপনার সাথে আবার কথা হবে।ভালো থাকবেন।)রাতের বেলা এক মুহূর্তও ঘুমাতে পারি না আমি।তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করার পর সারাটা বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি যে কষ্টে কেটেছে আমার।তোমাকে দুঃখ দিয়ে কেমন করে ভালো থাকবো আমি,বলো?তোমার কথা ভেবে ভেবে আমি রাতের বেলা ঘুমাতে পারি না।অন্য কোনো কারনে আমার কোনো দুঃখ নেই।আমার কোনো চিন্তা নেই,কষ্ট নেই।আমার যাবতীয় দুঃখ কষ্ট সব তোমায় নিয়ে।দিন এবং রাত কাটে তোমায় ভেবে ভেবে।আমার সমস্ত সওা জুড়ে আছো তুমি।শুধু তুমি।আমার কষ্টের কারন হয়ে আছো তুমি।যতদিন তুমি আমার কষ্টের কারন হয়ে থাকবে,ততদিন আমার অন্য কোনো কষ্ট থাকবে না।তোমার কথা ভাবতে ভাবতে অন্য সব কষ্টের কথা ভুলে যাবো আমি।আমার রক্তের ভেতর লাল কনিকা তুমি।যত দুরেই যাই ,তুমি আছো আমার মনের ভেতর।কেউই আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।বহুদূর থেকে আমি তোমার কথা ভাববো।তোমার জন্য কষ্ট পাবো।আমার মনের ভেতর আমার সব আনন্দ বেদনা হয়ে থাকবে তুমি।রক্তের ভেতর থাকবে কনিকা হয়ে।তোমার কাছ থেকে কেউ বিছিন্ন করতে পারবে না আমাকে।আমি বেঁচে থাকবো তোমার ভালোবাসায়।তোমার স্মৃ্তিতে।আনন্দ বেদনার শিহরনে।কষ্ট হয় ।খুব কষ্ট হয়।চোখ ভিজে উঠে বারবার।আমি রাত জেগে জেগে তোমার কথা ভাববো।তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়বো আবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে জানালা দিয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকালে তোমার কথা মনে পড়বে। যখন গাছ পালা কাঁপিয়ে বাতাস আসবে বা গভীর জ্যোন্সায় ভেসে যাবে সারা শহর বা কাছে দুরে কোথাও ঝম ঝম করে বৃষ্টি হবে-তখন কেবল আমার তোমার কথা মনে পড়বে।আমি জানি আমার জন্যই তুমি -বাতাস হয়ে,জ্যোন্সা হয়ে বৃষ্টি হয়ে দূরে কোথাও আমার কথা ভেবে ঝুম ঝুম করে ঝড়ছো।আমার বুকে হাত দিয়ে দেখ একটি বার-অনুভব করবে ভূমিকম্পের মতো কাঁপন,শুধু তোমার জন্যই।একবার বুকে হাত দিয়ে দেখ কি ভীষন তান্ডব আমার বুকে।সুনামীর চেয়ে কম না।আমি এখন খুব বুঝতে পারছি সত্যিকারের ভালোবাসা যে কত তীব্র দুঃখময় অনুভুতি। " তুমি সময় মতো থেকো- আমি আসবো বিকেলে।নীল শাড়ি পড়ে ,খোলা আঁচলে,তুমি অপেক্ষায় থেকোআমি আসবো।যদি বৃষ্টি হয়,তুমি ছাতা মাথায় নিয়ে অপেক্ষায় থেকো আমি আসবো।আমি আসবো তুমি অপেক্ষায় থেকো।এতক্ষন ফালতু বক বক করছি।এখন কাজের কথায় আসি।প্রেম-ভালোবাসা ইত্যাদি ফালতু কথা অনেক নাটক,উপন্যাস,রাস্তা ঘাটে দেখেছি,পড়েছি,জেনেছি আর আমার খুব হাসি পেয়েছে।যারা এসব পানসে প্রেমের গল্প লেখেন এবং পড়েন তারা যে বোকা মানুষ এতে আমার কোনো সংশয় নেই।এই শতাব্দীতে প্রেম নামক কোনো বস্তু নেই,নেই,নেই।তবে আমার নিজেরই মাঝে মাঝে প্রবল ঘোর ও মোহ সৃষ্টি হয়।তখন বিনা কারনেই আশে পাশের সব কিছুই ভালো লাগে।এতদিন চোখ খোলা থাকলেও যা কখনো চোখে পড়েনি,সেই সব তুচ্ছ ব্যাপার হঠাৎ এমন অসামান্যতায় নতুন করে আবিষ্কার হয়!দারুন একটা ভালো লাগাতে আমি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি।(আমার প্রিয় কবিতার কয়েকটা প্রিয় লাইন ব্যাহার করলাম।)"এলোমেলো চুল তার আছড়ে পড়ছে পিঠেস্পর্শেই মৌনতা।রঙ্গিন রিকশার গায়ে কার মুখ আঁকা?এই ভেবে পথের পাশে বসে বসে দেশলাই কাঠি জালাই।শুধু সিগারেটর প্যাকেট হাতে।বাতাস তোমার চুল নিয়ে খেলা করেআমি কোনো দিনই ছুঁতে পারি না তোমার চুল।আমি নীল শার্ট পরিনি কখনোতোমার ফেরবার পথে তবুওদাঁড়িয়ে রয়েছি একা।যেন আমি এবং তুমি মিলেদু'জনে একরাত ১২ টার পরে-জাহাজ বিহীন সমুদ্র সৈকতে।
false
ij
যারা বাউলের একতারা ভেঙ্গেছিল বাউলের একতারা। বাউলের সাধনযন্ত্র। প্রকারন্তের মামুলি জিনিস হয়তো । লাউ শুকিয়ে তৈরি। তবে সে বড় কোমল বস্তু, বড় মিঠে তার ধ্বনিস্বর- যেহেতু গুঞ্জনে গুঞ্জনে শাশ্বত সত্যরে পেতে চায় একতারা । যে কারণে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ সাহিত্যের ঐকতানসঙ্গীতসভায় একতারা যাহাদের তারাও সম্মান যেন পায়।’ (‘ঐকতান’। ‘জন্মদিনে।’) তার পরও একদল শিল্পবিরোধী লোক বাউলের একতারা ভাঙ্গতে বরাবরই তৎপর ছিল। যে কারণে, বাংলায় বাউলমতের উত্থান সহজে হয়নি। নানাভাবে বাউলসাধকদের কন্ঠরোধ করবার চেষ্টা করা হয়েছে। বাউলদের বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছে সামাজিক আন্দোলন, দেওয়া হয়েছে নানা বিধান ও ফতোয়া, রচিত হয়েছে বাউলবিরোধী নানা বইপত্র, লিফলেট। মূলধারার বাইরে বলে গোঁড়া হিন্দু ও মুসলিম-এ দু’ সম্পদায় দ্বারাই বাউলেরা আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও হচ্ছেন। বাউল সম্পর্কে মুন্সী মেহেরুল্লার ধারণা ছিল, ‘বানাইল পশু তারা বহুতর নরে।’ কবি জোনাব আলী প্রচন্ড আক্রোশে সরাসরি বলেছেন, ‘লাঠি মার মাথে দাগাবাজ ফকিরের।’ কাঙাল হরিনাথের সাপ্তাহিক ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’য় (আগষ্ট১৮৭২)‘জাতি’ শীর্ষক আলোচনায় লালন ফকির সম্বন্ধে প্রসঙ্গক্রমে আলোকপাত করা হয়। হিন্দুসম্প্রদায়ের ‘জাতি’-বিপন্নতার জন্য লালন ও তাঁর সম্প্রদায়কে এখানে দায়ী করা হয়েছে। ত্রিপুরা জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনে শিক্ষাবিদ ডক্টর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন মন্তব্য করেন যে, লালনসহ অন্যান্য লোককবি যে-সব গান রচনা করে গেছেন,‘তাহাতে যথেষ্ঠ রসবোধের পরিচয় নাই’ এবং ‘এগুলি গ্রাম্যতাদোষে দুষ্ট বলিয়া ভদ্রসমাজে স্থান করিয়া লইতে পারে নাই।’ শিক্ষাবিদ ডক্টর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের এই (অসার ও হাস্যকর) কথাগুলি মাথায় রেখে লালনের একটি গান স্মরণ করি। এমন মানব-জনম আর কি হবে মন যা করো ত্বরায় করো এই ভবে। অনন্তরুপ সৃষ্টি করলেন সাঁই শুনি মানবের উত্তম কিছুই নাই দেব-দেবতাগন করে আরাধন জন্ম নিতে মানবে। কত ভাগ্যের ফলে না জানি মন রে পেয়েছ এই মানব-তরণী বেয়ে যাও ত্বরায় সুধারায় যেন ভরা না ডোবে। এই মানুষে হবে মাধুর্য-ভজন তাই তো মানুষ-রুপ গঠলেন নিরঞ্জন এবার ঠকলে আর না দেখি কিনার অধীন লালন তাই ভাবে। শিক্ষাবিদ ডক্টর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেনএর রসবোধ কতটুকু ছিল-সে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। শরিয়তপন্থিরা বরাবরই শিল্পবিরোধী সঙ্গীতবিরোধী-যে কারণে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। তবে সত্য এই-অগ্রসরমান সভ্যতা শিক্ষাবিদ ডক্টর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেনদের প্রত্যাখান করছে আর লালনকে গ্রহন করছে। লালনের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথও সমুজ্জ্বল হয়ে উঠছেন। ১৯২২ সালে শ্রীনিকেতন পল্লীসেবা বিভাগের গ্রামসেবার কাজের ধারা নির্ধারণ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গেক্রমে শান্তিদেব ঘোষের পিতা কালীমোহন ঘোষকে বলেছিলেন- তুমি তো দেখেছ শিলাইদহতে লালন শাহ ফকিরের শিষ্যগনের সহিত ঘন্টার পর ঘন্টা আমার কীরুপ আলাপ জমত। তারা গরীব। পোষাক -পরিচ্ছদ নাই। দেখলে বোঝার জো নাই তারা কত মহৎ। কত গভীর বিষয় কত সহজ ভাবে তারা বলতে পারত। আজও ঢাকা শহরে-ধরা যাক চারুকলার সামনে- বাউলকে ঘিরে ধরে একঝাঁক উৎসুক তরুণ-তরুণীকে দেখা যায়। ওই একই কারণে। ‘তুমি তো দেখেছ শিলাইদহতে লালন শাহ ফকিরের শিষ্যগনের সহিত ঘন্টার পর ঘন্টা আমার কীরুপ আলাপ জমত। তারা গরীব। পোষাক -পরিচ্ছদ নাই। দেখলে বোঝার জো নাই তারা কত মহৎ। কত গভীর বিষয় কত সহজ ভাবে তারা বলতে পারত।’ আর শিক্ষাবিদ ডক্টর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন মনে করতেন, লালনসহ অন্যান্য লোককবি যে-সব গান রচনা করে গেছেন,‘তাহাতে যথেষ্ঠ রসবোধের পরিচয় নাই’ এবং ‘এগুলি গ্রাম্যতাদোষে দুষ্ট বলিয়া ভদ্রসমাজে স্থান করিয়া লইতে পারে নাই।’ রবীন্দ্রনাথ তৎকালীন বাংলার ভদ্রসমাজের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি ছিলেন। কাজেই মোয়াজ্জেম হোসেন কাদের কথা বলছেন-ঠিক বোঝা গেল না। বাংলার ভদ্রসমাজে লালনসহ বাংলার লোক কবির গান বহুপূর্বেই স্থান করে নিয়েছে। ২ প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও প্রগতিশীল লেখক কাজী আবদুল ওদুদ ছিলেন রবীন্দ্রচেতনায় সমুজ্জ্বল এক প্রাণ। তাঁর জন্ম ২৬ এপ্রিল ১৮৯৪ ফরিদপুর জেলার পাংশা উপজেলার অর্ন্তগত বাগমারা গ্রামে। ১৯২০ সালে ঢাকা কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। তাঁর একটি স্মরণীয় কীর্তি: ‘ব্যবহারিক শব্দকোষ’। এটি জনপ্রিয় বাংলা অভিধান। কাজী আবদুল ওদুদ-এর অন্যান্য গ্রন্থ-মীর পরিবার; নবপর্যায়; রবীন্দ্র কাব্যপাঠ; শাশ্বত বঙ্গ। ‘শাশ্বত বঙ্গ’ প্রকাশিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের ঠিক এক বছর আগে। সে গ্রন্থে আবদুল ওদুদ লিখেছেন-‘এই মারাফত-পন্থীর বিরুদ্ধে আমাদের আলেম -সম্প্রদায় তাঁদের শক্তি প্রয়োগ করেছেন, আপনারা জানেন। ...এক যুগ যে সাধনাকে মূর্ত করে তুলল, অন্য যুগের ক্ষুধা তাতে নাও মিটতে পারে। কিন্তু, আলেমদের এই শক্তি প্রয়োগের বিরুদ্ধে কথা বলবার সবচাইতে বড় প্রয়োজন এইখানে যে সাধনার দ্বারা সাধনাকে জয় করবার চেষ্টা তারা করেন নি, তার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত দূর্বলকে লাঠির জোরে তারা দাবিয়ে দিতে চেয়েছেন। (শাশ্বত বঙ্গ।) কী ভাবে? তার সামান্য কিছু সূচনায় বলেছি। আরও বলি। মুন্সী এমদাদ আলী (১৮৮১-১৯৪১) প্রণীত ‘রদ্দে নাড়া’ (২৪আষাঢ় ১৩২৪) নামের অপ্রকাশিত পুস্তিকায় বাউল বা নাড়ার ফকিরদের বিশদ পরিচয় দিয়ে তাদের তীব্র নিন্দা-সমালোচনা করা হয়েছে। রংপুর জেলার বাঙ্গালীপুর-নিবাসী মওলানা রেয়াজউদ্দীন আহমদ ‘বাউলধ্বংস ফৎওয়া’ অর্থাৎ ‘বাউলমত ধ্বংস বা রদকারী ফৎওয়া’ প্রণয়ন ও প্রচার করেন। বাংলার প্রসিদ্ধ ওলামা ও নেতৃবৃন্দ এই ফতোয়া সমর্থন ও অনুমোদন করেছিলেন। এ কারণেই তখন বলছিলাম, বাংলায় বাউলমতের উত্থান সহজে হয়নি। নানাভাবে বাউলসাধকদের কন্ঠরোধ করবার চেষ্টা করা হয়েছে ...যা হোক। আসল কথা তো কাজী আবদুল ওদুদ বলেই দিয়েছেন: ... কিন্তু আলেমদের এই শক্তি প্রয়োগের বিরুদ্ধে কথা বলবার সবচাইতে বড় প্রয়োজন এইখানে যে সাধনার দ্বারা সাধনাকে জয় করবার চেষ্টা তারা করেন নি, তার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত দূর্বলকে লাঠির জোরে তারা দাবিয়ে দিতে চেয়েছেন। (শাশ্বত বঙ্গ।) ৩ আজও বাউলের একতারা ভাঙ্গতে একশ্রেণির শিল্পবিরোধীরা তৎপর। আমরা যেন রবীন্দ্রনাথ ও কাজী আবদুল ওদুদ এর ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা ভুলে না যাই। এবং দূত্যিময় মহাকালের দিকে তাকিয়ে আমরা আমাদের কর্তব্যকর্ম স্থির করি। সূত্র: আবুল আহসান চৌধুরী: লালন সাঁইয়ের সন্ধানে। সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৫৭
false
rg
সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসবে 'ব্ল্যাকআউট' প্রদর্শিত ও কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা।। রেজা ঘটক ৩ জুলাই থেকে ৯ জুলাই ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি যৌথভাবে ‘সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসব’ আয়োজন করেছিল। উৎসবের জুরি কমিটি ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্মিত প্রায় সাড়ে ৫০০ চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে ২১টি চলচ্চিত্র বাছাই করেছিল। চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনী হয়েছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা, বেলা তিনটা, বিকেল পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাতটায়। 'সমকালীন দেশীয় উৎসবে'র চলচ্চিত্রগুলো হল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার', তানভীর মোকাম্মেলের 'লালন', চাষী নজরুল ইসলামের 'শুভা', সাইদুল আনাম টুটুলের 'আধিয়ার', মুরাদ পারভেজের 'চন্দ্রগ্রহণ', সারাহ বেগম কবরীর 'আয়না', গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের 'স্বপ্নডানায়', হুমায়ূন আহমেদের 'শ্যামল ছায়া', তৌকীর আহমেদের 'জয়যাত্রা', কাজী মোরশেদের 'ঘানি', নুরুল আলম আতিকের 'ডুবসাঁতার', তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না' ও 'রানওয়ে', কোহিনুর আক্তার সুচন্দার 'হাজার বছর ধরে', আবু সাইয়ীদের 'শঙ্খনাদ', গিয়াসউদ্দিন সেলিমের 'মনপুরা', মোরশেদুল ইসলামের 'প্রিয়তমেষু', এনামুল করিম নির্ঝরের 'আহা!', নোমান রবিনের 'কমন জেন্ডার', টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' ও নাসির উদ্দীন ইউসুফের 'গেরিলা'। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না' আর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় নাসির উদ্দীন ইউসুফের 'গেরিলা'। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্রের একটি জমজমাট আয়োজনের জন্য। ম্যুভিখোর দর্শকরা অনেক দিন পর সমকালীন বাংলা চলচ্চিত্রের একটি জমজমাট আয়োজনকে দীর্ঘদিন মনে রাখবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি অনুরূপ নানান আয়োজন করে চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। চলচ্চিত্রের যে কোন উৎসবেই ম্যুভিখোর দর্শকদের মনে ভালো ছবি একটি বিশেষ স্থান দখল করে নেয়। 'সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসবে'ও তেমনটি ঘটেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিগত ১০ বছরের ৫৫০ টি ছবি থেকে ২১ টি ভালো ছবি বাছাই করতে উৎসবের জুরি কমিটিকেও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। উৎসবে একমাত্র টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' ছবিটি ছিল আনরিলিজড ছবি। আমি উৎসবের যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটিকে এই সাহসী উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। একটি আনরিলিজড ছবি উৎসবের জুরি কমিটির নজরে আসতে পারায় 'ব্ল্যাকআউট'-এর নির্মাতা টোকন ঠাকুরকেও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' ছবি টি আনরিলিজড সত্বেও যে উৎসবে প্রদর্শনের জন্য বিবেচিত হল এবং প্রদর্শিত হল, সেজন্য উৎসব কমিটিকে আমি 'ব্ল্যাকআউট' টিমের পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ জানাই। আরেকটা কথা, যারা 'ব্ল্যাকআউট' এখনো দেখেন নি, তাদের বলবো, টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট'-এ আপনাদের জন্য অনেক গোপন খনি আছে। বাংলা চলচ্চিত্রে মুন্সিয়ানার দিক থেকে টোকন 'ব্ল্যাকআউট'-এ অনেক কিছুই এপ্লাই করেছেন। সাধারণ দর্শকদের চেয়ে যা নির্মাতাদের চোখে বেশি পড়ার কথা। টোকন ঠাকুর উৎসবে বিলি করা লিফলেটে পরিচালকের বক্তব্যে আমাদের জানিয়েছেন যে, ''শীতাবসান। ডাকে নেশা, ডাকে জুয়া। জুয়াড়ির পূর্বপুরুষ ছিল জোসনাখোর। তাই মাতাল হবার অধিকার শুধু তারই, যার জিন থেকে হ্রেষা ছুটে আসে, পাহাড়ি ঘোড়ার। বসন্তকালীন খর্খরে মন-অবাধ্য আবহাওয়ায় একটি ডিভি ফোর হ্যান্ড্রেড ক্যামেরা, পর্যাপ্ত লাইটসহ একদল বন্ধুভাবাপন্ন দেবশিশুকে জড়ো করে চৈত্রময় ফুরফুরে দিনে স্টার্ট করে শ্রাবণের বৃষ্টি পর্যন্ত ইনডোর-আউটডোর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা এবং এরপর আরো অনেকখানি সময় নিয়ে চলে সম্পাদনা-পর্ব; ব্যাপক কাটাকুটির শেষে নির্বাচিত দৃশ্য-শব্দ-সংলাপ-কবিতা-গান-সঙ্গীত-চিত্রকলা-ফটোগ্রাফি-অ্যানিমেশনের সহযোগিতায় যদ্দুর পারা গেল, ব্যাপারটা সাজিয়ে-গুছিয়ে সানাই বাজিয়ে কনে-বিদায়ের মতো, আনন্দ-বেদনায় ষোলআনা আপ্লুত। সত্যি, এই লগ্নের অনুভূতির সঙ্গে আগে কখনো দেখা হয়নি। ব্ল্যাকআউট-এ যা যা পারা হয়নি, আমার চেয়ে তো তা কেউ বেশি জানে না। বাংলায়, কথাটা এখন প্রায় প্রবাদ- কৃতিত্বটুকু প্রডাকশনের সবার, আর না পারার ব্যথাটুকু, ব্যর্থতাখানি একান্তই কার? তারপরও, প্রিয় দর্শক, আড়চোখে আমি আপনার চোখ দেখতে থাকব, যখন আপনি ব্ল্যাকআউট দেখবেন। জানি, ঠোঁটের চেয়ে চোখই বেশি সত্য বলে থাকে।'' টোকন ঠাকুরের হাতে যে সোনার কলমটি আছে আমি গ্র্যান্টি দিয়ে বলতে পারি সমকালীন বাংলা সাহিত্যে অমন একটি কলম আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনেকের হাতেই নেই। সেই টোকন ঠাকুর যখন ছবি বানালেন, সেখানে শিল্প-সাহিত্যের অনেক ম্যাট্রিক্স এক্সপারিমেন্ট করবেন এটাই স্বাভাবিক। টোকন ঠাকুর ক্যামেরা দিয়েও সেইরকম একটি সমকালীন জটিল ম্যাট্রিক্স অথচ মনোলগ রচনা করেছেন, যা কারো কারো কাছে একবার-দু'বার-তিনবারের দর্শনেও উন্মোচিত নাও হতে পারে। বারবার না দেখলে 'ব্ল্যাকআউট' সম্পর্কে টোটাল ধারণা অর্জন করাটা তাই একটু দুরূহ। সেই অর্থে টোকন ঠাকুর 'ব্ল্যাকআউট'-এর মাধ্যমে নির্মাতাদের নির্মাতা হিসেবে আমাদের সামনে আসেন। আপনি যদি ফিলোসপি না বোঝেন, আপনি যদি ডায়লগ না বোঝেন, আপনি যদি একবিংশ শতাব্দীর তারুণ্য না বোঝেন, আপনার যদি সারা বিশ্বের বিশাল আর্ট-কালচার-শিল্প-সাহিত্যের উপর ব্যাপক পড়াশুনা না থাকে, আপনার যদি ল্যাটিন আমেরিকার ম্যুভি সম্পর্কে ধারণা না থাকে, আপনার যদি আলবেয়ার কামু পড়া না থাকে, আপনার যদি রোম, মাদ্রিদ ও প‌্যারিসের আর্টের উপর ধারণা না থাকে, আপনার যদি ইরানি ফিল্ম দেখা না থাকে, আপনার যদি মধ্যরাতে একা একা গহীন অরণ্যে বা সমুদ্র পারে হাঁটার অভ্যাস না থাকে, আপনার যদি ঘোর অন্ধকারের বিভিষিকায় রাতের তারাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না থাকে, আপনার যদি অমর বাল্যকালে ঘোর লাগা কোনো লাল বাউলের প্রতি আসক্তি না থাকে, আপনার যদি নাগরিক সন্ধ্যায় হাজারো ব্যস্ততায় ফুটপাতের সান্ধ্য বাঁশরির সুমধুর সুরের মধ্যে হারিয়ে যাবার অভ্যাস না থাকে, আপনার যদি অন্তর্দহন বিশ্লেষণ করার মতো মগজ না থাকে, আপনার যদি একাকী নিসঙ্গতায় নির্লিপ্ততার অতলে হারিয়ে মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ পান করার তৃষ্ণা না থাকে, আপনার যদি কালের যাত্রার ধ্বনি কানে না লাগে, আপনার যদি নিজের প্রতি একটুখানি খামখেয়ালীও না থাকে, আপনার পক্ষে টোকন ঠাকুরের 'ব্ল্যাকআউট' দেখে সবকিছু আবিষ্কার করা কঠিন হবে। তাই আপনাকে বলি, ভাই, 'ব্ল্যাকআউট' বারবার দেখুন। 'ব্ল্যাকআউট'-এ টোকন ঠাকুর ক্যামেরা দিয়ে যে কবিতা লিখেছেন, সেটি চট করেই বুঝতে পারার কথা নয়। খামাখা সমালোচনা করাটা যতোটা সহজ, 'ব্ল্যাকআউট' বারবার দেখে আসুন নিজেরাই নিজেদের চোখ আর লুকিয়ে থাকা শিল্পের খনি আবিষ্কার করি। 'ব্ল্যাকআউট' টিমের আমি নিজে একজন ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা। যুদ্ধ আমাদের এখনো শেষ হয়নি। আর যুদ্ধে থাকতেই জীবনে সবচেয়ে বেশি আনন্দ। তাই 'ব্ল্যাকআউট' নিয়ে আরো যুদ্ধ যে বাকি আছে তা আমরা ভুলে যাইনি। আর সেই যুদ্ধ করার মতো যথেষ্ট গোলাবারুদ এখনো ব্যাকপ্যাকে বাধা আছে। সো, সাধু সাবধান। নির্মাণ পর্বের অনেক চড়াই উৎড়াই শেষে দীর্ঘ সাত বছরে 'ব্ল্যাকআউট' ম্যুভিখোর দর্শকদের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা করেছে বলেই আমি বিশ্বাস করি। খুব শীঘ্রই 'ব্ল্যাকআউট' মুক্তি পাবে। তখন আরো এ নিয়ে কথা হবে। সময় সবুজ ডাইনি। সে পৃথিবীর উপকণ্ঠে থাকে। সন্ধ্যার উঠোনে সেই সবুজ ডাইনি, হারিয়ে যাওয়া জাহাজের নাবিকের হাড় দিয়ে, সেই নাবিকের উত্তরপ্রজন্মের কোনো বালকের হাতে সেই জাহাজের ছবি আঁকে খোলা আকাশের সন্ধ্যার উঠোনে। বালক জানে না যে হাড় দিয়ে সে ছবি আঁকার চেষ্টা করছে, তা তার হারিয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষ সেই দুঃসাহসী নাবিকের হাড়। আর যে ভাঙা জাহাজের সে ছবি আঁকার চেষ্টা করছে, সেই জাহাজেই তার সেই পূর্বপুরুষ ছিল। হয়তো মলয় সাগরে সেই জাহাজ ডুবি হয়েছিল। নয়তো ভারত মহাসাগরে। বালক তা জানে না। তবু সেই বালক কুড়িয়ে পাওয়া সেই নাবিকের ভাঙা হাড় দিয়ে সেই ভাঙা জাহাজের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে। এটাই হয়তো জিনের ধর্ম। বংশ পরম্পরায় সেই বালক তারই যোগ্য উত্তরসুরী। সবশেষে 'ব্ল্যাকআউট' -এর সকল শুভাকাঙ্খীদের আমি 'ব্ল্যাকআউট' টিম থেকে অন্তরের শুভেচ্ছা জানাই। আমরা আরো বেশি সমকালীন বাংলা ছবি দেখে নিজেদের আরো অভিজ্ঞ বানাবো এটাই সকলের কাছে প্রত্যাশা। জয়তু 'ব্ল্যাকআউট'। জয়তু 'ভারমিলিয়ন রেড'।। সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩
false
hm
রং দে আরব বাসন্তী - প্রথম পর্ব গতবছর তিউনিসিয়া থেকে বাহরাইন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া আরব সমাজে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ভালোবেসে আরব বসন্ত নাম দিয়েছে পশ্চিমা মিডিয়া। ঋতু বসন্তের চেয়ে রোগ বসন্তের সাথেই এর সাদৃশ্য বেশি। তিউনিসিয়ায় এক ক্ষুব্ধ অপমানিত ফলবিক্রেতা নিজের গায়ে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেন, আর সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে সুদূর বাহরাইন পর্যন্ত। সুদীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আরব সমাজ গর্জে উঠেছে তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেনে। আরব বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবে এ আঁচ লাগেনি, যেমন লাগেনি আরব আমিরাতেও। হয়তো এরা পশ্চিমা বিশ্বের তেলের বহুলাংশ যোগান দেয় বলেই এসব দেশে আরব বসন্তের বিরুদ্ধে আগেভাগেই নানা টীকা দেয়া ছিলো। ঢালাওভাবে আরব দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়া রাজনৈতিক বিক্ষোভকে আরব বসন্ত নাম দিয়ে প্রতিটি বিক্ষোভের স্বাতন্ত্র্যকে অস্বীকার করে কিছু মোটা দাগের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এদের একটি কার্পেটের নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে মিডিয়া। আমাদের দেশের খবরের কাগজ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যারা কাজ করেন, তারা বড় পশ্চিমা মিডিয়ার বক্তব্যকেই তর্জমা করে চালিয়ে দেন। আমরাও তাই আরব বিক্ষোভকে আরব বসন্ত নামেই চিনতে শিখলাম, সেইসাথে মিডিয়ায় গর্জমান একটি কথা ছড়িয়ে পড়লো, এই বিপ্লব ফেসবুক বিপ্লব, সামাজিক যোগাযোগের সাইট এই বিপ্লবের জনক। এই কথাটা মিডিয়ায় এসেছে, আবার অন্যান্য ঘটনার চাপে মিডিয়া থেকে সরেও গেছে, কিন্তু প্রভাবশালী মহলের কানে এই বাক্যটি অনুরণিত হয়ে চলছে। সামাজিক যোগাযোগর সাইট নিয়ে মিডিয়ামুদি থেকে শুরু করে রাজনীতিকও উদ্বেগ প্রকাশ করে চলছেন। আসছে আষাঢ় মাস, তাঁদের মন ভাবছে, কী হয় কী হয়, কী জানি কী হয়! সামাজিক যোগাযোগ সাইট বিপ্লবের জন্ম দেয় না। বিপ্লবের জন্ম হয় শাসকের অদক্ষতা আর অকর্মণ্যতা থেকে, শাসিতের বঞ্চনার অনুভূতি থেকে। একাত্তরে এদেশে ফেসবুক ছিলো না, ছিলো না নব্বইতেও। কিন্তু একবার পাকিস্তানী সেনাশাসন, আরেকবার বাংলাদেশী সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লব করেছে বাংলাদেশের মানুষ। ফেসবুকে বসে বিপ্লব করে ফেলা লোকের অভাব যদিও নেই, কিন্তু বিপ্লব হয় আকাশের নিচে, সেখানে মানুষের উপস্থিতি লাগে, লক্ষ্য লাগে, কর্মপন্থা লাগে। সামাজিক যোগাযোগের সাইট বিপ্লব নিয়ে মত বিনিময়ের কাজটা শুধু অনেক সহজ করে দিয়েছে, এ-ই। আমাদের নীতিনির্ধারকরা সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো আরব বসন্তের জীবাণু দেখা শুরু করে দিয়েছেন সম্ভবত মিডিয়ার দেখানো জুজুর ভয়ে, কিংবা আরব বসন্ত এবং সামাজিক যোগাযোগ সাইট সম্পর্কে নিজেদের পর্বতপ্রমাণ অজ্ঞতার কারণে। আমাদের নেতানেত্রীরা কিছু শব্দ মুখস্থ করে যত্রতত্র ব্যবহার করেন, এবং তাঁদের অনবধানতাবশে মাঝেমধ্যে শব্দগুলো তার মূল অর্থ হারিয়ে যোগরূঢ়ার্থেই মানুষের কাছে বেশি পরিচিত হয়। গত শতাব্দীর শেষ দিকে এমনই একটি বহুলব্যবহৃত শূন্যগর্ভ শব্দমালা ছিলো "একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ", যার উচ্চ ঘটনসংখ্যায় বিরক্ত হয়ে হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, বাঙালি বিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাতেই অসমর্থ, সে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ কী মোকাবেলা করবে? এরপর আমরা সবকিছুতেই শহীদ জিয়ার স্বপ্ন পেয়েছি কিছুদিন, জানতে পেরেছি বর্তমান সময়ে যা কিছু ঘটে সবই শহীদ জিয়ার স্বপ্ন। এখন যোগরূঢ়ার্থে ধন্য হচ্ছে "ডিজিটাল"। "আরব বসন্ত"কে সেই পথে নিয়ে যাওয়ার কাজটা মিডিয়া-রাজনীতিকের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য জোট সফল করে তুললেও তুলতে পারে। তিউনিসিয়ায় যে বসন্ত এসেছিলো, তার সাথে মিশরের বসন্তের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু লিবিয়ায় বসন্তের কিসিম ছিলো সম্পূর্ণই ভিন্ন, যদিও পশ্চিমা মিডিয়া লিবিয়াকেও একই কাতারে ভিড়িয়ে দিয়ে খুশি। সিরিয়াতেও লিবিয়ার তরিকায় বসন্ত আনয়নের চিন্তাভাবনা চলমান। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর নাম ফেটেছে তিউনিসিয়া আর মিশরের ক্ষেত্রেই। খুলে বলি। তিউনিসিয়া আর মিশর, দুই জায়গাতেই দীর্ঘ সময় ধরে একনায়কের শাসন চলছে। তিউনিসিয়ায় রাজনৈতিক ব্লগের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, ফেসবুক নিয়ে একনায়ক বেন আলির কোনো মাথাব্যথা ছিলো না। সেখানে টিভি আর পত্রিকা, দুটিই ছিলো সেন্সরশিপের আওতায়। ফলে সিদি বুজিদে যখন মোহামেদ বোয়াজিজি নামে এক তরুণ ফল বিক্রেতা পুলিশের চাঁদাবাজি ও চড়থাপ্পড়ের কারণে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হন, এবং অভিমানে তাদের দরজার সামনেই গায়ে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেন, তখন ঘটনাটা পত্রিকা বা টিভি বা ব্লগ, কিছুতেই আসেনি। পরদিন অসংখ্য আম পাবলিক নগর কর্তৃপক্ষের দরজার সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ করলে তাদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়, সে খবরও মিডিয়া চেপে যায়। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের হাতে ইঁটের পাশাপাশি মোবাইল ফোনও ছিলো। মোবাইলে তারা পুলিশের তাণ্ডব ভিডিও করে তুলে দেয় ফেসবুকে। রাজধানী তিউনিসের এক ব্লগার স্লিম আমামু সেই জিনিস দেখতে পেয়ে ছড়িয়ে দেন। তরুণদের মধ্যে সেই জিনিস আলোড়ন তুললেও তিউনিস শহরে সিদি বুজিদের মতো সাড়া পড়েনি। তিউনিসে সিদি বুজিদের মতো বিক্ষোভ শুরুর কাজটা করেন আমামু ও তার কয়েকজন বন্ধু। শহরের এক চত্বরে নাগরিকদের জড়ো হওয়ার ডাক দিয়ে শুরু হয় আরব বসন্ত, আর ফেসবুকের নামটাও ফাটে তখনই। একবার বেন আলির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যাওয়ার পর সেটা নিজ থেকেই গতি পায়। বিক্ষোভ চলাকালে টুইটারও বিপ্লবীদের কাজে এসেছে। পুলিশ কোথাও জড়ো হয়ে কোনো রাস্তা আটকে দিলে তারা সেটা টুইট করে জানিয়ে দিয়েছে অন্যদের, এদিক দিয়ে নয় ওদিক দিয়ে চলো। সামাজিক যোগাযোগের সাইটের দৌড় অতটুকুই। তিউনিসিয়ায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বেন আলির দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন চলছিলো। বিপ্লব ফেসবুকে পেজ বা গ্রুপ খুলে শুরু করা যায় না, বিপ্লবের বারুদ সমাজে জমা হতে হয়। তিউনিসিয়ায় সেই বারুদে একটা স্ফূলিঙ্গের প্রয়োজন ছিলো, যা বোয়াজিজির আত্মহনন এবং তদপরবর্তী সিদি বুজিদ বিক্ষোভ থেকে এসেছে। তিউনিসিয়ায় মানুষ ফেসবুকে চোখ রেখেছে স্বাধীন সংবাদপত্র আর ইলেকট্রনিক মাধ্যমের অভাবের কারণেই। প্রেস-টিভি-রেডিও তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিকমতো পালন করতে পারেনি বলেই সেখানে সামাজিক যোগাযোগের সাইটের দিকে ঝুঁকে পড়েছে মানুষ। তিউনিসিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও অনেক বেশি, প্রতি তিনজনে সেখানে একজন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। মিশরে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে মানুষের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে। খালিদ নামের এক তরুণ রাজনৈতিক অ্যাকটিভিস্টকে মিশরীয় পুলিশ নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। খালিদের ভাই খালিদের মৃত মুখের ছবি তুলে নেটে পোস্ট করেন। সেই ছবিটি মিশরের তরুণদের আলোড়িত করে, সেইসাথে তিউনিসিয়ার টাটকা উদাহরণ তাদের একই রকম আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু মিশরে নেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা তিউনিসিয়ার চেয়ে আনুপাতিক হারে অনেক কম। শুধু তা-ই নয়, ফেসবুকে সেখানে পুলিশ শকুনের মতো চোখ রাখে সবসময়, ঊনিশ-বিশ দেখলে তুলে নিয়ে পেটায়। তাই খালিদের হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকজন তরুণ-তরুণী গোপনে পরিকল্পনা করেন, তারা গণবিক্ষোভের ডাক দেবেন অন্যভাবে। এ কাজে তারা ব্যবহার করেন কায়রোর ট্যাক্সিচালকদের। যেন খুব গোপন কিছু বলছেন, এভাবে তারা মোবাইলে ট্যাক্সিচালকদের শুনিয়ে শুনিয়ে অমুক জায়গায় তমুক দিন গণজমায়েতের কথা বলেন। ট্যাক্সিচালকরা সেই গুজব বিশ্বস্ততার সাথে ছড়িয়ে দেয় সারা শহরে। গণবিক্ষোভের আলামত দেখার পর মোবারক সরকার সোজা দেশে মোবাইল আর ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। আর সেটাই হয় কাল। যা পাবলিক ফোনে, নেটে, কানাঘুষায় জানতে পারছিলো, তা জানার জন্যে নেমে আসে পথে। আর তারই ফলাফল তাহরির স্কোয়্যারে কুড়ি লক্ষ মানুষের সমাগম। মোবারক সেই জনতার ওপর জলকামান থেকে শুরু করে ট্যাঙ্ক, পুলিশ-সেনা থেকে শুরু করে উষ্ট্রারোহী গুণ্ডা, সবই লেলিয়ে দেয়, কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। এখানেও বিপ্লবের জন্ম সামাজিক যোগাযোগ সাইটে নয়, মোবারকের চলমান অত্যাচারে। আর বিপ্লবের সাফল্য শুধু মিশরীদের অনমনীয় আন্দোলনেই নয়, মোবারকের প্রতি ওবামা আর মিশরী সেনাবাহিনীর নিমকহারামিতেও। মোবারক মার্কিন-ইসরায়েলি অক্ষের পরীক্ষিত বন্ধু, কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূলে দেখে ওবামা তাকেও এলি এলি, লামা শবক্তানি বলিয়ে ছাড়ে। মিশরীয় সেনাবাহিনীও তাদের আনুগত্য যতটা বারাকের প্রতি, ততটা মোবারাকের প্রতি দেখায়নি। তিউনিসিয়া-মিশরের সাথে লিবিয়ার পার্থক্য, সেখানে বিপ্লব গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। গাদ্দাফির পতন যত না সাধারণ মানুষের হাতে, তারচেয়ে বেশি ন্যাটোর আক্রমণ ও ব্রিটিশ-প্রশিক্ষিত মিলিশিয়াদের হাতে [১]। তিউনিসিয়া বা মিশরের চেয়ে লিবিয়ার মানুষ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বেশি ভোগ করতো, তাই গাদ্দাফিকে মুখোমুখি হতে হয়েছে নিজের দেশের একাংশসহ ন্যাটোরও, যেটা তিউনিসিয়া বা মিশরে ঘটেনি। ফেসবুক বা টুইটার লিবিয়াতে কোনো কাজে আসেনি, যেমন আসছে না সিরিয়া বা ইরান বা বাহরাইন বা সৌদি আরবের ক্ষেত্রে। শেষের দেশগুলো সামাজিক যোগাযোগ সাইট সম্পর্কে খুব হুঁশিয়ার অবশ্য, তারা কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ এখনও পাইকারি হারে মানুষ মেরে চলমান বিক্ষোভ দমন করে যাচ্ছে, সেখানে ফেসবুক বা টুইটারের জয়গান নিয়ে আরব বসন্তের কোকিলেরা একেবারেই চুপ। কারণ সামাজিক যোগাযোগের সাইটের ম্যাজিকের বেলুন সেখানে বাশারের নির্মম সেনাবাহিনী ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোকে পাইকারি হারে বিপ্লবের জনক বানিয়ে দেয়ার আগে, দুই হাজার নয়ে ইরানের কারচুপির নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলা যায়। ইউটিউবে তরুণী নেদার মৃত্যুর ভিডিও সেখানে মড়কের মতো ছড়িয়ে গিয়েছিলো। ছিলো ফেসবুক, ছিলো টুইটারও। কিন্তু কিছু হয়নি। অটোয়া সিটিজেনে ডেক্ল্যান হিল লিখেছেন, ইরানের বিক্ষোভের কয়েকদিন পরই মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু ঘটার কয়েক ঘন্টার মধ্যে গোটা ব্লগোস্ফিয়ার ইরানের রাজনীতি বাদ দিয়ে মাইকেলের সেরা গান বাছাই নিয়ে মগ্ন হয়ে পড়ে [২]। হিল তাঁর নিবন্ধে রং দে আরব বাসন্তী প্রপঞ্চটিকে আরেকটু ভালোমতো খতিয়ে দেখতে চেয়েছেন। যদি সামাজিক যোগাযোগ সাইটের কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকাই না থাকবে, তাহলে এদের নাম এতো ফাটলো কীভাবে? তিনি খুঁজে বার করেছেন দু'টি কারণ। এক, সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো চায় তাদের নাম ফাটুক, সেই খাতে তারা কিছু খরচাপাতি চেষ্টাচরিত্রও করে, তাই তাদের নাম কিছুটা ফাটে। দুই, তাদের চেষ্টাচরিত্রের বাইরে নাম ফাটে সাংবাদিকদের কারণে। পশ্চিমা মিডিয়ায় সাংবাদিক ছাঁটাই চলছে সমানে। যুক্তরাষ্ট্রে ২৫% সাংবাদিক ছাঁটাই হয়েছেন খবরের কাগজ থেকে। সারা বিশ্বে যখন নানা গিয়ানজাম চলমান, যখন ভালো সাংবাদিককে অকুস্থলে গিয়ে ঘটনার ওপর রিপোর্টিং করা জরুরি হয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই চলছে উল্টো ছাঁটাই। বাজেটেও নানা কাটছাঁট করে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে সাংবাদিকরা আর ডেস্ক ছেড়ে বেরোয় না, সামাজিক মিডিয়ায় নানা তথ্য-তত্ত্ব-ছবি-গালি-বুলির তালাশ করে বেড়ায়। তাতে করে সামাজিক যোগাযোগের সাইটের কদর বাড়ে, আর বড় মিডিয়া হাউসগুলো নিজেদের খরচ কমানোর ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে পারে। এই ধরনের চিন্তা বা বিশ্লেষণ থেকে আমাদের মিডিয়া দূরে। গুটি কয়েক পোড় খাওয়া ঝানু সাংবাদিকের পাশাপাশি অগণিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সংবাদকর্মী আমাদের দেশে মিডিয়া চালায়, যাদের অনেকে ঠিকমতো ইংরেজি থেকে বাংলাও করতে পারে না, ভুলভাল লিখে ছেপে বা এয়ার করে বসে থাকে। এরা এই গোটা আরব বসন্তের ঘটনাকে মিডিয়ায় উপস্থাপন করেছে ফেসবুক বিপ্লব হিসেবে। আমাদের এক বিতাড়িত রাষ্ট্রপতির বাতিল রাজনীতিক ছেলে ফেসবুকে তরুণদের রাজনৈতিক দল খুলে বসেছেন আরব বসন্তের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে। এই আরব বসন্তের ঝোঝুল্যমান মূলা ধামরাইয়ে খালেদা জিয়ার জনসভাতে্ও উচ্চারিত হতে শুনি আমরা। মিডিয়াও নিজের অজ্ঞতা-মূর্খতা চেপে চুপে রেখে ফেসবুক আর সামাজিক যোগাযোগের সাইটের বিপ্লবপ্রসূ চেহারাটাকে জিইয়ে রাখে, আবার সময় বুঝে সেই একই ধরনের সাইটগুলোকে শেকলবন্দী করার জন্যে চারতারা হোটেলে দাওয়াত করে এনে রাজনীতিকদের ধমকায়, কেন এখনও এইসব সাইটকে লাগাম-কাপাইয়ের আওতায় আনা হয়নি। আমরা জানি, আমাদের দেশে মিডিয়া অনেক স্বাধীনতা ভোগ করে। কিন্তু মিডিয়ার আচরণ আরব বিশ্বের বন্দী মিডিয়ার মতোই। ভেতরে ভেতরে হয়তো আমাদের মূল মিডিয়া জানে, তাকে রফা করতে হবে তাদের সাথেই, যাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব সাধারণত হয়। তাই সে পরিচয়ে স্বাধীন হলেও আচরণে বশংবদ। সামাজিক যোগাযোগের সাইটের জুজু দেখাতে পারলে রাজনীতিকের সাথে তার দর কষাকষির সুযোগ প্রশস্ত হয়, সংকীর্ণ হয় না। তাই রাজনীতিকরা ফেসবুক-টুইটার-ইউটিউব নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, মিডিয়া এই উদ্বেগ সরবরাহ করে খুশি থাকে। আমাদের দেশে অতীতে বিনা নোটিসে ইউটিউব আর ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছে (দেশে কিছু কর্তৃপক্ষের মনোভাব আইয়ুবের আমলাদের চরিত্র বহন করে এখনও), সেও এই উদ্বেগেরই ফসল। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের কি কোনো ভূমিকাই তাহলে বিপ্লবে নেই? এই যে আমরা ব্লগিং করছি, ফেসবুকে সন্নিবিষ্ট হচ্ছি, মত বিনিময় করছি, সকলই ভ্রান্ত সিন? মিডিয়া তাহলে সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে এমন আড়ে আড়ে তাকায় কেন? ব্লগ নিয়ন্ত্রণে তাহলে কিছু লোক আইন চায় কেন? ঢোঁড়া সাপের জন্যে তাহলে কেন কুঁচকি পর্যন্ত গামবুট? এর উত্তর দিচ্ছি দ্বিতীয় পর্বে। সামাজিক মিডিয়ার শক্তি আর মিডিয়া-রাজনীতিকের যৌথ ব্ল্যাকবোর্ডে তার ভুল উপস্থাপন নিয়ে সেখানে যথারীতি বাজে বকবো। তথ্যসূত্র: [১] Inside story of the UK's secret mission to beat Gaddafi, মার্ক আরবান, বিবিসি [২] The Arab Spring is not the 'Facebook Revolution', Declan Hill, THE OTTAWA CITIZEN
false
hm
পিচ্চিতোষ গল্প ১০: বইদাদু ১. কুড়ানকে তার বাবা কেন কুড়ান বলে ডাকতেন, কে জানে? কিন্তু মা-ও কুড়ানকে কুড়ান বলেই ডাকতে শুরু করলেন। সেই থেকে কুড়ানের বয়স যখন মোটে কয়েক ঘন্টা, তার নাম হয়ে গেলো কুড়ান। তার দুই খালা, দুই মামা তাকে কুড়ান বলে ডাকেন। দুই কাকা, এক ফুপি ডাকেন কুড়ান বলে। কাজের বুয়া দিলুর মা, যে কি না কুড়ানের বাবা যখন কুড়ানের বয়সী ছিলো, সেই তখন থেকে কুড়ানদের বাড়িতে কাজ করে, সে-ও তাকে কুড়ান বলে ডাকে। নিজের নাম নিয়ে তো কুড়ানের কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তার বন্ধুর বাবা-মা সবাই মুখ টিপে হাসেন তার নাম শুনে। যেন কুড়ান একটা বোকা নাম। যেন কুড়ান কারো নাম হতে পারে না। কুড়ানের সবচেয়ে ভালো বন্ধুর নাম টুনটুন। তার নামটার সাথে মাঝে মাঝে কুড়ান নিজের নাম মিলিয়ে দেখে। টুনটুনের নাম শুনে তো কেউ হাসে না। তাহলে কুড়ানের নাম শুনে বোকা লোকগুলি হাসে কেন? কুড়ান নিজের নাম মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে জপতে থাকে অনেকক্ষণ, একনাগাড়ে। "কুড়ান কুড়ান কুড়ান কুড়ান কুড়ান কুড়ান ...।" তার মোটেও খারাপ লাগে না নিজের নামটাকে। তাহলে বাকিরা হাসে কেন? দিলুর মা মাঝে মাঝে কুড়ানকে এরকম বিড়বিড় করতে দেখে ছুটে আসে। "কী হইছে? কী হইছে তর? পটপটাইয়া কী কস?" কুড়ান হি হি করে হাসে। দিলুর মা একটা ছুতো পেলেই চেঁচামেচি করে। কুড়ানের ভারি ভালো লাগে। কিন্তু দিন শেষে দিলুর মা-ই কুড়ানের সঙ্গী। বাবা অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে, মা-ও অফিস নিয়ে ব্যস্ত, কুড়ানকে স্কুল থেকে নিয়ে আসে ড্রাইভার, আর দেখাশোনা করে দিলুর মা। ছুটির দিনেও বাবা-মাকে ঠিকমতো কাছে পায় না কুড়ান। বাবা গম্ভীর হয়ে খবরের কাগজ পড়ে, নয়তো অফিসঘরে গিয়ে লেখাপড়া করে, মা ল্যাপটপে কী যেন খুটখাট করে। কুড়ান কম্পিউটারে গেমস খেলে, টিভি দেখে, মাঝে মাঝে টুনটুন বেড়াতে এলে তার সাথে নিনটেন্ডো উই খেলে। কুড়ান মানে কী, বাবাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগই পায় না সে। অবশ্য বইদাদুকে জিজ্ঞেস করা যায়। কিন্তু বইদাদু বড় গম্ভীর লোক, তাকে খুব ভয় পায় কুড়ান। ছাদের বাসাটায় থাকেন বইদাদু। তার দুটো ঘর, দুটো ভর্তি রাজ্যের বই। প্রকান্ড সব বইয়ের শেলফ আর আলমারি, তার মাঝে হাজার হাজার বই। বইদাদু সারাদিন ঘরে শুয়েবসে বই পড়েন, কোথাও বেরোন না। মাঝে মাঝে বড় বড় প্যাকেটে করে তার জন্যে বই নিয়ে আসে বইয়ের দোকানের লোকজন। বই দাদু বই কেনেনও ফোনে। কুড়ান বইদাদুর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে। অবশ্য এমন নয় যে বইদাদু খুব বদরাগী, কুড়ানকে তিনি কক্ষণো বকেন না, জোরে কথাও বলেন না। কিন্তু খুব গম্ভীর গম্ভীর কথা বলেন, কুড়ান শুনে ভয় পায়। আর বইদাদুর গলাও তেমন, উহ, কী ভারি! কুড়ানের বাবা পর্যন্ত বইদাদুকে ভয় পায়, আর কুড়ান পাবে না? বাবা আর মা মাঝে মাঝে ঝগড়া করে। কুড়ান সব কথা বোঝে না, কঠিন কঠিন শব্দ, অত ইংরেজি সে বোঝে না। দুয়েকটা টুকরো টুকরো কথা সে ধরতে পারে কেবল। বাবা মা যখন ঝগড়া করে, তখন ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দেয়। কুড়ান মাঝে মাঝে দরজায় কান পাতে, তা-ও স্পষ্ট করে কিছু বোঝা যায় না। কিন্তু চাপা গলায় অনেকক্ষণ ধরে ঝগড়া করে দু'জন। সেদিন রাতে দু'জনের কেউই একসাথে টেবিলে বসে খায় না। বইদাদু তো সবসময় নিজের ঘরে খাবার খায়, কুড়ানকে তখন দিলুর মা টিভির সামনে কোলে বসিয়ে নিয়ে খাইয়ে দেয়। কুড়ানের মনটা একটু ভার হয়ে থাকে, কিন্তু টিভি দেখতে দেখতে সে আবার ভুলে যায়। বাবা অবশ্য মাঝে মাঝে কুড়ানকে রাতে ঘুমের আগে দেখতে আসে। গলা খাঁকরে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ঘুরে ফিরে। "তোমার স্কুল কেমন চলছে বাবা?" "তোমার বন্ধুরা সবাই ভালো আছে তো?" "নতুন একটা গেমিং সেট কিনে দেবো সামনে, ঠিকাছে?" "তোমার বইদাদুর কাছে গিয়েছিলে? কেমন আছে দাদু?" "তোমার টিচার তোমাকে পড়াচ্ছে তো ঠিকমতো?" বাবা একবারও জিজ্ঞেস করে না, কুড়ান কোথাও বেড়াতে যাবে কি না। কতদিন হয়ে গেলো, কুড়ানের বাবা মা তাকে নিয়ে একসাথে কোথাও বেড়াতে যান না। বাবা তো তা-ও মাঝে মাঝে এসব বলে এসে, কুড়ানের মা আরো গম্ভীর হয়ে থাকেন। তিনি শুধু এসে হুকুম দিয়ে যান। "কুড়ান, দুধটুকু খেয়ে ঘুমাও।" "কুড়ান, কম্পিউটার বন্ধ করে শুতে যাও।" "কুড়ান, টিভি দেখার সময় শেষ। শুতে যাও।" "কুড়ান, অত শব্দ করে হেসো না।" "কুড়ান, অত শব্দ করে গেম খেলো না।" কুড়ান বড় ভয় পায় মাকে। সে চুপচাপ সব কথা শোনে। বইদাদু সেদিক দিয়ে অনেক ভালো। কুড়ান তার ঘরের দরজায় টোকা দিলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ডাক দেন, "কে, কুড়ান? ভেতরে এসো!" কুড়ান দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সবসময় বইদাদুকে একই জামা পরা অবস্থায় দেখে। সাদা গেঞ্জি, সাদা পায়জামা। চোখে একটা মোটা কালো চশমা। দাদু খুব রোগা আর ফর্সা আর লম্বা, নাকটা বাজপাখির ঠোঁটের মতো। কুড়ান ভেতরে ঢুকলে দাদু চশমাটা খুলে রাখেন। হাতের বইটাও বন্ধ করে রাখেন। তারপর তাকে ইজিচেয়ারে বসতে দেন। ঐ চেয়ারটা কুড়ানের খুব পছন্দ, সে পা তুলে উঠে বসে। "কেমন আছো কুড়ান?" দাদু সবসময় এই কথাটাই জিজ্ঞেস করেন শুরুতে। কুড়ান একটু ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ে, সে ভালো আছে। দাদু তারপর কুড়ানকে অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রশ্ন করেন, মাঝে মাঝে কীসব গল্প শোনান। সব গল্প কুড়ান বোঝেও না, কিন্তু দাদু চোখ বন্ধ করে আপনমনে বলে যান। তবে মজার গল্পও মাঝে মাঝে বলেন দাদু। একটা রুটির গল্প আছে, সেটা কুড়ান বার বার শুনতে চায়। গল্পটার মধ্যে একটা মজার ছড়া আছে, সেটা দাদু খুব সুন্দর করে বলেন। তবে দাদু মাঝে মাঝে চুপ করে থাকেন। গল্প সেদিন বলেন না। বলেন, "দেখেছো, কুড়ান, আজকে আকাশটা কতো সুন্দর?" কিংবা, "দেখেছো, কুড়ান, বৃষ্টি হবার পর চারপাশটা কী সুন্দর লাগছে?" কুড়ান বোঝে, দাদুর মন সেদিন কোনো কারণে খারাপ। কুড়ান সেদিন বেশিক্ষণ বসে না, "দাদু, এখন যাই?" বলে চলে আসে। দাদু বলেন, "যাবে? আচ্ছা, এসো।" তারপর আবার চোখে চশমা লাগিয়ে বই পড়তে থাকেন। কুড়ান আস্তে করে দাদুর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নিচে নেমে আসে। বইদাদুর বইগুলিতে কোনো ছবি নেই। খুদি খুদি অক্ষরে কী কী যেন লেখা, কুড়ান বোঝে না কিছু। দিলুর মা অবশ্য কুড়ানকে বইদাদুর অনেক গল্প বলেন। বইদাদুর নাকি খুব সুন্দর একটা বউ ছিলো। সেই বউ মারা যাবার পর বইদাদু বই কেনা শুরু করলেন। কিনতে কিনতে এমন অবস্থা, বাড়িতে বই আর আঁটে না। বইদাদুর অনেক টাকা, তাই তাকে কোনো কাজও করতে হয় না, তিনি শুধু বই কেনেন আর পড়েন। দিলুর মাও বইদাদুকে খুব ভয় পায়। "ছোডোমিয়া খুব রাগী লুক, বুচ্ছনি কুড়ান? কুন দুষ্টামি করবা না। সবসময় সালাম দিয়া কথা বলবা।" কুড়ান হি হি করে হাসে। বইদাদুকে সে কখনোই সালাম দেয় না। দাদু সেজন্যে কখনো রাগ করেননি। অবশ্য বইদাদুকে মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। দিলুর মা-র ধারণা, রাগের মাথায় বইদাদুর মাথায় রক্ত উঠে যায়। সেই রক্ত নামাতে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কুড়ান কয়েকবার দেখেছে, বাবা আর ড্রাইভার মতি ভাই মিলে দাদুকে ধরাধরি করে ছাদের বাসা থেকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ডাক্তারের কাছে। দাদুকে তখন খুব অসুস্থ লাগে দেখতে। আজ যখন কুড়ানের বাবা আর মা ঝগড়া করছিলেন দরজা লাগিয়ে, তখন দরজায় কান পেতে কয়েকটা কথা শুনে কুড়ান ঠিক করলো, বইদাদুকে এর মানে জিজ্ঞেস করতে হবে। বাবা আর মা সবসময় এই কথাটা একজন আরেকজনকে বলে। কুড়ান টিপটিপ পায়ে ছাদের ঘরে গিয়ে টোকা দেয়। কুড়ানের দাদু একটু পর ডাক দেন, "কে, কুড়ান? ভেতরে এসো!" কুড়ান গুটিগুটি পায়ে ভেতরে ঢুকে ইজিচেয়ারে উঠে বসে। দাদু বিছানায় শুয়ে, গায়ে একটা চাদর। "কেমন আছো কুড়ান?" বইদাদু জানতে চান। কুড়ান বিষণ্ণ মুখে মাথা দোলায়, সে ভালো আছে। "তোমার মুখটা এমন ভার কেন?" দাদু জানতে চান। কুড়ান বলে, "কুড়ান মানে কী?" দাদু হাসেন। "কুড়ান মানে নেই। এমনি একটা আদরের নাম।" কুড়ান বলে, "আমার নাম নিয়ে সবাই হাসে।" দাদু চুপ করে যান, তারপর বলেন, "যারা হাসে তারা বোকা। তারা নিজেরাও কুড়ান মানে জানে না। তাই হাসে।" কুড়ান ভেবে দেখে, সত্যি তো। দাদু ঠিকই বলেছে। দাদু বলেন, "তোমার নামের মানে জানেন তোমার বাবা-মা। তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলে?" কুড়ান মলিন মুখে বলে, "হেল মানে কী?" দাদু বলেন, "কীসের হেল?" কুড়ান বলে, "গো টু হেল মানে কী?" দাদুর চেহারাটা লালচে হয়ে যায়। তিনি উঠে বসে বলেন, "কুড়ান, এ কথাটা তুমি কোথায় শুনলে?" কুড়ান বলে, "আব্বু আর আম্মু দরজা লাগিয়ে কথা বলে। অনেক রাগারাগি করে। তখন একজন আরেকজনকে বলে, গো টু হেল।" বইদাদু উঠে দাঁড়িয়ে পায়ে চটি গলাতে গলাতে বলেন, "তুমি একটু বোসো কুড়ান, আমি তোমার বাবার সাথে একটু কথা বলে আসি।" কুড়ান বসে থাকে, দাদু আস্তে আস্তে নিচে নেমে যান। কুড়ান অবশ্য বেশিক্ষণ বসে থাকে না, সে চুপিসারে বেরিয়ে দাদুর পেছন পেছন নিচে নেমে যায়। সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে কুড়ান শুনতে পায়, দাদু প্রচণ্ড রেগে ধমকাচ্ছেন বাবা আর মাকে। "মনসুর! শাহানা! তোমাদের লজ্জা করে না? তোমাদের মেয়ে বড় হচ্ছে, আর তোমরা ঝগড়া করো! আজেবাজে কথা বলো! তোমাদের মেয়ে শেখে না এসব? সে কি বধির? সে কি বোকা? সে একটা শিশু! তোমরা নিজেরা এক একজন অপূর্ণ মানুষ, আর তোমাদের কচি মেয়েটাকে তোমাদের মূর্খামির ভিকটিম বানাচ্ছো!" কুড়ান আরো কয়েক ধাপ নিচে নেমে দেখে, তার বাবা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে দাদুর সামনে। দাদুর মুখটা লাল। কথা বলতে বলতে দাদু হঠাৎ বুক চেপে ধরে বসে পড়েন মেঝেতে। কুড়ানের বাবা চিৎকার করে জড়িয়ে ধরেন তাকে, "ছোটকা, ছোটকা!" কুড়ান খুব ভয় পেয়ে কেঁদে ওঠে। বইদাদুকে কুড়ানের বাবা তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কুড়ান কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। দিন দুয়েক বাদে দাদু আবার ফিরে আসেন। কুড়ান ভয়ে ভয়ে দাদুকে দেখতে যায়। দাদু বিছানায় শুয়ে। চোখ বন্ধ। কুড়ান দাদুর পায়ের বুড়ো আঙুল নেড়ে ডাকে। "বইদাদু! আমি কুড়ান!" দাদু চোখ মেলে তাকান। তারপর দুর্বল গলায় কাছে ডাকেন কুড়ানকে। কুড়ান দাদুর মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দাদু আস্তে আস্তে বলেন, "কুড়ান! আমি যা বলি, মন দিয়ে শোনো। এই যে আমার বইগুলি, এই সবগুলি বই আমি তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি। আমি আর বেশিদিন থাকবো না তোমাদের বাড়িতে। অন্য একটা জায়গায় চলে যেতে হবে। তুমি আমার বইগুলি দেখে রেখো। পারবে না?" কুড়ান কাঁদো কাঁদো মুখে বলে, "তুমি কোথায় যাবে?" বইদাদু একটু হেসে বলেন, "আমি মারা যাবো কুড়ান।" কুড়ান কেঁদে ফেলে। "না না না। তুমি মারা যাবে না!" বইদাদু কুড়ানের কাঁধে হাত রেখে বলেন, "সবাই একদিন মারা যাবে। আমি, দিলুর মা, তোমার বাবা, তোমার মা, তুমি ... সবাই।" কুড়ান বলে, "মারা গেলে মানুষ কোথায় যায়?" বইদাদু হাসেন। "মারা গেলে মানুষ স্বর্গে যায়। নরকে যায়। তুমি সেদিন জানতে চেয়েছিলে না, হেল মানে কী? হেল হচ্ছে নরক।" কুড়ান বলে, "সেখানে কী হয়?" বইদাদু বলেন, "সেখানে মানুষকে শুধু বই সেলাই করতে হয়। আর কাগজ কাটতে হয়। আর আঠা লাগাতে হয়। বইতে মলাট দিতে হয়। অনেক খাটনি!" কুড়ান বলে. "তুমি ওখানে যাবে?" বইদাদু হাসিমুখে মাথা নাড়েন। "না, আমি স্বর্গেই যাবো।" কুড়ান বলে, "সেখানে কী আছে?" দাদু বলেন, "সেখানে আছে অনেকগুলি ঘর! প্রত্যেকটা ঘরে অনেকগুলি আলমারি! আলমারিতে অনেকগুলি বই! সেখানে আকাশ সুন্দর, বাতাস সুন্দর, রোদ সুন্দর, বৃষ্টি সুন্দর! সেখানে মানুষ সারাদিন শুধু বই পড়ে। সেখানে একটা ছোটো নদী আছে, সেই নদীতে ছোটো ছোটো নৌকোতে করে আরো নতুন নতুন বই ভেসে আসে!" কুড়ান বলে, "সেই বইতে কি ছবি আছে?" বইদাদু হাসেন, "হ্যাঁ, সেখানে সব বইতে সুন্দর সুন্দর ছবি আছে! সেখানকার একটা বই আমার কাছে আছে। দেখবে কেমন?" কুড়ান মাথা নাড়ে। দাদু বালিশের নিচ থেকে একটা প্যাকেট বার করেন। "এটা তোমার জন্য। নিচে গিয়ে খুলে দেখো। আমি একটু ঘুমাই।" প্যাকেটের ওপর বাংলায় লেখা, "কুড়ানের জন্য।" কুড়ান প্যাকেটটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। দাদু আবার ডাকেন, "কুড়ান!" কুড়ান বলে, "কী দাদু?" দাদু বলেন, "তোমার বাবা মা আমার বইগুলির যত্ন করবে না। তুমি কোরো দাদু। মনে থাকবে তো?" কুড়ান ঘাড় নাড়ে। সে যত্ন করবে। দাদুর সব কটা বইয়ের সে যত্ন করবে। দাদু চোখ বোঁজেন। কুড়ান বেরিয়ে আসে। নিচে নামতে নামতে সে প্যাকেটটা খোলে। ভেতরে লাল একটা বই, তার মলাটে একটা বেড়ালের ছবি। বেড়ালটা চোখ টিপ দিচ্ছে। কুড়ান হেসে ফেলে। কী সুন্দর একটা বই!
false
hm
মাঙ্গালি দ্য মার্শিয়ানের বাংলাদেশি সংস্করণকে কী নামে ডাকা যেতে পারে, ভাবতে গিয়ে এই শব্দটাই মাথায় এলো। আরো কয়েক দশক পরের কথা। বাংলাদেশ আকাশযাত্রা ও শূন্য অধিবিভাগ, সংক্ষেপে বাসার অফিসটা বাসাবোতে। কয়েক দশক আগে প্রবল ভূমিকম্পে বাসাবো এলাকার তাবত বাড়িঘর ধ্বসে পড়ার পর নতুন করে আর তেমন কিছু গড়ে ওঠেনি, ধ্বংসস্তুপ সাফসুতরো করে সেখানে নানা রকম সরকারি প্রতিষ্ঠানের সুপরিসর কার্যালয় গড়ে উঠতে শুরু করেছে দুর্ঘটনার কয়েক বছর পর থেকেই। ধ্বংসস্তুপ সরানো হয়নি, এমন একটা বড়সড় প্লট ফাঁকা পড়ে থাকায় সেটার ইজারা চেয়ে নিখিল বিশ্ব ফেনী সমিতি সরকারের কাছে অনেক দেন দরবার করে আসছিলো। দুর্ভাগ্য তাদের, তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের জ্যেষ্ঠ সচিবের বাড়ি নোয়াখালি জেলায়। তাই তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে অবিশ্বাস্য গতিতে নাসার আদলে বাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যাতে ঐ প্লট বরাদ্দ করার জন্য একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়। সেই থেকে বাসার যাত্রা শুরু। সমালোচনা অবশ্য কম সহ্য করতে হয়নি বাসাকে। বোম্বের নায়কের নাম সালমান খান, তাই ঢাকাই নায়কের নাম সালমান শাহ হতে হয়, নইলে ছবি চলে না। বাসাকেও তাই নাসার আদলে এরকম খটমটে একটা নাম নিয়ে জন্মাতে হয়েছে বন্দে আলী মিয়ার মতো। টিটকিরিগুলো শুরুতে নামের ওপর দিয়েই গেছে। বাজেট মিটিঙে অর্থমন্ত্রী হাবুল মালদ্বীপ আবদেল মাহুত দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের ফাইল একপাশে ছুঁড়ে ফেলে বলতেন, ওনারা তো সারাদিন বাসাতেই পড়ে থাকেন। বাসার কর্মকর্তারা সিয়েঞ্জিওলাদের হাতেপায়ে ধরে কাকুতিমিনতি করতেন, চলেন না ভাই একটু বাসায় চলেন, একশো টাকা বাড়াইয়া দিমুনে। মন্ত্রকের যুগ্মসচিব বাসার আমীরকে ফোন করে মধুর কণ্ঠে শুধাতেন, বাসার খবর সব ভালো? টিভিতে টকমারানিরা বাসাকে ব্যঙ্গ করে ডাকতেন, শূন্য অধিবিভাগ। সংবাদ সম্মেলনে বাসার কর্তারা সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের সাংবাদিকপসন্দ উত্তর দিতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন, খবরে ছাপা হতো, "প্রশ্ন শুনে আকাশকর্তারা আকাশ থেকে পড়েন।" কিন্তু সব টীপ্পনী গা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে বাসা কোনোমতে এগিয়ে চলেছে গুটিগুটি পায়ে। চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে রামপালে বাংলাদেশের নিজস্ব রকেট লঞ্চিং সাইট তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠার প্রথম দশকেই, কেন যেন প্রবীণ রাজনীতিক জামায়েদ সাকী কোনো আপত্তি করেন নি। পরের দুই দশক কয়েক বছর পরপর একটা দুটো করে টুকিটাকি উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ভেতর দিয়েই কেটে গেছে। মঙ্গলে মনুষ্যবাহী নভোযান পাঠানোর কাজ বাসা এই দশকেই শুরু করেছে। কয়েক মাস আগে রামপালে রকেটের ফিতা কেটে উৎক্ষেপণ উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের খলিফা আস্তেক শাহ আবদালি। গিয়ানজামটা শুরুও হয়েছে তখন থেকেই। বাসাবোতে বাসার কার্যালয়ের সামনে আজ শামিয়ানা টাঙিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত, তর্জমা, তাফসীর ও তাশাক্কুরের পর ভাবগম্ভীর মুখে বাসার আমীর জনাব আলি আসমান মুজাহিদ মাইকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ঘনঘন ক্যামেরার শাটারের শব্দ আর ঝলকবাতির আলোতে চারদিক মুখরিত। আমীর মহোদয় বিষণ্ন গম্ভীর মুখে কেশে গলা সাফ করে নিয়ে বললেন, "ভাইয়োঁ, আপনারা ওয়াকিবাহাল আছেন, মঙ্গলে আমাদের একটি আসমানি জাহাজ গত জিলকদ মাসে অবতরণ করেছে। দিলভরা দুখ নিয়ে আজ আমাকে আপলোগোঁকে সামনে হাজির হয়ে এই গুজারশ দিতে হচ্ছে, আচমকা আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমাদের আসমানি জাহাজটিকে আবার মঙ্গল ছেড়ে উঠে পড়তে হয়েছে। আমাদের ছয়জন আসমানলস্করের মধ্যে পাঁচজন সহি সালামতে জাহাজে উঠে পড়তে পেরেছেন। কিন্তু ঝিনাইদহের শৈলকূপানিবাসী বিজ্ঞানী মোবারক ওয়াটনি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জাহাজে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন। মোহতারামবৃন্দ, জনাব মোবারক ওয়াটনিকে মঙ্গলে ফেলে রেখেই আমাদের আসমানি জাহাজ বিএএস মওদুদী মিশন অসমাপ্ত রেখে পৃথিবীতে ফেরত আসছে।" সাংবাদিকদের মধ্যে প্রবল গুঞ্জন উঠলো। কে কার আগে প্রশ্ন করবেন, তা নিয়ে উপস্থিত হাজারখানেক সাংবাদিকদের মধ্যে যথারীতি মৃদু মারপিট শেষ হওয়ার পর বিজয়ী কয়েকজন পালোয়ান প্রতিযোগীর-খুন-রাঙা মুষ্ঠিতে মাইক উঁচিয়ে প্রশ্ন গর্জাতে লাগলেন। আমীর মহোদয় আঙুল দিয়ে এক সাংবাদিকের দিকে ইশারা করলেন। সাংবাদিক হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, "মোবারক ওয়াটনি কি বেঁচে আছেন?" আমীর মহোদয় বিষণ্ন মুখে বললেন, "তা আমরা এখনো সঠিক জানি না। কিন্তু যেহেতু মঙ্গল গ্রহে পানি বা অক্সিজেন আহরণ করা অত্যন্ত কঠিন, এবং বাতাসের চাপ অত্যন্ত কম, তাই সে যদি বেঁচেও থাকে, তার আর বেশি হায়াত নাই। মঙ্গলে সে খাবে কী? হাগবে কোথায়? ওজু-গোছল করবে কীভাবে? সর্বোপরি, সানি লিওনির চলচ্চিত্রগুলিও সব ছিলো জাহাজের কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে। নাহ, আমি তার বাঁচার কোনো আশাই দেখছি না।" সাংবাদিকরা অনেকেই অনেক প্রশ্ন গুছিয়ে এনেছিলেন মনে মনে, আলি আসমান মুজাহিদের কথা শুনে সবার সওয়াল যেন ফুরিয়ে গেলো। এক সাংবাদিক তবুও পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, "মোবারক ওয়াটনিকে বাঁচানোর জন্য বাসা থেকে কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া হচ্ছে?" মুজাহিদ বললেন, "না।" সাংবাদিকরা সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। বেচারা মোবারক। বাসা থেকে এখন আর কী-ই বা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে? আপাতত গায়েবানা জানাজাটা ঠিকমতো পড়াতে হবে। আর সাংবাদিকপসন্দ মেনু সাজিয়ে হোটেল মেরিডিয়ানে একটা কুলখানির আয়োজন করলেই সব কূল রক্ষা পাবে। তবুও চাকরিতে নতুন ঢোকা এক সাংবাদিক চেঁচিয়ে উঠলো, "এ পরিস্থিতিতে বাসার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া কী?" আমীর মহোদয় এবার মৃদু হেসে বললেন, "আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে।"
false
rn
আমাদের সমাজের অধিপতিরা খুবই নিকৃষ্ট জাত কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তার সাথে ঠিক ততোটুকু খারাপ ব্যবহার করাই এক ধরণের ভালো ব্যবহার। যারা সমাজে প্রতারক, ভন্ড, মিথ্যাবাদী, লোভী, মোনাফেক, বেঈমান, দূর্নীতিবাজ তারাই সবচেয়ে ভালো আছে। তাদের লোকেরা সালাম দেয়, সম্মান করে, বড় চেয়ার ছেড়ে দেয় বসতে। তারা সমাজের নেতা। অসাধু সংখ্যাধিক্যে আপনি হারিয়ে যাবেন। কেউ খারাপ ব্যবহার করলে বা অন্যায় সুযোগ নিতে চাইলে প্রথমত শান্ত থাকতে হবে এবং ঠান্ডা মাথায় কৌশল ভাবতে হবে। আর এ পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে তা এড়ানো যায়। সবসময় মনে রাখতে হবে যে, ‘রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম’। কারণ যুগে যুগে দেশে দেশে যে ব্যক্তি বা জাতি রেগে গেছে তারাই পরাজিত হয়েছে। যারা ঠান্ডা মাথায় কাজ করেছে তারাই জয়ী হয়েছে। প্রতিদিন যদি দিনের কথা, কাজ ও আচরণগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করেন, নিজেই নিজেকে বলতে পারেন-কেন এটা করেছেন; এটা না করে বা এভাবে না করে আর কী কী ভাবে করতে পারতেন, দেখবেন আপনার ভুলের পরিমাণ কমে আসছে। আপনি অনেক সংযত, সহনশীল এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করতে পারছেন। নিজেকে নিয়ে তখন আপনি তৃপ্ত হতে পারবেন।জার্মান দার্শনিক নীটশে বলেছিলেন, সত্যিকারের যোদ্ধা সে-ই যে জানে কখন অস্ত্র সংবরণ করতে হয়। অর্থাৎ অস্ত্র থাকলেই অস্ত্র ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অস্ত্র ব্যবহার করাটা সত্যিকারের যোদ্ধার পরিচয় নয়। অস্ত্র কখন সামলে রাখতে হবে সেটা যে জানে, সে-ই হচ্ছে সত্যিকারের যোদ্ধা। অতএব আপনার শক্তি রয়েছে। সেই শক্তিকে সংহত করা, নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই হচ্ছে আপনার মহত্ত্ব। ধরুন, একটা টিনের ঘর। তাতে একটা ছিদ্র আছে। ছিদ্র দিয়ে বাইরের আলো আসছে। ছিদ্র থেকে আপনি যত দূরে থাকবেন, বাইরের আলো তত কম পাবেন। কিন্তু আপনি যদি ঐ ছিদ্রটার সাথে চোখ লাগাতে পারেন, তাহলে বাইরের পৃথিবীটাকে অনেক বেশি দেখতে পাবেন। যে ছিদ্র দিয়ে আলো ঢুকছে, যে ছিদ্র দিয়ে আপনি বাইরের পৃথিবীকে দেখতে পারতেন, রাগ এবং ক্ষোভ এ ছিদ্র থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর যখন আপনি প্রশান্ত হন, আত্মনিমগ্ন হন তখন ঐ ছিদ্রের কাছে যেতে থাকেন।যখনই রেগে যাবেন, ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তার প্রকাশ ঘটাতে যাবেন, এমন একটা ব্যবস্থা করুন যাতে ঐ রাগের দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করা যায়। আজকাল মোবাইলে ক্যামেরা বা ভিডিও করার ব্যবস্থা থাকায় এটা সহজ একটা সুযোগ। পরে যখন শান্ত হবেন, তখন ঐ ছবি বা দৃশ্যগুলো দেখুন। দেখবেন আপনার ধীর-স্থির শান্ত চেহারার চেয়ে ঐ চেহারা কত আলাদা। ক্রোধে উন্মত্ত একটা দানবের মতো এমন হিংস্র এবং কুৎসিত চেহারা দেখে আপনি নিজেই ভীষণ লজ্জা পাবেন। তখন নিজেই দেখবেন যে, প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছেন, ভবিষ্যতে আর কখনো রেগে গিয়ে ঐ চেহারার পুনরাবৃত্তি করবো না। প্রয়োজনে বার বার ঐ রাগান্বিত কুৎসিত চেহারা দেখুন। রাগ-ক্রোধমুক্ত হওয়ার এটা একটা কার্যকর পদ্ধতি। যে অপমান বোধ করে, তার আসলে কোনো আত্মসম্মানবোধ নেই। আরেকজন গালি দিলেই আপনি অপমানিত হলেন না। গালি দিয়েছে সে, মুখ খারাপ করেছে সে। এটা তার সমস্যা। আপনার নয়। একটা কুকুর এসে ঘেউ ঘেউ করলে আপনি কি অপমানিত হন? তাহলে আরেকজন চিল্লাচিল্লি করলে আপনি কেন অপমানিত হবেন? মানুষ বাঘকে পরাজিত করলো কীভাবে? বুদ্ধি দিয়ে, ব্রেনটাকে প্রয়োগ করে। রাগ এই ব্রেনকে কাজে লাগাবার ক্ষেত্রেই অন্তরায় সৃষ্টি করে। অতএব চারপাশের নেতিবাচক প্রভাব আপনাকে জয় করতে হবে ঠান্ডা মাথায় ইতিবাচক কাজ করে। রাগ স্টমাক এবং পরিপাকতন্ত্রের জন্যেও ক্ষতিকর এবং ক্রমান্বয়ে তা আলসারের রূপ নিতে পারে। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:৪৮
false
rn
কিভাবে সহবাস করতে হয় (১৮+) সহবাসের স্বাভাবিক পন্থা হলো এই যে, স্বামী উপরে থাকবে আর স্ত্রী নিচে থাকবে। প্রত্যেক প্রাণীর ক্ষেত্রেও এই স্বাভাবিক পন্থা পরিলক্ষতি হয়। সর্বপরি এ দিকেই অত্যন্ত সুক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে আল কুরআনে। আয়াতের অর্থ হলোঃ “যখন স্বামী -স্ত্রীকে ঢেকে ফেললো তখন স্ত্রীর ক্ষীণ গর্ভ সঞ্চার হয়ে গেলো।” আর স্ত্রী যখন নিচে থাকবে এবং স্বামী তার উপর উপুড় হয়ে থাকবে তখনই স্বামীর শরীর দ্বারা স্ত্রীর শরীর ঢাকা পড়বে। তাছাড়া এ পন্থাই সর্বাধিক আরামদায়ক। এতে স্ত্রীরও কষ্ট সহ্য করতে হয়না এবং গর্ভধারণের জন্যেও তা উপকারী ও সহায়ক। বিখ্যাত চিকিতসা বিজ্ঞানী বু-আলী ইবনে সীনা তার অমর গ্রন্থ “কানুন” নামক বইয়ে এই পন্থাকেই সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে উলে­খ করেছেন এবং ‘স্বামী নিচে আর স্ত্রী উপরে’ থাকার পন্থাকে নিকৃষ্ট পন্থা বলেছেন। কেননা এতে পুংলিংগে বীর্য আটকে থেকে দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আনন্দঘন মুহুর্তটা পরবর্তিতে বেদনার কারণ হয়ে না দাড়ায়। স্বামী-স্ত্রী সহবাসে উভয়ের বীর্য বাহির হওয়ার পর কিছু সময় নড়াচড়া না করে মিলিত অবস্থায় থাকতে হবে। অর্থাৎ স্ত্রী নীচে এবং স্বামী উপরে থাকবে। তাতে বীর্য জরায়ুতে ঠিক মত প্রবেশ করিতে সুবিধা হয়। তা না হলে বীর্য বাহিরে পড়ে যেতে পারে। আর বীর্য বাহিরে পড়লে গর্ভ সঞ্চার হয় না। সহবাসের পর হালকা গরম পানি দিয়ে স্বামী স্ত্রীর দুই জনের যৌনাঙ্গ ধুয়ে ফেলতে হয়। ঠাণ্ডা পানিতে ধোয়া উচিৎ নয়? তারপর স্বামী স্ত্রী দুইজনে কিছু মধু সেবন করে নিবেন। তার পর দুই জনে ফরজ গোসল করে ফযরের নামাজ আদায় করে নিবেন। সকল নেয়ামতের মধ্যে সবচাইতে তীব্র আনন্দের নেয়ামত স্বামী-স্ত্রীর সহবাস। স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতেই জান্নাতের সুখের কিঞ্চিত নিদর্শন পেয়ে থাকে।আল্লাহ সহবাসের আহবায়ক করেছেন পুরুষ মানুষকে। সাধারণত স্ত্রী লাজুক স্বভাবের হয়ে থাকে এবং সহজাতভাবে সহবাসের জন্য তাড়িত হয় না। কেবলমাত্র যখন তার স্বামী তাকে বুকে টেনে নেয় ও নানাবিধ উপায়ে আদর-সোহাগ করতে থাকে, তখনই স্ত্রীর দেহ-মনে সহবাসের কামনা জেগে উঠে। স্বামীর পুরুষাঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় নরম থাকে ও সহবাসকালীন যোনিগহবরে প্রবেশের উপযুক্ততা অর্জনের জন্য শক্ত হয়। এ সময় তা নরম অবস্থার চাইতে কারও ক্ষেত্রে ছোট হয়, কারও ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত থাকে, তবে অধিকাঙ্গশ ক্ষেত্রে কিঞ্চিত বর্ধিত হয়। সূরা আল-আলাক্বে বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মানুষকে একফোঁটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এক থেকে তিন মিলিলিটার পরিমাণ বীর্যপাত হয়, যা ঘনীভূত হয়ে থাকে বলে এক ফোঁটার ন্যায় দেখায়, যা ক্বোর’আনের বর্ণনার সাথে একেবারে মিলে যায় এবং ক্বোর’আনের সত্যতা প্রমাণ করে। তবে অনেক স্বামীর বীর্যের পরিমাণ বেশি এবং এমনকি দশ-বার ফোঁটা পর্যন্ত বীর্যও সহবাসে নির্গত হতে পারে। তবে সন্তান জন্মদানে ব্যয় হবে এক ফোঁটাই, বাকি অংশ স্ত্রীর গর্ভে শুকিয়ে যাবে।সহবাসকে সার্থক ও আনন্দদায়ক করে তুলতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। স্ত্রী যদি অকার্যকর হয়ে কেবল পড়ে থাকে, স্বামীর সাথে সাথে নিজের মত করে অগ্রসর না হয়, তাহলে সেই সহবাসে স্ত্রীও আনন্দ পায় না, স্বামীও স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে এমনকি পরনারীর প্রতি আকর্ষণ পর্যন্ত এভাবেই জন্মায়। তাই সহবাসকালীন স্ত্রীর করণীয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা সকল নারীরই কর্তব্য। সহবাস অন্তে স্বামী অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এমনকি কথা বার্তাও বলা থেকে বিরত থাকতে পারে। এই সময় স্বামীকে মিষ্টি দুগ্ধজাতীয় কোন খাদ্য দিলে স্ত্রীর প্রতি তার মহব্বত অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সহবাসের পূর্বেই এই খাবারের ব্যবস্থা রাখবে। স্বামীর গায়ে হাত বুলিয়ে দিবে। স্বামীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুম্বন করবে। প্রথম কয়েকদিনেই জেনে নিবে কোন স্থানে চুম্বন ও স্পর্শ স্বামীর পছন্দনীয়। ওই সমস্ত স্থানে অধিক মনোযোগ দিবে কিন্তু অবশিষ্ট শরীরেও সোহাগ করবে। তবে নারীসুলভ কোমলতায়। স্বামী উগ্রভাবে আদর করলেও স্ত্রীর উচিত হবে স্পর্শে কোমলতা বজায় রাখা। তবে চুম্বনে স্বামীর সাথে সমভাবে অংশগ্রহণ করবে এমনকি চুম্বনের প্রতিযোগিতা করবে। স্বামীকে আদরের সময় মৃদুভাবে অণ্ডথলিতে স্পর্শ করে রাখলে স্বামী স্ত্রীর ভক্ত হয়ে যায়। তবে সাবধান থাকবে, কেননা অণ্ডোথলি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও অতি মৃদু আঘাতেও মারাত্মক যন্ত্রণা হতে পারে। স্বামীর আনন্দ স্ত্রীর যোনিগহবরে প্রবেশের মাধ্যমে। কিন্তু স্বামী অনেক সময় জানে না যে স্ত্রীর আনন্দ সহবাসের পূর্বে আদর সোহাগে। তাই এই বিষয়ে অসন্তুষ্টি থাকলে স্বামীকে খুলে বলতে হবে এবং নিজের চাহিদা স্বামীর গোচরে আনতে হবে।২৫ বছরের কম বয়সী পুরুষ সাধারনত বেশি সময় নিয়ে মিলন করতে পারেনা। তবে তারা খুব অল্প সময় ব্যাভধানে পুনরায় উত্তেজিত/উত্তপ্ত হতে পারে। ২৫ এর পর বয়স যত বাড়বে মিলনে পুরুষ তত বেশি সময় নেয়। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পুনরায় জাগ্রত (ইরিকশান) হওয়ার ব্যাভধানও বাড়তে থাকে।এক নারী কিংবা একপুরুষের সাথে বার বার মিলন করলে যৌন মিলনে বেশি সময় দেয়া যায় এবং মিলনে বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। কারন স্বরুপ: নিয়মিত মিলনে একে অপরের শরীর এবং ভাললাগা/মন্দলাগা, পছন্দসই আসনভঙ্গি, সুখ দেয়া নেয়ার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত থাকে। যারা বলেন "এক তরকারী দিয়ে প্রতিদিন খেতে ভাল লাগেনা - তাই পর নারী ভোগের লালসা" - তাদেরকে অনুরোধ করছিঃ দয়াকরে মিথ্যাচার করবেন না। এমন যুক্তি ভিত্তিহীন। পরকীয়া আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। মাত্র কয়েক মিনিটের কাম যাতনা নিবারনের জন্য আজীবনের সম্পর্কে অবিশ্বাসের কালো দাগ লাগাবেন কেন? আজকালকের দিনে এমনকি আমাদের দেশের ১০-১২ বছরের ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত জেনে যাচ্ছে কিভাবে সেক্স করতে হয়। তাই বলা যায় বিয়ে তো বহুদূরের কথা, এখনকার ছেলেমেয়েদের গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড হওয়ার আগেই তারা এ বিষয়ে বহু কিছু জানে।ঠোট নারীদেহের সবচাইতে যৌনত্তেজক অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। ঠোটের মাধ্যমেই সমগ্র নারীদেহ উত্তেজনার সূচনার সবচেয়ে জোরালো সংকেতটি গ্রহন করে থাকে। মেয়েটি তার সঙ্গীর গালে, গলায়, বুকে, কান এদের স্পর্শ করলে ছেলেটি যেমন আনন্দ পায় তেমনি মেয়েটিও অন্যরকম এক আনন্দ লাভ করে। অনেক পর্ন মুভিতে দেখা যায় যে সেখানে মেয়েগুলো ছেলেদের লিঙ্গ চুষতে খুব পছন্দ করে।বিদেশে বাস্তবেও অনেক মেয়েই ছেলেদের লিঙ্গ শুধু তাকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই চুষে না। সে নিজেও এতে আনন্দ পায়। এর মূল কারনই হল তার ঠোট ও জিহবার স্পর্শকাতরতা। ছেলেটির দেহের অন্যান্য অংশে এ দুটি দিয়ে স্পর্শ করে সে যে আনন্দ লাভ করে, একই কারনে নিজের ছেলেটির লিঙ্গের স্পর্শে তার আনন্দ হয়।মেয়েদের যৌন চাহিদা ছেলেদের ৪ ভাগের এক ভাগ। কিশোরী এবং টিনেজার মেয়েদের যৌন ইচ্ছা সবচেয়ে বেশী।‘ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন মূল্য নেই’, ‘ইসলামে পুরুষকে স্ত্রীর ওপর যথেচ্ছ যৌনাচারের ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে’, ‘ইসলামে যৌন অধিকার একতরফাভাবে পুরুষকে দেওয়া হয়েছে’ এই জাতীয় অভিযোগ সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ আশা করি করবেন না। সূরা বাকারার ২২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।মদিনার ইহুদিদের মধ্যে একটা কুসংস্কার এই ছিল যে, কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে পেছন দিক থেকে যোনিপথে সঙ্গম করত তবে বিশ্বাস করা হতো যে এর ফলে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তানের জন্ম হবে। মদিনার আনসাররা ইসলামপূর্ব যুগে ইহুদিদের দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত ছিল। ফলে আনসারগণও এই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন। মক্কাবাসিদের ভেতর এই কুসংস্কার ছিল না। মক্কার মুহাজিররা হিজরত করে মদিনায় আসার পর, জনৈক মুহাজির যখন তার আনসার স্ত্রীর সাথে পেছন দিক থেকে সঙ্গম করতে গেলেন, তখন এক বিপত্তি দেখা দিল। আনসার স্ত্রী এই পদ্ধতিকে ভুল মনে করে জানিয়ে দিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুমতি ব্যতিত এই কাজ তিনি কিছুতেই করবেন না। ফলে ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছে গেল। এ প্রসঙ্গেই কুরআনের আয়াত (২:২২৩) নাযিল হয়, যেখানে বুঝানো হচ্ছে- সামনে বা পেছনে যেদিক দিয়েই যোনিপথে গমন করা হোক না কেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। শস্যক্ষেত্রে যেদিক দিয়ে বা যেভাবেই গমন করা হোক না কেন তাতে শস্য উত্পাদনে যেমন কোন সমস্যা হয় না, তেমনি স্বামী তার স্ত্রীর যোনিপথে যেদিক দিয়েই গমন করুক না কেন তাতে সন্তান উত্পাদনে কোন সমস্যা হয় না এবং এর সাথে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তান হবার কোন সম্পর্ক নেই। বিয়ের পর প্রথম কিছুদিন স্বাভাবিক নিয়মে সহবাস করার পর ভিন্ন ভিন্ন আসনে চেষ্টা করে দেখতে হবে নিজেদের সবচাইতে উপযুক্ত আসন কোনটি এবং কোন আসনে পরস্পরের সর্বাধিক সুখ বোধ হয়। তারপর সেই আসনেই সর্বদা মিলিত হবে। কেননা ভিন্ন ভিন্ন আসনে সহবাস অনেক সময় দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বামী আনন্দ পাচ্ছে, কিন্তু স্ত্রী সুখ বোধ করছে না, অথবা স্ত্রী সন্তুষ্ট, কিন্তু স্বামী সুখী নয়, এরূপ আসন নির্বাচন করা যাবে না। তাতে দাম্পত্য জীবনে আনন্দের ঘাটতি দেখা দিবে। স্বামী কোন নির্দিষ্ট আসনে সহবাস না করে প্রায়ই ভিন্ন ভিন্ন আসনে সহবাস করে, এরূপ হলে স্ত্রীর বুঝতে হবে সে স্বামীকে পূর্ণাঙ্গরূপে তৃপ্ত করতে পারছে না, যা একজন পুরুষ চায়। তখন স্বামীকে পূর্ণ তৃপ্তি দিতে সচেষ্ট হতে হবে। নবীজী (সঃ) আরো বলেছেন, জানোয়ারের মত হঠাত করে স্ত্রীর উপর কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বেনা, বরং তার উচিত হলো প্রথমে চুমু খেয়ে আলিঙ্গন করে এবং মিষ্টি মধুর কথায় তাকে আগ্রহী করে তোলা। বীর্যপাতের পর সাথে সাথে স্বামী সরে যাবে না বরং ঐ অবস্থাতেই কিছুক্ষণ পড়ে থাকবে। যাতে স্ত্রীর চাহিদা পুরা হয়ে যায়। কেননা কোন কোন মহিলার বীর্যপাত দেরীতে হয়। তারপর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই আলাদা আলাদা কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান মুছে পৃথক হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের ইসলামী নিয়মানুযায়ী চলার তৌফিক দান করুন। আমিন। আমি দুনিয়ার সম্পদ চাই না , আমার স্বামীকে চাই ’ - এ সব কথা যে স্ত্রী বলেন তিনি কি সুখী না অসুখী ? যে কোন বিবেকবান মানুষ বলবেন এসব স্বামী গর্বে গর্বিতা সুখী স্ত্রীর মনের কথা ।বাইবেলের পুরাতন সমাচারে আছে স্রষ্টার ছেলে দাউদ বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে অল্পবয়সের কুমারীকে বিয়ে করেছিলেন । এটা প্রমাণ করে যে মেয়ের বয়স কম হওয়া বা স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান বেশী হলেও সেটা ইয়াহুদী বা খ্রিস্টানদের বিয়েতে কোন বাধা নয় । খ্রিস্টানদের প্রভু যিশুর কুমারী মা মেরীর সাথে জোসেফের যখন বিয়ে হয় , তখন সেই যুগের রীতি অনুসারে মেরীর বয়স খুব বেশী হলে ১৩/১৪ ছিল ; জোসেফের বয়স ছিল ত্রিশের বেশী । সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৫
false
ij
জৈন কারা_ বর্তমানকালের ভাস্করে নির্মিত বর্ধমান মহাবীরের মার্বেল পাথরের ভাস্কর্য। জৈনদের একটি প্রার্থনা এরকম-Namo Loe Savva Sahunam: - এর অর্থ: I bow to all saints and sages everywhere in the world! খ্রিস্টপূর্ব যুগে প্রাচীন ভারতে যে ক’টি বেদবিরোধী ধর্মের উদ্ভব হয়েছিল তার মধ্যে জৈন ধর্মটি অন্যতম। জৈন ধর্মটির প্রাথমিক ধারনা যদিও অনেক প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল- প্রকৃত প্রস্তাবে বর্ধমান মহাবীরই ছিলেন জৈনধর্মের মূল স্থপতি।তিনি যদি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকে জৈনধর্মটির সংগঠিত না করতেন- তা হলে হয়তো জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে প্রাচীন জৈন সাধুদের দার্শনিক মতমতটি চিরকালের মতো হারিয়ে যেত। মহাবীরের ঔদার্য এই যে; তিনি যথেস্ট মেধা ও মৌলিক চিন্তার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও নতুন ধর্ম প্রচার করেননি; বরং, ২৩জন প্রাচীন সাধুর অহিংস দর্শনই জীবনভর প্রচার করে গিয়েছেন জগতের অহিংমতের জন্মভূমি প্রাচীন ভারতবর্ষে। সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রাচীন ভারতে তেইশ জন সাধু মোক্ষলাভের উপায় সম্বন্ধে প্রায় অভিন্ন এক অহিংস মতবাদ প্রচার করে আসছিলেন। এঁরা হলেন-ঋষব (বা আদিনাথ), অজিত, সম্ভব, অভিনন্দন সুমতি, পদ্মপ্রভূ, সুস্পর্শবন্ত, চন্দ্রপ্রভূ, সুবিধি, শীতল, অংশ, বসুপূজ্য, বিমল, অনন্ত, ধর্ম, শান্তি কুন্থ, আরা, মল্লি, মুনিসুব্রত, নামি, নেমি এবং পার্শ্বনাথ। এই ২৩জন প্রাচীন আচার্যকে বলা হয় তীর্থঙ্কর। তীর্থঙ্করের এক অর্থ-যে জলস্রোত পাড়ি দেয়। মানে, যে মোক্ষের দিকে যায়। তীর্থঙ্কর শব্দটির অন্য এক মানে হল- পবিত্র সাধু -বা জৈন পবিত্র সাধু। ভারতবর্ষের ভাষাগুলি প্রতিশব্দময়। কাজেই সাধু শব্দের আরও দুটো প্রতিশব্দ হল- অরহৎ এবং জিনা (Jina)। যিনি কামক্রোধ জয় করে গ্রন্থিমুক্ত হয়েছেন- তিনিই অরহৎ । যেহেতু গ্রর্ন্থিমুক্তির কথা রয়েছে। কাজেই, জৈনসাধুদের নির্গ্রন্থও বলা হয়ে থাকে। অন্তত, বৌদ্ধেরা সেই সময় তাই বলত। যিনি কাম ক্রোধ লোভ আবেগ গর্ব অহঙ্কার জয় করেছেন তিনিই জিনা। Jina শব্দটি সম্ভবত মাগধী। কাজেই জিনার অনুসরণকারীই জৈন। জৈনদের বিশ্বাস এই যে- জৈনধর্মটি ২৪ জন তীর্থঙ্করের জীবনদর্শনের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন পার্শ্বনাথ ও মহাবীর। বাকিরা নাকি ঐতিহাসিক ব্যাক্তি নন, সব কাল্পনিক চরিত্র! জৈনধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর হলেন মহাবীর । তাঁর পরে আর তীর্থঙ্কর আসেনি। কাজেই মহাবীরই জৈনধর্মের সর্বশেষ তীর্থঙ্কর। কাজেই, জৈন কারা-এই প্রশ্নটির উত্তর জানতে হলে আমাদের মহাবীরের জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। প্রাচীন ভারতের বৈশালী নামে একটি রাজ্য ছিল। বৈশালী জায়গাটি বর্তমান বিহারে। সেই বৈশালী রাজ্যে ছিল কুন্ড নামে একটি গ্রাম। সেই কুন্ডগ্রামেই মহাবীরের জন্ম । সময়টা ৫৯৯ খ্রিস্টপূর্ব। মহাবীরের মায়ের নাম ছিল ত্রিশলা। ত্রিশলা ছিলেন জ্ঞাতৃক জনগোষ্ঠীর রানী । কেননা, মহবীরের বাবা সিদ্ধার্থ ছিলেন জ্ঞাতৃক জনগোষ্ঠীর রাজা। এরা ছিলেন জাতে ক্ষত্রিয়; গোত্রে নট। মহাবীরের এক মামা ছিল; নাম চেটক। চেটক ছিলেন বৃজি জনগোষ্ঠীর প্রধান। কাজেই, সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্মেছিলেন মহাবীর। জন্মের পরই ত্রিশলা ছেলের নাম রাখলেন-মহাবীর। ইচ্ছে-ছেলে বীরের মতন জীবন যাপন করবে। ত্রিশলার সেই ইচ্ছে কালে কালে পূর্ন হয়েছিল। তবে সে বীর ক্ষত্রিয় বীর নয় - পরবর্তীকালে মহাবীর হয়ে উঠেছিলেন আধ্যাত্বিক যুদ্ধের মহৎ এক যোদ্ধা। ছেলের আরেকটি নামও রেখেছিলেন ত্রিশলা- বর্ধমান। মানে-ক্রমবর্ধমান; মানে- যে যুগের চেয়ে এগিয়ে। তাই কিন্তু হয়েছিল। মহাবীর ছিলেন যুগের চেয়ে এগিয়ে। যা হোক। বালক বয়েস থেকেই বর্ধমান যেন কেমন। গম্ভীর, চুপচাপ-সারাক্ষণ কী যেন ভাবছে। তো, সেকালে বর্ষকালে খুব বৃষ্টি হত বৈশালীতে- একালের মতোই। বৃষ্টিভেজা দিনের অন্ধকার ঘরে বসে বালক বর্ধমান কত কী যে ভাবত। ভাবত কে আমি? আমি কোত্থেকে এলাম? আমি যেখানে আছি-কী এটা? এই ঘর, এই অন্ধকার, এই বৃষ্টি, ওই নিমের ডালের বৃষ্টিভেজা কাক; এই কুন্ডগ্রাম। আমি এখানে কী করব? আমার কি করা উচিত? এসব ভেবে ভেবে বালক বর্ধমান হয়ে উঠত অস্থির। আর ওর মনও খারাপ হয়ে যেত প্রায়ই। কেননা, দিন কয়েক আগে পাথর ছুঁড়ে একটা বকের ছানা মেরে ফেলল শ্রাবক । শ্রাবক ওরই এক জেঠাতো ভাই। কী ছটফট করেই না মরে গেল বকের ছানাটি। বালক বর্ধমান ঐ করুণ দৃশ্যটি দেখে কেঁদে ফেলেছিল। মানুষ কেন যে পাখির ছানাদের ঢিল ছুঁড়ে? পশু পাখিকে সামান্যতম আঘাতও না করার পন করল বর্ধমান। ত্রিশলা ছেলের মন খারাপ ঠিকই টের পেয়েছিল। তিনি জানতেন যে তাঁর ছেলে একদিন সন্ন্যাস নেবে। তিনি প্রমাদ গুনলেন। ছেলে বলে কথা। চোখের আড়াল হলে মায়ের বুকের ব্যথা কে বুঝবে? বর্ধমান কিশোর বয়েসে পৌঁছলে ছেলের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবলেন ত্রিশলা। পাত্রী কৌন্ডিন্য গোত্রের মেয়ে যশোদা (কতিপয় জৈন অবশ্য বিশ্বাস করে যে-মহাবীর অবিবাহিত ছিলেন ! তাদের বলি-বিবাহিত না হলেই কি শুদ্ধতা বৃদ্ধি পায়?) কিশোর মহাবীরের ঘরে বউ এল । বউকে নিয়ে প্রেমকামে ডুবল ঠিকই মহাবীর-তবে তার মোহভঙ্গ হতেও সময় লাগল না। ততদিনে একটি মেয়েও হল-অনুজা। মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে থাকে মহাবীর। প্রশ্নগুলি মাথার ভিতরে ডালপালা মেলছিল। মহাবীর ভাবছিল। কেবল ভাবছিল। ভাবছিল, আমি কেন শ্রাবকের মত কিশোরী মেয়েদের সঙ্গে খুনসুটি করতে পারি না? কেন আমি গুরুজনদের মুখের ওপর কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দিতে পারি না? কেন আমি মনে করি নিঃস্ব শূদ্রও সম্মান পাবার অধিকারী! কেন আমি শস্তায় কোথায় গরু পাওয়া যায় সে খবর রাখি না। আমার কেন ভালো লাগে না ভিড়? হাটের ভিতর মানুষ মানুষ ভিড়? হাটের ভিড়ে পায়ের নিচে ধূলা। ধূলায় গড়ায় ভাঙ্গা করুন কূলা! আমার কেন ভালো লাগে রাত? রাতের ভিতর রাতের নির্জনতা? আমার কেন বুকটা করে হু হু? শীতের দিনের নম্র দুপুর বেলায়। আমি কেন এমন একা- ফাঁকা? বুকে আমার কেন এত প্রেম? মানুষ যখন ছোঁড়ে কঠিন ঢিল? মানুষ যখন হাটের ভিড়ে হা হা ... আর, ভাবল সে: 1. All worldly things are temporary. 2. The Soul alone is the sole resort. 3. This world is beginningless and crooked. 4. There is nothing to help the Soul, but the Soul itself. 5. Body, mind, etc., are essentially separate from the Soul. 6. The Soul is essentially pure and the body, etc., are essentially impure. 7. The Soul’s bondage is due to the inflow of Karma in it. 8. Every being ought to stop this inflow. 9. Emancipation is attained when Karma is absolutely got rid of. 10. The emancipated Souls remain fit the foremost top of the filled spaces. 11. In this world, to have the birth of a human being and to meditate on the nature of the Soul are the greatest blessings. 12. To have the three jewels as described by the Omniscient is the only morality. ২ মনের ভিতরে ভারি অশান্তি জমেছে। ঘরে আর ভাল লাগছিল না। আমি যা জানতে চাই, সেসব এই কুন্ডগ্রামে বেঁচে থেকে জানা সম্ভব নয় খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৯। শরৎকাল। ভোর। বাড়ির বাইরে পা রাখলেন মহাবীর। মহাবীরের বয়েস তখন ৩০। না; ছেলেকে বাঁধা দেননি ত্রিশলা। এ ছেলেকে যে ধরে রাখা যাবে না, তা তো তিনি অনেক আগেই জানতেন-। তিনি চোখ মুছলেন। যশোদা প্রথমে শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর মূর্চ্ছা গেলেন। গৃহত্যাগের সময় স্ত্রীকন্যার কথা মনে পড়েছিল কি মহাবীরের? কে জানে! সে যুগে স্ত্রীকন্যারা ছিল তুচ্ছ। ৩ হাঁটছেন মহাবীর। প্রাচীন ভারতের পথে পথে। প্রথম ১২ বছর আমি মৌন হয়ে থাকব। কারও সঙ্গে কথা বললেন না। কারও সঙ্গে কথা না বললে যদি আমার ভিতরের কথারা জেগে ওঠে। তাই করলেন। ওই মৌনী সময়টার সারাটা সময়টায় নির্জনে ধ্যান করে কাটালেন। কামক্রোধ লোভ অহঙ্কার-ইত্যাদি শব্দ নিয়ে খেলা করলেন। তখনকার দিনের রাজারা প্রায় প্রতি নগরেই ধর্মশালার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাধুসন্ন্যাসীদের সুবিধের জন্য। তারপরও প্রায়ই অনাহারে থাকলেন মহাবীর। চুপচাপ নিরীক্ষণ করতেন নিসর্গপ্রকৃতি। ছোটবেলা থেকেই এক গভীর মায়া বোধ করতেন পশুপাখির জন্য। সে মায়াবী বোধ আরও প্রবল হল ঋতু ও নিসর্গপ্রকৃতির দিকে তীক্ষ্ম চোখে চেয়ে; প্রবল এক অহিংস বোধে আক্রান্ত হলেন মহাবীর। পশু পাখিকে আঘাত না করার পন ছেলেবেলাতেই করেছিলেন। এবার সে মায়া মমতা গড়াল কীটপতঙ্গের দিকে। ৫৫৭ খ্রিস্টপূর্ব। নিজেকে কেমন নির্ভার মনে হল তাঁর । মনে হল জীবজগৎ সম্বন্ধে জ্ঞান যেন আরও স্বচ্ছ হয়েছে। হ্যাঁ, ঐ সময়েই পরমজ্ঞান লাভ করলেন মহাবীর। শরীরের পোষাক খুলে ফেললেন। কারণ, কীটপতঙ্গের প্রতি প্রবল এক অহিংস বোধে আক্রান্ত হয়েছিলেন মহাবীর। শরীরের পোষাকে কীটপতঙ্গ থাকতে পারে। যদি তারা পিষ্ট হয় তো! পরমজ্ঞান লাভ করে পথে পথে ঘুরছেন মহাবীর । নগ্ন । সেসময় লোকে এসব নগ্নতা ভ্র“ক্ষেপ করত না। কেননা- এ মাটিতেই এককালে উচ্চারিত হবে- “যত মত তত পথ।” পথে পথে হাঁটার সময় কত কথা যে মাথায় আসে তাঁর। কী ভাবে এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হল? কী আছে ঐ আকাশের ওপারে? এতকাল নিজের ভিতরের দিকে তাকিয়েছিলেন মহাবীর; এখন আকাশের দিকে তাকালেন । তো, সেই সময়টায় পথেই এক সাধুর সঙ্গে পরিচিত হল মহাবীরের। তারা পরস্পর পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হলেন। তারা একটা ছায়াময় গাছতলায় বসলেন। সাধুটি ছিলেন বৃদ্ধ। তিনি ছিলেন পার্শ্বনাথের অনুসারী। পার্শ্বনাথ ছিলেন জৈনদের ২৩তম তীর্থঙ্কর। দুশো বছর আগে নাকি বেঁচে ছিলেন পার্শ্বনাথ। মহাবীর কথাটা শুনে অবাক হলেন না। কেননা, অনেক আগেই তিনি শুনেছিলেন যে-আর্যাবর্তে সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই ঋষভ থেকে পার্শ্বনাথ-এই তেইশ জন সাধু মোক্ষলাভের উপায় সম্বন্ধে প্রায় অভিন্ন এক অহিংস মতবাদ প্রচার করে আসছিলেন। এই ২৩জন প্রাচীন আচার্যকে বলা হয় জৈন তীর্থঙ্কর। জৈন তীর্থঙ্করেরা ঠিক কী বিশ্বাস সে সম্বন্ধে আবছা ধারনা ছিল। মহাবীর কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। সাধুটি বললেন, পার্শ্বনাথসহ জৈন তীর্থঙ্করেরা বিশ্বাস করতেন যে অনন্তকাল ধরে জীব কর্মের বন্ধনে জড়িয়ে আছে। কেননা, কর্মের বশে আত্মা খোঁজে আনন্দ, এবং তা করতে গিয়েই সে মগ্ন হয়ে পড়ে বস্তুতে। যে কারণে মানুষ হয়ে ওঠে স্বার্থপর ও হিঃস্র। সে আরও বস্তু অর্জন করার জন্য আরও কর্ম করার উদ্যোগ গ্রহন করে সে। কাজেই, কর্মের বন্ধন হচ্ছে জীবের সমস্ত দুঃখকষ্টের মূলে। আমার আপন ভাবনার সঙ্গে কী মিল! মহাবীর অবাক হয়ে ভাবলেন। সাধুটি আরও বললেন,কর্মের বন্ধ থেকে মুক্ত হতে হলে দরকার সঠিক বিশ্বাস, সঠিক জ্ঞান, সঠিক আচরণ। এভাবেই মোক্ষ সম্ভব। সঠিক বিশ্বাস, সঠিক জ্ঞান, সঠিক আচরণ হল- অহিংসা, সত্যবাদীতা, অপহরণ না করা, ব্রহ্মচর্য পালন ও অপরিগ্রহ, মানে কারও ওপর নির্ভরশীল না থাকা। শুনতে শুনতে মহাবীর কেমন বিস্মিত হয়ে যেতে থাকেন। প্রাচীন তীর্থঙ্করেরা এমন মহৎ ছিলেন? সাধুটি মাথা নাড়লেন। তারপর বলতে লাগলেন, বিশ্বের সঙ্গে সবার যোগ কর্মের মাধ্যমে । কর্মের ওপরই ভালো বা মন্দ নির্ভরশীল। আলোকিত হলেই কেবল মোক্ষ লাভ হয়। সংযমী হয়েই মোক্ষলাভ করতে হয়। সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রাচীন ভারতে ঋষভ থেকে পার্শ্বনাথ-তেইশ জন সাধু মোক্ষলাভের উপায় সম্বন্ধে প্রায় অভিন্ন এক অহিংস মতবাদ প্রচার করে আসছিলেন। আমি যা বললাম তা সম্মিলিত ধারনা। ও। আমি একজন অরহৎ। বৃদ্ধ সাধুটি বললেন। অরহৎ? মানে? অরহৎ হলেন যিনি কামক্রোধ জয় করে গ্রন্থিমুক্ত হয়েছেন। কাজেই, জৈনসাধুদের নির্গ্রন্থও বলা হয়ে থাকে। আমাকে নির্গ্রন্থও বলতে পার। তুমি জিনা মানে জান? শব্দটি শুনেছি। কিন্তু এর অন্তর্গত মানে যে কী। মহাবীর ইতস্তত করলেন। সাধুটি ইষৎ হাস্য করলেন। তারপর বললেন, জিনা হল-যিনি ক্রোধ লোভ আবেগ অহঙ্কার জয় করেছেন । কাজেই জিনার অনুসরণকারীই জৈন। মহাবীর কী যেন ভাবলেন। এক যুগ মৌন থেকে কঠোর সাধনা করলেন। কিন্তু এখন যেন চোখ খুলে যাচ্ছে। জগৎ সম্বন্ধে তার প্রশ্নের কথা সাধুকে জানালেন মহাবীর। সাধুটি মহাবীরকে বললেন- প্রাচীন তীর্থঙ্করদের বিশ্বাস স্বর্গমর্ত্যসহ এক ধারাবাহিক স্তরে রয়েছে এ বিশ্বজগৎ । বিশ্বজগৎশুরু নেই; শেষ নেই। বলেন কী! মহাবীর আঁতকে উঠলেন। হ্যাঁ। মহাবিশ্বের ওপরে রয়েছে শীর্ষ আবাস। ওখানে বাস করে এক মুক্ত আত্মা-সিদ্ধ। উচ্চ জগতে তিরিশটি স্বর্গ রয়েছে। সেখানে বাস করে সমূদয় স্বর্গীয় জীব। পৃথিবী ও বাদবাকি বিশ্ব হচ্ছে মধ্যম জগৎ। নিম্ন জগতে রয়েছে সাতটি নরক ও তার কঠিনতম শাস্তি । আর সবার মূলে বাস করে জীবনের নিম্নতম রুপ। আর রয়েছে এক বৈশ্বিক দূরত্ব: মেঘের স্তরসমূহ- যা উর্ধ্ব জগৎকে রেখেছে ঘিরে। এসবই তীর্থঙ্করদের কথা? মহাবীর অবাক হয়ে গিয়ে শুধালেন। তা হলে আর কার? সাধুটি ইষৎ হাস্য করলেন। কাজেই, পরবর্তীকালে জৈনসৃষ্টিতত্ত্ব একথাগুলিই যুক্ত হয়েছিল। কেননা, পার্শ্বনাথসহ অন্য তীর্থঙ্করদের মতবাদকেই প্রচার করেছিলেন মহাবীর-নতুন কোনও মতবাদ নয়। তীর্থঙ্করদের মতবাদ অপার মানবিক বলেই মহাবীর আর নতুন ধর্মের প্রয়োজন বোধ করেননি। তীর্থঙ্করদের মতবাদে তাঁর আত্মার স্পন্দন শুনেছিলেন। কাজেই তিনি ঘোষনা করলেন-আমিই পার্শ্বনাথের পর জৈনধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর। তারপর ভারতবর্ষে ঘুরে জৈন তীর্থঙ্করদের অহিংসবাণী প্রচার করতে লাগলেন মহাবীর। His ways of meditation, days of austerities, and mode of behavior furnish a beautiful example for monks and nuns in religious life. His spiritual pursuit lasted for twelve years. At the end he realized perfect perception, knowledge, power, and bliss. This realization is known as keval-jnana. একটানা ৩০ বছর ধর্মপ্রচার করলেন মহাবীর। বাংলার পশ্চিম সীমান্তেও অহিংসবাণী নিয়ে এসেছিলেন মহাবীর। কী কারনে প্রাচীন বাংলার একদল অল্পদর্শী লোক কুকুর লেলিয়ে দিয়েছিল মহাবীরের পিছনে। ঐ দুঃখজনক ঘটনাটি প্রখ্যাত ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায়ের “বাঙালির ইতিহাস (আদিপর্ব)” বইতে লেখা রয়েছে। প্রাচীন ভারতের নানা জনপদে মহাবীরের নাম ছড়াল। লোকেরা তাঁর কাছে ভিড় করল। মুক্তির উপায় জানতে চাইল। তিনি বললেন-জন্মই আমাদের আজন্ম পাপ। কাজেই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত কীভাবে জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কী করে দুঃখযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দুঃখযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়াকে বলে নির্বান। মনে রাখবে নির্গ্রন্থ জৈনদের মূলকথা হল- অহিংসা, সত্যবাদীতা, অপহরণ না করা, ব্রহ্মচর্য পালন ও অপরিগ্রহ, মানে কারও ওপর নির্ভরশীল না থাকা। আর তোমরা সুন্দর হও। শরৎকালের জলের মতন নির্মল হও। নানা শ্রেণির মানুষ তার কথা শুনল। কেউ গ্রহন করল। কেউ করল না। মহাবীরের আগেও ভারতবর্ষে ২৩জন তীর্থঙ্করের মতবাদ ছিল। তবে তীর্থঙ্করদের কোনরুপ সংগঠন ছিল না। মহাবীরের সময়ে সময় বদলে গিয়েছিল পরিবেশ। প্রাচীনভারতে গড়ে উঠছিল একে একে ষোলটি মহাজনপদ। কৃষির পাশাপাশি স্থান করে নিচ্ছিল বানিজ্য। বাড়ছিল যোগাযোগ । জনসংখ্যাও বাড়ছিল। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছিল মানুষের। আর বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা যাবে না। কাজেই, তীর্থঙ্কদের বানী প্রচার ও চর্চার জন্য একটি সংঘ বা (সংগঠনের) প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন মহাবীর। যারা তাঁর কাছে শিষ্যত্ব বরণ করেছিল- মহাবীর তাদের ৪ ভাগে ভাগ করলেন- ১/সাধু ২/সাধ্বী (নারী সাধু) ৩/শ্রাবক (সাধারন মানুষ [পুরুষ]) ৪/শ্রাবিকা (সাধারন মানুষ [নারী]) এরাই পরে জৈন নামে পরিচিত হয়েছিল। আর সংঘটির নাম হল জৈন সংঘ। আজ আমরা জানি, মহাবীর জৈন সংঘটি দাঁড় না করালে ২৩জন তীর্থঙ্করের মতবাদটি চিরকালের মতো হারিয়েই যেত। ৫২৭ খ্রিস্টপূর্ব। মহাবীর তখন একজন শিষ্যের বাসায় (বর্তমান বিহারের কাছে) পাবাপুরীতে বাস করছেন। বয়েস হয়েছে ৭২ বছর । অনাহারে, অর্ধাহারে কাল কাটাতেন। শরীর ভালো যাচ্ছিল না। তবে মহাবীর সিদ্ধ হয়েছিলেন ঠিকই। কেমন এক সুগন্ধী অলীক জ্যোতি বেরুত তাঁর শরীর থেকে। একদিন সে জ্যোতি ধীরে ধীরে নিভে এল। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা আগে মহাবীর বললেন- আমার পরে আর তীর্থঙ্কর আসবেনা। আমিই জৈনধর্মের সর্বশেষ তীর্থঙ্কর। না। গত আড়াই হাজার বছরে জৈনদের মধ্যে থেকে কেউই দাবী করেনি যে- আমি জৈনধর্মের ২৫তম তীর্থঙ্কর কিংবা আমিই জৈনধর্মের সর্বশেষ তীর্থঙ্কর। মহাবীরের মৃত্যুর দিনটিতে পাবাপুরীর শোকার্ত জনগন দীপ জ্বালিয়েছিল । মহাবীরকে বড় ভালোবাসত তারা। আজও, আড়াই হাজার বছর পরেও ভারতের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ ভালোবাসে মহাবীরকে। আজও তারা মহাবীরের মৃত্যুদিবসে দীপ জ্বেলে দীপাবলী উৎসব পালন করে । ২ না। মহাবীর প্রতিষ্ঠিত সংঘটি অটুট থাকে নি। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের দিকে জৈনসংঘে ফাটল ধরেছিল। জৈনেরা নানা কারণে সেই সময়টায় দু’ভাগ হয়ে পড়েছিল। একদলের নাম হয়েছিল শ্বেতাম্বর। অন্যদলের দিগম্বর। কেন? খুলে বলছি। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের দিকে জৈনদের মধ্যে একদল মহাজ্ঞানী পন্ডিত বলল, পোষাক পরলে পোষাকের ভিতরে লুকানো কীটপতঙ্গের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। কাজেই পোষাক পরা অনুচিত। মনে নাই পরমজ্ঞান লাভ করে মহাবীর পোষাক খুলে ফেলেছিলেন? এরাই পরে দিগম্বর নামে পরিচিত হয়েছিল। পৃথিবীতে চিরকালই কথার পিঠে কথা চলে। বিরোধীদল বলল, কেন পার্শ্বনাথ পোষাক পরতেন না? পোষাক পরা যেতে পারে। তবে সাবধানে চললেই হল। এরাই পরে শেতাম্বর নামে পরিচিত হয়ে উঠল। দিগম্বরের বলল, নারী মোক্ষলাভের অধিকারীরি নয়। শেতাম্বরেরা বলল, কেন নয় শুনি? মহাবীর নিজে সাব্ধী সংঘ গড়ে দেন নি? তা হলে? নারীগন কেন মোক্ষলাভের অধিকারীরি নয়? দিগম্বরেরা বলল, মহাবীর বিবাহ করেননি। শেতাম্বরেরা তখন বলল, বিবাহিত না হলেই কি শুদ্ধতা বৃদ্ধি পায়? তর্ক চলতেই থাকল। তবে এসবই সব সংসারত্যাগী সাধুসাব্বধীদের বিষয়আশয়: ঠিক সংসারী লোকের নয়। সংসারী লোকের হিসেব অবশ্য আলাদা। হ্যাঁ। সংসারীরাও জৈনধর্ম গ্রহন করতে পারে। পবিত্র গ্রন্থ পাঠ করতে। পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে অঙ্গ ও উপাঙ্গই প্রধান। সবই মহাবীর থেকে আরম্ভ করে অন্যান্য ২৩ জনতীর্থঙ্করের বানী। জৈন নির্গ্রন্থরা আহারবিহার পরিত্যাগ করলেও- সাধারণ জৈন্যদের প্রধান আহার নিরামিষ। পরম অহিংস বলে মাছমাংস খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না! সংসারী জৈন্যদর প্রথম জীবন কাটে অধ্যয়নে, মানে ছাত্রজীবন। তারপর বিবাহ, পারিবারিক জীবন। সামাজিক জীবনও গুরুর্ত্বপূর্ন । শেষ জীবনে অনেকেই সাধু হয়ে যায় । ওদিকে নির্গ্রন্থ জৈনসাধুদের সময় কাটে পবিত্র গ্রন্থপাঠ ও ধর্মালোচনায়। অতি কঠোর জীবন এদের। দিনের বেলায় তো বটেই রাতেও তেমন ঘুমায় না এরা। চুল কাটে না, টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলে। চুল কাটলে চুলের কীট যদি মারা যায়। হাঁটার সময় ময়ূরের পালক রাখে সঙ্গে পথের কীটপতঙ্গ ঝারার জন্য। অহিংস বলেই গত আড়াই হাজার বছর ধরে কৃষিকাজ না-করে ব্যবসা করেছে জৈনরা। কৃষিতে জমি চষতে হয়। তাতে কীটপতঙ্গের মৃত্যুর সম্ভাবনা। কেননা, তাদের বিশ্বাস জীব পবিত্র, তার বিনাশ চলবে না। ব্যবসা করার কারণেই একশ কোটি মানুষের দেশে জৈনরা সংখ্যালঘু হলেও ভারতের অর্থনীতি প্রধান নিয়ন্তা । এরা যেমন, প্রভূত ধনের অধিকারী-তেমনি প্রচন্ড রকমের দানশীলও। শেষ বয়েসে হাজার কোটি রুপী বিলিয়ে দেওয়া কোনও জৈন ব্যবসায়ীর জন্য অসম্ভব না। আজও। জৈনরা মন্দিরে যায় উপাসনা করতে। মন্দিরের নাম জৈন চৈত্যগৃহ। ৫০ লক্ষর মতন জৈন আজও চৈত্যগৃহের ভিতরে উচ্চারন করে Namaskar Mantra * Namo Arihantanam: - I bow to the arithantas (অরহৎ)- the ever-perfect spiritual victors * Namo Siddhanam: - I bow to the siddhas (সিদ্ধ) - the liberated souls * Namo Ayariyanam: - I bow to acharyas (আচার্য) - the leaders of the jain order * Namo Uvajjayanam: - I bow to upadhyayas (উপাধ্যায়)- the learned preceptors * Namo Loe Savva Sahunam: - I bow to all saints and sages everywhere in the world (এই বাক্যটি লক্ষ্য করুন) * Eso Panch Namukkaro: - These five obeisances * Savva PavapPanasano: - Erase all Sins * Mangalancha Savvesin : - Amongst all that is auspicious * Padhamam Havai Mangalam: - This is the foremost In the above prayer, Jains do not ask for any favors or material benefits from their Gods, the Tirthankaras or from monks and nuns. They do not pray to a specific Tirthankara or monk by name. By saluting them, Jains receive the inspiration from the five benevolent for the right path of true happiness and total freedom from the misery of life. (এই লেখাটা পড়ে আপনাদের কারও যদি মনে হয় মহাবীর সত্যিই একজন আলোকময় মানুষ ছিলেন; তা হলে আপনাদের একটা কথা আবারও মনে করিয়ে দিই যে: মহাবীর অহিংসবাণী নিয়ে যখন প্রাচীন বাংলার পশ্চিম সীমান্তে এসেছিলেন- তাঁর পিছনে প্রাচীন বাংলার একদল লোক কুকুর লেলিয়ে দিয়েছিল । কথাটা বলার কারণ। আজও আমাদের মহাবীরের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়নি।) তথ্যসূত্র: ১) নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখিত-ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট। Click This Link http://www.religioustolerance.org/jainism.htm Click This Link http://www.dlshq.org/saints/mahavira.htm সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩১
false
rn
স্বাধীন দেশে লেখায় কেউ হস্তক্ষেপ করবেন না দাবী ও হুকুম একটিই- ব্লগারদের মুক্তি চাই।যেটা লিখেছে সেটার জবাব লেখার মাধ্যমে দেন। কিছু বলে থাকলে সেটা পালটা জবাবের মাধ্যমে দেন। গ্রেপ্তার করে নির্যাতনের মাধ্যমে জবাব দেয়া মুক্তচিন্তার পরিচয় না।ব্লগার'রা যদি কিছু ভুল লিখে থাকে- তাহলে আপনারা সঠিকটা লিখুন।যার যেটা খুশি সে সেটা গ্রহন করবে। ভুল লেখার কারণে ব্লগারদের এখনই শাস্তি দেওয়ার কি আছে! ৪২ বছর অপেক্ষা করুন। কথায় বলে গাইতে গাইতে গায়েন। ব্লগার'রা একদিন লিখতে লিখতে লেখক হয়ে যাবেন।ছেলে পেলেদের নিজের ইচ্ছা মতো স্বাধীনভাবে লিখতে দিন। তাদের লেখায় হস্তক্ষেপ করা উচির নয়।আপনারা রাজনীতি করছেন- ব্লগার'রা কিন্তু রাজা চেক দিতে জানে।বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকানো যায় না।বাংলাদেশের ইতিহাস পৃথিবীর অন্য সব দেশ থেকে আলাদা।চট্টগ্রাম নগরীতে মোটর সাইকেল শোডাউন করেছে ‘হেফাজতে ইসলামে'। এইডা কিসের শোডাউন ইসলাম রক্ষার নাকি জামাত রক্ষার? আজকাল মোল্লারা দেখি বড়লোক হয়ে গেছে? হোন্ডায় চড়ে শোডাউন না করে দু'রাকাত নামাজ পড়লে বেশী ভালো হতো।হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রতিহত করা এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্বের দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও প্রগতিশীল পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদসহ ২৭টি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।শুধুমাত্র ‘ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীকে’ সরকার শাস্তি দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে, অন্য ধর্ম অবমাননাকারীকে নয়! মূর্তি ভাঙ্গা অথবা সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়া লুটপাট করা জায়েজ? কীবোর্ডে টিপাটিপি না করলে তো ভালো লাগে না।কিছু মানুষকে খুশি করার জন্য ব্লগারদের গ্রেফতার করা হলো। তাদের অপরাধ তারা একটি বিশেষ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রাখে না । সারাদেশ দেখল তিন বিপ্লবী তরুণের চোখে জমে থাকা এক আকাশ ঘৃণার অশ্রু ।তাদের নেওয়া হলো রিমান্ডে। সর্বদাই কিছু কিছু লোক থাকবে যারা যুক্তিযুক্ত সমালোচনা দ্বারা ধর্মের বিভিন্ন অসঙ্গতি ধরিয়ে দেবে। ( মাঝে মাঝে ২/১ টা মন্দীরে আগুন না দিলে মানুষ বুঝবে কী করে যে , হিন্দু নামে এই দেশে একটা জাতি আছে । হিন্দুদের বাড়ি ঘর না জ্বালালে মানুষ ভাববে , হিন্দু ধর্ম কোন রুপকথার গল্পের শিরোণাম , বাস্তবে যার অস্তিত্ব নেই । সুতরাং. . . এদের আবার অনুভূতি?)একটা গোরুর গলায় দশ হাত লম্বা মোটা দড়ি বাঁধা। সেখান থেকে পঁচিশ হাত দূরে এক আঁটি ঘাস আছে। কেউ ঘাস এগিয়ে দিল না, দড়ি ছিঁড়তে হলো না, অথচ গোরু অনায়াসে সেই ঘাস খেয়ে ফেলল। বল তো, এটা কী করে সম্ভব হয়? বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫৭ ও ২৯৫(ক) ধারা অনুযায়ী, ধর্ম বা ধর্মবিশ্বাসের অবমাননা করে কোনো উক্তি করলে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে এ ধরনের কাজের জন্য আইন সংশোধন করে সাজার মাত্রা বাড়ানোর চিন্তাভাবনাও আছে। এ ধরনের অপরাধের বিচারে ঢাকায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিভাগীয় পর্যায়েও এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।যে তিনজন ব্লগারকে আটক করা হয়েছে- আমার বিশ্বাস তাদের হাতে এখন ল্যাপটপ দিলে, তারা আবার ভয়হীন ভাবে লিখবে- যা তারা সত্য বলে জানে, বিশ্বাস করে।অপরের বিশ্বাস দিয়ে নিজের বিশ্বাসকে আহত করার নাম হচ্ছে কাপুরুষতা।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির সঙ্গে আস্তিকতা বা নাস্তিকতার সম্পর্ক কি?ধর্ম অনুভূতিতে আঘাত লাগার কথা বলে যদি আস্তিকেরা নাস্তিকদের বিচার চায়, তাহলে নাস্তিকেরাও তো তাদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য আস্তিকদের বিচার চাইতে পারে।যদি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি- সসম্মানে আমার ব্লগার ভাইদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে! আহ !! ভাই, আমি একজন অতি সাধারন ব্লগার।আমি শান্তি চাই।নিজের জন্ম ভূমিতে সুখে শান্তিতে বাস করতে চাই। আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করুন, দুর্নীতিবাজদের বিচার করুন আর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমান, অন্যথায় আমাকে গ্রেফতার করুন । চারদিকে এত অনাচার আর ভালো লাগে না। জয় বাংলা ।
false
mk
বিএনপির অপরাজনীতি আগস্ট মাসেই বড় ধরনের নাশকতার দুটি ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। ১৫ আগস্ট জাতির জনক হত্যা এবং ২১ আগস্ট শেখ হাসিনা হত্যা। সবাই বলবে কথাটা মিছে কথা। কেননা দিব্যচোখে দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনা জীবিত এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, কথাটা কেন বললাম? গ্রেনেড হত্যায় বহুলোক মারা গিয়েছিল। আইভি রহমান মৃত্যুবরণ করেছিলেন যেভাবে তার চেয়েও করুণভাবে সেদিন শেখ হাসিনার মৃত্যুবরণ করার কথা। কিন্তু আল্লাহতায়ালাই তাকে সেদিন রক্ষা করেছিলেন বলেই হয়তো আজ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি পুনঃ অবতারণা করলাম এ জন্য যে, খুনিরা আবার বড় নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। তারা আবার মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা কার্যকর করতে চাচ্ছে।দেশব্যাপী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে অবশেষে বিএনপি আপাতত ঢাকাকেন্দ্রিক তার আন্দোলনের ভূগোল সংহত করেছে। এটি একটি বড় ধরনের ধাপ্পাবাজি। দেশব্যাপী কালো শক্তির নাশকতা চলছেই। আওয়ামী লীগ এবং প্রগতিশীলদের মাথা মাথাদের হত্যার নীলনকশা কার্যকর করা হচ্ছে। তারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের আগে প্রত্যন্তের মাথাগুলো কেটে ফেলতে চায়। তাদের ধারণা হয়েছে, প্রগতিশীল এবং আওয়ামীপন্থীদের মাথাগুলো কেটে ফেললেই শেখ হাসিনা প্রমাদ গুনতে শুরু করবেন। তাকে ভীতসন্ত্রস্ত করতে পারলেই তিনি ভুল করবেন। আর ভুলের সুযোগ নিয়ে তাকে হত্যা করতে হবে।বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে এক ধরনের কথাবার্তা বাজারে চলছে। সাধারণ দৃষ্টিতে অনেকেরই এমন ধারণা হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা অন্যরকম। বিএনপি চাচ্ছে উগ্র মৌলবাদীরা আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির নেতাদের হত্যা করুক। তাহলে তারা যে গণআন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে, তা সার্থক হবে। কেননা, রাস্তা দখলের লড়াইয়ে ব্রিটিশ মডেলের আওয়ামী নেতারা রাস্তায় নামবেন না। সরকারকে পুলিশনির্ভর হতেই হবে। পুলিশনির্ভর হলেই দেশে-বিদেশে সরকার নিন্দিত হবে। সরকারকে নিন্দিত না করতে পারলে তাদের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা_ সংলাপে বসবেন না শেখ হাসিনা। কেন যেন তাদের উৎকটদের ধারণা হয়েছে_ সংলাপে বসাতে পারলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার আসবে এবং ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছত্রছায়ায় তারা ষড়যন্ত্র করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করবে। ইতোমধ্যে তাদের বিদেশের লবিস্টরা তৎপরতা শুরু করেছেন এবং বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও তাদের শেখানো বুলি বলছেন।নতুন একটা ইস্যু বাজারে এসেছে। গণপ্রচারণাবিষয়ক। সরকার মানেই সমালোচনার যোগ্য যারা মনে করেন তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিপর্যয় আসছে বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত বাকশালি আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করার কৌশলের মতো এবারকার প্রস্তাব নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সমাবেশ করে এসব কথাই তারা বলেছে। যদিও এটি কোনো কাজের কথা নয়। যার যা মুখে আসবে তাই বলবে_ এটি বাকস্বাধীনতা হতে পারে না। রাষ্ট্রস্বার্থ সবার ওপরে। যার প্রচারণায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়, তা প্রতিরোধ করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা দুটোই রাষ্ট্রের থাকতে হবে। একটি নীতিমালা থাকা দরকার। যে জাতির মধ্যে দেশপ্রেম আছে, তাদের বলে দিতে হয় না যে কোনটা দেশের স্বার্থ পরিপন্থী আর কোনটা দেশের পক্ষে যাবে। কিন্তু যাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই তাদের জন্য সুব্যবস্থা থাকতেই হবে। যারা দেশের ভালোমন্দ বোঝে না তাদের নিয়মনীতি শেখাতে হয়। বর্তমানে যে সম্প্রচার নীতিমালা হয়েছে তা অনেকটা এরকম। এটি এখনো আইনে পরিণত হয়নি। তবে নীতিমালাভিত্তিক আইন প্রণীত হওয়া উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও নীতিমালা আছে, আইন আছে। গণচীনে সম্প্রচার নীতিমালা আছে। রাশিয়ায়ও আছে। কোন দেশে নেই? শুধু বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। ব্রিটিশের আইনই গোলেমালে চলছে। একটি বস্তুনিষ্ঠ ও আধুনিক নীতিমালা খুবই প্রয়োজন।বিচারপতিদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি সংসদে যাচ্ছে। এটি স্বৈরতান্ত্রিক জিয়া সরকার প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দিয়েছিল। নামকাওয়াস্তে একটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় বিচারপতিদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সংবিধানের আদিরূপে ফিরে গেলে দোষ কী? যখন এটি রাষ্ট্রপতির হাতে যায় তখন বড় বড় পন্ডিতরা বলেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চলে গেল। তারা সে সময় সংসদের হাতেই ক্ষমতা রাখার পক্ষে ছিলেন। এখন তারাই আবার বলছেন, সংসদে ক্ষমতা ফিরে পেলে বিচারপতিদের স্বাধীনতা থাকবে না। বলিহারি বাঙালি। এক মুখে কত কথা কয়।সংবিধানের আদিরূপই শ্রেষ্ঠ। যত পরিবর্তন হয়েছে সবই বিতর্কিত। এখন যদি সুযোগ পাওয়া যায় যে সেই আদিরূপে ফিরে যাওয়া যাবে, তখন যাওয়াই ভালো।বর্তমান সরকার নানামুখী ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে। ভালো কাজ করলেও তথাকথিত সমালোচকরা সমালোচনা করবেনই। আমার মনে হয়, বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরা সরকারকে কোণঠাসা করার কোনো সুযোগ না পেয়ে স্রোতধারায় ভেসে যাচ্ছে এবং খড়কুটো ধরছে। বাকস্বাধীনতা থাকবে এবং নীতিমালাও থাকবে। এ দুটির দ্বন্দ্বও থাকবে। আপনারা তো জানেনই যে, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব শাশ্বত। এ দ্বন্দ্ব থাকতেই হবে, নইলে রাষ্ট্রই থাকবে না। রাষ্ট্র উবে যাবে, এ তত্ত্বের অনুশাসন কেবল কমিউনিজমেই সম্ভব, অন্য কোনো সিস্টেমে সম্ভব নয়। ধনতন্ত্রেই রাষ্ট্র সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হয়। যে কারণে মানবাত্মা পীড়িত হয়। কিন্তু এর কোনো বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। হয় ধনতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি ত্যাগ করতে হবে নতুবা এই পীড়া সহ্য করতে হবে। বাকস্বাধীনতার নামে নৈরাজ্য রাষ্ট্রস্বার্থবিরোধী। রাষ্ট্র নৈরাজ্য প্রতিহত করবেই।সরকারকে চাপে ফেলে আদায় করার মনমানসিকতাই যদি বিরোধী দলের কৌশল হয় তবে তাদের আশাহত হতেই হবে। চাপে ফেলে সরকারের কাছ থেকে কিছুই পাওয়া যাবে না। যৌক্তিক দাবি-দাওয়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিএনপি যত দিন মৌলবাদের সঙ্গে সখ্য রাখবে তত দিন তাদের কোনো দাবিই পূরণ হবে না। তারা হৈচৈ ও নাশকতা করে কেবল রাষ্ট্রস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রাষ্ট্রস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের ওপর দমন-নিপীড়ন নেমে আসবে। ফলে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা যে নাশকতার লাইনে যাচ্ছে, এটি সরকারের জানা হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ দুর্বল এটি মনে করা কোনো বুদ্ধিমান লোকের কাজ নয়।মৌলবাদীরা বাংলাদেশকে ঘাঁটি বানাতে চায়। তারা বিরোধী দলকে মদদ দিচ্ছে এ কারণে যেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধ্বংস হয়। এটি সাম্রাজ্যবাদেরও কাম্য। মধ্যপ্রাচ্যের সব কটি রাষ্ট্রকেই তারা জঙ্গি বানাতে চায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বেশ কয়েক দিন আফগানিস্তানকে তারা জঙ্গিমুক্ত করার কাজ করেছে, এখন আবার কৌশল পরিবর্তন করে জঙ্গিদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য। এখন বাংলাদেশ তাদের টার্গেট। বিএনপি সাম্রাজ্যবাদের ওই কূটপরিকল্পনার এজেন্ট হয়েছে। জিয়ার সময় থেকেই বিএনপি সাম্রাজ্যবাদের খপ্পরে পড়েছে। মনে করা হয় যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াকে ক্ষমতায় বসানোর মূল পরিকল্পনা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদেরই। পাকিস্তান জিয়াকেই পছন্দ করেছিল কোনো এক গোপন রহস্যের কারণে। জেনারেল ওসমানী যে জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করতে চেয়েছিলেন তাও হয়তো ওই গোপন রহস্যের কারণে। পত্রপত্রিকায় খবর হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়টি জিয়াকে তার অধস্তনরা জানিয়েছিলেন। খুনিদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকারোক্তিতে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এটি কখনোই সত্য হতে পারে না। মোশতাক, জিয়া এবং কতিপয় আমলা যে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করেছিলেন তা গোপন করার জন্যই স্বঘোষিত খুনিরা এমন ধরনের ধামাচাপা দেয়া বক্তব্য দিয়েছেন। আমার মনে হয়, ফেলুদাকে দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করিয়ে সব গোপন তথ্য সংগ্রহ করে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করে আবার বঙ্গবন্ধু হত্যার সম্প্রসারিত বিচার করা উচিত। অনেক রুই-কাতলা ধরা পড়বে এবং সাম্রাজ্যবাদী চক্রের মুখোশও উন্মোচন হবে।শেখ হাসিনার প্রাণনাশের যে সম্ভাবনা নতুন করে দেখা দিয়েছে তা সম্ভবত বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত না করার কারণেই। যত দূর জানা যায়, ইয়ার্কি মারতে মারতে অকস্মাৎ বড় ধরনের হামলা হবে। হয়তো এমনো হতে পারে যে, খুবই ছোটখাটো মডেলের হামলায় শেখ হাসিনাকে হত্যা করা হতে পারে। মৌলবাদীরা ধরেই নিয়েছে, সব যুদ্ধাপরাধীর জীবন রক্ষার একটাই উপায়। শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। এ ধারণা তত দিন থাকবে যত দিন তাদের ফাঁসি না হবে। বিএনপির ধারণা হয়েছে, শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে তাকে নির্বাচনে পরাজিত করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। তাই তারা শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনা করে। বিএনপি পরিবেশ তৈরি করবে আর মৌলবাদীরা হত্যা করবে_ এমন গুজবও বাজারে আছে।রাজনৈতিক তৎপরতাই একমাত্র বিকল্প। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক তৎপরতাই তাকে বাঁচাতে পারে। যেভাবে মধ্যমসারির নেতাকর্মীরা খুন হচ্ছেন তাতে ভয় হয়, মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারবে কি না। রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে নেতাকর্মীদের মধ্যে সংহতি বাড়বে। জনসাধারণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতাও কমে আসবে। স্বতঃস্ফূর্ত গণআওয়াজই খুনিদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেবে। কিন্তু এটিই সব নয়। বিএনপি-জামায়াতের প্রতিটি পদক্ষেপই সন্দেহজনক। সাবধান হতে দোষ কী?
false
mk
ছিটমহল বিনিময়ে সাফল্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ছিটমহল বিনিময়ের সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে। এ ইস্যুতে এতদিনকার বিরোধিতাকারী বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাম্প্রতিক অবস্থান পরিবর্তনেই এ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ১৬২টি ছিটমহলের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দার ৬৭ বছরের অধিকারবঞ্চিত অমানবিক জীবন-যাপনের অবসান হবে শিগগিরই। একই সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কেও বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগী ভূমিকায় এবং তৃণমূল-নেত্রী মমতা ব্যানার্জির সমর্থন নিয়ে এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনের বিলটি ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আমরা এ অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই। উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের ভূখণ্ড-পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ড-পরিবেষ্টিত ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে এ ছিটমহলগুলোর প্রায় ৫২ হাজার মানুষ বলতে গেলে দেশপরিচয় ও নাগরিকত্বহীন; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ইত্যাদি নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত। আইন-আদালতের সুরক্ষাহীন মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন তারা। এ মানুষগুলোকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য দুই দেশের মধ্যে এ ছিটমহলগুলো বিনিময়ই সহজ এবং প্রায় অবিকল্প সমাধান। কিন্তু এ ইস্যুতে ভারতে কখনো রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে, আবার কখনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা থাকলেও আমলাতন্ত্রের বাধায় বিষয়টি সুরাহা হচ্ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে ছিটমহলগুলো হস্তান্তরের প্রস্তাব গৃহীত হলেও বিগত চার দশক যাবৎ তা অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সে সময়ে ইউপিএ জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়টি নিষ্পত্তির সম্ভাবনা জোরালো হয়েছিল। ওই সফরে দুদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তির ওই প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের সময় স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে সই হওয়া প্রটোকলটি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিরোধিতা করেছিল মোদির দল বিজেপি। সঙ্গে ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। এখন দেখা যাচ্ছে বিজেপি নেতা মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে উদ্যোগী। স¤প্রতি কাঠমান্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে তার সরকারের জোর প্রচেষ্টার কথা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এরপরই বিষয়টিতে গতি আসে। আর এরই মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে সরাসরি সমর্থন জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে ইউপিএ সরকারের সময় বিলটির বিরোধিতা করে আন্দোলন-বিক্ষোভ করা বিজেপির আসাম ইউনিটও এবার কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে নেমেছে। ভারতে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার অবসানে অনুক‚ল বাতাবরণ সৃষ্টি এবং সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার অগ্রগতির খবরে স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত ছিটমহলবাসী। আমরাও চাই ভারতের এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুতই সম্পন্ন হোক এবং ছিটমহলবাসী মানবিক জীবনের নিশ্চয়তা পাক।ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা এ সংকটের সমাধান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে। ছিটমহল সমস্যার সমাধান নিশ্চিতভাবেই উভয় দেশের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত মজবুত করবে। একইভাবে দুদেশের মধ্যকার বিবদমান অন্য ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তিতেও ভারতের বর্তমান সরকার সদিচ্ছা দেখাবে, উদ্যোগী হবে- এ প্রত্যাশা আমাদের।
false
hm
বিভিন্ন ব্যাঙ্কনোটে প্রাণীর প্রতিকৃতি বিশ্বের পয়সাওয়ালা দেশগুলির ব্যাঙ্কনোটের ছবি দিচ্ছি, কারণ গরীবের বউ সবার ভাবী। শুরু করি অস্ট্রেলিয়া দিয়ে। অস্ট্রেলিয় এক ডলারের নোট, ১৯৮৩ সালে ইস্যু করা। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ একা থাকলে কথা ছিলো, সাথে আবার কোট অব আর্মসের দুই পাশে ক্যাঙারু আর এমু। শুধু তা-ই নয়, উল্টোপিঠে আদিবাসীদের শিল্পকর্ম, সেখানেও নানা জীবজন্তুর ছবি। এক ডলারের কথা ছাড়ি, আসুন দুই ডলারের কথা বলি। অস্ট্রেলিয় দুই ডলারের নোট, ১৯৮৫ সালে ইস্যু করা। এখানেও এক পিঠে জন ম্যাকআর্থার আর একটা আস্তভেড়া, উল্টোপিঠে উইলিয়াম ফারার আর গমের শীষ। পাঁচ ডলারের নোটটা দেখুন, ১৯৯০ সালে ইস্যু করা। এখানে এক পিঠে জে. ব্যাঙ্কস, উল্টোপিঠে সি. কিশোম। আরো কিছু ইকড়িমিকড়ি চামচিকড়িও রয়েছে। অনেক আদমসন্তানের মাথা দেখা যায় ১৯৯২ সালে ইস্যু করা পাঁচ ডলারের নোটে আবার রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রের মাথা, তাঁর মাথা তো নোটে থাকবেই। তাঁর মাথা থাকবে না তো কার মাথা থাকবে? কিন্তু কেন তাঁর মাথা থাকবে? কী আপদ, ১৯৯৮ সালে ইস্যু করা নোটেও রাণীমা। এদের রাণীমা ফেটিশ তো কিছুতেই যাচ্ছে না নোট থেকে। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। কিন্তু নোট ওদের, ভক্তি ওদের, আমার কী বলার থাক্তে পারে? ওরা চাইলে রাণীর ছবি দিক, চাইলে ক্যাঙারুর ছবি দিক, আমার কী? ২০০১ সালে এসে ইস্যু হওয়া পাঁচ ডলারের নোট থেকে অবশেষে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথে হঠেছেন, কিন্তু আপসোস, তাঁর জায়গা দখল করে বসেছেন দুইজন ব্যক্তি, এইচ. পার্কস আর সি. এইচ. স্পেন্স। ১৯৯১ সালে ইস্যু করা দশ ডলারের নোটের দুই পিঠে গ্রীনওয়ে আর লসনের ছবি। নাহ, প্রাণীর প্রতিকৃতি হঠছে না নোটের গা থেকে। এদের রগে রগে মজ্জায় মজ্জায় বাতিল-বেদাতের জীবাণু। আর ১৯৮৮ সালে ইস্যু করা দশ ডলারের নোটে ক্যাপ্টেন কুক। ক্যাপ্টেন কুক একা নন, একজন আদিবাসীর আবক্ষ প্রতিকৃতিও দেখা যাচ্ছে। সে আবার বেপর্দা। বোঝাই যাচ্ছে আমল-আকিদার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ানদের কোন হুঁশ হয় নাই এখনো। ১৯৯৮ সালে ইস্যু করা দশ ডলারের নোটে প্যাটারসন, গিলমোর আর ঘোড়া। ঘোড়া একা নয়, ঘোড়ার পিঠে ঘোড়সওয়ার রয়েছে। একে রামে রক্ষা নাই, সুগ্রীব দোসর। কে এদের বোঝাবে. কে দেখাবে সত্যের সরল পথ, আর আলো? ২০০৬ সালে ইস্যু হওয়া দশ ডলারের নোটে দেখতে পাচ্ছি এবি "ব্যাঞ্জো" প্যাটারসন আর মেরি গিলমোরকে। এঁরাও বিভিন্ন কারণে স্মরণীয়, বরণীয়। ভেবেছিলাম ১৯৯৮ সালে ইস্যু হওয়া কুড়ি ডলারের নোটে এসে বোধহয় এদের একটু হুঁশজ্ঞান হবে, কিন্তু ওখানেও মেরি রাইবি আর রেভারেন্ড জন ফ্লিনের চেহারা, আর পবিত্র প্রাণী উট (পবিত্র জকিসহ)। ১৯৯৫ সালে ইস্যু হওয়া পঞ্চাশ ডলারের নোটেও বেদাতি কাজকর্ম চলছে সমানে। ডি. উনাইপন আর ই. কাওয়ান এর ছবি দেখা যাচ্ছে দু'পিঠে। ১৯৯৬ সালে ইস্যু হওয়া একশো ডলারের নোটে এন. মেলবা আর জে. মোনাশের ছবি শোভা পাচ্ছে। হায় রে, কোথায় যাই? বড়লোক হয়েও শান্তি নাই। আমার কেন যেন মনে হয় অস্ট্রেলিয়ায় কোন মুমিন ব্যক্তি বাস করলে পদে পদে গুনাহগার হন । ছবিসৌজন্য ব্যাঙ্কনোটস ডট কম।
false
rn
তোমরা যারা সারাদিন সেক্স সেক্স করো কি আছে একজন নারীর শরীরে? একজন নারী যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়- সব শ্রেনীর মানুষ খুব কুৎসিত ভাবে তাকায়। ছাত্র, শিক্ষক, চাচা, মামা,খালু, রিকশাওয়ালা, হকার, এমন কি মাত্র নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হওয়া একজন মুরুব্বী পর্যন্ত। যারা এই কুৎসিত ভাবে তাকায়, তখন আমি তাকাই তাদের দিকে- তাদের দিকে তাকিয়ে তখন আমার মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে নোংরা কিছু তাদের চোখে মুখে খেলা করে। একদিন আমার খুব রাগ হলো- আমি একজনকে প্রশ্ন করলাম- ভাই এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? মেয়েটিকে কি আপনারে পরিচিত? কুৎসিত ভাবে তাকানোর কি আছে? এখন কেউ যদি আপনার মা, বোন অথবা আপনার স্ত্রী'র দিকে এভাবে তাকায়! লোকটি আমার ওপর রেগে গেল। খবরের কাগজে যখন কোনো ধর্ষণ এর খবর পড়ি- আমি প্রচিন্ড অবাক হই। ব্যথিত হই। যারা ধর্ষণ করে তাদের চেয়ে খারাপ লোক আর এই দুনিয়াতে নেই। মেয়েরা যতই শিক্ষিত হোক, তারা আসলে বোকা। ৯০ ভাগ শিক্ষিত মেয়েরা বিয়ের আগেই শারীরিক সম্পর্ক করে। বোকা মেয়ে গুলো বুঝে না শারীরিক সম্পর্ক দিয়ে ছেলেরদের আটকে রাখা যায় না। তারা ঠিকই ছুটে যায়। আপনাকে ভোগ করে, অন্য মেয়ের পিছে ছুটে। আপনার সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করবে, আপনাকে বিয়ের কথা বলবে- আপনাকে মানসিক ভাবে দুর্বল করে আপনাকে বিছানায় নেবে। যৌন সুখ ভোগ করবে- দিনের পর দিন। তারপর আপনাকে ছুড়ে ফেলবে। আপনি কাঁদবেন। কিন্তু কেঁদে ফয়দা নেই। অবশ্য তাতে আপনার কিছু যায় আসে না। আপনার বাবা মা আপনাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। এই ভাবেই চলছে এযুগের প্রেম ভালোবাসা। আমি যখন রাস্তা দিয়ে বোনকে নিয়ে হেঁটে যাই- কেউ আমার দিকে তাকায় না। সবাই হা করে আমার বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। না, আমার বোন কোনো অশ্লীল জামা পড়েনি। তাদের এই নোংরা ভাবে তাকানো দেখে- আমার নিজেরই লজ্জা লাগে। আবার আমি যখন আমার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও যাই- তখনও রাস্তা ঘাটে নানা শ্রেনীর মানুষ কুৎসিত ভাবে তাকিয়ে থাকে। এই সমস্ত লোক গুলো শুধু আমার বোন বা আমার স্ত্রীর দিকে না তারা রাস্তা ঘাটে সব মেয়ের দিকেই কুৎসিত ভাবে তাকায়। তারা কি জানে(?) তাদের মা বোন আর স্ত্রী'র দিকে অসংখ্য লোক কুৎসিত ভাবে তাকায়। একদিন আমার বোনকে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে রাস্তার পাশে চায়ের দোকান থেকে কয়েকটা ছেলে কুৎসিত ইশারা করল এবং একজন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে বলল- সেই রকম 'মাল' দোস্ত। আমি ছেলেটিকে ডেকে বললাম- সমস্যা কি? এই ররকম নোংরা কথা বললে কেন? তোমার বাবা মা কি এই শিক্ষা দিয়েছেন তোমাদের? তারা রেগে-মেগে আমাকে মারতে আসলো। সেই দিন আমি সত্যি সত্যি বাংলা সিনেমার নায়কের মতো- আচ্ছা মতো মারলাম তিন বদমাশকে আশা করি তারা বাকি জীবনে কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে কোনো ইশারা বা নোংরা কথা বলবে না। এখন, নিজের কথা বলি- আমি যখন রাস্তা দিয়ে চলাচল করি- কোনো মেয়ের দিকে তাকাই না। ইচ্ছেই করে না তাকাতে। কেন কুৎসিত ভাবে তাকাবো? লাভটা কি? আমার পাশ দিয়ে কানা খোড়া নাকি বিশ্ব সুন্দরী গেলো তাতে আমার কি? যে আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছে- সে তো কারো না কারো আদরের সন্তান, কারো বোন অথবা কারো স্ত্রী। অনেক সময়- অনেক আত্মীয় স্বজন বা পরিচিতরা বলেন- সেদিব তোমাকে দেখলাম- আমার পাশ দিয়ে গেলে কিন্তু আমার দিকে ফিরেও তাকালে না। অনেকে ভাবেন আমি ভাব দেখাই। আসলে আমার কোনো দিনই- এক মুহূর্তের জন্যও কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে ইচ্ছা হয়নি। যারা রাস্তা ঘাটে কুৎসিত ভাবে মেয়েদের তাকায়, ভিড়ের মধ্যে মেয়েদের গায়ে হাত দেয় অথবা খারাপ মন্তব্য করে আমার ইচ্ছা করে তাদের জুতা দিয়ে মারি। কান ধরে তাদের বাবা-মা'র কাছে নিয়ে যাই। বাবা-মাকে বলি- দেখুন আপনার সন্তান কি করছে? সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দেন। যদি সন্তানকে ভালো শিক্ষা না দিতে পারেন তাহলে সন্তান জন্ম দিবেন না। সেক্স কি? আমি বলব সেক্স হলো ক্ষনিকের একটা মোহ। এই মোহ কে যারা জয় করতে পারে, তারাই জীবনে সাফল্য পায়। সেক্স'ই জীবনের সব নয়। নিজের কাজ কে ভালোবাসুন। যারা ধর্ষণ করে, তাদের যদি খুব সেক্স করতে ইচ্ছা হয়- তাহলে তারা কোনো হোটেলে গিয়ে টাকার বিনিময়ে সেক্স করে আসুক। কেন একটা অসহায় মেয়েকে জোর করে ক্ষত বিক্ষত করে দেয়া। একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। একটা ছোট্র ঘটনা বলি- আমাদের পাশের বাসার এক মহিলার খুব গর্ব তার ছেলে খুব ভদ্র-ভালো। সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার ছেলের সুনাম করে। একদিন দেখলাম তার ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে- নানান বাজে মন্তব্য করে। আরেকদিন দেখলাম- শপিংফ মলে ফাস্ট ফুডের দোকানের এক কোনায় এক মেয়ের সাথে জড়াজড়ি করছে। যাই হোক, কিছু দিন আগে সেই ছেলে এবং তার বন্ধুরা মিলে একটা নিশি কন্যাকে ভাড়া করে তাদের বাসার ছাদে নিয়ে আসে। এবং হাতে নাতে ধরা খায়। এইখানেই শেষ না আরও আছে- সেই ছেলের ঘর থেকে কম্পিউটার ভরতি থ্রি এক্স এবং প্রায় ১০০ সিডি। সেই ছেলের হবি হচ্ছে- পৃথিবীর সব দেশের পর্ণ ভিডিও সংগ্রহ করা। এবং সেই ছেলে বেশ কয়েকজন মেয়েদের সাথে যৌন ক্রিয়া করে আবার ভিডিও করেছে। আমি ছেলেটির মাকে বললাম- আপনার ছেলের এই অধপতনের জন্য আপনিই দায়ী। ছেলেটির মা বলল- আমার ছেলে দায়ী না, যে মেয়ে গুলো আমার ছেলের কাছে আসছে- ওই মেয়ে গুলোই দায়ী। তারাই আমার ছেলের মাথা খেয়েছে।ধরুন, আপনি বিয়ে করেছেন। আপনার স্ত্রী'র সাথে যখন খূশি শারীরিক সম্পর্ক করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি বেকার হোন বা অল্প বেতনে চাকরি করেন, সংসারে অভাব- তখন কিন্তু আপনি হাজার বার সেক্স করেও মনের শান্তি পাবেন না। তার মানে জীবনে সেক্সটাই সব নয়। মানুষের জীবনে কর্মটাই আসল। বুদ্ধদেব গুহ তার 'একটু উষ্ণতার জন্য' উপন্যাসে লিখেছেন- ''পুরুষ মানুষের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা তার কাজের ক্ষেত্রে, ঘরের মধ্যে বা বিছানায় নয়। যে পুরুষ মানুষ দক্ষ, পরিশ্রমী, যে তার কাজের ক্ষেত্রে সম্মান পেয়েছে , সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায়ই কৃতকার্য হয়েছে। যে পুরুষ মানুষ তার কাজের চেয়ে তার প্রেমিকা বা স্ত্রীকে বেশী ভালোবাসে, সে যথার্থ পুরুষ কি না সে বিষয়ে আমার বরাবরই সন্দেহ ছিল। কাজের ক্ষেত্রের পরেই তার ব্যক্তিগত জীবন। সে জীবনে প্রেম তার সবচেয়ে বড় উপাদান। যে পুরুষের জীবনে কোনো মেয়ের সত্যিকারের ভালোবাসা নেই, সে স্ত্রীরই হোক বা প্রেমিকারই হোক , সে যত দক্ষই হোক না কেন , সে একদিন না একদিন হেরে যেতে বাধ্য।আমার একজন পরিচিত লোকের কথা বলি- বিয়ে করেনি। ভালো চাকরি করে। দেখতে শুনতে ভালো। সে মনে করে সেক্স ছাড়া জীবনে আর কিছু নেই। সে ফেসবুক এর সাহায্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে। সারারাত মোবাইলে কথা বলে। তারপর বাইরে দেখা করে- এবং সেক্স করে। গত দশ বছর ধরে তাই'ই নিয়মিত করছে। সে গর্ব করে বলে ইনশাল্লাহ এ বছর সেঞ্চুরী করবো। এই সমস্ত মেয়ে গুলো বিয়ের আগেই কেন নিজেকে বিলিয়ে দেয়? তারা তাদের রতিক্রিয়া এক আকাশ আনন্দ নিয়ে নিজ ইচ্ছায় ভিডিও করে। তারপর ছড়িয়ে দেয় ইন্টারনেটে। এজন্য তাদের কোনো লজ্জা হয় না। নিজেরা যেমন অন্যের যৌন ক্রিয়া দেখে বিপুল আনন্দ লাভ করে, তাই তারা চায় তাদের যৌন ক্রিয়া দেখে অন্যরাও আনন্দ লাভ করুক। আমার এক বন্ধু একদিন আমার কাছে এসে বলল- আমি রোজিনা কে খুব ভালোবাসি। রোজিনা'র সাথে আমার বিয়ের তারিখ সব ঠিক-ঠাক। আর তিন মাস পর আমাদের বিয়ে। কিন্তু অন্য কোনো-কোনো মেয়েকে দেখলে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে, সেক্স করতে ইচ্ছা করে। নিজেকে কন্টোল করতে খুব কষ্ট হয়ে যায়। রাস্তা ঘাটে, বিয়ে বাড়িতে, শপিং মলে এমন কি অফিস আলাদলে কোনো-কোনো মেয়েকে দেখলে- আমার নুনু শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু আমি রোজিনা'কে ভালোবাসি। রোজিনা'কে বিয়ের পরও বন্ধুর সমস্যার সমাধান হয়নি। এখন তার মেয়ে দেখলে নুনু শক্ত হয়, জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। সেক্স করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু রীজিনাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। আমার বন্ধু রফিক এর কথা বলি। সে বিয়ে করেছে। ভালো চাকরি করে। সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করে। সে তার স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসে। ছুটি পেলেই স্ত্রীকে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে যায়। সেক্স ব্যাপারটাকে রফিক একেবারেই অপছন্দ করে। তার কাছে এটা একটা গা ঘিন ঘিন করা ব্যাপার। নোংরা ব্যাপার। না, তার কোনো অসুখ বিসুখ নেই। রফিক এর স্ত্রী জোর করে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে- ডাক্তার বলেছেন- অত্যাধিক পরিশ্রম এর কারনে সহবাসে তার এত অনীহা। আমার বন্ধুর ভাষায়- যৌনতা অতি তুচ্ছ বিষয়। বিছানায় স্ত্রীর সাথে লটকা-লটকি করার চেয়ে সমুদ্রের পাড়ে হাতে হাত রেখে হেঁটে যাওয়া অনেক বেশি আনন্দের। যারা রাস্তায় কুৎসিত ভাবে মেয়েদের দিকে তাকায়, বিচ্ছরি মন্তব্য করে অথবা সুযোগ পেলেই বাসে, মেলায় বা শপিং মলে গায়ে হাত দেন- এসব করা থেকে বিরত থাকুন। মেয়েদেরকে মানুষ ভাবুন। তাদের শ্রদ্ধা করুন। সম্মান করুন। তাদের সাথে পবিত্র সম্পর্ক রাখুন। তাদের বিপদে স্বচ্ছ ভাবে এগিয়ে আসুন। আপনারা তাদের কে সম্মান করবেন, শ্রদ্ধা করবেন, আপনার মা বোনকে তাহলে অন্য পুরুষরা শ্রদ্ধা করবে, সম্মান করবে। একে অপরের প্রতি স্বচ্ছ ভালোবাসায় সহযোগিতায় শ্রদ্ধায় এবং শুদ্ধ মানসিকতায় এগিয়ে যাবে দেশ। নিজের মাকে ভালোবাসুন। অন্যের মাকেও ভালোবাসুন। নিজের বোনকে স্নেহ করুন, মায়া করুন, অন্যের বোনকেও মায়া করুন, স্নেহ করুন। অন্যের স্ত্রী'র দিকে পবিত্র দৃষ্টিতে তাকান, সম্মান করুন তাহলে মানুষ আপনার স্ত্রী'র দিকেও কুৎসিত ভাবে তাকাবে না। আমার চোখে পুরুষ-রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই।বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকরঅর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।----কাজী নজরুল ইসলাম সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৩৪
false
ij
কবির_ রহস্যবাদী, কবি “I am not a Hindu, Nor a Muslim am I! I am this body, a play Of five elements; a drama Of the spirit dancing With joy and sorrow.” কবিরের জন্মও কুয়াশাচ্ছন্ন। কেউ কেউ এইরকম বলে যে- সে ছিল বিবধা এক ব্রাহ্মণীর পুত্র। হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। জগতের রহস্যবাদী কবিদের জন্মের হদিশ না-করাই শ্রেয়। মানুষ কর্মে বাঁচে, জন্মে নয়। তবে কবিরের নামের সঙ্গে পবিত্র বারানাসী নগরটি জড়িত। অনুমিত হয় যে ওখানকারই এক সম্পন্ন তাঁতী ঘরে কবিরের জন্ম। পরে নিঃসন্তান এক মুসলিম তাঁতী পরিবার কবিরকে দত্তক নেয়। সেই মা-বাবার নাম ছিল নিম্মা ও নিরু। গবেষকগন অবশ্য কবিরের সময়কাল ১৩৯৮ ১৪৪৮ বলে সনাক্ত করেছেন। যৌবনে রামানন্দের শিষ্য হলেন। রামানন্দ ছিলেন ভক্তিবাদী সন্ন্যাসী। দক্ষিণ ভারতে সূচিত হয়েছিল ভক্তিবাদী আন্দোলন। সময়কাল ৮০০ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ। যিনি ভক্তির মার্গ সন্ধান করতেন তাকে বলা হত ভক্তিযোগী। শিব বিষ্ণু কি শক্তিতে উদ্দেশ্য করেই ভক্তের ...ভগৎ হলেন এমন একজন পবিত্র মানুষ যিনি মানবজাতিকে ঈশ্বরের দিকে ভগৎ মানে গুরু। রামানন্দ ছিলেন সেই রকম গুরু। কবিরও পেশায় তাঁতীই ছিলেন। আর কবি হিসেবে অতুলনীয়। শিখদের পবিত্র গ্রন্থে তাঁর রচিত ৫০০ পদ্য রয়েছে। শিখরা তাঁকে গুরুর সম্মান দিয়েছে। কবির খোলাখুলিই অপর স¤প্রদায়গুলি সমালোচনা করেছেন। এভাবে ভারতীয় চিন্তার ইতিহাসে এক নবতর অধ্যায় সংযোজন করেছেন তিনি। তাঁর কবিতার সার্বজনীন আকর্ষন রয়েছে। পৃথিবীব্যাপী তাঁর যে সম্মান একারনেই। কবিরকে যে সার্বজনীন গুরু বলা হয় তা অকারণে নয়। কবির মনে করতেন যে-জীবন দুটো আধ্যাত্মিক নীতির আন্তক্রিয়া।একটি জীবাত্মা; অন্যটি পরমাত্মা। এই দুই আধ্যাত্মিক নীতির মিলনই মুক্তি। কবিরের মতবাদে মিশেছে হিন্দু কর্মের ধারণা ও ইসলামী সুফীবাদ। হিন্দু মুসলিম ছাড়াও শিখদেরও অনুপ্রানিত করেছেন কবির। তিনি বেদকোরন ফেলে সহজ পথের যাত্রী হতে বলতেন। ছিলেন বর্ণবাদ বিরোধী। কবিরের গুরু ছিলেন সৎগুরু। কবিরের কয়েকটি কবিতা- Between the conscious and the unconscious, the mind has put up a swing: Between the conscious and the unconscious, the mind has put up a swing: all earth creatures, even the supernovas, sway between these two trees, and it never winds down. Angels, animals, humans, insects by the million, also the wheeling sun and moon; ages go by, and it goes on. Everything is swinging: heaven, earth, water, fire, and the secret one slowly growing a body. Kabir saw that for fifteen seconds, and it made him a servant for life. O how may I ever express that secret word? O how can I say He is not like this, and He is like that? If I say that He is within me, the universe is ashamed: If I say that He is without me, it is falsehood. He makes the inner and the outer worlds to be indivisibly one; The conscious and the unconscious, both are His footstools. He is neither manifest nor hidden, He is neither revealed nor unrevealed: There are no words to tell that which He is. The Drop and the Sea I went looking for Him And lost myself; The drop merged with the Sea -- Who can find it now? Looking and looking for Him I lost myself; The Sea merged with the drop -- Who can find it now? কবিরের কবিতার রবীন্দ্র অনুবাদ http://www.sacred-texts.com/hin/sok/ উদ্ধৃতি http://thinkexist.com/quotes/kabir/ আরও কবিতা http://www.poetry-chaikhana.com/K/Kabir/ সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০২
false
rg
মোবাইল কোম্পানিগুলো সারাক্ষণ মানুষকে নানাভাবে বিরক্ত করছে। বিটিআরসি এসব জেনেও না জানার ভান করছে। এ কোন ডিজিটাল বিরক্তি রে ভাই!! বাংলাদেশ টেলিকমুনিকেশান রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি আমাদের কি কি সেবা দেয়? আমাদের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো চব্বিশ ঘণ্টা এসএমএস পাঠিয়ে, সরাসরি ফোন করে এই যে সারাদিন ১৬ কোটি মানুষকে সারাক্ষণ বিরক্ত করছে, এটা দেখার দায়িত্ব কার? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, ওরা কি প্রধানমন্ত্রীর মোবাইলেও এটা করে? টেলি যোগাযোগ মন্ত্রীর ফোনেও এটা করে? প্রধানবিচারপতির মোবাইলেও এটা করে?মোবাইল কোম্পানিগুলো যদি এটা শুধু আম-পাবলিকের জন্য করে থাকে, তাহলে বিটিআরসি'র কাছে আমার একখান কথা আছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো এভাবে পাবলিককে সারাক্ষণ বিরক্ত করার লাইসেন্স বিটিআরসি কিভাবে দেয়? টাকার বিনিময়ে মোবাইল সেবা আমরা নেই। আমরা তো ফাও ফাও বিরক্ত নেবার জন্য মোবাইল ব্যবহার করি না রে ভাই। মোবাইল কোম্পানিগুলো এই যে মানুষকে সারাক্ষণ বিরক্ত করছে, এটা দেখার দায়িত্ব বিটিআরসি এড়াতে পারে না। টাকা দিয়ে সেবার পরিবর্তে মোবাইল ফোনগুলো এক্সট্রা বিরক্ত ধরিয়ে দিচ্ছেরে ভাই। এই বিরক্ত আমি আর নিতে পারছি না। একান্ত প্রয়োজন না পরলে আমি এই মোবাইল ব্যবহারই করতাম না। মোবাইল কোম্পানিগুলো সারাদিনে যেভাবে বিরক্ত করছে, এটা মানুষের স্বাভাবিক সহ্যসীমাকে বারবার লংঘন করার সামিল।ফেসবুকে আমার বন্ধু তালিকায় কি কোনো আইনজীবী আছেন? আমি মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এই পাবলিককে বিরক্ত করার জন্য আইনগত ভাবেই নোটিশ করতে চাই। এসএমএস-এর বিরক্ত তো আছেই। তার উপর এখন সরাসরি ফোন করে। এটা কোন উৎপাত? আমি তো টাকা দিয়ে উৎপাত কিনি নাই রে ভাই।বিটিআরসি মোবাইল কোম্পানিগুলোর এই বিরক্তিকর ব্যাপারটিকে এড়িয়ে যেতে পারে না। মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ওফারগুলো নানান মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোক্তাদের জানাতে পারে। অন্তত মাসে একবার গ্রাহককে যদি এসএমএস করে তাদের সেবার কোনো আপডেট জানায়, সেটাও অনেকটা সহ্যের মধ্যে পরে। কিন্তু রোজ একই বিষয়, ঘণ্টায় ঘণ্টায় একই বিষয়ে এসএমএস পাঠিয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলো মানুষকে আসলে কি বুঝাতে চায়? অবস্থা দেখে মনে হয়, আমাদের মোবাইল কোম্পানিগুলোতেই পৃথিবীর সবচেয়ে চালাক-চতুর মানুষ নামের বিরক্তিকর প্রাণীগুলো বসে আছে। এরা মানুষকে আর কত ভাবে বিরক্ত করা যায়, তাই সারাক্ষণ গবেষণা করে বের করে।সত্যি সত্যি আমি মোবাইল কোম্পানিগুলোর সারাদিনের এই বিরক্তিকর জ্বালায় অতিষ্ট। আর বিটিআরসি নিশ্চয়ই সবাইকে বিরক্ত করার লাইসেন্স মোবাইল কোম্পানিগুলোকে দেয় নাই।মোবাইল ফোনের এই বিরক্ত কেন আমাকে বিনা পয়সায় সারাদিন হজম করতে হবে? মানুষকে বিরক্ত করার এই স্পর্ধা এরা কোথায় পেল? কাদের স্বার্থে পেল? কারা এদের সেই বিরক্ত করার লাইসেন্স দিয়েছে? বিটিআরসি কে অনুরোধ করব, দয়া করে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে এসব বিরক্তিকর বিষয়গুলোকে বন্ধ করার নির্দেশ দিন। .....................................১৯ মে ২০১৫ ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৪২
false
ij
ঢাকায় এসেছিলেন শিখধর্মের পথিকৃৎ গুরু নানক শিখ ধর্মের পথিকৃৎ গুরু নানক (১৪৬৯-১৫৩৯) । নানক ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় এসেছিলেন। তথ্যটি শিখদের একটি ওয়েভসাইট থেকে জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুদোয়ারা নানকশাহী তাঁরই স্মৃতি বহন করছে। তৎকালীন সুজাতপুর মৌজায়, এখনকার নীলক্ষেত রোড, তিনি তাঁর জীবনদর্শন আলোচনা করেছিলেন-যার কিছুটা আগের একটি পোষ্টে আলোচনা করেছি। নানক একটি গুরুত্বপূর্ন কথা বলেছিলেন:"Realisation of Truth is higher than all else. Higher still is truthful living"... যে কারণে ভাবতে ভালো লাগে যে একজন একেশ্বরবাদী পাঞ্জাবী সাধু নানক এর পদধূলিতে ধন্য হয়েছিল আমাদের প্রিয় ঢাকা ... ঢাকার পুরনো মানচিত্র। অবশ্য ষোড়শ শতকের নয়, পশ্চিমে দেখা যাচ্ছে ধানমন্ডি । এখানে প্রথম নৌকা থেকে নেমেছিলেন গুরু নানক । ষোড়শ শতকের (১৫০০) প্রারম্ভের কথা বলছি। সে সময় ঢাকার রায়ের বাজার আর ধানমন্ডির ছিল গ্রাম । সে গ্রামের নাম শিবপুর। বলাবাহুল্য, এই নামটি পরে বদলে যায়। শিবপুর গ্রামের দক্ষিণ পশ্চিমে বইত বুড়িগঙ্গা। একালে মতো কালো বিবর্ণ ছিল না নিশ্চয়ই-ছিল স্বচ্ছসলিলা, প্রশস্ত। শিবপুর ঘাটে ভিড়ত কত নৌকার । ঘাটে হাট-বাজার। দোকানপাট। লোকে ভিড়ে গমগম করত। বাংলার চিরায়ত দৃশ্য। নানক এমনই দৃশ্য দেখেছিলেন শিবপুর গ্রামে ... ১৫০৪ সাল। শিবপুর ঘাটে নৌকা থেকে নামল ৩৫ বছরের এক পাঞ্জাবি যুবক। পাটল রঙের গোরুয়া পরা সে যুবকের নাম নানক দেব। যুবক তত্ত্বদর্শী। দেশ ভ্রমনে বেরিয়েছে-জেনে নিতে চায় একেশ্বরের নানা রূপ; জগতে কীভাবে একেশ্বর নিজেকে নানা বিভঙ্গে ছড়িয়ে রেখেছেন। যুবককে ঈষৎ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। কেননা সে মিথিলা, কান্তনগর (দিনাজপুর), কামরুপ এবং সিলেট হয়ে দীর্ঘপথ ভ্রমন করে ঢাকা এসেছে। যুবকের কয়েকজন সহচর ছিলেন। তারাও তত্ত্বদর্শী । তারাও চোখকান খুলে রেখে দেখে নিচ্ছে সব। এই মানচিত্রটি খুঁটিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন সাধু নানক এর (নৌ) ভ্রমন পথটি কেমন ছিল। নানক যখন ঢাকায় এলেন তখন বাংলাকে বলা হত ‘বাঙ্গালাহ।’ বাংলায় তখন হোসেনশাহী বংশের শাসন। (১৪৯৪-১৫১৯) ...অতএব ঢাকাও। কিন্তু, তার আগে? নবশ শতকে সেনদের অধীনে চলে যাওয়ার পূর্বে ঢাকা ছিল কামরুপের বৌদ্ধ রাজাদের নিয়ন্ত্রনে। ১২ শতকে বল্লাল সেন ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঢাকা নামটির উৎস সম্ভবত ওই ঢাকেশ্বরী শব্দটি। অনেকে আবার বলেন যে সেকালে ঢাকার আশেপাশে থরে থরে ঢাক ফুল (Butea frondosa) ফুটে থাকত বলেই ওই নাম। Butea frondosa ফুল সে যাই হোক। ১৬০৮ সালে মুগলরা আসার পূর্বে দিল্লী সুলতানশাহীর শাসন ছিল ঢাকা। সুলতানী আমলেই ঢাকা নগরকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। লক্ষী বাজার, শাঁখারি বাজার, তাঁতী বাজার, পাটুয়াটুলী, কুমারটুলি, বানিয়া নগর-এসব এলাকা ধীরে ধীরে রুপ লাভ করে। পরে মুগল আমলে প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছিল ঢাকা। ঢাকার সত্যিকারের প্রতিষ্ঠা তখন থেকেই। ঢাকার মানচিত্র। পশ্চিমে ধানমন্ডি ... নানক সম্ভবত কোনও উদার হৃদয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন । বাঙালি অতিথি পরায়ণ। নানক সব লক্ষ করছিলেন। শিবপুর বর্ধিষ্ণু গ্রাম হলেও অধিকাংশ স্থানীয় জনগন স্বচ্ছল নয়। বিশুদ্ধ পানির বড় অভাব। দূষিত পানি রোগশোকের কারণ। নানক শিবপুর গ্রামের জাফরাবাদ এলাকায় পানীয় জলের অভাব দূর করতে একটি কূপ খনন করালেন । পরে নাকি সেখানে বিদেশি অতিথিদের স্নানের সুবিধার্থে এক স্থানীয় শাসক পুকুর খনন করিয়েছিলেন । লোকে বলত, সে পুকুরের জলে ছিল নাকি অলৌকিক ক্ষমতা। যা হোক। ১৯৫৯ অবধি সে কূপটি শিখরা দেখভাল করত। পরে আবাসন প্রকল্পের জন্য সরকার জমি বন্টন করে দেয় । নানক এর কুয়াটি বর্তমানে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ২৬ নং সড়কের ২৭৮ বাড়িতে অবস্থিত । ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ছবি। নানক ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নাম শুনেছিলেন। শিষ্যদের নিয়ে সে মন্দিরে গেলেন একদিন। মন্দিরে পূজারীর ভিড়। দেবী মূর্তিটি সম্বন্ধে শুনলেন স্থানীয় প্রচলিত উপকথাটি। দেবী মূর্তিটি নাকি মাটির নিচে পাওয়া গিয়েছিল। তাই এর নামকরণ এরূপ, অর্থাৎ, ঢাকেশ্বরী। বাংলার প্রাচীন সেন রাজা রাজা বল্লাল সেন মূর্তিটি খুঁজে পান। গুরু নানক। এখন যেটা ঢাকার নীলক্ষেত, তখন ছিল সুজাতপুর মৌজা। নানক সেখানে একটি মাঞ্জি প্রতিষ্ঠা ধর্মীয় উপদেশ দিতে লাগলেন। মাঞ্জি শব্দটি পাঞ্জাবি ভাষার-এর অর্থ আধ্যাত্মিক আলোচনার কেন্দ্র । পরে এটাই হয়ে ওঠে নানকশাহী গুরুদোয়ারা। ব্রিটিশ আমলে রমনা অর্ন্তগত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নানক কি জানতেন তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাঞ্জির পাশ ঘেঁষেই একদিন গড়ে উঠবে বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠটি? ঢাকার নানকশাহী গুরুদোয়ারা। গুরু নানক এর স্মৃতি রক্ষার্থে এটি নির্মাণ করেছিলেন ভাই নাথ নামে এক ধনী শিখ। বাংলার মুগল সুবাহদার শায়েস্তা খানের (১৬৬৪-১৬৮৮) কন্যা পরীবিবির মাজারের অনুকরণে ভবনটি তৈরি হয়। ১৮৩০ সালে গুরুদোয়ারা নানকশাহীর নির্মান কাজ শেষ হয়। নানক ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম। সেখানে চক বাজারে একটি মাঞ্জি স্থাপন করেন। তারপর চট্টগ্রাম থেকে প্রথমে কলকাতা পরে উড়িষ্যার পুরী হয়ে পাঞ্জাব ফিরে গিয়েছিলেন সেই আধ্যাত্মিক যুবকটি। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:০৭
false
rn
নরক পৃথিবী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছি। পকেটে কোনো টাকা নেই। তিন মাস আগে হঠাত চাকরী চলে গেল। অফিসে আমি প্রচুর পরিশ্রম করতাম। অফিসের কাজে লোকাল বাসে দৌড়ে দৌড়ে উঠতাম। বাসে কোনো দিনই সিট পেতাম না। বানরের মতন ঝুলে থাকতাম। রোদ বৃষ্টির মধ্যে এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানীতে ছুতে যেতাম। দুপুরের খাবার খেতাম- বিকেলে। প্রতিদিন একই অবস্থা হতো। চাকরীটা চলে যাওয়ার পর মনে হলো- কে যেন আমাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিল। জানি না সাঁতার, নেই কোনো নৌকা। পরিচিত অপরিচ সবার কাছে কাজ চাইলাম, কেউ একটা চাকরী দিল না। অভাবে অভাবে অনেকটা পাগলের মতন হয়ে গেলাম। ঘরে যা বিক্রি করার মতন ছিল সব বিক্রি করে দিয়েছি। মনে মনে ভেবে রাখলাম- ভাল একটা চাকরী পেলে আবার সব কিনব। কাছের পরিচিতরা সব জেনেও কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলো না। বউ অসুস্থ হয়ে পড়লো, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারলাম না। ছোট বাচ্চাটা চোখের সামনে না খেয়ে থাকে এই দৃশ্যও দেখতে হচ্ছে। আমার মা-বাবা, ভাই-বোন এবং ধনী আত্মীয় স্বজন সবাই'ই আছে। শ্বশুর বাড়ির অবস্থাও খারাপ না। বউ কঠিন গলায় বলেছে, খবরদার কখনও আমার বাপ- ভাইয়ের কাছে হাত পাতবে না। না খেয়ে মরে গেলেও না। আমি আমার বাপ ভাইয়ের কাছে ছোট হতে পারব না। এই অপমান আর কষ্ট তুমি আমাকে দিও না। বউ এর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি যাইনি শ্বশুর বাড়ি। চাকরী চলে যাবার পর অনেকের কাছেই হাত পেতেছি কিন্তু শ্বশুর বাড়ি যাইনি। তাদের কে আমার অবস্থার কথা কিছুই জানাইনি। চাকরীর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। এক বড় কোম্পানিতে গেলাম চাকরীর জন্য। এমডিকে বললাম, বউ অসুস্থ, ছোট বাচ্চাটাকে ঠিকভাবে খাবার দিতে পারি না। অন্তত পক্ষে একটা পিয়নের কাজ হলেও দেন। এমডি আমার চোখের পানি দেখলেন তবুও চাকরীটা দিলেন না। সব কোম্পানীর এমডি আর চেয়ারম্যান একই কাজ করলেন। আর বেশ কয়েকজন তো আমার সাথে কথা'ই বললেন না। তাদের কাছে একটা চাকরী কোনো ব্যাপারই না। একটা চাকরী পাওয়া আমার জন্য অনেক দরকার। একটা চাকরী পেলে বউ বাচ্চা নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারব। একজন বললেন, মামা চাচা ছাড়া এই সমাজে চাকরী পাওয়া যাবে না। যতই যোগ্যতা থাক।আমার তিন বছরের বাচ্চাটাকে নিয়ে যখন রাস্তায় বের হই, বাচ্চাটা রাস্তার পাশের দোকানে ঝুলে থাকা চিপস দেখলেই খেতে চায়, আইসক্রীম কিনতে চায় বিস্কুট কিনতে চায়- কিন্তু আমি এমনই একজন ব্যর্থ বাবা মেয়েটার সামান্য ইচ্ছাও পূরন করতে পারি না। একবার, আমার বাসার কাছে মসজিদের সামনে একটা ফলের দোকান আছে, সেই দোকানে আঙ্গুর দেখে মেয়েটা খেতে চাইল। খুব জিদ করল- কিন্তু আমি কিনে দিতে পারলাম না। নাই চাকরী। পকেটে নাই টাকা। পরে রেগে গিয়ে আমি মেয়েকে একটা থাপ্পড় দিলাম। মেয়েটা বাসায় ফিরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। সেদিন সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি। সারারাত কেঁদেছি। কি কষ্ট...কি কষ্ট। আমার মেয়েটা ওর মার ওড়না দিয়ে খুব সুন্দর করে প্যাচিয়ে শাড়ি পরে। আবার একটা ঘুমটাও দেয়। আমার কাছে এসে বলে- বাবা দেখ আমি কি সুন্দর সেজেছি। সেদিন মনে মনে ভাবলাম, মেয়েটা শাড়ি পড়তে এত পছন্দ করে, ওকে একটা বাচ্চাদের শাড়ি কিনে দেব। একদিন গুলশানে দেখলাম এক লোক হাতে নিয়ে ছোট বাচ্চাদের শাড়ি বিক্রি করছে। তখন আমার পকেটে আশি টাকা ছিল। ভাবলাম আশি টাকা দিয়েই শাড়ি কিনব। হেঁটে বাসায় ফিরব। বিক্রেতার কাছ থেকে অনেক সময় নিয়ে লাল রঙের একটা শাড়ি নিলাম। শাড়িটা খুব সুন্দর। মনের চোখ দিয়ে একবার ভেবে নিলাম আমার মেয়েটাকে কেমন লাগবে! বিক্রেতা দাম বলল, ২২০ টাকা। পকেটে আছে মাত্র ৮০ টাকা। মেয়েটার জন্য শাড়িটা আর কেনা হলো না। দুঃখ-কষ্টে যেন কলিজাটা ছিরে গেল। একবার ইচ্ছা করলো- বিক্রেতার কাছ থেকে শাড়িটা নিয়ে এক দৌড় দেই। শাড়িটা পেলে আমার মেয়েটা অনেক খুশি হবে। তাহলে আর ওর মার ওড়না প্যাচিয়ে কষ্ট করে পড়তে হবে না। দরিদ্র লোকদের সব সময় কঠিন অসুখ হয়। আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু আমার কাছে কয়েক 'শ টাকাও নেই। এই জন্যই মাঝে মাঝে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। যখন চাকরী ছিল, তখন অন্তত তিনবেলা ডাল-ভাত খেতে পারতাম। রাতে খাওয়ার পরে আয়েশ করে একটা গোল্ডলিফ সিগারেট ধরাতাম। প্রতিমাসে পুরান বইয়ের দোকান থেকে ৫০০ টাকার বই কিনতাম। সারা মাস সেই বই পড়তাম। মনে হতো, জীবনটা মন্দ নয়। আমার বিলাসিতা বলতে দু'টা জিনিস। বই আর চা-সিগারেট। চাকরী চলে যাওয়ার পর এখন খুব ইচ্ছা করলেও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চা-সিগারেটও খেতে পারি না। তবে দুই একটা চায়ের দোকান আমাকে বাকিতে চা-সিগারেট দেয়। আমার আব্বার কাছে গেলাম। আব্বাকে বললাম, সংসারের এই পরিস্থিতি। আব্বা খুব মন দিয়ে সব শুনে বলল- বিয়ের আগে কেন চিন্তা করো নাই, এখন আসছো আমার কাছে সাহায্য চাইতে। অনেক রাগারাগি করে আব্বা আমার হাতে ১০০০ টাকা দিল। মনে মনে ভাবলাম, আব্বার'ই বা কি দোষ- সে তিন-চারটা বিয়ে করেছে, অনেক গুলো ছেলে মেয়ে। সে আর কি-ই বা করতে পারে আমার জন্য। কিন্তু এক সময় আব্বার অনেক টাকা পয়সা ছিল। চাইলেই পেতাম। কোনো দ্দিন মানা করত না। আমার ভাইয়েরা ভাল চাকরী করে। তাদের অনেক টাকা। এক ভাই তো ছুটি কাটাতে মালোয়েশিয়া যায় বউ বাচ্চা নিয়ে। অন্য ভাই যায় কক্সবাজার। বড় ভাইয়ের বাসায় গেলাম। ভাই এর সাথে দেখা হলো না। ভাই নাকি অফিসের কাজে নেপাল গিয়েছে। ভাবী অনেক খাতির জন্য যত্ন করলেন। বাধ্য হয়ে ভাবীকে সব বললাম। সব শুনে ভাবী অনেক কষ্ট পেলেন। বড় ভাইয়ের পুরান জামা কাপড় আমাকে দিলেন। জুতো দিলেন দুই জোড়া। আমার স্ত্রীর জন্য তিনটা ছেঁড়া শাড়ি দিলেন। হাতে সতের 'শ টাকা খুঁজে দিলেন। ভাবীর এই উদারতা দেখে আমার চোখ ভিজে উঠলো। ইচ্ছা করলো বাবু বাজার ব্রিজের উপর উঠে নিচে একটা লাফ দেই। মা'র কাছে গেলাম। মা আমার কোনো কথাই শুনতে চাইল না। বলল, তোমার অন্য ভাইরা তো ভাল আছে, তোমার এই অবস্থা কেন? তোমার এই অবস্থার জন্য দায়ী তোমার বউ। বউ কে তাকাল দিয়ে আসো। তারপর যা পারি- তোমার জন্য করবো। আমি বললাম, মা তুমি এই সব কি বলছো? ও খুবই ভাল একটা মেয়ে। মা আমার সাথে সৎমার মতন আচরন করল। সেদিন মা'র কাছ থেকে অনেক কষ্ট পেয়ে বাসায় ফিরলাম। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব আশাবাদী মানূষ। বড় বড় স্বপ্ন দেখতে আমি একটুও ভয় পাই না। আমি জানি, আমি একজন সৎ মানুষ। এবং অবশ্যই মেধাবী। কেউ একজন হাত বাড়ালেই আমি তর তর করে উপরে উঠে যেতে পারব। আমার বিশ্বাস করতে ভাল লাগে- সু সুময় আসবে। আসবেই। আমার ভাবতে ভাল লাগে- ভাল একটা চাকরী পাব, ছোট বাচ্চাটাকে অনেক গুলো দামী শাড়ি কিনে দেব, খেলনা কিনে দেব। ভাল একটা স্কুলে ভরতি করে দিব। দোকানে নিয়ে গিয়ে- দোকানের সব চিপস কিনে দেব। স্ত্রীকে সঠিক চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলব। শীতের মৌসুমে স্ত্রীর আর বাচ্চাকে নিয়ে বেড়াতে যাব নীলগিরি পাহাড়ে। স্ত্রীর যদি পাহাড় ভাল না লাগে তাহলে ওকে নিয়ে যাব কক্সবাজার। আমরা তিন জন সমুদ্রের পাড়ে হাঁটব। বিশাল বিশাল ঢেউ এসে আমাদের পা ভিজিয়ে দেব। আমার মেয়েটা ভয় পেয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরবে। আমার বউ শক্ত করে ধরে থাকবে আমার হাত। যেন সমুদ্রের বিশাল ঢেউ এসে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। চাকরী টা পাওয়ার পর নিজের ঘর এবং ঘরের মানুষদের দায়িত্ব পালনের পর সমাজে পতিত মানুষদের টেনে তুলব। রাস্তার পাশে শুয়ে-বসে থাকা দরিদ্র বাচ্চাদের কোলে তুলে নিয়ে শাড়ি কিনে দেব, দোকানে নিয়ে অনেক চিপস, আইসক্রীম, বিস্কুট আর ফলের দোকান থেকে আঙ্গুর কিনে দেব। মাকে হজ্বে পাঠাবো। ভাবীকে অনেক গুলো নতুন শাড়ি কিনে দেব, আব্বাকে অনেক টাকা দেব, বিপদে-আপদে যে সব কাছের মানুষরা আমাকে সাহায্য না করে তাড়িয়ে দিয়েছে- আমি নিজে থেকে তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব। আমার যা দায়িত্ব, আমি তার থেকে অনেক বেশি করবো। অনেক বেশি করতে চাই।
false
fe
ত্যাগের মহিমা, উৎসবের আলো ও মানবিক জীবন ত্যাগের মহিমা, উৎসবের আলো ও মানবিক জীবনফকির ইলিয়াস============================================আরেকটি ঈদুল আজহা আমাদের জীবনে এলো। এলো ত্যাগের মহিমা নিয়ে। ত্যাগ মানেই সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির নীতিবাক্য। শান্তির প্রয়োজনে মানুষকে এসব নীতি মেনে চলতে হয়। আইন করে সব নীতি মানুষকে শেখানো যায় না। কিছু কিছু বিষয় আছে বিবেক প্রসূত। প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেয়ার যে প্রয়োজন তা মানুষ জন্মেই শিখে। মানুষ শিখে নেয়, আকাশের দিকে তাকাবার সাহস। সূর্য থেকে আলোস্নানের প্রেম। মৃত্তিকা থেকে সবুজ আহরণের পর্ব।ঈদুল আজহায় মুসলমানেরা ত্যাগের দীক্ষা নেন। যে নির্দেশ পালন করতে গিয়ে হজরত ইব্রাহিম নিজ পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কুরবানি দিতে এগিয়ে এসেছিলেন তা ছিল একটি পরীক্ষা। তিনি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) এই ত্যাগের আদর্শকে স্মরণ করার জন্য বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায় প্রতি বছর ঈদুল আজহায় হালাল পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু তারা মনের পশু কুরবানি দিতে পারেন কি? যদি পারতেন তাহলে আজকের বিশ্বে এত হিংসা কেন? এত বিভেদ কেন? এত হানাহানি কেন?আমি খুব সামান্য মানুষ। খুব সহজভাবে ধর্মে মানবিক বিষয়গুলো বিবেচনা করি। ইসলামের ইতিহাস আমাদের কি শিক্ষা দেয়? তা কি আমরা মনে রাখি সবসময়? আমরা কি ভুলে গেছি, মহানবী (সা.)-এঁর বিদায় হজের ভাষণের কথা।৯ জিলহজ দশম হিজরি মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) শুক্রবার ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয়ের পর মিনা হতে আরাফাহ ময়দানের পূর্বদিকে নামিরা নামক স্থানে তাঁবু স্থাপন করা হলে, সেখানে পৌঁছে দুপুর পর্যন্ত সেই তাঁবুতে অবস্থান করেন। জুমার নামাজ আদায় করে তিনি কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর ওপর আরোহণ করে আরাফার সন্নিকটে ‘আরনা’ প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে প্রায় এক লাখ বিশ হাজার লোকের সমাবেশে তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজের খুতবা বা ভাষণ প্রদান করেন। তাঁর প্রতিটি বাক্যই রাবিয়া বিন উমাইয়া বিন খালাফ (রা.) কর্তৃক পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। নামাজ আদায় করার পর আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন-হে মানবমণ্ডলী! তোমরা আমার কথাগুলো মন দিয়ে শ্রবণ কর; কেননা, আমি এ বছরের পর এ স্থানে তোমাদের সঙ্গে পুনরায় নাও মিলিত হতে পারি। আগত ও অনাগতকালের হে মানবমণ্ডলী! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে মিলিত না হচ্ছো তোমাদের রক্ত ও তোমাদের ধন-সম্পদ এই দিন ও এই মাসের মতোই পবিত্র। নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে মিলিত হবে, যখন তোমাদের প্রভু তোমাদের কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন এবং আমি তোমাদের তাঁর সংবাদ পৌঁছে দিয়েছি। তিনি বলেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমরা আমার কথাগুলো অনুধাবন কর নিশ্চিত করে বুঝতে। তোমরা শিক্ষা পেয়েছ প্রত্যেক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই, সব মুসলমানই এ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। এটা কোনো মানুষের জন্যই অবৈধ নয়। অনুমতি ব্যতীত অন্যের জিনিস গ্রহণ করবে না। সুতরাং কেউ কারো প্রতি অবিচার করো না।তিনি বলেছিলেন, সাবধান! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করো না। এই বাড়াবাড়ির ফলে তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। তোমরা ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া ও রক্তপাতে লিপ্ত হয়ো না। তোমরা পরস্পর পরস্পরের ভাই। হে মানববৃন্দ! কোনো দুর্বল মানুষের ওপর অত্যাচার করো না, গরিবের ওপর অত্যাচার করো না, সাবধান! কারো অসম্মতিতে কোনো জিনিস গ্রহণ করো না। সাবধান! মজুরের শরিরের ঘাম শুকাবার আগেই তার মজুরি মিটিয়ে দিও। তোমরা যা খাবে ও পরবে তা তোমাদের দাস-দাসিদের খেতে ও পরতে দিও। যে মানুষ দাস-দাসিদের ক্ষমা করে ও ভালোবাসে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন ও ভালোবাসেন। এই ছিল মহামানবের শিক্ষা। সেই শিক্ষা কি পালিত হচ্ছে আজকের সমাজে? না, হচ্ছে না। যদি হতো, তাহলে আজ একটি পক্ষ অন্য ধর্মের মানুষের ওপর হামলে পড়ত না।সিলেটের ইসকন মন্দিরে হামলা করা হয়েছে। নামাজে থাকা অবস্থায় মন্দিরে বাদ্যযন্ত্র বাজানোয় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। নামাজ শেষ হওয়ার পর ‘অতি উৎসাহী’ কিছু লোক মন্দিরের বাইরে গিয়ে ঢিল ছোড়ে। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যেত। আক্রমণ করে এভাবে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটানো হবে কেন?পূজামণ্ডপে হামলা বাংলাদেশে একটি প্রাত্যহিক বিষয়। আর ক’দিন পরই শুরু হচ্ছে দূর্গাপূজার উৎসব। চলতি বছরেরই কয়েকটি সংবাদ আমরা আবারো পড়তে পারি।১. কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সরস্বতী পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতকারীরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর মধ্যবাজারের স্বর্ণকারপট্টির সন্নিকটে গৌরচাঁদ কর্মকারের বাড়ির সামনে সরস্বতী পূজামণ্ডপ নির্মাণাধীন অবস্থায় একদল দুষ্কতকারী হামলা চালায়। এ সময় পূজামণ্ডপ ভাঙচুরসহ মণ্ডপ নির্মাণকারী শ্রমিকদের বেধড়ক মারধর করে। ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভেড়ামারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। [মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ প্রকাশিত সংবাদ ]২. কক্সবাজারের ১০টি মন্দিরে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে আইএস। ডাকযোগে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের প্রধান কার্যালয়ে এই চিঠি পাঠানো হয়। এই ঘটনার পর সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রণজিত দাশ।এডভোকেট রণজিত দাশ জানান, ডাকযোগে পাঠানো চিঠিটি বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে তার হস্তগত হয়। চিঠিটি হাতের লেখা। চিঠিতে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো ‘বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি কক্সবাজার। আইএস জঙ্গি সংগঠন। আগামী ৩০ শে জুলাইয়ের মধ্যে কক্সবাজারের সর্বপ্রথম মন্দিরে হামলা চালাবো। বাহ্ম মন্দিরে, এরপর কালিবাড়ি, ইসকন মন্দির, কৃষ্ণনন্দ ধাম, শংকর মঠে বড় ধরনের হামলা চালাবো, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম। আমরা যতদিন পর্যন্ত হিন্দুরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে না ততদিন পর্যন্ত এ জিহাদ চলবে। ’[জুলাই ১৫, ২০১৬ প্রকাশিত সংবাদ]এই হলো বাংলাদেশের খণ্ডচিত্র। মানুষ আজ জিম্মি হয়ে পড়ছে মানুষের কাছে। রহিত হয়ে যাচ্ছে মানবিক চেতনা। আমরা জানি, যে কোনো ধর্মীয় প্রার্থনা কিংবা উৎসব মানুষকে নত হতে শেখায়। কিন্তু আজকের বিশ্বের মানুষ উগ্রবাদিতার দিকে এগোচ্ছে কেন? তা থামানো যাবে কিভাবে?আজ প্রয়োজন সব সামাজিক শক্তির সম্মিলিত উদ্যোগ। মানবিক চেতনা জাগরিত করেই কেবল এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজ যেটা সবচেয়ে জরুরি তা হচ্ছে মানবিক সহনশীলতা। সংলাপের মাধ্যমে প্রজন্মকে জাগানো। ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। অন্য ধর্ম, অন্য সংস্কৃতির মানুষকে জানার চেষ্টা। তার জন্যই প্রয়োজন পরিশুদ্ধ জ্ঞানার্জন। মানবিক বোধ জাগরিত করার একটা বড় ক্ষেত্র হচ্ছে প্রতিদিনের শিক্ষা। মানুষ মূলত প্রকৃতির ছাত্র। বিষয়টি মনে রাখতে পারলেই তার অহঙ্কার দমিত হবে এবং অনুধাবন করা যাবে, রক্তের বিনিময়ে আর যাই হোক বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।-----------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৩৯
false
mk
নিজামীর বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ এ মামলার সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয় গত বছর শেষ দিকে। দুই দফা যুক্তিতর্ক শেষে চলতি বছর ২৪ জুন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণও রাখা হয়েছিল। ওই দিন রায়ের সকালে নিজামীর ‘অসুস্থতায়’ রায় ঝুলে যায়। প্রথম দফায় রায় অপেক্ষমাণ রাখার সাড়ে ১১ মাস পর অবশেষে বুধবার সকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছেন।জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুর দিনগুলিতে ছিলেন জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। পদাধিকার বলে তিনি ছিলেন আল-বদর বাহিনীর প্রধান, যে আধাসমরিক সংগঠন পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় দেশজুড়ে হত্যা, ধর্ষণসহ ব্যাপক যুদ্ধাপরাধ ঘটায়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের বুদ্ধজীবীদের হত্যা করাই ছিল এ বাহিনীর মূল লক্ষ্য।নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ধারায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৪(১) ও ৪(২) ধারায় আনা হয়েছে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’র অভিযোগ।২০১২ সালের ২৮ মে মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই জামায়াত নেতার বিচার শুরু হয়।অভিযোগ-১: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালানোর কারণে একাত্তরের ৪ জুন পাকিস্তানি সেনারা পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউস ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ১০ জুন তাকে ইছামতী নদীর পাড়ে আরো কয়েকজনের সঙ্গে হত্যা করা হয়।এ ঘটনায় আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-২: একাত্তরের ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে ওই সভায় নিজামী বলেন, শিগগিরই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে ১৪ মে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে সেদিন ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।এ ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (জি), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-৩: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ব্যবহৃত হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প হিসাবে। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প খুলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে।ট্রাইব্যুনালে নিজামীট্রাইব্যুনালে নিজামীনিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।এখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), (জি) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-৪: নিজামীর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় রাজাকার বাহিনী পাবনার করমজা গ্রামে হাবিবুর রহমান নামে একজনকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ৮ মে নিজামীর রাজাকার ও আলবদর বাহিনী ওই গ্রাম ঘিরে ফেলে নয়জনকে হত্যা করে। রাজাকার বাহিনী একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।এ ঘটনায় হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামির বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-৫: ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে নিজামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতেরবাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে ২১ জন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। সেখানে বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগও করা হয়।নিজামীর এ ঘটনায় হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-৬: নিজামীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামের ডা. আব্দুল আউয়াল ও তার আশেপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে।এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-৭: একাত্তর সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে নিজামীর দেওয়া তথ্যে রাজাকার বাহিনীকে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সেলিমের বাবা সোহরাব আলীকে আটক করে। তাকে রাস্তায় নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর স্ত্রী ও সন্তানদের সামনেই হত্যা করা হয়।এ ঘটনায় নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তখনকার বদর নেতা নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-৮: একাত্তরের ৩০ আগস্ট ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান নিজামী তার সংগঠনের তখনকার সেক্রেটারি আলী আহসান মুজাহিদকে সঙ্গে নিয়ে নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে যান এবং সেখানে আটক মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল, বদি, রুমি (শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে), জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাদের গালিগালাজ করেন। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে নিজামী বলেন, রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আদেশের আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। নিজামীর পরামর্শ অনুযায়ী পরে জালাল ছাড়া বাকি সবাইকে হত্যা করা হয়।এ ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-৯: নিজামী ও রাজাকার বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানি বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রফুল্ল, ভাদু, মানু, স্বস্তি প্রামানিক, জ্ঞানেন্দ্রনাথ হাওলাদার ও পুতুলসহ ৭০ জনকে হত্যা ও ৭২টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।এ ঘটনায় একটি সম্প্রদায়কে নির্মূল করতে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), (সি), (আই), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-১০: মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে পাবনার সোনাতলা গ্রামের অনিল চন্দ্র কুণ্ডু নিরাপত্তার জন্য ভাই-বোনদের নিয়ে ভারতে চলে যান। পরে অগাস্টে তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। নিজামীর নির্দেশে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তার এবং আশেপাশের বহু মানুষের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।এ ঘটনায় নিপীড়নের অভিযোগে আনা হয়েছে আসামির বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-১১: একাত্তরের ৩ অগাস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় নিজামী বলেন, পাকিস্তান আল্লাহর ঘর। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তিনি প্রিয় ভূমির হেফাজত করছেন। দুনিয়ার কোনো শক্তি পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারবে না।সেদিন তার উপস্থিতিতেই নিরীহ বাঙালিদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য ইসলামী ছাত্র সংঘ, আলবদর, রাজাকারদের মতো সহযোগী বাহিনীগুলোকে উসকানি দেওয়া হয়।ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এফ), ৪ (১), ৪ (৩) এবং ২০ (ই) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-১২: একাত্তরের ২২ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল মাদানীর স্মরণসভায় নিজামী বলেন, যারা পাকিস্তানকে ভাঙতে চায়, তারা ইসলামের শত্রু। পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে ইসলামের শত্রুরা অস্ত্র হাতে নিয়েছে মন্তব্য করে পাকিস্তানের শত্রুদের নির্মূল করার আহ্বান জানান তিনি।ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এফ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-১৩: ওই বছর ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ইসলামী ছাত্রসংঘের সভায় নিজামী বলেন, পাকিস্তানের অখণ্ডটা রক্ষায় হিন্দুস্তানের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে রাজাকার, আলবদর সদস্যরা প্রস্তুত। উসকানিমূলক ওই বক্তব্যে মুক্তিকামী বাঙালিকে ভারতের সহযোগী হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এফ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-১৪: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ সেপ্টেম্বর যশোরে রাজাকারদের প্রধান কার্যালয়ে এক সুধী সমাবেশে নিজামী প্রত্যেক রাজাকারকে ইমানদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।কারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালে নিজামীকারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালে নিজামীতিনি বলেন, আল্লাহর পথে কেউ কখনো হত্যা করে, কেউ মারা যায়। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্রসংঘের সদস্য, রাজাকার ও অন্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উসকানি ও প্ররোচনা দেন নিজামী।ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এফ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-১৫: একাত্তরের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প ছিল। নিজামী প্রায়ই ওই ক্যাম্পে গিয়ে রাজাকার সামাদ মিয়ার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।ওই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (জি) ও (এইচ), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অভিযোগ-১৬: মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।একটি জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ওই ঘটনায় গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে নিজামীর বিরুদ্ধে, যা ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (সি) (আই), ৪ (১), ৪ (২) এবং ২০ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
false