text
stringlengths
0
4.32k
সারাদিন সূর্যের পিছনে-পিছনে চলছে সে।
একবার তাকে দেখা যায়,
একবার হারিয়ে যায় কোথায়।
হেমন্তের সন্ধ্যায় জাফরান-রং-এর সূর্যের নরম শরীরে
শাদা থাবা বুলিয়ে-বুলিয়ে খেলা করতে দেখলাম তাকে;
তারপর অন্ধকারকে ছোটো-ছোটো বলের মতে থাবা দিয়ে লুফে আনলো সে,
সমস্ত পৃথিবীর ভিতর ছড়িয়ে দিলো।
আমি যদি বিড়াল হতাম
মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে লাভ হয়েছে কচু
কী যে ভালো হতো আমি হলে বিড়ালছানা!
নামটা আমার শচিন হলেও মায়ের কাছে শচু
শচিন কেন শচু হবে, আমার তা নেই জানা!
রোজ সকালে মা আমাকে ঘুমের থেকে তুলে
ঠেসে ধরে দাঁত মেজে দেয় টুথপেস্ট আর ব্রাশে!
আর আমি খুব কাঁদতে থাকি ঘুমে ঢুলে ঢুলে
তখন ছোট্ট বিড়ালছানা মিঁয়াও মিঁয়াও হাসে!
কত্ত মজা বিড়ালছানার মাজতে হয় না দাঁত
দাঁত মাজে না বলে কি তার দাঁত খেয়ে নেয় পোকা?
ক্যাভিটি হয়? দাঁতের ব্যথায় কাঁদে সে দিনরাত?
তুমি আমায় কী ভেবেছ? আমি এতই বোকা!
ব্রাশ-পেস্টের ধার ধারে না নেই বিড়ালের ব্রাশ
মজার ঘুমটা না ঘুমিয়ে যায় না সে ইশকুল।
টিচার পড়া ধরে না তাই করে না হাঁসফাঁস
বিড়ালগুলোর ফুর্তি কেবল, লম্ফ হুলুস্থুল!
সারাটা দিন মিঁয়াও মিঁয়াও গায় সে কত গান!
বাড়ির কোনাকাঞ্চিতে তার কেবল আনাগোনা,
টিভি দেখতে নেইকো বারণ, আনলিমিটেড টাইম
হোম টাস্ক নেই, নেই টেনশন, নেইকো পড়াশোনা!
বইয়ের বোঝা নেই বিড়ালের কাঁধে কিংবা ঘাড়ে
সুযোগ পেলেই ঝিমোয় বসে টিভি দেখার ছলে,
(ইশ!), আমি যদি জন্ম নিতাম বিড়াল পরিবারে!
একদিন ঠিক পালিয়ে যাব বিড়ালছানার দলে
বিড়ালের মায়ের কান্না
বিড়াল তো আর মানুষ নয় রে
জন্তু জানোয়ার
তার পরেতেও মায়ের স্নেহ
কম আছে কি তার?
সকাল বেলা বাচ্চাগুলো
নিয়ে গিয়েছে চোরে
সেই জন্যে সে খুঁজছে সদাই
সারা দিনমান ধরে ।
মিঁঞ মিঁঞ চিৎকার করে
করছে আহাজারি
তার কান্নাতে আকাশ বাতাস
হচ্ছে যেন ভারি।
ধমক ধামক দিচ্ছে সবাই
কিংবা দিচ্ছে পেটন
তারপরেতেও বাচ্চার শোকে
কাঁদছে সারাক্ষণ।
রাত্রী বেলা তার কান্নাতে
ঘুম হলো না মোর
বিড়াল মায়ের কান্না শুনে
রাত্রী হলো ভোর।
সকাল বেলা তাকিয়ে দেখি
শিশু হারানো শোকে
তাকিয়ে আছে আমার পানে
কি যে কাতর চোখে!
লাগল মায়া দিলাম খেতে
হালকা হলো বুক
খাবার দেখেও খেল না সে
ফিরিয়ে নিল মুখ।
বুঝতে পেলাম বিড়াল হলেও
বুকটা স্নেহে ভরা
সব মায়েদের মতই তাহার
মনটা মায়ায় গড়া।
তাই তো সদাই করছে কান্না
নিদ্রা বিহিন চোখে
খাবার দিলেও খাচ্ছে না আর
বাচ্চাগুলোর শোকে।
বিড়ালের গল্প
হাঁ করে তাকিয়ে আছে রাস্তা
কিছু সুড়সুড়ি ফলেছে তেঁতুল জিভে
লকলকে আগুনকে বোলো
স্পর্শসুখ আর নয়;
বেগুন এইমাত্র পুড়বে বুকে
ছবিগুলো বৃষ্টিতে নুইয়ে গেলে
হাত-পা সেঁকা রোদ
ভেতরে উলুদিয়ে জাগছে মৃত কোষ
আর তখনও আমি দর্শকাসনে
কে কার ঘুড়ি কাটছে! কোন রঙে
মিশে যাচ্ছে জল
শিকে ছিঁড়লেই বিড়ালটি…
বলার মত একগ্লাস স্বচ্ছ তরল নিভে যাচ্ছে
বাঘের গলায়…
পেরেকের দাঁতে ঝুলছে সময়
চিৎপাত দুপুর ম ম
ঘুমের থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে চোখ
তারা মৌমাছি বলেই জানা যায়নি বৈষম্য
একটা দিলখোলা জানালা মন পেতেছে তোমার দিকে
ভিজে জামায় বিড়ালটিও কাতর
গা-ঝাড়া দিয়ে শুকিয়ে নিচ্ছে জল
চুপচাপ জানালায় টাঙিয়ে দিয়েছে ম্যাঁও
রাস্তা কেটেছে ঘনঘন যাতায়াত
কেউ কেউ দুদণ্ড জিড়িয়ে নিয়েছে রোদ